বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
জাল হাদিসের কবলে বাংলাদেশী পির-অলি ও আলেম সমাজঃ (পর্ব-২)
ভূমিকাঃ জাল-জইফ হাদিস ও বানোয়াট
মিথ্যে কিচ্ছা কাহিনীমূলক ইসলামি বিভিন্ন গল্প মূলত দেখা যায় কথিত পির-অলি তথা মারেফত
পন্থী , তাবলীগ জামায়াতের বিভিন্ন বই-পুস্তকে এবং বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন চটি বইগুলোতে।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো একজন কোরআন ও হাদিসের হাফেজ , মুফতি, মুহাদ্দিস, ইমাম, মাদ্রাসার
শিক্ষক বিভিন্ন ওয়াজকারী এবং ইসলামের উপর ডক্টরেট পাশ করা কোনো আলেম যখন জাল-জইফ হাদিস
ও বানোয়াট মিথ্যে কিচ্ছা কাহিনীমূলক ইসলামি বিভিন্ন গল্প বলে সাধারন মুসলমানদেরকে নসিহত
করে। সাধারন মুসলমান তো এতো কিছু বুঝে না। একজন প্রখ্যাত আলেম বা পির-অলি বলেছেন তাই
তারা মেনে নিচ্ছে এবং এসবের উপর আমল করছে। আমি সেইসব আলেমদেরকে বলছি আপনারা নিজেকে
আগে সংশোধন করুন, কারন আপনাদের শিক্ষার মধ্যে ভুল আছে, তারপর জনগনকে হেদায়াতের পথে
ডাকতে নামুন। নইলে আপনাদের মতো আলেম সবার আগে জাহান্নামে যেতে হবে।
(ভুল সবই ভুল)
১. স্বদেশ প্রেম ঈমানের অংশ একটি ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট হাদিসঃ
একটি অতি প্রচলিত বাক্য:
حُبُّ الْوَطَنِ مِنَ الإِيْمَانِ
‘‘দেশপ্রেম ঈমানের অংশ।’’
হাদীস হিসেবে কথাটি একেবারেই ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট।[1]
এছাড়া কথাটির অর্থও ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ততটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কাজেই একে আলিমগণের কথা বা ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলে চালানোরও যৌক্তিকতা নেই। ঈমান ও ইসলাম ঐ সব কর্মের সমষ্টি যা মানুষ তার স্বাধীন ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে স্বেচ্ছায় করতে পারে বা অর্জন করতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে বা জন্মগতভাবে সে সকল বিষয় অর্জিত হয় তাকে ঈমানের বা ইসলামের অংশ বলা হয় না। কারণ এগুলো ঐচ্ছিক বা ইচ্ছাধীন কর্ম নয়। জন্মস্থান, আবাসস্থল, বন্ধুবান্ধব, স্ত্রী, সন্তান, পরিজন ও পিতামাতার প্রতি ভালবাসা একটি প্রকৃতিগত বিষয়। মানুষ সৃষ্টিগত ভাবে এদের প্রতি ভালবাসা অনুভব করে। এগুলো কোনটিই ঈমানের অংশ নয়। এজন্য পিতামাতার আনুগত্য ও সেবাকে ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলা হয়েছে, পিতামাতার ভালবাসাকে নয়। অনুরূপভাবে দেশের প্রতি, আবাসস্থলের প্রতি, পাড়া প্রতিবেশীর প্রতি মুসলিমের অনেক দায়িত্ব রয়েছে, যা তিনি ইচ্ছাধীন কর্মের মাধ্যমে পালন করবেন। কিন্তু প্রাকৃতিক ভালবাসাকে ঈমানের অংশ বলা ইসলামী ধারণার সাথে পুরোপুরি মেলে না।
কেউ যদি প্রকৃতির নিয়মকে লঙ্ঘন করে, নিজ সন্তান, স্ত্রী, পিতামাতা, আবাসস্থল বা দেশকে ভাল না বাসে তাহলে আমরা তাকে অপ্রকৃতিস্থ, পাগল ইত্যাদি বলব। আর যদি এ অবস্থা তাকে উপর্যুক্ত দায়িত্বাদি পালন থেকে বিরত রাখে তাহলে আমরা তাকে পাপী ও আল্লাহর অবাধ্য বলব।
[1] সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ: ১৯৫, নং ৩৮৬, মোল্লা আরী কারী, আল-আসরার, পৃ: ১০৯, নং ৪১৩, আল-মাসনূ‘য়, পৃ: ৬৯, নং ১০৬, আজলূনী, কাশফুল খাফা ১/৪১৩, যারকানী, মুখতাসারুল মাকাসিদ, পৃ: ৯৫, নং ৩৬১।
২. প্রচলিত পাঁচ কালিমা ও দুই ঈমান
আমাদের দেশে ইসলামী ঈমান-আকীদার বিবরণের ক্ষেত্রে ‘পাঁচটি কালিমা’র কথা প্রচলিত আছে। এছাড়া ঈমানে মুজমাল ও ঈমানে মুফাস্সাল নামে দু’টি ঈমানের কথা আছে। কায়েদা, আমপারা, দীনিয়াত ও বিভিন্ন প্রচলিত বই পুস্তকে এ কালিমাগুলো রয়েছে। এগুলোকে অত্যন্ত জরুরী মনে করা হয় এবং বিশেষভাবে মুখস্থ করা হয়। এ বাক্যগুলোর অর্থ সুন্দর। তবে সবগুলো বাক্য এভাবে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয় নি। এগুলোকে কুরআনের কথা বা হাদীসের কথা মনে করলে ভুল হবে।
(১) কালিমায়ে শাহাদত
কুরআন ও হাদীসে ইসলামী ঈমান বা বিশ্বাসের মূল হিসাবে দু’টি সাক্ষ্য প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যা আমাদের দেশে ‘কালিমা শাহাদত’ হিসাবে পরিচিত। এ কালিমায় আল্লাহর তাওহীদ এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করা হয়। প্রকৃতপক্ষে একমাত্র কালিমা শাহাদতই হাদীস শরীফে ঈমানের মূল বাক্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সালাতের (নামাযের) ‘তাশাহ্হুদের’ মধ্যে বাক্যদ্বয় এভাবে একত্রে বলা হয়েছে:
أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ (উপাস্য) নেই এবং আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।’’
এ ‘কালিমা’ বা বাক্যটি দু’টি বাক্যের সমন্বয়ে গঠিত।
প্রথম বাক্য:
أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ
‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ (উপাস্য) নেই।’’
এ প্রথম বাক্যটির ক্ষেত্রে কোনো কোনো হাদীসে বলা হয়েছে:
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ
‘‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই।’’
দ্বিতীয় বাক্য: وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
আযানের মধ্যে এ বাক্যদ্বয়কে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় বাক্যটির ক্ষেত্রে কোনো কোনো হাদীসে (أشهد) অর্থাৎ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি’ কথাটি পুনরাবৃত্তি না করে শুধুমাত্র (وَأنَّ) ‘এবং নিশ্চয়’ বলা হয়েছে। কোনো কোনো হাদীসে বাক্যদ্বয়ের শুরুতে (أشهد) বলা হয়নি, বরং বলা হয়েছে:
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّداً رَسُوْلُ اللهِ
দ্বিতীয় বাক্যটির ক্ষেত্রে অনেক হাদীসে (أن محمدا رسول الله) ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল’ কথাটির পরিবর্তে (أن محمدا عبده ورسوله) ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল’- বলা হয়েছে। এছাড়া কোনো কোনো হাদীসে ‘সাক্ষ্য প্রদান’ শব্দের পরিবর্তে ‘বলা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন হাদীসে আমরা এ কালেমাটিকে নিম্নের বিভিন্ন রূপে দেখতে পাই[1]:
(১) প্রথম রূপ:
أشهد أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وأشهد أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ
(২) দ্বিতীয় রূপ:
أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّه
(৩) তৃতীয় রূপ:
أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
(৪) চতুর্থ রূপ:
لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ
(৫) পঞ্চম রূপ:
أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عبده ورَسُولُه
বিভিন্ন হাদীসে আমরা দেখতে পাই যে, সাহাবায়ে কেরাম ইসলাম গ্রহণের সময়ে উপরে উল্লিখিত এ সকল বাক্যের কোনো একটি পাঠ করে ইসলামের ছায়াতলে প্রবেশ করতেন।[2]
(২) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সম্পূর্ণ বাক্যটি কালিমায়ে তাইয়িবা নয়ঃ
আমাদের দেশে কালিমা তাইয়িবা বা ‘পবিত্র বাক্য’ বলতে বুঝানো হয় তাওহীদ ও রিসালাতের একত্রিত ঘোষণা:
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ
কুরআন কারীমে আল্লাহ জাল্লা শানুহু বলেন:
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ
‘‘তুমি কি দেখ নি, কিভাবে আল্লাহ একটি উদাহরণ পেশ করেছেন: একটি ‘কালিমায়ে তাইয়িবা’ বা পবিত্র বাক্য একটি পবিত্র বৃক্ষের মত, তার মূল প্রতিষ্ঠিত এবং তার শাখা-প্রশাখা আকাশে প্রসারিত।’’[3]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবন আববাস (রা) ও অন্যান্য মুফাস্সির থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, এখানে ‘কালিমা তাইয়িবা’ বলতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ তাওহীদের এ বাক্যটিকে বুঝানো হয়েছে।[4] কিন্তু (লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) দু’টি বাক্য একত্রিতভাবে কোনো হাদীসে কালিমা তাইয়িবা হিসাবে উল্লেখ করা হয় নি।
আমরা দেখেছি যে, কালিমা শাহাদাতকে অনেক সময় ‘‘শাহাদাত’’ শব্দ উহ্য রেখে নিম্নরূপে বলা হয়েছে:
لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ
কিন্তু মাঝখানে (وَأَنَّ)
বাদ দিয়ে উভয় অংশ একত্রে
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ
এভাবে ‘কালিমা’ হিসাবে সহীহ হাদীসে কোথাও উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা যায় না। কোনো কোনো হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, এভাবে এ বাক্যদ্বয় একত্রে আরশের গায়ে লিখা ছিল। আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি যে, এ হাদীসগুলো সহীহ নয়। কোনো কোনো হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
-এর ঝান্ডা বা পতাকার গায়ে লিখা ছিল:
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ
এ অর্থের হাদীসগুলোর সনদে দুর্বলতা আছে।[5]
ইবন হাজার আসকালানী ইমাম হাকিম নাইসাপুরীর সূত্রে উদ্ধৃত করেছেন যে, আবূ যার গিফারী (রা) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে প্রশ্ন করেন: আমরা আপনার বক্তব্য শুনতে এসেছি। তখন তিনি বলেন:
أقول لا اله الا الله محمد رسول الله
‘‘আমি বলি: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’’: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।’’
হাদীসটির সনদ সহীহ। ইমাম হাকিমের মুসতাদরাক গ্রন্থে হাদীসটি প্রায় হুবহু বিদ্যমান। তবে সেখানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বক্তব্য নিম্নরূপ:
أقول لا إله إلا الله و أني رسول الله
‘‘আমি বলি: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্নী রাসূলুল্লাহ’’: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল।’’[6]
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু -র পর এবং (وَأَنَّ) সংযুক্ত মুহাম্মাদুর
রাসুলুল্লাহ তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্নি মুহাম্মাদুর
রাসুলুল্লাহ বাক্যের কিছু সহিহ হাদিস উল্লেখ করা হলোঃ
(১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি আল্লাহ্র রাসূল। যে কোন বান্দা সন্দেহাতীতভাবে এই বাক্য দু’টির ওপর ঈমান আনবে, সে আল্লাহ্র সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, সে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে না।
হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/১৪৮- তাহক্বীক্ব শু’আইব আরনাউত্ব ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ : হাদীস সহীহ : তাহক্বীক্ব শায়খ আহমাদ শাকির : এর সানাদ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ
হা
((২) ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি বলে : “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল, আর নিশ্চয়ই ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা, তাঁর বান্দীর (মারইয়ামের) পুত্র ও তাঁর সেই কালেমা যা তিনি মারইয়ামকে পৌঁছিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ হতে প্রেরিত একটি রূহ মাত্র, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য” - তাকে জান্নাতের আটটি দরজার যেটি দিয়ে প্রবেশ করতে চাইবে, প্রবেশ করাবেন।
হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/৩১৮০
অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “তার ‘আমল যা-ই হোক না কেন আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” (সহীহুল বুখারী হা/৩১৮০, সহীহ মুসলিম হা/১৫০)
হাদিসের মানঃ সহিহ
(৩)
‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল” আল্লাহ্ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন। [১]
[১] হাদীস সহীহ্ : সহীহ্ মুসলিম হা/১৫১শির্ক
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(৪) আবূ ‘আমরাহ আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর রাসূল। আর আমি আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দিচ্ছি- যে কোন বান্দা এ
(কালেমা) দু’টির প্রতি ঈমান রেখে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, এ দুটো অবশ্যই তার জন্য ক্বিয়ামাতের দিন জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হবে। [১]
[১] সহীহ লিগাইরিহি : ইবনু হিব্বান হা/২২১- হাদীসের শব্দাবলী তার- তাহক্বীক্ব আলবানী : সহীহ লিগাইরিহি।
হাদিসের মানঃ সহিহ
(৫) মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃ) বলেছেন : যে কোন ব্যক্তি এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে, সে খাঁটি অন্তরে এই সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল”- আল্লাহ তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দিবেন। [১]
[১] হাদীস সহীহ : আহমাদ হা/২১৯৯৮- আলবানী : হাসান সহীহ্
হাদিসের মানঃ সহিহ
(৬)
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলছেন : আমি মানুষের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করার জন্য প্রেরিত হয়েছি যতক্ষণ না তারা এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহামাদ আল্লাহর রাসূল, সালাত ক্বায়িম করবে এবং যাকাত দিবে। তারা যদি এটা করে তাহলে আমার পক্ষ থেকে তাদের রক্ত ও
সম্পদের নিরাপত্তার ঘোষণা রইল। তবে ইসলামের হাক্ব ব্যতীত। তাদের হিসাব্ আল্লাহর উপর। [১]
[১] হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/২৪, সহীহ মুসলিম হা/১৩৫
হাদিসের মানঃ সহিহ
(৭)
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : ইসলামের স্তুম্ভ পাঁচটি। এ
সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও
রাসূল, সলাত ক্বায়িম করা, যাকাত দেয়া, হাজ্জ্ব করা এবং রমাযানের সওম পালন করা। [১]
[১] হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/১২২
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদি
শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সংযুক্ত সহিহ হাদিস
(১)
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১]
[১] হাদীস সহীহ : ইবনু হিব্বান হা/২০১, সিলসিলাহ্ সহীহাহ হা/২৩৫৫- শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(২)
মু’আয (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : “যে ব্যক্তি খালেস অন্তরে ইখলাসের সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ এর সাক্ষ্য দিবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (ইবনু হিব্বান, আবূ নু’আইম, আহমাদ। এর সানাদ বুখারী ও
মুসলিমের শর্তে সহীহ। সিলসিলাহ্ সহীহাহ্ হা/২৩৫৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(৩)
‘ইতবান বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলবে, ক্বিয়ামাতের দিন সে এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে গেছে।” (আহমাদ হা/১৬৪৮২, সহীহুল বুখারী, সহীহ্ মুসলিম, বায়হাক্বীর ‘আসমা ওয়াস সিফাত’ ও
দূররে মানসুর)
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(৪)
ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃ) তাকে বললেন। লোকদের মাঝে ঘোষণা দাও : “যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে এ
সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই”- সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বাযযার, সহীহ্ জামিউল সাগীর হা/৮৫১- তাহক্বীক্ব আলবানী : সহীহ)
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(৫)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : ঈমানের সত্তর বা ষাটের অধিক শাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হলো এ
কথা বলা যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই। আর সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা। [১]
[১] হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/৮, সহীহ মুসলিম হা/১৬২-০, কোন বর্ণনায় রয়েছে : ‘সবচেয়ে উঁচু শাখা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং কোন বর্ণনায় রয়েছে : ‘সবচেয়ে বড় শাখা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। অতঃপর হাদীসের বাকী অংশ অনুরূপ। যেমন ত্বাবারানীতে বর্ণিত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(৬)
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃ) বলেন : সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ এবং সর্বোত্তম দু’আ
হলো ‘আল-হামদুলিল্লাহ্’। [১]
[১] হাদীস সহীহ : তিরমিযী হা/৩৩৮৩, ইবনু মাজাহ হা/৩৮০০, ইবনু হিব্বান, নাসায়ী, মুস্তাদরাক হাকিম হা/১৮৩৪ যাহাবীর তা’লীক্বসহ। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(৭)
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : নূহ (আঃ) স্বীয় ইন্তিকালের সময় তাঁর দুই ছেলেকে ডেকে বলেছেন : আমি তো অক্ষম হয়ে পড়েছি। তাই আমি তোমাদেরকে অসিয়ত করে যাচ্ছি। আমি তোমাদেরকে দু’টি বিষয়ে আদেশ করছি এবং দু’টি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। আমি তোমাদেরকে শির্ক
এবং অহংকার থেকে নিষেধ করছি। আর যে দুটি বিষয়ে আদেশ করছি তার একটি হলো : “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”।
কেননা সমস্ত আসমান ও
যমীন এবং এর মাছে যা কিছু আছে সব কিছু যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর অপর পাল্লায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” রাখা হয়, তাহলে কালেমার পাল্লাই ঝুলে যাবে (ভারি হবে)। আর যদি সমস্ত আসমান-যমীন (সাত আকাশ ও সাত যমীন) এবং এর মধ্যকার যা কিছু আছে, একটি হালকা বা গোলাকার করে তার উপর এ
কালেমাকে রাখা হয় তাহলে ওজনের কারণে তা ভেঙ্গে যাবে। আর আমি তোমাদেরকে আদেশ করছি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামাদিহি’ (পাঠ করার জন্য), কেননা এটা প্রত্যেক বস্তুর তাসবীহ, এর দ্বারাই প্রত্যেক বস্তুকে রিযিক্ব দেয়া হয়। [১]
[১] হাদীস সহীহ : আহমাদ হা/৬৫৮৩, ৭১০১- শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(৮)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন : একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ক্বিয়ামাতের দিন আপনার শাফা’আত দ্বারা কোন ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে? রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন : হাদীসের প্রতি তোমার আগ্রহ দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, তোমার আগে এ বিষয়ে কেউ জিজ্ঞেস করবে না। (অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন: আমার শাফায়া’আত দ্বারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে ঐ ভাগ্যবান ব্যক্তি যে অন্তরের ইখলাসের সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলবে।’
হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/৯৭- হাদীসের শব্দাবলী তার, অনুরূপ আহমাদ হা/৮৮৫৮
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(৯)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবে একদিন না একদিন এই কালেমা অবশ্যই তার উপকারে আসবে। যদিও ইতিপূর্বে তাকে কিছুটা শাস্তি ভোগ করতে হবে। [১]
[১] হাদীস সহীহ : বাযযার হা/৮২৯২- হাদীসের শব্দাবলী তার, ত্বাবারানীর কাবীর হা/১৪০, ৭৩৩, ১১১১, সহীহ আত-তারগীব হা/১৫২৫। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আল্লামা হায়সামী ‘মাজমাউয যাওয়ায়িদ’ গ্রন্থে (হা/১৩) বলেন : এর রিজাল সহীহ্ রিজাল।
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(১০)
আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি এই কালেমা গ্রহণ করবে যা আমি আমার চাচার (আবূ ত্বালিবের) কাছে পেশ করেছিলাম এবং তিনি তা প্রত্যাখান করেছিলেন, সেই কালেমা এই ব্যক্তির নাজাতের উপায় হবে। [১]
[১] হাদীস সহীহ : আহমাদ হা/২০শির্ক শু’আইব আরনাঊত্ব বলেন : বর্ণনাটি সহীহ এর শাওয়াহিদ দ্বারা।
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(১১)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে এই কালেমা তাকে ঐ
সময়ে মুক্তি দিবে যখন তার উপর মুসিবত আসবে।” (সিলসিলাহ সহীহাহ্ হা/ ১৯৩২)
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(১২)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেন : এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে এবং তার অন্তরে যবের দানার ওজন পরিমাণও কল্যাণ (ঈমান) থাকবে। এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে এবং তার অন্তরে গমের দানার ওজন পরিমাণও কল্যাণ থাকবে। অতঃপর এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে এবং তার অন্তরে অণু পরিমাণও কল্যাণ থাকবে। [১]
[১] হাদীস সহীহ : সহীহুল বুখারী হা/৬৮৬১- হাদীসের শব্দাবলী তার, অনুরূপ সহীহ মুসলিম হা/৪৯৯
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(১৩)
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: মহান আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে সমস্ত হাশরবাসীর সামনে আলাদা করে এনে উপস্থিত করবেন। তিনি তার সামনে ৯৯টি ‘আমলনামার খাতা খুলে ধরবেন। প্রতিটি খাতা দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। অতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি এসব ‘আমলনামার কোন কিছুকে অস্বীকার করো। ‘আমলনামা লিখার কাজে নিয়োজিত আমার ফিরিশতারা কি তোমার উপর কোন জুলুম করেছে? সে বলবে, না। অতঃপর প্রশ্ন করা হবে, এ সমস্ত গুনাহের পক্ষে তোমার একটি নেকী আমার কাছে রয়েছে। আজ তোমার উপর কোন জুলুম করা হবে না। অতঃপর একটি কাগজের টুকরা বের করা হবে, যাতে লিখা থাকবে : ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।’ বলা হবে, যাও এটাকে ওজন করে নাও। সে আরজ করবে, এতোগুলো দফতরের মোকাবেলায় এই সামান্য কাগজের টুকরা কি কাজে আসবে। বলা হবে, আজ তোমার উপর কোন জুলুম করা হবে না। অতঃপর ঐ দফতরগুলোকে এক পাল্লায় রাখা হবে এবং অপর পাল্লায় কাগজের ঐ
টুকরাটি রাখা হবে। তখন দফতরওয়ালা পাল্লাটির মোকাবেলায় ঐ কাগজের টুকরার পাল্লাটি ওজনে ভারি হয়ে যাবে। আসল কথা হলো, আল্লাহর নামের বিপরীতে কোন কিছুই ভারি হতে পারে না। [১]
[১] হাদীস সহীহ : তিরমিযী হা/২৬৩৯
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(১৪)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : কোন বান্দা এমন নেই যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে আর তার জন্য আকাশসমূহের দরজাগুলো খূলে যায় না। এমনকি এ
কালেমা সোজা আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তবে শর্ত হচ্ছে, এর পাঠকারী কবীরাহ গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকবে। [১]
[১] হাদীস হাসান : তিরমিযী হ/৩৫৯০- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহীহ জামিঊস সাগীর হা/৫৬৪৮। ইমাম তিরমিযী বলেন। এ সূত্রে হাদীসটি হাসান ও গরীব। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
হাদিসের মানঃ হাসান
হাদিস
(১৫)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : তোমরা তোমাদের মৃত্যু পথযাত্রীকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তালকীন করাও। কেননা যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১]
[১] হাদীস হাসান : ইবনু হিব্বান হা/৩০০৪- শু’আইব আরনাউত্ব বলেন : হাদীস সহীহ। ইরওয়াউল গালীল হা/৬৮৭- হাদীসের শব্দাবলী তার থেকে গৃহীত। শায়খ আলবানী বলেন : সানাদের ব্যক্তিবর্গ প্রত্যেকেই নির্ভরযোগ্য। অবশ্য মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল ব্যতীত। তাকে ইবনু হিব্বান ‘সিকাত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। আর হাদীসের বাক্য : “যারা শেষ কথা হবে...” এটি বাযযার ভিন্ন সানাদে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ হাসান
হাদিস
(১৬)
‘উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি অন্তরে এ
বিশ্বাস রেখে মৃত্যু বরণ করলো যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [১]
[১] হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/১৪৫- হাদীসের শব্দাবলী তার, অনুরূপ আহমান হা/৪৬৪, ৪৯৮- তাহক্বীক্ব ও শু’আইব আরনাউত্ব : সানাদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। আহমাদ শাকির বলেন (হা/৪৯৮) : সানাদ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
(১৭)
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি নাবী (সাঃ)-এর কাছে এসে দেখি তিনি সাদা কাপড় জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছেন। এরপর আবার এসেও তাকে ঘুমন্ত দেখতে পাই। অতঃপর আবার এসে দেখি তিনি জাগ্রত হয়েছেন। ফলে আমি তাঁর পাশে বসে পড়ি। তখন তিনি (সাঃ) বললেন : যে কোন বান্দা এ কথা বলে যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং এর উপরই মৃত্যু বরণ করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ
কথা শুনে আবূ যার (রাঃ) বলেন : যদি সে যেনা করে এবং যদি সে চুরি করে তবুও? নাবী (সাঃ) বললেন : যদি সে যেনা করে এবং যদি সে চুরি করে তবুও। আবূ যার (রাঃ) আবার বলেন : যদি সে যেনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও? নাবী (সাঃ) বললেন : যদি সে যেনা করে এবং যদি সে চুরি করে তবুও সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবূ যার নাবী (সাঃ)- কে প্রশ্নটি তিনবার করেন আর প্রতিবারই নাবী (সাঃ) একই জবাব দেন। অতঃপর চতুর্থবারে বললেন, আবূ যারের নাক ধুলো মলিন হোক। [১]
[১] হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/২৮৩- হাদীসের শব্দাবলী তার, অনুরূপ সহীহুল বুখারী হা/৫৩৭৯।
উল্লেখিত সহিহ হাদিসের আলোকে আমরা জানতে পারলাম যে, কালিমা তাইয়্যিবা মূলত শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এই বাক্যের সাথে যখনই মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সংযুক্ত হবে তখন বাক্যটি কালিমা শাহাদাত হয়ে যাবে। তারপরও মাঝখানে ওয়া আন্নি বসাতে হবে। হাদিসে আমরা তাই পাই।
উল্লেখিত সহিহ হাদিসের আলোকে আমরা জানতে পারলাম যে, কালিমা তাইয়্যিবা মূলত শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এই বাক্যের সাথে যখনই মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সংযুক্ত হবে তখন বাক্যটি কালিমা শাহাদাত হয়ে যাবে। তারপরও মাঝখানে ওয়া আন্নি বসাতে হবে। হাদিসে আমরা তাই পাই।
এখানে উল্লেখ্য যে, কালিমা তাইয়িবার দুটি অংশ পৃথকভাবে কুরআন কারীমে ও হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। উভয় বাক্যই কুরআনের অংশ এবং ঈমানের মূল সাক্ষ্যের প্রকাশ। উভয় বাক্যকে একত্রে বলার মধ্যে কোনো প্রকারের অসুবিধা নেই। এজন্য আমরা ইসলামের প্রাচীন গ্রন্থগুলো দেখি যে, তাবিয়ীগণের যুগ থেকে ইমাম, ফকীহ, মুহাদ্দীসগণ কালিমা শাহাদতের মূল ঘোষণা হিসাবে এ বাক্যটির ব্যবহার করেছেন। এ বাক্যটি ব্যবহারের বিষয়ে কেউ কোনো আপত্তি করেন নি। কুরআনে ‘কালিমাতুত্ তাকওয়া’ ‘তাকওয়ার বাক্য’ বলা হয়েছে[7]। এর ব্যাখ্যায় তাবিয়ী আতা আল-খুরাসানী (১৩৫ হি) বলেন: কালিমায়ে তাকওয়া হলো (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ)[8]।
(৩) কালিমায়ে তাওহীদ
কালিমায়ে তাওহীদ নামে আমাদের দেশে নিম্নের বাক্যটি প্রচলিত:
لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ وَاحِداً لاَ ثَانِيَ لَكَ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ إِمَامُ الْمُتَّقِيْنَ وَرَسُوْلُ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ.
এ বাক্যটির অর্থ সুন্দর। তবে এ বাক্যটির কোনোরূপ গুরুত্ব এমনকি এর কোনো প্রকারের উল্লেখ বা অস্তিত্ব কুরআন বা হাদীসে পাওয়া যায় না।
(৪) কালিমায়ে তামজীদ
কালেমায়ে তামজীদ হিসাবে নিম্নের বাক্যটি প্রচলিত:
لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ نُوْراً يَهْدِيْ اللهُ لِنُوْرِهِ مَنْ يَشَاءُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ إِمَامُ الْمُرْسَلِيْنَ خَاتَمُ النَّبِيِّيْنَ.
এ বাক্যটির অর্থও সুন্দর। কিন্তু এভাবে এ বাক্যটি বলার কোনো নির্দেশনা, এর কোনো গুরুত্ব বা অস্তিত্ব কুরআন বা হাদীসে পাওয়া যায় না।
(৫) কালিমায়ে রাদ্দে কুফর
কালেমায়ে রাদ্দে কুফর নামে কয়েকটি বাক্য প্রচলিত আছে, যেমন:
اَللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ شَيْئاً وَنُؤْمِنَ بِهِ وَأَسْتَغْفِرُكَ مِمَّا أَعْلَمُ بِهِ وَمَا لاَ أَعْلَمُ بِهِ وَأَتُوْبُ وَآمَنْتُ وَأَقُوْلُ أَنْ لاَ إِلهَ اِلاَّ اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ
শিরক থেকে আত্মরক্ষার একটি দুআ হাদীসে বর্ণিত।[9] এ কালিমার মধ্যে উক্ত মাসনূন দুআর সাথে কিছু কথা সংযুক্ত করা হয়েছে। বাক্যগুলোর অর্থ ভাল। কিন্তু বাক্যগুলো এভাবে কোনো হাদীসে পাওয়া যায় না।
(৬) ঈমানে মুজমাল
ইমানে মুজমাল নামে প্রচলিত বাক্যটির অর্থ সুন্দর ও সঠিক। তবে এরূপ কোনো বাক্য কোনোভাবে কোনো হাদীসে উল্লেখ করা হয় নি।
(৭) ঈমানে মুফাস্সাল
ঈমানের পরিচয় দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)
বলেন:
أن تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَِالْيَوْم الآخِر وَتُؤْمِنَ بالْقَدْرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ.
‘‘তুমি ঈমান আনবে আল্লাহর উপরে, তাঁর ফিরিশতাগণের উপরে, তাঁর কেতাবগুলোর উপরে, তাঁর রাসূলগণের উপরে, শেষ দিবসের (আখেরাতের) উপরে, এবং তুমি ঈমান আনবে তাকদীরের উপরে: তার ভাল এবং তার মন্দের উপরে।’’[10]
ঈমানের এ ছয়টি রুকন বা স্তম্ভের কথা কুরআন ও হাদীসে বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে। লক্ষ্যণীয় যে, ‘ঈমানে মুফাস্সালের মধ্যে আখিরাতের বিশ্বাসকে পৃথক দুটি বাক্যাংশে প্রকাশ করা হয়েছে (ইয়াওমিল আখির) ও (বা’সি বা’দাল মাউত): শেষ দিবস ও মৃত্যুর পরে উত্থান। উভয় বিষয় একই।
হাদিসের উৎসঃ
[1] বুখারী, আস-সহীহ, ১/১২, ২৯, ৩/১২৬৭; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৪৫, ৪৭, ৫৭, ৬১।
[2] বুখারী, আস-সহীহ ১/১৭৬, ৩/১২১১; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৩০২, ৩/১৩৮৬; নাসাঈ, আস-সুনান ১/১০৯।
[3] সূরা (১৪) ইবরাহীম: আয়াত ২৪।
[4] ইবনু কাসীর, আত-তাফসীর ২/৫৩১।
[5] হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৫/৩২১।
[6] হাকিম, আল-মুসতাদরাক ৩/১২১; ইবন হাজার আসকালানী, আল-ইসাবাহ ৬/৪৬৩।
[7] সূরা (৪৮) ফাত্হ: ২৬ আয়াত।
[8] তাবারী, আত-তাফসীর ২৬/১০৫।
[9] দুআটি দেখুন: রাহে বেলায়াত, পৃষ্ঠা ৫৪২।
[10] মুসলিম, আস-সহীহ ১/৩৭; বুখারী, আস-সহীহ ১/২৭, ৪/১৭৯৩।
[2] বুখারী, আস-সহীহ ১/১৭৬, ৩/১২১১; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৩০২, ৩/১৩৮৬; নাসাঈ, আস-সুনান ১/১০৯।
[3] সূরা (১৪) ইবরাহীম: আয়াত ২৪।
[4] ইবনু কাসীর, আত-তাফসীর ২/৫৩১।
[5] হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৫/৩২১।
[6] হাকিম, আল-মুসতাদরাক ৩/১২১; ইবন হাজার আসকালানী, আল-ইসাবাহ ৬/৪৬৩।
[7] সূরা (৪৮) ফাত্হ: ২৬ আয়াত।
[8] তাবারী, আত-তাফসীর ২৬/১০৫।
[9] দুআটি দেখুন: রাহে বেলায়াত, পৃষ্ঠা ৫৪২।
[10] মুসলিম, আস-সহীহ ১/৩৭; বুখারী, আস-সহীহ ১/২৭, ৪/১৭৯৩।
(সমাপ্ত)
প্রথম পর্ব দেখতে এখানে ক্লিককরুনঃ
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, গুলশান-২,ঢাকা, বাংলাদেশ।
কোরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক আরো বিষয় জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, গুলশান-২,ঢাকা, বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment