Thursday, September 26, 2019

মদ্যপায়ী ব্যক্তিদের ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মদ্যপায়ী ব্যক্তিদের ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তি

মদ এমন একটি বস্তু যা বিবেককে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর বিবেক আচ্ছন্ন হলে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। এজন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মদ হচ্ছে সকল অশ্লীল কর্মের মূল। উল্লেখ্য যে, মদ কোন নির্ধারিত বস্তুর নাম নয়। যেসব বস্তু বেশী পরিমাণ খেলে বিবেকের ক্ষতি হয় তার অল্প বস্তুও মদ।

মদ পান বা নেশাদার দ্রব্য গ্রহণ করলে এবং তা প্রমাণিত হলে ইসলামি শরিয়াহ আইনে তাকে দুনিয়ায় নির্ধারিত শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং পরকালেও তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কর্ম। অতএব তোমরা এগুলি থেকে বেঁচে থাক। যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও। শয়তান তোমাদের মাঝে মদ ও জুয়ার মাধ্যমে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করতে চায় এবং আল্লাহর যিকির ও ছালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে চায়। তাহলে কি তোমরা বিরত থাকবে”? (মায়িদাহ ৯০-৯১)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

“লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে মদ ও জুয়া সম্পর্কে। তুমি বল: উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং উপকারও আছে মানুষের জন্য, তবে এদের পাপ উপকারের চেয়ে অধিক”। (সূরা বাকারা-২১৯)।

তিনি আরো বলেন,

“হে মুমিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ে না, যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার এবং যদি তোমরা মুসাফির না হও তবে অপবিত্র অবস্থাতেও নয়, যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর। আর যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ শৌচস্থান থেকে আসে অথবা তোমরা নারী সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম কর সুতরাং মাসেহ কর তোমরা তোমাদের চেহারা ও হাত, নিশ্চয় আল্লাহ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল”। (সুরা নিসা-৪৩)।

রাসুল সাঃ বলেন,

(ক) সুওয়ায়দ ইবন নাসর (রহঃ)...ইবন সীরীন (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললোঃ সন্ধ্যায় লোক আমাদের জন্য পানীয় তৈরি করে, পরে আমরা তা ভোরে পান করি। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললোঃ আমি তোমাকে মাদক দ্রব্য থেকে নিষেধ করছি, তা অল্প হোক বা অধিক। আর আমি তোমাকে আল্লাহর নামে সাক্ষ্য দিয়ে নিষেধ করছি -মাদকদ্রব্য থেকে; তা কম হোক বা বেশি। খায়বারবাসীরা অমুক অমুক বস্তু হতে মদ তৈরি করতো এবং তার এটা ওটা নাম রাখতো, অথচ প্রকৃতপক্ষে তা মদ, আর ফাদাকবাসীরা অমুক অমুক বস্তুর শরাব তৈরি করে তার এই নাম রাখে, অথচ তাও মদ। এভাবে তিনি চার প্রকার শরাবের কথা বললেন, এর মধ্যে একটা ছিল মধুর শরাব। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৫৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে উপদেশ দিয়েছেনঃ শরাব পান করো না, কারণ তা সমস্ত পাপাচারের প্রসূতি। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭১, সহীহ আল-জামি' ৭৩৩৪, আত-তালীকুর রাগীব ১/১৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) সুওয়ায়দ (রহঃ)...উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তোমরা মাদকদ্রব্য পরিত্যাগ কর, কেননা তা নানা প্রকার অপকর্মের প্রসূতি। তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে এক আবেদ ব্যক্তি ছিল। এক কুলটা রমণী তাকে নিজের ধোঁকাবাজির জালে আবদ্ধ করতে মনস্থ করে। এজন্য সে তার এক দাসীকে তার নিকট প্রেরণ করে তাকে সাক্ষ্যদানের জন্য ডেকে পাঠায়। তখন ঐ আবেদ ব্যক্তি ঐ দাসীর সাথে গমন করলো। সে যখনই কোন দরজা অতিক্রম করত, দাসী পেছন থেকে সেটি বন্ধ করে দিত। এভাবে সেই আবেদ ব্যক্তি এক অতি সুন্দরী নারীর সামনে উপস্থিত হলো আর তার সামনে ছিল একটি ছেলে এবং এক পেয়ালা মদ। সেই নারী আবেদকে বললোঃ আল্লাহর শপথ! আমি আপনাকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডেকে পাঠাই নি, বরং এজন্য ডেকে পাঠিয়েছি যে, আপনি আমার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হবেন, অথবা এই মদ পান করবেন, অথবা এই ছেলেকে হত্যা করবেন। সেই আবেদ বললোঃ আমাকে এই মদের একটি মাত্র পেয়ালা দাও। ঐ নারী তাকে এক পেয়ালা মদ পান করালো। তখন সে বললোঃ আরও দাও। মোটকথা ঐ আবেদ আর থামল না, যাবৎ না সে তার সাথে ব্যভিচার করলো এবং ঐ ছেলেকেও হত্যা করলো। অতএব তোমরা মদ পরিত্যাগ কর। কেননা আল্লাহর শপথ! মদ ও ঈমান কখন সহাবস্থান করে না। এর একটি অন্যটিকে বের করে দেয়। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) সুওয়ায়দ (রহঃ)...উসমান (রাঃ) বলতেন, তোমরা মদ পরিত্যাগ কর। কেননা এটাই সকল অনিষ্টের মূল। তোমাদের পূর্ব যুগে এক ব্যক্তি ছিল। সে সর্বদা ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থাকত এবং লোক সংশ্রব হতে দূরে থাকত। এরপর পূর্বোক্ত ঘটনা বর্ণনা করে বললেনঃ তোমরা মদ পরিত্যাগ কর; কেননা, আল্লাহর শপথ! মদ এবং ঈমান কখনো সহাবস্থান করে না; বরং একটি অপরটিকে বের করে দেয়। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) সুওয়ায়দ ইবন নসর (রহঃ)...ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম এবং প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই খামর (মদ)। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৫৮২-৫৫৯৫, ৫৫৯৭, ৫৫৯৮, ৫৬০২, ৫৬৮৭, ৫৬৯৬, ৫৬৯৭, ৫৬৯৯, ৫৭০০, ৫৭০১, সুনান ইবন মাজাহ ৩৩৯০, সহীহুল জামে ৪৫৫৩, সুনান আত তিরমিযি ১৮৬১, আহমাদ ৪৬৩০, ৪৮১৫, ৪৮৪৮, ৫৬১৬, ৫৬৯৭, ৫৭৮৬, ৬১৪৪, ৬১৮৩, ইরওয়া ৮/৪১, রাওদুন নাদীর ৫৪২-৫৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(চ) জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে জিনিসের অধিক পরিমাণ নেশা উদ্রেক করে, তার সামান্য পরিমাণও হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৯৩, ৩৩৯৪, সুনান আত তিরমিযী ১৮৬৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৮১, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬০৭, ৫৬০৮, ৫৬০৯, ৫৬৮৩, ৫৬৮৪, ৫৬৮৫, ৫৬৮৬, ৫৬৯৮, আহমাদ ১৪২৯৩, ইরওয়া ৮/৪৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (ছ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নেশাদার দ্রব্য এবং তার মূল্য হারাম করেছেন। মৃতপ্রাণী ও তার মূল্য হারাম করেছেন। শূকর ও তার মূল্য হারাম করেছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(জ) আহমাদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন আলী (রহঃ)...আবূ বুরদা (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং মু’আয (রাঃ)-কে ইয়ামনে পাঠান। মুআয (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এমন এক দেশে পাঠাচ্ছেন, যেখানকার অধিবাসীগণ নানারকমের পানীয় ব্যবহার করে থাকে। আমরা কী পান করবো? তিনি বললেনঃ তোমরা পানীয় পান করবে কিন্তু ঐ পানীয় যাতে মাদকতা থাকে, তা পান করবে না। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৫৯৬, ৫৬০৩, ৫৬০৪, ৫৬০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) হিশাম ইব্‌ন আম্মার (রহঃ)...আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এবার আমি জানলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রেখেছেন। আমি তাঁর ইফতারের সময় নবীয নিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম, যা আমি তাঁর জন্য কদুর খােলে তৈরি করেছিলাম। তিনি বললেন, নিকটে আনো। আমি যখন তা নিকটে নিলাম, তখন তা গাজাচ্ছিল। এরপর তিনি বললেনঃ দেওয়ালে ছুঁড়ে মার। কেননা এটা ঐ ব্যক্তির পানীয় যে আল্লাহ এবং কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে না।

আবু আবদুর রহমান বলেনঃ এতে মাদকদ্রব্য হারাম হওয়ার প্রমাণ রয়েছে; অল্প হোক বা বেশি। এর বিপরীত সেই আত্মপ্রবঞ্চকদের এ কথা ঠিক নয় যে, পানপাত্রের সর্বশেষ চুমুকটি হারাম, আগে যা পান করেছে, তা হারাম নয়। জ্ঞানীজনের মধ্যে এই বিষয়ে কোন মতপার্থক্য নেই যে, নেশা প্রথম বা দ্বিতীয় চুমুক বা কেবল শেষ চুমুকে আসে তা না; বরং সবগুলো চুমুকের সমষ্টি দ্বারাই নেশা সৃষ্টি হয়। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬১০, ইবন মাজাহ ৩৪০৯, নাসায়ী ৫৬১০, ৫৭০৪, সহীহাহ ৩০১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মদপান কী গুরুতর পাপ?

ঈসা ইবন হাম্মাদ (রহঃ)...আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে, তখন সে মু’মিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না। মদখোর যখন মদ পান করে, তখন সে মু’মিন অবস্থায় মদ পান করে না। চোর যখন চুরি করে, তখন সে মু’মিন অবস্থায় চুরি করে না। আর যখন কোন ডাকাত ডাকাতিতে লিপ্ত হয়, আর লোক চোখ তুলে দেখতে থাকে, তখন সেও মু’মিন অবস্থায় ডাকাতি করে না। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৫৯, ৫৬৬০, সহীহুল জামে ৭৭০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ এর ভবিষ্যত বাণী

(ক) আবু মালিক আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

আবূ মালেক আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের কতক লোক মদের ভিন্নতর নামকরণ করে তা পান করবে। (তাদের পাপসক্ত অবস্থায়) তাদের সামনে বাদ্যবাজনা চলবে এবং গায়িকা নারীরা গীত পরিবেশন করবে। আল্লাহ তা’আলা এদেরকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দিবেন এবং তাদের কতককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৮৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৯২, আহমাদ ২২৩৯৩, রাওদুন নাদীর ৪৫২, সহীহাহ ১/১৩৮-১৩৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯০৯১, নাসায়ী ৫৬৫৮, সহীহুল জামি‘ ৮০৯১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৩৭৮, মুসনাদে আহমাদ ১৮০৯৮, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৪৩৯০, দারিমী ২১০০, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১০৬৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭৮৪৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ হাদিস দ্বারা বুঝা গেলো যে, মানুষ মদ্যপান করবে, তবে মদের নাম অন্য হবে। আর নেতা ও দায়িত্বশীলদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হবে বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা। এদের চরিত্র হবে নোংরা, এদের প্রিয় কাজ হবে অশ্লীলতা। তাদের স্বভাব ও কৃষ্টি-কালচার হবে শূকর ও বানরের ন্যায়। এরা স্বপরিবারে পাশ্চাত্যদের স্বভাব চরিত্র গ্রহণ করবে।

(খ) মু’আয ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘ইসলামের সূচনা বা রাজত্ব শুরু হয়েছে নবী ও দয়া দ্বারা। তারপর রাজত্ব আসবে খেলাফত ও রহমত দ্বারা, তারপর আসবে অত্যাচারী শাসকদের যুগ। তারপর আসবে কঠোরতা, উচ্ছৃংখলতা, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীর যুগ। এসব অত্যাচারী শাসকেরা রেশমী কাপড় পরিধান করা, অবৈধভাবে নারীদের লজ্জাস্থান উপভোগ করা এবং মদ পান করাকে হালাল মনে করবে। এরপরও তাদের প্রচুর রুযী দেয়া হবে। দুনিয়াবী যে কোন কাজে তাদের সাহায্য করা হবে। অবশেষে এ পাপের মধ্যে লিপ্ত থেকে আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে। (বায়হাক্বী, বাংলা মিশকাত হা/৫১৪৩, হাদীছ ছহীহ)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(গ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের আলামত সমূহের মধ্যে রয়েছে- বিদ্যা উঠে যাবে, মূর্খতা বেড়ে যাবে, ব্যভিচার (যিনা) বেড়ে যাবে, মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে এবং নারীর সংখ্যা বেশি হবে এমনকি একজন পুরুষ পঞ্চাশজন নারীর তত্ত্বাবধায়ক হবে এবং মূর্খতা প্রকাশ পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৪৩৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮০, ৮১, ৫২৩১, ৫৫৭৭, ৬৮০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭১, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০৪৫, সুনান আততিরমিযী ২২০৫, সহীহুল জামি ২২০৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ ২৭৬৭, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩৭২৮০, মুসনাদে আহমাদ ১৩১১২, ১২১১৮, ১২৩৯৫, ১২৬৮২, ১২৮১৮, ১৩৪৭০, ১৩৬৬৪, আবু ইয়া'লা ২৯৩১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৭৬৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৫৯০৫, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৬/২৮০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- (১) বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ধসে যাবে (২) উপর থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হবে (৩) অনেকের পাপের দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে। আর এ গযবের মূল কারণ তিনটি। (ক) মদ পান করা (খ) নায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হওয়া  ও (গ) বাদ্য যন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হওয়া। (উপদেশ ৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

ইসলামি আইনে মদ্যপায়ী বা নেশাদার দ্রব্য গ্রহণকারীর দুনিয়ায় শাস্তি

কারোর ব্যাপারে মদ অথবা মাদকদ্রব্য পান কিংবা সেবন করে নেশাগ্রস্ত হওয়া প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করা হবে। সে যতবারই মদ পান করে ধরা পড়বে ততবারই তার উপর উক্ত দন্ডবিধি প্রয়োগ করা হবে।

(ক)  আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

মদ পানকারী এ ব্যক্তিকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে নিয়ে আসা হলো। তিনি তাকে দু’খানা ছড়ি (এক যোগে ধরে তার) দ্বারা চল্লিশের মত কোড়া মারলেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ ১ম খলিফা আবু বাকর (রাঃ) এরূপ কোড়া মেরেছেন, উমার (রাঃ) তার খিলাফতকালে এ ব্যাপারে লোকদের সাথে পরামর্শ করলেন। আবদুর রহমান ইবনু আওফ বলেনঃ সর্বাপেক্ষা হালকা শাস্তি হচ্ছে আশি (কোড়া)। ‘উমার (রাঃ) ঐ (৮০-র) আদেশই জারি করলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭৭৩, ৬৭৭৬, সুনান আততিরমিযী ১৪৪৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৭৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৭০, আহমাদ ১১৭২৯, ১২৩৯৪, ১২৪৪৪, দারেমী ২৩১১। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(খ) হুসাইন ইবনুল মুনযির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ওয়ালিদ ইবনে উকবাকে উসমান (রাঃ) এর আদালতে আনা হলে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণে তার (মদ্যপানের) অপরাধ প্রমাণিত হলে তিনি আলী (রাঃ)-কে বলেন, এই নিন আপনার চাচাতো ভাইকে এবং তার উপর হদ্দ কার্যকর করুন। আলী (রাঃ) তাকে বেত্রাঘাত করেন এবং বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদ্যপকে) চল্লিশ বেত্রাঘাত করেছেন, আবূ বকর (রাঃ)ও চল্লিশ বেত্রাঘাত করেছেন এবং উমার (রাঃ) আশি বেত্রাঘাত করেছেন। এ সবই সুন্নাত। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৮০, ৪৪৮১, আহমাদ ৬২৫, ১১৮৮, ১২৩৪, দারেমী ২৩১২, ইরওয়া ৩০৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) মু’আবিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদ পানকারী প্রসঙ্গে বলেনঃ যখন তা পান করবে তখন তাকে কোড়া মারো, তারপর পান করলে কোড়া মারো, তারপর ৩য় বার পান করলেও তাকে কোড়া মারো, তারপর ৪র্থ বার মদ পান করলে তার গর্দান কেটে দাও। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৮২, ৪৪৮৪,  সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৭২, ২৫৭৩, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬২,  সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), আহমাদ ১৬৪০৫, ১৬৪১৭, ১৬৪২৭, ৭৭০৪, ৭৮৫১, ১০১৬৯, ১০৩৫১, দারেমী ২১০৫, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৮৭, সহীহাহ ১৩৬০। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঘ) আবূ বকর ইবনু আবূ শইবাহ, যুহায়র ইবনু হারব, আলী ইবনু হুজুর ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) হাদীসের শব্দগুলো তারই (বর্ণনা করা), হুসায়ন ইবনু মুনযির আবূ সাসান (রহঃ)....হতে তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনু আফফান (রাযিঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন ওয়ালীদকে তার কাছে আনা হল। সে ফজরের দু’রাকাআত সালাত আদায় করে বলেছিল, আমি তোমাদের উদ্দেশে আরো অধিক রাকাআত পড়ব। তখন দু’ব্যক্তি ওয়ালীদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিল। তন্মধ্যে একজনের নাম ছিল হুমরান। সে বলল, সে মদ খেয়েছে। দ্বিতীয় ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল যে, সে তাকে বমি করতে দেখেছে (মদ্যপানের কারণে)। তখন উসমান (রাযিঃ) বললেন, সে মদ খাওয়ার পরই বমি করেছে। অতএব তিনি বললেন, হে ’আলী (রাযিঃ) আপনি উঠুন এবং তাকে বেত্ৰাঘাত করুন।

তখন আলী (রাযিঃ) হাসান (রাযিঃ) কে বললেন, হে হাসান! তুমি উঠ এবং তাকে বেত্ৰাঘাত কর। হাসান (রাযিঃ) বললেন, যে ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করেছে সে তার তিক্ততা ভোগ করুক। এতে যেন আলী (রাযিঃ) তার প্রতি মৰ্মাহত হলেন। অতঃপর তিনি বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু জাফর! তুমি উঠ এবং তাকে দুররা (বেত্ৰাঘাত) মার। তিনি তাকে দুররা মারলেন। আর আলী (রাযিঃ) তা গণনা করলেন। যখন চল্লিশটি দুররা মেরেছেন তখন আলী (রাযিঃ) বলেন, তুমি বিরত হও। এরপর তিনি বললেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশটি বেত্ৰাঘাত করেছেন এবং আবূ বকর (রাযিঃ)-ও তার খিলাফতকালে চল্লিশটি দুররা মেরেছেন। আর উমার (রাযিঃ) (তার খিলাফাত কালে) আশিটি দুররা মেরেছেন। আর এতদুভয় সংখ্যার প্রতিটিই সুন্নাত। তবে এটি (শেষোক্তটি) আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়।

আলী ইবনু হুজুর (রহঃ) তার বর্ণনায় কিছু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। ইসমাঈল (রহঃ) বলেন যে, আমি তা দানাজ থেকে শুনেছিলাম, কিন্তু এখন তা আমার মনে নেই। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩০৮, ইসলামিক সেন্টার ৪৩০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মদ্যপায়ীদের পরকালীন শাস্তি

(ক)  আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নেশাদার দ্রব্য পানকারী জান্নাতে যাবে না। পিতামাতার অবাধ্য ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। খোটা দানকারী জান্নাতে যাবে না। (তারগীব হা/২৩৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(খ) আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পানকারী জান্নাতে যাবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭৬, আহমাদ ২৬৯৩৮, সহীহাহ ৬৭৫, ৬৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(গ)  ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নেশা উদ্রেককারী প্রত্যেক জিনিসই ’মদ’ আর প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী জিনিসই হারাম। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করেছে এবং অবিরত পান করতে থাকে এবং তা থেকে তওবা্ না করেই মৃত্যুবরণ করেছে, তাহলে সে পরকালে তা (জান্নাতী সুপেয় মদ) পান করতে পারবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)   ৫১১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০০৩, সুনান আননাসায়ী ৫৬৭৩, সুনান আততিরমিযী ১৮৬১, আহমাদ ৫৭৩০, সহীহ আল জামি‘ ৪৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) কুতায়বা (রহঃ)...জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইয়ামানের জায়শান গোত্রের এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট মিযর নামক এক প্রকার পানীয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো, যা তারা তাদের দেশে পান করে থাকে এবং যা ভুট্টা হতে প্রস্তুত হয়। তিনি বললেনঃ তা কি মাদকতা সৃষ্টি করে? সে ব্যক্তি বললোঃ হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম। আল্লাহ্ তা’আলা নির্ধারিত করে রেখেছেন, যে ব্যক্তি মদ পান করে, তাকে ’তীনাতুল খাবাল’ থেকে পান করাবেন। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তীনাতুল খাবাল কি? তিনি বললেনঃ তা হলো দোযখীদের ঘাম অথবা পুঁজ। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৭০৯, আত-তা'লীকুর রাগীব ৩/১৮৫–১৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ঙ) আবদুল্লাহ ইবনে ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শরাব পান করে এবং মাতাল হয়, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হয় না। সে মারা গেলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তা’আলা তার তওবা কবুল করবেন। সে পুনরায় শরাব পানে লিপ্ত হলে কিয়ামতের দিন অল্লাহ তা’আলা অবশ্যি তাকে ’’রাদগাতুল খাবাল’’ পান করাবেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ’রাদগাতুল খাবাল’ কী? তিনি বলেনঃ জাহান্নামীদের দেহ থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত। (সুনান ইবন মাজাহ ৩৩৭৭, সুনান তিরমিযী ১৮৬২, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৭০, নাসায়ী ৫৬৬৪, ৫৬৭০, আহমাদ ৬৬০৬, ৬৭৩৪, দারেমী ২০৯১, সহীহাহ ৭০৯, আত-তালীক আলা ইবনু খুযাইমাহ ৯৩৯, তাখরীজুল ঈমান লি ইবনুস সালাম ৯১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পান কারী মূর্তিপূজকের ন্যায় অপরাধী। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

 (ছ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়া ও লটারীতে অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদানকারী এবং সর্বদা মদপানকারী জান্নাতে যাবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৫৩, নাসায়ী ৫৬৭২, দারিমী ২১৩৮, সহীহাহ্ ৬৭৩, সহীহ আল জামি ৭৬৭৬, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(জ) আম্মার ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষ কখনো জান্নাতে যাবে না। (১) যে ব্যক্তি তার পরিবারে বেহায়াপনার সুযোগ দেয়। (২) পুরুষের বেশধারী নারী। (৩) নিয়মিত নেশাদার দ্রব্য পানকারী। (তাবরাণী, তারগীব হা/৩৩৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ঝ) ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। সর্বদা মদ্যপায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূস (পাপাচারী কাজে পরিবারকে বাধা দেয় না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৫৫, নাসায়ী ২৫৬৩, আহমাদ ৫৩৭২, সহীহ আল জামি‘ ৩০৫২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৬৬)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (ঞ) আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে না। (১) সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পানকারী। (২) আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী। (৩) যাদুকে বিশ্বাসকারী’ (আহমাদ, মিশকাত, হাদীছ ছহীহ হা/৩৬৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ট) আলী ইবন হুজুর (রহঃ)...উরওয়া ইবন রুওয়ায়ম (রহঃ) বলেন, একদা ইবন দায়লামী (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইবন আমর ইবন আস (রাঃ)-এর খোঁজে সওয়ার হলেন। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আবদুল্লাহ্ ইবন আমর! আপনি কি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মদ সম্বন্ধে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আমার উম্মতের কেউ শরাব পান করলে আল্লাহ তা’আলা তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করবেন না। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬৪, সহীহাহ ৭০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঠ) কুতায়বা ও আলী ইবন হুজুর (রহঃ)...মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন বিচারক যখন কোন উপঢৌকন গ্রহণ করে, তখন সে যেন হারাম খায়, আর যখন সে ঘুষ গ্রহণ করে, তখন সে কুফরী পর্যন্ত পৌছায়। মাসরুক (রহঃ) আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি শরাব পান করে, সে কাফির হয়ে যায়। তার কুফরী এই যে, তার নামায কবুল হয় না। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ড)  আবু বকর ইবন আলী (রহঃ) ... ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মদ পান করলো, অথচ নেশাগ্রস্থ হলো না, তার নামায কবূল হবে না, যতক্ষণ ঐ মদ তার পেটে অথবা শিরায় অবস্থান করবে। যদি ঐ ব্যক্তি সে অবস্থায় মারা যায়, তবে তার চল্লিশ দিনের নামায কবূল হবে না। যদি সে এ অবস্থায় মারা যায়, তবে সে কাফির অবস্থায় মারা যাবে। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬৮, আত-তা'লীকুর রাগীব ৩/১৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ণ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের সাথে সংশ্লিষ্ট দশ ব্যক্তির ওপর লা’নাত করেছেন- ১। যে মদ তৈরি করে, ২। যে মদ তৈরির নির্দেশ দেয়, ৩। যে মদ পান করে, ৪। যে মদ বহন করে, ৫। যার জন্য মদ বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, ৬। যে মদ পান করায়, ৭। যে মদ বিক্রি করে, ৮। যে মদের আয় উপভোগ করে, ৯। যে মদ ক্রয় করে, ১০। যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭৬, তিরমিযী ১২৯৫, ইবনু মাজাহ ৩৩৮১, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৫৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (ত)  কুতায়বা ও হারিস ইবন মিসকীন (রহঃ).. ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পৃথিবীতে মদ পান করে এবং পরে তাওবা না করে, আখিরাতে সে পবিত্র পানীয় হতে বঞ্চিত থাকবে। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৭১, ৫৬৭৩, ৫৬৭৪, সুনান ইবন মাজাহ ৩৩৭৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫৭৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০০৩, সুনান আত তিরমিযী ১৮৬১, নাসায়ী ৫৬৭১, ৫৬৭৩, ৫৬৭৪, সুনান আবু দাউদ ৩৬৭৯, আহমাদ ৪৬৭৬, ৪৭১৫, ৪৮০৮, ৪৮৯৭, মুয়াত্তা মালেক ১৫৯৭, দারেমী ২০৯০, রাওদুন নাদীর ৫৬১, আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(থ) সুওয়ায়দ (রহঃ)...যাহহাক (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সব সময় মদ পান করা অবস্থায় মারা যায়, দুনিয়া ত্যাগকালে তার চেহারায় গরম পানির ছিটা দেয়া হয়। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৭৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(দ)  আব্দুল্লাহ ইবনু আমর থেকে বর্ণিতঃ

‘যে ব্যক্তি মদ পান করবে আল্লাহ তার উপর ৪০ দিন সন্তুষ্ট হবেন না। (আহমাদ হা/২৭৬৪৪; তারগীব হা/৩৪১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত ভূমিকা: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ...