বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
যিনা/ব্যভিচার ও ধর্ষণ
(ইসলামি আইন বনাম মানবরচিত
আইন)
(Hazrat Muhammad (Saw) is one
of the best jurisprudents in the world)
যিনা বা ব্যভিচারঃ যিনা বা ব্যভিচার বলতে বুঝায়,
ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ বন্ধন ছাড়া অবৈধ পন্থায় যৌন তৃপ্তি লাভ। ইসলামি শরীয়াতে
অবৈধ পন্থায় যৌন সম্ভোগ সম্পূর্ণ হারাম এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ধর্ষণঃ ধর্ষণ হচ্ছে মেয়ের অনিচ্ছায় জোড় পূর্বক যৌন
সঙ্গম। ধর্ষণ এক পুরুষ কর্তৃকও হতে পারে আবার একাধিক পুরুষ মিলেও গণধর্ষণ হতে পারে।
মানব রচিত আইনে যিনা বা ব্যভিচার শাস্তিযোগ্য
অপরাধ নয়। কারণ যিনা বা ব্যভিচারে মেয়ের সম্মতি থাকে। যেমন পরকিয়া প্রেম, পতিতা বৃত্তি
বা লিভটুগেদার কিংবা মোবাইল প্রেম, বিভিন্ন পার্ক, আবাসিক হোটেলে তরুণ-তরুণীদের সাময়িক
অবাধ মেলামেশা ইত্যাদি। এসব Sexual কাজে উভয়ের
সম্মতি থাকে এমনকি অন্যের বিবাহিত স্ত্রীও যদি অন্য পুরুষের সাথে অবৈধ মেলামেশায় লিপ্ত
হয় আর স্বামী যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয় বলে আদালত
রায় দিয়ে থাকে।
কিন্তু ইসলাম সম্মতিক্রমে হোক আর জোড়পূর্বক
ধর্ষণ যাই হোক নারী-পুরুষ বিবাহ বহির্ভুত অবাধ মেলামেশা হলেই তার জন্যে শাস্তি নির্ধারিত।
ইসলাম উভয়ের লজ্জা স্থানের অংশটুকুর যৌন তৃপ্তিকেই যিনা বা ব্যভিচার হিসেবে গণ্য করে
না, মানব দেহের আরো ছয়টি অংশের যৌন তৃপ্তি লাভকেও যিনা বা ব্যভিচার হিসেবে গণ্য করে।
রাসুল সাঃ বলেন,
(ক) আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের জন্য তার ব্যভিচারের অংশ লিখে
রেখেছেন, সে তা নিশ্চয়ই করবে। চোখের ব্যভিচার হলো দেখা, জিহবার ব্যভিচার কথা বলা (যৌন
উদ্দীপ্ত কথা বলা)। আর মন চায় ও আকাঙ্ক্ষা করে এবং গুপ্তাঙ্গ তাকে সত্য বা মিথ্যায়
প্রতিপন্ন করে।
কিন্তু সহীহ মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছে,
আদম সন্তানের জন্য তাক্বদীরে যিনার অংশ যতটুকু নির্ধারণ করা হয়েছে, সে ততটুকু অবশ্যই
পাবে। দুই চোখের যিনা তাকানো, কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের যিনা আবেগ উদ্দীপ্ত
কথা বলা, হাতের যিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশে) স্পর্শ করা আর পায়ের যিনা ব্যভিচারের
উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের যিনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। আর গুপ্তাঙ্গ তা সত্য
বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬২৪৩, ৬৬১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭, সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৫২, আহমাদ ৭৬৬২, ৮১৫৬, ৮৩২১, ৮৩৩৪, ৮৩৯২, ৮৬২৬, ৯০৭৬, ৯২৭৯, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৪৪২০, ইরওয়া ১৭৮৭, সহীহ আল জামি ১৭৯৭, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮০১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫৬৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ) আব্দুল্লাহ
ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের উপর যে ব্যাপারে বেশী ভয় করি তা হচ্ছে যেনা ও গোপন
প্রবৃত্তি”। (আত-তারগীব হা/৩৪১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(গ)
আবু ওমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
বলতে শুনেছি, ‘আমি একদা ঘুমিয়ে ছিলাম আমার পাশে দু’জন লোক আসল, তারা আমার বাহু ধরে
নিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ দেখি আমি কিছু লোকের পাশে যারা খুব ফুলে আছে তাদের গন্ধ এতবেশী
যেন মনে হচ্ছে ভাগাড়। আমি বললাম এরা কারা? নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, এরা ব্যাভিচারী-ব্যাভিচারিণী। (আত-তারগীব হা/৩৪২৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
যিনা/ব্যভিচারের বিধান
ইসলামের মূল লক্ষ্যসমুহের মধ্যে অন্যতম লক্ষ্য
হল, মানুষের ইজ্জত-আবরু ও বংশের হেফাজত করা। যিনার মাধ্যমে ইসলামের এ মহান উদ্দেশ্য
বিঘ্নিত হয় বিধায় ইসলামে এটি হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং যে সব মানবিক অপরাধের
শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে এটি তন্মধ্যে গুরুতর ও অন্যতম। ব্যভিচার একটি মহাপাপ যা
অনেকগুলো অপরাধের নায়ক।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
(ক)
“তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটি অশ্লীল কাজ ও অসৎ পন্থা।” (সূরা বনী ইসরাঈল ৩২)।
তিনি অন্য স্থানে বলেন:
(খ)
“কোন রকম অশ্লীলতার কাছেও যেও না তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক।” (সূরা আল আনআম ১৫১)।
তিনি আরো বলেন,
(গ)
‘তারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন মা‘বূদকে ডাকে না শরী‘আত সম্মত কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা
করে না এবং যেনা করে না। আর যে ব্যক্তি এই সকল কাজ করে সে শাস্তি ভোগ করবে। ক্বিয়ামতের
দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং এ শাস্তি লাঞ্ছিত অবস্থায় সে অনন্তকাল ভোগ করতে
থাকবে’। (ফুরক্বান ৬৮)।
অশ্লীল কাজসমূহের মধ্যে যিনা বা ব্যভিচার সর্বাধিক
অশ্লীল কাজ। ইসলাম পর্দার বিধান পালন, দৃষ্টি অবনতকরণ ও পরনারীর সাথে নির্জনে অবস্থান
নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে ব্যভিচারের পথ ও মাধ্যম রুদ্ধ করে দিয়েছে।
‘আলকামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে চলতে ছিলাম, তখন তিনি বললেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম, তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে
করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংযত করে। আর যার সামর্থ্য নেই,
সে যেন সওম পালন করে। সওম তার প্রবৃত্তিকে দমন করে। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯০৫, ৫০৬৫, ৫০৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২৯১, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৪০০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৪৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৪৫, ১৮৪৬, ১৮৪৭,
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৮১, নাসায়ী ২২৪০, ২২৪১, ২২৪২, আহমাদ ৩৫৮১, দারেমী ২১৬৫,
২১৬৬, বুলগুলমারাম, ৯৬৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৭৮১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
তিনটি কারণ ব্যতীত কোনো মুসলিমকে হত্যা করা বৈধ নয়
(ক)
আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয়- আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, তাকে হত্যা করা বৈধ নয় তিনটি অপরাধের
যে কোনো একটিতে লিপ্ত না হলেঃ (১) বিবাহিত লোক ব্যভিচার করলে তাকে পাথর মেরে হত্যা
করবে, (২) আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে
অথবা ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানো হবে অথবা তাকে দেশ থেকে নির্বাসন দেয়া হবে, (৩) আর কাউকে
হত্যা করলৈ তার বিনিময়ে কিসাসস্বরূপ তাকেও হত্যা করা যাবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ)
আবূ উমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) (ছাদের)
উপর থেকে বিদ্রোহীদের প্রতি তাকালেন। হত্যার ব্যাপারে আলোচনা করতে শুনে তিনি বললেনঃ
তারা আমাকে হত্যার সংকল্প করছে। কেন তারা আমাকে হত্যা করবে? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ তিনটি কারণের কোন একটি বিদ্যমান না থাকলে কোন মুসলিমকে
হত্যা করা বৈধ নয়। বিবাহিত ব্যক্তি যেনা করলে, তাকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করা অথবা
যে ব্যক্তি কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে অথবা যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পর মুরতাদ হয়ে
যায়। আল্লাহর শপথ! আমি জাহিলী যুগেও কখনো যেনা করিনি এবং ইসলামী যুগেও না, আমি কোন
মুসলিমকে হত্যা করিনি এবং আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে মুরতাদ হইনি। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৩৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৫৮,
নাসায়ী ৪০১৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫০২, আহমাদ ৪৩৯, ৪৫৪, ৫১১, ১৪০৫, ২২৯৭, বায়হাকী
ফিস সুনান ৮/১৯৪, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ৪/৩৫০, ইরওয়া ৭/২৫৪, তাখরীজুল মাখতার ৩০০-৩০২,
৩৪২, ৩৪৬, ৩৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ)
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, ’’আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং আমি
আল্লাহর রাসূল’’ তার রক্তপাত বৈধ নয়। কিন্তু তিন শ্রেণীর লোক হত্যার যোগ্যঃ জানের
(হত্যার) বদলে জান (হত্যা), বিবাহিত যেনাকারী এবং মুসলিম জামাআত থেকে পৃথক হয়ে দীন
ত্যাগকারী। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৩৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৬৮৭৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৭৬, সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪০২, নাসায়ী ৪০১৬, ৪৭২১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৫২,
আহমাদ ৩৬১৪, ৪০৫৫, ৪২৩৩, ৪৪১৫, ২৪৯৪৭, দারেমী ২৪৪৭, বায়হাকী ফিস সুনান ৭/২১৩, ২৮৩,
২৮৪, ইবনু হিব্বান ৪৪০৮, ৫৯৭৭, দারাকুতনী ৩/৭২, ইরওয়া ২১৯৬, যিলালুল জান্নাহ ৬০, আধুনিক
প্রকাশনী ৬৩৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যিনা/ব্যভিচার ৭টি জিনিস দিয়ে হয়
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের জন্য তার ব্যভিচারের অংশ লিখে
রেখেছেন, সে তা নিশ্চয়ই করবে। চোখের ব্যভিচার হলো দেখা, জিহবার ব্যভিচার কথা বলা (যৌন
উদ্দীপ্ত কথা বলা)। আর মন চায় ও আকাঙ্ক্ষা করে এবং গুপ্তাঙ্গ তাকে সত্য বা মিথ্যায়
প্রতিপন্ন করে।
কিন্তু সহীহ মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছে,
আদম সন্তানের জন্য তাক্বদীরে যিনার অংশ যতটুকু নির্ধারণ করা হয়েছে, সে ততটুকু অবশ্যই
পাবে। দুই চোখের যিনা তাকানো, কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের যিনা আবেগ উদ্দীপ্ত
কথা বলা, হাতের যিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশে) স্পর্শ করা আর পায়ের যিনা ব্যভিচারের
উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের যিনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। আর গুপ্তাঙ্গ তা সত্য
বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬২৪৩, ৬৬১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭, সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৫২, আহমাদ ৭৬৬২, ৮১৫৬, ৮৩২১, ৮৩৩৪, ৮৩৯২, ৮৬২৬, ৯০৭৬, ৯২৭৯, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৪৪২০, ইরওয়া ১৭৮৭, সহীহ আল জামি ১৭৯৭, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮০১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫৬৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(ক) মনঃ এখান থেকেই ব্যভিচারের উৎপত্তি।
যে ব্যক্তি মনের বিরুদ্ধে চলতে পারে সেই পূর্ণ ঈমানদার মুসলমান হয়।
(খ) চোখঃ
চোখের ব্যভিচার সবচেয়ে বড় ব্যভিচার্। কারোর প্রতি অসাবধানতাবশত প্রথমবার চোখ পড়লে পাপ
হয়না কিন্তু ২য় বার তাকালে বা ১ম বার দৃষ্টির পর সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে না নিলে যিনা
তথা ব্যভিচার হয়।
(গ) জিহ্বাঃ
জিহ্বা দ্বারা ব্যভিচার হয় যখন একজন নর/নারী আরেকজন নর/নারীর সাথে কথা বলে রক্ত ও স্ত্রীর
সম্পর্ক ছাড়া।
(ঘ) কানঃ
এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন নর/নারীর কথা শুনা হয়। রক্তের সম্পর্ক থাকলে সমাস্যা নেই।
(ঙ) হাতঃ
এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন কোন বিবাহিত/ অবিবাহিত নর/নারীর শরীরের যেকোন অংশ স্পর্শ
বা ধরা হয়।
(চ) পাঃ
এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন পায়ে হেটে কাঙ্খিত কোন নর বা নারীর কাছে যাওয়া হয়।
(ছ) গুপ্ত অঙ্গঃ
এটা দিয়েই শুধু ব্যভিচার হয় মানুষ তা ভাবলেও এটার স্থান সবার পরে। কেননা উপরে ৬টিকে
দমন করতে পারলেই এই অঙ্গ হেফাযত করা যাবে।
যিনা/ ব্যভিচারের কুফল
যিনা বা ব্যভিচারের কারণে মানুষের ব্যক্তি
ও সমাজ জীবনে বিভিন্ন ধরণের কুফল বয়ে আনে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোঃ
(ক) যিনাকারী
বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এ কথা অনস্বীকার্য
যে, যিনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে প্রাণঘাতি বিভিন্ন যৌন রোগ সৃষ্টি হয় যার মধ্যে মরণঘাতি
এইডস্ (এইচ, আই, ভি), সিফিলিস, গণোরিয়া, মেহ-প্রমেহ, ক্ষয়রোগ ইত্যাদি প্রধান।
(খ) ব্যভিচারের
কারণে যৌন সম্ভোগের বৈধ পথ রূদ্ধ হয়ে যায়; এর মাধ্যমে বিবাহ, পরিবার, সন্তানসন্তুতির
প্রতি মানুষের অবজ্ঞা সৃষ্টি হয়। ফলত: আবহমান কাল ধরে চলে আসা পরিবার প্রথা ধ্বংস হতে
বাধ্য হয়।
(গ) যিনা
মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যকার বিভেদ উঠায়ে দেয়, এ দুই শ্রেণীর মধ্যে মূল পার্থক্য
হলো- চতুষ্পদ জন্তুর যৌনসঙ্গমের কোন নির্দিষ্ট পরিসর নেই, কিন্তু মানুষের জন্য এ পরিসর
সীমিত। তাই মানুষ যখন যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন এ পরিসরের দেয়াল টপকে মানুষ চতুষ্পদ
জন্তুতে পরিণত হয়। এ শ্রেণির মানুষের দৃষ্টান্ত দিয়ে আল্লাহ বলেন,
“তারা খায় ও আনন্দ উপভোগ করে যেমন আনন্দ উপভোগ
করে চতুষ্পদ জানোয়ার।” (সূরা মুহাম্মদ ১২)।
(ঘ)
যিনাকারীর লজ্জা থাকে না। যৌন পিপাসা মিটানোর নেশায় সে সাধারণ মানবিক লজ্জা-শরম হারিয়ে
ফেলে। বৈধ-অবৈধের মধ্যে কোন পার্থক্য তার কাছে আর থাকে না।
(ঙ)
মানুষের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে যিনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
লজ্জাস্থানের হেফাজত জান্নাতের গ্যারান্টি
যারা অবৈধ যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থেকে নিজেদের
লজ্জাস্থানকে অবৈধ ব্যবহার থেকে হেফাজত করে তাদের জন্য পরকালে জান্নাতের গ্যারান্টি
রয়েছে। মহান আল্লাহ সফলকাম মুমিনদের পরিচয় প্রদান করতে যেয়ে বলেন,
“আর তারা নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহকে সংযত রাখে,
তাদের স্ত্রী ও তারা যাদের মালিক হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ছাড়া এতে তারা নিন্দনীয় হবে
না। সুতরাং কেউ এ ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমা লংঘণকারী। এবং যারা আমানত ও
প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী; আর যারা নিজেদের নামাযে যত্নবান থাকে। তারাই হবে উত্তরাধিকারী;
উত্তরাধিকারী হবে ফেরদাউসের, যাতে তারা স্থায়ী হবে।” (সূরা
আল-মুমিন: ৫-১১)।
রাসুল সাঃ বলেন,
(ক) সাহ্ল ইবনে সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দু’রানের মাঝখানের বস্তু
(লজ্জাস্থান) এর জামানত আমাকে দিবে, আমি তার জান্নাতের যিম্মাদার। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭৪, ৬৮০৭, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৪০৮, আহমাদ ২২৩১৬, রিয়াদুস সলেহীন ১৫২১, তা’লীকুর রাগীব (৩/১৯৭), আধুনিক
প্রকাশনী ৬০২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬০৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ) আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা যে ব্যক্তিকে তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের অকল্যাণ
হতে মুক্ত করেছেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনান আত
তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪০৯), রিয়াদুস সলেহীন ১৫২৭, সহীহাহ ৫১০। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।
ইসলামি আইনে ব্যভিচারী বা যিনাকারীর শাস্তি
দুনিয়াতে লজ্জাস্থানের ব্যভিচারের শাস্তি আছে
। প্রথমে জেনে নেই ব্যভিচার কয় প্রকার।
ব্যভিচার দুই প্রকার। যথাঃ
(ক) Fornication.
(খ) Adultery.
Fornication: Fornication হলো দুজন অবিবাহিত নারী-পুরুষের
যৌন সম্পর্ক। মানে, একজনও বিবাহিত নয়। উল্লেখ্য, বাবা মা বা বাবা মার অনুপস্থিতিতে
অভিভাবককে না জানিয়ে গোপন বিয়ে করলে সে বিয়েও বৈধ হবে না এবং তাদের যৌন সম্পর্ক
Fornication হবে।
Adultery: Adultery হলো দুজন নারী-পুরুষ এর মধ্যে যৌন
সম্পর্ক, যাদের মধ্যে একজন বিবাহিত অপরজন অবিবাহিত আবার দুজনই বিবাহিত হতে পারে।
এ দুই ক্ষেত্রে দুই রকম শাস্তি আছে। দুটোই
আলোচনা করছি-তবে, এটা মনে রাখতে হবে এ শাস্তি কেবল ইসলামিক রাষ্ট্রতেই দেয়া যাবে এবং
শরিয়া সরকার সেটা প্রয়োগ করবে। কোনো ব্যক্তি না। এরকম নন-মুসলিম দেশে বিচার সেদেশের
আইনে হবে, চাইলে আদালত শরীয়া আইনে বিচার করবে, না চাইলে করবে না এটা সে দেশের ব্যাপার।
আমরা মাঝে মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জানতে পারি যে, অনেক আলেম ফতোয়া দিয়ে স্থানীয়ভাবে
দোররা মেরে থাকেন। পরবর্তীতে দেখা যায়, সেই আলেমের বিরুদ্ধে মামলা হয়, ধরপাকড় শুরু
হয় এবং শেষে জেল-জরিমানা গুণতে হয়। যেহেতু আমাদের দেশ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ রাষ্ট্র
হলেও ইসলামি রাষ্ট্র নয় এবং ইসলামি আইনে দেশ পরিচালনা করা হয় না, তাই ফতোয়া দিয়ে স্থানীয়ভাবে
যিনা বা ব্যভিচারের বিচার করা যাবে না। এরুপ অপকর্মে কেহ লিপ্ত হলে দেশের প্রচলিত মানব
রচিত আইনে তার বিচার হবে।
ইসলামি আইনে Fornication এর শাস্তি
(অবিবাহিত ছেলে-মেয়ে)
এই কেসে, শরিয়া আইনে দুজনকেই প্রকাশ্যে জনগণেরে
উপস্থিতে ১০০ বেত্রাঘাত করতে হবে এবং সাথে এক বছরের জন্য নির্বাসন বা জেল। এছাড়া খাঁটিভাবে
তওবা করতে হবে। আর বেত্রাঘাতের ক্ষেত্রে এটাই ইসলামী শরীয়াতের সবচেয়ে বড় শাস্তি।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে এক’শ ঘা করে
বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকরী করবে এদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের অভিভূত না
করে। যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাক। ঈমানদারদের একটি দল যেন এদের শাস্তি
প্রত্যক্ষ করে।” (সূরা আন নূর ২৪:২)।
হাদিস অনুয়ায়ী শাস্তির বিধান নিম্নে উল্লেখ
করা হলোঃ
(ক) যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হতে শুনেছি যে, অবিবাহিত লোক যিনা করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে
একশত চাবুক মারার ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করার হুকুম দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৮৩১, ২৩১৪, আধুনিক প্রকাশনী ৬৩৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ)
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(যিনাকারীকে) বেত্ৰাঘাত করেছেন ও নির্বাসন দণ্ড দিয়েছেন, আবূ বকর (রাঃ) বেত্ৰাঘাত
করেছেন ও নির্বাসন দিয়েছেন এবং উমার (রাঃ)-ও বেত্ৰাঘাত করেছেন এবং নির্বাসন দণ্ডও
প্রদান করেছেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৮, ইরওয়া
২৩৪৪, বুলগুলমারাম ১২১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(গ) উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা আমার কাছ থেকে (দীনের বিধান) শিখে নাও। আল্লাহ তাদের (মহিলিাদের
জন্য একটি পথ করে দিয়েছেন। যদি অবিবাহিত পুরুষ অবিবাহিত নারীর সাথে যেনা করে তবে তাদের
প্রত্যেককে এক বছরের নির্বাসনসহ এক শত বেত্রাঘাত করতে হবে। আর যদি বিবাহিত পুরুষ বিবাহিত
নারীর সাথে যেনা করে তবে তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত এবং রজম করতে হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩০৬,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৫৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১৪৩৪, ১৪৫১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪১৫, আহমাদ ২২১৫৮, ২২১৯৫, ২২২০৮, ২২২২৩, ২২২৭৪,
দারেমী ২৩২৭, ইরওয়া ২৩৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৬৭, ইসলামিক সেন্টার ৪২৬৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
(ঘ) আবূ
হুরায়রা, যায়েদ ইবনে খালিদ ও শিবল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে
বললো, আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, আমাদের মধ্যে কিতাবুল্লাহর বিধান অনুযায়ী
মীমাংসা করে দিন। তার তুলনায় অধিক বিচক্ষণ তার প্রতিপক্ষ বললো, হাঁ আমাদের মাঝে আল্লাহর
কিতাব অনুসারে ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে বক্তব্য পেশের অনুমতি দিন। তিনি বলেনঃ বলো।
লোকটি বললো, আমার পুত্র এই ব্যক্তির শ্রমিক
ছিল, সে তার স্ত্রীর সাথে যেনা করেছে। আমি তার পক্ষ থেকে এক শত বকরী এবং একটি গোলাম
পরিশোধ করেছি। অতঃপর আমি কতক বিজ্ঞ লোককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আমাকে বলা হয় যে,
আমার পুত্রকে এক শত বেত্রাঘাত করতে হবে এবং এক বছরের নির্বাসন দিতে হবে, আর এই ব্যক্তির
স্ত্রীকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই তোমাদের দু’জনের মধ্যে আল্লাহর
কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করবো। তুমি তোমার এক শত বকরী ও গোলাম ফেরত লও এবং তোমার পুত্রকে
এক বছরের নির্বাসনসহ এক শত বেত্রাঘাত করা হবে। আর হে উনাইস! তুমি আগামী কাল সকালে তার
স্ত্রীর নিকট যাবে। সে যদি স্বীকারোক্তি করে তবে তাকে রজম করবে। অধস্তন রাবী হিশাম
বলেন, উনায়স (রাঃ) পরদিন সকালে তার নিকট গেলো এবং সে স্বীকারোক্তি করলে তিনি তাকে রজম
করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৬৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯৭ - ১৬৯৮, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৫৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৩, নাসায়ী ৫৪১০, ৫৪১১, সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৪৫, আহমাদ ১৬৫৯০, ১৭০৩৮, মুয়াত্তা মালেক ১৫৫৬, দারেমী ২৩১৭,
ইরওয়া ১৪৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইসলামি আইনে Adultery শাস্তি (বিবাহিত
নারী পুরুষ)
এই কেসে, যে অবিবাহিত তাঁকে ১০০ বেত্রাঘাত
করতে হবে। আর যে বিবাহিত তাকে শরিয়াতের আইন মাফিক পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
করতে হবে। আর যদি দুজনেই বিবাহিত হয় তবে দুজনকেই পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড। যাতে করে
সে তার কুকর্মের উপযুক্ত ফলাফল ভোগ করতে পারে আর হারাম কাজে তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
যেমন করে মজা উপভোগ করেছিল, এখন তেমনি করে ঠিক তার উল্টা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ
করবে। এ মৃত্যুদণ্ডেও যদি তাদের পাপের পূর্ণ প্রায়শ্চিত্ত না হয় এবং তারা উভয়েই
তওবা না করে মারা যায় তাহলে তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে শাস্তি দেয়া হবে। এই ধরণের
বিচার প্রকাশ্য জনসম্মুখে কার্যকর করতে হবে, যাতে অন্যরা দেখে এই কাজ করতে সাহস না
পায়।
সহিহ হাদিস অনুয়ায়ী শাস্তির বিধান নিম্নে উল্লেখ
করা হলোঃ
(ক) উমার (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন এবং তাঁর ওপর কিতাব নাযিল
করেছেন, তন্মধ্যে ’রজমের’ আয়াত ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম
করেছেন এবং তারপরে আমরাও রজম করেছি। আর রজমের দণ্ড আল্লাহর কিতাবের মাঝে অপরিহার্য
সত্য ঐ সমস্ত পুরুষ ও নারীর ওপর যারা বৈবাহিক হওয়া সত্ত্বেও যিনা করে। যখন তা প্রমাণসাপেক্ষ
হয় অথবা গর্ভধারিণী হয় অথবা স্বীকারোক্তি দেয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৫৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৮৩০, ২৪৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৩১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯১, দারিমী ২৩৬৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১৪৩২, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫৩, আহমাদ ৩৯১, ইরওয়া ২৩৩৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৩৫৭, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন- ৬৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা মায়েয ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)!
আমাকে পবিত্র করুন। তিনি বললেন, ‘আক্ষেপ তোমার প্রতি, চলে যাও, আল্লাহর কাছে ক্ষমা
চাও এবং তওবা কর’। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি চলে গেলেন এবং সামান্য একটু দূরে গিয়েই পুনরায়
ফিরে আসলেন এবং আবারও বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে
পবিত্র করুন। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবারও তাঁকে পূর্বের ন্যায়
বললেন। এইভাবে তিনি যখন চতুর্থবার এসে বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা! আমি তোমাকে কোন্ জিনিস হতে পবিত্র করব? তিনি বললেন,
যিনা হতে। তাঁর কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (ছাহাবাদেরকে)
জিজ্ঞেস করলেন, ‘লোকটি কি পাগল’? লোকেরা বলল, না তো? তিনি পাগল নন। তিনি আবার বললেন,
‘লোকটি কি মদ পান করেছে’? তৎক্ষণাৎ এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তাঁর মুখ শুঁকে দেখেন; কিন্তু
মদের কোন গন্ধ তাঁর মুখ হতে পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি
সত্যই যিনা করেছ’? তিনি বললেন, জি হ্যাঁ। এরপর তিনি রজমের নির্দেশ দিলেন, তখন তাঁকে
রজম করা হল। এই ঘটনার দুই/তিন দিন পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
(ছাহাবাদের সম্মুখে) এসে বললেন, তোমরা মায়েয ইবনে মালেকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর।
কেননা সে এমন তওবাই করেছে, যদি তা সমস্ত উম্মতের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হয়, তবে তা
সকলের জন্য যথেষ্ট হবে।
অতঃপর আয্দ বংশের গামেদী গোত্রীয় একটি মহিলা
এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে পবিত্র করুন।
তিনি বললেন, তোমার প্রতি আক্ষেপ! চলে যাও, আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার কর এবং তওবা কর।
তখন মহিলাটি বলল, আপনি মায়েয ইবনে মালেককে যেভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন আমাকেও কি সেভাবে
ফিরিয়ে দিতে চান? দেখুন, আমার এই গর্ভ যিনার! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি (সত্যই গর্ভবতী)?
মহিলাটি বলল, জি হ্যাঁ।
অতঃপর তিনি বললেন, যাও, তোমার পেটের বাচ্চা
প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আনছারী এক লোক মহিলাটির সন্তান
প্রসব হওয়ার সময় পর্যন্ত তাকে নিজের তত্ত্বাবধানে নিয়ে গেলেন। সন্তান প্রসব হওয়ার পর
ঐ লোকটি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খেদমতে এসে বলল, হুযুর! গামেদী
মহিলাটির গর্ভ খালাছ হয়ে গিয়েছে। এবার তিনি বললেন, এই শিশু বাচ্চাটিকে রেখে আমরা মহিলাটিকে
রজম করতে পারব না। এমতাবস্থায় যে, তাকে দুধ পান করাবার মত কেউই নেই। এমন সময় আর একজন
আনছারী দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর নবী! আমিই তার দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করব। বর্ণনাকারী
বলেন, অতঃপর তাকে রজম করলেন।
অন্য এক রেওয়ায়াতে আছে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মহিলাটিকে বললেন, ‘তুমি চলে যাও এবং সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত
অপেক্ষা কর’। অতঃপর সন্তান প্রসবের পর যখন আসল, তখন বললেন, আবারও চলে যাও এবং তাকে
দুধ পান করাও এবং দুধ ছাড়ান পর্যন্ত অপেক্ষা কর। পরে যখন বাচ্চাটির দুধ খাওয়া বন্ধ
হয়, তখন মহিলাটি বাচ্চার হাতে এক খণ্ড রুটির টুকরা দিয়ে তাকে সঙ্গে করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খেদমতে উপস্থিত হল। এইবার মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর নবী! এই
দেখুন (বাচ্চাটির) দুধ ছাড়ান হয়েছে, এমনকি সে নিজের হাতের খানাও খেতে পারে। তখন রাসূল
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাচ্চাটিকে একজন মুসলমানের হাতে তুলে দিলেন। পরে
মহিলাটির জন্য গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দিলেন। অতএব তার জন্য বক্ষ পর্যন্ত গর্ত খনন করা
হল। তৎপর লোকদেরকে নির্দেশ করলেন, তারা মহিলাটিকে রজম করল। খালেদ ইবনে ওয়ালীদ (রাঃ)
সম্মুখে অগ্রসর হয়ে তার মাথায় একখণ্ড পাথর নিক্ষেপ করতেই রক্ত ছিটে এসে তাঁর মুখমণ্ডলের
উপর পড়ল। তাই তিনি মহিলাটিকে ভর্ৎসনা ও তিরস্কার করে গাল-মন্দ করলেন। (এটা শুনে) নবী
করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে খালেদ, থাম! সেই সত্তার কসম, যার
হাতে আমার প্রাণ! মহিলাটি এমন (খালেছ) তওবা করেছে, যদি কোন বড় যালেমও এই ধরনের তওবা
করে, তারও মাগফেরাত হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি তার জানাযা পড়ার আদেশ করলেন। অতঃপর তার জানাযা
পড়লেন এবং তাকে দাফনও করা হল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৫৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৪২৮২, ইসলামিক সেন্টার ৪২৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(গ) আবূ হুরায়রা, যায়েদ ইবনে
খালিদ ও শিবল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তারা বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললো, আমি
আপনাকে আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, আমাদের মধ্যে কিতাবুল্লাহর বিধান অনুযায়ী মীমাংসা
করে দিন। তার তুলনায় অধিক বিচক্ষণ তার প্রতিপক্ষ বললো, হাঁ আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব
অনুসারে ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে বক্তব্য পেশের অনুমতি দিন। তিনি বলেনঃ বলো।
লোকটি বললো, আমার পুত্র এই ব্যক্তির শ্রমিক
ছিল, সে তার স্ত্রীর সাথে যেনা করেছে। আমি তার পক্ষ থেকে এক শত বকরী এবং একটি গোলাম
পরিশোধ করেছি। অতঃপর আমি কতক বিজ্ঞ লোককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আমাকে বলা হয় যে,
আমার পুত্রকে এক শত বেত্রাঘাত করতে হবে এবং এক বছরের নির্বাসন দিতে হবে, আর এই ব্যক্তির
স্ত্রীকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই তোমাদের দু’জনের মধ্যে আল্লাহর
কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করবো। তুমি তোমার এক শত বকরী ও গোলাম ফেরত লও এবং তোমার পুত্রকে
এক বছরের নির্বাসনসহ এক শত বেত্রাঘাত করা হবে। আর হে উনাইস! তুমি আগামী কাল সকালে তার
স্ত্রীর নিকট যাবে। সে যদি স্বীকারোক্তি করে তবে তাকে রজম করবে। অধস্তন রাবী হিশাম
বলেন, উনায়স (রাঃ) পরদিন সকালে তার নিকট গেলো এবং সে স্বীকারোক্তি করলে তিনি তাকে রজম
করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৩১৫, ২৬৪৯, ২৬৯৬, ২৭২৫, ৬৬৩৩, ৬৮২৮, ৬৮৩২, ৬৮৩৩, ৬৮৩৬, ৬৮৪৩, ৬৮৬০, ৭১৯৫, ৭২৬০, ৭২৭৯,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৪৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৩, নাসায়ী ৫৪১০,
৫৪১১, আহমাদ ১৬৫৯০, মুয়াত্তা মালেক ১৫৫৬, দারেমী ২৩১৭, ইরওয়া ১৪৬৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২১৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২১৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন জনৈক লোক নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলো। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদে
ছিলেন। লোকটি উচ্চস্বরে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি যিনা করেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেদিকে
মুখ ফিরিয়ে নিলেন লোকটি সেদিকে গিয়ে আবার বলল, আমি যিনা করেছি। তখনও নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অবশেষে যখন লোকটি চারবার স্বীকারোক্তি
দিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, তুমি কি পাগল? লোকটি
(দৃঢ়তার সাথে) বলল, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি বিবাহিত?
সে বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীদের উদ্দেশে) বললেন, একে নিয়ে যাও এবং ’রজম’ কর।
(হাদীসের এক বর্ণনাকারী) ইবনু শিহাব (রহঃ)
বলেন, আমার নিকট এমন এক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন, যিনি জাবির ইবনু ’আব্দুল্লাহ থেকে শুনেছেন,
আমরা তাকে মদীনাতেই ’রজম’ করেছি। অতঃপর যখন তার ওপর পাথর নিক্ষেপ করছিল (তীব্র যাতনা
অনুভূত হয়ে) তখন সে পালিয়ে গেল। কিন্তু আমরা ’হাররাহ্’ নামক স্থানে তাকে পেলাম এবং
সেখানেই তার ওপর পাথর নিক্ষেপ করলাম। পরিশেষে সে মৃত্যুবরণ করল।
বুখারীর অপর বর্ণনাতে জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত,
সে বলল, ’হ্যাঁ’। এরপর বর্ণিত আছে যে, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যার নির্দেশ করলেন। সুতরাং ঈদগাহের মাঠে তার ওপর পাথর নিক্ষেপ
করা হয়। কিন্তু নিক্ষিপ্ত পাথরগুলো যখন তার দেহে আঘাত হানতে ছিল, তখন সে অসহ্য যন্ত্রণায়
দৌড়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু পরে তার নাগাল পাওয়া গেল ও রজম করা হলো। অতঃপর তার জানাযার
সালাতও আদায় করালেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৬০,
৩৫৬৫, ৩৫৬৬, ৩৫৬৭, ৩৫৮১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৭২,
৫২৭০, ৬৮২০, ৬৮২৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯১, ১৬৯২,
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪২৮, ১৪২৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪২৮, ৪৪৩০,
৯৫৩৫, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২১৯, ২২৮, আত-তহাবী ৩/১৪৩, ইরওয়া ৭/৩৫৩, নাসায়ী ১৯৫৬, আহমাদ
১৪৪৬২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৩৫, আধুনিক প্রকাশনী ৪৮৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৮০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আবূ গাসসান মালিক ইবনু আবদুল
ওয়াহিদ মিসমাঈ (রহঃ).....ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাযিঃ) এর মাধ্যমে হাদীস শুনিয়েছেন
যে,
জুহাইনাহ গোত্রের এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করল। সে বলল, হে আল্লাহর নবী! আমি হদ (শারীআত কর্তৃক
নির্ধারিত ব্যভিচারের শাস্তি) এর উপযোগী হয়েছি। অতএব আমার উপর তা কার্যকর করুন। তখন
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবককে ডাকালেন এবং বললেন, তাকে
ভালভাবে দেখাশোনা করো। তারপর সে যখন সন্তান প্রসব করবে তখন তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।
সে তাই করলো। এরপর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি (শাস্তি প্রদানের)
নির্দেশ দিলেন। তখন মহিলার কাপড় শক্ত করে বাধা হলো। এরপর তিনি শাস্তি কার্যকর করার
আদেশ দিলেন। তাকে পাথর মারা হলো।
অতঃপর তিনি তার উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন।
তখন উমর (রাযিঃ) বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি তার (জানাযার) সালাত আদায় করলেন অথচ
সে তো ব্যভিচার করেছিল? তিনি বললেন, নিশ্চয়ই সে এমনভাবে তওবা করেছে, যদি তা মদীনার
সত্তরজন লোকের মধ্যে বণ্টিত হতো, তবে তাদের জন্য তাই যথেষ্ট হতো। তুমি কি তার চেয়ে
অধিক উত্তম তওবাকারী কখনও দেখেছো? সে-তো নিজের জীবন আল্লাহর জন্য দিয়ে দিয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯৬,
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৪২৮৪, ইসলামিক সেন্টার ৪২৮৫, নাসায়ী ১৯৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫৫, আহমাদ ১৯৩৬০, ১৯৪০২,
১৯৪০২, ১৯৪২৪, ১৯৪৫২, দারেমী ২৩২৫, ইরওয়া ২৩৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(চ)
আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন কতিপয় ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জানালো যে, তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী
যিনা করেছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন,
’রজমের’ ব্যাপারে তোমরা তাওরাতে কি জেনেছ? তারা বলল, আমরা দোষীকে অপমান করি এবং চাবুক
মারা হয়। ’আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাতে অবশ্যই ’রজমের’
দণ্ড রয়েছে, তা নিয়ে আসো! অবশেষে তারা তা এনে খুলল ঠিকই কিন্তু তাদের একজন ’রজমের’
আয়াতের উপর স্বীয় হাত দিয়ে ঢেকে রেখে দিল এবং তারপর এর আগের ও পরের আয়াত পড়ল।
তখন ’আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, তোমার হাত
উঠাও! সে হাত উঠাল। তখন দেখা গেল, সেখানে রজমের আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। ইয়াহূদীরা বলল,
হে মুহাম্মাদ! সে সত্য বলেছে। এখানে রজমের আয়াত বিদ্যমান আছে। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দুজনকে রজম করে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। তখন তাদের উভয়কে
’’রজম’’ করা হলো। অন্য রিওয়ায়াতে আছে, ’আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, তোমার হাত উঠাও!
সে হাত উঠাল। তখন সেখানে স্পষ্টভাবে রজমের আয়াত বিদ্যমান দেখা গেল। [আয়াত গোপনকারী]
সেই লোকটি বলল, হে মুহাম্মাদ! সত্যিই তাওরাতে রজমের আয়াত বিদ্যমান আছে; কিন্তু আমরা
নিজেদের মাঝে তা গোপন রাখতাম। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয়কে
রজম করার নির্দেশ দিলেন। তখন তাদের উভয়কে রজম করা হলো। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩২৯,
৩৬৩৫, ৪৫৫৬, ৬৮১৯, ৬৮৪১, ৭৩৩২, ৭৫৪৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৩০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৬৯৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৪৬,
৪৪৪৯, আহমাদ ৪৪৮৪, ৪৬৫২, ৬৩৪৯, মুয়াত্তা মালেক ১৫৫১, দারেমী ২৩২১, ইরওয়া ১২৫৩, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ১২৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(ছ)
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....বারা ইবনু আযিব (রাযিঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখ দিয়ে একজন
ইয়াহুদীকে কালি মাখা এবং বেত্ৰাঘাতকৃত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বলেন,
তোমরা কি তোমাদের কিতাবে ব্যভিচারের শাস্তি এরূপই পেয়েছ? তারা বলল, হ্যাঁ। এরপর তিনি
তাদের মধ্য হতে একজন আলিম (পাদরী) ব্যক্তিকে ডাকালেন এবং বললেন, তোমাকে সে আল্লাহর
কসম দিয়ে বলছি, যিনি মূসা (আঃ) এর প্রতি তাওরাত কিতাব অবতীর্ণ করেছিলেন, এরূপই কি
তোমরা তোমাদের কিতাবে ব্যভিচারীর শাস্তি পেয়েছ?
তখন ইয়াহুদী আলিম ব্যক্তি বললেন, না। তিনি
আরো বললেন, আপনি যদি আমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে এভাবে না বলতেন তবে আমি আপনাকে জানাতাম
না যে, এর প্রকৃত শাস্তি রজম (পাথর নিক্ষেপ করা)। কিন্তু আমাদের সমাজের সম্ভান্ত ব্যক্তিদের
মাঝে এর ব্যাপক প্রচলন হয়ে গেছে। অতএব, আমরা যখন এতে কোন সম্ভান্ত লোককে পেতাম, তখন
তাকে ছেড়ে দিতাম এবং যখন কোন নিঃস্ব ব্যক্তিকে পাকড়াও করতাম তখন তার উপর শারীআতের
প্রকৃত শাস্তিحَد
বাস্তবায়িত করতাম। পরিশেষে আমরা বললাম, তোমরা সকলেই এসো, আমরা সবাই মিলে এ ব্যাপারে
একটি শাস্তি নির্ধারিত করে নেই, যা ভদ্র ও অভদ্র সকলের উপরই প্রযোজ্য হবে। সুতরাং আমরা
ব্যভিচারের শাস্তি কালি লাগানো এবং বেত্ৰাঘাত করাকেই স্থির করে নিলাম, পাথর নিক্ষেপের
পরিবর্তে।
তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, হে আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে তোমার নির্দেশ رجم বাস্তবায়িত (পুনর্জীবিত)
করলাম, যা তারা বাতিল করে ফেলেছিল। সুতরাং তিনি তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিলেন। অবশেষে
ঐ ইয়াহুদীকে পাথর মারা হল। এরপর মহান আল্লাহ এ আয়াতঃ “হে রসূল! যারা কুফরী কাজে দ্রুতগামী
তাদের কার্যকলাপ যেন আপনাকে চিন্তিত না করে। ... অতঃপর সেই বাণী পর্যন্ত যদি তোমরা
তা প্রদত্ত হও, তবে তা ধারণ কর"- (সূরা ময়িদাহ ৫:৪১) পর্যন্ত অবতীর্ণ করেন। তারা
(ইয়াহুদীরা) বলতো যে, তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গমন
করো, যদি তিনি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে- কালি লাগানো এবং বেত্ৰাঘাতের নির্দেশ প্রদান করেন,
তবে তোমরা তা কার্যকর করবে; আর যদি তিনি রজমের নির্দেশ দেন তবে তা প্রত্যাখ্যান করবে।
আল্লাহ তা’আলা (এ মর্মে) আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত মুতাবিক
বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারাই হলো কাফির (অস্বীকারকারী) সম্প্রদায়"- (সূরা
ময়িদাহ ৫:৪৪)।
"আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত অনুসারে
বিচার করে না তারাই হলো অত্যাচারী দল"- (সূরা ময়িদাহ ৫:৪৫)। "আর যারা আল্লাহর
নাযিলকৃত আয়াত অনুযায়ী বিচার করে না তারাই হলো সীমালঙ্ঘনকারী দল" (সূরা ময়িদাহ
৫:৪৭)। এ সবগুলো আয়াত কাফিরদের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০০, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫৮, ২৩২৭,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৪৭, ৪৪৪৮, আহমাদ ১৭০৫৪, ইরওয়া ২৬৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৪২৯১, ইসলামিক সেন্টার ৪২৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(জ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মা’ইয ইবনু মালিক যখন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন, তখন তিনি তাঁকে বললেন, তুমি কি (কোনো মহিলাকে) চুমু
দিয়েছিলে, অথবা চোখ দ্বারা ইশারা দিয়েছিলে? সে বলল, না, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে কি তুমি
তার সাথে সঙ্গম করেছ? কথাটি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোনো ইশারা-ইঙ্গিতে
বলেননি, বরং দৃঢ়কণ্ঠে বললেন। সে বলল, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
তাকে ’রজমের’ নির্দেশ করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৫৬১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৮২৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪২৭, আহমাদ
২১২৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৩৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
জোড় পূর্বক ধর্ষণ করলে ধর্ষিতা দোষী সাব্যস্ত হবে না
(ক) ওয়ায়িল
ইবনু হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে
জনৈকা মহিলা সালাতের উদ্দেশে বের হলো। এমন সময় এক ব্যক্তি তাকে ধরে নিয়ে জোরপূর্বক
যিনা করলে মহিলাটির চিৎকারে পুরুষটি পালিয়ে যায়। তখন মুহাজিরদের একটি দল সেখান দিয়ে
যাচ্ছিল। তখন মহিলাটি বলল, ঐ লোকটি আমার সাথে এরূপ এরূপ করেছে। তারা তখন ঐ লোকটিকে
গ্রেফতার করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত করল। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ মহিলাটিকে বললেন, চলে যাও আল্লাহ তা’আলা তোমাকে
ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর যে লোকটি মহিলাটির সাথে যিনা করেছিল। যিনাকারীর ব্যাপারে হুকুম
করলেন, একে পাথর নিক্ষেপে হত্যা কর। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
লোকটি এমনভাবে তওবা্ করেছে যদি মদীনার সকল লোক এরূপ তওবা্ করত, তাহলে তাদের সকলের পক্ষ
থেকে তা কবুল করা হতো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭২,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৭৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৪,আহমাদ ২৭২৪০,
সহীহাহ্ ৯০০, সহীহ আত্ তারগীব ২০২৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ)
লায়স (রহ.)...নাফি’ (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, সফীয়্যাহ বিন্ত আবূ ’উবায়দ তাকে
সংবাদ দিয়েছেন যে, সরকারী মালিকানাধীন এক গোলাম গনীমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসীর সঙ্গে
জবরদস্তি করে যিনা করে। তাতে তার কুমারীত্ব মুছে যায়। ’উমার (রাঃ) উক্ত গোলামকে কশাঘাত
করলেন ও নির্বাসন দিলেন। কিন্তু দাসীটিকে সে বাধ্য করেছিল বলে কশাঘাত করলেন না। যুহরী
(রহ.) কুমারী দাসীর ব্যাপারে বলেন, যার কুমারীত্ব কোন আযাদ ব্যক্তি ছিন্ন করে ফেলল,
বিচারক ঐ কুমারী দাসীর মূল্য অনুপাতে তার জন্য ঐ আযাদ ব্যক্তির নিকট হতে কুমারীত্ব
মুছে ফেলার দিয়াত গ্রহণ করবেন এবং ওকে কশাঘাত করবেন। আর বিবাহিতা দাসীর ক্ষেত্রে ইমামদের
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোন জরিমানা নেই। কিন্তু তার উপর ’হদ’ জারি হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৯৪৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৫৮০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৫৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা কোনো পাগল যিনায় লিপ্ত হলে তার শাস্তি
সা’ঈদ ইবনু সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একদিন সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্(রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট
এমন ব্যক্তিকে ধরে আনলেন, যে ছিল বিকলাঙ্গ ও ব্যাধিগ্রস্ত। তাকে এলাকার এক বাঁদীর সাথে
যিনাগ্রস্ত অবস্থায় দেখা যায়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমন একটি
খেজুরের বড় ছড়া নিয়ে আসো যার মধ্যে ছোট ছোট একশত শাখা রয়েছে এবং তা দ্বারা লোকটিকে
একবার আঘাত কর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৫৭৪, সুনান
ইবনু মাজাহ ২৫৭৪, আহমাদ ২১৯৩৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৫৯১, সহীহাহ্ ২৯৮৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
যিনা/ব্যভিচারের মিথ্যে অপবাদ দিলে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে
নির্দোষ প্রমাণ করে যখন কুরআনের আয়াত নাযিল হলো তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে তা তিলাওয়াত করলেন। অতঃপর মিম্বার হতে নেমে দু’জন পুরুষ ও একজন
মহিলাকে দণ্ড দেয়ার হুকুম করলেন। তখন লোকেরা তাদের ওপর (মিথ্যা অপবাদের) ’হাদ্দ’ জারি
করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৯, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৩১৮১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৭৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬৭, আহমাদ
২৪০৬৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
হদ্দ কার্যকর করতে কোনো দ্বিধা না করা ও সুপারিশ গ্রহণ না করা
(ক) উবাদা
ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমরা কাছের ও দূরের সকলের উপর আল্লাহ নির্ধারিত হদ্দ কার্যকর করো। আল্লাহর
কাজে কোন সমালোচকের সমালোচনা যেন তোমাদেরকে বিব্রত না করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৮৭, সহীহাহ ৬৭০, ১৯৪২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৫২,
মুসতাদরাক লিল হাকিম ২৪০৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ)
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মাখযূম গোত্রের এক নারী চুরি করে ধরা পড়লে তার বিষয়টি কুরায়শদেরকে
অত্যন্ত বিচলিত করে তোলে। তারা বলাবলি করলো, বিষয়টি নিয়ে কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কথা বলতে পারে? তারা বলাবলি করলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয়পাত্র উসামা ইবনে যায়েদ ছাড়া আর কেউ এমন দুঃসাহস করতে পারবে
না। অতঃপর উসামা (রাঃ) তাঁর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি কি আল্লাহ নির্ধারিত হদ্দের ব্যাপারে সুপারিশ করছো?
অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে খুতবা দিলেন এবং বলেনঃ
হে জনগণ! তোমাদের পূর্ববর্তীরা এ কারণে ধ্বংস হয়েছে যে, তাদের মধ্যকার কোন সম্ভ্রান্ত
ব্যক্তি চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিতো এবং কোন দুর্বল অসহায় ব্যক্তি চুরি করলে তাকে
শাস্তি দিতো। আল্লাহর শপথ! মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমাও যদি চুরি করতো, তাহলে অবশ্যই
আমি তার হাতও কেটে দিতাম। রাবী মুহাম্মাদ ইবনুর রুম্হ (রাঃ) বলেন, আমি লাইছ ইবনে সাদকে
বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলা তাকে (হযরত ফাতিমাকে) চুরি করা থেকে হেফাজত করেছেন। প্রত্যেক
মুসলিমেরই এরূপ বলা উচিত। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪৭, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৭৫, ২৬৪৮, ৩৭৩৩, ৪৩০৪, ৬৭৮৭, ৬৭৮৮, ৬৮০০, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৩০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৮৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩০,
নাসায়ী ৪৮৯৫, ৪৮৯৬, ৪৮৯৭, ৪৮৯৮, ৪৮৯১, ৪৯০০, ৪৯০১, ৪৯০২, ৪৯০৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৪৩৭৩, আহমাদ ২৪৭৬৯, দারেমী ২৩০২, ইরওয়া ২৩১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যার উপর হদ্দ কার্যকর করা আবশ্যিক নয়
আতিয়্যা আল-কুরাজী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, বনূ কুরায়জাকে হত্যার দিন আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সামনে উপস্থিত করা হলো। যার (লজ্জাস্থানের) লোম গজিয়েছিল, তাকে হত্যা করা হলো এবং
যার লোম গজায়নি তাকে রেহাই দেয়া হলো। আমি ছিলাম লোম না গজানোদের অন্তর্ভুক্ত, তাই আমাকে
রেহাই দেয়া হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪১, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৯৭৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪০৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৫৮৪,
আহমাদ ১৮৭৭৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৭/২৩৯, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ৪/৩৬৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahi)।
হদ্দ কার্যকর করার সুফল
(ক) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর নির্ধারিত হদ্দসমূহের মধ্য থেকে কোন
হদ্দ কার্যকর করা, চল্লিশ রাত মহান আল্লাহর কোন জনপদে বৃষ্টিপাত হওয়ার চেয়ে উত্তম।
(সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৩৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৮৮,
বায়হাকী ফিস সুনান ৭/২৬৭, সহীহাহ ২৩১, নাদীর ১০৬৮, সহীহ আল জামি ১১৩৯, সহীহ আত্ তারগীব
২৩৫০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ক)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ কোন জনপদে একটি হদ্দ কার্যকর করা সেই জনপদে চল্লিশ দিন বৃষ্টিপাত হওয়ার তুলনায়
উত্তম। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৩৮, নাসায়ী ৪৯০৪, ৪৯০৫, আল-হাকিম
ফিল মুসতাদরাক ৪/৩০৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
ইসলামে ধর্ষণ প্রমাণ করা
যিনা প্রমাণের জন্য ইসলামে দুটোর যে কোনোটি
জরুরী।
(ক)
৪ জন স্বাক্ষী।
(খ)
ধর্ষকের স্বীকারোক্তি।
তবে স্বাক্ষ্য না পাওয়া গেলে আধুনিক ডিএনএ
টেস্ট, সিসি ক্যামেরা, মোবাইল ভিডিও, ধর্ষিতার বক্তব্য ইত্যাদি অনুযায়ী ধর্ষককে দ্রুত
গ্রেফতার করে স্বীকার করার জন্য চাপ দিতে হবে। স্বীকারোক্তি পেলে তার ওপর শাস্তি কার্যকর
কর হবে।
পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন: নিশ্চয় আল্লাহ মুহাম্মাদ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন। আর তাঁর উপর কিতাব অবতীর্ণ
করেছেন। এবং আল্লাহর অবতীর্ণ বিষয়াদির একটি ছিল রজমের আয়াত। আমরা সে আয়াত পড়েছি, বুঝেছি,
আয়ত্ত করেছি। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাথর মেরে হত্যা করেছেন।
আমরাও তাঁর পরে পাথর মেরে হত্যা করেছি। আমি আশংকা করছি যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হবার
পর কোন লোক এ কথা বলে ফেলতে পারে যে, আল্লাহর কসম! আমরা আল্লাহর কিতাবে পাথর মেরে হত্যার
আয়াত পাচ্ছি না। ফলে তারা এমন একটি ফর্য ত্যাগের কারণে পথভ্রষ্ট হবে, যা আল্লাহ অবতীর্ণ
করেছেন। আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির উপর পাথর মেরে হত্যা অবধারিত যে বিবাহিত
হবার পর যিনা করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, যখন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাবে অথবা গর্ভ
বা স্বীকারোক্তি পাওয়া যাবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৪৬২, ৩৪৪৫, ৩৯২৮, ৪০২১, ৬৮৩০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৬৯১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪১৮, সুনান
ইবনু মাজাহ ২৫৫৩, আহমাদ ১৫১, ১৫৫, মালেক ১৫৫৮, দারেমী ২৩২২, বুলগুলমারাম ১২০৯, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৪২৭৩, ইসলামিক সেন্টার ৪২৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
যিনাকারীকে প্রকাশ্যে জনসাধারণের উপস্থিতিতে
পাথর মেরে হত্যা করতে হবে যাতে উক্ত শাস্তি দেখে ভয়ে অন্যরা অনুরুপ কাজে লিপ্ত না হয়।
তবে বর্তমানে প্রকাশ্যে জনসাধারণের উপস্থিতিতে
গুলি করে বা ফাঁসিতে ঝুলিয়েও হত্যা করা যেতে পারে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবরচিত আইনে ধর্ষকের
শাস্তিস্বরুপ ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বিধান আছে। তবে ইসলামের সাথে এখানে
পার্থক্য হলো, মানবরচিত আইনে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় গোপন কক্ষে আর ইসলামি আইনে
মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় প্রকাশে।
পরকীয়া প্রেম
আমাদের সমাজে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে
দাঁড়িয়েছে পরকীয়া। পত্রিকার পাতা খুলতেই চোখে পড়ে পরকীয়ার খবর। পরকীয়ার ফাঁদে আটকা
পড়ে আত্মহনন করছেন অগণিত নারী-পুরুষ, বলি হচ্ছেন নিরপরাধ সন্তান, স্বামী অথবা স্ত্রী।
পরকীয়ার পথে বাধা হওয়ায় নিজ সন্তানকেও নির্মমভাবে হত্যা করছে মমতাময়ী মা।
ইসলাম একটি মানবিক ধর্ম। সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন
বিধান। কোনো মানবিক গর্হিত কাজকে ইসলাম অনুমোদন দেয়নি।
বিবাহিত কোন নারী বা পুরুষ স্বীয় স্বামী বা
স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কোনো ধরণের সর্ম্পক কিংবা বিবাহবহির্ভূত প্রেম,
যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার মত গর্হিত কর্মকে কীভাবে ইসলাম সমর্থন করতে পারে?
এ বিকৃত কর্মের অসারতা বিবেকও ধিক্কার দেয়।
নিজ স্বামী বা স্ত্রী অন্য কারো সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করবে, সুস্থ বিবেকবান কোনো
মানুষ এটা মেনে নিতে পারে না। এ কর্মের কারণে সমাজ যেমন শৃঙ্খলতা হারায়, তেমনি পারিবারিক
বন্ধনেও ধরে ফাটল। পর্যুদুস্ত হয়ে পড়ে সামাজিক সকল রীতিনীতি।
এ কাজের বিষফল মানবাজাতি কয়েক যুগ ধরে প্রত্যক্ষ
ও পরোক্ষভাবে লক্ষ্য করে আসছে। ইসলাম হলো নীতি ও আদর্শের ধর্ম। ইসলামে পরকীয়া ও অবৈধ
সম্পর্ক থেকে নারী-পুরুষকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
নারীদের কথার আওয়াজকেও সতরের অন্তর্ভুক্ত করে
অপ্রয়োজনে পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজনে কথা বলতে হলেও
সুরা আহজাবের ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা
বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করেন।
শুধু নারীদেরই নয়, বরং সুরা নুরের ৩০ নম্বর
আয়াতে প্রথমে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর ৩১
নম্বর আয়াতে মহিলাদেরকে তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার পাশাপাশি তাদের গোপন শোভা অনাবৃত করতে
নিষেধ করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা
ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি
আখেরাতে প্রকাশ পাবে।
যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,
(ক)
তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে,
(খ)
তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং
(গ) তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।
আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা
হচ্ছে,
(ক) সে
আল্লাহর অসন্তোষ,
(খ) কঠিন হিসাব ও
(গ) জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি ৫৬৪)।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,‘‘যে কারো স্ত্রী অথবা কারো
ভৃত্যকে প্ররোচনা বা প্রলোভন দ্বারা নষ্ট করবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
পরকীয়া প্রেমের বিবাহ কতোটুকু বৈধ
নিজের স্ত্রীকে রেখে অন্যের স্ত্রীর দিকে নজর
দেয়া বা অন্য অবিবাহিত মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করা অনুরুপভাবে কোনো মেয়ে তার
নিজ স্বামীকে রেখে পরপুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করাই হচ্ছে পরকীয়া প্রেম।
বর্তমান সমাজের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে এই রোগ
মহামারীরুপে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে অতিআধুনিক পরিবারের প্রতিটি সদস্য এসব কাজে অভ্যস্ত।
এটাকে তারা ক্রেডিট মনে করে।
সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, নিজ স্বামীকে রেখে মেয়েরা
অন্য পুরুষের সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে এবং স্বামী সন্তান রেখে সুযোগ বুঝে তার
সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ঘর সংসার করছে।
আসলে এভাবে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করাটা কতোটুকু
বৈধ। ইসলামের বিধান হচ্ছে, কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিলে তিন মাস ইদ্দত পালন
করে পবিত্র হওয়ার পর দ্বিতীয় বিবাহ করবে। তথা তিন মাসের একটা গ্যাপ রেখে দ্বিতীয় বিবাহ
করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“তালাকপ্রাপ্তা নারীরা তিন মাসিক পর্যন্ত অপেক্ষা
করবে”। (সূরা আল-বাকারাহ ২২৮)।
রাসুল সাঃ বলেন,
’আবদুল্লাহ্ ইবন ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে,
তিনি রাসূল এর যুগে তাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেন। ’উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ)
এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে নির্দেশ দাও, সে যেন তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে
আনে এবং নিজের কাছে রেখে দেয় যতক্ষণ না সে মহিলা পবিত্র হয়ে আবার ঋতুমতী হয় এবং আবার
পবিত্র হয়। অতঃপর সে যদি ইচ্ছে করে, তাকে রেখে দিবে আর যদি ইচেছ করে তবে সহবাসের পূর্বে
তাকে তালাক দেবে। আর এটাই তালাকের নিয়ম, যে নিয়মে আল্লাহ্ তা’আলা স্ত্রীদের তালাক দেয়ার
বিধান দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৫১,
৪৯০৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩২৭৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৫৪৪, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৪৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৭৯, নাসায়ী ৩৩৯০, আহমাদ ৫২৯৯, দারিমী
২৩০৮, ইরওয়া ২০৫৯, সহীহ আল জামি ৫৩৬৭, আধুনিক প্রকাশনী ৪৮৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আর কারো স্বামী মারা গেলে চার মাস দশ দিন ইদ্দত
অতিবাহিত হওয়ার পর দ্বিতীয় বিবাহ করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“তোমাদের মধ্য হতে যারা স্ত্রীদেরকে রেখে মারা
যাবে সে অবস্থায় স্ত্রীরা নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন বিরত রাখবে”। (আল-বাকারাহ ২৩৪)।
রাসুল সাঃ বলেন,
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জনৈক মহিলা এসে বলল যে, আমার মেয়ের স্বামী
মারা গেছে। এমতাবস্থায় তার চোখে অসুখ হয়েছে, (’ইদ্দতকালে) আমি কী তার চোখে সুরমা ব্যবহার
করাতে পারব? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। এতে স্ত্রীলোকটি
দু’ বা তিনবার অনুমতি চাইল। প্রতিবারেই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
না। অতঃপর বললেন- দেখ! মাত্র ৪ মাস ১০ দিন, অথচ জাহিলিয়্যাত (অন্ধকার) যুগে তোমাদের
এক একজন নারীকে ’ইদ্দতকাল এক বছর পূর্ণ হলে উটের গোবর ফেলতে হতো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩২৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৩৩৬, ৫৩৩৮, ৫৭০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৬১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৮৮, সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২২৯৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৯৭, নাসায়ী ৩৫৩৩, আধুনিক
প্রকাশনী ৪৯৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উম্মু হাবীবাহ্ ও যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে
মু’মিনাহ্ আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের ওপর ঈমান আনে, তার পক্ষে কোনো মৃতের জন্য তিন দিনের
অধিক শোক প্রকাশ করা বৈধ নয়। অবশ্য কোনো রমণীর স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিনের জন্য
শোক প্রকাশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩৩০, ৩৩৩১,
৩৩৩২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৩৩৪-৩৫, ১২৮০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩৬১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৮৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২২৯৯, নাসায়ী ৩৫২৭, আহমাদ
২৬৭৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৩৭, আধুনিক প্রকাশনী ৪৯৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮৩৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
যেসব মেয়ে নিজ স্বামীকে রেখে পরপুরুষের সাথে
পালিয়ে গিয়ে পরে তালাকনামা প্রেরণ করে কিংবা স্বামীর নিকট বিনা কারণে তালাক চায় এরা
জাহান্নামী। রাসুল সাঃ বলেন,
সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে রমণী বিনা কারণে স্বামীর নিকট তালাক চায়,
সে জান্নাতের গন্ধও পাবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩২৭৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২২২৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৮৭, সুনান
ইবনু মাজাহ ২৫০০, দারিমী ১৩১৬, আহমাদ ২২৪৪০, ইরওয়া ২০৩৫, সহীহ আল জামি‘ ২৭০৬, সহীহ
আত্ তারগীব ২০১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসুল সাঃ আরো বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিবাহ বন্ধন হতে (বিনা কারণে) বিচ্ছিন্নকারিণীগণ
মুনাফিক রমণী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩২৯০, নাসায়ী
৩৪৬১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৮৬, ইরওয়া ৬৩২, সহীহ আল জামি‘ ৬৬৮১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব উল্লিখিত দলিলের ভিত্তিতে এটাই প্রমাণিত
যে, পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হয়ে যারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে তাদের বিয়ে শুদ্ধ হবে না।
এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিক হলোঃ
প্রথমতঃ
পরকীয়া প্রেমে আসক্ত নারী-পুরুষ যিনার অপরাধে অভিযুক্ত হবে।
দ্বিতীয়তঃ
তাদের বিবাহ শুদ্ধ হবে না।
তৃতীয়তঃ
ঐ নারী জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবে না।
ইসলামি আইনে দন্ডবিধি (পরকীয়া প্রেম)
পরকীয়া প্রেম যিনা/ব্যভিচারের ন্যায় জঘন্য
অপরাধ ও মহাপাপ। ইসলামি আইন অনুয়ায়ী এদের দন্ডবিধি কার্যকর করতে হবে।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন,
আমি আশঙ্কা করছি যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ বলে বসবে, আমি আল্লাহর কিতাবে
রজমের কথা পাচ্ছি না। ফলে সে আল্লাহর ফয়যসমূহের মধ্যকার একটি ফরয ত্যাগ করার কারণে
পথভ্রষ্ট হবে। সাবধান! রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করা বাধ্যতামূলক- অপরাধী বিবাহিত হলে
এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে অথবা গর্ভসঞ্চার হলে অথবা স্বীকারোক্তি করলে। অতঃপর
আমি রজমের এ আয়াত পাঠ করিঃ ’’বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা যেনায় লিপ্ত হলে তোমরা তাদের উভয়কে রজম
করো’’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন এবং তাঁর পরে আমরাও
রজম করেছি। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৬৮২৯, ২৪৬২, ৬৮৩০, ৭৩২৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩১০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৬৯১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩১, ১৪৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)৪৪১৮,
আহমাদ ১৫৫, ১৯৮, ২৫১, ২৭৮, ৩০১, ৩৩৩, ৩৫৪, ৩৯৩, মুয়াত্তা মালেক ১৫২০, দারেমী ২৩২২,
বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২১৩, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ৪/৩৫৭, ইরওয়া ২৩৩৮, আধুনিক প্রকাশনী
৬৩৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
৪৯৭ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশে পরকীয়া প্রেম জায়েজ
বিগত ৮ জুলাই ২০১৯ তারিখে “দৈনিক ইত্তেফাক“
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরটি পড়লে এতদ বিষয়ে জানা যাবে।
ব্যাভিচার সংক্রান্ত দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা কেন
অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট
ধারাটি কেন সংশোধনের নির্দেশ দেয়া হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। তিন সপ্তাহের
মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এবং লেজেসলেটিভ ও ড্রাফটিং বিভাগের
সচিবকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত
আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ আজ সোমবার
এই আদেশ দেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দণ্ডবিধির ৪৯৭
ধারা সংশোধনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান।
রিটে বলা হয়, ওই ধারাটি সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে নারী
ও পুরুষকে আলাদাভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। যা একজন নারীর জন্য অপমানজনক। এটা সংশোধন প্রয়োজন।
দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় ‘ব্যাভিচার’ এর বিষয়ে
বলা হয়েছে। এতে উল্লেখ রয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির স্ত্রী অথবা যাকে
সে অপর কোনো ব্যক্তির স্ত্রী বলে জানে বা তার অনুরূপ বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে এমন কোনো
ব্যক্তির সহিত উক্ত অপর ব্যক্তির সম্মতি ও সমর্থন ব্যাতীত এইরূপ যৌন সঙ্গম করে যা নারী
ধর্ষণের সামিল নহে, তবে সেই ব্যক্তি ব্যাভিচারের অপরাধের জন্য দোষী হবে। তাকে ৫ বছর
পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ডে, উভয়দণ্ডে দণ্ডিত
করা যাবে। অনুরুপ ক্ষেত্রে স্ত্রী লোকটি দুষ্কর্মের সহায়তাকারী হিসেবে দণ্ডিত হবে না।’
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম
ও রিটকারী পক্ষে ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও ইশরাত হাসান শুনানি করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট
রুল জারি করে।
ইশরাত হাসান ইত্তেফাককে বলেন, আইনের ওই বিধান
অনুযায়ী যদি কারো স্বামী পরকীয়া করে তাহলে স্ত্রী স্বামী বা অন্য নারীর বিরুদ্ধে মামলা
করতে পারবেন না। আবার স্ত্রী যদি পরকীয়া করে তাহলে স্বামীও স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা
দায়েরের সুযোগ নেই। তবে স্ত্রী যার সঙ্গে পরকীয়া করবে তার বিরুদ্ধে স্বামী মামলা করতে
পারবে। অপরদিকে স্বামীর অনুমতি নিয়ে পরকীয়া করলে সেটা কোনো অপরাধের পর্যায়ে পড়বে না।
ফলে কোনো স্বামী-স্ত্রী যদি বিবাহ বহির্ভতূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তাহলে এক্ষেত্রে একে
অন্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো সুযোগ এই আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় নেই।
লিভ টুগেদার
(দেশে দেশে এর বৈধতা বেড়েই
চলছে)
লিভ টুগেদার সামাজিক অপরাধ হলেও মানব রচিত
আইনে তা অপরাধ বলে গণ্য নয়।
বিগত ০১-০৮-২০১০ তারিখে “প্রথম আলো” পত্রিকায়
প্রকাশিত লিভ টুগেদার সম্পর্কে জেনে নেই।
বিয়ে বহির্ভূতভাবে একজন পুরুষের সঙ্গে একজন
নারীর একত্রে বসবাসকেই আমরা Live together (লিভ টুগেদার) হিসেবে গণ্য করে থাকি। পৃথিবীর
অনেক দেশেই বিশেষ করে আমেরিকা ও পাশ্চাত্য ইউরোপের অনেক দেশে লিভ টুগেদার আইনগত বৈধতা
পেয়েছে। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর অনেক দেশে সমকামিতাও আইনগত বৈধতা পেয়েছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে
লিভ টুগেদার কি অপরাধ? আমাদের দেশের কোনো আইনেই লিভ টুগেদারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে
বিবেচনা করা হয়নি। এটাকে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়, অনাচার এবং ধর্মীয় দৃষ্টিতে পাপাচার
হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এটি দণ্ডবিধির ২৯০ ধারা ও মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ
অনুসারে গন উপদ্রব হিসেবেও গণ্য হবে না।
নারী যদি অন্য কারোর স্ত্রী না হয় সে ক্ষেত্রে
দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা অনুসারে ব্যাভিচার হিসেবেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
তবে নারীর যদি বৈবাহিক অবস্থা বিদ্যমান থাকে, তবে ওই নারীর স্বামী বা ক্ষতিগ্রস্ত অন্য
কোনো ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় পুরুষ সঙ্গীর (বিবাহিত/বিবাহিতা) বিরুদ্ধে মামলা
করতে পারেন এবং ওই ধারা অনুসারে পুরুষ সঙ্গীর সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা
বা উভয় দণ্ডের শাস্তি হতে পারে। তবে এটা কোনো অবস্থাতেই ধর্ষণের শামিল হবে না এবং মহিলা
সঙ্গীকে শাস্তি দেওয়া যাবে না।
দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা অনুসারে যদি কোনো নারী
তাঁর বৈবাহিক অবস্থা বিদ্যমান থাকাবস্থায় অন্য কোনো পুরুষকে বিয়ে করেন, তাহলে তা শাস্তিযোগ্য
অপরাধ হবে এবং এর জন্য তাঁর সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে।
নারী সঙ্গীর বয়স যদি ১৬ বছরের কম হয় এবং সঙ্গীর
সঙ্গে যদি ওই নারীর যৌন সম্পর্ক থাকে, তবে তা ধর্ষণের শামিল, এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ
হবে এবং মামলা হলে পুরুষ সঙ্গীর যাবজ্জীবন শাস্তি হতে পারে। এ ধরনের সম্পর্কের ফলে
যদি কোনো সন্তান জন্মলাভ করে, তা ধর্মীয় ও আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ বা জারজ সন্তান। তারা
পিতামাতার বৈধ উত্তরাধিকারী হবে না।
আমাদের পড়শি দেশ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়
অনুসারে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারী বিয়ে না করে যদি একত্রে বসবাস করে, তা আইনের
দৃষ্টিতে মোটেও অপরাধ নয়। ওই দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি কে জি বালাকৃষ্ণসহ অপর দুই
বিচারপতি দক্ষিণ ভারতের নায়িকা খুশবুর এক আপিল রায়ে কৃষ্ণ-রাধার সম্পর্ক উল্লেখ করে
বলেন, পরস্পরকে ভালোবেসে একত্রে বসবাস জীবনের অধিকার এবং বিয়ে বহির্ভূত হলেও এ ধরনের
জীবন্ত সম্পর্ককে কোনো নিষেধাজ্ঞার আওতায় ফেলার কোনো আইন নেই। বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের
কথা স্বীকার করে নায়িকা খুশবু সাক্ষাৎকার দিলে তাঁর বিরুদ্ধে তামিলনাড়ুর বিভিন্ন আদালতে
২২টি মামলা হয়।
ফৌজদারি মামলা করেন স্থানীয় বিভিন্ন রক্ষণশীল
ব্যক্তি ও সংস্থা। ওই সব মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেতে খুশবু দারস্থ হন উচ্চ আদালতে। মাদ্রাজ
হাইকোর্টে পরাস্ত হয়ে খুশবু দ্বারস্থ হন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের। নায়িকা খুশবু লিভ
টুগেদারের সপক্ষে খোলামেলা স্বীকৃতি দিলে দক্ষিণ ভারতজুড়ে হইচই পড়ে যায়। আর ভারতে সুপ্রিম
কোর্টের এ রায়ে হইচই পড়ে যায় দেশজুড়ে। খুশবুর যুক্তি হলো, পরিণত বয়সের দুজন মানুষ যদি
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিয়ে না করেও একসঙ্গে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে, এতে তিনি দোষের কিছু
দেখেন না এবং কোনো শিক্ষিত ছেলেরই এমন প্রত্যাশা করা সংগত নয়, তাঁর হবু জীবন সঙ্গিনীকে
কুমারী হতে হবে।
দক্ষিণ ভারতের সংস্কৃতি এমন যে সেখানকার তরুণ-তরুণীরা
তাঁদের জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকাকে দেব-দেবীর তুল্য মনে করেন এবং তাঁদের জীবনধারাকে অনুসরণ
করেন। ভারতের সুশীল মহলের ধারণা, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ওই রায় নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের
লিভ টুগেদারের প্রতি উৎসাহিত করবে, বিয়ে-বহির্ভূত সম্পর্কের প্রবণতা বহুলাংশে বৃদ্ধি
পাবে এবং বিয়ে নামের সামাজিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়বে।
যদিও খ্যাতনামা ইংরেজি দৈনিক এশিয়ান এজ সুপ্রিম
কোর্টের ওই রায়কে ‘মাইলফলক’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং তাদের ধারণা, এ রায়ের প্রভাব হবে
সুদূরপ্রসারী। সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের দেশ ভারতের চেয়ে খানিকটা রক্ষণশীল।
আমাদের দেশে এমন বিয়ে-বহির্ভূত নারী-পুরুষের
জীবন যাপন এখন পর্যন্ত সামাজিক অনাচার ও ধর্মীয় পাপাচার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। আমাদের
দেশে এমন জীবন যাপন আইনগত স্বীকৃতি পেলে সামাজিক মূল্যবোধ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন
হবে। যদিও আমাদের দেশে এটি আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়, তবুও আমাদের আর্থসামাজিক-ধর্মীয়
প্রেক্ষাপটে এ ধরনের জীবন যাপন অনাকাঙ্ক্ষিত।
আরব আমিরাতে লিভ টুগেদার বৈধ
বিগত ১০ নভেম্বর ২০২০ তারিখে যুগান্তর পত্রিকায়
প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী জানা যায় যে,
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ আরব আমিরাত
লিভ টুগেদারকে বৈধতা দিয়েছে। এর অর্থ হল-এক সময়কার কট্টর ইসলামি অনুশাসনের দেশটিতে
এখন থেকে অবিবাহিত নারী-পুরুষ একসঙ্গে থাকতে পারবেন। আইনগতভাবে তাদেরকে কোনো ধরনের
বাধার মুখে পড়তে হবে না। একইসঙ্গে লাইসেন্স ছাড়া মদপানের সুযোগও দেয়া হয়েছে মানুষকে।
ইন্ডিয়া ডটকম, মেট্রো ডটকম।
দেশটির ইসলামিক পারসোনাল ল’-তে পরিবর্তন আনার
মধ্য দিয়ে এই দুটি সুযোগ দেয়া হয়েছে ২১ বছরের বেশি বয়সী মানুষের জন্য। একইসঙ্গে কথিত
‘অনার কিলিং’-কে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়টিও অনুমোদন করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
দেশটির আইনে এসব পরিবর্তন করা হয়েছে জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে। উল্লেখ্য, আরব আমিরাতে
বহু ধর্ম-বর্ণের লোকের বসবাস রয়েছে। তবে দেশটি মূলত আরব মুসলিমের বাসস্থান ও তাদের
শাসনাধীন।
সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরাইল-আরব
আমিরাত সম্পর্ক স্বাভাবিক করা হয়। এরপরই ইসরাইলের কাছ থেকে বিনিয়োগ ও পর্যটক আকর্ষণের
চেষ্টা করছে মুসলিম দেশটি। সরকার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর দ্রুত এ আইন কার্যকর হচ্ছে। এখন
থেকে মাদবদ্রব্য ও মদপান, বিক্রি ও মালিকানায় রাখার কারণে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।
এ ছাড়া ২১ বছরের বেশি বয়সী অবিবাহিত নারী-পুরুষ-আত্মীয় হোক বা না-হোক, একসঙ্গে বসবাসের
ক্ষেত্রে কোনো জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হবে না। শনিবার মুসলিম ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইনে
পরিবর্তনের এসব ঘোষণা দেয়া হয় আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে। এতদিন আমিরাতের আইনে লাইসেন্স
ছাড়া মদ ও মাদক রাখা এবং বিক্রির দায়ে ধরা পড়লে শাস্তির মুখে পড়ার বিধান ছিল। এ জন্য
অন্তত ৮০টি বেত্রাঘাতের বিধান ছিল। অবশ্য এ ধরনের শাস্তি বাস্তবায়নের ঘটনা দেখা গেছে
খুবই কম।
এ ছাড়া বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক করা
ও একসঙ্গে বসবাসের ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষকে কয়েক মাসের জেল দেয়ার বিধান ছিল ইসলামিক
পারিবারিক আইন অনুযায়ী। তবে ব্যভিচারের সন্দেহ না হলে কর্তৃপক্ষ এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে
তদন্তে যেত না। আমিরাতের অনেক স্থানেই কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে অন্ধ থাকার ভান ধরত। যেমন:
দুবাইয়ের মতো শহরগুলোয় হোটেলে অবিবাহিত নারী-পুরষের একসঙ্গে থাকার বিষয়ে কোনো বাধা
দেয়া হতো না।
আরব আমিরাতে বসবাসকারী বিদেশিদের ক্ষেত্রে
এখন থেকে বিবাহবিচ্ছেদ ও উত্তরাধীকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোয় স্থানীয় আইনের
পরিবর্তে বাদী-বিবাদীদের নিজ দেশের আইন অনুসরণ করা হবে। এটি দেশটিতে বসবাসকারী লাখো
বিদেশির জন্য বড় খবর। আরব আমিরাতে বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা দেশটির মূল অধিবাসীদের ১০
গুণ।
হঠাৎ আইনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার পেছনে
অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান উন্নতি এবং ঐতিহ্যগতভাবে পরমত সহিষ্ণুতার অংশকে কারণ হিসেবে
উল্লেখ করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ডব্লিউএএম। অন্যের ক্ষতি করে না-ব্যক্তির
এমন কোনো কাজকেও আর অপরাধ হিসেবে গণনা করা হবে না। এর বাইরে অনার কিলিংকে অপরাধ হিসেবে
গণ্য করায় নারীদের হত্যা ও নির্যাতনের মতো অন্যায় করে কেউ আর লঘু শাস্তিতে পার পাবে
না। এতদিন এমন সুযোগ ছিল। অবশ্য আইনে এসব পরিবর্তন দেশটির প্রভাবশালীদের খুব একটা ক্ষতি
করতে পারবে না। কারণ, আরব আমিরাতের আইনে দেশটির শাসক পরিবার ও মন্ত্রীরা দায়মুক্তির
সুযোগ পেয়ে থাকেন।
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট এর রায়
প্রাপ্তবয়স্ক হলে লিভ টুগেদার বৈধ। আদালতের
রায়ে বিচারপতি এ কে সিক্রি ও বিচারপতি অশোক ভূষণের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন
বলেছেন, ‘বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বয়স না হলেও যারা প্রাপ্তবয়স্ক, তারা সেই সম্পর্কের
বাইরেও লিভ-ইন (লিভ টুগেদার) করতে পারেন। তাদের সেই আইনি অধিকার রয়েছে। আইনসভাও লিভ-ইন
সম্পর্ককে অনুমোদন করেছে।
ইসলামি আইনে লিভ টুগেদারের শাস্তি
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন আইনীভাবে লিভ টুগেদারকে
বৈধতা দেয়া হচ্ছে। মূলত বিবাহ বহির্ভুত যৌনক্ষুধা নিবারণের এক আদর্শ পতিতালয় গঠনে সরকারি
সহযোগীতা। এখন আইনী বৈধতার কারণে বিবাহ নামক শব্দটি উঠে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও দেখা
যাচ্ছে, নারী গর্ভবতী হওয়ার পর কিংবা সন্তান জন্ম নেয়ার পর পিতার খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
তাদের নেই কোনো কাবিননামা, নেই কোনো বিবাহের ঘোষণা। অনেক নারী পুরুষ এখন বিবাহে মনোযোগী
না হয়ে তারা লিভ টুগেদারকে পছন্দ করছে বেশী। ইসলাম এই ধরণের যৌনতাকে যিনা বা ব্যভিচার
বলে আখ্যায়িত করে। এধরণের সম্পর্ককে ইসলাম বৈধতা দেয় না। যৌনসঙ্গম কেনো, কোনো নারীর
দিকে তাকানো, কোনো নারীর হাত স্পর্শ করা কিংবা মাহরাম ছাড়া কোনো নারীর নিকট গমন করতেও
ইসলাম নিষেধ করে। রাসুল সাঃ বলেন,
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মেয়েরা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ)
ব্যতীত অন্য কারো সাথে সফর করবে না। মাহরাম কাছে নেই এমতাবস্থায় কোন পুরুষ কোন মহিলার
নিকট গমন করতে পারবে না। এ সময় এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক অমুক
সেনাদলের সাথে জিহাদ করার জন্য যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হাজ্জ করতে যেতে চাচ্ছে।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তার সাথেই যাও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৬২, ৩০০৬, ৩০৬১, ৫৩৩৩, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৪১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০০, আহমাদ
১৯৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৭৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
ইসলামি আইনে দন্ডবিধি
লিভটুগেদার যেহেতু বিবাহ বহির্ভুত অবৈধ বসবাস
ও যিনায় লিপ্ত তাই ইসলামি আইনে অবিবাহিত হলে
তাদেরকে ১০০ বেত্রাঘাত এবং ১ বছরের জেল দিতে হবে। আর পূর্ব বিবাহিত হলে তাদেরকে রজম
করতে হবে। তবে রাষ্ট্র এই দন্ডবিধি কার্যকর করবে।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করার বিধান
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইসলামের সর্বপ্রথম সংঘটিত লি’আন’
এজন্য ছিল যে, হিলাল ইবনু উমাইয়াহ তার স্ত্রীর সাথে শারীক ইবনু সাহমার ব্যভিচারের অপবাদ
আরোপ করেছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে (হিলালকে) বলেন,
প্রমাণ উপস্থিত কর অন্যথায় তোমার পিঠের উপর অপবাদের হাদ্দ মারা হবে। (বুলুগুল মারাম ১২২৪, ইমাম শাওকানীর নাইলুল আওত্বার (৭/৬৯),
ইবনু হাযামের আল মাহাল্লী (১১/১৬৮, ১১/২৬৫), মুসনাদ আবূ ইয়ালা ২৮২৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
দাসীর ব্যভিচারের শাস্তি
(ক) আবূ হুরায়রা, যায়েদ ইবনে খালিদ ও শিবল (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ
তারা বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তাঁকে অবিবাহিত ক্রীতদাসীর যেনায় লিপ্ত হওয়া
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তাকে বেত্রাঘাত করো।
যদি সে পুনরায় যেনা করে তবে আমার তালে বেত্রাঘাত করো। তৃতীয় বা চতুর্থবারে তিনি বলেনঃ
চুলের একটি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে দাও। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২৫৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২১৫২, ২১৫৪, ২২৩৩, ২২৩৪, ২৫৫৬, ৬৮৩৮,
৬৮৩৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০৩, ১৭০৪, সুনান আত
তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৩, ১৪৪০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৬৯, ৪৪৭০, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৬৩, আহমাদ ৭৩৪৭, ৮৬৮৯, ৯১৭৪, ১০০৩৩, ১৬৫৯৫, ১৬৬০৯, মুয়াত্তা মালেক
১৫৬৪, দারেমী ২৩২৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২১৯, ২৪৪, ১০/৮৬, আল-হুমায়দী ৮১১, ইরওয়া ২৩২৬,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০১৯))। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
ক্রীতদাসী যেনায় লিপ্ত হলে তাকে বেত্রাঘাত করো। সে আবার যেনায় লিপ্ত হলে আবার তাকে
বেত্রাঘাত করো, আবার যেনায় লিপ্ত হলে আবারও তাকে বেত্রাঘাত করো, আবার যেনায় লিপ্ত হলে
আবারও তাকে বেত্রাঘাত করো। অতঃপর একটি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে দাও। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬৬, আহমাদ ২৩৮৪০, সহীহাহ ২৯২১, সহীহ আল-জামি
সগীর ৫২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দাসী গর্ভবতী হলে দন্ড প্রয়োগ করার বিধান
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে লোক সকল!
তোমরা তোমাদের গোলাম-বাঁদীদের ওপর দণ্ড কার্যকর কর, বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক। একদিন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক বাঁদী যিনা করেছিল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে তার ওপর দণ্ড প্রয়োগের নির্দেশ করলেন। অতঃপর যখন আমি জানতে
পারলাম, দাসীটি সদ্য প্রসূতি। তখন আমার সংশয় হলো, যদি আমি তাকে চাবুক মারি তাহলে আমার
দ্বারাই তার মৃত্যু হবে। সুতরাং আমি বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
জানালে তিনি বললেন, তুমি উত্তমই করেছ। (মুসলিম)
আবূ দাঊদ-এর এক বর্ণনাতে আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তার নিফাসের রক্তস্রাব বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তুমি তাকে ছেড়ে
দাও, তারপর তার ওপর ’’হাদ্দ’’ কার্যকর কর। আর তোমরা তোমাদের গোলাম-বাঁদীদের ওপর ’’হাদ্দ’
প্রয়োগ কর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৬৪, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৩৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৪১,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৭৩, আহমাদ ১৩৪১, ইরওয়া (৭/৩৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
দাসের প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ আরোপকারীর বিধান
(ক) আবু
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে কেউ আপন ক্রীতদাসের প্রতি অপবাদ আরোপ করল – অথচ সে তা থেকে পবিত্র
যা সে বলেছে- ক্বিয়ামাত দিবসে তাকে কশাঘাত করা হবে। তবে যদি এমনই হয় যেমন সে বলেছে
(সে ক্ষেত্রে কশাঘাত করা হবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৬৮৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৬০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত ১৯৪৭,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৬৫, আহমাদ ৯২৮৩, ১০১১০, বুলগুলমারাম ১২২৭, আধুনিক প্রকাশনী-
৬৩৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৯৪। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ) ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে ব্যক্তি নিজ গোলামকে এমন অপরাধের সাজা দেয়, যা সে করেনি অথবা তাকে চড় মারে, তাহলে
তার প্রায়শ্চিত্ত হল, সে তাকে মুক্ত ক‘রে দেবে। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪১৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৬১৬৮, আহমাদ ৪৭৬৯, ৫০৩১, ৫২৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
কোনো মানুষ পশুর সাথে কু-কর্মে লিপ্ত হলে তার শাস্তি
কোন পশুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া হারাম ও কবীরা
গুনাহ্। আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
আল্লাহ্’র লা’নত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন পশুর
সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। (আহমাদ ১/২১৭; আবূ ইয়া’লা ২৫২১;
ইব্নু হিববান ৪৪১৭ ’হাকিম ৪/৩৫৬; ত্বাবারানী/কাবীর ১১৫৪৬ বায়হাক্বী ৮/২৩১)।
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো জন্তু-জানোয়ারের
সাথে অপকর্ম করল, তাকে হত্যা করে দাও এবং তার সাথে ঐ জানোয়ারটিকেও হত্যা করে ফেল। ইবনু
’আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, জানোয়ারটি কেন হত্যাযোগ্য? তিনি বললেন, এ ব্যাপারে
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছুই শুনিনি। তবে আমি মনে করি
যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানোয়ারটির গোশ্ত/গোশত খাওয়া বা কোনভাবে
তাত্থেকে উপকৃত হওয়াকে অপছন্দ করেন। যেহেতু জানোয়ারটির সাথে অপকর্ম হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৬, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬৪, সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৬৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৫, ৮/৩৩০, দারাকুতনী ৩/১২৭,
ইরওয়া ২৩৪৮, ২৩৫২, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৯৯, যইফ আল-জামি ৫৮৭৮, সহীহ আল জামি ৫৯৩৮, সহীহ
আত্ তারগীব ২৪২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব কুকর্মকারীকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে
অথবা আধুনিক যুগে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কিংবা ফায়ার করে হত্যা করতে হবে। তবে একাজ
রাষ্ট্র ছাড়া সাধারণ জনগণ করবে না।
পায়ুকাম বা সমকামিতা
সমকামিতা অত্যন্ত ঘৃণ্য পাপ এবং কবীরা গুনাহ।
এই পাপের কারণেই বর্তমান পৃথিবীতে এইড্স-এর মত মরণ ব্যধি ছড়িয়ে পড়েছে। কারোর ব্যাপারে
সমকাম প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে ও তার সমকামী সঙ্গীকে শাস্তি স্বরূপ হত্যা করতে হয়। এ
অপরাধের কারণে বিগত যুগে আল্লাহ তা‘আলা কওমে লূতকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা
বলেন,
“আর আমি লূতকেও পাঠিয়েছিলাম। তিনি তার সম্প্রদায়কে
বলেছিলেন, “তোমরা কি এমন খারাপ কাজ করে যাচ্ছ যা তোমাদের আগে সৃষ্টিকুলের কেউ করেনি?
তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারীদের ছেড়ে পুরুষের কাছে যাও, বরং তোমরা সীমালংঘনকারী
সম্প্রদায়। উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, এদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে বহিস্কার কর,
এরা তো এমন লোক যারা অতি পবিত্র হতে চায়। অতঃপর আমরা তাকে ও তার পরিজনদের সবাইকে উদ্ধার
করেছিলাম, তার স্ত্রী ছাড়া, সে ছিল পিছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত। আর আমরা তাদের
উপর ভীষণভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম। কাজেই দেখুন, অপরাধীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছিল”।
(সুরা আরাফ ৮০-৮৪)।
আল্লাহ তাঁদেরকে এই কুকাজের শাস্তি স্বরূপ
তাঁদের ঘর বাড়ী উল্টে দিয়েছিলেন এবং আকাশ থেকে তাঁদের উপর বর্ষণ করেছিলেন পাথর।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
“আপনার জীবন, নিশ্চয় তারা তাদের নেশায় বিভ্রান্ত
হয়ে ঘুরছিল। অতঃপর সূর্যোদয়ের সময় প্রকাণ্ড চীৎকার তাদেরকে পাকড়াও করল; তাতে আমরা
জনপদকে উল্টিয়ে উপর-নীচ করে দিলাম এবং তাদের উপর পোড়ামাটির পাথর-কংকর বর্ষণ করলা।
নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণ-শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। আর নিশ্চয় তা
লোক চলাচলের পথের পাশেই বিদ্যমান”। (হিজর ১৫/৭২-৭৬)।
ইসলামি আইনে সমকামীর শাস্তি
(পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড কার্যকর
করা)
(ক) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ তোমরা কাউকে লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত পেলে তাকে এবং যার সাথে তা করা হয়
তাকে হত্যা করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৬১, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১৪৫৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৬২,মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৫,
বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৩২, ইরওয়া ২৩৫০, সহীহ আল জামি ৬৫৮৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৪২২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি
সম্পর্কে বলেনঃ তোমরা উপরের এবং নিচের ব্যক্তিকে অর্থাৎ উভয়কে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করো।
(সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১৪৫৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৩২, ইরওয়া ৬/১৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) জাবির
ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আমি আমার উম্মাতের ব্যাপারে লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার সর্বাধিক
আশঙ্কা করি। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬৩, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১৪৫৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৭, বায়হাকী ফিস সুনান ২/২১৫, ৬/১০৬।
আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৯৭, ১৯৮, আহমাদ ১৫০৯৩, সহীহ আল জামি ১৫৫২, সহীহ আত্ তারগীব ২৪১৭)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
সুতরাং উক্ত সম্প্রদায়ের মতো কুকর্মে যে লিপ্ত
হবে সেও উপর্যুক্ত শাস্তির উপযুক্ত। তাই এমন দুরাচার প্রসঙ্গে কিছু সাহাবা (রাঃ) এর
ফতোয়া হলো, তাকে জ্বালিয়ে মারা হবে। কেউ কেউ বলেন, উঁচু জায়গা থেকে ধাক্কা দিয়ে নীচে
ফেলে তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হবে। (ইবনে জিবরীন ৬২৬)।
রযীন-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, ইবনু ’আব্বাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত, ’আলী (রাঃ) এরূপ অপকর্মে (সমকামিতায়) লিপ্ত উভয়কে (যে করে এবং যাকে
করে) জ্বালিয়ে দিয়েছেন এবং আবূ বকর উভয়ের উপর দেয়াল চাপা দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৮৪)।
সমকামিদের উপর আল্লাহর লানত ও কিয়ামতে আল্লাহ তাদের দিকে তাকাবেন না
(ক) ইবনু
’আব্বাস ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের ন্যায় অপকর্মে লিপ্ত হয়, তার ওপর আল্লাহর
লা’নাত (অভিশাপ)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৮৩, সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) ইবনু
’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, যে কোনো পুরুষ
বা নারীর গুহ্যদারে সঙ্গম করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৫৮, তিরমিযী ১১৬৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১৬৮০৩, সহীহ আত্ তারগীব ২৪২৪, সহীহ আল জামি ৭৮০১)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
সমকামিতার বৈধতা
০৬ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে যুগান্তর পত্রিকায়
প্রকাশিত তথ্যানুসারে জানা যায় যে, এমন কিছু দেশ আছে যেসব দেশে সমকামী বিয়ে বৈধ।
অস্ট্রেলিয়াঃ
অস্ট্রেলিয়ায় সমকামীদের বিয়ে বৈধতা পেতে যাচ্ছে।
সম্প্রতি প্রতিনিধি পরিষদে এ-সংক্রান্ত বিল পাস হয়৷ এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৪৬টি এবং
বিপক্ষে পড়ে মাত্র ৪টি ভোট৷ এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস বা এবিএস
ঘোষণা করে যে, দেশটির জনগণ সমকামী বিয়ের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন৷ সমকামী বিয়ে বৈধতা আইনে
গণভোটের পক্ষে ভোট দেন ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ।
অস্ট্রিয়াঃ
অস্ট্রিয়ায় এবার অক্টোবরের নির্বাচনে জয়ী হয়েছে
রক্ষণশীল দল৷ কিন্তু জনগণ সমকামিতার পক্ষে মত দিয়েছে৷ চলতি বছরে ওস্টেরাইস পত্রিকা
একটি জরিপ করে, যেখানে দেখা গেছে দেশটির ৫৯ ভাগ মানুষ সমকামী বিয়ের পক্ষে, বিপক্ষে
২৫ শতাংশ মানুষ৷ ফলে অস্ট্রিয়াতেও খুব শিগগিরই সমকামী বিয়ে বৈধতা পাচ্ছে বলে আশা করা
যায়।
জার্মানিঃ
চলতি বছরের ৩০ জুন জার্মানিতে সমকামী বিয়ে
বৈধতা পায়৷ অর্থাৎ ইউরোপের ১৫তম দেশ হিসেবে জার্মানিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পেল৷ জার্মান
পার্লামেন্টের পক্ষে ৩৯৩টি ভোট পড়ে আর বিপক্ষে পড়ে ২২৬টি ভোট৷ চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা
মার্কেলের রক্ষণশীল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী পার্টি সমকামী বিয়ের বিপক্ষে থাকলেও, সংসদীয়
নির্বাচনের ক’মাস আগে হঠাৎ করেই মার্কেল ঘোষণা করেন যে, এ বিষয়ে ভোটাভুটি হবে।
মাল্টাঃ
২০১৭ সালের জুলাই মাসে মাল্টায় সমকামী বিয়ে
বৈধতা পায়, যদিও এর বিরোধিতা করেছিল ক্যাথলিক চার্চ।
বলিভিয়াঃ
২০০৯ সালে সংবিধান সংশোধন করে সমকামী বিয়ের
ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বলিভিয়া৷ কিন্তু ২০১৬ সালে তারা ট্রান্সজেন্ডারদের নানারকম
অধিকার দেয়াকে সমর্থন করে৷ ২০১৭ সালের জুনে ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে বিয়ের বৈধতা দেয়
রক্ষণশীল এই দেশটি।
তাইওয়ানঃ
তাইওয়ানের সাংবিধানিক আদালত এ বছরের মে মাসে
সমলিঙ্গের মানুষের মধ্যে বিয়ের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ এশিয়ার মধ্যে এই দেশটিই সর্বপ্রথম
সমকামী বিয়েকে বৈধতা দিল৷ আগামী বছর থেকে এই রায় কার্যকর হবে।
যেসব মুসলিম দেশে সমকামিতা বৈধ
বেশ কিছু মুসলিম দেশ সমকামকে আইনত বৈধতা দিয়েছে।
তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু মুসলিম দেশ সম্পর্কে।
তুরস্কঃ
১৮৫৮ সালে অটোমান সাম্রাজ্য সমকামিতাকে বৈধতা
দেয়। এরপর তুরস্ক স্বাধীন হলেও সেই আইন বলবৎ রাখা হয়। তবে দেশটির সংবিধানে সমকামীদের
জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা নেই। ফলে সরকারের সাথে সামাজিকভাবেও সমকামীদের
বৈষম্যের শিকার হতে হয়। তুরস্কের শাসনযন্ত্রে বসে থাকা অটোমানরা সমকামীকে অপরাধ বলে
ঘোষণা করেনি। পরে তুরস্ক স্বাধীন হলেও এ আইন বলবৎ থেকে গেছে।
ইন্দোনেশিয়াঃ
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বসবাস দক্ষিণ-পূর্ব
এশিয়ার দেশ ইন্দনেশিয়ায়৷ জনসংখ্যায় মুসলিম বিশ্বে দেশটির অবস্থান প্রথম। কিন্তু সেখানকার
আইনে সমকামি তাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়নি৷ ২০০৩ সালে একবার সেরকম উদ্যোগ নেয়া হলেও
সেটি ব্যর্থ হয়। ইন্দোনেশিয়া কোনো দিনই সমকামীদের নিষিদ্ধ করেনি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি
সমকামী ক্লাব রয়েছে ইন্দোনেশিয়াতেই।
আলবেনিয়াঃ
ইউরোপের একমাত্র মুসলিম দেশ আলবেনিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব
ইউরোপের এই দেশটিতে সমকামিতাকে আইনত বৈধ করা হয় ১৯৯৫ সালে। এমনকি দেশটিতে আইন করে সমকামীদের
বৈষম্যের হাত থেকে বাঁচানোরও চেষ্টা করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনঃ
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের জর্ডান অংশে ১৯৫১
সাল থেকে সমকামিতা বৈধ। তবে গাজাতে এমন প্রচলন নেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, গাজায় যে আইনের
কারণে সমকামিতা নিষিদ্ধ সেটা বলবৎ হয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে। অন্যান্য মুসলিম
প্রধান দেশের তুলনায় সেখানকার সমকামীরা বেশ ভালোই আছে। সরকারও আইন করে সমকামী দের
‘অনার কিলিং’-এর হাত থেকে রক্ষা করেছে।
ইরাকঃ
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাক কম বেশি সবারই পরিচিত।
সেইসাথে রাজনৈতিক কারণে নানাভাবে আলোচিতও দেশটি। কিন্তু সেখানে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে
সমকামিতা। ইরাকে আইনত সমকামিতা বৈধ। তবে সমকামিতাকে বৈধতা দিলেও বিষয়টি এখনও সেখানে
অনেকটাই ‘ট্যাবু’ হয়ে আছে।
মালিঃ
পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটির সংবিধানে সমকামী
কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে জানা যায়, দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ সমকামিতা পছন্দ
করে না। তাই বৈধ হলেও মালির সমকামীরা বেশ বৈষম্যের শিকার হন। তবে মালি যতই রক্ষণশীল
দেশ হোক, তাদের আইনে সমকামী হওয়া অপরাধ নয়। সমকামী বা সমকামীত্ব নিয়ে সেখানকার আইনে
কিছুই বলা নেই। তবে, ‘অশ্লীলতা’ ও ‘অভদ্রোচিত’ আচরণের কথা সেখানকার আইনে বলা আছে।
বাহরাইনঃ
১৯৭৬ সালে সেখানে সমকামিতাকে আইনগত বৈধতা দেয়।
তবে দেশটিতে এখনও প্রকাশ্যে ছেলেরা মেয়েদের, কিংবা মেয়েরা ছেলেদের পোশাক পরতে পারে
না।
যেসব দেশে সমকামিতা অপরাধ বলে গণ্য
বিশ্বের ৬৯টি দেশে সমকামিতা নিষিদ্ধ। এ তালিকায়
রয়েছে বাংলাদেশও। সম্প্রতি ভারতে সমকামিতা নিষিদ্ধ করা ঐতিহাসিক আইনটি সর্বোচ্চ আদালতের
নির্দেশে বাতিল করা হয়েছে। ফলে ভারতে এখন সমকামিতা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
পাপুয়া নিউ গিনি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো
দেশে সমকামিতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে। এমনকি ইরান, সুদান ও ইয়েমেনে সমকামিতার অপরাধে
মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
মূলত ব্রিটিশ শাসনামলে সারা বিশ্বের বিভিন্ন
স্থানে ব্রিটিশ কলোনিগুলোতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় সমকামিতা। ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ১৮৬১
সালের জারি করা আইনটিতেই সমকামিতা নিষিদ্ধ করা হয়। ব্রিটিশ আমলের এই বিতর্কিত আইনটির
সুবাদে 'অপ্রাকৃতিক যৌনতা'র অপরাধে ভারতে কোনও ব্যক্তির ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের
বিধান ছিল।
এশিয়ার যেসব দেশে সমকামিতা নিষিদ্ধ সেগুলো
হলো- আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ব্রুনেই দারুসসালাম, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লেবানন,
মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা,
সিরিয়া, তুর্কেমিনস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরা, উজবেকিস্তান ও ইয়েমেন।
আফ্রিকার আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বটসোয়ানা,
জিম্বাবুয়ে, উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া, নাইজেরিয়া, মরক্কো ও লিবিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে সমকামিতা
নিষিদ্ধ।
দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে সমকামিতা নিষিদ্ধ।
এসব দেশের মধ্যে রয়েছে বার্বাডোজ, ডমিনিকা, গ্রেনাডা, গায়ানা ও জ্যামাইকা।
অধিকাংশ মুসলিম দেশে সমকামিতা নিষিদ্ধ হলেও
বেশ কয়েকটি মুসলিমপ্রধান দেশে সমকামিতা বৈধ। সমকামিতা বৈধ এমন কয়েকটি মুসলিম প্রধান
দেশের তালিকায় রয়েছে তুরস্ক, মালি, জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া, আলবেনিয়া, বাহরাইন ও ইরাক।
১৮৫৮ সালে অটোমান সাম্রাজ্য সমকামিতাকে বৈধতা
দেয়৷ এরপর তুরস্ক স্বাধীন হলে সেই আইন বলবৎ রাখে৷ জর্ডানে ১৯৫১ সালে আইন করে সমকামিতাকে
বৈধতা দেয়া হয়৷ বাহরাইনে ১৯৭৬ সালে সমকামিতাকে আইনগত বৈধতা দেয়া হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমকামিদের অধিকার আদায়ে
কাজ করছে এলজিবিটি কমিউনিটি। তাদের তালিকায় দেখা যায় জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্বের ১৯৩টি দেশের
মধ্যে ৬৯টি দেশে সমকামিতা নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী সমকামিতাকে
প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে। তাতে বলা হয়, ‘কোনো ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায়
কোনো পুরুষ, নারী বা পশু প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করে, তবে তাকে আজীবন
কারাদণ্ড দেয়া হবে, অথবা বর্ণনা অনুযায়ী নির্দিষ্টকালের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে
যা দশ বছর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে, এবং এর সাথে নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও
দিতে হবে। ১৮৯৮ সালের আইন এটি, যার একই ধারা ভারতেও চালু ছিল। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সেটি
বাতিল করে সমকামীতা কোন অপরাধ নয় বলে রায় দেয়ায় ভারতে এখন সমকামিতা বৈধ।
ইসলামি আইনে ও মানবরচিত আইনে সমকামিতার দন্ডবিধির পার্থক্য
মানবরচিত আইনে ‘কোনো ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায়
কোনো পুরুষ, নারী বা পশু প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করে, তবে তাকে আজীবন
কারাদণ্ড দেয়া হবে, অথবা বর্ণনা অনুযায়ী নির্দিষ্টকালের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে
যা দশ বছর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে, এবং এর সাথে নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও
দিতে হবে।
আর ইসলামি দন্ডবিধি অনুযায়ী সমকামিতায় লিপ্ত
উভয়কে প্রকাশ্যে জনসাধারণের উপস্থিতিতে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে।
তবে যেহেতু বাংলাদেশে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম নেই। তাই সমকামিতায় লিপ্ত ব্যক্তিকে ধরে এনে পাথর মেরে হত্যা করা যাবে না। রাষ্ট্র এ দায়িত্ব পালন করবে। যেহেতু রাষ্ট্র ইসলামি আইন বাদ দিয়ে নিজেদের তৈরী আইনে শুধু জেল আর জরিমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে তাই উক্ত পাপের দায়ভার রাষ্ট্রের উপর বর্তাবে। তবে মূল পাপের ভাগী হবে তারাই যারা ভোট দিয়ে তাদেরকে নির্বাচিত করে অনুরুপ আইন তৈরীতে সহযোগীতা করেছে।
অভিশপ্ত
ডেড সি বা মৃত সাগর বা লুত সাগর
এই সেই অভিশপ্ত ডেড সি বা মৃত সাগর
কেউ বলেন ডেড-সি বা মৃত সাগর আবার কেউ বলেন লুত সাগর।
আসলে জায়গাটি নামে ভিন্ন হলেও প্রকৃতপক্ষে একই জায়গার দুটি ভিন্ন নাম। ডেড-সি হল পৃথিবী
পৃষ্ঠের সর্ববৃহৎ গর্ত, যা দেখতে অনেকটা সাগরের মতো বলেই এ জায়গাটিকে সাগর বলা হয়।
বর্তমান ডেড-সি হল উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত একটি ভূতাত্ত্বিক
বেসিন, যার পূর্বদিকে মুসলিম রাষ্ট্র জর্ডান এবং পশ্চিম দিকে দখলদার ইহুদি রাষ্ট্র
ইসরাইল এবং জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। ইতিহাসের বহুল পরিচিত ডেড-সির পানিস্তর
পশ্চিমদিকে অবস্থিত ভূমধ্যসাগরের পৃষ্ঠদেশ থেকে প্রায় ৩৯৭ মিটার নিচে অবস্থিত। সাগরের
তলদেশটি প্রতিবছর প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার (১ ফুট) করে নিচের দিকে (ভূগর্ভে) অবনমন হচ্ছে।
এ সাগরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ সর্বোচ্চ ১৮ কিলোমিটার।
কুরআনের বিভিন্ন সুরায় বর্ণিত
ডেড-সি (লুত সাগর) উৎপত্তির ঐতিহাসিক পটভূমি নিম্নরূপঃ
মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) বর্তমান ইরাকের অন্তর্গত প্রাচীন
উরনগরীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি নিজে প্রথমে ইরাক থেকে মিসর পর্যন্ত এবং সিরিয়া
ও ফিলিস্তিন থেকে আরবের মরুভূমির বিভিন্ন প্রান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ কয়েক বছরকাল ঘুরে ঘুরে
আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার ও তাঁর হুকুম মেনে চলার পথে মানবজাতিকে আহ্বান জানিয়েছেন।
অতঃপর তিনি তার এই দওয়াতের পয়গাম ও আদর্শ প্রচারের জন্য ট্রান্স-জর্ডানের
বর্তমান ডেড-সি (লুত সাগর) এলাকাটিতে তার ভাতিজা হজরত লুত (আ.)কে প্রেরণ করেন। উল্লেখ্য,
প্রায় ৪৫০০ বছর আগে বর্তমান লুত সাগর (ডেড-সি) এলাকাটিতে তদানীন্তন বিশ্বের আর্থিক
ও প্রযুক্তিগতভাবে সর্বোন্নত অথচ নৈতিকতার দিক দিয়ে অধঃপতিত ও সর্বনিকৃষ্ট একটা জাতি
বসবাস করত। পুরুষে-পুরুষে সমকামিতা, লুটপাট, রাহাজানি, ডাকাতি ইত্যাদি ছিল তাদের নিত্যদিনের
কাজ। প্রকাশ্য দরবারে, মাঠে, বিভিন্ন পার্কে দিবালোকে তারা সমকামে লিপ্ত হতো। হজরত
লুত (আ.) তার এই জাতিকে বিভিন্নভাবে এহেন অপকর্ম হতে বিরত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা
করলেন ।
কিন্তু কিছুতেই তিনি তাদের বোঝাতে ও বিরত রাখতে পারলেন না। বরং উল্টোভাবে
তার জাতি তাকে দেশ হতে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তিনি আল্লাহর কাছে এ ব্যাপারে
দোয়া করলেন এবং আল্লাহ তার দোয়া কবুল করলেন। লুত জাতিকে ধ্বংসের জন্য আল্লাহতায়ালা
ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতারা লুত জাতিকে ধ্বংসের আগে প্রথমেই ফিলিস্তিনের হেবরনে বসবাসরত
হজরত ইবরাহিম (আ.) বাড়িতে আসেন। ফেরেশতারা হজরত ইবরাহিম (আ.)কে তার দ্বিতীয়পুত্র হজরত
ইসহাক (আ.)-এর জন্মগ্রহণের সুসংবাদ শোনানোর পাশাপাশি হজরত লুত (আ.)-এর জাতির ওপর আসন্ন
আল্লাহর গজবের দুঃসংবাদও শুনান। ফেরেশতাদের নিকট এ দুঃসংবাদ শুনে হজরত ইবরাহিম (আ.)
লুত জাতিকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করলেন; কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালা
লুত জাতির ধ্বংসের সিদ্ধান্তে অটল রইলেন। সন্ধ্যার দিকে ফেরেশতারা ফিলিস্তিনের হেবরন
থেকে বের হয়ে লুত জাতির বসতিস্থল সাদুম ও গোমরা নগরীদ্বয়ের দিকে অগ্রসর হন।
যেহেতু নগরীদ্বয়ের লোকেরা সমকামিতার পঙ্কিলে নিমজ্জিত ছিল তাই তিনজন
ফেরেশতা, ১. হজরত জিবরাঈল (আ.), ২. হজরত ইসরাফিল (আ.) এবং ৩. হযরত মিকাঈল (আ.) কৌশলস্বরূপ
সুদর্শন ছেলে মানুষের রূপ ধারণ করে ওই এলাকায় আসেন। সুদর্শন ছেলে মানুষরূপী ফেরেশতারা
সন্ধ্যার পর রাতের অন্ধকারে হজরত লুত (আ.)-এর বাড়িতে পৌঁছার পরপরই হজরত লুত (আ.)-এর
স্ত্রী যে কোনোভাবেই হোক বিষয়টি জানার পর সে এলাকার যুবকদের মধ্যে গোপনে তথ্যটি ছড়িয়ে
দেয়।
সংবাদটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শত সহস্র যুবকদল মেহমানদের
সঙ্গে সমকামিতায় লিপ্ত হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে হজরত লুত (আ.)-এর বাড়িতে প্রবেশ করে।
মেহমানদের ইজ্জত রক্ষার স্বার্থে হজরত লুত (আ.) বারবার হীন অপকর্মের উদ্দেশে আসা যুবকদেরকে
নানাভাবে বুঝাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু চরিত্রহীন যুবকদল কোনোভাবেই এই মহান নবীর কথায়
কর্ণপাত করল না।
এ রকম অসহায় পরিবেশে হজরত লুত (আ.) আল্লাহতায়ালার দরবারে এর একটা সমাধানের
জন্য দোয়া করলেন। একপর্যায়ে হজরত লুত (আ.)-এর কাছে ফেরেশতারা তাদের পরিচয় দিয়ে বলেন,
রাত কিছুটা থাকতে অর্থাৎ ভোর হওয়ার আগেই হজরত লুত (আ.) যেন তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে
এ এলাকা ছেড়ে চলে যান এবং কেউ যেন পেছন দিকে ফিরে না তাকায়।
তবে শর্ত ছিল যে, হজরত লুত (আ.)-এর পরিবারের মধ্যে হতে তার স্ত্রী সঙ্গে
যেতে পারবে না, কারণ মহিলাটি তার জাতির সঙ্গে ধ্বংস হবে বলে আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত
ছিল। ভোর রাতে হজরত লুত (আ.) তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার সঙ্গে
সঙ্গে প্রবল ভূমিকম্প শুরু হয়। ভূগর্ভ হতে পরিপক্ব মাটির প্রস্তর (ভূ-তাত্ত্বিক ভাষায়,
অতি উত্যপ্ত লাভা) অবিশ্রান্তভাবে দুশ্চরিত্র জনতার ওপর বর্ষণ করা হয় এবং জমিনকে উল্টিয়ে
তাদের ওপর নিক্ষেপ করা হয়। এ সময়ে এক প্রচণ্ড ভূমিকম্প হয়েছিল। সাদুম, গোমরা ও আশপাশের
অন্যান্য পাপিষ্ঠ নগরীর জমিনকে ভূ-গর্ভে মিশিয়ে দেয়া হয়, যা বর্তমানে ডেড-সি বেসিন
বা মৃত সাগর অথবা লুত সাগর নামে পরিচিতি পেয়েছে।
ভূবিজ্ঞানের বর্তমান গবেষণা হতে এ কথা সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, প্রায়
৪৫০০ বছর পূর্বে ডেড-সির উৎপত্তির সঙ্গে তীব্র ভূমিকম্পের সম্পর্ক ছিল। যদিও অতি প্রাচীনকালের
এ ভূমিকম্পের তীব্রতা রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি, তবে ডেড-সি এলাকাটি যে একটি তীব্র ভূমিকম্পপ্রবণ
এলাকা, এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। বর্তমানে গবেষণার সাহায্যে জানা গেছে যে, ডেড-সি
এলাকাটিতে খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিভিন্ন মাত্রার অনেকগুলো ভূমিকম্প হয়েছে। অর্থাৎ ডেড-সি
একটি প্রচণ্ড ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা।
আল-কোরআনে উল্লেখ রয়েছে, লুত জাতির ঘরবাড়ি ও বস্তি-জনপদ আকাশে তুলে উল্টিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং তাদের নিচে ফেলে চাপা দেয়া হয়েছিল। ডেড-সি’র মতো একটি দৃশ্যমান নিদর্শনকে সামনে রেখে পরবর্তী মানবজাতিকে এ শিক্ষা নেয়ার প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, সমকামিতার মতো অতি জঘন্য আপরাধ যদি কোনো জাতি করে তাহলে লুত জাতির মতো পরিণতি তাদেরও হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমানে এ অপকর্ম অনেক দেশে বেড়ে চলেছে ও বৈধতা পাচ্ছে।
স্ত্রীর পায়ুপথে সংগম করার শাস্তি
স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস কবিরা গুনাহ। কেননা,
এটা হারাম হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট দলিল আছে। এমনকি ইমাম তাহাবি রহ বলেন, এর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত হাদিসগুলো মুতাওয়াতির
(বর্ণনা-পরম্পরার প্রতিটি স্তরেই রয়েছে বৃহৎ জনসংখ্যা।) (শরহু
মাআনিল আসার ৩/৪৩)।
যেমন,
(এক)
(ক) আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ
বলেছেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ কোনো ব্যক্তি গণকের নিকট গেলে (বর্ণনাকারী মূসা তার হাদীসে বলেন) এবং তার কথা
বিশ্বাস করলে অথবা স্ত্রীর সাথে (মুসাদ্দাদের বর্ণনায় রয়েছে) ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস
করলে অথবা স্ত্রীর সাথে পশ্চাৎ দ্বারে সহবাস করলে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে, সে তা থেকে দায়মুক্ত (অর্থাৎ ইসলামের গন্ডির বাইরে)।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
(খ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে লোক কোন পুরুষ বা স্ত্রীলোকের মলদ্বারে সংগম করে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ
তা’আলা তার দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। (সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৬৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৫)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(গ)
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে গুহ্যদ্বারে সঙ্গম করে সে অভিশপ্ত।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৬২)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(ঘ)
খুযাইমা ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না। কথাটি তিনি তিনবার বলেন।
(অতঃপর বলেন) তোমরা মহিলাদের মলদ্বারে সঙ্গম করো না। (সুনান
ইবনু মাজাহ ১৯২৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯২, আহমাদ ২১৩৪৩, ২১৩৬৭, দারেমী ১১৪৪,
ইরওয়াহ ২০০৫, আদাবুয যিফাফ ২৯)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ)
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘‘সেটি হচ্ছে ছোট সমকাম। অর্থাৎ পুরুষ নিজ
স্ত্রীর মলদ্বার ব্যবহার করা’’। (আহমাদ ৬৭০৬, ৬৯৬৭, ৬৯৬৮;
বায়হাক্বী ১৩৯০০)।
(দুই) উল্লেখ্য, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের দেহ থেকে
সব উপায়ে সুখ নেয়ার অনুমতি ইসলামে আছে। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের স্ত্রীগণ
তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ; অতএব তোমরা যেভাবেই ইচ্ছা তোমাদের ক্ষেতে গমণ কর। (সূরা বাকারা ২২৩)।
তবে যে উপায়ে সুখ নেয়া হারাম হওয়ার ব্যাপারে
স্পষ্ট দলিল আছে, তা পরিহার করতে হবে। যেমন, মলদ্বারে সহবাস এবং ঋতুবতী ও প্রসব পরবর্তী
সময়ে নির্গত রক্তস্রাব অবস্থায় সহবাস।
মুজাহিদ রহ. আয়াতের তফসিরে বলেন, দাঁড়ানো ও
বসা অবস্থায়, সামনের দিক থেকে এবং পিছনের দিক থেকে (সঙ্গম করতে পারো, তবে তা হতে হবে)
স্ত্রীর যোনিপথে।’ (দুররে মানছুর ১/২৬৫ তাফসীর তাবারী
২/৩৮৭-৩৮৮ মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ৪/২৩২)।
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, কুতায়বাহ ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ
ও আমর আন্ নাকিদ (রহিমাহুমুল্লাহ)....জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, স্বামী ইচ্ছে করলে
উপুড় করে, ইচ্ছা করলে উপুড় না করে তবে একই দ্বারে (যোনিপথে) হতে হবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৪২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৩৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দন্ডবিধি সংক্রান্ত কিছু কথা
কাউকে লুক্কায়িতভাবে ব্যভিচার কিংবা যে কোন
হারাম কাজ করতে দেখলে তা তড়িঘড়ি বিচারককে না জানিয়ে তাকে ব্যক্তিগতভাবে নসীহত করা ও
পরকালে আল্লাহ্ তা‘আলার কঠিন শাস্তির ভয় দেখানো উচিত।
(ক) আবু
হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে লোক কোন মু’মিন ব্যক্তির দুনিয়াবী অসুবিধাগুলোর কোন একটি অসুবিধা দূর করে
দেয়, তার পরকালের অসুবিধাগুলোর মধ্যে একটি অসুবিধা আল্লাহ তা’আলা দূর করে দিবেন। কোন
মুসলিম ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি যে লোক গোপন রাখে, তার দোষ-ত্রুটি আল্লাহ তা’আলা দুনিয়া
ও আখিরাতে গোপন রাখেন। যে পর্যন্ত বান্দাহ তার ভাইকে সাহায্য করতে থাকে সে পর্যন্ত
আল্লাহ তা’আলাও তাকে সাহায্য করতে থাকেন। (সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫; সুনান ইবনু মাজাহ ২২৫, ২৫৪৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৭৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৫৫, ৩৬৪৩,
৪৯৪৬; আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ৮১১৭, ১০১১৮, ১০২৯৮; দারিমী ৩৪৪, সহীহ্ তারগীব ১/৩১/৬৭, সহীহাহ
২৩৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬০৮, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬১)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি
তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন (অপরাধের) বিষয় গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার গুপ্ত
(অপরাধের) বিষয় গোপন রাখবেন। আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন বিষয় ফাঁস করে দিবে,
আল্লাহ তার গোপন বিষয় ফাঁস করে দিবেন, এমনকি এই কারণে তাকে তার ঘরে পর্যন্ত অপদস্থ
করবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪৬, আত-তালীকুর রাগীব৩/১৭৬,
সহীহাহ ২৩৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দন্ডবিধি প্রয়োগের সময় চেহারার প্রতি লক্ষ্য রাখা
কারোর উপর শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোনো দন্ডবিধি
প্রয়োগ করার সময় তার চেহারার প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে
ক্ষত-বিক্ষত না হয়ে যায়।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ প্রহার করার সময় যেন মুখমন্ডল থেকে বিরত থাকে।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৯৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৫৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪১৩, ইসলামিক সেন্টার
৬৪৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যে কোনো দন্ডবিধি মসজিদে প্রয়োগ না করা
(ক)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
মসজিদের ভিতর হদ কার্যকর করা যাবে না এবং ছেলেকে খুনের দায়ে বাবাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানকরা
যাবে না। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪০১, সুনান ইবনু
মাজাহ ২৫৯৯, ২৬৬১, দারেমী ২৩৫৭, ইরওয়া ৭/২৭১, ২৩২৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ)
হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মসজিদের ভিতরে কিসাস গ্রহণ করতে, কবিতা আবৃত্তি করতে এবং হাদ্দ কার্যকর
করতে নিষেধ করেছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৯০)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
দুনিয়াতে কারোর উপর শরীয়তের কোনো দন্ডবিধি
কায়েম করা হলে তা তার জন্য কাফ্ফারা হয়ে যায় তথা তার অপরাধটি ক্ষমা করে দেয়া হয়। পরকালে
এ জন্য তাকে কোনো শাস্তি দেয়া হবে না।
উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি
বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে কোন এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলাম।
তিনি বললেনঃ তোমরা এই কথার উপর আমার নিকট বাই’আত করঃ আল্লাহ্ তা’আলার সাথে তোমরা কোন
অংশীদার স্থাপন করবে না, চুরি করবে না এবং যিনা-ব্যভিচার করবে না। তারপর তিনি বাই’আত
বিষয়ক পূর্ণ আয়াত তাদেরকে তিলাওয়াত করে শুনালেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের যে লোক
এই বাই’আত পূর্ণ করবে, আল্লাহ্ তা’আলার নিকট রয়েছে তার জন্য তার পুরস্কার। আর কোন
মানুষ এর কোন একটি অপরাধে জড়িয়ে পড়লে এবং এর জন্য তাকে শাস্তিও প্রদান করা হলে তাতে
তার গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। আর কোন মানুষ এর কোন একটি অপকর্ম করে বসলে এবং আল্লাহ
তা’আলা সেটাকে লোকচক্ষুর আড়ালে রেখে দিলে তার প্রসঙ্গটি আল্লাহ তা’আলার উপর ন্যস্ত।
তাকে আল্লাহ তা’আলা চাইলে শাস্তিও দিতে পারেন আবার মাফও করে দিতে পারেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৯, ইরওয়া ২৩৩৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
যিনাকারীর পরকালীন শাস্তি
আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ)...আবূ হুরাইরাহ
(রাযিঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির
সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা কথা বললেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না।
রাবী আবূ মু’আবিয়াহ বলেন, তাদের প্রতি তাকাবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
(এরা হলো)
(ক)
ব্যভিচারী বুড়ো,
(খ)
মিথ্যাবাদী শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান ও
(গ) অহঙ্কার
দরিদ্র ব্যক্তি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ১৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১৯৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ২০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
সামুরাহ ইবনু জুনদাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল
সাঃ বলেন,
যিনারাকীরা উলংগ অবস্থায় এমন এক চুলার মধ্যে
থাকবে যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সংকীর্ণ আর নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত উহার তলদেশে অগ্নি
প্রজ্বলিত থাকবে তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝে মধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার
কাছাকাছি অবস্থায় পৌছে যাবে; অত:পর আগুন যখন স্তমিত হয়ে যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে
যাবে। আর তাদের সাথে এই আচারণ কেয়ামত পর্যন্ত করা হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৭০৪৭, ৮৪৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৭৫,
আহমাদ ২০১১৫, আধুনিক প্রকাশনী ৬৫৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahi।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা
ব্যভিচার পরিত্যাগ করো। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি
আখেরাতে প্রকাশ পাবে।
যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,
(ক) তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে,
(খ) তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং
(গ) তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।
আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা
হচ্ছে,
(ক) সে
আল্লাহর অসন্তোষ,
(খ) কঠিন
হিসাব ও
(গ) জাহান্নামের
শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)
আবু ওমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
বলতে শুনেছি, ‘আমি একদা ঘুমিয়ে ছিলাম আমার পাশে দু’জন লোক আসল, তারা আমার বাহু ধরে
নিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ দেখি আমি কিছু লোকের পাশে যারা খুব ফুলে আছে তাদের গন্ধ এতবেশী
যেন মনে হচ্ছে ভাগাড়। আমি বললাম এরা কারা? নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, এরা ব্যাভিচারী-ব্যাভিচারিণী। (আত-তারগীব ৩৪২৪)।
যিনাকারীনী মহিলা যদি গর্ভবতী হয়ে যায় তাহলে সে অবস্থায় যিনাকারীর সাথে তার বিবাহের বিধান
জিনা-ব্যভিচার জঘন্য গুনাহ (কবিরা গুনাহ)।
ইসলামের দৃষ্টিতে এর শাস্তি হল, প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা যদি জেনা কারি/জেনাকারিনি
বিবাহিত হয়। ইসলামে এর চেয়ে কঠিন শাস্তি আর কিছু নেই।
অথবা ১০০ বেত্রাঘাত এবং এক বছর দেশান্তর (বর্তমানে
জেল) যদি জেনাকারী/জেনাকারীনি অবিবাহিত হয়।
কিন্তু বর্তমানে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি,
গার্মেন্টস, অফিস-আদালত সহ সর্বত্র নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশা, পর্দা হীনতা, আল্লাহর
ভয় না থাকা, ইসলামের কঠোর আইনের অনুপস্থিতি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে এই ভয়ানক অপরাধ আমাদের
সমাজে পানির মত সহজ হয়ে গেছে! যা একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক!
অত:পর কথা হলো, কথিত প্রেমের নামে দেহ ভোগের
এই ঘৃণিত অপরাধে জড়িত হওয়ার ফলশ্রুতিতে যদি মহিলাটি গর্ভবতী হয়ে যায় তাহলে উক্ত যিনাকারী
পুরুষের সাথে তার বিবাহ বন্ধন বৈধ দুটি শর্ত সাপেক্ষে। যথা:
(ক) আল্লাহর
নিকট খাঁটিভাবে তওবা করা। (ব্যভিচারী পুরুষ ও নারী উভয়কেই তওবা করে পবিত্র হতে হবে)।
(খ) গর্ভস্থ
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া।
তওবা করা এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত
মহিলাটির বিবাহ বৈধ নয়। এটি অধিকাংশ আলেমের অভিমত এবং হাদিসের আলোকেও এটি অধিক বিশুদ্ধ।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
(ক)
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আওতাস যুদ্ধের বন্দী দাসীদের সম্বন্ধে বলেছেনঃ সন্তান প্রসবের আগে গর্ভবতীর
সাথে সঙ্গম করা যাবে না। আর গর্ভবতী নয় এমন নারীর মাসিক ঋতু শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার
সাথেও সঙ্গম করা যাবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২১৫৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩৩৮, আহমাদ ১১২২৮, দারিমী ২৩৪১, ইরওয়া ১৮৭, সহীহ
আল জামি ৭৪৭৯, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/১১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) রুয়াইফি’
ইবনু সাবিত আল-আনসারী (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। হানাশ (রহ.) বলেন, একদা রুয়াইফি’ আমাদের
সাথে দাঁড়িয়ে ভাষণ প্রদানের সময় বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে যা কিছু শুনেছি তোমাদেরকে শুধু তাই বলবো। তিনি হুনাইনের দিন বলেছেনঃ যে ব্যক্তি
আল্লাহ এবং শেষ দিনের উপর ঈমান রাখে, তার জন্য বৈধ নয় অন্যের ফসলে নিজের পানি সেচন
করা। অর্থাৎ গর্ভবতী মহিলার সাথে সঙ্গম করা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ঈমান
রাখে তার জন্য বৈধ নয় কোনো বন্দী নারীর সাথে সঙ্গম করা যতক্ষণ না সে সন্তান প্রসব করে
পবিত্র হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তার জন্যও বৈধ নয় বন্টনের
পূর্বে গনীমাত বিক্রয় করা। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২১৫৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে আলেমগণ গর্ভবতী নারীর বিবাহকে হারাম বলেছেন।
যে কোনো ঈমানদার পবিত্র পুরুষের জন্য কোনো
ব্যভিচারিণী মেয়েকে বিবাহ করা হারাম। তেমনিভাবে যে কোনো ঈমানদার সতী মেয়ের জন্যও কোনো
ব্যভিচারী পুরুষকে বিবাহ করা হারাম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“একজন ব্যভিচারী পুরুষ আরেকজন ব্যভিচারিণী
অথবা মুশরিকা মেয়েকেই বিবাহ করে এবং একজন ব্যভিচারিণী মেয়েকে আরেকজন ব্যভিচারী পুরুষ
অথবা মুশরিকই বিবাহ করে। মুমিনদের জন্য তা করা হারাম”। (সূরা
আন-নূর ৩)।
তওবার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,
"বরং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের
ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং
ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি
দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস
স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে এবং দেবেন।
আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যে তওবা করে ও সৎকর্ম করে, সে ফিরে আসার স্থান আল্লাহর
দিকে ফিরে আসে।" (সূরা ফুরকান: ৭০, ৭০ ও ৭১)।
সৌদি আরবে গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল্লাহ
বিন বায রা. এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
যদিও ইমাম আবু হানিফা রাহ. সহ কোনো কোনো আলেম
গর্ভবতী অবস্থায় যিনাকারীর সাথে বিবাহকে বৈধ বলেছেন। কিন্তু অধিক নির্ভরযোগ্য অভিমত
হলো, যিনাকারী ও যিনাকারীনী উভয়কে এই অন্যায় কর্ম সম্পাদনের কারণে খাঁটি তওবা করে পবিত্র
হতে হবে। তারপর মহিলার গর্ভস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর উক্ত যিনারকারীর সাথে বিবাহ
বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে; এর আগে নয়।
সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর বিবাহ করার বিধান
যেহেতু গর্ভের সন্তানটি যিনার সন্তান এবং তা
বিবাহকারীর নিজের, সেজন্য এখানে নতুন বিবাহের প্রয়োজন নেই বলে অধিকাংশ বিদ্বান মত প্রকাশ
করেছেন। (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৭/১৩০; হাশিয়াহ ইবনু আবেদীন
৩/৪৯; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ২৯/৩৩৮)।
উল্লেখ্য যে, এই বিবাহপূর্ব সন্তান মাতার দিকে
সম্বন্ধিত হবে এবং সে পিতার সম্পদের ওয়ারিছ হবে না। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২৭৪৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২২৬৫, আহমাদ ৬৬৬০, ৭০০৬, দারেমী ৩১১১)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আমর ইবনু শু’আইব (রহ.) থেকে পর্যায়ক্রমে তার
পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের প্রথম
যুগে এরূপ ফায়সালা করতেন যে, প্রত্যেক উত্তরাধিকারী তার পিতার মৃত্যুর পর তার ওয়ারিস
হবে যাকে সে ওয়ারিস হিসাবে স্বীকার করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ ফায়সালাও
দিতেনঃ প্রত্যেক দাসীর সন্তানকে সেই পাবে, যে ঐ দাসীর মালিক হয়ে তার সাথে সহবাস করেছে
এবং সে সন্তানও ঐ ব্যক্তির সাথে সংযুক্ত হবে। ইতিপূর্বে যেসব সম্পদ বন্টন হয়ে গেছে,
এ সন্তান তা থেকে কোনো অংশ পাবে না। আর যেগুলো ইতিপূর্বে বন্টন হয়নি এ সন্তান তা থেকে
অংশ প্রাপ্ত হবে।
তবে পিতা তার জীবদ্দশায় সন্তানটিকে অস্বীকার
করলে সন্তানটি তার সাথে সংযুক্ত হবে না। আর যদি সন্তান এমন দাসী থেকে জন্ম নেয়, যে
ব্যক্তি তার মালিক নয় কিংবা এমন স্বাধীন মহিলা থেকে জন্ম নেয়, যার সাথে সে যিনা করেছে,
এমতাবস্থায় এ সন্তান ঐ ব্যক্তির সাথে সংযুক্ত হবে না এবং এ সন্তান তার উত্তরাধিকারীও
হবে না, যদিও সে ব্যক্তি দাবী করে। আর যাকে তার সাথে সংযুক্ত করা হয়, আর সেও সম্পর্কিত
হয়, সে জারজ সন্তান, চাই সে দাসী কিংবা স্বাধীন নারীর গর্ভে জন্ম গ্রহণ করুক না কেন।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২২৬৫, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৪৬,
আহমাদ ৬৬৬০, ৭০০৬, দারেমী ৩১১১। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
যিনা/ব্যভিচারে লিপ্ত নারী-পুরুষের তওবার বিধান
নিঃসন্দেহে যেনা কাবীরা গুনাহ। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন, “তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট অভ্যাস”। (সূরা
বানী ইসরাঈল: ৩২)।
কোন ব্যক্তি মুমিন থাকাবস্থায় যেনা করে না।
কারণ সে সময় তার থেকে ঈমানের নূরকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৯৬, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৩১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইসলামী শরীআতে যেনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই
অবিবাহিত কোন পুরুষ যদি ব্যভিচার করে, তাহলে তাকে একশ বেত্রাঘাত করা হবে এবং এক বছরের
জন্য এলাকা থেকে বিতাড়িত করতে হবে। (সূরা আন-নূর: ২; সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯০: সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৪৪১৫; সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৬৭, ইসলামিক সেন্টার
৪২৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আর বিবাহিত নারী-পুরুষ যেনায় লিপ্ত হলে তাকে
রজম করতে হবে তথা পাথর দিয়ে মেরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৭০-৫২৭১, ৬৮২৫; সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৩১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৭১, ইসলামিক
সেন্টার ৪২৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এতদ্ব্যতীত ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুনের
লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৭০৪৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৭৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আর ধর্ষণের শাস্তি সাথে সাথে মৃত্যুদণ্ড দেয়া।
(সূরা আল-মায়েদাহ ৩৩)।
এমতাবস্থায় কর্তব্য হলো, দ্রুত উত্তম তওবাহ
করা। আর তা হচ্ছে, এ জন্য লজ্জিত হওয়া, অনুতপ্ত হওয়া এবং এই জঘন্যকর্ম পরিত্যাগ করা।
আর ভবিষ্যতে কখনো এ ধরনের হারাম কর্মে জড়িত না হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। যে ব্যক্তি
স্বচ্ছ ও পবিত্র অন্তরে একনিষ্ঠ ও একাগ্রতার সাথে খালেছ তওবা করে আল্লাহ তাঁর তওবা
কবুল করেন।
খাঁটিভাবে তওবা করার একটি ঘটনা
আবূ নুজাইদ ‘ইমরান ইবনুল হুসাইন আল খুযা‘ঈ
(রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুহায়নাহ্ গোত্রের এক নারী আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর নিকট
হাজির হল। সে যিনার কারণে গর্ভবতী ছিল। সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি দন্ডনীয় অপরাধ
করে ফেলেছি তাই আপনি আমাকে শাস্তি দিন!’ আল্লাহর নাবী (সা.) তার আত্মীয়কে ডেকে বললেন,
‘‘তুমি একে নিজের কাছে যত্ন সহকারে রাখ এবং সন্তান প্রসবের পর একে আমার নিকট নিয়ে এসো।’’
সুতরাং সে তাই করল (অর্থাৎ প্রসবের পর তাকে রাসূল (সা.)-এর কাছে নিয়ে এল)।
আল্লাহর নাবী (সা.) তার কাপড় তার (শরীরের)
উপর মজবুত করে বেঁধে দেয়ার আদেশ দিলেন। অতঃপর তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার আদেশ দিলেন।
অতঃপর তিনি তার জানাযার সলাত আদায় করলেন। ‘উমার তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি
এই মহিলার জানাযার সলাত আদায় করলেন, অথচ সে ব্যভিচার করেছিল?’ তিনি বললেন, ‘‘(‘উমার!
তুমি জান না যে,) এই মহিলাটি এমন বিশুদ্ধ তাওবাহ্ করেছে, যদি তা মদীনার ৭০ জন লোকের
মধ্যে বণ্টন করা হত তাহলে তা তাদের সকলের জন্য যথেষ্ট হত। এর চেয়ে কি তুমি কোন উত্তম
কাজ পেয়েছ যে, সে আল্লাহর জন্য নিজের প্রাণকে কুরবান করে দিল?’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯৬,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৮৪, ইসলামিক সেন্টার ৪২৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ তাআলা বলেন, “(হে নবী!) আপনি বলুন,
হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো
না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। (সূরা আয-যুমার ৫৩; সূরা আল-ফুরক্বান: ৬৮-৭০; ইবনু বায, মাজমূঊ
ফাতাওয়া, ৯ম খণ্ড, পৃ. ৩৬৪; ইসলাম সুওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-২৭১১৩, ২৩৪৮৫)।
এখানে মূল কথা হলো, যিনা/ব্যভিচার বা ধর্ষণ
করলে তা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে ইসলামি বিধান মোতাবেক দুনিয়ায় তার দন্ড কার্যকর করতে
হবে। সে যদি দুনিয়ায় বেঁচে থাকতেই খালেসভাবে তওবা করে তাহলে পরকালের শাস্তি থেকে রেহাই
পেতে পারে। নতুবা আগুনে পুড়ে মরতে হবে। যে শাস্তির শেষ নেই।
আর যদি যিনা/ব্যভিচারের বিষয়টি গোপন থাকে তাহলে
এই পথ থেকে সরে আসতে হবে এবং নিভৃতে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর নিকট বারংবার তওবা করতে
হবে ও এর সাথে সৎকর্ম চালিয়ে যেতে হবে।
কিন্তু আমাদের মুসলিম সমাজে এখন হচ্ছেটা কী?
গ্রাম-গঞ্জ, শহর বন্দর, হোটেল-মোটেলসহ এমন কোনো জায়গা নেই যে, সেখানে ব্যবিচার হচ্ছে
না। আর আমাদের সম্মানিত অভিভাবকগণ চেয়ে চেয়ে তাদের ছেলে মেয়েদের এসব অপকর্ম দেখছে ও
সায় দিয়ে যাচ্ছে।
পতিতাবৃত্তি
(মানব রচিত আইন ও ইসলামি আইন)
বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি আইন অনুযায়ী বৈধ, তবে
তা নিয়ন্ত্রিত। পতিতা হিসেবে কাজ করতে হলে তাকে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে এবং আদালতে
উপস্থিত হয়ে একটি হলফনামা জমা দিতে হবে এই মর্মে যে, তারা তাদের নিজস্ব পছন্দ ও জোরজবরদস্তি
ছাড়াই পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে এবং তারা অন্য কোন পেশা খুঁজে পেতে
অসমর্থ। [১] বাংলাদেশের পতিতাদের প্রায়ই অত্যন্ত দরিদ্র সামাজিক অবস্থার শিকার [২][৩]
এবং ঘন ঘন সামাজিকভাবে নিগ্রহের সম্মুখীন হয়। [৪][৫][৬]
নীতি ও আইনঃ
বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি আইনগত বৈধ। তবে বাংলাদেশের
সংবিধান বলছে যে, "রাষ্ট্র জুয়া ও পতিতাবৃত্তি প্রতিরোধ করবে।" দেশের বিভিন্ন
অঞ্চলের শিশু পতিতাবৃত্তি, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি, অবৈধ পতিতালয় ইত্যাদির বিরুদ্ধে
আইন বলবৎ আছে।
বিভিন্ন আইন কখনও কখনও পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে
ব্যবহার করা হয়। ২০০০ সালে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত রায় দেয় যে, দেশে ১০০ জন পতিতা
গ্রেফতার অভিযান ছিল বেআইনি, এবং পতিতাবৃত্তি একটি বৈধ পেশা। [৭] তবে প্রায়ই পুলিশ
বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে হোটেলে বেআইনি পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা
করে এবং পতিতা ও তাদের গ্রাহকদের উভয়কে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দেয়। [৮][৯]
দণ্ডবিধিঃ
বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৩৭২, ৩৭৩, ৩৬৪ (ক) ও
৩৬৬ (খ) ধারায় পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্রয় বিক্রয়ের শাস্তির
বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।
ব্যাপ্তিঃ
এক সময় পতিতাবৃত্তি কেবল পতিতালয়ে আবদ্ধ
ছিল। ফলে সে সময় পতিতাদের সংখ্যা নিরূপণ করা সহজ ছিল। বর্তমানে অনিবন্ধিত বা খণ্ডকালীন
দেহব্যবসায়ীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বিধায় কেবল পতিতালয়ে জরীপ চালিয়ে
নিরূপণ করা সম্ভব নয় কত সংখ্যক নারী দেহব্যবসায় জড়িত। স্থানীয় কিছু এনজিওর হিসাবে
মতে ২০০৮ সালে আনুমানিক মহিলা পতিতার সংখ্যা ছিল ১ লাখ। [১০] ২০১৬ সালে ইউএনএইডস এর
হিসাবে এই সংখ্যাটি দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৪০ হাজারে। [১১]
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০টি পতিতালয়
আছে। এর মধ্যে দৌলতদিয়া পতিতালয় দেশের মধ্যে বৃহত্তম। এটি পৃথিবীর বড় কয়েকটি পতিতালয়ের
মধ্যে একটি। [১২][১৩][১৪]
বাংলাদেশের পতিতালয়ঃ
সরকারি অনুমোদনে পরিচালিত বাংলাদেশের কিছু
বিখ্যাত পতিতালয় হলোঃ
(ক) দৌলতদিয়া
পতিতালয়
(খ) কান্দাপাড়া পতিতালয়
(গ) টানবাজার পতিতালয়
(ঘ) গাঙ্গিনাপাড় পতিতালয়
(ঙ) রথখোলা পতিতালয়
(চ)
সন্ধ্যাবাজার পতিতালয়
বাংরাদেশে পতিাতলয়ের সংখ্যা দিন দিন কমলেও
নতুন স্টালে ভদ্র বেশে পতিতা ব্যবসা দেদারছে চলছে। বিভিন্ন বিউটি পার্লার, থ্রি সাটার,
ফাইভ স্টার ও সেভেন স্টার হোটেলসহ বিভিন্ন বাসা বাড়িতে প্রকাশ্যে ও গোপনীয়ভাবে এই ব্যবসা
বেশ ভালই চলছে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো এই ব্যবসার সাথে যারা জড়িত
তাদের ৯৭% ই মুসলমান। এদের পক্ষে আছে মুসলিম সাংবাদিক, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি, আইনজীবি
ও রাজনীতিবিদ। এ ছাড়া প্রশাসনের একটা অংশ এর সাথে জড়িত। যার ফলে এদের বিরুদ্ধে কিছু
বললে উল্টো তাকে জেল খাটতে হয়।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পতিতা বৃত্তি ও আইন
পতিতাবৃত্তি নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পেশা।
কিন্তু কোনো যুগে, কোনো দেশেই মানুষ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেনি,
আজও করে না। তবে বিশ্বের বহু দেশেই পতিতাবৃত্তি বৈধ এবং সেখানে যৌনকর্মীরা নিয়মিত আয়করও
দেন।
হল্যান্ডের 'পতিতাপল্লী' পর্যটকদের মূল আকর্ষণঃ
নেদারল্যান্ডসে পতিতাবৃত্তি শুধু বৈধ নয়, ইউরোপের
এই দ্বীপ দেশটির পতিতাপলস্নী সত্যিকার অর্থেই বিশ্ববিখ্যাত। ওই 'রেড লাইট জোন' দেখতে
প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসে আমস্টারডামে। নেদারল্যান্ডসের
মতো ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়ামেও দেহব্যবসা সম্পূর্ণ বৈধ।
জার্মানি এবং ফ্রান্সে কঠোর আইনঃ
জার্মানি এবং ফ্রান্সেও দেহব্যবসা বৈধ। তবে
এ দুই দেশেই যৌনকর্মীদের এই ব্যবসা করতে হয় কঠোর আইন মেনে। জার্মানির কিছু শহরে এখনো
যৌনকর্মীরা রাস্তায় নেমে খদ্দের ডাকতে পারেন না, এভাবে খদ্দের সংগ্রহ করা সে সব জায়গায়
আইনত দন্ডনীয়। ফ্রান্সেও ২০১৪ সালে এমন একটা আইন হয়েছে, যা মেনে যথেচ্ছ দেহব্যবসা করা
খুব কঠিন।
সুইডেন আর নরওয়েতেও নিয়ন্ত্রিত পতিতাবৃত্তিঃ
ফ্রান্স ২০১৪ সালে যে আইন প্রবর্তন করে, সেটা
প্রথম চালু হয়েছিল সুইডেনে, ১৯৯৯ সালে। এ কারণে আইনটি 'সুইডিশ মডেল' হিসেবে পরিচিত।
এ আইনে যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষা করে দালালদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ায় স্বাস্থ্য
পরীক্ষা বাধ্যতামূলকঃ
সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াতেও দেহব্যবসা বৈধ।
তবে এ দুটি দেশে ১৯ বছর বয়স না হলে কেউ দেহব্যবসায় আসতে পারেন না। যৌনকর্মীদের যাতে
কোনো যৌনরোগ না হয়, কিংবা তাদের মাধ্যমে খদ্দেরদের মধ্যে যাতে এইডস, সিফিলিস বা অন্য
কোনো রোগ ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে যৌনকর্মীদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে
হয়। অবশ্য শুধু সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াতে নয়, জার্মানিতেও ওই একই নিয়ম।
গ্রিস এবং তুরস্কে পতিতাবৃত্তি নিয়ন্ত্রিতঃ
গ্রিস এবং তুরস্কেও পতিতাবৃত্তি পুরোপুরি বৈধ,
তবে দেহব্যবসার আইন খুব কঠিন। জার্মানির মতো এই দুটি দেশেও যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্যবীমা
করা বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া যৌনকর্মীরা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান কিনা, তা সবসময়
তদারক করা হয়। স্বাস্থ্য কার্ডেই লেখা থাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সব তথ্য।
যে দুই দেশের পতিতাপল্লীতে ধীরে
চলা মানাঃ
ব্রিটেন আর আয়ারল্যান্ডের পতিতাপলস্নী বা
'রেড লাইট জোন'-এর প্রায় সব আইনই জার্মানির মতো ছিল। তবে সম্প্রতি ব্রিটেনে কিছু বেসরকারি
সংস্থার দাবিতে এতে নতুন কিছু বিষয় যোগ করা হয়েছে। ব্রিটেনের রেড লাইট জোনে এখন যেমন
ধীরে গাড়ি চালানো নিষেধ।
কাউকে জোর করে পতিতা বানানো যায়
নাঃ
ইউরোপের সব দেশেই পতিতাবৃত্তি আইনত বৈধ। তবে
আইন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেশভেদে একটু হলেও অন্যরকম। যেমন- স্পেন এবং পর্তুগালেও দেহব্যবসা
বৈধ। কিন্তু স্পেনে কাউকে জোর করে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনকর্মী বানানো শাস্তিযোগ্য
অপরাধ।
দক্ষিণ অ্যামেরিকায় অন্যরূপঃ
দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশ দেশেই যৌনব্যবসা বৈধ।
তবে কিছু দেশে মাফিয়া এবং মানবপাচার বড় সমস্যা হয়ে ওঠায়, এই ব্যবসার ওপর কড়াকড়ি এবং
তদারকি বেড়েছে। দেহব্যবসাকে মাফিয়াচক্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখতে ব্রাজিল এবং মেক্সিকোতে
রয়েছে কঠোর আইন। তারপরও দেশ দুটিতে মাফিয়াচক্রের আধিপত্য রয়ে গেছে।
প্রতিবেশী হয়েও নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া
আলাদাঃ
নিউজিল্যান্ডে যৌনব্যবসা একেবারেই বৈধ। তবে
প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়ার অনেক রাজ্যে এই ব্যবসা এখনো অবৈধ। ২০০৩ সালে আইন করে সব
প্রাপ্তবয়স্কের জন্য যৌনব্যবসাকে বৈধ করে দেয় নিউজিল্যান্ড।
ভারতঃ
ভারতের পতিতাবৃত্তি বৈধ। তারপরও পতিতাবৃত্তি
চলে আড়ালে-আবডালে। রাস্তায় নেমে পতিতারা খদ্দের সংগ্রহ করতে পারেন না। খদ্দেররা অর্থের
বিনিময়ে যৌনক্ষুধা মেটাতে যায় রাতের আঁধারে।
তথ্যসূত্রঃ
(1) "Sex Work Law - Countries"। Sexuality, Poverty and
Law (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৮।
(2) Nawaz Farhin (১২ মে ২০১৮)। "Sex workers still
struggling for their rights"। dhakatribune.com। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর
২০১৮।
(3) "Independent Appeal: Sex workers dicing with death in
Bangladesh"। Independent.co.uk।
(4) Mark Dummett। "Bangladesh's dark brothel steroid
secret"। Bbc.co.uk।
(5) Rasheek Irtisam (১২ আগস্ট ২০১৬)। "Is it wrong to buy
sex?"। dhakatribune.com। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
(6) Syed Mehdi Momin (৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "Brothels:
Eviction not the solution, Brothels are by no means new additions to our social
structure, and neither have they been forced on us as part of some devious
imperialistic/colonial plan"। theindependentbd.com। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর
২০১৮।
(7) "Bangladesh says prostitution legal"। BBC News। ১৪
মার্চ ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১০।
(8) "26 arrested in Uttara for involvement in flesh
trade"। Bdnews24.com।
(9) "Police arrest over 60 sex workers from hotels"।
Bdnews24.com।
(10) "2008 Human Rights Report: Bangladesh"। State.gov।
সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১০।
(11) "Sex workers:
Population size estimate - Number, 2016"। www.aidsinfoonline.org। UNAIDS। ৪
জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৮।
(12) Claudia Hammond (৯ জানুয়ারি ২০০৮)। "'I'm just here
for survival'"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
(13) Christine Jackman (২৬ অক্টোবর ২০১৩)। "Daughters of the
brothel"। Sydney Morning Herald। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
(14) Tania Rashid (৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "Sex, Slavery, and
Drugs in Bangladesh"। Vice News। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
৪৯৭ ধারা অনুযায়ী পতিতা বৃত্তি অন্যায় কিছু নয়
যারা পতিতাবৃত্তির সাথে জড়িত তারা যদি কখনো
আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে আর কাঠ গড়ায় দাঁড়িয়ে যদি বিচারকের সামনে
সে স্বীকারোক্তি দেয় যে, সে পেটের দায়ে এ কাজ করে তাহলে বিচারক সেই পতিতাকে কিছু টাকা
জরিমানা করে তখনই ছেড়ে দেয়। ছাড়া পেয়ে সেই পতিতা আবার একই পেশায় জড়িত হয়। বাংলাদেশের
প্রতিটি জেলা শহর, বন্দর কিংবা রেল স্টেশনসহ প্রায় সকল আবাসিক হোটেলগুলোতে দেদারচ্ছে
চলছে দেহ ব্যবসা। ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী এদেশে দেহব্যবসা করা অন্যায় কিছু নয়।
পতিতাবৃত্তি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
আমাদের জনসংখ্যার ৯০ ভাগের অধিক ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
পৃথিবীর ধর্মমতসমূহের মধ্যে ব্যভিচার, দেহব্যবসা বা যৌনতার বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান
সবচেয়ে কঠোর। একজন ব্যভিচারীর জন্য ইসলামে যে শাস্তির বিধান করা হয়েছে সেটি হলো পাথর
নিক্ষেপের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা। আমাদের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলেও আমাদের দেশে
ইসলামি শাসন ব্যবস্থা চালু নেই। তথাপিও সংবিধানের চেতনার আলোকে পতিতাবৃত্তি নিরোধ বিষয়ে
রাষ্ট্রযন্ত্রের কার্যকর উদ্যোগ আবশ্যক।
পতিতাবৃত্তি ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা
বলেন,
“আর শুধু পার্থিব জীবনে তোমরা কিছু স্বার্থ
লাভ করার উদ্দেশ্যে তোমাদের দাসীদেরকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করো না, যদি তারা সতীত্ব
বজায় রাখতে চায়”। (সুরা-আন-নূর ৩৩)।
সবচেয়ে নিকৃষ্ট উপার্জন হল- ব্যভিচারিণীর ঐ
উপার্জন যা সে ব্যভিচারের মাধ্যমে অর্থাৎ দেহ ব্যবসার মাধ্যমে অর্জন করেছে। এ সম্পর্কে,
রাফি’ বিন খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুকুর বিক্রয়লব্ধ মূল্য ঘৃণিত
বস্তু, যিনা-ব্যভিচারের বিনিময়ও ঘৃণিত, শিঙ্গা লাগানোর (রক্তমোক্ষণের) ব্যবসা ঘৃণিত।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৩৯০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ৩৪২১, সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৭৫, আহমাদ ১৫৮২৭, দারিমী ২৬৬৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০৭৭, সহীহাহ্
৩৬২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারের বিনিময় এবং গণকের
পারিতোষিক (গ্রহণ করা) হতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৭, ২২৮২, ২৩৪৬, ৫৭৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০১, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৬৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৫৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৪, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৭, ২২৮২, ৫৩৪৬, ৫৭৬১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৩৩, ১২৭৬,
নাসায়ী ৪২৯২, ৪৬৬৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪২৮, ৩৪৮১, আহমাদ ১৬৬২২, ১৬৬২৬,১৬৬৩৯
মুয়াত্তা মালেক ১৩৬৩, দারেমী ২৫৬৮, ইরওয়া ১২৯১,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৫৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তমোক্ষণ কাজের বিনিময়, কুকুর বিক্রয় মূল্য ও
যিনা-ব্যভিচারের বিনিময় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) লা’নাত (অভিসম্পাত) করেছেন সুদগ্রহীতা ও সুদদাতার প্রতি। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো লা’নাত করেছেন ওই ব্যক্তির প্রতি যে দেহের কোনো অংশে নাম বা
চিত্রাঙ্কন করে ও করায়। তাছাড়াও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছবি অঙ্কনকারীর
প্রতিও লা’নাত করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৫,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৬২, ২০৮৬, আহমাদ ১৮৭৬৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫৫২৯, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫৪২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হারাম অর্থ উপার্জন; বর্জনের নির্দেশ
রাসুল সাঃ বলেন,
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহকে ভয়
করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো। কেননা কোন ব্যক্তিই তার জন্য নির্দ্ধারিত
রিযিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না, যদিও তার রিযিক প্রাপ্তিতে কিছু বিলম্ব
হয়। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো, যা হালাল তাই
গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো। (সুনান ইবনু মাজাহ
২১৪৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৭, সহিহাহ ২৬০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
হারাম খাদ্যে গঠিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না
(ক)
আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে, সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৭, সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল
ঈমান ৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) জাবির
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে দেহের গোশত/গোশত হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম
ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭২, আহমাদ ১৪৪১, শু‘আবুল ঈমান
৮৯৭২, দারিমী ২৭৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা
যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও
করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : ’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ’মাল
কর’’। (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)।
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’হে মু’মিনগণ! আমি
তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ১৭২)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের
সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত
আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম,
পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির
দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পতিতার দোয়া কবুল হয় না
ওছমান ইবনে আবিল আছ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘অর্ধরাতে আকাশের দরজা খোলা হয়। তখন আল্লাহ আহ্বান করে বলেন, কোন প্রার্থনাকারী আছে
কি তার প্রার্থনা কবুল করা হবে? কোন সাহায্য প্রার্থী ব্যক্তি আছে কি তাকে সাহায্য
করা হবে? কোন সংকটে নিমজ্জিত ব্যক্তি আছে কি তার সংকট দূর করা হবে? এ সময় কোন মুসলমান
দো‘আ করলে তার দো‘আ কবুল করা হয়। তবে অশ্লীল কাজে লিপ্ত যে নারী তার প্রার্থনা কবুল
হয় না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর মাখলূকের পাশে থাকেন। যে ক্ষমা চায়
তাকে ক্ষমা করেন। তবে যে নারী অশ্লীল কাজে (যিনা/ব্যভিচারে) লিপ্ত তাকে ক্ষমা করেন
না। (ছহীহাহ ১০৭৩; ছহীহুল জামে ২৯৭১; ছহীহ আত-তারগীব ২৩৯১,
৩৪২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
হারাম পন্থায় অর্থ উপার্জনকারীদের দান খয়রাত কবুল হয় না
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া সালাত
কবূল করেন না এবং হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের দান-খয়রাত কবূল করেন না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২২৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১, আহমাদ ৪৬৮৬, ৪৯৪৯, ৫১০২, ৫১৮৩, ৫৩৯৬,
ইরওয়াহ ১২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অতএব যারা দেহ ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করে
তাদের এ নিকৃষ্ট উপার্জন সম্পূর্ণভাবে হারাম, এ উপার্জন তাদের কোন উপকারে আসে না; এ
অর্থ দিয়ে কোন কিছু করা হলে তা নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যায়।
পতিতার নিকট গমন করা ও তাদের সাথে সঙ্গম করা
যেনা/ব্যভিচারের ন্যায় মহাপাপ।
কুরআন ও হাদিস দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, যিনা-ব্যভিচার/দেহ
ব্যবসা কিংবা পতিতাবৃত্তি সম্পূর্ণ হারাম ও সমাজে এটা গর্হিত কাজ। কুরআন ও হাদিস দ্বারা
প্রথমত যিনা-ব্যভিচার/দেহ ব্যবসা কিংবা পতিতাবৃত্তি করতে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কেহ
করে তার ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তি কি হবে তার আইন বা শাস্তি কি হবে আল্লাহ তায়ালা তা
কুরআনে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন।
ইসলামি আইনে বেশ্যা/পতিতার শাস্তি
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে লি’আন করার ব্যাপারটি আলোচিত হল। ’আসিম ইবনু আদী (রাঃ) এ
ব্যাপারে একটি কথা জিজ্ঞেস করে চলে গেলেন। এরপর তাঁর গোত্রের এক ব্যক্তি তার কাছে এসে
অভিযোগ করল যে, সে তার স্ত্রীর সাথে অন্য এক লোককে পেয়েছে। ’আসিম (রাঃ) বললেনঃ অযথা
জিজ্ঞাসার কারণেই আমি এ ধরনের বিপদে পড়তাম। এরপর তিনি লোকটিকে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলেন এবং অভিযোগকারীর ব্যাপারটি তাঁকে জানালেন। লোকটি ছিল
হলদে শীর্ণকায় ও সোজা চুল বিশিষ্ট। আর ঐ লোকটি যাকে তার স্ত্রীর কাছে পেয়েছে বলে সে
অভিযুক্ত করে সে ছিল প্রায় কালো, স্থুল দেহের অধিকারী।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
হে আল্লাহ! সমস্যাটি সমাধান করে দিন। এরপর মহিলা ঐ লোকটির আকৃতি বিশিষ্ট সন্তান জন্ম
দিল, যাকে তার স্বামী তার কাছে পেয়েছে বলে উল্লেখ করেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাদের স্বামী-স্ত্রী উভয়কে লি’আন করালেন। একব্যক্তি ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-কে
সে মজলিসেই জিজ্ঞেস করলঃ এ মহিলা সম্বন্ধেই কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছিলেন? ’’আমি যদি কাউকে বিনা প্রমাণে রজম করতাম, তবে একেই রজম করতাম।’’ ইবনু ’আব্বাস
(রাঃ) বললেনঃ না, সে ছিলএক মহিলা, যে মুসলিম সমাজে প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত থাকত।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৩১০, ৫৩১০, ৫৩১৬, ৬৮৫৫,
৬৮৫৬, ৭২৩৮, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫৯, ২৫৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৯৭, নাসায়ী
৩৪৭০, ৩৪৭১, আহমাদ ৩০৯৬, আধুনিক প্রকাশনী ৪৯১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮১৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahi।
ইভটিজিং
ইভ টিজিং দক্ষিন এশিয়ার একটি অন্যতম সমস্যা। এ শব্দটি মূলত একটি পুরুষ দ্বারা নারীকে যৌন নিপীড়ন,উত্যক্ত করা,বা লাঞ্ছনা প্রদান বুঝাতে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তান
এই তিনটি দেশে সর্বাধিক পরিমানে ব্যবহৃত হয়।
ইভ টিজিং শুধু একটি সামাজিক সমস্যাই নয়,বরং
এটি একটি ভয়াবহরকমের সামাজিক ও মানসিক ব্যাধি।বাজে অঙ্গভঙ্গী,অশ্লীল মন্তব্য, অশ্লীল
ছবি ও ভিডিও প্রদর্শন,শিষ বাজানো,গায়ে হাত দেয়া ,হাততালি দেয়া ইত্যাদি ইভ টিজিং এর
সাধারন কিছু উদাহরন। আধুনিককালে মিসড কল দেয়া বা অশ্লীল মেসেজ আদান প্রদান করাও ইভ
টিজিং এর পর্যায়ে পড়ে।
ইভ টিজিং শব্দটি মূলত একটি ইন্ডিয়ান ইংলিশ
শব্দ।এই শব্দটি প্রথম মিডিয়া ও জনগনের আলোচনায় আসে ১৯৬০ সালে,কারন ৬০ দশক থেকেই অধিক
সংখ্যক নারীরা স্কুলে এমনকি কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাতায়াত শুরু করে।অধিকাংশ নারীবাদী
লেখিকারা ইভ টিজিংকে কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্ষনের সাথেও তুলনা করেছেন,যা সাধারনত বিভিন্ন
পাবলিক প্লেস,পাবলিক যানবাহন ও রাস্তাঘাটে ঘটে থাকে।
বাংলাদেশে ইভ টিজিং শব্দটির প্রচলন হয় মূলত
স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর কল্যানে। পাশ্চাত্য ও ভারতীয় সংস্কৃতির অনুকরন,বিভিন্ন অপসংস্কৃতির
প্রচার ই এর মূল কারন। এক্টি শক্তিশালী মিডিয়া একটি দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি,কিন্তু বাংলাদেশে
তার উল্টো চিত্র,এখানেই বরং ইভ টিজাররা উস্কানী পাচ্ছে বেশী।বিভিন্ন নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্রে
ইভ টিজিংকে যেভাবে উপভোগ্য করে প্রদর্শন করা হচ্ছে তাতে সমস্যার হাল তো হচ্ছে না ই
বরং তা আরো প্রকট আকারে ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।আর এর জন্য দায়ী মিডিয়া
ব্যাবসায়ীদের নতজানু মনমানসিকতা, যাদের কাছে ব্যাবসা আর মুনাফাই শেষ কথা।
আজকাল এসব ব্যাধিগ্রস্থ ইভ টিজারদের জন্য কোন
নারীই রাস্তাঘাটে নিরাপদ নয়। স্কুলছাত্রী হতে শুরু করে অভিভাবক শিক্ষিকা কেউই স্বাধীন
নয়। ইভটিজিংকে আর বড় করে দেখলে,অফিসপাড়ায় বসের কাছে সুন্দরী সহকর্মী,শিক্ষকের কাছে
ছাত্রী সবাই কোন না কোনভাবে টিজিং এর শিকার হচ্ছে।এক সমীক্ষায় দেখা গেছে টিজারদের প্রায়
৩৩% ই মধ্যবয়স্ক লোক এবং শতকরা ১১ জন নারী অফিসে তার বসের দ্বারা কোন না কোনভাবে নির্যাতিত
হচ্ছেন।
আরো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে দক্ষিন এশিয়ায় প্রতি
৫১ সেকেন্ডে একজন নারী টিজিং এর শিকার হচ্ছে। ইভ টিজিংকে অনেকেই নিছক ফান বলে উড়িয়ে
দেন।কিন্তু কিছু কিছু মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মতে তা করা কোনভাবেই উচিত নয়,কারন ইভ টিজিং
একটি মেয়ের কোমল মনে শুধু ফোবিয়াই সৃষ্টি করেনা বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা একটি মেয়েকে
চিরদিনের জন্য মানসিক ভারসাম্যহীনও করে তুলতে পারে।আর এ থেকেই ইভ টিজিং এর ভয়াবহতা
উপলব্ধি করা যায়।
১৯৯০ সালের পর থেকে ইভ টিজিং এর ভয়াল থাবা
বাংলাদেশের সুক্ষ সামাজিক বুননকে প্রকটভাবে ধ্বংস করতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে এসিড নিক্ষেপ
নামক আরো একটি শব্দ নির্যাতনে নতুন মাত্রা যোগ করে।যদিও বাংলাদেশে ইভ টিজিং এর বিরুদ্ধে
বিভিন্ন আইন রয়েছে,তারপরও ইভ টিজাররা আইনের ফাক গলে বেড়িয়ে পড়ছে এবং প্রতিনিয়ত সমাজকে
দূষিত করে চলছে।
মানব রচিত আইনে ইভ টিজিংয়ের শাস্তি
দণ্ডবিধির আইনের ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি
অন্যদের বিরক্তি সৃষ্টি করে, কোনো প্রকাশ্য স্থানের কাছাকাছি কোনো অশ্লীল কাজ করে অথবা
কোনো প্রকাশ্য স্থানে কোনো অশ্লীল গান, গাথা সংগীত বা পদাবলি গায়, আবৃত্তি করে বা উচ্চারণ
করে; সেই ব্যক্তি তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।
দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় এ বিষয়ে স্পষ্ট বিধান
আছে। এ ধারায় বলা আছে, যদি কেউ কোনো নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কথা, অঙ্গভঙ্গি বা
কোনো কাজ করে, তাহলে দায়ী ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সাজা বা অর্থদণ্ড
কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ইভ টিজিং
বা উত্ত্যক্ততা বিষয়ে বলা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের ৭৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ কোনো রাস্তায়
বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে বা সেখান থেকে দৃষ্টিগোচরে স্বেচ্ছায় এবং অশালীনভাবে
নিজ শরীর এমনভাবে প্রদর্শন করে, যা কোনো গৃহ বা দালানের ভেতর থেকে হোক বা না হোক, কোনো
নারী দেখতে পায় বা স্বেচ্ছায় কোনো রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে কোনো নারীকে
পীড়ন করে বা তার পথ রোধ করে বা কোনো রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে কোনো অশালীন
ভাষা ব্যবহার করে, অশ্লীল আওয়াজ, অঙ্গভঙ্গি বা মন্তব্য করে কোনো নারীকে অপমান বা বিরক্ত
করে, তবে সেই ব্যক্তি ১ বৎসর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ডে অথবা ২ হাজার টাকা পর্যন্ত
জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ৭৫ ধারা
অনুযায়ী সমাজে অশালীন বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শাস্তি হিসেবে তিন মাস মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড
বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। আবার যৌন পীড়ন করলে নারী ও শিশু
নির্যাতন দমন আইনে আছে কঠিন শাস্তি। হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ইভ টিজিং একটি
গুরুতর যৌন নির্যাতন হিসেবেও গণ্য হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন অনুযায়ী, ম্যাজিস্ট্রেটের
সামনে কোনো অপরাধ হয়ে থাকলে তখনই অপরাধ আমলে নিয়ে শাস্তি দিতে পারবেন। এই আইনে শাস্তি
হবে সর্বোচ্চ দুই বছর।
কীভাবে আইনের আশ্রয় নিবেন
ইভ টিজিংয়ের শিকার হলে প্রথমে নিকটস্থ থানায়
গিয়ে দ্রুত বিষয়টি অবগত করতে হবে। লিখিত অভিযোগও করা যেতে পারে। অবশ্য পুলিশ নিজে বাদী
হয়েও মামলা করতে পারে। যদি উত্ত্যক্তকারী পরিচিত কেউ হয়, তাহলে তার নাম–ঠিকানা দিতে
হবে। আর যদি অপরিচিত হয়, তাহলে যদি তার চেহারার বর্ণনা দেওয়া যায় ভালো এবং ঘটনা ও ঘটনাস্থল
সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে হবে। পুলিশের সদিচ্ছা থাকলে উত্ত্যক্তকারীদের খুঁজে আইনি ব্যবস্থা
নিতে পারে। তবে কোনো মেলায় বা কোনো আয়োজনে গেলে কাছের থানা এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার
ফোন নম্বর রাখা উচিত।
থানায় যদি অভিযোগ না নেয়, তাহলে সরাসরি আদালতের
শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ আছে। কেউ ইভ টিজিংয়ের শিকার হয় বা হচ্ছে, এমন কোনো ঘটনা দেখলে,
আশপাশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সঙ্গে সঙ্গে অবগত করা উচিত।
তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত যদি হাতেনাতে প্রমাণ পান, তাহলে ঘটনাস্থলেই শাস্তি
আরোপ করতে পারবেন। তবে মনে রাখতে হবে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিরীহ কাউকে ফাঁসানোর
চেষ্টা করলে কিন্তু ফল উল্টো হতে পারে।
ইসলামি আইনে ইভটিজিং এর শাস্তি
ইভটিজিং এর বিভিন্ন রকম আছে। কোনো নারীর পাশ
দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আড় চোখে তাকানো, পার হয়ে যাওয়ার পর বাম দিক দিয়ে ঘুরে অথবা ডান
দিক দিয়ে ঘুরে তাকানো ভিন্ন ভিন্ন ইসলামে শাস্তির ব্যবস্থা আছে। চোখে ইশারা করা বা
চোখ টিপি দেয়া, নারীকে দেখে মুচকি হাসা মোবাইলে মিস্ড কল দেয়া, এসএমএস দেয়া ইত্যাদি
ইত্যাদি ইভটিজিং এর মধ্যে পড়ে। কিন্তু এসবের শাস্তি কুরআন ও হাদিসে সরাসরি উল্লেখ নেই।
তাহলে ইসলঅমি আইনে এদের শাস্তি কি হবে? বা শাস্তির পরিমান কি? এ ক্ষেত্রে-
রাষ্ট্রের অভিজ্ঞ আলিম ফকীহরা বসে বিভিন্ন
অপরাধের সংজ্ঞা এবং শাস্তি নির্ধারণ করবেন এবং প্রয়োগ করবেন। তবে এসব শাস্তি পরিবর্তনশীল।
মানব রচিত আইনের অনেক আইন আছে যেগুলো ডিজিটাল
যুগের জন্যে সমসাময়িক। এসব আইন কুরআন-হাদিসে নেই। অনেক আইন আছে যেগুলো কুরআন-হাদিস
বিরোধী না। যেমন, তথ্য প্রযুক্তি আইন। এরকম অনেক আইন আছে যা কুরআন-হাদিস বিরোধী কিনা
তা রাষ্ট্রের অভিজ্ঞ আলিম ফকীহরা বসে যাচাই-বাছাই
অন্তে গ্রহণ করা যেতে পারে।
ধর্ষণ ও বাংলাদেশের আইন
(১) বাংলাদেশ দন্ডবিধির ১৮৬০ (১৮৬০ সালের আইন
XLV) ধারা ৩৭৫ অনুসারে- একজন পুরুষকে ‘ধর্ষণকারী’
হিসেবে গণ্য করা হবে যদি নিচের যেকোনো একটি পরিস্থিতিতে তিনি যৌন সম্পর্কে যান-
প্রথমতঃ মেয়ের
ইচ্ছার বিরুদ্ধে
দ্বিতীয়তঃ
মেয়ের অনুমতি ছাড়া
তৃতীয়তঃ
সম্মতির সাথে, কিন্তু মৃত্যুভয়ে বা আঘাত দেওয়ার কারণে সম্মতি নিয়ে
চতুর্থতঃ
সম্মতিতে, যখন মেয়েটিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ছেলেটি সম্মতি আদায় করে ছেলেটি জানে ভবিষ্যতে
সে মেয়েটিকে স্ত্রী রূপে গ্রহণ করবে না
পঞ্চমতঃ
তার সম্মতি বা সম্মতি ছাড়া, যখন ভিক্টিমের বয়স চৌদ্দ বছরের নিচে হয়।
৩৭৬ ধারা দণ্ডবিধির অধীন অনুসারে ধর্ষণের শাস্তি
যদি কেউ ধর্ষণ করে, তার অবশ্যই শাস্তি হবে
যা দশ বছরের কারাদণ্ডের সমান হতে পারে এবং জরিমানাও করা হবে যদি না ধর্ষিত নারী তার
নিজের স্ত্রী হয় এবং তার বয়স ১২ বছরের বেশী হয়।
এই পর্যন্ত চারটি ধর্ষণ বিষয়ক আইনের সন্ধান
পাওয়া গেছেঃ
(ক) Penal Code, 1860 এর Section – 375/376,
(খ) Cruelty to Women Ordinance, 1983 এর Section
-7/8,
(গ) নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, ১৯৯৫ এর ধারা- ২(গ) ততসহ
ধারা- ৬,
(ঘ)
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ধারা -৯(১)।
এই চারটি আইনই পুরুষ কর্তৃক নারী বা শিশুকে
ধর্ষণের আইন এবং তার শাস্তির বিধান। ধর্ষণ বিষয়টিকে সংজ্ঞায়িত করেছে ১৮৬০ সালের দন্ড
বিধির ৩৭৫ ধারা। এইখানে ধর্ষণ বলতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে/সম্মতি ব্যতিরেকে ইত্যাদি পাঁচ
ধরণের সহবাসকে ধর্ষণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, বিষয়টা সত্যিকার অর্থে ধর্ষণের বিচার করার
জন্য যথেষ্ট ছিল এবং সাথে এমনও একটা বিষয় সংযুক্ত করা হল যে, বিবাহিত স্ত্রীর বয়স যদি
১৩ বছরের কম হয় তবে তার সাথে মিলন উক্ত নারী উপভোগ করলেও রাষ্ট্র স্বামীকে ধর্ষণের
শাস্তি দিবে। এই বিধানটা সম্ভবত বাল্যবিবাহ ঠেকানোর জন্য করা হয়েছিল। এই আইনটি যদিও
এখনও বহাল আছে কিন্তু এই আইনে এখন আর মামলা হয়না কেননা এর পরে আরো সময়োপযোগী আইন এসেছে।
Cruelty to Women Ordinance, 1983 এর ৭/৮ ধারায়
ধর্ষণ এর কোন শাস্তির বিধান না করলেও ধর্ষণ এর সময় মৃত্যু ঘটানো বা ঘটানোর চেষ্টার
শাস্তির বিধান করা হয়েছে কিন্তু ধর্ষণের কোন শাস্তির বিধান করা হয়নি কারন ধর্ষণের বিচার
দন্ডবিধিতেই করা সম্ভব ছিল। এই আইন এখন আর কার্যকর নাই ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু আইন
প্রণয়নের সাথে সাথে বাতিল হয়ে গেছে। এই আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা দন্ডবিধির আদলেই রেখে দেয়া
হয়েছে কিন্তু ধারা – ৬ এ প্রথম বারের মত শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হয়।
এই বিধানও ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বাতিল হয়ে গেছে।
তবে ধর্ষণের ক্ষেত্রে একটি নেতিবাচক দিক বেরিয়ে আসল যখন এই আইনের ধারা-৯(১) এর ব্যাখ্যা
অংশটুকুর মাধ্যমে, যেখানে বলা আছে ” প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া” বিপত্তি
ঘটল এখানে। আর এই লাইনটা আইনে থাকায় প্রেমিকারা এখন প্রেমিকদেরকে একেবারেই হাতের মুঠোয়
পেয়ে গেছেন। উপভোগ করেন একসাথে কিন্তু ব্রেক আপ হয়ে গেলে ধর্ষণ মামলা করতে বিলম্ব করেন
না।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, এর ৯ ধারা মতে সাজাসমুহ
৯ (১) যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন,
তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয়
হবেন।
(২) যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ
পরবর্তী তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তা হলে উক্ত
ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন
এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
(৩) যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা
শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন,
তা হলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয়
হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
(৪) যদি
কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে-
(ক) ধর্ষণ
করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে
দণ্ডনীয় হইবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন;
(খ) ধর্ষণের
চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বত্সর সশ্রম
কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
(৫) যদি
পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোন নারী ধর্ষিতা হন, তা হলে যাহাদের হেফাজতে থাকাকালীন
উক্তরূপ ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য
সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তিনি বা তারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হলে, হেফাজতের
ব্যর্থতার জন্য, অনধিক দশ বছর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয়
হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
(২) ধর্ষণ ও ভারতীয় আইনঃ
ভারতীয় দণ্ডমূলক আইনে (Penal Code) একজন পুরুষ
তখনই একটি নারীকে ধর্ষণ করেছে বলে ধরা হবে, যখন দুজনের যৌন-সংসর্গ ঘটছে:
(১) সেই
নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে
(২)
সেই নারীর সন্মতি ছাড়া
(৩) সেই
নারীর সন্মতি নিয়ে, কিন্তু সেই সন্মতি আদায় করা হয়েছে তাকে বা তার প্রিয়জনকে হত্যা
বা আঘাত করা হবে বলে ভয় দেখিয়ে।
(৪) নারীটি
সন্মতি দিয়েছে এই বিশ্বাসে যে পুরুষটি তার স্বামী, যদিও পুরুষটি জানে যে সে তার স্বামী
নয়।
(৫)
নারীটি যখন সন্মতি দিয়েছে তখন সে প্রকৃতিস্থ ছিলো না, অথবা পুরুষটি বা অন্য কারো দেওয়া
হতবুদ্ধিকর বা বাজে কোনো বস্তু খেয়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলো - যার ফলে এই সন্মতির
দানের পরিণাম বোঝার ক্ষমতা তার ছিলো না।
(৬) নারীটির
সন্মতি থাকুক বা না থাকুক - তার বয়স ১৬ বছরের কম।
এ ব্যাপারে দুটি ব্যতিক্রম আছে:
(ক) স্বামী
ও স্ত্রীর যৌন-মিলনকে কোনো ক্ষেত্রেই ধর্ষণ বলে ধরা হবে না, যদি না স্ত্রীর বয়স ১৫
বছরের কম হয়, অথবা আদালতের নির্দেশে স্বামী স্ত্রী আলাদা ভাবে থাকে।
(খ) নারীর
উপর অশালীন আক্রমণ (Indecent assaul) ধর্ষণের চেষ্টা বলে ধরা হবে না, যদি না আদালত
মনে করে যে অভিযুক্ত পুরুষটি সব রকম বাধা পাওয়া সত্বেও সর্বক্ষণই নিজের কাম-চরিতার্থ
করার জন্য সচেষ্ট ছিলো।
ভারতের ধর্ষণ আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা নিয়ে অনেকেই,
বিশেষকরে নারী সংস্থাগুলি আদৌ সন্তুষ্ট নয়। এই আইনে পুরুষাঙ্গ স্ত্রী-যৌনাঙ্গের ভেতরে
প্রবেশ না করলে সেটি ধর্ষণ বলে গণ্য করা হবে না। অথচ বহু ভাবেই পুরুষ নারীর ওপর যৌন-অত্যাচার
(sexual assault) করতে পরে - দুর্ভাগ্যবশতঃ ধর্ষণ আইনের আওতায় সেগুলি পড়বে না। অন্যান্য
যৌন-অত্যাচারের ঘটনা বাদ দিয়েও ভারত সরকারের হিসেব অনুযায়ী প্রতি ঘণ্টায় দেশে একজন
করে নারী ধর্ষিতা হচ্ছে। তবে অনুমান করতে অসুবিধা হয় না যে, বাস্তবে এই সংখ্যাটি অনেক
বেশি। ধর্ষণের বহু ঘটনাই সরকারের হিসেবের মধ্যে আসে না, কারণ পুলিশকে সেগুলি জানানো
হয় না।
ভারতীয় আইনে-‘লিভ ইন’ ধর্ষণের বাইরে নয়। প্রকাশ:
২০১৫-০৩-০৯ ১০:২৫:৫৮ এএম ।
ধর্ষণের বাইরে নয় ‘লিভ ইন’। ‘লিভ ইন’ সম্পর্ককে
ধর্ষণের আওতার বাইরে রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট।
বিশেষ লক্ষণীয়ঃ
আমরা মানব রচিত আইন থেকে জানতে পারলাম যে,
কেবল ইচ্ছের বিরুদ্ধে ও শিশু ধর্ষণ করলে তার বিচার আছে। কিন্তু নারী-পুরুষ উভয়ের সম্মতিতে
এমনকি অন্যের বিবাহিত স্ত্রীও যদি সম্মতিক্রমে অন্য পুরুষের সাথে যদি যৌন সঙ্গম করে
তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না। অনেক দেশে স্ত্রীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে সহবাস করলে আর স্ত্রী
যদি আদালতে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করে তাহলে ধর্ষণের মামলা হিসেবে গৃহিত হবে।
বাংলাদেশে ধর্ষণের পরিসংখ্যান (২০১৯)- প্রকাশ,
প্রথম আলো, তারিখ-২৬/০১/২০২০।
শুধুই সরকারি হিসেব অনুযায়ীঃ
বাংলাদেশ পুলিশ: গত বছর ৫ হাজার ৪০০ নারী এবং
৮১৫টি শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। ২০১৮ সালে শিশু ধর্ষণের মামলা ছিল ৭২৭টি এবং
নারী ধর্ষণের মামলা ছিল ৩ হাজার ৯০০টি। পুলিশের হিসাব বলছে, গত বছর ধর্ষণের কারণে ১২
শিশু এবং ২৬ জন নারী মারা যান। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ২১ নারী ও ১৪ শিশু।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক): আসকের ২০১৯ সালের
বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনা আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে।
গত বছর সারা দেশে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার ১ হাজার ৪১৩ নারী ও শিশু। ২০১৮ সালে সংখ্যাটি
ছিল ৭৩২।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন: গত বছর ৯০২ শিশু ধর্ষণের
শিকার হয়। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৫৬।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম: ২০১৯ সালের প্রতিবেদন
অনুযায়ী প্রতি মাসে গড়ে ৮৪টি শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া এক বছরে যৌন নির্যাতন
বেড়েছে ৭০ শতাংশ। গত বছর যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ১ হাজার ৩৮৩ শিশু। ২০১৮ সালের চেয়ে
গত বছর শিশু ধর্ষণ ৭৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়েছে।
২০২০ এর প্রথম ১০ দিনঃ
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ২০২০ সালের প্রথম ১০ দিনে
বাংলাদেশে ১২৮ ধর্ষণ সংঘটিত হয়।
বিশ্বে ধর্ষণের পরিসংখ্যানঃ
বিগত
অক্টোবর ২৭, ২০১৬ তারিখে “দৈনিক জনকন্ঠ”
পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ীঃ ধর্ষণে বিশ্বে প্রথম ১০টি দেশঃ-
(ক) আমেরিকা:
আমেরিকার ব্যুরো অব জাসটিস স্ট্যাটিস্টিক অনুযায়ী আমেরিকায় ধর্ষণের শিকার নারীর পরিসংখ্যান
৯১% এবং ৮% পুরুষ।
ন্যাশনাল ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইম্যানের সার্ভে
অনুযায়ী আমেরিকার প্রতি ৬ জন মহিলার মধ্যে ১ জন ধর্ষণের শিকার।
পুরুষদের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানটা ৩৩ জনে ১ জন
ধর্ষণের শিকার। এই দেশে ১৪ বছর বয়স থেকেই ধর্ষণের মত অপরাধের প্রবণতা তৈরি হয় শিশু
মননে।
(খ) দক্ষিণ আফ্রিকা:
সন্তান এবং শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গোটা পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয়।
এই দেশে একজন ধর্ষকের শাস্তি মাত্র ২ বছরের কারাবাস। দক্ষিণ আফ্রিকাকে বলা হয় ‘রেপ
ক্যাপিটাল অব দ্য ওয়ার্ল্ড’।
(গ) সুইডেন: ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে সুইডেনেই
সবথেকে বেশি ধর্ষণ হয়। প্রতি বছরই প্রায় ৫৮% হারে যৌন নির্যাতনের ঘটনা বাড়ে সুইডেনে।
(ঘ) ভারত:
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো অনুযায়ী ২০১২ সালে ভারতের মত উন্নতশীল দেশে ধর্ষণের
অভিযোগ জমা হয়েছে ২৪ হাজার ৯২৩টি। ভারতে ধর্ষণের শিকার হওয়া ১০০ জন নারীর মধ্যে ৯৮
জনই আত্মহত্যা করেন। প্রতি ২২ মিনিটে ভারতে একটি করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়।
(ঙ) ব্রিটেন:
৪ লাখ মানুষ প্রতিবছর ধর্ষণের মত ঘটনার শিকার হন ব্রিটেনে। প্রতি ৫ জন মহিলার (১৬-৫৯
বছর বয়সী) মধ্যে একজন করে ধর্ষণের শিকার হন।
(চ) জার্মানি:
এখনও পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার নারীর মৃত্যু হয়েছে জার্মানিতে। প্রতি
বছর জার্মানিতে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয় ৬৫ লাখ ৭ হাজার, ৩৯৪।
(ছ) ফ্রান্স:
১৯৮০ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের মত ঘটনা ফ্রান্সে অপরাধ বলেই মানা হত না। ফ্রান্সের সরকারী
গবেষোণায় দেখা গেছে প্রতি বছরে এই দেশে ধর্ষণের শিকার হন অন্তত ৭৫ হাজার নারী।
(জ) কানাডা:
এই দেশে এখনও পর্যন্ত লিখিত অভিযোগের (ধর্ষণ) সংখ্যা ২৫ লাখ ১৬ হাজার ৯১৮টি (এই সময়
পর্যন্ত)। প্রতি ১৭ জন মহিলার মধ্যে ১ জন করে মহিলা এই দেশে ধর্ষিতা হন। যাদের মধ্যে
৬২% শারীরিকভাবে আহত হন।
(ঝ) শ্রীলঙ্কা:
এই দেশে অপরাধের শতাংশের বিচারে ১৪.৫ শতাংশ অপরাধ সংগঠিত হয় ধর্ষণে। ধর্ষণে অভিযুক্তদের
৬৫.৮% ধর্ষণের মত নারকীয় কর্মকান্ডে লিপ্ত থেকেও কোনও প্রকার অনুশোচনা তাদের মধ্যে
হয় না।
(ঞ) ইথিওপিয়া:
এই দেশের ৬০% নারী ধর্ষণের শিকার।
দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত অনুয়ায়ী
এটাই প্রমাণিত যে, ধর্ষণ বেড়েই চলছে। শুধু মাত্র অবাধ মেলামেশা, অবাধ চলাফেরা, পোশাকের
নগ্নতা ও ইসলামি অনুশাসন না থাকায় যিনা/ব্যাভচার ও ধর্ষণ বেড়েই চলছে। যেসব দেশে ইসলামি
শাসন ব্যবস্থা কায়েম আছে সেসব দেশে ধর্ষণের হার খুবই কম। ২০০২ সাল অনুযায়ী প্রতি ১,০০,০০০
জনের মধ্যে মাত্র ০.৩ জন ধর্ষণের ঘটনা জনসম্মুখে প্রকাশ করে। সৌদি আরবে ধর্ষণের হার এতো কম কেনো? কারণ একটাই ইসলামি শরিয়াহ
ভিত্তিক সেখানের ধর্ষকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। এই আইন যদি অন্যান্য দেশ গ্রহণ
করতো তাহলে ধর্ষণের হার হয়তো জিরোতে নেমে আসতো।
ইসলামি আইনে
(ধর্ষণ ও যেনা/ব্যভিচারের শাস্তির
মধ্যে পার্থক্য)
ধর্ষণের শাস্তি ও যেনা বা ব্যভিচারের শাস্তির
মধ্যে কিছুটা তারতম্য রয়েছে। যেনা বা ব্যভিচারে লিপ্ত হলে তার শাস্তি বিবাহিত পুরুষ
ও নারীর জন্য প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদন্ড ও অবিবাহিতদের জন্য একশ’ বেত্রাঘাত ও এক বছর
নির্বাসন। (নূর ২৪/০২; সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৬৩৩; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯৭ - ১৬৯৮; মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৫৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৪৫, নাসায়ী ৫৪১০, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১৪৩৩, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪৯, আহমাদ ১৭০৩৮, দারিমী ২৩৬৩, ইরওয়া ১৪৬৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আর বিবাহিত ও অবিবাহিত ধর্ষকের জন্য যথাক্রমে
প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদন্ড ও একশ’ বেত্রাঘাতের সাথে একদল বিদ্বান মিছলে মোহর তথা উক্ত
নারীর সামাজিক অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ
মোহর জরিমানা হিসাবে যুক্ত করেছেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭২; মুওয়াত্তা মালেক হা/১৪, ২/৭৩৪; আল-মুনতাকা শারহুল মুওয়াত্তা
৫/২৬৮-৬৯; ইবনু আব্দিল বার্র, আল-ইস্তিযকার ৭/১৪৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আর যদি অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করা হয় বা হত্যার
উদ্দেশ্যে শারিরীকভাবে আঘাত করা হয় বা হত্যা করা হয়, তাহ’লে সেটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল, যার শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, “যারা আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং জনপদে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে, তাদের শাস্তি এটাই যে,
তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে
দেওয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটা তাদের জন্য দুনিয়াবী লাঞ্ছনা। আর আখেরাতে
তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি”। (মায়েদাহ ৫/৩৩)।
সেক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী আদালত উপযুক্ত
শাস্তি নির্ধারণ করবে। উল্লেখ্য যে, ধর্ষণের শিকার নারীর কোন শাস্তি হবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭২)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
তবে সে যে মূলত ধর্ষণের শিকার হয়েছে সে ব্যাপারে
প্রমাণ থাকতে হবে। যেমন চিৎকার করা, প্রশাসনকে অবহিত করা বা নিজেকে হেফাযতের জন্য সর্বাত্মক
চেষ্টার ব্যাপারে কোন প্রমাণ থাকা। (আব্দিল বার্র, আল-ইস্তিযকার
৭/১৪৬)।
ধর্ষণের কারণ ও ইসলামি বিধি বিধান
(১) যুবক-যুবতীর নির্জনতা অবলম্বনঃ যুবক-যুবতীর নির্জনতা
অবলম্বন, একান্তে গমন-ভ্রমণ, কোনো বাড়ি বা রুমে একাকী উভয়ের বসবাস, রিক্সা বা গাড়িতে
চালকের সাথে একাকিনী যাতায়াত, দোকানে দোকানদারের কাছে একাকিনী মার্কেট করা, দর্জির
কাছে একান্তে পোশাকের মাপ দেওয়া, ডাক্তারের সহিত নার্সের অথবা রোগিণীর একান্তে চিকিৎসা
কাজ, প্রাইভেট টিউটরের কাছে একাকিনী পড়াশোনা করা ইত্যাদি। এগুলি ব্যভিচারের এক একটি
সূক্ষ্ম ছিদ্রপথ।
কোনো নারী কোনো পুরুষের সাথে একান্তে থাকবে না
নারী-পুরুষের কোনো নির্জন স্থানে একাকী বাস,
কিছুক্ষণের জন্যও লোক-চক্ষুর অন্তরালে, ঘরের ভিতরে, পর্দার আড়ালে একান্তে অবস্থান শরীয়তে
হারাম। যেহেতু তা ব্যভিচার না হলেও ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে, ব্যভিচারের ভূমিকা অবতারণায়
সহায়িকা হয়।
উকবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! মহিলাদের সাথে
তোমরা কেউ অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ করবে না। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৭২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১১৭১, আহমাদ ১৭৩৫২, গায়াতুল মারাম ১৮১, আধুনিক প্রকাশনী ৪৮৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮৫২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এ ব্যাপারে সমাজে অধিক শৈথিল্য পরিলক্ষিত হয়
দেওর-ভাবী ও শালী-বুনাই-এর ক্ষেত্রে। অথচ এদের মাঝেই বিপর্যয় ঘটে অধিক। কারণ ‘পর চোরকে
পার আছে, ঘর চোরকে পার নাই।’ তাই তো আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের
পক্ষে তাদের দেবরকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করেছেন।”
উকবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! মহিলাদের সাথে
তোমরা কেউ অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ করবে না। আনসার সম্প্রদায়ের এক লোক বললেন, হে আল্লাহর
রাসূল! দেবর সম্পর্কে আপনার মত কি? তিনি বললেনঃ সে তো মৃত্যু (সমতুল্য)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২১৭২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭১, আহমাদ ১৭৩৫২, গায়াতুল মারাম ১৮১, আধুনিক
প্রকাশনী ৪৮৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব দেওরের সাথে মায়ের বাড়ি, ডাক্তারখানা,
অনুরূপ বুনাই-এর সাথে বোনের বাড়ি, ডাক্তারখানা বা কোনো বিলাস-বিহারে যাওয়া-আসা এক মারাত্মক
বিস্ফোরক প্রথা বা ফ্যাশন।
তদনুরূপ তাদের সাথে কোনো কামরা বা স্থানে নির্জনতা
অবলম্বন, বাড়ির দাসী বা দাসের সাথে গৃহকর্তা বা কর্ত্রী অথবা তাদের ছেলে-মেয়ের সাথে
নিভৃত বাস, বাগদত্তা বরকনের একান্তে আলাপ বা গমন, বন্ধু-বান্ধবীর একত্রে নির্জন বাস,
লিফটে কোনো বেগানা যুবক-যুবতীর একান্তে উঠা-নামা, ডাক্তার ও নার্সের একান্তে চেম্বারে
অবস্থান, টিউটর ও ছাত্রীর একান্তে নির্জন-বাস ও পড়াশোনা, স্বামীর অবর্তমানে কোনো বেগানা
আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে নির্জন-বাস, ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে বা রিক্সায় রিকশাচালকের
সাথে নির্জনে গমন, তথাকথিত পীর ও তথাকথিত মহিলা মুরিদের একান্তে বায়াত ও তা‘লীম প্রভৃতি
একই পর্যায়ের; যাদের মাঝে শয়তান কুটনি সেজে অবৈধ বাসনা ও কামনা জাগ্রত করে কোনো পাপ
সংঘটিত করতে চেষ্টা করে।
বারুদের নিকট আগুন রাখা হলে বিস্ফোরণ তো হতেই
পারে। যেহেতু মানুষের মন বড় মন্দ প্রবণ এবং দুর্নিবার কামনা ও বাসনা মানুষকে অন্ধ ও
বধির করে তোলে। তা ছাড়া নারীর মাঝে রয়েছে মনোরম কমনীয়তা, মোহনীয়তা এবং চপলতা। আর শয়তান
তো মানুষকে অসৎ কাজে ফাঁসিয়ে দিয়ে আনন্দ বোধ করে থাকে। অনুরূপ কোনো বেগানা মহিলার সাথে
নির্জনে নামায পড়াও বৈধ নয়।
তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীর নিকট নিজের সন্তান
দেখতে গিয়ে বা কোনো কাজে গিয়ে তার সাথে নির্জনতাও অনুরূপ। কারণ, সে আর স্ত্রী নেই।
আর এমন মহিলার সাথে বিপদের আশঙ্কা বেশী। শয়তান তাদেরকে তাদের পূর্বের স্মৃতিচারণ করে
ফাঁসিয়ে দিতে পারে।
বৃদ্ধ-বৃদ্ধার একান্তে বা তাদের সাথে যুবতী-যুবকের
নির্জন বাস, কোনো হিজরে বা খাসি করা নারী-পুরুষের আপসে বা তাদের সাথে যুবক-যুবতীর,
একাধিক মহিলার সাথে কোনো একটি যুবক অথবা একাধিক পুরুষের সাথে এক মহিলার, কোনো সুশ্রী
কিশোরের সাথে যুবকের নির্জন বাসও অবৈধ। প্রয়োজন হলে এবং মহিলার মাহরাম না পাওয়া গেলে
কোনো মহিলার জামাতে একজন পুরুষ থেকে সফর করায় অনেকের নিকট অনুমতি রয়েছে। প্রকাশ যে,
মহিলার সাথে কোনো নাবালক শিশু থাকলে নির্জনতা কাটে না।
ব্যভিচার থেকে সমাজকে দূরে রাখার জন্যই ইসলামে
নারী-পুরুষে অবাধ মেলা-মেশা, নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই অফিসে, মেসে, ক্লাসরুমে, বিয়ে
ও মরা বাড়িতে, হাসপাতালে, বাজারে প্রভৃতি ক্ষেত্রে উভয় জাতির একত্রে অবাধ মেলা-মেশা
করা অবৈধ।
মুসলিম নারীর শিক্ষার অর্থ এই নয় যে, তাকে
বড় ডিগ্রী, সুউচ্চ পদ, মোটা টাকার চাকুরী পেতে হবে। তার শিক্ষা জাতি গঠনের জন্য, সমাজ
গড়ার জন্য, মুসলিম দেশ ও পরিবেশ গড়ার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু শিখতে পারলেই যথেষ্ট;
যদিও তা ঘরে বসেই হয়। তাছাড়া পৃথক গার্লস স্কুল-কলেজ না থাকলে মিশ্র শিক্ষাঙ্গনে মুসলিম
নারীর শিক্ষায় ‘জল খেতে গিয়ে ঘটি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাই অধিক ঘটে থাকে; যে সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে
শিক্ষিত হওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু আদর্শ মুসলিম হওয়া যায় না। নারীর স্বনির্ভরশীলা হয়ে
জীবন-যাপন করায় গর্ব আছে ঠিকই, কিন্তু সুখ নেই। প্রকৃতির সাথে লড়ে আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা
করে নানান বিপত্তি ও বাধাকে উল্লঙ্ঘন করে অর্থ কামিয়ে স্বাধীনতা আনা যায় ঠিকই; কিন্তু
শান্তি আনা যায় না। শান্তি আছে স্বামীর সোহাগে, স্বামীর প্রেম, ভালোবাসা ও আনুগত্যে।
পরিত্যক্তা বা নিপীড়িতা হলে এবং দেখার কেউ না থাকলে মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজে তার কালাতিপাত
করার যথেষ্ট সহজ উপায় আছে। যেখানে নেই সেখানকার কথা বিরল। অবশ্য দ্বীন ও দুনিয়ার প্রকৃত
মূল্যায়ন করতে পারলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে উঠবে। যারা পরকালের চিরসুখে বিশ্বাসী
তারা জাগতিক কয়েকদিনের সুখ-বিলাসের জন্য দ্বীন ও ইজ্জত বিলিয়ে দেবে কেন?
যার স্বামী বিদেশ আছে তার নিকট গমন নিষিদ্ধ
ব্যভিচারের কাছে যাওয়ার আর এক পদক্ষেপ কোনো
এমন মহিলার নিকট কোনো গম্য আত্মীয় বা অন্য পুরুষের গমন যার স্বামী বর্তমানে বাড়িতে
নেই, বিদেশে আছে। কারণ এমন স্ত্রীর মনে সাধারণত: যৌন ক্ষুধা একটু তুঙ্গে থাকে, তাই
বিপদ ঘটাই স্বাভাবিক। স্ত্রী বা ঐ পুরুষ যতই পরহেজগার হোক, তবুও না।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাদের স্বামী উপস্থিত নেই, সে সকল মহিলাদের নিকট তোমরা
যেও না। কেননা, তোমাদের সকলের মাঝেই শাইতান (প্রবাহিত) রক্তের ন্যায় বিচরণ করে। আমরা
বললাম, আপনার মধ্যেও কি? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, আমার মধ্যেও। কিন্তু আমাকে আল্লাহ তা’আলা
সাহায্য করেছেন, তাই আমি নিরাপদ। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১১৭২, তাখরাজু ফিকহিস সীরাহ ৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আমর ইবনুল আস (রাযিঃ)-এর মুক্তদাস (আবূ কাইস
’আবদুর রাহমান ইবনু সাবিত) হতে বর্ণিত, কোন একদিন আমর ইবনুল "আস (রাযিঃ) আসমা
বিনতু উমাইসের নিকট যাবার অনুমতি প্রার্থনার জন্য তাকে আলী (রাযিঃ)-এর নিকট পাঠান।
তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। তিনি (আমর) যখন প্রয়োজনীয় আলাপ শেষ করলেন, তখন উক্ত গোলাম
এ প্রসঙ্গে আমর ইবনুল আস (রাযিঃ)-কে প্রশ্ন করল। তিনি বললেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বামীদের অনুমতি ব্যাতিত তাদের স্ত্রীদের নিকট যেতে আমাদেরকে নিষেধ
করেছেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৭৯, আদাবুয যিফাফ
নতুন সংস্করণ (২৮২-২৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মেয়েরা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ)
ব্যতীত অন্য কারো সাথে সফর করবে না। মাহরাম কাছে নেই এমতাবস্থায় কোন পুরুষ কোন মহিলার
নিকট গমন করতে পারবে না। এ সময় এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক অমুক
সেনাদলের সাথে জিহাদ করার জন্য যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হাজ্জ করতে যেতে চাচ্ছে।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তার সাথেই যাও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৬২, ৩০০৬, ৩০৬১, ৫৩৩৩, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৪১, আহমাদ ১৯৩৪, আধুনিক প্রকাশনী
১৭২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭৩৭, আহমাদ ১৯৩৫, ৩২২১, ইরওয়া ৯৮১, রাওদুন নাদীর ১০১৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) অবাধ মেলামেশাঃ পর্দার সাথে হলেও পাশাপাশি
নারী-পুরুষের অবস্থান ব্যভিচারের এক বিপজ্জনক ছিদ্রপথ। একই বাড়িতে চাচাতো প্রভৃতি ভাই-বোন,
স্কুল-কলেজে ও চাকুরী-ক্ষেত্রে যুবক-যুবতীর অবাধ দেখা-সাক্ষাৎ, অনুরূপ মার্কেটে, মেলা-খেলায়,
বিয়েবাড়ি, মরা-বাড়ি, হাসপাতাল প্রভৃতি জায়গায় নারী-পুরুষের বারবার সাক্ষাতের ফলে পরিচয়
এবং প্রেম, আর তারপরই শুরু হয় ব্যভিচার।
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘তোমাদের কি
শরম নেই? তোমাদের কি ঈর্ষা নেই? তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে পর-পুরুষদের মাঝে যেতে ছেড়ে
দাও এবং এরা ওদেরকে ও ওরা এদেরকে দেখাদেখি করে!’ (দেখুন-হাকাযা
তুদাম্মিরু জারীমাতুল জিনসিয়্যাতু আহলাহা পৃ. ২২।)
নারী হাত স্পর্শ করা হারাম
তদ্রূপ বেগানা নারীর সাথে মুসাফাহা বৈধ নয়।
হাতে মোজা, দস্তানা বা কাপড়ের কভার রেখেও নয়। কাম মনে হলে তা হবে হাতের ব্যভিচার।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো
স্ত্রী ছাড়া আর কোনো মহিলার হাত স্পর্শ করেননি।
“আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ ঈমানদার নারীদের মধ্যে
যারা আয়াতে উল্লেখিত) শর্তাবলী মেনে নিত, তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হত। তাই যখনই তারা
এ সম্পর্কে মুখে স্বীকারোক্তি করত তখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাদেরকে বলতেন যাও, আমি তোমাদের বাই’আত গ্রহণ করেছি। আল্লাহর কসম! কথার দ্বারা বাই’আত
গ্রহণ ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত কখনো কোন নারীর হাত
স্পর্শ করেনি। আল্লাহর কসম! তিনি কেবল সেসব বিষয়েই বাই’আত গ্রহণ করতেন, যে সব বিষয়ে
বাই’আত গ্রহণ করার জন্য আল্লাহ তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাই’আত গ্রহণ শেষে তিনি বলতেনঃ
আমি কথা দ্বারা তোমাদের বাই’আত গ্রহণ করলাম”। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন ৫২৮৮, ২৭১৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৭২৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৬৬, আহমাদ ২৬৩৮৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯০০, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন- ৪৭৯৫) । হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahi।
নারীর করতল চেপে ধরা এবং সুড়সুড়ি দেওয়াও হলো
তার ইঙ্গিত! কোনো গম্য নারীর দেহ স্পর্শ, বাসে-ট্রেনে, হাটে-বাজারে, স্কুলে-কলেজে প্রভৃতি
ক্ষেত্রে গায়ে গা লাগিয়ে চলা বা বসা, নারী-পুরুষের ম্যাচ খেলা ও দেখা প্রভৃতি ইসলামে
হারাম। কারণ, এ সবগুলিও অবৈধ যৌনাচারের সহায়ক। এগুলো মানুষের হাত পা ও চোখের ব্যভিচার।
সমাজ সংস্কারক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ্
(রাযিঃ) এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আদম
সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে অংশ লিখিত রয়েছে তা অবশ্যই সে, প্রাপ্ত হবে। নিঃসন্দেহে
দু’চোখের ব্যভিচার হলো তাকানো, দু’কানের ব্যভিচার হলো শোনা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো কথোপকথন
করা, হাতের ব্যভিচার হলো শক্ত করে ধরা, পায়ের ব্যভিচার হলো হেঁটে যাওয়া, হৃদয়ের
ব্যভিচার হচ্ছে কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে বা মিথ্যা সাব্যস্ত
করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৬৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৫৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
“কোন ব্যক্তির মাথায় লৌহ সুচ দ্বারা খোঁচা
যাওয়া ভালো, তবুও যে নারী তার জন্য অবৈধ তাকে স্পর্শ করা ভালো নয়”। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ, আলবানী: ২২৬)।
(৩) বিবাহে বিলম্বঃ
সঠিক ও উপযুক্ত বয়সে বা প্রয়োজন-সময়ে বিয়ে না হলে যৌন ক্ষুধা নিবারণের জন্য ব্যভিচার
ঘটা স্বাভাবিক। অধ্যয়ন শেষ করার আশায় অথবা চাকরি পাওয়ার অপেক্ষায় অথবা সামাজিক কোনো
বাঁধায় (বিধবা) বিবাহ না হওয়ার ফলে ব্যভিচারের এক চোরা পথ খোলা যায়। অভিবাবকদের দায়িত্ব
ও কর্তব্য হবে ছেলে মেয়েদের উপযুক্ত বয়সে বিবাহ দেয়া। মূলত উপযুক্ত বয়সে বিবাহ না দেয়া
কারণে ছেলে-মেয়েরা যিনা-ব্যভিচারের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ইন্টারনেটের যুগ আসায় এখন বাহিরে
গিয়ে সেক্স করতে হয়না। ঘরে বসেই নিজেদের সতীত্ব নষ্ট করছে। এজন্যে ইসলাম বিবাহের প্রতি
গুরুত্বারুপ করেছে বেশী।
ইসলাম বৈরাগ্য জীবন পছন্দ করে নাঃ ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব
(ক) আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ’ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা
’ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে
আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ্ ক্ষমা ক’রে দেয়া হয়েছে।
এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সালাত আদায় করতে থাকব। অপর
একজন বলল, আমি সব সময় সওম পালন করব এবং কক্ষনো বাদ দিব না।
অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও
বিয়ে করব না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং
বললেন, ’’তোমরা কি ঐ সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে
তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশিঅনুগত; অথচ আমি সওম পালন
করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি।
সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩২৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০১, আহমাদ ১৩৫৩৪, নাসায়ী ৩২১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯০,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ’আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস’উদ (রাঃ)-এর
সাথে মিনায় উপস্থিত ছিলাম। ’উসমান (রাঃ) এসে তাঁর সাথে একান্তে কথা বলেন। আমিও তার
নিকটেই বসলাম। ’উসমান (রাঃ) তাঁকে বলেন, আমি কি তোমার সাথে এক কুমারী মেয়ের বিবাহ দিবো,
যে তোমার অতীত যৌবনের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে? ’আবদুল্লাহ (রাঃ) যখন দেখলেন যে, তার উদ্দেশ্য
কেবল বিবাহ করার উৎসাহ প্রদান করা, তখন তিনি আমাকে হাতের ইশারায় ডাকলেন। আমি তার নিকটে
গেলাম এবং তিনি তখন বলছিলেন, তুমি যদি এ কথায় রাযী হয়ে যেতে। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যার বিবাহ করার সামর্থ্য
আছে, সে যেন বিবাহ করে। কেননা তা দৃষ্টিশক্তিকে সংযতকারী এবং লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী।
আর যার এ সামর্থ্য নেই, সে যেন রোযা রাখে। কেননা এটি তার জন্য জৈবিক উত্তেজনা প্রশমনকারী।
(সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৪৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৯০৫, ৫০৬৫, ৫০৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩২৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৮১, নাসায়ী
২২৩৯, ২২৪০, ২২৪১, ২২৪২, ২২৪৩, ৩২০৬, ৩২০৭, ৩২০৮, ৩২০৯, ৩২১১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)২০৪৬,
আহমাদ ৩৫৮১, ৪১০১, দারেমী ২১৬৫, ২১৬৬, ইরওয়াহ ১৭৮১, সহীহ আবী দাউদ ১৭৮৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(গ) সাহ্ল ইবনু সা'দ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক মহিলা রসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার জীবনকে আপনার হাতে
সমর্পণ করতে এসেছি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে তাকালেন এবং
সতর্ক দৃষ্টিতে তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করলেন। তারপর তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলাটি
দেখল, নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে কোন ফয়সালা দিচ্ছেন না,
তখন সে বসে পড়ল। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীদের মধ্যে
একজন দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! যদি আপনার বিয়ের প্রয়োজন না থাকে, তবে
আমার সঙ্গে এর বিয়ে দিয়ে দিন। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন,
তোমার কাছে কিছু আছে কি? সে উত্তর করলো- না, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রসূল! আমার কাছে
কিছুই নেই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের
কাছে ফিরে গিয়ে দেখ, কিছু পাও কিনা। এরপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম!
আমি কিছুই পাইনি। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আবার
দেখ, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার ফিরে গেল। এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল!
তাও পেলাম না, কিন্তু এই আমার লুঙ্গি (শুধু এটাই আছে)। (রাবী) সাহ্ল (রাঃ) বলেন, তার
কাছে কোন চাদর ছিল না। লোকটি এর অর্ধেক তাকে দিতে চাইল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে তোমার লুঙ্গি দিয়ে কী করবে? তুমি যদি পরিধান কর, তাহলে
তার কোন কাজে আসবে না, আর সে যদি পরিধান করে, তবে তোমার কোন কাজে আসবে না। তারপর বেশ
কিছুক্ষণ লোকটি নীরবে বসে থাকল। তারপর উঠে দাড়াল। সে যেতে উদ্যত হলে নাবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কী পরিমাণ কুরআন মাজীদ
মুখস্থ আছে? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে গণনা করল। নাবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কি তোমার মুখস্থ আছে। সে বলল, হা। নাবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে
তোমার কাছে এ মহিলাটিকে তোমার অধীনস্থ করে (বিয়ে) দিলাম। বুখারীর অন্য একটি বর্ণনায়
আছে, আমি তোমাকে তার উপরে অধিকার দিয়ে দিলাম— তোমার জানা কুরআন তাকে শিক্ষা দেয়ার
বিনিময়ে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩১১, ৫০২৯,
৫০৩০, ৫০৮৭, ৫১২১, ৫১২৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪২৫,
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১১৪, নাসায়ী ৩২৮০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১১১,
সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৮৯, আহমাদ ২২২৯২, মুওয়াত্তা মালেক ১১১৮,দারেমী ২২০১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
(ঘ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে নারীকে তার অভিভাবক বিবাহ দেয়নি তার বিবাহ বাতিল। স্বামী
তার সাথে সহবাস করলে তাতে সে মাহরের অধিকারী হবে। তাদের মধ্যে মতবিরোধ হলে সে ক্ষেত্রে
যার অভিভাবক নাই, শাসক তার অভিভাবক। -আবু আওয়ানাহ, ইবনু হিব্বান ও হাকিম একে সহীহ
বলেছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৮৩, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১১০২. সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৭৯, ১৮৮০. আহমাদ ২৩৬৮৫, ২৩৮৫১, দারেমী ২১৮৪)।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।
(ঙ) আবু
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন, কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে
তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! কেমন
করে তার অনুমতি নেয়া হবে। তিনি বললেন, তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার অনুমতি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫১৩৬, ৬৯৬৮ , ৬৯৭০, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৩৩৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪১৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১০৭,
নাসায়ী ৩১৬৪, ৩২৬৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৯২, ২০৯৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৭১,
আহমাদ ৭০৯১, ৭৩৫৬, দারেমী ২১৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(চ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন, যে দাস তার মুনিবের বা আপনজনের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করবে সে ব্যভিচার বা যিনাকারী
বলে গণ্য হবে। -তিরমিয়ী; তিনি একে সহীহও বলেছেন, ইবনু হিব্বানও তদ্রুপ। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১১১, ১১১২, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ২০৭৮. আহমদ ১৪৬১৩, ১৪৬৭৩, দারেমী ২৩৩৩)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।
(ছ) আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন, কেউ যেন ফুফু ও তার ভাতিজিকে এবং খালা এবং তার বোনঝিকে একত্রে বিয়ে না করে।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫১০৯, ৫১১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩২৭,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১২৬, নাসায়ী ৩২৮৮, ৩২৮৯,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৬৫, ২০৬৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২৯, আহমাদ ৭০৯৩, ৭৪১৩,
মুওয়াত্তামালেক ১১২৯, ১২৭৮, দারেমী ২১৭৮) ৷ হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(জ)
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দোর্রা লাগান (যিনার দায়ে শাস্তি প্রাপ্তা) মেয়েকে তার মত
(দুশ্চরিত্র) পুরুষ ব্যতীত বিবাহ করবে না। -এর সকল রাবী নির্ভরযোগ্য। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৫২. আহমাদ ৮১০১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
(ঞ) যাহ্হাক্
বিন ফাইরুয দায়লামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি ইসলাম গ্রহন করেছি এবং আমার বিবাহে দু’ (সহোদর) বোন
রয়েছে। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেনঃ তোমার ইচ্ছামত এদের
মধ্যে একজনকে তালাক দিয়ে পৃথক করে দাও। -ইবনু হিব্বান, দারাকুতনী ও বাইহাকী একে সহীহ
বলেছেন; আর বুখারী সানাদের ত্রুটি বর্ণনা করেছেন। (সুনান
আন নাসায়ী ৩৪১৬, আহমাদ ৪২৭১, ৪২৯৬, মালেক ২২৫৮)।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।
(৪) মহিলাদের বেপর্দা চলন ও নগ্নতাঃ মহিলাদের বেপর্দা
চলন ও নগ্নতাঃ ব্যভিচার ও ধর্ষণের এটি একটি বড় কারণ। ছিলা কলাতে মাছি বসা স্বাভাবিক।
ছিলা লেবু বা খোলা তেঁতুল দেখলে জিভে পানি আসা মানুষের প্রকৃতিগত ব্যাপার। অনুরূপ পর্দা-হীনা,
অর্ধ নগ্না ও প্রায় পূর্ণ নগ্না যুবতী দেখলে যুবকের মনে কাম উত্তেজিত হওয়াও স্বাভাবিক।
আর এ জন্যই ইসলামে পর্দার বিধান অনুসরণ করা মহিলার উপর ফরয করা হয়েছে। নারীকে তার সৌন্দর্য
বেগানা পুরুষকে প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে। (সূরা
নূর, আয়াত: ৩১)।
আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন যে,
ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমণী মাত্রই আবরণীয় (বিষয়), যখন সে বের
হয় তখন শায়ত্বন তাকে সুশোভিত করে তোলে বা শায়ত্বন হাত আড় করে তার প্রতি তাকায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১০৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১১৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন তিনি ও মায়মূনাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট
উপস্থিত ছিলেন, এমন সময় ’আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মু মাকতূম সেখানে আসলে তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁদেরকে পর্দার আড়ালে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। আমি (উম্মু সালামাহ্
(রাঃ)) বললাম, সে কি অন্ধ নয়? সে তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছে না! এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি অন্ধ যে, তাকে দেখতে পাচ্ছ না? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১১৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৪১১২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৭৮, আহমাদ ২৬৫৩৭, ইরওয়া ১৮০৬, য‘ঈফাহ্ ৫৯৫৮,
রিয়াযুস্ সলিহীন ১৬৩৪)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
উক্ত হাদীস দ্বারা এটাই প্রমানিত হয় যে, পর্দা
নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই । কোন পুরুষ যেমন কোন পর নারীর প্রতি তাকাতে পারবে না, কোন
নারীও তেমনি কোন পর পুরুষের দিকে তাকাতে পারবে না । এখানে সু-দৃষ্টি আর কু-দৃষ্টিরও
কোন পার্থক্য নেই । কারন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম যেমন একজন
পূত পবিত্র স্বভাবের অধিকারী, পূন্যবান মহান বুযুর্গ সাহাবী; অপরদিকে হযরত উম্মে সালামা
(রাঃ) (রাঃ) ও মাইমূনা (রাঃ) উভয়ই হলেন উম্মত-জননী এবং প্রিয়তম নবী (সঃ) এর জীবন
সঙ্গিনী । সুতরাং, এ ক্ষেত্রে কু-দৃষ্টির কথা চিন্তাই করা যায় না। তারপরও পর্দা করতে
আদেশ করা হয়েছে । কাজেই সহজেই অনুমেয় যে, পর্দা কত গুরুত্বপূর্ন বিষয় এবং তা পালন
করা কত জরুরী ।
আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা আসমা বিনতু
আবূ বকর (রাঃ) পাতলা কাপড় পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নিকট এলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে নিজের মুখ ফিরিয়ে নিয়ে
বললেনঃ হে আসমা! মেয়েরা যখন সাবালিকা হয় তখন এই দু’টো অঙ্গ ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ প্রকাশ
করা তার জন্য সংগত নয়, এ বলে তিনি তাঁর চেহারা ও দু’ হাতের কব্জির দিকে ইশারা করেন।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
এখানে বেগানা পরপুরুষের কথা উল্লেখ নাই । সুতরাং
গৃহে অবস্থানকালে যদি পরপুরুষ না থাকে তাহলে সেখানে মুখমন্ডল ও হাতের কব্জি খোলা রাখায়
সমস্যা নেই ।
কিন্তু অন্য বর্ননায় বেগানা পরপুরুষের সামনে
মেয়েদের মুখমন্ডল ও হাতের কব্জি খোলা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে । (ফাতাওয়ায়ে রাহীমিয়া
৪/১০৬, কিফায়াতুল মুফতী ৫/৩৮৮)।
যেমন হাদিসে ইরশাদ হয়েছে-
হযরত কায়স ইবনে শামমাস (রাঃ) বর্ননা করেন,
এক মহিলা রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর দরবারে এল। তাকে উম্মে খাল্লাদ বলে ডাকা হত । তার মুখ
ছিল নেকাবে ঢাকা। সে আল্লাহর পথে তার শহীদ পুত্র সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট
জানতে এসেছিল। তখন তাকে এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার পুত্র সম্পর্কে জানতে
এসেছ, আর মুখে নেকাব । হযরত উম্মে খাল্লাদ (রাঃ) তাকে উত্তরে বললেন, আমি আমার ছেলেকে
হারিয়ে এক বিপদে পড়েছি, এখন লজ্জা হারিয়ে তথা মুখমন্ডলসহ গোটা শরীর পর্দা না করে
কি আরেক বিপদে পড়ব ? (আবু দাউদ - ১/৩৩৭)।
উপরোক্ত হাদীস থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে,
মেয়েদের পর্দা তথা মোটা ও ঢিলাঢালা কাপড় দ্বারা চেহারাসহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা জরুরী।
পরপুরুষকে শরীরের কোন অংশ তারা দেখাতে পারবে না ।
হযরত বুরাইদা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ
(সঃ) বলেন, হে আলী ! তুমি হঠাত্ কোন মহিলার উপর দৃষ্টি পড়ার পর দ্বিতীয়বার ইচ্ছা
করে তাকাবে না। কারন প্রথমবার অনিচ্ছাকৃত তাকানো তোমার জন্য মাফ হলেও দ্বিতীয়বার ইচ্ছাকৃত
তাকানো মাফ নয়। (আবু দাউদ শরীফ-১/২৯২)।
চিন্তা করুন ৪র্থ খলিফা এবং চার তরিকা তথা
চিশ্তিয়া, কাদেরিয়া, নকশাবন্দিয়া ও সোহরাওয়ার্দিয়া সকল পীরের পীর হযরত আলী (রাঃ)
। তার জন্য হাদীসে পাকে এ নির্দেশ, তাহলে উম্মতের অন্যান্য পুরুষের জন্য পর্দার হুকুমে
যে কত কঠিন হবে, তা তো সহজেই অনুমেয় ।
বর্তমান যুগের মেয়েরা ওড়নাবিহীন অবস্থায় চলাফেরা
করতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। অনেকে ওড়না গলায় ঝুলিয়ে বেড়ায়।আবার অনেকে এমন টাইট জামা পরিধান
করে যা বাহিরে থেকে সেই মেয়ের পুরো বডি মাপা যায়। এমন পোশাক পরেও মেয়েরা উলঙ্গ। রাসুল
সাঃ বলেন,
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুই প্রকার জাহান্নামী লোক আমি
(এখন পর্যন্ত) প্রত্যক্ষ করিনি (অর্থাৎ পরে তাদের আবির্ভাব ঘটবে) : (১) এমন এক সম্প্রদায়
যাদের কাছে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা জনগণকে প্রহার করবে। (২) এমন এক
শ্রেণীর মহিলা, যারা (এমন নগ্ন) পোশাক পরবে যে, (বাস্তবে) উলঙ্গ থাকবে, (পর পুরুষকে)
নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও (পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে
উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মত। এ ধরনের মহিলারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও
পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরত্বের পথ থেকে পাওয়া যাবে।’’(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৮,
আহমাদ ৮৪৫১, ৯৩৩৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৫৪১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
মহিলার দিকে তাকানো থেকে বিরত থাকা
পর পুরুষের দৃষ্টিতে মহিলার সর্বশরীর লজ্জাস্থান।
বিশেষ করে চক্ষু এমন এক অঙ্গ যার দ্বারা বিপত্তির সূচনা হয়। চোখাচোখি থেকে শুরু হয়,
কিন্তু শেষ হয় গলাগলিতে। এই ছোট্ট অঙ্গার টুকরা থেকেই সূত্রপাত হয় সর্বগ্রাসী বড় অগ্নিকান্ডের
মহা বিপদ।
সুতরাং এ দৃষ্টি বড় সাংঘাতিক বিপত্তি। যার
জন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে
(নজর ঝুকিয়ে চলে) এবং তাদের যৌনাঙ্গকে হেফাযতে রাখে; এটিই তাদের জন্য উত্তম। ওরা যা
করে, আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারাও যেন নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত
রাখে ও লজ্জাস্থান সংরক্ষন করে---।” প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“(কোন নারীর উপর তোমার দৃষ্টি পড়লে তার প্রতি) বারবার দৃকপাত করো না। বরং নজর সত্বর
ফিরিয়ে নিও, কারণ, তোমার জন্য প্রথমবার ক্ষমা, দ্বিতীয়বার নয়”। (আহমদ ১৩৬৯)।
যেহেতু “চক্ষুও ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার
হল (কাম) দৃষ্টি।”
সুতরাং, এ দৃষ্টিকে ছবি থেকেও সংযত করতে হবে
এবং পরপুরুষ থেকে আড়ালে রাখতে হবে। যাতে একহাতে তালি নিশ্চয়ই বাজবে না। আর এই বড় বিপদ
সৃষ্টিকারী অঙ্গ চোখটি থাকে চেহারায়। চোখাচোখি যাতে না হয় তাই তো নারীর জন্য জরুরী
তার চেহারাকেও গোপন করা।
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘কোন পুরুষ অন্য পুরুষের গুপ্তাঙ্গের দিকে যেন না তাকায়। কোন নারী অন্য নারীর
গুপ্তস্থানের দিকে যেন না তাকায়। কোন পুরুষ অন্য পুরুষের সঙ্গে একই কাপড়ে যেন (উলঙ্গ)
শয়ন না করে। (অনুরূপভাবে) কোন নারী, অন্য নারীর সাথে একই কাপড়ে যেন (উলঙ্গ) শয়ন না
করে। (রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৬৩৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৬২৭, মুসলিম ৩৩৮, আহমাদ ১১২০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইসলামের সুসভ্য দৃষ্টিতে নারীর পর্দা ও সভ্য লেবাসের কয়েকটি শর্ত
(ক) মুসলিম
মহিলা যে পোশাক ব্যবহার করবে তাতে যেন পর্দা পাওয়া যায়; অর্থাৎ সেই পোশাক যেন তার সারা
দেহকে আবৃত করে। সুতরাং, যে লেবাসে নারীর কেশদাম, গ্রীবা, বক্ষদেশ, উদর ও পৃষ্ঠদেশ
(যেমন, শাড়ি ও খাটো ব্লাউজে) এবং হাঁটু ও জাং (যেমন, স্ক্যাট, ঘাগরা, ফ্রক ইত্যাদিতে)
প্রকাশিত থাকে তা (গম্য পুরুষদের সামনে) পরিধান করা হারাম।
(খ)
এই লেবাস যেন সৌন্দর্যময় ও দৃষ্টি-আকর্ষণকারী না হয়। সুতরাং, কামদার (এমব্রয়ডারি করা)
চকচকে রঙিন বোরকাও পরা বৈধ নয়।
(গ)
এমন পাতলা যেন না হয় যাতে ভিতরের চামড়ার রঙ নজরে আসে। অতএব পাতলা শাড়ি, উড়না প্রভৃতি
মুসলিম মহিলার ড্রেস নয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“দুই
শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী; যাদেরকে আমি দেখিনি। (তারা ভবিষ্যতে আসবে।) প্রথম
শ্রেণী (অত্যাচারীর দল) যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক, যদ্দারা তারা লোককে
প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় শ্রেণী হল সেই নারীদল; যারা কাপড় তো পরিধান করবে, কিন্তু তারা
বস্তুত: উলঙ্গ থাকবে, যারা পুরুষদের আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে,
যাদের মস্তক (খোপা বাঁধার কারণে) উটের হিলে যাওয়া কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ
করবে না, তার গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া
যাবে।”
(ঘ) এমন
টাইটফিট বা আঁট-সাঁট যেন না হয়; যাতে দেহাঙ্গের উচ্চতা ও নীচতা এবং আকার ও আকৃতি কাপড়ের
উপরেও বুঝা যায়। তাই এমন চুস্ত ও ফ্যাশনের লেবাস মুসলিম নারী পরিধান করতে পারে না,
যাতে তার সুডৌল স্তন-যুগল, সুউচ্চ নিতম্ব সরু কোমর প্রভৃতির আকার প্রকাশ পায়।
টাইটফিট ইত্যাদি লেবাস যে বড় ফিতনাসৃষ্টিকারী
ও হারাম তা বিভিন্ন লেডিস অন্তর্বাস কোম্পানীর নামই সাক্ষ্য দেয়।
(ঙ)
এই লেবাস যেন পুরুষদের পোষাকের অনুরূপ না হয়। সুতরাং প্যান্ট, শার্ট প্রভৃতি পুরুষদের
মত পোশাক কোনো মুসলিম মহিলা ব্যবহার করতে পারে না। যেহেতু পুরুষদের বেশধারিণী নারীদের
উপর আল্লাহর অভিশাপ থাকে, তাই কোনো পুরুষের জন্য পুরুষের বেশ ধারণ করা উচিত নয়। রাসূল
সা. বলেন,
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন নারীর বেশধারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশধারিণী
নারীদেরকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৫৮৮৫, ৫৮৮৬, ৬৮৩৪, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৭৮৪, ২৭৮৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৯৭, ৪৯৩০, আহমাদ ১৯৮৩, ২০০৮,
২১২৪, ৩৪৪৮, দারেমী ২৬৪৯, রওয ৪৪৭, আল-আদাব ৪৪৭, হিজাবুল মারআহ ৬৭)।হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(চ) তদ্রূপ
তা যেন কাফের মহিলাদের অনুরূপ না হয়। অবশ্য ঢিলে ম্যাক্সি ও শেলোয়ার কামীস এবং তার
উপর চাদর বা উড়না; যা মাথার কেশ, বক্ষস্থল ইত্যাদি আচ্ছাদিত করে তা মুসলিম নারীর লেবাস।
কেবলমাত্র শেলোয়ার কামীস বা ম্যাক্সি অথবা তার উপর বক্ষে ও গ্রীবায় থাক বা ভাঁজ করা
উড়নার লেবাস কাফের মহিলাদের। অনুরূপ শাড়ি যদি সর্বশরীরকে ঢেকে নেয় তবে মুসলিমদের; নচেৎ
থাক করে বুকে চাপানো থাকলে তথা কেশদাম ও পেট-পিঠ প্রকাশ করে রাখলে তা অমুসলিম মহিলাদের
লেবাস। আর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করবে, সে সেই
জাতির দলভুক্ত”। (আহমদ, হাদিস: ৫১১৪)।
(ছ) এই পোশাক যেন জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ তথা প্রসিদ্ধি
জনক না হয়।
(জ) লেবাস
যেন সুগন্ধিত বা সুরভিত না হয়। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, যে নারী সুগন্ধি ছড়িয়ে লোকালয়ে
যায়, সে বেশ্যা নারী। প্রকাশ যে, নারীদেহে যৌবনের চিহ্ন দেখা দেওয়া মাত্রই এই শর্তের
পোশাক পরা ওয়াজেব।
নারীদের কোন্ কোন্ অঙ্গ দেখানো যাবে
স্বামী-স্ত্রীর
মাঝে কোনো পর্দা নেই উভয়েই এক অপরের পোশাক।
উভয়েই উভয়ের সর্বাঙ্গ দেখতে পারে। তবে সর্বদা
নগ্ন পোশাকে থাকা উচিত নয়।
মা-বেটার মাঝে পর্দা ও গোপনীয় কেবল নাভি হতে
হাঁটু পর্যন্ত। অন্যান্য নিকটাত্মীয়; যাদের সাথে চিরকালের জন্য বিবাহ হারাম তাদের সামনে
পর্দা ও গোপনীয় অঙ্গ হল গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত।
অবশ্য কোনো চরিত্রহীন এগানা পুরুষের কথায় বা
ভাবভঙ্গিতে অশ্লীলতা ও কামভাব বুঝলে, মহিলা তার নিকটেও যথা সম্ভব অন্যান্য অঙ্গও পর্দা
করবে।
মহিলার সামনে মহিলার পর্দা নাভি থেকে হাঁটু
পর্যন্ত। মহিলা কাফের হলে তার সামনে হাত ও চেহারা ছাড়া অন্যান্য অঙ্গ খোলা বৈধ নয়।
যেমন, কোনো নোংরা ব্যভিচারিণী মেয়ের সামনেও নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করা উচিত নয়। অনুরূপ
এমন কোনো মহিলার সামনেও দেহসৌষ্ঠব খোলা নিষিদ্ধ; যে তার কোনো বন্ধু বা স্বামীর নিকট
অন্য মহিলার রূপচর্চা করে বলে জানা যায় বা আশঙ্কা হয়। এমন মহিলার সাথে মুসলিম মহিলার
সখীত্ব বা বন্ধুত্বও বৈধ নয়।
মা-বাপের চাচা ও মামা, মেয়ের চাচা ও মামা মাহরাম।
সুতরাং চাচাতো দাদো বা নানার সামনে পর্দা গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত।
তালাকের পর ইদ্দত পার হয়ে গেলে ঐ স্বামী এই
স্ত্রীর জন্য বেগানা হয়ে যায়। সুতরাং তার নিকটে পর্দা ওয়াজেব।
পালিত পুত্র থেকে পালয়িত্রী মায়ের এবং পালয়িতা
বাপ থেকে পালিতা কন্যার পর্দা ওয়াজেব। প্রকাশ যে, ইসলামে এ ধরনের প্রথার কোনো অনুমতি
নেই।
অনুরূপ পাতানো ভাই বোন, মা-বেটা, বাপ-বেটির
মাঝে, পীর ভাই-বোন (?)
বিয়াই-বিয়ান ও বন্ধুর স্বামী বা স্ত্রীর মাঝে
পর্দা ওয়াজেব। যদিও তাদের চরিত্র ফিরিশতার মত হয় তবুও দেখা দেওয়া হারাম। পর্দা হবে
আল্লাহর ভয়ে তাঁর আনুগত্যের উদ্দেশ্যে। মানুষের ভয়ে বা লোক প্রদর্শনের জন্য নয়। এতে
মানুষের চরিত্র ও সম্মান বিচার্য নয়। সুতরাং লম্পট, নারীবাজ, পরহেজগার, মৌলবি সাহেব
প্রভৃতি পর্দায় সকলেই সমান। আল্লাহর ফরয মানতে কোনো প্রকারের লৌকিকতা ও সামাজিকতার
খেয়াল অথবা কারো মনোরঞ্জনের খেয়াল নিশ্চয় বৈধ নয়।
দৃষ্টিহীন অন্ধ পুরুষের সামনে পর্দা নেই। অবশ্য
মহিলাকে ঐ পুরুষ থেকে দৃষ্টি সংযত করতে হবে।
পৃথক মহিলা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান না থাকলে বেপর্দায়
ছেলেদের সাথে একই সাথে পাশাপাশি বসে শিক্ষা গ্রহণ বৈধ নয়। স্বামী-সংসার উদ্দেশ্য হলে
বাড়িতে বসে বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ বই-পুস্তক পড়া এবং দ্বীন-সংসার শিখার শিক্ষাই যথেষ্ট।
অন্যান্য শিক্ষার প্রয়োজনে যথাসম্ভব পর্দার সাথে শিখতে হবে। পর্দার চেষ্টা না করে গড্ডালিকা
প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিলে অবশ্যই মেয়ে-অভিভাবক সকলেই পাপী হবে।
চিকিৎসার প্রয়োজনে মহিলার জন্য ডাক্তার খোঁজা
ওয়াজেব। লেডী ডাক্তার না পেলে অথবা যথাবিহিত চিকিৎসা তার নিকট না হলে বাধ্য হয়ে পুরুষ
ডাক্তারের নিকট যেতে পারে। তবে শর্ত হল মহিলার সাথে তার স্বামী অথবা কোনো মাহরাম থাকবে।
একাকিনী ডাক্তার-রুমে যাবে না। পরন্তু ডাক্তারকে কেবল সেই অঙ্গ দেখাবে, যে অঙ্গ দেখানো
প্রয়োজন। লজ্জা স্থান দেখলেও অন্যান্য অঙ্গ দেখানো অপ্রয়োজনে বৈধ হবে না। মহান আল্লাহ
বলেন,
“তোমরা আল্লাহকে যথাসম্ভব ভয় কর”। (সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৬)।
একাকিনী হলেও নামাযে আদবের লেবাস জরুরী। এই
সময় কেবল চেহারা ও হাত খুলে রাখা যাবে। শাড়ি পরে বাহু-পেট-পিঠ-চুল বের হয়ে গেলে নামায
হয় না। যেমন, সম্মখে বেগানা পুরুষ থাকলে চেহারাও ঢাকতে হবে।
সেলোয়ার-কামিস বা ম্যাক্সিতে নামায পড়লে চাদর
জরুরী। কুরআন শরীফ পড়তে গিয়ে মাথা খুলে গেলে ক্ষতি নেই। এতে ওযুও নষ্ট হয় না। আল্লাহ
বলেন,
“বৃদ্ধা
নারী; যারা বিবাহের আশা রাখে না, তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে যদি বহির্বাস
খুলে রাখে তাহলে তা দোষের নয়। তবে পর্দায় থাকাটাই তাদের জন্য উত্তম”। (সূরা নূর, ৬০)।
যেহেতু কানা বেগুনের ডগলা খদ্দেরও বর্তমান।
পর্দায় থাকলে বাড়ির লোক ঠাট্টা করলে এবং কোনো প্রকার অথবা সর্বপ্রকার সহায়তা না করলে
মহিলার উচিত যথাসম্ভব নিজে নিজে পর্দা করা। এ ক্ষেত্রে হাল ছেড়ে বসা বৈধ নয়। কল-পায়খানা
নেই বলে ওজর গ্রহণযোগ্য নয়। স্বামী পর্দায় থাকতে না দিলে চেষ্টার পরও যদি একান্ত নিরুপায়
হয়ে বেপর্দা হতে হয় তবুও যথাসাধ্য নিজেকে সংযত ও আবৃত করবে। আল্লাহ এ চেষ্টার অন্তর
দেখবেন। যারা সহায়তা করে না বা বাধা দেয় তাদের পাপ তাদের উপর।
পক্ষান্তরে বেগানা পুরুষ দেখে ঘর ঢুকলে বা
মুখ ঢাকলে যারা হাসাহাসি করে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে, কটাক্ষ হানে অথবা অসমীচীন মন্তব্য
করে বা টিস্ মারে, শরয়ী পর্দা নিয়ে যারা উপহাস করে তারা কাফের। এই পর্দানশীন মহিলারা
কাল কিয়ামতে ঐ উপহাসকারীদেরকে দেখে হাসবে।
সুতরাং মুমিন নারীর দুঃখ করা উচিত নয়, একাকিনী
হলেও মন ছোট করা সমীচীন নয়। সত্যের জয় অবধারিত, আজ অথবা কাল। মরতে সকলকেই হবে, প্রতিফল
সকলেই পাবে।
পর্দায় থাকার জন্য দেওর-ভরা সংসার থেকে পৃথক
হয়ে আলাদা ঘর বাড়ি করার জন্য স্ত্রী যদি তার স্বামীকে তাকীদ করে তবে তা স্বামীর মানা
উচিত; বরং নিজে থেকেই হওয়া উচিত। বিশেষ করে তার ভাইরা যদি অসৎ প্রকৃতির হয়। ইসলামে
এটা জরুরী নয় যে, চিরদিন ভাই-ভাই মিলে একই সংসারে থাকতে হবে। যা জরুরী তা হল, আল্লাহর
দ্বীন নিজেদের জীবন ও পরিবেশে কায়েম করা, আপোষে ভ্রাতৃত্ব-বোধ ও সহায়তা-সহানুভূতি রাখা।
সকলে মিলে পিতা-মাতার যথাসাধ্য সেবা করা। কিন্তু হায়রে! আল্লাহতে প্রেম ও বিদ্বেষ করতে
গিয়ে মানুষের মাঝে মানুষকে দুশমন হতে হয়। হারাতে হয় একান্ত আপনকে। যেহেতু, আল্লাহর
চেয়ে অধিক আপন আর কে?
পর্দা নিজের কাছে নয়। কোনো ইঁদুর নিজের চোখ
বন্ধ করে যদি মনে করে যে, সে সমস্ত বিড়াল থেকে নিরাপদ তবে এ তার বোকামী নয় কি? নারীর
সৌন্দর্য দেখে বদখেয়াল ও কুচিন্তা আসাও মানুষের জন্য স্বাভাবিক। অতএব পর্দা না করে
কি কাম লোলুপতা ও ব্যভিচারের ছিদ্রপথ বন্ধ করা সম্ভব? নারীর মোহনীয়তা, কমনীয়তা ও মনোহারিত্ব
লুকিয়ে থাকে তার লজ্জাশীলতায়। নারীর লজ্জাশীলতা তার রূপ-লাবণ্য অপেক্ষা বেশী আকর্ষণীয়।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“অশ্লীলতা বা নির্লজ্জতা যে বিষয়ে থাকে, সে
বিষয়কে তা সৌন্দর্যহীন করে ফেলে; পক্ষান্তরে লজ্জাশীলতা যে বিষয়ে থাকে, সে বিষয়কে তা
সৌন্দর্যময় ও মনোহর করে তোলে”। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১৮৫; তিরমিযি ১৯৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সভ্য লেবাসের পর্দা থেকে বের হওয়া নারী-স্বাধীনতার
যুগে পর্দা বড় বিরল। এর মূল কারণ হল লজ্জাহীনতা। কেননা, লজ্জাশীলতা নারীর ভূষণ। ভূষণ
হারিয়ে নারী তার বসনও হারিয়েছে। দ্বীনী সংযম নেই নারী ও তার অভিভাবকের মনে। পরন্তু
সংযমের বন্ধন একবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে উদ্দাম-উচ্ছৃঙ্খলতা বন্যার মত প্রবাহিত হয়।
তাতে সংস্কার, শিক্ষা, চরিত্র, সবই অনায়াসে ভেসে যায়। শেষে লজ্জাও আর থাকে না। বরং
এই লজ্জাহীনতাই এক নতুন ‘ফ্যাশন’ রূপে ‘সভ্য’ ও ‘আলোক প্রাপ্ত’ নামে সুপরিচিতই লাভ
করে। সত্যই তো, বগল-কাটা ব্লাউজ ও ছাঁটা চুল না হলে কি সভ্য নারী হওয়া যায়? আধা বক্ষ-স্থল,
ভুঁড়ির ভাঁজ ও জাং প্রভৃতি গোপন অঙ্গে দিনের আলো না পেলে কি ‘আলোক প্রাপ্ত’ হওয়া যায়?!
[নাউযুবিল্লাহ]
বলাই বাহুল্য যে, মুসলিম নারী-শিক্ষার ‘সুবেহ
সাদেক’ চায়, নারী-দেহের নয়। মুসলিম নারী-বিদ্বেষী নয়, নারী-শিক্ষার দুশমনও নয়। মুসলিম
বেপর্দা তথা অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের দুশমন। শিক্ষা, প্রগতি, নৈতিকতা তথা পর্দা সবই মুসলিমের
কাম্য। আর পর্দা প্রগতির পথ অবরোধ করতে চায় না; চায় বেলেল্লাপনা ও নগ্নতার পথ রুদ্ধ
করতে।
পক্ষান্তরে পর্দাহীনতা; আল্লাহ ও তাঁর রসূলের
অবাধ্যতা।
পর্দাহীনতা; নগ্নতা, অসভ্যতা, অশ্লীলতা, লজ্জাহীনতা,
ঈর্ষাহীনতা ও ধৃষ্টতা।
পর্দাহীনতা; সাংসারিক অশান্তি, ধর্ষণ, অপহরণ,
ব্যভিচার প্রভৃতির ছিদ্রপথ।
পর্দাহীনতা; যৌন উত্তেজনার সহায়ক। মানবরূপী
শয়তানদের চক্ষুশীতলকারী।
পর্দাহীনতা; দুষ্কৃতীদের নয়নাভিরাম।
পর্দাহীনতা; কেবল ধর্মীয় শৃঙ্খল থেকে নারী-স্বাধীনতা
নয়, বরং সভ্য পরিচ্ছদের ঘেরাটোপ থেকে নারীর সৌন্দর্য প্রকাশ ও দেহ মুক্তির নামান্তর।
পর্দাহীনতা; কিয়ামতের কালিমা ও অন্ধকার।
পর্দাহীনতা; বিজাতীয় ইবলীসী ও জাহেলিয়াতি প্রথা।
বরং সভ্য যুগের এই নগ্নতা দেখে জাহেলিয়াতের পর্দাহীনারাও লজ্জা পাবে। বেপর্দার জন্য
জাহান্নামের আগুন থেকে কোনো পর্দা নেই।
পর্দা সংক্রান্ত জরুরী মাসায়েল
মেয়েরা যখন কারীবুল বুলুগ বা বালেগা হওয়ার
কাছাকাছি পর্যায়ে পৌছে; অর্থাৎ তারা নিজেরা কামভাব অনুধাবন করতে পারে এবং তাঁদের দিকে
তাকালে অন্য পুরুষের মনে কামভাব সৃষ্টি হয়, তখন থেকেই তাঁদের জন পর্দা করা জরুরী হয়ে
পড়ে । (আহসানুল ফাতাওয়া, ৮/৩৭)।
হাকীমুল উম্মাত মুজাদ্দিলুল মিল্লাত হযরত মাওলানা
আশরাফ আলী থানভী (রঃ) বলেন যে, গায়ের মাহরাম অনাত্মীয় হলে তাঁদের থেকে সাত বছরের
আগে থেকেই পর্দা করা উচিত এবং গায়ের মাহরাম আত্মীয় হলে সাত বৎসর থেকেই পর্দা করা
উচিত । কারন অনেক ক্ষেত্রে সাবালিকা মহিলা সামনে আসা-যাওয়া করাতে এ পরিমান ফিতনার
আশঙ্কা নেই, যে পরিমান আশঙ্কা থাকে কারীবুল বুলুগ মেয়েদের সামনে আসা যাওয়া করাতে
। (ইসলাহে খাওয়াতীন-৩৭২)।
“আমার পর আমি পুরুষের জন্য নারীর ফেতনার চেয়ে
অধিক ক্ষতিকারক কোনো ফিতনা রেখে যাইনি” (বুখারী, ৫০৯৬ ; মুসলিম, ২৭৪০)। নারীর ফেতনাই
হল বড় ফেতনা। এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে নারীদের বিষয়ে
অধিক সতর্ক করেছেন। যাতে এ ফিতনা থেকে বেঁচে থাকা যায় এবং পর্দার বিধান রেখেছেন। মাহরাম
অর্থাৎ যাদের সাথে চিরতরে বিবাহ অবৈধ, তারা ব্যতীত বেগানা অর্থাৎ, যাদের সাথে বিবাহ
হারাম নয়, এমন লোকদের সাথে পর্দা করতে হয়।
(৫) মেয়েদের অতিরিক্ত সাজ-সজ্জা করে পর্দাহীনভাবে বাহিরে বের হওয়াঃ
বিবাহিত মেয়েদের সাজ সজ্জা মূলত শুধুই তার স্বামীকে সন্তুষ্ট করার জন্যে করতে হয়। বাহিরের
পরপুরুষকে দেখানোর জন্যে নয়। কিন্তু বর্তমান যুগে তার পুরোটাই উল্টো। যার ফলে কারো
মনে ব্যাধি থাকলে এই অতিরিক্তি মেকআপ, অলংকার ও পোশাকের ঝলকানীতে মেয়েদের প্রতি আকৃষ্ট
হয় এবং পরবর্তীতে ধর্ষনে রুপ নেয়। এক্ষেত্রে ইসলামের হুকুম হচ্ছে কোনো মেয়ে বাহিরে
সাজ-সজ্জা করে বের হবে না। কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করবে না।
সুগন্ধি ব্যবহার করে নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ
অনুরূপ কোনো প্রকার সেন্ট বা পারফিউমড্ ক্রিম
অথবা পাউডার ব্যবহার করে বাইরে পুরুষদের সম্মুখে (পর্দার সাথে হলেও) যাওয়া ব্যভিচারের
নিকটবর্তী হওয়ার এক ভূমিকা। যেহেতু যুবকের প্রবৃত্তি এই যে, মহিলার নিকট হতে সুগন্ধ
পেলে তার যৌন-চেতনা উত্তেজনায় পরিণত হয়। যার জন্যই সংস্কারক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
“প্রত্যেক
চক্ষুই ব্যভিচারী। আর নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো (পুরুষের) মজলিসের পাশ দিয়ে
পার হয়ে যায় তাহলে সে এক বেশ্যা।” এমন কি এই অবস্থায় নামাযের জন্য যেতেও নিষিদ্ধ। প্রিয়
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে মহিলা সেন্ট ব্যবহার করে মসজিদে যায়,
সেই মহিলার গোসল না করা পর্যন্ত কোনো নামায কবুল হবে না”। (সহীহ আল-জামে আস-সগীর আযযিয়াদাতুহ: ২৭০)।
(ক)
আবদুর রহমান ইবনু সাল্লাম জুমাহী (রহঃ)...আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক (রাস্তায়) চলাফেরা করছিল। তার মাথার
চুল ও দু’টি চাদর তাকে পুলকিত করে তুলছিল। এমন সময় তাকে জমিনে দাবিয়ে দেয়া হলো।
সে কিয়ামত অবধি মাটির নিচে দাবতে থাকবে। (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী ৫৩৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২৯০, ইসলামিক
সেন্টার ৫৩০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ)
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন এক আনসারী মহিলা তার মেয়েকে
বিয়ে দিলেন। কিন্তু তার মাথার চুলগুলো উঠে যেতে লাগল। এরপর সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে এ ঘটনা বর্ণনা করে বলল, তার স্বামী আমাকে বলেছে আমি যেন আমার
মেয়ের মাথায় কৃত্রিম চুল পরিধান করাই। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
না তা করো না, কারণ, আল্লাহ্ তা’আলা এ ধরনের মহিলাদের ওপর লা’নত বর্ষণ করেন, যারা মাথায়
কৃত্রিম চুল পরিধান করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫২০৫, ৫৯৩৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(গ) আবদুল্লাহ্
ইবনে মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্ লা’নাত করেছেন ঐ সমস্ত
নারীর প্রতি যারা অন্যের শরীরে উল্কি অংকণ করে, নিজ শরীরে উল্কি অংকণ করায়, যারা সৌন্দর্যের
জন্য ভূরু-চুল উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। সে সব নারী আল্লাহর সৃষ্টিতে
বিকৃতি আনয়ন করে। এরপর বানী আসাদ গোত্রের উম্মু ইয়াকূব নামের এক মহিলার কাছে এ সংবাদ
পৌঁছলে সে এসে বলল, আমি জানতে পারলাম, আপনি এ ধরনের মহিলাদের প্রতি লা’নত করেছেন। তিনি
বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার প্রতি লা’নাত করেছেন, আল্লাহর
কিতাবে যার প্রতি লা’নাত করা হয়েছে, আমি তার প্রতি লা’নাত করব না কেন? তখন মহিলা বলল,
আমি দুই ফলকের মাঝে যা আছে তা (পূর্ণ কুরআন) পড়েছি। কিন্তু আপনি যা বলেছেন, তা তো এতে
পাইনি।
’আবদুল্লাহ্ বললেন, যদি তুমি কুরআন পড়তে তাহলে
অবশ্যই তা পেতে, তুমি কি পড়নি রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে যা
দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক। মহিলাটি
বলল, হাঁ নিশ্চয়ই পড়েছি। ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তখন মহিলা বলল, আমার মনে হয় আপনার পরিবারও এ কাজ করে তিনি
বললেন, তুমি যাও এবং ভালমত দেখে এসো। এরপর মহিলা গেল এবং ভালভাবে দেখে এলো। কিন্তু
তার দেখার কিছুই দেখতে পেলো না। তখন ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বললেন, যদি আমার স্ত্রী এমন
করত, তবে সে আমার সঙ্গে একত্র থাকতে পারত না। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮৮৬, ৪৮৮৭, ৫৯৩১, ৫৯৩৯, ৫৯৪৩, ৫৯৪৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫৪৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৫, আহমাদ ৪৩৪৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৪৫২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ)
হুমায়দ ইব্নু ‘আবদুর রাহমান (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি মু‘আবিয়া ইব্নু আবূ সুফ্ইয়ান (রাঃ)-কে
বলতে শুনেছেন যে, তার হাজ্জ পালনের বছর মিম্বরে নববীতে উপবিষ্ট অবস্থায় তাঁর দেহরক্ষীদের
কাছ থেকে মহিলাদের একগুচ্ছ চুল নিজ হাতে নিয়ে তিনি বলেন যে, হে মীনাবাসী! কোথায় তোমাদের
আলিম সমাজ? আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ রকম পরচুলা ব্যবহার হতে
নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, বনী ইসরাঈল তখনই ধ্বংস হয়, যখন তাদের মহিলাগণ এ ধরনের
পরচুলা ব্যবহার করতে শুরু করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৪৬৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৭)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
(ঙ)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ
করেছেন।’
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী
মহিলাদেরকে অভিশাপ করেছেন।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৮৮৫, ৫৮৮৬, ৬৮৩৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৮৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৪০৯৭৮, ৪৯৩০, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০৪, আহমাদ ১৯৮৩, ২০০৭, ২১২৪, ২২৬৩, ২২৯১, ৩১৪১, ৩৪৪৮,
দারেমী ২৬৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(চ) আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সেই পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন, যে মহিলার পোশাক পরে এবং সেই মহিলাকে অভিসম্পাত
করেছেন যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে।’(সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৪০৯৮, আহমাদ ৮১১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৬) মেয়েদের কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গীতে কথা বলা নিষেধঃ
আল্লাহ বলেন, হে নবী পত্নীগন ! (উদ্দেশ্য উম্মতের সকল মহিলা) তোমরা অন্য নারীদের মত
নও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে পরপুরুষের সাথে এমন কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গীতে
কথা বলো না, যার ফলে যে ব্যক্তির অন্তরে ব্যধি রয়েছে সে কু-বাসনা করবে । আর তোমরা
সঙ্গত কথাবার্তা বলন। (সূরা আহযাব, আয়াত ৩২)।
উক্ত আয়াতটিও নারীদের পর্দা সম্পর্কিত, তাঁদের
কন্ঠ ও বাক্যালাপ নিয়ন্ত্রন সংক্রান্ত । আয়াতে فَلَا
تَخْضَعْنَ
بِالْقَوْلِ
এর ব্যাখ্যা হচ্ছে যদি পরপরুষের সাথে পর্দার অন্তরাল থেকে কথা বলা প্রয়োজনীয়তা দেখা
দেয়, তাহলে বাক্যালাপের সময় নারী কন্ঠের স্বভাবসুলভ কোমলতা ও লাজুকতা কৃত্রিমভাবে
পরিহার করবে। অর্থাৎ, এমন কোমলতা বা শ্রোতার মনে অবাঞ্ছিত কামনা সঞ্চার করে, তার কোন
সুযোগ দিবে না।
যেমন এর পরে এরশাদ হয়েছে ,অর্থাৎ এরুপ কোমল
কন্ঠে বাক্যালাপ করো না, যা ব্যধিগ্রস্থ অন্তর বিশিষ্ট লোকের মনে কু-লালসা ও আকর্ষন
সৃষ্টি করে।
মোদ্দাকথা, নারীদেরকে পরপুরুষের থেকে নিরাপদ
দূরত্বে অবস্থান করে পর্দার এমন উন্নত স্তর অর্জন করা উচিত, যাতে কোন অপরিচিত দূর্বল
ঈমান বিশিষ্ট লোকের অন্তরে কোন কামনা ও লালসা সৃষ্টি করা তো দূরের কথা, তার নিকটেও
ঘেষবা না । বরং তার বিরুদ্ধে অবস্থা ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে । (মা’আরিফুল কোরআন-৭/১৩২)।
স্বর্ণযুগের সোনার মানুষ পুন্যাত্মা নবী-পত্নীগনকে
যদি স্বর্ণযুগের স্বর্ণমানব সাহাবায়ে কেরামের সাথে পর্দার আড়াল করা সত্ত্বেও কথা
বলার ক্ষেত্রে এমন কড়া নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে যে, তাঁদের কন্ঠ ও বাক্যালাপও নিয়ন্ত্রণে
রাখতে হবে । তাহলে আধুনিক যুগের নারী-পুরুষদের কি পর্দার প্রয়োজন নেই? অথবা পর্দার
প্রয়োজন থাকলেও তাঁদের কন্ঠ ও বাক্যালাপ নিয়ন্ত্রন রাখার প্রয়োজন নেই ? অবশ্যই প্রয়োজন
রয়েছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না; বরং বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষনের পর সে প্রয়োজন
আরো তীব্রভাবে অনুভূত হয়।
(৭) নোংরা ফিল্ম দেখা, অশ্লীল পত্র-পত্রিকা পড়া এবং গান শোনাঃ
যৌবনের কামনায় যৌন-চেতনা বা উত্তেজনা বলে একটা জিনিস আছে। যার অর্থ এই যে, যৌন-কামনা
ঘুমিয়ে থাকে বা তাকে সুপ্ত রাখা যায় এবং কখনো কখনো তা প্রশান্ত থাকে বা তাকে প্রশমিত
রাখা সম্ভব। বলা বাহুল্য নোংরা ফিল্ম, পত্র-পত্রিকা এবং গান হলো এমন জিনিস, যা সুপ্ত
যৌনকামনাকে জাগ্রত করে এবং প্রশান্ত যৌন-বাসনাকে উত্তেজিত করে। এ ছাড়া এ উম্মতের সম্মানিত
উত্তরসূরীগণ বলতেন যে, ‘গান হলো ব্যভিচারের মন্ত্র।’
মোবাইলে প্রেমালাপ করা, ভিডিও কলিং এ একে অপরকে
দেখাদেখি, হাসাহাসি করা যেনা বা ব্যভিচারের মধ্যে গণ্য৷ শেষ পরিনতি জাহান্নাম৷
বর্তমান ইন্টারনেট যুগে ৯০% ছেলে মেয়ে মোবাইল
প্রেমে আসক্ত। এর মধ্যে ৭৫% ছেলে মেয়ে মোবাইল সেক্স করে থাকে৷ এসব মানুষকে দিন দিন
হারামের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ উপরন্তু বিনা প্রয়োজনে এরূপ কথা-বার্তা ও কার্যকলাপ যেনার
শামিল। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘চোখের যেনা তাকানো,
কানের যেনা শ্রবণ করা, জিহবার যেনা কথা বলা, হাতের যেনা স্পর্শ করা এবং পায়ের যেনা
ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে চলা’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৮৬)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পরপুরুষের
সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয়’।
(আহযাব ৩৩/৩২)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অশ্লীল কথা ও কর্ম মানুষকে
জাহান্নামে নিয়ে যায়’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৮২৪, সহীহ বুখারী (ইসলামিক
ফাউন্ডেশন) ৬০৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৩১-৬৫৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬০৭,
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৯৭১, সুনানে আবূ দাঊদ ৪৯৮৯, সহীহুল জামি‘ ৪০৭১, সহীহ
আত্ তারগীব ২৯৩২, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ২৯৮, মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আসার ৬১৬৮, মুসান্নাফ
ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৫৯৯, মুসনাদুল বাযযার ১৬৫৮, আহমাদ ৪০৯৫, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৫১৩৮,
সহীহ ইবনু হিব্বান ২৭২, শু‘আবুল ঈমান ৪৭৮৪, দারিমী ২৭১৫, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৫/৪৩, আল
মু‘জামুল আওসাত্ব ৭৮৭১, আল মুসতাদরাক ৪৪০, আস্ সুনানুল কুবরা ২১৩৩৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
উল্লেখ্য, বর্তমান সমাজে মোবাইল যোগাযোগের
মাধ্যমে গড়ে ওঠা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে খুন, ধর্ষণ, পরকীয়া সহ নানা অশ্লীলতা দিন বৃদ্ধি
পাচ্ছে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে যুব চরিত্র।
তাই এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকা একান্ত
জরুরী৷ নিভৃতে আপনার ছেলে মেয়ে মোবাইলে কি করছে একটু খোঁজ খবর রাখেন৷ প্রকাশ্য যেনার
চেয়ে এই মোবাইল যেনা আরো মারাত্মক৷
(৮) বেশ্যাবৃত্তির স্বীকৃতি ও সমাজে তাদের পেশাদারীর অনুমতিঃ
তাদেরকে ‘যৌনকর্মী’ বলে আখ্যায়িত করে তাদের বৃত্তিকে অর্থোপার্জনের এক পেশা বলে স্বীকার
করে নেওয়া ব্যভিচার প্রসার লাভের অন্যতম কারণ।
(৯) মদ ও মাদক-দ্রব্যের ব্যাপক প্রচলনঃ
মদ, হিরোইন প্রভৃতির নেশায় নারীর নেশা ও চাহিদা সৃষ্টি হয় মাতাল মনে। ফলে এর কারণেও
ব্যভিচার ব্যাপক হয়।
(১০) দ্বীন ও ঈমানের দুর্বলতা,
নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয়ঃ যার মাঝে ঈমান ও তাকওয়া নেই, সে ব্যভিচার
থেকে বাঁচতে পারে না। এমন ব্যক্তির মনের ডোর শয়তানের হাতে থাকে। অথবা নিজের খেয়াল-খুশী
মত চালাতে থাকে নিজের জীবন ও যৌবনকে।
বলা বাহুল্য, যুবক যদি উল্লেখিত ব্যভিচারের
কারণসমূহ থেকে দূরে থাকতে পারে, তাহলে অবশ্যই সে ব্যভিচার থেকে বাঁচতে পারবে। পক্ষান্তরে
উপরোক্ত কারণসমূহের কোনো একটির কাছাকাছি গেলেই ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ে পড়বে। আর মহান
আল্লাহর ঘোষণা হল, “তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। কারণ তা হলো অশ্লীল এবং নোংরা
পথ।” (সূরা ইসরা, আয়াত: ৩২)।
ব্যভিচার ব্যাপক আকারে প্রসার লাভ করা এই কথার
ইঙ্গিত যে, কিয়ামত অতি নিকটে আসছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭১, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব যত দিন যাবে, ব্যভিচার পৃথিবীময় তত আরও
বৃদ্ধি পাবে। তবে ঈমানদাররা ঈমান নিয়ে অবশ্যই সর্বদা সে অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকবে।
বেগানা নারীর জন্যে পুরুষের প্রতি ইসলামের হুকুম
(ক) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাক।’’ লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ওখানে আমাদের
বসা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। আমরা (ওখানে) বসে বাক্যালাপ করি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যদি তোমরা রাস্তায় বসা ছাড়া থাকতে না পার, তাহলে রাস্তার
হক আদায় কর।’’ তারা নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! রাস্তার হক কী?’ তিনি বললেন, ‘‘দৃষ্টি
অবনত রাখা, (অপরকে) কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া এবং ভাল কাজের আদেশ
দেওয়া ও মন্দ কাজে বাধা প্রদান করা।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২৪৬৫, ৬২২৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮১৫, আহমাদ ১০৯১৬, ১১০৪৪, ১১১৯২,
রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩০৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
(খ) আবূ
ত্বালহা যায়েদ ইবনে সাহ্ল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা ঘরের বাইরে অবস্থিত প্রাঙ্গণে
বসে কথাবার্তায় রত ছিলাম। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সেখানে)
এসে আমাদের নিকট দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘তোমরা রাস্তায় বৈঠক করছ? তোমরা রাস্তায় বসা থেকে
বিরত থাক।’’ আমরা নিবেদন করলাম, ‘আমরা তো এখানে এমন উদ্দেশ্যে বসেছি, যাতে (শরীয়তের
দৃষ্টিতে) কোন আপত্তি নেই। আমরা এখানে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করা ও কথাবার্তা বলার
জন্য বসেছি।’ তিনি বললেন, ‘‘যদি রাস্তায় বসা ত্যাগ না কর, তাহলে তার হক আদায় কর। আর
তা হল, দৃষ্টি সংযত রাখা, সালামের উত্তর দেওয়া এবং সুন্দরভাবে কথাবার্তা বলা।’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৬১,
আহমাদ ১৫৯৩২, রিয়াদুস সলেহীহ ১৬৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(গ) মজাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বললেন, আচমকা দৃষ্টি সম্পর্কে আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘‘তুমি তোমার দৃষ্টি
ফিরিয়ে নাও।’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৩৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২১৫৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৭৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৪৮,
আহমাদ ১৮৬৭৯, ১৮৭১৫, দারেমী ২৬৪৩, রিয়াদুস সলেহীহ ১৬৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৫৯, ইসলামিক
সেন্টার ৫৪৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(ঘ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘কোন পুরুষ অন্য পুরুষের গুপ্তাঙ্গের দিকে যেন না তাকায়। কোন নারী অন্য নারীর
গুপ্তস্থানের দিকে যেন না তাকায়। কোন পুরুষ অন্য পুরুষের সঙ্গে একই কাপড়ে যেন (উলঙ্গ)
শয়ন না করে। (অনুরূপভাবে) কোন নারী, অন্য নারীর সাথে একই কাপড়ে যেন (উলঙ্গ) শয়ন না
করে। (মুসলিম ৩৩৮, আহমাদ ১১২০৭) , রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(ঙ) উক্বা
ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘‘তোমরা (বেগানা) নারীদের নিকট (একাকী) যাওয়া থেকে বিরত থাক।’’ (এ কথা শুনে)
জনৈক আনসারী নিবেদন করল, ‘স্বামীর আত্মীয় সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?’ তিনি বললেন,
‘‘স্বামীর আত্মীয় তো মুত্যুসম (বিপজ্জনক)।’’(সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৭২, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১১৭১, আহমাদ ১৬৮৯৬, ১৬৯৪৫, দারেমী ২৬৪২), রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৬। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
(চ)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘মাহরামের উপস্থিতি ছাড়া কোন পুরুষ যেন কোনো মহিলার সাথে নির্জন-বাস না করে।’’
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৬২, ৩০০৬, ৩০৬১, ৫২৩৩,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৪১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০০,
আহমাদ ১৯৩৫, ৩২২১), রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(ছ) বুরাইদা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘স্বগৃহে অবস্থানকারী লোকদের পক্ষে মুজাহিদদের স্ত্রীদের মর্যাদা
তাদের নিজেদের মায়ের মর্যাদার মত। স্বগৃহে অবস্থানকারী লোকদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন
মুজাহিদ ব্যক্তির পরিবারের প্রতিনিধিত্ব (দেখা-শুনা) করে, অতঃপর তাদের ব্যাপারে সে
তার খেয়ানত ক’রে বসে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে মুজাহিদের সম্মুখে দাঁড় করানো হবে এবং
সে তার নেকীসমূহ থেকে সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত ইচ্ছামত নেকী নিয়ে নেবে।’’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে বললেন, ‘‘তোমাদের ধারণা কী?
(সে কি তখন তার কাছ থেকে নেকী নিতে ছাড়বে?’’ (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৮০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৭, নাসায়ী ৩১৮৯, ৩১৯০, ৩১৯১, সুনান
আবূ দাউদ ২৪৯৬, আহমাদ ২২৪৬৮, ২২৪৯৫), রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৮। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
ব্যভিচার বন্ধ করার লক্ষ্যে যৌথভাবে সামাজিক যে প্রচেষ্টার প্রয়োজন তা হলো
নিম্নরূপঃ
(১)
পর্দাহীনতা দূর করে, সমাজে পবিত্র পর্দা-আইন চালু করা। আর এ দায়িত্ব হলো প্রত্যেক মুসলিমের,
নারী ও পুরুষ, যুবক ও বৃদ্ধ, রাজা ও প্রজা সকলের।
(২) ব্যভিচারের
‘হদ্দ্’ দণ্ডবিধি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চালু করা। এমন শাস্তি প্রয়োগ করা, যাতে কোনো লম্পট
তার লাম্পট্যে সুযোগ ও সাহস না পায়।
(৩) মহিলাকে কোনো মাহরাম বা স্বামী ছাড়া একাকিনী বাড়ির
বাইরে না ছাড়া।
(৪) কোনো
বেগানা (দেওর, বুনাই, নন্দাই, বন্ধু প্রভৃতি) পুরুষের সাথে নারীকে নির্জনতা অবলম্বন
করার সুযোগ না দেওয়া। সে বেগানা পুরুষ ফিরিশতা তুল্য হলেও তার সহিত মহিলাকে নির্জন
বাস বা সফর করতে না দেওয়া।
(৫) সৎ-চরিত্র
গঠন করার সামাজিক ভূমিকা পালন করা; অশ্লীল ছবি, পত্র-পত্রিকা, গানবাজনা, যাত্রা-থিয়েটার
প্রভৃতি বন্ধ করা এবং রেডিও, টিভি ও পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি প্রচারমাধ্যমে সচ্চরিত্র
গঠনের উপর তাকীদ প্রচার করা।
(৬)
সর্বতোভাবে বিবাহের সকল উপায়-উপকরণ সহজ করা। সহজে বিবাহ হওয়ার পথে সকল বাধা-বিপত্তি
দূর করা।
(৭)
স্কুল-কলেজে সহশিক্ষা বন্ধ করে বালক ও বালিকাদের জন্য পৃথক পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
ব্যবস্থা করা। অবিবাহিত তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীকে যৌন-শিক্ষা না দেওয়া।
(৮) নারীর জন্য পৃথক চাকুরী-ক্ষেত্র তৈরী করা।
(৯) সকল প্রকার বেশ্যাবৃত্তি ও যৌন-ব্যবসা বন্ধ করা।
উপসংহারঃ ইসলামে
ধর্ষণ ও যিনা, তথা সম্মতি ও অসম্মতি উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষের শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।
তবে নারীর ক্ষেত্রে জোড়পূর্বক ধর্ষিতা হলে কোনো শাস্তি নেই, সম্মতিতে হলে শাস্তি আছে।
যৌন অপরাধ নির্ণয়ে ইসলাম নির্ধারিত বিভাজন রেখা (বিবাহিত-অবিবাহিত) সর্বোৎকৃষ্ট। বাংলাদেশের
আইনে যতোটুকু শাস্তি রয়েছে তা প্রয়োগে প্রশাসনের অবহেলা আর বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক
চাপ প্রয়োগে ধর্ষণের উপযুক্ত শাস্তি হয় না। উপরন্তু ধর্ষিতাকে একঘরে করে রাখা হয়,
তাকে সমাজে বাঁকা চোখে দেখা হয়। তার পরিবারকে হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। এগুলোর কোনোটিই
ইসলাম সমর্থন করে না।
অবৈধ সম্পর্ক বা দৈহিক মিলনকে যেনা-ব্যভিচার
কিংবা ধর্ষণ যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেনো ইসলামে তা জঘন্য অপরাধ। উপরোক্ত মানব
রচিত আইনী পর্যালোচনায় এটাই প্রমাণিত যে, ধর্ষণ সম্পর্কে মানুষের তৈরী কোনো আইন পৃথিবীর
কোনো রাষ্ট্র বা সমাজে শান্তি বা একটা সুষ্ঠু সমাজ উপহার দিতে পারে নাই আর পারবেও না।
মানব রচিত আইনে দিন দিন নারী নির্যাতনসহ ধর্ষণমূলক অপরাধের সংখ্যা আরো বেড়েই চলছে।
বাংলাদেশে ৯০% মুসলমান বসবাস করে। ৯০% মুসলমানদের
মধ্যে ৭০% মুসলমানই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েম হোক এটা চায় না। কারণ এরা
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যিনা-ব্যভিচারের সাথে জড়িত। শহরাঞ্চলে দেখা যায়, মেয়েরা হাফ
প্যান্ট আর একটা ছোট্ট গেঞ্জি পরে বাহিরে যত্র-তত্র যাচ্ছে, নেশা করছে, মদের বারে যাচ্ছে,
বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড নিয়ে সময় কাটাচ্ছে, মা তার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে যাচ্ছে,
বাবাও তেমনি বিভিন্ন নারীদের নিয়ে ফুর্তি করে বেড়াচ্ছে আবার তার সন্তানরাও একই কাজ
করে বেড়াচ্ছে। সবাই যেনো লাগামহীন জীববন-যাপন করছে। কেউ কাউকে বাঁধা দিচ্ছে না। পাশ্চাত্য
কৃষ্টি-কালচার আমাদের এই সমাজে এখন বিরাজমান। এদের দেখা দেখি অন্যরাও নষ্ট হচ্ছে। এটা
তাদের নাকি ফ্যাশন। পুরো সমাজটাই যেনো যিনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণে নিমজ্জিত।
মানব রচিত যে আইন আইন, তা দিয়ে কি এই সমাজটাকে
উদ্ধার করা সম্ভব? বড়ই দুঃখের বিষয় এক শ্রেণির আলেম এই সমস্ত লোকদের পক্ষে কথা বলে
না। সমাজ থেকে এসব দূরীভুত করার কোনো পদক্ষেপ তাদের মধ্যে দেখা যায় না। আমাদের দেশের
বিশিষ্ট এক পরিচিত আলেম নারীর নগ্নতা নিয়ে তিনি ফতোয়া দেন যে, সৌন্দর্য তো আল্লাহর
নিয়ামত।
প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরাঃ কুপের মধ্যে মৃত বিড়াল
রেখে বালতি বালতি পানি উত্তোলন করলে যেমন কুপের পানি পরিষ্কার হবে না, তেমনি সমাজে
যিনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণ, নারীর নগ্নতা, অবাধ মেলামেশা রেখে সমাজ কোনোদিন কলুষিত মুক্ত
হবে না।
একটি সুষ্ঠু সমাজ বা রাষ্ট্র গড়তে হলে চাই
ইসলামি অনুশাসন। ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্যে যেসব কুরআন ও হাদিসের হুকুম
আছে সেসব নিয়ে আমাদের দেশের পির-অলি ও তাদের মুরিদসহ বিদআতি আলেমগণ কোনো দিন ওয়াজ করে
না। তারা মনে করে এসব ইসলামের বাজে একটি অংশ। (নাউযুবিল্লাহ)।
এজন্যে এই সমস্ত আলেম বা তাদের অনুসারীগণ মুসলমান
হয়েও তারা কাফের, মুশরেক, ফাসেক ও জালেম। এদের স্থান হবে জাহান্নামের নিম্ন স্তরে।
(১) আল্লাহতায়ালা বলেন,
“হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি।
অতএব তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে
আল্লাহ্র পথ হতে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহ্র পথ হতে ভ্রষ্ট হয় তাদের জন্য রয়েছে
কঠিন শাস্তি। কারণ তারা বিচারদিবসকে ভুলে আছে”। (সূরা
ছদ (৩৮) : ২৬)।
(২) আল্লাহতায়ালা রাসুল সাঃ এর আদেশ নিষেধ মানতে
বলেছেন,
“রসুল (সঃ) তোমাদের জন্য যা কিছু দেন তা গ্রহণ
কর, আর যে জিনিস থেকে বিরত রাখেন (নিষেধ) করেন তা থেকে বিরত থাক। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই
আল্লাহ কঠিন শাস্তি দাতা”। (হাশর -৭)।
(৩) যারা মানবে না তাদের শাস্তিঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যারা তাঁর (রাসুলসঃ) হুকুমের বিরুদ্ধাচারন করে এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য যে, তারা
মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে”। (নূর-৬৩)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
“সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের
ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য
ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম
(সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে
জ্বালাবেন”। (সুরা আন নিসা ১১৫)।
(৪) যারা কুরআনের অর্ধেক হুকুম মানেঃ
“তোমরা কি কোরআনের কোন কোন অংশ (আয়াত) মানো
আর কোন কোন অংশ মানো না? অত:পর যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্য থেকে এরুপ কাজ করবে – পার্থিব জীবনে প্রকাশ্য লাঞ্চণা ভোগ করা
আর কিয়ামতের দিনে ভীষণ শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার আর কী সাজা হতে পারে!
আর আল্লাহ তো তোমাদের কার্য কলাপ সম্বন্ধেবে- খবর নন”। (বাকারা-৮৫)।
(৫) ইসলামি আইন ব্যতীত
অন্য আইন গ্রহন করলেঃ
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন
করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে
তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)।
রাসুল সাঃ বলেন,
(৬) আবদুল্লাহ্
ইব্নু মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আমি হাউযে কাউসারের নিকট তোমাদের আগেই হাজির থাকব। তোমাদের থেকে কিছু লোককে
আমার নিকট পেশ করা হবে। কিন্তু আমি যখন তাদের পান করাতে উদ্যত হব, তখন তাদেরকে আমার
নিকট হতে ছিনিয়ে নেয়া হবে। আমি বলব, হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার
পর তারা নতুন কী ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৪৯, ৬৫৭৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭)
আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন,
আমি হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এমন সময় নু’মান
ইব্নু আবূ আয়াস আমার নিকট হতে এ হাদীসটি শুনে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি সাহ্ল থেকে হাদীসটি
এরূপ শুনেছেন। আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন সে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আবূ সা’ঈদ
খুদ্রী (রাঃ) - কে এ হাদীসে অতিরিক্ত বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) তখন বলবেনঃ এরা তো আমারই অনুসারী। তখন বলা হবে, আপনি নিশ্চয় জানেন না যে,
আপনার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কি পরিবর্তন করেছে (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম, যা আপনি করতে
বলেননি)। এ শুনে আমি বলব, যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে, তারা (বিদআতী পির-অলি ও আলেম)
দূর হোক, দূর হোক। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৫০,
আধুনিক প্রকাশনী ৬৫৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৮)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেনঃ
কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর
যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৮০, আধুনিক প্রকাশনী ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৬৭৮৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) জারীর বিন আব্দুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন, “যে সম্প্রদায় যখন বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি থাকে,
যার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি তারা তাদেরকে বাধা না দেয় (এবং ঐ পাপাচরণ
বন্ধ না করে), তাহলে (তাদের জীবদ্দশাতেই) মহান আল্লাহ তাদেরকে ব্যাপকভাবে তাঁর কোন
শাস্তি ভোগ করান।” (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৩৯,
আহমাদ ৪/৩৬৪, সুনান ইবনে মাজাহ ৪০০৯, ইবনে হিব্বান, সহীহ আবূ দাউদ ৩৬৪৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
(১০) আবূ যায়দ উসামাহইবনে যায়দ ইবনে হারেষাহ (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ
আবূ ওয়াইল (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসামাহ
(রাঃ)-কে বলা হল, কত ভাল হত! যদি আপনি ঐ ব্যক্তির (উসমান (রাঃ)-এর নিকট যেতেন এবং তাঁর
সঙ্গে আলোচনা করতেন। উত্তরে তিনি বললেন, আপনারা মনে করছেন যে আমি তাঁর সঙ্গে আপনাদেরকে
শুনিয়ে শুনিয়ে বলব। অথচ আমি তাঁর সঙ্গে (দাঙ্গা দমনের ব্যাপারে) গোপনে আলোচনা করছি,
যেন আমি একটি দ্বার খুলে না বসি। আমি দ্বার উন্মুক্তকারীর প্রথম ব্যক্তি হতে চাই না।
আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হতে কিছু শুনেছি, যার পরে
আমি কোন ব্যক্তিকে যিনি আমাদের আমীর নির্বাচিত হয়েছেন এ কারণে তিনি আমাদের সবচেয়ে উত্তম
ব্যক্তি এ কথা বলতে পারি না। লোকেরা তাঁকে বলল, আপনি তাঁকে কী বলতে শুনেছেন? উসামাহ
(রাঃ) বললেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন আগুনে পুড়ে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। এ সময় সে
ঘুরতে থাকবে যেমন গাধা তার চাকা নিয়ে তার চারপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামবাসীরা
তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, হে অমুক ব্যক্তি! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না আমাদেরকে
সৎ কাজের আদেশ করতে আর অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করতে? সে বলবে, আমি তোমাদেরকে সৎ কাজে
আদেশ করতাম বটে, কিন্তু আমি তা করতাম না আর আমি তোমাদেরকে অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করতাম,
অথচ আমিই তা করতাম। এ হাদীসটি গুনদার (রহ.) শুবা (রহ.) সূত্রে আ‘মাশ (রহ.) হতে বর্ণনা
করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৬৭, ৭০৯৮,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৯,আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০২৬,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১১) আনাস
(রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
“আমি মি’রাজের রাতে এমন একদল লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি যারা আগুনের কাঁচি দ্বারা
নিজেদের ঠোঁট কাটছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে জিবরীল! ওরা কারা?’ তিনি বললেন, ‘ওরা
আপনার উম্মতের বক্তাদল (বিদআতী পির-অলি ও আলেম); যারা নিজেদের বিস্মৃত হয়ে মানুষকে
সৎকাজের নির্দেশ দিত, অথচ ওরা কিতাব (গ্রন্থ) অধ্যয়ন করত, তবে কি ওরা বুঝত না।” (আহমাদ ১২২১১, ১২৮৫৬ প্রভৃতি, ইবনে হিব্বান ৫৩, ত্বাবারানীর
আওসাত্ব ২৮৩২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭৩, আবূ য়্যা’লা ৩৯৯২, সহীহ তারগীব ১২৫)-হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
(১২) আবূ উমামা (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “আমার উম্মতের দুই শ্রেণির লোক আমার সুপারিশ লাভ করতে পারবে না; (বিবেকহীন)
অত্যাচারী রাষ্ট্রনেতা এবং প্রত্যেক সত্যত্যাগী অতিরঞ্জনকারী।” (ত্বাবারানী ৮০০৫, সহীহুল জামে’ ৩৭৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
আল্লাহ
তায়ালা বলেন,
(১৩)
যারা ইসলামি আইন বাদ দিয়ে অন্য আইন তথা মানব রচিত আইন
মানবে তারা শিরকের মধ্যে গণ্যঃ
অন্য কাউকে যদি আইন প্রদানের মালিক মনে করা
হয় তবে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেই রব মানা হয়; যা প্রকাশ্য বড় শির্ক। আর এ জন্যই আল্লাহ
তা‘আলা যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আইন মানবে তাদের সম্পর্কে বলেছেন:
“তারা কি জাহেলিয়াতের আইন চায়? দৃঢ়বিশ্বাসীগণের
জন্য আল্লাহর চেয়ে উত্তম হুকুম-বিধান দাতা আর কে হতে পারে?” (সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫০)।
এখানে জাহেলিয়্যাতের আইন বলতে আল্লাহ কর্তৃক
প্রণীত আইন ছাড়া যাবতীয় আইনকেই বুঝানো হয়েছে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রণীত আইনের
বাইরে যতো প্রকার মানব রচিত আইন রয়েছে, তার সবই জাহেলী আইন, যেমন ইংরেজদের রেখে যাওয়া
আইন, রোমান আইন ইত্যাদি।
হানী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি যখন তার গোত্রের
প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন, তখন
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার গোত্রের লোকদেরকে তাকে আবুল হাকাম উপনামে
ডাকতে শুনে তাকে ডেকে বললেন, আল্লাহই হলেন হাকাম (বিধান দাতা)এবং তাঁর নিকটই ন্যায়বিচার
ও নির্দেশ। তোমার উপনাম কি করে আবুল হাকাম হলো? তিনি বললেন, আমার গোত্রের লোকজনের মধ্যে
বিভেদ সৃষ্টি হলে তারা মীমাংসার জন্য আমার নিকট আসে। আমি যে সিদ্ধান্ত দেই তাতে তারা
উভয় পক্ষই সন্তুষ্ট হয়ে যায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯৫৫, নাসায়ী ২২৬, বায়হাকী ১৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
(১৪) ইসলামী আইন বাস্তবায়ন না করা
কুফুরী, যা ঈমান নষ্ট করে দেয়ঃ
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
“আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুসারে বিচারকার্য
সম্পাদন করে না, তারা কাফির। (সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত:
৪৪)।
তিনি আরও বলেন,
“আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুসারে বিচারকার্য
সম্পাদন করে না, তারা যালিম।” (সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত:
৪৫)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুসারে বিচারকার্য
সম্পাদন করে না, তারা ফাসেক।” (সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত:
৪৭)।
মূলত আল্লাহর আইন অনুসারে না চলার কয়েকটি পর্যায় হতে পারে,
(ক) আল্লাহর
আইন ছাড়া অন্য কোনো আইনে বিচার-ফয়সালা পরিচালনা জায়েয মনে করা।
(খ) আল্লাহর
আইন ব্যতীত অন্য কোনো আইন দ্বারা শাসন কার্য পরিচালনা উত্তম মনে করা।
(গ)
আল্লাহর আইন ও অন্য কোনো আইন শাসনকার্য ও বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে সমপর্যায়ের মনে করা।
(ঘ) আল্লাহর
আইন পরিবর্তন করে তদস্থলে অন্য কোনো আইন প্রতিষ্ঠা করা।
উপরোক্ত যে কোনো একটি কেউ বিশ্বাস করলে সে
সর্বসম্মতভাবে কাফির হয়ে যাবে। (এর জন্য দেখুন: শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম আল-শাইখ
প্রণিত গ্রন্থ ‘তাহকীমুল কাওয়ানীন)।
অতএব পির-অলি, বড় পির, রাসুল সাঃ এর আওলাদ,
মুফতি, হাফেজ, মুহাদ্দিস, এ নেতা ও নেতা, বড় মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল ইত্যাদি ইত্যাদি
হয়ে পরকালে ১০০% কোনো মুক্তি নেই, যদি না আপনি ইসলামি আইন বিষয়ক কুরআন ও হাদিস না মানেন,
না প্রচার করেন, না বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ নেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ?
এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক
পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার
করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল
নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো
আর আমার আয়াত ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ
করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।” (কাহাফঃ
১০৩-১০৫)।
মূল কথা হলো, আমাদের দেশে খুন, যিনা/ব্যভিচার/ধর্ষণ,
যিনার মিথ্যে অপবাদ দেয়া, আল্লাহদ্রোহীতা, চুরি/ডাকাতি, দস্যুতাসহ শত শত অপরাধের বিচার
ইসলামি আইনে কার্যকর করা হয় না। কারণ আমাদের দেশে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম নেই।
অথচ মুসলিম নেতৃবৃন্দ যখন ক্ষমতায় আসবে তাদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে কুরআনকে
সংবিধান হিসেবে মেনে নিয়ে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। কিন্তু তারা তা না করে মানবরচিত
আইনে রাষ্ট্র পরিচালনা করে থাকে। এজন্যেই আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতে দলীয় নেতাসহ তাদের
সবাইকে ডেকে তাদের আমলনামা দেখাবেন এবং সেই নেতার সাথেই তাদের পরবর্তী বসবাস হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“স্মরণ কর, যখন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের নেতা সহ আহবান
করব। যাদেরকে ডান হাতে তাদের আমলনামা দেওয়া হবে, তারা তাদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের
প্রতি খেজুরের আঁটির ফাটলে সুতো বরাবর (সামান্য পরিমাণ)ও যুলুম করা হবে না”। (সুরা
আল ইসরা (বণি ইসলাইল) ৭১)।
অর্থাৎ কিয়ামতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নেতার
নাম দ্বারা ডাকা হবে এবং সবাইকে এক জায়গায় জমায়েত করা হবে। রাসুল সাঃ বলেন,
আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
খিদমাতে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে আপনার কি অভিমত?
যে কোন কওম বা দলকে ভালোবাসে; কিন্তু তাদের সাথে (কখনো) সাক্ষাৎ হয়নি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে ব্যক্তি তার সাথেই আছে, যাকে সে ভালোবাসে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০০৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬১৬৮, ৬১৬৯, ৬১৭০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৪০, সুনান
আত তিরমিযী ২৩৮৭, সুনানে আবূ দাঊদ ৫১২৭, সহীহুল জামি‘ ৬৬৮৯, সহীহ আত্ তারগীব ৩০৩৩,
বাযযার ৩০১৪, আহমাদ ১৩৩৮৮, আবূ ইয়া‘লা ৫১৬৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৭, শু‘আবুল ঈমান ৪৯৭, সুনানুর নাসায়ী আল কুবরা ১১১৭৮, দারাকুত্বনী ২, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী
৭২০৮, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ৭৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব আজকে আপনি যে দল নেতার পিছে দৌঁড়াচ্ছেন
কিয়ামতে তার পিছেই থাকতে হবে। তথা সে জাহান্নামী হলে আপনার স্থানও সেই জায়গাতেই হবে।
তাই সকল দল মত বাদ দিয়ে ইসলামের পথে ফিরে আসুন। নইলে কিয়ামতে আপনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো
হবে এবং জিজ্ঞাসা করা হবে আপনি একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে ইসলামের জন্যে কী কী
দায়িত্ব পালন করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৫৫৮, ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৭৫১, ৫১৮৮,
৫২০০, ৭১৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬১৮,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮২৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৭০৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২৯২৮, আহমদ ৪৪৮১, ৫১৪৮, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭, ৫৯৯০,
আল লুলু ওয়াল মারজান-১১৯৯। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(সমাপ্ত)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইসলাম বুঝার তৌফিক
দান করুন। আমিন।
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
...........................................................................................
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য
সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC
এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment