বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
তাওবা ও ইস্তেগফারে রিজিক বৃদ্ধি পায়, অভাব-অনটন দূর হয়:
(ইহা পরীক্ষিত)
তওবা :
তওবা অর্থ হলো ফিরে আসা।
মানুষ যখন ভুল পথে যায় বা বিপথগামী হয়, তখন সেখান থেকে সঠিক পথে বা ভালো পথে ফিরে আসাকে
তওবা বলা হয়। তওবার পারিভাষিক অর্থ হলো লজ্জিত হওয়া। অর্থাৎ স্বীয় কৃতকর্মে লজ্জিত
হয়ে সঠিক পথে ফিরে আসা। তওবার জন্য করণীয় হলো, স্বীয় কৃতকর্মের প্রতি লজ্জিত ও অনুতপ্ত
হওয়া, সেই অপরাধ আর না করার দৃঢ় প্রত্যয় ও সংকল্প গ্রহণ করা এবং নেক আমলের প্রতি বেশিমাত্রায়
মনোযোগী হওয়া।
ইস্তিগফার:
ইস্তিগফার মানে হলো ক্ষমা
প্রার্থনা করা। আল্লাহ হলেন ‘গাফির’ ক্ষমাকারী, ‘গফুর’ ক্ষমাশীল, ‘গফফার’ সর্বাধিক
ক্ষমাকারী। ইস্তিগফার একটি স্বতন্ত্র ইবাদত; কোনো গুনাহ বা পাপ মাফ করার জন্য এই ইবাদত
করা হয় না। যেমন: সলাত, সিয়াম, হজ ইত্যাদি ইবাদত দ্বারা গুনাহ মাফ হয়; কিন্তু এসব ইবাদত
করার জন্য গুনাহ করা শর্ত নয়। তওবা ও ইস্তিগফার আল্লাহ তাআলার অতি পছন্দের একটি ইবাদত।
তাই প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার
তওবা ও ইস্তিগফার করতেন। অনুরূপ ইমানের পর সলাত প্রধান ও সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও
এই সলাত আদায়ের পর তিনবার ইস্তিগফার পড়া সুন্নত। অর্থাৎ ইস্তিগফার শুধু পাপের পরে নয়,
ইবাদতের পরেও করা হয়।
অধিক পরিমাণে আল্লাহর কাছে
ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করলে অভাব অনটন, দুঃখ, দূর্দশা দূর হয় ও রিজিক বৃদ্ধি পায়। (ইহা প্রমাণিত)
(১) আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অন্যতম
নবী ও রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন,
“আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের
কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের
উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য
করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। (সূরা নূহ, আয়াত : ১০-১২)
(২) হাদীসে বিষয়টি আরেকটু
খোলাসা করে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব
সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস
থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।” [আবূ দাঊদ : ১৫২০; ইবন মাজা : ৩৮১৯; তাবরানী
: ৬২৯১]
(৩) অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার
সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয়
উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।” [বাইহাকী : ৬৩৬; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭
সহীহ সূত্রে বর্ণিত।]
(৪) যে ব্যক্তি বেশি বেশি
ইস্তেগফার করবে, গোনাহের জন্য আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করবে তাকে
আল্লাহ তাআলা সকল সমস্যা ও মুসিবত থেকে বেরিয়ে আসার পথ করে দেবেন, তার সকল দুশ্চিন্তা
দূর করে দেবেন এবং এমন স্থান থেকে তার জন্য রিযিকের ব্যবস্থা করবেন যা সে কল্পনাও করতে
পারবে না। -মিশকাত শরীফ
(৫) একবার হাসান আল-বাসরী
রাহিমাহুল্লাহর কাছে এক ব্যক্তি এসে জানালো, ‘আমার ফসলে খরা লেগেছে। আমাকে আমল দিন।’
হাসান আল-বাসরী তাকে বললেন, ইস্তেগফার করো।
কিছুক্ষণ পর আরেক ব্যক্তি
এসে অভিযোগ পেশ করল, ‘আমি গরীব। আমাকে রিজিক এর আমল দিন।’ হাসান (রাহি.) তাকেও বললেন,
ইস্তেগফার করো।
এমনিভাবে অপর এক ব্যক্তি
এসে সন্তান হওয়ার আমল চাইলে তিনি বললেন, ‘ইস্তেগফার করো।’ মজলিসে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা
জিজ্ঞেস করল, ‘সবাইকে এক পরামর্শই দিলেন যে?’
বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান আল-বাসরী
(রাহি.) বললেন, ‘আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলিনি। এটা বরং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কুরআনে
শিখিয়েছেন।’ তারপর তিনি সূরা নূহ-এর আয়াত -১০-১২ তিলাওয়াত করলেন। [তাফসীরে কুরতুবী
১৮/৩০৩]
(৬) মানুষ ভুল-ত্রুটিমুক্ত
নয়। যে কোনো কাজেই ভুল-ত্রুটি হওয়া স্বাভাবিক। কাজেই সব সময় ভুল-ত্রুটি থেকে ক্ষমা
প্রার্থনা করাই উত্তম।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
আমি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি,
“আল্লাহর শপথ, আমি প্রতিদিন
সত্তরবারের চেয়েও অধিক আল্লাহর ইস্তেগফার করি ও তওবা করি”। [সহীহ বুখারি, কিতাব আদ-দাওয়াত-১১/১০১]
(৭) সহীহ মুসলিমে আরেকটি
হাদীস বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“হে মানব মণ্ডলী, তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর। কেননা,
আমি দিনে একশ বার তওবা করি।” [সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ: অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার করা মুস্তাহাব,
হা/৪৮৭১]
(৮) আল্লাহ তায়ালা দিনের
অপরাধীকে ক্ষমা করার জন্য রাতে তাঁর হাত প্রসারিত করেন। আর রাতের অপরাধীকে ক্ষমার জন্য
দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন। যেমন, ইমাম মুসলিম রহ. আবু মূসা আশয়ারী থেকে বর্ণনা করেছেন,নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আল্লাহ দিনের অপরাধীকে ক্ষমার জন্য রাতে তাঁর হাত
প্রসারিত করেন। আর রাতের অপরাধীকে ক্ষমার জন্য দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন। (তিনি
এরূপ করতেই থাকেন) যে পর্যন্ত না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হয় (তথা কিয়ামত পর্যন্ত)।
[ সহীহ মুসলিম। অনুচ্ছেদ: গুনাহ থেকে তওবা করলে তা কবুল হওয়া যদিও বারবর গুনাহ সংঘটিত
হয়, হা/৪৯৫৪, শামেলা]
(৯) আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে
বলেন,
“তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা
ও সেই জান্নাতের দিকে ধাবমান হও; যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ন্যায়। যা প্রস্তুত
রাখা হয়েছে মুত্তাকি তথা আল্লাহ ভিরুদের জন্য। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় ব্যয়
করে এবং যারা রাগ সংবরণকারী আর মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ নেককারদেরকে ভালবাসেন।”
(সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৩-১৩৪)
(১০) "তারা কখনও কোন
অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে
স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা
করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে
থাকে না। (সূরা আলে ইমরান: ১৫৩)
(১১) আল্লাহ তাআলা অন্য এক
আয়াতে বলেন,
“তোমরা কেন আল্লাহর কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা করছ না, যাতে করে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।”(সূরা নমল-৪৬)
(১২) ইস্তেগফারের ফলে সর্বধিক
থেকে শক্তি ও সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
“তিনি তোমাদের শক্তির সাথে
আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন”। (সুরা হুদ ৫২)
(১৩) “তুমি ক্ষমা চাও তোমার
ও মুমিন নারী-পুরুষদের ক্রটি-বিচ্যূতির জন্য” (সুরা মুহাম্মদ, ১৯)
(১৪) “আর তুমি আল্লাহর কাছে
ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালূ” (সুরা নিসা, ১০৬)
(১৫) নুহ (আ.) আল্লাহর কাছে
বন্যা থেকে নিজ ছেলেকে পরিত্রাণ দেয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এটিকে আল্লাহ তায়ালা অন্যায়
বলে গণ্য করলে নুহ (আ.) এ বলে ইস্তেগফার করেন,
“হে প্রভু, আমি আপনার কাছে
এমন বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা থেকে পানাহ চাই যার ব্যাপারে আমার কোনো জ্ঞান নেই। আপনি
আমাকে ক্ষমা ও দয়া না করলে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব।” (সূরা হুদ : ৪৭)।
(১৬) মুসা (আ.) এক মিসরিকে
হত্যা করে ফেললে তৎক্ষণাৎ অনুতপ্ত হয়ে এ বলে ক্ষমা প্রার্থনা করেন,
“হে রব, আমি নিজের ওপর জুলুম
করেছি। তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।” (সূরা কাসাস : ১৬)।
(১৭) ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর
নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে বলেন,
“আল্লাহ তো তিনি যার ব্যাপারে
আমি আশা রাখি যে, তিনি আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।” (সূরা শুআরা : ৮২)।
(১৮) ইউনুস (আ.) মাছের পেটে
গিয়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেন,
“আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।
আপনি মহান। নিশ্চয় আমি জুলুমকারীদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা আম্বিয়া : ৮৭)।
(১৯) দাউদ (আ.) এর ব্যাপারে
এসেছে,
“আর দাউদ মনে করল আমি তাকে
পরীক্ষায় নিপতিত করেছি। তখন সে তার রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল।” (সূরা সোয়াদ :
২৪)।
(২০) আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র
বলেন,
“যে গুনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে , অতপর আল্লাহর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়”। [সূরা আন-নিসা ৪:১১০]
(২১) “হে মুমিনগণ,তোমরা সকলে
আল্লাহর নিকট তওবা কর। যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার।” [ সূরা নূর: ৩১]
(২২) “তোমরা আল্লাহর নিকট
আন্তরিকভাবে তওবা কর।” [ সূরা তাহরীম: ৮]
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
(২৩) "আমার কাছে তারা
তওবা করে না কেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে না কেন? আল্লাহ যে ক্ষমাশীল, দয়ালু।"
(সূরা মা'ইদা: ৭৪)
(২৪) "আর যারা মন্দ
কাজ করে, তারপরে তওবা করে নেয় এবং ঈমান নিয়ে আসে, তবে নিশ্চয়ই তোমার পরওয়ারদেগার তওবার
পর অবশ্য ক্ষমাকারী, করুণাময়।" (সূরা আরাফ: ১৫৩)
(২৫) "বলুন, হে আমার
বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়
আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (সূরা যুমার: ৫৩)
উপরোক্ত কোরআন ও সহীহ হাদিস
দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, অধিক তওবা ও ইস্তিগফারকারীকে মহান আল্লাহ তায়ালা অধিক পছন্দ
করেন, তাকে ভালবাসেন, তার পাপসমূহ মোচন করে দেন, তার বালা মসিবত দূর করে দেন, তার রিজিক
বৃদ্ধি করে দেন এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন ও তার ইমানি শক্তি মজবুত করে দেন।
ইস্তেগফারের সময়ঃ
ইস্তেগফার সব সময় করা যায়,
কিন্ত গুনার পর ইস্তেগফার করা ওয়াজিব এবং নেক আমল করার পর মুস্তাহাব। যেমন, সলাত শেষে
সালাম ফিরানোর পর তিনবার ইস্তেগফার করা, হজ্ব শেষে ইস্তেগফার করা ইত্যাদি। তবে সাহরীর
সময় ইস্তেগফার করা বেশী ফজীলত, বরং মুস্তাহাব। কারণ এ সময় ইস্তেগফারকারীদের আল্লাহ
তায়ালা বেশী প্রশংসা করেছেন।
ইস্তেগফারের বিশেষ কিছু উপকার:
১. এটি গোনাহকে মুছে ফেলে ও বান্দার মর্যাদা উন্নীত
করে।
২. এর মাধ্যমে বালা মুসিবত
দূর হয়।
৩. রিজিক প্রশস্ত হয়।
৪. পরিবারে শান্তি আসে।
৫. শরীরে ঈমানি শক্তি বৃদ্ধি
পায়।
৬. হৃদয় স্বচ্ছ ও নির্মল
হয়।
৭. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
হয়।
৮. চিন্তা-পেরেশানি দূর হয়।
তওবার শর্তাবলী:
জেনে রাখা দরকার যে, তওবার
জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। এ সকল শর্ত সাপেক্ষে কেবল তওবা কবুল হতে পারে; অন্যথায় নয়।
গুনাহ যদি বান্দা ও আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট হয়; অপর কোন মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট না
হয় তবে তার জন্য তিনটি শর্ত। যথা:
১ম শর্ত: তৎক্ষণাৎ গুনাহ হতে বিরত
থাকা।
২য় শর্ত:
গুনাহের জন্য লজ্জিত হওয়া।
৩য় শর্ত:
পুনরায় উক্ত গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা।
উল্লেখিত তিনটি শর্ত পূরণ
না হলে তওবা কবুল হবে না।
আর অন্যায় যদি অন্য মানুষের
সাথে সংশ্লিষ্ট হয় তবে তার জন্য চার টি শর্ত।
উল্লেখিত তিনটি শর্তের সাথে
চতুর্থ শর্ত হল, সম্ভব হলে যার অধিকার হরণ করা হয়েছে তার সাথে বিষয়টি সুরাহা করে নেয়া।
যেমন, কারও অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করা হলে তা মালিকের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে। অগোচরে কারও
সমালোচনা করা হলে তার সাথে বিষয়টি মিটমাট করে নেয়া। তবে যদি তা সম্ভব না হয় তবে উক্ত
ব্যক্তির জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হবে এবং তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করতে হবে।
তওবা ও ইস্তেগফারসমূহঃ
দোয়া-১:
আস্তাগফিরুল্লা-হ।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা
প্রার্থনা করছি।
প্রতি ওয়াক্তের ফরয সলাতে
সালাম ফিরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দোয়া ৩ বার পড়তেন।
[মিশকাত-৯৬১]
দোয়া-২:
আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু
ইলাইহি।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা
প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিদিন
৭০ বারের অধিক তাওবা ও ইসতিগফার করতেন। [বুখারী-৬৩০৭]
দোয়া-৩:
রাব্বিগ্ ফিরলী, ওয়া তুব
‘আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়া-বুর রাহীম। দ্বিতীয় বর্ণনায় “রাহীম”-এর বদলে: ‘গাফূর’।
অনুবাদঃ হে আমার প্রভু, আপনি
আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।
দ্বিতীয় বর্ণনায়: তাওবা কবুলকারী ও ক্ষমাকারী।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মসজিদে
বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন। [আবূ দাঊদ-১৫১৬, ইবনু মাজাহ-৩৮১৪, তিরমিযী-৩৪৩৪,
মিশকাত-২৩৫২]
দোয়া-৪:
আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী
লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর কাছে
ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর
কাছে তাওবাহ্ করি।
এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তাকে
ক্ষমা করে দিবেন-যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নকারী হয়। [আবু দাউদ-১৫১৭, তিরমিযী-৩৫৭৭,
মিশকাত-২৩৫৩]
দোয়া-৫:
“আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী
লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী, ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আহ্দিকা ওয়া ও’য়াদিকা
মাসতাতা’তু, আ’উযুবিকা মিন শার্রি মা ছা’নাতু, আবূউলাকা বিনি’মাতিকা আ’লাইয়্যা, ওয়া
আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্ফির্লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা।”
অনুবাদঃ হে আল্লাহ তুমিই
আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম।
আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল
থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি।
আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ
গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।
এই দোয়া সকালে পড়ে রাতের
আগে মারা গেলে অথবা রাতে পড়ে সকালের আগে মারা গেলে সে জান্নাতে যাবে। [বুখারী-৬৩০৬]
দোয়া-৬:
লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা
ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমীন।
অর্থ: আপনি ব্যতীত আর কোনো
উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমি পাপী। -সূরা আল আম্বিয়া: ৮৭
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
যখন কোন মুসলিম কোন সমস্যায় এই দো‘আর মাধ্যমে তার পালনকর্তাকে আহবান করে, যা ইউনুস
মাছের পেটে গিয়ে করেছিলেন, তখন আল্লাহ তার আহবানে সাড়া দেন। ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯,
অনুচ্ছেদ-৪; ছহীহাহ হা/২৭২৭। [১৩৪]
ফজিলত
ক. এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা
ইরশাদ করেছেন, আমি নবী ইউনুসের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছি। তাকে দু:খ থেকে মুক্তি দিয়েছি।
অনুরূপভাবে যে মুমিনরা এ দোয়া পড়বে আমি তাদেরও বিভিন্ন বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি দিব।
-সূরা আল আম্বিয়া: ৮৮
খ. হজরত নবী করিম (সা.) ইরশাদ
করেছেন, যে ব্যক্তি হজরত ইউনুস (আ.)-এর ভাষায় দোয়া করবে, সে যে সমস্যায়ই থাকুক আল্লাহতায়ালা
তার ডাকে সাড়া দিবেন। -তিরমিজি: ৩৫০৫
গ. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)
আরও ইরশাদ করেছেন, আমার ভাই ইউনুসের দোয়াটি খুব সুন্দর। এর প্রথম অংশে আছে কালিমায়ে
তায়্যিবা। মাঝের অংশে আছে তাসবিহ। আর শেষের অংশে আছে অপরাধের স্বীকারোক্তি। যে কোনো
চিন্তিত, দু:খিত, বিপদগ্রস্থ ব্যক্তি প্রতি দিন এ দোয়া তিন বার পাঠ করবে আল্লাহতায়ালা
তার ডাকে সাড়া দিবেন। -কানজুল উম্মাল: ৩৪২৮
অভাব-অনটন ও দুঃখ-দূর্দশা দূরকরণ ও রিজিক বৃদ্ধির অন্যান্য দোয়া ও আমলসমূহঃ
কোরআন হতেঃ-
(১) রাসুল (সাঃ) হিজরতের
প্রাক্কালে বলেছিলেনঃ-
“ রব্বি আদখিলনি মুদখলা সিদক্বিওঁ
ওয়া আখরিজনি মুখরজা সিদক্বিওঁ ওয়াজআললি মিল্লাদুনকা সুলত্বানান নাসিরা।” (সুরা বনি
ইসরাইল : আয়াত ৮০)
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু!
আমাকে দাখিল করুন সত্যরূপে, বের করুন সত্যরূপে এবং দান করুন আমাকে নিজের নিকট থেকে
রাষ্ট্রীয় সাহায্য।’
(২) একদা ক্বাতাদা (রাঃ) আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন
যে, রাসুল (সাঃ) কোন দোয়াটি বেশী বেশী পড়তেন। আনাস (রাঃ) বললেন, রাসুল (সাঃ) বেশী বেশী
বলতেনঃ-
“রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া
হাসানাতাঁও ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাঁও ওয়াক্বিনা -আযা-বান্নার”
অর্থঃ হে আমাদের প্রভু প্রতিপালক!
আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বোত্তম কল্যাণ দান করো এবং আগুনের আযাব হতে আমাদের রক্ষা
করো।
(বাক্বারাহঃ২০১, সহীহ মুসলিম,
হা/২৬৯০, আবু দাউদ, হা/১৫১৯)।
(৩) “রব্বি আওঝি’নি আন্ আশকুরা
নি’মাতাকা-ল্লাতি আন্ আ’মতা আ’লাইয়্যা ওয়া আ’লা ওয়া-লিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা স-লিহান্
তারযহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ই’বাদিকাস সলিহিন।”
অর্থ: হে আমার পালনকর্তা!
তুমি আমাকে সামর্থ দাও, যেনো আমি তোমার সেই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি যা তুমি
আমাকে ও আমার পিতা মাতাকে দান করেছো এবং যেনো আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি
এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো। (নমল-২০)
(৪) সুলায়মান আঃ বলেছিলেন,
“রব্বিগফিরলী ওয়া হাবলী মুলকাল
লা ইয়ামবাগী লি আহাদিম মিম্ বা‘দী ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব।”
অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক!
আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন রাজত্ব দান করুন, যা আমার পরে কারো জন্য শোভনীয় হবে
না। নিশ্চয়ই আপনি বড় দাতা। (ছোয়াদঃ৩৫)।
(৫) ”রব্বানা-লা-তুঝিগ কুলুবানা-বা’দা
ইয হাদাইতানা-ওয়া হাবলানা- মিল্লাদুনকা রাহমাতান, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহাব, রব্বানা-
ইন্নাকা জা-মি‘উন না-স, লিইয়াওমিল লা -রইবা ফিহ, ইন্নাল্ল-হা লা-ইউখলিফুল মি-আ-দ।”
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা!
সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করো না এবং আপনার নিকট
থেকে আমাদেরকে অনৃগ্রহ দান করুন। আপনিই সব কিছুর দাতা। হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি মানুষকে
একদিন একত্রিত করবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার ওয়াদার বরখেলাপ করেন
না। (আলে ইমরান-৮-৯)।
(৬) “রব্বানা –লিইউক্বীমুছ
সলাতা ফাজ‘আল আফয়িদাতাম মিনাননাসি তাহবী ইলাইহিম ওয়ারঝুক্বহুম মিনাছ ছামারা-তি লা’আল্লাহুম
ইয়াশকুরুন”।
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক!
তারা যেনো সলাত কায়েম করে। মানুষের অন্তরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে দাও এবং তাদেরকে
ফল-ফলাদি দ্বারা রুযী দান করো। সম্ভবত তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। (ইব্রাহিম-৩৭)।
সহীহ হাদিস হতেঃ-
(১) “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা
মিনাল ফাক্বরি ওয়াল কিল্লাতি ওয়ায যিল্লাতি ওয়া আ’উযুবিকা মিন আন আযলিমা আও উযলিমা”। (আবু দাউদ-হা/১৫৪৪)।
অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার
নিকট অভাব, স্বল্পতা ও অপমান হতে আশ্রয় চাই,
আরো আশ্রয় চাই অত্যাচার করা ও অত্যাচার হওয়া থেকে।
(২) আনাস (রাঃ) বলেন, নবি
সা: বলতেন-
“আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘উযু
বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু
বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন গালাবাতিদ দ্বীনি ওয়া কাহরির রিজালি।”
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়
আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে; অপারগতা ও অলসতা থেকে; কৃপণতা ও ভীরুতা
থেকে; এবং ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (সহীহ বুখারি, হা/২৮৯৩/৬৩৬৯, মিশকাত,
হা/ ২৪৫৮, তিরমিযি, হা/৩৪৮৪, আবু দাউদ, হা/১৫৪১, আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৭২))
(৩) “আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা
আ’ন হারামিক; ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।”
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি
আমাকে আপনার হালালের সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচান। এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ব্যতীত
অন্যের মুখাপেক্ষি হতে বাঁচান।’ (তিরমিজি, হা/৩৫৬৩ মিশকাত, হা/৩৪৪৯, মুসতাদরাকে হাকিম,
হা/১৯৭৩)।
(৪) আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে
বর্ণিত, নবি সা: বলেছেন, তোমরা আল্লাহর নিকট পানাহ চেয়ে বল:
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ'উযুবিকা
মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাক্বা-ই, ওয়া সূইল ক্বাযা-ই, ওয়া শামা-তাতিল আ'দা-ই।“
অর্থ” আল্লাহ! আমি তোমার
আশ্রয় প্রার্থনা করছি অক্ষমকারী বিপদের কষ্ট হ'তে , দুভার্গ্যের আক্রমন হতে , মন্দ ফায়সালা হ'তে এবং শত্রুর হাসি
হ'তে।
(বুখারী-৬৩৪৭,৬৬১৬, মুসলিম-২৭০৭, নাসাঈ- ৫৪৯১, ৫৪৯২,
৭৩০৮, মিশকাত, হা/২৪৫৭, আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৬৯)।
(৫) “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা
মিন ফিতনাতিন্নারি অআযাবিন্নারি অমিন শার্রিল গিনা ওয়াল ফাক্ব।“
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের
ফিতনা থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে এবং ধনবত্তা ও দারিদ্রের মন্দ থেকে তোমার আশ্রয়
প্রার্থনা করছি। ( বুখারী-৮৩৩,২৩৯৭, ৬৩৬৮, ৫৩৭৫, ৫৩৭৬, ৬৩৭৭, ৭১২৯, মুসলিম-৫৮৭, ৫৮৯,
নাসাঈ- ১৩০৯, ৫৪৫৪, ৫৪৬৬, ৫৪৭২, ৫৪৭৭, ৫৪০৪, ইবনে মাজাহ- ৩৮৩৮, আহমদ- ২৪০৫৭, ২৪০৬১,
২৫৭৯৫, তিরমিযি- ৩৪৮৯, আবু দাউদ- ১৫৪৩)
(৬) “ আল্লাহুম্মা আফিনি
ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সামঈ, আল্লাহুম্মা আফিনি বাসারি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা,আল্লাহুম্মা
ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি
লা ইলাহা ইল্লা আনতা।”( [আবু দাউদ:৫০৯২ নাসায়ি কুব [রা.]৯৮৫০]।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমার শরীরে
সুস্থতা দান করো, হে আল্লাহ! আমার শ্রবণশক্তিতে সুস্থতা দান করো, হে আল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তিতে
সুস্থতা দান করো, তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা
করছি কুফুরি ও দরিদ্রতা থেকে, এবং তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আজাব থেকে। তুমি
ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।
(৭) “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল
হুদা ওয়াত-তুক্বা ওয়াল আফা-ফা ওয়াল গিনা।“
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার
নিকট হিদায়াত, পরহেযগারিতা, নৈতিক পবিত্রতা এবং সামর্থ্য কামনা করছি। (সহীহ মুসলিম,
হা/২৭২১, ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৩২, তিরমিজি, হা/৩৪৮৯, মিশকাত, হা/২৪৮৪)
(৮) “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি
ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া আযাবিল ক্ববরি। আল্ল-হুম্মা আ-তি নাফসী তাকওয়া-হা-
ওয়া যাক্কিহা-আন্তা খইরু মান যাক্কা-হা আন্তা ওয়ালিয়্যুহা- ওয়া মাওলাহা- আল্ল-হুম্মা
ইন্নী আউযুবিকা মিন ইলমিন লা- ইয়ানফাউ ওয়া মিন ক্বলবিন লা-ইয়াখশা-উ ওয়া মিন নাফসিন
লা-তাশবা’উ ওয়া মিন দা’ ওয়াতিন লা-ইউসতাজা-বু লাহা।”
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই
আমি আপনার নিকট আশ্যয় চাচ্ছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধ্যকতা ও ক্বরেরর
আযাব হতে। হে আল্লাহ! আমার আত্মাকে সংযম দান করুন, একে পবিত্র করুন, আপনি শ্রেষ্ঠ পবিত্রকারী,
আপনি তার অভিভাবক ও প্রভু। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এমন ইলম
হতে যা উপকার করে না। এমন অন্তর হতে যা ভয় করে না। এমন আত্মা হতে যা তৃপ্তি লাভ করে
না এবং এমন দোয়া হতে যা কবুল হয় না। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭২২, আবু দাউদ, হা/১৫৪৮, ইবনু
মাজাহ, হা/৩৮৩৭, মিশকাত, হা/২৪৬০)
(৯) ““আল্ল-হুম্মা ইন্নী
আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন্ ওয়া রিয্কান ত্বায়্যিবান ওয়া ‘আমালান মুতাক্বাব্বালান।”
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট
উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করি।” (ইবন মাজাহ্, নং ৯২৫;
নাসাঈ, হাদীস নং ১০২, মিশকাত, হা/২৪৯৮ )
(১০) আল্লা-হুম্মাগফির লী,
ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী, ওয়ারযুক্বনী)
“হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা
করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে হেদায়াত দিন এবং আমাকে রিযিক দিন।” মুসলিম ৪/২০৭২,
নং ২৬৯৬।
(১১) “আল্লা-হুম্মা ইন্নী
আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাতি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল
‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা ফী দীনী ওয়াদুনইয়াইয়া, ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর
‘আওরা-তী ওয়া আ-মিন রাও‘আ-তি। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী
ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন
তাহ্তী।”
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট
দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা
এবং নিরাপত্তা চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি
আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। হে
আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার
ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের অসিলায়
আশ্রয় চাই আমার নীচ থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে”।সহীহ ইবন মাজাহ্ ২/৩৩২।
উল্লেখ্য যে, সলাতের মধ্যে
সালাম ফিরানোর পূর্বে কুরআন ও হাদিস থেকে যে কোন দোয়া পড়া বৈধ। (বুখারি-হা/৬৩২৮, কিতাবুদ
দাওয়াত, সহীহ মুসলিম-হা/৯২৪, মিশকাত-হা/৯০৯)। তবে সালাতের মধ্যে আপন আপন ভাষায় দোয়া
করা যাবে না। এমনকি আরবিতেও নিজের বা কারো বানানো দোয়া পাঠ করা যাবে না এবং কুরআন ও
হাদিসে প্রমাণিত দোয়াগুলো অনুবাদ করে পড়াও চলবে না। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম মানুষের ভাষাকে সালাতের মধ্যে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সলাত
মানুষের কথাবার্তা বলার ক্ষেত্র নয়। এটাতো কেবল তাসবিহ, তাকবির ও কুরআন তিলাওয়াতের
জন্যই সুনির্দিষ্ট।’ (সহীহ মুসলিম-১২২৭, আবু দাউদ-৭৯৫, নাসাঈ-১২১৮, মুসনাদে আহমদ-২৩৮১৬,
দারিমী-১৫০২, বুলগুল মারাম-২১৭, মিশকাত-৯৭৮)।
সুতরাং উল্লেখিত দোয়াসমূহ
আমরা সলাতে কিংবা সলাত শেষে একাকী দুই হাত তুলে মোনাজাতে পাঠ করবো।
সর্বদা“আস্তাগফিরুল্লাহা” পাঠের একটি পরীক্ষিত ঘটনা
ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনার
এই ঘটনাটি ঘটেছিল ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের (রাহিমাহুল্লাহ) জীবনে, যিনি একজন সর্বজনবিদিত
আলেম এবং ফিকহশাস্ত্রবিদ। তিনি হাম্বলি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও বহুল সমাদৃত,
উনার সম্মানসূচক উপাধি “শায়খ-উল-ইসলাম” এবং “আহলে সুন্নাহ’র ইমাম”। ইমাম আহমদ তখন বার্ধক্যে
উপনীত হয়েছেন।
তিনি সফরে ছিলেন। যাত্রাপথে
রাত হয়ে এলে তিনি অচেনা শহরটিতে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি অচেনা শহরে একজন আগন্তুক
হিসেবেই থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন, অথচ তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করে অনেকের নিকট সমাদৃত
হতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি। এখানেও একজন মহৎ ব্যক্তিত্ত্ব হিসেবে ইমাম আহমদের
পরিচয় মেলে। তিনি রাতের সলাত শেষ করে সিদ্ধান্ত
নিলেন যে, মসজিদ প্রাঙ্গনেই রাতটা কাটিয়ে দিবেন কিন্তু মসজিদের খাদেম ইমাম আহমদ বিন
হাম্বলকে (রাহিমাহুল্লাহ) চিনতে না পারায়
তাকে তিনি মসজিদে রাত্রি যাপনের অনুমতি দিলেন না। কিন্তু ইমাম আহমদ বিন হাম্বল(রাহিমাহুল্লাহ)
যথেষ্ট বয়স্ক লোক বলে এতো রাতে কোথায় যাবে এই ভেবে মসজিদ প্রাঙ্গনেই থাকতে এক প্রকার জোড় তাগিদ করলে মসজিদের খাদেম তাকে এক
প্রকার টেনে হিঁচড়ে বাইরে বের করে দেন। মসজিদের অদূরেই একজন রুটি বিক্রেতা এই দৃশ্যটি
দেখলেন। এভাবে একজন বয়স্ক লোককে অপমানিত হতে দেখে রুটি বিক্রেতার মনে দয়া হল। রুটি
বিক্রেতা ইমাম আহমদের মেহমানদারি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ইমাম আহমদ লোকটির সাথে অবস্থানকালে
একটি অদ্ভুত বিষয় লক্ষ্যকরলেন। তিনি দেখলেন ঐ রুটি বিক্রেতা প্রতি মুহুর্তে আল্লাহর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে চলছেন। ইস্তিগফার করেই যাচ্ছেন, করেই যাচ্ছেন। অর্থাৎ রুটি
ছানার সময় আস্তাগফিরুল্লাহ, রুটি বানানোর সময়
আস্তাগফিরুল্লাহ, রুটি ভাজার সময় আস্তাগফিরুল্লাহ,
রুটি নামানোর সময় আস্তাগফিরুল্লাহ, বিক্রি করার সময় আস্তাগফিরুল্লাহ, টাকা নেয়ার সময়
আস্তাগফিরুল্লাহ, এভাবে প্রতিটি কাজেই আস্তাগফিরুল্লাহ বলেই যাচ্ছেন। ইমাম আহমদ বিন
হাম্বল(রাহিমাহুল্লাহ) কৌতুহলী হয়ে রুটি বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলেন, “তুমি এই আমলের
কোনো বিশেষ প্রতিদান পেয়েছো কি?”। রুটি বিক্রেতা জবাব দিলেন, ” আল্লাহ আমার সকল দু’আ
কবুল করেছেন, কিন্তু একটি দু’আ এখনো কবুল হয়নি।” ইমাম আহমদ আশ্চর্যান্বিত হয়ে জানতে
চাইলেন যে, তার কোন্ দু’আটি এখনো কবুল হয়নি। লোকটি উত্তর করল, “আমি বিখ্যাত আলেম ইমাম
আহমদের সাক্ষাৎ লাভের দু’আ করেছি যা এখনো আল্লাহ কবুল করেননি। ইমাম আহমদ জবাবে বললেন
, “আল্লাহ রব্বুল আলামিন তোমার দুআ শুনেছেন এমনকি তিনি ইমাম আহমদকে টেনে হিঁচড়ে তোমার
দরজায় এনে উপস্থিত করেছেন, আমিই সেই লোক যাকে তোমরা ইমাম আহমদ নামে জান”। [সংক্ষেপিত,
আল জুমুয়া ম্যাগাজিন, ভলিউম-১৯, ইস্যু-৭]
প্রিয় পাঠক বৃন্দ তওবার শর্তাবলী
মেনে নিয়ে কেউ যদি তওবা ও সব সময় ইস্তিগফার করে, আল্লাহ তায়ালা ১০০% তার মনের আশা পূরণ
করবেনই। (ইহা পরীক্ষিত)।
আসুন আমরা সব সময় পাঠ করি “আস্তাগফিরুল্লাহ”।
তওবা সংক্রান্ত সহিহ হাদিসসমূহ
হাদিস গ্রন্থঃ আল লু'লু ওয়াল মারজান
অধ্যায় (৪৯)-তাওবাহ
হাদিস নং ১৭৪৬ থেকে ১৭৬৪ পর্যন্ত
(হুবহু প্রকাশিত)
৪৯/১.
তাওবাহর প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং তদ্বারা আনন্দিত হওয়া।
১৭৪৬
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা ঘোষণা
করেন, আমি সেরূপই, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সঙ্গে থাকি যখন সে
আমাকে স্মরণ করে। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে; আমিও তাকে নিজে স্মরণ করি। আর যদি
সে লোক-সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি।
যদি সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তবে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই, যদি সে আমার
দিকে এক বাহু অগ্রসর হয়; আমি তার দিকে দু’ বাহু অগ্রসর হই। আর সে যদি আমার দিকে হেঁটে
অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই। (বুখারী পর্ব ৯৭ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ৭৪০৫;
মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১, হাঃ ১৬৭৫)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৭৪৭
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘আবদুল্লাহ
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) দু’টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। একটি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) থেকে আর অন্যটি তাঁর নিজ থেকে। তিনি বলেন, ঈমানদার ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে
এত বিরাট মনে করে, যেন সে একটা পর্বতের নীচে বসা আছে, আর সে আশঙ্কা করছে যে, সম্ভবত
পর্বতটা তার উপর ধ্বসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে মাছির মত মনে করে,
যা তার নাকে বসে চলে যায়। এ কথাটি আবূ শিহাব নিজ নাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলে। তারপর
(নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন) নাবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মনে কর কোন এক ব্যক্তি (সফরের অবস্থায়
বিশ্রামের জন্য) কোন এক স্থানে অবতরণ করলো, সেখানে প্রাণেরও ভয় ছিল। তার সঙ্গে তার
সফরের বাহন ছিল। যার উপর তার খাদ্য ও পানীয় ছিল, সে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো এবং জেগে
দেখলো তার বাহন চলে গেছে। তখন সে গরমে ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লো। রাবী বলেনঃ আল্লাহ
যা চাইলেন তা হলো। তখন সে বললো যে, আমি যে জায়গায় ছিলাম সেখানেই ফিরে যাই। এরপর সে
নিজ স্থানে ফিরে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। তারপর জেগে দেখলো যে, তার বাহনটি তার পাশেই
দাঁড়িয়ে আছে। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৬৩০৮; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ১ হাঃ ২৭৪৪)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৪৯/৪.
আল্লাহ
তা‘আলার দয়ার প্রশস্ততা এবং তা তাঁর রাগকে ছাড়িয়ে গেছে।
১৭৪৮
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বান্দার
তাওবাহর কারণে সেই লোকটির চেয়েও অধিক খুশী হন, যে লোকটি মরুভূমিতে তাঁর উট হারিয়ে পরে
তা পেয়ে যায়। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৬৩০৯; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ১, হাঃ ২৭৪৭)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৭৪৯
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ যখন সৃষ্টির
কাজ শেষ করলেন, তখন তিনি তাঁর কিতাব লাওহে মাহফুজে লিখেন, যা আরশের উপর তাঁর নিকট আছে।
নিশ্চয়ই আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রবল। (বুখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩১৯৪;
মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৪ হাঃ ২৭৫১)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৭৫০
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ
রহমতকে একশ’ ভাগে ভাগ করেছেন। তার মধ্যে নিরানব্বই ভাগ তিনি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন।
আর পৃথিবীতে একভাগ অবতীর্ণ করেছেন। ঐ এক ভাগের কারণেই সৃষ্ট জগত একে অন্যের উপর দয়া
করে। এমনকি ঘোড়া তার বাচ্চার উপর থেকে পা তুলে নেয় এ ভয়ে যে, সে ব্যথা পাবে। (বুখারী
পর্ব ৭৮ অধ্যায় ১৯ হাদীস নং ৬০০০; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৪, হাঃ ৬৪৬৯)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৭৫১
‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, একবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিছু সংখ্যক বন্দী আসে।
বন্দীদের মধ্যে একজন মহিলা ছিল। তার স্তন দুধে পূর্ণ ছিল। সে বন্দীদের মধ্যে কোন শিশু
পেলে তাকে ধরে কোলে নিত এবং দুধ পান করাত। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
আমাদের বললেনঃ তোমরা কি মনে করো এ মহিলা তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে? আমরা বললামঃ
ফেলার ক্ষমতা রাখলে সে কখনো ফেলবে না। তারপর তিনি বললেনঃ এ মহিলাটি তার সন্তানের উপর
যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর তদপেক্ষা অধিক দয়ালু। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায়
১৮ হাদীস নং ৫৯৯৯; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৪, হাঃ ২৭৫৪)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৭৫২
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক ব্যক্তি (জীবনেও) কোন ভাল ‘আমাল করেনি।
মৃত্যুর সময় সে বলল, মারা যাবার পর তোমরা তাকে পুড়িয়ে ফেল। আর অর্ধেক স্থলে আর অর্ধেক
সাগরে ছড়িয়ে দাও। সে আরো বলল, আল্লাহ্র কসম! আল্লাহ্ যদি তাকে পেয়ে যান তাহলে অবশ্যই
তাকে এমন শাস্তি দেবেন, যা জগতসমূহের আর কাউকে দেবেন না। তারপর আল্লাহ্ সাগরকে হুকুম
দিলে সাগর এর মধ্যকার অংশকে একত্রিত করল। স্থলকে হুকুম দিলে সেও তার মধ্যকার অংশ একত্রিত
করল। তারপর আল্লাহ্ বললেনঃ তুমি কেন এরূপ করলে? সে উত্তর করল, তোমার ভয়ে। আর তুমি অধিক
জ্ঞাত। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। (বুখারী পর্ব ৯৭ অধ্যায় ৩৪ হাদীস
নং ৭৫০৬; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৪ হাঃ ২৭৫৬)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৭৫৩
আবূ
সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তোমাদের
আগের এক লোক, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেছিলেন। যখন তার মৃত্যুর সময়
ঘনিয়ে এল তখন সে তার ছেলেদেরকে জড় করে জিজ্ঞেস করল আমি তোমাদের কেমন পিতা ছিলাম? তারা
বলল আপনি আমাদের উত্তম পিতা ছিলেন। সে বলল, আমি জীবনে কখনও কোন নেক আমল করতে পারিনি।
আমি যখন মারা যাব তখন তোমরা আমার লাশকে জ্বালিয়ে ছাই করে দিও এবং প্রচণ্ড ঝড়ের দিন
ঐ ছাই বাতাসে উড়িয়ে দিও। সে মারা গেল। ছেলেরা ওসিয়াত অনুযায়ী কাজ করল। আল্লাহ্ তা‘আলা
তার ছাই জড় করে জিজ্ঞেস করলেন, এমন ওসিয়াত করতে কে তোমাকে উদ্বুদ্ধ করল? সে বলল, হে
আল্লাহ্! তোমার শাস্তির ভয়। ফলে আল্লাহ্র রহমত তাকে ঢেকে নিল। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায়
৫৪ হাদীস নং ৩৪৭৮; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৪ হাঃ ২৭৫৭)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৪৯/৫.
পাপ
থেকে তাওবাহ করলে তাওবাহ কবূল হয় যদিও পাপ ও তাওবাহ বার বার হয়।
১৭৫৪
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি, এক বান্দা
গুনাহ্ করল। বর্ণনাকারী (আরবী) না বলে কখনো (আরবী) বলেছেন। তারপর সে বলল, হে আমার প্রতিপালক!
আমি তো গুনাহ্ করে ফেলেছি। বর্ণনাকারী (আরবী) এর স্থলে কখনো (আরবী) বলেছেন। তাই আমার
গুনাহ্ ক্ষমা করে দাও। তার প্রতিপালক বললেনঃ আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার রয়েছে
একজন প্রতিপালক যিনি গুনাহ্ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমার বান্দাকে আমি
ক্ষমা করে দিলাম। তারপর সে আল্লাহ্র ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল অবস্থান করল এবং সে আবার গুনাহতে
লিপ্ত হলো। বর্ণনাকারীর সন্দেহ (আরবী) কিংবা (আরবী) বলা হয়েছে। বান্দা আবার বলল, হে
আমার প্রতিপালক! আমি তো আবার গুনাহ্ করে বসেছি। এখানে (আরবী) কিংবা (আরবী) বলা হয়েছে।
আমার এ গুনাহ্ তুমি ক্ষমা করে দাও। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তা‘আলা বললেনঃ আমার বান্দা
কি জেনছে যে, তার রয়েছে একজন প্রতিপালক যিনি গুনাহ্ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও
দেন। এরপর সে বান্দা আল্লাহ্র ইচ্ছানুযায়ী কিছুদিন সে অবস্থায় অবস্থান করল। আবারও সে
গুনাহতে লিপ্ত হয়ে গেল। এখানে (আরবী) কিংবা (আরবী) বলা হয়েছে। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক!
আমি তো আরো একটি গুনাহ্ করে ফেলেছি। এখানে (আরবী) কিংবা (আরবী) বলা হয়েছে। আমার এ গুনাহ্
ক্ষমা করে দাও। তখন আল্লাহ্ বললেনঃ আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার একজন প্রতিপালক রয়েছেন,
যিনি গুনাহ্ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। আমি আমার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।
এরূপ তিনবার বললেন। ** অতঃপর সে যা ইচ্ছা তা করুক। (বুখারী পর্ব ৯৭ অধ্যায় ৩৫ হাদীস
নং ৭৫০৭; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৫ হাঃ ২৭৫৮)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৪৯/৬.
আল্লাহ
তা‘আলার গরিমা ও অশ্লীলতা হারাম।
১৭৫৫
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিষিদ্ধ কার্যে মু’মিনদেরকে বাধা দানকারী
আল্লাহ্র চেয়ে অধিক কেউ নেই, এজন্যই প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতা নিষিদ্ধ করেছেন,
আল্লাহ্র প্রশংসা প্রকাশ করার চেয়ে প্রিয় তাঁর কাছে অন্য কিছু নেই, সেজন্যেই আল্লাহ
আপন প্রশংসা নিজেই করেছেন। (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৪৬৩৪; মুসলিম ৪৯ অধ্যায়
৬, হাঃ ২৭৬০)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৭৫৬
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলার আত্মমর্যাদাবোধ
আছে এবং আল্লাহ্র আত্মমর্যাদাবোধ এই যে, যেন কোন মু’মিন বান্দা হারাম কাজে লিপ্ত না
হয়। (বুখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ১০৮ হাদীস নং ৫২২৩; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৬, হাঃ ২৭৬২)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৭৫৭
আসমা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্র চেয়ে
অধিক আত্মমর্যাদাবোধ আর কারো নেই। ইয়াহ্ইয়া (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ সালামাহ
(রহ.) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে শুনেছেন যে, তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে
অনুরূপ হাদীস বলতে শুনেছেন। (বুখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ১০৮ হাদীস নং ৫২২২; মুসলিম ৪৯ অধ্যায়
৬ হাঃ ২৭৬২)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৪৯/৭.
আল্লাহ
তা‘আলার বাণী- ‘নিশ্চয় সৎকর্ম অসৎকর্মকে মুছে দেয়’।
১৭৫৮
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, এক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুম্বন করে বসে। পরে সে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বিষয়টি তাঁর গোচরীভূত করে। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা আয়াত
নাযিল করেনঃ “দিনের দু’প্রান্তে-সকাল ও সন্ধ্যায় এবং রাতের প্রথম অংশে সলাত কায়েম কর।
নিশ্চয়ই ভালো কাজ পাপাচারকে মিটিয়ে দেয়” (সূরাহ হূদ ১১/১১৪)। লোকটি জিজ্ঞেস করলো, হে
আল্লাহ্র রাসূল! এ কি শুধু আমার বেলায়? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতের জন্যই। (বুখারী পর্ব ৯ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৫২৬; মুসলিম ৪৯
অধ্যায় ৭, হাঃ ২৭৬৩)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৭৫৯
আনাস
ইব্নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি
তাঁর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। তাই আমার
উপর শাস্তি প্রয়োগ করুন। কিন্তু তিনি তাকে অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন না। আনাস
(রাঃ) বলেন তখন সলাতের সময় এসে গেল। সে ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর
সঙ্গে সলাত আদায় করল। যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করলেন,
তখন সে ব্যক্তি তাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়াল এবং বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি শাস্তিযোগ্য
অপরাধ করে ফেলেছি। তাই আমার উপর আল্লাহ্র বিধান প্রয়োগ করুন। তিনি বললেনঃ তুমি কি আমার
সাথে সলাত আদায় করনি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমার গুনাহ্ ক্ষমা
করে দিয়েছেন। অথবা বললেনঃ তোমার শাস্তি (ক্ষমা করে দিয়েছেন)। (বুখারী পর্ব ৮৬ অধ্যায়
২৭ হাদীস নং ৬৮২৩; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৭, হাঃ ২৭৬৪)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৪৯/৮.
হত্যাকারীর
তাওবাহ কবূল হওয়া, যদিও তার হত্যা অনেক হয়।
১৭৬০
আবূ
সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বানী ইসরাঈলের মাঝে এমন কোন ব্যক্তি ছিল
যে, নিরানব্বইটি মানুষ হত্যা করেছিল। অতঃপর সে বের হয়ে একজন পাদরীকে জিজ্ঞেস করল, আমার
তাওবাহ কবুল হওয়ার আশা আছে কি? পাদরী বলল, না। তখন সে পাদরীকেও হত্যা করল। অতঃপর পুনরায়
সে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগল। তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সে
রওয়ানা হল এবং পথিমধ্যে তার মৃত্যু এসে গেল। সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সে স্থানটির দিকে
ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমত ও আযাবের ফেরেশতামণ্ডলী তার রূহকে নিয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত
হলেন। আল্লাহ্ সামনের ভূমিকে আদেশ করলেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং
পশ্চাতে ফেলে আসা স্থানকে (যেখানে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল) আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও।
অতঃপর ফেরেশতাদের উভয় দলকে নির্দেশ দিলেন- তোমরা এখান থেকে উভয় দিকের দূরত্ব পরিমাপ
কর। পরিমাপ করা হল, দেখা গেল যে, মৃত লোকটি সামনের দিকে এক বিঘত বেশি এগিয়ে আছে। কাজেই
তাকে ক্ষমা করা হল। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৫৪ হাদীস নং ৩৪৭০; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৮ হাঃ
২৭৬৬)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৭৬১
সাফওয়ান
ইবনু মুহরিয আল-মাযিনী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, একদিন আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সাথে তাঁর হাত ধরে চলছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি
এসে বলল, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর মু’মিন বান্দার একান্তে কথাবার্তা সম্পর্কে
আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কী বলতে শুনেছেন? তখন তিনি
বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ
তা‘আলা মু’মিন ব্যক্তিকে নিজের কাছে নিয়ে আসবেন এবং তার উপর স্বীয় আবরণ দ্বারা তাকে
ঢেকে নিবেন। তারপর বলবেন, অমুক পাপের কথা কি তুমি জান? তখন সে বলবে, হ্যাঁ, হে আমার
প্রতিপালক! এভাবে তিনি তার কাছ হতে তার পাপগুলো স্বীকার করিয়ে নিবেন। আর সে মনে করবে
যে, তার ধ্বংস অনিবার্য। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, আমি পৃথিবীতে তোমার পাপ গোপন করে
রেখেছিলাম। আর আজ আমি তা মাফ করে দিব”। তারপর তার নেকের আমলনামা তাকে দেয়া হবে। কিন্তু
কাফির ও মুনাফিকদের সম্পর্কে সাক্ষীরা বলবে, এরাই তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে মিথ্যা
বলেছিল। সাবধান, যালিমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। (বুখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ২ হাদীস নং
২৪৪১; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৮ হাঃ ২৮৬৮)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৪৯/৯.
কা‘ব
বিন মালিক ও তার সাথীদ্বয়ের তাওবাহর হাদীস।
১৭৬২
‘আবদুল্লাহ ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যতগুলো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন
তার মধ্যে তাবূক যুদ্ধ ব্যতীত আমি আর কোন যুদ্ধ থেকে পেছনে থাকিনি। তবে আমি বদর যুদ্ধেও
অংশগ্রহণ করিনি। কিন্তু উক্ত যুদ্ধ থেকে যাঁরা পেছনে পড়ে গেছেন, তাদের কাউকে ভর্ৎসনা
করা হয়নি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবল কুরাইশ দলের সন্ধানে
বের হয়েছিলেন। অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের এবং তাঁদের শত্রু বাহিনীর মধ্যে অঘোষিত
যুদ্ধ সংঘটিত করেন। আর আকাবার রাতে যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
আমাদের থেকে ইসলামের উপর অঙ্গীকার গ্রহণ করেন, আমি তখন তাঁর সঙ্গে ছিলাম। ফলে বদর প্রান্তরে
উপস্থিত হওয়াকে আমি প্রিয়তর ও শ্রেষ্ঠতর বলে বিবেচনা করিনি। যদিও আকাবার ঘটনা অপেক্ষা
লোকদের মধ্যে বদরের ঘটনা বেশী মাশহুর ছিল।
আর
আমার অবস্থার বিবরণ এই, তাবূক যুদ্ধ থেকে আমি যখন পেছনে থাকি তখন আমি এত অধিক সুস্থ,
শক্তিশালী ও সচ্ছল ছিলাম যে আল্লাহ্র কসম! আমার কাছে কখনো ইতোপূর্বে কোন যুদ্ধে একই
সঙ্গে দু’টো যানবাহন জোগাড় করা সম্ভব হয়নি, যা আমি এ যুদ্ধের সময় জোগাড় করেছিলাম। আর
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে অভিযান পরিচালনার সংকল্প গ্রহণ
করতেন, বাহ্যত তার বিপরীত দেখাতেন। এ যুদ্ধ ছিল ভীষণ উত্তাপের সময়, অতি দূরের যাত্রা,
বিশাল মরুভূমি এবং বহু শত্রুসেনার মোকাবালা করার। কাজেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ অভিযানের অবস্থা মুসলিমদের কাছে প্রকাশ করে দেন যাতে তারা যুদ্ধের
প্রয়োজনীয় সামান জোগাড় করতে পারে।
কা‘ব
(রাঃ) বলেন, যার ফলে যে কোন লোক যুদ্ধাভিযান থেকে বিরত থাকতে ইচ্ছে করলে তা সহজেই করতে
পারত এবং ওয়াহী মারফত এ খবর না জানানো পর্যন্ত তা সংগোপন থাকবে বলে সে ধারণা করত। রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ অভিযান পরিচালনা করেছিলেন এমন সময় যখন ফল-মূল
পাকার ও গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়ার সময় ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) স্বয়ং এবং তাঁর সঙ্গী মুসলিম বাহিনী অভিযানে যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণ করে
ফেলেন। আমিও প্রতি সকালে তাঁদের সঙ্গে রওয়ানা হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকি। কিন্তু
কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারিনি। মনে মনে ধারণা করতে থাকি, আমি তো যখন ইচ্ছে পারব। এই
দোটানায় আমার সময় কেটে যেতে লাগল। এদিকে অন্য লোকেরা পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ফেলল। ইতোমধ্যে
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাথী মুসলিমগণ রওয়ানা করলেন
অথচ আমি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না। আমি মনে মনে ভাবলাম, আচ্ছা ঠিক আছে, এক দু’দিনের
মধ্যে আমি প্রস্তুত হয়ে পরে তাঁদের সঙ্গে গিয়ে মিলব। এভাবে আমি প্রতিদিন বাড়ি হতে প্রস্তুতি
নেয়ার উদ্দেশে বের হই, কিন্তু কিছু না করেই ফিরে আসি। আবার বের হই, আবার কিছু না করে
ঘরে ফিরে আসি। ইত্যবসরে বাহিনী অগ্রসর হয়ে অনেক দূর চলে গেল। আর আমি রওয়ানা করে তাদের
সঙ্গে রাস্তায় মিলিত হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করতে লাগলাম। আফসোস যদি আমি তাই করতাম! কিন্তু
তা আমার ভাগ্যে জোটেনি। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রওয়ানা
হওয়ার পর আমি লোকদের মধ্যে বের হয়ে তাদের মাঝে বিচরণ করতাম। এ কথা আমার মনকে পীড়া দিত
যে, আমি তখন (মাদীনাহ্) মুনাফিক এবং দুর্বল ও অক্ষম লোক ব্যতীত অন্য কাউকে দেখতে পেতাম
না। এদিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূক পৌঁছার আগে পর্যন্ত
আমার ব্যাপারে আলোচনা করেননি। অনন্তর তাবূকে এ কথা তিনি লোকদের মাঝে বসে জিজ্ঞেস করে
বসলেন, কা‘ব কী করল? বানী সালামাহ গোত্রের এক লোক বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তার ধন-সম্পদ ও অহঙ্কার তাকে আসতে দেয়নি। এ কথা শুনে মুআয ইবনু
জাবাল (রাঃ) বললেন, তুমি যা বললে তা ঠিক নয়। হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ্র কসম, আমরা তাঁকে উত্তম ব্যক্তি বলে জানি। তখন রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব রইলেন।
কা‘ব
ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, আমি যখন জানতে পারলাম যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ মুনাওয়ারায় ফিরে আসছেন, তখন আমি চিন্তিত হয়ে গেলাম এবং মিথ্যা
ওজুহাত খুঁজতে থাকলাম। মনে স্থির করলাম, আগামীকাল এমন কথা বলব যাতে করে রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ক্রোধকে ঠাণ্ডা করতে পারি। আর এ সম্পর্কে আমার
পরিবারস্থ জ্ঞানীগুণীদের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করতে থাকি। এরপর যখন প্রচারিত হল যে, রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় এসে পৌঁছে যাচ্ছেন, তখন আমার অন্তর থেকে
মিথ্যা দূর হয়ে গেল। আর মনে দৃঢ় প্রত্যয় হল যে, এমন কোন উপায়ে আমি তাঁকে কখনো ক্রোধমুক্ত
করতে সক্ষম হব না, যাতে মিথ্যার লেশ থাকে। অতএব আমি মনে মনে স্থির করলাম যে, আমি সত্য
কথাই বলব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল বেলায় মাদীনায় প্রবেশ
করলেন। তিনি সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে মাসজিদে গিয়ে দু’রাক‘আত সলাত আদায় করতেন,
তারপর লোকদের সামনে বসতেন। যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করলেন,
তখন যারা পশ্চাদপদ ছিলেন তাঁরা তাঁর কাছে এসে শপথ করে করে অপারগতা ও আপত্তি পেশ করতে
লাগল। এরা সংখ্যায় আশির অধিক ছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বাহ্যত তাদের ওযর-আপত্তি গ্রহণ করলেন, তাদের বাই‘আত করলেন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা
করলেন। কিন্তু তাদের অন্তরের অবস্থা আল্লাহ্র হাওয়ালা করে দিলেন। [কা‘ব (রাঃ) বলেন]
আমিও এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে হাজির হলাম। আমি যখন তাঁকে
সালাম দিলাম তখন তিনি রাগান্বিত চেহারায় মুচকি হাসি হাসলেন। তারপর বললেন, এসো। আমি
সে মতে এগিয়ে গিয়ে একেবারে তাঁর সম্মুখে বসে গেলাম। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
কী কারণে তুমি অংশগ্রহণ করলে না? তুমি কি যানবাহন ক্রয় করনি? তখন আমি বললাম, হ্যাঁ,
করেছি। আল্লাহ্র কসম! এ কথা সুনিশ্চিত যে, আমি যদি আপনি ব্যতীত দুনিয়ার অন্য কোন ব্যক্তির
সামনে বসতাম তাহলে আমি তার অসন্তুষ্টিকে ওযর-আপত্তি পেশের মাধ্যমে ঠাণ্ডা করার চেষ্টা
করতাম। আর আমি তর্কে পটু। কিন্তু আল্লাহ্র কসম আমি পরিজ্ঞাত যে, আজ যদি আমি আপনার কাছে
মিথ্যা কথা বলে আমার প্রতি আপনাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করি তাহলে শীঘ্রই আল্লাহ তা‘আলা
আপনাকে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দিতে পারেন। আর যদি আপনার কাছে সত্য প্রকাশ করি যাতে
আপনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, তবুও আমি এতে আল্লাহ্র ক্ষমা পাওয়ার অবশ্যই আশা করি।
না, আল্লাহ কসম, আমার কোন ওযর ছিল না। আল্লাহ্র কসম! সেই যুদ্ধে আপনার সঙ্গে না যাওয়ার
সময় আমি সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ও সামর্থ্যবান ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে সত্য কথাই বলেছে। তুমি এখন চলে যাও, যতদিনে না তোমার
সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা ফায়সালা করে দেন। তাই আমি উঠে চলে গেলাম। তখন বানী সালিমার
কতিপয় লোক আমার অনুসরণ করল। তারা আমাকে বলল, আল্লাহ্র কসম! তুমি ইতোপূর্বে একটি ওযর
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পেশ করে দিতে পারতে না? আর
তোমার এ অপরাধের কারণে তোমার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর
ক্ষমা প্রার্থনাই তো যথেষ্ট ছিল। আল্লাহ্র কসম! তারা আমাকে বারবার কঠিনভাবে ভর্ৎসনা
করতে থাকে। ফলে আমি পূর্ব স্বীকারোক্তি থেকে ফিরে গিয়ে মিথ্যা বলার বিষয়ে মনে মনে চিন্তা
করতে থাকি। এরপর আমি তাদের বললাম, আমার মতো এ কাজ আর কেউ করেছে কি? তারা জওয়াব দিল,
হ্যাঁ, আরও দু’জন তোমার মতো বলেছে এবং তাদের ব্যাপারেও তোমার মতো একই ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হয়েছে। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, তারা কে কে? তারা বলল, একজন মুরারা ইবনু রবী আমরী
এবং অপরজন হলেন, হিলাল ইবনু ‘উমাইয়াহ ওয়াকিফী। এরপর তারা আমাকে জানালো যে, তারা উভয়ে
উত্তম মানুষ এবং তারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। সেজন্য দু’জনেই আদর্শস্থানীয়। যখন
তারা তাদের নাম উল্লেখ করল, তখন আমি পূর্ব মতের উপর অটল রইলাম।
আর
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মধ্যকার যে তিনজন তাবূকে অংশগ্রহণ
হতে বিরত ছিল তাদের সঙ্গে কথা বলতে মুসলিমদের নিষেধ করে দিলেন। তদনুসারে মুসলিমরা আমাদের
এড়িয়ে চলল। আমাদের প্রতি তাদের আচরণ বদলে ফেলল। এমনকি এ দেশ যেন আমাদের কাছে অপরিচিত
হয়ে গেল। এ অবস্থায় আমরা পঞ্চাশ রাত অতিবাহিত করলাম।
আমার
অপর দু’জন সাথী তো সংকট ও শোচনীয় অবস্থায় নিপতিত হলেন। তারা নিজেদের ঘরে বসে বসে কাঁদতে
থাকেন। আর আমি যেহেতু অধিকতর যুবক ও শক্তিশালী ছিলাম তাই বাইরে বের হতাম, মুসলিমদের
জামা‘আতে সলাত আদায় করতাম, বাজারে চলাফেরা করতাম কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে কথা বলত না।
আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে হাযির হয়ে তাঁকে সালাম
দিতাম। যখন তিনি সলাত শেষে মজলিসে বসতেন তখন আমি মনে মনে বলতাম ও লক্ষ্য করতাম, তিনি
আমার সালামের জবাবে তার ঠোঁটদ্বয় নেড়েছেন কি না। তারপর আমি তাঁর কাছাকাছি জায়গায় সলাত
আদায় করতাম এবং গোপন দৃষ্টিতে তাঁর দিকে দেখতাম যে, আমি যখন সলাতে মগ্ন হতাম তখন তিনি
আমার প্রতি দৃষ্টি দিতেন, আর যখন আমি তাঁর দিকে তাকাতাম তখন তিনি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতেন।
এভাবে আমার প্রতি মানুষদের কঠোরতা ও এড়িয়ে চলা দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকে। একদা আমি আমার
চাচাত ভাই ও প্রিয় বন্ধু আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ)-এর বাগানের প্রাচীর টপকে ঢুকে পড়ে তাঁকে
সালাম দেই। কিন্তু আল্লাহ্র কসম তিনি আমার সালামের জওয়াব দিলেন না। আমি তখন বললাম,
হে আবূ ক্বাতাদাহ! আপনাকে আমি আল্লাহ্র কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আপনি কি জানেন যে, আমি
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভালবাসি? তখন তিনি নীরবতা
পালন করলেন। আমি পুনরায় তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি এবারও কোন জবাব দিলেন না।
আমি আবারো তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই ভাল জানেন। তখন আমার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। আমি আবার
প্রাচীর টপকে ফিরে এলাম।
কা‘ব
(রাঃ) বলেন, একদা আমি মাদীনাহর বাজারে হাটছিলাম। তখন সিরিয়ার এক বণিক যে মাদীনাহর বাজারে
খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করার উদ্দেশে এসেছিল, সে বলছে, আমাকে কা‘ব ইবনু মালিকের সঙ্গে কেউ
পরিচয় করে দিতে পারে কি? তখন লোকেরা তাকে আমার প্রতি ইশারা করে দেখিয়ে দিল। তখন সে
এসে গাস্সানি বাদশার একটি পত্র আমার কাছে হস্তান্তর করল। তাতে লেখা ছিল, পর সমাচার
এই, আমি জানতে পারলাম যে, আপনার সাথী আপনার প্রতি জুলম করেছে। আর আল্লাহ আপনাকে মর্যাদাহীন
ও নিরাশ্রয় সৃষ্টি করেননি। আপনি আমাদের দেশে চলে আসুন, আমরা আপনার সাহায্য-সহানুভূতি
করব। আমি যখন এ পত্র পড়লাম তখন আমি বললাম, এটাও আর একটি পরীক্ষা। তখন আমি চুলা খুঁজে
তার মধ্যে পত্রটি নিক্ষেপ করে জ্বালিয়ে দিলাম। এ সময় পঞ্চাশ দিনের চল্লিশ দিন অতিবাহিত
হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ থেকে
এক সংবাদবাহক আমার কাছে এসে বলল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ
দিয়েছেন যে, আপনি আপনার স্ত্রী হতে পৃথক থাকবেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি তাকে তালাক
দিয়ে দিব, না অন্য কিছু করব? তিনি উত্তর দিলেন, তালাক দিতে হবে না বরং তার থেকে পৃথক
থাকুন এবং তার নিকটবর্তী হবেন না। আমার অপর দু’জন সঙ্গীর প্রতি একই আদেশ পৌঁছালেন।
তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পিত্রালয়ে চলে যাও। আমার সম্পর্কে আল্লাহ্র
ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত তুমি সেখানে থাক।
কা‘ব
(রাঃ) বলেন, আমার সঙ্গী হিলাল ইবনু উমাইয়ার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)! হিলাল ইবনু উমাইয়া অতি বৃদ্ধ, এমন বৃদ্ধ যে, তাঁর কোন খাদিম নেই। আমি
তাঁর খেদমত করি, এটা কি আপনি অপছন্দ করেন? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বললেন, না, তবে সে তোমার বিছানায় আসতে পারবে না। সে বলল, আল্লাহ্র কসম! এ সম্পর্কে
তার কোন অনুভূতিই নেই। আল্লাহ্র কসম! তিনি এ নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে সর্বদা কান্নাকাটি
করছেন। [কা‘ব (রাঃ) বলেন] আমার পরিবারের কেউ আমাকে পরামর্শ দিল যে, আপনিও যদি আপনার
স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে অনুমতি চেয়ে
নিতেন যেমনভাবে হিলাল ইবনু উমাইয়ার স্ত্রীকে অনুমতি দেয়া হয়েছে তার খিদমত করার জন্য।
তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
নিকট অনুমতি চাইব না। আমি যদি তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর অনুমতি চাই তবে তিনি কী বলেন, তা আমার জানা নেই। আমি তো নিজেই আমার খিদমতে
সক্ষম। এরপর আরও দশরাত কাটালাম। এভাবে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন
থেকে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেন তখন থেকে পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হল। এরপর আমি পঞ্চাশতম
রাত শেষে ফাজরের সলাত আদায় করলাম এবং আমাদের এক ঘরের ছাদে এমন অবস্থায় বসে ছিলাম যে
অবস্থার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা (কুরআনে) বর্ণনা করেছেন। আমার জান-প্রাণ দুর্বিষহ এবং
গোটা জগৎটা যেন আমার জন্য প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এমন সময় শুনতে
পেলাম এক চীৎকারকারীর চীৎকার। সে সালা পর্বতের উপর চড়ে উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করছে, হে
কা‘ব ইবনু মালিক! সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কা‘ব (রাঃ) বলেন, এ শব্দ আমার কানে পৌঁছামাত্র
আমি সাজদায় পড়ে গেলাম। আর আমি বুঝলাম যে, আমার সুদিন ও খুশীর খবর এসেছে। রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের সলাত আদায়ের পর আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে
আমাদের তওবা কবূল হওয়ার সুসংবাদ প্রকাশ করেন। তখন লোকেরা আমার এবং আমার সঙ্গীদ্বয়ের
কাছে সুসংবাদ দিতে থাকে এবং তড়িঘড়ি একজন অশ্বারোহী আমার কাছে আসে এবং আসলাম গোত্রের
অপর এক ব্যক্তি দ্রুত আগমন করে পর্বতের উপর আরোহণ করতঃ চীৎকার দিতে থাকে। তার চীৎকারের
শব্দ ঘোড়া অপেক্ষাও দ্রুত পৌঁছল। যার শব্দ আমি শুনেছিলাম সে যখন আমার কাছে সুসংবাদ
প্রদান করতে আসল, আমার তখন নিজের পরনের দু’টো কাপড় ব্যতীত আমার কাছে আর কোন কাপড় ছিল
না। আমি দু’টো কাপড় ধার করে পরিধান করলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর কাছে রওয়ানা হলাম। লোকেরা দলে দলে আমাকে ধন্যবাদ জানাতে আসতে লাগল। তারা
তওবা কবূলের মুবারকবাদ জানাচ্ছিল। তারা বলছিল, তোমাকে মুবারকবাদ যে, আল্লাহ তা‘আলা
তোমার তওবা কবূল করেছেন।
কা‘ব
(রাঃ) বলেন, অবশেষে আমি মাসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) সেখানে বসা ছিলেন এবং তাঁর চতুষ্পার্শ্বে জনতার সমাবেশ ছিল। ত্বলহা ইবনু
‘উবাইদুল্লাহ (রাঃ) দ্রুত উঠে এসে আমার সঙ্গে মুসাফাহা করলেন ও মুবারকবাদ জানালেন।
আল্লাহর কসম! তিনি ব্যতীত আর কোন মুহাজির আমার জন্য দাঁড়াননি। আমি ত্বলহার ব্যবহার
ভুলতে পারব না।
কা‘ব
(রাঃ) বলেন, এরপর আমি যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম
জানালাম, তখন তাঁর চেহারা আনন্দের আতিশয্যে ঝকমক করছিল। তিনি আমাকে বললেন, তোমার মা
তোমাকে জন্মদানের দিন হতে যতদিন তোমার উপর অতিবাহিত হয়েছে তার মধ্যে উৎকৃষ্ট ও উত্তম
দিনের সুসংবাদ গ্রহণ কর। কা‘ব বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! এটা কি আপনার পক্ষ থেকে না আল্লাহ্র পক্ষ থেকে? তিনি বললেন,
আমার পক্ষ থেকে নয় বরং আল্লাহ্র পক্ষ থেকে। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) যখন খুশী হতেন তখন তাঁর চেহারা এত উজ্জ্বল ও ঝলমলে হত যেন পূর্ণিমার চাঁদের
ফালি। এতে আমরা তাঁর সন্তুষ্টি বুঝতে পারতাম। আমি যখন তাঁর সম্মুখে বসলাম তখন আমি নিবেদন
করলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার তওবা কবূলের শুকরিয়া
স্বরূপ আমার ধন-সম্পদ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পথে
দান করতে চাই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার কিছু মাল
তোমার কাছে রেখে দাও। তা তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, খাইবারে অবস্থিত আমার অংশটি
আমার জন্য রাখলাম।
আমি
আরয করলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আল্লাহ তা‘আলা
সত্য বলার কারণে আমাকে রক্ষা করেছেন, তাই আমার তওবা কবূলের নিদর্শন ঠিক রাখতে আমার
বাকী জীবনে সত্যই বলব। আল্লাহ্র কসম! যখন থেকে আমি এ সত্য বলার কথা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে জানিয়েছি, তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমার জানা মতে কোন মুসলিমকে
সত্য কথার বিনিময়ে এরূপ নিয়ামত আল্লাহ দান করেননি যে নিয়ামত আমাকে দান করেছেন। [কা‘ব
(রাঃ) বলেন] যেদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মুকে সত্য
কথা বলেছি সেদিন হতে আজ পর্যন্ত অন্তরে মিথ্যা বলার ইচ্ছাও করিনি। আমি আশা পোষণ করি
যে, বাকী জীবনও আল্লাহ তা‘আলা আমাকে মিথ্যা থেকে রক্ষা করবেন।
এরপর
আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এ উপর এ আয়াত অবতীর্ণ
করেন “আল্লাহ অনুগ্রহপরায়ণ হলেন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি
এবং মুহাজিরদের প্রতি ....... এবং তোমরা সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।” (সূরাহ আততাওবাহ
৯/১১৭-১১৭)।
[কা‘ব
(রাঃ) বলেন] আল্লাহর শপথ! ইসলাম গ্রহণের পর থেকে কখনো আমার উপর এত উৎকৃষ্ট নিয়ামত আল্লাহ
প্রদান করেননি যা আমার কাছে শ্রেষ্ঠতর, তা হল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর কাছে আমার সত্য বলা ও তাঁর সঙ্গে মিথ্যা না বলা, যদি মিথ্যা বলতাম তবে
মিথ্যাচারীদের মতো আমিও ধ্বংস হয়ে যেতাম। সেই মিথ্যাচারীদের সম্পর্কে যখন ওয়াহী অবতীর্ণ
হয়েছে তখন জঘন্য অন্তরের সেই লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ “তোমরা তাদের নিকট
ফিরে আসলে তারা আল্লাহ্র শপথ করবে ....... আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়ের প্রতি সন্তুষ্ট
হবেন না।” (সূরাহ আততাওবাহ ৯/৯৫-৯৬)। কা‘ব (রাঃ) বলেন, আমাদের তিনজনের তওবা কবূল করতে
বিলম্ব করা হয়েছে যাদের তওবা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবূল
করেছেন যখন তাঁরা তার কাছে শপথ করেছে, তিনি তাদের বাই‘আত গ্রহণ করেছেন এবং তাদের জন্য
ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আমাদের বিষয়টি আল্লাহ্র ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্থগিত রেখেছেন।
এর
প্রেক্ষাপটে আল্লাহ বলেন “সেই তিনজনের প্রতিও যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা
হয়েছিল।” (সূরাহ আত্তওবাহ ৯/১১৮)। কুরআনের এ আয়াতে তাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়নি যারা
তাবূক যুদ্ধ থেকে পিছনে ছিল ও মিথ্যা কসম করে ওযর-আপত্তি জানিয়েছিল এবং রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও তা গ্রহণ করেছিলেন। বরং এ আয়াতে তাদের প্রতি
ইশারা করা হয়েছে আমরা যারা পেছনে ছিলাম এবং যাদের প্রতি সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল।
(বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮০ হাদীস নং ৪৪১৮; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৯, হাঃ ২৭৬৯)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৪৯/১০.
ইফক
বা অপবাদ ও অপবাদ দানকারীদের তাওবাহ কবূল হওয়ার হাদীস।
১৭৬৩
‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যখন
অপবাদ রটনাকারীগণ তাঁর প্রতি অপবাদ রটিয়েছিল।
‘আয়িশাহ
(রাঃ) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফরে যেতে ইচ্ছে
করতেন তখন তিনি তাঁর স্ত্রীগণের (নির্বাচনের জন্য) কোরা ব্যবহার করতেন। এতে যার নাম
উঠত তাকেই তিনি সঙ্গে নিয়ে সফরে যেতেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এমনি এক যুদ্ধে তিনি আমাদের
মাঝে কোরা ব্যবহার করেন, এতে আমার নাম উঠে আসে। তাই আমিই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সফরে গেলাম। এ ঘটনাটি পর্দার হুকুম নাযিলের পর ঘটেছিল।
তখন আমাকে হাওদাজসহ সাওয়ারীতে উঠানো ও নামানো হত। এমনিভাবে আমরা চলতে থাকলাম। অতঃপর
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন এ যুদ্ধ থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন,
তখন তিনি (গৃহাভিমুখে) প্রত্যাবর্তন করলেন। ফেরার পথে আমরা মাদীনাহর নিকটবর্তী হলে
তিনি একদিন রাতের বেলা রওয়ানা হওয়ার জন্য আদেশ করলেন। রওয়ানা হওয়ার ঘোষণা দেয়া হলে
আমি উঠলাম এবং (প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য) পায়ে হেঁটে সেনাছাউনী পেরিয়ে (সামনে)
গেলাম। অতঃপর প্রয়োজন সেরে আমি আমার সাওয়ারীর কাছে ফিরে এসে বুকে হাত দিয়ে দেখলাম যে,
(ইয়ামানের অন্তর্গত) যিফার শহরের পুতি দ্বারা তৈরি করা আমার গলার হারটি ছিঁড়ে কোথায়
পড়ে গেছে। তাই আমি ফিরে গিয়ে আমার হারটি খোঁজ করতে লাগলাম। হার খুঁজতে খুঁজতে আমার
আসতে দেরী হয়ে যায়। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, যে সমস্ত লোক উটের পিঠে আমাকে উঠিয়ে দিতেন
তারা এসে আমার হাওদাজ উঠিয়ে তা আমার উটের পিঠে তুলে দিলেন, যার উপর আমি আরোহণ করতাম।
তারা ভেবেছিলেন, আমি ওর মধ্যেই আছি, কারণ খাদ্যাভাবে মহিলারা তখন খুবই হালকা হয়ে গিয়েছিল
এবং তাদের দেহ মাংসল ছিল না। তাঁরা খুবই স্বল্প পরিমাণ খানা খেতে পেত। তাই তারা যখন
হাওদাজ উঠিয়ে উপরে রাখেন তখন তা হালকা বিষয়টিকে কোন প্রকার অস্বাভাবিক মনে করেননি।
অধিকন্তু আমি ছিলাম একজন অল্প বয়স্কা কিশোরী। এরপর তারা উট হাঁকিয়ে নিয়ে চলে যায়। সৈন্যদল
চলে যাওয়ার পর আমি আমার হারটি খুঁজে পাই এবং নিজ জায়গায় ফিরে এসে দেখি তাঁদের (সৈন্যদের)
কোন আহ্বানকারী এবং কোন জওয়াব দাতা সেখানে নেই। তখন আমি আগে যেখানে ছিলাম সেখানে বসে
রইলাম। ভাবলাম, তাঁরা আমাকে দেখতে না পেয়ে অবশ্যই আমার কাছে ফিরে আসবে। ঐ স্থানে বসে
থাকা অবস্থায় ঘুম চেপে ধরলে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। বানূ সুলামী গোত্রের যাকওয়ান শাখার সাফওয়ান
ইবনু মুআত্তাল (রাঃ) [যাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফেলে যাওয়া
আসবাবপত্র সংগ্রহের জন্য পশ্চাতে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন] সৈন্যদল চলে যাওয়ার পর সেখানে
ছিলেন। তিনি সকালে আমার অবস্থানস্থলের কাছে এসে একজন ঘুমন্ত মানুষ দেখে আমার দিকে তাকিয়ে
আমাকে চিনে ফেললেন। পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে তিনি আমাকে দেখেছিলেন। তিনি
আমাকে চিনতে পেরে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়লে আমি তা শুনে জেগে উঠলাম
এবং চাদর টেনে আমার চেহারা ঢেকে ফেললাম। আল্লাহ্র কসম! আমি কোন কথা বলিনি এবং তাঁর
থেকে ইন্না লিল্লাহ........ পাঠ ব্যতীত অন্য কোন কথাই শুনতে পাইনি। এরপর তিনি সওয়ারী
থেকে নামলেন এবং সওয়ারীকে বসিয়ে তার সামনের পা নিচু করে দিলে আমি গিয়ে তাতে উঠে পড়লাম।
পরে তিনি আমাকেসহ সওয়ারীকে টেনে আগে আগে চললেন, অতঃপর ঠিক দুপুরে প্রচণ্ড গরমের সময়
আমরা গিয়ে সেনাদলের সঙ্গে মিলিত হলাম। সে সময় তাঁরা একটি জায়গায় অবতরণ করেছিলেন। ‘আয়িশাহ
(রাঃ) বলেন, এরপর যাদের ধ্বংস হওয়ার ছিল তারা (আমার উপর অপবাদ দিয়ে) ধ্বংস হয়ে গেল।
তাদের মধ্যে এ অপবাদ দেয়ার ব্যাপারে যে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল সে হচ্ছে ‘আবদুল্লাহ
ইবনু উবাই ইবনু সুলূল।
বর্ণনাকারী
‘উরওয়াহ (রাঃ) বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তার (‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সুলূল) সামনে
অপবাদের কথাগুলো প্রচার করা হত এবং আলোচনা করা হত আর অমনি সে এগুলোকে বিশ্বাস করত,
খুব ভাল করে শুনত আর শোনা কথার ভিত্তিতেই ব্যাপারটিকে প্রমাণ করার চেষ্টা করত। ‘উরওয়াহ
(রাঃ) আরো বর্ণনা করেছেন যে, অপবাদ আরোপকারী ব্যক্তিদের মধ্যে হা্সসান ইবনু সাবিত,
মিসতাহ ইবনু উসাসা এবং হামনা বিনত জাহাশ (রাঃ) ব্যতীত আর কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।
তারা কয়েকজন লোকের একটি দল ছিল, এটুকু ব্যতীত তাদের ব্যাপারে আমার আর কিছু জানা নেই।
যেমন (আল-কুরআনে) মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ এ ব্যাপারে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল
তাকে ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই বিন সুলূল বলে ডাকা হয়ে থাকে। বর্ণনাকারী ‘উরওয়াহ (রাঃ)
বলেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ) এ ব্যাপারে হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে গালমন্দ করাকে পছন্দ করতেন
না। তিনি বলতেন, হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) তো সেই লোক যিনি তার এক কবিতায় বলেছেন,
আমার
মান সম্মান এবং আমার বাপ দাদা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মান
সম্মান রক্ষায় নিবেদিত।
‘আয়িশাহ
(রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা মাদীনায় আসলাম। মাদীনায় এসে এক মাস পর্যন্ত আমি অসুস্থ থাকলাম।
এদিকে অপবাদ রটনাকারীদের কথা নিয়ে লোকেদের মধ্যে আলোচনা ও চর্চা হতে থাকল। কিন্তু এগুলোর
কিছুই আমি জানি না। তবে আমি সন্দেহ করছিলাম এবং তা আরো দৃঢ় হচ্ছিল আমার এ অসুখের সময়।
কেননা এর আগে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যে রকম স্নেহ-ভালবাসা
পেতাম আমার এ অসুখের সময় তা আমি পাচ্ছিলাম না। তিনি আমার কাছে এসে সালাম করে কেবল
“তুমি কেমন আছ” জিজ্ঞেস করে চলে যেতেন। তাঁর এ আচরণই আমার মনে ভীষণ সন্দেহ জাগিয়ে তোলে।
তবে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাইরে বের হওয়ার আগে পর্যন্ত এ জঘন্য অপবাদের ব্যাপারে আমি কিছুই
জানতাম না। উম্মে মিসতাহ (রাঃ) (মিসতাহর মা) একদা আমার সঙ্গে পায়খানার দিকে বের হন।
আর প্রকৃতির ডাকে আমাদের বের হওয়ার অবস্থা এই ছিল যে, এক রাতে বের হলে আমরা আবার পরের
রাতে বের হতাম। এটা ছিল আমাদের ঘরের পাশে পায়খানা তৈরি করার আগের ঘটনা। আমাদের অবস্থা
প্রাচীন আরবের লোকদের অবস্থার মতো ছিল। তাদের মতো আমরাও পায়খানা করার জন্য ঝোপঝাড়ে
চলে যেতাম। এমনকি (অভ্যাস না থাকায়) বাড়ির পার্শ্বে পায়খানা তৈরি করলে আমরা খুব কষ্ট
পেতাম। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, একদা আমি এবং উম্মে মিসতাহ “যিনি ছিলেন আবূ রূহম ইবনু মুত্তালিব
ইবনু আবদে মানাফির কন্যা, যার মা সাখার ইবনু আমির-এর কন্যা ও আবূ বকর সিদ্দীকের খালা
এবং মিসতাহ ইবনু উসাসা ইবনু আব্বাদ ইবনু মুত্তালিব যার পুত্র” একত্রে বের হলাম। আমরা
আমাদের কাজ থেকে নিস্ক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পথে উম্মে মিসতাহ তার কাপড়ে জড়িয়ে হোঁচট
খেয়ে পড়ে গিয়ে বললেন, মিসতাহ ধ্বংস হোক। আমি তাকে বললাম, আপনি খুব খারাপ কথা বলছেন।
আপনি কি বদর যুদ্ধে যোগদানকারী ব্যক্তিকে গালি দিচ্ছেন? তিনি আমাকে বললেন, ওগো অবলা,
সে তোমার সম্বন্ধে কী কথা বলে বেড়াচ্ছে তুমি তো তা শোননি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি
তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, সে আমার সম্পর্কে কী বলছে? তখন তিনি অপবাদ রটনাকারীদের কথাবার্তা
সম্পর্কে আমাকে জানালেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, এরপর আমার পুরনো রোগ আরো বেড়ে
গেল। আমি বাড়ি ফেরার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে
আসলেন এবং সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন আছ? ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতা-মাতার
কাছে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক খবর জানতে চাচ্ছিলাম, তাই আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, আপনি কি আমাকে আমার পিতা-মাতার কাছে যাওয়ার জন্য অনুমতি
দেবেন? ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে
অনুমতি দিলেন। তখন আমি আমার আম্মাকে বললাম, আম্মাজান, লোকজন কী আলোচনা করছে? তিনি বললেন,
বেটী, এ ব্যাপারটিকে হালকা করে ফেল। আল্লাহ্র কসম! সতীন আছে এমন স্বামীর সোহাগ লাভে
ধন্যা সুন্দরী রমণীকে তাঁর সতীনরা বদনাম করবে না, এমন খুব কমই হয়। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন,
আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, সুবহানাল্লাহ। লোকজন কি এমন গুজবই রটিয়েছে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বর্ণনা
করেন, সারারাত আমি কাঁদলাম। কাঁদতে কাঁদতে সকাল হয়ে গেল। এর মধ্যে আমার চোখের পানিও
বন্ধ হল না এবং আমি ঘুমাতেও পারলাম না রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
তার স্ত্রীর (আমার) বিচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ ও আলোচনা করার নিমিত্তে ‘আলী ইবনু
আবূ ত্বলিব এবং উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে ডেকে পাঠালেন।
তিনি
[‘আয়িশাহ (রাঃ)] বলেন, উসামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর
স্ত্রীদের পবিত্রতা এবং তাদের প্রতি [নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর]
ভালবাসার কারণে বললেন, তাঁরা আপনার স্ত্রী, তাদের সম্পর্কে আমি ভাল ব্যতীত আর কিছুই
জানি না। আর ‘আলী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আল্লাহ তো আপনার জন্য সংকীর্ণতা
রাখেননি। তিনি ব্যতীত আরো বহু মহিলা আছে। অবশ্য আপনি এ ব্যাপারে দাসী [বারীরাহ (রাঃ)]-কে
জিজ্ঞেস করুন। সে আপনার কাছে সত্য কথাই বলবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারীরাহ (রাঃ)-কে ডেকে বললেন, হে বারীরাহ! তুমি
তাঁর মধ্যে কোন সন্দেহপূর্ণ আচরণ দেখেছ কি? বারীরাহ (রাঃ) তাঁকে বললেন, সে আল্লাহ্র
শপথ যিনি আপনাকে সত্য বিধানসহ পাঠিয়েছেন, আমি তার মধ্যে কখনো এমন কিছু দেখিনি যার দ্বারা
তাঁকে দোষী বলা যায়। তবে তাঁর সম্পর্কে কেবল এটুকু বলা যায় যে, তিনি হলেন অল্প বয়স্কা
কিশোরী, রুটি তৈরী করার জন্য আটা খামির করে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। আর বাক্রী এসে অমনি তা
খেয়ে ফেলে।
তিনি
[‘আয়িশাহ (রাঃ)] বলেন, সেদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে
সঙ্গে উঠে গিয়ে মিম্বরে বসে ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই-এর ক্ষতি থেকে রক্ষার আহ্বান জানিয়ে
বললেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! যে আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অপবাদ রটিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে
তার এ অপবাদ থেকে আমাকে কে মুক্ত করবে? আল্লাহ্র কসম! আমি আমার স্ত্রী সম্পর্কে ভাল
ব্যতীত আর কিছুই জানি না। আর তাঁরা এক ব্যক্তির (সাফওয়ান ইবনু মু‘আত্তাল) নাম উল্লেখ
করছে যার ব্যাপারেও আমি ভাল ব্যতীত কিছু জানি না। সে তো আমার সঙ্গেই আমার ঘরে যায়।
‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, বানী ‘আবদুল আশহাল গোত্রের সা‘দ (ইবনু মুআয) (রাঃ) উঠে বললেন,
হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আপনাকে এ অপবাদ থেকে মুক্তি
দেব। সে যদি আউস গোত্রের লোক হয় তাহলে তার শিরশ্চেদ করব। আর যদি সে আমাদের ভাই খাযরাজের
লোক হয় তাহলে তার ব্যাপারে আপনি যা বলবেন তাই করব। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এ সময় হাসসান
ইবনু সাবিত (রাঃ)-এর মায়ের চাচাতো ভাই খাযরাজ গোত্রের নেতা সা‘দ ইবনু উবাদা (রাঃ) দাঁড়িয়ে
এ কথার প্রতিবাদ করলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ এ ঘটনার আগে তিনি একজন সৎ ও নেককার লোক
ছিলেন। গোত্রীয় অহঙ্কারে উত্তেজিত হয়ে তিনি সা‘দ ইবনু মুআয (রাঃ)-কে বললেন, তুমি মিথ্যা
কথা বলছ। আল্লাহ্র কসম! তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না এবং তাকে হত্যা করার ক্ষমতাও
তোমার নেই। সে তোমার গোত্রের লোক হলে তুমি তার নিহত হওয়া কখনো পছন্দ করতে না। তখন সা‘দ
ইবন মুআয (রাঃ)-এর চাচাতো ভাই উসাইদ ইবনু হুযাইর (রাঃ) সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ)-কে
বললেন, বরং তুমিই মিথ্যা বলছ। আল্লাহ্র কসম! আমরা অবশ্যই তাকে হত্যা করব। তুমি হলে
মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষ নিয়ে কথাবার্তা বলছ।
তিনি
[‘আয়িশাহ (রাঃ)] বলেন, এ সময় আউস ও খাযরাজ উভয় গোত্র খুব উত্তেজিত হয়ে যায়। এমনকি তারা
যুদ্ধের সংকল্প করে বসে। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরে
দাঁড়িয়ে ছিলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
তাদের শান্ত করলেন এবং নিজেও চুপ হয়ে গেলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি সেদিন সারাক্ষণ
কেঁদে কাটালাম। চোখের ধারা আমার বন্ধ হয়নি এবং একটু ঘুমও হয়নি। তিনি বলেন, আমি কান্না
করছিলাম আর আমার পিতা-মাতা আমার পার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। এমনি করে একদিন দু’রাত কেঁদে
কেঁদে কাটিয়ে দিলাম। এর মধ্যে আমার একটুও ঘুম হয়নি। বরং অনবরত আমার চোখ দিয়ে অশ্রু
ঝরতে থাকে। মনে হচ্ছিল যেন কান্নার কারণে আমার কলিজা ফেটে যাবে। আমি ক্রন্দনরত ছিলাম
আর আমার আব্বা-আম্মা আমার পাশে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় একজন আনসারী মহিলা আমার কাছে
আসার অনুমতি চাইলে আমি তাকে আসার অনুমতি দিলাম। সে এসে বসল এবং আমার সঙ্গে কাঁদতে আরম্ভ
করল। তিনি বলেন, আমরা কান্না করছিলাম এই মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে এসে সালাম করলেন এবং আমাদের পাশে বসে গেলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ)
বলেন, অপবাদ রটানোর পর আমার পার্শ্বে এসে এভাবে তিনি আর বসেননি। এদিকে রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একমাস কাল অপেক্ষা করার পরও আমার ব্যাপারে তাঁর
নিকট কোন ওয়াহী আসেনি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, বসার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) কালিমা শাহাদাত পড়লেন। এরপর বললেন, ‘আয়িশাহ তোমার ব্যাপারে আমার কাছে
অনেক কথাই পৌঁছেছে, যদি তুমি এর থেকে পবিত্র হও তাহলে শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে এ অপবাদ
থেকে মুক্ত করবেন। আর যদি তুমি কোন গুনাহ করে থাক তাহলে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
কর এবং তওবা কর। কেননা বান্দা গুনাহ স্বীকার করে তওবা করলে আল্লাহ তা‘আলা তওবা কবূল
করেন।
তিনি
[‘আয়িশাহ (রাঃ)] বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কথা শেষ
করলে আমার অশ্রুধারা বন্ধ হয়ে যায়। এক ফোঁটা অশ্রুও আমি আর বের করতে পারলাম না। তখন
আমি আমার আব্বাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলছেন
আমার হয়ে তার জবাব দিন। আমার আব্বা বললেন, আল্লাহ্র কসম! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কী জবাব দিব তা জানি না। তখন আমি আমার আম্মাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলছেন, আপনি তার উত্তর দিন। আম্মা বললেন, আল্লাহ্র
কসম! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কী উত্তর দিব তা জানি না।
তখন আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা কিশোরী। কুরআনও বেশী পড়তে পারতাম না। তথাপিও এ অবস্থা দেখে
আমি নিজেই বললাম, আমি জানি আপনারা এ অপবাদের ঘটনা শুনেছেন, আপনারা তা বিশ্বাস করেছেন
এবং বিষয়টি আপনাদের মনে দৃঢ়মূল হয়ে আছে। এখন যদি আমি বলি যে, এর থেকে আমি পবিত্র তাহলে
আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আমি এ অপরাধের কথা স্বীকার করে নেই যে সম্পর্কে
আল্লাহ জানেন যে, আমি এর থেকে পবিত্র, তাহলে আপনারা তা বিশ্বাস করবেন। আল্লাহ্র কসম!
আমি ও আপনারা যে বিপাকে পড়েছি এর জন্য ইউসুফ (‘আ.)-এর পিতার কথা ব্যতীত আমি কোন দৃষ্টান্ত
খুঁজে পাচ্ছি না। তিনি বলেছিলেনঃ “কাজেই পূর্ণ ধৈর্য্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ এ ব্যাপারে
আল্লাহই একমাত্র আমার আশ্রয়স্থল।” অতঃপর আমি মুখ ঘুরিয়ে আমার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
আল্লাহ তা‘আলা জানেন যে, সে মুহূর্তেও আমি পবিত্র। অবশ্যই আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ
করে দেবেন তবে আল্লাহ্র কসম, আমি কক্ষনো ভাবিনি যে, আমার সম্পর্কে আল্লাহ ওয়াহী অবতীর্ণ
করবেন যা পাঠ করা হবে। আমার সম্পর্কে আল্লাহ কোন কথা বলবেন আমি নিজেকে এতটা উত্তম মনে
করিনি বরং আমি নিজেকে এর চেয়ে অনেক অধম বলে ভাবতাম। তবে আমি আশা করতাম যে, হয়তো রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে স্বপ্নযোগে দেখানো হবে যার ফলে আল্লাহ আমার
পবিত্রতা প্রকাশ করবেন। আল্লাহ্র কসম! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
তখনো তাঁর বসার জায়গা ছেড়ে যাননি এবং ঘরের লোকজনও কেউ ঘর হতে বেরিয়ে যাননি। এমন সময়
তাঁর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ শুরু হল। ওয়াহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় তাঁর যে বিশেষ ধরনের কষ্ট
হত তখনও সে অবস্থা হল। এমনকি ভীষণ শীতের দিনেও তাঁর শরীর হতে মোতির দানার মতো বিন্দু
বিন্দু ঘাম গড়িতে পড়ত ঐ বাণীর গুরুভারে, যা তাঁর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। ‘আয়িশাহ (রাঃ)
বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ অবস্থা কেটে গেলে তিনি
হাসিমুখে পহেলা যে কথা উচ্চারণ করলেন সেটা হল, হে ‘আয়িশাহ! আল্লাহ তোমার পবিত্রতা প্রকাশ
করে দিয়েছেন।
তিনি
[‘আয়িশাহ (রাঃ)] বলেন, এ কথা শুনে আমার মা আমাকে বললেন, তুমি উঠে গিয়ে রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি সম্মান কর। আমি বললাম, আল্লাহ্র কসম!
আমি তাঁর দিকে উঠে যাব না। মহান আল্লাহ ব্যতীত কারো প্রশংসা করব না। ‘আয়িশাহ (রাঃ)
বললেন, আল্লাহ (আমার পবিত্রতার ব্যাপারে) যে দশটি আয়াত অবতীর্ণ করেছেন, তা হ’ল,
১১.
“যারা এ অপবাদ রটনা করেছে তারা তো তোমাদেরই একটি দল; এ ঘটনাকে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর
মনে করো না; বরং তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে প্রতিফল যতটুকু
পাপ সে করেছে। আর এ ব্যাপারে যে নেতৃত্ব দিয়েছে তার জন্য আছে মহাশাস্তি।
১২.
তোমরা যখন এটা শূনতে পেলে তখন কেন মু’মিন কেন মু’মিন স্ত্রীরা তাদের নিজেদের লোক সম্পর্কে
ভাল ধারণা করল না আর বলল না, ‘এটা তো খোলাখুলি অপবাদ।
১৩.
তারা চারজন সাক্ষী হাযির করল না কেন? যেহেতু তারা সাক্ষী হাযির করেনি, সেহেতু তারা
আল্লাহ্র নিকট তারাই মিথ্যাবাদী।
১৪.
দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের উপর যদি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকতো, তবে তোমরা যাতে
তড়িঘড়ি লিপ্ত হয়ে পড়েছিলে তার জন্য মহা শাস্তি তোমাদেরকে পাকড়াও করত।
১৫.
যখন এটা তোমরা মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে আর তমাদের মুখ দিয়ে এমন কথা বলছিলে যে বিষয়ে তমাদের
কোন জ্ঞান ছিল না, আর তোমরা এতাকে নগণ্য ব্যাপার মনে করেছিলে, কিন্ত আল্লাহ্র নিকট
তা ছিল গুরুতর ব্যাপার।
১৬.
তোমরা যখন এটা শুনলে তখন তোমরা কেন বললে না যে, এ ব্যাপারে আমাদের কথা বলা ঠিক নয়।
আল্লাহ্ পবিত্র ও মহান, এটা তো এক গুরুতর অপবাদ!
১৭.
আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন তোমরা আর কখনো এর (অর্থাৎ এ আচরণের) পুনরাবৃত্তি করনা
যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক।
১৮.
আল্লাহ তোমাদের জন্য স্পষ্টভাবে আয়াত বর্ণনা করছেন, কারণ তিনি হলেন সর্ববিষয়ে জ্ঞানের
অধিকারী, বড়ই হিকমতওয়ালা।
১৯.
যারা পছন্দ করে যে, মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার বিস্তৃতি ঘটুক তাদের জন্য আছে ভয়াবহ
শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে। আল্লাহ্ জানেন তোমরা জান না।
২০.
তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে (তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে), আল্লাহ দয়ার্দ্র
ও বড়ই দয়াবান। (সূরাহ আন-নূর ২৪/১১-২০)।
আমার
পবিত্রতার ব্যাপারে আল্লাহ এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ করলেন।
আত্মীয়তা
এবং দারিদ্রের কারণে আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) মিসতাহ ইবনু উসাসাকে আর্থিক ও বৈষয়িক সাহায্য
করতেন। কিন্তু ‘আয়িশাহ (রাঃ) সম্পর্কে তিনি যে অপবাদ রটিয়েছিলেন এ কারণে আবূ বকর সিদ্দীক
(রাঃ) কসম করে বললেন, আমি আর কখনো মিসতাহকে আর্থিক সাহায্য করব না। তখন আল্লাহ তা‘আলা
অবতীর্ণ করলেন “তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ
না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহ্র পথে যারা গৃহত্যাগ করেছে
তাদেরকে কিছুই দিবে না। তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে।
শোন! তোমরা কি পছন্দ কর না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল; পরম দয়ালু”
(সূরাহ আন-নূর ২৪/২২)।
আবূ
বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলে উঠলেন, হ্যাঁ, আল্লাহ্র কসম! অবশ্যই আমি পছন্দ করি যে, আল্লাহ
আমাকে ক্ষমা করে দিন। এরপর তিনি মিসতাহ (রাঃ)-এর জন্য যে অর্থ খরচ করতেন তা পুনঃ দিতে
শুরু করলেন এবং বললেন, আল্লাহ্র কসম! আমি তাঁকে এ অর্থ দেয়া আর কখনো বন্ধ করব না।
‘আয়িশাহ
(রাঃ) বললেন, আমার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়নাব
বিনত জাহাশ (রাঃ)-কেও জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি যাইনাব (রাঃ)-কে বলেছিলেন, তুমি ‘আয়িশাহ
(রাঃ) সম্পর্কে কী জান অথবা বলেছিলেন তুমি কী দেখেছ? তখন তিনি বলেছিলেন, হে আল্লাহ্র
রাসূল! আমি আমার চোখ ও কানকে হিফাযত করেছি। আল্লাহ্র কসম! আমি তাঁর ব্যাপারে ভাল ব্যতীত
আর কিছুই জানি না।
‘আয়িশাহ
(রাঃ) বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের মধ্যে তিনি আমার
প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। আল্লাহ তাঁর তাকওয়ার কারণে তাঁকে রক্ষা করেছেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ)
বলেন, অথচ তাঁর বোন হামনা (রাঃ) তাঁর পক্ষ নিয়ে অপবাদ রটনাকারীদের মতো অপবাদ ছড়াচ্ছিলেন।
ফলে তিনি ধ্বংসপ্রাপ্তদের সঙ্গে ধ্বংস হয়ে গেলেন।
বর্ণনাকারী
ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, ঐ সমস্ত লোকের ঘটনা আমার কাছে যা পৌঁছেছে তা হলো এইঃ ‘উরওয়াহ
(রাঃ) বলেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ্র কসম! যে ব্যক্তি সম্পর্কে অপবাদ
দেয়া হয়েছিল, তিনি এসব কথা শুনে বলতেন, আল্লাহ মহান। ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ,
আমি কোন রমণীর বস্ত্র অনাবৃত করে কোনদিন দেখিনি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, পরে তিনি আল্লাহ্র
পথে শহীদ হন। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৫ হাদীস নং ৪১৪১; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ১০ হাঃ ২৭৭০)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৭৬৪
‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, যখন আমার সম্পর্কে আলোচনা চলছিল যা রটনা হয়েছে এবং আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানতাম
না। তখন আমার ব্যাপারে ভাষণ দিতে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
দাঁড়ালেন। তিনি প্রথমে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করলেন। তারপর আল্লাহ্র প্রতি যথাযোগ্য
হামদ ও সানা পাঠ করলেন। এরপরে বললেন, হে মুসলিমগণ! যে সকল লোক আমার স্ত্রী সম্পর্কে
অপবাদ দিয়েছে, তাদের ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দাও। আল্লাহ্র কসম! আমি আমার পরিবারের
ব্যাপারে মন্দ কিছুই জানি না। তাঁরা এমন এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছে, আল্লাহ্র কসম,
তার ব্যাপারেও আমি কখনও খারাপ কিছু জানি না এবং সে কখনও আমার অনুপস্থিতিতে আমার ঘরে
প্রবেশ করে না এবং আমি যখন কোন সফরে গিয়েছি সেও আমার সঙ্গে সফরে গিয়েছে।
তারপর
যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঘরে আসলেন। তখন তিনি আমার
খাদিমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, আল্লাহ্র কসম, আমি এ ব্যতীত তাঁর কোন
দোষ জানি না যে, তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন এবং বাক্রী এসে তাঁর খামির অথবা বললেন, গোলা আটা
খেয়ে যেত। তখন কয়েকজন সহাবী তাকে ধমক দিয়ে বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে সত্য কথা বল। এমনকি তাঁরা তাঁর নিকট ঘটনা খুলে বললেন। তখন সে
বলল, সুবহান আল্লাহ্, আল্লাহ্র কসম! আমি তাঁর ব্যাপারে এর চেয়ে অধিক কিছু জানি না,
যা একজন স্বর্ণকার তার এক টুকরা লাল খাঁটি স্বর্ণ সম্পর্কে জানে। এ ঘটনা সে ব্যক্তির
কাছেও পৌঁছল যার সম্পর্কে এ অভিযোগ উঠেছে। তখন তিনি বললেন, সুবহান আল্লাহ্! আল্লাহ্র
কসম, আমি কখনও কোন মহিলার পর্দা খুলিনি।
‘আয়িশাহ
(রাঃ) বলেন, পরবর্তী সময়ে এ (অভিযুক্ত) লোকটি আল্লাহ্র রাস্তায় শহীদ রূপে নিহত হন।
(বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ২৪ হাদীস নং ৪৭৫৭; মুসলিম ৪৪ অধ্যায় ১০ হাঃ ২৪৮৮)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক
প্রবন্ধের
লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের
Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির
লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ
উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের
আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে
ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে,
আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি
আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব
থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের
সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ
ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও
একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি
ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে
বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১,
হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন,
হাদিস নং ১৩৮৮।)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক
স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ,
রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক- পিএমএমআরসি, গুলশান-২, ঢাকা,
বাংলাদেশ।
ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে এর উপর ক্লিক করুনঃ
PLEASE SHARE ON
No comments:
Post a Comment