বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রচলিত
১১৩টি জাল-জইফ হাদিসঃ যেগুলো আলেমগণ মুখস্থ বলে
বেড়ায়-
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
প্রিয় বন্ধুগণ, আমরা
জানি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি হাদীস এক একটি আইন,
একটি সংবিধান ও একটি নীতি। যার সূত্র ধরে যুগে যুগে মানব জাতি তাদের করণীয় ও
বর্জনীয় নির্ধারণ করবে। এর মাধ্যমে মানবতা তাদের জীবন চলার দিক নির্দেশনা খুঁজে
নিবে। তাই যে কোন হাদীস গ্রহণ করার আগে তা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত হওয়া
অপরিহার্য। যার কারণে যুগে যুগে মুহাদ্দেসীনগণ হাদীসের বিশুদ্ধতা অনুসন্ধানের
নিমিত্তে হাদীসের বর্ণনাকারী, বর্ণনা সূত্র এবং হাদীসের মূল বক্তব্যের মাঝে কোন
রূপ সংযোজন-বিয়োজন কিম্বা পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে কি না তা অতি সূক্ষ্ম ভাবে চুল
চেরা বিশ্লেষণ করে হাদীসটির প্রতি সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন যে, এটি আদৌ হাদীস কি
না অথবা তা সহীহ না জঈফ। এটি অত্যন্ত জটির একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু আল্লাহর
সাহায্যে তারা এ কাজটি অভূতপূর্ব সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করে গেছেন। সুতরাং কেউ
ইচ্ছা করলেই কোন কথাকে হাদীস বলে চালিয়ে দিতে পারবে না।
আমরা দেখছি যে, আমাদের
সমাজের অনেক শিক্ষিত আলেম যারা কেউ মুফতি,
শায়েখ, মুহাদ্দিস কিংবা মাদ্রাসা ও জেনারেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কথিত
পির-অলি, ওয়াজকারী, ইমাম, মুয়াজ্জিন প্রমুখগণ জাল-জইফ হাদিসগুলো এমনভাবে বলেন,
শুনে মনে হয় এগুলো সত্যিকার হাদিস অথচ বাস্তবে সেগুলো হাদীস নয়। অনেকে বলেন যে,
তাহলে কি তারা সহিহ হাদিস শিখেন নি। আমি বলবো যে, তাদের শিক্ষার মধ্যে গলদ আছে।
তারা যেসব বই-পুস্তক পড়ে আলেম হয়েছেন ঐসব বই-পুস্তকেই জাল-জইফ হাদিসে ভরপুর।
কিন্তু সেগুলো যাচাই করার জ্ঞান তাদের নেই। তাদের শিক্ষা হচ্ছে বই-পুস্তক
মুখস্থকরণ ও ওস্তাদদের অন্ধ অনুকরন। আর যেহেতু তারা অনেক বছর পড়া শোনা করে আলেম
হয়েছেন তাই সহজে তারা এগুলো স্বীকার করতে চায় না। এখানে ২০০০টি জাল-জইফ হাদিস থেকে প্রচলিত ১১৩টি হাদিস দেয়া হলো। আপনার
পড়বেন এবং সহিহ আমল করবেন আর অন্যদেরকে সংশোধিত করবেন।
প্রচলিত ১১৩টি জাল-জইফ
হাদিসঃ
১। চীন দেশে গিয়ে হলেও তোমরা জ্ঞান অন্বেষণ কর।
হাদীসটি বাতিল।
এটি ইবনু আদী (২/২০৭), আবু নুয়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/১০৬),
ইবনু আল্লিক নাইসাপুরী “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (২/২৪১), আবুল কাসেম কুশায়রী "আল-আরবায়ীন"
গ্রন্থে (২/১৫১), আল-খাতীব “আত-তারীখ” গ্রন্থে (৯/৩৬৪) এবং “কিতাবুর রেহলা” গ্রন্থে
(১/২), বাইহাকী “আল-মাদখাল” গ্রন্থে (২৪১/৩২৪), ইবনু আদিল বার “জামেউ বায়ানিল ইলম”
গ্রন্থে (১/৭-৮) এবং যিয়া মাকদেসী “আল-মুনতাকা....” গ্রন্থে (১/২৮) বর্ণনা করেছেন।
তারা সকলে হাসান ইবনু আতিয়া সূত্রে আবূ আতিকা তুরায়ীফ ইবনু সুলায়মান হতে বর্ণনা করেছেন।
ইবনু আদী বলেনঃ “ولو بالصين’’ ‘চীন দেশে গিয়ে হলেও এ কথাটি হাসান ইবনু আতিয়া ছাড়া অন্য কেউ
বর্ণনা করেছেন বলে জানি না। এমনটিই বলেছেন আল-খাতীব ও হাকিম।
এ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে এ আবু আতিকা। তিনি সকলের ঐক্যমতে দুর্বল। উকায়লী
তার সম্পর্কে বলেছেনঃ তিনি নিতান্তই দুর্বল। বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। নাসাঈ
বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন। আবু হাতিম বলেনঃ তিনি যাহেবুল হাদীস, যেমনভাবে তিনি তার
পিতা হতে (২/১/৪৯৪) বর্ণনা করেছেন। করেছেন। ইবনু কুদামাহ “আল-মুনতাখাব” গ্রন্থে (১০/১৯৯/১)
দাওরী হতে নকল করে বলেছেন, তিনি বলেনঃ আমি ইয়াহইয়া ইবনু মা'ঈনকে আবু আতিকা সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি তাকে চিনেননি।
ইমাম আহমাদ এ হাদীসটিকে কঠোর ভাষায় ইনকার করেছেন।
ইবনুল জাওয়ী “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (১/২১৫) হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ
ইবনু হিব্বান বলেনঃ হাদীসটি বাতিল, এটির কোন ভিত্তি নেই। সাখাবী “মাকাসীদুল হাসানা”
গ্রন্থে তা সমর্থন (পৃ. ৬৩) করেছেন।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/১৯৩) তার সমালোচনা করে যা বলেছেন, তার
সার সংক্ষেপ হচ্ছে এই যে, হাদীসটির আরো দুটি সূত্র রয়েছেঃ
১। একটির সনদে রয়েছেন ইয়াকুব ইবনু ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আসকালানী
... । যেটি ইবনু আবদিল বার বর্ণনা করেছেন। এ ইয়াকুব সম্পর্কে যাহাবী বলেনঃ তিনি মিথ্যুক।
২। দ্বিতীয়টি আহমাদ ইবনু আবদিল্লাহ যুওয়াইবারীর সূত্র হতে...। সুয়ূতী
নিজে বলেছেনঃ যুওয়াইবার (হাদীস) জলিকারী। অতএব তার সমালোচনা করার কোন যৌক্তিকতা নেই।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
২। মায়েদের পায়ের নিচে জান্নাত। যাকে ইচ্ছা প্রবেশ করাবে আর যাকে ইচ্ছা
বের করে দিবে।
হাদীছটি জাল।
হাদীছটি ইবনু আদী (১/৩২৫) এবং উকায়লী "আয-যোয়াফা" গ্রন্থে
মূসা ইবনু মুহাম্মাদ হতে তিনি মায়মূন হতে ... বর্ণনা করেছেন।
উকায়লী বলেনঃ এটি মুনকার। এই মূসা সম্পর্কে পূর্বের
হাদীছে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি মিথ্যুক ।
এরূপ বানোয়াট হাদীছ হতে আমাদেরকে নিরাপদে রাখতে পারে মুয়াবিয়া ইবনু
জাহেমার হাদীছ। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন অতঃপর বললেনঃ
হে আল্লাহর রাসূল! আমি যুদ্ধ করার ইচ্ছা পোষণ করছি, এ জন্যই আপনার নিকট পরামর্শ করতে
এসেছি? তিনি বললেনঃ তোমার মা আছে কি? সে বলল হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি তার খেদমাতে ব্যস্ত
থাক, কারণ তার দুই পায়ের নিচে জগন্নাত।
হাদীছটি নাসাঈ (২/৫৪) ও অন্য বিদ্বানগণ যেমন তাবারানী (১/২২৫/২) বর্ণনা
করেছেন। এর সনদটি হাসান। এটিকে হাকিম (৪/১৫১) সহীহ বলেছেন। যাহাবী তার সাথে ঐকমত্য
পোষণ করেছেন। মুনযেরাও (৩/২১৪) তাকে সমর্থন করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৩। আপনি যদি না হতেন, তাহলে আমি আকাশ ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করতাম না।
হাদীসটি জাল।
যেমনভাবে সাগানী “আল-আহাদীসূল মাওযূআহ” গ্রন্থে (পৃঃ ৭) বলেছেন। তবে
শাইখ আল-কারীর উক্তি (৬৭-৬৮) কিন্তু তার অর্থটি সহীহ, এটি দাইলামী ইবনু আব্বাস (রাঃ)
হতে মারফু হিসাবে নিম্নের ভাষায় বর্ণনা করেছেনঃ
أتاني جبريل فقال: يا محمد لولاك لما خلقت الجنة، ولولاك ما خلقت النار وفي رواية ابن عساكر: لولاك ما خلقت الدنيا
আমার নিকট জিবরীল আসলেন, অতঃপর বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! আপনি যদি না হতেন
তাহলে জান্নাত সৃষ্টি করতাম না, আপনি যদি না হতেন তাহলে জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না।
ইবনু আসাকির হতে অন্য এক বর্ণনায় এসেছে; আপনি যদি না হতেন তাহলে দুনিয়া সৃষ্টি করতাম
না।
আমি (আলবানী) বলছিঃ দাইলামী হতে যা বর্ণনা করা হয়েছে তা সাব্যস্ত না
হওয়ার পূর্বেই হাদীসটির অর্থ সঠিক, এ কথাটি দৃঢ়তার সাথে বলা উচিত হবে না। আমি কাউকে
দেখছি না যিনি এটি বর্ণনা করেছেন। যদিও আমি তার সনদটি সম্পর্কে অবহিত হইনি, তবুও হাদীসটি
যে দুর্বল এ মর্মে আমি কোন সন্দেহ পোষণ করছি না। এর জন্য দাইলামী কর্তৃক এককভাবে বর্ণনা
করাটাই তার প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।
অতঃপর আমি যখন তার (দাইলামীর) “মুসনাদ” গ্রন্থে (১/৪১/২) হাদীসটির সনদ
সম্পর্কে অবহিত হলাম যে, এটি ওবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা আল-কুরাশী সূত্রে ফুযায়েল ইবনু
জাফার ইবনু সুলায়মান হতে বর্ণিত আর তিনি আব্দুস সামাদ ইবনু ‘আলী হতে, তিনি তার পিতা
হতে, তার পিতা আলী ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তখন আমি সিদ্ধান্তে উপনীত
হলাম এটির দুর্বলতার ফাটল সম্পর্কে।
আমি বলছিঃ এটির সমস্যা হচ্ছে এ আব্দুস সামাদ; উকায়লী তার সম্পর্কে
বলেনঃ তার হাদীস নিরাপদ নয় এবং তার মাধ্যম ছাড়া হাদীসটি অন্য কোন মাধ্যমে জানা যায়
না। অতঃপর তিনি সাক্ষীর সম্মানের বিষয়ে তার অন্য একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন, যা ২৮৯৮
নম্বরে আসবে। তার মাধ্যম ছাড়া আমি হাদীস দু'টোকে চিনি না।
ইবনু আসাকিরের বর্ণনায় হাদীসটি ইবনুল জাওযী তার “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে
(১/২৮৮-২৮৯) দীর্ঘ এক হাদীসের মধ্যে সালমান হতে বর্ণনা করে বলেছেনঃ إنه موضوع হাদিসটি বানোয়াট।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/২৭২) তার (ইবনুল জাওযীর) বক্তব্যকে সমর্থন
করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৪। “দ্বীন (ধর্ম)
হচ্ছে বিবেক, যার দ্বীন নেই তার কোন বিবেক নেই।”
হাদীসটি বাতিল
সূত্রঃ “ আল-কুনা ”এবং “ আল-কুনা ওয়াল আসমা ”
গ্রন্থে আবূ মালেক বিশর ইবনু গালিব সূত্রে যুহরী হতে বর্ণিত। বাতিল বলেছেনঃ ইমাম
নাসাঈ (রহঃ) , হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) ও আল্লামা আলবানী (রহঃ)।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেনঃ
“বিবেক সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদীস মিথ্যা।” (আল-মানার; পৃঃ ২৫ )
৫। “পুরুষদের ইচ্ছা ( মনোবল ) পর্বতমালাকে স্থানচ্যূত করতে পারে।” এটি হাদীস নয়।
বাতিল বলেছেনঃ ইসমাঈল আজলুনী (রহঃ) এর মন্তব্য–“এটি যে হাদীস তা সম্পর্কে অবহিত হতে পারি নি।”(কাশফুল খাফা)। আল্লামা আলবানী (রহঃ) ও হাদীসটিকে বাতিল বলে আখ্যায়িত করেছেন ।
৬। “মসজিদের মধ্যে কথোপকথন পূণ্যগুলোকে খেয়ে ফেলে যেমনভাবে চতুষ্পদ জন্তুগুলো ঘাস খেয়ে ফেলে।” হাদীসটি ভিত্তিহীন।
সূত্রঃ “ ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন” (১/১৩৬)
বাতিল বলেছেনঃ হাফিয ইরাকী (রহঃ) , হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ), আব্দুল ওয়াহাব সুবকী (রহঃ) , আল্লামা আলবানী (রহঃ)
৭। “যে ব্যক্তি নিজেকে চিনেছে , সে তার প্রভুকে চিনতে সক্ষম হয়েছে।” হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
বাতিল বলেছেনঃ ইমাম নববী (রহঃ), ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) হাফিয সাখাবী (রহঃ), ইমাম সূয়ুতী (রহঃ), শাইখ আল-কারী (রহঃ)।
ফিরোযাবাদী (রহঃ) বলেনঃ যদিও অধিকাংশ লোক এটিকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস বলে চালাচ্ছেন, তবুও এটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসের অন্তর্ভুক্ত নয়। এর ভিত্তিই সহীহ নয়। এটি ইসরাইলীদের বর্ণনায় বর্ণিত ।
৮। “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ জুম’আর দিবসে পাগড়ী ধারীদের প্রতি দয়া করেন।“ হাদীসটি জাল।
সূত্রঃ “আল-মু’জামাল কাবীর” এবং “আল-হিলইয়াহ” (৫/১৮৯-১৯০) গ্রন্থে আলা ইবনু আমর হানাফী সূত্রে আইউব ইবনু মুদরেক হতে বর্ণিত।
জাল বলেছেনঃ ইমাম ইবনুল জাওযী (রহঃ), হাফিয ইবনে হাজার (রহঃ), ইমাম উকাইলী (রহঃ) , ইমাম ইবনু আদী (রহঃ), ইমাম আল-আলবানী (রহঃ) ।
৯। “আমি আরবী ভাষী, কুরআন আরবী ভাষায় এবং জান্নাতীদের ভাষা আরবী।” হাদীসটি জাল।
সূত্রঃ “ আল- মু’জামুল আওসাত”। (২/২৮৫,১/ ৯৩০১ )।
হাদীসের রাবীর (আব্দুল আযীয) সমালোচনা করেছেনঃ ইমাম বুখারী (রহঃ), ইমাম হায়সামী (রহঃ), ইমাম সূয়ুতী (রহঃ), হাফিয ইরাকী (রহঃ), ইমাম ইবনু মাঈন (রহঃ), ইমাম ইবনু আররাক (রহঃ) , ইমাম ইবনু আদী (রহঃ), আল্লামা আল-আলবানী (রহঃ) ।
১০। “পাগড়ীসহ সালাত পড়া দশ হাজার ভাল কর্মের সমতুল্য।” হাদীসটি জাল।
সূত্রঃ “যায়লুল আহাদীসিল মাওযূ’ আহ” (পৃঃ ১১১ ) গ্রন্থে আবান নামক এক ব্যক্তি হতে বর্ণিত।
জাল বলেছেনঃ ইমাম সাখাবী (রহঃ), হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ), ইমাম মানূফী (রহঃ), শাইখ আল- কারী (রহঃ) ।
ইমাম সুয়ূতী (রহঃ ) বর্ণনাকারী আবান সম্পর্কে বলেনঃ আবান মিথ্যার দোষে দোষী। ইমাম ইবনুল আররাক (রহঃ) “তানযীহুশ শরীয়াহ” (২/২৫৭) গ্রন্থেও একই মন্তব্য করেছেন।
১১। “মুমিনের উচ্ছিষ্টে রয়েছে আরোগ্য।” হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
ভিত্তি নেই বলেছেনঃ শাইখ আহমাদ আল গাযাযী (রহঃ), শাইখ আজলূনী (রহঃ) ।
শাইখ আহমাদ আল গাযাযী (রহঃ) বলেনঃ এটি কোন হাদীস নয়। (আল-যাদ্দুল হাসীস )
১২। “যে ব্যক্তি তর্জনী অংগুলি দু’টির ভিতরের অংশ দ্বারা মুয়ায্যিন কর্তৃক আশ্-হাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলার সময় দু’চোখ মাসেহ করবে; তার জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুপারিশ অপরিহার্য হয়ে যাবে।” হাদীসটি সহীহ নয়।
সুত্রঃ এটি “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে রয়েছে ।
সহীহ নয় বলেছেনঃ ইমাম ইবনু তাহির (রহঃ) (আত-তাযকীরাহ), ইমাম শওকানী (রহঃ) (আহাদিসুল মাওযূ’আহ), ইমাম সাখাবী (রহঃ) (মাকাসিদুল হাসানা) ।
১৩। “যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল-ওয়াকে’য়াহ পাঠ করবে, তাকে কখনও অভাব (ক্ষুধা) গ্রাস করবে না।” হাদীসটি দুর্বল।
সূত্রঃ হাদীসটি হারিস ইবনু আবী উসামা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (১৭৮), ইবনুস সুন্নী “আমালুল ইয়াউম ওয়াল লাইলাহ” গ্রন্থে (৬৭৪), ইবনু লাল তার “হাদীস” গ্রন্থে (১/১১৬), ইবনু বিশরান “আল- আমালী” গ্রন্থে (২০/৩৮/১) বর্ণনা করেছেন আবূ শুযা’ সূত্রে আবূ তায়বাহ হতে।
দুর্বল বলেছেনঃ ইমাম আহমাদ (রহঃ), আবূ হাতিম (রহঃ), ইবনু আবী হাতিম (রহঃ), দারা কুতুনী (রহঃ), ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ)। ইমাম মানাবী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসটি মুনকার। (আত্- তায়সীর)
হাদীসটির রাবীদের সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেনঃ আবূ শুযাকে চেনা যায় না এবং আবূ তায়বাহ মাজহূল। ইমাম যায়লাঈ ( রহঃ ) হাদীসটি দোষণীয় হওয়ার কারণ উল্লেখ করেছেনঃ- এটির সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে ।
হাদীসটির মতনে (ভাষায়) দুর্বোধ্যতা রয়েছে। হাদীসটির বর্ণনাকারীগণ দুর্বল। এছাড়া ইযতিরাব রয়েছে।
১৪। “যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল-ওয়াকেয়াহ পাঠ করবে; তাকে কখনও অভাব গ্রাস করবে না। যে ব্যক্তি প্রতি রাতে লা-উকসিমু বি-ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ পাঠ করবে; সে কিয়ামত দিবসে আল্লাহর সাথে এমতাবস্থায় মিলিত হবে যে, তার চেহারা পূর্ণিমা রাতের চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল থাকবে।” হাদীসটি জাল।
সূত্রঃ এটি দায়লামী, আহমাদ ইবনু উমার ইয়ামানী সূত্রে নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) “যায়লুল আহাদীসুল মাওযূ’আহ” গ্রন্থে (১৭৭) উল্লেখ করে বলেছেনঃ বর্ণনাকারী আহমাদ ইয়ামানী মিথ্যুক।
১৫। “আমি সে সময়েও নবী ছিলাম যখন আদম পানি এবং মাটির মাঝে ছিলেন।”
নিম্নের হাদীসটিও এটির ন্যায়ঃ– “যখন আদম ছিলেন না, পানি ও মাটি ছিল না তখনও আমি নবী ছিলাম।” হাদীস দু’ টি জাল।
জাল বলেছেনঃ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) এবং ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) সহ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সকল মুহাদ্দীস।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) “বাকরীর প্রতিবাদ” গ্রন্থের মধ্যে (পৃষ্ঠাঃ ৯) বলেছেনঃ “কুর’আন ও হাদীসের মধ্যে এমন কি সুস্থ বিবেকেও এটির কোন ভিত্তি নেই। কোন মুহাদ্দিসই এটি উল্লেখ করেননি। এটির অর্থও বাতিল। কারণ আদম ( আলাইহিস সালাম ) কখনও পানি এবং মাটির মাঝে ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন দেহ এবং রূহ এর মাঝে।”
১৬। “যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে কথা বলার পূর্বেই ছয় রাকায়াত সালাত আদায় করবে; তা দ্বারা তার ৫০ বছরের গুণাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
সূত্রঃ এটি ইবনু নাসর “কিয়ামুল্লাহ” গ্রন্থে (পৃঃ ৩৩) মুহাম্মদ ইবনু গাযওয়ান দামেস্কীর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি ইমাম ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) তার “আল-ইলাল” গ্রন্থে এ সূত্রেই (১/১৭৮) উল্লেখ করেছেন, অতঃপর বলেছেনঃ—
ইমাম আবূ যুর’য়াহ (রহঃ) বলেনঃ তোমরা এ হাদীসটিকে পরিহার কর। কারণ এটি বানোয়াট হাদীসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মুহাম্মদ ইবনু গাযওয়ান দামেস্কী মুনকারুল হাদীস।
১৭। “পূর্ব-পশ্চিমের মাঝে (যে কোন প্রান্তে) জুম’আর দিবসের যে কোন সময়ের মধ্যে যদি (নিম্নের) এ দু’আর দ্বারা কিছু চাওয়া হয় তাহলে অবশ্যই তার দু’আ কবুল করা হবেঃ লা-ইলাহা ইল্লা আনতা, ইয়া হান্নানু, ইয়া মান্নানু! ইয়া বাদী’ঊস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদি! ইয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম।”
—-হাদীসটি বানোয়াট।
সূত্রঃ হাদীসটি খাতীব বাগদাদী ‘আত-তারিখ’ গ্রন্থে (৪/১১৬) খালেদ ইবনু ইয়াযীদ উমারী আবুল ওয়ালীদ হতে, তিনি ইবনু আবী যিইব হতে, তিনি মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির হতে, তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মারফূ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এটি বানোয়াট। এ খালেদ ছাড়া সকল বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।
ইবনু হিব্বান রাহিমাহুল্লাহ ‘আয-যু’য়াফা ওয়াল মাতরুকীন’ গ্রন্থে (১/২৮৪-২৮৫) বলেনঃ তিনি এক শাইখ রায়পন্থীদের মত অবলম্বন করতেন। তিনি খুবই মুনকারুল হাদীস। তার থেকে রায়পন্থীরা বেশী বেশী বর্ণনা করেছেন। তাকে নিয়ে ব্যস্ত হওয়া ঠিক নয়। কারণ তিনি নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতিতে বানোয়াট হাদীস বর্ণনা করতেন।
ওকায়লী রাহিমাহুল্লাহ ‘আয-যু’য়াফা’ গ্রন্থে (২/১৮) বলেনঃ তিনি ভুল হাদীস বর্ণনা করেন এবং নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে ভিত্তিহীন কিছু বর্ণনা করতেন। ইবনু আদী রাহিমাহুল্লাহ ‘আল-কামিল’ গ্রন্থে (৩/৮৯০) বলেনঃ তার অধিকাংশ হাদীসগুলো মুনকার।
আল্লামা হাফিয যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তাকে আবূ হাতিম এবং ইয়াহইয়া মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন।
১৮। “নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে পুনরায় ঊযু করতে হবে।”—হাদীসটি জাল (বানোয়াট)
সূত্রঃ হাদীসটি ইবনু আদী ‘আল-কামেল’ গ্রন্থে (কাফ ২/৪২৭) ইয়াগনাম ইবনু সালেম হতে, তিনি আনাস ইবনু মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর ইবনু আদী বলেছেনঃ ইয়াগনাম আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মুনকার হাদীস বর্ণনাকারী আর তার অধিকাংশ হাদীস নিরাপদ নয়।
ইবনু হিব্বান রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি আনাস ইবনু মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর উদ্ধৃতিতে হাদীস জাল করতেন।
ইবনু ইউনুস রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন, মিথ্যা বর্ণনা করেছেন।
আবদুল হক ইশবীলী রাহিমাহুল্লাহ ‘আল-আহকাম’ গ্রন্থে (নং-২৪৪) বলেনঃ ইয়াগনাম মুনকারুল হাদীস, হাদীসের ক্ষেত্রে তিনি দুর্বল।
১৯। দু’টি বস্তুর নিকটবর্তী হয়ো না, আল্লাহ্র সাথে শরীক স্থাপন করা এবং মানুষের ক্ষতি সাধন করা।
৫। “পুরুষদের ইচ্ছা ( মনোবল ) পর্বতমালাকে স্থানচ্যূত করতে পারে।” এটি হাদীস নয়।
বাতিল বলেছেনঃ ইসমাঈল আজলুনী (রহঃ) এর মন্তব্য–“এটি যে হাদীস তা সম্পর্কে অবহিত হতে পারি নি।”(কাশফুল খাফা)। আল্লামা আলবানী (রহঃ) ও হাদীসটিকে বাতিল বলে আখ্যায়িত করেছেন ।
৬। “মসজিদের মধ্যে কথোপকথন পূণ্যগুলোকে খেয়ে ফেলে যেমনভাবে চতুষ্পদ জন্তুগুলো ঘাস খেয়ে ফেলে।” হাদীসটি ভিত্তিহীন।
সূত্রঃ “ ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন” (১/১৩৬)
বাতিল বলেছেনঃ হাফিয ইরাকী (রহঃ) , হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ), আব্দুল ওয়াহাব সুবকী (রহঃ) , আল্লামা আলবানী (রহঃ)
৭। “যে ব্যক্তি নিজেকে চিনেছে , সে তার প্রভুকে চিনতে সক্ষম হয়েছে।” হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
বাতিল বলেছেনঃ ইমাম নববী (রহঃ), ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) হাফিয সাখাবী (রহঃ), ইমাম সূয়ুতী (রহঃ), শাইখ আল-কারী (রহঃ)।
ফিরোযাবাদী (রহঃ) বলেনঃ যদিও অধিকাংশ লোক এটিকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস বলে চালাচ্ছেন, তবুও এটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসের অন্তর্ভুক্ত নয়। এর ভিত্তিই সহীহ নয়। এটি ইসরাইলীদের বর্ণনায় বর্ণিত ।
৮। “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ জুম’আর দিবসে পাগড়ী ধারীদের প্রতি দয়া করেন।“ হাদীসটি জাল।
সূত্রঃ “আল-মু’জামাল কাবীর” এবং “আল-হিলইয়াহ” (৫/১৮৯-১৯০) গ্রন্থে আলা ইবনু আমর হানাফী সূত্রে আইউব ইবনু মুদরেক হতে বর্ণিত।
জাল বলেছেনঃ ইমাম ইবনুল জাওযী (রহঃ), হাফিয ইবনে হাজার (রহঃ), ইমাম উকাইলী (রহঃ) , ইমাম ইবনু আদী (রহঃ), ইমাম আল-আলবানী (রহঃ) ।
৯। “আমি আরবী ভাষী, কুরআন আরবী ভাষায় এবং জান্নাতীদের ভাষা আরবী।” হাদীসটি জাল।
সূত্রঃ “ আল- মু’জামুল আওসাত”। (২/২৮৫,১/ ৯৩০১ )।
হাদীসের রাবীর (আব্দুল আযীয) সমালোচনা করেছেনঃ ইমাম বুখারী (রহঃ), ইমাম হায়সামী (রহঃ), ইমাম সূয়ুতী (রহঃ), হাফিয ইরাকী (রহঃ), ইমাম ইবনু মাঈন (রহঃ), ইমাম ইবনু আররাক (রহঃ) , ইমাম ইবনু আদী (রহঃ), আল্লামা আল-আলবানী (রহঃ) ।
১০। “পাগড়ীসহ সালাত পড়া দশ হাজার ভাল কর্মের সমতুল্য।” হাদীসটি জাল।
সূত্রঃ “যায়লুল আহাদীসিল মাওযূ’ আহ” (পৃঃ ১১১ ) গ্রন্থে আবান নামক এক ব্যক্তি হতে বর্ণিত।
জাল বলেছেনঃ ইমাম সাখাবী (রহঃ), হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ), ইমাম মানূফী (রহঃ), শাইখ আল- কারী (রহঃ) ।
ইমাম সুয়ূতী (রহঃ ) বর্ণনাকারী আবান সম্পর্কে বলেনঃ আবান মিথ্যার দোষে দোষী। ইমাম ইবনুল আররাক (রহঃ) “তানযীহুশ শরীয়াহ” (২/২৫৭) গ্রন্থেও একই মন্তব্য করেছেন।
১১। “মুমিনের উচ্ছিষ্টে রয়েছে আরোগ্য।” হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
ভিত্তি নেই বলেছেনঃ শাইখ আহমাদ আল গাযাযী (রহঃ), শাইখ আজলূনী (রহঃ) ।
শাইখ আহমাদ আল গাযাযী (রহঃ) বলেনঃ এটি কোন হাদীস নয়। (আল-যাদ্দুল হাসীস )
১২। “যে ব্যক্তি তর্জনী অংগুলি দু’টির ভিতরের অংশ দ্বারা মুয়ায্যিন কর্তৃক আশ্-হাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলার সময় দু’চোখ মাসেহ করবে; তার জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুপারিশ অপরিহার্য হয়ে যাবে।” হাদীসটি সহীহ নয়।
সুত্রঃ এটি “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে রয়েছে ।
সহীহ নয় বলেছেনঃ ইমাম ইবনু তাহির (রহঃ) (আত-তাযকীরাহ), ইমাম শওকানী (রহঃ) (আহাদিসুল মাওযূ’আহ), ইমাম সাখাবী (রহঃ) (মাকাসিদুল হাসানা) ।
১৩। “যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল-ওয়াকে’য়াহ পাঠ করবে, তাকে কখনও অভাব (ক্ষুধা) গ্রাস করবে না।” হাদীসটি দুর্বল।
সূত্রঃ হাদীসটি হারিস ইবনু আবী উসামা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (১৭৮), ইবনুস সুন্নী “আমালুল ইয়াউম ওয়াল লাইলাহ” গ্রন্থে (৬৭৪), ইবনু লাল তার “হাদীস” গ্রন্থে (১/১১৬), ইবনু বিশরান “আল- আমালী” গ্রন্থে (২০/৩৮/১) বর্ণনা করেছেন আবূ শুযা’ সূত্রে আবূ তায়বাহ হতে।
দুর্বল বলেছেনঃ ইমাম আহমাদ (রহঃ), আবূ হাতিম (রহঃ), ইবনু আবী হাতিম (রহঃ), দারা কুতুনী (রহঃ), ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ)। ইমাম মানাবী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসটি মুনকার। (আত্- তায়সীর)
হাদীসটির রাবীদের সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেনঃ আবূ শুযাকে চেনা যায় না এবং আবূ তায়বাহ মাজহূল। ইমাম যায়লাঈ ( রহঃ ) হাদীসটি দোষণীয় হওয়ার কারণ উল্লেখ করেছেনঃ- এটির সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে ।
হাদীসটির মতনে (ভাষায়) দুর্বোধ্যতা রয়েছে। হাদীসটির বর্ণনাকারীগণ দুর্বল। এছাড়া ইযতিরাব রয়েছে।
১৪। “যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল-ওয়াকেয়াহ পাঠ করবে; তাকে কখনও অভাব গ্রাস করবে না। যে ব্যক্তি প্রতি রাতে লা-উকসিমু বি-ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ পাঠ করবে; সে কিয়ামত দিবসে আল্লাহর সাথে এমতাবস্থায় মিলিত হবে যে, তার চেহারা পূর্ণিমা রাতের চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল থাকবে।” হাদীসটি জাল।
সূত্রঃ এটি দায়লামী, আহমাদ ইবনু উমার ইয়ামানী সূত্রে নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) “যায়লুল আহাদীসুল মাওযূ’আহ” গ্রন্থে (১৭৭) উল্লেখ করে বলেছেনঃ বর্ণনাকারী আহমাদ ইয়ামানী মিথ্যুক।
১৫। “আমি সে সময়েও নবী ছিলাম যখন আদম পানি এবং মাটির মাঝে ছিলেন।”
নিম্নের হাদীসটিও এটির ন্যায়ঃ– “যখন আদম ছিলেন না, পানি ও মাটি ছিল না তখনও আমি নবী ছিলাম।” হাদীস দু’ টি জাল।
জাল বলেছেনঃ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) এবং ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) সহ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সকল মুহাদ্দীস।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) “বাকরীর প্রতিবাদ” গ্রন্থের মধ্যে (পৃষ্ঠাঃ ৯) বলেছেনঃ “কুর’আন ও হাদীসের মধ্যে এমন কি সুস্থ বিবেকেও এটির কোন ভিত্তি নেই। কোন মুহাদ্দিসই এটি উল্লেখ করেননি। এটির অর্থও বাতিল। কারণ আদম ( আলাইহিস সালাম ) কখনও পানি এবং মাটির মাঝে ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন দেহ এবং রূহ এর মাঝে।”
১৬। “যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে কথা বলার পূর্বেই ছয় রাকায়াত সালাত আদায় করবে; তা দ্বারা তার ৫০ বছরের গুণাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
সূত্রঃ এটি ইবনু নাসর “কিয়ামুল্লাহ” গ্রন্থে (পৃঃ ৩৩) মুহাম্মদ ইবনু গাযওয়ান দামেস্কীর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি ইমাম ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) তার “আল-ইলাল” গ্রন্থে এ সূত্রেই (১/১৭৮) উল্লেখ করেছেন, অতঃপর বলেছেনঃ—
ইমাম আবূ যুর’য়াহ (রহঃ) বলেনঃ তোমরা এ হাদীসটিকে পরিহার কর। কারণ এটি বানোয়াট হাদীসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মুহাম্মদ ইবনু গাযওয়ান দামেস্কী মুনকারুল হাদীস।
১৭। “পূর্ব-পশ্চিমের মাঝে (যে কোন প্রান্তে) জুম’আর দিবসের যে কোন সময়ের মধ্যে যদি (নিম্নের) এ দু’আর দ্বারা কিছু চাওয়া হয় তাহলে অবশ্যই তার দু’আ কবুল করা হবেঃ লা-ইলাহা ইল্লা আনতা, ইয়া হান্নানু, ইয়া মান্নানু! ইয়া বাদী’ঊস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদি! ইয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম।”
—-হাদীসটি বানোয়াট।
সূত্রঃ হাদীসটি খাতীব বাগদাদী ‘আত-তারিখ’ গ্রন্থে (৪/১১৬) খালেদ ইবনু ইয়াযীদ উমারী আবুল ওয়ালীদ হতে, তিনি ইবনু আবী যিইব হতে, তিনি মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির হতে, তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মারফূ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এটি বানোয়াট। এ খালেদ ছাড়া সকল বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।
ইবনু হিব্বান রাহিমাহুল্লাহ ‘আয-যু’য়াফা ওয়াল মাতরুকীন’ গ্রন্থে (১/২৮৪-২৮৫) বলেনঃ তিনি এক শাইখ রায়পন্থীদের মত অবলম্বন করতেন। তিনি খুবই মুনকারুল হাদীস। তার থেকে রায়পন্থীরা বেশী বেশী বর্ণনা করেছেন। তাকে নিয়ে ব্যস্ত হওয়া ঠিক নয়। কারণ তিনি নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতিতে বানোয়াট হাদীস বর্ণনা করতেন।
ওকায়লী রাহিমাহুল্লাহ ‘আয-যু’য়াফা’ গ্রন্থে (২/১৮) বলেনঃ তিনি ভুল হাদীস বর্ণনা করেন এবং নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে ভিত্তিহীন কিছু বর্ণনা করতেন। ইবনু আদী রাহিমাহুল্লাহ ‘আল-কামিল’ গ্রন্থে (৩/৮৯০) বলেনঃ তার অধিকাংশ হাদীসগুলো মুনকার।
আল্লামা হাফিয যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তাকে আবূ হাতিম এবং ইয়াহইয়া মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন।
১৮। “নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে পুনরায় ঊযু করতে হবে।”—হাদীসটি জাল (বানোয়াট)
সূত্রঃ হাদীসটি ইবনু আদী ‘আল-কামেল’ গ্রন্থে (কাফ ২/৪২৭) ইয়াগনাম ইবনু সালেম হতে, তিনি আনাস ইবনু মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর ইবনু আদী বলেছেনঃ ইয়াগনাম আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মুনকার হাদীস বর্ণনাকারী আর তার অধিকাংশ হাদীস নিরাপদ নয়।
ইবনু হিব্বান রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি আনাস ইবনু মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর উদ্ধৃতিতে হাদীস জাল করতেন।
ইবনু ইউনুস রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন, মিথ্যা বর্ণনা করেছেন।
আবদুল হক ইশবীলী রাহিমাহুল্লাহ ‘আল-আহকাম’ গ্রন্থে (নং-২৪৪) বলেনঃ ইয়াগনাম মুনকারুল হাদীস, হাদীসের ক্ষেত্রে তিনি দুর্বল।
১৯। দু’টি বস্তুর নিকটবর্তী হয়ো না, আল্লাহ্র সাথে শরীক স্থাপন করা এবং মানুষের ক্ষতি সাধন করা।
হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
হাদীসটি এ বাক্যেই পরিচিতি লাভ করেছে। সুন্নাহের কোন গ্রন্থে এর ভিত্তি
সম্পর্কে অবহিত হইনি। হতে পারে এর মূলে আছে গাযালীর “আল-ইহইয়া” গ্রন্থে (২/১৮৫) বর্ণিত
কথিত হাদীস।
হাফিয ইরাকী তার “তাখরীজ” গ্রন্থে বলেনঃ হাদীসটি “ফিরদাউস” গ্রন্থের
রচনাকারী আলী (রাঃ)-এর হাদীস হতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তার ছেলে তার “মুসনাদ” গ্রন্থে
মুসনাদ হাদীস হিসাবে উল্লেখ করেননি।
এ কারণেই সুবকী সেটিকে সেই সব হাদীসগুলোর অন্তর্ভুক্ত করেছেন (৪/১৫৬)
যেগুলো “আল-ইহইয়া” গ্রন্থে এসেছে, অথচ তিনি সেগুলোর কোন সনদ পাননি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
২০। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাকে হালাল রুযি অন্বেষণের উদ্দেশ্যে পরিশ্রান্ত
অবস্থায় দেখতে ভালবাসেন।
হাদীসটি জাল।
এটিকে আবু মানসূর দাইলামী “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে আলী (রাঃ)-এর
হাদীস হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
হাফিয ইরাকী (২/৫৬)বলেনঃ এটির সনদে মুহাম্মাদ ইবনু সাহাল আল-আত্তার
নামক এক বর্ণনাকারী আছেন। তার সম্পর্কে দারাকুতনী বলেনঃ তিনি হাদীস জালকারী।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটি সেই সব হাদীসের একটি যেগুলোকে সুয়ূতী
“জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করে তার গ্রন্থকে কালিমালিপ্ত করেছেন ভূমিকাতে উদ্ধৃত
তার নিজ উক্তির বিরোধিতা করে, তিনি বলেছেনঃ
صنته عما تفرد به وضاع أو كذاب
‘আমি কিতাবটি জালকারী ও মিথ্যুকের একক বর্ণনা হতে হেফাযাত করেছি।
এ গ্রন্থের ভাষ্যকার আব্দুর রউফ আল-মানাবী “ফয়যুল কাদীর” গ্রন্থে বলেনঃ
-জামেউস সাগীর" এর লেখকের হাদীসটিকে তার গ্রন্থ হতে মুছে ফেলা উচিত ছিল।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
২১। আমাকে প্রেরন করা হয়েছে শিক্ষাদানকারী হিসেবে।
হাদীসটি য’ঈফ (দুর্বল)।
এটি দারেমী (১/৯৯) আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ সূত্রে (তিনি হচ্ছেন আবু
আদির রহমান মাকরী), ইবনু ওয়াহাব “মুসনাদ” গ্রন্থে (৮/১৬৪/২), আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাক
“আল-যুহুদ” গ্রন্থে (২/২২০), তার থেকে হারিস তার “মুসনাদ" গ্রন্থে (পৃ. ১৬) এবং
তায়ালিসী (পৃ ২৯৮ হাঃ নং ২২৫১) বর্ণনা করেছেন। তারা সকলে আব্দুর রহমান ইবনু যিয়াদ
ইবনে আনয়াম হতে এরং তিনি আব্দুর রহমান ইবনু রাফে' হতে ...বর্ণনা করেছেন।
এ সনদটি দুর্বল। কারণ আব্দুর রহমান বিন যিয়াদ এবং ইবনু রাফে তারা উভয়েই
দুর্বল, যেমনভাবে হাফিয ইবনু হাজার “তাকরীবুত তাহযীব” গ্রন্থে বলেছেন। ইবনু মাজাহও
হাদীসটি (১/১০১) দাউদ ইবনু যাবারকান সূত্রে বাকর ইবনু খুনায়েস হতে, আর তিনি আব্দুর
রহমান ইবনু যিয়াদ হতে বর্ণনা করেছেন।
এ সনদটি প্রথমটির চেয়ে বেশী দুর্বল। কারণ আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ-এর
নীচের বর্ণনাকারীগণ সকলেই দুর্বল। তারা নির্ভরশীল বর্ণনাকারীদের বিরোধিতা করেছেন। বূসয়রী
“আল-যাওয়াইদ” গ্রন্থে (কাফ ১৬/২) বলেনঃ এর সনদে দাউদ, বাকর ও আব্দুর রহমান নামের
(তিনজন) বর্ণনাকারী রয়েছেন। তারা সকলেই দুর্বল। হাফিয ইরাকী “তাখরীজুল ইহইয়া” গ্রন্থে
বলেনঃ সনদটি দুর্বল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
২২। আমার উম্মাতের দু’শ্রেণীর লোক যখন ঠিক হয়ে যাবে, তখন মানুষ ভাল হয়ে
যাবে। নেতাগণ এবং ফাকীহগণ। (অন্য বর্ণনায় এসেছে ‘আলেমগণ’)।
হাদীসটি জাল
তাম্মাম “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (১/২৩৮), আবু নোয়াইম “হিলইয়াহ” গ্রন্থে
(৪/৯৬) এবং ইবনু আবদিল বার "জামেউ বায়ানিল ইলম” গ্রন্থে (১/১৮৪) মুহাম্মাদ বিন
যিয়াদ ইয়াশকুরী সূত্রে ... হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
এ সনদটি বানোয়াট। এ মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেনঃ
كذاب أعور يضع الحديث 'তিনি মিথ্যুক, চোখ
টেরা, হাদীস জালকারী'।
ইবনু মাঈন ও দারাকুতনী বলেনঃ “كذاب” তিনি মিথ্যুক । আবূ
যুর'আহ ও অন্যরাও তাকে মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। সুয়ূতী হাদীসটি “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে
তার শর্তের বিরোধিতা করে উল্লেখ করেছেন। গাযালী “আল-ইহইয়া” গ্রন্থে (১/৬) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীস হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তার তাখরীজকারী হাফিয ইরাকী বলেনঃ
সনদটি দুর্বল। হাফিয যে বলেছেন সনদটি দুর্বল আর আমরা বলেছি বানোয়াট তার মধ্যে কোন
দ্বন্ধ নেই। কারণ বানোয়ট হচ্ছে দুর্বল হাদীসের প্রকারগুলোর একটি। যেমনটি হাদীস শাস্ত্রের
নীতির উপর রচিত গ্রন্থ সমূহে এসেছে। এ মিথ্যুকের আরেকটি হাদীসঃ (দেখুন পরেরটি)
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
২৩। যে ব্যাক্তি তাঁর বাড়ী হতে সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য বের হয়, অতঃপর
এ দু’আ বলেঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করেছি তোমার নিকট প্রার্থনাকারীদের
সত্য জানার দ্বারা, আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি আমার এ চলাকে সত্য জানার দ্বারা।
কারন আমি অহংকার করে আর অকৃতজ্ঞ হয়ে বের হয়নি ... তখন আল্লাহ তাঁর চেহারা সমেত তাঁর
সম্মুখে উপস্থিত হন এবং তাঁর জন্য এক হাজার ফেরেশতা ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইবনু মাজাহ (১/২৬১-২৬২), আহমাদ (৩/২১), বাগাবী "হাদীসু আলী
ইবনুল যায়াদ" গ্রন্থে (৯/৯৩/৩) ও ইবনুস সুন্নী (নং ৮৩) ফুযায়েল ইবনু মারযুক
সূত্রে আতিয়া আল-আওফী হতে বর্ণনা করেছেন।
দুটি কারণে হাদীসটির সনদ দুর্বলঃ ।
১। ফুযায়েল ইবনু মারযুক দুর্বল বর্ণনাকারী। একদল তাকে দুর্বল আখ্যা
দিয়েছেন। আর একদল তাকে নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন।
আবু হাতিম বলেনঃ তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল। তিনি আরো বলেনঃ তার
হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যাবে না।
হাকিম বলেনঃ তিনি সহীহার শর্তের মধ্যে পড়েন না। ইমাম মুসলিম তার সূত্রে
হাদীস বর্ণনা করার কারণে দোষী হয়েছেন। নাসাঈ বলেনঃ তিনি দুর্বল।
ইবনু হিব্বান তার “আস-সিকাত” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি ভুল করতেন। তিনি
"আয-যুয়াফা" গ্রন্থে আরো বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের বিপক্ষে ভুল করতেন এবং
আতিয়া হতে জাল (বানোয়াট) হাদীস বর্ণনা করতেন।
লক্ষ্য করুন তাকে আবু হাতিম ও নাসাঈর সাথে হাকিম এবং ইবনু হিব্বানও
দুর্বল বলেছেন, অথচ তারা দু'জন নির্ভরযোগ্য বলার ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শনকারীদের
অন্তর্ভুক্ত। কাওসারী যে বলেছেনঃ শুধুমাত্র আবু হাতিমই তাকে দুর্বল বলেছেন। কথাটি যে
সঠিক নয় তার প্রমাণ মিলে গেছে।
তিনি যে বলেছেন, দোষারোপটি ব্যাখ্যাকৃত নয়, সেটিও ঠিক নয়। কারণ আবূ
হাতিম বলেনঃ তিনি বহু ভুল করতেন। হাফিয ইবনু হাজার তার এ কথার উপর নির্ভর করেছেন।
এছাড়া তিনি বলেছেন যে, বুস্তি তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। বুস্তি হচ্ছেন
ইবনু হিব্বান। তিনি কি বলেছেন আপনারা তা অবগত হয়েছেন।
২। হাদীসটি দুর্বল হওয়ার আরো একটি কারণ হচ্ছে আতিয়া আল-আওফী নামক
দুর্বল বর্ণনাকারী। হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব" গ্রন্থে বলেনঃ তিনি সত্যবাদী,
তবে বহু ভুল করতেন। এছাড়া তিনি একজন শিয়া মতাবলম্বী মুদাল্লিস বর্ণনাকারী ছিলেন।
অতএব তাকে দোষ দেয়াটা ব্যাখ্যাকৃত দোষারোপ।
ইবনু হিব্বান “আয-যুয়াফা" গ্রন্থে বলেনঃ তিনি আবু সাঈদ (রাঃ)
হতে কতিপয় হাদীস শুনেন। অতঃপর যখন আবু সাঈদ (রাঃ) মারা গেলেন, তখন তিনি কালবীর মজলিসে
বসা শুরু করলেন। যখন কালবী বলতেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন...,
তখন তিনি তা হেফয করে নিতেন। কালবীর কুনিয়াত ছিল আবূ সাঈদ। তিনি তার থেকে বর্ণনা করতেন।
তাকে যখন বলা হত এ হাদীসটি আপনাকে কে বর্ণনা করেছেন? তখন তিনি বলতেনঃ আমাকে হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন আবু সাঈদ। ফলে লোকেরা ধারণা করত যে, তিনি আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে বুঝাচ্ছেন,
অথচ আসলে হবে কালবী। এ জন্য তার হাদীস লিপিবদ্ধ করাই হালাল নয়। তবে আশ্চর্য হবার উদ্দেশ্যে
লিখা যেতে পারে।
যাহাবীও “আল-মীযান” গ্রন্থে তাকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম তিরমিয়ী আতিয়ার
হাদীসকে হাসান বলেছেন। কিন্তু তার একথা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তিরমিযী এ ক্ষেত্রে শিথিলতা
প্রদর্শনকারী হিসাবে পরিচিত। ইবনু দাহিয়া বলেনঃ তিনি বহু জাল এবং দুর্বল হাদীসের সনদকেও
সহীহ বা হাসান বলে উল্লেখ করেছেন। এ কারণে ইমাম যাহাবী বলেনঃ আলেমগণ ইমাম তিরমিযীর
বিশুদ্ধকরণের উপর নির্ভর করেননি।
আবুস সিদ্দীক হাদীসটির মুতাবায়াত করেছেন। কিন্তু তার সনদে আব্দুল হাকিম
ইবনু যাকওয়ান রয়েছেন। তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ তাকে আমি চিনি না। ইবনু হিব্বান
তাকে নির্ভরযোগ্য বললেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। এর ব্যাখ্যা পূর্বেই দেয়া হয়েছে।
হাদীসটি দুর্বল হওয়ার তৃতীয় কারণ হচ্ছে ইযতিরাব। একবার এসেছে মারফু’
হিসাবে আরেকবার এসেছে মওকুফ হিসাবে। এছাড়া ইবনুস সুন্নী “আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ"
গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তার সনদে বর্ণনাকারী ওয়াযে রয়েছেন, তিনি বিলাল হতে
বর্ণনা করেছেন। এ ওয়াযে সম্পর্কে আবু হাতিম বলেনঃ তিনি নিতান্তই দুর্বল, তিনি কিছুই
না।
তিনি তার ছেলেকে বলেনঃ তার হাদীসগুলো নিক্ষেপ কর, কারণ সেগুলো মুনকার।
হাকিম বলেনঃ তিনি কতিপয় বানোয়াট হাদীস বর্ণনা করেছেন। অন্যরাও অনুরূপ
বলেছেন।
মোটকথা হাদীসটি উভয় সূত্রেই দুর্বল। একটি সূত্র অন্যটি হতে বেশী দুর্বল।
বূসয়রী, মুনযেরী ও অন্যান্য ইমামগণ হাদীসটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
২৪। দুনিয়া হচ্ছে মু’মিন ব্যাক্তির এক পদক্ষেপ।
হাদীসটির কোন ভিত্তি নাই।
হাদীসটি সম্পর্কে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া “আল-ফাতাওয়া” গ্রন্থে
(১/১৯৬) বলেনঃ এটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে, এছাড়া উম্মাতের সালাফ
(সাহাবী ও তাবেঈ) এমনকি ইমামগণ হতেও জানা যায় না। হাদীসটি সুয়ূতী “যায়লুল আহাদীছিল
মাওযুআহ” গ্রন্থে (১১৮৭ নং) উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
২৫। দেশকে ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ (দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ)।
হাদীসটি জাল।
যেমনিভাবে সাগানী (পৃঃ ৭) ও অন্যরা বলেছেন। এটির অর্থও সহীহ নয়। কারণ
এ ভালবাসা নিজকে এবং সম্পদকে ভালবাসার মতই প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যেই মূলগত ভাবে বিদ্যমান।
শারীয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকে এ ভালবাসার প্রশংসা করা যায় না। এটি ঈমানের জন্য অপরিহার্যও
নয়। আপনারা কী দেখছেন না যে, এ ভালবাসায় মু'মিন এবং কাফিরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
২৬। যে ব্যাক্তি চল্লিশ দিনকে নিছক আল্লাহর উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট করবে, তাঁর
ভাষায় বিচক্ষণতার ঝর্ণাধারা উদ্ভাসিত হবে।
হাদীসটি দুর্বল।
হাদীসটি আবু নু’য়াইম “আল-হিলইয়্যাহ” গ্রন্থে (৫/১৮৯) মুহাম্মাদ ইবনু
ইসমাঈল সুত্রে আবূ খালেদ ইয়াযীদ ওয়াসেতী হতে, তিনি হাজ্জাজ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এছাড়া হুসাইন আল-মারওয়ায়ী “জাওয়ায়েদুয যুহুদ” গ্রন্থে (১/২০৪),
ইবনু আবী শাইবাহ “আল-মুসান্নাফ" গ্রন্থে (১৩/২৩১) ও হান্নাদ “আল-যুহুদ” গ্রন্থে
(৬৭৮ নং) উল্লেখ করেছেন। ইবনুল জাওযী হাদীসটি তার “মাওযূ"আত” গ্রন্থে (৩/১৪৪)
আবু নয়াইম সূত্রে উল্লেখ করে বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়। ইয়াযীদ ইবনু আবী ইয়াযীদ
আব্দুর রহমান ওয়াসেতী অধিক পরিমাণে ভুল করতেন, হাজ্জাজ ক্রটি যুক্ত ব্যক্তি, মুহাম্মাদ
ইবনু ইসমাঈল অপরিচিত এবং আবু আইউব (রাঃ) হতে মাকহুলের শ্রবণ সাব্যস্ত হয়নি।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/১৭৬) তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ ইরাকী
“তাখরীজুল ইহইয়া” গ্রন্থে শুধুমাত্র দুর্বল বলেই ক্ষান্ত হয়েছেন। মাকহুল হতে মুরসাল
হিসাবে তার অন্য একটি সূত্র রয়েছে, যাতে মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাইল ও ইয়াযীদ নেই।
আমি (আলবানী) বলছিঃ সনদে বর্ণিত হাজ্জাজ হচ্ছেন ইবনু আরতাত-তিনি মুদাল্লিস,
আন আন শব্দে বর্ণনা করেছেন। তা সত্ত্বেও মুরসাল। হাদীসটিকে সাগানী “আহাদীসুল মাওযু
আত” গ্রন্থে (পৃ ৭) উল্লেখ করেছেন।
এ হাদীসটির অন্য একটি সনদ পেয়েছি, সেটি কাযাঈ বর্ণনা করেছেন। তাতেও
সেওয়ার ইবনু মুস'য়াব নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন। তার সম্পর্কে নাসাঈ সহ প্রমুখ
মহাদিসগণ বলেছেনঃ তিনি মাতরূক। সুতরাং হাদীসটি দুর্বল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
২৭। যে ব্যাক্তি আসরের পর ঘুমবে, তার জ্ঞান ছিনিয়ে নেয়া হবে। ফলে সে শুধুমাত্র
নিজেকেই দোষারোপ করবে।
হাদীসটি দুর্বল।
হাদীসটি ইবনু হিব্বান “আয-যুয়াফা ওয়াল মাতরূকীন" গ্রন্থে (১/২৮৩)
খালিদ ইবনুল কাসেম সূত্রে বর্ণনা করেছেন। ইবনুল জাওযী “মাওযু"আত” গ্রন্থে (৩/৬৯)
হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়। কারণ খালেদ মিথ্যুক। হাদীসটি মূলত ইবনু
লাহীয়ার, খালিদ তা ছিনিয়ে নিয়েছেন। অতঃপর তাকে লাইস-এর সূত্রে গেথে দিয়েছেন।
তৃতীয় সূত্রে মারওয়ান হতে বর্ণনা করা হয়েছে। সেটি ইবনু আদী “আল কামিল
গ্রন্থে (কাফ ২১১/১৯ ও সাহমী “তারীখু জুরজান' গ্রন্থে (৫৩) উল্লেখ করেছেন। মারওয়ান
বলেনঃ আমি লাইস ইবনু সা'দকে এমতাবস্থায় বললাম যে, তিনি রামাযান মাসে আসরের পরে ঘুমাচ্ছিলেনঃ
হে আবুল হারিস কী হয়েছে আপনার যে আপনি আসরের পরে ঘুমাচ্ছেন? অথচ আমাদেরকে ইবনু লাহীয়া
হাদীস শুনিয়েছেন ... । উত্তরে আবুল লাইস বললেনঃ আকীল হতে ইবনু লাহীয়ার হাদীসের কারণে
আমি এমন কিছু ছাড়ব না যা আমার উপকার করে!
(ইবনু লাহীয়া মুখস্থ বিদ্যায় দুর্বল)।
বর্তমান যুগের বহু মাশায়েখ আসরের পরে ঘুমাতে নিষেধ করে থাকেন যদিও
তার প্রয়োজন হয়। তাকে যদি বলা হয় এ মর্মে বর্ণিত হাদীসটি দুর্বল। তাহলে দ্রুত উত্তরে
বলেনঃ ফাযায়েলে আমল-এর ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যায়। ভেবে দেখুন পূর্ববতীদের
চিন্তা-চেতনা আর পরবর্তীদের জ্ঞানের মধ্যে কত বড় পার্থক্য? লাইস ছিলেন মুসলমানদের
ইমাম এবং প্রসিদ্ধ এক ফাকীহ। তার কথা প্রমান বহন করছে তার চিন্তাচেতনা ও জ্ঞানের গভীরতার,
অথচ পরবর্তীগণ কী বলেন?
হাদীসটি আবু ইয়ালা ও আবু নয়াইম “আত-তিব্ববুন্নাবাবী" গ্রন্থে
(২/১২) আমর ইবনু হুসাইন সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এ আমরকে খাতীব বাগদাদীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ
মিথ্যুক বলেছেন। এ আমরই নিম্নের ডালের হাদীস বর্ণনাকারীঃ (দেখুন পরেরটি)
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
২৮। যে ব্যাক্তি হারাম পন্থায় (অন্যকে বিপদ্গ্রস্থ করে) সম্পদ অর্জন করল,
আল্লাহ তাঁকে নরকে নিয়ে যাবেন।
হাদীসটি সহীহ নয়।
হাদীসটি কাযাঈ “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে (কাফ ২/৩৭) ও রামহুরমুযী “আল-আমসাল"
গ্রন্থে (পৃঃ ১৬০) আমর ইবনুল হুসাঈন সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি সাকেত [নিক্ষেপযোগ্য]। এ আমর ইবনুল হুসাঈন
মিথ্যুক। পূর্বে তার সম্পর্কে বহুবার আলোচনা করা হয়েছে। সাখাবী “আল-মাকাসিদ” গ্রন্থে
(নং ১০৬১) বলেছেনঃ আমর মাতরূক। আর আবূ সালমা হচ্ছেন সুলায়মান ইবনু সালাম। তিনি ইয়াহইয়া
ইবনু জাবের-এর কাতিব [লেখক], তিনি সাহাবী নন।
এছাড়া আবু সালমা আল-হিমসী সম্পর্কে মানাবী বলেনঃ তিনি একজন মাজহুল
[অপরিচিত] তাবেঈ।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৪৯। যে ব্যাক্তি তার পিতা-মাতা উভয়ের কবর অথবা যে কোন একজনের কবর প্রত্যেক
জুম’আর দিবসে যিয়ারত করবে, তাঁকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং তাঁকে সৎকর্মশীলদের তালিকায়
লিপিবদ্ধ করা হবে।
হাদীসটি জাল।
তাবারানী হাদীসটি “মু'জামুস সাগীর” গ্রন্থে (পৃ. ১৯৯) এবং “মু'জামুল
কাবীর” গ্রন্থে (১/৮৪/১) উল্লেখ করেছেন। তার থেকে ইস্পাহানী “আত-তারগীব” গ্রন্থে (২/২২৮)
মুহাম্মাদ ইবনু নু'মান সূত্রে ইয়াহইয়া ইবনু 'আলা বাজালী হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি
আবদুল করীম আবী উমাইয়াহ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি বানোয়াট। এ মুহাম্মাদ ইবনু নুমান সম্পর্কে
যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে এবং তার অনুসরণ করে “আল-লিসান” গ্রন্থে ইবনু হাজার বলেছেনঃ
مجهول، قاله العقيلي، ويحيى متروك
উকায়লী বলেনঃ তিনি মজহুল এবং ইয়াহইয়া হচ্ছেন মাতরূক অগ্রহণযোগ্য।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ ইয়াহইয়ার দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত।
তাকে ওয়াকী মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। অনুরূপ ভাবে ইমাম আহমাদ বলেছেনঃ كذاب يضع الحديث তিনি মিথ্যুক, হাদীস জালকারী।
ইবনু আদী বলেনঃ তার বর্ণনাগুলোতে দুর্বলতা সুস্পষ্ট এবং তার হাদীসগুলো
বানোয়াট।
তার শাইখ আব্দুল করীম আবু উমাইয়াহ ইবনু আবিল মুখারিকও দুর্বল। তবে
তাকে মিথ্যার দোষে দোষী করা যায় না। এ কারণে শুধুমাত্র তার (আব্দুল করীম) কথা উল্লেখ
করে হাদীসটি দুর্বল হওয়ার কারণ বর্ণনা করে হাফিয হায়সামী সঠিক কাজটি করেননি।
তিনি বলেছেনঃ (৩/৬০) তাবারানী হাদীসটি “মু'জামুস সাগীর" এবং “মু'জামূল
কাবীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাতে আব্দুল করীম আবু উমাইয়াহ নামক একজন বর্ণনাকারী
আছেন, তিনি দুর্বল।
ইমাম সুয়ুতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/২৩৪) বলেছেনঃ عبد الكريم ضعيف، ويحيى بن العلاء ومحمد بن النعمان مجهولان (আবদুল করীম দুর্বল,
ইয়াহইয়া ইবনুল আলা এবং মুহাম্মাদ ইবনু নুমান দু’জনই মাজহুল)। শুধুমাত্র এভাবে কারণ
দর্শিয়ে ঠিক করেননি। কারণ ইয়াহইয়া ইবনুল আলা মাজহুল নন বরং তিনি পরিচিত, তবে মিথ্যুক
হিসাবে। এছাড়াও হাদীসটির সনদে ইযতিরাব সংঘটিত হয়েছে। এর কারণও বর্ণনা করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
১৯। যে ব্যাক্তি তার পিতা-মাতা উভয়ের কবর প্রত্যেক জুম’আর দিবসে যিয়ারত
করবে। অতঃপর তাদের উভয়ের নিকট অথবা পিতার কবরের নিকট সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে, প্রত্যেক
আয়াত অথবা অক্ষরের সংখ্যার বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি ইবনু আদী (১/২৮৬), আবূ নু’য়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে
(২/৩৪৪-৩৪৫) ও আব্দুল গনী আল-মাকদেসী “সুনান” গ্রন্থে (২/৯১) ... আমর ইবনু যিয়াদ সূত্রে
...বর্ণনা করেছেন।
কোন মুহাদ্দিস (আমার ধারণা তিনি হচ্ছেন ইবনু মুহিব কিংবা যাহাবী) “সুনানুল
মাকদেসী” গ্রন্থের হাশিয়াতে (টীকাতে) লিখেছেন, هذا حديث غير ثابت এ হাদীসটি সাব্যস্ত হয়নি।
ইবনু আদী বলেনঃ হাদীসটি বাতিল। এ সনদে এটির কোন ভিত্তি নেই। আমর ইবনু
যিয়াদ (তিনি হচ্ছেন আবুল হাসান আস-সাওবানী)-এর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে তার অন্যান্য
হাদীসের সাথে এ হাদীসটির ব্যাপারে উল্লেখিত মন্তব্যটি করেন। সে সব হাদীসের একটি সম্পর্কে
বলেনঃ موضوع জাল (বানোয়াট)।
অতঃপর বলেনঃ আমর ইবনু যিয়াদ-এর এ হাদীসটি ছাড়া আরো হাদীস রয়েছে।
সেগুলোর মধ্যে কিছু আছে নির্ভরযোগ্যদের থেকে চুরি করা এবং কিছু আছে বানোয়াট। তাকে
সেগুলো জালকারী হিসাবে দোষী করা হয়েছে। দারাকুতনী বলেনঃ يضع الحديث তিনি হাদীস জাল করতেন।
এ কারণে ইবনুল জাওযী হাদীসটিকে তার “আল-মাওযু আত” গ্রন্থে (৩/ ২৩৯)
ইবনু আদীর সূত্রে উল্লেখ করেছেন। তিনি ঠিকই করেছেন। অথচ সুয়ূতী তার সমালোচনা করে
“আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/৪৪০) বলেছেনঃ হাদীসটির সমর্থনে শাহেদ আছে। অতঃপর তিনি এ হাদীসটিতে
পূর্বের হাদীসের সনদটিই উল্লেখ করেছেন। যেটি সম্পর্কে আপনি জেনেছেন যে, সেটিও জাল হাদীস।
যদিও বলা হয়েছে সেটি শুধু দুর্বল। তা সত্ত্বেও সেটিকে এ হাদীসের শাহেদ হিসাবে ধরা
যেতে পারে না। কারণ এটির সাথে সেটির ভাষার মিল নেই। আর জাল হাদীসের শাহেদ হিসাবে জাল
হাদীস উল্লেখ করাতে কোন উপকারীতাও নেই। [শাহেদ অর্থ জানতে দেখুনঃ ৫৬ নং পৃষ্ঠা]
উল্লেখ্য কবরের নিকট কুরআন পাঠ করা মুস্তাহাব এ মর্মে সহীহ সুন্নাহ
হতে কোন প্রমাণ মিলে না। বরং সহীহ সুন্নাহ প্রমাণ করে যে, কবর যিয়ারতের সময় মৃত্যু
ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র সালাম প্রদান করা এবং আখেরাতকে স্বরণ করাই হচ্ছে শারীয়াত
সম্মত। সালাফে সালেহীনের আমল এর উপরেই হয়ে আসছে। অতএব কবরের নিকট কুরআন পাঠ করা ঘৃণিত
বিদ'আত। যেমনটি স্পষ্ট ভাবে পূর্ববর্তী একদল ওলামা বলেছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম
আবু হানীফা, ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য ইমামগণ, কারণ এ মর্মে কোন হাদীস বর্ণিত
হয়নি।
ইবনু উমার (রাঃ) হতে দাফনের সময় সূরা বাকারার প্রথম এবং শেষ অংশ পাঠের
যে কথা বলা হয়েছে তা সহীহ সনদে প্রমাণিত হয়নি। যদি ধরেইনি সহীহ তাহলে তা শুধুমাত্র
দাফনের সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট [কিন্তু ধরে নিয়ে কি সহিহ বানানো সঠিক]।
অতএব আমাদেরকে সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরতে হবে আর বিদ’আত হতে সতর্ক হয়ে
তা হতে বেঁচে চলতে হবে। যদিও লোকেরা বিদ'আতকে ভাল কাজ হিসাবে দেখে। কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল বিদ'আতই পথভ্রষ্টতা।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৩০। বহু সন্তানের পিতা দরিদ্র সৎ মু’মিন বান্দাকে আল্লাহ ভালোবাসেন।
হাদীসটি দুর্বল।
হাদীসটি ইবনু মাজাহ (২/৫২৯) এবং উকায়লী “আয-যুয়াফা" গ্রন্থে
(পৃঃ ৩৬১) হাম্মাদ ইবনু ঈসার সূত্রে মূসা ইবনু ওবায়দাহ হতে, তিনি কাসিম ইবনু মিহরান
হতে ... বর্ণনা করেছেন। উকায়লী কাসেম-এর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ
لا يثبت سماعه من عمران بن حصين، رواه عنه موسى بن عبيدة وهو متروك
কাসেম কর্তৃক ইমরান ইবনু হুসাইন হতে শ্রবণ সাব্যস্ত হয়নি এবং তার থেকে
হাদীসটি বর্ণনাকারী মূসা ইবনু ওবায়দাহ মাতরূক।’
বূসয়রী “আয-যাওয়াইদ" গ্রন্থে (২/২৫৩) উকায়লীর এ কথাকে সমর্থন
করে বলেছেনঃ এ সনদটি দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ উকায়লীর কথা হতে হাদীসটি দুর্বল হওয়ার দুটি কারণ
স্পষ্ট হয়েছে। কারণ দুটি হচ্ছে সনদে বিচ্ছিন্নতা এবং ইবনু ওবায়দার দুর্বলতা। এটির
তৃতীয় কারণ হচ্ছে কাসেম ইবনু মিহরানের মাজহুল হওয়া। হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব”
গ্রন্থে তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি মাজহুল [অপরিচিত)।
চতুর্থ কারণ হাম্মাদ ইবনু ঈসা ওয়াসেতী সম্পর্কে হাফিয বলেনঃ তিনি দুর্বল।
এ কারণে হাফিয ইরাকী বলেনঃ হাদীসটির সনদ দুর্বল, যেমনভাবে মানাবী উল্লেখ করেছেন। হাদীসটিকে
সাখাবীও “আল-মাকাসিদ” গ্রন্থে (২৪৬) দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির আরেকটি সূত্র পেয়েছি। কিন্তু সেটির দ্বারা
শুধু এটির দুর্বলতাই বৃদ্ধি পায়। কারণ এটি মুহাম্মাদ ইবনু ফযল-এর সূত্রে যায়েদ ইবনু
'আমী মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন হতে বর্ণনা করেছেন। এটি ইবনু আদী (১/২৯৫) ও আবু নু’য়াইম
(২/২৮২) উল্লেখ করেছেন। এটি দুর্বল হওয়ার পিছনে তিনটি কারণঃ
১। মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন ও ইমরান ইবনু হুসাইনের মধ্যে সনদে বিচ্ছিন্নতা।
কারণ তিনি ইমরান হতে শুনেননি, যেমনটি দারাকুতনী বলেছেন।
২। যায়েদ আল-'আমী, তিনি হচ্ছেন ইবনুল হাওয়ারী, তিনি দুর্বল।
৩। মুহাম্মাদ ইবনু ফযল; তিনি একজন মিথ্যুক, যেমনভাবে ফাল্লাস ও আরো
অনেকে বলেছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৩১। তোমরা বৃদ্ধদের ধর্মকে আঁকড়ে ধর।
হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
সাখাবী “আল-মাকাসিদ” গ্রন্থে এরূপই বলেছেন। সাগানী “আল-আহাদীসুল মাওযুআত”
গ্রন্থে (পৃঃ ৭) হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। অথচ ইমাম গাযালী মারফু হিসাবে হাদীসটি বর্ণনা
করেছেন!
তার তাখরীজকারী হাফিয ইরাকী বলেনঃ ইবনু তাহের “কিতাবুত তাযকিরাহ” গ্রন্থে
(৫১১) বলেনঃ সাধারণ লোকদের মাঝে হাদীসটি পরিচিত, অথচ সহীহ বা দুর্বল বর্ণনাতেও এটির
কোন ভিত্তি সম্পর্কে অবহিত হতে পারিনি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৩২। যখন কেউ শেষ যামানায় এসে যাবে এবং মতামতগুলো বিভিন্নরুপ হয়ে যাবে, তখন
তোমরা মফস্বলবাসী ও নারীদের ধর্মকে ধারন করবে।
হাদীসটি জাল।
ইবনু তাহের বলেনঃ এটির সনদে ইবনুল বাইলামানী রয়েছেন। তিনি তার পিতা
হতে, তার পিতা ইবনু উমার (রাঃ) হতে এমন এক কপি বর্ণনা করেছেন, যেটিকে জাল করার দোষে
তাকে দোষী করা হয়েছে।
হাফিয ইরাকী বলেনঃ এ সূত্রেই ইবনুল বাইলামানীর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে
ইবনু হিব্বান হাদীসটি “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু হিব্বান-এর সূত্রে ইবনুল জাওযী “আল-মাওযুআত”
গ্রন্থে (১/২৭১) হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। হাদীসটির অন্য সমস্যা হচ্ছে ইবনু আব্দির রহমান
বাইলামানী হতে বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনুল হারিস হারেসী; তিনি দুর্বল। ইবনু আদী (২/২৯৭)
হাদীসটি ইবনু আবদির রহমান বাইলামানী হতে বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনুল হারিস আল-হারেসীর
জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ وعامة ما يرويه غير محفوظ তার বর্ণনাকৃত অধিকাংশ
হাদীস মাহফুয নয় (নিরাপদ নয়)।
ইবনুল জাওযী বলেনঃ হাদীসটি সহীহ্ নয়। মুহাম্মাদ ইবনুল হারিস কিছুই
না এবং তার শাইখ ইবনুল বাইলামানী তার ন্যায়। তিনি তার পিতা হতে জাল কপির মাধ্যমে হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন। এটিকে উমার ইবনু আবদিল আযীয-এর ভাষ্য হিসাবে জানা যায়।
সুয়ূতী “আল-লাআলিল মাসনূ'য়াহ" গ্রন্থে তার এ কথাকে সমর্থন করে
বলেছেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু হারিস সুনান ইবনু মাজাহর বর্ণনাকারীদের একজন। “আল-মীযান” গ্রন্থে
বলা হয়েছে এ হাদীসটি তার অদ্ভুত বর্ণনাগুলোর একটি।
ইবনু হারিস সম্পর্কে কিছু আলোচনা না করে এখানে ইবনুল বাইলামানীর সম্পর্কে
বলাই উত্তম। কারণ সকলেই তার দুর্বল হওয়ার বিষয়ে একমত। আর কেউ কেউ ইবনু হারিসকে নির্ভরযোগ্যও
বলেছেন। অতএব এ হাদীসের সমস্যা হচ্ছে-ইবনুল বাইলামানী। যার সম্পর্কে সাখাবীও “আল-মাকাসিদ”
গ্রন্থে ইবনু তাহেরের ভাষ্যের ন্যায় বলেছেন।
শাইখ আলী আল-কারী বলেনঃ حديث موضوع হাদীসটি বানোয়াট। তা সত্ত্বেও হাদীসটি সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে
উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৩৩। আমার উম্মাতের মতাভেদ রহমত স্বরূপ।
হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
মুহাদ্দিসগণ হাদীসটির সনদ বের করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। শেষে
সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে বলেছেনঃ সম্ভবত কোন হুফফায-এর গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ
করা হয়েছে, কিন্তু তা আমাদের নিকট পৌছেনি! আমার নিকট এটি অসম্ভবমূলক কথা, কারণ এ কথা
এটাই সাব্যস্ত করে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু হাদীস উম্মাতের
মধ্য হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কোন মুসলিম ব্যক্তির এরূপ বিশ্বাস রাখা যুক্তিসঙ্গত নয়।
মানাবী সুবকীর উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ এ হাদিসটি মুহাদ্দিসগণের নিকট পরিচিত
নয়। এটির কোন সহিহ, দুর্বল এমনকি জাল সনদ সম্পর্কেও অবহিত হতে পারিনি।
শাইখ জাকারিয়া আল-আনসারী “তাফসীরে বায়যাবী" গ্রন্থের টীকাতে
(কাফ ২/৯২) মানাবীর কথাটি সমর্থন করেছেন। এছাড়া এ হাদীসের অর্থও বিচক্ষণ আলেমগণের
নিকট অপছন্দনীয়। ইবনু হাযম “আল-ইহকাম ফি উসূলিল আহকাম” গ্রন্থে (৫/৬৪) এটি কোন হাদীস
নয় এ ইঙ্গিত দেয়ার পর বলেনঃ এটি অত্যন্ত নিকৃষ্ট কথা। কারণ যদি মতভেদ রহমত স্বরূপ
হত, তাহলে মতৈক্য অপছন্দনীয় হত। এটি এমন একটি কথা যা কোন মুসলিম ব্যক্তি বলেন না।
তিনি অন্য এক স্থানে বলেনঃ باطل مكذوب এটি বাতিল, মিথ্যারোপ।
এ বানোয়াট হাদীসের কুপ্রভাবে বহু মুসলমান চার মাযহাবের কঠিন মতভেদগুলোকে
স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন। কখনো কিতাবুল্লাহ ও সহীহ হাদীসের দিকে প্রত্যাবর্তন করার চেষ্টা
করেন না। অথচ সে দিকে তাদের ইমামগণ প্রত্যাবর্তন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বরং তাদের
নিকট এ চার মাযহাব যেন একাধিক শরীয়াতের ন্যায়। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ولوكان من عند غير الله لوجدوا فيه اختلافا كثيرا অর্থঃ “যদি (এ কুরআন) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট হতে আসত, তাহলে
তারা তাতে বহু মতভেদ পেত।” [সূরা নিসা ৮২]
আয়াতটি স্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছে যে, মতভেদ আল্লাহ তা'আলার নিকট হতে নয়।
অতএব কীভাবে এ মতভেদকে অনুসরণীয় শারীয়াত বানিয়ে নেয়া সঠিক হয়? আর কীভাবেই তা নাযিলকৃত
রহমত হতে পারে?
মোটকথা শারীয়াতের মধ্যে মতভেদ নিন্দনীয়। ওয়াজিব হচ্ছে যতদূর সম্ভব
তা থেকে মুক্ত হওয়া। কারণ এটি হচ্ছে উম্মাতের দুর্বলতার কারণসমূহের একটি। যেমনিভাবে
আল্লাহ্ তা'আলা বলেছনঃ ولا تنازعوا فتفشلوا وتذهب ريحكم অর্থঃ “এবং তোমরা আপোসে
বিবাদ করো না, কারণ তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে আর তোমাদের শক্তি বিনষ্ট হয়ে যাবে"
(আনফালঃ ৪৬)।
অতএব মতভেদে সন্তুষ্ট থাকা এবং রহমত হিসাবে তার নামকরণ করা সম্পূর্ণ
আয়াত বিরোধী কথা, যার অর্থ খুবই স্পষ্ট। অপরপক্ষে মতভেদের সমর্থনে সনদ বিহীন (রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে যার কোন ভিত্তি নেই) এ জাল হাদীস ছাড়া আর কোন
প্রমাণ নেই।
এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, সাহাবীগণ মতভেদ করেছেন, অথচ তারা লোকদের
মধ্যে সর্বোত্তম। তাদেরকে কি উল্লেখিত এ নিন্দা সম্পৃক্ত করে না।
ইবনু হাযম তার উত্তরে বলেনঃ কক্ষনও নয়। তাদেরকে এ নিন্দা সম্পৃক্ত
করবে না। কারণ তাদের প্রত্যেকেই আল্লাহর পথ এবং হকের পক্ষকে গ্রহণ করার জন্য সচেষ্ট
ছিলেন। তাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি ভুল করেছেন তিনি তাতেও সওয়াবের অধিকারী এবং একটি
সওয়াব পাবেন। সুন্দর নিয়্যাত এবং উত্তম ইচ্ছা থাকার কারণে। তাদের উপর হতে তাদের ভুলের
গুনাহ উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। কারণ তারা তা করেননি আর সত্যকে জানার গবেষণার ক্ষেত্রে
তারা অলসতাও করেননি। ফলে তাদের মধ্যে যিনি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছতে সক্ষম হয়েছেন,
তিনি দুটি সওয়াবের অধিকারী। এমন ধারা প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির সমাধান লুকায়িত, যা
আমাদের নিকট এখনও পৌঁছেনি।
উল্লেখিত নিন্দা ও ভীতি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যে আল্লাহর রজ্জ্বর
সম্পর্ককে (কুরআনকে) এবং নাবীর হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করে, তার নিকট স্পষ্টভাবে দলীল
পৌছা ও প্রতীয়মান হওয়ার পরেও। বরং কুরআন ও সুন্নাহকে পরিত্যাগ করার মানসে অন্য ব্যক্তির
সাথে সে সম্পর্ক স্থাপন করেছে ইচ্ছাকৃতভাবে মতভেদের অন্ধ অনুসরণ করে, গোড়ামী ও অজ্ঞতার
দিকে আহবানকারী হিসাবে। সে এমন এক পর্যায়ে পৌছেছে যে, তার দাবীর সমর্থনে কুরআন ও হাদীসের
যে কথাটি মিলে সেটি গ্রহণ করে আর যেটি তার বিপরীতে যায় সেটি পরিত্যাগ করে। এরাই হচ্ছে
নিন্দনীয় মতভেদকারী।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৩৪। আমার সাহাবীগণ নক্ষত্রের ন্যায়, তোমরা তাদের যে কোন একজনের অনুসরণ করলে
সঠিক পথপ্রাপ্ত হবে।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি ইবনু আদিল বার “জামেউল ইলম” (২/৯১) ও ইবনু হাযম “আল-ইহকাম”
(৬/৮২) গ্রন্থে সালাম ইবনু সুলাইম সূত্রে হারিস ইবনু গোসাইন হতে, তিনি আমাশ হতে, তিনি
আবূ সুফিইয়ান হতে ... বর্ণনা করেছেন।
ইবনু আদিল বার বলেনঃ
هذا إسناد لا تقوم به حجة لأن الحارث بن غصين مجهول
“এ সনদটি দ্বারা দলীল সাব্যস্ত হয় না, কারণ এ সনদের বর্ণনাকারী হারিস
ইবনু গোসাইন মাজহুল।
ইবনু হাযম বলেনঃ এ বর্ণনাটি নিম্ন পর্যায়ের। তাতে আবূ সুফিইয়ান রয়েছেন,
তিনি দুর্বল আর হারিস ইবনু গোসাইন হচ্ছেন মাজহুল। আর সালাম ইবনু সুলাইম কতিপয় জাল
হাদীস বর্ণনা করেছেন। এটি নিঃসন্দেহে সেগুলোর একটি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ সালাম ইবনু সুলাইমকে বলা হয় ইবনু সুলায়মান আত-তাবীল,
তার দুর্বলতার ব্যাপারে সকলে একমত। এমনকি তার সম্পর্কে ইবনু খাররাশ বলেনঃ তিনি
মিথ্যুক।
ইবনু হিব্বান বলেনঃ روى أحاديث موضوعة তিনি কতিপয় জাল হাদীস
বর্ণনা করেছেন।
হারিস মাজহুল হলেও আবূ সুফিইয়ান দুর্বল নয় যেমনভাবে ইবনু হাযম বলেছেন।
তিনি বরং সত্যবাদী যেরূপ ইবনু হাজার "আত-তাকরীব" গ্রন্থে বলেছেন। ইমাম আহমাদ
বলেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়, যেমনভাবে ইবনু কুদামার “আল-মুনতাখাব” গ্রন্থে (১০/১৯৯/২) এসেছে।
তবে হাদীসটি জাল হওয়ার জন্য সালামই যথেষ্ট।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৩৫। অবশ্যই আমার সাথীগণ নক্ষত্রতুল্য। অতএব তোমরা তাদের যে কারো কথা গ্রহণ
করলে সঠিক পথপ্রাপ্ত হবে।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি ইবনু আবদিল বার মুয়াল্লাক হিসাবে (২/৯০) বর্ণনা করেছেন এবং
তার থেকে ইবনু হাযম মারফু হিসাবে আবূ শিহাব হান্নাত সূত্রে হামযা যাযারী হতে ... বর্ণনা
করেছেন। এছাড়া আবদু ইবনে হুমায়েদ “আল-মুনতাখাব মিনাল মুসনাদ” (১/৮৬) গ্রন্থে, এবং
ইবনু বাত্তা “আল-ইবানাহ" গ্রন্থে (৪/১১/২) ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর ইবনু আদিল বার বলেছেনঃ
هذا إسناد لا يصح، ولا يرويه عن نافع من يحتج به
এ সনদটি সহীহ নয়, হাদিসটি নাফে' হতে এমন কেউ বর্ণনা করেননি যার দ্বারা
দলীল গ্রহণ করা যায়।’
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হামযা হচ্ছে আবু হামযার ছেলে; দারাকুতনী তার সম্পর্কে
বলেনঃ তিনি মাতরূক।
ইবনু আদী বলেনঃ عامة مروياته موضوعة তার অধিকাংশ বর্ণনা
জাল (বানোয়াট)।
ইবনু হিব্বান বলেনঃ
ينفرد عن الثقات بالموضوعات حتى كأنه المتعمد لها، ولا تحل الرواية عنه
তিনি নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতিতে এককভাবে জাল (বানোয়াট) হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তিনি যেন তা ইচ্ছাকৃতই করেছেন। সুতরাং তার থেকে হাদীস বর্ণনা করাই হালাল নয়। যাহাবী
“আল-মীযান” গ্রন্থে তার জাল হাদীসগুলো উল্লেখ করেছেন। সেগুলোর একটি হচ্ছে এটি ।
ইবনু হাযম “আল-মুহাল্লা” গ্রন্থে ৬/৮৩) বলেনঃ এটিই স্পষ্ট হয়েছে যে,
এ বর্ণনাটি আসলে সাব্যস্ত হয়নি। বরং বর্ণনাটি যে মিথ্যা তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ
আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুণাগুণ বর্ণনা করে বলেছেনঃ
وما ينطق عن الهو ى، إن هو إلا وحي يوحى
তিনি মনোবৃত্তি হতে কিছু বলেন না। তাঁর উক্তি অহী ছাড়া অন্য কিছু নয়।”
(সূরা নাজম: ৩-৪)
যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সকল কথা শরীয়তের মধ্যে
সত্য এবং তা গ্রহণ করা ওয়াজিব, তখন তিনি যা বলেন তা নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট হতেই
বলেন। আর আল্লাহর নিকট হতে যা আসে তাতে মতভেদ থাকতে পারে না, তার এ বাণীর কারণে।
ولوكان من عند غير الله لوجدوا فيه اختلافا كثيرا
অর্থঃ “আর যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য করে নিকট হতে হতো, তাহলে তারা তাতে
বহু মতভেদ পেত।” (সূরা নিসাঃ ৮২)
আল্লাহ তা’আলা মতভেদ ও দ্বন্দ্ব করতে নিষেধ করেছেন, তাঁর এ বাণী দ্বারাঃ
ولا تنازعوا "আর তোমরা আপোষে
বিবাদ করো না।" (আনফালঃ ৪৬)।
অতএব এটি অসম্ভবমূলক কথা যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
সাহাবীগণের প্রত্যেকটি কথার অনুসরণ করার নির্দেশ দিবেন, অথচ তাদের মধ্য হতে কেউ কোন
বস্তুকে হালাল বলেছেন আবার অন্যজন সেটিকে হারাম বলেছেন। ইবনু হাযম এ বিষয়ে আরো বলেছেনঃ
সাহাবীগণের মধ্য হতে এমন মতামতও আছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায়
তারা তাতে ভুল করেছেন সুন্নাত বিরোধী হওয়ার কারণে। অতঃপর (৬/৮৬) বলেছেনঃ কীভাবে সম্ভব
তাদের অন্ধ অনুসরণ করা যারা ভুল করেছেন, আবার সঠিকও করেছেন?
ইবনু হাযম মতভেদ নিন্দনীয় অধ্যায়ে (৫/৬৪) আরো বলেনঃ আমাদের উপর ফরয
হচ্ছে আল্লাহর নিকট হতে কুরআনের মধ্যে যা এসেছে ইসলাম ধর্মের শারীয়াত হিসাবে তার অনুসরণ
করা এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সহীহ বর্ণনায় যা এসেছে তার অনুসরণ
করা। কারণ সেগুলোও আল্লাহর নির্দেশ হিসাবে তাঁর নিকট ধর্মের ব্যাখ্যায় এসেছে। অতএব
মতভেদ কখনও রহমত হতে পারে না, আবার তা গ্রহণীয় হতে পারে না।
মোটকথা হাদীসটি মিথ্যা, বানোয়াট, বাতিল, কখনও সহীহ নয়, যেমনটি ইবনু
হাযম বলেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৩৬। আমার পরিবারের সদস্যগণ নক্ষত্রতুল্য, তোমরা তাদের যে কোন জনকে অনুসরণ
করলে সঠিক পথ লাভ করবে।
হাদীসটি জাল।
এটি মিথ্যুক আহমাদ ইবনু নুবায়েতের কপিতে রয়েছে। আমি অবহিত হয়েছি
যে, এ বর্ণনাটি আবূ নু’য়াইম আসবাহানীর। তার সনদে আহমাদ ইবনু কাসিম আল-মিসরী আল-লোকাঈ
এবং আহমাদ ইবনু ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আল-আশযাঈ রয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ আহমাদ উক্ত কপিতে বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন, এটি
সেগুলোর একটি।
যাহাবী এ কপি সম্পর্কে বলেনঃ
فيها بلايا! وأحمد بن إسحاق لا يحل الاحتجاج به فإنه كذاب
তাতে বহু সমস্যা রয়েছে! আহমাদ ইবনু ইসহাক দ্বারা দলীল গ্রহণ করা বৈধ
নয়, কারণ তিনি একজন মিথ্যুক।’
হাফিয ইবনু হাজার “আল-লিসান” গ্রন্থে যাহাবীর কথাকে সমর্থন করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আহমাদ ইবনু ইসহাক হতে বর্ণনাকারী অপর ব্যক্তি আহমাদ
ইবনু কাসেম লোকাঈ দুর্বল।
ইবনু আররাক হাদিসটি সুয়ূতির "যায়লুল আহাদিসীল মাওযূ'আহ" গ্রন্থের
(পৃঃ ২০১) অনুসরণ করে “তানখীহুশ শারীয়াহ" গ্রন্থে (২/৪১৯) উল্লেখ করেছেন। এছাড়া
শাওকানীও “ফাওয়াইদুল মাযমূয়াহ ফিল আহাদীসিল মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃঃ ১৪৪) উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৩৭। যে ব্যাক্তি ফজরের সালাতে (নামায/নামাজ) সূরা “আলাম নাশরাহ” এবং সূরা
“আলাম তাঁরা কাইফা” পাঠ করবে; সে চোখে ঝাপসা দেখবে না।
হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
সাখাবী “মাকাসিদুল হাসানা” গ্রন্থে (পৃ ২০০) বলেছেনঃ এটির কোন ভিত্তি
নেই। চাই ফজর দ্বারা সকালের সুন্নাত অথবা সকালের ফরয সলাত ধরা হোক না কেন। উভয়টিতে
কিরায়াত পাঠের সুন্নাত এটির বিপরীতে হওয়ার কারণে।
তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে, ফজরের সুন্নাত সলাতে সুন্নাত হচ্ছে (প্রথম রাকাআতে)
কুল ইয়া-আইউহাল কাফিরুন আর (দ্বিতীয় রাকাআতে) কুল হু-ওয়াল্লাহু আহাদ পাঠ করা। আর
ফজরের ফরজ সালাতে ষাট বা ততোধিক আয়াত পাঠ করা।
অতএব হাদীসটি সঠিক নয়।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৩৮। উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পরে “ইন্না আনযালনাহু” সূরা পাঠ করতে হয়।
হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
যেমনটি সাখাবী বলেছেন।
তিনি বলেনঃ আমি এটি দেখি হানাফী মাযহাবের ইমাম আবুল লাইস-এর “আল-মুকাদ্দিমা”
গ্রন্থে। বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক তাতে (মুকাদ্দিমাতে) এটির
প্রবেশ ঘটেছে। এটি সহীহ্ সুন্নাতকে বিতাড়িত করে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ কারণ ওযুর পরের সুন্নাত হচ্ছে, এ দু'আ পাঠ করাঃ
أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدا عبده ورسوله، اللهم اجعلني من التوابين، واجعلني من المتطهرين
এটি ইমাম মুসলিম ও ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন, তবে বাক্যগুলো তিরমিযীর।
অথবা বলবেঃ
سبحانك اللهم وبحمدك، أشهد أن لا إله إلا أنت، أستغفرك وأتوب إليك
এটি হাকিম ও অন্যরা সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ (আলোচ্য) হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। এ কথাতে সন্দেহ
হতে পারে যে, এর কোন সনদ নেই। আসলে তা নয়, সনদ আছে তবে তা সঠিক নয়, যা ১৪৪৯ নং হাদীসে
আসবে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৩৯। যে ব্যাক্তি তার কোন ভাইকে পরিতৃপ্ত না হওয়া পর্যন্ত রুটি খাওয়াবে।
তৃষ্ণা না মিটা পর্যন্ত পানি পান করাবে। তাকে আল্লাহ সাত খন্দক সমপরিমাণ জাহান্নাম
থেকে দূরে সরিয়ে দিবেন। দু’ খন্দকের মধ্যের দূরত্ব হবে পাঁচশত বছরের চলার সমপরিমাণ।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি দুলাবী “আল-কুনা” গ্রন্থে (১/১১৭), ইয়াকুব আল-ফুসাবী “আত-তারীখ"
গ্রন্থে (২/৫২৭), ইবনু আবী হাকাম “ফতুহে মিসর” গ্রন্থে (পৃঃ ২৫৪), হাকিম (৪/১২৯), তাবারানী
“আল-আওসাত” গ্রন্থে (১/৯৫/১) ও ইবনু আসাকির (৬/১১৫/২) ইদরীস ইবনু ইয়াহইয়া খাওলানী
সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। এ সনদে রাজা ইবনু আবী আতা নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন।
হাকিম হাদীসটি সম্পর্কে বলেনঃ সহীহ আর তার সাথে সুর মিলিয়েছেন হাফিয
যাহাবী!
এটি তাদের দু’জনের মারাত্মক ভুল। কারণ এ রাজাকে কেউ নির্ভরশীল বলেননি,
বরং তিনি একজন মিথ্যার দোষে দোষী ব্যক্তি। শুনুন স্বয়ং হাকিম নিজে তার সম্পর্কে কি
বলেছেন, যাহাবী নিজেই যা “আল-মীযান” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। নিজে তাকে কিঞ্চিৎ ভাল
বলার পর বলেছেন, হাকিম বলেনঃ তিনি মিসরী জাল হাদীসের হোতা। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি
জাল হাদীস বর্ণনাকারী।
অতঃপর এ হাদীসটি মিসরীদের সূত্রে উল্লেখ করেছেন। ইবনুল জাওযী তার “আল-মাওযু
আত” গ্রন্থে (২/১৭২) হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/৮৭) তা
সমর্থন করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে বলেছেন যে, হাদীসটি ইবনু
হিব্বান বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ এটি জাল। হাকিম হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেনঃ হাদীসটির
সনদ সহীহ্। আবার তিনি নিজেই তার বর্ণনাকারী (রাজা) সম্পর্কে বলেছেনঃ তিনি জালের হোতা।
মোটকথা হাদীসটি জাল (বানোয়াট) এটিই সঠিক।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৪০। খাতীব যখন মিম্বারে উঠে যাবে; তার পর সালাত (নামায/নামাজ)-ও নেই, কোন
কথাও নেই।
হাদীসটি বাতিল।
হাদীসটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে ইবনু উমার (রাঃ) হতে মারফু
হিসাবে নিম্নের এ ভাষায় উল্লেখ করেছেনঃ
إذا دخل أحدكم المسجد والإمام على المنبر فلا صلاة ولا كلام، حتى يفرغ الإمام
"তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে এমতাবস্থায় যে, ইমাম মিম্বারের
উপরে, তখন ইমামের খুৎবা শেষ না করা পর্যন্ত আর কোন সলাত পড়া যাবে না এবং কোন কথাও
বলা যাবে না।"
এ হাদীসের সনদে আইউব ইবনু নাহীক নামক এক বর্ণনাকারী আছেন। তার সম্পর্কে
ইবনু আবী হাতিম “আল-জারহু ওয়াত-তা’দীল” গ্রন্থে (১/১/২৫৯) বলেনঃ আমি আমার পিতা হতে
শুনেছি তিনি বলেনঃ হাদীসের ক্ষেত্রে তিনি দুর্বল। আবু যুরয়াহ হতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ
আইউব ইবনু নাহীক হতে আমি হাদীস বর্ণনা করব না এবং তার হাদীস আমাদের নিকট পড়াও হয়
না। অতঃপর বলেছেনঃ তিনি একজন মুনকারুল হাদীস।
হায়সামী “মাজমাউয যাওয়াইদ" গ্রন্থে (২/১৮৪) বলেনঃ وهو متروك ضعفه جماعة "তিনি মাতরূক,
তাকে মুহাদ্দিসগণের এক জামা'আত দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।"
এ কারণেই হাফিয ইবনু হাজার “ফতহুল বারীর" মধ্যে (২/৩২৭) বলেছেনঃ
হাদীসটি দুর্বল। আমি হাদীসটি বাতিল বলে হুকুম লাগিয়েছি। কারণ তার সনদে দুর্বলতা থাকা
ছাড়াও এটি দুটি সহীহ হাদীস বিরোধীঃ
إذا جاء أحدكم يوم الجمعة والإمام يخطب فليركع ركعتين وليتجوز فيهما
১। “তোমাদের কেউ জুম'আর দিবসে যখন (মসজিদে) আসবে এমতাবস্থায় যে, ইমাম
খুৎবা দিচ্ছেন, তখন সে যেন সংক্ষেপে দুরাকাআত সলাত আদায় করে।"
হাদীসটি মুসলিম শরীফে (৩/১৪/১৫) এবং আবু দাউদে (১০২৩) বর্ণিত হয়েছে।
বুখারী এবং মুসলিম-এর বর্ণনাতেও জাবের (রাঃ) হতে অনুরূপ হাদীস এসেছে।
قوله صلى الله عليه وسلم: إذا قلت لصاحبك: أنصت، يوم الجمعة والإمام يخطب فقد لغوت
২। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “তুমি যদি তোমার সঙ্গীকে
জুম'আর দিবসে ইমাম খুৎবা দেয়ার সময় বল চুপ কর, তাহলে তুমি কটু কথা বললে।”
প্রথম হাদীসটি অত্যন্ত স্পষ্ট, যা তাগিদ দিচ্ছে খংবা চলাকালীন সময়ে
দু রাকাআত সলাত আদায় করার জন্য। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসের বিরোধিতা
করে কিছু অজ্ঞ ইমাম/খতীব খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করে যে ব্যক্তি দু' রাকাআত
সলাত আদায় করতে চাই তাকে নিষেধ করেন।
আমার ভয় হয় তারা রসূলের হাদীসের বিরোধিতা করার কারণে নিম্নে বর্ণিত
আয়াত দু'টিতে বর্ণিত শাস্তির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় কি না।
أَرَأَيْتَ الَّذِي يَنْهَى عَبْدًا إِذَا صَلَّى
অর্থঃ “কোন বান্দা যখন সলাত আদায় করে তখন তাকে যে নিষেধ করে তাঁর সম্পর্কে
আপনার সিদ্ধান্ত কী?” (সূরা আ'লাকঃ ৯-১০)।
فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অর্থঃ "যারা আল্লাহর হুকুমের বিরোধিতা করে তাদের ভয় করা উচিত
যে, তাদেরকে কোন বিপদ গ্রাস করবে বা তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক আযাব নাযিল হবে"
(সূরা নূরঃ ৬৩)।
দ্বিতীয় হাদীসটি হতে বুঝা যাচ্ছে ইমাম খুৎবা শুরু করলে কথা বলা নিষেধ।
খুৎবা শুরু না করে মিম্বারে বসে থাকা অবস্থায় কথা বললে তা নিষেধ নয়। কারণ উমার (রাঃ)
এর যুগে তিনি যখন মিম্বারের উপর বসতেন তখনও লোকেরা মুয়াযযিন চুপ না হওয়া পর্যন্ত
কথা বলতে থাকতেন। যখন তিনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে যেতেন তখন দু' খুৎবা শেষ না হওয়া পর্যন্ত
আর কেউ কথা বলতেন না।
অতএব মিম্বারে উঠলেই কথা বলা নিষেধ এটি সঠিক নয়।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৪১। নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন পথভ্রষ্ট তওবাকারী মু’মিন বান্দাকে।
হাদীসটি জাল।
এটি আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ “যাওয়াইদুল মুসনাদ” গ্রন্থে (নং ৬০৫,৮১০)
এবং তার সূত্রে আবু নু’য়াইম "হিলইয়াহ" গ্রন্থে (৩/১৭৮-১৭৯) উল্লেখ করেছেন।
এ সূত্রে আবু আবদিল্লাহ মাসলামা আর-রায়ী রয়েছেন। তিনি আবু আমর আল-বাজালী
হতে আর তিনি আব্দুল মালেক ইবনু সুফিয়ান আস-সাকাফী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এ সনদটি জাল। কারণ আবু আবদিল্লাহ মাসলামা আর-রায়ীর জীবনী পাচ্ছি না।
হাফিয ইবনু হাজার তাকে তার “তা'জীলুল মানফায়াহ" গ্রন্থে উল্লেখ করেননি।
আবূ আমর আল-বাজালী সম্পর্কে যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে এবং ইবনু হাজার
“আত-তা'জীল” গ্রন্থে বলেনঃ বলা হয় তার নাম আবীদা, তার থেকে হারামী ইবনু হাফস হাদীস
বর্ণনা করেছেন। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তার মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করা হালাল নয়।
হাফিয ইবনু হাজার দৃঢ়তার সাথে “আল-কুনা” গ্রন্থে “লিসানুল মীযান”-এর
উদ্ধৃতিতে (৬/৪১৯) বলেছেনঃ তিনি হচ্ছেন আবীদা ইবনু আবদির রহমান। তাকে ইবনু হিব্বান
উল্লেখ করে বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনা করতেন।
আব্দুল মালেক ইবনু সুফিইয়ান আস-সাকাফী সম্পর্কে হুসাইনী বলেনঃ তিনি
মাজহুল। হাফিয ইবনু হাজার তার এ কথাকে “আত-তা'জীল” গ্রন্থে সমর্থন করেছেন।
এছাড়া হাদীসটি ওয়াকেদী সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তিনি একজন মিথ্যুক।
অতএব হাদীসটি বানোয়াট।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৪২। যে ব্যক্তি কোন শিশুকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা পর্যন্ত লালনপালন করবে;
আল্লাহ তার হিসাব কিতাব নিবেন না।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি খারায়েতী “মাকারিমূল আখলাক” গ্রন্থে (পৃঃ ৭৫), ইবনু আদী (২/১৬২)
এবং ইবনুন নাজ্জার “যায়লু তারীখে বাগদাদ” গ্রন্থে (১০/১৬৩/২) আবূ উমাইর আব্দুল কাবীর
ইবনু মুহাম্মাদ সূত্রে তার শাইখ সুলায়মান আশ-শাযকুনী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটির সনদ জাল। এ আব্দুল কাবীর ও তার শাইখ
শাযকনী তারা উভয়ে মিথ্যার দোষে দোষী। হাদীসটি ইবনুল জাওযী তার “আল-মাওযু’আত”
গ্রন্থে (২/১৭৮) বর্ণনাকারী আব্দুল কাবীর হতে ইবনু আদীর সূত্রে উল্লেখ করে বলেছেনঃ
হাদীসটি সহীহ্ নয়।
ইবনু আদী বলেনঃ সম্ভবত এটির বিপদ হচ্ছে আবূ উমাইরের নিকট হতে। তিনি
বলেনঃ এটিকে ইব্রাহীম ইবনু বারা শাযকুনী হতে বর্ণনা করেছেন। এ ইবরাহীম বাতিল হাদীস
বর্ণনা করতেন। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে এ ইবরাহীমের জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ
করেছেনঃ উকায়লী বলেনঃ يحدث عن الثقات بالبواطيل তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে বাতিল হাদীস বর্ণনাকারী। ইবনু হিব্বান
বলেনঃ يحدث عن الثقات بالموضوعات তিনি নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে
জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন তার সমালোচনা করা ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে তাকে উল্লেখ করাই
বৈধ নয়’।
এ হাদীসটি অন্য সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে; যেটি সুয়ূতী ইবনুল জাওযীর সমালোচনা
করে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/৯/৯১) উল্লেখ করেছেন। যাতে আশ'য়াস ইবনু মুহাম্মাদ আল-কালাঈ
নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন। তাকে শুধুমাত্র এ হাদীসের সনদেই চেনা যায়। এ জন্যেই যাহাবী
তাকে “আল-মীযান” গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেনঃ তিনি জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। যাহাবীর
এ কথাকে হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে সমর্থন করেছেন। এ হাদীসটি বাতিল
এ মর্মে হাফিযগণ (ইবনু হিব্বান, ইবনু আদী, যাহাবী, আসকালানী) ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৪৩। তোমরা তোমাদের খাদ্যকে আল্লাহর যিকর ও সালাত (নামায/নামাজ) দ্বারা পরিপূর্ণ
রাখ, তোমরা তার উপর নিদ্রা যেওনা; কারন তাহলে তোমাদের হৃদয়গুলো কঠিন হয়ে যাবে।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি ইবনু নাসর “কিয়ামুল লাইল” গ্রন্থে (পৃঃ ১৯-২০), উকায়লী “আয-যুয়াফা”
গ্রন্থে (পৃ. ৯৬), ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (২/৪০), আবু নু’য়াইম “আখবারু আসবাহান”
গ্রন্থে (১/৯৬), ইবনুস সুন্নী “আমালুল ইয়াওম ওয়াল লাইআহ” গ্রন্থে (পৃ. ১৫৬ নং ৪৮২)
ও বাইহাকী “শুয়াবুল ঈমান” গ্রন্থে (২/২১১/১) বাযী আবুল খালীল সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি জাল। উকায়লী বলেনঃ বাযী অনুসরণযোগ্য নয়। ইবনু
আদী তার কতিপয় হাদীস উল্লেখ করে বলেছেনঃ এ সব হাদীসগুলো মুনকার। কোন ব্যক্তিই তার
অনুসরণ করেননি।
বাইহাকী বলেনঃ এটি মুনকার, বাযী একক ভাবে এটি বর্ণনা করেছেন। তিনি দুর্বল।
যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি মিথ্যার দোষে দোষী বর্ণনাকারী। ইবনু হিব্বান
বলেনঃ তিনি নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে বানোয়াট কিছু (হাদীস) বর্ণনা করেছেন, যেন তিনি
তা ইচ্ছাকৃতই করেছেন।
“লিসানুল মীযান” গ্রন্থে এসেছে বুরকানী দারাকুতনীর উদ্ধৃতিতে বলেনঃ
তিনি (বাযী') মাতরূক। তার সব কিছুই বাতিল। হাকিম বলেনঃ তিনি জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন
এবং তিনি তা নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটিকে ইবনুল জাওযী তার “আল-মাওযূ"আত” গ্রন্থে (৩৬৯) এ সূত্রে
ইবনু আদীর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন। তিনি অন্য বর্ণনায় আসরাম ইবনু হাওশাব সূত্রে উল্লেখ
করেছেন। অতঃপর ইবনুল জাওযী বলেছেনঃ এটি জাল। বাযী মাতরূক এবং আসরাম মিথ্যুক।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৪৪। তিনি গান গাওয়া ও গান শ্রবণ করাকে নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি গীবত করা ও
গীবত শ্রবণ করাকে নিষিদ্ধ করেছেন এবং তিনি পরনিন্দা করা ও পরনিন্দা শ্রবণ করাকে নিষিদ্ধ
করেছেন।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
খাতীব বাগদাদী তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে (৮/২২৬), তাবারানী “মুজামুল কাবীর”
ও “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে এবং আবু নু’য়াইম (৪/৯৩) গেনা শব্দ ছাড়া ফুরাত ইবনু সাঈব
সূত্রে ... উল্লেখ করেছেন।
ফুরাত সম্পর্কে নাসাঈ ও দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মাতরূক। হায়সামীও বলেনঃ
তিনি মাতরূক। ইমাম বুখারী বলেনঃ منكر الحديث তিনি মুনকারুল হাদীস।” ইমাম আহমাদ বলেনঃ তিনি মুহাম্মাদ ইবনু তাহানের
ন্যায়। তাকে যে মিথ্যার দোষে দোষী করা হয়, তিনি সেই দোষে দোষী।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ মুহাম্মাদ ইবনু তাহান ইবনু যিয়াদ ইয়াশকুরীকে
ইমাম আহমাদ ও অন্যরা মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন, যেমনভাবে ১৬ ও ১৯ নং হাদীসে আলোচনা করা
হয়েছে।
পরনিন্দা এবং গীবাত হারাম মর্মে সহীহ হাদীস এসেছে। অতএব এ য’ঈফ হাদীসের
কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।
তবে গানের ক্ষেত্রে সব গানই হারাম নয়। যেগুলোতে হারাম স্থান, বস্তু
বা কথার উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোই হারাম। যেগুলোতে এসব কিছু নেই সেগুলো হারাম নয়।
তবে বাদ্যযন্ত্র; সেগুলোর সবই হারাম, এ মর্মে সহীহ্ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৪৫। পাগড়ী পরে একটি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা বিনা পাগড়িতে ২৫টি সালাত
(নামায/নামাজ) আদায়ের সমতুল্য। পাগড়ী সহ একটি জুম’আহ পাগড়ী ছাড়া ৭০টি জুম’আর সমতুল্য।
ফেরেশতাগণ পাগড়ী পরা অবস্থায় জুম’আতে উপস্থিত হন এবং পাগড়ীধারীদের প্রতি সূর্যাস্ত
পর্যন্ত অব্যাহতভাবে রহমত কামনা করতে থাকেন।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি ইবনুন নাজ্জার তার সনদে মহাম্মাদ ইবনু মাহদী আল-মারওয়াযী পর্যন্ত
... বর্ণনা করেছেন। ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে (৩/২৪৪) বলেছেনঃ এ হাদীসটি
জাল। এটির সনদে আব্বাস ইবনু কাসীর রয়েছেন। তার বিবরণ ইবনু ইউনুসের "আল-গুরাবা"
এবং তার “আয-যায়ল” নামক গ্রন্থে দেখছিনা। বর্ণনাকারী আবু বিশর ইবনু সায়য়ারকে আবু
আহমাদ হাকিম তার “আল-কুনা” গ্রন্থে উল্লেখ করেননি। এছাড়া আরেক বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ
ইবনু মাহদী আল-মারওয়াযীকে চিনি না। আর মাহদী ইবনু মায়মূনকে সালিম হতে বর্ণনাকারী
হিসাবে চিনি না, তিনি বাসরীও নন।
সুয়ূতী তার “যায়লুল আহাদীসিল মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃ. ১১০) হাদীসটি
উল্লেখ করে আসকালানীর কথাকে সমর্থন করেছেন। ইবনুল আররাকও (২/১৫৯) তার অনুসরণ করেছেন।
তা সত্ত্বেও সুয়ূতী তার “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
আলী আল-কারী হাদীসটি তার “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (পৃ. ৫১) মানুকী হতে
বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ هذا حديث باطل এ হাদীসটি বাতিল।’
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৪৬। পাগড়ী সহ দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় বিনা পাগড়ীতে সত্তর রাকা’য়াত
সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের চাইতেও উত্তম।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি সুয়ূতী “জমেউস সাগীর” গ্রন্থে দাইলামীর বর্ণনায় জাবের (রাঃ)
হতে উল্লেখ করেছেন। এ হাদীসটি তার “যায়লুল আহাদীসিল মাওযুআহ” গ্রন্থে উল্লেখ করা উচিত
ছিল। যেমনটি পূর্বে উল্লেখিত হাদীসের ক্ষেত্রে করেছেন। কারণ এটিতে পূর্বেরটির চেয়ে
বেশী ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। এর উপর জালের হুকুম লাগানোটা বেশী উপযোগী ছিল। এটির
সনদে তারেক ইবনু আব্দির রহমান নামক এক বর্ণনাকারী আছেন। তাকে যাহাবী দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত
করে বলেছেনঃ নাসাঈ বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন। বুখারী তাকে দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
হাকিম বলেন তিনি হেফযের ক্ষেত্রে ক্রটযুক্ত ছিলেন। এ কারণে সাখাবী বলেনঃ
এ হাদীসটি সাব্যস্ত হয়নি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তারেক ইবনু আব্দির রহমান দু'জন রয়েছেন। একজন হচ্ছেন
বাজালী কুফী। তিনি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব হতে বর্ণনা করেছেন। অপরজন হচ্ছেন কুরাশী
হিজাজী। তিনি 'আলা ইবনু আব্দির রহমান হতে বর্ণনা করেছেন। এ দ্বিতীয়জন সম্পর্কে জানা
যায় না। তার সম্পর্কে নাসাঈ বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন। এ হাদীসের সনদে এ দ্বিতীয়জনই
রয়েছেন।
ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বালকে নাসীবীর শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু নু’য়াইম সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তাকে বলা হয়েছিল তিনি সোহাইল হতে, আর সোহাইল তার পিতা হতে,
তার পিতা আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে, আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হতে বর্ণনা করেছেন। ‘পাগড়ী সহ সলাত আদায় করা বিনা পাগড়ীতে সত্তরবার সলাত আদায় করার
চেয়েও উত্তম? উত্তরে তিনি (আহমাদ ইবনু হাম্মাল) বলেনঃ তিনি মিথ্যুক, এটি বাতিল হাদীস।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৪৭। ব্যভিচার (যিনা) দারিদ্রতার অধিকারী করে।
হাদীসটি বাতিল।
এটিকে কাযাঈ “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে (৭/২) উল্লেখ করেছেন। দু'টি কারণে
এটির সনদ নিতান্তই দুর্বলঃ
১। বর্ণনাকারী লাইস ইবনু আবী সুলাইম দুর্বল।
২। অপর বর্ণনাকারী আল-মাযী ইবনু মুহাম্মাদ মাজহুল, মুনকারুল হাদীস।
যাহাবী বলেছেনঃ তার বহু মুনকার হাদীস রয়েছে এটি সেগুলোর একটি।
ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে (১/৪১০-৪১১) বলেছেনঃ আমার পিতা এ
হাদীসটি সম্পর্কে বলেনঃ এটি বাতিল হাদীস, মাযীকে আমি চিনি না। এছাড়াও অন্য এক সূত্রে
হাদীসটি বাইহাকীর “আশ-শু'য়াব” গ্রন্থে (৬/৪৩২) এবং দাইলামীর “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে
(২/৯৯/২) বর্ণিত হয়েছে। সেটিতে একাধিক মাজহুল বর্ণনাকারী রয়েছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৪৮। তোমরা ব্যাভিচার (যেনা) থেকে বেঁচে থাক, কারন তাতে ছয়টি খাসালাত রয়েছে;
যার তিনটি ঘটবে দুনিয়ায় আর তিনটি ঘটবে আখেরাতে। যেগুলো দুনিয়াতে ঘটবে সেগুলো হচ্ছে;
তা (যেনা) উজ্জলতা নিয়ে যায়, দারিদ্রতার অধিকারী বানায় এবং রিযক কমিয়ে দেয়। আর যেগুলো
আখেরাতে ঘটবে সেগুলো হচ্ছে; তা প্রভুর ক্রোধ, মন্দ হিসাব-কিতাব এবং স্থায়ী জাহান্নামী
বানিয়ে দেয়।
হাদীসটি জাল।
এটিকে ইবনু আদী (২০/২৩) ও আবু নু’য়াইম (৪/১১১) আমাশ হতে মাসলামা ইবনু
আলী সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। ইবনু আদী বলেনঃ হাদীসটি আমাশ হতে নিরাপদ নয়, এটি মুনকার।
আবু নু’য়াইম বলেনঃ মাসলামা আ'মাশ হতে এককভাবে এটি বর্ণনা করেছেন। তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে
দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ মাসলামা মাতরূক হবার বিষয়ে সকলে একমত। বরং হাকিম
বলেছেনঃ তিনি আওযাঈ এবং যুবায়দীর উদ্ধৃতিতে মুনকার ও জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। যাহাবী
তার বহু মুনকার হাদীস উল্লেখ করেছেন, এটি সেগুলোর একটি। তার অন্য একটি হাদীস সম্বন্ধে
আবু হাতিম বলেছেনঃ এটি বাতিল, জাল।
ইবনুল জাওযী আলোচ্য হাদীসটিকে তার “আল-মাওযু'আত” গ্রন্থে (৩/১০৭) উল্লেখ
করে বলেছেনঃ মাসলামা মাতরূক। তার মুতাবায়াতকারী আবান ইবনু নাহশাল হচ্ছেন নিতান্তই
মুনকারুল হাদীস। ইবনু হিব্বান বলেনঃ হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
হাদীসটি অন্য কোন সূত্রেও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর মাধ্যমে বর্ণিত হয়নি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৪৯। তোমরা বিবাহ কর তবে তালাক দিওনা; কারন তালাকের জন্য আরশ কেঁপে উঠে।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি খাতীব বাগদাদী “তারীখু বাগদাদ” গ্রন্থে (১২/১৯১) এবং তার সূত্রে
... ইবনুল জাওযী (২/২৭৭) উল্লেখ করেছেন।
এটির সনদে আমর ইবনু জামী' রয়েছেন। তিনি যুওয়াইবীর হতে বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর ইবনুল জাওযী বলেছেনঃ এ আমর প্রসিদ্ধ বর্ণনাকারীদের উদ্ধৃতিতে মুনকার হাদীস এবং
নিৰ্ভযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনা করতেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি একজন মিথ্যুক এবং যুওয়াইবীর নিতান্তই দুর্বল।
এ কারণই দর্শিয়ে ইবনুল জাওযী বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ্ নয়। হাদীসটি সাগানী "আল-মাওযুআত"
গ্রন্থে (পৃঃ ৭) উল্লেখ করেছেন। সুয়ূতী ইবনুল জাওযীর কথাকে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/১৭৯)
সমর্থন করেছেন। তা সত্ত্বেও তিনি "জামেউস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
কীভাবে এ হাদীসটি সহীহ্ হয় যেখানে সালাফদের একদল তাদের স্ত্রীদের তালাক
দিয়েছেন। এমনকি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও হাফসা বিনতু উমার (রাঃ)-কে
তালাক দিয়েছিলেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৫০। আমি আরবী ভাষী, কুরআন আরবী ভাষায় এবং জান্নাতীদের ভাষা আরবী। এ তিনটি
কারণে তোমরা আরবদের মুহাব্বাত কর।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি হাকিম “আল-মুসতাদরাক” গ্রন্থে (৪/৮৭) এবং “মারিফাতু উলুমিল
হাদীস” গ্রন্থে (পৃঃ ১৬১-১৬২), উকায়লী “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে (৩২৭), তাবারানী “মুজামুল
কাবীর” (৩/১২২/১) ও “আল-আওসাত” গ্রন্থে, তাম্মাম “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (১/২২) এবং
তার সূত্রে যিয়া আল-মাকদেসী "সিফাতুল জান্নাহ" গ্রন্থে (৩/৭৯/১), বাইহাকী
“শুয়াবুল ঈমান” গ্রন্থে, ওয়াহেদী তার "আত-তাফসীর" গ্রন্থে (১/৮১) এবং ইবনু
আসাকির ও আবূ বাকর আল-আম্বারী “ইযাহুল ওয়াকফ ওয়াল ইবতিদা” গ্রন্থে ‘আলী ইবনু আমর
হানাফী সূত্রে ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াযীদ আল-আশয়ারী হতে, তিনি ইবনু যুরায়েজ হতে ...
বর্ণনা করেছেন।
এটির সনদ তিনটি কারণে বানোয়াট।
১। 'আলা ইবনু আমর; যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে তার সম্পর্ক বলেনঃ তিনি
মাতরূক। ইবনু হিব্বান বলেনঃ কোন অবস্থাতেই তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা জায়েয নয়। অতঃপর
তার এ হাদীসটি উকায়লীর সূত্রে উল্লেখ করে বলেনঃ এটি বানোয়াট। আবু হাতিম বলেনঃ এটি
মিথ্যা। অতঃপর তার অন্য একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেনঃ এটিও মিথ্যা। হাফিয ইবনু হাজার
“লিসানুল মীযান” গ্রন্থে বলেন, আযদী বলেছেনঃ তার হাদীস লিখা যাবে না। ইবনু হিব্বান
তাকে “আস-সিকাত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। নাসাঈ বলেনঃ তিনি দুর্বল। আবু হাতিম বলেনঃ
তার নিকট হতে লিখেছি, ভাল ছাড়া তার মধ্যে অন্য কিছু দেখিনি। সম্ভবত ইবনু হিব্বান ও
আবু হাতিম কর্তৃক দু’ধরনের কথা এ কারণে এসেছে যে, তারা তার জাল হাদীস বর্ণনা করা সম্পর্কে
অবহিত হওয়ার পূর্বেই তার ব্যাপারে ভাল মন্তব্য করেছিলেন। অতঃপর তার সম্পর্কে জানার
পর খারাপ মন্তব্য করেছেন।
ইবনু আবী হাতিম উক্ত হাদীসটি “আল-ইলাল” গ্রন্থে (২/৩৭৫-৩৭৬) উল্লেখ
করে বলেছেনঃ আমি আমার পিতাকে যে হাদীসটি 'আলা হানাফী বর্ণনা করেছেন সেটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করেছিলাম, আমি তাকে উত্তরে বলতে শুনেছিঃ এ হাদীসটি মিথ্যা। হাফিয ইবনু হাজার “আল-লিসান”
গ্রন্থে তার জীবনীতে বলেনঃ উকায়লী হাদীসটির তাখরীজ করে বলেছেনঃ এটি মুনকার, মতনটি
(ভাষাটি) দুর্বল। এর কোন ভিত্তি নেই। অতঃপর তিনি (ইবনু হাজার) তার কথাকে সমর্থন করেছেন।
হায়সামী “আল-মাজমা" গ্রন্থে (১০/৫২) বলেনঃ 'আলা ইবনু আমর দুর্বল এ মর্মে সকলে
একমত।
২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াযীদ সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি দুর্বল। ইবনু
নুমায়ের বলেনঃ তিনি একটি খেজুরের সমতুল্যও নন। আবু যুরীয়াহ বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস।
ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে বলেছেনঃ তাকে সাজী, উকায়লী ও ইবনু জারুদ দুর্বলদের
অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। তার সমালোচনা করে যাহাবী
বলেনঃ তাকে ইমাম আহমাদও দুর্বল বলেছেন। অন্য সূত্রে তার স্থলে মুহাম্মাদ ইবনুল ফযল
এসেছে, তিনি মিথ্যার দোষে দোষী। আমার ধারণা হাদীসটি বানোয়াট। হাফিয ইরাকীও তার সমালোচনা
করে বলেনঃ তিনি যা বলেছেন তেমনটি নয়, বরং তিনি দুর্বল। কারণ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াযীদ
ও তার থেকে বর্ণনাকারী আলা ইবনু আম্বর তারা উভয়েই দুর্বল।
৩। ইবনু যুরায়েজ একজন মুদল্লিস বর্ণনাকারী। ইমাম আহমদ বলেনঃ এসব হাদীসগুলোর
কতিপয় হাদীসকে ইবনু যুরায়েজ মুরসাল হিসাবে উল্লেখ করতেন। সেগুলো বানোয়াট। তিনি কোথা
হতে গ্রহণ করছেন তার পরওয়া করতেন না। অনুরূপ কথা “আল-মীযান” গ্রন্থেও এসেছে। ইবনুল
জাওযী হাদীসটি "আল-মাওযুআত" গ্রন্থে (২/৪১) উকায়লীর সূত্রে উল্লেখ করে বলেছেনঃ
উকায়লী বলেছেনঃ এটি মুনকার, এর কোন ভিত্তি নেই। ইবনুল জাওযী বলেনঃ ইয়াহইয়া উলট পালটকৃত
হাদীস বর্ণনা করতেন। সুয়ূতী ইবনু হিব্বান সহ অন্য যারা হাদীসটি সম্পর্কে ভাল মন্তব্য
করেছেন তা “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/৪৪২) উল্লেখ করে হাদীসটি গ্রহণযোগ্য এদিকে ইঙ্গিত
করেছেন। কিন্তু লক্ষ্য করেননি যে, এক ব্যক্তি সম্পর্কে ভাল এবং খারাপ মন্তব্য উভয়টি
হলে খারাপ মন্তব্যটিই অগ্রাধিকার পায়।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৫১। এক ঘণ্টা গবেষণা করা ষাট বছরের ইবাদতের থেকেও অতি উত্তম।
হাদীসটি জাল।
আবুশ শাইখ এটিকে “আল-আযমাহ” গ্রন্থে (১/২৯৭/৪২) উল্লেখ করেছেন এবং তার
থেকে ইবনুল জাওযী “আল-মাওযু'আত” (৩/১৪৪) গ্রন্থে উসমান ইবনু আব্দিল্লাহ আল-কুরাশী সুত্রে
ইসহাক ইবনু নাজীহ আল-মালতী হতে ... বর্ণনা করে বলেছেনঃ উসমান ও তার শাইখ তারা উভয়েই
মিথ্যুক।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/২২৭) তার সমালোচনা করে বলেছেন যে, ইরাকী
“তাখরীজুল ইহইয়া” গ্রন্থে হাদীসটিকে শুধুমাত্র দুর্বল আখ্যা দিয়ে বলেছেন তার শাহেদ
রয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি (ইরাকী) দাইলামীর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন এবং
তিনি তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (২/৪৬) নিজ সনদে সাঈদ ইবনু মায়সারা হতে বর্ণনা করেছেন,
সাঈদ আনাস (রাঃ) হতে শুনেছেন, তাতে আনাস (রাঃ) বলেনঃ “রাত ও দিনের বিবর্তনের মাঝে এক
ঘন্টা গবেষণা করা হাজার বছর ইবাদাত করা হতেও উত্তম।"
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি মওকুফ এবং এটিও জাল। এ সাঈদ সম্পর্কে যাহাবী
বলেনঃ তার ব্যাপারটি অন্ধকারাচ্ছন্ন। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি জাল হাদীস বর্ণনাকারী।
তার সম্পর্কে হাকিম বলেনঃ তিনি আনাস (রাঃ) হতে জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাকে ইয়াহইয়া
আল-কাত্তান মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন।
অতএব এরূপ সনদের হাদীস শাহেদ হতে পারে না।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৫২। মসজিদ ছাড়া মসজিদের প্রতিবেশীর সালাত (নামায/নামাজ) হবে না।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি দারাকুতনী (পৃঃ ১৬১), হাকিম (১/২৪৬) ও বাইহাকী (৩/৫৭) সুলায়মান
ইবনু দাউদ আল-ইয়ামামী সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে এ সুলায়মান,
কারণ তিনি নিতান্তই দুর্বল। তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি কিছুই না। ইমাম বুখারী
বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। যাহাবী বলেন, ইমাম বুখারী বলেছেনঃ যার সম্পর্কে আমি মুনকারুল
হাদীস বলেছি তার হাদীস বর্ণনা করা হালাল নয়।
হাদীসটি সাগানী তার “আল-মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃঃ ৬) এবং ইবনুল জাওযী তার
“আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (২/৯৩) উল্লেখ করেছেন।
দারাকুতনী মুহাম্মাদ ইবনু সিক্কীন আশ-শাকারী সুত্রে হাদিসটি উল্লেখ
করেছেন। কিন্তু এ মুহাম্মাদের কারণে হাদীসটি দুর্বল। কেননা তার সম্পর্কে আবূ হাতিম
“আল-জারহু ওয়াত-তাদীল” গ্রন্থে (৩/২/২৮৩) বলেনঃ তিনি মাজহুল (অপরিচিত), তার হাদীসটি
মুনকার।
যাহাবী বলেনঃ তাকে চেনা যায় না, তার খবর হচ্ছে মুনকার।
দারাকুতনী তার হাদীসকে দুর্বল বলেছেন।
এছাড় হাদীসটি অন্যান্য সনদেও বর্ণিত হয়েছে কিন্তু কোনটিই দুৰ্বলতার
সমস্যা হতে মুক্ত নয়।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৫৩। যে আমার কবরের নিকট আমার প্রতি দুরুদ পাঠ করবে; আমি তা শ্রবণ করি এবং
যে ব্যাক্তি আমার প্রতি দুর হতে দুরুদ পাঠ করবে; একজন ফেরেশতাকে তা আমার নিকট পৌঁছে
দেয়ার জন্য দায়িত্ব দেয়া হবে এবং তা তার দুনিয়া ও আখেরাতের কর্মের জন্য যথেষ্ট হয়ে
যাবে এবং আমি তার জন্য সাক্ষী বা সুপারিশকারী হয়ে যাব।
হাদীসটি এভাবে জাল।
হাদীসটি ইবনু সাম'উন “আল-আমালী” গ্রন্থে (২/১৯৩/২), খাতীব বাগদাদী তার
“আত-তারীখ” গ্রন্থে (৩/২৯১-২৯২) এবং ইবনু আসাকির (১৬/৭০/২) মুহাম্মাদ ইবনু মারওয়ান
সূত্রে আ'মাশ হতে এবং তিনি আবু সালেহ্ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ মুহাম্মাদ ইবনু মারওয়ান সূত্রে ইবনুল জাওযী “আল-মাওযুআত”
গ্রন্থে (১/ ৩০৩) উকায়লীর বর্ণনা হতে হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি সহীহ্ নয়। মুহাম্মাদ
ইবনু মারওয়ান হচ্ছেন সুদ্দী আস-সাগীর; তিনি মিথ্যুক। উকায়লী বলেনঃ এ হাদীসটির কোন
ভিত্তি নেই। সুয়ূতী তার সমালোচনা করে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/২৮৩) বলেছেনঃ এটিকে বাইহাকী
এ সূত্রেই “শুয়াবুল ঈমান" গ্রন্থে বর্ণনা করে তার শাহেদগুলোও উল্লেখ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ সুয়ূতী যে শাহেদগুলো উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর কোন
কোনটি আবার সহীহ, যেমনঃ
إن لله ملائكة سياحين في الأرض يبلغوني عن أمتي السلام
“নিশ্চয় যমীনের মধ্যে আল্লাহর কিছু ভ্রমনকারী ফেরেশতা রয়েছেন যারা
আমার নিকট আমার উম্মাতের সালামগুলো পৌঁছে দেন।" এছাড়া আরেকটি হাদীস ২০১ নং হাদীসর
আলোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ হাদীসগুলো আলোচ্য হাদীসটির পূরো অংশের জন্য শাহেদ হতে
পারে না। তবে সালাম যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছে এ অর্থ যে
উক্ত হাদীস হতে বুঝা যায় শুধুমাত্র সেটুকুর শাহেদ হতে পারে। অবশিষ্ট অংশগুলেকে বানোয়াটই
বলতে হবে।
এছাড়া মুতাবায়াত হিসাবে যেসব বর্ণনাগুলো এসেছে সেগুলোর কোনটিই সহীহ
সনদে বর্ণিত হয়নি। ইবনু তাইমিয়্যা “মাজমুউ ফাতাওয়া” গ্রন্থে বলেছেন (২৭/২৪১) এ হাদীসটি
বানোয়াট, এটি মারওয়ান আমাশ হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি সকলের ঐক্যমতে মিথ্যুক।
মোটকথা, যে অংশটুকু প্রমাণ বহন করছে যে, সালাম দিলে তাঁর নিকট পৌঁছে
দেয়া হয়, এ অংশটুকু সহীহ, বাকী অংশগুলো সহীহ নয় বরং সেগুলো বানোয়াট।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৫৪। পূর্ব-পশ্চিমে যে কোন মুসলিম ব্যাক্তি আমার প্রতি সালাম প্রদান করবে,
আমি ও আমার প্রভুর ফেরেশতাগণ তার সালামের উত্তর প্রদান করব। অতঃপর এক ব্যাক্তি বললঃ
হে আল্লাহর রাসুল! মদিনাবাসীদের অবস্থা কি হবে? (উত্তরে) তাকে বললেনঃ পাড়া-প্রতিবেশীদের
প্রতি দয়ালু ব্যাক্তি সম্পর্কে কিইবা বলার আছে, যে পাড়া-প্রতিবেশীকে হেফাযাত করার জন্য
আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন?
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি আবু নু’য়াইম "আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে উল্লেখ (৬/৩৪৯)
করে বলেছেনঃ মালেকের হাদীস হতে এটি গারীব, আবূ মুসয়াব এটিকে এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আবু মুসয়াব-এর নাম হচ্ছে আহমাদ ইবনু আবী বাকর আল-কাসেম
ইবনে হারেস আয-যুহরী আল-মাদানী। তিনি ইমাম মালেক হতে "মুওয়াত্তা" গ্রন্থের
একজন বর্ণনাকারী। তিনি নির্ভরযোগ্য ফাকীহ। এ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে আবূ মুসয়াব হতে
বর্ণনাকারী ওবায়দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-উমারী; তিনি হচ্ছেন কাযী। "আল-মীযান"
গ্রন্থে যাহাবী তার সম্পর্কে বলেছেনঃ নাসাঈ তাকে মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার সূত্রেই হাদীসটি দারাকুতনী “গারায়েবে মালেক”
গ্রন্থে বর্ণনা করে বলেছেনঃ এটি সহীহ্ নয়। উমারী এককভাবে এটিকে বর্ণনা করেছেন, তিনি
ছিলেন দুর্বল। অনুরূপ কথা “লিসানুল মীযান” গ্রন্থেও এসেছে।
সাখাবী "আল০কাওলুল বাদী" গ্রন্থে (পৃঃ ১১৭) বলেছেনঃ হাদিসটির
সনদে ওবায়দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-উমারী রয়েছেন, তাকে যাহাবী এ হাদীসটি জাল করার
দোষে দোষী করেছেন।
ইবনু আবদিল হাদী "আস-সারেমুল মানকী" গ্রন্থে (পৃঃ ১৭৬) বলেছেনঃ
হাদীসটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর বানানো হয়েছে। এটির কোন ভিত্তি
নেই। জাল করার দোষে দোষী করা হয়েছে এ শাইখ আল-উমারী আল-মাদানীকে। তার বেইজ্জতীর জন্য
এ ধরনের সনদে এ একটি হাদীসই যথেষ্ট।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৫৫। যে ব্যক্তি নাবীগণকে গালি দিবে; (শাস্তি হিসাবে) তাকে হত্যা করা হবে।
যে ব্যাক্তি আমার সাহাবীদের গালি দিবে; তাকে বেত্রাঘাত করা হবে।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি তাবারানী “আল-মুজামুস সাগীর” (পৃঃ ১৩৭) এবং “আল-মুজামুল আওসাত”
(১/২৮১/৪৭৩৯) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এটিও পূর্বের হাদীসটির ন্যায় ওবায়দুল্লাহ ইবনু
মুহাম্মাদ আল-উমারী আলকাযী সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তার সম্পর্কে হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল
মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ উমারীকে মিথ্যা এবং জাল করার দোষে দোষী করা হয়েছে। হাফিয ইবনু
হাযার আরো বলেনঃ এ খবরটি তার মুনকারগুলোর একটি।
হাদীসটি হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (৬/২৬০) উল্লেখ করে
বলেছেনঃ এটিকে তাবারানী "আল-মুজামস সাগীর" এবং “আল-মু'জামুল আওসাত"
গ্রন্থে তার শাইখ ওবায়দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-উমারী আল-কাযী হতে বর্ণনা করেছেন।
যাকে নাসাঈ মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৫৬। একমাত্র বিদ’আতী ছাড়া আমার উম্মতের সবার জন্য আমার সুপারিশ অত্যাবশ্যকীয়
হয়ে যাবে।
হাদীসটি মুনকার।
ইবনু ওযযাহ আল-কুরতুবী “আল-বিদ'উ ওয়ান নাহীউ আনহা” গ্রন্থে (পৃঃ ৩৬)
আবু আবদিস সালাম সূত্রে বাকর ইবনু আবদিল্লাহ আল-মুযানী হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি মুরসাল। এ বাকর একজন তাবেঈ। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পাননি। মুরসাল হওয়া সত্ত্বেও এটির সনদ দুর্বল। কারণ এ আবূ আবদিস
সালাম-এর নাম হচ্ছে সালেহ্ ইবনু রুস্তম আল-হাশেমী, তিনি মাজহুল; যেমনভাবে হাফিয ইবনু
হাজার "আত-তাকরীব" গ্রন্থে বলেছেন।
এছাড়াও এ দুর্বল মুরসাল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা
বিরোধী। কারণ তিনি বলেছেনঃ شفاعتي لأهل الكبائر من أمتي আমার শাফা'য়াত আমার
উম্মাতের কাবীরা গুনাহকারীদের জন্য। এ হাদীসটি সহীহ। দেখুনঃ "মিশকাত" (৫৫৯৮)।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
৫৭। যে আমার প্রতি দুরুদ পাঠ করবে না, তার কোন ধর্ম নেই।
হাদীসটি দুর্বল।
ইবনুল কাইয়্যিম বলেনঃ এটি মুহাম্মাদ ইবনু হামাদান আল-মারওয়াযী বর্ণনা
করেছেন।
এটির দুটি সমস্যাঃ
১। সনদের বর্ণনাকারী ইউসূফ ইবনু আসবাত সম্পর্কে আবু হাতিম বলেনঃ তিনি
একজন আবেদ ছিলেন। তার গ্রন্থগুলো দাফন করে দিয়েছিলেন। তিনি বহু ভুল করতেন। তিনি সৎ
ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তার হাদীসকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যায় না।
২। যার হতে বর্ণনাকারী ব্যক্তি ইনি এমন এক ব্যক্তি যার নাম উল্লেখ করা
হয়নি। হাফিয সাখাবী "আল-কাওলুল বাদী" গ্রন্থে (পৃঃ ১১৪) এ কারণই উল্লেখ
করেছেন। এটি হচ্ছে তার ক্রটি।
অতঃপর এ হাদিসটিকে দেখেছি তাবারানী "মু'জামুল কাবীর" গ্রন্থে
(নং ৮৯৪১, ৮৯৪২) দু'টি সূত্রে আসেম হতে, তিনি যার হতে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ
(রাঃ) থেকে উল্লেখ করেছেন। এটির সনদ হাসান, কিন্তু এটি মওকুফ। এরূপই সঠিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
৫৮। যে ব্যক্তি জুম’আর দিবসে আমার প্রতি আশিবার দুরুদ পাঠ করবে; আল্লাহ
তার আশি বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। কেও তাঁকে বললঃ আপনার প্রতি কীভাবে দুরুদ পাঠ
করবো হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেনঃ বলবে, হে আল্লাহ! তুমি দয়া কর তোমার বান্দা, তোমার
নাবী, তোমার রাসুল উম্মী নাবীর প্রতি এবং একবার গিরা দিবে।
হাদীসটি জাল।
এটি খাতীব বাগদাদী (১৩/৪৮৯) ওয়াহাব ইবনু দাউদ ইবনে সুলায়মান আয-যারীরের
সুত্রে ... বর্ণনা করে বর্ণনাকারী যারীরের জীবনীতে বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য ছিলেন
না।
সাখাবী "আল-কাওলুল বাদী" গ্রন্থে (পৃঃ ১৪৫) বলেছেনঃ ইবনুল
জাওযী হাদীসটিকে “আল-আহাদীসুল ওয়াহিয়া” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন (নং ৭৯৬)।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি তার “আহাদিসুল মাওযু'আত” গ্রন্থেও উল্লেখ করেছেন।
এটিই উত্তম এবং উপযোগী। কারণ এটির জাল হওয়াটাই স্পষ্ট। সহীহ হাদীসে দুরূদ পাঠের যে
সব ফযীলত এসেছে, এরূপ জাল হাদীস হতে নিরাপদে থাকার জন্য তাই যথেষ্ট। যেমন মুসলিম শরীফ
সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে সহীহ হাদীসে এসেছেঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার উপর দশবার
রহমত নাযিল করবেন।” সহীহ আবূ দাউদ" নং (১৩৬৯)।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৫৯। তোমরা আকিক পাথরের আংটি ব্যাবহার কর, কারণ সেটি বরকতপূর্ণ।
হাদীসটি জাল।
এটি মাহামেলী “আল-আমালী” গ্রন্থে (২/৪১ নং), খাতীব বাগদাদী তার “আত-তারীখ”
গ্রন্থে (১১/২৫১), উকায়লী “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে (৪৬৬) ইয়াকুব ইবনু ওয়ালীদ আল-মাদানী
সূত্রে বর্ণনা করেছেন এবং ইবনু আদী (১/৩৫৬) ইয়াকুব ইবনুল জাওযী উকায়লীর সূত্রে “আল-মাওযুআত”
গ্রন্থে (১/৪২৩) উল্লেখ করে বলেছেনঃ ইয়াকুব মিথ্যুক, জলকারী। উকায়লী বলেনঃ এ বিষয়ে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কিছুই সাব্যস্ত হয়নি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ যাহাবী ইয়াকুব-এর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ
ইমাম আহমাদ বলেছেনঃ তিনি ছিলেন বড় বড় মিথ্যুকদের একজন। তিনি হাদীস জাল করতেন। অতঃপর
তার এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
ইবনু আদী বলেনঃ এ ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম পরিচিত নন। তার থেকে ইয়াকুব
ইবনুল ওয়ালীদ চুরি করতেন।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/২৭২) তার অভ্যাসগতভাবে ইবনুল জাওযীর
সমালোচনা করে বলেছেনঃ এটির অন্য সূত্রও রয়েছে, যেটি আল-খাতীব এবং ইবনু আসাকির বর্ণনা
করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি অন্ধকারাচ্ছন্ন। কারণ এ সূত্রে বর্ণনাকারী
খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়ার নীচে যে তিনজন বর্ণনাকারী আছেন, তাদের কাউকেই চেনা যায় না।
তারা হচ্ছেন শুয়ায়েব ইবনু মুহাম্মাদ, আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু ওয়াসীফ আল-কামী
এবং মুহাম্মাদ ইবনু সাহাল।
হাদীসটি বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু সবগুলোই
বাতিল। যেমনভাবে সাখাবী “আল-মাকাসিদ” গ্রন্থে বলেছেন। অধিকাংশ সূত্র মিথ্যার দোষে দোষী
ব্যক্তি হতে মুক্ত নয়। তাছাড়া ভাষাগতভাবে চরম পর্যায়ের ইযতিরাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৬০। তোমরা আকিক পাথরের আংটি ব্যাবহার কর, কারণ সেটি দারিদ্রকে দূরীভূত করে।
হাদীসটি জাল।
এটিকে ইবনুল জাওযী “আল-মাওযু"আত” গ্রন্থে (৩/৫৮) ইবনু আদীর বর্ণনায়
উল্লেখ করেছেন এবং তার থেকে দাইলামী (২/৩১) হুসাইন ইবনু ইব্রাহীম আল-বাবী হতে ... বর্ণনা
করেছেন।
ইবনুল জাওযী বলেন, ইবনু আদী বলেছেনঃ এটি বাতিল, হুসইন মাজহুল।
যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ হাদীসটি জাল। তার এ মতকে হাফিয ইবনু
হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে সমর্থন করেছেন। অনুরূপভাবে সুয়ূতীও “আল-লাআলী” গ্রন্থে
(২/২৭৩) ইবনুল জাওযীর জাল বলাকে সমর্থন করেছেন। সুয়ূতী হাদীসটি জাল হিসাবে স্বীকার
করার পরেও “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে ইবনু আদীর বর্ণনা হতে উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৬১। সাবধান! অবশ্যই চল্লিশ ঘর পর্যন্ত প্রতিবেশী। সেই ব্যাক্তি জান্নাতে
প্রবেশ করবে না যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ঠতাকে ভয় করে। চল্লিশ ঘর বলতে কী বুঝানো হচ্ছে
এ মর্মে যুহরীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল? তিনি বললেনঃ চল্লিশ এ দিকে আর চল্লিশ ঐ দিকে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি তাবরানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (১৯/৭৩/নং ১৪৩) ইউসুফ ইবনু সাফার
হতে এবং তিনি আওযাঈ হতে ... বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী ইউসুফ ইবনু সাফার আবুল ফায়েয
সম্পর্কে সমালোচনা রয়েছে। অনুরূপ কথা যায়লাঈও (৪/৪১৩-৪১৪) বলেছেন। তাদের পক্ষ হতে
এ ইবনু সাফার সম্পর্কে নিতান্তই নরম কথা বলা হয়েছে। কারণ এরূপ কথা বলা হয় যার ব্যাপারে
ভাল না মন্দ এ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে তার ক্ষেত্রে। অথচ এ ইবনু সাফার মাতরূক হওয়ার
ব্যাপারে সবাই একমত, বরং তাকে দারাকুতনী মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন এবং বাইহাকী তার সম্পর্কে
বলেছেনঃ তিনি হাদীস জালকারীদের অন্তর্ভুক্ত। তার জাল হাদীস পূর্বে আলোচিত হয়েছে (১৮৭
নং)।
এ জন্য হায়সামী “আল-মাজমা" গ্রন্থে ( ৮/১৬৯) বলেছেনঃ ইউসুফ ইবনুস
সাফার মাতরক।
আমি (আলবানী) বলছি হাকাল ইবনু যিয়াদ আওযাই হতে মুরসাল হিসাবে হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন। সেটি আবু দাউদ তার "আল-মারাসীল" গ্রন্থে (নং ৩৫০) বর্ণনা
করেছেন।
এটির সনদের বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। যদি মুরসাল না হত তাহলে সহীহ
বলে হুকুম লাগাতাম। হাফিয় ইরাকী “তাখরীজুল ইহইয়া” গ্রন্থে (২/১৮৯) বলেছেনঃ হাদীসটি
দুর্বল। অনুরূপ কথা হাফিয ইবনু হাজার “ফাতহুল বারী” গ্রন্থেও (১০/৩৯৭) বলেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির অংশ বিশেষ ولا يدخل الجنة من خاف সহীহ। কারণ আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসের মধ্যে এসেছে এ ভাষায়ঃ
لا يدخل الجنة من لا يأمن جاره بوائقه
এটি মুসলিম (১/৪৯) এবং বুখারী “আদাবুল মুফরাদ” গ্রন্থে (পৃঃ ২০) বর্ণনা
করেছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৬২। যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল-ওয়াকে’য়াহ পাঠ করবে, তাঁকে কখনও অভাব
(ক্ষুধা) গ্রাস করবে না।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি হারিস ইবনু আবী উসামা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (১৭৮), ইবনুস সুন্নী
"আমালুল ইয়াউম ওয়াল লাইলাহ" গ্রন্থে (নং ৬৭৪), ইবনু লাল তার “হাদীস"
গ্রন্থে (১/১১৬), ইবনু বিশরান “আল-আমালী” গ্রন্থে (২০/৩৮/১) এবং বাইহাকী "আশ-শু'য়াব"
গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তারা সকলেই আবু শুযা সূত্রে আবু তায়বাহ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এটির সনদ দুর্বল। যাহাবী বলেনঃ আবু শুযাকে চেনা যায় না এবং আবু তায়বাহ মাজহুল।
এছাড়া হাদীসটির সনদে তিন দিক থেকে ইযতিরাব সংঘটিত হয়েছে। হাফিয ইবনু
হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে এ আবূ শুযার জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে তার বিবরণ দিয়েছেন।
যায়লাঈ উল্লেখ করেছেন হাদীসটি কয়েকটি দিক থেকে দোষণীয়ঃ
১। এটির সনদে রয়েছে বিচ্ছিন্নতা, যেমনভাবে দারাকুতনীসহ অন্যরা তার
বিবরণ দিয়েছেন।
২। হাদীসটির মতনে (ভাষায়) রয়েছে দুর্বোধ্যতা, যেমনভাবে ইমাম আহমাদ
উল্লেখ করেছেন।
৩। হাদীসটির বর্ণনাকারীগণ দুর্বল, যেরূপ ইবনুল জাওযী বলেছেন।
৪। এছাড়া ইযতিরাব রয়েছে।
এটি দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে ইমাম আহমাদ, আবু হাতিম, ইবনু আবী হাতিম,
দারাকুতনী, বাইহাকী এবং অন্যরাও একমত হয়েছেন। মানাবী “আত-তায়সীর” গ্রন্থে বলেনঃ হাদীসটি
মুনকার।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৬৩। যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল-ওয়াকে’আহ পাঠ করবে; তাঁকে কখনও অভাব
(ক্ষুধা) গ্রাস করবে না। যে ব্যাক্তি প্রতি রাতে লা-উকসেমু বে-ইওয়াওমিল কিয়ামাহ পাঠ
করবে; সে কিয়ামত দিবসে আল্লাহর দিবসে আল্লাহর সাথে এমতাবস্থায় মিলিত হবে যে, তার চেহারা
পূর্ণিমার রাতের ন্যায় উজ্জ্বল থাকবে।
হাদীসটি জাল।
এটি দাইলামী আহমাদ ইবনু উমার ইয়ামানী সূত্রে নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি সুয়ূতী "যায়লুল আহাদীসিল মাওযুআহ” গ্রন্থে (১৭৭) উল্লেখ করে বলেছেনঃ
আহমাদ ইয়ামামী মিথ্যুক।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৬৪। যে ব্যক্তি কুল-হু আল্লাহু আহাদ সূরা দু’শত বার পাঠ করবে, তার দু’শত
বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়ে।
হাদীসটি মুনকার।
এটি ইবনু যুরায়েস "ফাযায়েলুল কুরআন" গ্রন্থে (৩/১১৩/১),
খাতীব বাগদাদী (৬/১৮৭), ইবনু বিশরান (১২/৬২) ও বাইহাকী “আশ-শু'য়াব” গ্রন্থে (১/২/৩৫/১-২)
হাসান ইবনু আবী জাফার আল-জাফারী সূত্রে সাবেত আল-বুনানী হতে ... বর্ণনা করেছেন। এটির
সনদ নিতান্তই দুর্বল।
হাসান ইবনু জাফার সম্পর্কে যাহাবী বলেনঃ তাকে ইমাম আহমাদ ও নাসাঈ দুর্বল
আখ্যা দিয়েছেন। বুখারী এবং ফাল্লাস তাকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ কিন্তু তিনি এককভাবে এটি বর্ণনা করেননি। সুয়ূতী
“আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/২৩৯) বলেছেনঃ বাযযার সাবেত হতে আগলাব ইবনু তামীম সূত্রে বর্ণনা
করেছেন। মুখস্থ বিদ্যায় ক্রটির দিক দিয়ে তিনি হাসানের ন্যায়। ইবনু যুরায়েস ও বাইহাকী
সাবেত হতে সালেহ্ আল-মিরর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সালেহ্ হচ্ছেন ইবনু বাশীর আয-যাহেদ। তার সম্পর্কে
ইমাম বুখারী ও ফাল্লাস বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। মোটকথা হাদীসটি তিনটি সূত্রেই অত্যন্ত
দুর্বল। একটি দ্বারা অন্যটির দুর্বলতাকে দূর করার মত নয়। অর্থটিও আমার নিকট মুনকার,
কারণ ফীলতের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
৬৫। নিশ্চয় আল্লাহ কোন মুসলিমকে জুম’আর দিবসে ক্ষমা না করে ছাড়েন না।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মু'জামুল আওসাত” গ্রন্থে (৪৮-৪৯) ইবনুল আরাবী তার “আল-মু'জাম"
গ্রন্থে (১৪৭) এবং ইবনু বিশরান “আল-আমালী” গ্রন্থে (২৪/২৯০) মুফাযযাল ইবনু ফুযালা হতে
বর্ণনা করেছেন, তিনি আবূ উরওয়া বাসরী হতে হতে, তিনি যিয়াদ আবূ আম্মার হতে বর্ণনা করেছেন।
ইবনুল আরাবী বলেছেনঃ যিয়াদ ইবনু মায়মূন হতে ...।
যিয়াদ আন-নুমায়রী হচ্ছেন ইবনু আবদিল্লাহ বাসরী। তার কুনিয়াত আবূ
আম্মার হিসাবে পাচ্ছি না। যিয়াদ ইবনু মায়মূনের কুনিয়াত আবু আম্মার হিসাচ্ছে মিলছে।
ইবনুল আরাবী স্পষ্টভাবেই বলেছেনঃ এ ব্যক্তি যিয়াদ ইবনু মায়মূন। তিনি স্বস্বীকৃত হাদীস
জালকারী। যাহাবী বলেনঃ যিয়াদ ইবনু মায়মূন আস-সাকাফীকেই বলা হয় যিয়াদ আবূ আম্মার
বাসরী এবং যিয়াদ ইবনু আবী হাস্সান। যার সম্পর্কে ইয়াযীদ ইবনু হারূন বলেনঃ তিনি ছিলেন
মিথ্যুক। অতঃপর তার কতিপয় মুনকার হাদীস উল্লেখ করেছেন। এটি সেগুলোর একটি। এছাড়া আবূ
উরওয়া বাসরী হচ্ছেন মামার অর্থাৎ ইবনু রাশেদ। তিনি আব্দুর রাযযাকের শাইখ। যদিও তার
কুনিয়াত আবু উরওয়া তবুও আমি পাচ্ছি না যে, সেই এ সনদে।
হাফিয যাহাবী এবং ইবনু হাজার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, সে এ সনদে নেই। তারা
“আল-মীযান” ও “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ আবু উরওয়া যিয়াদ ইবনু ফুলান হতে মাজহুল
বর্ণনাকারী, তার শাইখও অনুরূপ।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ যিয়াদ হচ্ছেন মিথ্যুক যিয়াদ ইবনু মায়মূন। তার
সম্পর্কে পূর্বের হাদীসে আলোচনা হয়েছে। ওয়াহেদী কর্তৃক তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থের
(৪/১৪৫/১) বর্ণনাতেও যিয়াদ ইবনু মায়মূনকেই সনদে উল্লেখ করা হয়েছে। ইবনু আসাকিরের
বর্ণনাতে যিয়াদ আল-ওয়াসেতীর কথা বলা হয়েছে। সেও এ যিয়াদ ইবনু মায়মূন। অতএব হাদীসটির
কোন সনদই এ স্বস্বীকৃত জলকারী হতে মুক্ত নয়।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৬৬। মু’মিনের গুপ্তাঙ্গের দিকে দৃষ্টি দানকারী এবং যার দিকে দৃষ্টি দেয়া
হয়েছে তার উপরেও আল্লাহর অভিশাপ।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (২/১৫) ইসহাক ইবনু নাজীহ হতে এবং তিনি
আব্বাদ ইবনু রাশেদ মুনকেরী হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর ইবনু আদী বলেছেনঃ এটি স্পষ্ট
যে, ইসহাক ইবনু নাজীহ দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি আরো বলেছেনঃ যারা হাদীস জাল করতেন
তিনি তাদেরও অন্তর্ভুক্ত। ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি মিথ্যুক এবং হাদীস জালকারী হিসাবে পরিচিতি
লাভকারীদের একজন। ইবনু আদী বলেনঃ এ হাদীসটি আব্বাদ ইবনু রাশেদের মাধ্যমে হাসান হতে
একটি বানোয়াট হাদীস।
সুয়ূতী এটিকে যাহাবীর “আল-মীযান” গ্রন্থের অনুকরণ করে “যায়লুল আহাদীসিল
মাওযুআহ" (পৃঃ ১৪৯) গ্রন্থে এ ইসহাকের বাতিল হাদীস হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এ হাদীসটির
অগ্রহণযোগ্যতার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণীই যথেষ্টঃ তুমি
তোমার গুপ্তাঙ্গকে হেফাযাত কর। তবে তোমার স্ত্রী হতে নয়...। এটির সনদটি হাসান। আমি
“আদাবুয যুফাফ ফিস সুন্নাহ আল-মুতাহহারা” গ্রন্থে এটির (পৃঃ ৩৪-৩৫) তাখরীজ করেছি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৬৭। দাঊদ (আঃ) যখন এক মহিলার দিকে দৃষ্টি দিলেন এবং তাঁকে কামনা করলেন,
তখন বানু ইসরাইলের নিকট একদল সৈন্য প্রেরণ করলেন এবং সৈন্য দলের প্রধানের নিকট নির্দেশ
দিয়ে বললেনঃ যখন শত্রুরা উপস্থিত হবে; তখন তুমি উমুক ব্যাক্তিকে নিকটবর্তী করে দাও।
তিনি তার নামও উল্লেখ করে বললেনঃ তাঁকে তাবূতের সম্মুখে উপস্থিত করে দাও। তিনি বললেনঃ
তাবূত ছিল সেই যুগে এমন এক ব্যাক্তি যার মাধ্যমে সাহায্য নেয়া হতো। যাকেই তাবূতের সম্মুখে
উপস্থিত করা হত, সেই নিহত অথবা তার সম্মুখে যে সৈন্য বাহিনী যুদ্ধ করত তাঁরা পরাজিত
হওয়া ছাড়া ফিরে আসত না। মহিলার স্বামী নিহত হল। দু’ ফেরেশতা দাঊদ (আঃ) এর নিকট অবতরণ
করলেন, অতঃপর তাঁরা তাঁকে ঘটনাটি শোনালেন।
হাদীসটি বাতিল।
এটি হাকীম আত-তিরমিযী "নাওয়াদিরুল উসূল" গ্রন্থে ইয়াযীদ
আর-রুকাশী হতে বর্ণনা করেছেন, যেমনভাবে “তাফসীরু কুরতুবী” গ্রন্থে (১৫/১৬৭) বর্ণিত
হয়েছে। ইবনু কাসীর তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থে (৪/৩১) বলেনঃ হাদীসটি ইবনু আবী হাতিম বর্ণনা
করেছেন। এটির সনদ সহীহ নয়, কারণ এটি ইয়াযীদ আর-রুকাশীর বর্ণনায় এসেছে। ইয়াযীদ যদিও
সালেহীনদের অন্তর্ভুক্ত, তবুও তিনি ইমামগণের নিকট হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ বাহ্যিকতা প্রমাণ করছে যে, এটি ইসরাইলী বর্ণনা হতে
এসেছে। সেই আহলে কিতাবরা বর্ণনা করেছে যারা নাৰীগণ নিষ্পাপ এ বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়।
ইয়াযীদ এখানে ভুল করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত মারফূ' হিসাবে উল্লেখ
করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৬৮। সাত ব্যক্তির দিকে আল্লাহ তা’য়ালা কিয়ামত দিবসে তাকাবেন না। তাঁদেরকে
পবিত্রও করবেন না। তাঁদেরকে বলেবেনঃ তোমরা জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে জাহান্নামে
প্রবেশ করঃ সমকামী, যাকে করা হল, নিজ হাতকে বিবাহকারী, পশুকে বিবাহকারী, মহিলার পিছন
পথকে বিবাহকারী, মহিলা ও তার মেয়েকে বিবাহকারী, নিজ প্রতিবেশীর সাথে ব্যভিচারকারী এবং
প্রতিবেশীকে কষ্টদানকারী এমন ভাবে যে, সে এ কারণে তাঁকে অভিশাপ দিচ্ছে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইবনু বিশরান (৮৬/১-২) আব্দুল্লাহ ইবনু লাহী'য়াহ সূত্রে আব্দুর
রহমান ইবনু যিয়াদ হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ দুর্বল ইবনু লাহী'য়াহ ও তার শাইখ ইফরিকীর
কারণে। তারা দু’জনই মুখস্থ বিদ্যার দিক থেকে দুর্বল। মুনযেরী “আত-তারগীব” গ্রন্থে
(৩/১৯৫) হাদীসটির অংশ বিশেষ উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি ইবনু আবিদ-দুনিয়া, খারায়েতী ও
অন্যরা বর্ণনা করেছেন। অতঃপর এটি যে দুর্বল সেদিকে ইঙ্গিত করেছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৬৯। তোমরা যেরূপ, সেরূপ ব্যাক্তিকেই তোমাদের নেতা নিয়োগ করা হবে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি দাইলামী ইয়াহইয়া ইবনু হাশেম সূত্রে ইউনুস ইবনু আবী ইসহাক হতে
... মারফু' হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
বাইহাকী একই সনদে মুরসাল হিসাবে “আশ-শু'য়াব” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
এ ইয়াহইয়াকে সেই দলের মধ্যে গণ্য করা হয় যারা হাদীস জাল করতেন। কিন্তু হাদীসটির
অন্য সূত্র ইবনু জামী'র "আল-মুজাম" গ্রন্থে (পৃঃ ১৪৯) এবং কাযাঈর “মুসনাদ”
গ্রন্থে (১/৪৭) আহমাদ ইবনু উসমান কিরমানী হতে, তিনি মুবারাক ইবনু ফুযালা হতে ... বর্ণনা
করেছেন।
ইবনু তাহের বলেনঃ মুবারাকের ব্যাপারে যদিও কিছুটা দুর্বলতার কথা উল্লেখ
করা হয়েছে তবুও দোষটা তার থেকে বর্ণনাকারীর। কারণ তিনি (আহমাদ ইবনু
উসমান) হচ্ছেন মাজহুল অপরিচিত।
ইবনু হাজার “তাখরীজুল কাশশাফ” গ্রন্থে (৪/২৫) বলেনঃ মুবারাক পর্যন্ত
হাদীসটির সকল বর্ণনাকারী মাজহুল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৭০। যে ব্যক্তির কোন সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে, অতঃপর তার ডান কানে আযান এবং বাম
কানে ইকামত দেয়া হবে, বাচ্চাঁদের মা (শয়তান) তার কোন অনিষ্ঠ করতে পারবে না।
হাদীসটি জাল।
এটি আবূ ইয়ালা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (৪/১৬০২) এবং তার থেকে ইবনুস সুন্নী
"আমালুল ইওয়াম ওয়াল-লায়লাহ" গ্রন্থে (২০০/৬১৭) বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে
ইবনু আসাকির (১৬/১৮২/২) আবূ ইয়ালার সূত্র হতে, ইবনু বিশরান “আল-আমালী” গ্রন্থে (১/৮৮)
এবং আবু তাহের কুরাশী “হাদীস ইবনু মারওয়ান আনসারী ওয়া গায়রেহি” গ্রন্থে (১/২) ইয়াহইয়া
ইবনুল আল আর-রায়ী সূত্রে মারওয়ান ইবনু সুলায়মান হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ বানোয়াট। ইয়াহইয়া ইবনুল আলা এবং মারওয়ান
ইবনু সুলায়মান, তারা উভয়েই হাদীস জালকারী। ইবনুল কাইয়্যিম "তুহফাতুল মওদূদ"
গ্রন্থে (পৃ৯) বলেছেনঃ সনদটি দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি নরম পন্থা অবলম্বন করেছেন। অনুরূপভাবে হায়সামী
তার "আল-মাজমা" গ্রন্থে (৪/৫৯) মারওয়ান ইবনু সুলায়মানকে শুধুমাত্র মাতরুক
(অগ্রহণযোগ্য) বলেছেন। এ কারণে মানাবী তার সমালোচনা করে “শারহু জামেউস সাগীর” গ্রন্থে
বলেছেনঃ ইয়াহইয়া ইবনুল আলা বাজালী সম্পর্কে যাহাবী "আয-যু'য়াফা ওয়াল মাতরূকীন"
গ্রন্থে বলেন, ইমাম আহমাদ বলেছেনঃ তিনি মিথ্যুক, জালকারী। তিনি “আল-মীযান” গ্রন্থে
বলেছেন, ইমাম আহমাদ বলেনঃ তিনি মিথ্যুক, হাদীস জাল করতেন। অতঃপর তিনি তাঁর কতিপয় হাদীস
উল্লেখ করেছেন, এটি সেগুলোর একটি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি যে বানোয়াট তা অনেক লেখকের নিকটেই অপ্রকাশিত
রয়ে গেছে, যেমন ইমাম নাবাবীর নিকট।
এছাড়া ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ এবং ইবনুল কাইয়্যিম-এর নিকটেও আসল তথ্যটি
লুক্কায়িতই রয়ে গেছে, যদিও তারা উভয়েই হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আবু রাফে' হতে তিরমিযী দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন।
আবু রাফে' বলেনঃ যখন ফাতেমা (রাঃ) হাসান ইবনু আলীকে জন্ম দিলেন, তখন আমি রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাসানের কানে সলাতের ন্যায় আযান দিতে দেখেছি।
মুবারাকপুরী এ হাদীসটি দুর্বল বলার পরেও এটির উপর আমল করা যাবে একথা
বলেছেন, উল্লেখিত জাল হাদীসকে (যেটিকে আবু ইয়া'লা বর্ণনা করেছেন) আবু রাফের হাদীসের
শাহেদ হিসাবে বর্ণনা করে। চিন্তা করে দেখুন কিভাবে দুর্বল হাদীসকে জাল হাদীস দ্বারা
শক্তিশালী করেছেন।
জি হ্যাঁ; আবু রাফের হাদীসকে শক্তিশালী করা যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর
হাদীস দ্বারা। যেটিকে বাইহাকী “আশ-শু'য়াব” গ্রন্থে উল্লেখিত আবু রাফের হাদীসের সাথে
বর্ণনা করেছেন, অতঃপর বলেছেনঃ হাদীস দুটির সনদ দুর্বল।
যদি এরূপ হয়, তাহলে আবু রাফের হাদীসে যে শুধু আযান দেয়ার কথা আছে
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসের আযানের অংশটুকুই শুধুমাত্র তার (আবু রাফের) হাদীসের শাহেদ
হতে পারে। ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসে যে ইকামাতের কথা বলা হয়েছে সেটা গ্রহণযাগ্য
হবে না।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ হাসান পর্যায়ের হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে,
ফাতেমা (রাঃ) যখন হাসান ইবনু আলীকে জন্ম দেন তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম
তার কানে সলাতের ন্যায় আযান দিয়েছিলেন। হাদীসটি আবু দাউদ-“সহীহ্ আবী দাউদ"
(৫১০৫), ও তিরমিযী-"সহীহ্ তিরমিযী"- (১৫১৪) বর্ণনা করেছেন, হাদীসে দু’কানে
দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি, অতএব এক কানে আযাস দিলে তাই যথেষ্ট হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৭১। যখনই আল্লাহ জানতে পারেন যে, কোন বান্দা তার গুনাহের কারণে অনুতপ্ত
হয়েছে, তখনই সে ক্ষমা প্রার্থনা করার পূর্বেই তিনি ক্ষমা করে দেন।
হাদীসটি জাল।
এটি হাকিম (৪/২৫৩) হিশাম ইবনু যিয়াদ সূত্রে আবৃ্য যিনাদ হতে ... বর্ণনা
করে বলেছেনঃ এটির সনদ সহীহ। যাহাবী “আত-তালখীস” গ্রন্থে তার প্রতিবাদ করে বলেছেনঃ হিশাম
মাতরূক। ইবনু হিব্বান (৩/৮৮) বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে জাল ও উলট পালটকৃত
হাদীস বর্ণনাকারী। এমন কি শ্রবণকারীর নিকট এটিই প্রাধান্য পেত যে, তিনি তা ইচ্ছাকৃতই
করছেন। তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করাই জায়েয নয়। এটির আরেকটি সূত্র আছে অন্য ভাষায়।
সেটিও জাল। সেটি সম্পর্কে ৭৭৭ নম্বর হাদীসে আলোচনা আসবে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৭২। আমার উম্মাতের কলহ-বিবাদের সময় যে ব্যাক্তি আমার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে,
তার জন্য একশতটি শহীদানের সাওয়াব রয়েছে।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (২/৯০) এবং ইবনু বিশরান “আল-আমালী”
গ্রন্থে (১/৯৩, ২/১৪১) হাসান ইবনু কুতাইবা হতে, তিনি আব্দুল খালেক ইবনুল মুনযির হতে
... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সনদ নিতান্তই দুর্বল। এর কারণ হচ্ছে হাসান
ইবনু কুতাইবা। তার সম্পর্কে যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি হালেক (ধ্বংসপ্রাপ্ত)।
দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস। আবূ হাতিম বলেনঃ তিনি দুর্বল। আযদী বলেনঃ তিনি
ওয়াহীউল হাদীস (খুবই দুর্বল)। উকায়লী বলেনঃ তিনি অধিক পরিমাণে সন্দেহ প্রবণ ছিলেন।
আর তার শাইখ ইবনুল মুনযির অপরিচিত।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৭৩। লোকদের মধ্যে ইউসুফ ইবনু ইয়াকুব ইবনু ইসহাক হচ্ছেন সর্বাপেক্ষা সন্মানিত
ব্যাক্তি। তিনি যাবীহুল্লাহ।
হাদীসটি মুনকার।
এ শব্দে তাবারানী তার “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (১০২৭৮) আবূ ওবাইদার
সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে বলেছেনঃ (৮/২০২) এটির
সনদে বাকিয়াহ রয়েছেন, তিনি মুদাল্লিস এবং আবূ ওবাইদা তার পিতা হতে শুনেননি। কিন্তু
বাকিয়ার মুতাবায়াত পাওয়া যায়। মুয়াবিয়া ইবনু হাফস এবং বাকিয়া উভয়ে শু'বা হতে
বর্ণনা করেছেন। এটি ইবনুল মুজাফফার “গারায়েবু শু'বাহ” গ্রন্থে (১/১৩৮) বর্ণনা করেছেন।
ইবনু কাসীর তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থে (৪/১৭) বলেছেনঃ এটি ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে সহীহ
(অর্থাৎ মওকুফ হিসাবে)।
আমি (আলবানী) বলছিঃ “إن إسحاق ذبيح الله” এ অংশটুকু বাদ দিয়ে হাদীসটি মারফু' হিসাবেও সহীহ কারণ এ বর্ধিত অংশটুকু
মুনকার। এ অংশটুকু বাদ দিয়ে বুখারী এবং মুসলিম আবু হুরাইরার (রাঃ) হাদীস হতে বর্ণনা
করেছেন।
ইসহাকই ছিলেন যাবীহ এ মর্মে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সে গুলোর সবই
দুর্বল।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
৭৪। আল্লাহ তা'আলা আদমকে জাবীয়া নামক স্থানের মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন
এবং তাকে জান্নাতের পানি দিয়ে মুদিত করেছেন।
হাদীসটি মুনকার।
এটি ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (৮/১) এবং তার থেকে হাফিয ইবনু আসাকির
“তারীখু দেমাস্ক” গ্রন্থে (২/১১৯) ও যিয়া "আল-মাজমূ" গ্রন্থে (২/৬০) হিশাম
ইবনু আম্মার হতে, তিনি ওয়ালীদ ইবনু মুসলিম হতে, তিনি ইসমাইল ইবনু রাফে' হতে ... বর্ণনা
করেছেন। এটির সনদ নিতান্তই দুর্বল।
এ ইসমাঈল ইবনু রাফে সম্পর্কে দারাকুতনী ও অন্যরা বলেছেনঃ তিনি মাতরূকুল
হাদীস। ইবনু আদী বলেছেনঃ তার সকল হাদীসে বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। অতঃপর তার এ হাদীসটি
উল্লেখ করেছেন। তার সূত্র হতে ইবনুল জাওয়ী “আল-মাওযু"আত” গ্রন্থে (১/১৯০) উল্লেখ
করে বলেছেনঃ এটি সহীহ নয়। ইসমাঈলকে ইয়াহইয়া ও আহমাদ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন আর ওয়ালীদ
তাদলীস করতেন।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ এ ইসমাঈলের হাদীস
ইমাম তিরমিয়ী বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বুখারীর উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য,
মুকারেবুল হাদীস।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সমালোচনা সঠিক নয়। কারণ কোন ব্যক্তি নিজে নির্ভরযোগ্য
হয়েও তার মুখস্থ বিদ্যায় তিনি খারাপ হতে পারেন। কখনও কখনও তার হেফয শক্তি নিতান্তই
খারাপ হতে পারে। যার কারণে তার হাদীসে বেশী ভুলও সংঘটিত হয়। ফলে তার দ্বারা দলীল গ্রহণ
করা যায় না, এ ইসমাঈল এ পর্যায় ভূক্তই। তার সম্পর্কে ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি ব্যক্তি
হিসাবে সৎ ছিলেন। কিন্তু তিনি হাদীসগুলোকে উলট পালট করে ফেলতেন। ফলে তার অধিকাংশ হাদীস
মুনকারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, এজন্য ভাবা হত তিনি এটা ইচ্ছাকৃতই করতেন। এজন্যই তাকে
একদল কিছু না বলে ছেড়ে দিয়েছেন আর অন্যরা তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। হতে পারে বুখারীর
নিকট তার বিষয়টি অস্পষ্ট ছিল। নির্দোষীতার আগে ব্যাখ্যাকৃত দোষারোপ অগ্রাধিকার পাবে,
এর ভিত্তিতে তিনি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নন। এ কারণেই ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে
(২/২৯৭) তার পিতার উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ এ হাদীসটি মুনকার।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
৭৫। যে ব্যক্তি আমার মসজিদে চল্লিশ (ওয়াক্ত) সলাত আদায় করল এমনভাবে যে,
তার নিকট হতে এক (ওয়াক্ত) সলাতও ছুটল না, তার জন্য জাহান্নাম হতে মুক্তি ও শাস্তি
হতে নাজাত লিপিবদ্ধ করা হবে এবং সে মুনাফিকী হতে মুক্ত।
হাদীসটি মুনকার।
এটি ইমাম আহমাদ (৩/১৫৫) এবং তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (২/৩২/২/৫৫৭৬)
আব্দুর রহমান ইবনু আবির রিজাল সূত্রে নুবাইত ইবনু উমার হতে ... বর্ণনা করেছেন।
তাবারানী বলেনঃ আনাস (রাঃ) হতে শুধুমাত্র নুবাইত বর্ণনা করেছেন। ইবনু
আবির রেজালও এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ দুর্বল। নুবাইতকে শুধুমাত্র এ হাদীসেই
চেনা যায়। তাকে ইবনু হিব্বান “আস-সিকাত” গ্রন্থে (৫/৪৮৩) উল্লেখ করেছেন। কারণ মাজহুল
বর্ণনাকারীকে তার থিওরীতে নির্ভরশীল হিসাবে চিহ্নিত করা যাবে।
এ কারণেই হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (৪/৮) বলেছেনঃ ইমাম
আহমাদ ও তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে এটিকে বর্ণনা করেছেন। এটির বর্ণনাকারীগণ
নির্ভরশীল।
এছাড়া “আত-তারগীব” গ্রন্থে (২/১৩৬) মুনযেরী বলেনঃ এটি ইমাম আহমাদ বর্ণনা
করেছেন। তার বর্ণনাকারীগণ সহীহ্ বর্ণনাকারী।
এটি ধারণা মাত্র, কারণ নুবাইত সহীহ্ বর্ণনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়
বরং ছয়টি হাদীস গ্রন্থের কোন লেখক তার থেকে বর্ণনা করেননি।
এটি দুর্বল হওয়ার কারণ এটিও যে, হাদীসটি দুটি সূত্রে আনাস (রাঃ) হতে
বর্ণিত হয়েছে। যার একটি অন্যটিকে শক্তি যোগাচ্ছে। কিন্তু নিম্নের ভাষায় মারফু এবং
মওকুফ হিসাবে।
“যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন প্রথম তাকবীর সহকারে জামা'আতের সাথে সলাত আদায়
করবে, তার জন্য দুটি মুক্তি লিখা হয়। জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি এবং মুনাফেকী হতে
মুক্তি”। এ হাদীসটি তিরমিয়ী (১/৭) বর্ণনা করেছেন।
ইবনু মাজাহ্ (১/২৬৬) একটি শাহেদ উল্লেখ করেছেন, যার সনদটি দুর্বল এবং
মুনকাতি ।
এ বাক্যের হাদীসটির সূত্রগুলো সহীহার মধ্যে (২৬৫২) বিস্তারিত আলোচনা
করেছি, যা প্রমাণ করে যে, আলোচ্য হাদীসটি দুর্বল এবং মুনকার।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
৭৬। তোমরা আলেমদের অনুসরণ কর, কারণ তারা হচ্ছে দুনিয়ার চেরাগ এবং আখেরাতের
প্রদীপ।
হাদীসটি জাল।
এটি দাইলামী তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (১/৩৯) কাসিম ইবনু ইবরাহীম মালতী
সূত্রে লুওয়াইন আল-মাসীসী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
সুয়ূতী হাদীসটিকে “যায়লুল আহাদীসিল মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃ. ৩৯) উল্লেখ
করা সত্ত্বেও “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে দাইলামীর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ
করেছেন যে, কাসেম ইবনু ইব্রাহীম মালতি সম্পর্কে দারাকুতনী বলেছেনঃ তিনি মিথ্যুক। আল-খাতীব
বলেনঃ তিনি (কাসিম) লুওয়াইন হতে এবং তিনি মালেক হতে আশ্চর্যজনক বাতিল হাদীসগুলো বর্ণনা
করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৭৭। যে ব্যক্তি তার উঁচু স্বর আলেমদের নিকট নীচু করবে, সে ব্যক্তি কিয়ামতের
দিন আমার সাথীদের মধ্য হতে ঐ সব ব্যক্তিদের সাথে থাকবে যাদেরকে পরহেজগারিতার জন্য আল্লাহ
নির্বাচিত করে নিয়েছেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য বা জ্ঞান অনুসন্ধান করার মধ্য
ছাড়া তোষামোদী ও নম্রতার কোনই কল্যাণ নেই।
হাদীসটি জাল।
এটি দাইলামী “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে ইবনুস সুন্নীর সূত্রে ... বর্ণনা
করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ অন্ধকারাচ্ছন্ন। যার একজন আরেক জনের উর্ধ্বে।
বর্ণনাকারী কাত্তানের পরে আমের ইবনু সায়য়ার ছাড়া অন্য কাউকে চিনি না। ইবনু আবী হাতিম
(৩/১/৩২২) তার পিতার উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ এটি মাজহুল।
হাদীসটির সনদে যে বলা হয়েছে ইবনুস সাবাহ, তিনি হচ্ছেন মুসান্না ইয়ামানী।
তিনিই যদি হন, তাহলে তিনি দুর্বল। তার শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল যেমনভাবে
"আত-তাকরীব" গ্রন্থে এসেছে। অতঃপর আমার নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে, ইবনুস সাবাহ
ভুল। সঠিক হচ্ছে আবুস সাবাহ যেমনভাবে ইবনু আদীর “আল-কামিল” গ্রন্থে (৫/১৯৬৬) এসেছে।
তিনি হচ্ছেন আব্দুল গফুর ইবনু আবদিল আযীয আবুস সাবাহ ওয়াসেতী। তার জীবনীর শেষাংশে
তার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তার হাদীসে দুর্বলতা স্পষ্ট এবং তিনি মুনকারুল হাদীস।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে তিনিই। বিশেষ করে বুখারী
“তারীধুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/২/১২৭) বলেছেনঃ মুহাদ্দিসগণ তাকে গ্রহণ করেননি (পরিত্যাগ
করেছেন)। তিনি মুনকারুল হাদীস। একই অর্থে “তারীখুস সাগীর” গ্রন্থে (পৃ. ১৯৪) বলেছেনঃ
মুহাদ্দিসগণ তার ব্যাপারে চুপ থেকেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৭৮। আল্লাহ তা'আলা দুনিয়াকে বললেনঃ হে দুনিয়া! তুমি আমার বন্ধুদের জন্য
তিতা হও। তুমি তাদের জন্য মিঠা হয়ে তাদেরকে ফেতনায় ফেলো না।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু আবদির রহমান সুলামী “তাবাকাতুস সূফিয়া” গ্রন্থে (পৃ. ৮-৯)
বর্ণনা করেছেন এবং তার থেকে দাইলামী (৪/২১৮) বর্ণনা করেছেন। যার সনদে বর্ণনাকারী আবু
জাফার আর-রাযী এবং হুসাইন ইবনু দাউদ আল-বালখী রয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি বানোয়াট। আবু জাফার আর-রাযী সম্পর্কে যাহাবী
বলেনঃ আমি তাকে চিনি না। কিন্তু তিনি বাতিল খবর নিয়ে এসেছেন। তিনিই হাদীসটির সমস্যা।
হুসাইন ইবনু দাউদ বালখীর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে খাতীব বাগদাদী “আত-তারীখ” গ্রন্থে
(৮/৪৪) বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য ছিলেন না। তিনি একটি কপি ইয়াযীদ ইবনু হারূণ হতে, তিনি
হুমায়েদ হতে, তিনি আনাস হতে বর্ণনা করেছেন। যার অধিকাংশই বানোয়াট। অতঃপর তার অন্য
একটি হাদীস এ সনদে উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি হুসাইন ফুযায়েল হতে এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
সেটি হচ্ছে জাল। তার সূত্রেই কাযাঈ এ হাদীসটি “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে (২/১১৭) বর্ণনা
করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৭৯। জুম'আর দিবসে জামে মসজিদগুলোর গেটে আল্লাহর দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ
থাকেন। তারা সাদা পাগড়ীধারীদের জন্য ইসতিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করতে থাকেন।
হাদীসটি জাল।
এটি খাতীব বাগদাদী উপরের হাদীস দুটোর সনদেই বর্ণনা করেছেন। আমি অবহিত
হয়েছি যে, এটি ইয়াহইয়া ইবনু শাবীব ইয়ামামী কর্তৃক তৈরিকৃত। খাতীব বাগদাদীর সূত্র
হতে ইবনুল জাওয়ী হাদীসটি “আল-মাওযূ'আত” গ্রন্থে (২/১০৬) উল্লেখ করে বলেছেনঃ ইয়াহইয়া
হুমায়েদ এবং অন্যদের থেকে বাতিল হাদীস বর্ণনা করেছেন।
সুয়ুতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/২৭) তার কথাকে শক্তি যুগিয়েছেন একথা
বলে যে, “আল-মীযান” গ্রন্থে যাহাবী বলেছেনঃ এটি সে সবের একটি যেটিকে ইয়াহইয়া হুমায়েদের
উদ্ধৃতিতে তৈরি করেছেন।
তার এ কথাকে ইবনু আররাক (২/২৩৬) সমর্থন করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির আরেকটি সূত্র আমি পেয়েছি; যেটি আবু আলী কুশাইরী
হারানী "তারীখুর রিক্কা" গ্রন্থে (কাফ ২/৩৮) আবু ইউসুফ মুহাম্মাদ বর্ণনা
করেছেন। তিনি আব্বাসের জীবনীতে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন অথচ তিনি তার সম্পর্কে ভাল-মন্দ
কিছুই বলেননি। আবু ইউসুফ সাইদালানীর জীবনী কে রচনা করেছেন পাচ্ছি না। তিনি অথবা তার
শাইখ এ সূত্রটির সমস্যা।
পাগড়ী সংক্রান্ত বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাগড়ী
পরেছেন এতটুকু ছাড়া অন্য কিছুই সহীহ নয়। ১২৭ এবং ১২৯ নম্বরে পাগড়ীর হাদীস সম্পর্কে
আলোচনা করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৮০। যে ব্যক্তি সকালের সলাত আদায় করবে। অতঃপর কোন কথা বলার পূর্বেই একশত
বার কুল-হু-আল্লাহু আহদ পাঠ করবে, সে যখনই কুল-হু-আল্লাহ আহাদ পাঠ করবে তখনই তার এক
বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী (২২/৯৬/২৩২), অনুরূপভাবে হাকিম (৩/৫৭০) এবং ইবনু আসাকির
(১৯/১৯৬/২) মুহাম্মাদ ইবনু আবদির রহমান আল-কুশায়রী সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাকিম হাদীসটি সম্পর্কে কিছু না বলে চুপ থেকেছেন।
হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (১০/১০৯) বলেছেনঃ এটির সনদে মুহাম্মাদ ইবনু
আবদির রহমান কুশায়রী রয়েছেন; তিনি মাতরূক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি মিথ্যুক; যেমনভাবে আযদী বলেছেন। ইবনু আবী হাতিম
(৩/২/৩২৫) বলেনঃ আমি আমার পিতাকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি বলেনঃ তিনি
মাতরূকুল হাদীস, মিথ্যা বলতেন এবং হাদীস জাল করতেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৮১। যে ব্যক্তির তিনটি মেয়ে সন্তান হবে, অতঃপর তাদের বাসস্থান দানে (আশ্রয়
দানে), তাদের দুঃসময়ে এবং সুসময়ে ধৈর্য ধারণ করবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে খাস করে তাদের
প্রতি দয়া করার ফীলতের বিনিময়ে জান্নাত দিবেন। এক ব্যক্তি বললঃ যদি দু'টি মেয়ে হয়
হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেনঃ দুটি হলেও। এক ব্যক্তি বললঃ একটি মেয়ে হলে হে আল্লাহর
রসূল? তিনি বললেনঃ একটি মেয়ে হলেও।
হাদীসটি এ বাক্যে দুর্বল।
এটি হাকিম (৪/১৭৭) এবং আহমাদ (২/৩৩৫) ইবনু যুরায়েজ সূত্রে আবুয যুবায়ের
হতে, তিনি উমার ইবনু নাহবান হতে ... বর্ণনা করেছেন। হাকিম বলেনঃ সনদটি সহীহ। যাহাবী
তাকে সমর্থন করেছেন। মুনযেরীও "আত-তারগীব" গ্রন্থে (৩/৮৫) তা সমর্থন করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ কখনও নয়। কারণ ইবনু যুরায়েজ এবং আবুষ যুবায়ের
দু’জনই মুদল্লিস। তারা আন্ আন্ শব্দে বর্ণনা করেছেন এবং উমর ইবনু নাহবানের ব্যাপারে
জাহালাত (অজ্ঞতা) রয়েছে, যেমনভাবে যাহাবী নিজে “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেছেন, কীভাবে
এটি সহীহ?
আমি (আলবানী) বলছিঃ জাবের (রাঃ)-এর সহীহ্ হাদীস আমাদেরকে এ দুর্বল সনদের
হাদীসের প্রয়োজনীয়তা হতে মুক্ত রাখে। জাবের (রাঃ)-এর হাদীসে বলা হয়েছে; যার তিনটি
মেয়ে সন্তান হবে, অতঃপর সে তাদেরকে আশ্রয় দিবে, তাদের প্রয়োজনীয়তা মিটাবে এবং তাদের
উপর দয়া করবে; তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। কোন এক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর
রাল যদি দু’জন হয়? তিনি বললেনঃ যদি দু’জন হয় তবুও।” হাদীসটি বুখারী “আদাবুল মুফরাদ”
গ্রন্থে (পৃ. ১৪) এবং আবু নুয়াইম "আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে (৩/১৪) দু'টি সূত্রে
মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদীর হতে বর্ণনা করেছেন। এটির সনদটি সহীহ।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৮২। যে ব্যক্তি সব কিছুর পূর্বে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং সব কিছুর
পরে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ইউবকী ওয়া ইউফনী কুল্লা শাইয়ীন বলবে,
তাকে চিন্তা-ভাবনা হতে নিরাপদে রাখা হবে।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/কাফ ৯৩/১) আব্বাস ইবনু বাক্কার
যব্বী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। অতঃপর যাহাবী তার দুটি হাদীস উল্লেখ
করে বলেছেনঃ হাদীস দুটি বাতিল। দু'টির একটি ২৬৮৮ নাম্বারে আসবে। হাফিয ইবনু হাজার তাকে
মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন। "আল-মাজমা" গ্রন্থে (১০/১৩৭) এসেছে তাবারানী হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন। তাতে আব্বাস ইবনু বাক্কার রয়েছেন, তিনি দুর্বল। ইবনু হিব্বান তাকে
নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে এবং হাফিয ইবনু হাজার
“আল-লিসান” গ্রন্থে ইবনু হিব্বান কর্তৃক নির্ভরযোগ্য বলা কথাটি উল্লেখ করেননি। যদি
তার কথা সঠিকই হয় তাহলে ব্যাখ্যাকৃত দোষারোপ অগ্রাধিকার পাবে নির্দোষের পূর্বে।
ইবনু হিব্বান তাকে “আস-সিকাত” গ্রন্থে (৮/৫১২) উল্লেখ করে বলেছেনঃ তিনি
গরীব বর্ণনা করেছেন। নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে তার হাদীসে অসুবিধা নেই। ইবনু হিব্বান
আব্বাসকে "আয-যুয়াফা" গ্রন্থেও (২/১৯০) উল্লেখ করেছেন! তার শাইখ আবু হিলাল
যার নাম মুহাম্মাদ ইবনু সুলাইম রাসেবী, তার মধ্যেও দুর্বলতা রয়েছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৮৩। কিয়ামতের দিন লোকদেরকে ডাকা হবে তাদের মায়েদের পরিচয়ে, আল্লাহর পক্ষ
হতে তাদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদী (২/১৭) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম তাবারী হতে ... বর্ণনা করেছেন,
অতঃপর বলেছেনঃ এ সনদে হাদীসটির ভাষা মুনকার। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম মুনকারুল হাদীস। ইবনু
হিব্বান বলেনঃ তিনি ইবনু ওয়াইনা এবং ফুযায়েল ইবনু আইয়াশ হতে নিতান্তই মুনকার হাদীস
বর্ণনা করেছেন। তিনি নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস নিয়ে এসেছেন। আশ্চর্য হবার
উদ্দেশ্য ছাড়া তার হাদীস লিখাই হালাল নয়। হাকিম বলেনঃ তিনি ফুযায়েল এবং ইবনু ওয়াইনা
হতে কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন।
ইবনুল জাওয়ী হাদীসটি “আল-মাওযু’আত” গ্রন্থে (৩/২৪৮) ইবনু আদীর সূত্রে
উল্লেখ করে বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়, ইসহাক মুনকারুল হাদীস। সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে
(২/৪৪৯) তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ তাবারানীর নিকট তার অন্য সূত্র আছে। কিন্তু এটির
ভাষা হচ্ছে 'بأمهاتهم' আর তার (তাবারানীর)
ভাষা হচ্ছে 'بأسمائهم' দুটির মধ্যে পার্থক্য
সুস্পষ্ট। ইবনু আররাক তার প্রতিবাদ করে বলেছেন (২/৩৮১)- এটি আবু হুযাইফা ইসহাক ইবনু
বিশর সুত্রে বর্ণিত, শাহেদ হিসাবে সঠিক হবে না।
আমি (আলবানী) বলছিঃ কারণ শাহেদ হওয়ার শর্ত হচ্ছে, দুর্বলতা যেন বেশী
শক্তিশালী না হয়। কিন্তু এটি এরূপ নয়। কারণ ইসহাক ইবনু বিশরকে হাদীস জালকারীদের মধ্যে
গণ্য করা হয়। যেমনটি ২২৩ নং হাদীসের আলোচনায় গেছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৮৪। পুরুষরা যখন মহিলাদের অনুসরণ করবে, তখন তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইবনু আদী (১/৩৮), আবু নুয়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/৩৪),
ইবনু মাসী “যুজউল আনসারী” গ্রন্থের শেষে (১/১১), হাকিম (৪/২৯১) এবং আহমাদ (৫/৪৫) আবু
বাকরার সূত্রে বাক্কার ইবনু আবদিল আযীয ইবনে আবী বাকরা তার পিতা হতে, তার পিতা আবু
বাকরা হতে বর্ণনা করেছেন। হাকিম বলেনঃ সনদটি সহীহ। আর যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি যাহাবীর একটি ভুল। তিনি “আল-মীযান” গ্রন্থে
এ বাক্কারের জীবনীতে উল্লেখ করেছেন, ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি কিছুই না। ইবনু আদী বলেনঃ
তিনি সেই সব দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত যাদের হাদীস লিখা যায়। তিনি “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে
বলেছেনঃ তিনি দুর্বল। তাকে ইবনু আদী চালিয়ে দিয়েছেন।
এ হাদীসটির একটি আসল আছে, তবে এ ভাষায়ঃ لن يفلح قوم ولوا أمرهم امرأة “সেই জাতি পরিত্রাণ
পাবে না যারা তাদের নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছে নারীকে।” এটি ইমাম বুখারী, হাকিম ও আহমাদ
বর্ণনা করেছেন। এটিই হচ্ছে আসল হাদীস ।
কিন্তু আলোচ্য হাদীসটি যে ভাষায় এসেছে সেটি দুর্বল। তার বর্ণনাকারী
দুর্বল হওয়ার কারণে। তার অর্থও আমভাবে সহীহ নয়। কারণ হিসাবে হুদায়বিয়ার সন্ধির
সময়ের ঘটনা দ্রষ্টব্য।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৮৫। শেষ যামানায় জাহেল আবেদ এবং ফাসেক কারীদের সমারোহ ঘটবে।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু হিব্বান "আল-মাজরুহীন" গ্রন্থে (৩/১৩৫), হাকিম
(৪/৩১৫), আবু নুয়াইম (২/৩৩১-৩৩২) এবং তার থেকে দাইলামী (৪/৩১৯) এবং আবু বাকর আজুরী
"আখলাকুল ওলামা" গ্রন্থে (পৃ. ৬২) ইউসুফ ইবনু আতিয়া সূত্রে সাবেত হতে
... বর্ণনা করেছেন।
আবু নুয়াইম বলেনঃ এটি গারীব। এটিকে আমরা একমাত্র ইউসুফ ইবনু আতিয়া
হতে লিখেছি। তার হাদীসের মধ্যে মুনকার রয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু হিব্বান তাকে জাল করার দোষে দোষী করেছেন। হাকিম
চুপ থেকেছেন। যার জন্য যাহাবী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ ইউসুফ হালেক (ধ্বংসপ্রাপ্ত)।
বুখারী বলেছেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। তা সত্ত্বেও সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি
উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৮৬। নারীরা হচ্ছে খেলনার পাত্র, অতএব তোমরা তাদের বাছাই করে নাও।
হাদীসটি মুনকার।
এটি হাকিম তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে এবং তার থেকে দাইলামী মুয়াল্লাক
হিসাবে (৩/১১০) ইবনু লাহীয়ার সূত্রে আহওয়াস ইবনু হাকীম হতে ... মারফু হিসাবে বর্ণনা
করেছেন। সুয়ূতী "আল-লাআলী" গ্রন্থে (২/১৮৯) হাদীসটি অনুরূপ অর্থে আলী (রাঃ)
এর হাদীসের শাহেদ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
ইবনুল জাওষী বলেনঃ এটি সহীহ নয়।
আমি (আলবানী) বলছিঃ সুয়ূতী অভ্যাসগতভাবে এ শাহেদটির ব্যাপারে চুপ থেকেছেন,
অথচ সেটি নিতান্তই দুর্বল। তাতে তিনটি সমস্যা রয়েছেঃ ইবনু লাহীয়াহ দুর্বলতায় প্রসিদ্ধ।
আহওয়াস; তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন এবং ইবনুল মাদীনী বলেনঃ তিনি কিছুই না। তার পরেও এটি
হচ্ছে মুনকাতি। আহওয়াস এবং আমরের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। এ জন্যে ইবনু আররাক (২/২২৬)
বলেনঃ হাদীসটির সনদ দুর্বল। হাদীসটি দুর্বল ও মুনকার হওয়ার প্রমাণ বহন করছে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সাব্যস্ত এ হাদীসটি “إنما النساء شقائق الرجال” নারীরা হচ্ছে পুরুষদের সহোদর। সহীহ্ আবৃ দাউদঃ (২৩৪)।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
৮৭। যে ব্যক্তি মাগরীব এবং এশার মধ্যে বিশ রাকায়াত সলাত আদায় করবে, আল্লাহ
তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু মাজাহ (১/৪১৪) এবং ইবনু শাহীন “আত-তারগীব ওয়াত তারহীব” গ্রন্থে
(কাফ ১৭২/১, ২৭৭-২৭৮) ইয়াকুব ইবনু ওয়ালীদ মাদীনীর সূত্রে হিশাম ইবনু উরওয়া হতে
... বর্ণনা করেছেন।
বুসয়র “আয-যাওয়াইদ” গ্রন্থে (কাফ ৮৫/১) বলেনঃ এটির সনদে ইয়াকুব ইবনুল
ওয়ালীদ রয়েছেন। তিনি দুর্বল এ ব্যাপারে সকলেই একমত। তার সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেনঃ
তিনি বড় বড় মিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি হাদীস জাল করতেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু মাঈন এবং আবু হাতিমও তাকে মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন।
তা সত্ত্বেও সুয়ূতী তার এ হাদীসটিকে "জামেউস সাগীর" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
জেনে রাখুনঃ মাগরীব এবং এশার মধ্যে রাকা'য়াতের সংখ্যা উল্লেখ করে সলাত আদায়ে উৎসাহিত
করে যে সব হাদীস এসেছে সেগুলোর কোনটিই সহীহ নয়। বরং একটি অন্যটির চেয়ে বেশী দুর্বল।
এ সময়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাকায়াতের সংখ্যা নির্দিষ্ট না করে সলাত
আদায় করেছেন তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে তার বাণী হিসাবে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে
তা নিতান্তই দুর্বল। তার উপর আমল করা জায়েয হবে না।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৮৮। যে ব্যক্তি মাগরীবের পরে কথা বলার পূর্বেই ছয় রাকায়াত সলাত আদায়
করবে; তা দ্বারা তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি ইবনু নাসর “কিয়ামুল্লাইল” গ্রন্থে (পৃ. ৩৩) মুহাম্মাদ ইবনু গাযুওয়ান
দামেস্কী সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি ইবনু আবী হাতিম তার “আল-ইলাল” গ্রন্থে
এ সূত্রেই (১/৭৮) উল্লেখ করেছেন, অতঃপর বলেছেনঃ আবু যুরয়াহ বলেনঃ তোমরা এ হাদীসটিকে
প্রহার কর। কারণ এটি বানোয়াট হাদিসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মুহাম্মাদ ইবনু গাযওয়ান দামেশকী
মুনকারুল হাদিস।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৮৯। যে ব্যক্তি মাগরীবের পরে ছয় রাকায়াত সলাত আদায় করবে এমতাবস্থায়
যে, সে তার মাঝে কোন মন্দ কথা বলবে না। এ সলাত তার জন্য বার বছরের ইবাদাতের সমতুল্য
হয়ে যাবে।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি ইমাম তিরমিয়ী (২/২৯৯), ইবনু মাজাহ (১/৩৫৫, ৪১৫) এবং ইবনু নাসর
(পৃঃ ৩৩), ইবনু শাহীন “আত-তারগীব” গ্রন্থে (২/২৭২), মুখাল্লেস “আল ফাওয়ায়েদুল মুন্তাকাত”
গ্রন্থে (৮/৩৪/১), আসকারী “মুসনাদু আবী হুরাইরাহ” গ্রন্থে (১/৭১) এবং ইবনু সামউন ওয়ায়েয
"আল-আমালী" গ্রন্থে (১/৬১/২) উমর ইবনু আবী খায়সাম সূত্রে ইয়াহইয়া ইবনু আবী
কাসীর হতে ... বর্ণনা করেছেন।
তিরমিয়ী বলেনঃ হাদীসটি গারীব। এটিকে উমার ইবনু আবী খাসয়াম ছাড়া অন্য
কোন মাধ্যমে চিনি না। আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল বুখারীকে বলতে শুনেছিঃ উমর ইবনু আবী
খাসয়াম মুনকারুল হাদীস। তাকে তিনি নিতান্তই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। যাহাবী তার জীবনীতে
বলেছেনঃ তার দুটি মুনকার হাদীস রয়েছে, সে দু’টোর এটি একটি।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৯০। যে ব্যক্তি বুধ ও বৃহস্পতিবারে সওম পালন করবে, তার জন্য
জাহান্নাম হতে মুক্তি লিপিবদ্ধ করা হয়।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি আবু ইয়ালা ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং
মুনযেরী হাদীসটিকে “আত-তারগীব” গ্রন্থে (২/৮২) দুর্বল বলেছেন। হায়সামী তার কারণ উল্লেখ
করে বলেছেন (৩/১৯৮) এটির সনদে আবু বকর ইবনু আবী মারইয়াম রয়েছেন, তিনি দুর্বল।
অতঃপর আমি (আলবানী) তার সনদটি সম্পর্কে অবহিত হয়েছি, তাতে তিনটি রোগ
পেয়েছিঃ অন্য এক বর্ণনাকারীও দুর্বল। এটি বাকিয়া কর্তৃক আন আন শব্দে বর্ণিত। তিনি
হচ্ছেন মুদাল্লিস। ইবনু আবী মারইয়ামের ইযতিরাব তার সনদে রয়েছে। যার বিস্তারিত বিবরণ
শীঘ্রই আসবে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৯১। উদ্ভিত বিশেষ খাওয়া নিরাপত্তা দেয় কূলোন্জ রোগ হতে।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু নুয়াইম আসবাহানী “আত-তিব্ব” গ্রন্থে (কাফ ১৩৯/১) আবু নাসর
আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ সূত্রে মূসা ইবনু ইব্রাহীম হতে এবং তিনি ইবরাহীম ইবনু আবী ইয়াহইয়া
হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি জাল। কারণ ইবরাহীম ইবনু আবী ইয়াহইয়া হচ্ছেন
আসলামী, তিনি মিথ্যুক। তাকে একদল ইমাম স্পষ্টভাবে মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন, যেমন ইয়াহইয়া
ইবনু সাঈদ, ইবনু মাঈন, ইবনুল মাদীনী, ইবনু হিব্বান ও আরো অনেকে। তা সত্ত্বেও ইমাম শাফেঈ
তার থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। ইসহাক ইবনু রাহওয়াই তা
ইনকার করেছেন, যেমনভাবে ইবনু আবী হাতিম “আদাবুশ শাফেঈ” গ্রন্থে (পৃ. ১৭৮) বর্ণনা করেছেন।
ইবনু আবী হাতিম অন্য একস্থানে বলেন (২২৩) শাফে'ঈর নিকট স্পষ্ট হয়নি যে, তিনি মিথ্যা
বলতেন।
বাযযার বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন। তার জন্য মাসআলা জাল করা হত আর
তিনি তার জন্য সনদ জাল করতেন। তিনি ছিলেন কাদরিয়া...।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার নিচের দু' বৰ্ণনাকারীকে আমি চিনি না এবং সালেহ
মাওলা তুয়ামা দুর্বল। অতঃপর আমার নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে, হতে পারে মূসা ইবনু ইবরাহীম
হচ্ছেন আবু ইমরান মারওয়ায়ী। তা যদি হয় তাহলে তিনিও মিথ্যার দোষে দোষী।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৯২। বহু আবেদ আছে যারা অজ্ঞ, বহু আলেম আছে যারা পাপাচারী। অতএব তোমরা অজ্ঞ
আবেদদের এবং পাপাচারী আলেমদের থেকে বেঁচে চল। কারণ তারাই হচ্ছে ফিতনাবাজদের ফিতনা।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদী "আল-কামিল" গ্রন্থে (পৃঃ ৩৩-৩৪ নং ৩৬৪) এবং
তার সূত্রে ইবনু আসাকির “যাম্মু মান লা ই'য়ামালু বি ইলমেহি” গ্রন্থের চতুর্দশ মজলিসে
(পাতা ৫৬/ ১-২ / ৭৭ হতে) এবং "আত-তারীখ" গ্রন্থে (৩/১৫৪/২) বিশর ইবনু ইবরাহীম
সূত্রে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর ইবনু আসাকির বলেছেনঃ বিশর এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি জালকারী।
ইবনু আদী বলেনঃ নির্ভরযোগ্য ইমামদের নিকট হতে বর্ণনাকারী হিসাবে তিনি
মুনকারুল হাদীস ।
অতঃপর তার কতিপয় হাদীস উল্লেখ করে বলেছেনঃ এগুলো বাতিল। এগুলো বিশর
জাল করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটি সেগুলোর একটি।
অতঃপর (ইবনু আদী) বলেনঃ তিনি আমার নিকট যারা নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে
হাদীস জাল করতেন তাদের অন্তর্ভুক্ত। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন।
তারপর ইবনু আদী (১/৪০০) মাহফু্য ইবনু বাহারের জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে
তার সূত্রে উমর ইবনু মূসা হতে এবং তিনি খালিদ ইবনু মি’দান হতে হাদীসটি "فإن أولئك" এ অংশটুকু বাদ
দিয়ে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ খালিদ ইবনু মি’দান হতে এটি মুনকার। তার থেকে বর্ণনাকারী
উমার ইবনু মূসাকে বলা হয় ইবনু ওয়াজীহ। তিনি দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি হচ্ছেন সেই দলের অন্তর্ভুক্ত যারা হাদীস জাল
করতেন। এ মাহফু্য সম্পর্কে আবু আরুবা বলেছেনঃ তিনি মিথ্যা বলতেন। কিন্তু ইবনু আদী তার
পরেই বলেনঃ এটি মাহফুযের পক্ষ হতে নয়। তিনি যেন ইঙ্গিত করছেন যে, এ হাদীসটির ব্যাপারে
দোষী হচ্ছেন ইবনু ওয়াজীহ এবং বিশর ইবনু ইবরাহীম।
এ হাদীসটি সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে ইবনু আদীর বর্ণনা হতেই উল্লেখ
করেছেন। অথচ তিনি (ইবনু আদী) সেটিকে এ জালকারীর জীবনীতে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর সুয়ূতী
চুপ থেকেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৯৩। সর্বোত্তম খাদ্য হচ্ছে কিশমিশ, সে মাংসপেশীকে শক্তিশালী করে, অলসতাকে
দূর করে, ক্রোধকে মিটিয়ে ফেলে, মুখের গন্ধকে সুগন্ধিযুক্ত করে, কফকে বিতাড়িত করে,
রঙকে উজ্জ্বল করে। তিনি দশটির মত গুণাবলী উল্লেখ করেছেন কিন্তু বর্ণনাকারী সেগুলো মুখস্থ
করতে পারেনি।
হাদীছটি জাল।
হাদীছটিকে ইবনু হিব্বান “কিতাবুল মাজরুহীন" যা “আয-যোয়াফা” নামে
প্রসিদ্ধ (১/৩২৪ হিন্দী ছাপা), আবু নোয়াইম “আত-তিব্ব” (৯/১) গ্রন্থে, আল-খাতীব “আত-তালখীস"
(২/৩৬) গ্রন্থে এবং ইবনু আসাকির (৭/১১৫/১) সাঈদ ইবনু যাইয়্যাদ ইবনে ফায়েদ সূত্রে
... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীছটি বানোয়াট। এ সাঈদ সম্পর্কে আল-আযদী বলেনঃ
তিনি মাতরুক।
ইবনু ছিব্বান পরক্ষণেই বলেনঃ জানিনা সমস্যা কার নিকট হতে? সাঈদ হতে
নাকি তার পিতা অথবা তার দাদা হতে? কারণ আবু সাঈদের বর্ণনা ছাড়া তাদের দু'জনের কোন
বর্ণনা আছে বলে জানা যায় না। আর শাইখ হতে যদি কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী বর্ণনা না
করে, তাহলে সেই শাইখ মাজহুল, তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। কারণ দুর্বল বর্ণনাকারীর
বর্ণনা যে ব্যক্তি ন্যায়পরায়ণ নয় তাকে মাজহুলদের দল হতে বের করে ন্যায়পরায়ণদের
দলভুক্ত করতে পারে না। কারণ দুর্বল ব্যক্তি কর্তৃক বর্ণনা করা আর না করা হুকুম-এর দিক
দিয়ে উভয়ই সমান।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার এ বক্তব্য শক্তিশালী ইঙ্গিত যোগাচ্ছে একথার
যে, তার মাযহাব ছিল দুর্বল হাদীছের উপর আমল করাই জায়েয না। কারণ হুকুমের দিক দিয়ে
দুর্বল বর্ণনাকারী, বর্ণনা না কারীর ন্যায়।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৯৪। যে ব্যক্তি আল্লাহর ফয়সালায় সম্ভষ্ট হবে না এবং আল্লাহর কুদরতের উপর
ঈমান আনবে না, সে যেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন মা’বুদকে তালাশ করে।
হাদীছটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি তাবারানী "আল-মুজামুস সাগীর" (পৃঃ ১৮৭) গ্রন্থে, অনুরূপভাবে
“আল-মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে, আর তার সূত্রে আবু নোয়াঈম “আখবারু আসবাহান" (২/২২৮)
গ্রন্থে এবং আল-খাতীব “তারীখু বাগদাদ" (২/২২৭) গ্রন্থে সুহায়েল ইবনু আদিল্লাহ
সূত্রে. আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হতে মারফূ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
তাবারানী বলেনঃ খালিদ হতে সুহায়েল ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা করেননি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তাকে বলা হয় সুহায়েল ইবনু আবী হাযম। তিনি জামহুর
ওলামার নিকট দুর্বল। ইবনু হিব্বান (১/৩৪৯) বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে এককভাবে
এমন হাদীছ বর্ণনা করতেন যা নির্ভরশীলদের হাদীছের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল না।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
৯৫। যে ব্যক্তি রামায়ান মাসে দশদিন ইতিকাফ করবে তা তার জন্য দুটি হজ্জ
এবং দুটি উমরাহ করার সমতুল্য হয়ে যাবে।
হাদীছটি জাল।
এটি বাইহাকী "আশ-শু'আব" গ্রন্থে হুসাইন ইবনু আলী (রাঃ)-এর
হাদীছ হতে মারফূ হিসাবে বর্ণনা করে বলেছেনঃ সনদটি দুর্বল। মুহাম্মাদ ইবনু যাযান মাতরুক।
ভার সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেনঃ তার হাদীছ লিখা যাবে না। তাতে আম্বাসা ইবনু আবদির রহমানও
রয়েছেন তার সম্পর্কেও ইমাম বুখারী বলেনঃ মুহাদ্দিসগণ তাকে পরিত্যাগ করেছেন। ইমাম যাহাবী
“আয-যোয়াফা" গ্রন্থে বলেছেনঃ তিনি মাতরুক, তাকে জাল করার দোষে দোষী করা হয়েছে।
"ফায়যুল কাদীর" গ্রন্থে এরূপই এসেছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ আম্বাসা সম্পর্কেই আবু হাতিম বলেছেনঃ তিনি হাদীছ
জাল করতেন। ষেমনটি ইমাম যাহাবীর “আল-মীযান” গ্রন্থে এসেছে। অতঃপর তিনি তার কতিপয় হাদীছ
উল্লেখ করেছেন। এটি সেগুলোর একটি। তার সূত্রেই হাদীছটি তাবারানী "আল-মুজামুল কাবীর"
(১/২৯২/১) গ্রন্থে এবং আবু তাহের আল-আম্বারী "আল-মাশীখাহ" (কাফ ১৬২/১-২)
গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। ইবনু হিব্বান (২/১৬৮) বলেনঃ তিনি বহু বানোয়ট ও ভিত্তিহীন হাদীছের
অধিকারী।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৯৬। যাদের নেতৃত্ব দিবে নারী এমন একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি প্রকাশ পাবে, তারা
নাজাতপ্রাপ্ত হবে না। তবে তাদের নেতৃত্ব দানকারী জান্নাতী হবে।
হাদীছটি মুনকার।
এটি আবু সাঈদ ইবনুল আরাবী "আল-মু'জাম" (১/৭৭) গ্রন্থে বর্ণনা
করেছেন। আবু মানসূর ইবনু আসাকির "আল-আরবাউন ফী মানাকিবে উম্মাহাতিল মু'মেনীন"
(২/২২৮ হাঃ ১২) গ্রন্থে সাগানী সূত্রে বর্ণনা করেছেন। উকায়লী "আয-যো'য়াফা"
(২৮৯) গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেনঃ সনদের বর্ণনাকারী উমর ইবনু হাজান্না অনুসরণযোগ্য
নয়। তার মাধ্যম ছাড়া হাদীছটিকে চেনা যায় না। আরেক বর্ণনাকারী আব্দুল জাব্বার ইবনুল
আব্বাস শী'আহ সম্প্রদায়ভুক্ত।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এই আব্দুল জাব্বার সত্যবাদী। তবে উমর ইবনু হাজান্না'
সম্পর্কে উকায়লীর অনুসরণ করে হাফিয যাহাবী বলেনঃ তাকে চেনা যায় না। ইবনু হিব্বান
তাকে "আছ-ছিকাত" (১/১৪৫) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন অপরিচিতদেরকে নির্ভরশীল আখ্যা
দেয়া তার নীতি হওয়ার কারণে। তার এ নির্ভরযোগ্য আখ্যাদানের দ্বারা ধোকায় পড়া যাবে
না। এ ব্যাপারে বার বার সতর্ক করা হয়েছে।
এ ছাড়া আরেক বর্ণনাকারী আতা ইবনুস সায়েবের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল।
অতএব হাদীছটি দুর্বল মুনকার। হাদীছটিকে ইবনুল জাওযী “আল-মাওযু'আত” (২/১০) গ্রন্থে উকায়লীর
সূত্রে উল্লেখ করেছেন এবং আব্দুল জাব্বার দ্বারা সমস্যা বর্ণনা করেছেন। তিনি তাতে ঠিক
কাজটি করেননি! এ কারণেই "আল-লাআলী" (১০৯১) গ্রন্থে সুয়ূতী এবং “তানযীহুশ
শারীয়াহ" (১/১৯৫) গ্রন্থে উকায়লীর ভাষ্য দ্বারা তার প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বলেনঃ
ইবনুল হাজান্না মাতরূকুল হাদীছ।
আমি (আলবানী) বলছিঃ কারণ তিনি মিথ্যুক ছিলেন। অতএব তার হাদীছ গ্রহণযোগ্য
নয়।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
৯৭। লাঠি বহন করা মুমিনের আলামত এবং নাবীগণের সুন্নাত।
হাদীছটি জাল।
হাদীছটি দাইলামী “মুসনাদুল ফিরদাউস” (২/৯৭) গ্রন্থে ইয়াহইয়া ইবনু
হাশিম আল-গাসসানী সূত্রে কাতাদা হতে তিনি আনাস (রাঃ) হতে মারফু' হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি বানোয়াট। যদিও সুয়ূতী তার "আল-ফাতাওয়া"
(২/২০১) গ্রন্থে উল্লেখ করে চুপ থেকেছেন। তিনি "আল-জামেউল সাগীর" গ্রন্থেও
উল্লেখ করেছেন! এ জন্য তার ভাষ্যকার মানাবী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ এই গাসসানী সম্পর্কে
ইমাম যাহাবী "আয-যোয়াফা" গ্রন্থে বলেনঃ তিনি হাদীছ জাল করতেন
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৯৮। যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে কিছু (সূরা ফাতিহা) পাঠ করবে তার মুখকে আগুন
দিয়ে ভরে দেয়া হবে।
হাদীছটি জাল।
এটি ইবনু তাহের "তাযকিরাতুল মাওযুআত" (পৃঃ ৯৩) গ্রন্থে উল্লেখ
করে বলেছেনঃ এটির সনদে মামূন ইবনু আহমাদ আল-হারাবী রয়েছেন। তিনি দাজ্জাল, জাল হাদীছ
বর্ণনাকারী।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার সম্পর্কে পূর্বের হাদীছে আলোচনা করা হয়েছে।
আলোচ্য হাদীছটি ইবনু হিব্বান "আয-যোয়াফা" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। যাহাবী
এটিকে তার বিপদগুলোর একটি হিসাবে গণ্য করেছেন। কোন কোন হানাফী ব্যক্তি অতর্কিতে আক্রমণ
করে উক্ত জাল হাদীছ দলীল হিসাবে গ্রহণ পূর্বক ইমামের পিছনে কিরাআত পাঠ করা হারাম হওয়ার
দলীল দিয়ে থাকেন। আবুল হাসানাত লাখনুভী "আত-তালীকিল মুমযিদ আল মুওয়াত্তা মুহাম্মাদ"
(পৃঃ ৯৯) গ্রন্থে বলেনঃ “আন-নেহায়া” গ্রন্থের লেখকসহ অন্যরা হাদীছটি উল্লেখ করেছেন
মারফূ হিসাবে নিম্নের ভাষায়ঃ ففي فيه جمرة "তার মুখে প্রজ্জ্বলিত আগুনের টুকরা দিয়ে দেয়া হবে।" এটির
কোন ভিত্তি নেই।
তার কিছু পূর্বে বলেছেনঃ ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করা নিষেধ মৰ্মে
কোন সহীহ হাদীছ মারফু' হিসাবে বর্ণিত হয়নি। এ বিষয়ে যা কিছু মারফূ হিসাবে বর্ণনা
করা হয়েছে তা হয় ভিত্তিহীন, অথবা সহীহ নয়। ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ সংক্রান্ত
বিষয়ে পূর্ববতী এবং পরবর্তী আলেমগণ তিনভাগে বিভক্ত হয়েছেন।
১। যেহরী এবং সিররী উভয় ক্ষেত্রে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব।
২। উভয়টিতে চুপ থাকতে হবে।
৩। যেহরী রাকাআতগুলো বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সিররগুলোতে সূরা ফাতিহা পাঠ
করতে হবে।
আমি (আলবানীর নিকট) শেষোক্তটি সঠিকের বেশী নিকটবর্তী। এটিই ইমাম মালেক
ও আহমাদের মাযহাব। এ মতকেই কোন কোন হানাফী মাযহাবের আলেম প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমন
আবুল হাসানাত লাখনুভী তার আলোচিত গ্রন্থটিতে।
উক্ত দাজ্জাল হারাবীর ইমাম শাফেঈ (রহঃ) সম্পর্কে আরো একটি হাদীছঃ (দেখুন
পরেরটি)
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
৯৯। যে ব্যক্তি পরহেযগার আলেমের পিছনে সালাত আদায় করলো, সে যেন নাবীর পিছনে
সালাত আদায় করলো।
হাদীছটির কোন ভিত্তি নেই।
এ কারণেই হাফিয যায়লাঈ “নাসবুর রায়া” (২/২৬) গ্রন্থে তার ভাষায় ইঙ্গিত
করেছেন যে, এটি গারীব। যেসব হাদীছের কোন ভিত্তি নেই সেই সব হাদীছের ব্যাপারে এরূপ বলাটা
তার অভ্যাস। এটি হেফয করে নিন। কারণ এটি তার ব্যক্তিগত থিওরী।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
১০০। যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে ছাড়া সূরা ফাতিহা ব্যতীত এক রাকাআত সালাত
আদায় করল সে যেন সালাতই আদায় করল না।
হাদীছটি দুর্বল।
হাদীছটি কাযী আবুল হাসান আল-খাল'ঈ “আল-ফাওয়ায়েদ” (১/৪৭) গ্রন্থে ইয়াহইয়া
ইবনু সালাম হতে তিনি মালেক ইবনু আনাস হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইয়াহইয়া ইবনু সালামকে দারাকুতনী দুর্বল আখ্যা
দিয়েছেন, যেমনটি “আল-মীযান” গ্রন্থে এসেছে। যায়লাঈ (১/১০) দারাকুতনী হতে নকল করেছেন,
তিনি "গারায়েবে মালেক" গ্রন্থে বলেছেনঃ এটি বাতিল, মালেক হতে সহীহ নয়।
সঠিক হচ্ছে এই যে, এটি মওকুফ। খালঈ কায়ানাবী হতে আর বাইহাকী (২/১৬০) ইবনু বুকায়ের
হতে ... অনুরূপই বর্ণনা করেছেন।
বাইহাকী বলেনঃ মালেক হতে ইয়াহইয়া ইবনু সালাম ও অন্যরা মারফূ' করে
ফেলেছেন। তার দ্বারা দলীল হিসাবে বর্ণনা করাই হালাল নয়।
আমি (আলবানী) বলছি ঃ হাদীছটি إلا وراء الإمام এ অংশটুকু বাদ দিয়ে সহীহ। তার সাক্ষ্য দিচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিম্নোক্ত বাণীঃ لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না তার সালাতই হবে না। এটি বুখারী
ও মুসলিম ওবাদাহ ইবনুস সামেত হতে বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সালাতে ক্ৰটিকারী ব্যক্তিকে প্রথম রাকাআতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার নির্দেশ
দেন। অতঃপর তিনি তাকে তার সব সালাতে তা পাঠ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু ইমামের পিছনে
ছাড়া এ বর্ধিত অংশটুকুর সমর্থনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্য বাণী
হতে প্রমাণ মিলেঃ من كان له إمام فقراءة الإمام له قراءة "যে ব্যক্তির ইমাম থাকবে ইমামের কিরাআত তার কিরাআত হিসাবে গণ্য
হবে।" এটি আমাদের নিকটে সহীহ সূত্রের সংখ্যা অনেক হওয়ার কারণে। সেগুলো যায়লাঈ
(২/৬-১১) উল্লেখ করেছেন। আমিও "আল-ইরওয়া" (নং ৪৯৩) গ্রন্থে উল্লেখ করেছি।
হাদীছটির সকল সূত্রেই দুর্বলতা রয়েছে। কিন্তু সূত্রগুলো সংখ্যায় অনেক হওয়ায় তা
মোচনযোগ্য। মুরসাল হিসাবে সহীহ সূত্রে আব্দুল্লাহ ইবনু শাদ্দাদ হতে বর্ণিত হয়েছে।
তবে শুধুমাত্র যেহরী রাকাআত গুলোতে ইমামের পিছনে পাঠ করবে না। সিররীগুলোতে
পাঠ করতেই হবে। কারণ সিররীগুলোতে ইমামের কিরা'আত তার পিছনের ব্যক্তির কিরা'আত হিসাবে
গণ্য হবে না, তা শুনতে না পারা এবং তার দ্বারা কোন উপকারিতা না পাওয়ার কারণে। এটিই
ইমাম মালেক ও আহমাদ সহ অন্য বিদ্বানদের মত। সম্ভবত এটিই বেশী ইনসাফ ভিত্তিক কথা। যেমনটি
ইবনু তাইমিয়্যাহ “আল-ফাতাওয়া” গ্রন্থে বলেছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
১০১। প্রত্যেক জুম'আর দিবসে আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামের আগুন হতে ছয় লক্ষ
লোককে মুক্ত করে দেন। যাদের সবার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গিয়েছিল।
হাদীছটি মুনকার।
এটি ইবনু হিব্বান "আল-মাজরুহীন" (১/১৬৯) গ্রন্থে, তাম্মাম
"আল-ফাওয়ায়েদ" (১/২৩৬) গ্রন্থে, ইবনু আদী “আল-কামিল” (২/২৯) গ্রন্থে এবং
আলওয়াহেদী “আত-তাফসীর” (৪/১৪৫/১) গ্রন্থে ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়েম আত-তায়েফী সূত্রে
আযওয়ার ইবনু গালিব হতে তিনি সুলায়মান আত-তাইমী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
ইবনু হিব্বান এই আযওয়ারের জীবনীতে বলেনঃ তিনি কম সংখ্যক হাদীছই বর্ণনা
করেছেন। তা সত্ত্বেও নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে মুনকার হাদীছ বর্ণনা করেছেন যার মুতাবায়াত
করা যায় না। সম্ভবত তিনি তার অজান্তে ভুল করতেন। ফলে তিনি যখন এককভাবে বর্ণনা করেছেন
তখন তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না।
তিনি তার এ হাদীছটি উল্লেখ করে আরো বলেছেনঃ এ ভাষাটি বাতিল তার কোন
ভিত্তি নেই।
ইমাম যাহাবী "আল-মীযান" গ্রন্থে বলেছেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীছ।
এমন কিছু নিয়ে এসেছেন যা সঠিক হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। অতএব তিনি মিথ্যা বলেছেন।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
১০২। বিবাহিত ব্যক্তির দুরাকাআত অবিবাহিত ব্যক্তির সত্তর রাকাআতের চেয়েও
উত্তম।
হাদীছটি জাল।
এটি উকায়লী "আয-যোয়াফা" (৪৩২) গ্রন্থে মুজাশে ইবনু আমর
হতে তিনি আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ হতে ... বর্ণনা করেছেন। মুজাশের হাদীছ মুনকার, নিরাপদ
নয়। ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন বলেনঃ তাকে মিথ্যুক হিসাবে পেয়েছি। ইবনু হিব্বান (২/৩২১)
বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে হাদীছ জাল করতেন। তাকে শুধুমাত্র দোষারোপ করার
উদ্দেশ্যেই উল্লেখ করা বৈধ।
উকায়লীর উদ্ধৃতিতে ইবনুল জাওয়ী "আল-মাওযুআত" (২/২৫৭) গ্রন্থে
হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। সুয়ূতী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ তার অন্য সূত্রও রয়েছে।
এ সমালোচনার কোন যৌক্তিকতা নেই। কারণ অন্য সূত্রটি বাতিল। তার দ্বারা সাক্ষ্য (শাহেদ)
গ্রহণ করা যায় না।
এ ছাড়া এটির আরেকটি সমস্যা হচ্ছে এই যে, আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদও
মিথ্যার দোষে দোষী। পূর্বেও তার কতিপয় হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যদি মুজাশে হতে হাদীছটি
নিরাপদ হয় তাহলে তার থেকে নিরাপদ নয়।
অতঃপর আমি হাদীছটির আরেকটি সূত্র পেয়েছি যেটি আবুল হাসান আল-আবনূসী
"আল-ফাওয়ায়েদ" (১/৩২) গ্রন্থে আহমাদ ইবনু মুসলিম হতে তিনি আহমদ ইবনু মুহাম্মাদ
হতে তিনি দাউদ ইবনু আব্দিল্লাহ আন-নুমারী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি সাকেত (নিক্ষিপ্ত)। কারণ আহমাদ ইবনু মুসলিম
এবং দাউদ ইবনু আবদিল্লাহ আন-নুমারীর জীবনী কে বর্ণনা করেছেন পচ্ছি না। আর আহমাদ ইবনু
মুহাম্মাদ মিথ্যুক। ইমাম যাহাবী বলেনঃ আবু হাতিম এবং ইবনু সায়েদ তাকে মিথ্যুক আখ্যা
দিয়েছেন। দারাকুতনী বলেনঃ তিনি দুর্বল। অন্যবার বলেছেনঃ তিনি মাতরূক।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
১০৩। বিবাহিত ব্যক্তির দুই রাকাআত সালাত অবিবাহিত ব্যক্তির বিরাশি রাকাআতের
চেয়েও উত্তম।
হাদীছটি বাতিল।
এটি তাম্মাম আর-রাযী “আল-ফাওয়ায়েদ (৬/১১৮/১) গ্রন্থে এবং যিয়া
"আল-মুখতারাহ" (১/১১৭) গ্রন্থে মাসউদ ইবনু আমর আল-বাকরী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
ইমাম যাহাবী মাস'উদের জীবনীতে বলেনঃ আমি তাকে চিনি না, তার হাদিস বাতিল।
অতঃপর তিনি এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার “আল-লিসান” গ্রন্থে তার বক্তব্যকে
সমর্থন করেছেন।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” (২/১৬০) গ্রন্থে অন্য সূত্র রয়েছে বলার পর বলেছেনঃ
হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ এ হাদীছটি মুনকার, এটির তাখরীজ করার কোন অর্থ হয় না! অতএব
ইমাম সুয়ুতী কর্তৃক হাদীছটির অন্য সূত্র রয়েছে এরূপ বলে ইবনুল জাওয়ীর সমালোচনা করার
কোন অর্থ হয় না। “জামেউস সাগীর” গ্রন্থেও উল্লেখ করাটা অর্থহীন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
১০৪। তিনি যখন সালাত আদায় করতেন তখন তার ডান হাত দ্বারা তার মাথা স্পর্শ
করে বলতেনঃ বিসমিল্লাহিল্লায়ী লা ইলাহা গায়রুহু আর-রাহমানির রাহীম, আল্লাহুম্মাযহাব
আন্নীল হাম্মা ওয়াল হযনা।
হাদীছটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি তাবরানী "আল-মুজামুল আওসাত" (পৃঃ ৪৫১) এবং আল-খাতীব
(১২/৪৮০) কাছীর ইবনু সুলায়েম হতে তিনি আবু সালামাহ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ বর্ণনাকারী কাছীরের কারণে এ সনদটি নিতান্তই দুর্বল।
ইমাম বুখারী ও আবু হাতিম বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীছ। নাসাঈ এবং আল-আযদী বলেনঃ তিনি
মাতরূক। অন্য বিদ্বানগণ তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। হাদীছটি সুয়ুতী "আল-জামে"
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। অথচ তার ভাষ্যকার তার সমালোচনা করেননি।
আমি এটির আরেকটি সূত্র পেয়েছি, সেটি ইবনুস সুন্নী (নং ১১০) এবং আবু
নোয়াইম "আল-হিলইয়্যাহ" (২/৩০১) গ্রন্থে সালামাহ হতে তিনি যায়েদ ইবনুল
আম্মী হতে তিনি মুয়াবিয়াহ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এটি বানোয়াট। কারণ সালামাহ হচ্ছেন আত-তাবীল, তিনি মিথ্যুক।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
১০৫। ইসলামের মধ্যে কোন প্রকার বৈরাগ্যতা নেই।
হাদীছটি দুর্বল।
এটি আবু দাউদ (১৭২৯), হাকিম (১/৪৪৮), ইমাম আহমাদ (১//৩১২), তাবারানী
"আল-মুজামুল কাবীর (৩/১২৮/১) গ্রন্থে এবং যিয়া "আল-মুখতারাহ" (৬৫/৬৮/১)
গ্রন্থে উমার ইবনু আতা হতে তিনি ইকরিমা হতে ... বর্ণনা করেছেন।
হাকিম বলেনঃ সনদটি সহীহ যাহাবী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন!
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি তাদের দু'জনের ধারণা মাত্র। কারণ এই উমার ইবনু
আতা ইবনে ওররায সকলের ঐকমত্যে দুর্বল। যাহাবী নিজে তার সম্পর্কে "আল-মীযান"
গ্রন্থে বলেনঃ
ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন এবং নাসাঈ তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম আহমাদ
বলেছেনঃ তিনি শক্তিশালী নন। তিনি ইবনু আতা ইবনে আবিল খাওয়ার নন। ইবনু আবিল খাওয়ার
নির্ভরযোগ্য।
হাদীছটির একটি মাজহুল শাহেদ রয়েছে। সেটিকে তাবারানী "আল-মুজামুল
কাবীর" (১/৭৯/১) গ্রন্থে কিলাব ইবনু আলী আল-ওয়াহীদী হতে ... বর্ণনা করেছেন। এই
কিলাব মাজহুল যেমনটি যাহাবী এবং ইবনু হাজার বলেছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
১০৬। তোমরা বিবাহ কর তবে তালাক দিও না। কারণ তালাক দিলে তার জন্য আরশ কেঁপে
উঠে।
হাদীছটি জাল।
এটি আবু নোয়াইম “আখবাবু আসবাহান” (১/১৫৭) গ্রন্থে, তার থেকে দাইলামী
(২/১/৩০) এবং আল-খাতীব তার “আত-তারীখ” (১২/১৯১) গ্রন্থে আমর ইবনু জামী সূত্রে জুওয়াইবির
হতে তিনি যহহাক হতে তিনি আন-নাযাল ইবনু সাবরুমা হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আল-খাতীব আমুরের জীবনীতে বলেনঃ তিনি প্রসিদ্ধদের উদ্ধৃতিতে মুনকার হাদীছ
এবং নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে বানোয়াট হাদীছ বর্ণনা করেছেন। ইবনু মা'ঈন তার সম্পর্কে
বলেনঃ তিনি মিথ্যুক খাবীছ ছিলেন।
ইবনুল জাওযী হাদীছটি “আল-মাওযূ’আত” গ্রন্থে আল-খাতীবের সূত্রে উল্লেখ
করে বলেছেনঃ এটি সহীহ নয়, তাতে সমস্যা রয়েছে। যহহাক দূষণীয়। জুওয়াইবির কিছুই না।
আর আমর সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তাকে জাল করার দোষে দোষী করা হতো।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” (নং ১৯১৬) গ্রন্থে অতঃপর ইবনু ইরাক "তানযীহুশ
শারীয়াহ" (১/৩০১) গ্রন্থে তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। তা সত্ত্বেও তিনি হাদীছটি
“আল-জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন!
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
১০৭। যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে এক বছর আযান দিবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব
হয়ে যাবে।
হাদীছটি জাল।
এটি আল-খাতীব "আল-মুওয়াযযিহ" (২/১৮৬) গ্রন্থে আবু কায়েস
দেমাস্কী হতে তিনি ওবাদাহ ইবনু নাসীঈ হতে তিনি আবু মারিয়াম আস-সাকূনী হতে ... বর্ণনা
করেছেন। আল-খাতীব বলেনঃ আবু কায়েস দেমাস্কী হচ্ছেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু সাঈদ আল-মাসলুব।
আল্লাহর কসম! তিনি মিথ্যুক, হাদীছ জালকারী, যিন্দীক।
ইবনু আবী হাতিমও "আল-জারহু ওয়াত-তাদীল" (৪/৪২৬) গ্রন্থে
দৃঢ়তার সাথে বলেছেনঃ তিনি মুহাম্মাদ ইবনু আল-মাসলূব। সম্ভবত যাহাবী তার সম্পর্কে অবহিত
হননি যে কারণে তিনি “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেছেনঃ আমার ধারণা তিনি আল-মাসলূব, হালেক।
তবে হাফিয ইবনু হাজার “আল-কুনা”, "আত-তাহযীব" ও "আত-তাকরীব" গ্রন্থে
দৃঢ়তার সাথে বলেছেনঃ তিনি আল-মাসলূব।
ইমাম আহমাদ তার সম্পর্কে বলেনঃ তার হাদীছ বানোয়াট হাদীছ । তিনি আরো
বলেনঃ তিনি ইচ্ছাকৃত হাদীছ জাল করতেন। ইবনু হিব্বান (২/২৪৭) বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের
উপর হাদীছ জাল করতেন। তাকে দোষারোপ করার উদ্দেশ্য ছাড়া উল্লেখ করাই হালাল নয়। হাকিম
বলেনঃ তিনি হাদীছ জাল করতেন । ইবনুল জাওযী (১/৪৭) বলেনঃ জালকারীরা সংখ্যায় অনেক। তাদের
মধ্যে যারা প্রসিদ্ধ তারা হচ্ছেন ওয়াহাব ইবনু ওয়াহাব আল-কাযী, মুহাম্মাদ ইবনুস সায়েব
আল-কালবী এবং মুহাম্মাদ ইবনু সাঈদ আল-মাসলূব। তাকে সুয়ূতী “আল-লাআলী” (২/৪৭৩) গ্রন্থে
উল্লেখ করেছেন এবং তা স্বীকার করেছেন।
হাদীছটির আরেকটি সূত্র পেয়েছি। সেটি ইবনু আসাকির (১৫/২৮৬/১) বর্ণনা
করেছেন। তাতে আবু আমর শুরাহীল ইবনু আমর আল-আনাসী নামক এক বর্ণনাকারী আছেন। তিনি নিতান্তই
দুর্বল। অনুরূপভাবে তার থেকে বর্ণনাকারী ইবনু নিমরানও তার ন্যায়। মুহাম্মাদ ইবনু আউফ
আল-হিমসী উভয়কেই খুবই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
আবু যুর'আহ ইবনু নিমরান সম্পর্কে বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীছ, তার হাদীছ
লিখা যায় না। দারাকুতনী তাকে দুর্বল বলেছেন। ইবনু আবী হাতিম (৪/২/৩০৭) বলেনঃ আমি আমার
পিতাকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি বলেনঃ তিনি খুবই দুর্বল।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
১০৮। (আল্লাহ) আমাকে আরশের উপর বসাবেন।
হাদীছ বাতিল।
এটি যাহাবী "আল-উলু" (৫৫) গ্রন্থে দুটি সূত্রে আহমাদ ইবনু
ইউনুস হতে তিনি সালামাহ আল-আহমার হতে তিনি আশ'আছ ইবনু তালীক হতে ... বর্ণনা করেছেন।
যাহাবী বলেনঃ এ হাদীছটি মুনকার এর দ্বারা খুশি হওয়া যায় না। এই সালামাহ
মাতরূকুল হাদীছ। আর আশয়াছের ইবনু মাসউদের সাথে সাক্ষাৎ ঘটেনি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীছটির অন্য সূত্রও রয়েছে। কিন্তু সেটি সহীহ
নয়। সেটি সম্পর্কে (৫১৬০) নম্বর হাদীছে বিবরণ আসবে ইনশাআল্লাহ।
হাফিয যাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম হতে মওকুফ হিসাবে বর্ণনা করে বলেছেনঃ
মওকুফ হিসাবেও সনদটি সাব্যস্ত হয়নি।
এ কথাটির পাঁচটি সূত্র রয়েছে। যেগুলো ইবনু জারীর তার তাফসীর গ্রন্থে
উল্লেখ করেছেন। আর আল-মারওয়ায়ী একটি গ্রন্থই রচনা করেছেন।
অতঃপর ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। যার সনদ সহীহ
নয়। তাতে উমর ইবনু মুদরেক রয়েছেন, তিনি মাতরূক। বর্ণনাকারী জুওয়াইবিরও তার ন্যায়।
এটি মুজাহিদের কথা হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। মারফূ’ হিসাবে এটি বাতিল।
জেনে রাখুন। আরশের উপর রাসূল এর বসার ব্যাপারে এ বাতিল হাদীছটি ছাড়া
আর কোন হাদীছ নেই। আর আল্লাহ তা'আলার আরশের উপর বসার ব্যাপারেও কোন সহীহ হাদীছ বর্ণিত
হয়নি। কুরআনের আয়াতে ইসতিওয়ার অর্থ বসা নয়।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
১০৯। যে ব্যক্তি বেশী করে আল্লাহর যিকর করে না, সে ঈমান হতে মুক্ত হয়ে
গেছে।
হাদীছটি জাল।
মুনযেরী "আত-তারগীব" (২/২৩১) গ্রন্থে বলেনঃ তাবারানী “আল-আওসাত”
এবং “মুজামুস সাগীর” গ্রন্থে আবু হুরাইরাহ (রাঃ)-এর হাদীছ হতে বর্ণনা করেছেন। হাদীছটি
গারীব। হায়ছামী "আল-মাজমা" (১০/৭৯) গ্রন্থে বলেনঃ হাদীছটি তাবারানী
"আল-আওসাত" এবং “মুজামুস সাগীর” গ্রন্থে তার শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু সাহল ইবনিল
মুহাজির হতে তিনি মুয়াম্মাল ইবনু ইসমাইল হতে বর্ণনা করেছেন। "আল-মীযান" গ্রন্থে
এসেছেঃ মুহাম্মাদ ইবনু সাহল মুয়াম্মাল ইবনু ইসমাঈল হতে বানোয়াট হাদীছ বর্ণনাকারী।
তিনি যদি ইবনুল মুহাজির হন তাহলে তিনি দুর্বল। আর যদি অন্য কেউ হন তাহলে তার হাদীছ
হাসান!
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাফিয ইবনু হাজার বলেছেনঃ বরং হাদীছটি উভয় অবস্থায়
বানোয়াট। মাজহুল বর্ণনাকারী যখন এককভাবে বর্ণনা করেন তখন তার হাদীছ কোন অবস্থাতেই
হাসান হতে পারে না। এ কথাটি ভাল। যাহাবী "আল-মীযান" গ্রন্থে যে বলেছেনঃ তিনি
হচ্ছেন ইবনু সাহল, তাকে ইবনু হাজার “আল-লিসান” গ্রন্থে সমর্থন করেছেন। তিনি তার হাদীছটি
উল্লেখ করে আরো বলেছেন, স্পষ্টত এটি বানোয়াট। জানা দরকার যে, তাবারানী হাদীছটি “আস-সাগীর”
গ্রন্থে এ বাক্যে বর্ণনা করেননি। বরং তাতে বলা হয়েছেঃ "যে ব্যক্তি বেশী বেশী
আল্লাহর যিকর করবে সে নিফাক হতে মুক্ত হয়ে যাবে।" দুটির মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট।
যদিও তাবারানীর নিকট উভয়টির সনদ একই। তিনি এই মিথ্যার দোষে দোষী মুহাম্মাদ ইবনু সাহল
হতেই বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি দ্বিতীয় শব্দে এককভাবে বর্ণনা করেননি। অন্য সূত্রেও
মুয়াম্মাল ইবনু ইসমাঈল হতে বর্ণনা করেছেন।
তবে দ্বিতীয় শব্দের সমস্যা হচ্ছে এই মুয়াম্মাল ইবনু ইসমাঈল। কারণ
তার হেফযে ক্রটি থাকায় এবং তার বেশী ভুল হওয়ায় তিনি দুর্বল। আবু হাতিম বলেনঃ তিনি
সত্যবাদী, সুন্নাতের ব্যাপারে কঠোর, তবে বহু ভুলকারী। ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল
হাদীছ। আবু যুর'আহ বলেনঃ তার হাদীছের মধ্যে বহু ভুল আছে। এর দ্বারা স্পষ্ট হচ্ছে এই
যে, হাদীছটি প্রথম বাক্যে বানোয়াট যেমনটি ইবনু হাজার বলেছেন আর দ্বিতীয় বাক্যে দুর্বল।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
১১০। বিলাল যখন সালাতের ইকামাত দেয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন বলতেনঃ আসসালামু
আলাইকা আইউহান নাবীয়্যূ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, ইয়ারহামুকাল্লাহ।
হাদীছটি জাল।
এটি তাবারানী "আল-আওসাত" (১/২৭/১) গ্রন্থে মিকদাম ইবনু দাউদ
হতে তিনি আবদিল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনিল মুগীরাহ হতে তিনি কামিল আবুল আলী হতে তিনি
আবু সালেহ হতে তিনি আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ কামিল হতে
একমাত্র আব্দুল্লাহই বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি বানোয়াট। তার সমস্যা হচ্ছে এই ইবনুল মুগীরা।
যাহাবী তার কতিপয় হাদীছ উল্লেখ করে বলেছেনঃ এগুলো বানোয়াট। এ ছাড়া মিকদাম ইবনু দাউদ
নির্ভরযোগ্য নন যেমনটি নাসাঈ বলেছেন। হায়ছামী "মাজমাউয যাওয়ায়েদ" (২/৭৫)
গ্রন্থে আব্দুল্লাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ দুই দিক দিয়ে ক্রটিপূর্ণ সমস্যা বর্ণনা করা হয়েছেঃ
১। তিনি ইবনুল মুগীরাকে দুর্বল বলে শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন। অথচ আপনারা
অবহিত হয়েছেন যে, তিনি জালের অধিকারী। নাসাঈ বলেনঃ তিনি ছাওরী এবং মালেক ইবনু মিগওয়াল
হতে কতিপয় হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তারা উভয়েই সেগুলো বর্ণনা করা হতে আল্লাহকে বেশী
ভয় করতেন।
২। তিনি শুধুমাত্র ইবনুল মুগীরাকেই দোষী করেছেন। অথচ তার থেকে বর্ণনাকারী
মিকদাম তার ন্যায় বা তার নিকটবর্তী (দুর্বলতার দিক দিয়ে)।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
১১১। যে ব্যক্তি বিয়ে করার ক্ষেত্রে সচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও বিয়ে করল না,
সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।
হাদীসটি দুর্বল।
এটিকে ইবনু আবী শাইবাহ “আলমুসান্নাফ’ গ্রন্থে (৭/১/২), ত্ববারানী “আলআওসাত”
গ্রন্থে (১/১৬২/১), বাইহাকী "আসসুনান” (৭/৭৮) ও “শুয়াবুল ঈমান” গ্রন্থে (২/১৩৪/২)
ও অহেদী “আলঅসীত” গ্রন্থে (৩/১১৪/২) ইবনু জুরায়েজ হতে, তিনি উমায়ের ইবনু মুগাল্লিস
হতে, তিনি আবু নাজীহ হতে মারফু হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ কয়েকটি কারণে এ সনদটি দুর্বলঃ
১। সনদটি মুরসাল। কারণ আবু নাজীহ হচ্ছে নির্ভরযোগ্য তাবেঈ, তার নাম
ইয়াসার।
২। উমায়ের ইবনু মুগাল্লিস দুর্বল। তাকে ওকাইলী “আযযুয়াফা” গ্রন্থে
(পৃঃ ৩১৭) উল্লেখ করে বলেছেনঃ তিনি হুরায়েয ইবনু উসমান হতে, তিনি আব্দুর রহমান ইবনু
জুবায়ের হতে বর্ণনা করেছেন। তার মুতাবা'য়াত করা হয়নি এবং তাকে একমাত্র তার দ্বারাই
চেনা যায়। অতঃপর তিনি তার একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন সেটি পরবর্তীতে আসবেঃ
لا ينقطع دولة ولد فلان
হাফিয যাহাবী তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি শামী, তাকে চেনা যায় না।
হাইসামী (৪/২৫১-২৫২) বলেছেনঃ এটিকে ত্ববারানী “আলআওসাত” ও “আলকাবীর”
গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এর সনদটি মুরসাল হাসান যেমনটি ইবনু মাঈন বলেছেন।
তার এ কথা হাসান নয়। কারণ এর সনদে অন্য একটি সমস্যা রয়েছে, তা হচ্ছে
ইবনু জুরায়েজ কর্তৃক আন আন করে বর্ণনা করা। তবে তিনি বাইহাকীর নিকট স্পষ্ট করেছেন
হাদীস শ্রবণ করাকে। ফলে এ সমস্যা থেকে হাদীসটি নিরাপদ। শুধুমাত্র বাকি থাকছে পূর্বে
উল্লেখকৃত সমস্যা। বাইহাকী প্রথম সমস্যা উল্লেখ করেই হাদিসটির সমস্যা বর্ণনা করে বলেছেনঃ
এটি মুরসাল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
১১২। তিন শ্রেণীর লোক কিয়ামাতের দিন শাফায়াত করবেঃ নাবীগণ, আলেমগণ ও শহীদগণ।
হাদীসটি বানোয়াট।
এটিকে ইবনু মাজাহ (৪৩১৩), ওকাইলী “আযযুয়াফা” গ্রন্থে (পৃঃ ৩৩১), ইবনু
আব্দিল বার "জামেউ বায়ানিল ইলম" গ্রন্থে (১/৩০), নাসর মাকদেসী “জুযউম মিন
হাদীস” গ্রন্থে (২৫৫/১) ও ইবনু আসাকির (৯/৩৯১/১) আম্বাসা ইবনু আব্দুর রহমান কুরাশী
হতে, তিনি আল্লাক ইবনু আবু মুসলিম হতে, তিনি আবান ইবনু উসমান হতে, তিনি উসমান ইবনু
আফফান (রাঃ) হতে মারফু' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটিকে ওকাইলী এ আম্বাসার জীবনীতে উল্লেখ করে বলেছেনঃ তার মুতাবা'য়াত
করা হয়নি। আর ইমাম বুখারী হতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি বলেনঃ তাকে মুহাদ্দিসগণ
ত্যাগ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আবু হাতিম বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ থেকেই বুঝা যায় যে, হাফিয ইরাকী “তাখরীজু ইয়াহইয়া”
গ্রন্থে (১/৬) শুধুমাত্র দুর্বল বলে শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন। আর সুয়ূতী তার থেকেও
মন্দ করেছেন, অতঃপর মানাবী। তিনি তার "ফায়েয" গ্রন্থে বলেনঃ মুসান্নিফ হাদীসটি
হাসান হওয়ার চিহ্ন ব্যবহার করেছেন। অথচ ইবনু আদী ও ওকাইলী আম্বাসার দ্বারা হাদীসটির
সমস্যা বর্ণনা করেছেন। আর বুখারী হতে নকল করেছেন যে, তিনি বলেনঃ মুহাদ্দিসগণ তাকে ত্যাগ
করেছেন। তা সত্ত্বেও মানাবী তার “আততাইসীর” গ্রন্থে বলেছেনঃ এর সনদটি হাসান। আর গুমারী
অভ্যাসগতভাবে তার তাকলীদ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
১১৩। আমি ফেরেশতাদেরকে হামযাকে গোসল করাতে দেখেছি।
হাদীসটি দুর্বল।
এটিকে ইবনু সা'দ “আতত্ববাকাত” গ্রন্থে (৩/১৬), মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ্
আনসারী হতে, তিনি আশয়াস হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ হাসানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,
শাহীদদেরকে কি গোসল করানো হয়? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। তিনি আরো বলেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ...।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি সহীহ তবে মুরসাল। আশায়াস ছাড়া বর্ণনাকারীগণ
সকলে নির্ভরযোগ্য, ইমাম বুখারীর বর্ণনাকারী। তিনি হচ্ছেন ইবনু আব্দুল মালেক হুমরানী,
তিনি নির্ভরযোগ্য তবে হাদীসটি মুরসাল। হাসান হচ্ছেন বাসরী আর তার মুরসালগুলো শক্তিশালী।
কারণ তার মুরসাল দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যেমনটি দেখছেন। এটি তার নিকট নিঃসন্দেহে
সহীহ। কিন্তু তা আমাদের মাঝে হাদীসটি সহীহ হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বাস জন্মায় না। হাদীস
শাস্ত্রের নীতির কারণে- তার এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাঝের ব্যক্তি
অজ্ঞাত হওয়ায়। এছাড়াও হাসান বাসরী দুর্বলদের থেকে বর্ণনা করা এবং তাদের থেকে তাদলীস
করার ব্যাপারে পরিচিত। তিনি একবার আলী ইবনু যায়েদ ইবনু জাদ'য়ান হতে বর্ণনা করেন।
অতঃপর তিনি যখন পুনরায় হাদীসটি বর্ণনা করেন তখন তিনি স্মরণ রাখতে পারেননি যে, তিনি
হাদীসটি ইবনু জাদ'য়ান হতে গ্রহণ করেছেন!
এ কারণেই দারাকুতনী বলেনঃ তার মুরসালগুলোর মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে।
হ্যাঁ, হাদীসটিকে মুসনাদ হিসেবে মুয়াল্লা ইবনু আব্দুর রহমান অসেতী
বর্ণনা করেছেন আব্দুল হামীদ ইবনু জা’ফার হতে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনু কা'ব কুরাযী হতে,
তিন আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে, তিনি বলেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
চাচা হামযাহ ইবনু আব্দুল মুত্তালিবকে জুনবী অবস্থায় হত্যা করা হয়েছিল। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তাকে ফেরেশতারা গোসল করিয়েছেন।
এটিকে হাকিম (৩/১৯৫) বর্ণনা করে বলেছেনঃ সনদটি সহীহ।
আমি (আলবানী) বলছিঃ কিন্তু হাফিয যাহাবী তার প্রতিবাদ করে বলেছেনঃ মুয়াল্লা
হালেক (ধ্বংসপ্রাপ্ত)।
তিনি তাকে “আযযুয়াফা” গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেনঃ দারাকুতনী বলেনঃ তিনি
বড়ই মিথ্যুক।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(সমাপ্ত)
কোরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক আরো বিষয় জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ
৫। তাওবা ও ইস্তেগফারে
রিজিক বৃদ্ধি পায়, অভাব-অনটন দূর হয়: (ইহা পরীক্ষিত):
২৬। গান-বাজনা করা ও শোনা ইসলামে হারাম-গান বাজনার ব্যাপারে
ইসলামের হুকুম কি?
২৭। ছবি ও মূর্তির ব্যাপারে ইসলামের হুকুম কি?
২৮। শুকরের মাংস নিষিদ্ধ কেন? কোরআন ও বাইবেল ভিত্তিক আলোচনাঃ
২৯। কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান
৩০। ইসলামি অর্থনীতি : শান্তি ও সমৃদ্ধির অব্যর্থ ব্যবস্থা
৩১। ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমা ষড়যন্ত্র : ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ
৩২। ঘুষের ভয়াবহতা ও তা থেকে উত্তরণের উপায়
২৭। ছবি ও মূর্তির ব্যাপারে ইসলামের হুকুম কি?
২৮। শুকরের মাংস নিষিদ্ধ কেন? কোরআন ও বাইবেল ভিত্তিক আলোচনাঃ
২৯। কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান
৩০। ইসলামি অর্থনীতি : শান্তি ও সমৃদ্ধির অব্যর্থ ব্যবস্থা
৩১। ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমা ষড়যন্ত্র : ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ
৩২। ঘুষের ভয়াবহতা ও তা থেকে উত্তরণের উপায়
৫৩। আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কতিপয় ভ্রান্ত আক্বীদার দ্বন্দ্ব নিরসনঃ
৫৪। দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালাকে কি স্বচক্ষেদেখা যায়? কথিত পির-আউলিয়াগণ দেখেনঃ
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের
লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের
Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির
লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই
শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ
কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে
ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে,
আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
« مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا »
“যে হেদায়েতের
প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের
সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর
তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।”
[মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে
জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা
কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস)
আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী
৩৪৬১)।
হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড
(ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি
চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচিালক-পিএমএমআরসি,
গুলশান-ঢাকা
No comments:
Post a Comment