Search This Blog

Tuesday, September 10, 2019

যেসব কাজে আল্লাহর অভিশাপ নাযিল হয়

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

যেসব কাজে আল্লাহর অভিশাপ নাযিল হয়

 

ভূমিকাঃ মানুষ এমন অনেক কাজ করে থাকে যেগুলি কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এই কবীরা গুনাহগুলির মধ্যে কিছু আছে যা করলে মানুষের উপর অভিশাপ নেমে আসে। অভিশাপকে আরবীতে বলা হয় ‘লা‘নত’। লা‘নতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বলা হয় ‘মাল‘ঊন’। নিম্নে এমন কিছু কাজের কথা উল্লেখ করা হলো যেগুলি করলে লা‘নত বর্ষিত হয়।

(১) শিরক বা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করাঃ

শিরক মানব জীবনের ভয়ঙ্করতম পাপ। তাওবা বা অনুতপ্ত হয়ে পাপ বর্জন করা সকল পাপের ক্ষমার পথ। তবে মহান আল্লাহ তাওবা ছাড়াও নেক কর্মের কারণে, শাস্তির মাধ্যমে, শাফাআতের মাধ্যমে বা তাঁর অপার করুণায় অন্য সকল পাপ ক্ষমা করতে পারেন। তবে শিরকের পাপ তিনি তাওবার মাধ্যমে শিরক বর্জন ছাড়া ক্ষমা করেন না।

মহান আল্লাহ বলেন:

‘আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করেন না। তা ছাড়া অন্য কিছু যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। এবং যে কেউ আল্লার সাথে শরীক করে সে এক মহাপাপ করে।’’ (সূরা (৪) নিসা: ৪৮ আয়াত)।

এছাড়া সকল পাপ বা মহাপাপে লিপ্ত ব্যক্তির জন্যও জাহান্নামের শাস্তির পর জান্নাত লাভের আশা থাকে। কিন্তু শিরক-কুফরে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মৃত্যু হলে তার আর কোনো আশা থাকে না।

মহান আল্লাহ বলেন:

“কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত নিষিদ্ধ করেন ও তার আবাস জাহান্নাম; জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’’ (সূরা (৫) মায়িদা: ৭২ আয়াত)।

সর্বোপরি শিরক-কুফর মানুষের অন্যান্য নেক আমলও বিনষ্ট করে। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:

‘‘তোমার এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, ‘তুমি আল্লাহর শরীক স্থির করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত’।’’ (সূরা (৩৯) যুমার: ৬৫ আয়াত)।

আমরা দেখেছি যে, আরবের কাফিরগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য অনেক ইবাদত করত। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্জ-উমরা, কুরবানী ইত্যাদি ইবাদত পালন করত। কিন্তু আল্লাহর নিকট তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে বারবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শিরকযুক্ত নেক আমল সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:

‘‘এবং আমি তাদের (কাফির-মুশরিকদের) আমলের প্রতি অগ্রসর হব এবং তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।’’ (সূরা (২৫) ফুরকান: ২৩ আয়াত)।

শিরক বা কুফরী করার পর তওবা না করে মারা গেলে তাদের উপরে লা‘নত বর্ষিত হয়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাস করে এবং অবিশ্বাসী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তাদের উপরে আল্লাহর লা‘নত এবং ফেরেশতা মন্ডলী ও সমগ্র মানব জাতির লা‘নত’। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৬১-১৬২)।

শিরক সম্পর্কে রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার প্রিয় বন্ধু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে এই উপদেশ দিয়েছেনঃ তুমি আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করো না, যদিও তোমাকে টুকরা টুকরা করে ছিন্নভিন্ন করা হয় অথবা আগুনে ভস্মীভূত করা হয়। তুমি স্বেচ্ছায় ফরয নামায ত্যাগ করো না। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় তা ত্যাগ করে তার থেকে (আল্লাহর ) যিম্মদারি উঠে যায়। তুমি মদ্যপান করো না। কেননাতা সর্বপ্রকার অনিষ্টের চাবিকাঠি। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০৩৪, আত-তালীকুর রাগীব ১/১৯৫, ইরওয়া ২০৮৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আবূ বকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের সব থেকে বড় গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করব না? আমরা বললামঃ অবশ্যই সতর্ক করবেন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে অংশীদার গণ্য করা, পিতা-মাতার নাফরমানী করা। এ কথা বলার সময় তিনি হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর (সোজা হয়ে) বসলেন এবং বললেনঃ মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, দু’বার করে বললেন এবং ক্রমাগত বলেই চললেন। এমনকি আমি বললাম, তিনি মনে হয় থামবেন না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৭৬, ২৬৫৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আল্লাহ তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেওয়াঃ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেওয়া লা‘নতের কারণ। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে লা‘নত করেন। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাকর শাস্তি’। (সুরা আহযাব ৩৩/৫৭)।

তিনি আরও বলেন, “তাদের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে, ‘সে প্রত্যেক কথায় কর্ণপাত ক’রে থাকে।’ তুমি বলে দাও, ‘সে কর্ণপাত তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর। সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনায়ন করে এবং মু’মিনদেরকে বিশ্বাস করে। আর সে তোমাদের মধ্যে বিশ্বাসী লোকেদের জন্য করুণাস্বরূপ। যারা আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।’ (সুরা তাওবাহঃ ৬১)।

(৩) গায়রুল্লাহর নামে যবেহ করাঃ

ছালাত-ছিয়াম, যবেহ-কুরবানী কেবল আল্লাহর নামে হতে হবে। এসব আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে করা হলে, সেটা লা‘নতের কারণ হবে।

আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু যবেহ ও বলি দেওয়া শির্কে আকবর বা বড় শির্ক-এর অন্যতম।

আল্লাহ বলেন,

“আপনার প্রভূর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং যবেহ করুন”। (সূলা আল-কাওসার, আয়াত: ২)।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

যুহায়র ইবনু হারব ও সুরায়জ ইবনু ইউনুস (রহঃ)....আবূ তুফায়ল আমির ইবনু ওয়াসিলাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী ইবনু আবূ তালিব (রাযিঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক লোক তার নিকট এসে বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে আড়ালে কি বলেছিলেন? রাবী বলেন, তিনি রেগে গেলেন এবং বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের কাছ থেকে গোপন রেখে আমার নিকট একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি (বিশেষ শিক্ষণীয়) কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল- হে আমীরুল মুমিনীন! সে চারটি কথা কি? তিনি বললেনঃ ১. যে লোক তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন, ২. যে লোক আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কারো নামে যাবাহ করে আল্লাহ তার উপরও অভিসম্পাত করেন, ৩. ঐ ব্যক্তির উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, যে কোন বিদ’আতী লোককে আশ্রয় দেয় এবং ৪. যে ব্যক্তি জমিনের (সীমানার) চিহ্নসমূহ অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করে, তার উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫০১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৭৮,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০৭০, সুনান আননাসায়ী ৪৪২২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৭০, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা- ৬০২, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ০৫,  ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯৬২, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যবেহ-এর সঙ্গে জড়িত হারাম দু’প্রকার। যথা:

(ক) আল্লাহ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে যবেহ করা। যেমন, দেবতার কৃপা লাভের জন্য।

(খ) আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নাম নিয়ে যবেহ করা। উভয় প্রকার যবেহকৃত পশুর মাংস খাওয়া হরাম।জাহেলী আরবে জিনের উদ্দেশ্যে প্রাণী যবেহ-এর রেওয়াজ ছিল, যা আজও বিভিন্ন আঙ্গিকে কোনো কোনো মুসলিম দেশে চালু আছে। সে সময়ে কেউ বাড়ী ক্রয় করলে কিংবা তৈরি করলে অথবা কূপ খনন করলে তাদের ওপর জিন্নের উপদ্রব হতে পারে ভেবে পূর্বাহ্নেই তারা সেখানে বা দরজার চৌকাঠের উপরে প্রাণী যবেহ করত। এরূপ যবেহ সম্পূর্ণরূপে হারাম।

 (৪) আল্লাহর গ্রন্থে সংযোজন-বিয়োজন করাঃ

মহাগ্রন্থ আল-কুরআন আল্লাহর কিতাব। এতে সংযোজন বিয়োজনের কোন অধিকার কারো নেই। কেউ এরূপ করতে গেলে সে অভিশপ্ত হবে। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছয়জন ব্যক্তিকে আমি লা‘নত করি| আল্লাহ তা‘আলাও তাদের উপর লা‘নত করেন। আর প্রত্যেক নবী যারা মুসতাজাবুদ দাওয়াহ, তারাও তাদের উপর লা‘নত করেন। তন্মধ্যে যে আল্লাহর কিতাবে সংযোজন করে এবং তাক্বদীর বা ভাগ্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে’। (ইবনু বাত্তা, আল-ইবানাতুল কুবরা ১৫৩১, ছহীহ)।

আইশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ছয় শ্রেণীর লোককে আমি অভিসম্পাত করছি। আল্লাহ তা’আলা এবং সকল নবী (আঃ) এদেরকে অভিসম্পাত করেছেন। তারা হলঃ আল্লাহ তা’আলার কিতাবের বিকৃতিসাধনকারী, আল্লাহ তা’আলা নির্ধারিত তাকদীর অস্বীকারকারী, আল্লাহ যাকে অপদস্ত করেছেন তাকে সম্মানিত করার এবং যাকে ইজ্জত দিয়েছেন তাকে অপমান করার জন্য ক্ষমতা দখলকারী, আল্লাহ তা’আলার হেরেমে (হেরেম শরীফে) রক্তপাতকারী, আমার বংশধরের রক্তপাত আল্লাহ তা’আলা যা হারাম করেছেন তার রক্তপাতকারী এবং আমার প্রদর্শিত পথ (সুন্নাত) ত্যাগকারী। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৫৪)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

(৪) তাক্বদীরকে অস্বীকার করাঃ

তাক্বদীরে অবিশ্বাস করা একটি কবীরা গুনাহ্ তথা কুফরিও বটে। তাই তো তাক্বদীরে অবিশ্বাসকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা।

আবুদ্দারদা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘‘মাতা-পিতার অবাধ্য, মদ্যপানে অভ্যস্ত এবং তাক্বদীরে অবিশ্বাসী ব্যক্তিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না’’। (আহমাদ : ৬/৪৪১ সা’হীহাহ্, হাদীস ৬৭৫)।

ইবনু দাইলামী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মনে এই তাকদীর সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ দানা বাঁধে। তাই আমি এই ভেবে শংকিত হই যে, তা আমার দ্বীন ও অন্যান্য কার্যক্রম নষ্ট করে দেয় কিনা। তাই আমি উবাই ইবনু কাব (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আবূল মুনযির! আমার মনে এই তাকদীর সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ দানা বেঁধেছে, তাই আমি এই ভেবে শংকিত হই যে, তা আমার দ্বীন ও অন্যান্য কার্যক্রমকে নষ্ট করে দেয় কিনা। অতএব এ সম্পর্কে আমাকে কিছু বলুন। আশা করি আল্লাহ তার দ্বারা আমার উপকার করবেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা ঊর্ধলোকের ও ইহলকের সকলকে শাস্তি দিতে চাইলে তিনি অবশ্যই তাদের শাস্তি দিতে পারেন। তথাপি তিনি তাদের প্রতি জুলুমকারী নন। আর তিনি তাদেরকে দয়া করতে চাইলে তাঁর দয়া তাদের জন্য তাদের কাজকর্মের চেয়ে কল্যাণময়।

যদি তোমাদের নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ বা উহূদ পাহাড়ের মত সোনা থাকতো এবং তুমি তা আল্লাহ্র রাস্তায় খরচ করতে থাকো, তবে তোমার সেই দান কবূল করা হবে না, যাবৎ না তুমি তাকদীরের উপর ঈমান আনো। অতএব তুমি জেনে রেখো! যা কিছু তোমার উপর আপতিত হয়েছে, তা তোমার উপর আপতিত হতে কখনো ভুল হতো না এবং যা তোমার উপর আপতিত হওয়ার ছিল না তা ভুলেও কখনো তোমার উপর আপতিত হবে না। তুমি যদি এর বিপরীত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাও, তাহলে তুমি জাহান্নামে যাবে। (সুনান ইব্নু মাজাহ ৭৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬৯৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৫, আহমাদ ২১০৭৯, ২১১০২, ২১১৪৪, ফিললুল জান্নাহ ১৪৫, তাখরীজুত তাহরীয়াহু ৪৪৭, আবূ ‘আস্বিম/আস্-সুন্নাহ্ : ২৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

যারা তাক্বদীরে অবিশ্বাসী তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষায় এ উম্মতের অগ্নিপূজক বলে আখ্যায়িত। তারা অসুস্থ হলে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের কুশলাদি জানা যাবে না। মরে গেলে তাদের নামাযে জানাযায় উপস্থিত হওয়া যাবে না এবং কোথাও তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে তাদেরকে সালাম করা যাবে না।

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ উম্মাতের তারাই মাজুসী (অগ্নিপূজক) যারা আল্লাহ্র নির্ধারিত তাকদীরকে অস্বীকার করে। এরা রোগাক্রান্ত হলে তোমরা তাদের দেখতে যেও না। তারা মারা গেলে তোমরা তাদের জানাযায় হাজির হয়ো না। এদের সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হলে তোমরা এদের সালাম দিও না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৯২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৭, আহমাদ ৫৩২৭, সহীহুল জামি ৪৪৪২, ফিলাল ৩২৮, ত্বাবারানী/সগীর, হাদীস ১২৭ আবূ ‘আস্বিম/আস্-সুন্নাহ্ : ৩২৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছয় ব্যক্তিকে আমি লা‘নত করি, আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেন এবং প্রত্যেক নবী লা‘নত করেছেন। (তারা হচ্ছে) আল্লাহর কিতাবে সংযোজনকারী, তাক্বদীরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী, শক্তি দ্বারা ক্ষমতা দখলকারী যে ক্ষমতার বলে সে আল্লাহ তা‘আলা যাকে অপদস্থ করেছেন তাকে সম্মানিত করে এবং আল্লাহ তা‘আলা যাকে সম্মানিত করেছেন তাকে অপদস্থ করে, আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তসমূহকে হালাল জ্ঞানকারী, আমার পরিবার-পরিজনদের মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা হারাম করেছেন তাদেরকে হালাল জ্ঞানকারী ও আমার সুন্নাত পরিত্যাগকারী’। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৫৪)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

(৫) রাসূল (ছাঃ)-এর নাফরমানী করাঃ

যারা রাসূল (ছাঃ)-এর নাফরমানী করে তাদের উপর তিনি লা‘নত করেছেন। আর তারা ক্বিয়ামত দিবসে একে অপরকে লা‘নত করতে থাকবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

‘যেদিন তাদের মুখমন্ডল আগুনে ওলট-পালট করা হবে, সেদিন তারা বলবে, হায়! যদি আমরা আল্লাহকে মানতাম ও রাসূলকে মানতাম! ‘তারা আরও বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতাদের ও বড়দের আনুগত্য করতাম। অতঃপর তারাই আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে তুমি দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং তাদেরকে মহা অভিশাপ দাও’। (সুরা আহযাব ৩৩/৬৬-৬৮)।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

 “রাসুল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।” (সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭)।

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন আল-কুরআনে বলেন,

“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে ব্যাপারে তাদের নিজেদের কোনো রকম (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার থাকবে না। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করল, সে নিঃসন্দেহে সুস্পষ্টভাবে গোমরাহ (পথভ্রষ্ট) হলো।” (সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৬)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অবাধ্যতা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে পৌঁছানো এবং তাঁর রিসালাতের বাণী প্রচারই আমার দায়িত্ব। আর যে- কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।” (সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ২৩)।

আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য না করা আমল বরবাদ হওয়ার কারণ:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসুলের আনুগত্য কর, আর তোমরা তোমাদের আমলগুলো বিনষ্ট করো না।” (সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৩)।

নির্দ্বিধায় আল্লাহ তা‘আলার রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফয়সালা মানতে হবে,

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“কিন্তু না, আপনার রবের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের ঝগড়া-বিবাদের বিচারের ভার আপনার ওপর অর্পণ না করে, অতঃপর আপনার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের মনে কোনো দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫)।

আল্লাহ তা‘আলা ও তার রাসূলের আনুগত্য না করলে ফিতনা ও শাস্তি অবতীর্ণ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

সূরা নূরে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“কাজেই যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপদ বা বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩)।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“আর আপনি তাদেরকে প্রশ্ন করলে তারা অবশ্যই বলবে, ‘আমরা তো আলাপ- আলোচনা ও খেল-তামাশা করছিলাম।’ বলুন, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে বিদ্রূপ করছিলে?’ ‘তোমরা ওযর পেশ করো না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফুরী করেছ।” (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬৫ -৬৬)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৮০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৩, সহীহ আল জামি‘ ৪৫১৩, আহমাদ ৮৭২৮, সহীহাহ্ ৩১৪১, (আধুনিক প্রকাশনী ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে) বর্ণিত হয়েছে যে, (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,) যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলারই আনুগত্য করল আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলারই নাফরমানী করল। আর যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করল, সে ব্যক্তি আমারই আনুগত্য করল আর যে ব্যক্তি আমীরের নাফরমানী করল সে ব্যক্তি আমারই নাফরমানী করল। ইমাম তো ঢাল স্বরূপ। তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ এবং তাঁরই মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জন করা হয়। অতঃপর যদি সে আল্লাহর তাকওয়ার নির্দেশ দেয় এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে, তবে তার জন্য এর পুরস্কার রয়েছে আর যদি সে এর বিপরীত করে তবে এর মন্দ পরিণাম তার উপরই বর্তাবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭১৩৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৫৯, ৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩৫, নাসায়ী ৪১৯৩, ৫৫১০, আহমাদ ৭৩৮৬, ৭৬০০, ২৭৩৫০, ৮৩০০, ৮৭৮৮, ৯১২১, ৯৭৩৯, ১০২৫৯, আয-যিলাল ১০৬৫, ১০৭৮,  ইরওয়াউল গালীল ৩৯৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) মদীনা বা অন্যত্র বিদ‘আত প্রসার করাঃ

মদীনায় বিদ‘আতের বিস্তার ঘটানো লা‘নতের কারণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

হামিদ ইবনু উমার (রহঃ)....আসিম (রহঃ) বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মদীনাকে হারাম করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এখান থেকে ওখানের মধ্যবর্তী স্থান। অতএব যে ব্যক্তি এখানে কোন পাপ করে, তিনি পুনরায় আমাকে বললেন, তা খুবই ভয়ংকর ব্যাপার যে, এখানে কোন পাপ করে তার উপর আল্লাহ, তার মালাক এবং সমগ্র মানব জাতির লা’নাত। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তার ফারয (ফরয) অথবা নাফল কোন ইবাদাতই কবুল করবেন না।* রাবী বলেন, আনাস (রাযিঃ) এর পুত্র বললেন, “অথবা যে কোন পাপীকে আশ্রয় দিল।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৩২১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩১৮৯, ইসলামীক সেন্টার ৩১৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে যে কোন স্থানেই বিদ‘আত করা বা প্রসার করা হোক না কেন তা লা‘নত ডেকে আনবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

(ক) ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: (হে লোক সকল!) কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে খালি পায়ে, খালি দেহে ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। তারপর তিনি (সা.) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন- “আমি তোমাদেরকে আবার আমার কাছে ফিরিয়ে আনব যেমন প্রথমবার তৈরি করেছিলাম, এটা আমার প্রতিশ্রুতি, যা আমি অবশ্যই পূরণ করব"- (সূরাহ আল আম্বিয়া ২১: ১০৪)। [অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন,] সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরিধান করানো হবে, তিনি হবেন ইবরাহীম আলায়হিস সালাম। তিনি (সা.) আরো বলেছেন, আমি দেখব যে, আমার উম্মতের কিছুসংখ্যক লোককে গ্রেফতার করে বামদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন আমি বলব, তারা যে আমার উম্মতের কিছু লোক, তারা যে আমার উম্মতের কিছু লোক। (কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?) তখন আল্লাহ বলবেন, যখন থেকে আপনি তাদেরকে রেখে পৃথক হয়ে চলে এসেছেন, তখন হতেই তারা দীনকে পরিত্যাগ করে উল্টা পথে চলেছিল। তিনি (সা.) বলেন, তখন আল্লাহর নেক বান্দা ’ঈসা আলায়হিস সালাম যেমন বলেছিলেন অনুরূপ বলব, ’আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম ততদিনই আমি তাদের অবস্থা অবহিত ছিলাম....আপনি সর্বশক্তিমান ও মহাজ্ঞানী’ পর্যন্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৩৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৪৭, ৩৩৪৯, ৪৩৩৭, ৪৬২৫, ৪৬২৬, ৪৬৪০, ৬৫২৪, ৬৫২৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৭০৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৬০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪২৩, নাসায়ী ২০৮১, সহীহুল জামি ৭৮৭০, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩৫৭৬, সিলসিলাতুস সহীহাহ ৩৪৬৯, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩৪৩৯৫, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ ৪৮৩, মুসনাদে বাযযার ২০২৩, মুসনাদে আহমাদ ১৯৫০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের কাছে পৌছব। যে ব্যক্তি আমার কাছে পৌছবে, সে তার পানি পান করবে। আর যে একবার পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না। আমার কাছে এমন কিছু লোক আসবে যাদেরকে আমি চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। অতঃপর আমার ও তাদের মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, তারা তো আমার উম্মত। তখন আমাকে বলা হবে, আপনি জানেন না, আপনার অবর্তমানে তারা যে কি সকল নতুন নতুন মত পথ তৈরি করেছে। তা শুনে আমি বলব, যারা আমার অবর্তমানে আমার দীনকে পরিবর্তন করেছে, তারা দূর হোক (অর্থাৎ এ ধরনের লোক আমার শাফা’আত ও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৭১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৮৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৯৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৪৪, সহীহুল জামি ২৪৬৮, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩১৬৬৭, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ ৭৭৯, মুসনাদে আহমাদ ৩৮১২, আবূ ইয়া'লা ৭৪৭৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৯৮৫, শু’আবূল ঈমান ৩৬০, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৪০৯৯, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৬৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৭৪, ইসলামিক সেন্টার ৫৮০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইসলামে নতুন কিছু প্রবর্তন করলে তা বর্জনীয়

(ক) আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের এই দীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করবে যা তাতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। ইবনু ঈসা (রহঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি আমাদের আচার-অনুষ্ঠানের বিপরীত কোনো কিছু প্রবর্তন করলে তা বর্জনীয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬০৬,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৬৯৭,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭১৮, আহমাদ ২৬০৯২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫১৪))। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিয়ামতে রাসুল সাঃ  হাওজে কাওসারের নিকট  সকল উম্মতের মধ্যে যাদের মুখ ও হাত-পা উজ্জ্বল দেখবেন তাদেরকে তিনি তারঁ উম্মত বলে চিনতে পারবেন

(খ) আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার হাওযের (উভয় পার্শ্বের) দূরত্ব আয়লাহ ও ’আদন-এর মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকেও অধিক। তার পানি বরফের চেয়ে অধিক সাদা এবং দুধমিশ্রিত মধুর তুলনায় অনেক মিষ্ট। তার পানপাত্রসমূহ নক্ষত্রের সংখ্যা অপেক্ষা অধিক। আর আমি আমার হাওযের কাওসারে আগমন করা থেকে লোকেদেরকে (অন্যান্য উম্মতদেরকে) তেমনিভাবে বাধা দেব, যেমনিভাবে কোন লোক তার নিজের হাওয থেকে অন্যের উটকে পানি পানে বাধা দিয়ে থাকে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেদিন কি আপনি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? তিনি (সা.) বললেন, হ্যাঁ, সেদিন তোমাদের বিশেষ চিহ্ন থাকবে যা অন্যান্য উম্মাতের কারো জন্য হবে না। তোমরা আমার কাছে এমন অবস্থায় আসবে যে, তোমাদের মুখমগুল এবং হাত-পা উযূর কারণে উজ্জ্বল থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৬৮,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৭, সহীহুল জামি ৩৮২১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ১১৪৬, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ২৬১৮, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ১৪১৪৬, মুসনাদে বাযযার ৫০৫৬, মুসনাদে আহমাদ ২৭৯৬, সহীহ ইবনু খুযায়মা ২৭৩৩, শু’আবূল ঈমান ৪০৩৪, দারিমী ২৮৩৭, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৪২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ভালভাবে অযু করে কতোজনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে। যারা সালাত আদায় করে না তাদেরকে কিয়ামতে রাসুল সাঃ চিনতে পারবেন না)

বিদআতিদের কোনো ফরজ-নফল ইবাদত আল্লাহর নিকট গৃহিত হবে না

(ক)  ইব্রাহীম তাইমী (রহ.)-এর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, আমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব ও এই সহীফায় যা আছে, এছাড়া অন্য কোন কিতাব নেই, যা আমরা পাঠ করে থাকি। তিনি বলেন, এ সাহীফায় রয়েছে, যখমের দন্ড বিধান, উটের বয়সের বিবরণ এবং আইর পর্বত থেকে সওর পর্যন্ত মদিনা্ হারাম হবার বিধান। যে ব্যক্তি এর মধ্যে বিদ্‘আত উদ্ভাবণ করে কিংবা বিদ্আতীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। আল্লাহ তার কোন নফল ও ফরজ ‘ইবাদাত কবূল করেন না। আর যে নিজ মাওলা ব্যতীত অন্যকে মাওলা হিসেবে গ্রহণ করে, তার উপর একই রকম লা‘নত। আর নিরাপত্তা দানের ক্ষেত্রে সর্বস্তরের মুসলিমগণ একইভাবে দায়িত্বশীল এবং যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের চুক্তি ভঙ্গ করে তার উপরও তেমনি অভিসম্পাত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৭২, ১১১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কুরআন এবং এ কাগজে যা লিখা আছে তা ছাড়া কোন কিছু লিপিবদ্ধ করিনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আয়ির পর্বত হতে এ পর্যন্ত মদিনার হরম এলাকা। যে কেউ দ্বীনের ব্যাপারে বিদ্‘আত উদ্ভাবণ করে কিংবা কোন বিদ্‘আতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ তা‘আলা, ফেরেশতা ও সকল মানুষের লা’নত। তার কোন ফরজ কিংবা নফল ‘ইবাদাত গৃহীত হবে না। আর সকল মুসলিমের পক্ষ হতে নিরাপত্তা একই স্তরের। সাধারণ মুসলিম নিরাপত্তা দিলে সকলকে তা রক্ষা করতে হবে। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দেয়া নিরাপত্তা বাধাগ্রস্ত করবে তার উপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত এবং ফেরেশতামন্ডলী ও সকল মানুষের। তার কোন নফল কিংবা ফরজ ‘ইবাদাত গৃহীত হবে না। আর যে স্বীয় মনিবের অনুমতি ব্যতীত অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বের চুক্তি করে, তার উপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত এবং ফেরেশতামন্ডলী ও সকল মানুষের। তার কোন নফল কিংবা ফরজ ‘ইবাদাত কবূল হবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৭৯, ১১১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৫২ প্রথমাংশ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আমি ওদের কৃতকর্মগুলির প্রতি অভিমুখ করে সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণা (স্বরূপ নিষ্ফল) করে দেব”। (সুরা ফুরকান ২৩)।

(৭) কবরকে মসজিদ তথা সিজদার স্থানে পরিণত করাঃ

কবরের উপরে বা কবরকে সামনে রেখে সিজদা করলে লা‘নত বা অভিশাপ বর্ষিত হয়। উবাইদুল্লাহ ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবন ’উতবাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। আয়িশাহ ও ’আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযি.) বলেছেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মৃত্যু পীড়া শুরু হলে তিনি তাঁর একটা চাদরে নিজ মুখমণ্ডল আবৃত করতে লাগলেন। যখন শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হলো, তখন মুখ হতে চাদর সরিয়ে দিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বললেনঃ ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নবীদের (নবীদের) কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। (এ বলে) তারা যে (বিদ’আতী) কার্যকলাপ করত তা হতে তিনি সতর্ক করেছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩৫, ৪৩৬, ১৩৩০, ১৩৯০, ৩৪৫৩, ৩৪৫৪, ৪৪৪১, ৪৪৪৩, ৪৪৪৪, ৫৮১৫, ৫৮১৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১০৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩১, আহমাদ ১৮৮৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, সাবধান! তোমাদের আগে যারা ছিল তারা তাদের নবী ও বুজুর্গ লোকেদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। সাবধান! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ কাজ হতে নিশ্চিতভাবে নিষেধ করছি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১০৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩২, ইরওয়া ২৮৬, সহীহ আল জামি‘ ২৪৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যায়েদ ইবনু আসলাম (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত করবেন না, যেখানে ছালাত আদায় করা হবে। ঐ জাতির উপর আল্লাহ কঠিন শাস্তি বর্ষণ করুন, যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৭৫৪৪, সনদ ছহীহ)।

(৮) যে ব্যক্তি কিছাছ বা দিয়াত প্রদানে বাধা দেয়ঃ

হত্যার বদলে হত্যা অথবা তার বদলে রক্তমূল্য গ্রহণে বাধা দেওয়া লা‘নতের কারণ।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি অন্ধ বিদ্বেষ অথবা গোত্রীয় বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে পাথর, চাবুক অথবা লাঠির আঘাতে হত্যাকান্ড ঘটায় তার উপর কতলে খাতার দিয়াত ধার্য হবে। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে তার উপর কিসাস বাধ্যকর হবে। আর যে ব্যক্তি হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণের মধ্যে প্রতিবন্ধক হবে তার উপর আল্লাহর, ফেরেশতাকুলের এবং মানবজাতির অভিসম্পাত। তার নফল অথবা ফরয কোন ইবাদতই কবুল করা হবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৩৫, সুনান আননাসায়ী ৪৭৮৯, ৪৭৯০, সুনান আবূ দাউদ ৪৫৩৯, সহীহ আল জামি' আস-সগীর ৬৪৫০, ৬৪৫১,  ছহীহুল জামে‘ ২১৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অর্থাৎ যারা খুনীকে বাঁচানোর চেষ্টা করে বা বিভিন্ন কৌশলে আসল খুনীর বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেষ্টা করে তাদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সমগ্র মানবজাতির পক্ষ হতে লা‘নত বর্ষিত হতে থাকে।

(৯) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করাঃ

মানুষ একে অপরের সাথে বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িত। মানুষের মাঝের এই সম্পর্কের নাম হচ্ছে ‘আত্মীয়তা’। পরস্পরের সাথে জড়িত মানুষ হচ্ছে একে অপরের ‘আত্মীয়’। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে আত্মীয়তার সম্পর্ক সর্বতোভাবে জড়িত। আত্মীয় ছাড়া এ জীবন অচল। আত্মীয়দের সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও ভালবাসা নিয়েই মানুষ এ পার্থিব জীবনে বেঁচে থাকে। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় না থাকলে জীবন হয়ে যায় নীরস, আনন্দহীন, একাকী ও বিচ্ছিন্ন। তাই পার্থিব জীবনে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

(ক)  আল্লাহ বলেন,

“পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং যমীনে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্যই রয়েছে লা’নত এবং তাদের জন্য রয়েছে আখেরাতের মন্দ আবাস”। (সুরা রাদ ২৫)।

(খ) আল্লাহ বলেন,

“ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। ওরা তো তারা, যাদেরকে আল্লাহ অভিশপ্ত করে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন”। (সুরা মোহাম্মাদ ২২-২৩)।

(গ) আবূ বকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (ন্যায়পরায়ণ শাসকের বিরুদ্ধে) বিদ্রোহ এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মত মারাত্মক আর কোন গুনাহ নাই, যার শাস্তি আল্লাহ ত্বরিতে দুনিয়াতে দেন এবং আখেরাতের জন্যও জমা রাখেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২১১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫১১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯০২,আহমাদ ১৯৮৬১, ১৯৮৮৫, সহীহাহ ৯১৭, আত-তালীকুর রাগীব ৩/২২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) যুবায়র ইবনু মুত’ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫৬, আহমাদ ১৬৭৩২, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবু মূসা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তিন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ও যাদুতে বিশ্বাসী”। (আহমদ, হাদীস নং ১৯৫৮৭; হাকিম, হাদীস নং ৭২৩৪; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৫৩৪৬)।

(চ) আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আদম সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রিতে (আল্লাহ তা‘আলার নিকট) উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন বিচ্ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না”। (আহমদ, হাদীস নং ১০২৭৭)।

(ছ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বিদ্রোহী ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর মতো অন্য কাউকে দুনিয়াতে অতি দ্রুত আযাব দেয়ার পরও আখিরাতের আযাবও তার জন্য জমা করে রাখেননি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন। এ থেকে তিনি নিস্ক্রান্ত হলে ’রাহিম’ (রক্ত সম্পর্কে) দাঁড়িয়ে পরম করুণাময়ের আঁচল টেনে ধরল। তিনি তাকে বললেন, থামো। সে বলল, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী লোক থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্যই আমি এখানে দাঁড়িয়েছি। আল্লাহ্ বললেন, যে তোমাকে সম্পর্কযুক্ত রাখে, আমিও তাকে সম্পর্কযুক্ত রাখব; আর যে তোমার হতে থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আমিও তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করব এতে কি তুমি খুশী নও? সে বলল, নিশ্চয়ই, হে আমার প্রভু। তিনি বললেন, যাও তোমার জন্য তাই করা হল। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, ইচ্ছে হলে তোমরা পড়, ’’ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বাঁধন ছিন্ন করবে।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮৩০, ৪৮৩১, ৪৮৩২, ৫৯৮৭, ৭৫০২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাবী সুফ্ইয়ান বলেন, আ’মাশ এ হাদীস মারফূ’রূপে বর্ণনা করেননি। অবশ্য হাসান (ইবনু ’আমর) ও ফিতর (রহ.) একে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফূ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী নয়। বরং আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী সে ব্যক্তি, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হবার পরও তা বজায় রাখে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৯১, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঞ) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ)....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার আত্মীয়-স্বজন আছেন। আমি তাদের সাথে সদাচরণ করি; কিন্তু তারা আমাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমি তাদের উপকার করে থাকি; কিন্তু তারা আমার অপকার করে। আমি তাদের সহনশীলতা প্রদর্শন করে থাকি আর তারা আমার সঙ্গে মূৰ্খসুলভ আচরণ করে। তখন তিনি বললেন, তুমি যা বললে, তাহলে যদি প্রকৃত অবস্থা তাই হয় তুমি যেন তাদের উপর জলন্ত অঙ্গার নিক্ষেপ করছ। আর সর্বদা তোমার সঙ্গে আল্লাহর তরফ থেকে তাদের বিপক্ষে একজন সাহায্যকারী (ফেরেশতা) থাকবে, যতক্ষণ তুমি এ অবস্থায় বহাল থাকবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২৯৪, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করলে আল্লাহ তায়ালাও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন মহামহিম আল্লাহ যাবতীয় মাখলুকের সৃষ্টি সম্পন্ন করলেন তখন “রেহেম” (আত্মীয়তার বন্ধন) উঠে দাড়ালো। তিনি বলেন, কি ব্যাপার! সে বললো, এ হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান। তিনি বলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, যে তোমাকে যুক্ত রাখবে আমিও তাকে যুক্ত রাখবো এবং যে তোমাকে ছিন্ন করবে আমিও তাকে ছিন্ন করবো? রেহেম বললো, হে প্ৰভু! তিনি বলেন, এটাই তোমার প্রাপ্য। অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, তোমরা চাইলে পড়তে পারোঃ “তোমরা আধিপত্য লাভ করলে হয়তো পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে”। (মুহাম্মাদ ৪৭/২২)। (আল-আদাবুল মুফরাদ ৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,

আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ বলেন, আমার নাম রহমান, দয়াময়। আমি রেহেম (জরায়ু, আত্মীয় সম্পর্ক)-কে সৃষ্টি করেছি এবং আমার নাম থেকে তার নাম নির্গত করেছি। সুতরাং যে তাকে যুক্ত রাখবে আমিও তাকে আমার সাথে যুক্ত রাখবো এবং যে তাকে ছিন্ন করবে আমিও তাকে আমার থেকে ছিন্ন করবো। (আল-আদাবুল মুফরাদ ৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস করাঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করলো অথবা স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করলো অথবা গণকের নিকট গেলো এবং সে যা বললো তা বিশ্বাস করলো, সে অবশ্যই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর নাযিলকৃত জিনিসের (আল্লাহ্র কিতাবের) বিরুদ্ধাচরণ করলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৬৩৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯০৪, আহমাদ ৯০৩৫, ৯৮১১; দারিমী ১১৩৬, ইরওয়াহ ২০০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যে ব্যাক্তি তার ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করলো, তার সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে এক দ্বীনার বা অর্ধ দ্বীনার দান-খয়রাত করবে। (ইবনু মাজাহ  ৬৪০, ৬৫০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৬-৩৭, নাসায়ী ২৮৯, ৩৭০; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৬৪-৬৬, ২১৬৮-৬৯, আহমাদ ২০৩৩, ২১২২, ২২০২, ২৪৫৪, ২৫৯০, ২৭৮৪, ২৮৩৯, ৩১৩৫, ৩৪১৮, ৩৪৬৩; ১১০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে, আল্লাহ্ তার দিকে (দয়ার- দৃষ্টিতে) তাকান না। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৫,  সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৬৫, সহীহ আল জামি ৭৮০১, আহমাদ ৭৬২৭, ৮৩২৭, ৯৪৪০, ৯৮৫০, দারেমী ১১৪০, বায়হাকী ৭/৭৩৪, আদাবুয যিফাফ ৩০, সহীহ আবী দাউদ ১৮৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) খুযাইমা ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না। কথাটি তিনি তিনবার বলেন। (অতঃপর বলেন) তোমরা মহিলাদের মলদ্বারে সঙ্গম করো না। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২৪, আহমাদ ২১৩৪৩, ২১৩৬৭, দারেমী ১১৪৪, ইরওয়াহ ২০০৫, আদাবুয যিফাফ ২৯, মিশকাত ৩১৯২)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) সমকামীতায় লিপ্ত হলেঃ

সমকাম বা পায়ুগমন বলতে পুরুষে পুরুষে একে অপরের মলদ্বার ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ যৌন উত্তেজনা নিবারণ করাকেই বুঝানো হয়।

সমকাম একটি মারাত্মক গুনাহ্’র কাজ। যার ভয়াবহতা কুফরের পরই। হত্যার চাইতেও মারাত্মক। বিশ্বে সর্বপ্রথম লূত্ব (আঃ) এর সম্প্রদায় এ কাজে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে এমন শাস্তি প্রদান করেন যা ইতিপূর্বে কাউকে প্রদান করেননি। তিনি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাদের ঘরবাড়ি তাদের উপরই উল্টিয়ে দিয়ে ভূমিতে তলিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘আর আমি লূত্ব (আঃ) কে নবুওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। যিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন: তোমরা কি এমন মারাত্মক অশ্লীল কাজ করছো যা ইতিপূর্বে বিশ্বের আর কেউ করেনি। তোমরা স্ত্রীলোকদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষ কর্তৃক যৌন উত্তেজনা নিবারণ করছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়’’। (সুরা আ’রাফ ৮০-৮১)।

আল্লাহ্ তা‘আলা উক্ত কাজকে অত্যন্ত নোংরা কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন:

‘‘আর আমি লূত্ব (আঃ) কে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়েছি এবং তাঁকে উদ্ধার করেছি এমন জনপদ থেকে যারা নোংরা কাজ করতো। মূলতঃ তারা ছিলো নিকৃষ্ট প্রকৃতির ফাসিক সম্প্রদায়’’। (সুরা আম্বিয়া  ৭৪)।

আল্লাহ্ তা‘আলা অন্য আয়াতে সমকামীদেরকে যালিম বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন:

’’ফেরেশ্তারা ইব্রাহীম (আঃ) কে বললেন: আমরা এ জনপদবাসীদেরকে ধ্বংস করে দেবো। এর অধিবাসীরা নিশ্চয়ই জালিম’’। (সুরা আন্কাবূত ৩১)।

লূত্ব (আঃ) এদেরকে বিশৃঙ্খল জাতি হিসেবে উল্লেখ করেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘লূত্ব (আঃ) বললেন: হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন’’। (সুরা আন্কাবূত  ৩০)।

ইব্রাহীম (আঃ) তাদের ক্ষমার জন্য জোর সুপারিশ করলেও তা শুনা হয়নি। বরং তাঁকে বলা হয়েছে:

‘‘হে ইব্রাহীম! এ ব্যাপারে আর একটি কথাও বলো না। (তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে) তোমার প্রভুর ফরমান এসে গেছে এবং তাদের উপর এমন এক শাস্তি আসছে যা কিছুতেই টলবার মতো নয়’’। (সুরা হূদ্  ৭৬)।

যখন তাদের শাস্তি নিশ্চিত হয়ে গেলো এবং তা ভোরে ভোরেই আসবে বলে লূত্ব (আঃ) কে জানিয়ে দেয়া হলো তখন তিনি তা দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে আপত্তি জানালে তাঁকে বলা হলো:

‘‘সকাল কি অতি নিকটেই নয়?! কিংবা সকাল হতে কি এতই দেরী?!’’ (সুরা হূদ্ ৮১)।

আল্লাহ্ তা‘আলা লূত্ব (আঃ) এর সম্প্রদায়ের শাস্তির ব্যাপারে বলেন:

‘‘অতঃপর যখন আমার ফরমান জারি হলো তখন ভূ-খন্ডটির উপরিভাগকে নিচু করে দিলাম এবং ওর উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করতে লাগলাম, যা ছিলো একাধারে এবং যা বিশেষভাবে চিহ্নিত ছিলো তোমার প্রভুর ভান্ডারে। আর উক্ত জনপদটি এ যালিমদের থেকে বেশি দূরে নয়’’। (সুরা হূদ্  ৮২-৮৩)।

আল্লাহ্ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন:

‘‘অতঃপর তাদেরকে সূর্যোদয়ের সময়ই এক বিকট আওয়াজ পাকড়াও করলো। এরপরই আমি জনপদটিকে উল্টিয়ে উপর-নীচ করে দিলাম এবং তাদের উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করলাম। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। আর উক্ত জনপদটি (উহার ধ্বংস স্তূপ) স্থায়ী (বহু প্রাচীন) লোক চলাচলের পথি পার্শ্বেই এখনও বিদ্যমান। অবশ্যই এতে রয়েছে মু’মিনদের জন্য নিশ্চিত নিদর্শন’’। (সুরা হিজর ৭৩-৭৭)।

আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমকামীদেরকে তিন তিন বার লা’নত দিয়েছেন যা অন্য কারোর ব্যাপারে দেননি।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন’’। (আহমাদ ২৯১৫; ইব্নু হিববান ৪৪১৭; বায়হাক্বী ৭৩৩৭, ১৬৭৯৪; ত্বাবারানী/কাবীর ১১৫৪৬; আবূ ইয়া’লা ২৫৩৯; ‘আব্দুব্নু ’হুমাইদ্ ৫৮৯; হা’কিম ৪/৩৫৬)।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত’’। (সহীহুত্-তারগীবি ওয়াত্-তারহীব, হাদীস ২৪২০)।

বর্তমান যুগে সমকামের বহুল প্রচার ও প্রসারের কথা কানে আসতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সে ভবিষ্যদ্বাণীর কথা স্মরণ এসে যায় যাতে তিনি বলেন:

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার উম্মাতের ব্যাপারে লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার সর্বাধিক আশঙ্কা করি। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬৩; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৭, আহমাদ ২/৩৮২ সহীহুত্-তারগীবি ওয়াত্-তারহীব ২৪১৭, বায়হাকী ফিস সুনান ২/২১৫, ৬/১০৬, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৯৭, ১৯৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ফুযাইল্ ইব্নু ’ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

‘‘কোন সমকামী ব্যক্তি আকাশের সমস্ত পানি দিয়ে গোসল করলেও সে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে অপবিত্রাবস্থায় সাক্ষাৎ করবে’’। (দূরী/যম্মুল্লিওয়াত্ব : ১৪২)।

সমকামের শাস্তি

কারোর ব্যাপারে সমকাম প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে ও তার সমকামী সঙ্গীকে শাস্তি স্বরূপ হত্যা করতে হয়।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যে মানুষকে লুত সম্প্রদায়ের কুকর্মে (সমকামিতায়) নিয়োজিত পাবে সেই কুকর্মকারীকে এবং যার সাথে কুকর্ম করা হয়েছে তাকে মেরে ফেলবে। (ইবনু মাজাহ ২৫৬১, সুনান আততিরমিযী ১৪৫৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৫, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৩২, ইরওয়া ২৩৫০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উক্ত হত্যার ব্যাপারে সাহাবাদের ঐকমত্য রয়েছে। তবে হত্যার ধরনের ব্যাপারে তাদের পরস্পরের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে বলেনঃ তোমরা উপরের এবং নিচের ব্যক্তিকে অর্থাৎ উভয়কে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬২, সুনান আততিরমিযী ১৪৫৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৩২, ইরওয়া ৬/১৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আবূ বকর, ‘আলী, ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ যুবাইর (রাঃ) এবং হিশাম বিন্ আব্দুল্ মালিক (রাহিমাহুল্লাহ্) সমকামীদেরকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন।

মুহাম্মাদ বিন্ মুন্কাদির (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

‘‘খালিদ্ বিন্ ওয়ালীদ্ (রাঃ) একদা আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট এ মর্মে একটি চিঠি পাঠালেন যে, তিনি আরবের কোন এক মহল্লায় এমন এক ব্যক্তিকে পেয়েছেন যাকে দিয়ে যৌন উত্তেজনা নিবারণ করা হয় যেমনিভাবে নিবারণ করা হয় মহিলা দিয়ে। তখন আবূ বকর (রাঃ) সকল সাহাবাদেরকে একত্রিত করে এ ব্যাপারে তাঁদের পরামর্শ চেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ‘আলী (রাঃ) ও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন: এ এমন একটি গুনাহ্ যা বিশ্বে শুধুমাত্র একটি উম্মতই সংঘটন করেছে। আল্লাহ্ তা‘আলা ওদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন তা সম্পর্কে আপনারা অবশ্যই অবগত। অতএব আমার মত হচ্ছে, তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হবে। উপস্থিত সকল সাহাবারাও উক্ত মতের সমর্থন করেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) তাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার ফরমান জারি করেন’’। (বায়হাক্বী/শু‘আবুল্ ঈমান, হাদীস ৫৩৮৯)।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

‘‘সমকামীকে মহল্লার সর্বোচ্চ প্রাসাদের ছাদ থেকে উপুড় করে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তার উপর পাথর মারা হবে’’। (ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ২৮৩২৮ বায়হাক্বী ৮/২৩২)।

সমকামীর জন্য পরকালের শাস্তি হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা এমন ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না যে সমকামে লিপ্ত হয় অথবা কোন মহিলার মলদ্বারে গমন করে’’। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৬৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৫, ইব্নু আবী শায়বাহ্, হাদীস ১৬৮০৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১২) নকল চুল লাগানো, ভ্রূপ্লাগ করাঃ

(ক) ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই নারীকে অভিসম্পাত করেছেন, যে কৃত্রিম চুল সংযোজন করে এবং যে তা করায় এবং যে দেহে উল্কি অংকন করে এবং যে তা করায়। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৩৭, ৫৯৪০, ৫৯৪২, ৫৯৪৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৫৯, ১৭৮৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১৬৮, নাসায়ী ৫০৯৫, ৫২৫১, আহমাদ ৪৭১০, গায়াতুল মারাম ৬৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৩৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, আমার মেয়ের সদ্য বিবাহ হয়েছে, কিন্তু রোগের কারণে তার মাথার চুল ঝরে গেছে। আমি কি তার মাথায় কৃত্রিম চুল জোড়া দিবো? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে নারী পরচুলা সংযোজন করে এবং যে সংযোজন করায়, আল্লাহ্ তাদের উভয়কে অভিসম্পাত করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৩৫, ৫৯৩৬, ৫৯৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২২, নাসায়ী ৫০৯৪, ৫২৫০, আহমাদ ২৪২৮২, ২৬৩৭৮, ২৬৩৯১, ২৬৪৩৯, গায়াতুল মারাম ৯৮-৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুল্লাহ্ বিন মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই সব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন, যারা অন্যের দেহে আঁকে এবং যারা নিজেদের দেহে উল্কি অংকন করায়, যারা ভ্রূর চুল উপড়ে ফেলে এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, তারা আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করে। আসাদ গোত্রের উম্মু ইয়াকূব নাম্নী মহিলার কাছে এ হাদীস পৌঁছলে, তিনি ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর কাছে এসে বলেন, আমি অবগত হয়েছি যে, আপনি এমন এমন কথা বলেছেন।

আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি তাদেরকে কেন অভিসম্পাত করবো না যাদেরকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন এবং বিষয়টি আল্লাহর কিতাবে উক্ত আছে! মহিলা বলেন, আমি সম্পূর্ণ কুরআন পড়েছি, কিন্তু কোথাও তো তা পাইনি। ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, তুমি খেয়াল করে তা পড়লে, অবশ্যই পেতে। তুমি কি এ আয়াত পড়োনি (অনুবাদ) ’’রসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা থেকে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে তোমরা বিরত থাকো’’ (সূরা হাশরঃ ৭)? মহিলা বললেন, হ্যাঁ।

আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন। মহিলা বলেন, আমার মনে হয় আপনার পরিবার (স্ত্রী) এরূপ করে থাকে। তিনি বলেন, তাহলে তুমি গিয়ে লক্ষ্য করে দেখো। অতএব সে গিয়ে লক্ষ্য করলো, কিন্তু তার কোন লক্ষণই দেখতে পেলো না। শেষে সে বললো, আমি এমন কিছু দেখতে পাইনি। ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, তোমরা কথা ঠিক হলে সে আমাদের সাথে একত্রে থাকতে পারতো না। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮৮৬, ৪৮৮৭, ৫৯৩১, ৫৯৩৯, ৫৯৪৩, ৫৯৪৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৮২, নাসায়ী ৩৪১৬, ৫০৯৯, ৫১০২, ৫১০৭, ৫১০৮, ৫১০৯, ৫২৫২, ৫২৫৩, ৫২৫৪, ৫২৫৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১৬৯, আহমাদ ৩৮৭১, ৩৯৩৫, ৪০৭৯, ৪১১৮, ৪২১৮, ৪২৭১, ৪৩৩১, ৪৩৮৯, ৪৪২০, ২৬৪৭, গায়তুল মারাম ৯৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৩) পুরুষের বেশধারী নারী ও নারীর বেশধারী পুরুষঃ

ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের বেশধারিণী নারীকে এবং নারীর বেশধারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০৩, আদাবুয যিফাফ ১২২১)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন নারীর বেশধারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশধারিণী নারীদেরকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮৮৫, ৫৮৮৬, ৬৮৩৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৮৪, ২৭৮৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৯৭, ৪৯৩০, আহমাদ ১৯৮৩, ২০০৮, ২১২৪, ৩৪৪৮, দারেমী ২৬৪৯, রওয ৪৪৭, আল-আদাব ৪৪৭, হিজাবুল মারআহ ৬৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৪৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৩৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৪) হিল্লা বিবাহ দেয়া ও যার জন্য দেয়া হয়ঃ

(ক) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহলীলকারী (হিল্লাকারী)এবং যার জন্য তাহলীল (হিল্লা) করা হয়, তাদের (উভয়কে) অভিসম্পাত করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৩৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১১৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)  ২০৭৬, আহমাদ ৬৩৬, ৬৬২, ৬৭৩, ৭২৩, ৮৪৬, ৯৮৩, ১২৯১, ১৩৬৮, বায়হাকী ৫/৬১, হাকিম ফিল মুসতাদরাক ১/৪৫৪, ইরওয়াহ ৬/৩০৮, ৩০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) উকবা ইবনু ’আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের ভাড়াটে পাঁঠা সম্পর্কে অবহিত করবো না? তারা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বলেনঃ সে হলো তাহলীলকারী। আল্লাহ্ তাহলীলকারী এবং যার জন্য তাহলীল করা হয় তাদের উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৩৬, ইরওয়াহ ৬/৩০৯-৩১০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৫) ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতার উপর লা‘নতঃ

ঘুষ/দুর্নীতি করে না এমন সৎলোক কতোজন আছে। কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স, বাড়ি, দামী গাড়ি, শাড়ি গহনা এগুলো আসে কোথা থেকে। আমি নিজে গোয়েন্দা হিসেবে সরকারি চাকরি করতাম। আমি যখন যে জেলায় যেতাম সেখানে গিয়ে দুর্নীতিবাজদের তালিকা তৈরী করা হতো। আমি দেখেছি কোন বিভাগ কিভাবে ঘুস নেয় আর দুর্নীতি করে। আপনার বাড়ির আশে পাশে তাকালেই দেখায় যায় ঘুষখোরদের বিলাশবহুল অট্টালিকা। এরা আবার মসজিদের হর্তাকর্তা, এরা প্রথম সারিতে বসে। এরা সালাতও আদায় করে, হজ্জে যায় আবার ঘুষ/দুর্নীতিও করে। এদের উপার্জিত সকল অর্থ হারাম। আর হারাম দেহ কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বিস্তারিত দলিল পাবেন “হারাম খাদ্য ভক্ষণ করলে”। রাসুল সাঃ বলেন,

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৩১৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৩৭, আবূ দাউদ ৩৫৮০, ৬৫৯৬, ৬৭৩৯, ৬৭৯১, ৬৯৪৫, ইরওয়া ২৬২০, মিশকাত ৩৭৫৩, রাওদুন নাদীর ৫৮৩, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৪৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৬)  চৌর্যবৃত্তি করলেঃ

আল্লাহ তা‘আলা চোরদের প্রতি লা‘নত করেছেন। বর্তমানে যেসব বড় বড় কর্মকর্তা পুকুর চুরিতে লিপ্ত আছেন তাদের পরকালে ভয়াবহ অবস্থা হবে।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, চোরের উপর আল্লাহর লা’নত হোক, যখন সে একটি হেলমেট চুরি করে এবং এ জন্য তার হাত কাটা হয় এবং সে একটি রশি চুরি করে এ জন্য তার হাত কাটা হয়।

আ’মাশ (রহ.) বলেন, তারা মনে করত যে, হেলমেট লোহার হতে হবে আর রশির ব্যাপারে তারা ধারণা করত তা কয়েক দিরহামের সমমূল্যের হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭৮৩, ৬৭৯৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৮৭, আহমাদ ৭৪৪০, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৩১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

ইমাম নববী (রাঃ) বলেন, ‘এর দ্বারা লোহার হেলমেট উদ্দেশ্য, যা দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে মাথা ঢেকে রাখা হয়। আর রশি দ্বারা নৌকার বা জাহাযের রশিকে বুঝানো হয়েছে। আর এর প্রত্যেকটির মূল্যই প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণমুদ্রার মূল্যের সমান’। (শরহে ছহীহ মুসলিম ১/২০৮)।  

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘তোমরা চোর ও চুন্নির (ডান) হাত কেটে দিবে তাদের কৃতকর্মের (চৌর্যবৃত্তি) দরুন আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে শাস্তি সরূপ। বস্তত আল্লাহ্ তা‘আলা অতিশয় ক্ষমতাবান মহান প্রজ্ঞাময়’’। (সুরা মায়িদাহ্  ৩৮)।

(১৭) মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতাঃ

(ক)  আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নেশাদার দ্রব্য পানকারী জান্নাতে যাবে না। পিতামাতার অবাধ্য ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। খোটা দানকারী জান্নাতে যাবে না। (তারগীব হা/২৩৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(খ) আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পানকারী জান্নাতে যাবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭৬, আহমাদ ২৬৯৩৮, সহীহাহ ৬৭৫, ৬৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(গ)  ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নেশা উদ্রেককারী প্রত্যেক জিনিসই ’মদ’ আর প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী জিনিসই হারাম। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করেছে এবং অবিরত পান করতে থাকে এবং তা থেকে তওবা্ না করেই মৃত্যুবরণ করেছে, তাহলে সে পরকালে তা (জান্নাতী সুপেয় মদ) পান করতে পারবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০০৩, সুনান আননাসায়ী ৫৬৭৩, সুনান আততিরমিযী ১৮৬১, আহমাদ ৫৭৩০, সহীহ আল জামি‘ ৪৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) কুতায়বা (রহঃ)...জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইয়ামানের জায়শান গোত্রের এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট মিযর নামক এক প্রকার পানীয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো, যা তারা তাদের দেশে পান করে থাকে এবং যা ভুট্টা হতে প্রস্তুত হয়। তিনি বললেনঃ তা কি মাদকতা সৃষ্টি করে? সে ব্যক্তি বললোঃ হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম। আল্লাহ্ তা’আলা নির্ধারিত করে রেখেছেন, যে ব্যক্তি মদ পান করে, তাকে ’তীনাতুল খাবাল’ থেকে পান করাবেন। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তীনাতুল খাবাল কি? তিনি বললেনঃ তা হলো দোযখীদের ঘাম অথবা পুঁজ। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৭০৯, আত-তা'লীকুর রাগীব ৩/১৮৫–১৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ঙ) আবদুল্লাহ ইবনে ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শরাব পান করে এবং মাতাল হয়, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হয় না। সে মারা গেলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তা’আলা তার তওবা কবুল করবেন। সে পুনরায় শরাব পানে লিপ্ত হলে কিয়ামতের দিন অল্লাহ তা’আলা অবশ্যি তাকে ’’রাদগাতুল খাবাল’’ পান করাবেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ’রাদগাতুল খাবাল’ কী? তিনি বলেনঃ জাহান্নামীদের দেহ থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত। (সুনান ইবন মাজাহ ৩৩৭৭, সুনান তিরমিযী ১৮৬২, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৭০, নাসায়ী ৫৬৬৪, ৫৬৭০, আহমাদ ৬৬০৬, ৬৭৩৪, দারেমী ২০৯১, সহীহাহ ৭০৯, আত-তালীক আলা ইবনু খুযাইমাহ ৯৩৯, তাখরীজুল ঈমান লি ইবনুস সালাম ৯১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পান কারী মূর্তিপূজকের ন্যায় অপরাধী। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

 (ছ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়া ও লটারীতে অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদানকারী এবং সর্বদা মদপানকারী জান্নাতে যাবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৫৩, নাসায়ী ৫৬৭২, দারিমী ২১৩৮, সহীহাহ্ ৬৭৩, সহীহ আল জামি ৭৬৭৬, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(জ) আম্মার ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষ কখনো জান্নাতে যাবে না। (১) যে ব্যক্তি তার পরিবারে বেহায়াপনার সুযোগ দেয়। (২) পুরুষের বেশধারী নারী। (৩) নিয়মিত নেশাদার দ্রব্য পানকারী। (তাবরাণী, তারগীব হা/৩৩৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ঝ) ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। সর্বদা মদ্যপায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূস (পাপাচারী কাজে পরিবারকে বাধা দেয় না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৫৫, নাসায়ী ২৫৬৩, আহমাদ ৫৩৭২, সহীহ আল জামি‘ ৩০৫২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৬৬)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (ঞ) আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে না। (১) সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পানকারী। (২) আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী। (৩) যাদুকে বিশ্বাসকারী’ (আহমাদ, মিশকাত, হাদীছ ছহীহ হা/৩৬৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ট) আলী ইবন হুজুর (রহঃ)...উরওয়া ইবন রুওয়ায়ম (রহঃ) বলেন, একদা ইবন দায়লামী (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইবন আমর ইবন আস (রাঃ)-এর খোঁজে সওয়ার হলেন। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আবদুল্লাহ্ ইবন আমর! আপনি কি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মদ সম্বন্ধে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আমার উম্মতের কেউ শরাব পান করলে আল্লাহ তা’আলা তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করবেন না। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬৪, সহীহাহ ৭০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঠ) কুতায়বা ও আলী ইবন হুজুর (রহঃ)...মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন বিচারক যখন কোন উপঢৌকন গ্রহণ করে, তখন সে যেন হারাম খায়, আর যখন সে ঘুষ গ্রহণ করে, তখন সে কুফরী পর্যন্ত পৌছায়। মাসরুক (রহঃ) আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি শরাব পান করে, সে কাফির হয়ে যায়। তার কুফরী এই যে, তার নামায কবুল হয় না। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ড)  আবু বকর ইবন আলী (রহঃ) ... ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মদ পান করলো, অথচ নেশাগ্রস্থ হলো না, তার নামায কবূল হবে না, যতক্ষণ ঐ মদ তার পেটে অথবা শিরায় অবস্থান করবে। যদি ঐ ব্যক্তি সে অবস্থায় মারা যায়, তবে তার চল্লিশ দিনের নামায কবূল হবে না। যদি সে এ অবস্থায় মারা যায়, তবে সে কাফির অবস্থায় মারা যাবে। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬৮, আত-তা'লীকুর রাগীব ৩/১৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ণ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের সাথে সংশ্লিষ্ট দশ ব্যক্তির ওপর লা’নাত করেছেন- ১। যে মদ তৈরি করে, ২। যে মদ তৈরির নির্দেশ দেয়, ৩। যে মদ পান করে, ৪। যে মদ বহন করে, ৫। যার জন্য মদ বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, ৬। যে মদ পান করায়, ৭। যে মদ বিক্রি করে, ৮। যে মদের আয় উপভোগ করে, ৯। যে মদ ক্রয় করে, ১০। যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭৬, তিরমিযী ১২৯৫, ইবনু মাজাহ ৩৩৮১, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৫৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (ত)  কুতায়বা ও হারিস ইবন মিসকীন (রহঃ).. ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পৃথিবীতে মদ পান করে এবং পরে তাওবা না করে, আখিরাতে সে পবিত্র পানীয় হতে বঞ্চিত থাকবে। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৭১, ৫৬৭৩, ৫৬৭৪, সুনান ইবন মাজাহ ৩৩৭৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫৭৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০০৩, সুনান আত তিরমিযী ১৮৬১, নাসায়ী ৫৬৭১, ৫৬৭৩, ৫৬৭৪, সুনান আবু দাউদ ৩৬৭৯, আহমাদ ৪৬৭৬, ৪৭১৫, ৪৮০৮, ৪৮৯৭, মুয়াত্তা মালেক ১৫৯৭, দারেমী ২০৯০, রাওদুন নাদীর ৫৬১, আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(থ) সুওয়ায়দ (রহঃ)...যাহহাক (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সব সময় মদ পান করা অবস্থায় মারা যায়, দুনিয়া ত্যাগকালে তার চেহারায় গরম পানির ছিটা দেয়া হয়। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৭৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(দ)  আব্দুল্লাহ ইবনু আমর থেকে বর্ণিতঃ

‘যে ব্যক্তি মদ পান করবে আল্লাহ তার উপর ৪০ দিন সন্তুষ্ট হবেন না। (আহমাদ হা/২৭৬৪৪; তারগীব হা/৩৪১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

রাসুল সাঃ এর ভবিষ্যত বাণী

(ক) আবু মালিক আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

আবূ মালেক আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের কতক লোক মদের ভিন্নতর নামকরণ করে তা পান করবে। (তাদের পাপসক্ত অবস্থায়) তাদের সামনে বাদ্যবাজনা চলবে এবং গায়িকা নারীরা গীত পরিবেশন করবে। আল্লাহ তা’আলা এদেরকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দিবেন এবং তাদের কতককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৮৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৯২, আহমাদ ২২৩৯৩, রাওদুন নাদীর ৪৫২, সহীহাহ ১/১৩৮-১৩৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯০৯১, নাসায়ী ৫৬৫৮, সহীহুল জামি‘ ৮০৯১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৩৭৮, মুসনাদে আহমাদ ১৮০৯৮, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৪৩৯০, দারিমী ২১০০, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১০৬৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭৮৪৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ হাদিস দ্বারা বুঝা গেলো যে, মানুষ মদ্যপান করবে, তবে মদের নাম অন্য হবে। আর নেতা ও দায়িত্বশীলদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হবে বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা। এদের চরিত্র হবে নোংরা, এদের প্রিয় কাজ হবে অশ্লীলতা। তাদের স্বভাব ও কৃষ্টি-কালচার হবে শূকর ও বানরের ন্যায়। এরা স্বপরিবারে পাশ্চাত্যদের স্বভাব চরিত্র গ্রহণ করবে।

(খ) মু’আয ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘ইসলামের সূচনা বা রাজত্ব শুরু হয়েছে নবী ও দয়া দ্বারা। তারপর রাজত্ব আসবে খেলাফত ও রহমত দ্বারা, তারপর আসবে অত্যাচারী শাসকদের যুগ। তারপর আসবে কঠোরতা, উচ্ছৃংখলতা, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীর যুগ। এসব অত্যাচারী শাসকেরা রেশমী কাপড় পরিধান করা, অবৈধভাবে নারীদের লজ্জাস্থান উপভোগ করা এবং মদ পান করাকে হালাল মনে করবে। এরপরও তাদের প্রচুর রুযী দেয়া হবে। দুনিয়াবী যে কোন কাজে তাদের সাহায্য করা হবে। অবশেষে এ পাপের মধ্যে লিপ্ত থেকে আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে। (বায়হাক্বী, বাংলা মিশকাত হা/৫১৪৩, হাদীছ ছহীহ)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(গ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের আলামত সমূহের মধ্যে রয়েছে- বিদ্যা উঠে যাবে, মূর্খতা বেড়ে যাবে, ব্যভিচার (যিনা) বেড়ে যাবে, মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে এবং নারীর সংখ্যা বেশি হবে এমনকি একজন পুরুষ পঞ্চাশজন নারীর তত্ত্বাবধায়ক হবে এবং মূর্খতা প্রকাশ পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৪৩৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮০, ৮১, ৫২৩১, ৫৫৭৭, ৬৮০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭১, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০৪৫, সুনান আততিরমিযী ২২০৫, সহীহুল জামি ২২০৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ ২৭৬৭, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩৭২৮০, মুসনাদে আহমাদ ১৩১১২, ১২১১৮, ১২৩৯৫, ১২৬৮২, ১২৮১৮, ১৩৪৭০, ১৩৬৬৪, আবু ইয়া'লা ২৯৩১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৭৬৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৫৯০৫, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৬/২৮০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- (১) বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ধসে যাবে (২) উপর থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হবে (৩) অনেকের পাপের দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে। আর এ গযবের মূল কারণ তিনটি। (ক) মদ পান করা (খ) নায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হওয়া  ও (গ) বাদ্য যন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হওয়া। (উপদেশ ৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে জিনিসের অধিক পরিমাণ নেশা উদ্রেক করে, তার সামান্য পরিমাণও হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৯৩, ৩৩৯৪, সুনান আত তিরমিযী ১৮৬৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৮১, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬০৭, ৫৬০৮, ৫৬০৯, ৫৬৮৩, ৫৬৮৪, ৫৬৮৫, ৫৬৮৬, ৫৬৯৮, আহমাদ ১৪২৯৩, ইরওয়া ৮/৪৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে উপদেশ দিয়েছেনঃ শরাব পান করো না, কারণ তা সমস্ত পাপাচারের প্রসূতি। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭১, সহীহ আল-জামি' ৭৩৩৪, আত-তালীকুর রাগীব ১/১৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৮) দুনিয়া স্বয়ং লা‘নতপ্রাপ্তঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবই অভিশপ্ত, কিন্তু আল্লাহর যিকির এবং তার সাথে সংগতিপূর্ণ অনান্য আমল অথবা আলেম ও এলেম অন্বেষণকারী ব্যতীত। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১১২, সুনান আততিরমিযী ২৩২২, মিশকাতুল মাশাবিহ মিশকাত ৫১৭৬, আত-তালীকুর রাগীব ১/৫৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আমরা যে দুনিয়া অর্জনের জন্য সর্বদা ব্যস্ত থাকি, আল্লাহ ও রাসূলকে ভুলে থাকি, ইবাদত থেকে গাফেল থাকি সেই মরিচিকাতুল্য দুনিয়া সম্পর্কে হাদীছের এই কঠিনবাণী সম্পর্কে নিশ্চয়ই আমাদেরকে ভাবতে হবে।

অন্যত্র আরেকটি হাদীছে বলা হয়েছে,

জাবির (রা.) হতে বর্ণিত। একদিন রসূলুল্লাহ (সা.) একটি কানকাটা মৃত বকরীর বাচ্চার নিকট দিয়ে অতিক্রমকালে বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে পছন্দ করবে যে, এক দিরহামে বিনিময়ে এটা তার মালিকানাভুক্ত হোক। তাঁরা বললেন, কোন কিছুর বিনিময়ে এটা আমাদের মালিকানাভুক্ত হোক তা আমরা পছন্দ করব না। তখন তিনি বললেন : আল্লাহর শপথ! এটা তোমাদের কাছে যতটুকু নিকৃষ্ট, আল্লাহর কাছে দুনিয়া (এবং তার সম্পদ) এর চেয়েও অধিক নিকৃষ্ট। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৫৭, সুনান আবু দাউদ ১৮১, মুসনাদে আহমাদ ১৪৯৭২, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩২৩৫, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৪৮২, শুআবুল ঈমান ১০৪৬৭, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ৬৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ)...আবু সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, অবশ্যই দুনিয়াটা চাকচিক্যময় মিষ্টি ফলের মতো আকর্ষণীয়। আল্লাহ তা’আলা সেখানে তোমাদেরকে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। তিনি লক্ষ্য করতেছেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ করো। তোমরা দুনিয়া ও নারী জাতি থেকে সতর্ক থেকো। কেননা বনী ইসরাঈলদের মাঝে প্রথম ফিতনাহ নারীকেন্দ্রিক ছিল। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ৬৮৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য, পুরুষেরা যেমনভাবে নারীদের হ’তে বেঁচে থাকবে তেমনিভাবে নারীরাও পুরুষ হ’তে সর্বাত্মকভাবে বেঁচে থাকবে। কেননা এ হুকুমের মধ্যে উভয়েই শামিল। এরকম আরো অনেক হাদীছ রয়েছে যেখানে দুনিয়াবিমুখ হতে বলা হয়েছে।

(১৯) যুলুম করাঃ

যালিমদের উপর আল্লাহ লা‘নত করেন। তিনি বলেছেন, ‘জেনে রাখ! যালিমদের উপর আল্লাহ লা‘নত করেন’। (সুরা হূদ ১১/১৮)।

ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)..আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মু’মিনগণ যখন জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে, তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে এক পুলের উপর তাদের আটকে রাখা হবে। তখন পৃথিবীতে একের প্রতি অন্যের যা যা জুলুম ও অন্যায় ছিল, তার প্রতিশোধ গ্রহণের পরে যখন তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে তার আবাসস্থল যেরূপ চিনত, তার চাইতে অধিক তার জান্নাতের আবাসস্থল চিনতে পারবে। (সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২২৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ)...আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পুরণ করবে আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন। যে ব্যাক্তি (পৃথিবীতে) কোন মুসলিমের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যাক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করবেন। (সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২২৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে যুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ হতে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোন দ্বীনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার যুলুমের পরিমাণ তা তার নিকট হতে নেয়া হবে আর তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (সহিহ বুখারী ২৪৪৯, ৬৫৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৭)। হাদিসের মান সহিহ।

(২০) মানুষকে অস্ত্র দ্বারা ভয় দেখানোঃ

যে ব্যক্তি মানুষকে ধারালো হাতিয়ার দ্বারা ভয় দেখায় বা ইশারা করে তার উপর ফেরেশতাগণ লা‘নত করেন।

আমর আন নাকিদ ও ইবনু আবু উমর (রহঃ)....ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি (লৌহ নির্মিত) মরণাস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত করে সে তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তাকে অভিসম্পাত করতে থাকে যদিও সে তার আপন ভাই হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪২৮, ইসলামিক সেন্টার ৬৪৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ এবং আবূল আহওয়াস মুহাম্মাদ ইবনু হাইয়্যান (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়, আর যে ব্যক্তি আমাদের ধোকা দিবে সেও আমাদের দলভুক্ত নয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৭৫, আহমাদ ৮১৫৯, ২৮৫০০, ইবনুস সালাম এর তাখরীজুল ঈমান ৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বর্তমানে যেসকল মানুষ নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ছত্রছায়ায় অস্ত্রের মহড়া প্রদর্শন করে এবং যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে খারেজীদের অনুকরণে অস্ত্রধারণ করে তারা সবাই এই হাদীছের বিধানের অন্তর্ভুক্ত।

 (২৬) কাফেরদের উপর লা‘নতঃ

মহান আল্লাহ স্বয়ং যাদেরকে অভিসম্পাত করেন তাদের মধ্যে কাফেররা অন্যতম। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদের লা‘নত করেছেন এবং তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্ত্তত রেখেছেন’। (সুরা আহযাব ৩৩/৬৪)।

তিনি অন্যত্র বলেন,

 ‘আর যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হ’তে কিতাব (কুরআন) এসে গেল, যা সত্যায়নকারী ছিল (তওরাত-ইনজীলের), যা তাদের কাছে রয়েছে। অথচ ইতিপূর্বে তারা (শেষনবীর মাধ্যমে) কাফেরদের উপর বিজয় কামনা করত। অবশেষে যখন তাদের নিকট পরিচিত সেই কিতাব (কুরআন) এসে গেল তারা তাকে অস্বীকার করল। অতএব কাফেরদের উপরে আল্লাহর অভিসম্পাৎ’। (সুরা বাক্বারাহ ২/৮৯)।

(২৭) ইহুদীদের উপর লা‘নতঃ

ইহুদীরা হ’ল অভিশপ্ত জাতি। আর এই অভিশাপ তারা নিজেরাই নিজেদের নছীবে টেনে এনেছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,

 ‘বল! আমি যে তোমাদেরকে (আমাদের প্রতি তোমাদের শত্রুতার চাইতে) পরিণামের দিক দিয়ে নিকৃষ্টতম লোকদের বিষয়ে খবর দিব? (তারা হ’ল ইহুদী) যাদেরকে আল্লাহ লা‘নত করেছেন ও তাদের উপর ক্রুদ্ধ হয়েছেন এবং তাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে করেছেন বানর, শূকর ও শয়তানের পূজারী। ওরাই হ’ল নিকৃষ্টতম মর্যাদার অধিকারী এবং সরল পথ হতে সর্বাধিক বিপথগামী’। (সুরা মায়েদাহ ৫/৬০)।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘এদের প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাৎ করেছেন। আর আল্লাহ যাকে অভিসম্পাৎ করেন, তুমি তার জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না’। (সুরা নিসা ৪/৫২)।

(২৮) মুনাফিক পুরুষ-নারীদের উপর লা‘নতঃ

কাফের-মুশরিকদের চাইতে মুনাফিকরা অধিক নিকৃষ্ট। কারণ এদেরকে চেনা যায় না। এরা মুখে একরকম প্রকাশ করে আবার অন্তরে তার ভিন্নটা লালন করে। এদের প্রতি লা‘নত বর্ষিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও নারী এবং কাফিরদের জন্য জাহান্নামের আগুনের ওয়াদা করেছেন। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদেরকে লা‘নত করেছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি’। (সুরা তাওবা ৯/৬৮)।

ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় মুনাফিক বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যে অন্তরে কুফরি ও ইসলামবিরোধিতা রেখে মুখে ও প্রকাশ্যে ইসলাম প্রকাশ করে এবং মুসলমান হওয়ার দাবি করে। এরা কেন এ কাজ করে, এর ব্যাখ্যায় কোরআনের এক আয়াতে বলা হয়েছে, “তারা আল্লাহ ও মুমিনদের ধোঁকা দিতে চায়, আসলে তারা নিজেদের সঙ্গেই প্রতারণা করছে, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারছে না”। (সুরা বাকারা, আয়াত  ৯)।

অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তারা মূলত কাফিরদের কাছ থেকে মান-মর্যাদা পেতে চায়”।  (সুরা আন-নিসা, আয়াত ১৩৯)।

মুনাফিক মুসলমানদের  চিহ্নসমূহ,

আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ

(১) যখন কথা বলে মিথ্যা বলে;

(২) যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং

(৩) আমানত রাখা হলে খিয়ানাত করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩, ২৬৮২, ২৭৪৯, ৬০৯৫;  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯, আহমাদ ৯১৬২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে খাঁটি মুনাফিক্ব এবং যার মধ্যে তার একটি দেখা যাবে তার মধ্যে মুনাফিক্বের একটি স্বভাব থাকবে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করবে-

(১) যখন তার নিকট কোন আমানত রাখা হয় সে তা খিয়ানত করে,

(২) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে,

(৩) যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে এবং

(৪) যখন কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ করে, তখন সে অশ্লীলভাষী হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪, ২৪৫৯,৩১৭৮,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬৮৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৬৭৬৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৩৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুনাফিক বা চোগলখোর বা দ্বিমুখী মুসলমানদের শাস্তিঃ

(ক) আল্লাহ বলেন.

“মুনাফিকরা তো জাহান্নামের নিম্নতমস্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য আপনি কখনো কোন সহায় পাবেন না”। (সুরা নিসা ১৪৫)।

(খ) আল্লাহ  আরো বলেন.

“হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের (অবিশ্বাসীদের ও কপটদের) বিরুদ্ধে জিহাদ করুন আর তাদের প্রতি কঠোর হোন। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। আর কত খারাপ তাদের পরিণতি।” (সূরা তওবা: ৭৩)।

(গ) উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল-আনবারী (রহঃ)...যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহুদ যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তখন কিছু লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গ ত্যাগ করে চলে এলো। তাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ দু’দলে বিভক্ত হয়ে পড়লো। কেউ বললো, আমরা তাদের হত্যা করে ফেলবো, আর কেউ বললো, না (আমরা তাদের হত্যা করব না)। তখন নাযিল হল, “তোমাদের কি হলো, তোমরা মুনাফিকদের সমন্ধে দু’দল হয়ে গেলে, যখন আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের জন্য পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তোমরা কি তাকে সৎ পথে পরিচালিত করতে চাও এবং আল্লাহ কাউকে পথভ্রষ্ট করলে তুমি তার জন্য কখনো কোন পথ পাবে না।” (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৭৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও মুহাম্মদ ইবনু সাহল তামীমী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় কতিপয় মুনাফিক ব্যক্তির অভ্যাস এই ছিল যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যু্দ্ধের জন্যে বের তখন তারা পশ্চাতে থাকতো এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধাচরণ করে বসে থাকাতেই তারা আনন্দ লাভ করতো। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যাগমন করলে তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে ওজুহাত পেশ করতো, শপথ করতো এবং আশা করতো যেন তারা যা করেনি এমন কার্যের প্রশংসা করা হয়। তখন নাযিল হলঃ "যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং যা নিজেরা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালবাসে, তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে আপনি কখনো এরূপ মনে করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি।" (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৭৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

যে কোন মানুষের সাথে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট এ জাতীয় লোক হবে সর্ব নিকৃষ্ট লোকদের অন্যতম।

(ঙ) হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ব্যক্তিদের খনিজ ও গুপ্তধনের ন্যায় দেখতে পাবে। অতএব যারা জাহিলী যুগে উত্তম ছিল তারা ইসলামেও উত্তম বলে বিবেচিত হবে। যখন তারা দীনী জ্ঞানের অধিকারী হবে। কিংবা তোমরা এ ব্যাপারে অর্থাৎ ইসলামে উত্তম ব্যক্তি দেখতে পাবে যারা তার পূর্বে চরমভাবে ইসলামকে ঘৃণা করত। আর তোমরা সবচেয়ে খারাপ ব্যক্তি হিসেবে দেখতে পাবে সে সকল লোককে, যারা দ্বিমুখী চরিত্রের লোক- এরা এ দলের নিকট একমুখী কথা বলে পুনরায় অপর এক দলের নিকট এসে আরেক ধরনের রূপ নিয়ে উপস্থিত হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৩৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২২৪, ইসলামিক সেন্টার ৬২৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আম্মার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়াতে দ্বিমুখী স্বভাবের লোকের কিয়ামতের দিন আগুনের দু’টি জিহ্বা হবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ হলো দ্বিমুখী চরিত্রের লোক। তারা এক দলের নিকট এক চেহারা নিয়ে এবং অপর দলের নিকট অন্য চেহারা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২৯) যারা আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করেঃ

যারা আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা রাখে তাদের উপর লা‘নত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যাতে তিনি শাস্তি দিতে পারেন মুনাফিক পুরুষ ও নারীদের এবং মুশরিক পুরুষ ও নারীদের। যারা আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করে। তাদের জন্য রয়েছে মন্দ পরিণাম। আল্লাহ তাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাদের উপর লা‘নত করেছেন এবং তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্ত্তত রেখেছেন। আর কতই না মন্দ সেই ঠিকানা!’। (সুরা ফাতহ ৪৭/৬)।

(৩০) ধর্মকে মানার ক্ষেত্রে কুট কৌশলের আশ্রয় নেয়াঃ

আল্লাহ তা‘আলা ইহুদীদের উপর লা‘নত করেছেন কারণ তারা ধর্মকে মানার ক্ষেত্রে বাহানা ও কুট কৌশলের আশ্রয় নিত।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্ অমুক লোককে ধ্বংস করুক! সে কি জানে না যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ ইয়াহূদীদের ওপর লা‘নত করুন। তাদের জন্য চর্বি হারাম করা হয়েছিল। তখন তারা তা গলিয়ে বিক্রি করতে লাগল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৬০, ২২২৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩১) জমির নিশানা পরিবর্তন করাঃ

কারোর জমিনের সীমানা ঠেলে তার কিয়দংশ নিজের অধিকারভুক্ত করে নেয়াও আরেকটি কবীরা গুনাহ্।

যুহায়র ইবনু হারব ও সুরায়জ ইবনু ইউনুস (রহঃ).....আবূ তুফায়ল আমির ইবনু ওয়াসিলাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী ইবনু আবূ তালিব (রাযিঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক লোক তার নিকট এসে বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে আড়ালে কি বলেছিলেন? রাবী বলেন, তিনি রেগে গেলেন এবং বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের কাছ থেকে গোপন রেখে আমার নিকট একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি (বিশেষ শিক্ষণীয়) কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল- হে আমীরুল মুমিনীন! সে চারটি কথা কি? তিনি বললেনঃ ১. যে লোক তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন, ২. যে লোক আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কারো নামে যাবাহ করে আল্লাহ তার উপরও অভিসম্পাত করেন, ৩. ঐ ব্যক্তির উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, যে কোন বিদ’আতী লোককে আশ্রয় দেয় এবং ৪. যে ব্যক্তি জমিনের (সীমানার) চিহ্নসমূহ অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করে, তার উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫০১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯৬২, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৬৮, আহমাদ ২৯১৩, ’হা’কিম ৪/১৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালিম (রহ.)-এর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে সামান্য পরিমাণ জমিও নিয়ে নিবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক জমিনের নীচ পর্যন্ত ধসিয়ে দেয়া হবে। আবূ ‘আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহ.)] বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুবারক (রহ.) কর্তৃক খুরাসানে রচিত হাদীসগ্রন্থে এ হাদীসটি নেই। এ হাদীসটি বসরায় লোকজনকে শুনানো হয়েছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৫৪, ৩১৯৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩২) পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়াঃ

পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া কবীরা গুনাহ। এর পরিণাম খুবই ভয়াবহ। হাদীছে এসেছে,

আবদুল্লাহ্ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কবীরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া অথবা বলেছেন, মিথ্যা কসম করা। শু’বাহ (রহ.) তাতে সন্দেহ করেন। এবং মুয়ায (রহ.) বলেন, শু’বাহ আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন, কবীরা গুনাহ্ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, মিথ্যা কসম করা আর মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া অথবা বলেছেন প্রাণ হত্যা করা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৮৭০, ৬৬৭৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৩৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন মায়ের নাফরমানী, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া, কারো প্রাপ্য না দেয়া এবং অন্যায়ভাবে কিছু নেয়া আর অপছন্দ করেছেন অনর্থক বাক্য ব্যয়, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা, আর মাল বিনষ্ট করা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪০৮, ৮৪৪, মুসলিম ৫/৩০, হাঃ ৫৯৩)  (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

‘‘তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেনা: যে ব্যক্তি কাউকে অনুগ্রহ করে পুনরায় খোঁটা দেয়, মাতা-পিতার অবাধ্য এবং মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি’’। (জা’মিউস্ সাগীর: ৬/২২৮)।

তিনি আরো বলেন:

‘‘তিন ব্যক্তির উপর আল্লাহ্ তা‘আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তম্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তি’’। (জা’মিউস্ সাগীর: ৩/৬৯)।

তিনি আরো বলেন:

‘‘তিন ব্যক্তি বাইতুল্ মাক্বদিসে প্রবেশ করতে পারবেনা: অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, মাতা-পিতার অবাধ্য এবং যে ব্যক্তি কাউকে অনুগ্রহ করে পুনরায় খোঁটা দেয়’’। (সিল্সিলাতুল্ আহা’দীসিস্ সাহীহাহ্: ২/২৮৯)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে,

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ সপ্ত আসমানের উপর থেকে সাত প্রকারের ব্যক্তিকে লা‘নত করেন। আর তিনি তিনবার করে লা‘নত বর্ষণ করতে থাকেন। অথচ প্রত্যেকের ধ্বংসের জন্য একটি লা‘নতই যথেষ্ট। (তন্মধ্যে একটি হ’ল) যে মা-বাবার অবাধ্য হয়’। (তাবারানী, আদ-দো‘আ হা/৮৪৯৭, বিন হাম্বল, ফাযায়েলুছ ছাহাবা হা/৮; ছহীহা হা/২৩৪০)। 

(৩৩) পিতা-মাতাকে গালি দেওয়াঃ

যুহায়র ইবনু হারব ও সুরায়জ ইবনু ইউনুস (রহঃ)...আবূ তুফায়ল আমির ইবনু ওয়াসিলাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী ইবনু আবূ তালিব (রাযিঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক লোক তার নিকট এসে বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে আড়ালে কি বলেছিলেন? রাবী বলেন, তিনি রেগে গেলেন এবং বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের কাছ থেকে গোপন রেখে আমার নিকট একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি (বিশেষ শিক্ষণীয়) কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল- হে আমীরুল মুমিনীন! সে চারটি কথা কি? তিনি বললেনঃ ১. যে লোক তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন, ২. যে লোক আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কারো নামে যাবাহ করে আল্লাহ তার উপরও অভিসম্পাত করেন, ৩. ঐ ব্যক্তির উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, যে কোন বিদ’আতী লোককে আশ্রয় দেয় এবং ৪. যে ব্যক্তি জমিনের (সীমানার) চিহ্নসমূহ অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করে, তার উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫০১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯৬২, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৬৮, মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক ১৩৪৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’কাবীরাহ গুনাহসমূহের একটি হল আপন পিতা-মাতাকে গালি দেওয়া।’’ জিজ্ঞেস করা হল, ’হে আল্লাহর রসূল! আপন পিতা-মাতাকে কি কোন ব্যক্তি গালি দেয়?’ তিনি বললেন, হ্যাঁ, সে লোকের পিতাকে গালি-গালাজ করে, তখন সেও তার পিতাকে গালি-গালাজ করে থাকে এবং সে অন্যের মা-কে গালি দেয়, সুতরাং সেও তার মা-কে গালি দেয়। (বুখারী ৫৯৭৩, মুসলিম ২৭৩)

অন্য এক বর্ণনায় আছে, কাবীরাহ গুনাহসমূহের একটি হল নিজের পিতা-মাতাকে অভিশাপ করা।’’ জিজ্ঞেস করা হল, ’হে আল্লাহর রসূল! মানুষ নিজের পিতা-মাতাকে কিভাবে অভিশাপ করে?’ তিনি বললেন, ’’সে অপরের পিতাকে গালি-গালাজ করে, তখন সেও তার পিতাকে গালি-গালাজ ক’রে থাকে। আর সে অন্যের মা-কে গালি দেয়, বিনিময়ে সেও তার মা-কে গালি দেয়। (হাদীস সম্ভার ১৭২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩৪) পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করাঃ

যে ব্যক্তি পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যেকার সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটায় সে অভিশপ্ত। হাদীছে এসেছে,

ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটায় সে অভিশপ্ত’। (তাবারানী, আদ-দু‘আ হা/২১১৪)।

বর্তমানে অনেক স্ত্রীই তার স্বামীকে খোটা ও কান কথা দিয়ে স্বামীর মনকে বিষিয়ে তোলে। ফলে সেই স্বামী নিজের মা-বাবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে বা বাহ্যিকভাবে মিশলেও মনে প্রাণে নিজের মা-বাবাকে ঘৃণা ও বোঝা মনে করতে থাকে। এক্ষেত্রে যে সম্পর্ক ছিন্ন করে তার উপর যেমন লা‘নত বর্ষিত হয়। তেমনিভাবে যে অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়ে সম্পর্কে অবনতি ঘটায় সেও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী হিসাবে অভিশপ্ত হয়।

(৩৫) মুমিনদেরকে কষ্ট ও ধোঁকা দেওয়াঃ

মুসলমানকে কষ্ট দিতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন,‘অপরাধ না করা সত্ত্বেও যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে’। (সুরা আহযাব ৩৩/৫৮)।

মুমিনকে কষ্ট দিতে নিষেধ করে রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের উপর উঠলেন এবং উচ্চস্বরে ডেকে বললেনঃ ’’হে মুসলিমগণ! যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছ এবং অন্তরে ইসলামের প্রভাব রাখোনি, তোমরা মুসলিমদেরকে কষ্ট দিয়ো না, তাদেরকে লজ্জা দিয়ো না এবং তাদের দোষ অন্বেষণ করো না। কেননা যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ অন্বেষণ করে, আল্লাহ তা’আলা তার দোষ অন্বেষণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যার দোষ খুঁজবেন, তাকে অপমান করবেন, যদি সে নিজের ঘরের মধ্যেও থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০৪৪, তিরমিযী ২০৩২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৩৯, গয়াতুল মারাম ৪২০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৭৬৩, আহমাদ ১৯৭৭৬, শু‘আবুল ঈমান ৬৭০৪, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১২৮১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

যারা  মুমিনদের সাথে প্রতারণা করে, তাদেরকে ধোঁকা দেয় তারা অভিশপ্ত। মুমিনের সাথে হোক বা অন্যের সাথে হোক প্রতারণা করা ও কষ্ট দেয়া হারাম।

আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুমিনের ক্ষতিসাধন করে অথবা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সে অভিশপ্ত। (সুনান আততিরমিযী ১৯৪১)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

অমুসলিম দেশগুলিতে পথে-ঘাটে, বাজারে মুসলিমদেরকে দাড়ি রাখার কারণে, ইসলামী পোষাক-পরিচ্ছদের জন্য কটু কথা শুনতে হয়। তাদেরকে শারীরিকভাবে হেস্তনেস্ত করা হয়। শুধু তাই নয়। এমনকি মুসলিম দেশগুলিতেও এমনটা হয়ে থাকে। এভাবে কোন মুসলিম নারী-পুরুষকে কষ্ট দেয়া, তাদের সাথে মন্দ আচরণ করার ব্যাপারে হাদীছে কঠোর হুঁশিয়ার বাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে মুসলিমদেরকে তাদের পথে-ঘাটে কষ্ট প্রদান করে, তার উপর মুসলিমদের লা‘নত অবধারিত হয়ে যায়’। (তাবারানী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/৩০৫০; ছহীহাহ হা/২২৯৪)। 

মুসলিম মেয়েদেরকে উত্যক্ত করা, দাড়ি রাখার কারণে ছেলেদেরকে মন্দ কথা বলা, নিরপরাধ মুসলিম নারী-পুরুষদেরকে জঙ্গি বলা, কাঠমোল্লা বলে অপমান করা ইত্যাদি সবই লা‘নত ডেকে আনবে। সুতরাং এগুলি থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

(৩৬) ইচ্ছাকৃত মুমিনদেরকে হত্যা করাঃ

একজন মুসলিমকে গালি দেয়া পাপের কাজ। তার সাথে লড়াই করা কুফরী কাজ। কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করে তাহলে সে লা‘নতের হকদার হয়ে যায়। মহান আল্লাহ  তায়ালা বলেন,

“কোনো মুমিনের জন্য সমীচীন নয় যে, সে অন্য মুমিনকে হত্যা করবে, অবশ্য ভুলবশত করে ফেললে অন্য কথা। ...আর কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন”। (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৯২-৯৩)।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

“নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল”। (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৩২)।

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষের (অপরাধের) মধ্যে সর্বপ্রথম নরহত্যার (অপরাধের) বিচার করা হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৩৩, ৬৮৬৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২৬১৫, ২৬১৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৭৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৯৬, ১৩৯৭, নাসায়ী ২৯৯১, ২৯৯২, ২৯৯৩, ২৯৯৪, ২৯৯৬, আহমাদ ৩৬৬৫, ৪২০১, সহীহাহ ১৭৪৮, আধুনিক প্রকাশনী ৬০৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬০৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়লো, সে আল্লাহর যিম্মায় থাকলো। অতএব তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারিকে নষ্ট করো না। যে ব্যক্তি তাকে হত্যা করবে, আল্লাহ তাকে তলব করে এনে উল্টো মুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৪৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবদুল্লাহ ইবনে ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম যিম্মীকে হত্যা করবে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধ অবশ্যই চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৮৬, ২৬৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৬৬, ৬৯১৪, নাসায়ী ৪৭৫০, গায়াতুল মারাম ৪৪৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রিফা’আ ইবনে শাদ্দাদ আল-কিতবানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমর ইবনুল হামিক আল-খুযাঈ (রাঃ) -র নিকট আমি যে বাক্যটি শুনেছি তা না থাকলে আমি মুখতারের মাথা ও দেহের মাঝখান দিয়ে হাঁটাচলা করতাম (তাকে হত্যা করতাম)। আমি তাকে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন লোকের জানের নিরাপত্তা দেয়ার পর তাকে হত্যা করলো সে কিয়ামতের দিন বিশ্বাসঘাতকতার ঝান্ডা বয়ে বেড়াবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৮৮, আহমাদ ২১৪৩৯, ২১৪৪, রাওদুন নাদীর ৭৫১, ৭৫২, সহীহাহ ৪৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩৭) পশুর অঙ্গহানি করাঃ

জীব-জন্তু, পশু-পাখী হ’ল আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বিশেষ নে‘মত। এগুলির দ্বারা আমরা অনেক উপকার লাভ করি। এগুলির অঙ্গহানি করাও লা‘নতের কারণ।

 সা’ঈদ ইবনু যুবায়র (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ আমি ইবনু ’উমার -এর কাছে ছিলাম। এরপর আমরা একদল তরুণ কিংবা তিনি বলেছেন, একদল মানুষের কাছ দিয়ে যাবার সময় দেখলাম, তারা একটি মুরগী বেঁধে তার দিকে তীর ছুঁড়ছে। তারা যখন ইবনু ’উমার -কে দেখতে পেল, তখন তারা তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। ইবনু ’উমার বললেনঃ এ কাজ কে করেছে? এ কাজ যে করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উপর অভিশাপ দিয়েছেন।

শু’বাহ (রহ.) থেকে সুলাইমান এ রকমই বর্ণনা করেছেন। মিনহাল ইবনু ’উমার -এর সূত্রে বলেন, যে ব্যক্তি জীব-জন্তুর অঙ্গহানি করে তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫১৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৫১০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩৮)  কোনো পশুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হলেঃ

কোন পশুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

আল্লাহ্’র লা’নত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন পশুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। (আহমাদ ১/২১৭; আবূ ইয়া’লা ২৫২১; ইব্নু হিববান ৪৪১৭ ’হাকিম ৪/৩৫৬; ত্বাবারানী/কাবীর ১১৫৪৬ বায়হাক্বী ৮/২৩১)।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মাহরাম আত্মীয়ের সাথে সঙ্গম করে তোমরা তাকে হত্যা করো এবং যে ব্যক্তি পশুর সাথে সঙ্গম করে তোমরা তাকেও হত্যা করো এবং পশুটিও হত্যা করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৫, ৮/৩৩০, দারাকুতনী ৩/১২৭, ইরওয়া ৮/১৪-১৫, ২৩৪৮, ২৩৫২, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৯৯, যইফ আল-জামি ৫৮৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৩৯)  উপকারীর দানকে অস্বীকার করাঃ

উপকারীর উপকার অস্বীকার করা অভিশাপের কারণ। এ প্রসঙ্গে আবূ জা‘ফর মুহাম্মাদ বিন আলী হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একটি তলোয়ারের উপর লেখা ছিল যে, যে উপকারীর উপকারকে অস্বীকার করে সে অভিশপ্ত’। (জামেউ বায়ানিল ইলম হা/৩৯৩)।

(৪০) মিথ্যা কথা বলাঃ

যারা মিথ্যাচার করে তাদের উপর লা‘নত বর্ষিত হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর পঞ্চমবারে বলবে, সে যদি মিথ্যাবাদী হয় তবে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ হৌক’। (সুরা নূর ৭/২৪)।

যদিও এটা লে‘আনের ক্ষেত্রে নাযিল হয়েছে তবুও মিথ্যা বললে যে লা‘নত বর্ষিত হয় তার প্রমাণ এখানে পাওয়া যায়।

বাহয ইবনু হাকীম (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত আছে, তার দাদা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছিঃ সেই লোক ধ্বংস হোক যে মানুষদের হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সে নিপাত যাক, সে নিপাত যাক। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩১৫, গাইয়াতুল মারাম ৩৭৬,  তাহকীক ছানী ৪৮৩৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আব্দুল্লাহ ইবনু আমির (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঘরে বসা অবস্থায় আমার মা আমাকে ডেকে বললেন, এই যে, এসো! তোমাকে দিবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেনঃ তাকে কি দেয়ার ইচ্ছা করছে? তিনি বললেন, খেজুর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে তাহলে এ কারণে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যার পাপ লিপিবদ্ধ হতো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯৯১, সিলসিলাহ সহিহাহ ৭৪৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৪১) ছাহাবীদেরকে গালি-গালাজ করাঃ

ছাহাবীরা হলেন নবী করীম (রাঃ)-এর সুখ-দুঃখের সাথী। তারা ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে আমৃত্যু অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। দ্বীন ইসলামের জন্য তারা ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। তাদেরকে আল্লাহ দুনিয়াতেই জান্নাতী হিসাবে ঘোষণা করেন। তাদেরকে গালি-গালাজ করা লা‘নত ডেকে আনে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদেরকে গালি দেয়া আরেকটি মারাত্মক কবীরা গুনাহ্।

ইয়াহইয়া ইবনু ইযাহ্ইয়া তামিমী, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও মুহাম্মাদ ইবনুল আ’লা (রহঃ)...আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার সাহাবীগণকে কুৎসা করো না। তোমরা আমার সাহাবীদের কুৎসা করবে না। সে সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন, তোমাদের মাঝে কেউ যদি উহুদ পর্বতের ন্যায় স্বর্ণ খরচ করে তবুও তাদের কারোর এক মুদ কিংবা অর্ধ মুদের সমতুল্য হবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৩৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২৫৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৩০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উসমান ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)....আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ ও আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাযিঃ) এর মাঝে (অপ্রীতিকর) একটা কিছু ঘটেছিল। তখন খালিদ (রাযিঃ) তাকে গাল-মন্দ করেন। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা আমার সাহাবীদের কাউকে গাল-মন্দ করবে না। কারণ, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বতের সমতুল্য স্বর্ণ খরচ করে তবুও তাদের এক মুদ অথবা অর্ধ মুদের ন্যায় হবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৩৮২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৪১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৬৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২৫৭, ইসলামিক সেন্টার ৬৩০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘যে ব্যক্তি আমার কোন সাহাবাকে গালি দিলো তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলা, ফিরিশ্তা ও সকল মানুষের লা’নত পতিত হোক’’। (ত্বাবারানী/কবীর ১২৭০৯ সা’হীহুল্ জামি, হাদীস ৫২৮৫)।

(৪২) কুরআন-হাদীছের বিধানকে গোপন করাঃ

জেনে-বুঝে কুরআন-হাদীছের ইলমকে গোপন করা কবীরা গুনাহ। তাদের উপরে আল্লাহর লা‘নত।

মহান আল্লাহ বলেন,

‘আমরা এই কিতাবের মধ্যে মানব জাতির জন্য স্পষ্ট বিধান ও পথনির্দেশ সমূহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে নাযিল করার পরেও যারা সেগুলি গোপন করে, তাদেরকে লা‘নত করে থাকেন আল্লাহ ও সকল লা‘নতকারীগণ’। (সুরা আল বাক্বারাহ ২/১৫৯)।

অন্যত্র আল্লাহ তাদেরকে সবচাইতে বড় যালেম বলেছেন। যেমন তিনি বলেন, ‘বস্তুতঃ তার চাইতে বড় যালেম আর কে আছে যে আল্লাহর নিকট হ’তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য গোপন করে? অথচ আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে উদাসীন নন’। (সুরা আল বাক্বারাহ ২/১৪০)।

যারা সঠিক ইসলাম জানার পরও নিজেদের মনমত ইসলাম প্রচার করে এবং হক গোপন করে। আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত দান করুন।

(৪৩) সতী-সাধ্বী নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করাঃ

মিথ্যে অপবাদ হলো কারো ব্যাপারে অন্যের নিকটে এমন কথা বলা যা তার মাঝে নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৮২৮, মুসলিম ৭০-(২৫৮৯), সহীহুল জামি ৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৮৪৪, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৭৫৮, শু‘আবুল ঈমান ৬৭১৯, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ১১৫১৮, আস্ সুনানুল কুবরা ২১৬৯৫, সুনানুদ্ দারিমী ২৭১৪, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৪৯৩, আহমাদ ৮৯৮৫, তিরমিযী ১৯৩৪, আবূ দাঊদ ৪৮৯৪, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৫৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ক) আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,

‘‘নিশ্চয়ই যারা সতী-সাধ্বী সরলমনা মু’মিন মহিলাদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখিরাতে) রয়েছে মহা শাস্তি’’। (সুরা নূর  ২৩)।

(খ) আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন,

‘‘যারা সতী-সাধ্বী কোন মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো; অথচ চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণিত করতে পারেনি তা হলে তোমরা ওদেরকে আশিটি করে বেত্রাঘাত করো, কারোর ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করো না এবং তারাই তো সত্যিকার ফাসিক। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয় (তারা সত্যিই অপরাধমুক্ত)। কারণ, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’’। (সুরা নূর  ৪-৫)।

(গ) আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার সমর্থনে যখন আয়াত অবতীর্ণ হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে দাঁড়িয়ে বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেন। অতঃপর তিনি মিম্বার থেকে নেমে এসে দু’ জন পুরুষ ও একজন নারী সম্পর্কে নির্দেশ দিলে তাদের উপর হাদ্দ কার্যকর করা হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৭৪, সুনান আততিরমিযী ৩১৮১; সুনান ইবনে মাজাহ্ ২৬১৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঘ)  আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘যারা নিজ স্ত্রীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো অথচ তাদের সপক্ষে তারা ব্যতীত অন্য কোন সাক্ষী নেই তা হলে তাদের প্রত্যেককে চার চার বার এ বলে সাক্ষ্য দিতে হবে যে, সে নিশ্চয়ই সত্যবাদী। পঞ্চমবার সে এ কথা বলবে যে, তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার লা’নত পতিত হোক সে যদি এ ব্যাপারে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে। তবে স্ত্রীর শাস্তি রহিত হবে সে এ ব্যাপারে চার চার বার সাক্ষ্য দিলে যে, তার স্বামী নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী। পঞ্চমবার সে এ কথা বলবে যে, তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার গযব পতিত হোক যদি তার স্বামী এ ব্যাপারে সত্যবাদী হয়ে থাকে’’। (সুরা নূর ৬-৯)।

(ঙ) বাহয ইবনু হাকীম (রহঃ) তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপবাদের অভিযোগের দণ্ড স্বরূপ এক ব্যক্তিকে বন্দী করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৮৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৩০, সুনান আননাসায়ী ৪৮৭৬, সুনান আততিরমিযী ১৪১৭, ইরওয়া ২৩৯৭)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে ঐক্যমত রয়েছে যে, সতী-সাধ্বী নারীর উপর অপবাদ দেওয়ার শাস্তি পুরুষের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। (ফৎহুল বারী ১২/১৮১০)।

(৪৪) আল্লাহর সাথে কৃত শপথ ভঙ্গ করাঃ

যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করে তারা অভিশপ্ত। এরা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে এবং তার নিষেধকে মেনে চলে না। এরা পৃথিবীর বুকে ফেতনা-ফাসাদ করে থাকে। মহান আল্লাহ এদের সম্পর্কে বলেন,

 ‘পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ক অটুট রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে ও পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, তাদের জন্য রয়েছে অভিসম্পাৎ এবং তাদের জন্য রয়েছে মন্দ আবাস’। (সুরা রা‘দ ১৩/২৫)।

(৪৫) ইবলীস অভিশপ্তঃ

ইবলীস হ’ল সকল শয়তানের সর্দার। যাকে আল্লাহ আদম (আঃ)-কে জান্নাতে সিজদা না করার জন্য জান্নাত হতে বিতাড়িত করেন। তার প্রতি আল্লাহ লা‘নত বর্ষণ করেন। মহান আল্লাহ তাকে সরাসরি সম্বোধন করে বলেন, ‘আর তোমার প্রতি আমার অভিশাপ রইল বিচার দিবস পর্যন্ত’। (সুরা ছোয়াদ ৩৮/৭৮)।

(৪৬) কোনো অন্ধকে পথভ্রষ্ট করলেঃ

কোনো অন্ধকে পথভ্রষ্ট করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘‘আল্লাহ্’র লা’নত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন অন্ধকে পথভ্রষ্ট করে’’। (আহমাদ ১/২১৭; আবূ ইয়া’লা ২৫২১; ইব্নু হিববান ৪৪১৭ ’হাকিম ৪/৩৫৬; ত্বাবারানী/কাবীর ১১৫৪৬ বায়হাক্বী ৮/২৩১)।

(৪৭) পিতার মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীকে বিবাহ্ করলেঃ

পিতার মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীকে তথা সতাই মাকে বিবাহ্ করা হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: ‘‘তোমরা নিজেদের বাপ-দাদার স্ত্রীদেরকে বিবাহ্ করো না। তবে যা গত হয়ে গেছে তা আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল, অরুচিকর ও নিকৃষ্টতম পন্থা’’। (সুরা নিসা ২২)।

ইয়াযীদ ইবনু বারাআ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার চাচার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তখন তার সঙ্গে একটি ঝান্ডা ছিলো। আমি তাকে বলি, কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এক ব্যক্তির নিকট পাঠিয়েছেন, যে তার পিতার স্ত্রীকে (সৎ মাকে) বিয়ে করেছে। তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন তাকে হত্যা করতে এবং তার সম্পদ নিয়ে আসতে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪৮) কোনো মজুরকে কাজে খাটিয়ে তার মজুরি না দিলেঃ

কোন মজুরকে কাজে খাটিয়ে তার মজুরি না দেয়া আরেকটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ্।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন যে, কিয়ামতের দিবসে আমি নিজে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবো। এক ব্যক্তি, যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করল। আরেক ব্যক্তি, যে কোন আযাদ মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল। আর এক ব্যক্তি, যে কোন মজুর নিয়োগ করে তার হতে পুরো কাজ আদায় করে এবং তার পারিশ্রমিক দেয় না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২২৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ জাতীয় ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সত্যিকার অর্থেই দরিদ্র।

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও ’আলী ইবনু হুজর (রহঃ)....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কি বলতে পার, অভাবী লোক কে? তারা বললেন, আমাদের মাঝে যার দিরহাম (টাকা কড়ি) ও ধন-সম্পদ নেই সে তো অভাবী লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে সে প্রকৃত অভাবী লোক, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে ও আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সে ব্যক্তিকে তার নেক ’আমল থেকে দেয়া হবে, অমুককে নেক আমল থেকে দেয়া হবে। এরপর যদি পাওনাদারের হাক তার নেক ’আমল থেকে পূরণ করা না যায় সে ঋণের পরিবর্তে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪৯) মানুষকে অযথা শাস্তি দেয়া কিংবা প্রহার করাঃ

মানুষকে অযথা শাস্তি দেয়া কিংবা প্রহার করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

 আল্লাহ বলেন,

 “অপরাধ না করা সত্ত্বেও যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে”। (সুরা আহযাব ৩৩/৫৮)।

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামবাসী দু’ প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং এক দল স্ত্রী লোক, যারা কাপড় পরিহিত উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না অথচ এত এত দূর হতে তার সুঘ্ৰাণ পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৫৪১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘এ উম্মতের মধ্যে শেষ যুগে এমন কিছু লোক পরিলক্ষিত হবে যাদের সাথে থাকবে লাঠি যা দেখতে গাভীর লেজের ন্যায়। তারা সকালে বের হবে আল্লাহ্ তা‘আলার অসন্তুষ্টি নিয়ে এবং বিকেলে ফিরবে আল্লাহ্ তা‘আলার ক্রোধ নিয়ে’’। (আহমাদ ৫/২৫০; ’হা’কিম ৪/৪৩৬ ত্বাবারানী, হাদীস ৮০০০)।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ

 আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সে-ই মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ এবং সে-ই প্রকৃত মুহাজির, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে ত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০, ৬৪৮৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০, আহমাদ ৬৭৬৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫০) কাউকে ওজনে কম দিলেঃ

ওজনে কম দেয়া কবিরা গুনাহ। আল্লাহ বলেন,

“তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন দাঁড়িপাল্লা। যাতে তোমরা সীমা লঙ্ঘন না কর দাঁড়িপাল্লায়। তোমরা সঠিক ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিও না”। (সূরা আর-রহমান ৭-৯)।

 অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমরা মাপ ও ওজন পূর্ণ করে দাও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে। আমরা কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দিই না।’ (সূরা আনআম ১৫২)।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্যশস্য দু’বার ওজন না দেয়া পর্যন্ত তা বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। একটি হলো বিক্রেতার ওজন, অপরটি হলো ক্রেতার ওজন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২২৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ব্যবসায়-বাণিজ্য ও লেনদেনের ক্ষেত্রে পরিমাণ এব ওজনে কমবেশি করা বা ঠকানোর মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন একটি জঘন্য অপরাধ। মানুষ মাত্রাতিরিক্ত লোভ ও অল্পে তুষ্ট না হওয়ার কারণেই অবৈধ পন্থায় উপার্জনের পেছনে ছুটে থাকে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এধরণের কাজকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, নিন্দনীয় ও পরকালীন দুর্ভোগের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন,

“যারা মাপে কম দেয়, তাদের জন্য দুর্ভোগ। এরা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণমাত্রায় নেয় এবং যখন মানুষকে মেপে দেয় তখন কম করে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে? সেই মহা দিবসে যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে”। (সূরা মুতাফফিফিন ১-৬)।

ওজনে কম দিলে রাষ্ট্রে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়

আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেনো তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায় নি (যেমন: করোনা)। যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না (তথা ইসলামি আইন মোতাবেক বিচারিক কার্যক্রম ও রাষ্ট্র শাসন করে না) এবং আল্লাহর নাযীলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না (তথা কুরআনকে সংবিধান হিসেবে মেনে নেয় না), তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০১৯, সহীহাহ ১০৬, সুনানে দায়লামি ও তাফসিরে কুরতুবি)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

রাসুল সাঃ বলেন,

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আসেন তখন লোকেরা মাপে কারচুপি করতো। অতএব মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ) ’’মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়’’ (৮৩:১)। এরপর থেকে তারা ঠিকভাবে ওযন করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৫১) রাসুল সাঃ এর প্রতি মিথ্যারোপ করলেঃ

(ক) আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পক্ষ হতে (মানুষের কাছে) একটি বাক্য হলেও পৌঁছিয়ে দাও। বনী ইসরাঈল হতে শোনা কথা বলতে পারো, এতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে প্রস্তুত করে নেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৮, বুখারী ৩৪৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সামুরাহ্ বিন জুনদুব ও মুগীরাহ্ বিন শু’বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার পক্ষ হতে এমন হাদীস বলে, যা সে মিথ্যা মনে করে, নিশ্চয়ই সে মিথ্যাবাদীদের একজন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, সে যেন জাহান্নামকে তার আবাস বানালো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২২৫৭, ২৬৫৯, রওযুন নাসীর ৭০৭, ৮৮৫, সহীহাহ ১৩৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(ঘ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার প্রতি মিথ্যারোপ করো না। কেননা আমার প্রতি মিথ্যারোপ জাহান্নামে প্রবেশ করাবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৬০, আহমাদ ৫৮৫, ৬৩০ ১০০৩, ১০৭৮, ১২৯৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫২) অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলেঃ

(ক) কায়েস ইবনে আবূ হাযেম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়ালেন, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন, অতঃপর বলেন, হে লোকসকল! তোমরা তো এই আয়াত তিলাওয়াত করো (অনুবাদঃ) ’’হে ঈমানদারগণ! আত্মসংশোধন করাই তোমাদের কর্তব্য, তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও, তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’’ (সূরা মাইদাঃ ১০৫)। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ লোকেরা মন্দ কাজ হতে দেখে তা পরিবর্তনের চেষ্টা না করলে অচিরেই আল্লাহ তাদের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান। আবূ উসামা (রাঃ) -এর অপর সনদে এভাবে উক্ত হয়েছেঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৪২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৬৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৩৮, তাখরীজুল মুখতার ৫৪-৫৮, সহীহাহ ১৫৬৪, সহীহুল জামি ১৯৭৪, আহমাদ ৩০, আবূ ইয়া‘লা ১৩১, অন্য রিওয়ায়তে আবূ দাঊদ ৪৩৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে পাপাচার হতে থাকে এবং তাদের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্ষমতা থাকা সত্বেও তাদের পাপাচারীদের বাধা দেয় না, তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৩৯, আহমাদ ১৮৭৩১, ১৮৭৬৮, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৭০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উপসংহারঃ উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আমাদের সমাজে প্রচলিত অনেক কাজই মানুষ করে থাকে, যার ফলে সে অভিশপ্ত হয়ে যায়। সুতরাং এগুলি থেকে বিরত থাকা অতীব যরূরী। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর বিধান সমূহ সঠিকভাবে পালন করার মাধ্যমে লা‘নত থেকে বাঁচার তাওফীক দান করুন-আমীন!

(সমাপ্ত)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইসলাম বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

আরো বিস্তারিত জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(ক) নবি (সাঃ) এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো?(প্রথম অংশ)।

(খ) নবি সাঃ এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো?(দ্বিতীয় অংশ)।

(গ) জাহান্নামের বর্ণনা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তিরউপায়। (তৃতীয় অংশ)

 

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...