বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
যেহরী ছালাতে সুরা ফাতিহা শেষে আমিন সরবে নাকি নিরবে (দ্বন্দ্ব নিরসন)
ভূমিকাঃ ছালাতে নীরবে আমিন নাকি সরবে আমীন। এ নিয়ে
বাক-বিতন্ডার, বাহাছ-মুনাযারার শেষ নেই। এমনকি সরবে আমীন বলার কারণে মসজিদ ভাঙ্গা,
মসজিদ হ’তে বের করে দেয়া, মারধর করা, সমাজে একঘরে করা ইত্যাদি ন্যাক্কারজনক নির্যাতনও
চালানো হয়। যা আদৌ কাম্য নয়। নিম্নে আমরা ছালাতে আমিন নীরবে বলতে হবে নাকি জোড়ে বলতে
হবে তাদের সপক্ষে যে সকল দলীল পেশ করা হয়, সেগুলির পর্যালোচনা উপস্থাপন করবো। সবশেষে
এই সিদ্ধান্তে উপনিত হবো যে, একদল আলোর পথে হাঁটছে অন্যদল অন্ধকার পথে হাঁটছে, আপনি
কোন পথে হাঁটবেন? আপনার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবো যে, কোনটি অন্ধকার আর কোনটি আলোর
পথ। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, অন্ধকারের পথটি হচ্ছে রাসুল সা. এর সুন্নাত বিরোধী পথ। আশা করি, সত্য পিয়াসী মুমিনদের জন্য প্রবন্ধটি
সহায়ক হবে ইনশাল্লাহ। প্রথমে আমিন আস্তে বলার পক্ষের দলিলসমূহের পর্যালোচনা করি।
আমিন আস্তে বলার পক্ষে বর্ণিত দলিলসমূহ ও পর্যালোচনা
নিম্নে আমিন আস্তে বলার পক্ষে যে সকল দলীল
পেশ করা হয় তার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা উপস্থাপিত হলো।
বর্ণনা-১:
ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
আমাদেরকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাত পড়লেন। যখন তিনি বলেন, তখন আমীন বলেন। আর আমীন বলার আওয়াযকে তিনি
নিমণ করলেন’। (আহমাদ হা/১৮৮৫৪; দলীলসহ নামায পৃ. ১৮৪-৮৫)।
তাহক্বীক্বঃ
হাদীছটি
মুযত্বারিব। (যে হাদীসের বর্ণনাকারী মতন ও সনদকে বিভিন্ন প্রকার এলোমেলো করে বর্ণনা
করেছেন ,তাকে মুযতারিব হাদীস বলে ।
(১) শায়েখ
আলী যাঈ (রহঃ) একে মুযত্বারিব বলেছেন নিমাবীর বরাতে’। (আল-ক্বওলুল
মাতীন পৃ. ১০৫)।
(২)
মুসনাদে আহমাদের টীকাকারগণ বলেছেন, ‘তিনি আমীনের আওয়াযকে নিমণ করলেন’ কথাটি ব্যতীত
হাদীছটি ছহীহ। শুবাহ এখানে ভুল করেছেন’। (অত্র হাদীছের
টীকা দ্রঃ)।
(৩) ইমাম
তিরমিযী বলেছেন, ‘আমি মুহাম্মাদ (ইমাম বুখারীকে) বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, এই ক্ষেত্রে
শুবার চাইতে সুফিয়ানের হাদীছটি অধিক ছহীহ। আর শুবাহ এই হাদীছে একাধিক ভুল করেছেন’।
(তিরমিযী হা/২৪৮)।
(৪)
ত্বারহুছ তাছরীব গ্রন্থে আছে, ‘তিনি তার শব্দকে নিম্ন করলেন’ শুবার বর্ণিত এই হাদীছে
থাকা অত্র বাক্যটি ভুল’। (২/২৬৮)।
(৫)
ইমাম শাওকানী বলেছেন, শু‘বার বর্ণিত এই হাদীছের মধ্যে ইযত্বিরাবের ক্রটি ধরা হয়েছে।
আর সুফিয়ান এটা বর্ণনা করেছেন। তিনি সনদ এবং মতনে কোন ইযত্বিরাব ঘটান নি’। (নায়লুল আওত্বার হা/৭০৪ এর ব্যাখ্যা ২/২৬০)।
সুতরাং আস্তে আমীন বলা সম্পর্কে শু‘বা বর্ণিত
রেওয়ায়াত সুফিয়ান ছাওরীর জোরে আমীন বলার হাদীছের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য নয়।
বর্ণনা-২ :
সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি নীরবতা অবলম্বনের দুটি স্থান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে কন্ঠস্থ করেছি। ইমরান ইবনুল হুসাইন তা অস্বীকার করেন (এবং বলেন, আমরা একটি স্থান
জানি)। আমরা বিষয়টি মদিনাতে উবাই ইবনু কাব (রাঃ) কে লিখে জানালাম। তিনি লিখেন, সামুরা
বিষয়টি স্মরণ রেখেছেন। অধস্তন রাবী সাঈদ (রহঃ) বলেন, আমরা ক্বাতাদাহ (রাঃ) কে বললাম,
সেই নীরবতা অবলম্বনের স্থান দুটি কী কী? তিনি বলেন, যখন তিনি তাঁর সালাতে প্রবেশ করতেন
এবং যখন তিনি কিরাআত শেষ করতেন, অতঃপর তিনি বলেন, যখন তিনি গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম
ওয়ালায যআল্লীন পড়তেন। রাবী বলেন, কিরাআত পাঠ শেষ করে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য তিনি নীরবতা
অবলম্বন করতেন, এটা লোকেদের ভালো লাগতো। (সুনান ইবনু মাজাহ,
৮৪৪, ৮৪৫, সুনান আততিরমিযী ২৫১, সুনান আবূ দাঊদ ৭৭৭, আহমাদ ১৯৫৭৭, ১৯৬১৯, ১৯৬৫৩, ১৯৭১৬,
১৯৭৩১, ১৯৭৫৩, মাজাহ ৮৪৫, ইরওয়াহ ৫০৫ মিশকাত ৮০৮, দাউদ ১৩৩৯, ৯৩৫)। হাদিসের মানঃ যঈফ
(Dai'f)।
তাহক্বীক্বঃ এখানে ক্বাতাদা নামক একজন প্রসিদ্ধ রাবী
রয়েছেন। তিনি নির্ভরযোগ্য রাবী, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি তাদলীস করতেন। অতএব
তাঁর এই বর্ণনাটি মুহাদ্দিছদের নিকট দুর্বল। তিনি ৬০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন’। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, রাবী নং ১৩২)।
তার সম্পর্কে ইমামদের বক্তব্য নিমণরূপঃ
(১) হাফেয
যাহাবী (রহঃ) বলেছেন, ‘তিনি হাফেয, ছিক্বাহ। কিন্তু মুদাল্লিস রাবী। আর তাকে ক্বাদরিয়া
হওয়ার দোষে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেছেন, তা সত্বেও
আছহাবে ছিহাহ-গণ তার দ্বারা দলীল পেশ করতেন। বিশেষভাবে যখন তিনি বলতেন আমাদেরকে হাদীছ
বর্ণনা করেছেন’। (মীযানুল ই‘তিদাল, রাবী নং ৬৮৬৪)।
(২)
হাফেয আলাঈ বলেছেন, ‘ক্বাতাদা বিন দি‘আমাহ অন্যতম প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস রাবী। তিনি প্রচুর
পরিমাণে মুরসাল বর্ণনা উদ্ধৃত করতেন’। (জামেউত তাহছীল,
রাবী নং ৬৩৩)।
(৩)
আল-মুদাল্লিস গ্রন্থে আছে, ‘ক্বাতাদা বিন দি‘আমাহ তাদলীসের কারণেও প্রসিদ্ধ’। (আল-মুদাল্লিসীন, রাবী নং ৪৯)।
(৪) আত-তাবঈন
লি-আসমাইল মুদাল্লিসীন গ্রন্থে তাকে উল্লেখ করা হয়েছে’। (রাবী নং ৫৭)।
(৫) ইবনু
হাযার আসক্বালানী বলেছেন, ক্বাতাদা বিন দি‘আমাহ
আস-সাদূসী আল-বছরী আনাস বিন মালেক (রাঃ)-এর ছাত্র। তিনি তার যামানার যুগশ্রেষ্ঠ হাফেয
ছিলেন এবং তিনি তাদলীসের কারণে প্রসিদ্ধ। নাসাঈ এবং অন্যরা তাকে মুদাল্লিস রাবী হিসাবে
উল্লেখ করেছেন’। (রাবী নং ৯২)।
(৬)
শায়েখ আলী যাঈ (রহঃ) তার মুদাল্লিস রাবী হওয়ার বিষয়ে দলীলসমূহ পেশ করেছেন এবং স্বীয়
পর্যালোচনা উপস্থাপন করেছেন’। (আল-ফাতহুল মুবীন পৃঃ ১১১,
ক্রমিক ৯২)।
বর্ণনা-৩ :
সামুরা বিন জুনদুব বর্ণনা করেছেন যে, তিনি
নবী করীম (ছাঃ) হতে এই মর্মে স্মরণ রেখেছেন যে, একটি সাকতা হতো তাকবীরে তাহরীমার পর,
আরেকটি সাকতা হতো বলার পর। (আবূ দাঊদ হা/৭৭৯; দলীলসহ নামাযের মাসায়েল পৃ. ১৯২)।
হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ
(ক) আল-হাসান
(রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা সামুরাহ ইবনু জুনদুব ও ‘ইমরান ইবনু হুসায়িন (রাঃ) পরস্পরে
আলোচনাকালে প্রসঙ্গক্রমে সামুরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সালাতের দু’ স্থানে চুপ থাকা (দুই সাকতা) সম্পর্কীত জ্ঞান হিফয
করেছেন। প্রথম সাকতা হচ্ছে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর এবং দ্বিতীয় সাকতা হচ্ছে ‘‘গইরিল
মাগযূবি ‘আলাইহিম ওলাযযল্লীন’’ পাঠের পর। সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) বিষয়টি স্মরণ রাখলেও
‘ইমরান ইবনু হুসায়িন (রাঃ) তা অস্বীকার করে বসেন। ফলশ্রুতিতে তাঁরা দু’জনেই এ বিষয়ে
জানার জন্য উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-এর নিকট পত্র লিখেন। তিনি তাঁদের পত্রের জবাবে লিখেন
যে, সামুরাহ (রাঃ) বিষয়টি যথাযথ স্মরণ রেখেছেন। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৭৭, ৭৭৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮১৮, সুনান ইবনু মাজাহ
৮৪৫)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(খ) সামুরাহ
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালাতে দু’ স্থানে চুপ থাকা সম্পর্কীত জ্ঞান আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে হিফয করেছি। বর্ণনাকারী সাঈদ বলেন, আমরা
ক্বাতাদাহ্ (রহঃ)-কে দু’ স্থানে চুপ থাকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যখন কেউ
সালাত আরম্ভ করবে এবং যখন কিরাত শেষ করবে (তখন চুপ থাকবে)। পরে তিনি বলেন, (কিরাত শেষ
করা অর্থ হচ্ছে) যখন কেউ গইরিল মাগযূবি ‘আলাইহিম ওয়ালয্যল্লীন বলবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৮০। হাদিসের মানঃ যঈফ
(Dai'f)।
তাহক্বীক্বঃ এখানেও ক্বাতাদা (রহঃ) তাদলীস করেছেন।
বর্ণনা-৪ :
উমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেছেন, ইমাম চারটি
বিষয় নিঃশব্দে পড়বে। আঊযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও রববানা লাকাল হামদ’। (ইবনে হাযম আল-মুহাল্লা ২/২৮০; দলীলসহ নামায পৃ. ১৯৪)।
তাহক্বীক্বঃ এটা সনদবিহীন বর্ণনা। যদি বিদ্বান বর্ণনাটি
হাসান বা ছহীহ সনদে পেশ করেন তবেই সেটি গ্রহণযোগ্য হবে।
বর্ণনা-৫ :
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ বলেছেন, ইমাম তিনটি
বিষয় নিঃশব্দে পড়বে। আঊযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ এবং আমীন’। (ইবনু
হাযম ঐ; দলীলসহ নামায পৃ.১৯৫)।
তাহক্বীক্বঃ প্রথমত: এখানে পুরো সনদ নেই। দ্বিতীয়ত:
এখানে ইবরাহীম নাখাঈ তাদলীস করেছেন। সুতরাং বর্ণনাটি দুর্বল। আর ইবরাহীম নাখঈ সম্পর্কে
ইমামগণের মন্তব্য হ’ল-
(১)
ইবনু হাযার বলেন, ইবরাহীম বিন ইয়াযীদ আন-নাখাঈ একজন প্রসিদ্ধ ফক্বীহ। তিনি তাবেঈদের
অন্তর্ভুক্ত, কূফার অধিবাসী। হাকেম উল্লেখ করেছেন যে, তিনি তাদলীস করতেন। আবূ হাতেম
বলেছেন, আয়েশা (রাঃ) ব্যতীত তিনি কোন ছাহাবীকে পাননি। তবে তিনি তার হতে কিছু শ্রবণ
করেননি। আর তিনি প্রচুর ইরসাল করতেন। বিশেষভাবে ইবনু মাসঊদ হতে। তিনি আনাস এবং অন্যদের
হ’তে মুরসালরূপে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। (ত্বাবাক্বাতুল
মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ৩৫)।
(২)
‘আল-মুদাল্লিসীন’, ‘আল-মুগনী ফিয যুআফা’ (জীবনী নং ২০৯), ‘আত-তাবঈন লি-আসমাঈল মুদাল্লিসীন’
(জীবনী নং ২), ‘আসমাউল মুদাল্লিসীন’ (জীবনী নং ১) প্রভৃতি গ্রন্থসমূহে তাঁর নাম উল্লেখ
করা হয়েছে।
(৩)
হাফেয আলাঈ (রহঃ) লিখেছেন, ‘তিনি তাদলীস করতেন। এছাড়াও তিনি অত্যাধিক মুরসালকারী’।
(জামেউত তাহছীল, জীবনী নং ১৩)।
বর্ণনা-৬ :
আবূ ওয়ায়েল (রহঃ) হতে বর্ণিত। ওমর (রাঃ) এবং
আলী (রাঃ) বিসমিল্লাহ, আঊযুবিল্লাহ এবং আমীন স্বশব্দে পড়তেন না’। (শারহু মাআনিল আছার হা/১২০৮; দলিলসহ নামায পৃ. ১৯৫)।
তাহক্বীক্বঃ এটা যঈফ বর্ণনা। আবূ সাঈদ মুদাল্লিস
রাবী। যেমন-
(১)
ইবনু হাযার (রহঃ) বলেছেন, সাঈদ ইবনুল মারযুবান
আবূ সাঈদ তাবে তাবেঈন। তিনি যঈফ রাবী। তাদলীসের জন্য প্রসিদ্ধ’। (ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ১৩৭)।
ইমাম আহমাদ, আবূ হাতেম, দারাকুৎনী প্রমুখ তাঁর
সম্পর্কে অনুরূপ বিবরণ দিয়েছেন।
(২) আল-মুদাল্লিসীন
গ্রন্থে আছে, আবূ সাঈদ একজন সমালোচিত রাবী
(জীবনী নং ৭৯)।
(৩) আত-তাবয়ীন
গ্রন্থে আছে, সাঈদ ইবনুল মারযুবানকে আবূ যুরআহ সত্যবাদী বলেছেন। তিনি তাদলীস করতেন।
যাহাবী তাকে মীযান গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। (জীবনী নং ২৪)।
এছাড়াও ‘আসমাউল মুদাল্লিসীন’ গ্রন্থে তাকে উল্লেখ করা হয়েছে (জীবনী নং ৭১)।
বর্ণনা-৭ :
আবূ ওয়ায়েল বলেছেন, আলী ও ইবনু মাসঊদ বিসমিল্লাহ,
আঊযুবিল্লাহ এবং আমীন স্বশব্দে পড়তেন না। (ত্বাবারানী,
আল-মুজামুল কাবীর হা/৯৩০৪; দলীলসহ নামায পৃ. ১৯৫)।
তাহক্বীক্বঃ এখানেও উপরোক্ত আবূ সাঈদ বাক্কাল নামক
মুদাল্লিস রাবী রয়েছেন। স্বয়ং আব্দুল মতীন ছাহেব লিখেছেন, ‘হায়ছামী মাজমাউয যাওয়ায়েদ
গ্রন্থে বলেছেন, তিনি ছিক্বাহ-মুদাল্লিস’। (পৃ. ১৯৫)।
তবে কথাটি তিনি আরবীতে লিখেছেন। এর বাংলা অনুবাদ
তিনি করেননি।
বর্ণনা-৮ :
হাম্মাদ ইবরাহীম নাখঈ হ’তে বর্ণনা করেছেন যে,
ইমাম চারটি কথা নীরবে বলবে। বিসমিল্লাহ, আঊযুবিল্লাহ, আমীন এবং রববানা লাকাল হামদ’।
(মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক্ব হা/২৫৯৬; দলীলসহ নামায পৃঃ
১৯৬)।
তাহক্বীক্বঃ সনদ যঈফ। হাম্মাদ বিন আবী সুলায়মান তাদলীস
করেছেন এবং তিনি মস্তিষ্ক বিকৃতির শিকার হয়েছিলেন। ইবনু হাযার ‘ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন’
(জীবনী নং ৪৫) গ্রন্থে তাকে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাম্মাদ বিন আবী সুলায়মান
ফক্বীহ, সত্যবাদী। তার কতিপয় ভ্রান্তি রয়েছে। তাকে মুরজিয়া হওয়ার অভিযোগ দেয়া হয়েছিল’।
(তাক্বরীবুত তাহযীব,জীবনী নং ১৫০০; আল-ফাতহুল মুবীন, পৃঃ
৬১; তাহরীরু তাক্বরীবিত তাহযীব ১/৩১৯)।
মাওলানা আব্দুল মতীন ছাহেব ইবনু আবী শায়বাহর
উদ্ধৃতিও প্রদান করেছেন। হাদীছটির সনদ হলো- حَدَّثَنَا أَبُو
بَكْرٍ
قَالَ:
ثنا
وَكِيعٌ،
عَنِ
ابْنِ
أَبِي
لَيْلَى،
عَنِ
الْحَكَمِ،
عَنْ
إِبْرَاهِيمَ
..... । (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৮৮৪৮; দলীলসহ নামায
পৃঃ ১৯৬)।
আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন আবূ বকর। তিনি
বলেছেন,... আমাদেরকে ওয়াকী হাদীছ বর্ণনা করেছেন ইবনু আবী লায়লা হতে, তিনি হাকাম হতে,
তিনি ইবরাহীম হতে’।
এখানে মুহাম্মাদ বিন আবী লায়লা নামক যঈফ রাবী
আছেন। যার সম্পর্কে ইমামগণের বক্তব্য হলো-
(১)
আব্দুর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ) বলেছেন, হাফেয যাহাবী তাযকিরাতুল হুফফায গ্রন্থে বলেছেন,
তার হাদীছ হাসান স্তরের হয়ে থাকে। ছহীহ পর্যন্ত উন্নীত হয় না। কেননা তিনি মুতক্বিন
(নিপুণতাসম্পন্ন) নন মুহাদ্দিছদের নিকটে’। (তুহফাতুল আহওয়াযী
হা/১৯৪ -এর আলোচনা দ্রঃ)।
(২) ইমাম
আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ (রহঃ) বলেছেন, আমি তাকে
জিজ্ঞাসা করলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা সম্পর্কে। তিনি বলেন, তিনি
মুযত্বারিবুল হাদীছ। আমার পিতা বলেন, ইবনু আবী লায়লার ফিক্বহ তার হাদীছের চাইতে আমার
নিকটে অধিক পছন্দনীয়। (কারণ) তার হাদীছের মধ্যে ইযত্বিরাব আছে’। (আল-ইলাল ওয়া মা‘রিফাতুর রিজাল, রাবী নং ৮৬২)।
(৩) ইমাম
ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) বলেছেন, আমি আমার পিতা থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ বিন
আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা তার পিতা হ’তে হাদীছ শ্রবণ করেন নি’। (ইবনু আবী হাতেম, আল-মারাসীল, জীবনী নং ৬৭১)।
(৪) ইমাম
বুখারী (রহঃ) বলেছেন, মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা আবূ আব্দুর রহমান আনছারী
কুফার বিচারক। শা’বী, আত্বা হ’তে (বর্ণনা করেছেন)। (আত-তারীখুল
কাবীর, রাবী নং ৪৮০)।
(৫) ইমাম
ইজলী (রহঃ) তাকে ছিক্বাহ রাবী হিসাবে উল্লেখ করে তার প্রশংসা করেছেন’। (আছ-ছিক্বাত, জীবনী নং ১৪৭৬)।
(৬)
ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেছেন, তিনি বিচারক ছিলেন। শা’বী, আত্বা হ’তে বর্ণনা করেছেন। তার
থেকে ছাওরী এবং শুবাহ বর্ণনা করেছেন’। (আল-কুনা ওয়াল আসমা,
রাবী নং ২০৪৫)।
(৭)
ইমাম নাসাঈ (রহঃ) বলেছেন, ‘মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা কুফার বিচারক।
অন্যতম ফক্বীহ। হাদীছের ব্যাপারে শক্তিশালী ছিলেন না’। (আয-যু‘আফাউল
মাতরূকীন, জীবনী নং ৫২৫)।
(৮)
ইবনু হিববান (রহঃ) তাঁকে সমালোচিত রাবীদের গ্রন্থে উল্লেখ করে তার সম্পর্কে সমালোচনামূলক
উক্তিসমূহ বর্ণনা করেছেন’। (আল-কামিল, জীবনী নং ১৬৬৩)।
(৯)
ইবনু আদী (রহঃ) তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, ইবনু আবী লায়লা যঈফ। এবং আত্বা হ’তে তার অধিকাংশ
বর্ণনা ভুল’। (আল-মাজরূহীন, রাবী নং ৯২১)।
(১০) ‘তারীখু
আসমাইয যু‘আফা ওয়াল কাযযাবীন’ গ্রন্থে আছে, ইবনু আবী লায়লা শক্তিশালী নন’। (রাবী নং ৫৮০)।
(১১)
ইমাম ইবনুল জাওযী (রহঃ) যঈফ এবং বর্জিত রাবীদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং তার সম্পর্কে
অসংখ্য সমালোচনামূলক উক্তি বর্ণনা করেছেন’। (আয-যুআফাউল
মাতরূকীন, জীবনী নং ৩০৭২)।
(১২)
হাফেয যাহাবী (রহঃ) লিখেছেন, আহমাদ বিন হাম্বল বলেছেন, তিনি মন্দ হিফযধারী। আবূ হাতেম
বলেছেন, তিনি সত্যবাদী স্তরের’। (আল-কাশিফ, জীবনী নং ৫০০০)।
(১৩)
‘আল-মুগনী ফিয-যু‘আফা’ গ্রন্থে আছে, তিনি ক্বাযী, সত্যবাদী ইমাম। মুখস্তশক্তিতে অতি
দূর্বল ছিলেন। কেউ কেউ তাকে ছিক্বাহ বলেছেন। শুবাহ বলেছেন, তার চাইতে নিকৃষ্ট স্মৃতিধারী
আর কাউকে দেখিনি। আল-ক্বাত্ত্বান বলেছেন, তিনি খুবই বাজে স্মৃতিধারী। ইবনু মাঈন বলেছেন,
তিনি শক্তিশালী নন। নাসাঈ এবং অন্যরা বলেছেন, তিনি শক্তিশালী নন। দারাকুৎনী বলেছেন,
মন্দ হিফযধারী, অত্যধিক ভুলকারী। আহমাদ এবং হাকেম বলেছেন, তার অধিকাংশ হাদীছই উলট-পালটকৃত
(রাবী নং ৫৭২৩)।
(১৪)
হাফেয যাহাবী লিখেছেন, মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা আল্লামাহ, ইমাম, কুফার
মুফতী এবং বিচারক’। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, রাবী নং ৯৬৪)।
অতঃপর তিনি বলেছেন, তিনি ফিক্বহে আবূ হানীফার
সদৃশ ছিলেন। আহমাদ বলেছেন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ ইবনু আবী লায়লাকে যঈফ বলতেন (ঐ)। তারপর
তিনি বলেছেন, ইজলী বলেছেন, তিনি ফক্বীহ, সুন্নাতধারী, সত্যবাদী, জায়েযুল হাদীছ ছিলেন।
আর তিনি কুরআনের ক্বারী এবং এ সম্পর্কে আলেম ছিলেন’। (সিয়ারু
আলামিন নুবালা, রাবী নং ৯৬৪)।
তার সম্পর্কে হাফেয যাহাবী আরো কিছু সমালোচনামূলক
এবং প্রশংসাসূচক উক্তি বর্ণনা করেছেন।
(১৫)
ইবনু হাযার আসক্বালানী (রহঃ) তার সম্পর্কে সমালোচনামূলক উক্তিসমূহ বর্ণনা করেছেন। সেখানে
তিনি তার ফক্বীহ হওয়ার পক্ষেও ইমামদের কতিপয় উক্তি উল্লেখ করেছেন’। (তাহযীবুত তাহযীব, রাবী নং ৫০৩)।
(১৬)
‘বাহরুদ দাম’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘তিনি অন্যতম ইমাম। আহমাদ বলেছেন, তিনি বাজে স্মৃতিধারী,
মুযত্বারিবুল হাদীছ। তার ফিক্বহ আমার নিকটে অধিক প্রিয় তার হাদীছের চাইতে’। (রাবী নং ৯১৫)।
(১৭) ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী
(রহঃ) বলেছেন, ইজলী বলেছেন, নাসাঈ এবং অন্যরা তাকে যঈফ বলেছেন এবং আহমাদ বলেছেন, তিনি
বাজে হিফযের অধিকারী। মুযত্বারিবুল হাদীছ। তিনি ফক্বীহ, সুন্নাতধারী, সত্যবাদী, জায়েযুল
হাদীছ ছিলেন। তিনি ১৪৮ হিজরীতে মারা গিয়েছেন’। (ত্বাবাক্বাতুল
হুফ্ফায, রাবী নং ১৫৮)।
(১৮)
শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ (রহঃ) বলেছেন, ‘এর সনদ যঈফ’। (আনওয়ারুছ
ছহীফা, যঈফ তিরমিযী হা/১৯৪)।
(১৯) ইমাম
আলবানী (রহঃ) ‘যঈফুল ইসনাদ’ বলেছেন’। (যঈফ তিরমিযী হা/১৯৪)।
(২০) ইমাম
দারাকুৎনী (রহঃ) বলেছেন, তিনি যঈফুল হাদীছ। বাজে স্মৃতির অধিকারী’। (সুনানে দারাকুৎনী হা/৯৩৬)।
সুতরাং এই বর্ণনাটি গ্রহণযোগ্য নয়।
বর্ণনা-৯ :
মুগীরা বলেছেন, ইবরাহীম নাখঈ তাকবীর দিয়ে কিছু
সময় নীরব থাকতেন। আবার যখন গইরিল মাগযূবী আলাইহিম ওলায য-ল্লীন পড়তেন তখনও কিছু সময়
নীরব থাকতেন। (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৮৪১; দলীলসহ
নামায পৃ. ১৯৬)।
তাহক্বীক্বঃ সনদ যঈফ।
প্রথমতঃ
ইবরাহীম নাখঈর আমল বা ফৎওয়া স্বতন্ত্রভাবে দলীল নয়।
দ্বিতীয়তঃ
এখানে হুশাইম নামক মুদাল্লিস রাবী আছেন। ইবনু হাযার বলেছেন, হুশাইম বিন বাশীর আল-ওয়াসিত্বী
তাবে তাবেঈনদের অন্যতম। তিনি তাদলীসের জন্য প্রসিদ্ধ ছিক্বাহ হওয়া সত্ত্বেও’। (ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ১১১; আল-ফাতহুল মুবীন
পৃ. ১৩০, ১৩১)।
তৃতীয়তঃ
হুশাইমের উস্তাদ মুগীরাও মুদাল্লিস রাবী। ইবনু হাযার বলেছেন, মুগীরাহ বিন মিক্বসাম
আয-যববী আল-কূফী হলেন ইবরাহীম নাখঈর ছাত্র। তিনি ছিক্বাহ, প্রসিদ্ধ। নাসাঈ তাকে তাদলীসের
অভিযোগ অভিযুক্ত করেছেন’। (ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন,
জীবনী নং ১০৭; আল-ফাতহুল মুবীন পৃ. ১২৬)।
বর্ণনা-১০ :
আমি দেখলাম রাসূল (ছাঃ) ছালাত শুরু করলেন।
তিনি যখন সূরা ফাতেহা শেষ করলেন, তখন তিনবার আমীন বলেন। (ত্বাবারানী,
আল-মুজামুল কাবীর হা/৩৮; দলিলসহ নামাযের মাসায়েল পৃ. ১৯৭)।
তাহক্বীক্বঃ সনদ যঈফ। এখানে আ‘মাশ এবং আবূ ইসহাক্ব
নামী দু’জন মুদাল্লিস রাবী রয়েছেন যারা তাদলীস করেছেন।
রাবী-১ : আ‘মাশ তাদলীস করেছেন। এ সম্পর্কে মুহাদ্দিছদের
সাক্ষ্য তুলে ধরা হ’ল-
(১) হাফেয
ইবনু আব্দুল বার্র (রাঃ) লিখেছেন, এবং তারা বলেছেন, আ‘মাশের তাদলীস গ্রন্থে করা হয়
না’। (আত-তামহীদ ১/৩০)।
(২)
ইমাম দারাকুৎনী (রহঃ) লিখেছেন, এবং সম্ভবত আ‘মাশ হাবীব হতে এটি তাদলীস করেছেন’। (আল-ইলালুল ওয়ারিদাহ, মাসআলা-১৮৮৮)।
(৩)
ইমাম আবূ হাতেম (রহঃ) বলেছেন, আ‘মাশ কদাচিৎ
তাদলীস করতেন’। (ইবনু আবী হাতেম, ইলালুল হাদীছ হা/৯)।
(৪)
‘যিকরুল মুদাদিল্লিসীন’ গ্রন্থের পরিশিষ্টে তাকে মুদাল্লিস রাবী হিসাবে উল্লেখ করা
হয়েছে’। (মুলহাক্ব পৃ. ১২৫)।
(৫) হাফেয
যাহাবী (রহঃ) লিখেছেন, সুলায়মান বিন মিহরান আমাশ অন্যতম ছিক্বাহ ইমাম। তাকে ছোট তাবেঈনদের
মধ্যে গণ্য করা হয়। তারা (মুহাদ্দিছগণ) স্রেফ তাদলীসের কারণে তার উপর ক্রদ্ধ হয়েছেন’।
(মীযানুল ই‘তিদাল, জীবনী নং ৩৫১৭)।
অতঃপর তিনি লিখেছেন, আমি বলেছি, তিনি তাদলীস
করতেন এবং কখনো কখানো অজ্ঞাতসারে যঈফ রাবী হ’তে তাদলীস করতেন (ঐ)।
(৬)
হাফেয আলাঈ (রহঃ) বলেছেন, এই আ‘মাশ তাবেঈনদেন অন্তর্ভুক্ত। আর তুমি তাকে হাসান বিন
উমারাহ হ’তে তাদলীস করতে দেখেছ’। (জামে‘উত তাহছীল ১/১০১)।
(৭)
ইবনুল ইরাক্বী (রহঃ) তাকে ‘আল-মুদাল্লিসীন’ গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেন, সুলায়মান আ‘মাশও তাদলীসের কারণে প্রসিদ্ধ’। (মীযানুল ই‘তিদাল, জীবনী নং ৩৫১৭)।
(৮)
হাফেয বুরহানুদ্দীন আল-হালবী (রহঃ) লিখেছেন,
সুলায়মান বিন মিহরান আল-আ‘মাশ তাদলীসের কারণে প্রসিদ্ধ’। (আত-তাবঈন লি-আসমাইল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ৩০)।
(৯)
ইবনু হাযার আসক্বালানী (রহঃ) লিখেছেন, সুলায়মান বিন মিহরান কূফার মুহাদ্দিছ এবং সেখানকার
ক্বারী এবং তিনি তাদলীস করতেন। কারাবীসী, নাসাঈ এবং দারাকুৎনী ইত্যাদি (বিদ্বানগণ)
তাকে মুদাল্লিসের সাথে উল্লেখ করেছেন’। (ত্বাবাক্বাতুল
মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ৫৫)।
(১০)
হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ রহেমাহুল্লাহ তাঁকে ‘প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস’ বলেছেন’। (বিস্তারিত দ্রঃ তাহক্বীক্বী মাক্বালাত ১/২৬৭-২৭২)।
(১১)
হাফেয জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেছেন, সুলায়মান আ‘মাশ তাদলীসের কারণে প্রসিদ্ধ’।
(আসমাউল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ২১)।
(১২)
ইবনুল কাত্তান বলেছেন, নিশ্চয়ই তিনি মুদাল্লিস’। (বায়ানুল
ওয়াহমি ওয়াল ঈহাম হা/৪৪১)।
সুতরাং সারাংশ হলো, আমাশ একজন ছিক্বাহ এবং
মুদাল্লিস রাবী। আর মুদাল্লিস রাবীর আনআনাহ যইফ হয়ে থাকে। আব্দুল মতীন ছাহেব স্বয়ং
লিখেছেন, ‘আর স্বীকৃত কথা যে, মুদাল্লিস রাবী যদি عن
(হ’তে বা থেকে) শব্দ যোগে বর্ণনা করেন, তবে সেটি অবিচ্ছিন্ন সূত্র বলে বিবেচিত হয় না
(পৃঃ ৮৭)’।
রাবী-২ : আবূ ইসহাক্ব সম্পর্কে ইমামদের মতামত নিমণরূপ-
অপর রাবী আবূ ইসহাক্ব একজন প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস
রাবী। তিনি মুদাল্লিস রাবী হিসাবে অনেকেই সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। যেমন ‘আসমাউল মুদাল্লিসীন’
গ্রন্থে আছে যে, তিনি অত্যাধিক তাদলীসকারী
এবং ইমাম হিসাবে পরিচিত (রাবী নং ৪৫)। ইবনু হাযার আসক্বালানী (রহঃ) তাঁকে স্বীয় ‘ত্বাবাক্বাতুল
মুদাল্লিসীন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন (রাবী নং ৯১)। ‘যিকরুল মুদাল্লিসীন’ (রাবী নং ৯),
‘আল-মুদাল্লিসীন’ প্রভৃতি বইয়ে তাকে প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস রাবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে
(রাবী নং ৪৭)।
শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) তাঁকে মুদাল্লিস
রাবী হিসাবে অভিহিত করেছেন’। (ছহীহাহ হা/১৭০)।
অন্যত্র
তিনি বলেছেন, দ্বিতীয়ত, আবূ ইসহাক্ব আস-সাবীঈ ছিকাহ। কিন্তু তিনি তার ইখতিলাত্বের সময়
মুদাল্লিস’। (ঐ, হা/২০৩৫)।
স্মর্তব্য যে, একজন রাবী নির্ভরযোগ্য হওয়ার
সাথে সাথে মুদাল্লিসও হ’তে পারেন। অতএব এই রেওয়ায়াতটি ‘মুআনআন’ যা যঈফ। ‘দলিলসহ নামাযের
মাসায়েল’ গ্রন্থে আবূ ইসহাক্ব সম্পর্কে কিছু না বলে সত্য গোপন করা হয়েছে।
রাবী-৩: আব্দুল জাববার বিন ওয়ায়েল তার পিতা হ’তে শ্রবণ
করেননি। তাই এটার সনদে বিচ্ছিন্নতাও রয়েছে।
বর্ণনা-১১ :
ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে
সালাম ফেরানোর সময় আমি তার ডান গাল এবং বাম গাল দেখেছি। আর তিনি গইরিল মাগযূবী আলাইহিম
ওয়ালায য-ল্লীন পড়ার পর লম্বা আওয়াযে আমীন বলেন। আমার মনে হ’ল আমাদেরকে শেখানোর জন্যই
তিনি এমন করেছিলেন’। (দূলাবী, আল-কুনা ওয়াল আসমা ক্রমিক
১০১৯০; দলীলসহ নামাযের মাসায়েল পৃ. ১৯৮)।
তাহক্বীক্বঃ প্রখ্যাত দেওবন্দী উস্তাদ মাওলানা আব্দুল
মতীন একে যঈফ বলেছেন’। (দলীলসহ নামাযের মাসায়েল পৃঃ ১৯৮)।
দূলাবী সম্পর্কে ইয়াহইয়া মুআল্লিমী বলেছেন,
‘দূলাবী হাদীছের হাফেয। হানাফী মাযহাবের অনুসারী। তাকে নিয়ে সমালোচনা রয়েছে’। (আত-তানকীল ২/৬১৯)।
বর্ণনা-১২: সুফিয়ান ছাওরী বলেছেন, ‘যখন তুমি সূরা
ফাতেহা সমাপ্ত করবে তখন নিঃশব্দে আমীন বলবে’। (দলীলসহ
নামাযের মাসায়েল পৃঃ ১৯৯)।
তাহক্বীক্বঃ এটি সনদবিহীন উক্তি। অতএব প্রত্যাখ্যাত।
বর্ণনা-১৩ :
ইবনু মাসঊদ, ইবরাহীম নাখঈ, শা‘বী, ইবরাহীম
তায়মী প্রমুখ হ’তে বর্ণিত আছে যে, তারা আমীন আস্তে বলতেন। সঠিক হ’ল, আমীন জোরে এবং
আস্তে উভয়ভাবে বলা ছহীহ। এবং দু’টি পন্থা অনুযায়ী আলেমদের একটি জামা‘আত আমল করেছেন।
যদিও আমি (বর্ণনাকারী) আমীন আস্তে বলাই পসন্দ করি। কারণ অধিকাংশ ছাহাবী এবং তাবেঈ আস্তে
আমীন বলার আমলের উপর ছিলেন’। (আল-জাওহারুন নাক্বী ২/৫৮;
দলীলসহ নামায পৃ. ১৮৩)।
তাহক্বীক্বঃ
(১) দু’টি
গ্রন্থ থেকে এর উদ্ধৃতি প্রদান করা হয়ে থাকে।
(ক) আল-জাওহারুন নাক্বী।
(খ) ইমাম ইবনু বাত্তালের শারহুল
বুখারী। গ্রন্থদ্বয়ে এটা বিনা সনদে উল্লেখ হয়েছে।
(২) ইবনু
বাত্তালের মৃত্যু সন হ’ল ৪৪৯ হিজরীতে। পক্ষান্তরে ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) ৩১০ হিজরীতে
মারা গিয়েছেন। অতএব ইবনু বাত্তালের পক্ষ হ’তে ইবনু জারীরের কোন উক্তি পেশ করতে গেলে
সেটার সনদ দেখাতে হবে। অথবা ইবনু জারীরের স্বহস্তে রচিত বা তার কোন ছিক্বাহ ছাত্র কর্তৃক
রচিত গ্রন্থ দেখাতে হবে।
(৩)
এটা ছীগায়ে তামরীয তথা দুর্বলতাবাচক শব্দ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে।
অতএব বর্ণনাটি শক্তিশালী হাদীছসমূহের বিপরীতে
গ্রহণযোগ্য নয়।
আমিন জোড়ে বলার পক্ষে দলিলসমূহ
(১) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন কুরআন পাঠকারী (ইমাম)
আমীন বলেন, তখন তোমরাও আমীন বলো। কেননা ফেরেশতাগণও তখন আমীন বলেন অতএব যার আমীন বলা
ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে হয় তার পুর্ববর্তী গুনাহ মাফ করা হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৮৫১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৮০,
৭৮১, ৭৮২, ৪৪৭৫, ৬৪০২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১০, সুনান আততিরমিযী
২৫০, সুনান আননাসায়ী ৯২৫-৩০, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৯২৮, ৯২৯, ৯৩০, ৯৩১,
৯৩২, ৯৩৩, সুনান আবূ দাঊদ ৯৩৫-৩৬, আহমাদ ৭১৪৭, ৭২০৩, ৭৬০৪, ২৭৩৩৮, ২৭২১৫, ৯৫১২, ৯৬০৫;
মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৯৫-৯৭, সুনান আদ-দারেমী
১২৪৫-৪৬, ১২৭৭, ১২৭৮, সুনান ইবনে মাজাহ ৮৫২, ৮৫৩, ইরওয়াহ ৩৪৪, সহীহ আবী দাউদ ৮৬৬, মুসনাদুল
মাউসিলী ৫৮৭৪; ইবনু হিব্বান ১৮০৪, আধুনিক প্রকাশনী
৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(নামধারী আলেমগেণ এই হাদিসের ক্ষেত্রে
বলেন যে, যেহরী সালাতে সুরা ফাতিহা পাঠ শেষে রাসুল সাঃ ও সাহাবাগণ জোড়ে আমিন বলেছেন
তার কথা উল্লেখ নেই। তারা আরো বলেন উক্ত হাদিসটি মুনাজাত শেষে আমিন বলার পক্ষের দলিল।
আমি এ বিষয়ে প্রথমেই জবাব দিচ্ছি না কারণ নিম্নের সবগুলো হাদিস পাঠ শেষে আপনি নিজেই
জবাব দিবেন যে, কোথায় জোড়ে আমিন বলতে হবে)।
(২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কুরান
পাঠকারী (ইমাম) আমীন বলে, তখন তোমরাও আমীন বলো। যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার
সাথে হয়, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। (সুনান ইবনু
মাজাহ, ৮৫২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৮০, ৭৮১, ৭৮২, ৪৪৭৫, ৬৪০২; সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৮০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১০, সুনান আততিরমিযী ২৫০, সুনান আননাসায়ী
৯২৫-৩০, সুনান আবূ দাঊদ ৯৩৫-৩৬, আহমাদ ৭১৪৭, ৭২০৩, ৭৬০৪, ২৭৩৩৮, ২৭২১৫, ৯৫১২, ৯৬০৫;
মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৯৫-৯৭, দারিমী ১২৪৫-৪৬, সুনান ইবনে মাজাহ ৮৫১, ৮৫৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(৩) আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(সালাত আদায়কালে সূরাহ ফাতিহার শেষে) যখন “গাইরিল মাগদূবি ’আলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন’’
পড়তেন তখন এমন জোরে ’’আমীন’’ বলতেন যে, প্রথম কাতারে তাঁর নিকটবর্তী লোকেরা তাঁর এ
“আমীন’’ বলা শুনতে পেতো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৯৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৮৫৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৮০, ৭৮১, ৭৮২, ৪৪৭৫, ৬৪০২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১০, সুনান আততিরমিযী ২৫০, সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২৫০, সুনান আননাসায়ী ৯২৫-৩০, সুনান আবূ দাঊদ ৯৩৫-৩৬, আহমাদ ৭১৪৭, ৭২০৩, ৭৬০৪, ২৭৩৩৮,
২৭২১৫, ৯৫১২, ৯৬০৫; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৯৫-৯৭, দারিমী ১২৪৫-৪৬, সুনান ইবনে মাজাহ ৮৫১,
৮৫২)।
(৪) বিলাল
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমার আগে ’’আমীন’’ বলবেন না।
(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সূরাহ ফাতিহা পাঠ শেষ হয়ে যেতো অথচ
তখনও বিলালের (রাঃ) পড়া শেষ হতো না। তাই তিনি এ কথা বলতেন)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৯৩৭, আহমাদ (৬/১২, ১৫), বায়হাক্বী
‘সুনান’ (২/২৩), হাকিম (১/২১৯)।
(৫)
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে ওয়ালায যআল্লীন বলার (পড়ার) পর আমীন বলতে শুনেছি। (সুনান ইবনু মাজাহ
৮৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬)
আলী ইবনু ’আবদুল্লাহ (রহ.) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী বলেছেন, যখন ক্বারী
’আমীন’
বলবে তখন তোমরাও আমীন বলবে। কারণ এ সময় ফেরেশতা আমীন বলে থাকেন। সুতরাং যার আমীন বলা
ফেরেশতার আমীন বলার সঙ্গে মিলে যাবে, তার পূর্বের সব গুনাহক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪০২, ৭৮০, আধুনিক প্রকাশনী-
৫৯৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭)
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)..আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ’আমীন’ বলেন, তখন তোমারও ’আমীন’
বলো। কেননা, যারা ’আমীন’ (বলা) ও ফিরিশতাদের ’আমীন’
(বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ’আমীন’ বলতেন। (সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৭৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৮)
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ).. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ (সালাতে) ’আমীন’
বলে, আর আসমানে ফিরিশতাগণ ’আমীন’ বলেন এবং উভয়ের ’আমীন’
একই সময় হলে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহীহ
বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৭৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৯) আবদুল্লাহ
ইবনু মাসলামা (রহঃ)..আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম غَيْرِ الْمَغْضُوبِ
عَلَيْهِمْ
وَلاَ
الضَّالِّينَ
পড়লে তোমরা “আমীন” বলো। কেননা, যার এ (আমীন)
বলা ফিরিশতাদের (আমীন) বলার সাথে একই সময় হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রহঃ) সূত্রে আবূ হুরায়রা
(রাঃ)-এর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এবং নু’আইম-
মুজমির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় সুমাই (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।
(সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৭৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৭৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) আলী
ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)...আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যখন কারী (ইমাম) আমীন বলবে তখন তোমরাও আমীন বলবে। কারন এ সময় ফিরিশতাগণ আমীন
বলে থাকেন। সুতরাং যার আমীন বলা ফিরিশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের
সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৯৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১)
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)...আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন ইমাম আমীন বলবেন, তোমরাও তখন আমীন বলবে।
কেননা, যে ব্যাক্তি ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে একই সময় আমীন বলবে, তার পূর্ববতী সমস্ত
পাপ মোচন হয়ে যাবে। রাবী ইবনু শিহাব বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমীন বলতেন। (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৮০০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৪১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২)
হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)..আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে
আমীন বলবে ও ফেরেশতারা আকাশের উপর আমীন বলবে এবং উভয়টি একই সময় হবে, যখন তার অতীতের
সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৩) আবদুল্লাহ
ইবনু মাসলামা আল কানবী (রহঃ)...আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আমীন বলবে এবং ফেরেশতারা
আকাশের ওপর আমীন বলবেন, আর উভয়টি একই সময় উচ্চারিত হবে তখন তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ
মাফ হয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৮০৩,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(১৪)
মুহাম্মাদ ইবনে কাসীর (রহঃ)....ওয়াইল ইবনে হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “ওয়ালাদ্দল্লীন” পাঠ করার পর জোরে
“আমীন”
বলতেন। (সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৯৩২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৫) মাখলাদ
ইবনে খালিদ (রহঃ) ....ওয়াইল ইবনে হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে নামায আদায় করা কালে তিনি উচ্চ স্বরে আমীন
বলেন এবং (নামায শেষে) ডান ও বাম দিকে সালাম ফিরান এভাবে যে, আমি তাঁর গণ্ডদেশের সাদা
অংশ পরিষ্কারভাবে দেখি। (সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৯৩৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(১৬) নাসর
ইবনে আলী (রহঃ)....আবু হুরায়রা (রাঃ) এর চাচাত ভাই আবু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দল্লীন”
পাঠের পর এমন জোরে ’আমীন’ বলতেন যে প্রথম কাতারে তাঁর
নিকটবর্তী লোকেরা এই শব্দ শুনতে পেত। (সুনান আবূ দাউদ
(ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৯৩৪)।
(১৭)
আল কানবী (রহঃ)...আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন ইমাম “গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দল্লীন”
বলবে, তখন তোমরা ’আমীন’ বল। কেননা যার ’আমীন’
শব্দটি ফেরেশতার আমীন শব্দের সাথে মিশ্রিত হবে, তার অতীত যাবতীয় (সগীরাহ বা ছোট) গোনাহ
মাফ হয়ে যাবে। (সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৯৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৮)
আল কানবী (রহঃ)....আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন ইমাম আমীন বলবে, তখন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা যে ব্যক্তির আমীন
শব্দ ফেরেশতার আমীন শব্দের সাথে মিলবে তার পূর্ব-জীবনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া
হবে। (সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৯৩৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৯) আবদুল্লাহ
ইবন মুআবিয়া (রহঃ).....ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ক্রমাগতভাবে একমাস যাবত যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজরের
নামাযে কুনূতে নাযেলাহ পাঠ করেন। অর্থাৎ তিনি প্রত্যেক নামাযের শেষ রাকাতে ’সামিআল্লাহু
লিমান হামিদা’
বলার পর বনী সুলায়ম, রিআল, যাকওয়ান ও উসায়্যাদের জন্য বদ-দু’আ
করতেন। সে সময় মুকতাদীগণ আমীন বলতেন। (সুনান আবূ দাউদ
(ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ১৪৪৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(২০) কুতায়বা
(রহঃ)...ওয়ায়িল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর পেছনে সালাত আদায় করেছি। যখন তিনি সালাত আরম্ভ করতেন তখন তাকবীর বলতেন
এবং তাঁর উভয় হাত দু’কান পর্যন্ত তুলতেন। এরপর
সূরা ফাতিহা পাঠ করা আরম্ভ করতেন।আর তা শেষ করে "আমীন" বলতেন এবং তা বলার
সময় তার স্বর উচু করতেন। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২১) মুহাম্মদ
ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুল হাকাম (রহঃ)...নুয়ায়ম মুজমির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর পেছনে সালাত আদায় করি। তিনি প্রথমে পড়লেন বিসমিল্লাহির
রাহমানির রহিম। এরপর সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন, যখন তিনি غَيْرِ
الْمَغْضُوبِ
عَلَيْهِمْ
وَلاَ
الضَّالِّينَ
এ পর্যন্ত পৌছলেন তখন ’আমীন, বললেন, তারপরে সকল লোক বলল,’আমীন’।
যখনই তিনি সিজদা করতেন তখন বলতেন, ’আল্লাহু আকবার’ আর যখন তিনি বসা
থেকে দাড়াতেন তখনও আল্লাহু আকবার বলতেন। তিনি সালাম বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ, তার
শপথ! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মত সালাত আদায় করে তোমাদের
দেখালাম। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৯০৮)।
(২২)
আবদুল হামিদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ)..ওয়ায়িল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে সালাত আদায় করেছি। যখন তিনি তাকবীর বললেন,
তাঁর কর্ণদ্বয়ের নিম্ন পর্যন্ত উভয় হাত তুললেন, যখন তিনি -গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ
দ্বাল্লীন- বললেন, তখন আমীন বললেন। রাবী বলেন, আমি তাঁর পেছনে থেকে তা শ্রবণ করলাম।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
শুনলেন, এক ব্যক্তি বলছে الْحَمْدُ لِلَّهِ
حَمْدًا
كَثِيرًا
طَيِّبًا
مُبَارَكًا
فِيهِ
যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে সালাম ফিরালেন তখন বললেন, সালাতে কে
কথা বলেছে? তখন ঐ ব্যাক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি বলেছি। আর আমি এদ্বারা অন্য কিছু
ইচ্ছা করিনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বারজন ফেরেশতা তা দ্রুত আরশে
তুলে নিয়ে গেল এবং তাতে কোন বাধা সৃষ্টি হয়নি। (সুনান
আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৯৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৩)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ অনুসরণ করার জন্যই তো ইমাম নিযুক্ত করা হয়। সুতরাং ইমাম যখন তাকবীর বলেন, তোমরাও
তাকবীর বলো। যখন তিনি কিরাআত পড়েন তখন তোমরা নীরব থাকো। যখন তিনি গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম
ওয়ালায-যুআলীন বলেন, তখন তোমরা আমীন বলো। যখন তিনি রুকূ করেন, তখন তোমরাও রুকূ করো।
আর যখন তিনি সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলেন, তখন তোমরা আল্লাহুম্মা রাববানা ওয়ালাকাল
হামদ বলো। যখন তিনি সিজদা করেন, তখন তোমরাও সিজদা করো। তিনি বসা অবস্থায় সালাত পড়লে
তোমরাও সকলে বসা অবস্থায় সালাত পড়ো। (সুনান ইবনু মাজাহ
৮৪৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২২, ৭৩৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮১৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৪১৪, সুনান আননাসায়ী ৯২১-২২, সুনান আবূ দাঊদ ৬০৩, আহমাদ ৭১০৪, ৮২৯৭, ৮৬৭২,
৯০৭৪, ৯১৫১, ২৭২০৯, ২৭২১৫, ২৭২৭৩, ২৭৩৮৩; দারিমী ১৩১১, সুনান ইবনে মাজাহ ৯৬০, ১২৩৯)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(২৪) ওয়াইল
ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, (সালাত আদায়কালে সূরাহ ফাতিহার শেষে) রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ’’ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন’’ পড়তেন তখন তিনি সশব্দে আমীন
বলতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৯৩২, সুনান ইবনু মাজাহ,
৮৫৫, সুনান আততিরমিযী ২৪৮, সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২৪৮, সুনান
আননাসায়ী ৮৭৯, ৯৩২; আহমাদ ১৮৩৬২, ১৮৩৬৫, ১৮৩৮৮; ১২৪৭, মিশকাত সহীহাহ ৪৬৫৪, সহীহ আবী
দাউদ ৮৬৩, ৮৬৪, দারাকুতনী (১/৫/৩৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৫) ওয়াইল
ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
পিছনে সালাত আদায় করেছেন। তাতে তিনি সশব্দে ’’আমীন’’ বলেছেন। তিনি ডানে ও বামে এভাবে
সালাম ফিরিয়েছেন যে, আমি তাঁর গালের শুভ্রতা দেখেছি। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৯৩৩, সুনান আততিরমিযী ২৪৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(২৬)
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইয়াহূদীরা তোমাদের
কোন ব্যাপারে এত বেশি ঈর্ষান্বিত নয় যতটা তারা তোমাদের সালাম ও আমীনের ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত।
(সুনান ইবনু মাজাহ ৮৫৬, সহীহাহ ৬৯১। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(২৭) ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ ইহূদীরা তোমাদের আমীন বলায় যত বেশি ঈর্ষান্বিত হয়, আর কোন জিনিসে তত ঈর্ষান্বিত
হয় না। তাই তোমরা অধিক পরিমাণে আমীন বলো। (সুনান ইবনু
মাজাহ ৮৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]।
তাহক্বীক্বঃ যঈফ জিদ্দান, অধিক বলার কথা ব্যতীত সহীহ
সূত্রে বর্ণিত আছে।। তাখরীজ আলবানী: জামি সগীর ৫০৫৩ যঈফ জিদ্দান, যঈফ তারগীব ৫১৫ সহীহ,
যঈফ তারগীব ২৭০ যঈফ জিদ্দান।উক্ত হাদিসের রাবী তালহাহ বিন আমর সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল
বলেন,তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আবু দাউদ আস-সাজিসতানী তাকে
দুর্বল বলেছেন। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়।
(২৮) ওয়ায়িল
ইবনু হুজর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠ করলেন, [“ওয়ালাদ্দ্ব-ল্লীন।” (ফাতিহা: ৭)] তখন
বললেন, “আমীন”। আর এতে তিনি তাঁর কন্ঠস্বর উচ্চ করলেন। (সুনান
আদ-দারেমী, ১২৭৯, আহমাদ ৪/৩১৬, ৩১৭; সুনান আবু দাউদ ৯৩২; সুনান আততিরমিযী ৩৪৮; বাইহাকী
২/৫৭, ৫৮; তাবারাণী, আল কাবীর ২২/৪৪ নং ১১১; ইবনু হাযম, আল মুহাল্লা ৩/২৬৩; দারুকুতনী
১/৩৩৩-৩৩৪ নং ১, ২, ৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ ৩/৫৮ নং ৫৮৬ সহীহ সনদে, মাওয়ারিদুয যাম’আন
নং ৪৪৭। একে সহীহ বলেছেন দারুকুতনী, হাসান বলেছেন তিরমিযী ও বাগাবী।
অপর সনদে আবু দাউদ ৯৩৩, তিরমিযী
২৪৮, ২৪৯। তিরমিযী (২৪৮ নং এর পরে) বলেন: আমি মুহাম্মদ তথা ইমাম বুখারীকে বলতে শুনেছি:
এ ব্যাপারে সুফিয়ানের হাদীস শু’বার হাদীস হতে অধিক সহীহ। শু’বাহ এ হাদীসের কয়েকটি স্থানে
ভূল করেছেন।....” তিরমিযীও (২৪৯ নং এ) একই কথা বলেছেন।- মুহাক্বিক্বের মাওয়ারিদুয যাম’আনের
৪৪৭ নং এর টীকা হতে।- অনুবাদক)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বিস্তারিত ব্যাখ্যাঃ
যেহরী
সালাতে উচ্চস্বরে আমীন না বলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবাদের
আমলের বিপরীত, বরং ইমাম ও মুক্তাদির সকলেরই সরবে আমীন বলতে হবে। কেননা রসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেহরী সালাতে উচ্চস্বরে আমীন বলতেন এবং ইমাম যখন আমীন
বলে তখন মুক্তাদিকে আমীন বলার নির্দেশ দিতেন যেমন সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৮০,
৭৮১, ৭৮২, ৪৪৭৫, ৬৪০২; হাদীস বর্ণিত। এছাড়াও
তিরমিযী বর্ণিত হাদীসে আছেঃ
ওয়ায়িল বিন হুজর (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে “গায়রিল মাগযূবি ‘আলাইহিম অলায্যাল্লীন”
পড়তে শুনেছি। অতঃপর তিনি নিজের স্বরকে উচ্চ করে আমীন বলেছেন । (বুখারী ১ম ১০৭-১০৮ পৃষ্ঠা; মুসলিম ১৭৬ পৃষ্ঠা। আবূ দাউদ ১৩৪
পৃষ্ঠা। তিরমিযী ৫৭-৫৮ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৪০ পৃষ্ঠা। ইব্নু মাজাহ ৬২ পৃষ্ঠা। মেশকাত ১ম
খণ্ড ৭৯-৮০ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তামালেক ১০৮ পৃষ্ঠা। ইব্নু খুযায়মাহ ১ম ২৮৭ পৃষ্ঠা। যাদুল
মায়াদ ১ম খণ্ড ১৩২ পৃষ্ঠা। হিদায়া হিরায়াহ ১০৮ পৃষ্ঠা। মেশকাত নূর মোহাম্মদ আযমী ২য়
খণ্ড ও মাদ্রাসা পাঠ্য হাদীস নং ৭৬৮-৭৮৭। বুখারী আযীযুল হক ১ম খণ্ড হাদীস নং ৪৫৩, বুখারী
আধুনিক প্রকাশনী ১ম খণ্ড হাদীস নং ৭৩৬-৭৩৮, বুখারী ইসলামিত ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড অনুচ্ছেদসহ
হাদীস নং ৭৪১-৭৪৩। মুসলিম ইঃফাঃ ২য় খণ্ড হাদীস নং-৭৯৭-৮০৪ পর্যন্ত। আবূ দাউদ ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৯৩২। তিরমিযী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ২৪৮,
বুলূগুল মারাম বাংলা ৮৫ পৃষ্ঠা, কিমিয়ায়ে সায়াদাত ১ম খণ্ড ১৯০ পৃষ্ঠা। ইসলামিয়াত বি-এ
হাদীস পর্ব ১৫৭ পৃষ্ঠা)।
সাহাবীদের উচ্চস্বরে ‘আমিন’ বলা
আত্বা বলেনঃ “আমীন একটি দু‘আ। ইব্নু জুবায়র
(রাঃ) আমীন বলেছেন এবং তাঁর পিছনের লোকেরা বলেছেন এমন কি মসজিদ আমীন ধ্বনিতে গুঞ্জরিত
হয়েছিল ।” (বুখারী, তাগলীকুত তা‘লীক ২/৩১৮, হাফিয ইব্নু
হাজার)।
বড় পীর সাহেবের উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলাঃ
শায়খ আবদুল ক্বাদীর জীলানী (রহঃ) ‘গুনায়তুত্
তালেবীন’ গ্রন্থে সালাতের সুন্নাতসমূহ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেনঃ
“এবং উচ্চস্বরে কেরাত পড়া ও ‘আমীন’ বলা। (গুনয়াতুত তালেবীন পৃঃ ১০, আইয়ুবিয়া প্রেসে প্রকাশিত)।
মুজাদ্দিদে আল্ফেসানী (রহঃ)-এর উচ্চস্বরে
‘আমীন’ বলা । মুজাদ্দিদে আলফেসানী শায়খ আহমাদ সারহিন্দী (রহঃ) বলেনঃ “উচ্চস্বরে ‘আমীন’
বলার হাদীছসমূহ বেশী এবং অতি শুদ্ধ।” (আবকারূল মিনান পৃষ্ঠ
১৮৯)।
হানাফী ‘আলিমগণের উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলাঃ
শায়খ ‘আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহঃ) বলেনঃ
“রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
সূরা ফাতিহার শেষে আমীন বলতেন জাহরী সালাতে (অর্থাৎ মাগরিব, ইশা ও ফজরে) উচ্চস্বরে
আর সিররী ছলাতে (অর্থাৎ যুহর ও ‘আসরে) নিম্নস্বরে। (মাদারিজুন
নুবুওয়াত পৃষ্ঠা ২০১)।
আল্লামা আবদুল হাই লক্ষ্মৌবী (রহঃ) বলেনঃ
“ন্যায়সঙ্গত কথা হলো, দলীল অনুযায়ী উচ্চস্বরে
‘আমীন’ বলা মজবুত ।” (আত্ তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ ১০৩ পৃষ্ঠা)।
তিনি আরো বলেনঃ
“গভীর চিন্তা গবেষণার পর আমরা উচ্চস্বরে ‘আমীন’
বলাকেই অতি সঠিক পেলাম। কেননা এটা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত
রিওয়ায়াতের সাথে মিলে। আর নিম্নস্বরে ‘আমীন’ বলার রিওয়ায়াতগুলো দূর্বল তাই উচ্চস্বরে
বলার রিওয়ায়াতের সমকক্ষতা করতে পারবে না ।” (আস্ সিআয়া ১/১৩৬) আমীন বলার স্বপক্ষে ১৭টি
হাদীস এসেছে। (রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/২৭১) যার মধ্যে আমীন আস্তে বলার পক্ষে শু‘বা হতে
একটি রিওয়ায়াত আহমাদ ও দারাকুৎনীতে এসেছে অর্থাৎ
আমীন বলার সময় রসূলুল্লাহ্ সল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আওয়ায নিম্ন হত। একই রিওয়ায়াতে
সুফ্ইয়ান সত্তরূ (রহঃ) হতে এসেছে অর্থাৎ তাঁর
আওয়ায উচ্চ হত। হাদীস বিশারদগণের নিকট শু‘বা থেকে বর্ণিত নিম্নস্বরে আমীন বলার হাদীসটি
মুযতারাব। যার সনদ ও মতনে নাম ও শব্দগত ভুল থাকার কারণে য’ঈফ। পক্ষান্তরে সুফ্ইয়ান
সত্তরী (রহঃ) বর্ণিত সরবে আমীন বলার হাদীসটি এসব ক্রটি হতে মুক্ত হবার কারণে সহীহ।
(দারাকুতনী হাঃ ১২৫৬ এর ভাষ্য, রওযাতুন নাদিয়াহ ১/২৭২, নায়লুল আওত্বার ৩/৭৫)
শু‘বাহর ভুলঃ
শু‘বাহ্র প্রথম ভুল এই যে, তিনি হুজরকে আমবাসের
পিতা বলে উল্লেখ করেছেন। প্রকৃত কথা এই যে, হুজর আমবাসের পিতা নন, পুত্র। আর তার কুনিয়াত
হচ্ছে আবা সাকান। (তিরমিযী, আহমদী ছাপা ৪৯ পৃষ্ঠা)
ও তাঁর দ্বিতীয় ভ্রান্তি এই যে, এই হাদীসের
সনদে আলকামা বিন অয়েলকে অতিরিক্ত আমদানী করা হয়েছে। অথচ সনদে তাঁর উল্লেখ নাই।
তাঁর তৃতীয় ভূল এই যে, হাদীসের মতনে তিনি যেখানে
বলেন-রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমীন শব্দটি আস্তে বললেন প্রকৃত
প্রস্তাবে তা হবে যে, তিনি আমীন সশব্দে উচ্চারণ করলেন । স্বয়ং মোল্লা আলী কারী হানাফী
তদীয় মিশকাতের শরাহ মিরকাতে আকুন্ঠ ভাষায় স্বীকার করেছেন যে, হাদীসবিদগণ শো‘বার এই
ভূল সম্পর্কে একমত। তিনি বলেন, সর্বস্বীকৃত সঠিক কথা হচ্ছে ‘মাদ্দাবিহা সাওতাহু ও রাফা’আ
বেহা সাওতাহু অর্থাৎ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমীনের শব্দ দারাজ
করে পড়লেন এবং উচ্চকন্ঠে পড়লেন। লম্বা করে টেনে পড়ার কথা তিরমিযী, আহমাদ ও ইব্নু আবী
শায়বা রিওয়ায়াত করেছেন আর উচ্চকন্ঠে পড়ার কথা আবু দাউদ রিওয়ায়াত করেছেন।
এতদ্ব্যতীত বাইহাকী তদীয় হাদীস গ্রন্থে ও ইব্নু
হিব্বান স্বীয় সহীতে ‘আতার বাচনিক রিওয়ায়াত করেছেন যে, তিনি বলেন, “আমি সাহাবীগণের
মধ্যে এমন দু’শত জনকে পেয়েছি যারা ইমাম ওয়ালায্যাল্লীন বলার পর বুলন্দ আওয়াজে আমীন
বলতেন” ।
শু’বাহ্র হাদীস যে যয়ীফ সে সম্পর্কে তাঁর উপরোল্লিখিত
৩টি ভ্রান্তি এবং মোল্লা আলী কারীর উপরোদ্ধৃত মন্তব্যের পর কোনই সন্দেহ থাকতে পারে
না। এর উপর তার বর্ণিত সনদে দেখা যায়, আলকামা তদীয় পিতা অয়েল হতে এই হাদীস রিওয়ায়াত
করেছেন। কিন্তু মজার কথা এই যে, তিনি তাঁর পিতার নিকট এই হাদীস শুনেননি-শুনতে পারেন
না। এ সম্পর্কে হাফিয ইব্নু হাজার তদীয় ‘তক্রীবুত্ তাহ্যীব’ নামক রিজাল শাস্ত্রের গ্রন্থে
কী বলেন- পাঠক মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করুন! তিনি বলেনঃ ‘আলক্বামাহ বিল অয়েল বিন হুজর-(পেশযুক্ত
হা ও সাকিনযুক্ত জীম) হাজরামী কুফী (রাবী হিসাবে) সত্যবাদী (সন্দেহ নাই)। কিন্তু নিশ্চিত
কথা এই যে, তিনি তাঁর পিতা হতে হাদীস শ্রবণ করেননি।
পিতার নিকট হতে পুত্র কোন হাদীস শ্রবণ করতে
পারেননি সে কথার রহস্য উদঘাটন করে দিয়েছেন শায়খ ইব্নু হুমাম হানাফী স্বীয় ফাতহুল কাদীর
গ্রন্থে। তিনি ওটাতে লিখেছেনঃ অর্থাৎ ইমাম তিরমিযী স্বীয় ইলালে কবীর গ্রন্থে উল্লেখ
করেছেন যে, তিনি ইমাম বুখারীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আলকামা কি স্বীয় পিতার নিকট হাদীস
শ্রবণ করেছিলেন?” তদুত্তরে ইমাম বুখারী (হাঁ, ‘না কিছুই না বলে) বললেন, তিনি (‘আলক্বামাহ)
স্বীয় পিতার মৃত্যুর ৬ মাস পর জন্মগ্রহণ করেন। (দেখুন
ফাতহুল কাদীর, নলকিশোর ছাপা, ১ম খণ্ড ১২১ পৃষ্ঠা)
এই হাদিস হতে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
(১)
নামাজের মধ্যে সূরা আল ফাতিহা পাঠ করার শেষে আমীন (آمِينَ) বলার অর্থ হলো এই যে, হে আল্লাহ! আমি সূরা আল ফাতিহার
মাধ্যমে যে দোয়াটি আপনার নিকটে করেছি, সেই দোয়াটি আমার আপনি কবুল করুন।
(২) এই
হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সালাত আদায় অবস্থায় ইমাম, মোকতাদী এবং একাকী সালাত
আদায়কারীর জন্য সূরা আল ফাতিহা পাঠ করার শেষে আমীন (آمِينَ) বলা একটি ভালো কাজ।
(৩)
এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফেরেশতাগণের প্রতি ঈমান স্থাপন করা উচিত।
উপসংহারঃ উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হলো যে, ছালাতে
নিরবে আমীন বলা সংক্রান্ত হাদীছগুলো দুর্বল ও মুহাদ্দিছগণের নিকট অগ্রহণীয়, আমলযোগ্য
নয়। এর বিপরীতে ছালাতে জোরে আমীন বলার দলীলসমূহ বিশুদ্ধতার মানদন্ডে অধিক শক্তিশালী
ও আমলযোগ্য। আর দুর্বল বা অশুদ্ধ হাদীছের পরিবর্তে বিশুদ্ধ হাদীছই হলো মুমিন জীবনের
উৎকৃষ্ট পাথেয়।
তবে একথা অনস্বীকার্য যে, বর্তমানে মসজিদগুলোতে পূর্বের তুলনায় আমিন জোড়ে বলার প্রবনতা অধিকহারে বেড়ে চলছে। সাধারণ মুসলমান যে নিজে থেকে যতো বেশী কুরআন-হাদিস অধ্যয়ন করছে তার আমলের বিশুদ্ধতা ততো বেশী বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে
PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment