Search This Blog

Tuesday, September 10, 2019

ছালাতে নারী-পুরুষের পার্থক্য নেই- বিভ্রান্তি নিরসন

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

ছালাতে নারী-পুরুষের পার্থক্য নেই- বিভ্রান্তি নিরসন

ভূমিকাঃ সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, মাজহাবপন্থী বিশেষ করে নামধারী হানাফী মাজহাবীগণ ইসলামের কিছু কিছু বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদে লিপ্ত হচ্ছে। কথায় কথায় বাহাসের ডাক দিচ্ছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে দেখা যায়, অনেক আলেম যারা জাল-জঈফ হাদিসের হাফেজ তারা সেই মুখস্থ বিদ্যা দিয়ে সহিহ আকিদাহপন্থী আলেম বা মুসলমানদেরকে অযথা গালাগালি করেন। তারা এমন এমন হাদিস আর যুক্তি পেশ করেন যা ইতোপূর্বে কখনো শোনা যায়নি। তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এমনসব দলিল পেশ করেন এবং ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দেন যা শুনলে মনে হয় এটাই সঠিক।

বাজারে প্রচলিত ইসলামিক বই পড়ে ও ঐসব আলেমদের বিভ্রান্তিমূলক বিভিন্ন ওয়াজ শুনে যে যেভাবে পেয়েছে সে সেভাবেই আমল করে আসছেন। বর্তমান ডিজিটাল যুগ হওয়ায় প্রতিটি বিষয় এখন কষ্টি পাথরে যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু যেসব আলেম জাল-জঈফ হাদিসগুলো ছোট বেলা থেকেই মুখস্থ করে এতো বড় হয়েছেন তারা কোনোভাবেই সহিহ হাদিসগুলো মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলেন এগুলো নাকি ইসলামে নতুন উদ্ভাবন। এর মূল কারণ হচ্ছে তাদের মুরুব্বীদের অন্ধভাবে অনুকরণ-অনুসরণ। বানানো কিচ্ছা কাহিনী, মনগড়া কথা আর মিথ্যে যুক্তিই হচ্ছে এদের মূল দলিল।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য  ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম  (সঃ) কে, তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন। (সুরা আন নিসা-৪, আয়াত নং-১১৫)।

আমাদের সমাজে এমন কিছু আলেমের আবির্ভাব ঘটেছে যারা তাদের অর্জিত ইলমের গৌরব করেন, অযথা তর্ক-বিতর্ক করেন, কথায় কথায় বাহসে বসতে চান, আবার এমন কোমল সুরেলা কন্ঠে ওয়াজ করেন যা শুনে অনায়াসে লোকজন তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।

এসব আলেমদের ব্যাপরে রাসুল সা. বলেন,

কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন করে ‘আলিমদের ওপর গৌরব করার জন্য অথবা জাহিল-মূর্খদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার জন্য অথবা মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২২৫, তিরমিযী ২৬৫৪, সহীহুল জামি ১০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উলামাগণের সাথে তর্ক-বাহাস করার উদ্দেশ্যে ইল্ম শিক্ষা করা, ইল্ম দ্বারা মূর্খ লোকেদের সাথে বাগ্বিতণ্ডা করা এবং তদ্বারা আসন, পদ বা নেতৃত্ব) লাভের আশা করলে সে জাহান্নামী,

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তোমরা উলামাগণের সাথে তর্ক-বাহাস করার উদ্দেশ্যে ইল্ম শিক্ষা করো না, ইল্ম দ্বারা মূর্খ লোকেদের সাথে বাগ্বিতণ্ডা করো না এবং তদ্বারা আসন, পদ বা নেতৃত্ব) লাভের আশা করো না। কারণ, যে ব্যক্তি তা করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম।” (ইবনে মাজাহ ২৫৪, ইবনে হিব্বান ৭৭, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭১, সহীহ তারগীব ১০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

কুরআনের কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া কুফরী। 

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআনের কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া কুফরী।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৬, আবূ দাঊদ ৪৬০৩, আহমাদ ৭৭৮৯, সহীহুত্ তারগীব ১৪৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হচ্ছে সঠিক বিষয়টি তুলে ধরা এবং ঘুনে ধরা ইসলামকে সংস্কার করা। সীমালঙ্ঘনকারীদের রদবদল, বাতিলপন্থীদের মিথ্যে অপবাদ এবং জাহিল অজ্ঞদের ভুল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে বিদূরিত করা।

রাসুল সা. বলেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অবগত হয়েছি যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মাতের (কল্যাণের) জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর শেষে এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন যিনি তাদের দীনকে সংস্কার করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৭, আবূ দাঊদ ৪২৯১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

ইবরাহীম ইবনু ‘আবদুর রহমান আল ‘উযরী (রহঃ) হতে বর্ণিত।

 তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক আগত জামা‘আতের মধ্যে নেক, তাক্বওয়াসম্পন্ন এবং নির্ভরযোগ্য মানুষ (কিতাব ও সুন্নাহর) এ জ্ঞান গ্রহণ করবেন। আর তিনিই এ জ্ঞানের মাধ্যমে (কুরআন-সুন্নাহ) সীমালঙ্ঘনকারীদের রদবদল, বাতিলপন্থীদের মিথ্যা অপবাদ এবং জাহিল অজ্ঞদের ভুল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে বিদূরিত করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৮, বায়হাক্বী ১০/২০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বর্তমান যুগে প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রে অসংখ্য সহিহ আকীদাহপন্থী আলেম জন্ম গ্রহণ করেছেন। তারা ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে সহিহ হাদিস ভিত্তিক তথ্যগুলো তুলে ধরছেন। কিন্তু একদল আলেম ও তাদের অনুসারীগণ যারা প্রতি পদে পদে ইসলামের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তারা মনে করছেন তাদের চলার পথটিই সঠিক। তাদের ব্যাপরে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না  কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ? এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো আর আমার আয়াত ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতিদানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)।

এতএব ইহকাল ও পরকালে মুক্তি পেতে চাইলে একমাত্র রাসুল সা. এর তরীকা ব্যতীত অন্য কারো বানানো তরীকায় চলা যাবে না। সালাতের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাজহাবপন্থী বিশেষ করে হানাফী মাজহাবীদের মধ্যে অনেক গড়মিল দেখা যায়। পিরপন্থীরা তো বাবার বানানো ইবাদত বা পিরের তরীকা ছাড়া আর কারো কথাই শোনে না। অথচ রাসুল সা. এর সালাত আদায়ের পদ্ধতি ছাড়া আর কারো বানানো বা মনগড়া পদ্ধতি মোতাবেক সালাত আদায় করলে তা কবুল হবে না।

বিষয়টি মাজহাবপন্থীদের অনেকে অনুধাবন করলেওে একঘেয়েমী ও ধর্মব্যবসায় লোকশান গুণতে হবে বলে বিদআতি পন্থা ছাড়ছে না।

ইসলামে অনেক ইবাদতের মধ্যে সালাত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। যার সালাত সঠিক হবে কিয়ামতে তার অন্যান্য আমল কাজে আসবে। সালাত সঠিক না হলে কোনো আমলই তাকে নাজাত দিতে পারবে না। সেই সালাতের ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমাদের সমাজে এক শ্রেণির মুসলমান বিশেষ করে মাজহাবপন্থীগণ  পুরুষ ও নারীর সালাতে জইফ হাদিস আর মনগড়া যুক্তি দিয়ে নারীদেরকে রাসুল সা. এর দেখানো সহিহ পন্থায় সালাত আদায় থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে।  একক নির্দেশিত সালাতকে তারা বিভক্ত করেছে।

 আমরা সুস্পষ্টভাবে ইসলামের প্রতিটি বিষয় তুলে ধরে আসছি। এরপরও যারা অন্ধ অনুকরন-অনুসরন করে চলবে, আল্লাহ তাদেরকে সেই পথেই চলতে দিবেন এবং শেষ পর্যন্ত জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করবেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলামের প্রতিটি বিষয় সহিহ হাদিস ভিত্তিক বুঝার তৌফিত দান করুন। আমিন।

ছালাতে নারী-পুরুষের পার্থক্য নেই- বিভ্রান্তি নিরসন

 (বিস্তারিত আলোচনা)

আমরা প্রথমে জানবো, মাজহাবীদের মতে ছালাতে নারী-পুরুষের পার্থক্য আছে। মাজহাবীগণ যেসব দলিল ও যুক্তি পেশ করে থাকেন তা নিম্নে তুলে ধরা হলো।

মাজহাবীগণ বলেন নারী পুরুষের শারীরিক গঠন, সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। যেমন-

সাধারন যুক্তিঃ

(১) পুরুষ ও মহিলা উভয়ের উপরই হজ্ব ফরয। কিন্তু মহিলাদের জন্য পথ খরচ ছাড়াও হজ্বের সফরে স্বামী বা মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি শর্ত।

(২) ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য মাথা ঢাকা নিষেধ। অথচ মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় মাথা ঢেকে রাখা ফরয।

(৩) ইহরাম খোলার সময় পুরুষ মাথা মুন্ডায়। কিন্তু মহিলাদের মাথা মুন্ডানো নিষেধ।

(৪) হজ্ব পালনকালে পুরুষ উচ্চ আওয়াজে তালবীয়া পাঠ করে, পক্ষান্তরে মহিলাদের জন্য নিম্ন আওয়াজে পড়া জরুরী।

(৫) পুরুষের উপর জুমআ পড়া ফরয, মহিলাদের উপর নয়।

(৬) নামাযে সতর্ক করার মতো কোন ঘটনা ঘটলে সতর্ক করার জন্য পুরুষের তাসবীহ পড়ার হুকুম করা হয়েছে। কিন্তু মহিলাদের তাসফীক করা তথা হাতে শব্দ করার বিধান।

(৭) ইমাম ও খতীব শুধু পুরুষই হতে পারে, কোন নারী হতে পারে না।

(৮) আজান শুধু পুরুষই দিবে, কোন নারীকে মুয়াজ্জিন বানানো জায়েজ নয়।

(৯) পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আর মহিলাদের ঘরে নামায পড়াই উত্তম বলা হয়েছে।

(১০) সতর। পুরুষের সতর হল নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত। আর পরপুরুষের সামনে নারীদের সতর হলো প্রায় পুরো শারীরই ঢেকে রাখা ফরয।

নারী-পুরুষের মাঝে এরকম পার্থক্যসম্বলিত ইবাদতসমূহের অন্যতম হল নামায। তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানো, হাত বাঁধা, রুকু, সেজদা, প্রথম ও শেষ বৈঠক ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে পুরুষের সাথে নারীর পার্থক্য রয়েছে। তাদের সতরের পরিমাণ যেহেতু বেশি তাই যেভাবে তাদের সতর বেশী রক্ষা হয় সেদিকটিও বিবেচনা করা হয়েছে ক্ষেত্রগুলোতে। মুসলিম উম্মাহর প্রায় দেড় হাজার বছরের অবিচ্ছন্ন আমলের ধারা তাই প্রমাণ করে। বিষয়টি প্রমাণিত রাসূলে কারীম সাঃ এর হাদিস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আছারের মাধ্যমে।

প্রথমে হাদিস, তারপর পর্যায়ক্রমে সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীদের ফতোয়া ও আছার উল্লেখ করা হলো।

হাদিস হতে দলিল

১ নং হাদিসঃ

তাবেয়ী ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব রহ. বলেন-একবার রাসূল সা. দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন-“যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মতো নয়। (সুনানুল বায়হাকী, হাদিস নং-৩০১৬, কিতাবুল মারাসিল লি ইমাম আবু দাউদ-৫৫, হাদিস নং-৮০)।

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “আওনুল বারী” (১/৫২০) তে লিখেছেন-“উল্লেখিত হাদিসটি সকল ইমামদের উসুল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করার যোগ্য”।

মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী “সুবুলুস সালাম” শরহু বুলুগিল মারাম” গ্রন্থে (১/৩৫১-৩৫২) এই হাদিসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সেজদার পার্থক্য করেছেন।

২ নং হাদিসঃ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছন-“মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তায়ালা তাকে দেখে বলেন-ওহে আমার ফেরেস্তারা! তোমরা সাক্ষী থাক। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। (সুনানে বায়হাকী-২/২২৩, হাদিস নং-৩৩২৪। এই হাদিসটি হাসান।

৩ নং হাদিসঃ

হযরত ওয়াইল বিন হুজর রা. বলেন। আমি নবীজী সা. এর দরবারে হাজির হলাম। তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও) বলেছিলেন যে, হে ওয়াইল বিন হুজর! যখন তুমি নামায শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর। (আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং-২৮)। এই হাদিসটিও হাসান।

উল্লেখিত হাদিসগুলি থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কিছু কিছু হুকুমের ক্ষেত্রে মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। বিশেষত ২ নং হাদিসটি দ্বারা একথাও বুঝা গেল যে, মহিলার নামায আদায়ের শরীয়ত নির্ধারিত ভিন্ন এই পদ্ধতির মধ্যে ওই দিকটিই বিবেচনায় রাখা হয়েছে যা তার সতরও পর্দার পক্ষে সর্বাধিক উপপোযী।

উল্লেখ্য যে, এই সব হাদিসের সমর্থনে মহিলাদের নামায আদায়ের পদ্ধতির পার্থক্য ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে এমন আরো কিছু হাদিস আছে। পক্ষান্তরে এগুলির সাথে বিরোধপূর্ণ একটি হাদীসও কোথাও পাওয়া যাবেনা। যাতে বলা হয়েছে যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নেই। বরং উভয়ের নামাযই এক ও অভিন্ন। একথার পক্ষে একটি হাদীসও নেই।

সাহাবায়ে কিরামের ফতোয়াঃ

১ নং ফতোয়াঃ

হযরত আলী রা. বলেছেন-মহিলা যখন সেজদা করে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৮, হাদিস নং-৫০৭২, মুসান্নাফে ইবনে শাইবা-২/৩০৮, হাদিস নং-২৭৯৩, সুনানে কুবরা বায়হাকী-২/২২২)।

২ নং ফতোয়াঃ

হযরত ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করা হল-মহিলারা কিভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন-“খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৪)।

উপরে মহিলাদের নামায সম্পর্কে দু’জন সাহাবীর যে মত বর্ণিত হল, আমাদের জানা মতে কোন হাদীসগন্থের কোথাও একজন সাহাবী থেকেও এর বিপরীত কিছু বিদ্যমান নেই।

রাসূল সা. থেকে সাহাবায়ে কিরাম যে, দ্বীন শিখেছেন তাদের কাছ থেকে তা শিখেছেন তাবেয়ীগণ। তাঁদের ফাতওয়া থেকেও এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে,”মহিলাদের নামায পুরুষের নামায থেকে ভিন্ন। নিম্নে তাঁদের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকজনের ফাতওয়া উল্লেখ করা হলোঃ

১ নং ফতোয়াঃ

হযরত আতা বিন আবী রাবাহ কে জিজ্ঞেস করা হল-“নামাযে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে?” তিনি বললেন-“বুক বরাবর”। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,-১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৬)।

২ নং ফতোয়াঃ

হযরত ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন-“আমি আতা বিন আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করলাম-“মহিলা তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে?” তিনি বললেন-“মহিলা পুরুষের মত হাত তুলবেনা। এরপর তিনি তার উভয় হাত (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথ খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন-মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। তবে এমন না করলেও অসুবিধা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৯, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদিস নং-৫০৬৬,৬২৫১)।

৩ নং ফতোয়াঃ

হযরত মুজাহিদ বিন জাবর রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি পুরুষের জন্য মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৮৯৬)।

৪ নং ফতোয়াঃ

হযরত যুহরী রহ. বলেন-“মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদীস নং-২৪৮৭)।

৫ নং ফতোয়াঃ

হযরত হাসান বসরী ও কাতাদা রহ. বলেন-“মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দিবেনা যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে”। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩)।

৬ নং ফতোয়াঃ

হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন-মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৫)।

৭ নং ফতোয়াঃ

হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. আরো বলেন-“মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে। যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৭১)।

৮ নং ফতোয়াঃ

হযরত খালেদ বিন লাজ্জাজ রহ. বলেন-“মহিলাদেরকে আদেশ করা হত যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে। আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনি করতে হয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩, হাদিস নং-২৭৯৯)।

উল্লেখিত বর্ণনাগুলো ছাড়াও আয়িম্মায়ে তাবেয়ীনের আরো কিছু বর্ণনা এমন আছে যা মহিলা-পুরুষের নামাযের পার্থক্য নির্দেশ করে। পক্ষান্তরে একজন তাবেয়ী থেকেও এর বিপরীত বক্তব্য প্রমাণিত নয়। এই হচ্ছে মাজহাবীদের দলিল।

ছালাতে নারী-পুরুষের পার্থক্য নেই : বিভ্রান্তি নিরসন-দলীলসহ প্রমাণঃ

কোনো কোনো মুসলিম ভাই বিভিন্ন অগ্রহণযোগ্য বর্ণনা দ্বারা নারী-পুরুষের ছালাতের মাঝে পদ্ধতিগত পার্থক্য নিরূপণের চেষ্টা করেন। তারা ১৮টি পার্থক্য তুলে ধরে থাকেন। বঙ্গানুবাদ ‘বেহেশতী জেওর’ বইয়ে ১১টি পার্থক্য উল্লেখ করা হয়েছে। (মোকাম্মাল মোদাল্লাল বেহেশতী জেওর, (ঢাকা : হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড, তৃতীয় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারী ২০০৪ইং), পৃঃ ১১৬-১৭)।

তারা মারফূ‘, মাওকূফ এবং মাক্বতূ‘ এই তিন প্রকার বর্ণনা উপস্থাপন করেছেন। নিম্নে তাদের পেশকৃত দলীলসমূহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হ’ল।-

মারফূ‘ তথা রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত বর্ণনা সমূহ :

ছালাতে দুই হাত উত্তোলনঃ

দলিল-১ :

ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাকে রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘হে ওয়ায়েল বিন হুজর! যখন তুমি ছালাত পড়বে তখন তোমার দু’হাত কান পর্যন্ত উত্তোলন করবে। আর নারীরা তাদের দু’হাত বুক পর্যন্ত উত্তোলন করবে’। (ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/২৮, ১৯/২২ পৃঃ)।

 

জবাব : বর্ণনাটি যঈফ বা দুর্বল। নিম্নোক্ত কারণে এটি দলীল ও আমলযোগ্য নয়। হাফেয নূরুদ্দীন হায়ছামী (রহঃ) বলেন,

‘এটি ত্বাবারাণী একটি দীর্ঘ হাদীছে ওয়ায়েল-এর মানাক্বিব অধ্যায়ে মায়মূনাহ বিনতে হুজর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি তার ফুফু উম্মে ইয়াহ্ইয়া বিনতে আব্দুল জাববার হ’তে বর্ণনা করেছেন। আর আমি তাকে তথা উম্মে ইয়াহ্ইয়াকে চিনি না। এর অবশিষ্ট রাবীগণ নির্ভরযোগ্য’। (হায়ছামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/২৫৯৪)।

উল্লেখ্য, হায়ছামীর এই উক্তিটি ড. ইলিয়াস ফয়সাল প্রণীত ‘নবীজীর নামায’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হ’লেও এর বঙ্গানুবাদ করা হয়নি। (ড. ইলিয়াস ফয়সাল, সম্পাদনা : মাওলানা আব্দুল মালেক, নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৯)।

শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন,

‘এই সনদটি যঈফ। কেননা মায়মূনা বিনতে হুজর এবং তার ফুফু উম্মে ইয়াহ্ইয়া বিনতে আব্দুল জাববার উভয়ের জীবনী আমি পাইনি। অতঃপর তিনি বলেছেন,فالتفريق المذكور في الحديث منكر- ‘এই হাদীছটিতে উপরোল্লিখিত পার্থক্যটি অস্বীকৃত বা পরিত্যক্ত’। (সিলসিলা যঈফা হা/৫৫০০)।

হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘এমন কিছু বর্ণিত হয়নি যা পুরুষ ও নারীর রাফ‘উল ইয়াদায়নের বিষয়ে পার্থক্য নির্দেশ করে’। (ফাৎহুল বারী হা/৭৩৮, ২/২২১)।

আল্লামা শাওকানী বলেন,

‘আর জেনে রাখো! নিশ্চয়ই এই সুন্নাতটি পুরুষ-নারী উভয়কে (আমলের ক্ষেত্রে সমানভাবে) অন্তর্ভুক্ত করে। আর এমন কিছু বর্ণিত হয়নি যা এই বিষয়ে উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নির্দেশ করে। তদ্রূপ এমন কিছুই বর্ণিত হয়নি যা হাত উত্তোলন করার পরিমাণ সম্পর্কে পুরুষ-নারীর মাঝে পার্থক্য নির্দেশ করে’। (নায়লুল আওত্বার হা/৬৭১, ২/২১৪)।

সুতরাং উক্ত বর্ণনাটি রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত করা যাবে না। কেননা এটি দুর্বল বর্ণনা। উল্লেখ্য যে, ড. ইলিয়াস ফয়সাল প্রণীত ‘নবীজীর নামায’ বইয়ে এই বর্ণনাটিকে হাসান বলা হয়েছে। যা গ্রহণযোগ্য নয়। (নবীজীর নামায, পরিশিষ্ট-২, পৃঃ ৩৭৮-৩৭৯)।

মেয়েদের সালাত ভিন্ন হওয়ার ব্যাপারে গোড়ামী পন্থীদের কোন সুনির্দিষ্ট সহীহ দলীল নেই। মেয়েদের জড়োসড়ো হয়ে দাড়ানো থেকে সিজদাহ পর্যন্ত সবকিছুর ব্যাপারেই ইমাম কুদুরী (র.) মাযহাবের মত প্রকাশ করতে যেয়ে যুক্তি দেখিয়েছেন এটা তাদের সতরের জন্য অধিক উপযোগী। (আল হেদায়া প্রথম খন্ড পৃঃ৮৫-৮৭)।

ছালাতে দুই হাত উত্তোলনের বিষয়ে সহিহ দলিলসমূহ যা পুরুষ-নারী সবার জন্যে প্রযোজ্য

কাঁধ বরাবর হাত উঠানোর দলিল

(ক) আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত সম্পর্কে আপনাদের চেয়ে বেশি জানি। তারা বললেন, তা আমাদেরকে বলুন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি সালাতের জন্য দাঁড়ালে দু’ হাত উঠাতেন, এমনকি তা দু’ কাঁধ বরাবর উপরে তুলতেন।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯২, ৮০১, সহীহ  আবূ দাঊদ ৭৩০, ৭৩১-৭৩৫, ৯৬৩, দারিমী ১৩৯৬, সহীহ  বুখারী ৮২৮, ইরওয়া ৩৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শুরু করার সময় দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৩, সহীহ  বুখারী ৭৩৫, নাসায়ী ১০৫৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৬১, দারেমী ১২৮৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।।

কান বরাবর হাত উঠনোর দলিল

(ক) মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় তাঁর দু’ হাত তাঁর দু’ কান পর্যন্ত উপরে উঠাতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৫, সহীহ বুখারী ৭৩৭, মুসলিম ৩৯১, ইবনু মাজাহ্ ৮৫৯, আহমাদ ২০৫৩৫, দারেমী ১২৮৬, ইরওয়া ৩৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাত আরম্ভকালে স্বীয় দু’ হাত নিজের কান পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭২৬, ৭২৮,তিরমিযী ২৯২,  নাসায়ী ৮৮৮, ইবনু মাজাহ ৮৬৭, আহমাদ ৩১৬, ৩১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাতের ভিতর চার সময়ে দুই হাত উঠাতে হয় (নারী-পুরুষ সকলেই)

(ক) তাকবীরে তাহরীমার সময় দুই হাত উঠাতে হয়ঃ

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শুরু করতেন, তখন উভয় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূ‘তে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠাতেন তখনও একইভাবে দু’হাত উঠাতেন এবং سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ  বলতেন। কিন্তু সিজদার সময় এমন করতেন না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৭,৭৩৯ মুসলিম ৪/৯, হাঃ ৩৯০, আহমাদ ৪৫৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) যখন রুকুতে যাওয়া হয়ঃ  (১নং দ্রষ্টব্য)।

(গ) যখন  রুকু থেকে উঠা হয়ঃ (১নং দ্রষ্টব্য)।

(ঘ) যখন  তৃতীয় রাকাতের জন্যে দাঁড়ানো হয়। অর্থাৎ যে সালাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে দাঁড়ানো হয়।

নাফি‘ (রহ.) বর্ণিত যে, ইবনু ‘উমার (রাযি.) যখন সালাত শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং দু’ হাত উঠাতেন আর যখন রুকূ‘ করতেন তখনও দু’ হাত উঠাতেন। অতঃপর যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলতেন তখনও দু’ হাত উঠাতেন এবং দু’রাক‘আত আদায়ের পর যখন দাঁড়াতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭৩৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(এছড়াও দেখুন-বুখারী ১ম খণ্ড ১০২ পৃষ্ঠা। মুসলিম ১৬৮ পৃষ্ঠা। আবূ দাঊদ ১ম খণ্ড ১০৪,১০৫ পৃষ্ঠা। তিরমিযী ১ম খণ্ড ৫৯ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৪১, ১৫৮, ১৬২ পৃষ্ঠা। ইবনু খুযায়মাহ ৯৫,৯৬। মেশকাত ৭৫ পৃষ্ঠা। ইবনে মাজাহ ১৬৩ পৃষ্ঠা। যাদুল মা‘আদ ১ম খণ্ড ১৩৭,১৩৮,১৫০ পৃষ্ঠা। হিদায়া দিরায়াহ ১১৩-১১৫ পৃষ্ঠা। কিমিয়ায়ে সায়াদাত ১ম ১৯০ পৃষ্ঠা। বুখারী আধুনিক প্রকাশনী ১ম হাদীস নং ৬৯২, ৬৯৩, ৬৯৫। বুখারী আযীযুল হক ১ম খণ্ড হাদীস নং ৪৩২-৪৩৪। বুখারী ইসলামীক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ৬৯৭-৭০১ অনুচ্ছেদসহ। মুসলিম ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৪৫-৭৫০। আবূ দাঊদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম হাদীস নং ৮৪২-৮৪৪। তিরমিযী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ২৫৫। মেশকাত নূর মোহাম্মদ আযমী ও মাদরাসা পাঠ্য ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৩৮-৭৩৯, ৭৪১,৭৪৫। বুলূগুল মারাম ৮১ পৃষ্ঠা। ইসলামিয়াত বি-এ. হাদীস পর্ব ১২৬-১২৯ পৃষ্ঠা)।

অতএব সহিহ হাদিস থাকতে মাজহাবীদের জঈফ হাদিস আমলযোগ্য নয়।

ইমামের ভুল হলে তাসবীহ ও তাছফীক্ব করা

দলিল-২ : আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, التَّسْبِيْحُ لِلرِّجَالِ، وَالتَّصْفِيْقُ لِلنِّسَاءِ ‘তাসবীহ হ’ল পুরুষদের জন্য ও তাছফীক্ব হ’ল নারীদের জন্য’। (তাছফীক্ব হ’ল এক হাতের পাতা দ্বারা অন্য হাতের তালুতে মারা)। (বুখারী হা/১২০৩)।

জবাব : এই পার্থক্য ছালাত আদায়ের পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত নয়। বরং ইমামের ভুলের জন্য সতর্কীকরণের সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং এই ছহীহ হাদীছটি তাক্বলীদপন্থীদের পক্ষে দলীল হ’তে পারে না।

উক্ত হাদীছ দ্বারা নারীদের জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় প্রমাণিত হয়। কিন্তু হানাফীগণ এই অনুমতি দিতে প্রস্তুত নন।

সিজদাহর সময়  মহিলাদের শরীরের কিছু অংশ জমিনের সাথে মিলানোঃ

দলিল-৩ :

ইয়াযীদ বিন হাবীব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’জন মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা ছালাত পড়ছিল। তিনি বললেন, ‘যখন তোমরা সিজদা করবে, তখন শরীরের কিছু অংশ যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কারণ এক্ষেত্রে নারী পুরুষের মত নয়’। (মারাসীলে আবী দাঊদ হা/৮৭)।

জবাব : হাদীছটি নিম্নোক্ত কারণে আমলযোগ্য নয়।

(১) এই রেওয়াতটি মুরসাল। আর মুরসাল রেওয়াতসমূহ যঈফ হয়ে থাকে। (কানযুল উম্মাল হা/১৯৭; আল-ফাতহুল কাবীর হা/১১৩৫)।

(২) এর সনদে ‘সালেম বিন গায়লান’ নামক রাবী আছেন, যিনি বিতর্কিত।

(৩) শায়খ আলবানী (রহঃ) এই মুরসাল বর্ণনাটিকে যঈফ বলেছেন। তিনি বলেন,فعلة الحديث الإرسال فقط  ‘অতঃপর হাদীছটির ত্রুটি হলো, (এতে) ইরসাল রয়েছে’। অর্থাৎ হাদীছটি ‘মুরসাল’।  (সিলসিলা যঈফা হা/২৬৫২)।

উল্লেখ্য, আলবানীর এই উক্তিটি ‘নবীজীর নামায’ গ্রন্থে পেশ করা হয়েছে। তবে অনুবাদ করা হয়নি। (নবীজীর নামায, পরিশিষ্ট-২, পৃঃ ৩৭৭)।

(৪) হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন,وَرَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ مِنْ طَرِيقَيْنِ مَوْصُولَيْنِ، لَكِنْ فِي كُلٍّ مِنْهُمَا مَتْرُوكٌ ‘একে বায়হাক্বী দু’টি ‘মাওছূল’ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু উভয়ের প্রত্যেকটিতে একজন ‘মাতরূক’ তথা প্রত্যাখ্যাত (রাবী) আছে’। (আত-তালখীছুল হাবীর হা/৩৬৪)।

(৫) ইবনুত তুরকুমানী হানাফী বলেন, ‘তার কথায় স্পষ্ট হচ্ছে যে, এই হাদীছের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ব্যতীত আর কোন ত্রুটি নেই এবং সালেম (বিন গায়লান) হ’লেন মাতরূক’। (ইবনুত তুরকুমানী হানাফী, আল-জাওহারুন নাক্বী, ২/২২৩)।

মহিলারা ছালাতে বসলে এক উরু অপর উরুর উপর রাখা ও সিজদাহর সময় পেটকে উরুর সাথে মিলানোঃ

দলিল-৪ :

আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন নারী ছালাতে বসবে তখন তার এক উরু অপর উরুর উপর রাখবে। আর যখন সিজদা করবে তখন পেটকে উরুর সাথে মিলিয়ে দিবে, যা তার সতরের অধিক উপযোগী হয়। আর নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ! আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম’। (বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/৩১৯৯)।

জবাব : এ হাদীছ সম্পর্কে ‘আল-আবাত্বীলু ওয়াল মানাকীরু ওয়াছ ছিহাহ ওয়াল-মাশাহীরু’ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে,

’এই হাদীছটি মাউযূ‘ বাতিল। এর কোন ভিত্তি নেই। আর এটি আবূ মুত্বী-এর অন্যতম মাউযূ বর্ণনা’। (আল-আবাত্বীলু ওয়াল মানাকীরু ওয়াছ ছিহাহ ওয়াল-মাশাহীরু, ১/১৪৪-১৪৫)।

(১) হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ (রহঃ) এই রেওয়ায়াতটিকে মাউযূ তথা বানোয়াট বলেছেন। (তাহক্বীক্বী মাক্বালাত ১/২৩০)।

(২) শায়খ দাঊদ আরশাদ বলেছেন, রেওয়ায়াতটি অত্যন্ত দুর্বল ও বাতিল। (হাদীছ আওর আহলে তাক্বলীদ বি-জওয়াবে হাদীছ আওর আহলেহাদীছ, ২/৮০ পৃঃ)।

(৩) ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) বলেন,

‘আবূ মূত্বীর বর্ণিত হাদীছ যঈফের অন্তর্ভুক্ত। আর তার অধিকাংশ বর্ণনার মুতাবা‘আত (সমর্থনসূচক বর্ণনা) করা হয় না। শায়খ (রহঃ) বলেছেন, ইয়াহ্ইয়া বিন মাঈন এবং অন্যরা তাকে যঈফ বলেছেন’। (আস-সুনানুল কুবরা হা/৩২০০)।

(৪) ইবনু সা‘দ বলেন, ‘আবূ মুত্বী‘ আল-বালখী-এর নাম আল-হাকাম বিন আব্দুল্লাহ। তিনি ‘বালখ’-এর বিচার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি মুরজিয়া ছিলেন। তিনি আব্দুর রহমান বিন হারমালা ও অন্যান্যদের সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তাদের নিকটে হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে যঈফ। তিনি অন্ধ ছিলেন’। (ত্বাবাক্বাতুল কুবরা, জীবনী ক্রমিক নং ৩৬৪৮)।

(৫) হাফেয ইবনে হিববান (রহঃ) বলেন, الحكم بْن عَبْد اللهِ أَبُو مُطِيع الْبَلْخِي ... كَانَ من رُؤَسَاء المرجئة مِمَّن يبغض السّنَن ومنتحليها- ‘আল-হাকাম বিন আব্দুল্লাহ আবূ মুত্বী‘ আল-বালখী ... ঐ সকল শীর্ষস্থানীয় মুরজিয়াদের অন্তর্গত ছিলেন, যারা সুন্নাহ সমূহকে এবং সুন্নাতপন্থীদেরকে ঘৃণা করত’। (আল-মাজরূহীন, জীবনী ক্রমিক নং ২৩৬)।

(৬) হাফেয যাহাবী বলেন,الحكم بن عبد الله أَبُو مُطِيع الْبَلْخِي عَن ابْن جريج وَغَيره تَرَكُوهُ ‘হাকাম বিন আব্দুল্লাহ আবূ মুত্বী‘ আল-বালখী ইবনে জুরায়েজ এবং অন্যদের থেকে বর্ণনা করেছেন। তারা (মুহাদ্দিছগণ) তাকে বর্জন করেছেন’। (আল-মুগনী ফিয-যু‘আফা, জীবনী ক্রমিক নং ১৬৫৮)।

এছাড়া ইবনুল জাওযী (রহঃ), দারাকুৎনী (রহঃ), ইমাম নাসাঈ, হায়ছামী প্রমুখ আবু মুত্বী‘ আল-বালখীকে যঈফ ও পরিত্যক্ত রাবী হিসাবে স্ব স্ব গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। (আয-যু‘আফাউল মাতরূকীন, জীবনী ক্রমিক নং ৯৫৯, ১৬০, ৬৫৪; তানক্বীহুত তাহক্বীক্ব, মাসআলা নং ২৯৯)।

মাওকূফ তথা ছাহাবীদের প্রতি সম্বন্ধযুক্ত বর্ণনাসমূহ :

ছালাতে দুই হাত উত্তোলনঃ

দলিল-১ :

আব্দে রবিবহ বিন সুলায়মান বিন উমায়ের হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি উম্মুদ দারদাকে দেখেছি, তিনি ছালাতে তার দু’হাতকে কাঁধ পর্যন্ত তুলতেন’। (ইমাম বুখারী, জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন হা/২৩)।

জবাব : এই রেওয়ায়াত দ্বারা পুরুষ ও নারীদের ছালাতের পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য প্রমাণিত হয় না।

‘উম্মুদ দারদা (রাঃ) কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন’ এর পক্ষে ছহীহ হাদীছ রয়েছে। যেমন,  আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শুরু করতেন, তখন উভয় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূ‘তে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠাতেন তখনও একইভাবে দু’হাত উঠাতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৭,৭৩৯ মুসলিম ৪/৯, হাঃ ৩৯০, আহমাদ ৪৫৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৯৯,  নাসায়ী ১০৫৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৬১, দারেমী ১২৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এখানে فِي الصَّلَاةِ (ছালাতের মধ্যে) দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল তাকবীরে তাহরীমা, রুকূ‘র আগে ও পরের রাফঊল ইয়াদায়েন। যেমনটি ইমাম বুখারী (রহঃ) ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে,

আব্দু রবিবহ বিন সুলায়মান বিন নুমায়ের হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি উম্মুদ দারদাকে দেখেছি যে, তিনি ছালাতের মধ্যে তার দু’হাত দু’কাঁধ পর্যন্ত তুলতেন, যখন তিনি ছালাত শুরু করতেন এবং রুকূ‘ করতেন। আর যখন তিনি বলতেন, ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ তখন তার দু’হাত তুলতেন এবং বলতেন, ‘রববানা ওয়া-লাকাল হামদ’। (ইমাম বুখারী, জুযউ রাফইল ইয়াদায়েন হা/২৪; হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ (রহঃ) এই হাদীছের সনদকে হাসান বলেছেন। দ্রঃ তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ১/২৩৬ পৃঃ)।

‘কান’ পর্যন্ত রাফঊল ইয়াদায়েন করারও ছহীহ হাদীছ রয়েছে। যেমন-

(ক) মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় তাঁর দু’ হাত তাঁর দু’ কান পর্যন্ত উপরে উঠাতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৫, সহীহ বুখারী ৭৩৭, মুসলিম ৩৯১, ইবনু মাজাহ্ ৮৫৯, আহমাদ ২০৫৩৫, দারেমী ১২৮৬, ইরওয়া ৩৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাত আরম্ভকালে স্বীয় দু’ হাত নিজের কান পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭২৬, ৭২৮,তিরমিযী ২৯২,  নাসায়ী ৮৮৮, ইবনু মাজাহ ৮৬৭, আহমাদ ৩১৬, ৩১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব কান ও কাঁধ পর্যন্ত দু’হাত উত্তোলন তথা রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা উভয়টিই নারী-পুরুষের জন্য প্রযোজ্য।

উল্লেখ্য যে, হাত বাঁধার সময় দুই কানের লতি বরাবর দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী উঠানো বা কানের লতি স্পর্শ করা সংক্রান্ত হাদীছ যঈফ। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৩৭, আহমাদ ৩১৬, নাসায়ী ৮৮১)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

ছালাতে মহিলাগণ  চারজানু হয়ে বসা ও জড়সড়  হয়ে আদায় করাঃ

দলিল-২ :

ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, রাসূলের যুগে মহিলারা কিভাবে ছালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, তারা ছালাতে চারজানু হয়ে বসতেন অতঃপর জড়সড় হয়ে আদায় করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়’। (মুহাম্মাদ আল-খাওয়ারেযমী, জামেউ মাসানীদিল ইমামিল আ‘যম, ১/৪০০; মুসনাদে আবী হানীফা হা/৩৭)।

জবাব :

এই রেওয়ায়াতটি যঈফ নিম্নোক্ত কারণে,

(১) ইবরাহীম বিন মাহদীর নির্দিষ্টতা অজ্ঞাত রয়েছে। ‘তাক্বরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে এই নামের দু’জন রাবী আছেন। তন্মধ্যে দ্বিতীয়জন সমালোচিত। হাফেয ইবনে হাজার  আসক্বালানী (রহঃ) বলেছেন, ‘তিনি বাছরী, মুহাদ্দিছগণ তাকে মিথ্যুক বলেছেন’। (আত-তাক্বরীব, জীবনী ক্রমিক নং ২৫৭)।

(২) এর সনদে যির্র বিন নুজায়েহ, আহমাদ বিন মুহাম্মাদ খালেদ ও আলী বিন মুহাম্মাদ আল-বায্যায নামক রাবী আছেন, যাদের জীবনী পাওয়া যায় না।

(৩) ক্বাযী ওমর ইবনুল হাসান বিন আলী আল-আশনানী হ’লেন বিতর্কিত রাবী। তার সম্পর্কে ইমাম দারাকুৎনী বলেছেন যে, তিনি মিথ্যা বলতেন’। (দারাকুৎনী, সুওয়ালাতুল হাকিম, নং ২৫২, পৃঃ ১৬৪)।

ইবনুল জাওযী তার কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং বুরহানুদ্দীন হালাবী তাকে হাদীছ জালকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (আল-মাউযূ‘আত, ৩/২৮০; আল-কাশফুল হাছীছ, পৃঃ ৩১১-৩১২, নং ৫৪১)।

(৪) অন্য সনদে আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন খালেদ আর-রাযী, যাকারিয়া বিন ইয়াহইয়া নিশাপুরী ও ক্বাবীছাহ ত্বাবারী অজ্ঞাত। আর আবূ মুহাম্মাদ আল-বুখারী মিথ্যুক রাবী। (আল-কাশফুল হাছীছ, পৃঃ ২৪৮; বায়হাক্বী, কিতাবুল ক্বিরাআত, পৃঃ ১৫৪; লিসানুল মীযান, ৩/৩৪৮-৩৪৯; নূরুল আয়নাইন ফী ইছবাতি রাফ‘ইল ইয়াদায়েন, পৃঃ ৪০, ৪১)।

প্রতীয়মান হ’ল যে, এই রেওয়ায়াতটি মাওযূ‘। আর ইমাম আবূ হানীফা হ’তে এ রেওয়ায়াত প্রমাণিতই নেই। এরপরও বহু মানুষ এই মাউযূ‘ রেওয়ায়াত পেশ করে থাকেন। (যুবায়ের আলী যাঈ, তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ১/২৩০)।

সিজদাহর সময়  জড়সড়  হওয়া ও দুই উরুকে মিলিয়ে রাখাঃ

দলিল-৩ :

আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন নারী সিজদা করবে, তখন যেন জড়সড় হয়ে যায় ও দুই উরুকে মিলিয়ে রাখে’। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৭৭৭)।

জবাব : এই বর্ণনার সনদে হারেছ আল-আওয়ার নামক রাবী রয়েছে। তার সম্পর্কে হাফেয যায়লাঈ (রহঃ) বলেন,كَذَّبَهُ الشَّعْبِيُّ وَابْنُ الْمَدِينِيِّ، وَضَعَّفَهُ الدَّارَقُطْنِيُّ ‘তাকে শা‘বী ও ইবনুল মাদীনী মিথ্যুক অভিহিত করেছেন। আর দারাকুৎনী তাকে যঈফ বলেছেন’। (নাছবুর রায়াহ, ২/৩)।

নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ), ইবনু সা‘দ ও দারাকুৎনী হারেছকে যঈফ বলেছেন। (আছলু ছিফাতি ছলাতিন নাবী, ২/৬৭১; আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা, জীবনী ক্রমিক নং ২০৮৩, ১৫১)।

হাফেয যাহাবী বলেন, ইবনুল মাদীনী তাকে মিথ্যুক, দারাকুৎনী তাকে যঈফ, নাসাঈ তাকে ‘শক্তিশালী নন’ এবং শা‘বী তাকে মিথ্যুক বলেছেন। (আল-মুগনী ফী যু‘আফাইর রিজাল, জীবনী ক্রমিক নং ১২৩৬)।

সুতরাং এমন চরম দুর্বল রাবীর বর্ণনা দ্বারা দলীল গ্রহণ করা সিদ্ধ নয়। উপরন্তু এ হাদীছের সনদে ‘আবূ ইসহাক্ব আস-সাবীঈ’ নামক আরেকজন রাবী আছেন। তিনি আস্থাভাজন রাবী হ’লেও মুদাল্লিস হিসাবে ব্যাপক প্রসিদ্ধ। আসমাউল মুদাল্লিসীন, ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, যিকরুল মুদাল্লিসীন, আল-মুদাল্লিসীন প্রভৃতি গ্রন্থে তাকে প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস রাবী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। (আসমাউল মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ৪৫; ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ৬৬; যিকরুল মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ৯; আল-মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ৪৭)।

নাছিরুদ্দীন আলবানী তাকে মুদাল্লিস (রাবীর হিফয শক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়া, বিবেক-বুদ্ধি দুর্বল হয়ে যাওয়া, হাদীছকে সঠিকভাবে মনে রাখতে না পারায় হাদীছের বাক্যে তালগোল পাকিয়ে যাওয়াকে ইখতিলাত্ব বলা হয়। বিভিন্ন কারণে ইখতিলাত হ’তে পারে। যেমন বয়স বেড়ে যাওয়া, বই-পুস্তক পুড়ে যাওয়া, ধন-সম্পদের ক্ষতি হওয়া কিংবা সন্তান-সন্ততির মৃত্যু ঘটার কারণে মানসিক আঘাত পাওয়া ইত্যাদি। দ্রঃ তায়সীরু মুছত্বলাহিল হাদীছ, পৃঃ ১২৫) রাবী হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭০১)।

ছালাতে জড়সড়  হওয়া এবং খুবই আঁটসাঁট  হয়ে  ছালাত  আদায় করাঃ

দলিল-৪ :

ইবনে আববাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল মহিলাদের ছালাত সম্পর্কে। তিনি বললেন, ‘জড়সড় হয়ে এবং খুবই আঁটসাঁট হয়ে ছালাত পড়বে’। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৭৭৮)।

জবাব :

প্রথমতঃ  ছালাতের কোন রুকনকে আঁসাঁট হয়ে আদায় করবে, উপরোল্লিখিত বর্ণনাটিতে এই বিষয়ে কোন স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। বরং এর ভাষা হ’ল ‘আম’ তথা ব্যাপক অর্থবোধক। একে ‘খাছ’ করার দলীল প্রয়োজন। যদি বলা হয় যে, সিজদায় আঁটসাঁট হয়ে সিজদা করবে (যেমনটি হানাফীগণ দাবী করেন), তাহ’লে এটি মারফূ‘ হাদীছের খেলাফ হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) হুকুম দিয়েছেন যে, তোমাদের কেউ যেন কুকুরের মত তার বাহুদ্বয়কে বিছিয়ে না দেয়। (বুখারী হা/৮২২)।

এ হুকুম নারী-পুরুষ সবার জন্যই প্রযোজ্য। একে পুরুষদের সাথে ‘খাছ’ করার জন্য মারফূ‘ হাদীছ প্রয়োজন। সুতরাং নবী করীম (ছাঃ)-এর এই হুকুমকে ছাহাবীর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রত্যাখ্যান করা যাবে না।

দ্বিতীয়তঃ ইবনে আববাস (রাঃ) ৬৮ হিজরীতে মারা গেছেন। যখন ৮৮ হিজরীতে মুত্যৃবরণকারী ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন হারেছ (রাঃ)-এর সাথে তার হাদীছ শ্রবণ প্রমাণিত হয়নি, তখন ৬৮ হিজরীতে মৃত্যুবরণকারী ছাহাবী থেকে হাদীছ শ্রবণ কিভাবে সাব্যস্ত হ’তে পারে? (হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ, তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ১/২৩৩)।

তৃতীয়তঃ ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বুকায়ের হাদীছ শ্রবণ করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং এই রেওয়াতটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার দরুণ যঈফ সাব্যস্ত হয়েছে। যা আমলের অযোগ্য এবং দলীলযোগ্য নয়।

মাক্বতূ‘ তথা তাবেঈনদের প্রতি সম্বন্ধযুক্ত বর্ণনাসমূহ

সিজদাহর সময় নারীগণ পেটকে উরুর সাথে আঁটসাঁট করে রাখা এবং অঙ্গপ্রতঙ্গকে দূরবর্তী না করাঃ

দলিল-১ :

ইবরাহীম নাখঈ বলেন, নারীরা যখন সিজদা করবে তখন তার পেটকে উরুর সাথে আঁটসাঁট করে রাখবে এবং তার নিতম্বকে যেন (পুরুষের ন্যায়) উপরে না তুলে। আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ঐরূপ দূরবর্তী করে না রাখে যেভাবে পুরুষেরা রাখে’। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৭৮২)।

জবাব : এই বর্ণনাটিও যঈফ এবং অগ্রহণযোগ্য। কারণ এখানে সুফিয়ান ছাওরী নামক একজন মুদাল্লিস রাবী রয়েছেন, যিনি ‘আন’ (عَنْ) দ্বারা বর্ণনা করেছেন। ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) তার সম্পর্কে বলেন, وكان ربمادلس- ‘আর তিনি কখনো কখনো তাদলীস করতেন’। (তাক্বরীবুত তাহযীব, জীবনী ক্রমিক নং ২৪৪৫)।

‘আসমাউল মুদাল্লিসীন’, ‘আল-মুদাল্লিসীন’ ও ‘আত-তাবঈনু লি-আসমাইল মুদাল্লিসীন’ গ্রন্থে তাকে মুদাল্লিস বলা হয়েছে এবং ইবনুত তুরকুমানী হানাফী, হাফেয যাহাবী, বদরুদ্দীন আইনী হানাফী, ইমাম নববী প্রমুখ তাঁকে মুদাল্লিস বলেছেন। (আসমাউল মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ১৮; আল-মুদাল্লিসীন, জীবনী ক্রমিক নং ২১; আল-জাওহারুন নাক্বী, ৮/২৬২; মীযানুল ই‘তিদাল, জীবনী ক্রমিক নং ৩৩২২; উমদাতুল ক্বারী, হা/২১৪-এর আলোচনা দ্রঃ; শরহে ছহীহ মুসলিম, ২/১৮২)।

সিজদাহর সময়  পুরুষগণ নারীদের মতো পেটকে উরুর সাথে লাগিয়ে বসাঃ

দলিল-২ :

মুজাহিদ হ’তে বর্ণিত, তিনি এই বিষয়টিকে মাকরূহ মনে করতেন যে, ‘সিজদা করার সময় পুরুষ নারীদের মত তার পেটকে উরুর সাথে লাগিয়ে বসবে যেভাবে নারীরা রাখে’। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৭৮০)।

জবাব: এটি খুবই দুর্বল বর্ণনা। এর সনদে লায়ছ বিন সুলায়েম নামক রাবী আছেন। যিনি সত্যবাদী। কিন্তু তিনি শেষ বয়সে ইখতিলাত্বের শিকার হন। আর তার হাদীছ সমূহের মাঝে পার্থক্য করতে পারতেন না (কোন হাদীছটি ইখতিলাত্বের আগে আর কোনটি পরের তা বুঝতে পারতেন না)। এজন্য তার বর্ণিত হাদীছ যঈফ।

‘আত-তাহক্বীক্ব ফী মাসাইলিল খিলাফ’, ‘বায়ানুল ওয়াহমি ওয়াল ঈহাম ফী কুতুবিল আহকাম’, ‘মা‘রিফাতুত তাযকিরাহ’, ‘তানক্বীহুত তাহক্বীক্ব’ ও ‘আহওয়ালুর রিজাল’ গ্রন্থে লায়ছকে যঈফ বলা হয়েছে। (আত-তাহক্বীক্ব ফী মাসাইলিল খিলাফ হা/১৩১৫; বায়ানুল ওয়াহমি ওয়াল ঈহাম ফী কুতুবিল আহকাম, ৫/২৯৫; মা‘রিফাতুত তাযকিরাহ, জীবনী নং ২৬৮; ইবনে আব্দুল হাদী, তানক্বীহুত তাহক্বীক্ব, ৩/২৩৪; আহওয়ালুর রিজাল, জীবনী ক্রমিক নং ১৩২)।

বায়হাক্বী, যায়লাঈ, হাফেয হায়ছামী, ইমাম নাসাঈ, হাফেয আহমাদ শাহীন, ইবনুল জাওযী, ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও শায়খ আলবানী (রহঃ) সহ জমহুর বিদ্বানগণ লায়ছকে যঈফ বলেছেন। (আল-জাওহারুন নাক্বী, ১/২৯৮; নাছবুর রায়াহ, ২/৪৭৫, ৪/৩৩০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হা/৬৩৬৪; আয-যু‘আফাউল মাতরূকীন, জীবনী ক্রমিক নং ৫১১; তারীখে আসমাউয যু‘আফা ওয়াল কায্যাবীন, জীবনী ক্রমিক নং ৫৩১; আয-যু‘আফাউল মাতরূকীন, নং ২৮১৫; তারীখে ইবনে মাঈন, দারেমীর বর্ণনা, নং ৭২০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৫৪; ইতহাফুল মাহরাহ হা/২৭৬০)।

তাকবীরের সময়  নারী পুরুষের মতো হাত তুলবে নাঃ

দলিল-৩ :

ইবনে জুরায়েজ (রহঃ) বলেছেন যে, আমি আত্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, নারী কি তাকবীরের সময় পুরুষদের মত ইশারা করবে? তিনি বললেন, নারী পুরুষের মত হাত তুলবে না। এরপর তিনি ইশারা করলেন। তারপর তার দু’হাত নীচুতে রেখে (শরীরের সাথে) মিলিয়ে দিলেন। আর বললেন, নারীর পদ্ধতি পুরুষদের মত নয়। আর যদি এমনটি না করে, তবে কোন অসুবিধা নেই’। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৪৭৪)।

জবাব : রেওয়ায়াতটির শেষে আছে ‘যদি এমনটি না করে, তবে কোন অসুবিধা নেই’। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৪৭৪)।

এই বাক্যটির স্পষ্ট মর্ম এই যে, যদি পুরুষদের মত করে, তবুও কোন সমস্যা নেই।

দেওবন্দীদের নির্ভরযোগ্য আলেম জাফর আহমাদ থানভী দেওবন্দী বলেছেন, নিশ্চয়ই তাবেঈর বক্তব্যের মাঝে কোন হুজ্জাত তথা দলীল নেই’। (ই‘লাউস সুনান, ১/২৪৯; তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ১/২২৬-এর বরাতে)।

সিজদাহর সহিহ  নিয়ম (যা নারী-পুরুষ সবার জন্যে একই )

সাত অঙ্গ দ্বারা সিজদা করা ও সিজদায় চুল-কাপড় না গুটানোর হুকুমঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা্ করতে এবং চুল ও কাপড় না গুটাতে নির্দেশিত হয়েছিলেন। (অঙ্গ সাতটি হল) কপাল দু’ হাত, দু’ হাঁটু ও দু’ পা। (সুনান আদ-দারেমী, ১৩৫৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৮০৯,৮১০, ৮১২, ৮১৫, ৮১৬, মুসলিম ৪৯০, মুসনাদুল মাউসিলী  ২৩৮৯, ২৪৩১, ২৪৬৪, ২৬৬৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২১, ১৯২৩, ১৯২৪, ১৯২৫, মুসনাদুল হুমাইদী ৫০০, ৫০১, ৫০২, আহমাদ ২৫৮৪, আধুনিক প্রকাশনী ৭৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৭২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদায় যাওয়ার সহিহ নিয়ম

(১) সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে দু’হাত মাটিতে রাখবেন। কেননা এ বিষয়ে আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ হাদীছটি ‘ছহীহ’। (আবুদাঊদ ৮৪০, মিশকাত ৮৯৯)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সিজদা্ করার সময় যেন উটের বসার মতো না বসে, বরং দু’ হাত যেন হাঁটুর আগে মাটিতে রাখে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৯, নাসায়ী ১০৯১, সহীহ আল জামি‘ ৫৯৫, দারিমী ১৩২১, ১৩৫৭, ১৩৬০, মুসনাদুল মাওসিলী, ৬৫৪০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৪০, ১০৯০, আহমাদ ৩৮১, বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ ৩/১৩৪, বাইহাকী ২/৯৯, তাহাবী ১/২৫৪; হাযিমী, আল ই’তিবার পৃ: ১৫৮-১৫৯, মুসনাদুল মাউসিলী ৬৫৪০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) কিন্তু ওয়ায়েল বিন হুজ্র (রাঃ) বর্ণিত আগে হাঁটু রাখার হাদীছটি ‘যঈফ’ বা দুর্বল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস একাডেমী-৮৯৮, আবূ দাঊদ ৮০৮, ৮৩৮, তিরমিযী ২৬৮, নাসায়ী ১০৮৯, ইবনু মাজাহ্ ৮৮২, ইরওয়া ৩৫৭, দারিমী ১৩৫৯, মির‘আত ৩/২১৭-১৮)।  হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)। যঈফ হাদিস আমলযোগ্য নয়।

(৩) সিজদার সময় হাত দু’খানা ক্বিবলামুখী করে রাখতে হবে। (‘কেননা দুই হাতও সিজদা করে যেমন মুখমন্ডল সিজদা করে থাকে’। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

নাফি‘ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলতেন, যে ব্যক্তি সালাতের সাজদায় নিজের কপাল জমিনে রাখে সে যেন তার হাত দু’টিকেও জমিনে ওখানে রাখে যেখানে কপাল রাখে। তারপর যখন সিজদা হতে উঠবে তখন নিজের হাত দু’টিও উঠায়। কারণ যেভাবে মুখমণ্ডল সিজদা করে ঠিক সেভাবে দু’ হাতও সিজদা  করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস একাডেমী- ৯০৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) সিজদার সময় হাত দু’খানা মাথার দু’পাশে কাঁধ বা কান বরাবর থাকবে। (ফিক্বহুস্ সুন্নাহ ১/১২৩, নায়লুল আওত্বার ৩/১২১)।

(৫)  মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবেন। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একদল সাহাবীর মধ্যে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত আপনাদের চেয়ে বেশি আমি মনে রেখেছি। আমি তাঁকে দেখেছি, তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় দু্’ হাত দু’ কাঁধ বরাবর উঠাতেন। রুকূ‘ করার সময় পিঠ নুইয়ে রেখে দু’ হাত দিয়ে দু’ হাঁটু শক্ত করে ধরতেন। আর মাথা উঠিয়ে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। এতে প্রতিটি গ্রন্থি স্ব-স্ব স্থানে চলে যেত। তারপর তিনি সিজদা করতেন। এ সময় হাত দু’টি মাটির সাথে বিছিয়েও রাখতেন না, আবার পাঁজরের সাথে মিশাতেনও না এবং দু’ পায়ের আঙ্গুলগুলোর মাথা ক্বিবলা মুখী করে রাখতেন। এরপর দু’ রাক্‘আতের পরে যখন বসতেন বাম পায়ের উপরে বসতেন ডান পা খাড়া রাখতেন। সর্বশেষ রাক্‘আতে বাম পা বাড়িয়ে দিয়ে আর অপর পা খাড়া রেখে নিতম্বের উপর (ভর করে) বসতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস একাডেমী- ৭৯২, বুখারী ৮২৮, ইরওয়া ৩৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অনুরুপ আর একটি হাদিস,

বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদা করার সময় তোমরা দু’ হাতের তালু জমিনে রাখবে। উভয় হাতের কনুই উপরে উঁচিয়ে রাখবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮৯, সহীহ  মুসলিম ৪৯৪, আহমাদ ১৮৪৯১, সহীহ আল জামি‘ ৫৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬)  কনুই ও বগল ফাঁকা রাখবেন। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহায়নাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা দিতেন, তার হাত দু’টিকে এমন প্রশস্ত রাখতেন যে, তার বগলের নিচের শুভ্রতাও দেখা যেত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস একাডেমী- ৮৯১, মুসলিম ৪৯৫, বুখারী ৩৯০, নাসায়ী ১১০৬, আহমাদ ২২৯২৫, ইরওয়া ৩৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) হাঁটু বা মাটিতে ঠেস দিবেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮০১, সহীহ  আবূ দাঊদ ৭৩০, ৯৬৩,  ৭৩১-৭৩৫, দারিমী ১৩৯৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) সিজদায় দুই কনুই উঁচু রাখবেন এবং কোনভাবেই দু’হাত কুকুরের মত মাটিতে বিছিয়ে দেওয়া যাবেন না। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা সুষ্ঠুভাবে সিজদা করো। তোমাদের কেউ যেন কুকুরের ন্যায় তার বাহুদ্বয় মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে সিজদা না করে। (সুনানে ইবনে মাজাহ-তাওহীদ ৮৯২, বুখারী ৫৩২, ৮২২; মুসলিম ৪৯৩, তিরমিযী ২৭৬, নাসায়ী ১০২৮, ১১০৩, ১১১০; আবূ দাঊদ ৮৯৭, আহমাদ ১১৬৫৫, ১১৭৩৮, ১২৪০১, ১২৪২৯, ১২৫৭৯, ১২৮২০, ১৩০০৭, ১৩৪৮৩, ১৩৫৬১, ১৩৬৮৩; দারিমী ১৩২২,ইরওয়াহ ৩৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৯)  সিজদা এমন (লম্বা) হবে, যাতে বুকের নীচ দিয়ে একটা বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মায়মূনাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় নিজের দু’ হাত জমিন ও পেট হতে পৃথক করে রাখতেন, এমনকি যদি একটি ছাগলের বাচ্চা তাঁর হাতের নিচ দিয়ে চলে যেতে চাইলে যেতে পারতো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮৯০-[৪], হাদিস একাডেমী- আবূ দাঊদ ৮৯৮, মুসলিম ৪৬৯, নাসায়ী ১১০৯, ইবনু মাজাহ্। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) সহজ হিসেবে প্রত্যেক মুছল্লী নিজ হাঁটু হ’তে নিজ হাতের দেড় হাত দূরে সিজদা দিলে ঠিক হতে পারে। সিজদা হতে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবেন এবং ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবেন ও আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী রাখবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮০১, ৭৯২, সহীহ  আবূ দাঊদ ৭৩০, ৯৬৩, দারিমী ১৩৯৬, সহীহ  আবূ দাঊদ ৭৩১-৭৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদায় যা করা যাবে না

(১১) ‘আবদুর রহমান ইবনু শিবল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় কাকের মতো ঠোঁকর মারতে, হিংস্র প্রাণীর মতো জমিনে হাত বিছিয়ে দিতে ও উটের মতো মসজিদের মধ্যে নিজের জন্য স্থান নির্দিষ্ট করে নিতে নিষেধ করেছেন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০২, আবূ দাঊদ ৮৬২, নাসায়ী ১১১২, সহীহ আত্ তারগীব ৫২৩, দারিমী ১৩৬২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠক করার নিয়ম

(১২) দুই সিজদার মধ্যবতীর্ণ অবস্থায় স্থিরতা অবলম্বন ওয়াজিব।নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুই সিজদার মধ্যবর্তী অবস্থায় এমনভাবে স্থিরতা অবলম্বন করতেন যার ফলে প্রত্যেক হাড় স্ব স্ব স্থানে ফিরে যেত।তিনি এ বিষয়ে ছালাতে ক্ৰটিকারীকে নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ এমনটি না করা পর্যন্ত তোমাদের কারো ছালাত পূর্ণ হবে না।

বৈঠককে এতই দীর্ঘায়িত করতেন যে প্রায় সিজদার পরিমাণ হয়ে যেত।আবার কখনও এত দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত অবস্থান করতেন যে, কেউ কেউ মনে মনে বলত, নিশ্চয় তিনি ভুলে গেছেন।

 সিজদায় যে পরিমান সময় ব্যয় হবে এখানেও প্রায় সে পরিমান সময় ব্যয় করতে হবে। বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সলাতে দাঁড়ানো বসা অবস্থা ব্যতীত রাসুল (সাঃ) এর রুকু, সিজদাহ এবং দুই-সিজদার মধ্যবর্তী সময় ও রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো, এগুলো প্রায় সমপরিমান ছিল।বারাআ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালাতে দাঁড়ানো ও বসা অবস্থা ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রুকূ‘, সিজদা্ এবং দু’ সিজদার মধ্যবর্তী সময় এবং রুকূ‘ হতে উঠে দাঁড়ানো, এগুলো প্রায় সমপরিমাণ ছিল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৯২, ৮০১, ৮২০, মুসলিম ৪৭১, আহমাদ ১৮৬২১, আধুনিক প্রকাশনী ৭৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাতে সিজদারত অবস্থায় দু’পা রাখার নিয়ম

(১৩) হযরত আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘এক রাত্রিতে আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বিছানায় না পেয়ে আমার হাত দিয়ে খুঁজতে থাকলাম। অতঃপর আমার হাত তাঁর দু’পায়ের উপর পতিত হয়। তখন তিনি সিজদারত ছিলেন এবং তাঁর পা দু’টি খাঁড়া ছিল’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৩, সহীহ মুসলিম ৪৮৬, ইবনু মাজাহ্ ৩৮৪১, আহমাদ ২৫৬৫৬, নাসায়ী ১১০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৪) অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘এ সময় তাঁর গোড়ালীদ্বয় মিলানো ছিল এবং পায়ের অঙ্গুলিসমূহ কিবলার দিকে ছিল’। (মুস্তাদরাক হাকেম ১/৩৪০ পৃঃ, হা/৮৩২; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ ৬৫৪, ইবনু হিববান ১৯৩৩)।

(১৫) ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি সাত অঙ্গের উপর সিজদা করতে আদিষ্ট হয়েছি। নাকসহ চেহারা, দু’হাত, দু’হাটু এবং দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৬) এখানে ‘দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ’-এর ব্যাখ্যায় ছাহেবে মির‘আত বলেন, দু’পায়ের আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী থাকবে এবং দু’গোড়ালি খাড়া থাকবে’ (মির‘আত ৩/২০৪)।

(১৭) ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, দু’গোড়ালীর মাঝে এক বিঘত ফাঁক থাকবে (নায়ল ৩/১২১)। মূলতঃ দাঁড়ানো অবস্থায় যেমন দু’পা ফাঁক থাকে, সিজদা অবস্থায়ও সেভাবে থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক অবস্থা। এক্ষণে ইবনু হিববান, ইবনু খুযায়মা ও হাকেম বর্ণিত আয়েশা (রাঃ)-এর দু’গোড়ালি মিলানো সম্পর্কে যে বর্ণনাটি এসেছে, সে সম্পর্কে ইমাম হাকেম বলেন, ‘এই হাদীছ ব্যতীত অন্য কোথাও কেউ গোড়ালী মিলানোর কথা বর্ণনা করেছেন বলে আমি জানি না (হাকেম ১/৩৫২)।

নারী-পুরুষ উভয়ের দু'পায়ের মাঝে ফাঁকা রাখার পরিমাণ

পুরুষ ও মহিলা মুছল্লী স্ব স্ব কাতারে দু’পা স্বাভাবিক ফাঁক করে দাঁড়াবেন। যাতে পায়ের মাঝখানে নিজের জুতা জোড়া রাখা যায়।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন সালাত আদায়কালে জুতা খুলে তার ডান পাশে ও বাম পাশে না রাখে। কারণ তা অন্যের ডান পাশে হবে। অবশ্য বাম পাশে কেউ না থাকলে (রাখতে পারবে)। তবে জুতাজোড়া উভয় পায়ের মধ্যখানে রাখাই শ্রেয়।(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৫৪, হাকিম (১/২৫৯), বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (২/৪৩২), ইবনু খুযাইমাহ (১০১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সিজদা থেকে উঠে দাঁড়ানোর নিয়ম

আল্লাহু আকবার বলে প্রথমে মুখমন্ডল এরপর দুই হাত পরে হাঁটু উঠাবেন অথবা, মুখমন্ডল উঠিয়ে মাটিতে হাতের উপর ভর দিয়ে সরাসরি উঠে দাঁড়াবেন। উভয়ই জায়েয।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে মারফূ‘ভাবে বর্ণিত। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুখমন্ডলের ন্যায় দু’ হাতও সিজদা্ করে। তোমাদের কেউ মুখমন্ডল (কপাল) যমীনে রাখার সময় যেন অবশ্যই তার দু’ হাতের তালু যমীনে রাখে এবং যমীন থেকে মুখমন্ডল উঠানোর সময় যেন দু’ হাতও উঠায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-৮৯৩, ইবনু খুযাইমাহ  ১৬২২)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখিত পদ্ধতিতেই রাসুল সা. নিজে সালাত আদায় করতেন, তাঁর অনুরন করে সাহাবাগণও একই পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতেন এবং রাসুল সা. নিজে মহিলাদের নিয়ে জামাত করে একই পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতেন। এখানে মহিলাদের আলাদা করে বলেননি যে, সিজদাহর সময়  আঁটসাঁট বা জড়সড়  হয়ে পেটকে উরুর সাথে লাগিয়ে সিজদাহ দিতে। অথচ একদল  সুন্নাহত্যাগী মুসলমান কোথা থেকে কয়েকটি জঈফ হাদিস সংগ্রহ করে মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। এরাই আবার গলা ফাটিয়ে ওয়াজ করে।

বুকের উপর হাত বাঁধার দলিল ও নিয়ম

মাজহাবী মহিলাগণ ছালাতে বুকের উপর হাত বাঁধে। আর পুরুষেরা নাভির উপর হাত বাঁধে। তারা মহিলাদের বুকের  উপর হাত বাঁধার দলিল পেল কোথায়?

এখন মাজহাবীগণ মহিলাদের জন্যে যে দলিল পেশ করবেন সেই দলিল তো পুরুষের জন্যও প্রযোজ্য। দলিলগুলো লক্ষ্য করি,

রাসূলুল্লাহ (স) তাঁর সালাতে বুকের উপর হাত রাখতেন। তিনি বুকের উপর কিভাবে হাত রাখতেন তার দলীল নিম্নরুপঃ

(১) সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) বলেন, ‘লোকদেরকে নির্দেশ দেওয়া হতো যেন তারা ছালাতের সময় ডান হাত বাম হাতের উপরে রাখে। আবু হাযেম বলেন যে, ছাহাবী সাহল বিন সা‘দ এই আদেশটিকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দিকে সম্পর্কিত করতেন বলেই আমি জানি’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৪০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৭, ৭৯৮, আধুনিক প্রকাশনী ৬৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 আধুনিক প্রকাশনীর ৬৯৬ নম্বরে অত্র হাদীসের অনুবাদে একটি বিরাট জালিয়াতি ও ধোঁকাবাজি করা হয়েছে। পাঠকগণের সুবিধার্থে মূল হাদীসের ইবারতসহ সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো-

সালাতে নাভির নীচে হাত বাঁধার কথা সহীহ হাদীসে নাই। নাভির নীচে হাত বাঁধার কথা প্রমাণহীন। বরং হাত বুকের উপর বাঁধার কথা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

ওয়ায়িল বিন হুজর (রাযি.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত আদায় করেছি। তিনি তার বুকে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন।

বুখারীর হাদীসের আরবী ইবারতে ذراعه শব্দের অর্থ করেছেন হাতের কব্জি। কিন্তু এমন কোন অভিধান নেই যেখানে ذراع অর্থ কব্জি করা হয়েছে। আরবী অভিধানগুলোতে ذراع শব্দের অর্থ পূর্ণ একগজ বিশিষ্ট হাত। অনুবাদক শুধুমাত্র সহীহ হাদীসকে ধামাচাপা দিয়ে মাযহাবী মতকে অগ্রাধিকার দেয়ার উদ্দেশে ইচ্ছাকৃতভাবে অনুবাদে পূর্ণ হাতের পরিবর্তে কব্জি উল্লেখ করেছেন। তথাপিও সংশয় নিরসনের লক্ষে এ সম্পর্কে খানিকটা বিশদ আলোচনা উদ্ধৃত করা হলো-

ওয়াইল বিন হুজ্র (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করেছি। (আমি দেখেছি) নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর রাখলেন।

(বুখারী ১০২ পৃষ্ঠ। সহীহ ইবনু খুযায়মাহ ২০ পৃষ্ঠা। মুসলিম ১৭৩ পৃষ্ঠা। আবূ দাঊদ ১ম খণ্ড ১১০, ১২১, ১২৮ পৃষ্ঠা। তিরমিযী ৫৯ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৪১ পৃষ্ঠা। ইবনু মাজাহ ৫৮, ৫৯ পৃষ্ঠা, মেশকাত ৭৫ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তা মালিক ১৭৪ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ১৬০ পৃষ্ঠা। যাদুল মায়াদ ১২৯ পৃষ্ঠা। হিদায়া দিরায়াহ ১০১ পৃষ্ঠা। কিমিয়ায়ে সাআদাত ১ম খণ্ড ১৮৯ পৃষ্ঠা। বুখারী আযীযুল হক ১ম খণ্ড হাদীস নং ৪৩৫। বুখারী আধুনিক প্রকাশনী ১ম খণ্ড হাদীস নং ৬৯৬। বুখারী ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭০২; মুসলিম ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৮৫১। আবূদাঊদ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ৭৫৯, তিরমিযী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ২৫২, মেশকাত নূর মোহাম্মদ আযমী ২য় খণ্ড ও মাদ্রাসা পাঠ্য ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৪১, ৭৪২। বুলুগুল মারাম বাংলা ৮২ পৃষ্ঠা)।

বুকের উপর হাত বাঁধা সম্বন্ধে একটি হাদীস বর্ণিত হল- সীনা বা বুকের উপর এরূপভাবে হাত বাঁধতে হবে যেন ডান হাত উপরে এবং বাম হাত নীচে থাকে।

হাত বাঁধার দুইটি নিয়ম

প্রথম নিয়মঃ ডান হাতের কব্জি বাম হাতের কব্জির জোড়ের উপর থাকবে। (ইবনু খুযাইমাহ)

দ্বিতীয় নিয়মঃ ডান হাতের আঙ্গুলগুলি বাম হাতের কনুই-এর উপর থাকবে, অর্থাৎ সমস্ত ডান হাত বাম হাতের উপর থাকবে। (বুখারী)

এটাই যিরা‘আহর উপর যিরা‘আহ রাখার পদ্ধতি।

 একথা স্পষ্ট যে, বাম হাতের উপরে ডান হাত রাখলে তা বুকের উপরেই চলে আসে। নিম্নোক্ত রেওয়ায়াত সমূহে পরিষ্কারভাবে যার ব্যাখ্যা এসেছে। যেমন-

(ক) ছাহাবী হুলব আত-ত্বাঈ (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বাম হাতের জোড়ের (কব্জির) উপরে ডান হাতের জোড় বুকের উপরে রাখতে দেখেছি’। (আহমাদ হা/২২৬১০, সনদ হাসান, আলবানী, আহকামুল জানায়েয, মাসআলা নং-৭৬, ১১৮ পৃঃ; তিরমিযী (তুহফা সহ, কায়রো : ১৪০৭/১৯৮৭) হা/২৫২, ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১৮৭, ২/৮১, ৯০; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৯)।

(খ) ওয়ায়েল বিন হুজ্র (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছালাত আদায় করলাম। এমতাবস্থায় দেখলাম যে, তিনি বাম হাতের উপরে ডান হাত স্বীয় বুকের উপরে রাখলেন’। (ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৪৭৯; আবুদাঊদ হা/৭৫৫, ইবনু মাস‘ঊদ হ’তে; ঐ, হা/৭৫৯, ত্বাঊস বিন কায়সান হ’তে; ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, ‘ছালাতে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা’ অনুচ্ছেদ-১২০)।

উপরোক্ত ছহীহ হাদীছ সমূহে ‘বুকের উপরে হাত বাঁধা’ সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে। ইমাম শাওকানী বলেন, ‘হাত বাঁধা বিষয়ে ছহীহ ইবনু খুযায়মাতে ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছের চাইতে বিশুদ্ধতম কোন হাদীছ আর নেই’। (নায়লুল আওত্বার ৩/২৫)।

উল্লেখ্য যে, বাম হাতের উপরে ডান হাত রাখা সম্পর্কে ১৮ জন ছাহাবী ও ২ জন তাবেঈ থেকে মোট ২০টি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে এর বিপরীত কিছুই বর্ণিত হয়নি এবং এটাই জমহূর ছাহাবা ও তাবেঈনের অনুসৃত পদ্ধতি। (নায়লুল আওত্বার ৩/২২; ফিক্বহুস সুন্নাহ (কায়রো : ১৪১২/১৯৯২) ১/১০৯)।

এক্ষণে ‘নাভির নীচে হাত বাঁধা’ সম্পর্কে আহমাদ, আবুদাঊদ, মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ প্রভৃতি হাদীছ গ্রন্থে চারজন ছাহাবী ও দু’জন তাবেঈ থেকে যে চারটি হাদীছ ও দু’টি ‘আছার’ বর্ণিত হয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে মুহাদ্দেছীনের বক্তব্য হ’ল-‘(যঈফ হওয়ার কারণে) এগুলির একটিও দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়’।(মির‘আতুল মাফাতীহ (দিল্লী: ৪র্থ সংস্করণ, ১৪১৫/১৯৯৫) ৩/৬৩; তুহফাতুল আহওয়াযী ২/৮৯)।

প্রকাশ থাকে যে, ছালাতে দাঁড়িয়ে মেয়েদের জন্য বুকে হাত ও পুরুষের জন্য নাভীর নীচে হাত বাঁধার যে রেওয়াজ চালু আছে, হাদীছে বা আছারে এর কোন প্রমাণ নেই। (মির‘আত (লাহোর ১ম সংস্করণ, ১৩৮০/১৯৬১) ১/৫৫৮; ঐ, ৩/৬৩; তুহফা ২/৮৩)।

বরং এটাই স্বতঃসিদ্ধ যে, ছালাতের মধ্যকার ফরয ও সুন্নাতসমূহ মুসলিম নারী ও পুরুষ সকলে একই নিয়মে আদায় করবে। (মির‘আত ৩/৫৯ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৯; নায়লুল আওত্বার ৩/১৯)।

মাজহাবীদের একটি সহিহ হাদিসের ভ্রান্তিমূলক যুক্তি ও তার সহিহ জবাব

মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সমবয়সী একদল যুবক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট হাযির হলাম। বিশদিন ও বিশ রাত আমরা তাঁর নিকট অবস্থান করলাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও নরম স্বভাবের লোক ছিলেন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন যে, আমরা আমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যেতে চাই বা ফিরে যাওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে পড়েছি, তখন তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, আমরা আমাদের পিছনে কাদের রেখে এসেছি। আমরা তাঁকে জানালাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস কর। আর তাদের (দ্বীন) শিক্ষা দাও, এবং (সৎ কাজের) নির্দেশ দাও। (বর্ণনাকারী বলেন) মালিক (রাযি) আরও কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছিলেন যা আমার মনে আছে বা মনে নেই। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় করবে। সালাতের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন যেন আযান দেয় এবং যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে যেন তোমাদের ইমামত করে। (সহিহ বুখারী, তাওহীদ প্রকাশনী, ৬৩১,  ৬২৮, ৬৫৮, ৬৭৭, ৬৮৫, ৮০২, মুসলিম ৬৭৪, তিরমিযী ২০৫, ২৮৭, নাসায়ী ৬৩৪, ৬৩৫, ১১৫৩, আবূ দাউদ ৫৮৯, ৮৪২, ৮৪৩, ৮৪৪, ইবনু মাজাহ ৯৭৯, আহমাদ ১৫১৭১, ২০০০৬, দারেমী ১২৫৩, মিশকাত হা/৬৮৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬, বুলগুল মারাম-৩২৭, ৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

উক্ত হাদিসের শেষাংশ তথা তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় করবে। এখানে ”তোমরা” শব্দটি দ্বারা পুরুষ ও নারীদের উভয়কে আমরা বুঝিয়ে থাকি। মাজহাবীগণ এখানে আমাদের ভুল ধরে বলেন যে, ”তোমরা” শব্দটি দ্বারা শুধু ঐ যুবক পুরুষের দলকে বুঝানো হয়েছে যারা বিশ দিন বিশ রাত রাসুল সা. এর নিকট অবস্থান করেছিলেন। এখানে নারীদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়নি। তাই পুরুষগণ রাসুল সা. এর ন্যায় সালাত আদায় করবে আর নারীগণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্থক্য করবে। আর আমরা বলি যে, সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী একই পদ্ধতিতে সালাত আদায় করবে। যেহেতু রাসুল সা. বলেছেন, তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় করবে। মাজহাবীগণ বলেন যে, এখানে ”তোমরা” বলতে শুধু পুরুষদের বুঝানো হয়েছে।

জবাবঃ

উক্ত হাদিসটি ভালভাবে পড়লে জানা যায় যে, রাসুল সা. ঐ যুবক দলকে বললেনঃ তোমরা তোমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস করো। আর তাদের (দ্বীন) শিক্ষা দাও। এখানে পরিজনকে কি শিক্ষা দিবে সেই বিষয়টি আমাদের জানতে হবে। ঐ যুবক দল বিশ দিন বিশ রাত রাসুল সা. এর নিকট অবস্থানকালে যা শিখেছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সহিহ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করা। সালাত ব্যতীত অন্য কিছু শিখেছে তার কোনো বর্ণনা হাদিসে নেই। হাদিসে আছে, “আর তাদের (দ্বীন) শিক্ষা দাও” তথা তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় করবে-এই শিক্ষা পরিজনকে দাও। এখানে মাজহাবীদের মতে ”তোমরা” বলতে ঐ যুবক দলকে বুঝানো হলেও তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে একই পদ্ধতিতে পরিজনকে সালাত শিক্ষা দেয়া।

অতএব ”তোমরা” বলতে পুরুষ নারী উভয়কেই বুঝানো হয়। তাই মাজহাবীদের মনগড়া যুক্তি শুনে সালাত কবুল হওয়ার সহিহ পদ্ধতি থেকে কোনো নারীকে বঞ্চিত করা যাবে না।

উম্মে দারদা থেকে বর্ণিত হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা ও তার জবাব

ইমাম বুখারী (রহ.) এর রিজালশাস্ত্রের একটি কিতাব ”তারীখে সগীর” থেকে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি পেশ করেছেন-

 ”উম্মে দারদা থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নামাযে পুরুষের মত বসতেন।”

 

মাজহাবীদের মনগড়া ব্যাখ্যাঃ

এই বর্ণনাটি দ্বারা নামাযে পুরুষ ও মহিলার বসার ভিন্নতাই প্রমাণ হয়। এক হওয়া নয়। যদি উভয় বসার পদ্ধতি এক হতো, তাহলে ”পুরুষের মত বসা” কথাটির কোন অর্থ থাকে না। তাই এই কথা থেকে এটি বুঝা যায় যে, সেই যমানায় পুরুষদের মত মহিলারা বসত না। কিন্তু তিনি যেহেতো ভিন্নভাবে বসতেন তাই এটি ইতিহাসের বর্ণনায় চলে এসেছে।

জবাবঃ

উল্লেখিত হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে যে, উম্মে দারদা নামাযে পুরুষের মতো বসতেন। সেখানে ভাষাটিকে ইনিয়ে বিনিয়ে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে বিভ্রান্তি ছড়ানো শয়তানের কাজ ছাড়া কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না।

রাসুল সা. এর পিছনে শুধু কি উম্মে দারদাই সালাত আদায় করেছেন নাকি আরো মহিলাগণ জামাতে শরীক হয়ে সালাত আদায় করছেন।

আমরা জানি, মহিলাগণ ঈদের সালাত আদায় করতে ঈদগাহ মাঠে যেতেন। মসজিদে নববীতে মহিলাগণ জামাতে শরীক হতেন। আবার রাসুল সা. অনেকের সাথে মহিলাদের নিয়ে সালাত আদায় করতেন।

নিম্নোক্ত হাদিসগুলো লক্ষ্য করিঃ

(ক) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় মহিলারা জামা‘আতে সালাত আদায় করলে সালাম ফিরাবার সাথে সাথে উঠে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতেন। আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তাঁর সাথে যে সকল পুরুষ সালাতে শরীক হতেন, যতটুকু সময় আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য মঞ্জুর করতেন বসে থাকতেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দাঁড়াতেন সব পুরুষগণও দাঁড়িয়ে চলে যেতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৪৮, বুখারী ৮৬৬, নাসায়ী ১৩৩৩, আহমাদ ২৬৬৮৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ২২৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমাদের ঘরে আমি ও একটি ইয়াতীম ছেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলাম। আর আমার মা উম্মু সুলাইম (রাযি.) আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭২৭, ৩৮০, আধুনিক প্রকাশনী ৬৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূর রাবী' আয যাহরানী (রহঃ).....উম্মু আতিয়াহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন, আমরা যেন পরিণত বয়স্কা মেয়েদেরকে ও পর্দানশীন মেয়ে লোকদেরকে ঈদের সালাতে যাওয়ার জন্য বলি এবং তিনি ঋতুবতী নারীদেরকে আদেশ করেছেন তারা যেন মুসলিমদের সালাতের স্থান থেকে কিছুটা পৃথক থাকে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯২৪, ইসলামীক সেন্টার ১৯৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ).....উম্মু 'আতিয়াহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়) ঈদের মাঠে বের হওয়ার আদেশ করা হত এমনকি গৃহবাসিনী পর্দানশীন মহিলা ও প্রাপ্তবয়স্কা কুমারীকেও অনুমতি দেয়া হতো। উম্মু আতিয়াহ বলেন, ঋতুবতী মহিলারাও বের হয়ে আসত এবং সব লোকের সাথে তাকবীর পাঠ করত। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯২৫, ইসলামীক সেন্টার ১৯৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) 'আমর আন নাকিদ (রহঃ) ....উম্মু আতিয়্যাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন। আমরা যেন মহিলাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে বের করে দেই- পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনী সবাইকে। তবে ঋতুবতী মহিলারা সালাত থেকে বিরত থাকবে। বাকী পুণ্যের কাজে ও মুসলিমদের দু'আয় শারীক হবে। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কারো কারো চাদর ওড়না নেই। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য বোন তাকে নিজ চাদর বা ওড়না পরিয়ে দিবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯২৬, ইসলামীক সেন্টার ১৯৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরাঃ এখানে একটা বিষয় খেয়াল করুন, রাসুল সা. এর পিছনে সেই সময় অসংখ্য মহিলা সালাত আদায় করেছেন। রাসুল সা. কি মহিলাদেরকে নিয়ে মাজহাবী মহিলাদের মতো আলাদা করে সালাত আদায় করেছেন? এরকম হাদিস এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এখানে স্পষ্ট যে, মহিলাগণ হুবহু রাসুল সা. এর মতো করেই সালাত আদায় করতেন।

অতএব এটা প্রমানিত যে, উম্মে দারদা সালাতে পুরুষের মতো বসতেন। অন্য মহিলাগণও তাই করতেন।

প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরাঃ

সহিহ হাদিস ও বিশুদ্ধ মতানুযায়ী নারী-পুরুষের নামাযের পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নেই। যেমন, কিয়াম, কিরাআত, রুকু, সিজদা, তাশাহুদ, সালাম ইত্যাদি।

কিন্তু কিছু বিষয়ের পার্থক্য হাদীস দ্বারা প্রমানিত। তন্মধ্যে, আযান, একামত, জামাআতে নামায, মাসজিদে গমণ, জুমার নামায ইত্যদি কেবল পুরুষদের জন্য;মহিলাদের জন্য নয়। অনুরূপভাবে পর্দা, নামাযের ইমামতি, ইমামের ভুল সংশোধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের পার্থক্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

রাসূল (ছাঃ) এর সালাত বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছিল একথা ভাববার কোন অবকাশ নেই। পুরুষ ও মহিলা সালাতের মধ্যে পদ্ধতিগত কোন পর্থক্য নেই। সতর বা পর্দার যে বিষয়টি মেয়েদের সালাতের বিষয়ে বিভিন্ন নামায শিক্ষা বইতে এসেছে তা মেয়েদের পূর্ণাঙ্গ পর্দার মধ্যে সালাত আদায়ের নির্দেশই যথেষ্ট। এতে নতুন করে যুক্তি পেশ করার প্রয়োজন নেই। আমাদের মধ্যে যঈফ ও জাল হাদীসের অনুকরণে সালাত চালু থাকার কারণে এবং বিভিন্ন মাযহাব পন্থীর গোড়ামীর কারণে বিভিন্ন নিয়ম চালু হয়ে গিয়েছে। এজন্য আমাদের সমাজের মহিলারা কিংবা পুরুষেরা মনে করে, তাদের সালাত আলাদা। কিন্তু বাস্তবে পুরুষ মহিলাদের সালাতের মধ্যে পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নেই এবং এ ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীসও বর্ণিত হয়নি সালাত আদায় করার জন্য নারী পুরুষ কারোর জন্য স্বতন্ত্র নিয়ম করা হয়নি। জিবরাঈল (আঃ) মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ক্রমে দুই দফায় রাসূল (সাঃ)-কে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নিয়ম পদ্ধতি ইমামতি করে বাস্তবভাবে শিখিয়ে গেছেন। এ সময় জিবরাঈল (আঃ) নারীদের সালাতের জন্য আলাদা কোন নিয়ম পদ্ধতির বর্ণনা দেন নাই। নারী-পুরুষ নির্বিশেষের জন্য এ নমুনা শিখানো হয়েছে। আল্লাহর নিয়ম পদ্ধতিতে কখনও কোন পার্থক্য দেখা যাবে না।

এ মর্মে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

(১) “আর আপনি আল্লাহর নিয়ম-রীতিতে কখনও কোন পরিবর্তন পাবেন না।” [সূরা-আহযাব : আয়াত-৬২]

(২) (নারী-পুরুষ উভয় জাতির) উম্মতকে সম্বোধন করে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মালিক বিন হুওয়াইরিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আমাকে যেভাবে সলাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সলাত আদায় করবে। (সহিহ বুখারী, তাওহীদ প্রকাশনী, ৬৩১, ৬২৮, ৬৫৮, ৬৭৭, ৬৮৫, ৮০২, মুসলিম ৬৭৪, তিরমিযী ২০৫, ২৮৭, নাসায়ী ৬৩৪, ৬৩৫, ১১৫৩, আবূ দাউদ ৫৮৯, ৮৪২, ৮৪৩, ৮৪৪, ইবনু মাজাহ ৯৭৯, আহমাদ ১৫১৭১, ২০০০৬, দারেমী ১২৫৩, মিশকাত হা/৬৮৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬, বুলগুল মারাম-৩২৭, ৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

উল্লেখ্য হাদিসটি উম্মে দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি একজন ফকীহাও ছিলেন।

আলাদাভাবে বলা হয়নি। সুতরাং যে আদেশ শরীয়ত পুরুষদেরকে করেছে, সে আদেশ নারীদেরকেও করেছে এবং যে সাধারণ আদেশ মহিলাদের তাও পুরুষদের ক্ষেত্রে পালনীয়- যদি বিশেষ হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার দলীল না থাকে। যেমন,

(৩) “যারা সতী মহিলাদের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, অতঃপর চারজন স্বাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদের জন্য শাস্তি হল ৮০ কোড়া-। (কুরআন-২৪/৪)।

পরন্ত যদি কেউ কোন সৎ পুরুষকে অনুরুপ অপবাদ দেয়, তবে তার জন্য একই শাস্তি প্রযোজ্য।

সুতরাং মহিলারাও তাদের সালাতে পুরুষদের মতই হাত তুলবে। পিঠ লম্বা করে রুকু করবে, তাশাহুদেও সেইরুপ বসবে, যেরুপ পুরুষরা বসে।

(৪) মসজিদে নববীতে নারী পুরুষ সকলে রাসূল (ছাঃ) এর (ইমামতি) পিছনে একই নিয়মে সালাত ও জুম’আ আদায় করেছেন।

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(ক) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় মহিলারা জামা‘আতে সালাত আদায় করলে সালাম ফিরাবার সাথে সাথে উঠে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতেন। আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তাঁর সাথে যে সকল পুরুষ সালাতে শরীক হতেন, যতটুকু সময় আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য মঞ্জুর করতেন বসে থাকতেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দাঁড়াতেন সব পুরুষগণও দাঁড়িয়ে চলে যেতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৪৮, বুখারী ৮৬৬, নাসায়ী ১৩৩৩, আহমাদ ২৬৬৮৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ২২৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমাদের ঘরে আমি ও একটি ইয়াতীম ছেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলাম। আর আমার মা উম্মু সুলাইম (রাযি.) আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭২৭, ৩৮০, আধুনিক প্রকাশনী ৬৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাজহাবীগণ কি এখনো বলবেন আপনাদের মহিলাদের মতো রাসুল সা. আঁটসাঁট বা জড়সড় হয়ে সালাত আদায় করেছিলেন।

(৫) উম্মে দারদা (রাঃ) তার সালাতে পুরুষের মতই বসতেন। আর তিনি একজন ফকীহা ছিলেন। (আত-তারীখুস স্বাগীর, বুখারী ১/৩৫৫ পৃঃ, ফাৎহুল বারী ২/৩৫৫)।

(৬) মহিলাদের জন্য পুরুষদের ন্যায় মুস্তাহাব আর তা হলো, ডান পা খাড়া করে রাখবে এবং বাম পা বিছিয়ে রাখবে। এটা ইমাম নাসাঈ, ইমাম আবূ হানীফা এবং ইমাম মালিক (রহঃ) এর উক্তি। (আইনী ৩য় খন্ড ১৬৫ পৃষ্ঠা)।

(৭) ইবরাহীম নাখয়ী (রঃ) বলেন, ‘সালাতে মহিলারা ঐরুপ করবে, যেরুপ পুরুষরা করে থাকে। (ইবনু আবী শাইবাহ, সিসান ১৮৯ পৃঃ)।

(৮) এটাই স্বতঃসিদ্ধ যে, সালাতের মধ্যকার ফরয ও সুন্নাত সমূহ মুসলিম নারী ও পুরুষ সকলে একই নিয়মে আদায় করতে হবে। (মির’আত ৩/৫৯ পৃঃ; ফিকহুস সুন্নাহ ১/১০৯; নায়লুল আওত্বার ৩/১৯)।

(৯) মহিলারা পুরুষদের মত একই নিয়মে সালাত আদায় করবে। (ইবনে আবি শাইবা ১/৭৫/২, সিফাতু সালাতুন্নবী ১৮৯ পৃঃ)।

(১০) আর মহিলাদের জড়োসড়ো হয়ে সিজদাহ করার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই। (সিযঃ ২৬৫২ নং)।

(১১) আলবানী বলেন,‘পুরুষ ও মহিলাদের সালাতের পার্থক্য সম্পর্কে আমি একটিও সহীহ হাদীস জানি না। এটা ব্যক্তি রায় ও ইজতিহাদ মাত্র। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৫০০ এর আলোচনা দ্রঃ)।

বেগানা পুরুষ আশে পাশে থাকলে কির’আত পাঠের ক্ষেত্রে (জেহরী সলাতে) মহিলা সশব্দে কুরআন পড়বে না। তবে না থাকলে পড়তে হবে। (আল মারআতুল মুসলিমাহ ৩/৩০৪)।

             সুনির্দিষ্ট সহিহ দলিলের ভিত্তিতে মহিলা ও পুরুষের সালাতে কিছু পার্থক্য ?

(ক) মহিলারা মহিলা জাম‘আতে ইমামতি করলে প্রথম কাতারের মাঝখানে দাড়াবে। ‘আম্মার দুহনী হতে বর্ণিত, তিনি তার বংশের জনৈক মহিলা যার নাম হুজায়রাহ হতে বর্ণনা করেন, তিনি উম্মে সালামা হতে বর্ণনা করেন। উম্মে সালামা (রাঃ) তাদের ইমামতি করতেন এবং তাদের মাঝ বরাবর দাঁড়াতেন। (সুনানুল কুবরা হা/৫৫৬৩; আয়নুল মা‘বুদ ২খন্ড ২১২পৃঃ)।

(খ) সালাতে ইমামের ভুল স্মরণ করাবার জন্য ডান হাত দ্বারা বাম হাতে মেরে আওয়াজ দিয়ে স্মরণ করাবে। (বুখারি হা/১২০৩)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ (ইমামের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য) পুরুষদের বেলায় তাসবীহ সুবহানাল্লাহ্ বলা। তবে মহিলাদের বেলায় ‘তাসফীক’ (এক হাতের তালু দিয়ে অন্য হাতের তালুতে মারা)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৮৪০-৮৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪২২আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) মহিলারা পুরুষের কাতারে একা থাকলেও একাই দাড়াতে হবে। ( বুখারি হা/৭২৭,৩৮০)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমাদের ঘরে আমি ও একটি ইয়াতীম ছেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলাম। আর আমার মা উম্মু সুলাইম (রাযি.) আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৭, ৩৮০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) মহিলাদের আপাদমস্তক না ঢাকলে সালাত কবুল হবেনা। (আবু দাউদ হা/৬৪১, তিরমিযী হা/৩৭৭)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা ওড়না ছাড়া সালাত আদায় করলে আল্লাহ তার সালাত কবুল করেন না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৬৪১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৬৪১, তিরমিযী ৩৭৭, ইবনু মাজাহ ৬৫৫, আহমাদ (৬/১৫০, ২১৮), ইবনু খুযাইমাহ ৭৭৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) মহিলারা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না। (বুখারি হা/৭২৭)।

মহিলা কখনো ইমাম হবে না

পুরুষ সকলের ইমাম হবেন। কিন্তু নারী কখনো পুরুষের ইমাম হবেন না। নারী ও পুরুষ কখনোই পাশাপাশি দাঁড়াবেন না। দু’জন বয়স্ক পুরুষ, একটি বালক ও একজন মহিলা মুছল্লী হ’লে বয়স্ক একজন পুরুষ ইমাম হবেন। তাঁর পিছনে উক্ত পুরুষ ও বালকটি এবং সকলের পিছনে মহিলা একাকী দাঁড়াবেন। আর যদি দু’জন পুরুষ ও একজন মহিলা হন, তাহলে ইমামের ডাইনে পুরুষ মুক্তাদী দাঁড়াবেন এবং পিছনে মহিলা একাকী দাঁড়াবেন। (মুসলিম, মিশকাত হা/১১০৮, ১১০৯, অনুচ্ছেদ-২৫; আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৩০৮)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

(১) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও ইয়াতীম আমাদের ঘরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম। আর উম্মু সুলায়ম (রাঃ) ছিলেন আমাদের পেছনে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১০৮, বুখারী ৭২৭, মুসলিম ৬৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (২) আনাস (রাঃ) থেকেই বর্ণিত। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে, তার মা ও খালাসহ সালাত আদায় করলেন। তিনি বলেন আমাকে তিনি তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। মহিলাদেরকে দাঁড় করালেন আমাদের পেছনে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১০৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৮৮, ১৩৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ)  মহিলাদের পায়ের গোড়ালি ঢেকে রাখবে।

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃদ

(১) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইযার সম্পর্কে আলোচনা করলেন, তখন আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! এ ব্যাপারে মহিলাদের বিধান কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এক বিঘত পরিমাণ ঝুলাতে পারবে। তখন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বললেনঃ এমতাবস্থায় তার অঙ্গ (পা) খুলে যাবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তবে এক হাত তার অধিক যেন না হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৩৩৪, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৩৯২, আবূ দাঊদ ৪১১৭, সহীহ নাসায়ী ৫৩৩৬, ৪৯২৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৪৫১, ইবনু মাজাহ ৩৫৮০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৮৬৪, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪৮৯০, শু‘আবুল ঈমান ৬১৪৩, মুসনাদে আহমাদ ৫১৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আর তিরমিযী ও নাসায়ীর এক রিওয়ায়াতে ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বললেন, এমতাবস্থায় তাদের পা খুলে যাবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তবে তারা এক হাত পরিমাণ ঝুলাতে পারবে। তার অধিক যেন না হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৩৩৫, তিরমিযী ১৭৩১, নাসায়ী ৫৩৩৬, ইবনু মাজাহ ৩৫৮০-৩৫৮১, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ১৯৯৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) জাম‘আতে সালাত আদায়কালীন পুরুষদের মাথা উঠানোর পর মহিলারা মাথা উঠাবে। সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,“তহবন্দ -খাটো ---হে নারী সমাজ। পুরুষরা তাদের মাথা উত্তোলন না করা পর্যন্ত তোমরা সাজদা হতে তোমাদের মাথা উত্তোলন করবে না।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ).....সাহল ইবনু সা'দ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিছনে পুরুষদেরকে তাদের লুঙ্গি খাটো হওয়ার কারণে বালকদের মতো কাঁধের সাথে গিট দিয়ে তহবন্দ গলায় বেঁধে পরিধান করতে দেখেছি। এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে নারী সমাজ! পুরুষদের মাথা উঠানোর আগে তোমরা মাথা উঠাবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৮৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৬৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৮২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উপসংহার :

উপরোক্ত সর্বাধিক সহিহ দলিলের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে, মাজহাবীদের উপস্থাপিত দলিলসমূহ জাল ও জইফ বা দুর্বল হাদিস। সুতরাং তাদের বক্তব্য অনুসারে নারী-পুরুষের ছালাতের প্রচলিত পার্থক্যসমূহ সঠিক নয়। বিশেষ করে নারীদের জড়সড় হয়ে সিজদা দেওয়ার নিয়ম বিশুদ্ধ নয়। মূলতঃ ছালাত আদায়ের পদ্ধতি ও তাসবীহ তাহলীলের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে নারীরা জামা‘আতে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম একই কাতারের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে, ছালাতে ত্রুটি হ’লে মুক্তাদী নারী হাতের উপর হাত মেরে সতর্ক করবে। এছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই। আল্লাহ আমাদের ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী ছালাত আদায়ের তাওফীক দান করুন-আমীন!

আপনি কোন্ তরীকা মানবেন?

আল্লাহ (সুব:) কর্তৃক নাজিলকৃত বিধান অনুযায়ী মানব জাতির মুক্তির পথ কেবল মাত্র একটি। আল্লাহ (সুব:) বলেন:

 “আর এটিই আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।” (সুরা আনআ’ম ৬:১৫৩)।

এই আয়াতে আল্লাহ (সুব:) একটি তরীকাকেই অনুসরণ করতে বলেছেন।

আল্লাহ (সুব:) আরো বলেন:

“আর সঠিক পথ বাতলে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব, এবং পথের মধ্যে কিছু আছে বক্র। আর তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সকলকে হিদায়াত করতেন।” (সুরা নহল ১৬:৯)।

রাসূলুল্লাহ (সা:) থেকে ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ সর্ম্পকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে:

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।

 তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাদেরকে বুঝাবার উদ্দেশে) একটি (সরল) রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা আল্লাহর পথ। এরপর তিনি এ রেখার ডানে ও বামে আরো কয়েকটি রেখা টানলেন এবং বললেন, এগুলোও পথ। এসব প্রত্যেক পথের উপর শায়ত্বন (শয়তান) দাঁড়িয়ে থাকে। এরা (মানুষকে) তাদের পথের দিকে আহবান করে। অতঃপর তিনি তাঁর কথার প্রমাণ স্বরূপ কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই এটাই আমার সহজ সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথের অনুসরণ করে চলো....’’(সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬: ১৬৩) আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৬৬, নাসায়ী তাঁর ‘কুবরা’ গ্রন্থে ১১১৭৪, দারিমী ২০২, মুসনাদে আহমদ ৪১৩১, ৪১৪২; নাসায়ী ১১১৭৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:

আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত , রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন; আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে যে অস্বীকার করল (সে ব্যতীত)। সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! অস্বীকার করল কে? রাসূল (সাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার আনুগত্য করল না সেই অস্বীকার করল (ফলে সে জাহান্নামে যাবে)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭২৮০, আধুনিক প্রকাশনী-৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৬৭৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ বলেন, তোমাদের নিকট দু’টি বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি; যতদিন তোমরা ঐ দু’টি বস্তুকে মযবূতভাবে ধরে থাকবে, ততদিন (তোমরা) পথভ্রষ্ট হবে না। সে দু’টি বস্তু হ’ল আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত’।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মালিক ইবনু আনাস (রাঃ) (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না- আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসূলের হাদীস। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৮৬, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৫৯৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উপরোক্ত আলোচনায় আমরা জানতে পারলাম যে, আমাদের মুক্তির পথ একটাই তাহলো রাসুল সাঃ এর তরীকা মোতাবেক চলা। এই তরীকার মূল গাইড লাইন হচ্ছে কুরআন ও রাসুল সাঃ এর সুন্নাহ। কোনো পির-মাশায়েখ বা সুফিদের তরীকা গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের তরীকা মোতাবেক চললে জাহান্নামে যেতে হবে। আমাদের দেশে জনৈক এক পির ১২৬ তরীকা আবিস্কার করেছেন। এছাড়া অন্যান্য যতো পির আছেন, তাদের প্রত্যেকের নিজেস্ব তরীকা আছে। তাদের লক্ষ লক্ষ মুরিদ রাসুল সা. এর তরীকা বাদ দিয়ে পিরদের এইসব বানানো তরীকায় চলেন।

সার্বিক পর্যালোচনান্তে এটাই প্রমাণিত যে, পিরতন্ত্র বা সুফিবাদ ইসলামে নেই। এটা তাদের সম্পূর্ণ বানানো একটি নতুন তরীকা। পির বা সুফিগণ যেসব ভাষা বা শব্দ ব্যবহার করেন তা কুরআন-হাদিসের কোথাও নেই। এগুলো হচ্ছে কুরআন-হাদিসের বিকৃতরুপ। শয়তান হচ্ছে এদের প্রভু। তাই জেনে শুনে আমরা শয়তানের তরিকায় চলতে পারি না। আমাদের ইসলামের কোনো বিষয় বুঝতে সমস্যা হলে আমাদের আশে পাশে অনেক বিজ্ঞ আলেম আছেন, তাদের নিকট যাবেন, বুঝে নিবেন।

আল্লাহ তাঁর বান্দার শুধুই অন্তর ও আমল দেখেন, কারো দেহ এবং আকৃতি দেখেন নাঃ

আল্লাহ বলেন,

”আল্লাহর কাছে কখনোও ওগুলির মাংস পৌঁছে না এবং রক্তও না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া (সংযমশীলতা)।” (সুরা হাজ্ব ৩৭ নং আয়াত)।

আবূ হুরাইরাহ আব্দুর রহমান ইবনু সাখর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের দেহ এবং তোমাদের আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।”

(রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭,  হাদীস সম্ভার ১৬২,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৪৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৪, সহীহুল বুখারী ৫১৪৪, ৬০৬৬, তিরমিযী ১১৩৪, ১৯৮৮, নাসায়ী ৩২৩৯, ৪৪৯৬, ৪৫০৬, ৪৫০৭, আবূ দাউদ ৩৪৩৮, ৩৪৪৩, ৪৯১৭, ইবনু মাজাহ ১৮৬৭, ২১৭২, ২১৭৪, আহমাদ ৭৬৭০, ৭৮১৫, ৮০৩৯, মালিক ১৩৯১, ১৬৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সা. যেভাবে সালাত আদায় করতেন সেভাবে সালাত আদায় করার পদ্ধতি শিখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।  (PMMRC)

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।    

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...