Sunday, March 17, 2019

সালাতের ভিতর পঠিতব্য অতিরিক্ত দো'আসমূহ |


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সালাতের ভিতর পঠিতব্য অতিরিক্ত দো'আসমূহ

(রুকু, সিজদাহ ও তাশাহুদ বৈঠক)

আমরা সাধারণত সালাতের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু দোয়া যেমন: তাকবীরে তাহরীমার পর ছানা পড়া, রুকতে “সুবহানা রব্বীয়াল ‘আযীম” পড়া, রুকু হতে উঠার পড় সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় “রব্বানা ওয়ালাকাল হামদ” পড়া, সিজদায় গিয়ে “সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা” পড়া এবং সালাতের শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতো, দরুদে ইবরাহিম ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করে থাকি। এর বেশী কিছু জানি না বা পড়ি না। আমাদের স্থানীয় ইমাম, মোয়াজ্জিন বা আলেমগণ এর বেশী কাউকে কিছু বলেন না বা শিক্ষা দেন না। কিন্তু সালাতের মধ্যে উল্লেখিত দোয়াগুলো ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু দোয়া আছে যেগুলো পড়লে নিজের সকল প্রকার সমস্যার সমাধান করা যায়। পুরো সালাতটিই যেহেতু এক প্রকার দোয়া আর নবি সা: যখনই কোনো সমস্যার সম্মুখিন হতেন বা কোনো বিপদ দেখলেই তিনি সালাত আদায় করতেন এবং সমস্যার ধরণ অনুযায়ী তিনি সালাতের মধ্যেই সমাধানমূলক দোয়াগুলো পাঠ করতেন। তাই নবি সা: সালাতের মধ্যে যে যে স্থানে উল্লেখিত দোয়াগুলো ছাড়াও অতিরিক্ত যে দোয়াগুলো পড়তেন সেগুলো আমরা অনুসরন করবো। আল্লাহর নিকট কোনো কিছু চাইতে হলে সালাতের মধ্যে রুকু, সিজদা ও তাশাহুদ বৈঠকে বিভিন্ন দোয়া পাঠের মাধ্যমে চাইতে হয়। পুরো সালাতই এক প্রকার দোয়া ও মোনাজাত। যেমন: সুরা তাওবাহর ১০৩ নং আয়াতে সালাত শব্দটি দোয়া করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

রুকু সিজদায় পিঠ সোজা করা, সঠিকভাবে আদায় করার হুকুম ও গুরুত্ব

(ক) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রুকূ’ ও সিজদা্ ঠিকভাবে আদায় করবে। আল্লাহর কসম! আমি নিশ্চয়ই তোমাদেরকে আমার পিছন দিক হতেও দেখি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৬৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪২৫, আহমাদ ১২১৪৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যে পর্যন্ত রুকূ ও সাজদাতে তার পিঠ স্থিরভাবে সোজা না করে তার সালাত  হবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭৮, সুনান আবূ দাঊদ ৮৫৫, সুনান আততিরমিযী ২৬৫, সুনান আননাসায়ী ১০২৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৮৭০, দারিমী ১৩৬৬, সহীহ আত্ তারগীব ৫২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) শাক্বীক্ব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযায়ফাহ্ (রাঃ) এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে তার রুকূ’-সিজদা্ পূর্ণ করছে না। সে সালাত শেষ করলে তিনি তাকে ডেকে বললেন, তুমি সালাত আদায় করনি। শাক্বীক্ব বলেন, আমার মনে হয় হুযায়ফাহ্ এ কথাও বলেছেন, যদি তুমি এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ কর, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যে প্রকৃতির উপর আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি করেছেন, তুমি তার বাইরে মৃত্যুবরণ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৮৪,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৯১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ)  আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চুরি হিসেবে সবচেয়ে বড় চোর হলো ঐ ব্যক্তি যে সালাতে (আরকানের) চুরি করলো। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! সালাতের চুরি কিভাবে হয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতের চুরি হলো রুকূ’-সিজদা্ পূর্ণ না করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৮৫, আহমাদ ২২১৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ৫২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) নুমান ইবনু মুররাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ি কিরামকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ মদ্যপায়ী, ব্যভিচারী ও চোরের ব্যাপারে তোমাদের কি ধারণা? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ প্রশ্নটি এসব অপরাধের শাস্তি বিধানের আয়াত নাযিল হবার আগের। সাহাবীগণ আরয করলেন, এ ব্যাপারে আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলই ভালো জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তর দিলেন, গুনাহ কাবীরাহ্ (কবিরা), এর সাজাও আছে। আর নিকৃষ্টতম চুরি হলো যা মানুষ তার সালাতে করে থাকে। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! মানুষ তার সালাতে কিভাবে চুরি করে থাকে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মানুষ রুকূ’-সিজদা্ পূর্ণভাবে আদায় না করে (এ চুরি করে থাকে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৮৬, মুয়াত্ত্বা মালিক ৪০৩, দারিমী ১৩৬৭, সহীহ আত্ তারগীব ৫৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রুকূ ও সাজদায় পিঠ সোজা না রাখার পরিনতি

(চ) ত্বালক্ব ইবনু ’আলী আল হানাফী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ সে বান্দার সালাতের প্রতি সুদৃষ্টি দেন না, যে বান্দা সালাতের রুকূ’ ও সাজদায় তার পিঠ সোজা রাখে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯০৪, আহমাদ ১৫৮৪৮, সহীহ আত্ তারগীব ৫২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রুকু-সিজদায় দীর্ঘ সময় নেয়া

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রুকূ, সিজদা্, দুই সাজদার মধ্যে বসা ও রুকূর পর সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময়ের পরিমাণ প্রায় সমান সমান ছিল।

(ক) বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রুকূ’, সিজদা্, দু’ সাজদার মধ্যে বসা, রুকূ’র পর সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময়ের পরিমাণ (ক্বিরাআতের জন্য) দাঁড়ানোর সময় ছাড়া প্রায় সমান সমান ছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৬৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৯২, ৮০১, ৮২০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭১, সুনান আবূ দাঊদ ৮৫২, সুনান আননাসায়ী ১০৬৫, সুনান আততিরমিযী ২৭৯, আহমাদ ১৮৪৬৯, দারেমী ১৩৭২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন “সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বলতেন, সোজা হয়ে এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমরা মনে করতাম নিশ্চয়ই তিনি (সাজদার কথা) ভুলে গেছেন। এরপর তিনি সিজদা্ করতেন ও দুই সাজদার মধ্যে এত লম্বা সময় বসে থাকতেন, আমরা মনে করতাম, তিনি নিশ্চয় দ্বিতীয় সাজদার কথা) ভুলে গেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৩, সুনান আবূ দাঊদ ৮৫৩, ইরওয়া ৩০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সা. রুকু, সিজদাহ, রুকু হতে ওঠার পর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এবং দুই সিজদাহর মাঝখানে দীর্ঘ সময় নিতেন । এখন প্রশ্ন হলো এই দীর্ঘ সময়ে তিনি কী করতেন। সচরাচর আমরা যে একটা করে দোয়া পাঠ করি রাসুল সা. কি ঐ একটা করে দোয়া এতো দীর্ঘ সময় নিয়ে পাঠ করতেন ? বিষয়টি তা নয়। তিনি ঐ একটা করে দোয়ার পাঠের পরও আরও অতিরিক্ত দোয়া পাঠ করতেন যেগুলো হয়তো আমরা জানি না। এখানে সেই অতিরিক্তি দোয়াগুলো বর্ণনা করা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, অতিরিক্ত দোয়াগুলো জামাতে পড়তে গেলে সময় পাওয়া যাবে না। তাহলে কখন পড়বো?

উত্তরঃ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমদের কেউ যখন লোকেদের নিয়ে সালাত আদায় করে, তখন যেনো সে সংক্ষেপ করে। কেননা, তাদের মধ্যে ছোট, বড়, দুর্বল ও কর্মব্যস্তরা রয়েছে। আর যদি কেউ একাকী সালাত আদায় করে, তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৬৭, সুনান আততিরমিযী ২৩৬, সুনান আননাসায়ী ৮২৩, সুনান আবূ দাঊদ ৭৯৪, আহমাদ ২৭৪৪, ৯৯৩৩, ১০১৪৪, মুওয়াত্তা মালেক ৩০৩,বুলগুলমারাম-৪১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস ।

উল্লেখিত হাদিস দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, জামাতে সালাত আদায়কালে সংক্ষিপ্তভাবে তবে  একাকী সালাত আদায়কালে ধীরস্থিরভাবে ও সালাতের জায়গাগুলোতে অতিরিক্ত দোয়াগুলো পাঠ করা যাবে।

সালাতের মধ্যে অতিরিক্ত দোয়া পড়ার গুরুত্ব

 (১) রুকুর সময়ঃ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! আমাকে রুকূ-সাজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকূ’তে তোমাদের ’রবের’ মহিমা বর্ণনা কর। আর সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু’আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু’আ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭৩,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৯, সুনান আননাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি ২৭৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২)  সিজদার সময়ঃ

(ক) আল্লাহ তাআলা বলেন,‘ সিজদা করো এবং নিকটবর্তী হও।’ (আলাক : ১৯) ।

(খ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু‘আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু‘আ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৯, সুনান আননাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বান্দারা তাদের রবের বেশি নিকটে যায় সাজদারত অবস্থায়। তাই তখন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দু‘আ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮২, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭৫, সুনান আননাসায়ী ১১৩৭, আহমাদ ৯৪৬১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৩)  সলাতের মধ্যে তাশাহুদের পরঃ রাসুল সা: বলেন, “তাশাহুদের পর যার যা ইচ্ছে দোয়া করবে”।

হাদিসঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস’ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা এ ছিল যে, যখন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সালাতে থাকতাম, তখন আমরা বলতাম, বান্দার পক্ষ হতে আল্লাহর প্রতি সালাম। সালাম অমুকের প্রতি, সালাম অমুকের প্রতি। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর প্রতি সালাম, তোমরা এরূপ বল না। কারণ আল্লাহ্ নিজেই সালাম। বরং তোমরা বল-

“সমস্ত মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাগণের প্রতি।’’ তোমরা যখন তা বলবে তখন আসমান বা আসমান ও যমীনের মধ্যে আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার নিকট তা পৌঁছে যাবে। (এরপর বলবে) ’’আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন মাবূদ নাই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।’’ অতঃপর যে দু’আ তার পছন্দ হয় তা সে বেছে নিবে এবং পড়বে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৩৫, ৮৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, সালাতের শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে যেকোনো ধরনের দোয়া করা যায়। চাই তা কুরআনের আয়াত হোক বা হাদিসে বর্ণিত দোয়াই হোক।

রুকূ-সাজদায় কুরআন তিলাওয়াত করা নিষেধ

ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! আমাকে রুকূ-সাজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকূ’তে তোমাদের ’রবের’ মহিমা বর্ণনা কর। আর সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু’আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু’আ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৯, সুনান আননাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি ২৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাতের জন্য কাতারে দাঁড়ানোর পর পড়ার দোয়া

কাতারে দাঁড়িয়ে পড়তে হবেঃ

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি এসে সালাতের কাতারে ঢুকে পড়ল। তখন সে হাঁপাতে ছিল। এ অবস্থায় সে বলে উঠল “আল হামদুলিল্লা-হি হামদান কাসীরান তুইয়্যিবাম মুবা-রকান ফীহ”

(অর্থাৎ- সব প্রশংসাই মহান আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। তার অনেক অনেক প্রশংসা যা পবিত্র কল্যাণময়।)। সালাত শেষ করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ কথাগুলো কে বলেছ? তখন সবাই চুপ করে রইল। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ ঐ কথাগুলো যে বলেছে সে তো কোন খারাপ কথা বলেনি। তখন জনৈক ব্যক্তি বলে উঠলঃ আমি এসে যখন সালাতে শারীক হই তখন আমি হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। তাই আমি এ কথাগুলো বলেছি। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি দেখলাম, বারোজন মালায়িকাহ ঐ কথাগুলোকে আগে উঠিয়ে নেয়ার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬০০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২৩২, ইসলামীক সেন্টার ১২৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ (স) হাত উঠিয়ে ‘আল্লাহু আকবার' বলে তাকবীর দিয়েছেন

হাদিসটি নিম্ন রুপঃ

(ক) আবূ কিলাবাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাযি.)-কে দেখেছেন, তিনি যখন সালাত আদায় করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর দু’ হাত উঠাতেন। (সহিহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯১, আহমাদ ২০৫৫৮, আধুনিক প্রকাশনী ৬৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করার সময় দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। আবার রুকূ‘তে যাবার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর সাজদায় যাবার সময় আবার তাকবীর বলতেন। সিজদা্  হতে মাথা উঠাবার সময় তাকবীর বলতেন। পুনরায় দ্বিতীয় সাজদায় যেতে তাকবীর বলতেন, আবার সিজদা্ থেকে মাথা তোলার সময় তাকবীর বলতেন। সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত গোটা সালাতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরূপ করতেন। যখন দু’ রাক্‘আত আদায় করার পর বসা হতে উঠতেন তাকবীর বলতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৯, সহীহ বুখারী ৭৮৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯২, সুনান আননাসায়ী ১১৫০, আহমাদ ৯৮৫১, ইরওয়া ৩৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৫২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, হাত বাঁধার সময় দুই কানের লতি বরাবর দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী উঠানো বা কানের লতি স্পর্শ করা সংক্রান্ত হাদীছ যঈফ। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৩৭, আহমাদ ৩১৬, সুনান আননাসায়ী ৮৮১)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

অতঃপর বাম হাতের উপরে ডান হাত বুকের উপরে বেঁধে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সম্মুখে নিবেদিত চিত্তে সিজদার স্থান বরাবর দৃষ্টি রেখে (হাকেম, বায়হাক্বী, আলবানী, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী (বৈরূত : ১৪০৩/১৯৮৩) পৃঃ ৬৯; ইরওয়া হা/৩৫৪-এর শেষে দ্রষ্টব্য।) দন্ডায়মান হবেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর জন্য নিবিষ্টচিত্তে দাঁড়িয়ে যাও। (সুরা বাক্বারাহ ২/২৩৮)।

তাকবীরে তাহরীমার পর দো'আ

ছানা

‘ছানা’ অর্থ ‘প্রশংসা’। এটা মূলতঃ ‘দো‘আয়ে ইস্তেফতা-হ’ বা ছালাত শুরুর দো‘আ। বুকে জোড় হাত বেঁধে সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে বিনম্রচিত্তে নিম্নোক্ত দো‘আর মাধ্যমে মুছল্লী তার সর্বোত্তম ইবাদতের শুভ সূচনা করবে।

(১) আবূ সাঈদ ও আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) সালাতের শুরুতে এই দুআ পাঠ করতেন।

“সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা অতাবা-রাকাসমুকা অতাআ’-লা জাদ্দুকা অ লা ইলা-হা গায়রুক”।

অর্থ:- তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার নাম অতি বর্কতময়, তোমার মাহাত্ম অতি উচ্চ এবং তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৮০৬, সুনান আততিরমিযী ২৪৩, সুনান আবূ দাঊদ ৭৭৬, ত্বাহাবী ১/১১৭, দারাক্বুত্বনী, সুনান ১১৩, বায়হাকী ২/৩৪,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “নি:সন্দেহে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কথা হলো বান্দার ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা---’ বলা।” (তাওহীদ, ইবনে মাজাহ্‌, নাসাঈ, সুনান, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৯৩৯ নং)।

উক্ত ছানার স্থলে পড়ার অতিরিক্ত দোয়া বা ছানাসমূহ (যেকোনো ১টি পড়তে হবে):

(২) “ইন্নী ওয়াজজাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন”। (সুরা: আনয়াম, আয়াত নং-৭৯)।

 অর্থ: আমি সব দিক থেকে মূখ পিরেয়ে বিশেষ ভাবে কেবল মাত্র সেই মহান সত্তাকেই ইবাদত জন্য নির্দিষ্ট করলাম,যিনি সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই । (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮১৩,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৬৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭১, মুসনাদে শাফি‘ঈ ২০১, সুনান আবূ দাঊদ ৭৬০, সুনান আততিরমিযী ৩৪২১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১০৫৪, আহমাদ ৭২৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করার জন্য দাঁড়াতেন, আর এক বর্ণনায় আছে সালাত শুরু করার সময়, সর্বপ্রথম তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই দু‘আ পাঠ করতেনঃ

‘‘ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজী ফাত্বারাস্ সামাওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাওঁ ওয়ামা- আনা- মিনাল মুশরিকীন, ইন্না সলা-তী ওয়ানুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া-ইয়া ওয়ামামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন - লা- শারীকা লাহূ, ওয়াবিযা-লিকা উমিরতু, ওয়াআনা- মিনাল মুসলিমীন, আল্লা-হুম্মা আনতাল মালিকু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা রব্বী, ওয়াআনা- ‘আবদুকা যলামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু, বিযাম্বী, ফাগফিরলী যুনূবী জামী‘আ-, ইন্নাহূ লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আন্তা, ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক্বি লা- ইয়াহদী লিআহসানিহা- ইল্লা- আন্তা, ওয়াসরিফ ‘আন্নী সায়ইউয়াহা- লা- ইয়াসরিফু ‘আন্নী সায়য়্যিয়াহা- ইল্লা- আন্তা লাব্বায়কা ওয়া সা‘দায়কা, ওয়াল খয়রা কুল্লুহূ ফী ইয়াদায়কা, ওয়াশ্ শাররু লায়সা ইলায়কা, আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা, তাবা-রাকতা ওয়াতা‘আ-লায়তা, আস্তাগফিরুকা ওয়াআতূবু ইলায়কা’’ -

(অর্থাৎ- ‘‘আমি একনিষ্ঠভাবে আমার মুখ ফিরিয়েছি তাঁর দিকে, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। নিশ্চয়ই আমার সালাত  আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীনের জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। আর এজন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি। আমি মুসলিমের অন্তর্ভুক্ত। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ, তুমি ছাড়া প্রকৃত আর কোন মা‘বূদ নেই। তুমি আমার রব। আমি তোমার গোলাম। আমি আমার নিজের ওপর যুলম (অত্যাচার) করেছি। আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। তুমি আমার সব অপরাধ ক্ষমা কর। তুমি ছাড়া নিশ্চয়ই আর কেউ অপরাধ ক্ষমা করতে পারে না। আমাকে পরিচালিত করতে পারে না। তুমি দূরে রাখো আমার নিকট হতে মন্দ কাজ। তুমি ছাড়া মন্দ কাজ থেকে আর কেউ দূরে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে তোমার আদেশ পালনে উপস্থিত। সকল কল্যাণই তোমার হাতে। কোন অকল্যাণই তোমার প্রতি আরোপিত হয় না। আমি তোমার সাহায্যেই টিকে আছি। তোমার দিকেই ফিরে আছি। তুমি কল্যাণের আধার। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তোমার দিকেই আমি প্রত্যাবর্তন করছি”)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮১৩ (২), হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এখানে উল্লেখ্য যে, অনেকে সুরা: আনয়াম, আয়াত নং-৭৯ এর “ইন্নী ওয়াজজাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন” এই অংশটুকু জায়নামাজে দাঁড়িয়ে জায়নামাজের দোয়া হিসেবে পড়ে থাকে যা হাদিস দ্বারা প্রমানিত নয়।

উক্ত হাদিস দ্বারা জানা যায় যে, রাসুল সাঃ উক্ত দোয়া তাকবীরে তাহরীমার পর পড়তেন। ইহা জায়নামাজের দোয়া নয়।

সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ছানার দোয়া

(৩)  “আল্লা-হুম্মা বা-‘এদ বায়নী ওয়া বায়না খাত্বা-ইয়া-ইয়া, কামা বা-‘আদতা বায়নাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিবি। আল্লা-হুম্মা নাকক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া, কামা ইউনাকক্বাছ ছাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাসি। আল্লা-হুম্মাগসিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিল মা-য়ি ওয়াছ ছালজি ওয়াল বারাদি”।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমার এবং আমার গুনাহ্ খাতার মাঝে এমন দূরত্ব সৃষ্টি কর যেরূপ পশ্চিম ও পূর্বের দূরত্ব সৃষ্টি করেছ। হে আল্লাহ! আমাকে আমার গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার কর যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আমার পাপসমূহকে পানি, বরফ ও শিশিরের মাধ্যমে ধৌত করে দাও।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমার পর ক্বিরাআত (কিরআত) শুরু করার আগে কিছু সময় চুপ থাকতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান হোন! আপনি তাকবীর ও ক্বিরাআতের মধ্যবর্তী সময় চুপ থাকেন তাতে কি বলেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি বলি, ‘‘হে আল্লাহ! আমি ও আমার গুনাহসমূহের মধ্যে দূরত্ব করে দাও, যেভাবে তুমি দূরত্ব সৃষ্টি করে দিয়েছো মাশরিক ও মাগরিবের (অর্থাৎ- পূর্ব ও পশ্চিমের) মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর গুনাহ হতে, যেভাবে পরিষ্কার করা হয় সাদা কাপড়কে ময়লা হতে। হে আল্লাহ! তুমি পানি, বরফ ও মুষলধারার বৃষ্টি দিয়ে আমার গুনাহসমূহকে ধুয়ে ফেল।’’  (মিশকাতুল মিসাবীহ ৮১২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯৮, সুনান আবূ দাঊদ ৭৮১, সুনান আননাসায়ী ৬০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮০৫, আহমাদ ৭১৬৪, দারেমী ১২৮০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৭৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২৩০, ইসলামীক সেন্টার ১২৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আউযুবিল্লাহ পাঠ

ছানা বা দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ পাঠ শেষে,

“আ’উযু বিল্লাহিস সামিইল-‘আলীমি মিনাশ-শয়তানির রজীম মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি”

নীরবে পড়বেন।  (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৭৫, সুনান আততিরমিযী ২৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসটি নিম্নরুপ:

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সালাতের জন্য দন্ডায়মান হলে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর এই দুআ পড়তেনঃ

”সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা”

অতঃপর তিনবার ”লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” ও তিনবার ”আল্লা¬হু আকবার কাবীরান” বলার পর”আউযু বিল্লাহিস সামিইল-‘আলীমি মিনাশ-শয়তানির রজীম মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি” বলতেন। তারপর কিরাত পাঠ করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৭৫, সুনান আততিরমিযী ২৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রকাশ থাকে যে, ‘আঊযুবিল্লাহ’ কেবল ১ম রাক‘আতে পড়বেন, বাকী রাক‘আতগুলিতে নয়। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১১২ পৃঃ ; নায়ল ৩/৩৬-৩৯ পৃঃ)।

বিসমিল্লাহ পাঠ

‘আঊযুবিল্লাহ’ পাঠ শেষে  ‘বিসমিল্লাহ’ নীরবে পড়বেন। অতঃপর সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবেন। সুরা ফাতিহা পাঠ শেষে আমিন বলবেন। এরপর বিসমিল্লাহসহ অন্য সুরা বা সুরার অংশ বিশেষ যা পূর্ণাঙ্গ অর্থ বহন করে এমন আয়াত পাঠ করবেন।

সুরা ফাতিহাসহ অন্যান্য সুরা পাঠ করার পূর্বে “বিসমিল্লাহ “ বলার দলিল

(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম অবতীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোন সূরার শুরুর দিক চি‎‎হ্নিত করতে পারতেন না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৮৮, হাকিম (১/২৩২), বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (২/৪২)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এইমাত্র আমার উপর একটি সূরাহ অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তিনি পড়লেনঃ ‘‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম, ইন্না আ’ত্বায়না কাল-কাওসার .....’’ সূরাটির শেষ পর্যন্ত। তিনি বললেন, তোমরা কি জান! কাওসার কি? তাঁরা বললেন, এ বিষয়ে আল্লাহ এবং তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই সর্বাধিক অবগত। তিনি বললেন, তা হচ্ছে একটি নহর, আমার রব্ব আমাকে জান্নাতে তা দান করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৮৪। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

‘বিসমিল্লাহ’ সূরায়ে ফাতিহার অংশ হওয়ার পক্ষে যেমন কোন ছহীহ দলীল নেই। (নায়লুল আওত্বার ৩/৫২ পৃঃ। বিস্তারিত আলোচনা দ্রষ্টব্য : নায়ল ৩/৩৯-৫২)।

তেমনি ‘জেহরী’ ছালাতে ‘বিসমিল্লাহ’ সরবে পড়ার পক্ষে কোন নির্ভরযোগ্য ভিত্তি নেই। (নায়লুল আওত্বার ৩/৪৬ পৃঃ)।

বরং এটি দুই সূরার মধ্যে পার্থক্যকারী হিসাবে পঠিত হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

ইমাম কুরতুবী বলেন যে, সকল কথার মধ্যে সঠিক কথা হ’ল ইমাম মালেকের কথা যে, ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা ফাতিহার অংশ নয়’। যেমন ‘কুরআন’ খবরে ওয়াহেদ অর্থাৎ একজন ব্যক্তির বর্ণনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় না। বরং তা প্রতিষ্ঠিত হয় অবিরত ধারায় অকাট্ট বর্ণনা সমূহের মাধ্যমে, যাতে কোন মতভেদ থাকে না। ইবনুল ‘আরাবী বলেন, এটি সূরা ফাতিহার অংশ না হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এতে মতভেদ রয়েছে। আর কুরআনে কোন মতভেদ থাকে না। বরং ছহীহ-শুদ্ধ বর্ণনা সমূহ যাতে কোন আপত্তি নেই, একথা প্রমাণ করে যে, ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা ফাতিহার অংশ নয়’। এটি সূরা নমলের ৩০তম আয়াত মাত্র। এ বিষয়ে ছহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি প্রণিধানযোগ্য’। (মুসলিম, মিশকাত হা/৮২৩ ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২; তাফসীরে কুরতুবী মুক্বাদ্দামা, ‘বিসমিল্লাহ’ অংশ দ্রষ্টব্য)।

(১) আনাস বিন মালিক (রাঃ) বলেন,

“আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করেছি। কিন্তু তাঁদের কাউকে ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে পড়তে শুনিনি’। (ছহীহ ইবনু খুযায়মা (বৈরূত : ১৩৯১/১৯৭১), হা/৪৯৪-৯৬; আহমাদ, মুসলিম, নায়ল ৩/৩৯; দারাকুৎনী হা/১১৮৬-৯৫; হাদীছ ছহীহ)।

(২) দারাকুৎনী বলেন, ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে বলার বিষয়ে কোন হাদীছ ‘ছহীহ’ প্রমাণিত হয়নি। (নায়লুল আওত্বার ৩/৪৬ পৃঃ)।

(৩) তবে ছহীহ হাদীছ সমূহের বিপরীতে সবল-দুর্বল মিলে প্রায় ১৪টি হাদীছের প্রতি লক্ষ্য রেখে হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হয়তোবা কখনো কখনো ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে বলে থাকবেন। তবে অধিকাংশ সময় তিনি চুপে চুপেই পড়তেন। এটা নিশ্চিত যে, তিনি সর্বদা জোরে পড়তেন না। যদি তাই পড়তেন, তাহ’লে ছাহাবায়ে কেরাম, খুলাফায়ে রাশেদ্বীন, শহরবাসী ও সাধারণ মুছল্লীদের নিকটে বিষয়টি গোপন থাকত না’।.... অতঃপর বর্ণিত হাদীছগুলি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলির মধ্যে যেগুলি ছহীহ, সেগুলির বক্তব্য স্পষ্ট নয় এবং স্পষ্টগুলি ছহীহ নয়’। (যা-দুল মা‘আ-দ ১/১৯৯-২০০ পৃঃ ; নায়ল ৩/৪৭ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০২ পৃঃ)।

সুরা ফাতিহার শেষে আমিন বলা প্রসঙ্গে

সূরা ফাতিহার পর ইমাম ও মুক্তাদি সবাই আমীন বলবেন। আমীন শব্দের অর্থ হলো ‘হে আল্লাহ, কবুল কর। হাদীসে আছে, মুসল্লীগণ যখন আমীন বলে তখন ফেরেশতারা তাদের সাথে সাথে আমীন বলে। যখন উভয় গ্রুপের আমীন বলার আওয়াজ এক হয়ে যায় তখন এ মুসল্লীদের পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘আমীন’ বলেন, তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলো। কেননা, যার ‘আমীন’ (বলা) ও মালাইকাহর ‘আমীন’ (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মা‘ফ করে দেয়া হয়। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আমীন’ বলতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৮০, ৭৮১, ৭৮২, ৪৪৭৫, ৬৪০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১০, আহমাদ ৮২৪৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখিত হাদিস দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, সকল সালাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করার পর আমিন বলতে হবে।

এখন প্রশ্ন হলো, আমিন জোড়ে বলতে হবে নাকি নিম্ন স্বরে নাকি মনে মনে?

জবাবঃ

নামাজি ব্যক্তি একাই কিংবা ইমামের পিছনে হলে জোহর ও আসরসহ সকল সুন্নত এবং নফল সালাতে সুরা ফাতিহা শেষে আমিন মনে মনে বলবেন। ইমামের পিছনে সালাত আদায় করলে যেহেতু প্রতি রাকাতে মুক্তাদিকে সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হয় তাই সুরা ফাতিহা শেষে ইমাম মুক্তাদি সকলে মনে মনে আমিন বলবেন। এছাড়া ফজর, মাগরিব, এশা ও জুমার সালাতে ইমাম মুক্তাতি উভয়ই আমিন জোড়ে বলবেন এবং ইমাম মুক্তাতির আমিন বলা একই সাথে হতে হবে। ফজর, মাগরিব ও এশা সালাতে একাকি হলেও জোড়ে বা উচ্চ স্বরে আমিন বলবেন।

ইমামের পিছনে আমিন জোড়ে বলার সহিহ হাদিসসমূহ

(ক)  ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, (সালাত আদায়কালে সূরাহ ফাতিহার শেষে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘‘ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন’’ পড়তেন তখন তিনি সশব্দে আমীন বলতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৩২, সুনান আততিরমিযী ২৪৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৮৫৫, আহমাদ (৪/৩১৬), দারাকুতনী (১/৫/৩৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত আদায় করেছেন। তাতে তিনি সশব্দে ‘‘আমীন’’ বলেছেন। তিনি ডানে ও বামে এভাবে সালাম ফিরিয়েছেন যে, আমি তাঁর গালের শুভ্রতা দেখেছি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৩৩, সুনান আততিরমিযী ২৪৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘আমীন’ বলেন, তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলো। কেননা, যার ‘আমীন’ (বলা) ও মালাইকাহর ‘আমীন’ (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মা‘ফ করে দেয়া হয়। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আমীন’ বলতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৮০, ৬৪০২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১০, ৯৪২, আহমাদ ৮২৪৭, আধুনিক প্রকাশনী ৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৪৪, ৭৪৬, সুনান আবুদাঊদ ৯৩২, ৯৩৩, সুনান আততিরমিযী ২৪৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৮৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবু হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ পড়লে তোমরা ‘আমীন’ বলো। কেননা, যার এ (আমীন) বলা মালাকগণের (আমীন) বলার সাথে একই সময় হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর (রহ.) আবূ সালামাহ (রহ.) সূত্রে আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.)-এর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এবং নু‘আইম- মুজমির (রহ.) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে হাদীস বর্ণনায় সুমাই (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৮২, ৪৪৭৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদীছে এসেছে, তোমরা আমীন বল আল্লাহ তোমাদের দু‘আ কবুল করবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৭২, সুনান আননাসায়ী, ১০৬৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৯০১, আহমাদ ৩৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য বর্ণনায় আছে, ক্বারী যখন আমীন বলবেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ),৬৪০২, ২/৯৪৭ পৃঃ, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জ্ঞাতব্যঃ অনেকে দাবী করেন, উক্ত হাদীছগুলোতে আমীন জোরে বলার কথা নেই। অথচ হাদীছে বলা হয়েছে ‘যখন ইমাম আমীন বলবে তখন তোমরা আমীন বল’। তাহলে ইমাম ‘আমীন’ জোরে না বললে মুক্তাদীরা কিভাবে বুঝতে পারবে এবং কখন আমীন বলবে? তাছাড়া মুছল্লীদের আমীনের সাথে ফেরেশতাদের আমীন কিভাবে মিলবে? অন্য হাদীছে এসেছে,

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইয়াহূদীরা তোমাদের কোন ব্যাপারে এত বেশি ঈর্ষান্বিত নয় যতটা তারা তোমাদের সালাম ও আমীনের ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৮৫৬, সহীহাহ ৬৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার সুন্নাত গ্রহণ করাই হবে প্রকৃত মুমিনের দায়িত্ব।

নীরবে আমীন বলার পক্ষে যে কয়টি বর্ণনা এসেছে, তার সবই যঈফ ও জাল।

রুকুর অতিরিক্ত দোয়াসমূহ

(১)  রুকুতে গিয়ে প্রথমে পাঠ করুন, ‘সুবহানা রব্বীয়াল ‘আযীম’’ (৩ বার)।

হাদিসঃ

হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’তে  “সুবহা-না রব্বিয়াল ’আযীম’’

ও সাজদায়  “সুবহা-না রব্বিয়াল আ’লা-’’ পড়তেন।

 আর যখনই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ক্বিরাআতের সময় রহমতের আয়াতে পৌঁছতেন, ওখানে থেমে যেতেন, রহমত তলবের দু’আ পাঠ করতেন। আবার যখন ’আযাবের আয়াতে পৌঁছতেন, সেখানে থেমে গিয়ে ’আযাব থেকে বাঁচার জন্য দু’আ করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৮১, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭১, সুনান আততিরমিযী ২৬২, সুনান আননাসায়ী ১/১৭০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৮৮, দারিমী ১৩৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

এই দো‘আটি তিনবার পড়বেন।

বেশির কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৮৫; সুনান ইবনু মাজাহ ৮৮৮; আলবানী, ছিফাত, ১১৩ পৃঃ, নাসায়ী ১১৩৪)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

ঊর্ধ্বে দশবার পড়ার হাদীছ ‘যঈফ’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮০, ৮৮৩, সুনান দাঊদ ৮৮৬, সুনান আততিরমিযী ২৬১, ইবনু মাজাহ্ ৮৯০, য‘ঈফ আল জামি‘ ৫২৫)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

অথবা

(২) ‘‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী”।

অর্থ: আমার মহান রব্বের পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এরপর,

(৩)  আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের উপর ‘আমল করে নিজের রুকূ’ ও সাজদায় এই দু’আ বেশি বেশি পাঠ করতেনঃ

“সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা- ওয়াবিহামদিকা, আল্লা-হুমাগ ফিরলী’’-

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি পূত-পবিত্র। তুমি আমাদের রব। আমি তোমার গুণগান করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮১৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৯৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৪, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭৭, সুনান আননাসায়ী ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এরপর,

(৪) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ ও সাজদায় বলতেন,

“সুব্বুহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালা-য়িকাতি ওয়াররূহ’’

(অর্থাৎ- মালাক ও রূহ জিবরীলের রব অত্যন্ত পবিত্র, খুবই পবিত্র)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৯৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৭, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭২, আহমাদ ২৪০৬৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এরপর

(৫) মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর আল মুকাদ্দামী (রহঃ)...আলী ইবনু আবূ তুলিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সালাত আদায় করতে দাঁড়াতেন তখন এ বলে শুরু করতেনঃ

"ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাওঁ ওয়ামা- আনা মিনাল মুশরিকীনা ইন্না সলা-তী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীনা লা শারীকা লাহু ওয়াবি যা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা- মিনাল মুসলিমীন, আল্ল-হুম্মা আনতাল মালিকু লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা আনতা রব্বী ওয়া আনা- আবদুকা যলামতু নাফসী ওয়া’তারাফতু বিযাম্বি ফাগফিরলী যুনুবী জামী’আন ইন্নাহু লা- ইয়াগকরুত্ব যুনুবা ইল্লা- আনতা ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক্বি লা- ইয়াহদী লিআহসানিহা- ইল্লা- আনতা ওয়াসরিফ আন্নী সাইয়্যিআহা- লা- ইয়াসরিফু ’আন্নী সাইয়্যিআহা- ইল্লা- আনতা লাব্বায়কা ওয়া সাদায়কা ওয়াল খয়রু কুল্লুহু কী ইয়াদায়কা ওয়াশ শুররু লায়সা ইলায়কা আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা তাবা-রাকত ওয়াতা আ-লায়তা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতুব ইলায়ক"

(অর্থাৎ- আমি একনিষ্ঠ হয়ে আমার মুখ সে মহান সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিলাম যিনি আসমান ও জমিনকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছুই আল্লাহর জন্য যিনি সারা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। তার কোন শারীক নেই। আমি এ জন্যই আদিষ্ট হয়েছি। আমি মুসলিম বা আত্মসমর্পণকারী। হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম বাদশাহ। তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তুমি আমার প্রতিপালক, আর আমি তোমার বান্দা। আমি নিজে আমার প্রতি যুলুম করেছি। আমি আমার পাপ স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমার সব পাপ ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া আর কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না। আমাকে সর্বোত্তম আখলাক বা নৈতিকতার পথ দেখাও। তুমি ছাড়া এ পথ আর কেউ দেখাতে সক্ষম নয়। আর আখলাক বা নৈতিকতার মন্দ দিকগুলো আমার থেকে দূরে রাখ। তুমি ছাড়া আর কেউ মন্দগুলোকে দূরে রাখতে সক্ষম নয়। আমি তোমার সামনে হাজির আছি- তোমার আনুগত্য করতে প্রস্তুত আছি। সব রকম কল্যাণের মালিক তুমিই। অকল্যাণের দায়-দায়িত্ব তোমার নয়। আমার সব কামনা-বাসনা তোমার কাছেই কাম্য। আমার শক্তিসামর্থ্যও তোমারই দেয়া। তুমি কল্যাণময়, তুমি মহান। আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার কাছেই তওবা করছি।)।

আর রুকূ করার সময় বলতেনঃ

“আল্ল-হুম্মা লাকা রাকা’তু ওয়াবিকা আ-মানতু ওয়ালাকা আসলামতু খশা’আ লাকা সামঈ ওয়া বাসার ওয়া মুখখী ওয়া আযমী ওয়া আসাবী"

 (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার উদ্দেশেই আত্মসমর্পণ করলাম। আমার কান, চোখ, মগজ, হাড় এবং সব স্নায়ুতন্ত্রী তোমার কাছে নত ও বশীভূত হ’ল)।

আর রুকূ’ থেকে উঠে বলতেনঃ

 “আল্ল-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদু মিলআস সামা-ওয়াতি ওয়ামিল আল আরযি ওয়ামিলআ মা- বায়নাহুমা- ওয়ামিলআ মা- শি’তা মিন শাইয়িন বাদু”

 (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! হে আমার প্রতিপালক, সব প্রশংসা তোমারই প্রাপ্য। আসমান ভর্তি প্রশংসা একমাত্র তোমারই প্রাপ্য)।

আর যখন সাজদায় যেতেন তখন বলতেনঃ

"আল্ল-হুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়াবিকা আ-মানতু ওয়ালাকা আসলামৃত্যু সাজাদা ওয়াজহী লিল্লায়ী খলাকাহু ওয়াসাও ওয়ারাহু ওয়াশাক্বকা সাম’আহু ওয়া বাসারাহ্ তাবা-রাকাল্লা-হু আহসানুল খ-লিকীন”

(অর্থা- হে আল্লাহ! তোমারই উদ্দেশে আমি সিজদা করলাম। তোমারই প্রতি আমি ঈমান পোষণ করেছি। তোমারই উদ্দেশে আমি আত্মসমর্পণ করেছি। আমার মুখমণ্ডল সে মহান সত্তার উদ্দেশে সিজদা করল যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আকৃতি দান করেছেন আর কান ও চোখ ফুটিয়ে শোনা ও দেখার উপযোগী করে তৈরি করেছেন। মহা কল্যাণময় আল্লাহ, তিনি কতই না উত্তম সৃষ্টিকার)।

অতঃপর সবশেষে তাশাহহুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি বলতেনঃ

“আল্ল-হুম্মাগফিরলী মা- ক্বদ্দামতু ওয়ামা- আখখারতু ওয়ামা আসসারতু ওয়ামা আ’লানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আ’লামু বিহী মিন্নী আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা"

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বের ও পরের, গোপনে এবং প্রকাশ্যে কৃত গুনাহ ক্ষমা করে দাও। আর যে সব ব্যাপারে আমি বাড়াবাড়ি করেছি তাও ক্ষমা করে দাও। আমার কৃত যেসব পাপ সম্পর্কে তুমি আমার চাইতে বেশী জান তাও ক্ষমা করে দাও। তুমিই আদি এবং তুমিই অন্ত, তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৬০, সুনান আততিরমিযী ৩৪২১; সুনান আননাসাঈ ১০৪৯; ইবন খুযাইমার ৬০৭; ইবন হিব্বান, নং ১৯০১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৮২, ইসলামীক সেন্টার ১৬৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এরপর,

(৬) আওফ ইবনু মালিক (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করতে দাঁড়ালাম। তিনি রুকূতে গিয়ে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ তিলাওয়াত করতে যত সময় লাগতো তত সময় রুকূ’তে থাকলেন। রুকূ’তে বলতে থাকলেন,

“সুবহা-না যিল জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়া-য়ি ওয়াল আযামাতি’’

(অর্থাৎ- ক্ষমতা, রাজ্য, বড়ত্ব, মহত্ব ও বিরাটত্বের মালিকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৮২, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭০, সুনান আননাসায়ী ১০৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এরপর

(৭)  আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ), ‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইন্তিকালের পূর্বে এ দু'আটি খুব বেশি মাত্রায় পাঠ করতেনঃ

"সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা আস্তাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলায়ক"

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা প্রাপ্য একমাত্র তিনি, আমি তোমার নিকট সকল পাপের ক্ষমা চাচ্ছি ও তওবা করছি।” রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে যে এসব নতুন বাক্য পড়তে দেখছি- এগুলো কী? তিনি বললেনঃ আমার উন্মাতের মধ্যে আমার জন্য একটি চিহ্ন বা নিদর্শন রাখা হয়েছে। যখন আমি তা দেখি তখন এগুলো বলতে থাকি। আমি দেখেছিঃ “ইযা-জা-আ নাসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" সূরার শেষ পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৯, মুসনাদে আহমদ ১৯৭০, সিলসিলা সহীহা ৩০৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৮) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ), আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "ইযা- জাআ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" (সূরাহু আন নাসর) নাযিল হওয়ার পর থেকে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ দু'আ পাঠ করা ব্যতিরেকে কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি। অথবা তিনি সেখানে (সালাতে) বলতেনঃ

"সুবহা-নাকা রব্বী ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”

অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক আপনার জন্যই সকল পবিত্রতা ও প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন”। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৯, ইসলামিক সেন্টার ৯৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ), আয়িশাহ্ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পড়তেনঃ

“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হাম্‌দিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তওবা করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।” রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে অধিক সংখ্যায় এ কথা বলতে দেখছিঃ “সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"। রাবী বলেন, তিনি বললেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আমি অচিরেই আমার উন্মাতের মধ্যে একটি নিদর্শন দেখতে পাব। যখন আমি সে আলামাত দেখতে পাই তখন অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পাঠ করতে থাকিঃ "সুবহানাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"। সে নিদর্শন সম্ভবত এই “ইযা- জা-আ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ ..”। অর্থাৎ “যখন আল্লাহর সাহায্য আসবে এবং বিজয় লাভ হবে (অর্থাৎ- মক্কা বিজয়), তুমি দেখত পাবে, দলে দলে লোক আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে; তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা সহকারে তার তাসবীহ করে এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিঃসন্দেহে তিনি খুবই তওবা গ্রহণকারী"- (সূরাহ আন নাসর)। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৫-(২২০), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৭০, ইসলামিক সেন্টার ৯৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) হাসান ইবনু ‘আলী আল হুলওয়ানী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ), ইবনু জুরায়য (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আতাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি রুকু’তে কি পড়েন? তিনি বলেন,

"সুবহা-নাকা ওয়াবি হামদিকা লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা"

অর্থাৎ "হে আল্লাহ! আমরা তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি ব্যতীত কোন মা'বূদ নেই।" কেননা ইবনু আবূ মুলাইকাহ আমাকে আয়িশার সূত্রে অবহিত করছেন যে, তিনি ['আয়িশাহ (রাযিঃ)] বলেছেন, একরাতে আমি ঘুম থেকে জেগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আমার কাছে পেলাম না। আমি ধারণা করলাম, তিনি হয়ত তার অপর কোন স্ত্রীর কাছে গেছেন। আমি তার খোঁজে বের হলাম, কিন্তু না পেয়ে ফিরে আসলাম। দেখি, তিনি রুকু' অথবা (রাবীর সন্দেহ) সাজদায় আছেন এবং বলছেনঃ "সুবহ-নাকা ওয়াবি হামদিকা লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা"। আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। আমি কি ধারণায় নিমজ্জিত হয়েছি, আর আপনি কি কাজে মগ্ন আছেন। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৬-(২২১/৪৮৫), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭১, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ক্বওমা

রুকূ থেকে উঠে সুস্থির হয়ে দাঁড়ানোকে ‘ক্বওমা’ বলে। ‘ক্বওমা’র সময় দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবেন ও ইমাম-মুক্তাদী সকলে বলবেন,

“সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ” অর্থাৎ ‘আল্লাহ শোনেন তার কথা যে তাঁর প্রশংসা করে’।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করার সময় দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। আবার রুকূ‘তে যাবার সময় তাকবীর বলতেন। রুকূ‘ হতে তাঁর পিঠ উঠাবার সময় ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ এবং দাঁড়ানো অবস্থায় ‘‘রব্বানা- লাকাল হামদ’’ বলতেন। তারপর সাজদায় যাবার সময় আবার তাকবীর বলতেন। সিজদা্  হতে মাথা উঠাবার সময় তাকবীর বলতেন। পুনরায় দ্বিতীয় সাজদায় যেতে তাকবীর বলতেন, আবার সিজদা্ থেকে মাথা তোলার সময় তাকবীর বলতেন। সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত গোটা সালাতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরূপ করতেন। যখন দু’ রাক্‘আত আদায় করার পর বসা হতে উঠতেন তাকবীর বলতেন।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৮৯, হীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯২, সুনান আননাসায়ী ১১৫০, আহমাদ ৯৮৫১, ইরওয়া ৩৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৫১, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বলবে, তখন তোমরা ‘‘আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ’’ বলবে। কেননা যার কথা মালায়িকার কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের (ছোট) গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৪-৭৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৩২-৩৫, ৭৩৮, ৭৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৭৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৯, সুনান আবূ দাঊদ ৮৪৮, সুনান আততিরমিযী ২৬৭, আহমাদ ৯৯২৩, সহীহ আল জামি‘ ৭০৫, সহীহ আত্ তারগীব ৫২০, মালিক ১৯৭, নাসাঈ ১০৬৩, হাদীস সম্ভার ৬৬৩, । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত বর্ণনা থেকে এ কথা বুঝা যায় যে, ইমাম ‘সামিআল্লাহু---’বললে মুক্তাদী ‘রাব্বানা অলাকালহাম্দ’ বলবে। তবে এখানে এ কথা নিশ্চিত নয় যে, মুক্তাদী ‘সামিআল্লাহু---’ বলবে না। বরং মুক্তাদীও উভয় বাক্যই বলতে পারে। যেহেতু আল্লাহর নবি (সাঃ) উভয়ই বলেছেন।

অথবা

(৪) আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ হতে মাথা উঠিয়ে বলতেনঃ

“আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদু মিল্আস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ওয়া মিল্আ মা- শি’তা মিন শাইয়্যিম বা’দু আহলুস্ সানা-য়ি ওয়াল মাজদি আহাক্কু মা ক্ব-লাল ’আবদু ওয়া কুল্লুনা- লাকা ’আবদুন, আল্লা-হুম্মা লা- মা-নি’আ লিমা- আ’ত্বাইতা ওয়ালা- মু’তিয়া লিমা- মানা’তা। ওয়ালা ইয়ানফা’উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দ’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! হে আমাদের রব! তোমারই সব প্রশংসা। আকাশ পরিপূর্ণ ও পৃথিবী পরিপূর্ণ, এরপর তুমি যা চাও তাও পরিপূর্ণ। হে প্রশংসা ও মর্যাদার মালিক! মানুষ তোমার প্রশংসায় যা বলে তুমি তার চেয়েও অধিক প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী। আমরা সকলেই তোমার গোলাম। হে আল্লাহ! তুমি যা দিবে তাতে বাধা দেবার কেউ নেই। আর তুমি যাতে বাধা দিবে তা দিতেও কেউ সমর্থ নয়। কোন সম্পদশালীর সম্পদই তোমার শাস্তি হতে তাকে রক্ষা করতে পারবে না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৯৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৭, সুনান আবূ দাঊদ ৮৪৭, সুনান আননাসায়ী ১০৬৮, আহমাদ ১১৮২৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯০৫, ইরওয়া ৩৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অথবা

(৫) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ হতে তাঁর পিঠ সোজা করে উঠে বলতেন,

“সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ, আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ মিলআস্ সামা-ওয়া-তি ওয়া মিল্আল আরযি ওয়া মিল্আ মা- শি’তা মিন শাইয়িম বা’দ’’

 (অর্থাৎ- আল্লাহ শুনেন যে তার প্রশংসা করে। হে আমার রব! আকাশ ও পৃথিবীপূর্ণ তোমার প্রশংসা, এরপর তুমি যা সৃষ্টি করতে চাও তাও পরিপূর্ণ)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭৫,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৯৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৬, সুনান আবূ দাঊদ ৮৪৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৭৮, আহমাদ ১৯১০৪, ইরওয়া ৩৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৪৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অথবা

(৬) রিফা’আহ্ ইবনু রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত আদায় করছিলাম। তিনি যখন রুকূ’ হতে মাথা তুলে,

“সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বললেন (যে ব্যক্তি আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করলো আল্লাহ তা শুনলেন), তখন এক ব্যক্তি ’বলল,

“রব্বানা- লাকাল হামদু হামদান কাসীরান ত্বইয়্যিবাম্ মুবা-রকান্ ফীহ’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার জন্য প্রশংসা, অনেক প্রশংসা, যে প্রশংসা শির্ক ও রিয়া হতে পবিত্র ও মুবারক)। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এখন এ বাক্যগুলো কে পড়ল? সেই ব্যক্তি উত্তরে বললো, আমি, হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি বললেন, আমি ত্রিশজনেরও অধিক মালাক দেখেছি এ কালিমার সাওয়াব কার আগে কে লিখবে, এ নিয়ে তাড়াহুড়া করছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৬২, সুনান আননাসায়ী ১০৬২, সুনান আবূ দাঊদ ৭৭০, সুনান আততিরমিযী ৪০৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদাহ

‘সিজদা’ অর্থ চেহারা মাটিতে রাখা। পারিভাষিক অর্থ, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে বিনম্রচিত্তে চেহারা মাটিতে রাখা। রুকূ হতে উঠে ক্বওমার দো‘আ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে আল্লাহর নিকটে সিজদায় লুটিয়ে পড়বেন এবং সিজদার দো‘আসমূহ পাঠ করবেন। নাকসহ কপাল, দু’হাত, দু’হাঁটু ও দু’পায়ের আংগুল সমূহের অগ্রভাগসহ মোট ৭টি অঙ্গ মাটিতে লাগিয়ে সিজদা করবেন।

সাত অঙ্গ দ্বারা সিজদা করা ও সিজদায় চুল-কাপড় না গুটানোর হুকুমঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা্ করতে এবং চুল ও কাপড় না গুটাতে নির্দেশিত হয়েছিলেন। (অঙ্গ সাতটি হল) কপাল দু’ হাত, দু’ হাঁটু ও দু’ পা। (সুনান আদ-দারেমী, ১৩৫৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৮০৯,৮১০, ৮১২, ৮১৫, ৮১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৮২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯০, মুসনাদুল মাউসিলী  ২৩৮৯, ২৪৩১, ২৪৬৪, ২৬৬৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২১, ১৯২৩, ১৯২৪, ১৯২৫, মুসনাদুল হুমাইদী ৫০০, ৫০১, ৫০২, আহমাদ ২৫৮৪, আধুনিক প্রকাশনী ৭৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৭২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদায় যাওয়ার নিয়ম

(ক) সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে দু’হাত মাটিতে রাখবেন। কেননা এ বিষয়ে আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ হাদীছটি ‘ছহীহ’। (আবুদাঊদ ৮৪০, মিশকাত ৮৯৯)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সিজদা্ করার সময় যেন উটের বসার মতো না বসে, বরং দু’ হাত যেন হাঁটুর আগে মাটিতে রাখে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৯, সুনান আননাসায়ী ১০৯১, সহীহ আল জামি‘ ৫৯৫, দারিমী ১৩২১, ১৩৫৭, ১৩৬০, মুসনাদুল মাওসিলী, ৬৫৪০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৪০, ১০৯০, আহমাদ ৩৮১, বাগাবী, শারহুস ‍সুন্নাহ ৩/১৩৪, বাইহাকী ২/৯৯, তাহাবী ১/২৫৪; হাযিমী, আল ই’তিবার পৃ: ১৫৮-১৫৯, মুসনাদুল মাউসিলী ৬৫৪০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) কিন্তু ওয়ায়েল বিন হুজ্র (রাঃ) বর্ণিত আগে হাঁটু রাখার হাদীছটি ‘যঈফ’ বা দুর্বল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস একাডেমী-৮৯৮, সুনান আবূ দাঊদ ৮০৮, ৮৩৮, সুনান আততিরমিযী ২৬৮, সুনান আননাসায়ী ১০৮৯, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৮২, ইরওয়া ৩৫৭, দারিমী ১৩৫৯, মির‘আত ৩/২১৭-১৮)।  হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)। যঈফ হাদিস আমলযোগ্য নয়।

(গ) সিজদার সময় হাত দু’খানা ক্বিবলামুখী করে রাখতে হবে। (‘কেননা দুই হাতও সিজদা করে যেমন মুখমন্ডল সিজদা করে থাকে’। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

নাফি‘ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলতেন, যে ব্যক্তি সালাতের সাজদায় নিজের কপাল জমিনে রাখে সে যেন তার হাত দু’টিকেও জমিনে ওখানে রাখে যেখানে কপাল রাখে। তারপর যখন সিজদা হতে উঠবে তখন নিজের হাত দু’টিও উঠায়। কারণ যেভাবে মুখমণ্ডল সিজদা করে ঠিক সেভাবে দু’ হাতও সিজদা  করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস একাডেমী- ৯০৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) সিজদার সময় হাত দু’খানা মাথার দু’পাশে কাঁধ বা কান বরাবর থাকবে। (ফিক্বহুস্ সুন্নাহ ১/১২৩, নায়লুল আওত্বার ৩/১২১)।

(ঙ)  মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবেন। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একদল সাহাবীর মধ্যে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত আপনাদের চেয়ে বেশি আমি মনে রেখেছি। আমি তাঁকে দেখেছি, তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় দু্’ হাত দু’ কাঁধ বরাবর উঠাতেন। রুকূ‘ করার সময় পিঠ নুইয়ে রেখে দু’ হাত দিয়ে দু’ হাঁটু শক্ত করে ধরতেন। আর মাথা উঠিয়ে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। এতে প্রতিটি গ্রন্থি স্ব-স্ব স্থানে চলে যেত। তারপর তিনি সিজদা করতেন। এ সময় হাত দু’টি মাটির সাথে বিছিয়েও রাখতেন না, আবার পাঁজরের সাথে মিশাতেনও না এবং দু’ পায়ের আঙ্গুলগুলোর মাথা ক্বিবলা মুখী করে রাখতেন। এরপর দু’ রাক্‘আতের পরে যখন বসতেন বাম পায়ের উপরে বসতেন ডান পা খাড়া রাখতেন। সর্বশেষ রাক্‘আতে বাম পা বাড়িয়ে দিয়ে আর অপর পা খাড়া রেখে নিতম্বের উপর (ভর করে) বসতেন।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস একাডেমী- ৭৯২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮২৮, ইরওয়া ৩৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অনুরুপ আর একটি হাদিস,

বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদা করার সময় তোমরা দু’ হাতের তালু জমিনে রাখবে। উভয় হাতের কনুই উপরে উঁচিয়ে রাখবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৯১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৪, আহমাদ ১৮৪৯১, সহীহ আল জামি‘ ৫৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৮৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ)  কনুই ও বগল ফাঁকা রাখবেন। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহায়নাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা দিতেন, তার হাত দু’টিকে এমন প্রশস্ত রাখতেন যে, তার বগলের নিচের শুভ্রতাও দেখা যেত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস একাডেমী- ৮৯১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৯০, সুনান আননাসায়ী ১১০৬, আহমাদ ২২৯২৫, ইরওয়া ৩৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৮৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মায়মূনাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় নিজের দু’ হাত জমিন ও পেট হতে পৃথক করে রাখতেন, এমনকি যদি একটি ছাগলের বাচ্চা তাঁর হাতের নিচ দিয়ে চলে যেতে চাইলে যেতে পারতো।

সহীহ মুসলিমে প্রায় অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। মায়মূনাহ্ (রাঃ)বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা্ করতেন, তখন ছাগলের বাচ্চা তাঁর দু’ হাতের মাঝ দিয়ে (পেট ও হাতের ভিতর দিয়ে) চলে যেতে চাইলে যেতে পারতো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৯০, সুনান আবূ দাঊদ ৮৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৮০, সুনান আননাসায়ী ১১০৯, ১১৪৭, আহমাদ ২৬২৬৯, ২৬২৭৮, ২৬২৯১, ২৬৩০৪; দারিমী ১৩৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৮৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ)  হাঁটু বা মাটিতে ঠেস দিবেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮০১, সহীহ  আবূ দাঊদ ৭৩০, ৯৬৩,  ৭৩১-৭৩৫, দারিমী ১৩৯৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) সিজদায় দুই কনুই উঁচু রাখবেন এবং কোনভাবেই দু’হাত কুকুরের মত মাটিতে বিছিয়ে দেওয়া যাবেন না। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা সুষ্ঠুভাবে সিজদা করো। তোমাদের কেউ যেন কুকুরের ন্যায় তার বাহুদ্বয় মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে সিজদা না করে। (সুনানে ইবনে মাজাহ-তাওহীদ ৮৯২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৩২, ৮২২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৯৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৩, সুনান আততিরমিযী ২৭৬, সুনান আননাসায়ী ১০২৮, ১১০৩, ১১১০; সুনান আবূ দাঊদ ৮৯৭, আহমাদ ১১৬৫৫, ১১৭৩৮, ১২৪০১, ১২৪২৯, ১২৫৭৯, ১২৮২০, ১৩০০৭, ১৩৪৮৩, ১৩৫৬১, ১৩৬৮৩; দারিমী ১৩২২,ইরওয়াহ ৩৭২, (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৮৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (ঝ)  সিজদা এমন (লম্বা) হবে, যাতে বুকের নীচ দিয়ে একটা বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মায়মূনাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় নিজের দু’ হাত জমিন ও পেট হতে পৃথক করে রাখতেন, এমনকি যদি একটি ছাগলের বাচ্চা তাঁর হাতের নিচ দিয়ে চলে যেতে চাইলে যেতে পারতো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮৯০,  সৃনান আবূ দাঊদ ৮৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৬, সুনান আননাসায়ী ১১০৯, সুনান ইবনু মাজাহ্। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঞ) সহজ হিসেবে প্রত্যেক মুছল্লী নিজ হাঁটু হ’তে নিজ হাতের দেড় হাত দূরে সিজদা দিলে ঠিক হতে পারে। সিজদা হতে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবেন এবং ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবেন ও আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী রাখবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮০১, ৭৯২, সহীহ  আবূ দাঊদ ৭৩০, ৯৬৩, দারিমী ১৩৯৬, সহীহ  আবূ দাঊদ ৭৩১-৭৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদায় যা করা যাবে না

(ট) ‘আবদুর রহমান ইবনু শিবল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় কাকের মতো ঠোঁকর মারতে, হিংস্র প্রাণীর মতো জমিনে হাত বিছিয়ে দিতে ও উটের মতো মসজিদের মধ্যে নিজের জন্য স্থান নির্দিষ্ট করে নিতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০২, সুনান আবূ দাঊদ ৮৬২, সুনান আননাসায়ী ১১১২, সহীহ আত্ তারগীব ৫২৩, দারিমী ১৩৬২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সাজদায় কুকুরের মতো জমিনে হাত বিছিয়ে না দেয়া

(ঠ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদা্ ঠিক মত করবে। তোমাদের কেউ যেন সাজদায় কুকুরের মতো জমিনে হাত বিছিয়ে না দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৮৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৯৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৩, সুনান আননাসায়ী ১১১০, আহমাদ ১২১৪৯, সুনান আততিরমিযী ২৭৬, সুনান আবূ দাঊদ ৮৯৭, আহমাদ ১২১৪৯, ইরওয়া ৩৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদার গুরুত্ব ও ফজিলত

(১) আল্লাহ তাআলা বলেন,‘ সিজদা করো এবং নিকটবর্তী হও।’ (আলাক : ১৯) ।

(২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু‘আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু‘আ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৯, সুনান আননাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বান্দারা তাদের রবের বেশি নিকটে যায় সাজদারত অবস্থায়। তাই তখন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দু‘আ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮২, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭৫, সুনান আননাসায়ী ১১৩৭, আহমাদ ৯৪৬১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....মা’দান ইবনু তালহাহ আল ইয়ামারী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাযিঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম আমি বললাম, আমাকে একটি কাজের কথা বলে দিন যা করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহর প্রিয়তম ও পছন্দনীয় কাজের কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন। আমি পুনর্বার জিজ্ঞেস করলাম। এবারও তিনি নীরব থাকলেন। আমি তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেনঃ তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশি বেশি সিজদা করবে। কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা একধাপ বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তোমার একটি গুনাহ মাফ করে দিবেন। মাদান বলেন, অতঃপর আমি আবূ দারদাহ (রাযিঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে জিজ্ঞেস করলাম সাওবান (রাযিঃ) আমাকে যা বলেছেন, তিনিও তাই বললেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪২৩, সুনান আততিরমিযী ৩৮৮, আহমাদ ২২৩৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তানরা যখন সাজদার আয়াত পড়ে ও সিজদা্ করে, শায়ত্বন (শয়তান) তখন কাঁদতে কাঁদতে একদিকে চলে যায় ও বলে হায় আমার কপাল মন্দ। আদম সন্তান সাজদার আদেশ পেয়ে সিজদা করলো, তাই তার জন্য জান্নাত। আর আমাকে সাজদার আদেশ দেয়া হয়েছিল আমি তা অমান্য করলাম। আমার জন্য তাই জাহান্নাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৫,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১০৫২, আহমাদ ৯৭১৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৭৫৯, সহীহ আল জামি ৭২৭, সহীহ আত্ তারগীব ৯৪৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬)  আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাব? তিনি বললেনঃ মেঘমুক্ত পুর্ণিমার রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ কর? তাঁরা বললেন, না, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছে? সবাই বললেন, না। তখন তিনি বললেনঃ নিঃসন্দেহে তোমরাও আল্লাহকে তেমনিভাবে দেখতে পাবে।

কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, যে যার উপাসনা করতে সে যেন তার অনুসরণ করে। তাই তাদের কেউ সূর্যের অনুসরণ করবে, কেউ চন্দ্রের অনুসরণ করবে, কেউ তাগুতের অনুসরণ করবে। আর বাকী থাকবে শুধুমাত্র উম্মাহ্, তবে তাদের সাথে মুনাফিকরাও থাকবে। তাঁদের মাঝে এ সময় আল্লাহ তা‘আলা আগমন করবেন এবং বলবেনঃ ‘‘আমি তোমাদের রব।’’ তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রবের আগমন না হবে, ততক্ষণ আমরা এখানেই থাকব। আর তার যখন আগমন হবে তখন আমরা অবশ্যই তাঁকে চিনতে পারব। তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা‘আলা আগমন করবেন এবং বলবেন, ‘‘আমি তোমাদের রব।’’ তারা বলবে, হাঁ, আপনিই আমাদের রব। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের ডাকবেন। আর জাহান্নামের উপর একটি সেতু স্থাপন করা হবে। রাসূলগণের মধ্যে আমিই সবার আগে আমার উম্মাত নিয়ে এ পথ অতিক্রম করব। সেদিন রাসূলগণ ব্যতীত আর কেউ কথা বলবে না। আর রাসূলগণের কথা হবেঃ (আল্লাহুম্মা সাল্লিম সাল্লিম) হে আল্লাহ্! রক্ষা করুন, রক্ষা করুন।

আর জাহান্নামে বাঁকা লোহার বহু শলাকা থাকবে; সেগুলো হবে সা‘দান কাঁটার মতো। তোমরা কি সা‘দান কাঁটা দেখেছ? তারা বলবে, হাঁ, দেখেছি। তিনি বলবেন, সেগুলো দেখতে সা‘দান* কাঁটার মতোই। তবে সেগুলো কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানে না। সে কাঁটা লোকের ‘আমল অনুযায়ী তাদের তড়িৎ গতিতে ধরবে। তাদের কিছু লোক ধ্বংস হবে ‘আমলের কারণে। আর কারোর পায়ে যখম হবে, কিছু লোক কাঁটায় আক্রান্ত হবে, অতঃপর নাজাত পেয়ে যাবে। জাহান্নামীদের হতে যাদের প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলা রহমত করতে ইচ্ছা করবেন, তাদের ব্যাপারে মালাইকাহ্কে নির্দেশ দেবেন যে, যারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করতো, তাদের যেন জাহান্নাম হতে বের করে আনা হয়। মালাইকাহ তাদের বের করে আনবেন এবং সিজদার চিহ্ন দেখে তাঁরা তাদের চিনতে পারবেন। কেননা, আল্লাহ্ তা‘আলা জাহান্নামের জন্য সিজদার চিহ্নগুলো মিটিয়ে দেয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে তাদের জাহান্নাম হতে বের করে আনা হবে। কাজেই সিজদার চিহ্ন ছাড়া আগুন বানী আদমের সব কিছুই গ্রাস করে ফেলবে। অবশেষে, তাদেরকে অঙ্গারে পরিণত অবস্থায় জাহান্নাম হতে বের করা হবে। তাদের উপর ‘আবে-হায়াত’ ঢেলে দেয়া হবে ফলে তারা স্রোতে বাহিত ফেনার উপর গজিয়ে উঠা উদ্ভিদের মত সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাদের বিচার কাজ সমাপ্ত করবেন কিন্তু একজন লোক জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে থেকে যাবে। তার মুখমণ্ডল তখনও জাহান্নামের দিকে ফেরানো থাকবে। জাহান্নামবাসীদের মধ্যে জান্নাতে প্রবেশকারী সেই শেষ ব্যক্তি।

সে তখন নিবেদন করবে, হে আমার রব! জাহান্নাম হতে আমার চেহারা ফিরিয়ে দিন। এর দূষিত হাওয়া আমাকে বিষিয়ে তুলছে, এর লেলিহান শিখা আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, তোমার নিবেদন গ্রহণ করা হলে, তুমি এছাড়া আর কিছু চাইবে না তো? সে বলবে, না, আপনার ইয্যতের শপথ! সে তার ইচ্ছামত আল্লাহ্ তা‘আলাকে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিবে। কাজেই আল্লাহ তা‘আলা তার চেহারাকে জাহান্নামের দিক হতে ফিরিয়ে দিবেন। অতঃপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে, তখন সে জান্নাতের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা সে চুপ করে থাকবে।

অতঃপর সে বলবে, হে আমার রব! আপনি জান্নাতের দরজার নিকট পৌঁছে দিন। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন, তুমি পূর্বে যা চেয়েছিলে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না বলে তুমি কি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দাওনি? তখন সে বলবে, হে আমার রব! তোমার সৃষ্টির সবচাইতে হতভাগ্য আমি হতে চাই না। আল্লাহ্ তারক্ষণিক বলবেন, তোমার এটি পূরণ করা হলে তুমি এ ছাড়া কিছু চাইবে না তো? সে বলবে না, আপনার ইযয্তের কসম! এছাড়া আমি আর কিছুই চাইব না। এ ব্যাপারে সে তার ইচ্ছানুযায়ী অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে। সে যখন জান্নাতের দরজায় পৌঁছবে তখন জান্নাতের অনাবিল সৌন্দর্য ও তার আভ্যন্তরীণ সুখ শান্তি ও আনন্দঘন পরিবেশ দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহ্ তা‘আলা ইচ্ছা করবেন, সে চুপ করে থাকবে। অতঃপর সে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দাও! তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ্ বলবেনঃ হে আদম সন্তান, কি আশ্চর্য! তুমি কত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী! তুমি কি আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করনি এবং প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হয়েছে, তাছাড়া আর কিছু চাইবে না? তখন সে বলবে, হে আমার রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আমাকে সবচাইতে হতভাগ্য করবেন না। এতে আল্লাহ্ হেসে দেবেন। অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন এবং বলবেন, চাও। সে তখন চাইবে, এমন কি তার চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ফুরিয়ে যাবে। তখন পরাক্রমশালী মহান আল্লাহ্ বলবেনঃ এটা চাও, ওটা চাও। এভাবে তার রব তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবেন। অবশেষে যখন তার আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেনঃ এ সবই তোমার, এ সাথে আরো সমপরিমাণ (তোমাকে দেয়া হল)। আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.)-কে বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেনঃ এ সবই তোমার, তার সাথে আরও দশগুণ (তোমাকে দেয়া হল)। আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুধু এ কথাটি স্মরণ রেখেছি যে, এ সবই তোমার এবং এর সাথে সমপরিমাণ। আবূ সা‘ঈদ (রাযি.) বললেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, এসব তোমার এবং এর সাথে আরও দশগুণ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮০৬, ৬৫৭৩, ৭৩৩৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮২, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৬০৯, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২০৮৫৬, মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ১১৭৮, মুসনাদে বাযযার ৭৭৯১, আহমাদ ৭৭২১, ৭৭০৩, আবূ ইয়া'লা ৬৩৬০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১৪১, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১১৪৮৮, দারিমী ২৮০১, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম: ৮৭৩৬, (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) সিজদাহ হলো দোয়া কবুলের সর্বোত্তম সময়।

উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেনঃ যখন কোন বান্দা আল্লাহ্র জন্য একটি সিজদা করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে একটি নেকী দান করেন, তার একটি গুনাহ মাফ করেন এবং তার মর্যাদা এক ধাপ উন্নত করেন। অতএব তোমরা অধিক সংখ্যায় সিজদা করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৪২৪,)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) বী’আহ্ ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাতের বেলা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে থাকতাম। উযূর পানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন মিসওয়াক, জায়নামায ইত্যাদি এগিয়ে দিতাম। একদিন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, (দীন-দুনিয়ার কল্যাণের জন্য যা কিছু চাও) চেয়ে নাও। আমি নিবেদন করলাম, আমার তো শুধু জান্নাতে আপনার সাহচর্য লাভই একমাত্র কাম্য। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (যে মর্যাদায় তুমি পৌঁছতে চাও এটা তো বড় কথা) এছাড়া আর কিছু চাও? আমি বললাম, এটাই আমার একমাত্র আবেদন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি বেশি বেশি সিজদা্ করে (এ মর্যাদা লাভের জন্য) আমাকে সাহায্য কর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ৯৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৩২০, সুনান আননাসায়ী ১১৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদার তাসবীহ বা দোয়া

ক্বাওমার দোয়া পাঠ শেষে আল্লাহু আকবার বলতে বলতে সিজদায় গিয়ে প্রথমে পাঠ করুনঃ

(১)  হুযাইফাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করেছেন। তিনি রুকূ‘তে ‘সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম’ এবং সিজদাতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল আলা’ পাঠ করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) , ৮৭১, সুনান আততিরমিযী ২৬২, সুনান ইবনু মাজাহ ৮৯৭, দারিমী ১৩০৬), সুনান আননাসায়ী ১০০৭, আহমাদ, ইবনু খুযাইমাহ ৫৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২)  সা‘দী (রাঃ) হতে তাঁর পিতা অথবা তাঁর চাচার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতরত অবস্থায় দেখেছি। তিনি রুকূ‘ ও সিজদাতে ‘‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’’ তিনবার পড়ার সমপরিমাণ সময় অবস্থান করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদার অতিরিক্ত তাসবীহ বা দোয়াসমূহ

(৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের উপর ‘আমল করে নিজের রুকূ‘ ও সাজদায় এই দু‘আ বেশি বেশি পাঠ করতেনঃ

 ‘‘সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা- ওয়াবিহামদিকা, আল্লা-হুমাগ ফিরলী’’-

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি পূত-পবিত্র। তুমি আমাদের রব। আমি তোমার গুণগান করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৯৪, ৮১৭, ৪২৯৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৯৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৭, সুনান আননাসায়ী, ১০৪৬, ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টার ৯৭৮, নায়লুল আওত্বার ৩/১০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)....আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইন্তিকালের পূর্বে এ দু’আটি খুব বেশি মাত্রায় পাঠ করতেনঃ

"সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা আস্তাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলায়ক"

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা প্রাপ্য একমাত্র তিনি, আমি তোমার নিকট সকল পাপের ক্ষমা চাচ্ছি ও তওবা করছি।” রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে যে এসব নতুন বাক্য পড়তে দেখছি- এগুলো কী? তিনি বললেনঃ আমার উন্মাতের মধ্যে আমার জন্য একটি চিহ্ন বা নিদর্শন রাখা হয়েছে। যখন আমি তা দেখি তখন এগুলো বলতে থাকি। আমি দেখেছিঃ “ইযা-জা-আ নাসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" সূরার শেষ পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী  ৯৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৫) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ).....আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "ইযা- জাআ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" (সূরাহু আন নাসর) নাযিল হওয়ার পর থেকে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ দু'আ পাঠ করা ব্যতিরেকে কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি। অথবা তিনি সেখানে (সালাতে) বলতেনঃ

"সুবহা-নাকা রব্বী ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”।

অর্থাৎ, হে আমার প্রতিপালক আপনার জন্যই সকল পবিত্রতা ও প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন।" (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী  ৯৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ)...আয়িশাহ্ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক সংখ্যায় এ দু’আ পড়তেনঃ

“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হাম্দিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তওবা করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।” রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে অধিক সংখ্যায় এ কথা বলতে দেখছিঃ “সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"। রাবী বলেন, তিনি বললেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আমি অচিরেই আমার উন্মাতের মধ্যে একটি নিদর্শন দেখতে পাব। যখন আমি সে আলামাত দেখতে পাই তখন অধিক সংখ্যায় এ দু’আ পাঠ করতে থাকিঃ "সুবহানাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"। সে নিদর্শন সম্ভবত এই “ইযা- জা-আ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ .....”। অর্থাৎ “যখন আল্লাহর সাহায্য আসবে এবং বিজয় লাভ হবে (অর্থাৎ- মক্কা বিজয়), তুমি দেখত পাবে, দলে দলে লোক আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে; তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা সহকারে তার তাসবীহ করে এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিঃসন্দেহে তিনি খুবই তওবা গ্রহণকারী"- (সূরাহ আন নাসর)। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৭০, ইসলামিক সেন্টার ৯৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার বিছানায় পেলাম না। আমি তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে আমার হাত রসূলের পায়ের উপর গিয়ে পড়ল। আমি দেখলাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাতরত। তাঁর পা দু’টি খাড়া হয়ে আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলছেনঃ

‘‘আল্লা-হুম্মা আ‘ঊযু বিরিযা-কা মিন সাখাত্বিকা ওয়া বিমু‘আ-ফা-তিকা মিন ‘উকূবাতিকা, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনকা লা- উহসী সানা-আন ‘আলায়কা, আনতা কামা- আসনায়তা ‘আলা- নাফসিকা’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে তোমার অসন্তোষ ও গযব থেকে পানাহ চাই। তোমার ক্ষমার দ্বারা তোমার ‘আযাব হতে মুক্তি চাই। তোমার কাছে তোমার রহমতের ওয়াসীলায় আশ্রয় চাই। আমি তোমার প্রশংসা করে শেষ করতে পারবো না। তুমি তেমন, যেমন তুমি নিজে তোমার প্রশংসা করেছো)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৭৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৩৮৪১, আহমাদ ২৫৬৫৬, সুনান আননাসায়ী ১১০০, ১৬৯, আহমাদ, ইবনু খুযাইমাহ ৬৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ‘ ও সাজদায় বলতেন,

‘‘সুব্বুহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালা-য়িকাতি ওয়াররূহ’’

অর্থ: মালাক ও রূহ জিবরীলের রব অত্যন্ত পবিত্র, খুবই পবিত্র। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭২, সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী  ৯৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৭, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭২, আহমাদ ২৪০৬৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় গিয়ে বলতেন,

‘‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী জামবী কুল্লাহূ দিক্কহূ ওয়া জিল্লাহূ ওয়া আও্ওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ ওয়া ‘আলা- নিয়াতাহূ ওয়া সিররহূ’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার সকল ছোট-বড়, আগে-পরের, গোপনীয় ও প্রকাশ্য গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৯৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯৩১, ইবনু খুযাইমাহ, ৬৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (১০) ‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায়ে দাঁড়ালাম। তিনি ক্বিয়ামের সমপরিমাণ সময় রুকূ‘তে অবস্থান করেন এবং তাতে

‘‘সুবহানা যিল্ জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়াই ওয়াল ‘আযমাতি’’

পাঠ করেন। অতঃপর তিনি ক্বিয়ামের সমপরিমাণ সময় সিজদাতে অবস্থান করেন এবং তাতেও উক্ত দু‘আ পাঠ করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৩, সুনানন আততিরমিযী ‘শামায়িলি মাহমুদিয়্যাহ, ২৯৮, সুনান আননাসায়ী  ১০৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (১১) “আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়াবিকা ‘আ-মানতু ওয়ালাকা ‘আসলামতু সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খলাক্কাহু ওয়াসাও ওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সাম‘আহু ওয়া বাসারাহু তাবারকাল্লাহু আহসানুল খ-লিক্কীন”

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য সিজদা করেছি, তোমারই প্রতি ঈমান এনেছি, তোমার জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছি, আমার মুখমণ্ডল (আমার সমগ্র দেহ) সিজদায় অবনমিত সেই মহান সত্তার জন্য যিনি উহাকে সৃষ্টি করেছেন এবং উহার কর্ণ ও চক্ষু উদ্ভিন্ন করেছেন, মহিমান্বিত আল্লাহ সর্বোত্তম স্রষ্টা। (মুসলিম ১/৫৩৪)।

 (১২)  আয়েশা রা: বলেন, রাসুল সা:কে সিজদায় এ দুয়াটি পড়তে শুনেন।

“রব্বি আ‘তি নাফসী তাক্বওয়া-হা, যাক্কিহা-আনতা খয়রু মান যাক্কা–হা, আনতা ওয়া লিয়্যুহা-ওয়া মাওয়ালাহা”

অর্থ: আমার রব! আমার নফসকে তাকওয়া দান করো এবং আমার নফসকে পরিশুদ্ধ করো, তুমিই নফসের সর্বোত্তম পরিশুদ্ধকারী। তুমিই তো তার অভিভাবক ও মুরুব্বী। (মুসনাদ আহমদ-২৫৭৫৭)।

(১৩) হাসান ইবনু ’আলী আল হুলওয়ানী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ)...ইবনু জুরায়য (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আতাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি রুকু’তে কি পড়েন? তিনি বলেন,

"সুবহা-নাকা ওয়াবি হামদিকা লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা"

অর্থাৎ "হে আল্লাহ! আমরা তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই।" কেননা ইবনু আবূ মুলাইকাহ আমাকে আয়িশার সূত্রে অবহিত করছেন যে, তিনি [’আয়িশাহ (রাযিঃ)] বলেছেন, একরাতে আমি ঘুম থেকে জেগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আমার কাছে পেলাম না। আমি ধারণা করলাম, তিনি হয়ত তার অপর কোন স্ত্রীর কাছে গেছেন। আমি তার খোঁজে বের হলাম, কিন্তু না পেয়ে ফিরে আসলাম। দেখি, তিনি রুকু’ অথবা (রাবীর সন্দেহ) সাজদায় আছেন এবং বলছেনঃ "সুবহ-নাকা ওয়াবি হামদিকা লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা"। আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। আমি কি ধারণায় নিমজ্জিত হয়েছি, আর আপনি কি কাজে মগ্ন আছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭১, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এখানে উল্লেখিত রুকু ও সিজদাহর অতিরিক্ত দোয়া ছাড়াও কুরআনের আয়াত ব্যতীত হাদিস হতে জানা যেমন, অভাব-অনটন, হতাশা, বিপদ-আপদ বা বালা-মসিবত হতে মুক্তি কিংবা মনের আশা পূরণের যতো দোয়া আছে সবই পড়া যাবে। সালাত যেহেতু এক প্রকার দোয়া বা মুনাজাত তাই  একাকী দুই হাত তুলে মুনাজাতে যা বলবেন বা আল্লাহর নিকট যা চাইবেন সেই সংক্রান্ত হাদিস হতে দোয়াগুলো রুকু, সিজদা ও তাশাহুদ বৈঠকে বলবেন। আশা করা যায়, আপনার দোয়া কবুল হবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

(ক)  ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু‘আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু‘আ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৯, সুনান আননাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (খ)  আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বান্দারা তাদের রবের বেশি নিকটে যায় সাজদারত অবস্থায়। তাই তখন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দু‘আ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৯৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮২, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭৫, সুনান আননাসায়ী ১১৩৭, আহমাদ ৯৪৬১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুই সিজদার মাঝে বসার সময় কতোটুকু

রুকু ও সিজদায় যে পরিমান সময় ব্যয় হবে দুই সিজদার মাঝখানেও প্রায় সে পরিমান সময় ব্যয় করতে হবে।

বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রুকূ’, সিজদা্, দুই সাজদার মধ্যে বসা, রুকূ’র পর সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময়ের পরিমাণ (ক্বিরাআতের জন্য) দাঁড়ানোর সময় ছাড়া প্রায় সমান সমান ছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৬৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৯২, ৮০১, ৮২০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭১, সুনান আবূ দাঊদ ৮৫২, সুনান আননাসায়ী ১০৬৫, সুনান আততিরমিযী ২৭৯, আহমাদ ১৮৪৬৯, দারেমী ১৩৭২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৮৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদারত অবস্থায় ও দুই সিজদার মাঝে বসা অবস্থায় শান্ত হতে ও তাড়াহুড়া না করতে রাসুল (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন। দুই সিজদার মাঝে বৈঠকে পরিপূর্ণ শান্তভাবে না বসলে তার সালাত হবে না বলে তিনি জানিয়েছেন। অনেক মুছুল্লীকে দেখা যায় এক সিজদাহ দেয়ার পর মাথা সামান্য তুলেই আবার দ্বিতীয় সিজদায় যায় তাদের সালাত হবে না।

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আ

(১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ সাজদার মধ্যে বলতেনঃ

‘‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়া ‘আ-ফিনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুক্বনী’’

(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ কর। আমাকে রহম কর, হিদায়াত কর, আমাকে হিফাযাত কর। আমাকে রিযক্ব দান কর)। (মিশকাতুল মিসাবীহ ৯০০, সুনান আবূ দাঊদ ৮৫০, সুনান আততিরমিযী ২৮৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

এরপর বলবেন,

(২) হুযাইফাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’ সিজদার মাঝে বলতেন:  “রব্বিগফির লী।”  (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর)। (মিশকাতুল মিসাবীহ-৯০১, আহমাদ ৩৯৭, ৪০০, সুনান ইবনু মাজাহ ৮৯৭, আল ‍কুবরা ৬৫৬, ৭৩১, ১৩৭৮, ১৩৭৯, সুনান আবু দাউদ ৮৭৪; সুনান আততিরমিযী, শামাইল ২৭০, বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ ৯১০, বাইহাকী ২/১২১-১২২, আবু দাউদ তায়ালিসী ৪১৬, সুনান আদ-দারেমী ১৩৬০, নাসাঈ,  ১০৬৯, ইরওয়া ৩৩৫, দারিমী ১৩৬৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

শেষ বৈঠক (তাশাহুদ বৈঠক)

যে বৈঠকের শেষে সালাম ফিরাতে হয়, তাকে শেষ বৈঠক বলে। ক্বাযী ‘আয়ায (৪৭৬-৫৪৪ হিঃ) বলেন, আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য এবং শেষ নবীর রিসালাতের সাক্ষ্য শামিল থাকায় অন্য দো‘আসমূহের উপর প্রাধান্যের কারণে যিকরের এই বিশেষ অনুষ্ঠানটিকে সামষ্টিক ভাবে তাশাহহুদ বলা হয়’। (মির‘আত ৩/২২৭)।

এটি ফরয, যা না করলে ছালাত বাতিল হয়। তবে ১ম বৈঠকটি ওয়াজিব, যা ভুলক্রমে না করলে সিজদায়ে সহো ওয়াজিব হয়। ২য় রাক‘আত শেষে বৈঠকে বসবেন। যদি ১ম বৈঠক হয়, তবে কেবল ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ে ৩য় রাক‘আতের জন্য উঠে যাবেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২৯)।

আর যদি শেষ বৈঠক হয়, তবে ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার পরে দরূদ, দো‘আয়ে মাছূরাহ এবং সম্ভব হলে অন্য দো‘আ পড়বেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২৯; মির‘আত ১/৭০৪; ঐ, পৃঃ ৩/২৯৪-৯৫, হা/৯৪৭, ৯৪৯)।

বৈঠকে বসার নিয়ম

(১)  ১ম বৈঠকে বাম পা পেতে তার উপরে বসবেন ও শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে দিয়ে বাম নিতম্বের উপরে বসবেন ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবেন। এই সময় ডান পায়ের আঙ্গুলী সমূহের অগ্রভাগ ক্বিবলামুখী থাকবে।

হাদিসঃ

আবূ হুমায়দ আস্ সা’ইদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত সম্পর্কে আপনাদের চেয়ে বেশি জানি। তারা বললেন, তা আমাদেরকে বলুন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি সালাতের জন্য দাঁড়ালে দু’ হাত উঠাতেন, এমনকি তা দু’ কাঁধ বরাবর উপরে তুলতেন। তারপর তাকবীর বলতেন। এরপর ’ক্বিরাআত (কিরআত)’ পাঠ করতেন। এরপর রুকূ’তে যেতেন। দু’ হাতের তালু দু’ হাঁটুর উপর রাখতেন। পিঠ সোজা রাখতেন। অর্থাৎ- মাথা নীচের দিকেও ঝুকাতেন না, আবার উপরের দিকেও উঠাতেন না। এরপর (রুকূ’ থেকে) মাথা উঠিয়ে বলতেন “সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’। তারপর সোজা হয়ে হাত উপরে উঠাতেন, এমনকি তা কাঁধ বরাবর করতেন এবং বলতেন, ’আল্লা-হু আকবার’। এরপর সিজদা্ করার জন্য জমিনের দিকে ঝুঁকতেন। সাজদার মধ্যে দুই হাতকে বাহু থেকে আলাদা করে রাখতেন। দু’ পায়ের আঙ্গুলগুলোকে ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে দিতেন। তারপর মাথা উঠাতেন। বাম পা বিছিয়ে দিয়ে এর উপর বসতেন। এরপর সোজা হয়ে থাকতেন, যাতে তাঁর সমস্ত হাড় নিজ নিজ জায়গায় এসে যায়।

তারপর তিনি দাঁড়াতেন। দ্বিতীয় রাক্’আতও এভাবে আদায় করতেন। দু’ রাক্’আত আদায় করে দাঁড়াবার পর তাকবীর বলতেন ও কাঁধ পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন, যেভাবে প্রথম সালাত  শুরু করার সময় করতেন। এরপর তাঁর বাকী সালাত এভাবে তিনি আদায় করতেন। শেষ রাক্’আতের শেষ সাজদার পর, যার পরে সালাম ফিরানো হয়, নিজের বাম পা ডান দিকে বের করে দিতেন এবং এর উপর বসতেন। তারপর সালাম ফিরাতেন। তারা বলেন, আপনি সত্য বলেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এভাবেই সালাত আদায় করতেন।

আবূ দাঊদ-এর আর এক বর্ণনায় আবূ হুমায়দ-এর হাদীসে আছেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ করলেন। দু’ হাত দিয়ে দু’ হাঁটু আঁকড়ে মজবুত করে ধরলেন। এ সময় তাঁর দু’ হাত ধনুকের মতো করে দু’ পাঁজর হতে পৃথক রাখলেন। আবূ হুমায়দ (রাঃ) আরও বলেন, এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিজদা্  করলেন। নাক ও কপাল মাটির সাথে ঠেকালেন। দু’ হাতকে পাঁজর হতে পৃথক রাখলেন। দু’ হাত কাঁধ সমান জমিনে রাখলেন। দু’ উরুকে রাখলেন পেট থেকে আলাদা করে। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিজদা্ করলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাম পা বিছিয়ে দিয়ে এর উপর বসলেন। ডান পায়ের সম্মুখ ভাগকে ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে দিলেন। ডান হাতের তালু ডান উরুর উপর এবং বাম হাতের তালু বাম উরুর উপর রাখলেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করলেন। আবূ দাঊদ-এর আর এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুই রাক্’আতের পর বাম পায়ের পেটের উপর বসতেন। ডান পা রাখতেন খাড়া করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চতুর্থ রাক্’আতে বাম নিতম্বকে জমিনে ঠেকাতেন আর পা দু’টিকে একদিক দিয়ে বের করে দিতেন (ডান দিকে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮০১, ৭৯২,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৩০, ৭৩১, ৯৬৩; দারিমী ১৩৯৬,  নায়ল ৩/১৪৩-৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) জোড়-বেজোড় যেকোন ছালাতের সালামের বৈঠকে নারী-পুরুষ সকলকে এভাবেই বাম নিতম্বের উপর বসতে হয়। একে ‘তাওয়ার্রুক’ বলা হয়।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর ও ক্বিরাআত “আলহামদু লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন’’ দ্বারা সালাত  শুরু করতেন। তিনি যখন রুকূ করতেন মাথা খুব উপরেও করতেন না, আবার বেশী নীচুও করতেন না, মাঝামাঝি রাখতেন। রুকূ হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সাজদায় যেতেন না। আবার সিজদা্ হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে না বসে দ্বিতীয় সাজদায় যেতেন না। প্রত্যেক দু’ রাক্’আতের পরই বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়তেন। বসার সময় তিনি তাঁর বাম পা বিছিয়ে দিতেন। ডান পা খাড়া রাখতেন। শায়ত্বনের (শয়তানের) মতো কুকুর বসা বসতে নিষেধ করতেন। সাজদায় পশুর মতো মাটিতে দু’ হাত বিছিয়ে দিতেও নিষেধ করতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করতেন সালামের মাধ্যমে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৯১, ৮০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮২৮, ছহীহ ইবনু হিববান ১৮৬২,৬৭,৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৯৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৭, সুনান আবূ দাঊদ ৭৩০, ৭৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৬৯, আহমাদ ২৪০৩০, ইরওয়া ৩১৬,আধুনিক প্রকাশনী ৭৮২ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাশাহুদ বৈঠকে দোয়া পাঠের সময় আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা

(৩) (ক) ওয়ায়িল ইবনু হূজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি (তাশাহুদের বৈঠক সম্পর্কে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। অতঃপর তিনি বাম পা বিছিয়ে দিলেন। বাম হাতকে বাম রানের উপর রাখলেন। এভাবে তিনি ডান কনুইকে ডান রানের উপর বিছিয়ে রাখলেন। এরপর (নব্বইয়ের বন্ধনের ন্যায়) ডান হাতের কনিষ্ঠা ও অনামিকা বন্ধ করলেন। (মধ্যমা ও বৃদ্ধার দ্বারা) একটি বৃত্ত বানালেন এবং শাহাদাত আঙ্গুল উঠালেন। এ সময় আমি তাঁকে দেখলাম, তিনি তাশাহুদ পাঠ করতে করতে ইশারা করার জন্য শাহাদাত আঙ্গুল নাড়ছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯১১, সুনান আননাসায়ী ৮৮৯, ইরওয়া ৩৬৭, সুনান আবূ দাঊদ ৭২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সালাতে তাশাহুদ পড়ার সময় শাহাদাতের দু’ আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করতে লাগলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, এক আঙ্গুল দিয়েই ইশারা কর, এক আঙ্গুল দিয়েই ইশারা কর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯১৩, সুনান আততিরমিযী ৩৫৫৭, সুনান আননাসায়ী ১২৭২, দা‘ওয়াতুল কাবীর ৩১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ)  এবং ডান হাত ৫৩ -এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ থাকবে ও শাহাদাত অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করবেন। ৫৩ -এর ন্যায় অর্থ কনিষ্ঠা, অনামিকা ও মধ্যমা অঙ্গুলী মুষ্টিবদ্ধ করা ও বৃদ্ধাঙ্গুলীকে তাদের সাথে মিলানো এবং শাহাদাত অঙ্গুলীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া। বৈঠকের শুরু থেকে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত ইশারা করতে থাকবেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহুদ পড়ার জন্য বসলে তাঁর বাম হাত বাম পায়ের হাঁটুর উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। এ সময় তিনি তিপ্পান্নের মতো করার জন্য আঙ্গুল বন্ধ করে রাখতেন, তর্জনী দিয়ে (শাহাদাত) ইশারা করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০৬, ৯০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮০, আহমাদ ৬১৫৩, দারেমী ১৩৭৮, মির‘আত ৩/২২৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১১৮৫, ইসলামীক সেন্টার ১১৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) ছাহেবে মির‘আত ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (১৯০৪-৯৪ খৃ:) বলেন, আঙ্গুল ইশারার মাধ্যমে আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেওয়া হয়। (মির‘আত ৩/২২৯ পৃঃ)।

নারী পুরুষ সকলের জন্য একই হুকুম।

(ঙ) ইশারার সময় আঙ্গুল দ্রুত নাড়ানো যাবে না, যা পাশের মুছল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয়’।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চাদর পরে সালাত আদায় করলেন। চাদরটির এক কোণে অন্য রঙের বুটির মতো কিছু কাজ করা ছিল। সালাতে এই কারুকার্যের দিকে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একবার তাকালেন। সালাত শেষ করার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার এ চাদরটি (এর দানকারী) আবূ জাহম-এর কাছে নিয়ে যাও। তাকে এটি ফেরত দিয়ে আমার জন্য তার ‘আম্বিজা-নিয়াহ্’ নিয়ে আসো। কারণ এই চাদরটি আমাকে আমার সালাতে মনোযোগী হতে বিরত রেখেছে- (বুখারী ও মুসলিম)।

বুখারীর আর এক বর্ণনায় আছে, আমি সালাতে চাদরের কারুকার্যের দিকে তাকাচ্ছিলাম, তাই আমার ভয় হচ্ছে এই চাদর সালাতে আমার নিবিষ্টতা বিনষ্ট করতে পারে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৫৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৭৩,৭৫২, ৫৮১৭,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৫৬, সুনান আবূ দাঊদ ৪০৫২, ইরওয়া ৩৭৬, আহমাদ ২৪০৮৭, সহীহ আল জামি ৮৬৪, মির‘আত ৭৬৩, ১/৬৬৯ পৃঃ, ঐ, ২/৪৭৩ পৃঃ, আধুনিক প্রকাশনীঃ৩৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) ‘আশহাদু’ বলার সময় আঙ্গুল উঠাবেন ও ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর আঙ্গুল নামাবেন’ বলে যে কথা চালু আছে তার কোন ভিত্তি নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০৬, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী, পৃঃ ১৪০; মির‘আত ৩/২২৯), সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮০, আহমাদ ৬১৫৩, দারেমী ১৩৭৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ)  মুছল্লীর নযর ইশারার বাইরে যাবে না।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

নাফি‘ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) যখন সালাতে বসতেন, নিজের দু’ হাত নিজের দু’ রানের উপর রাখতেন। আর শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন এবং তার চোখের দৃষ্টি থাকতো আঙ্গুলের প্রতি। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ শাহাদাত আঙ্গুল শায়ত্বনের (শয়তানের) কাছে লোহার চেয়ে বেশি শক্ত। অর্থাৎ- শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে তাওহীদের ইশারা করা শায়ত্বনের (শয়তানের) ওপর নেয়া নিক্ষেপ করার চেয়েও কঠিন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯১৭, আহমাদ ৫৯৬৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৯০, নাসাঈ ১২৭৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৪) বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলো বাম হাঁটুর প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও বিছানো থাকবে।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসুল সাঃ যখন সালাতের মধ্যে বসতেন দু’ হাত দু’ হাঁটুর উপর রাখতেন এবং ডান হাতের বৃদ্ধার নিকট যে আঙ্গুল রয়েছে (তর্জনী) তা উঠাতেন। তা দিয়ে দু‘আ (ইশারা) করতেন। আর তাঁর বাম হাত বাম হাঁটুর উপর বিছানো থাকতো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮০, সুনান আননাসায়ী ১২৬৯, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৯১৩, আহমাদ ৬৩৪৯, ইরওয়া ৩৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫)  দো‘আ পাঠের সময় আকাশের দিকে তাকানো নিষেধ।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ লোকেরা যেন সালাতে দু‘আ করার সময় নযরকে আসমানের দিকে ক্ষেপন না করে। অন্যথায় তাদের দৃষ্টিকে ছোঁ মেরে নেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৮৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪২৯, সুনান আননাসাঈ ১২৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৪৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন লোক যেন সালাতে হাতের উপর ঠেস দিয়ে না বসে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯১৪, সুনান আবূ দাঊদ ৯৯২, আহমাদ ৬৩৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

তাশাহুদ বৈঠকে পঠিতব্য দোয়াসমূহ

প্রথমতঃ

আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি ওয়াছ্ ছালাওয়া-তু ওয়াত্ ত্বাইয়িবা-তু আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়ুহান নাবিইয়ু ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আসসালা-মু ‘আলায়না ওয়া ‘আলা ‘ইবা-দিল্লা-হিছ ছা-লেহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু।

অনুবাদ: যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধি সমূহ নাযিল হউক। শান্তি বর্ষিত হউক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের উপরে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল’।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

(ক) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করতাম তখন এ দু‘আ পাঠ করতাম, ‘‘আসসালা-মু ‘আলাল্ল-হি ক্ববলা ‘ইবা-দিহী, আসসালা-মু ‘আলা- জিবরীলা, আসসালা-মু ‘আলা- মীকায়ীলা, আসসালা-মু ‘আলা- ফুলা-নিন’’

(অর্থাৎ-আল্লাহর ওপর সালাম তাঁর বান্দাদের ওপর পাঠাবার আগে, জিবরীলের উপর সালাম, মীকায়ীল-এর ওপর সালাম। সালাম অমুকের উপর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষ করলেন, আমাদের দিকে ফিরে বললেন, ‘‘আল্লাহর ওপর সালাম’’ বলো না। কারণ আল্লাহ তো নিজেই সালাম (শান্তিদাতা)।

অতএব তোমাদের কেউ সালাতে বসে বলবে,

‘‘আততাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াস্ সলাওয়া-তু ওয়াত্ব ত্বইয়্যিবা-তু আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়্যুহান নাবিইয়্যু ওয়ারহমাতুল্ল-হি ওয়াবার-কা-তুহু আসসালা-মু ‘আলায়না ওয়া‘আলা- ‘ইবা-দিল্লা-হিস্ স-লিহীন’’

(অর্থাৎ- সব সম্মান, ‘ইবাদাত, উপাসনা ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার ওপর আল্লাহর সব নেক বান্দাদের ওপর সালাম)।

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কোন ব্যক্তি এ কথাগুলো বললে এর বারাকাত আকাশ ও মাটির প্রত্যেক নেক বান্দার কাছে পৌঁছবে। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,

‘‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রসূলুহু’’

(অর্থাৎ-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা‘বূদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল।)

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এরপর আল্লাহর বান্দার কাছে যে দু‘আ ভালো লাগে সে দু‘আ পাঠ করে আল্লাহর মহান দরবারে আকুতি মিনতি জানাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৩৫, ৮৩১, ৬২৩০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০২, সুনান আবূ দাঊদ ৯৬৮, নাসায়ী ১২৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৯৯, আহমাদ ৪১০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৮০, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(খ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আত্তাহিয়্যাতু শিক্ষা দিতেন, যেভাবে তিনি আমাদেরকে কুরআন মাজীদের সূরাহ্ শিক্ষা দিতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন,

‘‘আততাহিয়্যা-তুল মুবা-রাকা-তুস্ সলাওয়া-তু ওয়াততাইয়্যিবা-তু লিল্লা-হি। আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়্যুহান্ নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আসসালা-মু ‘আলায়না- ওয়া ‘আলা- ‘ইবা-দিল্লা-হিস্ স-লিহীন। আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়ারসূলুহু’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৭৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৮৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নীরবে তাশাহ্হুদ পাঠ করা সুন্নত

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাশাহহুদ আস্তে পড়া সুন্নাত। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৮৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯১৮, সুনান  আততিরমিযী ২৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দরূদ

দ্বিতীয়তঃ

হাদীছে বিভিন্ন শব্দে ছহীহ সনদে ৭টি দরূদ বর্ণিত হয়েছে (আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন্নবী, ১৬৫-১৬৮ পৃ.)। তাশাহ্হুদে এর যেকোন একটি পাঠ করলে ছালাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এর মধ্যে দরূদে ইবরাহীমী পাঠ করাই সর্বোত্তম। (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/৪৫৪-৪৫৮; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/২০২-২০৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/৩৯৯-৪০০)।

 (১ নং দরুদ, দরুদে ইবরাহিম):

“আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লায়তা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা বা-রকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত’।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ)-এর সাথে আমার দেখা হলে তিনি বললেন, হে ‘আবদুর রহমান! আমি কি তোমাকে একটি কথা উপহার দিব যা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছি? উত্তরে আমি বললাম, হাঁ আমাকে তা উপহার দিন। তিনি বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি আমরা ‘সালাম’ কিভাবে পাঠ করবো তা আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা আপানার ও আপনার পরিবারে প্রতি ‘সালাত’ কিভাবে পাঠ করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা বলো,

‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- সল্লায়তা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আল- আ-লি ইবরা-হীমা ইননাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- বা-রাকতা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’’-

(অর্থঃ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি রহমত বর্ষণ কর, যেভাবে তুমি রহমত বর্ষণ করেছো ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি বারাকাত নাযিল কর মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি, যেভাবে তুমি বারাকাত নাযিল করেছো ইব্রাহীম ও ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের প্রতি। তুমি বড় প্রশংসিত ও সম্মানিত)।

কিন্তু ইমাম মুসলিম-এর বর্ণনায় ‘আলা- ইবরা-হীম’ শব্দ দু’ স্থানে উল্লিখিত হয়নি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯১৯ সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩৭০, ৪৭৯৭, ৬৩৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৬, আহমাদ ১৮১৫৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২ নং দরুদ):

আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার প্রতি কিভাবে দরূদ পাঠ করব? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা বল,

‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আয্ওয়া-জিহী ওয়া যুররিইয়্যাতিহী কামা- সল্লায়তা ‘আলা- আ-লি ইব্র-হীমা ওয়াবা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আয্ওয়া-জিহী ওয়া যুররিইয়্যাতিহী কামা- বা-রকতা ‘আলা- আ-লি ইব্র-হীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও বংশধরগণের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করো, যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিজনের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করেছো এবং মুহাম্মাদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও বংশধরগণের প্রতি তোমার কল্যাণ নাযিল করো, যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিবার-পরিজনের প্রতি কল্যাণ নাযিল করেছো। অবশ্যই তুমি খুব প্রশংসিত এবং খুব সম্মানিত।)।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৯২০,সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬০,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪০৭, সুনান আবূ দাঊদ ৯৭৯, সুনান আননাসায়ী ১২৯৪, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৯০৫, আহমাদ ২৩৬০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দরুদ বিষয়ে জ্ঞাতব্য

প্রথমতঃ দরূদে মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর পরিবারকে ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিবারের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এর ফলে মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর পরিবারের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে বলে মনে হ’লেও প্রকৃত অর্থে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কেননা মুহাম্মাদ (ছাঃ) স্বয়ং ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধর এবং মানব জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ও সর্বশেষ রাসূল। পিতা ইবরাহীমের সাথে সন্তান হিসাবে তাঁর তুলনা মোটেই অমর্যাদাকর নয়।

দ্বিতীয়ত: ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশে হাজার হাজার নবী ছিলেন। কিন্তু মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরিবারবর্গের মধ্যে কোন নবী না থাকা সত্ত্বেও তাঁদেরকে অগণিত নবী-রাসূল সমৃদ্ধ মহা সম্মানিত ইবরাহীমী বংশের সাথে তুলনা করার মাধ্যমে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরিবারের মর্যাদা নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি করা হয়েছে। (মির‘আত ১/৬৭৮-৬৮০; ঐ, ৩/২৫৩-৫৫)।

দরূদ পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৮, সুনান আবুআবূ দাঊদ ১৫৩০, সুনান আননাসায়ী ১২৯৬, সুনান আততিরমিযী ৪৮৫, আহমাদ ৮৮৫৪, দারেমী ২৮১৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করবেন। তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, আর আল্লাহর নৈকট্যের জন্য দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২২, সুনান আন নাসায়ী ১২৯৭, হাকিম ১/৫৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা আমার প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করবে, তারাই কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আমার পক্ষ থেকে বেশি নিকটে হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২৩, সুনান আততিরমিযী ৪৮৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৬৮)। হাদিসের মানঃ হাসান। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঘ) উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কিছু মালাক (ফেরেশতা) আছেন যারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ান। তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার কাছে পৌঁছান। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২৪, সুনান আননাসায়ী ১২৮২, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৮৫৩, হাকিম ২/৪২১, দারিমী ২৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ আমার ওপর সালাম পাঠ করলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে আমার রূহ ফেরত দেন যাতে আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৫, সুনান আবূ দাঊদ ২০৪১, সহীহ আল জামি ৫৬৭৯, বায়হাক্বীর দা‘ওয়াতে কাবীর ১৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান।

(চ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তোমাদের ঘরকে কবরস্থান বানিও না, আর আমার কবরকেও উৎসবস্থলে পরিণত করো না। আমার প্রতি তোমরা দরূদ পাঠ করবে। তোমাদের দরূদ নিশ্চয়ই আমার কাছে পৌঁছে, তোমরা যেখানেই থাক না কেন।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২৬, সুনান আবূ দাঊদ ২০৪২, সহীহ আল জামি‘ ৭২২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(ছ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লাঞ্ছিত হোক সেই ব্যক্তি, যার নিকট আমার নাম উচ্চারিত হয় কিন্তু সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে না। লাঞ্ছিত হোক সেই ব্যক্তি, যার কাছে রমাযান মাস আসে আবার তার গুনাহ ক্ষমার আগে সে মাস চলে যায়। লাঞ্ছিত হোক সেই ব্যক্তি, যার নিকট তার বৃদ্ধ মা-বাপ অথবা দু’জনের একজন বেঁচে থাকে অথচ তারা তাকে জান্নাতে পৌঁছায় না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২৭, সুনান আততিরমিযী ৩৫৪৫, সহীহ আত্ তারগীব, হাকিম ১/৫৪৯)। হাদিসের মানঃ হাসান।

(জ) আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের কাছে তাশরীফ আনলেন। তখন তাঁর চেহারায় বড় হাসি-খুশী ভাব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার নিকট জিবরীল (আঃ) এসেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার রব বলেছেন, আপনি কি এ কথায় সন্তুষ্ট নন যে, আপনার উম্মাতের যে কেউ আপনার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে আমি তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবো? আর আপনার উম্মাতের কোন ব্যক্তি আপনার ওপর একবার সালাম পাঠালে আমি তার উপর দশবার সালাম পাঠাবো? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৮, সুনান আননাসায়ী ১২৮৩, দারিমী ২৮১৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঝ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সালাত আদায় করছিলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর কাছে ছিলেন আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ)। সালাত শেষে আমি যখন বসলাম, আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করলাম, এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠ করলাম। তারপর আমি আমার নিজের জন্য দু‘আ করতে লাগলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চাও, তোমাকে দেয়া হবে। চাও, তোমাকে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৩১, সুনান আততিরমিযী ৫৯৩)। হাদিসের মানঃ হাসান।

(ঞ) ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দু‘আ আসমান ও জমিনের মধ্যে লটকিয়ে থাকে। এর থেকে কিছুই উপরে উঠে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের নবীর ওপর দরূদ না পাঠাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৩৮,  সুনান আততিরমিযী ৪৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭৬। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(ট) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনার উপর অনেক বেশী দরূদ পাঠ করি। আপনি আমাকে বলে দিন আমি (দু’আর জন্য যতটুকু সময় বরাদ্দ করে রেখেছি তার) কতটুকু সময় আপনার উপর দরূদ পাঠাবার জন্য নির্দিষ্ট করব? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়। আমি আরয করলাম, যদি এক-তৃতীয়াংশ করি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়, যদি আরো বেশী কর তাহলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর। আমি আরয করলাম, যদি অর্ধেক সময় নির্ধারণ করি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার মন যতটুকু চায় কর। যদি আরো বেশী নির্ধারণ কর তাহলে তোমর জন্যই ভালো। আমি বললাম, যদি দুই-তুতীয়াংশ করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়। যদি আরো বেশি নির্ধারণ কর তোমার জন্যই কল্যাণকর। আমি আরয করলাম, তাহলে আমি আমার দু’আর সবটুকু সবসময়ই আপনার উপর দরূদ পড়ার কাজে নির্দিষ্ট করে দেব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে, তোমার দীন-দুনিয়ার মকসুদ পূর্ণ হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৯, সুনান আততিরমিযী ২৪৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঠ) ফুযালাহ্ ইবনু ’উবায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপবিষ্ট ছিলেন। তখন একজন লোক এলেন। তিনি সালাত  আদায় করলেন এবং এই দু’আ পড়লেন, “আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর ও আমার ওপর রহম কর)। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালাত আদায়কারী! তুমি তো নিয়ম ভঙ্গ করে বড্ড তাড়াহুড়া করলে। তারপর তিনি বললেন, তুমি সালাত শেষ করে দু’আর জন্য বসবে। আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করবে। আমার ওপর দরূদ পড়। তারপর তুমি যা চাও আল্লাহর কাছে দু’আ করবে।

ফুযালাহ্ (রাঃ) বলেন, এরপর আর এক ব্যক্তি এলো, সালাত আদায় করলো। সে সালাত শেষে আল্লাহর প্রশংসা করলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠ করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালাত আদায়কারী! আল্লাহর কাছে দু’আও কর। দু’আ কবূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩০, সুনান আততিরমিযী ৩৪৭৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৩, নাসায়ী ১/১৮৯, আহমাদ ৬/১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ড)  খলীফাহ্ আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রকৃত কৃপণ হলো সে ব্যক্তি, যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হবার পর আমার ওপর দরূদ পাঠ করেনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩৩, সুনান আততিরমিযী ৩৫৪৬, ইরওয়া ৫, আহমাদ ১৭৩৬, হাকিম ১/৫৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঢ) আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বের হয়ে একটি খেজুর বাগানে প্রবেশ করলেন। এখানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর দরবারে সাজদারত হলেন। সিজদা্ এত দীর্ঘ করলেন যে, আমি ভীত হয়ে পড়লাম। আল্লাহ না করুক তাঁকে তো আবার আল্লাহ মৃত্যুমুখে পতিত করেননি? আবদুর রহমান বলেন, তাই আমি তাঁর কাছে এলাম, পরখ করে দেখার জন্য। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথা উঠালেন এবং বললেন, কি হয়েছে? আমি তাঁকে আমার আশংকার কথা বললাম। আবদুর রহমান বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন আমাকে বললেনঃ জিবরীল (আঃ) আমাকে বললেন, আমি কি আপনাকে এই সুসংবাদ দিবো না যা আল্লাহ তা’আলা আপনার ব্যাপারে বলেন? যে ব্যক্তি আপনার ওপর দরূদ পাঠ করবে আমি তার প্রতি রহমত বর্ষণ করব। যে ব্যক্তি আপনার প্রতি সালাম পাঠাবে আমি তার প্রতি শান্তি নাযিল করব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩৭, আহমাদ ১৬৬৫, সহীহ আত তারগীব ১৬৫৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ণ) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’আ আসমান ও জমিনের মধ্যে লটকিয়ে থাকে। এর থেকে কিছুই উপরে উঠে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের নবীর ওপর দরূদ না পাঠাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩৮, সুনান আততিরমিযী ৪৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ছালাতের মধ্যে ইমামের তেলাওয়াতে রাসূল (ছাঃ)-এর নাম আসলে দরূদ পাঠ করার বিধান

ছালাতসহ যেকোন সময়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নাম শুনলে তার প্রতি দরূদ পাঠ করা জায়েয। (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৬০৪১-৪২; হায়তামী, তোহফাতুল মুহতাজ ২/৬৬; আল-মুনতাক্বা শারহুল মুয়াত্তা ১/১৫৪; বিন বায, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব)।

কারণ আল্লাহ তা‘আলা আদেশ দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ প্রেরণ করেন। (অতএব) হে মুমিনগণ! তোমরা তার প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ কর (সুরা আহযাব ৩৩/৫৬)।

এখানে ছালাতের মধ্যে বা ছালাতের বাইরে নির্দিষ্ট করা হয়নি। উল্লেখ্য যে, এই দরূদ সংক্ষেপে ও নীরবে হতে হবে। (আল-মুনতাক্বা শারহুল মুওয়াত্ত্বা ১/১৫৪)।

দো‘আয়ে মাছুরাহ

তৃতীয়তঃ

 ‘মাছূরাহ’ অর্থ ‘হাদীছে বর্ণিত’। সেই হিসাবে হাদীছে বর্ণিত সকল দো‘আই মাছূরাহ। কেবলমাত্র অত্র দো‘আটি নয়। তবে এ দো‘আটিই এদেশে ‘দো‘আয়ে মাছূরাহ’ হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে)।

“আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাছীরাঁও অলা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম”

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপরে অসংখ্য যুলুম করেছি। ঐসব গুনাহ মাফ করার কেউ নেই আপনি ব্যতীত। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ হ’তে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার উপরে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ বাকর আস্ সিদ্দীক্ব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিবেদন জানালাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন একটি দু‘আ বলে দিন যা আমি সালাতে (তাশাহুদের পর) পড়ব। উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ দুআ পড়বে,

‘‘আল্লা-হুমা ইন্নী যলামতু নাফসী যুলমান কাসীরা। ওয়ালা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা। ফাগফিরলী মাগফিরাতাম্ মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহামনী। ইন্নাকা আনতাল গফূরুর রহীম’’

(অর্থঃ “হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আমার নাফসের উপর অনেক যুলম করেছি। তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার কেউ নেই। অতএব আমাকে তোমার পক্ষ থেকে মাফ করে দাও। আমার ওপর রহম কর। তুমিই ক্ষমাকারী ও রহমতকারী”)।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৪২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৩৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৫, সুনান আননাসায়ী ১৩০২, সুনান আততিরমিযী ৩৫৩১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৩৮৩৫, আহমাদ ৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬২৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

সালাতের নিয়ম কানুন-এক হাদিসে

আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত সম্পর্কে আপনাদের চেয়ে বেশি জানি। তারা বললেন, তা আমাদেরকে বলুন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি সালাতের জন্য দাঁড়ালে দু’ হাত উঠাতেন, এমনকি তা দু’ কাঁধ বরাবর উপরে তুলতেন। তারপর তাকবীর বলতেন। এরপর ‘ক্বিরাআত (কিরআত)’ পাঠ করতেন। এরপর রুকূ‘তে যেতেন। দু’ হাতের তালু দু’ হাঁটুর উপর রাখতেন। পিঠ সোজা রাখতেন। অর্থাৎ- মাথা নীচের দিকেও ঝুকাতেন না, আবার উপরের দিকেও উঠাতেন না। এরপর (রুকূ‘ থেকে) মাথা উঠিয়ে বলতেন ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’। তারপর সোজা হয়ে হাত উপরে উঠাতেন, এমনকি তা কাঁধ বরাবর করতেন এবং বলতেন, ‘আল্লা-হু আকবার’। এরপর সিজদা্ করার জন্য জমিনের দিকে ঝুঁকতেন। সাজদার মধ্যে দুই হাতকে বাহু থেকে আলাদা করে রাখতেন। দু’ পায়ের আঙ্গুলগুলোকে ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে দিতেন। তারপর মাথা উঠাতেন। বাম পা বিছিয়ে দিয়ে এর উপর বসতেন। এরপর সোজা হয়ে থাকতেন, যাতে তাঁর সমস্ত হাড় নিজ নিজ জায়গায় এসে যায়।

তারপর তিনি দাঁড়াতেন। দ্বিতীয় রাক্‘আতও এভাবে আদায় করতেন। দু’ রাক্‘আত আদায় করে দাঁড়াবার পর তাকবীর বলতেন ও কাঁধ পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন, যেভাবে প্রথম সালাত  শুরু করার সময় করতেন। এরপর তাঁর বাকী সালাত এভাবে তিনি আদায় করতেন। শেষ রাক্‘আতের শেষ সাজদার পর, যার পরে সালাম ফিরানো হয়, নিজের বাম পা ডান দিকে বের করে দিতেন এবং এর উপর বসতেন। তারপর সালাম ফিরাতেন। তারা বলেন, আপনি সত্য বলেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এভাবেই সালাত আদায় করতেন। (আবূ দাঊদ, দারিমী, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1] আর তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ এ বর্ণনাটিকে এই অর্থে নকল করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

আবূ দাঊদ-এর আর এক বর্ণনায় আবূ হুমায়দ-এর হাদীসে আছেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ‘ করলেন। দু’ হাত দিয়ে দু’ হাঁটু আঁকড়ে মজবুত করে ধরলেন। এ সময় তাঁর দু’ হাত ধনুকের মতো করে দু’ পাঁজর হতে পৃথক রাখলেন। আবূ হুমায়দ (রাঃ)আরও বলেন, এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিজদা্  করলেন। নাক ও কপাল মাটির সাথে ঠেকালেন। দু’ হাতকে পাঁজর হতে পৃথক রাখলেন। দু’ হাত কাঁধ সমান জমিনে রাখলেন। দু’ উরুকে রাখলেন পেট থেকে আলাদা করে। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিজদা্ করলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাম পা বিছিয়ে দিয়ে এর উপর বসলেন। ডান পায়ের সম্মুখ ভাগকে ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে দিলেন। ডান হাতের তালু ডান উরুর উপর এবং বাম হাতের তালু বাম উরুর উপর রাখলেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করলেন। আবূ দাঊদ-এর আর এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুই রাক্‘আতের পর বাম পায়ের পেটের উপর বসতেন। ডান পা রাখতেন খাড়া করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চতুর্থ রাক্‘আতে বাম নিতম্বকে জমিনে ঠেকাতেন আর পা দু’টিকে একদিক দিয়ে বের করে দিতেন (ডান দিকে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮০১, সুনান  আবূ দাঊদ ৭৩০, ৭৩১, ৯৬৩; দারিমী ১৩৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাশাহ্হুদ বৈঠকে অতিরিক্ত পঠিতব্য দোয়াসমূহ

তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যেকার উল্লেখিত দো‘আসমূহের পাঠ শেষে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নিম্নের দো‘আসমূহ পড়তেনঃ

তাশাহহুদের শেষে নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করার জন্য বিশেষভাবে তাকীদ এসেছে -

(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ দু‘আ শিক্ষা দিতেন যেমন তাদেরকে কুরআনের সূরাহ্ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমরা বলো,

‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল কবরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া- ওয়াল মামা-তি’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের শাস্তি হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি হতে। তোমার নিকট আশ্রয় চাই দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪১,সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১২২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯০, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৪২, সুনান আননাসায়ী ২০৬৩, সুনান আততিরমিযী ৩৪৯৪, আহমাদ ২১৬৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩৬৫১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২০৯, ইসলামীক সেন্টার ১২২০-১২২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাতের শেষে শেষ তাশাহুদ পড়ে অবসর হয়ে যেন আল্লাহর কাছে চারটি জিনিস হতে পানাহ চায়। (১) জাহান্নামের ‘আযাব। (২) কবরের ‘আযাব। (৩) জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ্ (ফিতনা)। (৪) মাসীহুদ্ দাজ্জালের অনিষ্ট।

“আল্লহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন আযা-বি জাহান্নাম ওয়ামিন আযা-বিল কবরি ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহইয়া- ওয়াল মামা-তি ওয়ামিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল”

অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি)।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪০,সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮৮, সুনান আবূ দাঊদ ৯৮৩, সুনান আননাসায়ী ১৩১০, ৫৫০৫, ৫৫০৬, ৫৫০৯, ৫৫১১, ৫৫১৩-৫৫১৮, ৫৫২০, সুনান সুনান ইবনু মাজাহ্ ৯০৯, দারেমী ১৩৮৩, ১৩৪৪, সহীহ আল জামি ৬৯৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২০০, ইসলামীক সেন্টার ১২১১, রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস ১৪৩১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৭৭, তিরমিযী ৩৬০৪,  সুনান আবূ দাউদ ৯৮৩, আহমাদ ৭২৩৭, ৭১৯৬, ৭৮১০, ৭৯০৪, ৯০৯৩, ৯১৮৩, ৯৫৪৬, ৯৮২৪, ১০৩৮৯, ২৭৮৯০, ২৭৬৭৪, ২৭২৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(গ) ‘উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (রহ.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) তাঁকে বলেছেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে এ বলে দু‘আ করতেনঃ

“আল্ল-হুম্মা ইন্নি  আউজুবিকা মিন আযা-বিল ক্ববরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জ-লি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়া ফিতনাতিল মামাতি, আল্ল-হুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মাছামি ওয়াল মাগরামি।”

‘‘কবরের আযাব হতে, মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা হতে ইয়া আল্লাহ্! আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ্! গুনাহ্ ও ঋণগ্রস্ততা হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই।’’

তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আপনি কতই না ঋণগ্রস্ততা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বললেনঃ যখন কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৮৩২,৮৩৩, ২৩৯৭, ৬৩৬৮, ৬৩৭৫, ৬৩৭৬, ৬৩৭৭, ৭১২৯, আধুনিক প্রকাশনী ৭৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৯৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৩৯, মু সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮৯, সুনান আবূ দাঊদ ৮৮০, সুনান আননাসায়ী ১৩০৯, আহমাদ ২৪৫৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ)  আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাশাহহুদ ও সালাম ফিরার মধ্যখানে শেষ বেলায় অর্থাৎ সালাম ফিরবার আগে) এই দো‘আ পড়তেন,

“আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখ্খারতু অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু অমা আসরাফতু অমা আন্তা আ‘লামু বিহী মিন্নী, আন্তাল মুক্বাদ্দিমু অ আন্তাল মুআখখিরু লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত্”

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর, যে অপরাধ আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি, যা অতিরিক্ত করেছি এবং যা তুমি আমার চাইতে অধিক জান। তুমি আদি, তুমিই অন্ত। তুমি ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন, ১১২০, ৬৩১৭, ৬৩৮৫, ৭৪৪২, ৭৪৯৯, ৭৩৮৫, সুনান ইবনু মাজাহ, ১৩৫৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪১৮,সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৬৯, সুনান আননাসায়ী ১৬১৯, সুনান আবূ দাঊদ ৭৭১, আহমাদ ২৮১৩, ২৭০৫, ২৭৪৩, ২৮০৮, ৩৩৫৮,৩৪৫৮; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৫০০, দারিমী ১৪৮৬,আধুনিক প্রকাশনী ১০৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১০৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(ঙ) আবূ সালিহ (রহঃ) হতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি সালাতে কি দু‘আ পাঠ কর? লোকটি বলল, আমি তাশাহহুদ (তথা আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা¬হি..) পাঠ করি এবং বলি

‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ‘উযুবিকা মিনান্ নার’

কিন্তু আমি আপনার ও মু‘আযের অস্পষ্ট শব্দগুলো বুঝতে পারি না ( অর্থাৎ আপনি ও মু‘আয কি দু‘আ পড়েন তা বুঝতে সক্ষম হই না)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরাও তার আশে-পাশে ঘুরে থাকি (অর্থাৎ জান্নাত প্রার্থনা করি)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৯২, ৯৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৯১০, ছহীহ ইবনু হিববান ৮৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৭৭, সুনান আননাসায়ী ১৩১০, ৫৫০৫-৬, ৫৫০৮-১১, ৫৫১৩-১৮, ৫৫২০; আহমাদ ৭১৯৬, ৭৮১০, ৭৯০৪, ৯০৯৩, ৯১৮৩, ২৭৫৯৬, ২৭৮৯০, ৯৮২৪, ২৭২৮০; দারিমী ১৩৪৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (চ) আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বসা ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি সালাত আদায় করে এই বলে দু‘আ করলোঃ

“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বি আন্না লাকাল হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা শারীকা লাকাল মান্না-নু, ইয়া বাদী’আস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল-আরদী, ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরাম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু, ইন্নী আস্আলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্না-র”

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই, কারণ, সকল প্রশংসা আপনার, কেবলমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই, সীমাহীন অনুগ্রকারী: হে আসমানসমূহ ও যমীনের অভিনব স্রস্টা! হে মহিমাময় ও মহানুভব! হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী-সর্বসত্তার ধারক! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই”।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এ ব্যক্তি ইসমে আযম দ্বারা দু‘আ করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে তাঁর নিকট চাওয়া হলে তিনি দান করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-১৪৯৫, সুনান আততিরমিযি-৩৫৪৪, সুনান আননাসায়ী ১২৯৯, আহমাদ (৩/১৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(ছ) মুআয (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত ধরে বললেন, “হে মুআয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি।” অতঃপর তিনি বললেন, “হে মুআয! আমি তোমাকে অসিয়ত করছি যে, তুমি প্রত্যেক নামাযের শেষাংশে এ দু‘আটি পড়া অবশ্যই ত্যাগ করবে না,

‘আল্লা-হুম্মা আইন্নী আলা যিক্রিকা ওয়া শুকরিকা অহুসনি ইবা-দাতিক’

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিক্র (স্মরণ), শুক্র (কৃতজ্ঞতা) এবং সুন্দর ইবাদত করতে সাহায্য দান কর।” (রিয়াদুস সালেহীন ১৪৩০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫২২, ৫৪৮২, ৫৪৮৩, আহমাদ- ২১৬২১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (জ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সালাতের মধ্যে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করার পর বলতেন,

‘‘আহসানুল কালা-মি কালামুল্ল-হি ওয়া আহসানুল হাদয়ি হাদয়ু মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’’

(অর্থাৎ-আল্লাহর ‘কালামই’ সর্বোত্তম কালাম। আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হিদায়াতই সর্বোত্তম হিদায়াত।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৫৬, সুনান আননাসায়ী ১৩১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) সায়াদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযসমূহের শেষাংশে এই দো‘আ পড়ে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন,

‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল বুখলি অ আঊযু বিকা মিনাল জুবনি অ আঊযু বিকা মিন আন উরাদ্দা ইলা আরযালিল উমুরি অ আঊযু বিকা মিন ফিতনাতিদ্দুন্য়্যা অ আঊযু বিকা মিন ফিতনাতিল ক্বাবর’

অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট কার্পণ্য ও ভীরুতা থেকে পানাহ চাচ্ছি, স্থবিরতার বয়সে কবলিত হওয়া থেকে আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি আর দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের ফিতনা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। (রিয়াযুস স্বা-লিহীন-১৪/১৪২৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬৫, ৬৩৭০, ৬৩৭৪, ৬৩৯০, ২৮২২, সুনান আততিরমিযী ৩৫৬৭, সুনান আননাসায়ী ৫৪৪৫, ৫৪৪৭, ৫৪৭৮, ৫৪৭৯, ৫৪৮২, ৫৪৮৩, আহমাদ ১৫৮৯, ১৬২৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

তাশাহুদ বৈঠকে যার যা ইচ্ছে দোয়া পাঠ করবে

রুকু ও সিজদায় কুরআনের আয়াত ব্যতীত উল্লেখিত দোয়াসমুহ ছাড়াও সহিহ হাদিস হতে যতো প্রকার দোয়া আছে যদি জানা থাকে ও সালাত আদায়ের সময় থাকে তাহলে পাঠ করতে থাকবেন।  এমনকি ১৫/২০টি দোয়াও যদি মুখস্থ থাকে সবই পড়তে পারেন। 

তাশাহুদ বৈঠকে কুরআন ও সহিহ হাদিস হতে উল্লেখিত নিয়মানুসারে প্রচলিত দোয়ায়ে মাছুরা পাঠ করার পর  যতো প্রকার দোয়া মুখস্থ আছে সবই পাঠ করতে পারবেন।  আপনি এমন একটি সমস্যায় পড়েছেন যার সমাধানের দোয়া আপনার মুখস্থ আছে আর সেটি যদি হাদিসের হয় তাহলে আপনি রুকু, সিজদাহ ও তাশাহুদ বৈঠকে একই দোয়া বারবার পাঠ করতে পারবেন।

রাসুল সা: বলেন, “তাশাহুদের পর যার যা ইচ্ছে দোয়া করবে”। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৮৩৫, ৮৩১)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা এ ছিল যে, যখন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সালাতে থাকতাম, তখন আমরা বলতাম, বান্দার পক্ষ হতে আল্লাহর প্রতি সালাম। সালাম অমুকের প্রতি, সালাম অমুকের প্রতি। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর প্রতি সালাম, তোমরা এরূপ বল না। কারণ আল্লাহ্ নিজেই সালাম। বরং তোমরা বল-

"আত্তাহিয়াতু লিল্লা-হি ওয়াস্ সলাওয়া-তু ওয়াত তাইয়িবা-তু আসসালা-মু 'আলাইকা আইয়ুহান নাবিইয়্যু ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়াবারাকুহু আসসালা-মু 'আলাইনা- ওয়া'আলা- ইবা-দিল্লা-হিস্ স-লিহীন"

”সমস্ত মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাগণের প্রতি।” তোমরা যখন তা বলবে তখন আসমান বা আসমান ও যমীনের মধ্যে আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার নিকট তা পৌঁছে যাবে। (এরপর বলবে) ‘‘আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন মাবূদ নাই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। অতঃপর যে দুআ তার পছন্দ হয় তা সে বেছে নিবে এবং পড়বে।  (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),৮৩৫,৮৩১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৭৮৩, আধুনিক প্রকাশনী ৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

উক্ত হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, রুকু ও সিজায় কুরআনের আয়াত ব্যতীত হাদিসে বর্নিত যেকোনো দোয়া এবং সালাতের শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে যেকোনো ধরনের দোয়া পাঠ করা যায়। চাই তা কোরআনের আয়াত হোক বা হাদিসে বর্ণিত দোয়াই হোক।

অতএব সালাম ফিরানোর পর মুনাজাতে সময় ব্যয় না করে সেই সময় সালাতের মধ্যে ব্যয় করা উচিৎ। মুনাজাতে যা বলবেন তার চেয়ে অধিক বিষয় সালাতের মধ্যে পঠিতব্য দোয়াগুলোতে আছে। তবে হ্যাঁ দুই হাত তুলে  একাকী মুনাজাত করা যাবে। দুই হাত তুলে মুনাজাতে কুরআন ও হাদিসে বর্নিত দোয়াগুলো ছাড়াও বাংলা ভাষায় যেকোনোভাবে আল্লাহর নিকট চাওয়া যাবে।

তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে দোআ বিষয়ে জ্ঞাতব্য

 (ক) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এরপর আল্লাহর বান্দার কাছে যে দু‘আ ভালো লাগে সে দু‘আ পাঠ করে আল্লাহর মহান দরবারে আকুতি মিনতি জানাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৯০৯,সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৩৫, ৮৩১, ৬২৩০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০২, সুনান আবূ দাঊদ ৯৬৮, সুনান আননাসায়ী ১২৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৯৯, আহমাদ ৪১০১, মির‘আত হা/৯১৫, ৩/২৩৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, অতঃপর যে দু‘আ তার পছন্দ হয় তা সে বেছে নিবে এবং পড়বে।

এ কথার ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণের মধ্যে একদল বলেছেন, এ সময় গোনাহ নেই এবং আদবের খেলাফ নয়, দুনিয়া ও আখেরাতের এমন সকল প্রকার দো‘আ করা যাবে। পক্ষান্তরে অন্যদল বলেছেন, কুরআন-হাদীছে বর্ণিত দো‘আসমূহের মাধ্যমেই কেবল প্রার্থনা করতে হবে। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমাদের এই ছালাতে মানুষের সাধারণ কথা-বার্তা বলা চলে না। এটি কেবল তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠ মাত্র’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭৮, সহীহ মুসলিম ৫৩৭, নাসায়ী ১২১৮, দারিমী ১৫৪৩, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ৮৫৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বর্ণিত উভয় হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্য এটাই হতে পারে যে, অন্যের উদ্দেশ্যে নয় এবং আদবের খেলাফ নয়, আল্লাহর নিকট এমন সকল দো‘আ করা যাবে। তবে ছালাতের পুরা অনুষ্ঠানটিই যেহেতু আরবী ভাষায়, সেহেতু অনারবদের জন্য নিজেদের তৈরী করা আরবীতে প্রার্থনা করা নিরাপদ নয়।

(খ) সর্বাবস্থায় সকলের জন্য হাদীছের দো‘আ পাঠ করাই উত্তম। কিন্তু যখন দো‘আ জানা থাকে না, তখন তার জন্য সবচেয়ে উত্তম হবে প্রচলিত দো‘আয়ে মাছূরাহ (আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু...) শেষে নিম্নের দো‘আটির ন্যায় যে কোন একটি সারগর্ভ দো‘আ পাঠ করা, যা দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রয়োজনকে শামিল করে।

“আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই এ দু‘আ করতেন,

‘‘আল্ল-হুম্মা আ-তিনা- ফিদ্দুন্ইয়া- হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা- ‘আযা-বান্না-র’’

 (অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ায় এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করো। আর জাহান্নামের ‘আযাব [শাস্তি] হতে বাঁচাও)”। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৮৭, বাক্বারাহ ২/২০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫২২, ৬৩৮৯,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৩০২, আহমাদ ১৩১৬৩, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ২৮০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৯৩৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪১৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪১৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ সময় দুনিয়াবী চাহিদার বিষয়গুলি নিয়তের মধ্যে শামিল করবে। কেননা আল্লাহ বান্দার অন্তরের খবর রাখেন ও তার হৃদয়ের কান্না শোনেন’। (আলে ইমরান ৩/১১৯, ৩৮; ইবরাহীম ১৪/৩৯; গাফির/মুমিন ৪০/১৯)।

দো‘আর সময় নির্দিষ্টভাবে কোন বিষয়ে নাম না করাই ভাল। কেননা ভবিষ্যতে বান্দার কিসে মঙ্গল আছে, সেটা আল্লাহ ভাল জানেন। (সুরা বাক্বারাহ ২/২১৬)।

প্রশ্ন হতে পারে, সালাতের মধ্যে পঠিতব্য অতিরিক্ত দোয়াগুলো কি জামাতে সালাত আদায়কালে পড়ার সময় পাওয়া যাবে?

ইমাম সাধারনত জামাতে সালাত সংক্ষিপ্ত করে থাকেন। তাই শুধু গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলোই পাঠ করবেন যাতে ইমামের অনুসরণ করে সালাতের প্রতিটি রুকন অতিক্রম করা যায়। তবে নির্জনে একাকী সালাত আদায়কালে সালাতের প্রতিটি রুকন দোয়াগুলো পাঠের মাধ্যমে ধীর স্থিরভাবে আদায় করবেন।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমদের কেউ যখন লোকেদের নিয়ে সালাত আদায় করে, তখন যেনো সে সংক্ষেপ করে। কেননা, তাদের মধ্যে ছোট, বড়, দুর্বল ও কর্মব্যস্তরা রয়েছে। আর যদি কেউ একাকী সালাত আদায় করে, তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৬৭, সুনান আততিরমিযী ২৩৬, সুনান আননাসায়ী ৮২৩, সুনান আবূ দাঊদ ৭৯৪, আহমাদ ২৭৪৪, ৯৯৩৩, ১০১৪৪, মুওয়াত্তা মালেক ৩০৩,বুলগুলমারাম-৪১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

সালাম

(ক) দো‘আয়ে মাছূরাহ ও অন্যান্য দো‘আ শেষে ডানে ও বামে ‘আস্সালা-মু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ’ বলবেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে সালাম ফিরাবার সময় ‘‘আসসালা-মু ‘আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’, বলে ডান দিকে মুখ ফিরাতেন, এমনকি তাঁর চেহারার ডান পাশের উজ্জ্বলতা নজরে পড়ত। আবার তিনি বাম দিকেও ‘‘আসসালা-মু ‘আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’, বলে মুখ ফিরাতেন, এমনকি তাঁর চেহারার বাম পাশের উজ্জ্বলতা দৃষ্টিতে পড়ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৫০, সুনান আবূ দাঊদ ৬৬৯, সুনান আততিরমিযী, সুনান আননাসায়ী ১৩২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) কেবল ডানে সালামের শেষ দিকে ‘ওয়া বারাকা-তুহূ’ বৃদ্ধি করা যাবে।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আলকামাহ ইবনু ওয়াইল (রহঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করেছি। তিনি ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় বলতেন ‘‘আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’’ এবং বাঁ দিকে সালাম ফিরানোর সময় বলতেন ‘‘আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’’। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-৯৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  দু’দিকে নয়। (তামামুল মিন্নাহ ১৭১ পৃঃ)।

দুদিকে সালাম ফিরানো

(ঘ) যুহারর ইবনু হারব (রহঃ)....আবূ মা’মার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কাতে একজন আমীর ছিলেন। তিনি সালাতে দু’বার সালাম ফিরাতেন (একবার ডানে এবং একবার বামে)। এ কথা শুনে ’আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ বললেনঃ সে কোথা থেকে এ সুন্নাত শিখেছে? হাকাম তার বর্ণিত হাদীসে বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮১ সুনান আদ-দারেমী ১৩৮৩, মুসনাদুল মাউসিলী ৫২৪৪। ‘أنى علقها’ অর্থ: সে এ সুন্নাতটি কোথা থেকে হাসিল ও সংরক্ষণ করেছে?! দেখুন, মুসনাদুল মাউসিলী হাদীস  ৫০৫১, ৫১০২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১১৮৯ ইসলামীক সেন্টার ১২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাম ফিরানোর সময় মাথা কতো দূর পর্যন্ত ঘুরাবে?

(ঙ) আমর ইবনু সা’দ হতে বর্ণিত, তার পিতা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডানদিকে এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যে, (পাশ থেকে) তাঁর গালের শুভ্রতা দেখা যেতো। এরপর বাম দিকে এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যে, তাঁর গালের শুভ্রতা দেখা যেতো।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আমির ইবনু সা‘দ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি দেখেছি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান দিকে ও বাম দিকে এভাবে সালাম ফিরাতেন যে, আমি তাঁর গালের শুভ্রতা দেখতে পেয়েছি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৪৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮২, সুনান আননাসায়ী ১৩১৭, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৯১৫, ইরওয়া ৩৬৮, সুনান আদ-দারেমী, ১৩৮২, মুসনাদুল মাউসিলী  ৮০১, সহীহ ইবনু হিব্বান  ১৯৯২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১১৯১, ইসলামীক সেন্টার ১২০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আরো দেখুন,

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৫০, সুনান আবূ দাঊদ ৬৬৯, সুনান আততিরমিযী, সুনান আননাসায়ী ১৩২৫।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) সালাম ফিরানোর সময় মুছল্লী স্বাভাবিকভাবে ডানে বা বামে দৃষ্টিপাত করে সালাম ফিরাবেন। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাত আদায়কারী তার ডানে এবং বামে থাকা ভাইদেরকে সালাম প্রদান করবেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)...জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করতাম তখন, 'আসসালা-মু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ' 'আসসালামু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ' বলে সালাত শেষ করতাম। তিনি (জাবির) হাত দিয়ে উভয় দিকে ইশারা করে দেখালেন। (অর্থা-সালামের সাথে সাথে হাতে ইশারাও করা হত)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমরা (সালামের সময়) দুষ্ট ঘোড়ার লেজ ঘুরানোর মতো দু'হাত দিয়ে ইশারা করো কেন? তোমরা উরুর উপর হাত রেখে ডানে-বায়ে মুখ ফিরিয়ে তোমাদের ভাইদের সালাম দিবে। এরূপ করাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৮৫৬-(১২০/৪৩১), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮৫২, ইসলামিক সেন্টার ৮৬৫, ছহীহুল জামে‘ ৪০১৯ )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(বিঃদ্রঃ আমাদের সমাজে এ কথা প্রচলিত রয়েছে, রফউল ইয়াদাঈন করাটা ঘোড়ার লেজ নড়াবার মতো, যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন। কিন্তু উপরোক্ত হাদীস প্রমাণ করে যে, ঘোড়ার লেজের উক্তিটি সালাম ফিরানোর সাথে সম্পৃক্ত, নামাযের ভিতরে রফউল ইয়াদাঈনের সাথে নয়)।

(ছ) অতএব সালাম ফিরানোর সময় ডানে এবং বামে থাকা ভাইদেরকে সালাম প্রদানের নিয়ত করবেন। আর যদি একাকী ছালাত আদায় করেন, তাহলে ডানে ও বামে থাকা ফেরেশতাদের সালাম প্রদানের নিয়ত করবেন। (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৪৫৬, ৪৬২; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ১/৩২৬, ৩২৭; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/২০৮)।

(জ)  অতঃপর ডানে বামে সালাম ফিরানোর পর একবার সরবে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলবেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত শেষ হওয়াটা বুঝতাম ‘আল্ল-হু আকবার’ বলার মাধ্যমে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৫৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৪২, ৮৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ৭৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) এরপর তিনবার ‘আসতাগ্ফিরুল্লা-হ’ ও একবার ‘আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু, তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালা-লে ওয়াল ইকরা-ম’ বলবেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

সাওবান (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার ‘‘আস্তাগফিরুল্ল-হ’’ বলতেন, তারপর এ দু‘আ পড়তেনঃ ‘‘আল্ল-হুম্মা আন্‌তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬১, ৯৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯১, ইসলামী ফাউন্ডেশন, ১২১০, ইসলামীক সেন্টার ১২২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ফরয  সালাতে সালাম ফিরানোর পর পঠিতব্য অতিরিক্ত দুয়া, জিকির বা আমলসমূহ

ফরয সালাতের সালাম শেষে রাসূলুল্লাহ (স.) অনেক দু'আ ও যিকর করেছেন। ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আসমূহ ফরয ছালাতের পর পাঠ করাই সুন্নাত। কারণ এ ব্যাপারে যে সকল হাদীছ এসেছে তাতে ফরয ছালাতের পরের কথা বলা হয়েছে।

হাদিসঃ

হাসান ইবনু ঈসা (রহঃ)....ক’ব ইবনু উজরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক ফারয (ফরয) সালাতের পরে কিছু দু’আ আছে, যে ব্যক্তি ঐগুলো পড়ে বা কাজে লাগায় কখনো নিরাশ বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯৬,মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৫৯-৬১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২২৫, ইসলামীক সেন্টার ১২৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে দো‘আ হিসাবে এগুলো পরে পাঠ করলেও তার ছওয়াব পাওয়া যাবে ইংশাআল্লাহ। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন তোমরা ছালাত শেষ করবে, তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া সর্বাবস্থায় আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ কর। (সুরা নিসা ৪/১০৩)।

ফরয  ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আসমূহ সুন্নাত ছালাতের পর বা যেকোনো সময় পাঠ করা যাবে কি?

সুন্নাত ছালাতের পর বা যেকোন সময় দোয়াগুলো পাঠ করা যাবে। হাদীছে সকল ছালাতের জন্য আমভাবে প্রথমে আল্লাহু আকবর একবার সরবে, অতঃপর তিনবার ‘আসতাগফিরুল্লা-হ’ এবং একবার ‘আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু তাবা-রাকতা ইয়া-যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম’ পাঠের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬১, ৯৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯১, ইসলামী ফাউন্ডেশন, ১২১০, ইসলামীক সেন্টার ১২২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুতরাং এটি সকল ছালাতের জন্য প্রযোজ্য। আর ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর, আয়াতুল কুরসী প্রভৃতি দো‘আ ফরয ছালাতের পরে পাঠের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। অতএব সেগুলো সেখানে পাঠ করাই উত্তম হবে। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০২-এর আলোচনা)।

তবে সাধারণভাবে এগুলো যেকোনো ছালাতের পর পড়া যায়। (ফাৎহুল বারী ১১/১৩৪; তুহফাতুল আহওয়াযী ২/১৬৯)।

ফরজ  সালাতে সালাম ফিরানোর পর রাসুল সা. যেসব দোয়া, আমল বা যিকির করতেন  সেইসব দোয়া জানতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

 (PMMRC)

নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানতে চাইলে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(১) কুরআন ও সহিহ হাদিস হতে অধিক ফজিলতপূর্ণযিকির ও দোয়াসমূহ।

(২) দুই হাত তুলে দোয়া বা মুনাজাত করার সহিহনিয়ম।

(৩) সকাল ও বিকেলে পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণদোয়াসমূহ।

বিতর সালাতে সালাম ফিরানোর পর দোয়া

মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আ'লা (রহ.).....‘আবদুর রহমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (সা.) বিতরের সালাতে “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ'লা-”, “কুল ইয়া- আইয়ুহাল কা-ফিরূন” ও “কুল হুওয়ালু-হু আহাদ” পাঠ করতেন। অতঃপর যখন সালাম ফিরাতেন তখন “সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দুস” পড়তেন এবং তৃতীয়বারে “সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দুস” উচ্চৈঃস্বরে বলতেন। (সুনান আন-নাসায়ী (তাহকীককৃত) ১৭৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৩৪ম নাসায়ী'র “আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাতা” ৭৩৮, মুসনাদে আহমাদ ১৫৩৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

সালাতের মধ্যে পঠিতব্য যে অতিরিক্ত দোয়াগুলো উল্লেখ করা হলো সেগুলো সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। উক্ত দোয়াগুলোর মধ্যে কোনোটি গুনাহ মাফের, কোনোটি বিপদ আপদ থেকে মুক্তি পাওয়া, কোনোটি রিযিক বৃদ্ধি, কোনোটি জান্নাত লাভ আবার কোনোটি দোযখ থেকে মুক্তি লাভসহ আল্লাহ তায়ালার প্রশংসামূলক দোয়া। সুতরাং সলাত আদায় করার সময় তাড়াহুড়া না করে সময় নিয়ে সলাতের বিভিন্ন স্থানে দোয়াগুলো পাঠ করবো। সালাতের মাধ্যমেই যেহেতু আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় সেহেতু আমরা সালাত আদায়কালে আল্লাহর নিকট আমাদের সব সমস্যাগুলো কুরআন- হাদিসে উল্লেখিত দোয়ার মাধ্যমে পেশ করবো।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

.................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত ভূমিকা: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ...