Search This Blog

Friday, September 27, 2019

গুণাহ মাফ ও জান্নাতে যাওয়ার অধিক ফজিলতপূর্ণ আমলসমূহ-২

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

গুণাহ মাফ ও জান্নাতে যাওয়ার অধিক ফজিলতপূর্ণ  আমলসমূহ-২

 


ভূমিকাঃ বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলূক্বাত হিসাবে তার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, “আমি জিন ও ইনসান সৃষ্টি করেছি কেবল এজন্য যে, তারা আমার ইবাদত করবে”। (সুরা যারিয়াত ৫১/৫৬)।

নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। অধিক ফযিলতের আশায় অনেক মানুষ জাল, যঈফ ও ভুয়া আমল করে থাকে। শিরক ও বিদ‘আতপূর্ণ আমল অধিক নেকীর আশায় করা হলেও এ আমল তার ইহকালে কল্যাণ ও পরকালে মুক্তির মাধ্যম হিসাবে গৃহীত হবে না। কেননা কুরআন ও সহিহ হাদিস পরীপন্থী কোনো আমল আল্লাহ তা‘আলা গ্রহণ করবেন না। বরং তা পরিত্যাজ্য। মহান আল্লাহ বলেন, হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না  কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ? এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো আর আমার আয়াত  ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (সুরা কাহাফঃ ১০৩-১০৫)।

নেক আমল ও দু’আ ব্যতীত ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না

 নেক আমল ও দো‘আর মাধ্যমে মানুষের তাকদীরের পরিবর্তন হয়। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা করেন তা বহাল রাখেন”। (সূরা রা’দ ৩৯)।

সালমান আল ফারিসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু‘আ ছাড়া অন্য কিছুই তাকদীদের লিখনকে পরিবর্তন করতে পারে না এবং নেক ‘আমল ছাড়া অন্য কিছু বয়স বাড়াতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৩৯,  সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২২, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬১২৮, সহীহাহ্ ১৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৯, সহীহ আল জামি ৭৬৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ভাগ্য পরিবর্তনশীল এটাই সত্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও নিজের প্রচেষ্টায় নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করা সম্ভব। ভাগ্য যদি পরিবর্তনশীলই না হবে তাহলে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ তওবা ও ইস্তেগফারমূলক কিংবা আরো অসংখ্য দোয়া কেনো নাযিল করে সেগুলো সালাতের মধ্যে ও সালাতের বাহিরে আমল করতে বলা হলো। কদর রাতে আল্লাহ তায়ালা সুরা আল কদর নাযিল করা হয়েছে। সে রাতে প্রত্যেক বরকত পূর্ণ বিষয় নিয়ে ফেরেশতারা ও রূহ অবতীর্ণ হয়, স্বীয় রবের নির্দেশে। (সুরা আল কদর ৯৭, আয়াত ৪)।

এই রাতে সকল মুসলমান নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে ইবাদত বন্দেগী, জিকির ও বিভিন্ন আমল বা দোয়া পাঠ করে থাকে। অতএব ভাগ্য পরিবর্তনশীল। নিজের কৃতকর্ম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে বিভিন্ন দোয়া পাঠ বা আমলের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়।

আপনি যে আমল করছেন, সব সময় জিকির করছেন বা দোয়া পাঠ করছেন এটাও আপনার প্রচেষ্টা।

নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দোয়াই হলো ইবাদত। অতঃপর তিলাওয়াত করেন (অনুবাদঃ) ‘‘এবং তোমার প্রভু বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো’’ (সূরাহ আল-মু’মিন: ৬০)। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৬৯, ৩২৪৭, ৩৩৭২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৭৯, ১৭৮৮৮, ১৭৯১৯, ১৭৯৬৪, আল-আহকাম ১৯৪, রাওদুন নাদীর ৮৮৮, মিশকাত ২৩৩০, সহীহ আবু দাউদ ১৩২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাই আসুন, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে  কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে জাল, জঈফ ও বিদআতমুক্ত গুণাহ মাফ ও জান্নাতে যাওয়ার অধিক ফজিলতপূর্ণ  আমলসমূহ ধারাবাহিকভাবে জেনে নেই ও নিয়মিত আমল করতে থাকিঃ

(১) ওযূর ফযিলতঃ

ওযূ গুনাহ মাফের একটি মাধ্যম। হাদিসে এসেছে,

উসমান (রাঃ) হতে বণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করে এবং উত্তমভাবে উযূ করে, তার শরীর হতে তার সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নিচ হতেও তা বের হয়ে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র এসেছে,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম অথবা মু’মিন বান্দা উযূ করে এবং তার চেহারা ধুয়ে নেয়, তখন তার চেহারা হতে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার চোখের দ্বারা কৃত সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যা সে চোখ দিয়ে দেখেছে। যখন সে তার দুই হাত ধোয় তখন তার দুই হাত দিয়ে করা গুনাহ পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যা তার দু’ হাত দিয়ে ধরার কারণে সংঘটিত হয়েছে। অনুরূপভাবে সে যখন তার দুই পা ধোয়, তার পা দ্বারা কৃত গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যে পাপের জন্যে তার দু’ পা হাঁটছে। ফলে সে উযূর জায়গা হতে উঠার সময়) সকল গুনাহ হতে পাক-পবিত্র হয়ে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত ২৮৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ক্বিয়ামতের মাঠে মহানবী (ছাঃ) উম্মতে মুহাম্মাদীর ওযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উজ্জ্বলতা দেখে তাদেরকে চিনতে পারবে এবং হাউযে কাউছারে পানি পান করানোর জন্য আগেই পৌঁছে যাবে।

হাদিসে এসেছে,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে (অর্থাৎ- মদীনার বাকী’তে) উপস্থিত হলেন এবং সেখানে (মৃতদের উদ্দেশে) বললেনঃ ’’আস্সালা-মু ’আলায়কুম, (তোমাদের প্রতি আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক) হে মু’মিন অধিবাসীগণ! আমরা ইনশা-আল্লাহ তোমাদের সাথে এসে মিলিত হচ্ছি। আমরা আশা করি, আমরা যেন আমাদের ভাইদের দেখতে পাই’’। সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা আমার বন্ধু। আমার ভাই তারা যারা এখনো দুনিয়ায় আসেনি (পরে আসবে)। সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার উম্মাতদের যারা এখনো আসেনি, তাদের আপনি কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন কিভাবে চিনবেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বল দেখি, যদি কোন ব্যক্তির একদল নিছক কালো রঙের ঘোড়ার মধ্যে ধবধবে সাদা কপাল ও সাদা হাত-পা সম্পন্ন ঘোড়া থাকে, সে কি তার ঘোড়াগুলো চিনতে পারবে না? তারা বললেন, হাঁ, নিশ্চয়ই চিনতে পারবে, হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, আমার উম্মাত উযূর কারণে (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) সাদা ধবধবে কপাল ও সাদা হাত-পা নিয়ে উপস্থিত হবে এবং আমি হাওযে কাওসারের নিকট তাদের অগ্রগামী হিসেবে উপস্থিত থাকবো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩০৬; সুনান আন নাসাঈ ১৫০; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কষ্ট সত্বেও যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে ওযূ করে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং পদ মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। এ মর্মে হাদিসে এসেছে,

ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতাইবাহ ও ইবনু হুজর (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের এমন কাজ জানাবো না, যা করলে আল্লাহ (বান্দার) পাপরাশি দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন। তিনি বললেন অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদে আসার জন্যে বেশি পদচারণা করা এবং এক সালাতের পর আর এক সালাতের জন্যে প্রতীক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হল সীমান্ত প্রহরা। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫১, সুনান আততিরমিযী ৫, ৫১; মুয়াত্তা মালিক ৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২)  ওযূর দো‘আর ফযিলতঃ

 যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে ওযূ করবে এবং শেষে ওযূর দো‘আ পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের সব কয়টি দরজা খুলে দেওয়া হবে। সে যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছামত প্রবেশ করতে পারবে।

উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উযূ করবে এবং উত্তমভাবে অথবা পরিপূর্ণভাবে উযূ  করবে, এরপর বলবেঃ

’’আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়া রসূলুহ’’,

অর্থাৎ- ’আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল’। আর এক বর্ণনায় আছেঃ

“আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়া রসূলুহ’’-

(অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল।) তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে। এসব দরজার যেটি দিয়ে খুশী সে সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৯,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৪, তিরমিযী ৫৫, সহীহুল জামি ৬১৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) আযান দাতার ফযিলতঃ

ছালাতের জন্য আযান দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। রাসূল (ছাঃ) মুওয়ায্যিনের সম্মান ও মর্যাদার ঘোষণা দিয়েছেন,  হযরত মু‘আবিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, মুওয়ায্যিনগণ ক্বিয়ামতের দিন সবচেয়ে উঁচু গর্দান সম্পন্ন লোক হবে।

মুওয়ায্যিনের আযান যারা শুনতে পাবে তারা সবাই ক্বিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। এমনকি জ্বিন, পশু-পাখীও সাক্ষ্য দেবে। এ মর্মে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ছাঃ) বলেছেন,  ‘মুওয়ায্যিনের আযানের ধ্বনি  জিন ও ইনসান সহ যত প্রাণী শুনবে, ক্বিয়ামতের দিন সকলে তার জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবে’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫৪৮,৬০৯, সুনান আননাসায়ী ৬৪৪, আহমাদ ১১৩০৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৬১, সহীহ আল জামি ২৪৫০, আধুনিক প্রকাশনী ৭০২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭০৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আযানের ধ্বনি যতদূর যায় ততদূর শয়তান থাকতে পারে না। বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালিয়ে যায়।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের জন্য আযান দিতে থাকলে শায়ত্বন (শয়তান) পিঠ ফিরিয়ে পালায় ও বায়ু ছাড়তে থাকে, যাতে আযানের শব্দ তার কানে না পৌঁছে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে ফিরে আসে। আবার যখন ইক্বামাত শুরু হয় পিঠ ফিরিয়ে পালাতে থাকে। ইক্বামাত শেষ হলে আবার ফিরে আসে। সালাতে মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি করতে থাকে। সে বলে, অমুক বিষয় স্মরণ কর। অমুক বিষয় স্মরণ কর। যেসব বিষয় তার মনে ছিল না সব তখন তার মনে পড়ে যায়। পরিশেষে মানুষ অবচেতন হয় আর বলতে পারে না কত রাক্’আত সালাত আদায় করা হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৮, ১২২২, ১২৩১, ১২১৩২, ৩২৮৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৯, সুনান আবূ দাঊদ ৫১৬, সুনান নাসায়ী ৫৭০, আহমাদ ৯৯৩১, সহীহ আল জামি‘ ৮১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

পর্বত চূড়ায় যে ব্যক্তি একাকী হলেও আযান দিয়ে ছালাত আদায় করে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়ে জন্নাতে প্রবেশ করাবেন। হাদিসে  এসেছে,

উক্ববাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার রব সেই মেষপালক রাখালের উপর খুশী হন, যে একা পর্বত চূড়ায় দাঁড়িয়ে সালাতের জন্য আযান দেয় ও সালাত  আদায় করে। আল্লাহ তা’আলা সে সময় তার মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে) বলেন, তোমরা আমার এই বান্দার দিকে তাকাও। সে আমাকে ভয় করে (এই পর্বত চূড়ায়) আযান দেয় ও সালাত আদায় করে। তোমরা সাক্ষী থাক আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিলাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬৫, সুনান আবূ দাঊদ ১২০৩, সুনান আননাসায়ী ৬৬৬, ‘ইরওয়া ২১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে ব্যক্তি বার বছর আযান দিবে তাঁর জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে। আযান ও এক্বামতের জন্য যথাক্রমে ষাট ও ত্রিশ নেকী দেওয়া হবে। এ মর্মে হাদিসে  এসেছে,

আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বারো বছর পর্যন্ত আযান দিবে তাঁর জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় এবং তার আযানের বিনিময়ে প্রতিদিন তার ’আমলনামায় ষাটটি নেকী ও প্রত্যেক ইক্বামাতের (পরিবর্তে ত্রিশ নেকী লেখা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৭৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৭২৮, সহীহ আত্ তারগীব ২৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) আযানের জবাব দাতার ফযিলতঃ

জান্নাতে যাবার একটি মাধ্যম আযানের জবাব দেওয়া। অথচ অনেকেই এ ব্যাপারে উদাসীন। যে ব্যক্তি অন্তর থেকে আযানের জবাব দিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ)....উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুওয়াযযিন যখন “আল্লাহু আকবার, আল্লা-হু আকবার" বলে তখন তোমাদের কোন ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে তার জবাবে বলেঃ "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার"। যখন মুওয়াযযিন বলে "আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ" এর জবাবে সেও বলেঃ "আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ"। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্ল-হ" এর জবাবে সে বলেঃ "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্ল-হ”। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ "হাইয়্যা আলাস সলা-হ" এর জবাবে সে বলেঃ “লা-হাওলা ওয়ালা- কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ"। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ "হাইয়্যা ’আলাল ফালাহ" এর জবাবে সে বলেঃ “লা- হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ”। অতঃপর মুওয়াৰ্যযিন বলেঃ "আল্লা-হু আকবার, আল্লাহু আকবার" এর জবাবে সে বলেঃ "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার"। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ" এর জবাবে সে বলেঃ “লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ"। আযানের এ জবাব দেয়ার কারণে সে বেহেশতে যাবে।  (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৮, সুনান আবূ দাঊদ ৫২৭, সহীহ আল জামি ৭১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৩৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুতরাং মুওয়াযযিন আযানের যে বাক্য পাঠ করবে জবাবেও তাই বলতে হবে। শুধুমাত্র ‘হাইয়া আলাছ ছালা-হ’  ‘হাইয়া আলাল ফালা-হ’। ব্যতীত সেখানে “লা- হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ” বলবে। উল্লেখ্য যে,

ক. ফজরের আযানে ‘আছ ছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম- এর জওয়াবে ‘ছাদাক্বাতা ওয়া বারারতা’ বলার কোন ভিত্তি নেই।

খ. অমনিভাবে এক্বামত-এর সময় ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালা-হ-এর জওয়াবে ‘আক্বা-মাহাল্লা-হু, ওয়া আদা -মাহা’ বলা সম্পর্কে আবুদাঊদে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ।

গ. ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ এর জওয়াবে ছাল্লা-হু আলাইহে ওয়া সাল্লাম’ বলার ও কোন দলীল নেই’।

(৫)  আযানের দো‘আর  ফযিলতঃ

আযানের জওয়াবে দান শেষে প্রথমে দরূদ পড়বে কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন ‘তোমরা মুওয়ায্যিনের আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোই বলবে। অতঃপর আযান শেষে আমার উপর দরূদ পাঠ করবে’।

আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুয়াযযিনের আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ’ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ’ওয়াসীলা’ হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ’ওয়াসীলা’র দু’আ করবে, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৪, সুনান আবূ দাঊদ ৫২৩, সুনান আননাসায়ী ৬৭৮, সুনান আততিরমিযী ৩৬১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯০, ইরওয়া ২৪২, সহীহ আল জামি ৬১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতঃপর আযানের দো‘আ পড়বে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে এই দো‘আ পাঠ  করবে, তাঁর জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে।

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে (ও এর উত্তর দেয়ার ও দরূদ পড়ার পর) এ দু’আ পড়ে, তার জন্য সুপারিশ করা আমার অবশ্য করণীয় হয়ে পড়ে। দু’আ হলোঃ

“আল্লা-হুম্মা রব্বা হা-যিহিদ্ দা’ওয়াতিত্ তা-ম্মাতি ওয়াস্ সলা-তিল ক্ব-য়িমাতি আ-তি মুহাম্মাদা-নিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ্, ওয়াব্’আসহু মাক্বা-মাম্ মাহমূদা-নিল্লাযী ওয়া’আদতাহ্’’

অর্থাৎ- হে আল্লাহ! এ পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের প্রভু! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দান কর ওয়াসীলা; সুমহান মর্যাদা ও প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও তাঁকে (মাক্বামে মাহমূদে), যার ওয়া’দা তুমি তাঁকে দিয়েছ। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য আমার শাফা’আত আবশ্যকীয়ভাবে হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৬১৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬১৪, ৪৭১৯, সুনান  আননাসায়ী ৬৮০, সুনান আবূ দাঊদ ৫২৯, ইরওয়া ২৪৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৪২৩, সুনান আততিরমিযী ২১১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৭২২, আহমাদ ১৪৮১৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আযানের অন্য দো‘আও রয়েছে। যে দো‘আ পাঠ করলে বান্দার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। এ মর্মে হাদীছে এসেছে,

সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনে এই দু’আ পড়বে,

“আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়ারসূলুহূ, রযীতু বিল্লা-হি রববাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন রসূলান ওয়াবিল ইসলা-মি দীনা’’

(অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল, আমি আল্লাহকে রব, দীন হিসেবে ইসলাম, রসূল হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানি ও মানি) এর উপর আমি সন্তুষ্ট, তাহলে তার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৬, সুনান আবূ দাঊদ ৫২৫, সুনান আননাসায়ী ৬৭৯, সুনান আততিরমিযী ২১০, সুনান ইবনু মাজাহ ৭২১, আহমাদ ১৫৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৪২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৬) তাহিয়াতুল ওযূর  ফযিলতঃ

ওযু করার পর যে দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করা হয় তার নাম তাহিয়াতুল ওযূ। তাহিয়াতুল ওযূর দু’রাকা‘আত ছালাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হযরত বেলাল (রাঃ) এটি নিয়মিত আদায় করার কারণে জান্নাতে রাসূল (ছাঃ)-এর আগে আগে হেঁটে ছিলেন। এমর্মে হাদিসে এসেছে,

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা ফজরের সালাতের সময় বিলাল (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বিলাল! ইসলাম গ্রহণের পর সর্বাধিক সন্তুষ্টিব্যঞ্জক যে ‘আমল তুমি করেছ, তার কথা আমার নিকট ব্যক্ত কর। কেননা, জান্নাতে (মি’রাজের রাতে) আমি আমার সামনে তোমার পাদুকার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। বিলাল (রাযি.) বললেন, আমার নিকট এর চেয়ে (অধিক) সন্তুষ্টিব্যঞ্জক হয় এমন কিছুতো আমি করিনি। দিন রাতের যে কোন প্রহরে আমি তাহারাত ও পবিত্রতা অর্জন করেছি, তখনই সে তাহারাত দ্বারা (তাহিয়াতুল ওযূর) সালাত আদায় করেছি, যে পরিমাণ সালাত আদায় করা আমার তাক্দীরে লেখা ছিল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৪৯,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩২২,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬২১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৫৮, আহমাদ ৯৬৭৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৮৩, ইরওয়া ৪৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ২২৬, আহমাদ ৮৪০৩, ইবনু খুযায়মাহ্ ১২০৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য বর্ণনায় এ ছালাতের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মাইমূন (রহঃ)....উকবাহ ইবনু আমির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ওপর উট চড়ানোর দায়িত্ব ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকেদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তার এ কথা শুনতে পেলাম, "যে মুসলিম সুন্দরভাবে ওযু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ রেখে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। উকবাহ বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলামঃ বাহ! হাদীসটি কত চমৎকার! তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন, আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সে দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি ’উমার। তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে দেখেছি, এ মাত্র এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগে বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করে এ দু’আ পড়বে- "আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয় আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু"। তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) তাহিয়াতুল মাসজিদঃ

মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করা সুন্নাত। যাকে তাহিয়াতুল মাসজিদ বলে।  হাদিসে এসেছে,

আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার আগে দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করে নেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৪, ১১৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১৪, সুনান আননাসায়ী ৭৩০, সুনান আততিরমিযী ৩১৬, ইবনু মাজাহ্ ১০১৩, সুনান আবূ দাঊদ ৪৬৭, আহমাদ ২২৫২৩, ইরওয়া ৪৬৭, আহমাদ ১৫৭৮৯, ২২০১৭, ২২০২৩, ২২০৭২, ২২০৮৮, ২২১৪৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৮৮, দারিমী ১৩৯৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এমনকি জুম‘আর দিনে খুৎবা অবস্থায় যদি কেউ মসজিদে প্রবেশ করতো তাকেও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করে বসার নির্দেশ দিতেন। যেমন হাদিসে এসেছে,

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (কোন এক) জুমু‘আহর দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে খুৎবাহ দিচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক! তুমি কি সালাত আদায় করেছ? সে বলল, না; তিনি বললেন, উঠ, সালাত আদায় করে নাও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩০, ৯৩১, ১১৬৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৫, আহমাদ ১৪৯১২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৮৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮)  সুন্নাত ও নফল ছালাতের  ফযিলতঃ

পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাতের আগে পিছের সুন্নাত ছালাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা নিয়মিত আদায়কারী জন্নাতে প্রবেশ করবে।  হাদিসে এসেছে,

উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক দিন রাতে বারো রাক্’আত সালাত আদায় করবে তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (সে বারো রাক্’আত সালাত হলো) চার রাক্’আত যুহরের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পূর্বে আর দু’ রাক্’আত যুহরের (ফারযের) পরে, দু’ রাক্’আত মাগরিবের (ফরয সালাতের) পরে। দু’ রাক্’আত ’ইশার ফরয সালাতের পরে। আর দু’ রাক্’আত ফাজ্রের (ফজরের) (ফরয সালাতের) পূর্বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৫৯, সুনান আত্ তিরমিযী ৪১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৮, সুনান আননাসায়ী ১৮০৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১৪১, সহীহ আল জামি ৬৩৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ক্বিয়ামতের দিন ফরয ছালাতের ঘাটতি হলে সুন্নাত ও নফল ছালাতের মাধ্যমে তা পূরণ করা হবে। যেমন হাদিসে এসেছে,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন সব জিনিসের পূর্বে লোকের যে ’আমলের হিসাব হবে, তা হলো সালাত। যদি তার সালাত সঠিক হয় তাহলে সে সফলকাম হবে ও নাজাত পাবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে সে বিফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরয সালাতে কিছু ভুল হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তা’আলা মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে) বলবেন, দেখো! আমার বান্দার নিকট সুন্নাত ও নফল সালাত আছে কি-না? তাহলে সেখান থেকে এনে বান্দার ফরয সালাতের ত্রুটি পূরণ করে দেয়া হবে। এরপর এ রকম বান্দার অন্যান্য হিসাব নেয়া হবে। অন্য এক বিবরণ এসেছে, তারপর এ রকম যাকাতের হিসাব নেয়া হবে। অতঃপর অবশিষ্ট সব ’আমলের হিসাব একের পর এক এ রকম নেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৩০, সুনান আত্ তিরমিযী ৪১৩, সুনান আননাসায়ী ৪৬৫, সহীহ আত্ তারগীব ৫৪০, সহীহ আল জামি‘ ২০২০; আবূ দাঊদ ৮৬৪, ৮৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ক) ফজরের সুন্নাতে ছালাতঃ

ফজরের দু’রাকা‘আত সুন্নাত ছালাত খুব ফযিলতপূর্ণ। ফরযের পূর্বে এ ছালাত আদায় করতে হয়। সময় না পেলে ফরযের পরেও তা আদায় করা যাবে। এ ছালাতের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ ফাজ্রের (ফজরের) দু’ রাক্’আত সুন্নাত সালাত  দুনিয়া ও দুনিয়ার সকল জিনিসের চেয়ে বেশী উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫৫৮, ইসলামীক সেন্টার ১৫৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র এসেছে, আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নফল সালাতের মাঝে ফাজ্রের (ফজরের) দু’ রাক্’আত সুন্নাত সালাতের প্রতি যেমন কঠোর যত্ন নিতেন আর কোন সালাতের উপর এত কঠোর ছিলেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) যোহরের সুন্নাত ছালাতঃ

যোহরের ফরযের পূর্বে দু’রাকা‘আত বা চার রাকা‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করা যায়। ফরযের পরে দু’রাকা‘আত বা চার রাকা‘আত ছালাত আদায় করা যায়।

যোহরের সুন্নাত ছালাতের ফযীলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হাবীবাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে লোক যুহরের (ফরয সালাতের) পূর্বে চার রাক্’আত, এরপর চার রাক্’আত সালাত আদায় করে। আল্লাহ তার ওপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬৭, সুনান আবূ দাঊদ ১২৬৯, সুনান আত্ তিরমিযী ৪২৮, সুনান আননাসায়ী ১৮১৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১৬০, সহীহ আল জামি ৬১৯৫, আহমাদ ২৬২৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনু সায়িব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য হেলে যাওয়ার পর যুহরের সালাতের পূর্বে চার রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। তিনি বলতেন, এটা এমন এক সময় যখন (নেক ’আমল উপরের দিকে যাওয়ার জন্যে) আকাশের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। তাই এ মুহূর্তে আমার নেক ’আমলগুলো উপরের দিকে চলে যাক এটা আমি চাই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬৯, সুনান আত্ তিরমিযী ৪৭৮, সহীহ আত্ তারগীব ৫৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আছরের সুন্নাত ছালাতঃ

আছরের পূর্বে চার রাকা‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করা যায়। এমর্মে হাদিসে এসেছে, ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঐ লোকের ওপর রহমত বর্ষণ করেন, যে লোক ’আসরের (ফরয সালাতের) পূর্বে চার রাক্’আত সালাত  আদায় করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৭০, সুনান আবূ দাঊদ ১২৭১, সুনান আত্ তিরমিযী ৪৩০, আহমাদ ৫৯৮০, ইবনু খুযায়মাহ্ ১১৯৩, ইবনু হিব্বান ২৪৫৩, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪১৬৭, সহীহ আত্ তারগীব ৫৮৮, সহীহ আল জামি‘ ৩৪৯৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অন্যত্র হাদিসে এসেছে,

’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আসরের সালাতের (ফরযের) পূর্বে চার রাক্’আত সালাত  আদায় করতেন। এ চার রাক্’আতের মধ্যখানে সালাম ফিরানোর দ্বারা নিকটবর্তী মালাক (ফেরেশতা) এবং তাদের অনুসারী মুসলিম ও মু’মিনীনদের মাঝে পার্থক্য করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৭১, সুনান আত্ তিরমিযী ৪২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঘ) মাগরিবের সুন্নাত ছালাতঃ

মাগরিবের ফরয ছালাতের পরে দু’রাকা‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করতে হয়’। হাদিসে এসেছে,

ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যুহরের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পূর্বে দু’ রাক্’আত ও মাগরিবের ফারযের পরে দু’ রাক্’আত সালাত  তাঁর বাড়িতে এবং ’ইশার সালাতের ফারযের  পর দু’ রাক্’আত সালাত তার বাড়িতে আদায় করেছি। ইবনু ’উমার (রাঃ) আরো বলেছেন, হাফসাহ্ (রাঃ) (ইবনু ’উমারের বোন) আমার নিকট বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালকা দু’ রাক্’আত সালাত ফাজ্রের (ফজরের) সালাতের সময় আরম্ভ হবার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬১৮, ১১৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫৬৮, ইসলামীক সেন্টার ১৫৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে মাগরিবের আযানের পরে দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

’আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাগরিবের ফরয সালাতের পূর্বে তোমরা দু’ রাক্’আত নফল সালাত আদায় কর। মাগরিবের ফরয সালাতের পূর্বে তোমরা দু’ রাক্’আত নফল সালাত আদায় কর। তৃতীয়বার তিনি বলেছেন, ’’যিনি ইচ্ছা করেন’’ (তিনি তা পড়বেন)। বর্ণনাকারী বলেনঃ তৃতীয়বার তিনি এ কথাটি এ আশংকায় বললেন যাতে মানুষ একে সুন্নাত না করে ফেলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৮৩, ৭৩৬৮, সুনান আবূ দাঊদ ১২৮১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মদীনায় ছিলাম। (এ সময়ে অবস্থা এমন ছিল যে, মুয়াযযিন মাগরিবের আযান দিলে (কোন কোন সাহাবা (সাহাবা) ও তাবি’ঈ) মসজিদের খুঁটির দিকে দৌড়াতেন আর দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতে আরম্ভ করতেন। এমনকি কোন মুসাফির লোক মসজিদে এসে অনেক লোককে একা একা সালাত আদায় করতে দেখে মনে করতেন (ফরয) সালাত বুঝি সমাপ্ত হয়ে গেছে। আর লোকেরা এখন সুন্নাত পড়ছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৮০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র হাদিসে এসেছে,

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআয্যিন যখন আযান দিতো, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণের মধ্যে কয়েকজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বের হওয়া পর্যন্ত (মসজিদের) খুঁটির নিকট গিয়ে দাঁড়াতেন এবং এ অবস্থায় মাগরিবের পূর্বে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। অথচ মাগরিবের আযান ও ইক্বামাতের মধ্যে কিছু (সময়) থাকত না। ‘উসমান ইবনু জাবালাহ ও আবূ দাঊদ (রহ.) শু‘বাহ (রহ.) হতে বর্ণনা করেন যে, এ দু’য়ের মধ্যবর্তী ব্যবধান খুবই সামান্য হত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬২৫, ৫০৩; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৮৯ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসে এসেছে,

মারসাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ ইয়াযানী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘উকবাহ ইবনু জুহানী (রাযি.)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে বললাম, আবূ তামীম (রহ.) সম্পর্কে এ কথা বলে কি আমি আপনাকে বিস্মিত করে দিব না যে, তিনি মাগরিবের (ফরয) সালাতের পূর্বে দু’ রাক‘আত (নফল) সালাত আদায় করে থাকেন। ‘উক্বাহ (রাযি.) বললেন, (এতে বিস্ময়ের কী আছে?) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়ে তো আমরা তা আদায় করতাম। আমি প্রশ্ন করলাম, তা হলে এখন কিসে আপনাকে বাধা দিচ্ছে? তিনি বললেন, কাজকর্মের ব্যস্ততা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৮৪; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৮১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ)  এশার সুন্নাত ছালাতঃ

এশার ফরজ ছালাতের পরে দু’রাকা‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করতে হয়। এ মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন,

উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক দিন রাতে বারো রাক্’আত সালাত আদায় করবে তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (সে বারো রাক্’আত সালাত হলো) চার রাক্’আত যুহরের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পূর্বে আর দু’ রাক্’আত যুহরের (ফারযের) পরে, দু’ রাক্’আত মাগরিবের (ফরয সালাতের) পরে। দু’ রাক্’আত ’ইশার ফরয সালাতের পরে। আর দু’ রাক্’আত ফাজ্রের (ফজরের) (ফরয সালাতের) পূর্বে।

মুসলিমের এক বর্ণনায় শব্দ হলো উম্মু হাবীবাহ্ বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে মুসলিম প্রতিদিন আল্লাহ তা’আলার ফরয সালাত ব্যতীত বারো রাক্’আত সুন্নাত সালাত  আদায় করবে। আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। অথবা বলেছেন, জান্নাতে তার জন্যে একটি ঘর বানানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৫৯, সুনান আত্ তিরমিযী ৪১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৮, সুনান আননাসায়ী  নাসায়ী ১৭৯৬-৯৯, ১৮০১-২, ১৮০৪, ১৮০৮-১০; সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১৪১, সহীহ আল জামি ৬৩৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) ফরয  ছালাতের ফযিলতঃ

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সর্বোত্তম মাধ্যম হলো ছালাত। ছালাত বান্দাকে তাক্বওয়াশীল করে গড়ে তোলে। আত্মশুদ্ধি অর্জনের বড় মাধ্যম ছালাত। বান্দাকে পাপের কাজ থেকে বিরত রাখে ছালাত। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, আপনি তেলাওয়াত করুন কিতাব থেকে যা আপনার প্রতি ওহী করা হয় এবং সালাত কায়েম করুন। নিশ্চয় সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন। (সুরা আনকাবুত ২৯/৪৫)।

ছালাতের ফযিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিভিন্ন হাদিস বর্ণনা করেছেন। এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস নিম্নে পেশ করা হলো-

(ক) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজুর (রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এবং এক জুমুআহ থেকে অন্য জুমুআহ এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহের জন্যে কাফফারাহ হয়ে যায় যদি সে কাবীরাহ গুনাহতে লিপ্ত না হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৪, আহমাদ ৯১৯৭, সহীহাহ্ ৩৩২২, সহীহ আল জামি‘ ৩৮৭৫, সহীহ আত তারগীব ৬৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪১, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীগণের উদ্দেশে) বললেন, আচ্ছা বলো তো, তোমাদের কারো বাড়ীর দরজার কাছে যদি একটি নদী থাকে, যাতে সে নদীতে দিনে পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবীগণ উত্তরে বললেন, না, কোন ময়লা থাকবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এ দৃষ্টান্ত হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের। এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়কারীর গুনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৬৭, সুনান আননাসায়ী ৪৬২, সুনান আততিরমিযী ২৮৬৮, আহমাদ ৮৯২৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭২৬, ইরওয়া ১৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৯৪, ইসলামীক সেন্টার ১৪০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) “উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, যা আল্লাহ তা’আলা (বান্দার জন্য) ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি এ সালাতের জন্য ভালোভাবে উযূ  করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকূ’ ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭০, আহমাদ ২২৭০৪, সুনান আবূ দাঊদ ৪২৫, মালিক ১৪, সুনান আননাসায়ী ৪৬১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)....আবূ বকর ইবনু উমারাহ ইবনু রুআয়বাহ তার পিতা রুআয়বাহ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ এমন কোন ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্যোদয়ের পূর্বের এবং সূর্যাস্তের পূর্বের সালাত অর্থাৎ— ফাজর ও আসরের সালাত আদায় করে। এ কথা শুনে বাস্রার অধিবাসী একটি লোক তাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি নিজে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে এ কথা শুনেছ? সে বললঃ হ্যাঁ। তখন লোকটি বলে উঠল, আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি নিজে এ হাদীসটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে শুনেছি। আমার দু’ কান তা শুনেছে আর মন তা স্মরণ রেখেছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৩২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬২৪, সহীহ আল জামি ৫২২৮, সুনান আবূ দাঊদ ৪২৭, সুনান আননাসায়ী ৪৭১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৩৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩০৯, ইসলামীক সেন্টার ১৩২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডা সময়ের সালাত (অর্থাৎ- ফাজর ও ’আসর) আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬২৫,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩৫, আহমাদ ১৬৭৩০, দারেমী ১৪৬৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১৮৫, সহীহ আল জামি ৬৩৩৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) “উক্ববাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার রব সেই মেষপালক রাখালের উপর খুশী হন, যে একা পর্বত চূড়ায় দাঁড়িয়ে সালাতের জন্য আযান দেয় ও সালাত আদায় করে। আল্লাহ তা’আলা সে সময় তার মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে) বলেন, তোমরা আমার এই বান্দার দিকে তাকাও। সে আমাকে ভয় করে (এই পর্বত চূড়ায়) আযান দেয় ও সালাত আদায় করে। তোমরা সাক্ষী থাক আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিলাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬৫, সুনান আবূ দাঊদ ১২০৩, সুনান আননাসায়ী ৬৬৬, ‘ইরওয়া ২১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাছে রাতে একদল ও দিনে একদল মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) আসতে থাকেন। তারা ফাজর (ফজর) ও ’আসরের ওয়াক্তে মিলিত হন। যারা তোমাদের কাছে থাকেন তারা আকাশে উঠে গেলে আল্লাহ তা’আলা তাদের কাছে (বান্দার) অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, যদিও তিনি তাদের সম্পর্কে অধিক অবগত। বলেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কী অবস্থায় রেখে এসেছো? উত্তরে মালায়িকাহ্ বলেন, হে আল্লাহ! আমরা আপনার বান্দাদেরকে সালাত  আদায়ে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। আর যে সময় আমরা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছেছি তখনও তারা সালাত আদায় করছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫৫, ৩২২৩, ৭৪২৯, ৭৪৮৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩২, সুনান আননাসায়ী ৪৮৫, মালিক ১৮০/৫৯০, আহমাদ ১০৩০৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৩৭, সহীহ আল জামি‘ ৮০১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) মসজিদে ছালাতের ফযিলতঃ

আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়তর স্থান হলো মসজিদ’।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট সকল জায়গা হতে মাসজিদই হলো সবচেয়ে প্রিয়, আর বাজার সবচেয়ে ঘৃণ্য স্থান। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৭১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬০০, সহীহ আল জামি ১৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহর বান্দাহগণ ছালাতের জন্য দিনে রাতে পাঁচবার সমবেত হয় মসজিদে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরীব, ছোট-বড়, সাদা-কালো সকল ভেদাভেদ ভুলে পায়ের সাথে পা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয় একই কাতারে একই সৃষ্টিকর্তার ইবাদতে মশগুল থাকেন। ফলে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃদৃঢ় হয়। সামাজিক বন্ধন মযবুত হয় এবং নেকীর ঝুড়িও সমৃদ্ধ হয়। এ সম্পর্কিত হাদিসসমূহ নিম্নরূপ-

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল মসজিদে যাবে, আল্লাহ তা’আলা তার প্রত্যেকবারে যাতায়াতের জন্য জান্নাতে একটি মেহমানদারীর ব্যবস্থা করে রাখবেন। চাই সে সকালে যাক কী সন্ধ্যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৬৯, আহমাদ ১০৬০৮, ১০৬১৩, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ২০৩৭, সহীহ আল জামি ৬৩৯৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৯৭০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতে সবচেয়ে বেশী সাওয়াব পাবে ঐ ব্যক্তি দূরত্বের দিক দিয়ে যার বাড়ী সবচেয়ে বেশী দূরে। আর যে ব্যক্তি ইমামের সাথে জামা’আতে সালাত আদায় করার জন্য মসজিদে গিয়ে অপেক্ষা করে, তার সাওয়াবও ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশী হবে যে মসজিদের নিকটে থাকে এবং তাড়াতাড়ি সালাত আদায় করেই ঘুমিয়ে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৬২, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ১৫০১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জামা‘আতে সালাতের ফাযীলত একাকী আদায়কৃত সালাত অপেক্ষা সাতাশ গুণ বেশী। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৫, ৬৪৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৫০, আহমাদ ৫৩৩২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬১৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তির জামা‘আতের সাথে সালাতের সওয়াব, তার নিজের ঘরে ও বাজারে আদায়কৃত সালাতের সওয়াবের চেয়ে পঁচিশ গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। এর কারণ এই যে, সে যখন উত্তমরূপে উযূ করলো, অতঃপর একমাত্র সালাতের উদ্দেশে মসজিদে রওয়ানা করল তখন তার প্রতি কদমের বিনিময়ে একটি মর্তবা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। সালাত আদায়ের পর সে যতক্ষণ নিজ সালাতের স্থানে থাকে, মালাকগণ তার জন্য এ বলে দু‘আ করতে থাকেন - ‘‘হে আল্লাহ! আপনি তার উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করুন।’’ আর তোমাদের কেউ যতক্ষণ সালাতের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতে রত বলে গণ্য হয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭, ১৭৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬১৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একজন অন্ধ লোক এসে বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার এমন কোন চালক নেই যে আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবে। তিনি রসূলের নিকট আবেদন করলেন তাকে যেন ঘরে সালাত আদায়ের অবকাশ দেয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অবকাশ দিলেন। সে ফিরে চলে যাওয়া মাত্রই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার তাকে ডাকলেন এবং বললেন, তুমি কি সালাতের আযান শুনতে পাও? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে অবশ্যই আযানের সাড়া দিবে (অর্থাৎ নিজেকে জামা’আতে শরীক করবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৫৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৫৯, ইসলামীক সেন্টার ১৩৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে দিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন।

ক. ন্যায়পরায়ণ শাসক,

খ. সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে,

গ. সে ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে,

ঘ. সে দু’ ব্যক্তি যারা পরস্পরকে ভালবাসে আল্লাহর ওয়াস্তে, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য,

ঙ. সে ব্যক্তি যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহবান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’,

চ. সে ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না,

জ. সে ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর যিকর করে, ফলে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২২৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩১, আহমদ ৯৬৭১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬২৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০১, সুনান আননাসায়ী ৫৩৮০, সুনান আততিরমিযী ২৩৯১, আহমাদ ৯৬৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪৮৬, ইরওয়া ৮৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) জুম‘আর ছালাতের ফযিলতঃ

জুম‘আর দিনের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। এদিন আল্লাহর নিকট ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের চেয়ে মহিমান্বিত। এ দিনে দো‘আ কবুলের একটা বিশেষ সময় রয়েছে। যখন বান্দার যে কোন সঙ্গত প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করেন। এ সম্পর্কিত হাদিসসমূহ নিম্নরূপ-

(ক) লুবাবাহ্ ইবনু ’আবদুল মুনযির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’জুমু’আর দিন’’ সকল দিনের সর্দার, সব দিনের চেয়ে বড় ও আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদাবান। এ দিনটি আল্লাহর কাছে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্রের চেয়ে অধিক উত্তম। এ দিনটির পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

(১) আল্লাহ তা’আলা এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করেছেন।

(২) এ দিনে তিনি আদমকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।

(৩) এ দিনেই আদম মৃত্যুবরণ করেছেন।

(৪) এ দিনে এমন একটা ক্ষণ আছে সে ক্ষণে বান্দারা আল্লাহর কাছে হারাম জিনিস ছাড়া আর যা কিছু চায় তা তিনি তাদেরকে দান করেন। (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) হবে। আল্লাহর নিকটবর্তী মালাক (ফেরেশতা), আসমান, জমিন, বাতাস, পাহাড়, সাগর সবই এ জুমু’আর দিনকে ভয় করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৩, সুনান আতআত্ তিরমিযী ১০৮৪, ইবনু শায়বাহ্ ৫৫১৬, সহীহ আল জামি‘ ২২৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) সালমান ফারিসী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু’ জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমু‘আহ হতে আরেক জুমু‘আহ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮৩, ৯১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩২ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮১, শারহুস সুন্নাত ১০৫৮, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৯, সহীহ আল জামি ৭৭৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) উমাইয়্যাহ ইবনু বিস্তাম (রহঃ)....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি গোসল করে জুমুআর সালাতে আসল, অতঃপর সাধ্যমত (সুন্নাত) সালাত আদায় করল, অতঃপর ইমামের খুতবাহ শেষ হওয়া পর্যন্ত নীরব থাকল, অতঃপর ইমামের সাথে (জুমুআর) সালাত আদায় করল, এতে তার দু’ জুমুআর মধ্যকার দিনসমূহের এবং আরো তিন দিনের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৭, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৭, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমু’আর দিন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) মসজিদের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে যান। যে ব্যক্তি মসজিদে প্রথমে আসে তার নাম লিখেন। এরপর তার পরের ব্যক্তির নাম লিখেন। (অতঃপর তিনি বলেন,) যে ব্যক্তি মসজিদে প্রথমে যান তার দৃষ্টান্ত হলো, যে মক্কায় কুরবানী দেবার জন্য একটি উট পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু’আর সালাতে আসে তার দৃষ্টান্ত হলো, যে একটি গরু পাঠায়। তারপর যে লোক জুমু’আর জন্য মসজিদে আসে তার উপমা হলো, যে ব্যক্তি কুরবানীর জন্য মক্কায় একটি দুম্বা পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য মসজিদে আসে তার উদাহরণ হলো, যে কুরবানী করার জন্য মক্কায় একটি মুরগী পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু’আর জন্য মসজিদে আসে তার উপমা হলো, যে একটি ডিম পাঠায়। আর ইমাম খুতবাহ্ দেবার জন্য বের হলে তারা তাদের দপ্তর গুটিয়ে খুতবাহ্ শোনেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯২৯, ৩২১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫০, আহমাদ ১০৫৬৮, শারহু মা‘আনির আসার ৬২৪১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৬২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আওস ইবনু আওস আস-সাকাফী (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর দিন (স্ত্রী সহবাসজনিত) গোসল করলো এবং নিজে গোসল করলো এবং সকাল সকাল যানবাহন ছাড়া পদব্রজে মসজিদে এসে ইমামের কাছাকাছি বসলো, মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে খুতবাহ শুনলো এবং অনর্থক কিছু করলো না, তার জন্য প্রতি কদমে এক বছরের সাওম  রাখ ও তার রাত জেগে সালাত পড়ার সমান সওয়াব রয়েছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৮, সুনান আবূ দাঊদ ৩৪৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৪৯৯০, ইবনুর হিব্বান ২৭৮১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৭৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৬৫, সহীহ আত্ তারগীব ৬৯০, সহীহ আল জামি‘ ৬৪০৫, সুনান নাসায়ী ১৩৮১, ১৩৮৪, ১৩৯৮, আহমাদ ১৫৭২৮, ১৫৭৩৯, ১৫৭৪২, ১৬৫১৩, ১৫৪৬-৪৭, সুনান আত্ তিরমিযী ৪৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবুল জা’দ আয্ যুমায়রী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অলসতা ও অবহেলা করে পরপর তিন জুমু’আর সালাত  ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তা’আলা তার দিলে মুহর লাগিয়ে দেবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৭১, সুনান আবূ দাঊদ ১০৫২, সুনান আত্ তিরমিযী ৫০০, সুনান নাসাযী ১৩৬৯, আহমাদ ১৫৪৯৮, ইবনূ খুযায়মাহ্ ১৮৫৮, ইবনু মাজাহ্ ১১২৬, ইবনু হিব্বান ২৭৮৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৩৪, সহীহ আত্ তারগীব ৭২৭, সহীহ আল জামি‘ ৬১৪৩, মুসনাদুশ্ শাফি‘ঈ ৩৮২, দারিমী ১৬১২, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী ৫৫৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১২) ‘তারাবীহ’ ও ‘তাহাজ্জুদ’ ছালাতের ফযিলতঃ

রাত্রির বিশেষ নফল ছালাত ‘তারাবীহ’ ও ‘তাহাজ্জুদ’ নামে পরিচিত। রামাযানে এশার পর প্রথম রাতে পড়লে তাকে ‘তারাবীহ’ এবং রামাযান ও অন্যান্য সময়ে শেষরাতে পড়লে তাকে ‘তাহাজ্জুদ’ বলা হয়।

উল্লেখ্য যে, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, ক্বিয়ামে রামাযান, ক্বিয়ামুল লায়েল সবকিছু এক কথায় ‘ছালাতুল লায়েল’ বা ‘রাত্রির নফল ছালাত’ বলা হয়।

এ সম্পর্কিত হাদিসগুলি নিম্নরূপ-

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রতি রাত্রে শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের মর্যাদাবান বারাকাতপূর্ণ রব দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ’যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার নিকট কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে আমার নিকট মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দেব।’

মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, তারপর তিনি হাত বাড়িয়ে দেন এবং বলেন, কে আছে যে এমন সত্তাকে কর্য দেবে যিনি ফকীর নন, না অত্যাচারী এবং সকাল পর্যন্ত এ কথা বলতে থাকেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৪৫, ৬৩২১, ৭৪৯৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৫৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫৮, আহমাদ ৭৫৯৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঐ লোকের ওপর রহমত নাযিল করুন যে রাতে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত  আদায় করে। আবার নিজের স্ত্রীকেও সালাতের জন্যে জাগায়। যদি স্ত্রী না উঠে তাহলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ ঐ মহিলার প্রতিও রহমত করেন যে রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। আবার তার স্বামীকেও তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের জন্যে উঠায়। যদি স্বামী ঘুম থেকে না উঠে তাহলে সে তার মুখে পানি ছিটে দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৩০, সুনান আবূ দাঊদ ১৩০৮, সুনান নাসায়ী ১৬১০, সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৩৬, ইবনু খুযায়মাহ্ ১১৪৮, ইবনু হিব্বান ২৫৬৭, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১১৬৪, সুনান আল কুবরা ৪৩১৪, সহীহ আত্ তারগীব ৬২৫, সহীহ আল জামি‘ ৩৪৯৪, আহমাদ ৭৩২২, ৭৩৬২, ৯৩৪৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আবূ মালিক আল আশ্’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ জান্নাতে এমনসব কক্ষ আছে যার বাইরের জিনিস ভেতর থেকে আর ভেতরের জিনিস বাইরে থেকে দেখা যায়। আর এ বালাখানা আল্লাহ তা’আলা ঐসব ব্যক্তির জন্যে তৈরি করে রেখেছেন, যারা অন্য ব্যক্তির সঙ্গে নরম কথা বলে। (গরীব-মিসকীনকে) খাবার দেয়। প্রায়ই (নফল) সওম পালন করে। রাত্রে এমন সময় (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করে যখন অনেক মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৩২, ইবনু হিব্বান ৫০৯, মুসতাদরাক লিল হাকিম ২৭০, শু‘আবুল ঈমান ২৮২৫, সহীহ আত্ তারগীব ৬১৮, সহীহ আল জামি‘ ২১২৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কোন লোক যখন (রাতে) ঘুমিয়ে যায়, শায়ত্বন (শয়তান) তার মাথার পেছনের দিকে তিনটি গিরা লাগায়। প্রত্যেক গিরায় শায়ত্বন (শয়তান) তার মনে এ কথার উদ্রেক করে দেয় যে, এখনো অনেক রাত বাকী, কাজেই ঘুমিয়ে থাকো। সে যদি রাতে জেগে উঠে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাহলে তার (গাফলতির) একটি গিরা খুলে যায়। তারপর সে যদি উযূ করে, (গাফলতির) আর একটি গিরা খুলে যায়। যদি সে সালাত  আরম্ভ করে তখন তার তৃতীয় গিরাটিও খুলে যায়। বস্ত্ততঃ এ লোক পাক-পবিত্র হয়ে ভোরের মুখ দেখে, নতুবা অপবিত্র হয়ে ভোরের দিকে কলূষ অন্তর ও অলস মন নিয়ে উঠে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২১৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৪২, ৩২৬৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭৬, আহমাদ ৭৩১২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৭১. , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঙ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, রাত্রে এমন একটা সময় অবশ্যই আছে, কোন মুসলিম যদি এ সময়টা প্রাপ্ত হয় এবং আল্লাহ তা’আলার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কোন কল্যাণ করে তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাকে তা অবশ্যই দান করেন। এ সময়টা প্রতি রাত্রেই আসে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৪০, ইসলামীক সেন্টার ১৬৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমাযান (রমজান) মাসের সওমের পরে উত্তম সওম হলো আল্লাহর মাস, মুহাররম মাসের ’আশূরার সওম। আর ফরয সালাতের পরে সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের সালাত (অর্থাৎ- তাহাজ্জুদ)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৩৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৬৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৬৩, সুনান আবূ দাঊদ ২৪২৯, সুনান আততিরমিযী ৪৩৮, সুনান আননাসায়ী ১৬১৩, আহমাদ ৮৫৩৪, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ১১৩৪, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১১৫৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৪২১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৬৩৬, ইরওয়া ৯৫১, সহীহ আত্ তারগীব ৬১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৬২২, ইসলামীক সেন্টার ২৬২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘তারাবীহ’-এর  ছালাতের ফযিলত

তারাবীহ ছালাতের ফযিলত প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান মাসে ক্বিয়ামুল লায়লের উৎসাহ দিতেন (তারাবীহ সালাত), কিন্তু তাকিদ করে কোন নির্দেশ দিতেন না। তিনি বলতেন, যে লোক ঈমানের সঙ্গে ও পুণ্যের জন্যে রমাযান মাসে রাত জেগে ’ইবাদাত করে তার পূর্বের সব সগীরাহ্ গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে গেল। (অর্থাৎ তারাবীহের জন্যে জামা’আত নির্দিষ্ট ছিল না, বরং যে চাইতো সাওয়াব অর্জনের জন্যে আদায় করে নিত)। আবূ বকরের খিলাফাতকালেও এ অবস্থা ছিল। ’উমারের খিলাফাতের প্রথম দিকেও এ অবস্থা ছিল। শেষের দিকে ’উমার (রাঃ) তারাবীহের সালাতের জন্যে জামা’আতের ব্যবস্থা করেন এবং তখন থেকে লাগাতার তারাবীহের জামা’আত চলতে থাকল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৯৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০০৯, ৩৫, মুসলিম ৮৫৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(১৩) জানাযার ছালাতের ফযিলতঃ

প্রত্যেক মুসলিমের উপর জানাযার ছালাত ‘ফরযে কেফায়াহ’। অর্থাৎ মুসলমানদের কেউ জানাযা পড়লে উক্ত ফরয আদায় হয়ে যাবে। অন্যথায় না পড়লে সবাই দায়ী হবে। এক মুমিনের উপর আরেক মুমিনের অধিকার হলো কেউ মারা গেলে তার জানাযার ছালাতে অংশগ্রহণ করা’।

সুতরাং জানাযার ছালাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা আদায়কারীর জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অত্যন্ত চমকপ্রদ ফযিলত বর্ণনা করেছেন। যা নিম্নরূপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের জানাযায় ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে অংশগ্রহণ করে, এমনকি তার জানাযার সালাত আদায় করে কবরে দাফন করা পর্যন্ত সাথে থাকে। এমন ব্যক্তি দু’ ক্বীরাত্ব সাওয়াব নিয়ে ঘরে ফেরে। প্রত্যেক ক্বীরাত্ব উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি শুধু জানাযার সালাত আদায় করে দাফন করার আগে ফিরে সে এক ক্বীরাত্ব সাওয়াব নিয়ে ফিরে এলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৭, ১৩২৩, ১৩২৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪৫, সুনান আননাসায়ীর ৫০৩২, আহমাদ ৯৫৫১, ইবনু হিব্বান ৩০৮০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৯৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫০১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৪) ইশরাক্ব ও চাশতের ছালাতের ফযিলতঃ

শুরুক অর্থ উদিত হওয়া। ‘ইশরাক’ অর্থ চমকিত হওয়া। ‘যোহা’ অর্থ সূর্য গরম হওয়া। এই ছালাত সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে একে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’ বলা হয় এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে ‘ছালাতুল যোহা’ বা চাশতের ছালাত বলা হয়। এই ছালাত বাড়ীতে পড়া মুস্তাহাব। এটি সর্বদা পড়া এবং আবশ্যিক গণ্য করা ঠিক নয়। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কখনও পড়তেন, কখনো ছাড়তেন।

এ ছালাত অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ। এ সম্পর্কিত হাদিসগুলি নিম্নরূপ-

(ক) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ফাজ্রের (ফজরের) সালাত  জামা’আতে আদায় করল, অতঃপর বসে বসে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকর করতে থাকল, তারপর দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করল, সে একটি পূর্ণ হাজ্জ ও একটি সম্পূর্ণ ’উমরার সমান সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি তিনবার বলেছেন, সম্পূর্ণ হাজ্জ ও সম্পূর্ণ ’উমরার সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৭১, সুনান আততিরমিযী ৫৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ৪৬৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) বুরায়দাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ মানুষের শরীরে তিনশত ষাটটি জোড়া আছে। প্রত্যেক লোকের উচিত প্রত্যেকটি জোড়ার জন্যে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা। সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কার সাধ্য আছে এ কাজ করতে? তিনি বললেন, মসজিদে পড়ে থাকা থুথু মুছে ফেলাও একটি সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। পথ থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে দেয়াও একটি সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। তিনশত ষাট জোড়ার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেবার মতো কোন জিনিস না পেলে ’যুহার (চাশ্ত/চাশত) দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করে নেয়া তোমার জন্যে যথেষ্ট। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩১৫, সুনান আবূ দাঊদ ৫২৪২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১২২৬, শু‘আবুল ইমান ১০৬৫০, ইরওয়া ৮৬০, আহমাদ ২২৯৯৮, সহীহ আত্ তারগীব ৬৬৬, ২৯৭১, সহীহ আল জামি‘ ৪২৩৯)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সকাল হতেই তোমাদের প্রত্যেকের প্রতিটা গ্রন্থির জন্যে ’সদাক্বাহ্ (সাদাকা)’ দেয়া অবশ্য দায়িত্ব। অতএব প্রতিটা ’তাসবীহ’ই অর্থাৎ ’সুবহা-নাল্ল-হ’ বলা ’সদাক্বাহ্ (সাদাকা)’। প্রতিটি ’তাহমীদ’ই অর্থাৎ ’আলহামদুলিল্লা-হ’ পড়া সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। প্রতিটি ’তাহলীল’ অর্থাৎ ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। প্রতিটি ’তাকবীর’ অর্থাৎ ’আল্ল-হু আকবার’ বলা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। ’নেক কাজের নির্দেশ’ করা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। আর এ সবের পরিবর্তে ’যুহার দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করে নেয়া যথেষ্ট। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৫৫৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২০, আহমাদ ২১৪৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৮৯৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০০৭, সহীহ আত্ তারগীব ৬৬৫, সহীহ আল জামি‘ ৮০৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৫) কুরআন তেলাওয়াতের ফযিলতঃ

বিশ্ব মানবতার মহা সংবিধান হচ্ছে পবিত্র কুরআন। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জীবন ব্যবস্থা হিসাবে বিভিন্ন সময়ে জীবরাঈল (আঃ) মারফত বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর নাযিল করেছেন এবং এর হেফাযতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা নিজেই নিয়েছেন। তিনি বলেন,      

‘আমরা কুরআনুল কারীম নাযিল করেছি এবং আমরাই এর হেফাযত করব।’ (সুরা হিজর-১৫/৯)।

যা অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের  জন্য চূড়ান্ত জীবন বিধান হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে। তাতে রয়েছে মানুষের জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগের সমাধান। সুতরাং কুরআনের জ্ঞানার্জন করা, শিক্ষা দেওয়া, তেলাওয়াত করা এবং এর আদেশ-নিষেধগুলি বক্ষে ধারণ করা প্রতিটি বান্দার জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্য যা প্রচুর ছওয়াব ও ফযীলতে পরিপূর্ণ। হাদিসে এসেছে,

উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম, যে কুরআন শিক্ষা করে এবং তা (মানুষকে) শিক্ষা দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১০৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০২৭, ৫০২৮, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৫২, সুনান আততিরমিযী ২৯০৭, আহমাদ ৫০০, শু‘আবূল ঈমান ১৭৮৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১১৮, সহীহাহ্ ১১৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৪১৫, সহীহ আল জামি‘ ৩৩১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মসজিদে গিয়ে কুরআন শিক্ষা করা এবং অন্য শিক্ষা দেওয়ার ফযিলত অনেক বেশী। যা আরবের উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট মূল্যবান  উটের চেয়েও অধিক। এমনকি প্রতিটি আয়াতের বিনিময় একটি করে উটের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে,

উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (একদিন) মসজিদের প্রাঙ্গণে বসেছিলাম। এ সময়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আসলেন ও (আমাদেরকে) বললেন, তোমাদের কেউ প্রতিদিন সকালে ’বুত্বহান’ অথবা ’আক্বীক’ বাজারে গিয়ে দু’টি বড় কুঁজওয়ালা উটনী কোন অপরাধ সংঘটন ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা ছাড়া নিয়ে আসতে পছন্দ করবে? এ কথা শুনে আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের প্রত্যেকেই এ কাজ করতে পছন্দ করবে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদি তা-ই হয় তাহলে তোমাদের কেউ কোন মসজিদে গিয়ে সকালে আল্লাহর কিতাবের দু’টি আয়াত (মানুষকে) শিক্ষা দেয় না বা (নিজে) শিক্ষাগ্রহণ করে না কেন? অথচ এ দু’টি আয়াত শিক্ষা দেয়া তার জন্য দু’টি উটনী অথবা তিনটি আয়াত শিক্ষা দেয়া তার জন্য তিনটি উটনী অথবা চারটি আয়াত শিক্ষা দেয়া তার জন্য চারটি উটনীর চেয়েও উত্তম। সারকথা কুরআনের যে কোন সংখ্যক আয়াত, একই সংখ্যক উটনীর চেয়ে উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৩, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩০০৭৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৪১৮, সহীহ আল জামি ২৬৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পৃথিবীতে এমন  কোনো  গ্রন্থ নেই যা পাঠ করলে বিশেষভাবে নেকী হয়। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম হলো কুরআনুল কারীম। যা তেলাওয়াত করলে নেকী হয়। তেলাওয়াতকৃত প্রতিটি হরফে দশটি নেকী অর্জিত হয়। হাদিসে এসেছে,

(ক) আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের কোন একটি অক্ষরও পাঠ করবে, সে নেকী পাবে। আর নেকী হচ্ছে ’আমলের দশ গুণ। আমি বলছি না যে,(الٓمٓ) ’আলিফ লাম মীম’ একটি অক্ষর। বরং ’আলিফ’ একটি অক্ষর, ’লাম’ একটি অক্ষর ও ’মীম’ একটি অক্ষর। (তাই আলিফ, লাম ও মীম বললেই ত্রিশটি নেকী পাবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৩৭, সুনান আততিরমিযী ২৯১০, সহীহাহ্ ৩৩২৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৪১৬, সহীহ আল জামি‘ ৬৪৬৯, দারিমী ৩৩১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন পাঠকারীকে কিয়ামতের দিন বলা হবে, পাঠ করতে থাকো আর উপরে উঠতে থাকো। (অক্ষরে অক্ষরে ও শব্দে শব্দে) সুস্পষ্টভাবে পাঠ করতে থাকো, যেভাবে দুনিয়াতে স্পষ্টভাবে পাঠ করতে। কারণ তোমার স্থান (মর্যাদা) হবে যা তুমি পাঠ করবে শেষ আয়াত পর্যন্ত (আয়াত পাঠের তুলনাগত দিক থেকে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৩৪, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৬৪, সুনান তিরমিযী ২৯১৪, সহীহাহ্ ২২৪০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৯০, সহীহ আত্ তারগীব ১৪২৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৪২৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আবূ মূসা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঐ মু’মিন যে কুরআন পাঠ করে এবং সে অনুযায়ী ’আমল করে, তাঁর দৃষ্টান্ত ঐ লেবুর মত যা খেতে সুস্বাদু এবং গন্ধে চমৎকার। আর ঐ মু’মিন যে কুরআন পাঠ করে না; কিন্তু এর অনুসারে ’আমল করে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ খেজুরের মত যা খেতে সুস্বাদু কিন্তু সুগন্ধ নেই। আর মুনাফিক যে কুরআন পাঠ করে; তার উদাহরণ হচ্ছে, ঐ রায়হানের মত, যার মন মাতানো খুশবু আছে, অথচ খেতে একেবারে বিস্বাদ। আর ঐ মুনাফিক যে কুরআন পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ মাকাল ফলের মত, যা খেতে বিস্বাদ এবং গন্ধে দুর্গন্ধময়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৫৯, ৫০২০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) নাওয়াস ইবনু সাম্’আন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কুরআন ও কুরআন পাঠকদের যারা কুরআন অনুযায়ী ’আমল করত (তাদের) কিয়ামতের দিন উপস্থিত করা হবে। তাদের সামনে দু’টি মেঘখণ্ড অথবা দু’টি কালো ছায়ারূপে থাকবে সূরা আল বাকারাহ্ ও সূরা আ-লি ’ইমরান। এদের মাঝখানে থাকবে দীপ্তি। অথবা থাকবে প্রসারিত- পালক বিশিষ্ট পাখির দু’টি ঝাঁক। তারা আল্লাহর নিকট কুরআন পাঠকের পক্ষে সুপারিশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৫, সুনান আততিরমিযী ২৮৮৩, আহমাদ ১৭৬৩৭, শু‘আবূল ঈমান ২১৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৬৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৪৬, ইসলামীক সেন্টার ১৭৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও সূরার পৃথকভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফযিলত বর্ণনা করেছেন। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,

‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আর কোন বাধা থাকবে না মৃত্যু ব্যতীত’। (নাসাঈ কুবরা হা/৯৯২৮)।

এ ছাড়াও ‘যে ব্যক্তি শয়নকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে সকাল পর্যন্ত তার হেফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকবে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হতে না পারে’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩১১, ৩২৭৫, ৫০১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ কিতাবুল ওয়াকালাহ অনুচ্ছেদ-১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ অনুচ্ছেদ ১৪৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসে এসেছে,

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে সূরা আল বাকারার শেষ দু’টি আয়াত, অর্থাৎ- ’আ-মানার রসূলু’ হতে শেষ পর্যন্ত পড়ে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৪০, ৪০০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৭, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৪৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসে এসেছে, 

আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমাহ্ হতে আগামী জুমাহ্ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৬, ইরওয়া ৬২৬, সহীহ আত্ তারগীব ৭৩৬, সহীহ আল জামি‘ ৬৪৭০, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ বিষয়ে অন্য হাদিসে এসেছে,

আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ-এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রাখা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৯, সুনান আবূ দাঊদ ৪৩২৩, সুনান আততিরমিযী ২৮৮৬, আহমাদ ২১৭১২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩৩৯১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৭, রিয়াযুস্ সলিহীন ১০২৮, সহীহাহ্ ৫৮২, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৭২, সহীহ আল জামি‘ ৬২০১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৫৩, ইসলামীক সেন্টার. ১৭৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসে এসেছে,

আবূ দারদা (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কি প্রতি রাতে এক-তৃতীয়াংশ কুরআন তিলাওয়াতে সক্ষম? সাহাবীগণ বললেন, প্রতি রাতে কি করে এক-তৃতীয়াংশ কুরআন পড়া যাবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সূরা ’কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৭৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১১, দারিমী ৩৪৭৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসে এসেছে,

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে একটি সেনাদলের সেনাপতি করে পাঠালেন। সে তার সঙ্গীদের সালাত আদায় করাত এবং ’কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ দিয়ে সালাত শেষ করত। তারা মদীনায় ফেরার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ কথা উল্লেখ করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে জিজ্ঞেস করো কি কারণে সে তা করে। সে বলল, এর কারণ এতে আল্লাহর গুণাবলীর উল্লেখ রয়েছে। আর আমি আল্লাহর গুণাবলী পড়তে ভালবাসি। তার উত্তর শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে জানিয়ে দাও, আল্লাহ তা’আলাও তাকে ভালবাসেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৩৭৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১৩, ইবনু হিববান ৭৯৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৮৩, সুনান আননাসায়ী ৯৯৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসে এসেছে,

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি এ ’কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ সূরাকে ভালবাসি। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার এ সূরার প্রতি ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৩০, সুনান আততিরমিযী ২৯০১, দারিমী ৩৪০৫, সহীহ ইবনু হিববান ৭৯২, আহমাদ ১২৪৩২, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) দ্বীনি দাওয়াতের গুরুত্ব ও ফযিলতঃ

পৃথিবীতে যতো নবী রাসূল এসেছিলেন সকলেই তাওহীদের  দাওয়াত দিয়ে গেছেন। আল্লাহ বলেন, , প্রত্যেক জাতির নিকট আমরা রাসূল প্রেরণ করেছি (তারা যেন ঐ মর্মে দাওয়াত দেয়) তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং ত্বাগুত থেকে বেচেঁ থাক'। (সুরা নাহল-১৬/৩৬)।

এ দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আল্লাহ তাঁর প্রেরিত রাসূলকে সর্তকও করেছেন ।  যেমন আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা পৌঁছে দাও। তুমি যদি না কর, তবে তুমি রিসালাতের দায়িত্ব পালন করলে না’। (সুরা মায়েদা-৫/৬৭)।

আল্লাহ প্রদত্ত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রদর্শিত অভ্রান্ত সত্যকে জনগণের মাঝে প্রচার করা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের কুরআন-সুন্নাহ-এর স্বনিষ্ট অনুসারীদের দায়িত্ব। শয়তানের ধোঁকায় প্ররোচিত হয়ে বান্দা অন্যায়ে প্রলুব্ধ হয়। দুনিয়ার নগদ চাকচিক্যের মোহে মানুষ আখেরাতকে ভুলে গিয়ে স্রষ্টার আদেশ-নিষেধকে অমান্য করে। দিকভ্রান্ত উম্মাহকে হেদায়েতের আলোকবর্তিকায় ফিরে আনার প্রাণান্তকর চেষ্টাকারীদেও জন্য সুসংবাদ রয়েছে। দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দর পন্থায়’। (সুরা নামল-১৬/১২৫)।

আল্লাহ বলেন,

‘ঐ ব্যক্তির চাইতে কথায় উত্তম আর কে আছে, যে (মানুষকে) আল্লাহর দিকে ডাকে ও নিজে সৎকর্ম করে এবং বলে যে, নিশ্চয়ই আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা হামীম সাজদাহ-৪১/৩৩)।

হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা করত সুন্দরভাবে দাওয়াত দিতে হবে।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,  ‘তুমি তোমার পালনকর্তার দিকে (মানুষকে) দাওয়াত দাও। আর তুমি অবশ্যই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবে না’। (সুরা ক্বাছাছ ২৮/৮৭)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পক্ষ হতে (মানুষের কাছে) একটি বাক্য হলেও পৌঁছিয়ে দাও। বনী ইসরাঈল হতে শোনা কথা বলতে পারো, এতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে প্রস্তুত করে নেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৬১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দাওয়াতী ময়দানে একাকী দাওয়াতের চেয়ে সমবেত প্রচেষ্টা  বেশী ফলপ্রসূ হয়। সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রতি ইঈিত দিয়ে আল্লাহ বলেন, 'বলুন ইহাই আমার পথ আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র, আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভূক্ত নয়'। (সুরা ইউসুফ-১০৮)।

আল্লাহ বলেন, মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই হবে সফলকাম’। (সুরা আল ইমরান ৩/১০৪)।

সুতরাং একাকী বা সংঘবদ্ধভাবে মানুষকে হক্বের দিকে দাওয়াত দিতে হবে। হক হ’ল আল্লাহর বিধান যা তাঁর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। আল্লাহ বলেন,

‘আর তুমি বল হক আসে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে। অতঃপর যার ইচ্ছা তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করুক, যার ইচ্ছা অবিশ্বাস করুক। আমরা সীমালংঘনকারীদের জন্য জাহান্নাম প্রস্ত্তত করে রেখেছি’। (সুরা কাহফ-১৮/২৯)।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,‘তোমার প্রভুর বাক্য সত্য ও ন্যায় দ্বারা পূর্ণ। তাঁর বাক্যের পরিবর্তনকারী কেউ নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’। (সুরা আন’আম-৬/১১৫)।

অথচ মানুষ বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে, সামাজিকতার দোহাই দিয়ে কিংবা অধিকাংশের দোহাই দিয়ে আল্লাহ প্রদত্ত অভ্রান্ত সত্যের চূড়ান্ত মাপকাঠি কুরআন ও সুন্নাহর বিধানকে এড়িয়ে চলছে। ধর্মের নামে বিভিন্ন শিরকী ও বিদ’আতী আমল করছে। অথচ এসব কখনই সত্যের মাপকাঠি নয়। এ বিষয়ে সতর্কতাবাণী দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চল, তাহ’লে ওরা তোমাকে আল্লাহর পথ হ’তে বিপদগামী করে দিবে। তারা তো কেবল ধারণার অনুসরণ করে এবং অনুমানভিত্তিক  কথা বলে’। (সুরা আন’আম -৬/১১৬)।

মালিক ইবনু আনাস (রাঃ) (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না- আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসূলের হাদীস। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৫৯৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অতএব অশান্তিময় বিশ্বকে যদি বাঁচাতে হয়, তাহ’লে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার বিকল্প নেই। আর সেই সাথে ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ মর্মে হাদিসে এসেছে,

আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন শারী’আত বিরোধী কার্যকলাপ হতে দেখে, সেটাকে যেন নিজ হাতে পরিবর্তন করে দেয়। যদি নিজ হাতে সেগুলো পরিবর্তন করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে মুখে নিষেধ করবে। আর যদি মুখে নিষেধ করারও সাধ্য না থাকে, তাহলে অন্তরে সেটা ঘৃণা করবে। এটা সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯, সুনান আবূ দাঊদ ১১৪০, সুনান আততিরমিযী ২১৭২, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০১৩, সুনান আননাসায়ী ৫০০৮, সহীহ আত্ তারগীব ২৩০২, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ৫৬৪৯, আহমাদ ১০৬৮৯, ১০৭৬৬, ১১০৬৮, ১১১০০, ১১১২২, ১১৪৬৬, মুসনাদ আবূ ইয়া‘লা ১২০৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩০৭, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ১১৭৩৯, হিলইয়াতুল আওলিয়া ১০/২৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দাওয়াতের ফযিলত

এ বিষয়ে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন -

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন লোককে সৎ কাজের দিকে আহবান করবে, তার জন্যও সে পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে যা তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে, অথচ তাদের সাওয়াবের কোন অংশ একটুও কমবে না। অনুরূপ যে ব্যক্তি কাউকে গোমরাহীর দিকে আহবান করে তারও সে পরিমাণ গুনাহ হবে, যতটুকু গুনাহ তার অনুসারীদের জন্য হবে। অথচ এটা অনুসারীদের গুনাহকে একটুও কমাবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৬০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

‘যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন নেক কাজ চালু করলো সে এটি চালু করার ছওয়াব তো পাবেই, তারপরের লোকেরা যারা এ নেক কাজের উপর আমল করবে তাদেরও সমপরিমাণ নেকী হবে। অথচ তাদের নেকী কমবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতির প্রচলন করলো তার জন্য গুনাহ রয়েছে এবং পরবর্তীতে যারা এ মন্দ রীতির উপর আমল করবে তাদেরও সমপরিমাণ গুনাহ সে পাবে। তাদের গুনাহও কম করা হবে না’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৫৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,

আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার সওয়ারী চলতে পারছে না, আপনি আমাকে একটি সওয়ারীর ব্যবস্থা করে দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ সময় তো আমার নিকট তোমাকে দেবার মতো কোন সওয়ারী নেই। এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! আমি তাকে এমন এক লোকের সন্ধান দিতে পারি, যে তাকে সওয়ারীর ব্যবস্থা করে দিতে পারে। এটা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি কাউকে কোন কল্যাণের দিকে পথপ্রদর্শন করে, সে উক্ত কার্য সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৪৬, ইসলামিক সেন্টার ৪৭৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

তিনি আরো বলেন,

সাহল ইবনু সা‘আদ (রহ.) হতে বর্ণিত যে, তিনি খায়বারের যুদ্ধের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব যার হাতে বিজয় আসবে। অতঃপর কাকে পতাকা দেয়া হবে, সেজন্য সকলেই আশা করতে লাগলেন। পরদিন সকালে প্রত্যেকেই এ আশায় অপেক্ষা করতে লাগলেন যে, হয়ত তাকে পতাকা দেয়া হবে। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আলী কোথায়? তাঁকে জানানো হলো যে, তিনি চক্ষুরোগে আক্রান্ত। তখন তিনি ‘আলীকে ডেকে আনতে বললেন। তাকে ডেকে আনা হল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মুখের লালা তাঁর উভয় চোখে লাগিয়ে দিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেলেন যে, তাঁর যেন কোন অসুখই ছিল না। তখন ‘আলী (রাঃ) বললেন, আমি তাদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না তারা আমাদের মত হয়ে যায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সোজা এগিয়ে যাও। তুমি তাদের প্রান্তরে উপস্থিত হলে প্রথমে তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান জানাও এবং তাদের কর্তব্য সম্পর্কে তাদের অবহিত কর। আল্লাহর কসম, যদি একটি ব্যক্তিও তোমার দ্বারা হিদায়াত লাভ করে, তবে তা তোমার জন্য লাল রংয়ের উটের চেয়েও উত্তম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৪২, ৩০০৯, ৩৭০১, ৪২১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬১১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪০৬, আহমাদ ২২৮৮৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদিসে এসেছে,

আবূ ’আবস্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে যে বান্দার পদদ্বয় ধূলায় ধূসরিত হয়, জাহান্নামের আগুন তার পদদ্বয় স্পর্শ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮১১, ৯০৭, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদিসে এসেছে,

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত করা, দুনিয়া ও তার সমুদয় সমস্ত সম্পদ হতে সর্বোত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৮০, সহীহুল বুখারী ৪৬১৫, সুনান আততিরমিযী ১৬৫১, মুসনাদ আহমাদ ১২৩৫০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৬০২, সহীহ আল জামি ৪১৫১, সহীহ আত্ তারগীব ১২৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দাওয়াত না দেয়ার পরিণতি

শয়তান প্রতিনিয়ত সমাজ দূষণে রত থাকে এবং মানুষকে তার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের মাধ্যমে শয়তানের প্ররোচনায় অন্যায়ে প্রলুব্ধ মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে ফিরিয়ে আনা যায়। যদি দাওয়াতের এ মহান দায়িত্ব পালন না করা হয় তবে তাহ’লে আল্লাহ তা‘আলা সকলকে পাকড়াও করবেন। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে জাতিতে কোন লোক পাপে লিপ্ত থাকে, আর ঐ ব্যক্তিকে পাপ থেকে ফেরাতে জাতির লোকেদের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও না ফেরায়, তাহলে তাদের মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৪৩, সুনান আবূ দাঊদ ৪৩৩৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৩১৬, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৬৮৬, আহমাদ ১৮৭৩১, ১৮৭৬৮, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৭০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

হাদিসে এসেছে, 

 আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি সমবেত লোকেদের উদ্দেশে বলেন, হে জনগণ! তোমরা নিশ্চয় এ আয়াতটি পাঠ করেছ, (অর্থাৎ-) ’’হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ওপর এ কথা আবশ্যিক করে নাও, যে পথভ্রষ্ট হয়েছে, সে তোমাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা হিদায়াতের উপর স্থির থাকবে’’। এ সম্পর্কে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মানুষ যখন কোন খারাপ কাজ হতে দেখে, সেটাকে পরিবর্তন করে না, অনতিবিলম্বেই আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর তাঁর ’আযাব নাযিল করবেন।

আর আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর এক বর্ণনায় আছে যে, মানুষ যখন কোন অত্যাচারীকে অত্যাচার করতে দেখেও তার হাত ধরে না ফেলে, অনতিবিলম্বেই আল্লাহ তা’আলা তাকে শাস্তি প্রদান করবেন। ইমাম আবূ দাঊদ-এর অপর এক বর্ণনায় আছে যে, যে জাতির মধ্যে পাপাচার হয়, আর সে জাতির পরিবর্তন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সেটার পরিবর্তন না করে, তাহলে অনতিবিলম্বে আল্লাহ তা’আলা তাকে শাস্তি প্রদান করবেন। তাঁর অপর এক বর্ণনায় আছে যে, যে জাতি পাপাচারে লিপ্ত হয়, আর পাপে লিপ্তদের তুলনায় সাধারণ লোক সংখ্যায় বেশি হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৪২, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০৫, সুনান আততিরমিযী ২১৬৮, সুনান আবূ দাঊদ ৪৩৩৮, সহীহুল জামি‘ ১৯৭৪, আহমাদ ৩০, আবূ ইয়া‘লা ১৩১, অন্য রিওয়ায়তে আবূ দাঊদ ৪৩৩৭, তাখরীজুল মুখতার ৫৪-৫৮, সহীহাহ ১৫৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র এসেছে,

নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি প্রদানের বিষয়ে অলসতা করাকে ঐ সম্প্রদায়ের সাথে তুলনা করা যায়, যারা নৌকায় স্থান পাওয়ার জন্য লটারি করেছে এবং লটারি অনুসারে তাদের কেউ নৌকার নিচে এবং কেউ উপরে বসেছে। নৌকার নিচের লোকেরা উপরের লোকেদের পাশ দিয়ে পানির জন্য গমনাগমন করত, ফলে উপরের লোকেদের কষ্ট হত। একদিন নিচের লোকেদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি কুঠার হাতে নিয়ে নৌকার তলায় কাঠ কোপাতে আরম্ভ করল। তখন উপরের লোকেরা তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, সর্বনাশ! তুমি কি করছ? লোকটি বলল, তোমরা আমাদের কারণে কষ্ট পাচ্ছ। আর আমাদেরও পানি একান্ত প্রয়োজন। এমতাবস্থায় যদি তারা তার হস্তদ্বয় ধরে ফেলে, তাহলে তাকেও রক্ষা করবে, নিজেরাও রক্ষা পাবে। আর যদি তাকে তার কাজের উপরই ছেড়ে দেয়, তাহলে তাকেও ধ্বংস করবে, নিজেদেরকেও ধ্বংস করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৩৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৬৮৬, ২৪৯৩, সুনান আততিরমিযী ২১৭৩, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৬৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৩০৯, আহমাদ ১৮৩৭০, আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১৯৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদিসে এসেছে,

হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ পবিত্র সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, নিম্নোক্ত দু’টো বিষয়ের মধ্যে একটি অবশ্যই হবে। হয় অবশ্যই তুমি সৎকাজের আদেশ দান করবে এবং মন্দকাজ হতে নিষেধ করবে; নতুবা অনতিবিলম্বে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ওপর ’আযাব নাযিল করবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে; কিন্তু তোমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করা হবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৪০, সুনান আততিরমিযী ২১৬৯, সহীহুল জামি ৭০৭০, সহীহ আত্ তারগীব ২৩১৩, আহমাদ ২৩৩০১, আবূ ইয়া‘লা ৫০৩৫, শু‘আবুল ঈমান ৭৫৫৮ হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/২৭৯, আল মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৩৯৭, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ১৩৭৯, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৬৯৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আমলবিহীন দাঈর পরিণতি

মহান আল্লাহ বলেন,

‘হে ঈমানদারগণ তোমরা এমন কথা কেন বল যা তোমরা কর না। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ব্যাপার যে, তোমরা বলবে এমন কথা যা তোমরা কর না’। (সুরা ছফ- ২-৩)।

হাদিসে এসেছে,

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মি’রাজের রাতে আমি বহু লোককে দেখেছি যে, তাদের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে জিবরীল! এরা কারা? জিবরীল (আ.) বললেনঃ এরা আপনার উম্মাতের মধ্যে বক্তাগণ, যারা লোকেদেরকে ভালো কাজের আদেশ করত; কিন্তু নিজেদেরকে ভুলে যেত। অর্থাৎ- নিজেরা সৎকাজ করত না।

ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ)-এর অপর এক বর্ণনায় আছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে এমন সব খত্বীব বা বক্তা হবে, যারা এমন সব কথা বলবে, যা তারা নিজেরা কার্যকর করবে না। তারা আল্লাহ তা’আলার কুরআন পাঠ করবে; কিন্তু সে মতো ’আমল করত না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৪৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৪১৫৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৩২৭, শু‘আবুল ঈমান ৪৯৬৫, আহমাদ ১৩৪২১, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৪০৬৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদিসে এসেছে,

হযরত উসামা ইবনু জায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন একজন লোককে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে, সাথে সাথেই তার পেট থেকে নাড়ী-ভূড়ি বের হয়ে পড়বে। সে নাড়ি-ভূড়িকে কেন্দ্র করে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে যেভাবে আটার চাক্কিকে কেন্দ্র করে গাধা ঘুরতে থাকে, এটা দেখে জাহান্নামবাসীরা তার পাশে জমায়েত হবে। তাকে বলবে, হে অমুক ব্যক্তি! তোমার ঐ অবস্থা কেন? তুমি না আমাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করতে আর অন্যায় কাজ হ’তে নিষেধ করতে? সে বলবে, আমি তোমাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করতাম বটে, কিন্তু আমি তা করতাম না। আর আমি তোমাদেরকে অন্যায় কাজ হ’তে নিষেধ করতাম, অথচ আমিই তা করতাম’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৬৭, ৭০৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৩৬, আহমাদ ২১৭৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৭) পরস্পর সালাম ও মুসাফাহার ফযিলতঃ

পরস্পরে অভিবাদন হলো সালাম। সাক্ষাত হ’লে মুসলিম সালাম বিনিময় করবে। এর মাধ্যমে মহববত বৃদ্ধি হয়। পারস্পারিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। প্রচলিত কথাগুলি বিশেষ করে গুড মর্নিং, গুড নাইট, টাটা, বাই বাই, ইত্যাদি সব জাহেলী প্রথা। এগুলো থেকে বেঁচে থাকা যরূরী। সুতরাং ইসলামী রীতি অনুযায়ী সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটানো মুসলিমদের দায়িত্ব। মহান আল্লাহ বলেন,

‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য কারো গৃহে প্রবেশ করো না। যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নিবে এবং গৃহবাসীদের সালাম দিবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর’। (সুরা নূর ২৪/২৭)।

হাদিসে এসেছে,

’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন্ ’আমলটি উত্তম? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অপরকে খাবার খাওয়াবে এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৬২৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন ১২, ২৮;  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯, আহমাদ ৬৫৮১, ৬৫৪৫, ৬৮০৯, সুনান আননাসায়ী ৫০০০, সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৫৩, সুনান আবূ দাঊদ ৫১৯৪, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৯৪৪, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৭৭৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫০৫, ‘নাসায়ী’র কুবরা ১১৭৩১, শু‘আবুল ঈমান ৩৩৫৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসে এসেছে,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন মু’মিনের ওপর অপর মু’মিনের ছয়টি অধিকার রয়েছে। যথা- ১. যখন কোন মু’মিনের রোগ-ব্যাধি হয়, তখন তার সেবা-শুশ্রূষা করা, ২. কেউ মৃত্যুবরণ করলে, তার জানাযাহ্ ও দাফন-কাফনে উপস্থিত হওয়া, ৩. কেউ দা’ওয়াত করলে তা গ্রহণ করা অথবা কারো ডাকে সাড়া দেয়া, ৪. সাক্ষাতে সালাম প্রদান করা, ৫. হাঁচি দিলে জবাব দেয়া এবং ৬. উপস্থিত-অনুপস্থিত সকল অবস্থায় মু’মিনের কল্যাণ কামনা করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৬৩০, সুনান আন নাসায়ী ১৯৩৮, সুনান আততিরমিযী ২৭৩৭, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৮৩২, আল জামি‘উস্ সগীব ৯৩১৯, সহীহুল জামি‘ ৫১৮৮, আহমাদ ৮২৭১, শু‘আবুল ঈমান ৮৭৫৩, ‘নাসায়ী’র কুবরা ২০৬৫, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ৭১৯, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৯৩৪১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আমল অব্যাহত রাখা

(ক) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন, তখন এক মহিলা তাঁর কাছে (বসে) ছিল। তিনি বললেন, ‘‘এটি কে?’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ বললেন, ‘অমুক মহিলা, যে প্রচুর নামায পড়ে।’ তিনি বললেন, ‘‘থামো! তোমরা সাধ্যমত আমল কর। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়।’’ আর সেই আমল তাঁর নিকট প্রিয়তম ছিল, যেটা তার আমলকারী লাগাতার করে থাকে।

‘আল্লাহ ক্লান্ত হন না’- এ কথার অর্থ এই যে, তিনি সওয়াব দিতে ক্লান্ত হন না। অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে সওয়াব ও তোমাদের আমলের প্রতিদান দেওয়া বন্ধ করেন না এবং তোমাদের সাথে ক্লান্তের মত ব্যবহার করেন না; যে পর্যন্ত না তোমরা নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে আমল ত্যাগ করে বস। সুতরাং তোমাদের উচিত, তোমরা সেই আমল গ্রহণ করবে, যা একটানা করে যেতে সক্ষম হবে। যাতে তাঁর সওয়াব ও তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন থাকে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩, ১১২২, ১১৫১, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৮৭, ৬৪৬১, ৬৪৬২, ৬৪৬৪, ৬৪৬৫, ৬৪৬৬, ৬৪৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭১৯, ১৭১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮৫, নাসায়ী ৭৬২, ১৬২৬, ১৬৪২, ১৬৫২, ২১৭৭, ২৩৪৭, ২৩৪৯, ২৩৫১, ৫০৩৫, আবূ দাউদ ১৩১৭, ১৩৬৮, ১৩৭০, ২৪৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১৭১০, ৪২৩৮, আহমাদ ২৩৫২৩, ২৩৬০৪, ২৩৬৪২, ২৩৬৬০, ৪২৪০৯, ২৫৬০০, রিয়াযুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী- ১/১৪৬)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

(খ)  আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর।” (সূরা হিজর ৯৯ আয়াত)।

(গ) আহমাদ ইবনু ইউসুফ আল আযদী (রহঃ).......'আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবদুল্লাহ! (বেশী বেশী রাত জেগে) তুমিও অমুক ব্যক্তির মতো হয়ে যেও না। সে রাত জেগে জেগে সালাত আদায় করত, অতঃপর রাত জেগে ইবাদাত করা ছেড়ে দিয়েছে।

উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, কোনো আমল শুরু করলে তা ছেড়ে দেয়া যাবে না। আমল অব্যাহত রাখতে হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৫২, ১১৩১, ১১৫৩, ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৮০, ৩৪১৮, ৩৪১৯, ৩৪২০, ৫০৫২, ৫০৫৩, ৫০৫৪, ৫১৯৯, ৬১৩৪, ৬২৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২৬২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫৯, তিরমিযী ৭৭০, নাসায়ী ১৬৩০, ২৩৪৪, ২৩৮৯, ২৩৯০, ২৩৯১, ২৩৯২, ২৩৯৩, ২৩৯৪, ২৩৯৭, ২৩৯৯, ২৪০০, ২৪০১, ২৪০২, ২৪০৩, আবূ দাউদ ১৩৮৮, ১৩৮৯, ১৩৯০, ১৩৯১, ২৪২৭, ২৪৪৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৪৬, ১৭১২, আহমাদ ৬৪৪১, ৬৪৫৫, ৬৪৮০, ৬৭২৫, ৬৭৫০, ৬৭৯৩, ৬৮০২, ৬৮২৩, দারেমী ১৭৫২, ৩৪৮৬, রিয়াযুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী-২/১৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৬০০, ইসলামীক সেন্টার ২৫৯৯)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

অতএব আপনি যে বিষয়ে বছরের পর বছর ধরে আমল করছেন কিন্তু কবুল হচ্ছে না তবুও আমল ছেড়ে দেয়া যাবে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা সেই বিষয়ে কবুল না করলেও হয়তো এর বিনিময়ে অন্য কোনো বিপদ দূর করে দিয়েছেন বা দিবেন। সেটাও যদি না হয় তাহলে পরকালের জন্যে আল্লাহ তায়ালা তা মজুদ করে রেখেছেন। তাই হতাশ হওয়া যাবে না।

বিলম্ব হলেও দোয়া কবুল হয়

আবদুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবান জু’ফী (রহঃ)....ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল্লাহিল হারামের নিকট সালাত আদায় করছিলেন। আবূ জাহল ও তার সাথীরা অদূরে উপবিষ্ট ছিল। পূর্বদিন সেখানে একটি উট নহর করা হয়েছিল। আবূ জাহল বলল, কে অমুক গোত্রের উটের (নাড়ি-ভূড়িসহ) জরায়ুকে নিয়ে আসবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদারত হবে, তখন তার দু’কাঁধের মাঝখানে তা রেখে দেবে? তখন সম্প্রদায়ের সবচাইতে হতভাগা দূরাচার লোকটি উঠে দাঁড়ালো এবং তা নিয়ে আসলো এবং যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় গেলেন তখন তার দু’কাঁধের মাঝখানে তা রেখে দিল। তখন তারা হাসাহসি করতে লাগলো এবং একে অপরের গায়ের উপর ঢলে পড়তে লাগলো, আর আমি তখন দাঁড়িয়ে তা দেখলাম। যদি আমার প্রতিরোধের সাধ্য থাকতো তবে আমি তা অবশ্যই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিঠ থেকে ফেলে দিতাম।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় রইলেন এবং তিনি মাথা উঠাতে পারছিলেন না। অবশেষে একব্যক্তি গিয়ে ফাতিমাহকে খবর দিল। ফাতিমাহ সাথে সাথে আসলেন। আর তিনি তখন বালিকা। তিনি তা তার উপর থেকে ফেলে দিলেন। তারপর তাদের দিকে মুখ করে তাদেরকে মন্দাচারের বিষয়ে বলছিলেন। তারপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত সম্পন্ন করলেন তখন উচ্চস্বরে তাদেরকে বদদুআ দিলেন আর তিনি যখন দু’আ করতেন (সাধারণতঃ) তিনবার করতেন এবং যখন কিছু প্রার্থনা করতেন তখন তিনি তিনবার করতেন।

তারপর তিনি তিন তিনবার বললেন "ইয়া আল্লাহ! তোমার উপরেই কুরায়শদের বিচারের ভার ন্যস্ত করলাম। যখন তারা তার আওয়াজ শুনতে পেল তখন তাদের হাসি চলে গেল এবং তারা তার বদ দু’আয় ভয় পেয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আবূ জাহল ইবনু হিশাম, উতবাহ ইবনু রাবী’আহ, শাইবাহ ইবনু রাবী আহ, ওয়ালীদ ইবনু উকবাহ, উমাইয়াহ ইবনু খালাফ ও উকবাহ ইবনু আবূ মুআয়তের শাস্তির ভার তোমার উপর ন্যস্ত। রাবী বলেন, তিনি সপ্তম আরেকজনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। আমি তা স্মরণ রাখতে পরিনি। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যে পবিত্র সত্তা সত্যসহ রসূলরূপে প্রেরণ করেছেন, তার কসম! তিনি যাদের নাম সেদিন উচ্চারণ করেছিলেন বদরের দিন তাদের পতিত লাশ আমি দেখেছি। তারপর তাদের হেঁচড়িয়ে বদরের একটি নোংরা কূপে নিক্ষেপ করা হয়। আবূ ইসহাক বলেন, ওয়ালীদ ইবনু উকবার নাম এখানে ভুলে হয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৫৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪০, ৫২০, ২৯৩৪, ৩১৮৫, ৩৮৫৪, ৩৯৬০; আহমাদ ৩৭২২ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪৯৮, ইসলামিক সেন্টার ৪৫০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এখানে উল্লেখ্য যে. রাসুল সাঃ বদদোয়া করেছিলেন অনেক আগে আর তার প্রতিফল পেয়েছেন বদরের যুদ্ধে।

আল্লাহ আমাদের সকলকে সহিহভাবে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

(সমাপ্ত)

নিচের বইটি পড়তে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন।

গুণাহ মাফ ও জান্নাত পাওয়ার সহজ আমল-১

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

.......................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...