Thursday, September 26, 2019

প্রতিবেশীর সাথে অসদাচরনের ভয়াবহ পরিনতি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

প্রতিবেশীর সাথে অসদাচরনের ভয়াবহ পরিনতি

 


নিজ প্রতিবেশীকে যে কোনভাবে কষ্ট দেয়া একটি কবীরা গুনাহ্। যে ব্যক্তি নিজ প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় সে সত্যিকারের মুমিন নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

“তোমরা আল্লাহর ’ইবাদাত কর, কিছুকেই তাঁর শরীক করো না এবং মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের আয়ত্তাধীন দাস-দাসীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ লোককে ভালবাসেন না, যে অহংকারী, দাম্ভিক”। (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৬)।

সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে মানুষ পরস্পর একতাবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। বাড়ীর পাশাপাশি বসবাসকারী আত্মীয় বা অনাত্মীয় লোকজনই প্রতিবেশী। মানুষের সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে এরাই সর্বাগ্রে এগিয়ে আসে এবং সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করে। কাজেই এই প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করা জরুরী। প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ককে সৌহার্দ্যপূর্ণ, আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল করার লক্ষ্যে ইসলাম বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ প্রতিটি মানুষের জন্য অবশ্য পালনীয়।

প্রতিবেশীর পরিচয়

প্রতিবেশীর আরবী প্রতিশব্দ جار (জার) এবং ইংরেজী প্রতিশব্দ Neighbour. পারিভাষিক অর্থে- A person who lives next to you or near you. ‘তোমার পরে বা পার্শ্বে বসবাসকারী লোক।

ইবনুল মানযূর বলেন, ‘প্রতিবেশী হচ্ছে যে ব্যক্তি আইনত তোমার পার্শ্বে অবস্থান করছে, সে মুসলিম হোক বা কাফের, পুণ্যবান হোক বা পাপী, বন্ধু হোক বা শত্রু, দানশীল হোক বা কৃপণ, উপকারী হোক বা অনিষ্টকারী, আত্মীয় হোক বা অনাত্মীয়, দেশী হোক বা বিদেশী। (লিসানুল আরব ৪/১৫৩-৫৪ পৃঃ)।

প্রতিবেশী গণ্য হওয়ার সীমা

কত দূর এলাকার অধিবাসীরা প্রতিবেশী হিসাবে গণ্য হবে এ সম্পর্কে বিভিন্ন অভিমত পাওয়া যায়। যেমন-

 (১) হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, নিজের ঘর থেকে সামনের চল্লিশ ঘর, পেছনের চল্লিশ ঘর, ডানের চল্লিশ ঘর এবং বামের চল্লিশ ঘর তোমাদের প্রতিবেশী। (আদাবুল মুফরাদ ১০৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(২) কেউ বলেন, চারিদিকের দশ ঘর প্রতিবেশী হিসাবে গণ্য হবে।

(৩) কেউ বলেন, যে ব্যক্তি ডাক শুনতে পায় সে প্রতিবেশী।

(৪) যে অতি নিকটে বা পাশাপাশি থাকে সে প্রতিবেশী।

(৫) কেউ বলেন, প্রতিবেশী হচ্ছে যারা একই মসজিদে সমবেত হয়। (মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম আল-হামদ, আত-তাক্বছীর ফী  হুকূকিল জার, ১/১ পৃঃ)।

প্রতিবেশীর প্রকারভেদ

দূরত্বের বিবেচনায় প্রতিবেশী দু’প্রকারঃ-

১. নিকটবর্তী প্রতিবেশী,

২. দূরবর্তী প্রতিবেশী। (সুরা নিসা ৪/৩৬)।

ধর্মীয় ও আত্মীয়তার সম্পর্কের দিক দিয়ে প্রতিবেশী ৩ প্রকারঃ- যথা-

১. মুসলিম আত্মীয় প্রতিবেশী,

২. মুসলিম অনাত্মীয় প্রতিবেশী,

৩. অমুসলিম প্রতিবেশী।

আচার-আচরণের দৃষ্টিতে প্রতিবেশী দুই প্রকারঃ-

১. উত্তম প্রতিবেশী ও

২. নিকৃষ্ট প্রতিবেশী।

উত্তম প্রতিবেশী সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ)

বলেন,

নাফে ইবনুল হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ একজন মুসলিমের জন্য প্রশস্ত বাসভবন, সৎ প্রতিবেশী ও আরামদায়ক বাহন সৌভাগ্যের নিদর্শন।  (আদাবুল মুফরাদ হা/১১৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৯১৪, ২৫৭৬, সনদ ছহীহ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর নিকট সেই সঙ্গী উত্তম যে নিজ সঙ্গীদের নিকট উত্তম। আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী উত্তম যে নিজ প্রতিবেশীদের নিকট উত্তম। (আদাবুল মুফরাদ হা/১১৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৭০; ছহীহাহ হা/১০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

পক্ষান্তরে নিকৃষ্ট প্রতিবেশী হতে রাসূল (ছাঃ) দো‘আ করতেন এই বলে,

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি দোয়া হলোঃ “হে আল্লাহ! আমি (আমার ) আবাসস্থলে তোমার নিকট দুষ্ট প্রতিবেশী থেকে আশ্রয় চাই। কেননা দুনিয়ার প্রতিবেশী তো বদল হতে থাকে”। (আদাবুল মুফরাদ হা/১১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

প্রতিবেশী সম্পর্কে বিশেষ তাকীদ

’আয়িশাহ্ ও ইবনু ’উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জিবরীল (আ.) সর্বদা আমাকে প্রতিবেশীর অধিকার পূর্ণ করার উপদেশ দিতে থাকতেন। এমনকি আমার ধারণা হয়েছিল যে, তিনি প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী ঠিক করে দেবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৬৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০১৪, ৬০১৫, , সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬২৫, সুনান আততিরমিযী ১৯৪৩, সুনান আবূ দাঊদ ৫১৫২, সহীহুল জামি ১০৫৬৫, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৭৪, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৯৫, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৫৬ মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আসার ২৫৬৫, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ১৯৭৪৫, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৪১৭, মুসনাদুল বাযযার ২৩৮৮, আহমাদ ২৪২৬০০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১২, শু‘আবুল ঈমান ৯৫৬২, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/৩০৭, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৩১৫৯, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩৬০৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিকার

প্রতিবেশী আত্মীয় হোক অথবা অনাত্মীয়, মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম যে কোন অবস্থায় সাধ্যানুযায়ী তাদের সাহায্য-সহায়তা করা ও তাদের খোঁজ-খবর নেয়া যরূরী। তাদের সাথে উত্তম আচরণ করা আল্লাহর নির্দেশ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

‘আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকটবর্তী প্রতিবেশী ও দূরবর্তী প্রতিবেশী, সহকর্মী, পথিক ও দাস-দাসীর সাথে ভাল ব্যবহার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অহংকারী-দাম্ভিককে পসন্দ করেন না’। (সুরা নিসা ৪/৩৬)।

এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা পিতামাতার সাথে ভাল ব্যবহারের নির্দেশ দানের পাশাপাশি নিকটবর্তী ও দূরবর্তী প্রতিবেশীর সাথেও উত্তম ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা প্রতিবেশীরাই মানুষের বিপদ-আপদে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসে। তাই এসব লোকের সাথে ভাল আচরণ করা সকলের জন্য অবশ্য কর্তব্য।

আবূ শুরায়হ আল-খুযাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সমাদর করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, অন্যথায় নীরব থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৬৭২,  ৩২৭৫, সহীহুল বুখারী ৬০১৯, ৬১৩৫, ৬৪৭৬, মুসলিম ৪৮, তিরমিযী ১৯৬৭, ১৯৬৮, আবূ দাউদ ৩৭৪৮, আহমাদ ১৫৯৩৫, ২৬৬১৮, ২৬৬২০, মুয়াত্তা মালেক ১৭২৮, দারেমী ২০৩৫, ২০৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

অন্যত্র রাসুল সাঃ বলেন,

আবু হুরায়রাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কে এ বাক্যগুলো আমার নিকট হতে গ্রহণ করবে? অতঃপর নিজে সে মতো ’আমল করবে অথবা এমন ব্যক্তিকে শিখিয়ে দেবে যে সে অনুযায়ী আমল করে। আমি বললাম : আমি হে আল্লাহর রাসূল! এরপর তিনি (সা.) আমার হাত ধরে পাঁচটি গণনা করলেন। তিনি (সা.) বললেন : ১. আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হতে বেঁচে থাকো, এতে তুমি হবে মানুষের মাঝে উত্তম ইবাদাতকারী, ২. আল্লাহ তোমার তাকদিরে যা বন্টন করেছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকবে, এতে তুমি হবে মানুষের মাঝে সর্বাপেক্ষা ধনবান, ৩. তোমার প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করবে, এতে তুমি হবে পূর্ণ ঈমানদার, ৪. নিজের জন্য যা পছন্দ করো মানুষের জন্যও তা পছন্দ করবে, তখন তুমি হবে পূর্ণ মুসলিম এবং ৫. বেশি হাসবে না; কেননা বেশি হাসি অন্তরকে মেরে ফেলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৭১, সুনান আততিরমিযী ২৩০৫, মুসনাদে আহমাদ ৮০৮১, সহীহুল জামি ১০০, সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ২৩৪৯, সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৩০, আবু ইয়া'লা ৬২৪০, শুআবুল ঈমান ১১১২৮, আল মু'জামুস্ সগীর লিত্ব তবারানী ৮৮৮, আল । মু'জামুল আওসাত্ব ৭০৫৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করার মধ্যেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর ভালবাসা নিহিত আছে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

আবদুর রহমান ইবনু আবূ কুরাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ করলেন। সাহাবায়ে কিরাম তাঁর উযূর পানি স্বীয় শরীরে মর্দন করতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে বললেনঃ কিসে তোমাদেরকে এ কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করল? সাহাবায়ে কিরাম বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূল-এর ভালোবাসা। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যার আন্তরিক বাসনা যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালোবাসবে অথবা আল্লাহ ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ভালোবাসবেন, সে যেন যখন কথা বলে সত্য বলে, যখন তার কাছে গচ্ছিত রাখা হয় সে তা যথারীতি ফেরত দেয় এবং যার প্রতিবেশী আছে, সে প্রতিবেশীর সাথে প্রতিবেশীসুলভ উত্তম আচরণ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৯০, শু‘আবুল ঈমান লিল বায়হাক্বী ১৫৩৩, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৯৯৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেওয়া

সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে ও সুখী-সমৃদ্ধশালী জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর সাথে উত্তম ব্যবহার করা যরূরী। নিজেকে নিয়ে যে সদা ব্যস্ত থাকে, নিজের স্বার্থ ব্যতীত যে অন্য কিছুই ভাবে না, প্রতিবেশীর বিপন্ন ও দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা, হৃদয়গ্রাহী হাহাকার, করুণ আর্তনাদ যার মনে রেখাপাত করে না, এমনকি স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে তাদেরকে কষ্ট দিতে কুন্ঠিত হয় না, সে পূর্ণ মুমিন হতে পারে না।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে জ্বালাতন না করে। যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা চুপ থাকে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০১৮, ৫১৮৫; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭, আহমাদ ৭৬৩০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

প্রতিবেশীর সাথে খারাপ আচরণ করা পাপ। এমনকি তা ঈমানহীনতার পরিচায়ক। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার হবে না, আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার হবে না, আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার হবে না। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কে সে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যার প্রতিবেশী তার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৭০, ৬০১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৬, সহীহুল জামি ৭১০২, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৫০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩০০০, আহমাদ ৭৮৭৮, শু‘আবুল ঈমান ৯৫৩৪, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৭৯৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশীকে কষ্ট দানকারী ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না।  রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৬, সহীহুল জামি ৭৬৭৫, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৮৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৭৫, আহমাদ ৮৮৫৫, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৪৯০, শু‘আবুল ঈমান ৯৫৩৫, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/২৪, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৪০১, আল মুসতাদরাক ২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অপর একটি হাদীছে এসেছে,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল : হে আল্লাহর রসূল! অমুক মহিলা সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে, সে বেশি বেশি সালাত আদায় করে, সওম পালন করে এবং দান-দক্ষিণায় খুব প্রসিদ্ধি লাভ করেছে; কিন্তু নিজের মুখ দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে জাহান্নামে যাবে। লোকটি জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! অমুক মহিলা, যার সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে, সে কম সওম পালন করে, কম দান-দক্ষিণা করে এবং কম সালাত আদায় করে। সে শুধু কয়েক টুকরো পনির আল্লাহর রাস্তায় দান করে; কিন্তু নিজের কথার দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে জান্নাতে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৯২, বায়হাক্বী ৯৫৪৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৯০, আহমাদ ৯৬৭৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৭৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৬০, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া-বিবাদ না করা

প্রতিবেশীর সাথে কোন বিষয় নিয়ে বাক-বিতন্ডা ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। কেননা এতে উভয়ের মাঝে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তাছাড়া এর জন্য ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে বিচারের সম্মুখীন হ’তে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, 

উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’আলার আদালতে যে মামলার বিচার হবে, তা হলো দুই প্রতিবেশীর ঝগড়ার মামলা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০০০, আহমাদ ১৭৩৭২, সহীহুল জামি‘ ২৫৬৩, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৫৭, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৪২৫২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

প্রতিবেশীকে নির্যাতন করে গৃহত্যাগে বাধ্য না করা

প্রতিবেশীকে কষ্ট দিতে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন এবং কষ্ট দানকারীকে ঈমানহীন বলে অভিহিত করেছেন। এরপরও প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া ও নির্যাতন করে গৃহত্যাগে বাধ্য করা অতি বড় গোনাহের কাজ।

আবু আমের আল-হিমসী (রহঃ) বলেন, সাওবান (রাঃ) বলতেন, দুই ব্যক্তি তিন দিনের অধিক কাল সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকলে তাদের একজনের সর্বনাশ হবেই। আর সম্পর্কচ্ছেদরত অবস্থায় তারা মারা গেলে উভয়ে সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে প্রতিবেশী তার অপর প্রতিবেশীকে নির্যাতন করে বা তার সাথে হীন আচরণ করে, ফলে তাতে সে নিজ বাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়, সে ধ্বংস হলো। (আদাবুল মুফরাদ হা/১২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেওয়া

হাদিয়া প্রদানের ক্ষেত্রে নিকটতম প্রতিবেশীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, অর্থাৎ হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার দু’জন প্রতিবেশী আছে। আমি তাদের কার নিকট উপঢৌকন পাঠাব? রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘যার দরজা (বাড়ী) তোমার বেশী নিকটবর্তী’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৫৯, ২৫৯৫, ৬০২০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ  ২১১৬, আদাবুল মুফরাদ হা/১০৭-১০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বাড়ীতে ভাল কোন খাদ্য বা তরকারী পাক হলে তাতে প্রতিবেশীকে শরীক করা রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ দিতেন।

আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন তরকারী রান্না করো, পানি একটু বেশী করে দিও এবং প্রতিবেশীর প্রতি লক্ষ্য রেখ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৩৭, দারিমী ২১২৪, শু‘আবুল ঈমান ৯০৯২, আল-আদাবুল মুফরাদ ১১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশী যে ধর্মেরই হোক না কেন সকলেই উত্তম আচরণ পাবার অধিকারী

বাড়ীতে কোন ভাল জিনিস তৈরী হলে কিংবা পশু-পাখি যবেহ করা হ’লে তার গোশ্ত মুসলমান প্রতিবেশীর ন্যায় বিধর্মী প্রতিবেশীর বাড়ীতেও প্রেরণ করা উচিত।

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তখন তার গোলাম ছাগলের চামড়া ছাড়াচ্ছিলো। তিনি বলেন, হে বালক! অবসর হয়েই তুমি প্রথমে আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে মাংস দিবে। এক ব্যক্তি বললো, ইহুদী! আল্লাহ আপনাকে সংশোধন করুন। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রতিবেশী সম্পর্কে উপদেশ দিতে শুনেছি। এমনকি আমাদের আশংকা হলো বা আমাদের নিকট প্রতিভাত হলো যে, তিনি অচিরেই প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানাবেন। (আদাবুল মুফরাদ ১২৭,  দারিমী, তিরমিযী)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশীর জন্য নিজের পছন্দনীয় বস্তু এখতিয়ার করা

নিজের জন্য যা পসন্দ করবে, প্রতিবেশীর জন্যও তাই পছন্দ করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ)....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা যা পছন্দ করো তা অন্য ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করবে। আরো বর্ণনায় রয়েছে, প্রতিবেশীর জন্যও পছন্দ করবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৫, ছহীহুল জামে ৭০৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে নিজে ভুরিভোজ না করা

দুঃখ-দৈন্য, অভাব-অনটন মানব জীবনের নিত্যসঙ্গী। এসব দিয়ে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন। আবার ধনী-দরিদ্রও আল্লাহ করে থাকেন। সুতরাং দরিদ্র প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেওয়া আবশ্যক। প্রতিবেশী অভুক্ত থাকলে তাকে খাদ্য না দিয়ে নিজে পেট পুরে খাওয়া ঈমানদারের পরিচয় নয়। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)বলেন,

ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, সে ব্যক্তি পূর্ণ মু’মিন নয়, যে উদরপূর্তি করে খায় অথচ তার পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৯১, শু‘আবুল ঈমান ৩৩৮৯, সহীহুল জামি‘ ৫৩৮২, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১২৫৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৬১, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ২৬৯৯, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০১৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

প্রতিবেশীর দাওয়াত কবুল করা

সমাজের মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক ও আন্তরিকতা সামাজিক বন্ধনকে সুদূঢ় করে। আর পরস্পরকে দাওয়াত দিলে হৃদ্যতা বৃদ্ধি পায়। দাওয়াত কবুল করা রাসূলের নির্দেশও বটে। রাসুল সাঃ জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাউকেও খাবার আয়োজনে দা’ওয়াত দিলে, সে যেন গ্রহণ করে। তবে ইচ্ছা থাকলে খাবে, অন্যথায় খাবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩২১৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৪১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৩০, সুনান আবূ দাঊদ ৩৭৪০, সুনান ইবনু মাজাহ ১৭৫১, আহমাদ ১৫২১৯, সহীহ আত্ তারগীব ২১৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন তোমাদের কাউকে আহার করার জন্য ডাকা হয়, অথচ সে রোযাদার, তখন সে যেন বলে, আমি রোযাদার। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৭৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৫৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫০, সুনান আততিরমিযী ৭৮১, সুনান আবূ দাউদ ২৪৬১,আহমাদ ৭২৬২, দারেমী ১৭৩৭, সহীহাহ ১৩৪, ইরওয়াহ ১৯৫৩, সহীহ আবী দাউদ ২১২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুসলমানের ছয়টি হকের অন্যতম হচ্ছে দাওয়াত কবুল করা।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমের ওপর মুসলিমের ছয়টি হক (অধিকার) আছে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! এ অধিকারগুলো কি কি? জবাবে তিনি বলেন, (১) কোন মুসলিমের সাথে দেখা হলে, সালাম দেবে, (২) তোমাকে কেউ দা’ওয়াত দিলে, তা কবূল করবে, (৩) তোমার কাছে কেউ কল্যাণ কামনা করলে তাকে কল্যাণের পরামর্শ দেবে, (৪) হাঁচি দিলে তার জবাব ইয়ারহামুকাল্ল-হ বলবে, (৫) কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাবে, (৬) কারো মৃত্যু ঘটলে তার জানাযায় শরীক হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৬২, আহমাদ ৮৮৪৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০৯০৯, শু‘আবুল ঈমান ৮৭৩৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪০৫, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৯৯১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৯৪, সহীহ আল জামি‘ ৩১৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশীর সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ্য রাখা

প্রতিবেশীর সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ্য রাখা ইসলামের নির্দেশ। এমনকি নিজের কিছুটা ক্ষতি হ’লেও প্রতিবেশীর সুবিধা করে দেওয়া ও তার অসুবিধা না করার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো প্রতিবেশী যেন তার কোনো প্রতিবেশীকে দেয়ালে কড়িকাঠ গাড়তে বারণ না করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৬৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৬৩, ৫৬২৮, ৫৬২৭) সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪০২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬০৯, সুনান আবূ দাঊদ ৩৬৩৪, সুনান আততিরমিযী ১৩৫৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৩৫, সহীহ আল জামি‘ ৭৭৮৪, (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশীর জান-মাল, ইয্যত-আব্রু হেফাযত করা

প্রতিবেশীর মান-সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রাখা যেমন যরূরী, তেমনি মাল-সম্পদ হেফাযত করাও অবশ্য কর্তব্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সে-ই মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ এবং সে-ই প্রকৃত মুহাজির, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে ত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০, ৬৪৮৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০, আহমাদ ৬৭৬৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদীছে এসেছে,

মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে যেনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বলেন, হারাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তা হারাম করেছেন। তিনি বলেনঃ কোন ব্যক্তির দশটি নারীর সাথে যেনায় লিপ্ত হওয়া তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তার যেনা করার চেয়ে হালকা (পাপ)। পুনরায় তিনি তাদেরকে চুরি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলেন, হারাম, মহামহিম আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তা হারাম করেছেন। তিনি বলেনঃ কোন ব্যক্তির দশ পরিবারে চুরি করা তার প্রতিবেশীর ঘরে চুরি করার চেয়ে হালকা (অপরাধ)। (আদাবুল মুফরাদ ১০২; সিলসিলা ছহীহাহ ৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশীর দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা

মানুষ দোষ-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। ভাল এবং মন্দগুণের সমন্বয়ে মানুষ। প্রতিবেশীর দোষ গোপন রাখা অবশ্য কর্তব্য। কেননা মুসলিম ভাইয়ের দোষ গোপন রাখলে আল্লাহ ক্বিয়ামতে তার দোষ গোপন রাখবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৯, সুনান আততিরমিযী ১৪২৫, ১৯৩০, ২৯৪৫, সুনান আবূ দাউদ ৪৯৪৬, আহমাদ ৭৩৭৩, ৭৩৭৯, ৭৬৪৪, ৭৮৮২, ২৭৪৮৪, ৮৯৯৫, ১০১১৮, ১০২৯৮, ১০৩৮২, সহীহাহ ২৩৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 অন্যত্র তিনি আরো বলেন, ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন (অপরাধের) বিষয় গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার গুপ্ত (অপরাধের) বিষয় গোপন রাখবেন। আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন বিষয় ফাঁস করে দিবে, আল্লাহ তার গোপন বিষয় ফাঁস করে দিবেন, এমনকি এই কারণে তাকে তার ঘরে পর্যন্ত অপদস্থ করবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪৬, আত-তালীকুর রাগীব৩/১৭৬, সহীহাহ ২৩৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশীর প্রতি অনুগ্রহ করা ও তাকে কর্যে হাসানা প্রদান করা

পার্থিব জীবনে মানুষ অপরের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না। এজগতে কোন মানুষই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। বরং সে কোন না কোন ক্ষেত্রে অপরের মুখাপেক্ষী। প্রতিবেশীর কাজে সাধ্যমত সহায়তা করা তার প্রতি দয়ার বহিঃপ্রকাশ। আর মানুষের প্রতি মানুষের দয়া-অনুগ্রহে সমাজ সুন্দর হয়; আল্লাহর রহমত লাভ হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৪৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৩৭৬, ৬০১৩,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৯২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩১৯, সুনান আততিরমিযী ১৯২২, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৭১, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৩৬৩, আর মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬৫৫৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৮৩৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশী কখনও সমস্যায় পড়লে কর্যে হাসানা দিয়ে তাকে সাহায্য করা উচিত। তাকে কর্যে হাসানা দিয়ে সাহায্য করলে আল্লাহ তা‘আলা সাহায্যকারীকেও সাহায্য করবেন। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মু’মিনের দুনিয়ার বিপদসমূহের কোন একটি বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তা’আলা তার আখিরাতের বিপদসমূহের মধ্য হতে একটি (কঠিন) বিপদ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত লোকের অভাব (সাহায্যের মাধ্যমে) সহজ করে দিবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিনে তাকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করবেন। যে ব্যক্তি কোন মু’মিনের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে (প্রকাশ করবে না), আল্লাহ তা’আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে। যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের জন্য কোন পথ বা পন্থায় অনুপ্রবেশ করার সন্ধান করে, আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে তার জান্নাতে প্রবেশ করার পথ সহজ করে দেন। যখন কোন দল আল্লাহর কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং জ্ঞানচর্চা করে, তাদের ওপর আল্লাহর তরফ থেকে স্বস্তি ও প্রশান্তি নাযিল হতে থাকে, আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয় এবং মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তাদেরকে ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তা’আলা মালায়িকাহ্’র নিকট তাদের উল্লেখ করেন। আর যার ’আমল তাকে পিছিয়ে দেয় তার বংশ তাকে এগিয়ে দিতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রয়োজনে প্রতিবেশীকে কর্যে হাসানা প্রদান করা। এটা এমন একটি সৎকাজ যার কারণে আল্লাহ দাতাকে অনেক পুণ্য দান করে থাকেন। এর ছওয়াব বহুগুণ হয় এবং এর দ্বারা অপরাধ ক্ষমা করা হয়। মহান আল্লাহ্ তা‘আলা

বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তিনি তোমাদের জন্যে তা দ্বিগুণ করে দিবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন’। (সুরা তাগাবুন ১৭)।

সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য সাধ্যমত অভাবী প্রতিবেশীকে কর্যে হাসানা প্রদান করা।

কর্যে হাসানার ফযীলত সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ছাদাক্বার ছওয়াব দশগুণ এবং কর্যে হাসানার ছওয়াব আঠারগুণ’। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৪০৭)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন, ‘যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি তার অপর কোন মুসলিম ভাইকে দু’বার ঋণ প্রদান করে তবে তার আমলনামায় এ অর্থ একবার ছাদাক্বা করে দেয়ার সমান ছওয়াব লিখা হবে’। (ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭৬৯, সনদ ছহীহ)।

অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি লোকেদেরকে ধার দিত। সে তার কর্মচারীকে বলে দিত, কোনো পাওনাদারকে (ঋণ পরিশোধে) অক্ষম দেখলে তাকে মুক্তি দিয়ে দিও। এর ওয়াসীলায় হয়তো আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে মুক্তি দিবেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ অতঃপর (মৃত্যুর পর) ঐ ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে পৌঁছলে আল্লাহ তা’আলা তাকে মুক্তি করে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৭৮,  ৩৪৮০, মুসলিম ১৫৬২, আহমাদ ৭৫৭৯, সহীহ আল জামি ৪৪৫৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯৩৩ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র তিনি বলেন,

আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এ কামনা করে যে, আল্লাহ তা’আলা তাকে কিয়ামত দিবসের দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি দেন, সে যেন অক্ষম ঋণগ্রস্তকে সহজ উপায় করে দেয় অথবা ঋণ মাওকূফ করে দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৮৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৩, সহীহ আত্ তারগীব ৯০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ কাতাদাহ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অক্ষম ঋণীকে সময় দিবে অথবা ঋণ মাওকূফ করে দেবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামত দিবসের দুঃখ-কষ্ট হতে তাকে মুক্তি দান করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৮৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

আবুল ইয়াসার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অক্ষম ঋণীকে সময়দান করবে অথবা তার ঋণ মাওকূফ করবে, আল্লাহ তা’আলা (কিয়ামত দিবসে) তাকে তাঁর ছায়া দান করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯০৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৪০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩০০৬, আহমাদ ১৫৫২১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫০৪৪, সহীহ আল জামি‘ ৬১০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭২৪০, ইসলামিক সেন্টার ৭২৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশীর অসুস্থতায় দেখতে যাওয়া ও সেবা করা

রোগাক্রান্ত ও অসুস্থ হ’লে মানুষ অসহায় ও শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় কোথাও যেতে পারে না। বিছানায় শুয়ে শুয়ে তার সময় কেটে যায়। এমতাবস্থায় কেউ পাশে গিয়ে সান্ত্বনা দিলে সে স্বস্তি বোধ করে। অনুরূপভাবে অসুস্থ প্রতিবেশীকে দেখতে গেলে তাকে সে আপন মনে করে। তাছাড়া অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেয়া মুসলমানের অন্যতম দায়িত্ব। রোগীর দেখা-শোনা ও সেবা-শুশ্রূষাকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্ষুধার্থকে খাবার দিও, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেও, বন্দী ব্যক্তিকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৩৭৩, ৫৬৪৯, ৩০৪৬, সুনান আবূ দাঊদ ৩১০৫, আহমাদ ১৯৫১, সুনানুল কুবরা লিল নাসায়ী ৮৬১৮, ইবনু হিব্বান ৩৩২৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৭৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৯ম খন্ড/৪৮৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রোগীকে দেখতে যাওয়া ও সেবা-শুশ্রূষা করা বিরাট পূণ্যের কাজও বটে। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, 

সাওবান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম তার অসুস্থ কোন মুসলিম ভাইকে দেখার জন্য যখন চলতে থাকে, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৮, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৬৭, আহমাদ ২২৪৪৪, ইবনু হিব্বান ২৯৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৭৫, সহীহ আল জামি‘ ১৯৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,

 আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম তার কোন ভাইয়ের রোগ দেখতে যায় অথবা সাক্ষাৎ করতে যায়, তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমার জীবন সুখের হলো, তোমার চলন উত্তম হলো এবং তুমি জান্নাতে একটি ইমারত বানিয়ে নিলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০১৫, সুনান আততিরমিযী ২০০৮, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৭৮, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ২৬২, রিয়াযুস্ সলিহীন ৩৬৬, আহমাদ ৮৫৩৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৯৬১, শু‘আবুল ঈমান ৯০২৬, সহীহুল জামি‘ ৬৩৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, 

সুওয়াইর (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমার হাত ধরে আলী (রাঃ) বললেন, আমার সাথে চল, অসুস্থ হুসাইনকে দেখে আসি। আমরা তার নিকটে গিয়ে মূসা (রাঃ)-কে হাযির পেলাম। আলী (রাঃ) বললেন, হে আবু মূসা। আপনি কি রোগী দেখতে এসেছেন না এমনি বেড়াতে এসেছেন? তিনি বললেন, না, রোগী দেখতে এসেছি। আলী (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছিঃ কোন মুসলিম যদি অন্যকোন মুসলিম রোগীকে সকাল বেলা দেখতে যায় তাহলে সত্তর হাজার ফিরিশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দুআ করতে থাকে। সে যদি সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যায় তবে সত্তর হাজার ফিরিশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দু’আ করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরী হয়। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৯৬৯, সহীহাহ ১৩৬৭, আর-রা ওয ১১৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশীর দুঃখ-শোকে সান্ত্বনা দেওয়া

প্রতিবেশীর যে কোন দুঃখ-শোকে তার পাশে দাঁড়ানো, তার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা এবং তাকে সান্ত্বনা প্রদান করা নেকীর কাজ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

আমর ইবন হাযম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি তার মু’মিন ভাইকে তার বিপদে সান্ত্বনা দিবে, আল্লাহ্ তা’আলা কিয়ামতের দিন তাকে সম্মানের পোশাক পরাবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৬০১, ইরওয়াহ ৭৬৪, সহীহায় নতুন ছাপা ১৯৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

প্রতিবেশীর জানাযায় অংশগ্রহণ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমের ওপর মুসলিমের ছয়টি হক (অধিকার) আছে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! এ অধিকারগুলো কি কি? জবাবে তিনি বলেন, (১) কোন মুসলিমের সাথে দেখা হলে, সালাম দেবে, (২) তোমাকে কেউ দা’ওয়াত দিলে, তা কবূল করবে, (৩) তোমার কাছে কেউ কল্যাণ কামনা করলে তাকে কল্যাণের পরামর্শ দেবে, (৪) হাঁচি দিলে তার জবাব ইয়ারহামুকাল্ল-হ বলবে, (৫) কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাবে, (৬) কারো মৃত্যু ঘটলে তার জানাযায় শরীক হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৬২, আহমাদ ৮৮৪৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০৯০৯, শু‘আবুল ঈমান ৮৭৩৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪০৫, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৯৯১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৯৪, সহীহ আল জামি‘ ৩১৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক মুসলিমের ওপর আর এক মুসলিমের পাঁচটি হক বর্তায়। (১) সালামের জবাব দেয়া, (২) রোগ হলে দেখতে যাওয়া, (৩) জানাযায় শামিল হওয়া, (৪) দা’ওয়াত গ্রহণ করা ও (৫) হাঁচির জবাব দেয়া। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৪০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৬২,, আহমাদ ১০৯৬৬, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৯৯৭৮, আমলুল ইওয়ামে ওয়াল লায়লাহ্ ২২১, ইবনু হিব্বান ২৪১, সহীহ আত্ তারগীব ২১৫৬, সহীহ আল জামি ৩১৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জানাযায় অংশগ্রহণে প্রতিবেশীর হক যেমন আদায় হয়, তেমনি এতে অশেষ ছওয়াব রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের জানাযায় ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে অংশগ্রহণ করে, এমনকি তার জানাযার সালাত আদায় করে কবরে দাফন করা পর্যন্ত সাথে থাকে। এমন ব্যক্তি দু’ ক্বীরাত্ব সাওয়াব নিয়ে ঘরে ফেরে। প্রত্যেক ক্বীরাত্ব উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি শুধু জানাযার সালাত আদায় করে দাফন করার আগে ফিরে সে এক ক্বীরাত্ব সাওয়াব নিয়ে ফিরে এলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪৫, নাসায়ীর ৫০৩২, আহমাদ ৯৫৫১, ইবনু হিব্বান ৩০৮০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৯৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশীর মৃত্যু হলে তার পরিবারের জন্য খাদ্য সরবরাহ করা

কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার পরিবার-পরিজন শোকে মুহ্যমান থাকে। ঐ সময় পাড়া-প্রতিবেশীদের কর্তব্য হলো তাদেরকে খাদ্য সরবরাহ করা।

আবদুল্লাহ্ ইবনু জা’ফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জা’ফর (রাঃ)-এর শহীদ হওয়ার সংবাদ এসে পৌছলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা জা’ফরের পরিবারের জন্য খাদ্য তৈরি করো। কেননা তাদের উপর এমন বিপদ অথবা বিষয় এসেছে যা তাদের ব্যস্ত রেখেছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৬১০, সুনান আততিরমিযী ৯৯৮; আহমাদ ৩১৩২ মিশকাত ১৭৩৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

প্রতিবেশীর অসদাচরণের প্রতিকার

কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দিলে তার প্রতিকার কৌশলে করা উচিত। এ মর্মে হাদীছে এসেছে,

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার এক প্রতিবেশী আছে, সে আমাকে পীড়া দেয়। তিনি বলেনঃ তুমি ফিরে গিয়ে তোমার ঘরের আসবাবপত্র রাস্তায় ফেলে দাও। অতএব সে ফিরে এসে তার ঘরের আসবাবপত্র বাইরে ফেলে দিলো। এতে তার ঘরের সামনে লোকজন জড়ো হলো। তারা জিজ্ঞেস করলো, তোমার কি হয়েছে? সে বললো, আমার এক প্রতিবেশী আছে, সে আমাকে কষ্ট দেয়। আমি তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বললে তিনি বলেনঃ যাও, ঘরে গিয়ে তোমার আসবাবপত্র রাস্তায় ফেলে দাও। তখন তারা বলতে লাগলো, “হে আল্লাহ! তার উপর তোমার অভিসম্পাত, হে আল্লাহ! তাকে লাঞ্ছিত করো”। বিষয়টি প্রতিবেশী জানতে পেরে সেখানে এসে বললো, তুমি তোমার ঘরে ফিরে যাও। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে আর কষ্ট দিবো না। (আদাবুল মুফরাদ ১২৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অন্য হাদীছে এসেছে, আবু জুহায়ফা (রাঃ) বলেন,

আবু জুহাইফা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অভিযোগ করলো। তিনি বলেনঃ তুমি তোমার মালপত্র তুলে রাস্তায় রেখে দাও। যে লোকই সেই পথ দিয়ে যাবে সে-ই তাকে অভিশাপ দিবে। অতএব যে লোকই সেই পথে গেলো সে-ই তাকে অভিশাপ দিলো। তখন সেই ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলে তিনি বলেনঃ লোকদের নিকট থেকে তুমি কি পেলে? তিনি আরো বলেনঃ লোকজনের অভিসম্পাতের সাথে রয়েছে আল্লাহর অভিশাপ। অতঃপর তিনি অভিযোগকারীকে বলেনঃ তোমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে। (আদাবুল মুফরাদ ১২৪)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

প্রতিবেশীদের মাঝে ন্যায়বিচার করা

প্রতিবেশীদের মাঝে কোন বিষয়ে সমস্যা দেখা দিলে ন্যায়সঙ্গতভাবে এর সমাধান করা ইসলামের নির্দেশ। এতে ছাদাক্বার ছওয়াব পাওয়া যায়। বিবাদ মীমাংসার জন্য আল্লাহর নির্দেশ, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমাদের ভাইদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আশা করা যায় তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে’। (সুরা হুজুরাত ৪৯/১০)।

প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হ’লে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে; আর তাদের একদল অপর দলের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করলে যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে, তাহ’লে তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে ফায়ছালা করে দিবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালবাসেন’। (সুরা হুজুরাত ৪৯/৯)।

বিবাদ মীমাংসা করা শরী‘আতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পুণ্যের কাজ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে সিয়াম, সালাত ও সাদাকাহর চেয়েও ফাযীলাতপূর্ণ কাজের কথা বলবো না? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ পরস্পরের মধ্যে মীমাংসা করা। আর পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া বাধানো ধ্বংসের কারণ। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯১৯, সুনান আততিরমিযী ২৬৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুসলিম ভাইদের মাঝে বিবাদ মীমাংসা করে দিলে ছাদাক্বা করার ছওয়াব পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ)...হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করলেন। এর মধ্যে একটি হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরের প্রত্যেকটি গ্রন্থির উপর প্রতিদিনের জন্য সাদাকা ধার্য রয়েছে। দু’ ব্যক্তির মধ্যে ইনসাফ করে দেয়াও একটি সাদাকা। কোন ব্যক্তিকে সওয়ারীর উপর আরোহণে সাহায্য করা অথবা তার মালামাল সওয়ারীর উপরে তুলে দেয়াও একটি সাদাকা্। তিনি আরো বলেন, সকল প্রকার ভাল কথাই এক একটি সাদাকা, সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায়ের জন্য মসজিদে যেতে যতটি পদক্ষেপ ফেলা হয় তার প্রতিটিই এক একটি সাদাকা এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাও একটি সাদাকা। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২০৪, ইসলামীক সেন্টার ২২০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি মুসলিমেরই সাদাকা করা দরকার। উপস্থিত লোকজন বললঃ যদি সে সাদাকা করার মত কিছু না পায়। তিনি বললেনঃ তাহলে সে নিজের হাতে কাজ করবে। এতে সে নিজেও উপকৃত হবে এবং সাদাকা করবে। তারা বললঃ যদি সে সক্ষম না হয় অথবা বলেছেনঃ যদি সে না করে? তিনি বললেনঃ তাহলে সে যেন বিপন্ন মাযলূমের সাহায্য করে। লোকেরা বললঃ সে যদি তা না করে? তিনি বললেনঃ তা হলে সে সৎ কাজের আদেশ করবে, অথবা বলেছেন, সাওয়াবের কাজের নির্দেশ করবে। তারা বললঃ তাও যদি সে না করে? তিনি বললেনঃ তা হলে সে খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, এটাই তার জন্য সদাক্বাহ হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০২২, ১৪৪৫; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০০৮, আহমাদ ১৯৭০৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুই মুসলিম পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত হলে

(ক) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দুজন মুসলিম পরস্পর সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হলে হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুই মুসলিম তাদের তরবারিসহ পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত হলে হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো হত্যাকারী, কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী হলো? তিনি বলেনঃ সেও তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করতে উদ্যত ছিলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৬৪, নাসায়ী ৪১১৮, ৪১১৯, ৪১২৪, আহমাদ ১৯১৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন আল জাহদারী (রহঃ).....আহনাফ ইবনু কায়স (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি বের হলাম। এ লোকটিকে সহযোগিতা করা আমার অভিপ্রায় ছিল। এমন সময় আবু বাকরাহ (রাযিঃ) এর সঙ্গে আমার দেখা হলো। তখন তিনি বললেন, হে আহনাফ! তুমি কোথায় যেতে চাচ্ছ? তিনি বলেন, আমি বললাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচাত ভাই আলী (রাযিঃ)-কে সহযোগিতা করার জন্য আমি যেতে চাচ্ছি। আহনাফ (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, হে আহনাফ চলে যাও। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি এ কথা বলতে শুনেছি, যখন দুজন মুসলিম তরবারি নিয়ে পরস্পর যুদ্ধ করে তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি দুজনেই জাহান্নামী হবে। এ কথা শুনে আমি বললাম অথবা বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যাকারীর অবস্থা তো এ-ই, তবে নিহত ব্যক্তির অপরাধ কি? জবাবে তিনি বললেন, সে তার সাথীকে হত্যা করার প্রচেষ্টায় জড়িয়ে ছিল।  (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৮৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৬৫, নাসায়ী ৪১১৭, আহমাদ ১৯৯১১, সহীহাহ ১২৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯৮৮, ইসলামিক সেন্টার ৭০৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

ঝগড়া হলে মীমাংসা করে নেয়া

মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।(সুরা আল-হুজুরাত ১০)।

সাহল ইবনু সাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, কুবা-এর অধিবাসীদের মধ্যে লড়াই বেধে গেল। এমনকি তারা পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু করল। এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে খবর দেয়া হলে তিনি বললেন, ‘চল যাই তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেই। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৬৯৩, ৬৮৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত হোক তোমার মুসলিম ভাইকে সাহায্য করো। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! আমি তো অত্যাচারিতকে সাহায্য করব, অত্যাচারীকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাকে অত্যাচার থেকে নিবৃত্ত করো, এটাই অত্যাচারীর প্রতি তোমার সাহায্য। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৫৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪৩, ২৪৪৪, ৬৯৫২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২২৫৫, সহীহুল জামি ১৫০২, সহীহ আত্ তারগীব ২২৩৫, আহমাদ ১১৯৪৯, মুসনাদে আবূ ইয়ালা ৩৮৩৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৬৮, শুআবুল ঈমান ৭৬০৬, দারিমী ২৭৫৩, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/৯৪, আল মুজামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসে পারস্পরিক বিবাদ মীমাংসা করে দেওয়াকে সিয়াম, ছাদাক্বাহ, এমনকি সলাতের চাইতে উত্তম বলা হয়েছে!

আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে সিয়াম, সালাত ও সাদাকাহর চেয়েও ফাযীলাতপূর্ণ কাজের কথা বলবো না? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ পরস্পরের মধ্যে মীমাংসা করা। আর পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া বাধানো ধ্বংসের কারণ। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও ’আলী ইবনু হুজর (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কি বলতে পার, অভাবী লোক কে? তারা বললেন, আমাদের মাঝে যার দিরহাম (টাকা কড়ি) ও ধন-সম্পদ নেই সে তো অভাবী লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে সে প্রকৃত অভাবী লোক, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে ও আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সে ব্যক্তিকে তার নেক ’আমল থেকে দেয়া হবে, অমুককে নেক আমল থেকে দেয়া হবে। এরপর যদি পাওনাদারের হাক তার নেক ’আমল থেকে পূরণ করা না যায় সে ঋণের পরিবর্তে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুনিয়াতে যদি আপনি কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেন, কৌশলে নিজের নামে লিখিয়ে নেন, আইল ঠেলে জায়গা বাড়িয়ে নেন, বিদেশ থেকে ভাই টাকা পাঠিয়েছে আপনি কৌশলে সেই টাকা নিজের নামে জমা করেন, এগুলো হারাম।

মনে রাখতে হবে কিয়ামতের ময়দানে কেউ কাউকে ছাড় দেবে না। সুতরাং মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করা যাবে না। কেউ আমল একটু কম করুন, কিন্তু কারো সম্পদ আত্মসাৎ করবেন না। রাসুল সাঃ বলেন,

নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি ঈমানদারদেরকে তাদের পারস্পরিক সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও দয়ার ক্ষেত্রে একটি দেহের মতো দেখবে। দেহের কোন একটি অঙ্গ যদি ব্যথা পায়, তবে শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এর কারণে জাগরণ ও জ্বরের মাধ্যমে ঐ ব্যথার অংশীদার হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৫৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮৬, আহমাদ ১৮৩৭৩, শুআবুল ঈমান ৮৯৮৫, আল মুজামুস্ সগীর ৩৮২, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৬৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ আরো বলেন,

আবূ মূসা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাচীর বা ইমারতের মতো, যার একাংশ অপরাংশকে সুদৃঢ় করে। এটা বলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক হাতের অঙ্গুলি অপর হাতের অঙ্গুলির মধ্যে প্রবেশ করালেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৫৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮১, ২৪৪৬, ৬০২৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮৫, নাসায়ী ২৫৬০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৯২৮, সহীহুল জামি ৬৬৫৪, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ৩৪৪১৩, আহমাদ ১৯৬২৫, মুসনাদে আবূ ইয়ালা ৭৩২১, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৩১, শুআবুল ঈমান ৭৬১১, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ২৩৪১, আল মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৪০, আল মুজামুল আওসাত্ব ৫৭১৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুসলিমকে গালি দিলে ও তাকে হত্যা করলে

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং তাকে হত্যা করা কুফরী। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৩৯, ৩৯৪০, ৩৯৪১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮, ৬০৪৪, ৭০৭৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৯৮৩, ২৬৩৪, ২৬৩৫, নাসায়ী ৪১০৫, ৪১০৬, ৪১০৭, ৪১০৮, ৪১০৯, ৪১১০,৪১১১ ৪১১২, ৪১১৩, আহমাদ ৩৬৩৯, ৩৮৯৩, ৩৯৪৭, ৪১১৫, ৪১৬৭, ৪২৫০, ৪৩৩২, তাখরীজুল ঈমান লি ইবনুস সালাম ৭৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশীকে হত্যা করা ক্বিয়ামতের আলামত

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রতিবেশীর সাথে উত্তম ব্যবহার করতে বলেছেন এবং তাদেরকে কষ্ট দিতে নিষেধ করেছেন। অথচ বর্তমানে তুচ্ছ কারণে মানুষ প্রতিবেশীকে হত্যা পর্যন্ত করছে। এটা ক্বিয়ামতের পূর্ব লক্ষণ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

আবু মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশী, তার ভাই এবং তার পিতাকে হত্যা না করা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। (আদাবুল মুফরাদ ১১৭; সিলসিলা ছহীহাহ ৩১৮৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিবেশীর হক অত্যধিক। তাদের সাথে সদাচরণ করা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্য কর্তব্য। তাদের কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা রাসূলের নির্দেশ। খাদ্য আদান-প্রদান ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরী। প্রতিবেশীর হক আদায় না করলে এবং তাদের সাথে ভাল ব্যবহার না করলে জান্নাত পাওয়া দুষ্কর হবে।

তাছাড়া সমাজকে সুন্দর করার জন্য প্রতিবেশীর সাথে সম্প্রীতি-সদ্ভাব বজায় রাখা এবং তার সাথে সদাচরণ করা যরূরী। এতে সমাজে শান্তি বিরাজ করে। প্রতিবেশীর হক আদায় করলে পার্থিব জীবনে উপকারের পাশাপাশি পরকালীন জীবনেও অশেষ ছওয়াব অর্জিত হবে।

প্রতিবেশী আল্লাহ পাকের বিশেষ এক নেয়ামত। অতএব, এ অপরিসীম নেয়ামতের শোকর আদায়কল্পে প্রতিবেশীর সঙ্গে সৎ আচরণের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতি গড়ে সুন্দর এক সমাজ উপহার দেওয়া আমাদের অবশ্য কর্তব্য।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

 

লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন

(MSHRC)

--------------------

Please Share On

No comments:

Post a Comment

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত ভূমিকা: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ...