বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সকাল ও বিকেলে পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াসমূহ
ভূমিকাঃ আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন আবার শয়তানও
সৃষ্টি করেছেন। শয়তানের কাজ মানুষকে বিপদগামী করা। আবার বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য
আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবি-রাসুলসহ আসমানী
কিতাব দিয়েছেন। আমরা নবি-রাসুলদের দেখানো পথ অনুসরন করে চললে সকল প্রকার বালা-মসিবত,
হতাশা-টেনশন, অভাব-অনটন থেকে মুক্তি তথা ইহকালীন
ও পরকালীন সুখ-শান্তি লাভ করতে পারবো-ইনশাআল্লাহ।
কিভাবে ইহকালীন ও পরকালীন সুখ-শান্তি লাভ করা
যায় তার অনেক পদ্ধতি বা তরীকা আছে। এখানে তরীকা বলতে ভন্ড পিরদের বানানো তরীকা নয়।
রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহই হচ্ছে মুসলমানদের তরীকা। অন্য কারো নয়।
রাসুল (সাঃ) সকাল ও বিকেলে কি কি দোয়া পাঠ
করতেন বা আমল করতেন, যেগুলো আমল করলে আমাদের সামগ্রিক সমস্যাবলী দূরীভুত হবে সেগুলো
এখানে আলোচনা করবো। তবে দোয়া পাঠ করা বা আমল করার কিছু নিয়মাবলী আছে। সেভাবে আমল না
করলে কোনো ফল পাওয়া যাবে না।
দোয়া পাঠের মাধ্যমে মূলত আমরা আল্লাহকে স্মরণ
করি বা আল্লাহকে দোয়ার কথাগুলো দিয়ে নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়গুলো আল্লাহর নিকট তুলে
ধরি। আপনি যখনই দোয়া পাঠ করবেন বা আমল করবেন বা ইবাদতে নিমগ্ন হবেন তখনই আল্লাহকে স্মরণ
করা হচ্ছে। আল্লাহকে এভাবে স্মরণ করার নাম হচ্ছে জিকির।
আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি কি তোমাদের আমলসমূহের সর্বোত্তমটি সম্পর্কে তোমাদেরকে অবহিত করবো না, যা তোমাদের প্রভুর নিকট সর্বাধিক প্রিয়, তোমাদের মর্যাদাকে অধিক উন্নীতকারী, তোমাদের সোনা-রূপা দান করার চেয়ে এবং যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তোমাদের শত্রুুদের হত্যা করা এবং তোমাদের নিহত হওয়ার চেয়ে উত্তম? সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেটি কী? তিনি বলেনঃ আল্লাহর যিকির। মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, কোন মানুষের জন্য আল্লাহর যিকিরের চেয়ে উত্তম কোন আমল নাই, যা তাকে মহামহিম আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই দিতে পারে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৯০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৬৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৭৭, আহমাদ ২১১৯৫, ২৬৯৭৭, ২১৭০২, মুয়াত্তা মালেক ৪৯০, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ১, আত-তালীকুর রাগীব ২/২২৮), মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮২৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৯৩, সহীহ আল জামি ২৬২৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জিকিরের বাক্য চারটিঃ যথা-
(১) আল্লাহু আকবার।
(২) আলহামদু লিল্লাহ।
(৩) সোবহান আল্লাহ।
(৪) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
এছাড়া কালিমা, সালাত, সাওম, হজ্জ ও যাকাতসহ
বিভিন্ন দোয়া-কালাম কিংবা যখন যে অবস্থাতেই আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করেন না কেনো সবই
জিকিরের মধ্যে গণ্য। তথা ইসলামের সামগ্রিক বিধিবিধান আল্লাহকে স্মরণ করে পালন করার
নামই হচ্ছে জিকির। কিন্তু আমাদের মুসলিম সমাজের কতিপয় ভন্ড আলেম, পির-অলি অর্থ উপার্জনের
স্বার্থে উচ্চ স্বরে পাগলের মতো করে কখনো চোখ বন্ধ করে অথবা কোমর দোলায়ে কিংবা মাথা
ঝুঁকিয়ে, গানের সুরে বা ছন্দ মিলিয়ে উচ্চ স্বরে বা চিল্লায়ে চিল্লায়ে শুধু আল্লাহ বা ইল্লাল্লাহ কিংবা অন্যভাবে জিকির করে
যা সম্পূর্ণ বিদআত এবং ইসলামে নিষেধ। জিকির করতে হবে মনে মনে সবিনয়ে ও সশঙ্কচিত্তে
অনুচ্চস্বরে।
আল্লাহ বলেন, “তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয়
ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর (জিকির কর) এবং তুমি উদাসীনদের
দলভুক্ত হয়ো না।” (সূরা আ‘রাফ ২০৫ নং আয়াত)।
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খাইবার যুদ্ধের জন্য বের হলেন কিংবা
রাবী বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খাইবারের দিকে যাত্রা
করলেন, তখন সাথী লোকজন একটি উপত্যকায় পৌঁছে এই বলে উচ্চস্বরে তাকবীর দিতে শুরু করল-আল্লাহু
আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু। (আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ব্যতীত
কোন প্রকৃত ইলাহ নেই)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা
নিজেদের প্রতি দয়া কর। কারণ তোমরা এমন কোন সত্তাকে ডাকছ না যিনি বধির বা অনুপস্থিত।
বরং তোমরা তো ডাকছ সেই সত্তাকে যিনি শ্রবণকারী ও অতি নিকটে অবস্থানকারী, যিনি তোমাদের
সঙ্গেই রয়েছেন। [আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন] আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সাওয়ারীর পেছনে ছিলাম। তিনি আমাকে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’
বলতে শুনে বললেন, হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! আমি বললাম, আমি উপস্থিত হে আল্লাহর রাসূল!
তিনি বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি কথা শিখিয়ে দেব কি যা জান্নাতের ভান্ডারসমূহের মধ্যে
একটি ভান্ডার? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান
হোক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হল ‘লা হাওলা ওয়ালা
কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৪২০২, ২৯৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫৫-৬৭৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৪, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৩৮৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৮৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহকে স্মরণ করতে যেসব দোয়া বা আমল করতে
হয় এবং সেগুলো কিভাবে করতে হয় তা আল্লাহ ও রাসুল সাঃ আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন। অতএব
এর বাহিরে গিয়ে নিজেরা কোনো পথ মত বা তরিকা বানানো যাবে না। যারা করবে তারা মহাক্ষতিগ্রস্ত
হবে।
আল্লাহ বলেন, “হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের
জানিয়ে দেব না কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে
সম্পূর্ণ ব্যর্থ? এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে
করে যে তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে
মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে।
এ জন্যে তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না।
তারা যে কুফরী করেছিলো আর আমার আয়াত ও রাসুলগণের
প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে”। (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)।
আল্লাহ আরো বলেন, “যারা তাঁর (রাসুলসঃ) হুকুমের বিরুদ্ধাচারন করে এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য যে, তারা
মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে”। (নূর-৬৩)।
দোয়া পাঠ বা জিকির করার হুকুম এবং ফজিলত
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
(১) ‘‘তোমার প্রতিপালক বলেন- তোমরা আমাকে ডাকো,
আমি (তোমাদের ডাকে) সাড়া দেব। আরও তাঁর বাণীঃ যারা অহংকারবশতঃ আমার ‘ইবাদাত করে না,
নিশ্চিতই তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (সূরা আল-মু’মিন ৪০/৬০)।
(২) ‘আমি বলেছি- ‘তোমরা তোমাদের রবেবর কাছে ক্ষমা
চাও, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল। (তোমরা তা করলে) তিনি অজস্র ধারায় তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ
করবেন, তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন
এবং তোমাদের জন্য নদ্বীনালা প্রবাহিত করবেন।।’’ (সূরা
নূহ ৭১/১০-১২)।
(৩) ‘‘যারা কোন পাপ কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের
প্রতি যুল্ম করলে আল্লাহ্কে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে…..।’’
(সূরা আলে ‘ইমরান ৩/১৩৫)।
(৪) ‘‘তোমরা সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে
তাওবাহ করো।’’ (সূরাহ আত্-তাহরীম ৬৬/৮)।
(৫) মহান আল্লাহ বলেছেন, “অবশ্যই আল্লাহর স্মরণ
সর্বশ্রেষ্ঠ।” (সূরা আনকাবূত ৪৫ আয়াত)।
(৬) আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “তোমরা আমাকে স্মরণ
কর; আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।” (সূরা বাকারা ১৫২ আয়াত)।
(৭) তিনি অন্য জায়গায় বলেন, “আল্লাহকে অধিক-রূপে
স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (সূরা জুমআ ১০ আয়াত)।
(৮) তিনি আরও বলেছেন, “নিশ্চয়ই আত্মসমর্পণকারী
(মুসলিম) পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত
পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী,
বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযা পালনকারী পুরুষ ও রোযা
পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী (সংযমী) পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী (সংযমী) নারী,
আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নারী---এদের জন্য আল্লাহ
ক্ষমা ও মহা প্রতিদান রেখেছেন।” (সূরা আহযাব ৩৫ আয়াত)।
(৯) তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা
আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।” (সূরা আহযাব ৪১-৪২ আয়াত)।
রাসুল সাঃ বলেন,
(১) মুহাম্মাদ
ইবনু সাব্বাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন আল্লাহর কাছে
তওবা করে তখন আল্লাহ ঐ লোকের চেয়েও বেশি আনন্দিত হন, যে মরুভূমিতে নিজ সওয়ারীর উপর
আরোহিত ছিল। তারপর সওয়ারটি তার হতে হারিয়ে যায়। আর তার উপর ছিল তার খাদ্য ও পানীয়।
এরপর নিরাশ হয়ে সে একটি গাছের ছায়ায় এসে আরাম করে এবং তার উটটি সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে
নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় হঠাৎ উটটি তার কাছে এসে দাঁড়ায়। অমনিই সে, তার লাগাম
ধরে ফেলে। এরপর সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি
তোমার রব। আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে ভুল করে ফেলেছে। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৫৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭৪৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫৭৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশ'আরী ও মুহাম্মাদ
ইবনুল আ'লা (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় আর যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয়
না এরূপ দুটি ঘরের তুলনা করা যায় জীবিত ও মৃতের সঙ্গে। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৪০৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৯৩, ইসলামীক সেন্টার ১৭০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার
বান্দার ধারণার পাশে থাকি। (অর্থাৎ সে যদি ধারণা রাখে যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন,
তার তওবা কবুল করবেন, বিপদ আপদ থেকে উদ্ধার করবেন, তাহলে তাই করি।) আর আমি তার সাথে
থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। সুতরাং সে যদি তার মনে আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে
আমার মনে স্মরণ করি, সে যদি কোন সভায় আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম
ব্যক্তিদের (ফিরিশতাদের) সভায় স্মরণ করি।”
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫৩৬,
৭৫৩৬, ৭৫৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৬৬৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৫, সুনান
ইবনু মাজাহ ৩৮২২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২৩৮৮, ৩৬০৩, আহমাদ ৭৩৭৪, ৮৪৩৬, ৮৮৩৩, ৯০০১, ৯০৮৭, ৯৩৩৪, ৯৪৫৭, ১০১২০, ১০২৪১, ১০৩০৬,
১০৩২৬, ১০৪০৩, ১০৫২৬, ১০৫৮৫, ২৭২৭৯, ২৭২৮৩, সহীহাহ ২২৮৭, রিয়াযুস সালেহীন ২৮/১৪৪৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪)
মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ).....আগার আবূ মুসলিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আবু হুরাইরাহ ও আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) তারা
উভয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন জাতি আল্লাহ
সুবহানাহ ওয়াতা’আলার যিকর করতে বসলে একদল ফেরেশতা তাদেরকে ঘিরে ফেলে এবং রহমত তাদেরকে
ঢেকে নেয়। আর তাদের উপর শান্তি নাযিল হয় এবং আল্লাহ তা’আলা তার নিকটস্থ ফেরেশতাগণের
মধ্যে তাদের আলোচনা করেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০০, ২৬৯৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫, আবূ দাঊদ ১৪৫৫, ৩৬৪৩, ৪৯৪৬,
সুনান ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ৮১১৭, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৬৬১০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৩, রিয়াযুস সালেহীন-২/১৪৫৬, সহীহ্ তারগীব ১/৩১/৬৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া পাঠ বা জিকির কখন ও কিভাবে করবো?
দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, ওযূহীন ও অপবিত্র অবস্থায়
এবং মহিলাদের মাসিক অবস্থায় আল্লাহর যিকির করা যায়। অবশ্য (বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত)
অপবিত্র অবস্থায় এবং মহিলাদের মাসিক অবস্থায় কুরআন পাঠ বৈধ নয়।
মহান আল্লাহ বলেন,
(১) “নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং
রাত ও দিনের পরিবর্তনে জ্ঞানী লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে
আল্লাহকে স্মরণ করে।” (সূরা আলে ইমরান ১৯০-১৯১ আয়াত)।
(২) আল্লাহ বলেছেন, “তোমার প্রতিপালককে মনে মনে
সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর (জিকির করো) এবং তুমি
উদাসীনদের দলভুক্ত হইয়ো না।” (সূরা আ’রাফ ২০৫ আয়াত)।
(৩) তিনি আরও বলেছেন, “সূর্যের উদয় ও অস্তের পূর্বে
তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর।” (সূরা
ত্বাহা ১৩০ আয়াত)।
(৪) তিনি অন্যত্র বলেছেন, “সকাল-বিকালে তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা
ও মহিমা ঘোষণা কর।” (সূরা মুমিন ৫৫ আয়াত)।
(৫) “সে সব গৃহে---যাকে আল্লাহ সমুন্নত করতে এবং
যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন---সকাল ও সন্ধ্যায় তাতে তাঁর পবিত্রতা ও
মহিমা ঘোষণা করে, সে সব লোক যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ
হতে বিরত রাখে না।” (সূরা নূর ৩৬-৩৭ আয়াত)।
(৬) “আমি পর্বতমালাকে তার (দাঊদের) বশীভূত করেছিলাম;
ঐগুলি সকাল-সন্ধ্যায় তার সঙ্গে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত।” (সূরা স্বা-দ ১৮ আয়াত)।
রাসুল সাঃ বলেন,
(১) আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বক্ষণ (সর্বাবস্থায়) আল্লাহর
যিকির করতেন।’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১২, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৩৭৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৩০২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৮৪, আবূ দাউদ ১৮, আহমাদ ২৩৮৮৯, ২৪৬৭৪, ২৫৮৪৪,
রিয়াযুস সালেহীন-১/১৪৫২, সহীহাহ ৪০৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ
হাদীসটি প্রমাণ করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পবিত্র, উযুবিহীন, জুনুবী, বসে, দাঁড়িয়ে, হেলান দিয়ে, হাঁটা ও আরোহী সকল
অবস্থায়ই আল্লাহর যিকর করতেন। এখানে যিকর কথাটি ব্যাপক অর্থবোধক (‘আম), যা তাসবীহ,
তাহলীল, তাকবীর, তাহমীদ, ইস্তিগফার, দরুদ সকল প্রকার যিকর শামিলকরে। মুসলিমগণের ঐক্যমত
এরূপ করা শারী‘আত সম্মত। তবে পেশাব-পায়খানা এবং সহবাসের অবস্থায় বাদে। কেননা এ দুই
অবস্থায় যিকর করা অপছন্দনীয়। তবে পেশাব-পায়খানা এবং সহবাসের শুরুতে দোয়া পাঠ করা যাবে।
(২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আমাদের
পরওয়ারদেগার আমাদের নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ আমার নিকট দু‘আ করবে
কে? আমি তার দু‘আ কবূল করবো। আমার নিকট কে চাবে? আমি তাকে দান করবো। আমার কাছে কে তার
গুনাহ ক্ষমা চাবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩২১, ১১৪৫, ৭৪৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৫৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৭৫৮, আহমাদ ৭৫৯৫, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৬৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(রাসুল (সাঃ) তাঁর উম্মতের মুক্তির জন্য সালাত,
সাওম, হজ্জ ও যাকাত আদায়সহ ইসলামের অন্যান্য আদেশ নিষেধ পালনের পাশাপাশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ
দোয়া বা আমল শিক্ষা দিয়েছেন। দোয়াগুলো কখন কতোবার করে আমল করতে হবে সেটাও তিনি বলে
দিয়েছেন। নিচে সেগুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে।)
এক দল ফিরিস্তা, যাঁরা দোয়া পাঠ বা জিকিরকারীদের খুঁজে বেড়ান
আল্লাহ বলেন,
“তুমি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখ, যারা
সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে থাকে এবং
তুমি তাদের নিকট হতে স্বীয় দৃষ্টি ফিরায়ো না।” (সূরা কাহাফ
২৮ আয়াত)।
রাসুল (সাঃ) বলেন,
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত,
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর কিছু
ফেরেশতা আছেন, যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে-ফিরে আহলে যিকির খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন
কোন সম্প্রদায়কে আল্লাহর যিকিররত অবস্থায় পেয়ে যান, তখন তাঁরা একে অপরকে আহ্বান করে
বলতে থাকেন, ‘এস তোমাদের প্রয়োজনের দিকে।’ সুতরাং তাঁরা (সেখানে উপস্থিত হয়ে) তাদেরকে
নিজেদের ডানা দ্বারা নিচের আসমান পর্যন্ত বেষ্টিত করে ফেলেন। অতঃপর তাঁদেরকে তাঁদের
প্রতিপালক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার বান্দারা কি বলছে?’ ফেরেশতারা
বলেন, ‘তারা আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, আপনার মহত্ত্ব বর্ণনা করছে, আপনার প্রশংসা
ও গৌরব বয়ান করছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি আমাকে দেখেছে?’
ফেরেশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! তারা
আপনাকে দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা আমাকে দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘যদি
তারা আপনাকে দেখত, তাহলে আরও বেশী বেশী ইবাদত, গৌরব বর্ণনা ও তসবীহ করত।’ আল্লাহ বলেন,
‘ কি চায় তারা?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জান্নাত দেখেছে?’ ফিরিশতারা
বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত,
যদি তারা তা দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে তার জন্য আরও বেশী আগ্রহান্বিত
হত। আরও বেশী বেশী তা প্রার্থনা করত। তাদের চাহিদা আরও বড় হত।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা
কি থেকে পানাহ চায়?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা জাহান্নাম থেকে পানাহ চায়।’
আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জাহান্নাম দেখেছে?’
ফেরেশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন,
‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে বেশী বেশী করে তা হতে
পলায়ন করত। বেশী বেশী ভয় করত।’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে,
আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম।’ ফেরেশতাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘কিন্তু ওদের মধ্যে অমুক
ওদের দলভুক্ত নয়। সে আসলে নিজের কোন প্রয়োজনে সেখানে এসেছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘(আমি তাকেও
মাফ করে দিলাম! কারণ,) তারা হল এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত (হতভাগা)
থাকে না।”
মুসলিমের আবূ হুরাইরা কর্তৃক এক বর্ণনায় আছে,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অবশ্যই আল্লাহর অতিরিক্তি কিছু ভ্রাম্যমান
ফেরেশতা আছেন, যারা জিকিরের মজলিস খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন এমন মজলিস পেয়ে যান,
যাতে আল্লাহর যিকির হয়, তখন তাঁরা সেখানে বসে যান। তাঁরা পরস্পরকে ডানা দিয়ে ঢেকে নেন।
পরিশেষে তাঁদের ও নিচের আসমানের মধ্যবর্তী জায়গা পরিপূর্ণ করে দেন। অতঃপর লোকেরা মজলিস
ত্যাগ করলে তাঁরা আসমানে উঠেন। তখন আল্লাহ আয্যা অজাল্ল অধিক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে
জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমরা কোথা থেকে এলে?’ তাঁরা বলেন, ‘আমরা পৃথিবী থেকে আপনার এমন কতকগুলি
বান্দার নিকট থেকে এলাম, যারা আপনার তাসবীহ, তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ পড়ে এবং আপনার
নিকট প্রার্থনা করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা আমার নিকট কি প্রার্থনা করে?’ তাঁরা বলেন,
‘তারা আপনার নিকট আপনার জান্নাত প্রার্থনা করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা কি আমার জান্নাত
দেখেছে?’
তাঁরা বলেন, ‘না, হে প্রতিপালক!’ তিনি বলেন,
‘কেমন হত, যদি তারা আমার জান্নাত দেখত?’ তাঁরা বলেন, ‘তারা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা
করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা আমার নিকট কি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে?’ তাঁরা বলেন, ‘আপনার
জাহান্নাম থেকে, হে প্রতিপালক!’ তিনি বলেন, ‘তারা কি আমার জাহান্নাম দেখেছে?’ তাঁরা
বলেন, ‘না।’ তিনি বলেন, ‘কেমন হত, যদি তারা আমার জাহান্নাম দেখত?’ তাঁরা বলেন, ‘আর
তারা আপনার নিকট ক্ষমা চায়।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম, তারা যা প্রার্থনা
করে তা দান করলাম এবং যা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তা থেকে আশ্রয় দিলাম।’ তাঁরা বলেন,
‘হে প্রতিপালক! ওদের মধ্যে অমুক পাপী বান্দা এমনি পার হতে গিয়ে তাদের সাথে বসে গিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম! কারণ তারা সেই সম্প্রদায়, তাদের সাথে যে বসে
সেও বঞ্চিত হয় না।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪০৮,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৮৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৬০০, আহমাদ ৭৩৭৬, ৮৪৮৯, ৮৭৪৯, রিয়াযুস সালেহীন-১/১৪৫৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া বা আমল সম্পর্কে জ্ঞাতব্য বিষয়
(১) দোয়া কবুলে তাড়াহুড়ো করা যাবে না,
করলে সেই দোয়া কবুল হবে না।
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দু‘আ কবূল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দু‘আ করলাম। কিন্তু আমার দু‘আ তো কবূল হলো না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৫, আহমাদ ১৩০০৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৮৮, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবু তাহির (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ)
এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, বান্দার দু’আ
সর্বদা গৃহীত হয় যদি না সে অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য দুআ
করে এবং (দুআয়) তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! (দু’আয়) তাড়াহুড়া
করা কি? তিনি বললেন, সে বলতে থাকে, আমি দুআ তো করেছি, আমি দুআ তো করেছি; কিন্তু আমি
দেখতে পেলাম না যে, তিনি আমার দু’আ কবুল করেছেন। তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর দু’আ
করা পরিত্যাগ করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২৯,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২২৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৬৪২৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৮৮১, আল আদাবুল মুফরাদ ৬৫৪, সহীহ আল জামি ৭৭০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৬৮৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) দোয়া বা আমল কবুল না হলেও তা বন্ধ না করা তথা
আমল অব্যাহত রাখতে হবে।
(ক)
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
নিকট গেলেন, তখন এক মহিলা তাঁর কাছে (বসে) ছিল। তিনি বললেন, ‘‘এটি কে?’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
‘আনহ বললেন, ‘অমুক মহিলা, যে প্রচুর নামায পড়ে।’ তিনি বললেন, ‘‘থামো! তোমরা সাধ্যমত
আমল কর। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়।’’ আর
সেই আমল তাঁর নিকট প্রিয়তম ছিল, যেটা তার আমলকারী লাগাতার করে থাকে।
‘আল্লাহ ক্লান্ত হন না’- এ কথার অর্থ এই যে,
তিনি সওয়াব দিতে ক্লান্ত হন না। অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে সওয়াব ও তোমাদের আমলের প্রতিদান
দেওয়া বন্ধ করেন না এবং তোমাদের সাথে ক্লান্তের মত ব্যবহার করেন না; যে পর্যন্ত না
তোমরা নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে আমল ত্যাগ করে বস। সুতরাং তোমাদের উচিত, তোমরা সেই আমল গ্রহণ
করবে, যা একটানা করে যেতে সক্ষম হবে। যাতে তাঁর সওয়াব ও তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের জন্য
নিরবচ্ছিন্ন থাকে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩,
১১২২, ১১৫১, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৮৭, ৬৪৬১, ৬৪৬২, ৬৪৬৪, ৬৪৬৫, ৬৪৬৬, ৬৪৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ১৭১৯, ১৭১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮৫, নাসায়ী ৭৬২, ১৬২৬, ১৬৪২, ১৬৫২, ২১৭৭,
২৩৪৭, ২৩৪৯, ২৩৫১, ৫০৩৫, আবূ দাউদ ১৩১৭, ১৩৬৮, ১৩৭০, ২৪৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১৭১০,
৪২৩৮, আহমাদ ২৩৫২৩, ২৩৬০৪, ২৩৬৪২, ২৩৬৬০, ৪২৪০৯, ২৫৬০০, রিয়াযুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী-
১/১৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আল্লাহ
তায়ালা বলেন,
“আর
তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর।” (সূরা হিজর ৯৯ আয়াত)।
(গ) আহমাদ
ইবনু ইউসুফ আল আযদী (রহঃ)....'আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবদুল্লাহ! (বেশী বেশী
রাত জেগে) তুমিও অমুক ব্যক্তির মতো হয়ে যেও না। সে রাত জেগে জেগে সালাত আদায় করত,
অতঃপর রাত জেগে ইবাদাত করা ছেড়ে দিয়েছে।
উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, কোনো আমল শুরু
করলে তা ছেড়ে দেয়া যাবে না। আমল অব্যাহত রাখতে হবে। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৫২, ১১৩১, ১১৫৩, ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৭৯,
১৯৮০, ৩৪১৮, ৩৪১৯, ৩৪২০, ৫০৫২, ৫০৫৩, ৫০৫৪, ৫১৯৯, ৬১৩৪, ৬২৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৬২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫৯, তিরমিযী ৭৭০,
নাসায়ী ১৬৩০, ২৩৪৪, ২৩৮৯, ২৩৯০, ২৩৯১, ২৩৯২, ২৩৯৩, ২৩৯৪, ২৩৯৭, ২৩৯৯, ২৪০০, ২৪০১, ২৪০২,
২৪০৩, আবূ দাউদ ১৩৮৮, ১৩৮৯, ১৩৯০, ১৩৯১, ২৪২৭, ২৪৪৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৪৬, ১৭১২,
আহমাদ ৬৪৪১, ৬৪৫৫, ৬৪৮০, ৬৭২৫, ৬৭৫০, ৬৭৯৩, ৬৮০২, ৬৮২৩, দারেমী ১৭৫২, ৩৪৮৬, রিয়াযুস
সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী-২/১৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৬০০, ইসলামীক সেন্টার ২৫৯৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) ইচ্ছে হলে দোয়া কবুল করো এমন কথা
বললে তার দোয়া কবুল হবে না।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর কাছে দু‘আ করার সময় এ কথা না বলে যে, হে আল্লাহ! তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি যদি ইচ্ছা কর আমার প্রতি দয়া করো। তুমি যদি ইচ্ছা কর আমাকে রিযক দান করো। বরং সে দৃঢ়তার সাথে দু‘আ করবে (চাইবে)। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই প্রদান করেন। তাঁকে দিয়ে জোরপূর্বক কোন কিছু করাতে সক্ষম নয় বা তাকে বাধা দেয়ার কেউ নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২২৫, ২২২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪৭৭, ৬৩৩৯, আবূ দাঊদ ১৪৮৩, তিরমিযী ৩৪৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৫৪, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭২২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৩, আহমাদ ৮২৩৭, মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ১৭০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৯৭৭, সহীহ আল জামি ৭৭৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) আল্লাহর নিকট দোয়া করলে বা কিছু
চাইলে তা কবুল করা হয়।
(ক) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু‘আই (মূল) ‘ইবাদাত। অতঃপর
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘‘এবং তোমাদের
রব বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু‘আ করো, আমি তোমাদের দু‘আ কবূল করব।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩০, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৭৯, তিরমিযী
২৯৬৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৭, আহমাদ ১৮৩৫২, মু‘জামুস্ সগীর
লিত্ব ত্ববারানী ১০৪১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০২, শু‘আবূল ঈমান ১০৭০, সহীহ ইবনু হিববান
৮৯০, আদাবুল মুফরাদ ৭১৪/৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৭, সহীহ আল জামি ৩৪০৭)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু‘আর চেয়ে কোন জিনিসের
অধিক মর্যাদা (উত্তম) নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩২, তিরমিযী ৩৩৭০, ইবনু মাজাহ
৩৭২৯, আহমাদ ৮৭৪৮, মু‘জামুল আওসাত ৩৭০৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০১, আদ্ দা‘ওয়াতুল
কাবীর ৩, শু‘আবূল ঈমান ১০৭১, ইবনু হিববান ৮৭০, আল আদাবুল মুফরাদ ৭২২/৫৫২, সহীহ আত্
তারগীব ১৬২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৫) দু’আ ব্যতীত ভাগ্যের
পরিবর্তন হয় না।
সালমান আল ফারিসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু‘আ ছাড়া অন্য কিছুই তাকদীদের
লিখনকে পরিবর্তন করতে পারে না এবং নেক ‘আমল ছাড়া অন্য কিছু বয়স বাড়াতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২১৩৯, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬১২৮, সহীহাহ্ ১৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৯, সহীহ
আল জামি ৭৬৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৬) আল্লাহর নিকট দোয়া
না করলে আল্লাহ রাগান্বিত হোন।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কামনা
(দু‘আ) করে না, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২২৩৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৭৩,
সহীহ আল জামি ২৪১৮, আহমাদ ৯৭০১, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ২৪৩১, সহীহাহ্ ২৬৫৪,
সহীহ আল জামি ২৪১৮, শু‘আবূল ঈমান ১০৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭) সুখী জীবনে আল্লাহকে ভুলে না যাওয়া।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চায় বিপদাপদে আল্লাহ
তার দু‘আ কবূল করুন। সে যেন তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়েও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দু‘আ
করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৪০, সূনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৩৩৮২, সহীহাহ্ ৫৯৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৮, সহীহ আল জামি ৬২৯০)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(৮) দৃঢ়তা ও নিশ্চয়তা মনে রেখেই আল্লাহ
তা‘আলার নিকট দু‘আ করা।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দু‘আ কবূল হওয়ার দৃঢ়তা ও
নিশ্চয়তা মনে রেখেই আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ কর। জেনে রেখ, আল্লাহ তা‘আলা অবহেলাকারী
আস্থাহীন মনের দু‘আ কবূল করেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২২৪১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৪৭৯, আল মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৫১০৯, মুসতারাক লিল হাকিম ১৮১৭, আদ্
দা‘ওয়াতুল কাবীর ৩৮২, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৫৩, সহীহ আল জামি ২৪৫)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(৯) দুই হাত তুলে দোয়া করলে সেই হাত
ফিরিয়ে দিতে আল্লাহ লজ্জাবোধ করেন।
সালমান ফারসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত লজ্জাশীল
ও দয়ালু। বান্দা যখন তাঁর কাছে কিছু চেয়ে হাত উঠায় তখন তার হাত (দু‘আ কবূল না করে)
খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২২৪৪, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৮৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৫৬, মু‘কামুল কাবীর লিত্ব
ত্ববারানী ৬১৪৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩১৪৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৮৭৬, সহীহ আল
জামি‘ ১৭৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সকাল বেলার যিকির ও দোয়া বা আমলসমূহঃ
সাধারনত এই যিকির ফজরের সময় থেকে নিয়ে সূর্য
উঠা পর্যন্ত সময়ে করার কথা এসেছে। তবে কেউ যদি এই সময়ের দোয়া ও যিকির নির্ধারিত সময়ে
না পড়তে পারেন, তাহলে যোহরের পূর্বে যেকোন সময়ে পড়লেও হবে ইন শা আল্লাহ।
১ নং দোয়াঃ সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫ (আয়াতুল কুরসী)।
“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল
হাইয়্যুল ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি
ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা
আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া
কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল
আজীম”।
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি
জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও
যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি
ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা
থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর
সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে
কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা
আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫)।
আয়তুল কুরসিকে বলা হয় আল কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত।
এটি নিয়মিত আমল করলে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত লাভ করা যায়। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বর্ণনা করেছেন কোন আয়াতগুলি সর্বশ্রেষ্ঠ
এবং এই আয়াতগুলো পাঠে কী ধরনের নেয়ামত অর্জন করবে বান্দা।
ফজিলত ও নিয়ামতে ভরপুর সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হলো
আয়াতুল কুরসি। কুরআনের সর্ববৃহৎ ও দ্বিতীয় সূরা ‘সূরা আল-বাক্বারা’র ২৫৫ নম্বর আয়াত।
আয়াতটিতে মহাবিশ্বের ওপর আল্লাহর ক্ষমতার কথা বর্ণিত হয়েছে।
আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ) ... উবাই
ইবনু কাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একদিন আবূল মুনযিরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে আবূল মুনযির আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি
তোমার কাছে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ? আবূল মুনযির বলেন, জবাবে আমি বললামঃ এ বিষয়ে
আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলই সর্বাধিক অবগত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার
বললেনঃ হে আবূল মুনযির! আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি তোমার কাছে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ?
তখন আমি বললাম, اللَّهُ
لاَ
إِلَهَ
إِلاَّ
هُوَ
الْحَىُّ
الْقَيُّومُ
(এ আয়াতটি আমার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ)। এ কথা শুনে তিনি আমার বুকের উপর হাত মেরে
বললেনঃ হে আবূল মুনযির! তোমার জ্ঞানকে স্বাগতম। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২১২২, আবূ দাঊদ ১৪৬০, আহমাদ ২১২৭৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৫৩২৬, শু‘আবূল ঈমান ২১৬৯,
সহীহ আত্ তারগীব ১৪৭১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৫৫, ইসলামীক সেন্টার, ১৭৬২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
এ আয়াতটি ‘আয়াতুল কুরসি’ নামেই সব মুসলিমের
কাছে পরিচিত। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এর ফজিলত কী। এ আয়াত পাঠে কেমন সওয়াব হয়।
আসুন জেনে নেই
আয়াতটির গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতঃ-
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমাযানে যাকাতের মাল হিফাজতের
দায়িত্ব দিলেন। এক সময় এক ব্যক্তি এসে খাদ্য-সামগ্রী উঠিয়ে নেয়ার উপক্রম করল। আমি তাকে
ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কাছে নিয়ে যাব। এরপর পুরো হাদীস বর্ণনা করেন। তখন লোকটি বলল, যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন,
তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন। এর কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন পাহারাদার নিযুক্ত করা
হবে এবং ভোর পর্যন্ত শায়ত্বন আপনার কাছে আসতে পারবে না। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(ঘটনা শুনে) বললেন, (যে তোমার কাছে এসেছিল) সে সত্য কথা বলেছে, যদিও সে বড় মিথ্যাচারী
শায়ত্বন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১০, ২৩১১,
৩২৭৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৩, সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮০, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৪২৪, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৪০৬,
সহীহ আত্ তারগীব ৬১০, আধুনিক প্রকাশনী ৪৬৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৪২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) ইমাম নাসাঈ (রহ.) আবূ উমামা (রা.) থেকে বর্ণনা
করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরয সালাত শেষে আয়াতুল কুরসী
পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাধা হবে না। (সহীহ আল জামে: হাদিস: ৬৪৬৪)।
(গ)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, সেটি হলো আয়াতুল কুরসি। যে ঘরে এটি
পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে
হাকিম)।
(ঘ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি বস্তুরই চূড়া আছে। কুরআনের
উচু চূড়া হল সূরা আল-বাকারা। এতে এমন একটি আয়াত আছে যা কুরআনের আয়াতসমূহের প্রধান।
তা হল আয়াতুল কুরসী। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৭৮,
যঈফা (১৩৪৮), তা’লীকুর রাগীব (২/২১৮)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(ঙ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালবেলা সূরা আল-মু'মিন-এর
হা-মী-ম হতে ইলাইহিল মাসীর (১, ২, ও ৩ নং আয়াত) পর্যন্ত এবং আয়াতুল কুরসী তিলাওয়াত
করবে সে এর উসীলায় সন্ধ্যা পর্যন্ত (আল্লাহ্ তা'আলার) হিফাযাতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি
সন্ধ্যা বেলায় তা পাঠ করবে সে ব্যক্তি এর উসীলায় সকাল পর্যন্ত হিফাযাতে থাকবে। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৭৯, তাহকীক ছানী (২১৪৪)। হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(চ) সূরা আল-বাকারাহ্, ২৫৫ নং আয়াত। যে ব্যক্তি
সকালে তা বলবে সে বিকাল হওয়া পর্যন্ত জিন শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে, আর যে ব্যক্তি
বিকালে তা বলবে সে সকাল হওয়া পর্যন্ত জিন শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে। হাদীসটি হাকিম সংকলন করেছেন, ১/৫৬২। আর শাইখ আলবানী একে সহীহুত
তারগীব ওয়াত-তারহীবে সহীহ বলেছেন ১/২৭৩। আর তিনি একে নাসাঈ, তাবারানীর দিকে সম্পর্কযুক্ত
করেছেন এবং বলেছেন, তাবারানীর সনদ ‘জাইয়্যেদ’ বা ভালো।
‘আয়াতুল কুরসি’ এর ফযিলত প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বিভিন্ন গ্রন্থে মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন, তিনি বলেন,
‘সত্যতার সাথে যদি তুমি আয়াতুল কুরসী সে সময় পড় তাহলে তাদের কর্মকান্ড বাতিল হয়ে যায়,
কারণ তাওহীদ শয়তানকে তাড়ায়। মানুষ যদি শয়তানী চক্রান্ত স্থানে সত্যতার সাথে ‘আয়াতুল
কুরসী’ পড়ে, তাহলে তা (যাদু-মন্ত্র) নষ্ট করে দেয়। (কিতাব: ‘আল ফুরক্বান বাইনা আওলিয়াইর
রহমান ওয়া আওলিয়াইশ শাইত্বান’)।
২ নং দোয়াঃ- (সূরা ইখলাস,
সূরা নাস ও সূরা ফালাক সকাল ও বিকেলে প্রতিটি সূরা ৩ বার করে)।
মু‘আয ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু খুবাইব (রহঃ) থেকে
তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে আমাদের সালাত
পড়ার জন্য আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে
পেয়ে গেলাম। তিনি বললেনঃ বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বললেন, বলো। আমি কিছুই
বললাম না। তিনি আবার বললেনঃ বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কি বলবো? তিনি বললেনঃ
তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সূরা কুল হুয়াল্লাহু (সূরা ইখলাস), সূরা নাস
ও ফালাক পড়বে; এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৮২, সূনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৩৫৭৫, তা’লীকুর রাগীব (১/২২৪), আল-কালিমুত তাইয়্যিব (১৯/৭)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
৩ নং দোয়াঃ-
“আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু
ইলাইহি”।
(দৈনিক ১০০ বার)।
(ক) আবু বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....আবূ বুরদাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহাবা
আগার (রাযিঃ) হতে শুনেছি, তিনি ইবনু উমর (রাযিঃ) এর নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর নিকট
তওবা্ করো। কেননা আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদিন একশ’ বার তওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫২, ৬৭৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭০২, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর
কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৭, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন
আল্লাহ বলেন,
(ক) সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা
ঘোষণা কর এবং তাঁর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি অধিক তাওবা গ্রহণকারী। (সূরা নাসর ৩ নং আয়াত)।
(খ) আর যে কেউ মন্দ কার্য করে অথবা নিজের প্রতি
জুলুম করে, কিন্তু পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে আল্লাহকে অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু-রূপে
পাবে। (সূরা নিসা ১১০ নং আয়াত)।
(গ) আল্লাহ এরূপ নন যে, তুমি তাদের মধ্যে থাকা
অবস্থায় তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তিনি এরূপ নন যে, তাদের ক্ষমা প্রার্থনা করা
অবস্থায় তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল ৩৩ নং আয়াত)।
(ঘ) যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের
প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।
আর আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারে? এবং তারা যা [অপরাধ] করে ফেলে তাতে জেনে-শুনে
অটল থাকে না। (সূরা আলে ইমরান ১৩৫ নং আয়াত।
(ঙ) আবূ হুরাইরা) রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সেই মহান সত্তার
কসম, যার হাতে আমার জীবন আছে! যদি তোমরা পাপ না কর, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে
নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে [তোমাদের পরিবর্তে] এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং
আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’’
(বিঃদ্রঃ এ হাদিস দ্বারা পাপ করার পর আল্লাহর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ব্যক্ত করা হয়েছে। পাপ করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়নি।
কেননা, মানুষ মাত্রই ভুলে জড়িত। তাই ভুলে জড়িত হয়ে পড়লে আবশ্যিক-রূপে ক্ষমা চাওয়া কর্তব্য)।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৮৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৯, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন
নাম্বারঃ ১৮৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭১, তিরমিযী ২৫২৬, আহমাদ ৭৯৮৩, ৮০২১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছিঃ বারাকাতময় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
হে আদম সন্তান! যতক্ষণ আমাকে তুমি ডাকতে থাকবে এবং আমার হতে (ক্ষমা পাওয়ার) আশায়
থাকবে, তোমার গুনাহ যত অধিক হোক, তোমাকে আমি ক্ষমা করব, এতে কোন পরওয়া করব না। হে
আদম সন্তান! তোমার গুনাহর পরিমাণ যদি আসমানের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও পৌছে যায়,
তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি পরওয়া
করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার নিকট আস
এবং আমার সঙ্গে কাউকে অংশীদার না করে থাক, তাহলে তোমার কাছে আমিও পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা
নিয়ে হাযির হব। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৪০,
সহীহাহ১২৭, ১২৮, রাওযুন নাযীর ৪৩২, মিশকাত তাহকীক সানী ২৩৩৬, তা’লীকুর রাগীব ২/২৬৮,
রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৮৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ক্ষমা প্রার্থনা করার বাক্যসমূহ
কুরআন ও হাদিস হতে ক্ষমা প্রার্থনা করার বাক্য
অনেক আছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলোঃ-
(ক) ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, একই মজলিসে বসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (এই ইস্তিগফারটি) পাঠ
করা অবস্থায় একশো বার পর্যন্ত গুনতাম,
‘রাব্বিগফির লী অতুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা
আন্তাত তাউওয়াবুর রাহীম।’
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর,
আমার তওবা কবুল কর, নিশ্চয় তুমি অতিশয় তওবাহ কবূলকারী দয়াবান।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১৫১৬, তিরমিযী ৩৪৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮১৪, সহীহাহ ৫৫৬, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস
সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এ দো‘আ
পড়বে,
‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা
ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু অ আতূবু ইলাইহ্।’
অর্থাৎ আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা
করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা
করছি।
সে ব্যক্তির পাপরাশি মার্জনা করা হবে; যদিও
সে রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে (যাওয়ার পাপ করে) থাকে।’’
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
আবূ দাউদ ১৫১৭, তিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)- তাওহীদ পাবলিকেশন
নাম্বারঃ ১৮৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) “রব্বানা য-লামনা
আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কূনান্না মিনাল খ-সিরীন। ”
অর্থঃ “হে আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের নফসের
উপর যুলুম করেছি, তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না কর, আমাদের প্রতি করুণা না কর তবে আমরা
ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।” (সূরা আ‘রাফ- ২৩)।
(ঘ) আবূ বাকর সিদ্দীক (রাযি.) হতে বর্ণিত। একদা
তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আরয করলেন, আমাকে সালাতে
পাঠ করার জন্য একটি দু‘আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, এ দু‘আটি বলবে-
“আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু
নাফসি জুলমান কাছিরাও ওয়া লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন্
ইন্দিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আংতাল গাফুরুর রাহিম।”
‘‘হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অধিক জুলুম করেছি।
আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ হতে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন
এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৩৪, ৬৩২৬, ৭৩৮৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৭৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
৪ নং দোয়াঃ-
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা
‘ইলমান না-ফি‘আন ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা-’’ (৩ বার)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান, কবূলযোগ্য
‘আমল ও হালাল রিযক চাই”।
হাদিসঃ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে বলতেন,
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা
‘ইলমান না-ফি‘আন ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা-’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী
জ্ঞান, কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ
৯২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২৬৫, আহমাদ ২৬৫২১, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ১১৯, শু‘আবূল ঈমান
১৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
৫ নং দোয়াঃ-
(ক) “লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু
লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হাম্দু ইয়ুহ্য়ী ওয়াইয়ূমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি
শাই’ইন ক্বাদীর”। (১০ বার)।
অর্থঃ “একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ
নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত করেন এবং
মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান”।
হাদিসঃ
আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের নামাযের পর তার দুই পা ভাজ
করা অবস্থায় (তাশাহহুদের অবস্থায়) কোন কথাবার্তা বলার পূর্বে দশবার বলে, “আল্লাহ
তা'আলা ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তার কোন শারীক নেই, রাজত্ব তারই, সকল প্রশংসা
তার জন্য, তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দান করেন, তিনি সকল কিছুর উপর সর্বশক্তিমান”,
তার আমলনামায় দশটি সাওয়াব লেখা হয়, তার দশটি গুনাহ মুছে ফেলা হয় এবং তার সম্মান
দশগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। সে ঐ দিন সব রকমের সংকট হতে নিরাপদ থাকবে এবং শাইতানের ধোকা
হতে তাকে পাহারা দেয়া হবে এবং ঐ দিন শিরকীর গুনাহ ছাড়া অন্য কোন প্রকারের গুনাহ তাকে
সংকটাপন্ন করতে পারবে না। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৪৭৪, তা’লীকুর রাগীব (১/১৬৬), আহমাদ ৪/২২৭, নং ১৭৯৯০)। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান
সহীহ গারীব।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনে একশ’বার পড়বে
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল
হামদু ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর’’
(অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ
নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই প্রশংসা এবং তিনি হচ্ছেন সকল
বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান)।
তার দশটি গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সমপরিমাণ সাওয়াব
হবে। তার জন্য একশ নেকী লেখা হবে, তার একশটি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, তার জন্য এ
দুআ ঐ দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান হতে বেঁচে থাকার জন্য রক্ষাকবচ হবে এবং সে যে কাজ
করেছে তার চেয়ে উত্তম কাজ অন্য কেউ করতে পারবে না, কেবল ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে এর চেয়ে
বেশী পড়বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩০২, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৯৩, ৬৪০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯১, মুয়াত্ত্বা মালিক
৭১২, ৪৮৬, ৪৮৮, সুনান আততিরমিযী ৩৪৬৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৯৮, আহমাদ ৮০০৮, আল কালিমুত্ব
ত্বইয়্যিব ৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৫৪, সহীহ আল জামি ৬৪৩৭, আহমাদ ৭৯৪৮, ৮৫০২, ৮৬১৭, ৮৬৫৬,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
৬ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী,
আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাম্‘ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী। লা ইলা-হা ইল্লা আনতা।
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল-ফাক্বরি ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ‘আযা-বিল
ক্বাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা”। (৩ বার)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার
শরীরে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শ্রবণশক্তিতে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা
দিন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে
আশ্রয় চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। আপনি ছাড়া
আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই।” (আবূ দাউদ ৪/৩২৪, নং ৫০৯২; আহমাদ
৫/৪২, নং ২০৪৩০; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নং ২২; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৯; বুখারী,
আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭০১। আর শাইখ আল্লামা ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’
গ্রন্থের পৃ. ২৬ এ এর সনদকে হাসান বলেছেন)।
৭ নং দোয়াঃ-
“হাসবিয়াল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা
হুয়া, ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম”।
(৭ বার)।
অর্থঃ “আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া
আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব।”
হাদিসঃ-
আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সাতবার বলেঃ ‘‘আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া
কোনো ইলাহ নেই, আমি তাঁর উপর ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের রব’’ আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট
হবেন যা তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তার বিরুদ্ধে চাই সে সত্যিকারভাবে অথবা কৃত্রিমভাবে
বলুক না কেন।
যে ব্যক্তি দো‘আটি সকালবেলা সাতবার এবং বিকালবেলা
সাতবার বলবে তার দুনিয়া ও আখেরাতের সকল চিন্তাভাবনার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট হবেন। (ইবনুস সুন্নী, নং ৭১, মারফূ‘ সনদে; আবূ দাউদ ৪/৩২১; মাওকূফ
সনদে, নং ৫০৮১, কানজুল উম্মাল: ৫০১১)। আর শাইখ শু‘আইব ও আব্দুল কাদের আরনাঊত এর সনদকে
সহীহ বলেছেন। দেখুন, যাদুল মা‘আদ ২/৩৭৬)।
৮ নং দোয়াঃ-
“রদ্বীতু বিল্লা-হি রব্বান,
ওয়াবিল ইসলা-মি দীনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যান”।
(৩ বার)
অর্থঃ “আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন ও মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবীরূপে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট।”
হাদিসঃ-
সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলে, 'আল্লাহ
তা'আলা আমার রব, ইসলাম আমার দীন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার
রাসূল হওয়ায় আমি সর্বান্তকরণে পরিতৃপ্ত আছি", তাকে পরিতৃপ্ত করা আল্লাহ্ তা'আলার
করণীয় হয়ে যায়।
যে ব্যক্তি এ দো‘আ সকাল ও বিকাল তিনবার করে
বলবে, আল্লাহর কাছে তার অধিকার হয়ে যায় তাকে কিয়ামাতের দিন সন্তুষ্ট করা। (আহমাদ ৪/৩৩৭; নং ১৮৯৬৭; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল-লাইলাহ,
নং ৪; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৮; আবু দাউদ, ৪/৩১৮, নং ১৫৩১; তিরমিযী ৫/৪৬৫, নং ৩৩৮৯। আর
ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’ এর ৩৯ পৃষ্ঠায় একে হাসান বলেছেন)।
৯ নং দোয়াঃ-
“ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু
বিরাহমাতিকা আস্তাগীসু, আসলিহ্ লী শা’নী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা
‘আইন”।
(৩ বার)।
অর্থঃ “হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার
রহমতের অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার কামনা করি, আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন,
আর আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না।” (হাকেম ১/৫৪৫, তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, আর যাহাবী তা সমর্থন
করেছেন। আরও দেখুন, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ১/২৭৩)।
১০ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা সাল্লি ওয়াসাল্লিম ‘আলা নাবিয়্যিনা
মুহাম্মাদ”। (সকাল-বিকাল ১০
বার করে)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আপনি সালাত ও সালাম পেশ
করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর।”
(যে কেউ সকাল বেলা আমার উপর দশবার দরুদ পাঠ
করবে এবং বিকাল বেলা দশবার দরুদ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ দ্বারা সৌভাগ্যবান
হবে।’ (তাবরানী হাদীসটি দু’ সনদে সংকলন করেন, যার একটি
উত্তম। দেখুন, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ১০/১২০; সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব ১/২৭৩)।
১১ নং দোয়াঃ- (সায়্যিদুল ইসতিগফার)
“আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা
ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা
মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা,
ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা”।
অর্থঃ “হে আল্লাহ্! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া
আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার
সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার
কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি
স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি
ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।”
হাদিসঃ-
শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু‘আ পড়া- ‘‘হে আল্লাহ!
তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার
সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার
কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নি‘য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার
কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’’
যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে
এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি
রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে
সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬,
৬৩২৩, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
১২ নং দোয়াঃ-
“আসবাহনা ‘আলা ফিত্বরাতিল ইসলামি
ওয়া আলা কালিমাতিল ইখলাসি ওয়া আলা দ্বীনি নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ওয়া আলা মিল্লাতি আবীনা ইবরা-হীমা হানীফাম মুসলিমাও ওয়ামা কা-না মিনাল মুশরিকীন”।
অর্থঃ “আমরা সকালে উপনীত হয়েছি ইসলামের ফিত্বরাতের
উপর, নিষ্ঠাপূর্ণ বাণী (তাওহীদ) এর উপর, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীনের উপর, আর আমাদের পিতা ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম-এর মিল্লাতের উপর—যিনি
ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম এবং যিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না”। (আহমাদ ৩/৪০৬, ৪০৭, নং ১৫৩৬০)।
১৩ নং দোয়াঃ-
“সুব্হা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী ‘আদাদা খালক্বিহী, ওয়া রিদা নাফসিহী,
ওয়া যিনাতা ‘আরশিহী, ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহী”। (৩ বার ফজরের ফরজ
সালাতের পর)।
অর্থঃ “আমি আল্লাহর প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা
বর্ণনা করছি তাঁর মাখলুকের সংখ্যার পরিমাণ, তাঁর সন্তুষ্টির পরিমাণ, তাঁর ‘আর্শের ওযন
পরিমাণ ও তাঁর কালিমাসমূহের সংখ্যার পরিমাণ।”
হাদিসঃ-
কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ, আমর আন্ নাকিদ, ইবনু আবূ
উমর (রহঃ).....জুওয়াইরিয়াহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরবেলা ফজরের সালাত আদায় করে তার নিকট থেকে বের হলেন। ঐ সময় তিনি
সালাতের স্থানে বসাছিলেন। এরপর তিনি চাশতের পরে ফিরে আসলেন। এমতাবস্থায়ও তিনি উপবিষ্ট
ছিলেন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে যে অবস্থায় ছেড়ে গিয়েছিলাম তুমি সে অবস্থায়ই আছ।
তিনি বললেন, হ্যাঁ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমার নিকট হতে
রওনার পর চারটি কালিমাহ তিনবার পড়েছি। আজকে তুমি এ পর্যন্ত যা বলেছ তার সাথে ওযন করা
হলে এ কালিমাহ চারটির ওযনই ভারী হবে। কালিমাগুলো এই, “সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি হামদিহি
আদাদা খল্কিহি ওয়া রিযা- নাফসিহি ওয়াযিনাতা আরশিহি ওয়ামি দা-দা কালিমা-তিহি",
অর্থাৎ- “আমি আল্লাহর প্রশংসার সাথে তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার মাখলুকের সংখ্যার
পরিমাণ, তার সন্তুষ্টির পরিমণ, তার আরশের ওযন পরিমাণ ও তার কালিমাসমূহের সংখ্যার পরিমাণ।"
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮০৬-৬৮০৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৬৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৭১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৪ নং দোয়াঃ-
“আসবাহ্না ওয়া আসবাহাল মুলকু
লিল্লাহি ওয়ালহাম্দু লিল্লাহি, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল
মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর। রব্বি আস্আলুকা খাইরা মা
ফী হা-যাল ইয়াউমি ওয়া খাইরা মা বা‘দাহু, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররি মা ফী হা-যাল ইয়াউমি
ওয়া শাররি মা বা‘দাহু। রব্বি আঊযু বিকা মিনাল কাসালি ওয়া সূইল-কিবারি। রবিব আ‘ঊযু বিকা
মিন ‘আযাবিন ফিন্না-রি ওয়া আযাবিন্ ফিল ক্বাবরি”।
অর্থঃ “আমরা সকালে উপনীত হয়েছি, অনুরূপ যাবতীয়
রাজত্বও সকালে উপনীত হয়েছে, আল্লাহ্র জন্য। সমুদয় প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য। একমাত্র আল্লাহ
ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসাও তাঁর, আর
তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হে রব্ব! এই দিনের মাঝে এবং এর পরে যা কিছু
কল্যাণ আছে আমি আপনার নিকট তা প্রার্থনা করি। আর এই দিনের মাঝে এবং এর পরে যা কিছু
অকল্যাণ আছে, তা থেকে আমি আপনার আশ্রয় চাই।
হে রব্ব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই অলসতা ও
খারাপ বার্ধক্য থেকে। হে রব্ব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামে আযাব হওয়া থেকে
এবং কবরে আযাব হওয়া থেকে।” (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৮০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৫ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসবাহ্তু উশহিদুকা ওয়া উশহিদু
হামালাতা ‘আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতিকা ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা, আন্নাকা আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা
ইল্লা আনতা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আব্দুকা ওয়া রাসূলুকা”।
(৪ বার)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি সকালে উপনীত হয়েছি।
আপনাকে আমি সাক্ষী রাখছি, আরও সাক্ষী রাখছি আপনার ‘আরশ বহনকারীদেরকে, আপনার ফেরেশতাগণকে
ও আপনার সকল সৃষ্টিকে, (এর উপর) যে নিশ্চয় আপনিই আল্লাহ, একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো
হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই; আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আপনার বান্দা ও রাসূল।”
যে ব্যক্তি সকালে অথবা বিকালে তা চারবার বলবে,
আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করবেন। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৭১, বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ১২০১; নাসাঈ, ‘আমালুল ইয়াওমি
ওয়াল লাইলাহ, নং ৯; ইবনুস সুন্নী, নং ৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৬ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল
‘আফওয়া ওয়াল- ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাতি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া
ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা ফী দীনী ওয়াদুনইয়াইয়া, ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী
ওয়া আ-মিন রাও‘আ-তি। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন
ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী”।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও
আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা
চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ
ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে
হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার
বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আশ্রয় চাই আমার নীচ
থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে”।
হাদিসঃ-
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেনঃ
‘‘ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আমার দীন, আমার দুনিয়া, আমার পরিবার ও আমার সম্পদের স্বস্তি
ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমার লজ্জাস্থানকে গোপন রাখো, আমার ভয়কে শান্তিতে
পরিণত করো এবং আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে ও আমার উপরের দিক থেকে আমাকে হেফাজত
করো। আমি তোমার নিকট আমার নিচের দিক দিয়ে আমাকে ধ্বসিয়ে দেয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
করি্। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৭৪, নাসায়ী ৫৫২৯, ৫৫৩০, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
১৭ নং দোয়াঃ-
“আল্ল-হুম্মা ‘আ-লিমাল গয়বি
ওয়াশ্শাহা-দাতি, ফা-ত্বিরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, রব্বা কুল্লি শাইয়িন, ওয়া মালীকাহূ
আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা, আ‘ঊযুবিকা মিন্ শাররি নাফ্সী, ওয়ামিন শার্রিশ্
শায়ত্ব-নি, ওয়া শিরকিহী’’।
অর্থঃ হে আল্লাহ! যিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য জ্ঞানের
অধিকারী, আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, প্রত্যেক জিনিসের প্রতিপালক ও মালিক- আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, আমি তোমার কাছে আমার মনের মন্দ হতে,
শয়তানের মন্দ ও তাঁর শির্ক হতে আশ্রয় চাই।) এই দোয়াটি সকাল সন্ধ্যা ও শয্যায় যাওয়ার
সময় বলা যাবে।
হাদিসঃ-
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেছেন, একদিন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে
একটি দু‘আ বলে দিন যা আমি সকাল-সন্ধ্যায় পড়তে পারি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, তুমি পড়বে,
‘আল্ল-হুম্মা ‘আ-লিমাল গয়বি ওয়াশ্শাহা-দাতি,
ফা-ত্বিরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, রব্বা কুল্লি শাইয়িন, ওয়া মালীকাহূ আশহাদু আল্লা-
ইলা-হা ইল্লা- আন্তা, আ‘ঊযুবিকা মিন্ শাররি নাফ্সী, ওয়ামিন শার্রিশ্ শায়ত্ব-নি,
ওয়া শিরকিহী’’।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! যিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য জ্ঞানের
অধিকারী, আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, প্রত্যেক জিনিসের প্রতিপালক ও মালিক- আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, আমি তোমার কাছে আমার মনের মন্দ হতে,
শয়তানের মন্দ ও তাঁর শির্ক হতে আশ্রয় চাই।)
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
তুমি এ দু‘আ সকালে-সন্ধ্যায় ও ঘুমানোর সময় পড়বে।’’ (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৯২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৬৭, আহমাদ ৬৩, দারিমী ২৭৩১, ২৬৮৯, ইবনু হিব্বান ৯৬২, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ১২০২/৯১৭,
আল-কালিমুত তাইয়্যিব ২২, সহীহাহ ২৭৫৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৮ নং দোয়াঃ- জান্নাত পাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি
লাভের দোয়াঃ
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল
জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্নার”। (৩ বার)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত
চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই”।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জান্নাত প্রার্থনা
করে, জান্নাত আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করো। যে ব্যক্তি আল্লাহর
কাছে ৩ বার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, জাহান্নাম আল্লাহর কাছে দুয়া করে,
হে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও”।
হাদিসঃ-
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জান্নাতের
প্রত্যাশা করে; জান্নাত বলবে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর যে ব্যক্তি
তিনবার জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করবে; জাহান্নাম বলবে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম
থেকে মুক্তি দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৭৮, সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫৭২, সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩৪০, নাসায়ী ৫৫২১, সহীহ ইবনু হিববান
১০৩৪, সহীহ আল জামি ৬২৭৫, মুখতাসারুশ শামাইল ৪/২২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
একটি জাঈফ হাদিসঃ আল্লাহুম্মা আজরনি মিনান্নার।
উল্লেখ্য–সকাল সন্ধ্যায় ৭ বার “আল্লাহুম্মা
আজিরনি মিনান্নার” পড়ার হাদীসটা জয়ীফ বা দুর্বল, শায়খ
আলবানী সিলসিলা জয়ীফাহঃ ১৬২৪।
যেহেতু “আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার” জয়ীফ
বা দুর্বল তাই ইহার আমল না করে "আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু
বিকা মিনান্নার" সকাল সন্ধ্যায় তিনবার করে পাঠ করবো।
১৯ নং দোয়াঃ-
“বিসমিল্লা-হিল্লাযি লা-ইয়াদুররু
মা”আ ইসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামা-ই ওয়া হুয়াস সামীউল আলীম”।
অর্থঃ আমি ঐ আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যার
নামে আরম্ভ করলে আসমান ও যমীনের কোনো বস্তুই কোনোরুপ ক্ষতি সাধন করতে পারে না। আর তিনি
সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
হাদিসঃ-
আবান ইবনু ‘উসমান হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
আমার পিতাকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে বান্দা প্রত্যেক সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়বে,
‘‘বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা- ইয়াযুররু
মা‘আইস্মিহী শায়উন ফিল আরযি ওয়ালা- ফিস্সামা-য়ি, ওয়া হুওয়াস্ সামী‘উল ‘আলিম’’।
(অর্থাৎ- আল্লাহর নামে শুরু করছি, যে নামের
সাথে আসমান ও জমিনে কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সব শুনেন ও জানেন)- কোন
কিছু তাকে ক্ষতি করতে পারে না। বর্ণনাকারী বলেন, আবান পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
এজন্য যারা হাদীস শুনছিলেন তারা তাঁর দিকে তাকাচ্ছিল। আবান তখন বললেন, আমার দিকে কী
দেখছ? নিশ্চয়ই হাদীস যা আমি বর্ণনা করছি তাই, তবে যেদিন আমি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছি
সেদিন এ দু‘আ পড়িনি। এ কারণে আল্লাহ আমার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছিলেন তা কার্যকরী হয়েছে।
(তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ। কিন্তু আবূ দাঊদ-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, সে রাতে তাঁর
ওপর কোন আকস্মিক বিপদাপদ ঘটবে না যে পর্যন্ত না ভোর হয়, আর যে তা ভোরে বলবে তার ওপর
কোন আকস্মিক বিপদাপদ সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না সন্ধ্যা উপনীত হয়।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯১, তিরমিযী ৩৩৮৮, আবূ দাঊদ ৫০৮৮,
ইবনু মাজাহ ৩৮৬৯, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৯৫, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২৩, সহীহ আত্
তারগীব ৬৫৫, সহীহ আল জামি‘ ৫৭৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
২০ নং দোয়াঃ-
“আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা
মা জায়ালতাহু সাহলান, ওআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা”।
(৭ বার)।
অর্থঃ ইয়া আল্লাহ, কোনো বিষয় সহজ নয়। হ্যাঁ,
যাকে তুমি সহজ করে দাও, যখন তুমি চাও তখন তুমি মুশকিলকে সহজ করে দাও। (ইবনে হিব্বান: হাদিস নং-৯৭৪)।
২১ নং দেোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা মা আসবাহা বী
মিন নি‘মাতিন আউ বিআহাদিন মিন খালক্বিকা ফামিনকা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা, ফালাকাল
হাম্দু ওয়ালাকাশ্ শুক্রু”। (৩ বার)।
“হে আল্লাহ! যে নেয়ামত আমার সাথে বিকালে উপনীত
হয়েছে, অথবা আপনার সৃষ্টির অন্য কারও সাথে; এসব নেয়ামত কেবলমাত্র আপনার নিকট থেকেই;
আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং সকল প্রশংসা আপনারই। আর সকল কৃতজ্ঞতা আপনারই প্রাপ্য।”
যে ব্যক্তি সকালবেলা উপরোক্ত দো‘আ পাঠ করলো
সে যেনো সেই দিনের শুকরিয়া আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি বিকালবেলা এ দো‘আ পাঠ করলো সে
যেনো রাতের শুকরিয়া আদায় করলো’’। (হাদীসটি সংকলন করেছেন,
আবূ দাউদ ৪/৩১৮, নং ৫০৭৫; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নং ৭; ইবনুস সুন্নী, নং
৪১; ইবন হিব্বান, (মাওয়ারিদ) নং ২৩৬১। আর শাইখ ইবন বায তাঁর তুহফাতুল আখইয়ার পৃ. ২৪
এ এর সনদকে হাসান বলেছেন)।
বিকেল বেলার যিকির ও দোয়াসমূহ
বিকেল বেলার যিকির ও দোয়াসমূহঃ সাধারনত এই
দোয়া ও যিকিরসমূহ আসরের সময় থেকে সূর্যাস্ত
পর্যন্ত সময়ের মাঝে করার কথা বলা হয়েছে। তবে মাগরিবের পর রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ সময়ের
মাঝে করলেও সওয়াব পাওয়া যাবে।
১ নং দোয়াঃ-
“আ’উযু বিকালিমা –তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন শাররি
মা খলাক্বা”। (তিন বার)।
অর্থঃ
আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের অসিলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয়
চাই।
যে কেউ বিকাল বেলা এ দো‘আটি তিনবার বলবে, সে
রাতে কোনো বিষধর প্রাণী তার ক্ষতি করতে পারবে না। (আহমাদ
২/২৯০, নং ৭৮৯৮; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নং ৫৯০; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৮; আরও
দেখুন, সহীহুত তিরমিযী ৩/১৮৭; সহীহ ইবন মাজাহ ২/২৬৬; তুহফাতুল আখইয়ার লি ইবন বায, পৃ.
৪৫)।
২ নং দোয়াঃ-
(ক) “লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু
লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হাম্দু ইয়ুহ্য়ী ওয়াইয়ূমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি
শাই’ইন ক্বাদীর”। (১০ বার)।
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই,
তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু
দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান”। ১০ বার করে পড়তে হবে। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৭৪; আহমাদ ৪/২২৭,নং ১৭৯৯০)।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনে একশ’বার পড়বে
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল
হামদু ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর’’
(অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ
নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই প্রশংসা এবং তিনি হচ্ছেন সকল
বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান)।
তার দশটি গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সমপরিমাণ সাওয়াব
হবে। তার জন্য একশ নেকী লেখা হবে, তার একশটি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, তার জন্য এ
দুআ ঐ দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান হতে বেঁচে থাকার জন্য রক্ষাকবচ হবে এবং সে যে কাজ
করেছে তার চেয়ে উত্তম কাজ অন্য কেউ করতে পারবে না, কেবল ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে এর চেয়ে
বেশী পড়বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩০২, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৯৩, ৬৪০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯১, মুয়াত্ত্বা মালিক
৭১২, ৪৮৬, ৪৮৮, সুনান আততিরমিযী ৩৪৬৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৯৮, আহমাদ ৮০০৮, আল কালিমুত্ব
ত্বইয়্যিব ৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৫৪, সহীহ আল জামি ৬৪৩৭, আহমাদ ৭৯৪৮, ৮৫০২, ৮৬১৭, ৮৬৫৬,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
৩ নং দোয়াঃ- সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫- (আয়াতুল
কুরসী)।
“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল
হাইয়্যুল ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি
ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা
আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া
কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল
আজীম”।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি
জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও
যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি
ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা
থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর
সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে
কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫)।
৪ নং দোয়াঃ-
(সূরা ইখলাস, সূরা নাস ও সূরা ফালাক সকাল ও
বিকেলে প্রতিটি সূরা ৩ বার করে)।
মু‘আয ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু খুবাইব (রহঃ) থেকে
তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে আমাদের সালাত
পড়ার জন্য আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে
পেয়ে গেলাম। তিনি বললেনঃ বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বললেন, বলো। আমি কিছুই
বললাম না। তিনি আবার বললেনঃ বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কি বলবো? তিনি বললেনঃ
তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সূরা কুল হুয়াল্লাহু (সূরা ইখলাস), সূরা নাস
ও ফালাক পড়বে; এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৮২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৭৫, তা’লীকুর রাগীব (১/২২৪),
আল-কালিমুত তাইয়্যিব (১৯/৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
৫ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা মা আমসা (সকালে
বলতে হবে আসবাহা ) বী মিন নি‘মাতিন আউ বিআহাদিন মিন খালক্বিকা ফামিনকা ওয়াহ্দাকা লা
শারীকা লাকা, ফালাকাল হাম্দু ওয়ালাকাশ্ শুক্রু”। (৩ বার)।
“হে আল্লাহ! যে নেয়ামত আমার সাথে বিকালে উপনীত
হয়েছে, অথবা আপনার সৃষ্টির অন্য কারও সাথে; এসব নেয়ামত কেবলমাত্র আপনার নিকট থেকেই;
আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং সকল প্রশংসা আপনারই। আর সকল কৃতজ্ঞতা আপনারই প্রাপ্য।”
যে ব্যক্তি সকালবেলা উপরোক্ত দো‘আ পাঠ করলো
সে যেনো সেই দিনের শুকরিয়া আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি বিকালবেলা এ দো‘আ পাঠ করলো সে
যেনো রাতের শুকরিয়া আদায় করলো’’। (হাদীসটি সংকলন করেছেন,
আবূ দাউদ ৪/৩১৮, নং ৫০৭৫; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নং ৭; ইবনুস সুন্নী, নং
৪১; ইবন হিব্বান, (মাওয়ারিদ) নং ২৩৬১। আর শাইখ ইবন বায তাঁর তুহফাতুল আখইয়ার পৃ. ২৪
এ এর সনদকে হাসান বলেছেন)।
৬ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী,
আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাম্‘ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী। লা ইলা-হা ইল্লা আনতা।
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল-ফাক্বরি ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ‘আযা-বিল
ক্বাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা”। (৩ বার)।
“হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শরীরে।
হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শ্রবণশক্তিতে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন
আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয়
চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। আপনি ছাড়া আর
কোনো হক্ব ইলাহ নেই।” (আবূ দাউদ ৪/৩২৪, নং ৫০৯২; আহমাদ
৫/৪২, নং ২০৪৩০; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নং ২২; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৯; বুখারী,
আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭০১। আর শাইখ আল্লামা ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’
গ্রন্থের পৃ. ২৬ এ এর সনদকে হাসান বলেছেন)।
৭ নং দোয়াঃ-
“হাসবিয়াল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা
হুয়া, ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম”।
(৭ বার)।
“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো
হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব।”
হাদিসঃ-
আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সাতবার বলেঃ ‘‘আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া
কোনো ইলাহ নেই, আমি তাঁর উপর ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের রব’’ আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট
হবেন যা তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তার বিরুদ্ধে চাই সে সত্যিকারভাবে অথবা কৃত্রিমভাবে
বলুক না কেন।
যে ব্যক্তি দো‘আটি সকালবেলা সাতবার এবং বিকালবেলা
সাতবার বলবে তার দুনিয়া ও আখেরাতের সকল চিন্তাভাবনার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট হবেন। (ইবনুস সুন্নী, নং ৭১, মারফূ‘ সনদে; আবূ দাউদ ৪/৩২১; মাওকূফ
সনদে, নং ৫০৮১, কানজুল উম্মাল: ৫০১১)। আর শাইখ শু‘আইব ও আব্দুল কাদের আরনাঊত এর সনদকে
সহীহ বলেছেন। দেখুন, যাদুল মা‘আদ ২/৩৭৬)।
৮ নং দোয়াঃ-
“রদ্বীতু বিল্লা-হি রব্বান,
ওয়াবিল ইসলা-মি দীনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যান”।
(৩ বার)।
“আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবীরূপে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট।”
হাদিসঃ-
সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলে, 'আল্লাহ
তা'আলা আমার রব, ইসলাম আমার দীন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার
রাসূল হওয়ায় আমি সর্বান্তকরণে পরিতৃপ্ত আছি", তাকে পরিতৃপ্ত করা আল্লাহ্ তা'আলার
করণীয় হয়ে যায়।
যে ব্যক্তি এ দো‘আ সকাল ও বিকাল তিনবার করে
বলবে, আল্লাহর কাছে তার অধিকার হয়ে যায় তাকে কিয়ামাতের দিন সন্তুষ্ট করা। (আহমাদ ৪/৩৩৭; নং ১৮৯৬৭; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল-লাইলাহ,
নং ৪; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৮; আবু দাউদ, ৪/৩১৮, নং ১৫৩১; তিরমিযী ৫/৪৬৫, নং ৩৩৮৯। আর
ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’ এর ৩৯ পৃষ্ঠায় একে হাসান বলেছেন)।
৯ নং দোয়াঃ-
“ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু
বিরাহমাতিকা আস্তাগীসু, আসলিহ্ লী শা’নী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা
‘আইন”।
“হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের
অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার কামনা করি, আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন, আর
আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না।” (হাকেম
১/৫৪৫, তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, আর যাহাবী তা সমর্থন করেছেন। আরও দেখুন, সহীহ আত-তারগীব
ওয়াত-তারহীব ১/২৭৩)।
১০ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা সাল্লি ওয়াসাল্লিম ‘আলা নাবিয়্যিনা
মুহাম্মাদ”। (সকাল-বিকাল ১০ বার করে)।
“হে আল্লাহ! আপনি সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের
নবী মুহাম্মাদের উপর।”
(যে কেউ সকাল বেলা আমার উপর দশবার দরুদ পাঠ
করবে এবং বিকাল বেলা দশবার দরুদ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ দ্বারা সৌভাগ্যবান
হবে।’ (তাবরানী হাদীসটি দু’ সনদে সংকলন করেন, যার একটি
উত্তম। দেখুন, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ১০/১২০; সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব ১/২৭৩)।
১১ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আমসাইতু
(সকালে বলতে হবে-আসবাহ্তু) উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা ‘আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতিকা
ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা, আন্নাকা আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা
লাকা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আব্দুকা ওয়া রাসূলুকা”।
(৪ বার)।
“হে আল্লাহ! আমি বিকালে উপনীত হয়েছি। আপনাকে
আমি সাক্ষী রাখছি, আরও সাক্ষী রাখছি আপনার ‘আরশ বহনকারীদেরকে, আপনার ফেরেশতাগণকে ও
আপনার সকল সৃষ্টিকে, (এর উপর) যে নিশ্চয় আপনিই আল্লাহ, একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব
ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই; আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার
বান্দা ও রাসূল।”
যে ব্যক্তি সকালে অথবা বিকালে তা চারবার বলবে,
আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করবেন। যে ব্যক্তি সকালে অথবা বিকালে তা চারবার
বলবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করবেন। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৭১, বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ১২০১; নাসাঈ, ‘আমালুল ইয়াওমি
ওয়াল লাইলাহ, নং ৯; ইবনুস সুন্নী, নং ৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১২ নং দোয়াঃ-
“আমসাইনা ওয়া আমসাল মুলকু লিল্লাহি
ওয়ালহাম্দু লিল্লাহি, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু
ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর। রব্বি আস্আলুকা খাইরা মা ফী হা-যাল
ইয়াউমি ওয়া খাইরা মা বা‘দাহু, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররি মা ফী হা-যাল ইয়াউমি ওয়া শাররি
মা বা‘দাহু। রব্বি আঊযু বিকা মিনাল কাসালি ওয়া সূইল-কিবারি। রবিব আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযাবিন
ফিন্না-রি ওয়া আযাবিন্ ফিল ক্বাবরি”। (৩ বার)।
“আমরা বিকালে উপনীত হয়েছি, অনুরূপ যাবতীয় রাজত্বও
বিকালে উপনীত হয়েছে, আল্লাহ্র জন্য। সমুদয় প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া
কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি
সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হে রব্ব! এই দিনের মাঝে এবং এর পরে যা কিছু
কল্যাণ আছে আমি আপনার নিকট তা প্রার্থনা করি। আর এই দিনের মাঝে এবং এর পরে যা কিছু
অকল্যাণ আছে, তা থেকে আমি আপনার আশ্রয় চাই।
হে রব্ব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই অলসতা ও
খারাপ বার্ধক্য থেকে। হে রব্ব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামে আযাব হওয়া থেকে
এবং কবরে আযাব হওয়া থেকে।” (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৮০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৫৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৭১২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৩ নং দোয়াঃ-
“আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু
ইলাইহি”।
(দৈনিক ১০০ বার)।
“আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং
তাঁর নিকটই তাওবা করছি”।
(ক) আবু বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....আবূ বুরদাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহাবা
আগার (রাযিঃ) হতে শুনেছি, তিনি ইবনু উমর (রাযিঃ) এর নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর নিকট
তওবা্ করো। কেননা আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদিন একশ’ বার তওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫২, ৬৭৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭০২, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর
কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৭, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৪ নং দোয়াঃ- (সায়্যিদুল ইসতিগফার)
“আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা
ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা
মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা,
ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা”।
(৩ বার)।
“হে আল্লাহ্! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া আর
কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার সাধ্য
মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের
অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি স্বীকার করছি,
আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া আর কেউ
গুনাহসমূহ মাফ করে না।”
হাদিসঃ-
শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু‘আ পড়া- ‘‘হে আল্লাহ!
তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার
সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার
কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নি‘য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার
কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’’
যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে
এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি
রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে
সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬,
৬৩২৩, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৫ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল
‘আফওয়া ওয়াল- ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাতি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া
ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা ফী দীনী ওয়াদুনইয়াইয়া, ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী
ওয়া আ-মিন রাও‘আ-তি। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন
ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী”। (৩ বার)।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে
ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা
চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ
ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে
হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার
বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আশ্রয় চাই আমার নীচ
থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে”।
হাদিসঃ-
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেনঃ
‘‘ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আমার দীন, আমার দুনিয়া, আমার পরিবার ও আমার সম্পদের স্বস্তি
ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমার লজ্জাস্থানকে গোপন রাখো, আমার ভয়কে শান্তিতে
পরিণত করো এবং আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে ও আমার উপরের দিক থেকে আমাকে হেফাজত
করো। আমি তোমার নিকট আমার নিচের দিক দিয়ে আমাকে ধ্বসিয়ে দেয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
করি্। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৭৪, নাসায়ী ৫৫২৯, ৫৫৩০, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
১৬ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা আ-লিমাল গাইবি ওয়াশ্শাহা-দাতি ফা-ত্বিরাস
সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, রব্বা কুল্লি শাই’ইন ওয়া মালীকাহু, আশহাদু আল-লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আ‘উযু বিকা মিন
শাররি নাফ্সী ওয়া মিন শাররিশ শাইত্বা-নি ওয়াশিরকিহী ওয়া আন আক্বতারিফা ‘আলা নাফ্সী
সূওআন আউ আজুররাহূ ইলা মুসলিম”। (৩ বার)।
“হে আল্লাহ! হে গায়েব ও উপস্থিতের জ্ঞানী,
হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, হে সব কিছুর রব্ব ও মালিক! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,
আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আমার আত্মার অনিষ্ট থেকে,
শয়তানের অনিষ্টতা থেকে ও তার শির্ক বা তার ফাঁদ থেকে, আমার নিজের উপর কোনো অনিষ্ট করা,
অথবা কোনো মুসলিমের দিকে তা টেনে নেওয়া থেকে।”
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
তুমি এ দু‘আ সকালে-সন্ধ্যায় ও ঘুমানোর সময় পড়বে।’’ (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৯২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৬৭, আহমাদ ৬৩, দারিমী ২৭৩১, ২৬৮৯, ইবনু হিব্বান ৯৬২, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ১২০২/৯১৭,
আল-কালিমুত তাইয়্যিব ২২, সহীহাহ ২৭৫৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৭ নং দোয়াঃ-
“বিসমিল্লা-হিল্লাযি লা-ইয়াদুররু
মা”আ ইসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামা-ই ওয়া হুয়াস সামীউল আলীম”।
(৩ বার)।
অর্থঃ আমি ঐ আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যার
নামে আরম্ভ করলে আসমান ও যমীনের কোনো বস্তুই কোনোরুপ ক্ষতি সাধন করতে পারে না। আর তিনি
সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
হাদিসঃ-
আবান ইবনু ‘উসমান হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
আমার পিতাকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে বান্দা প্রত্যেক সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়বে,
‘‘বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা- ইয়াযুররু
মা‘আইস্মিহী শায়উন ফিল আরযি ওয়ালা- ফিস্সামা-য়ি, ওয়া হুওয়াস্ সামী‘উল ‘আলিম’’
(অর্থাৎ- আল্লাহর নামে শুরু করছি, যে নামের
সাথে আসমান ও জমিনে কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সব শুনেন ও জানেন)- কোন
কিছু তাকে ক্ষতি করতে পারে না। বর্ণনাকারী বলেন, আবান পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
এজন্য যারা হাদীস শুনছিলেন তারা তাঁর দিকে তাকাচ্ছিল। আবান তখন বললেন, আমার দিকে কী
দেখছ? নিশ্চয়ই হাদীস যা আমি বর্ণনা করছি তাই, তবে যেদিন আমি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছি
সেদিন এ দু‘আ পড়িনি। এ কারণে আল্লাহ আমার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছিলেন তা কার্যকরী হয়েছে।
(তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ। কিন্তু আবূ দাঊদ-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, সে রাতে তাঁর
ওপর কোন আকস্মিক বিপদাপদ ঘটবে না যে পর্যন্ত না ভোর হয়, আর যে তা ভোরে বলবে তার ওপর
কোন আকস্মিক বিপদাপদ সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না সন্ধ্যা উপনীত হয়।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯১, তিরমিযী ৩৩৮৮, আবূ দাঊদ ৫০৮৮,
ইবনু মাজাহ ৩৮৬৯, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৯৫, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২৩, সহীহ আত্
তারগীব ৬৫৫, সহীহ আল জামি‘ ৫৭৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৮ নং দোয়া:-
“লা -ইলা-হা ইল্লাল্ল-হুল আযীমুল
হালীম, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুল আরশিল আযীম, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুস সামা
ওয়া-তি ওয়া রব্বুল আরদি ওয়া রব্বুল আরশিল কারীম।” (৩ বার)।
অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, যিনি
মহান, যিনি সহনশীল। আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ ব্যতীত
কোনো মাবুদ নেই। তিনি আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালক এবং মহান আরশের প্রতিপালক।
হাদিসঃ-
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও
বর্ণিত। তিনি বলেন, বিপদের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন,
‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ‘আযীমুল
হালীম, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুল ‘আর্শিল ‘আযীম; লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুস্
সামা-ওয়া-তি, ওয়া রব্বুল আরযি রব্বুল ‘আর্শিল কারীম’’।
(অর্থাৎ- মহান ধৈর্যশীল আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে
কোন মা‘বূদ নেই। মহান ‘আরশের মালিক আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই। আল্লাহ
ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, যিনি সমগ্র আকাশম-লীর রব, মহান ‘আরশের রব।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪১৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৩৪৬, ৬৩৪৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩০, আহমাদ ২০১২,
মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৭৭২, সহীহ আল জামি‘ ৪৯৪০, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব
১১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৯ নং দোয়াঃ-
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা
মিন যা-ওয়া-লি নি’মাতিকা ওয়া তাহাওঁবুলি আ-ফিয়াতিকা ওয়া ফুজা-আতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামী’ঈ
সাখাতিক।” (৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা
করছি তোমার নি’আমতের হ্রাসপ্রাপ্তি, তোমার শান্তির বিবর্তন, তোমার শাস্তির হঠাৎ আক্রমণ
এবং সমস্ত অসন্তোষ হতে।
হাদিসঃ-
উবাইদুল্লাহ
ইবনু আবদুল কারীম আবু যুর’আহ (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’আর মধ্যে একটি ছিল এই যে,
"আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন যাওয়া-লি নি'মাতিকা ওয়াতা হাওউলি আ-ফিয়াতিকা
ওয়া ফুজা-য়াতি নিকমাতিকা ওয়া জামী’ই সাখাতিকা" অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি
তোমার নিকট আশ্রয় চাই নি’আমাত দূর হয়ে যাওয়া হতে, তোমার দেয়া সুস্থতা পরিবর্তন
হয়ে যাওয়া থেকে, তোমার অকস্মাৎ শাস্তি আসা হতে এবং তোমার সকল প্রকার অসন্তুষ্টি থেকে"।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭৩৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬১, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৪৫, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব
ত্ববারানী ৩৫৮৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৪৬, শু‘আবূল ঈমান ৪২২৪, সহীহ আল জামি ১২৯১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৯৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
২০ নং দোয়াঃ-
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা
মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া আযাবিল ক্ববরি। আল্ল-হুম্মা
আ-তি নাফসী তাকওয়া-হা- ওয়া যাক্কিহা-আন্তা খইরু মান যাক্কা-হা আন্তা ওয়ালিয়্যুহা- ওয়া
মাওলাহা- আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন ইলমিন লা- ইয়ানফাউ ওয়া মিন ক্বলবিন লা-ইয়াখশা-উ
ওয়া মিন নাফসিন লা-তাশবা’উ ওয়া মিন দা’ ওয়াতিন লা-ইউসতাজা-বু লাহা।”
(৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আশ্যয়
চাচ্ছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধ্যকতা ও ক্বরেরর আযাব হতে। হে আল্লাহ!
আমার আত্মাকে সংযম দান করুন, একে পবিত্র করুন, আপনি শ্রেষ্ঠ পবিত্রকারী, আপনি তার অভিভাবক
ও প্রভু। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এমন ইলম হতে যা উপকার করে
না। এমন অন্তর হতে যা ভয় করে না। এমন আত্মা হতে যা তৃপ্তি লাভ করে না এবং এমন দোয়া
হতে যা কবুল হয় না।
হাদিসঃ-
যায়দ ইবনু আরক্বম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা
মিনাল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া ‘আযা-বিল কবরি, ‘আল্ল-হুম্মা
আ-তি নাফসী তাকওয়া-হা- ওয়াযাক্কিহা- আন্তা খয়রু মিন্ যাক্কা-হা- আন্তা ওয়ালিয়্যুহা-
ওয়ামাও লা- হা-, আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘ইল্মিন লা- ইয়ানফা‘উ ওয়ামিন্ কলবিন
লা- ইয়াখশা‘উ ওয়ামিন্ নাফসিন লা- তাশবা‘উ ওয়ামিন্ দা‘ওয়াতিন্ লা- ইউসতাজা-বু লাহা-’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা,
কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের ‘আযাব হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! তুমি আমার আত্মাকে
সংযমী করো ও একে পবিত্র করো। তুমিই শ্রেষ্ঠ পুতঃপবিত্রকারী, তুমি তার অভিভাবক ও রব।
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ঐ জ্ঞান লাভ হতে আশ্রয় চাই, যে জ্ঞান (আত্মার) কোন উপকারে
আসে না, ঐ অন্তর হতে মুক্তি চাই যে অন্তর তোমার ভয়ে ভীত হয় না। ঐ মন হতে আশ্রয় চাই
যে মন তৃপ্তি লাভ করে না এবং ঐ দু‘আ হতে, যে দু‘আ কবূল করা হয় না।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭২২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১২৪, সহীহাহ্ ৪০০৫, সহীহ আল জামি ১২৮৬, সহীহ আত্
তারগীব ১২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
২১ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ'উযুবিকা মিন জাহদিল বালা-ই,
ওয়া দারাকিশ শাক্বা-ই, ওয়া সূইল ক্বাযা-ই, ওয়া শামা-তাতিল আ'দা-ই।“ (৩ বার)।
অর্থঃ আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি
অক্ষমকারী বিপদের কষ্ট হ'তে , দুভার্গ্যের
আক্রমন হতে , মন্দ ফায়সালা হ'তে এবং শত্রুর হাসি হ'তে।
হাদিসঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালা মুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের
অশুভ পরিণতি এবং দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাইলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪৭, ৬৬১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৭, নাসাঈ- ৫৪৯১, ৫৪৯২,
৭৩০৮, আদাবুল মুফরাদ ৬৬৯, সহীহ আল জামি ২৯৬৮, সহীহাহ্ ১৫৪১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯০১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
২২ নং দোয়াঃ-
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন ফিতনাতিন্নারি অআযাবিন্নারি অমিন শার্রিল
গিনা ওয়াল ফাক্ব।“ (৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের ফিতনা থেকে,
জাহান্নামের আযাব থেকে এবং ধনবত্তা ও দারিদ্রের মন্দ থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
হাদিসঃ-
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্যগুলো দিয়ে দু‘আ করতেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের পরীক্ষা,
আগুনের আযাব এবং প্রাচুর্য ও দারিদ্রের মধ্যে নিহিত অকল্যাণ হতে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’’
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৭৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)
২৩ নং দোয়াঃ-
“আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা
আ’ন হারামিক; ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।” (৭ বার)।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালালের
সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচান। এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষি
হতে বাঁচান।’
হাদিসঃ-
আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, একটি চুক্তিবদ্ধ
গোলাম তার নিকটে এসে বলে, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে আমি অপরাগ হয়ে পড়েছি। আমাকে
আপনি সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিব না যা আমাকে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর সীর (সাবীর)
পর্বত পরিমাণ ঋণও থাকে তবে আল্লাহ তা'আলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি
বলেনঃ তুমি বল, “হে আল্লাহ! তোমার হালালের মাধ্যমে আমাকে তোমার হারাম হতে বিরত রাখ
বা দূরে রাখ এবং তোমার দয়ায় তুমি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া হতে আমাকে আত্মনির্ভরশীল
কর”। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৬৩, তা’লীকুর রাগীব
(২/৪০), আল-কালিমুত তাইয়্যিব ১৪৩/৯৯, মুসতাদরাকে হাকিম, হা/১৯৭৩)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
২৪ নং দোয়াঃ-
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা
মিনাল ফাক্বরি ওয়াল কিল্লাতি ওয়ায যিল্লাতি ওয়া আ’উযুবিকা মিন আন আযলিমা আও উযলিমা”।
(৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট অভাব, স্বল্পতা
ও অপমান হতে আশ্রয় চাই, আরো আশ্রয় চাই অত্যাচার
করা ও অত্যাচার হওয়া থেকে।
হাদিসঃ-
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি দরিদ্রতা হতে, আপনার কম দয়া হতে এবং অসম্মানী
হতে। আমি আপনার কাছে আরো আশ্রয় চাইছি যুলুম করা অথবা অত্যাচারিত হওয়া হতে।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪৪, নাসায়ী ৫৪৭৫), আহমাদ (৩/৩০৫),
হাকিম (১/৫৪০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
২৫ নং দোয়াঃ-
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি
ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্ রিজাল’’।
(৩ বার)।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয়
নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে; অপারগতা ও অলসতা থেকে; কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে; এবং ঋণের
ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (সহীহ বুখারি, হা/২৮৯৩/৬৩৬৯,
মিশকাত, হা/ ২৪৫৮, তিরমিযি, হা/৩৪৮৪, আবু দাউদ, হা/১৫৪১, আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৭২)।
হাদিসঃ-
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি
ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্
রিজা-ল’’ ।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা,
শোক-তাপ, অক্ষমতা-অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের জোর-জবরদস্তি হতে
আশ্রয় চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৮, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৯, ৬৭৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭০৬, নাসায়ী ৫৪৪৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৮৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৪১, আহমাদ
১০৫২, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১২৯, সহীহ আল জামি ১২৮৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯২৩,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
২৬ নং দোয়াঃ-
“আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা
মা জায়ালতাহু সাহলান, ওআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা”।
(৭ বার)।
অর্থঃ ইয়া আল্লাহ, কোনো বিষয় সহজ নয়। হ্যাঁ,
যাকে তুমি সহজ করে দাও, যখন তুমি চাও তখন তুমি মুশকিলকে সহজ করে দাও। (ইবনে হিব্বান: হাদিস নং-৯৭৪)।
প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরাঃ
সকাল ও বিকেলে পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়া বা আমলগুলো উল্লেখ করা হলো। উক্ত দোয়াগুলো
যাদের মুখস্থ আছে তারা ফজরের সালাত আদায়ের পর তথা সূর্য ওঠার পর থেকে জুহরের পূর্ব পর্যন্ত এবং আসরের সালাতের
পর থেকে মাগরিবের সালাতের পূর্ব পর্যন্ত পাঠ করবেন। তবে সময় না পেলে ঈশার সালাতের পূর্বেও
পাঠ করা যাবে। যাদের মুখস্ত নেই তারা দেখে দেখে পাঠ করলেও চলবে। তবে যে বিষয়ে আমল শুরু
করবেন তা কবুল হোক বা না হোক কখনই আমল করা ছাড়বেন না। কারণ হয়তো আল্লাহ তায়ালা এর চেয়েও
বড় কোনো প্রতিদান উক্ত আমলের বিনিময়ে দিবেন।
এগুলো ছাড়াও প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর এবং সারা
দিনের আরো কিছু আমল আছে। এগুলোও অব্যাহত রাখতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার
তৌফিক দান করুন। আমিন।
(সমাপ্ত)
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য
করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social
Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে
দিন।
(ক) “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের)
জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে
নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)।
(খ) “তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে
আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন।
(সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)।
(গ)
ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ্
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান
রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না। আর যে লোক বিভ্রান্তির দিকে
ডাকে তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য
হালকা হবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৬৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৬০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঘ) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিত,
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান)
পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি
নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন
নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৩৪৬১, হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস
সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৩২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
.................................................................................................................
এক সাথে সকল পর্ব দেখতে
চাইলে এর উপর ক্লিক করুন
-----------------------------------------------------
Please Share On
No comments:
Post a Comment