বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
অভাব-অনটন ও দুঃখ কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার দোয়া বা আমলসমূহ
অভাব-অনটন দূরীকরণ বা রিজিক বৃদ্ধিকরণঃ
বিপদ-আপদ,
বালা-মসিবত, অভাব-অনটন, দুঃখ, কষ্ট প্রত্যেক মানুষের নিত্য সঙ্গী। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং
কখনো কখনো বিপদ-আপদ, বালা-মসিবত, অভাব-অনটন, দুঃখ, কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করেন। সেই পরীক্ষায়
যারা ধৈর্যধারণ করবে তারাই সফলকামী হবে।
(ক) আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি অবশ্যই তোমাদের
পরীক্ষা করব, কখনও ভয়ভীতি, কখনও অনাহার দিয়ে, কখনও তোমাদের জানমাল ও ফসলাদির ক্ষতির
মাধ্যমে। (এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্যধারণ করতে হবে) তুমি ধৈর্যশীলদের (জান্নাতের) সুসংবাদ
দান করো”। (সূরা বাকারা: ১৫৫)।
রিজিক কখনো কখনো বান্দার জন্য পরীক্ষা। কারণ
আল্লাহ দেখেন, যা তিনি মানুষকে অনুগ্রহ করে দান করলেন তা থেকে মানুষ কতটা তার পথে ব্যয়
করে। যখন তিনি মানুষের আচরণে সন্তুষ্ট হন, যাকে ইচ্ছা তিনি আরো বাড়িয়ে দেন। আবার কারো
কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। তাই আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত কেবল ভোগ করলে চলবে না, এর শুকরিয়াও
আদায় করতে হবে।
(খ) “পৃথিবীতে বিচরণশীল এমন কোনো প্রাণী নেই,
যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই। তাদের স্থায়ী এবং অস্থায়ী অবস্থানস্থল সম্পর্কে
তিনি অবহিত। সবকিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা আছে।” (সূরা
হুদ: ৬)।
(গ) “ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল কোনো প্রাণী এবং বাতাসে
ডানা বিস্তার করে উড়ে চলা কোনো পাখিকেই দেখ না কেন, এরা সবাই তোমাদের মতই বিভিন্ন
শ্রেণী। তাদের ভাগ্যলিপিতে কোনো কিছু লিখতে আমি বাদ দেইনি। তারপর তাদের সবাইকে তাদের
রবের কাছে সমবেত করা হবে”। (সূরা আল-আনআম: ৩৮)।
(ঘ) “তাঁরই কাছে আছে অদৃশ্যের চাবি, তিনি ছাড়া
আর কেউ তা জানে না। জলে-স্থলে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন । তাঁর অজ্ঞাতসারে গাছের
একটি পাতাও পড়ে না। মৃত্তিকার অন্ধকার প্রদেশে এমন একটি শস্যকণাও নেই যে সম্পর্কে
তিনি অবগত নন। শুষ্ক ও আর্দ্র সবকিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লিখিত আছ “। (সূরা আল আনআম: ৫৯)।
(ঙ) “আর এমন কত জীবজন্তু রয়েছে যারা নিজেদের রিযিক
মজুদ রাখে না। আল্লাহ্ই রিযিক দান করেন তাদেরকে ও তোমাদেরকে; আর তিনি সর্বশ্রোতা,
সর্বজ্ঞ”। (সুরা আল আনকাবুত-৬০)।
(চ) “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে।
আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ূতে যা আছে, তা তিনি জানেন। আর কেউ জানে না আগামীকাল
সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ,
সম্যক অবহিত”। (সুরা লুকমান-৩৪)।
(ছ) “নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক
জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনিই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে
ভালোভাবে অবহিত এবং সব কিছু দেখছেন”। (সূরা: আল-ইসরা,
আয়াত ৩০)।
(জ) “আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন সম্পত্তি দান
করেন”। (সূরা: আল-বাক্বারাহ, আয়াত ২১২)।
রিজিক কাকে বলে?
‘রিজিক’ এর কয়েকটি সংজ্ঞা রয়েছে। যথা-
(ক) মহান আল্লাহ তার সৃষ্টি জীবের প্রয়োজনে যেসকল
বস্তুর ব্যবস্থা করেন, তারপর সৃষ্টিজীব তার দ্বারা উপকৃত হয়, তা-ই রিজিক। সুতরাং সকল
সৃষ্টিই নিজ নিজ রিজিক গ্রহণ করে থাকে। (শারহুল মাকাসিদ
: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৩৫) ।
(খ) আরও বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য
যে সকল বস্তুর ব্যবস্থা করেন, অনন্তর প্রাণী তা গ্রহণ করে জীবন পরিচালনা করে তা-ই রিজিক।
আর তা কখনো কিছু সৃষ্টির জন্য হালাল হয় এবং কখনো কিছু সৃষ্টির জন্য হারাম হয়। এতে
প্রমাণিত হয় যে, আপেক্ষিকভাবে যা হারাম, তা-ও রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, সৃষ্টি বিশেষের
জন্য হালাল করা হয়েছে।
(গ) কারো কারো মতে, প্রাণী যা ভক্ষণ করে জীবন যাপন
করে তাকে রিজিক বলে। তবে এ সংজ্ঞা হতে প্রথমোক্ত সংজ্ঞাটি উত্তম। কেননা, তৃতীয় সংজ্ঞায়
রিজিকের সম্বন্ধ আল্লাহ তায়ালার দিকে করা হয়নি। অথচ রিজিক বোঝাতে আল্লাহর প্রতি সম্বন্ধ
থাকা বাঞ্চনীয়। (শারহুল আকাইদ: পৃষ্ঠা ৯৫)।
তবে ‘রিজিক’ ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। রিজিক
বলতে স্বাস্থ্য, সম্পদ, খাদ্য, বুদ্ধি, উপায়-উপকরণ, সময় ইত্যাদি সবই বোঝায়। এমনকি
আমাদের জীবনটাও রিজিক। এ সবকিছুই আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস
করি যে, আল্লাহ হলেন ‘আর-রাজ্জাক’ তথা রিজিকদাতা। এখন প্রশ্ন হলো, আমরা যদি কোনো কাজ
না করে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকি, তাহলে আমাদের রিজিক আসবে কি না? না-কি চেষ্টা করতে
হবে? কুরআন ও হাদীসের আলোকে এর জবাব হলো, অবশ্যই রিজিকের সন্ধানে চেষ্টা করতে হবে।
মহান আল্লাহ রিজিক অন্বেষণের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন,
(ক) “তারপর যখন নামায শেষ হয়ে যায় তখন তোমরা
ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তথা রিজিক সন্ধান করো এবং অধিক মাত্রায়
আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকো। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে”। (সূরা আল-জুমুআ: ১০)।
(খ) মহান আল্লাহ আরো বলেন, তোমাদেরকে আমি ক্ষমতা-ইখতিয়ার
সহকারে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তোমাদের জন্য এখানে জীবন ধারণের উপকরণ সরবরাহ
করেছি। কিন্তু তোমরা খুব কমই শোকর গুজারি করে থাকো। (সূরা
আল আরাফ: ১০)।
অধিকাংশ কাজ যার মাধ্যমে রিজিক অর্জন করা যায়,
তা আল্লাহ তায়ালা সহজ করেছেন, কঠিন করেননি। তিনি এ ব্যাপারে বলেন-
(গ) “তিনিই তো সেই মহান সত্ত্বা! যিনি তোমাদের
জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন। কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ কর এবং তাঁর রিজিক
থেকে তোমরা আহার কর। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান”। (সূরা
আল-মুলক, আয়াত: ১৫)।
এখন আমরা আলোচনা করবো, কীভাবে রিজিক পাওয়া
যায় কিংবা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। রিজিক পাওয়ার জন্য আমাদের কর্তব্য হলো হাত গুটিয়ে
বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহের চেষ্টা করা। কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে
আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কিছু পালনীয় বিষয় রয়েছে। আর তা হচ্ছে-
(১) তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন
করাঃ
(সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২-৩)।
(২) তওবা ও ইস্তেগফার করাঃ (সূরা নূহ, আয়াত: ১০-১২,
সুনানু আবি দাউদ: ১৫২০, সুনানু ইবনে মাজাহ: ৩৮১৯,
তাবরানী: ৬২৯১, বায়হাকী: ৬৩৬, হাকেম, মুস্তাদরাক: ৭৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi)।
(৩) আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাঃ
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৮৫, আধুনিক প্রকাশনী ৫৫৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi)।
(৪) নবীজীর ওপর দরুদ পড়াঃ (তিরমিযী : ২৬৪৫; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭)
(৫) আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করাঃ (সূরা আস-সাবা’,
আয়াত : ৩৯)।
(৬) বারবার হজ-উমরা করাঃ (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৮১৫; নাসাঈ ২৬৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭) দুর্বলের প্রতি সদয় ও সদাচার করাঃ
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৯৬, ৩৫৯৪, ৩৬৪৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৮২, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৬৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) ঝঞ্ঝাটমুক্ত ইবাদতঃ (সুনান ইবনে মাজাহ ৪১০৭, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪৬৬, সহীহাহ
১৩৫৯, মুসনাদ আহমদ ৮৬৮১ )। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih
(৯) আল্লাহর পথে হিজরত করাঃ (সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১০০)।
(১০) আল্লাহর পথে জিহাদঃ (মুসনাদ আহমদ : ৫৬৬৭; বায়হাকী : ১১৫৪; শুয়াবুল
ঈমান : ১৯৭৮৩)।
(১১) আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করাঃ (সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ০৭)।
(১২) বিয়ে করাঃ (সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২)।
(১৩) গুনাহ ত্যাগ করাঃ (সূরা আল-আলা, আয়াত: ১৬-১৭,
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৪৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৪১৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩১৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০৫৪, সহীহাহ ১২৯, তাখরীজুল মুশকিলাহ ১৮, আহমদ: ৬৫৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১৪) আল্লাহর কাছে দোয়া করা তথা বিপদ-আপদ, বালা-মসিবত, দুঃখ-কষ্টের সময়
আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ করা বা ডাকাঃ
রিজিক অর্জনে এবং অভাব দূরীকরণে প্রয়োজন আল্লাহর
কাছে দোয়া করা। কারণ, তিনি প্রার্থনা কবুল করেন। আর আল্লাহ তায়ালাই রিজিকদাতা এবং
তিনি অসীম ক্ষমতাবান।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
(১) ‘‘তোমার প্রতিপালক বলেন- তোমরা আমাকে ডাকো,
আমি (তোমাদের ডাকে) সাড়া দেব। আরও তাঁর বাণীঃ যারা অহংকারবশতঃ আমার ‘ইবাদাত করে না,
নিশ্চিতই তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (সূরা আল-মু’মিন ৪০/৬০)।
(২) ‘আমি বলেছি- ‘তোমরা তোমাদের রবেবর কাছে ক্ষমা
চাও, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল। (তোমরা তা করলে) তিনি অজস্র ধারায় তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ
করবেন, তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন
এবং তোমাদের জন্য নদ্বীনালা প্রবাহিত করবেন।।’’ (সূরা
নূহ ৭১/১০-১২)।
(৩)
মহান আল্লাহ বলেছেন, “অবশ্যই আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ।” (সূরা আনকাবূত ৪৫ আয়াত)।
(৪) আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “তোমরা আমাকে স্মরণ
কর; আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।” (সূরা বাকারা ১৫২ আয়াত)।
(৫) তিনি অন্য জায়গায় বলেন, “আল্লাহকে অধিক-রূপে
স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (সূরা জুমআ ১০ আয়াত)।
(৬) তিনি আরও বলেছেন, “নিশ্চয়ই আত্মসমর্পণকারী
(মুসলিম) পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত
পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী,
বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযা পালনকারী পুরুষ ও রোযা
পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী (সংযমী) পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী (সংযমী) নারী,
আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নারী---এদের জন্য আল্লাহ
ক্ষমা ও মহা প্রতিদান রেখেছেন।” (সূরা আহযাব ৩৫ আয়াত)।
(৭) তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ!
তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।”
(সূরা আহযাব ৪১-৪২ আয়াত)।
রাসুল সাঃ বলেন,
(১) মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ ও যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ)....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তওবা করে তখন আল্লাহ ঐ লোকের চেয়েও
বেশি আনন্দিত হন, যে মরুভূমিতে নিজ সওয়ারীর উপর আরোহিত ছিল। তারপর সওয়ারটি তার হতে
হারিয়ে যায়। আর তার উপর ছিল তার খাদ্য ও পানীয়। এরপর নিরাশ হয়ে সে একটি গাছের ছায়ায়
এসে আরাম করে এবং তার উটটি সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় হঠাৎ
উটটি তার কাছে এসে দাঁড়ায়। অমনিই সে, তার লাগাম ধরে ফেলে। এরপর সে আনন্দে আত্মহারা
হয়ে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার রব। আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে
ভুল করে ফেলেছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৫৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭৪৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫৭৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশ'আরী ও মুহাম্মাদ
ইবনুল আ'লা (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় আর যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয়
না এরূপ দুটি ঘরের তুলনা করা যায় জীবিত ও মৃতের সঙ্গে। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৪০৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৯৩, ইসলামীক সেন্টার ১৭০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার
বান্দার ধারণার পাশে থাকি। (অর্থাৎ সে যদি ধারণা রাখে যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন,
তার তওবা কবুল করবেন, বিপদ আপদ থেকে উদ্ধার করবেন, তাহলে তাই করি।) আর আমি তার সাথে
থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। সুতরাং সে যদি তার মনে আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে
আমার মনে স্মরণ করি, সে যদি কোন সভায় আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম
ব্যক্তিদের (ফিরিশতাদের) সভায় স্মরণ করি।”
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫৩৬,
৭৫৩৬, ৭৫৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৬৬৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৫, সুনান
ইবনু মাজাহ ৩৮২২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২৩৮৮, ৩৬০৩, আহমাদ ৭৩৭৪, ৮৪৩৬, ৮৮৩৩, ৯০০১, ৯০৮৭, ৯৩৩৪, ৯৪৫৭, ১০১২০, ১০২৪১, ১০৩০৬,
১০৩২৬, ১০৪০৩, ১০৫২৬, ১০৫৮৫, ২৭২৭৯, ২৭২৮৩, সহীহাহ ২২৮৭, রিয়াযুস সালেহীন ২৮/১৪৪৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অভাবকালে মানুষের কাছে হাত না পেতে আল্লাহর
শরণাপন্ন হলে এবং তাঁর কাছেই প্রাচুর্য চাইলে অবশ্যই তার অভাব মোচন হবে এবং রিজিক বাড়ানো
হবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা) কর্তৃক বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন-
‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতপর তা সে মানুষের
কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরীকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয়
না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অবিলম্বে
আল্লাহ তাকে তরিৎ বা ধীরে রিজিক দেবেন। (তিরমিযী : ২৮৯৬; মুসনাদ আহমদ : ৪২১৮)।
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই
আল্লাহ্ তা'আলার উপর নির্ভরশীল হতে তাহলে পাখিদের যেভাবে রিযিক দেয়া হয় সেভাবে তোমাদেরকেও
রিযিক দেয়া হতো। এরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে
আসে। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৪৪, সুনান ইবনু
মাজাহ ৪১৬৪, আহমাদ ৩৭২, তাখরীজুল মুখতার ২১৭, ২১৮, সহীহাহ ৩১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
‘হজরত মুতাল্লিব ইবনে হানতাব রা: থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, নিশ্চয় জিব্রাইল আমার অন্তরে ওহি ঢেলে দিয়েছেন, অবশ্যই রিজিক
শেষ হওয়ার আগে কারো মৃত্যু হয় না। সুতরাং তোমরা হারাম ছেড়ে হালাল পথে রিজিকের অনুসন্ধান
করো।’ (মুসান্নেফে ইবনে আবী শায়বা ৯/২৫৪)।
দুঃখ-কষ্ট বা বিপদ-আপদ কেনো আসেঃ
বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত আল্লাহর তরফ থেকে
আমাদের উপর নেমে আসে। কখনো আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্যে ইচ্ছেকৃতভাবে
বিপদে ফেলেন আবার মানুষের কৃত কর্মের জন্যে বিভিন্ন সময় বিপদ আপদ দিয়ে থাকেন। সুতরাং
আমরা বলতে পারি-
মানুষের উপর বিপদ আপদ বা বালা
মুসিবত আসে দুইভাবে।
(১) আল্লাহর তরফ থেকে বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য।
(২) মানুষের কৃত কর্মের জন্য।
আল্লাহর তরফ থেকে বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য
বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত আসে।
মহাবিশ্বে প্রতিনিয়ত যা কিছুই ঘটুক না কেন,
তা আল্লাহর ইচ্ছার বাইরের নয়। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই এখানে ঘটছে না?
তবে কি আমাদের উপর যে বিপদ-আপদ আসে, তাও কি
আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিফলন? আল্লাহ কি ইচ্ছা করেই আমাদের বিভিন্ন বিপদ-আপদে ফেলেন? অনেকভাবেই
এসকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়।
তবে সহজে বলতে গেলে, জীবন একটি পরীক্ষা। এই
পরীক্ষার প্রেক্ষিতেই আমাদের এই জীবনে যেমন সুখ ও সাফল্যের আগমন ঘটে, ঠিক তেমনি দুঃখ
ও বিপদ-আপদ আসে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে বলেন, “যিনি
সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ।
তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।” (সূরা মুলক, আয়াত: ২)।
দুঃখ ও বিপদ-আপদের মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করতে
পারি আমাদের নিজেদের। কেন এই পৃথিবীতে আমাদের আগমন, তা সম্পর্কেও আমরা সচেতন হতে পারি।
ফলে আমরা জীবনের মূল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে
আমাদের জীবনকে পরিচালনা করতে সক্ষম হতে পারি।
মানুষ ঈমানদার হোক আর কাফের হোক, নেককার হোক
আর পাপী হোক, সবার জীবনে বিপদ-আপদ আসে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যদিও আমরা অপছন্দ করি, তারপরেও
কেনো আমাদের জীবনে এইরকম বিপদ-আপদ আসে বা আল্লাহ কেনো আমাদের পরীক্ষায় ফেলেন?
আল্লাহ বলেন,
মানুষ কি মনে করে যে “আমরা ঈমান এনেছি”-এ কথা
বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবেনা? আমি অবশ্যই তাদের পূর্বে যারা
ছিলো তাদেরকে পরীক্ষা করেছি। আর আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী।”
(সুরা আনকাবুত, আয়াত ২-৩)।
এছাড়া অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন,
“মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত
হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে। যদি সে কল্যানপ্রাপ্ত হয়, তাহলে ইবাদতের উপর কায়েম থাকে। আর
যদি কোনো পরীক্ষায় পড়ে তাহলে সে পূর্বাবস্থায় (কুফুরিতে) ফিরে যায়। সে ইহকাল ও পরকালে
ক্ষতিগ্রস্ত, এটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি। (সুরা হাজ্জ, আয়াত
১১)।
আল্লাহ আরো বলেন,
“কঠিন শাস্তির পূর্বে আমি তাদেরকে হালকা শাস্তি
আস্বাদন করাবো, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।” (সুরা সাজদাহ,
আয়াত ২১)।
আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিভিন্নভাবে বিপদ আপদে ফেলেন
মহান আল্লাহ বান্দার প্রতি অতি দয়াবান। তিনি
সর্বদা বান্দার জন্য সহজ চান, কঠিন চান না। তিনি কারও উপর যুলুমকারী নন। সর্বদা বান্দার
কল্যাণ চান। তিনি চান বান্দার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে তাকে দ্বীনের সঠিক পথে পরিচালিত
করতে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য (হালাল-হারাম)
ব্যাখ্যা করে দিতে চান ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের (সুন্দর) রীতি সমূহের প্রতি তোমাদের
পথ প্রদর্শন করতে চান এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করতে চান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’।
(নিসা ৪/২৬)।
(ক) আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদাপদের সম্মুখীন করেনঃ
বিপদাপদ মহান প্রভুর পক্ষ থেকে এক বড় নে‘মত।
তিনি এর মাধ্যমে বান্দাকে পরীক্ষা করে থাকেন।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই আমরা তোমাদের
পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন ও প্রাণের ক্ষতির মাধ্যমে এবং ফল-শস্যাদি বিনষ্টের
মাধ্যমে’। (বাক্বারাহ ২/১৫৫)।
সুতরাং আমরা যদি বিপদাপদকে সর্বোত্তমভাবে আলিঙ্গন
করতে পারি তবেই আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণের স্বাদ আস্বাদন করতে পারব ইনশাআল্লাহ।
আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন,
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁর কোন বান্দার কল্যাণ চাইলে আগে-ভাগে
দুনিয়াতেই তাকে তার গুনাহখাতার জন্য কিছু শাস্তি দিয়ে দেন। আর কোন বান্দার অকল্যাণ
চাইলে দুনিয়ায় তার পাপের শাস্তিদান হতে বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন
তাকে তার পূর্ণ শাস্তি দিবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৫৬৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০৩১, শারহুস্ সুন্নাহ্
১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২২০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
বিপদাপদ জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যমঃ বিপদাপদে পড়লে গোনাহ
মাফ হয়। তাই এটা জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি ধারণা করেছ
জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের উপর এখনও তাদের মত অবস্থা আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে
বিগত হয়েছে। নানাবিধ বিপদ ও দুঃখ-কষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করেছিল ও তারা ভীত-কম্পিত হয়েছিল।
এমনকি রাসূল ও তার সাথী মুমিনগণ বলতে বাধ্য হয়েছিল যে, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? জেনে
রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য অতীব নিকটবর্তী’। (বাক্বারাহ
২/২১৪)।
(খ) আল্লাহ যার কল্যাণ চান, নেককার ব্যক্তিদের বিপদে ফেলেনঃ
আল্লাহ তা‘আলা কোন নেককার ব্যক্তির কল্যাণ
চাইলে তাকে বিপদে ফেলেন। হাদীছে এসেছে,
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলাম, তখন তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তাঁর উপর আমার হাত রাখলে তার গায়ের চাদরের উপর থেকেই তাঁর দেহের প্রচন্ড তাপ অনুভব করলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কত তীব্র জ্বর আপনার। তিনি বলেনঃ আমাদের (নবী-রাসূলগণের) অবস্থা এমনই হয়ে থাকে। আমাদের উপর দ্বিগুণ বিপদ আসে এবং দ্বিগুণ পুরস্কারও দেয়া হয়। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কার উপর সর্বাধিক কঠিন বিপদ আসে? তিনি বলেনঃ নবীগণের উপর। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারপর কার উপর? তিনি বলেনঃ তারপর নেককার বান্দাদের উপর। তাদের কেউ এতটা দারিদ্র পীড়িত হয় যে, শেষ পর্যন্ত তার কাছে তার পরিধানের কম্বলটি ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তাদের কেউ বিপদে এত শান্ত ও উৎফুল্ল থাকে, যেমন তোমাদের কেউ ধন-সম্পদ প্রাপ্তিতে আনন্দিত হয়ে থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২৪, সহীহাহ ১৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অপর এক হাদীছে এসেছে,
মুসআব ইবনু সা'দ (রহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে
বর্ণিত আছে, তিনি সাদ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল!
কোন্ মানুষের সর্বাপেক্ষা কঠিন পরীক্ষা হয়? তিনি বলেনঃ নবীগণের। অতঃপর মর্যাদার দিক
থেকে তাদের পরবর্তীদের, অতঃপর তাদের পরবর্তীগণের। বান্দাকে তার দীনদারির মাত্রা অনুসারে
পরীক্ষা করা হয়। যদি সে তার দীনদারিতে অবিচল হয় তবে তার পরীক্ষাও হয় ততটা কঠিন। আর
যদি সে তার দীনদারিতে নমনীয় হয় তবে তার পরীক্ষাও তদনুপাতে হয়। অতঃপর বান্দা অহরহ বিপদ-আপদ
দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। শেষে সে পৃথিবীর বুকে গুনাহমুক্ত হয়ে পাকসাফ অবস্থায় বিচরণ
করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২৩৯৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬২, আহমাদ ১৪৮৪, ১৪৯৭, ১৫৫৮, ১৬১০, দারেমী ২৭৮৩,
সহীহাহ ১৪৩, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৩৯, ইবনু হিব্বান ২৯০১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪০২।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) আল্লাহ যার কল্যাণ চান, দুনিয়ায় তাকে শাস্তি ভোগ করানঃ
যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা তাদেরকে তিনি দুনিয়াতেই
কিছু শাস্তি ভোগ করান। যাতে পরকালে তাঁর সেই বান্দাকে শাস্তি ভোগ করতে না হয়।
আনাস
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِ‘আল্লাহ তা‘আলা যখন তার বান্দার
মঙ্গল কামনা করেন তখন দুনিয়ায় তাকে অতি তাড়াতাড়ি বিপদাপদের সম্মুখীন করা হয়। আর যখন
তিনি কোন বান্দার অকল্যাণের ইচ্ছা করেন তখন তিনি তার গুনাহের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত
থাকেন। অবশেষে ক্বিয়ামতের দিন তাকে এর পরিপূর্ণ আযাবে নিপতিত করেন’। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, সহীহাহ ১২২০, মিশকাত ১৫৬৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আল্লাহ যার কল্যাণ চান, বান্দার দেহ, সম্পদ ও সন্তানদের বিপদগ্রস্ত
করেনঃ
আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ চান, তার নিজের
এবং সম্পদ ও সন্তানের উপরে বিপদ দেন। মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ (রহঃ) থেকে তার পিতা ও দাদার
সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য
লাভ করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ
কোনো ব্যক্তির জন্য বিনাশ্রমে আল্লাহর পক্ষ থেকে মর্যাদার আসন নির্ধারিত হলে আল্লাহ
তার দেহ, সম্পদ অথবা সন্তানকে বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর সে তাতে ধৈর্য ধারণ করলে শেষ
পর্যন্ত বরকতময় মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত উক্ত মর্যাদার স্তরে উপনীত হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩০৯০, সহীহাহ ২৫৯৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
যতো বড় পরীক্ষা ততো বড় পুরস্কার
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বড় বড় বিপদ-মুসীবাতের পরিণাম বড় পুরস্কার।
আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতিকে ভালবাসলে তাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা এতে সন্তুষ্ট
ও তৃপ্ত থাকে তাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে জাতি এতে অসন্তুষ্ট হয়, তার
জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৫৬৬, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০৩১, শু‘আবুল ঈমান ৯৩২৫,
শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৪৬, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪০৭)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
বিভিন্নমুখী বিপদাপদ মুকাবিলা করতে করতে মুমিন
এক সময় যখন মৃত্যুবরণ করবে, তখন তার আর কোন গোনাহ থাকবে না।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন নারী-পুরুষের উপর, তার
সন্তানের উপর ও তার ধন-সম্পদের উপর অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। সবশেষে আল্লাহ্ তা'আলার
সাথে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়। (সূনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৩৯৯, হাকেম ৭৮৭৯, ছহীহ ইবনু হিববান ২৯২৪, ছহীহাহ ২২৮০)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
পক্ষান্তরে দুষ্ট লোকদেরকে তাদের সীমাসংঘনে
ছেড়ে দেওয়া হবে ‘বরং আল্লাহ তাদের উপহাসের বদলা নেন এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যে
ছেড়ে দেন বিভ্রান্ত অবস্থায়’ (বাক্বারাহ ২/১৫)।
অতঃপর ক্বিয়ামতের ময়দানে কঠিনভাবে পাকড়াও করা
হবে।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা যখন তার কোন বান্দার কল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তার কোন বান্দার অকল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান হতে বিরত থাকেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, সহীহাহ ১২২০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২২০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এ দুনিয়াতে সর্বাধিক বিপদ গ্রস্থ কারা এমন
একটি প্রশ্নের জওয়াবে রাসূলে করীম (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘এ দুনিয়ায় সবচেয়ে কঠিন বিপদগ্রস্থ
হ’লেন নবীগণ। তারপর ক্রমানুযায়ী সর্বোচ্চ নেককারগণ। মুমিন পরীক্ষিত হবে তার দ্বীন অনুযায়ী।
যদি সে দ্বীনের বিষয়ে কঠিন হয়, তবে তার পরীক্ষা সেই অনুযায়ী কঠিন হবে। আর যদি সে দ্বীনের
ব্যাপারে ঢিলা হয়, তার পরীক্ষা অনুরূপ হালকা হবে। মুমিনের উপরে এইভাবে পরীক্ষা চলতে
থাকবে। এমন এক সময় আসবে যে, সে যমীনের উপরে চলাফেরা করবে এমন অবস্থায় যে, তার কোন গোনাহ
থাকবে না’। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২৩, সূনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৩৯৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬২, আহমাদ ১৪৮৪, ১৪৯৭, ১৫৫৮, ১৬১০,
দারেমী ২৭৮৩, সহীহাহ ১৪৩, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৩৯, ইবনু হিব্বান ২৯০১, সহীহ
আত্ তারগীব ৩৪০২। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
কেননা তার বালা-মুছীবত তার গোনাহের কাফফারা
হয়ে থাকে, যদি সে ঐ মুছীবতে সন্তুষ্ট থাকে। যেমন-
আবূ সা‘ঈদ খুদরী ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট
ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা
তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৪৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৩, আহমাদ ৮০২৭, ইবনু হিব্বান ২৯০৫, শারহুস্ সুন্নাহ্
১৪২১, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৪৯২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪১৩, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৮১৮,
আধুনিক প্রকাশনী ৫২৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫১২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মানুষের কৃত কর্মের জন্য বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত আসে
মূলত পৃথিবীতে যতো বড় বড় বিপদ আপদ বালা মুসিবত
এসেছে তার মূল কারণ হলো মানুষের পাপের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া। পূর্বে যেসব পাপের কারনে
আল্লাহ তায়ালা গজব নাজিল করেছিল, বর্তমানে সেইসব পাপের চেয়েওে মারাত্মক পাপকার্য আরো
বেশী সংঘটিত হচ্ছে। যেমন: সমকামিতার প্রচলন ও আল্লাহর গজব ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয়
ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা
ফিরে আসে। (আল–কোরআন, সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪১)।
মানুষের যেসব কৃত কর্মের জন্যে
বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত নেমে আসে তা হলোঃ
(১) পাপের সীমা ছাড়িয়ে গেলে।
(২) বিধর্মী কার্যকলাপের ফলে।
(৩) ব্যভিচার, মাপে কম দেওয়া ইত্যাদি অপকর্মের
ফলে।
(৪) অন্যায় কাজে বাধা না দেওয়ার ফলে।
(৫) অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে।
(৬) দুনিয়া প্রীতি বৃদ্ধি পেলে।
(৭) ধনীরা কৃপণ হলে।
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার
সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেনো তোমরা তার সম্মুখীন
না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে
প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে
কখনো দেখা যায় নি (যেমন: করোনা)। যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের
উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি
বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে
আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে,
তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ
সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না (তথা
ইসলামি আইন মোতাবেক বিচারিক কার্যক্রম ও রাষ্ট্র শাসন করে না) এবং আল্লাহর নাযীলকৃত
বিধানকে গ্রহণ করে না (তথা কুরআনকে সংবিধান হিসেবে মেনে নেয় না), তখন আল্লাহ তাদের
পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৪০১৯, সহীহাহ ১০৬)। হাদিসের মানঃ
হাসান হাদিস।
বিপদ-আপদ, বালা-মুছীবতে পড়লে করণীয়
(১) আল্লাহর উপর ভরসা করাঃ
বিপদাপদ, কষ্ট-ক্লেশ যাই আসুক না কেন সর্বদা
আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। কেননা এসব কিছু মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। আল্লাহ বলেন,
‘তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে
না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপরেই মুমিনদের ভরসা করা উচিত’। (তওবা ৯/৫১)।
(২) আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকাঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা যখন তার কোন বান্দার কল্যাণ
সাধন করতে চান তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তার
কোন বান্দার অকল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান হতে বিরত থাকেন।
তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন। (সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬৫, সহীহাহ ১২২০, শারহুস্
সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২২০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩০৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(৩) ধৈর্যধারণ করাঃ
হাদ্দাব ইবনু খালিদ আল আযদী ও শাইবান ইবনু
ফাররূখ (রহঃ).....সুহায়ব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মু’মিন ছাড়া অন্য কেউ
এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকর-গুজার করে আর অস্বচ্ছলতা
বা দুঃখ-মুসীবাতে আক্রান্ত হলে সবর করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৯৯,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭২২৯, ইসলামিক সেন্টার ৭২৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আর ধৈর্যশীল ব্যক্তিদের প্রতিদান সম্পর্কে
মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে ধৈর্যশীলগণ তাদের পুরষ্কার পাবে অপরিমিতভাবে’। (যুমার ৩৯/১০)।
ভাগ্য বা তাকদীর পরিবর্তনশীল নাকি অপরিবর্তনশীল
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ রেহেমে (মাতৃগর্ভে) একজন ফেরেশতা
নিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, হে প্রতিপালক! এটি বীর্য। হে প্রতিপালক! এটি রক্তপিন্ড।
হে প্রতিপালক! এটি গোশতপিন্ড। আল্লাহ্ যখন তার সৃষ্টি পূর্ণ করতে চান, তখন ফেরেশতা
বলে, হে প্রতিপালক! এটি নর হবে, না নারী? এটি দুর্ভাগা হবে, না ভাগ্যবান? তার রিযক্
কী পরিমাণ হবে? তার জীবনকাল কী হবে? তখন (আল্লাহর নির্দেশমত) তার মায়ের পেটে থাকাকালে
ঐ রকমই লিখে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৫৯৫, ৩১৮, ৩৩৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৬২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৪৬, আধুনিক প্রকাশনী ৬১৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬১৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস করা ঈমানের
একটি অন্যতম রুকন। (ফাতহুল বারী)।
অতীতে যা ঘটেছে, বর্তমানে যা ঘটছে এবং ভবিষ্যতে
যা ঘটবে সবই আল্লাহ তা‘আলার চোখের সামনে রয়েছে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবই তিনি সমানভাবে
জ্ঞাত। প্রত্যেকটি মানুষ কখন জন্মিবে, কখন মরবে আর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোন মুহূর্তে
কোন আমল করবে সবই তাঁর জানা। মৃত্যুর পর কেউ জান্নাতে যাবে, না জাহান্নামে যাবে কিংবা
প্রথমে জাহান্নামে যাওয়ার পর আবার জান্নাতে যাবে- এ সব কিছুই তাঁর জানা। মাতৃগর্ভে
১২০ দিন পর আল্লাহ ফেরেশতা পাঠিয়ে লিখিয়ে দেন কতটা রিযিক সে পাবে, কখন কোথায় মরবে,
সে জান্নাতী হবে, না জাহান্নামী হবে। তিনি তো সবই জানেন, আর তাই তিনি লিখিয়ে দেন। ভাগ্যে
লিখে দেয়ার কারণে কেউ জান্নাতী-জাহান্নামী হয় না, নিজের আমলের কারণেই জান্নাতী জাহান্নামী
হয়। বান্দার ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত আল্লাহর জানা কথাগুলো আগেই লিখে দেয়ার নামই তাকদীর।
তাকদীর গড়ার দায়-দায়িত্ব বান্দার, তাকদীর গড়ার স্বাধীনতা আল্লাহ তাঁর বান্দাকে দিয়ে
রেখেছেন। আল্লাহ বলেন আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্ত করেন না যে পর্যন্ত তারা নিজেরাই
নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন না করে। (সূরা রাদ-১১)।
অবশ্য আল্লাহ মানুষকে বিভিন্নভাবে ফযীলাত বা
প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা দান করেন। কিন্তু দুনিয়াবী প্রতিষ্ঠার
সঙ্গে আখিরাতের সফলতা বা ব্যর্থতার কোন সম্পর্ক নাই। কেউ জান্নাতের পথে যেতে যেতে শেষ
মুহূর্তে জাহান্নামে চলে গেলেও তার জন্য সে নিজেই দায়ী। আর আল্লাহ- যিনি তাকদীর লেখান
তিনি ভালভাবেই জানেন যে, শেষ মুহূর্তে ঐ ব্যক্তি নিজেই দিক পরিবর্তন করে জাহান্নামে
পৌঁছবে, যদিও সে সারাজীবন জান্নাতে যাওয়ার কাজই করেছে। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাকে
বিবেক বুদ্ধি দান করেছেন এবং তাকে ভাল ও মন্দ উভয় পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, তার বিবেক-বুদ্ধিকে
স্বাধীনভাবে ব্যবহার করার স্বাধীনতাও দিয়েছেন আর এর দ্বারা তাকে পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছেন।
এছাড়া আল্লাহ্ তা‘আলা মানুষসহ কোন কিছুকেই বেকার সৃষ্টি করেননি। অতএব তিনি যখন কোন
কিছুকেই বেকার হিসেবে সৃষ্টি করেননি তখন বিবেকসম্পন্ন এ মানব জাতিকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি
করেছেন সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়ে তাদেরকে তো পরীক্ষা করবেনই। আল্লাহ্ তা‘আলা
ভাল আর মন্দের সৃষ্টিকর্তা, তিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন মানব ও দানব জাতিদ্বয়কে পরীক্ষা
করার জন্যই। কিন্তু এ পরীক্ষায় কে কেমন ফলাফল করবে সে সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর
অগ্রিম জ্ঞান দ্বারাই অবগত রয়েছেন। সেটিই হচ্ছে তাকদীর যার কোন ব্যতিক্রম হবে না। এ
তাকদীরের উপর প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির ঈমান আনা মু’মিন হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত।
সারা জীবন ভাল কাজ করে শেষ জীবনে মন্দ কাজ
করে জাহান্নামে যাওয়ার পরিণতি এড়ানোর জন্যই আল্লাহ বলেছেন- তোমরা মুসলিম না থাকা আবস্থায়
কক্ষনো মরোনা অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত ইসলামের উপর কায়েম থাক। (আল-ইমরান-১০২)।
নেক আমল ও দু’আ ব্যতীত ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না
নেক
আমল ও দো‘আর মাধ্যমে মানুষের তাকদীরের পরিবর্তন হয়। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ যা ইচ্ছা
করেন তা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা করেন তা বহাল রাখেন”। (সূরা
রা’দ, আয়াত ৩৯)।
সালমান আল ফারিসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু‘আ ছাড়া অন্য কিছুই তাকদীদের
লিখনকে পরিবর্তন করতে পারে না এবং নেক ‘আমল ছাড়া অন্য কিছু বয়স বাড়াতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২১৩৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২২, মু‘জামুল কাবীর
লিত্ব ত্ববারানী ৬১২৮, সহীহাহ্ ১৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৯, সহীহ আল জামি ৭৬৮৭)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
ভাগ্য পরিবর্তনশীল এটাই সত্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জন ও নিজের প্রচেষ্টায় নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করা সম্ভব। ভাগ্য যদি পরিবর্তনশীলই
না হবে তাহলে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ তওবা ও ইস্তেগফারমূলক কিংবা আরো অসংখ্য দোয়া কেনো
নাযিল করে সেগুলো সালাতের মধ্যে ও সালাতের বাহিরে আমল করতে বলা হলো। কদর রাতে আল্লাহ
তায়ালা সুরা আল কদর নাযিল করা হয়েছে। সে রাতে প্রত্যেক বরকত পূর্ণ বিষয় নিয়ে ফেরেশতারা
ও রূহ অবতীর্ণ হয়, স্বীয় রবের নির্দেশে। (সুরা আল কদর
৯৭, আয়াত ৪)।
এই রাতে সকল মুসলমান নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে
ইবাদত বন্দেগী, জিকির ও বিভিন্ন আমল বা দোয়া পাঠ করে থাকে। অতএব ভাগ্য পরিবর্তনশীল।
নিজের কৃতকর্ম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে বিভিন্ন দোয়া পাঠ বা আমলের মাধ্যমে নিজের
ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়।
আপনি যে আমল করছেন, সব সময় জিকির করছেন বা
দোয়া পাঠ করছেন এটাও আপনার প্রচেষ্টা।
নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দোয়াই হলো ইবাদত। অতঃপর তিলাওয়াত
করেন (অনুবাদঃ) ‘‘এবং তোমার প্রভু বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া
দিবো’’ (সূরাহ আল-মু’মিন: ৬০)। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৮,
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৬৯, ৩২৪৭, ৩৩৭২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৭৯,
১৭৮৮৮, ১৭৯১৯, ১৭৯৬৪, আল-আহকাম ১৯৪, রাওদুন নাদীর ৮৮৮, মিশকাত ২৩৩০, সহীহ আবু দাউদ
১৩২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া বা আমল সম্পর্কে জ্ঞাতব্য বিষয়
(১) দোয়া কবুলে তাড়াহুড়ো করা যাবে না, করলে সেই দোয়া কবুল হবে নাঃ
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দু‘আ কবূল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া
না করে আর বলে যে, আমি দু‘আ করলাম। কিন্তু আমার দু‘আ তো কবূল হলো না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৮২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৫, আহমাদ ১৩০০৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৫৭৮৮, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬৫৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) আবু তাহির (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ)
এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, বান্দার দু’আ
সর্বদা গৃহীত হয় যদি না সে অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য দুআ
করে এবং (দুআয়) তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! (দু’আয়) তাড়াহুড়া
করা কি? তিনি বললেন, সে বলতে থাকে, আমি দুআ তো করেছি, আমি দুআ তো করেছি; কিন্তু আমি
দেখতে পেলাম না যে, তিনি আমার দু’আ কবুল করেছেন। তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর দু’আ
করা পরিত্যাগ করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২৯,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২২৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৬৪২৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৮৮১, আল আদাবুল মুফরাদ ৬৫৪, সহীহ আল জামি ৭৭০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৬৮৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) দোয়া বা আমল কবুল না হলেও তা বন্ধ না করা তথা আমল অব্যাহত রাখতে হবেঃ
(ক) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ থেকে বর্ণিত, একদা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন, তখন এক মহিলা তাঁর কাছে (বসে) ছিল।
তিনি বললেন, ‘‘এটি কে?’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ বললেন, ‘অমুক মহিলা, যে প্রচুর নামায
পড়ে।’ তিনি বললেন, ‘‘থামো! তোমরা সাধ্যমত আমল কর। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ক্লান্ত হন না,
যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়।’’ আর সেই আমল তাঁর নিকট প্রিয়তম ছিল, যেটা তার আমলকারী
লাগাতার করে থাকে।
‘আল্লাহ ক্লান্ত হন না’- এ কথার অর্থ এই যে,
তিনি সওয়াব দিতে ক্লান্ত হন না। অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে সওয়াব ও তোমাদের আমলের প্রতিদান
দেওয়া বন্ধ করেন না এবং তোমাদের সাথে ক্লান্তের মত ব্যবহার করেন না; যে পর্যন্ত না
তোমরা নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে আমল ত্যাগ করে বস। সুতরাং তোমাদের উচিত, তোমরা সেই আমল গ্রহণ
করবে, যা একটানা করে যেতে সক্ষম হবে। যাতে তাঁর সওয়াব ও তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের জন্য
নিরবচ্ছিন্ন থাকে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩,
১১২২, ১১৫১, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৮৭, ৬৪৬১, ৬৪৬২, ৬৪৬৪, ৬৪৬৫, ৬৪৬৬, ৬৪৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ১৭১৯, ১৭১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮৫, নাসায়ী ৭৬২, ১৬২৬, ১৬৪২, ১৬৫২, ২১৭৭,
২৩৪৭, ২৩৪৯, ২৩৫১, ৫০৩৫, আবূ দাউদ ১৩১৭, ১৩৬৮, ১৩৭০, ২৪৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১৭১০,
৪২৩৮, আহমাদ ২৩৫২৩, ২৩৬০৪, ২৩৬৪২, ২৩৬৬০, ৪২৪০৯, ২৫৬০০, রিয়াযুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী-
১/১৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আল্লাহ
তায়ালা বলেন,
“আর
তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর।” (সূরা হিজর ৯৯ আয়াত)।
(গ) আহমাদ
ইবনু ইউসুফ আল আযদী (রহঃ)....'আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবদুল্লাহ! (বেশী বেশী
রাত জেগে) তুমিও অমুক ব্যক্তির মতো হয়ে যেও না। সে রাত জেগে জেগে সালাত আদায় করত,
অতঃপর রাত জেগে ইবাদাত করা ছেড়ে দিয়েছে।
উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, কোনো আমল শুরু
করলে তা ছেড়ে দেয়া যাবে না। আমল অব্যাহত রাখতে হবে। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৫২, ১১৩১, ১১৫৩, ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৭৯,
১৯৮০, ৩৪১৮, ৩৪১৯, ৩৪২০, ৫০৫২, ৫০৫৩, ৫০৫৪, ৫১৯৯, ৬১৩৪, ৬২৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৬২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫৯, তিরমিযী ৭৭০,
নাসায়ী ১৬৩০, ২৩৪৪, ২৩৮৯, ২৩৯০, ২৩৯১, ২৩৯২, ২৩৯৩, ২৩৯৪, ২৩৯৭, ২৩৯৯, ২৪০০, ২৪০১, ২৪০২,
২৪০৩, আবূ দাউদ ১৩৮৮, ১৩৮৯, ১৩৯০, ১৩৯১, ২৪২৭, ২৪৪৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৪৬, ১৭১২,
আহমাদ ৬৪৪১, ৬৪৫৫, ৬৪৮০, ৬৭২৫, ৬৭৫০, ৬৭৯৩, ৬৮০২, ৬৮২৩, দারেমী ১৭৫২, ৩৪৮৬, রিয়াযুস
সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী-২/১৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৬০০, ইসলামীক সেন্টার ২৫৯৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পৃথিবীর বক্ষে যে মুসলিম লোকই
আল্লাহ তা'আলার নিকটে কোন কিছুর জন্য দু'আ করে, অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা তাকে তা দান করেন
কিংবা তার হতে একই রকম পরিমাণ ক্ষতি সরিয়ে দেন, যতক্ষণ না সে পাপে জড়িত হওয়ার জন্য
অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দু'আ করে। সমবেত ব্যক্তিদের একজন বলল, তাহলে আমরা
অত্যধিক দুআ করতে পারি। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা'আলা তার চাইতেও বেশী কবুলকারী। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৭৩, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস
সালেহীন) ১৫০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫০১, তা’লীকুর রাগীব (২/২৭১-২৭২)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
(৩) ইচ্ছে হলে দোয়া কবুল করো এমন কথা বললে তার দোয়া কবুল হবে নাঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর
কাছে দু‘আ করার সময় এ কথা না বলে যে, হে আল্লাহ! তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে ক্ষমা করে দাও।
তুমি যদি ইচ্ছা কর আমার প্রতি দয়া করো। তুমি যদি ইচ্ছা কর আমাকে রিযক দান করো। বরং
সে দৃঢ়তার সাথে দু‘আ করবে (চাইবে)। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই প্রদান করেন। তাঁকে দিয়ে জোরপূর্বক
কোন কিছু করাতে সক্ষম নয় বা তাকে বাধা দেয়ার কেউ নেই। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২২২৫, ২২২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪৭৭, ৬৩৩৯, আবূ দাঊদ ১৪৮৩, তিরমিযী ৩৪৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ
৩৮৫৪, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭২২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৩, আহমাদ ৮২৩৭, মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব
ত্ববারানী ১৭০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৯৭৭, সহীহ আল জামি ৭৭৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৪) আল্লাহর নিকট দোয়া করলে বা কিছু চাইলে তা কবুল করা হয়ঃ
(ক) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু‘আই (মূল) ‘ইবাদাত। অতঃপর
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘‘এবং তোমাদের
রব বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু‘আ করো, আমি তোমাদের দু‘আ কবূল করব।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩০, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৭৯, তিরমিযী
২৯৬৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৭, আহমাদ ১৮৩৫২, মু‘জামুস্ সগীর
লিত্ব ত্ববারানী ১০৪১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০২, শু‘আবূল ঈমান ১০৭০, সহীহ ইবনু হিববান
৮৯০, আদাবুল মুফরাদ ৭১৪/৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৭, সহীহ আল জামি ৩৪০৭)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু‘আর চেয়ে কোন জিনিসের অধিক মর্যাদা (উত্তম) নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২২৩২, তিরমিযী ৩৩৭০, ইবনু মাজাহ ৩৭২৯, আহমাদ ৮৭৪৮, মু‘জামুল আওসাত ৩৭০৬, মুসতাদারাক
লিল হাকিম ১৮০১, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৩, শু‘আবূল ঈমান ১০৭১, ইবনু হিববান ৮৭০, আল আদাবুল
মুফরাদ ৭২২/৫৫২, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৫) আল্লাহর নিকট দোয়া না করলে
আল্লাহ রাগান্বিত হোনঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কামনা
(দু‘আ) করে না, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২২৩৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৭৩,
সহীহ আল জামি ২৪১৮, আহমাদ ৯৭০১, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ২৪৩১, সহীহাহ্ ২৬৫৪,
সহীহ আল জামি ২৪১৮, শু‘আবূল ঈমান ১০৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) সুখী জীবনে আল্লাহকে ভুলে না যাওয়াঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চায় বিপদাপদে আল্লাহ
তার দু‘আ কবূল করুন। সে যেন তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়েও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দু‘আ
করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৪০, সূনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৩৩৮২, সহীহাহ্ ৫৯৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৮, সহীহ আল জামি ৬২৯০)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(৭) দৃঢ়তা ও নিশ্চয়তা মনে রেখেই আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ করাঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দু‘আ কবূল হওয়ার দৃঢ়তা ও
নিশ্চয়তা মনে রেখেই আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ কর। জেনে রেখ, আল্লাহ তা‘আলা অবহেলাকারী
আস্থাহীন মনের দু‘আ কবূল করেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২২৪১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৪৭৯, আল মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৫১০৯, মুসতারাক লিল হাকিম ১৮১৭, আদ্
দা‘ওয়াতুল কাবীর ৩৮২, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৫৩, সহীহ আল জামি ২৪৫)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(৮) দুই হাত তুলে দোয়া করলে সেই হাত ফিরিয়ে দিতে আল্লাহ লজ্জাবোধ করেনঃ
সালমান ফারসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত লজ্জাশীল
ও দয়ালু। বান্দা যখন তাঁর কাছে কিছু চেয়ে হাত উঠায় তখন তার হাত (দু‘আ কবূল না করে)
খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২২৪৪, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৮৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৫৬, মু‘কামুল কাবীর লিত্ব
ত্ববারানী ৬১৪৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩১৪৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৮৭৬, সহীহ আল
জামি‘ ১৭৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) মুসলিমদের অনুপস্থিতিতে তাদের জন্য দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল হয়ঃ
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ).....সাফওয়ান ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু সাফওয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সিরিয়াতে আবু দারদা (রাযিঃ)
এর ঘরে গেলাম। আমি তাকে ঘরে পেলাম না; বরং সেখানে উম্মু দারদাকে পেলাম। তিনি বললেন,
আপনি কি এ বছর হজ্জ পালন করবেন? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর নিকট আমাদের
কল্যাণের জন্যে দু’আ করবেন। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ একজন
মুসলিম বান্দা তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করলে তা কবুল হয়। তার মাথার
নিকটে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন, যখন সে তার ভাইয়ের জন্য প্রার্থনা করে তখন নিয়োজিত
ফেরেশতা বলে থাকে "আমীন এবং তোমার জন্যও অবিকল তাই"। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৩,
সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৮০, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৩৪, সহীহাহ ১৩৩৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) রাসুল সাঃ পরিপূর্ণ বাক্যে দু‘আ করা পছন্দ করতেনঃ
আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিপূর্ণ বাক্যে দু‘আ করা পছন্দ করতেন (যে দু‘আয় দুনিয়া
ও আখিরাতের কল্যাণের কথা থাকে), এছাড়া অন্যান্য দু‘আ ত্যাগ করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৮২, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস
সালেহীন) ১৪৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৬৬, আহমাদ ২৭৬৫০, ২৭৬৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
যে আমলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হোন
আবু বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও ইবনু নুমায়র (রহঃ)....আনাস
ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা সে বান্দার উপর সম্ভষ্ট, যে খাদ্য গ্রহণের পরে তার জন্য
আল হামদু লিল্লা-হ’ পড়ে এবং পানীয় পান করার পরে তার কৃতজ্ঞতা (স্বীকার) করে আল হামদু
লিল্লা-হ’ বলে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৬৮২, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসুল (সাঃ) তাঁর উম্মতের মুক্তির জন্য সালাত,
সাওম, হজ্জ ও যাকাত আদায়সহ ইসলামের অন্যান্য আদেশ নিষেধ পালনের পাশাপাশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ
দোয়া বা আমল শিক্ষা দিয়েছেন। দোয়াগুলো কখন কতোবার করে আমল করতে হবে সেটাও তিনি বলে
দিয়েছেন। নিচে সেগুলোর আলোকপাত করা হলো।
অভাব-অনটন ও দুঃখ কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার দোয়া বা আমলসমূহ
(১) (ক) “আল্লাহুম্মা
আকছির মালি ওয়া ওয়ালাদি ওয়া বারিক লি ফি-মা
আ’ত্বাইতানি“।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে ধন-সম্পদ দিন, সন্তান-সন্ততিতে
বরকত দিন এবং আমাকে যা দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।
(বিঃদ্রঃ দোয়াটি সিজদায়, তাশাহুদ
বৈঠকে, ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর অন্যান্য দোয়া পাঠ শেষে ১০ বার, এ ছাড়া সকাল ও
বিকেলেও ১০ বার করে পাঠ করতে পারেন)।
হাদিসঃ
মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ)....উম্মু
সুলায়ম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনার খাদিম আনাসের জন্য
আল্লাহর কাছে দুআ করুন। তখন তিনি দুয়া করলেন, اللَّهُمَّ
أَكْثِرْ
مَالَهُ
وَوَلَدَهُ
وَبَارِكْ
لَهُ
فِيمَا
أَعْطَيْتَهُ
"হে আল্লাহ, তাকে ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততিতে বারাকাত দিন এবং আপনি তাকে যা দান
করেছেন তাতেও বারাকাত দিন।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬২৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৮০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৮২, ৬৩৩৪,
৬৩৪৪, ৬৩৭৮, ৬৩৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬১৪৮, ইসলামিক সেন্টার ৬১৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(২) আবু বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)....আবু মূসা
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কোন এক সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সাথে ছিলাম। তখন মানুষেরা উচ্চঃস্বরে তাকবীর পাঠ করতেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের জীবনের উপর সদয় হও। কেননা তোমরা তো
কোন বধির অথবা অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছে না। নিশ্চয়ই তোমরা ডাকছো সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী
সত্তাকে যিনি তোমাদের সাথেই আছেন। আবু মূসা (রাযিঃ) বলেন, আমি তার পিছে ছিলাম। তখন
আমি বলছিলাম, আল্লাহর সহযোগিতা ছাড়া কোন ভাল কাজের দিকে এগিয়ে যাওয়ার এবং মন্দ কর্ম
থেকে ফিরে আসার সামর্থ্য নেই। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে
আবদুল্লাহ ইবনু কায়স আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্ত ধনসমূহের মধ্যে কোন একটি গুপ্তধনের
কথা জানিয়ে দিব? আমি বললাম, অবশ্যই হে আল্লাহর রসূল! অতঃপর তিনি বললেন,
“লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ'”
সহযোগিতা ছাড়া কারো (ভাল কর্মের দিকে) এগিয়ে
যাওয়া এবং (খারাপ কর্ম থেকে) ফিরে আসার সামর্থ্য নেই’। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৩৮৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৭০,
তিরমিযী ৩৩৭৪, ৩৪৬১, ইবনু মাজাহ ৩৮২৪, আহমাদ ১৯০২৬, ১৯০৭৮, ১৯০৮২, ১৯১০২, ১৯১০৮, ১৯১৫১,
১৯২৪৬, ১৯২৫৬, রিয়াজুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী- ৩৬/১৪৫১, রাওদুন নাদীর ১০৪১। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) উবাইদুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ).....আনাস (রাযিঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আ পাঠ করতেনঃ
"রব্বনা- আ-তিনা- ফিদ্দুনইয়া- হাসানাতাও ওয়াফিল আ-খিরতি হাসানাতাও ওয়াকিনা-
‘আযা-বান্ না-র"। অর্থাৎ- হে আমাদের রব! আমাদের পার্থিব জীবনে কল্যাণ দান করো,
আখিরাতে কল্যাণ দান করো। আর জাহান্নামের শাস্তি হতে আমাদের বাঁচাও। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯০,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) আবু বকর ইবনু আবু শাইবাহ ও আবু কুরায়ব (রহঃ)...আয়িশাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আসমূহ
পাঠের মাধ্যমে দুআ করতেন,
"আল্ল-হুম্মা ফাইন্নী আউযুবিকা
মিন্ ফিতনাতিন না-রি ওয়া ‘আযা-বিন্ না-রি ওয়া ফিতনাতিল কবরি ওয়া ‘আযা-বিল্ কবরি
ওয়ামিন শাররি ফিতনাতিল গিনা ওয়ামিন শার্রি ফিতনাতিল ফাক্রি ওয়া আউযুবিকা মিন্
শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল, আল্ল-হুম্মাগসিল খতা-ইয়া-ইয়া বিমা-য়িস্ সালজি
ওয়াল বারাদ, ওয়ানক্কি কলবী মিনাল খতা-ইয়া- কামানাক্কাইতাস্ সাওবাল আবইয়াযা মিনাদ
দানাস ওয়া বা-ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খতা- ইয়া-ইয়া কামা-বা-’আদতা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল
মাগরিব, আল্ল-হুম্মা ফা-ইন্নী আউযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়াল হারামি ওয়াল মা’সামি ওয়াল
মাগ্রাম।"
অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট জাহান্নামের
ফিতনাহ থেকে আশ্রয় চাই, জাহান্নামের শাস্তি হতে আশ্রয় চাই, কবরের ফিতনাহ, কবর শাস্তি
ও ধন-সম্পদের ফিতনাহ এবং অসচ্ছলতার ফিতনার খারাবী হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। আমি আপনার
নিকট মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার বিভ্রান্তির অপকারিতা থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ আমার
গুনাহসমূহ বরফ ও কুয়াশার স্নিগ্ধ-শীতল পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিন। আমার
অন্তর পবিত্র করে দিন যেভাবে আপনি সাদা কাপড় ময়লা হতে পরিষ্কার করে দেন। আমি ও আমার
গুনাহসমূহের মাঝে দূরত্ব করে দিন যেমন আপনি পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন।
হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অলসতা, বার্ধক্য, গুনাহ ও ধার-কৰ্জ হতে আশ্রয় চাই।"
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৫৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬২৪, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ).....আনাস ইবনু
মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলতেনঃ
"আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউয়ুবিকা
মিনাল আজ্যি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুব্নি ওয়াল হারামি ওয়াল বুখলি ওয়া আউয়ুবিকা মিন
আযা-বিল কবরি ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহইয়া- ওয়াল মামা-ত"।
অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অক্ষমতা,
অলসতা, কাপুরুষতা, বার্ধক্য, বখিলতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আপনার নিকট আরও আশ্রয়
চাচ্ছি কবরের শাস্তি, জীবন ও মরণের ফিতনার খারাবী থেকে।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৬,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬২৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) আবু
বকর ইবনু নাফি আল আবদী (রহঃ).....আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আসমূহ পাঠ করতেনঃ
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা
মিনাল বুখ্লি ওয়াল কাসালি ওয়া আরযালিল উমুরি ওয়া আযা-বিল কবরি ওয়া ফিতনাতিল মাহইয়া-
ওয়াল মামা-ত”।
অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে
বখিলতা, অলসতা, নিকৃষ্ট জীবন-যাপন, কবরের শাস্তি এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ থেকে আশ্রয়
চাই।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬২৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৭) ইবরাহীম ইবনু দীনার (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
“আল্ল-হুম্মা আসলিহলী দীনিয়াল্লিয়ী
হুওয়া ইসমাতু আমরী ওয়া আস্লিহলী দুন্ইয়াল্লাতী ফীহা মা’আ-শী ওয়া আসলিহলী আ-খিরতিল্লাতী
ফীহা মাআ-দী ওয়াজ আলিল হায়া-তা যিয়া-দাতান্ লী ফী কুল্লি খইরি ওয়াজ আলিল মাওতা
রা-হাতান মিন্ কুল্লি শাররিন"
অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আপনি আমার দীন পরিশুদ্ধ
করে দিন, যে দীনই আমার নিরাপত্তা। আপনি শুদ্ধ করে দিন আমার দুনিয়াকে, যেথায় আমার
জীবনোপকরণ রয়েছে। আপনি সংশোধন করে দিন আমার আখিরাতকে, যেখানে আমাকে প্রত্যাবর্তন করতে
হবে। আপনি আমার আয়ুষ্কালকে বৃদ্ধি করে দিন প্রত্যেকটি ভালো কর্মের জন্য এবং আপনি আমার
মরণকে বিশ্রামাগার বানিয়ে দিন সব প্রকার খারাবী হতে।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২০,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৫৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৭০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু
বাশশার (রহঃ)....আবদুল্লাহ (রাযিঃ) এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
বর্ণিত। তিনি এ বলে দুআ করতেন,
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল
হুদা ওয়াত তুকা ওয়াল “আফা-ফা ওয়াল গিনা”
অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পথনির্দেশ,
আল্লাহভীতি, চারিত্রিক উৎকর্ষতা ও সচ্ছলতার জন্য দুআ করছি।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৫৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৭০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা
মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া আযাবিল ক্ববরি। আল্ল-হুম্মা
আ-তি নাফসী তাকওয়া-হা- ওয়া যাক্কিহা-আন্তা খইরু মান যাক্কা-হা আন্তা ওয়ালিয়্যুহা- ওয়া
মাওলাহা- আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন ইলমিন লা- ইয়ানফাউ ওয়া মিন ক্বলবিন লা-ইয়াখশা-উ
ওয়া মিন নাফসিন লা-তাশবা’উ ওয়া মিন দা’ ওয়াতিন লা-ইউসতাজা-বু লাহা।”
(৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আশ্যয়
চাচ্ছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধ্যকতা ও ক্বরেরর আযাব হতে। হে আল্লাহ!
আমার আত্মাকে সংযম দান করুন, একে পবিত্র করুন, আপনি শ্রেষ্ঠ পবিত্রকারী, আপনি তার অভিভাবক
ও প্রভু। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এমন ইলম হতে যা উপকার করে
না। এমন অন্তর হতে যা ভয় করে না। এমন আত্মা হতে যা তৃপ্তি লাভ করে না এবং এমন দোয়া
হতে যা কবুল হয় না।
হাদিসঃ-
যায়দ ইবনু আরক্বম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা
মিনাল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া ‘আযা-বিল কবরি, ‘আল্ল-হুম্মা
আ-তি নাফসী তাকওয়া-হা- ওয়াযাক্কিহা- আন্তা খয়রু মিন্ যাক্কা-হা- আন্তা ওয়ালিয়্যুহা-
ওয়ামাও লা- হা-, আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘ইল্মিন লা- ইয়ানফা‘উ ওয়ামিন্ কলবিন
লা- ইয়াখশা‘উ ওয়ামিন্ নাফসিন লা- তাশবা‘উ ওয়ামিন্ দা‘ওয়াতিন্ লা- ইউসতাজা-বু লাহা-’’
(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আমি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা,
কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের ‘আযাব হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! তুমি আমার আত্মাকে
সংযমী করো ও একে পবিত্র করো। তুমিই শ্রেষ্ঠ পুতঃপবিত্রকারী, তুমি তার অভিভাবক ও রব।
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ঐ জ্ঞান লাভ হতে আশ্রয় চাই, যে জ্ঞান (আত্মার) কোন উপকারে
আসে না, ঐ অন্তর হতে মুক্তি চাই যে অন্তর তোমার ভয়ে ভীত হয় না। ঐ মন হতে আশ্রয় চাই
যে মন তৃপ্তি লাভ করে না এবং ঐ দু‘আ হতে, যে দু‘আ কবূল করা হয় না।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭২২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১২৪, সহীহাহ্ ৪০০৫, সহীহ আল জামি ১২৮৬, সহীহ আত্
তারগীব ১২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) “আল্লাহুম্মা
ইন্নি আউযুবিকা মিনাল ফাক্বরি ওয়াল কিল্লাতি ওয়ায যিল্লাতি ওয়া আ’উযুবিকা মিন আন আযলিমা আও উযলিমা”।
(৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট অভাব, স্বল্পতা
ও অপমান হতে আশ্রয় চাই, আরো আশ্রয় চাই অত্যাচার
করা ও অত্যাচার হওয়া থেকে।
হাদিসঃ-
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি দরিদ্রতা হতে, আপনার কম দয়া হতে এবং অসম্মানী
হতে। আমি আপনার কাছে আরো আশ্রয় চাইছি যুলুম করা অথবা অত্যাচারিত হওয়া হতে।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪৪, নাসায়ী ৫৪৭৫), আহমাদ (৩/৩০৫),
হাকিম (১/৫৪০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১)
আনাস (রাঃ) বলেন, নবি সা: বলতেন-
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা
মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্
দায়নি ওয়া গলাবাতির্ রিজাল’’। (৩ বার)।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয়
নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে; অপারগতা ও অলসতা থেকে; কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে; এবং ঋণের
ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
হাদিসঃ-
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা
মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্
দায়নি ওয়া গলাবাতির্ রিজা-ল’’ ।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা,
শোক-তাপ, অক্ষমতা-অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের জোর-জবরদস্তি হতে
আশ্রয় চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৮, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৯, ৬৭৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭০৬, নাসায়ী ৫৪৪৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৮৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৪১, আহমাদ
১০৫২, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১২৯, সহীহ আল জামি ১২৮৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯২৩,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২) “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ'উযুবিকা
মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাক্বাই, ওয়া সূইল ক্বাযা-ই, ওয়া শামা-তাতিল আ'দা-ই।“ (৩ বার)।
অর্থঃ আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি
অক্ষমকারী বিপদের কষ্ট হ'তে , দুভার্গ্যের
আক্রমন হতে , মন্দ ফায়সালা হ'তে এবং শত্রুর হাসি হ'তে।
হাদিসঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালা মুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের
অশুভ পরিণতি এবং দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাইলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪৭, ৬৬১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৭, নাসাঈ- ৫৪৯১, ৫৪৯২,
৭৩০৮, আদাবুল মুফরাদ ৬৬৯, সহীহ আল জামি ২৯৬৮, সহীহাহ্ ১৫৪১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯০১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৩) “আল্লাহুম্মা
ইন্নি আউযুবিকা মিন ফিতনাতিন্নারি অআযাবিন্নারি অমিন শার্রিল গিনা ওয়াল ফাক্ব।“
(৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের ফিতনা থেকে,
জাহান্নামের আযাব থেকে এবং ধনবত্তা ও দারিদ্রের মন্দ থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
হাদিসঃ-
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্যগুলো দিয়ে দু‘আ করতেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের পরীক্ষা,
আগুনের আযাব এবং প্রাচুর্য ও দারিদ্রের মধ্যে নিহিত অকল্যাণ হতে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’’
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৭৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)
(১৪) “আল্লা-হুম্মা
‘আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাম্‘ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী।
লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল-ফাক্বরি ওয়া
আ‘উযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা”।
(৩ বার)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার
শরীরে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শ্রবণশক্তিতে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা
দিন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে
আশ্রয় চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। আপনি ছাড়া
আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই।” (আবূ দাউদ ৪/৩২৪, নং ৫০৯২; আহমাদ
৫/৪২, নং ২০৪৩০; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নং ২২; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৯; বুখারী,
আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭০১। আর শাইখ আল্লামা ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’
গ্রন্থের পৃ. ২৬ এ এর সনদকে হাসান বলেছেন)।
(১৫) আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ)
এ দোয়া পড়তেন-
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা
মিন যা-ওয়া-লি নি’মাতিকা ওয়া তাহাওঁবুলি আ-ফিয়াতিকা ওয়া ফুজা-আতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামী’ঈ
সাখাতিক।” (৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা
করছি তোমার নি’আমতের হ্রাসপ্রাপ্তি, তোমার শান্তির বিবর্তন, তোমার শাস্তির হঠাৎ আক্রমণ
এবং সমস্ত অসন্তোষ হতে।
হাদিসঃ-
উবাইদুল্লাহ
ইবনু আবদুল কারীম আবু যুর’আহ (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’আর মধ্যে একটি ছিল এই যে,
"আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন যাওয়া-লি নি'মাতিকা ওয়াতা হাওউলি আ-ফিয়াতিকা
ওয়া ফুজা-য়াতি নিকমাতিকা ওয়া জামী’ই সাখাতিকা" অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি
তোমার নিকট আশ্রয় চাই নি’আমাত দূর হয়ে যাওয়া হতে, তোমার দেয়া সুস্থতা পরিবর্তন
হয়ে যাওয়া থেকে, তোমার অকস্মাৎ শাস্তি আসা হতে এবং তোমার সকল প্রকার অসন্তুষ্টি থেকে"।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭৩৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬১, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৪৫, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব
ত্ববারানী ৩৫৮৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৪৬, শু‘আবূল ঈমান ৪২২৪, সহীহ আল জামি ১২৯১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৯৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৬) ‘‘আল্ল-হুম্মা
ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা’’।
(৩ বার)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান,
কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই”।
হাদিসঃ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে বলতেন,
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা
‘ইলমান না-ফি‘আন ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী
জ্ঞান, কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৪৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৯২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২৬৫, আহমাদ ২৬৫২১, আদ্ দা‘ওয়াতুল
কাবীর ১১৯, শু‘আবূল ঈমান ১৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৭) আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দো‘আটি পাঠ করতেন,
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা
মিনাল জূ-’, ফাইন্নাহু বি’ছায্যাজী’। অ আঊযু বিকা মিনাল খিয়ানাহ, ফাইন্নাহা বি’ছাতিল
বিতা-নাহ।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ক্ষুধা থেকে
পানাহ চাচ্ছি, কারণ তা নিকৃষ্ট শয়ন-সাথী। আর আমি খেয়ানত থেকেও পানাহ চাচ্ছি, কারণ তা
নিকৃষ্ট সহচর। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ১৫৪৭, রিয়াযুস
স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন), ১৪৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৮৫, নাসায়ী ৫৪৬৮, ৫৪৬৯।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(১৮) (ক) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ)...মুসআব ইবনু সা’দ (রাযিঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জনৈক গ্রাম্য লোক এসে
বলল, আমাকে একটি কালাম শিক্ষা দিন, যা আমি নিয়মিত পাঠ করব। তিনি বললেন, তুমি বলো
"লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু
ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু আল্ল-হু আকবার কাবীরা ওয়াল হামদু লিল্লা-হি কাসীরা সুবহানাল্লা-হি
রব্বিল আ-লামীনা লা-হাওলা ওয়ালা- কুত্ত্বওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হিল আযীযিল হাকীম"।
অর্থাৎ-
"আল্লাহ ভিন্ন কোন মা’বূদ নেই, তিনি অদ্বিতীয়, তার কোন অংশীদার নেই, আল্লাহ মহান,
সবচেয়ে মহান, আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা এবং আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পবিত্রতা
ঘোষণা করছি। পরাক্রমশালী বিজ্ঞানময় আল্লাহর সাহায্য ছাড়া ভাল কাজ করার এবং খারাপ
কাজ হতে বিরত থাকার সাধ্য কারো নেই।" সে বলল, এসব তো আমার রবের জন্য। আমার জন্যে
কি? তিনি বললেন, বলো,
‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী অরহামনী
অহদিনী অরযুক্বনী।’
অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মাফ করুন, আমার
প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথ দেখিয়ে দিন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৬,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬০৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৫৬, রিয়াজুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী ৭/১৪২২,
আহমাদ ১৫৬৪, ১৬১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত
দোয়াটি দুই সিজদার মাঝখানে পড়তে হয়।
(খ) সাঈদ ইবনু আযহার আল ওয়াসিতী (রহঃ)....আবু
মালিক আল আশজাঈ এর পিতার সানাদে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি ইসলামে দীক্ষা
গ্রহণ করত তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রথমে সালাত আদায়ের শিক্ষা
দিতেন। তারপর তিনি তাকে এ কালিমাসমূহ পাঠ করার নির্দেশ দিতেন,
"আল্লা-হুম্মাগ ফিরলী ওয়ারহামনী
ওয়াহ্দিনী ওয়া’আ-ফিনী ওয়ারযুকনী।"
অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করুন, আমার
প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথপ্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন এবং আমার জীবিকা
উপকরণ দান করুন।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৪৩,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬০৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৫৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত দোয়াটি দুই সিজদার মাঝখানে পড়তে হয়।
তাওবা ও ইস্তেগফারে রিজিক বৃদ্ধি পায়, অভাব-অনটন দূর হয়
(১) আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অন্যতম নবী ও রাসূল নূহ
আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন,
“আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও;
নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি
বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের
জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। (সূরা নূহ
৭১, আয়াত: ১০-১২)।
(২) “আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা
প্রার্থনা কর। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহ’লে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময়
পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশী দিবেন”। (হূদ ১১/৩)।
(৩) “আর হে আমার কওম! তোমাদের পালনকর্তার কাছে
তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তারই প্রতি মনোনিবেশ কর। তিনি আসমান থেকে তোমাদের
উপর বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, আর তোমরা অপরাধীদের
মত বিমুখ হয়ো না”। (হূদ ১১/৫২)।
(৪) ইবনু ‘আব্বাস রাযিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি নিয়মিত
ইসতিগফার পড়লে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ হতে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সকল দুশ্চিন্তা
হতে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক্ব দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫১৮, সুনান ইবনু মাজাহ৩৮১৯, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’
(৩/৩৫১), যইফাহ ৭০৬, যইফ আবু দাউদ ২৬৮, আত-তালীকুর রাগীব ২/২৬৮, যইফ আল-জামি ৫৮২৯)।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
তওবা ও ইস্তেগফারসমূহ
দোয়া-১:
সাওবান (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার
‘‘আস্তাগফিরুল্ল-হ’’ বলতেন,
তারপর এ দু‘আ পড়তেনঃ ‘‘আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া-
যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’
(অর্থাৎঃ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯১, ইসলামী ফাউন্ডেশন, ১২১০, ইসলামীক সেন্টার ১২২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া-২:
“আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু
ইলাইহি”।
(দৈনিক ১০০ বার)।
(ক) আবু বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)....আবূ বুরদাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহাবা
আগার (রাযিঃ) হতে শুনেছি, তিনি ইবনু উমর (রাযিঃ) এর নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর নিকট
তওবা্ করো। কেননা আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদিন একশ’ বার তওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫২, ৬৭৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭০২, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর
কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৭, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া-৩:
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, একই মজলিসে বসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (এই ইস্তিগফারটি) পাঠ
করা অবস্থায় একশো বার পর্যন্ত গুনতাম,
‘রাব্বিগফির লী অতুব আলাইয়্যা,
ইন্নাকা আন্তাত তাউওয়াবুর রাহীম।’
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর,
আমার তওবা কবুল কর, নিশ্চয় তুমি অতিশয় তওবাহ কবূলকারী দয়াবান। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫১৬, তিরমিযী ৩৪৩৪, সুনান ইবনু
মাজাহ ৩৮১৪, সহীহাহ ৫৫৬, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ
১৮৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।]
দোয়া-৪:
ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এ দো‘আ
পড়বে,
“আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা
ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু অ আতূবু ইলাইহ্।”
অর্থাৎ আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা
করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা
করছি।
সে ব্যক্তির পাপরাশি মার্জনা করা হবে; যদিও
সে রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে (যাওয়ার পাপ করে) থাকে।’’ (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) আবূ দাউদ ১৫১৭, তিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-
তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
দোয়া-৫: (সায়্যিদুল ইসতিগফার)
“আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা
ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা
মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা,
ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা”।
অর্থঃ “হে আল্লাহ্! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া
আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার
সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার
কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি
স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি
ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।”
হাদিসঃ-
শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু‘আ পড়া- ‘‘হে আল্লাহ!
তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার
সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার
কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নি‘য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার
কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’’
যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে
এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি
রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে
সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬,
৬৩২৩, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া-৬:
সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলার
নবী যুন-নূন ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে থাকাকালে যে দু'আ করেছিলেন তা হলঃ
“লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা
ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন”
“তুমি ব্যতীত কোন মা'বূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র।
আমি নিশ্চয় যালিমদের দলভুক্ত"- (সূরা আম্বিয়া ৮৭)। যে কোন মুসলিম লোক কোন বিষয়ে
কখনো এ দু'আ করলে অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা তার দু'আ কবুল করেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫০৫, আল-কালিমুত তাইয়্যিব
(১২২/৭৯), তা’লীকুর রাগীব (২/২৭৫, ৩/৪৩), মিশকাত তাহকীক সানী (২২৯২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
পাপ করলে তা কতোক্ষণ পর লেখা হয়
আবূ উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় বামের ফিরিশতা পাপী বা অপরাধী মুসলিমের
উপর থেকে ছয় ঘন্টা কলম তুলে রাখেন। অতঃপর সে যদি পাপে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী
হয়, তাহলে তা উপেক্ষা করেন। নচেৎ একটি পাপ লেখা হয়। (হাদীস
সম্ভার ৩৭৯৯, ত্বাবারানীর কাবীর ৭৬৬৭, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৭০৫১, সহীহুল জামে’ হা/
২০৯৭, সিঃ সহীহাহ ১২০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া পাঠ বা আমলগুলো কখন ও কিভাবে
করবো?
দোয়াগুলো সালাতের মধ্যে রুকু ও সিজদায় কিংবা
তাশাহুদ বৈঠকে বা সালাতের বাহিরে ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর, বিশেষ করে ফজর, আসর
ও ঈশার সালাতের পর দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দোয়া কবুল হওয়ার মনোভাব নিয়ে এবং প্রত্যেক দোয়ার
অর্থের দিকে লক্ষ্য রেখে পাঠ করতে হবে।
সালাতের বাহিরেঃ
সালাতের বাহিরে দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, ওযূহীন
ও অপবিত্র অবস্থায় এবং মহিলাদের মাসিক অবস্থায় দোয়া পাঠ বা আল্লাহর যিকির করা যায়।
অবশ্য (বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত) অপবিত্র অবস্থায় এবং মহিলাদের মাসিক অবস্থায় কুরআন
পাঠ বৈধ নয়।
মহান আল্লাহ বলেন,
(১) “নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং
রাত ও দিনের পরিবর্তনে জ্ঞানী লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে
আল্লাহকে স্মরণ করে।” (সূরা আলে ইমরান ১৯০-১৯১ আয়াত)।
(২) আল্লাহ বলেছেন, “তোমার প্রতিপালককে মনে মনে
সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর (জিকির করো) এবং তুমি
উদাসীনদের দলভুক্ত হইয়ো না।” (সূরা আ’রাফ ২০৫ আয়াত)।
(৩) তিনি আরও বলেছেন, “সূর্যের উদয় ও অস্তের পূর্বে
তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর।” (সূরা
ত্বাহা ১৩০ আয়াত)।
(৪) তিনি অন্যত্র বলেছেন, “সকাল-বিকালে তোমার
প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।” (সূরা
মুমিন ৫৫ আয়াত)।
(৫) “সে সব গৃহে---যাকে আল্লাহ সমুন্নত করতে এবং
যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন---সকাল ও সন্ধ্যায় তাতে তাঁর পবিত্রতা ও
মহিমা ঘোষণা করে, সে সব লোক যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ
হতে বিরত রাখে না।” (সূরা নূর ৩৬-৩৭ আয়াত)।
(৬) “আমি পর্বতমালাকে তার (দাঊদের) বশীভূত করেছিলাম;
ঐগুলি সকাল-সন্ধ্যায় তার সঙ্গে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত।” (সূরা স্বা-দ ১৮ আয়াত)।
রাসুল সাঃ বলেন,
(১) আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বক্ষণ (সর্বাবস্থায়) আল্লাহর
যিকির করতেন।’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১২, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৩৭৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৩০২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৮৪, আবূ দাউদ ১৮, আহমাদ ২৩৮৮৯, ২৪৬৭৪, ২৫৮৪৪,
রিয়াযুস সালেহীন-১/১৪৫২, সহীহাহ ৪০৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ
হাদীসটি প্রমাণ করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পবিত্র, উযুবিহীন, জুনুবী, বসে, দাঁড়িয়ে, হেলান দিয়ে, হাঁটা ও আরোহী সকল
অবস্থায়ই আল্লাহর যিকর করতেন। এখানে যিকর কথাটি ব্যাপক অর্থবোধক (‘আম), যা তাসবীহ,
তাহলীল, তাকবীর, তাহমীদ, ইস্তিগফার, দরুদ সকল প্রকার যিকর শামিল করে। মুসলিমগণের ঐক্যমত
এরূপ করা শারী‘আত সম্মত। তবে পেশাব-পায়খানা এবং সহবাসের অবস্থায় বাদে। কেননা এ দুই
অবস্থায় যিকর করা অপছন্দনীয়। তবে পেশাব-পায়খানা এবং সহবাসের শুরুতে দোয়া পাঠ করা যাবে।
(২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আমাদের
পরওয়ারদেগার আমাদের নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ আমার নিকট দু‘আ করবে
কে? আমি তার দু‘আ কবূল করবো। আমার নিকট কে চাবে? আমি তাকে দান করবো। আমার কাছে কে তার
গুনাহ ক্ষমা চাবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩২১, ১১৪৫, ৭৪৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৫৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৭৫৮, আহমাদ ৭৫৯৫, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৬৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
সালাতের মধ্যেঃ
(১) রুকুর সময়ঃ
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসুল (সাঃ) বলেন, শোন! আমাকে নিষেধ করা হয়েছে যে, আমি যেনো রুকু বা সিজদাহ অবস্থায়
কুরআন না পড়ি। সুতরাং রুকুতে তোমরা আল্লাহর মহত্ব ঘোষণা করো। আর সিজদায় অধিকাধিক দুয়া
করার চেষ্টা করো। কারণ তা (আল্লাহর নিকট) গ্রহণযোগ্য।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আলী ইবনু হুজর মারওয়াযী (রহঃ)...আব্দুল্লাহ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যে অসুখে ইন্তেকাল করেন, সে অসুস্থ অবস্থায় তিনি পর্দা খুললেন। তার মাথায় পট্টি বাধা
ছিল। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি পৌছিয়েছি, একথা তিনবার বললেন। বস্তুত যথার্থ স্বপ্ন
ব্যতীত নবুওতের সুসংবাদ ছাড়া আর কিছুই বাকি রইল না। বান্দা তা দেখে অথবা তাকে তা দেখানো
হয়। তোমরা শুনে রেখ, আমাকে রুকু এবং সিজদায় কিরাআত থেকে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব, যখন
তোমরা রুকু করবে তখন তোমাদের রবের তাযীম করবে। আর যখন তোমরা সিজদা করবে তখন তোমরা
বেশি বেশি দোয়া করার চেষ্টা করবে। কেননা, এটা তোমাদের দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময়। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ১১২৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(২) সিজদার সময়ঃ
(ক) ইবনু আব্বাস (রা;) বলেন, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন,“তোমরা
সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করো, কেননা সিজদাহ হচ্ছে দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৩)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! আমাকে রুকূ-সাজদায় কুরআন
তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকূতে তোমাদের ”রবের” মহিমা বর্ণনা কর।
আর সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দুআ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দুআ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৩, সহীহ মুসলিম ৪৭৯, নাসায়ী ১০৪৫,
আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি ২৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) অন্য বর্ণনায় রয়েছে, মানুষ সিজদাহ অবস্থায়
তার প্রতিপালকের সবচেয়ে বেশী নিকটবর্তী হয়। অতএব তোমরা সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করো।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৪)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বান্দারা তাদের রবের বেশি
নিকটে যায় সাজদারত অবস্থায়। তাই তখন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দুআ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৪, সহীহ মুসলিম ৪৮২, আবূ দাঊদ
৮৭৫, নাসায়ী ১১৩৭, আহমাদ ৯৪৬১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৭৫, সহীহ আত্
তারগীব ৩৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) সলাতের মধ্যে তাশাহুদের পরঃ
রাসুল সা: বলেন, “তাশাহুদের পর যার যা ইচ্ছে
দোয়া করবে” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৮৩৫, ৮৩১)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা এ ছিল যে, যখন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সঙ্গে সালাতে থাকতাম, তখন আমরা বলতাম, বান্দার পক্ষ হতে আল্লাহর প্রতি সালাম। সালাম
অমুকের প্রতি, সালাম অমুকের প্রতি। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
আল্লাহর প্রতি সালাম, তোমরা এরূপ বল না। কারণ আল্লাহ্ নিজেই সালাম। বরং তোমরা বল-
"আত্তাহিয়াতু লিল্লা-হি
ওয়াস্ সলাওয়া-তু ওয়াত তাইয়িবা-তু আসসালা-মু 'আলাইকা আইয়ুহান নাবিইয়্যু ওয়া রহমাতুল্ল-হি
ওয়াবারাকুহু আসসালা-মু 'আলাইনা- ওয়া'আলা- ইবা-দিল্লা-হিস্ স-লিহীন"
”সমস্ত মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর
জন্য। হে নবী! আপনার উপর প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের
প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাগণের প্রতি।” তোমরা যখন তা বলবে তখন আসমান বা আসমান ও
যমীনের মধ্যে আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার নিকট তা পৌঁছে যাবে। (এরপর বলবে) ‘‘আমি সাক্ষ্য
প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন মাবূদ নাই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। অতঃপর যে দুআ তার
পছন্দ হয় তা সে বেছে নিবে এবং পড়বে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন), ৮৩৫, ৮৩১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৭৮৩, আধুনিক প্রকাশনী ৭৮৮, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৭৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, রুকু ও
সিজদায় কুরআনের আয়াত ব্যতীত হাদিসে বর্নিত যেকোনো দোয়া এবং সালাতের শেষ বৈঠকে সালাম
ফিরানোর পূর্বে যেকোনো ধরনের দোয়া পাঠ করা যায়। চাই তা কুরআনের আয়াত হোক বা হাদিসে
বর্ণিত দোয়াই হোক।
কোন সময়ে দোয়া বেশী কবুল হয়
আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘কোন দো‘আ
সর্বাধিক শোনা (কবূল করা) হয়?’ তিনি বললেন, “রাত্রির শেষভাগে এবং ফরয নামাযসমূহের শেষাংশে।”
(রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৫০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫০০, সূনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৩৪৯৯, তা’লীকুর রাগীব (২/২৭৬), আল-কালিমুত তাইয়্যিব (১১৩/৭০)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
ছালাতুল হাজত
বিশেষ কোন বৈধ চাহিদা (যেমন, বালা মুসিবত বা
বিপদ-আপদ, অভাব-অনটন, হতাশা, টেনশন, মামলা-মোকদ্দমা ইত্যাদি থেকে মুক্তি লাভ) পূরণের
জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে যে দুই রাকআত নফল ছালাত আদায় করা হয়, তাকে ‘ছালাতুল হাজত বলা
হয়। এই সালাতের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। যেকোনো সময় আদায় করা যায়।
হাদিসঃ-
উসমান
ইবনু হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক অন্ধ লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
নিকট এসে বললো, আপনি আল্লাহ্র কাছে আমার জন্য দুআ করুন। তিনি যেন আমাকে রোগমুক্তি
দান করেন। তিনি বলেনঃ তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য দুআ করতে বিলম্ব করবো, আর তা হবে কল্যাণকর।
আর তুমি চাইলে আমি দুআ করবো। সে বললো, তাঁর নিকট দুআ করুন। তিনি তাকে উত্তমরূপে অযু
করার পর দু রাকআত সালাত পড়ে এ দুআ করতে বলেনঃ হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা
করছি, রহমতের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উসীলা দিয়ে, আমি তোমার
প্রতি নিবিষ্ট হলাম। হে মুহাম্মাদ! আমার চাহিদা পূরণের জন্য আমি আপনার উসীলা দিয়ে আমার
রবের প্রতি মনোযোগী হলাম, যাতে আমার প্রয়োজন মিটে। হে আল্লাহ্! আমার জন্য তাঁর সুপারিশ
কবুল করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৮৫, তিরমিযী ৩৫৭৮, তালীক
ইবনু খুযাইসাহ ১২০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সঙ্গত কোন প্রয়োজন পূরণের জন্য বান্দা স্বীয়
প্রভুর নিকটে ছবর ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করবেন। (বাক্বারাহ ২/১৫৩)।
এজন্য শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর সালাম ফিরানোর
পূর্বে আশু প্রয়োজনীয় বিষয়টির কথা নিয়তের মধ্যে এনে নিম্নোক্ত সারগর্ভ দোআটি পাঠ করবেন।
“আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা
ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খেরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র”।
‘হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে
দুনিয়াতে মঙ্গল দিন ও আখেরাতে মঙ্গল দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হ’তে রক্ষা
করুন’।
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অধিকাংশ
সময় এ দোআটিই পড়তেন” ।
হাদিসঃ-
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই এ দু‘আ পড়তেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা রব্বানা আ-তিনা-
ফিদ্দুন্ইয়া- হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা- ‘আযা-বান্না-র’’।
অর্থঃ হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ
দাও এবং আখিরাতেও কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা কর। (সূরা
আল-বাকারাহ ২/২০১)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৮৯,
৪৫২২; মুসলিম ৪৮/৯, হাঃ ২৬৯০, আহমাদ ১৩৯৩৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৫৮৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোআটি সিজদায় পড়লে বলবেন, আল্লা-হুম্মা আ-তিনা...।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই এ দু‘আ করতেন,
‘‘আল্ল-হুম্মা আ-তিনা- ফিদ্দুন্ইয়া-
হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা- ‘আযা-বান্না-র’’।
(অর্থাৎ-হে
আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ায় এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করো। আর জাহান্নামের ‘আযাব [শাস্তি]
হতে বাঁচাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৮৭, বুখারী
৬৩৮৯, মুসলিম ২৬৯০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৩০২, আহমাদ ১৩১৬৩, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ২৮০,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৯৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কেননা রুকূ-সিজদায় কুরআনী দোআ পড়া চলে না।
হাদিসঃ-
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! আমাকে রুকূ-সাজদায় কুরআন
তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকূ‘তে তোমাদের ‘রবের’ মহিমা বর্ণনা কর।
আর সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু‘আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু‘আ ক্ববূল করা হবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৮৭৩, মুসলিম ৪৭৯, নাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি ২৭৪৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন
কোন সংকটে পড়তেন, তখন ছালাতে রত হতেন। (সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ১৩১৯, ছহীহুল জামে ৪৭০৩, আহমাদ
(৫/৩৮৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
উক্ত বিষয়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর স্ত্রী সারার
ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে। যখন তিনি অপহৃত হয়ে মিসরের লম্পট সম্রাটের নিকটে নীত হলেন
ও অত্যাচারী সম্রাট তার দিকে এগিয়ে গেল, তখন তিনি ওযূ করে ছালাতে রত হয়ে আল্লাহর নিকটে
আশ্রয় প্রার্থনা করে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! এই কাফেরকে তুমি আমার উপর বিজয়ী করোনা”।
সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং উক্ত লম্পটের হাত-পা অবশ হয়ে পড়েছিল।
তিন-তিনবার ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সে বিবি সারা-কে সসম্মানে মুক্তি দেয় এবং বহুমূল্যবান
উপঢৌকনাদিসহ তার খিদমতের জন্য হাজেরাকে তার সাথে ইবরাহীমের নিকট পাঠিয়ে দেয়।
হাদিসঃ-
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ) সারাকে সঙ্গে নিয়ে হিজরত
করলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ করলেন, যেখানে এক বাদশাহ ছিল, অথবা বললেন, এক অত্যাচারী
শাসক ছিল। তাকে বলা হলো যে, ইবরাহীম (নামক এক ব্যক্তি) এক পরমা সুন্দরী নারীকে নিয়ে
(আমাদের এখানে) প্রবেশ করেছে। সে তখন তাঁর নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করল, হে ইবরাহীম,
তোমার সঙ্গে এ নারী কে? তিনি বললেন, আমার বোন। অতঃপর তিনি সারার নিকট ফিরে এসে বললেন,
তুমি আমার কথা মিথ্যা মনে করো না। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। আল্লাহর শপথ!
দুনিয়াতে (এখন) তুমি আর আমি ব্যতীত আর কেউ মু’মিন নেই। সুতরাং আমি ও তুমি দ্বীনী ভাই
বোন। এরপর ইবরাহীম (আঃ) (বাদশাহর নির্দেশে) সারাকে বাদশাহর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ
তাঁর দিকে অগ্রসর হল। সারা উযূ করে সালাত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দু‘আ করলেন, হে
আল্লাহ! আমিও তোমার উপর এবং তোমার রাসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ব্যতীত সকল
হতে আমার লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ করেছি। তুমি এই কাফিরকে আমার উপর ক্ষমতা দিও না। তখন
বাদশাহ বেহুঁশ হয়ে পড়ে মাটিতে পায়ের আঘাত করতে লাগলো। তখন সারা বললেন, আয় আল্লাহ! এ
যদি মারা যায় তবে লোকে বলবে, স্ত্রীলোকটি একে হত্যা করেছে। তখন সে সংজ্ঞা ফিরে পেল।
এভাবে দু’বার বা তিনবারের পর বাদশাহ বলল, আল্লাহর শপথ! তোমরা তো আমার নিকট এক শয়তানকে
পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের নিকট ফিরিয়ে দাও এবং তার জন্য হাজেরাকে হাদিয়া স্বরূপ দান কর।
সারাহ (রাযি.) ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বললেন, আপনি জানেন কি, আল্লাহ তা‘আলা
কাফিরকে লজ্জিত ও নিরাশ করেছেন এবং সে এক বাঁদী হাদিয়া হিসেবে দিয়েছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২১৭, ২৬৩৫, ২৩৫৭, ২৩৫৮, ৫০৮৪,
৬৯৫০, আধুনিক প্রকাশনী ২০৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
২০৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সহিহ আমল করার তৌফিক দান
করুন। আমিন।
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
আরো অধিক বিষয় জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ
(ক) সকাল ও বিকেলে পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াসমূহ।
(খ) বিপদ আপদ ও টেনশন বা দুশ্চিন্তা দূর করার দোয়া বা আমলসমূহ।
(গ) কুরআন ও সহিহ হাদিস হতে অধিক ফজিলতপূর্ণ যিকির ও দোয়াসমূহ।
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য
করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social
Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে
দিন।
(ক) “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের)
জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে
নিষেধ করবে।”
(সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)।
(খ) “তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে
আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন।
(সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)।
(গ)
ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ্
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান
রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না। আর যে লোক বিভ্রান্তির দিকে
ডাকে তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য
হালকা হবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৬৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৬০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঘ) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণিত,
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান)
পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি
নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন
নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।”(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৬১, হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস
সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৩২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
.................................................................................................................
এক সাথে সকল পর্ব দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন
-----------------------------------------------------
Please
Share On
No comments:
Post a Comment