বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ফরজ সালাত শেষে সম্মিলিত মোনাজাত সুন্নত না বিদআত-দ্বন্দ্ব নিরসন
ভূমিকাঃ আমাদের সমাজে যতগুলো বিদ’আত প্রচলিত আছে তার
মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত মোনাজাত। প্রায় সব মসজিদে ফরজ সালাতে সালাম
ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদী দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করতে দেথা যায়। অথচ এই
প্রথার শারঈ কোন ভিত্তি নেই। এই সম্মিলিত মোনাজাতের দলীল নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম থেকে পাওয়া যায় না।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত শেষে দুয়া কবুল হওয়ার
কথা বহু সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত। তাহলে এ নিয়ে বিতর্ক কেন? আসলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের
পর দোয়া নিয়ে বিতর্ক নয়, বিতর্ক হলো এর পদ্ধতি নিয়ে। যে পদ্ধতিতে সম্মিলিতভাবে নিয়মিত
দোয়া করা হচ্ছে সেই পদ্ধতিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তাঁর
সাহাবায়ে কেরামগণ দোয়া করেছিলেন কিনা সেটিই দেখার বিষয়।
বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে যে, আহলে হাদিস আর
হানাফী মাজহাবীদের মধ্যে সম্মিলিত মোনাজাত করা নিয়ে প্রায়ই দ্বন্দ্ব দেখা যায়। উভয়
পক্ষই কুরআন ও হাদিস থেকে দলীল পেশ করে থাকে। এখন প্রশ্ন হলো সাধারণ মুসলমান কোন্ পথে
চলবে। আসলেই আমরা কোন্ পথে চলবো তার দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য উভয় পক্ষের যুক্তি ও দলীল
এখানে তুলে ধরা হলো। আমরা মনোযোগসহকারে উভয় পক্ষের আলোচনা পড়বো । এরপর কুরআন ও সহিহ
হাদিস ভিত্তিক সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করবো। কোনো মুরুব্বী কিংবা দাদার দলীল গ্রহণ করবো
না।
মোনাজাতের অর্থ
‘মোনাজাত’ (مُنَاجَاةٌ) আরবী শব্দ। সেই
থেকে نَاجَى
يُنَاجِىْ
مُنَاجَاةً
ব্যবহার হয়। এর অর্থ পরস্পর চুপি চুপি কথা বলা। (আল-মু‘জামুল
ওয়াসীত্ব ইস্তাম্বুল-তুরকী : আল-মাকতাবুল ইসলামী, দ্বিতীয় প্রকাশঃ ১৯৭২খৃঃ/১৩৯২হিঃ),
পৃঃ ৯০৫; আল-মুনজিদ ফিল লুগাহ ওয়াল আ‘লাম, বৈরুত-লেবানন : আল-মাকতাবাতুশ শারক্বিইয়াহ,
৪১তম প্রকাশ : ২০০৫), পৃঃ ৭৯৩)।
শরী‘আতের পরিভাষায় মোনাজাত হলো, ছালাতের মধ্যে
আল্লাহ তা‘আলার সাথে মুছল্লীর চুপি চুপি কথা বলা। ছহীহ বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য
হাদীছ গ্রন্থে উক্ত অর্থেই মোনাজাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘নিশ্চয়ই
তোমাদের কেউ যখন তার ছালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার রবের সাথে মোনাজাত করে’।
হাদিসঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিবলার দিকে (দেয়ালে) ‘কফ’ দেখলেন। এটা তাঁর নিকট
কষ্টদায়ক মনে হলো। এমনকি তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠলো। তিনি উঠে গিয়ে তা হাত দিয়ে পরিষ্কার
করলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সাথে একান্তে
কথা বলে। অথবা বলেছেন, তার ও ক্বিবলার মাঝখানে তার রব আছেন। কাজেই, তোমাদের কেউ যেন
ক্বিবলার দিকে থুথু না ফেলে। বরং সে যেন তার বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে তা ফেলে। অতঃপর
চাদরের আঁচল নিয়ে তাতে তিনি থুথু ফেললেন এবং তার এক অংশকে অন্য অংশের উপর ভাঁজ করলেন
এবং বললেনঃ অথবা সে এমন করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৪০, ২৪১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৫১, আহমাদ ১২৮০৯)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদীছে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই মুমিন যখন ছালাতের মধ্যে থাকে তখন সে তার
রবের সাথে মোনাজাত করে’।
হাদিসঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন যখন সালাতে থাকে, তখন সে
তার প্রতিপালকের সাথে নিভৃতে কথা বলে। কাজেই সে যেন তার সামনে, ডানে থুথু না ফেলে,
বরং তার বাম দিকে অথবা (বাম) পায়ের নীচে ফেলে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪১৩, ২৪১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আরেক হাদীছে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই মুছল্লী তার রবের
সাথে মোনাজাত করে’।
হাদিসঃ
ইবনু ’উমার (রাঃ) এবং ’আবদুল্লাহ ইবনু আনাস
আল-বায়াযী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ সালাত আদায়কারী সালাতরত অবস্থায় তার পরওয়ারদিগারের সাথে একান্তে আলাপ করে।
তাই তার উচিত সে কি আলাপ করে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা। অতএব একজনের কুরআন তিলাওয়াতের
শব্দ অন্যজনের কানে যেন না পৌঁছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৮৫৬, আহমাদ ৬০৯২, সহীহাহ্ ১০৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘যখন
তোমাদের কেউ ছালাতে দাঁড়াবে, তখন সে যেন তার সামনে থুথু না ফেলে। কারণ সে যতক্ষণ মুছাল্লাতে
ছালাত রত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহর সাথে মোনাজাত করে’।
হাদিসঃ
ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ)...আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ সালাতে
দাঁড়ালে সে তার সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। সে যতক্ষণ তার মুসাল্লায় থাকে, ততক্ষণ মহান
আল্লাহর সঙ্গে চুপে চুপে কথা বলে। আর ডান দিকেও ফেলবে না। কেননা তার ডান দিকে থাকেন
ফিরিশতা। সে যেন তার বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে থুথু ফেলে এবং পরে তা পুঁতে ফেলে। (সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৪১৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৭১০, আহমাদ ৮২৩৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৮৩, সহীহাহ্ ৩৯৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
উল্লেখ্য, হাদীছে উল্লিখিত يُنَاجِى শব্দটি ফে‘ল বা ক্রিয়া।
আর তার মাছদার বা ক্রিয়ামূল হল (مُنَاجَاةٌ)
মোনাজাত।
মুছল্লী ছালাতের মধ্যে সারাক্ষণই যে মোনাজাত
করে এবং পুরো ছালাতটাই যে তার জন্য মোনাজাত তা উপরিউক্ত হাদীছগুলো থেকে পরিষ্কার ফুটে
উঠেছে। এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে, মুছল্লী যখন ছালাত শেষ করে, তখন তার মোনাজাতও শেষ হয়ে
যায়। মুছল্লী ছালাতের মাঝে আল্লাহর সাথে কিভাবে মোনাজাত করে তাও হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত
হয়েছে-
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাত আদায় করলো কিন্তু
এতে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ- সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পাঠ করলো না তাতে তার সালাত ’’অসম্পূর্ণ’’
রয়ে গেল। এ কথা তিনি তিনবার বললেন। এ কথা শুনে কেউ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস
করলেন, আমরা যখন ইমামের পিছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবো তখনও কি তা পাঠ
করবো? উত্তরে তিনি বললেন, হাঁ তখনও তা পাঠ করবে নিজের মনে মনে। কারণ আমি রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ’’আল্লাহ বলেছেন, আমি ’সালাত’ অর্থাৎ,
সূরাহ্ ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করেছি, (এভাবে যে, হামদ
ও সানা আমার জন্য আর দু’আ বান্দার জন্য)। আর বান্দা যা চায় তা তাকে দেয়া হয়।
বান্দা বলে, সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি সমস্ত
জাহানের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করলো। যখন বান্দা
বলে, আল্লাহ বড় মেহেরবান ও পরম দয়ালু। আল্লাহ তখন বলেন, আমার বান্দা আমার গুণগান করলো।
বান্দা যখন বলে, আল্লাহ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিনের মালিক, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা
আমাকে সম্মান প্রদর্শন করলো। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ!) আমরা একমাত্র তোমারই ’ইবাদাত
করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য কামনা করি, তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার
মধ্যকার ব্যাপার (’ইবাদাত আল্লাহর জন্য আর দু’আ বান্দার জন্য)। আর আমার বান্দা যা চাইবে
তা সে পাবে। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ)! তুমি আমাদেরকে সহজ ও সরল পথে পরিচালিত কর।
সে সমস্ত লোকের পথে, যাদেরকে তুমি নি’আমাত দান করেছ। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি তোমার
গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, এটা আমার বান্দার
জন্য, আর বান্দা যা চাইবে, সে তাই পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৮২৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯৫, সুনান আততিরমিযী ২৯৫৩, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৩৮, আহমাদ
৭২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব, মোনাজাত বা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে প্রার্থনা
করার সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান হলো ছালাত। (সুরা বাক্বারাহ ৪৫)।
সাধারণত আল্লাহর নিকট কোনো কিছু চাইতে হলে
সালাতের মধ্যে রুকু, সিজদা ও তাশাহুদ বৈঠকে বিভিন্ন দোয়া পাঠের মাধ্যমে চাইতে হয়। পুরো
সালাতই এক প্রকার দোয়া ও মোনাজাত।
ফরজ সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার
পক্ষে বিপক্ষে উপস্থাপিত দলিলসমূহের আলোচনা পর্যালোচনা
(১) আল্লাহ বলেন :
“যখন তোমরা সালাত শেষ করলে তখন দাঁড়িয়ে, বসে
ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে”। (সুরা আন নিসা : ১০৩ )।
ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার পক্ষে
অনেকে এই দলিলটি উপস্থান করে থাকে। এখানে আমাদের জানতে হবে যে, সালাত শেষে সালাম ফিরানোর
পর রাসুল সা. অনেক দোয়ার আমল করতেন। সাহাবীগণও সেই আমলগুলো করতেন। সালাতের বাহিরে তথা
সালাম ফিরানোর পর, সকাল, বিকেল, রাতে শোয়ার সময় এবং সারাদিন বিভিন্ন দোয়া পাঠের মাধ্যমে
আল্লাহকে যে স্মরণ বা যিকির করা হয় আল্লাহ তায়ালা সেই কথাই উক্ত আয়াতে বলেছেন। এখানে
সম্মিলিত মোরাজাতের কথা বলা হয়নি।
(২)
সালমান
ফারসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত লজ্জাশীল ও দয়ালু। বান্দা যখন তাঁর কাছে কিছু চেয়ে হাত উঠায়
তখন তার হাত (দু‘আ কবূল না করে) খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৪৪, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৮৮, সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৫৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬৫, মু‘কামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী
৬১৪৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩১৪৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৮৭৬, সহীহ আল জামি‘ ১৭৫৭,
সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অনেকে এই দলিল দিয়ে বলেন, “এ হাদীস থেকে বোঝা
যাচ্ছে, হাত তুলে মোনাজাত করলে তা কবূলের সম্ভাবনা বেশি”। কথাটি সত্য তবে ফরজ সালাতে
সালাম ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার কথা এখানে উল্লেখ নেই। একাকী
দুই হাত তুলে মোনাজাত করার বিধান আছে। রাসুল সা. নিজে একাকী দুই হাত তুলে মোনাজাত করেছেন।
তবে ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর সাহাবীদের সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে দুই হাত তুলে মোনাজাত
করেননি।
(৩) নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আই (মূল) ’ইবাদাত। অতঃপর তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’এবং তোমাদের রব
বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু’আ করো, আমি তোমাদের দু’আ কবূল করব।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩০, আবূ দাঊদ ১৪৭৯, তিরমিযী ২৯৬৯,
ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৭, আহমাদ ১৮৩৫২, মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী
১০৪১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০২, শু‘আবূল ঈমান ১০৭০, সহীহ ইবনু হিববান ৮৯০, আদাবুল
মুফরাদ ৭১৪/৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৪০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এখানে আল্লাহ তায়ালা সামগ্রিকভাবে সবার উদ্দেশ্যে
বলেছেন, তোমরা (একাকী দুই হাত তুলে বা বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে) দোয়া করো, আমি তোমাদের
দোয়া কবুল করবো। উক্ত আয়াতে ফরজ সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে
মোনাজাত করার কথা বলা হয়নি। অতএব উক্ত দলিল সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার স্বপক্ষে উপস্থাপন
করা যথার্থ হবে না।
(৪) আল্লাহ
বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। যারা অহংকার বশে আমার ইবাদত হতে
বিমুখ হয়, সত্বর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়”। এখানে ‘ইবাদত’ অর্থ
দো‘আ। (সুরা গাফের/মুমিন ৪০/৬০; ‘আওনুল মা‘বূদ হা/১৪৬৬-এর
ব্যাখ্যা, ‘দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৩৫২)।
অনেকে এই দলিল দিয়েও ফরজ সালাত শেষে সালাম
ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
আসলে আমাদের বুঝার ভুল আছে। আল্লাহ বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, এই ডাকার কিছু মাধ্যম
আছে। যেমন, সালাত , সাওম, হজ্জ, যাকাত প্রদান, দান খয়রাত করা, যিকির করা, একাকী দুই
হাত তুলে মোনাজাত করা ইত্যাদি। উক্ত আয়াতে ফরজ সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদি
সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার কোনো কথা নেই। অতএব উক্ত দলিল ফরজ সালাত শেষে সালাম ফিরানোর
পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার স্বপক্ষে উপস্থাপন করা যথার্থ হবে না।
(৫) আল্লাহ আরও বলেন, “আমার বান্দারা যখন তোমার
কাছে আমার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে, তখন বলে দাও যে, আমি তাদের অতীব নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর
আহবানে সাড়া দিয়ে থাকি, যখন সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমার আদেশ সমূহ পালন
করে এবং আমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে। যাতে তারা সুপথ প্রাপ্ত হয়”। (সুরা বাক্বারাহ
২/১৮৬)।
উক্ত আয়াতে ফরজ সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর
ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার কোনো কথা নেই। অতএব উক্ত দলিল ফরজ সালাত শেষে
সালাম ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার স্বপক্ষে উপস্থাপন করা যথার্থ
হবে না। আল্লাহ তায়ালা সব সময় তাঁর বান্দার খুব নিকটবর্তী থাকেন। কেউ তাঁকে মনে মনে
স্মরণ করলেও তিনি শোনেন এবং তার আহবানে তিনি সাড়া দেন। যেমন, রাসুল সা, বলেন,
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ ঘোষণা করেন, আমি সে রকমই,
যে রকম বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি বান্দার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে।
যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে; আমিও তাকে নিজে স্মরণ করি। আর যদি সে জন-সমাবেশে আমাকে
স্মরণ করে, তবে আমিও তাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক
বিঘত এগিয়ে আসে, তবে আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই, যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর
হয়; আমি তার দিকে দু’ হাত এগিয়ে যাই। আর সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে
দৌড়ে যাই। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪০৫, ৭৫০৫,
৭৫৩৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৫, আহমাদ ৭৪২৬,আধুনিক
প্রকাশনী ৬৮৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসুল সা, আরও বলেন,
আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, এক সফরে আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। লোকেরা
তখন উচ্চস্বরে তাকবীর বলছিল। (তাকবীর শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের নাফসের উপর রহম করো। কেননা তোমরা তাকবীরের মাধ্যমে
কোন বধিরকে বা কোন অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না, তোমরা ডাকছ এমন সত্তাকে যিনি তোমাদের
সব কথা শুনেন ও দেখেন। তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। তোমরা যাঁকে ডাকছ তিনি তোমাদের প্রত্যেকের
বাহনের গর্দান থেকেও বেশি নিকটে। আবূ মূসা আল আশ্’আরী বলেন, আমি তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে চুপে চুপে বলছিলাম ’’লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা-
বিল্লা-হ’’ (অর্থাৎ- আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমার কোন উপায় নেই)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! (আবূ মূসার ডাক নাম) আমি কি তোমাকে
জান্নাতের ভাণ্ডারগুলোর একটি ভাণ্ডারের সন্ধান দেব না? আমি বললাম, অবশ্যই দেবেন, হে
আল্লাহর রসূল! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সেটা হলো ’’লা- হাওলা
ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৩০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা
করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময় মুসল্লীগণ ফরজ সালাত শেষ হলে
উচ্চস্বরে যিকর করতেন (সালাম ফিরানোর পর সকলে উচ্চ স্বরে আল্লাহু আকবর বলতেন)। ইবনু
‘আব্বাস (রাযি.) বলেন, আমি এরূপ শুনে বুঝতাম, মুসল্লীগণ সালাত শেষ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৪১, ৮৪২, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৯৫৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮৩, আধুনিক
প্রকাশনীঃ৭৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত হাদিস অনুযায়ী বোঝা যাচ্ছে যে, ফরজ সালাতে
সালাম ফিরানোর পর সাহাবীদের সাথে নিয়ে দুই
হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত না করে তাঁরা উচ্চ স্বরে যিকির করতেন।
(৭) সামুরাহ
ইবনু জুনদুব (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
সালাত শেষ করতেন, তখন আমাদের দিকে মুখ ফিরাতেন। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৪৫, ১১৪৩, ১৩৮৬, ২০৮৫, ২৭৯১, ৩২৩৬, ৩৩৫৪, ৩৩৫৪, ৩৬৭৪, ৬০৯৬,
৭০৪৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ৭৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসুল সা. সালাম ফিরানোর পর ডানে বা বামে মোড়
নিয়ে মুক্তাদির দিকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন এবং অনেক সময় কেউ স্বপ্ন দেখেছেন কিনা তা জিজ্ঞেস
করতেন। উক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে, রাসুল সা. মুখ ফিরে নেয়ার পর সাহাবীদের সাথে
নিয়ে দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করেননি।
যেমনঃ
সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল তিনি ফজরের সালাত শেষে প্রায়ই
আমাদের দিকে মুখ করে বসতেন এবং জিজ্ঞেস করতেন, তোমাদের কেউ আজ রাতে কোন স্বপ্ন দেখেছ
কি? রাবী বলেন, আমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখে থাকলে তাঁর নিকট বলত। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর হুকুম মোতাবেক তার তা’বীর করতেন। যথারীতি একদিন সকালে জিজ্ঞেস
করলেনঃ তোমাদের কেউ (আজ রাতে) কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৬২১, ৪৬২৪, তিরমিযী ৭০৪৮, ‘বায়হাক্বী’র
কুবরা ১০৭৭৬, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ৬৮৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাযি.) হতে বর্ণিত
যে, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে বৃষ্টি হবার পর
হুদায়বিয়াতে আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে ফিরে
বললেনঃ তোমরা কি জান, তোমাদের পরাক্রমশালী ও মহিমাময় প্রতিপালক কি বলেছেন? তাঁরা বললেনঃ
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই বেশি জানেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
(রব) বলেন, আমার বান্দাদের মধ্য কেউ আমার প্রতি মু’মিন হয়ে গেল এবং কেউ কাফির। যে বলেছে,
আল্লাহর করুণা ও রহমতে আমরা বৃষ্টি লাভ করেছি, সে হল আমার প্রতি বিশ্বাসী এবং নক্ষত্রের
প্রতি অবিশ্বাসী। আর যে বলেছে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টিপাত হয়েছে,
সে আমার প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছে এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসী হয়েছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৪৬, ১০৩৮, ৪১৪৭, ৭৫০৩; সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১, আহমাদ ১৭০৬০, আধুনিক প্রকাশনীঃ৭৯৮,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
উক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে, রাসুল সা. মুখ ফিরে নেয়ার পর সাহাবীদের সাথে নিয়ে দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করেননি।
(৯) আনাস
ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
অর্ধরাত পর্যন্ত সালাত বিলম্ব করলেন। এরপর তিনি আমাদের সামনে বের হয়ে এলেন। সালাত শেষে
তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, লোকেরা সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু তোমরা
যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষায় থাকবে ততক্ষণ তোমরা যেন সালাতে রত থাকবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৪৭, ৫৭২, আধুনিক প্রকাশনীঃ৭৯৯
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০৭)।
উক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে, রাসুল সা.
মুখ ফিরে নেয়ার পর সাহাবীদের সাথে নিয়ে দুই
হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করেননি।
(১০) উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ (রাযি.) হতে
বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরানোর পর নিজ জায়গায় কিছুক্ষণ
অপেক্ষা করতেন। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর বসে থাকার কারণ আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞাত। তবে আমার মনে হয় সালাতের পর মহিলাগণ যাতে
ফিরে যাওয়ার সুযোগ পান। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৮৪৯, ৮৩৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮০১ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
উক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে, রাসুল সা.
সাহাবীদের সাথে নিয়ে দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করেননি।
(১১) হিন্দ
বিন্ত হারিস ফিরাসিয়াহ যিনি উম্মু সালামাহ (রাযি.)-এর বান্ধবী তাঁর সূত্রে নবী পত্নী
উম্মু সালামাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সালাম ফিরাতেন, অতঃপর মহিলারা ফিরে গিয়ে তাঁদের ঘরে প্রবেশ করতেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফিরবার পূর্বেই। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৫০, ৮৩৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ
নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে, রাসুল সা.
সাহাবীদের সাথে নিয়ে দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করেননি।
(১২) উকবাহ
(রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মদিনা্য় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
পিছনে আসরের সালাত আদায় করলাম। সালাম ফিরানোর পর তিনি তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান এবং মুসল্লীগণকে
ডিঙ্গিয়ে তাঁর সহধর্মিণীগণের কোন একজনের কক্ষে গেলেন। তাঁর এই দ্রুততায় মুসল্লীগণ ঘাবড়িয়ে
গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট ফিরে এলেন এবং দেখলেন যে, তাঁর
দ্রুততার কারণে তাঁরা বিস্মিত হয়ে গেছেন। তাই তিনি বললেনঃ আমাদের নিকট রাখা কিছু স্বর্ণের
কথা মনে পড়ে যায়। তা আমার জন্য বাধা হোক, তা আমি পছন্দ করি না। তাই আমি সেটার বণ্ঠনের
নির্দেশ দিলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৫১,
১২২১, ,১৪৩০, ৬২৭৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
উক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে, রাসুল সা.
সাহাবীদের সাথে নিয়ে দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করেননি।
(১৩)
উম্মুল
মু’মিনীন ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সালাতের সালাম ফিরাবার পর শুধু এ দু’আটি শেষ করার পরিমাণ সময় অপেক্ষা করতেন, “আল্ল-হুম্মা
আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’ (অর্থা-
হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম
ও মহা সম্মানিত)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৬০, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২১১, ইসলামীক
সেন্টার ১২২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
উক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে, রাসুল সা.
সাহাবীদের সাথে নিয়ে দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করেননি।
(১৪) সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার “আস্তাগফিরুল্ল-হ’’
বলতেন, তারপর এ দু’আ পড়তেনঃ ’’আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা
ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার পক্ষ
থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১২২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯১, ইসলামী ফাউন্ডেশন, ১২১০, ইসলামীক সেন্টার ১২২২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ!
এরকম বহু ঞাদিস আছে যা দ্বারা প্রমাণ করে যে, রাসুল সা. ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর
সাহাবীদের সাথে নিয়ে তুই হাত তুলে সম্মিলিত মোনাজাত না করে বিভিন্ন দোয়ার আমল করতেন।
কখনো তিনি কাজের তাড়া থাকলে উঠে যেতেন। রাসুল সা. ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর যেসব
আমল করতেন আসুন আমরা সহিহ হাদিস ভিত্তিক তা জেনে নেই ও সম্মিলিত মোনাজাত নামক বিদআত
থেকে বিরত থেকে সেইসব আমল করি।
সহিহ হাদিস থেকে ফরজ সালাত শেষে ইমাম-মুক্তাদী
সবার জন্য পঠিতব্য দোয়া ও জিকিরসমূহ উপস্থাপন করা হলো
সালাত শেষে ডানে বামে সালাম ফিরানোর
পর একবার সরবে পড়ুন:-
(১নং) আল্ল-হু আকবার
(একবার)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত শেষ হওয়াটা বুঝতাম
‘আল্ল-হু আকবার’ বলার মাধ্যমে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৫৯, সহীহ বুখারী ৮৪২, মুসলিম ৫৮৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২নং) এরপর তিনবার ‘আসতাগ্ফিরুল্লা-হ’
ও একবার ‘আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু, তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালা-লে
ওয়াল ইকরা-ম’ বলবেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার ‘‘আস্তাগফিরুল্ল-হ’’ বলতেন, তারপর এ দু‘আ পড়তেনঃ ‘‘আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা
ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার
পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬১, ৯৬০, সহীহ মুসলিম ৫৯১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আমাদের দেশের ৯৫% আলেম বা ইমাম-মুয়াজ্জিন ফরজ
ছালাত শেষে ১ নং ও ২ নং এর ‘আসতাগ্ফিরুল্লা-হ’ পাঠ করেই দুই হাত তুলে মোনাজাত
ধরেন। তারপর ২ নং এর ‘‘আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া-
যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’ দোয়াটি দুই হাত তুলে মোনাজাতে বলেন। অথচ রাসুল সা. এভাবে কখনো
ফরজ সালাত শেষে দুই হাত তুলে সামষ্টিকভাবে মোনাজাত করেননি বা এভাবে দোয়াও পাঠ করেনি।
রাসুল সা. ফরজ সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর যেসব দোয়া পাঠ বা যিকির বা আমল করতেন তা
এখানে সহিহ হাদিস ভিত্তিক আলোচনা করা হলোঃ
ছালাম ফিরানোর পরই উঠে চলে যাওয়া নিষেধ
অনেক মুছল্লি আছেন যারা ছালাম ফিরানোর সাথে
সাথেই উঠে চলে যায়। অথচ এভাবে চলে যাওয়া হাদিসে সম্পূর্ণ নিষেধ আছে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
“একদা সালাত শেষে জনৈক এক ব্যক্তি তাড়াহুড়ো
করে যেতে ধরলে হযরত উমর রাঃ তার ঘাড় ধরে বসালেন। এই দৃশ্য রাসুল সাঃ দেখে বললেন, উমর
তুমি ঠিকই করেছো।” (আহামদ হাদিস নং ২৩১৭০, সিলসিলা সহিহাহ
হাদিস নং ২৫৪৯)। হাদিসের মান-সহিহ হাদিস।
ফরজ ছালাত শেষে ছালাম ফিরানোর পরই চলে না গিয়ে কিংবা সম্মিলিত মোনাজাতে
অংশ না নিয়ে ছালাতের জায়গায় অযু অবস্থায় বসে বসে বিভিন্ন দোয়া পাঠ বা যিকির করার ফজিলত
(১)
মুহাম্মাদ
ইবনু হাতিম (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের জন্য বসে সালাতের জন্য অপেক্ষা
করতে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতরত থাকে। আর মালায়িকাহও ততক্ষণ পর্যন্ত তার জন্য
এ বলে দু'আ করতে থাকে যে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তাকে
রহম করো। (আর মালায়িকাহ) ততক্ষণ পর্যন্ত এরূপ দুআ করতে থাকে যতক্ষণ সে সেখান থেকে
উঠে চলে না যায় কিংবা যতক্ষণ ওযু নষ্ট না করে। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৯৫, ১৩৯৪, ১৩৯৬, ১৩৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৯, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ) ১৭৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৬, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৪৩২,হাদিস সম্ভার-৭৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(২) আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন, “নামাযের পর আর এক নামাযের জন্য অপেক্ষমাণ ব্যক্তি সেই অশ্বারোহীর সমতুল্য, যে
তার অশ্বসহ আল্লাহর পথে শত্রুর বিরুদ্ধে বিক্রমের সাথে সদা প্রস্তুত; যে থাকে বৃহৎ
প্রতিরক্ষার কাজে।” (আহমাদ ৮৬২৫, ত্বাবারানীর কাবীর ১১৭৫,
আওসাত্ব ৮১৪৪, সহীহ তারগীব ৪৫০নং, হাদিস সম্ভার-৭৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৩)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যারা ফাজ্রের (ফজরের) সালাত শেষ করে
সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত থাকে তাদের সঙ্গে আমার বসে থাকা, ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর
সন্তান থেকে চারজনকে দাসত্বমুক্ত করার চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয়। আর যারা ‘আসরের সালাতের
শেষে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত থাকে তাদের সঙ্গে আমার বসে থাকা, চারজনকে
আযাদ করার চেয়ে আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৭০, সুনান আবূ দাঊদ ৩৬৬৭, ৩৬৬৯, সহীহ আত্ তারগীব ৪৬৫, হাদিস সম্ভার-৭৩১)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৪) আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ফাজ্রের (ফজরের) সালাত জামা‘আতে আদায় করল, অতঃপর বসে বসে সূর্যোদয় পর্যন্ত
আল্লাহর যিকর করতে থাকল, তারপর দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করল, সে একটি পূর্ণ হজ্জ ও একটি সম্পূর্ণ ‘উমরার সমান সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে।
বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি তিনবার বলেছেন,
সম্পূর্ণ হাজ্জ ও সম্পূর্ণ ‘উমরার সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭১, সুনান আততিরমিযী ৫৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ৪৬৪, হাদিস সম্ভার-৭৩০)।
। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৫) মু'মিন জননী জুয়াইরিয়াহ বিনতে হারেস (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল
ভোরে ফজরের নামায সমাপ্ত করে তাঁর নিকট থেকে বাইরে গেলেন। আর তিনি (জুয়াইরিয়াহ) স্বীয়
জায়নামাযে বসেই রইলেন। তারপর চাশ্তের সময় তিনি যখন ফিরে এলেন, তখনও তিনি সেখানেই বসেছিলেন।
এ দেখে তিনি তাঁকে বললেন, “আমি যে অবস্থায় তোমাকে ছেড়ে বাইরে গেলাম, সে অবস্থাতেই তুমি
রয়েছ?” তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমার
নিকট থেকে যাবার পর আমি চারটি বাক্য তিনবার পড়েছি। যদি সেগুলিকে তোমার সকাল থেকে (এ
যাবৎ) পঠিত দু‘আর মুকাবিলায় ওজন করা যায়, তাহলে তা ওজনে সমান হয়ে যাবে। আর তা হচ্ছে
এই যে,
‘সুবহা-নাল্লা-হি অবিহামদিহী আদাদা খালক্বিহী,
অরিযা নাফসিহী, অযিনাতা আরশিহী, অমিদা-দা কালিমা-তিহ্।’ অর্থাৎ, আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা
ঘোষণা করি; তাঁর সৃষ্টির সমান সংখ্যক, তাঁর নিজ মর্জি অনুযায়ী, তাঁর আরশের ওজন বরাবর
ও তাঁর বাণীসমূহের সমান সংখ্যক প্রশংসা।” (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৬৮০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২৬, সুনান আততিরমিযী ৩৫৫৫, সুনান আননাসায়ী
১৩৫২, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮০৮, আহমাদ ২৬২১৮, ২৬৮৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৬৫, ইসলামিক
সেন্টার ৬৭১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৬) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ).....আবু
হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ আল্লাহ জাল্লা শানুহু বলেন, আমি বান্দার ধারণা অনুযায়ী নিকটে আছি। যখন সে আমার
যিকর (স্মরণ) করে সে সময় আমি তার সাথে থাকি। বান্দা আমাকে একাকী স্মরণ করলে আমিও তাকে
একাকী স্মরণ করি। আর যদি সে আমাকে কোন সভায় আমার কথা স্মরণ করে তাহলে আমি তাকে তার
চেয়ে উত্তম (ফিরিশতাদের) সভায় স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় তাহলে
আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে আসি। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌড়িয়ে
আসি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৮, ৬৭০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৫, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫৩৬, ৭৫৩৬, ৭৫৩৭, সুনান আততিরমিযী ২৩৮৮, ৩৬০৩, সুনান
ইবনু মাজাহ ৩৮২২, আহমাদ ৭৩৭৪, ৮৪৩৬, ৮৮৩৩, ৯০০১, ৯০৮৭, ৯৩৩৪, ৯৪৫৭, ১০১২০, ১০২৪১, ১০৩০৬,
১০৩২৬, ১০৪০৩, ১০৫২৬, ১০৫৮৫, ২৭২৭৯, ২৭২৮৩, রিয়াদুস সালেহীন ১৪৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৫৬১, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আল্লাহর একদল ফেরেশতা আছেন, যাঁরা আল্লাহর যিকরে রত লোকেদের খোঁজে পথে পথে ঘুরে বেড়ান।
যখন তাঁরা কোথাও আল্লাহর যিকরে রত লোকেদের দেখতে পান, তখন ফেরেশতারা পরস্পরকে ডাক দিয়ে
বলেন, তোমরা আপন আপন কাজ করার জন্য এগিয়ে এসো। তখন তাঁরা তাঁদের ডানাগুলো দিয়ে সেই
লোকদের ঢেকে ফেলেন নিকটবর্তী আকাশ পর্যন্ত। তখন তাঁদের প্রতিপালক তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন
(যদিও ফেরেশতাদের চেয়ে তিনিই অধিক জানেন) আমার বান্দারা কী বলছে?
তখন তাঁরা বলে, তারা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা
করছে, তারা আপনার শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিচ্ছে, তারা আপনার গুণগান করছে এবং তারা আপনার
মাহাত্ম্যপ্রকাশ করছে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? তখন তাঁরা বলবেঃ
হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার শপথ! তারা আপনাকে দেখেনি। তিনি বলবেন, আচ্ছা, তবে যদি তারা
আমাকে দেখত? তাঁরা বলবেন, যদি তারা আপনাকে দেখত, তবে তারা আরও অধিক পরিমাণে আপনার
’ইবাদাত করত, আরো অধিক আপনার মাহাত্ম্য ঘোষণা করত, আরো অধিক পরিমাণে আপনার পবিত্রতা
বর্ণনা করত।
বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহ বলবেন, তারা আমার
কাছে কী চায়? তাঁরা বলবে, তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তারা কি
জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতারা বলবেন, না। আপনার সত্তার কসম! হে রব! তারা তা দেখেনি। তিনি
জিজ্ঞেস করবেন, যদি তারা দেখত তবে তারা কী করত? তাঁরা বলবে, যদি তারা তা দেখত তাহলে
তারা জান্নাতের আরো অধিক লোভ করত, আরো বেশি চাইত এবং এর জন্য আরো বেশি বেশি আকৃষ্ট
হত।। আল্লাহ্ তা’আলা জিজ্ঞেস করবেন, তারা কী থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়? ফেরেশতাগণ বলবেন,
জাহান্নাম থেকে। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? তাঁরা জবাব দেবে, আল্লাহর
কসম! হে প্রতিপালক! তারা জাহান্নাম দেখেনি।
তিনি জিজ্ঞেস করবেন, যদি তারা তা দেখত তখন
তাদের কী হত? তাঁরা বলবে, যদি তারা তা দেখত, তাহলে তারা তাত্থেকে দ্রুত পালিয়ে যেত
এবং একে অত্যন্ত বেশি ভয় করত। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি,
আমি তাদেরক্ষমা করে দিলাম। তখন ফেরেশতাদের একজন বলবে, তাদের মধ্যে অমুক ব্যক্তি আছে,
যে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সে কোন প্রয়োজনে এসেছে। আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, তারা এমন
উপবেশনকারী যাদের মাজলিসে উপবেশনকারী বিমুখ হয় না। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪০৮, রিয়াদুস সালেহীন ১৪৫৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৮৯, সুনান আততিরমিযী ৩৬০০, আহমাদ ৭৩৭৬, ৮৪৮৯, ৮৭৪৯, আধুনিক
প্রকাশনী- ৫৯৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৮) আবূ হুরাইরা (রাঃ) ও আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যখনই কোন সম্প্রদায় আল্লাহ আয্যা অজাল্লার যিকরেরত হয়, তখনই তাদেরকে
ফিরিশতাবর্গ ঢেকে নেন, তাদেরকে রহমত আচ্ছন্ন করে নেয়, তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ
হয় এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাবর্গের কাছে তাদের কথা আলোচনা করেন।” (রিয়াদুস সালেহীন ১৪৫৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৪৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৬৯৯, সুনান আততিরমিযী ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫, সুনান আবূ দাউদ ৪৯৪৬, সুনান
ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৯) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কিছু মালাক (ফেরেশতা) আছেন যারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ান। তারা
আমার উম্মাতের সালাম আমার কাছে পৌঁছান। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯২৪, সুনান আননাসায়ী ১২৮২, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৮৫৩, হাকিম ২/৪২১, দারিমী
২৮১৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ফরয
সালাতে সালাম ফিরানোর পর পঠিতব্য অতিরিক্ত দুয়া, জিকির বা আমলসমূহ
ফরয সালাতের সালাম শেষে রাসূলুল্লাহ (স.) অনেক
দু'আ ও যিকর করেছেন। ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আসমূহ ফরয ছালাতের পর পাঠ করাই সুন্নাত।
কারণ এ ব্যাপারে যে সকল হাদীছ এসেছে তাতে ফরয ছালাতের পরের কথা বলা হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৫৯-৬১;
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তবে দো‘আ হিসাবে এগুলো পরে পাঠ করলেও তার ছওয়াব
পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন তোমরা ছালাত শেষ করবে, তখন দাঁড়ানো,
বসা ও শোয়া সর্বাবস্থায় আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ কর’। (সুরা
আননিসা ৪/১০৩)।
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ (সময়ের) দু‘আ (আল্লাহর কাছে) বেশী শ্রুতি হয়।
তিনি বললেন, শেষ রাতের মধ্যের (দু‘আ) এবং ফরয সালাতের শেষের দু‘আ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৮, সুনান আততিরমিযী ৩৪৯৯,
সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৮। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আসমূহ সুন্নাত ছালাতের
পর বা যেকোন সময় পাঠ করার বিধান
দো‘আসমূহ সুন্নাত ছালাতের পর বা যেকোন সময়
পাঠ করা যাবে। হাদীছে সকল ছালাতের জন্য আমভাবে প্রথমে আল্লাহু আকবর একবার সরবে, অতঃপর
তিনবার ‘আসতাগফিরুল্লা-হ’ এবং একবার ‘আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু
তাবা-রাকতা ইয়া-যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম’ পাঠের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত)-৯৫৯-৬১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
সুতরাং এটি সকল ছালাতের জন্য প্রযোজ্য। আর
ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর, আয়াতুল কুরসী
প্রভৃতি দো‘আ ফরয ছালাতের পরে পাঠের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। অতএব সেগুলি সেখানে পাঠ
করাই উত্তম হবে (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০২-এর আলোচনা)। তবে সাধারণভাবে এগুলি যেকোন ছালাতের
পর পড়া যায়। (ফাৎহুল বারী ১১/১৩৪; তুহফাতুল আহওয়াযী ২/১৬৯)।
১ ও ২ নং দোয়া পাঠ করার পর, পরের দোয়াগুলো পাঠ করুনঃ
(৩নং)
(ক) প্রতি সালাতের পর ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, আল্ল-হু আকবার’ ও আলহামদু
লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার করে পড়াঃ
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
দরিদ্র মুহাজিরগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হয়ে আরয
করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ধন-সম্পদশালী লোকজন সম্মানে ও স্থায়ী নি‘আমাতের ব্যাপারে আমাদের
থেকে অনেক অগ্রগামী। তিনি বললেন, এটা কিভাবে? তারা বললেন, আমরা যেমন সালাত আদায় করি তারাও আমাদের মতই সালাত আদায় করে, আমাদের
মতো সওম পালন করে। তবে তারা দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে। আমরা তা করতে পারি না। তারা
গোলাম মুক্ত করে, আমরা গোলাম মুক্ত করতে পারি না। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদেরকে কি আমি এমন কিছু শিখাব না যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রগামীদের
মর্যাদায় পৌঁছতে পারবে এবং তোমাদের পশ্চাদ্গামীদের চেয়ে আগে যেতে পারবে, কেউ তোমাদের
চেয়ে বেশী উত্তম হতে পারবে না, তারা ছাড়া যারা তোমাদের মতো ‘আমল করবে? গরীব লোকেরা
বললেন, বলুন হে আল্লাহর রসূল!
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তোমরা প্রতি সালাতের পর ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, আল্ল-হু আকবার’ আলহামদু লিল্লা-হ’
তেত্রিশবার করে পড়বে। রাবী আবূ সালিহ বলেন, পরে সে গরীব মুহাজিরগণ রসূলের দরবারে ফিরে
এসে বললেন, আমাদের ধনী লোকেরা আমাদের ‘আমলের কথা শুনে তারাও তদ্রূপ ‘আমল করছেন। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা আল্লাহ তা‘আলার করুণা, যাকে ইচ্ছা তা দান
করেন। (বুখারী, মুসলিম; আবূ সালিহ-এর কথা শুধু মুসলিমেই বর্ণিত। বুখারীর অন্য বর্ণনায়
তেত্রিশবারের স্থানে প্রতি সালাতের পর দশবার করে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’
‘আল্ল-হু আকবার’ পাঠ করার কথা পাওয়া যায়)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৪৩, ৬৩২৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৩৪, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৫৯৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৯৫ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আলী
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ফাতিমা (রাঃ) (আটার) চাক্কি পিষতে পিষতে তার হাতের
কষ্ট অনুভূত হওয়ার অভিযোগ স্বরূপ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন।
তিনি [ফাতিমা (রাঃ)] জানতে পেরেছিলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কাছে যুদ্ধবন্দী গোলাম এসেছে। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রসূলের
দেখা না পেয়ে মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে এ কথা বললেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
যখন ফিরে আসলেন ‘আয়িশাহ্ ফাত্বিমার কথা তাঁকে জানালেন। ‘আলী (রাঃ) বলেন, অতঃপর খবর
পেয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন আমাদের এখানে আসলেন, তখন আমরা বিছানায়
শুয়ে পড়ছিলাম। তাঁকে দেখে আমরা উঠতে চাইলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় থাকো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের
কাছে এসে আমার ও ফাত্বিমার মাঝে বসে গেলেন। এমনকি আমি আমার পেটে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পায়ের শীতলতা অনুভব করলাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা যা আমার কাছে চেয়েছ এর (গোলামের) চেয়ে অনেক উত্তম এমন কথা
আমি কি তোমাদেরকে বলে দেবো না? আর তা হলো যখন তোমরা ঘুমাবে তখন তেত্রিশবার ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, তেত্রিশবার ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ এবং চৌত্রিশবার ‘আল্ল-হু আকবার’ পড়বে। এটা তোমাদের জন্য খাদিম (গোলাম)
হতে অনেক উত্তম হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৫৩৬১,৩১১৩,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২৭, সুনান আবূ দাঊদ ৫০৬২,আহমাদ
১১৪১, ইবনু হিববান ৬৯২১, সহীহ আত্ তারগীব ৬০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৬৭, ইসলামিক সেন্টার
৬৭২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতি ফরয সালাতের পর পাঠ
করার মতো কিছু কালিমাহ্ আছে যেগুলো পাঠকারী বা ‘আমলকারী বঞ্চিত হয় না। সে কালিমাগুলো
হলোঃ
‘সুবহা-নাল্ল-হ’
তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ তেত্রিশবার ও ‘আল্ল-হু আকবার’ চৌত্রিশবার করে পড়া। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৬, সহীহ, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন
১২২৫, ইসলামীক সেন্টার ১২৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে লোক প্রত্যেক সালাতের শেষে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার এবং ‘আল্ল-হু আকবার’ তেত্রিশবার পড়বে, যার মোট সংখ্যা হবে
নিরানব্বই বার, একশত পূর্ণ করার জন্যে একবার ‘‘লা- ইলা-হা
ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি
শাইয়্যিন ক্বদীর’’ (অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। তিনি এক,
তাঁর কোন শরীক নেই। সমগ্র রাজত্ব একমাত্র তাঁরই ও সকল প্রকারের প্রশংসা তাঁরই জন্য
এবং তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।) পাঠ করবে, তাহলে তার সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে,
যদি তা সাগরের ফেনারাশির সমানও হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯৭, ইসলামী
ফাউন্ডেশন ১২২৮, ইসলামীক সেন্টার ১২৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমাদেরকে নির্দেশ করা হয়েছে, প্রতি সালাতের শেষে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’
তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার ও ‘আল্ল-হু আকবার’ চৌত্রিশবার পাঠ করতে। একজন আনসারী স্বপ্নে
দেখতে পেল যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি
তোমাদেরকে প্রতি সালাত শেষে এতো এতো বার তাসবীহ
পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন? আনসারী স্বপ্নের মধ্যে বলল, হ্যাঁ। মালাক (ফেরেশতা) বললেন, এ
তিনটি কালিমাকে পঁচিশবার করে পাঠ করার জন্য নির্ধারিত করবে। এবং এর সাথে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ পাঠ করে নিবে। সকালে ঐ আনসারী
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তার স্বপ্ন সম্পর্কে
তাঁকে অবহিত করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যা বলা হয়েছে
তাই করো। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭৩, সুনান আততিরমিযী ৩৪১৩, দারিমী ১৩৯৪, আহমাদ ২১৬০০। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(৪নং) (ক) ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতি সালাতের শেষে ‘‘কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিন্ না-স’’ ও ‘‘কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিল ফালাক্ব’’
পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৬৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৫২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে (ঘুমাবার জন্য) বিছানায় যাবার সময় দু’
হাতের তালু একত্র করতেন। তারপর এতে ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ,
কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিন্না-স’ পড়ে ফুঁ দিতেন। এরপর
এ দু’ হাত দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর শরীরের যতটুকু সম্ভব হত
মুছে নিতেন। শুরু করতেন মাথা, চেহারা এবং শরীরের সম্মুখ ভাগ হতে। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ২১৩২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১৭, ৫৭৪৮, ৬৩১৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৭৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭১৫, সুনান আবূ দাঊদ ৫০৫৬, সুনান আততিরমিযী ৩৪০২,
মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৫০৭৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৪৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব
৩০, সহীহাহ্ ৩১০৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫নং) (ক) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুক্ত
করা গোলাম বিলাল ইবনু ইয়াসার ইবনু যায়দ বলেন, আমার পিতা আমার দাদার মাধ্যমে বলেন, আমার
দাদা যায়দ বলেছেন, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন।
যে ব্যক্তি বলল, ‘
"আস্তাগফিরুল্ল-হাল্লাযী
লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি"।
(৭ বার)।
(অর্থাৎ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি
ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তওবা্ করি)।
আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করবেন, যদিও সে যুদ্ধের
ময়দান হতে পালিয়ে যেয়ে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৩৫৩, সহীহ লিগয়রিহী আবূ দাঊদ ১৫১৭,
সুনান আততিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস্ সলিহীন ১৮৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২২, সিলসিলা ছহীহাহ
হা/২৭২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আগার আল মুযানী (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে মানবমন্ডলী! আল্লাহর
কাছে তওবা্ করো। আর আমিও প্রতিদিন একশ’বার করে আল্লাহর কাছে তওবা্ করি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৩২৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৫১-৬৭৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০২, সহীহাহ্ ১৪৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬নং)
উম্মু
সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের
সালাত আদায় করে বলতেন,
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা
‘ইলমান না-ফি‘আন ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা”।
(৩ বার)।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী
জ্ঞান, কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
২৪৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৯২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২৬৫, আহমাদ ২৬৫২১, ২৫৯৮২, ২৬০৬২, ২৬১৬০,
২৬১৯১, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ১১৯, শু‘আবূল ঈমান ১৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭নং) (ক) ‘আবদুর রহমান ইবনু গানম (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফাজর (ফজর) ও মাগরিবের সালাতের শেষে জায়গা হতে উঠার
ও পা ঘুরানোর আগে এ দু‘আ দশবার পড়েঃ
‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ
লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু বিয়াদিহিল খায়রু, ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াওহুয়া
‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর’’। (১০ বার)।
(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ
নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, তাঁর হাতেই সমস্ত
কল্যাণ রয়েছে, তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন, তিনি সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।)।
তাহলে প্রতিবারের বিনিময়ে তার জন্য দশ নেকী
লিখা হয়। তার দশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। তাকে দশটি মর্যাদার স্তরে উন্নীত করা হয়।
আর এ দু‘আ তাকে সমস্ত অপছন্দনীয় ও বিতাড়িত শায়ত্বন (শয়তান) থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। শির্ক
ছাড়া অন্য কোন গুনাহের কারণে তাকে ধর-পাকড় করা হালাল হবে না। ‘আমলের দিক দিয়ে এ লোক
হবে অন্য লোকের চেয়ে উত্তম, তবে সে ব্যক্তি ব্যতীত যে এর চেয়েও অতি উত্তম ‘আমল করবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭৫, হাসান লিগায়রিহী : আহমাদ
১৭৯৯৯, সহীহ আত্ তারগীব ৪৭৭। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) যে
ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের ফরয ছালাতের পর দশবার করে বিশেষ তাহলীল পাঠ করে, তার আমলনামায়
দশজন মুমিন ক্রীতদাস মুক্ত করার নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়।
উমারাহ ইবনু শাবীব আস-সাবায়ী (রাযিঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাগরিবের
নামাযের পর যে লোক দশবার বলেঃ
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু
লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইয়ুহ্য়ি ওয়া ইয়মীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি
শাইয়িন ক্বাদীর”
অর্থাৎ
“আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কোন মা’বূদ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, সমস্ত কিছুই তার
এবং তিনিই সকল প্রশংসার অধিকারী, তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন এবং প্রতিটি জিনিসের
উপর তিনিই মহা ক্ষমতাশালী”,
আল্লাহ তাআলা তার নিরাপত্তার জন্য ফেরেশতা
পাঠান যারা তাকে শায়তানের ক্ষতি হতে ভোর পর্যন্ত নিরাপত্তা দান করেন, তার জন্য (আল্লাহ
তাআলার অনুগ্রহ) অবশ্যম্ভাবী করার ন্যায় দশটি পুণ্য লিখে দেন, তার দশটি ধ্বংসাত্মক
গুনাহ বিলুপ্ত করে দেন এবং তার জন্য দশটি ঈমানদার দাস মুক্ত করার সমপরিমাণ সাওয়াব
রয়েছে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৩৪, সহীহ আত-তারগীব
ওয়াত তারহীব (১/১৬০/৪৭২), সুনান আননাসাঈ ১০৩৩৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৮নং)
মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ফরয
সালাতের পরে এ দু‘আ পড়তেনঃ
“লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ
লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর,
আল্ল-হুম্মা লা- মা-নি‘আ লিমা- আ‘ত্বয়তা, ওয়ালা- মু‘ত্বিয়া লিমা- মানা‘তা, ওয়ালা- ইয়ানফা‘উ
যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু’’। (১ বার)।
(অর্থাৎ আল্লাহ ভিন্ন কোন উপাস্য নেই। তিনি
অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার নেই! রাজত্ব একমাত্র তারই এবং সব প্রশংসা একমাত্র তাঁর
জন্যে। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান করো, কেউ নেই তা ফিরাবার।
আর যা তুমি দান করতে বারণ করো, কেউ নেই তা দান করার। ধনবানকে ধন-সম্পদে পারবে না কোন
উপকার করতে আপনার আক্রোশ-এর সামনে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৪৪, ১৪৭৭, ২৪০৮, ৫৯৭০, ৬৩৩০, ৬৪৭৩,
৬৬১৫, ৭২৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯৩, আহমাদ ১৮১৬২,
আধুনিক প্রকাশনী ৭৯৬ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮০৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বুখারীতে
এভাবে বর্ণিত আছে,
মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাযি.)-এর কাতিব ওয়ার্রাদ
(রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাযি.) আমাকে দিয়ে মু’আবিয়াহ
(রাযি.)-কে একখানা পত্র লিখালেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ফরজ
সালাতের পর বলতেনঃ
“লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ
লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর,
আল্ল-হুম্মা লা- মা-নি‘আ লিমা- আ‘ত্বয়তা, ওয়ালা- মু‘ত্বিয়া লিমা- মানা‘তা, ওয়ালা- ইয়ানফা‘উ
যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু’’। (১ বার)।
“এক আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, সার্বভৌমত্ব
একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য, তিনি সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল। হে
আল্লাহ্! আপনি যা প্রদান করতে চান তা রোধ করার কেউ নেই, আর আপনি যা রোধ করেন তা প্রদান
করার কেউ নেই। আপনার নিকট (সৎকাজ ভিন্ন) কোন সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসে না।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৪৪, ১৪৭৭, ২৪০৮, ৫৯৭০, ৬৩৩০,
৬৪৭৩, ৬৬১৫, ৭২৯২ সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯৩, আল-আদাবুল
মুফরাদ ৪৬২, আহমাদ ১৮১৬২, আধুনিক প্রকাশনীঃ৭৯৬ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
প্রিয়
পাঠক বিষয়টি লক্ষ্য করুন, ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর দোয়া পাঠের
কতো গুরুত্ব। সেসময় একে অপরের নিকট জানা কোনো আমল থাকলে তা পত্র মারফত পর্যন্ত শেয়ার
করতেন। আর আমরা এতো গুরুত্বপূর্ণ আমল বাদ দিয়ে সম্মিলিত মোনাজাত নিয়ে পড়ে আছি।
(৯নং)
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যখন নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাশাহহুদ ও সালাম ফিরার মধ্যখানে শেষ বেলায় অর্থাৎ
সালাম ফিরবার আগে) এই দো‘আ পড়তেন,
“আল্ল-হুম্মাগফিরলী মা-ক্বদ্দামতু
ওয়ামা- আখখারতু ওয়ামা আসসারতু ওয়ামা আ'লানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আ'লামু বিহী
মিন্নী আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা"
। (৩ বার)।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর,
যে অপরাধ আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি,
যা অতিরিক্ত করেছি এবং যা তুমি আমার চাইতে অধিক জান। তুমি আদি, তুমিই অন্ত। তুমি ব্যতীত
কেউ সত্য উপাস্য নেই। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত),
৩৪২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন, ১১২০, ৬৩১৭, ৬৩৮৫, ৭৪৪২, ৭৪৯৯, ৭৩৮৫, সুনান ইবনু
মাজাহ, ১৩৫৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪১৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৯৭,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭১, সুনান আননাসায়ী ১৬১৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৭১, আহমাদ
২৮১৩, ২৭০৫, ২৭৪৩, ২৮০৮, ৩৩৫৮,৩৪৫৮; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৫০০, দারিমী ১৪৮৬,আধুনিক প্রকাশনী
১০৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১০৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
এই দোয়াটি ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পরও আমল
করা যায়।
(১০নং) ‘আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সলাতের সালাম ফিরানোর
পর উচ্চ কণ্ঠে বলতেন,
‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ
লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর,
লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়ালা- না‘বুদু
ইল্লা- ঈয়্যাহু, লাহুন্ নি‘মাতু, ওয়ালাহুল ফাযলু, ওয়ালাহুস্ সানা-উল হাসানু, লা- ইলা-হা
ইল্লাল্ল-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন’’।
(১ বার)।
(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই,
তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর এবং তিনি সকল বিষয়ে
ক্ষমতাশীল। কোন অন্যায় ও অনিষ্ট হতে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই এবং কোন সৎ কাজ করারও
ক্ষমতা নেই একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, আমরা
একমাত্র তাঁরই ‘ইবাদাত করি, যাবতীয় নি‘আমাত ও অনুগ্রহ একমাত্র তাঁরই পক্ষ থেকে এবং
উত্তম প্রশংসাও তাঁর। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই। আমরা তাঁর দেয়া জীবন বিধান
একমাত্র তাঁর জন্য একনিষ্ঠভাবে মান্য করি, যদিও কাফিরদের নিকট তা অপ্রীতিকর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১২৩০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২১৯, ইসলামীক সেন্টার ১২৩১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১নং) মু‘আয
ইবনু জাবাল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি, আল্লাহর শপথ!
আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে ওয়াসিয়াত করছি, তুমি
প্রত্যেক সালাতের পর এ দু‘আটি কখনো পরিহার করবে নাঃ
‘‘আল্লাহুম্মা আঈন্নী ‘আলা যিকরিকা
ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা’’। (৩ বার)।
(অর্থঃ
হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ‘ইবাদাতে আমাকে সাহায্য
করুন)। অতঃপর মু‘আয (রাঃ) আস-সুনাবিহী (রহঃ)-কে এবং আস-সুনাবিহী ‘আবদুর রহমানকে এরূপ
দু‘আ করার ওয়াসিয়াত করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
১৫২২, সুনান আননাসায়ী ১৩০২, হাকিম (১/২৭৩), আহমাদ (৫/২৪৪), ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ৭৫১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২নং)
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, যে ব্যক্তি বলে, আমি আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে দীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রসূল হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছি, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব
হয়ে গেছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১৫২৯, সুনান আননাসায়ী
৫, হাকিম (১/৫১৮)ইবনু হিববান ‘মাওয়ারিদ’ (হাঃ ২৩৬৮), সিলসিলাহ সহীহাহ (হাঃ ৩৩৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৩নং) সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি তার সন্তানদেরকে
দু‘আর এ কালিমাগুলো শিক্ষা দিতেন ও বলতেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সালাতের পর এ কালিমাগুলো দ্বারা আল্লাহর নিকটে আশ্রয় চাইতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা
মিনাল জুবনি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন আরযালিল ‘উমুরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা
মিন ফিতনাতিদ্ দুন্ইয়া- ওয়া ‘আযা-বিল কবরি’’। (৩ বার)।
(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি কাপুরুষতা থেকে তোমার
কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। বখিলী থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। নিষ্কর্মা জীবন থেকে তোমার নিকট
আশ্রয় চাই। দুনিয়ার ফিতনাহ্ (ফিতনা) ও কবরের শাস্তি থেকে তোমার নিকটে আশ্রয় চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৮২২, ৬৩৬৫, ৬৩৭০, ৬৩৭৪, ৬৩৯০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬২৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৪নং)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা
মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্
দায়নি ওয়া গলাবাতির্ রিজা-ল’’। (৩ বার)।
(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা,
শোক-তাপ, অক্ষমতা-অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের জোর-জবরদস্তি হতে
আশ্রয় চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৫৮, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬৯, সুনান আননাসায়ী ৫৪৪৯, সুনান আততিরমিযী ৩৪৮৪, ইবনু আবী শায়বাহ্
২৯১৪১, আহমাদ ১০৫২, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১২৯, সহীহ আল জামি ১২৮৯, আধুনিক
প্রকাশনী-৫৯২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৫নং)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও উম্মুল মু’মিনীন জুওয়াইরিয়্যাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুওয়াইরিয়াহ (রাঃ) এর কাছ থেকে বেরিয়ে
এলেন। ইতিপূর্বে তার নাম ছিলো বাররাহ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ নাম
পরিবর্তন করেন। তিনি তার কাছ থেকে বেরিয়ে আসার সময়ও মুসাল্লায় বসে তাসবীহ পাঠ করতে
দেখেন এবং ফিরে এসেও তাকে ঐ মুসাল্লায় বসে থাকতে দেখেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি
তখন থেকে একটানা এ মুসাল্লায় বসে রয়েছো? তিনি বললেন, হাঁ। তিনি বললেন, তোমার কাছ থেকে
যাওয়ার পর আমি তিনবার চারটি কালেমা পড়েছি; এ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তুমি যা কিছু পাঠ করেছো,
উভয়টি ওজন হলে আমার ঐ চারটি কালেমা ওজনে ভারী হবে। তা হচ্ছেঃ
‘‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি
‘আদাদা খালক্বিহি, ওয়া রিদা নাফসিহি, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহি, ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।’’
(৩ বার)।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
১৫০৩, সুনান আততিরমিযী ৩৫৫৫, সুনান আননাসায়ী ১৩৫১, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮০৮, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৬৮০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২৬, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ১২৭, শু‘আবূল
ঈমান ৫৯৬, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৫০৪/৬৪৭, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১২, সহীহাহ্ ২১৫৬, সহীহ
আত্ তারগীব ১৫৭৪, সহীহ আল জামি‘ ৫১৩৯, ইবনু খুযায়মাহ্ ৭৫৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
২৩০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৬৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৭১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৬নং) আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় সময়ই
এ দু‘আ করতেনঃ
“ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূবে ছাবিবত ক্বালবী ‘আলা দ্বীনিকা,
আল্লা-হুম্মা মুছারিরফাল ক্বলূবে ছাররিফ ক্বলূবানা
‘আলা ত্বোয়া-‘আতিকা”। (৩ বার)।
অর্থঃ হে হৃদয় সমূহের পরিবর্তনকারী! আমার
হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখো’। ‘হে অন্তর সমূহের রূপান্তরকারী! আমাদের অন্তর
সমূহকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দাও’।
আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমরা আপনার ওপর
এবং আপনি যে দীন নিয়ে এসেছেন, তার ওপর ঈমান এনেছি। এরপরও কি আপনি আমাদের সম্পর্কে আশংকা
করেন? জবাবে তিনি বললেন, কেননা ‘ক্বল্ব, আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে রয়েছে (অর্থাৎ-
তাঁর নিয়ন্ত্রণ ও অধিকারে রয়েছে)। তিনি যেভাবে চান সেভাবে (অন্তরকে) ঘুরিয়ে থাকেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০২, সুনান আততিরমিযী ২০৬৬,
সুনান ইবনু মাজাহ্ ৩৮২৪, ইমাম তিরমিযী জামি‘ আত্ তিরমিযীর ২/২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১৭নং) “আল্লা-হুম্মা আদখিলনিল জান্নাতা
ওয়া আজিরনী মিনান্ না-র”। (৩ বার)
অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ
করাও এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ দাও!
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জান্নাতের
প্রত্যাশা করে; জান্নাত বলবে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর যে ব্যক্তি
তিনবার জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করবে; জাহান্নাম বলবে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম
থেকে মুক্তি দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৭৮, সুনান আততিরমিযী ৫৫২১, সুনান আননাসায়ী ৫৫২১, সহীহ ইবনু
হিববান ১০৩৪, সহীহ আল জামি‘ ৬২৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৮নং) “আল্লা-হুম্মা
ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াত তুক্বা ওয়াল ‘আফা-ফা ওয়াল গিনা”। (৭ বার)।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে সুপথের নির্দেশনা,
পরহেযগারিতা, পবিত্রতা ও সচ্ছলতা প্রার্থনা করছি।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ
ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু‘আয়)
বলতেন,
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল
হুদা- ওয়াত্তুকা- ওয়াল ‘আফা-ফা ওয়াল গিনা-’’
(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হিদায়াত
[সঠিক পথ], তাকওয়া [পরহেযগারিতা], হারাম থেকে বেঁচে থাকা ও অমুখাপেক্ষিতা প্রত্যাশা
করি)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭২১, সুনান আততিরমিযী ৩৪৮৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৩২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৯২,
আহমাদ ৩৯৫০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৯০০, সহীহ আল জামি‘ ১২৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৫৬, ইসলামিক
সেন্টার ৬৭০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৯নং) (ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দৈনিক একশ’বার পড়বে
‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী’
(অর্থাৎ- আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর
প্রশংসার সাথে)- তার গুনাহসমূহ যদি সমুদ্রের ফেনার মতো বেশি হয় তবুও তা মাফ করে দেয়া
হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২২৯৬, ২২৯৭, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৬৯১, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭১৩, ইবনু হিব্বান ৮২৯, সহীহ আল জামি ৬৪২৫, ৬৪৩১, সুনান আততিরমিযী
৩৪৬৬, ৩৪৬৯, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৪১৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮১২, আহমাদ ৮০০৯, ৮৮৫৫, আহমাদ
৮০১৪, সহীহ আত্ তারগীব ৬৫৩, ১৫৯০, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৫৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’টি খুব সংক্ষিপ্ত
বাক্য যা বলতে সহজ অথচ (সাওয়াবের) পাল্লায় ভারী এবং আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়, তা হলো
‘‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী, সুবহা-নাল্ল-হিল ‘আযীম’’।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৬৮২, ৬৪০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৯,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৪, সুনান আততিরমিযী ৩৪৬৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮০৬, ইবনু আবী
শায়বাহ্ ২৯৪১৩, আহমাদ ৭১৬৭, শু‘আবূল ঈমান ৫৮৫, ইবনু হিব্বান ৮৪১, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব
৮, সহীহ আত্ তারগীব ১৫৩৭, সহীহ আল জামি ৪৫৭২, আধুনিক প্রকাশনী-৫ ৬২১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-
৬২২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)..আবূ হুরাইরাহ্
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু
লা- শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলাকুল্লি শাইয়্যিন কদীর।”
অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই; তিনি অদ্বিতীয়,
তার কোন অংশীদার নেই, তারই রাজত্ব, তারই যাবতীয় প্রশংসা; তিনিই সব বিষয়ের উপর শক্তিধর-
যে লোক এ দু’আ প্রতিদিনে একশ’ বার পাঠ করে সে দশজন গোলাম মুক্ত করার পুণ্য অর্জন হয়,
তার (আমলনামায়) একশ’ নেকী লেখা হয় এবং তার হতে একশ’ পাপ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর তা
ঐ দিন বিকাল পর্যন্ত শাইতান (শয়তান) (তার কুমন্ত্রণা) হতে তার জন্যে রক্ষাকারী হয়ে
যায়। সেদিন সে যা পুণ্য অর্জন করেছে তার চেয়ে বেশি পুণ্যবান কেউ হবে না। তবে কেউ
তার চাইতে বেশি ’আমল করলে তার কথা আলাদা। আর যে লোক দিনে একশ’ বার "সুবহা-নাল্ল-হি
ওয়াবিহামদিহী"। অর্থাৎ- ’আমি আল্লাহর সপ্রশংসা সহ তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি পাঠ
করবে, তার সমস্ত পাপ মিটিয়ে দেয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৯৮, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sah।
(২০নং)
‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন তাঁর কাছে একজন মুকাতাব (চুক্তিবদ্ধ দাস)
এসে বললো, আমি আমার কিতাবাতের (মুনিবের সাথে সম্পদের লিখিত চুক্তিপত্রের) মূল্য পরিশোধ
করতে পারছি না, আমাকে সাহায্য করুন। উত্তরে তিনি [‘আলী (রাঃ)] বললেন, আমি কি তোমাকে
এমন কিছু কালাম (বাক্য) শিখিয়ে দেবো, যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে শিখিয়েছেন? (এ দু‘আর মাধ্যমে) যদি তোমার ওপর বড় পাহাড়সম ঋণের বোঝাও থাকে, আল্লাহ
তা পরিশোধ করে দেবেন। তুমি পড়বে,
‘‘আল্ল-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা
‘আন্ হারা-মিকা, ওয়া আগ্নিনী বিফাযলিকা ‘আম্মান্ সিওয়াক’’।
(৭ বার)।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হালাল [জিনিসের]
সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখো এবং তুমি তোমার রহমতের মাধ্যমে আমাকে পরমুখাপেক্ষী
হতে রক্ষা করো)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৪৯, সুনান
আততিরমিযী ৩৫৬৩, আহমাদ ১৩১৯, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৭৩, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৪৪,
সহীহাহ্ ২৬৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৮২০, সহীহ আল জামি ২৬২৫)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(২১নং)
সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫ (আয়াতুল কুরসী)।
“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল
হাইয়্যুল ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি
ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা
আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া
কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল
আজীম”।
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি
জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও
যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি
ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা
থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর
সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে
কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫)।
আয়তুল কুরসিকে বলা হয় আল কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত।
এটি নিয়মিত আমল করলে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত লাভ করা যায়। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বর্ণনা করেছেন কোন আয়াতগুলি সর্বশ্রেষ্ঠ
এবং এই আয়াতগুলো পাঠে কী ধরনের নেয়ামত অর্জন করবে বান্দা।
ফজিলত ও নিয়ামতে ভরপুর সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হলো
আয়াতুল কুরসি। কুরআনের সর্ববৃহৎ ও দ্বিতীয় সূরা ‘সূরা আল-বাক্বারা’র ২৫৫ নম্বর আয়াত।
আয়াতটিতে মহাবিশ্বের ওপর আল্লাহর ক্ষমতার কথা বর্ণিত হয়েছে।
আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ)...উবাই ইবনু
কাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন
আবূল মুনযিরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে আবূল মুনযির আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি তোমার
কাছে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ? আবূল মুনযির বলেন, জবাবে আমি বললামঃ এ বিষয়ে আল্লাহ
ও আল্লাহর রসূলই সর্বাধিক অবগত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেনঃ
হে আবূল মুনযির! আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি তোমার কাছে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ?
তখন আমি বললাম, اللَّهُ
لاَ
إِلَهَ
إِلاَّ
هُوَ
الْحَىُّ
الْقَيُّومُ
(এ আয়াতটি আমার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ)। এ কথা শুনে তিনি আমার বুকের উপর হাত মেরে
বললেনঃ হে আবূল মুনযির! তোমার জ্ঞানকে স্বাগতম। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২১২২, আবূ দাঊদ ১৪৬০, আহমাদ ২১২৭৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৫৩২৬, শু‘আবূল ঈমান ২১৬৯,
সহীহ আত্ তারগীব ১৪৭১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৫৫, ইসলামীক সেন্টার, ১৭৬২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
এ আয়াতটি ‘আয়াতুল কুরসি’ নামেই সব মুসলিমের
কাছে পরিচিত। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এর ফজিলত কী। এ আয়াত পাঠে কেমন সওয়াব হয়।
আসুন জেনে নেই
আয়াতটির গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতঃ-
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমাযানে যাকাতের মাল হিফাজতের
দায়িত্ব দিলেন। এক সময় এক ব্যক্তি এসে খাদ্য-সামগ্রী উঠিয়ে নেয়ার উপক্রম করল। আমি তাকে
ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কাছে নিয়ে যাব। এরপর পুরো হাদীস বর্ণনা করেন। তখন লোকটি বলল, যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন,
তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন। এর কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন পাহারাদার নিযুক্ত করা
হবে এবং ভোর পর্যন্ত শায়ত্বন আপনার কাছে আসতে পারবে না। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(ঘটনা শুনে) বললেন, (যে তোমার কাছে এসেছিল) সে সত্য কথা বলেছে, যদিও সে বড় মিথ্যাচারী
শায়ত্বন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১০, ২৩১১,
৩২৭৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৩, সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮০, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৪২৪, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৪০৬,
সহীহ আত্ তারগীব ৬১০, আধুনিক প্রকাশনী ৪৬৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৪২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) ইমাম নাসাঈ (রহ.) আবূ উমামা (রা.) থেকে বর্ণনা
করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরয সালাত শেষে আয়াতুল কুরসী
পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাধা হবে না। (সহীহ আল জামে: হাদিস: ৬৪৬৪)।
(গ)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, সেটি হলো আয়াতুল কুরসি। যে ঘরে এটি
পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে
হাকিম)।
(ঘ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি বস্তুরই চূড়া আছে। কুরআনের
উচু চূড়া হল সূরা আল-বাকারা। এতে এমন একটি আয়াত আছে যা কুরআনের আয়াতসমূহের প্রধান।
তা হলো আয়াতুল কুরসী। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২৮৭৮, যঈফা (১৩৪৮), তা’লীকুর রাগীব (২/২১৮)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(ঙ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালবেলা সূরা আল-মু'মিন-এর
হা-মী-ম হতে ইলাইহিল মাসীর (১, ২, ও ৩ নং আয়াত) পর্যন্ত এবং আয়াতুল কুরসী তিলাওয়াত
করবে সে এর উসীলায় সন্ধ্যা পর্যন্ত (আল্লাহ্ তা'আলার) হিফাযাতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি
সন্ধ্যা বেলায় তা পাঠ করবে সে ব্যক্তি এর উসীলায় সকাল পর্যন্ত হিফাযাতে থাকবে। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৭৯, তাহকীক ছানী (২১৪৪)। হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(চ) সূরা আল-বাকারাহ্, ২৫৫ নং আয়াত। যে ব্যক্তি
সকালে তা বলবে সে বিকাল হওয়া পর্যন্ত জিন শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে, আর যে ব্যক্তি
বিকালে তা বলবে সে সকাল হওয়া পর্যন্ত জিন শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে। হাদীসটি
হাকিম সংকলন করেছেন, ১/৫৬২। আর শাইখ আলবানী একে সহীহুত তারগীব ওয়াত-তারহীবে সহীহ বলেছেন
১/২৭৩। আর তিনি একে নাসাঈ, তাবারানীর দিকে সম্পর্কযুক্ত করেছেন এবং বলেছেন, তাবারানীর
সনদ ‘জাইয়্যেদ’ বা ভালো।
‘আয়াতুল কুরসি’ এর ফযিলত প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বিভিন্ন গ্রন্থে মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন, তিনি বলেন,
‘সত্যতার সাথে যদি তুমি আয়াতুল কুরসী সে সময় পড় তাহলে তাদের কর্মকান্ড বাতিল হয়ে যায়,
কারণ তাওহীদ শয়তানকে তাড়ায়। মানুষ যদি শয়তানী চক্রান্ত স্থানে সত্যতার সাথে ‘আয়াতুল
কুরসী’ পড়ে, তাহলে তা (যাদু-মন্ত্র) নষ্ট করে দেয়। (কিতাব: ‘আল ফুরক্বান বাইনা আওলিয়াইর
রহমান ওয়া আওলিয়াইশ শাইত্বান’)।
(২২ নং) ইবনু
‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে
এ দু‘আ শিক্ষা দিতেন যেমন তাদেরকে কুরআনের সূরাহ্ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমরা
বলো,
‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা
মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল কবরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল
মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া- ওয়াল মামা-তি’’।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয়
চাই জাহান্নামের শাস্তি হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি হতে। তোমার নিকট আশ্রয়
চাই দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১২২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪২, মুয়াত্তা মালেক
৪৯৯, নাসায়ী ২০৬৩, ৫৫১২, ৯৮৪, ১৫৪২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৯৪, সুনান ইবনু
মাজাহ ৩৮৪০, আহমাদ ২১৬৯, ২৩৩৮, ২৭০৪, ২৭৭৪, ২৮৩৪, , সহীহ আত্ তারগীব ৩৬৫১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাতের শেষে শেষ তাশাহুদ
পড়ে অবসর হয়ে যেন আল্লাহর কাছে চারটি জিনিস হতে পানাহ চায়। (১) জাহান্নামের ‘আযাব।
(২) কবরের ‘আযাব। (৩) জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ্ (ফিতনা)। (৪) মাসীহুদ্ দাজ্জালের অনিষ্ট।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ১৩৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৯০৯, ৯১০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৯৮৩, নাসায়ী ১৩১০, ৫৫০৫-৬, ৫৫০৮-১১, ৫৫১৩-১৮, ৫৫২০, আহমাদ ৭১৯৬, ৭৮১০, ৭৯০৪, ৯০৯৩,
৯১৮৩, ২৭৫৯৬, ২৭৮৯০, ৯৮২৪, ২৭২৮০, দারেমী ১৩৮৩,১৩৪৪, সহীহ আল জামি ৬৯৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২০০, ইসলামীক
সেন্টার ১২১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(বিঃদ্রঃ দোয়াটি সালাতের মধ্যে তাশাহুদ বৈঠকে
এবং সালাতে সালাম ফিরানোর পর অন্যান্য দোয়া শেষে পাঠ করা যাবে)।
(২৩ নং) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাশাহহুদ
ও সালাম ফিরার মধ্যখানে শেষ বেলায় অর্থাৎ সালাম ফিরবার আগে) এই দো‘আ পড়তেন,
“আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু
অমা আখ্খারতু অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু অমা আসরাফতু অমা আন্তা আ‘লামু বিহী মিন্নী, আন্তাল
মুক্বাদ্দিমু অ আন্তাল মুআখখিরু লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত্।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর,
যে অপরাধ আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি,
যা অতিরিক্ত করেছি এবং যা তুমি আমার চাইতে অধিক জান। তুমি আদি, তুমিই অন্ত। তুমি ব্যতীত
কেউ সত্য উপাস্য নেই।
(সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত),
৩৪২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন, ১১২০, ৬৩১৭, ৬৩৮৫, ৭৪৪২, ৭৪৯৯, ৭৩৮৫, সুনান ইবনু
মাজাহ, ১৩৫৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪১৮,মুসলিম ৭৬৯, নাসায়ী ১৬১৯, আবূ দাঊদ
৭৭১, আহমাদ ২৮১৩, ২৭০৫, ২৭৪৩, ২৮০৮, ৩৩৫৮,৩৪৫৮; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৫০০, দারিমী ১৪৮৬,আধুনিক
প্রকাশনী ১০৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১০৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
যদিও দোয়াটি তাশাহুদ বৈঠকে সালাম ফিরানোর আগে
পড়তে বলা হয়েছে তারপরও দোয়া হিসেবে এটি সালাম ফিরানোর পর আমল করা যাবে।
(২৪ নং) আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বসা ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি সালাত আদায় করে
এই বলে দু‘আ করলোঃ
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা
বি আন্না লাকাল হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা শারীকা লাকাল মান্না-নু, ইয়া
বাদী’আস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল-আরদী, ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরাম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু,
ইন্নী আস্আলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্না-র”।
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই, কারণ,
সকল প্রশংসা আপনার, কেবলমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই,
সীমাহীন অনুগ্রকারী: হে আসমানসমূহ ও যমীনের অভিনব স্রস্টা! হে মহিমাময় ও মহানুভব! হে
চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী-সর্বসত্তার ধারক! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম
থেকে আশ্রয় চাই”।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
এ ব্যক্তি ইসমে আযম দ্বারা দু‘আ করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে তাঁর
নিকট চাওয়া হলে তিনি দান করেন।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-১৪৯৫,
সুনান আততিরমিযি-৩৫৪৪, সুনান আননাসায়ী ১২৯৯, আহমাদ (৩/১৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
এই দোয়াটি তাশাহুদ বৈঠকে সালাম ফিরানোর আগে
পড়া যাবে, সালাম ফিরানোর পর পাঠ করা যাবে । এছাড়া আপনি একাকী দুই হাত তুলে মোনাজাত
করার আগে ও মোনাজাতের মধ্যে পাঠ করতে পারবেন।
সম্মানিত মুছল্লীবৃন্দঃ কর্মব্যস্ত মুছল্লীগণ জোহর, আসর ও মাগরিবে হয়তো
সময় বেশী না পাওয়ায় সবগুলো আমল করা সম্ভব হবে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলো অবশ্যই
পাঠ করার চেষ্টা করবেন নিজের জন্যে, দুনিয়ার কল্যাণের জন্যে ও আখিরাতের মুক্তির জন্যে।
ফজর ও ইশার ফরজ সালাতের পর অবশ্যই সবগুলো দোয়া পাঠ করবেন। বিশেষ করে, ফজরের সালাত আদায়
করার পর ওযু অবস্থায় সালাতের জায়গায় বসে থেকেই দোয়াগুলো পাঠ করবেন। এরপর সকালে ও বিকেলে
পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াগুলোও পাঠ করবেন।
একাকী সালাত আদায় করলে সেই সালাত দীর্ঘায়িত
করা যাবে। সেই সময় রুকতে, সিজদায় ও তাশাহুদ বৈঠকে পঠিতব্য অতিরিক্ত দোয়াগুলো পাঠ করা
যাবে এবং সালাম ফিরানোর পর বিভিন্ন আমল করা যাবে।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে সালাত আদায়
করে, তখন যেন সে সংক্ষেপ করে। কেননা, তাদের মাঝে দুর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধ রয়েছে। আর
যদি কেউ একাকী সালাত আদায় করে, তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৯৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৬৭, আহমাদ ৭৪৭৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৬৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সালাতের জায়গা পরিবর্তন করে বা সেই জায়গা থেকে
একটু ডারে বামে বা সামনে পিছনে সরে গিয়ে সূর্য ওঠার পর দুই রাকাত ‘ছালাতুল ইশরাক্
“ আদায় করবেন।
(ক) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে ফজর ছালাত আদায় করবে অতঃপর সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে
বসে যিকির করবে; তারপর দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, তার জন্য পূর্ণ একটি হজ্জ এবং পূর্ণ
একটি ওমরার নেকী রয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭১,
সুনান আততিরমিযী ৫৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ৪৬৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) বুরায়দাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ মানুষের শরীরে তিনশত ষাটটি
জোড়া আছে। প্রত্যেক লোকের উচিত প্রত্যেকটি জোড়ার জন্যে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা। সাহাবীগণ
আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কার সাধ্য আছে এ কাজ করতে? তিনি বললেন, মসজিদে পড়ে থাকা
থুথু মুছে ফেলাও একটি সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। পথ থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে দেয়াও
একটি সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। তিনশত ষাট জোড়ার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেবার মতো কোন জিনিস
না পেলে ‘যুহার (চাশ্ত/চাশত) দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করে নেয়া তোমার জন্যে যথেষ্ট।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৩১৫,সুনান আবূ দাঊদ ৫২৪২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১২২৬, শু‘আবুল ইমান
১০৬৫০, ইরওয়া ৮৬০, আহমাদ ২২৯৯৮, সহীহ আত্ তারগীব ৬৬৬, ২৯৭১, সহীহ আল জামি ৪২৩৯)।হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ)
যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একটি দলকে ‘যুহার’ সময় সালাত আদায় করতে
দেখে বললেন, এসব লোকে জানে না, এ সময় ব্যতীত অন্য সময়ে সালাত আদায় করা অনেক ভাল। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ নিবিষ্টচিত্তে
লোকদের সালাতের সময় হলো উষ্ট্রীর দুধ দোহনের সময়ে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ১৩১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৪৮,
আহমাদ ১৯৩১৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৯০৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৫৩৯, সহীহ আল জামি‘
৩৮১৫, সহীহাহ্ ১১৬৮, ইরওয়া ৪৬৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উল্লেখ্য যে, শুরূক্ব অর্থ সূর্য উদিত হওয়া।
‘ইশরাক্ব অর্থ চমকিত হওয়া। ‘যোহা অর্থ সূর্য গরম হওয়া। হাদীছে একই ছালাতকে তিনটি নামে
উল্লেখ করা হয়েছে। পূর্ব আকাশে সূর্য উঠার সাথে সাথে পড়লে তাকে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’,
সূর্য একটু উপরে উঠার পর আদায় করলে ‘ছালাতুয যোহা’ বা চাশতের ছালাত এবং আরো একটু উপরে
উঠার পর আদায় করলে তাকে ‘ছালাতুল আউয়াবীন’ বা ‘আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনশীল বান্দাদের
ছালাত’ বলা হয়েছে। যেকোন একটি পড়লেই চলবে।
ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর কতিপয় জাল জইফ হাদিসের আমল যা পরিত্যাজ্য
(১) সালাম ফিরানোর পর মাথায়
হাত রেখে দু‘আ পড়াঃ
সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত রেখে দু‘আ পড়ার
প্রমাণে কোন ছহীহ দলীল নেই। বরং যা বর্ণিত হয়েছে, তার সবই জাল ও যঈফ।
(ক) কাছীর
ইবনু সুলায়মান আবু সালামা বলেন, আমি আনাসের নিকট শুনেছি, রাসূল (ছাঃ) যখন ছালাত আদায়
করতেন, তখন ডান হাত তার মাথায় রাখতেন এবং বলতেন, আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি ছাড়া
কোন ইলাহ নেই। যিনি পরম করুণাময়, দয়ালু। হে আল্লাহ! আমার থেকে চিন্তা ও শঙ্কা দূর করে
দিন। (ত্বাবারাণী, আওসাত্ব হা/৩১৭৮, পৃঃ ৪৫১)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। এর সনদে কাছীর বিন
সুলাইম নামে রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী ও আবু হাতিম বলেন, সে মুনকার রাবী। শায়খ আলবানী
(রহঃ) বলেন, এই হাদীছের সনদ নিতান্তই যঈফ। (সিলসিলা ছহীহাহ
হা/৬৬০, ২/১১৪-১৫)।
তিনি
আরো বলেন, এটা জাল। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৬০, ২/১১৪-১৫)।
(খ) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
যখন তার ছালাত শেষ করতেন, তখন ডান হাত দ্বারা তার মাথা মাসাহ করতেন এবং উক্ত দু‘আ পড়তেন।
(ইবনুস সুন্নী হা/১১০)।
তাহক্বীক্বঃ এর সনদ জাল। সালাম আল-মাদাইনী
অভিযুক্ত। সে ছিল দীর্ঘ পুরুষ, ডাহা মিথ্যাবাদী। (সিলসিলা
যঈফাহ হা/১০৫৮, ৩/১৭১ পৃঃ)।
উক্ত মর্মে আরো বর্ণনা আছে।(বনুস সুন্নী, আমালুল
ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ হা/১১০)।
তবে সেগুলোর সনদও জাল। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৫৯, ৩/১৭২ পৃঃ)।
অতএব সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত দিয়ে দু‘আ
পড়ার প্রথা বর্জন করতে হবে। কারণ জাল হাদীছ দ্বারা কখনো কোন আমল প্রমাণিত হয় না।
(২) আয়াতুল কুরসী পড়ে বুকে ফুঁক দেয়াঃ
ফরয ছালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী’ পড়া অত্যন্ত
ফযীলতপূর্ণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে,
তাকে মৃত্যু ব্যতীত কোন কিছু জান্নাতে প্রবেশ করতে বাধা দিতে পারবে না। (নাসাঈ, আল-কুবরা হা/৯৯২৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭২। উল্লেখ্য
যে, মিশকাতে যে বর্ণনা এসেছে, তার সনদ যঈফ। আলবানী, মিশকাত হা/৯৭৪, ১/৩০৮ দ্রঃ)।
তবে এ সময় বুকে ফুঁক দেয়ার শারঈ কোন ভিত্তি
নেই। যদিও আমলটি সমাজে খুবই প্রসিদ্ধ। অতএব এই বিদ‘আতী প্রথা পরিত্যাগ করতে হবে।
(৩) ‘ফাকাশাফনা আনকা গিত্বাআকা’..
পড়ে চোখে মাসাহ করাঃ
সূরা ক্বাফ-এর (২২ নং) উক্ত আয়াত পড়ে বৃদ্ধা
আঙ্গুলে ফুঁক দিয়ে চোখে মাসাহ করার প্রথা চলে আসছে দীর্ঘকাল যাবৎ। কিন্তু নির্দিষ্ট
করে উক্ত আয়াত পড়ার কোন প্রমাণ নেই। তবে পবিত্র কুরআন আরোগ্য দানকারী বিধান। তাই যেকোন
আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আরোগ্য কামনা করা যায়। (সূরা
বাণী ইসরাঈল ৮২)।
(৪) ফজর ও মাগরিব ছালাতের পর সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত পড়াঃ
উক্ত আমল সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে,
তার সনদ যঈফ।
মা‘কিল ইবনু ইয়াসির রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা
করেন, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে তিনবার ‘আঊযুবিল্লা-হিস সামীইল আলীম মিনাশ শায়ত্ব-নির
রাজীম’সহ সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত পড়বে, আল্লাহ তার জন্য ৭০ হাযার ফেরেশতা নিযুক্ত
করবেন, যারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদি ঐ দিন ঐ ব্যক্তি মারা
যায়, তাহলে শহীদ হয়ে মারা যাবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পড়বে, তার জন্যও একই ফযীলত
রয়েছে। (তিরমিযী হা/২৯২২, ২/১২০ পৃঃ)।
তাহক্বীক্বঃ ইমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীছটি গরীব।
আর এই সূত্র ছাড়া আর অন্য কোন সূত্র নেই। (তিরমিযী হা/২৯২২,
২/১২০ পৃঃ)।
এর সনদে খালেদ ইবনু ত্বাহমান নামে যঈফ রাবী
আছে। (ইরওয়াউল গালীল ২/৫৮ পৃঃ)।
এ সম্পর্কে আরো জাল হাদীছ রয়েছে। (যঈফুল জামে‘
হা/১৩২০)।
অতএব উক্ত হাদীছ আমল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
বরং সূরা মুলক পড়া যেতে পারে।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ)
বলেন, পবিত্র কুরআনে এমন একটি সূরা আছে, যার ৩০টি আয়াত রয়েছে। যে ব্যক্তি ঐ সূরা পাঠ
করবে, তার জন্য উহা সুপারিশ করবে যতক্ষণ তাকে ক্ষমা না করা হবে। সেটা হলো- ‘তাবারাকাল্লাযী
বিইয়াদিহিল মুলক’। (আবুদাঊদ হা/১৪০০, ১/১৯৯ পৃঃ; সনদ হাসান,
মিশকাত হা/২১৫৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২০৪৯; ছহীহ ইবনে হিববান হা/৭৮৪)।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি
প্রত্যেক রাত্রিতে ‘তাবারাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক’ পাঠ করবে এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা
তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দান করবেন। আর আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে এর নাম বলতাম
‘আল-মানে‘আহ’ বা বাধাদানকারী..। (নাসাঈ, সুনানুল কুবরা
হা/১০৫৪৭; সনদ হাসান, ছহীহ তারগীব হা/১৪৭৫)।
(৫) তাসবীহ দানা দ্বারা তাসবীহ গণনা করাঃ
সমাজে তাসবীহ দানা দিয়ে যিকির করার প্রচলন
ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফরয ছালাতের পর, হাটে-বাজারে, রাস্তায়, বাসে-ট্রেনে, অফিস-আদালতে
সর্বত্র একশ্রেণীর মানুষকে তাসবীহ গণনা করতে দেখা যায়। এতে যে রিয়া সৃষ্টি হয় তাতে
কোন সন্দেহ নেই। অনেক মসজিদের কাতারে কাতারে রেখে দেয়া হয় কিংবা দেওয়ালে ও জালানায়
ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাসবীহই যেন মূল ইবাদত। অথচ এর ছহীহ কোন ভিত্তি নেই। উক্ত মর্মে যে
সমস্ত বর্ণনা রয়েছে তার সবই জাল কিংবা যঈফ।
(ক) আয়েশা বিনতে সা‘দ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন
যে, তার পিতা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে এক মহিলার নিকটে যান। তখন স্ত্রীলোকটির সম্মুখে কিছু
খেজুরের বিচি অথবা কংকর ছিল, যার দ্বারা সে তাসবীহ গণনা করছিল। রাসূল (ছাঃ) বললেন,
আমি কি তোমাকে এমন কথা বলে দিব না, যা এটা অপেক্ষা অধিক সহজ বা উত্তম হবে? তা হচ্ছে-
‘সুবহা-নাল্লাহ’ অর্থাৎ, আল্লাহর পবিত্রতা যে পরিমাণ তিনি আসমানে মাখলূক সৃষ্টি করেছেন,
‘সুবহা-নাল্লাহ’ যে পরিমাণ তিনি যমীনে মাখলূক সৃষ্টি করেছেন, ‘সুবহা-নাল্লাহ’ যে পরিমাণ
উভয়ের মাঝে রয়েছে এবং ‘সুবহা-নাল্লাহ’ যে পরিমাণ তিনি ভবিষ্যতে সৃষ্টি করবেন। ‘আল্লাহু
আকবার’ উহার অনুরূপ, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ উহার অনুরূপ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু’ উহার অনুরূপ
এবং লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ অনুরূপ। (তিরমিযী
হা/৩৫৬৮, ২/১৯৭ পৃঃ ও হা/৩৫৫৪; আবুদাঊদ হা/১৫০০, ১/২১০ পৃঃ; মিশকাত হা/২৩১১; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/২২০৩, ৫/৯০ পৃঃ)।
তাহক্বীক্বঃ যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে খুযায়মাহ ও সাঈদ
ইবনু আবী হেলাল নামে দুইজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে। (যঈফ
তিরমিযী হা/৩৫৬৮, ২/১৯৭ পৃঃ, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩০; যঈফ আবুদাঊদ হা/১৫০০,
১/২১০ পৃঃ; যঈফ আত-তারগীব হা/৯৫৯; সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩)।
তাছাড়া এটি ছহীহ হাদীছের বিরোধী। কারণ রাসূল
(ছাঃ) ডান হাতের আঙ্গুলে তাসবীহ গণনা করতেন। (আবুদাঊদ
হা/১৫০২, ১/২১০ পৃঃ; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/৩১৪৮; ছহীহ ইবনে হিববান হা/৮৪৩;
তিরমিযী হা/৩৪৮৬। উল্লেখ্য যে, ভারতীয় ছাপা তিরমিযীতে উক্ত অংশ নেই দ্রঃ ২/১৮৬ পৃঃ)।
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে দানা
দ্বারা যিকির করে সে কতইনা উত্তম! (দায়লামী, মুসনাদুল
ফেরদাউদ ৪/৯৮ পৃঃ)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার প্রত্যেক
রাবীই ত্রুটিপূর্ণ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩)।
আলবানী বলেন, إِنَّ السُّبْحَةَ بِدْعَةٌ لَمْ تَكُنْ فِىْ عَهْدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا حَدَثَتْ بَعْدَهُ ‘নিশ্চয় তাসবীহ দানা বিদ‘আত।
এটি রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ছিল না। বরং তাঁর পরে সৃষ্টি হয়েছে’। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩-এর আলোচনা দ্রঃ)।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম
(ছাঃ) কংকর দ্বারা তাসবীহ গণনা করতেন। (আবুল কাসেম জুরজানী,
তারীখে জুরজান হা/৬৮)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। এর সনদে কুদামা
বিন মাযঊন এবং ছালেহ ইবনু আলী নামে অভিযুক্ত রাবী আছে। (সিলসিলা
যঈফাহ হা/১০০২)।
(৬) ফজর ছালাতের পর ১৯ বার ‘বিসমিল্লাহ’ বলাঃ
উক্ত মর্মে ছহীহ বা যঈফ সূত্রে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) থেকে কোন হাদীছ পাওয়া যায় না। তবে ‘বিসমিল্লা-হ’-এর ফযীলত বিষয়ে আব্দুল্লাহ ইবনু
মাসঊদ (রাঃ) থেকে একটি বক্তব্য এসেছে- ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছা পোষণ করে যে, আযাবের ১৯ জন
ফেরেশতা হতে আল্লাহ তাকে পরিত্রাণ দেবেন, সে যেন ‘বিসমিল্লা-হির রহমান-নির রহীম’ পড়ে’।
কারণ ‘বিসমিল্লা-হ’-তে ১৯টি বর্ণ রয়েছে। আর প্রতিটি বর্ণ তার জন্য ঢাল স্বরূপ এবং উক্ত
বর্ণ তাকে আযাবের ১৯ জন ফেরেশতা হতে বাঁচাবে’। কিন্তু উক্ত বর্ণনার ছহীহ কোন ভিত্তি
নেই। ইবনু আত্বিয়াহ বলেন, هَذَا
مِنْ
مُلَحِ
التَّفْسِيْرِ
‘এগুলো চটকদার তাফসীরের অন্তর্ভুক্ত’। (তাফসীরে কুরতুবী
১/৯২ পৃঃ, ‘বিসমিল্লাহ’ অনুচ্ছেদ)।
(৭) ফজর ও মাগরিবের পর যিকির
করাঃ
অনেক মসজিদে একশ্রেণীর মানুষ ফজর ও মাগরিবের
ছালাতের পর গোল হয়ে বসে যিকির করে থাকে। উক্ত যিকিরের শব্দগুলোও বানোয়াট। উচ্চৈঃস্বরে
যিকিরের কারণে এটা রিয়াতে পরিণত হয়েছে। ভাবখানা দেখে মনে হয় যে, তারা চিৎকার করে আল্লাহকে
আসমান থেকে টেনে নামাবে। এ ধরনের যিকির সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা
তোমাদের প্রতিপালককে ডাকবে বিনীতভাবে ও অতি সংগোপনে। তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন
না’ (আ‘রাফ ৫৫)। অন্য আয়াতে বলেন, ‘আপনি আপনার প্রতিপালককে মনে মনে বিনয় ও ভয়-ভীতি
সহকারে নীরবে সকাল-সন্ধ্যায় স্মরণ করুন’ (আ‘রাফ ২০৫)। রাসূল (ছাঃ) সরবে যিকির করতে
নিষেধ করেছেন। (বুসহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৯২, ৪২০২, ৬৩৮৪, ৬৪০৯, ৬৬১০, ৭৩৮৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৭৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৪, আহমাদ ১৯৬১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭৭১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৭৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
উক্ত যিকিরপন্থীরা শেষে লম্বা মুনাজাত করে
বিদায় নেয়। এটাও একটি বিদ‘আতী আমল। শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এ
ধরনের লোকদেরকেই ধমক দিয়েছিলেন। (দারেমী হা/২১০)।
(৮) সকালে সূরা ইয়াসীন এবং সন্ধ্যায় সূরা ওয়াক্বি‘আহ পাঠ করলে সচ্ছলতা
আসে কথাটির সত্যতা আছে কি?
সূরা ইয়াসীন সম্পর্কে উক্ত মর্মে কোন হাদীছ
বা আছার বর্ণিত হয়নি। বরং একজন তাবেঈ থেকে এমন একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যার সনদ ছহীহ
নয়। (মুহাম্মাদ বিন আমর, আহাদীছুন ওয়া মারবিয়াতুন ফিল
মীযান ৪/১১৩, ৭৫ পৃ.)।
আর সূরা ওয়াক্বিআহ সম্পর্কেও অনুরূপ কিছু বর্ণনা
পাওয়া যায়, যেগুলো যঈফ। (মিশকাত হা/২১৮১; যঈফাহ হা/২৮৯;
যঈফুল জামে হা/৫৭৭৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৩/১৪২)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক
রাতে ‘‘সূরা আল ওয়াকিআহ্ তিলাওয়াত করবে, সে
কখনো অভাব অনটনে পড়বে না। বর্ণনাকারী ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ তাঁর কন্যাদেরকে প্রত্যেক
রাতে এ সূরা তিলাওয়াত করতে বলতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ২১৮১,যঈফ শুআবূল ঈমান ২২৬৯, যঈফাহ্ ২৮৯, যঈফ আল জামি ৫৭৭৩। কেননা এর সানাদে
আবূ ত্বয়বাহ্ একজন মাজহূল রাবী। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
অতএব ছহীহ সনদে প্রমাণিত না হওয়ায় এইসব ফযীলতের
বিবরণ গ্রহণযোগ্য নয়।
সুরা ইয়াছিন সম্পর্কে অন্যান্য জইফ হাদিসসমূহঃ
(ক) ‘আত্বা ইবনু আবূ রবাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নির্ভরযোগ্য সূত্রে আমার কাছে এ কথা পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনের প্রথম অংশে সূরা ইয়াসীন পড়বে, তার সব প্রয়োজন
পূর্ণ হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৭৭, যঈফ, দারিমী
৩৪৬১। কারণ এটি মুরসাল। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(খ) মাকাল ইবনু ইয়াসার আল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি
লাভের উদ্দেশে সূরা ইয়াসীন পড়বে, তার আগের গুনাহসমূহ (সগীরাহ্) মাফ করে দেয়া হবে। তাই
তোমরা তোমাদের মৃত্যু (আসন্ন) ব্যক্তিদের কাছে এ সূরা পড়বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৭৮, যঈফ, শুআবূল ঈমান ২২৩১, যঈফাহ্
৬৬২৩, যঈফ আল জামি‘ ৫৭৮৫, যঈফ আত্তারগীব ৮৮৪। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(গ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক জিনিসের “কলব” (হৃদয়) আছে। কুরআনের
“কলব” হলো, ‘সূরা ইয়াসীন’। যে ব্যক্তি এ সূরা একবার পড়বে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য একবার
পড়ার কারণে দশবার কুরআন পড়ার সাওয়াব লিখবেন। (তিরমিযী,
দারিমী। ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটিকে গরীব বলেছেন)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৪৭,
মাওযূ (জাল) : তিরমিযী ২৮৮৭, দারিমী ৩৪৫৯, যঈফাহ্ ১৬৯, যঈফ আল জামি ১৯৩৫, যঈফ আত্ তারগীব
৮৮৫। কারণ এর সানাদে মুহাম্মাদ-এর পিতা হারূন একজন মিথ্যার অপবাদপ্রাপ্ত রাবী)। হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)।
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিন সৃষ্টির
এক হাজার বছর পূর্বে সূরা ত্ব-হা- ও সূরা ইয়াসীন পাঠ করলেন। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)
(ফেরেশতাগণ) তা শুনে বললেন, ধন্য সে জাতি যাদের ওপর এ সূরা নাযিল হবে। ধন্য সে পেট
যে এ সূরা ধারণ করবে। ধন্য সে মুখ (জিহ্বা), যে তা উচ্চারণ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৪৮, মুনকার দারিমী ৩৪৫৭, শুআবূল
ঈমান ২২২৫, যঈফাহ্ ১২৪৮। কারণ এর সানাদে ইব্রাহীম সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন,
মুনকারুল হাদীস। আর ইমাম নাসায়ী (রহঃ) বলেছেন, দুর্বল)। হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)।
সুরা ইখলাস সম্পর্কে জইফ হাদিসসমূহঃ
(ক) সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) মুরসাল হাদীসরূপে
এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যদি কোন ব্যক্তি সূরা “ক্বুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ” দশবার পড়ে, বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে
একটি প্রাসাদ তৈরি করা হবে। যে ব্যক্তি বিশবার পড়বে তার জন্য দুটি। আর যে ব্যক্তি ত্রিশবার
পড়বে তার জন্য জান্নাতে তিনটি প্রাসাদ তৈরি করা হবে। এ কথা শুনে ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব
(রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ, হে আল্লাহর রসূল! যদি তা-ই হয় তাহলে তো আমরা অনেক প্রাসাদ
লাভ করব। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর রহমত এর চেয়েও
অধিক প্রশস্ত (এতে বিস্ময়ের কিছু নেই হে ‘উমার!)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৮৫, যঈফ দারিমী ৩৪৭২।
কারণ এর সানাদটি মুরসাল)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(খ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন দুইশ বার সূরা ‘কুল
হুওয়াল্ল-হু আহাদ পড়বে তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হবে। যদি তার ওপর কোন ঋণের
বোঝা না থাকে। (তিরমিযী ও দারিমী। কিন্তু দারিমীর বর্ণনায় [দুইশ বারের জায়গায়] পঞ্চাশ
বারের কথা উল্লেখ হয়েছে। তিনি ঋণের কথা উল্লেখ করেননি)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৫৮, যঈফ তিরমিযী ২৮৯৮, যঈফ আত্ তারগীব ৯৭৫, যঈফ আল জামি‘ ৫৭৮৩,
যঈফাহ্ ৩০০, দারিমী,৩৪৪১ যঈফ আত্ তারগীব ৯৭৫। কারণ এর সানাদে রাবী হাতিম ইবনু মায়মূন
মুনকারুল হাদীস। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, সে মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন)। হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(গ) আনাস (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত হয়েছে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ঘুমাবার জন্য বিছানায় যাবে এবং ডান
পাশের উপর শোয়ার পর একশ বার সূরা ‘কুল হুওয়াল্ল-হু
আহাদ’পড়বে, কিয়ামতের দিন প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন, হে আমার বান্দা! তুমি
তোমার ডান দিকের জান্নাতে প্রবেশ করো। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান তবে গরীব)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৫৯, যঈফ তিরমিযী ২৮২৯৮, যঈফ আত্ তারগীব ৩৪৮, য‘ঈফ আল জামি‘
৫৩৮৯। কারণ এর সানাদে রাবী হাতিম ইবনু মায়মূন মুনকারুল হাদীস )। হাদিসের মানঃ যঈফ
(Dai'f)।
সালাম ফিরানোর পর ইমাম বা মুক্তাদী কোনো দো‘আ
না পড়েই কি উঠে যেতে পারবে?
সালাম ফিরানোর পর ইমাম ও মুক্তাদী সকলের জন্য
মুছাল্লায় বসে দো‘আ ও যিকির করা সুন্নাত। কারণ এ সময়ে ফেরেশতাগণ দো‘আ পাঠরত মুছল্লীদের
জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, মুছল্লী ছালাত শেষে যতক্ষণ স্বীয় স্থানে
বসে তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করে, ততক্ষণ ফেরেশতামন্ডলী তার জন্য দো‘আ করতে থাকে এই মর্মে
যে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর ও তার উপর রহম কর।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘরে অথবা (ব্যাস্ততার কারণে) কারো
বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে মসজিদে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করার সাওয়াব পঁচিশ গুণ
বেশী। কারণ কোন ব্যক্তি ভালো করে (সকল আদাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে) ওযু করে নিঃস্বার্থভাবে
সালাত (আদায় করার জন্যই মসজিদে আসে। তার প্রতি ক্বদমের বিনিময়ে একটি সাওয়াবে তার মর্যাদা
বেড়ে যায়, আর একটি গুনাহ কমে যায়। এভাবে মসজিদে পৌঁছা পর্যন্ত (চলতে থাকে)। সালাত আদায়
শেষ করে যখন সে মুসল্লায় বসে থাকে, মালায়িকাহ্ অনবরত এ দু‘আ করতে থাকেঃ ‘হে আল্লাহ!
তুমি তাকে মাফ করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তার ওপর রহমত বর্ষণ কর।’’ আর যতক্ষণ পর্যন্ত
তোমাদের কেউ সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, সে সময়টা তার সালাতের সময়ের মধ্যেই পরিগণিত
হবে।
আর এক বর্ণনার শব্দ হলো, ‘যখন কেউ মসজিদে গেল,
আর সালাতের জন্য অবস্থান করলো সেখানে, তাহলে সে যেন সালাতেই রইল। আর মালায়িকার দু‘আর
শব্দাবলী আরো বেশিঃ ‘‘হে আল্লাহ! এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। তার তওবা্ ক্ববূল কর’’।
এভাবে চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্য কোন মুসলিমকে কষ্ট না দেয় বা তার উযূ ছুটে
না যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭০২, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১৩৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৫,
১৭৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৭৮, ইসলামীক সেন্টার. ১৩৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তবে কেউ যদি ওযরের কারণে যিকির-আযকার সংক্ষিপ্ত
করতে চায় তবে কমপক্ষে তিনি ‘আল্ল-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু, তাবা-রক্তা
ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম’ বলে উঠে যাবেন। (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১২২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯২; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৬০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২১১, ইসলামীক সেন্টার ১২২৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
একাকী দুই হাত তুলে মুনাজাত করার দলীল
একাকী দুই হাত তুলে মোনাজাত করা যাবে। ফরজ
সালাতে সালাম ফিরানোর পর বা অন্য যেকোনো সালাতের পর পঠিতব্য দোয়াগুলো পাঠ করবেন যেগুলো
উপরে বর্ণিত হয়েছে এবং অন্য যেকোনো সময় বান্দা তার প্রভুর নিকটে যে কোন ভাষায় দো‘আ
করবে। তবে হাদীছের দো‘আই উত্তম। বান্দা হাত তুলে একাকী নিরিবিলি কিছু প্রার্থনা করলে
আল্লাহ তার হাত খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জা বোধ করেন।
হাদিসঃ
সালমান ফারসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত লজ্জাশীল
ও দয়ালু। বান্দা যখন তাঁর কাছে কিছু চেয়ে হাত উঠায় তখন তার হাত (দু‘আ কবূল না করে)
খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২২৪৪, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৮৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৫৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬৫,
মু‘কামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬১৪৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩১৪৬, সহীহ ইবনু
হিব্বান ৮৭৬, সহীহ আল জামি‘ ১৭৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একাকী দুই হাত তুলে মোনাজাত করেছেন
(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় উম্মতের জন্য আল্লাহর
নিকট হাত উঠিয়ে একাকী কেঁদে কেঁদে দো‘আ করেছেন।
হাদিসঃ
ইউনুস ইবনু আবদুল আ’লা আস্ সাদাফী (রহঃ)....আবদুল্লাহ
ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনে ইবরাহীম (আঃ) এর দু’আ সম্বলিত আয়াতঃ "হে আমার প্রতিপালক।
এ সকল প্রতিমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত।
আর যে আমার অবাধ্য হবে তুমি তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু"— (সূরাহ ইবরাহীম ১৪ঃ ৩৬)
তিলাওয়াত করেন। আর "ঈসা (আঃ) বলেছেনঃ “তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা
তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়"-
(সূরাহ আল মায়িদাহ ৫ঃ ১১৮)। তারপর তিনি তার উভয় হাত উঠালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ!
আমার উম্মত, আমার উম্মত! আর কেঁদে ফেললেন।
তখন মহান আল্লাহ বললেন, হে জিবরীল! মুহাম্মাদের
নিকট যাও, তোমার রব তো সবই জানেন তাকে জিজ্ঞেস কর, তিনি কাঁদছেন কেন? জিবরীল (আঃ) এসে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছিলেন, তা তাকে অবহিত করলেন। আর আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ। তখন আল্লাহ
তা’আলা বললেন, হে জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদ এর কাছে যাও এবং তাকে বল, “নিশ্চয়ই আমি
(আল্লাহ) আপনার উম্মতের ব্যাপারে আপনাকে সন্তুষ্ট করে দিব, আপনাকে অসন্তুষ্ট করব না"।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) বদরের যুদ্ধের দিন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহর
নিকটে একাকী হাত তুলে কাতর কণ্ঠে দো‘আ করেছিলেন।
হাদিসঃ
হান্নাদ ইবনু সারিয়্যি ও যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ)...উমার ইবনু খাত্তাব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধের দিনে রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের দিকে তাকালেন, দেখলেন যে, তারা সংখ্যায়
এক হাজার ছিল। আর তার সাহাবী ছিলেন তিনশ’ তের জন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কিবলামুখী হলেন, এরপর দু’হাত উঁচু করে আওয়াজ করে আপন প্রভুর কাছে দুআ করতে লাগলেন,
হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছ আমার জন্য তা পূরণ করো। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে
যা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছ, তা দাও। হে আল্লাহ! যদি মুসলিমদের এ ক্ষুদ্র সেনাদল
ধ্বংস করে দাও তবে পৃথিবীতে তোমার ইবাদাত করার মত আর কেউ থাকবে না। তিনি এমনিভাবে দু’হাত
উঁচু করে কিবলামুখী হয়ে প্রভুর কাছে উচ্চস্বরে দু’আ করে যাচ্ছিলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৬৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) বনু জাযীমা গোত্রের কিছু লোক ভুলক্রমে নিহত
হওয়ায় মর্মাহত হয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একাকী দু’বার হাত উঠিয়ে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চেয়েছিলেন।
হাদিসঃ
ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ ইবনু ওয়ালীদ -কে বানী জাযীমাহ্-এর বিরুদ্ধে
অভিযানে পাঠালেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানালেন। কিন্তু তারা ’’আমরা
ইসলাম গ্রহণ করেছি’’ সঠিকভাবে বাক্যটি উচ্চারণ না করে “আমরা স্বীয় ধর্ম ত্যাগ করেছি’’
এ বাক্যটি উচ্চারণ করতে থাকে। এমতাবস্থায় খালিদ তাদেরকে হত্যা ও বন্দী করতে লাগলেন
এবং বন্দীদেরকে আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। একদিন তিনি আমাদের প্রত্যেককে
স্বীয় বন্দীদেরকে হত্যার নির্দেশ দিলেন। আমি (বর্ণনাকারী) বললাম, আল্লাহর কসম! আমি
আমার বন্দীকে হত্যা করব না এবং আমার সাথীরাও কেউ তাদের বন্দীকে হত্যা করবে না। অতঃপর
ঘটনাটি আদ্যোপান্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনা করলাম। এতদশ্রবণে
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর দু’ হাত উপরে উঠিয়ে বললেন, হে আল্লাহ!
খালিদ-এর কৃত অপরাধ হতে আমি তোমার নিকট আমার দায়মুক্তি ঘোষণা করছি। এভাবে দু’বার বললেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৭৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৪৩৩৯, ৭১৮৯, সুনান আননাসায়ী ৫৪০৫, আহমাদ ৬৩৮২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৯৬, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৪০০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(৪) আওত্বাস যুদ্ধে আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ)-এর নিহত
ভাতিজা দলনেতা আবু ‘আমের আশ‘আরী (রাঃ)-এর জন্য ওযূ করে দু’হাত তুলে একাকী দো‘আ করেছিলেন।
হাদিসঃ
আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়ন
যুদ্ধ অতিক্রান্ত হওয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ আমির (রাঃ)-কে
একটি সৈন্যবাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে আওতাস গোত্রের বিরুদ্ধে পাঠালেন। যুদ্ধে তিনি
দুরাইদ ইবনু সিম্মার সঙ্গে মুকাবালা করলে দুরাইদ নিহত হয় এবং আল্লাহ তার সঙ্গীদেরকেও
পরাস্ত করেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ আমির
(রাঃ)-এর সঙ্গে আমাকেও পাঠিয়েছিলেন। এ যুদ্ধে আবূ আমির (রাঃ)-এর হাঁটুতে একটি তীর নিক্ষিপ্ত
হয়। জুশাম গোত্রের এক লোক তীরটি নিক্ষেপ করে তাঁর হাঁটুর মধ্যে বসিয়ে দিয়েছিল। তখন
আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, চাচাজান! কে আপনার উপর তীর ছুঁড়েছে? তখন তিনি আবূ মূসা
(রাঃ)-কে ইশারার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ঐ যে, ঐ ব্যক্তি আমাকে তীর মেরেছে। আমাকে
হত্যা করেছে। আমি লোকটিকে লক্ষ্য করে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম আর সে আমাকে দেখামাত্র
ভাগতে শুরু করল। আমি এ কথা বলতে বলতে তার পিছু নিলাম- তোমার লজ্জা করে না, তুমি দাঁড়াও।
লোকটি থেমে গেল। এবার আমরা দু’জনে তরবারি দিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করলাম এবং আমি ওকে হত্যা
করে ফেললাম। তারপর আমি আবূ আমির (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহ আপনার আঘাতকারীকে হত্যা করেছেন।
তিনি বললেন, এখন এ তীরটি বের করে দাও। আমি তীরটি বের করে দিলাম। তখন ক্ষতস্থান থেকে
কিছু পানি বের হল। তিনি আমাকে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
আমার সালাম জানাবে এবং আমার মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করতে বলবে। আবূ আমির (রাঃ) তাঁর স্থলে
আমাকে সেনাদলের অধিনায়ক নিয়োগ করলেন। এরপর তিনি কিছুক্ষণ বেঁচেছিলেন, তারপর ইন্তিকাল
করলেন। (যুদ্ধ শেষে) আমি ফিরে এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহে প্রবেশ
করলাম। তিনি তখন পাকানো দড়ির তৈরি একটি খাটিয়ায় শায়িত ছিলেন। খাটিয়ার উপর (যৎসামান্য)
একটি বিছানা ছিল। কাজেই তাঁর পৃষ্ঠে এবং দুইপার্শ্বে পাকানো দড়ির দাগ পড়ে গিয়েছিল।
আমি তাঁকে আমাদের এবং আবূ ‘আমির (রাঃ)-এর সংবাদ জানালাম। তাঁকে এ কথাও বললাম যে, (মৃত্যুর
পূর্বে বলে গিয়েছেন) তাঁকে [নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে] আমার মাগফিরাতের
জন্য দু‘আ করতে বলবে। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনতে বললেন
এবং ‘উযু করলেন। তারপর তাঁর দু’হাত উপরে তুলে তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় বান্দা
আবূ আমিরকে ক্ষমা করো। (হস্তদ্বয় উত্তোলনের কারণে) আমি তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রাংশ দেখতে
পেয়েছি। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে তুমি তাঁকে তোমার অনেক
মাখলুকের উপর, অনেক মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান কর। আমি বললামঃ আমার জন্যও (দু‘আ করুন)।
তিনি দু‘আ করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়সের গুনাহ ক্ষমা করে দাও
এবং ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে তুমি তাঁকে সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করাও। বর্ণনাকারী
আবূ বুরদা (রাঃ) বলেন, দু’টি দু‘আর একটি ছিল আবূ আমির (রাঃ)-এর জন্য আর অপরটি ছিল আবূ
মূসা (আশআরী) (রাঃ)-এর জন্য। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৪৩২৩, ২৮৮৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৩০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৯৮, আহমাদ ১৯৭১৩,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) তিনি দাওস কওমের হেদায়াতের জন্য ক্বিবলামুখী
হয়ে একাকী দু’হাত তুলে দো‘আ করেছেন।
হাদিসঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
তুফাইল ইবনু ‘আমর দাওসী ও তাঁর সঙ্গীরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট
এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! দাওস গোত্রের লোকেরা (ইসলাম গ্রহণে) অবাধ্যতা করেছে ও
অস্বীকার করেছে। আপনি তাদের বিরুদ্ধে দু‘আ করুন।’ অতঃপর বলা হলো, দাওস গোত্র ধ্বংস
হোক। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি দাওস
গোত্রকে হিদায়াত করুন এবং তাদেরকে ইসলামে নিয়ে আসুন।’ (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৩৭, ৪৩৯২, ৬৩৯৭) সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৫২৪, আহমাদ
৭৩১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৬) হজ্জ ও ওমরাহ কালে সাঈ করার সময় ‘ছাফা’ পাহাড়ে
উঠে কা‘বার দিকে মুখ ফিরিয়ে দু’হাত তুলে দো‘আ করা। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৫৫৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৮৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১২১৮,
সুনান আবূ দাঊদ ১৯০৫, সুনান আননাসায়ী ২৭৬১, সুনান ইবনু মাজাহ ৩০৭৪, ইবনু আবী শায়বাহ্
১৪৭০৫, দারিমী ১৮৯২,ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৮১৭, ইসলামীক সেন্টার ২৮১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৭) আরাফার ময়দানে একাকী দু’হাত তুলে দো‘আ করা।
(সুনান আননাসাঈ ৩০১১, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/২৬৭-২৬৮,
আল-মুমতে ৭/৩২৯-৩৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) ১ম ও ২য় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর একটু দূরে
সরে গিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত তুলে দো‘আ করা।
হাদিসঃ
ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি প্রথম
জামরায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন।
তারপর সামনে অগ্রসর হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং উভয়
হাত তুলে দু’আ করতেন। অতঃপর মধ্যবর্তী জামরায় কঙ্কর মারতেন এবং একটু বাঁ দিকে চলে সমতল
ভূমিতে এসে কিবলামুখী দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন।
এরপর বাতন ওয়াদী হতে জামরায়ে ’আকাবায় কঙ্কর মারতেন। এর কাছে তিনি বিলম্ব না করে ফিরে
আসতেন এবং বলতেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এরূপ করতে দেখেছি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৭৫১, ১৭৫২, ১৭৫৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৬২৯. ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) মুসাফির অবস্থায় হাত তুলে দো‘আ করা।
হাদিসঃ
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা
যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও
করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : ’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ’মাল
কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে
যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা
২ : ১৭২)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের
সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত
আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম,
পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির
দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আততিরমিযী
২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(১০) কবর জিয়ারতের সময়ঃ
(ক) হারূন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ)....মুহাম্মাদ
ইবনু কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি- তিনি
বলেন, আমি কি তোমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ও আমার তরফ থেকে হাদীস
বর্ণনা করে শোনাব না? আমরা বললাম, অবশ্যই! ইমাম মুসলিম (রহঃ) হাজ্জাজ আল আ’ওয়ার (রহঃ)
থেকে শুনেছেন....জনৈক কুরায়শী আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে মুহাম্মাদ ইবনু কায়স ইবনু মাখরামাহ
ইবনুল মুত্ত্বালিব (রহঃ) একদিন আমাকে বলেন, আমি কি তোমাদেরকে আমার পক্ষ থেকে ও আমার
আমার আম্মাজান থেকে হাদীস বর্ণনা করে শুনাব? রাবী আবদুল্লাহ বলেন, আমরা ধারণা করলাম
তিনি তার জননী মাকে বুঝাচ্ছেন। এরপর তিনি বললেন, "আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেছেন, আমি
কি তোমাদের আমার পক্ষ থেকে ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস
বর্ণনা করে শুনাব? আমরা বললাম, হ্যাঁ অবশ্যই। তিনি বলেন, যখন ঐ রাত আসত যে রাতে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে থাকতেন। তিনি এসে তার চাদর রেখে দিতেন, জুতা
খুলে পায়ের কাছে রাখতেন। পরে নিজ তহবন্দের (লুঙ্গি) একদিক বিছানায় বিছিয়ে কাত হয়ে
শুয়ে পড়তেন।
অতঃপর মাত্র কিছু সময় যতক্ষণে তিনি ধারণা
করতেন যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, বিশ্রাম গ্রহণ করতেন। অতঃপর উঠে ধীরে ধীরে নিজ চাদর
নিতেন এবং জুতা পরিধান করতেন। পরে আস্তে আস্তে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়তেন। অতঃপর কিছু
সময় নিজেকে আত্মগোপন করে রাখতেন। একদিন আমি আমার জামা মাথার উপর স্থাপন করে তা দিয়ে
মাথাটা ঢেকে লুঙ্গি পরিধান করে, অতঃপর তার পেছনে রওয়ানা হলাম। যেতে যেতে তিনি বাকী’তে"
(কবরস্থানে) পৌছলেন। তথায় তিনি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তিনি তিনবার হাত
উঠিয়ে দু’আ করলেন। এবার গৃহের দিকে ফিরে রওয়ানা করলে আমিও রওয়ানা হলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্রুত রওয়ানা করলে আমিও দ্রুত চলতে লাগলাম। তাকে আরও দ্রুত পদক্ষেপে
এগিয়ে আসতে দেখে আমি আরও দ্রুত চলতে লাগলাম। এরপর আমরা দৌড়াতে আরম্ভ করলে আমি দৌড়ে
তার আগেই ঘরে ঢুকে পড়লাম এবং বিলম্ব না করে শুয়ে পড়লাম।
একটু পরে তিনি গৃহে প্রবেশ করে আমাকে জিজ্ঞেস
করলেন, হে আয়িশাহ! তোমার কি হল? কেন হাপিয়ে পড়েছ? আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন, আমি জবাব
দিলাম না, তেমন কিছু না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হয় তুমি
নিজে আমাকে ব্যাপারটা খুলে বলবে নতুবা মহান আল্লাহ আমাকে তা জানিয়ে দিবেন। আমি বললাম,
হে আল্লাহর রসূল! আপনার ওপর আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক। এরপর তাকে ব্যাপারটা জানিয়ে
দিলাম। তিনি বললেন, তুমিই সে কালো ছায়াটি যা আমি আমার সামনে দেখছিলাম। আমি বললামঃ
জী হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার বুকে একটা থাপ্পড় মারলেন যাতে
আমি ব্যথা পেলাম। অতঃপর বললেন, তুমি কি ধারণা করেছ আল্লাহ ও তার রসূল তোমার ওপর অবিচার
করবেন? আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন, যখনই মানুষ কোন কিছু গোপন করে, আল্লাহ তা অবশ্যই জানেন।
হ্যাঁ অবশ্যই জানেন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, যখন তুমি আমাকে দেখেছ এ সময় আমার কাছে জিবরীল (আঃ) এসেছিলেন এবং আমাকে ডাকছিলেন।
অবশ্য তা তোমার কাছে গোপন রাখা হয়েছে। আর আমিও তা গোপন রাখা বাঞ্ছনীয় মনে করে তোমার
নিকট গোপন রেখেছি। যেহেতু তুমি তোমার কাপড় রেখে দিয়েছ, তাই তিনি তোমার কাছে আসেননি।
আমি ভেবেছিলাম তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ তাই তোমাকে জাগানো সমীচীন মনে করিনি। আর আমি আশঙ্কা
করছিলাম যে, তুমি ভীত বিহ্বল হয়ে পড়বে।
এরপর জিবরীল (আঃ) বললেন, আপনার প্রভু আপনার
প্রতি আদেশ করছেন, বাকী’র কবরবাসীদের নিকট গিয়ে তাদের জন্য দু’আ ইসতিগফার করতে। আয়িশাহ
(রাযিঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি তাদের জন্য কীভাবে দু’আ করব?
তিনি বললেনঃ তুমি বল, "এ বাসস্থানের অধিবাসী ঈমানদার মুসলিমদের প্রতি সালাম বর্ষিত
হোক। আমাদের মধ্য থেকে যারা আগে বিদায় গ্রহণ করেছে আর যারা পিছনে বিদায় নিয়েছে সবার
প্রতি আল্লাহ দয়া করুন। আল্লাহ চাহে তো আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৭৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন,
২১২৫, ইসলামীক সেন্টার ২১২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইয়াহইয়া
ইবনু ইয়াহইয়া আত তামিমী, ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব ও কুতায়বাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)...আয়িশাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভ্যাস
ছিল, যেদিন তার কাছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাত্রি যাপনের পালা
আসত, তিনি শেষ রাত্রে উঠে (বাকী কবরস্থানে) চলে যেতেন এবং এভাবে দু’আ করতেনঃ
“আসসালা-মু আলায়কুম দা-রা কাওমিন
মু’মিনীনা ওয়া আতা-কুম মা ত’আদূনা গদান মুআজজালুনা ওয়া ইন্না- ইনশা-আল্ল-হু বিকুম
লা-হিকূন আল্ল-হুমমাগফিরলি আহলি বাকীউল গরকাদ”
(অর্থাৎ- তোমাদের ওপর সালাম ও শান্তি বর্ষিত
হোক, ওহে ঈমানদার কবরবাসীগণ! তোমাদের কাছে পরকালে নির্ধারিত যেসব বিষয়ের প্রতিশ্রুতি
দেয়া হয়েছিল তা তোমাদের নিকট এসে গেছে। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত
হব। হে আল্লাহ! বাকী গারকদি কবরবাসীদেরকে ক্ষমা করে দাও।)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৭৪,
ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১২৪, ইসলামীক সেন্টার ২১২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) কারো জন্য ক্ষমা চাওয়ার লক্ষ্যে হাত তুলে
দু‘আঃ
আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়ন
যুদ্ধ অতিক্রান্ত হওয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ আমির (রাঃ)-কে
একটি সৈন্যবাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে আওতাস গোত্রের বিরুদ্ধে পাঠালেন। যুদ্ধে তিনি
দুরাইদ ইবনু সিম্মার সঙ্গে মুকাবালা করলে দুরাইদ নিহত হয় এবং আল্লাহ তার সঙ্গীদেরকেও
পরাস্ত করেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ আমির
(রাঃ)-এর সঙ্গে আমাকেও পাঠিয়েছিলেন। এ যুদ্ধে আবূ আমির (রাঃ)-এর হাঁটুতে একটি তীর নিক্ষিপ্ত
হয়। জুশাম গোত্রের এক লোক তীরটি নিক্ষেপ করে তাঁর হাঁটুর মধ্যে বসিয়ে দিয়েছিল। তখন
আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, চাচাজান! কে আপনার উপর তীর ছুঁড়েছে? তখন তিনি আবূ মূসা
(রাঃ)-কে ইশারার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ঐ যে, ঐ ব্যক্তি আমাকে তীর মেরেছে। আমাকে
হত্যা করেছে। আমি লোকটিকে লক্ষ্য করে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম আর সে আমাকে দেখামাত্র
ভাগতে শুরু করল। আমি এ কথা বলতে বলতে তার পিছু নিলাম- তোমার লজ্জা করে না, তুমি দাঁড়াও।
লোকটি থেমে গেল। এবার আমরা দু’জনে তরবারি দিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করলাম এবং আমি ওকে হত্যা
করে ফেললাম। তারপর আমি আবূ আমির (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহ আপনার আঘাতকারীকে হত্যা করেছেন।
তিনি বললেন, এখন এ তীরটি বের করে দাও। আমি তীরটি বের করে দিলাম। তখন ক্ষতস্থান থেকে
কিছু পানি বের হল। তিনি আমাকে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
আমার সালাম জানাবে এবং আমার মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করতে বলবে। আবূ আমির (রাঃ) তাঁর স্থলে
আমাকে সেনাদলের অধিনায়ক নিয়োগ করলেন। এরপর তিনি কিছুক্ষণ বেঁচেছিলেন, তারপর ইন্তিকাল
করলেন। (যুদ্ধ শেষে) আমি ফিরে এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহে প্রবেশ
করলাম। তিনি তখন পাকানো দড়ির তৈরি একটি খাটিয়ায় শায়িত ছিলেন। খাটিয়ার উপর (যৎসামান্য)
একটি বিছানা ছিল। কাজেই তাঁর পৃষ্ঠে এবং দুইপার্শ্বে পাকানো দড়ির দাগ পড়ে গিয়েছিল।
আমি তাঁকে আমাদের এবং আবূ ‘আমির (রাঃ)-এর সংবাদ জানালাম। তাঁকে এ কথাও বললাম যে, (মৃত্যুর
পূর্বে বলে গিয়েছেন) তাঁকে [নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে] আমার মাগফিরাতের
জন্য দু‘আ করতে বলবে। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনতে বললেন
এবং ‘উযু করলেন। তারপর তাঁর দু’হাত উপরে তুলে তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় বান্দা
আবূ আমিরকে ক্ষমা করো। (হস্তদ্বয় উত্তোলনের কারণে) আমি তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রাংশ দেখতে
পেয়েছি। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে তুমি তাঁকে তোমার অনেক
মাখলুকের উপর, অনেক মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান কর। আমি বললামঃ আমার জন্যও (দু‘আ করুন)।
তিনি দু‘আ করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়সের গুনাহ ক্ষমা করে দাও
এবং ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে তুমি তাঁকে সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করাও। বর্ণনাকারী
আবূ বুরদা (রাঃ) বলেন, দু’টি দু‘আর একটি ছিল আবূ আমির (রাঃ)-এর জন্য আর অপরটি ছিল আবূ
মূসা (আশআরী) (রাঃ)-এর জন্য। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৪৩২৩, ২৮৮৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৩০০,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৯৮, আহমাদ ১৯৭১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৩৯৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২) হজ্জে পাথর নিক্ষেপের সময়ঃ
ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি প্রথম
জামরায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন।
তারপর সামনে অগ্রসর হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং উভয়
হাত তুলে দু’আ করতেন। অতঃপর মধ্যবর্তী জামরায় কঙ্কর মারতেন এবং একটু বাঁ দিকে চলে সমতল
ভূমিতে এসে কিবলামুখী দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন।
এরপর বাতন ওয়াদী হতে জামরায়ে ‘আকাবায় কঙ্কর মারতেন। এর কাছে তিনি বিলম্ব না করে ফিরে
আসতেন এবং বলতেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এরূপ করতে দেখেছি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৭৫১, ১৭৫২, ১৭৫৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৬২৯. ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬৩৭ )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
(১৩) যুদ্ধক্ষেত্রেঃ
হান্নাদ ইবনু সারিয়্যি ও যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ)...উমার ইবনু খাত্তাব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধের দিনে রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের দিকে তাকালেন, দেখলেন যে, তারা সংখ্যায়
এক হাজার ছিল। আর তার সাহাবী ছিলেন তিনশ’ তের জন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কিবলামুখী হলেন, এরপর দু’হাত উঁচু করে আওয়াজ করে আপন প্রভুর কাছে দুআ করতে লাগলেন,
হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছ আমার জন্য তা পূরণ করো। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে
যা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছ, তা দাও। হে আল্লাহ! যদি মুসলিমদের এ ক্ষুদ্র সেনাদল
ধ্বংস করে দাও তবে পৃথিবীতে তোমার ইবাদাত করার মত আর কেউ থাকবে না। তিনি এমনিভাবে দু’হাত
উঁচু করে কিবলামুখী হয়ে প্রভুর কাছে উচ্চস্বরে দু’আ করে যাচ্ছিলেন।
এক পর্যায়ে তার কাঁধ থেকে চাদর পড়ে গেল।
তখন আবূ বকর (রাযিঃ) তার কাছে এসে চাদরটি তার কাঁধে পুনরায় তুলে দিলেন। তারপর তার
পিছন দিক থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনার এতটুকু দু’আই যথেষ্ট
আপনার প্রভুর কাছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা আপনার সঙ্গে যে ওয়াদা করেছেন, তা অচিরেই
পূর্ণ করবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন-
"স্মরণ করে, যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের
নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে; তখন তিনি তা কবুল করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আমি তোমাদেরকে
এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করব যারা একের পর এক আসবে।" (সূরা আনফাল ৮ঃ ৯)
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য
করলেন। আবূ যুমায়ল বর্ণনা করেন যে, আমার নিকট ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) বলেছেন যে, সেদিন
একজন মুসলিম সৈনিক তার সামনের একজন মুশরিকের পিছনে ধাওয়া করছিলেন। এমন সময় তিনি তার
উপর দিক থেকে বেত্রাঘাতের শব্দ শুনতে পেলেন এবং তার উপর দিকে অশ্বারোহীর এরূপ ধ্বনি
শুনতে পেলেন। তিনি বলতেছিলেন, হে হায়যুম, (ফেরেশতার ঘোড়ার নাম) সামনের দিকে অগ্রসর
হও। তখন তিনি তার সামনের এক মুশরিক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। আরো
দেখেন যে, তার নাক-ক্ষতযুক্ত এবং তার মুখমণ্ডল আঘাতপ্রাপ্ত। যেন কেউ তাকে বেত্ৰাঘাত
করেছে। আহত স্থানগুলো সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে (বেত্রের বিষাক্ততায়)।
এরপর আনসারী ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে যাবতীয় ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। এ সাহায্য তৃতীয় আকাশ থেকে এসেছে। পরিশেষে
সেদিন মুসলিমগণ সত্তর জন কাফিরকে হত্যা এবং সত্তর জনকে বন্দী করলেন। আবূ যুমায়ল বলেন
যে, ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) বর্ণনা করেছেন, যখন যুদ্ধ বন্দীদেরকে আটক করা হলো, তখন রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সব যুদ্ধবন্দী সম্পর্কে আবূ বকর (রাযিঃ) এবং উমর
(রাযিঃ) এর সাথে কথা বললেন, “এ সকল যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে আপনারা কী মত দিচ্ছেন"।
আবূ বকর (রাযিঃ) বললেন, হে আল্লাহর নবী! তারা তো আমাদের চাচাতো ভাই এবং স্বগোত্রীয়।
আমি উচিত মনে করি যে, তাদের নিকট থেকে আপনি মুক্তিপণ (فدية)
গ্রহণ করুন। এতে কাফিরদের উপর আমাদের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। আশা করা যায় আল্লাহ তা’আলা
তাদেরকে ইসলামের হিদায়াত দিবেন।
এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, হে ইবনুল খাত্তাব! এ ব্যাপারে আপনি কী বলছেন? উমর (রাযিঃ) বললেন, তখন আমি বললাম,
আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রসূল! আবূ বকর যা উচিত মনে করেন আমি তা উচিত মনে করি না। আমি
উচিত মনে করি যে, আপনি তাদেরকে আমাদের হস্তগত করুন। আমরা তাদের গর্দান উড়িয়ে দেব।
আর আকিল-কে আলী-এর হস্তগত করুন। তিনি তার শিরোচ্ছেদ করবেন। আর আমার বংশের অমুককে আমার
কাছে অৰ্পণ করুন, আমি তার শিরোচ্ছেদ করবো। কেননা তারা হল কাফিরদের মর্যাদাশালী নেতৃস্থানীয়
ব্যক্তিবর্গ। অতএব আবূ বকর (রাযিঃ) যা বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সেটাই পছন্দ করলেন এবং আমি যা বললাম, তা তিনি পছন্দ করলেন না।
পরের দিন যখন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম, তখন দেখি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এবং আবূ বকর (রাযিঃ) উভয়েই বসে কাঁদছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে বলুন,
আপনি এবং আপনার সাথী কেন কাঁদছেন? আমার কান্না আসলে আমিও কাঁদবো। আর যদি আমার কান্না
না আসে তবে আপনাদের কাঁদার কারণে আমিও কান্নার ভান করবো (প্রচেষ্টা চালাব)। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মুক্তিপণ গ্রহণের কারণে তোমার সাথীদের উপর সমাগত
বিপদের কথা স্মরণ করে আমি কাঁদছি। আমার নিকট তাদের শাস্তি পেশ করা হল- এ বৃক্ষ থেকেও
নিকটে। বৃক্ষটি ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটবর্তী। (একটি বৃক্ষের
দিকে লক্ষ্য করে বললেন, এ বৃক্ষের চাইতেও কাছে তোমাদের উপর সমাগত আযাব আমাকে দেখানো
হয়েছিল।)
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ
“দেশে ব্যাপকভাবে শত্রুকে পরাস্ত না করা পর্যন্ত
বন্দী কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয়.....যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করেছ তা বৈধ ও উত্তম বলে তোমরা
ভোগ কর"— (সূরা আল-আনফাল ৮ঃ ৬৭-৬৯)। এর ফলে আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য মালে গনীমাত
হালাল করে দেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ৪৪৮০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৭৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪৩৬, ইসলামিক সেন্টার ৪৪৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১৪) সাফা-মারওয়া সায়ী করার সময়ঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাহ্ হতে (হজ্জ/হজ ও ’উমরা পালনের জন্য)
মক্কায় প্রবেশ করে হাজারে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হলেন, একে চুমু খেলেন। তারপর বায়তুল্লাহর
তাওয়াফ করলেন, এরপর সাফা পাহাড়ের দিকে এলেন এবং এর উপর উঠলেন যাতে বায়তুল্লাহ দেখতে
পান। তারপর দু’ হাত উঠালেন এবং উদারমনে আল্লাহর যিকির ও দু’আ করতে লাগলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৫৭৫, সুনান আবূ দাঊদ ১৮৭২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৫) খালিদ বিন ওয়ালিদ -এর অপন্দ কর্মের কারণে হাত
তুলে দু‘আঃ
সালিমের পিতা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)]
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক অভিযানে খালিদ ইবনু
ওয়ালীদ (রাঃ)-কে বানী জাযিমার বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। (সেখানে পৌঁছে) খালিদ (রাঃ) তাদেরকে
ইসলামের দা‘ওয়াত দিলেন। কিন্তু ‘আমরা ইসলাম কবূল করলাম’, এ কথাটি তারা ভালভাবে বুঝিয়ে
বলতে পারছিল না। তাই তারা বলতে লাগল, আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করলাম, আমরা স্বধর্ম ত্যাগ
করলাম। খালিদ তাদেরকে হত্যা ও বন্দী করতে থাকলেন এবং আমাদের প্রত্যেকের কাছে বন্দীদেরকে
সোপর্দ করতে থাকলেন। অবশেষে একদিন তিনি আদেশ দিলেন আমাদের সবাই যেন নিজ নিজ বন্দীকে
হত্যা করে ফেলি। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি আমার বন্দীকে হত্যা করব না। আর আমার সঙ্গীদের
কেউই তার বন্দীকে হত্যা করবে না। অবশেষে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কাছে ফিরে আসলাম। আমরা তাঁর কাছে এ ব্যাপারটি উল্লেখ করলাম। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তখন দু’হাত তুলে বললেন, হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে আমি তার দায় থেকে মুক্ত হওয়ার কথা তোমার নিকট জ্ঞাপন করছি। এ কথাটি তিনি
দু’বার বললেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩৩৯,
৭১৮৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(১৬) সদাক্বাহ
আদায়কারীর ভুল মন্তব্য শুনে হাত তুলে দু‘আঃ
আবূ হুমায়দ সা’ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে রাজস্ব আদায়কারী নিযুক্ত
করলেন। সে কাজ শেষ করে তাঁর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটা আপনার জন্য আর এ জিনিসটি
আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ
তুমি তোমার বাপ-মার ঘরে বসে থাকলে না কেন? তা হলে দেখতে তোমার জন্য হাদিয়া পাঠানো হয়
কি না? এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার ওয়াক্তের সালাতে দাঁড়িয়ে
গেলেন এবং তাশাহ্হুদ পাঠ করলেন ও আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। এরপর বললেনঃ রাজস্ব
আদায়কারীর অবস্থা কী হল? আমি তাকে নিযুক্ত করে পাঠালাম আর সে আমাদের কাছে এসে বলছে,
এটা সরকারী রাজস্ব আর এ জিনিস আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। সে তার বাপ-মার ঘরে বসেই থাকল
না কেন? তাহলে দেখত তার জন্য হাদিয়া দেয়া হয় কি না?
ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রাণ, তোমাদের মাঝে কেউ কোন বস্তুতে খিয়ানত করলে, কিয়ামতের দিন
সে ঐ বস্তুটিকে তার কাঁধে বহন করা অবস্থায় আসবে। সে বস্তুটি যদি উট হয় তা হলে উট আওয়াজ
করতে থাকবে। যদি গরু হয় তবে হাম্বা হাম্বা করতে থাকবে। আর যদি বক্রী হয় তবে ভ্যা ভ্যা
করতে থাকবে। আমি (বাণী) পৌঁছিয়ে দিলাম। রাবী আবূ হুমায়দ বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হস্ত মুবারক এতটুকু উঠালেন যে, আমরা তাঁর দু’বগলের শুভ্রতা
দেখতে গেলাম। আবূ হুমায়দ বলেন, এ কথাগুলো যায়দ ইবনু সাবিতও আমার সঙ্গে শুনেছে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে। কাজেই তোমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পার। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬৩৬, ৯২৫; সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৬৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩২, আহমাদ ২৩৬৫৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৬১৭৩, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন- ৬১৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
তাছাড়া জুম‘আ ও ঈদায়েনের খুৎবায় বা অন্যান্য
সভা ও সম্মেলনে একজন দো‘আ করলে অন্যেরা (দু’হাত তোলা ছাড়াই) কেবল ‘আমীন’ বলবেন। (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৮/২৩০-৩১; ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম পৃঃ
৩৯২)।
এমনকি একজন দো‘আ করলে অন্যজন সেই সাথে ‘আমীন’
বলতে পারেন।
উল্লেখ্য যে, দো‘আর জন্য সর্বদা ওযূ করা, ক্বিবলামুখী
হওয়া এবং দু’হাত তোলা শর্ত নয়। বরং বান্দা যে কোন সময় যে কোন অবস্থায় আল্লাহর নিকটে
প্রার্থনা করবে। যেমন খানাপিনা, পেশাব-পায়খানা, বাড়ীতে ও সফরে সর্বদা বিভিন্ন দো‘আ
করা হয়ে থাকে। আর আল্লাহ যে কোন সময় যে কোন অবস্থায় তাঁকে আহবান করার জন্য বান্দার
প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৮৬, সুরা মুমিন/গাফের
৪০/৬০; বুখারী ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৮০, অনুচ্ছেদ-২৪, ২৫ ও অন্যান্য অনুচ্ছেদ সমূহ)।
দুই হাত তুলে দোআ ও মুনাজাত বা প্রার্থনা করার সহিহ নিয়ম
(১) দোয়া বা মুনাজাত করার আগে অজু করাঃ
দুই হাত তুলে যেকোনো সময় মুনাজাত করা যায়।
সালাত শেষে কিংবা অন্য যেকোনো সময়। তবে অন্য কোনো সময় মুনাজাত করতে চাইলে অযু করে নেয়া
উত্তম।
আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়ন
যুদ্ধ অতিক্রান্ত হওয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ আমির (রাঃ)-কে
একটি সৈন্যবাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে আওতাস গোত্রের বিরুদ্ধে পাঠালেন। যুদ্ধে তিনি
দুরাইদ ইবনু সিম্মার সঙ্গে মুকাবালা করলে দুরাইদ নিহত হয় এবং আল্লাহ তার সঙ্গীদেরকেও
পরাস্ত করেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ আমির
(রাঃ)-এর সঙ্গে আমাকেও পাঠিয়েছিলেন। এ যুদ্ধে আবূ আমির (রাঃ)-এর হাঁটুতে একটি তীর নিক্ষিপ্ত
হয়। জুশাম গোত্রের এক লোক তীরটি নিক্ষেপ করে তাঁর হাঁটুর মধ্যে বসিয়ে দিয়েছিল। তখন
আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, চাচাজান! কে আপনার উপর তীর ছুঁড়েছে? তখন তিনি আবূ মূসা
(রাঃ)-কে ইশারার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ঐ যে, ঐ ব্যক্তি আমাকে তীর মেরেছে। আমাকে
হত্যা করেছে। আমি লোকটিকে লক্ষ্য করে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম আর সে আমাকে দেখামাত্র
ভাগতে শুরু করল। আমি এ কথা বলতে বলতে তার পিছু নিলাম- তোমার লজ্জা করে না, তুমি দাঁড়াও।
লোকটি থেমে গেল। এবার আমরা দু’জনে তরবারি দিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করলাম এবং আমি ওকে হত্যা
করে ফেললাম। তারপর আমি আবূ আমির (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহ আপনার আঘাতকারীকে হত্যা করেছেন।
তিনি বললেন, এখন এ তীরটি বের করে দাও। আমি তীরটি বের করে দিলাম। তখন ক্ষতস্থান থেকে
কিছু পানি বের হল। তিনি আমাকে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
আমার সালাম জানাবে এবং আমার মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করতে বলবে। আবূ আমির (রাঃ) তাঁর স্থলে
আমাকে সেনাদলের অধিনায়ক নিয়োগ করলেন। এরপর তিনি কিছুক্ষণ বেঁচেছিলেন, তারপর ইন্তিকাল
করলেন। (যুদ্ধ শেষে) আমি ফিরে এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহে প্রবেশ
করলাম। তিনি তখন পাকানো দড়ির তৈরি একটি খাটিয়ায় শায়িত ছিলেন। খাটিয়ার উপর (যৎসামান্য)
একটি বিছানা ছিল। কাজেই তাঁর পৃষ্ঠে এবং দুইপার্শ্বে পাকানো দড়ির দাগ পড়ে গিয়েছিল।
আমি তাঁকে আমাদের এবং আবূ ‘আমির (রাঃ)-এর সংবাদ জানালাম। তাঁকে এ কথাও বললাম যে, (মৃত্যুর
পূর্বে বলে গিয়েছেন) তাঁকে [নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে] আমার মাগফিরাতের
জন্য দু‘আ করতে বলবে। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনতে বললেন
এবং ‘উযু করলেন। তারপর তাঁর দু’হাত উপরে তুলে তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় বান্দা
আবূ আমিরকে ক্ষমা করো। (হস্তদ্বয় উত্তোলনের কারণে) আমি তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রাংশ দেখতে
পেয়েছি। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে তুমি তাঁকে তোমার অনেক
মাখলুকের উপর, অনেক মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান কর। আমি বললামঃ আমার জন্যও (দু‘আ করুন)।
তিনি দু‘আ করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়সের গুনাহ ক্ষমা করে দাও
এবং ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে তুমি তাঁকে সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করাও। বর্ণনাকারী
আবূ বুরদা (রাঃ) বলেন, দু’টি দু‘আর একটি ছিল আবূ আমির (রাঃ)-এর জন্য আর অপরটি ছিল আবূ
মূসা (আশআরী) (রাঃ)-এর জন্য। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৪৩২৩, ২৮৮৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৩০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৯৮, আহমাদ ১৯৭১৩,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) কিবলামুখী হয়ে দোয়া করাঃ
আবূত তহির ও হারমালাহ্ (রহঃ).....আব্বাদ ইবনু
তামীম আল মাযিনী (রহঃ) থেকে তার চাচার সূত্রে বর্ণিত। যিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ইসতিসকার উদ্দেশে বের হলেন। তিনি লোকদের দিকে পিঠ রেখে আল্লাহর
নিকট দু’আ করতে লাগলেন এবং কিবলার দিকে মুখ করে তার চাদরটা উল্টিয়ে দিলেন। অতঃপর তিনি
দু’ রাকাআত সালাত আদায় করলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৯৫৮, ১৯৫৭, ১৯৫৬, ১৯৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯৪ সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১০০৫, ১০১১, ১০১২, ১০২৩, ১০২৪, ১০২৫, ১০২৬, ১০২৭, ১০২৮, ৬৩৪৩; আহমাদ ১৬৪৬৮, ইসলামী
ফাউন্ডেশন ১৯৪৩, ইসলামীক সেন্টার ১৯৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) খোলা দু’হস্ততালু একত্রিত করে চেহারা বরাবর সামনে রেখে দো‘আ করাঃ
ইকরিমাহ্ (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)
হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার নিয়ম হলো, নিজের হাত দু’টি
কাঁধ পর্যন্ত অথবা কাঁধের কাছাকাছি পর্যন্ত উঠাবে। আর আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার বা ক্ষমা
চাওয়ার নিয়ম হলো, তোমার একটি আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করবে এবং আল্লাহর কাছে অনুনয় বিনয়
করে প্রার্থনা করার নিয়ম হলো, তোমার দু’হাত একত্রে প্রসারিত করবে। অন্য এক বর্ণনায়
আছে, তিনি বলেছেন, অনুনয় বিনয় করে প্রার্থনা করবে এভাবে- এরপর তিনি নিজের দু’হাত উপরের
দিকে উঠিয়ে ধরলেন এবং তার উভয় হাতের পিঠ মুখমণ্ডলের নিকটবর্তী করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৫৬, আবূ দাঊদ ১৪৮৯, ১৪৯০, আদ্
দাওয়াতুল কাবীর ৩১৩, সহীহ আল জামি ৬৬৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাত তোলার সময় দুই হাত কি মিলিয়ে
রাখবে; না কি দুই হাতের মাঝে ফাঁক রাখবে?
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) তাঁর ‘আল-শারহুল মুমতি’
গ্রন্থে (৪/২৫) উল্লেখ করেছেন যে, হাত দুইটি মিলিয়ে রাখবে। তাঁর ভাষায়: “দুই হাতের
মাঝখানে ফাঁক রাখা ও এক হাত থেকে অন্য হাত দূরে রাখা সম্পর্কে আমি কোন দলিল পাইনি;
না হাদিসে; আর না আলেমগণের বাণীতে।” [সমাপ্ত]
(৪) দো‘আর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা
ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করাঃ
ফুযালাহ্ ইবনু ’উবায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপবিষ্ট ছিলেন। তখন একজন লোক
এলেন। তিনি সালাত আদায় করলেন এবং এই দু’আ পড়লেন, ’
’আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর ও
আমার ওপর রহম কর)। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে
সালাত আদায়কারী! তুমি তো নিয়ম ভঙ্গ করে বড্ড তাড়াহুড়া করলে। তারপর তিনি বললেন, তুমি
সালাত শেষ করে দু’আর জন্য বসবে। আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করবে। আমার ওপর দরূদ পড়।
তারপর তুমি যা চাও আল্লাহর কাছে দু’আ করবে।
ফুযালাহ্ (রাঃ)বলেন, এরপর আর এক ব্যক্তি এলো,
সালাত আদায় করলো। সে সালাত শেষে আল্লাহর প্রশংসা করলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
ওপর দরূদ পাঠ করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালাত আদায়কারী!
আল্লাহর কাছে দু’আও কর। দু’আ কবূল করা হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৭৬, ৩৪৭৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৩,
নাসায়ী ১/১৮৯, আহমাদ ৬/১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহর প্রশংসামূলক বাক্য হচ্ছেঃ
(ক) সুবহানাল্লাহ (আল্লাহ পবিত্র)
(খ) আলহামদুলিল্লাহ
(সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য)
(গ)
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য
নেই)
(ঘ) আল্লাহু
আকবার (আল্লাহ তাআলাই মহান (সবচেয়ে বড়)।
এই দরুদটি পাঠ করতে পারেন,
‘আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম আলা নাবিয়্যিনা
মুহাম্মাদ।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবি মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রহমত ও শান্তি দান করুন।’
(৫) কারো জন্যে দোয়া করলে প্রথমে নিজের জন্যে দোয়া করাঃ
উবাই ইবনু কাব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখপূর্বক কারো জন্য দু’আ করলে প্রথমে
তার নিজের জন্য দুআ করতেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৩৮৫, মিশকাত তাহকীক সানী ২২৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) আল্লাহর গুণবাচক নাম ধরে দোয়া করাঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা
তাকে সে সকল নাম দিয়ে প্রার্থনা করবে। (সুরা
আল-আরাফ : ১৮০)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম
আছে অর্থাৎ এক কম এক শত। যে ব্যক্তি এই নামগুলো কণ্ঠস্থ করলো বা গুণে গুণে পড়লো সে
জান্নাতে প্রবেশ করলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬০, ৩৮৬১,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৩৬, ৭৩৯২, ৬৪১০, মুসলিম ২৬৭৭, তিরমিযী ৩৫০৬, ৩৫০৭,
৩৫০৮, আহমাদ ৭৪৫০, ৭৫৬৮, ২৭৩৬৩, ৯২২৯, ১০১০৩, ১০১৫৪, ১০৩০৭, মিশকাত ২২৮৭, আদ্ দা‘ওয়াতুল
কাবীর ২৯২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৮১৬, ইবনু হিব্বান ৮১৭, সহীহ আল জামি ২১৬৬,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৪৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৭) নিজের নেক কাজের ওসীলা দিয়ে দুআ করাঃ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিন ব্যক্তি হেঁটে চলছিল। এমন সময় প্রবল
বৃষ্টি শুরু হলে তারা এক পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করে। হঠাৎ একটি পাথর গড়িয়ে তাদের গুহার
মুখ বন্ধ করে দেয়। তাদের একজন আরেকজনকে বলল; তোমরা যে সব ‘আমল করেছ, তার মধ্যে উত্তম
আমলের ওয়াসীলা করে আল্লাহর কাছে দু‘আ কর। তাদের একজন বলল, ইয়া আল্লাহ! আমার অতিবৃদ্ধ
পিতামাতা ছিলেন, আমি (প্রত্যহ সকালে) মেষ চরাতে বের হতাম। তারপর ফিরে এসে দুধ দোহন
করতাম এবং এ দুধ নিয়ে আমার পিতা-মাতার নিকট উপস্থিত হতাম ও তাঁরা তা পান করতেন। তারপরে
আমি শিশুদের, পরিজনদের এবং স্ত্রীকে পান করতে দিতাম। একরাত্রে আমি আটকা পড়ে যাই। তারপর
আমি যখন এলাম তখন তাঁরা দু’জনে ঘুমিয়ে পড়েছেন। সে বলল, আমি তাদের জাগানো পছন্দ করলাম
না। আর তখন শিশুরা আমার পায়ের কাছে (ক্ষুধায়) চীৎকার করছিল। এ অবস্থায়ই আমার এবং পিতা-মাতার
ফজর হয়ে গেল। ইয়া আল্লাহ! তুমি যদি জান তা আমি শুধুমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের আশায়
করেছিলাম তা হলে তুমি আমাদের গুহার মুখ এতটুকু ফাঁক করে দাও, যাতে আমরা আকাশ দেখতে
পারি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন একটু ফাঁকা হয়ে গেল। আরেকজন বলল, ইয়া আল্লাহ! তুমি জান
যে, আমি আমার এক চাচাতো বোনকে এত ভালবাসতাম, যা একজন পুরুষ নারীকে ভালবেসে থাকে। সে
বলল, তুমি আমা হতে সে মনস্কামনা সিদ্ধ করতে পারবে না, যতক্ষণ আমাকে একশত দ্বীনার না
দেবে। আমি চেষ্টা করে তা সংগ্রহ করি। তারপর যখন আমি তার পদদ্বয়ের মাঝে উপবেশন করি,
তখন সে বলে ‘‘আল্লাহকে ভয় কর’’। বৈধ অধিকার ছাড়া মাহরকৃত বস্তুর সীল ভাঙবে না। এতে
আমি তাকে ছেড়ে উঠে পড়ি। (হে আল্লাহ) তুমি যদি জান আমি তা তোমারই সন্তুষ্টি অর্জনের
উদ্দেশে করেছি, তবে আমাদের হতে আরো একটু ফাঁক করে দাও। তখন তাদের হতে (গুহার মুখের)
দুই-তৃতীয়াংশ ফাঁক হয়ে গেল। অপরজন বলল, হে আল্লাহ! তুমি জান যে, এক ফারাক (পরিমাণ)
শস্য দানার বিনিময়ে আমি একজন মজুর রেখেছিলাম। আমি তাকে তা দিতে গেলে সে তা গ্রহণ করতে
অস্বীকার করল। তারপর আমি সে এক ফারাক শস্য দানা দিয়ে চাষ করে ফসল উৎপন্ন করি এবং তা
দিয়ে গরু ক্রয় করি এবং রাখাল নিযুক্ত করি। কিছুকাল পরে সে মজুর এসে বলল, হে আল্লাহর
বান্দা! আমাকে আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি বললাম, এই গরুগুলো ও রাখাল নিয়ে যাও। সে বলল,
তুমি কি আমার সাথে উপহাস করছ? আমি বললাম, আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না বরং এসব তোমার।
হে আল্লাহ! তুমি যদি জান আমি তা তোমারই সন্তুষ্টির উদ্দেশে করেছি, তবে আমাদের হতে
(গুহার মুখ) উন্মুক্ত করে দাও। তখন তাদের হতে গুহার মুখ উন্মুক্ত হয়ে গেল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২১৫, ২২৭২, ২৩৩৩, ২৪৬৫, ৫৯৭৪,
মুসলিম ৪৮/২৭, হাঃ ২৭৪৩, আহমাদ ৫৯৮১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৭৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(৮) জীবিত নেক বান্দার অসিলা ধরে
দোয়া করাঃ
জীবিত নেক বান্দার অসিলা ধরে দোয়া করলে আল্লাহ
সেই দোয়া কবুল করেন। তবে মৃত কোনো পির অলির অসিলা ধরা যাবে না এমনকি রাসুল সাঃ এর অসিলাও
ধরা যাবে না।
আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। ‘উমার
ইবনু খাত্তাব (রাযি.) অনাবৃষ্টির সময় ‘আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাযি.)-এর ওয়াসীলাহ
দিয়ে বৃষ্টির জন্য দু‘আ করতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ্! (আগে) আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওয়াসীলাহ দিয়ে দু‘আ করতাম এবং আপনি বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা
আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চাচার ওয়াসীলাহ দিয়ে দু‘আ করছি, আপনি
আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। বর্ণনাকারী বলেন, দু‘আর সাথে সাথেই বৃষ্টি বর্ষিত হত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০১০, ৩৭১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৯৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) ইসমে আজম দিয়ে দোয়া করাঃ দুই হাত তুলে দোয়া করার সময়
এই ইসমে আজম পাঠ করবেন।
(ক) আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বসা ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি সালাত আদায় করে
এই বলে দু‘আ করলোঃ
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা
বি আন্না লাকাল হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা শারীকা লাকাল মান্না-নু, ইয়া
বাদী’আস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল-আরদী, ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরাম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু,
ইন্নী আস্আলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্না-র”।
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই, কারণ,
সকল প্রশংসা আপনার, কেবলমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই,
সীমাহীন অনুগ্রকারী: হে আসমানসমূহ ও যমীনের অভিনব স্রস্টা! হে মহিমাময় ও মহানুভব! হে
চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী-সর্বসত্তার ধারক! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম
থেকে আশ্রয় চাই”।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
এ ব্যক্তি ইসমে আযম দ্বারা দু‘আ করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে তাঁর
নিকট চাওয়া হলে তিনি দান করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-১৪৯৫,
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৪৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৫৮, সুনান আননাসায়ী ১২৯৯, ১৩০০,
আহমাদ ১১৭৯৫, ১২২০০, ১৩১৫৮, ১৩৩৮৭, রাওদুন নাদীর ১৩৩, আস-সহীহ ১৩৪২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ।
(খ) বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, ’হে আল্লাহ! আমি
তোমার কাছে প্রার্থনা করছি এবং জানি যে, তুমিই আল্লাহ। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন
মা’বূদ নেই। তুমি এক ও অনন্য। তুমি অমুখাপেক্ষী ও স্বনির্ভর। যিনি কাউকে জন্মও দেননি।
কারো থেকে জন্মও নন। যার কোন সমকক্ষ নেই।’ তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, এ ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলাকে তার ইস্মে আ’যম বা সর্বাধিক বড় ও সম্মানিত নামে ডাকল।
এ নামে ডেকে তাঁর কাছে কেউ কিছু প্রার্থনা করলে, তিনি তাকে তা দান করেন এবং কেউ ডাকলে
তিনি তার ডাকে সাড়া দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৮৯,
২২৯০, আবূ দাঊদ ১৪৯৩, তিরমিযী ৩৪৭৫, ইবনু মাজাহ
৩৮৫৭, আহমাদ ২২৯১৫, ইবনু হিব্বান ৮৯১, শু‘আবূল ঈমান ২৩৬৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
(গ) আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর ইস্মে আ’যম এই দু’ আয়াতের
মধ্যে রয়েছে, ওয়া ইলা-হুকুম ইলা-হূ ওয়া-হিদ, লা- ইলা-হা
ইল্লা- হুওয়ার রহমা-নুর রহীম।
এছাড়াও সূরা আ-লি ’ইমরান-এর শুরুতে আলিফ লা-ম
মী-ম আল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৯১, আবূ দাঊদ ১৪৯৬, তিরমিযী ৩৪৭৮, ইবনু মাজাহ
৩৮৫৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৩৬৩, দারিমী ৩৪৩২, মু‘জামুল কাবীর ৪৪০, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪২,
সহীহ আল জামি ৯৮০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(১০) দুআ ইউনুস দ্বারা দোয়া বা প্রার্থনা করাঃ
দুই হাত তুলে দোয়া করার সময় এই দোয়াটি পাঠ করবেন।
সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার
নবী যুন-নূন ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে থাকাকালে যে দু’আ করেছিলেন তা হলোঃ
“লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা
ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন”
“তুমি ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র।
আমি নিশ্চয় যালিমদের দলভুক্ত"- (সূরা আম্বিয়া ৮৭)। যে কোন মুসলিম লোক কোন বিষয়ে
কখনো এ দু’আ করলে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তার দু’আ কবুল করেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫০৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২২৯২, আল-কালিমুত তাইয়্যিব (হাঃ ১২২/৭৯), তা’লীকুর রাগীব (২/২৭৫, ৩/৪৩), মিশকাত তাহকীক
সানী (হাঃ ২২৯২, আহমাদ ১৪৬২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৬২, শু‘আবূল ঈমান ৬১১, আল কালিমুত্ব
ত্বইয়্যিব ১২৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৪, সহীহ আল জামি ৩৩৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
এরপর আরো বিভিন্ন দোয়া পাঠ করবেন।
এই দোয়াগুলো আরবী-বাংলা উভয়টিই হতে পারে। তবে
মোনাজাতের অনেক দোয়া আছে সেগুলো মুখস্থ করে নিবে। এছাড়া বাংলায় মনের যতো ইচ্ছে আছে
ততো আল্লাহর নিকট চাইবে। তবে দুই হাত তুলে একাকি মোনাজাত করতে অবশ্যই হৃদয় নিংড়ানো
কান্নাভাব থাকতে হবে। তাহলে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বেশী।
(১১) সবশেষে আবার দরুদ পাঠ করে দুই হাত নামাতে হবেঃ
মুনাজাত যখন শেষ করবেন তখন আবার দরুদ পাঠ করবেন।
তানাহলে উক্ত দোয়া আসমানে ঝুলে থাকবে, আল্লাহর
নিকট পৌঁছবে না। যেমন, ‘সুবহা-না রবিবকা রবিবল ‘ইযযাতি ‘আম্মা ইয়াছিফূন, ওয়া সালা-মুন
‘আলাল মুরসালীন, ওয়াল হামদু লিল্লা-হি রবিবল ‘আ-লামীন’ পাঠ অন্তে দো‘আ শেষ করবেন।
অথবা অন্য যেকোনো দরুদ পাঠ করলেও চলবে।
‘আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম
আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবি মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রহমত ও শান্তি দান করুন।’
দুই হাত নামানোর সময় অনেকে মুখ মন্ডল মুছে
নেয়। এসংক্রান্ত কোনো হাদিস নেই। নিয়ম হলো, দুই হাত দিয়ে মুখ মন্ডল না মুছে সরাসরি
দুই হাত উল্টো করে নিচের দিকে নামাবেন।
সবশেষে
দরুদ পাঠ করার দলিল
হজরত ওমর (রা.) বলেন, নিশ্চয়ই দোয়া আসমান
ও জমিনের মধ্যে স্থগিত থাকে, এর কোনো কিছুই আসমানের দিকে ওঠে না যতক্ষণ না তুমি তোমার
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর দরূদ না পাঠাও। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৮৬, সহীহাহ ২০৫৩)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার সহিহ বিধান
রাসুল সাঃ বিশেষ ক্ষেত্রে সম্মিলিত মোনাজাত
করেছেন তবে এইসব দলিল ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দুই
হাত তুলে মোনাজাত করার পক্ষ্যে দলিল হিসেবে প্রযোজ্য নয়। অনেকে এইসব দলিল দিয়ে তথা
আম গাছের আঠা কাঠাল গাছে লাগিয়ে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে তাদের এমন আমল গ্রহণযোগ্য নয়।
(১) বৃষ্টি প্রার্থনার জন্যঃ
(ক) আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সে সময়
কোন এক জুমু‘আহর দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবাহ দিচ্ছিলেন। তখন এক
বেদুইন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল! (বৃষ্টির অভাবে) সম্পদ ধ্বংস হয়ে
যাচ্ছে। পরিবার পরিজনও অনাহারে রয়েছে। তাই আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দু‘আ করুন।
তিনি দু’ হাত তুললেন। সে সময় আমরা আকাশে এক খন্ড মেঘও দেখিনি। যাঁর হাত আমার প্রাণ,
তাঁর শপথ (করে বলছি)! (দু‘আ শেষে) তিনি দু’ হাত (এখনও) নামান নি, এমন সময় পাহাড়ের ন্যায়
মেঘের বিরাট বিরাট খন্ড উঠে আসল। অতঃপর তিনি মিম্বার হতে নীচে নামেননি, এমন সময় দেখতে
পেলাম তাঁর দাড়ির উপর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। সে দিন আমাদের এখানে বৃষ্টি হল। এর
পরে ক্রমাগত দু’দিন এবং পরবর্তী জুমু‘আহ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন। (পরবর্তী জুমু‘আহর দিন)
সে বেদুইন অথবা অন্য কেউ উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল! (বৃষ্টির কারণে)
এখন আমাদের বাড়ি ঘর ধ্বসে পড়ছে, সম্পদ ডুবে যাচ্ছে। তাই আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট
দু‘আ করুন। তখন তিনি দু’ হাত তুললেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ্ আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায়
(বৃষ্টি দাও), আমাদের উপর নয়। (দু‘আর সময়) তিনি মেঘের এক একটি খন্ডের দিকে ইশারা করছিলেন,
আর সেখানকার মেঘ কেটে যাচ্ছিল। এর ফলে চতুর্দিকে মেঘ পরিবেষ্টিত অবস্থায় ঢালের ন্যায়
মদিনার আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে এবং কানাত উপত্যকার পানি একমাস ধরে প্রবাহিত হতে লাগল,
তখন (মদিনার) চারপাশের যে কোন অঞ্চল হতে যে কেউ এসেছে, সে এ প্রবল বৃষ্টির কথা আলোচনা
করেছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩৩, ৯৩২, আহমাদ
১৩৬৯৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু
আইয়ুব, কুতায়বাহ ও ইবনু হুজুর (রহঃ)....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত জনৈক
ব্যক্তি জুমুআর দিন মসজিদে নবাবীতে দারুল কাযার দিকে স্থাপিত দরজা দিয়ে প্রবেশ করল।
এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছিলেন। সে
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (অনাবৃষ্টির ফলে) মাল সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আমাদেরকে বৃষ্টি
দান করেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু হাত উঠিয়ে দু’আ করলেন,
“আল্ল-হুম্মা আগিসনা- আল্ল-হুম্মা
আগিসনা-, আল্ল-হুম্মা আগিসনা-”
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ
করুন, আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন।)। [৩ বার]
আনাস (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! এ সময় আসমানে
কোন মেঘ বা মেঘের চিহ্নও ছিল না। আর আমাদের ও সালই পাহাড়ের মাঝে কোন ঘর-বাড়ী কিছুই
ছিল না। (ক্ষণিকের মধ্যে) তার পেছন থেকে ঢালের ন্যায় অখণ্ড মেঘ উদিত হ’ল। একটু পর
তা মাঝ আকাশে এলে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং বৃষ্টি শুরু হ’ল। বর্ণনাকার বলেন, এরপর
আল্লাহর শপথ আমরা সপ্তাহকাল যাবৎ আর সূর্যের মুখ দেখিনি।
অতঃপর পরবর্তী জুমুআয় আবার এক ব্যক্তি ঐ দরজা
দিয়ে প্রবেশ করল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছিলেন।
সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর
রসূল! মাল সম্পদ সব বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব, আল্লাহর কাছে
দু’আ করুন যেন বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার হাত উঠিয়ে দুআ করলেন,
“আল্ল-হুম্মা হাওলানা- ওয়ালা- আলায়না- আল্ল-হুম্মা
’আলাল আ-কা-মি ওয়ায় যিরা-বি ওয়া বুতনিল আওদিয়াত ওয়া মানা-বিতিশ শাজার”
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ আমাদের অবস্থা পাল্টে দাও
আমাদের ওপর এ অবস্থা চাপিয়ে দিও না। হে আল্লাহ! পাহাড়ী এলাকায়, মালভূমিতে মাঠের
অভ্যন্তরে ও গাছপালা গজানো স্থলে তা ফিরিয়ে নিয়ে যাও।)।
এরপর বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে গেল। আমরা বের হয়ে
সূর্য তাপের মধ্যে চলাচল করতে লাগলাম। শারীক বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিককে জিজ্ঞেস করলাম,
এ ব্যক্তি কি প্রথম ব্যক্তি? আনাস বললেন, আমার জানা নেই। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯৪৮, ইসলামীক
সেন্টার, ১৯৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আনাস ইবনু মালেক রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, একদা জুম‘আর দিন জনৈক বেদুঈন রসূল ﷺ-এর
নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল ﷺ!
বৃষ্টির অভাবে গৃহপালিত পশুগুলো মারা যাচ্ছে। মানুষ খতম হয়ে যাচ্ছে। তখন রসূল ﷺ
দু‘আর জন্য দু’ হাত উঠালেন। আর লোকেরাও রসূল ﷺ-এর
সাথে হাত উঠাল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বেই বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে
গেল। এমনকি পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত বৃষ্টি বর্ষিত হ’তে থাকল। তখন একটি লোক রসূল ﷺ-এর
নিকট এসে বলল, হে আল্লহর রসূল ﷺ! রাস্তা-ঘাট অচল হয়ে গেল’।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০২৯,আধুনিক প্রকাশনীঃ
৯৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এইসব স্থানে ইমাম মুক্তাদি সকলে দুই হাত উত্তোলন
করে মোনাজাত করা যায়। তবে এই দলিল ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর সকলে দুই হাত তুলে মোনাজাত
করার পক্ষে না।
(ঘ) আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসতিসক্বা (বৃষ্টির
জন্য সালাত) ছাড়া আর অন্য কোন দু’আয় হাত উঠাতেন না। এ দু’আয় তিনি এত উপরে হাত উঠাতেন
যে তাঁর বগলের শুভ্র উজ্জ্বলতা দেখা যেত। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৪৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৩১, ৩৫৬৫, ৬৩৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ১৯৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯৫, সুনান আননাসায়ী ৭৪৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১৮০,
মুসনাদ আল বাযযার ৬৮৪৫, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৯১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪৪৫, শারহুস্
সুন্নাহ্ ১১৬৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঙ) আনাস (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আল্লাহর নিকট পানি চাইলেন এবং দু’হাতের পিঠ
আসমানের দিকে করে রাখলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৪৯৯, আহমাদ ১২৫৫৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
(চ) আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বৃষ্টির জন্য লোকজন নিয়ে
ঈদগাহতে গেলেন। তাদের নিয়ে তিনি দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। উচ্চস্বরে করে তিনি
উভয় রাক্’আতে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়লেন। এরপর তিনি ক্বিবলা মুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দু’আ
করলেন। ক্বিবলা মুখী হবার সময় তিনি তাঁর চাদর ঘুরিয়ে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৯৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১০২৫, ১০০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৫৫-৫৮,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯৪, সুনান আবূ দাঊদ ১১৬১, সুনান আত্ তিরমিযী ৫৫৬, সুনান আননাসায়ী
১৫১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) উমায়র মাওলা আবূ লাহম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ’আহজা-রুয্ যায়ত’ নামক জায়গার কাছে ’যাওরার’
নিকটবর্তী স্থানে বৃষ্টির জন্য দু’আ করতে দেখেছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তখন দাঁড়িয়ে দু’হাত চেহারা পর্যন্ত উত্তোলন করে বৃষ্টির জন্য দু’আ করছিলেন;
কিন্তু তাঁর হাত (উপরের দিকে) মাথা পার হয়ে যায়নি। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫০৪, সুনান আবূ দাঊদ ১১৬৮, সুনান আত্ তিরমিযী ৫৫৭, সুনান আননাসায়ী
১৫১৪, আহমাদ ২১৯৪৪, ইবনু হিব্বান ৮৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(জ) আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকজন
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অনাবৃষ্টির কষ্টের কথা নিবেদন করল।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে মিম্বার আনার জন্য নির্দেশ দিলেন।
বস্তুতঃ মিম্বার আনা হলো। তিনি লোকজনদেরকে একদিন ঈদগাহে আসার জন্য সময় ঠিক করে দিলেন।
’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, নির্দিষ্ট দিনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যকিরণ
দেখা দেবার সাথে সাথে ঈদগাহে চলে গেলেন। মিম্বারে আরোহণ করে তাকবীর দিলেন। আল্লাহর
গুণকীর্তন বর্ণনা করে বললেন, তোমরা তোমাদের শহরের আকাল, সময় মতো বৃষ্টি না হবার অভিযোগ
করেছ। আল্লাহ তা’আলা এখন তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন। তোমরা তাঁর কাছে দু’আ করো। তিনি
তোমাদের দু’আ কবূল করবেন বলে ওয়া’দা করেছেন। তারপর তিনি বললেন,
“আলহামদু লিল্লা-হি রব্ববিল
’আ-লামীন, আর্ রহমা-নির রহীম, মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ইয়াফ্’আলু
মা- ইউরীদুল্ল-হুম্মা আন্তাল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তাল গনিয়্যু ওয়া নাহনুল ফুক্বারা-উ,
আনযিল ’আলায়নাল গয়সা ওয়াজ্’আল মা- আনযালতা লানা- ক্যুওয়াতান ওয়াবালা-গান ইলা- হীন’’
(অর্থাৎ সকল প্রশংসা আল্লাহর। তিনি সারা বিশ্বের
পালনকর্তা, মেহেরবান ও ক্ষমাকারী। প্রতিদান দিবসের মালিক। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ
নেই। তিনি যা চান তা-ই করেন। হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই। তুমি অমুখাপেক্ষী।
আর আমরা কাঙ্গাল, তোমার মুখাপেক্ষী। আমাদের ওপর তুমি বৃষ্টি বর্ষণ করো। আর যে জিনিস
(বৃষ্টি) তুমি অবতীর্ণ করবে তা আমাদের শক্তির উপায় ও দীর্ঘকালের পাথেয় করো।)।
এরপর তিনি তাঁর দু’হাত উঠালেন। এত উঠালেন যে,
তাঁর বগলের উজ্জ্বলতা দেখা গেল। তারপর তিনি জনগণের দিকে পিঠ ফিরিয়ে নিজের চাদর ঘুরিয়ে
নিলেন। তখনো তার দু’ হাত ছিল উঠানো। আবার লোকজনের দিকে মুখ ফিরালেন এবং মিম্বার হতে
নেমে গেলেন। দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আল্লাহ তা’আলা তখন
মেঘের ব্যবস্থা করলেন। মেঘের গর্জন শুরু হলো। বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে
বর্ষণ শুরু হলো। তিনি তাঁর মাসজিদ পর্যন্ত পৌঁছার পূর্বেই বৃষ্টির ঢল নেমে গেল। এ সময়
তিনি মানুষদেরকে বৃষ্টি থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য দৌড়াতে দেখে হেসে ফেললেন। এতে তাঁর
সামনের দাঁতগুলো দৃষ্টিগোচর হতে থাকল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন,
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আর আমি এ সাক্ষীও
দিচ্ছি যে, আমি তাঁর বান্দা ও রসূল। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৫০৮, সুনান আবূ দাঊদ ১১৭৩, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫৪৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৬৪০৯, সহীহ আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৫২, শারহু মা‘আনীর আসার ১৯০৬, ইবনু হিব্বান ৯৯১,
ইরওয়া ৬৬৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
( ২) বৃষ্টি বন্ধের জন্যঃ
আনাস রাযিঃ) বলেন, পরবর্তী জুম‘আয় ঐ দরজা দিয়েই
এক ব্যক্তি প্রবেশ করল রসূল ﷺ-এর দাঁড়িয়ে খুৎবা দান রত
অবস্থায়। অতঃপর লোকটি রসূল ﷺ-এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে
বলল, হে আল্লাহর রসূল ﷺ! সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং
রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে গেল। আপনি আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন, আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে দিবেন।
রাবী আনাস রাযিঃ) বলেন, তখন রসূল ﷺ
স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন পূর্বক বললেন, হে আল্লহ! আমাদের নিকট থেকে বৃষ্টি সরিয়ে দিন,
আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন না। হে আল্লাহ! অনাবাদী জমিতে, উঁচু জমিতে উপত্যকায়
এবং ঘন বৃক্ষের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩৩, ৯৩২, আহমাদ ১৩৬৯৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৮৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময়ঃ
উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার আল কাওয়ারীরী (রহঃ).....আবদুর
রহমান ইবনু সামুরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর জীবদ্দশায় আমি তীর নিক্ষেপ করেছিলাম। এমন সময় সূর্যগ্রহণ লাগল। তখন আমি এগুলো
ফেলে রেখে মনে মনে ভাবলাম, আজ সূর্যগ্রহণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর কাছে নতুন কিছু প্রকাশ পায় কিনা তা অবশ্যই দেখব। আমি তার কাছে পৌছে গেলাম। এ সময়
তিনি দু’ হাত উঠিয়ে দুআ করছিলেন এবং তাকবীর (আল্ল-হু আকবার), তাহমীদ (আল হামদুলিল্লা-হ)
ও তাহলীলে (লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) মশগুল ছিলেন। অবশেষে সূর্য পরিষ্কার হয়ে গেল। এরপর
তিনি দু’টি সূরাহ পাঠ করলেন এবং দু’ রাকাআত সালাত আদায় করলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০০৩-২০০৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৯১৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯৮৭, ইসলামীক সেন্টার ১৯৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(৪) কুনূতে নাযেলার সময়ঃ
আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে এক মাস পর্যন্ত প্রতিদিন
যুহর, ’আসর, মাগরিব, ’ইশা ও ফাজ্রের (ফজরের) সালাতের শেষ রাক্’আতে ’সামি’আল্ল-হু লিমান
হামিদাহ’ বলার পর দু’আ কুনূত পড়তেন। এতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বানী
সুলায়ম-এর কয়েকটি গোত্র, রি’ল, যাকওয়ান, ‘উসাইয়্যাহ্ এর জীবিতদের জন্যে বদ্দু’আ করতেন।
পেছনের লোকেরা ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১২৯০, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৪৩)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
সম্মানিত পাঠকগণ!
উল্লেখিত হাদিসগুলোতে সম্মিলিতভাবে হাত তোলার কথা এসেছে যা ইসতিস্ক্বা বা পানি চাওয়া
সংক্রান্ত। ইসতিসক্বা বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত যাতে সম্মিলিতভাবে দু‘আ করার কথা আছে।
তাই এ দু‘আ করতে গিয়ে রসূলুল্লাহ ﷺ-এর
নিয়ম-পদ্ধতির এক চুলও ব্যতিক্রম করা যাবে না যে ক্ষেত্রে যেভাবে দু‘আ করার কথা সহীহ
হাদীসে বর্ণিত আছে সেভাবেই দু‘আ করতে হবে। কেননা দু‘আও ইবাদতেরই অংশ বিশেষ।
অনেকে উল্লেখিত দলিলগুলো দিয়ে অন্যদের বুঝায়
যে, ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করা যায়। আসলে এই সব দলিল সালাতের
পর সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার স্বপক্ষের দলিল না। আর ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিতভাবে
মোনাজাত করার কোনো দলিলই নেই।
ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিতভাবে দুই হাত তুল মোনাজাত করার স্বপক্ষে
যারা দলিল পেশ করেন তার পর্যালোচনা
(১) আনাস ইবনু মালিক বলেন, নাবী ﷺ
বলেছেনঃ যখন কোন বান্দা প্রত্যেক সলাতের পর দু’হাত প্রশস্ত করে, অতঃপর বলে, হে আমার
মা‘বূদ এবং ইবরাহীম, ইসহাক্ব ‘আ.-এর মা‘বূদ এবং জিবরীল, মীকাইল ও ইসরাফীল ‘আ.-এর মা‘বূদ,
তোমার কাছে আমি চাচ্ছি, তুমি আমার প্রার্থনা কবুল কর। আমি বিপথগামী, তুমি আমাকে আমার
দ্বীনের উপর রক্ষা কর। তুমি আমার উপর রহমত বর্ষণ কর। আমি অপরাধী, তুমি আমার দরিদ্রতা
দূর কর। আমি দৃঢ়ভাবে তোমাকে গ্রহণ করি। তখন আল্লাহর উপর হক্ব হয়ে যায় তার খালি হাত
দু’খানা ফেরত না দেয়া। (ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াম ওয়াল
লাইল ৪৯ পৃঃ)। হাদীসটি য‘ঈফ।
হাদীসটির সনদে ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুর রহমান
ও খাদীফ নামে দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছে। তা সত্ত্বেও অত্র দুর্বল হাদীসে একক ব্যক্তির
হাত তুলে দু‘আ প্রমাণিত হয়, দলবদ্ধভাবে দু‘আ প্রমাণিত হয় না।
(২) আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত, একদা রসূল ﷺ
সালাম ফিরার পর ক্বিবলা মুখ হয়ে দু’হাত উঠালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে
পরিত্রাণ দাও। আইয়াশ, ইবনু আবী রবী‘আহ, সালাম ইবনু হিশাম এবং দুর্বল মুসলমানদের পরিত্রাণ
দাও। যারা কোন কৌশল জানে না। যারা কাফিরদের হাত হতে কোন পথ পায় না। (ইবনু কাসীর ২য় খন্ড, পৃঃ ৫৫৫; সূরা নিসা ৯৭ আয়াতের ব্যাখ্যা
দ্রঃ)। হাদীসটি য‘ঈফ। (ইবনু হাজার আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব বৈরুত ছাপা ১৯৯৪, ৭/২৭৪
রাবী নং ৪৯০৫)।
আলোচ্য হাদীসে ‘আলী ইবনু যায়দ ইবনু জাদ‘আন
য‘ঈফ রাবী। (ইবনু হাজার আসক্বালানী, তাক্বরীব বৈরুত ছাপা ১৯৮৮, পৃঃ ৪০১ রাবী নং ৪৭৩৪
এ ‘আলীকে শাইখ আলবানীও দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন, দেখুন ‘‘যিলালিল জান্নাহ্’’ ৬৩০, ‘‘আল-ইসরা
ওয়াল মি‘রাজ’’ পৃঃ ৫২ ও কিস্সাতু মাসীহিদ দাজ্জাল’’ গ্রন্থে পৃঃ ৯৪)।
অন্য প্রসঙ্গে বর্ণিত একটি হাদীসে আলোচ্য হাদীসটি
মুনকার তথা সহীহ্ বুখারী ও মুসলিম সহ বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত সহীহ্ হাদীস বিরোধী।
আবূ হুরাইরাহ রাযিঃ) বর্ণিত বুখারীর হাদীসে
সলাতের মধ্যে রুকূ‘র পর দু‘আ করার কথা রয়েছে। অথচ এ দুর্বল হাদীসে সালামের পরের কথা
রয়েছে।
বুখারীর হাদীসে হাত তোলার কথা নেই, কিন্তু
এ হাদীসে হাত তোলার কথা বলা হয়েছে। অথচ ঘটনা একটিই এবং দু‘আ হলো কুনূতে নাযিলা। (সহীহুল বুখারী হাঃ ২৯৩২, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ৯৮, মুসলিম
৬৭৫, নাসাঈ ১০৭৪, আবূ দাঊদ ১৪৪২, ইবনু মাজাহ্ ১২৯৪, আহমাদ ৭৪১৫ ও দারেমী ১৫৯৫)।
অতএব সলাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আর প্রমাণ পেশ
করা শরীয়ত বিকৃত করার শামিল।
(৩) ইবনু ‘আববাস বলেন, রসূল ﷺ
বলেছেন, সলাত দু’ দু’ রাক‘আত এবং প্রত্যেক দু’রাক‘আতেই তাশাহহুদ, ভয়, বিনয় ও দীনতার
ভাব থাকবে। অতঃপর তুমি ক্বিবলামুখী হয়ে তোমার দু’হাতকে তোমার মুখের সামনে উঠাবে এবং
বলবে, হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! যে এরূপ করবে না তার সলাত অসম্পূর্ণ।
(মিশকাত পৃঃ ৭৭, হাঃ ৮০৫ ‘সলাতের বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ)। হাদীসটি
য‘ঈফ।
‘আবদুল্লাহ ইবনু নাফি‘ ইবনিল আময়া য‘ঈফ রাবী।
আলবানী যঈফ আবী দাঊদ হাঃ ১২৯৬, য‘ঈফ ইবনে মাজাহ্ ১৩২৫, সহীহ্ ইবনে খুযায়মাহ্ ১২১২ য‘ঈফ,
যঈফুল জামে‘ আস-সগীর হাঃ ৩৫১২; তাহক্বীক্ব মিশকাত হাঃ ৮০৫-এর টীকা নং ৩; তাক্বরীবুত
তাহযীব পৃঃ ৩২৬, রাবী নং ৩৬৫৮।
হাদীসটি
দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও এতে নফল সলাতের কথা বলা হয়েছে এবং এককভাবে দু‘আর কথা এসেছে।
(৪) খাল্লাদ ইবনু সায়িব হ’তে বর্ণিত, রসূল ﷺ
যখন দু’আ করতেন, তখন তাঁর দু’হাত মুখের সামনে উঠাতেন। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ ১ম খন্ড, পৃঃ
১৬৯)। হাদীসটি য‘ঈফ। (হাফস্ ইবনু হাশি ইবনু ‘উত্বাহ্ য‘ঈফ
রাবী। তাক্বরীবুত তাহযীব পৃঃ ১৭৪, রাবী নং ১৪৩৪)।
(৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আববাস বলেন, রসূল ﷺ বলেছেন, তোমরা হাতের পেট দ্বারা চাও পিঠ দ্বারা চেয়ো না। অতঃপর তোমরা যখন দু‘আ শেষ কর তখন তোমাদের হাত দ্বারা চেহারা মুছে নাও’। (হাদীসটি দুর্বল, দেখুন ‘‘য‘ঈফ আবী দাঊদ’’ ১৪৮৫, উল্লেখ্য দাগ দেয়া অংশ বাদে হাদীসটি দুর্বল। দাগ দেয়া অংশটুকু সহীহ্, দেখুন ‘‘সহীহ্ আবী দাঊদ’’ ১৪৮৬, ‘‘সহীহ্ জামে‘ইস সাগীর’’ ৫৯৩, ৩৬৩৪ ও ‘‘ সিলসিলা আহাদীসিস সহীহাহ’’ ৫৯৫)।
প্রকাশ থাকে যে, হাত তুলে দু‘আ করার পর হাত
মুছার প্রমাণে কোনো সহীহ হাদীস নেই। বিস্তারিত দেখুন-
ইরওয়াউল গালীল ২/১৭৮-১৮২, হাঃ ৪৩৩ ও ৪৩৪-এর আলোচনা তাহক্বীক মিশকাত হাঃ ২২৫৫ এর টীকা
নং ৪।
(৬) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,
রসূল ﷺ
যখন দু‘আ করতেন তখন দু’হাত উঠাতেন এবং দু’হাত দ্বারা চেহারা মুছে নিতেন- আবূ দাঊদ,
হাঃ ১৪৯২, মিশকাত হাঃ ২২৫৫)। হাদীসটি য‘ঈফ।
আলোচ্য হাদীসে ‘আবদুল্লাহ ইবনু লাহইয়াহ নামক
রাবী য‘ঈফ। যঈফ আবূ দাঊদ হাঃ ১৪৯২, পৃঃ ১১২; আউনুল মা‘বূদ ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৬০; তাক্বরীব
পৃঃ ৩১৯ রাবী নং ৩৫৬৩।
(৭) ‘আসওয়াদ ‘আমিরী তার পিতা হ’তে বর্ণনা করেন,
তার পিতা বলেন, আমি রসূল ﷺ-এর সাথে ফজরের সলাত আদায়
করেছি। যখন তিনি সালাম ফিরালেন এবং ঘুরলেন তখন হাত উঠিয়ে দু‘আ করলেন। (ইবনু আবী শায়বা ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৩৭)।
প্রকাশ থাকে যে, رفع
يديه
ودعا
রসূল ﷺ
তাঁর দু’হাত উঠালেন এবং দু‘আ করলেন’ এ অংশটুকু মূল হাদীসে নেই। (ইবনু আবী শায়বা, আল-মুছান্নাফ
বৈরুতঃ দারুল ফিকর, ১৯৮৯), ১/৩৩৭, ছালাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৬)।
মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভী এবং আল্লামা আব্দুর
রহমান মুবারকপুরী তাঁরা নিজ নিজ গ্রন্থে হাদীসগুলো আলোচনা করেছেন। কিন্তু সহী জঈফের
মানদন্ডে হাদীসগুলো সহীহ নয়। তাই এখনো যারা এ হাদীস বক্তব্য বা লিখনীর মাধ্যমে প্রচার
করতে চাইবেন তাদেরকে অবশ্যই হাদীসের মূল কিতাব দেখে পরিত্যাগ করতে হবে অন্যথা তারা
হবেন নাবীর উপর মিথ্যারোপকারী এবং মিথ্যা প্রচারকারী, যাদের পরিণতি ভয়াবহ’। (মুসলিম, মিশকাত হাঃ ১৯৮, ১৯৯ ‘ইল্ম অধ্যায়)।
(৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের একজন লোককে সলাত শেষের
পূর্বে হাত তুলে দু‘আ করতে দেখলেন। যখন তিনি দু‘আ শেষ করলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের
তাকে বললেন, রসূল ﷺ ছালাত শেষ না করা পর্যন্ত
হাত তুলে দু‘আ করতেন না- মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১ম খন্ড, পৃঃ ১৬৯)। হাদীসটি য‘ঈফ, মুনকার,
সহীহ হাদীস বিরোধী।
সহীহ হাদীসে সালাতের মধ্যে রুকুর পর কুনুতে
নাযেলা পড়ার সময় হাত তুলার কথা আছে। (আহমাদ, তাবরানী,
সনদ ছহীহ, ইরওয়া, গালীল, ২/১৮১, হা/৮৩৮-এর আলোচনা দ্রঃ)।
(৯) ‘আবূ নুঈম বলেন, আমি ওমর ও ইবনু যুবায়েরকে
তাদের দু’হাতের তালু মুখের সামনে করে দু‘আ করতে দেখেছি’। (অত্র হাদীসে মুহাম্মাদ ইবনু
ফোলাইহ এবং তার পিতা তারা দু’জনই য‘ঈফ রাবী। আল আদাবুল মুফরাদ তাহক্বীক্ব হা/৬০৯ পৃঃ
২০৮ ‘দু‘আয় দু’হাত তুলা অনুচ্ছেদ, পৃঃ ২০৮) ১০)।
(১০) আবূ হুরায়রা বলেন, আমি রসূল ﷺ
কে বলতে শুনেছি যে, যখন আদম সন্তানের কোন দল একত্রিত হয়ে কেউ কেউ দু‘আ করে আর অন্যরা
আ-মীন বলে, আল্লাহ তাদের দু‘আ কবুল করেন। (মুস্তাদরাক
হাকেম, ৩/৩৯০ পৃঃ হা/৫৪৭৮ ‘ছাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা অধ্যায়; তারগীব ওয়া তারহীব, ১ম
খন্ড, পৃঃ ৯০)।
হাদীসটি য‘ঈফ। ইবনু লাহইয়াহ নামে রাবী দুর্বল।
তাক্বরীবুত তাহযীব, পৃঃ ৩১৯ রাবী নং ৩৫৬৩) ১১)।
(১১) একদা আলী হাজরামী ছাহাবী লোকদের নিয়ে সালাত
আদায় করেন। সালাত শেষে হাঁটু গেড়ে বসেন, লোকেরাও হাঁটু গেড়ে বসে। তিনি হাত তুলে দু‘আ
করেন এবং লোকেরা তার সাথে ছিল। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ,
৩য় জিলদ, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ৩৩২)।
অত্র ঘটনাটি ইতিহাসে বর্ণিত থাকলেও এর কোনো
সনদ নেই। প্রকাশ থাকে যে, হাদীসের সনদ থাকা সত্ত্বও কোনো রাবী য‘ঈফ হলে তার হাদীস গ্রহণযোগ্য
নয়। আর অত্র ঘটনাটির কোনো সনদই নেই। তাহলে তা দলীলের যোগ্য হয় কী করে? এ বিবরণকে হাদীস
বললে ছাহাবীর উপর মিথ্যারোপ করা হবে।
(১২) হুসাইন ইবনু ওয়াহওয়াহ হ’তে বর্ণিত, ত্বালহা
ইবনু বারায়া মৃত্যুবরণ করলে তাকে রাতে দাফন করা হয়। সকালে রসূল ﷺ-কে
সংবাদ দেয়া হ’লে রসূল ﷺএসে কবরের পার্শ্বে দাঁড়ান
এবং লোকেরাও তাঁর সাথে সারিবদ্ধ হয়। অতঃপর তিনি দু’হাত তুলে বলেন, হে আল্লা-হ! ত্বালহা
তোমার উপর সন্তুষ্ট ছিল, তুমি তার উপর রহমত বর্ষণ কর। (তাবারানী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ)।
হাদীসটি য‘ঈফ, মুনকার, সহীহ হাদীস বিরোধী)।
সহীহ হাদীসে কবরের পাশে জানাযা পড়ার কথা রয়েছে।
বুখারী, ১ম খন্ড, ‘জানাযা’ অধ্যায়)। উল্লেখ্য কবর যিয়ারাতে গিয়ে মৃত ব্যক্তিকে সালাম
প্রদানের পরে একাকী হাত তুলে দু‘আ করার সমর্থনে সহীহ্ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে কবরকে
সামনে না করে কিবলাকে সামনে করে মৃত ব্যক্তিদের জন্য দু‘আ করতে হবে এবং দু‘আ শেষে হাত
মুখে মুছবে না। (দেখুন ‘‘আহকামুল জানায়েয’’ মাসআলা নং
১২০ ও পৃষ্ঠা নং ২৪৬)।
(১৩) তোফায়েল -এর গোত্রের জনৈক ব্যক্তি তার সাথে
হিজরত করেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সে তার কাঁধের রগ কেটে ফেলে এবং মৃত্যুবরণ
করেন। তোফায়েল একদা স্বপ্নে তাকে জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহ আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন?
তিনি বললেন, নাবী ﷺ-এর নিকট হিজরত করার কারণে
আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তোফায়েল রাযিঃ) বললেন, আপনার দু’হাতের খবর কী? তিনি
বললেন, আমাকে বলা হয়েছে, তুমি যে অংশ নিজে নষ্ট করেছ, তা আমি কখনো ঠিক করব না। এ স্বপ্ন
তোফায়েল রাযিঃ) রসূল সা) -এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি তার জন্য দু’হাত তুলে ক্ষমা চাইলেন।
হাদীসটি য‘ঈফ। (য‘ঈফ আদাবুল মুফরাদ হা/৬১৪, পৃঃ ২১০)।
প্রিয় পাঠক!
উপরোক্ত য‘ঈফ হাদীস সমূহের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে বুঝা যায় যে, কোনো কোনো সময় সালাতের
পর এককভাবে হাত তুলে দু‘আ করা যায়। কিন্তু য‘ঈফ হওয়ার কারণে হাদীসগুলো রসূল ﷺ-এর
কি-না, তা স্পষ্ট নয়। সে কারণে এর উপর ‘আমল করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। বাংলা লিখনী
জগতের রত্ন মাওলানা আব্দুর রহীম বলেন, কেবলমাত্র সহীহ হাদীস ব্যতীত অন্য কোনো হাদীস
গ্রহণ করা যাবে না। এ কথায় হাদীসের সকল ইমাম একমত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। (হাদীস সংকলনের ইতিহাস, পৃঃ ৪৪৫)।
সিরিয়ার মুজাদ্দেদ আল্লামা জামালুদ্দীন কাসেমী,
ইমাম বুখারী, মুসলিম, ইয়াহইয়া, ইবনু মুঈন, ইবনুল আরাবী, ইবন হযম ও ইবনু তায়মিয়া রহঃ)
সহ অনেক হাদীসের পন্ডিত দৃঢ়কণ্ঠে ব্যক্ত করেছেন, ফাযীলাত কিংবা আহকাম কোনো ব্যাপারেই
য‘ঈফ হাদীস ‘আমলযোগ্য নয়। (ক্বাওয়াইদুত তাওহীদ পৃঃ ৯৫)।
যারা সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করার পক্ষে
মত পোষণ করেন, তারা পবিত্র কুরআন থেকে কিছু
আয়াত এবং কিছু য‘ঈফ হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। নিম্নে তাদের দলীল সমূহের পর্যালোচনা
তুলে ধরা হ’ল।
কুরআন থেকে দলিল পেশ করে থাকে
(১) “তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমার নিকট দু‘আ কর,
আমি তোমাদের দু‘আ কবূল করব। যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ‘ইবাদত হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে,
তারা অচিরেই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”। (সূরাহ্ মু’মিন ৬০)।
(২) “হে নাবী! আমার বান্দারা যদি আমার সম্পর্কে
নিকট জিজ্ঞেস করে, তাহলে আপনি বলে দিন যে, আমি তাদের নিকটেই আছি। যে আমাকে ডাকে, আমি
তার ডাক শ্রবণ করি এবং তার ডাকে সাড়া দেই। কাজেই তাদের আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার
উপর ঈমান আনা উচিত। তবেই তারা সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে”। (সূরাহ্ বাক্বারাহ ১৮৬)।
(৩) “তোমরা তোমাদের রবকে ভীতি ও বিনয় সহকারে গোপনে
ডাক, নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না”। (সূরাহ্
আ‘রাফ ৫৫) ।
(৪) “অতঃপর যখন অবসর পাও পরিশ্রম কর এবং তোমার পালনকর্তার প্রতি মনোনিবেশ কর”। (সূরাহ্ ইন্শিরাহ ৭-৮)।
উল্লিখিত আয়াতসমূহ হাত তোলার প্রমাণে পেশ করা
হয়। অথচ আয়াতসমূহের কোথাও হাত তোলার প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। বরং সাধারণভাবে আল্লাহর
নিকট প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে মাত্র। তাছাড়া কোন মুফাসসিরই উক্ত আয়াতসমূহের তাফসীর
করতে গিয়ে হাত তুলার কথা বলেননি। এমনকি এ সম্পর্কিত কোন হাদীসও দলীল হিসেবে পেশ করেননি।
সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, উপরে বর্ণিত আয়াতসমূহ ফরয সলাতের পর সম্মিলিতভাবে
হাত তুলে দু‘আ করা প্রমাণ করে না। কাজেই হাত তুলে দু‘আ করার প্রমাণে অত্র আয়াতগুলো
পেশ করা শরী‘আত বিকৃত করার নামান্তর মাত্র।
ফরয সলাতের পরে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করা সম্বন্ধে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ
আলেমগণের অভিমত
(১) আহমাদ ইবনু তায়মিয়াহ রহঃ)-কে ফরয সলাতের পর
ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা জায়েয কি-না জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, ‘ছালাতের
পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা বিদ‘আত। রসূলুল্লাহﷺ-এর
যুগে এরূপ দু‘আ ছিল না। বরং তাঁর দু‘আ ছিল সলাতের মধ্যে। কারণ সলা-তের মধ্যে) মুসল্লী
স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে আর নীরবে কথা বলার সময় দু‘আ করা যথাযথ’। (মাজমূ‘আ
ফাতাওয়া ২২/ ৫১৯ পৃঃ)।
(২) শায়খ আবদুল্লাহ বিন বায রহঃ) বলেন, ‘পাঁচ
ওয়াক্ত ফরয সলাত ও নফল সলাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা স্পষ্ট বিদ‘আত। কারণ এরূপ দু‘আ
রসূলুল্লাহﷺ-এর যুগে এবং তাঁর ছাহাবীদের যুগে ছিল না।
যে ব্যক্তি ফরয সলাতের পর অথবা নফল সলাতের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করে সে যেন আহলে সুন্নাত
ওয়াল জামা‘আতের বিরোধিতা করে’। (হাইয়াতু কেবারিল ওলামা
১/২৪৪ পৃঃ)।
তিনি আরো বলেন, ‘ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে
দু‘আ করার প্রমাণে রসূলুল্লাহﷺ থেকে, কথা, কর্ম ও অনুমোদনগত
কাওলী, ফে‘লী ও তাক্বরীরী) কোন হাদীস সম্পর্কে আমরা অবগত নই। আর একমাত্র রসূলুল্লাহﷺ-এর
আদর্শের অনুসরণেই রয়েছে সমস্ত কল্যাণ। সলাত আদায়ের পর ইমাম-মুক্তাদীর দু‘আ সম্পর্কে
রসূল ﷺ-এর
আদর্শ সুস্পষ্ট আছে, যা তিনি সালামের পর পালন করতেন। চার খলীফাসহ ছাহাবীগণ এবং তাবেঈগণ
যথাযথভাবে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেছেন। অতঃপর যে ব্যক্তি তাঁর আদর্শের বিরোধিতা করবে,
তাঁর আমল পরিত্যাজ্য হবে। রসূলুল্লাহﷺ
বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নির্দেশ ব্যতীত কোন আমল করবে তা পরিত্যাজ্য। কাজেই যে ইমাম
হাত তুলে দু‘আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ হাত তুলে আ-মীন আ-মীন বলবেন তাদের নিকটে এ সম্পর্কে
গ্রহণযোগ্য দলীল চাওয়া হবে। অন্যথায় তারা দলীল দেখাতে ব্যর্থ হ’লে) তা পরিত্যাজ্য’।
(হাইয়াতূ কেবারিল ওলামা ১/২৫৭)।
(৩) বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ আল্লামা
শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী রহঃ) বলেন, দু‘আয়ে কুনূতে হাত তুলার পর মুখে হাত মুছা বিদ‘আত।
সলাতের পরেও ঠিক নয়। এ সম্পর্কে যত হাদীস রয়েছে, এর সবগুলিই য‘ঈফ। এজন্য ইমাম আযউদ্দীন
বলেন, সলাতের পর হাত তুলে দু‘আ করা মূর্খদের কাজ। (ছিফাতু
ছালাতিন নাবী ﷺ পৃঃ
১৪১) ।
(৪) শায়খ ওছায়মিন রহঃ) বলেন, সলাতের পর দলবদ্ধভাবে
দু‘আ করা বিদ‘আত। যার প্রমাণ রসূল ﷺ
ও তাঁর সহাবীগণ থেকে নেই। মুসল্লীদের জন্য বিধান হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে
যিকর করবে। (ফাতাওয়া ওছায়মীন, পৃঃ ১২০) ।
(৫) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহঃ) বলেন, ফরয
সলাতের পর হাত তুলে দু‘আ করা ব্যতীত অনেক দু‘আই রয়েছে। (রফুস
সামী পৃঃ ৯৫) ।
(৬) আল্লামা আব্দুল হাই লক্ষ্ণৌভী রহঃ) বলেন,
বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা যে, ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেন এবং মুক্তাদীগণ
‘আ-মীন’ ‘আ-মীন’ বলেন, এ প্রথা রসূল ﷺ-এর
যুগে ছিল না। (ফৎওয়ায়ে আব্দুল হাই, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০০)
।
(৭) আল্লামা ইউসুফ বিন নূরী বলেন, অনেক স্থানেই
এ প্রথা চালু হয়ে গেছে যে, ফরয সলাতের সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত
করা হয় যা রসূল ﷺ হ’তে প্রমাণিত নয়। (মা‘আরেফুস সুনান, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৪০৭) ।
(৮) আল্লামা আবুল কাসেম নানুতুবী রহঃ) বলেন, ফরয
সলা-তের সালাম ফিরানোর পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা নিকৃষ্ট বিদ‘আত।
(এমাদুদ্দীন পৃঃ ৩৯)।
(৯) আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম ৬৯১-৮৫৬ হিঃ) বলেন,
ইমাম পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করা কখনও
রসূল ﷺ-এর
তরীকা নয়। এ সম্পর্কে একটিও সহীহ অথবা হাসান হাদীস নেই। (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল
মা‘আদ বৈরুত ছাপা ১৯৯৬, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪৯ ‘ফরয ছালাতের পর দু‘আ করা সম্পর্কে লেখকের
মতামত’ অনুচ্ছেদ)।
(১০) আল্লামা মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী রহঃ) বলেন,
ফরয সলাতের সালাম ফিরানোর পর ইমামগণ যে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেন, তা কখনও রসূল ﷺ
করেননি এবং এ সম্পর্কে কোন হাদীসও পাওয়া যায় না। (ছিফরুস
সা‘আদাত, পৃঃ ২০)।
(১১)
আল্লামা শাত্বেবী ৭০০ হিঃ) বলেন, শেষ কথা হ’ল এই যে, ফরয সলাতের পর সম্মিলিতভাবে রসূল
ﷺ
নিজেও মুনাজাত করেননি, করার আদেশও দেননি। এমনকি তিনি এটা সমর্থন করেছেন, এ ধরনেরও কোন
প্রমাণ পাওয়া যায় না। (আল-ই‘তেসাম, ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৫২)
।
(১২) আল্লামা ইবনুল হাজ মাক্কী বলেন, নিঃসন্দেহে
এ কথা বলা চলে যে, রসূল ﷺ ফরয সলাতের সালাম ফিরানোর
পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেছেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন আ-মীন বলেছেন, এরূপ কখনো দেখা যায় না।
চার খলীফা থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই এ ধরনের কাজ, যা রসূল ﷺ
করেননি, তাঁর সহাবীগণ করেননি, নিঃসন্দেহে তা না করা উত্তম এবং করা বিদ‘আত। (মাদখাল, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৮৩)।
(১৩) আল্লামা আশরাফ আলী থানাবী রহঃ) বলেন, ফরয
সলাতের পর ইমাম সাহেব দু‘আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন আ-মীন বলবেন, এ সম্পর্কে ইমাম
আরফাহ এবং ইমাম গাবরহিনী বলেন, এ দু‘আকে সলাতের সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব মনে করা না
জায়েয। (ইস্তিহবাবুদ দাওয়াহ পৃঃ ৮) ।
(১৪) আল্লামা মুফতী মোহাম্মাদ শফী রহঃ) বলেন, বর্তমানে
অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস হয়ে গেছে যে, কিছু আরবী দু‘আ মুখস্থ করে নিয়ে সলাত শেষ
করেই দু’হাত উঠিয়ে) ঐ মুখস্থ দু‘আগুলি পড়েন। কিন্তু যাচাই করে দেখলে দেখা যাবে যে,
এ দু‘আগুলোর সারমর্ম তাদের অনেকেই বলতে পারে না। আর ইমামগণ বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত
যে, অনেক মুক্তাদী এ সমস্ত দু‘আর অর্থ মোটেই বুঝে না। কিন্তু না জেনে না বুঝে আ-মীন,
আ-মীন বলতে থাকে। এ সমস্ত তামাশার সারমর্ম হচ্ছে কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র। প্রার্থনার
যে রূপ বা প্রকৃতি, তা এতে পাওয়া যায় না। (মা‘আরেফুল কুরআন ৩য় খন্ড, পৃঃ ৫৭৭)।
আপনি কোন্ তরীকা মেনে চলবেন
আল্লাহ (সুব:) কর্তৃক নাজিলকৃত বিধান অনুযায়ী
মানব জাতির মুক্তির পথ কেবল মাত্র একটি। আল্লাহ (সুব:) বলেন:
অর্থ: “আর এটিই আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা
তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন
করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।”
(সুরা আনআ’ম ৬:১৫৩)।
এই আয়াতে আল্লাহ (সুব:) একটি তরীকাকেই অনুসরণ
করতে বলেছেন।
আল্লাহ (সুব:) আরো বলেন:
অর্থ: “আর সঠিক পথ বাতলে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব,
এবং পথের মধ্যে কিছু আছে বক্র। আর তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সকলকে হিদায়াত
করতেন।” (সুরা নহল ১৬:৯)।
রাসূলুল্লাহ (সা:) থেকে ‘সিরাতে মুস্তাকিম’
সর্ম্পকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে:
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাদেরকে বুঝাবার উদ্দেশে)
একটি (সরল) রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা আল্লাহর পথ। এরপর তিনি এ রেখার ডানে ও বামে
আরো কয়েকটি রেখা টানলেন এবং বললেন, এগুলোও পথ। এসব প্রত্যেক পথের উপর শায়ত্বন (শয়তান)
দাঁড়িয়ে থাকে। এরা (মানুষকে) তাদের পথের দিকে আহবান করে। অতঃপর তিনি তাঁর কথার প্রমাণ
স্বরূপ কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই এটাই আমার সহজ সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথের
অনুসরণ করে চলো ....’’ (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬: ১৬৩) আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৬৬, নাসায়ী তাঁর ‘কুবরা’ গ্রন্থে
১১১৭৪, দারিমী ২০২, মুসনাদে আহমদ ৪১৩১, ৪১৪২; সুনান আন নাসায়ী ১১১৭৫)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:
হুযাইফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে
কুরআন পাঠকারী সমাজ! তোমরা (কুরআন ও সুন্নাহর উপর) সুদৃঢ় থাক। নিশ্চয়ই তোমরা অনেক পশ্চাতে
পড়ে আছ। আর যদি তোমরা ডানদিকের কিংবা বামদিকের পথ অনুসরণ কর তাহলে তোমরা সঠিকপথ বহু
দূরে সরে পড়বে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৮২,
আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ)
ইরশাদ করেছেন; আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে যে অস্বীকার করল (সে ব্যতীত)।
সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! অস্বীকার করল কে? রাসূল (সাঃ) বললেন,
যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার আনুগত্য করল না সেই
অস্বীকার করল (ফলে সে জাহান্নামে যাবে)। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ), ৭২৮০, আধুনিক প্রকাশনী-৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৬৭৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
রাসুল সাঃ বলেন, তোমাদের নিকট দু’টি বস্তু
ছেড়ে যাচ্ছি; যতদিন তোমরা ঐ দু’টি বস্তুকে মযবূতভাবে ধরে থাকবে, ততদিন (তোমরা) পথভ্রষ্ট
হবে না। সে দু’টি বস্তু হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত’।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
মালিক ইবনু আনাস (রাঃ) (রহঃ) হতে মুরসালরূপে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের
মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ
পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না- আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসূলের হাদীস। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৮৬, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৫৯৪)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
রাসুল সাঃ বলেন,
আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে,
সর্বোত্তম কালাম হল আল্লাহর কিতাব, আর সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথ নির্দেশনা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো নতুনভাবে উদ্ভাবিত
পন্থাসমূহ। ’’তোমাদের কাছে যার ওয়াদা দেয়া হচ্ছে তা ঘটবেই, তোমরা ব্যর্থ করতে পারবে
না’’- (সূরাহ আন’আম ৬/১৩৪)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭২৭৭, ৬০৯৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আল্লাহ তাঁর বান্দার শুধুই অন্তর ও আমল দেখেন,
বাহ্যিক চাল-চলন ও বিত্ত-বৈভবের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না।
আমর আন নাকিদ (রহঃ)...আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই
আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক চাল-চলন ও বিত্ত-বৈভবের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তিনি
দৃষ্টি দিয়ে থাকেন তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৩৭, ৬৪৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৩১১, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
সম্মানিত মুছল্লীবৃন্দঃ উপরোক্ত আলোচনায় আমরা
জানতে পারলাম যে, রাসুল সা. ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর সাহাবীদের সাথে নিয়ে কখনই
সম্মিলিতভাবে দুই হাত তুলে মোনাজাত করেননি। দুই হাত তুলে মোনাজাতের স্বপক্ষে যেসব দলিল
আছে সেগুলো সালাতে সালাম ফিরানোর পর দুই হাত
তুলে সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করার পক্ষে প্রমান করে না। অতএব রাসুল সা. যা করেননি তা
সওয়াবের আশায় নতুনভাবে আবিষ্কার করলে তা হবে বিদআত। যারা বিদআতি আমলের সাথে জড়িত থাকবে
তাদের ফরজ, নফল কোনো আমল আল্লাহর নিকট গৃহিত হবে না।
(ক) ইব্রাহীম
তাইমী (রহ.)-এর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং
বললেন, আমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব ও এই সহীফায় যা আছে, এছাড়া অন্য কোন কিতাব নেই, যা
আমরা পাঠ করে থাকি। তিনি বলেন, এ সাহীফায় রয়েছে, যখমের দন্ড বিধান, উটের বয়সের বিবরণ
এবং আইর পর্বত থেকে সওর পর্যন্ত মদিনা্ হারাম হবার বিধান। যে ব্যক্তি এর মধ্যে বিদ্‘আত
উদ্ভাবণ করে কিংবা বিদ্আতীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত।
আল্লাহ তার কোন নফল ও ফরজ ‘ইবাদাত কবূল করেন না। আর যে নিজ মাওলা ব্যতীত অন্যকে মাওলা
হিসেবে গ্রহণ করে, তার উপর একই রকম লা‘নত। আর নিরাপত্তা দানের ক্ষেত্রে সর্বস্তরের
মুসলিমগণ একইভাবে দায়িত্বশীল এবং যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের চুক্তি ভঙ্গ করে তার উপরও
তেমনি অভিসম্পাত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৭২,
১১১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কুরআন এবং এ কাগজে যা লিখা আছে তা ছাড়া কোন
কিছু লিপিবদ্ধ করিনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আয়ির পর্বত হতে এ
পর্যন্ত মদিনার হরম এলাকা। যে কেউ দ্বীনের ব্যাপারে বিদ্‘আত উদ্ভাবণ করে কিংবা কোন
বিদ্‘আতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ তা‘আলা, ফেরেশতা ও সকল মানুষের লা’নত। তার কোন
ফরজ কিংবা নফল ‘ইবাদাত গৃহীত হবে না। আর সকল মুসলিমের পক্ষ হতে নিরাপত্তা একই স্তরের।
সাধারণ মুসলিম নিরাপত্তা দিলে সকলকে তা রক্ষা করতে হবে। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দেয়া
নিরাপত্তা বাধাগ্রস্ত করবে তার উপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত এবং ফেরেশতামন্ডলী ও সকল মানুষের।
তার কোন নফল কিংবা ফরজ ‘ইবাদাত গৃহীত হবে না। আর যে স্বীয় মনিবের অনুমতি ব্যতীত অন্যদের
সঙ্গে বন্ধুত্বের চুক্তি করে, তার উপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত এবং ফেরেশতামন্ডলী ও সকল
মানুষের। তার কোন নফল কিংবা ফরজ ‘ইবাদাত কবূল হবে না। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৭৯, ১১১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৫২
প্রথমাংশ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি ওদের কৃতকর্মগুলির
প্রতি অভিমুখ করে সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণা (স্বরূপ নিষ্ফল) করে দেব”। (সুরা ফুরকান ২৩)।
বিদআতিদেরকে হাওযে কাওসার থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে
(ক) ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন।
তিনি (সা.) বলেছেন: (হে লোক সকল!) কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে খালি পায়ে, খালি দেহে ও
খতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। তারপর তিনি (সা.) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন-
“আমি তোমাদেরকে আবার আমার কাছে ফিরিয়ে আনব যেমন প্রথমবার তৈরি করেছিলাম, এটা আমার
প্রতিশ্রুতি, যা আমি অবশ্যই পূরণ করব"- (সূরাহ আল আম্বিয়া ২১: ১০৪)। [অতঃপর রাসূল
(সা.) বললেন,] সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরিধান করানো হবে, তিনি হবেন ইবরাহীম আলায়হিস
সালাম। তিনি (সা.) আরো বলেছেন, আমি দেখব যে, আমার উম্মতের কিছুসংখ্যক লোককে গ্রেফতার
করে বামদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন আমি বলব, তারা যে আমার উম্মতের কিছু লোক, তারা
যে আমার উম্মতের কিছু লোক। (কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?) তখন আল্লাহ বলবেন, যখন থেকে আপনি
তাদেরকে রেখে পৃথক হয়ে চলে এসেছেন, তখন হতেই তারা দীনকে পরিত্যাগ করে উল্টা পথে চলেছিল।
তিনি (সা.) বলেন, তখন আল্লাহর নেক বান্দা ’ঈসা আলায়হিস সালাম যেমন বলেছিলেন অনুরূপ
বলব, ’আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম ততদিনই আমি তাদের অবস্থা অবহিত ছিলাম....আপনি সর্বশক্তিমান
ও মহাজ্ঞানী’ পর্যন্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৩৫,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৪৭, ৩৩৪৯, ৪৩৩৭, ৪৬২৫, ৪৬২৬, ৪৬৪০, ৬৫২৪, ৬৫২৬, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০৯৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৮৬০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪২৩, নাসায়ী ২০৮১, সহীহুল জামি ৭৮৭০,
সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩৫৭৬, সিলসিলাতুস সহীহাহ ৩৪৬৯, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ
৩৪৩৯৫, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ ৪৮৩, মুসনাদে বাযযার ২০২৩, মুসনাদে আহমাদ ১৯৫০, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৩১৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের কাছে পৌছব। যে ব্যক্তি
আমার কাছে পৌছবে, সে তার পানি পান করবে। আর যে একবার পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত
হবে না। আমার কাছে এমন কিছু লোক আসবে যাদেরকে আমি চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে
পারবে। অতঃপর আমার ও তাদের মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, তারা তো আমার উম্মত।
তখন আমাকে বলা হবে, আপনি জানেন না, আপনার অবর্তমানে তারা যে কি সকল নতুন নতুন মত পথ
তৈরি করেছে। তা শুনে আমি বলব, যারা আমার অবর্তমানে আমার দীনকে পরিবর্তন করেছে, তারা
দূর হোক (অর্থাৎ এ ধরনের লোক আমার শাফা’আত ও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৭১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৫৮৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৯৬, সুনান ইবনু মাজাহ
৩৯৪৪, সহীহুল জামি ২৪৬৮, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩১৬৬৭, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ
৭৭৯, মুসনাদে আহমাদ ৩৮১২, আবূ ইয়া'লা ৭৪৭৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৯৮৫, শু’আবূল ঈমান
৩৬০, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৪০৯৯, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৬৭৩,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৭৪, ইসলামিক সেন্টার ৫৮০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বিদআতীদের তওবাও কবুল হয় না যতক্ষণ না---
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন, “আল্লাহ প্রত্যেক বিদআতীর তওবা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত রাখেন (গ্রহণ করেন না),
যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার বিদআত বর্জন না করেছে।” (ত্বাবারানীর
আওসাত্ব ৪২০২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৯৪৫৭, সহীহ তারগীব ৫৪নং)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
অতএব সকল পথ মত তরিকা ছেড়ে দিয়ে রাসুল সা.
এর দেখানো তরিকায় চলবো। ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর বেশ কিছু আমল আছে সেগুলো পাঠ করার
পর একাকী দুই হাত তুলে মোনাজাত করবো।
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
.................................................................
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে
PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment