Search This Blog

Wednesday, September 25, 2019

অন্যায়-অত্যাচারকারীর ভয়াবহ পরিনতি


 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

অন্যায়-অত্যাচারকারীর ভয়াবহ পরিনতি

কারোর জন্য অন্যের উপর যে কোনভাবে যুলুম, অত্যাচার অথবা অন্যায় মূলক আক্রমণ হারাম ও কবীরা গুনাহ্। কাউকে মারা, হত্যা করা, আহত করা, গালি দেয়া, অভিসম্পাত করা, ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া, দুর্বলের উপর হাত উঠানো চাই সে হোক নিজের কাজের ছেলে কিংবা নিজের কাজের মেয়ে অথবা নিজ স্ত্রী-সন্তান; তেমনিভাবে জোর করে কারোর কোন অধিকার হরণ ইত্যাদি ইত্যাদি যুলুমেরই অন্তর্গত।

জুলুম একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো নির্যাতন বা অবিচার। সাধারণ অর্থে কাউকে অন্যায়ভাবে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক বা যেকোনো পন্থায় অবিচার বা নির্যাতন করাকে জুলুম বলে। তবে জুলুমের সবচেয়ে উত্তম সংজ্ঞা হলো, কোনো কিছু নিজ স্থান বাদ দিয়ে অন্য কোনো স্থানে প্রয়োগ করা বা রাখা।

এই সংজ্ঞাটি ব্যাপক অর্থবহ। সব ধরনের জুলুম এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ্ ইবনু কা’নাব (রহঃ)...জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অত্যাচার করা থেকে বিরত থাক। কেননা কিয়ামত দিবসে অত্যাচার অন্ধকারে পরিণত হবে। তোমরা কৃপণতা থেকে সাবধান হও। কেননা এ কৃপণতাই তোমাদের আগেকার কাওমকে ধ্বংস করেছে। এ কৃপণতা তাদের খুন-খারাবী ও রক্তপাতে উৎসাহ যুগিয়েছে এবং হারাম বস্তুসমূহ হালাল জ্ঞান করতে প্রলোভন দিয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪০, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুলুম কিয়ামতের দিন অনেক অন্ধকারের রূপ ধারণ করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে যালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে,আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন।যে কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের বিপদ দুর করবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪২, ৬৯৫১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে যালিম হোক অথবা মাযলুম। (অর্থাৎ যালিম ভাইকে যুলুম থেকে বিরত রাখবে এবং মাযলুম ভাইকে যালিমের হাত হতে রক্ষা করবে)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪৩, ২৪৪৪, ৬৯৫২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তারপর তিনি উল্লেখ করলেন, অসুস্থদের খোঁজখবর নেয়া, জানাযায় পিছে পিছে যাওয়া, হাঁচির জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ্ বলা, সালামের উত্তর দেয়া, অত্যাচারিতকে সাহায্য করা, আহবানকারীর প্রতি সাড়া দেয়া, কসমকারীকে দায়িত্ব মুক্ত করা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪৫, ১২৩৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জুলুম একটি সামাজিক ব্যাধি। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এটি।

অন্যের ওপর অন্যায় বা অবিচার করে নিজের পতন ও ধ্বংস ডেকে আনে জালিমরা। আপদ-বিপদ ও দুর্যোগ-বিশৃঙ্খলায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো জুলুম। তাই আল্লাহ তাআলা সবাইকে তা থেকে নিষেধ করেছেন। এমনকি আল্লাহ নিজের জন্যও এটিকে হারাম করেছেন।

আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু বাহরাম আদ দারিমী (রহঃ)....আবু যার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ওহে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজ সত্তার উপর অত্যাচারকে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম বলে ঘোষণা করছি। অতএব তোমরা একে অপরের উপর অত্যাচার করো না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে ন্যায়পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো মানবজীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায়পন্থা, অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়দের হক প্রদানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে নিষেধ করেন। (সুরা: নাহল, আয়াত ৯০)।

অন্যায়-অত্যাচারকারীর ভয়াবহ পরিনতি

যুলুম পারস্পরিক বন্ধুত্ব বিনষ্ট করে। আত্মীয়-স্বজনের মাঝে বৈরিতা সৃষ্টি করে। মানুষের মাঝে হিংসা ও বিদ্বেষের জন্ম দেয় এবং এরই কারণে ধনী ও গরীবের মাঝে ধীরে ধীরে ঘৃণা ও শত্রুতা জেগে উঠে। তখন উভয় পক্ষই দুনিয়ার বুকে অশান্তি নিয়েই জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা যালিমদের জন্য জাহান্নামে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন। যা তাকে গ্রহণ করতেই হবে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘আমি যালিমদের জন্য জাহান্নাম প্রস্ত্তত রেখেছি। যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে। তারা পানি চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানি। যা তাদের মুখমণ্ডল পুড়িয়ে দিবে। এটা কতই না নিকৃষ্ট পানীয় এবং সে জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়’’। (সুরা কাহ্ফ : ২৯)।

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন: “অত্যাচারীরা শীঘ্রই জানবে কোথায় তাদের গন্তব্যস্থল!’’ (সুরা শু‘আরা’: ২২৭)।

কেউ কেউ কোন যালিমকে অনায়াসে মানুষের উপর যুলুম করতে দেখলে এ কথা ভাবে যে, হয়তো বা সে ছাড় পেয়ে গেলো। তাকে আর কোন শাস্তিই দেয়া হবে না। না, ব্যাপারটা কখনোই এমন হতে পারে না। বরং আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে কিয়ামতের দিনের কঠিন শাস্তির অপেক্ষায় রেখেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: ‘‘কাজেই মানুষকে সতর্ক কর সেদিনের ব্যাপারে যেদিন তাদের উপর ‘আযাব আসবে। যারা জুলুম করেছিল তারা তখন বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে অল্পদিনের জন্য সময় দাও, আমরা তোমার আহবানে সাড়া দিব আর রাসূলদের কথা মেনে চলব।’ (তখন তাদেরকে বলা হবে) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলনি যে, তোমাদের কক্ষনো পতন ঘটবে না? অথচ তোমরা সেই লোকগুলোর বাসভূমিতে বসবাস করছিলে যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল আর তোমাদেরকে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয়া হয়েছিল আমি তাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিলাম। আর আমি বহু উদাহরণ টেনে তোমাদেরকে বুঝিয়েও দিয়েছিলাম। তারা যে চক্রান্ত করেছিল তা ছিল সত্যিই ভয়ানক, কিন্তু তাদের চক্রান্ত আল্লাহ্র দৃষ্টির ভিতরেই ছিল, যদিও তাদের চক্রান্তগুলো এমন ছিল যে, তাতে পর্বতও টলে যেত। (অবস্থা যতই প্রতিকূল হোক না কেন) তুমি কক্ষনো মনে কর না যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলগণকে দেয়া ওয়া‘দা খেলাপ করবেন, আল্লাহ মহা প্রতাপশালী, প্রবল প্রতিশোধ গ্রহণকারী।’’ (সুরা ইবরাহীমঃ ৪২-৪৭)।

মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বিত্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন, নিপীড়ন করে। ফলে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে নেমে আসে নানা বিপদ-আপদ। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন,

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)....হিশাম ইবনু হাকীম ইবনু হিযাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তিনি একবার সিরিয়ায় কয়েকজন মানুষের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদেরকে উত্তপ্ত সূৰ্যতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল এবং তাদের মাথার উপর গরম তেল ঢালা হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, এটা কী? তাকে বলা হলো যে, তাদেরকে খাযনার জন্যে সাজা দেয়া হচ্ছে। তখন তিনি বললেন, হুশিয়ার! আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা সেসব লোকেদের সাজা দিবেন, যারা এ জগতে মানুষকে (অন্যায়) সাজা দেয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪১৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৪৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত: ২২৭)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না।’ (সুরা: আনআম, আয়াত: ৫৭)।

জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

আবূ বকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুলুম এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মত মারাত্মক আর কোন গুনাহ নাই, যার শাস্তি আল্লাহ ত্বরিতে দুনিয়াতে দেন এবং আখেরাতের জন্যও জমা রাখেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২১১, সুনান আততিরমিযী ২৫১১, সুনান আবূ দাউদ ৪৯০২, সহীহাহ ৯১৭, আত-তালীকুর রাগীব ৩/২২৮, সুনান ইব্নু মাজাহ্ ৪২৮৬; ইব্নু হিববান ৪৫৫, ৪৫৬ বায্যার, হাদীস ৩৬৯৩; আহমাদ ২০৩৯০, ২০৩৯৬, ২০৪১৪, ১৯৮৬১, ১৯৮৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ৪১)।

রাসুল সাঃ বলেন,

 আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ)....আবূ মাসউদ বাদরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আমার এক ক্রীতদাসকে চাবুক দিয়ে প্রহার করছিলাম। হঠাৎ আমার পিছনে থেকে একটি শব্দ শোনলাম, হে আবূ মাসউদ! জেনে রেখো! রাগের কারণে আমি শব্দটি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম না। বর্ণনাকারী বলেন, যখন তিনি আমার কাছাকাছি এলেন তখন দেখতে পেলাম, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তিনি বলছেনঃ হে আবূ মাসউদ! তুমি জেনে রেখো, হে আবূ মাসউদ! তুমি জেনে রেখো! বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমি চাবুকটি আমার হাত থেকে ফেলে দিলাম। এরপর তিনি বললেন, হে আবূ মাসউদ! তুমি জেনে রেখো যে, এ গোলামের উপর তোমার ক্ষমতার চেয়ে তোমার উপর আল্লাহ তা’আলা অধিক ক্ষমতাবান। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, এরপর কখনও কোন কৃতদাসকে আমি প্রহার করবো না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪১৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪১৬০, ইসলামিক সেন্টার ৪১৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....হিশাম ইবনু হাকীম ইবনু হিযাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তিনি একবার সিরিয়ায় কয়েকজন মানুষের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদেরকে উত্তপ্ত সূৰ্যতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল এবং তাদের মাথার উপর গরম তেল ঢালা হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, এটা কী? তাকে বলা হলো যে, তাদেরকে খাযনার জন্যে সাজা দেয়া হচ্ছে। তখন তিনি বললেন, হুশিয়ার! আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা সেসব লোকেদের সাজা দিবেন, যারা এ জগতে মানুষকে (অন্যায়) সাজা দেয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪১৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৪৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কারোর মধ্যে বিনয় ও নম্রতা না থাকলেই সে কারোর উপর উদ্যত ও আক্রমণাত্মক হতে পারে। এ কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা সকলকে বিনয়ী ও নম্র হতে আদেশ করেন।

আবু আম্মার হুসায়ন ইবনু হুরায়স (রহঃ)....বানী মুজাশি’ এর ভাই ইয়ায ইবনু হিমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ প্রদানকালে আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা আমাকে আদেশ দিয়েছেন। তারপর তিনি কাতাদাহ্ (রহঃ) হতে হিশাম এর সানাদে বর্ণিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে এতে এ কথা বর্ধিত উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা আমার প্রতি ওয়াহী নাযিল করেছেন যে, তোমরা বিনয়ী হও, কারো উপর কেউ যেন গর্ব না করে এবং কারো প্রতি যেন কেউ যুলম না করে। এ হাদীসে এটাও রয়েছে যে, তারা তোমাদের এমন অনুগামী যে, পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ সন্ধান করে না।

কাতাদাহ (রহঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আবু আবদুল্লাহ! এমনটি কি হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। জাহিলিয়াতের যুগে আমি তাদেরকে পেয়েছি। আর এরূপ এক গোত্রে কোন এক লোক ছিল। সে বকর চরাতো। দাসী ছাড়া সেখানে তার কাছে কেউ যেত না। তার সাথেই সে সহবাস করত। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯৪৬, ইসলামিক সেন্টার ৭০০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করলে

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ এবং আবূল আহওয়াস মুহাম্মাদ ইবনু হাইয়্যান (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়, আর যে ব্যক্তি আমাদের ধোকা দিবে সেও আমাদের দলভুক্ত নয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৭৫, আহমাদ ৮১৫৯, ২৮৫০০, ইবনুস সালাম এর তাখরীজুল ঈমান ৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুই মুসলিম পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত হলে

(ক) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দু’জন মুসলিম পরস্পর সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হলে হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’ মুসলিম তাদের তরবারিসহ পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত হলে হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো হত্যাকারী, কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী হলো? তিনি বলেনঃ সেও তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করতে উদ্যত ছিলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৬৪, নাসায়ী ৪১১৮, ৪১১৯, ৪১২৪, আহমাদ ১৯১৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন আল জাহদারী (রহঃ).....আহনাফ ইবনু কায়স (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি বের হলাম। এ লোকটিকে সহযোগিতা করা আমার অভিপ্রায় ছিল। এমন সময় আবু বাকরাহ (রাযিঃ) এর সঙ্গে আমার দেখা হলো। তখন তিনি বললেন, হে আহনাফ! তুমি কোথায় যেতে চাচ্ছ? তিনি বলেন, আমি বললাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচাত ভাই আলী (রাযিঃ)-কে সহযোগিতা করার জন্য আমি যেতে চাচ্ছি। আহনাফ (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, হে আহনাফ চলে যাও। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি এ কথা বলতে শুনেছি, যখন দু’জন মুসলিম তরবারি নিয়ে পরস্পর যুদ্ধ করে তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি দু’জনেই জাহান্নামী হবে। এ কথা শুনে আমি বললাম অথবা বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যাকারীর অবস্থা তো এ-ই, তবে নিহত ব্যক্তির অপরাধ কি? জবাবে তিনি বললেন, সে তার সাথীকে হত্যা করার প্রচেষ্টায় জড়িয়ে ছিল। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৮৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৬৫, নাসায়ী ৪১১৭, আহমাদ ১৯৯১১, সহীহাহ ১২৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯৮৮, ইসলামিক সেন্টার ৭০৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

মানুষের সম্পদ ধ্বংস করার ইচ্ছে পোষণ করলে

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের সম্পদ ধ্বংস করার অভিপ্রায় গ্রহণ করে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৪১১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩৮৭, আহমাদ ৮৫১৬, ৯১৩৫, গায়াতুল মারাম ৩৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যের ক্ষতি করলে বা কষ্ট দিলে কিংবা অপমান করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করলে

(ক) আবূ সিরমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করবে, আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন এবং যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দিবে আল্লাহ তাকে কষ্ট দিবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৩৪২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৯৪০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৩৫, আহমাদ ১৫৩২৮, ইরওয়া ৮৯৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) সাহল ইবনু মু’আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো মু’মিনকে মুনাফিক থেকে রক্ষা করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার শরীর জাহান্নাম থেকে রক্ষার জন্য একজন ফিরিশতা প্রেরণ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করবে তাকে মহান আল্লাহ জাহান্নামের সেতুর উপর প্রতিরোধ ব্যবস্থা করবেন যতক্ষণ না তার কৃত কর্মের ক্ষতিপূরণ হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৮৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

যুলুমমূলক কাজে সহযোগিতা করলে অথবা যুলুমে সহায়তা করলে

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালেমদের সহযোগী হবে না, তাহলে আগুন (জাহান্নামের) তোমাদেরও স্পর্শ করবে।’ (সূরা হূদ : ১১৩)।

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কারো যুলুমমূলক মামলায় সহযোগিতা করে অথবা যুলুমে সহায়তা করে, তা থেকে নিবৃত্ত না হওয়া পর্যন্ত সর্বদাই সে আল্লাহর গযবে নিপতিত থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৩২০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৫৯৭, ইরওয়া ৭/৩৫০, সহীহাহ ৪৩৮, ১০২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

সন্ত্রাস, অপহরণ, দস্যুতা, ছিনতাই ও লুটতরাজ করলে

সন্ত্রাস, দস্যুতা, ছিনতাই, লুন্ঠন, অপহরণ, ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি কবীরা গুনাহ্গুলোর অন্যতম। চাই সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে হত্যা করা হোক অথবা নাই হোক। কারণ, তারা যমীনে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী। তবে সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে হত্যা করা হলে অবশ্যই হত্যাকারীদেরকে হত্যা করতে হবে। আর সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে হত্যা করা না হলে সে অঘটনগুলো সম্পাদনকারীদেরকে চারটি শাস্তির যে কোন একটি শাস্তি দিতে হবে। হত্যা করতে হবে অথবা ফাঁসী দিতে হবে অথবা এক দিকের হাত এবং অপর দিকের পা কেটে ফেলতে হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্দী করে রাখতে হবে যতক্ষণ না তারা খাঁটি তাওবা করে নেয়। এমনকি তারা শুধুমাত্র একজনকেই হত্যা করার ব্যাপারে কয়েকজন অংশ গ্রহণ করলেও তাদের সকলকেই হত্যা করা হবে। যদি তারা সরাসরি উক্ত হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘যারা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যুদ্ধ কিংবা প্রকাশ্য শত্রুতা পোষণ করে অথবা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিধি-বিধানের উপর হঠকারিতা দেখায় এবং (হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের মাধ্যমে) ভূ-পৃষ্ঠে অশান্তি ও ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা ফাঁসী দেয়া হবে অথবা এক দিকের হাত এবং অপর দিকের পা কেটে ফেলা হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্দী করে রাখা হবে যতক্ষণ না তারা খাঁটি তাওবা করে নেয়। এ হচ্ছে তাদের জন্য ইহলোকের ভীষণ অপমান এবং পরকালেও তাদের জন্য ভীষণ শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে তোমরা তাদেরকে গ্রেফতার করার পূর্বে যদি তারা স্বেচ্ছায় তাওবা করে নেয় তাহলে জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু’’। (সুরা মা’য়িদাহ্ : ৩৩)।

তবে মানুষের হৃত অধিকার তাদেরকে অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

আবূ আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) (রহ.) বলেন, আমাকে ইবনু বাশশার (রহ.) ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একটি বালককে গোপনে হত্যা করা হয়। তখন ’উমার (রাঃ) বললেন, যদি গোটা সান্’আবাসী এতে অংশ নিত তাহলে আমি তাদেরকে হত্যা করতাম।

মুগীরাহ ইবনু হাকীম (রহ.) আপন পিতা হাকীম থেকে বর্ণনা করেন যে, চারজন লোক একটি বালককে হত্যা করেছিল। তখন ’উমার (রাঃ) ঐরকম কথা বলেছিলেন। আবূ বকর ও ইবনু যুবায়র, ’আলী ও সুওয়ায়দ ইবনু মুকাররিন (রাঃ) চড়ের বিষয়ে কিসাসের নির্দেশ দেন। ’উমার (রাঃ) ছড়ি দিয়ে মারার ব্যাপারে কিসাসের নির্দেশ দেন। আর ’আলী (রাঃ) তিনটি বেত্রাঘাতের জন্য কিসাসের নির্দেশ দেন এবং শুরায়হ্ (রহ.) একটি বেত্রাঘাত ও নখের আঁচড়ের জন্য কিসাস বলবৎ করেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৮৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুতরাং সন্ত্রাস, দস্যুতা, ছিনতাই, লুন্ঠন, অপহরণ ইত্যাদি এগুলো কবিরা গুণাহ। এগুলোর সাথে যারা জড়িত তারা মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত নয়। রাসুল সাঃ বলেন,

ইমরান ইবনুল হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ছিনতাই ও লুটতরাজ করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৩৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১২৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত ২৯৪৭, আহমাদ ১৯৯৪৬, সহীহ আল জামি ৩২৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

রাসুল সাঃ আরো বলেন,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যেনাকারী যখন যেনায় লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে না। মদ্যপ যখন মদ পানে লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে না। চোর যখন চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে না। আর লুটতরাজ ও ছিনতাইকারী যখন লুটতরাজ ও ছিনতাই করে এবং লোকজন তার দিকে চোখ তুলে তাকায়, তখন সে মুমিন থাকে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৩৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬২৫, নাসায়ী ৪৮৭০, ৪৮৭১, ৪৮৭২, ৫৬৫৯, ৫৬৬০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬৮৯, আহমাদ ২৭৪১৯, ৮৬৭৮, ৮৭৮১, ৯৮৫৯, দারেমী ১৯৯৪, ২১০৬, রাওদুন নাদীর ৭১৬, সহীহাহ ৩০০০, তাখরীজুল ঈমান লি ইবনু আবু শায়বাহ ৩৮-৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ১১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অত্যাচারী ও নিপীড়নকারী শাসক সর্বনিকৃষ্ট

আয়িয ইবনু ’আমর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ শাসকদের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট শাসক সে, যে অত্যাচারী ও নিপীড়নকারী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩০, আহমাদ ২০৬৩৭, সহীহাহ্ ২৮৮৫, সহীহ আল জামি ২০৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৮১, ইসলামিক সেন্টার ৪৫৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাষ্ট্র প্রধান বা শাসক আত্মসাৎকারীরূপে মৃত্যুবরণ করলে

মা’ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিম জনতার ওপর যদি কোনো শাসক নিযুক্ত হয়, অতঃপর সে আত্মসাৎকারীরূপে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭১৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১, ইসলামিক সেন্টারঃ ২৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মজলুমের বদদোয়া কবুল হয়

মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়।

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনি ব্যক্তির দু’আ রদ হয় নাঃ ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোযাদার যতক্ষণ না ইফতার করে এবং মজলুমের দু’আ। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তার দু’আ মেঘমালার উপরে তুলে নিবেন এবং তার জন্য আসমানের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং আল্লাহ্ বলবেনঃ আমার মর্যাদার শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবো, একটু বিলম্বেই হোক না কেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৭৫২, সুনান আততিরমিযী ৩৫৯৮, যঈফাহ ১৪৫৮, রোযাদার ও মাযলুমের দুয়ার কথা সহীহ এবং ন্যায়পরায়ণ ইমাম এর স্থলে মুসাফিরের কথা সহীহ। সহীহাহ ৫৯৬, ১৭৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]।

(খ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মু‘আয (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠান এবং তাকে বলেন, মাযলুমের ফরিয়াদকে ভয় করবে। কেননা, তার ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪৮, ১৩৯৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানের (শাসক নিয়োগ করে) পাঠানোর সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেনঃ তুমি আহলে কিতাবের কাছে যাচ্ছ। কাজেই তাদের কাছে যখন পৌঁছবে তখন তাদেরকে এ কথার দিকে দাওয়াত দিবে তারা যেন সাক্ষ্য দিয়ে বলে যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয় তবে তাদের বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। যদি তারা এ কথাও মেনে নেয় তবে তাদের বলবে যে, আল্লাহ তাদের উপর সাদাকা (যাকাত) ফরজ করেছেন- যা তাদের ধনীদের নিকট হতে গ্রহণ করা হবে এবং অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হবে। তোমার এ কথা যদি তারা মেনে নেয়, তবে (কেবল) তাদের উত্তম মাল গ্রহণ হতে বিরত থাকবে এবং মযলুমের বদদু‘আকে ভয় করবে। কেননা, তার (বদদু‘আ) এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৯৬, ১৩৯৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৪০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

কেউ কারো ওপর জুলুম করলে ইহকালেই এর শাস্তি পেতে হয়। কোনোভাবে ইহকালে পার পেয়ে গেলেও পরকালে অবশ্যই এই জুলুমের প্রতিশোধ নেওয়া হবে।

কিয়ামতে অত্যাচারীর নিকট থেকে যেভাবে প্রতিশোধ নেয়া হবে

(ক) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো, (প্রকৃত) গরীব কে? সহাবায়ে কিরাম বললেনঃ আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা, ধনদৌলত নেই, সে-ই গরীব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি গরীব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে সালাত, সিয়াম ও যাকাত আদায় করে আসবে; কিন্তু সাথে সাথে সেসব লোকেদেরকেও নিয়ে আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারো অপবাদ রটিয়েছে, কারো সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে; এমন ব্যক্তিদেরকে তার নেকীগুলো দিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর যখন তার পুণ্য শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো বাকি, তখন পাওনাদারদের গুনাহ তথা পাপ তার ওপর ঢেলে দেয়া হবে, আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মিসকাতুল মাশাবিহ মিসকাত ৫১২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১, সুনান আততিরমিযী ২৪১৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৮৪৫, সহীহুল জামি‘ ৮৭, সহীহ আত্ তারগীব ২২২৩, শু‘আবুল ঈমান ৩৩, আহমাদ ৮০২৯, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪১১, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ৫৬১, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ২৭৭৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৩)। হাদিসের মান সহিহ।

(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন হকদারদের হক আদায় করা হবে, এমনকি যে বকরীর শিং নেই, তার জন্য শিংওয়ালা বকরী থেকে বিনিময় আদায় করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮২, সুনান আততিরমিযী ২৪২০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৫৮৮, সহীহুল জামি‘ ৫০৬২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৬০৩, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১৩৬, আহমাদ ৭২০৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৬৩, আস্ সুনানুল কুবরা ১১৮৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৪, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)...আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মু’মিনগণ যখন জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে, তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে এক পুলের উপর তাদের আটকে রাখা হবে। তখন পৃথিবীতে একের প্রতি অন্যের যা যা জুলুম ও অন্যায় ছিল, তার প্রতিশোধ গ্রহণের পরে যখন তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে তার আবাসস্থল যেরূপ চিনত, তার চাইতে অধিক তার জান্নাতের আবাসস্থল চিনতে পারবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪০, ৬৫৩৫, সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২২৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (ঘ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অত্যাচারঘটিত; যেমন- মানহানি বা অন্য কোন বিষয়ের কোন হক থাকে, তবে সে যেন সেদিনের পূর্বেই তার কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নেয়, যেদিন তার কাছে কোন দীনার বা দিরহাম থাকবে না। যদি তার নেক আমল থাকে, তাহলে অত্যাচারিতের হক অনুসারে তার কাছ থেকে নেক ’আমল নিয়ে নেয়া হবে। আর যদি তার নেক না থাকে, তবে অত্যাচারিত ব্যক্তির পাপকে তার ওপর চাপানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪৯, ৬৫৩৪, সহীহুল জামি ৬৫১১, সহীহ আত্ তারগীব ২২২২, আহমাদ ১০৫৭৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৬১, শু‘আবুল ঈমান ৭৪৭০, আর মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৩৫, আল মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ৩৪৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৭৮০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নির্যাতিতকে ক্ষমা করা

আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ

“তোমরা সৎকর্ম প্রকাশ্যে করলে অথবা গোপনে করলে অথবা দোষ ক্ষমা করলে আল্লাহও দোষ মোচনকারী, শক্তিমান’’- (আন-নিসাঃ ১৪৯)।’’ মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ, কিন্তু যে মাফ করে দেয় এবং আপোষে নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকটই রয়েছে। তিনি যালিমদের পছন্দ করেন না। তবে অত্যাচারিত হওয়ার পর যারা প্রতিবিধান করে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে, যারা মানুষের উপর জুলুম করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়। এদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। অবশ্য যে ধৈর্য ধারণ করে এবং মাফ করে দেয়, এতো হবে দৃঢ়সংকল্পের কাজ। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য কোন অভিভাবক নেই। যালিমরা (কিয়ামতের দিন) যখন শাস্তি দেখবে, তখন আপনি তাদের বলতে শুনবেন প্রত্যাবর্তনের কোন পথ আছে কি?’’ (সুরা শূরা (৪২): ৪০-৪৪)।

অত্যাচারী শাসকের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করা

উম্মু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শীঘ্রই তোমাদের মধ্যে এমন কিছু সংখ্যক ব্যক্তি শাসক হবে যাদের কতগুলো কাজ তোমরা পছন্দ করবে এবং কতগুলো কাজ অপছন্দ করবে। যে লোক (তাদের) অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, সে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে, আর যে লোক তাকে ঘৃণা করবে সেও দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু যে লোক তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে এবং তার অনুসরণ করবে সে অন্যায়ের অংশীদার বলে গণ্য হবে। প্রশ্ন করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করব না? তিনি বললেন, না, তারা যে পর্যন্ত নামায আদায় করে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২২৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলে তার উপর গজব নাজিল হয়

(ক) কায়েস ইবনে আবূ হাযেম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়ালেন, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন, অতঃপর বলেন, হে লোকসকল! তোমরা তো এই আয়াত তিলাওয়াত করো (অনুবাদঃ) ’’হে ঈমানদারগণ! আত্মসংশোধন করাই তোমাদের কর্তব্য, তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও, তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’’ (সূরা মাইদাঃ ১০৫)। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ লোকেরা মন্দ কাজ হতে দেখে তা পরিবর্তনের চেষ্টা না করলে অচিরেই আল্লাহ তাদের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান। আবূ উসামা (রাঃ) -এর অপর সনদে এভাবে উক্ত হয়েছেঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৪২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৬৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৩৮, তাখরীজুল মুখতার ৫৪-৫৮, সহীহাহ ১৫৬৪, সহীহুল জামি ১৯৭৪, আহমাদ ৩০, আবূ ইয়া‘লা ১৩১, অন্য রিওয়ায়তে আবূ দাঊদ ৪৩৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে পাপাচার হতে থাকে এবং তাদের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্ষমতা থাকা সত্বেও তাদের পাপাচারীদের বাধা দেয় না, তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৩৯, আহমাদ ১৮৭৩১, ১৮৭৬৮, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৭০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে ফরিয়াদ, তিনি যেন আমাদের জালিমদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে রক্ষা করেন এবং মজলুমের অভিশাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আমিন।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...