Search This Blog

Tuesday, February 21, 2023

দুই হাত তুলে দোয়া বা মুনাজাত করার সহিহ নিয়ম

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

দুই হাত তুলে দোয়া বা মুনাজাত করার সহিহ নিয়ম

 


ভুমিকাঃ সালমান ফারসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত লজ্জাশীল ও দয়ালু। বান্দা যখন তাঁর কাছে কিছু চেয়ে হাত উঠায় তখন তার হাত (দু‘আ কবূল না করে) খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৪৪, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৮৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৫৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬৫, মু‘কামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬১৪৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩১৪৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৮৭৬, সহীহ আল জামি‘ ১৭৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সাধারণত আল্লাহর নিকট কোনো কিছু চাইতে হলে সালাতের মধ্যে রুকু, সিজদা ও তাশাহুদ বৈঠকে বিভিন্ন দোয়া পাঠের মাধ্যমে চাইতে হয়। পুরো সালাতই এক প্রকার দোয়া ও মুনাজাত। উল্লেখিত হাদিস অনুসারে জানা যায় যে, সালাতের বাহিরেও যেকোনো সময় আল্লাহর নিকট দুই হাত তুলে বৈধ যেকোনো জিনিস চাওয়া যায়।  আসুন দুই হাত তুলে কিভাবে দোয়া ও মুনাজাত করতে হয় সে সম্পর্কে কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক বিস্তারিত জেনে নেই।

দোয়া

দোয়া অর্থ আহবান বা ডাকা, যা ইসলামে একটি বিশুদ্ধ মিনতি প্রক্রিয়া। এই শব্দটি এসেছে একটি আরবি শব্দ থেকে যার বাংলা অর্থ ডাকো বা তলব করো।

আল্লাহ বলেন,

“আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেবো। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে”। (সুরা আল মুমিন ৪০, আয়াত ৬০)।

রাসুল সাঃ বলেছেন:

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু‘আর চেয়ে কোন জিনিসের অধিক মর্যাদা (উত্তম) নেই।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩২, সুনান আততিরমিযী ৩৩৭০, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭২৯, আহমাদ ৮৭৪৮, মু‘জামুল আওসাত ৩৭০৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০১, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৩, শু‘আবূল ঈমান ১০৭১, ইবনু হিববান ৮৭০, আল-আদাবুল মুফরাদ ৭১৮, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৭, সুনান আততিরমিযী ৩৩৭৩, সহীহাহ ২৬৫৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 দোয়া দুই প্রকারঃ যথাঃ

(এক) দুআউল ইবাদাহ বা উপাসণামূলক দু'আ। সকল প্রকার ইবাদতকে এ অর্থে দু'আ বলা হয়।

(দুই) দুআউল মাছআলা অর্থাৎ প্রার্থনাকারী নিজের জন্য যা কল্যাণকর তা চাবে এবং যা ক্ষতিকর তা থেকে মুক্তি প্রার্থনা করবে। (বাদায়ে আল-ফাওয়ায়েদ : ইবনুল কায়্যিম)।

যেমন কেউ সালাত আদায় করল। এ সালাতের মধ্যে অনেক প্রার্থনামূলক বাক্য ছিল। এগুলোই দুআউল ইবাদাহ বা উপাসণামূলক প্রার্থনা। আবার সে পরীক্ষা দেবে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল হে আল্লাহ! তুমি আমার পরীক্ষা সহজ করে দাও এবং কৃতকার্য করে দাও! এটা হলো দুআ আল-মাছআলা বা চাওয়া।

মুনাজাত

 ‘মুনাজাত’ (مُنَاجَاةٌ) আরবী শব্দ। সেই থেকে نَاجَى يُنَاجِىْ مُنَاجَاةً ব্যবহার হয়। এর অর্থ পরস্পর চুপি চুপি কথা বলা। (আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব (ইস্তাম্বুল-তুরকী : আল-মাকতাবুল ইসলামী, দ্বিতীয় প্রকাশঃ ১৯৭২খৃঃ/১৩৯২হিঃ), পৃঃ ৯০৫; আল-মুনজিদ ফিল লুগাহ ওয়াল আ‘লাম (বৈরুত-লেবানন : আল-মাকতাবাতুশ শারক্বিইয়াহ, ৪১তম প্রকাশ : ২০০৫), পৃঃ ৭৯৩)।

শরী‘আতের পরিভাষায় মোনাজাত হল, ছালাতের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার সাথে মুছল্লীর চুপি চুপি কথা বলা। ছহীহ বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে উক্ত অর্থেই মোনাজাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

 ‘নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ যখন তার ছালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার রবের সাথে মোনাজাত করে’। (ছহীহ বুখারী হা/৪০৫, ১ম খন্ড, ৫৮, (ইফাবা হা/৩৯৬, ১/২২৭ পৃঃ), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৩। এছাড়া দ্রঃ হা/৪১৭, ৫৩১, ৫৩২ ও ১২১৪, ১ম খন্ড, পৃঃ ৫৯, ৭৬ ও ১৬২)।

হাদিসঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হর দিকে (দেয়ালে) ‘কফ’ দেখলেন। এটা তাঁর নিকট কষ্টদায়ক মনে হলো। এমনকি তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠলো। তিনি উঠে গিয়ে তা হাত দিয়ে পরিষ্কার করলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সাথে একান্তে কথা বলে। অথবা বলেছেন, তার ও ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হর মাঝখানে তার রব আছেন। কাজেই, তোমাদের কেউ যেন ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হর দিকে থুথু না ফেলে। বরং সে যেন তার বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে তা ফেলে। অতঃপর চাদরের আঁচল নিয়ে তাতে তিনি থুথু ফেললেন এবং তার এক অংশকে অন্য অংশের উপর ভাঁজ করলেন এবং বললেনঃ অথবা সে এমন করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪০, ২৪১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৫১, আহমাদ ১২৮০৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদীছে এসেছে,  ‘নিশ্চয়ই মুমিন যখন ছালাতের মধ্যে থাকে তখন সে তার রবের সাথে মোনাজাত করে’। (ছহীহ বুখারী হা/৪১৩, ১/৫৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪০২, ১/২২৯ পৃঃ), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৬)।

হাদিসঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন যখন সালাতে থাকে, তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে নিভৃতে কথা বলে। কাজেই সে যেন তার সামনে, ডানে থুথু না ফেলে, বরং তার বাম দিকে অথবা (বাম) পায়ের নীচে ফেলে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪১৩, ২৪১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আরেক হাদীছে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই মুছল্লী তার রবের সাথে মুনাজাত করে’। (মিশকাত হা/৮৫৬, ১/২৭১ পৃঃ, সনদ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৯৬, ২/২৮৪ পৃঃ)।

হাদিসঃ

ইবনু ’উমার (রাঃ) এবং ’আবদুল্লাহ ইবনু আনাস আল-বায়াযী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী সালাতরত অবস্থায় তার পরওয়ারদিগারের সাথে একান্তে আলাপ করে। তাই তার উচিত সে কি আলাপ করে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা। অতএব একজনের কুরআন তিলাওয়াতের শব্দ অন্যজনের কানে যেন না পৌঁছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৫৬, আহমাদ ৬০৯২, সহীহাহ্ ১০৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,

 ‘যখন তোমাদের কেউ ছালাতে দাঁড়াবে, তখন সে যেন তার সামনে থুথু না ফেলে। কারণ সে যতক্ষণ মুছাল্লাতে ছালাত রত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহর সাথে মোনাজাত করে’। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ বুখারী হা/৪১৬, ১/৫৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪০৫, ১/২৩০ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/১২৩০; ১ম খন্ড, পৃঃ ২০৭, ‘মসজিদ ও ছালাতের জায়গা সমূহ’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৭১০, পৃঃ ৬৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৫৮, ২/২১৯ পৃঃ; ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ)।

হাদিসঃ

ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ালে সে তার সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। সে যতক্ষণ তার মুসাল্লায় থাকে, ততক্ষণ মহান আল্লাহর সঙ্গে চুপে চুপে কথা বলে। আর ডান দিকেও ফেলবে না। কেননা তার ডান দিকে থাকেন ফিরিশতা। সে যেন তার বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে থুথু ফেলে এবং পরে তা পুঁতে ফেলে। (সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৪১৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১০, আহমাদ ৮২৩৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৮৩, সহীহাহ্ ৩৯৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য, হাদীছে উল্লিখিত يُنَاجِى শব্দটি ফে‘ল বা ক্রিয়া। আর তার মাছদার বা ক্রিয়ামূল হল (مُنَاجَاةٌ) মুনাজাত।

মুছল্লী ছালাতের মধ্যে সারাক্ষণই যে মুনাজাত করে এবং পুরো ছালাতটাই যে তার জন্য মুনাজাত তা উপরিউক্ত হাদীছগুলো থেকে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে, মুছল্লী যখন ছালাত শেষ করে, তখন তার মুনাজাতও শেষ হয়ে যায়। মুছল্লী ছালাতের মাঝে আল্লাহর সাথে কিভাবে মুনাজাত করে তাও হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে-

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাত আদায় করলো কিন্তু এতে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ- সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পাঠ করলো না তাতে তার সালাত ’’অসম্পূর্ণ’’ রয়ে গেল। এ কথা তিনি তিনবার বললেন। এ কথা শুনে কেউ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা যখন ইমামের পিছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবো তখনও কি তা পাঠ করবো? উত্তরে তিনি বললেন, হাঁ তখনও তা পাঠ করবে নিজের মনে মনে। কারণ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ’’আল্লাহ বলেছেন, আমি ’সালাত’ অর্থাৎ, সূরাহ্ ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করেছি, (এভাবে যে, হামদ ও সানা আমার জন্য আর দু’আ বান্দার জন্য)। আর বান্দা যা চায় তা তাকে দেয়া হয়।

বান্দা বলে, সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি সমস্ত জাহানের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করলো। যখন বান্দা বলে, আল্লাহ বড় মেহেরবান ও পরম দয়ালু। আল্লাহ তখন বলেন, আমার বান্দা আমার গুণগান করলো। বান্দা যখন বলে, আল্লাহ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিনের মালিক, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করলো। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ!) আমরা একমাত্র তোমারই ’ইবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য কামনা করি, তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার (’ইবাদাত আল্লাহর জন্য আর দু’আ বান্দার জন্য)। আর আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ)! তুমি আমাদেরকে সহজ ও সরল পথে পরিচালিত কর। সে সমস্ত লোকের পথে, যাদেরকে তুমি নি’আমাত দান করেছ। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি তোমার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, এটা আমার বান্দার জন্য, আর বান্দা যা চাইবে, সে তাই পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮২৩,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯৫, সুনান আততিরমিযী ২৯৫৩, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৩৮, আহমাদ ৭২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব, মুনাজাত বা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে প্রার্থনা করার সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান হলো ছালাত। (সুরা বাক্বারাহ ৪৫)।

দোয়া ও মুনাজাত বা প্রার্থনার গুরুত্ব

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, “দোয়া” হলো ইবাদত’।

নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আই (মূল) ’ইবাদাত। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’এবং তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু’আ করো, আমি তোমাদের দু’আ কবূল করব।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩০, আবূ দাঊদ ১৪৭৯, তিরমিযী ২৯৬৯, ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৭, আহমাদ ১৮৩৫২, মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৪১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০২, শু‘আবূল ঈমান ১০৭০, সহীহ ইবনু হিববান ৮৯০, আদাবুল মুফরাদ ৭১৪/৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৪০৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। যারা অহংকার বশে আমার ইবাদত হতে বিমুখ হয়, সত্বর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়”। এখানে ‘ইবাদত’ অর্থ দো‘আ। (সুরা গাফের/মুমিন ৪০/৬০; ‘আওনুল মা‘বূদ হা/১৪৬৬-এর ব্যাখ্যা, ‘দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৩৫২)।

আল্লাহ আরও বলেন,

“আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে আমার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে, তখন বলে দাও যে, আমি তাদের অতীব নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দিয়ে থাকি, যখন সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমার আদেশ সমূহ পালন করে এবং আমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে। যাতে তারা সুপথ প্রাপ্ত হয়”। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৮৬)।

দোয়া সম্পর্কে জ্ঞাতব্য বিষয়

(১) দোয়া কবুলে তাড়াহুড়ো করা যাবে না, করলে সেই দোয়া কবুল হবে নাঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দু‘আ কবূল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দু‘আ করলাম। কিন্তু আমার দু‘আ তো কবূল হলো না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪০,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৫, আহমাদ ১৩০০৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৮৮, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬৫৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবু তাহির (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, বান্দার দু’আ সর্বদা গৃহীত হয় যদি না সে অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য দুআ করে এবং (দুআয়) তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! (দু’আয়) তাড়াহুড়া করা কি? তিনি বললেন, সে বলতে থাকে, আমি দুআ তো করেছি, আমি দুআ তো করেছি; কিন্তু আমি দেখতে পেলাম না যে, তিনি আমার দু’আ কবুল করেছেন। তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর দু’আ করা পরিত্যাগ করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২২৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪২৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৮৮১, আল আদাবুল মুফরাদ ৬৫৪, সহীহ আল জামি ৭৭০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৮৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) দোয়া বা আমল কবুল না হলেও তা বন্ধ না করা তথা আমল অব্যাহত রাখতে হবেঃ

(ক) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন, তখন এক মহিলা তাঁর কাছে (বসে) ছিল। তিনি বললেন, ‘‘এটি কে?’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ বললেন, ‘অমুক মহিলা, যে প্রচুর নামায পড়ে।’ তিনি বললেন, ‘‘থামো! তোমরা সাধ্যমত আমল কর। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়।’’ আর সেই আমল তাঁর নিকট প্রিয়তম ছিল, যেটা তার আমলকারী লাগাতার করে থাকে।

‘আল্লাহ ক্লান্ত হন না’- এ কথার অর্থ এই যে, তিনি সওয়াব দিতে ক্লান্ত হন না। অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে সওয়াব ও তোমাদের আমলের প্রতিদান দেওয়া বন্ধ করেন না এবং তোমাদের সাথে ক্লান্তের মত ব্যবহার করেন না; যে পর্যন্ত না তোমরা নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে আমল ত্যাগ করে বস। সুতরাং তোমাদের উচিত, তোমরা সেই আমল গ্রহণ করবে, যা একটানা করে যেতে সক্ষম হবে। যাতে তাঁর সওয়াব ও তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন থাকে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩, ১১২২, ১১৫১, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৮৭, ৬৪৬১, ৬৪৬২, ৬৪৬৪, ৬৪৬৫, ৬৪৬৬, ৬৪৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭১৯, ১৭১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮৫, নাসায়ী ৭৬২, ১৬২৬, ১৬৪২, ১৬৫২, ২১৭৭, ২৩৪৭, ২৩৪৯, ২৩৫১, ৫০৩৫, আবূ দাউদ ১৩১৭, ১৩৬৮, ১৩৭০, ২৪৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১৭১০, ৪২৩৮, আহমাদ ২৩৫২৩, ২৩৬০৪, ২৩৬৪২, ২৩৬৬০, ৪২৪০৯, ২৫৬০০, রিয়াযুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী- ১/১৪৬)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

(খ)  আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর।” (সূরা হিজর ৯৯ আয়াত)।

(গ)  আহমাদ ইবনু ইউসুফ আল আযদী (রহঃ)....'আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবদুল্লাহ! (বেশী বেশী রাত জেগে) তুমিও অমুক ব্যক্তির মতো হয়ে যেও না। সে রাত জেগে জেগে সালাত আদায় করত, অতঃপর রাত জেগে ইবাদাত করা ছেড়ে দিয়েছে।

উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, কোনো আমল শুরু করলে তা ছেড়ে দেয়া যাবে না। আমল অব্যাহত রাখতে হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৫২, ১১৩১, ১১৫৩, ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৮০, ৩৪১৮, ৩৪১৯, ৩৪২০, ৫০৫২, ৫০৫৩, ৫০৫৪, ৫১৯৯, ৬১৩৪, ৬২৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২৬২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫৯, তিরমিযী ৭৭০, নাসায়ী ১৬৩০, ২৩৪৪, ২৩৮৯, ২৩৯০, ২৩৯১, ২৩৯২, ২৩৯৩, ২৩৯৪, ২৩৯৭, ২৩৯৯, ২৪০০, ২৪০১, ২৪০২, ২৪০৩, আবূ দাউদ ১৩৮৮, ১৩৮৯, ১৩৯০, ১৩৯১, ২৪২৭, ২৪৪৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৪৬, ১৭১২, আহমাদ ৬৪৪১, ৬৪৫৫, ৬৪৮০, ৬৭২৫, ৬৭৫০, ৬৭৯৩, ৬৮০২, ৬৮২৩, দারেমী ১৭৫২, ৩৪৮৬, রিয়াযুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী-২/১৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৬০০, ইসলামীক সেন্টার ২৫৯৯)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

 (৩) আল্লাহর নিকট দোয়া করলে বা কিছু চাইলে তা কবুল করা হয়ঃ

(ক) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু‘আই (মূল) ‘ইবাদাত। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘‘এবং তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু‘আ করো, আমি তোমাদের দু‘আ কবূল করব।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩০, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৭৯, তিরমিযী ২৯৬৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৭, আহমাদ ১৮৩৫২, মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৪১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০২, শু‘আবূল ঈমান ১০৭০, সহীহ ইবনু হিববান ৮৯০, আদাবুল মুফরাদ ৭১৪/৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৭, সহীহ আল জামি ৩৪০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু‘আর চেয়ে কোন জিনিসের অধিক মর্যাদা (উত্তম) নেই।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩২, তিরমিযী ৩৩৭০, ইবনু মাজাহ ৩৭২৯, আহমাদ ৮৭৪৮, মু‘জামুল আওসাত ৩৭০৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০১, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৩, শু‘আবূল ঈমান ১০৭১, ইবনু হিববান ৮৭০, আল আদাবুল মুফরাদ ৭২২/৫৫২, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (৪) আল্লাহর নিকট দোয়া না করলে আল্লাহ রাগান্বিত হোনঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কামনা (দু‘আ) করে না, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ৩৩৭৩, সহীহ আল জামি ২৪১৮, আহমাদ ৯৭০১, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ২৪৩১, সহীহাহ্ ২৬৫৪, সহীহ আল জামি ২৪১৮, শু‘আবূল ঈমান ১০৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) সুখী জীবনে আল্লাহকে ভুলে না যাওয়াঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চায় বিপদাপদে আল্লাহ তার দু‘আ কবূল করুন। সে যেন তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়েও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দু‘আ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৪০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৮২, সহীহাহ্ ৫৯৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৮, সহীহ আল জামি ৬২৯০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

নেক আমল ও দু’আ ব্যতীত ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না

 নেক আমল ও দো‘আর মাধ্যমে মানুষের তাকদীরের পরিবর্তন হয়। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা করেন তা বহাল রাখেন”। (সূরা রা’দ, আয়াত  ৩৯)।

সালমান আল ফারিসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু‘আ ছাড়া অন্য কিছুই তাকদীদের লিখনকে পরিবর্তন করতে পারে না এবং নেক ‘আমল ছাড়া অন্য কিছু বয়স বাড়াতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৩৯,  সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২২, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬১২৮, সহীহাহ্ ১৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৯, সহীহ আল জামি ৭৬৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ভাগ্য পরিবর্তনশীল এটাই সত্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও নিজের প্রচেষ্টায় নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করা সম্ভব। ভাগ্য যদি পরিবর্তনশীলই না হবে তাহলে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ তওবা ও ইস্তেগফারমূলক কিংবা আরো অসংখ্য দোয়া কেনো নাযিল করে সেগুলো সালাতের মধ্যে ও সালাতের বাহিরে আমল করতে বলা হলো। কদর রাতে আল্লাহ তায়ালা সুরা আল কদর নাযিল করা হয়েছে। সে রাতে প্রত্যেক বরকত পূর্ণ বিষয় নিয়ে ফেরেশতারা ও রূহ অবতীর্ণ হয়, স্বীয় রবের নির্দেশে। (সুরা আল কদর ৯৭, আয়াত ৪)।

এই রাতে সকল মুসলমান নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে ইবাদত বন্দেগী, জিকির ও বিভিন্ন আমল বা দোয়া পাঠ করে থাকে। অতএব ভাগ্য পরিবর্তনশীল। নিজের কৃতকর্ম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে বিভিন্ন দোয়া পাঠ বা আমলের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়।

আপনি যে আমল করছেন, সব সময় জিকির করছেন বা দোয়া পাঠ করছেন এটাও আপনার প্রচেষ্টা।

নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দোয়াই হলো ইবাদত। অতঃপর তিলাওয়াত করেন (অনুবাদঃ) ‘‘এবং তোমার প্রভু বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো’’ (সূরাহ আল-মু’মিন: ৬০)। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৬৯, ৩২৪৭, ৩৩৭২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৭৯, ১৭৮৮৮, ১৭৯১৯, ১৭৯৬৪, আল-আহকাম ১৯৪, রাওদুন নাদীর ৮৮৮, মিশকাত ২৩৩০, সহীহ আবু দাউদ ১৩২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুই হাত তুলে দোআ ও মুনাজাত বা প্রার্থনা করার সহিহ নিয়ম

(১) দোয়া বা মুনাজাত করার আগে অজু করাঃ

দুই হাত তুলে যেকোনো সময় মুনাজাত করা যায়। সালাত শেষে কিংবা অন্য যেকোনো সময়। তবে অন্য কোনো সময় মুনাজাত করতে চাইলে অযু করে নেয়া উত্তম।

আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়ন যুদ্ধ অতিক্রান্ত হওয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ আমির (রাঃ)-কে একটি সৈন্যবাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে আওতাস গোত্রের বিরুদ্ধে পাঠালেন। যুদ্ধে তিনি দুরাইদ ইবনু সিম্মার সঙ্গে মুকাবালা করলে দুরাইদ নিহত হয় এবং আল্লাহ তার সঙ্গীদেরকেও পরাস্ত করেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ আমির (রাঃ)-এর সঙ্গে আমাকেও পাঠিয়েছিলেন। এ যুদ্ধে আবূ আমির (রাঃ)-এর হাঁটুতে একটি তীর নিক্ষিপ্ত হয়। জুশাম গোত্রের এক লোক তীরটি নিক্ষেপ করে তাঁর হাঁটুর মধ্যে বসিয়ে দিয়েছিল। তখন আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, চাচাজান! কে আপনার উপর তীর ছুঁড়েছে? তখন তিনি আবূ মূসা (রাঃ)-কে ইশারার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ঐ যে, ঐ ব্যক্তি আমাকে তীর মেরেছে। আমাকে হত্যা করেছে। আমি লোকটিকে লক্ষ্য করে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম আর সে আমাকে দেখামাত্র ভাগতে শুরু করল। আমি এ কথা বলতে বলতে তার পিছু নিলাম- তোমার লজ্জা করে না, তুমি দাঁড়াও। লোকটি থেমে গেল। এবার আমরা দু’জনে তরবারি দিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করলাম এবং আমি ওকে হত্যা করে ফেললাম। তারপর আমি আবূ আমির (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহ আপনার আঘাতকারীকে হত্যা করেছেন। তিনি বললেন, এখন এ তীরটি বের করে দাও। আমি তীরটি বের করে দিলাম। তখন ক্ষতস্থান থেকে কিছু পানি বের হল। তিনি আমাকে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার সালাম জানাবে এবং আমার মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করতে বলবে। আবূ আমির (রাঃ) তাঁর স্থলে আমাকে সেনাদলের অধিনায়ক নিয়োগ করলেন। এরপর তিনি কিছুক্ষণ বেঁচেছিলেন, তারপর ইন্তিকাল করলেন। (যুদ্ধ শেষে) আমি ফিরে এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহে প্রবেশ করলাম। তিনি তখন পাকানো দড়ির তৈরি একটি খাটিয়ায় শায়িত ছিলেন। খাটিয়ার উপর (যৎসামান্য) একটি বিছানা ছিল। কাজেই তাঁর পৃষ্ঠে এবং দুইপার্শ্বে পাকানো দড়ির দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমি তাঁকে আমাদের এবং আবূ ‘আমির (রাঃ)-এর সংবাদ জানালাম। তাঁকে এ কথাও বললাম যে, (মৃত্যুর পূর্বে বলে গিয়েছেন) তাঁকে [নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে] আমার মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করতে বলবে। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনতে বললেন এবং ‘উযু করলেন। তারপর তাঁর দু’হাত উপরে তুলে তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় বান্দা আবূ আমিরকে ক্ষমা করো। (হস্তদ্বয় উত্তোলনের কারণে) আমি তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রাংশ দেখতে পেয়েছি। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে তুমি তাঁকে তোমার অনেক মাখলুকের উপর, অনেক মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান কর। আমি বললামঃ আমার জন্যও (দু‘আ করুন)। তিনি দু‘আ করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়সের গুনাহ ক্ষমা করে দাও এবং ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে তুমি তাঁকে সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করাও। বর্ণনাকারী আবূ বুরদা (রাঃ) বলেন, দু’টি দু‘আর একটি ছিল আবূ আমির (রাঃ)-এর জন্য আর অপরটি ছিল আবূ মূসা (আশআরী) (রাঃ)-এর জন্য। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩২৩, ২৮৮৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৩০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৯৮, আহমাদ ১৯৭১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) কিবলামুখী হয়ে দোয়া করাঃ

আবূত তহির ও হারমালাহ্ (রহঃ).....আব্বাদ ইবনু তামীম আল মাযিনী (রহঃ) থেকে তার চাচার সূত্রে বর্ণিত। যিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ইসতিসকার উদ্দেশে বের হলেন। তিনি লোকদের দিকে পিঠ রেখে আল্লাহর নিকট দু’আ করতে লাগলেন এবং কিবলার দিকে মুখ করে তার চাদরটা উল্টিয়ে দিলেন। অতঃপর তিনি দু’ রাকাআত সালাত আদায় করলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৫৮, ১৯৫৭, ১৯৫৬, ১৯৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯৪ সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০০৫, ১০১১, ১০১২, ১০২৩, ১০২৪, ১০২৫, ১০২৬, ১০২৭, ১০২৮, ৬৩৪৩; আহমাদ ১৬৪৬৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯৪৩, ইসলামীক সেন্টার ১৯৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) খোলা দু’হস্ততালু একত্রিত করে চেহারা বরাবর সামনে রেখে দো‘আ করাঃ

ইকরিমাহ্ (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার নিয়ম হলো, নিজের হাত দু’টি কাঁধ পর্যন্ত অথবা কাঁধের কাছাকাছি পর্যন্ত উঠাবে। আর আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার বা ক্ষমা চাওয়ার নিয়ম হলো, তোমার একটি আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করবে এবং আল্লাহর কাছে অনুনয় বিনয় করে প্রার্থনা করার নিয়ম হলো, তোমার দু’হাত একত্রে প্রসারিত করবে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, অনুনয় বিনয় করে প্রার্থনা করবে এভাবে- এরপর তিনি নিজের দু’হাত উপরের দিকে উঠিয়ে ধরলেন এবং তার উভয় হাতের পিঠ মুখমণ্ডলের নিকটবর্তী করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৫৬, আবূ দাঊদ ১৪৮৯, ১৪৯০, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ৩১৩, সহীহ আল জামি ৬৬৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাত তোলার সময় দুই হাত কি মিলিয়ে রাখবে; না কি দুই হাতের মাঝে ফাঁক রাখবে?

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) তাঁর ‘আল-শারহুল মুমতি’ গ্রন্থে (৪/২৫) উল্লেখ করেছেন যে, হাত দুইটি মিলিয়ে রাখবে। তাঁর ভাষায়: “দুই হাতের মাঝখানে ফাঁক রাখা ও এক হাত থেকে অন্য হাত দূরে রাখা সম্পর্কে আমি কোন দলিল পাইনি; না হাদিসে; আর না আলেমগণের বাণীতে।” [সমাপ্ত]

(৪)  দো‘আর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করাঃ

ফুযালাহ্ ইবনু ’উবায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপবিষ্ট ছিলেন। তখন একজন লোক এলেন। তিনি সালাত আদায় করলেন এবং এই দু’আ পড়লেন, ’

’আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর ও আমার ওপর রহম কর)। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালাত আদায়কারী! তুমি তো নিয়ম ভঙ্গ করে বড্ড তাড়াহুড়া করলে। তারপর তিনি বললেন, তুমি সালাত শেষ করে দু’আর জন্য বসবে। আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করবে। আমার ওপর দরূদ পড়। তারপর তুমি যা চাও আল্লাহর কাছে দু’আ করবে।

ফুযালাহ্ (রাঃ)বলেন, এরপর আর এক ব্যক্তি এলো, সালাত আদায় করলো। সে সালাত শেষে আল্লাহর প্রশংসা করলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠ করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালাত আদায়কারী! আল্লাহর কাছে দু’আও কর। দু’আ কবূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৭৬, ৩৪৭৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৩, নাসায়ী ১/১৮৯, আহমাদ ৬/১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহর প্রশংসামূলক বাক্য হচ্ছেঃ

(ক) সুবহানাল্লাহ  (আল্লাহ পবিত্র)

(খ) আলহামদুলিল্লাহ (সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য)

(গ) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ  (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই)

(ঘ) আল্লাহু আকবার  (আল্লাহ তাআলাই মহান (সবচেয়ে বড়)।

এই দরুদটি পাঠ করতে পারেন,

‘আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রহমত ও শান্তি দান করুন।’

(৫) কারো জন্যে দোয়া করলে প্রথমে নিজের জন্যে  দোয়া করাঃ

উবাই ইবনু কাব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখপূর্বক কারো জন্য দু’আ করলে প্রথমে তার নিজের জন্য দুআ করতেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৮৫, মিশকাত তাহকীক সানী ২২৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) আল্লাহর গুণবাচক নাম ধরে দোয়া করাঃ

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :

আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাকে সে সকল নাম দিয়ে প্রার্থনা করবে।  (সুরা আল-আরাফ : ১৮০)।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম আছে অর্থাৎ এক কম এক শত। যে ব্যক্তি এই নামগুলো কণ্ঠস্থ করলো বা গুণে গুণে পড়লো সে জান্নাতে প্রবেশ করলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬০, ৩৮৬১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৩৬, ৭৩৯২, ৬৪১০, মুসলিম ২৬৭৭, তিরমিযী ৩৫০৬, ৩৫০৭, ৩৫০৮, আহমাদ ৭৪৫০, ৭৫৬৮, ২৭৩৬৩, ৯২২৯, ১০১০৩, ১০১৫৪, ১০৩০৭, মিশকাত ২২৮৭, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ২৯২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৮১৬, ইবনু হিব্বান ৮১৭, সহীহ আল জামি ২১৬৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৪৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৭) নিজের নেক কাজের ওসীলা দিয়ে দুআ করাঃ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিন ব্যক্তি হেঁটে চলছিল। এমন সময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে তারা এক পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করে। হঠাৎ একটি পাথর গড়িয়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ করে দেয়। তাদের একজন আরেকজনকে বলল; তোমরা যে সব ‘আমল করেছ, তার মধ্যে উত্তম আমলের ওয়াসীলা করে আল্লাহর কাছে দু‘আ কর। তাদের একজন বলল, ইয়া আল্লাহ! আমার অতিবৃদ্ধ পিতামাতা ছিলেন, আমি (প্রত্যহ সকালে) মেষ চরাতে বের হতাম। তারপর ফিরে এসে দুধ দোহন করতাম এবং এ দুধ নিয়ে আমার পিতা-মাতার নিকট উপস্থিত হতাম ও তাঁরা তা পান করতেন। তারপরে আমি শিশুদের, পরিজনদের এবং স্ত্রীকে পান করতে দিতাম। একরাত্রে আমি আটকা পড়ে যাই। তারপর আমি যখন এলাম তখন তাঁরা দু’জনে ঘুমিয়ে পড়েছেন। সে বলল, আমি তাদের জাগানো পছন্দ করলাম না। আর তখন শিশুরা আমার পায়ের কাছে (ক্ষুধায়) চীৎকার করছিল। এ অবস্থায়ই আমার এবং পিতা-মাতার ফজর হয়ে গেল। ইয়া আল্লাহ! তুমি যদি জান তা আমি শুধুমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় করেছিলাম তা হলে তুমি আমাদের গুহার মুখ এতটুকু ফাঁক করে দাও, যাতে আমরা আকাশ দেখতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন একটু ফাঁকা হয়ে গেল। আরেকজন বলল, ইয়া আল্লাহ! তুমি জান যে, আমি আমার এক চাচাতো বোনকে এত ভালবাসতাম, যা একজন পুরুষ নারীকে ভালবেসে থাকে। সে বলল, তুমি আমা হতে সে মনস্কামনা সিদ্ধ করতে পারবে না, যতক্ষণ আমাকে একশত দ্বীনার না দেবে। আমি চেষ্টা করে তা সংগ্রহ করি। তারপর যখন আমি তার পদদ্বয়ের মাঝে উপবেশন করি, তখন সে বলে ‘‘আল্লাহকে ভয় কর’’। বৈধ অধিকার ছাড়া মাহরকৃত বস্তুর সীল ভাঙবে না। এতে আমি তাকে ছেড়ে উঠে পড়ি। (হে আল্লাহ) তুমি যদি জান আমি তা তোমারই সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে করেছি, তবে আমাদের হতে আরো একটু ফাঁক করে দাও। তখন তাদের হতে (গুহার মুখের) দুই-তৃতীয়াংশ ফাঁক হয়ে গেল। অপরজন বলল, হে আল্লাহ! তুমি জান যে, এক ফারাক (পরিমাণ) শস্য দানার বিনিময়ে আমি একজন মজুর রেখেছিলাম। আমি তাকে তা দিতে গেলে সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। তারপর আমি সে এক ফারাক শস্য দানা দিয়ে চাষ করে ফসল উৎপন্ন করি এবং তা দিয়ে গরু ক্রয় করি এবং রাখাল নিযুক্ত করি। কিছুকাল পরে সে মজুর এসে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আমাকে আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি বললাম, এই গরুগুলো ও রাখাল নিয়ে যাও। সে বলল, তুমি কি আমার সাথে উপহাস করছ? আমি বললাম, আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না বরং এসব তোমার। হে আল্লাহ! তুমি যদি জান আমি তা তোমারই সন্তুষ্টির উদ্দেশে করেছি, তবে আমাদের হতে (গুহার মুখ) উন্মুক্ত করে দাও। তখন তাদের হতে গুহার মুখ উন্মুক্ত হয়ে গেল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২১৫, ২২৭২, ২৩৩৩, ২৪৬৫, ৫৯৭৪, মুসলিম ৪৮/২৭, হাঃ ২৭৪৩, আহমাদ ৫৯৮১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৮)  জীবিত নেক বান্দার অসিলা ধরে দোয়া করাঃ 

জীবিত নেক বান্দার অসিলা ধরে দোয়া করলে আল্লাহ সেই দোয়া কবুল করেন। তবে মৃত কোনো পির অলির অসিলা ধরা যাবে না এমনকি রাসুল সাঃ এর অসিলাও ধরা যাবে না।

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাযি.) অনাবৃষ্টির সময় ‘আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাযি.)-এর ওয়াসীলাহ দিয়ে বৃষ্টির জন্য দু‘আ করতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ্! (আগে) আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওয়াসীলাহ দিয়ে দু‘আ করতাম এবং আপনি বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চাচার ওয়াসীলাহ দিয়ে দু‘আ করছি, আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। বর্ণনাকারী বলেন, দু‘আর সাথে সাথেই বৃষ্টি বর্ষিত হত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০১০, ৩৭১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) ইসমে আজম দিয়ে দোয়া করাঃ দুই হাত তুলে দোয়া করার সময় এই ইসমে আজম পাঠ করবেন।

(ক) আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বসা ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি সালাত আদায় করে এই বলে দু‘আ করলোঃ

“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বি আন্না লাকাল হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা শারীকা লাকাল মান্না-নু, ইয়া বাদী’আস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল-আরদী, ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরাম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু, ইন্নী আস্আলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্না-র”।

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই, কারণ, সকল প্রশংসা আপনার, কেবলমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই, সীমাহীন অনুগ্রকারী: হে আসমানসমূহ ও যমীনের অভিনব স্রস্টা! হে মহিমাময় ও মহানুভব! হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী-সর্বসত্তার ধারক! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই”।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এ ব্যক্তি ইসমে আযম দ্বারা দু‘আ করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে তাঁর নিকট চাওয়া হলে তিনি দান করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-১৪৯৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৪৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৫৮, সুনান আননাসায়ী ১২৯৯, ১৩০০, আহমাদ ১১৭৯৫, ১২২০০, ১৩১৫৮, ১৩৩৮৭, রাওদুন নাদীর ১৩৩, আস-সহীহ ১৩৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(খ) বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, ’হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি এবং জানি যে, তুমিই আল্লাহ। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন মা’বূদ নেই। তুমি এক ও অনন্য। তুমি অমুখাপেক্ষী ও স্বনির্ভর। যিনি কাউকে জন্মও দেননি। কারো থেকে জন্মও নন। যার কোন সমকক্ষ নেই।’ তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলাকে তার ইস্মে আ’যম বা সর্বাধিক বড় ও সম্মানিত নামে ডাকল। এ নামে ডেকে তাঁর কাছে কেউ কিছু প্রার্থনা করলে, তিনি তাকে তা দান করেন এবং কেউ ডাকলে তিনি তার ডাকে সাড়া দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৮৯, ২২৯০,  আবূ দাঊদ ১৪৯৩, তিরমিযী ৩৪৭৫, ইবনু মাজাহ ৩৮৫৭, আহমাদ ২২৯১৫, ইবনু হিব্বান ৮৯১, শু‘আবূল ঈমান ২৩৬৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর ইস্মে আ’যম এই দু’ আয়াতের মধ্যে রয়েছে, ওয়া ইলা-হুকুম ইলা-হূ ওয়া-হিদ, লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়ার রহমা-নুর রহীম।

এছাড়াও সূরা আ-লি ’ইমরান-এর শুরুতে আলিফ লা-ম মী-ম আল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৯১, আবূ দাঊদ ১৪৯৬, তিরমিযী ৩৪৭৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৫৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৩৬৩, দারিমী ৩৪৩২, মু‘জামুল কাবীর ৪৪০, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪২, সহীহ আল জামি ৯৮০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১০) দুআ ইউনুস দ্বারা দোয়া বা প্রার্থনা করাঃ দুই হাত তুলে দোয়া করার সময় এই দোয়াটি পাঠ করবেন।

সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নবী যুন-নূন ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে থাকাকালে যে দু’আ করেছিলেন তা হলোঃ

“লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন”

“তুমি ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র। আমি নিশ্চয় যালিমদের দলভুক্ত"- (সূরা আম্বিয়া ৮৭)। যে কোন মুসলিম লোক কোন বিষয়ে কখনো এ দু’আ করলে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তার দু’আ কবুল করেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫০৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৯২, আল-কালিমুত তাইয়্যিব (হাঃ ১২২/৭৯), তা’লীকুর রাগীব (২/২৭৫, ৩/৪৩), মিশকাত তাহকীক সানী (হাঃ ২২৯২, আহমাদ ১৪৬২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৬২, শু‘আবূল ঈমান ৬১১, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১২৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৪, সহীহ আল জামি ৩৩৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এরপর আরো বিভিন্ন দোয়া পাঠ করবেন।

এই দোয়াগুলো আরবী-বাংলা উভয়টিই হতে পারে। তবে মোনাজাতের অনেক দোয়া আছে সেগুলো মুখস্থ করে নিবে। এছাড়া বাংলায় মনের যতো ইচ্ছে আছে ততো আল্লাহর নিকট চাইবে। তবে দুই হাত তুলে একাকি মোনাজাত করতে অবশ্যই হৃদয় নিংড়ানো কান্নাভাব থাকতে হবে। তাহলে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বেশী।

(১১) সবশেষে আবার দরুদ পাঠ করে দুই হাত নামাতে হবেঃ

মুনাজাত যখন শেষ করবেন তখন আবার দরুদ পাঠ করবেন। তানাহলে উক্ত দোয়া আসমানে  ঝুলে থাকবে, আল্লাহর নিকট পৌঁছবে না। যেমন, ‘সুবহা-না রবিবকা রবিবল ‘ইযযাতি ‘আম্মা ইয়াছিফূন, ওয়া সালা-মুন ‘আলাল মুরসালীন, ওয়াল হামদু লিল্লা-হি রবিবল ‘আ-লামীন’ পাঠ অন্তে দো‘আ শেষ করবেন।

অথবা অন্য যেকোনো দরুদ পাঠ করলেও চলবে।

‘আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রহমত ও শান্তি দান করুন।’

দুই হাত নামানোর সময় অনেকে মুখ মন্ডল মুছে নেয়। এসংক্রান্ত কোনো হাদিস নেই। নিয়ম হলো, দুই হাত দিয়ে মুখ মন্ডল না মুছে সরাসরি দুই হাত উল্টো করে নিচের দিকে নামাবেন।

সবশেষে  দরুদ পাঠ করার দলিল

হজরত ওমর (রা.) বলেন, নিশ্চয়ই দোয়া আসমান ও জমিনের মধ্যে স্থগিত থাকে, এর কোনো কিছুই আসমানের দিকে ওঠে না যতক্ষণ না তুমি তোমার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর দরূদ না পাঠাও। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৮৬, সহীহাহ ২০৫৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সুরা ফাতিহা ও সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়ে দোয়া করলে সেই দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন

হাদিসঃ

(১) হাসান ইবনুর রাবী’ ও আহমাদ ইবনু জাওওয়াস আল হানাফী (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জিবরীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসেছিলেন। সে সময় তিনি উপর দিক থেকে দরজা খোলার একটা প্রচণ্ড আওয়াজ শুনতে পেয়ে মাথা উঠিয়ে বললেনঃ এটি আসমানের একটি দরজা। আজকেই এটি খোলা হ’ল- ইতোপূর্বে আর কখনো খোলা হয়নি। আর এ দরজা দিয়ে একজন মালায়িকাহ পৃথিবীতে নেমে আসলেন। আজকের এ দিনের আগে আর কখনো তিনি পৃথিবীতে আসেননি। তারপর তিনি সালাম দিয়ে বললেনঃ আপনি আপনাকে দেয়া দু’টি নূর বা আলোর সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনার পূর্বে আর কোন নবীকে তা দেয়া হয়নি। আর ঐ দু’টি নূর হ’ল ফা-তিহাতুল কিতাব বা সূরাহ আল ফাতিহাহ এবং সূরাহ আল বাকারাহ-এর শেষাংশ। এর যে কোন হারফ আপনি পড়বেন তার মধ্যকার প্রার্থিত বিষয় আপনাকে দেয়া হবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৫০, ইসলামীক সেন্টার ১৭৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(২) বাদরী সাহাবী আবূ মাস‘উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূরাহ বাকারার শেষে এমন দু’টি আয়াত রয়েছে যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত দু’টি তিলাওয়াত করবে তার জন্য এ আয়াত দু’টোই যথেষ্ট। অর্থাৎ রাত্রে কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করার যে হাক রয়েছে, কমপক্ষে সূরাহ বাকারার শেষ দু’টি আয়াত তেলাওয়াত করলে তার জন্য তা যথেষ্ট। ‘আবদুর রহমান (রহ.) বলেন, পরে আমি আবূ মাস‘উদের সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিলেন। এ হাদীসটির ব্যাপারে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সেটা আমার নিকট বর্ণনা করলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪০০৮, ৫০০৮, ৫০০৯, ৫০৪০, ৫০৫১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৭১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৩) নুমান ইবনু বাশীর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আসমান-যামীন সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখেছেন। সেই কিতাব হতে তিনি দুটি আয়াত নাযিল করছেন। সেই দু’টি আয়াতের মাধ্যমেই সূরা আল-বাকারা সমাপ্ত করেছেন। যে ঘরে তিন রাত এ দুটি আয়াত তিলাওয়াত করা হয় শাইতান সেই ঘরের নিকট আসতে পারে না। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৪৫, রাওযুন নায়ীর (৮৮৬), তা’লীকুর রাগীব ২/২১৯, আহমাদ ১৮৪১৪, দারিমী ৩৪৩০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩০৩১, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ক) সুরা ফাতিহাঃ সকলের মুখস্থ আছে।

(খ) সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতঃ

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বাংলা উচ্চারণ

(২৮৫) আ-মানাররাছূলু বিমাউনঝিলা ইলাইহি মির রাব্বিহী ওয়াল মু’মিনূনা কুল্লুন আ-মানা বিল্লাহি ওয়া মালাইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রুছুলিহী লা-নুফাররিকুবাইনা আহাদিম মির রুছুলিহী ওয়া কা-লূ ছামি‘না ওয়াআতা‘না গুফরা-নাকা রাব্বানা-ওয়া ইলাইকাল মাসীর।

(২৮৬) লা-ইউকালিলফুল্লা-হু নাফছান ইল্লা-উছ‘আহা-লাহা-মা কাছাবাত ওয়া ‘আলাইহা-মাকতাছাবাত রাব্বানা-লা-তুআ-খিযনা ইন নাছীনা-আও আখতা’না-রাব্বানা ওয়ালা-তাহমিল ‘আলাইনা-ইসরান কামা-হামালতাহূ আলাল্লাযীনা মিন কাবলিনা-রাব্বানা-ওয়ালা তুহাম্মিলনা-মা-লা-তা-কাতা লানা-বিহী ওয়া‘ফু‘আন্না-ওয়াগফিরলানা-ওয়ারহামনা-আনতা মাওলা-না-ফানসুরনা-‘আলাল কাওমিল কা-ফিরীন।

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বাংলা অর্থ

(২৮৫) রাসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।

(২৮৬) আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর।

আমলটি কখন করবেন

দোয়া কবুলের বিশেষ কিছু মুহূর্ত বা সময় আছে যে সময়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়ে থাকে। আপনি হয়তো কোনো সমস্যায় ভুগছেন তাহলে আপনি সেই সময়গুলোতে উপরোক্ত আমলটি করবেন।

দোয়া কবুলের সময়সমূহ

(১) রমাদান মাসে। (বুখারি, ১৮৯৮)

(২) ফরজ সালাতের পর। (তিরমিযি, ৩৪৯৯)

(৩) শেষ রাতে। (বুখারি, ১১৪৫)

(৪) আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়। (আবূ দাঊদ, ৫২১)

(৫) ফরয সালাতের আযানের সময়। (আবূ দাঊদ, ২৫৪০)

(৬) ইকামাতের সময়। (ইবনু হিব্বান, ১৭৬৪)

(৭) বৃষ্টির সময়। (আবূ দাঊদ, ২৫৪০)

(৮) আল্লাহর রাস্তায় লড়াই তীব্র আকার ধারণ করলে। (আবূ দাঊদ, ২৫৪০)

(৯) প্রতি রাতে কিছুসময়। (মুসলিম, ৭৫৭)

(১০) জুমুআর দিন আসরের পর। (আহমাদ, ২/২৭২)

(১১) সৎ নিয়তে জমজমের পানি পান করার সময়। (ইবনু মাজাহ, ৩০৬২)

(১২) সালাতের সিজদাহ য়ে। (মুসলিম, ৪৮২)

(১৩) রাতে ঘুম থেকে উঠে নির্দিষ্ট দুআ পড়ার পর। (বুখারি, ১১৫৪)

(১৪) দুআ ইঊনুস পাঠ করার পর। (তিরমিযি, ৩৫০৫)

(১৫) মুসিবতের সময় নির্দিষ্ট দুআ পাঠ করলে। (মুসলিম, ৯১৮)

(১৬) কারও মৃত্যুর পর যখন সমবেত মানুষ দুআ করে। (মুসলিম, ৯২০)

(১৭) সালাতের শুরুতে বিশেষ দুআ। (মুসলিম, ৬০১)

(১৮) সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার সময়। (মুসলিম, ৩৯৫)

(১৯) রুকূ থেকে ওঠার সময়। (বুখারি, ৭৯৯)

(২০) সূরা ফাতিহার পর ফেরেশতাদের আমীন বলার সময়। (বুখারি, ৭৯৯)

(২১) রুকূ থেকে উঠে বিশেষ দুআ পড়ার সময়। (বুখারি, ৭৯৬)

(২২) সালাতের শেষ বৈঠকে নবি স.-এর ওপর দরুদ পড়ার পর। (তিরমিযি, ৫৯৩)

(২৩) সালাতে সালাম ফেরানোর আগে। (নাসাঈ, ১৩০০)

(২৪) ওযুর পর নির্দিষ্ট দুআ পাঠকালে। (মুসলিম, ২৩৪)

(২৫) আরাফার দিন আরাফার ময়দানে। (তিরমিযি, ৩৫৮৫)

(২৬) সূর্য ঢলে পড়ার পর, যুহরের আগে। (তিরমিযি, ৪৭৮)

(২৭) লাইলাতুল কদরের রাতে। (তিরমিযি, ৩৫১৩)

(২৮) যিকরের মজলিশে মুসলিমদের সমাবেশে। (বুখারি, ৬৪০৮)

(২৯) মোরগ ডাকার সময়। (বুখারি, ৩৩০৩)

(৩০) নেক কাজের ওসীলা দিয়ে দুআ করলে। (বুখারি, ২২১৫)

(৩১) যুল হিজ্জাহ মাসের প্রথম দশ দিন। (বুখারি, ৯৬৯)

দোয়া করার সময় অন্যান্য জ্ঞাতব্য বিষয়

(১)  একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করাঃ

আল্লাহ তাআলা বলেন: আর “তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহ্র ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে।” (সূরা বাইয়্যেনা, আয়াত: ০৫)।

দোয়া হচ্ছে- ইবাদত; যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। তাই ইখলাস হচ্ছে দোয়া কবুলের শর্ত।

(২) ইচ্ছে হলে দোয়া কবুল করো বা যদি চান এমন কথা না বলাঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর কাছে দু‘আ করার সময় এ কথা না বলে যে, হে আল্লাহ! তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি যদি ইচ্ছা কর আমার প্রতি দয়া করো। তুমি যদি ইচ্ছা কর আমাকে রিযক দান করো। বরং সে দৃঢ়তার সাথে দু‘আ করবে (চাইবে)। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই প্রদান করেন। তাঁকে দিয়ে জোরপূর্বক কোন কিছু করাতে সক্ষম নয় বা তাকে বাধা দেয়ার কেউ নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২২৫, ২২২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪৭৭, ৬৩৩৯,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭০৫-৬৭০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৮৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৫৪, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭২২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৩, আহমাদ ৮২৩৭, মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ১৭০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৯৭৭, সহীহ আল জামি ৭৭৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) দৃঢ়তা ও নিশ্চয়তা মনে রেখেই আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ করাঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দু‘আ কবূল হওয়ার দৃঢ়তা ও নিশ্চয়তা মনে রেখেই আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ কর। জেনে রেখ, আল্লাহ তা‘আলা অবহেলাকারী আস্থাহীন মনের দু‘আ কবূল করেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৪১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ৩৪৭৯, আল মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৫১০৯, মুসতারাক লিল হাকিম ১৮১৭, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৩৮২, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৫৩, সহীহ আল জামি ২৪৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৪) অনুনয়-বিনয়, আশা ও ভয় প্রকাশ করে দোয়া করাঃ

আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক”। (সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫)।

তিনি আরও বলেন: “তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত, আর তারা আমাদেরকে ডাকত আগ্রহ ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমাদের নিকট ভীত-অবনত।” (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯০)।

তিনি আরও বলেন: “আর আপনি আপনার রবকে নিজ মনে স্মরণ করুন সবিনয়ে, ভীতচিত্তে ও অনুচ্চস্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায়।” (সূরা আরাফ, আয়াত: ২০৫)।

(৫) গোপনে দোয়া করা, শব্দ না করাঃ

আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক”। (সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫)।

আল্লাহ তাআলা যাকারিয়া (আলাইহি সালাম) এর প্রশংসা করে বলেন: “যখন তিনি তার রবকে ডেকেছিলেন নিভৃতে”। (সূরা মারিয়াম, আয়াত: ০৩)।

(৬) হালাল খাদ্য গ্রহণ করাঃ হালাল খাদ্য গ্রহণ করা দোয়া কবুলের পূর্ব শর্ত।

 আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনুল আলী (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা’আলা তার প্রেরিত রসূলদের যে হুকুম দিয়েছেন মুমিনদেরকেও সে হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র ও হালাল জিনিস আহার কর এবং ভাল কাজ কর। আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে জ্ঞাত।" (সূরা আল মু’মিনূন ২৩:৫১)।

তিনি (আল্লাহ) আরো বলেছেন, “তোমরা যারা ঈমান এনেছো শোনা আমি তোমাদের যে সব পবিত্র জিনিস রিযক হিসেবে দিয়েছি তা খাও”— (সূরা আল বাকারাহ ২ঃ ১৭২)। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধূসরিত রুক্ষ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, “হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দু’আ তিনি কী করে কবুল করতে পারেন?” (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) যা চাইবেন তা তিনবার করে বলাঃ

(ক) আবদুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবান জু’ফী (রহঃ)....ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল্লাহিল হারামের নিকট সালাত আদায় করছিলেন। আবূ জাহল ও তার সাথীরা অদূরে উপবিষ্ট ছিল। পূর্বদিন সেখানে একটি উট নহর করা হয়েছিল। আবূ জাহল বলল, কে অমুক গোত্রের উটের (নাড়ি-ভূড়িসহ) জরায়ুকে নিয়ে আসবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদারত হবে, তখন তার দু’কাঁধের মাঝখানে তা রেখে দেবে? তখন সম্প্রদায়ের সবচাইতে হতভাগা দূরাচার লোকটি উঠে দাঁড়ালো এবং তা নিয়ে আসলো এবং যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় গেলেন তখন তার দু’কাঁধের মাঝখানে তা রেখে দিল। তখন তারা হাসাহসি করতে লাগলো এবং একে অপরের গায়ের উপর ঢলে পড়তে লাগলো, আর আমি তখন দাঁড়িয়ে তা দেখলাম। যদি আমার প্রতিরোধের সাধ্য থাকতো তবে আমি তা অবশ্যই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিঠ থেকে ফেলে দিতাম।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় রইলেন এবং তিনি মাথা উঠাতে পারছিলেন না। অবশেষে একব্যক্তি গিয়ে ফাতিমাহকে খবর দিল। ফাতিমাহ সাথে সাথে আসলেন। আর তিনি তখন বালিকা। তিনি তা তার উপর থেকে ফেলে দিলেন। তারপর তাদের দিকে মুখ করে তাদেরকে মন্দাচারের বিষয়ে বলছিলেন। তারপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত সম্পন্ন করলেন তখন উচ্চস্বরে তাদেরকে বদদুআ দিলেন আর তিনি যখন দু’আ করতেন (সাধারণতঃ) তিনবার করতেন এবং যখন কিছু প্রার্থনা করতেন তখন তিনি তিনবার করতেন।

তারপর তিনি তিন তিনবার বললেন "ইয়া আল্লাহ! তোমার উপরেই কুরায়শদের বিচারের ভার ন্যস্ত করলাম। যখন তারা তার আওয়াজ শুনতে পেল তখন তাদের হাসি চলে গেল এবং তারা তার বদ দু’আয় ভয় পেয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আবূ জাহল ইবনু হিশাম, উতবাহ ইবনু রাবী’আহ, শাইবাহ ইবনু রাবী আহ, ওয়ালীদ ইবনু উকবাহ, উমাইয়াহ ইবনু খালাফ ও উকবাহ ইবনু আবূ মুআয়তের শাস্তির ভার তোমার উপর ন্যস্ত। রাবী বলেন, তিনি সপ্তম আরেকজনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। আমি তা স্মরণ রাখতে পরিনি। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যে পবিত্র সত্তা সত্যসহ রসূলরূপে প্রেরণ করেছেন, তার কসম! তিনি যাদের নাম সেদিন উচ্চারণ করেছিলেন বদরের দিন তাদের পতিত লাশ আমি দেখেছি। তারপর তাদের হেঁচড়িয়ে বদরের একটি নোংরা কূপে নিক্ষেপ করা হয়। আবূ ইসহাক বলেন, ওয়ালীদ ইবনু উকবার নাম এখানে ভুলে হয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৫৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪০, ৫২০, ২৯৩৪, ৩১৮৫, ৩৮৫৪, ৩৯৬০; আহমাদ ৩৭২২ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪৯৮, ইসলামিক সেন্টার ৪৫০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ কুরায়ব (রহঃ)....আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লাবীদ ইবনু আসাম নামে বানু যুৱায়ক সম্প্রদায়ের এক ইয়াহুদী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যাদু করল। তিনি বলেন, এ যাদুর কারণে এমনও হত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্মরণ হত যে কোন (পার্থিব) কাজ তিনি করছেন, অথচ (প্রকৃতভাবে) তিনি তা করছেন না। পরিশেষে একদিনে কিংবা এক রাত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করলেন; আবার দুআ করলেন, আবার দুআ করলেন। অতঃপর বললেনঃ হে আয়িশাহ! তুমি কি অনুধাবন করতে পেরেছে যে, আল্লাহ আমাকে সে ব্যাপারে সমাধান দিয়েছেন, যে ব্যাপারে আমি তার নিকট সমাধান চেয়েছিলাম?

(তা এভাবে যে) (দু’জন ফেরেশতা) দু’লোক (মানুষের বেশ ধরে) আমার নিকট আসলো। তাদের একজন আমার মস্তকের নিকট এবং অপরজন আমার পায়ের নিকট বসল। অতঃপর আমার মাথার নিকটের লোক পায়ের নিকটের লোককে অথবা আমার পায়ের নিকটের লোকটি আমার মাথার নিকটের লোকটিকে বলল, লোকটির ব্যাধি কি? (অপরজন) বলল, যাদুগ্রস্ত। (প্রথম জন) বলল, কে তাকে যাদু করেছে? (দ্বিতীয় জন) বলল- লাবীদ ইবনু আসাম। (প্রথমজন) বলল, কোন জিনিসে? (দ্বিতীয় জন) বলল- চিরুনি, (আঁচড়ানোর সময় চিরুনির সঙ্গে) উঠা চুল, (আরও) বলল, পুরুষ খেজুরের ফুলের বেষ্টনীতে। (প্রথমজন) বলল, তা কোথায়? (দ্বিতীয় জন) বলল- যা আরওয়ান কুয়ায়।

তিনি [আয়িশাহ্ (রাযিঃ)] বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কতিপয় সাহাবীকে সাথে নিয়ে সেথায় আসলেন। তারপর (ফিরে এসে) বললেন, হে আয়িশাহ্! আল্লাহর কসম, সে (কূপের) পানি যেন মেহেদীপাতা ভিজানো (পানি) এবং সেখানকার খেজুর গাছ যেন শাইতানের মস্তিষ্ক। তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে আপনি তা (জনসমক্ষে) পুড়ে ফেললেন না কেন? তিনি বললেন, না, (আমি তা উচিত মনে করেনি)। কেননা, আল্লাহ আমাকে তো রোগমুক্ত করেছেন-আর লোকদেরকে কোন অকল্যাণে উত্তেজিত করা অপছন্দ করছি। আমি সে ব্যাপারে নির্দেশ দিলাম। ফলে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫১৫, ইসলামিক সেন্টার ৫৫৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করাঃ

আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম তার কোন মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দু‘আ করলে ওই দু‘আ কবূল করা হয়। দু‘আকারীর মাথার পাশে একজন মালাক (ফেরেশতা) নিয়োজিত থাকেন। যখন সে তার ভাইয়ের জন্য (কল্যাণের) দু‘আ করে; সে নিযুক্ত মালাক সাথে সাথে বলেন ‘আমীন’ এবং তোমার জন্যও অনুরূপ হোক। (মিসকাতুল মাশাবিহ মিসকাত ২২২৮, মুসলিম ২৭৩৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪৩১, সহীহ আল জামি‘ ৬২৩৫)। হাদিসের মান সহিহ।

(৯) বারবার চাওয়াঃ

বান্দা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর যা ইচ্ছা তা চাইবে, কাকুতি-মিনতি করবে, তবে দোয়ার ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া করা যাবে না। কেননা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দু’আ কবূল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দু’আ করলাম। কিন্তু আমার দু’আ তো কবূল হলো না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪০,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৫, আহমাদ ১৩০০৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিন ব্যক্তির দো‘আ নিশ্চিত কবুল হয়

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তিন ব্যক্তির দো‘আ নিশ্চিতভাবে কবুল হয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

(ক) মাযলূমের দো‘আ,

(খ) মুসাফিরের দো‘আ ও

(গ) সন্তানের জন্য পিতার দো‘আ।

(১) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে তিন লোকের দু’আ কবূল হয়।

(ক) পিতার দু’আ,

(খ) মুসাফিরের দু’আ এবং

(গ) মাযলূমের (পীড়িতের) দু’আ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৫০, আবূ দাঊদ ১৫৩৬, তিরমিযী ১৯০৫, ইবনু মাজাহ ৩৮৬২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৮৩০, মু‘জামুল আওসাত ২৪, শু‘আবূল ঈমান ৩৩২৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৬৯৯, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ২৪/৩২, রিয়াযুস্ সলিহীন ৯৮৭, সহীহাহ্ ৫৯৬, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৩২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(২) আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠাবার সময় বললেন, মু’আয! তুমি আহলে কিতাবদের (ইয়াহূদী ও খৃস্টান) নিকট যাচ্ছো। প্রথমতঃ তাদেরকে এ লক্ষ্যে দীনের প্রতি আহবান করবে, এক আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল। যদি তারা এটা মেনে নেয় তাহলে তাদের সামনে এই ঘোষণা দেবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তারা এটা মেনে নিলে তাদেরকে জানাবে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর যাকাত ফরয করেছেন। তাদের ধনীদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করে তাদের গরীবদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। যদি তারা এ হুকুমের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাহলে তুমি (তাদের) ভাল ভাল মাল গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে, মাযলূমের ফরিয়াদ হতে বাঁচার চেষ্টা করবে। কেননা মাযলূমের ফরিয়াদ আর আল্লাহ তা’আলার মধ্যে কোন আড়াল থাকে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৭২, বুখারী ২১৪৯৬, মুসলিম ১৯, আবূ দাঊদ ১৫৮৪, আত্ তিরমিযী ৬২৫, নাসায়ী ২৫২২, ইবনু মাজাহ্ ১৭৮৩, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২২৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭২৭৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৫৭, ইরওয়া ৭৮২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২২৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুই হাত তুলে মুনাজাতে অতিরিক্ত যেসব দোয়া পাঠ করবেন

নিজ মাতৃভাষায় আল্লাহর নিকট বৈধ যেকোনো জিনিস চাওয়া যায়। তবে কুরআন ও হাদিসে উল্লেখিত দোয়ার মাধ্যমে চাওয়া উত্তম। আপনি যা চাইবেন তার সব কিছু এই দোয়াগুলোর মধ্যে আছে।

কুরআন হতে দোয়াসমূহ

(১) যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ).....আবদুল আযীয ইবনু সুহায়ব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কাতাদাহ্ আনাস (রাযিঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দুআ সর্বাধিক পড়তেন? তিনি বললেন, তিনি যে দু’আ দ্বারা সর্বাধিক দু’আ করতেন তাতে বলতেনঃ

“আল্ল-হুম্মা আ-তিনা- ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আ-খিরতি হাসানাতাও ওয়াকিনা- ‘আযা-বান না-র”।

অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতে কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে বঁচিয়ে রাখো।"

রাবী বলেন, আনাস (রাযিঃ) যখনই কোন দু’আ করার সংকল্প করতেন তখন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ন্যায়) দুআ করতেন। তারপর যখন তিনি কোন ব্যাপারে দু’আ করার সংকল্প করতেন তখন তাতে এ দু’আ পড়তেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৮৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫১৯, বুখার৬৩৮৯), আহমাদ ১৩৯৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৯৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৪৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) নবি করিম (সাঃ) কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় তা গ্রহণের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করলে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে নবি! আপনি বলুন,

“রব্বি যিদনী ইলমা’।

অর্থঃ- হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন। (সুরা ত্বহাঃ১১৪)।

(৩) আদম আঃ ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া তাঁদের ভুলের ক্ষমা চেয়ে বলেছিনে,

“রব্বানা য-লামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কূনান্না মিনাল খ-সিরীন। ”

অর্থঃ “হে আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের নফসের উপর যুলুম করেছি, তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না কর, আমাদের প্রতি করুণা না কর তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।” (সূরা আ‘রাফ- ২৩)।

(৪) পিতা-মাতার জন্য দোয়াসমূহঃ

(ক) আল্লাহ তা‘আলা রাসুল (সাঃ) –কে বলেন, হে নবি! আপনি বলুন,

“রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়া-নী সগিরা’।

অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের (পিতা-মাতা) প্রতি রহম করুন, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন পালন করেছেন। (সুরা ইসরা-২৪)।

(খ) “রব্বিগফিরলি' ওয়ালি ওয়া-লিদাইয়া ওয়ালিমান দাখলা বাইতিয়া মু'মিনা, ওয়া লিলমু'মিনীনা ওয়াল মু'মিনা'তি ওয়ালা' তাযিদিজ জ'লিমি'না ইল্লা তাবা র'।

অর্থ:- হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং মুমিন হয়ে আমার ঘরে যারা প্রবেশ করবে এমন সব লোককে এবং মুমিন পুরুষ এবং মহিলাদেরকে ক্ষমা করে দাও। আর যালেমদের জন্যে ধ্বংস ছাড়া অন্য কিছুই বৃদ্ধি করো না।। (সুরা নূহ: ২৮)।

(গ) ইবরাহিম আঃ পিতা মাতা, ছেলে-মেয়ে ও মুমিনদের প্রার্থনায় বলেছিলেন,

“রব্বিজ আলনী মুক্বীমাস সলাতি ওয়া মিন যুররিইয়াতি রব্বানা- ওয়া তাক্বব্বাল  দো’আ-রব্বানাগ ফিরলী ওয়ালি ওয়া লি-দাইয়া ওয়া লিল মুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।”

অর্থ: হে আমার পালনকর্তা! আমাকে সলাত কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের দোয়া কবুল করুন। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে,, আমার পিতা মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যে দিন হিসাব কায়েম হবে। (সুরা ইব্রাহিম-৪০,৪১)।

(৫) ইবরাহিম আঃ প্রার্থনা করেছিলেন,

“রব্বি হাবলি হুকমাঁও ওয়ালহিক্বনী বিস্সলিহীন ওয়াজ আল লী লিসা-না স্বিদকিন ফীল আ-খিরীন ওয়াজ আলনী মিঁও ওয়ারাছাতি জান্নাতিন নাঈম।”

অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা! আমাকে হিকমত দান করুন এবং সঃকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন। (হে প্রভু!) আপনি পরকালে আমাকে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং “নাঈম” জান্নাতের উত্তরাধীকারী করুন।” (শু‘আরাঃ৮৩-৮৫)।

(৬) মুসা আঃ ফিরাউনের দরবারে গমনের সময় বলেছিলেন,

“রব্বিশ রহলি' সদরি' ওয়াসসিরলি' আমরি' ওয়াহলুল উকদাতাম মিল লিছানি' ইয়াফক্বাহু ক্বওলি"।

অর্থ:- হে আমার পালনকর্তা! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন এবং আমার কর্ম সহজ করে দিন, আমার জিহ্ববার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। (সুরা ত্বহা- ২৫-২৮)।

(৭) “রব্বি আওঝি’নি আন্ আশকুরা নি’মাতাকা-ল্লাতি আন্ আ’মতা আ’লাইয়্যা ওয়া আ’লা ওয়া-লিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা স-লিহান্ তারযহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ই’বাদিকাস সলিহিন।”

অর্থ: হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমাকে সামর্থ দাও, যেনো আমি তোমার সেই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা মাতাকে দান করেছো এবং যেনো আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো। (সুরা নমল-২০)।

(৮)”রব্বানা-লা-তুঝিগ কুলুবানা-বা’দা ইয হাদাইতানা-ওয়া হাবলানা- মিল্লাদুনকা রাহমাতান, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহাব, রব্বানা- ইন্নাকা জা-মি‘উন না-স, লিইয়াওমিল লা -রইবা ফিহ, ইন্নাল্ল-হা লা-ইউখলিফুল মি-আ-দ।”

অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করো না এবং আপনার নিকট থেকে আমাদেরকে অনৃগ্রহ দান করুন। আপনিই সব কিছুর দাতা। হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি মানুষকে একদিন একত্রিত করবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার ওয়াদার বরখেলাপ করেন না। (সুরা আলে ইমরান-৮-৯)।

(৯) “রব্বানা-লা-তুআ-খিযনা-ইন নাসিনা-আও আখত্ব‘না, রব্বানা ওয়ালা তাহমিল আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহু আলাল্লাযিনা মিন ক্ববলিনা, রব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা-লা-ত্ব ক্বাতালানা বিহ, ওয়া‘ফু আন্না ওয়াগফিরলানা  ওয়ারহামনা আন্তা মাওলানা ফানসুরনা আলাল ক্বওমিল কা-ফিরিন।”

অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পন করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর করেছ, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করাইও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ সমূহ মোচন করো। তুমি আমাদের ওলী। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করো। (সুরা আল বাকারাহ-২৮৬)।

(১০) “রব্বানা –আ-মান্না ফাগফিরলানা ওয়ার হামনা ওয়া আন্তা খয়রুর রহিমিন।”

অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করো ও আমাদের প্রতি রহম করো। (সুরা মুমিনুন-১০৯)।

(১১) “রব্বানা–ইন্নানা-আ-মান্না-ফাগফিরলানা–যুনুবানা–ওয়াক্বিনা আযা-বান না-র”।

অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ইমান এনেছি, কাজেই আমাদের গুণাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করো। (সুরা আলে ইমরান- ১৬)।

(১২) “রব্বানা–আতমিম লানা-নুরনা-ওয়াগফিরলানা-ইন্নাকা আলা-কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর।”

অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে পূর্ণ আলো দান করুন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চই আপনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। (সুরা তাহমীম-৮)।

(১৩) “রব্বানা-আ-তিনা-মিল লাদুনকা রহমাতাওঁ ওয়া হাইয়ি’ লানা মিন আমরিনা-রশাদা”।

অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন’। (সুরা কাহাফ-১০)।

(১৪)  “রব্বি আ’উযুবিকা মিন হামাযা-তিশ শায়া-ত্বীন, ওয়া আ’উযুবিকা রব্বি ইয়াহ যুরুন।”

অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আমার প্রতিপালক! তাদের উপস্থিতি থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সুরা মুমিনুন-৯৭-৯৮)।

(১৫) “রব্বানা-হাবলানা- মিন আঝওয়া জিনা ওয়া যুররিইয়া-তিনা –কুররতা আ‘য়ুনিউ ওয়াজ’ আলনা-লিল মুত্তাক্বীনা ইমা-মা”।

অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদেরকে মুত্তাক্বীদের জন্য আদর্শ স্বরুপ করো। (সুরা ফুরক্বান-৭৪)।

সহিহ হাদিস হতে দোয়াসমূহ

(১) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাশাহহুদ ও সালাম ফিরার মধ্যখানে শেষ বেলায় অর্থাৎ সালাম ফিরবার আগে) এই দো‘আ পড়তেন,

“আল্ল-হুম্মাগফিরলী মা- ক্বদ্দামতু ওয়ামা- আখখারতু ওয়ামা আসসারতু ওয়ামা আ'লানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আ'লামু বিহী মিন্নী আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা"

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর, যে অপরাধ আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি, যা অতিরিক্ত করেছি এবং যা তুমি আমার চাইতে অধিক জান। তুমি আদি, তুমিই অন্ত। তুমি ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই।

(সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন, ১১২০, ৬৩১৭, ৬৩৮৫, ৭৪৪২, ৭৪৯৯, ৭৩৮৫, সুনান ইবনু মাজাহ, ১৩৫৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪১৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭১, নাসায়ী ১৬১৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৭১, আহমাদ ২৮১৩, ২৭০৫, ২৭৪৩, ২৮০৮, ৩৩৫৮,৩৪৫৮; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৫০০, দারিমী ১৪৮৬,আধুনিক প্রকাশনী ১০৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১০৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ দু‘আ শিক্ষা দিতেন যেমন তাদেরকে কুরআনের সূরাহ্ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমরা বলো,

‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল কবরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া- ওয়াল মামা-তি’’।

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের শাস্তি হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি হতে। তোমার নিকট আশ্রয় চাই দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪২, মুয়াত্তা মালেক ৪৯৯, নাসায়ী ২০৬৩, ৫৫১২, ৯৮৪, ১৫৪২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৯৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৪০, আহমাদ ২১৬৯, ২৩৩৮, ২৭০৪, ২৭৭৪, ২৮৩৪, , সহীহ আত্ তারগীব ৩৬৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাতের শেষে শেষ তাশাহুদ পড়ে অবসর হয়ে যেন আল্লাহর কাছে চারটি জিনিস হতে পানাহ চায়। (১) জাহান্নামের ‘আযাব। (২) কবরের ‘আযাব। (৩) জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ্ (ফিতনা)। (৪) মাসীহুদ্ দাজ্জালের অনিষ্ট। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮৮,  সুনান ইবনু মাজাহ ৯০৯, ৯১০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৯৮৩, নাসায়ী ১৩১০, ৫৫০৫-৬, ৫৫০৮-১১, ৫৫১৩-১৮, ৫৫২০, আহমাদ ৭১৯৬, ৭৮১০, ৭৯০৪, ৯০৯৩, ৯১৮৩, ২৭৫৯৬, ২৭৮৯০, ৯৮২৪, ২৭২৮০, দারেমী ১৩৮৩,১৩৪৪,  সহীহ আল জামি ৬৯৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২০০, ইসলামীক সেন্টার ১২১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল ফাক্বরি  ওয়াল কিল্লাতি ওয়ায যিল্লাতি  ওয়া আ’উযুবিকা মিন আন আযলিমা আও উযলিমা”।

অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট অভাব, স্বল্পতা ও অপমান হতে আশ্রয় চাই,  আরো আশ্রয় চাই অত্যাচার করা ও অত্যাচার হওয়া থেকে।

হাদিসঃ-

 আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি দরিদ্রতা হতে, আপনার কম দয়া হতে এবং অসম্মানী হতে। আমি আপনার কাছে আরো আশ্রয় চাইছি যুলুম করা অথবা অত্যাচারিত হওয়া হতে।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪৪, নাসায়ী ৫৪৭৫), আহমাদ (৩/৩০৫), হাকিম (১/৫৪০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) ‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্ রিজাল’’।

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে; অপারগতা ও অলসতা থেকে; কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে; এবং ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (সহীহ বুখারি, হা/২৮৯৩/৬৩৬৯, মিশকাত, হা/ ২৪৫৮, তিরমিযি, হা/৩৪৮৪, আবু দাউদ, হা/১৫৪১, আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৭২)।

হাদিসঃ-

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্ রিজা-ল’’।

(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা, শোক-তাপ, অক্ষমতা-অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের জোর-জবরদস্তি হতে আশ্রয় চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৯, ৬৭৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৬, নাসায়ী ৫৪৪৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৮৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৪১, আহমাদ ১০৫২, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১২৯, সহীহ আল জামি ১২৮৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) “আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আ’ন হারামিক; ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।”

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালালের সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচান। এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষি হতে বাঁচান।’

হাদিসঃ-

আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, একটি চুক্তিবদ্ধ গোলাম তার নিকটে এসে বলে, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে আমি অপরাগ হয়ে পড়েছি। আমাকে আপনি সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিব না যা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর সীর (সাবীর) পর্বত পরিমাণ ঋণও থাকে তবে আল্লাহ তা'আলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি বলেনঃ তুমি বল, “হে আল্লাহ! তোমার হালালের মাধ্যমে আমাকে তোমার হারাম হতে বিরত রাখ বা দূরে রাখ এবং তোমার দয়ায় তুমি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া হতে আমাকে আত্মনির্ভরশীল কর”। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৬৩, তা’লীকুর রাগীব (২/৪০), আল-কালিমুত তাইয়্যিব ১৪৩/৯৯, মুসতাদরাকে হাকিম, হা/১৯৭৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৬)  “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ'উযুবিকা মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাক্বা-ই, ওয়া সূইল ক্বাযা-ই, ওয়া শামা-তাতিল আ'দা-ই।“

অর্থঃ আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি অক্ষমকারী বিপদের কষ্ট হ'তে , দুভার্গ্যের  আক্রমন হতে , মন্দ ফায়সালা হ'তে এবং শত্রুর হাসি হতে।

হাদিসঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালা মুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের অশুভ পরিণতি এবং দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাইলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪৭, ৬৬১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৭, নাসাঈ- ৫৪৯১, ৫৪৯২, ৭৩০৮, আদাবুল মুফরাদ ৬৬৯, সহীহ আল জামি ২৯৬৮, সহীহাহ্ ১৫৪১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন ফিতনাতিন্নারি অআযাবিন্নারি অমিন শার্রিল গিনা ওয়াল ফাক্ব।“

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের ফিতনা থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে এবং ধনবত্তা ও দারিদ্রের মন্দ থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

হাদিসঃ-

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্যগুলো দিয়ে দু‘আ করতেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের পরীক্ষা, আগুনের আযাব এবং প্রাচুর্য ও দারিদ্রের মধ্যে নিহিত অকল্যাণ হতে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪৩,   সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) “আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাম্‘ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী। লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল-ফাক্বরি ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা”।

“হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শরীরে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শ্রবণশক্তিতে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই।” (আবূ দাউদ ৪/৩২৪, নং ৫০৯২; আহমাদ ৫/৪২, নং ২০৪৩০; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নং ২২; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৯; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭০১। আর শাইখ আল্লামা ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’ গ্রন্থের পৃ. ২৬ এ এর সনদকে হাসান বলেছেন)।

(৯)  আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে বলে দিন, যদি আমি ‘কদর রাত’ পাই, এতে আমি কী দু‘আ করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি বলবে,

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নাকা ‘আফুব্বুন, তুহিব্বুল আফ্ওয়া‘, ফা‘ফু ‘আন্নী’’।

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমিই ক্ষমাকারী। আর ক্ষমা করাকে তুমি পছন্দ করো। অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৯১, সুনান ইবনু মাজাহ, ৩৮৫০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫১৩, আহমাদ ২৫৩৮৪, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৪২, সহীহাহ্ ৩৩৩৭, সহীহ আল জামি ৩৩৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ)....আবদুল্লাহ (রাযিঃ) এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি এ বলে দুআ করতেন,

“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল হুদা ওয়াত তুকা ওয়াল “আফা-ফা ওয়াল গিনা”

অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পথনির্দেশ, আল্লাহভীতি, চারিত্রিক উৎকর্ষতা ও সচ্ছলতার জন্য দুআ করছি।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৫৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৭০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) এ দোয়া পড়তেন-

“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন যা-ওয়া-লি নি’মাতিকা ওয়া তাহাওঁবুলি আ-ফিয়াতিকা ওয়া ফুজা-আতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামী’ঈ সাখাতিক।”

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার নি’আমতের হ্রাসপ্রাপ্তি, তোমার শান্তির বিবর্তন, তোমার শাস্তির হঠাৎ আক্রমণ এবং সমস্ত অসন্তোষ হতে।

হাদিসঃ-

 উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল কারীম আবু যুর’আহ (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’আর মধ্যে একটি ছিল এই যে, "আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন যাওয়া-লি নি'মাতিকা ওয়াতা হাওউলি আ-ফিয়াতিকা ওয়া ফুজা-য়াতি নিকমাতিকা ওয়া জামী’ই সাখাতিকা" অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই নি’আমাত দূর হয়ে যাওয়া হতে, তোমার দেয়া সুস্থতা পরিবর্তন হয়ে যাওয়া থেকে, তোমার অকস্মাৎ শাস্তি আসা হতে এবং তোমার সকল প্রকার অসন্তুষ্টি থেকে"। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬১, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৪৫, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৩৫৮৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৪৬, শু‘আবূল ঈমান ৪২২৪, সহীহ আল জামি ১২৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৯৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১২) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে দু‘আ করতেন,

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন শাররি মা- ‘আমিলতু ওয়ামিন্ শাররি মা-লাম আ‘মাল’’।

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই যা আমি করেছি এবং যা আমি করিনি তার অনিষ্টতা বা অপকারিতা হতে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৮৮-৬৭৯১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭১৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৫০, নাসায়ী ৫৫২৭, ইবনু হিববান ১০৩১, সহীহ আল জামি ১২৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৩)  আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু‘আয়) বলতেনঃ

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুযা-মি, ওয়াল জুনূনি, ওয়ামিন্ সাইয়্যিয়িল আসক্বা-ম’’।

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি শ্বেতরোগ, কুষ্ঠরোগ, উম্মাদনা ও কঠিন রোগসমূহ হতে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৭০,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৫৪, নাসায়ী ৫৪৯৩, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১২৯, আহমাদ ১৩০০৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১০৯৭, সহীহ আল জামি ১২৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৪)  “আল্ল-হুম্মা লা-ত্বয়রা ইল্লা ত্বয়রুকা, ওয়া লা খয়রা ইল্লা খয়রুকা, ওয়া লা ইলা হা গয়রুকা”।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি কিছু ক্ষতি না করলে অশুভ বা কুলক্ষণ বলে কিছু নেই এবং তোমার কল্যাণ ছাড়া কোনো কল্যাণ নেই। তুমি ছাড়া কোনো হক্ব মা’বুদ নেই। (সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০৬৫, বায়হাকী, হা/১১৮০)।

(১৫) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি বিছা এক ব্যক্তিকে দংশন করলে ঐ রাতে সে আর ঘুমাতে পারেনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হলো, অমুক ব্যক্তিকে বিছায় দংশন করায় সে গত রাতে ঘুমাতে পারেনি। তিনি বলেনঃ আহা, সে যদি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলতো,

‘‘আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক’’।

অর্থঃ আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামের উসীলায় তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই, তাহলে বিছার দংশন সকাল পর্যন্ত তার কোন ক্ষতি করতে পারতো না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫১৮, ৩৫৪৭,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৮, আবূ দাউদ ৩৮৯৯, আহমাদ ৭৮৩৮, ৮৬৬৩, ২৭১২২ আত-তালীকুর রাগীব ১/২২৫-২২৬, মুসলিম ২৭০৮, তিরমিযী ৩৪৩৭, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৫৮৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৪০৯, ইবনু খুযায়মাহ্ ২৫৬৬, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬০৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০৩২২, ইবনু হিব্বান ২৭০০, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৮০, সহীহাহ্ ৩৯৮০, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৩০, সহীহ আল জামি‘ ৮০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৬) ‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা’’।

অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান, কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই”।

হাদিসঃ

উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে বলতেন,

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান, কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৯২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২৬৫, আহমাদ ২৬৫২১, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ১১৯, শু‘আবূল ঈমান ১৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৭) “হাসবিয়াল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুয়া, ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম”।

“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব।”

হাদিসঃ-

আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সাতবার বলেঃ ‘‘আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আমি তাঁর উপর ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের রব’’ আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হবেন যা তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তার বিরুদ্ধে চাই সে সত্যিকারভাবে অথবা কৃত্রিমভাবে বলুক না কেন।

যে ব্যক্তি দো‘আটি সকালবেলা সাতবার এবং বিকালবেলা সাতবার বলবে তার দুনিয়া ও আখেরাতের সকল চিন্তাভাবনার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট হবেন। (ইবনুস সুন্নী, নং ৭১, মারফূ‘ সনদে; আবূ দাউদ ৪/৩২১; মাওকূফ সনদে, নং ৫০৮১, কানজুল উম্মাল: ৫০১১)। আর শাইখ শু‘আইব ও আব্দুল কাদের আরনাঊত এর সনদকে সহীহ বলেছেন। দেখুন, যাদুল মা‘আদ ২/৩৭৬)।

(১৮)  যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ)...আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেন, আদম সন্তানের কলবসমূহ পরম দয়াময় আল্লাহ তা’আলার দু’আঙ্গুলের মধ্যে এমনভাবে আছে যেন তা একটি কলব। তিনি যেভাবে চান সেভাবেই তা উলট পালট করেন। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“আল্ল-হুম্মা মুসাররাফাল কুলুবি সাররাফ কুলুবানা আলা তা -আতিকা”।

অর্থঃ “কলব সমূহের পরিচালক হে আল্লাহ! আপনি আমাদের কলব সমূহকে তোমার বশ্যতার উপর স্থির রাখুন।” (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৯, আহমাদ ৬৫৬৯, সহীহাহ্ ১৬৮৯, সহীহ আল জামি ২১৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫০৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৫৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৯)  আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু’আ অধিক পাঠ করতেনঃ

“ইয়া মুক্বাল্লিবাল কুলুবি সাব্বিত ক্বালবি আলা দ্বীনিকা”।

অর্থঃ “হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত (দৃঢ়) রাখো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আমরা ঈমান এনেছি আপনার উপর এবং আপনি যা নিয়ে এসেছেন তার উপর। আপনি আমাদের ব্যাপারে কি কোনরকম আশংকা করেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, কেননা, আল্লাহ তা'আলার আঙ্গুলসমূহের মধ্যকার দুটি আঙ্গুলের মাঝে সমস্ত অন্তরই অবস্থিত। তিনি যেভাবে ইচ্ছা তা পরিবর্তন করেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৪০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০২,  সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৩৪, আদাবুল মুফরাদ, ৬৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২০)  শুতায়র ইবনু শাকাল ইবনু হুমায়দ (রহঃ) তাঁর পিতা শাকাল (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি একদিন বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমাকে এমন একটি দু‘আ শিখিয়ে দিন, যা দিয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে পারি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, পড়-

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন্ শাররি সাম্‘ঈ, ওয়ামিন্ শাররি বাসারী, ওয়া শাররি লিসা-নী ওয়া শাররি কলবী ওয়া শাররি মানিয়্যি’’।

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই- আমার কানের [মন্দ শোনার] অনিষ্টতা, চোখের [দেখার] অনিষ্টতা, আমার মুখের [বলার] অনিষ্টতা, আমার কলবের [অন্তরের চিন্তা-ভাবনার] অনিষ্টতা ও বীর্যের [যিনা-ব্যভিচারের] অনিষ্টতা হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৭২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৫১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৯২, নাসায়ী ৫৪৫৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৪৫, আহমাদ ১৫৫৪১, সহীহ আল জামি ১২৯২, ৪৩৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২১) “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা- ‘আ’লামু  ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা-লা-আ’লামু”।

“হে আল্লাহ! আমি সজ্ঞানে তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই”।

হাদিসঃ

মাকিল ইবনে ইয়াসার (রাঃ) বলেন, আমি আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ) এর সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম। তিনি বলেনঃ হে আবু বাকর! নিশ্চয় শিরক পিপীলিকার পদচারণা থেকেও সন্তর্পণে তোমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। আবু বাকর (রাঃ) বলেন, কারো আল্লাহর সাথে অপর কিছুকে ইলাহরূপে গণ্য করা ছাড়াও কি শিরক আছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়েও সূক্ষ্ম। আমি কি তোমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিবো না, তুমি যা বললে শিরকের অল্প ও বেশী সবই দূর হয়ে যাবে? তিনি বলেনঃ তুমি বলো,

“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা-‘আ’লামু ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা-লা-আ’লামু”।

“হে আল্লাহ! আমি সজ্ঞানে তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই”। (ইমাম বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭২১, সহীহ আল জামে ৩/২৩৩; সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব লিল আলবানী, ১/১৯, আহমাদ ৪/৪০৩, নং ১৯৬০৬, ইবনুস সুন্নী)।

(২২) ‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা-’’।

অর্থঃ  “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান, কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই”।

হাদিসঃ

উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে বলতেন,

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা-’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান, কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই)।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৯২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২৬৫, আহমাদ ২৬৫২১, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ১১৯, শু‘আবূল ঈমান ১৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২৩) “আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাম্‘ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী। লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল-ফাক্বরি ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা”।

অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শরীরে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শ্রবণশক্তিতে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই।” (আবূ দাউদ ৪/৩২৪, নং ৫০৯২; আহমাদ ৫/৪২, নং ২০৪৩০; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নং ২২; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৯; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭০১। আর শাইখ আল্লামা ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’ গ্রন্থের পৃ. ২৬ এ এর সনদকে হাসান বলেছেন)।

(২৪)  জান্নাত পাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের দোয়াঃ

“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্নার”।

অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই”।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

“যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করো। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, জাহান্নাম আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও”।

হাদিসঃ-

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জান্নাতের প্রত্যাশা করে; জান্নাত বলবে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর যে ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করবে; জাহান্নাম বলবে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৭৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫৭২, সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩৪০, নাসায়ী ৫৫২১, সহীহ ইবনু হিববান ১০৩৪, সহীহ আল জামি ৬২৭৫, মুখতাসারুশ শামাইল ৪/২২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২৫)  “আল্লাহুম্মা আদখিলনিল জান্নাতা ওয়া আজিরনি মিনান্নার”।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জান্নাতের প্রত্যাশা করে; জান্নাত বলবে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর যে ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করবে; জাহান্নাম বলবে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৭৮, সুনান আততিরমিযী ৫৫২১, সুনান আননাসায়ী ৫৫২১, সহীহ ইবনু হিববান ১০৩৪, সহীহ আল জামি‘ ৬২৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২৬) “আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু সাহলান, ওআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা”।

অর্থঃ ইয়া আল্লাহ, কোনো বিষয় সহজ নয়। হ্যাঁ, যাকে তুমি সহজ করে দাও, যখন তুমি চাও তখন তুমি মুশকিলকে সহজ করে দাও। (ইবনে হিব্বান: হাদিস নং-৯৭৪)।

(২৭)  “আ’উযু বিকালিমা –তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন শাররি মা খলাক্বা”।

 অর্থঃ আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের অসিলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।

যে কেউ বিকাল বেলা এ দো‘আটি তিনবার বলবে, সে রাতে কোনো বিষধর প্রাণী তার ক্ষতি করতে পারবে না। (আহমাদ ২/২৯০, নং ৭৮৯৮; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নং ৫৯০; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৮; আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী ৩/১৮৭; সহীহ ইবন মাজাহ ২/২৬৬; তুহফাতুল আখইয়ার লি ইবন বায, পৃ. ৪৫)।

(২৮) “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন যা-ওয়া-লি নি’মাতিকা ওয়া তাহাওঁবুলি আ-ফিয়াতিকা ওয়া ফুজা-আতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামী’ঈ সাখাতিক।”

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার নি’আমতের হ্রাসপ্রাপ্তি, তোমার শান্তির বিবর্তন, তোমার শাস্তির হঠাৎ আক্রমণ এবং সমস্ত অসন্তোষ হতে।

হাদিসঃ-

 উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল কারীম আবু যুর’আহ (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’আর মধ্যে একটি ছিল এই যে, "আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন যাওয়া-লি নি'মাতিকা ওয়াতা হাওউলি আ-ফিয়াতিকা ওয়া ফুজা-য়াতি নিকমাতিকা ওয়া জামী’ই সাখাতিকা" অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই নি’আমাত দূর হয়ে যাওয়া হতে, তোমার দেয়া সুস্থতা পরিবর্তন হয়ে যাওয়া থেকে, তোমার অকস্মাৎ শাস্তি আসা হতে এবং তোমার সকল প্রকার অসন্তুষ্টি থেকে"। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬১, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৪৫, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৩৫৮৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৪৬, শু‘আবূল ঈমান ৪২২৪, সহীহ আল জামি ১২৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৯৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২৯)  “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ'উযুবিকা মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাক্বা-ই, ওয়া সূইল ক্বাযা-ই, ওয়া শামা-তাতিল আ'দা-ই।“ 

অর্থঃ আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি অক্ষমকারী বিপদের কষ্ট হ'তে , দুভার্গ্যের  আক্রমন হতে , মন্দ ফায়সালা হ'তে এবং শত্রুর হাসি হ'তে।

হাদিসঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালা মুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের অশুভ পরিণতি এবং দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাইলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪৭, ৬৬১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৭, নাসাঈ- ৫৪৯১, ৫৪৯২, ৭৩০৮, আদাবুল মুফরাদ ৬৬৯, সহীহ আল জামি ২৯৬৮, সহীহাহ্ ১৫৪১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩০)  “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন ফিতনাতিন্নারি অআযাবিন্নারি অমিন শার্রিল গিনা ওয়াল ফাক্ব।“

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের ফিতনা থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে এবং ধনবত্তা ও দারিদ্রের মন্দ থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

হাদিসঃ-

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্যগুলো দিয়ে দু‘আ করতেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের পরীক্ষা, আগুনের আযাব এবং প্রাচুর্য ও দারিদ্রের মধ্যে নিহিত অকল্যাণ হতে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪৩,   সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩১) “আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আ’ন হারামিক; ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।”

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালালের সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচান। এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষি হতে বাঁচান।’

হাদিসঃ-

আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, একটি চুক্তিবদ্ধ গোলাম তার নিকটে এসে বলে, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে আমি অপরাগ হয়ে পড়েছি। আমাকে আপনি সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিব না যা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর সীর (সাবীর) পর্বত পরিমাণ ঋণও থাকে তবে আল্লাহ তা'আলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি বলেনঃ তুমি বল, “হে আল্লাহ! তোমার হালালের মাধ্যমে আমাকে তোমার হারাম হতে বিরত রাখ বা দূরে রাখ এবং তোমার দয়ায় তুমি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া হতে আমাকে আত্মনির্ভরশীল কর”। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৬৩, তা’লীকুর রাগীব (২/৪০), আল-কালিমুত তাইয়্যিব ১৪৩/৯৯, মুসতাদরাকে হাকিম, হা/১৯৭৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৩২) “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল ফাক্বরি  ওয়াল কিল্লাতি ওয়ায যিল্লাতি  ওয়া আ’উযুবিকা মিন আন আযলিমা আও উযলিমা”।

অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট অভাব, স্বল্পতা ও অপমান হতে আশ্রয় চাই,  আরো আশ্রয় চাই অত্যাচার করা ও অত্যাচার হওয়া থেকে।

হাদিসঃ-

 আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি দরিদ্রতা হতে, আপনার কম দয়া হতে এবং অসম্মানী হতে। আমি আপনার কাছে আরো আশ্রয় চাইছি যুলুম করা অথবা অত্যাচারিত হওয়া হতে।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪৪, নাসায়ী ৫৪৭৫), আহমাদ (৩/৩০৫), হাকিম (১/৫৪০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩৩)  ‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্ রিজাল’’।

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে; অপারগতা ও অলসতা থেকে; কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে; এবং ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (সহীহ বুখারি, হা/২৮৯৩/৬৩৬৯, মিশকাত, হা/ ২৪৫৮, তিরমিযি, হা/৩৪৮৪, আবু দাউদ, হা/১৫৪১, আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৭২)।

হাদিসঃ-

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্ রিজা-ল’’ ।

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা, শোক-তাপ, অক্ষমতা-অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের জোর-জবরদস্তি হতে আশ্রয় চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৯, ৬৭৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৬, নাসায়ী ৫৪৪৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৮৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৪১, আহমাদ ১০৫২, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১২৯, সহীহ আল জামি ১২৮৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩৪) “আল্লাহুম্মা আকছির মালি ওয়া ওয়ালাদি ওয়া বারিক লি ফি-মা  আ’ত্বাইতানি“।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে ধন-সম্পদ দিন, সন্তান-সন্ততিতে বরকত দিন এবং আমাকে যা দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।

হাদিসঃ

মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ)....উম্মু সুলায়ম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনার খাদিম আনাসের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন। তখন তিনি দুয়া করলেন, اللَّهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ وَبَارِكْ لَهُ فِيمَا أَعْطَيْتَهُ "হে আল্লাহ, তাকে ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততিতে বারাকাত দিন এবং আপনি তাকে যা দান করেছেন তাতেও বারাকাত দিন।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬২৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৮০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৮২, ৬৩৩৪, ৬৩৪৪, ৬৩৭৮, ৬৩৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬১৪৮, ইসলামিক সেন্টার ৬১৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩৫) সাঈদ ইবনু আযহার আল ওয়াসিতী (রহঃ)....আবু মালিক আল আশজাঈ এর পিতার সানাদে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি ইসলামে দীক্ষা গ্রহণ করত তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রথমে সালাত আদায়ের শিক্ষা দিতেন। তারপর তিনি তাকে এ কালিমাসমূহ পাঠ করার নির্দেশ দিতেন,

"আল্লা-হুম্মাগ ফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াহ্দিনী ওয়া’আ-ফিনী ওয়ারযুকনী।"

অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথপ্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন এবং আমার জীবিকা উপকরণ দান করুন।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬০৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩৬)  ‘ইয়া- হাইয়্যু, ইয়া কইয়ূমু বিরহমতিকা আস্তাগীস’’।

হাদিসঃ

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বিষয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লে বলতেন,

‘‘ইয়া- হাইয়্যু, ইয়া কইয়ূমু বিরহমতিকা আস্তাগীস’’

(অর্থাৎ-হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! তোমার রহমতের সাথে আমি প্রার্থনা করছি)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫২৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১১৯, সহীহাহ্ ৩১৮২, সহীহ আল জামি ৪৭৭৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

দোয়া কবুলের সময়  ও স্থানসমূহ

(১) রমাদান মাসেঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন রমাযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৯৮, ১৮৯৯, ৩২৭৭, মুসলিম ১৩/১, হাঃ ১০৭৯, আহমাদ ৮৬৯২)  (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৭৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) ফরজ সালাতের পরবর্তী দোয়াঃ

আবূ উমামাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! কোন সময়ের দুআ বেশি (শোনা) গ্রহণযোগ্য হয়? তিনি বললেনঃ শেষ রাতের মাঝ ভাগের এবং ফরয নামাযগুলোর পরবর্তী দুআ। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৯৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৩) শেষ রাতেঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকতে আমাদের প্রভু দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ “আমার কাছে যে দুআ করবে তার দুআ আমি কবুল করব। যে ব্যক্তি আমার নিকট (কিছু) প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে ব্যক্তি আমার নিকট মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দিব। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৯৮, )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ঃ

আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু’আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) ফরয সালাতের আযান, বৃষ্টি ও আল্লাহর রাস্তায় লড়াই তীব্র আকার ধারণ করলে  সে সময়েঃ

সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’ সময়ের দু’আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না অথবা (তিনি বলেছেন) কমই ফিরিয়ে দেয়া হয়। আযানের সময়ের দু’আ ও যুদ্ধের সময়ের দু’আ, যখন পরস্পর কাটাকাটি, মারামারি আরম্ভ হয়ে যায়। আর এক বর্ণনায় আছে বৃষ্টি বর্ষণের সময়ে দু’আ।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৭২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৫৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) ইকামাতের সময়ঃ

 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দোয়া কবুলের সুযোগ সন্ধান করো সৈন্য সমাবেশ, নামাজের ইকামত ও বৃষ্টি বর্ষণের সময়।’ (ইবনু হিব্বান ১৭৬৪, বায়হাকি)।

(৭) প্রতি রাতে কিছু সময়ঃ

উসমান ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ)....জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ সারা রাতের মধ্যে এমন একটি বিশেষ সময় আছে যে সময়ে কোন মুসলিম আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কোন কল্যাণ প্রার্থনা করলে তিনি তাকে তা দান করেন। আর ঐ বিশেষ সময়টি প্রত্যেক রাতেই থাকে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৫৫, ১৬৫৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫৭ ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৪০, ইসলামীক সেন্টার ১৬৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) জুমআর দিনে বিশেষ একটি সময়েঃ

জুমআর দিনে বিশেষ একটি মুহূর্ত আছে সেই বিশেষ মুহূর্তে দোয়া করলে তা কবুল হয়ঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আহর দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩৫, ৫২৯৪, ৫২৯৫, ৬৪০০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৫৪-১৮৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫২, সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩৭, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯১, নাসায়ী ১৪৩০-৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)১০৪৬, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৪২-৪৩, দারিমী ১৫৬৯, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৫৫৭২, আহমাদ ৭১৫১, ৯৮৯২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৩৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৮, শু‘আবুল ঈমান ২৭১১, সহীহ আত্ তারগীব ৭০০, সহীহ আল জামে ২১২০, আহমাদ ৭১১১, ৭৪২৩, ৭৬৩১, ৭৭১১, ৭৭৬৪, ৮৯৫৩, ৯৮৭৪, ৯৯২৯-৩০, ৯৯৭০, ১০০৮২, ১০১৬৭, ২৭২৩৪, ২৭২৬৯, ২৭৩৩৫;)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বসে থাকা অবস্থায় আমি বললাম, আমরা আল্লাহ্‌র কিতাবে জুমুআহর দিনের এমন একটি মুহূর্ত সম্পর্কে উল্লেখ পেয়েছি যে, সেই মুহূর্তে কোন মুমিন বান্দা সালাতরত অবস্থায় আল্লাহ্‌র নিকট কিছু প্রার্থনা করলে, তিনি তার প্রয়োজন পূরণ করেন। আবদুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে ইশারা করে বললেনঃ এক ঘণ্টার সামান্য সময় মাত্র। আমি বললাম, আপনি যথার্থই বলেছেন, এক ঘণ্টার সামান্য সময়ই। আমি বললাম, সেটি কোন মুহূর্ত? তিনি বলেনঃ সেটি হলো দিনের শেষ মুহূর্ত। আমি বললাম, তা সালাতের সময় নয়? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। মুমিন বান্দা এক সালাত শেষ করে বসে বসে অন্য সালাতের প্রতীক্ষায় থাকলে সে সালাতের মধ্যেই থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩৯, আহমাদ ২৩২৬৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (কুরআনে বর্ণিত) ‘‘ইয়াওমুল মাও‘ঊদ’’ হলো কিয়ামতের দিন। ‘ইয়াওমুল মাশহূদ’ হলো ‘আরাফাতের দিন। আর ‘শাহিদ’ হলো জুমু‘আর দিন। যেসব দিনে সূর্য উদয় ও অস্ত যায় তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো ‘‘জুমু‘আর দিন’’। এ দিনে এমন একটি সময় আছে সে সময়টুকু যদি কোন মু’মিন বান্দা পেয়ে যায়, আর ওই সময়ে সে আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণ কামনা করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাকে সে কল্যাণ প্রদান করবেন। যে জিনিস থেকে সে আশ্রয় চাইবে, আল্লাহ অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৩৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৫৬৪, সহীহ আল জামি ৮২০১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঘ) এই মুহূর্তের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তা হল ইমামের মিম্বরে বসা থেকে নিয়ে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়।

আবূ বুরদাহ্ ইবনু আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জুমু‘আর দিনের দু‘আ কবূলের সময় সম্পর্কে বলতে শুনেছেনঃ সে সময়টা হলো ইমামের মিম্বারের উপর বসার পর সালাত পড়াবার আগের মধ্যবর্তী সময়টুকু। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৩, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৩৯, দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫২৩, সুনানুল বায়হাক্বী ৫৯৯৯, শু‘আবুল ঈমান ২৭২৯, রিয়াযুস সালিহীন ১১৬৪০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) অথবা তা হলো আসরের পর যে কোন একটি সময়। অবশ্য এ প্রসঙ্গে আরো অন্য সময়ের কথাও অনেকে বলেছেন। (যাদুল মাআদ, ইবনুল কাইয়েম ১/৩৮৯-৩৯০)।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন দু‘আ কবূল হবার সময়টির আকাঙ্ক্ষা করে, সে যেন ‘আসরের পরে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময় খোঁজে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৮৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৫৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ৭০১, সহীহ আল জামি‘ ১২৩৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আহর দিনের বার ঘন্টার মধ্যে এমন একটি মুহুর্ত রয়েছে যদি কোন মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে তা দান করেন। এ মুহুর্তটি তোমরা ‘আসরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৪৮, নাসায়ী ১৩৮৮, হাকিম (১/২৭৯) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৯) সৎ নিয়তে জমজমের পানি পান করার সময়ঃ

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যমযমের পানি যে উপকার লাভের আশায় পান করা হবে, তা অর্জিত হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩০৬২, আহমাদ ১৪৪৩৫, ১৪৫৭৮, ইরওয়া ১১২৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) সালাতের সিজদা সময়ঃ

হারূন ইবনু মা’রূফ ও আমর ইবনু সাওওয়াদ (রহঃ)...আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ বান্দার সিজদারত অবস্থায়ই তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভের সর্বোত্তম অবস্থা (বা মুহুর্ত)। অতএব তোমরা অধিক পরিমাণে দু’আ পড়ো। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) রাতে ঘুম থেকে উঠে নির্দিষ্ট দুআ পড়ার পরঃ

উবাদাহ ইবনু সামিত (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে জেগে ওঠে (উপরোক্ত) দু‘আ পড়ে-

(দু‘আর অর্থ) ‘‘এক আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। রাজ্য তাঁরই। যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই। তিনিই সব কিছুর উপরে শক্তিমান। যাবতীয় হাম্দ আল্লাহরই জন্য, আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র, আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই। আল্লাহ্ মহান, গুনাহ হতে বাঁচার এবং নেক কাজ করার কোন শক্তি নেই আল্লাহর তাওফীক ব্যতীত।’’ অতঃপর বলে, ‘‘হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করুন।’’ বা (অন্য কোন) দু‘আ করে, তাঁর দু‘আ কবূল করা হয়। অতঃপর উযূ করে (সালাত আদায় করলে) তার সালাত কবূল করা হয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৫৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১২) দুআ ইঊনুস পাঠ করার পরঃ

সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নবী যুন-নূন ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে থাকাকালে যে দু’আ করেছিলেন তা হলঃ “তুমি ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র। আমি নিশ্চয় যালিমদের দলভুক্ত"- (সূরা আম্বিয়া ৮৭)। যে কোন মুসলিম লোক কোন বিষয়ে কখনো এ দু’আ করলে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তার দু’আ কবুল করেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫০৫, আল-কালিমুত তাইয়্যিব (হাঃ ১২২/৭৯), তা’লীকুর রাগীব (২/২৭৫, ৩/৪৩), মিশকাত তাহকীক সানী (হাঃ ২২৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৩) মুসিবতের সময় নির্দিষ্ট দুআ পাঠ করলেঃ

(ক) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বাহ ও ইবনু হুজর (রহঃ)....উম্মু সালামাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কোন মুসলিমের ওপর মুসীবাত আসলে যদি সে বলেঃ আল্লাহ যা হুকুম করেছেন-

"ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলায়হি র-জিউন”

 (অর্থাৎ- আমরা আল্লাহরই জন্যে এবং তারই কাছে ফিরে যাব) বলে এবং এ দু’আ পাঠ করে- “আল্ল-হুম্মা’ জুৱনী ফী মুসীবাতী ওয়া আখলিফ লী খয়রাম মিনহা- ইল্লা- আখলাফাল্ল-হু লাহ খয়রাম মিনহা-”

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাকে আমার মুসীবাতে সাওয়াব দান কর এবং এর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান কর, তবে মহান আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করে থাকেন।)।

উম্মু সালামাহ্ (রাযিঃ) বলেন, এরপর যখন আবূ সালামাহ ইনতিকাল করেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, কোন মুসলিম আবূ সালামাহ থেকে উত্তম? তিনি সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি হিজরত করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছে গেছেন। এতদসত্ত্বেও আমি এ দু’আগুলো পাঠ করলাম। এরপর মহান আল্লাহ আবূ সালামার স্থলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মতো স্বামী দান করেছেন। উম্মু সালামাহ (রাযিঃ) বলেন, আমার নিকট রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ের পয়গাম পৌছাবার উদ্দেশে হাতিব ইবনু আবূ বালতা’আহ-কে পাঠালেন। আমি বললাম, আমার একটা কন্যা আছে আর আমার জিদ বেশী। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার কন্যা সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে দুআ করব যাতে তিনি তাকে তার কন্যার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেন। আর (তার সম্পর্কে) দু’আ করব যেন আল্লাহ তার জিদ দূর করে দেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯১৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯৯৫, ইসলামীক সেন্টার ২০০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ).....নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কোন বান্দার ওপর মুসীবাত আসলে যদি সে বলে

"ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলায়হি র-জাউন, আল্ল-হুম্মা’ জুরনী ফী মুসীবাতী ওয়া আখলিফ লী খয়রাম মিনহা ইল্লা- আজারাহুল্ল-হু ফী মুসীবাতিহী ওয়া আখলাফা লাহ্ খয়রাম মিনহা-”

(অর্থাৎ- আমরা আল্লাহর জন্যে এবং আমরা তারই কাছে ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমাকে এ মুসীবাতের বিনিময় দান কর এবং এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান কর। তবে আল্লাহ তাকে তার মুসীবাতের বিনিময় দান করবেন এবং তাকে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করবেন।)।

উম্মু সালানাহ (রাযিঃ) বলেন, এরপর যখন আবূ সালামাহ ইনতিকাল করলেন, আমি ঐরূপ দুআ করলাম যেরূপ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন। অতঃপর মহান আল্লাহ আমাকে তার চেয়েও উত্তম নি’আমাত অর্থাৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে স্বামীরূপে দান করলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯১৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯৯৬, ইসলামীক সেন্টার ২০০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(১৪) কারও মৃত্যুর পর যখন সমবেত মানুষ দুআ করেঃ

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ).....উম্মু সালামাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ সালামাহকে দেখতে এলেন, তখন চোখ খোলা ছিল। তিনি তার চোখ বন্ধ করে দিলেন এবং বললেন, যখন রূহ কবয করা হয়, তখন চোখ তার অনুসরণ করে। আবূ সালামাহ এর পরিবারের লোকেরা কান্না শুরু করে দিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা তোমাদের নিজেদের ব্যাপারে ভাল কথা ছাড়া কোন খারাপ কিছু বলাবলি করো না। কেননা, তোমরা যা কিছু বল তার স্বপক্ষে মালায়িকাহ আমীন’ বলে থাক। এরপর তিনি এভাবে দু’আ করলেন, “হে আল্লাহ আবূ সালামাহ কে ক্ষমা কর এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদাকে উচু করে দাও, তুমি তার বংশধরদের অভিভাবক হয়ে যাও। হে রাব্বুল আলামীন তাকে ও আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও। তার কবরকে প্রশস্ত কর এবং তা জ্যোতির্ময় করে দাও।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯২০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯৯৯, ইসলামীক সেন্টার ২০০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৫) সালাতের শুরুতে বিশেষ দুআঃ

যুহারর ইবনু হারব (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত আদায় করেছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি বলে উঠলঃ

“আল্লহু আকবার কাবীরা- ওয়াল হামদুলিল্লা-হি কাসীরা- ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি বুকরাতান ওয়া আসীলা-”

(অর্থাৎ- আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, বড়। সব প্রশংসা আল্লাহর। আর সকাল ও সন্ধ্যায় তারই পবিত্রতা বর্ণনা করতে হবে।)।

(সালাত শেষে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এ কথাগুলো কে বলল? সবার মধ্যে থেকে জনৈক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রসূল আমি ঐ কথাগুলো বলেছি। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কথাগুলো আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। কারণ কথাগুলোর জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়েছিল।

আবদুল্লাহ ইবনু উমার বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথাগুলো বলতে শোনার পর থেকে তার ওপর আমল করা কখনো ছাড়িনি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬০১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২৩৩, ইসলামীক সেন্টার ১২৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (১৬) সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার সময়ঃ

ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল অথচ তাতে উন্মুল কুরআন (সূরাহ ফা-তিহাহ্) পাঠ করেনি তার সালাত ত্রুটিপূর্ণ থেকে গেল, পূর্ণাঙ্গ হল না। এ কথাটা তিনবার বলেছেন। আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা যখন ইমামের পিছনে সালাত আদায় করব তখন কী করব? তিনি বললেন, তোমরা চুপে চুপে তা পড়ে নাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ আমার এবং আমার বান্দার মাঝে আমি সালাতকে অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ করে নিয়েছি এবং আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়। বান্দা যখন বলে, الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য), আল্লাহ তা’আলা তখন বলেনঃ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। সে যখন বলে, الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (তিনি অতিশয় দয়ালু এবং করুণাময়); আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ বান্দা আমার প্রশংসা করেছে, গুণগান করেছে। সে যখন বলে, مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (তিনি বিচার দিনের মালিক), তখন আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে আল্লাহ আরো বলেনঃ বান্দা তার সমস্ত কাজ আমার উপর সমর্পণ করেছে। সে যখন বলে, إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি) তখন আল্লাহ বলেন। এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার। (এখন) আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়। যখন সে বলে,اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ * صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ (আমাদের সরল-সঠিক পথে পরিচালনা করুন। যেসব লোকদের আপনি নি’আমাত দান করেছেন, তাদের পথে নয় যাদের প্রতি আপনার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে; তখন আল্লাহ বলেনঃ এসবই আমার বান্দার জন্যে এবং আমার বান্দার জন্যে রয়েছে সে যা চায়।

সুফইয়ান বলেন, আমি ’আলা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু ইয়াকূবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে এ হাদীস বর্ণনা করে শুনান। এ সময় তিনি রোগশয্যায় ছিলেন এবং আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৬২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৭) সূরা ফাতিহার পর ফেরেশতাদের আমীন বলার সময়ঃ

রিফা‘আহ ইবনু রাফি’ যুরাকী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত আদায় করলাম। তিনি যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠিয়ে سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বললেন, তখন পিছন হতে এক সাহাবা رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ  বললেন। সালাত শেষ করে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে এরূপ বলেছিল? সে সাহাবী বললেন, আমি। তখন তিনি বললেনঃ আমি দেখলাম ত্রিশ জনের অধিক মালাইকাহ এর সওয়াব কে পূর্বে লিখবেন তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৯৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ৭৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৮) রুকূ থেকে উঠে বিশেষ দুআ পড়ার সময়ঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলেন, তখন তোমরা اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ  বলবে। কেননা, যার এ উক্তি মালাইকাহর উক্তির সঙ্গে একই সময়ে উচ্চারিত হয়, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৯৬, ৩২২৮; মুসলিম ৪/১৮, হাঃ ৪০৯, আহমাদ ৯৯৩০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৯) সালাতের শেষ বৈঠকে নবি স.-এর ওপর দরুদ পড়ার পরঃ 

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি নামায আদায় করছিলাম এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আবু বাকর এবং উমর (রাঃ)-ও উপস্থিত ছিলেন। আমি (শেষ বৈঠকে) বসলাম, প্রথমে আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা করলাম, তারপর নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাম নিবেদন করলাম, তারপর নিজের জন্য দু’আ করলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি প্রার্থনা করতে থাক তোমাকে দেয়া হবে, তুমি প্রার্থনা করতে থাক তোমাকে দেয়া হবে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫৯৩,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩১, সিফাতুস সালাত, তাখরাজুল মুখতারাহ ২৫৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(২০) সালাতে সালাম ফেরানোর আগে সালাতের মধ্যেঃ

উবায়দ ইবনু ওয়াকী ইবনুল জাররাহ (রহ.)...আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মু সুলায়ম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন কিছু বাক্য শিক্ষা দিন যা আমি আমার সালাতে পাঠ করবো। তিনি বললেন, তুমি সুবহা-নাল্ল-হ’ দশবার, ’আলহামদুলিল্লা-হ দশবার এবং ’আল্ল-হু আকবার’ দশবার বলে আল্লাহর নিকট তোমার যা প্রয়োজন হয় তা চাইবে। তিনি বলবেন- হ্যাঁ, হ্যাঁ, অর্থাৎ নিশ্চয় তিনি তোমার দু’আ গ্রহণ করবেন। (সুনান আন-নাসায়ী (তাহকীককৃত) ১৩০০, সুনান আততিরমিযী ৪৮১, ৪৮৪; মুসনাদে আহমাদ ১২২২৮, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ ৮৫০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(২১) ওযুর পর নির্দিষ্ট দুআ পাঠকালেঃ

মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মাইমূন (রহঃ)....উকবাহ ইবনু আমির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ওপর উট চড়ানোর দায়িত্ব ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকেদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তার এ কথা শুনতে পেলাম, "যে মুসলিম সুন্দরভাবে ওযু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ রেখে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। উকবাহ বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলামঃ বাহ! হাদীসটি কত চমৎকার! তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন, আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সে দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি ’উমার। তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে দেখেছি, এ মাত্র এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগে বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করে এ দু’আ পড়বে- "আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয় আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু"। তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২২) আরাফার দিন আরাফার ময়দানেঃ

আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) কর্তৃক পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও তার দাদার সনদে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরাফাতের দিনের দু’আই উত্তম দুআ। আমি ও আমার আগের নবীগণ যা বলেছিলেন তার মধ্যে সর্বোত্তম কথাঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূদ নেই। তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, সার্বভৌমত্ব তারই এবং সমস্ত কিছুর উপর তিনি সর্বশক্তিমান”। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৮৫, মিশকাত (২৫৯৮), তা’লীকুর রাগীব (২/২৪২), সহীহাহ (১৫০৩)।দিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(২৩) সূর্য ঢলে পড়ার পর, যুহরের আগেঃ

’আবদুল্লাহ ইবনুস সায়িব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর যুহরের পূর্বে চার রাকাআত নামায আদায় করতেন। তিনি বলেছেনঃ এটা এমন একটা সময় যখন আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। আমি এ সময় আমার কোন ভাল কাজ উপরে উঠে যাক এ আকাংখা করি।  (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৭৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১২৭০, সুনান ইবনু মাজাহ ১১৫৭, আহমাদ ৫/৪১৬, ইবনু খুযাইমাহ ১২১৪, হুমাইদী ‘মুসনাদ’ ৩৮৫, তিরমিযী ‘শামায়িলি মাহমুদিয়্যাহ’ ২৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 “বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে যাওয়ার পর এক সালামে চার রাক"আত নামায আদায় করতেন।"

(২৪) লাইলাতুল কদরের রাতেঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে বলে দিন, যদি আমি ’কদর রাত’ পাই, এতে আমি কী দু’আ করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি বলবে,

“আল্ল-হুম্মা ইন্নাকা ’আফুব্বুন, তুহিব্বুল আফ্ওয়া’, ফা’ফু ’আন্নী’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমিই ক্ষমাকারী। আর ক্ষমা করাকে তুমি পছন্দ করো। অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৯১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫১৩, মিশকাত ২০৯১, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৫০, আহমাদ ২৫৩৮৪, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৪২, সহীহাহ্ ৩৩৩৭, সহীহ আল জামি ৩৩৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২৫) যিকরের মজলিশে মুসলিমদের সমাবেশেঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর একদল ফেরেশতা আছেন, যাঁরা আল্লাহর যিকরে রত লোকেদের খোঁজে পথে পথে ঘুরে বেড়ান। যখন তাঁরা কোথাও আল্লাহর যিকরে রত লোকেদের দেখতে পান, তখন ফেরেশতারা পরস্পরকে ডাক দিয়ে বলেন, তোমরা আপন আপন কাজ করার জন্য এগিয়ে এসো। তখন তাঁরা তাঁদের ডানাগুলো দিয়ে সেই লোকদের ঢেকে ফেলেন নিকটবর্তী আকাশ পর্যন্ত। তখন তাঁদের প্রতিপালক তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন (যদিও ফেরেশতাদের চেয়ে তিনিই অধিক জানেন) আমার বান্দারা কী বলছে?

তখন তাঁরা বলে, তারা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, তারা আপনার শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিচ্ছে, তারা আপনার গুণগান করছে এবং তারা আপনার মাহাত্ম্যপ্রকাশ করছে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? তখন তাঁরা বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার শপথ! তারা আপনাকে দেখেনি। তিনি বলবেন, আচ্ছা, তবে যদি তারা আমাকে দেখত? তাঁরা বলবেন, যদি তারা আপনাকে দেখত, তবে তারা আরও অধিক পরিমাণে আপনার ’ইবাদাত করত, আরো অধিক আপনার মাহাত্ম্য ঘোষণা করত, আরো অধিক পরিমাণে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করত।

বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহ বলবেন, তারা আমার কাছে কী চায়? তাঁরা বলবে, তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতারা বলবেন, না। আপনার সত্তার কসম! হে রব! তারা তা দেখেনি। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, যদি তারা দেখত তবে তারা কী করত? তাঁরা বলবে, যদি তারা তা দেখত তাহলে তারা জান্নাতের আরো অধিক লোভ করত, আরো বেশি চাইত এবং এর জন্য আরো বেশি বেশি আকৃষ্ট হত।। আল্লাহ্ তা’আলা জিজ্ঞেস করবেন, তারা কী থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়? ফেরেশতাগণ বলবেন, জাহান্নাম থেকে। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? তাঁরা জবাব দেবে, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা জাহান্নাম দেখেনি।

তিনি জিজ্ঞেস করবেন, যদি তারা তা দেখত তখন তাদের কী হত? তাঁরা বলবে, যদি তারা তা দেখত, তাহলে তারা তাত্থেকে দ্রুত পালিয়ে যেত এবং একে অত্যন্ত বেশি ভয় করত। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি, আমি তাদেরক্ষমা করে দিলাম। তখন ফেরেশতাদের একজন বলবে, তাদের মধ্যে অমুক ব্যক্তি আছে, যে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সে কোন প্রয়োজনে এসেছে। আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, তারা এমন উপবেশনকারী যাদের মাজলিসে উপবেশনকারী বিমুখ হয় না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪০৮, মুসলিম ৪৮/৮, হাঃ ২৬৮৯, আহমাদ ৭৪৩০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২৬) মোরগ ডাকার সময়ঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে তখন তোমরা আল্লাহর নিকট তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করে দু‘আ কর। কেননা এ মোরগ ফিরিশতাদের দেখে আর যখন গাধার আওয়াজ শুনবে তখন শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবে, কেননা এ গাধাটি শয়তান দেখেছে।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩০৩, মুসলিম ৪৮/২০ হাঃ ২৭২৯, আহমাদ ৯৪১৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (২৭) যুল হিজ্জাহ মাসের প্রথম দশ দিনঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ‘আমলের চেয়ে অন্য কোন দিনের ‘আমলই উত্তম নয়। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ছাড়া যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়েও জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৬৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

.................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...