বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর
পর্ব-০১
সম্পাদকীয়ঃ
আল্লাহ বলেন, “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান
করো প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো সুন্দর পন্থায়। (নহল
১৬/১২৫)।
আল্লাহ বলেন, “হে ইমানদারগন, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ
তেমনই ভাবে ভয় করতে থাকো, এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না। সুরা আলে ইমরানঃ
১০২।
আল্লাহ বলেন, “আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ
যারা সৎ কর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত
রাখবে। আর তারাই হবে সফলকাম। সুরা আলে ইমরানঃ ১০৪।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, “অন্যায় কিছু দেখলে (ক্ষমতা থাকলে) তা হাত
দিয়ে প্রতিরোধ করবে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত
হা/৫১৩৭)।
প্রশ্নঃ মাজহাব
মানা চরম বিদআত কেনো?
বর্তমানে সারাবিশ্বে
মুসলমানের সংখ্যা আড়াইশো কোটিরও বেশী। পৃথিবীর প্রত্যেক তিনজন ব্যাক্তির মধ্যে
একজন মুসলমান। অমুসলিমদের কাছে আমরা অর্থাৎ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা মুসলমান বলে
পরিচিত হলেও মুসলিমরা নিজেদের মধ্যে অনেক নামে পরিচিত। যেমন, হানাফী, শাফেয়ী,
মালেকী, হাম্বলী প্রভৃতি। এই নামগুলি আল্লাহ বা মুহাম্মাদ (সা) এর দেওয়া
নয় এমনকি যাঁদের নামে এই মাযহাব তৈরি করা হয়েছে তারাও এই নামগুলো দেয়নি।
মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত চারটি মাযহাব, দল বা ফিকাহ ইসলামের কোনো নিয়ম বা বিধান
মেনে তৈরি করা হয়নি। কারন ইসলাম ধর্মে কোনো দলবাজী বা ফিরকাবন্দী নেই। মুসলমানদের
বিভক্ত হওয়া থেকে এবং ধর্মে নানা মতের সৃষ্টি করা থেকে কঠোরভাবে সাবধান করা হয়েছে।
এই মাযহাবগুলো রসুল (যা) এবং সাহাবাদের (রা) সময় সৃষ্টি হয়নি। এমনকি ঈমামগনের সময়ও
হয়নি। চার ইমামের মৃত্যুর অনেক বছর পরে তাঁদের নামে মাযহাব তৈরি হয়েছে। কোরআন
হাদীস ও চার ইমামের দৃষ্টিতে মাযহাব কি, কেন, মাযহাব কি মানতেই হবে, মাযহাব মানলে
কি গোনাহ হবে, সে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ্!
মাযহাব তৈরিতে আল্লাহর কঠোর নিষেধাজ্ঞাঃ
মুসলমানেরা যাতে
বিভিন্ন দলে আলাদা বা বিভক্ত না হয়ে যায় সে জন্য আল্লাহ পাক আমাদের কঠোরভাবে
সাবধান করেছেন। যেমনঃ আল্লাহ তা’আলা কুরআনের সূরা আন-আমর এর ১৫৯ নম্বর আয়াতে
বলেছেন ‘যারা দ্বীন সন্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন, দলে বিভক্ত
হয়েছে হে নবী! তাদের সাথে তোমার কোনও সম্পর্ক নেই; তাদের বিষয় আল্লাহর
ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবগত করবেন। একটু থামুন।
উপরের আয়াতটা দয়া করে বারবার পড়ুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন, চিন্তা করুন। আল্লাহ
তা’আলা সরাসরি বলেছেন যারা দ্বীন বা ধর্মে অর্থাৎ ইসলামে নানা মতগের সৃষ্টি করেছে
এবং বিভক্ত হয়েছে, তাদের সাথে আমাদের নবী মহাম্মাদ (সা) এর কোনো সম্পর্ক নেই। যার
সাথে নবীজীর (সা) কোনো সম্পর্ক নেই সে কি মুসলমান? সে কি কখনো জান্নাতের গন্ধও
পাবে। আমরা মুসলমান কোরআন হাদীস মাননে ওয়ালা এটাই আমাদের একমাত্র পরিচয়। আল্লাহ
বলেন এবং তোমাদের এই যে জাতি, এতো একই জাতি; এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক, অতএব
আমাকে ভয় করো। (সূরা মুউমিনুন ২৩/৫২)। তাহলেই বুঝতেই পড়েছেন ফরয, ওয়াজীব ভেবে
আপনারা যা মেনে চলছেন আল্লাহ তা মানতে কত কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন তবে শুধু এইটুকুই নয়
আল্লাহ আরও অনেক আয়াতে এ ব্যাপারে মানুষকে সাবধানবানী শুনিয়েছেন। যেমন সূরা রূমের
একটি আয়াত দেখুন যেখানে আল্লাহ পাক বলছেন ‘….. তোমরা ঐ সকল মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত
হয়ো না যারা নিজেদের দ্বীনকে শতধা বিচ্ছিন্ন করে বহু দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
প্রত্যেক দল নিজেদের কাছে যা আছে তা নিয়ে খুশি’–(সূরা রুম ৩০/৩১-৩২)। বর্তমানে
আমাদের সমাজের অবস্থাও ঐ মুশরিকদের মতো। ইসলামকে তারা (মাযহাবীরা) বিভিন্ন দলে
বিভক্ত করেছে এবং তাদের নিজেদের কাছে যা আছে তা নিয়েই তারা খুশি। তাদের সামনে কোনো
কথা উপস্থাপন করলে তারা বলেনা যে কুরআন হাদীসে আছে কি না। তারা বলে আমাদের ইমাম কি
বলেছে। এরা কুরয়ান হাদীসের থেকেও ইমামের ফিকাহকে অধিক গুরুত্ব দেয়। অথচ ইসলামের
ভিত্তি হচ্ছে কুরআন হাদীস। তা ছাড়া অন্য কিছু নয়। উপরের আযাতে আল্লাহ তা’আলা
আমাদের উপদেশ দিয়েছেন তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না; তোমরা ইসলামে মাযহাবের
সৃষ্টি করো না। অথচ আমরা কুরআনের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে দ্বীনে দলের সৃষ্টি করেছি
এবং নিজেকে হানাফী, মালেকী বা শাফেরী বলতে গর্ব অনুভব করছি। আল্লাহ বলেন ‘হে
ইমানদারগন তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রগামী হয়ো না, এবং আল্লাহকে ভয়
করো; আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী (সূরা হুরুরতে/০১) আমার প্রিয় মাযহাবী ভাইয়েরা!
এরকম কোরআনের স্পষ্ট নির্দেশ জানার পরও কি আপনারা মাযহাবে বিশ্বাসী হবেন এবং
নিজেকে মাযহাবী বলে পরিচয় দেবেন। যারা জানে না তাদের কথা আলাদা। আল্লাহ বলেন ‘বলো,
যারা জানে এবং যারা জানেনা তারা কি সমান? (সূরা যুমার ৩৯/০৯)। তাই আজই তওবা করে
সঠিক আক্বিদায় ফিরে আসুন। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলাম বোঝার তোফিক দিন। আমীন!
ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেননিঃ
ভারতবর্ষের বিখ্যাত
হাদীসশাস্ত্রবিদ ও হানাফীদের শিক্ষাগুরু যাকে হানাফীরা ভারতবর্ষের ‘ইমাম বুখারী’
বলে থাকেন সেই শাহ আলিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহেলভী (রহ) বলেছেন – ‘ই’লাম আন্না
না-সা-কা-নু ক্কারলাল মিআতির রা-বিআতি গাইরা মুজমিয়ীনা আলাত্-তাকলীদিল খা-লিস
লিমায় হাবিন্ ওয়া-হিদিন্ বি-আইনিহী’ অর্থাৎ তোমরা জেনে রাখো যে, ৪০০ হিজরীর আগে
লোকেরা কোন একটি বিশেষ মাযহাবের উপর জমে ছিল না’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ; ১৫২
পৃষ্ঠা)। অর্থাৎ ৪০০ হিজরীর আগে নিজেকে হানাফী, শাফেরী বা মালেকী বলে পরিচয় দিতো
না। আর চারশো হিজরীর অনেক আগে ইমামরা ইন্তেকাল করেন। ইমামদের জন্ম ও মৃত্যুর
সময়কালটা একবার জানা যাক তাহলে ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।
ইমামগণের নাম, জন্ম ও মৃত্যুঃ
আবু হানীফা (রহ) ৮০
হিজরী ১৫০ হিজরী
ইমাম মালেক (রহ) ৯৩
হিজরী ১৭৯ হিজরী
ইমাম শাকেরী (রহ) ১৫০
হিজরী ২০৪ হিজরী
আহমদ বিন হাম্বাল (রহ)
১৬৪ হিজরী ২৪১ হিজরী
বিশিষ্ট হানাফী বিদ্বান
শাহ ওলিউল্লাহ দেহেলভী (রহ) এর কথা যদি মেনে নেওয়া যায় যে ৪০০ হিজরীর আগে কোনো
মাযহাব ছিল না, এবং ৪০০ হিজরীর পরে মানুষেরা মাযহাব সৃষ্টি করেছে, তার মানে এটা
দাঁড়ায় যে আবু হানীফার ইন্তেকালের ২৫০ বছর পর হানাফী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম
মালেকের ইন্তেকালের ২২১ বছর পর মালেকী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম শাফেরীর
ইন্তেকালের ১৯৬ বছর পরে শাফেরী মাযহাব এবং ইমাম আহমাদের ইন্তেকালের ১৫৯ বছর পর
হাম্বলী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ ইমামদের জীবিত অবস্থায় মাযহাব সৃষ্টি হয়নি।
তাঁদের মৃত্যুর অনেকদিন পরে মাযহাবের উদ্ভব হয়েছে। আর একবার চিন্তা করে দেখুন
মাযহাব বা দল সৃষ্টি করাতে কোরআন ও হাদিসে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মহামান্য
ইমামরা ছিলেন কোরআন হাদীসের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসারী এবং ধর্মপ্রান মুসলিম। তাঁরা কি
কোরআন হাদীসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মাযহাব তৈরি করবেন যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এটা
কখনো হতে পারে? যারা বলে ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেছেন তারা হয় মুর্খ নয় বেইমান।
তারা ইমামদের প্রতি অপবাদ দেয়।
মাযহাব সৃষ্টি হল কিভাবেঃ এটা বিদআতিদের তৈরী
ফারসীতে একটি প্রবাদ
আছে ‘মান তোরা হাজী গো ইয়াম তু মোরা হাজী বোগো’ অর্থাৎ একজন লোক আর একজনকে বলছে,
ভাই! যদিও তুমি হাজী নও তথাপি আমি তোমাকে হাজী সাহেব বলছি এবং যদিও আমি হাজী নই
তুমি আমাকে হাজী সাহেব বলো। এভাবে একে অপরকে হাজী সাহেব বলে ডাকার ফলে আমরা
দু-জনেই হাজী সাহেব হয়ে যাবো। এভাবেই আবু হানীফার অনুসারীদের অথবা তাঁর ফতোয়া
মান্যে ওয়ালাদের অন্যেরা হানাফী একইভাবে ইমাম মালেকের ফতোয়া মাননে ওয়ালাদের মালেকী
বলে ডাকাডাকির ফলে মাযহাবের সৃষ্টি হয়েছে। আজ যা বিরাট আকার ধারন করেছে। আবু
হানীফা (রহ) বা তাঁর শিষ্যরা কখনো বলেননি আমাদের ফতোয়া যারা মানবা তারা নিজেদের
পরিচয় হানাফী বলে দিবা। অথবা ইমাম মালেক বা শাফেয়ীও বলে যাননি যে আমার অনুসারীরা
নিজেকে মালেকী বা শাফেয়ী বলে পরিচয় দিবা। ইমামরা তো বটেই এমনকি ইমামদের শাগরেদরা কিংবা
তাঁর শাগরেদদের শাগরেদরাও মাযহাব সৃষ্টি করতে বলেননি। যখন আমাদের মহামতি ইমামরা
মাযহাব সৃষ্টি করেননি এবং করতেও বলেননি তখন উনাদের নামে মাযহাব সৃষ্টি করার অধিকার
কেন দিল?
মাজহাবপন্থীরা যাদের
মাজহাব মানে তারাই (চার ইমাম) মাজহাব বিরোধী
মাযহাবীদের মধ্যে কিছু লোক দেখা
যায় যারা ইমামদের তাক্কলীদ করে অর্থাৎ অন্ধ অনুসরন করে। তারা ইমামদের বক্তব্যকে আসমানী
ওহীর মতো মানে। কোরআন-হাদিস বিরোধী কোনো রায় হলেও তাতে আমল করে। তাই সেই সব লোকদের
জন্য হাদীস অনুসরনের ব্যাপারে ইমামদের মতামত এবং তাদের হাদীস বিরোধী বক্তব্য প্রত্যাখ্যান
করার ব্যাপারে তাদের কয়েকটি উক্তি দেওয়া হল। ইনশাল্লাহ্! মাযহাবী ভাইয়েরা এ থেকে শিক্ষা
নিবেন ও তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসবেন।
আবু হানীফা (রহ:)-
১) যখন হাদীস সহীহ হবে,
তখন সেটাই আমার মাযহাব অর্থাৎ হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব। (ইবনুল আবেদীন
১/৬৩; রাসমুল মুফতী ১/৪; ঈক্কামুল মুফতী ৬২ পৃষ্ঠা)
২) কারো জন্য আমাদের
কথা মেনে নেওয়া বৈধ নয়; যতক্ষন না সে জেনেছে যে, আমরা তা কোথা থেকে গ্রহন করেছি।
(হাশিয়া ইবনুল আবেদীন ২/২৯৩ রাসমুল মুফতী ২৯, ৩২ পৃষ্ঠা, শা’ রানীর মীথান ১/৫৫;
ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ২/৩০৯)
৩) যে ব্যাক্তি আমার
দলিল জানে না, তার জন্য আমার উক্তি দ্বারা ফতোয়া দেওয়া হারাম। (আন-নাফিউল কাবীর
১৩৫ পৃষ্ঠা)
৪) আমরা তো মানুষ। আজ
এক কথা বলি, আবার কাল তা প্রত্যাহার করে নিই। – (ঐ)
৫) যদি আমি এমন কথা বলি
যা আল্লাহর কিবাব ও রাসুলের (সা) হাদীসের পরিপন্থি, তাহলে আমার কথাকে বর্জন করো।
(দেওয়ালে ছুড়ে মারো)। (ঈক্কাবুল হিমাম ৫০ পৃষ্ঠা)
ইমাম মালেক (রহ:)-
১) আমি তো একজন মানুষ
মাত্র। আমার কথা ভুল হতে পারে আবার ঠিকও হতে পারে। সুতরাং তোমরা আমার মতকে বিবেচনা
করে দেখ। অতঃপর যেটা কিতাব ও সুন্নাহর অনুকুল পাও তা গ্রহন কর। আর যা কিতাব ও
সুন্নাহর প্রতিকুল তা বর্জন করো। (জানেউ বায়ানিল ইলম ২/৩২, উসুলুল আহকাম ৬/১৪৯)
২) রাসুলুল্লাহ (সা) এর
পর এমন কোনো ব্যাক্তি নেই যার কথা ও কাজ সমালোচনার উর্ধে। একমাত্র রাসুলুল্লাহ
(সা) ই সমালোচনার উর্ধে। (ইবনু আবদিল হাদী, ১ম খন্ড, ২২৭ পৃষ্ঠা, আল ফতোয়া – আসসাবকী,
১ম খন্ড ১৪৮ পৃষ্ঠা, উসুলুল আহকাম ইবনু হাযম, ষষ্ঠ খন্ড ১৪৫ – ১৭৯ পৃষ্ঠা)।
৩) ইবনু ওহাব বলেছেন,
আমি ইমাম মালেককের উয়ব মধ্যে দুই পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার বিষএ এক প্রশ্ন করতে
শুনেছি। তিনি বলেন লোকদের জন্য এটার প্রয়োজন নীই। ইবনু ওহাব বলেন, আমি মানুষ কমে
গেলে তাঁকে নিরিবিলে পেয়ে বলি ‘তাতো আমাদের জন্য সুন্নাহ। ইমাম মালেক বলেন, সেটা
কি? আমি বললাম, আমরা লাইস বিন সাদ, ইবনু লোহাইআ, আমর বিন হারেস, ইয়াবিদ বিন আমার
আল-মা আফেরী, আবু আবদুর রহমান আল হাবালী এবং আল মোস্তাওরাদ বিন শাদ্দাদ আল কোরাশী
এই সুত্র পরম্পরা থেকে জানতে পেরেছি যে, শাদ্দাদ আল কোরাশী বলেন, আমি রাসুল (সা)
কে কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে দুই পায়ের আঙ্গুল খেলাল করতে দেখেছি। ইমাম মালেক বলেন, এটা
তো সুন্দর হাদীস। আমি এখন ছাড়া আর কখনো এই হাদীসটি শুনিনি। তারপর যখনই তাকে এ
বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, তখনই তাঁকে পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার আদেশ দিতে আমি
শুনেছি। (মোকাদ্দামা আল জারাহ ওয়াত তা দীল- ইবনু হাতেমঃ ৩১- ৩২ পৃষ্ঠা)
ইমাম শাফেরী (রহ:)-
১) হাদীস সহীহ হলে
সেটাই আমার মাযহাব। (মাজমু ১/৬৩; শা’রানী ১/৫৭)
২) আমি যে কথাই বলি না
কেন অথবা যে নীতিই প্রনয়ন করি না কেন, তা যদি আল্লাহর রাসুল (সা) এর নিকট থেকে
বর্ণিত (হাদীসের) খিলাপ হয়, তাহলে সে কথাই মান্য, যা রাসুল (সা) বলেছেন। আর সেটাই
আমার কথা। (তারীখু দিমাশ্ক; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ২/৩৬৬,৩৬৪)
৩) নিজ ছাত্র ইমাম
আহমাদকে সম্বোধন করে বলেন) হাদীস ও রিজাল সম্বন্ধে তোমরা আমার চেয়ে বেশি জানো।
অতএব হাদীস সহীহ হলে আমাকে জানাও, সে যাই হোক না কেন; কুকী, বাসরী অথবা শামী। তা
সহীহ হলে সেটাই আমি আমার মাযহাব (পন্থা) বানিয়া নেবো। (ইবনু আবী হাতীম ৯৪-৯৫
পৃষ্ঠা; হিলয়াহ ৯/১০৬)
৪) আমার পুস্তকে যদি
আল্লাহর রাসুল (সা) এর সুন্নাহের খেলাপ কে কথা পাও, তাহলে আল্লাহর রাসুল (সা) এর
কথাকেই মেনে নিও এবং আমি যা বলেছি তা বর্জন করো। (নাওয়াবীর মা’জমু ১/৬৩; ইলামূল
মুওয়াক্কিঈন ২/৩৬১)
৫) যে কথাই আমি বলি না
কেন, তা যদি সহীহ সুন্নাহর পরিপন্থি হয়, তাহলে নবী (সা) এর হাদীসই অধিক মান্য।
সুতরাং তোমরা আমার অন্ধানুকরন করো না। (হাদীস ও সুন্নাহর মুল্যমান ৫৪ পৃষ্ঠা)
৬) নবী (সা) থেকে যে
হাদীসই বর্ণিত হয়, সেটাই আমার কথা; যদিও তা আমার নিকট থেকে না শুনে থাকো। (ইবনু
আবী হাতীম ৯৩-৯৪)
ইমাম আহমাদ (রহ:)-
১) তোমরা আমার
অন্ধানুকরন করো না, মালেকেরও অন্ধানুকরন করো না। অন্ধানুকরন করো না শাফেরীর আর না
আওয়ারী ও ষত্তরীব বরং তোমরা সেখান থেকে তোমরা গ্রহন কর যেখান থেকে তারা গ্রহন
করেছেন। (ইলামুল মোয়াক্কিঈন ২/৩০২)
২) যে ব্যক্তি আল্লাহর
রাসুল (সা) এর হাদীস প্রত্যাখ্যান করে, সে ব্যক্তি ধ্বংসোন্মুখ। (ইবনুল জাওযী ১৮২
পৃষ্ঠা)
৩) আওযাঈঃ ইমাম মালেক ও
ইমাম আবু হানীফার রায় তাদের নিজস্ব রায় বা ইজতিহাদ। আমার কাছে এসবই সমান। তবে দলিল
হল সাহাবী ও তাবেঈগনের কথা। (ইবনু আবদিল বার-আল-জামে, ২ খন্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা)।
মাজহাবপন্থী ভাইদের
বলছি, এই লেখা পড়ার পর তৎক্ষণাত তওবা করে কোরআন ও সহীহ হাদিসের পথে ফিরে আসা উচিত।
তানাহলে আপনাদের কোনো আমল আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। চার ইমাম কোরআন ও সহীহ
হাদিস বিরোধী ছিলেন না। কিন্তু বর্তমানে তাদেরকে অন্ধের মতো অনুসরন-অনুকরন করতে
গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ৯৫% মুসলমান সহীহ হাদিস বাদ দিয়ে জাল, জইফ বা মিথ্যে কিংবা
দূর্বল হাদিসের উপর আমল করছে। এভাবে সহীহ হাদিস বাদ দিয়ে অন্যের মতামত বা অভিমতকে
অন্ধের মতো অনুসরন করা বিদআত। আমরা মুসলমান আমাদের মূল দলীল হবে কোরআন ও সহীহ
হাদিস।
বিদআত ও বিদআতিদের শেষ
পরিণতি
বিদআত
শব্দের আভিধানিক অর্থ হল, কোন বস্তুকে আবিস্কার করা বা তৈরি করা। শরীয়তের পরিভাষায়
বিদআত শব্দের অর্থ হল দ্বীনের মধ্যে সওয়াব অর্জনের উদ্দেশে এমন কোন বস্তুকে সৃষ্টি
করা,যার কোন ভিত্তি সুন্নাহে পাওয়া যায় না।
জাবের(রাযিঃ)
হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেনঃ
হামদ
ও সানা তথা আল্লাহর প্রশংসার পরে মনে রাখবে,সর্বোত্তম কথা হল আল্লাহর কিতাব,আর
সর্বোত্তম নিয়ম পদ্ধতি হল মুহাম্মাদ (সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) এর নিয়ম পদ্ধতি।
আর সবচেয়ে খারাপ কাজ হল,দ্বীনে নতুন কথা আবিস্কার করা। আর প্রত্যেক বিদআত গুমরাহী।
(মুসলিম,কিতাবুল
জুমুআহ,হাদিস-৮৬৭)
ইরবায
ইবনু সারিয়া(রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেনঃ
দ্বীনে
নব আবিষ্কৃত বিষয়াদি থেকে বাঁচ,কেননা প্রত্যেক বিদআত গুমরাহী।
(ইবনু
মাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস-৪০,সহিহ)
সকল
বিদা’ত সম্পূর্ণরূপে গোমরাহী। বিদাআতে হাসানাহ (উত্তম/ভাল বিদআত) বা বিদআত
সাইয়িআহ(মন্দ বিদআত) এর নামে বিদা’তের বিভক্তি সুন্নাহ বিরোধী।
আব্দুল্লাহ ইবনু উমর বলেন,সকল বিদআত গোমরাহী,যদিও বা লোকজন তাকে আপাতদৃষ্টিতে ভাল মনে করে। (দারিমী,কিতাবুল আসমা ফি জাম্মিল ইবতিদা’,পৃষ্ঠা-১৭)
বিদআতিদের
শেষ পরিনতিঃ
(১) বিদা’তিকে সহযোগিতাকারীর উপর
আল্লাহর অভিশাপঃ
আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
আল্লাহ অভিশাপ করেছেন সেই ব্যক্তি
যে আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো নামে জবাই করে, আর যে জমির সীমা চুরি করে, আর যে মাতা পিতাকে
অভিশাপ দেয়, আর যে বিদা’তিকে আশ্রয় দেয়। (মুসলিম,কিতাবুল আযাহী,হাদিস-১৯৭৮)
(২) বিদআতির আমল আল্লাহর কাছে অগ্রহণযোগ্যঃ
আয়েশা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি এমন কাজ করল যা দ্বীনে
নেই, সেই কাজটি আল্লাহর কাছে পরিত্যাজ্য।
(বুখারি ও মুসলিম,আলল’লুউ ওয়াল
মারজান,২য় খণ্ড,হাদিস-১১২০)
(৩) বিদআতির তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে
না,যতক্ষণ না সে বিদআত সম্পূর্ণ ছেড়ে দেয়ঃ
আনাস ইবনু মালেক (রাযিঃ) হতে
বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেনঃ
আল্লাহ তা’আলা বিদা’তিদের তাওবা
গ্রহন করেন না ততক্ষন পর্যন্ত যতক্ষণ না সে বিদআত থেকে সম্পূর্ণ তওবা করে। (তারবানী,সহীহুত
তারগীব ওয়াততারহীব,১ম খণ্ড,হাদিস-৫২)
(৪) রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি
ওয়াসাল্লাম) এর অসন্তুষ্টির কারণঃ
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাহুয়ালিহি
ওয়াসাল্লাম) কিয়ামতের দিন বিদআতি লোকদের প্রতি বেশি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন।
সাহাল ইবনু সাআদ (রাযিঃ) হতে
বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
আমি হাউজে কাওসারে তোমাদের অপেক্ষাই
থাকব। যে ব্যাক্তি সেখানে আসবে সে পানি পান করবে। আর যে ব্যক্তি একবার পান করবে সে
আর তৃষ্ণার্ত হবে না। কিছু লোক এমন আসবে যাদের আমি চিনি এবং তারাও আমাকে চিনবে। আমি
মনে করব, তারা আমার উম্মাত। তারপর তাদেরকে আমার কাছ পর্যন্ত পৌছতে দেওয়া হবে না। আমি
বলবো, এরা তো আমার উম্মত। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ,আপনি জানেন না, আপনি দুনিয়া
থেকে চলে আসার পর এসব লোকেরা কেমন বিদআত সৃষ্টি করেছে। তারপর আমি বলবো, তাহলে দূর হোক,
দূর হোক সে সকল লোকেরা যারা আমার পর দ্বীন পরিবর্তন করেছে।
(বুখারি ও মুসলিম,আলল’লুউ ওয়াল
মারজান,২য় খণ্ড,হাদিস-১৪৭৬)
(৫) আল্লাহ, ফেরেশতা ও লোকসকলের
অভিশাপঃ
আসেম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, আনাস
(রাযিঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) কি মদিনাকে হেরেম
আখ্যা দিয়েছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ অমুক স্থান থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত। এ স্থানের গাছ
কাটা যাবে না। রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি এখানে কোন বিদআত
সৃষ্টি করবে তার উপর আল্লাহ,ফেরেস্তাসমূহ ও লোকসকলের অভিশাপ হবে। (বুখারি ও মুসলিম,আলল’লুউ
ওয়াল মারজান,২য় খণ্ড,হাদিস-৮৬৫)
(৬) বিদআত প্রলচলনকারীর গুনাহের
ভাগ পাওয়াঃ
কাসীর ইবনু আবিদল্লাহ (রাহঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহ থেকে
কোন একটি সুন্নাহ কে জীবিত করেছে আর অন্য লোকেরা সে অনুযায়ী আমল করেছে, তাকে সব আমলকারীর
সমান সওয়াব দেওয়া হবে। আবার তাদেরকেও কম দেওয়া হবে না। আর যে বিদআত চালু করেছে ও লোকেরা সে অনুযায়ী আমল করেছে,তাকে
সব আমলকারীর সমান পাপ দেওয়া হবে। আবার তাদের পাপে কম করা হবে না। (ইবনু মাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস-১৭৩,সহিহ)
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি লোকজনকে হেদায়াতের
দিকে আহবান করবে, তাকে সে হিদায়াত মতে আমলকারী সকল লোকের সমান সওয়াব দেওয়া হবে। আর
লোকজনের সওয়াবে কোন কম করা হবে না। এমনিভাবে যে
লোকজনকে গোমরাহীর দিকে ডাকবে, তাকে সে গোমরাহী মতে আমলকারীর সমান পাপ দেওয়া
হবে। আবার তাদের পাপ ও কম করা হবে না। (মুসলিম,কিতাবুল ইলম)।
(৭) সুন্নাহ হতে বঞ্চিতঃ
হাসসান ইবনু আতিয়্যাহ বলেনঃ
যে ব্যক্তি দ্বীনে কোন বিদআত যতটুকু গ্রহন করবে,আল্লাহ তা’আলা তার থেকে ততটুকু সুন্নাহ উঠিয়ে নেন। তারপর কিয়ামত
পর্যন্ত তাদের মধ্যে সে সুন্নাত ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (দারিমী-সহিহ,মিসকাত,হাদিস-১৮৮,সহিহ)
(৮) শয়তানের প্রিয় হওয়াঃ
সুফিয়ান সাওরী (রাযিঃ) বলেনঃ
শয়তান পাপের পরিবর্তে বিদআতকে
বেশী পছন্দ করে। কারণ পাপ থেকে তো লোকেরা তাওবা করে নেয়, কিন্তু বিদআত থেকে তওবা করে
না।
বিঃদ্রঃ বিদআতি তো সওয়াব অর্জনের
উদ্দেশে বিদআত করে। কেও কি কোন আমলের জন্য তওবা করে?
(৯) ফিতনা ও কষ্টদায়ক শাস্তিঃ
ইমাম মালেক (রাহঃ) থেকে জিজ্ঞাসা
করা হল, হে আবু আব্দিল্লাহ,এহরাম কোথা হতে বাধব? উত্তরে তিনি বললেন, আমি মসজিদে নববী
তথা কবরের কাছ থেকে এহরাম বাধতে চাই। ইমাম মালেক (রাহঃ) বললেন, এমন কর না, আমার ভয়
হয় তুমি ফেতনায় পতিত হবে। লোকটি বলল, এখানে ফেতনার কি আছে? আমি তো শুধু কয়েক মাইল পূর্বে
এহরাম বাধতে চাইছি। ইমাম মালেক (রাহঃ) বললেন, এর চেয়ে বড় ফিতনা আর কি হবে যে, তুমি
মনে করছ যে, এহরাম বাধার সওয়াবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আগে
বেড়ে যাচ্ছ। আমি আল্লাহ তা’আলাকে বলতে শুনেছি, যারা আল্লাহর রাসুল (সাল্লাহুয়ালিহি
ওয়াসাল্লাম) এর আদেশ অমান্য করে তাদের ভয় থাকা উচিত যেন, তারা কোন ফিতনা বা কষ্টদায়ক
শাস্তিতে পতিত না হয়। (আল ইতিছাম,আলকাউলুল আসমা ফি যাম্মিল ইবতিকা,পৃষ্ঠা-২১,২২)
(১০) নেক আমল গ্রহণযোগ্য না হওয়াঃ
ফুযায়িল ইবনু আয়ায (রাযিঃ) বলেনঃ
যখন তোমরা বিদআত পন্থী কোন লোক
আসতে দেখবে তখন সে রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তা গ্রহন করো। বিদআতির কোন আমল আল্লাহর কাছে
গ্রহণযোগ্য হবে না। যে ব্যাক্তি বিদআতিকে সাহায্য করল, সে যেন দ্বীন ধ্বংস করতে সাহায্য
করল। (খাছায়িছু আহলেসুন্নাহ,পৃষ্ঠা-২২)
প্রিয় পাঠকগণ সতর্ক হন নিজ আমলের
ক্ষেত্রে। যাচাই বাছাই করে দেখুন আপনার আমল রাসুলুল্লাহ (সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম)
এর আমলের সাদৃশ্য কিনা।
আল্লাহ বলেনঃ
“ওহে যারা ঈমান এনেছো! আল্লাহ্কে
মেনে চলো ও রসূলের আজ্ঞা পালন করো, আর তোমাদের ক্রিয়াকর্ম বিফল করো না।” -(সুরা মুহাম্মাদ-৩৩)।
কুরআন ও সহিহ হাদিস হতে শেষ পরিনতির আরো দলীল
১।
হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ?
এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক
পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার
করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল
নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো
আর আমার আয়াত ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ
করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)
২।
যারা তাঁর (রাসুলসঃ) হুকুমের বিরুদ্ধাচারন
করে এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য
যে, তারা মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে। (নূর-৬৩)
৩।
আমাদের উপস্থাপিত ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় যে কোন নতুন নিয়ম পদ্ধতি বা মতবাদের প্রচলন
করবে, যা তার সামগ্রিক প্রকৃতির সাথে কিছু মাত্র খাপ খায় না, তা অবশ্যই প্রত্যাখান
করতে হবে।( বুখারী ও মুসলিম)
৪।
সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য
ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম (সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে
দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন। (কোরআন-৪:১১৫)
৫।“ হোজায়ফা (রাঃ) হতে বর্নিত,
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, , মুসলিম সমাজে এমন লোকদের আবির্ভাব হইবে যাহারা আমার নীতি ছাড়া
অন্য নীতিও অবলম্বন করিবে। তাহাদের কোন কোন কাজ ভালো এবং কোন কাজ মন্দও দেখিতে পাইবে।”(বুখারী)
৬।
“যে ব্যক্তি নিজের মতবাদকে কেন্দ্র করে তার নিয়ন্ত্রনে কোরআনের ব্যাখ্যা করে-যে ব্যক্তি
কোরআনের নির্দেশ অনুসারে স্বীয় মতবাদ স্থির করে না; বরং স্বীয় মতবাদের নির্দেশ অনুসারে
কোরআনের ব্যাখ্যা করে, শাব্দিক অর্থে ঐ ব্যাখ্যা শুদ্ধ হলেও বস্তুত তা ভুল পরিগণিত।”(মেশকাত)
৮।
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল
করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা আলে ইমরান,
আয়াত : ৮৫)
৯।
নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন: হযরত হারিসুল আশয়ারী (রঃ)হতে বর্ণিত।
নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি (১) জামায়াত
বদ্ধ হবে (২) নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে (৩) তার আদেশ মেনে চলব (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয়
কাজ বর্জন করবে (৫) আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, যে ব্যক্তি ইসলামি সংগঠন ত্যাগ করে
এক বিঘত দূরে সরে গেল, সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে
প্রত্যাবর্তন করে তো স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীতির দিকে (লোকদের)
আহবান জানায় সে জাহান্নামী। যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী
করে। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)। (সমাপ্ত)
প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু
(১
নং পর্বে মোট ১২০টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে)
জানুয়ারি/২০১৯
প্রশ্ন (১/১২১) : কয়েক বছর আগে আমার মামার পরিবারের সাথে আমাদের কোন
এক বিষয়ে খুব ঝগড়া হয়। এই কারণে তাদের সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। কিন্তু আমি যখন
আমার মাকে বুঝালাম যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে যেতে পারবে না, তখন আমার
মা তার ভুল বুঝতে পারেন এবং আমার পিতা আমার মাকে নিয়ে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে যান।
কিন্তু তারা আমার মাকে গ্রামের সকল মানুষের সামনে মারধর করে অপমান করে। এই অবস্থায়
আমরা কি করব? আমরা কি আল্লাহর কাছে দায়ী থাকব? জানালে খুব উপকৃত হব।
উত্তর : মামার পরিবার এই মন্দ আচরণের মাধ্যমে কবীরা গুনাহগার হয়েছে।
এর বিপরীতে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে গিয়ে যারা অপমানিত হয়েছে তারা অশেষ নেকীর
অধিকারী হয়েছে। জনৈক ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল
(ছাঃ)! আমার আত্মীয়-স্বজন আছে। আমি তাদের সাথে সদাচরণ করি, কিন্তু তারা আমাকে
বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমি তাদের উপকার করি, কিন্তু তারা আমার ক্ষতি করে। আমি তাদের
প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শন করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে মূর্খতাসুলভ আচরণ করে। তখন
তিনি বললেন, তুমি যা বললে, এটিই যদি প্রকৃত অবস্থা হয়, তাহ’লে তুমি যেন তাদের উপর
জ্বলন্ত অঙ্গার নিক্ষেপ করছ (অর্থাৎ তারা এই আচরণের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির উপযুক্ত
হয়েছে)। আর সর্বদা তোমার সঙ্গে আল্লাহর তরফ থেকে তাদের বিপক্ষে একজন সাহায্যকারী
(ফেরেশতা) থাকবে, যতক্ষণ তুমি এ অবস্থায় বহাল থাকবে’ (মুসলিম হা/২৫৫৮; মিশকাত হা/৪৯২৪; ছহীহাহ হা/২৫৯৭)। সুতরাং
প্রশ্নোল্লেখিত সম্পর্কছিন্নকারী আত্মীয়দের উপর নিঃসন্দেহে আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত
হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, আত্মীয়দের সাথে ন্যূনতম
হ’লেও যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সালাম প্রদানের মাধ্যমে হ’লেও
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৬০২;
ছহীহাহ হা/১৭৭৭)। তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিদানের বিনিময়ে আত্মীয়তার
সম্পর্ক রক্ষাকারী প্রকৃত আত্মীয়তা রক্ষাকারী নয়। বরং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা
হ’লে যে ব্যক্তি তা যুক্ত করে সেই হ’ল আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী’ (বুখারী হা/৫৯৯১; আবূদাঊদ হা/১৪৮৯)। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মানুষের আমলসমূহ জমা করে আল্লাহর নিকট পেশ করা হয়। কিন্তু
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর আমল কবুল করা হয় না (আহমাদ হা/১০২৭৭; ছহীহুত তারগীব হা/২৫৩৮)। সুতরাং কোনভাবেই
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না।
প্রশ্ন (২/১২২) : গরু দিয়ে আক্বীক্বা দেওয়া যাবে কি?
উত্তর : আক্বীক্বার সুন্নাতী নিয়ম হ’ল ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি ও মেয়ের পক্ষ
থেকে একটি ছাগল বা দুম্বা আক্বীক্বা দেওয়া (আবূদাঊদ
হা/২৮৩৪; মিশকাত হা/৪১৫২; ছহীহাহ হা/১৬৫৫)। গরু ও উট দিয়ে আক্বীক্বা
করার প্রমাণে বর্ণিত হাদীছটি জাল। আয়েশা (রাঃ)-এর ভাতিজা জন্মগ্রহণ করলে তাকে উট
দ্বারা আক্বীক্বা করতে বলা হ’ল। তখন তিনি বললেন, আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।
রাসূল (ছাঃ) দু’টি সমপর্যায়ের ছাগল দ্বারা আক্বীক্বা করতে বলেছেন (বায়হাক্বী হা/১৯০৬৩; ইরওয়া হা/১১৬৬-এর আলোচনা ৪/৩৯০ পৃ.)।
জনৈক মহিলা আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট বলল, অমুকের স্ত্রী সন্তান প্রসব করলে তার পক্ষ
থেকে একটি উট আক্বীক্বা করব। তখন আয়েশা (রাঃ) প্রতিবাদ করে বলেন, না, বরং সুন্নাত
হ’ল ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি ছাগল ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল আক্বীক্বা করা (মুসনাদে ইবনু রাহওয়াইহ হা/১০৩৩; ছহীহাহ হা/২৭২০)। অতএব
সুন্নাতের অনুসরণ করাই কর্তব্য।
প্রশ্ন (৩/১২৩) : ব্যাংক থেকে সূদে ঋণ নিয়ে বাড়ি করলে উক্ত বাড়ির ভাড়া
ভোগ করা মালিকের জন্য বৈধ হবে কি?
উত্তর : প্রথমতঃ সূদের উপর ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করা জায়েয নয়।
কারণ সূদ সর্বাবস্থায় হারাম এবং সবচেয়ে বড় কবীরা গুণাহসমূহের অন্তর্ভুক্ত (বাক্বারাহ ২/২৭৫৮)। অতএব উক্ত ব্যক্তিকে অবিলম্বে খালেছ তওবা
করতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব ঋণ পরিশোধ করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ উক্ত ঋণ দ্বারা
নির্মিত বাড়ীর মালিকানা লাভ করা বা ভাড়া ভোগ করা নাজায়েয হবে না। কেননা সূদ অবৈধ
হ’লেও ঋণ বৈধ। তাছাড়া ঋণদাতা সূদ নিয়ে থাকে, ঋণ গ্রহীতা নয়। অতএব তিনি উক্ত গৃহে
বসবাস ও প্রাপ্ত অর্থ ভোগ করতে পারবেন (ফাতাওয়া আশ-শাবকাতুল ইসলামিয়াহ
১২/৬৯২৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/৪১১)। সর্বোপরি এই সূদী লেনদেনের
জন্য গ্রহীতাকে অবশ্যই অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবা করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, পাপ থেকে
তওবাকারী ব্যক্তি পাপমুক্ত ব্যক্তির ন্যায়’ (ইবনু
মাজাহ হা/৪২৫০; মিশকাত হা/২৩৬৩)।
প্রশ্ন (৪/১২৪) : রুকূ ও সিজদায় কুরআনে বর্ণিত দো‘আগুলি পাঠ করা যাবে
কি?
উত্তর : রুকূ ও সিজদায় কুরআনের সূরা ও আয়াত সমূহ তেলাওয়াত করা নিষিদ্ধ।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সাবধান! আমাকে রুকূ-সিজদায় কুরআন তেলাওয়াত করতে নিষেধ করা
হয়েছে। তাই তোমরা রুকূতে তোমাদের রবের মহিমা বর্ণনা কর। আর সিজদায় অতি মনোযোগের
সাথে দো‘আ কর। আশা করা যায়, তোমাদের দো‘আ কবূল করা হবে’ (মুসলিম হা/৪৭৯-৪৮০; মিশকাত হা/৮৭৩)। ইবনু তায়মিয়াহ বলেন, এটা
এজন্য হ’তে পারে যে, রুকূ ও সিজদায় বান্দার মস্তক অবনত থাকে। এ অবস্থায় কুরআন
তেলাওয়াত করা আদবের খেলাফ (মাজমু‘উল ফাতাওয়া ৫/৩৩৮)।
তবে মর্ম ঠিক রেখে সামান্য শাব্দিক পরিবর্তনে পড়া যাবে। যেমন রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া... (বাক্বারাহ ২০১)-এর স্থলে আল্লা-হুম্মা
রববানা আ-তিনা পাঠ করা (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৩৪-১৩৫ পৃ.)।
একদল বিদ্বানের মতে, কেবল দো‘আর উদ্দেশ্যে পাঠ করলে তা জায়েয হবে, তেলাওয়াতের
উদ্দেশ্যে নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৬/৪৪৩,
আশ-শারহুল মুমতে’ ৩/১৩৩)।
প্রশ্ন (৫/১২৫) : ব্যাংক, রেডিও ও টেলিভিশনে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চাকুরী
করা যাবে কি?
উত্তর : সূদী ব্যাংকে প্রকৌশলী হিসাবে কাজ করা যাবে না। কারণ তাতে
অন্যায় কাজে সহযোগিতা করা হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৫/৪১;
ফাতাওয়া ইসলামিয়া ২/৮৭১)। অনুরূপভাবে রেডিও ও টেলিভিশনে যদি অশ্লীলতা,
গান-বাজনা প্রচার করা হয়, তবে সেখানেও চাকুরী করা জায়েয হবে না। কেননা এতে এসব
অন্যায় কর্ম ও অশ্লীলতা প্রচারে সহযোগিতা করা হয়, যা নিষিদ্ধ (মায়েদা ৫/২)। এর চেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হ’ল, এতে চলমান গুনাহে
জড়িত হ’তে হয়, যাতে ব্যক্তি নিজে সরাসরি পাপে যুক্ত না থেকেও অন্যের পাপের বোঝা
বহন করে (নাহল ১৬/২৫; মুসলিম হা/২৬৭৪)।
তবে স্রেফ ইসলামী অনুষ্ঠান বা সংবাদ প্রচারের জন্য হ’লে উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকুরীতে
বাধা নেই।
প্রশ্ন (৬/১২৬) : চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতে ইমাম তৃতীয় রাক‘আতে বৈঠক
করেন। আবার পঞ্চম রাক‘আতে বৈঠক করে সালাম ফিরান। লোকমা দেওয়া হ’লেও সহো সিজদা না দিয়ে
ছালাত শেষ করেন। এক্ষণে আমাদের ছালাত হয়েছে কি?-যাকির মোল্লা, বরগুনা।
উত্তর : মুক্তাদীসহ ইমামকে সহো সিজদা দেওয়া আবশ্যক ছিল। তবে উক্ত
ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না। কারণ ইমাম ভুলক্রমে এটি করেছেন। ফলে ইমাম যে কয়
রাক‘আত পড়েন, মুক্তাদী তাই পড়বেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ইমাম নিযুক্ত হন তাকে অনুসরণ
করার জন্য (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/১১৩৯)।
উল্লেখ্য যে, চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতে ইমাম পঞ্চম রাক‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলে
এবং লোকমা দেওয়া সত্ত্বেও সতর্ক না হ’লে সালাম ফিরানোর পূর্বে কিংবা পরে তিনি সহো
সিজদা দিবেন। যদি কোন ব্যক্তি ২য় বা ৩য় রাক‘আতে এসে যোগদান করেন, তবে তিনি ইমামের
কৃত অতিরিক্ত রাক‘আতকে নিজের জন্য গণনা করবেন এবং সেই মোতাবেক তার ছালাত শেষ
করবেন।
প্রশ্ন (৭/১২৭) : রাসূল (ছাঃ)-এর জানাযা কিভাবে হয়েছিল? কারা তাঁর জানাযায়
অংশগ্রহণ করেছিলেন?
উত্তর : রাসূল (ছাঃ)-এর জানাযা এককভাবে হয়েছিল। জায়গার সংকীর্ণতার
কারণে জামা‘আত করা সম্ভব হয়নি (আহমাদ হা/২০৭৮৫; মাজমাউয যাওয়ায়েদ
হা/১৪২৭৩)। ঘরের মধ্যে খননকৃত কবরের পাশেই তাঁর লাশ রাখা হয়। অতঃপর
আবুবকর (রাঃ)-এর নির্দেশক্রমে দশ দশজন করে ভিতরে গিয়ে জানাযা পড়েন। জানাযায় নির্দিষ্ট
কোন ইমাম ছিল না। তারা এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে জানাযা পড়ে অন্য দরজা দিয়ে বের হয়ে
গিয়েছিলেন। প্রথমে রাসূল (ছাঃ)-এর পরিবার-পরিজন, অতঃপর মুহাজিরগণ, অতঃপর আনছারগণ
জানাযার ছালাত আদায় করেন। এভাবে পুরুষ, মহিলা ও বালকগণ পরপর জানাযা পড়েন। জানাযার
এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া মঙ্গলবার সারা দিন ও রাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফলে বুধবারের
মধ্যরাতে দাফনকার্য সম্পন্ন হয় (সীরাতু ইবনে হিশাম ২/৬৬৪)।
মানছূরপুরী বলেন, ইসলামী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সন্ধ্যার পরেই দিন শেষ হয়ে যায় এবং
পরবর্তী দিন শুরু হয়। সেকারণ মঙ্গলবার ও বুধবারের মতভেদ দূর করার জন্য আমরা ঘণ্টার
আশ্রয় নিয়েছি। সে হিসাবে মৃত্যুর প্রায় ৩২ ঘণ্টা পরে রাসূল (ছাঃ)-এর দাফন কার্য
সম্পন্ন হয় (মানছূরপুরী, রহমাতুল্লিল আলামীন
১/২৫৩, ২/৩৬৮; দ্র. সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৭৫৪ পৃঃ)।
প্রশ্ন (৮/১২৮) : জনৈক কলামিস্ট একটি পত্রিকায় লিখেছেন যে, মহানবী
(ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা ধর্মের মূল কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে তার ব্যবহারিক দিকগুলো অবশ্যই
যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংশোধন ও পরিবর্তন করবে’। উক্ত মর্মে সত্যিই কোন
হাদীছ আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। তাছাড়া শরী‘আতের কোন
স্পষ্ট বিধান পরিবর্তন বা সংশোধন করার কোন সুযোগ নেই। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘তোমার
প্রতিপালকের কালেমা সত্য ও ন্যায় দ্বারা পূর্ণ। যার পরিবর্তনকারী কেউ নেই’ (আন‘আম ৬/১১৫)। কারণ ইসলামী শরী‘আত পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা (মায়েদাহ ৫/৩), যা সর্বকালের জন্য প্রযোজ্য। তবে মু‘আমালাত বা
ব্যবহারিক ক্ষেত্রে মূল বিধান ঠিক রেখে ধরণ, উপলক্ষ্য বা উপকরণের পরিবর্তন হ’তে
পারে। যেমন আল্লাহ জিহাদের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্ত্তত রাখতে বলেছেন (আনফাল ৮/৬০)। তৎকালীন যুগে তা ছিল ঘোড়া, তরবারী, তীর-বর্শা
ইত্যাদি। আজকের যুগে সেটি পরিবর্তিত হ’তে পারে আধুনিক অস্ত্র সমূহ দ্বারা। সুতরাং
যুগের সাথে তাল মিলানোর নামে আধুনিক যুগে কতিপয় বুদ্ধিজীবী সূদ, জিহাদ, মহিলাদের
পর্দা, ইসলামের হুদূদ, পারিবারিক আইন প্রভৃতি শারঈ বিধান সমূহ পরিবর্তনের জন্য যে
প্রস্তাব পেশ করে থাকেন তা একান্তই অজ্ঞতাপ্রসূত এবং কুফরীর পর্যায়ভুক্ত। কোন
ঈমানদার মুসলমানদের জন্য এরূপ চিন্তাধারা থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
প্রশ্ন (৯/১২৯) : কোন ব্যক্তি হাজীকে ইহরামের কাপড় উপহার দিলে তা দ্বারা
হজ্জ করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : হাদিয়ার কাপড় ইহরামে পরা জায়েয। এমনকি কেউ হজ্জের পুরো অর্থ
হাদিয়া হিসাবে দিলে তা দ্বারাও হজ্জ করা জায়েয (ফাতাওয়া
লাজনা দায়েমা ১১/৩৪-৪০)। এতে সহযোগিতাকারী পূর্ণ ছওয়াব পাবেন। আল্লাহ
বলেন, ‘তোমরা নেকী ও তাক্বওয়ার কাজে পরস্পরকে সাহায্য কর এবং গোনাহ ও সীমালংঘনের
কাজে সাহায্য করো না’ (মায়েদাহ ৫/২)। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ ততক্ষণ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের
সাহায্যে থাকে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪ ‘ইলম’
অধ্যায়)। যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসে, আল্লাহ তার
সাহায্যে এগিয়ে আসেন’ (বুখারী হা/২৪৪২; মুসলিম হা/২৫৮০;
মিশকাত হা/৪৯৫৮)।
প্রশ্ন (১০/১৩০) : ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.) কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন?
জনৈক ব্যক্তি বলেন, তিনি হাম্বলী মাযহাবকেই ফৎওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতেন। একথা
কি সঠিক?
উত্তর : ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) একজন মুজতাহিদে মুত্বলাক ছিলেন। তিনি
নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন না। বরং কুরআন ও হাদীছের ভিত্তিতে যে বিষয়টি
সঠিক মনে হ’ত তিনি সে বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতেন। আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) ইবনু
তায়মিয়াহ (রহঃ)-কে মুজতাহিদ বলে বিশেষিত করেছেন (ত্বাবাকতুল
হুফফায ৫১৬-১৭ পৃ:)। আল্লামা ইবনু রজব তাকে মুজতাহিদ বলে উল্লেখ
করেছেন (যায়লু ত্বাবাক্বাতিল হানাবিলা ২/৩০৭)।
শাওকানী তাকে মুজতাহিদে মুত্বলাক্ব বলে অভিহিত করেছেন (আল-বাদরুত ত্বালে‘ ১/৫৭)। এক্ষণে তাঁর অধিকাংশ মাসআলা
হাম্বলী মাযহাবের সাথে মিলে যাওয়ার কারণ হ’ল তিনি হাদীছ ভিত্তিক ফৎওয়া দিতেন। আর
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলও হাদীছ ভিত্তিক ফৎওয়া দিতেন। তাছাড়া ইমাম আহমাদ অন্য তিন
ইমামের তুলনায় হাদীছ বেশী জানতেন; যার জ্বলন্ত প্রমাণ তাঁর সংকলিত ত্রিশ হাযার
হাদীছ সম্বলিত মুসনাদ গ্রন্থটি। সুতরাং এই কারণে ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.)-কে হাম্বলী
মাযহাবের অনুসারী মনে করার সুযোগ নেই।
প্রশ্ন (১১/১৩১) : ক্বিয়ামতের দিন মসজিদ, মাদরাসা, কা‘বাঘর ও কুরআন
মাজীদ ইত্যাদি অক্ষত থাকবে। এমর্মে বর্ণিত হাদীছের কোন সত্যতা আছে কি?
উত্তর : এ মর্মে কোন দলীল পাওয়া যায় না। বরং ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ ব্যতীত
সকল সৃষ্টজীব ধ্বংস হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ বলেন, ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে, সবই
ধ্বংসশীল। কেবল অবশিষ্ট থাকবে তোমার প্রতিপালকের চেহারা (রহমান ৫৫/২৬-২৭)। এছাড়া ক্বিয়ামতের পূর্বে কা‘বা ধ্বংস হয়ে
যাবে মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি যেন দেখতে পাচ্ছি কাল বর্ণের বাঁকা পা বিশিষ্ট
লোকেরা (কা‘বা ঘরের) একটি একটি করে পাথর খুলে এর মূলোৎপাটন করছে’ (বুখারী হা/১৫৯৫; মিশকাত হা/২৭২২)। এমনকি সে সময় কুরআন থাকবে
কিন্তু কুরআনে কোন লেখা থাকবে না। মানুষের স্মৃতি থেকে কুরআন উঠিয়ে নেওয়া হবে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, (ক্বিয়ামতের পূর্বে শেষ যামানায়) একরাতে পৃথিবী থেকে আল্লাহর
কিতাব বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং একটি আয়াতও অবশিষ্ট থাকবে না। মানুষের কতক দল অবশিষ্ট
থাকবে তাদের বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা বলবে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’-এর অনুসারী দেখতে পেয়েছি। সুতরাং আমরাও সেই বাক্য বলতে থাকব’ (ইবনু মাজাহ হা/৪০৪৯; দারেমী হা/৩৩৪৩; ছহীহাহ হা/৮৭)। সুতরাং
মাদরাসা বা মসজিদ টিকে থাকার প্রশ্নই আসে না।
প্রশ্ন (১২/১৩২) : কসমের কাফফারার তিনটি ছিয়াম ধারাবাহিকভাবে রাখা আবশ্যক
কি?
উত্তর : কসমের কাফফারার তিনটি ছিয়াম ধারাবাহিকভাবে রাখা আবশ্যক নয়। বরং
যেকোন দিন আলাদাভাবে রাখা যাবে। তবে যেকোন ওয়াজিব ছিয়াম ধারাবাহিকভাবে রাখা
উত্তম (নববী, আল-মাজমূ‘ ১৮/১২২; ইবনু কুদামাহ, মুগনী
৯/৫৫৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২২/২৩)।
প্রশ্ন (১৩/১৩৩) : নারীরা শয়তানের জাল- মর্মে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়েছে
কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এর সনদ অত্যন্ত
যঈফ (মিশকাত হা/৫২১২; যঈফাহ হা/২০৫৯)।
বরং এটি একটি আরবী প্রবাদ মাত্র। এতে দুশ্চরিত্রা নারীদের থেকে সাবধান করা হয়েছে,
সকল নারী উদ্দেশ্য নয়।
প্রশ্ন (১৪/১৩৪) : মসজিদের দেয়ালে মুছল্লীদের স্মরণ করার সুবিধার্থে
কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ লেখা জায়েয হবে কি? -
উত্তর : মুছল্লীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় এমন কিছু মসজিদের দেয়ালে বা
মেহরাবে লেখা বা লাগানো উচিৎ নয়। কেননা ছালাতের সময় এগুলি চোখে পড়লে ছালাতের
একাগ্রতা নষ্ট হয়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি নকশাদার চাদরে
ছালাত আদায় করেন। ছালাত শেষে তিনি বললেন, আমার এ চাদরটি হাদিয়া প্রদানকারী আবু
জাহমের নিকট নিয়ে যাও এবং আমার জন্য তার ‘আম্বেজানিয়া’ চাদর নিয়ে আস। কেননা এখনই
এই চাদরটি আমার ছালাতের একাগ্রতা নষ্ট করল’ (মুত্তাফাক
আলাইহ, মিশকাত হা/৭৫৭)। আনাস (রাঃ) বলেন, আয়েশা (রাঃ)-এর একটি পর্দা
ছিল, যা দ্বারা তিনি ঘরের একদিক ঢেকে রেখেছিলেন। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমার এ
পর্দা সরিয়ে ফেল। কারণ তার ছবিসমূহ আমার ছালাতের মাঝে আমার চোখে পড়ে (বুখারী, মিশকাত হা/৭৫৮)। ইমাম মালেক (রহঃ)-কে এ বিষয়ে
জিজ্ঞাসা করা হ’লে তিনি বলেন, মসজিদের ক্বিবলায় কুরআনের কিছু লিখা বা এর দ্বারা
সৌন্দর্য বর্ধন করাকে আমি অপসন্দ করি। কারণ এগুলি মুছল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয় (ইবনুল হাজ্জ, আল-মাদখাল ২/২১৫)। এছাড়া কালেমা মসজিদ সাজানোর
জন্য নয়, বরং পাঠের জন্য। ইমাম নববী বলেন, কুরআনের কিছু অংশ দেওয়ালে লেখা আমাদের
নিকট মাকরূহ (আত-তিবইয়ান ফী হাম্মাল্লাতিল
কুরআন ১১০ পৃ.)। হানাফী বিদ্বান কামাল ইবনুল হুমাম বলেন, কুরআন বা
আল্লাহর নাম দেওয়ালে লেখা মাকরূহ (ফাৎহুল ক্বাদীর ১/৩১০)।
এছাড়াও আধুনিক যুগের প্রখ্যাত আলেমগণ মসজিদের দেওয়ালে বিশেষত ক্বিবলার দিকে কিছু
লেখা বা নকশা করাকে বিদ‘আত ও অপসন্দনীয় বলেছেন (ফাতাওয়া
লাজনা দায়েমা ২/৫/১৯০-১৯১; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১১/২৭৫)।
প্রশ্ন (১৫/১৩৫) : অনেক হাদীছের শেষে সনদ যঈফ লেখা সত্ত্বেও বলা হয়
যে, তবে হাদীছটির একাধিক শাওয়াহেদ ও মুতাবা‘আত থাকার কারণে এটি ছহীহ। এর ব্যাখ্যা কি?
উত্তর : শাওয়াহেদ ও মুতাবা‘আত হ’ল উছূলে হাদীছের দু’টি পরিভাষা। একই হাদীছ
ভিন্ন ভিন্ন ছাহাবী থেকে বর্ণিত হ’লে হাদীছগুলি পরস্পরের জন্য ‘শাহেদ’। হ’তে
পারে প্রথম সনদে কোন দুর্বল রাবী রয়েছে, কিন্তু অন্য ছাহাবী থেকে বর্ণিত দ্বিতীয়
বা তৃতীয় সনদে হাদীছটি শক্তিশালী রাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। ফলে একই মর্মে বর্ণিত
হাদীছের শক্তিশালী সনদগুলি দুর্বল সনদটির জন্য শাহেদ হিসাবে গণ্য হবে এবং মূল
হাদীছটি ছহীহ হিসাবে গণ্য হবে। আর মুতাবা‘আত হ’ল একই ছাহাবী হ’তে দুই বা ততোধিক
সূত্রে বর্ণিত হাদীছ। এক্ষেত্রে একটি সূত্র দূর্বল হ’লেও অপর সূত্রটি ছহীহ হ’লে
সেটি প্রথম সূত্রটির জন্য ‘মুতাবা‘আহ’ হিসাবে গণ্য হবে। ফলে হাদীছটির একটি সূত্র
দূর্বল হ’লেও অপর শক্তিশালী মুতাবা‘আত থাকার কারণে সেটি ছহীহ বলে গণ্য হবে।
প্রশ্ন (১৬/১৩৬) : মসজিদে বিবাহের ওয়ালীমার অনুষ্ঠান করা যাবে কি?
উত্তর : মসজিদে বিবাহের অনুষ্ঠান বা
ওয়ালীমা করা যাবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৮/১১০-১১১)।
আব্দুল্লাহ ইবনুল হারিছ আয-যুবাইদী (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে
মসজিদে বসে রুটি ও গোশত খেতাম (ইবনু মাজাহ হা/৩৩০০; মিশকাত
হা/৪২৭৫)। তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় কঠোরভাবে বর্জনীয়। আর সেগুলো
হ’ল- ১. মসজিদ কোনভাবেই অপরিষ্কার রাখা যাবে না (আবুদাউদ
হা/৪৫৫; ছহীহাহ হা/২৭২৪)। ২. নারী-পুরুষের অবাধ মিশ্রণ হ’তে দেওয়া
যাবে না (আহযাব ৩৩/৫৩; বুখারী হা/৫২৩২; মিশকাত
হা/৩১০২)। ৩. ঋতুবতী নারীরা মসজিদে অবস্থান করতে পারবে না (মুসলিম হা/৮৯০; ছহীহাহ হা/৬০০)। ৪. গান-বাজনা করা যাবে
না (বুখারী হা/৫৫৯০; মিশকাত হা/৫৩৪৩)। ৫.
মুছল্লীদের ইবাদতে অসুবিধা হয় এমন কাজ করা যাবে না (আহমাদ হা/১৯০৪৪; মিশকাত হা/৮৫৬; দ্র. নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/৫৩৪-৩৫;
রুহায়বানী, মাতালিবু উলিন নুহা ২/২৬৩)।
প্রশ্ন (১৭/১৩৭) : ‘আল্লাহর নিকটে তালাক সবচেয়ে নিকৃষ্ট হালাল কাজ’
মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটির সনদ ছহীহ নয় (আবূদাউদ হা/২১৭৮; যঈফুল জামে‘ হা/৪৪)। তবে মর্ম সঠিক। শায়খ
উছায়মীন বলেন, উক্ত মর্মে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে; কিন্তু সনদ ছহীহ নয়। যদিও মর্ম
ছহীহ। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তালাক দেওয়াকে অপসন্দ করেন। কিন্তু জাতির কল্যাণে এর
বৈধতা রেখেছেন (লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৫৫/ ১০)।
প্রশ্ন (১৮/১৩৮) : দাড়িতে মেহেদী লাগাতেই হবে নতুবা ইহূদীদের সাদৃশ্য
হবে- এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর : দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করা অভ্যাসগত সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ইহূদী
ও নাছারারা (দাড়ি-চুলে) রং লাগায় না। তোমরা তাদের বিপরীত কর’ (বুখারী হা/৩৪৬২; মুসলিম হা/২১০৩)। রাসূল (ছাঃ) একদল সাদা
দাড়িধারী লোকদের পাশ দিয়ে গমনকালে বলেন, হে আনছারগণ! তোমরা দাড়িকে লাল ও হলুদ রঙে
রঞ্জিত কর এবং আহলে কিতাবদের বিরোধিতা কর’ (আহমাদ
হা/২২৩৩৭; ছহীহাহ হা/১২৪৫, সনদ ছহীহ)। তবে এটি ওয়াজিব নয়। কেননা
ছাহাবীগণের মধ্যে হযরত আবুবকর, ওমর ও একদল ছাহাবী দাড়িতে মেহেদী লাগাতেন।
পক্ষান্তরে হযরত আলী, উবাই বিন কা‘ব, আনাস, সালামা বিন আকওয়া‘ প্রমুখ ছাহাবী খেযাব
ব্যবহার করতেন না (ফাৎহুল বারী হা/৫৮৯৯-এর আলোচনা
১০/৩৫৫ পৃ. ‘পোষাক’ অধ্যায়-৭৭ ‘খেযাব’ অনুচ্ছেদ-৬৭)।
উল্লেখ্য যে, বার্ধক্যের শুভ্রতা
পরিবর্তনের জন্য মেহেদী ও কাতাম বা কালচে ঘাসই সর্বোত্তম’ (তিরমিযী হা/১৭৫৩; আবুদাউদ হা/৪২০৫; মিশকাত হা/৪৪৫১; ছহীহাহ হা/১৫০৯)।
তবে কোনভাবেই কালো রং দ্বারা শুভ্রতা পরিবর্তন করা যাবে না। কেননা রাসূল (ছাঃ) এটা
নিষেধ করেছেন (মুসলিম হা/২১০২)।
তিনি বলেন, ‘শেষ যামানায় একদল লোকের আবির্ভাব হবে, যারা কালো রং-এর খেযাব লাগাবে
কবুতরের বুকের ঠোসার কালো পাখনা সমূহের ন্যায়। এরা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না’ (আবূদাউদ হা/৪২১২; মিশকাত হা/৪৪৫২)।
প্রশ্ন (১৯/১৩৯) : পারিবারিকভাবে ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে গিয়ে আমার স্বামী
প্রচুর পরিমাণ ঋণী হয়ে পড়েছেন। ফ্ল্যাট বিক্রি না হওয়ায় তার ঋণ পরিশোধ করাও সম্ভব হচ্ছে
না। শুনেছি বায়তুল্লাহ গিয়ে দো‘আ করলে দো‘আ কবুল হয়। এক্ষণে এ মহা বিপদ থেকে উদ্ধার
পাওয়ার জন্য আমাদের করণীয় কি? বায়তুল্লাহ গমন বা মানত করা না কি সাধারণভাবে দো‘আ করা
উচিৎ হবে?
উত্তর : এক্ষেত্রে আল্লাহর নিকট প্রাণ খুলে দো‘আ করতে হবে। আর দো‘আ কবুলের
শ্রেষ্ঠ সময় হ’ল শেষ রাত্রি (দো‘আ কবূলের শর্তাবলী দ্রষ্টব্য :
ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২৬৮ পৃঃ)। আল্লাহ চাইলে যেকোন সময় দো‘আ কবুল করতে
পারেন। এজন্য বায়তুল্লাহ গমন বা কোন মানত করা শর্ত নয়। আর সেই সাথে সাথে ঋণ
পরিশোধের আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। কেননা ঋণ পরিশোধ ব্যতীত মৃত্যুবরণ করলে হাশরের
মাঠে নিজের নেকী থেকে ঋণের দাবী পূরণ করতে হবে (বুখারী
হা/২৪৪৯; মিশকাত হা/৫১২৬)। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘মুমিনের আত্মা
ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয় তার ঋণের কারণে, যতক্ষণ না তার পক্ষ হ’তে ঋণ পরিশোধ করা
হয়’ (তিরমিযী হা/১০৭৮; মিশকাত হা/২৯১৫;
ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭৭৯)। সাথে সাথে আল্লাহর নিকটে ঋণমুক্তির জন্য দো‘আ
করতে হবে ‘আল্লা-হুম্মাক্ফিনী বিহালা-লিকা ‘আন হারা-মিকা
ওয়া আগ্নিনী বিফায্লিকা ‘আম্মান সিওয়া-কা’। অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি
আমাকে হারাম ছাড়া হালাল দ্বারা যথেষ্ট করুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে
অন্যদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন করুন!
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘এই দো‘আর ফলে পাহাড়
পরিমাণ ঋণ থাকলেও আল্লাহ তার ঋণ মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন’ (তিরমিযী হা/৩৫৬৩; মিশকাত হা/২৪৪৯; ছহীহাহ হা/২৬৬)। সর্বোপরি
ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করলে আল্লাহ সাহায্য করবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি
মানুষের মাল (ধার) নেয় পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে, আল্লাহ তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন।
আর যে তা নেয় বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করেন’ (বুখারী হা/২৩৮৭; মিশকাত হা/২৯১০)। কোনভাবেই সম্ভব না হ’লে
সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, দাতব্য সংস্থা, সংগঠন বা সরকার তার ঋণমুক্তির
ব্যবস্থা করবে। আর একারণেই শরী‘আতে যাকাতের ৮টি খাতের একটি খাত হিসাবে ঋণমুক্তিকে
নির্ধারণ করা হয়েছে।
আর সম্ভাব্য সকল উপায় গ্রহণের পরও ঋণ
পরিশোধের ব্যবস্থা না করা গেলে ঋণদাতার নিকট ক্ষমা চাইতে হবে এবং সেক্ষেত্রে
ঋণদাতারও উচিত সত্যিকারের অক্ষম ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেওয়া। কেননা আবু ক্বাতাদাহ
(রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে অক্ষম
ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে অথবা ঋণ ক্ষমা করে দিবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন
দুঃখ-কষ্ট হ’তে মুক্তি দিবেন’ (মুসলিম হা/৩০০৬; মিশকাত হা/২৯০৩)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন স্বীয় ছায়ার নীচে ছায়া দান
করবেন’ (মুসলিম হা/১৫৬৩; মিশকাত হা/২৯০৪)।
প্রশ্ন (২০/১৪০) : সূরা আহযাব ৫০ আয়াতের ব্যাখ্যা কি? উক্ত আয়াতে কি
চাচাতো, মামাতো, খালাতো ও ফুফাতো বোনকে বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে?
উত্তর : আয়াতটির অনুবাদ : ‘হে নবী! আমরা তোমার জন্য হালাল করেছি ঐসব
স্ত্রীদের, যাদেরকে তুমি মোহর দিয়েছ এবং ঐসব দাসীদের, যাদেরকে আল্লাহ তোমার জন্য
গণীমত হিসাবে প্রদান করেছেন। আর তোমার চাচাতো বোন, ফুফাতো বোন, মামাতো বোন ও
খালাতো বোনকে, যারা তোমার সাথে হিজরত করেছে। আর ঐ মুমিন নারীকে, যে নিজেকে নবীর
জন্য পেশ করে, যদি নবী তাকে বিয়ে করতে চান। এটি কেবল তোমার জন্য খাছ, অন্য
মুমিনদের জন্য নয়। আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যা আমরা তাদের জন্য নির্ধারিত করেছি
(অনধিক চারজন) স্ত্রী ও মালিকানাধীন দাসীগণ। আর তোমার জন্য বিশেষ সুযোগ দিয়েছি,
যাতে তোমার কোন সংকোচ না থাকে’ (আহযাব ৩৩/৫০)।
অত্র আয়াতে বিবাহের ক্ষেত্রে নবী
(ছাঃ)-এর জন্য কি কি বৈধ করা হয়েছে তার বিবরণ এসেছে। যেমন (১) মোহরানা প্রদান
সাপেক্ষে কোন মুমিনা নারীকে বিবাহ করা। (২) চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো ও খালাতো বোন
তাঁর জন্য হালাল, যদি তারা মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে থাকে। হিজরতের এ শর্ত অন্য
মুসলমানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, এক্ষেত্রে নাছারা
ও ইহূদীরা (আত্মীয়দের সাথে বিবাহের ক্ষেত্রে) যে বাড়াবাড়ি করে থাকে তার মধ্যবর্তী
পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। কেননা নাছারারা এমন নারীকে বিয়ে করে না, যার মধ্যে সাত
বা তার অধিক দাদার স্তর না থাকে। অন্যদিকে ইহূদীরা নিজের ভাই ও বোনের মেয়েকে বিয়ে
করার মত নিকৃষ্ট কাজ করে। ইসলামী শরী‘আত উভয় সম্প্রদায়ের বাড়াবাড়ির মধ্যবর্তী পথ
গ্রহণ করেছে এবং চাচাতো, ফুফাতো এবং মামাতো ও খালাতো বোনকে বিবাহের বৈধতা দিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রীগণের মধ্যে তাঁর চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো বা
খালাতো বোনদের মধ্যে কেউ ছিলেন না। (৩) যে মুমিনা নারী নিজেকে রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য
পেশ করে, তাকে বিনা মোহরে, বিনা ওলীতে ও বিনা সাক্ষীতে তিনি বিয়ে করতে পারেন, যদি
তিনি চান। এটি ছিল তাঁর জন্য খাছ। অন্যদের জন্য নয়। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এরূপ
কোন নারী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট ছিল না (ইবনু
কাছীর, অত্র আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)। আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে যে,
‘আমরা নিশ্চিতভাবে জানি, যা আমরা তাদের জন্য নির্ধারিত করেছি’। এর অর্থ আমরা অন্য
মুসলমানদের জন্য একত্রে সর্বোচ্চ চারজন স্বাধীনা স্ত্রী রাখার যে বিধান দিয়েছি এবং
তার মালিকানাধীন দাসী, যতজনকে তারা চায় (ইবনু কাছীর; নিসা ৪/৩)।
অর্থাৎ মোহর, ওলী ও সাক্ষীসহ চারের অধিক মুমিনা নারীকে বিবাহ করা মুসলমানদের জন্য
নিষিদ্ধ (কুরতুবী, ইবনু কাছীর)। তবে এসকল
শর্ত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
সুতরাং প্রশ্নমতে অত্র আয়াতে এমন কিছু
বলা হয়নি যে, চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো ও খালাতো বোন কেবল রাসূলের জন্য হালাল এবং
অন্যদের জন্য হারাম। বরং এখান থেকে উদ্দেশ্য হ’ল, কোন নারী যদি রাসূল (ছাঃ)-এর
নিকট নিজেকে সোপর্দ করে, তাহ’লে তাদের স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করায় তাঁর জন্য বাধা
নেই। সেটি চারের অধিকও হ’তে পারে। কিন্তু মুমিনরা একাজ করতে পারবে না। তাদেরকে
চারটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আর এই সংখ্যায় সীমাবদ্ধ থেকে চাচাতো, মামাতো,
খালাতো, ফুফাতো বোনদেরকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য জায়েয।
প্রশ্ন (২১/১৪১) : মহিলাদের ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে পায়ের পাতা ঢেকে
দাঁড়াতে হবে কি? রুকূ ও সিজদার সময় পা বের হয়ে গেলে ছালাত নষ্ট হয়ে যাবে কি?
উত্তর : মহিলাদের দুই হাতের তালু ও চেহারা ব্যতীত মাথা হ’তে পায়ের
পাতা পর্যন্ত সর্বাঙ্গ সতর (আবুদাঊদ হা/৪১০৪; মিশকাত হা/৪৩৭২)।
সে হিসাবে ছালাতে নারীদের জন্য পায়ের পাতা ঢেকে রাখা উত্তম। উম্মে সালামাহ
(রাঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এ সময় বড় চাদর দিয়ে পায়ের পাতাসহ
সর্বাঙ্গ আবৃত করবে (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ
হা/৬২২৮)। তবে রুকূ-সিজদার সময় পায়ের পাতা প্রকাশ পেলে ছালাত বিনষ্ট
হবেনা। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তবে যেটুকু
স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় সেটুকু ব্যতীত’ (নূর ২৪/৩১; (দ্র. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ ফাতাওয়া ২২/১১৪-১২০)।
প্রশ্ন (২২/১৪২) : মহিলা কি তার জামাই বা শ্বশুরের সাথে হজ্জ করতে পারবে?
মাহরাম কারা?
উত্তর : মহিলার জন্য তার জামাই (মেয়ের স্বামী) এবং শ্বশুর উভয়ই মাহরামের
অন্তর্ভুক্ত। অতএব এদের সাথে হজ্জ বা সফর করা বৈধ। আল্লাহ বলেন, তোমাদের ঔরসজাত
পুত্রের স্ত্রীকে হারাম করা হয়েছে (সুরা নিসা ২৩)।
মাহরামগণ হলেন, রক্ত সম্পর্কীয় ৭ জন :
(১) পিতা-দাদা (২) পুত্র-পৌত্র ও অধঃস্তন (৩) ভ্রাতা (৪) ভ্রাতুষ্পুত্র ও অধঃস্তন
(৫) ভগিনীপুত্র ও অধঃস্তন (৬) চাচা (৭) মামু। এতদ্ব্যতীত দুগ্ধ সম্পর্কীয় উক্ত ৭
জন।
বিবাহ সম্পর্কীয় ৪ জন : (১) স্বামীর
পুত্র বা পৌত্র (২) স্বামীর পিতা বা দাদা (৩) জামাতা, পুতিন-জামাতা, নাতিন-জামাতা
(৪) মাতার স্বামী বা দাদী-নানীর স্বামী (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৭/৩৮
পৃ.; দ্রঃ হা.ফা.বা প্রকাশিত ‘হজ্জ ও ওমরাহ’ বই ৮০-৮১ পৃ.)।
প্রশ্ন (২৩/১৪৩) : সাত ব্যক্তিকে আরশের নীচে ছায়া দেওয়া হবে মর্মে বর্ণিত
হাদীছটি কেবল পুরুষের জন্য খাছ?
উত্তর : উক্ত হাদীছ নারী-পুরুষ সবাইকে শামিল করে। কারণ হিসাব
নারী-পুরুষ উভয়েরই হবে এবং উভয়ের আমলের উপর তাদের কর্মফল নির্ভর করবে। তবে সাত
শ্রেণীর মধ্যে দুটি বিষয়ে নারীরা শামিল হবে না। আর তা হ’ল ন্যায়পরায়ণ শাসক। কারণ
শাসক নারী হতে পারে না। আর মসজিদের সাথে ঝুলন্ত হৃদয়ের নারী। কারণ তাদের জন্য
বাড়িতে ছালাত আদায় উত্তম (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৬/৩৪৭;
ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৪/১৪৩)।
প্রশ্ন (২৪/১৪৪) : কোম্পানীর মালিক আমাকে চুক্তি অনুযায়ী বেতনের চাইতে
কম দিত। ফলে আমার কাছে মালিকের যে ক্যাশ থাকত তা থেকে মালিককে না বলে উক্ত টাকা প্রতিমাসে
নিয়ে নিতাম। এভাবে আমি পাঁচ বছর চাকুরী শেষে চলে আসি। আমার পক্ষে উক্ত অর্থ ফেরৎ দেয়ার
সামর্থ্য নেই। এখন আমার করণীয় কি?
উত্তর : যত টাকা মালিককে না জানিয়ে নেওয়া হয়েছে তা তাকে ফেরত দিতে হবে।
অন্যথায় খেয়ানতের দায়ে আল্লাহর দরবারে অপরাধী সাব্যস্ত হ’তে হবে। আল্লাহ বলেন,
‘তোমরা বাতিল পন্থায় অন্যের মাল ভক্ষণ করো না’ (নিসা
৪/২৯)। যদি ফিরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য না থাকে, তবে মালিকের কাছে নিজের
ভুল স্বীকার করে সমঝোতার চেষ্টা করবে। মালিক ক্ষমা করলেই তবে ক্ষমা হ’তে পারে,
অন্যথায় নয়। অন্যদিকে মালিকও চুক্তি মোতাবেক বেতন না দিয়ে থাকলে তার অন্যায়ের জন্য
এবং অন্যের হক নষ্ট করার জন্য আল্লাহর নিকট অপরাধী সাব্যস্ত হবে। রাসূল (ছাঃ)
বলেন, সাবধান! কারো ওপর যুলুম করবে না। সাবধান! কোন ব্যক্তির মাল অন্য কারো জন্য
হালাল নয়, যতক্ষণ না সে তা স্বেচ্ছায় প্রদান করে’ (আহমাদ হা/২০৭১৪; মিশকাত হা/২৯৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৬৬২)।
প্রশ্ন (২৫/১৪৫) : এলাকার এক বড় আলেম/কবিরাজের কাছ থেকে তাবীয নেওয়াতে
দীর্ঘ ৪ বছর পর একটি পুত্র সন্তান হয়েছে। ফলে তারা বলে এটা যদি শিরক হ’ত তাহ’লে আল্লাহ
তাদের সন্তান দিতেন না। এই ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে তারা যেকোন কাজে সেই কবিরাজের শরণাপন্ন
হয়। এখন তাদেরকে কিভাবে বুঝাতে পারি?
উত্তর : কোন আলেম বা কবিরাজ সন্তান দেওয়ার মালিক নয়। বরং আল্লাহ যখন ও যাকে
খুশি তখন সন্তান দান করেন। আল্লাহ বলেন, ...তিনি যা চান তাই সৃষ্টি করেন। তিনি
যাকে চান কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে চান পুত্র সন্তান দান করেন।...যাকে চান
বন্ধ্যা করেন’ (শূরা ৪২/৪৯-৫০)। যখন
তারা চিকিৎসা করেছিল তখনও হয়ত সন্তান আসার সময় হয়নি। সেজন্য উক্ত সন্তান পৃথিবীতে
আগমন করেনি। কথায় বলে, কাকও বলল, তালও পড়ল; কাকের কেরামতি বাড়ল। অতএব এসব শিরকী
বিশ্বাস থেকে তওবা করা অপরিহার্য। নইলে এখুনি নিঃশ্বাস বন্ধ হলে জাহান্নাম
অবশ্যম্ভাবী। এছাড়া আল্লাহ কখনও এর দ্বারা বান্দার ঈমানের পরীক্ষাও গ্রহণ করেন যে,
বান্দা একমাত্র আল্লাহর প্রতিই তাওয়াক্কুল করে নাকি অন্য কারও প্রতি। হযরত
ইব্রাহীমের স্ত্রী সারা বন্ধ্যা ছিলেন, স্বামী ৮৬ বছরের বৃদ্ধ। অথচ তারা সন্তান
লাভ করেন আল্লাহর হুকুমে। যিনি হলেন, নবী ইসহাক (আঃ)। সুতরাং বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে
তার শিরকী আক্বীদা থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। কেননা আল্লাহ শিরকের গুনাহ মাফ করেন
না’ (নিসা ৪/৪৮)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি তাবীয লটকালো সে শিরক করল’ (আহমাদ হা/১৭৪৪০; ছহীহাহ হা/৪৯২ ও
৩৩১)। অন্য হাদীছে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোন কিছু লটকালো সে তার দিকেই
ধাবিত হ’ল’ (তিরমিযী হা/২০৭২; মিশকাত হা/৪৫৫৬;
ছহীহুত তারগীব হা/৩৪৫৬)।
প্রশ্ন (২৬/১৪৬) : প্রয়োজন বোধে ঔষধ খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখা জায়েয হবে
কি?
উত্তর : দৈহিক কোন ক্ষতি না হ’লে এরূপ করা বৈধ। তবে যদি নারী কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত
হয়, তবে তা করা উচিৎ নয়। অবশ্য ঋতুবতী স্ত্রীকে মিলন ছাড়া অন্য সকল পন্থায় সম্ভোগ
করা যাবে (মুসলিম হা/৩০২; ইবনু মাজাহ
হা/৬৪৪)।
প্রশ্ন (২৭/১৪৭) : খরচ কমানোর জন্য কোবালা রেজিষ্ট্রি না করে দানপত্রের
মাধ্যমে জমি রেজিষ্ট্রি করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : এটি জায়েয হবে না। কারণ এতে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হবে। যদিও এটি
রাষ্ট্রীয় যুলুম এবং এর জন্য সরকার আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘সত্ত্বর আমার পরে তোমাদের উপর যালেম শাসকদের আগমন ঘটবে এবং এমন কিছু কাজসমূহ
দেখবে, যা তোমরা অপসন্দ করবে। ...এ সময় তাদের হক (প্রাপ্য) তাদের দাও এবং তোমাদের
হক আল্লাহর নিকট চাও’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত
হা/৩৬৭২)। আর শাসকরা অবশ্যই তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহর নিকট
জিজ্ঞাসিত হবেন (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮৫)।
প্রজাদের প্রতি খেয়ানতকারী হিসাবে মৃত্যুবরণ করলে ঐ শাসকের জন্য জান্নাতকে হারাম
করা হবে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮৬)।
প্রশ্ন (২৭/১৪৭) : খরচ কমানোর জন্য কোবালা রেজিষ্ট্রি না করে দানপত্রের
মাধ্যমে জমি রেজিষ্ট্রি করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : এটি জায়েয হবে না। কারণ এতে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হবে। যদিও এটি
রাষ্ট্রীয় যুলুম এবং এর জন্য সরকার আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘সত্ত্বর আমার পরে তোমাদের উপর যালেম শাসকদের আগমন ঘটবে এবং এমন কিছু কাজসমূহ
দেখবে, যা তোমরা অপসন্দ করবে। ...এ সময় তাদের হক (প্রাপ্য) তাদের দাও এবং তোমাদের
হক আল্লাহর নিকট চাও’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত
হা/৩৬৭২)। আর শাসকরা অবশ্যই তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহর নিকট
জিজ্ঞাসিত হবেন (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮৫)।
প্রজাদের প্রতি খেয়ানতকারী হিসাবে মৃত্যুবরণ করলে ঐ শাসকের জন্য জান্নাতকে হারাম
করা হবে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮৬)।
প্রশ্ন (২৮/১৪৮) : কুরআন ছুঁয়ে কসম করা শিরক বলে গণ্য হবে কি?
উত্তর : আল্লাহর নাম বা গুণাবলী ছাড়া অন্য কারু নামে কসম করা শিরক। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে কসম করল, সে কুফরী করল অথবা শিরক
করল’ (তিরমিযী হা/১৫৩৫; মিশকাত হা/৩৪১৯;
ছহীহাহ হা/২০৪২)। তিনি আরও বলেন, ‘যে কসম খেতে চায়, সে যেন আল্লাহর
নামে কসম খায় অথবা চুপ থাকে’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৩৪০৭
‘কসম ও মানত’ অধ্যায়)। কুরআন যেহেতু আল্লাহর কালাম, সেহেতু কুরআনের
নামে শপথ করা জায়েয। তবে এর জন্য কুরআন ছুঁয়ে শপথ করার প্রয়োজন নেই। কেননা রাসূল
(ছাঃ) এবং ছাহাবীদের যুগে এমন কোন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। বরং এটি পরবর্তী যুগের
আবিষ্কার (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন
আলাদ-দারব)। সুতরাং এ থেকে বিরত থাকাই উত্তম। এক্ষণে শপথকারীকে
আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে অধিকতর ভয় প্রদর্শনের জন্য আদালত যদি কুরআন ছুঁয়ে শপথ করতে
বলেন, তবে তাতে বাধা নেই (ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩/৪৬৩)।
প্রশ্ন (২৯/১৪৯) : ছালাতে ইমামের সাথে ছালাত শুরুর পর ইমাম রুকুতে চলে
যাওয়ার পরও সুরা ফাতিহা পাঠ শেষ না হলে আমার করণীয় কি? সুরা ফাতিহা শেষ করা না রুকুতে
যাওয়া? কোনটি যরূরী?
উত্তর : প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় মুক্তাদী ইমামের সাথে রুকূতে চলে যাবে
এবং এই রাক‘আতটি ইমাম সালাম ফিরানোর পর পড়ে নিবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা
জামা‘আতে ছালাতের যতটুকু পাও, ততটুকু আদায় কর এবং যেটুকু ছুটে যায় সেটুকু পূর্ণ
কর’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮৬, দ্র.
ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৯৯ পৃ.)।
প্রশ্ন (৩০/১৫০) : স্বামী থাকার পরও পরকিয়ায় লিপ্ত স্ত্রী গোপনে দ্বিতীয়
বিবাহ করে। সে প্রথম স্বামীর বাসাতেই থাকে। যদি সে প্রথম স্বামীর কাছেই থাকতে চায় তাহলে
কি করতে হবে?
উত্তর : একজনের স্ত্রী থাকা অবস্থায় অন্যের সাথে বিবাহ হয় না। তাই বর্ণিত
নারীর দ্বিতীয় বিবাহ কোন বিবাহই নয়। অতএব পরপুরুষের সাথে সে যা কিছু করেছে পুরোটাই
ব্যভিচার হিসাবে গণ্য হবে। ইসলামী বিধান মতে এই মহাপাপের জন্য সে রজমের
শাস্তিযোগ্য অপরাধী হয়েছে। এক্ষণে তাকে উক্ত অনৈতিক সম্পর্ক থেকে খালেছভাবে তওবা
করতে হবে এবং আল্লাহর নিকট অনুতপ্ত হৃদয়ে নিরন্তর ক্ষমা চাইতে হবে। এমতাবস্থায়
স্বামী তাকে ক্ষমা করলে তার সাথেই সে বসবাস করবে।
প্রশ্ন (৩১/১৫১) : মাইয়েতের মুখ দেখার জন্য নারী-পুরুষ সবাই ভীড় জমায়।
এটা কি শরী‘আতের দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েয?
উত্তর : মাইয়েতের মুখ দেখাতে দোষের কিছু নেই (বুখারী হা/১২৪১)। তবে নারীদের ক্ষেত্রে যে সকল নারীকে জীবিত
অবস্থায় দেখা হারাম, সে সকল নারীকে মৃত অবস্থায়ও দেখা হারাম। অতএব কোন গায়ের
মাহরাম পুরুষের জন্য কোন মৃত নারীকে দেখা জায়েয নয়। অনুরূপভাবে নারীদের জন্যও উচিৎ
নয় গায়ের মাহরাম পুরুষ মাইয়েতকে দেখা। তবে নারী যদি বৃদ্ধা বা নাবালিকা হয় তাহ’লে
দেখাতে দোষ নেই (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ২/৩৭৪,
৩৯১; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/২৪/৪২৩)।
প্রশ্ন (৩২/১৫২) : জানাযার ছালাতে ইমাম মুক্তাদী উভয়েই কি সূরা ফাতেহার
সাথে অন্য সূরা পাঠ করবে, নাকি শুধু ইমাম পড়বেন?- গোলাম রহমান, কলারোয়া,
সাতক্ষীরা।
উত্তর : জানাযার ছালাতে ইমাম সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোন সূরা মিলিয়ে
পড়বেন (নাসাঈ হা/১৯৮৭; ইবনু হিববান হা/৩০৭১;
আল-আছারুছ ছহীহাহ হা/৪১২; তোহফাহ ৪/৯৬)। ইমাম সরবে পড়লে মুক্তাদীর
জন্য কেবল সূরা ফাতিহা পড়াই যথেষ্ট। আর ইমাম নীরবে পড়লে মুক্তাদী সূরা ফাতিহার
সাথে অপর একটি সূরা মিলিয়ে পড়বে (দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২১৬
পৃ.)।
প্রশ্ন (৩৩/১৫৩) : অসুস্থতার কারণে শুয়ে ছালাত আদায়ের নির্দিষ্ট কোন
নিয়ম আছে কি? জনৈক আলেম বলেন, ডান কাতে ফিরে মাথা পশ্চিম দিকে ফিরিয়ে ছালাত আদায় করতে
হবে? এর সত্যতা আছে কি?
উত্তর : যে ব্যক্তি পার্শ্ব পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে সে ডান কাতে ফিরে
ক্বিবলামুখী হয়ে ছালাত আদায় করবে (বুখারী হা/১১১৭; মিশকাত হা/১২৪৮)।
যদি পার্শ্ব পরিবর্তন করার ক্ষমতা না রাখে তাহলে চিৎ হয়ে শুয়ে পা কিববলার দিকে করে
ছালাত আদায় করবে (নাসাঈ হা/; দারাকুৎনী হা/১৭২৫)।
এ সময় সম্ভব হ’লে মাথা একটু উঁচু রাখবে। তাছাড়া রুকূ-সিজদা করার সময় মাথা দ্বারা
ইশারা করবে। যদি মাথা দ্বারা ইশারা করতে না পারে তাহলে চোখ দ্বারা ইশারা করবে। আর
এটিও না পারলে অন্তরে নিয়ত করে ছালাত আদায় করবে’ (উছায়মীন,
মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/১২৬, ১৫/২২৯)।
প্রশ্ন (৩৪/১৫৪) : ‘তুমি যদি ছেলেটার সাথে আরেকবার কথা বল তাহ’লে তালাক’।
এক্ষণে যদি স্ত্রী সেই ছেলের সাথে কথা বলে তাহ’লে কি তিন তালাক হয়ে যাবে নাকি এক তালাক
হবে?
উত্তর : উক্ত ছেলের সাথে স্ত্রী কথা বললে এক তালাক গণ্য হবে। কারণ
একই বৈঠকে তিন শব্দ উল্লেখ করলেও এক তালাকই হয় (মুসলিম
হা/১৪৭২; আহমাদ হা/২৮৭৭; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩৩/৪৬)।
প্রশ্ন (৩৫/১৫৫) : মহিলারা কি মহিলাদের মধ্যে জানাযার ইমামতি করতে পারবে?
উত্তর : পারবে। এতে কোন বাধা নেই। আর পুরুষের ইমামতিতেও তাদের জন্য জানাযার
জামা‘আতে অংশগ্রহণ করা জায়েয। তবে পর্দার ব্যবস্থা না থাকলে পৃথকভাবে তারা নিজেরাই
জানাযা পড়তে পারেন। যেমন মা আয়েশা (রাঃ) ও অন্যান্য উম্মাহাতুল মুমিনীন হযরত সা’দ
বিন আবু ওয়াক্কাছ (রাঃ)-এর লাশ মসজিদে নববীতে আনিয়ে নিজেরাই তাঁর জানাযা
পড়েছিলেন (মুসলিম হা/৯৭৩; আলবানী, আহকামুল
জানায়েয হা/৭১; দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২২৮ পৃ.)। সে হিসাবে মহিলারা
মহিলাদের জানাযার ছালাতে ইমামতি করতে পারেন।
প্রশ্ন (৩৬/১৫৬) : আমার স্ত্রীর অতীত জীবন মন্দ ছিল। আমার সাথে বিবাহের
কিছুদিন পর সে বিবাহের পূর্বে তার জোরপূর্বক ধর্ষিতা হওয়ার কাহিনী বলে। তখন থেকে আমি
তাকে মেনে নিতে পারছি না। এক্ষণে আমার কি করা উচিৎ?
উত্তর : বিষয়টি যেহেতু ধর্ষণ ছিল, সেহেতু স্বামীর উচিৎ হবে সেটিকে
সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা। কেননা এতে মেয়েটির কোন দোষ ছিল না। অপরপক্ষে মেয়েটিরও
উচিৎ ছিল বিষয়টি প্রকাশ না করা। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর নিষিদ্ধ
এই ধরণের জঘন্য কর্মসমূহ থেকে বেঁচে থাক। যে ব্যক্তি এ ধরণের বিপদে আক্রান্ত হবে
সে যেন তা গোপন রাখে। তাহ’লে আল্লাহ তা গোপন রাখবেন। আর তার উচিত আল্লাহর নিকট
তওবা করা’ (হাকেম হা/৭৬১৫; ছহীহাহ হা/৬৬৩)।
প্রশ্ন (৩৭/১৫৭) : সফরে বের হওয়ার পূর্বে যোহরের সময় যোহর-আছর একত্রে
জমা ও ক্বছর করে বের হওয়া যাবে কি?
উত্তর : সফর হিসাবে গণ্য করা যায়, এরূপ সফরে বের হ’লে নিজ বাসস্থান থেকে
বেরিয়ে কিছুদূর গেলেই ‘জমা ও ক্বছর’ করা যায়। কোন কোন বিদ্বানের নিকটে সফরের নিয়ত
করলে ঘর থেকেই ‘ক্বছর’ শুরু করা যায়। তবে ইবনুল মুনযির বলেন যে, সফরের উদ্দেশ্যে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনা শহর ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার পূর্বে ‘ক্বছর’ করেছেন বলে আমি
জানতে পারিনি’। তিনি বলেন, বিদ্বানগণ একমত হয়েছেন যে, সফরের নিয়তে বের হয়ে নিজ
গ্রাম (বা মহল্লার) বাড়ীসমূহ অতিক্রম করলেই তিনি ক্বছর করতে পারেন (নায়লুল আওত্বার ৪/১২৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১৩; দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)
১৮৭ পৃ.)।
আমরা মনে করি যে, মতভেদ এড়ানোর জন্য ঘর
থেকেই দু’ওয়াক্তের ফরয ছালাত ক্বছর ও সুন্নাত ছাড়াই পৃথক দুই এক্বামতের মাধ্যমে
জমা করে সফরে বের হওয়া ভাল। তাবূকের অভিযানে বের হওয়ার পূর্বে রাসূল (ছাঃ) ও
ছাহাবীগণ এটা করেছিলেন (আবুদাঊদ হা/১২০৮; মিশকাত হা/১৩৪৪
‘সফরের ছালাত’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (৩৮/১৫৮) : সম্প্রতি আমার স্বামী মারা গেছেন। কিন্তু কয়েকটি
সন্তানের মা ও পরিবারের সকল কাজের দায়িত্বশীল হওয়ায় এবং স্বামী মৃত্যুর পর পরিবারের
সার্বিক ব্যবস্থাপনা করতে বাধ্য হওয়ায় ইদ্দত পালন করার সুযোগ হয়নি। এক্ষণে তার মৃত্যুর
চারমাস পর ইদ্দত শুরু করা যাবে কি?
উত্তর : ইদ্দত পালন মূলতঃ স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর জন্য শোক পালন। আর এর
সময়সীমা হ’ল, স্বামীর মৃত্যুর দিন থেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত। আর এটা স্বামীর
গৃহে থেকেই করতে হয়। এই সময়সীমা পার হয়ে গেলে আর ইদ্দত নেই। তবে সঠিক নিয়মে
ইদ্দতের বিধান পালন না করায় প্রশ্নকারীনী গোনাহগার হবে। যদিও এজন্য কাযা বা
কাফ্ফারা আদায় করতে হবে না। বরং আল্লাহর কাছে এই ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১/২০/৪১৮)। উল্লেখ্য যে, ইদ্দতপালনকারী
পরিবারের কর্ত্রী তার প্রয়োজনীয় কাজ করার জন্য বাইরে যেতে পারবে। যেমন কর্মস্থলে
যাওয়া, বৃক্ষ পরিচর্যা করা, চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়া ইত্যাদি। বিকল্প পথ না
থাকলে ইদ্দত পালনকারী প্রয়োজন মাফিক করতে পারবেন। এগুলি ইদ্দতের ক্ষতি করে
না’ (মুসলিম হা/১৪৮৩; মিশকাত হা/৩৩২৭; ইবনু
তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩৪/২৭-২৯)।
প্রশ্ন (৩৯/১৫৯) : ছোটকাল থেকে আমি মামীর কাছেই বড় হয়েছি। এক্ষণে মামীর
সাথে আমার পর্দা করতে হবে কি? বিশেষত ঘরের মধ্যে আমার সামনে তাকে নেকাব পরে চলাফেরা
করতে হবে কি?
উত্তর : মামী মাহরাম না হওয়ায় উভয়কে পূর্ণ শারঈ পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে।
কেননা যে সকল নারীকে আল্লাহ মাহরাম হিসাবে উল্লেখ করেছেন মামী তাদের মধ্যে গণ্য
নন (নিসা ৪/২৪)। আর ফিৎনার আশঙ্কা না থাকলে
নেকাব পরিধান করা আবশ্যক নয়; তবে উত্তম (আবু দাউদ হা/৪১০৪; মিশকাত
হা/৪৩৭২)।
প্রশ্ন (৪০/১৬০) : ক্বিয়ামতের দিন লূত (আঃ) কি তাঁর স্ত্রী থেকে পলায়ন
করবেন?
উত্তর : কেবল লূত (আঃ) নন, প্রত্যেক মানুষ নিজ সম্পর্কে এতই বিভোর থাকবে যে
সে নিজ স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, ভাই-বোন ও পিতা-মাতা থেকে পলায়ন করবে (আবাসা ৮০/৩৪-৩৭)। তবে কোন কোন তাফসীরকার উপরোক্ত আয়াতগুলির
তাফসীরে বলেন, কাবীল তার ভাই হাবীল থেকে, ইবরাহীম (আঃ) তার পিতা আযর থেকে,
নূহ (আঃ) পলায়ন করবেন তার ছেলে থেকে। হাসান বছরী বলেন, ক্বিয়ামতের দিন প্রথম তার
পিতা থেকে পলায়ন করবেন ইবরাহীম (আঃ), সন্তান থেকে প্রথম পলায়ন করবেন নূহ (আঃ),
স্ত্রী থেকে প্রথম পলায়ন করবেন লূত (আঃ) (তাফসীরে কুরতুবী, ‘আবাসা ৩৪
আয়াতের তাফসীর)।
ফেব্রুযারি/২০১৯
প্রশ্ন (১/১৬১) : ভূমিকম্পের সময় ছালাত ছেড়ে চলে যাওয়া যাবে কি?
উত্তর : যে কোন ভয়ংকর ও আতঙ্কজনক মুহূর্তে ছালাত ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয়
নেওয়া যাবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) ছালাতের মধ্যে সাপ ও বিচ্ছু দেখলে তা হত্যা করতে
নির্দেশ দিয়েছেন (আহমাদ, আবূদাঊদ, মিশকাত হা/১০০৪,
সনদ ছহীহ)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো
না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)। যেহেতু
ভূমিকম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে, সেহেতু এক্ষেত্রে ছালাত ছেড়ে দিতে হবে এবং পরে
পূর্ণ ছালাত আদায় করে নিতে হবে (তাফসীরে সা‘দী, বাক্বারাহ ২৩৯
আয়াতের তাফসীর; আল-মুগনী ৩/৯৭)।
প্রশ্ন (২/১৬২) : সিজদা থেকে দ্বিতীয় রাক‘আতের জন্য ওঠার পদ্ধতি কি? কেউ
বলছেন, হাঁটুতে হাত রেখে উঠতে হবে। কেউ বলছেন, আটা পেষার মত মুষ্টিবদ্ধ হাতের উপর ভর
দিয়ে উঠতে হবে। কোনটি সঠিক?
উত্তর : হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে উঠতে হবে। সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে
দু’হাত মাটিতে রাখবে। অনুরূপভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ রাক‘আতের জন্য ওঠার সময়ও
হাতের তালুর উপর ভর করে দাঁড়াবে। কেননা এ বিষয়ে আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
‘হাঁটুর পূর্বে হাত রাখার হাদীছটি ছহীহ (আবূদাঊদ হা/৮৪০; মিশকাত হা/৮৯৯)।
কিন্তু ওয়ায়েল বিন হুজ্র (রাঃ) বর্ণিত ‘আগে হাঁটু রাখার’ হাদীছটি যঈফ (আবূদাঊদ হা/৮৩৮; মিশকাত হা/৮৯৮; মির‘আত ৩/২১৭-১৮; ইরওয়া হা/৩৫৭)।
আর মুষ্টিবদ্ধ হাতের উপর ভর করে সিজদা থেকে ওঠা ঠিক নয়। কেননা এর দ্বারা মাটিতে
পুরোপুরি ভর দেয়া যায় না। ইবনে ওমর (রাঃ)-এর হাদীছে كان يَعْجِنُ শব্দ এসেছে, যার অর্থ আটার খামীর যেমন হাতের পুরা চাপ দিয়ে করতে
হয়, অনুরূপভাবে মাটিতে হাতের উপর পুরা ভর দিয়ে উঠতে হয় (দ্র. মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৪০০৭; ছহীহাহ হা/২৬৭৪; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)
১৫৮পৃ.)।
উল্লেখ্য যে, যারা মনে করেন রাসূল (ছাঃ)
বার্ধক্যের কারণে হাতে ভর করে দাঁড়াতেন তাঁদের ধারণা ভুল। কারণ ইবনু ওমর (রাঃ)
সুন্নাতের অনুসরণ করার জন্যই এমন আমল করতেন। সেজন্য ইবনু ওমরের ছেলে ও তার সাথীদের
জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, ইবনু ওমর কি বার্ধক্যের কারণে এমন আমল করতেন? তারা জওয়াবে
বলেছিলেন, না। বরং এমনভাবে তিনি নিয়মিত করতেন (বায়হাক্বী,
সুনানুল কুবরা হা/২৬৩২; তামামুল মিন্নাহ ১/২০০; যঈফাহ হা/৯৬৮-এর আলোচনা দ্র.,
আছারটির সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (৩/১৬৩) : একাধিক ছেলে ও মেয়েদের মাঝে মেয়েদেরকে কি বেশী ভালবাসতে
হবে, না-কি সমান ভালবাসতে হবে? আর জীবিত অবস্থায় সন্তানদের সম্পদ দিলে কি সমানভাবে
দিতে হবে?
উত্তর : সন্তানদের ভালোবাসার ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ের মাঝে সাধ্যমত
সমতা রক্ষা করতে হবে। সম্ভবত প্রশ্নটি এসেছে নিম্নোক্ত হাদীছটি অনুসারে- একদিন
রাসূল (ছাঃ)-এর পাশে একজন ছাহাবী বসে ছিলেন। তার পুত্র সন্তানটি আগমন করলে সে চুমু
দিয়ে নিজের কোলে বাসালো। একটু পরে তার কন্যা সন্তানটি আসলে তাকে পাশে বসিয়ে দিল।
এটি দেখে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি উভয়ের মাঝে ইনছাফ করলে না কেন? (বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান হা/৮৭০; ছহীহাহ হা/২৯৯৪)। এখানে
মেয়েকে বেশী ভালবাসার কথা বলা হয়নি; বরং কারও প্রতি বৈষম্য না করার কথা বলা হয়েছে,
সেটা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। দ্বিতীয়তঃ জীবিত অবস্থায় ছেলে ও মেয়েদের কোন সম্পত্তি
দান করলে মীরাছ বণ্টনের বিধান অনুযায়ী মেয়েদেরকে ছেলের অর্ধেক হিসাবে দিতে হবে।
আত্বা বলেন, তারা আল্লাহর বণ্টন অনুযায়ী সন্তানদের মাঝে সম্পদ বণ্টন করতেন (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৬/৩৩৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৬/২১৩; আব্দুল
আযীয, আত-তাহজীল ফী তাখরীজে মা-লাম ইউখারাজ ফিল ইরওয়া ১৯১ পৃ:)। ইবনু
তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, মীরাছ অনুপাতে সন্তানদের মাঝে সম্পদ বণ্টন করে ইনছাফ করা
ওয়াজিব (আল-ইখতিয়ারাত ৫১৬ পৃ:)।
উল্লেখ্য যে, সন্তানদের বিশেষ দান করার
ব্যাপারে দু’টি বিষয় লক্ষণীয়। এক- যদি পিতা সন্তানদের কোন সম্পদ হেবা বা দান করতে
চান তাহ’লে সকল সন্তানকে সমানভাবে দিতে হবে। আর মেয়েদেরকে ছেলেদের অর্ধেক দিতে
হবে। তবে কাউকে বেশী দিতে চাইলে অন্য শরীকদের সম্মতি থাকতে হবে, যাতে তাদের মাঝে
পক্ষপাতিত্ব ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি না হয়। দুই- বিষয়টি যদি সাধারণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে
হয় তাহ’লে কমবেশীতে বাধা নেই। যেমন দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে মেডিকেলে পড়ে যার খরচ
অনেক বেশী। অপরদিকে আরেক ছেলে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে যার খরচ অনেক কম।
অনুরূপভাবে কোন অসুস্থ, প্রতিবন্ধী বা অভাবী সন্তানের জন্য অতিরিক্ত খরচ করা
ইত্যাদি। এরূপ খরচের ক্ষেত্রে কমবেশী করাতে কোন দোষ নেই (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৫/৩৮৯; উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ২/৬৩)।
আর ‘যদি তুমি দানের ক্ষেত্রে কাউকে প্রাধান্য দিতে চাও তাহ’লে মেয়েদের প্রাধান্য দিবে’-মর্মে
বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (যঈফাহ হা/৩৪০)।
প্রশ্ন (৪/১৬৪) : দাদন ব্যবসা কাকে বলে? এটা কি বৈধ?
উত্তর : ‘দাদন’ শব্দটি ফার্সী দাদান (প্রদান করা) শব্দ থেকে উদ্ভূত। কোন
ব্যক্তি কোন ব্যবসায়িক চুক্তি হিসাবে কোন কিছু অগ্রিম দিলে তাকে দাদনদার বলা হয়।
আঠারো শতকে বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ব্যবসা-ব্যবস্থাপনায় দাদন কথাটি
একটি বাণিজ্যিক পরিভাষা হিসাবে চালু হয়। কোম্পানী বাযার থেকে পণ্য সংগ্রহের জন্য
যে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিযুক্ত করত তাদের দাদন ব্যবসায়ী বলা হ’ত। তারা কিছু
নির্ধারিত শর্তে পণ্য সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতিতে কোম্পানীর কাছ থেকে আগাম অর্থ
গ্রহণ করত। স্থানীয় বাযারে গিয়ে নির্ধারিত সময় ও বর্ণনা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহের
শর্তে প্রকৃত উৎপাদক বা চাষীকে আগাম হস্তান্তর করার জন্যই তাদেরকে এ অর্থ প্রদান
করা হ’ত। দাদন ব্যবসায়ীরা সরাসরি প্রকৃত উৎপাদককে কিংবা দালাল বা পাইকার (স্থানীয়
আড়তদার) নামে অভিহিত দ্বিতীয় পর্যায়ের মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ঐ দাদন হস্তান্তর
করত। দাদন ব্যবসায়ী এ কাজটি করত একটি নির্ধারিত কমিশনের বিনিময়ে যার একটা অংশ
অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী তথা দালালরাও পেত। বহু দাদন ব্যবসায়ী যথাসময়ে পণ্য সরবরাহে
ব্যর্থ হ’ত, এমনকি তাদের অনেকে আগাম দেওয়া কোম্পানীর অর্থ নিয়ে গা-ঢাকা দিত। এসব
কারণে ১৭৫৩ সালে দাদন প্রথা রহিত করা হয় (দ্র. বাংলা পিডিয়া)। তবে
গ্রামবাংলায় এই দাদন ব্যবসা আজও অব্যাহত রয়েছে এবং তা সূদভিত্তিক। সূদের কারবারী
মহাজনরা গ্রামের গরীব চাষীদের সূদে ঋণ বা দাদন দেয় এবং নির্ধারিত সময়ে সূদে-আসলে
তা আদায় করে। বর্তমানে বিভিন্ন এনজিও’র ব্যানারে ঋণ কর্মসূচীর নামে চলছে চড়া সূদে
দাদন ব্যবসা। এমনকি ‘ইসলামী শরী‘আহ ভিত্তিক পরিচালিত সংস্থা’ লিখে সমিতির নামে
চলছে দাদনের কারবার। সুতরাং যে নামেই হোক না কেন, সূদী কারবারী ও সূদভিত্তিক সকল
প্রকার লেনদেন ইসলামে হারাম ও কবীরা গুনাহ (বাক্বারাহ
২/২৭৫-২৭৯, আলে ইমরান ৩/১৩০)। কোন ঈমানদার মুসলমানের জন্য এরূপ ঘৃণ্য
ব্যবসায় জড়িত না হওয়া এবং দাদনদারদের সাথে লেনদেন থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
প্রশ্ন (৫/১৬৫) : শুনেছি মানুষের রক্ত ভক্ষণ হারাম। কিন্তু আমার দাতে সমস্যা
থাকায় মাঝে মাঝে রক্ত বের হয়ে খাবারের সাথে ভিতরে চলে যায়। এটা হারাম ভক্ষণের শামিল
হবে কি?
উত্তর : এটি হারাম ভক্ষণের শামিল হবে না। কারণ মুখের ভিতরের রক্ত
শরীরের অংশ। এটি নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের সাধ্যের বাইরে। যদি বেশী বের হয় তবে কুলি
করে ফেলে দিবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ক্রমিক
১৯৮১১, ২২/২৭২ পৃ.)।
প্রশ্ন (৬/১৬৬) : ওহী লেখক ছাহাবীগণের মাঝে কেউ কি মুরতাদ হয়ে গিয়েছিলেন?
উত্তর : অহী লেখক ছাহাবীগণের মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন সা‘দ বিন আবী
সারাহ নামে একজন ছাহাবী মুরতাদ হয়েছিলেন। তিনি ওছমান (রাঃ)-এর দুধ ভাই ছিলেন।
মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল (ছাঃ) তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে ওছমান (রাঃ)
তাঁর জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করলে রাসূল (ছাঃ) তাঁকে নিরাপত্তা দেন। অতঃপর তিনি
ইসলামে ফিরে আসেন এবং ইসলামের উপরেই তার মৃত্যু হয়। ওছমান (রাঃ) তাঁকে মিসরের
গভর্নর নিয়োগ করেন। তিনি অনেক রাজ্যও জয় করেন। মু‘আবিয়া ও আলী (রাঃ)-এর ফিৎনার
আমলে তিনি কোন পক্ষে যোগদান না করে মিসরের আসক্বালান কিংবা ফিলিস্তীনের রামাল্লায়
আত্মগোপন করেন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন (আবূদাউদ
হা/২৬৮৫, ৪৩৫৮; ছহীহাহ হা/১৭২৩; আল-ইছাবাহ ৪/১১০, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৩/৩৪)।
প্রশ্ন (৭/১৬৭) : প্রতিবেশী হিন্দু হ’লে তার প্রতি প্রতিবেশীর হক আদায় করতে
হবে কি?
উত্তর : প্রতিবেশী অমুসলিম হ’লেও বিধিসম্মতভাবে তাদের হক আদায় করতে হবে।
যেমন তাদের সাথে সদাচরণ করা, বিপদে সহযোগিতা করা, গরীব হ’লে অর্থ সাহায্য করা
ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং
তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায় বিচার করতে
আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালবাসেন’ (মুমতাহিনাহ ৬০/৮)। তাবেঈ বিদ্বান মুজাহিদ বলেন, আব্দুল্লাহ
ইবনু আমর (রাঃ)-এর জন্য তার পরিবারে একটি ছাগল যবেহ করা হ’ল। তিনি এসে বললেন,
তোমরা কি আমাদের ইহূদী প্রতিবেশীকে (গোশত) হাদিয়া পাঠিয়েছ? আমি রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিব্রীল (আঃ) আমাকে অবিরত
উপদেশ দিতে থাকেন, এমনকি আমার ধারণা হ’ল যে, হয়ত শীঘ্রই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী
বানিয়ে দিবেন’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০৫; তিরমিযী
হা/১৯৪৩; ছহীহুত তারগীব হা/২৫৭৪)। এমনকি অমুসলিম প্রতিবেশীকে কুরবানীর
গোশত দেওয়া যায় (আল-মুগনী ৯/৪৫০; ফাতাওয়া লাজনা
দায়েমাহ ১১/৪২৪)।
প্রশ্ন (৮/১৬৮) : যোহরের ছালাতে তাহিইয়াতুল মাসজিদ না যোহরের সুন্নাত আদায়
করতে হবে? সময় পেলে উভয়টি আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : ফজর বা যোহরের সুন্নাত আদায় করাই তাহিইয়াতুল মাসজিদের জন্য যথেষ্ট।
তবে সময় পেলে উভয়টি আদায় করতে পারে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১/৭/২৪৪)।
প্রশ্ন (৯/১৬৯) : ছহীহ হাদীছ অনুসারে ছালাত আদায় করার ফলে প্রায় ২ বছর যাবৎ
আমার পরিবারের সাথে আমার মনোমালিন্য চলছে। সম্প্রতি এটা খুবই খারাপ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।
আমি অনেক চেষ্টা করেও আমার পিতাকে বুঝাতে পারিনি। এখন আমি এ বিষয়ে কি করতে পারি?
উত্তর : সাধ্যমত তাদের বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে। যদি তারা হক গ্রহণ না করে
তবুও তাদের সাথে দুনিয়াবী সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে (লোক্বমান ৩১/১৫)। হক-এর দাওয়াত পৌঁছানোই মূল কর্তব্য। গ্রহণ
করা বা না করা তাদের ব্যাপার। আল্লাহ চাইলে আপনার প্রচেষ্টা ও দো‘আর বরকতে একদিন
নিশ্চয়ই তারা হক গ্রহণ করবেন। তবে পরিবারের সন্তুষ্টির জন্য হককে পরিত্যাগ করার
কোন সুযোগ নেই। বরং যে কোন মূল্যে হককে আঁকড়ে থাকতে হবে (ক্বাছাছ ২৮/৫৫-৫৬)।
প্রশ্ন (১০/১৭০) : সফরে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত কয় রাক‘আত এবং কোন কোন সুন্নাত
আদায় করতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর : সফরে ক্বছর কেবল মাত্র চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
যেমন যোহর, আছর ও এশাতে। ফজর ও মাগরিবে পূর্ণ ছালাত আদায় করতে হবে। আর সুন্নাতের
ক্ষেত্রে কেবল ফজরের পূর্বের দু’রাক‘আত সুন্নাত ও বিতর ছালাত পড়তে হবে। কারণ রাসূল
(ছাঃ) এই দু’ছালাত কখনো পরিত্যাগ করতেন না’ (দারেমী
হা/১৫৯৪; ছহীহাহ হা/১৯৯৩; যাদুল মা‘আদ ১/৪৭৩)। অন্যান্য সুন্নাত
ছালাতগুলো রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম সফরে পড়তেন না’ (বুখারী হা/১৬৭৩; মুসলিম হা/৬৮৯, ১২১৮; আছারুছ ছহীহাহ হা/১৭০)।
প্রশ্ন (১১/১৭১) : আমার কোম্পানীর মালিক কাদিয়ানী। তবে তারা এ ব্যাপারে
কর্মীদের উপর কোন চাপ সৃষ্টি করে না। এক্ষণে এই কোম্পানীতে চাকুরী করা আমার জন্য জায়েয
হবে কি?
উত্তর : যতক্ষণ না তাদের আদর্শ গ্রহণের চাপ দেবে ততক্ষণ এরূপ প্রতিষ্ঠানে
চাকুরী করা জায়েয (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৪/৪৮৬)।
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর পরিবারে খাদ্যকষ্টের খবর জানতে পেরে আমি কাজের
সন্ধানে বের হই। পরে একজন ইহূদীর বাগিচায় প্রতি বালতি একটি করে ‘আজওয়া খেজুর
প্রদানের শর্তে ১৭ বালতি পানি উত্তোলন করি। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট
সেগুলি নিয়ে যাই এবং তিনি তা থেকে ভক্ষণ করেন’ (আহমাদ,
ইবনু মাজাহ; ইরওয়া ৫/৩১৩-১৫, হাদীছ হাসান)।
প্রশ্ন (১২/১৭২) : সূরা দুখানের ৪৪ আয়াতের ব্যাখ্যা জানতে চাই।
উত্তর : আল্লাহর বাণী, ‘নিশ্চয়ই যাক্কুম বৃক্ষ পাপীর খাদ্য হবে। এই আয়াতে
‘যাক্কুম’ বলা হয়েছে। অন্যত্র এসেছে যরী‘। কোথাও এসেছে পুঁজ-রক্ত। কুরতুবী বলেন,
এই আয়াতগুলির মধ্যে সমন্বয় এই যে, জাহান্নামীদের অনেকগুলি স্তর থাকবে; একেক স্তরের
পাপীকে একেক ধরনের নিকৃষ্ট খাদ্য দেওয়া হবে’ (কুরতুবী,
তাফসীর সূরা গাশিয়াহ ৬ আয়াত)। আরবদের বুঝানোর জন্যই তাদের পরিচিত এ
সকল নিকৃষ্ট বৃক্ষের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে জাহান্নামের সবকিছু হবে
জাহান্নামের মতই। দুনিয়াতে যার কোন তুলনা নেই।
প্রশ্ন (১৩/১৭৩) : আমার শ্রম আর বন্ধুর টাকায় আমরা ব্যবসা করি এবং লাভ নেই
সমান হারে। এক্ষণে যদি ব্যবসায় লোকসান হয় তাহ’লে আমার বন্ধুর টাকাতেই সেটা হচ্ছে। তাহ’লে
এ ক্ষেত্রে লোকসানের ভাগীদার কে হবে? দু’জনেই, নাকি বন্ধু একাই হবে?
উত্তর : ইবনু কুদামা বলেন, এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী লোকসানের ভাগীদার হবে
না। কেবল বিনিয়োগকারী হবে। তবে লাভের ক্ষেত্রে উভয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে অংশীদার হবে।
এ বিষয়ে বিদ্বানগণের মধ্যে কোন মতভেদ আছে বলে আমরা জানি না (ইবনু কুদামা ৫/২৭-২৮, ৫/৪৯, ৫১)। কেননা লোকসানের ভাগীদার
হ’লে ব্যবসায়ীকে দু’দিক থেকে দায়িত্ব নিতে হয়। প্রথমতঃ সে ব্যবসা পরিচালনা করে,
আবার লোকসানেরও ভাগ বহন করে; যা যুলুমের পর্যায়ভুক্ত (আল-মওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ৩৮/৬৪)। আল্লাহ্ বলেন, ‘হে
বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না, তোমাদের পারস্পরিক
সম্মতিতে ব্যবসা ব্যতীত’ (নিসা ৪/২৯)।
প্রশ্ন (১৪/১৭৪) : রাসূল (ছাঃ) মি‘রাজে কতকাল ছিলেন? কেউ কেউ বলেন, তিনি
২৭ বছর ছিলেন। এ সময় দুনিয়ার সবকিছু স্থির করে দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে দলীলসহ জবাব দিলে
উপকৃত হব।
উত্তর : মি‘রাজের রাতে তিনি সপ্তাকাশে গমন করেন ও একই রাতে তিনি নেমে আসেন
এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদে নবীগণের ছালাতে ইমামতি করেন। অতঃপর বোরাকে চড়ে
রাত্রি কিছু বাকী থাকতেই মক্কায় মাসজিদুল হারামে ফিরে আসেন (বুখারী হা/৩৮৮৭; মুসলিম হা/১৬৪, ১৭৮; মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৬; তাফসীর ইবনু
কাছীর)। পুরা ঘটনাটিই ঘটে অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে, যা মানবীয়
জ্ঞানের বহির্ভূত। কিন্তু এতে দুনিয়ার সবকিছু ২৭ বছর স্থির করে দেয়া হয়েছিল কিংবা
দুনিয়াতে স্বাভাবিক কোন নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছিল বলে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
অতএব উপরোক্ত কথা গ্রহণযোগ্য নয় (সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ২০৭-২১০ পৃ.)।
প্রশ্ন (১৫/১৭৫) : ৭টি কারণে দরিদ্রতা আসে। যথা- দ্রুত ছালাত, দাঁড়িয়ে পেশাব,
পেশাবের স্থানে ওযূ, দাঁড়িয়ে পানি পান, ফুঁ দিয়ে বাতি নেভানো, দাঁত দিয়ে নখ কাটা, পরিধেয়
বস্ত্ত দ্বারা মুখ ছাফ করা। এটি কি কোন হাদীছ?
উত্তর : উক্ত মর্মে কোন হাদীছ পাওয়া যায় না। তবে নিঃসন্দেহে উপরোক্ত
কর্মগুলো ইসলামী আদবের বিপরীত হওয়ায় পরিত্যাজ্য।
প্রশ্ন (১৬/১৭৬) : পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয হওয়ার পূর্বে নবী করীম (ছাঃ) ও
ছাহাবায়ে কেরাম কিভাবে ছালাত আদায় করতেন?
উত্তর : প্রথম কুরআন নাযিলের পর জিব্রীলের মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ) ওযূ
ও ছালাত শিক্ষা করেন (আহমাদ হা/১৭৫১৫, দারাকুৎনী
হা/৩৯৯, মিশকাত হা/৩৬৬; ছহীহাহ হা/৮৪১)। হিজরতের স্বল্পকাল পূর্বে
মি‘রাজ সংঘটিত হবার আগ পর্যন্ত ফজরের দু’রাক‘আত ও আছরের দু’রাক‘আত করে ছালাত
আদায়ের নিয়ম জারী ছিল। আয়েশা (রাঃ) বলেন, শুরুতে ছালাত বাড়ীতে ও সফরে দু’ দু’
রাক‘আত করে ছিল (মুসলিম হা/৬৮৫; আবূদাঊদ হা/১১৯৮;
ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১১)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য ‘অতিরিক্ত’ (نَافِلَةً) ছিল তাহাজ্জুদের ছালাত (বনু ইস্রাঈল ১৭/৭৯)।
সেই সাথে ছাহাবীগণও নিয়মিতভাবে রাত্রির নফল ছালাত আদায় করতেন (মুয্যাম্মিল ৭৩/২০; তাফসীরে কুরতুবী)। অতঃপর মি‘রাজের
রাত্রিতে নিয়মিতভাবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করা হয় (বুখারী হা/৩২০৭; মুসলিম হা/১৬২; মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫ দ্র. ছালাতুর রাসূল
(ছাঃ), ২৯ পৃ.)।
প্রশ্ন (১৭/১৭৭) : ছালাত আদায়কালীন সময়ে কলিংবেল বাজলে করণীয় কি?
উত্তর : এক্ষেত্রে মুছল্লী নফল ছালাতে থাকলে ছালাতরত অবস্থায় দরজা খুলে
দিয়ে ছালাত অব্যাহত রাখবে (আবূদাউদ হা/৯২২; তিরমিযী হা/৬০১)।
তবে দূরত্ব বেশী হ’লে ছালাত ছেড়ে দিয়ে পুনরায় নতুনভাবে ছালাত শুরু করবে (তুহফাতুল আহওয়াযী ৩/১৭৩)। আর ফরয ছালাতে থাকলে যরূরী প্রয়োজন
ব্যতীত ছালাত পরিত্যাগ করবে না। সম্ভব হ’লে পুরুষ সুবহানাল্লাহ বলে ও নারী
হস্তাঘাত দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করবে যে এখন সে ছালাতে আছে। কারণ রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন, ‘তোমাদের ছালাতে কোন ব্যাপার ঘটলে তোমরা সুবহানাল্লাহ বলবে। হাতচাপড়ানো
কেবল নারীদের জন্য ও পুরুষদের জন্য সুবহানাল্লাহ বলা’ (বুখারী হা/১২১৮; মুসলিম হা/৪২১; আহমাদ হা/২২৮৫৩)। তবে
বাধ্যগত অবস্থায় ছালাত ছেড়ে দিতে হবে এবং দরজা খুলে পুনরায় নতুনভাবে ছালাত শুরু
করবে’ (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/৩৪৭)।
প্রশ্ন (১৮/১৭৮) : জুম‘আর খুৎবা চলাকালীন সময়ে দো‘আ কবুলের আশায় মনে মনে
ইচ্ছানুযায়ী দো‘আ করা যাবে কি?
উত্তর : খুৎবা চলাকালীন সময়ে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলা নিষেধ (বুখারী হা/৯৩৪; মুসলিম হা/৮৫১; মিশকাত হা/১৩৮৫)। সুতরাং এসময়
বিশেষ কোন দো‘আ পাঠ করা উচিৎ নয়। তবে ইমামের দো‘আ বা বক্তব্যের উত্তরে নিম্নস্বরে
আমীন বা অন্যান্য তাসবীহ বলা যাবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩০/২৪৩)।
এক্ষণে খুৎবার সময় দো‘আ কবুলের সময় মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার অর্থ হ’ল
ইমামের দো‘আয় শরীক হয়ে আমীন বলা, দু’খুৎবার মধ্যবর্তী সময়ে দো‘আ করা, ছালাতের
মধ্যে দো‘আ করা প্রভৃতি (মুসলিম হা/৮৫৩; মিশকাত হা/১৩৫৮;
বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩০/২৪৩, ২৪৮; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৭০, ১৬/৬৮)।
প্রশ্ন (১৯/১৭৯) : পিতা-মাতার কবরের পার্শ্বে গিয়ে দুই হাত তুলে দো‘আ করা
যাবে কি? এ সময় কিবলামুখী হ’তে হবে কি?
উত্তর : কবরের পার্শ্বে গিয়ে হাত তুলে মুনাজাত করা যাবে। তবে
জামা‘আতবদ্ধভাবে নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) একাকী কবরস্থানে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে হাত
তুলে মুনাজাত করেছেন (মুসলিম হা/৯৭৪; নাসাঈ হা/২০৩৭;
আহমাদ হা/২৫৮৯৭)। এজন্য কিবলামুখী হওয়ার শর্ত নেই। অতএব সুবিধামত
যেকোন দিকে মুখ করে দো‘আ করা যাবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া
২৭/১৬৬; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৩৭; উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ক্রম ৮২)।
প্রশ্ন (২০/১৮০) : আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহকে নবী করীম (ছাঃ) দেখেছেন বলে
দাবীকারী মিথ্যুক। আবার আরেক ছাহাবী (রাঃ) বলেছেন, নবী করীম (ছাঃ) আল্লাহকে দেখেছেন।
এমতাবস্থায় কার কথা মানতে হবে?
উত্তর : মি‘রাজে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখেননি।
আবু যার গিফারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলা হ’ল, আপনি কি
আল্লাহকে দেখেছেন? জবাবে তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তো নূর। আমি কি করে তাঁকে
দেখব’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৫৯-৫৬৬০ ‘আল্লাহকে
প্রত্যক্ষ করা’ অনুচ্ছেদ)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘...যে ব্যক্তি বলে যে,
মুহাম্মাদ (ছাঃ) স্বীয় পালনকর্তাকে দেখেছেন সে মিথ্যা বলে। অতঃপর তিনি দেখতে না
পারার প্রমাণে দলীল পেশ করে বলেন, ‘কোন চোখ তাঁকে দেখতে পারে না। বরং তিনি সকল
চোখকে দেখতে পান’ (আন‘আম ৬/১০৩)। তারপর
পাঠ করলেন, ‘অহীর মাধ্যমে বা পর্দার আড়াল থেকে ব্যতীত আল্লাহর সাথে কথা বলা কোন
মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় (শূরা ৫১; মুসলিম হা/১৭৭; তিরমিযী
হা/৩০৬৮)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর বাণী, ‘যা সে দেখেছে তার
হৃদয় তা অস্বীকার করেনি.. নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল (নাজম ৫৩/১১ ও ১৩)। তিনি তাকে অন্তরে দু’বার দেখেছেন (মুসলিম হা/১৭৬; মিশকাত হা/৫৬৬০)। এখন দু’বার কাকে দেখেছেন এর
ব্যাখ্যায় ছাহাবীগণ বলেন, নবী করীম (ছাঃ) জিব্রীল (আঃ)-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দু’বার
দেখেছেন তাঁর ছয়শত ডানা বিশিষ্ট অবস্থায়। তাঁর প্রসারিত ডানা পূর্ব ও পশ্চিমের
(আকাশ ও পৃথিবীর) মধ্যবর্তী স্থানকে বেষ্টন করে রেখেছিল। এ দর্শনকে নবী করীম
(ছাঃ)-এর অন্তর মিথ্যা মনে করেনি’ (মুসলিম হা/১৭৪; তিরমিযী হা/৩২৮৩;
মিশকাত হা/৫৬৬২)। উল্লেখ্য যে, যে সকল হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে,
মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর রবকে দেখেছেন তা জাল বা যঈফ (হাকেম হা/৩২৩৪; তিরমিযী হা/৩২৭৯; যিলালুল জান্নাহ হা/৪৩৭)।
এক্ষণে ইবনু আববাসের বক্তব্য সত্য হিসাবে ধরলেও তা তার নিজস্ব উক্তি হওয়ায় এবং
আয়েশা (রাঃ)-এর প্রতিবাদ থাকায় তা দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৬/৫০৯; ইবনুল ক্বাইয়িম, ইজতিমাউ জয়ূশিল
ইসলামিয়াহ ১/১২)।
প্রশ্ন (২১/১৮১) : আমাদের এলাকায় একটি পার্ক নির্মিত হচ্ছে। পার্কের প্রায়
মধ্যস্থলে পড়েছে অত্র এলাকার গোরস্থানটি। পার্কে গান-বাজনা হওয়ায় গোরস্থানের ভাবগাম্ভীর্য
বিনষ্ট হচ্ছে। এমতাবস্থায় গোরস্থানটি কি অন্যত্র স্থানান্তর করা যাবে, না-কি ঐ অবস্থাতেই
রেখে দিতে হবে? আর স্থানান্তর করলে কিভাবে করতে হবে? গোরস্থানের সকল মাটি উত্তোলন করে
স্থানান্তর করা যাবে কি? উল্লেখ্য যে, প্রায় ২০ শতাংশ জায়গার উপর অবস্থিত গোরস্থানটি
প্রায় অর্ধশত বছরের পুরোনো এবং ওয়াক্ফকৃত।
উত্তর : শারঈ কারণ ব্যতীত কবর খনন করে লাশ উঠানো বা গোরস্থান
স্থানান্তর করা জায়েয নয়। তাতে লাশের অসম্মান করা হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
লাশের হাড্ডি ভাঙ্গা জীবিতের হাড্ডি ভাঙ্গার সমান (মুওয়াত্ত্বা, আবূদাউদ হা/৩২০৭; মিশকাত হা/১৭১৪ ‘মৃতের দাফন’ অনুচ্ছেদ)।
লাশ বহন সময়কালীন করণীয় সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন তোমরা লাশ উঠাবে তখন
ধাক্কা-ধাক্কি এবং জোরে নাড়া-চাড়া করো না; বরং ধীরে ধীরে নিয়ে চলবে’ (বুখারী হা/৫০৬৭; মিশকাত হা/৩২৩৭)। অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায়
হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এই হাদীছ থেকে জানা যায় যে, মুমিনের সম্মান মৃত্যুর
পরেও অবশিষ্ট থাকে যেমন জীবিত অবস্থায় ছিল’ (ফাৎহুল
বারী ৯/১১৩)।
তবে যদি বাধ্যগত প্রয়োজন দেখা দেয়,
তাহ’লে কবর খনন করে লাশ উঠানো জায়েয’ (আল-বাজী, আল-মুনতাক্বা শারহুল
মু্ওয়াত্ত্বা ৩/২২৫; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৩/২১৫; আলবানী, আহকামুল জানায়েয,
মাসআলা নং ১০৭, পৃঃ ৬৯ ও ৯১)। যেমন মু‘আবিয়া (রাঃ) একটি পানির নহর
প্রবাহিত করার জন্য ওহোদ যুদ্ধে শহীদ কতিপয় ছাহাবীর কবর খনন করে তাঁদের লাশ
অন্যত্র দাফনের ব্যবস্থা করেন (ইবনুল মুবারাক, কিতাবুল জিহাদ
হা/৯৮)। অনুরূপভাবে জাবের (রাঃ) তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ ওহোদ যুদ্ধে
শাহাদত বরণের ছয় মাস পর তাঁকে কবর থেকে উত্তোলন করে অন্যত্র দাফন করেন (বুখারী হা/১৩৫১)। এছাড়া কবর যদি বহু পুরানো হয় এবং তাতে
লাশের হাড়-হাড্ডির কোন চিহ্ন না থাকে তাহ’লে মুসলমানদের কল্যাণে সেখানে নতুন লাশ
দাফন করা বা সেখানে মসজিদ ও বাড়ি-ঘর নির্মাণ, চাষাবাদ ইত্যাদি করা যেতে
পারে’ (ইমাম নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/৩০৩; ইবনু কুদামা,
মুগনী ২/১৯৪, ৪১৩)।
তবে প্রশ্নোল্লেখিত অবস্থায় কয়েকটি
কারণে গোরস্থানটি স্থানান্তর করা ঠিক হবে না। এক. কবরস্থানটি ওয়াকফকৃত। আর
ওয়াক্ফকৃত স্থান একান্ত বাধ্যগত অবস্থা ব্যতীত স্থানান্তর করা জায়েয নয় (বুখারী হা/২৭৬৪; মুসলিম হা/১৬৩২; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া
৩১/২৫২, ২৬৫)। দুই. এখানে শক্তিশালী কোন শারঈ কারণ নেই। কেননা পার্ক
কর্তৃপক্ষের খেল-তামাশার স্বার্থে মুসলমানের ওয়াকফকৃত কবরস্থান স্থানান্তর করা আদৌ
গ্রহণযোগ্য নয়। তিন. শারঈ প্রয়োজন ব্যতীত কবর স্থানান্তর করা মুসলিম মাইয়েতগণের
প্রতি অমর্যাদাকর। অতএব সার্বিক বিবেচনায় উক্ত কবরস্থানটি স্থানান্তর করা সঠিক হবে
না।
প্রশ্ন (২২/১৮২) : আমার পিতা মৃত্যুর পূর্বে একটি সম্পদ ব্যতীত সকল সম্পদ
বণ্টন করে দেন। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন যে, আমাকে কিছু অংশ বেশী দেওয়া হয়েছে। সেজন্য
তিনি আমাকে অছিয়ত করেন যে, যে অংশটুকু বণ্টন হয়নি তা থেকে তুমি কিছুই গ্রহণ করবে না।
কিন্তু আমার নিকট যা বেশী আছে তা অবণ্টিত সম্পত্তিতে পাওনা সম্পদের সমান নয়। এক্ষণে
আমার পিতার অছিয়ত পূরণ করা কি আমার জন্য আবশ্যক? আমার করণীয় জানতে চাই।
উত্তর : সম্পদের ব্যাপারে পিতার পক্ষ থেকে সন্তানের জন্য অছিয়ত কার্যকরী
নয়। কারণ সন্তান পিতার সম্পদের উত্তরাধিকারী। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা
প্রত্যেক হকদারের জন্য তার হক নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। অতএব ওয়ারিছের জন্য কোন
অছিয়ত নেই’ (আবূদাঊদ, ইবনু মাজাহ প্রভৃতি,
ছহীহুল জামে‘ হা/১৭৮৯; মিশকাত হা/৩০৭৩ ‘ফারায়েয’ অধ্যায় ‘অছিয়ত’ অনুচ্ছেদ)।
তবে ওয়ারিছ ব্যতীত অন্য কারো জন্য অছিয়ত করলে সম্পদের এক- তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পূরণ
করা যাবে (বুখারী হা/২৭৪২; মুসলিম হা/১৬২৮;
মিশকাত হা/৩০৭১)। এক্ষণে অবণ্টিত সম্পদ থেকে শরী‘আত মোতাবেক যদি
প্রশ্নকর্তার কিছু প্রাপ্য থাকে তবে তিনি অন্য শরীকদের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে
নির্ধারিত অংশটি বুঝে নিতে পারবেন। কেননা মীরাছের বণ্টননীতি আল্লাহ কর্তৃক
নির্ধারিত (নিসা ৪/১১)।
প্রশ্ন (২৩/১৮৩) : আমাদের এলাকায় মসজিদে ঈদের ছালাত আদায় করা হয়। জায়গা
সংকুলান না হওয়ায় সেখানে একাধিক জামা‘আত করা যাবে কি? নাকি একাধিক জামা‘আত করলে তা
বিদ‘আত হবে?
উত্তর : প্রথমত, মসজিদ হ’তে ভিন্ন স্থানে ঈদের ছালাত আদায় করা
সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে নববীর পূর্ব পার্শ্বের ময়দানে ঈদের ছালাত আদায়
করতেন (যাদুল মা‘আদ ১/৪২৫ পৃঃ; আলবানী, ছালাতুল
ঈদায়েন ফিল মুছাল্লা বই)। অথচ মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে ছালাত
আদায়ের ফযীলত অনেক বেশী (মুসলিম হা/১৩৯৪; ইবনু মাজাহ
হা/১৪০৪)। তবে বাধ্যগত কারণে মসজিদে পড়া যাবে (মির‘আত ৫/৬১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/১৪২)। দ্বিতীয়ত,
একই স্থানে ঈদের ছালাত একাধিকবার পড়ার পক্ষে কোন দলীল নেই। সুতরাং যাদের ছালাত
ছুটে যাবে তারা পরে নিজেরা একাকী কিংবা জামা‘আতে পড়ে নিবে। তবে পার্শ্ববর্তী অন্য
কোন ঈদের জামা‘আত খুঁজে নেওয়াই উত্তম (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ
দারব)।
প্রশ্ন (২৪/১৮৪) : ওমর (রাঃ) কি মসজিদকে সাধারণ
কবিতা আবৃত্তি, গল্প-গুজব করার জন্য মসজিদের পার্শ্বে একটি বারান্দা তৈরী করেছিলেন?
উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক। মসজিদকে বিশেষ করে মসজিদে নববীকে এগুলো থেকে
মুক্ত রাখার জন্য ওমর (রাঃ) এধরনের ব্যবস্থা করেছিলেন। সালেম ইবনু ওমরের বরাতে
বলেন, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) মসজিদে নববীর পার্শ্বে একটি বড় চত্বর
বানিয়েছিলেন, এর নাম রাখা হয়েছিল বুত্বায়হা। তিনি লোকেদেরকে বলে রেখেছিলেন, যে
ব্যক্তি বাজে কথা বলবে অথবা কবিতা আবৃত্তি করবে অথবা উঁচু কণ্ঠে (দুনিয়াবী) কথা
বলতে চায়, সে যেন সেই চত্বরে চলে যায়’ (মুওয়াত্ত্বা হা/৪২২; মিশকাত
হা/৭৪৫; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/২০০৫৩; সনদ ছহীহ, আলবানী, ইছলাহুল মাসাজিদ;
ইবনু আব্দিল বার্র, আল-ইস্তিযকার হা/৩৯৪)। তবে মসজিদের ভিতরে ইসলামী
জাগরণী বা দ্বীনী আলোচনা করায় কোন বাধা নেই।
প্রশ্ন (২৫/১৮৫) : ওহোদ যুদ্ধের শহীদদের জানাযা কি আট বছর পর পড়া হয়েছিল?
শহীদদের জানাযা পড়ানো কি নাজায়েয?
উত্তর : আট বছর পর ওহোদ শহীদদের নিকট গিয়ে রাসূল (ছাঃ) দো‘আ করেছিলেন। যেমন
ওক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) বলেন, আট বছর পর নবী করীম (ছাঃ) ওহোদের শহীদদের জন্য
(কবরস্থানে) এমনভাবে দো’আ করলেন যেমন কোন বিদায় গ্রহণকারী জীবিত ও মৃতদের জন্য
দো‘আ করেন (বুখারী হা/৪০৪২; মুসলিম হা/২২৯৬;
মিশকাত হা/৫৯৫৮)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, নবী করীম (ছাঃ) একদা বের হ’লেন
এবং ওহোদে পৌঁছে মাইয়েতের জন্য যেরূপ (জানাযায়) দো‘আ করা হয় ওহোদের শহীদানের জন্য
অনুরূপ দো‘আ করলেন’ (বুখারী হা/১৩৪৪; মুসলিম হা/২২৯৬)।
উপরোক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী ও আবু হাতেম বলেন, মাইয়েতের জন্য ছালাতে দো‘আ
পাঠের ন্যায় তিনি দো‘আ করলেন (মুসলিম হা/২২৯৬-এর ব্যাখ্যা;
মির‘আত ৫/৪০০; ইবনু হিববান হা/৩১৯৯)। হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন,
সম্ভবত রাসূল (ছাঃ) তাঁর মৃত্যু নিকবর্তী হওয়ার বিষয়টি জেনে নেওয়ার ফলে ওহোদের
শহীদগণের জন্য দো‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন (ফাৎহুল
বারী ৩/২১০)। উল্লেখ্য যে, শহীদগণের জন্য সাধারণভাবে জানাযার ছালাত
নেই। কারণ ছালাত হ’ল মাইয়েতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা। আর শহীদদের আল্লাহ্ ক্ষমা করে
দিয়েছেন’ (কুরতুবী, আল-বায়ান ওয়াত তাহছীল
২/২৯৯)। জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ওহোদের শহীদগণকে রক্তমাখা দেহে
দাফন করেন। তিনি তাদের জানাযার ছালাত আদায় করেননি (বুখারী হা/১৩৪৩; মিশকাত হা/১৬৬৫)। অবশ্য কেউ চাইলে শহীদগণের
জন্যও জানাযার ছালাত আদায় করতে পারেন। তবে এটি ওয়াজিব নয় (নাসাঈ হা/১৯৫৩; শারহু মা‘আনিল আছার হা/২৬৫৭, সনদ হাসান; আলবানী, আহকামুল
জানায়েয ১/৮২)।
প্রশ্ন (২৬/১৮৬) : যে সকল ইমাম বিশ্বাস করেন যে, ‘আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান’-
তাদের পিছনে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : এই আক্বীদাহ যারা পোষণ করে তাদের পিছনে ছালাত আদায় করলে
ছালাত হয়ে যাবে। তবে বিকল্প মসজিদ বা ইমামের পিছনে ছালাত আদায়ের সুযোগ থাকলে
সেখানে ছালাত আদায় করাই উত্তম (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া
৩/২৮০-৮১, ৭/৫০৭, ২৩/২৫৬; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১৪/৩৩; আলবানী,
তাখরীজুত তাহাবিয়াহ ১/৬৭; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/৭)। উল্লেখ্য যে, ‘আল্লাহ
সর্বত্র বিরাজমান’ এধরনের আক্বীদা বাতিল। আল্লাহর সত্তা সর্বত্র বিরাজমান নয়। বরং
তাঁর ইল্ম ও কুদরত অর্থাৎ জ্ঞান ও ক্ষমতা সর্বত্র বিরাজমান (ত্বোয়া-হা ২০/৪৬)। তিনি সপ্তম আসমানের উপরে আরশে
সমুন্নীত (আল-আ‘রাফ ৭/৫৪; ইউনুস ১০/৩; রা‘দ
১৩/২; ত্বোয়াহা ২০/৫; আল-ফুরক্বান ২৫/৫৯; সাজদাহ ৪; হাদীদ ৪; মুসলিম হা/৮৩৬,
‘মসজিদ’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৩৩০৩)। মু‘আত্ত্বিলাগণ ‘আরশে অবস্থান’
সম্পর্কিত সর্বমোট সাতটি আয়াতের অর্থ করেছেন ‘মালিক হওয়া’, কেউ করেছেন ‘আরশ
সৃষ্টির ইচ্ছা করা’ ইত্যাদি। এইভাবে এঁরা ২৫ প্রকারের সম্ভাব্য অর্থ ব্যক্ত
করেছেন। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) এসবের
প্রতিবাদে ৪২টি যুক্তি পেশ করেছেন (ইবনুল ক্বাইয়িম, মুখতাছার ছাওয়ায়েকুল
মুরসালাহ ২/১২৬-১৫২)। ইমাম যাহাবী উক্ত আয়াত সমূহের ব্যাখ্যায় ৯৬টি
হাদীছ, ২০টি আছার ও আহলে সুন্নাত বিদ্বানগণের ১৬৮টি বক্তব্য সংকলন করেছেন (যাহাবী, ‘মুখ্তাছারুল ‘উলু’)।
মূলতঃ তাদের কল্পিত উক্ত
অর্থগুলো রূপক। আর আল্লাহর ছিফাতের বিষয়ে বর্ণিত আয়াতের এরূপ রূপক ও কাল্পনিক অর্থ
করা অন্যায়। তাই এ সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের জওয়াবে ইমাম মালিক বিন আনাস (রহঃ)
বলেছিলেন, ‘সমুন্নীত’ শব্দের অর্থ সুবিদিত, কিভাবে সেটা অবিদিত, এর উপরে ঈমান আনা
ওয়াজিব এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা বিদ‘আত’ (ইমাম লালকাঈ, ‘উছূলু ই‘তিক্বাদ’
৩/৩৮৭ টীকা-২; শাহরাস্তানী, ‘আল-মিলাল’ ১/৯৩; দ্রঃ থিসিস পৃঃ ১১৫-১১৭।
প্রশ্ন (২৭/১৮৭) : মসজিদে কথা বললে ছাওয়াব কর্তন করা হবে কি? শুনা যায়,
আগুন যেমন কাঠকে পুড়িয়ে দেয় তেমনি মসজিদে কথা বলা ছওয়াবকে পুড়িয়ে দেয়’। মসজিদে ইসলামী
নাটক করা যাবে কি?
উত্তর : ‘আগুন যেমন কাঠকে পুড়িয়ে দেয় তেমনি মসজিদে কথা-বার্তা ছওয়াবকে
পুড়িয়ে দেয়’ মর্মের বর্ণনাটি জাল (যঈফাহ হা/০৪)। আরেকটি
বর্ণনায় এসেছে, চতুষ্পদ জন্তু যেমন তৃণলতা খেয়ে ফেলে তেমনি মসজিদে কথা-বার্তা বলা
ছওয়াবকে খেয়ে ফেলে’ সেটিও ভিত্তিহীন (যঈফাহ হা/০৪; আছ-ছামারুল
মুস্তাতাব ৬৮৩ পৃ:)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘মসজিদে কথা বললে চল্লিশ
বছরের আমল বিনষ্ট হয়ে যায়’। সেটিও ভিত্তিহীন (আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাতাব ৬৮৩
পৃ:)। সুতরাং মসজিদে কথা বললেই ছওয়াব কর্তন করা হবে- এ কথা ঠিক নয়।
কারণ মসজিদে প্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলা জায়েয (শাওকানী,
নায়লুল আওত্বার ২/১৮৭; তোহফাতুল আহওয়াযী ২/২৩২)। আর মসজিদে শরী‘আত
সম্মত কোন অনুষ্ঠান করায় বাধা নেই। জাবের বিন সামুরাহ (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর নবী
ও ছাহাবীগণের সাথে একশরও অধিকবার মসজিদে মিলিত হয়েছি। তাদেরকে দেখেছি, তারা
পরস্পরে কবিতা ও জাহেলী যুগের কর্মকান্ড সম্পর্কে আলোচনা করতেন। আর তিনি
মাঝে-মধ্যে তাদের সাথে মুচকি হাসতেন (আহমাদ হা/২০৮৮৫; আলবানী,
আছ-ছামারুল মুস্তাতাব ৮৩২ পৃ:, সনদ ছহীহ)। রাসূল (ছাঃ) প্রায়ই ফজরের
ছালাতের পর ছাহাবীদের নিয়ে জাহেলী যুগ সম্পর্কে আলোচনা করতেন। এতে ছাহাবীগণ
হাসাহাসি করতেন ও তিনি মুচকি হাসতেন (মুসলিম হা/৬৭০; মিশকাত হা/৪৭৪৭)।
হাস্সান বিন ছাবিত (রাঃ)-কে মসজিদে কবিতা আবৃত্তি করতে দেখে ওমর (রাঃ) বাধা দিলে
হাসসান বলেন, আমি রাসূলের যুগে কবিতা আবৃত্তি করতাম। তিনি আমাকে বাধা দেননি’ (বুখারী হা/৩২১২; মুসলিম হা/২৪৮৫)। অতএব মুছাল্লীদের কষ্ট না
দিয়ে এবং মসজিদের আদব বিরোধী কথা-বার্তা না থাকলে যেকোন ইসলামী অনুষ্ঠান মসজিদে
করা যাবে। আর যা নিষিদ্ধ তা হ’ল মসজিদে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, হারানো বস্ত্ত খোঁজ
করা, পরনিন্দা করা, চোগলখুরি করা, গোলাকৃতি হয়ে বসে অর্থহীন দুনিয়াবী গল্প-গুজব
করা, চিৎকার করে কথা বলা ইত্যাদি (নববী, আল-মাজমূ‘ ২/১৭৭; ইবনু
তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/২০০; তাফসীরে কুরতুবী সূরা নূর ৩৭ আয়াতের তাফসীর
দ্রষ্টব্য)।
প্রশ্ন (২৮/১৮৮) : আমাদের মসজিদটি দো’তলা। যেটুকু জমি তার সবটুকু মসজিদ,
ওযূখানা ও টয়লেট-প্রস্রাবখানা। ইমাম ও মুওয়াযযিনের থাকার কোন জায়গা নেই। এক্ষণে মসজিদের
ছাদের উপর ইমামের জন্য কোয়ার্টার নির্মাণ করা যাবে কি?
উত্তর : মসজিদ যদি ওয়াক্ফকৃত হয় এবং ওয়াক্ফকারীর পূর্ব থেকে মসজিদের উপর
কোয়ার্টার নির্মাণের পরিকল্পনা থাকে তবে মসজিদের আদব বজায় রেখে কোয়ার্টার নির্মাণ
করা যেতে পারে। আর পূর্ব থেকে পরিকল্পনা না থাকলে দাতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার
নির্মাণ করা সমীচীন নয়। কেননা সেটি কেবল মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্যেই ওয়াক্ফ করা
হয়েছে। আর ওয়াক্ফকৃত না হ’লে এতে কোন বাধা নেই, (আল-মাওসূ‘আতুল
ফিক্বহিয়াহ ১২/২৯৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২/৫/২২০)। শায়খ আলবানীসহ
কতিপয় বিদ্বানের মতে, কেবল মসজিদের কল্যাণার্থে হ’লে এরূপ নির্মাণকাজ জায়েয। তবে
খেয়াল রাখতে হবে যেন মসজিদের আদব বজায় থাকে (আলবানী, আল-হাভী লিল
ফাতাওয়া ১/২৭৮)। উল্লেখ্য যে, মসজিদ স্বতন্ত্রভাবে একক উদ্দেশ্যে
নির্মাণ করাই সর্বোত্তম।
প্রশ্ন (২৯/১৮৯) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, জুদী পাহাড়ের ঝরনার প্রবাহ থেকেই
যমযম কূপের উৎপত্তি হয়েছে। উক্ত কথাটির সত্যতা জানতে চাই।
উত্তর : উক্ত বক্তব্যের কোন ভিত্তি নেই। আল্লাহ তাঁর অলৌকিক
ক্ষমতার মাধ্যমে এই পানি সরবরাহ করে থাকেন। ইসলামের ইতিহাসে যমযম কূপের উৎপত্তি
নিয়ে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। নবী ইবরাহীম (আঃ) তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী হাজেরা ও
শিশুপুত্র ইসমাঈল (আঃ)-কে আল্লাহর আদেশে মক্কার বিরান মরুভূমিতে রেখে আসেন। তাঁর
রেখে যাওয়া খাদ্য পানীয় শেষ হয়ে গেলে হাজেরা পানির সন্ধানে পার্শ্ববর্তী ছাফা ও
মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাতবার ছোটাছুটি করেছিলেন। এসময় জিবরীল (আঃ)-এর পা বা
ডানার আঘাতে মাটি ফেটে পানির ধারা বেরিয়ে আসে। ফিরে এসে এই দৃশ্য দেখে হাজেরা পাথর
দিয়ে পানির ধারা আবদ্ধ করলে তা কূপের রূপ নেয়। এসময় হাযেরা উদ্গত পানির ধারাকে
যমযম অর্থাৎ থাম!- বলায় এর নাম যমযম হয়েছে। পরবর্তীতে নবী ইবরাহীম (আঃ) এই কূপের
পাশে কা‘বা গৃহ পুনঃনির্মাণ করেন (বুখারী হা/৩৩৬৪; ছহীহ
সীরাতুন নবাবিয়াহ ৪১ পৃঃ)।
প্রশ্ন (৩০/১৯০) : আমি মানত করেছিলাম, আল্লাহ আমাকে সন্তান দান করলে প্রচলিত
তাবলীগ জামা‘আতে এক চিল্লা দেব। আল্লাহ আমাকে সন্তান দান করেছেন। কিন্তু আমি জানতে
পারলাম, তাবলীগ জামা‘আতের কার্যক্রম ভুলে ভরা। এক্ষণে আমার জন্য করণীয় কি?
উত্তর : এক্ষেত্রে নযর বা মানত পূর্ণ না করে কসমের কাফফারা দিবে। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে কোন লোক মানত করলে সে যেন তা
পূর্ণ করে। আর তাঁর অবাধ্যতার উদ্দেশ্যে মানত করলে সে যেন তা পূর্ণ না করে’ (বুখারী হা/৬৬৯৬; মিশকাত হা/৩৪২৭)। অতএব এক্ষেত্রে করণীয়
সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, অবাধ্যতার কাজে কোন মানত নেই। আর কসমের কাফফারাই
মানতের কাফফারা’ (মুসলিম হা/১৬৪৫; মিশকাত হা/৩৪২৯)।
আর কসমের কাফফারা হ’ল ১০ জন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করা অথবা একজন দাসকে মুক্ত করা
কিংবা তিনদিন ছিয়াম পালন করা (মায়েদাহ ৫/৮৯)।
প্রশ্ন (৩১/১৯১) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, ছোট বাচ্চাদের কপালে টিপ দিলে মানুষের
বদ নযর থেকে তারা রক্ষা পায়। উক্ত বক্তব্যের সত্যতা জানতে চাই।
উত্তর : উক্ত বক্তব্য ভিত্তিহীন। বরং এটি হিন্দুয়ানী প্রথা থেকে আগত।
প্রাচীন ভারতে হিন্দুরা যেসকল ধারণা থেকে টিপ ব্যবহার করত তন্মধ্যে একটি হ’ল শিশুর
উপর থেকে দুষ্ট শক্তির প্রভাব দূর করা। এমনকি তারা এটিকে তৃতীয় চোখ মনে করত।
সুতরাং এরূপ ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কোন মুসলমান এ ধরনের সামাজিক
নিদর্শনের ক্ষেত্রে অমুসলিমদের অনুকরণ করলে সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে (আহমাদ, আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭, ‘পোষাক’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন (৩২/১৯২) : একই ব্যক্তির জানাযায় একাধিকবার অংশগ্রহণ করা যাবে কি?
উত্তর : একজন মৃত ব্যক্তির জানাযার ছালাত একাধিকবার পড়া যায়।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জানাযার ছালাত অনেক বার পড়া হয়েছিল (সীরাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ৭৫৪)। অনুরূপভাবে একই ব্যক্তির
জানাযা পুনরায় অনুষ্ঠিত হ’লে একজন একাধিকবারও শরীক হ’তে পারে (বুখারী হা/১৩২১; মিশকাত হা/১৬৫৮; মির‘আত ৫/৩৯০ পৃঃ; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ),
পৃঃ ২২৮)।
প্রশ্ন (৩৩/১৯৩) : কোন হিন্দু যদি যবেহ করার সময় বিস্মিল্লাহ বলে যবেহ করে
তাহ’লে উক্ত প্রাণীর গোশত খাওয়া বৈধ হবে কি?
উত্তর: হিন্দুরা বিসমিল্লাহ বলে পশু যবেহ করলেও উক্ত পশুর গোশত খাওয়া যাবে
না। কারণ হিন্দুরা মুশরিকদের মতই অপবিত্র (তওবাহ ৯/২৮; ফাতাওয়া লাজনা
দায়েমাহ ২২/৪৩৯; মাজাল্লাতু মাজমাঈল ফিক্বহিল ইসলামী ১০/২৪৩)।
উল্লেখ্য যে, কোন আহলে কিতাব তথা ইহুদী-খৃষ্টানের যবেহকৃত পশু ভক্ষণ করা জায়েয,
যদি সে যবেহকালে বিসমিল্লাহ বলে (মায়েদা ৫/৫)।
প্রশ্ন (৩৪/১৯৪) : শীতকালে নাকসহ মুখ ঢেকে এবং ক্বওমার সময়ে চাদরের নীচে
হাত বেঁধে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : নাক-মুখ ঢেকে ছালাত আদায় করা যাবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) মুখ ঢেকে
ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন (ইবনু মাজাহ হা/৯৬৬; মিশকাত
হা/৭৬৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৮৮৩)। আর ঠান্ডার কারণে হাতের উপর চাদর
রাখাতে কোন দোষ নেই। তবে কাপড় দ্বারা নিজেকে পেঁচানো যাবে না’ (বুখারী হা/৮০৯; আবূদাউদ হা/৮৮৯; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১২/৩৪)।
প্রশ্ন (৩৫/১৯৫) : ছালাত শেষে সালাম ফিরানোর সময় কি বলে সালাম ফিরাতে হবে?
উত্তর : দো‘আয়ে মাছূরাহ ও অন্যান্য দো‘আ শেষে ডাইনে ও বামে কেবল ‘আস্সালা-মু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ’বলবে’ (নাসাঈ হা/১৩২৫; মিশকাত হা/৯৫০)। এটিই সর্বোত্তম। আর কেবল
ডাইনে বা বামে সালামের শেষদিকে ‘ওয়া বারাকা-তুহূ’ বৃদ্ধি
করার ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে। অতএব তা পরিহার করাই উত্তম। কারণ সালাম ছালাতের
একটি রুকন যা ইখতিলাফ মুক্ত হওয়া উচিৎ (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১৬৪)।
তবে কেউ শুধু ডানে অথবা ডানে ও বামে উভয় দিকে ‘ওয়া বারাকাতুহু’ যোগ করলে ছালাতের
কোন ক্ষতি হবে না (ইবনু হিববান হা/১৯৯৩; আবূদাউদ
হা/৯৯৭, সনদ ছহীহ)। উল্লেখ্য যে, কেবল ডানে সালাম ফিরানোর সময় ‘ওয়া
বারাকাতুহু’ বলার বিষয়টি আবূদাউদের সব কপিতে পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন (৩৬/১৯৬) : আমার ছোট ভাই ২৪ বছর যাবত মানসিক বিকারগ্রস্ত এবং বিগত
চার বছর ধরে নিখোঁজ। আমার আরো ভাই ও বোন বেঁচে আছে। এক্ষণে সম্পত্তি কিভাবে বণ্টিত
হবে?
উত্তর : দীর্ঘ সময় ধরে নিখোঁজ ব্যক্তি নিহত হিসাবে পরিগণিত হবে। এক্ষেত্রে
যদি বিচারক তার হারানোর ব্যাপারে নিশ্চিত ফায়ছালা দেন তবে এই সম্পত্তি নিয়ম
অনুযায়ী মেয়ের তুলনায় ছেলে দ্বিগুণ আকারে বণ্টিত হবে। আর বাকী অংশ নিকটতম পুরুষ
আত্মীয়গণ আছাবা হিসাবে পেয়ে যাবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা মৃতের পরিত্যক্ত
সম্পত্তির নির্ধারিত অংশসমূহ হকদারগণকে পৌঁছে দাও। অতঃপর যা বেঁচে যাবে, সেগুলি
(আছাবা সূত্রে) নিকটতম পুরুষ উত্তরাধিকারীদের দাও’ (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩০৪২, ‘ফারায়েয ও অছিয়তসমূহ’ অধ্যায়)।
পরে হারানো ব্যক্তি ফিরে আসলে তার অংশ ফিরিয়ে দিতে হবে।
প্রশ্ন (৩৭/১৯৭) : আমি পিতার একমাত্র সন্তান। আমার নিজেরও একটি সন্তান রয়েছে।
এক্ষণে আমি যদি আমার পিতা-মাতার পূর্বে মারা যাই তাহ’লে সম্পত্তি কিভাবে বণ্টিত হবে?
আমার সন্তান কি এতে অংশ পাবে?
উত্তর : প্রশ্নকারীর কোন ভাই-বোন না থাকায় তার সন্তান আছাবা হিসাবে দাদার
পুরো সম্পত্তির মালিক হবে। কারণ নাতি তখনই দাদার সম্পত্তি পাবে না যখন দাদার অন্য
ছেলে বা মেয়ে থাকবে (তোহফাতুল মুহতাজ ৬/৪০২)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির নির্ধারিত অংশসমূহ হকদারগণকে
পৌঁছে দাও। অতঃপর যা বেঁচে যাবে, সেগুলি (আছাবা সূত্রে) নিকটতম পুরুষ
উত্তরাধিকারীদের দাও’ (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩০৪২)।
প্রশ্ন (৩৮/১৯৮) : ‘মরিয়ম ফুল’ সম্পর্কে সমাজে অনেক রেওয়াজ চালু আছে। অনেকে
হজ্জ করতে গিয়ে মরিয়ম ফুল কিনে নিয়ে আসে এবং এর পানি দ্বারা উপকার গ্রহণ করে থাকে।
এগুলোর সত্যতা জানতে চাই।
উত্তর : মরু অঞ্চলের ক্ষণজন্মা উদ্ভিদ মরিয়ম ফুল। মধ্যপ্রাচ্য ও
সাব-সাহারার বিস্তীর্ণ মরুময় অঞ্চলে বছরের পর বছর শুকনো গাছ মাটি আঁকড়ে থাকে।
মরুভূমির অসহনীয় গরমের মধ্যে থাকা শুকনো এই গাছ এবং নির্জীব পাথরের মধ্যে কোন
পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। কখনও বৃষ্টির পরশ পেলে জীবন ফিরে পায় এবং এর বংশ
বিস্তার ঘটে। এই গাছের ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,
পটাসিয়াম, দস্তা এবং লোহা। বিশেষত, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম একসঙ্গে পেশী
সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে। এর কোন নেতিবাচক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। প্রসবকালীন সময়
এই ফুল বিশেষ প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করতে হয়। এতে প্রসূতি মায়ের প্রসব বেদনা লাঘব হয়
এবং দ্রুত ও সহজে ডেলিভারী সম্পন্ন হয় বলে কথিত আছে (তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট)। সুতরাং ঔষধি গাছ হিসাবে চিকিৎসার
জন্য এই ফুল থেকে উপকার গ্রহণ করা যাবে।
প্রশ্ন (৩৯/১৯৯) : উভয় পরিবারের অভিভাবকগণের উপস্থিতিতে আমাদের বিবাহের
সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে গত এক বছর পূর্বে। কিন্তু ছেলের চাকুরীর ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা
থাকায় আরো দেড় বছর বিবাহের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তার পরিবারও অপেক্ষা করার ব্যাপারে
অনড়। এমতাবস্থায় আমার বড় ভাই, বোন ও দুলাভাইদের উপস্থিতিতে কিছুদিন পূর্বে গোপনে আমাদের
বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে উভয়ের পিতা-মাতা উপস্থিত ছিলেন না। তবে আমার মা এটা জানেন।
এক্ষণে এ বিবাহ শুদ্ধ হয়েছে কি?
উত্তর: উক্ত বিবাহ বিধিসম্মত হয়নি। কারণ মেয়ের অলী তথা পিতা এ বিষয়ে অবহিত
নন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অলী ব্যতীত বিবাহ হয় না’ (আবূদাঊদ,
মিশকাত হা/৩১৩০)। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, ‘দু’জন সাক্ষী এবং একজন
জ্ঞানসম্পন্ন অলী ব্যতীত বিবাহ হয় না’ (ইরওয়াউল গালীল হা/১৮৪৪)। এক্ষণে পিতার উপস্থিতিতে নতুনভাবে বিবাহ পড়ানোর
মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে হবে।
প্রশ্ন (৪০/২০০) : আমাদের মসজিদের মিম্বারটি চার স্তর বিশিষ্ট। শুনেছি রাসূলের
মিম্বার ছিল তিন স্তর বিশিষ্ট। এক্ষণে করণীয় কি?
উত্তর : এই মিম্বার ব্যবহারে বাধা নেই। যদিও রাসূল (ছাঃ)-এর মেম্বার তিন
স্তর বিশিষ্ট ছিল (মুসলিম হা/৫৪৪; ইবনু মাজাহ
হা/১৪১৪; আহমাদ হা/২৪১৯)। মু‘আবিয়া (রাঃ) মিম্বারের স্তর সংখ্যা
বৃদ্ধি করেন যাতে লোকেরা তাঁকে দেখতে পায় এবং তাঁর কথা শুনতে পায়’ (ফাৎহুল বারী ২/৩৯৯; ঊমদাতুল কারী ৬/২১৬; হাশিয়াতুস সুয়ূতী আলা সুনানিন
নাসাঈ ২/৫৯; (সামহুদী, খোলাছাতুল ওয়াফা বিআখবারি দারিল মুছতাফা ২/৫১-৫৪)।
মার্চ/২০১৯
প্রশ্ন (১/২০১) : ওয়াহশী সম্পর্কে জানতে চাই। তিনি কি ছাহাবী ছিলেন?
উত্তর : যিনি রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছেন, তাঁর প্রতি ঈমান এনেছেন এবং
ঈমানের হালতে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনিই ছাহাবী। সে অনুযায়ী ওয়াহশী বিন হারব হাবাশী
একজন ছাহাবী ছিলেন (আল-ইছাবাহ ৬/৪৭০)।
তিনি মুত্বঈম বা তু‘মা বিন ‘আদীর ক্রীতদাস ছিলেন। তিনি দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার
শর্তে ওহোদের যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ)-এর চাচা হামযা বিন আব্দুল মুত্ত্বালিবকে হত্যা
করেন। পরে মক্কা বিজয়ের দিন ইসলাম গ্রহণ করেন। আবূবকর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে তিনি
ভন্ডনবী মুসায়লামা কাযযাবকে হত্যা করেন। তিনি বলেন, মক্কায় ইসলাম প্রসার লাভ করলে
আমি তায়েফ চলে গেলাম। কিছু দিনের মধ্যে তায়েফবাসীরা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে দূত
প্রেরণের ব্যবস্থা করলে আমাকে বলা হ’ল যে, তিনি দূতদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন
না। তাই আমি তাদের সাথে রওয়ানা হ’লাম এবং রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট হাযির হ’লাম। তিনি
আমাকে দেখে বললেন, তুমি কি ওয়াহ্শী? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমিই কি
হামযাকে হত্যা করেছিলে? আমি বললাম, আপনার কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছে ব্যাপারটি তাই।
তিনি বললেন, আমার সামনে থেকে তোমার চেহারা কি সরিয়ে রাখতে পার? ওয়াহ্শী বলেন, আমি
তখন চলে আসলাম’। রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর ভন্ডনবী মুসায়লামা কায্যাব আবির্ভূত
হ’লে আমি বললাম, আমি অবশ্যই মুসায়লামার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হব এবং তাকে হত্যা
করে হামযা (রাঃ)-কে হত্যার পায়শ্চিত্ত করব। তাই আমি লোকদের সাথে রওয়ানা হ’লাম।
যুদ্ধের এক পর্যায়ে আমি দেখলাম যে, হালকা কালো রঙের উটের ন্যায় উষ্কখুষ্ক
চুলবিশিষ্ট এক ব্যক্তি একটি ভাঙ্গা প্রাচীরের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। তখন সাথে সাথে
আমি আমার বর্শা দিয়ে তার উপর আঘাত করলাম এবং তার বক্ষের উপর এমনভাবে বসিয়ে দিলাম
যে, তা দু’কাঁধের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে গেল। এরপর একজন আনছার ছাহাবী এসে তার উপর
ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং তরবারী দিয়ে তার মাথার খুলিতে প্রচন্ড আঘাত করলেন। আব্দুল্লাহ
বিন ওমর (রাঃ) বলেন, (মুসায়লামা নিহত হ’লে) ঘরের ছাদে উঠে একটি বালিকা বলছিল, হায়,
হায়! আমীরুল মুমিনীন (মূসায়লামা)-কে একজন কালো ক্রীতদাস হত্যা করল (বুখারী হা/৪০৭২; আহমাদ হা/১৬১২১)। পরে ওয়াহশী খালিদ বিন
ওয়ালিদের সাথে ইয়ারমূকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং হিমছে বসবাস করেন’ (আল-ইছাবাহ ৬/৪৭০; উসদুল গাবাহ ৫/৪০৯)। তিনি
হিমছেই মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে রাসূল (ছাঃ)-এর গোলাম
ছাওবানের পাশে দাফন করা হয় (আল-বিদায়াহ ৪/২০)।
প্রশ্ন (২/২০২) : প্রত্যক ছালাতের পরে কি সূরা নাস, ফালাক্ব ও ইখলাছ পাঠ
করতে হবে? নাকি কেবল সূরা নাস ও ফালাক্ব পড়লেই হবে?
উত্তর : সূরা ফালাক্ব ও নাস পড়াই যথেষ্ট। তবে সেই সাথে সূরা ইখলাছও
পাঠ করা যেতে পারে। সূরা ফালাক্ব ও নাসকে ‘মুআ‘উভেযাতাইন’ বলা হয়। কেননা এ দু’টি
সূরার শূরুতে ‘আ‘উযু’ (আমি পানাহ চাচ্ছি) শব্দ রয়েছে। প্রত্যেক ছালাত শেষে
অন্যান্য দো‘আর সাথে উপরোক্ত দু’টি সূরা পাঠ করা মুস্তাহাব। ছাহাবী ওক্ববা ইবনু
আমের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে প্রতি ছালাতের শেষে সূরা ফালাক্ব ও নাস
পাঠের নির্দেশ দিয়েছেন’ (তিরমিযী হা/২৯০৩ ও অন্যান্য;
মিশকাত হা/৯৬৯; ছহীহাহ হা/১৫১৪)। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিন ও ইনসানের চোখ লাগা হ’তে আশ্রয় চাইতেন। কিন্তু যখন সূরা
ফালাক্ব ও নাস নাযিল হ’ল, তখন তিনি সব বাদ দিয়ে এ দু’টিই পড়তে থাকেন’ (তিরমিযী হা/২০৫৮ ও অন্যান্য; মিশকাত হা/৪৫৬৩ ‘চিকিৎসা ও ঝাড়ফুঁক’ অধ্যায়)।
ওক্ববা (রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে,
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমি প্রত্যেক ছালাতের শেষে
‘মুআ‘উভেযাত’ (পানাহ চাওয়ার সূরা সমূহ) পাঠ করি’ (আহমাদ
হা/১৭৪৫৩; আবূদাঊদ হা/১৫২৩; মিশকাত হা/৯৬৯)। অন্য বর্ণনায় এসেছে,
তোমরা প্রত্যেক ছালাতের শেষে ‘মুআ‘উভেযাত’ পাঠ কর’ (হাকেম হা/৯২৯, সনদ ছহীহ)। এখানে বহুবচন (সূরা সমূহ)-এর
ব্যাখ্যায় ছাহেবে মির‘আত বলেন, এর দ্বারা সূরা ফালাক্ব ও নাস বুঝানো হয়েছে। কেননা
নিম্নতম বহুবচন হ’ল দুই। অথবা এর দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ সকল আয়াত, যার মধ্যে
শব্দগতভাবে অথবা মর্মগতভাবে আল্লাহর নিকট পানাহ চাওয়ার অর্থ রয়েছে। সে হিসাবে
ফালাক্ব ও নাস ছাড়াও সূরা ইখলাছ ও কাফেরূন এর মধ্যে শামিল হ’তে পারে। কেননা ঐ
দু’টি সূরায় শিরক মুক্তির বিষয়ে আল্লাহর পানাহ চাওয়ার অর্থ রয়েছে (মির‘আত হা/৯৭৬-এর ব্যাখ্যা; মিরক্বাত হা/৯৬৯-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।
প্রশ্ন (৩/২০৩) : রাসূল (ছাঃ) উম্মে হানীকে বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ার পরেও
উম্মে হানী কেন বিবাহে রাযী হননি?
উত্তর : আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাঁর চাচাত বোন উম্মে হানীকে দুই বার বিবাহের
প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন একবার নবুঅত লাভের পূর্বে জাহেলী
যুগে তার পিতা আবু তালেবকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিকটাত্মীয়দের বাইরে
আত্মীয় বানানোর জন্য রাসূলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হুবায়রা বিন আবু ওয়াহাবের
সাথে বিবাহ দেন। তবে এটি ছহীহ সনদে প্রমাণিত নয়। আর ইসলামী যুগে রাসূল (ছাঃ) তাকে
আরেকবার বিবাহের প্রস্তাব দিলে তিনি নিজের বার্ধক্য ও সন্তানদের দেখাশুনার
ব্যস্ততা দেখিয়ে বিবাহে অসম্মতি জানান। তখন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘উষ্ট্রারোহী
মহিলাদের মধ্যে কুরায়েশ বংশের মহিলারা সর্বোত্তম। তারা শিশুদের প্রতি স্নেহশীলা
এবং স্বামীর মর্যাদা রক্ষার্থে উত্তম হেফাযতকারিনী’ (বুখারী হা/৫৩৬৫; মুসলিম হা/২৫২৭; ইবনু সা‘দ, ত্বাবাকাত ৮/১২০; আল-ইছাবাহ
৮/৩১৭)।
প্রশ্ন (৪/২০৪) : মুমিন কি সৎকর্মের মাধ্যমে ক্বিয়ামতের দিন নবী-রাসূলগণের
মর্যাদায় পৌঁছতে পারবে যেমন কুরআন ও বিভিন্ন হাদীছে দেখা যায়?
উত্তর : কোন সাধারণ ব্যক্তি নবী ও রাসূলগণের সমমর্যাদা লাভ করতে
পারবে না। এমনকি সকল নবী-রাসূলও পরস্পর সমান মর্যাদার অধিকারী হবেন না। যেমন
আল্লাহ বলেন, ‘উক্ত রাসূলগণ, আমরা তাদেরকে একে অপরের উপর মর্যাদা দান করেছি। তাদের
কারু সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কারু মর্যাদা উচ্চতর করেছেন’.. (বাক্বারাহ ২/২৫৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমার জন্য তোমরা আল্লাহ
তা‘আলার কাছে অসীলা প্রার্থনা কর। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! অসীলা কি?
তিনি বললেন, জান্নাতের সবচাইতে উঁচু স্তর। শুধুমাত্র এক ব্যক্তিই তা লাভ করবে। আশা
করি আমিই হব সেই ব্যক্তি (তিরমিযী হা/৩৬১২; মিশকাত হা/৫৭৬৭;
ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬৩৬)। আহমাদের বর্ণনায় রয়েছে, অসীলা জান্নাতের একটি
স্তর। যার উপরে কোন স্তর নেই। তোমরা আমার জন্য দো‘আ করবে যাতে আমাকে সেই মর্যাদা
দেওয়া হয়’ (আহমাদ হা/১১৮০০; ছহীহাহ হা/৩৫৭১;
ছহীহুল জামে‘ হা/১৯৮৮)। এক্ষণে যে সকল আয়াত ও হাদীছে সমান মর্যাদার
কথা বলা হয়েছে তার অর্থ হ’ল তারা একই স্তরে থাকবে কিন্তু রাসূলদের মর্যাদা বেশী
হবে। তাদের পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ ও কথোপকথন হবে (ফাৎহুল
বারী ৬/৩২৮; কুরতুবী, আল-মুফহাম ৫/২৪)।
উল্লেখ্য যে, জান্নাতীদের মধ্যেও
স্তরভেদ হবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই জান্নাতের একশতটি স্তর রয়েছে। আল্লাহ
তাঁর রাস্তায় জিহাদকারীদের জন্য তা তৈরি করেছেন। প্রতি দু’স্তরের মধ্যে আসমান ও
যমীনের ব্যবধান রয়েছে। সুতরাং তোমরা যখন আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করবে, তখন
জান্নাতুল ফিরদাউস প্রার্থনা করবে। কারণ তা জান্নাতের মধ্যখানে অবস্থিত এবং
সর্বোচ্চ জান্নাত। সেখান থেকেই জান্নাতের নদীসমূহ প্রবাহিত হয়, এর ওপরই আল্লাহর
আরশ অবস্থিত (বুখারী হা/২৭৯০; মিশকাত হা/৩৭৮৭)।
প্রশ্ন (৫/২০৫) : পবিত্র অবস্থায় তালাক দিতে চাই। কিন্তু স্ত্রী দূরে থাকায়
অবস্থা জানি না। এক্ষণে করণীয় কী?
উত্তর : এমতবস্থায় করণীয় হ’ল, স্বামী পত্রে লিখবে যে, তুমি যদি পবিত্র
অবস্থায় থাক তাহ’লে তালাক, আর যদি হায়েয অবস্থায় থাক তাহ’লে যখন পবিত্র হবে তখন
তালাক, যেমনটি ইমাম শাফেঈ (রহঃ) মত ব্যক্ত করেছেন (কিতাবুল উম্ম ৫/১৯৪)। সুন্নাতী তালাকের নিয়ম হ’ল এভাবে তিন
মাসে তিন তুহরে তিন তালাক প্রদান করা (বাক্বারাহ ২/২২৯)।
প্রশ্ন (৬/২০৬) : এক্বামতের সময় হাত ছেড়ে না বেঁধে রাখতে হবে?
উত্তর : হাত খোলা অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে রাখবে। এরপর ইমাম তাকবীর দিলে
মুছল্লী তাকবীর দিয়ে বুকে হাত বাঁধবে।
প্রশ্ন
(৭/২০৭) : যিহার কি? যিহারের কাফফারা কি কুরআনে বর্ণিত ধারাবাহিকতা অবলম্বন করে
দিতে হবে? নাকি তিনটির যেকোন একটি দিলেই চলবে?
উত্তর : যিহার হ’ল স্ত্রীর কোন অঙ্গকে মা বা স্থায়ী মাহরামের পিঠ বা অন্য
কোন অঙ্গের সাথে তুলনা করা (নাসাঈ, বুলূগুল মারাম হা/১০৯১
‘যিহার’ অনুচ্ছেদ)। আর এরূপ যিহারের কাফ্ফারা হ’ল স্বামী একটি গোলাম
আযাদ করবে অথবা এক টানা দু’মাস ছিয়াম পালন করবে অথবা ৬০ জন মিসকীনকে খাওয়াবে (মুজাদালাহ ৫৮/৩-৪)। এক্ষণে কাফফারা হিসাবে দাসমুক্তির সুযোগ
না থাকায় প্রথমতঃ ধারাবাহিকভাবে দুই মাস একটানা ছিয়াম পালন করবে। এতে অক্ষম হ’লে
ষাটজন মিসকীনকে মধ্যম মানের খাবার খাওয়াবে (মুজাদালাহ
৫৮/৩-৪)। উল্লেখ্য যে, কাফফারার ছিয়াম শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী
স্পর্শ করবে না। কিন্তু যদি অধৈর্য হয়ে করেই ফেলে, তাহ’লে কাফফারা শেষ হওয়ার
পূর্বে পুনরায় স্ত্রী স্পর্শ করবে না (ইবনু মাজাহ হা/২০৬৫)।
প্রশ্ন (৮/২০৮) : রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে দু’জন পারসিক দূত আসলে তিনি তাদের
চাছা দাড়ি ও লম্বা গোফ দেখে অপসন্দ করেন। তখন তারা বলে যে, তাদের প্রভু কিসরার নির্দেশে
তারা এমনটি করেছেন। একথা শুনে রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমার প্রভু আমাকে দাড়ি লম্বা করতে
ও গোঁফ ছাটতে বলেছেন। এ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ‘হাসান’ (আলবানী, ফিক্বহুস সীরাহ ১/৩৫৯; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-জাওয়াবুছ ছহীহ
১/৩২০-২১; আল-বিদায়াহ ৪/২৭০)। তবে কেউ কেউ এটিকে ‘মুরসাল’ ছহীহ
বলেছেন (ইবনু সাদ, আত-তাবাকাতুল কুবরা ১/৩৪৭)।
প্রশ্ন (৯/২০৯) : আমি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে দ্বীন বিষয়ক আলোচনায়
অংশগ্রহণ করে থাকি। শ্রোতাদের মধ্যে পুরুষ ও নারী উভয়ই থাকে। এটা কি জায়েয হবে?
উত্তর : শায়খ বিন বায সহ কতিপয় বিদ্বানের মতে এটি জায়েয হবে। কারণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আর মুমিন পুরুষ ও নারী পরস্পরের বন্ধু (সহযোগী)। তারা সৎ
কাজের আদেশ করে ও অসৎ কাজে নিষেধ করে’ (তওবা ৯/৭১)। অতএব
পূর্ণ শারঈ পর্দা ও আদব বজায় রেখে এরূপ সেমিনার বা কনফারেন্সে মহিলাদের বক্তব্য উপস্থাপন
নাজায়েয নয়। কেননা এখানে মূল উদ্দেশ্য হ’ল নছীহত করা। মহিলা ছাহাবী ও তাবেঈদের
অনেকেই পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে দ্বীনের নছীহত করতেন এবং দ্বীন শিক্ষা দিতেন (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব)। তবে নিঃসন্দেহে উত্তম
হ’ল, নারীরা নারীদের মজলিসে বক্তব্য রাখবে ও শিক্ষাদান করবে। নারী ও পুরুষের
কর্মক্ষেত্র ভিন্ন হওয়াটাই নিয়ম (মুসলিম হা/৪৪০; আবুদাঊদ হা/ ৬৭৮;
মিশকাত হা/১০৯২)।
প্রশ্ন (১০/২১০) : কবরে লাশ নামানোর জন্য কি এমন ব্যক্তি হওয়া যরূরী যে
পূর্বরাতে স্ত্রী মিলন করেনি? যদি তাই হয় তবে এর পিছনে হেকমত কি?
উত্তর : এমন ব্যক্তি হওয়া যরূরী নয়, তবে উত্তম। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর কন্যার কবরের পার্শ্বে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে
বসেন। আমি দেখতে পেলাম, তাঁর চোখ হ’তে অশ্রু ঝরছে। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন,
তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে গত রাতে স্ত্রীর নিকটবর্তী হওনি? আবু তালহা
(রাঃ) বললেন, আমি। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি কবরে নামো। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর
নির্দেশে আবু তালহা (রাঃ) কবরে নামলেন’ (বুখারী হা/১২৮৫; মিশকাত হা/৭১৫)।
এর ব্যাখ্যায় শায়খ উছায়মীন বলেন, আমার জানা নেই যে, কোন আলেম বলেছেন, পূর্বরাতে
স্ত্রী সহবাসকারীদের জন্য কবরে নামা নিষিদ্ধ। বরং হাদীছে উত্তম বলা হয়েছে (লিক্বাউল বাবিল মাফতুহ ৭৭/২১)। এর হিকমত আল্লাহই ভালো জানেন।
তবে কেউ কেউ বলেন, স্ত্রী সহবাসকারীর মনে শয়তান রাতের অবস্থাগুলো স্মরণ করিয়ে
দিবে। ফলে এতে মানসিক পবিত্রতার ঘাটতি হ’তে পারে (ফাৎহুল
বারী ৩/১৫৯; মির‘আত হা/১৭২৯-এর ব্যাখ্যা; নায়লুল আওতার ৪/১০৬; ইবনু হাজার হায়তামী,
তোহফাতুল মুহতাজ ৩/১৬৯)।
প্রশ্ন (১১/২১১) : শামুক ও ঝিনুক দিয়ে মালা বানিয়ে গলায় পরা বা বানিয়ে রাখা
যাবে কি? কিংবা এগুলি ঘর সাজানোর উদ্দেশ্যে রাখা যাবে কি?
উত্তর : ঘরের সৌন্দর্যের জন্য এগুলো ব্যবহার করা যাবে। মহিলারা এগুলো মালা
হিসাবে পরিধান করতে পারবেন। কারণ এগুলো মৌলিকভাবে কোন হারাম বস্ত্ত নয় এবং এর
খোলসগুলো মানুষের নিত্য-ব্যবহার্য তৈজসপত্র বা উপকরণে পরিণত হয়। তবে পুরুষেরা এর
তৈরী মালা ব্যবহার করতে পারবে না। কেননা তাদের জন্য নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা
নাজায়েয (বুখারী হা/৫৮৮৫; মিশকাত হা/৪৪২৯)।
প্রশ্ন (১২/২১২) : জুম‘আর ছালাতে ইমামের তাশাহহুদে থাকাবস্থায় আমি জামা‘আতে
শরীক হই। এখন কি আমি চার রাক‘আত যোহর আদায় করব? না-কি ২ রাক‘আত জুম‘আর ছালাত আদায় করব?
উত্তর : এক্ষণে তাকে যোহরের চার রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হবে। কারণ জুম‘আর
ছালাতের ক্ষেত্রে পূর্ণ এক রাক‘আত না পেলে জুম‘আর ছালাত পাওয়া সাব্যস্ত হয় না’ (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৫৫৮; ইরওয়া হা/৬২২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে
ব্যক্তি জুম‘আর ছালাতের এক রাক‘আত পেল, সে যেন তার সাথে আরো এক রাক‘আত মিলিয়ে
পড়ে (ইবনু মাজাহ হা/১১২১; মিশকাত হা/১৪১৯; ছহীহুল
জামে‘ হা/৫৯৯১)।
প্রশ্ন (১৩/২১৩) : পুস্তক সমিতির নিয়ম মেনেই কি বই কেনা-বেচা করতে হবে?
নাকি স্বাধীনভাবে বিক্রি করা যাবে?
উত্তর : সমিতির নিয়ম-নীতি যদি কুরআন-হাদীছ বিরোধী না হয় ও ব্যবসায়ের জন্য
ক্ষতিকর না হয় তাহ’লে দুনিয়াবী শৃংখলার স্বার্থে নিয়ম মেনেই বই কেনা-বেচা করবে।
কারণ ইসলামী শরী‘আত সর্বাবস্থায় জাগতিক শান্তি-শৃংখলাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে (ক্বাছাছ ২৮/৮৩)।
প্রশ্ন (১৪/২১৪) : হায়েয অবস্থায় সহবাস করলে তার কাফফারা কি? যদি কাফফারা
আদায় করতে না পারে তাহ’লে কি করতে হবে?
উত্তর : হায়েয অবস্থায় স্ত্রী সহবাস হারাম (বাক্বারা ২/২২২)। ইচ্ছাকৃতভাবে যদি কেউ করে, তবে তাকে খালেছ
নিয়তে তওবা করতে হবে এবং কাফফারা স্বরূপ এক দীনার বা অর্ধ দীনার গরীব-মিসকীনকে দান
করতে হবে (তিরমিযী, আবুদাঊদ হা/২৬৪; ইরওয়া
হা/১৯৭; মিশকাত হা/৫৫৩)। আর এক দীনার হ’ল ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণের
সমপরিমাণ। যার বর্তমান বাযারমূল্য প্রায় ১৪/১৫ হাযার টাকা। তবে শারঈ বিধান না জেনে
অজ্ঞতাবশতঃ কিংবা ভুলক্রমে করে ফেললে তওবা করাই যথেষ্ট হবে (মুসলিম হা/১২৬; ইবনুল উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতি‘ ১/৫৭১)।
প্রশ্ন (১৫/২১৫) : ভারতের ভূপালে একটি নারী জিমনেশিয়াম হয়েছে। যেখানে নারীরা
জিম করতে পারে। কোন পুরুষ থাকে না। এক্ষণে এটা কি জায়েয হবে?
উত্তর : পর্দার সাথে নারীরা শরীর চর্চা করতে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সবল
মুমিন আল্লাহর নিকট দুর্বল মুমিন অপেক্ষা বেশী প্রিয়। আর প্রত্যেকের মধ্যে কল্যাণ
রয়েছে। তুমি ঐ জিনিসে যত্নবান হও, যাতে তোমার কল্যাণ আছে’ (মুসলিম হা/২৬৬৪; মিশকাত হা/৫২৯৮)। তিনি আরো বলেন, তোমরা
তীরন্দাযী কর ও ঘোড়দৌড় শিক্ষা কর। তবে তোমাদের ঘোড়দৌড় শেখার তুলনায় তীরন্দাযী
শিক্ষা করা আমার নিকট বেশী পসন্দনীয়। মুসলিম ব্যক্তির সকল ক্রীড়া-কেŠতুকই বৃথা।
তবে তীর নিক্ষেপ, ঘোড়ার প্রশিক্ষণ, সাঁতার শিক্ষা এবং নিজ স্ত্রীর সাথে
ক্রীড়া-কৌতুক বৃথা নয়। কারণ এগুলো উপকারী ও বিধি সম্মত (তিরমিযী হা/১৬৩৭; ছহীহাহ হা/৩১৫; ছহীহুত
তারগীব হা/১২৮২)। পৃথক ব্যবস্থাপনা থাকলেও সর্বাবস্থায় নারীকে স্বীয়
আব্রু ও সম্ভ্রমের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যেসব মহিলা স্বীয়
ঘর ব্যতীত অন্য জায়গায় কাপড় খোলে, তারা নিজেদের ও আল্লাহর মধ্যকার পর্দা
ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলে’ (আবুদাউদ হা/৪০১০; ছহীহুল জামে‘
হা/৫৬৯২; ছহীহাহ হা/৩৪৪২)।
প্রশ্ন (১৬/২১৬) : আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, ‘আমাকে নবী করীম (ছাঃ) দু’টি
বস্ত্ত দিয়েছেন। একটি প্রকাশ করেছি। অপরটি প্রকাশ করলে আমার গর্দান কাটা যাবে। তিনি
কি ইলমে তাছাউফের জ্ঞান গোপন করেছিলেন, যেমনটি অনেকে বলে থাকেন?
উত্তর : আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট থেকে
দু’টি (জ্ঞান) পাত্র সংরক্ষণ করেছি। যার একটি তো আমি প্রচার করে দিয়েছি। কিন্তু
তার দ্বিতীয়টি যদি প্রচার করতাম, তাহ’লে আমার এই কণ্ঠনালী কাটা যেত’ (বুখারী হা/১২০; মিশকাত হা/২৭১)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তাঁকে
বলা হ’ল, আপনি অধিক হাদীছ বর্ণনা করেন। তিনি বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ) থেকে যা
শুনেছি তার সবগুলো যদি বর্ণনা করতাম তাহ’লে তোমরা আমাকে পাথর মেরে হত্যা করতে; কোন
অবকাশই দিতে না (আহমাদ হা/১০৯৭২, সনদ ছহীহ)।
উপরোক্ত হাদীছে ছুফীবাদের পক্ষে কোন দলীল নেই। যেমনটি তারা বলে যে, আবু হুরায়রা
(রাঃ) যা গোপন রেখেছিলেন তা ইলমে বাতেনী। আর বাতেনী ইলম বা নূর তাদের নিকটে রয়েছে।
তাদের এ ধরনের দাবী মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বরং উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণ
বলেন, তা ছিল ফিৎনা সম্পর্কিত বিষয় বা তৎকালীন শাসকের বিরুদ্ধেছিল, যা প্রকাশ করলে
তাকে হত্যা করা হ’ত। অথবা হয়ত এমন বিষয় ছিল যা গোপন রাখলে দ্বীনের কোন ক্ষতি হবে
না বরং প্রকাশ করলে ফিৎনা বৃদ্ধি পাবে বলেই তিনি প্রকাশ করেননি। এমনকি যাদের হাত
থেকে ইসলামী নেতৃত্ব হারিয়ে যাবে বলে রাসূল (ছাঃ) সাবধান করেছিলেন তাদের নামও তিনি
জানতেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি আছ-ছাদিকুল মাছদূক (সত্যবাদী ও সত্যবাদী
হিসাবে সত্যায়িত)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমার উম্মতের ধ্বংস কুরাইশের কতিপয় বালকের হাতে
হবে। তখন মারওয়ান বললেন, এ সকল বালকের প্রতি আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হোক। আবূ
হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি যদি বলার ইচ্ছা করি যে তারা অমুক অমুক গোত্রের লোক
তাহ’লে তাদের নাম বলতে সক্ষম’ (বুখারী হা/৩৬০৫)। আমর
বিন ইয়াহইয়া বলেন, মারওয়ান যখন সিরিয়ায় ক্ষমতাসীন হ’লেন, তখন আমি আমার দাদার
সঙ্গে সেখানে গেলাম। তিনি যখন তাদের অল্প বয়ষ্ক বালকদের দেখলেন তখন তিনি আমাদের
বললেন, সম্ভবত এরা সেই দলেরই অন্তর্ভুক্ত। আমরা বললাম, এ বিষয়ে আপনিই ভাল বুঝেন (বুখারী হা/৭০৫৮)। এদের নামই আবু হুরায়রা (রাঃ) গোপন
রেখেছিলেন। কোন ইলমে বাতেনী বা ওয়াহ্দাতুল অজূদ ছিল না (রশীদ রেযা, তাফসীরুল মানার ৬/৩৯০; তাহের আল-জাযায়েরী, তাওযীহুন নাযার
১/৬৩-৬৪)। এ ব্যাপারে ইমাম কুরতুবী বলেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) যা প্রকাশ
করেননি এবং যা প্রকাশ করলে স্বীয় জীবনের জন্য ঝুঁকি মনে করছিলেন তা ছিল ফিৎনা
সংক্রান্ত বিষয় এবং মুরতাদ ও মুনাফিকদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে দলীল। সেগুলো হেদায়াত
ও বিধান সংশ্লিষ্ট ছিল না (তাফসীরে কুরতুবী ২/১৮৬)।
হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) জ্ঞানের যে পাত্র উন্মুক্ত করেননি
তার ব্যাখ্যায় ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, সে পাত্রে নিকৃষ্ট নেতাদের নাম, অবস্থা ও
সময়কাল স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল। অবশ্য আবু হুরায়রা (রাঃ) কোন কোন সময় তাদের উপনাম
উল্লেখ করেছেন। কিন্তু জীবনের ভয়ে স্পষ্ট করে নাম উল্লেখ করেননি। যেমন তিনি দো‘আয়
বলতেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ষাট হিজরী থেকে আশ্রয় চাই। বালকদের নেতৃত্ব থেকে
আশ্রয় চাই। এর দ্বারা তিনি ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়ার খেলাফতের প্রতি ইঙ্গিত করেছিলেন।
কারণ তিনি ষাট হিজরীতে খেলাফত লাভ করেন। আল্লাহ তার দো‘আ কবুল করেন। তিনি ঊনষাট
হিজরীতে মারা যান (ফাৎহুল বারী ১/২১৬)।
অতএব উক্ত হাদীছে ছূফীবাদের পক্ষে কোন দলীল নেই।
প্রশ্ন (১৭/২১৭) : মাসবূক যদি ইমামকে দ্বিতীয় রাক‘আতে পায় তাহ’লে সেই রাক‘আত
কি মাসবূকের ছালাতের প্রথম রাক‘আত গণ্য হবে, নাকি দ্বিতীয় রাক‘আত গণ্য হবে?
উত্তর : মাসবূকের উক্ত রাক‘আত প্রথম রাক‘আত হিসাবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা (ছালাতের যে অংশটুকু) পাও সেটুকু আদায় কর এবং যেটুকু বাদ পড়ে
যায় সেটুকু পূর্ণ কর’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৮৬)।
ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, মুছল্লী ইমামের সাথে ছালাতের যে অংশ পাবে সেটি তার জন্য
ছালাতের প্রথম অংশ হবে। এটি ইমাম শাফেঈরও অভিমত (আত-তামহীদ
২০/২৩৪; নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৩৫২)।
প্রশ্ন (১৮/২১৮) : আমাদের মসজিদের ইমাম এক মেয়েকে তার পিতার অনুমতি ছাড়াই
তার বোনের বাড়ীতে কিছু দিন রেখে বিয়ে করে। তার বিয়ে কি সিদ্ধ হয়েছে? না হ’লে করণীয়
কি? তার সন্তানরা কি হালাল সন্তান হবে নাকি জারজ হবে?
উত্তর : উক্ত বিবাহ সঠিক হয়নি। কারণ পিতার অসম্মতিতে মেয়ের বিবাহ বৈধ
নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন মহিলা যদি অলীর বিনা অনুমতিতে বিবাহ করে তাহ’লে তার ঐ
বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল’ (আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাউদ, ইবনে
মাজাহ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৩১৩১ ও ৩১৩০ ‘বিবাহে অলীর কাছে মহিলাদের অনুমতি
প্রার্থনা’ অনুচ্ছেদ)। নবী করীম (ছাঃ) আরো বলেন, ‘কোন মহিলা কোন
মহিলার বিয়ে দিতে পারবে না এবং কোন মহিলা নিজেকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারবে
না’ (ইবনু মাজাহ, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/৩১৩৬;
ইরওয়া হা/৮৪১)। এক্ষণে তওবা করে নতুনভাবে শারঈ পদ্ধতি মোতাবেক পিতার
সম্মতিতে বিবাহ পড়িয়ে নিতে হবে। তবে তার সন্তান জারজ হবে না এবং সেই সন্তান পিতার
সম্পত্তির অংশীদার হবে। কেননা এই বিবাহ সঠিক পদ্ধতিতে না হ’লেও ‘শিবহে নিকাহ’ বা
বিবাহের অনুরূপ ছিল (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া
৩২/১০৩; ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ১১/১৯৬)।
প্রশ্ন (১৯/২১৯) : ক্বিয়ামতের দিন বিচার হওয়ার পর মানুষকে জান্নাত বা জাহান্নামে
দেওয়ার পর পৃথিবীর কি হবে? আল্লাহ কি আবার মানুষ ও নবী-রাসূল পৃথিবীতে পাঠাবেন নাকি
ক্বিয়ামতের পর পৃথিবী মানবশূন্য থেকে যাবে?
উত্তর : কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিবরণ অনুযায়ী আসমান ও যমীন সবকিছুই ধ্বংস
হয়ে যাবে। কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকবে না (হাক্কাহ ১৩-১৮; মা‘আরিজ ৮-৯;
তাকভীর ১-১৪)। সুতরাং সবকিছুই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। অতঃপর আল্লাহ আসমান ও
যমীনকে ভিন্নরূপে সৃষ্টি করবেন (ইবরাহীম ৪৮)। কিন্তু
পরবর্তীতে আল্লাহ পুনরায় অন্য কোন জাতিকে সৃষ্টি করবেন কি-না এমন কোন ইঙ্গিত কোথাও
পাওয়া যায় না। সর্বোপরি এগুলো গায়েবের বিষয়, যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। সুতরাং
এ বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা অনর্থক।
প্রশ্ন (২০/২২০) : কবর খনন করার ফযীলত কি?
উত্তর : কবর খননকারী অশেষ ছওয়াবের অধিকারী হবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নেকীর
কাজে তোমরা পরস্পরে সহযোগিতা কর...’ (মায়েদাহ ৫/২)। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম মাইয়েতকে গোসল করাল। অতঃপর তার গোপনীয়তাসমূহ
গোপন রাখল, আল্লাহ তাকে চল্লিশ বার ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতের জন্য কবর খনন
করল, অতঃপর দাফন শেষে তা ঢেকে দিল, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পুরস্কার দিবেন
জান্নাতের একটি বাড়ীর সমপরিমাণ, যেখানে আল্লাহ তাকে রাখবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে
কাফন পরাবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের মিহি ও মোটা রেশমের পোষাক
পরাবেন’ (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৯২৬৫; হাকেম
হা/১৩০৭; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪৯২, সনদ ছহীহ; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২২৬ পৃ.।
প্রশ্ন (২১/২২১) : ছগীরা গুনাহ কাকে বলে? কয়েকটি ছগীরা গুনাহের উদাহরণ দিলে
উপকৃত হব।
উত্তর : ছগীরাহ গুনাহ অর্থ ছোট গুনাহ। যে সকল গুনাহের ব্যাপারে আল্লাহ এবং
তাঁর রাসূল (ছাঃ) সতর্ক করেছেন কিন্তু কোন শাস্তির কথা বলেননি। যা নেক আমল করলেই
ক্ষমা হয়ে যায় তওবার প্রয়োজন হয় না। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘পাঁচ
ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম‘আ হ’তে আরেক জুম‘আ, এক রামাযান হ’তে আরেক রামাযান এর
মধ্যবর্তী সকল গোনাহের জন্য কাফফারা হবে যদি কবীরা গোনাহ সমূহ থেকে বিরত থাকা
যায়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৪)। আল্লাহ
বলেন, যারা বড় বড় পাপ ও অশ্লীল কর্ম সমূহ হ’তে বেঁচে থাকে ছোটখাট পাপ ব্যতীত (সে
সকল তওবাকারীর জন্য) তোমার প্রতিপালক প্রশস্ত ক্ষমার অধিকারী’ (নাজম ৫৩/৩২)।
ছগীরা গুনাহের সংজ্ঞায় ওলামায়ে কেরাম
বিভিন্ন মতামত পেশ করেছেন। যেমন ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, প্রত্যেক যে সকল পাপের
জন্য জাহান্নামের শাস্তি, আল্লাহর গযব, লা‘নত প্রভৃতির কথা উল্লেখিত হয়েছে, তা
কবীরা গুনাহ। এমন গুনাহের সংখ্যা ৭০টির মত (তাফসীর কুরতুবী ৫/১৫৯)।
ছগীরা গুনাহের উদাহরণ যেমন- বেগানা নারীর প্রতি অনৈতিক দৃষ্টি নিক্ষেপ, কাউকে গালি
প্রদান, হিংসা করা, প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া ইত্যাদি।
তবে ছগীরা গুনাহ বার বার করলে তা কবীরা
গুনাহে পরিণত হয়। যেমন হযরত ওমর ও ইবনু আববাস প্রমুখ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, لاَ صَغِيْرَةَ فِي الْاِصْرَارِ وَلاَ كَبِيْرَةَ فِي اْلِاسْتِغْفَارِ ‘বারবার ছগীরা গোনাহ করলে সেটি আর ছগীরা থাকে না এবং ক্ষমা
প্রার্থনা ও তওবা করলে আর কবীরা গুনাহ থাকে না’ (নববী,
শরহ মুসলিম ২/৮৭)। যেমন পরনারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়া ছগীরা গুনাহ।
কিন্তু কেউ কেউ বার বার তাকালে তা কবীরা গুনাহ হয়ে যাবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/২৯৩)। সেজন্য রাসূল (ছাঃ)
ছোট গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে তাকীদ করেছেন। তিনি বলেন, হে আয়েশা! ক্ষুদ্র গুনাহ
থেকেও সাবধান হও। কারণ সেগুলোর জন্যও আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে’ (ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৩; মিশকাত হা/৫৩৫৬; ছহীহাহ হা/৫১৩)।
প্রশ্ন (২২/২২২) : ডান হাতে ভাতের এটো থাকাবস্থায় বাম হাত দিয়ে পানি পান
করা যাবে কি?
উত্তর : এমতবস্থায় বাম হাত দিয়ে নয়, বরং ডান হাতের সহযোগিতা নিয়ে দুই হাতে
পানি পান করবে। রাসূল (ছাঃ) কোন কোন সময় দুই হাতের সহায়তায় পানি পান করেছেন (বুখারী হা/৫২৯০; হাকেম হা/৪২৯১; তিরমিযী হা/২৪৭৭; নববী, আল-মাজমূ‘ ১/৩১৬)।
প্রশ্ন (২৩/২২৩) : কোন অক্ষম সুস্থ মানুষ কি হিজড়াকে বিবাহ করতে পারবে?
উত্তর : কোন সুস্থ মানুষের জন্য কোন হিজড়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
হওয়া বৈধ হবে না। এমনকি যৌন মিলনে অক্ষম পুরুষের জন্য কোন নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে
আবদ্ধ হওয়াও বৈধ নয় (বুখারী হা/১৯০৫; মুসলিম হা/১৪০০;
মিশকাত হা/৩০৮০)। উল্লেখ্য যে, হিজড়া দুই প্রকার। (১) অস্পষ্ট আকৃতি
বিশিষ্ট- যার নারী বা পুরুষ হওয়ার জন্য যথেষ্ট আলামত নেই। তার জন্য কোন অবস্থায়
বিবাহ বৈধ নয়। (২) স্পষ্ট আকৃতি বিশিষ্ট- যার নারী বা পুরুষ হওয়ার পক্ষে আলামত
রয়েছে। যদি হিজড়ার মধ্যে পুরুষের আলামত বেশী থাকে এবং যৌন মিলনে সক্ষম হয়, তাহলে
সে কোন নারীকে বিবাহ করতে পারবে। আর যদি তার মধ্যে নারীর আলামত বেশী থাকে এবং
স্বামী সম্ভোগের উপযুক্ত হয়, তাহলে সে কোন পুরুষের সাথে বিবাহ করতে পারবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/৬১৯)। উল্লেখ্য যে, কোন অক্ষম বা
বৃদ্ধ পুরুষ যদি কোন নারীকে এমনকি স্পষ্ট আকৃতি বিশিষ্ট হিজড়া নারীকে বিবাহ করতে
চায় এবং উক্ত নারী তার অক্ষমতা জানা সত্ত্বেও বিবাহে রাযী হয় তাহলে তাদের মধ্যে
বিবাহ বৈধ (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘
১২/২১১; ইবনু যুইয়ান, মিনারুস সাবীল ২/১৩৪; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ১৬/৩১)।
প্রশ্ন (২৪/২২৪) : ইতিহাসে পাওয়া যায় যে, ওমর (রাঃ) শিফা নাম্নী জনৈকা মহিলা
ছাহাবীকে বাযারের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য দায়িত্বশীল নিয়োগ করেছিলেন। এই ঘটনা কি
সত্য?
উত্তর : উক্ত ঘটনা জীবনীকারগণ বর্ণনা করেছেন (হাফেয ইবনু হাজার, আল-ইছাবাহ ৮/২০২; ইবনু আব্দিল বার্র, আল-ইস্তী‘আব
৪/১৮৬৯)। কিন্তু কেউ সনদ উল্লেখ করেননি। ইবনুল আরাবীসহ অনেক বিদ্বান
বর্ণনাটিকে বাতিল বলেছেন (ইবনুল ‘আরাবী, আহকামুল কুরআন
৩/৪৮২; তাফসীরে কুরতুবী ১৩/১৮৩)। তাছাড়া উক্ত বর্ণনায় বলা হয়েছে,وربما ولّاها شيئا من أمر السوق ‘হয়তবা বাযারের কিছু কর্মে তাকে দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন’। এটি
প্রমাণ করে যে, তাকে কোন স্থায়ী দায়িত্ব বা প্রশাসনের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। হ’তে
পারে বাযারের পাশে বাড়ি হওয়ার কারণে সাধারণ কোন দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। উল্লেখ্য
যে, শিফা বিনতে আব্দুল্লাহ প্রসিদ্ধ মহিলা ছাহাবী ছিলেন। তিনি হিজরতের পূর্বে
ইসলাম গ্রহণ করেন এবং প্রথম হিজরতকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি ইসলামে নারীদের
প্রথম শিক্ষিকা ছিলেন এবং নারীদের তারাবীহর ছালাতে ইমামতি করতেন বলে বর্ণিত হয়েছে (আল-ইছাবাহ ৮/২০২; তারীখে দিমাশক্ব ২২/২১৬; ত্বাবাক্বাত্ব ১/৩৭৯;
আল-ইস্তী‘আব ৪/১৮৬৯; তাহযীবুল কামাল ৩৫/২০৭)। তিনি রাসূল (ছাঃ) থেকে
বেশ কিছু হাদীছও বর্ণনা করেছেন। যেমন একটি হাদীছে রয়েছে তিনি বলেন, আমি হাফছাহ
(রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম, এমন সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেখানে প্রবেশ করে বললেন,
তুমি যেভাবে হাফছাকে হস্তলিপি শিখিয়েছ, সেভাবে তাকে ‘নামলাহ’ (ফুঁসকুড়ি) রোগের
মন্ত্র শিখাও না কেন? (আবুদাউদ হা/৩৮৮৭; মিশকাত হা/৪৫৬১;
ছহীহুল জামে‘ হা/২৬৫০)।
প্রশ্ন (২৫/২২৫) : আমার বিবাহের কিছুদিন পর থেকেই স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য
লেগে থাকে। দেড় বছরে বহুবার তাকে তালাকের নিয়তে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছি। কিন্তু
আমি জানতাম না যে, লিখিত তালাক ছাড়া মুখে তালাক হয়ে যায়। এখন সে গর্ভবতী। এখন আমার
করণীয় কি?
উত্তর : এক্ষেত্রে অজ্ঞতা কোন ওযর হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং যেহেতু
আপনি সজ্ঞানে অসংখ্যবার ও বিভিন্ন মাসে পবিত্র ও অপবিত্র অবস্থায় তালাক দিয়েছেন
সেহেতু ইতিমধ্যে তিন তালাক তথা তালাকে বায়েন হয়ে গেছে। এক্ষণে উক্ত মহিলা তার সন্তান
প্রসব করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এরপর সে হালাল হয়ে যাবে এবং অন্য কাউকে বিবাহ
করতে পারবে। অতঃপর দ্বিতীয় স্বামী কর্তৃক কোন কারণে তালাকপ্রাপ্তা হ’লে প্রথম
স্বামীর সাথে নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারবে (শায়খ উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ২৩/২০৬; আশ-শারহুল মুমতে‘ ১০/৪৬১)।
প্রশ্ন (২৬/২২৬) : স্বামী স্ত্রীকে মোহরানা হিসাবে ৫ বিঘা জমি দান করে।
কিন্তু পরবর্তীতে স্ত্রী নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যায়। এখন স্ত্রীর রেখে যাওয়া সেই ৫
বিঘা জমি থেকে স্বামী মীরাছ হিসাবে কিছু পাবে কি? পেলে কতটুকু পাবে?
উত্তর : স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তিতে অংশ পাবে। তাদের সন্তান না থাকায় স্বামী
স্ত্রীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। আল্লাহ বলেন, আর তোমাদের স্ত্রীদের
পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে তোমরা অর্ধেক পাবে, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি থাকে,
তবে তোমরা সিকি পাবে, তাদের অছিয়ত পূরণ ও ঋণ পরিশোধের পর’ (নিসা ৪/১২)।
প্রশ্ন (২৭/২২৭) : আমি গর্ভাবস্থায় স্ত্রীকে এক তালাক দিয়েছি। এরপর সে পিতার
বাড়িতে চলে যায়। তিন মাস পরে বাচ্চা প্রসবের পূর্বে মিটমাট হয়ে যায়। এক্ষণে নতুন বিবাহের
প্রয়োজন রয়েছে কি?
উত্তর : এক্ষেত্রে নতুন বিবাহের প্রয়োজন নেই। কারণ গর্ভবতী নারীর ইদ্দত হ’ল
সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত’ (তালাক্ব ৬৫/৪)।
প্রশ্ন (২৮/২২৮) : আমি সরকারী একটি পদে চাকুরী করি। এক্ষণে পদোন্নতির জন্য
আবেদন করা যাবে কি? কারণ হাদীছে পদ চেয়ে নিতে নিষেধ করা হয়েছে।
উত্তর : পদোন্নতির জন্য আবেদন করা যাবে। কারণ পদবী ও নেতৃত্ব এক নয়। বরং
এটি একটি পদমর্যাদা, যা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ব্যক্তির যোগ্যতা যাচাই সাপেক্ষে
দিয়ে থাকে। তাছাড়া এ ধরনের দায়িত্বের জন্য কেউ নিজেকে অধিক যোগ্য ও উপযুক্ত মনে
করলে আবেদন করতে পারে। যেমন ইউসুফ (আঃ) বলেছিলেন, আপনি আমাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের
দায়িত্বে নিয়োজিত করুন। নিশ্চয়ই আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও (এ বিষয়ে) বিজ্ঞ’ (ইউসুফ ১২/৫৫)। অত্র আয়াতে প্রয়োজনবোধে দায়িত্ব চেয়ে নেয়ার
বৈধতা প্রমাণিত হয়। অথচ হাদীছে এটি নিষেধ করা হয়েছে। এর জবাবে ইমাম কুরতুবী বলেন,
(১) ইউসুফ (আঃ) জানতেন যে, সততার সাথে ধন-ভান্ডার সংরক্ষণ ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে
গরীবদের হক তাদের নিকট পৌঁছে দেবার মত কেউ বাদশাহর সাথে নেই (২) ইউসুফ এখানে নিজের
উন্নত মর্যাদার দোহাই দেননি। বরং নিজেকে ‘বিশ্বস্ত রক্ষক ও এ বিষয়ে বিজ্ঞ’ বলেছেন।
যা ছিল বাস্তব (৩) তিনি নিজের পরিচয় এমন ব্যক্তির কাছে তুলে ধরেছেন, যিনি তাঁর
সম্পর্কে জানতেন না। অতএব এটি আত্মপ্রশংসা নয়, যা নিষিদ্ধ (৪) তিনি এ দায়িত্ব
গ্রহণকে রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে অপরিহার্য গণ্য করেছিলেন। কেননা তিনি ব্যতীত উক্ত
বিষয়ে বিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত তখন কেউ ছিল না। এ কারণটিই সবচেয়ে স্পষ্ট’। মাওয়ার্দী
বলেন, সাধারণভাবে দায়িত্ব চেয়ে নেওয়ার বিষয়টি এখানে নয়, বরং এটি ছিল একটি বিশেষ
অবস্থা, যেখানে জ্ঞান ও যোগ্যতার বিবেচনায় দায়িত্ব চেয়ে নেওয়া যায়। যে বিষয়ে আয়াতে
বর্ণিত হয়েছে (কুরতুবী; দ্রঃ নবীদের কাহিনী
১/২০৭)।
প্রশ্ন (২৯/২২৯) : ইসমে আ‘যম বলতে কি বুঝায়? বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর : ইসমে আ‘যম হ’ল আল্লাহর মহান নাম। ইসমে আ‘যমকে কেন্দ্র করে ১৪টি মত
রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ কথা হ’ল ইসমে আযম হ’ল ‘আল্লাহ’ ও তাঁর সকল গুণবাচক নাম। আর
এগুলোর মধ্যে যে নামগুলোতে তাওহীদের ঘোষণা রয়েছে সেগুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন
আল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম, যুল জালালে ওয়াল ইকরাম, আল-আহাদ, আছ-ছামাদ ইত্যাদি। যেমন
হাদীছে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি ছালাত শেষে নিম্নোক্ত দো‘আ পাঠ করে; ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা বিআন্নাকা আনতাল্লা-হুল আহাদুছ ছামাদুল্লাযী
লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইয়াকুল লাহূ কুফুওয়ান আহাদ’(হে
আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে প্রার্থনা করছি। কেননা তুমি আল্লাহ। তুমি এক ও
অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেননি ও যিনি কারু থেকে জন্মিত নন এবং যাঁর সমতুল্য
কেউ নেই)। ঐ ব্যক্তিকে এটা পড়তে শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তি
আল্লাহর নিকটে তাঁর ‘ইসমে আযম’ (মহান নাম) সহ দো‘আ করেছে। যে ব্যক্তি উক্ত নাম
সহকারে প্রার্থনা করবে, তাকে তা দেওয়া হবে। আর যখন এর মাধ্যমে দো‘আ করা হবে, তা
কবুল করা হবে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৮৫৭, আবুদাঊদ
হা/১৪৯৩; মিশকাত হা/২২৮৯; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৪০)। অন্য হাদীছে এসেছে
রাসূল (ছাঃ) বলেন, কুরআনে তিনটি সূরায় ইসমে আ‘যম রয়েছে, সূরা বাক্বারাহ ২৫৫, আলে
ইমরান ২ ও ত্বোয়াহা ১১১ আয়াতে’ (হাকেম হা/১৮৬৭; ছহীহাহ হা/৭৪৬)।
অর্থাৎ সূরাগুলোর আল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম অংশ। অন্য হাদীছে এসেছে, আনাস (রাঃ) বলেন,
একদিন আমি নবী (ছাঃ)-এর সাথে মসজিদে নববীতে বসে ছিলাম। তখন জনৈক ব্যক্তি ছালাত
আদায় করছিল এবং ছালাতের পর বলছিল, ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বি
আন্না লাকাল হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল হান্নানুল মান্নানু বাদী‘উস সামাওয়াতি ওয়াল
আরযি, ইয়া যাল-জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু ‘হে
আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। কারণ তোমারই জন্য সকল প্রশংসা। তুমি ছাড়া
কোন মাবূদ নেই। তুমিই বড় দয়ালু ও বড় দাতা। তুমিই আসমান ও যমীনের স্রষ্টা। হে
মর্যাদা ও সম্মান দানের মালিক! হে চিরঞ্জীব, হে সবকিছুর ধারক! তখন নবী (ছাঃ)
বললেন, যে আল্লাহ্কে ইসমে আ‘যম-এর সাথে ডাকে, তিনি তাতে সাড়া দেন এবং যখন তাঁর
কাছে প্রার্থনা করা হয়, তখন তিনি তা দান করেন’ (আবুদাঊদ
হা/১৪৯৫; মিশকাত হা/২২৯০; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৪১)।
প্রশ্ন (৩০/২৩০) : ব্রাক ব্যাংকের অধীনে পরিচালিত মেডিকেল কলেজের মেডিকেল
টেকনোলজিস্ট হিসাবে চাকুরী করা যাবে কি?
উত্তর : প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি সূদী কারবারের সাথে জড়িত না থাকায় সেখানে
চাকুরী করতে বাধা নেই। তবে সম্ভব হলে ভিন্ন কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী গ্রহণই উত্তম।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, সন্দিগ্ধ বিষয় পরিহার করে নিঃসন্দেহ বিষয়ের দিকে ধাবিত হও।
কেননা সত্যে রয়েছে প্রশান্তি এবং মিথ্যায় রয়েছে সন্দেহ’ (আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/২৭৭৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৭৭)।
প্রশ্ন (৩১/২৩১) : শুনেছি হযরত আবুবকর (রাঃ) পোতার সম্পত্তিতে দাদা মীরাছ
পাবেন মর্মে মতপ্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে আরেকজন ছাহাবী পাবেন না বলেছেন। এক্ষণে এর মধ্যে
কোন মতটি বিশুদ্ধ?
উত্তর : এ বিষয়ে বিশুদ্ধ মত হ’ল, সহোদর ভাই জীবিত থাকা অবস্থায় দাদা পোতার
সম্পত্তিতে মীরাছ পাবেন এবং এমতাবস্থায় ভাইয়েরা বঞ্চিত হবে (বুখারী ২২/২২১; আত-তাহজীল ফী তাখরীজে মা লাম ইউখাররাজ্ ফী ইরওয়াউল গালীল
১/২০৭)। এই পক্ষেই মত দিয়েছেন আবুবকর, আবু মূসা ও ইবনু আববাস সহ
চৌদ্দজন ছাহাবী (রাঃ)। তাছাড়া আবূ হানীফা, আহমাদ ইবনু হাম্বল, ইবনু তায়মিয়াহ,
ইবনুল ক্বাইয়িম, বিন বায, উছায়মীন ও ছালেহ ফাওযান প্রমুখ। দাদা পিতার মতই কখনো
ওয়ারিছ হিসাবে, কখনো আছাবা হিসাবে, আবার কখনো ওয়ারিছ ও আছাবা উভয় দিক থেকে পোতার
সম্পত্তিতে ওয়ারিছ হবেন (উছায়মীন, তাসহীলুল ফারায়েয ৪০ পৃঃ;
ছালেহ ফাওযান, আত-তাহক্বীক্বাতুল মারযিয়াহ ফী মাবাহিছিল মারযিয়াহ ১৩৫-১৪০ পৃঃ)।
প্রশ্ন (৩২/২৩২) : কবীরা গুনাহগার ব্যক্তি কি বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে
পারে?
উত্তর: কবীরা গুনাহগার বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে পারবে না। তবে খালেছ
তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করতেও পারেন, নাও করতে পারেন। আল্লাহ বলেন, যারা আল্লাহর
সঙ্গে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করে না এবং যারা আল্লাহ যাকে হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন,
ন্যায়সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং যারা ব্যভিচার করে না। যারা এগুলি
করবে তারা শাস্তি ভোগ করবে। ক্বিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তারা
সেখানে লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল থাকবে। তবে তারা ব্যতীত, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও
সৎকর্ম সম্পাদন করে। আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন।
বস্ত্ততঃ আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’ (ফুরক্বান
২৫/৬৮-৭০)। আর কেউ তওবা না করলেও যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, ক্ষমা করতে
পারেন। যেমন তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে
অন্যকে শরীক করে। এতদ্ব্যতীত তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে থাকেন।
প্রশ্ন (৩৩/২৩৩) : পুরুষের সাথে নারীর সাদৃশ্য পোষণ করা ক্বিয়ামতের অন্যতম
আলামত কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি। আবু নাঈম ইস্ফাহানীর
‘হিলইয়াতুল আউলিয়া ওয়া ত্বাবাক্বাতু আছফিয়া’ (৩/৩৫৮) নামক গ্রন্থে উক্ত মর্মে একটি
হাদীছ রয়েছে যা নিতান্তই যঈফ (ইবনু হাজার, আত-তালখীছুল হাবীর
২/৩৪১)। তবে নিঃসন্দেহে উক্ত কর্মটি নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা পুরুষের সাথে মহিলার এবং মহিলার সাথে পুরুষের সাদৃশ্য
অবলম্বনকারীকে লা‘নত করেছেন’ (বুখারী, মিশকাত হা/৪৪২৯)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী করীম (ছাঃ) পুরুষ হিজড়াদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী
মহিলাদের উপর লা‘নত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ওদেরকে ঘর থেকে বের করে দাও’। ইবনু
আববাস (রাঃ) বলেছেন, নবী (ছাঃ) অমুককে বের করেছেন এবং ওমর (রাঃ) অমুককে বের করে
দিয়েছেন’ (বুখারী হা/৫৮৮৬; মিশকাত হা/৪৪২৮)।
প্রশ্ন (৩৪/২৩৪) : আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) কি ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর
নির্দেশে আলেকজান্দ্রিয়া বিজয়ের সময় সেখানকার বিশাল লাইব্রেরী পুড়িয়ে দিয়েছিলেন?
উত্তর : উক্ত মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি। আবু নাঈম ইস্ফাহানীর
‘হিলইয়াতুল আউলিয়া ওয়া ত্বাবাক্বাতু আছফিয়া’ (৩/৩৫৮) নামক গ্রন্থে উক্ত মর্মে একটি
হাদীছ রয়েছে যা নিতান্তই যঈফ (ইবনু হাজার, আত-তালখীছুল হাবীর
২/৩৪১)। তবে নিঃসন্দেহে উক্ত কর্মটি নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা পুরুষের সাথে মহিলার এবং মহিলার সাথে পুরুষের সাদৃশ্য
অবলম্বনকারীকে লা‘নত করেছেন’ (বুখারী, মিশকাত হা/৪৪২৯)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী করীম (ছাঃ) পুরুষ হিজড়াদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী
মহিলাদের উপর লা‘নত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ওদেরকে ঘর থেকে বের করে দাও’। ইবনু
আববাস (রাঃ) বলেছেন, নবী (ছাঃ) অমুককে বের করেছেন এবং ওমর (রাঃ) অমুককে বের করে
দিয়েছেন’ (বুখারী হা/৫৮৮৬; মিশকাত হা/৪৪২৮)।
প্রশ্ন (৩৫/২৩৫) : হজ্জ পালনকারীরা বাড়ি ফিরে এসে ৪০ দিন নিজ বাড়িতেই অবস্থান
করবে মর্মে কোন নির্দেশনা আছে কি?
উত্তর : হজ্জ থেকে ফিরে এসে হাজী ছাহেব যাবতীয় বৈধ কাজ করতে পারবেন। সফর
করাতেও কোন বাধা নেই। তবে সালাফে ছালেহীনের মতে হজ্জ কবুল হ’লে ব্যক্তি পূর্বের
তুলনায় বেশী নেক আমল করবে (নববী, শরহ মুসলিম ২/৭৫; মির‘আতুল
মাফাতীহ ৮/৩০০)।
প্রশ্ন (৩৬/২৩৬) : যদি কোন জুম‘আ মসজিদে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাতের
আযান ও জামা‘আত না হয়, তাহ’লে সেই মসজিদে জুম‘আর ছালাত আদায় করা বৈধ হবে কি? -শাহীনুর রহমান, মানিকনগর,
ঢাকা।
উত্তর : এরূপ পরিত্যক্ত মসজিদে জুম‘আর ছালাত আদায় করা জায়েয। কারণ জুম‘আর
ছালাতের জন্য নির্দিষ্ট মসজিদ হওয়াই শর্ত নয়। তবে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ থাকলে সেখানে
ছালাত আদায় করাই উত্তম’ (ইরাকী, তারহুত তাছরীব ৩/১৯০;
আল-ইনছাফ ২/৩৭৮; শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব)।
প্রশ্ন (৩৭/২৩৭) : বিবাহের জন্য একাধিক মেয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া জায়েয
হবে কি? নাকি সরাসরি দেখার ক্ষেত্রে একজনের বেশী দেখা যাবে না?
উত্তর : প্রয়োজন সাপেক্ষে বিয়ের জন্য একাধিক মেয়ে দেখায় কোন বাধা নেই। নিয়ম
হ’ল, বিবাহের উদ্দেশ্যে প্রথমে মেয়েকে না জানিয়ে দেখে নিবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন
তোমাদের কেউ কোন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দিবে তখন তার প্রতি দৃষ্টিদানে কোন দোষ
নেই যদি কেবল প্রস্তাব দেওয়ার উদ্দেশ্যে দেখা হয়। এমনকি তার অজান্তে হ’লেও’ (আহমাদ হা/২৩৬০৩; ছহীহাহ হা/৯৭)। হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ)
বলেন, জমহূর বিদ্বানগণ বলেন, বিবাহের উদ্দেশ্যে মেয়ের অনুমতি ব্যতীত গোপনে থেকে
তাকে দেখা জায়েয (ফাৎহুল বারী ৯/১৫৭)।
মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ ও জাবের বিন আব্দুল্লাহর মত ছাহাবীগণ বিবাহের উদ্দেশ্যে
আড়াল থেকে মেয়ে দেখেছেন (আবুদাউদ হা/২০৮২; হাকেম হা/২৬৯৬;
ছহীহাহাহ হা/৯৯-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। এরপর পসন্দ হলে মাহরামের
উপস্থিতিতে ঘরে বসে দেখবে। চূড়ান্তভাবে পসন্দ না হলে এরপরেও এড়িয়ে যেতে পারে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন তোমাদের কেউ কোন পাত্রীকে প্রস্তাব দিবে, তখন সম্ভব হ’লে সে
যেন পাত্রীকে দেখে। যা বিবাহের জন্য সহায়ক হবে (আবুদাউদ হা/২০৮২;
মিশকাত হা/৩১০৬; ছহীহাহ হা/৯৯)। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, পাত্রী
দর্শনে পরস্পরে মহববত সৃষ্টি হয়’ (ইবনু মাজাহ হা/১৮৬৫; মিশকাত
হা/৩১০৭; ছহীহাহ হা/৯৬)। আবু
হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলল, আমি আনছারদের এক
মেয়েকে বিবাহ করতে ইচ্ছুক। তিনি বললেন, তুমি তাকে প্রথমে দেখে নাও। কারণ আনছার
মেয়েদের চোখে দোষ থাকে (মুসলিম হা/১৪২৪, মিশকাত হা/৩০৯৮
‘বিবাহ’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন (৩৮/২৩৮) : এক মা তার ২ বছরের দুধের শিশুর খাদ্যের অবশিষ্টাংশ নিজে
না খেয়ে অন্য কাউকে খেতে দেয়। জিজ্ঞেস করা হ’লে সে বলে যে শিশু দুধ না ছাড়া পর্যন্ত
নাকি তার খাদ্যের অবশিষ্টাংশ মা খেতে পারবে না এবং এ ব্যাপারে নিষেধ আছে। এ কথা কি
সঠিক?
উত্তর : এটি কুসংস্কার মাত্র। এ ব্যাপারে শরী‘আতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই
প্রশ্ন (৩৯/২৩৯) : আদম (আঃ) পৃথিবীতে কত ধাপে আগমন করেছিলেন?
উত্তর : সূরা বাক্বারার ৩৬-৩৯ আয়াতের তাফসীরে মুফাসি্সরগণ দু’টি মত
দিয়েছেন। (১) প্রথম নির্দেশের মাধ্যমে আদম (আঃ)-কে জান্নাত থেকে আসমানে নামানো হয়।
এরপরের নির্দেশে আসমান থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়। (২) প্রথম নির্দেশে পৃথিবীতে
পাঠানো হয়। অতঃপর দ্বিতীয়বার নির্দেশের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বিষয়টি আরো
জোরালোভাবে তাকীদ করেছেন’ (তাফসীরুল বাসীত্ব ২/৪১০, অত্র
আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য; ইবনুল ক্বাইয়িম, হাভিল আরওয়াহ ২৮ পৃ:)।
দ্বিতীয় মতটিকেই হাফেয ইবনু কাছীর প্রাধান্য দিয়েছেন (আল-বিদায়াহ ১/১৮৫-১৮৬)।
প্রশ্ন (৪০/২৪০) : হারাম এলাকায় প্রাণী হত্যার বিধান কি? মশা বা অনুরূপ
প্রাণী মারলে এর হুকুম কি হবে?
উত্তর : ক্ষতিকর প্রাণী হ’লে হারাম এলাকাতেও মারা জায়েয। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
পাঁচ প্রকার দুষ্ট জন্তুকে হারাম এবং হারামের বাইরে হত্যা করা যায়। আর তা হ’ল-
সাপ, আব্কা (যার বুক ও পিঠ সাদা বর্ণের), কাক, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর এবং চিল’ (মুসলিম হা/১১৯৮; মিশকাত হা/২৬৯৯)। অনুরূপভাবে মশাও একটি
ক্ষতিকর জীব, যাকে হারামের মধ্যেও হত্যা করা যায়’ (নববী, শরহ মুসলিম ৮/১১৪, অত্র হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।
(সমাপ্ত)
No comments:
Post a Comment