Friday, August 9, 2019

দৈনন্দিন সহজ কিছু জান্নাতি আমল

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

দৈনন্দিন সহজ কিছু জান্নাতি আমল


আমি ইতিপূর্বে “নবি (সাঃ) এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো”? এর প্রথম ও দ্বিতীয অংশে ১৫০টি জাহান্নামে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করেছি এবং  “জাহান্নামের বর্ণনা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়” নামক গ্রন্থে কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় বলে দিয়েছি। সহিহ হাদিস থেকে জানা যায় যে, ৯৯% মুসলমান জাহান্নামে যাবে। এর মধ্যে আমি আপনিও থাকতে পারি। রাসুল সাঃ যেহেতু জান্নাতে যাওয়ার বিভিন্ন আমল বলে দিয়েছেন সেহেতু আমরা নিরাশ না হয়ে জান্নাতে যাওয়ার আমলগুলো পালন করতে থাকি।

জান্নাতে যাওয়ার আমলসমূহ

 ১ নং আমলঃ- প্রত্যেক ওযুর পর কালেমা শাহাদত পাঠ করুণঃ

"আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয় আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু"

এতে জান্নাতের ৮টি দরজার যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।

মূল হাদিসঃ

মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মাইমূন (রহঃ)....উকবাহ ইবনু আমির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ওপর উট চড়ানোর দায়িত্ব ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকেদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তার এ কথা শুনতে পেলাম, "যে মুসলিম সুন্দরভাবে ওযু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ রেখে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। উকবাহ বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলামঃ বাহ! হাদীসটি কত চমৎকার! তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন, আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সে দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি ’উমার। তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে দেখেছি, এ মাত্র এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগে বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করে এ দু’আ পড়বে- "আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয় আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু"। তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

২ নং আমলঃ- প্রত্যেক ফরজ সলাত শেষে আয়াতুল কুরসি (সূরা বাকারা- আয়াত ২৫৫) পাঠ করুণঃ

“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম”।

এতে মৃত্যুর সাথে সাথে জান্নাতে যেতে পারবেন। (সুনান আন নাসাই ৯৯২৮, সহীহ জামে ৫/৩৩৯, ৬৪৬৪,  সিলসিলাহ সহীহাহ্ ৯৭২)।

৩ নং আমলঃ- আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে লোক প্রত্যেক সালাতের শেষে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার এবং ‘আল্ল-হু আকবার’ তেত্রিশবার পড়বে, যার মোট সংখ্যা হবে নিরানব্বই বার, একশত পূর্ণ করার জন্যে একবার ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর’’ (অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। সমগ্র রাজত্ব একমাত্র তাঁরই ও সকল প্রকারের প্রশংসা তাঁরই জন্য এবং তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।) পাঠ করবে, তাহলে তার সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদি তা সাগরের ফেনারাশির সমানও হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১২৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২২৮, ইসলামীক সেন্টার ১২৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সেই সাথে জাহান্নাম থেকেও মুক্তি পেয়ে যাবেন কেননা দিনে ৩৬০ বার এই তাসবিহগুলো পড়লেই জাহান্নাম থেকে মুক্ত রাখা হয় আর এভাবে ৫ ওয়াক্তে ৫০০ বার পড়া হচ্ছে।

মূল হাদিসঃ

 হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ)....আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক আদম সন্তানকেই ৩৬০টি অস্থিসন্ধি বিশিষ্ট করে সৃষ্টি করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি ঐ সংখ্যা পরিমাণ আল্লা-হু আকবার বলবে, আলহামদু লিল্লাহ’ বলবে, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলবে, সুবহা-নাল্ল-হ’ বলবে, আসতাগফিরুল্ল-হ’ বলবে, মানুষের চলার পথ থেকে একটি পাথর বা একটি কাটা বা একটি হাড় সরাবে, সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে, সে কিয়ামতের দিন এমনভাবে চলাফেরা করবে যে, সে নিজেকে ৩৬০ ( অস্থিসন্ধি) সংখ্যা পরিমাণ জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে অর্থাৎ বেঁচে থাকবে। আবূ তওবা তার বর্ণনায় এ কথাও উল্লেখ করেছেন যে, সে এ অবস্থায় সন্ধ্যা করবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২১৯৯, ইসলামীক সেন্টার ২২০১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

৪ নং আমলঃ- প্রতি রাতে সূরা মুলক (৬৭ নাম্বার সুরা) পাঠ করুণঃ

এতে কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।

মূল হাদিসঃ

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, বান্দাকে কবরে রাখা হ’লে পায়ের দিক হ’তে আযাব আসে। তখন পা বলে, আমার দিক থেকে আযাব দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ তিনি আমাদের উপর সূরা মুলক তিলাওয়াত করতেন। এরপর পেটে শাস্তি দিতে চাইলে পেট বলে, আমাকে শাস্তি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ তিনি আমার মধ্যে সূরা মুলক আয়ত্ব করতেন। মাথার দিক থেকে আযাব আসতে চাইলে মাথা বলবে, আমার দিকে দিয়ে আসার কোন সুযোগ নেই। কারণ তিনি আমার মধ্যে সূরা মুলক তিলাওয়াত করতেন। (মু‘জামুল কাবীর ৮৬৫১; হাকেম ৩৮৩৯; ছহীহ আত-তারগীব ১৪৭৫, সিলসিলাহ সহিহাহ-১১৪০)।

৫ নং আমলঃ- সুরা ইখলাস ৩ বার পড়লে পুরো কুরআন খতমের সওয়াব পেয়ে যাবেনঃ

মূল হাদিসঃ

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এক রাতে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করা সাধ্যাতীত মনে কর? এ প্রশ্ন তাদের জন্য কঠিন ছিল। এরপর তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের মধ্যে কার সাধ্য আছে যে, এটা পারবে? তখন তিনি বললেন, ’’কুল হুআল্লাহ আহাদ’’ অর্থাৎ সূরাহ ইখ্লাস কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুতরাং যতো খুশী পড়ুন, চাইলেই প্রতিদিন শত শত বার কুরআন খতমের সওয়াব পেতে পারেন।

৬ নং আমলঃ- সকালে ১০০ বার ও বিকালে ১০০ বার সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি পাঠ করুণঃ

মূল হাদিসঃ

(ক) জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক (একবার) বলে

“সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়াবিহামদিহী”

তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ লাগানো হয়। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৬৪, রাওযুন নায়ীর ২৪৩, সহীহাহ ৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে জেগে উঠে একশো বার বলবেঃ “সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহি’’ এবং সন্ধ্যায় উপনীত হয়েও অনুরূপ বলে, তাহলে সৃষ্টিকুলের কেউই তার মত মর্যাদা ও সওয়াব অর্জনে সক্ষম হবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

৭ নং আমলঃ- সকালে ১০০ বার ও সন্ধ্যায় (সন্ধ্যায় বলতে আসর থেকে মাগরিবের মধ্যে যে কোন সময়ে) ১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি পাঠ করুণঃ

(ক) মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, যুহায়র ইবনু হারব, আবূ কুরায়ব ও মুহাম্মাদ ইবনু তারীফ আল বাজালী (রহঃ)....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন দু’টি কালিমাহ জিহ্বার উপর (উচ্চারণে) খুবই হালকা, মীযানের পাল্লায় খুবই ভারী, রহমান (পরম দয়ালু আল্লাহ) এর নিকট অত্যন্ত প্রিয়। তা হলো

"সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী সুবহা-নাল্ল-হিল আযীম",

অর্থাৎ আমি আল্লাহ তা’আলার সমস্ত প্রশংসা, পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি, আমি মহান আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি।’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪০৬, ৬৬৮২, ৭৫৬৩, আহমাদ ৭১৭০, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮৫১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল মালিক উমাবী (রহঃ)...আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় (সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী)

(আল্লাহ পবিত্র ও সমস্ত প্রশংসা তাঁরই) একশ’ বার পাঠ করে কিয়ামতের দিনে তার চেয়ে উত্তম আমল কেউ আসবে না। তবে সে ছাড়া, যে ব্যক্তি তদানুরূপ আমল করে কিংবা তার চেয়ে আরও বেশী আমল করে। (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৫৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

"লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলাকুল্লি শাইয়্যিন কদীর।"

অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই; তিনি অদ্বিতীয়, তার কোন অংশীদার নেই, তারই রাজত্ব, তারই যাবতীয় প্রশংসা; তিনিই সব বিষয়ের উপর শক্তিধর- যে লোক এ দু’আ প্রতিদিনে একশ’ বার পাঠ করে সে দশজন গোলাম মুক্ত করার পুণ্য অর্জন হয়, তার (আমলনামায়) একশ’ নেকী লেখা হয় এবং তার হতে একশ’ পাপ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর তা ঐ দিন বিকাল পর্যন্ত শাইতান (শয়তান) (তার কুমন্ত্রণা) হতে তার জন্যে রক্ষাকারী হয়ে যায়। সেদিন সে যা পুণ্য অর্জন করেছে তার চেয়ে বেশি পুণ্যবান কেউ হবে না। তবে কেউ তার চাইতে বেশি ‘আমল করলে তার কথা আলাদা। আর যে লোক দিনে একশ’ বার

"সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী"।

অর্থাৎ- ‘আমি আল্লাহর সপ্রশংসা সহ তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি পাঠ করবে, তার সমস্ত পাপ মিটিয়ে দেয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৯৩, ৬৪০৩,  আহমাদ ৮০১৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

৮ নং আমলঃ- সকালে সূর্য ওঠার আগে এবং বিকালে সূর্য ডোবার আগে অর্থাৎ ফজর সলাত আদায় করে সূর্য ওঠার আগেই এবং বিকালে সূর্য ডোবার আগেই  ১০০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০০ বার আলহামদুলিল্লাহ্, ১০০ বার আল্লাহু আকবার এবং ১০০ বার (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর) পাঠ করুণ এতে মক্কায় ১০০টি উট কুরবানির চেয়ে বেশী সওয়াব, জিহাদে ১০০ টা ঘোড়া পাঠানোর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, ১০০ টি গোলাম আযাদ করার চেয়ে শ্রেষ্ঠ, এবং পৃথিবীর সব মানুষের চেয়ে বেশী সওয়াব হবে আপনার।

মূল হাদিসঃ

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে সে যেন একশতটি হজ্ব আদায় করল বা একশতটি উট আল্লাহর ওয়াস্তে দান করল। যে ব্যক্তি এই দুই সময়ে ১০০ বার ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলল সে যেন আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য ১০০ টি ঘোড়ার পিঠে মুজাহিদ প্রেরণ করলো, অথবা আল্লাহর রাস্তায় ১০০ টি গাযওয়া বা অভিযানে শরীক হলো। আর যে ব্যক্তি এই দুই সময়ে ১০০ বার করে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করলো, সে যেন ইসমাঈল বংশের একশত ব্যক্তিকে দাসত্ব থেকে মুক্তি প্রদান করলো। আর যে ব্যক্তি এই দুই সময়ে ১০০ বার করে ‘আল্লাহু আকবার’ বলল, ঐ দিনে তার চেয়ে বেশি আমল আর কেউ করতে পারবে না। তবে যদি কেউ তার সমান এই যিকরগুলি পাঠ করে বা তার চেয়ে বেশি পাঠ করে তাহলে ভিন্ন কথা। (তাহলে সেই শুধু তার উপরে উঠতে পারবে।) ইমাম নাসাঈর বর্ণনায় ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু’-র পরিবর্তে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুআ আলা কুলিল শাইয়্যিন কাদীর’ ১০০ বার পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। (সুনানুত তিরমিযী ৫/৫১৩, নং ৩৪৭১, নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা ৬/২০৫, ১০৬৫৭,  সহীহুত তারগীব ১/৩৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

৯ নং আমলঃ- ঘুমানোর পূর্বে বিছানায় গিয়ে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়ুন, রাসুল সাঃ তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) এবং আলী (রাঃ)-কে এই আমল করার জন্য বিশেষভাবে নসিহত করেছেন।

মূল হাদিসঃ

আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, যাঁতা ঘুরাতে ঘুরাতে ফাতিমাহ (রাঃ)-এর হাত ফোসকা পড়ে যাওয়ায় তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অভিযোগ করেন। কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী থেকে ফাতিমাহ (রাঃ) একটি খাদেম চাওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন, কিন্তু তাঁর দেখা না পেয়ে তিনি এ বিষয়ে আয়িশাহ (রাঃ)-কে জানিয়ে চলে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসলে তিনি তাঁকে বিষয়টি জানালেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন সময় আমাদের নিকট উপস্থিত হলেন যখন আমরা ঘুমাতে যাচ্ছিলাম।

তাঁর আগমনে আমরা বিছানা থেকে উঠতে উদ্যত হলে তিনি বললেনঃ তোমরা স্বস্থানে থাকো। তিনি এসে আমাদের দু’জনের মাঝখানে বসলেন। এমন কি আমি তাঁর পায়ের শীতল পরশ আমার বুকে অনুভব করছিলাম। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের দু’জনকে এমন একটি উত্তম পথ দেখাবো না যা তোমাদের পার্থিত জিনিসের চেয়ে উত্তম হবে? তা হলো, তোমরা শোয়ার সময় তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশ বার আলহমাদু লিল্লাহ ও চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবার বলবে। আর এটা তোমাদের উভয়ের জন্য একটি খাদেমের চেয়ে অধিক উত্তম হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩১৮, ৩১১৩, ৫৩৬১, ৩৭০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৮৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৬২,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৮৭, আধুনিক প্রকাশনী-৫৮৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৫৭৬৬,  আহমাদ ১১৪১, ইবনু হিববান ৬৯২১, সহীহ আত্ তারগীব ৬০৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

১০ নং আমলঃ- বাজারে প্রবেশ করে পাঠ করুনঃ

“লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু য়্যুহয়ী ওয়া য়্যুমীতু ওয়া হুয়া হাইয়ুল লা য়্যামূত, বিয়াদিহিল খাইরু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর”।

এতে ১০ লক্ষ পুণ্য হবে, ১০ লক্ষ পাপ মোচন হবে, ১০ লক্ষ মর্যাদা বৃদ্ধি হবে এবং জান্নাতে আপনার জন্য ১ টি গৃহ নির্মাণ করা হবে।

মূল হাদিসঃ

মুহাম্মাদ ইবনু ওয়াসি’ (রহঃ) বলেন, আমি মক্কায় পৌছালে আমার ভাই সালিম ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) আমার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তার বাবা হতে, তার দাদার সনদে আমার কাছে হাদীস রিওয়ায়াত করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক বাজারে প্রবেশ করে বলে, “আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, সকল ক্ষমতা তারই, সমস্ত প্রশংসা তার জন্য, তিনিই প্রাণ দান করেন ও মৃত্যু দেন, তিনি চিরজীবি, তিনি কক্ষনো মৃত্যুবরণ করবেন না, তার হাতেই মঙ্গল এবং তিনিই সবসময় প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতার অধিকার",

তার জন্য আল্লাহ তা’আলা দশ লক্ষ নেকী বরাদ্দ করেন, তার দশ লক্ষ গুনাহ মাফ করেন এবং তার দশ লক্ষ গুণ সম্মান বৃদ্ধি করেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪২৮, ৩৪২৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৩৫, আহমাদ ৩২৯, দারেমী ২৬৯২, তাখরীজুল মুখতার ১৭৬-১৭৮, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৪, তাখরীজু কালিমুত তায়্যিব ২২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

১১ নং আমলঃ- বাড়িতে সালাম দিয়ে প্রবেশ করুণঃ

মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন,

“এরপর যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ননা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও”। (সুরা নুর : ৬১)।

ঘরে প্রবেশের নিয়মঃ

রিবঈ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনী আমিরের এক লোক আমাকে বলেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক ঘরে অবস্থানকালে তাঁর নিকট প্রবেশের জন্য অনুমতি চেয়ে বললেন, আমি কি আসবো? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খাদেমকে বললেন, তুমি বের হয়ে তার নিকট গিয়ে তাকে অনুমতি নেয়ার নিয়ম শিখিয়ে দাও। তুমি তাকে বলো, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভেতরে আসতে পারি? লোকটি একথা শুনে বললো, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি ভেতরে আসতে পারি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন এবং সে ভেতরে প্রবেশ করলো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ হে বৎস! তুমি যখন তোমার পরিবার-পরিজনের নিকটে যাও, তখন সালাম দিও। তাতে তোমার ও তোমার পরিবার-পরিজনের কল্যাণ হবে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৯৮)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

ফজিলতঃ

বাড়িতে সালাম দিয়ে প্রবেশ করলে আল্লাহ তা’লা নিজ জিম্মাদারিতে আপনাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (ইবনু হিব্বান-৪৯৯, সহিহ তারগিব-৩১৬)।

১২ নং আমলঃ- জামাতে ইমামের প্রথম তাকবীরের সাথে ৪০ দিন সলাত আদায় করুন। অর্থাৎ দেরিতে নয় বরং সলাত আরম্ভ হওয়ার সময়ই শরিক হওয়া এতে আপনি নিশ্চিত জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।

মূল হাদিসঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সন্তোষ অর্জনের উদ্দেশ্যে একাধারে চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার (প্রথম তাকবীর) সাথে জামা’আতে নামায আদায় করতে পারলে তাকে দুটি নাজাতের ছাড়পত্র দেওয়া হয়ঃ জাহান্নাম হতে নাজাত এবং মুনাফিকী হতে মুক্তি। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪১, তা’লীকুর রাগীব (১/১৫১), সহীহাহ (২৬৫২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

১৩ নং আমলঃ- জুমার দিন  গোসল করে, পায়ে হেটে, আগে আগেই মসজিদে গিয়ে, ইমামের পাশাপাশি বসে, মনোযোগের সাথে খুতবা শুনলে বাড়ি থেকে হেটে আসার প্রতি কদমে ১ বছর সারা রাত তাহাজ্জুদ সালাত পড়া এবং ১ বছর টানা সিয়াম পালন করার সওয়াব পাবেন।

মূল হাদিসঃ

আওস ইবনু আওস আস-সাকাফী (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর দিন (স্ত্রী সহবাসজনিত) গোসল করলো এবং নিজে গোসল করলো এবং সকাল সকাল যানবাহন ছাড়া পদব্রজে মসজিদে এসে ইমামের কাছাকাছি বসলো, মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে খুতবাহ শুনলো এবং অনর্থক কিছু করলো না, তার জন্য প্রতি কদমে এক বছরের সাওম রাখ ও তার রাত জেগে সালাত পড়ার সমান সওয়াব রয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৪৯৯০, ইবনুর হিব্বান ২৭৮১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৭৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৬৫, সহীহ আত্ তারগীব ৬৯০, সহীহ আল জামি‘ ৬৪০৫, সুনান আত্ তিরমিযী ৪৯৬, সুনান আননাসায়ী ১৩৮১, ১৩৮৪, ১৩৯৮, আহমাদ ১৫৭২৮, ১৫৭৩৯, ১৫৭৪২, ১৬৫১৩, ১৫৪৬-৪৭। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাহলে যদি কোন ব্যক্তি এই শর্তগুলো পুরন করে, তবে সে যদি বাড়ি থেকে ১০০০ পা ফেলে মসজিদে যায়, তবে তার জন্য ১০০০ বছর একটানা সারা রাত তাহাজ্জুদ নামাজের সওয়াব এবং ১০০০ বছর একটানা সিয়াম পালনের সওয়াব দেওয়া হবে, (সুবহানাল্লাহ), এবং কদম যতো বারতে থাকবে সওয়াবও এই একই অনুপাতে বারতে থাকবে।

১৪ নং আমলঃ- সাধ্যমত বেশি বেশি জানাজা সলাতে শরিক হবেন কেননা শুধু জানাজা সলাতে শরিক হলেই এক কীরাত সওয়াব দেওয়া হয় আর দাফন পর্যন্ত থাকলে ২ কিরাত সওয়াব দেওয়া হয় আর ২ কিরাত অর্থ দু’টি বিশাল পর্বত সমতুল্য (সাওয়াব)।

মূল হাদিসঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃতের জন্য সালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাযায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কীরাত, আর যে ব্যক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দু’ কীরাত। জিজ্ঞেস করা হল দু’ কীরাত কী? তিনি বললেন, দু’টি বিশাল পর্বত সমতুল্য (সাওয়াব)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩২৫, ৪৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২০৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪৫, আহমাদ ৯২১৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৪৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

১৫ নং আমলঃ- প্রতিমাসের আয়ের একটা অংশ এতিমখানা বা মসজিদ মাদ্রাসা বা গরিব-দুখী, বিধবা ও দুস্থদের মাঝে দান করবেন। হোক সেটা অতি অল্প। এতে আপনি আল্লাহ তা’লার কাছে জিহাদকারির সমতুল্য হবেন।

মূল হাদিসঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিধবা ও মিসকীনদের অভাব দূর করার জন্য সচেষ্ট ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর ন্যায়। [ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন] আমার ধারণা যে কা’নবী (বুখারীর উস্তাদ ’আবদুল্লাহ) সন্দেহ প্রকাশ করেছেনঃ সে রাতভর দাঁড়ানো ব্যক্তির মত যে (’ইবাদাতে) ক্লান্ত হয় না এবং এমন সিয়াম পালনকারীর মত, যে সিয়াম ভঙ্গ করে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০০৭, ৫৩৫৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

১৬ নং আমলঃ- মহিলারা ৪টি কাজ করবেন,

(ক)  ৫ ওয়াক্ত সলাত আদায় করা,

(খ)  রমজানের সিয়াম রাথা,

(গ)  লজ্জাস্থানের হেফাজত করা ও

(ঘ) স্বামীর আনুগত্য করা, এতে জান্নাতের যেকোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।

মূল হাদিসঃ

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমাযানের সিয়াম পালন করে, গুপ্তাঙ্গের হিফাযাত করে, স্বামীর একান্ত অনুগত হয়। তার জন্য জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশের সুযোগ থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩২৫৪, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৬/৩০৮, সহিহ ইবনু হিব্বান-৪১৬৩, মুসনাদে আহমাদ-১৬৬১, তবরানি কাবির-৯৯১)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

১৭ নং আমলঃ- মসজিদে ফজরের সলাত আদায় করে বসে দোয়া জিকির পাঠ করুণ এবং সূর্য উঠে গেলে ২ রাকাত ইসরাকের সলাত আদায় করুণ এতে আপনি প্রতিদিন নিশ্চিত কবুল ১ টি হজ্জ ও ১ টি উমরার সওয়াব পাবেন আর কবুল হজ্জের সওয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।

মূল হাদিসঃ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ফাজ্রের (ফজরের) সালাত জামা’আতে আদায় করল, অতঃপর বসে বসে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকর করতে থাকল, তারপর দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করল, সে একটি পূর্ণ হাজ্জ ও একটি সম্পূর্ণ ’উমরার সমান সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৭১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ৪৬৪, তা’লীকুর রাগীব- (১/১৬৪, ১৬৫),)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(মহিলারাও বাড়ীতে ফজর সলাত আদায় করে যদি মুসল্লায় বসেই দোয়া জিকির পাঠ করে এবং সূর্য উঠে গেলে ২ রাকাত ইসরাকের সলাত আদায় করে তাহলে তারাও এই সওয়াব পাবে বলে শাইখ বিন বাজ রঃ-এর ফতওয়া রয়েছে সুতরাং চাইলেই এই বিশাল সওয়াব প্রতিদিনই অর্জন করা সম্ভব)

বিঃ দ্রঃ ফরজ ইবাদতগুলো করার পাশাপাশি শির্ক, বিদআত ও হারাম ভক্ষণ থেকে দূরে থেকে (কেননা এই ৩ পাপে লিপ্ত থাকলে কোন ইবাদতই কবুল করা হয় না) যে কেউ এই অতি সহজ আমলগুলো করবে, সে সহজেই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে ইং শা আল্লাহ। কিয়ামতের দিন পাপ পুণ্য মিজানের পাল্লায় মাপা হবে, পুণ্যের পাল্লা ভারি হলেই কেবল জান্নাত পাওয়া যাবে। তাই আমলগুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পুণ্যের পাল্লা ভারি করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, আল্লাহ তাওফিক দিন।

(সমাপ্ত)

এসব বিষয় জানতে এদের উপর ক্লিক করুন।

(১)নবি (সাঃ) এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো? (প্রথম অংশ)।

(২)নবি সাঃ এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো? (দ্বিতীয় অংশ)।

(৩)যেসব কারণে অধিকাংশ নারী জাহান্নামী।

(৪)জাহান্নামের বর্ণনা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়। (তৃতীয় অংশ)

(৫)দোয়া কেনো কবুল হয় না।

(৬)দুই হাত তুলে দোয়া বা মুনাজাত করার সহিহনিয়ম।

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

.................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত ভূমিকা: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ...