বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পরকালে মানুষকে যেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে
ভূমিকাঃ
প্রত্যেক মুসলমান এ কথা বিশ্বাস করে যে, দুনিয়ার
জীবনই একমাত্র জীবন নয়। মৃত্যুর পর রয়েছে অনন্তকালের জীবন। ইসলামের পরিভাষায় সেটাকে
আখিরাত বা পরকাল বলা হয়। পরকালে দুনিয়ার প্রতিটি কাজের হিসাব-নিকাশ নেয়া হবে। সেই দিন
ভালো-মন্দ কাজের প্রতিদান ও প্রতিফল দেওয়া হবে। এ জন্যে দুনিয়াতে বান্দা যা কিছু করে
ও বলে সবকিছু লিপিবদ্ধ করা হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “সম্মানিত লেখক ফেরেশতাবৃন্দ
সবকিছু লিখে রাখেন”। (সুরা ইনফিত্বার ৮২/১১)।
ফেরেশতারা প্রত্যেক ব্যক্তির প্রত্যেকটি কাজ
সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত। সব জায়গায় সব অবস্থায় সকল ব্যক্তির সাথে তারা এমনভাবে লেগে
আছে যে, তারা জানতেই পারছে না, কেউ তাদের কাজ পরিদর্শন করছে। কোন ব্যক্তি কোন নিয়তে
কি কাজ করেছে তাও তারা জানতে পারে। তাই তাদের তৈরি করা রেকর্ড একটি পুর্ণাঙ্গ রেকর্ড।
এই রেকর্ডের বাইরে কোনো কথা নেই। এ সম্পর্কেই সূরা কাহাফের ৪৯ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ
“কিয়ামতের দিন অপরাধীরা অবাক হয়ে দেখবে তাদের সামনে যে আমলনামা পেশ করা হচ্ছে তার
মধ্যে তাদের ছোট বড় কোনো একটি কাজও অলিখিত থেকে যায়নি। যা কিছু তারা করেছিল সব হুবহু
ঠিক তেমনিভাবেই তাদের সামনে আনা হয়েছে।” (করতুবী)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
“সে যে কথাই উচ্চারণ করে তার কাছে সদা উপস্থিত
সংরক্ষণকারী রয়েছে”। (সুরা ক্বাফ ৫০/১৮)।
তিনি বলেন, “আর প্রত্যেক মানুষের কাজ আমরা তার গ্ৰীবালগ্ন করেছি
এবং কিয়ামতের দিন আমরা তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত। তুমি তোমার
কিতাব পাঠ কর, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসেব-নিকেশের জন্য যথেষ্ট”। (সুরা বনী ইসরাঈল ১৭/১৩-১৪)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“সবাইকে তাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে”।
(সুরা নাহল ১৬/৯৩; সুরা হিজর ১৫/৯২-৯৩)।
পরিশেষে আমল অনুপাতে তাদেরকে প্রতিদান দেয়া
হবে। এমনকি “অণু পরিমাণ ভাল কাজ করলে, সে তা দেখতে পাবে এবং অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করলে
সেও তা দেখতে পাবে”। (সুরা যিলযাল ৯৯/৭)।
ক্বিয়ামতের দিন বান্দাকে তার দুনিয়াবী ছোট-বড়,
গোপন-প্রকাশ্য, কথা ও কর্ম তথা সব আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। তন্মধ্যে কিছু বিষয়
কিতাব ও সুন্নাহতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলি সম্পর্কে বান্দাকে সেদিন জিজ্ঞেস
করা হবে, যাতে বান্দা সেসব বিষয়ে সতর্ক থাকে, সেগুলির হেফাযত করে, নিজে ও অন্যরাও এসবের
হেফাযত না করার ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে এবং
এগুলিকে বেশি ভয় করে । পরকালে সব মানুষ বিশেষভাবে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হবে,
সেগুলো এখানে আলোচনা করা হলো।
কবরে তিনটি প্রশ্ন করা হবে
কবরে মুনকার-নাকির ফেরেশতা দু’জনের প্রশ্নকে
কবরের ফিতনা বলা হয়। ফেরেশতা দু’জনের প্রশ্নের মাধ্যমে কবরস্থ মৃত ব্যক্তিকে পরীক্ষা
করা হবে। কবরের এ ফিতনার ব্যাপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির
হাদীছ রয়েছে। তার মধ্যে বারা ইবনে আযিব, আনাস ইবনে মালেক, আবু হুরায়রা এবং অন্যান্য
সাহাবীর হাদীছ অন্যতম।
পরকালীন জীবনের সর্বপ্রথম মনযিল কবর। কবরে
বান্দাকে তিনটি বিশেষ প্রশ্ন করা হবে। তবে কবরের প্রশ্ন ক্বিয়ামতের দিনের প্রশ্ন হতে
ভিন্ন।
(ক) আল-বারা’আ ইবনু আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আনসার গোত্রের
এক ব্যক্তির জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য রওয়ানা হয়ে কবরের নিকট গেলাম। কিন্তু তখনও কবর
খনন শেষ হয়নি। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসলেন এবং আমরাও তাঁর
চারিদিকে নীরবে তাঁকে ঘিরে বসে পড়লাম, যেন আমাদের মাথার উপর পাখি বসে আছে। তখন তাঁর
হাতে ছিলো একখানা লাঠি, তা দিয়ে তিনি মাটিতে আঁচড় কাটছিলেন।
অতঃপর তিনি মাথা তুলে দু’ বা তিনবার বললেন,
তোমরা আল্লাহর নিকট কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাও। বর্ণনাকারী জারীর তার আরো উল্লেখ করেন,
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়
যখন তারা ফিরে যেতে থাকে, আর তখনই তাকে বলা হয়, হে অমুক! তোমার রব কে? তোমার দীন কি
এবং তোমার নবী কে?
হান্নাদ (রহঃ) বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, অতঃপর তার নিকট দু’ জন ফিরিশতা এসে তাকে বসিয়ে উভয়ে প্রশ্ন করে,
তোমার রব কে? তখন সে বলে, আমার রব আল্লাহ। তারা উভয়ে তাকে প্রশ্ন করে, তোমার দীন কি?
সে বলে, আমার দীন হলো ইসলাম। তারা প্রশ্ন করে, এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন,
তিনি কে? তিনি বলেন, সে বলে, তিনি আল্লাহর রাসূল। তারপর তারা উভয়ে আবার বলে, তুমি কি
করে জানতে পারলে? সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং সত্য
বলে স্বীকার করেছি।
জারির বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ এটাই হলো আল্লাহর
এ বাণীর অর্থঃ ’’যারা এ শাশ্বত বাণীতে ঈমান এনেছে তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ
সুপথ প্রতিষ্ঠিত রাখবেন।’’ (সূরা ইবরাহীমঃ ২৭) এরপর বর্ণনাকারী জারির ও হান্নাদ উভয়ে
একইরূপ বর্ণনা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অতঃপর আকাশ থেকে একজন
ঘোষক ঘোষণ করেন, আমার বান্দা যথাযথ বলেছে, সুতরাং তার জন্য জান্নাতের একটি বিছানা বিছিয়ে
দাও এবং তাকে জান্নাতের পোশাক পড়িয়ে দাও। এছাড়া তার জন্য জান্নাতের দিকে একটা দরজা
খুলে দাও। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সুতরাং তার দিকে জান্নাতের
স্নিগ্ধকর হাওয়া ও তার সুগন্ধি বইতে থাকে। তিনি আরো বলেন, ঐ দরজা তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত
প্রশস্ত করা হয়।
অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কাফিরদের মৃত্যু প্রসঙ্গে বলেন, তার রূহকে তার শরীরের ফিরিয়ে আনা হয় এবং দু’ জন ফিরিশতা
এসে তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করে, তোমার রব কে? সে উত্তর দেয়, হায়! আমি কিছুই জানি না। তারপর
ঐ তারা প্রশ্ন করেন, তোমার দ্বীন কি? সে বলে, হায়! আমি কিছুই জানি না। তারা প্রশ্ন
করে, এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন তিনি কে? সে বলে, হায়! আমি তো জানি না।
তখন আকাশের দিক থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন, সে মিথ্যা বলছে। সুতরাং তার জন্য জাহান্নামের
একটি বিছানা এনে বিছিয়ে দাও এবং তাকে জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দাও। আর তার জন্য জাহান্নামের
দিকে দরজা খুলে দাও।
তিনি বলেন, অতঃপর তার দিকে জাহান্নামের উত্তপ্ত
বাতাস আসতে থাকে। এছাড়া তার জন্য তার কবরকে সংকীর্ণ করে দেয়া হয়, ফলে তার একদিকের পাজর
অপর দিকের পাজরের মধ্যে ঢুকে যায়। বর্ণনাকারী জারির বর্ণিত হাদিসে রয়েছেঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অতঃপর তার জন্য এক অন্ধ ও বধির ফিরিশতাকে নিযুক্ত করা হয়,
যার সঙ্গে একটি লোহার হাতুড়ি থাকবে, যদি এ দ্বারা পাহাড়কে আঘাত করা হয় তাহলে তা ধুলায়
পরিণত হয়ে যাবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
তারপর সে তাকে হাতুড়ি দিয়ে স্বজোরে আঘাত করতে থাকে, এতে সে বিকট শব্দে চিৎকার করতে
থাকে। যা মানুষ ও জীন ছাড়া পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সকল সৃষ্ট জীবই শুনতে পায়। আঘাতের
ফলে সে মাটিতে মিশে যায়। তিনি বলেন, অতঃপর (শাস্তি অব্যাহত রাখার জন্য) পুনরায় তাতে
রূহ ফেরত দেয়া হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৭৫৩,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩১, আহমাদ ১৮০৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিমকে যখন কবরে জিজ্ঞেস করা হয়
তখন সে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা’বূদ নেই এবং নিঃসন্দেহে মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল। ’’যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে
দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে অটল ও অবিচল রাখেন’’- (সূরাহ্ ইবরাহীম ১৪: ২৭)। আল্লাহর এ
বাণীর অর্থ হলো এটাই।
অপর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “ইউসাব্বিতুল্লা-হুল্লাযীনা আ-মানূ বিল ক্বওলিস্ সা-বিতি’’- এ আয়াত
কবরের ’আযাব সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। কবরে মৃতকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমার রব কে? সে বলে,
আমার রব মহান আল্লাহ তা’আলা। আর আমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৪৬৯৯, ১৩৬৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১১১,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৭৫০, সহীহ আল জামি ৬৭০৮, সহীহাহ্
৩৯৬৩, সুনান আননাসায়ী ২০৫৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩১২০, রাওদুন নাদীর ১৬৪,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৩৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার
সাথীরা এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে, সে তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এ সময় দু’জন
ফেরেশ্তা তার নিকট এসে তাকে বসান এবং তাঁরা বলেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তুমি কী বলতে? তখন মু’মিন ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, তিনি আল্লাহ্র বান্দা এবং তাঁর রাসূল। তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থান
স্থলটির দিকে নযর কর, আল্লাহ্ তোমাকে তার বদলে জান্নাতের একটি অবস্থান স্থল দান করেছেন।
তখন সে দু’টি স্থলের দিকেই দৃষ্টি করে দেখবে। কাতাদাহ (রহ.) বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা
করা হয়েছে যে, সে ব্যক্তির জন্য তাঁর কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি (কাতাদাহ)
পুনরায় আনাস (রাঃ)-এর হাদীসের বর্ণনায় ফিরে আসেন। তিনি [(আনাস) (রাঃ)] বলেন, আর মুনাফিক
বা কাফির ব্যক্তিকেও প্রশ্ন করা হবে তুমি এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কী বলতে? সে উত্তরে বলবে, আমি জানি না। লোকেরা যা বলত আমি তা-ই
বললাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি না নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। আর তাকে লোহার
মুগুর দ্বারা এমনভাবে আঘাত করা হবে, যার ফলে সে এমন বিকট চিৎকার করে উঠবে যে, দু’ জাতি
(মানুষ ও জ্বিন) ছাড়া তার আশপাশের সকলেই তা শুনতে পাবে। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৭৪, ১৩৩৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৬, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৭১০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৭০, সুনান আননাসায়ী ২০৫১, আহমাদ ১২২৭১,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৩১২০, সহীহ আল জামি‘ ১৬৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৫৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১২৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম ছালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে
হক দুই প্রকার। যেমনঃ
(এক)
আল্লাহর হক।
(দুই)
বান্দার হক। আল্লাহর হকগুলির মধ্যে ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হিসাব নেয়া হবে ছালাতের।
যেমন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন
সব জিনিসের পূর্বে লোকের যে আমলের হিসাব হবে, তা হলো সালাত। যদি তার সালাত সঠিক হয়
তাহলে সে সফলকাম হবে ও নাজাত পাবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে সে বিফল ও ক্ষতিগ্রস্ত
হবে। যদি ফরয সালাতে কিছু ভুল হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তা’আলা মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে)
বলবেন, দেখো! আমার বান্দার নিকট সুন্নাত ও নফল সালাত আছে কি-না? তাহলে সেখান থেকে এনে
বান্দার ফরয সালাতের ত্রুটি পূরণ করে দেয়া হবে। এরপর এ রকম বান্দার অন্যান্য হিসাব
নেয়া হবে। অন্য এক বিবরণ এসেছে, তারপর এ রকম যাকাতের হিসাব নেয়া হবে। অতঃপর অবশিষ্ট
সব ’আমলের হিসাব একের পর এক এ রকম নেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৩০, ১৬৭৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪১৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৮৬৪, ৮৬৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১৪২৫, সুনান আননাসায়ী ৪৬৫-৬৭, সহীহ আত্ তারগীব ৫৪০, সহীহ
আল জামি ২০২০, আহমাদ ৭৮৪২, ৯২১০, ১৬৫০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অর্থাৎ ছালাত যদি শুদ্ধ হয়, রুকূ, সিজদা, ক্বিয়াম-কুঊদ,
খুশু-খুযূ সহ সময় মত আদায় করে। আর যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় তথা আদায় করেনি অথবা অশুদ্ধ হয়েছে
অথবা গৃহীত হয়নি, তাহলে সে ছওয়াব লাভে ব্যর্থ হবে এবং শাস্তি ভোগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আর বান্দার হকগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম বিচার
করা হবে অন্যায় রক্তপাত বা হত্যার। যেমন, আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষের (অপরাধের)
মধ্যে সর্বপ্রথম নরহত্যার (অপরাধের) বিচার করা হবে। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৩৩, ৬৮৬৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২৬১৫, ২৬১৭, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪২৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৭৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৯৬,
১৩৯৭, সুনান আননাসায়ী ২৯৯১, ২৯৯২, ২৯৯৩, ২৯৯৪, ২৯৯৬, আহমাদ ৩৬৬৫, ৪২০১, সহীহাহ ১৭৪৮,
আধুনিক প্রকাশনী ৬০৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬০৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উল্লেখ্য, হাদীছের আলোকে বুঝা যায় যে, আল্লাহর
হক ও বান্দার হকের মধ্যে সর্বপ্রথম আল্লাহর হকের হিসাব নেয়া হবে।
পাঁচটি বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে
ইবনু মাসউদ (রাঃ) নাবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন।
তিনি (সা.) বলেছেন : কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের পদদ্বয় একটু নড়তে পারবে না যতক্ষণ
পর্যন্ত তাকে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।
(১) তার বয়স সম্পর্কে, সে তা কী কাজে ব্যয়
করেছে?
(২) তার যৌবন সম্পর্কে, সে তা কী কাজে ক্ষয়
করেছে?
(৩) তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, সে তা কোথা হতে
অর্জন করেছে?
(৪) আর তা কোথায় ব্যয় করেছে? এবং
(৫) যে জ্ঞানার্জন করেছিল, সে অনুযায়ী কী
’আমাল করেছে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৯৭, সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪১৬, সিলসিলাতুস্
সহীহাহ ৯৪৬, সহীহুল জামি ৭২৯৯, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ১২৮, সিলসিলাতুস সহীহাহ্
৯৪৬, ইয়া'লা ৫২৭১, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৯৬৫৩)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
আল্লাহ প্রদত্ত নে‘মতগুলি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে দুনিয়াতে অসংখ্য
নে‘মত দান করেছেন। তিনি বলেন, “তোমরা যদি আল্লাহর
নে‘মতকে গণনা কর, তাহ’লে তা গণনা করে শেষ করতে পারবে না”। (সুরা নাহল ১৬/১৮)।
আর এ সকল নে‘মত সম্পর্কে তিনি তাঁর বান্দাদের
জিজ্ঞেস করবেন, যাতে সে তা স্বীকৃতি দেয় এবং এর হক আদায় করেছে কি না তা জানতে পারে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সেদিন অবশ্যই নে‘মতসমূহ
সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’। (সুরা তাকাছুর ১০২/৮)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
কোন একদিন বা রাতের বেলায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়েই আবূ
বকর ও ’উমার -কে দেখতে পেলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন
: কোন জিনিস তোমাদের উভয়কে এ মুহূর্তে ঘর হতে বের হতে বাধ্য করেছে? তারা উভয়ে বললেনঃ
ক্ষুধার তাড়না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে মহান সত্তার কসম,
যাঁর হাতে আমার প্রাণ! যে জিনিস তোমাদের দু’জনকে বের করেছে, আমাকেও সে জিনিস বের করেছে।
আচ্ছা! চলো। অতঃপর তাঁরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে চললেন এবং জনৈক
আনসারীর বাড়িতে আসলেন। তখন তিনি ঘরে ছিলেন না। যখনই আনসারীর স্ত্রী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলেন, তখন তিনি তাঁকে খোশ আমদেদ জানালেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, অমুক (অর্থাৎ- তোমার স্বামী) কোথায়? তিনি বললেনঃ
তিনি আমাদের জন্য মিষ্টি পানি আনতে গিয়েছেন। ঠিক এমন সময় আনসারী এসে উপস্থিত হলেন।
তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীদ্বয়কে দেখে বললেনঃ আলহাম্দুলিল্লাহ!
আজকের দিন আমার মতো সম্মানিত মেহমানের সৌভাগ্য লাভকারী আর কেউই নেই।
বর্ণনাকারী (রাবী) বলেন, এ কথা বলেই তিনি বাগানে
চলে গেলেন এবং মেহমানদের জন্য এমন একটি খেজুরের ছড়া নিয়ে আসলেন, যার মধ্যে পাকা, শুকনা
ও কাঁচা হরেক রকমের খেজুর ছিল। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন : অনুগ্রহ করে আপনারা এটা হতে খেতে
থাকুন এবং তিনি একখানা ছুরি হাতে নিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ সাবধান! দুধওয়ালা বকরী যাবাহ করবে না। অবশেষে
তিনি তাদের জন্য একটি বকরী যাবাহ করলেন। তাঁরা বকরীর মাংস ও খেজুরের ছড়া হতে খেলেন
এবং পানি পান করলেন। যখন তাঁরা খাদ্য ও পানীয় দ্বারা পরিতৃপ্ত হলেন, তখন রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর ও ’উমার -কে লক্ষ্য করে বললেনঃ সে মহান সত্তার
কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, কিয়ামতের দিন নিশ্চয় তোমরা এ সমস্ত নি’আমাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত
হবে। ক্ষুধা তোমাদেরকে নিজ নিজ ঘর হতে বের করেছিল, অতঃপর গৃহে ফিরে যাওয়ার পূর্বেই
তোমরা এ সমস্ত নি’আমাত লাভ করলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪২৪৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫২০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৩৮, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৩৬৯, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব
ত্ববারানী ১৫৯০৭, ইবনু মাজাহ ৩১৮০, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩২৯৬, মুসনাদে আবূ
ইয়া‘লা ৬১৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
তিরমিযীতে এসেছে, আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (ছাঃ)
বলেন, ‘সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন যে সকল নে‘মত সম্পর্কে
তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে তা হ’ল, শীতল ছায়া, পবিত্র খেজুর ও ঠান্ডা পানীয়’। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৬৯; ছহীহাহ ১৬৪১, মুখতাসার
শামাইল ১১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,
আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন নি’আমাত সম্পর্কে বান্দাকে সর্বপ্রথম যে প্রশ্ন
করা হবে তা হলো; আমি কি তোমার দেহকে সুস্থ করিনি, আমি কি তোমাকে শীতল পানি দিয়ে পরিতৃপ্ত
করিনি? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৯৬, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৩৩৫৮, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৫৩৯,
সহীহুল জামি ২০২২, ছহীহাহ ৫৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
আর নে‘মতের হক হলো এর শুকরিয়া আদায় করা, অর্থাৎ
আল্লাহর নে‘মত সম্পর্কে বলা, তাঁর আনুগত্যে এবং বৈধ কাজে সেগুলিকে ব্যবহার করা। যদি
কোন ব্যক্তি এগুলি করে, তাহলে সে যেনো এসবের হক আদায় করল এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায়
করল। সে আল্লাহর সন্তষ্টি লাভেও ধন্য হবে। আর যদি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করে, তাহলে
সে যেনো নে‘মতকে অস্বীকার করল।
আবু বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও ইবনু নুমায়র (রহঃ).....আনাস
ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা সে বান্দার উপর সম্ভষ্ট, যে খাদ্য গ্রহণের পরে তার জন্য
আল হামদু লিল্লা-হ’ পড়ে এবং পানীয় পান করার পরে তার কৃতজ্ঞতা (স্বীকার) করে আল হামদু
লিল্লা-হ’ বলে। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১৮১৬, আহমাদ ১১৫৬২, ১১৫৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৮২, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৩৬, রিয়াযুস
স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৪০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৩৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইলম, শ্রবণ, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা
হবে
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “যে বিষয়ে তোমার কোন
জ্ঞান নেই তার পিছে পড়ো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, হৃদয় প্রত্যেকটির বিষয়ে তোমরা (ক্বিয়ামতের
দিন) জিজ্ঞাসিত হবে”। (সুরা বনী ইসরাঈল ১৭/৩৬)।
এ আয়াতের দুটি অর্থ করা হয়ে থাকেঃ
(এক)
কেয়ামতের দিন কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ সম্পর্কে তার মালিককে প্রশ্ন করা হবে। প্রশ্ন
করা হবেঃ তুমি সারা জীবন কি কি শুনেছ? প্রশ্ন করা হবেঃ তুমি সারা জীবন কি কি দেখেছ?
প্রশ্ন করা হবেঃ সারা জীবনে মনে কি কি কল্পনা করেছ এবং কি কি বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন
করেছ? যদি শরীআত বিরোধী কাজ কর্ম করে থাকে, তবে এর জন্য সে ব্যক্তিকে আযাব ভোগ করতে
হবে। (ফাতহুল কাদীর)।
(দুই)
কেয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এ ব্যাপারে স্বয়ং সাক্ষ্য দেবে। কারণ
আল্লাহ সেগুলোকে প্রশ্ন করবেন। এটা হাশরের ময়দানে গুনাহগারদের জন্য অত্যন্ত লাঞ্ছনার
কারণ হবে। সূরা ইয়াসীনে বলা হয়েছেঃ “আজ (কেয়ামতের দিন) আমি এদের (অপরাধীদের) মুখ
মোহর করে দেব। ফলে, তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের চরণসমূহ সাক্ষ্য দেবে তাদের
কৃতকর্মের”। (সূরা ইয়াসীনঃ ৬৫)।
অনুরূপভাবে সূরা আন-নূরে এসেছে, “যেদিন তাদের
বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও তাদের পা তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে।
(সূরা নূরঃ ২৪)।
কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর এসবকিছুই মহান রবের দেয়া
বড় নে‘মত। আর এগুলি সম্পর্কে ক্বিয়ামতের দিন আমাদের জিজ্ঞেস করা হবে, সেগুলি কি আল্লাহর
আনুগত্যে ও সৎকাজে ব্যবহার করে এগুলির শুকরিয়া আদায় করা হয়েছে, না এগুলি আল্লাহর অবাধ্য
ও পাপাচারের কাজে লাগানো হয়েছে? সুতরাং এগুলির সদ্ব্যবহার করতঃ শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
কিন্ত অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে গাফেল।
মহান আল্লাহ বলেন, “বল, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি
করেছেন এবং তোমাদেরকে দান করেছেন কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয়। কিন্তু তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা
স্বীকার কর”। (সুরা মুল্ক ৬৭/২৩)।
জিহাদ, ইলম ও সম্পদের মতো তিনটি বড় নে‘মত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে
ক্বিয়ামতের দিন বান্দাকে আল্লাহ প্রদত্ত যে
সকল বড় নে‘মত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে তন্মধ্যে রয়েছে ইলম, সম্পদ ও আল্লাহর রাস্তায়
জিহাদ। তার কাছে জানতে চাওয়া হবে, সে এগুলোর ক্ষেত্রে আল্লাহর যে হক রয়েছে তা যথাযথ
আদায় করেছে কি-না? সে কি এগুলির হেফাযত করেছে, না সেগুলি নষ্ট করেছে?
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন প্রথমে
এক শাহীদ ব্যক্তির ব্যাপারে বিচার হবে। আল্লাহ তা’আলার সামনে হাশ্রের (হাশরের) ময়দানে
তাকে পেশ করবেন এবং তাকে তিনি তার সকল নি’আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। অতঃপর তার
এসব নি’আমাতের কথা স্মরণ হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এসব
নি’আমাত পাবার পর দুনিয়াতে তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকারে কী কাজ করেছো? সে উত্তরে বলবে, আমি
তোমার (সন্তুষ্টির) জন্য তোমার পথে (কাফিরদের বিরুদ্ধে) লড়াই করেছি, এমনকি শেষ পর্যন্ত
আমাকে শাহীদ করে দেয়া হয়েছে। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তোমাকে বীরপুরুষ
বলবে এজন্য তুমি লড়েছো। আর তা বলাও হয়েছে (তাই তোমার উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে)। তখন তার
ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি- যে নিজে জ্ঞানার্জন
করেছে, অন্যকেও তা শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন পড়েছে, তাকে উপস্থিত করা হবে। তাকে দেয়া সব
নি’আমাত আল্লাহ তাকে স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব নি’আমাত তার স্মরণ হবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস
করবেন, এসব নি’আমাতের তুমি কি শোকর আদায় করেছো? সে উত্তরে বলবে, আমি ’ইলম অর্জন করেছি,
মানুষকে ’ইলম শিক্ষা দিয়েছি, তোমার জন্য কুরআন পড়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো,
তোমাকে ’আলিম বলা হবে, ক্বারী বলা হবে, তাই তুমি এসব কাজ করেছ। তোমাকে দুনিয়ায় এসব
বলাও হয়েছে। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং মুখের উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে
তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এরপর তৃতীয় ব্যক্তি- যাকে আল্লাহ তা’আলা বিভিন্ন
ধরনের মাল দিয়ে সম্পদশালী করেছেন, তাকেও আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তাকে
দেয়া সব নি’আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব তারও মনে পড়ে যাবে। আল্লাহ তাকে এবার
জিজ্ঞেস করবেন, এসব নি’আমাত পেয়ে তুমি কি ’আমল করেছো? সে ব্যক্তি উত্তরে বলবে, আমি
এমন কোন খাতে খরচ করা বাকী রাখিনি, যে খাতে খরচ করাকে তুমি পছন্দ কর। আল্লাহ তা’আলা
বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো, তুমি খরচ করেছো, যাতে মানুষ তোমাকে দানবীর বলে। সে খিতাব
তুমি দুনিয়ায় অর্জন করেছো। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে
হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৫, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৪৭৭০, ইসলামিক সেন্টার ৪৭৭১) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অঙ্গীকার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে
ক্বিয়ামতের দিন আমাদের দেয়া অঙ্গীকার সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করা হবে। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয়ই
অঙ্গীকার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে’। (সুরা বনী ইসরাঈল
১৭/৩৪)।
‘প্রতিশ্রুতি’ বা অঙ্গীকার বলতে সেই অঙ্গীকার
যা আল্লাহ ও বান্দাদের মধ্যে রয়েছে এবং সেই অঙ্গীকারও যা বান্দাগণ আপোসে একে অপরের
সাথে করে থাকে। উভয় অঙ্গীকার পূরণ করা জরুরী। পক্ষান্তরে প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলে
কাল কিয়ামতে জিজ্ঞাসিত হতে হবে এবং সে ব্যাপারে কৈফিয়ত দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, “অথচ তারা ইতিপূর্বে আল্লাহর
সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না। বস্ত্ততঃ আল্লাহর সাথে কৃত
অঙ্গীকার সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞেস করা হবে”। (সুরা আহযাব
৩৩/১৫)।
কোনো ব্যাপারে কারো সাথে অঙ্গীকার করে পরবর্তীতে তা ভঙ্গ করার পরিণাম কি?
প্রথমতঃ
বিনা ওযরে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা কাবীরা গুনাহ। (সুরা মায়েদাহ
৫/০১; যাহাবী, কিতাবুল কাবায়ের ১/১৬৮)।
হাদিসঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ খুৎবা খুব কমই দিয়েছেন যাতে এ কথা বলেননি যে,
যার আমানাতদারী নেই তার ঈমানও নেই এবং যার ওয়া’দা-অঙ্গীকারের মূল্য নেই তার দীনও নেই।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫, আহমাদ ৩/১৩৫, সহীহুত্
তারগীব ৩০০৪, শু‘আবুল ঈমান ৪০৪৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
দ্বিতীয়তঃ এটি
মুনাফিকের লক্ষণ (বুখারী হা/৩৪; মিশকাত হা/৫৬)।
হাদিসঃ
আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া
যাবে, সে খাঁটি মুনাফিক্ব এবং যার মধ্যে তার একটি দেখা যাবে তার মধ্যে মুনাফিক্বের
একটি স্বভাব থাকবে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করবে- (১) যখন তার নিকট কোন আমানত রাখা
হয় সে তা খিয়ানত করে, (২) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে, (৩) যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে এবং
(৪) যখন কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ করে, তখন সে অশ্লীলভাষী হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪, ২৪৫৯,৩১৭৮,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৪৬৮৮, সুনান আততিরমিযী ২৬৩২, আবূ দাঊদ ৬৭৬৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৫৪, সহীহ আত্ তারগীব
২৯৩৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তৃতীয়তঃ এরূপ
ব্যক্তি আল্লাহর লা‘নতপ্রাপ্ত হয় এবং তাদের অন্তর শক্ত হয়ে যায়। (সুরা মায়েদাহ ৫/১৩)।
চতূর্থতঃ এর
কুপ্রভাবে সমাজে অশান্তি ও হত্যাকান্ড ছড়িয়ে পড়ে। (হাকেম
হা/২৫৭৭; ছহীহাহ হা/১০৭)।
পঞ্চমতঃ অঙ্গীকার
ভঙ্গকারীদের আল্লাহ তা‘আলা নিকৃষ্ট সৃষ্টি বলে আখ্যায়িত করেছেন। (সুরা আনফাল ৮/৫৫-৫৬)।
অতএব যেকোন মূল্যে অঙ্গীকার পূর্ণ করা জান্নাত
পিয়াসী মুমিনের আবশ্য কর্তব্য। স্মর্তব্য যে, ভুলে যাওয়া, বাধ্যগত অবস্থা, হারাম কাজ
করা বা ওয়াজিব তরক করার ব্যাপারে অঙ্গীকার করা, হঠাৎ রোগ-শোকে আক্রান্ত হওয়া প্রভৃতি
কারণবশতঃ অঙ্গীকার ভঙ্গের ব্যাপারে মুমিন ব্যক্তি ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে ইনশাআল্লাহ। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৮৬; ইবনে মাজাহ হা/২০৪৫)।
হাদিসঃ
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ্ আমার উম্মাতকে ভুল, বিস্মৃতি ও জোরপূর্বক কৃত কাজের
দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২০৪৫, রাওদুন
নাদীর ৪০৪, ইরওয়াহ ৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কুফর ও শিরক সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে
দুনিয়াতে যারা কুফরী করে ও আল্লাহর সাথে শরীক
করে, তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।
মহান আল্লাহ্ বলেন, “আল্লাহর কসম! তোমরা যে
মিথ্যা উদ্ভাবন কর, সে বিষয়ে অবশ্যই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে” । (সুরা নাহল ১৬/৫৬)।
তিনি আরো বলেন, “এরপর ক্বিয়ামতের দিন তিনি
তাদের লাঞ্ছিত করবেন এবং বলবেন, কোথায় আমার শরীকরা যাদের কারণে তোমরা (আমাদের নবীদের
সঙ্গে) শত্রুতা করতে? তখন (ফেরেশতা বা মুমিনগণ) যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে, তারা বলবে,
নিশ্চয়ই সকল লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল আজ কেবল কাফেরদের জন্যই”। (সুরা
নাহল ১৬/২৭)।
কারো মনের অজান্তে মুখ দিয়ে কুফরী বা শিরকী কথা বেরিয়ে গেলে সে কি কাফের বা মুশরিক হিসাবে গণ্য হবে?
মনের অজান্তে কারো মুখ থেকে কুফরী বা শিরকী
কথা বেরিয়ে গেলেই সে কাফির বা মুশরিক হিসাবে গণ্য হবে না। কারণ আল্লাহ নিজেই স্বীয়
বান্দাকে দো‘আ শিখিয়ে দিয়েছেন এই মর্মে যে, হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই
বা অজ্ঞতাবশে ভুল করি, সেজন্য তুমি আমাদের পাকড়াও করো না। (সুরা বাক্বারাহ ২/২৮৬)।
তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ্ আমার উম্মাতকে ভুল,
বিস্মৃতি ও জোরপূর্বক কৃত কাজের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২০৪৫, রাওদুন নাদীর ৪০৪, ইরওয়াহ ৮২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
তবে সর্বদা কুফরী বা শিরকী কথার ব্যাপারে সতর্কতা
অবলম্বন করতে হবে, যাতে মুখ দিয়ে এমন বাক্য বের না হয়। রাসূল (ছাঃ) প্রকাশ্য-গোপন সর্বপ্রকার
শিরক থেকে বাঁচার জন্য নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করতেন-
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’অলাম, ওয়া
আস-তাগফিরুকা লিমা -লা -আ’লাম”।
(‘হে আল্লাহ! জেনেশুনে তোমার সাথে শিরক করা
থেকে আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং অজ্ঞতাবশে শিরক করা থেকে আমি তোমার নিকট ক্ষমা
প্রার্থনা করছি’।
মাকিল ইবনে ইয়াসার (রাঃ) বলেন, আমি আবু বাকর
সিদ্দীক (রাঃ) এর সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম। তিনি বলেনঃ
হে আবু বাকর! নিশ্চয় শিরক পিপীলিকার পদচারণা থেকেও সন্তর্পণে তোমাদের মধ্যে লুকিয়ে
থাকে। আবু বাকর (রাঃ) বলেন, কারো আল্লাহর সাথে অপর কিছুকে ইলাহরূপে গণ্য করা ছাড়াও
কি শিরক আছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার
প্রাণ! শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়েও সূক্ষ্ম। আমি কি তোমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিবো
না, তুমি যা বললে শিরকের অল্প ও বেশী সবই দূর হয়ে যাবে? তিনি বলেনঃ তুমি বলো, “হে
আল্লাহ! আমি সজ্ঞানে তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত
তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই”। (আল-আদাবুল মুফরাদ ৭২১)।
ফেরেশতাগণের প্রতি মিথ্যারোপ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে
দুনিয়াতে এক শ্রেণীর মানুষ ফেরেশতাগণের প্রতি
মিথ্যারোপ করে এবং তাদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বলে, তারা নাকি নারী জাতি। এমনকি
তারা তাদেরকে আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করে। ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস
করা হবে। এমর্মে মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘আর তারা ফেরেশতাদের নারী গণ্য করে, যারা দয়াময়ের
বান্দা। তবে কি তারা তাদের সৃষ্টির সময় উপস্থিত ছিল? তাদের (এখনকার) সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ
করা হবে এবং (কিয়ামতের দিন) তারা জিজ্ঞাসিত হবে’। (সুরা
যুখরুফ ৪৩/১৯)।
রাসূলগণের দাওয়াতে সাড়া দেয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে
আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য যুগে
যুগে রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন। ক্বিয়ামতের দিন তিনি তাঁদের উম্মতদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তারা
তাঁদের দাওয়াত কবুল করেছে কি-না? এমনকি তিনি তাঁর রাসূলগণকেও জিজ্ঞেস করবেন, তাঁরা
তাঁদের ওপর অর্পিত রিসালতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন কি-না? তাঁরা স্বীয় উম্মতদের
নিকট তা পৌঁছে দিয়েছেন কি-না?
মহান আল্লাহ বলেন, “সেদিন তাদের ডেকে আল্লাহ
বলবেন, নবীদের আহবানে তোমরা কিরূপ সাড়া দিয়েছিলে?” (সুরা
ক্বাছাছ ২৮/৬৫)।
তিনি আরো বলেন, “অতঃপর যাদের কাছে রাসূল প্রেরণ
করা হয়েছিল তাদেরকে এবং রাসূলগণকে অবশ্যই আমরা (ক্বিয়ামতের দিন) জিজ্ঞাসাবাদ করব”।
(সুরা আ‘রাফ ৭/৬)।
এ আয়াতের তাফসীরে ইবনু জারীর ত্বাবারী (রহঃ)
বলেন, ‘যাদের নিকট আমি আমার রাসূলগণকে পাঠিয়েছি তাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করব, আমার পক্ষ
থেকে রাসূলগণ তাদের নিকট যে আদেশ-নিষেধ নিয়ে এসেছিলেন, তারা তা অনুযায়ী কি আমল করেছে?
আমি তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছি তারা কি তা পালন করেছে, আমি যা থেকে তাদেরকে নিষেধ করেছিলাম
তারা কি তা থেকে বিরত থেকেছে এবং আমার আনুগত্য মেনে নিয়েছে? না তারা আমার অবাধ্য হয়েছে
এবং সেগুলির বিরোধিতা করেছে? আমি যে সকল রাসূলগণকে উম্মতদের নিকট পাঠিয়েছি তাঁদেরকেও
জিজ্ঞেস করব, তাঁরা কি তাদের নিকট আমার রিসালত পৌঁছে দিয়েছেন, তাদের ব্যাপারে আমি যে
দায়িত্ব দিয়েছিলাম তা কি আদায় করেছেন, না তাঁরা এ ব্যাপারে কমতি করেছেন, ফলে তাঁরা
অবহেলা করেছেন এবং তাদের নিকট তা পৌঁছে দেননি’? (তাফসীরে
ত্বাবারী, ১২/৩০৫-৩০৬ পৃঃ)।
পরিশেষে আল্লাহ্ তা‘আলা যেন আমাদেরকে দ্বীনের
ওপরে চলা এবং খাঁটি মুসলিম ও মুমিন হয়ে মৃত্যুবরণ করার তাওফীক্ব দান করেন। সৎ আমল করা
এবং কবর সহ পরকালের সকল স্তরে হিসাব সহজ করে দেন। ক্বিয়ামতের দিন যাবতীয় ফিৎনা থেকে
আমাদের রক্ষা করে পুলছিরাত পার হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন। তার অশেষ রহমতে আমাদেরকে তাঁর
জান্নাত লাভে ধন্য করেন-আমীন।
(সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
======================
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে
PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment