বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সহিহ হাদিস ভিত্তিক
সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম
দ্বিতীয় খন্ড
“সালাতের ভিতর যা করা বৈধ-অবৈধ এবং সালাত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি”
প্রথম অংশ
সালাতের ভিতর যা করা বৈধ-অবৈধ
সালাত
আদায় করার সময় এমন কিছু কাজ আছে যা করা বৈধ, অথচ সাধারণত: তা অবৈধ মনে হয় বা বড় ভুল
ভাবা হয়। এ রকম কিছু কাজ নিম্নরুপ :-
(১) সালাতরত অবস্থায় কান্নাকাটি
করা বৈধঃ
সালাত
পড়তে পড়তে চোখ দিয়ে অশ্র ঝরা অথবা ডুকরে বা গুমরে কেঁদে ওঠা দূষণীয় নয়। আল্লাহর ভয়ে
এমন কান্না কাঁদা তাঁর নেক ও বিনম্র বান্দার বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ বলেন, “তাদের নিকট
করুণাময় (আল্লাহর) আয়াত পাঠ করা হলে তারা লুটিয়ে পড়ে সিজদা ও ক্রন্দন করত।” (কুরআন
মাজীদ ১৯/৫৮)।
আব্দুল্লাহ
বিন শিখখীর বলেন, ‘একদা আমি নবী (সাঃ) এর নিকটে এলাম। তখন তিনি সালাত পড়ছিলেন। আর তাঁর
ভিতর থেকে চুলোর উপর হাঁড়িতে পানি ফোটার মত কান্নার শব্দ বের হ্চ্ছিল।’
অন্য
এক বর্ণনায় আছে, ‘যাঁতার শব্দের মত কান্নার শব্দ বের হ্চ্ছিল।’ (মিশকাত ১০০০)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
মুত্বররিফ
ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু শিখখীর (রহঃ) নিজের পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি সালাত আদায়
করতেছিলেন এবং তাঁর ভিতর থেকে টগবগে আওয়াজ হচ্ছিল যেমন ডেগের ফুটন্ত পানির টগবগ আওয়াজ
হয়। অর্থাৎ তিনি কান্নাকাটি করছিলেন।
আর
এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাত আদায়
করতে দেখছি। এমতাবস্থায় তাঁর সিনার মধ্যে চাক্কির আওয়াজের ন্যায় কান্নার আওয়াজ থাকত।
(আহমাদ; নাসায়ী প্রথমাংশটুকু, আবূ দাঊদ দ্বিতীয়াংশটুকু বর্ণনা করেছেন)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০০০, সহীহ আবূ দাঊদ ৯০৪, নাসায়ী ১২১৪, সহীহ আত্ তারগীব ৫৪৪,
আহমাদ ১৬৩১২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর অসুখ যখন খুব বেড়ে গিয়েছিল, তখন তাঁকে সালাতের সময় হয়েছে বললে তিনি বললেন, “তোমরা আবূ বাকারকে নামায পড়াতে বল।” আয়েশা রা. বললেন, ‘আবূ বাকার তো নরম-দেলের মানুষ। উনি যখন কুরআন পড়েন, তখন কান্না রুখতে পারেন না।’ মহানবী (সাঃ) বললেন, “তোমরা ওকে বল, ওই নামায পড়াবে।” আয়েশা রা. পুনরায় ঐ একই কথা বললে মহানবী (সাঃ) ও পুন: বললেন, “ওকে বল, ওই সালাত পড়াবে।” (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১৪০, বুখারী ৬৮৭-৭১৩, মুসলিম ৪১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এ
কান্না দীর্ঘ হলেও তাতে নামায নষ্ট হয় না। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি
১/২৬১)।
(২) সালাতরত অবস্থায় হাঁচি দেয়া
ও তার জন্য দুআ পাঠ বৈধঃ
সালাতের
মধ্যে হাঁচি এলে হাঁচির পর নির্দিষ্ট দুআ পাঠ বৈধ। আর সেই দুআর বড় ফযীলতও রয়েছে।
সালাতরত
অবস্থায় হাঁচি আসলে অধিক বিশুদ্ধ মতে 'আলহামদু লিল্লাহ' পাঠ করা জায়েজ আছে।
এ
ব্যাপারে হাদিস হল:
আবু
হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“তোমাদের কেউ হাঁচি দিলে সে যেন আলহামদুলিল্লাহ বলে।”
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬২২৪, আধুনিক প্রকাশনী-
৫৭৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এখানে
সাধারণভাবে যে কোনো সময় হাঁচি আসলে ‘আল হামদু লিল্লাহ’ পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। তবে
বিশেষভাবে সালাতরত অবস্থায় আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করার কথা নিম্নোক্ত হাদিসদ্বারা প্রমাণিতঃ
রিফা‘আহ্
ইবনু রাফি‘ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
পেছনে সালাত আদায় করলাম। (সালাতের মধ্যে) আমি হাঁচি দিলাম। আমি ক্বালিমায়ে হামদ অর্থাৎ
‘‘আলহামদু লিল্লা-হি হামদান কাসীরান ত্বইয়্যিবাম্ মুবা-রাকান ফীহি মুবা-রাকান ‘আলায়হি
কামা- ইউহিব্বু রব্বুনা- ওয়া ইয়ারযা-’’ পাঠ করলাম। সালাত শেষ করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে বললেন, সালাতের মাঝে কথা বলল কে? এতে কেউ কোন কথা বলেনি, তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় প্রশ্ন করলেন। তবুও কেউ কোন কথা বলেনি। তৃতীয়বার
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার প্রশ্ন করলেন। এবার রিফা‘আহ্ (রাঃ) বললেন,
হে আল্লাহর রসূল! আমি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ জাতের শপথ যাঁর
হাতে আমার প্রাণ! ত্রিশের বেশি মালাক (ফেরেশতা) এ ক্বালিমায়ে হামদগুলো কার আগে কে উপরে
নিয়ে যাবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা করছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৯২, সহীহ আত্ তিরমিযী ৪০৪, আবূ দাঊদ ৭৭০, নাসায়ী ৯৩১। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)। সহিহ আবু দাউদ ৭৪৭, এই বিষয়ে আনাস, ওয়াইল ইবনু হুজর ও আমির ইবনু রাবীআ রাদিয়াল্লাহু
আনহুম থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।
ইমাম
আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি নফল সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (সূনান তিরমিজী (ইফাঃ,
৪০৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
তবে
মুহাক্কিক আলমগণ বলেন, যে কোনো সালাতেই হাঁচি আসলে আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করা যাবে-চাই
তা ফরয, সুন্নত বা নফল যাই হোক না কেন। এ পক্ষেই মত ব্যক্ত করেছেন, অধিকাংশ সাহাবী,
তাবেঈ এবং ইমাম মালেক, শাফেঈ, আহমদ প্রমুখ ইমামগণ।
তবে
তা চুপি স্বরে অথবা এমনভাবে পড়া উচিৎ যে, সে যেন নিজের কানে শুনতে পায়। কিন্তু জামাআতে
সালাত পড়ার সময় এতটা উঁচু আওয়াজে বলবে না যে, অন্যান্য মুসল্লিদের সালাতে ব্যাঘাত ঘটে।
তবে
সালাতরত অবস্থায় হাঁচির জবাব দেওয়া জায়েয নেই। এ ব্যাপারে আলেমদের কোনো দ্বিমত নেই।
ইমাম
নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন: "সালাতরত
অবস্থায় কেউ হাঁচির জবাব দিলে তার সালাত ভঙ্গ হয়ে যাবে।"
(৩) সালাতরত অবস্থায় হাই উঠলে তা দমন করা কর্তব্যঃ
সালাতে
যদিও হাই তোলা বৈধ, তবুও যেহেতু হাই আলস্য জনিত বা নিদ্রা জনিত কারণে মুখ ব্যাদানোর
নাম, তাই তা যথাসম্ভব দমন করা কর্তব্য। কারণ, সালাতে নামাযী আলস্য প্রদর্শন করলে শয়তান
খুশী হয়।
(ক) ইমাম বুখারীর এক বর্ণনায় আবূ হুরায়রাহ্
(রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের
কারও সালাতের মধ্যে ‘হাই’ আসে, তখন সে যেন স্বীয়শক্তি অনুযায়ী তা প্রতিরাধ করতে চেষ্টা
করে এবং ‘হা’ করে মুখ খুলে না দেয়। নিশ্চয়, এটা শায়ত্বনের (শয়তানের) পক্ষ হতেই হয়ে
থাকে, শায়ত্বন (শয়তান) তাতে হাসে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত)-৯৮৬-[৯], সহীহ বুখারী ৬২২৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) “তোমাদের কেউ হাই তুললে সে যেন তার মুখে হাত রেখে
নেয়। কারণ, শয়তান হাই-এর সাথে (মুখে) প্রবেশ করে যায়!”। (জামে
৪২৬)।
(গ) আবী সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন তোমাদের কারো হাই আসে সে যেন তা
হাত দ্বারা বাধা দেয়। কেননা, (মুখ দিয়ে) শয়তান প্রবেশ করে।” আবু মুহাম্মদ বলেন: অর্থাৎ
মুখের উপর (হাত দ্বারা বাধা দেবে)। (সুনান আদ-দারেমী,
১৪১৯, সহীহ মুসলিম ২৯৯৫; মুসনাদুল মাউসিলী ১১৬২ ও সহীহ ইবনু হিব্বান ২৩৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
কিন্তু এ সময় তথা সালাতের মধ্যে হাই উঠলে "লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ" অথবা "আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজিম" পাঠ করা সম্পর্কে কোনো হাদিস আছে বলে জানা নেই-সালাতের মধ্যে হোক অথবা বাইরে হোক।
সৌদি
আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটিকে এ বিষয় জিজ্ঞেস করা হলে তারা উত্তর দেন:
“আমরা
এমন কিছু জানি না, যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাই উঠলে আউযুবিল্লাহ পাঠ করা শরিয়ত সম্মত-সলাতের
মধ্যে হোক অথবা সালাতের বাইরে হোক।” (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ
৬/৩৮৩)।
(৪) মসজিদে থুথু ফেললে করণীয়ঃ
কেউ
সালাতে দাঁড়ালে তার সম্মুখ দিকে থুথু ফেলা নিষেধ। তার ডান দিকেও থুথু ফেলা
যাবে না। বরং মসজিদের মেঝে কাঁচা মাটির হলে অথবা মাঠে-ময়দানে সালাত পড়লে তার বাম দিকে
অথবা সেদিকে কেউ থাকলে তার (বাম) পায়ের নিচে ফেলবে। পরে সে দাফন করে দেবে। কিংবা নিজের
জামার উপর ফেলবে পরে তা ঘষে ফেলতে হবে। নাক ঝাড়লেও অনুরুপ করা উচিৎ। অবশ্য পৃথক রুমাল
বা টিসু-পেপার ব্যবহার উত্তম।
সালাতরত ব্যক্তির থুথু ফেলা
সংক্রান্ত হাদিসসমূহঃ
(ক) তারিক ইবনু আবদুল্লাহ আল-মুহারিবী
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি সালাতরত
অবস্থায় তোমার সামনে ও ডানে থুথু ফেলবে না, বরং তোমরা বামে অথবা তোমার পায়ের নিচে থুথু
ফেলবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ১/১০২১, তিরমিযী ৫৭১, নাসায়ী
৭২৬, আবূ দাঊদ ৪৭৮, সহীহ আবী দাউদ ৪৯৭, সহীহাহ ১২২৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কিবলার দিকে থুথু পতিত দেখতে পেয়ে লোকেদের সামনে
দাঁড়িয়ে বলেনঃ তোমাদের কারো কী হল যে, তার রবের সামনে দাঁড়ায় এবং তার সামনের দিকে থুথু
নিক্ষেপ করে? তোমাদের কেউ কি তার সামনে থেকে তার মুখে থুথু নিক্ষিপ্ত হওয়া পছন্দ করে?
অতএব তোমাদের কেউ যখন থুথু ফেলবে, তখন সে যেন তা তার বাম দিকে ফেলে অথবা এভাবে তার
কাপড়ে ফেলে। অতঃপর ইসমাঈল ইবনু উলাইয়্যা তার থুথু নিক্ষেপ করে তা রগড়িয়ে আমাকে দেখান।
(সুনানে ইবনে মাজাহ ১০২২, বুখারী ৪০৮, ৪০৯, ৪১১, ৪১৪,
৪১৬; মুসলিম ৫৪৮-৫০, নাসায়ী ৩০৯, ৭২৫; আবূ দাঊদ ৪৭৭, ৪৮০; আহমাদ ৭৩৫৭, ৭৪৭৮, ৭৫৫৪,
২৭৪৫৩, ৮০৯৮, ৯১০২, ৯৭৪৬, ১০৫০৮, ১০৬৪২, ১০৬৮০, ১০৮০১, ১১১৫৬, ১১২৩০, ১১৪২৭, ১১৪৬৯;
দারিমী ১৩৯৮, মাজাহ ৭৬১, সহীহ তারগীব ২৮০, মুসনাদুল মাউসিলী ৯৭৫, ৯৯৩, ১০৮১; সহীহ ইবনু হিব্বান ২২৬৮, মুসনাদুল হুমাইদী ৭৪৫, ৭৪৬ )। হাদিসের মান:
সহিহ।
(গ) হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি শাবাছ
ইবনু রিবঈকে তার সামনে থুথু ফেলতে দেখে বলেন, হে শাবাছ! তোমার সামনের দিকে থুথু ফেলো
না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করতে নিষেধ করতেন এবং বলতেনঃ
কোন ব্যক্তি যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন আল্লাহ তার সামনে থাকেন, যতক্ষণ না সে সালাত শেষ
করে ফিরে যায় অথবা কোন নিকৃষ্ট আচরণ করে। (সুনানে ইবনে
মাজাহ, ৩/১০২৩, সহীহাহ ১৫৯৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঘ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিবলার দিকে থুথু পতিত হতে দেখলেন। এতে তিনি ভীষণ রাগ করলেন। তাঁর
চেহারায় এ রাগ প্রকাশ পেল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উঠে গিয়ে নিজের হাতে
তা খুঁচিয়ে তুলে ফেলে দিলেন। তারপর বললেন, তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায় তার ‘রবের’
সাথে একান্ত আলাপে রত থাকে। আর তখন তার ‘রব’ থাকেন তার ও ক্বিবলার মাঝে। অতএব কেউ যেন
তার ক্বিবলার দিকে থুথু না ফেলে, বরং বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলে। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের চাদরের এক পাশ ধরলেন, এতে থুথু ফেললেন, তারপর চাদরের একাংশকে
অপরাংশ দ্বারা মলে দিলেন এবং বললেনঃ সে যেন এভাবে থুথু নিঃশেষ করে দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৪৬, সহীহ আল জামি‘ ১৫৩৭, সহীহ
ইবনু হিব্বান ২২৬৭, সুনানে ইবনে মাজাহ, ১০২৪, সহীহ বুখারী ২৪১, ৪০৫, ৪১৭; নাসায়ী ৩০৮, আবূ দাঊদ ৩৮৯, দারিমী
১৩৯৬, ১৪৩৩, মুসলিম ৫৫১, মুসনাদুল মাউসিলী ২৮৮৪; মুসনাদুল হুমাইদী ১২৫৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ।
(ঙ) সায়িব ইবনু খল্লাদ (রাঃ)হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের মধ্যে একজন বলেন, এক
লোক কিছু লোকের ইমামাত করছিল। সে ক্বিবলার দিকে থুথু ফেলল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখলেন এবং ঐ লোকগুলোকে বললেন, এ ব্যক্তি যেন আর তোমাদের সালাত
আদায় না করায়। পরে এই লোক তাদের সালাত আদায়
করাতে চাইলে লোকেরা তাকে সালাত আদায় করতে নিষেধ করলো এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ তাকে জানিয়ে দিল। সে বিষয়টি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে জানালে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ (ঘটনা
ঠিক)। রাবী (বর্ণনাকারী) বলেন, আমার মনে হয় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে এ কথাও বলেছেন, তুমি আল্লাহ ও তাঁর রসূল কে কষ্ট দিয়েছ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৪৭, সহীহ লিগয়রিহী : বুখারী ৪৮১,
সহীহ আত্ তারগীব ২৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) শু’বাহ বলেন, আমি কাতাদাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আনাস
রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে এ কথা বর্ণনা করতে
শুনেছেন: “মসজিদে থুথু ফেলা একটি পাপের কাজ”? তিনি বললেন, হাঁ। আর এর কাফফারা (প্রতিবিধান)
হলো একে (মাটিতে) পুঁতে ফেলা। (সুনান আদ-দারেমী, ১৪৩২,বুখারী
৪১৫, মুসলিম ৫৫২, মুসনাদুল মাউসিলী ২৭৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) ইবনু উমার বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন, তখন মসজিদে কিবলার দিকে তিনি কফ দেখতে পেলেন।
ফলে তিনি মসজিদের লোকদের উপর ভীষণ রাগ করলেন এবং বললেন: “যখন তোমাদের কেউ সালাতে রত
থাকে, তখন আল্লাহ তার সামনে থাকেন। ফলে সে অবশ্যই (সেদিকে) থুথু ফেলবে না। অথবা- তিনি
বলেছেন: নাক ঝাড়বে না। এরপর তিনি এর স্থানটি ঘষে তুলে ফেলার আদেশ দিলেন, অথবা, তিনি
আদেশ দিলে তা (মলে) বিবর্ণ করে দেয়া হলো।”হাম্মাদ বলেন, আমি কেবল এটা শুনেছি যে, ‘তিনি
বললেন, ওখানে ‘জা’ফরান দ্বারা (মলে দাও)’। (সুনান আদ-দারেমী
১৪৩৪,বুখারী ৭৫৩, ১২১৩; বাইহাকী ২/২৯৩; আহমাদ ২/৬, ১৪১; মুসলিম ৫৪৭ (৫১); আবু দাউদ
৪৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কিবলার দিকে কফ্ ফেললে তার
পরকালীন শাস্তিঃ
ইবনে
উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিবলার
দিকে যে কফ্ ফেলে তার চেহারায় ঐ কফ্ থাকা অবস্থায় সে ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত
করা হবে।
[বলা
বাহুল্য সালাত ছাড়া অন্যান্য অবস্থাতেও কেবলার দিকে থুথু বা কফ্ ফেলা বৈধ নয়।] (হাদীস সম্ভার, ৫৮৯, বাযযার ৫৯০৪, ইবনে খুযাইমাহ ১৩১৩, ইবনে
হিব্বান ১৬৩৮, সহীহ তারগীব ২৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) সালাতরত অবস্থায় অনিষ্টকর জীব-জন্তু মারা বৈধঃ
সালাত
পড়তে পড়তে সাপ, বিছা, বোলতা প্রভৃতি বিষধর ও অনিষ্টকর জন্তু মারা বৈধ। আল্লাহর রসূল
(সাঃ) বলেন, “সালাতে দুই কালো জন্তু; সাপ ও বিছা মেরে ফেলো।”
হাদিসটি
নিম্নরুপঃ
আবু
হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, সালাতরত অবস্থায় দু’টি কালো প্রাণিকে মেরে
ফেলার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ করেছেন। ইয়াহইয়া বলেন:
কালো রং এর প্রাণী দু’টি হলো: সাপ ও বিচ্ছু। (সুনান আদ-দারেমী,
১৫৪২,সহীহ ইবনু হিব্বান ২৩৫১, ২৩৫২ ও মাওয়ারিদুয যাম’আন ৫২৬, ৫২৮, আহমাদ, মুসনাদ ২/২৩৩,
আবূদাঊদ, সুনান ৯২১, তিরমিযী, সুনান ৩৯০, ইবনে মাজাহ্, সুনান ১২৪৫, ত্বায়ালিসী ২৫৩৮,
আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ ১৭৫৪, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ ৮৯৬, হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২৫৬,
বায়হাকী ২/২৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
অনুরুপ
উকুন বা উকুন-জাতীয় পোকাও সালাতে মারা বৈধ। (আলমুমতে’,
শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩৫০)।
(৬) সালাতরত অবস্থায় শরীর চুলকানো বৈধঃ
দেহে
অস্বস্তিকর চুলকানি শুরু হলে সালাত পড়া অবস্থাতেও চুলকানো বৈধ। কারণ, চুলকানিতে নামাযীর
একাগ্রতা নষ্ট হয়। আর চুলকে দিলে অস্বস্তিবোধ দূর হয়ে যায়। সুতরাং এখানে ধৈর্য ধরা
উত্তম নয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩৫০-৩৫১)।
সালাতরত অবস্থায় নড়াচড়া করা
বৈধঃ
ইবনু
‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি তাঁর খালা মু’মিনদের মা মাইমূনাহ (রাযি.)-এর
ঘরে রাত কাটালেন। তিনি বলেন, আমি বালিশের প্রস্থের দিকে শুয়ে পড়লাম, আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সহধর্মিণী বালিশের দৈর্ঘ্যে শয়ন করলেন। অতঃপর
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যরাত বা তার কিছু আগ বা পর পর্যন্ত
ঘুমিয়ে থাকলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠে বসলেন
এবং দু’হাতে মুখমন্ডল মুছে ঘুমের রেশ দূর করলেন। অতঃপর তিনি সূরাহ্ আলে ইমরানের শেষ
দশ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। পরে একটি ঝুলন্ত মশ্কের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং এর পানি দ্বারা
উত্তমরূপে উযূ করে সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) বলেন, আমিও
উঠে পড়লাম এবং তিনি যেমন করেছিলেন, আমিও তেমন করলাম। অতঃপর আমি গিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়ালাম।
তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত আমার মাথার উপরে রেখে
আমার ডান কানে মোচড়াতে লাগলেন (এবং আমাকে তাঁর পিছন হতে ঘুরিয়ে এনে তাঁর ডানপাশে দাঁড়
করিয়ে দিলেন)। তিনি তখন দু’রাক‘আত সালাত আদায় করলেন, অতঃপর দু’রাক‘আত, অতঃপর দু’রাক‘আত,
অতঃপর দু’রাক‘আত, অতঃপর দু’রাক‘আত, অতঃপর (দু’রাক‘আতের সাথে আর এক রাক‘আত দ্বারা বেজোড়
করে) বিতর আদায় করে শুয়ে পড়লেন। শেষে (ফজরের জামা‘আতের জন্য) মুআয্যিন এলেন। তিনি দাঁড়িয়ে
সংক্ষিপ্ত (কিরাআতে) দু’রাক‘আত (ফজরের সুন্নাত) আদায় করলেন। অতঃপর বেরিয়ে গেলেন এবং
ফাযরের সালাত আদায় করলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ১১৯৮,
১১৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যেহেতু রাসুল সা. সালাতে তিনি নিজের হাত নড়াচড়া করেছেন তাই শরীর চুলকালে
নিজের হাত দিয়ে চুলকানো জায়েজ। নচেৎ সালাতের একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যাবে।
(৭) প্রয়োজনবোধে চলাচল অবস্থায় (সামনে-পিছনে) সালাত
আদায় করা বৈধঃ
শত্রুর
ভয় হলে (জিহাদের ময়দানে) চলা অবস্থায় সালাত বৈধ। মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা সালাত সমূহের
প্রতি -বিশেষ করে মধ্যবর্তী (আসরের) সালাতের প্রতি- যত্নবান হও এবং আল্লাহর সম্মুখে
বিনীতভাবে দাঁড়াও। কিন্তু যদি (শত্রুর) ভয় কর, তাহলে চলা অথবা সওয়ার অবস্থায় (সালাত
পড়)।” (কুরআন মাজীদ ২/২৩৮-২৩৯)।
‘আয়িশাহ্
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নফল সালাত
(সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন এমতাবস্থায় দরজা বন্ধ থাকত। আমি এসে দরজা খুলতে বলতাম।
তিনি হেঁটে এসে দরজা খুলে দিয়ে আবার মুসল্লায় চলে যেতেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, দরজা
ছিল ক্বিবলা মুখী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০০৫,
সুনান আবূদাঊদ ৯২২, সহীহ আবূ য়্যা’লা ৪৪০৬, দারাক্বুত্বনী, সুনান, বায়হাকী ২/২৬৫, আত্
তিরমিযী ৬০১, নাসায়ী ১২০৬, আহমাদ ২৪০২৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
একদা তিনি সূর্যগ্রহণের সালাতে বেহেশ্ত দেখে অগ্রসর এবং দোযখ দেখে
পশ্চাদপদ হয়েছিলেন। (বুখারী ১০৫২, মুসলিম, সহীহ ৫২৫)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ্
ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
সময় সূর্যগ্রহণ হল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সালাত আদায় করেন
এবং তিনি সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ পাঠ করতে যত সময় লাগে সে পরিমাণ দীর্ঘ কিয়াম করেন। অতঃপর
দীর্ঘ রুকূ‘ করেন। অতঃপর মাথা তুলে পুনরায় দীর্ঘ কিয়াম করেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের
চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকূ‘ করলেন। তবে তা প্রথম রুকূ‘র চেয়ে অল্পস্থায়ী
ছিল। অতঃপর তিনি সিজদা্ করেন। আবার দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ কিয়াম করলেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের
চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর আবার দীর্ঘ রুকূ‘ করেন, তবে তা পূর্বের রুকূ‘র চেয়ে অল্পস্থায়ী
ছিল। অতঃপর তিনি মাথা তুললেন এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কিয়াম করলেন, তবে তা প্রথম কিয়াম
অপেক্ষা অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকূ‘ করেন, তবে তা প্রথম রুকূ‘ অপেক্ষা অল্পস্থায়ী
ছিল। অতঃপর তিনি সিজদা্ করেন এবং সালাত শেষ করেন। ততক্ষণে সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয়ে গিয়েছে।
তারপর
তিনি বললেনঃ নিঃসন্দেহে সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন।
কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে এ দু’টির গ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা গ্রহণ দেখবে তখনই
আল্লাহ্কে স্মরণ করবে। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের
জায়গা হতে কি যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। তিনি বললেনঃ আমিতো
জান্নাত দেখেছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে
দুনিয়া কায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো
হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি। আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা
নারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কী কারণে? তিনি বললেনঃ তাদের কুফরীর কারণে।
জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে? তিনি জবাব দিলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য
থাকে এবং ইহ্সান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচরণ কর, অতঃপর
সে তোমার হতে (যদি) সামান্য ত্রুটি পায়, তা হলে বলে ফেলে, তোমার কাছ থেকে কখনো ভাল
ব্যবহার পেলাম না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১০৫২,
১২১২, মুসলিম ১০/৩, হাঃ ৯০৭, আহমাদ ২৭১১, ৩৩৭৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৯৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সাহাবাগণকে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে তিনি মিম্বরে চড়ে সালাত পড়েছেন। মিম্বরের
উপর রুকূ করে পিছ-পায়ে নেমে নিচে সিজদাহ করেছেন। (বুখারী ৯১৭, মুসলিম, সহীহ ৫৪৪) ।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
হাযিম ইবনু দ্বীনার হতে বর্ণিত যে, (একদিন) কিছু লোক সাহল ইবনু সা‘দ সা‘ঈদীর নিকট আগমন
করে এবং মিম্বরটি কোন্ কাঠের তৈরি ছিল, এ নিয়ে তাদের মনে প্রশ্ন জেগে ছিল। তারা এ সম্পর্কে
তাঁর নিকট জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি সম্যকরূপে অবগত আছি যে, তা কিসের
ছিল। প্রথম যেদিন তা স্থাপন করা হয় এবং প্রথম যে দিন এর উপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসেন তা আমি দেখেছি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আনসারদের অমুক মহিলার (বর্ণনাকারী বলেন, সাহল (রাযি.) তার নামও উল্লেখ করেছিলেন) নিকট
লোক পাঠিয়ে বলেছিলেন, তোমার কাঠমিস্ত্রি গোলামকে আমার জন্য কিছু কাঠ দিয়ে এমন জিনিস
তৈরি করার নির্দেশ দাও, যার উপর বসে আমি লোকদের সাথে কথা বলতে পারি। অতঃপর সে মহিলা
তাকে আদেশ করেন এবং সে (মদিনা হতে নয় মাইল দূরবর্তী) গাবা’র ঝাউ কাঠ দ্বারা তা তৈরি
করে নিয়ে আসে। মহিলাটি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট তা পাঠিয়েছেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আদেশে এখানেই তা স্থাপন করা হয়। অতঃপর আমি
দেখেছি, এর উপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেছেন। এর
উপর উঠে তাকবীর দিয়েছেন এবং এখানে (দাঁড়িয়ে) রুকূ‘ করেছেন। অতঃপর পিছনের দিকে নেমে
এসে মিম্বারের গোড়ায় সিজদা্ করেছেন এবং (এ সিজদা্) পুনরায় করেছেন, অতঃপর সালাত শেষ
করে সমবেত লোকদের দিকে ফিরে বলেছেনঃ হে লোক সকল! আমি এটা এ জন্য করেছি যে, তোমরা যেন
আমার অনুসরণ করতে এবং আমার সালাত শিখে নিতে পার। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৯১৭, ৩৭৭; মুসলিম ৫/০ হাঃ ৫৪৪৪, আহমাদ ২২১৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৮৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
একদা আবূ বাকার (সাঃ) এর ইমামতি কালে মহানবী (সাঃ) এসে উপস্থিত হলে
তিনি (আবূ বাকার) পিছ-পায়ে সরে এসেছিলেন। (বুখারী ৬৮০, ১২০৫) ।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আনাস
ইবনু মালিক আনসারী (রাযি.) যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অনুসারী, খাদিম
এবং সাহাবী ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
অন্তিম রোগে পীড়িত অবস্থায় আবূ বাকর (রাযি.) সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করতেন। অবশেষে
যখন সোমবার এল এবং লোকেরা সালাতের জন্য কাতারে দাঁড়াল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হুজরার পর্দা উঠিয়ে আমাদের দিকে তাকালেন। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন,তাঁর চেহারা
যেন কুরআনে করীমের পৃষ্ঠা (এর ন্যায় ঝলমল করছিল)। তিনি মুচকি হাসলেন। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পেয়ে আমরা খুশীতে প্রায় আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম এবং আবূ
বাকর (রাযি.) কাতারে দাঁড়ানোর জন্য পিছন দিকে সরে আসছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো সালাতে বেরিয়ে আসবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে
ইশারায় জানালেন যে, তোমরা তোমাদের সালাত পূর্ণ করে নাও। অতঃপর তিনি পর্দা ছেড়ে দিলেন।
সে দিনই তাঁর ওফাত হয়।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৮০, ৬৮১,৭৫৪,১২০৫,৪৪৪৮,মুসলিম ৪/২১ হাঃ
৪১৯, আহমাদ ১৩০২৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আবূ বারযাহ্ আসলামী (রাঃ) ফরয সালাত পড়তে পড়তে তাঁর ঘোড়া পালাতে শুরু
করলে তিনি তার পিছনে পিছনে গিয়েছিলেন। (বুখারী ১২১১ নং, আহমাদ, মুসনাদ, বায়হাকী)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আযরাক্ব
ইবনু ক্বায়স (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আহওয়ায শহরে হারুরী (খারিজী) সম্প্রদায়ের
বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিলাম। যখন আমরা নহরের তীরে ছিলাম তখন সেখানে এক ব্যক্তি এসে সালাত
আদায় করতে লাগল আর তার বাহনের লাগাম তার হাতে আছে। বাহনটি (ছুটে যাওয়ার জন্য) টানাটানি
করতে লাগল, তিনিও তার অনুসরণ করতে লাগলেন। রাবী শু‘বাহ (রহ.) বলেন, তিনি ছিলেন আবূ
বারযাহ আসলামী (রাযি.)। এ অবস্থা দেখে এক খারিজী বলে উঠলো, ইয়া আল্লাহ্! এ বৃদ্ধকে
কিছু করুন। বৃদ্ধ সালাত শেষ করে বললেন- আমি তোমাদের কথা শুনেছি। আমি আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছয়, সাত কিংবা আট যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি
এবং আমি তাঁর সহজীকরণ লক্ষ্য করেছি। আমার বাহনটির সাথে আগপিছ হওয়া বাহনটিকে তার চারণ
ভূমিতে ছেড়ে দেয়ার চেয়ে আমার নিকট অধিক প্রিয়। কেননা, তা আমার জন্য কষ্টদায়ক হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১২১১, ৬১২৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১১৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) সালাতরত অবস্থায় কাঁধে ছেলে তোলা যাবেঃ
নবী
মুবাশ্শির (সাঃ) ইমামতি করতেন, আর আবুল আসের শিশু কন্যা তাঁর কাঁধে থাকত। অতঃপর যখন
তিনি রুকূ করতেন, তখন তাকে নিচে নামিয়ে দিতেন। পুনরায় যখন সিজদাহ থেকে উঠতেন, তখন আবার
কাঁধে তুলে নিতেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
লোকজন নিয়ে সালাত পড়াতে দেখেছি। এমতাবস্থায়
নাতনি উমামাহ্ বিনতু আবুল ‘আস তখন তাঁর কাঁধে থাকত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
যখন রুকূ‘তে যেতেন উমামাকে নিচে নামিয়ে রাখতেন। আবার যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) সিজদা হতে মাথা উঠাতেন, তাকে আবার কাঁধে উঠিয়ে দিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৮৪, সহীহ বুখারী ৫৯৯৬, মুসলিম ৫৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৯) সালাতরত অবস্থায় শিশুদের ঝগড়া থামানোঃ
একদা
বনু ‘আবদুল মুত্তালিবের দু’টি বালিকা এসে কাতারের মধ্যে প্রবেশ করল। তিনি সালাত পড়ছিলেন।
সেই অবস্থায় তিনি উভয়কে দু’দিকে সরিয়ে দিলেন। (আবূদাঊদ,
সুনান ৭১৬, ৭১৭, সহিহ,নাসাঈ, সুনান ৭২৭ নং)।
হাদিসটি নিম্নরুপ:
(ক) আবূস সাহবা সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমরা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট সালাত নষ্ট হওয়ার কারণ সম্পর্কে আলোচনা করলাম। ইবনু
‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, একদা আমি এবং বনু ‘আবদুল মুত্তালিবের এক বালক গাধার পিঠে আরোহণ
করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলাম। তখন তিনি সালাত আদায়
করছিলেন। সে ও আমি গাধার পিঠ থেকে নামলাম এবং আমরা গাধাটিকে কাতারের সামনে ছেড়ে দিলাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে আপত্তিকর মনে করলেন না। এ সময় বনু
‘আবদুল মুত্তালিবের দু’টি বালিকা এসে কাতারের মধ্যে প্রবেশ করল। এতেও তিনি কোন ভ্রুক্ষেপ
করলেন না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭১৬, নাসায়ী ৭৫৩,
আহমাদ (১/২৬৫/৩৪১), ইবনু খুযাইমাহ ৮৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) মানসূর (রহঃ) হতে একই সানাদে উপরোক্ত
হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তখন ‘আবদুল মুত্তালিব গোত্রের দু’টি
মেয়ে ঝগড়ারত অবস্থায় আসল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ধরে
ফেললেন। ‘উসমান বলেন, তারপর উভয়কে পৃথক করে দিলেন। দাউদ বলেন, তারপর তাদের একজনকে অপরজন
হতে আলাদা করে দিলেন কিন্তু তিনি এরূপ করা আপত্তিকর মনে করলেন না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১০) সালাতরত অবস্থায় খোঁচা দিয়ে অন্যকে সরে যেতে ইঙ্গিত
করাঃ
আয়েশা
রা. মহানবী (সাঃ) এর সালাত আদায়কালে তাঁর সামনে কিবলার দিকে পা মেলে শুয়ে থাকতেন। তিনি
(অন্ধকারে) যখন সিজদাহ করতেন, তখন হাতের খোঁচা দিয়ে তাঁকে (স্ত্রীকে) পা সরিয়ে নিতে
ইঙ্গিত করতেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে ঘুমাতাম, আমার পা দু’খানা
তাঁর ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হর দিকে ছিল। তিনি সিজদা্য় গেলে আমার পায়ে মৃদু চাপ দিতেন,
তখন আমি পা দু’খানা গুটিয়ে নিতাম। আর তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আমি পা দু’খানা প্রসারিত করতাম।
তিনি বলেনঃ সে সময় ঘরগুলোতে বাতি ছিল না। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৮২, ৩৮৩, ৩৮৪, ৫০৮, ৫১১, ৫১২, ৫১৩, ৫১৪, ৫১৫, ৫১৯, ৯৯৭, ১২০৯,
৬২৭৬; মুসলিম ৪/৫১, হাঃ ৫১২, আহমাদ ২৫৭০৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৩৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) সালাতরত অবস্থায় ইশারায় সালামের জওয়াব দেওয়া বৈধঃ
নামাযী
সালাতে রত থাকলেও তাকে সালাম দেওয়া বিধেয় এবং নামাযীর সালাত পড়া অবস্থাতেই সালামের
জওয়াব দেওয়া কর্তব্য। তবে মুখে নয়, হাত বা আঙ্গুলের ইশারায়।
(ক) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হাবাশাহ্ যাওয়ার পূর্বে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
তাঁর সালাতরত অবস্থায় সালাম দিতাম। তিনিও আমাদের সালামের উত্তর দিতেন। আমরা যখন হাবাশাহ্
হতে ফিরে (মাদীনায়) আসি আমি তখন তাকে সালাতরত অবস্থায় পাই। তারপর আমি তাকে সালাম দিলাম
কিন্তু তিনি আমাকে সালামের জবাব দিলেন না সালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত, তরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন যে বিষয় ইচ্ছা করেন সে বিষয় আদেশ জারী
করেন। আল্লাহ এখন সালাতে কথাবার্তা না বলার আদেশ জারী করেছেন। অতঃপর তিনি আমার সালামের
উত্তর দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৮৯, সহীহ আবূ দাঊদ ৯২৪, সহিহ মুসলিম ৫৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বিলালকে
প্রশ্ন করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতরত থাকা অবস্থায় তারা রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম দিলে তিনি সালামের জবাব কিভাবে দিতেন? বিলাল
উত্তরে বললেন, তিনি হাত দিয়ে (সালামের জবাবে) ইশারা করতেন। (তিরমিযী; নাসায়ীর বর্ণনাও
এমনই। তবে তাতে বিলাল-এর স্থলে সুহায়ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে বলে উল্লেখ হয়েছে।)
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৯১, সহীহ আত্ তিরমিযী ৩৬৮,
নাসায়ী ১১৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) সুহাইব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি
বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম।
তিনি তখন নামাযে ছিলেন। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি ইশারায় আমার সালামের জবাব দিলেন।
(সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৬৭, সহীহ আবু দাউদ ৮৫৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) একদা আবূ হুরাইরা (রাঃ) তাঁকে সালাত
পড়া অবস্থায় সালাম দিলে তিনি ইশারায় উত্তর দিয়েছিলেন। (ত্বাবারানী,
মু’জাম, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৬/৯৯৮)।
(ঙ) নাফি‘ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে গমন করলেন, তখন সে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)
আদায় করছিল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাকে সালাম প্রদান করলেন। সে ব্যক্তি ‘আবদুল্লাহ
ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সালামের উত্তর স্বশব্দে দিলো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার
নিকট ফিরে গেলেন এবং বললেন, তোমাদের কোন লোককে সালাতরত অবস্থায় সালাম দেয়া হলে তার
উত্তর স্বশব্দে দিতে নেই, বরং নিজের হাত দিয়ে ইশারা করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০১৩, সহীহ
মালিক ৪০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) সালামের জওয়াব ছাড়া সালাতে প্রয়োজনে
অন্য জরুরী কথাও ইঙ্গিত ও ইশারার মাধ্যমে বুঝানো যায়। একদা মহানবী (সাঃ) সালাত আদায়
করছিলেন। তিনি সিজদাহ করলে হাসান (রাঃ) ও হুসাইন (রাঃ) তাঁর পিঠে চড়ে বসলে সাহাবীগণ
বারণ করলেন। কিন্তু তিনি ইশারা করে বললেন, “ওদেরকে নিজের অবস্থায় ছেড়ে দাও।” অতঃপর
সালাত শেষ করলে তিনি উভয়কে কোলে রেখে বললেন, “যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসে, সে যেন এই
দু’জনকেও ভালোবাসে।” (ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ ৭৭৮, বায়হাকী
২/২৬৩)।
এখানে
উল্লেখ্য যে, সালাতরত অবস্থায় নামাজীকে বাহিরে থেকে মুছল্লী সালাম দিতে পারবে তবে নামাজী
মুখে উচ্চারন করে কোনো জবাব দিবে না, আঙ্গুলের ইশারায় জবাব দিবে। তদ্রুপ পায়খানা/পেশাবরত
অবস্থায় বাহিরে থেকে সালাম দেয়া যাবে। তবে সালামের উত্তর মুখে বা ইশারায় দেয়া যাবে
না। পেশাব পায়খানার ফ্রেশ হয়ে সালামের উত্তর দিবে।
(১২) সালাতরত অবস্থায় কাউকে কোন জরুরী ব্যাপারে সতর্ক
করা বৈধঃ
নামাযী
সালাতে রত আছে এ কথা জানাতে অথবা ইমাম সালাতে কিছু ভুল করলে তার উপর তাঁকে সতর্ক করতে
পুরুষদের জন্য ‘সুবহা-নাল্লাহ্’ বলা এবং মহিলাদের জন্য হাততালি দেওয়া বিধেয়।
হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ
(ক) সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সালাতের মধ্যে
যে ব্যক্তির কাছে কোন কিছু আপতিত হয় সে ব্যক্তি যেন ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ পড়ে নেয়। আর হাত
তালি একমাত্র মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট।
আরো
এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তাসবীহ পড়া পুরুষদের
বেলায়, আর হাত তালি দেয়া নারীদের বেলায় প্রযোজ্য। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৮৮, সহীহ বুখারী ৬৮৩, ১২০৩,
মুসলিম ৪২১, ৪২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) নারী
এমন এক সৃষ্টি, যার রুপ, সৌরভ ও শব্দে পুরুষের মন প্রকৃতিগতভাবে চকিত হয়ে ওঠে। ফলে,
যাতে সালাতের সময় তাদের মোহ্নীয় কণ্ঠস্বরে পুরুষরা সংকটে না পড়ে তার জন্য শরীয়তের
এই বিধান। পক্ষান্তরে শয়তান মানুষের শিরায় শিরায় ফিরে বেড়ায়।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
সাফিয়্যাহ
বিনতু হুয়াই (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ই‘তিকাফ অবস্থায় ছিলেন। আমি রাতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসলাম। অতঃপর তাঁর সঙ্গে কিছু
কথা বললাম। অতঃপর আমি ফিরে আসার জন্য দাঁড়ালাম। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-ও আমাকে পৌঁছে দেয়ার জন্য আমার সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন। আর তাঁর বাসস্থান ছিল
উসামাহ ইবনু যায়দের বাড়িতে। এ সময় দু’জন আনসারী সে স্থান দিয়ে অতিক্রম করল। তারা যখন
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখল তখন তারা শীঘ্র চলে যেতে লাগল। তখন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা একটু থাম। এ সাফিয়্যা বিন্তে হুয়াই। তারা
বললেন, সুবহানাল্লাহ! হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, মানুষের রক্তধারায় শয়তান প্রবাহমান
থাকে। আমি শংকাবোধ করছিলাম, সে তোমাদের মনে কোন খারাপ ধারণা অথবা বললেন অন্য কিছু সৃষ্টি
করে না কি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন, ৩২৮১, ২০৩৫,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৪৮, সহিহ মুসলিম ২১৭৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
এবং
পুরুষদের জন্য নারী হল সবচেয়ে বড় ফিতনার জিনিস।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
উসামাহ
ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পুরুষের জন্য
স্ত্রীজাতি অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর কোন ফিতনা আমি রেখে গেলাম না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫০৯৬, মুসলিম ২৭৪০, আহমাদ
২১৮০৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
এখান
থেকে বুঝা যায় যে, মহিলাদের পৃথক জামাআত হলে এবং সেখানে কোন বেগানা পুরুষ না থাকলে
হাততালি না দিয়ে তাসবীহ পড়ে মহিলারা (মহিলা) ইমামকে সতর্ক করতে পারে। কারণ, তাসবীহ
হল সালাতের এক অংশ। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন
৩/৩৬২-৩৬৩)।
মুক্তাদীদের
মধ্যেও কেউ কিছু ভুল করলে, (যেমন সিজদায় বা বৈঠকে ঘুমিয়ে পড়লে) তাকেও সতর্ক করার জন্য
তাসবীহ ব্যবহার চলবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩৬৭-৩৬৮)।
(১৩) সালাতরত অবস্থায় ইমামের ক্বিরাআত বা ভুল সংশোধন করা বৈধঃ
সালাতে
কুরআন পাঠ করতে করতে যদি ইমাম সাহেব কোন আয়াত ভুলে যান, থেমে যান অথবা ভুল পড়েন, তাহলে
‘লুকমাহ্’ দিয়ে তা মনে পড়ানো, ধরিয়ে দেওয়া বা সংশোধন করা বিধেয়।
মহানবী
(সাঃ) বলেন,“আমি তোমাদেরই মত একজন মানুষ। আমিও ভুলে যাই, যেমন তোমরা ভুলে যাও। সুতরাং
আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে মনে পড়িয়ে দিও।”
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ
(রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করলেন। রাবী ইব্রাহীম
(রহ.) বলেনঃ আমার জানা নেই, তিনি বেশী করেছেন বা কম করেছেন। সালাম ফিরানোর পর তাঁকে
বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সালাতের মধ্যে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেনঃ তা কী?
তাঁরা বললেনঃ আপনি তো এরূপ এরূপ সালাত আদায় করলেন। তিনি তখন তাঁর দু’পা ঘুরিয়ে ক্বিবলা
মুখী হলেন। আর দু’টি সিজদা আদায় করলেন। অতঃপর সালাম ফিরলেন। পরে তিনি আমাদের দিকে ফিরে
বললেনঃ যদি সালাত সম্পর্কে নতুন কিছু হতো, তবে অবশ্যই তোমাদের তা জানিয়ে দিতাম। কিন্তু
আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুল করে থাক, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই।
আমি কোন সময় ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সালাত সম্বন্ধে সন্দেহে
পতিত হলে সে যেন নিঃসন্দেহ হবার চেষ্টা করে এবং সে অনুযায়ী সালাত পূর্ণ করে। অতঃপর
যেন সালাম ফিরিয়ে দু’টি সিজদা দেয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন), ৪০১, ৪০৪, ১২২৬, ৬৬৭১, ৭২৪৯; মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৫৭২, ৪১৭৪ আহমাদ, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৩৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
একদা
তিনি সালাতে কুরআন পড়তে পড়তে ভুলে কিছু অংশ ছেড়ে দিলেন। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর
রসূল! অমুক অমুক আয়াত আপনি ছেড়ে দিয়েছেন, (পড়েন নি)। তিনি বললেন, “তুমি আমাকে মনে পড়িয়ে
দিলে না কেন?”
একদা
সালাতে ক্বিরাআত পড়তে পড়তে তাঁর কিছু গোলমাল হল। সালাম ফেরার পর উবাই (রাঃ) এর উদ্দেশ্যে
তিনি বললেন, “তুমি আমাদের সাথে সালাত পড়লে?” উবাই (রাঃ) বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন,
“তবে ভুল ধরিয়ে দিলে না কেন?”
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
মিসওয়ার
ইবনু ইয়াযীদ আল-মালিকী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করি। সালাতের ক্বিরাআতে তাঁর পঠিত আয়াতের অংশ বিশেষ
ভুলবশত ছুটে গেলে সালাত শেষে এক ব্যক্তি তাঁকে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আপনি অমুক অমুক
আয়াত ছেড়ে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি আমাকে
তা স্মরণ করিয়ে দাওনি কেন? সুলাইমানের বর্ণনায় রয়েছেঃ আমি ভেবেছিলাম, তা মানসূখ হয়ে
গেছে।
ইবনু
‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সালাতে
ক্বিরাআত পাঠে আটকে গেলেন। সালাত শেষে তিনি উবাই ইবনু কা‘বকে বললেন, তুমি কি আমাদের
সাথে সালাত আদায় করেছো? তিনি বললেন, হাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তোমাকে কিসে বাঁধা দিয়েছে (আমাকে আয়াত মনে করিয়ে দিতে)? (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৯০৭, বুখারী ১৯৪, আহমাদ, ইবনু খুযাইমাহ ১৬৪৮,
বায়হাকী ৩/২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উল্লেখ্য
যে, সূরা ফাতিহা সালাতের একটি রুক্ন অথবা ফরয। সুতরাং তা পড়তে ইমাম কোন প্রকারের ভুল
করলে (যাতে অর্থ বদলে যায় তা) মুক্তাদীদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া ওয়াজেব। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩৪৬)।
(১৪) প্রয়োজনে কাপড় বা পাগড়ীর উপর সিজদাহ করা যাবেঃ
অতি
গ্রীষ্ম বা শীতের সময় সিজদার স্থানে কপাল রাখা কষ্টকর হলে চাদর, আস্তীন বা পাগড়ীর বাড়তি
অংশ ঐ স্থানে রেখে সিজদাহ করা বৈধ।
হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ
(ক) আনাস
ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সাথে সালাত আদায় করতাম। আমাদের কেউ কেউ সিজদা কালে বেশী গরমের কারণে কাপড়ের প্রান্ত
সিজদার স্থানে রাখতো। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৩৮৫, ৫৪২, ১২০৮; মুসলিম ৬২০, আহমাদ ১১৯৭০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৩৭৮, তিরমিযী ৫৮৪, নাসায়ী ১১১৬, আবূ দাঊদ ৬৬০, আহমাদ ১১৫৫৯ দারিমী ১৩৩৭, ইরওয়াহ ৩১১,
সহীহ আবী দাউদ ৬৬৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে যুহরের সালাত আদায় করতাম।
আমি এক মুষ্টি পাথর হাতে নিতাম আমার হাতের তালুতে শীতল করার জন্যে। প্রচন্ড গরম থেকে
বাঁচার জন্যে এ পাথরগুলোকে সাজদার স্থানে রাখতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০১১, আবূ দাঊদ ৩৯৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(১৫) পরিস্কার জুতা বা চপ্পল পরে মসজিদে প্রবেশ ও সালাত
আদায় করা বৈধঃ
জুতা
পাক-সাফ হলেও অনেকে বুযুর্গদের সাথে সাক্ষাতের সময় তা পায়ে রাখে না। যা শ্রদ্ধার অতিরঞ্জন
এবং বিদআত। বলাই বাহুল্য, এমন লোকদের নিকট জুতা পায়ে নামায পড়া তাদের কল্পনার বাইরে।
কিন্তু
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) জুতা পায়ে সালাত পড়তেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
মাসলামাহ সা‘ঈদ ইবনু ইয়াযীদ আল-আযদী (রহ.) বলেনঃ আমি আনাস ইবনু মালিক (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস
করেছিলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর না‘লাইন (চপ্পল) পরে সালাত আদায়
করতেন? তিনি বললেন, হাঁ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৩৮৬, ৫৮৫০; মুসলিম ৫/১৪, হাঃ ৫৫৫, আহমাদ ১১৯৭৬, আধুনিক প্রকাশনী,৩৭৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৩৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আব্দুল্লাহ
বিন আম্র বলেন, আমি নবী (সাঃ) কে খালি পায়ে ও জুতা পায়ে উভয় অবস্থাতেই সালাত পড়তে
দেখেছি।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আমর
ইবনু শু‘আইব (রাঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কখনো খালি পায়ে আবার কখনো জুতা
পরে সালাত আদায় করতে দেখেছি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৬৫৩, ইবনু মাজাহ ১০৩৮), আহমাদ (২/১৭৪), হায়যামী ‘মাজমাউয যাওয়ায়িদ’ (৩/১৫৯)।হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
রসূল
(সাঃ) বলেন, “যখন তোমাদের মধ্যে কেউ সালাত পড়বে, তখন সে যেন তার জুতা পরে নেয় অথবা
খুলে তার দু’ পায়ের মাঝে রাখে। আর সে যেন তার জুতা দ্বারা অপরকে কষ্ট না দেয়।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমাদের কেউ সালাত আদায়কালে জুতা খুলে যেন এমন জায়গায় না রাখে যাতে অন্যের কষ্ট হয়।
বরং জুতাজোড়া যেন দু’ পায়ের মাঝখানে রেখে দেয় অথবা তা পরেই সালাত আদায় করে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৫৫, ইবনু হিব্বান (৩৫৮), ইবনু
খুযাইমাহ (১০০৯), বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (২/৪৩২), হাকিম (৯১/২৬০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
তিনি
আরো বলেন, “তোমরা ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধাচরণ কর (এবং জুতা পরে সালাত পড়)। কারণ, ওরা ওদের
জুতো ও চামড়ার মোজায় সালাত পড়ে না।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ই‘য়ালা
ইবনু শাদ্দাদ ইবনু আওস থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ইয়াহূদীদের বিপরীত কর। তারা জুতা এবং মোজা পরে সালাত
আদায় করে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৫২, বায়হাক্বী
‘সুনানুল কুবরা’ (২/৪৩২), হাকিম (১/২৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জুতা
খুলে সালাত পড়লে এবং মসজিদে জুতা রাখার কোন নির্দিষ্ট জায়গা না থাকলে যদি বাম পাশে
কেউনা থাকে তাহলে বাম পাশে, নচেৎ দুই পায়ের মাঝে রাখতে হবে। ডান দিকে রাখা যাবে না।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমাদের কেউ যেন সালাত আদায়কালে জুতা খুলে তার ডান পাশে ও বাম পাশে না রাখে। কারণ তা
অন্যের ডান পাশে হবে। অবশ্য বাম পাশে কেউ না থাকলে (রাখতে পারবে)। তবে জুতাজোড়া উভয়
পায়ের মধ্যখানে রাখাই শ্রেয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৬৫৪, হাকিম (১/২৫৯), বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (২/৪৩২), ইবনু খুযাইমাহ (১০১৬)।হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
অবশ্য
জুতায় ময়লা বা নাপাকী লেগে থাকলে তা পরে সালাত হয় না। নাপাকী বা ময়লা মাটিতে বা ঘাসে
রগড়ে মুছে দূর করে নিয়ে তাতে সালাত পড়া যায়। সালাতের মাঝে জুতায় ময়লা লেগে আছে দেখলে
বা জানতে পারলে তা সাথে সাথে খুলে ফেলা জরুরী।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
সাঈদ আল-খদুরী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের নিয়ে সালাত আদায়কালে তাঁর জুতাজোড়া খুলে তাঁর বাম পাশে রেখে
দিলেন। এ দৃশ্য দেখে লোকেরাও তাদের জুতা খুলে রাখল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সালাত শেষে বললেনঃ তোমরা তোমাদের জুতা খুললে কেন? তারা বলল, আপনাকে আপনার
জুতাজোড়া খুলে রাখতে দেখে আমরাও আমাদের জুতা খুলে রেখেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম আমার কাছে এসে আমাকে জানালেন, আপনার
জুতাজোড়ায় নাপাকি লেগে আছে। তিনি আরো বললেন, তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন
তার জুতাজোড়া দেখে নেয়। তাতে নাপাকি দেখতে পেলে যেন জমিনে তা ঘষে নিয়ে পরিধান করে সালাত
আদায় করে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৫০, আহমাদ (৩/২০,
৯২) দারিমী, ১৩৭৮, ইবনু খুযাইমাহ ২/৪৩১, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ২৮৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
খেয়াল
রাখার বিষয় যে, মসজিদ পাকা ও গালিচা-বিছানো হলে তার ভিতরে জুতা পরে গিয়ে নোংরা করা
বৈধ নয়। মসজিদের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার খেয়াল অবশ্যই জরুরী।
(১৬)
মোজা পরে সালাত আদায় করা বৈধঃ
হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ
(ক) হাম্মাম ইবনু হারিস (রহ.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আমি জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযি.)-কে দেখলাম যে, তিনি পেশাব করলেন। অতঃপর
উযূ করলেন আর উভয় মোজার উপরে মাসেহ করলেন। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন। তাঁকে
জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কেও এরূপ করতে
দেখেছি। ইবরাহীম (রহ.) বলেনঃ এ হাদীস মুহাদ্দিসীনের নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয়। কারণ জারীর
(রাযি.) ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেষ সময়ে ইসলাম গ্রহণকারীদের
মধ্যে একজন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৮৭, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৩৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে উযূ করিয়েছি। তিনি (উযূর সময়) মোজা দু’টির
উপর মাসহ(মাসেহ) করলেন ও সালাত আদায় করলেন। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৮৮, আধুনিক প্রকাশনী ৩৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৮১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(১৭) সালাতরত অবস্থায় মনে
অন্য চিন্তা এসে পড়লে করণীয়ঃ
অনিচ্ছা
সত্ত্বেও সালাতে অন্য চিন্তা এসে পড়লে সালাত বাতিল হয়ে যায় না। অবশ্য অন্য চিন্তা এনে
দেওয়ার কাজ শয়তানই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে করে থাকে। শয়তান আল্লাহকে বলল,
“অতঃপর
সে বলল, ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তেমনি তাদের সবাইকে
পৃথিবীতে নানারূপ সৌন্দর্যে প্রলুব্ধ করব এবং তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দেব। তবে যারা আপনার
একনিষ্ঠ বান্দা, তাদের ব্যতীত”। (হিজর ১৫/৩৪-৪০; ছোয়াদ
৩৮/৭৯-৮৩)।
যেহেতু
সিজদাহ করার হুকুম অমান্য করায় তাকে শয়তান বানানো হয়েছে তাই শয়তান সালাতের মধ্যেই মুছল্লীকে
অন্যমনস্ক করে তোলে।
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেনঃ সালাতের আযান হলে
শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায় যাতে সে আযান শুনতে না পায়। তখন তার পশ্চাদ-বায়ু নিঃসরণ হতে
থাকে। মুআয্যিন আযান শেষে নীরব হলে সে আবার এগিয়ে আসে। আবার ইক্বামাত(ইকামত/একামত)
বলা হলে পালিয়ে যায়। মুআয্যিন ইক্বামাত শেষ করলে এগিয়ে আসে। তখন সে মুসল্লীকে বলতে
থাকে, (ওটা) স্মরণ কর, যে বিষয় তার স্মরণে ছিল না। শেষ পর্যন্ত কত রাক‘আত সালাত আদায়
করল তা মনে করতে পারে না। আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহ.) বলেছেন, তোমাদের কেউ
এরূপ অবস্থায় পড়লে (শেষ বৈঠকে) বসা অবস্থায় যেন দু’টি সিজদা্ করে। এ কথা আবূ সালামাহ
(রহ.) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে শুনেছেন। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ১২২২, ৬০৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৪৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব
সালাতে শয়তানের কারনেই হোক আর নিজের কারনেই হোক অন্যমনস্ক হওয়া অস্বাভাবিক নয়। রাসুল
সা. নিজেও সালাতের মধ্যে ভুলে যেতেন। আর এখান থেকেই সাহু সিজদার উৎপত্তি। সাহাবাগণও
সালাতের মধ্যে অন্যমনস্ক হতেন।
হযরত
উমার (রাঃ) স্বীকার করেন যে, তিনি কোন কোন সালাতে সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত ও প্রেরণ করার
কথা চিন্তা করতেন। (বুখারী বিনা সনদে ২৩৯পৃ:)।
একদা
আসরের সালাতে মহানবী (সাঃ) এর মনে পড়ল যে, তাঁর ঘরে কিছু সোনা বা চাঁদির টুকরা থেকে
গেছে। তাই সালাম ফিরেই সত্বর তিনি কোন পত্নীর গৃহে প্রবেশ করে রাত্রি আসার পূর্বেই
দান করতে আদেশ করে এলেন!
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘উকবাহ
(রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মদিনা্য় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
পিছনে আসরের সালাত আদায় করলাম। সালাম ফিরানোর পর তিনি তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান এবং মুসল্লীগণকে
ডিঙ্গিয়ে তাঁর সহধর্মিণীগণের কোন একজনের কক্ষে গেলেন। তাঁর এই দ্রুততায় মুসল্লীগণ ঘাবড়িয়ে
গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট ফিরে এলেন এবং দেখলেন যে, তাঁর
দ্রুততার কারণে তাঁরা বিস্মিত হয়ে গেছেন। তাই তিনি বললেনঃ আমাদের নিকট রাখা কিছু স্বর্ণের
কথা মনে পড়ে যায়। তা আমার জন্য বাধা হোক, তা আমি পছন্দ করি না। তাই আমি সেটার বণ্ঠনের
নির্দেশ দিলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৮৫১,
১২২১, ,১৪৩০, ৬২৭৫, আধুনিক প্রকাশনী ৮০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সাহাবাগণের
মধ্যে এমন অনেক সাহাবা ছিলেন, যাঁরা আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর সাথে সালাত পড়তেন। কিন্তু
গত রাত্রে এশার সালাতে তিনি (সাঃ) কোন্ সূরা পড়েছেন তা খেয়াল রাখতে পারতেন না।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকে বলে আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) অধিক হাদীস
বর্ণনা করেছে। এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হলে আমি জিজ্ঞেস করলাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম গতরাতে ‘ইশার সালাতে কোন সূরাহ্ পড়েছেন? লোকটি বলল, আমি জানি না।
আমি বললাম, কেন, তুমি কি সে সালাতে উপস্থিত ছিলে না? সে বলল, হাঁ, ছিলাম। আমি বললাম,
আমি কিন্তু জানি তিনি অমুক অমুক সূরাহ্ পড়েছেন। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন). ১২২৩, আধুনিক প্রকাশনী ১১৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১১৫০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অবশ্য
প্রত্যেকের উচিৎ, যথাসম্ভব অন্য চিন্তা এবং অন্যমনস্কতা দূর করা। নচেৎ অন্য খেয়াল বা
চিন্তা যত বেশী হবে, সালাতের সওয়াব তত কম হয়ে যাবে।
(১৮) সিজদার জায়গা সাফ বা পরিস্কার করা বা ফুঁক দেয়া
বৈধঃ
সিজদার
জায়গা পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যে সালাতের মাঝে (সিজদার সময়) ফুঁক দেওয়া বৈধ। আল্লাহর
নবী (সাঃ) সূর্য-গ্রহণের সালাতের সিজদায় ফুঁক দিয়েছেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ
ইবনু ‘আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর যুগে সূর্যগ্রহণ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দাঁড়ান।
তিনি এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন যে, রুকূতেই যাচ্ছেন না। আতঃপর রুকূ‘ করলেন এবং এত
দীর্ঘক্ষণ রুকূ‘ করলেন যে, মাথা উঠাবেন বলে মনে হলো না, অবশ্য পরে উঠালেন এবং এত দীর্ঘক্ষণ
দাঁড়িয়ে থাকলেন যে, সিজদা্ করার সম্ভাবনাই থাকলো না। অতঃপর সিজদা্ করলেন এবং এত দীর্ঘক্ষণ
সিজদা্ করলেন যে, মাথা উঠানোর সম্ভাবনাই থাকলো না। অবশ্য পরে মাথা উঠালেন এবং প্রথম
সিজদার পর এত দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেন যে, দ্বিতীয় সিজদা্ করবেন বলে সম্ভাবনা দেখা গেলো
না।
অতঃপর
সিজদায় গিয়ে এত দীর্ঘক্ষণ সিজদা্ করলেন যে, মাথা উঠাবেন বলে মনে হলো না, অতঃপর উঠালেন
এবং দ্বিতীয় রাক‘আতেও অনুরূপ করলেন। পরে তিনি সর্বশেষ সাজদার মধ্যে করলেন উহঃ উহঃ শব্দ
করলেন এবং বললেনঃ হে আমার প্রভূ! আপনি কি আমাকে এ প্রতিশ্রুতি দেননি যে, আমার বর্তমানে
আপনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন না? আপনি কি আমার সাথে ওয়াদা করেননি যে, তারা ক্ষমা চাইতে
থাকলে আপনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন না? এ বলে তিনি সালাত হতে অবসর হলে সূর্যও গ্রাসমুক্ত
হয়ে যায়। আর এভাবেই হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত), ১১৯৪, নাসায়ী ১৪৮১), তিরমিযী ‘শামায়িলি মাহমুদিয়্যাহ’ (৩০৭) সংক্ষেপে,
আহমাদ (২/১৫৯, হাঃ ৬৪৮৩), ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ১৩৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পক্ষান্তরে
ফুঁক দেওয়া নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে হাদীস সহীহ নয়। (তামামুল
মিন্নাহ্, আলবানী ৩১৩পৃ:)।
অনুরুপ
কাঁকর সরানো নিষিদ্ধ হওয়ার হাদীসও যয়ীফ।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ানোর পর যেন আর কাঁকর না সরায়। কেননা তখন রহমত তার অভিমুখী
হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১০২৭,দারিমী ১৩৮৮, আবূ দাঊদ ৯৪৫ যঈফ,
ইরওয়া ৩৭৭, জামি সগীর ৩১৬ যঈফ, নাসায়ী ১১৯১ যঈফ, তিরমিযী ৩৭৯ যঈফ, মিশকাত ১০০১, ইরওয়াহ
৩৭৭, যঈফ আবূ দাউদ ১৭৫)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
তবে
একবার মাত্র সরানোর অনুমতি আছে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৯৮০
নং)
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
মুআইকীব
(রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতরত অবস্থায় পাথর স্পর্শ
করা সম্পর্কে বলেছেনঃ তোমার যদি তা করতেই হয় তবে মাত্র একবার। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১০২৬, বুখারী ১২০৭, মুসলিম ৫৪১-৩, তিরমিযী
৩৮০, নাসাঈ ১১৯২, আবূ দাঊদ ৯৪৬, ৮৭২, আহমাদ ১৫৮৩, ২৩৯৭, দারিমী ১৩৮৭, সহীহ তারগীব ৫৫৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তবে
না সরানো ১০০টি উৎকৃষ্ট উটনী অপেক্ষা উত্তম। (ইবনে খুযাইমাহ্,
সহীহ, সহিহ তারগিব ৫৫৫ নং)।
সালাতরত
অবস্থায় কাঁকর সরানোকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি (সালাতরত অবস্থায়) কাঁকর স্পর্শ করলো সে বাজে কাজ করলো। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১০২৫, আহমাদ ৯২০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১৯) চাটাই বা মাদুর এর উপর সালাত আদায় করা বৈধঃ
হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ
(ক) আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, তাঁর দাদী
মুলাইকাহ্ (রাযি.) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে খাওয়ার দা’ওয়াত
দিলেন, যা তাঁর জন্যই তৈরি করেছিলেন। তিনি তা হতে খেলেন, অতঃপর বললেনঃ উঠ, তোমাদের
নিয়ে আমি সালাত আদায় করি। আনাস (রাযি.) বলেনঃ আমি আমাদের একটি চাটাই আনার জন্য উঠলাম,
তা অধিক ব্যবহারে কালো হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি সেটা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিলাম। অতঃপর
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের জন্যে দাঁড়ালেন। আর আমি এবং
একজন ইয়াতীম বালক (যুমাইরাহ) তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম আর বৃদ্ধা দাদী আমাদের পেছনে ছিলেন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করলেন।
অতঃপর তিনি চলে গেলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৮০,
৭২৭, ৮৬০, ৮৭১, ৮৭৪, ১১৬৪; মুসলিম ৫/৪৮, হাঃ ৬৫৮, আহমাদ ১২৩৪২, আধুনিক প্রকাশনী ৩৬৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৭৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৬৫৭, ৬৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) মাইমূনাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট চাটাইয়ের উপর সালাত আদায় করতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৮১, ৩৩৩, আধুনিক প্রকাশনী ৩৬৮,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৭৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(গ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর স্ত্রী মায়মূনা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাটাইয়ের
উপর সালাত আদায় করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১০২৮, বুখারী ৩৩৩,
৩৮৯, ৩৮১, মুসলিম ৫১৩ নাসায়ী ৭৩৮, আবূ দাঊদ ৬৫৬, আহমাদ ২৬২৬৫, ২৬২৬৮, ২৬৩০৯, ২৬৩১১,
দারিমী ১৩৭৩, সহীহ আবী দাউদ ৬৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাটাইয়ের উপর সালাত আদায় করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১০২৯, মুসলিম ৫১৯, তিরমিযী ৩৩২, আহমাদ ১১০৯৭,
১১১৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২০) বিছানায় সালাত আদায়
করা বৈধঃ
হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ
(ক)
আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বসরায় অবস্থানকালে
তার বিছানার উপর সালাত আদায় করেছেন। অতঃপর তিনি তাঁর সঙ্গীদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেন
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিছানার উপর সালাত আদায় করতেন।
(সুনান ইবনু মাজাহ, ১০৩০, তিরমিযী ৩৩১, আহমাদ ২৪২২, ২৮০৯,
২৯৩৪, ৩৩৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে ঘুমাতাম, আমার পা দু’খানা
তাঁর ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হর দিকে ছিল। তিনি সিজদা্য় গেলে আমার পায়ে মৃদু চাপ দিতেন,
তখন আমি পা দু’খানা গুটিয়ে নিতাম। আর তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আমি পা দু’খানা প্রসারিত করতাম।
তিনি বলেনঃ সে সময় ঘরগুলোতে বাতি ছিল না। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৮২, ৩৮৩, ৩৮৪, ৫০৮, ৫১১, ৫১২, ৫১৩, ৫১৪, ৫১৫, ৫১৯, ৯৯৭, ১২০৯,
৬২৭৬; মুসলিম ৪/৫১, হাঃ ৫১২, আহমাদ ২৫৭০৫, আধুনিক প্রকাশনী ৩৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৩৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২১) সালাতে কাপড় পরিধান করার বিধানাবলীঃ
(ক) সালাত আদায়কালীন কাপড় পরিধান করার আবশ্যকতাঃ
আল্লাহ্
তা‘আলার বাণীঃ ‘‘তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান করবে’’- (সূরাহ্
আরাফ ৭/৩১)। এবং এক বস্ত্র শরীরে জড়িয়ে সালাত আদায়কারী প্রসঙ্গ।
সালামাহ
ইবনুল আকওয়া‘ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা
জামায় বোতাম লাগিয়ে নাও এমন কি কাঁটা দিয়ে হলেও। এই হাদীসের সনদ সম্পর্কে কথা আছে।
যে কাপড় পরে স্ত্রী সহবাস করা হয়েছে তাতে কোন অপবিত্রতা দেখা না গেলে তা পরিধান করে
সালাত আদায় করা যায়। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যে, উলঙ্গ
অবস্থায় যেন কেউ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ না করে।
উম্মু
‘আতিয়্যাহ (রাযি.) হতে রিওয়ায়াত হয়েছে , তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ঈদের দিবসে ঋতুমতী এবং পর্দানশীন নারীদের বের করে আনার আদেশ দিলেন, যাতে তারা মুসলিমদের
জামা‘আত ও দু‘আয় অংশ গ্রহণ করতে পারে। অবশ্য ঋতুমতী নারীগণ সালাতের জায়গা হতে দূরে
অবস্থান করবে। এক মহিলা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো কারো ওড়না নেই। তিনি
বললেনঃ তার সাথীর উচিত তাকে নিজের ওড়না পরিয়ে দেয়া। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ)-৩৫১, আধুনিক প্রকাশনীঃ৩৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৪)।
‘আবদুল্লাহ
ইবনু রাজা’ (রহ.) সূত্রে উম্মু ‘আতিয়্যাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এরূপ বলতে শুনেছি। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)
(খ) এক কাপড়ে সালাত আদায় করা বৈধঃ
প্রথম হাদিসঃ
মুহাম্মাদ
ইবনুল মুনকাদির (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযি.)-কে
এক কাপড়ে সালাত আদায় করতে দেখেছি। আর তিনি বলেছেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
এক কাপড়ে সালাত আদায় করতে দেখেছি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৩৫৩,
৩৫২; মুসলিম, ৪/৫২, হাঃ ৫১৮, আহমাদ ১৫১৩৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ৩৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৩৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দ্বিতীয় হাদিসঃ
উম্মু
হানী বিনতু আবূ তালিব (রাযি.) বলেনঃ আমি ফত্হে মক্কার বছর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গিয়ে দেখলাম যে, তিনি গোসল করছেন আর তাঁর মেয়ে ফাতিমাহ
(রাযি.) তাঁকে আড়াল করে রেখেছেন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁকে সালাম প্রদান করলাম। তিনি জানতে
চাইলেনঃ এ কে? আমি বললামঃ আমি উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব। তিনি বললেনঃ মারহাবা, হে
উম্মু হানী! গোসল শেষ করে তিনি এক কাপড় জড়িয়ে আট রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। সালাত সমাধা
করলে তাঁকে আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার সহোদর ভাই [‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাযি.)]
এক ব্যক্তিকে হত্যা করতে চায়, অথচ আমি তাকে আশ্রয় দিয়েছি। সে ব্যক্তিটি হুবায়রার ছেলে
অমুক। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উম্মু হানী! তুমি
যাকে নিরাপত্তা দিয়েছ, আমিও তাকে নিরাপত্তা দিলাম। উম্মু হানী (রাযি.) বলেনঃ এ সময়
ছিল চাশতের ওয়াক্ত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৩৫৭,২৮০; মুসলিম
৩/১৬, হাঃ ৩৩৬, আহমাদ ২৬৯৭৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ।
(গ) এক কাপড়ে সালাত আদায় করলেও
কাঁধ খোলা রেখে সালাত আদায় নিষিদ্ধঃ
আবূ
হাযিম (রহ.) সাহল ইবনু সা‘দ (রাযি.) হতে বর্ণনা করেন যে, সহাবায়ে কিরাম নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে তহবন্দ কাঁধে বেঁধে সালাত আদায় করেছিলেন।
প্রথম হাদিসঃ আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ
যে ব্যক্তি এক কাপড়ে সালাত আদায় করে, সে যেন কাপড়ের দু’ প্রান্ত বিপরীত পাশে রাখে।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৩৬০, ৩৫৯, আধুনিক প্রকাশনী ৩৪৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
দ্বিতীয় হাদিসঃ
মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির (রহ.) হতে রিওয়ায়াত হয়েছে, তিনি বলেনঃ একদা জাবির (রাযি.)
কাঁধে লুঙ্গি বেঁধে সালাত আদায় করেন। আর তাঁর কাপড় (জামা) আলনায় রাখা ছিল। তখন তাঁকে
এক ব্যক্তি বললোঃ আপনি যে এক লুঙ্গি পরে সালাত আদায় করলেন? তিনি জবাবে বললেনঃ তোমার
মত আহাম্মকদের দেখানোর জন্য আমি এমন করেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
যুগে আমাদের কার দু’টো কাপড় ছিল? (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৩৫২,
৩৫৩, ৩৬১, ৩৭০ দ্রষ্টব্য, আধুনিক প্রকাশনীঃ৩৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
সুতরাং
বহু হাজীদের ইহ্রাম পরে এক কাঁধ খোলা অবস্থায় নামায পড়া বৈধ নয়। (মাজমূউস স্বালাওয়াতি ফিল-ইসলাম, ড: শওকত উলাইয়ান ২৫১পৃ:)।
তৃতীয় হাদিসঃ
যুহরী (রহ.) তাঁর হাদীসে বর্ণনা করেছেন যে, الْمُلْتَحِفُ -এর অর্থ الْمُتَوَشِّحُ অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি যে চাদরের উভয় অংশ বিপরীত কাঁধে রাখে।
এভাবে উভয় কাঁধের উপর চাদর রাখাকে ইশতিমাল বলে। উম্মু হানী (রাযি.) বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মাত্র চাদর গায়ে দিলেন এবং তিনি চাদরের উভয় প্রান্ত বিপরীত
কাঁধে রাখলেন।
‘উমার
ইবনু আবূ সালামাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি
মাত্র কাপড় পরিধান করে সালাত আদায় করেছেন, যার উভয় প্রান্ত বিপরীত দিকে রেখেছিলেন।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৩৫৪, ৩৫৫, ৩৫৬; মুসলিম ৪/৫২, হাঃ
৫১৭, আহমাদ ২৭৬০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১, ৩৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৭, ৩৪৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ ।
চতুর্থ হাদিসঃ
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে একটি কাপড়ে সালাত আদায়ের মাসআলাহ জিজ্ঞেস করল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের কি দু’টি করে কাপড় আছে? (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৩৫৮, ৩৬৫; মুসলিম ৪/৫২, হাঃ ৫১৫, আহমাদ
৭১৫২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পঞ্চম হাদিসঃ
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, তোমাদের কেউ এক কাপড় পরে এমনভাবে যেন সালাত আদায় না করে যে, তার উভয় কাঁধে
এর কোন অংশ নেই। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৩৫৯, ৩৬০; মুসলিম
৪/৫২, হাঃ ৫১৬, আহমাদ ৭৩১১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) কাপড় সংকীর্ণ হয় যদিঃ
প্রথম হাদিসঃ
সা‘ঈদ
ইবনু হারিস (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযি.)-কে একটি
কাপড়ে সালাত আদায় করা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বললেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে কোন এক সফরে বের হয়েছিলাম। এক রাতে আমি কোন দরকারে তাঁর
নিকট গেলাম। দেখলাম, তিনি সালাতে রত আছেন। তখন আমার শরীরে মাত্র একখানা কাপড় ছিল। আমি
কাপড় দিয়ে শরীর জড়িয়ে নিলাম আর তাঁর পার্শ্বে সালাতে দাঁড়ালাম। তিনি সালাত শেষ করে
জিজ্ঞেস করলেনঃ জাবির! রাতের বেলা আসার কারণ কী? তখন আমি তাঁকে আমার প্রয়োজনের কথা
জানালাম। আমার কাজ শেষ হলে তিনি বললেনঃ এ কিরূপ জড়ানো অবস্থায় তোমাকে দেখলাম? আমি বললামঃ
কাপড় একটিই ছিল (তাই এভাবে করেছি)। তিনি বললেনঃ কাপড় যদি বড় হয়, তাহলে শরীরে জড়িয়ে
পরবে। আর যদি ছোট হয় তাহলে লুঙ্গি হিসেবে ব্যবহার করবে। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ)-৩৬১, ৩৫২; মুসলিম ৫৩/১৮, হাঃ ৩০১০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪৮, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৩৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দ্বিতীয় হাদিসঃ
সাহল
(রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা শিশুদের মত নিজেদের লুঙ্গি কাঁধে বেঁধে সালাত
আদায় করতেন। আর মহিলাদের প্রতি নির্দেশ ছিল যে, তারা যেন পুরুষদের ঠিকমত বসে যাওয়ার
পূর্বে সিজদা হতে মাথা না উঠায়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৩৬২,৮১৪,
১২১৫; মুসলিম ৪/২৯, ৪৪১, আহমাদ ১৫৫৬২, আধুনিক প্রকাশনী ৩৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ছালাত আদায়কারী মুছল্লীর লেবাস কেমন হবে তা বিস্তারিত
প্রথম খন্ডে আলোচনা করা হয়েছে।
(২২) নফল সালাত বসে আদায়
করা বৈধঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী হাফসা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বসে নফল সালাত আদায় করতে দেখিনি। অবশেষে তাঁর ইন্তিকালের
এক বছর বা দু’ বছর আগে থেকে নফল সালাত বসে আদায় করতেন এবং যে সূরা পাঠ করতেন তা এতই
তারতীলের সাথে (স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে) পাঠ করতেন যে, তা এর চেয়ে দীর্ঘ সূরার চাইতেও
অধিক দীর্ঘ হয়ে যেতো। (সুনান আদ-দারেমী, ১৪২২, মালিক,
জামা’আত ২২; মুসলিম ৭৩৩; মুসনাদুল মাউসিলী ৭০৫৫ ও সহীহ ইবনু হিব্বান ২৫৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ ।(Sahih)।
বসে সালাত আদায়কারীর (ফযীলত)
দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীর অর্ধেকঃ
আব্দুল্লাহ
ইবনু আমর হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার নিকট এ খবর পৌঁছেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কোনো ব্যক্তির বসা অবস্থায় আদায়কৃত সালাত (এর ফযীলত) হলো (দাঁড়িয়ে
আদায়কৃত) সালাতের অর্ধেক।” তিনি বলেন, এরপর (একদা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
বসে সালাত আদায় করছিলেন, এমতাবস্থায় আমি তাঁর নিকট প্রবেশ করলাম। তখন আমি তাঁকে বললাম,
ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার নিকট এ খবর পৌঁছেছে যে, আপনি বলেছেন: “কোনো ব্যক্তির বসা অবস্থায়
আদায়কৃত সালাত (এর ফযীলত) হলো (দাঁড়িয়ে আদায়কৃত) সালাতের অর্ধেক।” অথচ আপনিই বসা অবস্থায়
সালাত আদায় করছেন। জবাবে তিনি বললেন: “হাঁ, নিশ্চয়ই। তবে আমি তোমাদের কারো মতো নই।”
(সুনান আদ-দারেমী, ১৪২১, আব্দুর রাযযাক ৪১২৩; আহমাদ ২/২০৩;
মুসলিম ৭৩৫; আবু দাউদ ৯৫০; বাইহাকী ৭/৬২; নাসাঈ ৩/২২৩; সহীহ ইবনু খুযাইমা ১২৩৭। হাদিসের
মানঃ সহিহ (ahih)।
(২৩) সালাতের সময় রাতের আহার পরিবেশন করা হলে প্রথমে আহার করে নিতে
হবেঃ
(ক) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে বলেনঃ (একই সময়) সালাতের ইকামত ও আহার
দেয়া হলে, তোমরা আগে আহার করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৯৩৩,
বুখারী ৬৭২, ৫৪৬৪; মুসলিম ৫৫৭, তিরমিযী ৩৫৩, নাসায়ী ৮৫৩, আহমাদ ১১৫৬০, ১১৬৬৬, ১২২৩৪,
১২৯৯৯, ১৩০৭৯, ১৩১৮৮; দারিমী ১২৮১। হাদিসের মানঃ সহিহ।ahih)।
(খ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রাতের খাবার উপস্থিত করা
হলে এবং (একই সময়) সালাতের ইকামত দেয়া হলে তোমরা প্রথমে আহার করো। রাবী বলেন, ইবনু
উমার (রাঃ) এক রাতে ইকামত পশ্রবণরত অবস্থায় আহার করেন। (সুনানে
ইবনে মাজাহ, ৯৩৪, বুখারী ৬৭৪, মুসলিম ৫৫৯, তিরমিযী ৩৫৪, আবূ দাঊদ ৩৭৫৭, আহমাদ ৫৭৭২,
৬৩২৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ রাতের খাবার উপস্থিত হলে এবং সালাতের ইকামতও
দেয়া হলে তোমরা আগে আহার করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৯৩৫,
বুখারী ৬৭১, ৫৪৬৫; মুসলিম ৫৫৮, আহমাদ ২৩৬০০, ২৩৭২৫, ২৫০৯৩; দারিমী ১২৮০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih।
(২৪) সালাতের জন্যে ইক্বামত দেয়া হলে ইমাম যখন দাঁড়াবেন
তখন মুছল্লীগণও দাঁড়াবেনঃ
আবূ
ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যখন সালাতের জন্য ইক্বামাত দেয়া হবে, তোমরা আমাকে বের হয়ে আসতে না দেখা পর্যন্ত
দাঁড়াবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৬৮৫, সহীহ বুখারী
৬৩৭, মুসলিম ৬০৪, আবূ দাঊদ ৫৩৯, নাসায়ী ৬৮৭, তিরমিযী ৫৯২, আহমাদ ২২৫৩৩, দারেমী ১২৯৬,
সহীহ আল জামি‘ ৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৫) ইমামের অনুসরণ করা এবং
প্রতিটি কাজ তার পরে করাঃ
(ক) আহমাদ ইবনু ইউনুস, ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ), আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে বারা (রাযিঃ)
এ হাদীস বলেছেন। তিনি মিথ্যাবাদী নন। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর পিছনে সালাত আদায় করতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ’ থেকে মাথা
তোলার পর আমি কাউকে (সাজদায় যাওয়ার জন্য) পিঠ বাকা করতে দেখিনি, যে পর্যন্ত না রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের কপাল মাটিতে রাখতেন। অতঃপর সবাই সাজদায় লুটিয়ে
পড়ত। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৯৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৯৪৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ বাকর ইবনু খাল্লাদ আল বাহিলী
(রহঃ), আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে বারা (রাযিঃ) এ
হাদীস বলেছেন। তিনি মিথ্যাবাদী নন। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম যখন "সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলতেন- আমাদের কেউই (সাজদায় যাওয়ার
জন্য) পিঠ বাঁকা করত না যতক্ষণ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সাজদায় না যেতেন। তার পরে আমরা সাজদায় যেতাম। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৯৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৪৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৫৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু সাহম
আল আন্তাকী (রহঃ), আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন, আমাদেরকে বারা
(রাযিঃ) বলেছেন, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সালাত আদায়
করতেন। তিনি যখন রুকু’তে যেতেন, তারাও রুকু’তে যেতেন। তিনি রুকূ’ থেকে মাথা তোলার সময়
"সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলতেন। আমরা দাঁড়িয়ে থাকতাম, এমনকি যখন দেখতাম
তিনি তার কপাল মাটিতে রেখেছেন তখন আমরা তার অনুসরণ করতাম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৯৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৪৬, ইসলামিক সেন্টারঃ
৯৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র
(রহঃ), বারা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সাথে সালাত আদায় করতাম। আমরা যতক্ষণ তাকে সাজদায় পৌছতে না দেখতাম, ততক্ষণ আমাদের
কেউ নিজের পিঠ বাকা করতাম না। যুহায়র বলেন, আমাদেরকে সুফইয়ান বলেছেন, এমনকি যখন আমরা
তাকে সাজদারত অবস্থায় দেখতাম'। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী),
৯৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৪৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) মুহরিয ইবনু ‘আওন ইবনু আবূ আওন (রহঃ),
'আমর ইবনু হুৱায়স (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর পিছনে ফজরের সালাত আদায় করলাম। আমি তাকে فَلاَ
أُقْسِمُ بِالْخُنَّسِ
* الْجَوَارِ الْكُنَّسِ
আমি শপথ করি পশ্চাদপসরণকারী নক্ষত্রের, যা প্রত্যাগমন করে ও দৃশ্য হয়"- (সুরাহ
আত-তাকবীরঃ ১৫-১৬) পাঠ করতে শুনলাম। তিনি সম্পূর্ণভাবে সাজদায় না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের
কেউ নিজের পিঠ বাকা করত না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী),
৯৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৪৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(২৬) সালাত আদায় করা থেকে
বাধাপ্রাপ্ত হলে কয়েক ওয়াক্তের সালাত এক সাথে ও পদব্রজে বা যানবাহনাদির উপর সালাত আদায়
করা বৈধঃ
আবূ
সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: খন্দকের যুদ্ধের দিন আমাদেরকে
(সালাত হতে) বিরত রাখা হয়েছিল এমনকি রাত নেমে এলো, কিন্তু সেটিই আমাদের জন্য যথেষ্ট
হয়ে গিয়েছিল। আর তা-ই হলো আল্লাহ তা’আলার এই আয়াতের বক্তব্য: [“যুদ্ধে মু’মিনদের জন্য
আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহই হলেন সর্বশক্তিমান, পরাক্রমশালী।” (আহযাব ৩৩:২৫)]
তারপর
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল -কে ইকামত দেওয়ার আদেশ করেন। তখন
তিনি যুহরের সালাতের ইকামত দেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াক্তের মধ্যে
সে সালাত যেভাবে উত্তমরূপে আদায় করেন, তেমনিভাবে তিনি যোহরের (কাযা) সালাত আদায় করেন।
এরপর তিনি তাকে আদেশ দিলে সে (বিলাল) আসরের সালাতের জন্য ইকামত দেয় এবং তিনি আসরের
(কাযা) সালাত আদায় করেন। এরপর তিনি তাকে আদেশ দিলে সে (বিলাল) মাগরিবের সালাতের জন্য
ইকামত দেয় এবং তিনি মাগরিবের (কাযা) সালাত আদায় করেন। এরপর তিনি তাকে আদেশ দিলে সে
(বিলাল) ঈশার সালাতের জন্য ইকামত দেয় এবং তিনি ঈশার সালাত আদায় করেন। আর এটি ছিল (যুদ্ধের)
এ আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বের ঘটনা: [“অতঃপর যদি তোমরা (শত্রুর ভয়ের) আশংকা করো, সে অবস্থায়
পদব্রজে বা যানবাহনাদির উপর (সালাত আদায় করে নেবে)...।” সূরা:
বাক্বারা ২: ২৩৯]। (সুনান আদ-দারেমী, ১৫৬২, আহমাদ ৩/২৫, ফাওয়ায আহমাদের ১৫২৪, মুসনাদুল
মাউসিলী ১২৯৬; সহীহ ইবনু হিব্বান ২৮৯০; মাওয়ারিদুয যাম’আন ২৮৫। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(২৭) মুসহাফ হাতে দেখে দেখে কুরআন পাঠ করে সালাত আদায়
বৈধঃ
তারাবীহ্
প্রভৃতি লম্বা সালাতে (লম্বা ক্বিরাআতের) হাফেয ইমাম না থাকলে ‘কুল-খানী’ করে ঠকাঠক
কয়েক রাকআত পড়ে নেওয়ার চেয়ে মুসহাফ (কুরআন মাজীদ) দেখে দেখে পাঠ করে দীর্ঘ ক্বিরাআত
করা উত্তম। (অবশ্য কুরআন খতমের উদ্দেশ্যে নয়।) অনুরুপ (জামাআতে অন্য হাফেয মুক্তাদী
না থাকলে) হাফেয ইমামের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কোন মুক্তাদীর কুরআন দেখে যাওয়া
বৈধ। এ সব কিছু প্রয়োজনে বৈধ; ফলে নামাযের কোন ক্ষতি হয় না।
মা
আয়েশা রা. এর আযাদকৃত গোলাম যাকওয়ান রমযানে (তারাবীতে) দেখে দেখে কুরআন পাঠ করে তাঁর
ইমামতি করতেন। (মালেক, মুঅত্তা, ইবনে আবী শাইবা ৭২১৫,
৭২১৬, ৭২১৭ নং)।
ইমাম
হাসান, মুহাম্মদ, আত্বা প্রমুখ সলফগণ এরুপ (প্রয়োজনে) বৈধ মনে করতেন। (ইবনে আবী শাইবা ৭২১৪, ৭২১৮, ৭২১৯, ৭২২০, ৭২২১ নং)।
বর্তমান
বিশ্ব তথা সঊদী আরবের উলামা ও মুফতী কমিটির সিদ্ধান্ত মতেও প্রয়োজনে মুসহাফ দেখে তারাবীহ্
পড়ানো বৈধ। (ফিকহুস সুন্নাহ্ ১/২৩৪, মাজাল্লাতুল বুহূসিল
ইসলামিয়্যাহ্ ১৯/১৫৪, ২১/৫৬) সঊদিয়ার প্রায় অধিকাংশ মসজিদে আমলও তাই।
হযরত
আনাস (রাঃ) নামাযে ক্বিরাআত পড়তেন আর তাঁর গোলাম তাঁর পশ্চাতে মুসহাফ ধরে দাঁড়াতেন।
তিনি কিছু ভুলে গেলে গোলাম ভুল ধরিয়ে দিতেন। (ইবনে আবী
শাইবা ৭২২২ নং)।
সালাতের
ভিতরে কুরআন খতম করলে খতমের পরে দুআ করার কোন দলীল নেই। তাই কুরআন খতমের দুআ নামাযের
ভিতরে না করাই উচিৎ। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৫৭-৫৮) অবশ্য সালাতের
বাইরে হযরত আনাস (রাঃ) কুরআন খতম করলে তাঁর পরিবার-পরিজনকে সমবেত করে দুআ করতেন। (ইবনুল মুবারাক, যুহ্দ ৮০৯ পৃ:, ইবনে আবী শাইবা ১০৮৭ নং, দারেমী,
সুনান, ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, মাজমাউয যাওয়াইদ,হাইষামী ৭/১৭২)।
প্রসঙ্গত:
উল্লেখ্য যে, কুরআনের খতমের কোন নির্দিষ্ট দুআও নেই। (মাজাল্লাতুল
বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২০/১৬৫, ১৮৬) অতএব কুরআন মাজীদের
শেষ পৃষ্ঠার পর ‘দুআ-এ খতমিল কুরআন’ নামে যে দুআ প্রায় মুসহাফে ছাপা থাকে তা মনগড়া।
(২৮) লাল কাপড় পরে সালাত আদায় করা বৈধঃ
আবূ
জুহাইফাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে চামড়ার একটি লাল তাঁবুতে দেখলাম এবং তাঁর জন্য উযূর পানি নিয়ে বিলাল (রাযি.)-কে
উপস্থিত দেখলাম। আর লোকেরা তাঁর উযূর পানির জন্যে প্রতিযোগিতা করছে। কেউ সামান্য পানি
পাওয়া মাত্র তা দিয়ে শরীর মুছে নিচ্ছে। আর যে পায়নি সে তার সাথীর ভিজা হাত হতে নিয়ে
নিচ্ছে। অতঃপর বিলাল (রাযি.) রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একটি
লৌহফলকযুক্ত ছড়ি নিয়ে এসে তা মাটিতে পুঁতে দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একটা লাল ডোরাযুক্ত পোশাক পরে বের হলেন, তাঁর তহবন্দ কিঞ্চিৎ উঁচু করে পরা ছিল। সে
ছড়িটি সামনে রেখে লোকদের নিয়ে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। আর মানুষ ও জন্তু-জানোয়ার
ঐ ছড়িটির বাইরে চলাফেলা করছিলো। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন), ৩৭৬, ১৮৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(২৯) পুরুষদের মসজিদে ঘুমানো
বৈধঃ
হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ
(ক) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে
বর্ণিত। তিনি মসজিদে নববীতে ঘুমাতেন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক। তাঁর কোন পরিবার-পরিজন
ছিল না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৪৪০, ১১২১,
১১৫৬, ৩৭৩৮, ৩৭৪০, ৩৭৪১, ৭০১৫, ৭০১৬, ৭০২৮, ৭০২৯, ৭০৩০, ৭০৩১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২১
, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এ
হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ আইনী রহ. (মৃ.৮৫৫
হি.) বলেন,
এতে
স্থানীয় লোকদের জন্যও (যারা মুসাফির নয়) মসজিদে ঘুমানো জায়েয বলে প্রমাণিত হয়। (উমদাতুল কারী)।
হাফেজ
ইবনে হাজার আসকালানী রহ. (মৃ.৮৫২ হি.) বলেন,
অর্থাৎ
পুরুষদের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয। এটাই অধিকাংশের মত। (ফাতহুল
বারী)।
(খ) সাহল ইবনু সা‘দ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমাহ (রাযি.)-এর গৃহে
এলেন, কিন্তু ‘আলী (রাযি.)-কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমাহ (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ
তোমার চাচাত ভাই কোথায়? তিনি বললেনঃ আমার ও তাঁর মধ্যে বাদানুবাদ হওয়ায় তিনি আমার সাথে
রাগ করে বাইরে চলে গেছেন। আমার নিকট দুপুরের বিশ্রামও করেননি। অতঃপর আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেনঃ দেখ তো সে কোথায়? সে ব্যক্তি খুঁজে
এসে বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল, তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এলেন, তখন ‘আলী (রাযি.) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাঁর শরীরের এক পাশের চাদর
পড়ে গিয়েছে এবং তাঁর শরীরে মাটি লেগেছে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর শরীরের মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বললেনঃ উঠ, হে আবূ তুরাব! উঠ, হে আবূ তুরাব!* (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৪৪১, ৩৭০৩, ৬২০৪, ৬২৮০; মুসলিম
৪৪/৪, হাঃ ২৪০৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)। *আবূ তুরাবঃ আলী (রা.) এর উপাধি।
এ
হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা আইনী রহ. (মৃ.৮৫৫ হি.) বলেন,
এ
হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়, ঘর-বাড়িহীন দরিদ্র ও ভীনদেশী মুসাফির ছাড়া স্থানীয়দের জন্যও
মসজিদে ঘুমানো জায়েয। অনুরূপ মসজিদে কাইলূলা (দিবসকালীন বিশ্রাম) করাও জায়েয। কারণ
(জায়েয বলেই) হযরত আলী (রা.) ফাতেমা রা. এর ঘরে বিশ্রাম না করে মসজিদে গিয়ে ঘুমালেন।
ইমাম আবু নু‘আইম ইসফাহানী রহ. ‘কিতাবুল মাসাজিদে’
হযরত জুবাইর ইবনে মুতইম রা. থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, মেহমান
বা স্থানীয় যে কেউ মসজিদে বিশ্রাম নিতে আসলে তাকে বাধা দিও না। (উমদাতুল কারী)।
(গ) হযরত হারেস ইবনে আব্দুর রহমান বলেন,
হযরত সুলায়মান ইবনে ইয়াসারকে জিজ্ঞেস করলাম, মসজিদে ঘুমানোর বিধান কী? তিনি উত্তরে
বললেন, তোমরা কেন এবিষয়ে প্রশ্ন কর? আহলে ছুফফাতো
মসজিদেই থাকতেন, মসজিদেই নামাজ পড়তেন। অর্থাৎ মসজিদে ঘুমানো জায়েয। আহলে ছুফফার মসজিদে
ঘুমানোটাই এর দলীল। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১১)।
(ঘ) বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহ.
এর একটি মসজিদ ছিল। তিনি তাতে নামাজও পড়তেন, ঘুমাতেনও। (মুসান্নাফে
ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১৩)।
(ঙ) ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন, আমি হযরত আতা
রা. কে জিজ্ঞেস করলাম, মসজিদে ঘুমানোকে কি আপনি অপছন্দ করেন? বললেন, না, বরং মসজিদে
ঘুমানোকে আমি পছন্দ করি। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১৭)।
(চ) হযরত সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিবকে জিজ্ঞেস
করা হল, মসজিদে ঘুমানো জায়েয আছে কী? তিনি উত্তরে বললেন, আহলে ছুফ্ফা কোথায় থাকতেন
তাহলে? অর্থাৎ তারা মসজিদেই ঘুমাতেন। (সুতরাং মসজিদে ঘুমানো জায়েয এবং এটি সুস্পষ্ট)
(মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯২২)।
(ছ) হযরত ইবনে আবী নাজীহ বলেন , আমি মসজিদে
হারামে ঘুমিয়েছিলাম। তখন আমার স্বপ্নদোষ হল। তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে জুবাইর রহ. কে জিজ্ঞেস
করলাম, কি করব? বলেন, গোসল করে আস। অর্থাৎ তিনি তাকে মসজিদে ঘুমাতে নিষেধ করেননি। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯২৩)।
(জ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আমি সত্তরজন আসহাবে সুফফাকে দেখেছি, তাঁদের কারো গায়ে বড় চাদর ছিল না। হয়ত
ছিল কেবল লুঙ্গি কিংবা ছোট চাদর, যা তাঁরা ঘাড়ে বেঁধে রাখতেন। (নীচের দিকে) কারো নিস্ফে
সাক বা হাঁটু পর্যন্ত আর কারো টাখনু পর্যন্ত ছিল। তাঁরা লজ্জাস্থান দেখা যাবার ভয়ে
কাপড় হাত দিয়ে ধরে রাখতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৪৪২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সার কথাঃ
নবীজী
সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়সাল্লাম, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর, হযরত উসমান, হযরত আলী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, হযরত আবুযর গিফারী রা.
ও আহলে ছুফ্ফা সকলেই মসজিদে ঘুমিয়েছেন। তাই তাবেয়ী-তবে তাবেয়ীনের অনেকেই মসজিদে ঘুমিয়েছেন
এবং নির্দ্বিধায় মসজিদে ঘুমানোকে জায়েয বলেছেন। ফলে প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ইমামগণ,
আবু হানীফা, মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. প্রয়োজনে মসজিদে ঘুমানোকে জায়েয
বলেছেন। তবে ইমাম মালেক ও আহমদ রহ. বলেছেন, নিজের পৃথক ঘুমানোর জায়গা থাকা সত্ত্বেও
মসজিদকে নিয়মিত ঘুমানোর জায়গা বানিয়ে নেয়া উচিত নয়। হাঁ ইবাদত ও নেক কাজের উদ্দেশ্যে
সকল মাযহাবেই নির্দ্বিধায় মসজিদে ঘুমানো জায়েয। (দ্র. ফাতহুল বারী, ইবনে রজব, ই‘লামুস্-সাজিদ
বিআহ্কামিল মাসাজিদ, মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ যারকাশী (মৃ.৭৯৪
হি.) পৃ. ৩০৫-৩০৭)।
(৩০) মসজিদে মহিলাদের ঘুমানো
বৈধঃ
‘আয়িশাহ
(রাযি.) হতে বর্ণিত। কোন আরব গোত্রের একটা কালো দাসী ছিল। তারা তাকে আযাদ করে দিল।
অতঃপর সে তাদের সাথেই থেকে গেল। সে বলেছে যে, তাদের একটি মেয়ে গলায় লাল চামড়ার উপর
মূল্যবান পাথর খচিত হার পরে বাইরে গেল। দাসী বলেছেঃ সে হারটা হয়তো নিজে কোথাও রেখে
দিয়েছিল, অথবা কোথাও পড়ে গিয়েছিল। তখন একটা চিল তা পড়ে থাকা অবস্থায় গোশ্তের টুকরা
মনে করে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। দাসী বলেছেঃ অতঃপর গোত্রের লোকেরা বেশ খোঁজাখুঁজি করতে
লাগলো। কিন্তু তারা তা পেল না। তখন তারা আমার উপর এর দোষ চাপাল। সে বলেছেঃ তারা আমার
উপর তল্লাশী শুরু করলো, এমন কি আমার লজ্জাস্থানেও। দাসীটি বলেছেঃ আল্লাহর কসম! আমি
তাদের সাথে সেই অবস্থায় দাঁড়ানো ছিলাম, এমন সময় চিলটি উড়ে যেতে যেতে হারটি ফেলে দিল।
সে বলেছেঃ তাদের সামনেই তা পড়লো। তখন আমি বললামঃ তোমরা তো এর জন্যেই আমার উপর দোষ চাপিয়েছিলে।
তোমরা আমার সম্পর্কে সন্দেহ করেছিলে অথচ আমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ। এই তো সেই
হার! সে বলেছেঃ অতঃপর সে রাসসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে
ইসলাম গ্রহণ করলো। ‘আয়িশাহ (রাযি.) বলেনঃ তার জন্যে মসজিদে (নাবাবীতে) একটা তাঁবু অথবা
ছাপড়া করে দেয়া হয়েছিল। ‘আয়িশাহ (রাযি.) বলেনঃ সে (দাসীটি) আমার নিকট আসতো আর আমার
সঙ্গে কথাবার্তা বলতো। সে আমার নিকট যখনই বসতো তখনই বলতোঃ
‘‘সেই
হারের দিনটি আমার প্রতিপালকের আশ্চর্য ঘটনা বিশেষ।
জেনে
রাখুন সে ঘটনাটি আমাকে কুফরের শহর হতে মুক্তি দিয়েছে।’’
‘আয়িশাহ
(রাযি.) বলেন, আমি তাকে বললামঃ কি ব্যাপার, তুমি আমার নিকট বসলেই যে এ কথাটা বলে থাক?
‘আয়িশাহ (রাযি.) বলেনঃ সে তখন আমার নিকট উক্ত ঘটনা বর্ণনা করল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৪৩৯, ৩৮৩৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ
৪২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইবনে
বত্তাল রহ. বলেছেন, এ হাদীস থেকে বুঝা যায় রাত যাপনের স্থান নেই এমন যে কোন নারী-পুরুষের
জন্য মসজিদে থাকা জায়েয। (উমদাতুল কারী, বুখারী শরীফের
ব্যাখ্যা গ্রন্থ)।
(৩১) মসজিদে লিয়ান করা বৈধঃ
সাহল
ইবনু সা‘দ (রাযি.) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! কেউ তার স্ত্রীর
সাথে অন্য ব্যক্তিকে দেখতে পেলে কি তাকে হত্যা করবে? পরে মসজিদে সে ও তার স্ত্রী একে
অন্যকে ‘লি‘আন’ করল। তখন আমি তা প্রত্যক্ষ করলাম। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৪২৩, ৪৭৪৫, ৪৭৪৬, ৫২৫৯, ৫৩০৮, ৫৩০৯, ৬৮৫৪, ৭১৬৫, ৭১৬৬,
৭৩০৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
লি'আনঃ
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সৃষ্ট বিবেদ কোন মীমাংসা না হলে, সর্বশেষ ফয়সালা হিসেবে তারা
প্রত্যেকে নিজের উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করবে এই বলে যে, যদি আমি মিথ্যাবাদী হই তাহলে
আল্লাহর অভিসম্পাত আমার উপর পতিত হোক। (সুরাহ নূর ২৪/৬-৯)।
সালাতে যা করা মাকরুহ অথবা নিষিদ্ধঃ
(১) সালাতে রাফেউল ইয়াদাইন,
ইস্তিরাহার বৈঠক বা বুকে হাত বাঁধা ইত্যাদি না করা মাকরুহঃ
সালাতে যে সমস্ত কার্যাবলী করা সুন্নত (যেমন রাফেউল
ইয়াদাইন, ইস্তিরাহার বৈঠক, বুকে হাত বাঁধা ইত্যাদি) তার কোন একটিও ত্যাগ করা মাকরুহ।
(ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু ১২৫পৃ:)।
(২) মুখ ঘুরিয়ে বা আড় চোখে
এদিক-ওদিক তাকিয়ে (যেমন ঘড়ি বা অন্য কিছু)
দেখা বৈধ নয়ঃ
চোরা
দৃষ্টিতে বা ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক-ওদিক দৃষ্টিপাত করার মাধ্যমে শয়তান নামাযীর সালাত চুরি
করে থাকে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আয়িশাহ্
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতে
এদিক-সেদিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করার ব্যাপারে প্রশ্ন করেছি। তিনি বলেছেন, এটা ছোঁ মারা।
শায়ত্বন (শয়তান) বান্দাকে সালাত ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৮২, সহীহ বুখারী ৭৫১, আবূ দাঊদ ৯১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অন্য দিকে দৃষ্টিপাত করে মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহও মুখ ফিরিয়ে নেন সংক্রান্ত
হাদিসটি জইফ।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যখন কোন বান্দা সালাতের মধ্যে থাকে, আল্লাহ তা‘আলা তার সঙ্গে থাকেন, যতক্ষণ না সে এদিক-সেদিক
দৃষ্টি ফেরায়। আর সে এদিক-সেদিক নযর করলে তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৯৫, আবূ দাঊদ ৯০৯, নাসায়ী ১১৯৫, আহমাদ
২৯৫০৪, সহীহ আত্ তারগীব ৫৫৪। কারণ এর সানাদে আবুল আহওয়াস
নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
নফল সালাতেও এদিক-ওদিক দেখা বৈধ নয়। বৈধ হওয়ার ব্যাপারে হাদীসগুলি সহীহ
নয়। (তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ৩০৮-৩০৯পৃ:)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,
হে আমার বৎস! সালাতে এদিক-সেদিক তাকানো থেকে সাবধান থাকো। কারণ সালাতে (ঘাড় ফিরিয়ে)
এদিক-সেদিক লক্ষ্য করা ধ্বংসাত্মক কান্ড। যদি নিরুপায় হয়ে পড়ে তবে নফল সালাতের ক্ষেত্রে
(অনুমতি থাকবে) ফরয সালাতের ক্ষেত্রে নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৯৭, আত্ তিরমিযী ৫৮৯, য‘ঈফুল জামি‘ ৬৩৮৯, য‘ঈফ আত্ তারগীব ২৯০। কারণ সা‘ঈদ
ইবনুল মুসাইয়্যিব আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেননি। অতএব সানাদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)।
অবশ্য
চোখের কোণে ডাইনে-বামের জিনিস দেখা বা নজরে পড়া সালাতের জন্য ক্ষতিকর নয়। কারণ, ইবনে
আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাঃ) সালাত পড়া অবস্থায় ডাইনে ও বামে লক্ষ্য করতেন।
আর পিঠের দিকে ঘাড় ঘুরাতেন না।’
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু
‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সালাতের মাঝে ডানদিকে বামদিকে লক্ষ্য করতেন, পেছনের দিকে গর্দান ঘুরাতেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৯৮, সহীহ আত্ তিরমিযী ৫৮৭, সহীহ আল জামি‘ ৫০১১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
অনুরুপ
ভয় ও প্রয়োজনের সময় দৃষ্টি নিক্ষেপ দূষণীয় নয়। একদা মহানবী (সাঃ) এক উপত্যকার দিকে
জাসূস পাঠালেন। অতঃপর ফজরের সালাত পড়তে পড়তে তার অপেক্ষায় সেই উপত্যকার দিকে তাকিয়ে
দেখছিলেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৯১৬ নং,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২৩৭)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
সাহল
ইবনু হানযালিয়্যাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা ফজর সালাতের ইক্বামাত দেয়া হলে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করতে লাগলেন এবং সালাতের অবস্থায়ই তিনি
গিড়ি পথের দিকে তাকাচ্ছিলেন।
ইমাম
আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিরিপথ পাহারা দেয়ার
জন্য রাতে এক অশ্বারোহীকে সেখানে প্রেরণ করেছিলেন। (সেজন্যই তিনি সেখানে দৃষ্টি ফিরাচ্ছিলেন)।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯১৬, ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ
৪৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহর
রসূল (সাঃ) যোহ্র ও আসরের সালাতে কুরআন পড়তেন তা সাহাবাগণ তাঁর দাড়ি হিলার ফলে বুঝতে
পারতেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
মা‘মার (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও ‘আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন? তিনি
বললেন, হ্যাঁ। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা কী করে বুঝতে পারতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাড়ির
নড়াচড়া দেখে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭৪৬, ৭৬০,
৭৬১, ৭৭৭, আধুনিক প্রকাশনী ৭০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অনুরুপ
তাঁরা তাঁকে সিজদায় মাথা রাখতে না দেখার পূর্বে কেউ কওমা থেকে সিজদায় যেতেন না। (বুখারী
৭৪৭ নং)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
বারাআ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আর তিনি মিথ্যাবাদী ছিলেন
না, তাঁরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সালাত আদায় করতেন, তখন
রুকূ‘ হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সিজদা্য় গেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭৪৭,
৬৯০, আধুনিক প্রকাশনী ৭০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব
শিশুর মা সালাত পড়তে পড়তে যদি তার শিশুর গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে আড় নয়নে তাকায়, তাহলে
সালাতের কোন ক্ষতি হয় না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে
উষাইমীন ৩/৩১২)।
(৩) সালাতরত অবস্থায় আকাশের (বা উপর) দিকে তাকানো হারামঃ
নবী
মুবাশ্শির (সাঃ) বলেন, “লোকেরা যেন অবশ্য অবশ্যই সালাতের মধ্যে আকাশের দিকে তাকানো
হতে বিরত হয়, নচেৎ তাদের চক্ষু ছিনিয়ে নেওয়া হবে!”
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আনাস
ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
লোকদের কী হলো যে, তারা সালাতে আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকায়? এ ব্যাপারে তিনি কঠোর বক্তব্য
রাখলেন; এমনকি তিনি বললেনঃ যেন তারা অবশ্যই এ হতে বিরত থাকে, অন্যথায় অবশ্যই তাদের
দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়া হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৭৫০, সহীহ মুসলিম ৪২৯, আধুনিক প্রকাশনী ৭০৬,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব
সালাত পড়তে পড়তে উপর বা আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করা হারাম। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩১৫)।
(৪) চোখ বন্ধ করে সালাত আদায়
করা মাকরহঃ
মহানবী
(সাঃ) যখন সালাত পড়তেন, তখন তিনি তাঁর চোখ দু’টিকে খুলে রাখতেন। তাঁর দৃষ্টি থাকত সিজদার
জায়গায়। তাশাহ্হুদে বসার সময় তিনি তাঁর তর্জনী আঙ্গুলের উপর নজর রাখতেন। এ ছাড়া তিনি
চোখ খুলে রাখতেন বলেই মা আয়েশা রা. এর দেওয়ালে টাঙ্গানো ছবিযুক্ত পর্দা তাঁর সম্মুখ
থেকে সরিয়ে নিতে বলেছিলেন। সুতরাং সুন্নত হল, চোখ খোলা রেখে সালাত পড়া।
তবে
হ্যাঁ, যদি প্রয়োজন পড়ে; যেমন সামনে কারুকার্য, নক্সা, ফুল বা এমন কোন জিনিস থাকে,
যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে অথবা মনোযোগ কেড়ে নেয় অথবা ক্বিরাআত ভুলিয়ে দেয় এবং তা দূর করা
সম্ভব না হয়, তাহলে চোখ বন্ধ করে সালাত পড়ায় কোন দোষ নেই। বরং এই ক্ষেত্রে চোখ বন্ধ
করেই সালাত পড়া উত্তম হওয়া শরীয়ত এবং তার উদ্দেশ্য ও নীতির অধিক নিকটবর্তী। (যাদুল মাআদ, ইবনুল কাইয়েম ১/২৯৩-২৯৪, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ,
ইবনে উষাইমীন ৩/৪৮, ৫২, ৩১৬, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৮৯-২৯০, মুত্বাসা
১৩০-১৩১পৃ:)।
সালাতে
একাগ্রতার জন্যে চোখ বন্ধ করে সালাত আদায় করা মাকরুহ-এর বিস্তারিত আলোচনা প্রথম খন্ডে
আলোচনা করা হয়েছে।
(৫) এমন জিনিস (যেমন নক্সাদার
মুসাল্লা, সৌন্দর্য ও কারুকার্যময় দেওয়াল বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্যপূর্ণ কাপড় ইত্যাদি)
সামনে রেখে সালাত পড়া, যাতে নামাযীর মনোযোগ ও একাগ্রতা নষ্ট হয়ঃ
হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ
(ক) আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা একটি কারুকার্য খচিত চাদর গায়ে
দিয়ে সালাত আদায় করলেন। আর সালাতে সে চাদরের কারুকার্যের প্রতি তাঁর দৃষ্টি পড়ল। সালাত
শেষে তিনি বললেনঃ এ চাদরখানা আবূ জাহমের নিকট নিয়ে যাও, আর তার কাছ হতে আমবিজানিয়্যাহ
(কারুকার্য ছাড়া মোটা চাদর) নিয়ে আস। এটা তো আমাকে সালাত হতে অমনোযোগী করে দিচ্ছিল।
হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ (রহ.) তাঁর পিতা হতে এবং তিনি ‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণনা করেন
যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সালাত আদায়ের সময় এর কারুকার্যের
প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে। তখন আমি আশংকা করছিলাম যে, এটা আমাকে ফিতনায় ফেলে দিতে পারে।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন, ৩৭৩, ৭৫২, ৫৮১৭; মুসলিম
৫/১৫, ৫৫৬, আহমাদ ২৪১৪২, আধুনিক প্রকাশনী ৩৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) আনাস
(রাযি.) হতে বর্ণিত। ‘আয়িশাহ (রাযি.)-এর নিকট একটা বিচিত্র রঙের পাতলা পর্দার কাপড়
ছিল। তিনি তা ঘরের এক দিকে পর্দা হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার সামনে থেকে তোমার এই পর্দা সরিয়ে নাও। কারণ সালাত আদায়ের সময়
এর ছবিগুলো আমার সামনে ভেসে ওঠে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন), ৩৭৪, ৫৯৫৯ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) রাসুল সা. ডোরা কাটা বা নকশাখচিত পর্দা ঝুলানো থাকলে সে ঘরে প্রবেশ
করতেন নাঃ
আব্দুল্লাহ
ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমাহ
(রাঃ)-এর নিকট এসে দরজায় পর্দা ঝুলানো দেখতে পেয়ে তিনি ভিতরে ঢুকলেন না। বর্ণনাকারী
বলেন, অধিকাংশ সময় তিনি ভিতরে ঢুকেই সর্বপ্রথম ফাতিমাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। এ সময়
আলী (রাঃ) এসে ফাতিমাহকে চিন্তিত দেখে বললেন, তোমার কি হয়েছে? তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আসতে চেয়েও আসেননি। অতঃপর আলী (রাঃ) তাঁর নিকট গিয়ে বললেন,
হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ফাতিমাহর নিকট গিয়েও প্রবেশ না করায় এটা তার জন্য অত্যন্ত কষ্টকর
হয়ে পড়েছে।
তিনি
বলেনঃ দুনিয়াদারী ও চাকচিক্যতার সাথে আমার কি সম্পর্ক। একথা শুনে আলী ফাতিমাহর নিকট
গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্য বর্ণনা করলেন। তিনি বলেন,
আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলুন, তিনি আমাকে এটাকে কি করতে
আদেশ দেন? (আলীর বর্ণনা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তাকে (ফাতিমাহকে)
বলো, তা (পর্দাটি) যেন অমুক গোত্রে পাঠিয়ে দেয়। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪১৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইবনু
ফুদাইল (রহঃ) তার পিতার সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, পর্দাটি ছিলো ডোরাযুক্ত ও
নকশা খচিত। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪১৫০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ক্রুশ চিহ্নযুক্ত কাপড়
সম্পর্কেঃ
আয়িশাহ
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে ক্রুশ চিহ্নযুক্ত
কোনো জিনিসই রাখতে দিতেন না। তিনি সেগুলোকে ছিঁড়ে ফেলতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪১৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) কোন প্রাণীর বা মানুষের ছবি, মূর্তি বা আগুন সামনে
রেখে বা ঘরে রেখে সালাত আদায় করা এবং কোন প্রাণী বা মানুষের ছবি চিত্রিত কাপড় পরে সালাত
আদায় করা নিষেধঃ
ঘরে
প্রাণীর ছবি, কার্টুন, প্রতিকৃতি, মূর্তি ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হারাম। যে ঘরে এসব থাকে
সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। এ মর্মে একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
(ক) মুহাম্মদ ইবন আবদুল মালিক ইবন আবুশ
শাওয়ারিব (রহঃ), আবু তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ ফেরেশতা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর অথবা
ভাস্কর্য থাকে। (সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৫৩৪৭০।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী মাইমূনাহ (রাঃ) আমার নিকট
বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল (আঃ) আমার সাথে রাতে
সাক্ষাৎ করার ওয়াদা করেছিলেন; কিন্তু সাক্ষাৎ করেননি। অতঃপর তাঁর মনে পড়লো যে, আমাদের
বিছানার নীচে একটি কুকুর শাবক আছে।
তিনি
এটাকে বের করে দিতে আদেশ দিলে তা বের করা হলো। অতঃপর তিনি নিজেই পানি দিয়ে সে স্থানটা
ধুয়ে ফেললেন। জিবরীল (আঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাতের সময় বললেন, যে ঘরে কুকুর এবং ছবি থাকে
সে ঘরে আমরা কখনো প্রবেশ করি না। সকাল বেলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর
মারতে আদেশ দিলেন, এমন কি ছোট বাগান পাহারার কুকুর হত্যা করারও আদেশ দেন, বড় বাগানের
পাহারাদার কুকুর ছাড়া। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-৪১৫৭,
৪১৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) যায়িদ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) সূত্রে
বর্ণিত। আবূ তালহা আল-আনসারী (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছিঃ যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে সেই ঘরে ফিরিশতা প্রবেশ করেন না। অতঃপর তিনি
(যায়িদ) বলেন, চলো, তোমার উম্মুল মু‘মিনীন আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে এ সম্পর্কে প্রশ্ন
করি।
আমরা
তার নিকট পৌঁছে বললাম, হে উম্মুল মু‘মিনীন! আবূ তালহা (রাঃ) আমাদের কাছে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ এরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। আপনি কি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ বিষয়ে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, না, তবে আমি তাঁকে যা
করতে দেখেছি, সে সম্পর্কে একটি হাদীস আপনাদের বলছি।
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক যুদ্ধাভিযানে গেলেন। আমি তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষায়
ছিলাম। আমি আমাদের একটি পশমী কাপড় দরজার চৌকাঠে পর্দা হিসেবে ঝুলিয়ে রাখলাম। তিনি যখন
ফিরে এলেন, আমি স্বাগতম জানিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর
রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আপনাকে সম্মানিত ও মর্যাদা
সম্পূর্ণ করেছেন। তিনি ঘরের দরজার দিকে তাকাতে পশমী পর্দা দেখেন। কিন্তু আমার কথার
কোনো জবাব দিলেন না।
আমি
তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ দেখতে পেলাম। তিনি পশমী (ছবিযুক্ত) কাপড়টির নিকট গিয়ে
তা ছিঁড়ে ফেলে বলেনঃ আল্লাহ আমাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছেন, তা পাথর ও ইটকে পরানোর
আদেশ দেননি। তিনি (আয়িশাহ) বলেন, আমি কাপড়টা কেটে দু’টি বালিশ তৈরী করলাম এবং ভেতরে
খেজুরের ছাল বাকল ভরে দিলাম; তিনি আমার এ কাজ অপছন্দ করেননি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-৪১৫৩, ৪১৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঘ) যায়িদ ইবনু খালিদ (রাঃ) বলেন, আবূ তালহা
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে ফিরিশতা প্রবেশ করে না। বুসর (রহঃ) বলেন, অতঃপর যায়িদ (রাঃ)
অসুস্থ হলে আমরা তাকে দেখতে তার বাড়িতে গেলাম। তার ঘরের দরজায় ছবিযুক্ত একটি পর্দা
দেখলাম। আমি তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী মাইমূনাহ (রাঃ)-এর পালিত
পুত্র উবায়দুল্লাহ আল-খাওলানীকে বললাম, যায়িদ (রাঃ) আমাদের ছবি না রাখার হাদীস শুনিয়েছেন।
উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আপনি কি শুনেননি, সে হাদীসে তিনি এ কথাও উল্লেখ করেছেন, কাপড়ের
মধ্যে যদি গাছপালা, লতাপাতা ইত্যাদি ছবি থাকে, তা নিষেধ নয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-৪১৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঙ) জাবির (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। মক্কা বিজয়ের
সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আল-বাতহা’ নামক স্থানে দাঁড়িয়ে উমার ইবনুল
খাত্তাব (রাঃ)-কে আদেশ দিলেন যেন তিনি কা‘বার ভিতরে গিয়ে এর মধ্যে বিদ্যমান সব ছবি
মিটিয়ে দেন। অতঃপর সব ছবি মিটিয়ে দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ভিতরে প্রবেশ করেননি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-৪১৫৬)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(চ) আলী ইবন শুআয়ব (রহঃ), উবায়দুল্লাহ্
ইবন আবদুল্লাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবূ তালহা আনসারী (রাঃ)-কে তাঁর রুগ্নাবস্থায়
দেখতে গেলে তাঁর নিকট সাহল ইবন হুনায়ফকে দেখতে পান। আবু তালহা (রাঃ) এক ব্যক্তিকে
তাঁর নিচ থেকে বিছানা বের করে ফেলতে আদেশ করলেন। তখন সাহল (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ কেন বের
করবেন? তিনি বললেনঃ কেননা তাতে ছবি রয়েছে। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, তা তো তুমি জান। সাহল বললেন, তিনি কি বলেন নি যে, কাপড়ে নকশারূপে
থাকলে কোন ক্ষতি নেই? আবু তালহা (রাঃ) উত্তর করলেনঃ হ্যাঁ, কিন্তু আমার মনের জন্য এটাই
বেশি স্বস্তিকর। (সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৫৩৪৮,
৫৩৪৯, ৫৩৫০, ইবন মাজাহ ৩৩৫৯ )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) ইসহাক ইবন ইবরাহীম (রহঃ) ... আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে গেলেন।
তারপর আবার প্রবেশ করলেন। আমি একটি পর্দা লটকিয়ে রেখেছিলাম, যাতে ডানাবিশিষ্ট ঘোড়ার
ছবি ছিল। তিনি তা দেখে বললেনঃ তুমি এটা খুলে ফেল। (সূনান
নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৫৩৫১)। দিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(জ) মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন বাযী
(রহঃ), উম্মুল মু'মিনীন আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার একখানা পর্দার কাপড়
ছিল, যাতে ছিল পাখির ছবি। কেউ ঘরে ঢোকার সময় তা তার সামনে পড়তো। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আয়েশা! তুমি এটা উল্টিয়ে দাও। কেননা যখন আমি ঘরে প্রবেশ
করি, তখন তা (মার্কা) দেখলে, দুনিয়া আমার স্মরণে এসে পড়ে। তিনি আরো বলেনঃ আমাদের
আর একখানা চাদর ছিল, যাতে পণ্যচিহ্ন অঙ্কিত ছিল, আমরা তা পরতাম। তাই তা কাটিনি। (সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৫৩৫২, ৫৩৫৩, গায়াতুল মারাম
১১৯, ১৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঞ) কুতায়বা (রহঃ)..আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফর শেষে তশরীফ আনলেন।
আমি চেরাগদানে একটি পর্দা ঝুলিয়েছিলাম। যাতে ছবি অঙ্কিত ছিল। তিনি সেটি খুলে ফেলে
বললেনঃ কিয়ামতের দিন সর্বাধিক আযাব হবে তাদের, যারা আল্লাহর সৃষ্টবস্তুর ছবি অঙ্কন
করে। (সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৫৩৫৫- ৫৩৬৩, আদাবুয
যিফাফ ৯৮–৯৯. গায়াতুল মারাম ১১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উল্লেখ্য
যে, মুহাদ্দিসগণ বলেন: মুহাদ্দিসগণ বলেন: উল্লেখিত হাদিসগুলোতে যে সকল ফেরেশতা প্রবেশ
করবে না বলা হয়েছে সেগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য হল, রহমত ও বরকতের ফেরেশতাগণ। অর্থাৎ কোনো
ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি, প্রতিকৃতি ও কুকুর থাকলে ঐ সকল প্রবেশরতাগণ তাতে প্রবেশ করে
না যারা রহমত ও বরকত নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে আগমন করে থাকেন। কিন্তু বিভিন্ন দায়িত্বে
নিয়োজিত ফেরেশতাগণ তাদের দায়িত্ব পালনার্থে অবশ্যই প্রবেশ করে- ঘরে যতই ছবি, মূর্তি
ও কুকুর থাকুক না কেন। যেমন: প্রাণ সংহারের দায়িত্বে নিয়োজিত মালাকুল মওত বা মৃত্যু
দূত, তাঁর সঙ্গে আগত ফেরেশত মণ্ডলী, মানুষের কার্যবিবরণী লেখার দায়িত্ব প্রাপ্ত কিরামান
কাতিবীন বা সম্মানিত লেখক ফেরেশতাবৃন্দ ইত্যাদি।
মোটকথা,
এ সকল ছবিকে ঘর থেকে সরানো জরুরি অথবা আসবাব-পত্রে যে সকল প্রাণীর ছবি বা প্রাণীর কার্টুনের
ছবি আছে কমপক্ষে সেগুলোর মুখমণ্ডল কালি দিয়ে বা যে কোনভাবে মুছে দেয়া জরুরি। মুখ মণ্ডল
তথা চোখ, মুখ, নাক, কান ইত্যাদি মুখাবয়বের চিহ্ন অবশিষ্ট না থাকলে তার উপর ছবির বিধান
প্রযোজ্য হবে না।
এখানে
আরো উল্লেখ্য যে, নিজের বা আর কারো ছবি পকেটে রেখেও সালাত মাকরুহ। অবশ্য কোথাও রেখে
সালাত পড়লে চুরি হয়ে বা হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে নিরুপায় অবস্থায় ছবিযুক্ত টাকা-পয়সা, পাশপোর্ট,
পরিচয়-পত্র প্রভৃতি সঙ্গে নিয়ে নামায পড়ায় দোষ নেই। (মাজাল্লাতুল
বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১২/৯৮, ১৯/১৬১)।
(৭) রেশমী কাপড় পরিধান করে
সালাত আদায় করা বৈধ নয়ঃ
(ক) ‘উকবাহ ইবনু ‘আমির (রাযি.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে একটা রেশমী জুববা হাদিয়া হিসেবে
দেয়া হয়েছিল। তিনি তা পরিধান করে সালাত আদায় করলেন। কিন্তু সালাত শেষ হবার সাথে সাথে
দ্রুত তা খুলে ফেললেন, যেন তিনি তা পরা অপছন্দ করছিলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ মুত্তাকীদের
জন্যে এই পোশাক সমীচীন নয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৩৭৫, ৫৮০১; মুসলিম ৩৭/২, হাঃ ২০৭৫, আহমাদ ১৭৩৪৮ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬২,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবদুর রহমান ইবনু গানাম আশ’আরী (রহ.)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার নিকট আবূ আমির কিংবা আবূ মালিক আশ’আরী বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহর কসম! তিনি আমার কাছে মিথ্যে কথা বলেননি। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার,
রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। তেমনি এমন অনেক দল হবে, যারা পাহাড়ের
ধারে বসবাস করবে, বিকাল বেলায় যখন তারা পশুপাল নিয়ে ফিরবে তখন তাদের নিকট কোন অভাব
নিয়ে ফকীর আসলে তারা বলবে, আগামী দিন সকালে তুমি আমাদের নিকট এসো। এদিকে রাতের অন্ধকারেই
আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেবেন। পর্বতটি ধ্বসিয়ে দেবেন, আর বাকী লোকদেরকে তিনি কিয়ামতের
দিন পর্যন্ত বানর ও শূকর বানিয়ে রাখবেন। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৫৯০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৭৬, আবূ দাউদ
৪০৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) হুযাইফাহ (রাঃ) হতে বৰ্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পানাহারকরতে আমাদেরকে
নিষেধ করেছেন এবং তিনি মোটা ও চিকন রেশমী বস্ত্ৰ পরিধান করতে ও তাতে উপবেশন করতে নিষেধ
করেছেন। (বুখারী ৫৪২৬, ৫৬৩২, ৫৬৩৩, ৫৮৩৭, মুসলিম ২০৬৭,
তিরমিযী ১৮৮৭)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) তিন চার আঙ্গুল পরিমান হলে তা ব্যবহার করা বৈধঃ
উমার
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেশমের কাপড় পরিধান
করতে নিষেধ করেছেন। তবে দুই বা তিন বা চার আঙুল পরিমাণ কাপড় হলে তা ব্যবহার করতে পারে।
(বুখারী ৫৮২৮, ৫৮২৯, মুসলিম ২০৬৯)।হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঙ) চিকিৎসার জন্য রেশমী কাপড় পরিধান বৈধঃ
আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রাহমান ইবনু আওফ
(রাঃ) ও যুবায়র (রাঃ)-কে তাদের শরীরে চুলকানি থাকায় রেশমী জামা পরিধান করতে অনুমতি
দিয়েছিলেন। (বুখারী ২৯১৯, ২৯২০, ২৯২২, ৫৮২৯, মুসলিম ২০৭৬,
৫২৬৮)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) মহিলাদের জন্য রেশমী কাপড়
বৈধঃ
‘আলী
(রাঃ) হতে বৰ্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এক জোড়া রেশমী
কাপড় পরতে দেন। আমি তা পরে বের হই। কিন্তু তাঁর [নবী সাঃ] মুখমণ্ডলে রাগের ভাব আমি
লক্ষ্য করি। কাজেই আমি তা আমার পরিবারের মহিলাদের মধ্যে বণ্টন করে দেই। (বুখারী ২৬১৪, ৫৩৬৬, ৫৮৪০, মুসলিম ২০৭১, ৫২৬২)।হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।।
(ছ) স্বর্ণ ও রেশমী কাপড় মহিলাদের বৈধ আর পুরুষদের
জন্য হারামঃ
আবূ
মূসা (রাঃ) থেকে বৰ্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমার উম্মাতের
নারীদের জন্য সোনা ও রেশম ব্যবহার হালাল করা হয়েছে, এবং পুরুষদের উপর হারাম করা হয়েছে।
-তিরমিযী একে সহীহ বলেছেন। (নাসায়ী ৫১৪৮, তিরমিযী ১৭২০)।হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) দুই হাতের আঙ্গুলসমূহকে পরস্পর খাঁজাখাঁজি করা নিষেধঃ
প্রিয়
নবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যখন সুন্দরভাবে ওযু করে মসজিদের উদ্দেশে বের হয়,
তখন সে যেন অবশ্যই তার (দুই হাতের) আঙ্গুলসমূহকে খাঁজাখাঁজি না করে। কারণ, সে সালাত
অবস্থায় থাকে।”
হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ
(ক) আবী ছুমামাহ আল হান্নাত্ব বলেন, কা’ব ইবনু ’ঊজরাহ
আমাকে (মসজিদের) আঙিনায় এমতাবস্থায় পেলেন, যখন আমি আমার (হাতের) আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের
মাঝে প্রবিষ্ট করা অবস্থায় ছিলাম। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন তোমাদের কেউ ওযু করে সালাতের উদ্দেশ্যে বের হয়, সে যেন তার
(উভয় হাতের) আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের মধ্যে প্রবেশ না করায়।”
(সুনান আদ-দারেমী, ১৪৪১, সহীহ ইবনু হিব্বান নং ২০৩৬, ২১৪৯, ২১৫০, মাওয়ারিদুয
যাম’আন ৩১৫, ৩১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(খ) কা’ব ইবনু ‘ঊজরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন
তুমি ওযু করে মসজিদে (যাওয়ার) ইচ্ছা করবে, তখন তুমি (উভয় হাতের) আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের
মধ্যে প্রবেশ না করাবে না। কেননা, তুমি তো সালাতরত (বলেই গণ্য)।” (সুনান আদ-দারেমী, ১৪৪২, সহীহ ইবনু হিব্বান ২১৪৯, মাওয়ারিদুয
যাম’আন ৩১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) আবী হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি
ওযু করে সালাতের উদ্দেশ্যে (মসজিদের দিকে) বের হয়, সে তো সালাতেই রত থাকে, যতক্ষণ না
সে তার বাড়িতে ফিরে আসে। ফলে তোমরা এইভাবে ধরো না।”- অর্থাৎ: তিনি তাঁর এক হাতের আঙ্গুলসমূহ
অপর হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করালেন। (সুনান আদ-দারেমী,
১৪৪৩, ইবনু খুযাইমা ৪৪৬; হাকিম ১/২০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অর্থাৎ
নামায পড়া অবস্থায় ঐরুপ নিষিদ্ধ।
নামাযের
জন্য ওযূ করার পর থেকে সালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঐরুপ করা নিষিদ্ধ। (সহিহ তারগিব ২৯২, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১২৯৪, জামে ৪৪৫,
৪৪৬ নং)।
(৯) সালাতের মধ্যে আঙ্গুল ফুটানো মাকরুহঃ
সালাতের
মধ্যে আঙ্গুল ফুটানো মাকরুহ। কারণ, এটি একটি বাজে ও নিরর্থক কর্ম এবং অপর নামাযীদের
মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে
উষাইমীন ৩/৩২৪)।
(১০) সালাত পড়ার সময় কোমরে হাত রাখা নিষেধঃ
আল্লাহর
নবী (সাঃ) সালাত পড়ার সময় কোমরে হাত রাখতে নিষেধ করেছেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সালাতে কোমর বা কাঁধে হাত রেখে ক্বিয়াম (কিয়াম) করতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৮১, সহীহ বুখারী ১২১৯, মুসলিম
৫৪৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)-৩৮৩, সিফাতুস সালাত- (৬৯), সহীহ আবু দাউদ- (৮৭৩),
রাওয- (১১৫২), ইরওয়া— (৩৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এ
অনুচ্ছেদে ইবনু উমার (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবু হুরাইরার হাদীসটি
হাসান সহীহ। একদল বিশেষজ্ঞ কোমরে হাত দিয়ে নামাযে দাড়ানো মাকরুহ বলেছেন। অপর একদল
বিদ্বান কোমরে হাত রেখে হাটা মাকরূহ বলেছেন। নামাযের মধ্যে এক হাত অথবা দুই হাত কোমরে
রাখাকে ইখতিসার বলে। বর্ণিত আছে, ইবলীস পথ চলার সময় কোমরে হাত রেখে চলে।
এর
কারণ বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, এমন কাজ ইয়াহুদীদের। (বুখারী
৩৪৫৮, ইবনে আবী শাইবা ৪৫৯১, ৪৬০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আয়িশাহ
(রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি কোমরে হাত রাখাকে অপছন্দ করতেন। আর বলতেন, ইয়াহূদীরা এমন
করে। শু‘বা (রহ.) আ‘মাশ (রহ.) হতে হাদীস বর্ণনায় সুফ্ইয়ান (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৪৫৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৩২০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অথবা
জাহান্নামীরা জাহান্নামে এরুপ কোমরে হাত রেখে আরাম নেবে। (ইবনে আবী শাইবা ৪৫৯২, ৪৫৯৫
নং)।
সুতরাং
তাদের সদৃশতা অবলম্বন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। অনেকে বলেন, নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ, এরুপ
কাজ অহংকারী, বিপদগ্রস্ত অথবা ভাবনা ও দুশ্চিন্তাগ্রস্তদের। তাই নামাযে এরুপ প্রদর্শন
অবৈধ। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩২৩, মুখালাফাত
ফিত্বাহারাতি অসস্বালাহ্ ১৫৫পৃ:)।
(১১) সালাতে কুকুরের মতো বসা নিষেধঃ
দুই
পায়ের গোড়ালী খাড়া রেখে, হাত দু’টিকে মাটিতে রেখে এবং দুই পাছার উপর ভর করে কুকুরের
মত বৈঠক নিষিদ্ধ। কারণ এমন বৈঠক শয়তানের।
সিজদারত অবস্থায় কুকুরের
মতো দুই হাত বিছিয়ে না দেয়ার হুকুমঃ
(ক) আবূ হুমাইদ (রাযি.) বর্ণনা করেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা্ করেছেন এবং তাঁর দু’হাত রেখেছেন, কিন্তু বিছিয়েও
দেননি আর তা গুটিয়েও দেননি।
আনাস
ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদায়
(অঙ্গ প্রত্যঙ্গের) সামঞ্জস্য রক্ষা কর এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দু’ হাত বিছিয়ে না
দেয়, যেমন কুকুর বিছিয়ে দেয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-২৪১,৮২২,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস
ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদায়
(অঙ্গ প্রত্যঙ্গের) সামঞ্জস্য রক্ষা কর এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দু’হাত বিছিয়ে না
দেয় যেমন কুকুর বিছিয়ে দেয়। (সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)-৭৮৪।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)
... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, তোমরা সিজদার সময় অংগসমূহ সঠিক রাখবে-কুকুরের মত দুই হাত বিছিয়ে দিবে না। (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)-৯৮৫।হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১২) কাপড় গাঁটের নিচে ঝুলিয়ে চলাফেরা করা ও সালাত আদায়
করা নিষেধঃ
পুরুষদের
জন্য তাদের কাপড়; লুঙ্গি, পায়জামা, প্যান্ট, চোগা প্রভৃতি গাঁটের নিচে ঝুলিয়ে পরা সব
সময়ের জন্য নিষিদ্ধ। পরন্তু মহান বাদশার সামনে সালাতে দাঁড়িয়ে অহংকারীদের মত এমনভাবে
কাপড় ঝুলিয়ে রাখা অধিকভাবে নিষিদ্ধ।
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে সে ব্যক্তির
দিকে (দয়ার) দৃষ্টি দিবেন না, যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশতঃ ইযার বা পরিধেয় বস্ত্র ঝুলিয়ে
পরিধান করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৭৮৮, ৫৭৯১,
মুসলিম ৩৭/৩৯, হাঃ ২০৮৭, আহমাদ ৯০১৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
ইযারের বা পরিধেয় বস্ত্রের যে অংশ পায়ের গোড়ালির নীচে থাকবে, সে অংশ জাহান্নামে যাবে।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৭৮৭, আধুনিক প্রকাশনী-
৫৩৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অথবা আবুল কাসিম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি
আকর্ষণীয় জোড়া কাপড় পরিধান করতঃ চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে পথ অতিক্রম করছিল; হঠাৎ আল্লাহ
তাকে মাটির নীচে ধ্বসিয়ে দেন। ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) অবধি সে এভাবে ধ্বসে যেতে থাকবে।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৭৮৯, ৫৭৯০, মুসলিম
৩৭/১০, হাঃ ২০৮৮, আহমাদ ১০০৪০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৬০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, এক ব্যক্তি স্বীয় লুঙ্গি (পায়ের গিরার নিচে) ঝুলিয়ে সলাত আদায় করছিল। রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ যাও, উযু করে আস। সে উযু করে এলে তিনি
আবার বললেনঃ যাও, উযু করে আস। সে পুনরায় উযু করে আসল। একজন বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি
তাকে (উযু থাকাবস্থায় পুনরায়) উযু করতে কেন বললেন? তিনি বললেন, সে তার লুঙ্গি ঝুলিয়ে
সলাত আদায় করছিল। মহান আল্লাহ (পায়ের গিরার নিচে) লুঙ্গি ঝুলিয়ে সলাত আদায়কারীর সলাত
ক্ববুল করেন না। (সুনানে
আবু দাউদ, হাদিস নং ৬৩৮, মুসনাদ বাজ্জার ৮৭৬২, সুনান আল বায়হাকি ৩৪৩১)।
ব্যাখ্যাঃ
“ক”
নং হাদিসে বলা হয়েছে যে, অহংকারবশতঃ পায়ের গিরার নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়লে কিয়ামত দিবসে
তার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না। অনেকে এখানে যুক্তি দেখায় যে, আমি তো অহংকার করছি
না। তাই নিরহংকার হয়ে কাপড় ঝুলিয়ে পড়লে সমস্যা নেই। তবে সর্বসম্মতিক্রমে অন্যান্য হাদিস
দ্বারা এটা প্রমানিত যে, পায়ের গিরার নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়া হারাম। সালাতের ক্ষেত্রে
বলা হয়েছে যে, সালাত কবুল হয় না। এখানে সালাত কবুল হয় না অর্থ হবে সওয়াব বেশী পাবে
না। একদম যে সালাত বাতিল হবে এমনটি নয়। তথা গাঁটের নিচে কাপড় ঝুলিয়ে সালাত পড়লে ওযূ
ও সালাত কিছুই বাতিল হয় না। অবশ্য এমন কাজ করলে তার উপর থেকে মহান আল্লাহর সুনজর ও
দায়িত্ব উঠে যায়। আর ওযূ ও সালাত বাতিল হওয়ার ব্যাপারে দলীলের হাদীস সহীহ নয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩০১)।
(১৩) কাপড় (শাল বা চাদর)
না জড়িয়ে দুই কাঁধে দুই দিকে ঝুলিয়ে রাখা অথবা চাদরে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় হাত দুইটিকে
তার ভিতরে রেখেই রুকূ-সিজদা করা নিষেধঃ
হযরত
আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) সালাতে এইভাবে কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। হাদিসটি
নিম্নরুপঃ
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার সময় ‘সাদল’ করতে ও কারও মুখমণ্ডল ঢাকতে নিষেধ
করেছেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৬৪, আবূ দাঊদ ৬৪৩, তিরমিযী ৩৭৮, সহীহ আল জামি‘ ৬৮৮৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(১৪) চাদর, শাল, কম্ফর্টার
প্রভৃতির মাধ্যমে মুখ ঢেকে সালাত আদায় নিষেধঃ
সালাত
পড়া অবস্থায় মুখ ঢাকতে মহানবী (সাঃ) নিষেধ করেছেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার সময় ‘সাদল’ করতে ও কারও মুখমণ্ডল ঢাকতে নিষেধ
করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৬৪, আবূ দাঊদ ৬৪৩,
তিরমিযী ৩৭৮, সহীহ আল জামি‘ ৬৮৮৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
মদ্বীনার
ফকীহ্ সালেম বিন আব্দুল্লাহ বিন উমার কাউকে সালোতে মুখ ঢেকে থাকতে দেখলে তার মুখ থেকে
তার কাপড়কে সজোরে টেনে সরিয়ে দিতেন। (মালেক, মুঅত্তা ৩০নং)।
(১৫) পুরুষের লম্বা চুল পেছন
দিকে বেঁধে সালাত আদায় করা নিষেধঃ
(ক) আবী রাফি’ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে সাজদারত অবস্থায় দেখতে পেলেন, আর
তখন আমি চুলে বেণী বা খোঁপা বেঁধে রেখেছিলাম- অথবা, তিনি বলেন, আমি চুল বেঁধে রেখেছিলাম।
অতঃপর তিনি তা খুলে দিলেন। (সুনান আদ-দারেমী, ১৪১৭, সহীহ
ইবনু হিব্বান নং ২২৭৯, মাওয়ারিদুয যাম’আন ৪৭৪আবু দাউদ ৬৪৬; তিরমিযী ৩৮২; ইবনু মাজাহ
১০৪২; সহীহ ইবনু খুযাইমা ২/৫৮ নং ৯১১; সহীহ ইবনু হিব্বান নং ২২৭৬ (আল ইহসান); বাইহাকী
২/১০৯; আব্দুর রাযযাক ২/১৮৩ নং ২৯৯০; হাকিম ১/২৬১-২৬২; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ ৬৪৬;
তাবারাণী, আল কাবীর ৯৯০-৯৯৩; আহমাদ ৬/৮, ১০, ৩৯১।... মুহাক্কিক্বের মাওয়ারিদুয যাম’আন
৪৭৪ নং এর টীকা ও ড. মাহির ইয়াসীন ফাহল এর তাহক্বীক্বকৃত সহীহ ইবনু খুযাইমা ৯১১ নং
এর টীকা হতে। এসব কিতাবে এটি এভাবে এসেছে: “ একদা (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের মুক্ত দাস) আবু রাফি’ হাসান ইবনু আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র পাশ দিয়ে
গমন করেন। এ সময় হাসান রা: সালাতরত ছিলেন এবং তার মাথার চুল উপরে (খোঁপা) বাঁধা ছিল।
আবূ রাফি’ তখন তাঁর পিছনে গিয়ে তার খোঁপা খুলে দিলেন। ফলে হাসান রা: তাঁর প্রতি রাগান্বিত
হয়ে তাকালে আবু রাফি’ রা: বলেন, আপনি আগে সালাত সমাপ্ত করুন, রাগান্বিত হবেন না। কেননা,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: ‘এটা শয়তানের আসন।
অর্থাত শয়তানের আড্ডস্থল- অর্থাত পুরুষের খোঁপা বা বেণী।” (আবু দাউদ ৬৪৬ সহ অন্যরা)- অনুবাদক)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমার
মুক্ত দাস কুরাইবা দেখেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনুল হারিছ সালাত আদায় করছেন এবং তার মাথার
পিছন দিকে খোঁপা বা বেণী বাঁধা রয়েছে। তখন তিনি দাঁড়িয়ে তা খুলে দিতে থাকলেন এবং অপরজন
তা (নিশ্চুপভাবে) মেনে নিলেন। এরপর তিনি সালাত শেষে ইবনু আব্বাস রা: এর নিকট এসে বললেন,
আমার মাথা সাথে আপনি এরূপ করলেন কেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: “এর দৃষ্টান্ত হলো ঐ ব্যক্তির মত যে পেছনে
দু’হাত বাঁধা অবস্থায় সালাত আদায় করে।” (সুনান আদ-দারেমী,
১৪১৮, সহীহ মুসলিম নং ৪৯২, সহীহ ইবনু হিব্বান নং ২২৮০, আবু দাউদ ৬৪৭; নাসাঈ ২/২১৫-২১৬;
কুবরা ৭০১; আহমাদ ১/২০৪, ৩১৬; আবু আউয়ানাহ ২/৮১; ইবনু হিব্বান ২২৮০; সহীহ ইবনু খুযাইমা
নং ৯১০, সহীহ ইবনু খুযাইমা ৯১০ নং এর টীকা হতে।- অনুবাদক)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
ইবনুল
আষীর বলেন, লম্বা চুল খোলা অবস্থায় থাকলে সিজদাহ অবস্থায় সেগুলিও মাটিতে পড়ে যাবে।
ফলে সিজদাহকারীকে ঐ চুলের সিজদাহ করার সওয়াব দেওয়া হবে। পক্ষান্তরে বাঁধা বা গাঁথা
থাকলে সেগুলো সিজদায় পড়তে পারবে না। তাই বাঁধতে নিষেধ করা হয়েছে। (নাইলুল আউতার, শাওকানী ২/৩৪০)।
আল্লামা
আলবানী (রহঃ) বলেন, মনে হয় এ বিধান কেবল পুরুষদের জন্যই, মহিলাদের জন্য নয়। ইবনুল আরাবী
থেকে এ কথা উদ্ধৃত করে শওকানী তাই বলেন। (সিফাতু স্বালাতিন
নাবী (সাঃ), আলবানী ১৪৩পৃ:) কারণ, মেয়েদের চুল থাকবে বাঁধা ও কাপড়ের পর্দার
ভিতরে। যা বের হলে মহিলার নামাযই বাতিল হয়ে যাবে। (নাইলুল
আউতার, শাওকানী ২/৩৪০)।
(১৬) সালাতরত অবস্থায় কাপড়
গুটানো নিষেধঃ
আল্লাহর
রসূল (সাঃ) বলেন, “আমি আদিষ্ট হয়েছি যে, আমি ৭ অঙ্গ দ্বারা সিজদাহ করি --এবং কাপড় ও
চুল না গুটাই।” (বুখারী, মুসলিম, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ
৭৮২, জামে ১৩৬৯ নং)।
মুহাদ্দিস
আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘এই নিষেধ কেবল সালাত অবস্থাতেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং সালাতের পূর্বেও
যদি কেউ তার চুল বা কাপড় গুটায় অতঃপর নামাযে প্রবেশ করে, তাহলে অধিকাংশ উলামাগণের মতে
সে ঐ নিষেধে শামিল হবে। আর চুল বেঁধে সালাত পড়া নিষিদ্ধ হওয়ার হাদীস উক্ত মতকে সমর্থন
করে। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৪৩পৃ:)।
এখান
থেকেই বহু উলামা বলেছেন যে, জামার আস্তীন বা হাতা গুটিয়ে সালাত পড়া মাকরুহ। কারণ মহানবী
(সাঃ) ও তাঁর উম্মত নামাযে কাপড় না গুটাতে আদিষ্ট হয়েছেন। আর জামারহাতা গুটানো কাপড়
গুটানোরই শামিল।
ইমাম
নওবী বলেন, উলামাগণ এ বিষয়ে একমত যে, কাপড় বা জামার আস্তীন গুটিয়ে, চুল বেঁধে বা পাগড়ীর
নিচে গুটিয়ে রেখে নামায পড়া নিষিদ্ধ। অবশ্য এই নিষেধের মান হল মাকরুহ। অর্থাৎ, এতে
নামায নষ্ট হয় না। (শারহু মুসলিম ৪/২০৯, আউনুল মা’বূদ
২/২৪৭)।
উক্ত
নিষেধের কারণ বর্ণনায় অনেকে বলেন যে, কাপড় গুটানো বা তোলা অহংকারীদের লক্ষণ। তাই তাদের
সাদৃশ্য অবলম্বন নিষিদ্ধ। (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৩৪৬)।
অবশ্য
কাপড় খুলে গেলে তা পরা উক্ত নিষেধের আওতাভুক্ত নয়। বরং লজ্জাস্থান খুলে যাওয়ার আশঙ্কা
হলে তো নামায অবস্থাতেও পরা ওয়াজেব। অনুরুপ উলঙ্গ নামাযী নামাযের মাঝে যদি কাপড় পায়,
তাহলে সেই অবস্থাতেই তার জন্যও তা পরা ওয়াজেব। কারণ, কাপড় বর্তমান থাকতে লজ্জাস্থান
বের করে নামায পড়লে নামায বাতিল। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ,
ইবনে উষাইমীন ৩/৩৪৭-৩৪৮)।
নামায
পড়তে পড়তে খুব শীত লাগলে এবং পাশে কাপড় থাকলে নামাযী নামাযের মধ্যেই তা পরতে বা গায়ে
নিতে পারে। কারণ না পরলে তার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটবে। (ঐ ৩/৩৪৮) অনুরুপ খুব গরম লাগলেও
অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় কাপড় নামায অবস্থাতেই সরিয়ে ফেলতে পারে।
চুল-কাপড় না গুটানোর ব্যাখ্যাঃ
ছালাত
অবস্থায় মাথার চুল ও কাপড় গুটিয়ে নিতে নিষেধ করা হয়েছে। যাতে মাথার চুল ও ঝুলে থাকা
কাপড়ও মুছল্লীর সাথে সিজদায় যায়। পাশাপাশি মুছল্লীর ভিতরে যেন কোন অহংকার প্রকাশ না পায়। কেননা সিজদায় গিয়ে ধূলা
লাগার ভয়ে কাপড় ভাঁজ হয়ে যাওয়ার আশংকায় ও চুল গুটিয়ে নেওয়ায় অহংকার প্রকাশ পায়। আল্লাহ
তা‘আলার সম্মুখে সিজদা করার সময় এটা একেবারে অনভিপ্রেত। (ফাৎহুল
বারী ২/২৯৪; মির‘আত ২/২০৬-০৭; মিরক্বাত ২/৩১৯)। জমহূর বিদ্বান বলেন, ‘পুরুষের
জন্য মাথার চুল বাঁধা কেবল ছালাতের সময় নয় বরং সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। ইমাম নববী বলেন,
এভাবেই ছাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্য বিদ্বানগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং এটাই সঠিক’ (মির‘আত ৩/২০৭, হা/৮৯৪-এর ব্যাখ্যা)।
তবে
নারীদের চুলের বিষয়টি ভিন্ন। হাফেয ইরাকী বলেন, এটি পুরুষের জন্য খাছ, মেয়েদের জন্য
নয়। কেননা তাদের চুলও সতরের অন্তর্ভুক্ত, যা ছালাত অবস্থায় ঢেকে রাখা ওয়াজিব। যদি সে
বেণী বা খোঁপা খুলে দেয় এবং চুল ছড়িয়ে পড়ে ও তা বেরিয়ে যায়, তাহ’লে তার ছালাত বাতিল
হয়ে যাবে। (নায়লুল আওত্বার ৩/২৩৬-২৩৭ ‘পুরুষের
জন্য চুল বাঁধা অবস্থায় ছালাত আদায়’ অনুচ্ছেদ)। আলবানী বলেন, ‘এটা প্রকাশ্য যে, সিজদাকালে
চুল খুলে দেওয়ার নির্দেশ শুধুমাত্র পুরুষের জন্য খাছ, মহিলাদের জন্য নয়’ (ছিফাতু ছালাতিন্নবী পৃ: ১২৫)।
(১৭) সালাতরত অবস্থায় সশব্দে
বা গুনগুণ করে কুরআন পাঠ নিষেধঃ
অনেকে
ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা ইত্যাদি পড়ার সময় মাঝে মাঝে গুন্গুন্ করে বা ফিসফিসিয়ে
ওঠে। যাতে পাশের নামাযীর বড় ডিষ্টার্ব হয়। এমন করাও হাদীস থেকে নিষিদ্ধ। মহানবী (সাঃ)
বলেন, “অবশ্যই নামাযী তার প্রতিপালকের সাথে নিরালায় আলাপ করে। সুতরাং কি নিয়ে আলাপ
করছে, তা যেন সে লক্ষ্য করে। আর তোমাদের কেউ যেন অপরের পাশে কুরআন সশব্দে না পড়ে।”
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু
‘উমার (রাঃ) এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু আনাস আল-বায়াযী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী সালাতরত
অবস্থায় তার পরওয়ারদিগারের সাথে একান্তে আলাপ করে। তাই তার উচিত সে কি আলাপ করে তার
প্রতি লক্ষ্য রাখা। অতএব একজনের কুরআন তিলাওয়াতের শব্দ অন্যজনের কানে যেন না পৌঁছে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৫৬, আহমাদ ৬০৯২, সহীহাহ্
১০৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৮) খাবার সামনে রেখে সালাত আদায় করা নিষেঃ
খাবার
জিনিস সামনে হাজির থাকলে এবং খাওয়ার ইচ্ছা ও আকাঙ্খা থাকলে তা না খেয়ে সালাত পড়া মাকরুহ।
কারণ, সে সময় খাবারের দিকে মন পড়ে থাকে এবং সালাতে যথার্থ মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে।
[‘আবদুল্লাহ
ইবনু ‘উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমাদের কারো রাতের খাবার সামনে রাখা হলে এমতাবস্থায় সালাতের তাকবীর বলা হলে,
তখন রাত্রের খাবার খাওয়া শুরু করবে। খাবার খেতে তাড়াহুড়া করবে না খাবার শেষ না হওয়া
পর্যন্ত। ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সামনে খাবার রাখা হত এমতাবস্থায় সালাত শুরু হলে তিনি
খাবার খেয়ে শেষ করার আগে সালাতের জন্য যেতেন না, এমনকি তিনি ইমামের ক্বিরাআত শুনতে
পেলেও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৫৬, সহীহ বুখারী ৬৭৪, মুসলিম ৫৫৯)।হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১৯) প্রস্রাব-পায়খানা আটকে
রেখে সালাত আদায় করা নিষেধঃ
প্রস্রাব-পায়খানার
চাপ থাকলে সেই অবস্থায় সালাত পড়া বৈধ নয়। সময় বা জামাআত ছুঠে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও
প্রস্রাব-পায়খানার কাজ না সেরে নামাযে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) আব্দুল্লাহ ইবনু আরকাম রাদ্বিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু-আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন: “সালাত শুরুর প্রাক্কালে
তোমাদের কারো যদি পায়খানার বেগ হয়, তবে সে যেন প্রথমে পায়খানার প্রয়োজন সম্পন্ন করে।”
(সুনান আদ-দারেমী, ১৪৬৪, সহীহ ইবনু হিব্বান নং২০৭১; মাওয়ারিদুয
যামআন নং ১৯৪, মুসনাদুল হুমাউদী ৮৯৬, আবু দাউদ ৮৮; তিরমিযী ১৪২; নাসাঈ ৮৫৩; ইবনু মাজাহ
৬১৬; বাইহাকী ৩/৭২; ইবনু খুযাইমা ৯৩২; আহমাদ ৪/৩৫; হাকিম ১/১৬৮, মুহাক্বিক্বের মাওয়ারিদুয
যাম’আন নং ১৯৪ এর টীকা হতে। - অনুবাদক)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইরশাদ করতে শুনেছিঃ খাবার সামনে
রেখে কোন সালাত নেই এবং দু’ অনিষ্ট কাজ (পায়খানা-পেশাব)
চেপে রেখেও কোন সালাত নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
১০৫৭, সহীহ মুসলিম ৫৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ
সালাতের ইক্বামাত হয়ে গেলে তখন তোমাদের কারো পায়খানার বেগ ধরলে সে যেন আগে পায়খানা
করে নেয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৬৯, সহীহ আত্ তিরমিযী ১৪২, আবূ দাঊদ ৮৮, দারিমী ১৪৬৭, ইবনু খুযায়মাহ্
১৬৫২, সহীহ আল জামি‘ ৩৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তির জন্য পায়খানা-পেশাবের বেগ হতে মুক্ত না হয়ে
সালাত আদায় করা বৈধ নয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২০) ঢুল বা তন্দ্রা অবস্থায় সালাত আদায় অপছন্দনীয়ঃ
ঘুমের
ঘোর থাকলে বা ঢুল এলে (নফল) নামায পড়া উচিৎ নয়। বরং একটু ঘুমিয়ে নিয়ে পড়া উচিৎ। অবশ্য
ফরয নামাযের ক্ষেত্রে জামাআত ও নির্দিষ্ট সময় খেয়াল রাখা একান্ত জরুরী।
হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ
(ক) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ মসজিদের মধ্যে
তোমাদের কারো তন্দ্রা এলে সে যেন তার স্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র বসে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১১১৯তিরমিযী ৫২৬, আহমাদ (২/৩২,
হাঃ ৪৭৪১), ইবনু খুযাইমাহ ১৮১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যদি সালাতরত অবস্থায় তোমাদের
কারো (প্রবল) ঘুম পায়, তবে সে যেনো ঘুমিয়ে নেয়, যতক্ষণ তার ঘুম দূরীভূত না হয়। কেননা,
সে ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে হয়তোবা (ঘুমের ঘোরে) নিজেকে গালি দিয়ে বসবে।” (সুনান আদ-দারেমী, ১৪২০,
বুখারী ২১২; মুসলিম ৭৮৬; সহীহ ইবনু হিব্বান নং ২৫৮৩, ২৫৮৪; মুসনাদুল মাউসিলী
৫/১৮৬ নং ২৮০০, মুসনাদুল হুমাইদী নং ১৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২১) মাদকদ্রব্য বা কোন হারাম বস্তু বহন করাঃ
হ্কপ্রিয়
ও সত্যানুসন্ধানী উলামাগণের নিকট কুরআন, সুন্নাহ্, বিবেক ও জ্ঞান-বিজ্ঞান ভিত্তিক
বহু দলীল বর্তমান থাকার কারণে বিড়ি, সিগারেট, গালি, তামাক, গুল-জর্দা প্রভৃতি মাদকদ্রব্য
মাকরুহে তাহ্রীমী অর্থাৎ হারাম। তাই এ সব জিনিস পকেটে রেখে মসজিদে যাওয়া ও নামায পড়া
মাকরুহ। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/১৯৯-২০০)।
(২২) সালাতে হেলা-দোলা বৈধ নয়ঃ
সালাত
পড়তে পড়তে আগে-পিছে বা ডানে-বামে হেলা-দোলা বৈধ নয়। কেন না, এ কাজ নামাযে একাগ্রতা
ও স্থিরতার প্রতিকূল। (মুখালাফাত ফিত্বাহারাতি অসস্বালাহ্
২২০পৃ:)।
অনেকে
কেবল ডান অথবা বাম পায়ের উপর ভরনা দিয়ে বাঁকা হয়ে দাঁড়ায়; যাতে কাতারের পাশের নামাযীরও
ডিষ্টার্ব হয়। পক্ষান্তরে প্রিয় নবী (সাঃ) নামায শুরু করার পূর্বে সাহাবাগণের কাঁধ
স্পর্শ করে বলতেন, “তোমরা সোজা হয়ে দাঁড়াও। বিভিন্নরুপে দাঁড়ায়ো না। নচেৎ তোমাদের হৃদয়ও
বিভিন্ন হয়ে যাবে।”
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
মাস্‘ঊদ আল আনসারী (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সালাতের সময় আমাদের কাঁধে হাত রেখে বলতেনঃ সোজা হয়ে দাঁড়াও, সামনে পিছনে হয়ে দাঁড়িও
না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বিভেদ সৃষ্টি হবে। আর তোমাদের যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী,
তারা আমার নিকট দাঁড়াবে। তারপর সমস্ত লোক যারা তাদের নিকটবর্তী (মানের), তারপর ঐসব
লোক যারা তাদের নিকটবর্তী হবে। আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন, আজকাল
তোমাদের মাঝে বড় মতভেদ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৮৮,
সহীহ মুসলিম ৪৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অবশ্য
নামায লম্বা হলে পা ধরার ফলে দু-একবার পা বদলে আরাম নেওয়া দূষণীয় নয়। তবে শর্ত হল,
যেন এক পা অপর পায়ের চেয়ে বেশী আগা-পিছা না হয়ে যায়। বরং উভয় পা যেন বরাবর থাকে এবং
এ কাজ বারবারও না হয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন
৩/৩২৩-৩২৪)। তাছাড়া যেন পাশের মুসল্লীর ডিষ্টার্ব না হয়।
(২৩) সালাতের প্রতিকূল কিছু আচরণঃ
সালাত
পড়তে পড়তে মাথা বা দাড়ি চুলকানো, বারবার মাথার টুপী, পাগড়ী বা রুমাল সোজা করা, ঘড়ি
হিলানো ও দেখা, নখ, দাঁত, নাক ও ব্রণ খোঁটা প্রভৃতি অপ্রয়োজনীয় কর্ম বৈধ নয়। (মুখালাফাত ফিত্বাহারাতি অসস্বালাহ্ ১৭২-১৭৫পৃ:)।
একটি
কথা খুবই সত্য যে, হৃদয় চাঞ্চল্যময় থাকলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চঞ্চল থাকে। আর হৃদয়কে যদি
শান্ত ও স্থির রাখা যায়, তাহলে বাহিরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সেই মহান বাদশার জন্য শান্ত
ও স্থির থাকবে।
এমন বহু কর্ম আছে, যা নামাযের ভিতরে করলে সালাত বাতিল হয়ে যায়। সে সব কর্মের
কিছু নিম্নরুপ:-
(১) অপ্রয়োজনে সালাতের ভিতর
অতিরিক্ত নড়াচড়া করলে সালাত বাতিল হয়ে যায়ঃ
অপ্রয়োজনে
সালাতের ভিতর এত বেশী নড়া-সরা বা চলা-ফেরা করা যাতে অন্য কেউ দেখলে এই মনে করে যে,
সে সালাত পড়ে নি। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন
৩/৩৫২-৩৫৩) ।
কারণ,
কথা বলার মত নামাযের বহির্ভূত অন্যান্য কর্ম করলে নামায বাতিল হয়ে যায়। মহান আল্লাহ
বলেন, “--আর তোমরা আল্লাহর সামনে বিনীত ভাবে দাঁড়াও।” (কুরআন
মাজীদ ২/২৩৮)।
(২) সালাতের কোন রুকন বা
শর্ত ত্যাগ করলে সালাত বাতিল হয়ে যায়ঃ
ধীর-স্থিরভাবে
সালাত না পড়ার কারণে মহানবী (সাঃ) নামায ভুলকারী সাহাবাকে তিন-তিনবার ফিরিয়ে সালাত
পড়তে আদেশ করেছিলেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করলো।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মসজিদের এক কোণে বসা ছিলেন। এরপর লোকটি
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে সালাম জানালো। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, ‘‘ওয়া ‘আলায়কাস্ সালা-ম; যাও, আবার সালাত
আদায় কর। তোমার সালাত হয়নি।’’ সে আবার গেল ও সালাত আদায় করলো। আবার এসে রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করলো। তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘ওয়া ‘আলায়কাস্
সালা-ম; আবার যাও, পুনরায় সালাত আদায় কর। তোমার সালাত হয়নি।’’ এরপর তৃতীয়বার কিংবা
এর পরের বার লোকটি বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি যখন সালাত আদায় করতে ইচ্ছা করবে (প্রথম) ভালোভাবে উযূ করবে। এরপর ক্বিবলার দিকে দাঁড়িয়ে তাকবীর তাহরীমা
বলবে। তারপর কুরআন থেকে যা পড়া তোমার পক্ষে সহজ হয় তা পড়বে। তারপর রুকূ‘ করবে। রুকূ‘তে
প্রশান্তির সাথে থাকবে। এরপর মাথা উঠাবে। সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর সিজদা্ করবে। সাজদাতে স্থির থাকবে। তারপর মাথা উঠিয়ে স্থির
হয়ে থাকবে। এরপর দ্বিতীয় সিজদা্ করবে। সাজদায় স্থির থাকবে। আবার মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে
দাঁড়াবে। এভাবে তুমি তোমার সব সালাত আদায় করবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯০, সহীহ বুখারী ৬২৫১, ৬৬৬৭, মুসলিম ৩৯৭, আবূ দাঊদ ৮৫৬, নাসায়ী
৮৮৪, তিরমিযী ৩০৩, আহমাদ ৯৬৩৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
কারণ,
ধীর-স্থির ও শান্তভাবে নামায পড়া নামাযের এক রুক্ন ও ফরয। যা ত্যাগ করার পর সহু সিজদাহ
করলেও সংশোধন হয় না।
অনুরুপ
সূরা ফাতিহা, রুকূ, কোন সিজদাহ, সালাম বা অন্য কোন রুক্ন ত্যাগ করলে নামাযই হয় না।
প্রিয়
নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি নাপাক হয়ে যায়, সে ব্যক্তি পুনরায় ওযূ না করা পর্যন্ত
তার নামায কবুল হয় না।”
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যার উযূ ছুটে গেছে তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কবূল হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত
সে উযূ না করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩০০, সহীহ
বুখারী ১৩৫, মুসলিম ২২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পবিত্রতা
বিনা নামাযই কবুল হয় না।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু
‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
পাক-পবিত্রতা ছাড়া সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) এবং হারাম ধন-সম্পদের দান-খয়রাত কবূল
হয় না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩০১, সহীহ মুসলিম
২২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সুতরাং
সালাত পড়তে পড়তে কারো ওযু ভেঙ্গে গেলে তার সালাত বাতিল। সালাত ত্যাগ করে পুনরায় ওযূ
করে এসে নতুনভাবে নামায পড়তে হবে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আয়িশাহ্
সিদ্দীক্বা (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভঙ্গ করে ফেলে সে যেন তার নাক চেপে
ধরে তারপরে সালাত ছেড়ে চলে আসে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
১০০৭, আবূ দাঊদ ১১৪, সহীহ আল জামি ২৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অবশ্য
ওযূ ভাঙ্গার নিছক সন্দেহের কারণে সালাত বাতিল হয় না। নিশ্চিতরুপে ওযূ নষ্ট হওয়ার কথা
না জানা গেলে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। প্রিয় রসূল (সাঃ) বলেন, “ (নামাযে হাওয়া বের হওয়ার
সন্দেহ্ হলে) শব্দ না শোনা অথবা দুর্গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত কেউ যেন নামায ত্যাগ না
করে।” হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আব্বাদ
ইবনু তামীম (রহ.)-এর চাচা হতে বর্ণিত। একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নিকট এক ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হল যে, তার মনে হয়েছিল যেন সালাতের মধ্যে কিছু হয়ে
গিয়েছিল। তিনি বললেনঃ সে যেন ফিরে না যায়, যতক্ষণ না শব্দ শোনে বা দুর্গন্ধ পায়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৩৭, ১৭৭, ২০৫৬; মুসলিম ৩/২৬,
হাঃ ৩৬১, আধুনিক প্রকাশনী ১৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সালাত
পড়তে পড়তে শরমগাহ্ বের হয়ে পড়লে, মহিলাদের পেট, পিঠ, হাতের বাজু, চুল ইত্যাদি প্রকাশ
হয়ে পড়লে (তা কোন বেগানা পুরুষ দেখতে পাক অথবা না পাক) নামায বাতিল হয়ে যায়।
সালাত
পড়তে থাকা কালে কাপড়ে বীর্য (স্বপ্নদোষের) চিহ্ন অথবা (মহিলা) মাসিকের দাগ দেখলে নামায
ত্যাগ করা জরুরী।
সালাত
অবস্থায় দেহ্ বা লেবাসের কোন স্থানে নাপাকী লেগে থাকতে নজর পড়লে যদি তা সত্বর দূর
করা সম্ভব হয়, তাহলে তা দূর করে নামায হয়ে যাবে। যেমন অতিরিক্ত লেবাসে; অর্থাৎ টুপী,
রুমাল, গামছা বা পাগড়ী অথবা জুতায় নাপাকী দেখলে এবং সত্বর তা খুলে ফেলে দিলে নামায
শুদ্ধ।
একদা
সালাত পড়তে পড়তে জিবরীল (আঃ) মারফৎ মহানবী (সাঃ) তাঁর জুতায় নাপাকী লেগে থাকার সংবাদ
পেলে তিনি তা খুলে ফেলে নামায সম্পন্ন করেছিলেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করছিলেন। হঠাৎ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
পা থেকে জুতা খুলে বাম পাশে রেখে দিলেন। তা দেখে লোকেরাও নিজেদের জুতা খুলে ফেললেন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত
শেষ করে বললেন, তোমরা কেন নিজেদের পায়ের জুতা খুলে ফেললে? তারা উত্তর দিলেন,
আপনাকে জুতা খুলে ফেলতে দেখে আমরাও আমাদের জুতা খুলে রেখে দিয়েছি। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জিবরীল (আঃ) এসে আমাকে খবর দিলেন, আমার জুতায় নাপাকী আছে।
তোমাদের কেউ যখন মসজিদে আসে তখন সে যেন তার জুতায় নাপাক আছে কিনা তা দেখে নেয়। যদি
তার জুতায় নাপাকী দেখে তাহলে সে যেন তা মুছে ফেলে। এরপর জুতা সহকারেই সালাত আদায় করে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৬৬, সহীহ আবূ দাঊদ ৬৫০, ইরওয়া ২৮৪, দারিমী ১৪১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সত্বর
খোলা সম্ভব না হলে অথবা পূর্ণ লেবাস পরিবর্তন করা দরকার হলে নামায ত্যাগ করে পবিত্র
লেবাস পরে পুনরায় নামায পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্,
সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৮৯)।
কারো
সালাত পড়ার পর যদি মনে পড়ে যে সে বিনা ওযূতে সালাত পড়েছে, অথবা কাপড়ে (নিজের) বীর্য
(স্বপ্নদোষ) বা (মহিলা) মাসিকের চিহ্ন দেখে, তাহলে নামায শুদ্ধ হয় নি। যথা নিয়মে পবিত্র
হওয়ার পর সে সালাত পুনরায় পড়তে হবে। কারণ, দেহ্ নাপাক রেখে নামাযই হয় না।
পক্ষান্তরে
সালাত পড়ার পর যদি দেখে, কাপড়ে প্রস্রাব, পায়খানা বা অন্য কোন নাপাকী লেগে আছে; অর্থাৎ
সে তা নিয়েই নামায পড়েছে, তাহলে না জানার কারণে তার নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। আর ফিরিয়ে
পড়তে হবে না। কারণ, বাইরের কাপড়ে (অনুরুপ কোন অঙ্গে) নাপাকী লেগে থাকলেও তার দেহ্
আসলে পাক ছিল। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি
১/১৯৮, ২৯৮)।
(৩) জেনে শুনে ইচ্ছাকৃত কথা
বললে সালাত নষ্ট হয়ঃ
আব্দুল্লাহ
বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) এর সালাত পড়া অবস্থায় আমরা তাঁকে সালাম দিতাম এবং
তিনি সালামের উত্তরও দিতেন। অতঃপর যখন নাজাশীর নিকট থেকে ফিরে এলাম, তখন সালাম দিলে
তিনি উত্তর দিলেন না। পরে কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, “নামাযে মগ্নতা আছে।”
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ্
ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে তাঁর সালাতরত অবস্থায় সালাম করতাম; তিনি আমাদের সালামের জওয়াব দিতেন। পরে যখন আমরা
নাজাশীর নিকট হতে ফিরে এলাম, তখন তাঁকে (সালাতে) সালাম করলে তিনি আমাদের সালামের জবাব
দিলেন না এবং পরে ইরশাদ করলেনঃ সালাতে আছে নিমগ্নতা। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১১৯৯, ১২১৬, ৩৮৭৫, আধুনিক প্রকাশনী ১১২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১১২৫, ১১২৬, মুসলিম ৫/৭, ৫৩৮, আহমাদ ৩৫৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যায়দ
বিন আরকাম (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) এর যুগে আমরা সালাতে কথা বলতাম; আমাদের মধ্যে কেউ
কেউ তার সঙ্গীকে নিজের প্রয়োজনের কথা বলত। অতঃপর যখন আল্লাহর এই নির্দেশ অবতীর্ণ হল,
“তোমরা নামাযসমূহ এবং বিশেষ করে মধ্যবর্তী (আসরের) নামাযের প্রতি যত্নবান হও। আর আল্লাহর
উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দাঁড়াও।” তখন আমরা চুপ থাকতে (নামাযের সূরা, দুআ, দরুদ ছাড়া অন্য
কথা না বলতে) আদিষ্ট হ্লাম।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
যায়দ
ইবনু আরক্বাম (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সময়ে সালাতের মধ্যে কথা বলতাম। আমাদের যে কেউ তার সঙ্গীর সাথে নিজ দরকারী বিষয়ে
কথা বলত। অবশেষে এ আয়াত নাযিল হল- ‘‘তোমরা তোমাদের সালাতসমূহের সংরক্ষণ কর ও নিয়ানুমবর্তিতা
রক্ষা কর; বিশেষ মধ্যবর্তী (‘আসর) সালাতে, আর তোমরা (সালাতে) আল্লাহর উদ্দেশে একাগ্রচিত্ত
হও’’- (সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ্ ২/২৩৮)। অতঃপর আমরা সালাতে নীরব থাকতে আদেশপ্রাপ্ত হলাম।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১২০০, ৪৫৩৪; মুসলিম
৫/৭, হাঃ ৫৩৯, আহমাদ ১৯২৯৮, আধুনিক প্রকাশনী ১১২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১১২৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অবশ্য
সালাতে কথা বলা হারাম তা না জেনে যদি কেউ কথা বলেই ফেলে, তাহলে তার নামায বাতিল নয়।
এক ব্যক্তি নামাযে হাঁচলে (ছিকি মারলে) মুআবিয়া বিনহাকাম নামাযের অবস্থাতেই ঐ ব্যক্তির
জন্য ‘য়্যারহামুকাল্লাহ্’ বলে দুআ করলে সাহাবাগণ নিজেদের জানুতে আঘাত করে তাঁকে চুপ
করাতে চাইলেন। সালাত শেষ হলে আদর্শ শিক্ষক প্রিয় রসূল (সাঃ) তাঁকে নরমভাবে বুঝিয়ে বললেন,
“এই নামাযে লোক-সমাজের কোন কথা বলা বৈধ (সঙ্গত) নয়। এতে যা বলতে হয় তা হল; তাসবীহ,
তকবীর ও কুরআন পাঠ।”
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
মুআবিয়া
ইবনুল হাকাম আস-সুলামী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাথে কোনো একটি সালাত আদায় করেছিলাম। ইত্যবসরে
লোকদের মধ্য থেকে একজন হাঁচি দিল। ফলে আমি বললাম, ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’।
তিনি
বলেন, তখন লোকেরা আড়চোখে আমার দিকে তাকাতে লাগল। আমি বললাম “আমার মায়ের পুত্র বিয়োগ
হোক! তোমরা আমার প্রতি (এভাবে) তাকাচ্ছো কেন? তখন তারা তাদের উরুর উপর হাত চাপড়াতে
লাগল। আমি যখন দেখলাম যে, তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছে, তখন আমি বললাম, তোমরা আমাকে
চুপ করাতে চাচ্ছো কেন? যাহোক, আমি চুপ হয়ে গেলাম। তিনি বলেন, অতঃপর যখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাত শেষ করলেন, আমার মাতা-পিতা তাঁর জন্য কুরবান
হোক! আমি কোনো শিক্ষাদাতাকে তার মতো এত সুন্দর করে শিক্ষা দান করতে পূর্বেও কখনো দেখিনি,
তাঁর পরেও কখনো দেখিনি। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে মারলেন না, ধমক দিলেন না, গালিও দিলেন
না। বরং তিনি বললেন: “আমাদের এ সালাতে কোনো লোকের কোনো কথাবার্তা বলা ঠিক নয়। বরং তা
হচ্ছে- তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠের জন্য।” (সুনান আদ-দারেমী,
১৫৪০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭৮, সহীহ
মুসলিম ৫৩৭, নাসায়ী ১২১৮, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ৮৫৯, মুসলিম, মাসাজিদ ৫৩৭; নাসাঈ, সাহু
৩/১৪-১৮; আবু আউয়ানাহ ২/১৪১; তাহাবী, শারহু মা’আনিল আছার ১/৪৪৬; তাবারাণী, আল কাবীর
১৯/৪০১ নং ৯৪৫, ৯৪৭; বাইহাকী, আস সালাত ২/২৪৯; খতীব, ফাকিহ ওয়াল মুতাফাকিহ নং ৯৮২;
আহমাদ ৫/৪৪৭, ৪৪৮; ইবনু আবী শাইবা ২/৪৩২; আবু দাউদ, আস সালাত ৯৩০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ
৭২৬; ইবনুল জারুদ নং ২১২; ইবনু হাযম, আল মুহাল্লা ৩/১৪৯ ও ৪/৪; তায়ালিসী ১/১০৭ নং ৪৮৬;
সহীহ ইবনু হিব্বান নং ১৬৫,২২৪৭, ২২৪৮, তালখীসুল হাবীর ১/২৮০, ২৮১। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
উক্ত
হাদীসে এ কথা উল্লেখ নেই যে, তিনি তাঁকে সালাত ফিরিয়ে পড়তে বলেছিলেন। সুতরাং বুঝা গেল,
অজান্তে কেউ কথা বলে ফেললে তার নামায নষ্ট হয়ে যাবে না। (ফিকহুস
সুন্নাহ্ ১/২৩৯)।
উল্লেখ্য
যে, সালাতের সূরা, দুআ-দরুদ ইত্যাদির অনুবাদও যদি সালাতে বলা হয়, তাহলেও সালাত বাতিল
হয়ে যাবে। কারণ, অনুবাদও মানুষের সাধারণ কথার শামিল।
প্রকাশ
থাকে যে, কথা যদি সালাত সংশোধন করার মানসেও বলা প্রয়োজন হয়, তবুও বলা বৈধ নয়। যেমন
যদি ইমাম আসরের সময় জোরে ক্বিরাআত পড়তে শুরু করে এবং কোন মুক্তাদী তা সংশোধনের উদ্দেশ্যে
বলে, ‘এটা আসরের নামায’ অথবা যদি ইমাম এক সিজদার পর বসে যায় এবং কোন মুক্তাদী ‘তাসবীহ’
বলার পরও বুঝতে না পারে যে, দ্বিতীয় সিজদাহ করতে হবে; ফলে সে উঠতে যায়। এ ক্ষেত্রে
কোন মুক্তাদীর ‘সিজদাহ’ বা ‘সিজদাহ করুন’ বলাও বৈধ নয়। এরুপ বললে নামায বাতিল। কারণ,
পূর্বেই আমরা জেনেছি যে, নামাযে কিছু ঘটলে মহানবী (সাঃ) আমাদেরকে (পুরুষের জন্য) তাসবীহ
এবং (মহিলার জন্য) হাততালি বিধেয় করেছেন। (আলমুমতে’, শারহে
ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩৬৪-৩৬৫)।
এ
বিষয়ে একটি ব্যতিক্রম ব্যাপার এই যে, কোন জামাআতের লোক ভুল করে চার রাকআতের জায়গায়
তিন রাকআত পড়ে সালাম ফিরার পর মুক্তাদীদের কেউ এই ভুল সম্বন্ধে স্মরণ দিলে এবং ইমামও
নিশ্চিত হওয়ার জন্য অন্যান্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সংশোধনের উদ্দেশ্যে আরো এক রাকআত নামায
অবশ্যই পড়বে এবং সহু সিজদাহ করবে। আর এর মাঝে ইমাম-মুক্তাদীর ঐ কথোপকথন নামাযের জন্য
ক্ষতিকর হবে না। যেহেতু এ কথা তখনই বলা হয়, যখন সালাম ফিরে দেওয়া হয়। আর তখন কথা বলা
বৈধ। পক্ষান্তরে নিশ্চিত জানা যায় না যে, সত্যই সালাত কম পড়া হয়েছে কি না। এ রকমই হয়েছিল
মহানবী (সাঃ) ও সাহাবাগণের।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’
রাক‘আত আদায় করে সালাত শেষ করে ফেললেন। যূল-ইয়াদাইন (রাযি.) তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর
রাসূল! সালাত কি কম করা হয়েছে, না আপনি ভুলে গেছেন? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম (অন্যদের লক্ষ্য করে) বললেনঃ যূল-ইয়াদাইন কি ঠিক বলছে? সাহাবীগণ বললেন,
হ্যাঁ। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং আরও দু’ রাক‘আত
সালাত আদায় করলেন, অতঃপর সালাম ফিরালেন এবং তাকবির বলে স্বাভাবিক সিজদার মতো অথবা তার
চেয়ে দীর্ঘ সিজদা্ করলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৭১৪, ৪৮২, আধুনিক প্রকাশনী ৬৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৪) সালাতরত অবস্থায় পানাহার করলে সালাত নষ্ট হয়ে যায়ঃ
সালাত
পড়তে পড়তে খেলে অথবা পান করলে সালাত বাতিল হয়ে যায়। মুখের ভিতর পান, গালি (?), চুইংগাম
প্রভৃতি রেখে সালাত হয় না। কারণ এ কাজ সালাতের পরিপন্থী। (ফিকহুস
সুন্নাহ্ ১/২৪০, ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু ১৩০ পৃ:)।
(৫) সালাতরত অবস্থায় হাসাহাসি করলে সালাত নষ্ট হয়ে যায়ঃ
হাসলেও
অনুরুপ কারণে সালাত বাতিল পরিগণিত হয়। (ফিকহুস সুন্নাহ্
১/২৪০, ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু ১৩০পৃ:) অবশ্য কোন হাস্যকর জিনিস দেখে অথবা হাস্যকর
কথা শুনে হাসি চেপে রাখতে না পেরে যদি কেউ মুচকি হাসি (শব্দ না করে) হেসে ফেলে, তাহলে
তার সালাত বাতিল হবে না।
প্রকাশ
থাকে যে, নামাযী কে হাসাবার চেষ্টা করা তথা তার নামায নষ্ট করার কাজ শয়তানের। কোন মুসলিম
মানুষের এ কাজ হওয়া উচিৎ নয়।
(৬) পিতার হারাম উপায়ে উপর্জিত অর্থ খেলে ও ব্যয় করলে
পুত্রের সালাত বাতিল হয় নাঃ
পিতার
হারাম উপায়ে উপর্জিত অর্থ খেলে ও ব্যয় করলে পুত্রের সালাত বাতিল নয়। তবে সেই অর্থ ব্যবহার
না করতে যথাসাধ্য প্রয়াস থাকতে হবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে পরহেযগারী অবলম্বন
করে, আল্লাহ তার জন্য চলার পথ সহ্জ করে দেন। আর তিনি তাকে এমন জায়গা থেকে রুযী দান
করে থাকেন, যা সে বুঝতে ও কল্পনাই করতে পারে না। (ফাতাওয়া
ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৬৪)।
(৭) ইমাম থাকতে তাঁর জায়গায়
তাঁর বিনা অনুমতিতে অন্যের ইমামতি করা অবৈধঃ
ইমাম
থাকতে তাঁর জায়গায় তাঁর বিনা অনুমতিতে অন্যের ইমামতি করা অবৈধ, আর তা বড় বেপরোয়া লোকের
কাজ। এ সব লোকেদের ইমামের একটু দেরী সয় না। সামান্য দেরী হলেই আর তাঁর অপেক্ষা না করে
জামাআত খাড়া করে দেয়। এ ধরনের ধৈর্যহারা মানুষরা কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমান।
মহানবী
(সাঃ) বলেন, “তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত (নামাযের জন্য উঠে) দাঁড়াও না।”
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের ইক্বামাত
হলে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৩৭, ৬৩৮, ৯০৯; মুসলিম ৫/২৯, হাঃ ৬০৪, আহমাদ ২২৭১২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ
৬০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আপনি
যাকে দেখা করতে যাচ্ছেন, সে যদি আপনার থেকে জ্ঞানে-মানে ছোটও হয়, তবুও আপনি নিজ থেকে
তার ইমামতির জায়গায় ইমামতি করবেন না এবং তার আসনে বা বিছানায় বসবেন না। অবশ্য সে অনুমতি
দিলে বা অনুরোধ করলে আলাদা কথা।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(খ) আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ জাতির ইমামতি এমন
লোক করবেন, যিনি আল্লাহর কিতাব সবচেয়ে উত্তম পড়তে পারেন। উপস্থিতদের মাঝে যদি সকলেই
উত্তম ক্বারী হন তাহলে ইমামতি করবেন ঐ লোক যিনি সুন্নাতের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী জানেন।
যদি সুন্নাতের ব্যাপারে সকলে সমপর্যায়ের জ্ঞানী হন তবে যে সবার আগে হিজরত করেছেন। হিজরত
করায়ও যদি সবাই এক সমান হন। তাহলে ইমামাত করবেন যিনি বয়সে সকলের চেয়ে বড়। আর কোন লোক
অন্য লোকের ক্ষমতাসীন এলাকায় গিয়ে ইমামতি করবে না এবং কেউ কোন বাড়ী গিয়ে যেন অনুমতি
ছাড়া বাড়ীওয়ালার আসনে না বসে। (মুসলিম; তাঁর অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘‘আর কোন লোক অন্য
লোকের গৃহে গিয়ে [অনুমতি ব্যতীত] ইমামতি করবে না)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ১১১৭, সহীহ মুসলিম ৬৭৩,
আবূ দাঊদ ৫৮২, আত্ তিরমিযী ২৩৫, নাসায়ী ৭৮০, ইবনু মাজাহ্ ৯৮০, আহমাদ ১৭০৬৩, সহীহ আল
জামি‘ ৩১০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
কোনো এলাকায় গিয়ে ইমামতি
করা নিষেধঃ
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
তিনি
আরো বলেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ কোন সম্প্রদায়ের যিয়ারতে যায়, তখন সে যেন তাদের ইমামতি
না করে। বরং তাদের মধ্যেই কেউ যেন ইমামতি করে।’’ (সহীহুল জা’মে হা/৫৮৪)।
অবশ্য
অস্বাভাবিক বেশী দেরী হলে মুক্তাদীদের অধিকার আছে জামাআত করার। কিন্তু ইমাম উপস্থিত
হওয়ার যথাসময় পার হওয়ার পর মুক্তাদীদের কোন এক উপযুক্ত ব্যক্তি ইমামতি শুরু করলে ইতিমধ্যে
যদি নিযুক্ত ইমাম এসে পড়েন, তাহলে ইমাম অগ্রসর হয়ে নিজ ইমামতি করতে পারেন। আর সে ক্ষেত্রে
ঐ মুক্তাদী ইমাম পিছে হ্টে যাবেন। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল
ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৮৩) যেমন দু-দুবার হযরত আবূ বাক্র (রাঃ) নামায পড়াতে শুরু
করলে ইতিমধ্যে মহানবী (সাঃ) এসে উপস্থিত হন এবং আবূ বাক্র পিছে হ্টে যান ও তিনি ইমামতি
করেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
সাহল
ইবনু সা‘দ সা‘ঈদী (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমর ইবনু আওফ গোত্রের এক বিবাদ মীমাংসার জন্য সেখানে যান। ইতোমধ্যে (আসরের) সালাতের
সময় হয়ে গেলে, মুয়ায্যিন আবূ বাকর (রাযি.)-এর নিকট এসে বললেন, আপনি কি লোকদের নিয়ে
সালাত আদায় করে নেবেন? তা হলে ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দেই? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আবূ বাকর
(রাযি.) সালাত আরম্ভ করলেন। লোকেরা সালাতরত অবস্থাতেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আসলেন এবং তিনি সারিগুলো ভেদ করে প্রথম সারিতে গিয়ে দাঁড়ালেন। তখন সাহাবীগণ
হাতে তালি দিতে লাগলেন। আবূ বাকর (রাযি.) সালাতে আর কোন দিকে তাকাতেন না। কিন্তু সাহাবীগণ
যখন অধিক করে হাতে তালি দিতে লাগলেন, তখন তিনি তাকালেন এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
প্রতি ইঙ্গিত করলেন- নিজের জায়গায় থাক। তখন আবু বাকর (রাযি.) দু‘হাত উঠিয়ে আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে পিছিয়ে
গেলেন এবং কাতারের বরাবর দাঁড়ালেন। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সামনে এগিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, হে আবূ বাকর! আমি তোমাকে
নির্দেশ দেয়ার পর কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছিল? আবূ বাকর (রাযি.) বললেন, আবূ কুহাফার পুত্রের
জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা
শোভনীয় নয়। অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের
এক হাতে তালি দিতে দেখলাম। কারণ কী? শোন! সালাতে কারো কিছু ঘটলে সুবহানাল্লাহ্ বলবে।
সুবহানাল্লাহ্ বললেই তার প্রতি দৃষ্টি দেয়া হবে। আর হাতে তালি দেয়া তো মহিলাদের জন্য।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৮৪, ১২০১,১২০৪,১২১৮,১২৩৪,
২৬৯০, ২৬৯৩, ৭১৯০ মুসলিম ৪/২২, হাঃ ৪২১ আহমাদ ২২৮৭১, আধুনিক প্রকাশনী ৬৪৩, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৬৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অবশ্য
ইমাম চাইলে মুক্তাদী হয়েও নামায সম্পন্ন করতে পারেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
মুহাম্মাদ
ইবনু রাফি ও আল হুলওয়ানী (রহঃ) ..... হামযাহ ইবনু মুগীরাহ (রাযিঃ) হতে আব্বাদ (রাযিঃ)-এর
হাদীদের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। মুগীরাহ (রাযিঃ) বলেন, আমি আবদু রহমান ইবনু ‘আওফকে পিছনে
সরিয়ে আনার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাকে
নিজ অবস্থায় ছেড়ে দাও। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী),
৮৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৪৮, ইবনে মাজাহ্, সুনান ১২৩৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইক্তিদার নিয়ত :
ইমামের
পিছনে নামায পড়ার সময় মনে মনে ইক্তিদার নিয়ত (সংকল্প) করা জরুরী। যেহেতু মুক্তাদী অবস্থায়
ইমামের অনুসরণ ওয়াজেব, ইমামের পিছনে মুক্তাদী ভুল করলে সহু সিজদা করতে হয় না এবং অনেক
সময় ইমামের নামায বাতিল হলে মুক্তাদীরও বাতিল; তাই এই নিয়ত জরুরী। সুতরাং নিয়ত না হলে
মুক্তাদীর নামায জামাআতী নামায হবে না। (আহ্কামুল ইমামাতি
অল-ই’তিমামি ফিস সালাত, আব্দুল মুহ্সিন আল-মুনীফ ২০৬পৃ:)।
(৮) নামাযী যদি জানে যে তার সামনে দিয়ে কোন মহিলা, গাধা
বা কালো কুকুর অতিক্রম করবে এবং এ জানা সত্ত্বেও বিনা সুতরায় সালাত পড়ে, তাহলে ঐ তিনটের
একটাও তার সামনে বেয়ে পার হয়ে গেলে তার নামায বাতিলঃ
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ নারী, গাধা ও কুকুর সালাত (সামনে দিয়ে অতিক্রম করে) নষ্ট করে। আর এর থেকে রক্ষা
করে হাওদার (পেছনে দন্ডায়মান) ডাণ্ডার ন্যায় কিছু বস্ত্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৭৮, সহীহ
মুসলিম ৫১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এখানে
উল্লেখ্র যে, মুক্তাদীর সুতরাহ্ ইমামের সুতরাই। অতএব ইমাম সুতরাহ্ রেখে নামায না
পড়লে এবং ঐ তিনটের একটা সামনে বেয়ে অতিক্রম করলে ইমাম-মুক্তাদী সকলের সালাত বাতিল।
প্রকাশ
যে, সালাত পড়তে পড়তে সালাত বাতিল হওয়া জানা গেলে অথবা ওযূ নষ্ট হওয়া বুঝতে পারলে সাথে
সাথে সালাত ছেড়ে বেরিয়ে আসা ওয়াজেব। লজ্জায় বা অন্য কারণে নামায শেষ করা হারাম এবং
তা এক প্রকার আল্লাহর সাথে ব্যঙ্গ করা! কারণ, যা তিনি গ্রহণ করবেন না, তা জেনেশুনেও
নিবেদন করতে থাকা উপহাস বৈকি? (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ,
ইবনে উষাইমীন ৩/৩৯২-৩৯৩)।
(৯) সালাতরত বা অযু অবস্থায়
বায়ু বের হলে সালাত ও অযু নষ্ট হয়ে যায়ঃ
অবশ্য
জামাআতে থাকলে লজ্জা হওয়া স্বাভাবিক। বিশেষ করে হাওয়া বের হওয়ার ফলে ওযূ নষ্ট হলে অনেকে
সালাত বা জামাআত ত্যাগ করে কাতার ভেঙ্গে আসতে লজ্জা ও সংকোচবোধ করে। কিন্তু মহানবী
(সাঃ) এই লজ্জা ঢাকার জন্য এক কৃত্রিম উপায়ের কথা বলে দিয়েছেন; তিনি বলেন, “যখন তোমাদের
মধ্যে কেউ তার নামাযে নাপাক হয়ে যাবে তখন সে যেন তার নাক ধরে নেয়। অতঃপর বের হয়ে আসে।”
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আয়িশাহ্
সিদ্দীক্বা (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে উযূ ভঙ্গ করে ফেলে সে যেন তার নাক চেপে ধরে তারপরে
সালাত ছেড়ে চলে আসে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০০৭,
সহীহ আবূ দাঊদ ১১৪, সহীহ আল জামি ২৮৬, হাকেম,
মুস্তাদরাক ১/১৮৪,)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ত্বীবী
বলেন, এই নির্দেশ এই জন্য যে, যাতে লোকেরা মনে করে তার নাকে রক্ত আসছে (তাই বের হয়ে
যাচ্ছে)। আর এরুপ করা মিথ্যা নয়, বরং তা ‘তাওরিয়াহ্’ বা বৈধ অভিনয়। শয়তান যাতে তার
মনে লোকদেরকে শরম করার কথা সুশোভিত না করে ফেলে (এবং নামায পড়তেই থেকে যায়)। তাই তার
জন্য এ কাজের অনুমতি ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। (আউনুল মা’বূদ,
মিরকাত, মিশকাতের টীকা ১নং, ১/৩১৮)।
(১০) মসজিদে সালাতের পরে
হাদাসের পূর্ব পর্যন্ত সালাত আদায় করলে সেখানে যতক্ষণ বসে থাকে ততক্ষণ মালাকগণ তার
জন্যে দু‘আ করতে থাকেনঃ
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমাদের কেউ মসজিদে সালাতের পরে হাদাসের পূর্ব পর্যন্ত যেখানে সে সালাত আদায় করেছে
সেখানে যতক্ষণ বসে থাকে ততক্ষণ মালাকগণ তার জন্যে দু‘আ করতে থাকেন। তাঁরা বলেনঃ হে
আল্লাহ! তাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ! তার উপর রহম কর। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৪৪৫, ১৭৬; মুসলিম ৫/৪৯, হাঃ ৬৪৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৬,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দ্বিতীয় অংশ
সালাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ঃ
(১) কাতারের পিছনে একাকী
দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলে তার সালাত হবে নাঃ
(ক) আলী ইবনু শায়বান (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমরা এক প্রতিনিধি দল রওয়ানা হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নিকটে উপস্থিত হলাম। আমরা তাঁর নিকট বাইআত (ইসলাম) গ্রহণ করলাম এবং তাঁর পিছনে সালাত
পড়লাম, অতঃপর তাঁর পিছনে আরো এক ওয়াক্তের সালাত পড়লাম। তিনি সালাত শেষে এক ব্যাক্তিকে
কাতারের পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে দেখলেন। রাবী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট থামলেন এবং সে সালাত শেষ করলে তিনি তাকে বলেন তুমি পুনরায়
সালাত পড়ো। কারণ যে ব্যাক্তি কাতারের পেছনে একাকী দাঁড়ায় তার সালাত হয় না। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-১/১০০৩, আহমাদ ১৫৮৬২, ইরওয়াহ ৩২৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, যিয়াদ ইবনু আবূল জাদ (রহঃ) আমার হাত ধরে আর-রাক্কা নামক স্থানে ওয়াবিসা
ইবনু মাবাদ (রাঃ) নামক প্রবীণ ব্যাক্তির নিকট নিয়ে যান। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি কাতারের
পিছনে একাকী সালাত পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তা পুনর্বার পড়ার
নির্দেশ দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-২/১০০৪, তাখরীজ
কুতুবুত সিত্তাহ: তিরমিযী ২৩০-৩১, আবূ দাঊদ ৬৮২, আহমাদ ১৭৫৩৯, ১৭৫৪১; দারিমী ১২৮৫,
ইরওয়াহ ৫৪১, মিশকাত ১১০৫। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তবে সামনের কাতারে জায়গা না থাকলে বাধ্যগত অবস্থায় পিছনে একাকী দাঁড়ানো জায়েয আছে। (বাক্বারাহ ২/২৮৬, তাগাবুন ৬৪/১৬; নায়ল ৪/৯২-৯৩ পৃঃ)।
(২) রুকু না পেলে পরের রাকাতের
জন্য অপেক্ষা করা ভুলঃ
রুকু
না পেলে নামাজে যোগ না দিয়ে পরের রাকাত শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা ভুল। বরং যে অবস্থাতেই
ইমামকে পাওয়া যাবে, সে অবস্থা থেকেই জামাতে শামিল হতে হবে। ইমাম সেজদায় থাকলে মুসল্লিও
সিজদায় চলে যাবেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, জামাতের যতটুকু পাও ইমামের সঙ্গে পড়ো, বাকিটা
একাকী পূর্ণ করে নাও।’
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাযি.) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
যখন তোমরা ইক্বামাত শুনতে পাবে, তখন সালাতের দিকে চলে আসবে, তোমাদের উচিত স্থিরতা ও
গাম্ভীর্য অবলম্বন করা। তাড়াহুড়া করবে না। ইমামের সাথে যতটুকু পাও তা আদায় করবে, আর
যা ছুটে যায় তা পূর্ণ করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৬৩৬, ৯০৮; মুসলিম ৫/২৯, হাঃ ৬০৪, আহমাদ ২২৭১২, আধুনিক প্রকাশনী ৬০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অবশ্য,
রাকাত গণ্য হওয়ার জন্য রুকুতে বা তার আগে পাওয়া আবশ্যক।
(৩) ইমামের আগে রুকু-সেজদা
করা নিষেধঃ
ইমামের
পূর্বে রুকু-সেজদায় চলে যাওয়া এবং ইমামের আগেই রুকু-সেজদা থেকে ওঠে যাওয়া মারাত্মক
ভুল। ভুলে এমনটি করলে নামাজ নষ্ট হবে না, তবে ইচ্ছাকৃত করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। এমন
ব্যক্তির জন্য হাদিসে কঠিন হুঁশিয়ারি এসেছে। রাসুল সা. বলেন,
(ক) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের পূর্বে মাথা উঠিয়ে
ফেলে, তখন সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার মাথা গাধার মাথায় পরিণত করে দিবেন,
তার আকৃতি গাধার আকৃতি করে দেবেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন), ৬৯১, মুসলিম ৪/২৫, হাঃ ৪২৭ আহমাদ ১০৫৫১, আধুনিক প্রকাশনী ৬৫০, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৬৫৮, সহীহ ইবনু হিব্বান নং ২২৮২, ২২৮৩, বাইহাকী মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার
নং ৩৪৫৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ ৩/৪১৭ নং ৮৪৯; আবু নুয়াইম, যিকরু আখবারু আসবাহান ১/২৬৯,
২/৫৫, ২১৮, ২৯৯; উকাইলী, আদ দুয়া’ফা ২/৭৩; ইবনু আদী, আল কামিল ৩/১০৬১, ৪/১৫৬৬, ৬/২২৩৭;
ইবনু হিব্বান, আল মাজরুহীন ২/৩৫-৩৬; তাবারাণী, আল আওসাত ৩৩৩০, ৩৬০৯, ৩৯৩০, ৫৯৫৯, ৭১৯৩;
ও সগীর ১/১১০; তালখীসুল হাবীর ২/২৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) মু’য়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমি এখন আমি কিছুটা
মোটা হয়ে গেছি। ফলে আমার পূর্বে তোমরা রুকূ’-সিজদা করবে না। (কখনো কখনো এরূপ হয় যে,)
আমি তোমাদের যত আগেই রুকূ’তে যায় না কেন, তোমরা আমার মাথা উঠানোর পূর্বেই আমাকে পেয়ে
যাও (ধরে ফেলো)। আবার আমি তোমাদের যত আগেই সিজদা করি না কেন, তোমরা আমাকে সিজদা হতে
মাথা উঠানোর আগেই পেয়ে যাও।” (সুনান আদ-দারেমী, ১৩৫১,
সহীহ ইবনু হিব্বান নং ২২২৯, ২২৩০; মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৩৮২, ৩৮৩ ও মুসনাদুল হুমাইদী
নং ৬১৩ তে। (আহমাদ ৪/৯২; বাইহাকী ২/৯২; সহীহ ইবনু খুযাইমা ১৫৯৪; আবু দাউদ ৬১৯; ইবনু
মাজাহ ৯৬৩; তাবারাণী, আল কাবীর ১৯/২৭৩-২৭৪ নং ৮৬২, মুহাক্বিক্বের মাওয়ারিদুয যাম’আন
নং ৩৮৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে সালাতের ব্যাপারে অনুপ্রাণিত
করতেন এবং তিনি যখন তাদের ইমামতি করতেন তখন তাঁর পূর্বে রুকূ’ সিজদায় গমণ করতে তাদেরকে
নিষেধ করতেন। এছাড়া তাঁর সালাত শেষ করার পূর্বেই তাদেরকে সালাত শেষ করতে যেতে নিষেধ
করতেন। এবং তিনি বলেন: “আমি তোমাদেরকে আমার পিছন দিক থেকেও দেখতে পাই, আর সামনের দিক
থেকে তো দেখিই।” (সুনান আদ-দারেমী, ১৩৫৩, ইবনু আবী শাইবা
২/৩২৮; মুসলিম ৪২৬; আমরা এর পূর্ণ তাখরীজ দিয়েছি মুসনাদুল মাউসিলী নং ৩৯৫২, ৩৯৫৭, ৩৯৬০,
৩৯৬৩; আবু আওয়ানাহ ২/১৩৬; বাইহাকী ২/৯১-৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
(৪) এক সালাম ফেরানোর পরই
মাসবুকের দাঁড়িয়ে যাওয়াঃ
যখন
ইমাম সাহেব সালাম ফিরাবেন, তখন মাসবুক ব্যক্তি সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন এবং ছুটে
যাওয়া রাকাতগুলো আদায় করবেন। অনেকে ইমাম সাহেব এক সালাম ফেরানোর পর দ্বিতীয় সালাম শুরু
করার সময়ই দাঁড়িয়ে যান, এটি অনুচিত। নিয়ম হলো, ইমাম সাহেব ডানে-বামে উভয় দিকে সালাম
ফিরানো শেষ করার পর একটু অপেক্ষা করে মাসবুক ব্যক্তি দাঁড়াবে। এর আগে নয়। (ফাতাওয়ায়ে শামি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৪৮)।
(৫) মসজিদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও হৈ-হল্লা করা, হারানো
বস্তুর খোঁজ বা ঘোষণা করা, কেনা-বেচা করা, ভাড়া বা মজুরী বা ইজারা চুক্তি ইত্যাদি অনুরূপ
কর্ম নিষেধঃ
(ক) আবী হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যদি তোমরা মসজিদের মধ্যে
কাউকে ক্রয়-বিক্রয় করতে দেখো, তবে তোমরা বলবে: ‘আল্লাহ যেন তোমার ব্যবসা লাভজনক না
করেন।’ আর তোমরা যদি মসজিদে কাউকে হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে দেখো, তবে বলবে: ‘আল্লাহ
যেন তোমাকে তা ফেরত না দেন।’ (সুনান আদ-দারেমী, ১৪৩৮,
সহীহ ইবনু হিব্বান নং ১৬৫০ ও মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৩১৩, সহীহ ইবনু খুযাইমা ২/২৭৪ নং
১৩০৫; তিরমিযী ১৩২১; নাসাঈ, আমলুল ইয়াম ওয়াল লাইল নং ১৭৬; বাইহাকী ২/৪৪৭; হাকিম ২/৫৬,
মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক ১/৪৪১ নং ১৭২৫। মুহাক্কিক্বের মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৩১৩ এর
টীকা হতে।- অনুবাদক)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
একটি লোক মসজিদের মধ্যে [হারানো বস্তু সম্পর্কে] ঘোষণা পূর্বক বলল, ‘আমাকে আমার লাল
উটের সন্ধান কে দিতে পারবে?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘‘তুমি যেন তা না পাও। মসজিদ সেই কাজের জন্য নির্মিত হয়েছে, যে কাজের জন্য নির্মিত
হয়েছে।’’ (রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন), ১৭০৭,
মুসলিম ৫৬৯, ইবনু মাজাহ ৭৬৫, আহমাদ ২২৫৩৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আমর ইবনে শুআইব রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয়
পিতা থেকে, তিনি তাঁর [আমরের] দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন মসজিদের মধ্যে কেনা-বেচা করতে, হারানো বস্তু সন্ধান করতে অথবা
তাতে [অবৈধ] কবিতা আবৃত্তি করতে। (রিয়াযুস স্বা-লিহীন
(রিয়াদুস সালেহীন), ১৭০৮, তিরমিযী ৩২২, আবূ দাউদ ১০৭৯, নাসায়ী ৭১৪, ৭১৫, ইবনু মাজাহ
৭৪৯)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঘ) সাহাবী সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মসজিদে নববীতে ছিলাম। এমন সময় একটি লোক আমাকে কাঁকর
ছুঁড়ে মারল। আমি তার দিকে তাকাতেই দেখি, তিনি উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু।
তিনি বললেন, ‘যাও, ঐ দু’জনকে আমার নিকট নিয়ে এস।’ আমি তাদেরকে নিয়ে তাঁর কাছে এলাম।
তিনি বললেন, ‘তোমরা কোথাকার?’ তারা বলল, ‘আমরা তায়েফের অধিবাসী।’ তিনি বললেন, ‘তোমরা
যদি এই শহর [মদিনার] লোক হতে, তাহলে আমি তোমাদেরকে অবশ্যই কঠোর শাস্তি দিতাম। তোমরা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলছ!’ (রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন), ১৭০৯, সহীহুল বুখারী
৪৭০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sah।
(৬) [কাঁচা] রসূন, পিঁয়াজ,
লিক পাতা তথা তীব্র দুর্গন্ধ জাতীয় কোন জিনিস খেয়ে, দুর্গন্ধ দূর না করে মসজিদে প্রবেশ
করা নিষেধ। তবে নিতান্ত প্রয়োজনবশতঃ জায়েযঃ
(ক) ইবনে
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে ব্যক্তি এই গাছ---অর্থাৎ রসুন ---থেকে কিছু খায়, সে যেন অবশ্যই আমাদের মসজিদের
নিকটবর্তী না হয়।’’
মুসলিমের
এক বর্ণনায় আছে, ‘‘সে যেন অবশ্যই আমাদের মসজিদসমূহের নিকটবর্তী না হয়।’’ (রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন), ১৭১০, সহীহুল বুখারী
৮৫৩, ৪২১৫, ৪২১৭, ৪২১৮, ৫৫২২, মুসলিম ৫৬১, আবূ দাউদ ৩৮২৫, ইবনু মাজাহ ১০১৬, আহমাদ ৪৭০১,
৪৭০৬, ৫৭৫২, ৬২৫৫, ৬২৭৪, ২৭৮৩৬, দারেমী ২০৫৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এই [রসুন] গাছ
থেকে কিছু ভক্ষণ করল, সে যেন অবশ্যই আমাদের নিকটবর্তী না হয়, আর না আমাদের সাথে নামায
পড়ে।’’ (রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন), ১৭১১,
সহীহুল বুখারী ৮৫৬, ৫৪৫১, মুসলিম ৫৬২, আহমাদ ২৭৮৩৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি [কাঁচা]
রসূন অথবা পিঁয়াজ খায়, সে যেন আমাদের নিকট হতে দূরে অবস্থান করে অথবা আমাদের মসজিদ
থেকে দূরে থাকে।’’
মুসলিমের
এক বর্ণনায় আছে যে, ‘‘যে ব্যক্তি [কাঁচা] পিঁয়াজ, রসূন এবং লিক পাতা খায়, সে যেন অবশ্যই
আমাদের মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কেননা, ফিরিশতাগণ সেই জিনিসে কষ্ট পান, যাতে আদম-সন্তান
কষ্ট পায়।’’ (রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন), ১৭১২,
সহীহুল বুখারী ৮৫৪, ৮৫৫, ৫৪৫২, ৭৩৫৯, মুসলিম ৫৬৪, তিরমিযী ১৮০৬, নাসায়ী ৭০৭, আবূ দাউদ
৩৮২২, আহমাদ ১৪৫৯৬, ১৪৬৫১, ১৪৭৩৯, ১৪৮৫০, ১৪৮৭৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) উমার
ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি এক জুমার দিন খুতবা দিলেন, সে খুতবায়
তিনি বললেন, ....অতঃপর তোমরা হে লোক সকল! দুই শ্রেণীর এমন গাছ [সবজী] খেয়ে থাক; যা
[কাঁচা অবস্থায়] খাওয়ার অনুপযুক্ত মনে করি; পিঁয়াজ আর রসুন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, যখন তিনি মসজিদের মধ্যে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে ঐ দুই
[সবজি]র দুর্গন্ধ পেতেন, তখন তাকে [মসজিদ থেকে বহিষ্কার করতে] আদেশ দিতেন। ফলে তাকে
বাকী’ [নামক জায়গা] পর্যন্ত বের করে দেওয়া হত। সুতরাং যে ঐ দুই সবজী খেতে চায়, সে যেন
ঐগুলি রান্না করে তার গন্ধ মেরে খায়।’’ (রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন), ১৭১৩, মুসলিম ৫৬৭, ইবনু
মাজাহ ৩৩৬৩, ১০১৪, নাসায়ী ৭০৩, আহমাদ ৯০, ৩৪৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭) জুমার দিনে ইমামের খুৎবা
চলা অবস্থায় দুই হাঁটুকে পেটে লাগিয়ে বসা অপছন্দনীয়ঃ
মুআয
ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার
দিনে ইমামের খুৎবা চলা অবস্থায় দুই হাঁটুকে পেটে লাগিয়ে বসতে নিষেধ করেছেন। (রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন), ১৭১৪, আবূ দাউদ ১১১০,
তিরমিযী ৫১৪, আহমাদ ১৫২০৩)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৮) মসজিদে বা যেকোনো সময়
বাম হাত পিঠে নিয়ে তার পাতার উপর ভর করে বাম পাশে হেলান দিয়ে বসা নিষেধঃ
আমর
ইবনুস শারীদ (রহঃ) থেকে তার পিতা শারীদ ইবনু সুওয়াইদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আমি
আমার বাম হাত পিঠে নিয়ে তার পাতার উপর বসেছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, তুমি কি তাদের মতো বসছো, যারা অভিশপ্ত। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৮৪৮, হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।)
(৯) ওড়না ছাড়া মহিলাদের সালাত
আদায় করলে তার সালাত কবুল হয় নাঃ
‘আয়িশাহ্
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন প্রাপ্তবয়স্কা
মহিলা ওড়না ছাড়া সালাত আদায় করলে আল্লাহ তার সালাত কবুল করেন না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৪১, তিরমিযী ৩৭৭, ইমাম তিরমিযী
৬৫৫, আহমাদ (৬/১৫০, ২১৮), ইবনু খুযাইমাহ ৭৭৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) জুমু‘আহর দিন লোকজনের
ঘাড় টপকিয়ে সামনে যাওয়া নিষেধঃ
আবুয্
যাহিরিয়্যাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জুমু‘আহর দিনে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) এর সাথে ছিলাম। এমন সময় এক
ব্যক্তি এসে লোকদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছিল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ)
বললেন, একদা জুমু‘আহর দিন এক ব্যক্তি লোকদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন খুত্ববাহ দিচ্ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
তুমি বসো, তুমি লোকদের কষ্ট দিয়েছো। (সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত), ১১১৮, নাসায়ী ১৩৯৭, আহমাদ (৪/১৮৮)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) মসজিদের ভিতর দিয়ে অস্ত্র
বহন করা নিষেধঃ
১৪৩৯.
সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা বলেন, আমি আমর ইবনু দীনার কে জিজ্ঞেস করলাম, যে, ‘এক ব্যক্তি তীর
সাথে নিয়ে (মসজিদ) অতিক্রম করছিল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন:
“তুমি এর ফলাগুলো (ধারালো অংশ) (হাত দিয়ে) ধরে রাখো।” -আপনি কি জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ
রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে এ হাদীস বলতে শুনেছেন? তিনি (আমর) বললেন, হাঁ। (সুনান আদ-দারেমী,১৪৩৯, বুখারী ৪৫১; মুসলিম ২৬১৪; মুসনাদুল মাউসিলী ন ১৮৩৩; সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৪৭ ও মুসনাদুল হুমাইদী ১২৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২) ঈশার সালাতের পূর্বে
ঘুমানো এবং এর পরে কথা বলা নিষেধঃ
(ক) আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈশার সালাতের পূর্বে
ঘুমানো এবং এর পরে কথা বলা অপছন্দ করতেন।” (সুনান আদ-দারেমী,
১৪৬৬, ১৩, ১৪২৯, বুখারী ৫৪১, ৫৪৭, ৫৬৮, ৫৯৯, ৭৭১; মুসলিম ৬৭৪, তিরমিযী ১৬৮, নাসায়ী
৪৯৫, ৫২৫, ৫৩০; আহমাদ ১৯২৬৮, ১৯২৮২, ১৯২৯৪, ১৯৩০১, ১৯৩১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাতের পূর্বে ঘুমাননি এবং তারপরে
নৈশ আলাপ করেননি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৭০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাতের পর আমাদের নৈশালাপ
নিষেধ করতেন অর্থাৎ কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। (সুনানে ইবনে
মাজাহ, ৭০৩, আহমাদ ৩৬৭৮, ৩৮৮৪, সহীহাহ ২৪৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৩) মসজিদসমূহকে সুসজ্জিত
ও কারুকার্যমণ্ডিত করা নিষেধঃ
আনাস
ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“কিয়ামত সঙ্ঘটিত হবে না, যতক্ষণ মসজিদসমূহের ব্যাপারে লোকেরা পরস্পর গর্ব-অহংকারের
প্রতিযোগীতায় লিপ্ত না হবে।” (সুনান আদ-দারেমী, ১৪৪৫,
সহীহ ইবনু হিব্বান নং ১৬১৩, ১৬১৪, মাওয়ারিদুয যাম’আন ৩০৭, ৩০৮, মুসনাদে আবী ইয়ালা আল মাউসিলী ৫/১৮৪ নং
২৭৯৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ ২/৩৫০ নং ৪৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৪) যাদের সালাত পরিপূর্ণ
হয় নাঃ
রিফা‘আহ
ইবনু রাফি‘ (রাঃ) হতে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পূণার্ঙ্গভাবে
অযু না করলে কারও সালাত শুদ্ধ হবে না। সুতরাং সে তার মুখমন্ডল এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত
ধুবে, মাথা মাসাহ করবে এবং উভয় পা গোড়ালীসহ ধুবে। অতঃপর তাকবীরে তাহরীমা বলে হামদ পাঠ
করে কুরআন হতে যে অংশ সহজ মনে হয় তিলাওয়াত করবে। অতঃপর হাম্মাদের হাদীসের অনুরূপ। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহু আকবার বলে কপাল মাটিতে লাগিয়ে সিজদা
করবে এমনভাবে যেন শরীরের জোড়াসমূহ স্ব-স্ব স্থানে অবস্থান করে ও প্রশান্তি পায়। এরপর
তাকবীর বলে সোজা হয়ে পাছার উপর ভয় দিয়ে বসবে এবং পিঠ সোজা রাখবে। এরূপে তিনি চার রাক‘আত
সালাতের নিয়ম শেষ পর্যন্ত বর্ণনা দেন। এ পদ্ধতিতে সালাত আদায় না করলে তোমাদের কারো
সালাতই পরিপূর্ণ হবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৮৫৮, তিরমিযী ৩০২, নাসায়ী ১১৩৫, ইবনু মাজাহ
৪৬০, দারিমী ১৩২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৫) যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তখন ফরয সালাত ব্যতীত
আর কোনো সালাত নেইঃ
(ক) আবী হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন সালাতের ইকামত
দেয়া হয়, তখন ফরয সালাত ব্যতীত আর কোনো সালাত নেই।” (সুনান
আদ-দারেমী, ১৪৮৫, ১৪৮৬, ১৪৮৮, ১৪৮৯, ১৪৯০. তাহাবী, শারহু মা’আনিল আছার ১/৩৭১, মুসলিম
৭১০; মুসনাদুল মাউসিলী নং ৬৩৭৯, ৬৩৮০; সহীহ ইবনু হিব্বান নং ২১৯০, ২১৯৩, ২৪৭০। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইবনু বুহাইনা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাতের ইকামত হয়ে গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক
ব্যক্তিকে দু’ রাকা’আত সালাত আদায় করতে দেখলেন। এরপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তাঁর (ফরয) সালাত শেষ করলেন, তখন লোকেরা তার (ঐ ব্যক্তির) নিকট একত্রিত হলো।
তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন: “তুমি কি ফজর (এর সালাত) চার
রাকা’আত আদায় করো?” (সুনান আদ-দারেমী, ১৪৮৭, আহমাদ ৫/৩৪৫,
৩৪৬; ইবনু আবী শাইবা ২/২৫৩; বুখারী ৬৬৩; মুসলিম ৭১১; নাসাঈ ২/১১৭; তাহাবী, শারহু মা’আনিল
আছার ১/৩৭২; বাইহাকী ২/৪৮২) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৬) যে সকল সময়ে সালাত আদায়
করা মাকরুহঃ
(ক) উকবা ইবনু আমির আল- জুহানী রাদ্বিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, তিন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আমাদেরকে সালাত আদায় করতে এবং মৃতদের কবরস্থ করতে নিষেধ করতেন: সূর্য যখন উদিত হয়,
তা পূর্ণভাবে উদিত না হওয়া পর্যন্ত; ও যখন ঠিক দ্বিপ্রহর হয়, এরপর সূর্য পশ্চিম দিকে
না হেলে পড়া পর্যন্ত এবং যখন সূর্য অস্তমিত হওয়ার দিকে ঝুঁকে যায়, তখন (থেকে পূর্ণভাবে)
অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত।” (সুনান আদ-দারেমী, ১৪৬৯, মুসলিম,
৮৩১; মুসনাদুল মাউসিলী ১৭৫৫; সহীহ ইবনু হিব্বান নং ১৫৪৬, ১৫৫১। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) ইবনু ‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কয়েকজন সন্তোষভাজন ব্যক্তি - ‘উমারও যাদের অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন
এবং তাদের মধ্যে ‘উমার-ই আমার নিকট অধিক সন্তোষভাজন ব্যক্তি- তারা আমাকে বলেছেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ফজরের সালাতের পর (থেকে) সূর্য (পূর্ণরূপে)
উদিত হওয়া পর্যন্ত কোন সালাত নাই এবং আসরের সালাতের পর (থেকে) সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন
সালাত নাই।” (সুনান আদ-দারেমী, ১৪৭০, ইবনু মাজাহ ১২৫০;
বুখারী ৫৮১; মুসলিম ৮২৬ (২৮৭); তিরমিযী ১৮৩; নাসাঈ ৫৬৩; আহমাদ ১/১৮; আবু দাউদ ১২৭৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৭) সালাতরত অবস্থায় শান্ত থাকার নির্দেশ, হাত দিয়ে ইশারা করা
এবং সালামের সময় হাত উত্তোলন করা নিষেধঃ
(ক) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব
(রহঃ), জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে বের হয়ে আসলেন। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের হাত উঠাতে
দেখি কেন? মনে হয় যেন তা দুষ্ট ঘোড়ার লেজ। ধীরস্থিরভাবে সালাত আদায় করো, নড়াচড়া
করো না। রাবী বলেন, তিনি আরেক দিন বের হয়ে আমাদের গোলাকারে দেখে বললেনঃ আমি তোমাদের
পরস্পরকে বিচ্ছিন্ন দেখছি কেন? রাবী বলেন, তিনি পুনরায় বের হয়ে এসে বললেনঃ মালায়িকারা
(ফেরেশতারা) যেভাবে তাদের প্রতিপালকের সামনে লাইন বেঁধে দাড়ায় তোমরা কি সেভাবে লাইন
বাধবে না? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে ফেরেশতারা তাদের রবের সামনে কাতারবন্দী
হন? তিনি বললেনঃ তারা প্রথম লাইন (আগে) পূর্ণ করে এবং পরস্পরের সাথে মিলে দাঁড়ায়।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৮৫৪, ৮৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৮৫০, ৮৫১, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৬৩, ৮৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব
(রহঃ), জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করতাম তখন, 'আসসালা-মু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ'
'আসসালামু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ' বলে সালাত শেষ করতাম। তিনি (জাবির) হাত দিয়ে
উভয় দিকে ইশারা করে দেখালেন। (অর্থাৎ- সালামের সাথে সাথে হাতে ইশারাও করা হত)। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমরা (সালামের সময়) দুষ্ট ঘোড়ার লেজ ঘুরানোর
মতো দু'হাত দিয়ে ইশারা করো কেন? তোমরা উরুর উপর হাত রেখে ডানে-বায়ে মুখ ফিরিয়ে তোমাদের
ভাইদের সালাম দিবে। এরূপ করাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৮৫৬, ৮৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮৫২, ৮৫৩, ইসলামিক সেন্টার ৮৬৫, ৮৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(উল্লেখ্য
যে, আমাদের সমাজে এ কথা প্রচলিত রয়েছে, রাফিউল ইয়াদাঈন করাটা ঘোড়ার লেজ নড়াবার
মতো, যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন। কিন্তু উপরোক্ত হাদীস
প্রমাণ করে যে, ঘোড়ার লেজের উক্তিটি সালাম ফিরানোর সাথে সম্পৃক্ত, সালাতের ভিতরে রাফিউল
ইয়াদাঈনের সাথে নয়। মূলত হাদিস ভালভাবে না বুঝেই অথবা বিদআত প্রতিষ্ঠা করতেই তারা
হাদিসের ব্যাখ্যা বা অর্থ ভুল করে অন্যদের বুঝিয়ে থাকে। এসব আলেম থেকে সবসময় দূরে থাকবেন)।
(১৮) যেসব স্থানে সালাত আদায় বৈধ ও অবৈধঃ
(ক) জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু
আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমাকে এমন পাঁচটি
বিষয় প্রদান করা হযেছে, যা আমার পূর্বে আর কোনো নবীকেই প্রদান করা হয়নি। (১) প্রত্যেক
নবী নির্দিষ্ট কওম (গোত্র)-এর জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন, আর আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে সকল
মানুষের জন্য। (২) আমার জন্য গণিমাত (যুদ্ধেলব্ধ মাল-সম্পদ) হালাল করা হয়েছে, যা আমার
পূর্ববর্তীদের জন্য হারাম ছিল। (৩) আমার জন্য সমগ্র ভূমিকে পবিত্র মসজিদ (সালাতের স্থান)
ও পবিত্রকারী বানিয়ে দেয়া হয়েছে। (৪) আমাদের শত্রুদের (অন্তরে) আমাদের থেকে এক মাসের
দূরত্ব সত্বেও ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে এবং (৫) আমাকে শাফা’আত (এর অনুমতি) প্রদান করা
হয়েছে।” (সুনান আদ-দারেমী, ১৪২৬, বুখারী ৩৩৫; মুসলিম ৫২১;
সহীহ ইবনু হিব্বান নং ৬৩৯৮। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) কবর স্থান ও গোসলখানায় সালাত আদায় করা নিষেধঃ
আবী
সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “জমিনের সকল স্থানই মাসজিদ (সালাতের স্থান), কেবল কবরস্থান ও গোসলখানা
ব্যতীত।” আবী মুহাম্মদ কে বলা হলো, কবরস্থানে আদায়কৃত সালাতের সাওয়াব পাওয়া যাবে কি?
তিনি বললেন: যখন তা সরাসরি কবরের উপরে না হবে, তখন হ্যাঁ, পাবে। (সুনান আদ-দারেমী, ১৪২৭, ১৩৯০, ১৩৯৯, মুসনাদুল মাউসিলী নং ১৩৫০,
সহীহ ইবনু হিব্বান নং ১৬৯৯ ও মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৩৩৮, শুয়াবুল ঈমান নং ১৪৭৯, ১৪৮০;
ইবনু আব্দুল বারর, আত তামহীদ ৫/২২১-২২২; আবু নুয়াইম, হিলইয়া ৮/৩১৬, আবু দাউদ ৪৯২; তিরমিযী
৩১৭; ইবনু মাজাহ, আহমাদ (৩/৮৩, ৯৬), ইবনু খুযাইমাহ ৭৯১।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) কবরকে মসজিদ বা সিজদার স্থানে
পরিণত করা নিষেধঃ
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যু পীড়া শুরু হলে তিনি তাঁর একটি চাদর (কালো কাপড়)
দিয়ে মুখমণ্ডল আবৃত করছিলেন। যখন এতে কষ্ট হতে লাগলো তখন তিনি তাঁর মুখের উপর থেকে
সেটাকে সরিয়ে দিলেন। তখন তিনি যা বললেন, তা ছিল এরূপ: “ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর
লা’নত (অভিশাপ)! তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত করেছে।” (এভাবে) তারা যে
(শিরকী) কার্যকলাপ করেছিলো, তেমন (কার্যকলাপ) থেকে তিনি সতর্ক করছিলেন। (সুনান আদ-দারেমী, ১৪৪০, বুখারী ৪৩৫, ৪৩৬; মুসলিম ৫৩১; সহীহ
ইবনু হিব্বান নং ৬৬১৯) ।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ যার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার জন্য (অর্থাৎ আমার উম্মাতের
জন্য) সমগ্র জমিনকে পবিত্র এবং মাসজিদ (সিজদার স্থান) বানানো হয়েছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৮৯, আহমাদ (৫/১৪৫, ১৪৭) দারিমী
২৪৫৭, বুখারী ৩৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঙ) উটের আস্তাবলে সালাত আদায় করা
নিষেধ তবে বকরীর খোয়াড়ে সালাত করা যাবেঃ
আল-বারাআ
ইবনু ‘আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
উটের আস্তাবলে সালাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ তোমরা উটের আস্তাবলে
সালাত আদায় করবে না। কারণ তা শয়তানের আড্ডাখানা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বকরীর খোঁয়াড়ে সালাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ সেখানে সালাত আদায়
করতে পার। কারণ তা বরকতময় প্রাণী (বা স্থান)। (সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১৯) ফজর ও আসরের সালাতের পর নফল
নামায পড়া নিষেধঃ
উসমান
ইবনে আহমাদ আদ-দাঙ্কাক (রহঃ), আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বছরের দু’টি দিন-তাতে তোমরা রোযা রেখো না এবং
দিনের দুই সময়, তাতে তোমরা নামায পড়ো না। কারণ খৃস্টান ও ইয়াহুদী সম্প্রদায় এ দু'টির
অনুসন্ধান করে। ঈদুল ফিতরের দিন ও ঈদুল আযহার দিন এবং ফজরের নামাযের পর থেকে সূর্য
উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ও আসরের নামাযের পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত (সময়)।
(সুনান আদ-দারাকুতনী, ৯৪০-৯৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(২০) যে ব্যক্তি সালাত না পড়ে ঘুমিয়ে
গেল বা সালাতের কথা ভুলে গেল সে জাগ্রত হলে বা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে সালাত আদায় করে
নিবেঃ
(ক) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল যে, এক ব্যাক্তি
সালাতের কথা ভুলে গেছে অথবা সালাত না পড়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। তিনি বলেনঃ যখনই তার স্মরণে
আসবে, তখনই সে ঐ সালাত আদায় করবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ,
৬৯৫, বুখারী ৫৯৭, মুসলিম ৬৮১-৩, তিরমিযী ১৭৮, নাসাঈ ৬১৩-১৪, আবূ দাঊদ ৪৪২, আহমাদ ১১৫৬১,
১২৮৫০, ১৩১৩৮, ১৩৪১০, ১৩৪৩৬, ১৩৫৯৫; দারিমী ১২২৯ ইবনু মাজাহ ৬৯৬, ইরওয়াহ ২৬৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি সালাতের
কথা ভুলে গেলো, সে যেন তা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে পড়ে নেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৬৯৬, সহীহ আবূ দাউদ ৪৬৮, বুখারী ৫৯৭, মুসলিম ৬৮১-৩, তিরমিযী
১৭৮, নাসায়ী ৬১৩-১৪, আবূ দাঊদ ৪৪২, আহমাদ ১১৫৬১, ১২৮৫০, ১৩১৩৮, ১৩৪১০, ১৩৪৩৬, ১৩৫৯৫;
দারিমী ১২২৯; ইবনু মাজাহ ৬৯৫। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনকালে সারারাত ধরে
পথ চলতে থাকেন। অবশেষে তিনি ঘুমে কাতর হয়ে বিশ্রামের জন্য এক স্থানে অবতরণ করেন এবং
বিলাল -কে বলেনঃ তুমি আমাদের জন্য রাতের হেফাজত করবে। অতএব বিলাল তার সাধ্যমত সালাত
আদায় করতে থাকেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ ঘুমিয়ে
পড়েন।
ফজরের
সময় নিকটবর্তী হলে বিলাল তার সওয়ারীর শিবিকার সাথে হেলান দিয়ে পূর্ব আকাশের দিকে মুখ
করে বসলেন। শিবিকার সাথে হেলান দেয়া অবস্থায় তিনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। বিলাল
(রাঃ) ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের কেউই ঘুম থেকে জাগতে পারেননি,
যাবত না তাদের উপর সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়লো। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে উঠেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বলেনঃ হে বিলাল! বিলাল(রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার পিতা-মাতা
আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। যেই সত্তা আপনার জান নিয়েছেন, তিনি আমার জানও নিয়েছেন।
তিনি
বলেনঃ তোমরা সামনে অগ্রসর হও। অতএব তারা তাদের সওয়ারী নিয়ে অগ্রসর হন। এরপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ করেন এবং বিলাল (রাঃ) কে ইকামত দেয়ার নির্দেশ দেন।
তিনি তাদের নিয়ে ফজরের সালাত পড়েন। সালাত সমাপনান্তে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ যে ব্যাক্তি সালাতের কথা ভুলে যায়, সে যেন তা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে পড়ে নেয়।
কেননা মহান আল্লাহ বলেন: আমার স্মরণে তুমি সালাত কায়িম করো (সূরাহ তহাঃ ১৪)। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৬৯৭, মুসলিম ৬৮০/১-২, তিরমিযী ৩১৬৩, নাসায়ী
৬১৮-২০, ৬২৩; আবূ দাঊদ ৪৩৫, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৫, ইরওয়াহ ২৯২, সহীহ আবূ দাউদ ৪৬১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, সাহাবীগণ তাদের ঘুমে বাড়াবাড়ির কথা আলোচনা করলেন। কেউ বলেন, লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে,
এমনকি সূর্য উঠে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঘুমে কোন বাড়াবাড়ি
নেই, বাড়াবাড়ি হয় জাগ্রত অবস্থায়। সুতরাং তোমাদের কেউ সালাতের কথা ভুলে গেলে বা তা
না পড়ে ঘুমিয়ে গেলে সে যেন তা স্মরণে আসার সাথে সাথে পড়ে নেয় অথবা পরদিন স্ব স্ব ওয়াক্তে
পড়ে নেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৬৯৮, বুখারী ৫৯৫, ৭৪৭১;
মুসলিম ৬৮১, তিরমিযী ১৭৭, নাসায়ী ৬১৫-১৭, ৪৪৬; আবূ দাঊদ ৪৩৭, ৪৬৪, ৪৪১, ইরওয়াহ ২৯৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২১) কোন্ স্থানে নফল (সুন্নাত)
সালাত আদায় করা উত্তমঃ
(ক) যাইদ ইবনু ছাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কর্তব্য
হলো তোমাদের ঘরে সালাত আদায় করা। কেননা, কোনো লোকের সর্বোত্তম সালাত হলো তাই যা সে
তার ঘরে আদায় করে, তবে জামা’আত (তথা ফরয সালাত) ব্যতীত। (সুনান
আদ-দারেমী, ১৪০৩, বুখারী ৭৩১; মুসলিম ৭৮১, সহীহ ইবনু হিব্বান নং ২৪৯১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) বাড়িতে সালাত আদায় করার পর পূণরায় সে
সালাত জামা’আতে আদায় করা প্রসঙ্গেঃ
ইয়াযীদ
ইবনুল আসওয়াদ আস সাওয়াঈ হতে বর্ণিত, তিনি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের সাথে ফজরের সালাত আদায় করলেন। তিনি বলেন, এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের সালাত আদায়ের সময় দু’ ব্যক্তি সালাত আদায় না করে (মসজিদের) এক
প্রান্তে বসে রইলো। তিনি বলেন, ফলে তাদের দু’জনকে ডেকে আনা হলো। তখন তারা দু’জন ভীষণ
ভয়ে কঁম্পমান অবস্থায় হাযির হলো। অতঃপর তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: “আমাদের সাথে
সালাত আদায় করতে কিসে তোমাদেরকে বাধা দিয়েছে?” তারা বললো, আমরা আমাদের ঘরে সালাত আদায়
করে এসেছি। তিনি বললেন: “তোমরা এইরূপ করো না। বরং যখন তোমরা তোমাদের বাড়ীতে সালাত আদায়
করবে তারপর ইমামের সাথে (জামা’আত) পাবে, তখন তোমরা (তার সাথে) পূনরায় সালাত আদায় করবে,
তাহলে তা তোমাদের জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে।”
তিনি
বলেন, তখন লোকেরা দাঁড়িয়ে গেলো এবং তাঁর হাত ধরে তা তাদের মুখমণ্ডলে মাসেহ করতে লাগলো।তিনি
বলেন, তখন আমিও তাঁর হাত ধরে তা দিয়ে আমার মুখমণ্ডল মাসেহ করলাম। (তখন দেখলাম) তা ছিল
বরফের চেয়েও শীতল, আর মিসকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধযুক্ত। (সুনান আদ-দারেমী,১৪০৪, সহীহ ইবনু হিব্বান নং ১৫৬৪, ২৩৯৫ ও মাওয়ারিদুয
যাম’আন নং ৪৩৪, ৪৩৫, আহমাদ ৪/১৬০; তিরমিযী ২১৯; নাসাঈ ৮৫৯; ইবনু খুযাইমা, আস সহীহ ১২৭৯;
দারুকুতনী ১/৪১৩; বাইহাকী ২/৩০১; তায়ালিসী ১/১৩৭ নং ৬৫৬; আবু দাউদ ৫৭৫, ৫৭৬; তাহাবী,
শারহু মা’আনিল আসার ১/৩৬৩; আব্দুর রাযযাক ২/৪২১ নং ৩৯৩৪; তাবারাণী ২২/২৩২-২৩৫; মুহাক্বিক্বের
মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৪৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(২২) যে মসজিদে একবার জামা’আতে
সালাত অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে পূনরায় সালাতের জামা’আত করা প্রসঙ্গেঃ
(ক) আবী সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে একজন একাকী সালাত আদায়
করছে। তখন তিনি বললেন: “এমন কেউ কি নেই, যে এ লোকটিকে সাদাকা করবে, তথা এর সাথে সালাত
আদায় করবে? (সুনান আদ-দারেমী, ১৪০৫, সহীহ ইবনু হিব্বান
নং ১০৫৭ ও মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৪৩৬ তে। ((আহমাদ ৩/৬৪; বাইহাকী ৩/৬৯; আবু দাউদ ৫৭৪;
হাকিম ১/২০৯; হাকিম একে সহীহ বলেছেন আর যাহাবী তা সমর্থন করেছেন।; তিরমিযী ২২০, মুহাক্বিক্বের
মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৪৩৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবী সাঈদ আল খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি মসজিদে এমন সময় প্রবেশ করলো, ততক্ষণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করে নিয়েছেন। তখন তিনি বললেন: “এমন কেউ কি নাই, যে এ লোকটিকে
সাদাকা করবে, তথা এর সাথে সালাত আদায় করবে?”[1] আব্দুল্লাহ বলেন, তিনি আসর সালাত আদায়
করতেন এবং মাগরিবের সালাত আদায় করতেন, তবে (সে দু’টিকে) একত্রে আদায় করতেন। (সুনান আদ-দারেমী, ১৪০৬, সহীহ ইবনু হিব্বান নং ২৩৯৮, ২৩৯৯ ও
মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৪৩৭, ৪৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৩) সালাত সংক্ষিপ্ত করার বিধানাবলীঃ
(ক) আবূ
মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি ফজরের সালাতের জামাআতে অমুকের কারণে
দেরীতে উপস্থিত হই। কারণ তিনি আমাদের সালাতে দীর্ঘ কিরাআত পড়েন। রাবী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সে দিনের চাইতে আর কোন দিন অধিক রাগান্বিত হয়ে খুতবাহ
দিতে দেখিনিঃ হে লোকসকল! তোমাদের মধ্যে লোকেদের ঘৃণা উদ্রেককারী ব্যাক্তিও আছে। অতএব
তোমাদের কেউ যখন লোকেদের নিয়ে সালাত পড়ে তখন সে যেন সংক্ষিপ্ত কিরাআত পড়ে। কেননা তাদের
মধ্যে দুর্বল, বৃদ্ধ ও কর্মব্যস্ত লোকও রয়েছে। (সুনানে
ইবনে মাজাহ, ৯৮৪, বুখারী ৯০, ৭০২, ৭০৪, ৬১১০, ৭১৫৯; মুসলিম ৪৬৬, আহমাদ ১৬৬১৭, ১৬৬২৯;
দারিমী ১২৫৯, সহীহ আবূ দাউদ ৭০৯০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংক্ষেপে অথচ পূর্ণরূপে সালাত
আদায় করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৯৮৫, বুখারী ৭০৬, ৭০৮-১০;
মুসলিম ৪৬৯১-৩, ৪৭০, ৪৭৩; তিরমিযী ২৭৩, ৩৭৬; নাসায়ী ৮২৪, আবূ দাঊদ ৮৫৩, আহমাদ ১১৫৭৯,
১১৬৫৬, ১২২৪২, ১২৩২৩, ১২৩৬২, ১২৪৩১, ১২৪৬৬, ১২৭১৩, ১২৭৩৮, ১৩০০১, ১৩০৩৬, ১৩৩৪৭, ১৩৫১৫,
১৩৫৩৩, ১৩৫৫৩, ১৩৫৯৭; দারিমী ১২৬০, মাজাহ ৯৮৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
মুআয ইবনু জাবাল আল-আনসারী (রাঃ) তার সাথীদের নিয়ে এশার সালাত পড়লেন। তিনি তাদের সালাত
দীর্ঘ করলেন। ফলে আমাদের মধ্যকার এক ব্যাক্তি (সালাত থেকে) পৃথক হয়ে একাকী সালাত পড়ে।
মুআয (রাঃ) কে তার সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনি বলে, নিশ্চয় সে মোনাফিক। লোকটি তা জানতে
পেরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে তার সম্পর্কে
মুআয (রাঃ) এর মন্তব্য তাঁকে অবহিত করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
হে মুআয! তুমি কি বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী হতে চাও? তুমি যখন লোকেদের নিয়ে সালাত পড়বে,
তখন সূরাহ আস-শামসি ওয়া যুহাহা, সূরাহ আল-আলা, সূরাহ ওয়াল-লাইল ও সূরাহ ইকরা বিসমি
রব্বিকা পাঠ করবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৯৮৬, বুখারী ৭০১,
৭০৫, ৬১০৬; মুসলিম ৪৩১-২, নাসায়ী ৮৩১, ৮৩৫, ৯৮৪, ৯৯৭-৯৮; আবূ দাঊদ ৭৯০, আহমাদ ১৩৭৭৮,
১৩৮৯৫, ১৪৫৪৩; দারিমী ১২৯৬, সহীহ ইবনু মুয়াঈমাছ ১৬৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) মুতাররিফ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনুুস শিখখীর
(রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনু আবূল আস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তায়েফের আমীর নিয়োগ করাকালে আমার থেকে সর্বশেষ প্রতিশ্রুতি
গ্রহণ করে বলেনঃ হে উসমান! তুমি সালাত সংক্ষেপ করবে এবং লোকেদের মধ্যকার দুর্বলদের
সামর্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। কেননা তাদের মধ্যে বৃদ্ধ, নাবালেগ, রোগাক্রান্ত ব্যাক্তি,
দূরের পথের পথিক এবং কর্মব্যস্ত লোক আছে। (সুনানে ইবনে
মাজাহ, ৯৮৭, মুসলিম ৪৬৮, নাসায়ী ৬৭২, আবূ দাঊদ ৫৩১, আহমাদ ১৫৮৩৬, ১৭৪৪২, ১৭৪৪৮, ১৭৪৫৫;
মাজাহ ৯৮৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঙ) উসমান ইবনু আবূল আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ আমাকে যা বলেছেন তা হলঃ যখন তুমি লোকেদের ইমামতি
করবে, তখন তাদের সালাত সংক্ষেপ করবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ,
৯৮৮, মুসলিম ৪৬৮, নাসায়ী ৬৭২, আবূ দাঊদ ৫৩১, আহমাদ ১৫৮৩৬, ১৭৪৪২, ১৭৪৪৮, ১৭৪৫৫; মাজাহ
৯৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সালাত শুরু করে
তা দীর্ঘায়িত করার সংকল্প করি। কিন্তু আমি শিশুদের কান্না শুনতে পাই এবং তাতে তার মায়ের
বিচলিত হওয়ার কথা চিন্তা করে আমার সালাত সংক্ষিপ্ত করি। (সুনানে
ইবনে মাজাহ, ৯৮৯, বুখারী ৭০৬, ৭০৮-১০; মুসলিম ৪৬৯১-৩, ৪৭০, ৪৭৩; তিরমিযী ২৭৩, ৩৭৬;
নাসায়ী ৮২৪, আবূ দাঊদ ৮৫৩, আহমাদ ১১৫৭৯, ১১৬৫৬, ১২২৪২, ১২৩২৩, ১২৩৬২, ১২৪৩১, ১২৪৬৬,
১২৭১৩, ১২৭৩৮, ১৩০০১, ১৩০৩৬, ১৩৩৪৭, ১৩৫১৫, ১৩৫৩৩, ১৩৫৫৩, ১৩৫৯৭; দারিমী ১২৬০, মাজাহ
৯৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) উসমান ইবনু আবূল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আমি শিশুরু কান্না শুনতে
পাই এবং আমার সালাত সংক্ষিপ্ত করি। (সুনানে ইবনে মাজাহ,
৯৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(জ) আবূ
ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ নিশ্চয় আমি সালাতে দাঁড়িয়ে তা দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছা করি। কিন্তু আমি শিশুরু
কান্না শুনতে পেয়ে সালাত সংক্ষিপ্ত করি, তার মায়ের কষ্ট হওয়ার আশঙ্কায়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৯৯১, বুখারী ৭০৭, ৮৬৮; নাসায়ী ৮২৫, আবূ
দাঊদ ৭৮৯, আহমাদ ২২০৯৬, সহীহ আবী দাউদ ৭৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৪) মহিলাগণ মসজিদে সালাত আদায় করতে গেলে কোন কাতারে
দাঁড়াবেঃ
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিলাদের কাতারগুলোর মধ্যে
(সওয়াবের দিক থেকে) উত্তম হল শেষ কাতার এবং তাদের জন্য মন্দ কাতার (কম সওয়াবের) হল
তাদের প্রথম কাতার। পুরুষদের কাতারগুলোর মধ্যে উত্তম হল প্রথম কাতার এবং তাদের জন্য
মন্দ হল তাদের শেষ কাতার। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ১০০০, মুসলিম
৪৪০, তিরমিযী ২২৪, নাসায়ী ৮২০, আবূ দাঊদ ৬৭৮, আহমাদ ৭৩১৫, ৮২২৩, ৮২৮১, ৮৪৩০, ৮৫৮০,
৯৯১৭; দারিমী ১২৬৮, সহীহ তারগীব ৪৮৮, সহীহ আবী দাউদ ৬৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পুরুষদের কাতারগুলোর
মধ্যে উত্তম হল তাদের সামনের (প্রথম) কাতার এবং মন্দ হল তাদের পেছনের (শেষ) কাতার।
মহিলাদের কাতারগুলোর মধ্যে উত্তম হল তাদের পেছনের (সর্বশেষ) কাতার এবং মন্দ হল তাদের
সামনের কাতার। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ১০০১, আহমাদ ১৩৭০৯,
১৪১৪১, ১৪৭৪১। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(বর্তমানে নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে সালাত আদায় করে
না। অনেক মসজিদে নারীদের আলাদা কক্ষ আছে। তবে যে মসজিদে আলাদা কক্ষ নেই সেই মসজিদে
নারীগণ একদম শেষ কাতারে দাঁড়াবে আর এইটাই তাদের জন্যে উত্তম কাতার)।
সালাতে সুরা ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ যেভাবে নামাজী ব্যক্তির সাথে কথা
বলেনঃ
প্রতি
সালাতেই সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হয়। সূরা ফাতিহা ছাড়া সালাত শুদ্ধ হয় না। একাকী হোক বা
ইমামের সাথে হোক প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হয়। এই সুরা ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে
আল্লাহর সাথে নামাজী ব্যক্তির কথাবার্তা হয়। এই সূরা ফাতিহায় কিভাবে আল্লাহর সাথে কথা
হয় তা দেখতে নিম্নোক্ত হাদিসটি পড়ুন-
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাত আদায় করলো কিন্তু এতে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ- সূরাহ্ ফাতিহাহ্
পাঠ করলো না তাতে তার সালাত ‘‘অসম্পূর্ণ’’ রয়ে গেল। এ কথা তিনি তিনবার বললেন। এ কথা
শুনে কেউ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা যখন ইমামের পিছনে সালাত আদায়
করবো তখনও কি তা পাঠ করবো? উত্তরে তিনি বললেন, হাঁ তখনও তা পাঠ করবে নিজের মনে মনে।
কারণ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আল্লাহ বলেছেন,
আমি ‘সালাত’ অর্থাৎ, সূরাহ্ ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ
করেছি, (এভাবে যে, হামদ ও সানা আমার জন্য আর দু‘আ বান্দার জন্য)। আর বান্দা যা চায়
তা তাকে দেয়া হয়।
বান্দা
বলে, সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি সমস্ত জাহানের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার
বান্দা আমার প্রশংসা করলো। যখন বান্দা বলে, আল্লাহ বড় মেহেরবান ও পরম দয়ালু। আল্লাহ
তখন বলেন, আমার বান্দা আমার গুণগান করলো। বান্দা যখন বলে, আল্লাহ কিয়ামতের (কিয়ামতের)
দিনের মালিক, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করলো। বান্দা যখন
বলে, (হে আল্লাহ!) আমরা একমাত্র তোমারই ‘ইবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য কামনা
করি, তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার (ইবাদাত আল্লাহর জন্য
আর দু‘আ বান্দার জন্য)। আর আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ)!
তুমি আমাদেরকে সহজ ও সরল পথে পরিচালিত কর। সে সমস্ত লোকের পথে, যাদেরকে তুমি নি‘আমাত
দান করেছ। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি তোমার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এটা আমার বান্দার জন্য, আর বান্দা যা চাইবে, সে তাই পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৮২৩, মুসলিম ৩৯৫, তিরমিযী ২৯৫৩, ইবনু মাজাহ্ ৮৩৮, আহমাদ ৭২৯১, সহীহ ইবনু
হিব্বান ৭৭৬, তিরমিযী ২৯৫৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
সহিহ হাদিস ভিত্তিক সালাতের আহকাম-আরকানসমূহঃ
সালাতের
প্রস্তুতিতে কিছু কাজ রয়েছে। সালাতের প্রস্তুতিমূলক এসব কাজ বা সালাত শুরু করার আগে
যে ফরজ কাজগুলো আছে, সেগুলোকে সালাতের আহকাম বা শর্ত বলে।
সালাতের
আহকাম সাতটি। যথাঃ
(ক) শরীর পাক (অর্থাৎ সালাতের আগে ওযু করে পবিত্র হতে
হবে, আর গোসল ফরয হলে আগে গোসল করে নিতে হবে),
(খ)
পোশাক পাক,
(গ) জায়গা
পাক,
(ঘ) সময় হওয়া,
(ঙ) সতর ঢাকা,
(চ) কিবলামুখী হওয়া,
(ছ) নিয়ত করা।
দলীল: (এক) বুখারী: ১৩৫, ইফা ১৩৭, আধুনিক:
১৩২, (দুই) আবু দাউদ ৩৭৮-৩৭৯, (তিন) বুখারী: ২২০, ইফা ২২০, আধুনিক ২১৪, (চার) সূরা
নিসা: ১০৩, (পাঁচ) সূরা আ'রাফ: ৩১, আহমদ: ২/১৮৭, (ছয়) সূরা বাকারা ১৪৪, মুসলিম: ৩৯৭,
(সাত) বুখারী: ১। উপরে বর্ণিত যেকোন একটা হুকুম বা শর্ত জেনে-শুনে বাদ দিলে সালাত আদায়
হবে না। তবে ভুলে কোনটা বাদ গেলে সালাত আদায় হয়ে যাবে ।
সালাতের রুকন বা আরকানঃ
একবচনে
রুকন ও বহুবচনে আরকান। সালাত আদায়কালে আমরা কিছু ফরজ কাজ পালন করি। সালাতের ভিতরে যে
ফরজ কাজগুলো আছে সেগুলোকে সালাতের আরকান বলে। এর সংখ্যা নিয়েও আলেমগণের মতভেদ রয়েছে।
তবে বিশুদ্ধ দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে বিজ্ঞ ফকীহগণের মতে, সালাতের রুকন ১০টি। যথাঃ
(ক) দাঁড়িয়ে সালাত আদায় (ফরয সালাতে সক্ষম অবস্থায়)
(খ) তাকবীরে
তাহরীমা (প্রথম তাকবীর)
(গ)
সূরা ফাতিহা পাঠ (প্রত্যেক রাকাআতে)
(ঘ) রুকু করা এবং রুকু থেকে উঠা।
(ঙ) সিজদা এবং সিজদা থেকে উঠা।
(চ) দুই
সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠক।
(ছ) শেষ বৈঠক ও তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়া।
(জ) রুকনগুলো
ধীরস্থিরভাবে আদায় করা।
(ঝ) রুকন আদায়ে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা
(অর্থাৎ ক্রমধারা অনুযায়ী একের পর এক রুকনগুলো আদায় করা )
(ঞ) সালাম ফেরানো (ডানে ও বামে)। এর কোন একটা ফরয ইচ্ছায়
বা ভুলে বাদ পড়লে সালাত বাতিল হয়ে যাবে।
দলীল: (এক) বুখারী: ১১১৭, (দুই) বুখারী: ৭০৯,
ইফা: ৭৫৭, আধুনিক: ৭৪৯, (তিন) বুখারী: ৭৫৬, ইফা ৭২০, আধুনিক ৭১২, (চার) সূরা হাজ্জ:
৭৭, বুখারী: ৭৫৭, ইফা ৭২১, আধুনিক: ৭১৩, (পাঁচ এবং ছয়) বুখারী: ৭৫৭, (সাত) বুখারী:
৭৫৭, ইফা ৭২১, বুখারী: ৮৩১, ইফা ৭৯৩, আধুনিক ৭৮৫, (আট) বুখারী: ৭৫৭, ইফা ৭২১, (নয়)
বুখারী, (দশ) আবু দাউদ: ৬১)।
সালাতের ওয়াজিবসমূহঃ
ইচ্ছাকৃতভাবে
কোন একটা ওয়াজিব ছেড়ে দিলে সালাত বাতিল হয়ে যায়। আর ভুলে বাদ পড়লে সাহু সিজদা
দিতে হয়। বিশুদ্ধ দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে সালাতের ওয়াজিব সাতটি। যথাঃ
(ক) সকল তাকবীর (তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া)
(খ) (সূরা
ফাতিহার পর) সূরা মিলানো। অধিকাংশ মাযহাবে এটা সুন্নাত।
(গ) ‘সামি আল্লাহু লিমান হামীদা’ বলা (রুকু
থেকে মাথা উঠানোর সময় ইমাম ও একাকী নামায আদায়কারী এ তাসবীহটি পড়বে ।
(ঘ) রাব্বানা
ওয়া লাকাল হামদ' বলা, (ইমাম, মুক্তাদি ও একাকী নামায আদায়কারী সবাই বলবে)।
(ঙ) মাগরিব ও চার রাকআত বিশিষ্ট সালাতের প্রথম বৈঠক।
(চ) প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পড়া।
(ছ) দরূদ পড়া (শেষ বৈঠকে), একদল ফিকহবিদের মতে, এটা
রুকন।
দলীল: (এক) বুখারী: ৭৩৩, ইফা ৬৯৭, আধুনিক
৬৮৯, (দুই) বুখারী: ৭৫৯, ইফা: ৭২৩, আধুনিক: ৭১৫, (তিন) বুখারী: ৭৮৯, ইফা ৭৫৩, আধুনিক
৭৪৫, (চার) বুখারী, (পাঁচ) বুখারী: ৮৩০, ইফা ৭৯২, আধুনিক ৭৮৪, (ছয়) নাসাঈ: ১১৬৩,
(সাত) মুসলিম: ৪০৫, বুখারী: ৬৩৫৭)।
সালাতের সুন্নাতসমূহঃ
ফরয ও ওয়াজিব ব্যতিরেকে এমন কিছু কথা ও কাজ আছে,
যা সুন্নাত এর মধ্য থেকে। কোন কিছু জেনে, না জেনে বা ভুলে ছুটে গেলে সালাত বাতিল হয়ে
যাবে না, তবে সাওয়াব কমে যাবে। উল্লেখ্য, রাসূলুল্লাহ (স.) ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত-
এসব সহ সালাত আদায় করতেন। নিম্নে সালাতের সুন্নাত সমূহের একটি বিবরণ দেওয়া হলো:
(ক)
দুই হাত কাঁধ বা কান বরাবর উঠানো: (তাকবীরে তাহরীমা, রুকুতে যাওয়া, রুকু থেকে
উঠার সময় এবং আত্তাহিয়্যাতুর প্রথম বৈঠক থেকে উঠার সময়।) (বুখারী: ৬৯৯ ইফা.)।
(খ) বাম
হাতের উপর ডান হাত বুকের উপর রাখা। (ইবনে খুযাইমা: ৪৭৯)
(গ)
দাঁড়ানো ও রুকু অবস্থায় সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখা। (বায়হাকী ২/২৮৩)
(ঘ) ছানা পড়া। (বুখারী: ৭০৮ ইফা; ৭০০ আধু.)
(ঙ) ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম’
পড়া।(আবু দাউদ: ৭৭৫)
(চ) “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ' পড়া। (আহমদ: ৩/২৬৪)
(ছ) সূরা ফাতিহা পড়ার পর ‘আমীন' বলা।
(বুখারী: ৭৪৪ ইফা.; ৭৩৬ আধু.)
(জ)
যাহেরী সালাতে সূরা আওয়াজ করে পড়া। (বুখারী: ৭২৯ ইফা; ৭২১ আধু.)
(ঝ) চুপি চুপি সালাতে (অর্থাৎ যোহর ও আসর
এবং তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতে) চুপে চুপে কিরাআত পড়া। (বুখারী: ৭২৫ ইফা; ৭১৭ আধু.)।
(ঞ) কিরাআত
পাঠ শেষে রুকুতে যাওয়ার পূর্বক্ষণে ক্ষণিকের জন্য একটু চুপ থাকা। (আবু দাউদ: ৭৭৮)।
(ট) রুকুর
সময় হাঁটুতে দু' হাতের আঙুলগুলো ফাঁকা ফাঁকা করে হাঁটুকে শক্ত করে ধরে রাখা।
(আবু
দাউদঃ ৭৩১; বুখারী: ৭৯০ ইফা.)।
(ঠ) রুকুতে পিঠ মাটির সমান্তরালে এমনভাবে
সোজা রাখা, যাতে সেখানে পানি রাখলে তা সমান উচ্চতায় স্থির থাকে। (আবু দাউদ: ৮৫৯, ইবনে
মাজাহ: ৮৭২)
(ড) রুকুতে উভয় হাত দুই পাজর থেকে ফাকা
করে দূরে রাখা। (আবু দাউদঃ ৭৩৪)
(ঢ) রুকু ও সিজদায় তিনবার তাসবীহ পড়া (বেজোড় সংখ্যা
উত্তম, জোড় হলেও সমস্যা নেই)। (মুসলিম: ৭৭২)।
(ণ) দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে একাধিকবার মাগফিরাত চাওয়া
। রাসূলুল্লাহ (স.) দুই সিজদার মাঝের বৈঠকে পড়তেন ‘রাব্বিগ ফিরুলী’, ‘রাব্বি ফিলী'....
(আবু দাউদ: ৮৭৪)
(ত) রাব্বানা লাকাল হাম্দ ' বলার পর এ দু'আটি পড়া: মিল’আস
সামা-ওয়া-তি ওয়া মিল’আল আরদি ওয়ামা বাইনাহুমা, ও মিল’আ মা শি’তা মিন শাইয়িন বা‘দু
(থ) সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাত ও পরে হাঁটু রাখা এবং
উঠার সময় বিপরীতে আগে হাঁটু ও পরে হাত উঠানো। (আবু দাউদ: ৮৪০)।
(দ) সিজদার সময় দুই হাতের আঙুলগুলো জমিয়ে (মিশিয়ে)
রাখা। (হাকেম: ১/২২৪)।
(ধ) সিজদায় পায়ের আঙুলগুলো পরস্পর ফাঁকা
করে রাখা। (আবু দাউদ: ৭৩০)।
(ন)
সিজদারত অবস্থায় পায়ের আঙুলসমূহ কিবলামুখী করে রাখা। (বুখারী: ৭৯০ ইফা.; ৭৮২
আধুনিক)।
(প) দুই বাহু বক্ষদেশ থেকে ফাঁকা করে রাখা, অর্থাৎ বুকের
সাথে বাহু মিশিয়ে না রাখা । (বুখারী: ৭৭০ ইফা.; ৭৬২)।
(ফ) পেট থেকে দুই উরুকে ফাঁকা করে রাখা এবং উরুদ্বয়
দুই রান থেকে ফাঁকা করে রাখা। (আবু দাউদঃ ৭৩৫)।
(ব) সিজদায় দুই হাত কাঁধ বা কান বরাবর রাখা এবং এ দু
হাতের মধ্যবর্তী স্থানে সিজদা করা। (আবু দাউদঃ ৭৩৪; তিরমিযী ২৭০, নাসাঈ ৮৮৯)।
(ভ) সিজদার সময় দুই পায়ের মধ্যখানে ফাক
না রেখে একত্রে মিশিয়ে পা দুটি খাড়া করে রাখা। (মুসলিম: ৪৮৬)।
(ম) সিজদায় বেশি বেশি দু'আ করা। (মুসলিম: ৪৮২)।
(য) আত্তাহিয়্যাতু-এর প্রথম বৈঠকে বাম
পা বিছিয়ে এর উপর বসে ডান পা খাড়া করে রাখা। (মুসলিম: ৪৯৮)।
(র) তাশাহহুদের বৈঠকে দুই হাত দুই উরুর উপর অথবা দুই
হাঁটুর উপর রাখা। (মুসলিম: ৫৭৯)।
(ল) তাশাহহুদের বৈঠকে এবং দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে
বাহু দু’টি উরুর সাথে মিশিয়ে রাখা অর্থাৎ বাহু ও উরুর মাঝে কোন ফাঁকা না রাখা। (নাসাঈ:
১২৬৪)।
(শ) বৈঠকে ডান হাতের কনিষ্ঠা ও অনামিকা
আঙুল দুটি গুটিয়ে রেখে বৃদ্ধা ও মধ্যমা অঙ্গুলিকে গোলাকার করে ধরে শাহাদাত অঙ্গুলি
কাবামুখী করে ইশারা করা। (ইবনে মাজাহ: ৯১২)।
(স)
দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাকআত এর জন্য সিজদা থেকে দাঁড়ানোর পূর্বক্ষণে ‘ইস্তিরাহার
বৈঠক করা। (বুখারী: ৭৮৫ ইফা; ৭৭৭ আধু.)।
(হ) সালাতের প্রথম বৈঠকে ‘ইফতিরাশ করা এবং শেষ বৈঠকে
‘তাওয়াররূক’ করা। অর্থাৎ, যে সালাতে মাত্র একবার তাশাহহুদ পড়া হয় সে বৈঠকে ‘ইফতিরাশ
করা, আর যে সালাতে দুই বার তাশাহহুদ পড়া হয় এমন সালাতের শেষ বৈঠকে তাওয়াররূক’ করা।
(ড়)
বসা অবস্থায় দৃষ্টি ডান হাতের শাহাদাত অঙ্গুলি অতিক্রম না করা। (নাসাঈ: ১২৭৫,
১৬৬০)।
(ঢ়)
আত্তাহিয়্যাতু পড়া শেষে দু'আ করা এবং চারটি জিনিস থেকে আশ্রয় চাওয়া: (ক.
কবরের আযাব, খ. আগুনের আযাব, গ. জীবনমৃত্যুর ফেতনা, ঘ. দাজ্জালের ফেতনা) (বুখারী: ১৩৭৭]।
(য়)
সালাম দেয়ার সময় ডানে ও বামে মুখ ফেরানো। (মুসলিম: ৫৮২, ৪৩১)।
নির্জন বা গোপনীয় স্থানে সালাত আদায়ের গুরুত্বঃ
(ক) উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমার প্রতিপালক বিস্মিত হন পর্বত চূড়ায়
সেই ছাগলের রাখালকে দেখে যে নামাযের জন্য আযান দিয়ে (সেখানেই) নামায আদায় করে; আল্লাহ
আযযা অজাল্ল বলেন, তোমরা আমার এই বান্দাকে লক্ষ্য কর, (এমন জায়গাতেও) আযান দিয়ে নামায
কায়েম করছে! সে আমাকে ভয় করে। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করালাম।
(আবু দাঊদ ১২০৫, নাসাঈ ৬৬৬, সহীহ তারগীব ২৪৭, হাদিস সম্ভার,
হাদিস নং-৮৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জামাআতে পড়া নামায পঁচিশটি নামাযের সমতুল্য।
যদি কেউ সেই নামায কোন জনশূন্য প্রান্তরে পড়ে এবং তার রুকু ও সিজদা পূর্ণরূপে আদায়
করে, তবে ঐ নামায পঞ্চাশটি নামাযের সমমানে পৌঁছায়। (আবু
দাঊদ ৫৬০, সহীহ তারগীব ৪১৩ , হাদিস সম্ভার, হাদিস নং-৮৫৫)।
হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) সালমান ফারেসী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি যখন কোন বৃক্ষ-পানিহীন
প্রান্তরে থাকে, অতঃপর সেখানে নামাযের সময় উপস্থিত হয়, তখন সে যেন ওযু করে। পানি না
পেলে যেন তায়াম্মুম করে। অতঃপর সে যদি শুধু ইকামত দিয়ে নামায পড়ে, তাহলে তার সাথে তার
সঙ্গী দুই ফিরিশতা নামায পড়েন। কিন্তু সে যদি আযান দিয়ে ও ইকামত দিয়ে নামায পড়ে, তাহলে
তার পশ্চাতে আল্লাহর এত ফিরিশতা নামায পড়েন, যাদের দুই প্রান্ত নজরে আসে না! (ত্বাবারানী ৫৯৯৭, আঃ রায্যাক ১৯৫৫, সহীহুত তারগীব ২৪৯, ৪১৪,
হাদিস সম্ভার, হাদিস নং-৮৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যেসব মুসল্লির সালাত কবুল হয় নাঃ
কিছু
নামাযী আছে, যারা সালাত আদায় করেন এবং অন্যান্য আমলও করেন কিন্তু তাদের সালাত আল্লাহ
রব্বুল আলামীনের দরবারে কবুল ও গৃহীত হয় না। সালাত বা আমল বা ইবাদতের অবস্থা দেখে মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হন না। এমন কতকগুলি
নামাযী বা আমলকারী ব্যক্তি নিম্নরুপ:-
(১) অন্যায়ের প্রতিবাদ করা
ফরজ, যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না তাদের কোনো আমল বা ইবাদত আল্লাহর নিকট গৃহিত হয়
নাঃ
আল্লাহ
বলেন,
“তোমাদের
মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (লোককে) কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকার্যের
নির্দেশ দেবে ও অসৎ কার্য থেকে নিষেধ করবে। আর এ সকল লোকই হবে সফলকাম”। (সূরা আলে ইমরান ১০৪)।
তিনি আরো বলেন,
“তোমরাই
শ্রেষ্ঠতম জাতি। মানবমণ্ডলীর জন্য তোমাদের অভ্যুত্থান হয়েছে, তোমরা সৎকার্যের নির্দেশ
দান কর, আর অসৎ কার্য (করা থেকে) নিষেধ কর, আর আল্লাহতে বিশ্বাস কর”। (সূরা আলে ইমরান ১১০)।
তিনি আরো বলেন,
“তুমি
ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল”। (সূরা আ’রাফ ১৯৯)।
তিনি
অন্যত্রে বলেছেন,
“আর
বিশ্বাসী পুরুষরা ও বিশ্বাসিনী নারীরা হচ্ছে পরস্পর একে অন্যের বন্ধু, তারা সৎ কাজের
আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে”। (সূরা তওবা ৭১)।
তিনি
আরো বলেন,
“বনী
ইস্রাঈলের মধ্যে যারা অবিশ্বাস করেছিল তারা দাঊদ ও মারয়্যাম-তনয় কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল।
কেননা, তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী। তারা যেসব গর্হিত কাজ করত তা থেকে তারা একে
অন্যকে বারণ করত না। তারা যা করত নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট”। (সূরা
মায়েদাহ ৭৮-৭৯)।
রাসুল
সা. বলেন,
আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন গর্হিত কাজ দেখবে, সে যেন তা নিজ হাত দ্বারা পরিবর্তন
করে দেয়। যদি (তাতে) ক্ষমতা না রাখে, তাহলে নিজ জিভ দ্বারা (উপদেশ দিয়ে পরিবর্তন করে)।
যদি (তাতেও) সামর্থ্য না রাখে, তাহলে অন্তর দ্বারা (ঘৃণা করে)। আর এ হল সবচেয়ে দুর্বল
ঈমান। (হাদীস সম্ভার, ১৫৯০, আহমাদ ১১০৭৪, মুসলিম ১৮৬,
আসহাবে সুনান)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি
আরো বলেন,
ইবনে
মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার
পূর্বে আল্লাহ যে কোন নবীকে যে কোন উম্মতের মাঝে পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে তাঁর (কিছু)
সহযোগী ও সঙ্গী হত। তারা তাঁর সুন্নাতের উপর আমল করত এবং তাঁর আদেশের অনুসরণ করত। অতঃপর
তাদের পরে এমন অপদার্থ লোক সৃষ্টি হয় যে, তারা যা বলে, তা করে না এবং তারা তা করে,
যার আদেশ তাদেরকে দেওয়া হয় না। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ হাত দ্বারা সংগ্রাম
করবে সে মু’মিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ জিভ দ্বারা সংগ্রাম করবে সে মু’মিন
এবং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ অন্তর দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন। আর এর পর সরিষার
দানা পরিমাণও ঈমান নেই। (হাদীস সম্ভার, ১৫৯১, মুসলিম ১৮৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি
আরো বলেন,
উম্মুল
মু’মেনীন উম্মে সালামাহ হিন্দ্ বিনতে আবী উমাইয়া হুযাইফাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অদূর ভবিষ্যতে তোমাদের উপর এমন শাসকবৃন্দ নিযুক্ত
করা হবে, যাদের (কিছু কাজ) তোমরা ভালো দেখবে এবং (কিছু কাজ) গর্হিত। সুতরাং যে ব্যক্তি
(তাদের গর্হিত কাজকে) ঘৃণা করবে, সে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে এবং যে আপত্তি ও প্রতিবাদ
জানাবে, সেও পরিত্রাণ পেয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি (তাতে) সম্মত হবে এবং তাদের অনুসরণ
করবে (সে ধ্বংস হয়ে যাবে)। সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করব না?’ তিনি বললেন, না; যে পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করবে। (হাদীস সম্ভার, ১৫৯৩, আহমাদ ২৬৫২৮, মুসলিম ৪৯০৬)।হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
তিনি
আরো বলেন,
হুযাইফাহ
(রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তার কসম যার হাতে আমার
প্রাণ আছে! তোমরা অবশ্যই ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে, তা না
হলে শীঘ্রই আল্লাহ তাআলা তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের উপর আযাব পাঠাবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর
কাছে দু‘আ করবে; কিন্তু তা কবুল করা হবে না। (হাদীস সম্ভার,
১৬০৪, আহমাদ, তিরমিযী ২১৬৯, সহীহুল জামে ৭০৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
তিনি
আরো বলেন,
জারীর
বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, যে সম্প্রদায় যখন বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি থাকে,
যার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি তারা তাদেরকে বাধা না দেয় (এবং ঐ পাপাচরণ
বন্ধ না করে), তাহলে (তাদের জীবদ্দশাতেই) মহান আল্লাহ তাদেরকে ব্যাপকভাবে তাঁর কোন
শাস্তি ভোগ করান। (হাদীস সম্ভার, ১৬০৬, আহমাদ ৪/৩৬৪, আবূ
দাউদ ৪৩৩৯, ইবনে মাজাহ ৪০০৯, ইবনে হিব্বান, সহীহ আবূ দাউদ ৩৬৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
সুতরাং
কোনো মুছল্লী সে যতোই সালাত আদায় করুক বা অন্যান্য আমল করুক কিন্তু তার সম্মুখে সংঘটিত
কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলে তার কোনো ইবাদতই আল্লাহর নিকট গৃহিত হবে না।
হাদিস
অনুসারে প্রতিবাদের ধরন তি প্রকার। যথাঃ
(ক) হাত দ্বারা প্রতিবাদ করা।
(খ) মৌখিকভাবে প্রতিবাদ করা।
(গ) অন্তরে ঘৃণা পোষণের মাধ্যমে প্রতিবাদ
করা।
মৌখিকভাবে
প্রতিবাদের ধরণ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন,
(ক) ফেসবুকসহ সোসাল মিডিয়ায় লেখনীর মাধ্যমে।
(খ) পত্রিকায় প্রতিবাদ প্রকাশ করে।
(গ) বই-পুস্তক প্রকাশ করে।
(ঘ)
ধর্মীয় সভায় ওয়াজ করে।
(ঙ) টিভিতে টক শো করে।
(চ) মানব বন্ধন করে।
(ছ) প্লাকাড প্রদর্শন করে ইত্যাদি।
আমাদের
সমাজে একটা গ্রুপ আছে যেমন পিরপন্থী এদেরকে কখনো হাদিসে উল্লেখিত তিনিটির একটিও দিয়ে
প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। এরকম আরো অনেক দল বা ব্যক্তি আছে তারা মাথায় ঘোমটা দিয়ে
ঘরের কোণায় বসে বিভিন্ন ইবাদতে মশগুল থাকে। তারা কি করে জান্নাতের আশা করে।
(২) তিন ব্যক্তির সালাত কবুল হয় নাঃ
আবূ
উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন ব্যক্তির
নামায তাদের কান অতিক্রম করে না; প্রথম হল, পলাতক ক্রীতদাস; যতক্ষণ না সে ফিরে আসে।
দ্বিতীয় হল, এমন মহিলা যার স্বামী তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করে এবং তৃতীয়
হল, সেই জামাআতের ইমাম যাকে ঐ লোকেরা অপছন্দ করে। (হাদীস
সম্ভার ৭২০, তিরমিযী ৩৬০, সহীহ তারগীব ৪৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) গণকের কাছে যাওয়া ও গণকের
কথা বিশ্বাস করাঃ
এমন
লোক, যে কোন গণকের কাছে ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ জানার আশায় গণককে ‘ইলমে গায়বের মালিক’ মনে
করে হাত দেখায়। এমন ব্যক্তির -কেবল গণকের কাছে যাওয়ার কারণেই- তার ৪০ দিনের (২০০ ওয়াক্তের)
নামায কবুল হয় না! তার উপর গণক যা বলে তা বিশ্বাস করলে তো অন্য কথা। বিশ্বাস করলে তো
সে মূলেই ‘কাফের’-এ পরিণত হয়ে যায়। আর কাফেরের নামায-রোযা অবশ্যই মকবূল নয়।
(ক) হাফছাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি কোন গণক বা জ্যোতির্বিদদের নিকট যাবে এবং তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করবে ৪০
দিন তার ছালাত কবুল করা হবে না’ (মুসলিম, সহীহ ২২৩০, মিশকাত
হা/৪৫৯৫ বঙ্গানুবাদ ৮ম খন্ড হা/৪৩৯৩ ‘জ্যোতিষীর গণনা’ অনুচ্ছেদ)। হাদিসের মান-সহিহ।
(খ) আবূ হুরাইরা ও হাসান (রাঃ) বলেন, নবী
(ছাঃ) বলেছেনঃ ‘যে কোন গণক বা জ্যোতির্বিদদের নিকট আসল এবং তার বলা কথার প্রতি বিশ্বাস
করল সে মুহাম্মাদ (ছাঃ) এর উপর যা (কুরআন মাজীদ) অবতীর্ণ হয়েছে তাকে অস্বীকার করল।
(সহীহুল জামে’ ৫৯৩৯, আহমাদ ২/৪২৯পৃঃ)। হাদিসের মান-সহিহ।
(৪) মদ পানকারী মুছল্লীর সালাত কবুল হয় নাঃ
মদ
এমন একটি বস্তু যা বিবেককে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর বিবেক আচ্ছন্ন হলে মানুষের হিতাহিত
জ্ঞান থাকে না। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মদ হচ্ছে সকল অশ্লীল কর্মের মূল। উল্লেখ্য
যে, মদ কোন নির্ধারিত বস্তুর নাম নয়। যেসব বস্তু বেশী পরিমাণ খেলে বিবেকের ক্ষতি হয়
তার অল্প বস্তুও মদ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(ক) ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ জুয়া, প্রতিমা
এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কর্ম। অতএব তোমরা এগুলি থেকে বেঁচে থাক।
যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও। শয়তান তোমাদের মাঝে মদ ও জুয়ার মাধ্যমে শত্রুতা ও বিদ্বেষ
সঞ্চারিত করতে চায় এবং আল্লাহর যিক্র ও ছালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে চায়। তাহলে
কি তোমরা বিরত থাকবে? (মায়িদাহ ৯০-৯১)।
(খ) অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কয়েকটি অশ্লীল
কর্ম হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। (১) নেশাদার দ্রব্য যা পাপের মূল। (২) জুয়া যা মানুষকে
সামাজিক ও আর্থিকভাবে অপদস্ত করে। (৩) পীর, দরবেশ, ওয়ালী ও মূর্তির আস্তানা যা শির্ক।
(৪) শরসমূহ বা ফালবাজি, ভাগ্যবাজি শির্ক। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘তারা আপনাকে নেশাদার দ্রব্য ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করে। আপনি বলুন, তাতে বড় গুনাহ হয়’। (বাক্বারাহ ২১৯)।
(গ) ওছমান (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
‘তোমরা নেশাদার দ্রব্য থেকে বেঁচে থাক। কেননা নেশাদার দ্রব্য হচ্ছে অশ্লীল কর্মের মূল।
যে ব্যক্তি নেশাদার দ্রব্য থেকে বেঁচে থাকে না তারা আল্লাহ এবং তার রসূলের নাফারমানী
করে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফারমানী করার কারণে সে শাস্তির হক্বদার হয়’। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন, ‘যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নাফারমানী করে এবং তার সীমালঙ্ঘন করে,
আল্লাহ তাকে এমন আগুনে প্রবেশ করাবেন যেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার জন্য রয়েছে অপমানজনক
শাস্তি’। (নিসা ১৪; নাসাঈ, হাদীছ ছহীহ)।
(ঘ) ইবনু
‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
নেশা উদ্রেককারী প্রত্যেক জিনিসই ‘মদ’ আর প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী জিনিসই হারাম। আর
যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করেছে এবং অবিরত পান করতে থাকে এবং তা থেকে তওবা্ না করেই
মৃত্যুবরণ করেছে, তাহলে সে পরকালে তা (জান্নাতী সুপেয় মদ) পান করতে পারবে না। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৩৬৩৮, মুসলিম ২০০৩, আবূ দাঊদ ৩৬৭৬,
নাসায়ী ৫৬৭৩, তিরমিযী ১৮৬১, আহমাদ ৫৭৩০, সহীহ আল জামি‘ ৪৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৬১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ শরাব পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
(সুনান ইবনু মাজাহ, ৩৩৭৬, আহমাদ ২৬৯৩৮, সহীহাহ ৬৭৫, ৬৭৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান,
জুয়ারি, অনুগ্রহ করে খোঁটাদানকারী ও সর্বদা মদ্যপায়ী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩৬৫৩, নাসায়ী ৫৬৭২, দারিমী ২১৩৮,
সহীহাহ্ ৬৭৩, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত
হারাম করে দিয়েছেন। সর্বদা মদ্যপায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূস (পাপাচারী
কাজে পরিবারকে বাধা দেয় না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৩৬৫৫, নাসায়ী ২৫৬৩, আহমাদ ৫৩৭২, সহীহ আল জামি‘ ৩০৫২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৬৬। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(জ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান,
জুয়ারি, অনুগ্রহ করে খোঁটাদানকারী ও সর্বদা মদ্যপায়ী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩৬৫৩, নাসায়ী ৫৬৭২, দারিমী ২১৩৮, সহীহাহ্ ৬৭৩, সহীহ আল
জামি‘ ৭৬৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক মদ্যপায়ী অবস্থায়
মৃত্যুবরণ করে, সে মূর্তিপূজক হিসেবে আল্লাহ তা‘আলার নিকট উপস্থিত হবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩৬৫৭, আহমাদ ২৪৫৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৫৪৯,
সহীহ আত্ তারগীব ২৩৬৪, সহীহাহ্ ৬৭৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঞ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে জিনিসে অতিমাত্রায় নেশা আনয়ন
করে, তার সামান্য পরিমাণও হারাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৩৬৪৫, তিরমিযী ১৮৬৫, আবূ দাঊদ ৩৬৮১, ইবনু মাজাহ ৩৩৯৩, আহমাদ ১৪৭০৩, সহীহ আল জামি‘ ৫৫৩০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ট) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (একবার)
মদ পান করে, আল্লাহ তা‘আলার কাছে চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত গৃহীত হয় না। তবে যদি
সে তওবা্ করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার তওবা্ কবুল করেন। অতঃপর যদি সে (দ্বিতীয়বার)
মদ পান করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করেন না। এরপরও
যদি সে তওবা্ করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার তওবা্ কবুল করেন। তারপরও যদি সে (তৃতীয়বার)
মদ পান করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করেন না। পুনরায়ও
যদি সে তওবা্ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার তওবা্ কবুল করেন। অতঃপর যদি সে চতুর্থবার মদ পানের
পুনরাবৃত্তি করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করেন না।
এবারও যদি সে তওবা্ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার তওবা্ কবুল করবেন না এবং তাদেরকে জাহান্নামীদের
রক্ত ও পুঁজের নহর হতে পান করাবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৩৬৪৩, তিরমিযী ১৮৬২, সহীহ জামি‘ ৬৩১২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৮৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ঠ)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মদের সাথে সংশ্লিষ্ট দশ ব্যক্তির ওপর লা‘নাত করেছেন- ১। যে মদ তৈরি করে, ২। যে মদ তৈরির
নির্দেশ দেয়, ৩। যে মদ পান করে, ৪। যে মদ বহন করে, ৫। যার জন্য মদ বহন করে নিয়ে যাওয়া
হয়, ৬। যে মদ পান করায়, ৭। যে মদ বিক্রি করে, ৮। যে মদের আয় উপভোগ করে, ৯। যে মদ ক্রয়
করে, ১০। যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ২৭৭৬, তিরমিযী ১২৯৫, ইবনু মাজাহ ৩৩৮১, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৫৭)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
(ড) আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমার বন্ধু (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে উপদেশ দিয়েছেনঃ শরাব
পান করো না, কারণ তা সমস্ত পাপাচারের প্রসূতি। (সুনান
ইবনু মাজাহ, ৩৩৭১, সহীহ আল-জামি' ৭৩৩৪, আত-তালীকুর রাগীব ১/১৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ফ) ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রতিটি নেশা উদ্রেককর জিনিস হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩৩৮৮,ইরওয়া ৮/৪১, রাওদুন নাদীর ৫৪২-৫৪৪।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঢ)
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
প্রতিটি নেশা উদ্রেককর জিনিস শরাবের অন্তর্ভুক্ত এবং যে কোন শরাবই হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩৩৯০, মুসলিম ৩৭৩৩, ৩৭৩৪, ৩৭৩৫, তিরমিযি
১৮৬১, আহমাদ ৪৬৩০, ৪৮১৫, ৪৮৪৮, ৫৬১৬, ৫৬৯৭, ৫৭৮৬, ৬১৪৪, ৬১৮৩, ইরওয়া ৮/৪১, রাওদুন নাদীর
৫৪২-৫৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) যে সালাতে চুরি করেঃ
এমন নামাযী, যে সালাত পড়ে কিন্তু নামায চুরি করে।
দায় সারা করে পড়ে। ঠিকমত রুকূ-সিজদাহ করে না। রুকূতে স্থির হয় না, সিজদায় স্থির থাকে
না। কোমর বাঁকানো মাত্র তুলে নেয়। ‘সু-সু-সু’ করে দুআ পড়ে চটপট উঠে যায়! কারো কোমর
ঠিকমত বাঁকে না। মাথা উঁচু করেই রুকূ করে। কারো সিজদার সময় নাক মুসাল্লায় স্পর্শ করে
না। কারো পা দু’টি উপর দিকে পাল্লায় হাল্কা হওয়ার মত উঠে যায়। কেউ রুকূ ও সিজদার মাঝে
স্থির হয়ে দাঁড়ায় না। হাফ দাঁড়িয়ে সিজদায় যায়।
(ক) আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চোরদের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যতম চোর হল সেই
ব্যক্তি, যে নামায চুরি করে। সকলে বলল, হে আল্লাহর রসূল! সে নামায কিভাবে চুরি করে?
তিনি বললেন, সে তার নামাযের রুকূ-সিজদা পূর্ণরূপে করে না। অথবা তিনি বললেন, সে রুকূ
ও সিজদাতে তার পিঠ সোজা করে না। (অর্থাৎ তাড়াহুড়া করে চটপট রুকু-সিজদা করে)। (আহমাদ ২২৬৪২, ত্বাবারানী ৩২০৭, ইবনে খুযাইমা ৬৬৩, হাকেম ৮৩৫,
সহীহ তারগীব ৫২৪, হাদীস সম্ভার, হাদিস নং-৮৪৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি রুকূ ও সিজদা
করে তার পিঠ সোজা করে না, তার সালাত পূর্ণাঙ্গ হয় না। (সুনানে
ইবনে মাজাহ (তাওহীদ) ৮৭০, তিরমিযী ২৬৫, নাসায়ী
১০২৭, ১১০১১; আবূ দাঊদ ৮৫৫, আহমাদ ১৬৬২৫, ১৬৬৫৪; দারিমী ১৩২৭, মিশকাত ৮৭৮, সহীহ আবী
দাউদ ৮০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আলী ইবনু শায়বান (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি ছিলেন প্রতিনিধি দলের সদস্য। তিনি বলেন, আমরা রওনা হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম, তাঁর হাতে বাইআত গ্রহণ করলাম এবং তাঁর পিছনে সালাত
পড়লাম। তিনি এক ব্যাক্তির দিকে হালকা দৃষ্টিতে তাকান যে রুকূ ও সাজদা্হয় তার পিঠ সোজা
রাখেনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করে বলেনঃ হে মুসলিম সমাজ! যে
ব্যাক্তি রুকূ ও সিজদায় তার পিঠ সোজা করে না তার সালাত হয় না। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-২/৮৭১, আহমাদ ১৫৮৬২, সহীহাহ ২৫৩৬।
। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) “মানুষ ৬০ বছর ধরে নামায পড়ে, অথচ তার
একটি সালাতও কবুল হয় না! কারণ, হয়তো বা সে রুকূ পূর্ণরুপে করে, কিন্তু সিজদাহ পূর্ণরুপে
করে না। অথবা সিজদাহ পূর্ণরুপে করে, কিন্তু রুকূ ঠিকমত করে না।” (আসবাহানী, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৫৩৫ নং)।
(ঙ) “সালাত ৩ ভাগে বিভক্ত; এক তৃতীয়াংশ
পবিত্রতা, এক তৃতীয়াংশ রুকূ এবং আর এক তৃতীয়াংশ হল সিজদাহ। সুতরাং যে ব্যক্তি তা যথার্থরুপে
আদায় করবে, তার নিকট থেকে তা কবুল করা হবে এবং তার অন্যান্য সমস্ত আমলও কবুল করা হবে।
আর যার সালাত রদ করা হবে, তার অন্য সকল আমলকে রদ্দ্ করে দেওয়া হবে।” (বাযযার, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৫৩৭ নং)।
(৭) আযান শুনেও যে নামাযী
বিনা ওজরে মসজিদের জামাআতে সালাত পড়ে নাঃ
জামাআতে
সালাত পড়া ওয়াজেব। এই ওয়াজেব ত্যাগ করলে তার নামায কবুল নাও হতে পারে।
(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনা সত্ত্বেও
কোনরূপ ওজর ছাড়া (বিনা কারণে) জামা‘আতে সালাত আদায়ে বিরত থাকে তার অন্যত্র (একাকী)
সালাত কবুল হবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ওজর কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ ভয়-ভীতি অথবা অসুস্থতা। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
551, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (৩/৭৫), হাকিম (১/পৃঃ ২৪৫), দারাকুতনী (১/পৃঃ ৪২১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) জামা‘আত পরিত্যাগের ব্যাপারে সাবধান বাণীঃ
ইবনু
উম্মে মাকতূম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস
করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো অন্ধ, আমার ঘরও দূরে অবস্থিত। আমার একজন পথচালকও আছে,
কিন্তু সে আমার অনুগত নয়। এমতাবস্থায় আমার জন্য ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতি আছে কি? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আযান শুনতে পাও? ইবনু উম্মে মাকতূম
বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তোমার জন্য অনুমতির কোন সুযোগ দেখছি না।(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫৫২, ইবনু মাজাহ হাঃ ৭৯২) হাকিম (১/২৪৭)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan),
(৮) এমন মহিলা, যে আতর বা
সেন্ট মেখে মসজিদের জন্য বের হয়ঃ
পারফিউম
তথা সুগন্ধি ব্যবহার করা আসলে সুন্নত।
ইসলামে
নারীদের জন্য পর্দার বিধান আর ইসলামে নারীদের জন্য সুগন্ধি ব্যবহারের বিধান পরস্পরের
পরিপূরক অর্থ্যাৎ একই বিধান।
নারীরা
এমনভাবে সুগন্ধি ব্যবহার করবে যাতে ঐ সুগন্ধ কোন পরপুরুষ না পান। অর্থ্যাৎ একজন নারী
শুধু তার স্বামীর জন্যই বাসায় সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবেন, তাছাড়া নয়। সুগন্ধি ব্যবহার
করে বাসার বাইরে বের হলে (স্বামীর সাথে বাইরে বের হলেও) তা পরপুরুষ বুঝতে পারবে। তাহলে
তো তার ইসলামী বিধান অনুযায়ী পর্দারর বিধান রক্ষা করা হলো না। পর্দার সাথে হলেও মহিলা
পারফিউম বা সেন্ট জাতীয় কোন সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে যেতে পারবে না। কারণ তাতে ফিতনা
আছে।
(ক) আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রতিটি চক্ষুই
ব্যভিচারী। আর যে মহিলা সুগন্ধি দিয়ে পুরুষদের সভায় যায় সে এমন এমন অর্থাৎ ব্যভিচারকারিণী।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৬৫, আত্ তিরমিযী ২৭৮৬,
আবূ দাঊদ ৪১৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ২০১৯, সুনান আল কুবরা ৯৪২২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৬৪১, ইবনু
হিব্বান ৪৪২৪, সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৫১২৫। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি আমার মাহবুব আবুল ক্বাসিম (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
বলতে শুনেছিঃ ঐ মহিলার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কবূল হবে না যে সুগন্ধি মেখে মসজিদে
যায়, যতক্ষণ সে গোসল না করে নাপাকী থেকে গোসল করার ন্যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৬৪, আহমাদ ৯৯৩৮, আবূ দাঊদ ৪১৭৪, সহীহ আল জামি‘
৭৩৮৫। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) পিতামাতার অবাধ্য সন্তানঃ
(ক) আবূ বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তোমাদেরকে কি অতি
মহাপাপের কথা বলে দেব না?” আমরা বললাম, ‘অবশ্যই বলুন হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন,
“আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা এবং মাতা-পিতার অবাধ্যাচরণ করা।” তারপর তিনি হেলান
ছেড়ে উঠে বসলেন এবং বললেন, “শোন! আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।” শেষোক্ত কথাটি তিনি বারবার
বলতে থাকলেন। এমনকি অনুরূপ বলাতে আমরা (মনে মনে) বললাম, ‘যদি তিনি চুপ হতেন।’ (বুখারী ২৬৫৪, ৬৯১৯, ৫৯৭৬, মুসলিম ২৬৯, তিরমিযী)-হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
(খ) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “---আর তিন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না;
পিতা-মাতার নাফরমান ছেলে, মদপানে অভ্যাসী মাতাল এবং দান করার পর যে বলে ও গর্ব করে
বেড়ায় এমন খোঁটাদানকারী ব্যক্তি।” (আহমাদ ৬১৮০, নাসাঈর
কুবরা ২৩৪৩, হাকেম ২৫৬২, সহীহুল জামে’৩০৭১)
(গ) অন্য বর্ণনায় আছে,
“তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা
জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। অব্যাহতভাবে মদ পানকারী, পিতা-মাতার অবাধ্যজন এবং এমন বেহায়া,
যে তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়।” (আহমাদ ৫৩৭২, ৬১১৩)-হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
(ঘ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “দুটি (পাপ) দরজা এমন রয়েছে, যার শাস্তি
দুনিয়াতেই তরান্বিত করা হয়; বিদ্রোহ ও পিতা-মাতার অবাধ্যাচরণ।” (হাকেম ৭৩৫০, সহীহুল জামে’ ২৮১০ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১০) দান করে যে খোটা দেয়াঃ
কারো
উপকার শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করা উচিত, পার্থিব স্বার্থে নয়। কখনো এদিকে লক্ষ
করা উচিত নয় যে যার উপকার করা হয়েছে তার পক্ষ থেকে কী ধরনের আচরণ আসছে। খোঁটা দেওয়ার
তো কোনো প্রশ্নই আসে না। কেননা কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের
দান-সদকাকে পণ্ড কোরো না খোঁটা ও কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে।’ (সুরা
বাকারা : ২৬৪)।
‘আবদুল্লাহ
ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, জুয়ারি, অনুগ্রহ করে খোঁটাদানকারী ও সর্বদা মদ্যপায়ী জান্নাতে
প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩৬৫৩, নাসায়ী
৫৬৭২, দারিমী ২১৩৮, সহীহাহ্ ৬৭৩, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) তকদীর অস্বীকারকারী
ব্যক্তিঃ
রাসুল
সাঃ বলেছেন, “পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মদ্যপায়ী এবং তকদীর অস্বীকার কারী জান্নাতে
প্রবেশ করবে না।” (ত্বাবারানী, জামে ৩০৬৫, সিলসিলা সহীহা,
হাসান, ৬৭৫)।
(১২) পরের বাপকে যে নিজের
বাপ বলে দাবী করেঃ
যুহারর
ইবনু হারব (রহ), আবূ যার (রযিঃ) বলেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি জেনে শুনে নিজ পিতার পরিবর্তে অন্য কাউকে পিতা বলে, সে
কুফুরী করল। আর যে ব্যক্তি এমন কিছুর দাবী করে যা তার নয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয় এবং
সে যেন জাহান্নামে তার আবাসস্থল বানিয়ে নেয়। আর কেউ কাউকে কাফির বলে ডাকলে বা আল্লাহর
দুশমন' বলে ডাকল, যদি সে তা না হয় তাহলে এ কুফুরী সম্বোধনকারীর প্রতি ফিরে আসবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১২০, ১২১, ১২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১২১, ১২২, ১২৩ ইসলামিক সেন্টারঃ ১২৫, ১২৬,
১২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৩) যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে
হ্ত্যা করে এবং তাতে সে গর্ববোধ করে ও খুশী হয়ঃ
(ক) উবাদাহ
বিন সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে হত্যা করে তা
নিয়ে আনন্দ উপভোগ করবে সে ব্যক্তির নফল, ফরয কোন ইবাদতই আল্লাহ কবুল করবেন না।” (আবূ দাঊদ ৪২৭২, সহীহুল জামে’ ৬৪৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ) মুহাম্মাদ ইবনু বাককার ইবনু আর রাইয়্যান
ও ‘আওন ইবনু সাল্লাম এবং মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ), 'আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ
(রাযিঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসলিমকে গালি
দেয়া গুনাহের কাজ এবং তার সাথে মারামারি করা কুফুরী। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১২৪-১২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১২৫, ইসলামিক সেন্টার ১২৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আহমাদ ইবন সুলায়মান (রহঃ), আবূ ওয়ায়ল
(রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সর্বাগ্রে মানুষের মধ্যে খুনের বিচার
করা হবে। (সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৩৯৯৩-৩৯৯৮,
মুসলিম ১০২২, সহীহুল জামে ২০২১, ২৫৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৪) মুনাফিকীকরণ করলেঃ
দুমুখো
কপট মানুষ খুবই ইতর প্রকৃতির লোক। তাই মুখে ঈমান রেখে অন্তরে কুফরি গোপন করা মুনাফিকদের
আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন আর এরা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে।
(ক) ‘এই মুনাফিক পুরুষ ও নারী এবং কাফেরদের
জন্য আল্লাহতায়ালা দোযখের আগুনের ওয়াদা করেছেন, যাতে তারা চিরদিন থাকবে, ইহাই তাদের
উপযুক্ত। তাদের উপর আল্লাহর অভিসাপ এবং তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী আযাব।’ (তওবা ৬৮)।
(খ) ‘নিশ্চয় মুনাফিকগণ জাহান্নামের সর্বনিম্ন
স্তরে অবস্থান করবে, আর আপনি তাদের সাহায্যকারী হিসেবে কখনও কাউকে পাবেন না।’ (নিসা ১৪৫)।
(গ) আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবিতাবস্থায় কতক মুনাফিক
লোকের অভ্যাস এই ছিল যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন যুদ্ধের জন্যে
বের হতেন তখন তারা পিছনে গা ঢাকা দিয়ে থাকতো এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)-এর বিরূদ্ধে অবস্থান করাতেই তারা উচ্ছাস প্রকাশ করত। এরপর যখন রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে আসতেন তখন তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গিয়ে বিভিন্ন অজুহাত পেশ করত, কসম করত এবং প্রত্যাশা
করত যেন তারা প্রশংসিত হয় এমন কার্যের উপর যা তারা করেনি। তখন অবতীর্ণ হলোঃ “যারা নিজেরা
যা করেছে তাতে আনন্দোল্লাস করে এবং যা নিজেরা করেনি এমন কর্মের জন্য প্রশংসিত হতে পছন্দ
করে, তারা ‘আযাব থেকে রেহাই পাবে- আপনি কক্ষনো এমন মনে করবেন না। তাদের জন্যে আছে কঠিন
‘আযাব”- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৮৮)। (ই.ফা. ৬৭৭৬,
ই.সে. ৬৮৩১, সহিহ মুসলিম-৬৯২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(ঘ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(তিনি
বলেন,) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক ভ্রমণ থেকে প্রত্যাগমন
করে মাদীনার সন্নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছলে এমনভাবে প্রচণ্ডবেগে বায়ু প্রবাহিত হয় যে,
মনে হচ্ছিল যেন আরোহীকে ধূলায় ঢেকে ফেলবে। রাবী বলেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন মুনাফিকের মৃত্যুর কারণে এ বায়ু
প্রবাহিত হয়েছে। যখন তিনি মাদীনায় পৌঁছলেন, তখন দেখা গেল, একজন বড় মুনাফিকের মৃত্যু
ঘটেছে। (ই.ফা. ৬৭৮৪, ই.সে. ৬৮৩৯-সহিহ মুসলিম-৬৯৩৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
(১৫) যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে
অন্যের জমি দখল করে নেয়ঃ
(ক) সাঈদ ইবনু যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অত্যাচার করে অর্ধহাত যমীন
দখল করেছে, নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন অনুরূপ সাতটি যমীন তার কাঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হবে’ ।
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৩৮)।-হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস।
(খ) তাবেঈ সালেম তাঁর বাপ আব্দুল্লাহ ইবনু
ওমর হতে থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে অনধিকারে কারো
কিছু যমীন নিয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক যমীন পর্যন্ত ধসিয়ে দেওয়া হবে’। (বুখারী, মিশকাত হা/২৯৫৮)।-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(গ) ইয়া’লা
ইবনু মুররা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘যেকোন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে
কারো এক বিগত জমি দখল করে তাকে আল্লাহ তা সাত তবকের শেষ পর্যন্ত খুঁড়তে বাধ্য করবেন।
অতঃপর তার গলায় তা শিকলরূপে পরিয়ে দেওয়া হবে, যাবৎ না মানুষের বিচার শেষ করা হয়’। (আহমাদ, মিশকাত হা/২৯৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(ঘ) খাওলা আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে
সম্পদ দখল করবে। ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নাম রয়েছে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৩৯৯৫; বাংলা মিশকাত ৮ম খণ্ড, হা/৩৮১৯ ‘জিহাদ’
অধ্যায়)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১৮) হারাম খ্যদ্য খেলেঃ
(ক) কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘হারাম খাদ্য দ্বারা পরিপুষ্ট শরীর জান্নাতে
যাবে না’ (মিশকাত/২৭৮৭ ; বাংলা ৬ষ্ঠ খণ্ড, হাঃ/২৬৬৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ) জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে দেহের গোশত হারাম মালে গঠিত, তা জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম মালে গঠিত দেহের জন্য জাহান্নামই সমীচীন’ (আহমাদ, দারেমী,
বায়হাক্বী, শু’আবুল ঈমান। (মিশকাত হা/২৭৭২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
(১৬) তিন শ্রেণির লোকের সাথে
আল্লাহ কিয়ামতে কথা বলবেন নাঃ
আবূ
হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা
ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না। তাদের তিনি পবিত্রও করবেন না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তাদের
দিকে তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হচ্ছেন (১) বৃদ্ধ
যেনাকার (২) মিথ্যাবাদী শাসক এবং (৩) অহঙ্কারী দরিদ্র ব্যক্তি। (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৯ম খণ্ড, হা/৪৮৮২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১৭) আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী
জান্নাতে যাবে নাঃ
(ক) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“ক্ষমতায়
অধিষ্ঠিত হতে পারলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন
ছিন্ন করবে। আল্লাহ তা‘আলা এদেরকেই করেন অভিশপ্ত, বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২২-২৩]।
(খ) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
“যারা
আল্লাহ তা‘আলাকে দেওয়া দৃঢ় অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহ তা‘আলা
আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের জন্য রয়েছে লা’নত
ও অভিসম্পাত এবং তাদের জন্যই রয়েছে মন্দ আবাস”। [সূরা
আর-রা‘দ, আয়াত: ২৫]।
(গ) যুবায়র ইবনু মুত‘ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী
জান্নাতে প্রবেশ করবে না। [সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৫৯৮৪, মুসলিম ৪৫/৬, হাঃ ২৫৫৬, আহমাদ ১৬৭৩২, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-
৫৪৪৫, তিরমিযী, হাদীস নং ১৯০৯; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬৯৬; আব্দুর রায্যাক, হাদীস নং
২০২৩৮; বায়হাকী, হাদীস নং ১২৯৯৭।। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবু মূসা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“তিন
ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ও যাদুতে বিশ্বাসী”।
(আহমদ, হাদীস নং ১৯৫৮৭; হাকিম, হাদীস নং ৭২৩৪; ইবন হিব্বান,
হাদীস নং ৫৩৪৬)।
(ঙ) আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“আদম
সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রিতে (আল্লাহ তা‘আলার নিকট) উপস্থাপন
করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন বিচ্ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না”। (আহমদ, হাদীস নং ১০২৭৭)।
(১৮) কঠোর প্রকৃতি ও কটুভাষী লোক এবং যে ব্যক্তি মানুষের কাছে এমন
বিষয় নিয়ে গর্ব-অহংকার প্রকাশ করে বেড়ায় প্রকৃতপক্ষে যা তার নিকট নেইঃ
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কঠোর প্রকৃতি ও কটুভাষী লোক জান্নাতে প্রবেশ
করবে না এবং ঐ লোকও নয় যে এমন সব বিষয়ে মানুষের নিকট গর্ব-অহংকার প্রকাশ করে বেড়ায়
প্রকৃতপক্ষে যা তার কাছে নাই।” (আবু দাঊদ, হা/৪৮০১, সহীহ,
আলবানী)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৯) নারীর বেশ ধারণকারী
পুরুষ এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলা অভিশপ্তঃ
ইবনে
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ
করেছেন।’
অন্য
বর্ণনায় আছে, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী
পুরুষদেরকে এবং পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ করেছেন।’ (রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন), ১৬৩৯, সহীহুল বুখারী
৫৮৮৫, ৫৮৮৬, ৬৮৩৬, তিরমিযী ২৭৮৪, আবূ দাউদ ৪০৯৭৮, ৪৯৩০, ইবনু মাজাহ ১৯০৪, আহমাদ ৮১১০,
১৯৮৩, ২০০৭, ২১২৪, ২২৬৩, ২২৯১, ৩১৪১, ৩৪৪৮, দারেমী ২৬৪৯)।হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সম্মানিত মুসল্লিবৃন্দঃ উল্লেখিত বিষয়াদি ছাড়াও কুরআন ও হাদিসে
নিষেধমূলক এমন কিছু কর্মকান্ড আছে যেগুলোর সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা সত্ত্বেও
জড়িত থাকলে তারা জাহান্নামে যাবে। যেমন, যে ব্যক্তির অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার
থাকবে সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী), ১৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৭৪)। এখানে উল্লেখ্য
যে, সরিষা পরিমান অহংকারী লোকটাও কিন্তু সালাত আদায়কারী। তাহলে কিয়ামতে এই মুসল্লির
সালাত কোনো কাজে আসবে না। তাই সালাত আদায়ের পাশাপাশি নিষেধমূলক কাজগুলো এড়িয়ে চলতে
হবে। নইলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়কারী মুসল্লিও জাহান্নামে যাবে।
সালাত পরিত্যাগকারী বেনামাজির ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তিঃ
ফরজ
ইবাদতগুলো অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। ফলে তার গুরুত্ব অত্যধিক। ফরজ ইবাদত ছেড়ে দেওয়া
কোনো অবস্থায়ই জায়েজ নেই। কোনো মুমিন বিনা কারণে ফরজ ইবাদত ছেড়ে দিলে তাকে চরম শাস্তি
পেতে হবে। সব ফরজ ইবাদতগুলোর মধ্যে সালাত অন্যতম। যারা সালাত নেই কিয়ামতে তার অন্যান্য
ইবাদত বা আমল কোনো কাজে আসবে না।
ফরজ
সালাত তরক করার শাস্তিঃ সালাত ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম ও শ্রেষ্ঠ শারীরিক ইবাদত।
তা বর্জনের শাস্তি দুই ধরনেরঃ
(১) ঐহলৌকিক শাস্তি ও
(২) পারলৌকিক শাস্তি।
ইহলৌকিক
শাস্তি : সালাত বর্জনকারী আল্লাহর নিয়ামত, বরকত ও রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। আল্লাহর ফেরেশতারা
তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, তার দোয়া কবুল হয় না, তার চেহারার নুর উঠে যায়, তার জীবিকা
সংকীর্ণ করা হয়। ফলে সে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কষ্ট পায়। তাই শিশুদের ১০ বছর বয়স থেকেই সালাতের
গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এই বয়সে সালাত ছেড়ে দিলে মা-বাবাকে তাকে শাস্তি দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন, তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে সালাতের আদেশ করো। আর ১০ হলে সালাত ছাড়ার জন্য শাস্তি প্রদান করো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৯৫, আহমাদ (২/১৮০, হাঃ ৬৬৮৯ এবং
২/১৮৭), হাঃ ৬৭৫৬), হাকিম (১/১৯৭) বায়হাক্বী (৩/৮৪)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
শরয়ি
আইন অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা এবং ইসলামী সরকার প্রধান সালাত বর্জনের জন্য
শাস্তি প্রয়োগ করতে পারেন।
ইমাম
আবু হানিফা ও ইমাম মুজানির (রহ.)-এর মতে, কোনো ব্যক্তি অলসতাবশত ইচ্ছাকৃত সালাত ছেড়ে
দিলে তাকে আটক করা হবে।
ইমাম
আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) ও কোনো কোনো শাফেয়ি আইনবিদের মতে, সালাত বর্জনকারীকে হত্যা
করা হবে। কেননা রাসুল (সা.) বলেছেন,
(ক) বুরাইদাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের ও তাদের (কাফিরদের)
মধ্যে (মুক্তির) যে প্রতিশ্রুতি আছে তা হল নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দেয়,
সে কুফুরী কাজ করে। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ২৬২১,
ইবনু মাজাহ (১০৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা ও কুফরের মধ্যে
পার্থক্য হলো সালাত বর্জন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১০৭৮, মুসলিম
৮২, তিরমিযী ২৬১৮, ২৬২০; আবূ দাঊদ ৪৬৭৮, আহমাদ ১৪৫৬১, ১৪৭৬২; দারিমী ১২৩৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক আল-উকাইলী (রাহঃ)
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন সাহাবী নামায
ব্যাতিত অন্য কোন আমল ছেড়ে দেয়াকে কুফুরী কাজ বলে মনে করতেন না। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ২৬২২, সহীহুত তারগীব (১/২২৭-৫৬৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হানাফি
ইমামরা বলেন, আল্লাহ তাআলা তাওহিদে বিশ্বাসী পাপীকেও মুমিন বলে সম্বোধন করেছেন। আর
সালাত নেক আমলের অন্যতম। যে ব্যক্তি তা বর্জন করল সে পাপী-ফাসেক হলো। ফলে সালাত বর্জনকারীকে
জেলখানায় আটক রাখা হবে, যতক্ষণ না সালাত পড়ার স্বীকৃতি দান করে। (বাহরে রায়েক : ৫/৪৯; আল-বাদায়ে ওয়াস সানায়ে : ৭/৬৪; নাইলুল
আওতার : ১/৩৪৮০)৷
পারলৌকিক শাস্তিঃ সালাত ছেড়ে দেওয়া মারাত্মক গুনাহ।
হাদিসে সালাত বর্জনকারীর প্রতি কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।
রাসুল
সা. বলেন,
(ক)
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত বর্জন। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-১/১০৭৮, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ:
মুসলিম ৮২, তিরমিযী ২৬১৮, ২৬২০; আবূ দাঊদ ৪৬৭৮, আহমাদ ১৪৫৬১, ১৪৭৬২; দারিমী ১২৩৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
বুরাইদাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের ও
তাদের (কাফেরদের) মধ্যে যে অংগীকার রয়েছে তা হলো সালাত। অতএব যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ
করলো, সে কুফরী করলো। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-১/১০৭৯,
তিরমিযী ২৬২১, মিশকাত ৫৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মুমিন বান্দা ও শিরক-এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে
সালাত বর্জন করা। অতএব যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করলো, সে অবশ্যই শিরক করলো। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-১/১০৮০, সহীহ তারগীব ৫৬৫, ১৬৬৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) বেনামাজি কিয়ামতের দিন চরমভাবে লাঞ্ছিত
ও অপদস্থ হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
“স্মরণ
করো সেই চরম সংকটের দিনের কথা, যেদিন তাদেরকে আহ্বান করা হবে সিজদা করার জন্য, কিন্তু
তারা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। অথচ যখন তারা
নিরাপদ ছিল তখন তো তাদেরকে আহ্বান করা হয়েছিল”। (সুরা:
কালাম, আয়াত : ৪২, ৪৩)।
(ঙ) আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমার প্রিয় বন্ধু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে এই উপদেশ
দিয়েছেনঃ তুমি আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করো না, যদিও তোমাকে টুকরা টুকরা করে ছিন্নভিন্ন
করা হয় অথবা আগুনে ভস্মীভূত করা হয়। তুমি স্বেচ্ছায় ফরয নামায ত্যাগ করো না। যে ব্যক্তি
স্বেচ্ছায় তা ত্যাগ করে তার থেকে (আল্লাহর ) যিম্মদারি উঠে যায়। তুমি মদ্যপান করো না।
কেননাতা সর্বপ্রকার অনিষ্টের চাবিকাঠি। (সুনান ইবনু মাজাহ,
৪০৩৪, মিশকাত ৫৪০, আত-তালীকুর রাগীব ১/১৯৫, ইরওয়া ২০৮৬)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
সালাত বর্জনকারী জাহান্নামের আগুনে জ্বলবেঃ
(ক) কুআনে এসেছে, অপরাধীদের সম্পর্কে (আল্লাহ)
বলবেন, “তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে? তারা বলবে, আমরা নামাজ পড়তাম না, অভাবগ্রস্তকে
আহার্য দিতাম না, আমরা সমালোচকদের সঙ্গে সমালোচনা করতাম এবং প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার
করতাম”। (সুরা: মুদ্দাসসির, আয়াত : ৪১-৪৬)৷
(খ) তাদের পরে যারা তাদের স্থলাভিষিক্ত
হল, তারা নামাজ নষ্ট করল (একেবারে নামাজ পড়ে না কিংবা মন চাইলে) এবং নফসের লালসা-বাসনার
অনুসরণ করল। সুতরাং তারা অচিরেই এই কুকর্মের (নামাজ নষ্টের ও প্রবৃত্তিপরায়ন হওয়ার)
শাস্তি ভোগ করবে। অবশ্য যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকর্মশীল হয়েছে তারা ব্যতিত।’
(সুরা মারইয়াম : আয়াত ৫৯)।
(গ) আনাস ইবনু হাকীম আদ-দাববী (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরাইরাহ আমাকে বললেন, তুমি তোমার শহরে পৌঁছে তার বাসিন্দাদের
অবহিত করবে যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের
দিন মুসলিম বান্দার নিকট থেকে সর্বপ্রথম ফরয সালাতের হিসাব নেয়া হবে। যদি সে তা পূর্ণরূপে
আদায় করে থাকে (তবে তো ভালো), অন্যথায় বলা হবেঃ দেখো তো তার কোন নফল সালাত আছে কি না? যদি তার নফল সালাত থেকে থাকে, তবে তা দিয়ে তার ফরয সালাত পূর্ণ করা হবে। অতঃপর অন্যান্য সব ফরয আমলের ব্যাপারেও
অনুরূপ ব্যবস্থা করা হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১৪২৫, ১৪২৬,
তিরমিযী ৪১৩, নাসায়ী ৪৬৫-৬৭, আবূ দাঊদ ৮৬৪, আহমাদ ৭৮৪২, ৯২১০, ১৬৫০১; ইবনু মাজাহ ১৪২৬,
মিশকাত ১৩৩০-১৩৩১)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
উক্ত
হাদিসে নফল সালাত দিয়ে ফরজ সালাত এর সমন্বয় করতে বলা হয়েছে। কিন্তু যে সালাতই আদায়
করে না তার কি হবে।
আমাদের সমাজে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে মুসলমানগণ কয়েক শ্রেণিতে বিবক্তঃ
(ক) প্রথম শ্রেণির মুসলমানগণ রাসুল সা.
এর তরীকা মোতাবেক সালাত আদায় করে থাকেন। এই সালাত কবুলযোগ্য।
(খ) দ্বিতীয় শ্রেণির মুসলমানগণ পাঁচ ওয়াক্ত
সালাত আদায়সহ অণ্যান্য ইবাদত পালন করে কিন্তু বিদআতি পন্থায়। এ্ই সালাত কবুলযোগ্য নয়।
(গ) তৃতীয় শ্রেণির মুসলমানগণ শুধু শুক্রবারে
জুমার সালাত আদায় করে থাকে। এটা হচ্ছে দায়সারা লোক দেখানো সালাত।
(ঘ) চতুর্থ শ্রেণির মুসলমানগণ বিভিন্ন
পর্ব যেমন দুই ইদ, শবে বরাত ইত্যাদিতে অংশ নিয়ে থাকে। এটাও দায়সারা লোক দেখানো সালাত।
(ঙ) পঞ্চম শ্রেণির মুসলমাগণ জীবনেও সালাত
আদায় করে না। এদের মধ্যে অনেকে হজ্জ করে, যাকাতও দেয়।
এখানে
উল্লেখ্য যে, প্রথম শ্রেণির মুসলমানগণ ব্যতীত অন্য শ্রেণির মুসলমাগণ সালাত সংক্রান্ত
বিষয়ে নাজাত পাবে না।
বেনামাজি নারী-পুরুষের সাথে
নামাজি নারী-পুরুষের বা নামাজি নারী-পুরুষের সাথে বেনামাজি নারী-পুরুষের বিবাহ দিলে
সে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবেঃ
যারা
সালাত আদায় করে না তারা উপরোল্লিখিত দলিল অনুযায়ী কাফির ও মুশরিক বলে গণ্য।
মহান
আল্লাহ্ বলেন, “আর তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ
করে। অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরিক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদের রূপ-সৌন্দর্য্য
তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরিকের তুলনায়
অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা জাহান্নামের দিকে আহ্বান করে, আর
আল্লাহ নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে
নিজের নির্দেশ বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। (সুরা
বাকারাঃ ২২১)।
এখানে
আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে মুশরিক বলেছেন তারা অমুসলিমদের মধ্যে যারা মুশরিক তাদেরকে বুঝানো
হয়েছে। অনেকে এই যুক্তি দিয়ে মুসলমানকে মুশরিক হিসেবে গণ্য করে বিবাহের সাথে সামঞ্জস্য
করতে চান না। কিন্তু আল্লাহ ও রাসুল সা. মুসলমানদের বেশ কিছু কর্মকান্ডের জন্যে কাউকে
কাফির, কাউকে মুশরিক এবং কাউকে মুনাফিক বলেছেন। আবার রাসুল সা. বলেছেন, তাঁর উম্মতের
মধ্যে ৭৩ দল হবে, তার মধ্যে একটি দল মাত্র জান্নাতে যাবে আর বাকি ৭২ দল জাহান্নামে
যাবে। (আহমাদ ১৬৯৩৭, আবূ দাঊদ ৪৫৯৯)।
আল্লাহ
তায়ালাও বলেছেন, হে ইমানদারগণ তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সুরা আলে ইমরানঃ ১০২)।
অতএব
ইমান আনলেই সে মুসলমান নয় তাকে মুসলমান হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে। এখন মুসলমান হতে গেলে
তাকে ইসলামে পরিপূর্ণরুপে প্রবেশ করতে হবে। (সুরা বাকারা
২০৮)।
পূর্ণাঙ্গ
মুসলমান হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে তাকে রাসুল সা. এর দেখানো তরীকা মোতাবেক পাঁচ ওয়াক্ত
সালাত আদায় করতে হবে। যার সালাত নেই তার অন্যান্য আমল কিয়ামতে কোনো কাজে আসবে না।
যেখানে
কুরআন-হাদিসে বার বার সালাত আদায়ের আদেশ দেয়া হচ্ছে সেই আদেশ অমান্যকারী কি করে জান্নাতের
আশা করে।
কুরআন
ও হাদিসের বিভিন্ন দলিলের উপর ভিত্তি করে এটাই প্রমাণিত যে, একজন বেনামাজি অমসলিম কাফির
মুশরিকদের মতোই কাফির মুশরিক। এই সামঞ্জস্যতার দিক থেকে বেনামাজিকে একজন নামাজি বিয়ে
করতে পারে না। আর করলেও সেই বিয়ে বাতিল হবে। এখানে বিয়ে বাতিল হলে তারা যিনার করার
মধ্যে গণ্য হবে।
কোনো
বেনামাজিকে নামাজি ব্যক্তি বিয়ে না করা এটা বেনামাজির জন্যে লজ্জাকর ব্যাপার এবং এটা
তার দুনিয়ার শাস্তি।
যে তিন শ্রেণির মুছল্লী জাহান্নামে যাবেঃ
ছালাত
একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদত। এ ইবাদত কবুল হওয়ার উপরেই অন্যান্য ইবাদত নির্ভর করে।
অথচ মানুষ ছালাতের যথার্থ গুরুত্ব অনুধাবন না করে যেনতেনভাবে ছালাত আদায় করে। এ ধরনের
ছালাত আল্লাহর নিকটে কবুল হবে না; বরং এসব ছালাত আদায়কারীর জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি
রয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধে সে বিষয়েই আলোকপাত করা হয়েছে।
ছালাত
আদায়কারী তিন শ্রেণীর মানুষকে জাহান্নামে শাস্তি পেতে হবে।
(ক) যারা অলসতা বা অবহেলা বশতঃ
যারা অলসতা বা অবহেলা বশতঃ সঠিক
সময়ে ছালাত আদায় করে না, তাদের ছালাত কবুল হবে না। তাদের জন্য পরকালে শাস্তি রয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর দুর্ভোগ ঐসব মুছল্লীর জন্য, যারা তাদের ছালাত থেকে উদাসীন’
(মাঊন ১০৭/৪-৫)। অর্থাৎ ‘যারা ছালাত থেকে উদাসীন
ও খেল-তামাশায় ব্যস্ত’। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে আউয়াল ওয়াক্ত ছেড়ে যঈফ ওয়াক্তে ছালাত আদায়
করে। যারা জানা সত্ত্বেও ছহীহ হাদীছ মোতাবেক ছালাত আদায় করে না। রুকূ-সিজদা, উঠা-বসা
যথাযথভাবে করে না। ক্বিরাআত ও দো‘আ-দরূদ ঠিকমত পাঠ করে না। কোন কিছুর অর্থ বুঝে না
বা বুঝবার চেষ্টাও করে না। আযান শোনার পরেও যারা অলসতাবশে ছালাতে দেরী করে বা জামা‘আতে
হাযির হওয়া থেকে বিরত থাকে। ছালাতে দাঁড়াবার সময় বা ছালাতে দাঁড়িয়েও অমনোযোগী থাকে
ইত্যাদি। (মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, তাফসীরুল কুরআন
৩০তম পারা, পৃঃ ৫০১)।
সা‘দ
ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) বলেন, এর অর্থ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যারা অবহেলা বশে
সঠিক সময় থেকে দেরীতে ছালাত আদায় করে’। (কুরতুবী হা/৬৪৮৩;
বাযযার, ত্বাবারী, বায়হাক্বী। তবে বায়হাক্বী সা‘দ থেকে ‘মওকূফ’ সূত্রে বর্ণনা করার
পর সেটাকেই ‘সঠিক’ বলেছেন (২/২১৪-১৫)। হায়ছামী একে ‘হাসান’ বলেছেন (১/৩২৫)।
ইবনু
কাছীর বলেন, عَنْ صَلَوتِهِمْ
سَاهُوْنَ ‘তারা তাদের ছালাত থেকে উদাসীন’ অর্থ
হ’ল তারা নিয়মিতভাবে বা অধিকাংশ সময়ে আউয়াল ওয়াক্তের বদলে আখেরী ওয়াক্তে ছালাত আদায়
করে (ইবনু কাছীর)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ওটা মুনাফিকদের ছালাত, যারা সূর্যের
প্রতীক্ষায় বসে থাকে, তারপর সূর্য অস্ত যেতে শুরু করলে শয়তান তার শিং মেলিয়ে দেয়, তখন
তারা দাঁড়িয়ে মোরগের মত চারটি ঠোকর মারে। তাতে আল্লাহর স্মরণ খুব কমই হয়’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৫৯৩, মুসলিম ৬২২, নাসায়ী ৫১১, তিরমিযী
১৬০, আহমাদ ১১৯৯৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রকাশ
থাকে যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ ছালাত আদায়কারী মুসলিম জানেন যে, ছালাত ফরয। কিন্তু নির্ধারিত
সময়ে ছালাত আদায় করাও যে ফরয এটা অনেকেই জানে না। এ কারণেই বলা হয়েছে যে, ছালাত আদায়
করেও তিন শ্রেণীর মুছল্লী জাহান্নামে যাবে। মহান আল্লাহ ছালাত ফরয করার পর বলেছেন,
‘নিশ্চয়ই ছালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত হয়েছে’ (নিসা ৪/১০৩)।
সময়মত
ছালাত আদায় করা অন্যতম উত্তম আমল। নিম্নের হাদীছটি যার প্রমাণ, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ
(রাঃ) বলেন,
‘আমি
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর নিকট কোন কাজটি সর্বাধিক প্রিয়? তিনি
বললেন, যথাসময়ে ছালাত সম্পাদন করা। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কোনটি? রাসূল
(ছাঃ) বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, অতঃপর কোনটি?
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা’। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫২৭, ২৭৮২, ৫৯৭০, ৭৫৩৪; মুসলিম ১/৩৬, হাঃ ৮৫, আহমাদ ৪২২৩,
আধুনিক প্রকাশনী ৪৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য
হাদীছে এসেছে উম্মে ফারওয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস
করা হ’ল, আমল সমূহের মধ্যে কোন আমল সর্বাধিক উত্তম? তিনি বললেন, আউয়াল (প্রথম) ওয়াক্তে
ছালাত আদায় করা’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৬০৭, আবূ
দাঊদ ৪২৬, তিরমিযী ১৭০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৯৯, আহমাদ ২৭১০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উপরোক্ত
হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহর নিকট প্রিয় ও শ্রেষ্ঠতর আমল হচ্ছে আউয়াল
ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের অধিকাংশ মুসলিম ছালাত আদায়
করে শেষ ওয়াক্তে। উপরের দু’টি ছহীহ হাদীছ মাযহাবী আলেমগণ মুছল্লীদের সামনে পেশ করে
না। তারা শুধু বড় জামা‘আতে বেশী ফযীলত এই ধোঁকা দিয়ে মানুষকে মুনাফিকদের ছালাত শিক্ষা
দেয়। আর নেতারা শেষ সময় ছালাত আদায় করলে করণীয় সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবু যার (রাঃ)
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বললেন,
‘নেতারা
যখন ছালাতকে তার ওয়াক্ত থেকে দেরী করে পড়বে বা ছালাতকে তার ওয়াক্ত থেকে মেরে ফেলবে
তখন তুমি কি করবে? আমি বললাম, আপনি আমাকে কি করতে আদেশ করছেন? তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বললেন, ছালাতের ওয়াক্তেই ছালাত আদায় করে নিবে। অতঃপর তাদের সাথে যদি পুনরায় আদায় করতে
পার তাহ’লে আদায় করবে। আর তা তোমার জন্য নফল হবে’। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৬০০, মুসলিম ৬৪৮, আবূ দাঊদ ৪৩১, ইবনু মাজাহ্ ১২৫৬, তিরমিযী ১৭৬,
দারেমী ১২৬৪, আহমাদ ২১৩২৪, সহীহ আল জামি‘ ৪৫৮৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রকাশ
থাকে যে, বড় জামা‘আতে ছালাত আদায় করার চেয়ে আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা উত্তম। কারণ
ছালাতের শেষ ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা মুনাফিকী। অতএব দেরিতে ছালাত আদায় করলে মুনাফিক
হয়ে জাহান্নামে জ্বলতে হবে। আউয়াল ওয়াক্তে একাই ছালাত আদায়কারী ব্যক্তির প্রতি মহান
আল্লাহর পক্ষ হ’তে বিশেষ ক্ষমা রয়েছে। উক্ববা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক আনন্দিত হন ঐ ছাগলের রাখালের প্রতি, যে একাই পর্বত শিখরে
দাঁড়িয়ে ছালাতের আযান দেয় এবং ছালাত আদায় করে। আল্লাহ তা‘আলা তখন ফেরেশতাগণকে লক্ষ্য
করে বলেন, তোমরা আমার বান্দার প্রতি লক্ষ্য কর, সে আমার ভয়ে আযান দিচ্ছে এবং ছালাত
আদায় করছে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৬৬৫,আবূ দাঊদ ১২০৩, নাসায়ী ৬৬৬,
ইরওয়া ২১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উল্লেখ্য
যে, আমাদের দেশের একদল লোক বলে যে, ‘আসুন ভাই আসুন খুশি-খুশি জামায়াতের সহিত নামায
পড়ি। বহুত ফায়দা আছে’। অথচ দেরী করে ছালাত আদায় করে আর উপরের হাদীছ প্রমাণ করে যে,
আল্লাহ তা‘আলা নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত আদায় ফরয করেছেন। অতএব একা হ’লেও ঐ সময়ই ছালাত
আদায় করতে হবে, তবুও দেরিতে ছালাত আদায় করা যাবে না। এ বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) চৌদ্দশত
বছর পূর্বে জানিয়ে দিয়ে গেছেন।
(খ) রাসুল সা. এর তরীকা মোতাবেক
সালাত আদায় না করাঃ
ছালাত
আদায় করেও জাহান্নামে যাবে ঐসব মুছল্লী যারা রাসূল (ছাঃ)-এর পদ্ধতিতে ছালাত আদায় না
করে নিজেদের মনগড়া পদ্ধতিতে ছালাত আদায় করে। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা আমাকে
যেভাবে ছালাত আদায় করতে দেখ, ঠিক সেভাবেই ছালাত আদায় কর’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৬৮৩, বুখারী ৬৩১, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ৩৯৭, সহীহ
ইবনু হিব্বান ১৬৫৮, সহীহ আল জামি‘ ৮৯৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) যেভাবে ছালাত আদায় করেছেন, সেভাবে ছালাত আদায় করতে গেলে অবশ্যই ছহীহ হাদীছের
আলোকেই ছালাত আদায় করতে হবে। কোন ইমাম, তরীকা বা মাযহাবের পদ্ধতিতে ছালাত আদায় করলে
সেটা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পদ্ধতির ছালাত হবে না। যেমন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
সাক্ষাতে তিন, তিন বার ছালাত আদায় করেও তা সঠিক বলে গণ্য হয়নি। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
‘রাসূল
(ছাঃ) মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে ছালাত আদায় শেষে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-কে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, তুমি যাও, পুনরায় ছালাত আদায় কর।
কেননা তুমি ছালাত আদায় করনি। এভাবে লোকটি তিন বার ছালাত আদায় করল। রাসূল (ছাঃ) তাকে
তিন বারই ফিরিয়ে দিলেন। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে
প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, এর চাইতে সুন্দরভাবে আমি ছালাত আদায় করতে জানি না।
অতএব আমাকে ছালাত শিখিয়ে দিন! অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, যখন তুমি ছালাতে দাঁড়াবে
তখন তাকবীর দিবে। অতঃপর কুরআন থেকে যা পাঠ করা তোমার কাছে সহজ মনে হবে, তা পাঠ করবে।
তারপর ধীরস্থিরভাবে রুকূ করবে। অতঃপর সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর ধীরস্থিরভাবে সাথে সিজদা
করবে। অতঃপর মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসবে। আর প্রত্যেক ছালাত এভাবে আদায় করবে’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯০, বুখারী ৬২৫১, ৬৬৬৭, মুসলিম
৩৯৭, আবূ দাঊদ ৮৫৬, নাসায়ী ৮৮৪, তিরমিযী ৩০৩, আহমাদ ৯৬৩৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৯০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বিজ্ঞ
পাঠক! উপরের হাদীছ দ্বারা ছালাতে দ্রুততার সাথে কিয়াম-কুউদ ও রুকূ-সিজদা করার পরিণতি
জানা গেল। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় চোর ঐ ব্যক্তি
যে তার ছালাত চুরি করে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সে কিভাবে
ছালাত চুরি করে? তিনি বললেন, সে ছালাতে রুকূ ও সিজদা পূর্ণ করে না’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮৫, আহমাদ ২২১৩৬, সহীহ আত্ তারগীব
৫২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূল
(ছাঃ)-এর ভাষায় বড় চোর হচ্ছে যারা ছালাতের মধ্যে চুরি করে। পার্থিব জীবনে মানুষ মানুষের
ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা চুরি করে, এটাকে সামান্য চুরি বলা যেতে পারে। কিন্তু যে ব্যক্তি
নিজের মহামূল্যবান সম্পদ, জান্নাতে যাওয়ার পুঁজি, কত ইবাদতের মাঝে শ্রেষ্ঠ ইবাদত চুরি
করে সেই প্রকৃতপক্ষে বড় চোর।
বস্ত্ততঃ
রুকূ-সিজদা যথাযথভাবে না করলে ছালাতই হয় না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,‘ছালাতের ছওয়াব তিনভাগে
বিভক্ত। এক-তৃতীয়াংশ পবিত্রতা, এক-তৃতীয়াংশ রুকূ ও এক-তৃতীয়াংশ সিজদায়। যে এইগুলি পূর্ণ
আদায় করল তার ছালাত কবুল হ’ল এবং তার সমস্ত আমলও কবুল হ’ল। আর যার ছালাত কবুল করা হবে
না, তার কোন আমলই কবুল হবে না’।(সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৪৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫৩৯)।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন,‘আল্লাহ তা‘আলা ঐ বান্দার ছালাতের প্রতি দৃষ্টি দেন না, যে ছালাতে রুকূ
ও সিজদায় পিঠ সোজা করে না’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৯০৪, আহমাদ ১৫৮৪৮, সহীহ আত্ তারগীব ৫২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য
হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই কোন মছুল্লী ৬০ বছর যাবৎ ছালাত আদায়
করছে, কিন্তু তার ছালাত কবুল হচ্ছে না। হয়ত সে পূর্ণভাবে রুকূ করে কিন্তু সিজদা পূর্ণভাবে
করে না। অথবা পূর্ণভাবে সিজদা করে কিন্তু পূর্ণভাবে রুকূ করে না’। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৯৬৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫২৯;
ছহীহাহ হা/২৫৩৫, সনদ হাসান)।
অন্য বর্ণনায় আছে আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন,‘মুছল্লীর ছালাত ততক্ষণ পর্যন্ত যথেষ্ট হবে না যতক্ষণ সে রুকূ ও সিজদায়
তার পীঠ সোজা না করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৮,
আবূ দাঊদ ৮৫৫, তিরমিযী ২৬৫, নাসায়ী ১০২৭, ইবনু মাজাহ ৮৭০, দারিমী ১৩৬৬, সহীহ আত্ তারগীব
৫২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) যারা লোক দেখানো ছালাত আদায় করেঃ
যারা
লোক দেখানো ছালাত আদায় করে তারা মুনাফিক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা লোক দেখানোর জন্য
তা করে’ (মাঊন ১০৭/৬)। এটা হচ্ছে মুনাফিকদের ছালাত।
যেমন মহান আল্লাহ অপর আয়াতে বলেছেন,
‘নিশ্চয়ই
মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়, আর তিনিও তাদের ধোঁকায় ফেলেন। যখন ওরা ছালাতে দাঁড়ায়,
তখন অলসভাবে দাঁড়ায় লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে’ (নিসা ৪/১৪২)।
ইমাম
সুয়ূতী বলেন, মুনাফিকদের ধোঁকা হ’ল লোক দেখানো ছালাত আদায় করা। এভাবে তারা যেন আল্লাহকে
ধোঁকা দেয় যে, তারা ছালাত আদায় করে থাকে। অথচ আল্লাহ তাদের অন্তরের খবর রাখেন। আর আল্লাহ
তাদের ধোঁকায় ফেলেন অর্থ ওদের লোক দেখানো ছালাত জানা সত্ত্বেও তিনি তাদের দুনিয়াতে
জান-মালের নিরাপত্তা দান করেন। অথচ আখেরাতে তাদের জন্য জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে
স্থান নির্ধারণ করেন (নিসা ৪/১৪৫)। (তাফসীরুল কুরআন ৩০তম
পারা, পৃঃ ৫০৩)।
উক্ত
আয়াতের প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, এ নির্বোধ মুনাফিকরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে প্রতারণা করছে।
অথচ তিনি তাদের অন্তরের সমস্ত কথা সম্যক অবগত রয়েছেন। তাদের স্বল্প বুদ্ধির কারণে এ
মুনাফিকরা মনে করে নিয়েছে যে, তাদের কপটতা যেমন দুনিয়াতে চলছে তদ্রূপ কিয়ামতের দিন
আল্লাহ তা‘আলার সমীপেও চলবে। আসলে কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থা এমন হবে যে, তারা মুসলমানদের
আলোর উপর নির্ভর করে থাকতে চাইবে। কিন্তু তাওহীদবাদী খাঁটি মুসলিমগণ সামনের দিকে এগিয়ে
যাবে। তখন মুনাফিকরা মুসলমানদেরকে ডেকে বলবে, তোমরা থাম, আমরা তোমাদের আলোর সাহায্য
চাই। মুসলমানরা তখন উত্তর দিবে, তোমরা পিছনে ফিরে যাও এবং আলো অনুসন্ধান কর। তখন তারা
পিছনে ফিরবে। এমন সময় তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে। আফসোস! মুসলমানদের মাঝে থাকবে আল্লাহর
পক্ষ হ’তে করুণা ও দয়া। আর মুনাফিকদের জন্য থাকবে দুঃখ-বেদনা।
ছহীহ
বুখারী ও ছহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মুনাফিকদের উপর সবচেয়ে
ভারী ছালাত হচ্ছে এশা ও ফজরের ছালাত। যদি তারা এই ছালাতের ফযীলতের কথা জানত, তবে হাঁটুতে
ভর দিয়ে হ’লেও এ ছালাতে হাযির হ’ত। কাজেই আমি তখন ইচ্ছা করি যে, তাকবীর দিয়ে কাউকে
ইমামতির স্থানে দাঁড় করতঃ ছালাত আরম্ভ করিয়ে দেই, অতঃপর আমি লোকদেরকে বলি যে, তারা
যেন জ্বালানী কাঠ নিয়ে এসে ঐ লোকদের বাড়ীর চতুর্দিকে রেখে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং
তাদের ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দেয়। যারা জামা‘আতে হাযির হয় না’। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪; মুসলিম ৫/৪২, হাঃ ৬৫১, আহমাদ ৭৩৩২,
আধুনিক প্রকাশনী ৬০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মূলতঃ লোক দেখানো কোন আমল আল্লাহ কবুল করেন
না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সালামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জুনদুবকে
বলতে শুনেছি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন। তিনি ছাড়া আমি অন্য কাউকে ‘নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন’ এমন বলতে শুনিনি। আমি তাঁর নিকট গেলাম এবং তাঁকে
বলতে শুনলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লোক শোনানো ‘ইবাদাত
করে আল্লাহ্ এর বিনিময়ে তার ‘লোক-শোনানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন’। আর যে ব্যক্তি
লোক-দেখানো ‘ইবাদাত করবে আল্লাহর এর বিনিময়ে তার ‘লোক দেখানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে
দেবেন’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৪৯৯, ৭১৫২;
মুসলিম ৫৩/৫, হাঃ ২৯৮৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অর্থাৎ
আল্লাহ তাকে লজ্জিত করেন এবং স্পষ্ট করে দেন যে, সে আদৌ মোখলেছ নয়। বস্ত্ততঃ পূর্ণ
আল্লাহভীতি এবং খুশূ-খুযূ ও একাগ্রতা ব্যতীত ছালাত কবুল হয় না। আর লোক দেখানো আমলকারীকে
উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ২০৫, মুসলিম ১৯০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পরিশেষে
বলবো, সঠিক সময়ে খালেছ অন্তরে রাসূল (ছাঃ)-এর তরীকায় তথা ছহীহ হাদীছ মোতাবেক ছালাত
আদায় করতে হবে। অন্যথা ছালাত আদায় করেও জাহান্নামী হতে হবে।
(দ্বিতীয় খন্ড সমাপ্ত)
...........................................................................................
প্রথম খন্ড “সালাত আদায়ের সহিহ পদ্ধতি ও সালাতের ভিতর পঠিতব্য অতিরিক্ত
দোয়াসমূহ” দেখতে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
(PMMRC)
...........................................................................................
তৃতীয় খন্ড (প্রথম অংশ) “জামাআতে সালাত আদায় এর গুরুত্ব, ফজিলত ও সহিহ নিয়মাবলী” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC-1)
...........................................................................................
তৃতীয় খন্ড (দ্বিতীয় অংশ) “ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং যোগ্য ইমামের গুণাবলী” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC-2)
...........................................................................................
তৃতীয় খন্ড (তৃতীয় অংশ) “কাযা, উমরি কাযা ও কসর সালাতের সহিহ বিধিবিধান” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC-3)
...........................................................................................
তৃতীয় খন্ড (চতুর্থ অংশ) “জামায়াত সংক্রান্ত সহিহ মাসলা মাসায়েল” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC-4)
...........................................................................................
চতুর্থ খন্ড “মসজিদ ও জুমার সালাত” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC)
...........................................................................................
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে
PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC)
Please Share On
No comments:
Post a Comment