Search This Blog

Friday, March 5, 2021

ফরজ ছালাতে ছালাম ফিরানোর পর পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াসমূহঃ (নতুন সংস্করণ-মার্চ ২০২১)


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

ফরজ ছালাতে ছালাম ফিরানোর পর পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াসমূহঃ

(নতুন সংস্করণ-মার্চ ২০২১)

ভূমিকাঃ যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। আমরা তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁরই নিকট তওবা করি। আমাদের নাফসের সকল প্রকার বিপর্যয় ও কুকীর্তি হতে রক্ষা করার জন্য তাঁরই সাহায্য প্রার্থনা করি। অতঃপর আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ এক এবং তাঁর কোনো শরিক নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্‌র বান্দাহ্ ও রাসুল। আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে কিয়ামত পর্যন্ত সালাম বর্ষিত হউক তাঁর রাসূল, আহলে বাইত এবং সমস্ত সাহাবারদের উপর আর ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের উপর যারা অনুসরণ করেছেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এবং আঁকড়ে ধরেছেন তাঁর সুন্নাতকে।

আমাদের সমাজে দেখা যায়, ফরজ সলাত শেষে সালাম ফিরানোর পরই ইমাম-মুক্তাদীগণ সম্মিলিতভাবে দুই হাত তুলে  মুনাজাত করে থাকেন। অথবা শুরু হয় বিদআতী পদ্ধতিতে সম্মিলিত জিকির। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযা সাল্লাম ফরজ সলাত শেষে সালাম ফিরানোর পর যে সকল দুয়া, আমল বা জিকির নিয়মিত পাঠ করতেন সেগুলোর কোন গুরুত্ব নেই। ইমাম সাহেব নিজেও এসব দুয়া বা জিকিরগুলো পাঠ করেন না আবার মুসল্লীদেরকেও শেখান না বা পড়তে উৎসাহিত করেন না। অনেককে দেখা যায়, সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত দিয়ে দোয়া পড়ে। অনেকে দোয়া পড়ে আঙ্গুলে ফু দিয়ে চোখ ঘষে। অথচ নবি (সাঃ) এসবের কিছুই করেননি।

 তিনি (নবি সা:) সালাত পড়ার আগে, সালাত পড়ার সময় ও সালাতের সালাম ফিরানোর পর কি কি করতেন বা কোন্ কো্ন‌ দোয়া পড়তেন তা তিনি নিজে যেমন আমল করতেন তেমনি সাহাবাদেরকেও শিখিয়ে দিতেন। সাহাবাগণ রাসুল সা. এর শেখানো সেই তরিকা মোতাবেক সালাত আদায় করতেন বা আমল করতেন । অতএব আমাদেরকেও সেই তরিকা মোতাবেক চলতে হবে। নতুন কোনো পথ মত বা সূত্র আমরা তৈরী করবো না বা অন্যের তৈরী নতুন পদ্ধতিও মানবো না। নবি (সা:) যেসব দোয়া পড়তেন তা খুবই বরকতময়। অযথা বিদআতী পন্থায় যিকির বা মোনাজাতে সময় নষ্ট না করে সেই সময়ে নিম্নোক্ত দোয়াগুলো পড়ে অশেষ সওয়াব হাসিল করবো। আল্লাহ আমাদেরকে রাসুল সা. এর তরিকা মোতাবেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

মনে রাখবেন, ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আসমূহ পাঠ করা সুন্নাত। রাসুল সা.  ও সাহাবাগণ এ দুয়াগুলো পাঠ করতেন। যারা ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পরই উঠে চলে যান বা দুই হাত তুলে মুনাজাত ধরেন তারা রাসুল সা. ও সাহাবাগণের সুন্নাত বিরোধী।

সহিহ হাদিস থেকে ফরজ সালাত শেষে ইমাম-মুক্তাদী সবার জন্য পঠিতব্য দোয়া ও জিকিরসমূহ উপস্থাপন করা হল:

সালাত শেষে ডানে বামে সালাম ফিরানোর পর একবার সরবে পড়ুন:-

(১নং) আল্ল-হু আকবার (একবার)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত শেষ হওয়াটা বুঝতাম ‘আল্ল-হু আকবার’ বলার মাধ্যমে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৫৯, সহীহ বুখারী ৮৪২, মুসলিম ৫৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২নং) এরপর তিনবার ‘আসতাগ্ফিরুল্লা-হ’ ও একবার আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু, তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালা-লে ওয়াল ইকরা-ম’ বলবেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার ‘‘আস্তাগফিরুল্ল-হ’’ বলতেন, তারপর এ দু‘আ পড়তেনঃ ‘আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬১, ৯৬০, সহীহ মুসলিম ৫৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আমাদের দেশের ৯৫% আলেম বা ইমাম-মুয়াজ্জিন ফরজ ছালাত শেষে ১ নং ও ২ নং  এর  ‘আসতাগ্ফিরুল্লা-হ’ পাঠ করেই দুই হাত তুলে মোনাজাত ধরেন। তারপর ২ নং এর ‘‘আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’ দোয়াটি দুই হাত তুলে মোনাজাতে বলেন। অথচ রাসুল সা. এভাবে কখনো ফরজ সালাত শেষে দুই হাত তুলে সামষ্টিকভাবে মোনাজাত করেননি বা এভাবে দোয়াও পাঠ করেনি। রাসুল সা. ফরজ সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর যেসব দোয়া পাঠ বা যিকির বা আমল করতেন তা এখানে সহিহ হাদিস ভিত্তিক আলোচনা করা হলোঃ

ছালাম ফিরানোর পরই উঠে চলে যাওয়া নিষেধঃ

অনেক মুছল্লি আছেন যারা ছালাম ফিরানোর সাথে সাথেই উঠে চলে যায়। অথচ এভাবে চলে যাওয়া হাদিসে সম্পূর্ণ নিষেধ আছে।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

“একদা সালাত শেষে জনৈক এক ব্যক্তি তাড়াহুড়ো করে যেতে ধরলে হযরত উমর রাঃ তার ঘাড় ধরে বসালেন। এই দৃশ্য রাসুল সাঃ দেখে বললেন, উমর তুমি ঠিকই করেছো।” (আহামদ হাদিস নং ২৩১৭০, সিলসিলা সহিহাহ হাদিস নং ২৫৪৯)। হাদিসের মান-সহিহ হাদিস।   

ফরজ ছালাত শেষে ছালাম ফিরানোর পরই চলে না গিয়ে কিংবা সম্মিলিত মোনাজাতে অংশ না নিয়ে ছালাতের জায়গায় অযু অবস্থায় বসে বসে বিভিন্ন দোয়া পাঠ বা যিকির করার ফজিলতঃ

(১) মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের জন্য বসে সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতরত থাকে। আর মালায়িকাহও ততক্ষণ পর্যন্ত তার জন্য এ বলে দু'আ করতে থাকে যে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তাকে রহম করো। (আর মালায়িকাহ) ততক্ষণ পর্যন্ত এরূপ দুআ করতে থাকে যতক্ষণ সে সেখান থেকে উঠে চলে না যায় কিংবা যতক্ষণ ওযু নষ্ট না করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৯৫, ১৩৯৪, ১৩৯৬, ১৩৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ১৭৬,  আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩২,হাদিস সম্ভার-৭৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

 (২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) প্রমুখাৎ থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি নামাযের অবস্থাতেই থাকে যতক্ষণ নামায তাকে (অন্যান্য কর্ম হতে) আটকে রাখে। তাকে নামায ব্যতীত অন্য কিছু তার পরিবারের নিকট ফিরে যেতে বাধা দেয় না।” (বুখারী ৬৫৯, মুসলিম ১৫৪২)।

বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় এরূপ এসেছে, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি নামাযেই থাকে যতক্ষণ নামায তাকে আটকে রাখে। (আগামী নামায পড়ার জন্য অপেক্ষা করে মসজিদেই বসে থাকে।) আর সেই সময় ফিরিশতাবর্গ বলতে থাকেন, ‘হে আল্লাহ! ওকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! ওর প্রতি সদয় হও।’ (এই দু‘আ ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে) যতক্ষণ পর্যন্ত না সে নামাযের স্থান ত্যাগ করেছে অথবা তার ওযু নষ্ট হয়েছে।” (বুখারী ৩২২৯, হাদিস সম্ভার-৭৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।                  

(৩) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “নামাযের পর আর এক নামাযের জন্য অপেক্ষমাণ ব্যক্তি সেই অশ্বারোহীর সমতুল্য, যে তার অশ্বসহ আল্লাহর পথে শত্রুর বিরুদ্ধে বিক্রমের সাথে সদা প্রস্তুত; যে থাকে বৃহৎ প্রতিরক্ষার কাজে।” (আহমাদ ৮৬২৫, ত্বাবারানীর কাবীর ১১৭৫, আওসাত্ব ৮১৪৪, সহীহ তারগীব ৪৫০নং, হাদিস সম্ভার-৭৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

 (৪) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যারা ফাজ্‌রের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত থাকে তাদের সঙ্গে আমার বসে থাকা, ইসমা‘ঈল (আঃ)-এর সন্তান থেকে চারজনকে দাসত্বমুক্ত করার চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয়। আর যারা ‘আসরের সালাতের শেষে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত থাকে তাদের সঙ্গে আমার বসে থাকা, চারজনকে আযাদ করার চেয়ে আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭০, আবূ দাঊদ ৩৬৬৭, ৩৬৬৯, সহীহ আত্ তারগীব ৪৬৫, হাদিস সম্ভার-৭৩১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৫) আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ফাজ্‌রের (ফজরের) সালাত  জামা‘আতে আদায় করল, অতঃপর বসে বসে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকর করতে থাকল, তারপর দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করল, সে একটি পূর্ণ হজ্জ  ও একটি সম্পূর্ণ ‘উমরার সমান সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি তিনবার বলেছেন, সম্পূর্ণ হাজ্জ ও সম্পূর্ণ ‘উমরার সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭১, তিরমিযী ৫৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ৪৬৪, হাদিস সম্ভার-৭৩০)। । হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৬) মু'মিন জননী জুয়াইরিয়াহ বিনতে হারেস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল ভোরে ফজরের নামায সমাপ্ত করে তাঁর নিকট থেকে বাইরে গেলেন। আর তিনি (জুয়াইরিয়াহ) স্বীয় জায়নামাযে বসেই রইলেন। তারপর চাশ্তের সময় তিনি যখন ফিরে এলেন, তখনও তিনি সেখানেই বসেছিলেন। এ দেখে তিনি তাঁকে বললেন, “আমি যে অবস্থায় তোমাকে ছেড়ে বাইরে গেলাম, সে অবস্থাতেই তুমি রয়েছ?” তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমার নিকট থেকে যাবার পর আমি চারটি বাক্য তিনবার পড়েছি। যদি সেগুলিকে তোমার সকাল থেকে (এ যাবৎ) পঠিত দু‘আর মুকাবিলায় ওজন করা যায়, তাহলে তা ওজনে সমান হয়ে যাবে। আর তা হচ্ছে এই যে,

‘সুবহা-নাল্লা-হি অবিহামদিহী আদাদা খালক্বিহী, অরিযা নাফসিহী, অযিনাতা আরশিহী, অমিদা-দা কালিমা-তিহ্। অর্থাৎ, আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি; তাঁর সৃষ্টির সমান সংখ্যক, তাঁর নিজ মর্জি অনুযায়ী, তাঁর আরশের ওজন বরাবর ও তাঁর বাণীসমূহের সমান সংখ্যক প্রশংসা।” (মুসলিম ২৭২৬, তিরমিযী ৩৫৫৫, নাসায়ী ১৩৫২, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮০৮, আহমাদ ২৬২১৮, ২৬৮৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৭) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ জাল্লা শানুহু বলেন, আমি বান্দার ধারণা অনুযায়ী নিকটে আছি। যখন সে আমার যিকর (স্মরণ) করে সে সময় আমি তার সাথে থাকি। বান্দা আমাকে একাকী স্মরণ করলে আমিও তাকে একাকী স্মরণ করি। আর যদি সে আমাকে কোন সভায় আমার কথা স্মরণ করে তাহলে আমি তাকে তার চেয়ে উত্তম (ফিরিশতাদের) সভায় স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে আসি। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌড়িয়ে আসি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৬৯৮, ৬৭০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫৩৬, ৭৫৩৬, ৭৫৩৭, তিরমিযী ২৩৮৮, ৩৬০৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২২, আহমাদ ৭৩৭৪, ৮৪৩৬, ৮৮৩৩, ৯০০১, ৯০৮৭, ৯৩৩৪, ৯৪৫৭, ১০১২০, ১০২৪১, ১০৩০৬, ১০৩২৬, ১০৪০৩, ১০৫২৬, ১০৫৮৫, ২৭২৭৯, ২৭২৮৩, রিয়াদুস সালেহীন ১৪৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৬১, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৮) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর কিছু ফিরিশতা আছেন, যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে-ফিরে আহলে যিকর খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন সম্প্রদায়কে আল্লাহর যিকররত অবস্থায় পেয়ে যান, তখন তাঁরা একে অপরকে আহ্বান ক‘রে বলতে থাকেন, ‘এস তোমাদের প্রয়োজনের দিকে।’ সুতরাং তাঁরা (সেখানে উপস্থিত হয়ে) তাদেরকে নিজেদের ডানা দ্বারা নিচের আসমান পর্যন্ত বেষ্টিত করে ফেলেন। অতঃপর তাঁদেরকে তাঁদের প্রতিপালক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার বান্দারা কি বলছে?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, আপনার মহত্ত্ব বর্ণনা করছে, আপনার প্রশংসা ও গৌরব বয়ান করছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি আমাকে দেখেছে?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! তারা আপনাকে দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা আমাকে দেখত?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘যদি তারা আপনাকে দেখত, তাহলে আরও বেশী বেশী ইবাদত, গৌরব বর্ণনা ও তসবীহ করত।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি চায় তারা?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা আপনার কাছে বেহেশত চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জান্নাত দেখেছে?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে তার জন্য আরও বেশী আগ্রহান্বিত হত। আরও বেশী বেশী তা প্রার্থনা করত। তাদের চাহিদা আরও বড় হত।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি থেকে পানাহ চায়?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা দোযখ থেকে পানাহ চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি দোযখ দেখেছে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে বেশী বেশী করে তা হতে পলায়ন করত। বেশী বেশী ভয় করত।’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে মাফ ক‘রে দিলাম।’ ফিরিশতাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘কিন্তু ওদের মধ্যে অমুক ওদের দলভুক্ত নয়। সে আসলে নিজের কোন প্রয়োজনে সেখানে এসেছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘(আমি তাকেও মাফ করে দিলাম! কারণ,) তারা হল এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত (হতভাগা) থাকে না।” (রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং-১৪৫৫, সহীহুল বুখারী ৬৪০৮, মুসলিম ২৬৮৯, তিরমিযী ৩৬০০, আহমাদ ৭৩৭৬, ৮৪৮৯, ৮৭৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) ও আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যখনই কোন সম্প্রদায় আল্লাহ আয্যা অজাল্লার যিকরেরত হয়, তখনই তাদেরকে ফিরিশতাবর্গ ঢেকে নেন, তাদেরকে রহমত আচ্ছন্ন করে নেয়, তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাবর্গের কাছে তাদের কথা আলোচনা করেন।” (রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং-১৪৫৬, মুসলিম ২৬৯৯, ২৭০০, তিরমিযী ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫, আবূ দাউদ ৪৯৪৬, ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১০) আনাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কিছু মালাক (ফেরেশতা) আছেন যারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ান। তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার কাছে পৌঁছান। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২৪, সহীহ নাসায়ী ১২৮২, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৮৫৩, হাকিম ২/৪২১, দারিমী ২৮১৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ফরয  সালাতে সালাম ফিরানোর পর পঠিতব্য অতিরিক্ত দুয়া, জিকির বা আমলসমূহঃ

ফরয সালাতের সালাম শেষে রাসূলুল্লাহ (স.) অনেক দু'আ ও যিকর করেছেন। ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আসমূহ ফরয ছালাতের পর পাঠ করাই সুন্নাত। কারণ এ ব্যাপারে যে সকল হাদীছ এসেছে তাতে ফরয ছালাতের পরের কথা বলা হয়েছে (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৫৯-৬১; মুসলিম হা/৫৯১-৫৯৬; আলবানী, ছহীহাহ হা/১০২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)-হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। তবে দো‘আ হিসাবে এগুলি পরে পাঠ করলেও তার ছওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন তোমরা ছালাত শেষ করবে, তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া সর্বাবস্থায় আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ কর’ (নিসা ৪/১০৩)।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ (সময়ের) দু‘আ (আল্লাহর কাছে) বেশী শ্রুতি হয়। তিনি বললেন, শেষ রাতের মধ্যের (দু‘আ) এবং ফরয সালাতের শেষের দু‘আ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৮, তিরমিযী ৩৪৯৯, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৮। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আসমূহ সুন্নাত ছালাতের পর বা যেকোন সময় পাঠ করার বিধানঃ

দো‘আসমূহ সুন্নাত ছালাতের পর বা যেকোন সময় পাঠ করা যাবে। হাদীছে সকল ছালাতের জন্য আমভাবে প্রথমে আল্লাহু আকবর একবার সরবে, অতঃপর তিনবার ‘আসতাগফিরুল্লা-হ’ এবং একবার ‘আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু তাবা-রাকতা ইয়া-যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম’ পাঠের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৫৯-৬১; বুখারী ৮৪২; মুসলিম ৫৮৩, ৫৯১, ৫৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুতরাং এটি সকল ছালাতের জন্য প্রযোজ্য। আর ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর, আয়াতুল কুরসী প্রভৃতি দো‘আ ফরয ছালাতের পরে পাঠের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। অতএব সেগুলি সেখানে পাঠ করাই উত্তম হবে (আলবানী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০২-এর আলোচনা)। তবে সাধারণভাবে এগুলি যেকোন ছালাতের পর পড়া যায় (ফাৎহুল বারী ১১/১৩৪; তুহফাতুল আহওয়াযী ২/১৬৯)।

১ ও ২ নং দোয়া পাঠ করার পর পরের দোয়াগুলো পাঠ করুনঃ

 (৩নং) (ক) প্রতি সালাতের পর ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, আল্ল-হু আকবার’আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার করে পড়াঃ

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হয়ে আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ধন-সম্পদশালী লোকজন সম্মানে ও স্থায়ী নি‘আমাতের ব্যাপারে আমাদের থেকে অনেক অগ্রগামী। তিনি বললেন, এটা কিভাবে? তারা বললেন, আমরা যেমন সালাত  আদায় করি তারাও আমাদের মতই সালাত আদায় করে, আমাদের মতো সওম পালন করে। তবে তারা দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে। আমরা তা করতে পারি না। তারা গোলাম মুক্ত করে, আমরা গোলাম মুক্ত করতে পারি না। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদেরকে কি আমি এমন কিছু শিখাব না যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রগামীদের মর্যাদায় পৌঁছতে পারবে এবং তোমাদের পশ্চাদ্গামীদের চেয়ে আগে যেতে পারবে, কেউ তোমাদের চেয়ে বেশী উত্তম হতে পারবে না, তারা ছাড়া যারা তোমাদের মতো ‘আমল করবে? গরীব লোকেরা বললেন, বলুন হে আল্লাহর রসূল!

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা প্রতি সালাতের পর ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, আল্ল-হু আকবার’ আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার করে পড়বে। রাবী আবূ সালিহ বলেন, পরে সে গরীব মুহাজিরগণ রসূলের দরবারে ফিরে এসে বললেন, আমাদের ধনী লোকেরা আমাদের ‘আমলের কথা শুনে তারাও তদ্রূপ ‘আমল করছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা আল্লাহ তা‘আলার করুণা, যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। (বুখারী, মুসলিম; আবূ সালিহ-এর কথা শুধু মুসলিমেই বর্ণিত। বুখারীর অন্য বর্ণনায় তেত্রিশবারের স্থানে প্রতি সালাতের পর দশবার করে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ ‘আল্ল-হু আকবার’ পাঠ করার কথা পাওয়া যায়)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৫, সহীহ  বুখারী ৮৪৩, ৬৩২৯, মুসলিম ৫৯৫। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ফাতিমা (রাঃ) (আটার) চাক্কি পিষতে পিষতে তার হাতের কষ্ট অনুভূত হওয়ার অভিযোগ স্বরূপ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন। তিনি [ফাতিমা (রাঃ)] জানতে পেরেছিলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যুদ্ধবন্দী গোলাম এসেছে। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রসূলের দেখা না পেয়ে মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে এ কথা বললেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ফিরে আসলেন ‘আয়িশাহ্ ফাত্বিমার কথা তাঁকে জানালেন। ‘আলী (রাঃ) বলেন, অতঃপর খবর পেয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন আমাদের এখানে আসলেন, তখন আমরা বিছানায় শুয়ে পড়ছিলাম। তাঁকে দেখে আমরা উঠতে চাইলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় থাকো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে এসে আমার ও ফাত্বিমার মাঝে বসে গেলেন। এমনকি আমি আমার পেটে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পায়ের শীতলতা অনুভব করলাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা যা আমার কাছে চেয়েছ এর (গোলামের) চেয়ে অনেক উত্তম এমন কথা আমি কি তোমাদেরকে বলে দেবো না? আর তা হলো যখন তোমরা ঘুমাবে তখন তেত্রিশবার ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, তেত্রিশবার ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ এবং চৌত্রিশবার ‘আল্ল-হু আকবার’ পড়বে। এটা তোমাদের জন্য খাদিম (গোলাম) হতে অনেক উত্তম হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৫৩৬১,৩১১৩, মুসলিম ২৭২৭, আবূ দাঊদ ৫০৬২,আহমাদ ১১৪১, ইবনু হিববান ৬৯২১, সহীহ আত্ তারগীব ৬০৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতি ফরয সালাতের পর পাঠ করার মতো কিছু কালিমাহ্ আছে যেগুলো পাঠকারী বা ‘আমলকারী বঞ্চিত হয় না। সে কালিমাগুলো হলোঃ

‘সুবহা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ তেত্রিশবার ও ‘আল্ল-হু আকবার’ চৌত্রিশবার করে পড়া। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৬, সহীহ  মুসলিম ৫৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ)  আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে লোক প্রত্যেক সালাতের শেষে সুবহা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার এবং ‘আল্ল-হু আকবার’ তেত্রিশবার পড়বে, যার মোট সংখ্যা হবে নিরানব্বই বার, একশত পূর্ণ করার জন্যে একবার ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর’’ (অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। সমগ্র রাজত্ব একমাত্র তাঁরই ও সকল প্রকারের প্রশংসা তাঁরই জন্য এবং তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।) পাঠ করবে, তাহলে তার সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদি তা সাগরের ফেনারাশির সমানও হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৭, সহীহ  মুসলিম ৫৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে নির্দেশ করা হয়েছে, প্রতি সালাতের শেষে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার ও ‘আল্ল-হু আকবার’ চৌত্রিশবার পাঠ করতে। একজন আনসারী স্বপ্নে দেখতে পেল যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদেরকে প্রতি সালাত  শেষে এতো এতো বার তাসবীহ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন? আনসারী স্বপ্নের মধ্যে বলল, হ্যাঁ। মালাক (ফেরেশতা) বললেন, এ তিনটি কালিমাকে পঁচিশবার করে পাঠ করার জন্য নির্ধারিত করবে। এবং এর সাথে লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ পাঠ করে নিবে। সকালে ঐ আনসারী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তার স্বপ্ন সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যা বলা হয়েছে তাই করো।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭৩, সহীহ  তিরমিযী ৩৪১৩, দারিমী ১৩৯৪, আহমাদ ২১৬০০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪নং) (ক) ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতি সালাতের শেষে ‘‘কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিন্ না-স’’ ও ‘‘কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিল ফালাক্ব’’ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন’’। ( মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৯, সহীহ  আবূ দাঊদ ১৫২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে (ঘুমাবার জন্য) বিছানায় যাবার সময় দু’ হাতের তালু একত্র করতেন। তারপর এতে ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ, কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিন্‌না-স’ পড়ে ফুঁ দিতেন। এরপর এ দু’ হাত দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর শরীরের যতটুকু সম্ভব হত মুছে নিতেন। শুরু করতেন মাথা, চেহারা এবং শরীরের সম্মুখ ভাগ হতে। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৩২, সহীহ বুখারী ৫০১৭, মুসলিম ২৭১৫, আবূ দাঊদ ৫০৫৬, তিরমিযী ৩৪০২, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৫০৭৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৪৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ৩০, সহীহাহ্ ৩১০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫নং) (ক) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুক্ত করা গোলাম বিলাল ইবনু ইয়াসার ইবনু যায়দ বলেন, আমার পিতা আমার দাদার মাধ্যমে বলেন, আমার দাদা যায়দ বলেছেন, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন। যে ব্যক্তি বলল, ‘

"আস্‌তাগফিরুল্ল-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি"। (৭ বার)।

(অর্থাৎ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তওবা্ করি)।

আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করবেন, যদিও সে যুদ্ধের ময়দান হতে পালিয়ে যেয়ে থাকে।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৩৫৩, সহীহ লিগয়রিহী আবূ দাঊদ ১৫১৭, তিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস্ সলিহীন ১৮৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২২, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আগার আল মুযানী (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে মানবমন্ডলী! আল্লাহর কাছে তওবা্ করো। আর আমিও প্রতিদিন একশ’বার করে আল্লাহর কাছে তওবা্ করি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৩২৫, সহীহ  মুসলিম ২৭০২, সহীহাহ্ ১৪৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬নং) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে বলতেন,

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা”। (৩ বার)।

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান, কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই)।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৯৮, সহীহ ইবনু মাজাহ ৯২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২৬৫, আহমাদ ২৬৫২১, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ১১৯, শু‘আবূল ঈমান ১৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭নং) (ক) ‘আবদুর রহমান ইবনু গানম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফাজর (ফজর) ও মাগরিবের সালাতের শেষে জায়গা হতে উঠার ও পা ঘুরানোর আগে এ দু‘আ দশবার পড়েঃ

‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু বিয়াদিহিল খায়রু, ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াওহুয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর’’। (১০ বার)। 

(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, তাঁর হাতেই সমস্ত কল্যাণ রয়েছে, তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন, তিনি সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।)।

তাহলে প্রতিবারের বিনিময়ে তার জন্য দশ নেকী লিখা হয়। তার দশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। তাকে দশটি মর্যাদার স্তরে উন্নীত করা হয়। আর এ দু‘আ তাকে সমস্ত অপছন্দনীয় ও বিতাড়িত শায়ত্বন (শয়তান) থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। শির্ক ছাড়া অন্য কোন গুনাহের কারণে তাকে ধর-পাকড় করা হালাল হবে না। ‘আমলের দিক দিয়ে এ লোক হবে অন্য লোকের চেয়ে উত্তম, তবে সে ব্যক্তি ব্যতীত যে এর চেয়েও অতি উত্তম ‘আমল করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭৫, হাসান লিগায়রিহী : আহমাদ ১৭৯৯৯, সহীহ আত্ তারগীব ৪৭৭। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের ফরয ছালাতের পর দশবার করে বিশেষ তাহলীল পাঠ করে, তার আমলনামায় দশজন মুমিন ক্রীতদাস মুক্ত করার নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়।

উমারাহ ইবনু শাবীব আস-সাবায়ী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাগরিবের নামাযের পর যে লোক দশবার বলেঃ

“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইয়ুহ্য়ি ওয়া ইয়মীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর”

 অর্থাৎ “আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কোন মা’বূদ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, সমস্ত কিছুই তার এবং তিনিই সকল প্রশংসার অধিকারী, তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন এবং প্রতিটি জিনিসের উপর তিনিই মহা ক্ষমতাশালী”,

আল্লাহ তাআলা তার নিরাপত্তার জন্য ফেরেশতা পাঠান যারা তাকে শায়তানের ক্ষতি হতে ভোর পর্যন্ত নিরাপত্তা দান করেন, তার জন্য (আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ) অবশ্যম্ভাবী করার ন্যায় দশটি পুণ্য লিখে দেন, তার দশটি ধ্বংসাত্মক গুনাহ বিলুপ্ত করে দেন এবং তার জন্য দশটি ঈমানদার দাস মুক্ত করার সমপরিমাণ সাওয়াব রয়েছে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৩৪, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (১/১৬০/৪৭২), নাসাঈ ১০৩৩৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (৮নং) মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ফরয সালাতের পরে এ দু‘আ পড়তেনঃ

“লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, আল্ল-হুম্মা লা- মা-নি‘আ লিমা- আ‘ত্বয়তা, ওয়ালা- মু‘ত্বিয়া লিমা- মানা‘তা, ওয়ালা- ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু’’। (১ বার)। 

(অর্থাৎ আল্লাহ ভিন্ন কোন উপাস্য নেই। তিনি অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার নেই! রাজত্ব একমাত্র তারই এবং সব প্রশংসা একমাত্র তাঁর জন্যে। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান করো, কেউ নেই তা ফিরাবার। আর যা তুমি দান করতে বারণ করো, কেউ নেই তা দান করার। ধনবানকে ধন-সম্পদে পারবে না কোন উপকার করতে আপনার আক্রোশ-এর সামনে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৪৪, ১৪৭৭, ২৪০৮, ৫৯৭০, ৬৩৩০, ৬৪৭৩, ৬৬১৫, ৭২৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯৩, আহমাদ ১৮১৬২, আধুনিক প্রকাশনী ৭৯৬ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮০৪)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯নং) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাশাহহুদ ও সালাম ফিরার মধ্যখানে শেষ বেলায় অর্থাৎ সালাম ফিরবার আগে) এই দো‘আ পড়তেন,

“আল্ল-হুম্মাগফিরলী মা-ক্বদ্দামতু ওয়ামা- আখখারতু ওয়ামা আসসারতু ওয়ামা আ'লানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আ'লামু বিহী মিন্নী আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা" (৩ বার)।

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর, যে অপরাধ আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি, যা অতিরিক্ত করেছি এবং যা তুমি আমার চাইতে অধিক জান। তুমি আদি, তুমিই অন্ত। তুমি ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই।

(সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন, ১১২০, ৬৩১৭, ৬৩৮৫, ৭৪৪২, ৭৪৯৯, ৭৩৮৫, সুনান ইবনু মাজাহ, ১৩৫৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪১৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭১, নাসায়ী ১৬১৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৭১, আহমাদ ২৮১৩, ২৭০৫, ২৭৪৩, ২৮০৮, ৩৩৫৮,৩৪৫৮; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৫০০, দারিমী ১৪৮৬,আধুনিক প্রকাশনী ১০৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১০৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(১০নং) ‘আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সলাতের সালাম ফিরানোর পর উচ্চ কণ্ঠে বলতেন,

‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়ালা- না‘বুদু ইল্লা- ঈয়্যাহু, লাহুন্ নি‘মাতু, ওয়ালাহুল ফাযলু, ওয়ালাহুস্ সানা-উল হাসানু, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন’’। (১ বার)। 

(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর এবং তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাশীল। কোন অন্যায় ও অনিষ্ট হতে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই এবং কোন সৎ কাজ করারও ক্ষমতা নেই একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, আমরা একমাত্র তাঁরই ‘ইবাদাত করি, যাবতীয় নি‘আমাত ও অনুগ্রহ একমাত্র তাঁরই পক্ষ থেকে এবং উত্তম প্রশংসাও তাঁর। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই। আমরা তাঁর দেয়া জীবন বিধান একমাত্র তাঁর জন্য একনিষ্ঠভাবে মান্য করি, যদিও কাফিরদের নিকট তা অপ্রীতিকর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৩, সহীহ  মুসলিম ৫৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১নং) মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে ওয়াসিয়াত করছি, তুমি প্রত্যেক সালাতের পর এ দু‘আটি কখনো পরিহার করবে নাঃ

‘‘আল্লাহুম্মা আঈন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা’’। (৩ বার)।

 (অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ‘ইবাদাতে আমাকে সাহায্য করুন)। অতঃপর মু‘আয (রাঃ) আস-সুনাবিহী (রহঃ)-কে এবং আস-সুনাবিহী ‘আবদুর রহমানকে এরূপ দু‘আ করার ওয়াসিয়াত করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১৫২২, নাসায়ী ১৩০২, হাকিম (১/২৭৩), আহমাদ (৫/২৪৪), ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ৭৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (১২নং) “রাযীতু বিললা-হি রববান ওয়া বিল ইসলা-মি দীনান ওয়াবি মুহাম্মাদিন্ নাবিইয়ান”। (৩ বার)।

অর্থ: আমি সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম আল্লাহর উপরে প্রতিপালক হিসাবে, ইসলামের উপরে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদের উপরে নবী হিসাবে’।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বলে, আমি আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে দীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রসূল হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছি, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১৫২৯, নাসায়ী ৫, হাকিম (১/৫১৮)ইবনু হিববান ‘মাওয়ারিদ’ (হাঃ ২৩৬৮), সিলসিলাহ সহীহাহ (হাঃ ৩৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৩নং) সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি তার সন্তানদেরকে দু‘আর এ কালিমাগুলো শিক্ষা দিতেন ও বলতেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের পর এ কালিমাগুলো দ্বারা আল্লাহর নিকটে আশ্রয় চাইতেনঃ

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন আরযালিল ‘উমুরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিদ্ দুন্ইয়া- ওয়া ‘আযা-বিল কবরি’’। (৩ বার)।

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি কাপুরুষতা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। বখিলী থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। নিষ্কর্মা জীবন থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। দুনিয়ার ফিতনাহ্ (ফিতনা) ও কবরের শাস্তি থেকে তোমার নিকটে আশ্রয় চাই)।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৪, সহীহ  বুখারী ২৮২২, ৬৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (১৪নং) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্ রিজা-ল’’। (৩ বার)। 

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা, শোক-তাপ, অক্ষমতা-অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের জোর-জবরদস্তি হতে আশ্রয় চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৫৮, সহীহ ৬৩৬৯, মুসলিম ২৭০৬, নাসায়ী ৫৪৪৯, তিরমিযী ৩৪৮৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৪১, আহমাদ ১০৫২, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১২৯, সহীহ আল জামি ১২৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (১৫নং) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও উম্মুল মু’মিনীন জুওয়াইরিয়্যাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুওয়াইরিয়াহ (রাঃ) এর কাছ থেকে বেরিয়ে এলেন। ইতিপূর্বে তার নাম ছিলো বাররাহ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ নাম পরিবর্তন করেন। তিনি তার কাছ থেকে বেরিয়ে আসার সময়ও মুসাল্লায় বসে তাসবীহ পাঠ করতে দেখেন এবং ফিরে এসেও তাকে ঐ মুসাল্লায় বসে থাকতে দেখেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তখন থেকে একটানা এ মুসাল্লায় বসে রয়েছো? তিনি বললেন, হাঁ। তিনি বললেন, তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি তিনবার চারটি কালেমা পড়েছি; এ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তুমি যা কিছু পাঠ করেছো, উভয়টি ওজন হলে আমার ঐ চারটি কালেমা ওজনে ভারী হবে। তা হচ্ছেঃ

‘‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি ‘আদাদা খালক্বিহি, ওয়া রিদা নাফসিহি, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহি, ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।’’ (৩ বার)। 

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১৫০৩, তিরমিযী ৩৫৫৫, নাসায়ী ১৩৫১, ইবনু মাজাহ ৩৮০৮, সহীহ  মুসলিম ২৭২৬, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ১২৭, শু‘আবূল ঈমান ৫৯৬, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৫০৪/৬৪৭, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১২, সহীহাহ্ ২১৫৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৫৭৪, সহীহ আল জামি‘ ৫১৩৯, ইবনু খুযায়মাহ্ ৭৫৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৩০১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৬নং) “ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূবে ছাবিবত ক্বালবী ‘আলা দ্বীনিকা, আল্লা-হুম্মা  মুছারিরফাল কবুলূবে ছাররিফ ক্বুলূবানা ‘আলা ত্বোয়া-‘আতিকা”। (৩ বার)।

অর্থঃ হে হৃদয় সমূহের পরিবর্তনকারী! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখো’। ‘হে অন্তর সমূহের রূপান্তরকারী! আমাদের অন্তর সমূহকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দাও’।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় সময়ই এ দু‘আ করতেনঃ ‘‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী আল্লাহ! আমার হৃদয়কে তোমার দীনের উপর দৃঢ় রাখ’’। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমরা আপনার ওপর এবং আপনি যে দীন নিয়ে এসেছেন, তার ওপর ঈমান এনেছি। এরপরও কি আপনি আমাদের সম্পর্কে আশংকা করেন? জবাবে তিনি বললেন, কেননা ‘ক্বল্ব, আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে রয়েছে (অর্থাৎ- তাঁর নিয়ন্ত্রণ ও অধিকারে রয়েছে)। তিনি যেভাবে চান সেভাবে (অন্তরকে) ঘুরিয়ে থাকেন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০২, সহীহ তিরমিযী ২০৬৬, ইবনু মাজাহ্ ৩৮২৪, ইমাম তিরমিযী জামি‘ আত্ তিরমিযীর ২/২০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৭নং) “আল্লা-হুম্মা আদখিলনিল জান্নাতা ওয়া আজিরনী মিনান্ না-র”। (৩ বার)

অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ দাও! [তিরমিযী, নাসাঈ,মিশকাত হা/২৪৭৮]

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জান্নাতের প্রত্যাশা করে; জান্নাত বলবে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর যে ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করবে; জাহান্নাম বলবে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৭৮, সহীহ তিরমিযী ৫৫২১, নাসায়ী ৫৫২১, সহীহ ইবনু হিববান ১০৩৪, সহীহ আল জামি‘ ৬২৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৮নং) “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াত তুক্বা ওয়াল ‘আফা-ফা ওয়াল গিনা”। (৭ বার)।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে সুপথের নির্দেশনা, পরহেযগারিতা, পবিত্রতা ও সচ্ছলতা প্রার্থনা করছি।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু‘আয়) বলতেন,

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল হুদা- ওয়াত্তুকা- ওয়াল ‘আফা-ফা ওয়াল গিনা-’’

(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হিদায়াত [সঠিক পথ], তাকওয়া [পরহেযগারিতা], হারাম থেকে বেঁচে থাকা ও অমুখাপেক্ষিতা প্রত্যাশা করি)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৮৪, সহীহ মুসলিম ২৭২১, তিরমিযী ৩৪৮৯, ইবনু মাজাহ ৩৮৩২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৯২, আহমাদ ৩৯৫০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৯০০, সহীহ আল জামি‘ ১২৭৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৯নং) (ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দৈনিক একশ’বার পড়বে 

‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী’ 

(অর্থাৎ- আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে)- তার গুনাহসমূহ যদি সমুদ্রের ফেনার মতো বেশি হয় তবুও তা মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২২৯৬, ২২৯৭, সহীহ বুখারী ৬৪০৫, মুসলিম ২৬৯১, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭১৩, ইবনু হিব্বান ৮২৯, সহীহ আল জামি ৬৪২৫, ৬৪৩১, তিরমিযী ৩৪৬৬, ৩৪৬৯, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৪১৭, ইবনু মাজাহ ৩৮১২, আহমাদ ৮০০৯, ৮৮৫৫, সহীহ আত্ তারগীব ৬৫৩, ১৫৯০, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’টি খুব সংক্ষিপ্ত বাক্য যা বলতে সহজ অথচ (সাওয়াবের) পাল্লায় ভারী এবং আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়, তা হলো ‘‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী, সুবহা-নাল্ল-হিল ‘আযীম’’।

 (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), সহীহ বুখারী ৬৬৮২, মুসলিম ২৬৯৪, তিরমিযী ৩৪৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৮০৬, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৪১৩, আহমাদ ৭১৬৭, শু‘আবূল ঈমান ৫৮৫, ইবনু হিব্বান ৮৪১, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ৮, সহীহ আত্ তারগীব ১৫৩৭, সহীহ আল জামি ৪৫৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (২০নং) ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন তাঁর কাছে একজন মুকাতাব (চুক্তিবদ্ধ দাস) এসে বললো, আমি আমার কিতাবাতের (মুনিবের সাথে সম্পদের লিখিত চুক্তিপত্রের) মূল্য পরিশোধ করতে পারছি না, আমাকে সাহায্য করুন। উত্তরে তিনি [‘আলী (রাঃ)] বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালাম (বাক্য) শিখিয়ে দেবো, যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শিখিয়েছেন? (এ দু‘আর মাধ্যমে) যদি তোমার ওপর বড় পাহাড়সম ঋণের বোঝাও থাকে, আল্লাহ তা পরিশোধ করে দেবেন। তুমি পড়বে,

‘‘আল্ল-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন্ হারা-মিকা, ওয়া আগ্‌নিনী বিফাযলিকা ‘আম্মান্ সিওয়াক’’। (৭ বার)।

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হালাল [জিনিসের] সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখো এবং তুমি তোমার রহমতের মাধ্যমে আমাকে পরমুখাপেক্ষী হতে রক্ষা করো)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৪৯, তিরমিযী ৩৫৬৩, আহমাদ ১৩১৯, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৭৩, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৪৪, সহীহাহ্ ২৬৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৮২০, সহীহ আল জামি ২৬২৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (২১নং) সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫ (আয়াতুল কুরসী)।

“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম”।

অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫)।

আয়তুল কুরসিকে বলা হয় আল কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত। এটি নিয়মিত আমল করলে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত লাভ করা যায়। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বর্ণনা করেছেন কোন আয়াতগুলি সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এই আয়াতগুলো পাঠে কী ধরনের নেয়ামত অর্জন করবে বান্দা।

ফজিলত ও নিয়ামতে ভরপুর সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি। কুরআনের সর্ববৃহৎ ও দ্বিতীয় সূরা ‘সূরা আল-বাক্বারা’র ২৫৫ নম্বর আয়াত। আয়াতটিতে মহাবিশ্বের ওপর আল্লাহর ক্ষমতার কথা বর্ণিত হয়েছে।

আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ) ... উবাই ইবনু কাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আবূল মুনযিরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে আবূল মুনযির আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি তোমার কাছে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ? আবূল মুনযির বলেন, জবাবে আমি বললামঃ এ বিষয়ে আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলই সর্বাধিক অবগত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেনঃ হে আবূল মুনযির! আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি তোমার কাছে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ? তখন আমি বললাম, اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ (এ আয়াতটি আমার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ)। এ কথা শুনে তিনি আমার বুকের উপর হাত মেরে বললেনঃ হে আবূল মুনযির! তোমার জ্ঞানকে স্বাগতম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২২, আবূ দাঊদ ১৪৬০, আহমাদ ২১২৭৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৫৩২৬, শু‘আবূল ঈমান ২১৬৯, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৭১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৫৫, ইসলামীক সেন্টার, ১৭৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ আয়াতটি ‘আয়াতুল কুরসি’ নামেই সব মুসলিমের কাছে পরিচিত। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এর ফজিলত কী। এ আয়াত পাঠে কেমন সওয়াব হয়। আসুন জেনে নেই

আয়াতটির গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতঃ-

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমাযানে যাকাতের মাল হিফাজতের দায়িত্ব দিলেন। এক সময় এক ব্যক্তি এসে খাদ্য-সামগ্রী উঠিয়ে নেয়ার উপক্রম করল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে যাব। এরপর পুরো হাদীস বর্ণনা করেন। তখন লোকটি বলল, যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন। এর কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন পাহারাদার নিযুক্ত করা হবে এবং ভোর পর্যন্ত শায়ত্বন আপনার কাছে আসতে পারবে না। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঘটনা শুনে) বললেন, (যে তোমার কাছে এসেছিল) সে সত্য কথা বলেছে, যদিও সে বড় মিথ্যাচারী শায়ত্বন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১০, ২৩১১, ৩২৭৫,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮০, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৪২৪, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৪০৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬১০, আধুনিক প্রকাশনী ৪৬৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইমাম নাসাঈ (রহ.) আবূ উমামা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরয সালাত শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাধা হবে না। (সহীহ আল জামে: হাদিস: ৬৪৬৪)।

 (গ) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, সেটি হলো আয়াতুল কুরসি। যে ঘরে এটি পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে হাকিম)।

(ঘ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি বস্তুরই চূড়া আছে। কুরআনের উচু চূড়া হল সূরা আল-বাকারা। এতে এমন একটি আয়াত আছে যা কুরআনের আয়াতসমূহের প্রধান। তা হল আয়াতুল কুরসী। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৭৮, যঈফা (১৩৪৮), তা’লীকুর রাগীব (২/২১৮)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

(ঙ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালবেলা সূরা আল-মু'মিন-এর হা-মী-ম হতে ইলাইহিল মাসীর (১, ২, ও ৩ নং আয়াত) পর্যন্ত এবং আয়াতুল কুরসী তিলাওয়াত করবে সে এর উসীলায় সন্ধ্যা পর্যন্ত (আল্লাহ্ তা'আলার) হিফাযাতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যা বেলায় তা পাঠ করবে সে ব্যক্তি এর উসীলায় সকাল পর্যন্ত হিফাযাতে থাকবে। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৭৯, তাহকীক ছানী (২১৪৪)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

(চ) সূরা আল-বাকারাহ্, ২৫৫ নং আয়াত। যে ব্যক্তি সকালে তা বলবে সে বিকাল হওয়া পর্যন্ত জিন শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে, আর যে ব্যক্তি বিকালে তা বলবে সে সকাল হওয়া পর্যন্ত জিন শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে। হাদীসটি হাকিম সংকলন করেছেন, ১/৫৬২। আর শাইখ আলবানী একে সহীহুত তারগীব ওয়াত-তারহীবে সহীহ বলেছেন ১/২৭৩। আর তিনি একে নাসাঈ, তাবারানীর দিকে সম্পর্কযুক্ত করেছেন এবং বলেছেন, তাবারানীর সনদ ‘জাইয়্যেদ’ বা ভালো।

‘আয়াতুল কুরসি’ এর ফযিলত প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বিভিন্ন গ্রন্থে মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন, তিনি বলেন, ‘সত্যতার সাথে যদি তুমি আয়াতুল কুরসী সে সময় পড় তাহলে তাদের কর্মকান্ড বাতিল হয়ে যায়, কারণ তাওহীদ শয়তানকে তাড়ায়। মানুষ যদি শয়তানী চক্রান্ত স্থানে সত্যতার সাথে ‘আয়াতুল কুরসী’ পড়ে, তাহলে তা (যাদু-মন্ত্র) নষ্ট করে দেয়। (কিতাব: ‘আল ফুরক্বান বাইনা আওলিয়াইর রহমান ওয়া আওলিয়াইশ শাইত্বান’)।

(২২ নং)  ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ দু‘আ শিক্ষা দিতেন যেমন তাদেরকে কুরআনের সূরাহ্ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমরা বলো,

‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল কবরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া- ওয়াল মামা-তি’’।

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের শাস্তি হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি হতে। তোমার নিকট আশ্রয় চাই দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪২, মুয়াত্তা মালেক ৪৯৯, নাসায়ী ২০৬৩, ৫৫১২, ৯৮৪, ১৫৪২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৯৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৪০, আহমাদ ২১৬৯, ২৩৩৮, ২৭০৪, ২৭৭৪, ২৮৩৪, , সহীহ আত্ তারগীব ৩৬৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাতের শেষে শেষ তাশাহুদ পড়ে অবসর হয়ে যেন আল্লাহর কাছে চারটি জিনিস হতে পানাহ চায়। (১) জাহান্নামের ‘আযাব। (২) কবরের ‘আযাব। (৩) জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ্ (ফিতনা)। (৪) মাসীহুদ্ দাজ্জালের অনিষ্ট। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮৮,  সুনান ইবনু মাজাহ ৯০৯, ৯১০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৯৮৩, নাসায়ী ১৩১০, ৫৫০৫-৬, ৫৫০৮-১১, ৫৫১৩-১৮, ৫৫২০, আহমাদ ৭১৯৬, ৭৮১০, ৭৯০৪, ৯০৯৩, ৯১৮৩, ২৭৫৯৬, ২৭৮৯০, ৯৮২৪, ২৭২৮০, দারেমী ১৩৮৩,১৩৪৪,  সহীহ আল জামি ৬৯৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২০০, ইসলামীক সেন্টার ১২১১ )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(বিঃদ্রঃ দোয়াটি সালাতের মধ্যে তাশাহুদ বৈঠকে এবং সালাতে সালাম ফিরানোর পর অন্যান্য দোয়া শেষে পাঠ করা যাবে)।

সম্মানিত মুছল্লীবৃন্দঃ  কর্মব্যস্ত মুছল্লীগণ জোহর, আসর ও মাগরিবে হয়তো সময় বেশী না পাওয়ায় সবগুলো আমল করা সম্ভব হবে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলো অবশ্যই পাঠ করার চেষ্টা করবেন নিজের জন্যে, দুনিয়ার কল্যাণের জন্যে ও আখিরাতের মুক্তির জন্যে। ফজর ও ইশার ফরজ সালাতের পর অবশ্যই সবগুলো দোয়া পাঠ করবেন। বিশেষ করে, ফজরের সালাত আদায় করার পর ওযু অবস্থায় সালাতের জায়গায় বসে থেকেই দোয়াগুলো পাঠ করবেন। এরপর সকালে ও বিকেলে পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াগুলোও পাঠ করবেন।

(সকাল ও বিকেলে পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াসমূহ জানতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন)- PMMRC

এরপর জায়গা পরিবর্তন করে বা সেই জায়গা থেকে একটু ডারে বামে বা সামনে পিছনে সরে গিয়ে সূর্য ওঠার পর দুই রাকাত ‘ছালাতুল ইশরাক্ “ আদায় করবেন।

(ক) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে ফজর ছালাত আদায় করবে অতঃপর সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে যিকির করবে; তারপর দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, তার জন্য পূর্ণ একটি হজ্জ এবং পূর্ণ একটি ওমরার নেকী রয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭১, তিরমিযী ৫৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ৪৬৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) বুরায়দাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ মানুষের শরীরে তিনশত ষাটটি জোড়া আছে। প্রত্যেক লোকের উচিত প্রত্যেকটি জোড়ার জন্যে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা। সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কার সাধ্য আছে এ কাজ করতে? তিনি বললেন, মসজিদে পড়ে থাকা থুথু মুছে ফেলাও একটি সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। পথ থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে দেয়াও একটি সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। তিনশত ষাট জোড়ার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেবার মতো কোন জিনিস না পেলে ‘যুহার (চাশ্ত/চাশত) দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করে নেয়া তোমার জন্যে যথেষ্ট। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৩১৫, সহীহ  আবূ দাঊদ ৫২৪২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১২২৬, শু‘আবুল ইমান ১০৬৫০, ইরওয়া ৮৬০, আহমাদ ২২৯৯৮, সহীহ আত্ তারগীব ৬৬৬, ২৯৭১, সহীহ আল জামি ৪২৩৯)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (গ) যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একটি দলকে ‘যুহার’ সময় সালাত আদায় করতে দেখে বললেন, এসব লোকে জানে না, এ সময় ব্যতীত অন্য সময়ে সালাত আদায় করা অনেক ভাল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ নিবিষ্টচিত্তে লোকদের সালাতের সময় হলো উষ্ট্রীর দুধ দোহনের সময়ে।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৩১২, সহীহ মুসলিম ৭৪৮, আহমাদ ১৯৩১৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৯০৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৫৩৯, সহীহ আল জামি‘ ৩৮১৫, সহীহাহ্ ১১৬৮, ইরওয়া ৪৬৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, শুরূক্ব অর্থ সূর্য উদিত হওয়া। ‘ইশরাক্ব অর্থ চমকিত হওয়া। ‘যোহা অর্থ সূর্য গরম হওয়া। হাদীছে একই ছালাতকে তিনটি নামে উল্লেখ করা হয়েছে। পূর্ব আকাশে সূর্য উঠার সাথে সাথে পড়লে তাকে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’, সূর্য একটু উপরে উঠার পর আদায় করলে ‘ছালাতুয যোহা’ বা চাশতের ছালাত এবং আরো একটু উপরে উঠার পর আদায় করলে তাকে ‘ছালাতুল আউয়াবীন’ বা ‘আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনশীল বান্দাদের ছালাত’ বলা হয়েছে। যেকোন একটি পড়লেই চলবে।

ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর কতিপয় জাল জইফ হাদিসের আমল যা পরিত্যাজ্যঃ

(১)  সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত রেখে দু‘আ পড়াঃ

সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত রেখে দু‘আ পড়ার প্রমাণে কোন ছহীহ দলীল নেই। বরং যা বর্ণিত হয়েছে, তার সবই জাল ও যঈফ।

(ক) কাছীর ইবনু সুলায়মান আবু সালামা বলেন, আমি আনাসের নিকট শুনেছি, রাসূল (ছাঃ) যখন ছালাত আদায় করতেন, তখন ডান হাত তার মাথায় রাখতেন এবং বলতেন, আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। যিনি পরম করুণাময়, দয়ালু। হে আল্লাহ! আমার থেকে চিন্তা ও শঙ্কা দূর করে দিন। (ত্বাবারাণী, আওসাত্ব হা/৩১৭৮, পৃঃ ৪৫১)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। এর সনদে কাছীর বিন সুলাইম নামে রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী ও আবু হাতিম বলেন, সে মুনকার রাবী। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এই হাদীছের সনদ নিতান্তই যঈফ। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৬০, ২/১১৪-১৫)।

 তিনি আরো বলেন, এটা জাল। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৬০, ২/১১৪-১৫)।

(খ) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন তার ছালাত শেষ করতেন, তখন ডান হাত দ্বারা তার মাথা মাসাহ করতেন এবং উক্ত দু‘আ পড়তেন। (ইবনুস সুন্নী হা/১১০)।

তাহক্বীক্বঃ এর সনদ জাল। সালাম আল-মাদাইনী অভিযুক্ত। সে ছিল দীর্ঘ পুরুষ, ডাহা মিথ্যাবাদী। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৫৮, ৩/১৭১ পৃঃ)।

উক্ত মর্মে আরো বর্ণনা আছে।(বনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ হা/১১০)।

তবে সেগুলোর সনদও জাল। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৫৯, ৩/১৭২ পৃঃ)।

অতএব সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত দিয়ে দু‘আ পড়ার প্রথা বর্জন করতে হবে। কারণ জাল হাদীছ দ্বারা কখনো কোন আমল প্রমাণিত হয় না।

(২) আয়াতুল কুরসী পড়ে বুকে ফুঁক দেয়াঃ

ফরয ছালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী’ পড়া অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে, তাকে মৃত্যু ব্যতীত কোন কিছু জান্নাতে প্রবেশ করতে বাধা দিতে পারবে না। (নাসাঈ, আল-কুবরা হা/৯৯২৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭২। উল্লেখ্য যে, মিশকাতে যে বর্ণনা এসেছে, তার সনদ যঈফ। আলবানী, মিশকাত হা/৯৭৪, ১/৩০৮ দ্রঃ)।

তবে এ সময় বুকে ফুঁক দেয়ার শারঈ কোন ভিত্তি নেই। যদিও আমলটি সমাজে খুবই প্রসিদ্ধ। অতএব এই বিদ‘আতী প্রথা পরিত্যাগ করতে হবে।

(৩)   ‘ফাকাশাফনা আনকা গিত্বাআকা’.. পড়ে চোখে মাসাহ করাঃ

সূরা ক্বাফ-এর (২২ নং) উক্ত আয়াত পড়ে বৃদ্ধা আঙ্গুলে ফুঁক দিয়ে চোখে মাসাহ করার প্রথা চলে আসছে দীর্ঘকাল যাবৎ। কিন্তু নির্দিষ্ট করে উক্ত আয়াত পড়ার কোন প্রমাণ নেই। তবে পবিত্র কুরআন আরোগ্য দানকারী বিধান। তাই যেকোন আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আরোগ্য কামনা করা যায় (সূরা বাণী ইসরাঈল ৮২)।

(৪) ফজর ও মাগরিব ছালাতের পর সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত পড়াঃ

উক্ত আমল সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তার সনদ যঈফ।

মা‘কিল ইবনু ইয়াসির রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে তিনবার ‘আঊযুবিল্লা-হিস সামীইল আলীম মিনাশ শায়ত্ব-নির রাজীম’সহ সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত পড়বে, আল্লাহ তার জন্য ৭০ হাযার ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন, যারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদি ঐ দিন ঐ ব্যক্তি মারা যায়, তাহলে শহীদ হয়ে মারা যাবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পড়বে, তার জন্যও একই ফযীলত রয়েছে। (তিরমিযী হা/২৯২২, ২/১২০ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ ইমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীছটি গরীব। আর এই সূত্র ছাড়া আর অন্য কোন সূত্র নেই। (তিরমিযী হা/২৯২২, ২/১২০ পৃঃ)।

এর সনদে খালেদ ইবনু ত্বাহমান নামে যঈফ রাবী আছে। (ইরওয়াউল গালীল ২/৫৮ পৃঃ)।

এ সম্পর্কে আরো জাল হাদীছ রয়েছে। (যঈফুল জামে‘ হা/১৩২০)।

অতএব উক্ত হাদীছ আমল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বরং সূরা মুলক পড়া যেতে পারে।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, পবিত্র কুরআনে এমন একটি সূরা আছে, যার ৩০টি আয়াত রয়েছে। যে ব্যক্তি ঐ সূরা পাঠ করবে, তার জন্য উহা সুপারিশ করবে যতক্ষণ তাকে ক্ষমা না করা হবে। সেটা হল- ‘তাবারাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক’। (আবুদাঊদ হা/১৪০০, ১/১৯৯ পৃঃ; সনদ হাসান, মিশকাত হা/২১৫৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২০৪৯; ছহীহ ইবনে হিববান হা/৭৮৪)।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাত্রিতে ‘তাবারাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক’ পাঠ করবে এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দান করবেন। আর আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে এর নাম বলতাম ‘আল-মানে‘আহ’ বা বাধাদানকারী..। (নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/১০৫৪৭; সনদ হাসান, ছহীহ তারগীব হা/১৪৭৫)।

(৫) তাসবীহ দানা দ্বারা তাসবীহ গণনা করাঃ

সমাজে তাসবীহ দানা দিয়ে যিকির করার প্রচলন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফরয ছালাতের পর, হাটে-বাজারে, রাস্তায়, বাসে-ট্রেনে, অফিস-আদালতে সর্বত্র একশ্রেণীর মানুষকে তাসবীহ গণনা করতে দেখা যায়। এতে যে রিয়া সৃষ্টি হয় তাতে কোন সন্দেহ নেই। অনেক মসজিদের কাতারে কাতারে রেখে দেয়া হয় কিংবা দেওয়ালে ও জালানায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাসবীহই যেন মূল ইবাদত। অথচ এর ছহীহ কোন ভিত্তি নেই। উক্ত মর্মে যে সমস্ত বর্ণনা রয়েছে তার সবই জাল কিংবা যঈফ।

(ক) আয়েশা বিনতে সা‘দ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে এক মহিলার নিকটে যান। তখন স্ত্রীলোকটির সম্মুখে কিছু খেজুরের বিচি অথবা কংকর ছিল, যার দ্বারা সে তাসবীহ গণনা করছিল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কথা বলে দিব না, যা এটা অপেক্ষা অধিক সহজ বা উত্তম হবে? তা হচ্ছে- ‘সুবহা-নাল্লাহ’ অর্থাৎ, আল্লাহর পবিত্রতা যে পরিমাণ তিনি আসমানে মাখলূক সৃষ্টি করেছেন, ‘সুবহা-নাল্লাহ’ যে পরিমাণ তিনি যমীনে মাখলূক সৃষ্টি করেছেন, ‘সুবহা-নাল্লাহ’ যে পরিমাণ উভয়ের মাঝে রয়েছে এবং ‘সুবহা-নাল্লাহ’ যে পরিমাণ তিনি ভবিষ্যতে সৃষ্টি করবেন। ‘আল্লাহু আকবার’ উহার অনুরূপ, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ উহার অনুরূপ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু’ উহার অনুরূপ এবং লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ অনুরূপ। (তিরমিযী হা/৩৫৬৮, ২/১৯৭ পৃঃ ও হা/৩৫৫৪; আবুদাঊদ হা/১৫০০, ১/২১০ পৃঃ; মিশকাত হা/২৩১১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২২০৩, ৫/৯০ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে খুযায়মাহ ও সাঈদ ইবনু আবী হেলাল নামে দুইজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে। (যঈফ তিরমিযী হা/৩৫৬৮, ২/১৯৭ পৃঃ, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩০; যঈফ আবুদাঊদ হা/১৫০০, ১/২১০ পৃঃ; যঈফ আত-তারগীব হা/৯৫৯; সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩)।

তাছাড়া এটি ছহীহ হাদীছের বিরোধী। কারণ রাসূল (ছাঃ) ডান হাতের আঙ্গুলে তাসবীহ গণনা করতেন। (আবুদাঊদ হা/১৫০২, ১/২১০ পৃঃ; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/৩১৪৮; ছহীহ ইবনে হিববান হা/৮৪৩; তিরমিযী হা/৩৪৮৬। উল্লেখ্য যে, ভারতীয় ছাপা তিরমিযীতে উক্ত অংশ নেই দ্রঃ ২/১৮৬ পৃঃ)।

আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে দানা দ্বারা যিকির করে সে কতইনা উত্তম! (দায়লামী, মুসনাদুল ফেরদাউদ ৪/৯৮ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার প্রত্যেক রাবীই ত্রুটিপূর্ণ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩)।

আলবানী বলেন, إِنَّ السُّبْحَةَ بِدْعَةٌ لَمْ تَكُنْ فِىْ عَهْدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا حَدَثَتْ بَعْدَهُ ‘নিশ্চয় তাসবীহ দানা বিদ‘আত। এটি রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ছিল না। বরং তাঁর পরে সৃষ্টি হয়েছে’। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩-এর আলোচনা দ্রঃ)।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) কংকর দ্বারা তাসবীহ গণনা করতেন। (আবুল কাসেম জুরজানী, তারীখে জুরজান হা/৬৮)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। এর সনদে কুদামা বিন মাযঊন এবং ছালেহ ইবনু আলী নামে অভিযুক্ত রাবী আছে। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১০০২)।

(৬) ফজর ছালাতের পর ১৯ বার ‘বিসমিল্লাহ’ বলাঃ

উক্ত মর্মে ছহীহ বা যঈফ সূত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে কোন হাদীছ পাওয়া যায় না। তবে ‘বিসমিল্লা-হ’-এর ফযীলত বিষয়ে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে একটি বক্তব্য এসেছে- ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছা পোষণ করে যে, আযাবের ১৯ জন ফেরেশতা হতে আল্লাহ তাকে পরিত্রাণ দেবেন, সে যেন ‘বিসমিল্লা-হির রহমান-নির রহীম’ পড়ে’। কারণ ‘বিসমিল্লা-হ’-তে ১৯টি বর্ণ রয়েছে। আর প্রতিটি বর্ণ তার জন্য ঢাল স্বরূপ এবং উক্ত বর্ণ তাকে আযাবের ১৯ জন ফেরেশতা হতে বাঁচাবে’। কিন্তু উক্ত বর্ণনার ছহীহ কোন ভিত্তি নেই। ইবনু আত্বিয়াহ বলেন, هَذَا مِنْ مُلَحِ التَّفْسِيْرِ ‘এগুলো চটকদার তাফসীরের অন্তর্ভুক্ত’। (তাফসীরে কুরতুবী ১/৯২ পৃঃ, ‘বিসমিল্লাহ’ অনুচ্ছেদ)।

(৭)  ফজর ও মাগরিবের পর যিকির করাঃ

অনেক মসজিদে একশ্রেণীর মানুষ ফজর ও মাগরিবের ছালাতের পর গোল হয়ে বসে যিকির করে থাকে। উক্ত যিকিরের শব্দগুলোও বানোয়াট। উচ্চৈঃস্বরে যিকিরের কারণে এটা রিয়াতে পরিণত হয়েছে। ভাবখানা দেখে মনে হয় যে, তারা চিৎকার করে আল্লাহকে আসমান থেকে টেনে নামাবে। এ ধরনের যিকির সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ডাকবে বিনীতভাবে ও অতি সংগোপনে। তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পসন্দ করেন না’ (আ‘রাফ ৫৫)। অন্য আয়াতে বলেন, ‘আপনি আপনার প্রতিপালককে মনে মনে বিনয় ও ভয়-ভীতি সহকারে নীরবে সকাল-সন্ধ্যায় স্মরণ করুন’ (আ‘রাফ ২০৫)। রাসূল (ছাঃ) সরবে যিকির করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী হা/২৯৯২, ১/৪২০ পৃঃ, (ইফাবা হা/২৭৮৪, ৫/২২২ পৃঃ), ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩১; মুসলিম হা/৭০৭৩; মিশকাত হা/২৩০৩, পৃঃ ২০১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২১৯৫, ৫/৮৭ পৃঃ, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়, ‘সুবহা-নাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ’ বলার ছওয়াব’ অনুচ্ছেদ)।

উক্ত যিকিরপন্থীরা শেষে লম্বা মুনাজাত করে বিদায় নেয়। এটাও একটি বিদ‘আতী আমল। শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এ ধরনের লোকদেরকেই ধমক দিয়েছিলেন। (দারেমী হা/২১০)।

(৮) সকালে সূরা ইয়াসীন এবং সন্ধ্যায় সূরা ওয়াক্বি‘আহ পাঠ করলে সচ্ছলতা আসে কথাটির সত্যতা আছে কি?

সূরা ইয়াসীন সম্পর্কে উক্ত মর্মে কোন হাদীছ বা আছার বর্ণিত হয়নি। বরং একজন তাবেঈ থেকে এমন একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যার সনদ ছহীহ নয়। (মুহাম্মাদ বিন আমর, আহাদীছুন ওয়া মারবিয়াতুন ফিল মীযান ৪/১১৩, ৭৫ পৃ.)।

আর সূরা ওয়াক্বিআহ সম্পর্কেও অনুরূপ কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়, যেগুলো যঈফ। (মিশকাত হা/২১৮১; যঈফাহ হা/২৮৯; যঈফুল জামে হা/৫৭৭৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৩/১৪২)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাতে ‘‘সূরা আল ওয়াকিআহ্  তিলাওয়াত করবে, সে কখনো অভাব অনটনে পড়বে না। বর্ণনাকারী ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ তাঁর কন্যাদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সূরা তিলাওয়াত করতে বলতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৮১,যঈফ শুআবূল ঈমান ২২৬৯, যঈফাহ্ ২৮৯, যঈফ আল জামি ৫৭৭৩। কেননা এর সানাদে আবূ ত্বয়বাহ্ একজন মাজহূল রাবী। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)। 

অতএব ছহীহ সনদে প্রমাণিত না হওয়ায় এইসব ফযীলতের বিবরণ গ্রহণযোগ্য নয়।

সুরা ইয়াছিন সম্পর্কে অন্যান্য জইফ হাদিসসমূহঃ

(ক) ‘আত্বা ইবনু আবূ রবাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নির্ভরযোগ্য সূত্রে আমার কাছে এ কথা পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনের প্রথম অংশে সূরা ইয়াসীন পড়বে, তার সব প্রয়োজন পূর্ণ হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৭৭, যঈফ, দারিমী ৩৪৬১। কারণ এটি মুরসাল। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

(খ) মাকাল ইবনু ইয়াসার আল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে সূরা ইয়াসীন পড়বে, তার আগের গুনাহসমূহ (সগীরাহ্) মাফ করে দেয়া হবে। তাই তোমরা তোমাদের মৃত্যু (আসন্ন) ব্যক্তিদের কাছে এ সূরা পড়বে।(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৭৮, যঈফ, শুআবূল ঈমান ২২৩১, যঈফাহ্ ৬৬২৩, যঈফ আল জামি‘ ৫৭৮৫, যঈফ আত্তারগীব ৮৮৪। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

(গ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক জিনিসের “কলব” (হৃদয়) আছে। কুরআনের “কলব” হলো, ‘সূরা ইয়াসীন’। যে ব্যক্তি এ সূরা একবার পড়বে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য একবার পড়ার কারণে দশবার কুরআন পড়ার সাওয়াব লিখবেন। (তিরমিযী, দারিমী। ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটিকে গরীব বলেছেন)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৪৭, মাওযূ (জাল) : তিরমিযী ২৮৮৭, দারিমী ৩৪৫৯, যঈফাহ্ ১৬৯, যঈফ আল জামি ১৯৩৫, যঈফ আত্ তারগীব ৮৮৫। কারণ এর সানাদে মুহাম্মাদ-এর পিতা হারূন একজন মিথ্যার অপবাদপ্রাপ্ত রাবী)। হাদিসের মানঃ জাল (Fake)।

(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিন সৃষ্টির এক হাজার বছর পূর্বে সূরা ত্ব-হা- ও সূরা ইয়াসীন পাঠ করলেন। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) (ফেরেশতাগণ) তা শুনে বললেন, ধন্য সে জাতি যাদের ওপর এ সূরা নাযিল হবে। ধন্য সে পেট যে এ সূরা ধারণ করবে। ধন্য সে মুখ (জিহ্বা), যে তা উচ্চারণ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৪৮, মুনকার দারিমী ৩৪৫৭, শুআবূল ঈমান ২২২৫, যঈফাহ্ ১২৪৮। কারণ এর সানাদে ইব্রাহীম সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, মুনকারুল হাদীস। আর ইমাম নাসায়ী (রহঃ) বলেছেন, দুর্বল)।  হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)।

সুরা ইখলাস সম্পর্কে জইফ হাদিসসমূহঃ

(ক) সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) মুরসাল হাদীসরূপে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তি সূরা “ক্বুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ” দশবার পড়ে, বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করা হবে। যে ব্যক্তি বিশবার পড়বে তার জন্য দুটি। আর যে ব্যক্তি ত্রিশবার পড়বে তার জন্য জান্নাতে তিনটি প্রাসাদ তৈরি করা হবে। এ কথা শুনে ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ, হে আল্লাহর রসূল! যদি তা-ই হয় তাহলে তো আমরা অনেক প্রাসাদ লাভ করব। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর রহমত এর চেয়েও অধিক প্রশস্ত (এতে বিস্ময়ের কিছু নেই হে ‘উমার!)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৮৫, যঈফ  দারিমী ৩৪৭২। কারণ এর সানাদটি মুরসাল)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

(খ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন দুইশ বার সূরা ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ পড়বে তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হবে। যদি তার ওপর কোন ঋণের বোঝা না থাকে। (তিরমিযী ও দারিমী। কিন্তু দারিমীর বর্ণনায় [দুইশ বারের জায়গায়] পঞ্চাশ বারের কথা উল্লেখ হয়েছে। তিনি ঋণের কথা উল্লেখ করেননি)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৫৮, যঈফ তিরমিযী ২৮৯৮, যঈফ আত্ তারগীব ৯৭৫, যঈফ আল জামি‘ ৫৭৮৩, যঈফাহ্ ৩০০, দারিমী,৩৪৪১ যঈফ আত্ তারগীব ৯৭৫। কারণ এর সানাদে রাবী হাতিম ইবনু মায়মূন মুনকারুল হাদীস। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, সে মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

(গ) আনাস (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ঘুমাবার জন্য বিছানায় যাবে এবং ডান পাশের উপর শোয়ার পর একশ  বার সূরা ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’পড়বে, কিয়ামতের দিন প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন, হে আমার বান্দা! তুমি তোমার ডান দিকের জান্নাতে প্রবেশ করো। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান তবে গরীব)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৫৯, যঈফ  তিরমিযী ২৮২৯৮, যঈফ আত্ তারগীব ৩৪৮, য‘ঈফ আল জামি‘ ৫৩৮৯। কারণ এর সানাদে রাবী হাতিম ইবনু মায়মূন মুনকারুল হাদীস )। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

সালাম ফিরানোর পর ইমাম বা মুক্তাদী কোন দো‘আ না পড়েই কি উঠে যেতে পারবে?

সালাম ফিরানোর পর ইমাম ও মুক্তাদী সকলের জন্য মুছাল্লায় বসে দো‘আ ও যিকির করা সুন্নাত। কারণ এ সময়ে ফেরেশতাগণ দো‘আ পাঠরত মুছল্লীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, মুছল্লী ছালাত শেষে যতক্ষণ স্বীয় স্থানে বসে তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করে, ততক্ষণ ফেরেশতামন্ডলী তার জন্য দো‘আ করতে থাকে এই মর্মে যে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর ও তার উপর রহম কর।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘরে অথবা (ব্যাস্ততার কারণে) কারো বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে মসজিদে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করার সাওয়াব পঁচিশ গুণ বেশী। কারণ কোন ব্যক্তি ভালো করে (সকল আদাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে) ওযু করে নিঃস্বার্থভাবে সালাত (আদায় করার জন্যই মসজিদে আসে। তার প্রতি ক্বদমের বিনিময়ে একটি সাওয়াবে তার মর্যাদা বেড়ে যায়, আর একটি গুনাহ কমে যায়। এভাবে মসজিদে পৌঁছা পর্যন্ত (চলতে থাকে)। সালাত আদায় শেষ করে যখন সে মুসল্লায় বসে থাকে, মালায়িকাহ্ অনবরত এ দু‘আ করতে থাকেঃ ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তার ওপর রহমত বর্ষণ কর।’’ আর যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, সে সময়টা তার সালাতের সময়ের মধ্যেই পরিগণিত হবে।

আর এক বর্ণনার শব্দ হলো, ‘যখন কেউ মসজিদে গেল, আর সালাতের জন্য অবস্থান করলো সেখানে, তাহলে সে যেন সালাতেই রইল। আর মালায়িকার দু‘আর শব্দাবলী আরো বেশিঃ ‘‘হে আল্লাহ! এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। তার তওবা্ ক্ববূল কর’’। এভাবে চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্য কোন মুসলিমকে কষ্ট না দেয় বা তার উযূ ছুটে না যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭০২, সহীহ মুসলিম ৬৪৭, ৬৪৯, বুখারী ৪৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে কেউ যদি ওযরের কারণে যিকির-আযকার সংক্ষিপ্ত করতে চায় তবে কমপক্ষে তিনি ‘আল্ল-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু, তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম’ বলে উঠে যাবেন (বুখারী ৮৪৯; মুসলিম ৫৯২; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)  ৯৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।

(ক) “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)।

(খ) “তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)।

(গ) নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

 “যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]

(ঘ) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী ৩৪৬১,হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮,  রিয়াদুস  সলেহিন,  হাদিস নং  ১৩৮৮।)

==============================

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই একসাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

=============================

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...