বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম-
বিদআত কি? বিদআতীদের শেষ ও করুণ পরিনতিঃ
মাজহাব মানা বিদআত কেনো? বিদআতী ইমামের পিছনে সালাত আদায় করার হুকুম
কি?
(বিদআতীদের তওবা বা কোনো আমল আল্লাহর নিকট গৃহীত হবে না, যতোক্ষণ না
বিদআতী কর্মকান্ড থেকে সরে আসবে।)
কোরআন ও সহীহ হাদিস থেকে বিদআত সম্পর্কে শিক্ষাঃ
আল্লাহ তাআলা বলেন :
অতঃপর সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া কী থাকে?
(সূরা ইউনুস আয়াত : ৩২)
এ আয়াত থেকে বিদআত সম্পর্কে শিক্ষা:
এক. এ আয়াতে হক তথা সত্য বলতে দীনে ইসলামকে বুঝনো
হয়েছে।
দুই. ইসলাম পূর্ণতা লাভ করার পর ইসলামের নামে দীনের
মধ্যে যা কিছু সংযোজিত, আবিস্কৃত ও প্রচলিত হবে সব কিছুই ভ্রান্ত বলে প্রত্যাখ্যাত
হবে। আর তা বিদআত বলে গণ্য হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
আমি এ কিতাবে কোন কিছু বাদ রাখিনি। (সূরা আনআম,
আয়াত : ৩৮)
এ আয়াত থেকে বিদআত সম্পর্কে শিক্ষা:
এক. আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে সব কিছু যখন বলে
দিয়েছেন তখন ধর্মে নতুন কোন বিষয় সংযোজন বা বিয়োজন করার প্রয়োজন নেই। যে কোন ধরনের
সংযোজন ও বিয়োজনই বিদআত বলে গণ্য হবে
আল্লাহ তাআলা বলেন :
অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে
তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও। (সূরা নিসা, আয়াত : ৫৯)
এ আয়াত থেকে বিদআত সম্পর্কে
শিক্ষা:
এক. যখন কোন বিষয়ে মত বিরোধ সৃষ্টি হবে তখন তার
সমাধান আল্লাহ তাআলার কিতাব কুরআনুল কারীম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর হাদীসে খুঁজতে হবে।
দুই. আল্লাহর বিধানে সমাধান না খুঁজে নিজেদের পক্ষ
থেকে যুক্তি দিয়ে কোন বিষয় সংযোজন ও বিয়োজন করা যাবে না। কুরআন-সুন্নাহর মূল ধারার
বাইরে কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যাবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার
অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন
করে দেবে। (সূরা আনআম, আয়াত : ১৫৩)
এ আয়াত থেকে বিদআত সম্পর্কে শিক্ষা:
এক. আয়াতটি সূরা আনআমে বর্ণিত আল্লাহ তাআলার
দশটি নির্দেশের একটি।
দুই. আল্লাহ তাআলা যা কিছু করতে বলেছেন। আর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা কিছু প্রমাণিত, সেটা হল সঠিক পথ। আর যা কিছু
প্রমাণিত নয় তা অনুসরণ করা যাবে না। কারণ তা বক্র পথ। সে পথে আছে বিভ্রান্তি।
তিন. সত্য, সঠিক ও সরল পথ একটিই। আর তা হল ইসলাম।
ইসলাম বাদে আছে আরও অনেক পথ। কিন্তু সেগুলো সত্য, সঠিক ও সরল নয়। সেগুলো বিদআত।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
বল, 'যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার
অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি
ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)
এ আয়াত থেকে বিদআত সম্পর্কে শিক্ষা:
এক. আল্লাহ তাআলাকে ভালবাসার দাবী হল রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অনুসরণ করা। যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের অনুসরণ পরিত্যাগ করে সে মূলত: আল্লাহকে ভালবাসে না।
দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
অনুসরণ করে আল্লাহ তাআলাকে ভালবাসলে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ভালবাসা লাভ করা যাবে।
তিন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
অনুসরণ আল্লাহকে ভালবাসার প্রমাণ।
চার. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের অনুসরণ করলে আল্লাহ তাআলার ভালবাসা পাওয়ার সাথে সাথে তাঁর ক্ষমা লাভ করা
যাবে।
পাঁচ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
অনুসরণের দাবী হল, সকল প্রকার বিদআত পরিহার করা। বিদআত থেকে দূরে থাকা। কারণ, তিনি
বিদআতে লিপ্ত হতে নিষেধ করেছেন।
হাদীস - ১.
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের এ বিষয়ে (ধর্মীয় বিষয়ে)
এমন কিছু সৃষ্টি করবে যা এর থেকে (প্রমাণিত) নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের একটি বর্ণনায় এসেছে : যে ব্যক্তি
এমন কোন কাজ করবে যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত।
এ হাদিস থেকে বিদআত সম্পর্কে শিক্ষা:
এক. বিদআত ইসলামে নিষিদ্ধ। ইহুদী ও খৃষ্টধর্মসহ
অন্যান্য আসমানী ধর্মগুলো বিদআতের কারণেই নি:শেষ হয়ে গেছে। ধর্মে নতুন বিষয় প্রচলন
করার কারণে এ সব ধর্মের মূল কাঠামো আর অবশিষ্ট থাকেনি।
দুই. আলোচ্য হাদীসে 'আমাদের এ বিষয়ের মধ্যে' বাক্য
দ্বারা ইসলামের ধর্মীয় বিষয় বুঝানো হয়েছে। ইসলামের ধর্মীয় আচার-আচরণে কোন নতুন
বিষয় সংযোজন, প্রচলন, আবিস্কার করা যাবে না। অতএব জাগতিক ও পার্থিব বিষয়ে নতুন আবিস্কার,
উদ্ভাবন বা নতুন কিছুর প্রচলন নিষিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যাত নয়।
তিন. ধর্মে নতুন বিষয় প্রচলন করা, আবিস্কার করা
যেমন অন্যায়, তেমনি এর অনুসরণ করে তা পালন করাও অন্যায়।
হাদীস - ২.
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুতবা দিতেন তখন তাঁর চক্ষুদ্বয়
লাল হয়ে যেত। কন্ঠস্বর উচ্চ হয়ে যেত। রাগত ভাব প্রচন্ডভাবে প্রকাশ পেত। মনে হত তিনি
কোন সৈন্যবাহিনীকে সতর্ক করছেন যে, সকালে বা বিকালেই শত্রু বাহিনী এসে পড়বে। তিনি
আরো বলতেন, আমি আর কেয়ামত এমন নিকটবর্তী, এ কথা বলে মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুল দুটো একত্র
করতেন। তিনি আরো বলেনঃ জেনে রাখ! সবচেয়ে ভাল কথা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম
আদর্শ হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। আর ধর্মের মধ্যে
সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে ধর্মে নতুন সৃষ্টি। (এটা বিদআত) আর সব বিদআতই পথভ্রষ্টতা।
তারপর তিনি বলেনঃ আমি প্রত্যেক মুমিনের নিকট
তার প্রাণের চেয়ে আপন। যে ব্যক্তি কোন সম্পদ রেখে মারা যায়, তা তার পরিবারের জন্য।
আর যে ব্যক্তি কোন ঋণ অথবা অসহায় সন্তান রেখে মারা যায়, তাহলে তাদের দায়িত্ব আমার
উপরই। (মুসলিম)
এ হাদিস থেকে বিদআত সম্পর্কে শিক্ষা:
এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
খুতবা ও ভাষণ দানের পদ্ধতি জানা গেল। তিনি উচ্চ কন্ঠে, একজন বীর সেনাপতির মত ভাষণ দিতেন।
আর এভাবে খুতবা প্রদান সুন্নত, তাতে সন্দেহ নেই।
দুই. কেয়ামত আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের আগমন খুবই নিকটবর্তী। মানে এর মধ্যবর্তী সময়ে আর কোন নবী বা রাসূলের
আগমন ঘটবে না।
তিন. খুতবা বা ভাষণে হাত দিয়ে ইশারা-ইঙ্গিত করা
সুন্নত।
চার. সর্বোত্তম কথা ও সর্বোত্তম আদর্শ সম্পর্কে
জানতে পারলাম। একইভাবে সবচেয়ে খারাপ বিষয় সম্পর্কেও জানতে পারলাম। আর তা হল বিদআত।
কারণ, সকল বিদআতই মানুষকে পথভ্রষ্ট করে। যেমন খৃষ্ট ধর্মে বিদআত খৃষ্টানদেরকে পথভ্রষ্ট
করে পৌত্তলিকতায় লিপ্ত করেছে।
পাঁচ. প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তির কাছে তার প্রাণ যেমন
আপন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চেয়েও আপন।
ছয়. তিনি এই খুতবাতে ইসলামী রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ
মূলনীতি বর্ণনা করলেন। তা হল, কোন ব্যক্তি ঋণ রেখে মারা গেলে তা আদায় করা রাষ্ট্রের
দায়িত্ব। এমনিভাবে অসহায় সন্তান রেখে মারা গেলে তার লালন-পালনের দায়িত্বও পালন করবে
রাষ্ট্র। কিন্তু যদি কোন সম্পদ রেখে মারা যায় তা পাবে তার পরিবারের লোকজন। রাষ্ট্র
বা সরকার তা গ্রহণ করতে পারবে না।
সাত. জুমার খুতবায় লোকদেরকে বিদআত সম্পর্কে সতর্ক
করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুন্নাত।
বিদআত প্রসঙ্গে আরেকটি হাদীস -
আবু নাজীহ ইরবাজ ইবনে সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের
উদ্দেশ্যে এমন এক বাগ্মীতাপূর্ণ ভাষায় ওয়াজ করলেন, তাতে আমাদের হৃদয় সন্ত্রস্ত হয়ে
গেল আর চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা যেন আপনার
বিদায়ী উপদেশ। আপনি আমাদের আরো উপদেশ দিন। তিনি বললেন: আমি আল্লাহর ব্যাপারে তাকওয়া
অবলম্বনের জন্য তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি। আরো উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা তোমাদের নেতার অনুসরণ
ও আনুগত্য করবে। যদি হাবশী গোলাম তোমাদের আমীর নির্বাচিত হয়, তবুও। আর তোমাদের মধ্যে
যে জীবিত থাকবে সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য হবে, আমার সুন্নাত আঁকড়ে
ধরা ও সৎপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ অনুসরণ করা। এ সুন্নাত ও আদর্শকে খুব
মজবুতভাবে ধারণ করবে। আর (ধর্মের মধ্যে) সকল প্রকার নবসৃষ্ট বিষয় থেকে দূরে থাকবে।
জেনে রাখো, প্রত্যেকটি বিদআতই পথভ্রষ্টতা। (আবু দাউদ, তিরমিজি)
এ হাদিস থেকে বিদআত সম্পর্কে শিক্ষা:
এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এমন ভাষায় ও ভঙ্গিতে ওয়াজ করতেন যাতে শ্রোতাদের চোখে পানি এসে যেত।
দুই. সাহাবায়ে কেরাম সর্বদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াজ-নসীহত, খুতবা-বক্তৃতা শোনার জন্য উদগ্রীব থাকতেন। এতে তারা
কখনো ক্লান্তি বোধ করতেন না।
তিন. তাকওয়া বা সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ ভীতির নীতি
অনুসরণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা উম্মতকে নির্দেশ
দিয়েছেন। প্রতিটি ভাষণ ও খুতবাতে তিনি তাকওয়া অবলম্বন করার উপদেশ দিতেন।
চার. শাসকদের আনুগত্য করা ইসলামে অপরিহার্য। তাদের
সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারন করা, বিদ্রোহ করা, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া, তাদের
আনুগত্য থেকে বের হওয়া ইত্যাদি গুরুতর পাপ। তবে তাদের সংশোধনের জন্য কাজ করা, আনুগত্যের
মধ্যে থেকে সংশোধনের উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের অন্যায়গুলোর সমালোচনা করা দোষের কিছু নয়।
পাঁচ. শাসক যদি অযোগ্য, অপদার্থ হয় তবুও তার আনুগত্য
থেকে বের হয়ে যাওয়া যাবে না। কারণ মুসলিম অথারিটি ইসলামের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়। যদি মুসলমানদের নেতৃত্ব দেয়ার মত অথারিটি না থাকে তাহলে ইসলামের অস্তিত্ব বিপন্ন
হবে। প্রত্যেকে যার যার খুশী মত ইসলাম অনুসরণ করবে। ফলে ইসলামের একটি অভিন্ন রূপ কোথাও
খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ছয়. সর্বক্ষেত্রে একজন মুসলিম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণ করবে। তারপর খোলাফায়ে রাশেদীন -আবু বকর রা.
উমার রা. উসমান রা. ও আলী রা.- এর আদর্শ অনুসরণ করবে। আর যখন কোন বিষয়ে মতভেদ দেখা
দিবে তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর অনুসরণ আরো জরুরী
হয়ে পড়ে। আর সুন্নাহ অনুসরণ করার মাধ্যমে ইখতেলাফ দূর হয়ে উম্মতের মধ্যে ঐক্য কায়েম
হতে পারে। তাই কুরআন ও সুন্নাহ হল ইসলামী ঐক্যের মূলভিত্তি। আর বিদআত হল উম্মতকে বিভক্ত
করার একটি বড় মাধ্যম।
সাত. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ও তার খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শের বিপরীত যা কিছু ধর্ম হিসাবে চালু হবে তার নাম বিদআত।
বিদআত হল সুন্নাহর বিপরীত। বিদআত ইসলামে একটি মারাত্মক অপরাধ।
আট. এ হাদীসে বিদআত থেকে দূরে থাকার জন্য রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলকে সতর্ক করেছেন। বিদআত হল, ধর্মের নামে ধর্মের
মধ্যে নতুন আবিস্কৃত বিষয়। যা আল্লাহ বলেননি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের সুন্নাহ দ্বারা যা প্রমাণিত নয়, সাহাবায়ে কেরামের কেউ যা করেননি তা দীনি
বা সওয়াবের কাজ বলে আমল করার নাম হল বিদআত। বিদআত যেমন কর্মে হয় তেমনি আকীদা- বিশ্বাসেও
হয়ে থাকে।
নয়. 'ধর্মের জন্য নতুন বিষয়ের প্রচলন' আর 'ধর্মের
মধ্যে নতুন বিষয়ের প্রচলন' এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রথমটি বিদআত নয়। দ্বিতীয়টি
বিদআত। প্রথমটি উদাহরণ হিসাবে আজকের যুগের মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আজান ও নামাজে
মাইক ব্যবহার, ইসলামের দাওয়াতে টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদির ব্যবহার পেশ করা যেতে পারে।
এগুলো সব ধর্মের জন্য প্রচলন করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় প্রকারের উদাহরণ হিসাবে মীলাদুন্নবী
উদযাপন, শবে বরাত পালন, ওরস অনুষ্ঠান ইত্যাদি পেশ করা যেতে পারে। এগুলো হল ধর্মের মধ্যে
নতুন আবিস্কার।
বিদআত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনাঃ
ভূমিকাঃ
সুপ্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ আমাদের প্রিয়
মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ নানা ধরণের সমস্যায়
জর্জরিত। তম্মধ্যে ধর্মীয় ক্ষেত্রে অন্যতম বড় সমস্যা হল বিদআত সমস্যা। বর্তমানে আমরা
অজ্ঞতা বা বিভিন্ন কারণে ধর্মের নামে নানা ধরণের বিদআতী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছি।
যার কারণে আমরা যেনো ধীরে ধীরে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাহ
থেকে দূরে সরে পড়ছি। তাই মুসলিম ভাই-বোনদেরকে এ সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে আমার
এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। এতে আমি বিদআতের সংজ্ঞা, বিভক্তি, কি ভাবে বিদআত শুরু হয় এবং
বিদআত করার কি ভয়াবহ পরিণতি ইত্যাদি যথাসম্ভব উদাহরণ দিয়ে প্রমাণ সহকারে আলোচনা করার
চেষ্টা করেছি। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথের উপর অটুট থেকে জীবন পরিচালনা করার তওফীক দান
করুন। (আমিন)
বিদআতের সংজ্ঞাঃ
বিদআতের আবিধানিক অর্থ হল, নব আবিস্কৃত ও নব
উদ্ভাবন। পারিভাষিক অর্থে দ্বীনের মধ্যে নতুন কোন কিছু সংযোজন করার নাম বিদআত।
ইমাম নওবী (রহঃ) বিদআত শব্দের অর্থ লিখেছেন,
“(ছোওয়াবের আশায়) এমন সব কাজ করা বিদআত যার কোন পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই।”
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) লিখেছেন,
“শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত হল, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে ছিল
না এমন নীতি ও পথ কে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে প্রবর্র্তন করা।”
অন্য ভাষায় বলতে গেলে, প্রত্যেক সে কাজকে
বিদআত বলা হয় যা সোয়াব ও পূণ্যের নিয়তে করা হয় কিন্তু শরীয়তে তার কোন ভিত্তি বা
প্রমাণ পাওয়া যায়না। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে
করেননি এবং কাউকে তা করার অনুমতি ও প্রদান করেননি। এরূপ আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণ যোগ্য
হয় না। (বুখারী ও মুসলিম)
দ্বীনের সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকারক বিষয় হলো বিদআতঃ
যেহেতু বিদআতকার্য পূণ্য ও ছাওয়াবের কাজ মনে
করা হয় সেহেতু বিদআতী ব্যক্তি তা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারেনা। অথচ অন্যান্য পাপসমূহে
বোধশক্তি থাকে। তাই আশা করা যায় যে, পাপী কোন না কোন দিন আপন পাপে লজ্জিত হয়ে নিশ্চয়
তওবা-ইস্তেগফার করবে। এ জন্যই ছুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, “শয়তান পাপের পরিবর্তে বিদআতকেই
খুবই ভালোবাসে।”
বিদআতী কাজ যেহেতু সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে
করা হয় সেহেতু বিদআত থেকে তাওবা করার চিন্তা ও করা হয় না। তাই বিদআতীর মৌলিক আকীদা
সংশোধন হওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা।
শরীয়তের দৃষ্টিতে দুটি পাপ এমন আছে যেগুলো
না ছাড়া পর্যন্ত কোন আমল কবুল হয়না । পাপ দুটি হল, শিরক ও বিদআত।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন, “আল্লাহ তাআলা বান্দার পাপ মাফ করতে থাকেন যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালার মাঝে পর্দা
হয়। ছাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, পর্দা কী? তিনি বললেন, “পর্দা হলো,
মানুষ শিরক অবস্থায় মৃত্যু বরণ করা।” (মুসনাদ আহমাদ)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন, “আল্লাহ তায়ালা বিদআতীর তওবা গ্রহণ করবেন না যতক্ষণ না বিদআত ছেড়ে দেয়।”
(তাবারানী)
কিয়ামতের দিন যখন রাসূল আকরাম (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাউযে কাওসারে আসবেন যাদেরকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) তার উম্মত মনে করবেন কিন্তু ফেরেশ্তাগণ বলবেন, এরা হলো সে সকল ব্যক্তি যারা
আপনার পরে বিদআত শরু করে দিয়েছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলবেন,
“সুহকান, সুহকান” “দূর হয়ে যাও, দূর হয়ে যাও সে সকল লোক যারা আমার পরে দ্বীনকে পরিবর্তন
করেছ।” (বুখারী ও মুসলিম)
কিয়ামতের দিন কিছু লোক এমন হবে যারা আমল করে
ক্লান্ত হয়ে গেছে কিন্তু জলন্ত আগুনে তাদেরকে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা গাশিয়া ৩-৪)
বিদআতের বিভক্তিঃ
আমাদের সমাজের এক বড় শ্রেণির লোকের অধিকাংশ
আকীদা ও আমলের ভিত্তি হলো যঈফ (দূর্বল) ও মওযূ (জাল) হাদীস সমূহের উপর। তাই তারা তাদের
সুন্নত বিরোধী ও বিদআত কার্যসমূহকে দ্বীনের সনদ দেয়ার উদ্দেশ্যে বিদআতে হাসানা ও সাইয়্যেআ
দুভাগে বিভক্ত করেছে। আর কিতাব-সুন্নাহের শিক্ষা থেকে অজ্ঞ জনসাধারণকে এটি বোঝানো হচ্ছে
যে, বিদআতে সাইয়্যেআ হলো, বাস্তবে পাপের কাজ কিন্তু বিদআতে হাসানা তো ছোয়াবের কাজ।
অথচ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “কুল্লু বিদআতিন যালালাহ, কুল্লু
যালালাতিন ফিন নার” অর্থাৎ সমস্ত বিদআত পথ ভ্রষ্টতা ও গোমরাহী এবং সমস্ত গোমরাহীর পরিণাম
হচ্ছে জাহান্নাম। (মুসলিম)
বাস্তব কথা হল, বেদআতে হাসানার চোরা দরজা দিয়ে
দ্বীনের মধ্যে অগণিত বিদআতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং বিভিন্ন মাসনূন ইবাদাতের স্থানে গায়রে
মাসনূন ও মনগড়া ইবাদত জায়গা দখল করে সম্পূর্ণ একটি নতুন বিদআতী ধর্মের ভিত্তি রাখা
হয়েছে। পীর-মুরিদীর নামে বেলায়েত, খেলাফত, তরীকত, সুলুক, বাইয়াত, নিসবত, ইজাযত,
তাওয়াজ্জুহ, এনায়েত, ফরয, করম, জালাল, আস্তানা, দরগাহ, খানকাহ, ইত্যাদি পরিভাষা গড়া
হয়েছে। আর মুরাকাবা, মুজাহাদা, রিয়াযত, চিল্লাকোশী, কাশফুল কুবূর, আলোক সজ্জা, সবুচা,
চোমুক, নযর, মানত, কুন্ডা, ঝান্ডা, শ্যামা (গান), রকস (নৃত্য), হাল, ওয়াজদ, ইমামে
যামেন, দোয়া ফায়েয, কাওয়ালী, পুঁথি, সুন্দলমালী, এবং কফিয়ত ইত্যাদি হিন্দু নিয়মে
পুজা পাঠের নিয়ম-নীতি আবিস্কার করা হয়েছে।
মাযার সমূহে সজ্জাদনশীল, গদিনশীল, মাখদূম,
জারুবকাশ, দরবেশ এবং মাস্তনরা এ স্বগড়িত ধর্মের রক্ষণা-বেক্ষণকারী এবং ঝান্ডা ধারী
হয়ে আছে।
ফাতেহা শরীফ, কুল শরীফ, দশম শরীফ, চল্লিশা
শরীফ, গেয়রবী শরীফ, নিয়ায শরীফ, করামত বর্ণনা, স্বগড়িত যিকির আযকার ও ওযীফা সমূহের
মত গায়েরে মাসনূন ও বেদআতী কার্যাবলীকে ইবাদতের স্থান দেয়া হয়েছে।
আর কোথাও এসকল ইবাদতের কিঞ্চিত ধারণা থাকলে
বিদআতের দ্বারা সেগুলোর আসল রূপ বিকৃত করা হয়েছে। উদাহরণ সরূপ, ইবাদতের একটি দিক যিকিরকে
নিন। দেখুন, তাতে কী কী ভাবে কত ধরণের মনগড়া কথা যোগ করা হয়েছে। যেমনঃ
১) ফরয সালাতের পর সম্মিলিতভাবে
মোনাজাত করা ও উচ্চস্বরে যিকির করা।
২) যিকির করার সময় আল্লাহর
নাম মোবারকে কমবেশ করা।
৩) দেড় লক্ষবার আয়াতে কারীমার
যিকিরের জন্য মাহফিল অনুষ্ঠান করা।
৪) মোহাররমের প্রথম রাত্রিকে
যিকিরের জন্য নির্দিষ্ট করা।
৫) সফর মাসকে অশুভ মনে করা।
৬) ২৭ রজবকে শবে মেরাজ মনে করে
যিকিরের ব্যাবস্থা করা।
৭) ১৫ শাবান যিকিরের মাহফিল
অনুষ্ঠান করা।
৮) সায়্যেদ আব্দুল কাদের জিলানী
(রহঃ) নামে ওযীফা পড়া।
৯) সায়্যেদ আব্দুল কাদের জিলানী
(রহঃ) নামে নেসবতকৃত সারা সপ্তাহে ওযীফা পড়া।
১০) দোয়া গান্জুল আরশ, দোয়া
জামিলা, দোয়া সুরয়ানী, দোয়া আক্কাশাহ, দোয়া হিযবুল বাহার, দোয়া আমন, দোয়ায়ে
হাবীব, আহাদ নামা, দরূদে তাজ, দুরূদে শাহী, দুরূদে তুনাজ্জিনা, দুরুদে আকবর, হফত্ হায়কল
শরীফ, চেহেল কাফ, কাদহে মুআয্যাম, শশ কুফল, ইত্যাদি ওযীফা সমূহ গুরুত্বের সহিত পড়া।
এ সব ওযীফা আমাদের দেশে বাস, ট্রেন, গাড়ী ও সাধারণ দোকান গুলিতে খুবই স্বল্প মূল্যে
পাওয়া যায়। যা সাদা-সিধে অজ্ঞ মুসলিম ভায়েরা ক্রয় করে থাকেন। প্রয়োজন বশত দুঃখ-মুসিবতের
সময় কাজে লাগিয়ে থাকে।
বিদআত কিভাবে চালু হয়?
বিদআত উদ্ভত ও চালু হওয়ার মূলে
চারটি কার্যকারণ লক্ষ্য করা যায়ঃ
১) বিদআতী তা নিজের থেকে উদ্ভাবিত করে সমাজে
চালিয়ে দেয়। পরে তা সাধারণভাবে সমাজে প্রচলিত হয়ে পড়ে।
২) কোন আলেম ব্যক্তি হয়ত শরীয়তের বিরোধী একটা
কাজ করেছেন, তা শরীয়তের বিরোধী জানা সত্বেও কিন্তু তা দেখে জাহিল লোকেরা মনে করতে
শুরু করে যে, এ কাজ শরীয়ত সম্মত না হয়ে যায় না। এভাবে এক ব্যক্তির কারণে গোটা সমাজেই
বেদআতের প্রচলন হয়ে পড়ে।
৩) জাহিল লোকেরা শরীয়ত বিরোধী কাজ করতে শুরু
করে। তখন সমাজের আলেমগণ সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরব হয়ে থাকেন। তার প্রতিবাদও করেন
না। সে কাজ করতে নিষেধও করে করেন না। কখনো বলেন না যে, এ কাজ শরীয়তের বিরোধী, তোমরা
এ কাজ কিছুতে করতে পারবে না। এরূপ অবস্থায় আলেমদের দায়িত্ব, সুযোগ ও ক্ষমতা থাকা
সত্বেও বিদআত বা শরীয়ত বিরোধী কাজের প্রতিবাদ কিংবা বিরুদ্ধতা না করার ফলে সাধারণ
লোকদের মনে ধারণা জন্মে যে, এ কাজ নিশ্চয় নাজায়েয হবে না বা বিদআত হবে না। বিদআত
হলে কি আলেম সাহেবেরা প্রতিবাদ করতেন না? অথবা উমুক সভায় এ কাজটি হয়েছে, এ কথাটি
বলা হয়েছে, সেখানে উমুক উমুক বড় আলেম উপস্থিতও ছিলেন তাঁরা যখন এর প্রতিবাদ করেননি
তখন বুঝতে হবে যে, এ কাজ বা কথা শরীয়ত সম্মত হবেই। না হলে তো তাঁরা প্রতিবাদ করতেনই।
এভাবে সম্পূর্ণ বিদআত বা জায়েয কাজ শরীয়ত সম্মত কাজ রূপে পরিচিত ও প্রচলিত হয়ে পড়ে।
৪) কোন কাজ হয়ত মূলতই ভালো, শরীয়ত সম্মত কিংবা
সুন্নত অনুরূপ। কিন্তু বহুকাল পর্যন্ত তা সমাজের লোকদের সামনে বলা হয়নি, প্রচার করা
হয়নি। তখন সে সম্পর্কে জন-সাধারণের ধারণা হয় যে, এ কাজ নিশ্চয় ভল নয়। ভাল হলে আলিম
সাহেবেরা কি এতদিন তা বলতেন না? এভাবে একটি শরীয়ত সম্মত কাজকে শেষ পর্যন্ত শরীয়ত
বিরোধী বলে লোকেরা মনে করতে থাকে। আর এও একটি বিদআত।
জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “ হামদ ও সানা তথা আল্লাহর প্রশংসার পরে মনে রাখবে, সর্বোত্তম
কথা হল, আল্লাহর কিতাব আর সর্বোত্তম নিয়ম-পদ্ধতি হল, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর নিয়ম-পদ্ধতি। আর সবচেয়ে খারাপ কাজ হল, বিদআত তথা দ্বীনে নতুন বিষয়
আবিষ্কার করা। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী।” (মুসলিম)
ইরবায ইবনু সারিয়াহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দ্বীনে নব আবিস্কৃত বিষয়াদী থেকে বাঁচ।
কেননা, প্রত্যেক বিদআত তথা দ্বীনে নব আবিস্কৃত বিষয় গোমরাহী। (ইবনু মাজাহ, সহীহ)
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, “সকল বিদআত
গোমরাহী। যদিও লোকজন তাকে আপাত দৃষ্টিতে ভালো মনে করে।” (দারিমী)
বিদআত সম্প্রসারণের কয়েকটি কারণঃ
১) অন্ধ অনুকরণঃ
শাষকবর্গের অনুকরণার্থে মাযারে উপস্থিতি, ফাতেহাখানী,
কুরআনখানী, জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী, নিরবতা পালন, ওরস ইত্যাদি।
২) বুযুর্গ ব্যক্তিদের অতি ভক্তিঃ
উপমহাদেশে সূফীগণ ইসলামের দাওয়াত নিয়ে পৌঁছলেন
যখন তারা উপলব্ধি করেন যে, এখানে জনসাধারণ গান-বাজনা ও সঙ্গীতকে খুবই পছন্দ করেন তখন
সূফীগণ দাওয়াতের স্বার্থে শ্যামা ও কাওয়ালীর প্রথা চালু করেন।
৩) মতবিরোধ পূর্ণ মাসায়েলের ধোকাঃ
দাওয়াতের ক্ষেত্রে কিছু কিছু লোক মতপার্থক্য
সৃষ্টি করে। যেমন, নামাযে রফয়ে ইয়াদইন (উভয় হাত উঠানো), উচ্চস্বরে আমীন বলা। আবার
কেউ সহীহ হাদীস দূরের কথা যঈফ হাদীস ও নাই যেমন, ফাতেহা প্রথা, কুলখানী প্রথা, দশরী,
চল্লিশা, গেয়ারবী, কুরআন খানী, মীলাদ, বার্ষিকী পালন, কাওয়ালী, সুন্দলমালী, আলোক
সজ্জা, কুন্ডা, ঝান্ডা, ইত্যাদি। এ সকল বিদআত কে ইখতেলাফী মাসায়েল বা মতবিরোধপূর্ণ
বিষয় বলে উড়িয়ে দেয়া মূলত দ্বীনের মধ্যে বিদআত প্রচারে উদ্বুদ্ধ করা।
৪) সহীহ সুন্নাহ থেকে অজ্ঞতাঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এর বিধানাবলী মেনে চলা যেহেতু সকল মুসলমানের উপর ফরয তাই অধিকাংশ লোকেরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামে বর্ণিত প্রত্যেক কথাকে সুন্নত মনে করে আমল শুরু করে দেন।
এমন লোক খুব কমই আছেন যারা এ কথা জাচাই-বাছাই করাকে অবশ্যক মনে করেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামে বর্ণিত কথাটি কি সত্যিই তাঁর কথা? না তার নামে ভূল নেসবত
করা হয়েছে? জন সাধারণের এই দূর্বলতা তথা অজ্ঞতার কারণে অনেক বিদআত ও কুসংস্কার সমাজে
প্রচলিত হয়ে গেছে। যাকে লোকেরা সৎ উদ্দেশ্যে দ্বীন বুঝে প্রতিনিয়ত পালন করে আসছে।
আমার জানামতে এমন অনেক লোক রয়েছে যারা সহীহ ও যঈফ হাদীসের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারার
পর গায়রে মাসনূন কাজ বাদ দিয়ে সুন্নাত সমর্থিত কাজ ধরতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করেন
নি।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন, “যে ব্যক্তি জেনে শুনে আমার প্রতি মিথ্যা কথা নেসবত করবে সে যেন জাহান্নামে
নিজের ঠিকান করে নেয়।” (মুসলিম)
অতএব জনগণকে পথ প্রদর্শনের কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের
গুরু দায়িত্ব হল, তার যেন পরিপূর্ণ জাচাই বাছাইয়ের পর সহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত
মাসায়েলগুলি কেবল জনগণকে বলেন। আর জনগণের বড় দায়িত্ব হল, তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামে নেসবতকৃত কথাকে ততক্ষণ সুন্নাত বলে গ্রহণ করবে না যতক্ষণ
না তাত তার দিকে নেসবতকৃত কথা ও কাজটি বাস্তবে তারই কথা বলে প্রমাণিত হবে।
৫) রাজনৈতিক স্বার্থঃ
বর্তমানে আমাদের দেশে অধিকাংশ ধর্মীয় রাজনৈতিক
দল নিজেদের দলীয় সমর্থন বৃদ্ধি করা বা ভোট বেশি পাওয়ার স্বার্থে বিভিন্ন সময় শিরক-বিদআত
বা অপসংস্কৃতির সাথে আপোষ করতেও দ্বিধা করে না। যে দলগুলো নিজেদের জ্ঞানানুসারে র্শিক-বিদআতের
বিভিষিকা সম্পর্কে সঠিক উপলদ্ধি রাখেন তারা শুধু জনসাধারণের অসন্তুষ্টিকে এড়ানোর জন্য
বিভিন্ন টাল-বাহানার মাধ্যমে এ ব্যাপারে চুপ থাকা বা সত্যকে গোপন করার নিয়ম অবলম্বন
করে আছেন। কখনো বলেন, এটাও বৈধ, ওটাও বৈধ, তবে না করাই বেশি উত্তম ছিল। আবার কখনো বলেন,
অমুক ব্যক্তি এটাকে অবৈধ মনে করতেন কিন্তু অমুকের নিকট এটি বৈধ ইত্যাদি…. আরো অনেক
রকমের কথা। এই পদ্ধতি জন সাধরণের অন্তরে মাসনূন সুন্নাহ ও গায়রে মাসনুন সন্নাহকে সংমিশ্রণ
করে সুন্নাতের গুরুত্বকে একেবারে শেষ করে দিয়েছে। তারা মূলতঃ বিদআতের প্রচার-প্রসারের
পথকেই সুগম করে দিয়েছে।
কোন কোন মুবাল্লিগ যারা ক্ষমতার মসনদে বসে
শিরক ও বিদআতের নিন্দা করতেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তারাও অনেক র্শিকও বিদআতের
কাজে লিপ্ত হচ্ছেন। কোন কোন আলিম যারা কিতাব সুন্নাতের ঝান্ডাবাহী ছিলেন তারাও রাজনৈতিক
অপারগতার নামে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিবর্গের শক্তি বৃদ্ধি কারণ হয়ে যাচ্ছেন। এমনিভারে
কিছু ধর্মীয় পথ প্রদর্শকগণ যারা জাতিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিহাদের প্রতি আহবান করতেন
তারা নিজেরাই অন্যায় গ্রহণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে মগ্ন। রাজনৈতিক স্বর্থের নামে এ
সকল ধর্মীয় দল এবং কতিপয় আলিমদের কথা ও কাজের এই বৈপরিত্ব শিরক-বিদআতের বিরুদ্ধে
অতীতে কৃত দীর্ঘ প্রচেষ্টাকে খুব বেশী ক্ষতি করেছে।
৬) প্রবৃত্তির অনুসরণঃ
এটাই স্বাভাবিক যে, কোন লোক যখন আল্লাহর কিতাব
ও রাসূলের (সাঃ) সুন্নাত থেকে বিমুখ হবে, তখন সে আপন প্রবৃত্তির অনুসরণে লিপ্ত হবে।
যেমন আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন:
অর্থঃ অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না
দেয়, তবে জেনে নিন যে, তারা শুধু নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, আল্লাহর হেদায়েতের
পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে আছে?
নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সমপ্রদায়কে সঠিক পথ দেখান না। (সূরা কাসাসঃ ৫০)
আল্লাহ আরো বলেন:
অর্থঃ আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন? যে
তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন,
তার কান ও অন্তরে মোহর এঁটে দিয়েছেন আর তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর
পর কে তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করবে? অতএব তোমরা কি চিন্তা-ভাবনা করনা? (সূরা আল-জাসিয়াঃ
২৩) সুতরাং আপন খেয়াল-খুশীর অনুসরণ বিদআতের পথকে উম্মুক্ত করে।
৭) আলেমদের অন্ধ অনুসরণঃ
আলেম ও পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ মানুষকে
দলীল-প্রমাণের অনুসরণ এবং সত্য জানার আগ্রহ ও তা কবূল করার পথে বিরাট অন্তরায় হয়ে
দাড়িয়েছে। আল্লাহ্ তায়া’লা বলেন,:
অর্থঃ যখন তাদেরকে বলা হয় আল্লাহ যা অবতীর্ণ
করেছেন, তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে থাকে আমরা বরং আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে যে বিষয়ের
উপর পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব। যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জানতো না এবং সত্য পথপ্রাপ্তও
ছিলনা। (সূরা বাক্বারাঃ ১৭০) ।
বর্তমান যুগের কতক মাজহাবপন্থী, সুফী ও কবর
পুজারীদের একই অবস্থা। তাদেরকে কিতাব ও সুন্নাতের দিকে ডাকা হলে এবং কুরআন-সুন্নাহ
বিরোধী আমলসমূহ বর্জন করতে বলা হলে তারা তাদের মাজহাব, মাশায়েখ এবং বাপ-দাদার দোহাই
দিয়ে থাকে।
৮) কাফির-মুশরিকদের সাদৃশ্য করাঃ
বিধর্মী কাফের-মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য রাখা
নতুন নতুন বিদআত সৃষ্টির বিরাট একটি কারণ। আবু ওয়াকেদ আল- লাইছী (রাঃ)এর হাদীছে একথার
সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমরা রাসূল (সাঃ)এর সাথে হুনাইন যুদ্ধের জন্য
বের হলাম। আমরা ছিলাম নতুন মুসলমান। আমরা দেখলাম মুশরিকদের জন্য একটি বড়ই গাছ রয়েছে।
তারা সেখান থেকে বরকত লাভের আশায় নিজেদের অস্ত্র ঐ গাছে ঝুলিয়ে রাখে। গাছটির নাম
ছিল জাতু আনওয়াত অর্থাৎ বরকতময় বৃক্ষ। আমরা সে গাছটির নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময়
বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! তাদের জন্য যেমন বরকতময় বৃক্ষ রয়েছে, আমাদের জন্যও
একটি বরকতময় বৃক্ষ নির্ধারণ করে দিন। যাতে আমরা যুদ্ধের অস্ত্র ঝুলিয়ে রাখব এবং বরকত
হাসিল করব। রাসূল (সাঃ) তাদের কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, “আল্লাহু আকবার”
নিশ্চয় এটি একটি পথ। ঐ সত্বার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, তোমরা এমন রীতি-নীতির কথা
বললে যেমনটি বলেছিল বনী ইসরাইল সমপ্রদায় আল্লাহর নবী মূসা (আঃ)কে। আল্লাহ্ বলেন:
অর্থঃ তারা বলেছিল, হে মূসা! তাদের জন্য যেমন
মা’বূদ রয়েছে, আমাদের জন্যও অনুরূপ একটি মা’বূদ নির্ধারণ করে দিন। মূসা (আঃ) বললেন,
নিশ্চয় তোমরা একটি মূর্খ জাতি। (সূরা আরাফঃ ১৩৮) অতঃপর নবী (সাঃ) বললেন, তোমরা তো
দেখছি অবশ্যই অতীত জাতিসমূহের পথের অনুসরণ করবে।
এই হাদীছের মাধ্যমে জানতে পারা যায় যে, কাফেরদের
সাথে সাদৃশ্য করাই বনী ইসরাঈলদেরকে তাদের নবীর কাছে এরকম একটি জঘন্য আবদার করতে উৎসাহিত
করেছে। তাদের আবদার ছিল, তাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য একটি মাবূদ নির্ধারণ করে দেয়া
হোক, তারা সে মাবূদের এবাদত করবে এবং তা থেকে বরকত হাসিল করবে। বর্তমান কালেও একই অবস্থা।
অধিকাংশ মুসলমান বিদআত ও শির্কী কর্মসমূহে কাফের-মুশরেকদের অনুসরণ করে চলেছে। যেমন
ঈদে মীলাদুন্ নবী, বিভিন্ন উপলক্ষে দিন ও সপ্তাহ পালন করা, ধর্মীয় বিভিন্ন উপলক্ষে
অনুষ্ঠান পালন করা, নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতিমূর্তি তৈরী করা, স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন
করা, মাতম করা, মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রকার বিদআতের প্রচলন করা, কবরের
উপর গম্বুজ নির্মাণ করা ইত্যাদি।
বিদ‘আতের বৈশিষ্ট্য :
বিদ‘আতের চারটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে :
১. বিদ‘আতকে বিদ‘আত হিসেবে চেনার জন্য সুনির্দিষ্ট
কোন দলীল পাওয়া যায় না; তবে তা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে মূলনীতিগত ‘আম ও সাধারণ দলীল
পাওয়া যায়।
২. বিদ‘আত সবসময়ই শরীয়তের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য
ও মাকাসিদ এর বিপরীত ও বিরোধী অবস্থানে থাকে। আর এ বিষয়টিই বিদ‘আত নিকৃষ্ট ও বাতিল
হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এ জন্যই হাদীসে বিদ‘আতকে ভ্রষ্টতা বলে অভিহিত করা হয়েছে।
৩. অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদ‘আত এমন সব কার্যাবলী
সম্পাদনের মাধ্যমে হয়ে থাকে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম ও সাহাবাদের
যুগে প্রচলিত ছিল না। ইমাম ইবনুল জাওযী রহ: বলেন,
‘বিদ‘আত বলতে বুঝায় এমন কাজকে যা ছিল না, অতঃপর তা উদ্ভাবন
করা হয়েছে’।[7]
৪. বিদ‘আতের সাথে শরীয়তের কোনো কোনো ইবাদাতের
কিছু মিল থাকে। দু’টো ব্যাপারে এ মিলগুলো লক্ষ্য করা যায়:
প্রথমত : দলীলের দিক থেকে এভাবে মিল রয়েছে যে,
কোনো একটি ‘আম দলীল কিংবা সংশয় অথবা ধারণার ভিত্তিতে বিদ‘আতটি প্রচলিত হয় এবং খাস
ও নির্দিষ্ট দলীলকে পাশ কাটিয়ে এ ‘আম দলীল কিংবা সংশয় অথবা ধারণাটিকে বিদ‘আতের সহীহ
ও সঠিক দলীল বলে মনে করা হয়।
দ্বিতীয়ত : শরীয়ত প্রণীত ইবাদাতের রূপরেখা ও পদ্ধতির
সাথে বিদ‘আতের মিল তৈরী করা হয় সংখ্যা, আকার-আকৃতি, সময় বা স্থানের দিক থেকে কিংবা
হুকুমের দিক থেকে। এ মিলগুলোর কারণে অনেকে একে বিদ‘আত মনে না করে ইবাদাত বলে গণ্য করে
থাকেন।
বিদ‘আত নির্ধারণে মানুষের মতপার্থক্য :
বিদ‘আত নির্ধারণে মানুষ সাধারণতঃ
তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত :
এক : দলীল
পাওয়া যায় না এমন প্রতিটি বিষয়কে এক শ্রেণীর মানুষ বিদ‘আত হিসেবে চিহ্নিত
করছে এবং এক্ষেত্রে তারা বিশেষ বাছ-বিচার না করেই সব কিছুকে (এমন কি মু‘আমালার বিষয়কেও)
বিদ‘আত বলে অভিহিত করছে। এদের কাছে বিদ‘আতের সীমানা বহুদূর বিস্তৃত।
দুই : যারা দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবিত সকল বিষয়কে
বিদ‘আত বলতে রাজী নয়; বরং বড় বড় নতুন কয়েকটিকে বিদ‘আত বলে বাকী সবকিছু শরীয়তভুক্ত
বলে তারা মনে করে। এদের কাছে বিদ‘আতের সীমানা খুবই ক্ষুদ্র।
তিন : যারা যাচাই-বাছাই করে শুধুমাত্র প্রকৃত
বিদ‘আতকেই বিদ‘আত বলে অভিহিত করে থাকেন। এরা মধ্যম পন্থাবলম্বী এবং হকপন্থী।
বিদ‘আতের মৌলিক নীতিমালাঃ
বিদ‘আতের তিনটি মৌলিক নীতিমালা রয়েছে। সেগুলো
হল :
১. এমন ‘আমলের মাধ্যমে আল্লাহ্র নিকট সাওয়াবের
আশা করা যা শরীয়ত সিদ্ধ নয়। কেননা শরীয়তের স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম হল- এমন আমল দ্বারা
আল্লাহ্র নিকট সাওয়াবের আশা করতে হবে যা কুরআনে আল্লাহ নিজে কিংবা সহীহ হাদীসে তাঁর
রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম অনুমোদন করেছেন। তাহলেই কাজটি ইবাদাত
বলে গণ্য
হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম যে আমল
অনুমোদন করেন নি সে আমলের মাধ্যমে আল্লাহ্র ইবাদাত করা হবে বিদ‘আত।
২. দ্বীনের অনুমোদিত ব্যবস্থা ও পদ্ধতির বাইরে
অন্য ব্যবস্থার অনুসরণ ও স্বীকৃতি প্রদান। ইসলামে একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, শরীয়তের বেঁধে
দেয়া পদ্ধতি ও বিধানের মধ্যে থাকা ওয়াজিব। যে ব্যক্তি ইসলামী শরীয়ত ব্যতীত অন্য
বিধান ও পদ্ধতি অনুসরণ করল ও তার প্রতি আনুগত্যের স্বীকৃতি প্রদান করল সে বিদ‘আতে লিপ্ত
হল।
৩. যে সকল কর্মকান্ড সরাসরি বিদ‘আত না হলেও বিদ‘আতের
দিকে পরিচালিত করে এবং পরিশেষে মানুষকে বিদ‘আতে লিপ্ত করে, সেগুলোর হুকুম বিদ‘আতেরই
অনুরূপ।
জেনে রাখা ভাল যে, ‘সুন্নাত’-এর অর্থ বুঝতে
ভুল হলে বিদ‘আত চিহ্নিত করতেও ভুল হবে।
এদিকে ইঙ্গিত করে ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন,
‘‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সুন্নাতকে বিদ‘আত থেকে পৃথক করা; কেননা সুন্নাত হচ্ছে ঐ
বিষয়,শরীয়ত প্রণেতা যার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর বিদ‘আত হচ্ছে ঐ বিষয় যা শরীয়ত
প্রণেতা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত বলে অনুমোদন করেন নি। এ বিষয়ে মানুষ মৌলিক ও অমৌলিক অনেক
ক্ষেত্রে প্রচুর বিভ্রান্তির বেড়াজালে নিমজ্জিত হয়েছে। কেননা, প্রত্যেক দলই ধারণা
করে যে, তাদের অনুসৃত পন্থাই হ’ল সুন্নাত এবং তাদের বিরোধীদের পথ হল বিদ‘আত।’’[8]
বিদ‘আতের উপরোল্লিখিত তিনটি প্রধান মৌলিক নীতিমালার
আলোকে বিদ‘আতকে চিহ্নিত করার জন্য আরো বেশ কিছু সাধারণ নীতিমালা শরীয়ত বিশেষজ্ঞ আলেমগণ
নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যদ্দ্বারা একজন সাধারণ মানুষ সহজেই কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসের
ভিত্তিতে বিদ‘আতের পরিচয় লাভ করতে পারে ও সমাজে প্রচলিত বিদ‘আতসমূহকে চিহ্নিত করতে
পারে। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হল শরীয়তের দৃষ্টিতে যা বিদ‘আত তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে
জেনে নেয়া ও তা থেকে পুরোপুরি বেঁচে থাকা। নীচে উদাহরণ স্বরূপ কিছু দৃষ্টান্তসহ আমরা
অতীব গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় নীতিমালা উল্লেখ করছি।
প্রথম নীতি :
অত্যধিক দুর্বল, মিথ্যা ও জাল হাদীসের ভিত্তিতে
যে সকল ইবাদাত করা হয়, তা শরীয়তে বিদ‘আত বলে বিবেচিত।
এটি বিদ‘আত চিহ্নিত করার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
একটি নীতি। কেননা ইবাদাত হচ্ছে পুরোপুরি অহী নির্ভর। শরীয়তের কোন বিধান কিংবা কোন
ইবাদাত শরীয়তের গ্রহণযোগ্য সহীহ দলীল ছাড়া সাব্যস্ত হয় না। জাল বা মিথ্যা হাদীস
মূলতঃ হাদীস নয়। অতএব এ ধরনের হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হওয়া কোন বিধান বা ইবাদাত শরীয়তের
অংশ হওয়া সম্ভব নয় বিধায় সে অনুযায়ী আমল বিদ‘আত হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে থাকে। অত্যধিক
দুর্বল হাদীসের ব্যাপারে জমহুর মুহাদ্দিসগণের মত হল এর দ্বারাও শরীয়তের কোন বিধান
সাব্যস্ত হবে না।
উদাহরণ :
রজব মাসের প্রথম জুমু‘আর রাতে অথবা ২৭শে রজব
যে বিশেষ শবে মি‘রাজের সালাত আদায় করা হয় তা বিদ‘আত হিসেবে গণ্য। অনুরূপভাবে নিসফে
শা‘বান বা শবেবরাতের রাতে যে ১০০ রাকাত সালাত বিশেষ পদ্ধতিতে আদায় করা হয় যাকে সালাতুর
রাগায়েব বলেও অভিহিত করা হয়,তাও বিদ‘আত হিসেবে গণ্য। কেননা এর ফযীলত সম্পর্কিত হাদীসটি জাল।[9]
দ্বিতীয় নীতি :
যে সকল ইবাদাত শুধুমাত্র মনগড়া মতামত ও খেয়াল-খুশীর
উপর ভিত্তি করে প্রণীত হয় সে সকল ইবাদাত বিদ‘আত হিসেবে গণ্য। যেমন কোন এক ‘আলিম বা
আবেদ ব্যক্তির কথা কিংবা কোন দেশের প্রথা অথবা স্বপ্ন কিংবা কাহিনী যদি হয় কোন ‘আমল
বা ইবাদাতের দলীল তাহলে তা হবে বিদ‘আত।
দ্বীনের প্রকৃত নীতি হল- আল কুরআন ও সুন্নাহ্র
মাধ্যমেই শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কাছে জ্ঞান আসে। সুতরাং শরীয়তের হালাল-হারাম
এবং ইবাদাত ও ‘আমল নির্ধারিত হবে এ দু’টি দলীলের ভিত্তিতে। এ দু’টি দলীল ছাড়া অন্য
পন্থায় স্থিরীকৃত ‘আমল ও ইবাদাত তাই বিদ‘আত বলে গণ্য হবে। এ জন্যই বিদ‘আতপন্থীগণ তাদের
বিদ‘আতগুলোর ক্ষেত্রে শরয়ী দলীলের অপব্যাখ্যা করে সংশয় সৃষ্টি করে।
এ প্রসঙ্গে ইমাম শাতেবী রহ. বলেন, “সুন্নাতী
তরীকার মধ্যে আছে এবং সুন্নাতের অনুসারী বলে দাবীদার যে সকল ব্যক্তি সুন্নাতের বাইরে
অবস্থান করছে, তারা নিজ নিজ মাসআলাগুলোতে সুন্নাহ্ দ্বারা দলীল পেশের ভান করেন।’’[10]
উদাহরণ :
১। কাশ্ফ, অন্তর্দৃষ্টি তথা মুরাকাবা-মুশাহাদা,
স্বপ্ন ও কারামাতের উপর ভিত্তি করে শরীয়াতের হালাল হারাম নির্ধারণ করা কিংবা কোন বিশেষ‘আমল
বা ইবাদাতের প্রচলন করা।[11]
২। শুধুমাত্র ‘আল্লাহ’ কিংবা হু-হু’ অথবা ‘ইল্লাল্লাহ’
এর যিকর উপরোক্ত নীতির আলোকে ইবাদাত বলে গণ্য হবে না। কেননা কুরআন কিংবা হাদীসের কোথাও
এরকম যিকর অনুমোদিত হয় নি।[12]
৩। মৃত অথবা অনুপস্থিত সৎব্যক্তিবর্গকে আহবান
করা, তাদের কাছে প্রার্থনা করা ও সাহায্য চাওয়া, অনুরূপভাবে ফেরেশতা ও নবী-রসূলগণের
কাছে দু‘আ করাও এ নীতির আলোকে বিদ‘আত বলে সাব্যস্ত হবে। শেষোক্ত এ বিদ‘আতটি মূলতঃ শেষ
পর্যন্ত বড় শির্কে পরিণত হয়।
তৃতীয় নীতি :
কোন বাধা-বিপত্তির কারণে নয় বরং এমনিতেই রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম যে সকল ‘আমল ও ইবাদাত থেকে বিরত থেকে ছিলেন,পরবর্তীতে
তার উম্মাতের কেউ যদি সে ‘আমল করে, তবে তা শরীয়তে বিদ‘আত হিসেবে গণ্য হবে।
কেননা তা যদি শরীয়তসম্মত হত তাহলে তা করার
প্রয়োজন বিদ্যমান ছিল। অথচ কোন বাধাবিপত্তি ছাড়াই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম
সে‘আমল বা ইবাদাত ত্যাগ করেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ‘আমলটি শরীয়তসম্মত নয়। অতএব
সে ‘আমল করা যেহেতু আর কারো জন্য জায়েয নেই, তাই তা করা হবে বিদ‘আত।
উদাহরণঃ
১। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমা‘ ছাড়া অন্যান্য
সালাতের জন্য ‘আযান দেয়া। উপরোক্ত নীতির আলোকে বিদ‘আত বলে গণ্য হবে।
২। সালাত শুরু করার সময় মুখে নিয়তের বাক্য পড়া।
যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম ও সাহাবীগণ এরূপ করা থেকে বিরত থেকেছিলেন
এবং নিয়ত করেছিলেন শুধু অন্তর দিয়ে, তাই নিয়তের সময় মুখে বাক্য পড়া বিদ‘আত বলে
গণ্য হবে।
৩। বিপদ-আপদ ও ঝড়-তুফান আসলে ঘরে আযান দেয়াও
উপরোক্ত নীতির আলোকে বিদ‘আত বলে গণ্য হবে। কেননা বিপদ-আপদে কী পাঠ করা উচিত বা কী
‘আমল করা উচিত তা হাদীসে সুন্দরভাবে বর্ণিত আছে।
৪। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম এর জন্মোৎসব
পালনের জন্য কিংবা আল্লাহর কাছে সাওয়াব ও বরকত লাভের প্রত্যাশায় অথবা যে কোন কাজে
আল্লাহর সাহায্য লাভের উদ্দেশে মিলাদ পড়া উপরোক্ত নীতির আলোকে বিদ‘আত বলে গণ্য হবে।
চতুর্থ নীতি :
সালাফে সালেহীন তথা সাহাবায়ে কেরাম, ও তাবেয়ীন
যদি কোন বাধা না থাকা সত্ত্বেও কোন ইবাদাতের কাজ করা কিংবা বর্ণনা করা অথবা লিপিবদ্ধ
করা থেকে বিরত থেকে থাকেন, তাহলে এমন পরিস্থিতিতে তাদের বিরত থাকার কারণে প্রমাণিত
হয় যে, কাজটি তাদের দৃষ্টিতে শরীয়তসিদ্ধ নয়। কারণ তা যদি শরীয়তসিদ্ধ হত তাহলে তাদের
জন্য তা করার প্রয়োজন বিদ্যমান ছিল। তা সত্ত্বেও যেহেতু তারা কোন বাধাবিপত্তি ছাড়াই
উক্ত ‘আমল ত্যাগ করেছেন, তাই পরবর্তী যুগে কেউ এসে সে ‘আমাল বা ইবাদাত প্রচলিত করলে
তা হবে বিদ‘আত।
হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘‘যে সকল
ইবাদাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম এর সাহাবাগণ করেন নি তোমরা সে সকল ইবাদাত
কর না।’’[13]
মালিক ইবনে আনাস রহ. বলেন, ‘‘এই উম্মাতের প্রথম
প্রজন্ম যে ‘আমল দ্বারা সংশোধিত হয়েছিল একমাত্র সে ‘আমল দ্বারাই উম্মাতের শেষ প্রজন্ম
সংশোধিত হতে পারে।’’[14]
ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. কিছু বিদ‘আতের প্রতিবাদ
করতে গিয়ে বলেন, ‘‘এ কথা জানা যে, যদি এ কাজটি শরীয়তসম্মত ও মুস্তাহাব হত যদ্দ্বারা
আল্লাহ সাওয়াব দিয়ে থাকেন, তাহলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম এ ব্যাপারে
সবচেয়ে বেশী অবহিত থাকতেন এবং অবশ্যই তাঁর সাহাবীদেরকে তা জানাতেন, আর তাঁর সাহাবীরাও
সে বিষয়ে অন্যদের চেয়েও বেশী অবহিত থাকতেন এবং পরবর্তী লোকদের চেয়েও এ ‘আমলে বেশী
আগ্রহী হতেন। কিন্তু যখন তারা এ প্রকার ‘আমলের দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করলেন না তাতে বোঝা
গেল যে, তা নব উদ্ভাবিত এমন বিদ‘আত যাকে তারা ইবাদাত, নৈকট্য ও আনুগত্য হিসেবে বিবেচনা
করতেন না। অতএব এখন যারা একে ইবাদাত, নৈকট্য, সাওয়াবের কাজ ও আনুগত্য হিসাবে প্রদর্শন
করছে তারা সাহাবাদের পথ ভিন্ন অন্য পথ অনুসরণ করছেন এবং দ্বীনের মধ্যে এমন কিছুর প্রচলন
করছেন যার অনুমতি আল্লাহ প্রদান করেন নি।’’[15]
তিনি আরো বলেন, ‘‘আর যে ধরনের ইবাদাত পালন
থেকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বিরত থেকেছেন অথচ তা যদি শরীয়াতসম্মত
হত তাহলে তিনি নিজে তা অবশ্যই পালন করতেন, অথবা অনুমতি প্রদান করতেন এবং তাঁর পরে খলিফাগণ
ও সাহাবীগণ তা পালন করতেন। অতএব এ কথা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করা ওয়াজিব যে এ কাজটি
বিদ‘আত ও ভ্রষ্টতা।’’[16]
এর দ্বারা বুঝা গেল যে, যে সকল ইবাদাত পালন
করা থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম নিজে এবং তাঁর পরে উম্মাতের প্রথম প্রজন্মের
আলিমগণ বিরত থেকেছিলেন নিঃসন্দেহে সেগুলো বিদ‘আত ও ভ্রষ্টতা। পরবর্তী যুগে কিংবা আমাদের
যুগে এসে এগুলোকে ইবাদাত হিসেবে গণ্য করার কোন শর‘য়ী ভিত্তি নেই।
উদাহরণ :
১। ইসলামের বিশেষ বিশেষ দিবসসমূহ ও ঐতিহাসিক উপলক্ষগুলোকে
ঈদ উৎসবের মত উদযাপন করা। কেননা ইসলামী শরীয়াতই ঈদ উৎসব নির্ধারণ ও অনুমোদন করে। শরীয়াতের
বাইরে অন্য কোন উপলক্ষকে ঈদ উৎসবে পরিণত করার ইখতিয়ার কোন ব্যক্তি বা দলের নেই। এ
ধরনের উপলক্ষের মধ্যে একটি রয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম এর জন্ম উৎসব
উদযাপন। সাহাবীগণ ও পূর্ববর্তী ‘আলিমগণ হতে এটি পালন করাতো দূরের কথা বরং অনুমোদন দানের
কোন বর্ণনাও পাওয়া যায় না।
ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন, “এ কাজটি পূর্ববর্তী
সালাফগণ করেন নি অথচ এ কাজ জায়িয থাকলে সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে তা পালন করার কার্যকারণ
বিদ্যমান ছিল এবং পালন করতে বিশেষ কোন বাধাও ছিল না। যদি এটা শুধু কল্যাণের কাজই হতো
তাহলে আমাদের চেয়ে তারাই এ কাজটি বেশী করতেন। কেননা তারা আমাদের চেয়েও রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াল্লাম-কে বেশী সম্মান ও মহববত করতেন এবং কল্যাণের কাজে তারা ছিলেন বেশী
আগ্রহী।’’[17]
২। ইতোপূর্বে বর্ণিত সালাত-আর রাগায়েব বা শবে
মি‘রাজের সালাত উল্লেখিত চতুর্থ নীতির আলোকেও বিদ‘আত সাব্যস্ত হয়ে থাকে।
ইমাম ইযযুদ্বীন ইবনু আব্দুস সালাম রহ. এ প্রকার
সালাত এর বৈধতা অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এ প্রকার সালাত যে বিদ‘আত তার একটি প্রমাণ হলো
দ্বীনের প্রথম সারির ‘উলামা ও মুসলিমদের ইমাম তথা সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ীন, তাবে
তাবেয়ীন ও শরীয়াহ বিষয়ে গ্রন্থ প্রণয়নকারী বড় বড় ‘আলিমগণ মানুষকে ফরয ও সুন্নাত
বিষয়ে জ্ঞান দানের প্রবল আগ্রহ পোষণ করা সত্ত্বেও তাদের কারো কাছ থেকে এ সালাত সম্পর্কে
কোন বর্ণনা পাওয়া যায় নি এবং কেউ তাঁর নিজ গ্রন্থে এ সম্পর্কে কিছু লিপিবদ্ধও করেন
নি ও কোন বৈঠকে এ বিষয়ে কোন আলোকপাতও করেন নি। বাস্তবে এটা অসম্ভব যে, এ সালাত আদায়
শরীয়তে সুন্নাত হিসেবে বিবেচিত হবে অথচ দ্বীনের প্রথম সারির ‘আলিমগণ ও মুমিনদের যারা
আদর্শ,বিষয়টি তাদের সকলের কাছে থেকে যাবে সম্পূর্ণ অজানা’’। [আত তারগীব ‘আন সলাতির
রাগাইব আল মাওদুয়া, পৃঃ ৫-৯]
পঞ্চম নীতি :
যে সকল ইবাদাত শরীয়াতের মূলনীতিসমূহ এবং মাকাসিদ
তথা উদ্দেশ্য ও লক্ষের বিপরীত সে সবই হবে বিদ‘আত।
উদাহরণ :
১. দুই ঈদের সালাতের জন্য আযান দেয়া। কেননা নফল
সালাতের জন্য আযান দেয়া শরীয়ত সম্মত নয়। আযান শুধু ফরয সালাতের সাথেই খাস।
২. জানাযার সালাতের জন্য আযান দেয়া। কেননা জানাযার
সালাতে আযানের কোন বর্ণনা নেই, তদুপরি এতে সবার অংশগ্রহণ করার বাধ্যবাধকতাও নেই।
৩. ফরয সালাতের আযানের আগে মাইকে দরূদ পাঠ। কেননা
আযানের উদ্দেশ্য লোকদেরকে জামাআ‘তে সালাত আদায়ের প্রতি আহবান করা,মাইকে দরূদ পাঠের
সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
ষষ্ঠ নীতি :
প্রথা ও মু‘আমালাত বিষয়ক কোনো কাজের মাধ্যমে
যদি শরীয়তের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছাড়াই আল্লাহর কাছে সাওয়াব লাভের আশা করা হয় তাহলে
তা হবে বিদ‘আত।
উদাহরণ :
পশমী কাপড়, চট, ছেঁড়া ও তালি এবং ময়লাযুক্ত
কাপড় কিংবা নির্দিষ্ট রঙের পোষাক পরিধান করাকে ইবাদাত ও আল্লাহর প্রিয় পাত্র হওয়ার
পন্থা মনে করা। একই ভাবে সার্বক্ষণিক চুপ থাকাকে কিংবা রুটি ও গোশত্ ভক্ষণ ও পানি পান
থেকে বিরত থাকাকে অথবা ছায়াযুক্ত স্থান ত্যাগ করে সূর্যের আলোয় দাঁড়িয়ে কাজ করাকে
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পন্থা হিসাবে নির্ধারণ করা।
উল্লেখিত কাজসমূহ কেউ যদি এমনিতেই করে তবে
তা নাজায়িয নয়, কিন্তু এ সকল ‘আদাত কিংবা মোয়ামালাতের কাজগুলোকে যদি কেউ ইবাদাতের
রূপ প্রদান করে কিংবা সাওয়াব লাভের উপায় মনে করে তবে তখনই তা হবে বিদ‘আত। কেননা এগুলো
ইবাদাত ও সওয়াব লাভের পন্থা হওয়ার কোন দলীল শরীয়তে নেই।
সপ্তম নীতি :
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম
যে সকল কাজ নিষেধ করে দিয়েছেন সেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও সাওয়াব লাভের আশা
করা হলে সেগুলো হবে বিদ‘আত।
উদাহরণ :
১। গান-বাদ্য ও কাওয়ালী বলা ও শোনা অথবা নাচের
মাধ্যমে যিকর করে আল্লাহর কাছে সাওয়াবের আশা করা।
২। কাফির, মুশরিক ও বিজাতীয়দের অনুকরণের মাধ্যমে
আল্লাহর নৈকট্য ও সাওয়াব লাভের আশা করা।
অষ্টম নীতি :
যে সকল ইবাদাত শরীয়তে নির্ধারিত সময়, স্থান
ও পদ্ধতির সাথে প্রণয়ন করা হয়েছে সেগুলোকে সে নির্ধারিত সময়, স্থান ও পদ্ধতি থেকে
পরিবর্তন করা বিদ‘আত বলে গণ্য হবে।
উদাহরণ :
১। নির্ধারিত সময় পরিবর্তনের উদাহরণ- যেমন জিলহাজ্জ
মাসের এক তারিখে কুরবানী করা। কেননা, কুরবানীর শরয়ী সময় হল ১০ জ্বিলহাজ্জ ও তৎপরবর্তী
আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলো।
২। নির্ধারিত স্থান পরিবর্তনের উদাহরণ- যেমন মসজিদ
ছাড়া অন্য কোথাও ই‘তিকাফ করা। কেননা, শরীয়ত কর্তৃক ই‘তিকাফের নির্ধারিত স্থান হচ্ছে
মসজিদ।
৩। নির্ধারিত শ্রেণী পরিবর্তনের উদাহরণ- যেমন
গৃহ পালিত পশুর পরিবর্তে ঘোড়া দিয়ে কুরবানী করা।
৪। নির্ধারিত সংখ্যা পরিবর্তনের উদাহরণ- যেমন
পাঁচ ওয়াক্তের অতিরিক্ত ৬ষ্ঠ আরো এক ওয়াক্ত সালাত প্রচলন করা। কিংবা চার রাক‘আত সালাতকে
দুই রাক‘আত, কিংবা দুই রাক‘আতের সালাতকে চার রাক‘আতে পরিণত করা।
৫। নির্ধারিত পদ্ধতি পরিবর্তনের উদাহরণ : অযু
করার শর‘য়ী পদ্ধতির বিপরীতে যেমন দু‘পা ধোয়ার মাধ্যমে অযু শুরু করা এবং তারপর দু‘হাত
ধৌত করা এবং মাথা মাসেহ করে মুখমন্ডল ধৌত করা। অনুরূপভাবে সালাতের মধ্যে আগে সিজদাহ
ও পরে রুকু করা।
নবম নীতি :
‘আম তথা ব্যাপক অর্থবোধক দলিল দ্বারা শরীয়তে
যে সকল ইবাদাতকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে সেগুলোকে কোন নির্দিষ্ট সময় কিংবা নির্দিষ্ট
স্থান অথবা অন্য কিছুর সাথে এমনভাবে সীমাবদ্ধ করা বিদ‘আত বলে গণ্য হবে যদ্দ্বারা প্রতীয়মান
হয় যে, উক্ত ইবাদাতের এ সীমাবদ্ধ করণ প্রক্রিয়া শরীয়তসম্মত, অথচ পূর্বোক্ত ‘আম দলীলের
মধ্যে এ সীমাবদ্ধ করণের উপর কোন প্রমাণ ও দিক নির্দেশনা পাওয়া যায় না।
এ নীতির মোদ্দাকথা হচ্ছে কোন উন্মুক্ত ইবাদাতকে
শরীয়াতের সহীহ দলীল ছাড়া কোন স্থান, কাল বা সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ করা বিদ‘আত হিসেবে
বিবেচিত।
উদাহরণ :
১। যে দিনগুলোতে শরীয়াত রোযা বা সাওম রাখার বিষয়টি
সাধারণভাবে উন্মুক্ত রেখেছে যেমন মঙ্গল বার, বুধবার কিংবা মাসের ৭, ৮ ও ৯ ইত্যাদি তারিখসমূহ,
সে দিনগুলোর কোন এক বা একাধিক দিন বা বারকে বিশেষ ফযীলাত আছে বলে সাওম পালনের জন্য
যদি কেউ খাস ও সীমাবদ্ধ করে অথচ খাস করার কোন দলীল শরীয়তে নেই, যেমন ফাতিহা-ই-ইয়াযদাহমের
দিন সাওম পালন করা, তাহলে শরীয়াতের দৃষ্টিতে তা হবে বিদ‘আত, কেননা দলীল ছাড়া শরীয়াতের
কোন হুকুমকে খাস ও সীমাবদ্ধ করা জায়েয নেই।
২। ফযীলাতপূর্ণ দিনগুলোতে শরীয়াত যে সকল ইবাদাতকে
উন্মুক্ত রেখেছে সেগুলোকে কোন সংখ্যা, পদ্ধতি বা বিশেষ ইবাদাতের সাথে খাস করা বিদ‘আত
হিসাবে গণ্য হবে। যেমন প্রতি শুক্রবার নির্দিষ্ট করে চল্লিশ রাক‘আত নফল সালাত পড়া,
প্রতি বৃহস্পতিবার নির্দিষ্ট পরিমাণ সদাকা করা,অনুরূপভাবে কোন নির্দিষ্ট রাতকে নির্দিষ্ট
সালাত ও কুরআন খতম বা অন্য কোন ইবাদাতের জন্য খাস করা।
দশম নীতি :
শরীয়াতে যে পরিমাণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে ইবাদাত
করতে গিয়ে সে ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশী ‘আমল করার মাধ্যমে বাড়াবাড়ি করা এবং কঠোরতা
আরোপ করা বিদ‘আত বলে বিবেচিত।
উদাহরণ :
১। সারা রাত জেগে নিদ্রা পরিহার করে কিয়ামুল
লাইল এর মাধ্যমে এবং ভঙ্গ না করে সারা বছর সাওম রাখার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন
করা এবং অনুরূপভাবে স্ত্রী, পরিবার ও সংসার ত্যাগ করে বৈরাগ্যবাদের ব্রত গ্রহণ করা।
সহীহ বুখারীতে আনাস ইবনে মালেক (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর হাদীসে যারা সারা বছর সাওম
রাখার ও বিবাহ করে সংসার ধর্ম পালন না করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল তাদের উদ্দেশ্যে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বলেছিলেন :
‘‘আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহর প্রতি সবচেয়ে
বেশী ভয় পোষণ করি এবং তাকওয়া অবলম্বনকারী। কিন্তু আমি সওম পালন করি ও ভাঙ্গি, সালাত
আদায় করি ও নিদ্রা যাপন করি এবং নারীদের বিবাহ করি। যে আমার এ সুন্নাত থেকে বিরাগভাজন
হয়, যে আমার দলভুক্ত নয়।’’[18]
২। হাজ্জের সময় জামরায় বড় বড় পাথর দিয়ে রমী
করা, এ কারণে যে, এগুলো ছোট পাথরের চেয়ে পিলারে জোরে আঘাত হানবে এবং এটা এ উদ্দেশ্যে
যে, শয়তান এতে বেশী ব্যথা পাবে। এটা বিদ‘আত এজন্য যে, শরীয়তের নির্দেশ হল ছোট পাথর
নিক্ষেপ করা এবং এর কারণ হিসেবে হাদীসে বলা হয়েছে যে, ‘‘আল্লাহর যিকর ও স্মরণকে কায়েম
করা।’’[19] উল্লেখ্য যে, পাথর নিক্ষেপের স্তম্ভটি শয়তান বা শয়তানের প্রতিভূ নয়।
হাদীসের ভাষায় এটি জামরাহ। তাই সকল ক্ষেত্রে নিরাপদ হল হাদীস অনুযায়ী ‘আমল করা ও
আকীদা পোষণ করা।
৩। যে পোষাক পরিধান করা শরীয়তে মুবাহ ও জায়েয,
যেমন পশমী কিংবা মোটা কাপড় পরিধান করা তাকে ফযীলাতপূর্ণ অথবা হারাম মনে করা বিদ‘আত,
কেননা এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে বাড়াবাড়ি।
একাদশ নীতি :
যে সকল আকীদাহ, মতামত ও বক্তব্য আল-কুরআন ও
সুন্নাতের বিপরীত কিংবা এ উম্মাতের সালাফে সালেহীনের ইজমা‘ বিরোধী সেগুলো শরীয়াতের
দৃষ্টিতে বিদ‘আত। এই নীতির আলোকে নিম্নোক্ত
দু’টি বিষয় শরীয়াতের দৃষ্টিতে বিদ‘আত ও প্রত্যাখ্যাত বলে গণ্য হবে।
প্রথম বিষয়ঃ নিজস্ব আকল ও বিবেকপ্রসূত মতামতকে অমোঘ
ও নিশ্চিত নীতিরূপে নির্ধারণ করা এবং কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্যকে এ নীতির সাথে মিলিয়ে
যদি দেখা যায় যে, সে বক্তব্য উক্ত মতামতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ তাহলে তা গ্রহণ করা এবং
যদি দেখা যায় যে, কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্য উক্ত মতামত বিরোধী তাহলে সে বক্তব্য প্রত্যাখ্যান
করা। অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহ্র উপরে নিজের আকল ও বিবেককে অগ্রাধিকার দেয়া।
শরীয়াতের দৃষ্টিতে এ বিষয়টি অত্যন্ত গর্হিত
কাজ।
এ ব্যাপারে ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন :
‘‘বিবেকের মতামত অথবা কিয়াস দ্বারা আল কুরআনের বিরোধিতা করাকে সালাফে সালেহীনের কেউই
বৈধ মনে করতেন না। এ বিদ‘আতটি তখনই প্রচলিত হয় যখন জাহমিয়া, মু‘তাযিলা ও তাদের অনুরূপ
কতিপয় এমন ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে যারা বিবেকপ্রসূত রায়ের উপর ধর্মীয় মূলনীতি নির্ধারণ
করেছিলেন এবং সেই রায়ের দিকে কুরআনের বক্তব্যকে পরিচালিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন, যখন
বিবেক ও শরীয়ার মধ্যে বিরোধিতা দেখা দিবে তখন হয় শরীয়াতের সঠিক মর্ম বোধগম্য নয়
বলে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করা হবে অথবা বিবেকের রায় অনুযায়ী তা’বীল ও ব্যাখ্যা করা
হবে। এরা হলো সে সব লোক যারা কোন দলীল ছাড়াই আল্লাহর আয়াতের ব্যাপারে তর্ক করে থাকে।’’[20]
ইবনু আবিল ‘ইয্ আল-হানাফী রহ. বলেন, ‘‘বরং
বিদ‘আতকারীদের প্রত্যেক দলই নিজেদের বিদ‘আত ও যাকে তারা বিবেকপ্রসূত যুক্তি বলে ধারণা
করে তার সাথে কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্যকে মিলিয়ে দেখে। কুরআন সুন্নাহর সে বক্তব্য
যদি তাদের বিদ‘আত ও যুক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় তাহলে তারা বলে, এটি মুহকাম ও দৃঢ়বক্তব্য।
অতঃপর তারা তা দলীলরূপে গ্রহণ করে। আর যদি তা তাদের বিদ‘আত ও যুক্তির বিপরীত হয় তাহলে
তারা বলে, এটি মুতাশাবিহাত ও আবোধগম্য, অতঃপর তারা তা প্রত্যাখ্যান করে..........অথবা
মূল অর্থ থেকে পরিবর্তন করে’’[21]
দ্বিতীয় বিষয়ঃ কোন জ্ঞান ও ইলম ছাড়াই
দ্বীনী বিষয়ে ফাতওয়া দেয়া।
ইমাম শাতিবী রহ. বলেন, ‘‘যারা অনিশ্চিত কোন
বক্তব্যকে অন্ধভাবে মেনে নেয়ার উপর নির্ভর করে অথবা গ্রহণযোগ্য কোন কারণ ছাড়াই কোন
বিষয়কে প্রাধান্য দেয়, তারা প্রকৃত পক্ষে দ্বীনের রজ্জু ছিন্ন করে শরীয়াত বহির্ভূত
কাজের সাথে জড়িত থাকে। আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে এ থেকে আমাদেরকে নিরাপদ রাখুন। ফাতওয়ার
এ পদ্ধতি আল্লাহ তা‘আলার দ্বীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত বিদ‘আতেরই অন্তর্ভুক্ত, তেমনিভাবে
আকল বা বিবেককে দীনের সর্বক্ষেত্রে Dominator হিসেবে স্থির করা নবউদ্ভাবিত বিদ‘আত।’’[22]
দ্বাদশ নীতি :
যে সকল আকীদা কুরআন ও সুন্নায় আসে নি এবং
সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনের কাছ থেকেও বর্ণিত হয় নি, সেগুলো বিদআতী আকীদা হিসেবে
শরীয়তে গণ্য।
উদাহরণ :
১. সুফী তরীকাসমূহের সে সব আকীদা ও বিষয়সমূহ
যা কুরআন ও সুন্নায় আসে নি এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনের কাছ থেকেও বর্ণিত হয়
নি।
ইমাম শাতিবী রহ. বলেন, ‘‘তন্মধ্যে রয়েছে এমন
সব অলৌকিক বিষয় যা শ্রবণকালে মুরিদদের উপর শিরোধার্য করে দেয়া হয়। আর মুরীদের কর্তব্য
হল যা থেকে সে বিমুক্ত হয়েছে পুনরায় পীরের পক্ষ থেকে তা করার অনুমতি ও ইঙ্গিত না
পেলে তা না করা.....এভাবে আরো অনেক বিষয় যা তারা আবিষ্কার করেছে, সালাফদের প্রথম যুগে
যার কোন উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায় না।’’[23]
২. আল্লাহর যাতী গুণাবলীর ক্ষেত্রে [24]الجهة বা দিক-নির্ধারণ الجسم বা শরীর ইত্যাদি সার্বিকভাবে
সাব্যস্ত করা কিংবা পুরোপুরি অস্বীকার করা বিদ‘আত হিসেবে গণ্য। কেননা কুরআন, হাদীস
ও সাহাবায়ে কিরামের বক্তব্যের কোথাও এগুলোকে সরাসরি সাব্যস্ত কিংবা অস্বীকার কোনটাই
করা হয় নি।
এ সম্পর্কে ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ রহ. বলেন,
‘‘সালাফের কেউই আল্লাহর ব্যাপারে الجسم
বা শরীর সাব্যস্ত করা কিংবা অস্বীকার করার বিষয়টি সস্পর্কে কোন বক্তব্য প্রদান করেন
নি। একইভাবে আল্লাহর সম্পর্কে الجواهر
বা মৌলিক বস্তু এবং التحيز
বা অবস্থান গ্রহণ অথবা অনুরূপ কোন বক্তব্যও তারা দেন নি। কেননা এগুলো হলো অস্পষ্ট শব্দ,
যদ্দ্বারা কোন হক প্রতিষ্ঠিত হয় না এবং বাতিলও প্রমাণিত হয় না।.....বরং এগুলো হচ্ছে
সে সকল বিদআতী কালাম ও কথা যা সালাফ ও ইমামগণ প্রত্যাখ্যান করেছেন।’’[25]
আল্লাহর সিফাত সম্পর্কিত মুজমাল ও অস্পষ্ট
শব্দমালার সাথে সালাফে সালেহীনের অনুসৃত ব্যবহারিক নীতিমালা কী ছিল সে সম্পর্কে ইমাম
ইবনু আবিল ইয্ আল-হানাফী রহ. বলেন, ‘‘যে সকল শব্দ (আল্লাহর ব্যাপারে) সাব্যস্ত করা
কিংবা তার থেকে অস্বীকার করার ব্যাপারে নস তথা কুরআন-হাদীসের স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে
তা প্রবলভাবে মেনে নেয়া উচিত। অতএব আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম
যে সকল শব্দ ও অর্থ সাব্যস্ত করেছেন আমরা সেগুলো সাব্যস্ত করব এবং তাদের বক্তব্যে যে
সব শব্দ ও অর্থকে অস্বীকার করা হয়েছে আমরাও সেগুলোকে অস্বীকার করবো। আর যে সব শব্দ
অস্বীকার করা কিংবা সাব্যস্ত করার ব্যাপারে কিছুই আসে নি (আল্লাহর ব্যাপারে) সে সব
শব্দের ব্যবহার করা যাবে না। অবশ্য যদি বক্তার নিয়তের প্রতি লক্ষ্য করলে বুঝা যায়
যে অর্থ শুদ্ধ, তাহলে তা গ্রহণ করা হবে। তবে সে বক্তব্য কুরআন-হাদীসের শব্দ দিয়েই
ব্যক্ত করা বাঞ্ছনীয়, মুজমাল ও অস্পষ্ট শব্দ দিয়ে নয়........।’’[26]
ত্রয়োদশ নীতি
দ্বীনী ব্যাপারে অহেতুক তর্ক, ঝগড়া-বিবাদ
ও বাড়াবাড়িপূর্ণ প্রশ্ন বিদ‘আত হিসেবে গণ্য। এ নীতির মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো শামিলঃ
১. মুতাশাবিহাত বা মানুষের বোধগম্য নয় এমন
বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা। ইমাম মালেক রহ.-কে এক ব্যক্তি আরশের উপর আল্লাহর استواء বা উঠার প্রকৃতি-ধরণ সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন ‘‘কিরূপ উঠা তা বোধগম্য নয়, তবে استواء বা উঠা একটি জানা ও জ্ঞাত
বিষয়, এর প্রতি ঈমান রাখা ওয়াজিব এবং প্রশ্ন করা বিদ‘আত।[27]
ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ রহ. বলেন, ‘‘কেননা এ প্রশ্নটি
ছিল এমন বিষয় সম্পর্কে যা মানুষের জ্ঞাত নয় এবং এর জবাব দেয়াও সম্ভব নয়।’’[28]
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘‘استواء বা আরশের উপর উঠা সম্পর্কে
ইমাম মালেকের এ জবাব আল্লাহর সকল গুণাবলী সম্পর্কে ব্যাখ্যা হিসেবে পুরাপুরি যথেষ্ট।’’[29]
২। দীনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন কিছু নিয়ে গোঁড়ামি
করা এবং গোঁড়ামির কারণে মুসলিমদের মধ্যে অনৈক্য ও বিভেদ সৃষ্টি করা বিদ‘আত বলে গণ্য।
৩। মুসলিমদের কাউকে উপযুক্ত দলীল ছাড়া কাফির
ও বিদ‘আতী বলে অপবাদ দেয়া।
চতুর্দশ নীতিঃ
দ্বীনের স্থায়ী ও প্রমাণিত অবস্থান ও শরীয়ত
কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখাকে পরিবর্তন করা বিদ‘আত।
উদাহরণ :
১। চুরি ও ব্যভিচারের শাস্তি পরিবর্তন করে
আর্থিক জরিমানা দন্ড প্রদান করা বিদ‘আত।
২। যিহারের কাফ্ফারার ক্ষেত্রে শরীয়াতের
নির্ধারিত সীমারেখা পাল্টে আর্থিক জরিমানা করা বিদ‘আত।
পঞ্চদশ নীতিঃ
অমুসলিমদের সাথে খাস যে সকল প্রথা ও ইবাদাত
রয়েছে মুসলিমদের মধ্যে সেগুলোর অনুসরণ বিদ‘আত বলে গণ্য।
উদাহরণ :
কাফিরদের উৎসব ও পর্ব অনুষ্ঠানের অনুকরণে উৎসব
ও পর্ব পালন করা।
ইমাম যাহাবী রহ. বলেন, ‘‘জন্ম উৎসব, নববর্ষ
উৎসব পালনের মাধ্যমে অমুসলিমদের অনুকরণ নিকৃষ্ট বিদ‘আত।’’[30]
শেষ কথাঃ
বিদ‘আতের সংজ্ঞা প্রদানের পাশাপাশি বিদ‘আতের
মৌলিক ও সাধারণ কিছু নীতিমালা আমরা এখানে আলোচনা করলাম। আশা করি সকলেই এগুলো ভালভাবে
জেনে নেবেন এবং উপলব্ধি করার চেষ্টা করবেন। পরবর্তী করণীয় হল এ মূলনীতিগুলোর আলোকে
আমাদের নিজেদের মধ্যে কিংবা আমাদের লোকালয়ে কোন বিদ‘আত রয়েছে কিনা তা যাচাই করা,
আর যদি এখানে কোন বিদ‘আত থেকে থাকে তাহলে আমাদের উচিত সেগুলো চিহ্নিত করা ও দেশবাসীকে
তা অবহিত করা এবং নিজেরা সেগুলো ত্যাগ করা ও অন্যদেরকেও তা ত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করা,
যাতে রিসালাতের দায়িত্ব পালনে মুসলিম হিসেবে আমরা সকলেই কম-বেশী অবদান রাখতে পারি।
আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন!
দলীলের উৎসঃ
[1] সূরা আলে-ইমরান : ৮৫
[2] সূরা আল মায়িদা : ৩
[3] আন-নিহায়াহ, পৃঃ ৬৯, কাওয়ায়েদ
মা’রিফাতিল বিদআ’হ, পৃঃ ১৭
[4] কাওয়ায়েদ মা’রিফাতিল বিদআ’হ,
পৃঃ ২৪
[5] সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং
৩৯৯১ ও সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬। তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।
[6] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫
ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে।
[7] তালবীসু ইবলীস, পৃ: ১৬
[8] আল-ইস্তিকামাহ : ১/১৩
[9] তানযীহুশ শারীয়াহ আল মরফু‘আহ
২/৮৯-৯৪, আল-ইবদা‘ পৃঃ ৫৮
[10] আল ই‘তেসাম ১/২২০
[11] আল-ই‘তিসাম ১/২১২, ২/১৮১
[12] মাজমু‘ আল ফাতাওয়া ১০/৩৬৯
[13] সহীহ বুখারী।
[14] ইকতিযা আস-সিরাত আল মুস্তাকীম
২/৭১৮
[15] ইকতিয়া আস সীরাত আল-মুস্তাকীম
২/৭৯৮
[16] মাযমু‘ আল ফাতাওয়া- ২৬/১৭২
[17] ইকতিযা আস-সিরাত আল মুস্তাকিম-২/৬১৫
[18] সহীহ বুখারী, হাদীস নং
৫০৬৩
[19] সুনান আবি দাঊদ, হাদীস
নং ১৬১২ ও সুনান আ-তিরমিযী, হাদীস নং ৮২৬, তিরমিযী বলেছেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।
[20] আল-ইসতেকামা ১/২৩
[21] শরহুল আকীদা আত তাহাভিয়া
পৃঃ ১৯৯৯
[22] আল-ই‘তিসাম ২/১৭৯
[23] আল-‘ইতিসাম ১/২৬১
[24] তবে দিক নির্ধারণ না করলেও
جهة العلو বা উপরের দিক আল্লাহর জন্য
নির্ধারিত। এটা কুরআন ও হাদীসের হাজার হাজার ভাষ্য দ্বারা প্রমাণিত। গ্রন্থকারের উদ্দেশ্য
جهة শব্দটি ব্যবহার না করা। উপরের দিক প্রতিটি মুসলিমই সাব্যস্ত করে থাকেন।
[সম্পাদক]
[25] মাজমু‘ আল ফাতাওয়া ৩/৮১
[26] শারহু আল-‘আকীদাহ আত-তহাবিয়্যাহ,
পৃঃ২৩৯, আরো দেখুন পৃঃ ১০৯-১১০।
[27] আস-সুন্নাহ ৩/৪৪১, ফাতহুল
বারী ১৩/৪০৬-৪০৭
[28] মাজমু‘ আল-ফাতাওয়া ৩/২৫
[29] মাজমু‘ আল- ফাতাওয়া ৪/৪
[30] আত-তামাসসুক- বিসসুনান
পৃঃ ১৩০
বিদআতের কুফলঃ
এমন অনেকের সাক্ষাত পাবেন যারা ইসলামী চেতনায়
সমৃদ্ধ। কিন্তু বলেন, বিদআতের বিরোধিতায় এত বাড়াবাড়ির কি দরকার? কেউ একটু মীলাদ
পড়লে, কুলখানি বা চল্লিশা-চেহলাম পালন কিংবা এ জাতীয় কিছু করলে দ্বীন ইসলামের কি
এমন ক্ষতি হয়ে যায়?
আমি একদিন এক মসজিদের ইমাম সাহেবের বক্তব্য
শুনছিলাম। তিনি বলছিলেন শবে মিরাজ উপলক্ষ্যে এ রাতে কোন বিশেষ সালাত, ইবাদাত-বন্দেগী
বা সিয়াম নেই। যদি শবে মিরাজ উপলক্ষ্যে কোন আমল করা হয় তা বিদআত হিসাবেই গণ্য হবে।
তার এ বক্তব্য শেষ হতে না হতেই কয়েকজন শিক্ষিত
শ্রেণীর মুসল্লী বলে উঠলেন, হুজুর এ কি বলেন! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
মুহাব্বতে এ রাতে কিছু করলে বিদআত হবে কেন? প্রশ্নকারী লোকগুলো যে বিভ্রান্ত বা বিদআতপন্থী
তা কিন্তু নয়। তাদের খারাপ কোন উদ্দেশ্যও ছিল না। কিন্তু তারা যা করার ইচ্ছা করেছেন,
তার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই।
অবশ্যই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের মুহব্বত ঈমানের অঙ্গ। আর সব ধরনের মুহাব্বতেই আবেগ থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহব্বতেও থাকবে। কিন্তু সেই আবেগ যেন মুহব্বতের নীতিমালা লংঘন
না করে। সেই আবেগভরা মুহাব্বত যেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
আদর্শ ও সুন্নাহর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত না হয়। যদি এমনটি হয় তাহলে বুঝতে হবে যে, রাসূলে
কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বতের নামে শয়তান তাকে ধোঁকায় ফেলেছে।
এ কথাতো মুসলিমদের কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট
যে, খৃষ্টানরা বিদআতী কাজ-কর্ম করে ও তাদের নবীর মুহব্বতে বাড়াবাড়ি করে পথভ্রষ্ট
হয়ে গেছে। এ কথা যেমন পবিত্র কুরআনে এসেছে, তেমনি হাদীসেও আলোচনা করা হয়েছে।
• আমি এখানে অতি সংক্ষেপে বিদআতের কতিপয় পরিণাম
সম্পর্কে আলোচনা করছি যার অধিকাংশ شرح
رياض
الصالحين
من
كلام
سيد
المرسلين
للشيخ
محمد
بن
صالح
العثيمين-
رحمه
الله
নামক কিতাব থেকে নেয়া হয়েছে।
(১) বিদআত মানুষকে পথভ্রষ্ট করেঃ
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যা উম্মতের জন্য নিয়ে এসেছেন তা হল হক। এ ছাড়া যা কিছু ধর্মীয় আচার হিসাবে পালিত
হবে তা পথভ্রষ্টতা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
অর্থ : হক আসার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কি
থাকে ? (সূরা ইউনুস: ৩২)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন :
অর্থ : সকল ধরনের বিদআত পথভ্রষ্টতা। (মুসলিম,
ইবনে মাজাহ)
(২) বিদআত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য থেকে মানুষকে
বের করে দেয় এবং সুন্নাতের বিলুপ্তি ঘটায়ঃ
কেননা বিদআত অনুযায়ী কেউ আমল করলে অবশ্যই
সে এক বা একাধিক সুন্নাত পরিত্যাগ করে। উলামায়ে কিরাম বলেছেন : "যখন কোন দল সমাজে
একটা বিদআতের প্রচলন করে, তখন সমাজ থেকে কম করে হলেও একটি সুন্নাত বিলুপ্ত হয়ে যায়।"
আর এটা অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত যে, যখনই কোন বিদআত
আমলে আনা হয়েছে তখনই সেই স্থান থেকে একটি সুন্নাত চলে গেছে বা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদ আলফেসানীর মাকতুবাত থেকে উদ্ধৃতি দেয়া যায়। তিনি লিখেছেন :
এক ব্যক্তি আমাকে প্রশ্ন করল: আপনারা বলেছেন যে, কোন বিদআত নাকি একটি সুন্নাতকে বিলুপ্ত
করে দেয়। আচ্ছা, যদি মৃত ব্যক্তিকে কাফনের সাথে একটি পাগড়ী পড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে
কোন সুন্নাতটি বিলুপ্ত হয়? কি কারণে এটা বিদআত বলা হবে?'
আমি জবাবে লিখলাম : অবশ্যই একটি সুন্নাত বিলুপ্ত
হয় যদি মৃতের কাফনে পাগড়ী দেয়া হয়। কারণ পুরুষের কাফনের সুন্নাত হল কাপড়ের সংখ্যা
হবে তিন। পাগড়ী পড়ালে এ সংখ্যা আর তিন' থাকে না, সংখ্যা হয়ে যায় চার।'
উদাহরণ হিসাবে আরো বলা যায়, এক ব্যক্তি ঋণগ্রস্থ
হয়ে পড়ল। ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এ সমস্যার জন্য এক পীর সাহেবের কাছে গেল। পীর
সাহেব তাকে বললেন, তুমি এক খতম কুরআন বখশে দাও অথবা নির্দেশ দিলেন একটা মীলাদ দাও বা
খতমে ইউনুসের ব্যবস্থা কর। সে তা-ই করল। ফলাফল কি দাড়াল? ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির
জন্য একটি দুআ রয়েছে যা আমল করা সুন্নাত। বিদআত অনুযায়ী আমল করার কারণে সে সেই সুন্নাতটি
পরিত্যাগ করল। জানার চেষ্টা করল না যে, এ ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম কি ব্যবস্থা দিয়ে গেছেন। অন্যদিকে সে মিলাদ, কুরআন খতম ইত্যাদি বিদআতী কাজ
করে আরও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলো।
রমজানের শেষ দশ দিনের রাতসমূহে রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগী
করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু ১৫ শাবানে রাত
জাগাকে যেমন গুরুত্ব দেয়া হয়, তেমনিভাবে এ সুন্নাতী আমলের প্রচলন দেখা যায় না। বরং
শবে কদরের মূল্যায়ন দিয়ে দেয়া হচ্ছে শবে বরাতকে।
ফরয সালাত আদায়ের পর সর্বদা নিয়মিতভাবে জামাতবদ্ধ
হয়ে মুনাজাত করা একটি বিদআত। এটা আমল করার কারণে ফরয সালাত আদায়ের পর যে সকল যিক্র-আযকার
সুন্নাত হিসাবে বর্ণিত আছে তা পরিত্যাগ করা হয়।
আপনি দেখবেন এভাবে প্রতিটি বিদআত একটি সুন্নাতকে
অপসারিত করে তার স্থান দখল করে নেয়।
(৩) বিদআত আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করেঃ
এর জ্বলন্ত উদাহরণ আজকের খৃষ্টান ধর্ম। তারা
ধর্মে বিদআতের প্রচলন করতে করতে তার মূল কাঠামো পরিবর্তন করে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে
পথভ্রষ্ট হিসাবে অভিহিত হয়েছে। তাদের বিদআত প্রচলনের কথা আল-কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে
:
অর্থ : আর সন্ন্যাসবাদ! এটাতো তারা নিজেরাই
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় প্রচলন করেছিল। আমি তাদের এ বিধান দেইনি। (সূরা হাদীদ:
২৭)
সন্ন্যাসবাদ তথা বৈরাগ্যবাদের বিদআত খৃষ্টানেরা
তাদের ধর্মে প্রবর্তন করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ভাল ছিল; উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি।
কিন্তু ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত যে কোন কাজ করলেই তা গ্রহণযোগ্য হয় না।
এ জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুমোদন প্রয়োজন।
এভাবে যারা ধর্মে বিদআতের প্রচলন করে তাদের অনেকেরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভাল থাকে। কিন্তু
তাতে নাজাত পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ইয়াহুদী ও খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মে অন্য জাতির
রসম-রেওয়াজ ও বিদআত প্রচলন করে ধর্মকে এমন বিকৃত করেছে যে, তাদের নবীগণ যদি আবার পৃথিবীতে
ফিরে আসেন তাহলে তাদের রেখে যাওয়া ধর্ম তাঁরা নিজেরাই চিনতে পারবেন না।
এমনিভাবে আমাদের মুসলিম সমাজে শিয়া সম্প্রদায়
বিদআতের প্রচলন করে দ্বীন ইসলামকে কিভাবে বিকৃত করেছে তা নতুন করে বর্ণনা করার প্রয়োজন
নেই।
(৪) বিদআত ইসলামের উপর একটি আঘাতঃ
যে ইসলামে কোন বিদআতের প্রচলন করল সে মূলতঃ
অজ্ঞ লোকদের মত এ কথা স্বীকার করে নিল যে, ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান নয়, তাতে সংযোজনের
প্রয়োজন আছে। যদিও সে মুখে এ ধরনের বক্তব্য দেয় না, কিন্তু তার কাজ এ কথার স্বাক্ষী
দেয়। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ
করে দিলাম। (সূরা মায়িদা, আয়াত : ৩)
(৫) বিদআত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে
খিয়ানাতের এক ধরনের অভিযোগঃ
যে ব্যক্তি কোন বিদআতের প্রচলন করল বা আমল
করল আপনি তাকে জিজ্ঞেস করুন 'এ কথা বা কাজটি যে ইসলাম ধর্মে পছন্দের বিষয় এটা কি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতেন?' তিনি উত্তরে 'হ্যাঁ' অথবা 'না' বলবেন। যদি
'না' বলেন, তাহলে তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, ইসলাম সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম কম জানতেন। আর যদি 'হ্যাঁ' বলেন, তাহলে তিনি স্বীকার করে নিলেন
যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি জানতেন, কিন্তু উম্মাতের
মধ্যে প্রচার করেননি। এ অবস্থায় তিনি তাবলীগে শিথিলতা করেছেন। খিয়ানত করেছেন আমানতের
ব্যাপারে। (নাউযুবিল্লাহ!)
(৬) বিদআত মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে ও ঐক্য-সংহতিতে আঘাত হানেঃ
বিদআত মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শত্রুতা ও বিবাদ-বিচ্ছেদ
সৃষ্টি করে তাদের মারামারি হানাহানিতে লিপ্ত করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, একদল
লোক মীলাদুন্নবী পালন করল। আরেক দল বিদআত হওয়ায় তা বর্জন ও বিরোধিতা করল। যারা এটা
পালন করল তারা প্রচার করতে লাগল যে, অমুক দল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের জন্মদিনে আনন্দিত হওয়া পছন্দ করে না। তাঁর গুণ-গান করা তাদের কাছে ভাল লাগে
না। তাদের অন্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বত নেই। যাদের অন্তরে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বত নেই তারা বেঈমান। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুশমন। আর এ ধরনের প্রচারনায় তারা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে একে
অপরের দুশমনে পরিণত হয়ে হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ল।
এভাবে ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই বিদআতকে
গ্রহণ ও বর্জনের প্রশ্নে মুসলিম উম্মাহ শিয়া ও সুন্নী এবং পরবর্তী কালে আরো শত দলে
বিভক্ত হয়ে গেল। কত প্রাণহানির ঘটনা ঘটল, রক্তপাত হল।
তাই মুসলিম উম্মাহকে আবার একত্র করতে হলে সকলকে
কুরআন ও সুন্নাহর দিকে আহ্বান ও বিদআত বর্জনের জন্য অহিংস ও শান্তিপূর্ণ পন্থায় পরম
ধৈর্যের সাথে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করতে হবে সকল মানুষ ও মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা
ও ভালবাসা প্রদর্শন করে। কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন আচরণ করা যাবে না। এ বিশ্বাস
রাখতে হবে যে, যা হক ও সত্য তা-ই শুধু টিকে থাকবে। আর যা বাতিল তা দেরীতে হলেও বিলুপ্ত
হবে।
(৭) বিদআত 'আমলকারীর তাওবা করার সুযোগ হয় নাঃ
বিদআত যিনি প্রচলন করেন বা সেই অনুযায়ী আমল
করেন তিনি এটাকে এক মহৎ কাজ বলে মনে করেন। তিনি মনে করেন এ কাজে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট
হবেন। যেমন আল্লাহ খৃষ্টানদের সম্পর্কে বলেছেন তারা ধর্মে বৈরাগ্যবাদের বিদআত চালু
করেছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে। যেহেতু বিদআতে লিপ্ত ব্যক্তি বিদআতকে
পাপের কাজ মনে করেন না, তাই তিনি এ কাজ থেকে তাওবা করার প্রয়োজন মনে করেন না এবং তাওবা
করার সুযোগও হয় না। অন্যান্য পাপের বেলায় কমপক্ষে যিনি পাপে লিপ্ত হন তিনি এটাকে
অন্যায় মনে করেই করেন। পরবর্তীতে তার অনুশোচনা আসে, এক সময় তাওবা করে আল্লাহ তাআলার
ক্ষমা লাভ করেন। কিন্তু বিদআতে লিপ্ত ব্যক্তির এ অবস্থা কখনো হয় না।
(৮) বিদআত প্রচলনকারী রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
শাফাআত পাবে নাঃ
রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তাঁর গুনাহগার উম্মাতের শাফায়াতের ব্যাপারে হাশরের ময়দানে খুব আগ্রহী হবেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে অনুমতি লাভ করার পর তিনি বহু গুনাহগার বান্দা-যাদের
জন্য শাফাআত করতে আল্লাহ তাআলা অনুমতি দেবেন-তাদের জন্য শাফাআত করবেন। কিন্তু বিদআত
প্রচলনকারীর জন্য তিনি শাফাআত করবেন না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন :
অর্থ : শুনে রাখ! হাউজে কাউছারের কাছে তোমাদের
সাথে আমার দেখা হবে। তোমাদের সংখ্যার আধিক্য নিয়ে আমি গর্ব করব। সেই দিন তোমরা আমার
চেহারা মলিন করে দিওনা। জেনে রেখ! আমি সেদিন অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার
চেষ্টা চালাব। কিন্তু তাদের অনেককে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। আমি বলব : হে
আমার প্রতিপালক! তারা তো আমার প্রিয় সাথী-সংগী, আমার অনুসারী। (কেন তাদের দূরে সরিয়ে
দেয়া হচ্ছে ?) তিনি উত্তর দেবেন, আপনি জানেন না, আপনার চলে আসার পর তারা ধর্মের মধ্যে
কি কি নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে। (ইবনে মাজাহ)
অন্য এক বর্ণনায় আছে এর পর আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই তাদের উদ্দেশে বলবেন : দূর হও! দূর হও!!
(৯) বিদআত মুসলিম সমাজে কুরআন ও হাদীসের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়ঃ
কুরআন ও সুন্নাহ হল মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামের
রক্ষা কবচ। ইসলাম ধর্মের অস্তিত্বের একমাত্র উপাদান। তাইতো বিদায় হজেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যতক্ষণ তোমরা
তা আঁকড়ে রাখবে ততক্ষণ বিভ্রান্ত হবে না। আল্লাহর কিতাব ও তার রাসূলের সুন্নাত।
বিদআত অনুযায়ী আমল করলে কুরআন ও সুন্নাহর
মর্যাদা মানুষের অন্তর থেকে কমে যায়। 'যে কোন নেক আমল কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত
হতে হবে' - এ অনুভূতি মানুষের অন্তর থেকে ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে। তারা কুরআন ও হাদীসের
উদ্ধৃতি বাদ দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, পীর-মাশায়েখ ও ইমামদের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকে।
(১০) বিদআত প্রচলনকারী অহংকারের দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে ও নিজেদের ব্যবসায়িক
স্বার্থে দ্বীনকে ব্যবহার ও বিকৃত করতে চেষ্টা করেঃ
বিদআত প্রচলনকারী তার নিজ দলের একটি আলাদা
কাঠামো দাঁড় করিয়ে ব্যবসায়িক বা আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য এমন কাজের প্রচলন করে
থাকে যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় রূপ লাভ করলেও কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা সমর্থিত
হয় না। কারণ সেই কাজটা যদি কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা সমর্থিত হয় তাহলে তার দলের আলাদা
কোন বৈশিষ্ট্য থাকে না। কেননা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত আমল সকল মুসলিমের জন্যই
প্রযোজ্য। তাই সে এমন কিছু আবিষ্কার করতে চায় যার মাধ্যমে তার দলের আলাদা পরিচয় প্রতিষ্ঠা
করা যায়।
এ অবস্থায় যখন হাক্কানী উলামায়ে কিরাম এর
প্রতিবাদ করেন বা এ কাজটি চ্যালেঞ্জ করেন তখন তার ঔদ্ধত্য বেড়ে যায়। নিজেকে সে কুতুবুল
আলম, ইমাম-সম্রাট, হাদীয়ে উম্মাত, রাহবারে মিল্লাত, যিল্লুর রহমান বলে দাবী করতে থাকে।
প্রচার করতে থাকে এ দুনিয়ায় সে'ই একমাত্র হক পথে আছে, বাকী সবাই ভ্রান্ত।
প্রশ্ন?
প্রশ্ন: বাংলাদেশে প্রচলিত বড় বড় বিদ’আতগুলো কি কি? এই বিদআতগুলো সবচেয়ে
বেশী কোথায় পালন করতে দেখা যায়?
উত্তর:
১। ঈদ-ই মিলাদুন্নবী পালন করা
বিদআত।
২। সকল প্রকার মিলাদ-কিয়াম করা
বিদআত।
৩। শব-ই বরাত পালন করা বিদআত।
৪। শব-ই মিরাজের সালাত বা সাওম
বা এ উপলক্ষে কোন ইবাদাত করা বিদআত।
৫। কুর’আন খানি করা বিদআত।
৬। মৃত ব্যক্তির জন্য- কুর’আন
পড়া, কুলখানি করা, চল্লিশা করা, দু’আর আয়োজন করা, সওয়াব বখশে দেয়া কিংবা মৃত ব্যক্তির
সামনে সুরা ইয়াছিন পাঠ করা বিদআত।
৭। জোরে জোরে চিল্লিয়ে জিকির
করা বিদআত এবং চিল্লিয়ে জিকির করা কোরআন বিরোধী কর্মকান্ড।
৮। হাল্কায়ে জিকির, ইসকের জিকির,
লাফালাফি জিকির, নাচানাচি জিকির, শুধু ইল্লাল্লাহ জিকির করা বিদআত।
৯। পির-মুরীদি মানা বিদআত।
১০। মুখে মুখে উচ্চারণ করে নিয়্যাত
পড়া বিদআত।
১১। ঢিলা কুলুখ নিতে গিয়ে ৪০
কদম হাঁটা, কাঁশি দেয়া উঠা বসা করা,লজ্জাস্থানে হাত দিয়ে হাটাহাটি ইত্যাদি করা বিদআত।
১২।কুরআন ও সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে
ফাজায়েলে জিকির, ফাজায়েলে আমল, ফাজায়েলে
সাদাকাত, ফাজায়েলে হজ্জ, নিয়ামুল কোরআন, বেহেস্তি জেওর, মোকসেদুল মোমেনীন,
মোকসেদুল মোহসেনীন, ইত্যাদি শির্ক- বিদআত ও কুফুরী মিশ্রিত কিতাব পাঠ করা ও আমল করা।
১৩। জায়নামাজের দুআ পড়া বিদআত।
১৪। প্রত্যেক ফরজ সালাতে জামায়াতের
পর ইমামের নেতৃত্বে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা বিদআত।
১৫। কবরে হাত তুলে সবাই একত্রে
দূ’আ করা বিদআত।
১৬। খতমে ইউনুস, তাহলীল, খতমে
কালিমা, বানানো দরুদ পড়া, এবং যত প্রকার তাজবীহ খতম আছে সবই বিদআত, তাজবীহ দানা গননা করাও বিদআত।
১৭। ১৩০ ফরজ মানা বিদআত।
১৮। ইলমে তাসাউফ বা সুফীবাদ
মানা বিদআত।
১৯। জন্মদিন, মৃত্যু দিবস,মা,
বাবা দিবস বিবাহ বার্ষিকী, ভ্যালেন্টাইনস ডে, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ
ইত্যাদি দিবস পালন করা বিদআত।
২০। অপরের কাছে তাওবা পড়া বিদআত।
২১। অজুতে ঘাড় মাসেহ করা বিদআত।
২২।আল্লাহকে “খোদা” বলা বিদআত
(কেননা খোদা বলা শিরক) ।
২৩। বাতেনী এলেম বা তাওয়াজ্জুহ
মানা বিদআত।
২৪। বার্ষিক মাহফিলের আয়োজন
করে রাতভর ওয়াজ করা ও সম্মিলিত মুনাজাত করা বিদআত।
২৫। অন্ধভাবে মাজহাব মানা বিদআত।
২৬। ওরস পালন করা,কবর পাকা,
কবর সাজানো, লাইটিং করা বিদআত।
২৭। এমন দু’য়া বা দুরুদ পড়া
যা হাদিসে নাই যেমনঃ দুরুদে হাজারী, দুরুদে লক্ষী, দুরুদে তাজ, ওজীফা, দুরুদে জালালী
ইত্যাদি পাঠ করা বিদআত।
২৮। মালাকুল মাউতকে আজরাঈল বলে
ডাকা বিদআত।
২৯। মিথ্যা বানোয়াট হাসির গল্প
বলে মানুষকে হাসানো বিদআত।
৩০। “আস্তাগ ফিরুল্লাহ [রব্বি মিন কুল্লি জাম্বি
ওয়া] আতুবু ইলাইক লাহাওলা ওয়ালা কুয়াত্তা ইল্লা
বিল্লাহি ‘আলিইল ‘আজিম” (এখানে রব্বি মিন কুল্লি জাম্বি অংশটুকু বিদআ’ত )।
৩১। ৭০ হাজার বার কালিমা খতম
করা বিতআদ।
৩২। ইসলামের নামে দলাদলি করা
বিদআত।
৩৩। দলের আমীরের হাতে বায়াত
করা বিদআত।
৩৪। দ্বীন প্রতিষ্ঠায় প্রচলিত
রাজনীতি করা বিদআত।
৩৫।দ্বীনের হেফাজতের নামে হরতাল,
অবরোধ, মারামারি করা বিদআত। অনেক ক্ষেত্রে হারামও ।
৩৬। আল্লাহ হাফিজ বা ফি আমানিল্লাহ
বলা বিদআত।
৩৭। জানাজা দেয়ার সময় কালিমা
শাহাদাত পাঠ করা বিদআত।
৩৮। মৃত ব্যাক্তির কাজা নামাজের
কাফফারা দেয়া বা আদায় করা বিদআত।
৩৯। কুর’আনকে সবসময় চুমু খাওয়া
৪০. কুর’আন নীচে পড়ে গেলে লবণ কাফফারা দেয়া, সালাম করা, কপালে লাগানো ইত্যাদি বিদআত।
৪১। দুই হাতে মোসাফা করা, মোসাফা
শেষে বুকে লাগানো বিদআত।
৪২। কারোর গায়ে পা লাগলে গাঁ
ছুঁয়ে সালাম করা বিদআত।
৪৩। ইছালেহ সোয়াব নামে ওয়াজ
ও দোয়া করা বিদআত ।
৪৪। টুপি ছাড়া নামাজ পড়লে সোয়াব
কম হয়, পাগড়ি মাথায় দিয়ে নামাজ পড়লে বেশী সোয়াব/ নেকি হয় এইসব বিদআত।
৪৫। কোরআন, সহীহ্ হাদীসের বাহিরে
যত দোয়া, দুরুদ, জিকির, কালেমা আছে সবই বিদআত।
৪৬। বিশেষ সওয়াবের আশায় টঙ্গীর
বিশ্ব ইজতেমায় সম্মিলিত মোনাজাতে অংশ নেয়া বিদআত।
উল্লেখিত বিদআতগুলো আমাদের দেশের কথিত পির,
আউলিয়াদের দরবারে সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, কথিত পির-আউলিয়াগণ তাদের সংসার
পরিচালনার জন্য ইনকামের উৎস হিসেবে উক্ত বিদআতগুলো পালন করে থাকে। তাদের দলিল হচ্ছে,
মিথ্যে, জাল বা জইফ হাদিস, কাশফ, স্বপ্ন, এলহাম ও পূর্ববর্তী মুরুব্বীদের মুখের কথা।
আর এসব দলিল দিয়েই তারা মুরিদদের মগজ ধোলাই করে থাকে।
অন্ধভাবে মাযহাব মানা চরম বিদআতঃ
বর্তমানে সারাবিশ্বে মুসলমানের সংখ্যা আড়াইশো
কোটিরও বেশী। পৃথিবীর প্রত্যেক তিনজন ব্যাক্তির মধ্যে একজন মুসলমান। অমুসলিমদের কাছে
আমরা অর্থাৎ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা মুসলমান বলে পরিচিত হলেও মুসলিমরা নিজেদের মধ্যে অনেক
নামে পরিচিত। যেমন, হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী প্রভৃতি। এই নামগুলি আল্লাহ বা
মুহাম্মাদ (সা) এর দেওয়া নয় এমনকি যাঁদের নামে এই মাযহাব তৈরি করা হয়েছে তারাও এই নামগুলো
দেয়নি। মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত চারটি মাযহাব, দল বা ফিকাহ ইসলামের কোনো নিয়ম বা বিধান
মেনে তৈরি করা হয়নি। কারন ইসলাম ধর্মে কোনো দলবাজী বা ফিরকাবন্দী নেই। মুসলমানদের বিভক্ত
হওয়া থেকে এবং ধর্মে নানা মতের সৃষ্টি করা থেকে কঠোরভাবে সাবধান করা হয়েছে। এই মাযহাবগুলো
রসুল (যা) এবং সাহাবাদের (রা) সময় সৃষ্টি হয়নি। এমনকি ঈমামগনের সময়ও হয়নি। চার ইমামের
মৃত্যুর অনেক বছর পরে তাঁদের নামে মাযহাব তৈরি হয়েছে। কোরআন হাদীস ও চার ইমামের দৃষ্টিতে
মাযহাব কি, কেন, মাযহাব কি মানতেই হবে, মাযহাব মানলে কি গোনাহ হবে, সে সব বিষয় নিয়ে
আলোচনা করব ইনশাল্লাহ্!
মাযহাব তৈরিতে আল্লাহর কঠোর নিষেধাজ্ঞাঃ
মুসলমানেরা যাতে বিভিন্ন দলে আলাদা বা বিভক্ত
না হয়ে যায় সে জন্য আল্লাহ পাক আমাদের কঠোরভাবে সাবধান করেছেন। যেমনঃ আল্লাহ তা’আলা
কুরআনের সূরা আন-আমর এর ১৫৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন ‘যারা দ্বীন সন্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি
করেছে এবং বিভিন্ন, দলে বিভক্ত হয়েছে হে নবী! তাদের সাথে তোমার কোনও সম্পর্ক নেই; তাদের
বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবগত করবেন। একটু
থামুন। উপরের আয়াতটা দয়া করে বারবার পড়ুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন, চিন্তা করুন। আল্লাহ
তা’আলা সরাসরি বলেছেন যারা দ্বীন বা ধর্মে অর্থাৎ ইসলামে নানা মতগের সৃষ্টি করেছে এবং
বিভক্ত হয়েছে, তাদের সাথে আমাদের নবী মহাম্মাদ (সা) এর কোনো সম্পর্ক নেই। যার সাথে
নবীজীর (সা) কোনো সম্পর্ক নেই সে কি মুসলমান? সে কি কখনো জান্নাতের গন্ধও পাবে। আমরা
মুসলমান কোরআন হাদীস মাননে ওয়ালা এটাই আমাদের একমাত্র পরিচয়। আল্লাহ বলেন এবং তোমাদের
এই যে জাতি, এতো একই জাতি; এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক, অতএব আমাকে ভয় করো। (সূরা মুউমিনুন
২৩/৫২)। তাহলেই বুঝতেই পড়েছেন ফরয, ওয়াজীব ভেবে আপনারা যা মেনে চলছেন আল্লাহ তা মানতে
কত কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন তবে শুধু এইটুকুই নয় আল্লাহ আরও অনেক আয়াতে এ ব্যাপারে মানুষকে
সাবধানবানী শুনিয়েছেন। যেমন সূরা রূমের একটি আয়াত দেখুন যেখানে আল্লাহ পাক বলছেন
‘….. তোমরা ঐ সকল মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না যারা নিজেদের দ্বীনকে শতধা বিচ্ছিন্ন
করে বহু দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দল নিজেদের কাছে যা আছে তা নিয়ে খুশি’–(সূরা
রুম ৩০/৩১-৩২)। বর্তমানে আমাদের সমাজের অবস্থাও ঐ মুশরিকদের মতো। ইসলামকে তারা (মাযহাবীরা)
বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছে এবং তাদের নিজেদের কাছে যা আছে তা নিয়েই তারা খুশি। তাদের
সামনে কোনো কথা উপস্থাপন করলে তারা বলেনা যে কুরআন হাদীসে আছে কি না। তারা বলে আমাদের
ইমাম কি বলেছে। এরা কুরয়ান হাদীসের থেকেও ইমামের ফিকাহকে অধিক গুরুত্ব দেয়। অথচ ইসলামের
ভিত্তি হচ্ছে কুরআন হাদীস। তা ছাড়া অন্য কিছু নয়। উপরের আযাতে আল্লাহ তা’আলা আমাদের
উপদেশ দিয়েছেন তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না; তোমরা ইসলামে মাযহাবের সৃষ্টি করো
না। অথচ আমরা কুরআনের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে দ্বীনে দলের সৃষ্টি করেছি এবং নিজেকে
হানাফী, মালেকী বা শাফেরী বলতে গর্ব অনুভব করছি। আল্লাহ বলেন ‘হে ইমানদারগন তোমরা আল্লাহ
ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রগামী হয়ো না, এবং আল্লাহকে ভয় করো; আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী
(সূরা হুরুরতে/০১) আমার প্রিয় মাযহাবী ভাইয়েরা! এরকম কোরআনের স্পষ্ট নির্দেশ জানার
পরও কি আপনারা মাযহাবে বিশ্বাসী হবেন এবং নিজেকে মাযহাবী বলে পরিচয় দেবেন। যারা জানে
না তাদের কথা আলাদা। আল্লাহ বলেন ‘বলো, যারা জানে এবং যারা জানেনা তারা কি সমান? (সূরা
যুমার ৩৯/০৯)। তাই আজই তওবা করে সঠিক আক্বিদায় ফিরে আসুন। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলাম
বোঝার তোফিক দিন। আমীন!
ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেননিঃ
ভারতবর্ষের বিখ্যাত হাদীসশাস্ত্রবিদ ও হানাফীদের
শিক্ষাগুরু যাকে হানাফীরা ভারতবর্ষের ‘ইমাম বুখারী’ বলে থাকেন সেই শাহ আলিউল্লাহ মুহাদ্দিস
দেহেলভী (রহ) বলেছেন – ‘ই’লাম আন্না না-সা-কা-নু ক্কারলাল মিআতির রা-বিআতি গাইরা মুজমিয়ীনা
আলাত্-তাকলীদিল খা-লিস লিমায় হাবিন্ ওয়া-হিদিন্ বি-আইনিহী’ অর্থাৎ তোমরা জেনে রাখো
যে, ৪০০ হিজরীর আগে লোকেরা কোন একটি বিশেষ মাযহাবের উপর জমে ছিল না’ (হুজ্জাতুল্লাহিল
বালেগাহ; ১৫২ পৃষ্ঠা)। অর্থাৎ ৪০০ হিজরীর আগে নিজেকে হানাফী, শাফেরী বা মালেকী বলে
পরিচয় দিতো না। আর চারশো হিজরীর অনেক আগে ইমামরা ইন্তেকাল করেন। ইমামদের জন্ম ও মৃত্যুর
সময়কালটা একবার জানা যাক তাহলে ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।
ইমামগণের নাম, জন্ম ও মৃত্যুঃ
আবু হানীফা (রহ) ৮০ হিজরী ১৫০ হিজরী
ইমাম মালেক (রহ) ৯৩ হিজরী ১৭৯ হিজরী
ইমাম শাকেরী (রহ) ১৫০ হিজরী ২০৪ হিজরী
আহমদ বিন হাম্বাল (রহ) ১৬৪ হিজরী ২৪১ হিজরী
বিশিষ্ট হানাফী বিদ্বান শাহ ওলিউল্লাহ দেহেলভী
(রহ) এর কথা যদি মেনে নেওয়া যায় যে ৪০০ হিজরীর আগে কোনো মাযহাব ছিল না, এবং ৪০০ হিজরীর
পরে মানুষেরা মাযহাব সৃষ্টি করেছে, তার মানে এটা দাঁড়ায় যে আবু হানীফার ইন্তেকালের
২৫০ বছর পর হানাফী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম মালেকের ইন্তেকালের ২২১ বছর পর মালেকী
মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম শাফেরীর ইন্তেকালের ১৯৬ বছর পরে শাফেরী মাযহাব এবং ইমাম
আহমাদের ইন্তেকালের ১৫৯ বছর পর হাম্বলী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ ইমামদের জীবিত
অবস্থায় মাযহাব সৃষ্টি হয়নি। তাঁদের মৃত্যুর অনেকদিন পরে মাযহাবের উদ্ভব হয়েছে। আর
একবার চিন্তা করে দেখুন মাযহাব বা দল সৃষ্টি করাতে কোরআন ও হাদিসে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ
করা হয়েছে। মহামান্য ইমামরা ছিলেন কোরআন হাদীসের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসারী এবং ধর্মপ্রান
মুসলিম। তাঁরা কি কোরআন হাদীসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মাযহাব তৈরি করবেন যা কঠোরভাবে
নিষিদ্ধ, এটা কখনো হতে পারে? যারা বলে ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেছেন তারা হয় মুর্খ নয়
বেইমান। তারা ইমামদের প্রতি অপবাদ দেয়।
মাযহাব সৃষ্টি হলো কিভাবে?
ফারসীতে একটি প্রবাদ আছে ‘মান তোরা হাজী গো
ইয়াম তু মোরা হাজী বোগো’ অর্থাৎ একজন লোক আর একজনকে বলছে, ভাই! যদিও তুমি হাজী নও তথাপি
আমি তোমাকে হাজী সাহেব বলছি এবং যদিও আমি হাজী নই তুমি আমাকে হাজী সাহেব বলো। এভাবে
একে অপরকে হাজী সাহেব বলে ডাকার ফলে আমরা দু-জনেই হাজী সাহেব হয়ে যাবো। এভাবেই আবু
হানীফার অনুসারীদের অথবা তাঁর ফতোয়া মান্যে ওয়ালাদের অন্যেরা হানাফী একইভাবে ইমাম মালেকের
ফতোয়া মাননে ওয়ালাদের মালেকী বলে ডাকাডাকির ফলে মাযহাবের সৃষ্টি হয়েছে। আজ যা বিরাট
আকার ধারন করেছে। আবু হানীফা (রহ) বা তাঁর শিষ্যরা কখনো বলেননি আমাদের ফতোয়া যারা মানবা
তারা নিজেদের পরিচয় হানাফী বলে দিবা। অথবা ইমাম মালেক বা শাফেয়ীও বলে যাননি যে আমার
অনুসারীরা নিজেকে মালেকী বা শাফেয়ী বলে পরিচয় দিবা। ইমামরা তো বটেই এমনকি ইমামদের শাগরেদরা
কিংবা তাঁর শাগরেদদের শাগরেদরাও মাযহাব সৃষ্টি করতে বলেননি। যখন আমাদের মহামতি ইমামরা
মাযহাব সৃষ্টি করেননি এবং করতেও বলেননি তখন উনাদের নামে মাযহাব সৃষ্টি করার অধিকার
কেন দিল?
মাজহাবপন্থীরা যাদের মাজহাব মানে তারাই (চার ইমাম) মাজহাব বিরোধী
মাযহাবীদের মধ্যে কিছু লোক দেখা যায় যারা ইমামদের
তাক্কলীদ করে অর্থাৎ অন্ধ অনুসরন করে। তারা ইমামদের বক্তব্যকে আসমানী ওহীর মতো মানে।
কোরআন-হাদিস বিরোধী কোনো রায় হলেও তাতে আমল করে। তাই সেই সব লোকদের জন্য হাদীস অনুসরনের
ব্যাপারে ইমামদের মতামত এবং তাদের হাদীস বিরোধী বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে
তাদের কয়েকটি উক্তি দেওয়া হল। ইনশাল্লাহ্! মাযহাবী ভাইয়েরা এ থেকে শিক্ষা নিবেন ও তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসবেন।
আবু হানীফা (রহ:):-
১) যখন হাদীস সহীহ হবে, তখন সেটাই
আমার মাযহাব অর্থাৎ হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব। (ইবনুল আবেদীন ১/৬৩; রাসমুল
মুফতী ১/৪; ঈক্কামুল মুফতী ৬২ পৃষ্ঠা)।
২) কারো জন্য আমাদের কথা মেনে
নেওয়া বৈধ নয়; যতক্ষন না সে জেনেছে যে, আমরা তা কোথা থেকে গ্রহন করেছি। (হাশিয়া ইবনুল
আবেদীন ২/২৯৩ রাসমুল মুফতী ২৯, ৩২ পৃষ্ঠা, শা’ রানীর মীথান ১/৫৫; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন
২/৩০৯)।
৩) যে ব্যাক্তি আমার দলিল জানে
না, তার জন্য আমার উক্তি দ্বারা ফতোয়া দেওয়া হারাম। (আন-নাফিউল কাবীর ১৩৫ পৃষ্ঠা)।
৪) আমরা তো মানুষ। আজ এক কথা বলি,
আবার কাল তা প্রত্যাহার করে নিই। – (ঐ)
৫) যদি আমি এমন কথা বলি যা আল্লাহর
কিবাব ও রাসুলের (সা) হাদীসের পরিপন্থি, তাহলে আমার কথাকে বর্জন করো। (দেওয়ালে ছুড়ে
মারো)। (ঈক্কাবুল হিমাম ৫০ পৃষ্ঠা)।
ইমাম মালেক (রহ:):-
১) আমি তো একজন মানুষ মাত্র। আমার কথা ভুল হতে
পারে আবার ঠিকও হতে পারে। সুতরাং তোমরা আমার মতকে বিবেচনা করে দেখ। অতঃপর যেটা কিতাব
ও সুন্নাহর অনুকুল পাও তা গ্রহন কর। আর যা কিতাব ও সুন্নাহর প্রতিকুল তা বর্জন করো।
(জানেউ বায়ানিল ইলম ২/৩২, উসুলুল আহকাম ৬/১৪৯)।
২) রাসুলুল্লাহ (সা) এর পর এমন কোনো ব্যাক্তি
নেই যার কথা ও কাজ সমালোচনার উর্ধে। একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সা) ই সমালোচনার উর্ধে।
(ইবনু আবদিল হাদী, ১ম খন্ড, ২২৭ পৃষ্ঠা, আল ফতোয়া – আসসাবকী, ১ম খন্ড ১৪৮ পৃষ্ঠা, উসুলুল
আহকাম ইবনু হাযম, ষষ্ঠ খন্ড ১৪৫ – ১৭৯ পৃষ্ঠা)।
৩) ইবনু ওহাব বলেছেন, আমি ইমাম মালেককের উয়ব মধ্যে
দুই পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার বিষএ এক প্রশ্ন করতে শুনেছি। তিনি বলেন লোকদের জন্য এটার
প্রয়োজন নীই। ইবনু ওহাব বলেন, আমি মানুষ কমে গেলে তাঁকে নিরিবিলে পেয়ে বলি ‘তাতো আমাদের
জন্য সুন্নাহ। ইমাম মালেক বলেন, সেটা কি? আমি বললাম, আমরা লাইস বিন সাদ, ইবনু লোহাইআ,
আমর বিন হারেস, ইয়াবিদ বিন আমার আল-মা আফেরী, আবু আবদুর রহমান আল হাবালী এবং আল মোস্তাওরাদ
বিন শাদ্দাদ আল কোরাশী এই সুত্র পরম্পরা থেকে জানতে পেরেছি যে, শাদ্দাদ আল কোরাশী বলেন,
আমি রাসুল (সা) কে কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে দুই পায়ের আঙ্গুল খেলাল করতে দেখেছি। ইমাম মালেক
বলেন, এটা তো সুন্দর হাদীস। আমি এখন ছাড়া আর কখনো এই হাদীসটি শুনিনি। তারপর যখনই তাকে
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, তখনই তাঁকে পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার আদেশ দিতে আমি শুনেছি।
(মোকাদ্দামা আল জারাহ ওয়াত তা দীল- ইবনু হাতেমঃ ৩১- ৩২ পৃষ্ঠা)
ইমাম শাফেরী (রহ:):-
১) হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার
মাযহাব। (মাজমু ১/৬৩; শা’রানী ১/৫৭)
২) আমি যে কথাই বলি না কেন অথবা
যে নীতিই প্রনয়ন করি না কেন, তা যদি আল্লাহর রাসুল (সা) এর নিকট থেকে বর্ণিত (হাদীসের)
খিলাপ হয়, তাহলে সে কথাই মান্য, যা রাসুল (সা) বলেছেন। আর সেটাই আমার কথা। (তারীখু
দিমাশ্ক; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ২/৩৬৬,৩৬৪)।
৩) নিজ ছাত্র ইমাম আহমাদকে সম্বোধন
করে বলেন) হাদীস ও রিজাল সম্বন্ধে তোমরা আমার চেয়ে বেশি জানো। অতএব হাদীস সহীহ হলে
আমাকে জানাও, সে যাই হোক না কেন; কুকী, বাসরী অথবা শামী। তা সহীহ হলে সেটাই আমি আমার
মাযহাব (পন্থা) বানিয়া নেবো। (ইবনু আবী হাতীম ৯৪-৯৫ পৃষ্ঠা; হিলয়াহ ৯/১০৬)।
৪) আমার পুস্তকে যদি আল্লাহর রাসুল
(সা) এর সুন্নাহের খেলাপ কে কথা পাও, তাহলে আল্লাহর রাসুল (সা) এর কথাকেই মেনে নিও
এবং আমি যা বলেছি তা বর্জন করো। (নাওয়াবীর মা’জমু ১/৬৩; ইলামূল মুওয়াক্কিঈন ২/৩৬১)
৫) যে কথাই আমি বলি না কেন, তা
যদি সহীহ সুন্নাহর পরিপন্থি হয়, তাহলে নবী (সা) এর হাদীসই অধিক মান্য। সুতরাং তোমরা
আমার অন্ধানুকরন করো না। (হাদীস ও সুন্নাহর মুল্যমান ৫৪ পৃষ্ঠা)।
৬) নবী (সা) থেকে যে হাদীসই বর্ণিত
হয়, সেটাই আমার কথা; যদিও তা আমার নিকট থেকে না শুনে থাকো। (ইবনু আবী হাতীম ৯৩-৯৪)
ইমাম আহমাদ (রহ:):-
১) তোমরা আমার অন্ধানুকরন করো না, মালেকেরও অন্ধানুকরন
করো না। অন্ধানুকরন করো না শাফেরীর আর না আওয়ারী ও ষত্তরীব বরং তোমরা সেখান থেকে তোমরা
গ্রহন কর যেখান থেকে তারা গ্রহন করেছেন। (ইলামুল মোয়াক্কিঈন ২/৩০২)
২) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা) এর হাদীস প্রত্যাখ্যান
করে, সে ব্যক্তি ধ্বংসোন্মুখ। (ইবনুল জাওযী ১৮২ পৃষ্ঠা)
৩) আওযাঈঃ ইমাম মালেক ও ইমাম আবু হানীফার রায়
তাদের নিজস্ব রায় বা ইজতিহাদ। আমার কাছে এসবই সমান। তবে দলিল হল সাহাবী ও তাবেঈগনের
কথা। (ইবনু আবদিল বার-আল-জামে, ২ খন্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা)।
মাজহাবপন্থী ভাইদের বলছি, এই লেখা পড়ার পর
তৎক্ষণাত তওবা করে কোরআন ও সহীহ হাদিসের পথে ফিরে আসা উচিত। তানাহলে আপনাদের কোনো আমল
আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। চার ইমাম কোরআন ও সহীহ হাদিস বিরোধী ছিলেন না। কিন্তু
বর্তমানে তাদেরকে অন্ধের মতো অনুসরন-অনুকরন করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ৯৫% মুসলমান সহীহ
হাদিস বাদ দিয়ে জাল, জইফ বা মিথ্যে কিংবা দূর্বল হাদিসের উপর আমল করছে। এভাবে সহীহ
হাদিস বাদ দিয়ে অন্যের মতামত বা অভিমতকে অন্ধের মতো অনুসরন করা বিদআত। আমরা মুসলমান
আমাদের মূল দলীল হবে কোরআন ও সহীহ হাদিস।
বিদআতীদের শেষ ও করুন পরিনতিঃ
(১) বিদআতীকে সহযোগিতাকারীর উপর আল্লাহর অভিশাপঃ
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুরাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ অভিশাপ করেছেন সেই ব্যক্তিকে যে
আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো নামে জন্তু জবেহ করে। আর যে জমির সীমা চুরি করে। আর যে মাতা
পিতাকে অভিশাপ দেয়। আর যে বেদআতীকে আশ্রয় দেয়। (মুসলিম)
(২) বিদআতীর আমল আল্লাহর কাছে অগ্রাহ্যঃ
আয়েশা (রাঃ) রাসূলুরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করল যা দ্বীনে নেই সে কাজটি
আল্লাহ কাছে পরিত্যজ্য।” (বুখারী ও মুসলিম)
(৩) বিদআতির তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে না,যতক্ষণ না সে বিদআত সম্পূর্ণ ছেড়ে
দেয়ঃ
আনাস ইবনু মালেক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি
ওয়াসাল্লাম)বলেছেনঃ
আল্লাহ তা’আলা বিদা’তিদের তাওবা গ্রহন করেন
না ততক্ষন পর্যন্ত যতক্ষণ না সে বিদআত থেকে সম্পূর্ণ তওবা করে। (তারবানী,সহীহুত তারগীব
ওয়াততারহীব,১ম খণ্ড,হাদিস-৫২)
(৪) রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) এর অসন্তুষ্টির কারণঃ
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) কিয়ামতের
দিন বিদআতি লোকদের প্রতি বেশি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন।
সাহাল ইবনু সাআদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেনঃ
আমি হাউজে কাওসারে তোমাদের অপেক্ষাই থাকব।
যে ব্যাক্তি সেখানে আসবে সে পানি পান করবে। আর যে ব্যক্তি একবার পান করবে সে আর তৃষ্ণার্ত
হবে না। কিছু লোক এমন আসবে যাদের আমি চিনি এবং তারাও আমাকে চিনবে। আমি মনে করব, তারা
আমার উম্মাত। তারপর তাদেরকে আমার কাছ পর্যন্ত পৌছতে দেওয়া হবে না। আমি বলবো, এরা তো
আমার উম্মত। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ,আপনি জানেন না, আপনি দুনিয়া থেকে চলে আসার
পর এসব লোকেরা কেমন বিদআত সৃষ্টি করেছে। তারপর আমি বলবো, তাহলে দূর হোক, দূর হোক সে
সকল লোকেরা যারা আমার পর দ্বীন পরিবর্তন করেছে।
(বুখারি ও মুসলিম,আলল’লুউ ওয়াল মারজান,২য় খণ্ড,হাদিস-১৪৭৬)
(৫) বিদআত থেকে যে কোন উপায়ে বাঁচার আদেশ রয়েছেঃ
ইরবায ইবনু সারিয়া বলেন, রাসূলুরাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন. লোক সকল! তোমরা বিদআত থেকে বাঁচ”। (কিতাবুস
সুন্নাহ ইবনু আবী আসিম)
(৬) কিয়ামতের দিন বিদআতী হাওযে কাউছারের পানি থেকে বঞ্চিত হবেঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
কিয়ামতের দিন বিদআতী লোকদের থেকে বেশী অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন। সাহাল ইবনু সাআদ
(রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি হাওযে কাওছারে
তোমাদের অপেক্ষায় থাকব। যে ব্যক্তি সেখানে আসবে সে পানি পান করবে। আর যে ব্যক্তি একবার
পানি পান করবে তার কখনো তৃষ্ণা থাকবে না। কিছু লোক এমন আসবে যাদেরকে আমি চিনব। তারাও
আমাকে চিনবে। আমি মনে করব তারা আমার উম্মত তার পরও তাদেরকে আমার নিকট পর্যন্ত পৌঁছতে
হবে না। আমি বলব এরা তো আমার উম্মত। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মদ! আপনি জানেন না আপনি
দুনিয়া থেকে চলে আসার পর এসব লোকেরা কেমন কেমন বিদআত সৃষ্টি করেছে। তার পর আমি বলব,
“দূর হোক, দূর হোক সে সকল লোকেরা যারা আমার পর দ্বীন পরিবর্তন করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)
(৭) বিদআত সৃষ্টিকারীর প্রতি আল্লাহর ফেরেশ্তা
সমূহ এবং সব লোকের অভিশাপ হয়ে থাকেঃ
আসেম (রাহঃ) বলেন, আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা
করা হল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি মদীনাকে হারাম আখ্যা দিয়েছেন?
তিনি বললেন হাঁ। উমুক স্থান থেকে উমুক স্থান পর্যন্ত । এ স্থানের কোন গাছ কাটা যাবে
না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি এখানে কোন
বিদআত সৃষ্টি করবে তার উপর আল্লাহ ফেরেশ্তা এবং লোক সকলের অভিশাপ হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
(৮) বিদআত প্রচলনকারী নিজের গুনাহ ব্যতিত তার সৃষ্ট বিদআত মতে আমলকারী
সব লোকের গুনাহের একটি ভাগ পাবেঃ
কাসীর ইবনু আব্দুল্লাহ রহঃ বলেন রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমর সুন্নাত থেকে কোন একটি
সুন্নাহ কে জীবিত করেছে আর অন্য লোকেরা সে মতে আমল করেছে তাকে সব আমলকারীর সমান সাওয়াব
দেয়া হবে। আবার তাদেরকেও কম দেয়া হবে না। আর যে ব্যক্তি কোন বিদআত চালু করেছে এবং
লোকেরা সে মতে আমল করেছে তাকে সব আমলকারীর সমান পাপ দেয়া হবে। আবার তাদের পাপে কম
করা হবে না। (ইবনু মাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস-১৭৩,সহিহ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি লোক জনকে হেদায়েতের দিকে আহবান করবে তাকে
সে হেদায়াত মতে আমলকারী সব লোকের সোওয়াব দেয়া হবে। আর লোকজনের সোওয়াবেও কোন কম
করা হবে না। এমনি ভাবে যে ব্যক্তি লোকজনকে গোমরাহীর দিকে আহবান করবে তাকে সে গোমরাহী
মতে আমল কারীর সব লোকের সমান পাপ দেয়া হবে । আবার লোক জনের পাপেও কোন কম করা হবে না।
(মুসলিম,কিতাবুল ইলম)।
(৯) আব্দুল্লাহ ইবনু উমর রাঃ কোন বেদআতী লোকের সালামের উত্তর দিতেন
নাঃ
নাফে (রাঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)
এর কছে এক ব্যাক্তি এসে বলল, উমুক লোক আপনাকে সালাম বলেছেন। ইবনু উমার (রাঃ) বললেন,
আমি শুনেছি সে নাকি বিদআত আবিস্কার করেছে। যদি তা ঠিক হয় তাহলে তাকে আমার পক্ষ থেকে
সালাম বলনা। (তিরমিযী, সনদ সহীহ)
(১০) বিদআত গ্রহণকারী ব্যক্তিদের কে সুন্নাহ থেকে বঞ্চিত রাখা হয়ঃ
হাসান ইবনু আতিয়া বলেন, যে ব্যক্তি দ্বীনে
কোন বিদআত গ্রহণ করবে আল্লাহ তাআলা তার থেকে ততটুকু সুন্নাহ ঊঠিয়ে নিবেন। তার পর কিয়ামত
পর্যন্ত তাদের মধ্যে সে সুন্নত ফিরিয়ে দেয়া হয় না। (দরেমী, সনদ ১০/১৩/২০১১সহীহ)
(১১) অন্য গুনাহের চেয়ে বিদআত শয়তানের কাছে অধিক প্রিয়ঃ
সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, শয়তান পাপের পরিবর্তে
বিদআতকে বেশি পছন্দ করে। কারণ পাপ থেকে তো লোকেরা তওবা করে নেয় কিন্তু বিদআত থেকে
তওবা করে না। (শরহুস সুন্নাহ)
(১২)আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাঃ বিদআতীদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিয়েছেনঃ
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) জানতে পারলেন
যে, কিছু লোক মসজিদে একত্রিত হয়ে উচ্চস্বরে যিকির এবং দরুদ শরীফ পড়তে ছিলেন। তিনি
তাদের কাছে আসলেন এবং বললেন, আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যামানায়
এরূপভাবে যিকির করতে বা দুরূদ পড়তে কাউকে দেখিনি। অতএব আমি তোমাদেরকে বেদআতী মনে করি।
তিনি এ কথাটি বারবার বলেছিলেন, এমনকি তাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিলেন। (আবূ নুআইম)
(১৩) মুহাদ্দিসগণের নিকট বিদআতীদের হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়ঃ
মুহাম্মাদ ইবনু সিরীন (রহ) বলেন, প্রথম প্রথম
লোকেরা হাদীসের সনদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করত না কিন্তু যখন ফেতনা, বেদআত ও মন গড়া বর্ণনা
প্রসার হতে লাগল তখন হাদীসের সনদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা অপরিহার্য হয়ে গেল। যদি হাদীস
বর্ণনাকারী আহলে সুন্নাহ হয়, তাহলে তা গ্রহণ করা হয় আর যদি বর্ণনাকারী বিদআতপন্থি
হয় তাহলে তার হাদীস গ্রহণ করা হয় না। (মুসলিম)
(১৪) বিদআত ফিতনায় পতিত হওয়া বা কষ্ট দায়ক শাস্তিযোগ্য হওয়ার বড়
কারণঃ
ইমাম মালেক রাহঃ কে জিজ্ঞাসা করা হল হে আবু
আব্দল্লাহ! ইহরাম কোথা থেকে বাঁধব? আমি মসজিদে নববী তথা কবর শরীফের কাছ থেকে ইহরাম
বাঁধতে চাই। উত্তরে ইমাম মালেক বললেন, এরূপ কর না। আমার ভয় হয়, হয়ত তুমি ফিতনায়
পতিত হবে। লোকটি বলল, এখানে ফিতনার কী আছে? আমি তো শুধু কয়েক মাইল পূর্বে ইহরাম বাঁধতে
চাইছি।ইমাম মালেক বললেন, এর চেয়ে বড় ফিতনা আর কি হবে যে, তুমি মনে করছ যে ইহরাম বাঁধার
সোওয়াব রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আগে বেড়ে যাচ্ছ। আল্লাহ তাআলা
বলেন, “যারা আল্লাহ তায়ালার আদেশ অমান্য করে তাদের ভয় থাকা উচিৎ যেন তারা কোন ফিত্না
বা কষ্ট দায়ক শস্তিতে পতিত না হয়। (আল ইতিসাম)
দ্বীনের ব্যাপারে নিজের খেয়াল খুশী বা মনের চাহিদা মতে চলা থেকে আল্লাহর
আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিৎঃ
আবূ বারআ আসলামী রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি আমার পরে তোমাদের ব্যাপারে পেট, লজ্জাস্থান, এবং
বিপথগামী মন বাসনাকে ভয় করছি। (কিতাবুস সুন্নাহ ইবনু আবী আছিম। সহীহ)
(১৫) বিদআতপন্থী লোকের কোন নেক আমল গ্রহণযোগ্য হবে নাঃ
ফুযাইল ইবনু আয়ায (রহ.) বলেন, যখন তোমরা বিদআতপন্থী
কোন লোক আসতে দেখবে সে রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তা গ্রহণ করবে। বিদআতীর কোন আমল আল্লাহর
কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যে ব্যক্তি বিদআতপন্থীকে সহযোগিতা করল সে যেন দ্বীন ধ্বংস করতে
সহযোগিতা করল। (খাছায়িছু আহলেসুন্নাহ,পৃষ্ঠা-২২)
(১৬) বিদ’আতীর উপর দুনিয়াতে বেইজ্জতী আর আখেরাতে আল্লাহর ক্রোধ চাপিয়ে
দেয়া হবে :
(আখেরাতেও বেইজ্জতী হতে হেব
তার প্রমাণ তিন নম্বরে বর্ণিত হাদীস) আল্লাহ
তা’আলা বলেন :
“অবশ্যই যারা গাভীর বাচ্চাকে উপাস্য বানিয়ে
নিয়েছে তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে দুনিয়াতেই ক্রোধ ও লাঞ্ছনা এসে পড়বে
। মিথ্যারোপকারীদেরকে আমি অনুরুপ শাস্তি দিয়ে থাকি” (সূরা আরাফ: ১৫২) ।
সামেরীর প্ররোচনায় গাভীর বাচ্চা দ্বারা তারা
পথভ্রষ্ট হয়েছিল এমনকি তারা তার ইবাদাতও করেছিল ।
আল্লাহ তা’আলা আয়াতের শেষে
বলেছেন:
“মিথ্যারোপকারীদেরকে আমি অনুরুপ শাস্তি দিয়ে থাকি এটি ব্যাপকভিত্তিক কথা । এর সাথে
বিদ’আতেরও সাদৃশ্যতা আছে । কারণ সকল প্রকার বিদ’আতও আল্লাহর উপর মিথ্যারোপের শামিল
। যেমনটি আল্লাহ তা’আলা বলেছেন :
“নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে , যারা নিজ
সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতাবশতঃ বিনা জ্ঞানে হত্যা করেছে এবং আল্লাহ তাদেরকে যেসব রিযিক
দিয়েছিলেন , সেগুলোকে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে হারাম করে দিয়েছে । নিশ্চয় তারা
পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সুপথগামী হয়নি” (সূরা আন’আম : ১৪০)।
অতএব আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে যে ব্যক্তিই বিদ’আত
সৃষ্টি করবে তাকেই তার বিদ’আতের কারণে লজ্জিত ও লাঞ্ছিত হতে হবে । তাবেঈ’দের যুগে বাস্তবে
বিদ’আতীদের ভাগ্যে এমনটিই ঘটেছিল । তাদেরকে তাদের বিদ’আত নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে
।
বিদ‘আতী পির-অলি, ইমাম, মুয়াজ্জিন, মুফতি, হুজুর, মাওলানা, মুহাদ্দিস
ও তাদের অনুসারীদের সাথে উঠা বসা করা প্রকৃত ইমান্দার মুসলমানদের জন্য হারামঃ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে
শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও
শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নবি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:
মুসলমানদের অগ্রবর্তী ন্যায়নিষ্ঠ ইমামদের সর্বজনগৃহীত
একটি নীতি ছিল—বিদ‘আতীদের সাথে কেউ যেন ওঠাবসা বা চলাফেরা বা মেলামেশা না করে। শ্রদ্ধেয় ইমাম, শাইখুল ইসলাম, হাফিয আবূ ‘আব্দুল্লাহ
আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] আহলুস সুন্নাহ’র মূলনীতি বর্ণনা
করতে গিয়ে বলেছেন,
“আমাদের নিকট সুন্নাহ’র মূলনীতি হচ্ছে, বিদ‘আতীদের
সাথে তর্কবিতর্ক এবং (তাদের সাথে) ওঠাবসা বর্জন করা।” [ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ),
উসূলুস সুন্নাহ; পৃষ্ঠা: ৩; তারিখ ও প্রকাশনার বিহীন; ইমাম আল-লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ),
শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ৩১৭; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা:
১৪৮; দারুল বাসীরাহ, আলেকজান্দ্রিয়া কর্তৃক প্রকাশিত।
এই মূলনীতি গৃহীত হয়েছে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ
ﷺ ও তাঁর সাহাবীবর্গ
এবং তাঁদের পরবর্তী অনুসারীগণ কর্তৃক অবলম্বিত মানহাজ থেকে।
আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত:
৫৮ হি.] থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, “এক ব্যক্তি নাবী ﷺ এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইল। তিনি লোকটিকে
দেখে বললেন, ‘সে সমাজের নিকৃষ্ট লোক এবং সমাজের দুষ্ট সন্তান।’ এরপর সে যখন এসে বসল,
তখন নাবী ﷺ আনন্দ সহকারে তার
সাথে মেলামেশা করলেন। লোকটি চলে গেলে ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) তাঁকে জিজ্ঞেস
করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, যখন আপনি লোকটিকে দেখলেন তখন তার ব্যাপারে এমন বললেন, পরে
তার সাথেই আপনি আনন্দচিত্তে সাক্ষাৎ করলেন।’ তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “হে ‘আইশাহ, তুমি
কখনো আমাকে অশালীন দেখেছ? কেয়ামতের দিন আল্লাহ’র কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে মানুষের মধ্যে
সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার দুষ্টামির কারণে মানুষ তাকে ত্যাগ করে।” [সাহীহ বুখারী,
হা/৬০৩২; সাহীহ মুসলিম, হা/২৫৯১]।
প্রখ্যাত তাবি‘ঈ, মাদীনাহ’র শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ
ও মুফতী, ইমাম সুলাইমান বিন ইয়াসার (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১০৭ হি.] থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, “বানূ তামীম গোত্রে সাবীগ বিন ‘ইসল নামে এক ব্যক্তি ছিল। একবার সে মাদীনাহ’য়
আগমন করে। তার কাছে বেশ কিছু গ্রন্থ ছিল। সে লোকদেরকে কুরআনের মুতাশাবিহ তথা দ্ব্যর্থবোধক
আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করছিল। ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি
তাকে ডেকে পাঠান। আর তার জন্য তিনি খেজুর গাছের (কাঁদির) অনেকগুলো শুকনো দণ্ড প্রস্তুত
করেন। সে যখন তাঁর নিকটে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করে, তখন তিনি বলেন, ‘তুমি কে?’ সে বলে,
‘আমি আল্লাহ’র গোলাম সাবীগ।’ ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘আর আমি হলাম আল্লাহ’র
গোলাম ‘উমার।’ এই বলে তিনি তার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং ওই প্রস্তুতকৃত শুকনো খর্জূর দণ্ডগুলো
দিয়ে পিটাতে লাগলেন। তিনি তাকে মারতেই থাকলেন, এমনকি মারতে মারতে তার মাথা ফাটিয়ে দিলেন,
আর ওই ব্যক্তির মুখ থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল। সে বলল, ‘আমীরুল মু’মিনীন, যথেষ্ট
হয়েছে। আল্লাহ’র কসম, আমার মাথায় যা (ভ্রান্ত বিশ্বাস) ছিল তা উধাও হয়ে গেছে’।” [ইমাম
আল-লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ;
আসার নং: ১১৩৮; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৫৬০; দারুল বাসীরাহ, আলেকজান্দ্রিয়া কর্তৃক প্রকাশিত।
ইবনু যুর‘আহ (রাহিমাহুল্লাহ) স্বীয় পিতা থেকে
বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমি সাবীগ বিন ‘ইসলকে বসরায় দেখেছি। সে যেন খোস-পাঁচড়ায়
আক্রান্ত এক উট, সে (লোকদের) বৈঠকগুলোতে যেত। যখনই সে কোনো বৈঠকে বসত, তখনই ওই বৈঠকের
লোকেরা উঠে চলে যেত এবং তাকে বর্জন করত। সে যদি এমন সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে বসত যারা
তাকে চিনে না, তাহলে অপর বৈঠকের লোকেরা তাদের ডাক দিয়ে বলত, আমীরুল মু’মিনীনের কড়া
নির্দেশ আছে (অর্থাৎ, ওই লোককে পরিত্যাগ করো)।” [প্রাগুক্ত; আসার নং: ১১৪০; খণ্ড: ৪;
পৃষ্ঠা: ৫৬১]
প্রখ্যাত সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু
‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] বলেছেন,
“যে
ব্যক্তি স্বীয় দ্বীনকে সম্মান করতে পছন্দ করে, সে যেন বিদ‘আতীদের সংস্রব বর্জন করে।
কেননা বিদ‘আতীদের সংস্রব খোস-পাঁচড়ার চেয়েও অধিক সংক্রামক।” [ইমাম ইবনু ওয়াদ্বদ্বাহ
(রাহিমাহুল্লাহ), আল-বিদা‘উ ওয়ান নাহয়ু ‘আনহা; আসার নং: ১৩১; পৃষ্ঠা: ৯৬; মাকতাবাতু
ইবনি তাইমিয়্যাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]
যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুফাসসিরকুল শিরোমণি,
উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘ইলমী ব্যক্তিত্ব, সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু
‘আনহুমা) [মৃত: ৬৮ হি.] বলেছেন,
“তুমি
বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা কোরো না। কেননা তাদের সাথে ওঠাবসা অন্তরে রোগ সৃষ্টি করে।”
[ইমাম ইবনু বাত্বত্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-ইবানাহ; আসার নং: ৩৭১]
প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ, আহলুস সুন্নাহ’র শ্রেষ্ঠ
‘আলিম, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৮৭ হি.] বলেছেন,
“তুমি বিদ‘আতীর সাথে ওঠাবসা কোরো না। কেননা
আমি আশঙ্কা করছি যে, তোমার উপর লা‘নাত বর্ষণ করা হবে।” [ইমাম ইবনু বাত্বত্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ),
আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪৪১; ইমাম আল-লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি
আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৬২]
ইমাম ফুদ্বাইল বিন ‘ইয়াদ্ব (রাহিমাহুল্লাহ)
[মৃত: ১৮৭ হি.] আরও বলেছেন,
“যে ব্যক্তি বিদ‘আতীর সাথে বসে, সে ব্যক্তি
থেকে সাবধান থাক। যে ব্যক্তি কোনো বিদ‘আতীর সাথে বসে, তাকে হিকমাহ (প্রজ্ঞা) দেওয়া
হয় না। আমি তো এটা পছন্দ করি যে, আমার ও বিদ‘আতীর মধ্যে একটি লোহার কেল্লা (স্থাপিত)
হবে। কোনো বিদ‘আতীর নিকট খাওয়া অপেক্ষা কোনো ইহুদি বা খ্রিষ্টানের নিকট খাওয়া আমার
কাছে অধিক পছন্দনীয়।” [আবূ নু‘আইম (রাহিমাহুল্লাহ), হিলইয়াতুল আউলিয়া; খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা:
১০৩; ইমাম আল লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল
জামা‘আহ; আসার নং: ১১৪৯ (শব্দগুচ্ছ লালাকাঈ’র)]
শাইখুল ইসলাম, হাফিয আবূ নু‘আইম ফাদ্বল বিন
‘আমর আত তাইমী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২১৮ হি.] বলেছেন,
“এক জুমু‘আহর দিন সুফইয়ান সাওরী [মৃত: ১৬১
হি.] মাসজিদে প্রবেশ করলেন। সে সময় (বিদ‘আতী) হাসান বিন সালিহ বিন হাই সালাত পড়ছিল।
(তা দেখে) তিনি বললেন, ‘আমরা আল্লাহ’র কাছে মুনাফিক্বের বিনয়নম্রতা থেকে পানাহ চাচ্ছি।’
তারপর তিনি তাঁর জুতো নিয়ে ফিরে গেলেন।” [তাহযীবুল কামাল; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ১৮০; সিয়ারু
আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৩৬৩]
প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম
আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৭ হি.] কে বলা হলো,
“এক ব্যক্তি বলছে, ‘আমি আহলুস সুন্নাহ’র সাথেও
ওঠাবসা করি, আবার বিদ‘আতীদের সাথেও ওঠাবসা করি।’ তখন আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন,
‘এই লোক হক এবং বাতিলকে সমান করতে চাচ্ছে’।” [আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪৩০]।
এই আসারটি বর্ণনা করার পর ইমাম ইবনু বাত্বত্বাহ
(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩৮৭ হি.] বলেছেন, “আওযা‘ঈ সত্যই বলেছেন। আমি বলছি, এই ব্যক্তি
হক ও বাতিলের এবং ঈমান ও কুফরের পার্থক্য সম্পর্কে অবগত নয়। এ ধরনের লোকদের ব্যাপারেই
কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং নাবী ﷺ
থেকে সুন্নাহ বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذَا لَقُوا
الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا
وَإِذَا
خَلَوْا
إِلَىٰ
شَيَاطِينِهِمْ
قَالُوا
إِنَّا
مَعَكُمْ
“যখন তারা মু’মিনদের সংস্পর্শে আসে তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’; আর যখন তারা নিভৃতে
তাদের শয়তানদের (সর্দারদের) সঙ্গে মিলিত হয়, তখন বলে, ‘আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি’।”
(সূরাহ বাক্বারাহ: ১৪)” [আল-ইবানাহ; আসার নং: ৪৩০ – এর টীকা]
বিদ‘আতীদের সাথে মেলামেশার কুফল:
ইমাম ইয়া‘কূব বিন শাইবাহ (রাহিমাহুল্লাহ)
[মৃত: ২৬২ হি.] বলেছেন, “বানূ সাদওয়াস গোত্রে ‘ইমরান বিন হিত্বত্বান নামে এক ব্যক্তি
ছিল। সে নাবী ﷺ এর একদল সাহাবীকে পেয়েছিল। এতৎসত্ত্বেও সে
খারিজী মতবাদে দীক্ষিত হয়েছিল। এর কারণ সম্পর্কে আমাদের কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছে তা হলো,
তার এক চাচাতো বোন ছিল, যে খারিজী মতাদর্শ লালন করত। ‘ইমরান সেই মেয়েকে বিয়ে করে, তাকে
তার ভ্রান্ত মতাদর্শ থেকে ফেরানোর জন্য। কিন্তু ওই মেয়েই তাকে নিজের মতাদর্শে দীক্ষিত
করে ফেলে।” [তারীখু দিমাশক্ব; খণ্ড: ৪৩; পৃষ্ঠা: ৪৯০; তাহযীবুল কামাল; খণ্ড: ২২; পৃষ্ঠা:
৩২৩; গৃহীত: শাইখ জামাল বিন ফুরাইহান আল-হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ), লাম্মুদ দুর্রিল মানসূর
মিনাল ক্বাওলিল মা’সূর ফিল ই‘তিক্বাদি ওয়াস সুন্নাহ; পৃষ্ঠা: ১৮৮; দারুল মিনহাজ, কায়রো
কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হিজরী (১ম প্রকাশ)]
পরবর্তীতে এই খারিজী ‘ইমরান বিন হিত্বত্বান
ইসলামের চতুর্থ খলিফা ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র হত্যাকারী ‘আব্দুর রহমান বিন মুলজিম
আল-খারিজী’র প্রশংসা করে দীর্ঘ কবিতা রচনা করে। আল্লাহ’র কাছে যাবতীয় বিদ‘আত ও তার
বাহকদের সংস্পর্শ থেকে পানাহ চাচ্ছি।
ভারতবর্ষের অপ্রতিদ্বন্দ্বী মুহাদ্দিস, আশ-শাইখুল
‘আল্লামাহ, ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ বিন ‘আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:
১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.] বলেছেন, “এই সাদৃশ্য স্থাপনের মধ্যে বেশ কিছু জ্ঞাতব্য বিষয় রয়েছে।
তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এ সকল বিদ‘আত এবং তা পালনকারী বিদ‘আতীদের নিকটবর্তী হওয়া থেকে
সতর্ক থাকা। যেহেতু জলাতঙ্ক রোগ সংক্রামক ব্যাধির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর জলাতঙ্ক রোগের
উৎস রয়েছে কুকুরের মধ্যে। সেই কুকুর যখন কাউকে কামড় দেয়, তখন সেও তার মতোই (ব্যাধি
বহনকারী) হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে এই রোগ থেকে না মরে নিস্তার পায় না। একইভাবে
একজন বিদ‘আতী যখন কারও কাছে নিজের (ভ্রান্ত) মতাদর্শ এবং সংশয় পরিবেশন করে, তখন খুব
কম সময়ই সে ওই (বিদ‘আতীর) দুর্যোগ থেকে নিস্তার পায়। বরং (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই) হয় সে
ওই বিদ‘আতীর সাথে তার (সংশয়পূর্ণ) মতাদর্শে পতিত হয় এবং তার দলেরই একজন সদস্য বনে যায়।
নতুবা ওই বিদ‘আতী এই ব্যক্তির অন্তরে সংশয় প্রোথিত করে; যা থেকে সে বেরিয়ে আসতে চায়,
কিন্তু সক্ষম হয় না।
এটা পাপাচারিতার বিপরীত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই
পাপচারী ব্যক্তি তার সাথের ব্যক্তিটির অনিষ্ট করে না এবং স্বীয় পাপাচারিতায় তাকে প্রবিষ্ট
করে না। তবে তার সাথে দীর্ঘ সময়ের ঘনিষ্ঠতা ও মেলামেশা থাকলে এবং তার পাপকাজে বারবার
উপস্থিত হলে ভিন্ন কথা। (সালাফদের থেকে বর্ণিত) আসারসমূহে যে বর্ণনা এসেছে তা এই ব্যাখ্যাকে
সমর্থন করে। কেননা ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ তাদের (বিদ‘আতীদের) সাথে ওঠাবসা করতে ও তাদের
সাথে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছেন, এবং বিদ‘আতীদের সাথে যারা কথা বলে তাদের সাথেও কথা
বলতে নিষেধ করেছেন। আর এ ব্যাপারে তাঁরা কঠোরতা অবলম্বন করেছেন।” [ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ
মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ), মির‘আতুল মাফাতীহ শারহে মিশকাতুল মাসাবীহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা:
২৭৮; গৃহীত: শাইখ খালিদ আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ), ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত
তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ১০২-১০৩; মাকতাবাতুল আসালাতিল আসারিয়্যাহ, জেদ্দা
কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, বিদ‘আতীদের
সাথে ওঠাবসা বর্জন করা আহলুস সুন্নাহ’র একটি মহান মূলনীতি। তাই আমরা আল্লাহ’র কাছে
প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে উক্ত মূলনীতিটি হেফাজত করার মাধ্যমে সালাফী মানহাজের
প্রকৃত অনুসারী হওয়ার তাওফীক্ব দান করেন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
বিদআতী ইমামের পিছনে সালাত পড়ার হুকুম কী?
জবাব:
এক. বিদআতপন্থী ইমামের বিদআত হয়তো কুফরি বিদআত
হবে অথবা সাধারণ কোন বিদআত হবে। যদি কুফরি-বিদআত হয় তাহলে ওই ইমামের পিছনে সালাত পড়া
জায়েয হবে না। আর যদি ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয় এমন কোন বিদআত না হয়; বরং তার বিদআতি-কার্যক্রম
কেবল কবিরা গোনাহ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে,যেমন প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম, জানাযার পরে মুনাজাত
ইত্যকার বিষয় সে করে তাহলে তার পিছনে সালাত
পড়া মাকরুহে তাহরিমী।
(বাদায়েউস সানায়ে’-১/৩৮৭;ফাতওয়ায়ে শামী-২/২৯৯;
ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৮৪; আল বাহরুর রায়েক-১/৬১০)
সুতরাং আপনার যদি বিদআতী ইমামকে বাদ দিয়ে অন্য
কোন ইমামের পিছনে নামায পড়ার সুযোগ থাকে তাহলে সেটাই করতে হবে। বিশেষতঃ আলেম শ্রেণী
ও তালিবুল ইলমকে সেটা করতে হবে। কেননা তা করা সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ তুল্য
হবে।
দুই. কিন্তু এ ইমামের পিছনে সালাত বর্জন করতে গিয়ে
জামাত বর্জন করা জায়েয হবে না। আলেমগণ লিখেছেন, এলাকাতে যদি শুধু একজন ইমাম থাকেন তাহলে
তার পিছনেই জামাতে সালাত আদায় করতে হবে। কেননা জামাতে সালাত আদায় করা, একাকী সালাত
আদায় করার চেয়ে উত্তম; এমনকি ইমাম ফাসেক কিংবা বিদআতী হলেও। কারণ সাহাবায়ে কেরাম জুমআর
সালাত, জামাতে সালাত ফাসেক ইমামের পিছনেও আদায় করেছেন; তবুও তাঁরা জামাত বর্জন করেন
নি। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. হাজ্জাজের পিছনে সালাত আদায় করেছেন। আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রাযি. ও অন্যান্য সাহাবী ওয়ালিদ ইবনে উকবার পিছনে সালাত আদায় করেছেন। ওয়ালিদ
বিন উকবা মদ্যপ ছিল। তবুও তাঁরা জামাত ত্যাগ করেন নি।
সার কথা হচ্ছে- যদি আপনি এমন কোন মসজিদে যেতে পারেন
যেখানে বিদআত নেই, যে মসজিদের ইমাম বিদআতের দিকে আহ্বান করে না সেটা ভাল। যদি না যেতে
পারেন অথবা কাছাকাছি অন্য কোন মসজিদ না থাকে তাহলে উল্লেখিত কারণে জামাত ত্যাগ করা
জায়েয হবে না।(আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা ২/৩০৭-৩০৮)।
‘ফাজায়েলে আমল’ নামক বেদাতী বই পড়া জায়েজ নয়ঃ
(সৌদী আরবের সবচাইতে বড় ফতোয়া কমিটির ফাতওয়া)
১. ‘ফাজায়েলে আমল’ নামক বেদাতী
বই পড়া জায়েজ নয়।
২. ফাজায়েলে আমলে বর্ণিত ভ্রান্ত
‘শিরকি ও কুফুরী কাহিনী’ বিশ্বাস করে, এমন ইমামের পেছনে নামাজ পড়া জায়েজ নয়।
সৌদী স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়া,
ফতোয়া নং- ২১৪১২,
ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ খণ্ড-
২, পৃষ্ঠা- ২৮২-২৮৪।
ফাজায়েলে আমলসহ ফাজায়েলে জিকির, ফাজায়েলে সাদাকাত, ফাজায়েলে হজ্জ, নিয়ামুল কোরআন, বেহেস্তি
জেওর, মোকসেদুল মোমেনীন, মোকসেদুল মোহসেনীন, ইত্যাদি শির্ক- বিদআত ও কুফুরী মিশ্রিত
কিতাব পাঠ করা ও আমল করা একজন ইমান্দার মুত্তাকি মুসলমানের জন্যে সম্পূর্ণভাবে হারাম
হারাম। এই সব পুস্তকের যারা অনুসারী বা প্রচারকারী এদের সাথে উঠা বসা করা, আত্মীয়তা
করা এদের পিছনে সালাত আদায় করা কিংবা সালাম বিনিময় করাও হারাম। এরা স্পষ্ট বিদআতী।
কোরআন ও সহিহ হাদিস মোতাবেক এরা জাহান্নামী।
প্রশ্ন?
প্রশ্নঃ শাইখ মুহাম্মাদ যাকারিয়া (রহঃ) ভারত ও পাকিস্তানের
বিখ্যাত ধর্মীয় পণ্ডিতগণের মধ্যে একজন, বিশেষ করে তাবলীগ জামায়াতের (ইসলামের দিকে ডাকে
এমন একটি দলের) অনুসারীদের মধ্যে। তার লিখা অনেকগুলো কিতাব রয়েছে যার মধ্যে “ফাজায়েলে
আমল” একটি, যেটি তাবলীগ জামাত দলের ধর্মীয় আলোচনার সময় পড়া হয়ে থাকে এবং যেটিকে এই
দলের সদস্যরা সহীহ বুখারীর মতই শ্রদ্ধা করে। আমি তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। এই বইটি পড়তে
গিয়ে আমি দেখলাম এর মধ্যে কিছু কিছু বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য ও অবিশ্বাস্য। সুতরাং আমি
আমার এই সমস্যাটা আপনাদের সুবিখ্যাত কমিটির কাছে পেশ করছি, এই আশায় যে, আপনারা হয়তো
এর সমাধান দিতে পারবেন। এই বর্ণনাগুলো আহমেদ রিফাঈর লিখা থেকে নেয়া, যেখানে তিনি দাবী
করেছেন যে, হজ্জ্ব শেষে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা জেয়ারত
করতে যান এবং এই কবিতাংশটি পাঠ করেনঃ
যখন আমি দূরে ছিলাম, আমি আমার আত্মাকে আপনার
কাছে পাঠিয়ে দিতাম
আমার পক্ষ থেকে মাটিকে চুম্বন করার জন্যে
এখন যেহেতু আমি স্বশরীরে ও আত্মায় উপস্থিত
(হে নবী আপনি) আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, যেন
আমি চুম্বন করতে পারি।
এই বাক্যগুলো বলার পর রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের ডান হাত তাঁর কবর বের হয়ে আসে, আর রিফাঈ তাতে চুম্বন করেন। এই
ঘটনার বর্ণনা আছে আল-সুয়ূতী রচিত “আল-হাওয়ী” নামক গ্রন্থে। তিনি আরো দাবী করেছেন যে,
প্রায় ৯ (অথবা ৯০) হাজার মুসলিম এই মহান ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন, এবং সেই পূন্যময় হাতও
সবাই দেখতে পান যার মধ্যে শাইখ আবদুল কাদের জ্বিলানী (রহঃ) ও তখন মসজিদে নববীর মধ্যে
থেকে তা প্রত্যক্ষ করেছেন। এই কাহিনীর আলোকে আমি নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো করতে চাইঃ
১. এটি কী কোন সত্য ঘটনা নাকি অবাস্তব কল্পকাহিনী?
২. সুয়ূতী রচিত কিতাবটি “আল-হাওয়ী” সম্বন্ধে
আপনাদের মত কী যেটির মধ্যে এই কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে?
৩. যদি এই গল্প সঠিক না হয়, এমন কোন ঈমামের পেছনে
নামাজ পড়া জায়েজ হবে কী, যেই ইমাম এই গল্প বয়ান করে ও বিশ্বাস করে?
৪. এমন কিতাব কোন মসজিদে কোন ধর্মীয় আলোচনা সভায়
পড়া জায়েজ হবে কী, যেমন ব্রিটেনে তাবলীগিদের মসজিদে এই কিতাব পড়ে থাকে? এই বইটি সৌদী
আরবেও ব্যাপক প্রচলিত, বিশেষ করে মদীনা মুনাওয়ারাতে কারণ এর লেখক এখানে অনেকদিন যাবত
বাস করেছিলেন।
শ্রদ্ধেয় উলামাবৃন্দ,
দয়া করে আমাদেরকে সন্তোষজনক
জবাব দিয়ে পথ দেখাবেন কী, যেন আমি এটিকে স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করে বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী
ও অন্য সকল মুসলিম ভাইদের মাঝে বিলি করতে পারি এই বিষয়ে কথা বলার সময়?
উত্তরঃ এই গল্পটি একটি মিথ্যা ও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন
কাহিনী। মৃত ব্যক্তি সম্বন্ধে সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, নবী-রাসুল বা সাধারণ মুসলিম যেই হোন
না কেন, তিনি তাঁর কবরে নাড়াচাড়া করতে পারেন না। যেটি দাবী করা হয় যে, রাসুলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রিফাঈর জন্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বা অন্য কারো জন্যে,
তা সত্য নয়; বরং, এটি একটি ভিত্তিহীন গুজব বা মতিভ্রম, যা কোনমতেই বিশ্বাস করা উচিত
নয়।
তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
আবু বকর (রাঃ) এর জন্যে তাঁর হাত বাড়িয়ে দেন নি, উমার (রাঃ) এর জন্যে দেন নি, অথবা
অন্য কোন সাহাবীর জন্যেও না। কারোই উচিত হবে না সুয়ূতীর কিতাব “আল-হাওয়ী” থেকে এই কাহিনী
বর্ণনা করে বিভ্রান্ত হওয়া, কেননা অনেক পণ্ডিত মত দিয়েছেন যে, সুয়ূতী তার কাহিনী সত্য-মিথ্যা
যাচাই না করেই তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া, যে ইমাম এই কাহিনী বিশ্বাস করে তার
পেছনে সলাত আদায় করাও জায়েজ হবে না, কারণ তিনি তাঁর আকিদাহগত দিক দিয়ে খাঁটি মুসলিম
নন এবং তিনি কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন। ফাজায়েলে আমল বা এই জাতীয় কিতাব মসজিদে বা অন্য
কোথায়ও পড়া জায়েজ নেই যার মধ্যে কুসংস্কার রয়েছে এবং মানুষের কাছে মিথ্যার প্রচার করে,
কারণ এসব মানুষকে বিভ্রান্ত করে ও তাদের মধ্যে কুসংস্কার ছড়ায়।
সর্বশক্তিমান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ সকল মুসলিমকে
সত্যের পথে পরিচালিত করুন।
তিনি সর্বশ্রোতা ও উত্তরদাতা। আল্লাহ আমাদের
সফলতা দান করুন। আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার পরিবার
ও তাঁর সাহাবীগণের উপর আল্লাহ্ শান্তি ও দয়া বর্ষন করুন।
স্থায়ী ফাতওয়া কমিটির সম্মানিত মুফতিদের নামঃ
১. চেয়ারম্যানঃ আল্লামাহ শায়খ
আব্দুল আ’জিজ ইবনে আবদুল্লাহ আলে-শায়খ হা’ফিজাহুল্লাহ।
২. সদস্যঃ আল্লামাহ শায়খ সালেহ
আল-ফওজান হা’ফিজাহুল্ল...
৩. সদস্যঃ আল্লামাহ শায়খ বাকর
আবু জায়েদ রাহি’মাহুল্লাহ।
৪. সদস্যঃ আল্লামাহ আব্দুল্লাহ
ইবনে গুদাইয়্যান রাহি'মাহুল্লাহ।
তাবলীগ জামাতের কিতাবে কুরআইলিয়াসী তাবলীগ জামাত শির্ক বিদআতের কারখানা প্রমানসহ জেনে নিনঃ
(কয়েকটি মাত্র নমূনা দেয়া হলো-বিস্তারিত অন্য বই এ)
মাওলানা জাকারিয়া সাহেব এর লিখিত ফাজায়েলে
নামাজের যথাক্রমে ৭৬, ৯০, ৯৬, ৯৭, ১২৫ পৃষ্ঠায় লেখার সংক্ষিপ্ত সার উপস্থাপন করছিঃ--
(১) কৃষকগণ মাঠে জামাতে নামাজ আদায় করিলে ৫০ অয়াক্ত
নামাজের সওয়াব পাওয়া যাবে। [ফাজায়েলে নামাজ, ৭৬ পৃষ্ঠা]
(২) সাবেত
নামক এক ব্যক্তি ৫০ বছর ঘুমায় নাই, এর বরকতে তিনি কবরে নামাজ পরার সুযোগ পেয়েছিলেন।
[ফাজায়েলে নামাজ, ৯৭ পৃষ্ঠা]
(৩) এক অজুতে ইমাম আবু হানিফা এবং আর কিছু বুজুর্গ
ব্যক্তি ৫০ বছর এশা ও ফজরের নামাজ পরতেন। [ফাজায়েলে নামাজ, ৯০ পৃষ্ঠা]
(৪) সূফী আব্দুল ওয়াহেদ প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি
ঘুমাবেন না এবং সেইভাবেই জীবন কাটাবেন। [ফাজায়েলে নামাজ, ৯০ পৃষ্ঠা]
(৫) তাকবিরে উলা অর্থাৎ ১ম তাকবীরে নামাজে শরিক
হওয়া দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে সবচেয়ে উত্তম। অন্য রেওয়াতে আছে আল্লাহর রাস্তায় ১
হাজার উট সাদকা করার চেয়ে উত্তম। [ফাজায়েলে নামাজ, ১২৫ পৃষ্ঠা]
(৬) আবু এতাব ছুলামি ৪০ বছর যাবত দিনের বেলায় রোজা
রাখতেন। [ফাজায়েলে নামাজ, ৯৭ পৃষ্ঠা]
(৭) হযরত জয়নুল আবেদিন (রাঃ) দৈনিক ১ হাজার রাকাত
নামাজ পড়তেন। বাড়ি বা সফরে কোনো অবস্থায় তার ব্যতিক্রম হতো না। [ফাজায়েলে নামাজ, ১১৭
পৃষ্ঠা]
(৮) সাহাবি কর্তৃক রাসুল সাঃ এর রক্ত চুসিয়া পান
করার ঘটনা শুনিয়া হুজুর সাঃ বলিলেন যেই শরীরে আমার রক্ত ঢুকিয়াছে তাহাকে দোজখের আগুন
স্পর্শ করিবে না। [ফাজায়েলে আমাল, হেকায়েতে সাহাবা]
(৯) হাদিসের কোন কিতাবের নাম উল্লেখ ছাড়াই তিনি
লিখেছেন, “রাসুল সাঃ এর মল-মুত্র সবই পাক পবিত্র। কাজেই তাতে কোনো তরকের অবকাশ নাই”।
[হেকাবাতে সাহাবা ২৫৪ পৃষ্ঠা]
(১০) হাদিসের কোনো কিতাবের নাম উল্লেখ ছাড়াই তিনি
আয়েশা রাঃ এর বরাত দিয়ে লিখেছেন, “রাসুল সাঃ বলেছেন কেয়ামতের দিন হিসাব নিকাশ শেষ হবার
পর আল্লাহ কেরামান কাতেবিনকে বলবেন, অমুক বান্দার একটি নেকির কথা আমল নামায় লেখো নাই
আর তা হচ্ছে জিকিরে খফি।” [ফাজায়েলে জিকির ৬১ পৃষ্ঠা]
(১১) হাদিসের কোনো কিতাবের নাম উল্লেখ ছাড়াই বলা
হয়েছে, “ ইমাম মালেক হতে বর্ণিত আছে, ফজরের পর হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত কথা বলা মাকরুহ।“
[ফাজায়েলে জিকির ৬৭ পৃষ্ঠা]
(১২) হাদিসের মিথ্যা অনুবাদ করেছে আলাইহিমুস সালাত
এর অর্থ করা হয়েছে যে, নবিগন কবরে জীবিত আছেন এবং তাহাদের নিকট রিজিক পৌছিয়া থাকে।“
[ফাজায়েলে দরুদ ৪৫-৪৬ পৃষ্ঠা]
অথচ সবাই জানেন যে এর অর্থ হচ্ছে তাদের (নবীদের)
উপর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।
(১৩) রসুল সাঃ কর্তৃক প্রদত্ত দরুদ (দরুদে ইব্রাহীম)
এর পরিবর্তে তিনি বিভিন্ন জনের তৈরিকৃত দরুদ বর্ণনা করেছেন যেগুলা ভিত্তিহীন, বানোয়াট
ও বিশেষ করে স্বপ্নে দেখা ফজিলতও বর্ণনা করেছেন। উল্লেখিত দরুদের এই পরিমান গুরুত্ব
দেয়া হয়েছে যে, এবনুল মোশ্তাহেরের ভাষায় বলেছেন, তার দেওয়া প্রার্থনা ও দরুদ এতই শ্রেষ্ঠ
ও উত্তম যে, আজ পর্যন্ত আসমান ও জমিনের জীন, ইনছান, ও ফিরিশতা কেহই উহা উত্তম করতে
পারেনি। সকল প্রার্থনা ও দরূদ অপেক্ষা উহাই শ্রেষ্ঠ। [ফাজায়েলে দরূদ, ৫৩ পৃষ্ঠা]
ফাজায়েলে আমালের ফজিলতের অন্তরালে ইমান বিধ্বংসী
আকিদা লুকিয়ে রেখে এই তাবলীগ জামাত সাধারণ মানুষদের কিভাবে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। আর তারা
দাবী করে যে তারা নাকি নবিওয়ালা কাজ করতেছে। এই বিদআতগুলা নাকি নবিওয়ালা কাজ ।
কোরআন ও হাদিস বিরোধী আজগুবি কিসসা-কাহিনীঃ
“একজন স্ত্রীলোকের মৃত্যু হইয়াছিল। তাহার
ভাই দাফনের কাজে শরীক ছিল। ঘটনাক্রমে দাফনের সময় তাহার টাকার থলি কবরে পড়িয়া যায়।
তখন খেয়াল হয় নাই। কিন্তু পরে যখন খেয়াল হইল, তখন তাহার খুব আফসোস হইল। চুপে পুপে
কবর খুলিয়া উহা বাহির করিতে এরাদা করিল। অতঃপর যখন কবর খুলিল তখন কবর আগুনে পরিপূর্ণ
ছিল। সে কাঁদিতে কাঁদিতে মায়ের নিকট আসিল এবং অবস্থা বর্ণনা করিয়া কারন জিজ্ঞাসা
করিল। মা, বলিলেন, সে নামাজে অলসতা করিত এবং কাজা করিয়া দিত”
ফাজায়েলে আমল; ফাজায়েলে নামাজ; মুহাম্মাদ
জাকারিয়া ছাহেব কান্ধলভি; অনুবাদক- মুফতি মুহাম্মাদ উবাইদুল্লাহ; নজরে ছানী ও সম্পাদনা
হাফেজ মাওলানা মুহাম্মাদ যুবায়ের ছাহেব ও মাওলানা রবিউল হক ছাহেব; কাকরাইল মসজিদ,
ঢাকা।
প্রকাশনা- দারুল কিতাব, ৫০ বাংলাবাজার,ঢাকা;
অক্টোবর ২০০১ ইং; পৃষ্ঠা নঃ ৬০
উপরোক্ত গল্পের মাধ্যমে আমরা দুটি বিষয় বুঝতে
পারিঃ
# কবরে আযাব হয়।
# কবরের আযাব মানুষ দেখতে পায়।
কবরের আযাব কুরআন ও হাদিস দ্বারা
সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত সত্য। কবরের আযাব সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে বহু বিষয়
জানিয়ে গেছেন। যাই হোক, আমাদের আলোচনার মুল বিষয় রাসুল (সাঃ) ছাড়া কবরের আযাব, যা
গায়েবী বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত তা অন্য কেউ দেখেছেন কি না?
কবরের আযাব গায়েবের বিষয়ঃ
যদি কবরের আযাব প্রকাশ্যে হত, তাহলে তার প্রতি
ঈমান আনয়নের কোন বিশেষত্ব থাকতো না। কেননা দৃশ্যমান কোন জিনিসকে সাধারনত প্রত্যাখ্যান
করা হয় না। যেমন মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ ‘’অতঃপর যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ
করল, তখন বলল, আমরা এক আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনলাম এবং আমরা তাঁর সঙ্গে যাদেরকে শরীক
করতাম, তাঁদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম”। (মুমিনঃ ৮৪)
সুতরাং মানুষ যদি দাফনকৃতদের দেখতে ও তাদের
চিৎকার শুনতে পেত, তখন তারা অবশ্যই ঈমান আনত। কবরের আযাব গায়েবী বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত।
কত মানুষ কবরে আযাব ভোগ করে, কিন্তু আমরা তা অনুভব করতে পারি না। অনুরুপ কত কবরবাসীর
জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়, তারা ভোগ করে অফুরন্ত সুখ-শান্তি। অথচ আমরা তা
জানতে বা অনুধাবন করতে পারি না। তা কেবল আল্লাহ্ জানেন। এবং আল্লাহ্ তায়ালা ওয়াহীর
মাধ্যমে রাসুল (সাঃ)-কে কবরের আযাব ও সুখ-শান্তির কথা জানিয়েছেন। কবরের আযাব, তার
নেয়ামত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। সুতরাং তার প্রতি যথাযথভাবে বিশ্বাস স্থাপন
করা আবশ্যক। তবে কবরের শাস্তি ও নেয়ামতের প্রকৃতি ও স্বরূপ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন
ও হাদিসে যা বর্ণিত হয়েছে তার চেয়ে বেশি কিছু আমরা জানি না।
রাসুল (সাঃ)-কে আল্লাহ্ তায়ালা কবরের আযাব দেখিয়েছেন এবং রাসুল
(সাঃ) ছাড়া অন্য কেউ কবরের আযাব দেখেননিঃ
আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ)
বলেছেনঃ ‘’বান্দাহকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তাঁকে পিছনে রেখে তার সাথীরা চলে যায়
(এতটুকু দূরে যে), তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। এমন সময় দু’জন ফেরেশতা তার
নিকট এসে তাকে বসিয়ে দেন। অতঃপর তাঁরা প্রশ্ন করেন মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে তুমি
কি বলতে? তখন মুমিন ব্যাক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহ্র বান্দাহ
এবং তাঁর রাসুল। তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানের জায়গাটি দেখে নাও,
যার পরিবর্তে আল্লাহ্ তায়ালা তোমার জন্য জান্নাতে একটি স্থান নির্ধারণ করেছেন। নাবী
(সাঃ) বলেন, তখন সে দুটি স্থানের দিকেই দৃষ্টি দিবে। আর কাফির বা মুনাফিক ব্যাক্তিকে
যখন প্রশ্ন করা হবে, তুমি এই ব্যাক্তি অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে কি বলতে? সে
উত্তরে বলবেঃ আমি জানি না, লোকেরা যা বলত আমি তাই বলতাম। তখন তাঁকে বলা হবেঃ তুমি না
নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। অতঃপর তার দুই কানের মাঝখানে লোহার মুগুর দ্বারা
এমনভাবে আঘাত করা হবে, যার ফলে সে এমন বিকট চিৎকার করে উঠবে যে, তার আশেপাশের সকলেই
তা শুনতে পাবে, মানুষ ও জ্বিন ছাড়াঃ। (বুখারী ১৩৩৮, ১৩৭)
এমনকি সাহাবীরা পর্যন্ত কবরের আযাব দেখেননিঃ
জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, সা’দ ইবন মুয়ায (রাঃ) যখন মৃত্যুবরণ করেন, আমরা রাসুল (সাঃ)-এর সাথে তাঁর জানাযায়
হাজির হলাম। জানাযা পড়ার পর সাদ (রাঃ) কে যখন কবরে রাখা হল ও মাটি সমান করে দেয়া
হল, তখন রাসুল (সাঃ) সেখানে দীর্ঘ সময় আল্লাহ্র তাসবীহ পাঠ করলেন, আমরাও দীর্ঘ তাঁর
সাথে তাসবীহ পাঠ করলাম। অতঃপর তিনি তাকবীর বললেন। আমরাও তাঁর সাথে তাকবীর বললাম। এ
সময় রাসুল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলঃ হে আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ)! কেন আপনি এরুপ তাসবীহ
ও তাকবীর বললেন? তিনি বললেনঃ তাঁর কবর অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল; অতএব আমি এরুপ
করলাম, এতে আল্লাহ্ তাঁর কবরকে প্রশস্ত করে দিলেন’’
(আহমাদ; মিশকাত হাদীস নঃ ১৩৫; ইরওয়াউল গালীল
৩/১৬৬; সনদ সহীহ)
ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী
(সাঃ) এমন দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে কবর দু’টিতে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। তখন
তিনি বললেনঃ ‘’এ দু’ব্যাক্তিকে কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। অথচ বড় কোন পাপের জন্য তাদেরকে
শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব থেকে সতর্কতা অবলম্বন করত না, আর অপরজন চোগলখোরী
করে বেড়াত’’-(বুখারী ২১৬, ১৩৬১)।
কবরের আযাব যদি মানুষ দেখতে পেত তাহলে কেউ দাফন কর্মে উপস্থিত হত নাঃ
যায়িদ বিন সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল
(সাঃ) বলেছেনঃ ‘’এ উম্মাতকে তাদের কবরের মধ্যে পরীক্ষা করা হবে। তোমরা মৃত ব্যক্তিকে
দাফন করা বর্জন করবে, এ আশংকা না হলে আমি আল্লাহ্র নিকট দুআ করতাম যেন তিনি তোমাদেরকে
কবরের আযাব শুনান যা আমি শুনতে পাচ্ছি”। (মুসলিম ৭১০৫, ৭১০৬)
হে আমার মুসলিম ভাই! এখন তুমি চিন্তা করে দেখ,
তাবলীগ জামাতের কিতাবে কিভাবে কুরআন ও হাদীস বিরোধী ভ্রান্ত আকিদাহ পেশ করা হচ্ছে!
আল্লাহ্ আমাদেরকে কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী
সঠিক আকিদাহ পোষণ করার তৌফিক দান করুন।
তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর ও কুফরীমূলক বক্তব্য ও আক্বিদাঃ
(১)
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবে একথা উল্লেখ আছে যে, মূর্খ হোক, আলেম
হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরযে আইন। (হযরতজীর
মাল্ফুযাত-৪ পৃষ্ঠা-৭, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৫৩, তাবলীগে ইসলাম
পৃষ্ঠা-৩, পস্তী কা ওয়াহেদ এলাজ পৃষ্ঠা-২২)
(২) ইলিয়াছ সাহেবের মাল্ফুযাতসহ আরো কিছু কিতাবে
লেখা আছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত অনন্য ধর্মীয় তরীক্বা, যা সকল দ্বীনী আন্দোলনের
মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত, যার থেকে ভাল তরীক্বা আর হতে পারেনা। (হযরতজীর মাল্ফুযাত-২৯
পৃষ্ঠা-২২, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৮৫, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন পৃষ্ঠা-৪৯,
তাবলীগ জামায়াতের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৬)
(৩) প্রচলিত তাবলীগের কেউ কেউ বলে থাকে যে, প্রচলিত
ছয় উছূলী তাবলীগে অংশগ্রহণ না করলে ও চিল্লা না দিলে ঈমান ও এক্বীন সহীহ্ হয়না। তাই
সাধারণ লোক ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য তিন চিল্লার দরকার।
(৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের কেউ কেউ অনেক সময়
বলে থাকে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা ছাড়া আর সকলেই গোমরাহ্। অর্থাৎ একমাত্র
তারাই হিদায়েতের উপর রয়েছে।
(৫) মুহম্মদ মুযাম্মিলুল হক লিখিত- “তাবলীগ জামায়াত
প্রসঙ্গে ১০ দফা” নামক কিতাবের ১৪নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে যে, “প্রচলিত তাবলীগ হচ্ছে নবীওয়ালা
কাজ।”
(৬) প্রচলিত তাবলীগওয়ালারা বলে থাকে যে, পীর সাহেবগণের
যেখানে শেষ, তাবলীগওয়ালাদের সেখানে শুরু। অতএব, পীর সাহেবদের ইছলাহ্র জন্য দশ চিল্লার
দরকার।
(৭) তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াছ সাহেবের
মাল্ফুযাতের ৫৩নং পৃষ্ঠার ৮০নং মাল্ফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, প্রচলিত তাবলীগের বা অতরীক্বতপন্থীদের,
তাসাউফের বা সূফীদের বই পড়া উচিত নয়।
(৮) মাল্ফুযাত নামক কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠার ৩নং মালফূযে
ও তাবলীগ জামায়াতের হাক্বীক্বত নামক কিতাবের ৭২ পৃষ্ঠায় একথা উল্লেখ আছে যে, “তরীক্বত
পন্থায় কিছু কিছু বিদ্য়াত রয়েছে।”
(৯) দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন (মুহম্মদ ওবায়দুল
হক রচিত) ১১৬ পৃষ্ঠা, পস্তী কা ওয়াহেদ এলাজ ৯ পৃষ্ঠা, মূল- মাওঃ এহ্তেশামুল হাসান কান্দলভী,
অনুবাদক- ছাখাওয়াত উল্লাহ। তাবলীগী নেছাব ১১ পৃষ্ঠা, ফাজায়েলে তাবলীগ (মূল- মাও জাকারিয়া,
অনুবাদক- আম্বর আলী) ৯ পৃষ্ঠা, তাবলীগে ইসলাম, লেখক- আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী ৯ পৃষ্ঠা
ও মাওলানা শাহ্ মনিরুজ্জামান লিখিত- আমি কেন তাবলীগ করি ১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
“তাবলীগ তথা দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার কারণেই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
উম্মতকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, অন্য কোন কারণে নয়।”
(১০) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বেশ কিছু লোককে
বলতে শুনেছি যে, তিন তাস্বীহ্ পাঠ করলেই বেহেশ্তে যাওয়া যাবে, অন্যথায় নয়।
(১১) মাল্ফুযাতের ৪৩ পৃষ্ঠার ৪২নং মাল্ফূযে এবং
নুবুওওয়ত ও মাওঃ ইলিয়াছ নামক কিতাবের ৩০-৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “মুসলমান দু’প্রকার-
একদল প্রচলিত তাবলীগের জন্য হিজরত করবে, দ্বিতীয় দল নুছরত বা সাহায্য করবে, এ দু’দলই
মুসলমান। অর্থাৎ যারা প্রচলিত তাবলীগও করবেনা আর তাবলীগ কারীদেরকে সাহায্যও করবেনা,
তারা মুসলমান নয়।” (অনুরূপ তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মোঃ ইসমাইল হোসেন
দেওবন্দী ১৭৪ পৃষ্ঠা, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন? (লেখক- ওবায়দুল হক) ২১ পৃষ্ঠা, হযরতজীর
কয়েকটি স্মরণীয় বয়ান, ২য় খণ্ড ১১ পষ্ঠায় উল্লেখ আছে।)
(১৩) টঙ্গীর ইজ্তেমা এলে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের প্রায়
লোক সাধারণ লোকদের মাঝে একথা প্রচার করে থাকে যে, “বিশ্ব ইজ্তেমাই হচ্ছে- গরিবের হজ্জ।
কেননা টঙ্গীর বিশ্ব ইজ্তেমায় গেলে হজ্জের সওয়াব পাওয়া যায়।”
(১৪) ইলিয়াছ সাহেবের মলফূযাতের ১৮ পৃষ্ঠার ২৯নং
মলফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, “নামাজ-রোজা উচ্চাঙ্গের ইবাদত কিন্তু দ্বীনের সাহায্যকারী
নয়।”
(১৫) “দাওয়াতে তাবলীগ” (আম্বর আলী কর্তৃক প্রণীত)
নামক কিতাবের প্রথম খণ্ড ৩৯ পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, “প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের
লোকজন ইজ্তেমায়ী আমল করে, যার জন্য তারা আহ্লে তাসাউফগণ যারা ইনফেরাদী আমল করেন, তাদের
থেকে অনেক বেশি সওয়াবের ভাগীদার হয়।”
(১৬) আমাদের এলাকার তাবলীগ জামায়াতের এক আমীর আমাদের
বললো যে, “টঙ্গীতে যে কয়দিন ইজ্তেমা সংঘটিত হয়, সে কয়দিন স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপসি'ত থাকেন।”
(১৭) প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা
ইলিয়াছ সাহেবের “মলফূযাতের” ৪৯ পৃষ্ঠার, ৭৪নং মলফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, “শুধুমাত্র
জিহ্বার দ্বারাই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব, যা প্রচলিত তাবলীগওয়ালাদের মাঝেই বিদ্যমান।”
(১৮) তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে- “মূর্খ লোক চিল্লা
দিলে আলেমের চেয়ে বেশি ফযীলতপ্রাপ্ত হয়, আর মূর্খ লোক ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য তিন
চিল্লা দরকার এবং তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে “তেরো দফা” নামক কিতাবে ৭ পৃষ্ঠায় যা মুযাম্মিলুল
হক উল্লেখ করেছেন, “মূর্খ লোক আমীর হওয়ার জন্য তিন চিল্লাই যথেষ্ট, আর আলেমের জন্য
প্রয়োজন সাত চিল্লার।”
(১৯) “মলফূযাতে ইলিয়াছ” নামক কিতাবের ৪৮ পৃষ্ঠার
বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, “প্রচলিত তাবলীগওয়ালারাই যাকাত পাবার প্রকৃত হক্বদার।”
(২০) “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক
কিতাবের (লেখক- মাওঃ ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী) ১০৯ পৃষ্ঠায় ও “তাবলীগে দাওয়াত কি এবং
কেন?” নামক কিতাবের (লেখক- ওবায়দুল হক) ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “প্রচলিত তাবলীগ
জামায়াতে জিহাদ পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান বা ছয় উছূলী তাবলীগই হচ্ছে- জিহাদুল আকবর।” অনুরূপ
তাবলীগ জামায়াতের সমালোচনা ও তার জবাব নামক কিতাবের যার মূল হযরত জাকারিয়া কর্তৃক লিখিত
৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।
(২১) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা গাশ্তের গুরুত্ব
বুঝাতে গিয়ে বলে থাকে যে, “গাশ্ত ক্বাজা করা, নামাজ ক্বাজা করার চেয়েও কঠিন গুনাহের
কারণ।”
(২২) ‘মলফূযাত’ নামক কিতাবের ১২৮ পৃষ্ঠার ২০১নং
মলফূয এবং (মাওলানা ইসমাইল হোসেন, দেওবন্দী লিখিত) “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব”
নামক কিতাবের ১০১ পৃষ্ঠায় একথা লেখা আছে যে, “ফাযায়েলের মর্যাদা মাসায়েলের চেয়ে বেশি।”
(২৩) ভোট গণতন্ত্রের একটি অংশ আর গণতন্ত্র ইসলামে
হারাম। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা লিখিত, “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু
দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৭৫ ও ১২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ভোট দান প্রচলিত তাবলীগের ৬নং
উছূলের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ ভোট দেয়াও তাবলীগের অন্তর্ভুক্ত।
(২৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা সাধারণ লোকদের
তাবলীগের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যে গাশ্তের ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলে থাকে
যে, গাশ্তকারীরা যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়, সে রাস্তায় যে ঘাস হয়, সে ঘাস যে গরু খায়,
সে গরুর দুধ বা গোশত যারা পান করবে বা খাবে, তারাও বেহেশ্তে যাবে।
(২৫) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের সমর্থনপুষ্ট প্রায়
কিতাবেই একথা লেখা আছে যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ কোন কোন ক্ষেত্রে ভুল করেছিলেন।
যেমন- হযরত আদম আলাইহিস সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন ও হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম
দাওয়াত না দিয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি। (মলফূযাতে শায়খুল হাদীস পৃষ্ঠা ২৩১, তাবলীগ গোটা
উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী পৃষ্ঠা ৬১)
(২৬) মৌলভী মুহম্মদ ইব্রাহীম কর্তৃক লিখিত- “তাবলীগ
জামায়াতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ” নামক কিতাবের ১ম খণ্ড ৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
খ্রিস্টান মিশনারীদের ন্যায় প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত কৃতিত্বের দাবিদার।
(২৭) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে
যে, বিদায় হজ্জের (খুৎবা) ভাষণ শ্রবণকালে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম-এর, যাঁর ঘোড়ার মুখ যে দিকে ছিল, ভাষণ (খুৎবা) শেষ হওয়া মাত্র উনারা সেদিকেই
প্রচলিত তাবলীগের কাজে ছুটেছেন।
(২৮) হযরত জাকারিয়া প্রণীত- তাবলীগ জামায়াতের সমালোচনা
ও জবাব ৪৪ পৃষ্ঠায়, মলফূযাত ২২ পৃষ্ঠা, মলফূয ২৯ পৃষ্ঠা, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু
দায়িত্ব, (লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী) ১১৫ পৃষ্ঠার বক্তব্যসমূহ দ্বারা প্রতীয়মান
হয় যে, “প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মাদ্রাসা কিতাবের প্রচার-প্রসার পছন্দ করে
না, খানকা শরীফ সম্পর্কেও ভাল ধারণা রাখে না এবং মনে করে যে, সেগুলোর দ্বারা কমই ইসলামের
খেদমত হয়ে থাকে।”
(২৯) মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী লিখিত “তাবলীগ
গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, লক্ষাধিক ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর মধ্যে অধিকাংশই মূর্খ ছিলেন। (অনুরূপ শরীয়তের
দৃষ্টিতে তাবলীগী নেছাব, যার মূল মাওলানা জাকারিয়া প্রণীত- ১৩ পৃষ্ঠা, তাবলীগী জামায়াতের
প্রধানের তর্ক ও ইচ্ছা নামক কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে)
(৩০) মলফূযাত, পৃষ্ঠা-৪৭, ৫০নং মলফূয, শরীয়তের দৃষ্টিতে
তাবলীগী নেছাব পৃষ্ঠা ১৫, হযরতজী ইনয়ামের তর্ক ও বাহাছ পৃষ্ঠা ১২, তাবলীগ পরিচয় পৃষ্ঠা
১৭, তাবলীগ দর্পণ পৃষ্ঠা ৬২ ইত্যাদি কিতাবসমূহের বর্ণনা অনুযায়ী ইলিয়াস সাহেব বিশেষ
স্বপ্নের মাধ্যমে এ তাবলীগের নির্দেশ পেয়েছে। আবার কারো কারো মতে হিন্দু জমিদারদের
কারণে মুসলমানগণ প্রায় হিন্দু হয়ে পড়লে ইলিয়াস সাহেব এ তাবলীগের উদ্যোগ নেন। তাবলীগের
কাজ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর ইলিয়াস সাহেবই পুনরুজ্জীবিত করেন।
নাঊযুবিল্লাহ!
(৩১) “দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন” (লেখক- ওবায়দুল
হক) নামক কিতাবের ৪৮ ও ৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, তাবলীগের কাজ করার কারণেই মাত্র দশ
হাজার ছাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)-এর মাজার মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এ আছে। উল্লেখ্য প্রচলিত
তাবলীগ জামায়াতের অনেক লোকও এই কথা বলে থাকে।
(৩২) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে যে,
তাদের প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের অনুসরণ করা উচিত, কেননা তারা বড় জামায়াত।
তাবলীগ জামাত সহিহ আক্বিদাহ ভিত্তিক
ইসলামি কোনো দাওয়াতি সংগঠন বা দল নয়। তাদের কোনো লক্ষ্য উদ্দেশ্য নেই। অশিক্ষিত যুগে
তাবলীগের কর্মকান্ড সমাজের মানুষের নিকট সমাদৃত হলেও বর্তমানে এর শিরক, কুফর আর বিদআতী
কর্মকান্ড প্রকাশিত হওয়ায় তাবলীগের গ্রহণযোগ্য কমে যাচ্ছে। কারন পরকালে মুক্তি পাওয়ার
মতো কোনো আমল তাবলীগের মধ্যে নেই। তাদের ওজু, গোসল, সালাত আদায়ের পদ্ধতি ৯৭% ভুল, যা বিদআত। জাল জইফ হাদিস আর মুরুব্বীদের মিথ্যে
কিচ্ছা কাহিনীই হচ্ছে এদের মূল দলীল। তাদের দোয়া ও দরুদগুলো মানুষের তৈরী। যা আমল করলে
উল্টো জাহান্নামে যেতে হবে।
সার্বিক পর্যালোচনা শেষে এই সিদ্ধান্তে
উপনিত হওয়া যায় যে, তাবলীগের সমস্ত কর্মকান্ড শিরক, কুফর ও বিদআত প্রমাণিত হওয়ায়া ইহা
সর্বক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য বলে পরিগণিত। ইলিয়াসী তাবলীগী মনোভাব নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে
তার মৃত্যু হবে জাহেলি মৃত্যু। শেষ পরিনতি জাহান্নাম। ইলিয়াসী তাবলীগ জামাতসহ সমস্ত
বিদআতী কর্মকান্ডের সহিত জড়িত মুসলমানদের তওবা ও আমল আল্লাহর নিকট গৃহিত হবে না, যতোক্ষণ
না বিদআতী কর্মকান্ড ছাড়বে।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সমস্ত বিদআতী
কর্মকান্ড থেকে মুক্ত থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।
(সমাপ্ত)
ভন্ড ও বিদআতী পির-অলি ও আলেমদের করুণ পরিনতির দলীলসমূহঃ
১। হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ?
এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক
পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার
করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল
নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো
আর আমার আয়াত ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ
করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)।
২। যারা তাঁর (রাসুলসঃ) হুকুমের বিরুদ্ধাচারন করে এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য যে, তারা
মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে। (নূর-৬৩)।
৩। সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত
অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য ও বিরোধিতা
করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম (সঃ) কে তবু তাদেরকে
তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন। (কোরআন-৪:১১৫)।
৪। “তোমরা কি কোরআনের কোন কোন অংশ (আয়াত) মানো
আর কোন কোন অংশ মানো না? অত:পর যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্য থেকে এরুপ কাজ করবে – পার্থিব জীবনে প্রকাশ্য লাঞ্চণা ভোগ করা
আর কিয়ামতের দিনে ভীষণ শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার আর কী সাজা হতে পারে!
আর আল্লাহ তো তোমাদের কার্য কলাপ সম্বন্ধেবে- খবর নন।
(বাকারা-৮৫)।
৫। “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন
করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে
তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)।
৬। আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেনঃ আমি হাউজে কাউসারের নিকট তোমাদের আগেই হাজির থাকবো। তোমাদের থেকে কিছু লোককে
আমার নিকট পেশ করা হবে। কিন্তু আমি যখন তাদের পান করাতে উদ্যত হবো, তখন তাদেরকে আমার
নিকট হতে ছিনিয়ে নেয়া হবে। আমি বলবো, হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার
পর তারা নতুন (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম, যা আপনি করতে বলেননি) কী ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না। (আধুনিক প্রকাশনী-
৬৫৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৩, সহিহ বুখারী-হাদিস নং-৭০৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৭। সাহ্ল ইব্নু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) – কে বলতে শুনেছি যে, আমি হাউজের ধারে তোমাদের আগে হাজির থাকব। যে সেখানে
হাজির হবে, সে সেখান থেকে পান করার সুযোগ পাবে। আর যে একবার সে হাউজ থেকে পান করবে
সে কখনই পিপাসিত হবে না। অবশ্যই এমন কিছু দল আমার কাছে হাজির হবে যাদের আমি (আমার উম্মাত
বলে) চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। কিন্তু এরপরই তাদের ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা
দাড় করে দেয়া হবে।
আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, আমি হাদীস বর্ণনা করছিলাম,
এমন সময় নু’মান ইব্নু আবূ আয়াস আমার নিকট হতে এ হাদীসটি শুনে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি
কি সাহ্ল থেকে হাদীসটি এরূপ শুনেছেন। আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন সে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, আমি আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) - কে এ হাদীসে অতিরিক্ত বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লালাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলবেনঃ এরা তো আমারই অনুসারী। তখন বলা হবে, আপনি নিশ্চয় জানেন
না যে, আপনার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কি পরিবর্তন করেছে (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম, যা
আপনি করতে বলেননি) । এ শুনে আমি বলব, যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে, তারা (বিদআতী পির-অলি
ও আলেম) দূর হোক, দূর হোক। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৪, সহিহ
বুখারী-হাদিস নং-৭০৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৮। “হোজায়ফা
(রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, মুসলিম সমাজে এমন লোকদের আবির্ভাব হইবে
যাহারা আমার নীতি ছাড়া অন্য নীতিও অবলম্বন করিবে। তাহাদের কোন কোন কাজ ভালো এবং কোন
কাজ মন্দও দেখিতে পাইবে।”(বুখারী)।
৯। “যে ব্যক্তি নিজের মতবাদকে কেন্দ্র করে তার
নিয়ন্ত্রনে কোরআনের ব্যাখ্যা করে- যে ব্যক্তি কোরআনের নির্দেশ অনুসারে স্বীয় মতবাদ
স্থির করে না; বরং স্বীয় মতবাদের নির্দেশ অনুসারে কোরআনের ব্যাখ্যা করে, শাব্দিক অর্থে ঐ
ব্যাখ্যা শুদ্ধ হলেও বস্তুত তা ভুল পরিগণিত।” (মেশকাত)।
১০। নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন: হযরত হারিসুল আশয়ারী (রঃ)হতে বর্ণিতঃ
নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে
পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি (১) জামায়াত বদ্ধ হবে (২) নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে
(৩) তার আদেশ মেনে চলব (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে (৫) আর আল্লাহর পথে জিহাদ
করবে, যে ব্যক্তি ইসলামি সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত দূরে সরে গেল, সে নিজের গর্দান থেকে
ইসলামের রশি খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তন করে তো স্বতন্ত্র কথা। আর যে
ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীতির দিকে (লোকদের) আহবান জানায় সে জাহান্নামী। যদিও সে
রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)।
১১। আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেনঃ
কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর
যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৭২৮০,আধুনিক প্রকাশনী-
৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)।
১২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহুআনহু হতে বর্ণিত,
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক
কোন কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, আর সে (যদি উত্তর না দিয়ে) তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে
(জাহান্নামের) আগুনের লাগাম পরানো হবে।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান)-তিরমিযী ২৬৪৯,
ইবনু মাজাহ ২৬৬, আহমাদ ৭৫১৭, ৭৮৮৩, ৭৯৮৮, ৮৩২৮, ৮৪২৪, ১০০৪৮।
১৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহুআনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন জ্ঞান অর্জন করল, যার দ্বারা আল্লাহ আয্যা
অজাল্লার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা সে কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন
করল, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না।” (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ
সানাদ)-আবূ দাউদ ৩৬৬৪, ইবনু মাজাহ ২৫২, আহমাদ ৮২৫২।
১৪। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “নিঃসন্দেহে
আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইলম তুলে নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে
নেওয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নেবেন (অর্থাৎ আলেম দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন
কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মূর্খ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং
তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট
হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী ১০০, ৭৩০৭, মুসলিম ২৬৭৩, তিরমিযী
২৬৫২, ইবনু মাজাহ ৫২, আহমাদ ৬৪৭৫, ৬৭৪৮, ৬৮৫৭, দারেমী ২৩৯)
১৫। কা’ব বিন মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন যে, “যে ব্যক্তি উলামাদের সাথে তর্ক করার জন্য, অথবা মূর্খ লোকেদের সাথে বচসা
করার জন্য এবং জন সাধারণের সমর্থন (বা অর্থ) কুড়াবার জন্য ইল্ম অন্বেষণ করে, সে ব্যক্তিকে
আল্লাহ জাহান্নাম প্রবেশ করাবেন।” (তিরমিযী ২৬৫৪, ইবনে আবিদ্দুনয়্যা, হাকেম ২৯৩, বাইহাক্বীর
শুআবুল ঈমান ১৭৭২, সহীহ তারগীব ১০০)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
১৬। আলী (রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
“তোমরা আমার উপর মিথ্যা বলো না। যেহেতু যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করল, সে যেন দোযখে
প্রবেশ করল।” (বুখারী ১০৬, মুসলিম ২)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১৭। সালামাহ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আমি যা বলিনি তা বানিয়ে বলে, সে যেন নিজের ঠিকানা দোযখে বানিয়ে নেয়। (বুখারী
১০৯)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১৮। মুগীরাহ বিন শু’বাহথেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার পক্ষ থেকে কোন এমন হাদীস বর্ণনা করে যার বিষয়ে সে মনে করে
যে তা মিথ্যা, তাহলে সে (বর্ণনাকারী) মিথ্যাবাদীদের একজন।” (মুসলিম, সহীহুল জামে’ ৬১৯৯)-হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
১৯। আবূ হুরাইরা(রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “শেষ যুগে আমার উম্মতের মধ্যে এমন কতক লোক হবে (বিদআতী পির-অলি ও আলেম), যারা
তোমাদেরকে সেই হাদীস বর্ণনা করবে, যা তোমরা এবং তোমাদের পিতৃ পুরুষরাও শ্রবণ করেনি
সুতরাং তোমরা তাদের হতে সাবধান থেকো।” (মুসলিম ১৫)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২০। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “আখেরী যামানায় বহু ধোকাবাজ মিথ্যাবাদী হবে; যারা তোমাদের কাছে এমন এমন হাদীস
নিয়ে উপস্থিত হবে, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপদাদারাও কোন দিন শ্রবণ করেনি। সুতরাং তোমরা
তাদের থেকে সাবধান থেকো; তারা যেন তোমাদেরকে ভ্রষ্টতা ও ফিতনায় না ফেলে।” (মুসলিম ১৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২১। উক্ত আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার নামে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলে, সে যেন নিজের বাসস্থান জাহান্নামে
বানিয়ে নেয়।” (বুখারী ১১০, ৬১৯৭, মুসলিম ৪)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২২। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “বিনা ইল্মে যাকে ফতোয়া দেওয়া হয় (এবং সেই ভুল ফতোয়া দ্বারা সে ভুল কর্ম করে)
তবে তার পাপ ঐ মুফতীর উপর এবং যে ব্যক্তি তার ভাইকে এমন পরামর্শ দেয় অথচ সে জানে যে
তার জন্য মঙ্গল অন্য কিছুতে আছে, তবে সে ব্যক্তি তার খিয়ানত (বিশ্বাসঘাতকতা) করে।”
(আবূ দাঊদ ৩৬৫৯, হাকেম ৩৫০, সহীহুল জামে’ ৬০৬৮)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৩। আবূ সাঈদ খুদরীথেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন, “তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তার দ্বারা আল্লাহর নিকট জান্নাত প্রার্থনা কর, তাদের
পূর্বে পূর্বে যারা কুরআন শিক্ষা করে তার দ্বারা দুনিয়া যাচনা করবে। যেহেতু কুরআন তিন
ব্যক্তি শিক্ষা করে; প্রথমতঃ সেই ব্যক্তি যে তার দ্বারা বড়াই করবে। দ্বিতীয়তঃ সেই ব্যক্তি
যে তার দ্বারা উদরপূর্তি করবে এবং তৃতীয়তঃ সেই ব্যক্তি যে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে তেলাঅত
করবে।’ (বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ২৬৩০, সিঃ সহীহাহ ২৫৮)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪। আবু দারদা (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষাদানের উপর একটি ধনুকও গ্রহণ করবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের
দিন তার পরিবর্তে জাহান্নামের আগুনের ধনুক তার গলায় লটকাবেন।” (বাইহাক্বী ১১৪৬৫, সহীহুল
জামে’ ৫৯৮২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৫। জারীর বিন আব্দুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন, “যে সম্প্রদায় যখন বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি থাকে,
যার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি তারা তাদেরকে বাধা না দেয় (এবং ঐ পাপাচরণ
বন্ধ না করে), তাহলে (তাদের জীবদ্দশাতেই) মহান আল্লাহ তাদেরকে ব্যাপকভাবে তাঁর কোন
শাস্তি ভোগ করান।” (আহমাদ ৪/৩৬৪, আবূ দাউদ ৪৩৩৯, ইবনে মাজাহ ৪০০৯, ইবনে হিব্বান, সহীহ
আবূ দাউদ ৩৬৪৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৬। আবূ হুরাইরাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন, “যে ব্যক্তি (কাউকে) সৎপথের দিকে আহবান করবে, সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী
পাবে। এটা তাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কম করবে না। আর যে ব্যক্তি (কাউকে) ভ্রষ্টতার
দিকে আহবান করবে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ চাপবে। এটা তাদের গোনাহ থেকে
কিছুই কম করবে না।” (মুসলিম ৬৯৮০ প্রমুখ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৭। আবূ যায়দ উসামাহইবনে যায়দ ইবনে হারেষাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
কে বলতে শুনেছি, “কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ
করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে,
যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে
বলবে, ‘ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে
বাধা দান করতে?’ সে বলবে, ‘অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি
তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!” (বুখারী ৩২৬৭,
মুসলিম ৭৬৭৪)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৮। আনাস (রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
“আমি মি’রাজের রাতে এমন একদল লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি যারা আগুনের কাঁচি দ্বারা
নিজেদের ঠোঁট কাটছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে জিবরীল! ওরা কারা?’ তিনি বললেন, ‘ওরা
আপনার উম্মতের বক্তাদল (বিদআতী পির-অলি ও আলেম); যারা নিজেদের বিস্মৃত হয়ে মানুষকে
সৎকাজের নির্দেশ দিত, অথচ ওরা কিতাব (গ্রন্থ) অধ্যয়ন করত, তবে কি ওরা বুঝত না।” (আহমাদ
১২২১১, ১২৮৫৬ প্রভৃতি, ইবনে হিব্বান ৫৩, ত্বাবারানীর আওসাত্ব ২৮৩২, বাইহাক্বীর শুআবুল
ঈমান ১৭৭৩, আবূ য়্যা’লা ৩৯৯২, সহীহ তারগীব ১২৫)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৯। উমার বিন খাত্তাব(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন, “ইসলাম বিজয় লাভ করবে। যার ফলশ্রুতিতে বণিকদল সমুদ্রে বাণিজ্য-সফর করবে। এমন
কি অশ্বদল আল্লাহর পথে (জিহাদে) অবতরণ করবে। অতঃপর এমন একদল লোক প্রকাশ পাবে; যারা
কুরআন পাঠ করবে (দ্বীনী ইলম শিক্ষা করে ক্বারী ও আলেম হবে)। তারা (বড়াই করে) বলবে,
‘আমাদের চেয়ে ভালো ক্বারী আর কে আছে? আমাদের চেয়ে বড় আলেম আর কে আছে? আমাদের চেয়ে বড়
ফকীহ (দ্বীন-বিষয়ক পন্ডিত) আর কে আছে?’ অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
সাহাবাগণের উদ্দেশ্যে বললেন, “ওদের মধ্যে কি কোন প্রকারের মঙ্গল থাকবে?” সকলে বলল,
‘আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই অধিক জানেন।’তিনি বললেন, “ওরা তোমাদেরই মধ্য হতে এই উম্মতেরই
দলভুক্ত। কিন্তু ওরা হবে জাহান্নামের ইন্ধন।”(ত্বাবারানীর আউসাত্ব ৬২৪২, বাযযার, সহীহ
তারগীব ১৩৫)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩০। ইবনে মাসঊদ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
“তোমরা অনুসরণ কর, নতুন কিছু রচনা করো না।
কারণ তোমাদের জন্য তাই যথেষ্ট। আর তোমরা পুরাতন পন্থাই অবলম্বন কর।” (সহীহ, সিলসিলা
যায়ীফাহ ২/১৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩১। আলী বিন আবী তালেব(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করে, আল্লাহর
অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে নিজ পিতামাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই
ব্যক্তির উপর যে কোন দুষ্কৃতকারী বা বিদআতীকে আশ্রয় দেয় এবং আল্লাহর অভিসম্পাত সেই
ব্যক্তির উপর যে ভূমির (জমি-জায়গার) সীমা-চিহ্ন পরিবর্তন করে।” (মুসলিম ৫২৪০নং)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩২। আবূ হুরাইরাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে, সেই সত্তার কসম! এই উম্মতের যে কেউ---ইয়াহুদী
হোক বা খ্রিস্টান আমার কথা শুনবে, অতঃপর যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তার প্রতি ঈমান
আনবে না, সেই জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (মুসলিম ৪০৩)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৩। ইবনে মাসঊদ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী (আল্লাহর অবাধ্যাচরণ) এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী।”
(বুখারী ৪৮, ৬০৪৪, মুসলিম ২৩০, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৪। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে উৎসব কেন্দ্রে পরিণত করো না (যেমন কবর-পূজারীরা
উরস ইত্যাদির মেলা লাগিয়ে ক’রে থাকে)। তোমরা আমার প্রতি দরূদ পেশ কর। কারণ, তোমরা যেখানেই
থাক, তোমাদের পেশকৃত দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়।” (আবূ দাঊদ ২০৪৪ নং, বিশুদ্ধ সূত্রে,
সহীহুল জামে’ ৭২২৬ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৫। সুহাইল থেকে বর্ণিতঃ
একদা (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এর নাতির ছেলে) হাসান বিন হাসান বিন আলী আমাকে কবরের নিকট দেখলেন। তিনি আমাকে ডেকে
পাঠালেন। সেই সময় তিনি ফাতেমার বাড়িতে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। আমি উপস্থিত হলে তিনি
বললেন, ‘এসো খানা খাও।’ আমি বললাম, ‘খাবার ইচ্ছা নেই।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘কী ব্যাপার
যে, আমি তোমাকে কবরের পাশে দেখলাম?’ আমি বললাম, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
কে সালাম দিলাম।’ তিনি বললেন, ‘যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সালাম দেবে।’ অতঃপর তিনি
বললেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে
ঈদ বানিয়ে নিয়ো না। তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ে নিয়ো না। তোমরা যেখানেই থাক, সেখান থেকেই
আমার উপর দরূদ পাঠ কর। কারণ তোমাদের দরূদ আমার নিকট (ফেরেশতার মাধ্যমে) পৌঁছে যায়।
আল্লাহ ইয়াহুদকে অভিশাপ করুন। কারণ তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদ (সিজদা ও নামাযের
স্থান) বানিয়ে নিয়েছে।” (এ ব্যাপারে এখানে) তোমরা এবং উন্দুলুসের লোকেরা সমান।’ (সুনান
সাঈদ বিন মানসূর, আহকামুল জানায়েয, আলবানী ২২০পৃঃ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৬। আবূ উমামা (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “আমার উম্মতের দুই শ্রেণির লোক আমার সুপারিশ লাভ করতে পারবে না; (বিবেকহীন)
অত্যাচারী রাষ্ট্রনেতা এবং প্রত্যেক সত্যত্যাগী অতিরঞ্জনকারী।” (ত্বাবারানী ৮০০৫, সহীহুল
জামে’ ৩৭৯৮ নং)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৭। আরফাজাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “অদূর ভবিষ্যতে বড় ফিতনা ও ফাসাদের প্রার্দুভাব ঘটবে। সুতরাং যে ব্যক্তি এই
উম্মতের ঐক্য ও সংহতিকে (নষ্ট করে) বিচ্ছিন্নতা আনতে চাইবে সে ব্যক্তিকে তোমরা তরবারি
দ্বারা হত্যা করে ফেলো; তাতে সে যেই হোক না কেন।” (মুসলিম ৪৯০২ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
৩৮। ষাওবান (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “আমি আমার উম্মতের উপর ভ্রষ্টকারী ইমাম (আলেম ও নেতা প্রভৃতি)র দলকেই ভয় করি।”
(আহমাদ ২২৩৯৩, আবূ দাঊদ ৪২৫৪, তিরমিযী ২২২৯ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৯। আবূ সাঈদ (রাঃ)ও আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ বলেছেন, “আমার উম্মতের মাঝে মতবিরোধ
ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হবে। একদল হবে যাদের কথাবার্তা সুন্দর হবে এবং কর্ম হবে অসুন্দর।
তারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের গলদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে না। তারা দ্বীন
থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তারা (সেইরূপ দ্বীনে)
ফিরে আসবে না, যেরূপ তীর ধনুকে ফিরে আসে না। তারা সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি। শুভ
পরিণাম তার জন্য, যে তাদেরকে হত্যা করবে এবং যাকে তারা হত্যা করবে। তারা আল্লাহর কিতাবের
দিকে মানুষকে আহবান করবে, অথচ তারা (সঠিকভাবে) তার উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকবে না। যে তাদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, সে হবে বাকী উম্মত অপেক্ষা আল্লাহর নিকটবর্তী। তাদের চিহ্ন হবে
মাথা নেড়া।” (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ, হাকেম, সহীহুল জামে’ ৩৬৬৮ নং)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪০। আবূ বাকরাহ থেকেবর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “----- এক জাতি হবে যারা গরুর লেজ ধরে চাষবাস করবে এবং জিহাদে বিমুখতা প্রকাশ
করবে, তারা হবে ধ্বংস।” (আবূ দাঊদ ৪৩০৬, মিশকাত ৫৪৩২ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪১। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ সে জিহাদ করেনি এবং অন্তরে জিহাদ সম্পর্কে
কোন চিন্তা-ভাবনাও করেনি, সে মুনাফিক্বীর একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করল।” (মুসলিম ৫০৪০,
আবূ দাঊদ ২৫০৪ নং)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪২। মাসরূক থেকে বর্ণিতঃ
আমি আয়েশা (রাঃ)র নিকট হেলান দিয়ে বসে ছিলাম।
হঠাৎ তিনি বললেন, ‘হে আবূ আয়েশা! যে ব্যক্তি তিনটের মধ্যে একটি কথা বলে, সে আল্লাহর
প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করেঃ
(ক) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মদ তাঁর প্রতিপালক
(আল্লাহ)কে দেখেছেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। যেহেতু আল্লাহ বলেন,
“দৃষ্টিসমূহ তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না, কিন্তু দৃষ্টিসমূহ তাঁর আয়ত্বে আছে এবং তিনিই
সূক্ষ্মদর্শী; সম্যক পরিজ্ঞাত।”
(আনআমঃ ১০৩)
(খ) “কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তার
সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন ওহীর (প্রত্যাদেশ) মাধ্যম ব্যতিরেকে, অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা
কোন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে; আর তখন আল্লাহ যা চান তা তাঁর অনুমতিক্রমে অহী (প্রত্যাদেশ)
করেন; নিঃসন্দেহে তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়।” (শূরাঃ ৫১)
(গ) বর্ণনাকারী মাসরূক বলেন, আমি হেলান দিয়ে
বসে ছিলাম। এ কথা শুনে সোজা হয়ে বসে বললাম, ‘হে উন্মুল মু’মিনীন! একটু থামুন, আমার
ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবেন না। আল্লাহ তাআলা কি বলেননি যে,
“নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল।”
(নাজ্মঃ ১৩) “অবশ্যই সে তাকে স্পষ্ট দিগন্তে দর্শন করেছে।” (তাকভীরঃ ২৩)
মা আয়েশা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি এ ব্যাপারে
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন,
“তিনি হলেন জিব্রীল। তাঁকে ঐ দুইবার
ছাড়া অন্য বারে তার সৃষ্টিগত আসল রূপে দর্শন করিনি। যখন তিনি আসমানে অবতরণরত ছিলেন,
তাঁর বিরাট সৃষ্টি-আকৃতি আকাশ-পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থানকে ঘিরে রেখেছিল!”
(২) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মদ আল্লাহর
অবতীর্ণ কিছু অহী গোপন করেছেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। অথচ আল্লাহ
বলেন, “হে রসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা
প্রচার কর (যদি তা না কর, তাহলে তো তুমি তাঁর বার্তা প্রচার করলে না।)” (সূরা মাইদাহ
৬৭ আয়াত)
(৩) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মাদ ভবিষ্যতের
খবর জানেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। অথচ আল্লাহ বলেন, “বল, আল্লাহ
ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না।” (নাম্লঃ ৬৫),
(মুসলিম ৪৫৭নং, তিরমিযী ৩০৬৮নং, প্রমুখ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪৩। বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা
নিষেধঃ
(ক) আল্লাহ তাআলা বলেন,
অর্থাৎ, সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি আছে?
(সূরা ইউনুস ৩২ আয়াত)
(খ) তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ, আমি কিতাবে কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে
ক্রটি করিনি। (সূরা আনআম ৩৮ আয়াত)
(গ) তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ, আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ
ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। (সূরা নিসা ৫৯ আয়াত) অর্থাৎ,
কিতাব ও সুন্নাহর দিকে।
(ঘ) তিনি অন্যত্র বলেছেন,
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। সুতরাং
এরই অনুসরণ কর এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন
ক’রে ফেলবে। (সূরা আনআম ১৫৩ আয়াত)
(ঙ) তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ, বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে
আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।
(সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)
এ ছাড়া এ প্রসঙ্গে আরো বহু আয়াত রয়েছে। আর হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ
৪৪। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(ক) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন, “যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কথা উদ্ভাবন করল---যা
তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।” (বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ৪৫৮৯নং)
(খ) মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, “যে ব্যক্তি
এমন কাজ করল, যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই তা বর্জনীয়।” (৪৫৯০নং)-হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
৪৫। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
নসীহত করার জন্য আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি বললেন, “হে লোক সকল! তোমাদেরকে আল্লাহর
নিকট উলঙ্গ পা, উলঙ্গ দেহ ও খাতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। (আল্লাহ বলেন,) ‘যেমন
আমি প্রথম সৃষ্টি করেছি আমি পুনর্বার তাকে সেই অবস্থায় ফিরাবো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা,
যা আমি পুরা করব।’ (সূরা আম্বিয়া ১০৪)
জেনে রাখো! কিয়ামতের দিন সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম ইব্রাহীম
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বস্ত্র পরিধান করানো হবে। আরো শুনে রাখ! সে দিন
আমার উম্মতের কিছু লোককে নিয়ে আসা হবে অতঃপর তাদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর
আমি বলব, ‘হে প্রভু! এরা তো আমার সঙ্গী।’কিন্তু আমাকে বলা হবে, ‘এরা আপনার (মৃত্যুর)
পর (দ্বীনে) কী কী নতুন নতুন রীতি আবিষ্কার করেছিল, তা আপনি জানেন না।’(এ কথা শুনে)
আমি বলব--যেমন নেক বান্দা (ঈসা (আঃ) বলেছিলেন, “যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন
আমি ছিলাম তাদের ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই
তো ছিলে তাদের ক্রিয়াকলাপের পর্যবেক্ষক। আর তুমি সর্ববস্তুর উপর সাক্ষী। তুমি যদি তাদেরকে
শাস্তি দাও, তবে তারা তোমারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী
প্রজ্ঞাময়।’(সূরা মায়েদা ১১৭) অতঃপর আমাকে বলা হবে যে, ‘নিঃসন্দেহে আপনার ছেড়ে আসার
পর এরা (ইসলাম থেকে) পিছনে ফিরে গিয়েছিল।’(বুখারী ৩৩৪৯, মুসলিম ৭৩৮০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
বিদআতী পির-অলি ও আলেমদের তওবাও কবুল হয় না যতক্ষণ না---
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন, “আল্লাহ প্রত্যেক বিদআতীর তওবা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত রাখেন (গ্রহণ করেন না),
যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার বিদআত বর্জন না করেছে।” (ত্বাবারানীর আওসাত্ব ৪২০২, বাইহাক্বীর
শুআবুল ঈমান ৯৪৫৭, সহীহ তারগীব ৫৪নং)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
সুপ্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরাঃ আমাদের সমাজে সম্প্রতি হাজার
হাজার বিদআতী পির-অলি ও আলেমের আবির্ভাব ঘটেছে। এই সব ভন্ড আলেম আগেও ছিল বর্তমানেও
আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। ইতিমধ্যে ভন্ডরা হাদিস নামে মিথ্যে কিচ্ছা কাহিনী বলে বলে কোটি
কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। এক সময় তারা যা বলতো সাধারন মুসলমান তাই বিশ্বাস করতো।
কিন্তু বর্তমানে কোরআন ও হাদিসের সহিহ চর্চার কারনে বিশেষ করে ইসলামি ফাউন্ডেশন কর্তৃক
হাদিস গ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ করায় সকল শিক্ষিত মুসলমানরা যখন আদ্যোপান্ত পড়ে বুঝতে
পারল যে, এতোদিন ভন্ড আলেমরা শুধুই মনগড়া মিথ্যে ওয়াজ করেছে আর বর্তমানে এসবের বিরোধীতা
করায় তথা বিদআতীদের গোপন রহস্য ফাঁস করায় এই সব ভন্ড আলেমদের ধর্ম ব্যবসায় ধ্বস নামা
শুরু হয়েছে। আফসোসের বিষয় হলো, এদের মধ্যে আছে কোরআনের হাফেজ, হাদিসের হাফেজ বা মুফতি,
মুহাদ্দিস, পির, অলি আবার অনেকে আছে ডক্টরেট পাশ। কিন্তু এরা সকলেই জাল-জইফ হাদিস ভিত্তিক
যেমন ওয়াজ করে তেমনি বিভিন্ন বিদআতী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। এরা এক দিকে যেমন গোমরাহী হয়ে জাহান্নামী হচ্ছে তেমনি
এদের সাগরেদ বা মুরিদ কিংবা অনুসারীদেরকেও জাহান্নামী বানাচ্ছে। ইমান আমল নষ্ট করে
দিচ্ছে।
এই দলের মধ্যে আছে বাংলাদেশের তথা কথিত ভন্ড
পির-অলি, নামধারী ধর্ম প্রচারক, চিহ্নিত ইসলামি দল এবং আরেক শ্রেণির ওয়াজকারী ধর্ম
ব্যবসায়ী।
উপসংহারঃ তাই
পরিশেষে আহবান জানাই, আসুন দ্বীনের মধ্যে নিত্য নতুন বিদআতী কাজ কর্ম থেকে সতর্কতা
অবলম্বন অবলম্বন করি। সেই সাথে নিজেদের নিকট আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এবং সর্বোপরি
দেশের মুসলমান ভাইদেরকে এই সব ঘৃণ্য বিদআত থেকে সাবধান থাকার জন্য আহবান করি। আল্লাহ
আমাদেরকে সকল প্রকার শিরক, কুফর ও বিদআত থেকে দূরে থেকে তাওহীদ ও সুন্নাহর আলোকে দ্বীনের
পথে জীবন অতিবাহিত করার তাওফীক দান করুন। আমিন।
মো: ইজাবুল
আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর),
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি,
এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
মোঃ আনোয়ার হোসাইন আকন্দ (কামিল, ফার্স্ট ক্লাশ- আল হাদিস)
সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়া, ঢাকা, বাংলাদেশ।
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook,
Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে
শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে।
তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে,
নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা
আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের
সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার
প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ
থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে
(আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর,
তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস)
আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী
৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন,
হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল
আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর),
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি,
এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
মোঃ আনোয়ার হোসাইন আকন্দ (কামিল, ফার্স্ট ক্লাশ- আল হাদিস)
সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়া, ঢাকা, বাংলাদেশ।
ইসলামি সকল পর্ব এক সাথে দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন-
Please Share On
No comments:
Post a Comment