বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম
ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎকারীর ভয়াবহ পরিণতি
ভূমিকাঃ
একটি সমাজে নানাধরনের মানুষের বসবাস। কেউ অর্থ-বিত্তের
মালিক, কেউ অসহায়-নিঃস্ব, কেউ মালিক, কেউ শ্রমিক, কেউ অনাথ-ইয়াতীম প্রভৃতি। এসবই মহান
আল্লাহ তা‘আলার ব্যবস্থাপনা। কেননা সকলেই যদি মালিক হোন, তাহলে মালিকের প্রয়োজনে শ্রমিক
পাওয়া যাবে কোথায়? আবার সকলে শ্রমিক হ’লে কাজ পাওয়া যাবে কোথায়? মূলতঃ একটি সমাজ সুন্দর
ও সুশৃংখলভাবে পরিচালনার জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলাই উঁচু-নীচু ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছেন।
(সুরা যুখরুফ ৪৩/৩২)।
তাই বলে বিত্তবানরা বিত্তহীনদের শোষণ করবে
এমনটি নয়। বরং এক্ষেত্রে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। কারো প্রতি যুলুম-নির্যাতন,
অন্যায় দখল, কাউকে বঞ্চিত করা এহেন জঘন্যতম অন্যায়ের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি নির্ধারিত
আছে। রাছুল সাঃ বলেন,
(ক)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমরা কি জানো, (প্রকৃত) গরীব কে? সহাবায়ে কিরাম বললেনঃ আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে
যার টাকা-পয়সা, ধনদৌলত নেই, সে-ই গরীব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি গরীব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া
থেকে সালাত, সিয়াম ও যাকাত আদায় করে আসবে; কিন্তু সাথে সাথে সেসব লোকেদেরকেও নিয়ে আসবে
যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারো অপবাদ রটিয়েছে, কারো সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে
এবং কাউকে প্রহার করেছে; এমন ব্যক্তিদেরকে তার নেকীগুলো দিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর যখন তার
পুণ্য শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো বাকি, তখন পাওনাদারদের গুনাহ তথা পাপ
তার ওপর ঢেলে দেয়া হবে, আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মিসকাতুল মাশাবিহ মিসকাত ৫১২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১, সুনান আততিরমিযী ২৪১৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৮৪৫,
সহীহুল জামি‘ ৮৭, সহীহ আত্ তারগীব ২২২৩, শু‘আবুল ঈমান ৩৩, আহমাদ ৮০২৯, মুসনাদে আবূ
ইয়া‘লা ৬৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪১১, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ৫৬১, আল মু‘জামুল
আওসাত্ব ২৭৭৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৩, ইসলামিক
সেন্টার ৬৩৯৩)। হাদিসের মান সহিহ।
(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন হকদারদের হক আদায় করা হবে, এমনকি
যে বকরীর শিং নেই, তার জন্য শিংওয়ালা বকরী থেকে বিনিময় আদায় করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৪৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮২, সুনান আততিরমিযী ২৪২০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৫৮৮,
সহীহুল জামি‘ ৫০৬২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৬০৩, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১৩৬, আহমাদ ৭২০৪,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৬৩, আস্ সুনানুল কুবরা ১১৮৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৪, ইসলামিক
সেন্টার ৬৩৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)...আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মু’মিনগণ যখন জাহান্নাম
থেকে নাজাত পাবে, তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে এক পুলের উপর তাদের আটকে রাখা
হবে। তখন পৃথিবীতে একের প্রতি অন্যের যা যা জুলুম ও অন্যায় ছিল, তার প্রতিশোধ গ্রহণের
পরে যখন তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে তার
আবাসস্থল যেরূপ চিনত, তার চাইতে অধিক তার জান্নাতের আবাসস্থল চিনতে পারবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪০, ৬৫৩৫, সহীহ বুখারী (ইসলামিক
ফাউন্ডেশন) ২২৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৬১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অত্যাচারঘটিত; যেমন- মানহানি বা অন্য কোন বিষয়ের কোন হক থাকে, তবে সে যেন সেদিনের পূর্বেই তার কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নেয়, যেদিন তার কাছে কোন দীনার বা দিরহাম থাকবে না। যদি তার নেক আমল থাকে, তাহলে অত্যাচারিতের হক অনুসারে তার কাছ থেকে নেক ’আমল নিয়ে নেয়া হবে। আর যদি তার নেক না থাকে, তবে অত্যাচারিত ব্যক্তির পাপকে তার ওপর চাপানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪৯, ৬৫৩৪, সহীহুল জামি ৬৫১১, সহীহ আত্ তারগীব ২২২২, আহমাদ ১০৫৭৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৬১, শু‘আবুল ঈমান ৭৪৭০, আর মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৩৫, আল মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ৩৪৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৭৮০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে কুক্ষিগত করা বা
আত্মসাৎ করা নিষিদ্ধ। আর কেউ যদি এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করে তবে তা আরো জঘন্য অপরাধ
বিবেচিত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা এতিমের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের
পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং অচিরেই তারা জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।’ (সুরা: নিসা, আয়াত ১০)।
সমাজের সবচাইতে অসহায় হচ্ছে ইয়াতীম সন্তান।
কেননা শৈশবেই সে তার পিতাকে অথবা পিতা-মাতা উভয়কে হারায়। তখন তার সুস্থ-সুন্দর ভাবে
বেড়ে ওঠা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। শিক্ষা-দীক্ষারও তেমন কোন সুযোগ থাকে না। এমনকি তার পিতা-মাতার
রেখে যাওয়া সহায়-সম্পত্তিও অন্যরা ভোগদখলের জন্য হায়েনার ন্যায় থাবা বিস্তার করে। অনেক
ক্ষেত্রে কিছু অংশ ফেরত দেওয়া হ’লেও বেশিরভাগই আত্মসাৎ করা হয়। অথচ ইসলামে ইয়াতীমদের
তত্ত্বাবধান ও লালন-পালনে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাতকারীর
জন্য মর্মান্তিক শাস্তি ঘোষিত হয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধে ইয়াতীম প্রতিপালন প্রসঙ্গে আলোকপাত
করা হলোঃ
ইয়াতীম অর্থ
‘ইয়াতীম’ (يَتِيْمٌ) শব্দটি আরবী। এর অর্থ একক, একাকী, নিঃসঙ্গ
ইত্যাদি। পরিভাষায় ইয়াতীম বলা হয় ‘শৈশবে যার পিতা মৃত্যুবরণ করেছে। চাই সে ছেলে হোক
বা মেয়ে হোক’। (আউনুল মা‘বূদ)।
শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, ‘বালেগ হওয়ার পূর্বে
যার পিতা মৃত্যুবরণ করেছে, ছেলে হোক বা মেয়ে হোক’। (ছালেহ আল-উছায়মীন,
তাফসীরু কুরআনিল কারীম (রিয়ায : দারু ইবনুল জাওযী, ২য় সংস্করণ ১৪৩১ হিঃ), সূরা বাক্বারাহ
২/২৭৬ পৃঃ)।
উল্লেখ্য যে, মাতা মৃত্যুবরণ করলে সন্তান ইয়াতীম
হিসাবে গন্য হবে না। (তাফসীরু কুরআনিল কারীম ২/২৭৬ পৃঃ)।
তবে কারো পিতা ও মাতা উভয়ে মারা গেলে সেই হয়
সমাজের সবচেয়ে বড় অসহায়। পিতৃস্নেহ ও মমতাময়ী মায়ের আদর-সোহাগ তার ভাগ্যে জুটে না।
অতি প্রিয় ‘মা’ ডাকটি যেনো তার হৃদয় জুড়ে বিষাদের করুণ সুর বাজায়। অবহেলিত ও অধিকার
বঞ্চিত হয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে সে।
ইয়াতীমের বয়সসীমা
ইয়াতীমের বয়সসীমা হচ্ছে বালেগ বা প্রাপ্ত বয়ষ্ক
হওয়া পর্যন্ত। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছ থেকে শুনে মুখস্থ করে নিয়েছিঃ ’’যৌবনপ্রাপ্ত হলে
কেউ ইয়াতীম থাকে না এবং সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নীরব থাকা জায়িয নয়।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৮৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অর্থাৎ বালেগ হওয়া পর্যন্ত সে ইয়াতীম হিসাবে
গণ্য হবে। যখন সে বালেগ হয়ে যাবে বা সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের যোগ্যতা অর্জন করবে তখন তার
সম্পদ তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ইয়াতীম প্রতিপালনের গুরুত্ব
ইয়াতীমদের ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশ অত্যন্ত
কঠোর। পবিত্র কুরআনের যেখানেই সদয়, সহানুভূতি ও ভাল আচরণের কথা এসেছে সেখানেই ইয়াতীমদের
কথা এসেছে। মহান আল্লাহ তাঁর ইবাদত ও শিরক থেকে বাঁচার পাশাপাশি পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন,
ইয়াতীম ও নিঃস্বদের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,
‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর ও তাঁর সাথে কোন কিছুকে
শরীক কর না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী,
সংগী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের প্রতি সদাচরণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ
দাম্ভিক, অহংকারীকে পসন্দ করেন না’। (সুরা নিসা ৪/৩৬)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
‘পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানোতে তোমাদের
কোন পুণ্য নেই; বরং পুণ্য আছে তার জন্য, যে আল্লাহ, পরকাল, ফিরিশতাগণ, কিতাব সমূহ এবং
নবীগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করে; আল্লাহর মুহাববাতে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত,
মুসাফির ও সাহায্যপ্রার্থীদেরকে এবং দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করে; ছালাত কায়েম করে
ও যাকাত প্রদান করে এবং অঙ্গীকার করলে পূর্ণ করে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য
ধারণ করে। বস্তুতঃ তারাই সত্যপরায়ণ ও তারাই আল্লাহ ভীরু’। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৭৭)।
সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও ইয়াতীমদের অগ্রাধিকার
দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে যে, তারা কিরূপে ব্যয় করবে? তুমি
বল, তোমরা ধন-সম্পদ হ’তে যা ব্যয় করবে তা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন
ও পথিকদের জন্য কর’। (সুরা বাক্বারাহ ২/২১৫)।
ইয়াতীমের অসম্মান করাকে আল্লাহ মানুষের মন্দ
স্বভাব হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কখনোই নয়। বস্ত্ততঃ তোমরা ইয়াতীমকে সম্মান
কর না এবং অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদানে পরস্পরকে উৎসাহিত কর না’। (সুরা ফাজর ৮৯/১৭-১৮)।
এখানে ‘সম্মান করা’ কথাটি বলার মাধ্যমে ইয়াতীমের
যথাযথ হক আদায় করা ও তার প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতি ইয়াতীমের অভিভাবক ও সমাজের
প্রতি নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। (তাফসীরুল কুরআন রাজশাহী
: হাফাবা প্রকাশনী, ২য় সংস্করণ মে ২০১৩), ৩০ তম পারা, পৃ : ২৮৩)।
স্মর্তব্য যে, সমাজের সর্বাধিক অসহায় হচ্ছে
ইয়াতীমরা। এরা পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত, অবহেলিত বনু আদম। যথাযথ আদর-যত্ন ও পৃষ্ঠপোষকতার
অভাবে এরা শিক্ষাবঞ্চিত ও শিষ্টাচার বহির্ভূত মানব শিশু হিসাবে বেড়ে ওঠে। সমাজের আর
দশটা সন্তানের মত নিশ্চিন্তভাবে সে বেড়ে ওঠতে পারে না। অথচ ইসলাম দেড় হাযার বছর পূর্বেই
এর সুন্দর সমাধান দিয়েছে। সমাজের অপরাপর সদস্যদের প্রতি নির্দেশ জারি করেছে ইয়াতীমদের
প্রতি সদয়, সহযোগী ও সহানুভূতিশীল হ’তে। এদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করতে এবং সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা
দানের মাধ্যমে এদেরকে সুস্থ-সুন্দর আদর্শ সন্তান হিসাবে গড়ে তুলতে। এমনকি বিশ্ব মানবতার
মুক্তির দূত বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পিতৃ-মাতৃহীন ইয়াতীম
শিশু করে ক্বিয়ামত পর্যন্ত অনাগত সকল ইয়াতীম সন্তানকে সান্ত্বনা প্রদান করা হয়েছে যে,
ইয়াতীমদের নেতা হচ্ছেন বিশ্বনবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। জান্নাতে পৃথিবীর
শ্রেষ্ঠ মানব ও শ্রেষ্ঠ ইয়াতীম রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাথী হওয়ার
সৌভাগ্য অর্জন করবে তারাই, যারা ইয়াতীমদের তত্ত্বাবধান করবে। মহান আল্লাহ তা‘আলা রাসূল
ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে সর্বযুগের সকল ইয়াতীমের
প্রতি সদয় হওয়ার চূড়ান্ত নির্দেশ প্রদান করেছেন।
আল্লাহ বলেন, ‘তিনি কি আপনাকে ইয়াতীম রূপে
পাননি? অতঃপর আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন।
আপনাকে নিঃস্ব পেয়েছেন, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন। সুতরাং আপনি ইয়াতীমের প্রতি কঠোর হবেন
না’। (সুরা যুহা ৯৩/৬-৯)।
ইয়াতীমদের সঠিকভাবে গড়ে না তুলা হ’লে এরা ঈমান-আমলহীন
এক অন্ধকার জগতে হাবুডুবু খাবে। তখন এরা সমাজের জন্য এক বিষফোঁড়া হিসাবে দেখা দিবে।
অতএব ইয়াতীমদের লালন-পালন, দেখাশুনা করা, তাদের দ্বীনি জ্ঞানে পারদর্শী করা এবং তাদের
সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করা সবিশেষ গুরুত্ববহ।
ইয়াতীম প্রতিপালনের ফজিলত
ইয়াতীম প্রতিপালন করা জান্নাতী লোকদের অন্যতম
বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতী লোকদের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, ‘আহার্যের প্রতি
আসক্তি সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে এবং (বলে) আমরা
তোমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে খাদ্য দান করি। এর বিনিময়ে তোমাদের থেকে কোন প্রতিদান
ও কৃতজ্ঞতা চাইনা’। (সুরা দাহর ৭৬/৮-৯)।
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে ইয়াতীম প্রতিপালনের
বিশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলোঃ
(১) জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়ঃ
ইয়াতীমদের লালন-পালন করলে জান্নাত লাভ হয়।
আমর বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাতা পিতা মারা যাওয়া কোন মুসলিম
ইয়াতীমকে স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত নিজ পানাহারে শামিল করে, ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাত
অবধারিত হয়ে যায়’। (আহমাদ হা/১৯০২৫; ছহীহ তারগীব হা/২৫৪৩)।
একই ভাবে অসহায় মায়ের ক্ষুধার্ত অবুঝ সন্তানকে
নিজের মুখের গ্রাস তুলে দেওয়ার মধ্যেও জান্নাত হাছিল হয়।
কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)....আয়িশাহ (রাযিঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক অসহায় স্ত্রী তার দুটি মেয়ে সন্তানসহ আমার নিকট
আসলো। আমি তাদেরকে তিনটি খেজুর খেতে দিলাম। সে দু’ মেয়ের প্রত্যেককে একটি করে খেজুর
দিল এবং একটি নিজে খাবার জন্যে তার মুখে তুলল। সে মুহুর্তে মেয়ে দুটি এ খেজুরটিও খেতে
চাইল। সে তখন নিজে খাবার জন্যে যে খেজুরটি মুখে তুলেছিল সেটি তাদের উভয়ের মাঝে বণ্টন
করে দিল। তার এ আচরণ আমাকে আশ্চর্য করে দিল। পরে আমি সে যা করেছে তা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমীপে আলোচনা করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা এ কারণে তার জন্যে
জান্নাত আবশ্যক করে দিয়েছেন অথবা তিনি তাকে এ কারণে জাহান্নাম হতে মুক্তি দিয়েছেন।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৬৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪৫৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৫০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(২) জান্নাতে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনঃ
জান্নাতে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম -এর সাথী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করা সর্বাধিক মর্যাদা ও সম্মানের বিষয়। মহান
আল্লাহ তা‘আলা এই বিশেষ মর্যাদা তাঁর ঐ সকল বান্দাদের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন, যারা
ইয়াতীমদের যথাযথভাবে তত্ত্বাবধান করেন।
সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি এবং ইয়াতীমের লালন-পালনকারী,
সে ইয়াতীম নিজের হোক বা অন্য কারো হোক জান্নাতে এরূপ হবো, এ কথা বলে তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করলেন। তখন দু’ অঙ্গুলির
মধ্যে সামান্য ব্যবধান ছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪৯৫২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০০৫, ৫৩০৪, সুনান আততিরমিযী ১৯১৮, সুনান আবূ
দাঊদ ৫১৫০, সহীহাহ্ ৮০০, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৪১, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১০০, আহমাদ ২২৮২০,
মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৫৫৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৬০, আর মু‘জামুল কাবীর ৫৭৭২, আস্ সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩০৩৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৬৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অপর এক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবু হুরাইরাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আত্মীয় বা অনাত্মীয় ইয়াতীমের রক্ষণাবেক্ষণকারী ও আমি জান্নাতে এ দু’ আঙ্গুলের ন্যায়
কাছাকাছি থাকব। বর্ণনাকারী মালিক (রহঃ) হাদীস বর্ণনার সময় শাহাদাত ও মধ্যম অঙ্গুলির
দ্বারা ইঙ্গিত করে দেখালেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭৩৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৯৯, ইসলামিক সেন্টার ৭২৫২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আলোচ্য হাদীছসমূহে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহ
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দুই আঙ্গুল পাশাপাশি করে বুঝাতে চেয়েছেন যে, হাতের দু’টি আঙ্গুল
যেমন খুব কাছাকাছি, ইয়াতীমের প্রতিপালনকারীও জান্নাতে অনুরূপ আমার কাছাকাছি অবস্থান
করবে। অর্থাৎ জান্নাতে তার ঘর হবে আমার ঘরের নিকটবর্তী। নিঃসন্দেহে উম্মতের জন্য এর
চাইতে অধিক আনন্দের ও অধিক সৌভাগ্যের আর কিছুই হতে পারে না।
(৩) রিযিক প্রশস্ত হয় এবং রহমত ও বরকত নাযিল হয়ঃ
ইয়াতীমরাই
সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তি। আর দুর্বলদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসলে আল্লাহ তা‘আলা
বান্দাকে সাহায্য করেন এবং রিযিক প্রদান করেন।
জুবায়র ইবনু নুফাইল আল-হাদরামী (রহঃ) সূত্রে
বর্ণিত। তিনি আবূ দারদা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা দুর্বল লোকদের খোঁজ করে আমার কাছে নিয়ে এসো। কেননা
তোমরা তোমাদের মধ্যকার দুর্বল লোকদের ওয়াসিলায় রিযিক এবং সাহায্য প্রাপ্ত হয়ে থাকো।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৫৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৪) ইয়াতীম প্রতিপালনে হৃদয় কোমল
হয়ঃ
কোমল হৃদয় মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কঠোর
হৃদয়ের অধিকারীকে আল্লাহ পসন্দ করেন না। আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর রাসূলকে সতর্ক করে
বলেন, ‘আল্লাহর অনুগ্রহে তুমি তাদের প্রতি কোমল চিত্ত হয়েছ। যদি তুমি কর্কশভাষী ও কঠোর
হৃদয়ের হ’তে, তবে নিশ্চয়ই তারা তোমার সংসর্গ হ’তে দূরে সরে যেত’। (সুরা আলে ইমরান ৩/১৫৯)।
হৃদয় কোমল করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ইয়াতীমের
প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি
বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তার অন্তর কঠিন মর্মে
অভিযোগ করলে তিনি তাকে বললেন, যদি তুমি তোমার হৃদয় নরম করতে চাও তাহলে দরিদ্রকে খানা
খাওয়াও এবং ইয়াতীমের মাথা মুছে দাও’। (আহমাদ, ছহীহুল জামে‘
হা/১৪১০; সিলসিলা ছহীহা হা/৮৫৪)।
(৫) আত্মীয় ইয়াতীম প্রতিপালনে দ্বিগুণ নেকীঃ
মানুষ নিকটাত্মীয়ের ব্যাপারে উদাসীন থাকে।
অনেক সময় দানের ক্ষেত্রে তাদের বঞ্চিত করা হয়। অথচ ইসলাম তাদেরকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে।
কেননা এক্ষেত্রে তাদের দু’টি হক রয়েছে। একটি ইয়াতীম-মিসকীন হওয়ার কারণে, আরেকটি আত্মীয়
হওয়ার কারণে।
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন, إ
সালমান ইবনু ’আমির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মিসকীনকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা
এক প্রকার, আর নিকটাত্মীয়ের কাউকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেয়া দু’ প্রকার সাওয়াবের কারণ।
এক রকম সাওয়াব নিকটাত্মীয়ের হক আদায় এবং অন্য রকম সাওয়াব সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করার জন্য।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৩৯, সুনান আত্ তিরমিযী ৬৫৮,
সুনান আননাসায়ী ২৫৮২, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৮৪৪, আহমাদ ১৬২৩, দারিমী ১৭২২, ইবনু খুযায়মাহ্
২৩৮৫, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৪৭৬, ইরওয়া ৮৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ৮৯২, সহীহ আল জামে আস্
সগীর ৩৮৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইয়াতীমের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ
ইয়াতীমের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ
একটি বিষয়। এটি এমন এক আমানত যে বিষয়ে ত্রুটি হ’লে পরিণাম হবে ভয়াবহ। আর এ কাজ নিশ্চয়ই
দুর্বলদের দ্বারা সম্ভব নয়। খেয়ানতের আশংকা থাকলে এই দায়িত্ব থেকে দূরে থাকাই বরং কল্যাণকর।
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবূ যর (রাঃ)-কে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
জিজ্ঞেস করলাম : হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি আমাকে (কোনো অঞ্চলের) শাসক নিযুক্ত করবেন
না? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার কাঁধে করাঘাত করে বললেনঃ হে আবূ
যার! তুমি একজন দুর্বল প্রকৃতির লোক, আর শাসনকার্য হলো একটি আমানত। নিশ্চয় তা হবে কিয়ামতের
দিন অপমান ও লাঞ্ছনা। তবে সে ব্যক্তি ব্যতীত, যে তা ন্যায়সঙ্গতভাবে মেনে নিয়েছে এবং
নিষ্ঠার সাথে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে।
অপর এক বর্ণনাতে আছে- তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ হে আবূ যার! আমি দেখছি তুমি একজন দুর্বলমনা লোক। আর আমি তোমার
জন্য সেটাই পছন্দ করি, যা আমি নিজের জন্য পছন্দ করি। তুমি কক্ষনো দু’জন লোকেরও শাসক
হয়ো (দায়িত্বভার নিও) না। আর ইয়াতীমের ধন-সম্পদের অভিভাবকও হয়ো না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৮২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮২৫, সহীহ আল জামি‘
৭৮২৩, সহীহ আত্ তারগীব ২১৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উল্লেখ্য যে, আলোচ্য হাদীছ দ্বারা দায়িত্ব
গ্রহণ না করা উদ্দেশ্য নয়, বরং অধিক সর্তকতা অবলম্বন উদ্দেশ্য। অর্থাৎ যিনি দায়িত্বশীল
হবেন তিনি যেন আমানতের ব্যাপারে অতি সাবধানতা অবলম্বন করেন। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আমি দু’ দুর্বলের অর্থাৎ
ইয়াতীম ও নারীর অধিকার (নস্যাৎ করা) নিষিদ্ধ করছি। (সুনান
ইবনু মাজাহ ৩৬৭৮, আহমাদ ৯৩৭৪, সহীহাহ ১০১৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
ইয়াতীমদের সম্পদ সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করতঃ সময়মত
তাদের নিকটে সমর্পন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর ইয়াতীমদেরকে তাদের
ধন-সম্পদ সমর্পন কর। পবিত্রতার সাথে অপবিত্রতার বিনিময় কর না ও তোমাদের সম্পদের সাথে
তাদের সম্পদ মিশ্রিত করে গ্রাস কর না। নিশ্চয়ই এটা গুরুতর অপরাধ’। (সুরা নিসা ৪/২)।
আল্লাহ আরও বলেন,
‘আর ইয়াতীমগণ বিবাহযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে
পরীক্ষা করে নাও; অতঃপর যদি তাদের মধ্যে ভাল-মন্দ বিচারের জ্ঞান লক্ষ্য কর, তবে তাদের
সম্পদ তাদেরকে সমর্পন কর এবং তারা বয়োঃপ্রাপ্ত হবে বলে তা অপব্যয় ও তাড়াহুড়া করে আত্মসাৎ
কর না। যে অভাবমুক্ত সে নিবৃত্ত থাকবে এবং যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হবে সে সঙ্গত পরিমাণ
ভোগ করবে। যখন তাদের সম্পত্তি তাদেরকে সমর্পণ করতে চাও তখন তাদের জন্য সাক্ষী রেখ এবং
আল্লাহই হিসাব গ্রহণে যথেষ্ট’। (সুরা নিসা ৪/৬)।
আলোচ্য আয়াতে ইয়াতীমদের প্রাপ্ত বয়স্ক ও জ্ঞান-বুদ্ধি
না হওয়া পর্যন্ত তাদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। প্রাপ্ত বয়ষ্ক
হয়ে গেলে যথাযথভাবে তাদের সম্পদ তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে। তবে রক্ষণাবেক্ষণকারী দরিদ্র
হ’লে সঙ্গত পরিমাণ গ্রহণ করতে পারবে।
ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎকারীর পরিণতি
ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎকারীর শাস্তি অত্যন্ত
মর্মান্তিক। দুনিয়াতে ক্ষমতার দাপটে ইয়াতীমের সম্পদ গ্রাস করা সম্ভব হ’লেও পরকালে ঐ
ব্যক্তির বাঁচার কোন উপায় থাকবে না। অন্যান্য পাপীদের ন্যায় সেও বাম হাতে আমলনামা পেয়ে
সেদিন আফসোস করে বলতে থাকবে-
‘হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া হ’ত।
আমি যদি আমার হিসাব কি তা না জানতাম! হায়! আমার মৃত্যুই যদি আমার শেষ হ’ত! (আজ) আমার
ধন-সম্পদ আমার কোনই কাজে আসল না। আমার ক্ষমতা আজ ধ্বংস হয়ে গেছে’। (সুরা হা-ক্কাহ ৬৯/২৫-২৯)।
ইয়াতীমের সম্পদ যেন আত্মসাৎ না হয় সেজন্য অতি
সাবধান করতঃ ইয়াতীমের সম্পদের নিকটবর্তী হ’তেও মহান আল্লাহ তা‘আলা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
তিনি বলেন,
‘আর ইয়াতীমের বয়োঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত
সদুদ্দেশ্য ব্যতীত তার বিষয় সম্পত্তির কাছেও যেও না’। (সুরা
আন‘আম ১৫২)।
তিনি আরও বলেন, ‘আর ইয়াতীমের বয়োঃপ্রাপ্ত না
হওয়া পর্যন্ত সদুদ্দেশ্য ব্যতীত তাদের বিষয় সম্পত্তির কাছেও যেও না এবং তোমরা অঙ্গীকার
পূর্ণ কর। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে’। (সুরা
বানী ইসরাঈল ১৭/৩৪)।
আলোচ্য আয়াতদ্বয়ে ‘ইয়াতীমের সম্পদের কাছেও
যেও না’ অর্থ ইয়াতীমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ কর না। যেমনটি হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ)-কে
সৃষ্টির পর নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,
‘তোমরা এই বৃক্ষের নিকটেও যেও না। (যদি যাও) তাহ’লে তোমরা যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে
যাবে’। (সুরা বাক্বারাহ ২/৩৫)।
মূলতঃ ইয়াতীমের সম্পদের হেফাযত ও ব্যবস্থাপনার
দায়িত্ব যাদের উপর অর্পিত হবে তাদেরকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে আয়াতদ্বয়ে একথা বলা হয়েছে।
অর্থাৎ কোনভাবেও যেন ইয়াতীমদের সম্পদ আত্মসাৎ করা না হয়। কেননা ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ
করার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা অর্থ আগুন ভক্ষণ করা। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ইয়াতীমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ
করে, তারা তাদের উদরে অগ্নি ভর্তি করে এবং সত্বরই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে’। (সুরা নিসা ৪/১০)।
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কাছীর (রঃ) বলেন,
‘তারা যদি বিনা কারণে ইয়াতীমদের সম্পদ ভক্ষণ করে, তাহ’লে তারা আগুন ভক্ষণ করবে। ক্বিয়ামতের
দিন তাদের পেটে যেই আগুন প্রজ্বলিত হবে’। (মুখতাছার তাফসীরে
ইবনে কাছীর (বৈরুতঃ দারুল কুরআনিল কারীম, ৭ম সংস্করণ ১৪০০ হিঃ/১৯৮১ খৃঃ), ১ম খন্ড,
পৃঃ ৩৬১)।
একই মর্মার্থে পূর্বোক্ত ৬নং আয়াতে উল্লিখিত
‘যে অভাবমুক্ত সে নিবৃত্ত থাকবে এবং যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হবে সে সঙ্গত পরিমাণ ভোগ
করবে’ (সুরা নিসা ৬) -এর ব্যাখ্যায় ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, যে ধনী হবে, যার নিজের খাওয়া-পরার
জিনিস যথেষ্ট থাকবে, তার কর্তব্য হবে তাদের মাল হ’তে কিছুই গ্রহণ না করা। এমতাবস্থায়
মৃত জন্তু এবং প্রবাহিত রক্তের ন্যায় এ মাল তাদের জন্য সম্পূর্ণরূপে হারাম। তবে অভিভাবক
দরিদ্র হ’লে তাকে লালন-পালন করার পারিশ্রমিক হিসাবে সময়ের প্রয়োজনে ও দেশ প্রথা অনুযায়ী
তার মাল হ’তে গ্রহণ করা তার জন্য বৈধ। এক্ষেত্রে সে নিজের প্রয়োজন দেখবে এবং পরিশ্রমও
দেখবে। যদি প্রয়োজন পরিশ্রম অপেক্ষা কম হয় তবে প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রহণ করবে। আর যদি
পরিশ্রম প্রয়োজন অপেক্ষা কম হয় তবে পরিশ্রমের বিনিময় গ্রহণ করবে। (তাফসীর ইবনে কাছীর, বঙ্গানুবাদ: ড. মুহাম্মাদ মুজীবুর রহমান
(ঢাকা: তাফসীর পাবলিকেশন্স কমিটি, ৮ম সংস্করণ, সেপ্টেম্বর ২০০৮), ৪র্থ-৭ম খন্ড, পৃঃ
২৮৮)।
ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ মানুষকে ধ্বংসে নিক্ষেপ
করে। হযরত আবুহুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (হে লোক সকল!) সাতটি ধ্বংসাত্মক
বিষয় হতে তোমরা দূরে থাকবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এ সাতটি বিষয়
কী? জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক
করা। (২) যাদু করা। (৩) শারী’আতের অনুমতি ব্যতীত কাউকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করা। (৪)
সুদ খাওয়া। (৫) (অন্যায়ভাবে) ইয়াতীমের মাল খাওয়া। (৬) জিহাদের মাঠ থেকে পালিয়ে আসা।
(৭) নির্দোষ ও সতী-সাধ্বী মুসলিম মহিলার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯, সুনান আননাসায়ী ৩৬৭১, সুনান আবূ দাঊদ ২৮৭৪, শু‘আবুল
ঈমান ৪০০০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৬১, ইরওয়া ১২০২, সহীহ আল জামি‘ ১৪৪, সহীহ আত্ তারগীব
১৩৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব ধ্বংস থেকে রক্ষা ও জাহান্নামের মর্মন্তুদ
শাস্তি থেকে মুক্তির স্বার্থে ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। পাশাপাশি
জান্নাতে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথী হওয়ার দৃঢ় প্রত্যাশায় ইয়াতীম
প্রতিপালনে এগিয়ে আসতে হবে।
ইয়াতীম প্রতিপালনের ধরন
ইয়াতীমের তত্ত্বাবধায়ক হওয়া নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের
ব্যাপার ও অত্যন্ত মর্যাদাকর বিষয়। যিনি এই মহান দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন তিনি অবশ্যই
ইনছাফপরায়ণ হবেন। আপন সন্তানের ন্যায় ইয়াতীমের সার্বিক বিষয় দেখভাল করবেন। কখনো আদর
করে, মাথায় হাত বুলিয়ে সহানুভূতি প্রদর্শন করবেন, আবার অবাধ্যতায় কখনো শাসন করবেন।
দাঊদ (আঃ) বলতেন, ‘ইয়াতীমদের প্রতি দয়াবান
পিতার ন্যায় হয়ে যাও’। (বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান হা/১০৫২৮;
ছহীহ আদাবুল মুফরাদ, তাহক্বীক্ব আলবানী হা/১০৩, সনদ ছহীহ)।
অর্থাৎ সন্তানের প্রতি পিতা যেমন রহমদিল তেমনি
ইয়াতীমের প্রতিও রহমদিল হ’তে হবে। ইয়াতীম প্রতিপালনের ধরন কী হবে এ সম্পর্কে নিম্নে
আলোকপাত করা হলোঃ
(১) লালন-পালন ও শিষ্টাচার শিক্ষা দানঃ
সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা শিশুর জন্মগত
অধিকার। কিন্তু শৈশবে পিতৃবিয়োগের কারণে এটি অনেকাংশেই বিঘ্নিত হয়। সঠিকভাবে খাওয়া-পরার
অভাবে তার শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি যথাযথভাবে হয়ে ওঠে না। সেকারণ যিনি ইয়াতীমের দায়িত্বশীল
হবেন তার উচিত হবে নিজ সন্তানের ন্যায় ইয়াতীম সন্তানের লালন-পালনেরও যথাযথ ব্যবস্থা
নেওয়া। তার সঠিক পরিচর্যা করা, উপযুক্ত খাদ্য, প্রয়োজনীয় পোষাক-পরিচ্ছদ ও সুচিকিৎসার
ব্যবস্থা করা।
পাশাপাশি শৈশব থেকেই তাকে শিষ্টাচার শিক্ষা
দিতে হবে। আলী (রাঃ) বলেন,
‘যার পিতা মারা গেছে সে প্রকৃত ইয়াতীম বা অনাথ
নয়। বরং জ্ঞান ও শিষ্টাচারে দৈন্য ব্যক্তিই প্রকৃত ইয়াতীম’। (জামীউ দাওয়াবীনিশ শি‘রিল আরাবী ১০/১৭০)।
বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করা, সাক্ষাতে
সালাম প্রদান করা, গৃহে প্রবেশ ও বের হওয়ার আদব, খাওয়া-পরার আদব, ঘুমানো ও ঘুম থেকে
ওঠার আদব, ছালাতের নিয়ম ও প্রয়োজনীয় দো‘আ-কালাম প্রভৃতি দৈনন্দিন জীবনে চলার নিয়ম-পদ্ধতি
শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ ইয়াতীমের তত্ত্বাবধায়কের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এক্ষেত্রে দায়িত্ব
পালনে ত্রুটি হলে জবাব প্রদানেও অক্ষম হতে হবে। কেননা প্রত্যেককেই সেদিন স্ব স্ব দায়িত্ব
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন,
আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই
এক একজন দায়িত্বশীল, আর (পরকালে) নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে তোমাদের প্রত্যেককেই জবাবদিহি
করতে হবে। সুতরাং জনগণের শাসকও একজন দায়িত্বশীল লোক, তার দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জবাবদিহি
করতে হবে। আর প্রত্যেক পুরুষ তার পরিবারের একজন দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে
জবাবদিহি করতে হবে। আর স্ত্রী তার স্বামীর ঘর-সংসার ও সন্তান-সন্ততির ওপর দায়িত্বশীল,
তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। এমনকি কোনো গোলাম বা চাকর-চাকরাণীও তার
মুনীবের ধন-সম্পদের উপর একজন দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে
হবে। অতএব সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল, আর তোমাদের প্রত্যেককেই স্বীয়
দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৬৮৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭১৩৮, ৮৯৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৬১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮২৯, সুনান আবূ দাঊদ ২৯২৮, সুনান আততিরমিযী ১৭০৫, আহমাদ
৫১৬৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৯২২, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৫৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) শিক্ষা-দীক্ষাঃ
ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব ব্যাপক। রাসূলুল্লাহ
ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম অবতীর্ণ ৫টি আয়াতের
প্রথম শব্দটিই হচ্ছে اِقْرَأْ
‘পড়’। আল্লাহ বলেন, ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে
জমাট রক্তপিন্ড হ’তে। পড়! আর তোমার পালনকর্তা বড়ই দয়ালু। যিনি কলমের মাধ্যমে শিক্ষা
দান করেছেন’। (সুরা ‘আলাক্ব ৯৬/১-৫)।
আলোচ্য আয়াতে পড়াকে শর্তযুক্ত করে দেয়া হয়েছে
আল্লাহর সাথে। অর্থাৎ এমন বিষয়ে পড়াশুনা করা আবশ্যক, যার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ
সম্বন্ধে সঠিক ইলম হাছিল হয়। পক্ষান্তরে যে ইলম মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়,
মানুষকে নাস্তিক বানায়, ঐ ইলম এখানে উদ্দেশ্য নয়। ঐ ইলম অর্জন থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ অন্যত্র
বলেন, যারা জ্ঞানী এবং যারা মূর্খ তারা কি সমান?’ (সুরা
যুমার ৩৯/৯)।
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন,
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইলম বা জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য
ফরয এবং অপাত্রে তথা অযোগ্য মানুষকে ইলম শিক্ষা দেয়া শুকরের গলায় মণিমুক্তা বা স্বর্ণ
পরানোর শামিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৮, সুনান
ইবনু মাজাহ্ ২২৪, সহীহুল জামি ৩৯১৩, য‘ঈফুল জামি ৩৬২৬, বায়হাক্বী ১৫৪৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]।
অতএব সুন্দর জীবনের জন্য সুস্থ জ্ঞান হাছিল
আবশ্যক। যার ভিত্তিমূল হচ্ছে পরিবার। মাতৃক্রোড়েই শিক্ষার শুভ সূচনা হয়। ছোট্ট শিশুটি
মায়ের কাছেই দুই ঠোট নেড়ে অস্ফুট ভাষায় তার আবেদন প্রকাশের চেষ্টা করে। অতঃপর ক্রমান্বয়ে
যত বড় হয় ততই নতুন কিছু শিখে। পিতা-মাতাই সন্তানের প্রথম শিক্ষক। সন্তানকে সুশিক্ষায়
শিক্ষিত করে গড়ে তুলার জন্য পিতা-মাতার দায়িত্ব সর্বাগ্রগণ্য। কিন্তু পিতৃহীন বা পিতৃ-মাতৃহীন
ইয়াতীম শিশুটি এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সেকারণ তার দায়-দায়িত্ব অর্পিত হবে যার তত্ত্বাবধানে
সে বড় হবে তার উপর। পিতা-মাতার অবর্তমানে তিনিই ইয়াতীম শিশুটির শিক্ষার প্রতি সবিশেষ
গুরুত্ব আরোপ করবেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাকে ইলমে দ্বীন শিক্ষা দিবেন এবং তার একাডেমিক
শিক্ষার ব্যবস্থা করবেন। এভাবে একজন ইয়াতীমকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য সার্বিক
ব্যবস্থা গ্রহণের সর্বাত্মক চেষ্টা করা একজন ‘কাফীল’ বা তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব।
(৩) ঈমান ও ছহীহ আক্বীদা শিক্ষা
দানঃ
ইসলাম স্বভাবজাত ধর্ম বা দ্বীনে ফিতরাত। রাসূলুল্লাহ
ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক সন্তানই ইসলামী ফিতরাতের
উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইয়াহুদী, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক
বানিয়ে ফেলে। যেরূপে চতুষ্পদ জন্তু পূর্ণাঙ্গ জন্তুই জন্ম দিয়ে থাকে, এতে তোমরা কোন
বাচ্চার কানকাটা দেখতে পাও কি? এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিলাওয়াত
করলেনঃ
“আল্লাহর ফিতরাত, যার উপর তিনি মানবজাতিকে
সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টি রহস্যে কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল প্রতিষ্ঠিত
দীন।’’ (সূরাহ্ আর্ রূম ৩০: ৩০)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৯০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৫৮, ১৩৫৯, ১৩৮৫, ৪৭৭৫, ৬৫৯৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৬৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৮, আহমাদ ৭১৮১, ইরওয়া ১২২০, সহীহ আল জামি‘
৫৭৮৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১২৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৭৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আলোচ্য হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে, ঈমান, বিশুদ্ধ
আক্বীদা ও সুন্দর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার যোগ্যতা প্রতিটি শিশুর মধ্যেই বিদ্যমান আছে।
যদি শিশুর পিতামাতা বা অভিভাবক এ ব্যাপারে যত্নবান হয় এবং পরিবেশ যদি অনুকূলে থাকে
তবে শিশুর মধ্যে অনুপম চরিত্রের বিকাশ ঘটে। আর যদি পিতামাতা বা অভিভাবক এ বিষয়ে অবহেলা
করে কিংবা পরিবেশ প্রতিকূলে থাকে, তবে শিশুর চরিত্র বিনষ্ট হয়ে যায়। সেকারণ পিতা-মাতা
বা অভিভাবকের দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানকে সদুপদেশের মাধ্যমে সঠিক পথের সন্ধান দেওয়া। তাকে
আল্লাহর অস্তিত্বের কথা, তাঁর একত্ববাদের কথা এবং তাঁর উপর ঈমান আনার কথা বলা। চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্র,
আসমান-যমীনের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং এ সব কিছুর যে একজন স্রষ্টা আছেন তার
কথা সন্তানদেরকে বুঝানো। অতঃপর পর্যায়ক্রমে নবী-রাসূল, ফিরিশতা, মৃত্যু, আখেরাত, জান্নাত
ও জাহান্নাম সম্পর্কে অবহিত করা ও এসব বিষয়ে ঈমান আনতে বলা। পাশাপাশি শিরক ও বিদ‘আতের
ভয়াবহতা তুলে ধরা এবং এসব থেকে বেঁচে থাকতে বলা। যেমনটি লোকমান তাঁর সন্তানকে উদ্দেশ্য
করে বলেছিলেন,
‘স্মরণ কর, যখন লোকমান উপদেশ দিতে গিয়ে তার
পুত্রকে বলেছিল, হে বৎস! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক কর না। নিশ্চয়ই শিরক মহা অন্যায়’।
‘হে বৎস! যদি তা (পুণ্য ও পাপ) সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা থাকে শিলাগর্ভে অথবা
আকাশে কিংবা মৃত্তিকার নীচে, আল্লাহ তা উপস্থিত করবেন। আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক
অবগত’। ‘হে বৎস! ছালাত কায়েম কর, সৎ কাজের আদেশ দাও, আর অসৎ কাজের নিষেধ কর এবং বিপদাপদে
ধৈর্যধারণ কর। এটাই তো দৃঢ় সংকল্পের কাজ’। ‘অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কর না এবং
পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ উদ্ধত, অহংকারীকে পসন্দ করেন না’।
‘(হে বৎস!) তুমি সংযতভাবে পদক্ষেপ ফেলবে এবং তোমার কণ্ঠস্বর নীচু করবে, নিশ্চয়ই গাধার
স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর’। (সুরা লোক্বমান ৩১/১৩,
১৬-১৯)।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সওয়ারীর পিছনে বসছিলাম। তখন তিনি আমাকে উদ্দেশ্য
করে বললেন, হে ছেলে! আল্লাহর বিধানসমূহ যথাযথভাবে মেনে চল আল্লাহ তোমাকে হিফাযতে রাখবেন।
আল্লাহর অধিকার আদায় কর, তবে তুমি আল্লাহকে তোমার সম্মুখে পাবে। আর যখন তুমি কারো
কাছে কিছু চাওয়ার ইচ্ছা করবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে এবং যখন কারো সাহায্য চাইতে
হয় তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। জেনে রাখ, যদি সমস্ত সৃষ্টিজীব একত্র হয়ে তোমার
কোন কল্যাণ করতে চায় তবে তারা আল্লাহর নির্ধারিত পরিমাণ ব্যতীত তোমার কোন কল্যাণ করতে
পারবে না। পক্ষান্তরে যদি সমস্ত সৃষ্টিজীব সমবেতভাবে তোমার কোন ক্ষতি করতে চায় তবে
তারা আল্লাহর নির্ধারিত পরিমাণ ব্যতীত তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (তোমাদের ভাগ্যের
সব কিছু লেখার পর) কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং খাতাসমূহ শুকিয়ে গেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩০২, সুনান আততিরমিযী ২৫১৬, মুসনাদে
আহমাদ ২৬৬৯, সহীহুল জামি ৭৯৫৭, আবূ ইয়া'লা ২৫৫৬, শুআবূল ঈমান ১৯৫, আল মু'জামুল কাবীর
লিত্ব তবারানী ১১২৫৩, আল মু'জামুল আওসাত্ব ৫৪১৭, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৬৩০৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
লোকমান কর্তৃক স্বীয় সন্তানকে প্রদত্ত ধারাবাহিক
উপদেশ এবং আলোচ্য হাদীছে কিশোর ইবনে আববাসকে প্রদত্ত মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের উপদেশ থেকে এ কথা দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয় যে, ঈমান ও ছহীহ আক্বীদা শিক্ষাদানের
উপযুক্ত বয়স হচ্ছে শিশু-কিশোর বয়স। সেকারণ ইয়াতীমের দায়িত্বশীল ব্যক্তি এই গুরুত্বপূর্ণ
সময়ে তার অধীনস্থ ইয়াতীম সন্তানকে ঈমান ও বিশুদ্ধ আক্বীদা শিক্ষা দিবেন। শিরক বিমুক্ত
খালেছ তাওহীদপন্থী ও বিদ‘আতমুক্ত প্রকৃত সুন্নাতপন্থী হিসাবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন।
তবেই তিনি নিজেকে একজন সফল ইয়াতীম প্রতিপালনকারী হিসাবে আত্মতৃপ্তি লাভে ধন্য হবেন।
(৪) উপযুক্ত বয়সে বিবাহের ব্যবস্থা করাঃ
ইয়াতীমের
দায়িত্বশীলের এটিও অন্যতম দায়িত্ব যে, বিবাহের বয়স হ’লে তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করা।
শারঈ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করে তাদের বিবাহের কার্য সুসম্পন্ন
করা। কেননা বিবাহ মুসলিম জীবনের একটি অন্যতম অনুসঙ্গ। বিবাহের মাধ্যমে যেমন নিঃসঙ্গতা
দূরীভূত হয়, চিন্তা প্রশমিত হয়, ঠিক তেমনি তাক্বওয়া বা পরহেযগারিতা বৃদ্ধি পায়। অশান্ত
মনে প্রশান্তি ফিরে আসে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে
যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই তোমাদের সঙ্গিনীদেরক সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা
তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মধ্যে পরস্পরে ভালবাসা ও দয়া’।
(সুরা রূম ৩০/২১)।
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন,
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে যুবক সম্প্রদায়!
তোমাদের মধ্যে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন অবশ্যই বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি
অবনত করে ও লজ্জাস্থানের অধিক অধিক হিফাযাত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম
(রোযা) রাখে। কেননা, সওম তার জন্য ঢালস্বরূপ (অর্থাৎ- অবৈধ যৌনচাহিদা থেকে বিরত রাখে)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩০৮০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৫০৬৬, ১৯০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০০,
সুনান আননাসায়ী ৩২১০, সুনান আততিরমিযী ১০৮১, আহমাদ ৪০২৩, ইরওয়া ১৭৮১, সহীহ আল জামি
৭৯৭৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
শেষ কথাঃ
বাহ্যত ইয়াতীমরা সমাজে মর্যাদাহীন। তাদের পিতৃহীনতা
যেন তাদের অপরাধ। অথচ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ছিলেন ইয়াতীম। তিনিই ইয়াতীমদের বিশ্বময় নেতা। সুতরাং ইয়াতীম ও অসহায়দের
অবজ্ঞা-অবহেলার চোখে দেখার কোনই অবকাশ নেই। আর এ অবহেলা কেবলমাত্র তাদের পক্ষেই সম্ভব
যারা অবিশ্বাসী ও মিথ্যারোপকারী। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি দেখেছ তাকে, যে বিচার দিবসে
মিথ্যারোপ করে? সে হ’ল ঐ ব্যক্তি, যে ইয়াতীমকে গলাধাক্কা দেয় এবং অভাবগ্রস্তকে খাদ্য
দানে উৎসাহিত করে না’। (সুরা মা‘ঊন ১০৭/১-৩)।
সুতরাং ইয়াতীমদের গলাধাক্কা নয়, বরং তাদের
যথাযথ প্রতিপালনে এগিয়ে আসতে হবে। যা পবিত্র কুরআনের বহু আয়াত ও একাধিক ছহীহ হাদীছ
দ্বারা নির্দেশিত। ইয়াতীম প্রতিপালন করা জান্নাতী লোকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জান্নাতে
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জিত হয় ইয়াতীম
প্রতিপালনের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে হৃদয় কোমল হয়, রিযিক প্রশস্ত হয় এবং রহমত ও বরকত নাযিল
হয়। সুতরাং এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ ও নেকীর কাজে মুমিন মাত্রেরই এগিয়ে আসা উচিত। আল্লাহ
আমাদের সহায় হৌন- আমিন।
(সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো:
ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি,
এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
...........................................................................................
কুরআন
ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক
করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment