Search This Blog

Friday, November 22, 2019

হাদিস পরিচিতি, হাদিস সংকলনের ইতিহাস, জাল-জঈফ হাদিস ও হাদিস মানার গুরুত্বঃ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

হাদিস পরিচিতি, হাদিস সংকলনের ইতিহাস, জাল-জঈফ হাদিস ও হাদিস মানার গুরুত্বঃ

(বিদআতীদের করুন পরিনতি)


ভূমিকাঃ হাদীস শরীফ মুসলিম মিল্লাতের এক অমূল্য সম্পদ, ইসলামী শরই’আতের অন্যতম অপরিহার্য উৎস এবং ইসলামী জীবন বিধানের অন্যতম মূল ভিত্তি। কুরআন মজীদ যেখানে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মৌলনীতি পেশ করে, হাদীস সেখানে এ মৌল নীতির বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও তা বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থা বলে দেয়। কুরআন ইসলামের আলোকস্তম্ভ, হাদীস তাঁর বিচ্ছুরিত আলো। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে কুরআন যেন হৃদপিণ্ড, আর হাদীস এ হৃদপিণ্ডের সাথে সংযুক্ত ধমনী। জ্ঞানের বিশাল ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত তাজা তপ্ত শোণিতধারা প্রবাহিত করে এর অঙ্গ-প্রতঙ্গকে অব্যাহতভাবে সতেজ ও সক্রিয় রাখে। হাদীস একদিকে যেমন কুরআনুল আযীমের নির্ভুল ব্যাখ্যা দান করে, অনুরূপভাবে তা পেশ করে কুরআনের ধারক ও বাহক নবী করীম (সঃ)-এর পবিত্র জীবনচরিত, কর্মনীতি ও আদর্শ এবং তাঁর কথা ও কাজ, হিদায়াত ও উপদেশের বিস্তারিত বিবরণ। এজন্যই ইসলামী জীবন বিধানে কুরআনে হাকীমের পরপরই হাদীসের স্থান।

আল্লাহ তা’আলা জিবরাঈল আমীনের মাধ্যমে নবী করিম (সঃ)-এর উপর যে ওহী নাযিল করেছেন, তা হলো হাদীসের মূল উৎস। ওহী-এর শাব্দিক অর্থ ‘ইশারা করা’ গোপনে অপরের সাথে কথা বলা। ওহী দু প্রকার। প্রথম প্রকার প্রত্যক্ষ ওহী যার নাম ‘কিতাবুল্লাহ’ বা ‘আল-কুরআন’। এর ভাব, ভাষা উভয়ই মহান আল্লাহ্র। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তা হুবুহু প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয় প্রকার পরোক্ষ ওহী এর নাম ‘সুন্নাহ’ বা ‘আল-হাদীস’। এর ভাব আল্লাহ্র, তবে নবী (সঃ) তা নিজের ভাষায়, নিজের কথায় এবং নিজের কাজে ও সম্মতির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। প্রথম প্রকারের ওহী রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর সরাসরি নাযিল হতো এবং তাঁর কাছে উপস্থিত লোকজন তা উপলব্ধি করতে পারত। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকারের ওহী তাঁর উপর প্রচ্ছন্নভাবে নাযিল হতো এবং অন্যরা তা উপলব্ধি করতে পারত না।

আখেরী নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কুরআনের ধারক ও বাহক, কুরআন তাঁর উপরই নাযিল হয়। আল্লাহ তা’আলা তাঁর কিতাবে নামব জাতিকে একটি আদর্শ অনুসরণের ও অনেক বিধি-বিধান পালনের নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর বিস্তারিত বিবরণ দান করেননি। এর ভার ন্যস্ত করেছেন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর। তিনি নিজের কথা-কাজ ও আচার-আচরনের মাধ্যমে কুরআনের আদর্শ ও বিধান বাস্তবায়নের পন্থা ও নিয়ম কানূন বলে দিয়েছেন। কুরআনকে কেন্দ্র করেই তিনি ইসলামের এক পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধান পেশ করেছেন। অন্য কথায়, কুরআন মজীদের শিক্ষা ও নির্দেশসমূহ ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কার্যকর করার জন্য নবী (সঃ) যে পন্থা অবলম্বন করেছেন, তাই হচ্ছে হাদীস। হাদীসও যে ওহীর সুত্রে প্রাপ্ত এবং তা শরী’আতের অন্যতম উৎস কুরআন ও মহানবী (সঃ)-এর বাণীর মধ্যেই তাঁর প্রমাণ বিদ্যমান।

মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবী (সঃ) সম্পর্কে বলেনঃ

 “আর তিনি (নবী) মনগড়া কথাও বলেন না, এ তো ওহী যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়” (সুরা নাজম-৩-৪ নং আয়াত)।

আল্লাহ আরো বলেন,

 “তিনি (নবী) যদি আমার নামে কিছু রচনা চালাতে চেষ্টা করতেন আমি অবশ্যই তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং কেটে লইতাম তাঁর জীবনধমনী” (সুরা হাক্বকাহ-আয়াত নং, ৪৪-৪৬)।

ওহী দুই প্রকারঃ যথা:-

(১) প্রত্যক্ষ ওহী-কুরআন।

(২) পরোক্ষ ওহী-হাদিস।

আল্লাহর কথায় বোঝা যায়, রাসুল সাঃ যা বলেছেন, যা করেছেন সবই আল্লাহরই নির্দেশে যা পরোক্ষ ওহী নামে পরিচিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেন যে,

“রাসুল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।” ( ৫৯: ৭)।

রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,

(ক) আবূ নাজীহ ইরবায ইবনে সারিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন। তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। আর নাসাঈর এক বর্ণনায় আছে, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামে (নিয়ে যায়)।

(আবু দাঊদ ৪৬০৯, তিরমিযী ২৬৭৬, ইবনে মাজাহ ৪২)

(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে; কিন্তু সে নয় যে অস্বীকার করবে। জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! (জান্নাতে যেতে আবার) কে অস্বীকার করবে?’ তিনি বললেন, যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করবে, সেই জান্নাত যেতে অস্বীকার করবে। (বুখারী ৭২৮০)।

(গ) জাবের (রাঃ) বলেন, একদিন একদল ফিরিশতা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে উপস্থিত হলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ঘুমাচ্ছিলেন। ফিরিশতাগণ একে অপরকে বলতে লাগলেন, ‘তোমাদের এই বন্ধুর একটি উপমা আছে, অতএব তোমরা সেটি বর্ণনা কর। তখন তাঁদের কেউ বললেন, ‘তিনি তো ঘুমিয়ে আছেন। তাঁদের কেউ বললেন, ‘তাঁর চোখে ঘুম থাকলেও তাঁর অন্তর জাগ্রত। তখন তাঁরা বললেন, ‘তাঁর উপমা হল; এক ব্যক্তি একটি গৃহ নির্মাণ করে খাবারের দস্তরখানা প্রস্তুত করে লোকদেরকে দাওয়াত দিয়ে আনার জন্য একজন আহবায়ককে প্রেরণ করল। অতঃপর যে ঐ আহবায়কের আহবানে সাড়া দিল, সে ঐ গৃহে প্রবেশ করে সেখানে রাখা খাবার খেতে পেল।

আর যে আহবায়কের আহবানে সাড়া দিল না, সে ঐ গৃহে প্রবেশ করে সেখানে রাখা খাবার খেতে পেল না। অতঃপর তাঁরা আপোসে বললেন, ‘তোমরা এই উপমার তাৎপর্য বলে দাও, যাতে তিনি বুঝতে পারেন। এবারও তাঁদের কেউ বললেন, ‘তিনি তো ঘুমিয়ে আছেন। তাঁদের কেউ বললেন, ‘তাঁর চোখে ঘুম থাকলেও তাঁর অন্তর জাগ্রত। তখন তাঁরা বললেন, ‘ঐ গৃহ হল জান্নাত। ঐ আহবায়ক হলেন মুহাম্মাদ। সুতরাং যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের আনুগত্য করবে, সে আসলে আল্লাহর আনুগত্য করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের নাফরমানি করবে, সে আসলে আল্লাহরই নাফরমানি করবে। আর মুহাম্মদ হলেন মানুষের (মুমিন ও কাফেরের) মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণকারী (মানদণ্ড)। (বুখারী ৭২৮১, মিশকাত ১৪৪)।

(ঘ) আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার এবং যে জিনিস দিয়ে আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হল এই যে, এক ব্যক্তি নিজ সম্প্রদায়ের নিকট এসে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি আমার এই দু চোখে একদল শত্রুসৈন্য দেখে আসছি এবং আমি হচ্ছি তোমাদের জন্য একজন স্পষ্ট সতর্ককারী। সুতরাং তোমরা (বাঁচার জন্য) তাড়াতাড়ি কর, তাড়াতাড়ি কর। এ কথা শুনে তার সম্প্রদায়ের কিছু লোক তার কথা মেনে নিয়ে রাতারাতি পলায়ন করল এবং এতে তারা ধীরে-সুস্থে যেতে পারল, আর (শত্রুর কবল থেকে) মুক্তিও পেল। পক্ষান্তরে অন্য একদল লোক তার সেই কথাকে মিথ্যা মনে করল। ফলে তারা নিজ নিজ ঘরে রাত্রিবাস করল। কিন্তু ভোর হতেই শত্রুসৈন্য তাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিল। এই হল সেই ব্যক্তির উদাহরণ, যে আমার আনুগত্য করে আমি যা আনয়ন করেছি তার অনুসরণ করে এবং সেই ব্যক্তির উদাহরণ, যে আমার অবাধ্য হয় এবং আমার আনীত সত্য বিষয়কে মিথ্যায়ন করে।

(বুখারী ৬৪৮২, মুসলিম ৬০৯৪, মিশকাত ১৪৮)।

(ঙ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নসীহত করার জন্য আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে লোক সকল! তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট উলঙ্গ পা, উলঙ্গ দেহ ও খাতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। (আল্লাহ বলেন,) ‘যেমন আমি প্রথম সৃষ্টি করেছি আমি পুনর্বার তাকে সেই অবস্থায় ফিরাবো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা, যা আমি পুরা করব। (সূরা আম্বিয়া ১০৪)

জেনে রাখো! কিয়ামতের দিন সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম ইব্রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বস্ত্র পরিধান করানো হবে। আরো শুনে রাখ! সে দিন আমার উম্মতের কিছু লোককে নিয়ে আসা হবে অতঃপর তাদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর আমি বলব, ‘হে প্রভু! এরা তো আমার সঙ্গী। কিন্তু আমাকে বলা হবে, ‘এরা আপনার (মৃত্যুর) পর (দ্বীনে) কী কী নতুন নতুন রীতি আবিষ্কার করেছিল, তা আপনি জানেন না। (এ কথা শুনে) আমি বলব--যেমন নেক বানদা (ঈসা (আঃ)) বলেছিলেন, ‘‘যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই তো ছিলে তাদের ক্রিয়াকলাপের পর্যবেÿক। আর তুমি সর্ববস্তুর উপর সাক্ষী। তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তোমারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (সূরা মায়েদা ১১৭) অতঃপর আমাকে বলা হবে যে, ‘নিঃসন্দেহে আপনার ছেড়ে আসার পর এরা (ইসলাম থেকে) পিছনে ফিরে গিয়েছিল। (বুখারী ৩৩৪৯, মুসলিম ৭৩৮০)।

(চ) আবেস ইবনে রাবীআহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) কে ‘হাজরে আসওয়াদ চুমতে দেখেছি, তিনি বলছিলেন, ‘আমি সুনিশ্চিত জানি যে, তুমি একটা পাথর; তুমি না উপকার করতে পার, আর না অপকার? আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তোমাকে চুমতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুমতাম না।

(বুখারী ১৫৯৭, ১৬১০, মুসলিম ৩১২৬-৩১২৮)।

(ছ) মিকদাম বিন মাদিকারিব বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শোন! আমাকে কুরআন দান করা হয়েছে এবং তারই সাথে তারই মতো (সুন্নাহ) দান করা হয়েছে। শোন! সম্ভবতঃ নিজ গদিতে বসে থাকা কোন পরিতৃপ্ত লোক বলবে, ‘তোমরা এই কুরআনের অনুসরণ কর; তাতে যা হালাল পাও, তাই হালাল মনে কর এবং তাতে যা হারাম পাও, তাই হারাম মনে কর। সতর্ক হও! আল্লাহর রসূল যা হারাম করেন, তাও আল্লাহর হারাম করার মতোই।

(আবূ দাঊদ ৪৬০৬, ইবনে মাজাহ ১২, দারেমী ৫৮৬, মিশকাত ১৬৩)।

(জ) আবূ হুরাইরা কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা অবলম্বন করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ। ‘হওয (কাওসারে) আমার নিকট অবতরণ না করা পর্যন্ত তা বিচ্ছিন্ন হবে না। (হাকেম ৩১৯)।

(ঝ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, বিদায়ী হজ্জে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের মাঝে খোতবা (ভাষণ) দিলেন। তাতে তিনি বললেন, ‘‘শয়তান এ বিষয়ে নিরাশ হয়ে গেছে যে, তোমাদের এই মাটিতে তার উপাসনা হবে। কিন্তু এতদ্ব্যতীত তোমরা যে সমস্ত কর্মসমূহকে অবজ্ঞা কর, তাতে তার আনুগত্য করা হবেএ নিয়ে সে সন্তুষ্ট। সুতরাং তোমরা সতর্ক থেকো! অবশ্যই আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি; যদি তা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করে থাকো তবে কখনই তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না; আর তা হল আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাহ (কুরআন ও হাদীস)

(হাকেম ৩১৮, সহীহ তারগীব ৩৬)।

(ঞ) আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক কর্মের উদ্যম আছে এবং প্রত্যেক উদ্যমের আছে নিরুদ্যমতা। সুতরাং যার নিরুদ্যমতা আমার সুন্নাহর গণ্ডির ভিতরেই থাকে সে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় এবং যার নিরুদ্যমতা এ ছাড়া অন্য কিছুতে (সুন্নাত বর্জনে) অতিক্রম করে সে ধ্বংস হয়ে যায়।

(ইবনে আবী আসেম, ইবনে হিব্বান, আহমাদ ৬৯৫৮, ত্বাহাবী, সহীহ তারগীব ৫৬)।

(ট) আনাস (রাঃ) বলেন, তিন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীদের বাসায় এলেন। তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর যখন তাঁদেরকে এর সংবাদ দেওয়া হল তখন তাঁরা যেন তা অল্প মনে করলেন এবং বললেন, ‘আমাদের সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তুলনা কোথায়? তাঁর তো আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ মোচন করে দেওয়া হয়েছে। (সেহেতু আমাদের তাঁর চেয়ে বেশী ইবাদত করা প্রয়োজন)। সুতরাং তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, ‘আমি সারা জীবন রাতভর নামায পড়ব।

দ্বিতীয়জন বললেন, ‘আমি সারা জীবন সিয়াম রাখব, কখনো সিয়াম ছাড়ব না। তৃতীয়জন বললেন, ‘আমি নারী থেকে দূরে থাকব, জীবনভর বিয়েই করব না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট এলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা এই এই কথা বলেছ? শোনো! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি, তার ভয় অন্তরে তোমাদের চেয়ে বেশী রাখি। কিন্তু আমি (নফল) সিয়াম রাখি এবং সিয়াম ছেড়েও দিই, নামায পড়ি এবং নিদ্রাও যাই। আর নারীদের বিয়েও করি। সুতরাং যে আমার সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।

(বুখারী ৫০৬৩, মুসলিম ৩৪৬৯)।

(ঠ) জাবের (রাঃ) বলেন, একদা উমার (রাঃ) এর হাতে একটি পাতা ছিল, যার মধ্যে তাওরাতের কিছু অংশ লিখা ছিল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে রাগাম্বিত হয়ে তাঁকে বললেন, আমার ব্যাপারে কি কোন সন্দেহ আছে হে ইবনে খাত্ত্বাব? আমি কি শুভ্র ও নির্মল শরীয়ত নিয়ে আগমন করিনি? যদি আমার ভাই মূসা জীবিত থাকতেন, তাহলে আমার অনুসরণ ছাড়া তাঁর অন্য কোন এখতিয়ার ছিল না। অন্য বর্ণনামতে উমার (রাঃ) তাঁর নিকট এসে বললেন, আমরা ইয়াহুদীদের নিকট কিছু এমন কথা শুনি যা আমাদেরকে ভালো লাগে। আপনার কী রায়, তার কিছু লিখে নেব কি? তা শুনে তিনি বললেন, তোমরাও কি নির্বিচারে সব কিছু মেনে নিতে চাও, যেমন ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা মেনে নিয়েছে? যদি মূসা জীবিত থাকতেন, তাহলে আমার অনুসরণ ছাড়া তাঁর অন্য কোন এখতিয়ার ছিল না। (আহমাদ ১৫১৫৬, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৬)।

(ড) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের মতবিরোধের সময় আমার সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণকারী হবে হস্তমুষ্টিতে অঙ্গার ধারণকারীর মত। (হাকীম, সহীহুল জামে ৬৬৭৬)।

হাদীস অধ্যয়নের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রঃ) বলেন,

“দুনিয়া ও আখিরাতের পরম কল্যাণ লাভই হচ্ছে হাদীস অধ্যয়নের উদ্দেশ্য ও লক্ষ।”

আল্লামা কিরমানী (রঃ) লিখেছেন, “কুরআনের পর সকল প্রকার জ্ঞানের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম এবং তথ্য তত্ত্ব সমৃদ্ধ সম্পদ হচ্ছে ইলমে হাদীস। কারন এই জ্ঞানের সাহায্যেই আল্লাহ্র কালামের লক্ষ্য ও তাৎপর্য জানা যায় এবং তাঁর হুকুম-আহকামের উদ্দেশ্য অনুধাবন করা যায়।”

সুতরাং ইসলামকে সহিহভাবে জানতে হলে কুরআন এর পর আমাদের প্রত্যেকের হাদিস অধ্যয়ন করতে হবে। হাদিস বা সুন্নাহর অনুসরন বাদ দিয়ে অন্য কারো অন্ধ অনুকরন অনুসরন করা যাবে না। বর্তমানে সবাই সচেতন। অজ্ঞ, অশিক্ষিত বা মূর্খ লোক নেই বললেই চলে। তাই যেকেউ একটা গল্প বা কাহিনী বলবে আর তা যাচাই না করেই মেনে নিবেন সেই যুগ আর নেই। যাচাই করার মাধ্যম হচ্ছে সহিহ হাদিস গ্রন্থগুলো নিয়মিত অধ্যয়ন করা। তবে পূর্ব থেকে আমাদের দেশে যেসব হাদিস গ্রন্থগুলো প্রচলিত তাতে শত শত জাল জইফ হাদিস সংযোজিত আছে। এখন বলতে পারেন, কোন কোন হাদিস জাল, জইফ বা সহিহ তা জানার উপায় কি? মূলত এসব বিষয় জানার জন্যেই আজকের আলোচনা। আপনারা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। অনেক শেখার আছে।

হাদীসের সংজ্ঞা

শাব্দিক অর্থে হাদীস মানে নতুন, প্রাচীন ও পুরাতন-এর বিপরীত বিষয়। এ অর্থে যে সব কথা, কাজ ও বস্তূ পূর্বে ছিল না, এখন অস্তিত্ব লাভ করেছে তাই হাদীসের আরেক অর্থ হলো কথা। ফকীহগণের পরিভাষায় নবী করীম (সঃ) আল্লাহ্র রাসূল হিসাবে যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমুতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন তাঁকে হাদীস বলা হয়। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ এর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সম্পর্কিত বর্ণনা ও তাঁর গুণাবলী সম্পর্কিত বিবরণকেও হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেন।

এ হিসেবে হাদীসকে প্রাথমিক পর্যায়ে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথাঃ

(১) কাওলী হাদীস,

(২) ফে’লী হাদীস ও

(৩) তাকরীরী হাদীস।

প্রথমতঃ কোন বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) যা বলেছেন, অর্থাৎ যে হাদীসে তাঁর কোন কথা বিধৃত হয়েছে তাঁকে কাওলী (বানী সম্পর্কিত) হাদীস বলা হয়।

দ্বিতীয়তঃ মহানবী (সঃ)-এর কাজকর্ম, চরিত্র ও আচার-আচারণের ভেতর দিয়েই ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান ও রীতিনীতি পরিস্ফুট হয়েছে। অতএব যে হাদীসে তাঁর কোন কাজের বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে তাঁকে ফে’লী ( কর্ম সম্পর্কিত) হাদীস বলা হয়।

তৃতীয়তঃ সাহাবীগণের যে সব কথা বা কাজ নবী করীম (সঃ)-এর অনুমোদন ও সমর্থনপ্রাপ্ত হয়েছে, সে ধরনের কোন কথা বা কাজের বিবরণ হতেও শরী’আতের দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। অতএব যে হাদীসে এ ধরনের কোন ঘটনার বা কাজের উল্লেখ পাওয়া যায় তাঁকে তাকরীরী (সমর্থনমূলক) হাদীস বলে।

সুন্নাহ কি?

হাদীসের অপর নাম সুন্নাহ। সুন্নাহ শব্দের অর্থ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি নবী করীম (সঃ) অবলম্বন করতেন তাঁকে সুন্নাত বলা হয়। অন্য কথায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রচারিত উচ্চতম আদর্শই সুন্নাত। কুরআনে মহোত্তম ও সুন্দরতম আদর্শ বলতে এই সুন্নাতকেই বোঝানো হয়েছে। ফিকাহ পরিভাষায় সুন্নাত বলতে ফরয ও ওয়াজিব ব্যতীত ইবাদত রূপে যা করা হয় তা বোঝায়, যেমন সুন্নাত সালাত। হাদীসকে আরবী ভাষায় খবরও বলা হয়। তবে খবর শব্দটি হাদীস ও ইতিহাস উভয়টিকেই বোঝায়।

আসার শব্দটিও কখনও কখনও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর হাদীস নির্দেশ করে। কিন্তু অনেকেই হাদীস ও আসার-এর মধ্যে কিছু পার্থক্য করে থাকেন। তাঁদের মতে সাহাবীগণ থেকে শরী’আত সম্পর্কে যা কিছু উদ্বুদ্ধ হয়েছে তাঁকে আসার বলে। তবে এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, শরী’আত সম্পর্কে সাহাবীগণ নিজস্বভাবে কোন বিধান দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কাজেই এ ব্যাপারে তাঁদের উদ্ধৃতিসমূহ মূলত রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উদ্ধৃতি। কিন্তু কোন কারণে শুরুতে তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নাম উল্লেখ করেননি। উসূলে হাদীসের পরিভাষায় এসব আসারকে বলা হয় ‘মাওকূফ হাদীস’।

 

রাবীদের সংখ্যা হিসেবে হাদীস তিন প্রকার:

১। খবরে মুতাওয়াতির: যে হাদীস এত অধিক সংখ্যক রাবী বর্ণনা করেছেন যাদেও মিথ্যার উপর একমত হওয়া অসম্ভব।

২। খবরে মাশহুর: প্রত্যেক যুগে অন্তত: তিনজন রাবী রেওয়ায়েত করেছেন,তাকে খবরে মাশহুর বলে, তাকে মুস্তাফিজ ও বলে।

৩। খবরে ওয়াহেদ বা খবরে আহাদ: প্রত্যেক যুগে এক, দুই অথবা তিনজন রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীসকে খবরে ওয়াহিদ বা আখবারুল আহাদ বলা হয়।

খবরে ওয়াহেদ বা খবরে আহাদ  আবার  তিন প্রকারঃ

১। মাশহূরঃ যে সহীহ হাদীস প্রত্যেক যুগে অন্ততপক্ষে তিনজন রাবী বর্ণনা করেছেন তাঁকে মাশহূর হাদীস বলা হয়।

২। আযীযঃ যে সহীহ হাদীস প্রত্যেক যুগে অন্ততপক্ষে দুইজন রাবী বর্ণনা করেছেন তাঁকে আযীয বলা হয়।

৩। গরীবঃ যে সহীহ হাদীস কোন যুগে মাত্রও একজন রাবী বর্ণনা করেছেন তাঁকে গরীব হাদীস বলা হয়।

রাবীদের সিলসিলা হিসেবে হাদীস তিন প্রকার:

১। মারফু হাদীস: যে হাদীসের সনদ রাসুল(স:) পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মারফু হাদীস বলে।

২। মাওকুফ হাদীস : যে হাদীসের সনদ সাহাবী পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মাওকুফ হাদীস বলে।

৩। মাকতু হাদীস: যে হাদীসের সনদ তাবেয়ী পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মাকতু হাদীস বলে।

রাবী বাদ পড়া হিসাবে হাদীস দুই প্রকার:

১। মুত্তাছিল হাদীস: যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা সর্বস্তরে ঠিক রয়েছে কোথা ও কোন রাবী বাদ পড়ে না তাকে মুক্তাছিল হাদীস বলে।

২। মুনকাতে হাদীস: যে হাদীসের সনদের মধ্যে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুনকাতে হাদীস বলে।

মুনকাতে হাদীস তিন প্রকার:

১। মুরসাল হাদীস: যে হাদীসে রাবীর নাম বাদ পড়া শেষের দিকে অথাৎ সাহাবীর নামই বাদ পড়েছে তাকে মুরসাল হাদীস বলে।

২। মুয়াল্লাক হাদীস: যে হাদীসের সনদের প্রথম দিকে রাবীর নাম বাদ পড়েছে অথার্ৎ সাহাবীর পর তাবেয়ী তাবে তাবেয়ীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুয়াল্লাক হাদীস বলে।

৩। মুদাল হাদীস: যে হাদীসে দুই বা ততোধীক রাবী ক্রমান্বয়ে সনদ থেকে বিলুপ্ত হয় তাকে মুদাল হাদীস বলে।

বিশ্বস্ততা হিসেবে হাদীস তিন প্রকার

১। সহীহ হাদীস: যে হাদীসের বর্ণনাকারীদের বর্ণনার ধারাবাহিকতা রয়েছে, সনদের প্রতিটি স্তরে বর্ণনাকারীর নাম, বর্ণানাকারীর বিশ্বস্ততা, আস্তাভাজন, স্বরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর কোনস্তরে তাদের সংখ্যা একজন হয়নি তাকে সহীহ হাদীস বলে।

২। হাসান হাদীস: সহীহ সবগুনই রয়েছে, তবে তাদের স্বরণ শক্তির যদি কিছুটা দুর্বলতা প্রমাণিত হয়

তাকে হাসান হাদীস বলে।

৩। যায়ীফ হাদীস: হাসান, সহীহ হাদীসের গুনসমুহ যে হাদীসে পাওয়া না যায় তাকে যায়ীফ হাদীস

বলে।

হাদীসের কতিপয় পরিভাষা

রাবী: রাবি’ আরবি শব্দ, বাংলা অর্থ বর্ণনাকারী ও উদ্ধৃতকারী। হাদিসের পরিভাষায় সনদে বিদ্যমান প্রত্যেক ব্যক্তিকে রাবী বলা হয়। সাহাবি নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তাবেয়ি সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন, এভাবে গ্রন্থকার পর্যন্ত সবাই বর্ণনা করেন, তাই সনদে বিদ্যমান প্রত্যেক ব্যক্তি রাবি।

মুহাদ্দিস: যে ব্যক্তি হাদিস চর্চা করেন এবং বহুসংখ্যক হাদিসের সনদ ও মতন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন তাঁকে মুহাদ্দিস বলে।

শায়খ : ‘শায়খ’ আরবি শব্দ, বাংলা অর্থ বৃদ্ধ ও বয়স্ক। সাধারণত পঞ্চাশ ঊর্দ্ধ বয়স হলে شَيْخ বলা হয়। আরবরা বয়স্ক ও সম্মানিত ব্যক্তিকে শায়খ বলেন, অনুরূপ উস্তাদকেও তারা শায়খ বলেন। হাদিসের ছাত্ররা তাদের হাদিসবিশারদ উস্তাদকে শায়খ বলেন। শায়খ দ্বারা হাদিসের উস্তাদ ও রাবি দ্বারা শায়খের ছাত্রকে বুঝানো হয়ে থাকে।

শাইখুল হাদিস: হাদিস শাস্ত্রে গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী, দীর্ঘ দিন হাদিসের পঠন ও পাঠনে নিরত শায়খকে কেউ ‘শায়খুল হাদিস’ বলেন। তবে আমাদের ভারত উপমহাদেশে বুখারি শরীফের পাঠদানকারীকে ‘শায়খুল হাদিস’ বলা হয়।

হাদীসে কুদসী: যে হাদীসের মুল বক্তব্য আল্লাহ সরাসরি রাসূল(স:) কে ইলহাম বা স্বপ্ন যোগে জানিয়ে দিয়েছেন, রাসূল(স:) নিজ ভাষায় তা বর্ণনা করেছেন তাকে হাদীসে কুদসী বলে।

মুদাল্লাছ হাদীস: যে হাদীসের সনদের দোষ ক্রটি গোপন করা হয় তাকে মুদাল্লাছ হাদীস বলে।

সুনান: হাদীসের ঐ কিতাবকে সুনান বলা হয় যা ফিক্হ এর তারতীব অনুয়াযী সাজানো হয়েছে।

সুনানে আরবায়া: আবুদাউদ শরীফ+ নাসায়ী শরীফ+তিরমীযী শরীফ+ ইবনে মাজায় শরীফ এই চার হাদীস গ্রন্থকে এক সাথে সুনানে আরবায়া বলা হয়।

মুসনাদ: হাদীসের ঐ কিতাবকে বলা হয় যা সাহাবায়ে কিরামের তারতীব অনুয়াযী লিখা হয়েছে।

সহীহাইন: বুখারী শরীফ ও মুসলীম শরীফকে এক সাথে সহীহাইন বলা হয়।

মুত্তাফাকুন আলাইহি: ইমাম বুখারী (র) ইমাম মুসলিম (র:) উভয়ে একই সাহাবী হতে যে হাদীস স্ব-স্ব প্রান্তে সংকল করেছেন তাকে মুত্তাফাকুন আল্লাইহি বলে।

জামে: যে গ্রন্থে হাদীস সমূহকে বিষয় বস্তু অনুসারে সাজানো হয়েছে এবং যার মধ্যে আকাইদ ছিযতাফসির আহকাম, আদব, ফিতান, রিকাক ও মানাকিব এ আটটি অধ্যায় রয়েছে তাকে জামে বলা  হয় যেমন জামে তিরমিযী।

সনদ: হাদীস বর্ণনা কারীদের ধারাবাহিকতাকে সনদ বলে।

মতন: হাদীসের মূল শব্দ সমূহকে মতন বলে।

রেওয়ায়েত: হাদীস বর্ণনা করাকে রেওয়ায়েত বলে।

দেরায়েত: হাদীসের মতন বা মূল বিষয়ে আভ্যান্তরীন সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে যুক্তির কষ্টি পাথরে  যে সমালোচনা করা হয় তাকে দেরায়েত বলে।

রিজাল: হাদীস বর্ণনাকারীর সমষ্টিকে রিজাল বলে।

শায়খাইন: মুহাদ্দিসদের পরিভাষায় ইমান বুখারী(র:) ও মুসলিম (র:) কে শায়খাইন বলে।

হাফিজ: যে ব্যাক্তি সনদও মতনের সকল বৃত্তান্ত সহ এক লক্ষ হাদীস মুখস্ত জানেন তাকে হাফিজ বলে।

হুজ্জাত: যে ব্যাক্তি সদন ও মতনের সকল বৃন্তান্ত সহ তিন লক্ষ্য হাদীস মুখস্ত জানেন তাকে হুজ্জাত বলে।

হাকিম: যে ব্যাক্তি সনদ ও মতনের সকল বৃত্তান্ত সহ সকল হাদীস মুখস্থ করেছেন তাকে হাকিম বলে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্নঃ হাদীছ কাকে বলে?

উত্তরঃ নবী (সাঃ)এর কথা, কাজ ও সমর্থনকে হাদীছ বলে।

প্রশ্নঃ হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?

উত্তরঃ হাদীছ দুপ্রকারঃ মাকবূল (গ্রহণযোগ্য) হাদীছ ও (মারদূদ) অগ্রহণযোগ্য হাদীছ।

প্রশ্নঃ মাকবূল হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?

উত্তরঃ মাকবূল হাদীছ দুপ্রকারঃ ছহীহ ও হাসান।

প্রশ্নঃ মারদূদ বা অগ্রহণযোগ্য হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?

উত্তরঃ দুপ্রকারঃ যঈফ (দুর্বল) ও জাল (বানোয়াট)।

প্রশ্নঃ সহীহ হাদীছ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে হাদীছটি নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন, উহার সনদ পরস্পর সম্পৃক্ত, তার মধ্যে গোপন কোন ত্রুটি নেই এবং উহা শাযও (তথা অন্য কোন অধিকতর নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর বর্ণনার বিরোধী) নয় তাকে সহীহ হাদীছ বলে।

প্রশ্নঃ প্রসিদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ ৬টি। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ।

প্রশ্নঃ সিহাহ সিত্তা বলতে কি বুঝায়?

উত্তরঃ হাদীছের ছয়টি গ্রন্থকে বুঝানো হয়। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ। (বুখারী ও মুসলিমের সবগুলো এবং অন্য কিতাবগুলোর অধিকাংশ হাদীছ বিশুদ্ধ, তাই এগুলোকে একসাথে সিহাহ সিত্তা বা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ বলা হয়)

প্রশ্নঃ হাদীছ গ্রন্থগুলোর মধ্যে কোন কিতাবে সবচেয়ে বেশী হাদীছ সংকলিত হয়েছে?

উত্তরঃ মুসনাদে আহমাদে (হাদিস সংখ্যা ২৭৭৪৬টি)।

প্রশ্নঃ ছয়টি প্রসিদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ ছাড়া আরো ৫টি হাদীছ গ্রন্থের নাম উল্লেখ কর?

উত্তরঃ মুসনাদে আহমাদ, মুআত্ত্বা মালেক, দারাকুত্বনী, সুনানে দারেমী, সুনানে বায়হাক্বী।

প্রশ্নঃ রিয়াযুস্ সালেহীন কিতাবটির লিখক কে?

উত্তরঃ ইমাম নববী।

প্রশ্নঃ জাল হাদীছ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে কথাটি মানুষে তৈরী করেছে, অতঃপর তা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে, তাকে জাল হাদীছ বলে।

প্রশ্নঃ আল্লাহর কুরআনের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধতম গ্রন্থ কোনটি?

উত্তরঃ সহীহ বুখারী (বুখারির হাদিস সংখ্যা ৭০০৮টি। মতান্তরেঃ ৭৫৬৩টি)।

প্রশ্নঃ সহীহ বুখারীর একটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ভাষ্য (ব্যাখ্যা) গ্রন্থের নাম কি?

উত্তরঃ হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) প্রণীত ফাতহুল বারী।

প্রশ্নঃ কোন দুটি হাদীছ গ্রন্থকে সহীহায়ন বলা হয়?

উত্তরঃ সহীহ বুখারী (হাদিস সংখ্যা ৭০০৮টি। মতান্তরেঃ ৭৫৬৩টি) ও সহীহ মুসলিম (হাদিস সংখ্যা ৩০৩৩টি)

প্রশ্নঃ মুত্তাফাকুন আলাইহে বলতে কি বুঝানো হয়?

উত্তরঃ যে হাদীছটি ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, সে হাদীছ সম্পর্কে বলা হয় মুত্তাফাকুন আলাইহে।

প্রশ্নঃ সাহাবী কাকে বলে?

উত্তরঃ যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য লাভ করেছেন বা তাঁকে দেখেছেন ও তাঁর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, অথবা জীবনে একবার তাঁকে দেখেছেন এবং ইমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে এর সাহাবী বলে।

প্রশ্নঃ ফাৎওয়া কাকে বলে?

উত্তরঃ জিজ্ঞাসিত ব্যক্তির নিকট থেকে দলীল ভিত্তিক শারঈ হুকুম সুস্পষ্ট বর্ণনা করে নেয়াকে ফাৎওয়া বলে।

প্রশ্নঃ ফিক্বহ কাকে বলে?

উত্তরঃ ইজতিহাদ বা গবেষণার পদ্ধতিতে শারঈ হুকুম সম্পর্কে জানার বিধানকে ফিক্বহ বলে। আসল বা মূল (اصل): এমন প্রথম বিষয়, যার উপর ভিত্তি করে কোন কিছু গড়ে উঠে। যেমন- দেয়ালের ভিত্তি।

তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ী

তাবেয়ী হচ্ছেন- যারা নবুয়তি যুগের পরে এসেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেননি। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গ পেয়েছেন।

তাবে-তাবেয়ী হচ্ছেন- যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণের সাক্ষাত লাভ করেনি; তাবেয়ীগণের সাক্ষাত লাভ করেছেন এবং তাঁদের সঙ্গ পেয়েছেন।

উলুমুল হাদিস এর পরিভাষায় তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ী

(এক) 

তাবেয়ী হচ্ছেন: যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন তিনি তাবেয়ী। বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, এর জন্য দীর্ঘদিনের সঙ্গ শর্ত নয়। অতএব, যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন এবং ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনিই তাবেয়ী। তাবেয়ীর মধ্যে উত্তমতার স্তরভেদ রয়েছে।

হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) ‘নুখবাতুল ফিকার’ (৪/৭২৪) গ্রন্থে বলেন:

তাবেয়ী হচ্ছেন- যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন। (সমাপ্ত) ।

ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন: খতিব আল-বাগদাদী বলেন:

তাবেয়ী হচ্ছেন যিনি সাহাবীর শিষ্য ছিলেন। হাকেমের বক্তব্যের দাবী হচ্ছে- যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন তাকে তাবেয়ী বলা যাবে। তাঁর থেকে এ কথাও বর্ণিত আছে যে, যদিও সাহাবীর শিষ্যত্ব না পেয়ে থাকুক না কেন? (সমাপ্ত)।

 ইরাকী (রহঃ) তাঁর ‘আলফিয়া’ (পৃষ্ঠা-৬৬) তে বলেন:

তাবেয়ী হচ্ছেন- যিনি সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন।

তাবে-তাবেয়ীন হচ্ছেন তাঁরা যারা তাবেয়ীগণের সাক্ষাত পেয়েছেন; সাহাবীগণকে পায়নি। তাবেয়ীগণের উদাহরণ হচ্ছে- সাঈদ ইবনে আল-মুসায়্যিব, উরওয়া ইবনে যুবাইর, হাসান বসরী, মুজাহিদ ইবনে জাবর, সাঈদ ইবনে যুবায়ের, ইবনে আব্বাসের ক্রীতদাস ইকরিমা, ইবনে উমরের ক্রীতদাস নাফে। তাবে-তাবেয়ীগণের উদাহরণ হচ্ছে- ছাওরী, মালেক, রাবিআ, ইবনে হুরমুয, হাসান ইবনে সালেহ, আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান, ইবনে আবু লাইলা, ইবনে শুবরুমা, আল-আওযায়ী।

(দুই)

ইমাম বুখারী (৩৬৫১) ও ইমাম মুসলিম (২৫৩৩) ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সর্বোত্তম মানুষ হচ্ছে- আমার প্রজন্ম। এরপর তাদের পরে যারা। এরপর তাদের পরে যারা। অতঃপর এমন কওম আসবে যাদের সাক্ষ্য হলফের পিছনে, হলফ সাক্ষ্যের পিছনে ছুটা ছুটি করবে।”

ইমাম নববী বলেন:

বিশুদ্ধ মতানুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রজন্ম হচ্ছে-সাহাবায়ে কেরাম। দ্বিতীয় প্রজন্ম হচ্ছে- তাবেয়ীগণ। তৃতীয় প্রজন্ম হচ্ছে- তাবে-তাবেয়ীগণ। [ইমাম নববী রচিত সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ (১৬/৮৫) থেকে সমাপ্ত]।

হাফেয ইবনে হাজার বলেন:

হাদিসের বাণী: “এরপর তাদের পরে যারা” অর্থাৎ তাদের পরের প্রজন্ম। তারা হচ্ছেন- তাবেয়ীগণ। “এরপর তাদের পরে যারা”। তারা হচ্ছেন- তাবে-তাবেয়ীগণ। ফাতহুল বারী (৭/৬) থেকে সমাপ্ত।

ক্বারী (রহঃ) বলেন:

সুয়ুতী বলেন: বিশুদ্ধ মতানুযায়ী এটি অর্থাৎ প্রজন্ম বিশেষ কোন সময়সীমাতে আবদ্ধ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রজন্ম হচ্ছে- সাহাবায়ে কেরাম। নবুয়তের শুরু থেকে সর্বশেষ সাহাবীর মৃত্যু পর্যন্ত ১২০ বছর এ প্রজন্মের সময়কাল। তাবেয়ী-প্রজন্মের সময়কাল ১০০ হিঃ থেকে ৭০ বছর। আর তাবে-তাবেয়ী প্রজন্মের সময়কাল এরপর থেকে ২২০ হিঃ পর্যন্ত। এ সময়ে ব্যাপকভাবে বিদআতের উদ্ভব ঘটে। মুতাযিলারা তাদের মুখের লাগাম খুলে দেয়। দার্শনিকেরা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে। দ্বীনদার আলেমগণকে “কুরআন আল্লাহর সৃষ্টি” এই মতবাদ মেনে নেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। এভাবে গোটা পরিস্থিতি ওলট পালট যায়। এভাবে আজ অবধি দ্বীনদারি হ্রাস পেতেই আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর বাস্তব নমুনা যেন ফুটে উঠেছে- “এরপর মিথ্যা ব্যাপক হারে দেখা দিবে”। ‘মিরকাতুল মাফাতিহ’ (৯/৩৮৭৮) গ্রন্থ থেকে সমাপ্ত।

আল্লাহই ভাল জানেন।

‘সহিহ হাদিস’ কাকে বলে ?

صحيح (সহিহ) শব্দটি আরবি। বহুবচনে صحاح। এর আভিধানিক অর্থ সুস্থ। সাধারণত মানুষের শারীরিক সুস্থতার জন্য ‘সহিহ’ ব্যবহৃত হয়, যেমন হাদিসে এসেছে: ” وَأَنْتَ صَحِيحٌ ” ‘তুমি সুস্থাবস্থায়’ এ থেকেই সনদ ও মতন দোষমুক্ত হলে হাদিসকে সহিহ বলা হয়।

‘সহিহ’-র পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী বলেন :

 “যে হাদিস মুত্তাসিল সনদ তথা অবিচ্ছিন্ন সনদ পরম্পরায় বর্ণিত হয়, রাবী বা বর্ণনাকারী আদিল ও পূর্ণ আয়ত্বশক্তির অধিকারী হয়, এবং সনদটি শায কিংবা মুআল্লাল নয়; এমন হাদিসকে সহিহ বলে।

মোট কথা, হাদিস সহিহ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে :

১. সনদ মুত্তাসিল হওয়া।

২. রাবির আদিল হওয়া।

৩. রাবির দ্বাবিত হওয়া।

৪. শায না হওয়া।

৫. মু‘আল্লাল না হওয়া।

হাদীস গ্রন্থসমূহের শ্রেণি বিভাগ

হাদীস গ্রন্থ প্রনয়নের বিভিন্ন ধরন ও পদ্ধতি রয়েছে। এসব গ্রন্থের নামও বিভিন্ন ধরনের। নিম্নে এর কতিপয় প্রসিদ্ধ পদ্ধতির নাম উল্লেখ করা হলঃ

১। আল-জামিঃ

যে সব হাদিসগ্রন্থে (১) আকীদা-বিশ্বাস (২) আহকাম  ( শরিয়াতের আদেশ-নিষেধ) ৩) আখলাক ও আদব (৪) কুরআনের তাফসীর (৫) সীরাত ও ইতিহাস (৬) ফিতনা ও আশরাত অর্থাৎ বিশৃঙ্খলা ও আলামতে কিয়ামত (৭) রিকাক অর্থাৎ আত্নশুদ্ধি (৮) মানাকিব অর্থাৎ ফযিলত ইত্যাদি সকল প্রকারের হাদীস বিভিন্ন অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয়, তাঁকে আল-জামি বলা হয়। সাহীহ বুখারী ও জামি তিরমিযী এর অন্তর্ভুক্ত।

সহীহ মুসলিমে যেহেতু তাফসীর ও কিরাআতের সংক্রান্ত হাদীস খুবই কম, তাই কোন কোন হাদীসবিশারদের মতে তা জামি শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত নয়।

২। আস-সুনানঃ

যেসব হাদীসগ্রন্থে কেবল মাত্র শরী’আতের হুকুম-আহকাম ও ব্যাবহারিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম-নীতি ও আদেশ-নিষেধমূলক হাদিস একত্রিত করা হয় এবং ফিকহ গ্রন্থের ন্যায় বিভিন্ন অধ্যায় ও অনুচ্ছেদ সজ্জিত হয় তাঁকে সুনান বলে।

যেমন- সুনান আবূ দাঊদ, সুনান নাসাঈ, সুনান ইবন মাজা ইত্যাদি। তিরমিযী শরীফও এই হিসেব সুনান গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।

৩। আল-মুসনাদঃ

যে সব হাদীসগ্রন্থে সাহাবীগণের বর্ণিত হাদীসসমূহ তাঁদের নামের আদ্যাক্ষর অনুযায়ী অথবা তাঁদের মর্যাদা অনুযায়ী পরপর সংকলিত হয়, ফিকাহের পধতিতে সংকলিত হয় না তাঁকে আল-মুসনাদ বা আল-মাসানীদ বলা হয়। যেমন- হযরত আয়িশা (রঃ)কর্তৃক বর্ণিত সমস্ত হাদিস তাঁর নামের শিরোনামের অধীনে একত্রিত করা হলে। ইমাম আহমদ (রঃ)-এর আল-মুসনাদ গ্রন্থ, মুসনাদ আবূ দাঊদ তা’য়ালিসী (রঃ) ইত্যাদি এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

৪। আল-মু’জামঃ

যে হাদীসগ্রন্থে মুসনাদ গ্রন্থের পদ্ধতিতে এক একজন উস্তাদের নিকট থেকে প্রাপ্ত হাদীসসমুহের পর্যায়ক্রমে একত্রে সন্নিবেশ করা হয় তাঁকে আল-মু’জাম বলে। যেমন- ইমাম তাবারানী (রঃ) সংকলিত আল- মু’জামুল কবীর।

৫। আল-মুসতাদরাকঃ

যেসব হাদীস বিশেষ কোন হাদীসগ্রন্থে শামিল করা হয়নি অথচ তা সংশ্লিষ্ট গ্রন্থকারের অনুসৃত শর্তে পূর্ণমাত্রায় উত্তীর্ণ হয়, সে সব হাদীসযে গ্রন্থে সন্নিবেশ করা হয় তাঁকে আল-মুসতাদরাক বলা হয়। যেমন- ইমাম হাকিম নিশাপুরী (রঃ)-এর আল-মুসতাদরাক গ্রন্থ।

৬। রিসালাঃ

যে ক্ষুদ্র কিতাবে মাত্র এক বিষয়ের অথবা এক রাবীর হাদিসসমূহ একত্র করা হয়াছে তাঁকে রিসালা বা জুয বলা হয়।

৭। সিহাহ সিত্তাহঃ

বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসাঈ ও ইবন মাজা- এই ছয়টি গ্রন্থকে একত্রে সিহাহ সিত্তাহ বলা হয়। কিন্তু কতিপয় বিশিষ্ট আলিম ইবন মাজার পরিবর্তে ইমাম মালিক (রঃ)-এর মুওয়াত্তাকে, আবার কিছু সংখ্যক আলিম সুনানুদ- দারিমীকে সিহাহ সিত্তার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। শায়খ আবুল হাসান সিন্ধী (রঃ) ইমাম তাহাবী (রঃ) সংকলিত মা’আনীল আসার (তাবারী শরীফ) গ্রন্থকে সিহাহ সিত্তার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এমনকি ইবন হাযম ও আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশমীরী (রঃ) তাহাবী শরীফকে নাসায়ী ও আবূ দাঊদ শরীফের স্তরে গণ্য করেছেন।

সিহাহ্ সিত্তা হাদীস গ্রন্থ গুলো এবং সংকলকদের নামঃ

১। সহীহ বুখারী- ইমাম বুখারী (র:)- হাদীস সংখ্যা ৭৩৯৭

২। সহীহ মুসলিম - ইমাম মুসলিম (র:) হাদীস সংখ্যা- ৪০০০

৩। জামি তিরমিযী- ইমাম তিরমিযী (র:) হাদীস সংখ্যা ৩৮১২

৪। সুনানে আবুদাউদ (র:) ইমাম আবুদাউদ (র:) হাদীস সংখ্যা ৪৮০০

৫। সুনানে নাসায়ী – ইমাম নাসাই (র:) হাদীস সংখ্যা ৪৪৮২

৬। সুনানে ইবনে মাজাহ ইমাম ইবনে মাজাহ (র:) হাদীস- ৪৩৩৮

৮। সাহীহায়নঃ

সাহীহ বুখারী ও সাহীহ মুসলিমকে একত্রে সাহীহায়ন বলা হয়।

৯। সুনানে আরবা’আঃ

সিহাহ সিত্তার অপর চারটি গ্রন্থ আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ এবং ইবন মাজাকে একত্রে সুনানে আরবা’আ বলা হয়।

হাদীসের কিতাবসমুহের স্তর বিভাগ

হাদীসের কিতাবসমূহকে মোটামুটিভাবে পাঁচটি স্তরে বা তাবাকায় ভাগ করা হয়েছে। শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রঃ) তাঁর ‘হুজ্জাতুল্লাহহিল বালিগা’ নামক কিতাবে এরূপ পাঁচ স্তরে ভাগ করেছেন।

প্রথম স্তর:

এ স্তরের কিতাবসমূহের কেবল সাহীহ হাদিসই রয়েছে। এ স্তরের কিতাব মাত্র তিনটিঃ মুওয়াত্তা ইমাম মালিক, বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। সকল হাদীস বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে একমত যে, এ তিনটি কিতাবের সমস্ত হাদীসই নিশ্চিতরূপে সহীহ।

দ্বিতীয় স্তর:

এ স্তরের কিতাবসমূহ প্রথম স্তরের খুব কাছাকাছি। এ স্তরের কিতাবে সাধারনতঃ সহীহ ও হাসান হাদীসই রয়েছে। যঈফ হাদীস এতে খুব কম আছে। নাসাঈ শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফ এ স্তরের কিতাব। সুনান দারিমী, সুনান ইবন মাজা এবং শাহ ও ওয়ালি উল্লাহ (রঃ)-এর মতে মুসনাদ ইমাম আহমেদকেও এ স্তরে শামিল করা যেতে পারে। এই দুই স্তরের কিতাবের উপরই সকল মাজহাবের ফাকীহগণ নির্ভর করে থাকেন।

তৃতীয় স্তর:

এ স্তরের কিতাবে সহীহ, হাসান, যঈফ, মা’রুফ ও মুনকার সকল প্রকারের হাদীসই রয়েছে। মুসনাদ আবী ইয়া’লা, মুসনাদ আবদুর রাযযাক, বায়হাকী, তাহাবী ও তাবারানী (রঃ)-এর কিতাবসমূহের এ স্তরেরই অন্তর্ভুক্ত।

চতুর্থ স্তর:

হাদীস বিশেষজ্ঞগণের বাছাই ব্যাতিত এ সকল কিতাবের হাদীস গ্রহণ করা হয় না। এ স্তরের কিতাবসমুহে সাধারনতঃ যইফ হাদীসই রয়েছে। ইবন হিব্বানের কিতাবুয যুআফা, ইবনুল-আছীরের কামিল ও খতীব বাগদাদী, আবূ নুআয়ম-এর কিতাবসমূহ এই স্তরের কিতাব।

পঞ্চম স্তর:

উপরের স্তরেগুলোতে যে সকল কিতাবের স্থান নেই সে সকল কিতাবই এ স্তরের কিতাব।

সহীহায়নের বাইরেও সহীহ হাদীস রয়েছে

বুখারী ও মুসলিম শরীফ সহীহ হাদীসের কিতাব। কিন্তু সমস্ত সহীহ হাদীসই যে বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে তা নয়। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেছেনঃ ‘আমি আমার এ কিতাবে সহীহ ব্যাতীত কোন হাদিসকে স্থান দেই নাই এবং বহু সহীহ হাদীসকে আমি বাদও দিয়েছি।’

এইরূপে ইমাম মুসলিম (রঃ) বলেনঃ ‘আমি এ কথা বলি না যে, এর বাইরে যে সকল হাদীস রয়েছে সেগুলি সমস্ত যইফ।’ কাজেই এ দুই কিতাবের বাইরেও সহিহ হাদীস ও সহীহ কিতাব রয়েছে। শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলবীর (রঃ) মতে সিহাহ সিত্তাহ, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক ও সুনান দারিমী ব্যাতীত নিম্নোক্ত কিতাবসমূহও সহীহ (যদিও বুখারী ও মুসলিমের পর্যায়ের নয়)।

১. সহীহ ইবন খুযায়মা - আবূ আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক (৩১১ হি.)

২. সহীহ ইবন হিব্বান - আবূ হাতিম মুহাম্মাদ ইবন হিব্বান (৩৫৪ হি.)

৩.   আল-মুসতাদরাক – হাকিম-আবূ আবদুল্লাহ নিশাপুরী (৪০২ হি.)

৪. আল-মুখতারা – যিয়াউদ্দীন আল-মাকদিসী (৭০৪ হি.)

৫.   সহীহ আবূ আ’ওয়ানা – ইয়াকুব ইবন ইসহাক (৩১১ হি.)

৬. আল-মুনতাকা – ইবনুল জারুদ আবদুল্লাহ ইবন আলী।

এতদ্ব্যতীত মুহাম্মদ ইবন মুহাম্মদ রাজা সিন্ধি (২৮৬হি) এবং ইবন হাযম জাহিরীর (৪৫৬ হি)-ও এক একটি সহীহ কিতাব রয়েছে বলে কোন কোন কিতাবে উল্লেখ দেখা যায়। কিন্তু পরবর্তী মুহাদ্দিসগণ এগুলিকে সহীহ বলে গ্রহণ করেছেন কি না বা কোথাও এগুলির পাণ্ডুলিপি বিদ্যমান আছে কি না তা জানা যায় নাই।

হাদিস সংকলনের ইতিহাস-১

হাদীসের সংখ্যাঃ

হাদীসের মূল কিতাবসমূহের মধ্যে ঈমান আহমদ ইবন হাম্বলের মুসনাদ একটি বৃহৎ কিতাব। এতে ৭ শত সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত পুনরুল্লেখ (তাকরার) সহ মোট ৪০ হাজার এবং ‘তাকরার’ বাদ ৩০ হাজার হাদীস রয়েছে। শায়খ আলী মুত্তাকী  জৌনপুরীর মুনতাখাবু কানযিল উমমাল-এ ৩০ হাজার এবং মূল কানযূল উমমাল-এ (তাকরার বাদ) মোট ৩২ হাজার হাদীস রয়েছে। অথচ এই কিতাব বহু মূল কিতাবের সমষ্টি। একমাত্র হাসান আহমদ সমরকান্দীর ‘বাহরুল আসানীদ’ কিতাবেই এক লক্ষ হাদিস রয়েছে বলে বর্ণিত আছে। মোট হাদিসের সংখ্যা সাহাবা ও তাবিঈনের আসারসহ সর্বমোট এক লক্ষের অধিক নয় বলে মনে হয়। এর মধ্যে সহীহ হাদীসের সংখ্যা আরও কম। হাকিম আবূ আবদুল্লাহ নিশাপুরীর মতে প্রথম শ্রেণীর সহীহ হাদীসের সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম। সিহাহ সিত্তায় মাত্র পৌনে ছয় হাজার হাদীস রয়েছে। এর মধ্যে ২৩২৬ টি হাদীস মুত্তাফাকু আলায়হি। তবে যে বলা হয়ে থাকেঃ হাদিসের বড় বড় ইমামের লক্ষ লক্ষ হাদিস জানা ছিল, তাঁর অর্থ এই যে, অধিকাংশ হাদীসের বিভিন্ন সনদ রয়েছে। (এমনকি শুধু নিয়্যাত সম্পর্কীয় হাদিসটিরই ৭ শতের মত সনদ রয়েছে- তাদবীন, ৫৪ পৃ) অথচ আমাদের মুহাদ্দিসগণ যে হাদিসের যতটি সনদ রয়েছে সেটিকে তত সংখ্যক হাদিস বলে গণ্য করেন।

হাদীসের সংকলন ও তাঁর প্রচার-২

সাহাবায়ে কিরাম (রঃ) মহানবী (সঃ)-এর প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং তাঁর প্রতিটি কাজ ও আচরণ সুক্ষ দৃষ্টিতে লক্ষ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীগণকে ইসলামের আদর্শ ও এর যাবতীয় নির্দেশ যেমন মেনে চলার হুকুম দিতেন, তেমনি তা স্মরণ রাখতেন এবং অনাগত মানব জাতির কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীস চর্চাকারীর জন্য তিনি নিম্নোক্ত দু’আ করেছেনঃ

“আল্লাহ সেই ব্যাক্তিকে সজীব ও আলোকোজ্জ্বল করে রাখুন, যে আমার কথা শুনে স্মৃতিতে ধরে রাখল, তাঁর পূর্ণ হিফাযত করল এবং এমন লোকের কাছে পৌঁছে দিল, যে তা শুনতে পায়নি।”( তিরমিযী, ২য় খণ্ড, পৃ ৯০)

মহানবী (সঃ) আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দলকে প্রয়োজনীয় উপদেশ দান করে বললেনঃ “এই কথাগুলো তোমরা পুরোপুরি স্মরণ রাখবে এবং যারা তোমাদের পেছনে রয়েছে তাঁদের কাছেয় পৌঁছে দেবে”(বুখারী)। তিনি সাহাবীগণকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ “ আজ তোমরা (আমার নিকট দীনের কথা) শুনেছ, তোমাদের নিকট থেকেও (তা) শুনা হবে” – (মুসতাদরাক হাকিম, ১ খ, পৃ ৯৫)।

তিনি আরও বলেনঃ “আমার পরে লোকেরা তোমাদের নিকট হাদীস শুনতে চাইবে)। তাঁরা এই উদ্দেশ্যে তোমাদের নিকট এলে তাঁদের প্রতি সদয় হয়ো এবং তাঁদের নিকট হাদীস বর্ণনা করো।” (মুসনাদ আহমদ)। তিনি অন্যত্র বলেছেনঃ “আমার নিকট থেকে একটি বাক্য হলেও তা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।” (বুখারী) ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পরের দিন এবং ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জের ভাষণে মহানবী (সঃ) বলেনঃ “ উপস্থিত লোকেরা যেন অনুপস্থিতদের নিকট আমার কথাগুলো পৌঁছে দেয়।” (বুখারী)।

রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর উল্লেখিত বাণীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তাঁর সাহাবীগণ হাদীস সংরক্ষনে উদ্যোগী হন। প্রধানত তিনটি শক্তিশালী উপায়ে মহানবী (সঃ)- এর হাদীস সংরক্ষিত হয়ঃ (১) উম্মতের নিয়মিত আমল, (২) রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর লিখিত ফরমান, সাহাবীদের নিকট লিখিত আকারে সংরক্ষিত  হাদীস ও পুস্তিকা এবং (৩) হাদীস মুখস্থ করে স্মৃতির ভাণ্ডারে সঞ্চিত রাখা, তারঃপর বর্ণনা ও শিক্ষাদানের মাধ্যমে লোক পরম্পরায় তাঁর প্রচার।

তদানীন্তন আরবদের স্মরণশক্তি অসাধারণভাবে প্রখর ছিল। কোন কিছু স্মৃতিতে ধরে রাখবার জন্য একবার শ্রবণই তাঁদের জন্য যথেষ্ট ছিল। স্মরণশক্তির সাহায্যে আরববাসীরা হাজার বছর ধরে তাঁদের জাতীয় ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে আসছিল। হাদীস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপায় হিসেবে এই মাধ্যমটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মহানবী (সঃ) যখনই কোন কথা বলতেন, উপস্থিত সাহাবীগণ পূর্ণ আগ্রহ ও আন্তরিকতা সহকারে তা শুনতেন, অতঃপর মুখস্থ করে নিতেন। তদানীন্তন মুসলিম সমাজে প্রায় এক লক্ষ লোক রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর বানী ও কাজের বিবরণ সংরক্ষণ করেছেন এবং স্মৃতিপটে ধরে রেখেছেন। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রঃ) বলেন,   “আমরা রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর হাদীস মুখস্থ করতাম।” (সহীহ মুসলিম, ভূমিকা, পৃ ১০)।

উম্মতের নিরবচ্ছিন্ন আমল, পারম্পারিক পর্যালোচনা, শিক্ষাদানের মাধ্যমেও হাদীস সংরক্ষিত হয়। রাসুলুল্লাহ (সঃ) যে নির্দেশই দিতেন, সাহাবীগণ সাথে সাথে তা কার্যে পরিণত করতেন। তাঁরা মসজিদ অথবা কোন নির্দিষ্ট স্থানে একত্র হতেন এবং হাদীস আলোচনা  করতেন। আনাস ইবন মালিক (রঃ) বলেন, “আমার মহানবী (সঃ)-এর নিকট হাদীস শুনতাম। তিনি যখন মজলিশ থেকে উঠে চলে যেতেন, আমরা শ্রুত  হাদীসগুলো পরস্পর পুনরাবৃত্তি ও পর্যালোচনা করতাম। আমাদের এক একজন করে সবাই হাদীসগুলো মুখস্থ শুনিয়ে দিতেন। এ ধরনের প্রায় বৈঠকেই অন্তত ষাট-সত্তরজন লোক উপস্থিত থাকতেন। বৈঠক থেকে আমরা যখন উঠে যেতাম তখন আমাদের প্রত্যেকেরই সবকিছু মুখস্থ হয়ে যেত”- (আল-মাজমাউয-যাওয়াইদ, ১খ, পৃ ১৬১)।

মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করে স্বয়ং নবী করীম (সঃ)-এর জীবদ্দশায় যে শিক্ষায়তন গড়ে উঠেছিল সেখানে একদল বিশিষ্ট সাহাবী ( আহলুস সুফফা) সার্বক্ষণিকভাবে কুরআন-হাদীস শিক্ষায় রত থাকতেন। হাদীস সংরক্ষণের জন্য যথাসময়ে যথেষ্ট পরিমাণে লেখনী শক্তিরও সাহায্য নেয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কুরআন মজীদ ব্যাতিত সাধারণতঃ অন্য কিছু লিখে রাখা হত না। পরবর্তীকালে হাদীসের বিরাট সম্পদ লিপিবদ্ধ হতে থাকে। ‘হাদীস নবী করীম (সঃ)-এর জীবদ্দশায় লিপিবিদ্ধ হয়নি, বরং তাঁর ইন্তেকালের শতাব্দী কাল পর লিপিবদ্ধ হয়েছে’ বলে যে ভুল ধারনা প্রচলিত আছে তাঁর আদৌ কোন ভিত্তি নেই। অবশ্য একথা ঠিক যে, কুরআনের সঙ্গে হাদীস মিশ্রিত হয়ে জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে- কেবল এই আশংকায় ইসলামী দাওয়াতের প্রাথমিক পর্যায় রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ “আমরা কোন কথাই লিখ না। কুরআন ব্যাতিত আমার নিকট থেকে কেউ অন্য কিছু লিখে থাকলে তা যেন মুছে ফেলে।”(মুসলিম) কিন্তু যেখানে এরূপ বিভ্রান্তির আশংকা ছিল না মহানবী (সঃ) সে সকল ক্ষেত্রে হাদীস লিপিবদ্ধ করে রাখতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেন।

আবদুল্লাহ ইবন আমর (রঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, “হে আল্লাহ্র রাসূল ! আমি হাদীস বর্ণনা করতে চাই। তাই যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমি স্মরণশক্তির ব্যাবহারের সাথে সাথে লেখনীরও সাহায্য গ্রহণ করতে ইচ্ছুক।” তিনি বললেনঃ “আমার হাদীস কণ্ঠস্থ করার সাথে সাথে লিখেও রাখতে পার”(দারামী)। আবদুল্লাহ ইবন আমর (রঃ) আরও বলেন, “আমি রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট যা কিছু শুনতাম, মনে রাখার জন্য তা লিখে নিতাম। কতিপয় সাহাবী আমাকে তা লিখে রাখতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) একজন মানুষ, কখনও স্বাভাবিক অবস্থায় আবার কখনও রাগান্বিত অবস্থায় কথা বলেন।” এ কথা বলার পর আমি হাদীস লেখা থেকে বিরত থাকলাম, অতঃপর তা রাসুলুল্লাহ (সঃ)-কে জানালাম। তিনি নিজ হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে স্বীয় মুখের দিকেইঙ্গিত করে বললেনঃ “ তুমি লিখে রাখ। যেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রান, এই মুখ দিয়ে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বের হয় না” (আবূ দাঊদ, মুসনাদ আহমেদ, দারমী, হাকিম, বায়হাকী)। তাঁর সংকলনের নাম ছিল ‘সাহীফায়ে সাদিকা’ । এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “সাদিকা হাদীসের একটি সংকলন – যা আমি নবী (সঃ)এর নিকট শুনেছি” –(উলূমুল হাদীস, পৃ ৪৫)। এই সংকলনের এক হাজার হাদিস লিপিবদ্ধ ছিল।

হাদিস সংকলনের ইতিহাস-৩

আবু হুরায়রা (রঃ) বলেন, এক আনসারী সাহাবী রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে আরয করেলেন, হে আল্লাহ্র রাসুল ! আপনি যা কিছু বলেন, আমার কাছে খুবই ভালো লাগে, কিন্তু মনে রাখতে পারি না। নবী করীম (সঃ) বললেনঃ “ তুমি ডান হাতের সাহায্য নাও।” তারপর তিনি হাত এর ইশারায় লিখে রাখার প্রতি ইঙ্গিত করলেন- (তিরমিযী, হাদিসটি যঈফ [বাংলা হাদিস])।

আবূ হুরায়রা (রঃ) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সঃ) ভাষণ দিলেন। আবূ শাহ ইয়ামানী (রঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! এ ভাষণ আমাকে লিখে দিন। নবী করীম (সঃ) ভাষণটি তাঁকে লিখে দেওয়ার নির্দেশ দেন-(বুখারী, তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ)। হাসান ইবন মুনাব্বিহ (রঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রঃ) আমাকে বিপুল সংখ্যক কিতাব (পাণ্ডুলিপি) দেখালেন। তাতে রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর হাদীস লিপিবদ্ধ ছিল ( ফাতহুল বারী)। আবূ হুরায়রা (রঃ)-র সংকলনের একটি কপি ( ইমাম ইবন তাইমিয়ার হস্তলিখিত) দামেশক এবং বার্লিনের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে।

আনাস ইবন মালিক (রঃ) তাঁর (স্বহস্ত লিখিত) সংকলন বের করে ছাত্রদের দেখিয়ে বলেন, আমি এসব হাদীস নবী করীম (সঃ)-এর নিকট শুনে লিখে নিয়েছি। পরে তাঁকে তা পড়ে শুনিয়েছি (মুসতাদরাক হাকিম,৩য় খ, পৃ ৫৭৩) রাফি’ ইবন খাদীজা (রঃ)-কে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সঃ) হাদীস লিখে রাখার অনুমুতি দেন। তিনি প্রচুর হাদীস লিখে রাখেন (মুসনাদে আহমেদ)।

আলী ইবন আবূ তালিব (রঃ)-ও হাদীস লিখে রাখতেন। চামড়ার থলের মধ্যে রক্ষিত সঙ্কলনটি তাঁর সঙ্গেই থাকত। তিনি বলতেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট থেকে এ সহীফা ও কুরআন মজীদ ব্যাতিত আর কিছু লিখিনি। সংকলনটি স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সঃ) লিখিয়ে ছিলেন। এতে যাকাত, রক্তপাত(দিয়াত), বন্দীমুক্তি, মদীনার হেরেম এবং আরও অনেক বিষয় সম্পর্কিত বিধান উল্লেখ ছিল (বুখারী, ফাতহুল বারী)। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রঃ)-এর পুত্র আবদুর রহমান একটি পাণ্ডুলিপি নিয়ে এসে শপথ করে বললেন, এটা ইবন মাসঊদ (রঃ)-এর সহস্তে লিখিত (জামি’বায়নিল ইলম, ১খ, পৃ ১৭)।

স্বয়ং নবী করীম (সঃ) হিজরত করে মদীনায় পৌঁছে বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে যে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন (যা মদীনার সনদ নামে খ্যাত), হুদায়বিয়ার প্রান্তরে মক্কার মুশারিকদের সাথে সন্ধি করেন, বিভিন্ন সুময়ে যে ফরমান জারি করেন, বিভিন্ন গোত্র-প্রধান ও রাজন্যবর্গের কাছে ইসলামের যে দাওয়াতনামা প্রেরন করেন এবং বিভিন্ন ব্যাক্তি ও গোত্রকে যেসব জমি, খনি ও কুপ দান করেন তা সবই লিপিবদ্ধ আকারে ছিল এবং তা সবই হাদীসরূপে গণ্য।

এসব ঘটনা থেকে পরিষ্কারভাবে প্রমানিত হয় যে, নবী (সঃ)-এর সময় থেকেই হাদীস লেখার কাজ শুরু হয়। তাঁর দরবারে বহু সংখ্যক লেখক সাহাবী সব সময় উপস্থিত থাকতেন এবং তাঁর মুখে যে কথাই শুনতেন, তা লিখে নিতেন। রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর আমলে অনেক সাহাবীর নিকট স্বহস্তে লিখিত সংকলন বর্তমান ছিল। উদাহরণস্বরূপ আবদুল্লাহ ইবন আমর (রঃ)-এর সাহীফায়ে সাদিকা, আবূ হুরায়রা (রঃ)-র সংকলিত সমাধিক খ্যাত।

সাহাবীগণ যেভাবেই রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট থেকে হাদীসের জ্ঞান লাভ করেন। তেমনিভাবে হাজার হাজার তাবিঈ সাহাবীগণের কাছে হাদীসের শিক্ষা লাভ করেন। একমাত্র আবূ হুরায়রা (রঃ)-এর নিকট আটশত তাবিঈ  হাদীস শিক্ষা করেন। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব, উরওয়া ইবনু জুবাইর, ইমাম যুহরী, হাসান বসরী, ইবন সিরীন, নাফি, ইমাম যয়নুল আবেদীন, মুজাহিদ, কাযী শুরাইহ, মাসরূহ, মাকহুল, ইকরিমা, আতা, কাতাদা, ইমাম শা’বী, আলকামা, ইবরাহীম নাখঈ (রঃ) প্রমুখ প্রবীণ তাবিঈর প্রায় সকলে ১০ম হিজরীর পর জন্মগ্রহন করেন এবং ১৪৮ হিজরীর মধ্যে ইন্তিকাল করেন। অন্যদিকে সাহাবীগণ ১১০ হিজরীর মধ্যে ইন্তিকাল করেন। এদিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, তাবিঈগণ সাহাবীগণের দীর্ঘ সহচর্য লাভ করেন। একজন তাবিঈ বহু সংখ্যক সাহাবীর সঙ্গে সাক্ষাত করে নবী করীম (সঃ)-এর জীবনের ঘটনাবলি, তাঁর বানী, কাজ ও সিদ্ধান্তসমূহ সংগ্রহ করেন এবং তা তাঁদের পরবর্তীগণ অর্থাৎ তাবে-তাবিঈনের নিকট পৌঁছে দেন।

হিজরী দ্বিতীয় শতকের শুরু থকে কনিষ্ঠ তাবিঈ ও তাবিঈ-তাবিঈনের এক বিরাট দল সাহাবা ও প্রবীণ তাবিঈনের বর্ণিত ও লিখিত হাদীসগুলো ব্যাপকভাবে একত্র করতে থাকেন। তাঁরা গোটা মুসলিম জাহানে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র উম্মতের মধ্যে হাদীসর জ্ঞান পরিব্যাপ্ত করে দেন। এ সময় ইসলাম বিশ্বের খলীফা উমর ইবন আবদুল্লাহ আযীয (রঃ) দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকদের নিকট হাদীস সংগ্রহ করার জন্য রাজকীয় ফরমান প্রেরন করেন। ফলে সরকারী উদ্যোগ সংগৃহীত হাদীসের বিভিন্ন সংকলন রাজধানী দামেশক পৌঁছতে থাকে। খলীফা সেগুলর একাধিক পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দেশের সর্বত্র পাঠিয়ে দেন। এ কালের ইমাম আবূ হানীফা (রঃ)-এর নেতৃত্বে কূফায় এবং ইমাম মালিক (রঃ) তাঁর মুত্তয়াত্তা গ্রন্থ এবং ইমাম আবূ হানীফার দুই সহচর ইমাম মুহাম্মদ ও আবূ ইউসুফ (রঃ) ইমাম হানীফার রিওয়ায়াতগুলো একত্র করে ‘কিতাবুল আসার’ সংকলন করেন। এ যুগের আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হাদীস সংকলন হচ্ছেঃ জামি’ সুফইয়ান সাওরী, জামি’ইবনুল মুবারক, জামি’ইমাম আওযাঈ, জামি’ ইবন জুরাইজ ইত্যাদি।

হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষার্ধ থেকে চতুর্থ শতকের শেষ পর্যন্ত হাদীসের চর্চা আরও ব্যাপকতর হয়। এ সময়কালে হাদীসের প্রসিদ্ধ ইমাম-বুখারী, মুসলিম, আবূ ঈসা তিরমিযী, আবূ দাঊদ সিজিস্তানী, নাসাঈ ও ইবন মাজা (রঃ)-এর আবির্ভাব হয় এবং তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দীর্ঘ অধ্যবসায়ের ফলশ্রুতিতে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ছয়খানি হাদীস গ্রন্থ (সিহাহ সিত্তাহ) সংকলিত হয়। এ যুগেই ইমাম শাফিঈ (রঃ) তাঁর কিতাবুল উম্ম ও ইমাম আহমেদ (রঃ) তাঁর আল-মুসনাদ গ্রন্থ সংকলন করেন। হিজরীর চতুর্থ শতকে মুসতাদরাক হাকিম, সুনান দারি কুনতী, সহীহ ইবন হিব্বান, সহীহ ইবন খুযায়মা, তাবারানীর আল-মু’জাম, মুসান্নাফুত-তাহাবী এবং আরও কতিপয় হাদীস গ্রন্থ সংকলিত হয়। ইমাম বায়হাকীর সুনানু কুবরা ৫ম হিজরী শতকে সংকলিত হয়।

চতুর্থ শতকের পর থেকে এ পর্যন্ত সংকলিত হাদীসের মৌলিক গ্রন্থগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের সংকলন ও হাদীসের ভাষ্য গ্রন্থ এবং এই শাস্ত্রের সাখা-প্রশাখার উপর ব্যাপক গবেষণা ও বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়। বর্তমান কাল পর্যন্ত এ কাজ অব্যাহত রয়েছে। এসব সংকলের মধ্যে তাজরীদুস সিহাহ ওয়াস সুনান, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, আল-মুহাল্লা, মাসাবীহুস সুন্নাহ, নাইলুল আওতার প্রভৃতি সমাধিক প্রসিদ্ধ।

উপমহাদেশে হাদীস চর্চা-৪

বাংলা-পাক-ভারত উপমহাদেশে মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কাল (৭১২ খৃ) থেকেই হাদীস চর্চা শুরু হয় এবং এখানে মুসলিম জনসংখা বৃদ্ধির সাথে সাথে ইসলামী জ্ঞান চর্চা ব্যাপকতর হয়। ইসলামের প্রচারক ও বাণী বাহকগণ উপমহাদেশের সর্বত্র ইসলামী জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র গড়ে তোলেন। খ্যাতনামা মুহাদ্দিস শায়ক শরফুদ্দীন আবূ তাওয়ামা (মৃ ৭০০ হি) ৭ম শতকে ঢাকার সোনারগাঁও আগমন করেন এবং কুরআন ও হাদীস চর্চার ব্যাপক ব্যবস্থা করেন। বঙ্গদেশের রাজধানী হিসেবে এখানে অসংখ্য হাদীসবেত্তা সমাবেত হন এবং ইলমে হাদীসের জ্ঞান এতদঞ্চলে ছড়িয়ে দেন। মুসলিম শাসনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত ছিল। বর্তমান কাল পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। দারুল উলূম দেওবন্দ, মাযাহিরুল উলূম সাহারানপুর, মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা, মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া, জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালাবাগ প্রভৃতি হাদীস কেন্দ্র বর্তমানে ব্যাপকভাবে হাদীস চর্চা ও গবেষণা করে চলেছে। এভাবে যুগ ও বংশ পরম্পরায় মহানবী (সঃ)-এর হাদীস ভাণ্ডার আমাদের কাছে পৌঁছেছে এবং ইনশাল্লাহ অব্যাহতভাবে তা অনাগত মানব সভ্যতার কাছে পৌঁছতে থাকবে।

জাল-জঈফ হাদিস পরিচিতঃ কারা এসবের প্রচলনকারী?

হাদিস জালকারী ইসলামের দূশমনদের কারনেই আজ অবধি কোটি কোটি মানুষ জাল হাদিসের কবলে পড়েছে এবং ঈমান হারা হয়েছে এবং ঈমান হারাচ্ছে। বর্তমান যুগে এসে দেখা যাচ্ছে, জাল হাদিসগুলো বুখারী শরিফসহ মাদ্রাসা কিংবা জেনারেল লাইনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ধর্মীয় বইগুলোতে স্থান পেয়েছে। যুগ যুগ ধরে এই জাল হাদিসগুলো শিক্ষা দেয়া হচ্ছে এবং লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শ্রুতি মধুর জাল হাদিসের কারনেই মানুষ কুরআন ও সহিহ হাদিস বাদ দিয়ে জাল হাদিস আমল করছে। আর এটাই হল শয়তানের সফল মিশন।

যে সব আলেম বা হুজুর সারা জীবন কষ্ট করে এই জাল হাদিসগুলো মুখস্থ করেছেন তাদেরকে কোনোভাবেই সহিহ পথে আনা যাচ্ছে না। এইসব আলেমগণ যুক্তি দেখায়, যারা এই পুস্তকগুলো লিখেছেন তারা তো বিখ্যাত আলেম বা মাওলানা বা মৌলভী। তারা কি না জেনেই লিখেছেন? ইত্যাদি কথা। যাই হোক সব কিছুর তথ্য আমরা এখানে জানবো ইন শা আল্লাহ।

প্রথমে জেনে নেই সাহাবীদের যুগে প্রথম জাল হাদিসের প্রচলনকারী কারা?

হাদিস জালকারীদের মধ্য হতে যাদেরকে হত্যা করা হয়েছিলঃ

(১) আব্দুল করিম ইবনে আবিল আওজা। তিনি ৪ (চার) হাজার জাল হাদীস রচনা করেছে।

কুফার গভর্নর মুহাম্মদ ইবনে সুলায়মান ইবনে আলী তাকে মৃত্যুদন্ড দেন।

(২) বয়ান ইবনে সাম আন। খালিদ ইবন আব্দুল্লাহ আন কাসরী তাকে মৃত্যুদন্ড দেন।

(৩) মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ আল মাসলুব। আবু জাফর আল মানসূর তাকে মৃত্যুদন্ড দেন।

জাল হাদীস রচনা করে যারা স্বীকার করেনঃ

(১) আবুল করিম ইবনে আবিল আওজা স্বীকার করে যে, সে ৪ (চার) হাজার হাদিস জাল করেছে।

(২) নূহ ইবনে আবু মরিয়াম স্বীকার করে বলে যে, লোকেরা পবিত্র কুরআন পড়া ছেড়ে দিয়েছে, আর মশগুল হয়েছে ইমাম আবু হানিফা(রঃ)-এর ফিকহ ও ইবনে ইসহাকের যুদ্ধ বিষয়ক রচনাতে। তখন আমি লোকদেরকে কুরআনের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য জাল হাদিস রচনা করেছি। তিনি কুরআনের বিভিন্ন সুরার ফযীলত সম্পর্কে মিথ্যা হাদিস রচনা করেন ৫৮। কুরতুবী পৃ: ১০১।

(৩) অন্যজন ছিল গোলাম খলিল। তিনি ছিলেন সংসার ত্যাগী সুফী, তার ওফাতের দিনে শোকে বাগদাদের সকল দোকান পাঠ বন্ধ ছিল। তিনি যিকর ও বিভিন্ন প্রকার অযীফার ফযীলত সম্বন্ধে বহু জাল হাদিস রচনা করেন। তারই অনুকরনে বর্তমানে মুর্খ সুফীরা নতুন নতুন পদ্ধতিতে অজিফা ও যিকর আবিষ্কার করছে। সুফীদের এরুপ গ্রন্থেরও অভাব নেই, নিয়ামুল কোরআন, নাফায়েল খানায়েক, মুকছেদুল মুমিনীন ও সুফিদের অন্যান্য গ্রন্থে বাজার ভর্তি হয়ে আছে।

(৪) আবান ইবনে জাফার আল-নুজাইরামী, ইনি ইমাম আবু হানীফা (রঃ) সম্পর্কে তিনশত- এর বেশী জাল হাদিস রচনা করেন।

হাদিস জালকারীদের মধ্যে যারা তওবা করেনঃ

(১) ইবনে উবাইদুল্লাহ আবুল আয ইবনে কাদিম।

(২) শায়খ ইবনে আবু খালিদ।

(৩) নাসর ইবনে তারীফ আবুজাযা আল বাসার।

হাদিস জালকারীদের মধ্যে যারা নিজেকে সাহাবী দাবী করেছেঃ

একদল মিথ্যাবাদী নিজেদেরকে সাহাবী দাবী করেছে এবং সাথে সাথে তারা তাদের নিজস্ব ভক্তি বা তাদের মনগড়া কথাকে রাসুলের নামে বানিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। তাদের কয়েকজন হলঃ-

(১) আল আসাজ্জ। এ ব্যক্তি রাসুল (সাঃ)-এর ৫ শত বৎসর পরে জন্ম গ্রহন করেও নিজেকে সাহাবী দাবী করে বসে।

(২) জুবাইর ইবনুল হারিস। এ ব্যক্তি হিজরী ষষ্ঠ শতকের লোক হয়েও নিজেকে সাহাবী দাবী করে।

অথচ প্রথম হিজরী শতকের পর তথা ১১০ হিজরীর পরে কোন সাহাবীই দুনিয়াতে জীবিত ছিলেন না।

(৩) রতন আল হিন্দী। এ ব্যক্তি রাসুল(সাঃ)- এর ছয়শত বৎসর পরে জন্মগ্রহন করে নিজেকে সাহাবী দাবী করে। তাকেই খাজা রতন অথবা বাবা রতন বলা হত।

হাদিস জালকারীদের সংখ্যাঃ

মুহাদ্দিসগন হাদিস জালকারীদেরকে চিহ্নিত ও জাল হাদিস প্রতিরোধ কল্পে অক্লান্ত চেষ্টা ও সাধনা করে হাদিস জালকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ করে গেছেন।

ডঃ জামাল উদ্দিন রীজাল শাস্ত্র ও জাল হাদীসের ইতিবৃত্ত গ্রন্থে ৪২৪ জন জালকারীর নাম তালিকাভূক্ত করেছেন।

সহীহ হাদিস ও জাল-জয়ীফ হাদিস চেনার প্রধান উপায়ঃ

(১)  যদি সেটির বক্তব্য কুরআনের স্পষ্ট (মুহকাম) বক্তব্যের খেলাফ হয়।

(২)  যদি সেটি একাধিক সহীহ, মুতাওয়াতির-মরফু' হাদিসের বক্তব্যের খেলাফ হয়।

(৩)  যদি সেটির বর্ণনা সূত্রে কোন মিথ্যাবাদী, অবিশ্বস্ত এবং হালকা স্বভাবের বর্ণনাকারী থাকে।

(৪)  যদি সেটির বক্তব্য রসূল সা -এর সুস্পষ্ট সুন্নাহ ও আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক হয় এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়।

জাল-জঈফ হাদিস জানতে হলে পড়তে হবেঃ

(১)  হাদিস সংকলনের ইতিহাস।

(২)  রাবিদের জীবনবৃত্তান্ত সংক্রান্ত গ্রন্থাবলি (আসমাউর রিজাল শাস্ত্র)।

(৩)  জাল ও জয়ীফ হাদিসের আলাদা সংকলন হয়েছে, সম্ভব হলে সেগুলো পড়তে হবে।

(৪)  শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী কয়েকটি গ্রন্থ যাচাই বাছাই করে সহীহ ও জয়ীফ হাদিসের

আলাদা আলাদা সংকলন করেছেন, সম্ভব হলে সেগুলো সংগ্রহ করতে হবে।

(৫) বাংলায় দুইটি বই প্রকাশ হয়েছেঃ

(ক) জয়ীফ ও মওজু হাদিসের সকলন। এটি ঢাকার কাঁটাবনে পাওয়া যাবে।

(খ) হাদিসের নামে জালিয়াতি। এটি লিখেছেন ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর।

(৬) হাদিসের গভীর জ্ঞান রাখেন এমন উস্তায পাওয়া গেলে তাদের কাছ থেকেও অনেক কিছু জানতে পারা যাবে।

আশ্চর্যের বিষয় বুখারীতেও অনেক জাল হাদিসঃ

অত্যাচারী শাসকের আনুগত্যের হাদিসঃ

বুখারী শরিফের অনেক হাদিসে অত্যাচারী শাসকদের আনুগত্য করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে (যেমনঃ ২:২২৬৪-৬৫; ৩-২৯২৬, ৩৩৩৫-৩৭, ৩৫১০-১২; ৪: ৩৯৮৭; ৬:৬৫৬২-৬৪, ৬৫৭৫, ৬৫৮৮-৮৯, ৬৬১২, ৬৬৪৪-৪৫,বুখারী শরিফ,আধুনিক প্রকাশনী)। এসকল হাদিসের সারাংশ এই, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আমার পরে এমনও শাসক আসবে যারা আমার প্রদর্শিত পথে তোমাদেরকে পরিচালিত করবে না-আমার সুন্নাহও অনুসরন করবে না। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, “ ঐ সময় আমরা কি করব?” রাসুল (সাঃ) বললেন, “ ঐসব জালিম শাসকদের কথা তোমরা শুনবে ও তাঁদের আনুগত্য করবে। তারা যদি তোমাদের আঘাত করে এবং তোমাদের ধন-সম্পত্তি ছিনিয়েও নেয়,তবুও তোমরা তাঁদের অনুসরন ও আনুগত্য করবে”। অথচ কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,”এবং তাঁদের সাথে যুদ্ধ কর যতক্ষন না সমস্ত অরাজকতা নির্মুল হয়ে যায় এবং দীন কেবল আল্লাহরই জন্য হয়”। (সুরা বাকারাঃ ১৯৩)। (এরকম আরও আয়াত আমরা কুরআনে পাই, যেমনঃ ২: ১৯০, ২১৬-১৭, ২৪৪, ৪: ৭৪-৭৫, ৮৯-৯৪ ইত্যাদি)। আমরা জানি, যে হাদিস কুরআনের আয়াতকে সমর্থন করে না,  সেটি জাল হাদিস (মুঃ আল বাকির, সহি আল কাফি, ভল্যুম-১,পাতা-৮, সংস্করন ১৪০২ হিজরী)।

আল্লাহর ক্লান্ত হওয়াঃ

“তোমরা ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ ক্লান্ত হন না।“(বুখার, ১ম অধ্যায়, হাদিস# ৪১,আধুনিক প্রকাশনী)। এই হাদিসটির বিপরীত হচ্ছে আমরা ক্লান্ত হলে হলে আল্লাহ ক্লান্ত হন। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক কুরানে বলেনঃ “......না তাঁকে তন্দ্রা আচ্ছন্ন করে ,আর না নিদ্রা;....(বাকারা, আয়াত# ২৫৫)।

রাসুলের (সাঃ) বন্দ্বু ও ভাইঃ

রাসুল(সাঃ) বলেছেন,উম্মতের মধ্যে তিনি কাউকে বন্ধু হিসাবে গ্রহন করলে হজরত আবু বকরকে (রাঃ) গ্রহন করতেন” (বুখারি, ১৪৪৬ ও ৪৪৭, ৩-৩৩৮২-৮৪-৮৬, আধুনিক প্রকাশনী)। কিন্তু আমরা জানি যে, রাসুল (সাঃ) মক্কায় ও মদীনাতে যখন আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃ্ত্বের বন্ধন রচনা করেন, তখন রাসুল (সাঃ) আমিরুল মু’মিনিন হজরত আলীকে (আঃ) বন্ধু ও ভাই হিসাবে গ্রহন করেছিলেন। মদীনায় হিজরতের পর মুহাজিরদের কষ্ট লাঘবের জন্য আনাসারদের সঙ্গে ভ্রাতৃ্ত্বের বন্ধন রচনা করেন। কিন্তু তিনি নিজে অন্য কাউকে না নিয়ে হজরত আলীকে (আঃ) বেছে নেন এবং তাঁকে বলেন, হে আলী, তুমি ইহকালে ও পরকালে আমার ভাই (তিরমিজি - ৬০৮৪)।

গুই সাপ খাওয়াঃ

হাদিস থেকে আমরা জেনেছি যে, হিংস্র ও নোংড়া প্রানী খাওয়া জায়েজ নয়, হারাম ( বুখারি, অধ্যায় ৫, হাদিস# ৫১২০-২৩, আধুনিক প্রকাশনী)। অথচ বুখারী, অধ্যায় ২, হাদিস# ২৩৮৮, অধায় ৫,হাদিস# ৪৯৯৯, ৫০০১, ৫১২৯, ৫১৩০, আধুনিক প্রকাশনী , অনুযায়ী গুইসাপ হালাল।

বানরের ব্যভিচারঃ

বুখারি শরিফের অধায় ৩, হাদিস# ৩৫৬২ এ বর্নিত আছে যে, “ একটি বানর ব্যভিচারে লিপ্ত হবার কারনে অন্য বানররা তাঁকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে মেরে হত্যা করে”। আমরা সকলেই জানি যে, প্রানিদের মধ্যে অবাধ মেলামেশা হয়ে থাকে বা এব্যাপারে শরিয়তগত কোন বিধান নেই। এধরনের উদ্ভট, বানোয়াট, জাল হাদিস রাসুলের (সাঃ) নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। আশা করি বুদ্বিমান মানুষেরা এধরনের জাল হাদিসগুলো প্রত্যাখ্যান করবেন।

মাছির এক পাখায় আছে রোগ,আর অন্য পাখায় আছে সে রোগের ঔষধঃ

আধুনিক প্রকাশনী প্রকাশিত বুখারী শরিফে (অধ্যায় ৩,হাদিস# ৩০৭৪,অধ্যায় ৫,হাদিস# ৫৩৫৭) আবু হুরায়রা থেকে বর্নিত এক হাদিসে দেখা যায়,রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “ যদি তোমাদের কারো পানীয়ের মধ্যে ঘরের কোন মাছি পড়ে, সে যেন পুরো মাছিটাকেই পানীয়ের মধ্যে চুবিয়ে নেয়”। কারন মাছির এক পাখায় আছে রোগ,আর অন্য পাখায় আছে সে রোগের ঔষধ (বুখারি,ইং ৫৩৭,৪২৩)। পাঠক, চিকিতসা বিজ্ঞানে এর কোন ব্যাখ্যা আছে কি না আমার জানা নেই। তবে আমরা যেটা জেনেছি যে, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে হাদিস কুরানের আয়াতকে সমর্থন করে না সেটি জাল হাদিস (মুঃ আল বাকির, সহি আল কাফি, ভল্যুম-১,পাতা-৮,সংস্করন ১৪০২ হিজরী)। কেউ কি পারবেন উপরে উল্লেখিত মাছির হাদিসটিকে কুরানের কোন আয়াত দ্বারা সত্যায়ন করতে? আমি মনে করি অসম্ভব।

আবু বকর (রাঃ) কর্তৃক নামাজে ইমামতি করাঃ

আধুনিক প্রকাশনী প্রকাশিত বুখারী শরিফে (অধ্যায়১, হাদিস# ৬২৪, ৬৩৭-৪৬, ৬৬৯-৭০, ৬৭৩, ৭১০, ১১২৬; অধায়-৩, ৩১৩৪-৩৫, অধ্যায় ৪, হাদিস# ৪০৯২,৪০৯৫; অধ্যায় ৬,হাদিস# ৬৭৯৩) হাদিসগুলির মর্মার্থ হলঃ রোগাক্রান্ত হলে (যে রোগে তিনি সাঃ ইন্তেকাল করেন) হযরত আবু বকরকে নবীজী (সাঃ) নামাজের ইমামতি করতে বলেন এবং একবার তিনি নিজেও তাঁর সাথে নামাজ আদায় করেন। কিন্তু আধুনিক প্রকাশনী প্রকাশিত বুখারী শরিফে (অধ্যায় ৩,হাদিস# ৩৪৫১, অধায় ৪,হাদিস# ৩৯১৯, ৪১১০-১১, অধ্যায় ৬, ৬১৬৫, ৬৬৮৪ এবং আরও অনান্য হাদিস গ্রন্থ থেকে জানা যায়,যে সময়ে নামাজে আবু বকরকে ইমামতি করতে বলা হয়, সে সময় আবুবকর উসামার (রাঃ) অধীনে ‘উবুনা’ যুদ্বের জন্য মদীনার বাইরে ‘জোরাফ’ নামক স্থানে সেনা শিবিরে অবস্থান করছিলেন। এসকল বানোয়াট হাদিস পয়সা দিয়ে বানিয়ে রাসুলের (সাঃ) নামে চালান হয়েছে আবু বকরের অবৈধ খলিফা নির্বাচনকে বৈধতা দেবার জন্য।

উষ্ট্রারোহিনী নারী সর্বোত্তমঃ

আধুনিক প্রকাশনী প্রকাশিত বুখারী শরিফে (অধ্যায় ৩,হাদিস# ৩১৮০,অধ্যায় ৪,হাদিস# ৪৭০৯, ৪৯৬৫ অনুযায়ী সর্বোত্তম মহিলা হচ্ছেন উষ্ট্রারোহিনী এবং সতী-সাধবী হচ্ছে কুরাইশ মহিলারা। অনুচ্ছেদ ২৯ এ বর্নিত হাদিস অনুযায়ী মরিয়ম (সাআ) রমনীকুলের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ট।আধুনিক প্রকাশনী প্রকাশিত বুখারী শরিফে(অধ্যায় ৩,হাদিস# ৩১৮০ অনুযায়ী তিনি কখনও উটে চড়েননি।তাই প্রথমে উল্লেখিত হাদিসগুলি সত্য হলে (উষ্ট্রারোহিনী), মরিয়ম (সা আ) এর শ্রেষ্টত্ব সংক্রান্ত হাদিসগুলি মিথ্যা,কারন তিনি উটে চড়েননি। আসলে মুল ব্যাপারটি হল হজরত আয়েশা(রাঃ) উটের পিঠে চড়ে ‘জঙ্গে জামালের’ যুদ্বে অংশ নিয়েছিলেন। উষ্ট্রারোহিনী হিসাবে তিনি সর্বোত্তম নারীর স্বীকৃতি লাভ না হলে তো ‘জঙ্গে জামালের’ যুদ্বে নিহত মুসলমানদের দায় তাকেই নিতে হবে।আসলে হজরত আয়েশার(রাঃ) অপরাধ গোপন ও তাঁকে সর্বোত্তম স্থানে উঠানোর ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে এসমস্ত বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হাদিস রচনার মাধ্যমে।

জন্মের সময় শয়তানের টোকা মারাঃ

আধুনিক প্রকাশনী প্রকাশিত বুখারী শরিফে (অধ্যায়-৩,হাদিস# ৩০৪৪,৩১৭৮, অধ্যায়-৪, হাদিস#৪১৮৮) আবু হুরায়রা (রাঃ) দ্বারা বর্ননা করা হয়েছে যে, “প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্মের সময় তাঁর পার্শ্ব দেশে শয়তান আঙ্গুল দ্বারা টকা মারে,ব্যতিক্রম শুধু ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ)”। অদ্ভুত, বানোয়াট এ সমস্ত মনগড়া হাদিস কি এই যুগে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে? হাদিসটির ভাষ্য যদি সঠিক হয় তবে হজরত ঈসা ইবনে মরিয়ম(আঃ) বাদে অন্য সব নবী রাসুল(সাঃ),ইমাম(আঃ) গনকেও তাহলে শয়তান টকা মেরেছিল? অসম্ভব,এটা সত্য হতেই পারে না। কারন নবী,রাসুল(সাঃ) ও ইমাম (আঃ) গন আল্লাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও নিস্পাপ ছিলেন।

আরও একটি মৌলিক বিষয় হাদিসের ব্যাপারে,তা হল আমরা কিভাবে বুঝবো একটি হাদিস জাল বা সহী? সেটাও রাসুল (সাঃ) আমাদের বাতলে দিয়েছেন।আর তা হল, যে হাদিস কুরানের আয়াতকে সমর্থন করে না সেটি জাল হাদিস(মুঃ আল বাকির, সহি আল কাফি,ভল্যুম-১,পাতা-৮,সংস্করন ১৪০২ হিজরী)।

বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি বাংলাভাষী পাঠকের কাছে নিবেদন, কেউ কি পারবেন, উপরে উল্লেখিত হাদিসকে সত্য বলে প্রমান করতে?

খবরে ওয়াহেদের নামে আবুবকরের (রাঃ) জাল হাদিসঃ

রাসুল নাকি আবুবকরকে (রাঃ) বলেছেন, “ আমরা নবীগনের কোন উত্তরাধিকারী নেই; আমরা যা কিছু রেখে যাই তার সবই জাকাত হিসাবে বায়তুল মাল”( বুখারী, ৪র্থ খন্ড,পৃঃ৯৬; ৫ম খন্ড, পৃঃ২৫, ২৬, ১১৫, ১১৭; ৮ম খন্ড, পৃঃ ১৮৫; নায়সাবুরি, ৫ম খন্ড, পৃঃ ১৫৩-১৫৫; তিরমিজী, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ১৫৭-১৫৮; তায়লিসী, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৪২-১৪৩; নাসাঈ, ৭ম খন্ড,পৃঃ ১৩২; হাম্বল, ৪র্থ খন্ড,পৃঃ ৪, ৬, ৯, ১০; শাফী, ৬ষ্ট খন্ড,পৃঃ৩০০; সাদ, ২য় খন্ড, পৃঃ ৮৬-৮৭; তাবারী, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৮২৫; বাকরী, ২য় খন্ড, পৃঃ ১৭৩-১৭৪)।

এ হাদিসটি উত্তরাধীকার সংক্রান্ত কুরআনের নির্দেশের পরিপন্থী। নবীদের উত্তরাধিকার সম্পর্কে কুরআনে বর্নিত হয়েছেঃ

“এবং সোলায়মান ছিল দাউদের উত্তরাধিকারী” (সুরা নামল,আয়াত# ১৬)। “সুতরাং তোমরা নিজের থেকে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দাও যে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকুবের পরিবারের উত্তরাধীকারী হবে-বললেন জাকারিয়া” (সুরা মরিয়ম,আয়াত# ৫-৬)।

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে ভৌত সম্পদের উত্তরাধিকারীকেই বুঝানো হয়েছে।কেউ কেউ মনে করেন এমন আয়াত মানুষের নবুয়তের জ্ঞানের উত্তরাধিকারীকে বুঝানো হয়েছে।এটা একটা অসাড় যুক্তি এবং বাস্তব বিবর্জিত কথা।কারন নবীদের জ্ঞান উত্তরাধিকারের বস্তু হতে পারে না এবং এটা উত্তরাধিকারের মাধ্যমে হস্তান্তর যোগ্য নয়।এমনটি হলে সকল নবীর বংশধর নবী হতেন।সেক্ষেত্রে কোন কোন নবীর পুত্র নবী হয়েছিলেন এবং অন্যরা এটা থেকে বঞ্চিত হয়েছে-এরুপ ব্যবধানের কোন অর্থ হয় না।

বুখারীতে মুশরিক আবু জাহেলকে রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছেঃ

আব্দুল্লাহ(রাঃ) বলেন,বদর যুদ্বের দিন(আহত) আবু জাহেল যখন ইন্তেকালের মুখোমুখী,সে সময় তিনি তাঁর কাছে গেলেন।যে লোকটিকে তোমরা হত্যা করলে( অর্থাৎ আমাকে) তাঁর চেয়ে অধিকতর নির্ভরযোগ্য(উত্তম) আর কোন লোক আছে কি?(হাদিস# ৩৬৭৫,সোলায়মান প্রকাশনি)।

ইমাম/খতিব্দের প্রতি অনুরোধ মসজিদের মিম্বরে বসে সত্য প্রচার করুন।কখনো প্রচার করবেন না,কুরানের পর বিশ্বের সবচেয়ে সহী গ্রন্থ বুখারী শরীফ।

কৃ্ষি যন্ত্রপাতির বিরুদ্বে বুখারীর মিথ্যা হাদিস সংকলনঃ

আধুনিক প্রকাশনী প্রকাশিত বুখারী শরিফে(অধ্যায়-২,হাদিস# ২১৫৩) বর্ননা করা হয়েছে, “কৃ্ষি কাজের যন্ত্রপাতি যে জাতির ঘরে প্রবেশ করে,আল্লাহ সেখানেই হীনতা ও নীচতা ঢুকিয়ে দেন”। একটি জাতিকে পঙ্গু করে ফেলার জন্য এধরনের জাল হাদিসই যথেষ্ট ।কারন পবিত্র কুরানের সুষ্পষ্ট আয়াত-“তোমরা নামাজের পরে জমিনে ছড়াইয়া পড়”।অর্থাত আল্লাহ পাক আমাদেরকে কাজ করতে বলেছেন।সেই কাজ হতে পারে কৃ্ষি কাজ,পড়ালেখা,গবেষনা ইত্যাদি।আর কৃ্ষি কাজ প্রত্যেক জাতির উন্নয়নের একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি।এই হাদিসের বক্তব্য ইসলামের রীতিনীতির পরিপন্থী,যা মহাসম্মানিত আল্লাহর রাসুলের(সাঃ) নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।

হজরত সোলায়মানের (আঃ) স্ত্রী সহবাস প্রসঙ্গেঃ

আধুনিক প্রকাশনী প্রকাশিত বুখারী শরিফে(অধ্যায়-৩, হাদিস# ২৬০৯, ৩১৭২, অধায়-৫, হাদিস# ৪৮৫৯, অধায়-৬, ৬১৫৩, ৬১৭৬, ৬২৫৩) আবু হুরায়রা (রাঃ) দ্বারা বর্নিত হয়েছে যে, “হজরত সোলায়মান (আঃ) এক রাতে ৭০-১০০ জন স্ত্রীর নিকট গমন করেছিলেন” (বুখারী, হাদিস# ৩১৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন,)। আমরা জানি,রাসুল(সাঃ) বলেছেন, যে হাদিস কুরানের আয়াতকে সমর্থন করে না সেটি জাল হাদিস(মুঃ আল বাকির,সহি আল কাফি,ভল্যুম-১,পাতা-৮,সংস্করন ১৪০২ হিজরী)।এই হাদিসের আলোকে আমি মনে করি উল্লেখিত বুখারীর হাদিসটি ডাহা মিথ্যা।

রাসুল (সাঃ) কি আল্লাহকে সেজদার সময় হজরত আয়েশার (রাঃ) পা টিপতেন?

আধুনিক প্রকাশনী প্রকাশিত বুখারী শরিফে (অধ্যায়-১,হাদিস# ৩৬৯, ৪৮৩, ৪৮৯, ১১৩০) বর্নিত হাদিস অনুযায়ী রাসুল (সাঃ) আল্লাহকে সেজদার সময় হজরত আয়েশার (রাঃ) পা টিপতেন এবং হজরত আয়েশা (রাঃ) তখন পা গুটিয়ে নিতেন।

আমরা একথা নির্দ্বিধায় জানি, আল্লাহ পাকের সম্মানিত রাসুল (সাঃ) অসভ্য ছিলেন না, বরং উমাইয়া শাসকগন ছিল চরম অসভ্য। তাঁদের অসভ্যতা জায়েজ করার জন্য তারা রাসুলের (সাঃ) নামে এধরনের জাল হাদিস রাসুলের নামে চালিয়ে উমাইয়ারা তাঁদের অপকর্মকে জায়েজ করার চেষ্টা চালিয়েছে।

রাসুল (সাঃ) কি কাবা ঘর মেরামতকালে উলংগ হয়েছিলেন?

আধুনিক প্রকাশনী প্রকাশিত বুখারী শরিফে (অধ্যায়-১, হাদিস# ৩৫১, অধ্যায়-২, হাদিস# ১৪৭৮ ও অধায়-৩, হাদিস# ৩৫৪৪) হাদিস অনুযায়ী রাসুল (সাঃ) কাবাঘর মেরামতকালে উলংগ হন। যেই রাসুল (সাঃ) জন্মের পর থেকেই আল্লাহ পাকের সম্মানিত ফেরেস্তা দ্বারা প্রহরাধীন থাকতেন এবং আল্লাহ দ্বারা protected ছিলেন,সেই আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কি উলংগ হয়েছিলেন কাবাঘর মেরামতকালে? একথাও কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে? বিশ্বের বিবেকবান মুমিন-মুসলমানদের কি এখনো জেগে উঠার সময় হয় নি?

সবার কাছে অনুরোধ,মিথ্যা হাদিস গুলো ছুড়ে ফেলুন। রাসুলের (সাঃ) পরিবারের (আঃ) সদস্যদের দ্বরা বর্নিত হাদিস মেনে চলুন।

ইয়াজিদের বায়াতের সমর্থনে বুখারি শরিফে বর্নিত হাদিসঃ

নাফি (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন,যখন মদীনার লোকেরা ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার (রাঃ) বায়াত ভংগ করলো,  তখন ইবনে উমর (রাঃ) তাঁর বিশেষ ভক্তবৃন্দ ও সন্তানদের সমবেত করলেন এবং বললেন, আমি নবীকে (সাঃ) বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি করে ঝান্ডা (পতাকা) উত্তোলন করা হবে আর আমরা এ লোকটির (ইয়াজিদের) প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বর্নিত শর্তানুযায়ী বায়াত গ্রহন করার পর তাঁর বিরুদ্বে যুদ্বের প্রস্তুতি গ্রহনের চেয়ে বড় কোন বিশ্বাসঘাতকতা আছে বলে আমি জানি না। আমি যেন কারো সম্পর্কে ইয়াজিদের বায়াত ভংগ করেছে বা সে আনুগত্য করছে না জানতে না পাই। অন্যথায় তাঁর ও আমার সম্পর্ক বিচ্ছিন হয়ে যাবে। (বুখারি শরিফ, হাদিস# ৬৬২৬, অনুবাদঃ মওলানা আজিজুল হক, প্রকাশকঃ সোলেমানিয়া বুক ডিপো, ৩৬,৪৫, বাংলা বাজার, ঢাকা-১০০০, প্রকাশকাল-২০০৬।

ওহুদের যুদ্ব ক্ষেত্র থেকে পালান হজরত আবু বকর (রাঃ) ও ওমরের (রাঃ) নামে শ্রেষ্ঠত্বের হাদিসঃ

আধুনিক প্রকাশনী প্রকাশিত বুখারী শরিফে (অধ্যায়-১, হাদিস#২২, ৮২, ৩৮৭, ৪৪৬-৪৪৭,  ৪৯৪, ১৩০২, অধ্যায় ৩, হাদিস# ২৬৩১, ৩০০২, ৩২১১, ৩৩৬২, ৩৩৮২-৮৮, ৩৩৯০, ৩৩৯২, ৩৩৯৪, ৩৩৯৬, ৩৩৯৯, ৩৪০০-০২, ৩৪০৪-০৫, ৩৪০৭-০৮, ৩৪১০-২০, ৩৪২৪, ৩৬১৭; অধ্যায়-৪, হাদিস# ৪০১২, ৪১২৫, ৪৪২৫; অধ্যায়-৫, হাদিস# ৪৮৪৩-৪৪, ৪৮৫৪, ৫৭৯৮; অধ্যায়-৬, হাদিস# ৬১৭০, ৬২৭০, ৬৫২১-২৪, ৬৫৩৩-৩৯, ৬৯৫৭) আবুবকর ও ওমরের শ্রেষ্টত্ব বর্ননা করা হয়েছে এবং রাসুলের (সাঃ) নামে বলা হয়েছে, তিনি বলেছেন,”তারপরে আর কেহ নবী হলে ওমর নবী হতেন”।

( হাদিস# ৩৪১৪, বুখারী, আধুনিক প্রকাশনী)।

অপর এক বর্ননায় পাওয়া যায় যে, “ আবুবকরের ঈমান একদিকে, আর সকল মুমিনের ঈমান একত্রে অন্যদিকে হলে, আবুবকরের একার ঈমান বেশী হবে”। হজরত আবুবকর (রাঃ) ও ওমরের (রাঃ) উভয়েই ওহুদের যুদ্ব ক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেছিলেন (মা’রেফুল কুরান,পাতা-২০০-০১,২০৮)। রাসুলকে (সাঃ) যুদ্ব ক্ষেত্রে একা ফেলে তারা চরম স্বার্থপরতার পরিচয় দিয়েছিলেন। অথচ পবিত্র কুরান বলছে, “ যুদ্ব ক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা হারাম (সুরা আনফাল,আয়াত# ১৫)।

হাদিস জালকারীগন পরাস্ত হন, নীচের লেখাটি থেকে সুষ্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায়ঃ

হজরত আয়েশার (রাঃ) হত্যাকারী মুয়াবিয়াকে (লা’নত) রক্ষার চেষ্টা করেছেন বুখারী সংকলক ইসমাইল বুখারী হোমায়দ ইবনে আব্দুর রশিদ (রাঃ) বলেন,আমি হযরত মুয়াবিয়াকে (রাঃ) একদা খোতবার মধ্যে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,আমি রাসুলকে (সাঃ) বলতে শুনেছি,তিনি ইরশাদ করেছেনঃআল্লাহ যার কল্যান মঙ্গলের ইচ্ছা করেন তাঁকে দ্বীনি ইলম দান করেন। আমি বন্টনকারী এবং আল্লাহ হলেন দাতা।এ উম্মত সর্বদা আল্লাহর হুকুমের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাঁদের বিরোধীতা করবে, কেয়ামত আসা পর্যন্ত বিরোধীরা কখনও তাঁদের ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী, হাদিস# ৭১, প্রকাশকঃ সোলায়মানী বুক হাউস, একুশে বই মেলা,২০০৬)।

সম্মানিত পাঠক খেয়াল করুন, মুয়াবিয়া ছিল হজরত আয়েশার (রাঃ) হত্যাকারী। মুয়াবিয়া গর্ত খুড়ে গর্তের ভিতর গরম চুন ঢেলে তাতে হজরত আয়েশাকে (রাঃ) নিক্ষেপ করে হত্যা করে। মুয়াবিয়ার বাপ আবু সুফিয়ান রাসুলের (সাঃ) বিরুদ্বে ২২ বছরে ২৬টি যুদ্ধের নেতৃ্ত্ব দেন। মুয়াবিয়ার মা হেন্দা ছিল রাসুলের (সাঃ) চাচা হামজার (রাঃ) কলিজা ভক্ষনকারীনি মহিলা এবং সে ছিল ততকালীন আরবের প্রতিষ্ঠিত পতিতা। মুয়াবিয়ার কুপুত্র ইয়াজিদ ছিল রাসুল (সাঃ) ঘোষিত বেহেস্তের নেতা হজরত ইমাম হুসাইনের (সাঃ) হত্যাকারী। হাদিসটির একটি অংশ-“এ উম্মত সর্বদা আল্লাহর হুকুমের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাঁদের বিরোধীতা করবে, কেয়ামত আসা পর্যন্ত বিরোধীরা কখনও তাঁদের ক্ষতি করতে পারবে না”। হাদিসের একথাটি মোটেই সঠিক না। কারন রাসুলের (সাঃ) উম্মত সর্বদা আল্লাহর হুকুমের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকেননি। রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকালের পরেই উম্মতের একটি অংশ রাসুলের (সাঃ) মনোনীত উত্তরাধীকারী ইমামকে ত্যাগ করে নিজেরা খলিফা হয়েছিল। এরপরের মুসলমানদের যে ক্ষতি উমাইয়া ও আব্বাসীয়রা করেছে ,ইতিহাস তাঁর সাক্ষী হয়ে আছে। আশা করি কুরআন ও নবী পরিবারের (আঃ) অনুসারীরা এব্যাপারে আরও বিস্তারিত সবাইকে জানাবেন। ইনশাআল্লাহ-চেপে রাখা ইতিহাস থেকে মুমিন-মুসলমানেরা শিক্ষা গ্রহন করবেন।

রাসুল (সাঃ) কাচা রসুন খেতে নিষেধ করেছেন?

৩৯০০/ আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, খায়বার যুদ্বের সময় রাসুল (সাঃ) কাচা রসুন এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। রসুন খেতে নিষেধ করেছেন এ কথা নাফে (রঃ) এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন-একথা হজরত সালেম দ্বারা বর্নিত। (বুখারী,হাদিস# ৩৯০০, প্রকাশক: সোলায়মানী বুক হাউস,একুশে বই মেলা, ২০০৬)।

বুখারী শরিফের হাদিসে হজরত আলীকে (আঃ) অপমান করা হয়েছেঃ

হজরত আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত, আমি এমন এক ব্যক্তি ছিলাম যে, আমার ‘মযী’ অধিক বের হত। এ মাসয়ালা সম্পর্কে অবগত হবার জন্য আমি এক ব্যক্তিকে আদেশ করলাম, তিনি যেন রাসুলাল্লাহকে (সাঃ) প্রশ্ন করে জেনে নেন যেহেতু তাঁর বেটি আমার স্ত্রী (আমি তাঁকে এ মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করতে লজ্জা বোধ করছি)। অতপর তিনি এ মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করলে হুযুর (সাঃ) বললেন, মযী বের হবার পর অযু করতে হবে ও পুরুষাংগ ধুয়ে নিতে হবে। (বুখারী, হাদিস# ২৬৭, প্রকাশকঃ সোলায়মানী বুক ডিপো,, ২০০৬ সাল)।

সম্মানিত পাঠক, আমরা জানি হজরত আলী (আঃ) হচ্ছেন রাসুলের (সাঃ) প্রধান সাহাবী, ২৩ বছরের কুরআন লেখক, হাফিজ-ই-কুরআন, রাসুল (সাঃ) ঘোষিত জ্ঞানের নগরীর দরজা, শেরে খোদা, রাসুলের (সাঃ) নেতৃত্বে সমস্ত যুদ্বের বিজয়ী বীর। রাসুলের (সাঃ) বানী,” জুলফিকারের মত কোন তরবারী নেই, আলীর মত কোন বীর নেই”। অথচ লক্ষ্য করুন, কিভাবে বুখারীর সংকলিত হাদিসে হজরত আলীকে (আঃ) অপমান করা হয়েছে। কুরআন ও নবী পরিবারের ১ম ইমাম হজরত আলীর (আঃ) শানে এ ধরনের অসভ্য, নির্লজ্জ মিথ্যাচার কুরআন বিরোধী।

রাসুল (সাঃ) এর হাদিস বা সুন্নত মানার গুরুত্বঃ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার দরবারে। দরূদ ও সালাম বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানব নবীকুল শিরোমণি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর মহান সাহাবীগণ এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর। প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তি মাত্রই এ কথার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ তাআলার প্রতিটি হুকুম পালন করা এবং এর পাশাপাশি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের ইত্তিবা ব্যতীত ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির কোন উপায় নেই। কুরআনের সাথে সাথে সুন্নতের অনুসরণও জরুরি। শুধু রাসূলের অনুসরণই নয় বরং মুক্তির জন্য তার প্রতি শ্রদ্ধা এবং মহব্বত থাকাও আবশ্যক।

অনুসরণ বলতে এমন অনুসরণই উদ্দেশ্য যা হবে শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসার ফলশ্রুতি। অর্থাৎ- অন্তরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মহব্বত ও ভালবাসা এত অধিক পরিমাণে থাকতে হবে যার ফলে তাঁর অনুসরণে বাধ্য হতে হয়। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরীকায় যা পালন করা হবে তা-ই আল্লাহ পাকের কাছে ইবাদত হিসেবে কবুল হবে। সুন্নত তরীকা ব্যতীত অন্য যে কোন পন্থায় ইবাদত পালন করা হউক না কেন তা প্রত্যাখ্যাত হবে। মানব জীবনের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের আদর্শ রেখে যাননি।

একটি কথা প্রচলিত আছে যে, যার সুন্নত ঠিক তার ওয়াজিবও ঠিক, যার ওয়াজিব ঠিক, তার ফরযও ঠিক। কিন্ত যার সুন্নত ঠিক থাকে না তার ওয়াজিবও ঠিক থাকে না। যার ওয়জিব ঠিক থাকে না তার ফরযও ঠিক থাকে না। আর সুন্নত হলো আল্লাহ পাক পর্যন্ত পৌঁছার সহজ মাধ্যম। যে কোন কাজে সুন্নত সম্মত তরীকার সীমারেখা অতিক্রম করাই বাড়াবাড়ি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রকার বেদআতকে কঠোর ভাবে প্রতিরোধ করেছেন। বুযুর্গানে দ্বীন নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন, তিনটি সুন্নত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যার উপর আমল করতে পারলে অন্তরে নূর পয়দা হয়, যার বরকতে অন্যান্য সকল সুন্নতের উপর আমল করা সহজ হয়ে যায় এবং অন্তরে সুন্নতের উপর আমল করার স্পৃহা জাগ্রত হয়।

(১)  আগে আগে সালাম করা ও সর্বত্র সালামের ব্যাপক প্রসার করা।

(২) প্রত্যেক ভাল কাজ ও ভাল স্থানে ডান দিককে প্রাধান্য দেয়া। যেমন মসজিদে ও ঘরে প্রবেশ কালে ডান পা আগে রাখা। পোশাক পরিধানের সময় ডান হাত ও ডান পা আগে প্রবেশ করানো। তাছাড়া তুলনায় প্রত্যেকটি নিম্নমানের কাজ এবং নিম্ন মানের স্থানে বাম দিককে প্রাধান্য দেয়া। যেমন বাথরুমে প্রবেশ কালে বাম পা আগে রাখা, বাম হাতে নাক পরিষ্কার করা, পোশাকের ভিতর হতে বাম হাত ও বাম পা আগে বের করা।

(৩)  বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা।(সূরা আহযাব:৪১, কান্যুল উম্মাল ১:৪১৪)

যেমন- প্রতিদিন কুরআন থেকে কিছু পরিমাণ তেলাওয়াত করা বা অন্যের তেলাওয়াত শ্রবণ করা। (মেশকাত ১:১৯০)।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর সুন্নত নামায থাকলে সুন্নতের পরে নতুবা ফরযের পরে ৩ বার ইস্তেগফার, একবার আয়াতুল কুরছী,একবার সূরায়ে ইখলাস, সূরায়ে ফালাক, সূরায়ে নাস, এবং তাছবীহে ফাতেমী অর্থাৎ- ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আল হামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া। (তিরমিযী ১:৯৪)।

উপরে উঠার সময় আল্লাহু আকবার, নীচে নামার সময় সুবাহানাল্লাহ, সমতল ভূমিতে চলার সময় লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে থাকা এবং প্রত্যেক কাজে মাসনুন দোআ পড়া। (দারেকুতনী ২:২৩৩)।

আল্লাহ তাআলার প্রতিটি হুকুমের এত্তেবা তো এ জন্যই করতে হবে যেহেতু তিনি আমাদের প্রভূ। আর রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এত্তেবা এ জন্য জরুরি যেহেতু রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় কথা ও কাজের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতিটি হুকুম ও নির্দেশ বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। অতএব আল্লাহর প্রতিটি হুকুম বাস্তবায়নের জন্যই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণের বিকল্প নেই।

মূলত এ কারণেই কুরআনে কারীমের একাধিক স্থানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্যের সাথে সাথে তাঁর রাসূলের আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ বলেন,

“আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবে এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল দয়ালু। আপনি বলুন! আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর। বস্তুত যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে তাহলে আল্লাহ কাফেরদেরকে ভালবাসেন না।” (সূরায়ে আল ইমরান :৩১,৩২)।

অন্যত্র আল্লাহ পাক বলেন,

তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। (সূরা আনফাল:১)

-হে মু’মিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমরা যখন তার কথা শ্রবণ করতেছ তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিও না। (সূরা আনফাল, আয়াত ২০)।

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

“তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর। আর নিজেদের আমল ধ্বংস করে দিও না।” (সূরায়ে মুহাম্মদ:৩৩)

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

“যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে।” (সূরায়ে আহযাব:৭১)।

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূল (সা.) এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, যারা আল্লাহ ও আখেরাতকে চায় ও আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে”। (সূরা আহযাব : ২১)।

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

 “কোন ঈমানদার পুরুষ ও কোন ঈমানদার নারীর এ অধিকার নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোন বিষয়ে ফায়সালা করেন, তখন সে নিজেই সে ব্যাপারে ভিন্ন কোন ফায়সালা করার ইখতিয়ার

রাখে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর যারাই আনুগত্যহীনতা দেখাবে তারা প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট ও ভ্রান্ত”। (আল আহযাব: ৩৬)।

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

হে মু’মিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাদের, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী; কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট। এটিই উত্তম ও পরিণামে প্রকৃষ্টতর। (সূরা নিসা, আয়াত-৫৯)।

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করলে আল্লাহ তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এটা মহাসাফল্য। আর কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হলে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমালংঘন করলে তিনি তাকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করবেন; সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার জন্য লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি রয়েছে (সূরা নিসা, আয়াত-১৩-১৪)।

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

আর কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করলে সে নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ-যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন- তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী। (সূরা নিসা, আয়াত ৬৯)।

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

না, হে মুহাম্মাদ (সা.), আপনার রবের কসম, তারা কখনো মু’মিন হতে পারে না যতক্ষণ তাদের পারস্পরিক মতবিরোধের ক্ষেত্রে তারা আপনাকে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নেবে, তারপর আপনি যা ফায়সালা করবেন সে ব্যাপারে নিজেদের মনের মধ্য যে কোনো প্রকার কুণ্ঠা ও দ্বিধার স্থান দেবে না, বরং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেবে।” (সুরা আন-নিসা: ৬৫)।

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

বলুন ‘আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর’। অত:পর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তিনিই দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী; এবং তোমরা তার আনুগত্য করলে, সৎপথ পাবে, আর রাসূলের কাজ তো কেবল পৌঁছে দেওয়া। (সূরা নূর, আয়াত ৫৪)।

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

ঈমানদার লোকদের কাজতো এই যে, যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ডাকা হবে- যেমন রাসূল তাদের মামলা মুকাদ্দমার ফায়সালা করে দেয় তখন তারা বলে: আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম”। (আন নূর: ৫১)।

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং রসূলের আনুগত্য করো, আশা করা যায়, তোমাদের প্রতি করুণা করা হবে”। (সুরা আন-নূর: ৫৬)

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর এবং সতর্ক হও; যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রাখ যে, স্পষ্ট প্রচারই আমরা রাসূলের কর্তব্য। (সূরা মায়িদা, আয়াত-৯২)

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে ও নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। (সূরা আনফাল, আয়াত ৪৬)।

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক। (সূরা হাশর, আয়াত ৭)।

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে আল্লাহ তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত; কিন্তু যে ব্যক্তি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে তিনি তাকে মর্মন্তুদ শাস্তি দিবেন। (সূরা ফাতহ, আয়াত ১৭)।

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

কারও নিকট সৎপথ প্রকাশিত হবার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু’মিনের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে তবে যে দিকে সে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব, আর তা কত মন্দ আবাস। (সূরা নিসা, আয়াত ১১৫)।

রাসুল (সাঃ) বলেন,

যে আমার এতায়াত বা আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে আমার হুকুম অমান্য করল, সে আল্লাহর হুকুমই অমান্য করল। যে আমীরের আনুগত্য করল, সে আমার আনুগত্য করল। আর যে আমীরের আদেশ অমান্য করল, সে প্রকৃতপক্ষে আমারই আদেশ অমান্য করল (বুখারী ও মুসলিমঃ ২/৭৭)।

রাসুল (সাঃ) বলেন,

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে শুধু যে অস্বীকার করেছে সে ছাড়া। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) কে অস্বীকার করবে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে আমার আনুগত্য করল সে জান্নাতে যাবে আর যে আমার অবাধ্য হল বা অমান্য করল, সে অস্বীকার করল। (সহীহ আল-বুখারী -২/১১২)।

রাসুল (সাঃ) এর সুন্নত অনুসরণ সংক্রান্ত সহিহ হাদিসসমূহ

 (১) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে।[1] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩), সহীহ বুখারী (তাওহীদ প্রকাশনী)-৭২৮০.।

[1] যারা আল্লাহর রাসূলের সহীহ হাদীসকে জেনে বুঝে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে পরিত্যাগ ক’রে কারো স্বকপোল কল্পিত রায় কিয়াসের অনুসরণ করে তারা আল্লাহর রাসূলের অবাধ্য। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

 (২) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদল ফেরেশ্তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন। তিনি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। একজন ফেরেশ্তা বললেন, তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ঘুমিয়ে আছেন। অন্য একজন বললেন, চক্ষু ঘুমিয়ে বটে, কিন্তু অন্তর জেগে আছে। তখন তারা বললেন, তোমাদের এ সাথীর একটি উদাহরণ আছে। সুতরাং তাঁর উদাহরণ তোমরা বর্ণনা কর। তখন তাদের কেউ বলল- তিনি তো ঘুমন্ত, আর কেউ বলল, চক্ষু ঘুমন্ত তবে অন্তর জাগ্রত। তখন তারা বলল, তাঁর উদাহরণ হল সেই লোকের মত, যে একটি বাড়ী তৈরি করল। তারপর সেখানে খানার আয়োজন করল এবং একজন আহবানকারীকে (লোকদের ডাকতে) পাঠাল। যারা আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিল, তারা ঘরে প্রবেশ করে খানা খাওয়ার সুযোগ পেল। আর যারা আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিল না, তারা ঘরেও প্রবেশ করতে পারল না এবং খানাও খেতে পারল না।

তখন তারা বললেন, উদাহরণটির ব্যাখ্যা করুন, যাতে তিনি বুঝতে পারেন। তখন কেউ বলল, তিনি তো ঘুমন্ত, আর কেউ বলল, চক্ষু ঘুমন্ত, তবে অন্তর জাগ্রত। তখন তারা বললেন, ঘরটি হল জান্নাত, আহবানকারী হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করল, তারা আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবাধ্যতা করল, তারা আসলে আল্লাহরই অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মানুষের মাঝে পার্থক্যের মাপকাঠি। কুতাইবাহ জাবির (রাঃ) থেকে এরকম হাদীস বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বের হয়ে আসলেন’’ এ কথাটি বলেছেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৪), সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৭২৮১। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 (৩) হুযাইফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে কুরআন পাঠকারী সমাজ! তোমরা (কুরআন ও সুন্নাহর উপর) সুদৃঢ় থাক। নিশ্চয়ই তোমরা অনেক পশ্চাতে পড়ে আছ। আর যদি তোমরা ডানদিকের কিংবা বামদিকের পথ অনুসরণ কর তাহলে তোমরা সঠিকপথ বহু দূরে সরে পড়বে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৫), সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৭২৮২। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

 (৪) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাক, যে পর্যন্ত না আমি তোমাদের কিছু না বলি। কেননা, তোমাদের আগে যারা ছিল, তারা তাদের নবীদেরকে বেশি বেশি প্রশ্ন করা ও নাবীদের (নবীদের) সঙ্গে মতভেদ করার জন্যই ধ্বংস হয়েছে। তাই আমি যখন তোমাদেরকে কোন ব্যাপারে নিষেধ করি, তখন তাত্থেকে বেঁচে থাক। আর যদি কোন বিষয়ে আদেশ করি তাহলে সাধ্য অনুসারে মেনে চল। [মুসলিম ১৫/৭৩, হাঃ ১৩৩৭, আহমাদ ৯৭৮৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯০), সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৭২৮৮। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

 (৫) হুযাইফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, আমানাত আসমান হতে মানুষের অন্তরের অন্তঃস্তলে অবতীর্ণ হয়েছে, তারপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং মানুষ কুরআন পাঠ করেছে এবং সুন্নাত শিক্ষা করেছে। [৬৪৯৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮০), সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৭২৭৬.। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

 (৬) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, সর্বোত্তম কালাম হল আল্লাহর কিতাব, আর সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথ নির্দেশনা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল নতুনভাবে উদ্ভাবিত পন্থাসমূহ। ‘‘তোমাদের কাছে যার ও‘য়াদা দেয়া হচ্ছে তা ঘটবেই, তোমরা ব্যর্থ করতে পারবে না’’- (সূরাহ আন‘আম ৬/১৩৪)।[1] [৬০৯৮] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮১), সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৭২৭৭।

সুন্নতের গুরুত্ব যে কতটুকু তা উপরে উল্লেখিত হাদীস শরীফ দ্বারা সহজেই অনুমান করা যায়। সুন্নত মানব জীবনের সফলতার জন্য একটি সহায়ক। যার জীবন সুন্নত তরীকা অনুযায়ী যততুটু সাজানো তার জীবনও তত আরামদায়ক জীবন এবং উন্নত । যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আরামের যিন্দিগী তালাশ করে তার জন্য সুন্নত আকড়ে ধরা উচিত। সুন্নত ব্যতীত আরামের যিন্দেগী তালাশ করা বোকামী ছাড়া কিছু নয়। আল্লাহ পাক যাদের মঙ্গল ও কল্যাণ চান তাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান এবং সুন্নত তরীকা অনুযায়ী জীবন গড়ার তৌফিক দান করেন। আল্লাহ পাক আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁর বন্ধুর তরীকায় চলার তৌফিক এনায়েত করুন। আমিন।

রাসুল (সাঃ) এর হাদিস বা সুন্নাহ না মানার পরিনাম

হাদিসগুলো পাবলিশারঃ ওয়াহীদিয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরী / গ্রন্থঃ হাদীস সম্ভার / অধ্যায়ঃ ২/ বিদআত থেকে বর্নিত।

হাদিস নম্বরঃ ১৩৪ | 134 | ۱۳٤

পরিচ্ছেদঃ ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন

(১৩৪) আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার পূর্বেও যে সকল আম্বিয়া ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের উপর এই দায়িত্ব ছিল যে, তাঁরা যা উম্মতের জন্য উত্তম বলে জানবেন, তা তাদেরকে অবহিত করবেন এবং যা তাদের জন্য মন্দ বলে জানবেন, তা হতে তাদেরকে সতর্ক করবেন। [১]

অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, প্রত্যেক নবীর জন্য জরুরী যে, তিনি তাঁর উম্মতকে সেই কাজ বাতলে দেবেন, যা তিনি তাদের জন্য সবচেয়ে ভাল বলে জানবেন।[২]

[১] আহমাদ ৬৫০৩, মুসলিম ৪৮৮২।

[২] আল-ইহকাম ১/৯০।

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

হাদিস নম্বরঃ ১৩৫ | 135 | ۱۳۵

পরিচ্ছেদঃ ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন

(১৩৫) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে লোক সকল! জান্নাতের নিকটবর্তীকারী এবং জাহান্নাম থেকে দূরকারী এমন কোন জিনিস নেই, যা আমি তোমাদেরকে করতে আদেশ করিনি। আর জাহান্নামের নিকটবর্তীকারী এবং জান্নাত থেকে দূরকারী এমন কোন জিনিস নেই, যা আমি তোমাদেরকে করতে নিষেধ করিনি। (বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১০৩৭৬, হাকেম ২১৩৬, সিলসিলাহ সহীহাহ ২৮৬৬)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৩৬ | 136 | ۱۳٦

পরিচ্ছেদঃ ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন

(১৩৬) মুত্ত্বালিব কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এমন কোন জিনিস নেই, যা আমি তোমাদেরকে আদেশ করিনি, অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তা আদেশ করেছেন এবং এমন কোন জিনিস নেই, যা আমি তোমাদেরকে নিষেধ করিনি, অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে তা নিষেধ করেছেন।’’ (বাইহাক্বী ১৩৮২৫)। (বাইহাক্বী ১৩৮২৫)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৩৭ | 137 | ۱۳۷

পরিচ্ছেদঃ ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন

(১৩৭) সাহাবী আবূ যার্র (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন অবস্থায় ছেড়ে গেছেন যে, আকাশে উড়ন্ত পাখীর ইলমও আমাদেরকে দিয়ে গেছেন।

(আহমাদ ২১৩৬১)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৩৮ | 138 | ۱۳۸

পরিচ্ছেদঃ ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন

(১৩৮) জাবের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, বিদায় হজ্জের সময় এক লক্ষ অথবা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার সাহাবার সামনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, তোমরা আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে, সুতরাং তোমরা কী বলবে? তাঁরা সকলেই বলেছিলেন যে, ‘আমরা সাক্ষ্য দেব যে, (আপনার উপর যে গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল তা) পৌঁছে দিয়েছেন, (আমানত) আদায় করে দিয়েছেন এবং (উম্মতের জন্য) হিতাকাঙ্ক্ষী ও নসীহত করেছেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসমানের দিকে আঙ্গুল তুলে এবং লোকেদের দিকে ফিরিয়ে ইঙ্গিত করে তিনবার বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? অথবা তিনি তিনবার বললেন, আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো। (মুসলিম ৩০০৯)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৩৯ | 139 | ۱۳۹

পরিচ্ছেদঃ ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন

(১৩৯) মাসরূক (রহঃ) বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) এর নিকট হেলান দিয়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ তিনি বললেন, ‘হে আবূ আয়েশা! যে ব্যক্তি তিনটের মধ্যে একটি কথা বলে, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করেঃ

(১) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মাদ তাঁর প্রতিপালক (আল্লাহ) কে দেখেছেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। যেহেতু আল্লাহ বলেন,

 দৃষ্টিসমূহ তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না, কিন্তু  দৃষ্টিসমূহ তাঁর আয়ত্বে আছে এবং তিনিই সুক্ষদর্শী; সম্যক পরিজ্ঞাত। (আনআমঃ ১০৩)

কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন ওহীর (প্রত্যাদেশ) মাধ্যম ব্যতিরেকে, অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা কোন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে; আর তখন আল্লাহ যা চান তা তাঁর অনুমতিক্রমে অহী (প্রত্যাদেশ) করেন; নিঃসন্দেহে তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়। (শূরাঃ ৫১)

বর্ণনাকারী মাসরূক বলেন, আমি হেলান দিয়ে বসে ছিলাম। এ কথা শুনে সোজা হয়ে বসে বললাম, ‘হে উম্মুল মু’মিনীন! একটু থামুন, আমার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা কি বলেননি যে,

নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল। (নাজমঃ ১৩) অবশ্যই সে তাকে স্পষ্ট দিগন্তে দর্শন করেছে। (তাকভীরঃ ২৩)

মা আয়েশা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি এ ব্যাপারে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন,

তিনি হলেন জিবরীল। তাঁকে ঐ দুইবার ছাড়া অন্য বারে তাঁর সৃষ্টিগত আসল রূপে দর্শন করিনি। যখন তিনি আসমানে অবতরণরত ছিলেন, তাঁর বিরাট সৃষ্টি-আকৃতি আকাশ-পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থানকে ঘিরে রেখেছিল!

(২) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর অবতীর্ণ কিছু অহী গোপন করেছেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। অথচ আল্লাহ বলেন, হে রসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা প্রচার কর, (যদি তা না কর, তাহলে তো তুমি তাঁর বার্তা প্রচার করলে না।) (সূরা মা‘য়িদাহ ৬৭ আয়াত)

(৩) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মাদ ভবিষ্যতের খবর জানেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। অথচ আল্লাহ বলেন, বল, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না। (নামলঃ ৬৫)। (মুসলিম ৪৫৭, তিরমিযী ৩০৬৮, প্রমুখ)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৪০ | 140 | ۱٤۰

পরিচ্ছেদঃ ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন

(১৪০) আবুত ত্বুফাইল বলেন, আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাদেরকে কোন বিশেষ জ্ঞান দান করে গেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, তিনি আমাদেরকে বিশেষ কোন জ্ঞান দিয়ে যাননি, যা সাধারণ লোকে জানে না। তবে আমার এই তরবারির খাপে যা আছে, (তা হতে পারে।) অতঃপর তিনি খাপ থেকে একটি লিখিত কাগজ বের করলেন। তাতে লিখা ছিল, আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে অভিশাপ করুন, যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করে। আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে অভিশাপ করুন, যে ব্যক্তি জমি-জায়গার চিহ্ন সরিয়ে ফেলে। আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে অভিশাপ করুন, যে ব্যক্তি বিদআতীকে আশ্রয় দেয়। (মুসলিম ৫২৪১)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৪১ | 141 | ۱٤۱

পরিচ্ছেদঃ ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন

(১৪১) আবূ জুহাইফাহ (রাঃ) বলেন, একদা আমি আলী (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের নিকট এমন কিছু (ইলম) আছে কি, যা কুরআনে নেই? উত্তরে তিনি বললেন, সেই সত্তার কসম! যিনি বীজকে অঙ্কুরিত করেন এবং প্রাণ সৃষ্টি করেন, আমাদের নিকট কুরআনে যা আছে, তার বাড়তি কিছু নেই। তবে আল্লাহর কিতাবের সমঝ এবং এই সহীফাতে যা আছে তাই। আমি বললাম, সহীফাতে কি আছে? তিনি বললেন, রক্তপণ ও বন্দী মুক্তির ব্যাপার এবং এই যে, কোন কাফেরের খুনের বদলায় কোন মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না। (বুখারী ৩০৪৭)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৪২ | 142 | ۱٤۲

পরিচ্ছেদঃ ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন

(১৪২) আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আল্লাহর) আজ্ঞাবহ দাস ছিলেন। তাঁকে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছিল, তা (উম্মতের নিকট) পৌঁছে দিয়েছেন। আর তিনটি জিনিস ছাড়া তিনি অন্যান্য মানুষকে ছেড়ে আমাদেরকে বিশেষ করে কোন কিছু দিয়ে যাননি। (১) তিনি আমাদেরকে পূর্ণরূপে ওযূ করতে আদেশ করেছেন, (২) আমাদেরকে সদকা খেতে নিষেধ করেছেন এবং (৩) ঘুড়ীর সাথে গাধার মিলন ঘটাতে নিষেধ করেছেন। (আবূ দাঊদ ৮০৮, তিরমিযী ১৭০১, নাসাঈ ১৪১,  প্রমুখ)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৪৩ | 143 | ۱٤۳

পরিচ্ছেদঃ বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধ

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

অর্থাৎ, সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি আছে? (সূরা ইউনুস ৩২ আয়াত) তিনি আরো বলেন,

অর্থাৎ, আমি কিতাবে কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে ত্রুটি করিনি। (সূরা আনআম ৩৮ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

অর্থাৎ, আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। (সূরা নিসা ৫৯ আয়াত)  অর্থাৎ, কিতাব ও সুন্নাহর দিকে।

তিনি অন্যত্র বলেছেন,

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এরই অনুসরণ কর এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। (সূরা আনআম ১৫৩ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

অর্থাৎ, বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। (সূরা আলে ইমরান ৩১)

(এ ছাড়া এ প্রসঙ্গে আরো বহু আয়াত রয়েছে। আর হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ)

(১৪৩) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কথা উদ্ভাবন করল—যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।[১]

মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি এমন কাজ করল, যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই তা বর্জনীয়।[২]

[১] বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ৪৫৮৯।

[২] মুসলিম ৪৫৯০।

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

হাদিস নম্বরঃ ১৪৪ | 144 | ۱٤٤

পরিচ্ছেদঃ বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধ

(১৪৪) জাবের (রাঃ) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিতেন, তখন তাঁর চক্ষুদ্বয় লাল হয়ে যেত এবং তাঁর আওয়াজ উঁচু হত ও তাঁর ক্রোধ কঠিন রূপ ধারণ করত। যেন তিনি (শত্রু) সেনা থেকে ভীতি প্রদর্শন করছেন। তিনি বলতেন, (সে শত্রু) তোমাদের উপর সকালে অথবা সন্ধ্যায় হামলা করতে পারে। আর তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলদ্বয় মিলিত করে বলতেন যে, আমাকে এবং কিয়ামতকে এ দু’টির মত (কাছাকাছি) পাঠানো হয়েছে। আর তিনি বলতেন, আম্মা বা’দ (আল্লাহর প্রশংসা ও সাক্ষ্য দান করার পর) নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম রীতি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রীতি। আর নিকৃষ্টতম কাজ (দ্বীনে) নব আবিষ্কৃত কর্মসমূহ এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা। অতঃপর তিনি বলতেন, আমি প্রত্যেক মু’মিনদের নিকট তার আত্মার চেয়েও নিকটতম। যে ব্যক্তি মাল ছেড়ে (মারা) যাবে, তা তার উত্তরাধিকারীদের জন্য এবং যে ঋণ অথবা অভাবী সন্তান-সন্ততি ছেড়ে যাবে, তার দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত। (মুসলিম ২০৪২)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৪৫ | 145 | ۱٤۵

পরিচ্ছেদঃ বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধ

(১৪৫) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "...আর ধ্বংসকারী কর্মাবলী হল; এমন কৃপণতা যার অনুসরণ করা হয়, এমন প্রবৃত্তি যার আনুগত্য করা হয় এবং মানুষের আত্মমুগ্ধতা।" হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৪৬ | 146 | ۱٤٦

পরিচ্ছেদঃ বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধ

(১৪৬) উক্ত আনাস (রাঃ) হতেই বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ প্রত্যেক বিদআতীর তওবা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত রাখেন (গ্রহণ করেন না), যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার বিদআত বর্জন না করেছে। (ত্বাবারানীর আওসাত্ব ৪২০২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৯৪৫৭, সহীহ তারগীব ৫৪)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৪৭ | 147 | ۱٤۷

পরিচ্ছেদঃ বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধ

(১৪৭) আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক কর্মের উদ্যম আছে এবং প্রত্যেক উদ্যমের আছে নিরুদ্যমতা। সুতরাং যার নিরুদ্যমতা আমার সুন্নাহর গণ্ডির ভিতরেই থাকে, সে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় এবং যার নিরুদ্যমতা এ ছাড়া অন্য কিছুতে (সুন্নত বর্জনে) অতিক্রম করে, সে ধ্বংস হয়ে যায়। (ইবনে আবী আসেম, ইবনে হিব্বান ১১, আহমাদ ৬৯৫৮, ত্বাহাবী, সহীহ তারগীব ৫৬)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৪৮ | 148 | ۱٤۸

পরিচ্ছেদঃ বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধ

(১৪৮) ইরবায বিন সারিয়াহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, অবশ্যই তোমাদেরকে উজ্জল (স্পষ্ট দ্বীন ও হুজ্জতের) উপর ছেড়ে যাচ্ছি; যার রাত্রিও দিনের মতই। ধ্বংসোন্মুখ ছাড়া তা হতে অন্য কেউ ভিন্নপথ অবলম্বন করবে না। (আহমাদ ১৭১৪২, ইবনে মাজাহ ৪৩, হাকেম ৩৩১, ত্বাবারানী ১৫০২৩, সহীহ তারগীব ৫৬)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৪৯ | 149 | ۱٤۹

পরিচ্ছেদঃ বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধ

(১৪৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, হাওয কওসরের পানি পান করার জন্য পিপাসার্ত লোক (কিয়ামতের) দিন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হবে। কিন্তু তাদেরকে নিরুদ্দেশ উট বিতাড়িত করার ন্যায় বিতাড়িত করা হবে। তিনি বলবেন, ওরা আমার দলের। (বা ওরা তো আমার উম্মত)। বলা হবে, আপনি জানেন না, আপনার বিগত হওয়ার পর ওরা কি নবরচনা করেছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলবেনঃ দূর হও, দূর হও।

(মুসলিম ৬০৭)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৫০ | 150 | ۱۵۰

পরিচ্ছেদঃ বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধ

(১৫০) আলী বিন আবী ত্বালেব (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে নিজ পিতামাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন দুষ্কৃতকারী বা বিদআতীকে আশ্রয় দেয় এবং আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে ভূমির (জমি-জায়গার) সীমা-চিহ্ন পরিবর্তন করে। (মুসলিম ৫২৪০)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৫১ | 151 | ۱۵۱

পরিচ্ছেদঃ বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধ

(১৫১) নাওয়াস বিন সামআন আনসারী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ সরল পথের উপমা বর্ণনা করেছেন। তার দুই পাশে আছে দুটি প্রাচীর। তাতে আছে অনেক উন্মুক্ত দুয়ার। সকল দুয়ারে পর্দা ঝুলানো আছে। পথের মাথায় একজন আহবায়ক আছে। সে আহবান করে বলছে, হে লোক সকল! তোমরা সরল পথে চলতে থাকো। বাঁকা পথে যেয়ো না। তার উপরেও একজন আহবায়ক আছে। যখনই কোন বান্দা কোন দুয়ার খুলতে চাচ্ছে, তখনই সে আহবান করে বলছে, সর্বনাশ হোক তোমার! দুয়ারের পর্দা খুলো না। কারণ খুললেই তুমি তাতে প্রবেশ করে যাবে। সরল পথ হল ইসলাম। উন্মুক্ত দরজাসমূহ হল আল্লাহর হারামকৃত বস্তুসমূহ। প্রাচীর ও পর্দাসমূহ হল আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। পথের শেষ মাথায় আহবায়ক হল কুরআন। উপরের আহবায়ক হল প্রত্যেক মুসলিমের হৃদয়ে আল্লাহর আহবায়ক। (আহমাদ ১৭৬৩৪, হাকেম ২৪৫, সহীহুল জামে’ ৩৮৮৭)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

হাদিস নম্বরঃ ১৫২ | 152 | ۱۵۲

পরিচ্ছেদঃ বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধ

(১৫২) ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, তোমরা অনুসরণ কর, নতুন কিছু রচনা করো না। কারণ তোমাদের জন্য তাই যথেষ্ট। আর তোমরা পুরাতন পন্থাই অবলম্বন কর। (সহীহ, সিলসিলা যয়ীফাহ ২/১৯)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

জাল ও জঈফ হাদিস সংক্রন্ত অধিক জ্ঞান অর্জন করতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(১) জাল হাদিসের কবলে বাংলাদেশী পির-অলি ও আলেমসমাজঃ

(২) পবিত্রতা,সালাত ও আনুসঙ্গিক বিষয়ে জাল-জইফহাদিসসমূহঃ

(৩) বারো চাঁদের সালাত ও ফযীলত সম্পর্কে মিথ্যেও বানোয়াট কিচ্ছা কাহিনী ও জাল-জইফ হাদিসসমূহঃ

(৪) প্রচলিত১১৩টি জাল-জইফ হাদিসঃ যেগুলো আলেমগণমুখস্থ বলে বেড়ায়ঃ

(৫) আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কতিপয় ভ্রান্তআক্বীদার দ্বন্দ্ব নিরসনঃ (আল কোরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক):

(৬) আযান, দোয়া ওইক্বামত নিয়ে ভুল ভ্রান্তিরদ্বন্দ্ব নিরসনঃ

(৭) জাল হাদিসের কবলে বাংলাদেশের আলেম সমাজ(২০০০টি জাল ও জঈফ হাদিস):

(৮) কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে “ভ্রান্ত আক্বিদায়সব আমলই নষ্ট” (আপনি কি মুসলমান?):  

(৯) বিদআত কি? বিদআতীদের শেষ ও করুণ পরিনতি-মাজহাব মানা বিদআত কেনো? বিদআতী ইমামের পিছনে সালাত আদায় করার হুকুম কি?

ভন্ড ও বিদআতী পির-অলি ও আলেমদের করুণ পরিনতির দলীলসমূহঃ

১। হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না  কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ? এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো আর আমার আয়াত  ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)।

২। যারা তাঁর (রাসুলসঃ)  হুকুমের বিরুদ্ধাচারন করে  এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য যে, তারা মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে।  (নূর-৬৩)।

৩। সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য  ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম  (সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন। (কোরআন-৪:১১৫)।

৪। “তোমরা কি কোরআনের কোন কোন অংশ (আয়াত) মানো আর কোন কোন অংশ মানো না? অত:পর যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্য থেকে এরুপ কাজ  করবে – পার্থিব জীবনে প্রকাশ্য লাঞ্চণা ভোগ করা আর কিয়ামতের দিনে ভীষণ শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার আর কী সাজা হতে পারে! আর আল্লাহ তো তোমাদের কার্য কলাপ সম্বন্ধেবে- খবর নন। (বাকারা-৮৫)।

৫। “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)।

৬। আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি হাউজে কাউসারের নিকট তোমাদের আগেই হাজির থাকবো। তোমাদের থেকে কিছু লোককে আমার নিকট পেশ করা হবে। কিন্তু আমি যখন তাদের পান করাতে উদ্যত হবো, তখন তাদেরকে আমার নিকট হতে ছিনিয়ে নেয়া হবে। আমি বলবো, হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার পর তারা নতুন (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম, যা আপনি করতে বলেননি)  কী ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৩, সহিহ বুখারী-হাদিস নং-৭০৪৯)।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৭। সাহ্ল ইব্নু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে বলতে শুনেছি যে, আমি হাউজের ধারে তোমাদের আগে হাজির থাকব। যে সেখানে হাজির হবে, সে সেখান থেকে পান করার সুযোগ পাবে। আর যে একবার সে হাউজ থেকে পান করবে সে কখনই পিপাসিত হবে না। অবশ্যই এমন কিছু দল আমার কাছে হাজির হবে যাদের আমি (আমার উম্মাত বলে) চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। কিন্তু এরপরই তাদের ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা দাড় করে দেয়া হবে।

আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, আমি হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এমন সময় নু’মান ইব্নু আবূ আয়াস আমার নিকট হতে এ হাদীসটি শুনে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি সাহ্ল থেকে হাদীসটি এরূপ শুনেছেন। আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন সে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) - কে এ হাদীসে অতিরিক্ত বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলবেনঃ এরা তো আমারই অনুসারী। তখন বলা হবে, আপনি নিশ্চয় জানেন না যে, আপনার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কি পরিবর্তন করেছে (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম, যা আপনি করতে বলেননি) । এ শুনে আমি বলব, যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে, তারা (বিদআতী পির-অলি ও আলেম) দূর হোক, দূর হোক। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৪, সহিহ বুখারী-হাদিস নং-৭০৫০)।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৮। “হোজায়ফা  (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, মুসলিম সমাজে এমন লোকদের আবির্ভাব হইবে যাহারা আমার নীতি ছাড়া অন্য নীতিও অবলম্বন করিবে। তাহাদের কোন কোন কাজ ভালো এবং কোন কাজ মন্দও দেখিতে পাইবে।”(বুখারী)।

৯। “যে ব্যক্তি নিজের মতবাদকে কেন্দ্র করে তার নিয়ন্ত্রনে কোরআনের ব্যাখ্যা করে- যে ব্যক্তি কোরআনের নির্দেশ অনুসারে স্বীয় মতবাদ স্থির করে না; বরং স্বীয় মতবাদের  নির্দেশ  অনুসারে কোরআনের ব্যাখ্যা করে, শাব্দিক অর্থে ঐ ব্যাখ্যা শুদ্ধ হলেও বস্তুত তা ভুল পরিগণিত।” (মেশকাত)।

১০। নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন: হযরত হারিসুল আশয়ারী (রঃ)হতে বর্ণিতঃ

নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি (১) জামায়াত বদ্ধ হবে (২) নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে (৩) তার আদেশ মেনে চলব (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে (৫) আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, যে ব্যক্তি ইসলামি সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত দূরে সরে গেল, সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তন করে তো স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীতির দিকে (লোকদের) আহবান জানায় সে জাহান্নামী। যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)।

১১। আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেনঃ কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৭২৮০,আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)।

১২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহুআনহু হতে বর্ণিত,

 তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক কোন কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, আর সে (যদি উত্তর না দিয়ে) তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে (জাহান্নামের) আগুনের লাগাম পরানো হবে।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান)

তিরমিযী ২৬৪৯, ইবনু মাজাহ ২৬৬, আহমাদ ৭৫১৭, ৭৮৮৩, ৭৯৮৮, ৮৩২৮, ৮৪২৪, ১০০৪৮।

১৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহুআনহু হতে বর্ণিত,

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন জ্ঞান অর্জন করল, যার দ্বারা আল্লাহ আয্যা অজাল্লার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা সে কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করল, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না।” (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সানাদ)-আবূ দাউদ ৩৬৬৪, ইবনু মাজাহ ২৫২, আহমাদ ৮২৫২।

১৪। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,

 তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইলম তুলে নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নেবেন (অর্থাৎ আলেম দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মূর্খ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)

(সহীহুল বুখারী ১০০, ৭৩০৭, মুসলিম ২৬৭৩, তিরমিযী ২৬৫২, ইবনু মাজাহ ৫২, আহমাদ ৬৪৭৫, ৬৭৪৮, ৬৮৫৭, দারেমী ২৩৯)

১৫। কা’ব বিন মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে, “যে ব্যক্তি উলামাদের সাথে তর্ক করার জন্য, অথবা মূর্খ লোকেদের সাথে বচসা করার জন্য এবং জন সাধারণের সমর্থন (বা অর্থ) কুড়াবার জন্য ইল্ম অন্বেষণ করে, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ জাহান্নাম প্রবেশ করাবেন।” (তিরমিযী ২৬৫৪, ইবনে আবিদ্দুনয়্যা, হাকেম ২৯৩, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭২, সহীহ তারগীব ১০০)

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৬। আলী (রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার উপর মিথ্যা বলো না। যেহেতু যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করল, সে যেন দোযখে প্রবেশ করল।” (বুখারী ১০৬, মুসলিম ২)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৭। সালামাহ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমি যা বলিনি তা বানিয়ে বলে, সে যেন নিজের ঠিকানা দোযখে বানিয়ে নেয়। (বুখারী ১০৯)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

১৮। মুগীরাহ বিন শু’বাহথেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার পক্ষ থেকে কোন এমন হাদীস বর্ণনা করে যার বিষয়ে সে মনে করে যে তা মিথ্যা, তাহলে সে (বর্ণনাকারী) মিথ্যাবাদীদের একজন।” (মুসলিম, সহীহুল জামে’ ৬১৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

১৯।  আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “শেষ যুগে আমার উম্মতের মধ্যে এমন কতক লোক হবে (বিদআতী পির-অলি ও আলেম), যারা তোমাদেরকে সেই হাদীস বর্ণনা করবে, যা তোমরা এবং তোমাদের পিতৃ পুরুষরাও শ্রবণ করেনি সুতরাং তোমরা তাদের হতে সাবধান থেকো।” (মুসলিম ১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২০। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আখেরী যামানায় বহু ধোকাবাজ মিথ্যাবাদী হবে; যারা তোমাদের কাছে এমন এমন হাদীস নিয়ে উপস্থিত হবে, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপদাদারাও কোন দিন শ্রবণ করেনি। সুতরাং তোমরা তাদের থেকে সাবধান থেকো; তারা যেন তোমাদেরকে ভ্রষ্টতা ও ফিতনায় না ফেলে।” (মুসলিম ১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২১। উক্ত আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার নামে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলে, সে যেন নিজের বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।” (বুখারী ১১০, ৬১৯৭, মুসলিম ৪)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২২। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “বিনা ইল্মে যাকে ফতোয়া দেওয়া হয় (এবং সেই ভুল ফতোয়া দ্বারা সে ভুল কর্ম করে) তবে তার পাপ ঐ মুফতীর উপর এবং যে ব্যক্তি তার ভাইকে এমন পরামর্শ দেয় অথচ সে জানে যে তার জন্য মঙ্গল অন্য কিছুতে আছে, তবে সে ব্যক্তি তার খিয়ানত (বিশ্বাসঘাতকতা) করে।” (আবূ দাঊদ ৩৬৫৯, হাকেম ৩৫০, সহীহুল জামে’ ৬০৬৮)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৩। আবূ সাঈদ খুদরীথেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তার দ্বারা আল্লাহর নিকট জান্নাত প্রার্থনা কর, তাদের পূর্বে পূর্বে যারা কুরআন শিক্ষা করে তার দ্বারা দুনিয়া যাচনা করবে। যেহেতু কুরআন তিন ব্যক্তি শিক্ষা করে; প্রথমতঃ সেই ব্যক্তি যে তার দ্বারা বড়াই করবে। দ্বিতীয়তঃ সেই ব্যক্তি যে তার দ্বারা উদরপূর্তি করবে এবং তৃতীয়তঃ সেই ব্যক্তি যে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে তেলাঅত করবে।’ (বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ২৬৩০, সিঃ সহীহাহ ২৫৮)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৪। আবু দারদা (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষাদানের উপর একটি ধনুকও গ্রহণ করবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার পরিবর্তে জাহান্নামের আগুনের ধনুক তার গলায় লটকাবেন।” (বাইহাক্বী ১১৪৬৫, সহীহুল জামে’ ৫৯৮২)

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৫। জারীর বিন আব্দুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে সম্প্রদায় যখন বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি থাকে, যার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি তারা তাদেরকে বাধা না দেয় (এবং ঐ পাপাচরণ বন্ধ না করে), তাহলে (তাদের জীবদ্দশাতেই) মহান আল্লাহ তাদেরকে ব্যাপকভাবে তাঁর কোন শাস্তি ভোগ করান।” (আহমাদ ৪/৩৬৪, আবূ দাউদ ৪৩৩৯, ইবনে মাজাহ ৪০০৯, ইবনে হিব্বান, সহীহ আবূ দাউদ ৩৬৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

২৬। আবূ হুরাইরাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি (কাউকে) সৎপথের দিকে আহবান করবে, সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী পাবে। এটা তাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কম করবে না। আর যে ব্যক্তি (কাউকে) ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করবে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ চাপবে। এটা তাদের গোনাহ থেকে কিছুই কম করবে না।” (মুসলিম ৬৯৮০ প্রমুখ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৭। আবূ যায়দ উসামাহইবনে যায়দ ইবনে হারেষাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ‘ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, ‘অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!” (বুখারী ৩২৬৭, মুসলিম ৭৬৭৪)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৮। আনাস (রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “আমি মি’রাজের রাতে এমন একদল লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি যারা আগুনের কাঁচি দ্বারা নিজেদের ঠোঁট কাটছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে জিবরীল! ওরা কারা?’ তিনি বললেন, ‘ওরা আপনার উম্মতের বক্তাদল (বিদআতী পির-অলি ও আলেম); যারা নিজেদের বিস্মৃত হয়ে মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দিত, অথচ ওরা কিতাব (গ্রন্থ) অধ্যয়ন করত, তবে কি ওরা বুঝত না।” (আহমাদ ১২২১১, ১২৮৫৬ প্রভৃতি, ইবনে হিব্বান ৫৩, ত্বাবারানীর আওসাত্ব ২৮৩২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭৩, আবূ য়্যা’লা ৩৯৯২, সহীহ তারগীব ১২৫)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

২৯। উমার বিন খাত্তাব(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “ইসলাম বিজয় লাভ করবে। যার ফলশ্রুতিতে বণিকদল সমুদ্রে বাণিজ্য-সফর করবে। এমন কি অশ্বদল আল্লাহর পথে (জিহাদে) অবতরণ করবে। অতঃপর এমন একদল লোক প্রকাশ পাবে; যারা কুরআন পাঠ করবে (দ্বীনী ইলম শিক্ষা করে ক্বারী ও আলেম হবে)। তারা (বড়াই করে) বলবে, ‘আমাদের চেয়ে ভালো ক্বারী আর কে আছে? আমাদের চেয়ে বড় আলেম আর কে আছে? আমাদের চেয়ে বড় ফকীহ (দ্বীন-বিষয়ক পন্ডিত) আর কে আছে?’ অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবাগণের উদ্দেশ্যে বললেন, “ওদের মধ্যে কি কোন প্রকারের মঙ্গল থাকবে?” সকলে বলল, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই অধিক জানেন।’তিনি বললেন, “ওরা তোমাদেরই মধ্য হতে এই উম্মতেরই দলভুক্ত। কিন্তু ওরা হবে জাহান্নামের ইন্ধন।”(ত্বাবারানীর আউসাত্ব ৬২৪২, বাযযার, সহীহ তারগীব ১৩৫)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩০। ইবনে মাসঊদ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ

“তোমরা অনুসরণ কর, নতুন কিছু রচনা করো না। কারণ তোমাদের জন্য তাই যথেষ্ট। আর তোমরা পুরাতন পন্থাই অবলম্বন কর।” (সহীহ, সিলসিলা যায়ীফাহ ২/১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

৩১। আলী বিন আবী তালেব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে নিজ পিতামাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন দুষ্কৃতকারী বা বিদআতীকে আশ্রয় দেয় এবং আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে ভূমির (জমি-জায়গার) সীমা-চিহ্ন পরিবর্তন করে।” (মুসলিম ৫২৪০নং)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

৩২। আবূ হুরাইরাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে, সেই সত্তার কসম! এই উম্মতের যে কেউ---ইয়াহুদী হোক বা খ্রিস্টান আমার কথা শুনবে, অতঃপর যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তার প্রতি ঈমান আনবে না, সেই জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (মুসলিম ৪০৩)

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৩। ইবনে মাসঊদ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী (আল্লাহর অবাধ্যাচরণ) এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী।” (বুখারী ৪৮, ৬০৪৪, মুসলিম ২৩০, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৪। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে উৎসব কেন্দ্রে পরিণত করো না (যেমন কবর-পূজারীরা উরস ইত্যাদির মেলা লাগিয়ে ক’রে থাকে)। তোমরা আমার প্রতি দরূদ পেশ কর। কারণ, তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের পেশকৃত দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়।” (আবূ দাঊদ ২০৪৪ নং, বিশুদ্ধ সূত্রে, সহীহুল জামে’ ৭২২৬ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

৩৫। সুহাইল থেকে বর্ণিতঃ

একদা (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাতির ছেলে) হাসান বিন হাসান বিন আলী আমাকে কবরের নিকট দেখলেন। তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। সেই সময় তিনি ফাতেমার বাড়িতে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। আমি উপস্থিত হলে তিনি বললেন, ‘এসো খানা খাও।’ আমি বললাম, ‘খাবার ইচ্ছা নেই।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘কী ব্যাপার যে, আমি তোমাকে কবরের পাশে দেখলাম?’ আমি বললাম, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে সালাম দিলাম।’ তিনি বললেন, ‘যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সালাম দেবে।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে ঈদ বানিয়ে নিয়ো না। তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ে নিয়ো না। তোমরা যেখানেই থাক, সেখান থেকেই আমার উপর দরূদ পাঠ কর। কারণ তোমাদের দরূদ আমার নিকট (ফেরেশতার মাধ্যমে) পৌঁছে যায়। আল্লাহ ইয়াহুদকে অভিশাপ করুন। কারণ তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদ (সিজদা ও নামাযের স্থান) বানিয়ে নিয়েছে।” (এ ব্যাপারে এখানে) তোমরা এবং উন্দুলুসের লোকেরা সমান।’ (সুনান সাঈদ বিন মানসূর, আহকামুল জানায়েয, আলবানী ২২০পৃঃ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬। আবূ উমামা (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার উম্মতের দুই শ্রেণির লোক আমার সুপারিশ লাভ করতে পারবে না; (বিবেকহীন) অত্যাচারী রাষ্ট্রনেতা এবং প্রত্যেক সত্যত্যাগী অতিরঞ্জনকারী।” (ত্বাবারানী ৮০০৫, সহীহুল জামে’ ৩৭৯৮ নং)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

৩৭। আরফাজাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “অদূর ভবিষ্যতে বড় ফিতনা ও ফাসাদের প্রার্দুভাব ঘটবে। সুতরাং যে ব্যক্তি এই উম্মতের ঐক্য ও সংহতিকে (নষ্ট করে) বিচ্ছিন্নতা আনতে চাইবে সে ব্যক্তিকে তোমরা তরবারি দ্বারা হত্যা করে ফেলো; তাতে সে যেই হোক না কেন।” (মুসলিম ৪৯০২ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৮। ষাওবান (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমি আমার উম্মতের উপর ভ্রষ্টকারী ইমাম (আলেম ও নেতা প্রভৃতি)র দলকেই ভয় করি।” (আহমাদ ২২৩৯৩, আবূ দাঊদ ৪২৫৪, তিরমিযী ২২২৯ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৯। আবূ সাঈদ (রাঃ)ও আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ বলেছেন, “আমার উম্মতের মাঝে মতবিরোধ ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হবে। একদল হবে যাদের কথাবার্তা সুন্দর হবে এবং কর্ম হবে অসুন্দর। তারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের গলদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তারা (সেইরূপ দ্বীনে) ফিরে আসবে না, যেরূপ তীর ধনুকে ফিরে আসে না। তারা সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি। শুভ পরিণাম তার জন্য, যে তাদেরকে হত্যা করবে এবং যাকে তারা হত্যা করবে। তারা আল্লাহর কিতাবের দিকে মানুষকে আহবান করবে, অথচ তারা (সঠিকভাবে) তার উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকবে না। যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, সে হবে বাকী উম্মত অপেক্ষা আল্লাহর নিকটবর্তী। তাদের চিহ্ন হবে মাথা নেড়া।” (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ, হাকেম, সহীহুল জামে’ ৩৬৬৮ নং)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

৪০। আবূ বাকরাহ থেকেবর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “----- এক জাতি হবে যারা গরুর লেজ ধরে চাষবাস করবে এবং জিহাদে বিমুখতা প্রকাশ করবে, তারা হবে ধ্বংস।” (আবূ দাঊদ ৪৩০৬, মিশকাত ৫৪৩২ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৪১। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ সে জিহাদ করেনি এবং অন্তরে জিহাদ সম্পর্কে কোন চিন্তা-ভাবনাও করেনি, সে মুনাফিক্বীর একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করল।” (মুসলিম ৫০৪০, আবূ দাঊদ ২৫০৪ নং)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

৪২। (১) মাসরূক থেকে বর্ণিতঃ

আমি আয়েশা (রাঃ)র নিকট হেলান দিয়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ তিনি বললেন, ‘হে আবূ আয়েশা! যে ব্যক্তি তিনটের মধ্যে একটি কথা বলে, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করেঃ

(ক) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মদ তাঁর প্রতিপালক (আল্লাহ)কে দেখেছেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। যেহেতু আল্লাহ বলেন, “দৃষ্টিসমূহ তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না, কিন্তু দৃষ্টিসমূহ তাঁর আয়ত্বে আছে এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী; সম্যক পরিজ্ঞাত।” (আনআমঃ ১০৩)।

(খ) “কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন ওহীর (প্রত্যাদেশ) মাধ্যম ব্যতিরেকে, অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা কোন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে; আর তখন আল্লাহ যা চান তা তাঁর অনুমতিক্রমে অহী (প্রত্যাদেশ) করেন; নিঃসন্দেহে তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়।” (শূরাঃ ৫১)

(গ) বর্ণনাকারী মাসরূক বলেন, আমি হেলান দিয়ে বসে ছিলাম। এ কথা শুনে সোজা হয়ে বসে বললাম, ‘হে উন্মুল মু’মিনীন! একটু থামুন, আমার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবেন না। আল্লাহ তাআলা কি বলেননি যে,

“নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল।” (নাজ্মঃ ১৩) “অবশ্যই সে তাকে স্পষ্ট দিগন্তে দর্শন করেছে।” (তাকভীরঃ ২৩)

মা আয়েশা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি এ ব্যাপারে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন,

“তিনি হলেন জিব্রীল। তাঁকে ঐ দুইবার ছাড়া অন্য বারে তার সৃষ্টিগত আসল রূপে দর্শন করিনি। যখন তিনি আসমানে অবতরণরত ছিলেন, তাঁর বিরাট সৃষ্টি-আকৃতি আকাশ-পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থানকে ঘিরে রেখেছিল!”

(২) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মদ আল্লাহর অবতীর্ণ কিছু অহী গোপন করেছেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। অথচ আল্লাহ বলেন, “হে রসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা প্রচার কর (যদি তা না কর, তাহলে তো তুমি তাঁর বার্তা প্রচার করলে না।)” (সূরা মাইদাহ ৬৭ আয়াত)

(৩) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মাদ ভবিষ্যতের খবর জানেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। অথচ আল্লাহ বলেন, “বল, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না।” (নাম্লঃ ৬৫), (মুসলিম ৪৫৭নং, তিরমিযী ৩০৬৮নং, প্রমুখ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৪৩। বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধঃ

(ক) আল্লাহ তাআলা বলেন,

অর্থাৎ, সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি আছে? (সূরা ইউনুস ৩২ আয়াত)

(খ) তিনি আরো বলেন,

অর্থাৎ, আমি কিতাবে কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে ক্রটি করিনি। (সূরা আনআম ৩৮ আয়াত)

(গ) তিনি আরো বলেন,

অর্থাৎ, আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। (সূরা নিসা ৫৯ আয়াত) অর্থাৎ, কিতাব ও সুন্নাহর দিকে।

(ঘ) তিনি অন্যত্র বলেছেন,

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এরই অনুসরণ কর এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন ক’রে ফেলবে। (সূরা আনআম ১৫৩ আয়াত)

(ঙ) তিনি আরো বলেন,

অর্থাৎ, বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। (সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)

এ ছাড়া এ প্রসঙ্গে আরো বহু আয়াত রয়েছে। আর হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ

৪৪। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

(ক) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কথা উদ্ভাবন করল---যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।” (বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ৪৫৮৯নং)

(খ) মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল, যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই তা বর্জনীয়।” (৪৫৯০নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

৪৫। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নসীহত করার জন্য আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি বললেন, “হে লোক সকল! তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট উলঙ্গ পা, উলঙ্গ দেহ ও খাতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। (আল্লাহ বলেন,) ‘যেমন আমি প্রথম সৃষ্টি করেছি আমি পুনর্বার তাকে সেই অবস্থায় ফিরাবো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা, যা আমি পুরা করব।’ (সূরা আম্বিয়া ১০৪)

জেনে রাখো! কিয়ামতের দিন সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম ইব্রাহীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বস্ত্র পরিধান করানো হবে। আরো শুনে রাখ! সে দিন আমার উম্মতের কিছু লোককে নিয়ে আসা হবে অতঃপর তাদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর আমি বলব, ‘হে প্রভু! এরা তো আমার সঙ্গী।’কিন্তু আমাকে বলা হবে, ‘এরা আপনার (মৃত্যুর) পর (দ্বীনে) কী কী নতুন নতুন রীতি আবিষ্কার করেছিল, তা আপনি জানেন না।’(এ কথা শুনে) আমি বলব--যেমন নেক বান্দা (ঈসা (আঃ) বলেছিলেন, “যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই তো ছিলে তাদের ক্রিয়াকলাপের পর্যবেক্ষক। আর তুমি সর্ববস্তুর উপর সাক্ষী। তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তোমারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’(সূরা মায়েদা ১১৭) অতঃপর আমাকে বলা হবে যে, ‘নিঃসন্দেহে আপনার ছেড়ে আসার পর এরা (ইসলাম থেকে) পিছনে ফিরে গিয়েছিল।’(বুখারী ৩৩৪৯, মুসলিম ৭৩৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

বিদআতী পির-অলি ও আলেমদের তওবাও কবুল হয় না যতক্ষণ না---

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ প্রত্যেক বিদআতীর তওবা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত রাখেন (গ্রহণ করেন না), যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার বিদআত বর্জন না করেছে।” (ত্বাবারানীর আওসাত্ব ৪২০২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৯৪৫৭, সহীহ তারগীব ৫৪নং)।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

সুপ্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরাঃ আমাদের সমাজে সম্প্রতি হাজার হাজার বিদআতী পির-অলি ও আলেমের আবির্ভাব ঘটেছে। এই সব ভন্ড আলেম আগেও ছিল বর্তমানেও আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। ইতিমধ্যে ভন্ডরা হাদিস নামে মিথ্যে কিচ্ছা কাহিনী বলে বলে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। এক সময় তারা যা বলতো সাধারন মুসলমান তাই বিশ্বাস করতো। কিন্তু বর্তমানে কোরআন ও হাদিসের সহিহ চর্চার কারনে বিশেষ করে ইসলামি ফাউন্ডেশন কর্তৃক হাদিস গ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ করায় সকল শিক্ষিত মুসলমানরা যখন আদ্যোপান্ত পড়ে বুঝতে পারল যে, এতোদিন ভন্ড আলেমরা শুধুই মনগড়া মিথ্যে ওয়াজ করেছে আর বর্তমানে এসবের বিরোধীতা করায় তথা বিদআতীদের গোপন রহস্য ফাঁস করায়  এই সব ভন্ড আলেমদের ধর্ম ব্যবসায় ধ্বস নামা শুরু হয়েছে। আফসোসের বিষয় এদের মধ্যে আছে কোরআনের হাফেজ, হাদিসের হাফেজ বা মুফতি, মুহাদ্দিস, পির, অলি আবার অনেকে আছে ডক্টরেট পাশ। কিন্তু এরা সকলেই জাল-জইফ হাদিস ভিত্তিক যেমন ওয়াজ করে তেমনি বিভিন্ন বিদআতী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। এরা  এক দিকে যেমন গোমরাহী হয়ে জাহান্নামী হচ্ছে তেমনি এদের সাগরেদ বা মুরিদ কিংবা অনুসারীদেরকেও জাহান্নামী বানাচ্ছে। ইমান আমল নষ্ট করে দিচ্ছে।

এই দলের মধ্যে আছে বাংলাদেশের তথা কথিত ভন্ড পির বা অলি এবং আরেক শ্রেণির ওয়াজকারী ধর্ম ব্যবসায়ী।

আপনারা একটা কথা মনে রাখবেন, আল্লাহকে ডাকতে কোনো মাধ্যম লাগে না। কোরআন আছে পড়বেন, জানবেন, মানবেন আর সহিহ হাদিস কোথায় পাবেন? বোখারীতেও জাল হাদিস, মিশকাতেও জাল হাদিস, এখন সাধারন মুসলমানরা বুঝবে কেমনে? আপনাদেরকে সঠিক তথ্য দেয়ার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা। আপনারা আমার ব্লগে নিয়মিত অধ্যায়ন করতে থাকুন, দেখবেন ধাপে ধাপে সব পেয়ে যাবেন ইন শা আল্লাহ।

----------------------------------------------------------------------------------------

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

-----------------------------------------------------------------------------------------------

আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।

(১) “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)

(২) “তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন।

(সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)।

(৩) নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

 “যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]

(৪) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী ৩৪৬১,হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮,  রিয়াদুস  সলেহিন,  হাদিস নং  ১৩৮৮।)

---------------------------------------------------------------------------------------

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

উপদেষ্টা-

মোঃ আনোয়ার হোসাইন আকন্দ (কামিল, ফার্স্ট ক্লাশ-আল হাদিস)

সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়া, ঢাকা, বাংলাদেশ।

ইসলামি সকল পর্ব এক সাথে দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুনঃ

MSHRC

-----------------------------------------------------------------

(1) BCSসহ যেকোনো সরকারি বেসরকারি চাকরি সহজে পেতে এখানে ক্লিক করুন।

BBC

(2) মজার মজার ইসলামিক গজল ও অন্যান্য বিষয়ের ভিডিও দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন।

GAIBANDHAPEACE TV

-------------------------------------------------------------------

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...