বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করার ভয়াবহ পরিনতি
অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করার ভয়াবহ পরিনতি
অন্যের জিনিস আত্মসাৎ করা গর্হিত অপরাধ। কোনো
প্রকৃত ধার্মিক ও রুচিশীল ভদ্র মানুষ এমন করতে পারে না। তাই যে যা আত্মসাৎ করবে, তা
নিয়ে বিচারের মাঠে উপস্থিত হবে।
আল্লাহতায়ালা বলেন, “কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয় যে, সে আত্মসাৎ করবে। আর
যে কেউ কিছু আত্মসাৎ করবে, সে তার আত্মসাৎ করা বস্তু নিয়ে কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে।
অতঃপর (সেদিন) প্রত্যেকে যে যা অর্জন করেছে, তা পূর্ণ মাত্রায় প্রদত্ত হবে এবং তাদের
প্রতি কোন যুলুম করা হবে না”। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত:
১৬১)।
বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)....আদী ইবনু
উমাইরাহ্ আল-কিন্দী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আমরা তোমাদের মধ্যে যাকে আদায়কারী নিযুক্ত করি, আর সে
একটি সূচ পরিমাণ বা তার চাইতেও কম মাল আমাদের কাছে গোপন করে, তাই আত্মসাৎ বলে গণ্য
হবে এবং তা নিয়েই কিয়ামতের দিন সে উপস্থিত হবে। রাবী বলেন, তখন একজন কৃষ্ণকায় আনসারী
(সাহাবী) তার দিকে অগ্রসর হলেন, আমি যেন তাকে দেখতে পাচ্ছি। তিনি আরয করলেন, হে আল্লাহর
রসূল! আপনার দায়িত্বভার আপনি বুঝে নিন। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তোমার কী হয়েছে? তিনি আরয করলেন, আমি আপনাকে এরূপ এরূপ (কঠিন ভাষা) বলতে শুনেছি।
তখন তিনি বললেন, আমি এখনও বলছি, তোমাদের মধ্যকার যাকেই আমি কর্মচারী নিযুক্ত করি আর
সে অল্প বিস্তর যা-ই আদায় করে এনে উপস্থিত করে, তারপর তাকে যা-ই দেয়া হয় তা-ই গ্রহণ
করে এবং যা থেকে নিষেধ করা হয় তা থেকে বিরত থাকে (তার জন্য ভয়ের কারণ নেই)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩৩,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৯১, ইসলামিক সেন্টার ৪৫৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
আল্লাহতায়ালা বলেন,
“তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের ধন অন্যায়ভাবে
গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে
বিচারকগণকে ঘুষ দিও না”। (সুরা আল বাকারা ১৮৮)।
১৮৮ নং আয়াতের তাফসীরঃ
অত্র আয়াতে মানুষের সম্পদে স্বতন্ত্র অধিকার
নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একজন মানুষ অন্যায়ভাবে যেমন মিথ্যা শপথ, ডাকাতি, চুরি, ঘুষ
নিয়ে ও সুদ খেয়ে অন্যের সম্পদ হরণ করবে তা হারাম।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ ইবনু কা’নাব (রহঃ)....আবূ
হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর ধোকাবাজি করো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো
না, একে অপরের ক্ষতি করার উদ্দেশে অগোচরে শত্রুতা করো না এবং একে অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের
উপর ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকো।
এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করবে না, তাকে অপদস্ত করবে না এবং
হেয় প্রতিপন্ন করবে না। তাকওয়া এখানে, এ কথা বলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তিনবার তার বক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই
যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় জ্ঞান করে। কোন মুসলিমের উপর প্রত্যেক মুসলিমের জান-মাল
ও ইযযত-আবরু হারাম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৩৫,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৫৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৫৮,
আহমাদ ৭৭২৭, শু‘আবুল ঈমান ৬৬৬০, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৩০৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাফেয ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন, এখানে ঐ সব ব্যক্তিদের
আলোচনা করা হচ্ছে, যাদের কাছে অপরের কোন প্রাপ্য থাকে কিন্তু প্রাপকের নিকট তার প্রাপ্য
অধিকারের কোন প্রমাণ থাকে না, ফলে এ দুবর্লতার সুযোগ গ্রহণ করে সে আদালতের আশ্রয় নিয়ে
বিচারকের মাধ্যমে নিজের পক্ষে ফায়সালা করিয়ে নেয় এবং এভাবে সে প্রাপকের অধিকার হরণ
করে। এটা জুলুম ও হারাম। আদালতের ফায়সালা জুলুম ও হারামকে বৈধ ও হালাল করে দিতে পারে
না। আদালত কেবল বাহ্যিক দিক অবলোকন করে বিচার করে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন,
উম্মু
সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা
আমার নিকট মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে আস। আর তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত প্রতিপক্ষের তুলনায়
প্রমাণ সাক্ষী পেশ করার ব্যাপারে অধিক বাকপটু। তবে জেনে রেখ, বাকপটুতার কারণে যার পক্ষে
আমি তার ভাইয়ের প্রাপ্য হক ফায়সালা করে দেই, তার জন্য আসলে আমি জাহান্নামের অংশ নির্ধারণ
করে দেই। কাজেই, সে যেন তা গ্রহণ না করে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৬৮০, ২৪৫৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫০১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কাতাদাহ (রহঃ) বলেন, হে আদম সন্তান! জেনে রেখ,
বিচারকের মীমাংসা তোমার জন্য হারামকে হালাল এবং অন্যায়কে ন্যায় করে দিতে পারে না। বিচারক
সাক্ষীদের সাক্ষ্য অনুসারে বাহ্যিক অবস্থা দেখে বিচার করে। তাছাড়া তিনি মানুষ, তার
দ্বারা ভুল হওয়াও সম্ভব। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়তের তাফসীর)
অতএব এরূপ ধোঁকাবাজী ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে
অন্যের সম্পদ ভোগ করলে এর বিনিময়ে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
বান্দার হক
বান্দার হককে আমরা তুচ্ছ মনে করি, কিন্তু বান্দার
হক নষ্ট করা আল্লাহর হক নষ্ট করার চেয়েও ভয়াবহ।
হক দুই প্রকারঃ-
(ক) আল্লাহর
প্রতি হক,
(খ) বান্দার
প্রতি হক
আল্লাহর প্রতি হকঃ
আল্লাহর হক নষ্ট করলে আল্লাহ চাইলে শিরক ব্যতীত
অন্য যে কোন গুনাহ ক্ষমা করতে পারেন।
আল্লাহতায়ালা বলেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী (শিরক) করার
অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যার জন্য ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। আর যে কেউ
আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন (শিরক) করে, সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়”। (সূরা নিসা: ১১৬)।
তবে এই আয়াতে উল্লেখিত গুনাহ হচ্ছে নামাজ,
রোজা, হজ্জ, যাকাত যেগুলো আল্লাহর হক সেগুলো পালন না করার গুনাহ।
বান্দার প্রতি হকঃ
বান্দার হক নষ্ট করার গুনাহ ক্ষমা করার এখতিয়ার
আল্লাহ নিজ হাতে রাখেন নি। যেমন, আমি যদি একজনকে ধোঁকা দিয়ে ১ টি টাকাও নিয়ে নিই, কোন
কথা বা গালির সাহায্যে মনে কষ্ট দেই, তবে একমাত্র সেই লোক (যার হক নষ্ট করলাম) সে বাদে
আর কেউ ক্ষমা করতে পারবে না।
বান্দার হকের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ
(সা:) বলেনঃ-
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমগণ
নিরাপদ থাকে সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম। আর যাকে মানুষ তাদের জান ও মালের জন্য নিরাপদ
মনে করে সে-ই প্রকৃত মুমিন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২৬২৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৮৪,
মিশকাত তাহকীক সানী ৩৩, সহীহাহ ৫৪৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৪০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
অন্যত্র রাসূল ( সা:) বলেনঃ-
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ ইবনু কা’নাব (রহঃ)....আবূ
হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর ধোকাবাজি করো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো
না, একে অপরের ক্ষতি করার উদ্দেশে অগোচরে শত্রুতা করো না এবং একে অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের
উপর ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকো।
এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করবে না, তাকে অপদস্ত করবে না এবং
হেয় প্রতিপন্ন করবে না। তাকওয়া এখানে, এ কথা বলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তিনবার তার বক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই
যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় জ্ঞান করে। কোন মুসলিমের উপর প্রত্যেক মুসলিমের জান-মাল
ও ইযযত-আবরু হারাম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৩৫,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৪, হাদীস সম্ভার ৩০২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩০৯, ইসলামিক সেন্টার
৬৩৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ঝগড়া হলে মীমাংসা করে নেওয়া
আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক হলো
অতিমাত্রায় ঝগড়াটে লোক
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক হলো অতিমাত্রায় ঝগড়াটে, অর্থাৎ বেশী বেশী সর্বদা ঝগড়া করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৫৭, ৪০২৩, ৭১৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৬৮, নাসায়ী ৫৪২৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৭৬, আহমাদ ২৪২৭৭, সহীহাহ্ ৩৯৭০, সহীহ আত্ তারগীব ১৪২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহতায়ালা বলেন,
“মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের
ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত
হও”। (সুরা আল-হুজুরাত, ৪৯/১০)।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, কুবা-এর
অধিবাসীদের মধ্যে লড়াই বেধে গেল। এমনকি তারা পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু করল। এ ব্যাপারে
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে খবর দেয়া হলে তিনি বললেন, ‘চল যাই
তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেই।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৬৯৩, ৬৮৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত হোক তোমার মুসলিম
ভাইকে সাহায্য করো। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! আমি তো অত্যাচারিতকে
সাহায্য করব, অত্যাচারীকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেনঃ তাকে অত্যাচার থেকে নিবৃত্ত করো, এটাই অত্যাচারীর প্রতি তোমার সাহায্য। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৫৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৪৪৩, ২৪৪৪, ৬৯৫২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮৪, সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২২৫৫, সহীহুল জামি ১৫০২, সহীহ আত্ তারগীব ২২৩৫, আহমাদ ১১৯৪৯,
মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৩৮৩৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৬৮, শু‘আবুল ঈমান ৭৬০৬, দারিমী ২৭৫৩,
হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/৯৪, আল মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
হাদিসে পারস্পরিক বিবাদ মীমাংসা করে দেওয়াকে
সিয়াম, ছাদাক্বাহ, এমনকি সলাতের চাইতে উত্তম বলা হয়েছে!
আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে সিয়াম, সালাত
ও সাদাকাহর চেয়েও ফাযীলাতপূর্ণ কাজের কথা বলবো না? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই হে
আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ পরস্পরের মধ্যে মীমাংসা করা। আর পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া বাধানো
ধ্বংসের কারণ। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯১৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও ’আলী ইবনু হুজর (রহঃ).....আবু
হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা
কি বলতে পার, অভাবী লোক কে? তারা বললেন, আমাদের মাঝে যার দিরহাম (টাকা কড়ি) ও ধন-সম্পদ
নেই সে তো অভাবী লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে সে প্রকৃত অভাবী লোক, যে
ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে,
সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা
করেছে ও আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সে ব্যক্তিকে তার নেক ’আমল থেকে দেয়া হবে, অমুককে
নেক আমল থেকে দেয়া হবে। এরপর যদি পাওনাদারের হাক তার নেক ’আমল থেকে পূরণ করা না যায়
সে ঋণের পরিবর্তে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করা হবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৩৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দুনিয়াতে যদি আপনি কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেন,
কৌশলে নিজের নামে লিখিয়ে নেন, আইল ঠেলে জায়গা বাড়িয়ে নেন, বিদেশ থেকে ভাই টাকা পাঠিয়েছে
আপনি কৌশলে সেই টাকা নিজের নামে জমা করেন, এগুলো হারাম।
মনে রাখতে হবে কিয়ামতের ময়দানে কেউ কাউকে ছাড়
দেবে না। সুতরাং মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করা যাবে না। কেউ আমল একটু কম করুন, কিন্তু
কারো সম্পদ আত্মসাৎ করবেন না। রাসুল সাঃ বলেন,
নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি ঈমানদারদেরকে তাদের
পারস্পরিক সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও দয়ার ক্ষেত্রে একটি দেহের মতো দেখবে। দেহের কোন একটি
অঙ্গ যদি ব্যথা পায়, তবে শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এর কারণে জাগরণ ও জ্বরের মাধ্যমে
ঐ ব্যথার অংশীদার হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৫৩,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৮০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৫৮৬, আহমাদ ১৮৩৭৩, শু‘আবুল ঈমান ৮৯৮৫, আল মু‘জামুস্ সগীর ৩৮২, আস্ সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৬৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসুল সাঃ আরো বলেন,
আবূ মূসা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্য প্রাচীর বা ইমারতের মতো,
যার একাংশ অপরাংশকে সুদৃঢ় করে। এটা বলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক হাতের
অঙ্গুলি অপর হাতের অঙ্গুলির মধ্যে প্রবেশ করালেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৫৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮১, ২৪৪৬, ৬০২৬; সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮৫, নাসায়ী ২৫৬০, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১৯২৮, সহীহুল জামি‘ ৬৬৫৪, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ৩৪৪১৩, আহমাদ ১৯৬২৫,
মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৩২১, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৩১, শু‘আবুল ঈমান ৭৬১১, সুনানুন্ নাসায়ী
আল কুবরা ২৩৪১, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৪০, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৫৭১৮,
আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ বলেন,
“যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে
কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে”। (সূরা আহযাব: ৫৮)।
অর্থাৎ কোন মানুষকে যে কোন ভাবে কষ্ট দিলে
তা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। ক্ষমা কেবল সেই ব্যক্তিই করতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎকারীর ভয়াবহ পরিণতি
ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা
কবিরা গুনাহ বা বড় ধরনের অপরাধ। আর দেশের সম্পদ আত্মসাৎ করা আরো জঘন্য পাপ। কেননা,
দেশের সম্পদের মধ্যে দেশের সব মানুষের হক আছে। তাই রাষ্ট্রীয় সম্পদ গ্রাস করা দেশের
সব মানুষের হক মেরে দেওয়ার নামান্তর।
আর পরকালে এমন আত্মসাৎকারীর পরিণতি হবে খুবই
ভয়াবহ। যে যা আত্মসাৎ করবে, তাই নিয়ে কিয়ামতের ময়দানে উপস্থিত হতে হবে। পবিত্র কোরআনে
ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো নবীর জন্য শোভনীয় নয় যে তিনি খিয়ানত করবেন। আর যে ব্যক্তি খিয়ানত
করবে সে কিয়ামতের দিন সেই খিয়ানত করা বস্তু নিয়ে উপস্থিত হবে।
অতঃপর প্রত্যেকেই পরিপূর্ণভাবে পাবে যা সে
অর্জন করেছে। আর তাদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না।’ (সুরা
আলে ইমরান, আয়াত: ১৬১)
রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যয় ও অসদ্ব্যবহার ইসলামে
সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে ব্যবহার
করতে পারবে না।
পরকালে এমন ব্যক্তি জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।
মহানবী (সা.) বলেন,
খাওলাহ্ আনসারীয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, কিছু লোক আল্লাহর দেয়া
সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১১৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৮৪,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) কসম করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই
এই (রাষ্ট্রীয়) সম্পদে কেউ কারো চেয়ে বেশি হকদার নয়। আমিও কারো চেয়ে বেশি হকদার নই।
এই সম্পদে সব মুসলমানের অধিকার আছে, তবে মালিকানাধীন দাস ছাড়া। (আল ফাতহুর রব্বানি, পৃষ্ঠা: ৮৭)।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যয়ে দক্ষ ও সৎ প্রশাসক নিয়োগ
দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর বর্ণনা থেকে তার একটি ধারণা লাভ
করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমি কি তোমাকে আমার ও এদের দৃষ্টান্ত সম্পর্কে বলব? আমাদের দৃষ্টান্ত
হলো এমন একটি যাত্রীদলের মতো, যারা তাদের সম্পদ একত্র করে এবং তাদের একজনের হাতে অর্পণ
করে যে প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করবে। এখন সেই ব্যক্তির জন্য কি বৈধ হবে কাউকে অগ্রাধিকার
দেওয়া?’ (মানাকিবু আমিরিল মুমিনিনা ওমর ইবনুল খাত্তাব,
পৃষ্ঠা: ১০২)।
কোনো ব্যক্তি তাঁর সামাজিক বা রাজনৈতিক প্রভাব
খাটিয়ে কোনো সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করলে তা ইসলামী আইনে অপরাধ বলে গণ্য হবে। কেননা, এর
ফলে রাষ্ট্র যেমন যোগ্য কর্মী ও প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে, তেমনি একজন যোগ্য
ব্যক্তি তার প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। এ ক্ষেত্রে নবীযুগের
একটি ঘটনা দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করা যেতে পারে,
আবূ হুমায়দ সা‘ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আযদ গোত্রের ইবনু উতবিয়া নামের এক লোককে সাদাকা
সংগ্রহের কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, এগুলো আপনাদের আর এগুলো আমাকে
হাদিয়া দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে তার বাবার
ঘরে কিংবা তার মায়ের ঘরে কেন বসে থাকল না। তখন সে দেখত পেত, তাকে কেউ হাদিয়া দেয় কি
দেয় না? যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম, সাদাকার মাল হতে স্বল্প পরিমাণও যে
আত্মসাৎ করবে, সে তা কাঁধে করে কিয়ামত দিবসে উপস্থিত হবে। সেটা উট হলে তার আওয়াজ করবে,
আর গাভী হলে হাম্বা হাম্বা রব করবে আর বকরী হলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করতে থাকবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) তাঁর দু’হাত এই পরিমাণ উঠালেন যে, আমরা তাঁর দুই বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম।
তিনি তিনবার বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি। হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি?
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৫৯৭, ৯২৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৪০৮., ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উল্লিখিত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, রাষ্ট্রীয়
ও প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ফলে কোনো ব্যক্তিকে যদি উপহার দেওয়া হয়, তবু
তা প্রত্যাখ্যান করা আবশ্যক।
আত্মসাৎকারী ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম করা
হয়েছে। এমন ব্যক্তি অপরাধের শাস্তি না পেয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ পাবে না। এ মর্মে
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
হাসান বাসরী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমরা মা’কিল ইবনু ইয়াসারের কাছে তার সেবা-শুশ্রূষার জন্য আসলাম। এ সময় ’উবাইদুল্লাহ্
প্রবেশ করল। তখন মালিক (রাঃ) বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করে শোনাব, যা
আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, কোন দায়িত্বশীল
ব্যক্তি মুসলিম জনসাধারণের দায়িত্ব লাভ করল এবং তার মৃত্যু হল এ হালতে যে, সে ছিল খিয়ানাতকারী,
তাহলে আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭১৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৪২, আহমাদ ২০১৩১, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৬৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদিসে এসেছে,
হাসান
বাসরী (রহ.) হতে বর্ণিত যে, ’উবাইদুল্লাহ্ ইবনু যিয়াদ (রহ.) মাকিল ইবনু ইয়াসারের মৃত্যুশয্যায়
তাকে দেখতে গেলেন। তখন মাকিল (রাঃ) তাকে বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করছি
যা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি যে, কোন বান্দাকে যদি আল্লাহ্ জনগণের নেতৃত্ব প্রদান করেন,
আর সে কল্যাণ কামনার সঙ্গে তাদের তত্ত্বাবধান না করে, তাহলে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে
না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭১৫০, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ২৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪২, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-
৬৬৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আত্মসাৎ, খিয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা ভয়ংকর অপরাধ।
যারা দুনিয়ায় এগুলোর সঙ্গে জড়িত হবে, তাদের হাশরের ময়দানে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার
ব্যবস্থা করা হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শপথ ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামতের দিন একটা পতাকা
দাঁড় করানো হবে। আর বলা হবে যে, এটা অমুকের পুত্র অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার নিদর্শন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬১৭৮, ৩১৮৮, আধুনিক প্রকাশনী-
৫৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যারা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছে,
তাদের বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ংকর। জনগণের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করা থেকে সাবধান! সামান্য
সুখ যেন আজীবনের কান্নায় রূপ না নেয়!
পরকালে এই সম্পদের ‘পাই টু পাই’ হিসাব দিতে
হবে।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি
বা অন্য কোন বিষয়ে যুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ হতে মাফ করিয়ে নেয়,
সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোন দ্বীনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোন সৎকর্ম
না থাকলে তার যুলুমের পরিমাণ তা তার নিকট হতে নেয়া হবে আর তার কোন সৎকর্ম না থাকলে
তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে।
আবূ ‘আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহ.) বলেন,
ইসমাঈল ইবনু উয়াইস (রহ.) বলেছেন, সাঈদ আল-মাকবুরী (রহ.) কবরস্থানের পার্শ্বে অবস্থান
করতেন বলে আল-মাকবুরী বলা হত। আবূ ‘আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহ.) এও বলেছেন, সাঈদ
আল-মাকবুরী হলেন, বনূ লাইসের আযাদকৃত গোলাম। ইনি হলেন সাঈদ ইবনু আবূ সাঈদ। আর আবূ সাঈদের
নাম হলো কায়সান। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪৯,
৬৫৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
ঘুষ আদান-প্রদান
কারো হক বিনষ্ট করা কিংবা কোনো অন্যায়কে কার্যকর
করার জন্য বিচারক কিংবা শাসককে ঘুষ দেওয়া মারাত্মক অপরাধ। কেননা ঘুষের ফলে বিচারক প্রভাবিত
হয়, হকদারের প্রতি অবিচার করা হয়, বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থায় ধস নেমে আসে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ করো
না এবং জেনে-বুঝে মানুষের সম্পদ থেকে ভক্ষণের জন্য বিচারকদের দরবারে উহার আরযী পেশ
করো না”। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৮)।
অনুরূপভাবে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
“বিচার-ফায়সালায় ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ের
উপরে আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন”। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস
নং ৯০১১; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৫০৯৩)।
তবে যদি ঘুষ প্রদান ব্যতীত নিজের পাওনা বা
অধিকার আদায় সম্ভব না হয় কিংবা ঘুষ না দিলে যুলুম-অত্যাচারের শিকার হতে হয় তবে ঐ অধিকার
আদায় ও যুলুম নিরোধ কল্পে ঘুষ দিলে ঘুষদাতা উক্ত শাস্তির আওতায় পড়বে না।
বর্তমানে ঘুষের বিস্তার রীতিমত উদ্বেগজনক পর্যায়ে
পৌঁছে গেছে। এমনকি অনেক চাকুরের নিকট মূল বেতনের চেয়ে তা রীতিমত আয়ের এক বড় উৎস। অনেক
অফিস ও কোম্পানী নানা নামে-উপনামের ছদ্মাবরণে ঘুষকে আয়ের বাহানা বানিয়ে নিয়েছে। অনেক
কাজই এখন ঘুষ ছাড়া শুরু ও শেষ হয় না। এতে গরীব ও অসহায়রা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক
চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি ঘুষের কারণে ভঙ্গ হয়ে যায়। ঘুষ না দিলে ভালো সার্ভিসের আশা করা
বাতুলতা মাত্র। যে ঘুষ দিতে পারে না তার জন্য নিকৃষ্ট মানের সার্ভিস অপেক্ষা করে। হয়ত
তাকে বারবার ঘুরানো হয়, নয়ত তার দরখাস্ত বা ফাইল একেবারে গায়েব করে দেওয়া হয়। আর যে
ঘুষ দিতে পারে সে পরে এসেও ঘুষ দিতে অক্ষম ব্যক্তির নাকের ডগার উপর দিয়ে বহু আগেই কাজ
সমাধা করে চলে যায়। অথচ ঘুষের কারণে যে অর্থ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের
পাওয়ার কথা ছিল তা তাদের হাতে না পৌঁছে বরং ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারীর পকেটস্থ হয়।
এসব নানাবিধ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ঘুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবার বিরুদ্ধে বদ দো‘আ করেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে বর্ণনা করেন,
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতার
উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৩১৩, সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৩৭, আবূ দাউদ ৩৫৮০, ৬৫৯৬, ৬৭৩৯, ৬৭৯১, ৬৯৪৫, ইরওয়া ২৬২০,
মিশকাত ৩৭৫৩, রাওদুন নাদীর ৫৮৩, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সুপারিশের বিনিময়ে উপহার গ্রহণ
মানুষের মান-মর্যাদা ও পদাধিকার বান্দার ওপর
আল্লাহর অনুগ্রহরাজির অন্যতম। এ অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করা কর্তব্য। মুসলিমদের উপকারে
তাদের পদ ও মর্যাদাকে কাজে লাগানো উক্ত শুকরিয়ারই অংশ বিশেষ। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মন্তর তথা ঝাড়ফুঁক করা হতে নিষেধ করেছেন। (এ নিষেধের
পর) ’আমর ইবনু হাযম-এর বংশের কয়েকজন লোক এসে বলল : হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কাছে এমন
একটি মন্ত্র আছে, যার দ্বারা আমরা বিচ্ছুর দংশনে ঝাড়ফুঁক করে থাকি। অথচ আপনি মন্তর
পড়া হতে নিষেধ করেছেন। অতঃপর তারা মন্ত্রটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
পড়ে শুনাল। তখন তিনি বললেনঃ আমি তো এটার মধ্যে দোষের কিছু দেখছি না। অতএব, তোমাদের
যে কেউ নিজের কোন ভাইয়ের কোন উপকার করতে পারে, সে যেন অবশ্যই তার উপকার করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৫২৯, মুসলিম (২১৯৯)-৬৩, আহমাদ ১৪৩৮২,
মা‘রিফাতুস্ সুনান লিল বায়হাক্বী ৫৯৫৪, আল জামি‘উস্ সগীর ১০৯৬৩, সহীহুল জামি ৬০১৬৯,
আস্ সুনানুস্ সুগরা ৪২৮৮, বায়হাক্বী’র কুবরা ২০০৭৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৪৮২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
যে ব্যক্তি তার পদের মাধ্যমে কোনো মুসলিম ভাইকে
যুলুম থেকে রক্ষা করে কিংবা তার কোনো কল্যাণ সাধন করে এবং তা করতে গিয়ে কোনো হারাম
উপায় অবলম্বন করে না বা কারো অধিকার ক্ষুন্ন করে না, সে ব্যক্তির নিয়ত বিশুদ্ধ হলে
আল্লাহর নিকট সে পারিতোষিক পাওয়ার যোগ্য। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
মু’আবিয়াহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তোমরা সুপারিশ
করো, তাহলে সওয়াব লাভ করতে পারবে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ ’’তোমরা সুপারিশ করো, সাওয়াব পাবে।’’ কারণ আমি (মু’আবিয়াহ) কোনো সিদ্ধান্ত
নিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করি যাতে তোমরা সুপারিশ করে সাওয়াব লাভ করতে পারো। কেননা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সুপারিশ করো সাওয়াব অর্জন
করো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৩২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
এ সুপারিশ ও মধ্যস্থতার জন্য কোনো বিনিময়ে
গ্রহণ করা জায়েয নয়। আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো শাসক বা বিচারকের নিকট সুপারিশ করে, আর সে সুপারিশ স্বরূপ তার নিকট কোনো হাদিয়া (উপহার) পাঠায় এবং তিনি তা গ্রহণ করেন। তাহলে সে সুদের দরজাসমূহের মধ্য থেকে কোনো একটি বিরাট দরজায় প্রবেশ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৫৭, সুনান আবূ দাঊদ ৩৫৪১, সহীহাহ্ ৩৪৬৫, সহীহ আল জামি ৬৩১৬, সহীহ আত্ তারগীব ২৬২৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
এক শ্রেণির মানুষ আর্থিক স্বার্থের বিনিময়ে
তাদের পদমর্যাদাকে কাজে লাগাতে চায় বা মধ্যস্থতা করতে সম্মত হয়। যেমন, কোনো একজন লোককে
চাকরি দেওয়া অথবা কাউকে কোনো প্রতিষ্ঠান বা এলাকা থেকে অন্য প্রতিষ্ঠান বা এলাকায় বদলি
করে দেওয়া কিংবা কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসা করে দেওয়া ইত্যাদির জন্য অর্থলাভের
শর্ত আরোপ করে। কিন্তু এরূপ স্বার্থের জন্য শর্তারোপ ও তার সুযোগ গ্রহণ করা হারাম।
উপরোক্ত হাদীছই তার জ্বলন্ত প্রমাণ; বরং যে কোনো কিছু গ্রহণ করাই এ হাদীসের বাহ্যিক
দিকের আওতায় পড়ে, চাই পূর্বে কোনো কিছুর শর্ত আরোপ না করা হোক। [শাইখ আব্দুল আযীয ইবন
বায রহ. এর জবানী থেকে] আসলে ভালো কাজের কর্মীর জন্য আল্লাহর পারিতোষিকই যথেষ্ট, যা
সে কিয়ামত দিবসে পাবে।
জনৈক ব্যক্তি কোনো এক প্রয়োজনে হাসান ইবন সাহলের
নিকট এসে তাঁর সুপারিশ প্রার্থনা করে। তিনি তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। ফলে লোকটি তাঁর
প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগল। তখন হাসান ইবন সাহল তাকে বললেন, ‘কি জন্য তুমি আমাদের
প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছ? আমরা তো মনে করি পদেরও যাকাত আছে, যেমন অর্থ-সম্পদের যাকাত
আছে”। (ইবন মুফলিহ, আল-আদাবুশ শার’ঈয়্যাহ ২/১৭৬ পৃ:)।
এখানে এ পার্থক্যের দিকে ইঙ্গিত করা যথার্থ
হবে যে, কোনো কার্য সম্পাদনের জন্য ব্যক্তি বিশেষকে পারিশ্রমিক দিয়ে নিযুক্ত করা এবং
শর্ত সাপেক্ষে বৈধ মজুরী প্রদান জায়েয শ্রেণিভুক্ত হবে। পক্ষান্তরে আর্থিক সুযোগ-সুবিধার
বিনিময়ে নিজ পদমর্যাদা ও মধ্যস্থতাকে কাজে লাগিয়ে সুপারিশের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
এটা নিষিদ্ধ। উভয় প্রক্রিয়া এক নয়।
শ্রমিক থেকে ষোলআনা শ্রম আদায় করে পুরো মজুরী না দেওয়া
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রমিকের
পাওনা দ্রুত পরিশোধে জোর তাকীদ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা শ্রমিককে তার ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দিবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৮৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৪৪৩, ইরওয়া ১৪৯৮, সহীহ আল জামি ১০৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
শ্রমিক, কর্মচারী, দিনমজুর যেই হোক না কেন
তার থেকে শ্রম আদায়ের পর যথারীতি তার পাওনা পরিশোধ না করা মহা যুলম। এ যুলুম এখন হর-হামেশাই
হচ্ছে। শ্রমিকদের প্রতি যুলুমের বিচিত্র রূপ রয়েছে। যেমন,
(ক)
শ্রমিক স্বীয় কাজের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করতে না পারায় তার পাওনাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার
করা। এক্ষেত্রে দুনিয়াতে তার হক নষ্ট হলেও কিয়ামতে তা বৃথা যাবে না। কিয়ামতের দিন যালিমের
পূণ্য থেকে মাযলূমের পাওনা পরিমাণ পূন্য প্রদান করা হবে। যদি তার পূণ্য নিঃশেষ হয়ে
যায় তাহলে মাযলুমের পাপ যালিমের ঘাড়ে চাপানো হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা
হবে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো, (প্রকৃত) গরীব কে? সাহাবায়ে
কিরাম বললেনঃ আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা, ধনদৌলত নেই, সে-ই গরীব।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের মধ্যে ঐ
ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি গরীব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে সালাত, সিয়াম ও যাকাত আদায় করে
আসবে; কিন্তু সাথে সাথে সেসব লোকেদেরকেও নিয়ে আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারো
অপবাদ রটিয়েছে, কারো সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে; এমন
ব্যক্তিদেরকে তার নেকীগুলো দিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর যখন তার পুণ্য শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের
পাওনা তখনো বাকি, তখন পাওনাদারদের গুনাহ তথা পাপ তার ওপর ঢেলে দেয়া হবে, আর তাকে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১২৭, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১, সুনান আততিরমিযী ২৪১৮, সিলসিলাতুস্
সহীহাহ্ ৮৪৫, সহীহুল জামি ৮৭, সহীহ আত্ তারগীব ২২২৩, শু‘আবুল ঈমান ৩৩, আহমাদ ৮০২৯,
মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪১১, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর
৫৬১, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ২৭৭৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৩৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) যে
পরিমাণ অংক মজুরী দেওয়ার জন্য চুক্তি হয়েছে তার থেকে কম দেওয়া। এ বিষয়ের সমূহ ক্ষতি
প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা হুঁশিয়ারী বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন,
“যারা ওযনে কম দেয় তাদের জন্য দুর্ভোগ রয়েছে”।
(সূরা আল-মুতাফফিফীন, আয়াত: ১)।
অনেক নিয়োগকর্তা দেশ-বিদেশ থেকে নির্দিষ্ট
বেতন বা মজুরীর চুক্তিতে শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে। তারপর তারা যখন কাজে যোগদান করে তখন
সে একতরফাভাবে চুক্তিপত্র পরিবর্তন করে বেতন বা মজুরীর পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেয়। অনিচ্ছা
সত্ত্বেও ঐসব শ্রমিক তখন কাজ করতে বাধ্য হয়। অনেক সময় শ্রমিকরা তাদের অধিকারের সপক্ষে
প্রমাণ পেশ করতে পারে না। তখন কেবল আল্লাহর নিকট অভিযোগ দায়ের করা ছাড়া তাদের আর কোনো
উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে যদি নিয়োগকর্তা মুসলিম ও নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি কাফির হয় তবে
বেতন মজুরী হ্রাসে ঐ শ্রমিকের ইসলাম গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে কিয়ামত দিবসে
ঐ কাফিরের পাপ তাকে বহন করতে হবে।
(গ) বেতন
বা মজুরী বৃদ্ধি না করে কেবল কাজের পরিমাণ কিংবা সময় বৃদ্ধি করা। এতে শ্রমিককে তার
অতিরিক্ত কাজের পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করা হয়।
(ঘ) বেতন বা মজুরী পরিশোধে গড়িমসি করা। অনেক
চেষ্টা-প্রচেষ্টা, তদবীর তাগাদা, অভিযোগ-অনুযোগ ও মামলা-মোকদ্দমার পর তবেই প্রাপ্য
অর্থ আদায় সম্ভব হয়। অনেক সময় নিয়োগকারী শ্রমিককে ত্যক্ত-বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে টাল-বাহানা
করে, যেন সে পাওনা ছেড়ে দেয় এবং কোনো দাবী না তুলে চলে যায়। আবার কখনো তাদের টাকা খাটিয়ে
মালিকের তহবিল স্ফীত করার কুমতলব থাকে। অনেকে তা সূদী কারবারেও খাটায়। অথচ সেই শ্রমিক
না নিজে খেতে পাচ্ছে না নিজের পুত্র-পরিজনদের জন্য কিছু পাঠাতে পারছে। যদিও তাদের মুখে
দু’মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্যই সে এ দূর দেশে পড়ে আছে। এজন্যই এ সকল যালিমের জন্য
এক কঠিন দিনের শাস্তি অপেক্ষা করছে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, কিয়ামত দিবসে
আমি তিন লোকের বিরুদ্ধে বাদী হবো- [১] যে লোক আমার নামে অঙ্গীকার করে পরে তা ভঙ্গ করেছে,
[২] যে লোক স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য খেয়েছে এবং [৩] যে লোক শ্রমিক নিয়োগ
করে পূর্ণ কাজ আদায় করে নিয়েছে, কিন্তু তার প্রাপ্য মজুরী প্রদান করেনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৮৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২২২৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৪৪২, আহমাদ ৮৬৯২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ঋণ পরিশোধে অনীহা প্রকাশ করা
মহান রাব্বুল আলামীনের নিকটে বান্দার হক অতীব
গুরুত্ববহ। আল্লাহর হক নষ্ট করলে তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা পাওয়া যায়। কিন্তু বান্দার হক
নষ্ট করলে সংশ্লিষ্ট বান্দার নিকট থেকে ক্ষমা না পেলে ক্ষমা লাভের কোনো উপায় নেই। যেকোনো
মূল্যে তার হক আদায় করতে হবে ঐদিন আসার পূর্বে যেদিন টাকা-পয়সার কোনো কারবার হবে না।
সেদিন হকদারের পাপ হক আত্মসাৎকারীকে দেওয়া হবে এবং হক আত্মসাৎকারীর নেকী হকদারকে দেওয়া
হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ
দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানতকে তার প্রাপকের নিকটে অর্পন করবে”। (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯)।
বর্তমান সমাজে ঋণ গ্রহণ একটি মামুলী ও গুরুত্বহীন
বিষয় বলে বিবেচিত। অনেকে অভাবের জন্য নয়; বরং প্রাচুর্য সৃষ্টি ও অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা
করতে গিয়ে নতুন নতুন বাড়ী, গাড়ী, আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য ঋণ নিয়ে থাকে। অনেক
সময় এরা কিস্তিতে বেচা-কেনা করে থাকে, যার অনেকাংশই সন্দেহপূর্ণ বা হারাম।
ঋণ পরিশোধকে লঘু বা সাধারণভাবে নিলে প্রায়শই
সেখানে টালবাহানা ও গড়িমসি সৃষ্টি হয়। ক্ষেত্রবিশেষ তাতে অপরের সম্পদ বিনষ্ট করা হয়।
এর শোচনীয় পরিণতি বর্ণনা করতে গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক পরিশোধের নিয়্যাতে অপর লোকের মাল
(ঋণরূপে) গ্রহণ করে, আল্লাহ তা’আলা তার ঋণ পরিশোধ করে দেন। আর যে লোক বিনষ্ট করার নিয়্যাতে
ঋণদাতার মাল গ্রহণ করে আল্লাহ তা’আলা তাকে ধ্বংস করে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯১০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩৮৭, সুনান
ইবনু মাজাহ ২৪১১, আহমাদ ৮৭৩৩, সহীহ আল জামি‘ ৫৯৮০, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৯৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন তার ঋণের কারণে বাধাপ্রাপ্ত
হয়ে থাকে যতক্ষণ না তার পক্ষ হতে তা পরিশোধ করা হয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত ২৯১৫, সুনান আততিরমিযী ১০৭৮, সুনান ইবনু মাজাহ ২৪১৩, আহমাদ ১০৫৯৯,
দারিমী ২৫৯৪, সহীহ আল জামি ৬৭৭৯, সহীহ আত্ তারগীব ১৮১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
মানুষ ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বড় উদাসীন। তারা
এটাকে খুবই তুচ্ছ মনে করে। অথচ আল্লাহর নিকট তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি আল্লাহর রাস্তায়
শহীদ ব্যক্তি এতসব মর্যাদা ও অগণিত ছওয়াবের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধের দায়
থেকে সে অব্যাহতি পায় নি।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
‘সুবহানাল্লাহ! ঋণ প্রসঙ্গে কী কঠোর বাণীই
না আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেছেন। ফলে আমরা চুপ হয়ে গেলাম এবং ভীত হলাম, অতঃপর যখন
পরের দিন আসলো, আমরা তাঁকে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, কী কঠোর বাণী নাযিল হয়েছে?
তখন তিনি বললেন, যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, ঋণগ্রস্ত অবস্থায় কেউ যদি আল্লাহর পথে
শহীদ হয় তারপর জীবিত হয়, তারপর শহীদ হয়, তারপর জীবিত হয়, তারপর আবার শহীদ হয় তবুও ঋণ
পরিশোধ না করা পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না”। (হাকেম হা/২২১২; ছহীহুল জামে হা/৩৬০০)।
জনৈক ব্যক্তির দুই দীনার ঋণ ছিল। রাসূল (ছাঃ)
তার জানাযা আদায়ে অস্বীকৃতি জানালেন। আবু ক্বাতাদা (রাঃ) ঐ ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নিলে
তিনি তার জানাযায় ইমামতি করেন। পরের দিন ক্বাতাদার সাথে দেখা হলে রাসূল (ছাঃ) ঋণ পরিশোধের
বিষয়টি জিজ্ঞেস করেন। তিনি বললেন, সে তো কেবল গতকাল মারা গেছে। রাসূল (ছাঃ) বিষয়টির
গুরত্বারোপ করে চলে গেলেন। পরের দিন দেখা হলে আবারো ঋণের বিষয়টি জিজ্ঞেস করেন। আবু
ক্বাতাদা ঋণ পরিশোধের বিষয়টি জানালেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, এখন তার চামড়া কবরের
আযাব থেকে ঠান্ডা হলো। (আহমাদ হা/১৪৫৭২; ছহীহুত তারগীব
হা/১৮১২)।
উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় নববী বলেন, ‘এখন তার
চামড়া ঠান্ডা হলো’ কথাটি রাসূল (ছাঃ) তখনই বললেন যখন তার পক্ষ থেকে ঋণ আদায় করা হলো।
আবু ক্বাতাদা ঋণের যিম্মাদারী নেওয়ার সময় বলেননি। (আল-মাজমূ‘
৫/১২৪)।
শাওকানী বলেন, ‘ঋণের ব্যাপারে আযাব তখনই বন্ধ
হবে যখন ঋণ আদায় করা হবে। কেবল যিম্মাদারী নিলেই মাইয়েতের আযাব বন্ধ হবে না। আর এজন্যই
রাসূল (ছাঃ) দ্রুত দ্বিতীয় দিন আবু ক্বাতাদাকে তার ঋণের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন’। (শাওকানী, নায়লুল আওতার ৫/২৮৫)।
একই মন্তব্য করেছেন ইমাম ত্বাহাবী, ইবনুল মুলাক্কিন,
ইবনু বাত্ত্বাল, ইবনু আব্দিল বার্র (রহঃ) (শারহু মুশকিলুল
আছার ১০/৩৩৫; আত-তাওযীহ ১৫/১২৪; শারহুল বুখারী ৬/৪২১; আল-ইস্তিযকার ৭/২২০)।
এরপরও কি ঋণ পরিশোধে টালবাহানাকারী মতলববাজদের
হুঁশ ফিরবে না?
চাঁদাবাজি করা
চাঁদাবাজি আরেকটি মারাত্মক অপরাধ। কোন প্রভাবশালী
চক্র কর্তৃক জোর পূর্বক কাউকে কোথাও নিজ কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
খোলার জন্য অথবা নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করা ইত্যাদির জন্য নির্দিষ্ট অথবা অনির্দিষ্ট
পরিমাণে চাঁদা দিতে বাধ্য করাকে সাধারণত চাঁদাবাজি বলা হয়। দস্যুতার সাথে এর খুবই মিল।
চাঁদা উত্তোলনকারী, চাঁদা লেখক ও চাঁদা গ্রহণকারী সবাই উক্ত গুনাহ্’র সমান অংশীদার।
এরা যালিমের সহযোগী অথবা সরাসরি যালিম।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
‘‘শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধেই (শাস্তির) ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হবে যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ আচরণ
করে বেড়ায়। বস্ত্তত: এদের জন্যই রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি’’। (সুরা শূরা: ৪২)।
তিনি আরো বলেন:
“তোমরা যালিমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না তথা তাদেরকে
যুলুমের সহযোগিতা করো না। অন্যথায় তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে। আর তখন
আল্লাহ্ ছাড়া কেউ তোমাদের সহায় হবে না। অতএব তখন তোমাদেরকে কোন সাহায্যই করা হবে না’’।
(সুরা হূদ্: ১১৩)।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ্ ইবনু কা’নাব (রহঃ)....জাবির
ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমরা অত্যাচার করা থেকে বিরত থাক। কেননা কিয়ামত দিবসে অত্যাচার অন্ধকারে
পরিণত হবে। তোমরা কৃপণতা থেকে সাবধান হও। কেননা এ কৃপণতাই তোমাদের আগেকার কাওমকে ধ্বংস
করেছে। এ কৃপণতা তাদের খুন-খারাবী ও রক্তপাতে উৎসাহ যুগিয়েছে এবং হারাম বস্তুসমূহ
হালাল জ্ঞান করতে প্রলোভন দিয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৪৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪০, ইসলামিক সেন্টার
৬৩৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এতিমের সম্পদ আত্মসাতের পরিণাম
মহান আল্লাহ তায়ালা এতিমের সম্পদ বুঝিয়ে দেওয়ার
প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। যারা এতিমের সম্পদ লুণ্ঠন করে, তাদের প্রাপ্য অধিকার আদায়
করে না, এমন পাপিষ্ঠদের ব্যাপারে কঠোর পরিণতির কথা বর্ণনা করেছেন। এ সম্পর্কে মহান
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন,
“তোমরা এতিমের সম্পদ বুঝিয়ে দাও এবং অপবিত্র
সম্পদকে পবিত্র সম্পদ দ্বারা বদল করো না। আর তাদের সম্পদকে তোমাদের সম্পদের সঙ্গে মিশিয়ে
গ্রাস করো না। নিশ্চয় এটা মহাপাপ। (সূরা নিসা, আয়াত ০২)।
মহান রাব্বুল আলামিন কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ
করেন,
“যারা এতিমের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে,
তারা মূলত তাদের পেট আগুন দ্বারা পূর্ণ করছে; আর অচিরেই তারা জাহান্নামের প্রজ্বলিত
আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে”। (সূরা নিসা, আয়াত ১০)।
মহান আল্লাহ তায়ালা এতিম এবং ভিক্ষুকদের সঙ্গে
খারাপ আচরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন,
“এতিমের প্রতি কঠোরতা গ্রহণ করো না। ভিক্ষুককে
ধমক দিয়ো না। তোমার রবের অনুগ্রহ বর্ণনা করো”। (সূরা দোহা,
আয়াত ৯-১১)।
যারা এতিমকে ভালোবাসে, তাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার
করে, তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং তাদের লালন-পালনের
দায়িত্ব গ্রহণ করে, প্রিয়নবী (স) তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। তিনি
বলেছেন,
সাহল (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ও ইয়াতীমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনিভাবে নিকটে থাকবে।
এই বলে তিনি শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুল দু’টি দ্বারা ইঙ্গিত করলেন এবং এ দু’টির মাঝে
কিঞ্চিত ফাঁক রাখলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৩০৪, ৬০০৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৫২, সুনান আততিরমিযী ১৯১৮, সুনান আবূ দাঊদ
৫১৫০, সহীহাহ্ ৮০০, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৪১, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১০০, আহমাদ ২২৮২০,
মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৫৫৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৬০, আর মু‘জামুল কাবীর ৫৭৭২, আস্ সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩০৩৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮০৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রিয়নবী (স) এতিম অবস্থায় পৃথিবীতে আগমন করেছেন।
তাই তিনি সর্বদা এতিমদের ভালোবাসতেন, তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন, তাদের মাথায়
স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিতেন। তিনি এতিমের সম্পদ গ্রাস করাকে ধ্বংসাত্মক কাজ বলে ঘোষণা
করেছেন।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে।
সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক
করা (২) যাদু (৩) আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে
তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে
যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবা সতী-সাধ্বী মু’মিনাদের অপবাদ দেয়া। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৬৬, ৫৭৬৪, ৬৮৫৭, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
২৫৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ওয়ারিশদের সম্পত্তি দখল করা
ওয়ারিশদের মধ্য হতে বর্তমানে বেশি অবহেলিত
হচ্ছে মেয়েরা-বোনেরা। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির মেয়েরা। বিয়ের পর যখনই মেয়ে বা বোন স্বামীর
বাড়ি চলে যায়; তখনই ভাইয়েরা ওই বোনের সম্পদ লুটে খাওয়া শুরু করে। বিভিন্ন উপায়ে তাদের
বঞ্চিত করার পাঁয়তারা করে। অথচ পবিত্র কোরআনুল কারিম তাদেরও অংশ দিয়েছে। কোরআনের ভাষায়
দুই মেয়েকে এক ছেলের সমপরিমাণ সম্পদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাদের সম্পদও আজ ভাইয়েরা
এভাবে লোপাট করে খাচ্ছে যে, ভাবছে এতে কোনো গুনাহই নেই। বিষয়টি খুবই নরমাল করে দেখছে
তারা। একটুও ভাবছে না, এর পরিণতি কী।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের ওপর দুই ধরনের হক
রয়েছে। এক হলো আল্লাহর হক। দুই হলো বান্দার হক। এই দুটি হকের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
হচ্ছে আল্লাহর হক। আর সবচেয়ে জটিল হচ্ছে বান্দার হক। মানুষ যদি আল্লাহর কোনো হক নষ্ট
করে তাহলে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তা মাফ করে দেন। পক্ষান্তরে কেউ যদি কোনো মানুষের হক নষ্ট
করে তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত ওই বান্দা তা মাফ না করবেন ততক্ষণ স্বয়ং আল্লাহও মাফ করবেন
না। মূলত এ জন্যই ইসলাম ধর্মে বান্দার হককে এত গুরুত্ব দিয়েছে। এক হাদিসে রাসুলে কারিম
(সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা শহিদের যাবতীয় অন্যায় মাফ করে দেন কিন্তু ঋণ মাফ করবেন না।
কেননা, এটা বান্দার হক।
এখানে চিন্তা করে দেখার বিষয় হচ্ছে, একজন শহিদ
যার সব অপরাধ মাফ করে দেওয়া হয়। শাহাদত বরণের সঙ্গে সঙ্গে যে জান্নাতে প্রবেশ করে।
তার ক্ষেত্রে যদি বিষয়টি এমন হয় যে, সাধারণ একজন মানুষের হক নষ্ট করার অপরাধ আল্লাহ
মাফ না করেন; তাহলে সাধারণ একজন মানুষ যদি কাছের কোনো মানুষের হক নষ্ট করে তাহলে কী
অবস্থা হবে! তার পরিণতি কতটুকু ভয়াবহ আর ভয়ানক হবে তা কল্পনাও করা যায় না। মানুষ যেন
এই পরিণতির শিকার না হয় এজন্য আল্লাহতায়ালা সতর্ক করেছেন। বলেছেন, ‘আর যারা অন্যায়ভাবে
এতিমদের সম্পদ আত্মসাৎ করে তারা মূলত তাদের
পেটে আগুন ঢুকাচ্ছে। অচিরেই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে’। (সুরা নিসা আয়াত ১০)।
আবূ সালামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা
করেন যে, তাঁর এবং কয়েকজন লোকের মধ্যে একটি বিবাদ ছিল। ‘আয়িশাহ (রাযি.)-এর কাছে উল্লেখ
করা হলে তিনি বললেন, হে আবূ সালামাহ! জমির ব্যাপারে সতর্ক থাক। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এক বিঘত জমি অন্যায়ভাবে নিয়ে নেয়, (কিয়ামতের
দিন) এর সাত তবক জমি তার গলায় লটকিয়ে দেয়া হবে। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৫৩, ৩১৯৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
২২৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যের জমি আত্মসাৎ করা
যখন মানুষের মন থেকে আল্লাহভীতি উঠে যায় তখন
তার শক্তি, বুদ্ধি সবই তার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। সে এগুলোকে নির্বিচারে যুলুম-নিপীড়নে
ব্যবহার করে। যেমন শক্তির বলে অন্যের সম্পদ কুক্ষিগত করা। ভূমি জবরদখল এরই একটি অংশ।
এর পরিণাম খুবই মারাত্মক।
সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার
(রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে অন্যায়ভাবে কারো কিছু জমিন নিয়েছে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক জমিন পর্যন্ত ধসিয়ে
দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৫৮, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৫৪, সহীহ আল জামি ৫৯৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইয়া’লা ইবনু মুররাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে কেউ অন্যায়ভাবে
কারো এক বিঘত জমি নিয়ে নেয়, আল্লাহ তাকে তার জমিনের সাত তবকের শেষ পর্যন্ত খুঁড়তে বাধ্য
করবেন। অতঃপর তার গলায় তা শিকলরূপে পরিয়ে দেয়া হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষের (হাশরের)
বিচার শেষ করা হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৬০, আহমাদ
১৭৫৭১, সহীহাহ্ ২৪০, সহীহ আল জামি‘ ২৭২২, সহীহ আত্ তারগীব ১৮৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
জমির সীমানা বা আইল পরিবর্তন করাও এ হুকুমের
অন্তর্ভুক্ত হবে। এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
আবুত্ব তুফায়ল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন ’আলী -কে জিজ্ঞেস করা হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাদেরকে
(অর্থাৎ- আহলে বায়তকে) স্বতন্ত্রভাবে কিছু বলেছেন কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ তিনি (রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন কোন বিষয়ে আমাদেরকে স্বতন্ত্র রাখেননি, যাতে অন্য
লোক অন্তরভুক্ত হয়নি। তবে আমার তলোয়ারের এ খাপের ভিতরে যা আছে। অতঃপর তিনি খাপের ভিতর
হতে এক খন্ড লিখিত কাগজ বের করলেন তাতে লিখা ছিল, সে ব্যক্তির ওপর আল্লাহর লা’নাত যে
গায়রুল্লাহর নামে যাবাহ করে। আর সে ব্যক্তির ওপরও আল্লাহর লা’নাত যে জমিনের সীমানা
পরিবর্তন করে। আল্লাহর লা’নাত ঐ ব্যক্তির ওপর, যে নিজের পিতাকে অভিসম্পাত দেয় এবং আল্লাহর
লা’নাত সে ব্যক্তির ওপর, যে কোন বিদ্’আতীকে আশ্রয় দেয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০৭০, সুনান আননাসায়ী ৪৪২২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৭০, মুসনাদে
আবূ ইয়া‘লা- ৬০২, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কসম খেয়ে অর্থ আত্মসাৎ করার পরিণাম
মিথ্যা কসম খাওয়া কবিরা গুনাহ। চাই তা কোনো
বিপদ থেকে বাঁচার জন্যই হোক বা কারো সম্পদ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করার জন্যই হোক। আব্দুল্লাহ
বিন ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন,
’আবদুল্লাহ্ ইবনু ’আমর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ কবীরা গুনাহসমূহের (অন্যতম) হচ্ছে আল্লাহর
সঙ্গে শরীক করা, পিতামাতার নাফরমানী করা, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম করা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬৭৫, ৬৮৭০, ৬৯২০, আধুনিক প্রকাশনী-
৬২০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
মিথ্যা শপথ করে সম্পদ আত্মসাতের পরিনাম
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের
ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা’।
(সুরা নিসা: ২৯)।
আরও বর্ণিত হয়েছে- ‘কিন্তু যারা কুফুরি করে,
তারা ভোগ বিলাসে মত্ত থাকে এবং জন্তু জানোয়ারের মতো উদরপূর্তি করে; আর জাহান্নামই তাদের
নিবাস।’ (সুরা মুহাম্মদ: ১২)।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিমদের অর্থ সম্পদ (যা তার
জিম্মায় আছে) আত্মসাৎ করার উদ্দেশে মিথ্যা কসম খায়, সে আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় মিলিত
হবে যে, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেনঃ
‘‘যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে
---- এর শেষ পর্যন্ত’’- (আলে ‘ইমরান : ৭৭)। এরপর আশ‘আস (রাঃ) এসে বলেন, আবূ ‘আবদুর
রহমান (রাঃ) তোমার নিকট যে হাদীস বর্ণনা করছিলেন (সে হাদীসে বর্ণিত) এ আয়াতটি তো আমার
সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আমার চাচাতো ভাইয়ের জায়গায় আমার একটি কূপ ছিল। (এ ব্যাপারে আমাদের
মধ্যে বিবাদ হওয়ায়) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তোমার সাক্ষী
পেশ কর। আমি বললাম, আমার সাক্ষী নেই। তিনি বললেন, তাহলে তাকে কসম খেতে হবে। আমি বললাম,
হে আল্লাহর রাসূল! সে তো কসম করবে। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীস
বর্ণনা করেন এবং আল্লাহ তা‘আলা তাকে সত্যায়িত করে এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩৫৬-২৩৫৭, ২৪১৬, ২৫১৫, ২৬৬৬,
২৬৬৯, ২৬৭৩, ২৬৭৬, ৪৫৪৯, ৬৬৫৯, ৬৬৭৬, ৭১৮৩, ৭৪৪৫, ২৩৫৩, ২৪১৭, ২৫১৬, ২৬৬৭, ২৬৭০, ২৬৭৭,
৪৫৫০, ৬৬৬০, ৬৬৭৭, ৭১৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৮,
আহমাদ ৩৫৭৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২১৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো, (প্রকৃত) গরীব কে? সাহাবায়ে
কিরাম বললেনঃ আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা, ধনদৌলত নেই, সে-ই গরীব।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের মধ্যে ঐ
ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি গরীব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে সালাত, সিয়াম ও যাকাত আদায় করে
আসবে; কিন্তু সাথে সাথে সেসব লোকেদেরকেও নিয়ে আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারো
অপবাদ রটিয়েছে, কারো সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে; এমন
ব্যক্তিদেরকে তার নেকীগুলো দিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর যখন তার পুণ্য শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের
পাওনা তখনো বাকি, তখন পাওনাদারদের গুনাহ তথা পাপ তার ওপর ঢেলে দেয়া হবে, আর তাকে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১২৭, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১, সুনান আততিরমিযী ২৪১৮, সিলসিলাতুস্
সহীহাহ্ ৮৪৫, সহীহুল জামি ৮৭, সহীহ আত্ তারগীব ২২২৩, শু‘আবুল ঈমান ৩৩, আহমাদ ৮০২৯,
মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪১১, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর
৫৬১, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ২৭৭৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৩৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইয়াহইয়া
ইবনু আইয়ুব, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজুর (রহঃ).....আবূ উমামাহ্ (রাযিঃ) থেকে
বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি কসমের মাধ্যমে
কোন মুসলিমের হক বিনষ্ট করে তার জন্য আল্লাহ জাহান্নাম ওয়াজিব করে রেখেছেন এবং জান্নাত
হারাম করে রেখেছেন। তখন জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! অতি সামান্য বস্তু
হলেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আরাক (বাবলা গাছের মত এক
ধরনের কাঁটাযুক্ত) গাছের ডাল হলেও এ শাস্তি দেয়া হবে। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫২. ইসলামিক
সেন্টারঃ ২৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, এদের দিকে নযরও দেবেন না
এবং এদেরকে পবিত্রও করবেন না, বরং এদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। যে ব্যক্তির নিকট
অতিরিক্ত পানি থাকা সত্ত্বেও তা পথিককে দেয় না। যে ব্যবসায়ী আসরের পর* তার পণ্য সামগ্ৰী
ক্রেতার নিকট আল্লাহর কসম করে বিক্রি করে আর বলে, আমি এ পণ্য এতো এতো মূল্যে ক্রয়
করেছিলাম, আর ক্রেতা তাকে সত্যবাদী মনে করে, কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তার উল্টো। যে ব্যক্তি
ইমামের (রাষ্ট্রপ্রধান) হাতে কেবল পার্থিব স্বার্থে বাই’আত করে, যদি ইমাম তাকে কিছু
পার্থিব সুযোগ দেয়, তাহলে সে তার বাই’আতের প্রতিজ্ঞা পূরণ করে, আর যদি তা থেকে কিছু
না দেয় তাহলে আর প্রতিজ্ঞা পূরণ করে না। (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৮, ইসলামিক সেন্টারঃ
২০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহর দোহাই দিয়ে কেউ কিছু চাইলে তাকে দিতে হবে
আবু মুসা আশআরি (রা.) শুনেছেন, রাসুলুল্লাহ
(স.) বলেছেন, সে ব্যক্তি অভিশপ্ত, যে আল্লাহর দোহাই দিয়ে কিছু চায় এবং অভিশপ্ত সে-ও,
যার কাছে আল্লাহর দোহাই দিয়ে কিছু চাওয়া হয়, আর সে (জিনিসটি) অবৈধ না হওয়া সত্ত্বেও
তাকে তা দেয় না। (তাবারানি, সহিহুল জামে: ৫৮৯০)।
ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ
(স.) বলেছেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যার কাছে আল্লাহর দোহাই দিয়ে চাওয়া হয়, অথচ
সে দেয় না। (তারিখুল বুখারি, সহিহুল জামে: ৩৭০৮)।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঈসা ইবনু মরিয়ম (আঃ) এক ব্যক্তিকে চুরি করতে দেখে বললেন, তুমি
চুরি করলে? সে বললো, না, সেই সত্তার শপথ যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তখন ঈসা (আঃ)
বললেন, আমি আল্লাহর উপর ঈমান আনলাম এবং আমার চোখকে অবিশ্বাস করলাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১০২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৪৪,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬০৩১, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৩৬৮, সুনান আননাসায়ী ৫৪২৭, আহমাদ ২৭৩৭১, ৮৭৫০০)।
আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করা শিরক
আজকের দিনে মিথ্যা শপথের আরও ভয়াবহ অবস্থা।
অনেককেই দেখা যায়, কোরআন ছুঁয়ে, মাথা ছুঁয়ে, মাজার বা পীরের নামেও শপথ করে। ইসলামি
বিধানমতে, তা শিরক ও সবচেয়ে বড় গুনাহ।
সা’দ ইবনু উবাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, ইবনু
উমার (রাঃ) একজন লোককে বলতে শুনলেন, না, কাবার শপথ! ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ
তা’আলার নাম ব্যতীত অন্য কিছুর নামে শপথ করা যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তা’আলার নাম ব্যতীত অন্য কিছুর নামে
যে লোক শপথ করল সে যেন কুফরী করল অথবা শিরক করল। (সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৫৩৫, ইরওয়া ২৫৬১, সহীহা(২০৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
স্মরণ রাখতে হবে, অহেতুক শপথ করা ইসলাম সমর্থন
করে না। শপথ ভঙ্গ করাও ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। মিথ্যা শপথ করা কবিরা গুনাহ। আবার
মিথ্যা শপথ করে কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা জঘন্য কবিরা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে
উপরোক্ত সকল কবিরা গুনাহ থেকে হেফাজত করুন।
জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি
অনুগ্রহ করে না, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন না। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৪৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৩৭৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫৯২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩১৯, সুনান আততিরমিযী ১৯২২, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৭১,
মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৩৬৩, আর মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬৫৫৫, আস্ সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৮৩৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মানুষের সম্পদ ধ্বংস করার ইচ্ছে পোষণ করলে
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের সম্পদ ধ্বংস করার অভিপ্রায় গ্রহণ করে,
আল্লাহ তাকে ধ্বংস করবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৪১১, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩৮৭, আহমাদ ৮৫১৬, ৯১৩৫, গায়াতুল মারাম ৩৫২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)
অন্যের ক্ষতি করলে বা কষ্ট দিলে কিংবা অপমান
করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করলেঃ
(ক)
আবূ সিরমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে
ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করবে, আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন এবং যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দিবে
আল্লাহ তাকে কষ্ট দিবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৩৪২, সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৯৪০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৩৫, আহমাদ ১৫৩২৮, ইরওয়া
৮৯৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ)
সাহল ইবনু মু’আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো মু’মিনকে মুনাফিক থেকে রক্ষা করবে, কিয়ামতের
দিন আল্লাহ তার শরীর জাহান্নাম থেকে রক্ষার জন্য একজন ফিরিশতা প্রেরণ করবেন। আর যে
ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করবে তাকে মহান আল্লাহ জাহান্নামের
সেতুর উপর প্রতিরোধ ব্যবস্থা করবেন যতক্ষণ না তার কৃত কর্মের ক্ষতিপূরণ হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৮৩)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
কিয়ামতের দিবসে আল্লাহ তায়ালা নিজে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবে
বিশর ইবনু মারহুম (রহঃ)..আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ্ তা’আলা
ঘোষনা করেছেন যে, কিয়ামতের দিবসে আমি নিজে তিন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবো। এক ব্যাক্তি,
যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে। আরেক ব্যাক্তি, যে কোন আযাদ মানুষকে বিক্রি করে
তার মূল্য ভোগ করল। আর এক ব্যাক্তি, যে কোন মজুর নিয়োগ করে তার থেকে পুরো কাজ আদায়
করে এবং তার পারিশ্রমিক দেয় না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২২২৭, সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২০৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২২৭,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ কিয়ামতের দিন নয় শ্রেণির লোকের সাথে কথা বলবেন না
(ক) আবূ
যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ কিয়ামতের
দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে পবিত্রও
করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা
কারা? তারা তো বিফল হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেনঃ (১) যে ব্যক্তি পায়ের
গোছার নিচে পরিধেয় ঝুলিয়ে পরে, (২) যে ব্যক্তি দান করার পর খোঁটা দেয় এবং (৩) যে ব্যক্তি
মিথ্যা শপথ করে নিজের মাল বিক্রয় করে। (সুনান ইবনু মাজাহ
২২০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১২১১, নাসায়ী ২৫৬৩, ২৫৬৪, ৪৪৫৮, ৪৪৫৯, ৫৩৩৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৪০৮৭, আহমাদ ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০, ২১০৩৪, দারেমী ২৬০৫, গায়াতুম নারাম ১৭০, ইরওয়া
৯০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ
বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ)...আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা কথা বললেন
না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। রাবী আবূ মু’আবিয়াহ বলেন, তাদের প্রতি তাকাবেন
না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হলো) (ক) ব্যভিচারী বুড়ো, (খ) মিথ্যাবাদী
শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান ও (গ) অহঙ্কার দরিদ্র ব্যক্তি। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী ১৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ২০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(গ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের প্রতি
দৃষ্টিপাত করবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।
(১) যার নিকট নির্জন প্রান্তরে অতিরিক্ত পানি
আছে, সে তা পথিক মুসাফিরকে পান করতে বাধা দেয়।
(২) যে বিক্রেতা আসরের পর তার পণ্য ক্রেতার
নিকট বিক্রয় করে আর আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে, সে এতো এতো মূল্যে তা ক্রয় করেছে
এবং ক্রেতা তার কথা বিশ্বাস করেছে, অথচ আসল ব্যাপার তার বিপরীত।
(৩) যে ব্যক্তি কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের
অভিপ্রায়ে শাসকের আনুগত্য করার শপথ করে, শাসক তাকে কিছু দিলে শপথ পূর্ণ করে এবং না
দিলে শপথ ভঙ্গ করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২০৭, ২৮৭০, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪৪৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৮, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১৫৯৫, নাসায়ী ৪৪৬২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৭৪, আহমাদ ৭৩৯৩, ৯৮৬৬,
বায়হাকী ফিস সুনান ১০/১৭৭, বায়হাকী ফিশ শু'আব ৩৪৪৪, আল-হাকিম ফিল-মুসতাদরাক ২/৬, মুসান্নাফ
আব্দুর রাযযাক ২০৯৯৯, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ৯৫৫)। (হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih))।
কোনো চাকরিজীবি নির্ধারিত বেতনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করলে
(ক) বুরায়দাহ্
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো লোককে
যদি আমরা কোনো কাজে নিযুক্ত করি এবং তাকে সে কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেই। অতঃপর যদি
সে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করে, তবে তা হলো খিয়ানাত। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৪৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪৩, সহীহ আল জামি‘ ৬০২৩, সহীহ
আত্ তারগীব ৭৭৯, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৩৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
মুসতাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি
আমাদের শাসনকার্যে নিযুক্ত হবে, তার যদি স্ত্রী না থাকে তবে সে একজন স্ত্রীর ব্যবস্থা
করতে পারে। আর যদি তার খাদিম না থাকে, তাহলে একজন খাদিম রাখতে পারে। আর যদি তার কোনো
ঘর না থাকে, তাহলে একটি ঘরেরও ব্যবস্থা করতে পারে। অপর এক বর্ণনাতে আছে, সে যদি তা
ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করে, তবে তা খিয়ানাত হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৫১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪৫, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৪৭৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আদী
ইবনু ’উমায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ হে মানব সকল! তোমাদের কাউকে যদি আমাদের কোনো কাজে নিযুক্ত করা হয়। অতঃপর সে যদি
তা থেকে একটি সুঁই পরিমাণ অথবা তার চেয়ে অধিক কিছু লুক্কায়িত রাখে, তাহলে সে খিয়ানাতকারী
বলে সাব্যস্ত হবে। কিয়ামতের দিনে সে তা বহন করে উত্থিত হবে। তখন জনৈক আনসারী দাঁড়িয়ে
বলে উঠলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমার ওপর যে কাজ অর্পণ করেছেন, তা অনুগ্রহপূর্বক
প্রত্যাহার করে নিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কেন এটা বলছ? লোকটি
বলল, আমি শুনেছি যে, আপনি এরূপ এরূপ (ভীতিকর) কথা বলেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, আমি আবারও বলছি, যাকে আমরা কোনো কাজে নিযুক্ত করি, তখন সে
যেন তার কম ও বেশি যাই হোক (সবকিছু) আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়। অতঃপর তাকে যা কিছু দেয়া
হবে, শুধু তাই গ্রহণ করবে। আর যা থেকে নিষেধ করা হবে, তা থেকে সর্বদা বিরত থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩৩, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৩৫৮১, আহমাদ ১৭৭২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৯১, ইসলামিক সেন্টার ৪৫৯৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ)
আবূ হুমায়দ সা’ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে রাজস্ব আদায়কারী নিযুক্ত করলেন। সে কাজ শেষ করে তাঁর কাছে
এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটা আপনার জন্য আর এ জিনিসটি আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি তোমার বাপ-মার ঘরে বসে
থাকলে না কেন? তা হলে দেখতে তোমার জন্য হাদিয়া পাঠানো হয় কি না? এরপর রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার ওয়াক্তের সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাশাহ্হুদ
পাঠ করলেন ও আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। এরপর বললেনঃ রাজস্ব আদায়কারীর অবস্থা
কী হল? আমি তাকে নিযুক্ত করে পাঠালাম আর সে আমাদের কাছে এসে বলছে, এটা সরকারী রাজস্ব
আর এ জিনিস আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। সে তার বাপ-মার ঘরে বসেই থাকল না কেন? তাহলে দেখত
তার জন্য হাদিয়া দেয়া হয় কি না?
ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রাণ, তোমাদের মাঝে কেউ কোন বস্তুতে খিয়ানত করলে, কিয়ামতের দিন
সে ঐ বস্তুটিকে তার কাঁধে বহন করা অবস্থায় আসবে। সে বস্তুটি যদি উট হয় তা হলে উট আওয়াজ
করতে থাকবে। যদি গরু হয় তবে হাম্বা হাম্বা করতে থাকবে। আর যদি বক্রী হয় তবে ভ্যা ভ্যা
করতে থাকবে। আমি (বাণী) পৌঁছিয়ে দিলাম। রাবী আবূ হুমায়দ বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হস্ত মুবারক এতটুকু উঠালেন যে, আমরা তাঁর দু’বগলের শুভ্রতা
দেখতে গেলাম। আবূ হুমায়দ বলেন, এ কথাগুলো যায়দ ইবনু সাবিতও আমার সঙ্গে শুনেছে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে। কাজেই তোমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পার। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬৩৬, ৯২৫; সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৬৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪৬, আহমাদ
২৩৬৫৯, আধুনিক প্রকাশনী ৬১৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬১৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সন্ত্রাস, অপহরণ, দস্যুতা, ছিনতাই ও লুটতরাজ করলে
সন্ত্রাস, দস্যুতা, ছিনতাই, লুন্ঠন, অপহরণ,
ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি কবীরা গুনাহ্গুলোর অন্যতম। চাই সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে হত্যা করা
হোক অথবা নাই হোক। কারণ, তারা যমীনে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী। তবে সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে
হত্যা করা হলে অবশ্যই হত্যাকারীদেরকে হত্যা করতে হবে। আর সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে হত্যা
করা না হলে সে অঘটনগুলো সম্পাদনকারীদেরকে চারটি শাস্তির যে কোন একটি শাস্তি দিতে হবে।
হত্যা করতে হবে অথবা ফাঁসী দিতে হবে অথবা এক দিকের হাত এবং অপর দিকের পা কেটে ফেলতে
হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্দী করে রাখতে হবে যতক্ষণ না তারা খাঁটি তাওবা করে নেয়।
এমনকি তারা শুধুমাত্র একজনকেই হত্যা করার ব্যাপারে কয়েকজন অংশ গ্রহণ করলেও তাদের সকলকেই
হত্যা করা হবে। যদি তারা সরাসরি উক্ত হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
‘‘যারা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যুদ্ধ কিংবা প্রকাশ্য শত্রুতা পোষণ করে অথবা আল্লাহ্ তা‘আলা
ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিধি-বিধানের উপর হঠকারিতা দেখায় এবং
(হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের মাধ্যমে) ভূ-পৃষ্ঠে অশান্তি ও ত্রাস সৃষ্টি
করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা ফাঁসী দেয়া হবে অথবা এক
দিকের হাত এবং অপর দিকের পা কেটে ফেলা হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্দী করে রাখা হবে
যতক্ষণ না তারা খাঁটি তাওবা করে নেয়। এ হচ্ছে তাদের জন্য ইহলোকের ভীষণ অপমান এবং পরকালেও
তাদের জন্য ভীষণ শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে তোমরা তাদেরকে গ্রেফতার করার পূর্বে
যদি তারা স্বেচ্ছায় তাওবা করে নেয় তাহলে জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমাশীল
ও অত্যন্ত দয়ালু’’। (সুরা মা’য়িদাহ্: ৩৩)।
তবে মানুষের হৃত অধিকার তাদেরকে অবশ্যই পূরণ
করতে হবে।
আবূ আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) (রহ.) বলেন,
আমাকে ইবনু বাশশার (রহ.) ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একটি বালককে গোপনে
হত্যা করা হয়। তখন ’উমার (রাঃ) বললেন, যদি গোটা সান্’আবাসী এতে অংশ নিত তাহলে আমি তাদেরকে
হত্যা করতাম।
মুগীরাহ ইবনু হাকীম (রহ.) আপন পিতা হাকীম থেকে
বর্ণনা করেন যে, চারজন লোক একটি বালককে হত্যা করেছিল। তখন ’উমার (রাঃ) ঐরকম কথা বলেছিলেন।
আবূ বকর ও ইবনু যুবায়র, ’আলী ও সুওয়ায়দ ইবনু মুকাররিন (রাঃ) চড়ের বিষয়ে কিসাসের নির্দেশ
দেন। ’উমার (রাঃ) ছড়ি দিয়ে মারার ব্যাপারে কিসাসের নির্দেশ দেন। আর ’আলী (রাঃ) তিনটি
বেত্রাঘাতের জন্য কিসাসের নির্দেশ দেন এবং শুরায়হ্ (রহ.) একটি বেত্রাঘাত ও নখের আঁচড়ের
জন্য কিসাস বলবৎ করেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৮৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সুতরাং সন্ত্রাস, দস্যুতা, ছিনতাই, লুন্ঠন,
অপহরণ ইত্যাদি এগুলো কবিরা গুণাহ। এগুলোর সাথে যারা জড়িত তারা মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত
নয়। রাসুল সাঃ বলেন,
ইমরান ইবনুল হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ছিনতাই ও লুটতরাজ করে, সে আমাদের
অন্তর্ভুক্ত নয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৩৭, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১১২৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত ২৯৪৭, আহমাদ ১৯৯৪৬, সহীহ আল জামি ৩২৬৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
রাসুল সাঃ আরো বলেন,
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যেনাকারী যখন যেনায় লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে
না। মদ্যপ যখন মদ পানে লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে না। চোর যখন চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত
হয় তখন সে মুমিন থাকে না। আর লুটতরাজ ও ছিনতাইকারী যখন লুটতরাজ ও ছিনতাই করে এবং লোকজন
তার দিকে চোখ তুলে তাকায়, তখন সে মুমিন থাকে না। (সুনান
ইবনু মাজাহ ৩৯৩৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৫৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬২৫, নাসায়ী ৪৮৭০, ৪৮৭১, ৪৮৭২, ৫৬৫৯, ৫৬৬০, সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬৮৯, আহমাদ ২৭৪১৯, ৮৬৭৮, ৮৭৮১, ৯৮৫৯, দারেমী ১৯৯৪, ২১০৬, রাওদুন
নাদীর ৭১৬, সহীহাহ ৩০০০, তাখরীজুল ঈমান লি ইবনু আবু শায়বাহ ৩৮-৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১০৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ১১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যের জিনিস নিজের দাবী করলে
যুহারর ইবনু হারব (রহ) ... আবূ যার (রযিঃ)
বলেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি
জেনে শুনে নিজ পিতার পরিবর্তে অন্য কাউকে পিতা বলে, সে কুফুরী করল। আর যে ব্যক্তি এমন
কিছুর দাবী করে যা তার নয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয় এবং সে যেন জাহান্নামে তার আবাসস্থল
বানিয়ে নেয়। আর কেউ কাউকে কাফির বলে ডাকলে বা আল্লাহর দুশমন’ বলে ডাকল, যদি সে তা
না হয় তাহলে এ কুফুরী সম্বোধনকারীর প্রতি ফিরে আসবে। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৬১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৩১৯, আহমাদ ২০৯৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২১, ইসলামিক সেন্টারঃ
১২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
কোন পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে দালালি করা
কোন পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে দালালি করা আরেকটি হারাম
কাজ। দালালি বলতে নিলামে বিক্রি কোন মাল তো তার কেনার কোন ইচ্ছে নেই; অথচ সে উক্ত পণ্যের
বেশি দাম হাঁকিয়ে ওর মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন
কাজ করতে সবাইকে নিষেধ করে দিয়েছেন।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, শহরবাসী গ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে বিক্রয় করবে না। আর তোমরা
(মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশে) দালালী করবে না। কেউ যেন তার ভাইয়ের ক্রয়ের উপরে দাম না বাড়ায়
এবং কেউ যেন তার ভাইয়ের (বিবাহের) প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। আর কোন স্ত্রীলোক
যেন তার বোনের (সতীনের) পাত্রের অধিকারী হওয়ার উদ্দেশে তার তালাকের চেষ্টা না করে।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭২৩, ২১৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৫২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বর্তমান যুগে নিলামে গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে
এমন অপতৎপরতা বেশি দেখা যায়। গাড়ির দাম হাঁকার সময় গাড়ির মালিক, তার বন্ধুবান্ধব অথবা
কোন দালাল ক্রেতার বেশে ক্রেতাদের মাঝে সতর্কভাবে ঢুকে পড়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়;
অথচ পণ্যটি কেনার তাদের কোন ইচ্ছে নেই। এতে করে ক্রেতারা প্রতারিত হয়। কারণ, তারা তখন
পণ্যটি আসল দামের চাইতে অনেক বেশি দামে কিনতে বাধ্য হয়; অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম উক্ত অপতৎপরতাকে জাহান্নামের কারণ বলে আখ্যায়িত করেন।
ক্বাইস্ বিন্ সা’দ্ ও আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত
তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘‘ধোঁকা ও ষড়যন্ত্র
জাহান্নামে যাওয়ার বিশেষ কারণ’’। (ইব্নু ‘আদি’ ২/৫৮৪ বায়হাক্বী/শু‘আবুল্
ঈমান ২/১০৫/২; হা’কিম ৪/৬০৭)
খাদ্যশস্য বিক্রিতে ধোকা দিলে
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন সে খাদ্যশস্য বিক্রয় করছিল। তিনি খাদ্যশস্যের
স্তুপের মধ্যে তার হাত ঢুকালেন এবং আদ্রতা অনুভব করলেন। রাসূলুল্লাহ বলেনঃ যে ব্যক্তি
ধোঁকা দেয় সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সুনান ইবনু মাজাহ
২২২৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১৩১৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৫২, আহমাদ ৭২৫০, ২৭৫০০, ইবনু হিব্বান
৪৯০৫, ৫৫৫৫৯, বায়হাকী ফিস সুনান ৫/৩২০, ইরওয়া ১৩১৯, ইবনুস সালাম এর তাখরীজুল ঈমান ৭১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ব্যবসায়ীক মালপত্র/খাদ্য দ্রব্য মজুদদারী করলে
অধিক মুনাফা লাভের আশায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী খাদ্য
দ্রব্য বা অন্যান্য মালামাল গোপনে মজুদ করে রাখে। এতে রাষ্ট্রে খাদ্য দ্রব্য বা অন্যান্য
মালামালের সংকট দেখা যায় ও দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। যারা এরুপ কাজ করে তারা পাপিষ্ঠ লোক।
মা’মার ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে নাদলা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাপিষ্ঠ ব্যক্তি
ছাড়া কেউ মজুতদারি করে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৫৪, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪০১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬০৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১২৬৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৪৭, আহমাদ ১৫৩৩১, ২৬৭০৩, দারেমী ২৫৪৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ সাঈদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি মু’মিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো (পাপীষ্ঠ লোকের) সঙ্গী
হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেযগার লোকে খায়। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৩২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
হারাম খাদ্য ভক্ষণ করলে সেই দেহ জান্নাতে যাবে না
হারাম বা অবৈধ উপায়ে অর্থ বা সম্পদ উপার্জনের
মাধ্যমগুলো যেমন সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতী, ছিনতাই, ওজনে কম দেয়া, মিথ্যে কথা
বলে পণ্য বিক্রি করা, নারী পাচার করা, যিনার মূল্য, কুকুরের মূল্য ইত্যাদি ইত্যাদি
এর সাথে যারা জড়িত তারা জান্নাতে যাবে না।
হালাল রিজিক ইবাদত কবুলের অন্যতম প্রধান শর্ত।
রিজিক হালাল বা পবিত্র এবং বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে।
প্রথমতঃ
ব্যবহার্য, ভোগ্য বা উপভোগ্য বস্তু বা বিষয়টি হালাল তথা পবিত্র ও অনুমোদিত হতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ তা
প্রাপ্তি বা অর্জনের পথ বা মাধ্যম হালাল বা বৈধ হতে হবে। এ দুইয়ের কোনো একটির ব্যত্যয়
ঘটলে ঐ রিজিক হালাল বা পবিত্র হবে না।
রাসুল সাঃ বলেন,
(ক) আবূ
বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে, সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৭, সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল ঈমান
৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ)
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে দেহের গোশত/গোশত হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম
ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭২, আহমাদ ১৪৪১, শু‘আবুল ঈমান
৮৯৭২, দারিমী ২৭৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি পুত-পবিত্র
জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ করেছেন তদ্রূপ
এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : ’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র
হালাল রুযী খাও এবং নেক আ’মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)। আল্লাহ তা’আলা আরো
বলেনঃ ’’হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ
ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ১৭২)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের
সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত
আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম,
পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির
দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের সামনে এমন একটি যুগ আসবে, যখন কেউ
কি উপায়ে ধন-সম্পদ উপার্জন করলো, হারাম না হালাল উপায়ে- এ ব্যাপারে কেউ কোনো প্রকার
পরোয়া করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬১, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৫৯, ২০৮৩, নাসায়ী
৪৪৫৪, সহীহ আল জামি‘ ৮০০৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭২২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯১৬ , ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ১৯৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঙ)
নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর এ উভয়ের মধ্যে এমন অনেক সন্দেহভাজন
বিষয় বা বস্ত্ত আছে, যে ব্যাপারে অনেক মানুষই এগুলো হালাল, কি হারাম- এ বিষয়ে অবগত
নয়। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় হতে বিরত থাকবে, তার দীন ও মান-মর্যাদা পুত-পবিত্র
থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত থাকবে, সে সহসাই হারামে জড়িয়ে পড়বে। বিষয়টি সেই
রাখালের ন্যায়, যে রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার কাছাকাছি নিয়ে চরালো, তার
পাল অজান্তেই নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
সাবধান! প্রত্যেক দায়িত্বশীলেরই (প্রশাসন বা
সরকারেরই) চারণভূমি (নিষিদ্ধ এলাকা) আছে, আর আল্লাহ তা’আলার নিষিদ্ধ চারণভূমি হারামসমূহকে
নির্ধারিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, মানব দেহের ভিতরে একটি গোশতপিন্ড আছে, যা ভালো থাকলে
গোটা শরীরই ভালো থাকে। আর এটি নষ্ট হয়ে গেলে বা বিকৃতি ঘটলে সমস্ত শরীরটাই নষ্ট হয়ে
যায়। সেই গোশতপিন্ডটিই হলো ’কলব’ (অন্তঃকরণ)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩৯৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২০৫, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত ৩৩৩০, আহমাদ ১৮৩৭৪, দারিমী ২৫৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
(ক)
“হে মানবগণ! পৃথিবীর মধ্যে যা বৈধ-পবিত্র, তা হতে ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদঙ্ক অনুসরণ
করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”। (সুরা আলবাক্বারাহ ১৬৮)।
(খ) “হে
ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যা জীবিকা স্বরূপ দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ
কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাকো”। (সুরা আলবাক্বারাহ ১৭২)।
(গ) “হে
রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র বস্তু হতে আহার করুন ও সৎকর্ম করুন; আপনারা যা করেন সে সম্বন্ধে
আমি অবগত”। (সুরা মুমিনূন ৫১)।
হারাম উপায়ে উপার্জিত কিছু খাত
(ক) রাফি’ বিন খাদীজ (রাঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুকুর বিক্রয়লব্ধ
মূল্য ঘৃণিত বস্তু, যিনা-ব্যভিচারের বিনিময়ও ঘৃণিত, শিঙ্গা লাগানোর (রক্তমোক্ষণের)
ব্যবসা ঘৃণিত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৩, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত
৩৪২১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৭৫, আহমাদ ১৫৮২৭, দারিমী ২৬৬৩, সহীহ আল জামি‘
৩০৭৭, সহীহাহ্ ৩৬২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারের বিনিময় এবং গণকের পারিতোষিক (গ্রহণ করা) হতে নিষেধ করেছেন।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৭, ২২৮২, ২৩৪৬, ৫৭৬১,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৫৯,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৭, ২২৮২, ৫৩৪৬,
৫৭৬১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৩৩, ১২৭৬, নাসায়ী ৪২৯২, ৪৬৬৬, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৩৪২৮, ৩৪৮১, আহমাদ ১৬৬২২, ১৬৬২৬,১৬৬৩৯ মুয়াত্তা মালেক ১৩৬৩, দারেমী ২৫৬৮, ইরওয়া ১২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৫৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২০৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৯৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কুকুরের মূল্য ও পাঠার ভাড়া গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২১৬০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮৪, নাসায়ী ৪২৯৩, ৪৬৭৩, আহমাদ ৭৯১৬,
৮১৮৯, ৯১০৮, ১০১১১, দারেমী ২৬২৩, ২৬২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ)
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিড়ালের
মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬১,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১২৭৯, নান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮০, নাসায়ী ৪২৯৫, ৪৬৬৮, আহমাদ ১৪২৪২, ১৪৩৫৩, ১৪৭২৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ)
আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তমোক্ষণ
কাজের বিনিময়, কুকুর বিক্রয় মূল্য ও যিনা-ব্যভিচারের বিনিময় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ
করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লা’নাত (অভিসম্পাত) করেছেন সুদগ্রহীতা
ও সুদদাতার প্রতি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো লা’নাত করেছেন ওই ব্যক্তির
প্রতি যে দেহের কোনো অংশে নাম বা চিত্রাঙ্কন করে ও করায়। তাছাড়াও তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছবি অঙ্কনকারীর প্রতিও লা’নাত করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৬২, ২০৮৬,
আহমাদ ১৮৭৬৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫৫২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(চ) আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা গায়িকা বেচা-কেনা
করো না তাদেরকে (মেয়েদেরকে) গান শিক্ষাও দিয়ো না, এর মূল্য হারাম। এ জাতীয় কাজ যারা
করে তাদের ব্যাপারেই কুরআন মাজীদের এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, অর্থাৎ- ’’কতক মানুষ আল্লাহ্র
পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশে অজ্ঞতাবশত অবান্তর কথাবার্তা ক্রয় করে আর আল্লাহ্র পথকে
ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদের জন্যই আছে অবমাননাকর শাস্তি।’’- (সূরা লুকমান ৩১ : ৬)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১২৮২, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬৮, সহীহ আল জামি ৫০৯১, সহিহাহ ২৯২২)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(ছ)
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আবূ বকর (রাঃ)-এর একটি ক্রীতদাস ছিল।
দাসটি তাঁর জন্য রুযী-রোজগার করতো এবং তিনি তা খেতেন। একবার সেই ক্রীতদাসটি কোনো খাবার
নিয়ে এলে আবূ বকর (রাঃ) তা খেলেন। ক্রীতদাসটি তাঁকে বললেন, আপনি কি জানেন- এটা কিভাবে
উপার্জিত হয়েছে? আবূ বকর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ মাল কিভাবে উপার্জিত? তখন ক্রীতদাসটি
বললো, জাহিলী যুগে একবার আমি এক ব্যক্তির কাছে গণকের কাজ করেছিলাম, অথচ আমি গণনার কাজও
ভালো করে জানতাম না। আমি গণনার ভান করে তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম। ঐ ব্যক্তির সাথে আজ আমার
দেখা হলে সে আমাকে আগের ঐ গণনার বিনিময়ে বস্তুটি দান করেছে, আপনি তাই খেয়েছেন। তিনি
বলেন, (এ কথা শুনামাত্র) আবূ বকর(রাঃ) গলার ভিতরে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে পেটের সব জিনিস
বমি করে ফেলে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৬,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৮৪২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(জ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন পথে পড়ে থাকা একটি খেজুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ খেজুর যাকাত বা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হবার
সন্দেহ না থাকলে আমি উঠিয়ে খেয়ে নিতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৮২১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৩১, ২০৫৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩৬৮, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০৭১, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক্ব ১৮৬৪২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩৬, ইরওয়া ১৫৫৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নাতি হাসান ইবনু ’আলী (রাঃ) সদাক্বার খেজুর হতে একটি খেজুর উঠিয়ে মুখে পুরলেন। (তা
দেখে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খেজুরটি মুখ থেকে বের করে ফেলো, বের
করে ফেলো। (তিনি এ কথাটি এভাবে বললেন যেন হাসান তা মুখ থেকে বের করে ফেলে দেয়)। তারপর
তিনি তাঁকে বললেন, তুমি কি জানো না যে, আমরা (বানী হাশিম) সদাক্বার মাল খেতে পারি না।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ২৩৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬৯, আহমাদ ৯৩০৮, দারিমী ১৬৮২, সুনানুল কুবরা
লিল বায়হাক্বী ১৩২৩১, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৪৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(ঞ) জাবির
ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মক্কা বিজয়ের বছর তথায় অবস্থানকালে বলেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মদ, মৃতজমত্ত, শুকর ও
মূর্তির ক্রয়-বিক্রয় হারাম করেছেন। তাঁকে বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মৃত জন্তুর চর্বি
সম্পর্কে কী বলেন? কারণ এটি নৌকায় লাগানো হয়, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহৃত হয় এবং
লোকেরা তা দিয়ে বাতিও জ্বালায়। তিনি বলেনঃ না, এগুলোও হারাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ ইহূদীদের ধ্বংস করুন। আল্লাহ তাদের জন্য চর্বি হারাম
করলে তারা এটি গলিয়ে বিক্রয় করে এবং এর মূল্য ভোগ করে। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২১৬৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৬, ৪৬৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩৯৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৮১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৯৭, নাসায়ী ৪২৫৬,
৪৬৬৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮৬, বায়হাকী ৯/৩৫৫, ইবনু হিব্বান ৪৯৩৭, ইরওয়া ১২৯০,
রাওদুন নাদীর ৪৪৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৯৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
এগুলো ছাড়াও হারাম উপায়ে অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন
খাত রয়েছে, যেমন সুদ খাওয়া, সুদীকারবারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা, ঘুষ নেয়া, দুর্নীতি
করা, সুপারিশের করে টাকা নেয়া, নাটক সিনেমায় অভিনয় করা, চাঁদাবাজি করা, টেন্ডারবাজি
করা, চুরি করা, ডাকাতি করা, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা, যেকোনো অবৈধ ব্যবসা করা,
ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে কর্মরত থাকা অবস্থায় আলাদাভাবে রোগী দেখে টাকা নেয়া কিংবা
অন্য কোথাও রেফার্ড করে বা টেস্ট করিয়ে তার কমিশন নেয়া, ঘুষ নিয়ে রায় দেয়া, ঘুষ নিয়ে
মামলার রিপোর্ট পরিবর্তন করা আর কতো লিখবো এরকম হাজার হাজার অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের
খাত আছে। যারা এসব খাতের সাথে জড়িত তাদের উপার্জিত অর্থ হারাম। হারাম খেলে দেহও হারাম
হয়ে যায়। তাদের ইবাদত, আমল বা দান খয়রাত আল্লাহ তায়ালা কখনো কবুল করবেন না। রাসুল সাঃ
বলেন,
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবূল করেন না এবং
হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের দান-খয়রাত কবূল করেন না। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২৭২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৪, সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১, আহমাদ ৪৬৮৬, ৪৯৪৯, ৫১০২, ৫১৮৩, ৫৩৯৬, ইরওয়াহ ১২০, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৪২৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জীবনোপকরণ লাভে উত্তম পন্থা অবলম্বন কর
রাসুল সাঃ বলেন,
আবূ হুমাইদ আস-সাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পার্থিব জীবনোপকরণ
লাভে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা যাকে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজতর
করা হয়েছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৪২, আত-তালীকুর রাগীব
২/৭, সহিহাহ ৮৯৮, ২৬০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসুল সাঃ আরো বলেন,
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহকে ভয়
করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো। কেননা কোন ব্যক্তিই তার জন্য নির্দ্ধারিত
রিযিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না, যদিও তার রিযিক প্রাপ্তিতে কিছু বিলম্ব
হয়। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো, যা হালাল তাই
গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো। (সুনান ইবনু মাজাহ
২১৪৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৭, সহিহাহ ২৬০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কিয়ামতে অর্থ সম্পদ আত্মসাৎকারীর নিকট থেকে যেভাবে প্রতিশোধ
নেয়া হবে
(ক) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা
কি জানো, (প্রকৃত) গরীব কে? সহাবায়ে কিরাম বললেনঃ আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে যার
টাকা-পয়সা, ধনদৌলত নেই, সে-ই গরীব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কিয়ামতের
দিন আমার উম্মাতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি গরীব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে সালাত,
সিয়াম ও যাকাত আদায় করে আসবে; কিন্তু সাথে সাথে সেসব লোকেদেরকেও নিয়ে আসবে যে, সে কাউকে
গালি দিয়েছে, কারো অপবাদ রটিয়েছে, কারো সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে
প্রহার করেছে; এমন ব্যক্তিদেরকে তার নেকীগুলো দিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর যখন তার পুণ্য শেষ
হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো বাকি, তখন পাওনাদারদের গুনাহ তথা পাপ তার ওপর
ঢেলে দেয়া হবে, আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মিসকাতুল
মাশাবিহ মিসকাত ৫১২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১,
সুনান আততিরমিযী ২৪১৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৮৪৫, সহীহুল জামি‘ ৮৭, সহীহ আত্ তারগীব
২২২৩, শু‘আবুল ঈমান ৩৩, আহমাদ ৮০২৯, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪১১,
‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ৫৬১, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ২৭৭৮, আস্ সুনানুল কুবরা
লিল বায়হাক্বী ১১৮৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৩)। হাদিসের মান
সহিহ।
(খ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন হকদারদের হক আদায় করা হবে, এমনকি যে বকরীর শিং নেই, তার জন্য
শিংওয়ালা বকরী থেকে বিনিময় আদায় করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮২,
সুনান আততিরমিযী ২৪২০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৫৮৮, সহীহুল জামি‘ ৫০৬২, সহীহ আত্ তারগীব
৩৬০৩, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১৩৬, আহমাদ ৭২০৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৬৩, আস্ সুনানুল
কুবরা ১১৮৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৪, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(গ) ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)...আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মু’মিনগণ যখন জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে, তখন জান্নাত ও জাহান্নামের
মাঝখানে এক পুলের উপর তাদের আটকে রাখা হবে। তখন পৃথিবীতে একের প্রতি অন্যের যা যা জুলুম
ও অন্যায় ছিল, তার প্রতিশোধ গ্রহণের পরে যখন তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তখন তাদেরকে
জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ,
নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে তার আবাসস্থল যেরূপ চিনত, তার চাইতে অধিক তার জান্নাতের
আবাসস্থল চিনতে পারবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৪৪০, ৬৫৩৫, সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২২৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৪০, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ২২৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির কোন মুসলিম
ভাইয়ের প্রতি অত্যাচারঘটিত; যেমন- মানহানি বা অন্য কোন বিষয়ের কোন হক থাকে, তবে সে
যেন সেদিনের পূর্বেই তার কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নেয়, যেদিন তার কাছে কোন দীনার বা দিরহাম
থাকবে না। যদি তার নেক আমল থাকে, তাহলে অত্যাচারিতের হক অনুসারে তার কাছ থেকে নেক
’আমল নিয়ে নেয়া হবে। আর যদি তার নেক না থাকে, তবে অত্যাচারিত ব্যক্তির পাপকে তার ওপর
চাপানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১২৬, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪৯, ৬৫৩৪, সহীহুল জামি ৬৫১১, সহীহ আত্ তারগীব ২২২২, আহমাদ ১০৫৭৩,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৬১, শু‘আবুল ঈমান ৭৪৭০, আর মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৩৫,
আল মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ৩৪৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৭৮০, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ২২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
...........................................................................................
কুরআন
ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক
করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment