বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সর্বাধিক কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক
শহিদ
ও মুজাহিদদের মর্যাদা, শহিদগণ কি কবরে জীবিত?
প্রথম অধ্যায়
শহিদ
কারা
বর্তমানে অনেকেই শহিদ শব্দটি নিজেদের খেয়াল
খুশি মতো ব্যবহার করছে। শহিদ শব্দটি মূলত কুরআনের
নিজস্ব শব্দ। কাজেই কুরআন যাদেরকে শহিদ বলেছে তাদেরকেই শহিদ বলা হবে। ইদানিং অধিকাংশ
লোকেরা যাকে তাকেই শহিদ বলে আখ্যা দিচ্ছে। এমনকি কাফের, মুশরিক, অমুসলিম, বেইমান
ও মুনাফিক নিহত হলেও তাদেরকেও শহিদ বলে উপাধি দেয়া হচ্ছে। আর ইসলাম সম্বন্ধে অজ্ঞ লেখকগণ
তাদের বই-পুস্তকেও শহিদের মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা
লিখে ছাত্র-ছাত্রীদের মগজে ভ্রান্ত অর্থ দ্বারা নকল শহিদের চিত্র বদ্ধমূল করে দিচ্ছে।
কারণ সাধারণ মানুষ শহিদের অর্থ ও ব্যাখা জানে না।
শহিদ হলো আরবি শব্দ। আল্লাহর পথে নিহত ব্যক্তির
জন্য শহিদ উপাধি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
দিয়েছেন।
প্রথমতঃ বিজ্ঞ
আলেমদের মতামতের দিকে যদি দৃষ্টিপাত করি তারা বলেন: "শহিদ হলো, আল্লাহর রাস্তায়
নিহত ব্যক্তি। অর্থাৎ, প্রত্যেক অভিধানেই পরিষ্কার দেখতে পাবো যে, একমাত্র আল্লাহর
পথে নিহত হলেই শহিদ হয়।
দ্বিতীয়তঃ
আল্লাহ স্বয়ং কুরআনে বলেন: "যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় একমাত্র তারাই শহীদ হবে
এবং আল্লাহর বিরাট বিরাট পুরস্কার ও বিভিন্ন ধরনের নিয়ামত পাবে।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন:
“অতএব যারা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে
বিক্রয় করে তাদের আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা উচিত। বস্তুতঃ যে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে,
অতঃপর সে নিহত হবে অথবা বিজয়ী, আমি তাকে শীঘ্রই মহা পুরস্কার দান করব”। (সূরা আন নিসা ৭৪)।
মহান আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
“যারা মুমিন বা বিশ্বাসী তারা আল্লাহর পথে
যুদ্ধ করে, আর যারা কাফের তারা তাগূতের পথে যুদ্ধ করে। কাজেই তোমরা শয়তানের বন্ধুদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; শয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্ব ”। (সূরা
আন নিসা: ৭৬)।
আবূ
মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, এমন কেউ যদি গনীমাতের ধন-মালের লাভের প্রত্যাশায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ
করে, কেউ সুনাম সুখ্যাতি (তথা মুজাহিদ নাম) অর্জনের প্রত্যাশায় যুদ্ধ করে, আর কেউ আছে
বীরত্ব প্রদর্শনের (তথা যোদ্ধা হওয়ার) অহমিকায় যুদ্ধ করে- এদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি
সর্বোত্তম? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি শুধুমাত্র
আল্লাহর বাণী-বিধান (ইসলাম) প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করে, সে-ই শুধু আল্লাহর পথে জিহাদ
করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮১৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮১০, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৮১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৪, সুনান আবূ দাঊদ ২৫১৭, সুনান আননাসায়ী
৩১৩৬, সুনান আততিরমিযী ১৬৪৬, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৮৩, মুসনাদ আহমাদ ১৯৫৯৬, সহীহ আল জামি‘
৬৪১৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৩২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৬৬, ইসলামিক সেন্টার ৪৭৬৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রকৃত শহিদ কে?
যারা তাওহীদের কালেমাকে সমুন্নত করার খালেছ
নিয়তে আল্লাহর পথে লড়াই করে মারা যাবে, তারাই হচ্ছে প্রকৃত শহীদ। আর শহীদের পরিচয় ও
বৈশিষ্ট্য হবে এই যে, সে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে লড়াই করবে না, তাকে বাহাদুর বলা হবে
এ উদ্দেশ্যে বা লোককে শুনানোর উদ্দেশ্যে লড়াই করবে না’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
(সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি খ্যাতি অর্জনের জন্য কোন কাজ করে, আল্লাহ তা’আলা তার দোষ-ক্রটিকে
লোক সমাজে প্রকাশ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য কোন কাজ করে, আল্লাহ
তা’আলাও তার সাথে লোক দেখানোর আচরণ করবেন (প্রকৃত সাওয়াব হতে সে বঞ্চিত থাকবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩১৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৯৯, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী ৭৩৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৭, সুনান আততিরমিযী ২৩৮১, সুনান ইবনু
মাজাহ ৪২০৬, সহীহুল জামি' ১১৫৫৫, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩৫২৯৮, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু
হুমায়দ ৭৭৮, মুসনাদে আহমাদ ১১৩৭৫, আবূ ইয়া'লা ১০৫৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪০৬, শুআবূল
ঈমান ৬৮১৮, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৬৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জিহাদে নিহত ব্যক্তি তিন শ্রেণির হয়ে থাকে
উতবাহ্
ইবনু ’আব্দুস্ সুলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিহাদে নিহত ব্যক্তি তিন শ্রেণীর হয়ে থাকে।
(ক)
সেই প্রকৃত মু’মিন ব্যক্তি, যে নিজের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, শত্রুর
মুকাবিলায় বীরদর্পে লড়াই করে, পরিশেষে শাহাদাত বরণ করে। এদের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ ব্যক্তিই পরীক্ষিত শহীদ। সুতরাং ’আরশের নিচে আল্লাহর তাঁবুতে
তাদেরই স্থান হবে। আর নবী-রসূলগণের মর্যাদা যে সমস্ত শাহীদের ওপর নাবূওয়াতের মর্যাদা
ব্যতীত অধিক অন্য কোনো কিছু হবে না।
(খ) সেই
মু’মিন ব্যক্তি, যে পাপ-পুণ্যের জীবন অতিবাহিত করেছে, আর নিজের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর
পথে জিহাদ করতে করতে শাহাদাত লাভ করেছে। তার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, সে পাপরাশি মোচনকারী শাহাদাত লাভ; যা তার অন্যায় ও অপরাধসমূহ মুছে দেয়। মূলত
তরবারি হলো সকল গুনাহ মোচনকারী, ফলে সে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা অনায়াসে
প্রবেশ করবে।
(গ)
মুনাফিক (মুসলিম) নিজের জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে, এমনকি শত্রু মুকাবিলায় যুদ্ধ করে
মৃত্যুবরণও করে; কিন্তু সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। কেননা তরবারি (মুনাফিকের) নিফাক
দূরীভূত করতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৫৯,
দারিমী ২৪৫৫, আহমাদ ১৭৬৫৭)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
শহিদের প্রকারভেদ
প্রত্যেক প্রাণীকে অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ
করতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’
(সুরা আলে ইমরান : ১৮৫, সুরা আম্বিয়া : ৩৫, সুরা আনকাবুত : ৫৭)। মুমিনের মৃত্যু আর
অন্যদের মৃত্যু এক রকম নয়।
আল্লাহ তাআলা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বলেছেন,
‘আপনি বলুন, আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই
জন্য।’ (সুরা আনআম : ১৬২)।
একজন মুমিনের স্বীকৃতি এটিই যে আমার সকল কাজ
এবং জীবন-মরণ আল্লাহর জন্য নিবেদিত। আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন, ‘তিনি জান্নাতের
বিনিময়ে মুমিনদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন।’ (সুরা
তাওবা : ১১১)।
মুমিনের কামনা-বাসনা হলো শহিদি মৃত্যু। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন, সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে শাহাদাতের মনোষ্কামনা করে; আল্লাহ
তা’আলা তাকে শাহীদের মর্যাদায় উন্নীত করেন, যদিও সে স্বীয় বিছানায় মৃত্যুবরণ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৮২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৫২০, সুনান আননাসায়ী ৩১৬২, সুনান
আততিরমিযী ১৬৫৩, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৯৭, দারিমী ২৪৫১, ২৪০৭, সহীহ আল জামি‘ ৬২৭৬, সহীহ
আত্ তারগীব ১২৭৬, ইবনু হিব্বান ৩১৯২, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ২/৭৭, বায়হাকী ফিস সুনান
৯/১৭০, আত-তালীকুর রাগীব ২/১৬৯, সহীহ আবু দাউদ ১৩৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবার জিহাদের নিয়্যাত না করে মৃত্যুবরণ
করলে, সে প্রকৃতপক্ষে মুনাফিক হয়েই মৃত্যুবরণ করল।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জিহাদে অংশগ্রহণ করেনি
এবং জিহাদের নিয়্যাত না করে মৃত্যুবরণ করে, সে প্রকৃতপক্ষে মুনাফিক হয়েই মৃত্যুবরণ
করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮১৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৮২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১০, সুনান আবূ দাঊদ ২৫০২, সুনান আননাসায়ী ৩০৯৭,
মুসনাদ আহমাদ ৮৮৬৫, সহীহ আল জামি‘ ৬৫৪৮, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
শহিদি মৃত্যু
শহিদি মৃত্যু দুই প্রকার। এক প্রকার হলো প্রকৃত
শহিদ। আরেক প্রকার হলো হুকুমি শহিদ।
প্রকৃত শহিদঃ
তা হলো, দ্বিন কায়েমের জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করে জীবন দেওয়া। এ ধরনের শহিদের মর্যাদা অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা
তা বুঝ না।’ (সুরা আল-বাকারা : ১৫৪)।
হুকুমি শহিদঃ
এই প্রকারের শহিদগণ প্রকৃত শহিদ নয় তারা শহিদদের মতো সাওয়াবপ্রাপ্ত হবেন। তারা হলেন, প্লেগ,
মহামারি ইত্যাদিতে মৃত্যুবরণকারী। তারা শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।
ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শাহীদগণ এবং যারা বিছানায় মৃত্যুবরণ করেছে
তারা আল্লাহ তা’আলার নিকট প্লেগ রোগে মৃত্যুবরণকারীদের ব্যাপারে ঝগড়া করবে। শহীদগণ
বলবে, ’’এরা আমাদের ভাই। কেননা আমাদেরকে যেভাবে নিহত করা হয়েছে, এভাবে এদেরকেও নিহত
করা হয়েছে।’’ আর বিছানায় মৃত্যুবরণকারীগণ বলবে, ’’এরা আমাদের ভাই। এ লোকেরা এভাবে বিছানায়
শুয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, যেভাবে আমরা মরেছি।’’ তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, এদের জখমগুলোকে
দেখা হোক। এদের জখম যদি শহীদদের জখমের মতো হয়ে থাকে, তাহলে এরাও শহীদদের অন্তর্ভুক্ত
এবং তাদের সাথে থাকবে। বস্তুত যখন জখম দেখা হবে, তখন তা’ শাহীদদের জখমের মতো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৯৬, সুনান আননাসায়ী ৩১৬৪, আহমাদ
১৭১৫৯, শু‘আবুল ঈমান ৯৪১৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৪০৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৮০৪৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়লে ওখান থেকে ভেগে যাওয়া যুদ্ধের ময়দান
থেকে ভেগে যাবার মতো। প্লেগ ছড়িয়ে পড়লে সেখানেই ধৈর্য ধরে অবস্থানকারী শাহীদের সাওয়াব
পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৯৭, আহমাদ ১৪৮৭৫,
সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২৯৩, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪২৭৭)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
আসুন সহিহ হাদিস হতে শহিদদের প্রকারভেদ জেনে নেই।
(১) সা’ঈদ
ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে লোক তার দীনের কারণে মৃত্যুবরণ করে, সে শহীদ। যে লোক তার প্রাণ রক্ষার্থে
মৃত্যুবরণ করে, সে শহীদ। যে লোক তার ধন-সম্পদ হিফাযাত করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে
শহীদ। যে লোক তার পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫২৯, সুনান আবূ দাঊদ ৪৭৭২, সুনান
আননাসায়ী ৪০৯৫, সুনান আততিরমিযী ১৪২১, আহমাদ ১৬৫২, ইরওয়া ৭০৮, সহীহ আল জামি‘ ৬৪৪৫,
সহীহ আত্ তারগীব ১৪১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(২)
আহমাদ ইবন নাসর (রহঃ) ... বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার মাল রক্ষার্থে মারা যায়, সে শহীদ। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৪০৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৩)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যকার কাকে তোমরা শহীদ বলে মনে কর? সাহাবীগণ সমস্বরে বলে উঠল, যে
ব্যক্তি আল্লাহর পথে নিহত হয়, সেই শহীদ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
তাহলে তো আমার উম্মাতের মধ্যে শাহীদের সংখ্যা খুবই নগণ্য হবে। সুতরাং
(ক)
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করে, সে শহীদ;
(খ) যে
ব্যক্তি আল্লাহর পথে নিয়োজিত থেকে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ এবং
(গ)
যে ব্যক্তি প্লেগ রোগে মৃত্যুবরণ করে, সেও শহীদ। আর
(ঘ)
যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণ করে, সেও শহীদ।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৮১১, সহীহুল বুখারী ৬৫৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮৩৫, ৪৮৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৯১৫, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮০৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৯৩, সুনান আততিরমিযী ১০৬৩, ১৯৫৮, ৫২৪৫,
আহমাদ ৮০৯২, ১০৩৮৩, ২৭৩২৯, মুয়াত্তা মালেক ২৯৫, ইবনু হিব্বান ৩১৭৭, ২/৩২৪, ৩২৫, বায়হাকী
ফিস সুনান ৯/১৬৪, আল-আহকাম ৩৬, ৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) জাবির
ইবনে আতীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে দেখতে আসেন। জাবির (রাঃ) এর পরিবারের কেউ বললো, আমরা আশা করতাম যে, সে আল্লাহর
রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
তাহলে আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে।
(ক) আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারীতে
নিহত হলে শহীদ,
(খ) যে
মহিলা গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং
(গ) পানিতে
ডুবে,
(ঘ) আগুনে
পুড়ে ও
(ঙ)
ক্ষয়রোগে মৃত্যুবরণকারী শহীদ।
(সুনান ইবনু মাজাহ ২৮০৩, সুনান
নাসায়ী ১৮৪৬, ৩১৯৪, সুনান আবূ দাউদ ৩১১১, আহমাদ ২৩২৪১, মুয়াত্তা মালেক ৫৫২, আল-আহকাম
৩৯-৪০ নং পৃষ্ঠা, আত-তালীকুর রাগীব ২/২০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ)....আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ এক ব্যক্তি পথ চলাকালে একটি কাটাযুক্ত গাছের ডাল রাস্তায় পেয়ে তা সরিয়ে
দিল, তখন আল্লাহ তা’আলা তার প্রতিদানে তাকে ক্ষমা করে দিলেন। তিনি আরও বললেন, শহীদ
পাচ প্রকারঃ ১. প্লেগগ্রস্ত, ২. উদরাময়গ্রস্ত, ৩. ডুবন্ত,৪. কোন কিছু চাপা পড়ে মৃত
ব্যক্তি এবং ৫. আল্লাহর পথে (জীবনদানকারী) শহীদ। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৮৭,
ইসলামীক সেন্টার ৪৭৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
পাঁচ প্রকার মৃত শহীদঃ মহামারীতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তূপে
চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহর পথে শহীদ হলো। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮২৯, ৬৫৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৩০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) আনাস
ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৩০, ৫৭৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১৬, আহমাদ ১২৫২১,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
শহিদগণ কি জান্নাতি
(ক) জাবির
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদের দিন জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
জিজ্ঞেস করলেন। আচ্ছা বলুন! আমি যদি এ যুদ্ধে মারা যাই, তবে আমার অবস্থান কোথায় হবে?
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, জান্নাতে। এমতাবস্থায় তিনি নিজের হাতের
খেজুরগুলো (যা খাচ্ছিলেন) ছুঁড়ে ফেলে দিলেন, অতঃপর জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে শাহাদাত
বরণ করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৩৭, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৯,
আহমাদ ১৪৩১৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৭৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রুবাইয়্যা’ বিনুত বারা (রাঃ)-এর কন্যা হারিসাহ্ ইবনু
সুরাকাহ্-এর মা। একদিন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে
জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী! তার পুত্র হারিসাহ্ যে বাদ্রের যুদ্ধে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির
তীর নিক্ষেপে নিহত হয়, সে ব্যাপারে জানতে চাইলেন যে, হারিসাহ্ জান্নাতী হবে কিনা? যদি
সে জান্নাতে প্রবেশ করে, তবে আমি ধৈর্যধারণ করব, অন্যথায় তার জন্য আমার আত্মার কান্না
রোধ করতে পারব না। এটা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হে হারিসার
মা! জান্নাতে অসংখ্য বাগান রয়েছে, আর তোমার ছেলে তো জান্নাতুল ফিরদাওসের উচ্চাসনে স্থান
পেয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮০৯, সহীহুল বুখারী
২৮০৯, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ)
আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
সাহাবীগণসহ রওয়ানা হয়ে মুশরিকদের পূর্বেই বদর প্রান্তরে পৌঁছে গেলেন। অতঃপর মুশরিকরাও
সেখানে এসে গেল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীগণের উদ্দেশে)
ঘোষণা করলেন, তোমরা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সমবিস্তৃত এমন এক জান্নাতের জন্য প্রস্তুত
হয়ে যাও। এটা শুনে ’উমায়র ইবনুল হুমাম বলে উঠল, বাহ! বাহ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এরূপ বললে? সে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর কসম! আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্য নয়; শুধুমাত্র জান্নাতে প্রবেশের
আকাঙ্ক্ষায় এরূপ বলেছি যেন আমি তার অধিবাসী হই। তদুত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেন, তুমি নিশ্চয় জান্নাতের অধিবাসী হবে। রাবী বলেন যে, এরপরে ঐ সাহাবী
তার তীরের থলি হতে কয়েকটি খেজুর বের করে খেতে লাগলেন এবং পরক্ষনেই বলে উঠলেন, এ খেজুরগুলো
খেয়ে শেষ করা পর্যন্ত বেঁচে থাকাও অনেক দীর্ঘ জীবন! এটা বলে সে সব খেজুর ছুঁড়ে দিয়ে
শত্রুর মুকাবিলায় যুদ্ধ করতে করতে শাহাদাত বরণ করল। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০১,
মুসনাদ আহমাদ ১২৩৯৮, সহীহ আত্ তারগীব ১৩১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৬২, ইসলামিক সেন্টার
৪৭৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(ঘ) আনাস
ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। উম্মু রুবায়্যি বিনতে বারা, যিনি হারিস ইবনু সুরাকার
মা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বলেন, ‘হে আল্লাহর
নবী! আপনি হারিসাহ (রাঃ) সম্পর্কে আমাকে কিছু বলবেন কি? হারিসা (রাঃ) বাদারের যুদ্ধে
অজ্ঞাত তীরের আঘাতে শাহাদাত লাভ করেন। সে যদি জান্নাতবাসী হয়ে থাকে তবে আমি সবর করব,
তা না হলে আমি তার জন্য অবিরাম কাঁদতে থাকবো।’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘হে হারিসার মা! জান্নাতে অসংখ্য বাগান আছে, আর তোমার ছেলে সর্বোচ্চ
জান্নাতুল ফেরদাউস পেয়ে গেছে।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৮০৯, ৩৯৮২, ৬৫৫০, ৬৫৬৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
একজন অপরজনকে হত্যা করেও উভয়ে জান্নাতি
(ঙ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঐ দু’ ব্যক্তির প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশে হেসে থাকেন। যারা একজন
অপরজনকে হত্যা করে, অথচ তারা জান্নাতী। তন্মধ্যে এক ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করে
শহীদ হয়, আর হত্যাকারীকে (ঈমান আনার জন্য) আল্লাহ তা’আলা সুযোগ দান করেন, অতঃপর (সে
ঈমান এনে) শাহাদাত লাভ করেন (অর্থাৎ- উভয়েই জান্নাতপ্রাপ্ত হয়)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮০৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮২৬, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৭৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৮৯০, সুনান আননাসায়ী ৩১৬৬, মুসনাদ আহমাদ ৯৯৭৬, সহীহ আল জামি‘ ৮১০০, আহমাদ ৯৯৮৩, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ২৬১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ঋণ ব্যতীত শহিদের সকল গুণাহ মাফ করা হয়
(ক)
কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)...আবূ কাতাদাহ্ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা তাদের
মধ্যে দাঁড়ালেন এবং তাদের কাছে বর্ণনা করলেন যে, আল্লাহর পথে জিহাদ এবং আল্লাহর প্রতি
ঈমান হচ্ছে সর্বোত্তম আমল। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আপনি কি মনে করেন যে, আমি
যদি আল্লাহর পথে নিহত হই তাহলে আমার সকল পাপ মোচন হয়ে যাবে? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ হ্যা, যদি তুমি ধৈর্যশীল, সাওয়াবের আশায় আশান্বিত
হয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে (শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায়) আল্লাহর রাস্তায় নিহত হও। তারপর
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কী বললে হে! তখন সে ব্যক্তি
(আবার) বলল, আপনি কি মনে করেনঃ আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত হই তাহলে কি আমার সকল গুনাহের
কাফফারা হয়ে যাবে? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, তুমি
যদি ধৈর্যধারণকারী, সাওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখী
অবস্থায় নিহত হও, অবশ্য ঋণের কথা আলাদা। কেননা, জিবরাঈল (আঃ) আমাকে এ কথা বলেছেন।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৮৮৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮০৫, সুনান আততিরমিযী ১৭১২, সুনান আননাসায়ী ৩১৫৭,
মুসনাদ আহমাদ ২২৫৮৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(উক্ত হাদিস দ্বারা এটা প্রমানিত যে, আমাদের
সমাজের কতিপয় আলেম দাবী করেন যে, রাসুল সাঃ গায়েব জানতেন। এখন কথা হলো তিনি যদি গায়েব
জানতেন তাহলে ঋণ এর বিষয়টি বলেননি কেনো। জিবরাইল আঃ এসে বলার পর তিনি ঋণ এর বিষয়টি
বলেছেন। অতএব রাসুল সাঃ গায়েব জানতেন না, তাঁকে যতোটুকু জানানো হয় ততোটুকুই বলেন।)
(খ) আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে শহীদ হলে শুধুমাত্র ঋণ ব্যতীত সকল কিছু ক্ষমা করে দেয়া হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৭৭, ৪৭৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৮৬, সহীহ আল জামি‘ ১৪৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৩০, ইসলামিক সেন্টার ৪৭৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জিহাদে গিয়ে শহিদ হয়েও জাহান্নামী
(ক) ইবনু
আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, খায়বার যুদ্ধের
দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কয়েকজন সাহাবী এসে নিহত মুসলিমদের বর্ণনা
করতে গিয়ে বললেন, অমুক অমুক শহীদ হয়েছে। পরিশেষে তারা আরো একজন সম্পর্কেও বললেন, অমুকও
শহীদ হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কক্ষনো না। গনীমাতের
মাল হতে একটি কম্বল অথবা বলেছেন একটি জুববা খিয়ানাতের দায়ে আমি তাকে জাহান্নামের আগুনে
দগ্ধ হতে দেখছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ইবনুল
খত্ত্বাব! যাও, লোকেদেরকে তিনবার ঘোষণা শুনিয়ে দাও, মু’মিন ছাড়া কেউ জান্নাতে যাবে
না। ’উমার বলেনঃ আমিও এ ঘোষণা তিনবার প্রচার করলাম যে, মু’মিন ছাড়া কেউ জান্নাতের অধিকারী
হবে না (জান্নাতে প্রবেশ করবে না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৪০৪৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৪, আহমাদ
২০৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৪৬, দারিমী ২৫৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২১০, ইসলামিক সেন্টারঃ
২১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবদুল্লাহ
ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিরকিরা নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মালপত্র পাহারা দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। সে মারা গেলে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে জাহান্নামী। সাহাবীগণ অনুসন্ধান করে তার সঈে
একটি কম্বল অথবা একটি আবা পেলো যা সে আত্মসাৎ করেছিল। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২৮৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩০৭৪, আহমাদ ৬৪৫৭, বায়হাকী ফিস সুনান ৩/৩৮৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
২৮৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ)
সাহল ইবনু সা‘দ সা‘ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একবার আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) ও মুশ্রিকদের মধ্যে মুকাবিলা হয় এবং উভয়পক্ষ ভীষণ যুদ্ধ লিপ্ত হয়। অতঃপর
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজ সৈন্যদলের নিকট ফিরে এলেন, মুশ্রিকরাও
নিজ সৈন্যদলে ফিরে গেল। সেই যুদ্ধে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
সঙ্গীদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে কোন মুশরিককে একাকী দেখলেই তার পশ্চাতে ছুটত
এবং তাকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমণ করত। বর্ণনাকারী (সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) বলেন, আজ আমাদের
কেউ অমুকের মত যুদ্ধ করতে পারেনি। তা শুনে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, সে তো জাহান্নামের অধিবাসী হবে। একজন সাহাবী বলে উঠলেন, আমি তার সঙ্গী হব। অতঃপর
তিনি তার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন, সে দাঁড়ালে তিনিও দাঁড়াতেন এবং সে শীঘ্র চললে তিনিও দ্রুত
চলতেন। তিনি বললেন, এক সময় সে মারাত্মকভাবে আহত হলো এবং সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করতে
লাগল। এক সময় তলোয়ারের বাঁট মাটিতে রাখল এবং এর তীক্ষ্ণ দিক বুকে চেপে ধরে তার উপর
ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। অনুসরণকারী ব্যক্তিটি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল।
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কী ব্যাপার? তিনি বললেন, যে
ব্যক্তিটি সম্পর্কে আপনি কিছুক্ষণ আগেই বলেছিলেন যে, সে জাহান্নামী হবে, তা শুনে সাহাবীগণ
বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করলেন। আমি তাদের বললাম যে, আমি ব্যক্তিটির সম্পর্কে খবর তোমাদের
জানাব। অতঃপর আমি তার পিছু পিছু বের হলাম। এক সময় লোকটি মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং সে
শীঘ্র মৃত্যু কামনা করতে থাকে। অতঃপর তার তলোয়ারের বাট মাটিতে রেখে এর তীক্ষ্ণধার বুকে
চেপে ধরল এবং তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, ‘মানুষের বাহ্যিক বিচারে অনেক সময় কোন ব্যক্তি জান্নাতবাসীর
মত ‘আমল করতে থাকে, আসলে সে জাহান্নামী হয় এবং তেমনি মানুষের বাহ্যিক বিচারে কোন ব্যক্তি
জাহান্নামীর মত ‘আমল করলেও প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতী হয়।’ (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৯৮, ৪২০৩, ৪২০৭, ৬৪৯৩, ৬৬০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১২, আহমাদ ২২৮৯৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
২৬৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
শহিদগণের মর্যাদা
আল্লাহর পথে মুজাহিদগণ শহীদ বা আহত হলে, তারা
পরিপূর্ণ সাওয়াবের অধিকারী হবে
আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে মুজাহিদগণ সংখ্যায় বেশি হোক বা কম হোক যদি জিহাদে জয়ী হয়ে গনীমাতের মালসহ নিরাপদে বাড়ী ফিরে আসে, তবে তারা জিহাদের সাওয়াবের দুই-তৃতীয়াংশ দুনিয়াতেই লাভ করল। আর যে কোনো ক্ষুদ্র দল বা বৃহৎ দল যদি তারা গনীমাত লাভে বঞ্চিত হয় এবং জান-মালের ক্ষতিসাধন হয় অথবা শহীদ হয় বা আহত হয়, তবে তারা পরিপূর্ণ সাওয়াবের অধিকারী হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহর পথে (কোনো কাজে) নিয়োজিত থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে, তার আমল নিঃশেষ
হয় না, কিয়ামত পর্যন্ত তার আমল বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সে কবরের কঠিন আযাব হতে নিরাপত্তা
লাভ করবে
ফাযালাহ্ ইবনু ’উবায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক লোকের মৃত্যুর
সাথে সাথে তার ’আমলের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু যে লোক আল্লাহর পথে (কোনো কাজে) নিয়োজিত
থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তার ’আমল নিঃশেষ হয় না, কিয়ামত পর্যন্ত তার আমল বৃদ্ধি পেতে
থাকে এবং সে কবরের কঠিন আযাব হতে নিরাপত্তা
লাভ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২৩, সুনান আবূ
দাঊদ ২৫০০, সুনান আততিরমিযী ১৬২১, মুসনাদ আহমাদ ২৩৯৫১, সহীহ আল জামি‘ ৪৫৬২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
শহিদদের জন্য আল্লাহর নিকট ছয়টি পুরস্কার সুরক্ষিত
মিকদাম
ইবনে মাদীকারিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
শহীদের জন্য আল্লাহর নিকট ছয়টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
(১) তার দেহের রক্তের প্রথম ফোঁটাটি বের হতেই
তিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং জান্নাতে তার ঠিকানা তাকে দেখানো হয়,
(২) কবরের আযাব থেকে তাকে রক্ষা করা হয়,
(৩) (কিয়ামতের) ভয়ংকর ত্রাস থেকে সে নিরাপদ
থাকবে;
(৪) তাকে ঈমানের চাদর পরানো হবে;
(৫) আয়তলোচনা হুরের সাথে তার বিবাহ দেয়া হবে
এবং
(৬) তার নিকট আত্মীয়দের মধ্য থেকে সত্তরজনের
পক্ষে তাকে শাফা’আত করার অনুমতি দেয়া হবে। (সুনান ইবনু
মাজাহ ২৭৯৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৩৪, সুনান আততিরমিযী ১৬৬৩, সহীহাহ্ ৩২১৩,
আহমাদ ১৬৭৩০, বায়হাকী ফিস সুনান ৯/১৬৪, বায়হাকী ফিশ শুআব ১০৮২৩, ১০৮২৪, আল-আহকাম ৩৬
নং পৃষ্ঠা, মিশকাত আত-তালীকুর রাগীব ২/১৯৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
শহিদদের হত্যার ব্যথা পিঁপড়ার দংশনের ব্যথার মতো
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পিঁপড়ার দংশনে তোমরা যেরূপ ব্যথাতুর
হও, শাহীদের হত্যার ব্যথাও অনুরূপ অনুভূত হয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৩৬, সুনান আননাসায়ী ৩১৬১, সুনান আততিরমিযী ১৬৬৮, দারিমী ২৪৭৫ ,
২৪০৮, সহীহ আল জামি‘ ৩৭৪৬, আহমাদ ৭৮৯৩, বায়হাকী ফিস সুনান ৫/১৫২, আত-তালীকুর রাগীব
২/১৯২, সহীহাহ ৯৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহর পথে সীমানা পাহারারত অবস্থায় কারো মৃত্যু হলে এ পুণ্য ’আমলের সাওয়াব
অবিরত পেতে থাকবে, জান্নাত হতে রিজিক আসতে থাকবে এবং কবরের কঠিন পরীক্ষা হতে মুক্তি
পাবে
সালমান ফারিসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর পথে একদিন
বা একরাত সীমানা পাহারা দেয়া, একমাসের সওম পালন ও সালাত আদায় করা হতে উত্তম। আর ঐ প্রহরী
যদি এ অবস্থায় মারা যায়, তবে তার কৃতকর্মের এ পুণ্য ’আমলের সাওয়াব অবিরত পেতে থাকবে,
তার জন্য সর্বক্ষণ রিযক (জান্নাত হতে) আসতে থাকবে এবং সে কবরের কঠিন পরীক্ষা হতে মুক্তি
পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৯৩, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৮৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১৩, সুনান আততিরমিযী ১৬৬৫, ইরওয়া ১২০০,
সহীহ আল জামি‘ ৩৪৮০, সহীহ আত্ তারগীব ১২১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যারা আল্লাহর পথে (কোনো কাজে বা সীমান্ত) পাহারা দেয় বিনিদ্রা অবস্থায় তাদের
চক্ষু জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামের আগুন কক্ষনো দু’টি
চক্ষুকে স্পর্শ করবে না। একটি চক্ষু, যা আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে ক্রন্দনরত হয়। অপর চক্ষু,
যা আল্লাহর পথে (কোনো কাজে বা সীমান্ত) পাহারা দেয় বিনিদ্রা অবস্থায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২৯, সুনান আততিরমিযী ১৬৩৯, সহীহ
আল জামি‘ ৪১১৩, সহীহ আত্ তারগীব ১২২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আহত মুজাহিদের রক্ত থেকে কিয়ামতে মিশকের সুঘ্রাণ বের হবে
(ক) আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর পথে আহত হয়, তবে আল্লাহই প্রকৃতপক্ষে জানেন যে, কে
তার পথে হতাহত হয়েছে। কিয়ামতের দিনে সে এরূপ অবস্থায় আগমন করবে যে, তার ক্ষতস্থান হতে
রক্ত প্রবাহিত হয়ে বের হতে থাকবে এবং তার বর্ণ রক্তের মতো হবে আর তার সুগন্ধি হবে মিশকের
সুঘ্রাণের ন্যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮০২, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮০৩, ২৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৫৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৮৭৬, সুনান আততিরমিযী ১৬৫৬, সহীহ আল জামি‘ ৫৭৮৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৯৪,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) মু’আয
ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছি, যে লোক অতি অল্প সময় আল্লাহর পথে জিহাদ করে শহীদ হয়েছে, তার জন্য জান্নাত
নির্ধারিত হয়ে যায়। যে লোক (শত্রুর আঘাতে) আল্লাহর পথে হতাহত বা ক্ষত-বিক্ষতের দরুন
কাতর হয়েছে- সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, উক্ত ক্ষতস্থান (দুনিয়ার
তুলনায়) সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে, রক্তের রং হবে যা’ফরানের এবং তা হতে মিশ্কের সুগন্ধি
বিচ্ছুরিত হতে থাকবে। আর আল্লাহর পথে জিহাদরত থাকাবস্থায় যে ব্যক্তির শরীরে ফোঁড়া-ঠোসা
পরিলক্ষেত হবে, কিয়ামতের দিন উক্ত ফোঁড়ার উপরে শহীদগণের সীলমোহর থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২৫, সুনান আবূ দাঊদ ২৫৪১, সুনান
আননাসায়ী ৩১৪১, সুনান আততিরমিযী ১৬৫৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৯২, মুসনাদ আহমাদ ২২১১৬,
সহীহ আল জামি‘ ৬৪১৬, সহীহ আত্ তারগীব ১২৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জান্নাতে শহিদদের জন্যে আলাদা ঘর নির্মিত
সামুরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমি আজ রাতে (স্বপ্নে) দেখতে পেলাম যে, দু’ব্যক্তি
আমার নিকট এল এবং আমাকে নিয়ে একটি গাছে উঠলো। অতঃপর আমাকে এমন উৎকৃষ্ট একটি ঘরে প্রবেশ
করিয়ে দিল এর আগে আমি কখনো এর চেয়ে সুন্দর ঘর দেখিনি। সে দু’ব্যক্তি আমাকে বলল, এই
ঘরটি হচ্ছে শহীদদের ঘর। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৭৯১, ৮৪৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
শহীদের উপর ফেরেশতাদের ছায়া বিস্তার
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধ শেষে আমার পিতাকে (তার লাশ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
নিকট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা অবস্থায় আনা হল এবং তাঁর সামনে রাখা হল। আমি তাঁর চেহারা
খুলতে চাইলাম আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে নিষেধ করল। এমন সময় তিনি কোন বিলাপকারিণীর
বিলাপ ধ্বনি শুনতে পেলেন। বলা হলো, সে ‘আমরের কন্যা বা ভগ্নি। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে কাঁদছে কেন? অথবা বলেছিলেন, সে যেন না কাঁদে। ফেরেশতামন্ডলী
তাকে ডানা দ্বারা ছায়াদান করছেন। আমি [ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন] সাদাকা (রহ.)-কে জিজ্ঞেস
করলাম, এও কি বর্ণিত আছে যে, তাকে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত? তিনি বললেন, (জাবির (রাঃ) কখনো
সেটাও বলেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮১৬,
১২৪৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
শহিদগণ কি কবরে জীবিত?
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত
বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।” (সুরা বাকারাহ -১৫৪)।
এই আয়াত নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভ্রান্ত ধারনা
চলমান রয়েছে। বিশেষ করে ভন্ড পীর, অলি, দরবেশ, গাউস, কুতুব, বুজুর্গ ও এদের মুরিদরা
এই আয়াতের সরাসরি ভুল ব্যাখ্যা করে মৃত বুজুর্গদের কবরে জীবিত থাকার প্রমান হিসেবে
উপস্থাপন করে এবং তারা বলতে চায় মৃত মানুষও কবরে জীবিত থাকে তথা ভন্ড পীর, অলি, দরবেশ,
গাউস, কুতুব, বুজুর্গরা কবরে জীবিত। এদের কবর জিয়ারত করতে গেলে মুরিদের কথা এরা শুনতে
পায় এবং কবর থেকে মুরিদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে দেয়।
আসলে শহিদগণ কবরে জীবিত কিনা তা আমরা সহিহ
হাদিস দ্বারা জেনে নেই।
প্রত্যেক মৃত ব্যক্তি আলমে-বরযখে বা কবরে বিশেষ
ধরণের এক প্রকার হায়াত বা জীবন প্রাপ্ত হয় এবং সে জীবনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কবরের
আযাব বা সওয়াব ভোগ করে থাকে। তবে সে জীবনের হাকীকত আমরা জানি না। যেসব লোক আল্লাহর
রাস্তায় নিহত হন, তাদেরকে শহীদ বলা হয়। তাদের মৃত্যুকে অন্যান্যদের মৃত্যুর সমপর্যায়ভুক্ত
মনে করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা, মৃত্যুর পর প্রত্যেকেই বরযখের জীবন লাভ করে থাকে
এবং সে জীবনের পুরস্কার অথবা শাস্তি ভোগ করতে থাকে। কিন্তু শহীদগণকে সে জীবনের অন্যান্য
মৃতের তুলনায় একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মর্যাদা দান করা হয়।
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, উহুদের যুদ্ধের দিন আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম (রাঃ) শহীদ হলে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে জাবির! মহামহিম আল্লাহ তোমার পিতাকে যা বলেছেন
তা কি আমি তোমাকে অবহিত করবো না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা যার সাথেই
কথা বলেছেন, পর্দার অন্তরাল থেকে বলেছেন, কিন্তু তোমার পিতার সাথে সামনা সামনি কথা
বলেছেন। তিনি বলেছেন, হে আমার বান্দা! তুমি আকাঙ্ক্ষা করো, আমি তোমাকে দিবো।
সে বললো, হে প্রভু! আমাকে জীবিত করুন আমি পুনরায়
আপনার রাস্তায় শহীদ হবো। তিনি বলেন, আমার পক্ষ থেকে পূর্বেই এটা সাব্যস্ত হয়ে গেছে
যে, এখানে আসার পর তারা আর প্রত্যাবর্তন করবে না। সে বললো, প্রভু! আমার পক্ষ থেকে আমার
পশ্চাতের (পৃথিবীর) লোকেদের সুসংবাদ পৌঁছে দিন। তখন মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন
(অনুবাদ): ’’যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে তোমরা কখনও মৃত মনে করো না, বরং তারা
জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তারা জীবিকাপ্রাপ্ত...’’ (সূরা আল ইমরানঃ ১৬৯-১৭১)।
(সুনান ইবনু মাজাহ ২৮০০, ২৮০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৮১৪, ১০০১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৭৯,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৮৭, সুনান আততিরমিযী ৩০১০, ৩০১১, দারেমী ২৮২২, সহীহাহ ২৬৩৩,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বকর ইবনু আবূ
শাইবাহ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ)....মাসরুক
(রহঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) (রাযিঃ) কে এ আয়াতটি
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যাতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ "যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত
হয়েছে তাদেরকে কখনো তোমরা মৃত মনে করো না বরং তারা জীবিত, তাদের প্রতিপালকের নিকট
থেকে তারা জীবিকাপ্রাপ্ত"- (সূরা আ-লি ইমরান ৩:১৬৯)। আবদুল্লাহ (রাযিঃ) বলেন,
আমি এ আয়াত সম্পর্কে (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) জিজ্ঞেস করেছিলাম
তখন তিনি বললেন, তাদের রুহসমূহ সবুজ পাখীর উদরে রক্ষিত থাকে, যা আরশের সাথে ঝুলন্ত
দীপাধারে বাস করে। জান্নাতের সর্বত্র তারা যেখানে চায় সেখানে বিচরণ করে।
অবশেষে সে দীপাধারগুলোতে ফিরে আসে। একবার তাদের
প্রভু তাদের দিকে পরিপূর্ণভাবে তাকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কি কোন আকাঙ্ক্ষা
আছে? জবাবে তারা বলল, আমাদের আর কি আকাঙ্খা থাকতে পারে, আমরা তো যেভাবে ইচ্ছা জান্নাতে
ঘোরাফেরা করছি। আল্লাহ তা’আলা তাদের সাথে এরূপ তিন তিনবার করলেন। যখন তারা দেখলো জবাব
না দিয়ে প্রশ্ন থেকে রেহাই পাচ্ছে না তখন তারা বলল, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের
আকাঙ্খা হয় যদি আমাদের রূহুগুলোকে আমাদের দেহসমূহে ফিরিয়ে দিতেন আর পুনরায় আমরা
আপনারই পথে নিহত হতে পারতাম। অতঃপর মহান আল্লাহ যখন দেখলেন, তাদের আর কোন প্রয়োজনই
নেই, তখন তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হলো (আর প্রশ্ন করা হলো না)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৮৭,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮০৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩০১০, সুনান ইবনু মাজাহ
১৯০, ২৮০০, সহীহাহ্ ২৬৩৩, সহীহ আল জামি ১৫৫৮, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৮৬, দারিমী ২৮২২, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৪৭৩২, ইসলামিক সেন্টার ৪৭৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের ভাইয়েরা
যখন উহুদের যুদ্ধে শহীদ হয়, তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের রূহগুলোকে (জান্নাতের) সবুজ পাখির
অভ্যন্তরে স্থাপন করেন। আর এ পাখিগুলো জান্নাতের নহরসমূহে বিচরণ করে, জান্নাতের ফল-ফলাদি
খায় এবং ’আরশের ছায়ায় স্বর্ণের ফানুসে ঝুলন্তরূপে অবস্থান করে। অতঃপর তারা যখন এরূপ
সুমিষ্ট পানীয়, সুস্বাদু খাদ্য ও আরামদায়ক মনোমুগ্ধকর বিশ্রামাগার লাভ করবে, তখন তারা
স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে বলে উঠবে, এমন কে আছে যে আমাদেরকে ভাইদের নিকট সুসংবাদ পৌঁছিয়ে দেবে,
আমরা যে জান্নাতে জীবিত অবস্থান করছি তারা যাতে জান্নাত লাভে অবহেলিত না হয় এবং জিহাদের
মাঠে পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে। এমতাবস্থায় তাদের এ আকাঙ্ক্ষার উত্তরে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
আমি তোমাদের পক্ষ হতে তাদের নিকট সুসংবাদ পৌঁছিয়ে দেব। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত
নাযিল করেন, “যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করো না; বরং তারা
তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে রিযকপ্রাপ্ত হয়’’- (সূরা আ-লি ইমরান ৩ : ১৬৯)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৫৩, সুনান আবূ দাঊদ ২৫২০, সহীহ
আল জামি‘ ১৫০৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
কাব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সবুজ পাখির মধ্যে শহীদদের রূহ অবস্থান করে।
তারা জান্নাতের বৃক্ষসমূহের ফল ভক্ষণ করে। (সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১৬৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মুমিন ব্যক্তির রূহ কোথায় থাকে?
আবদুর রহমান ইবনে কা’ব আল-আনসারী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তার পিতা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
মুমিন ব্যক্তির রূহ একটি পাখির আকৃতিতে জান্নাতের বৃক্ষে যুক্ত থাকবে। শেষে কিয়ামতের
দিন তার রূহ তার দেহে ফিরে আসবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৭১,
সুনান আননাসায়ী ২০৭৩, আহমাদ ৩৫৫, ১৫৩৪৯, ১৫৩৬০, ১৫৩৬৫, ২৬৬২৫, মুয়াত্তা মালেক ৫৬৬,
সহীহাহ ৯৯৫, আত-তালীকুর রাগীব ২/১৯২, তাখরীজুল তাহাবিয়াহ ৫৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
উক্ত হাদিস দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, প্রত্যেক
মু’মিনের আত্মা সেখানে জীবিত আছে। কিন্তু শহিদগণের আত্মার এক বিশেষ সম্মান, মর্যাদা
ও শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।
উক্ত দলিল দ্বারা আমরা জানতে পারলাম যে,
(১) শহিদগণ
কবরে জীবিত না, তাঁরা আল্লাহর নিকট জীবিত। তাই সুরা বাকারার ১৫৪ নং আয়াতের সহিহ বঙ্গানুবাদ
হবে,
“আর আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে মৃত
বলো না, বরং তারা আল্লাহর নিকট জীবিত; কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পার না”। (সুরা বাকারাহ -১৫৪)।
(২) শহীদগণের
আত্মা জান্নাতের সবুজ রঙয়ের পাখির দেহে থাকে এবং পাখিগুলো জান্নাতের নহরসমূহে বিচরণ
করে, জান্নাতের ফল-ফলাদি খায় এবং আরশের ছায়ায় স্বর্ণের ফানুসে ঝুলন্তরূপে অবস্থান করে।
(৩) এই
আত্মার সাথে আল্লাহ কথা বলেন এবং আত্মাও আল্লাহর সাথে কথা বলে ।
(৪) তারা অন্যান্যদের থেকে বিশেষভাবে সম্মান প্রাপ্ত।
(৫)
শহিদগণ জান্নাতে আল্লাহর দেয়া নিয়ামত পেয়ে তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে দুনিয়ায় এসে বার
বার শহিদ হতে চান।
(ক) আনাস
ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, জান্নাতে
প্রবেশের পর আর কেউ দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা করবে না, যদিও দুনিয়ার সকল জিনিস তাকে
দেয়া হয়। একমাত্র শহীদ ব্যতীত; সে দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা করবে যেন দশবার শহীদ
হয়। কেননা সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখেছে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮১৭, ২৭৯৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৭, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৮০৩, আহমাদ ১২২৭৫, ১২৭৭১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৬৬২, ১৬৪৩, সহীহ
আল জামি‘ ৫৫১৯, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৫২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আব্দুর
রহমান ইবনু আবূ ’আমীরহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মুসলিমকে আল্লাহ মৃত্যু দান করার পরে আবার তোমাদের মধ্যে
(দুনিয়ায়) ফিরে আসতে চাইবে না, যদিও দুনিয়া ও তার সমুদয় ধন-সম্পদের পরিমাণ তাকে দেয়া
হয়, একমাত্র শাহাদাতবরণ ব্যতীত। ইবনু আবূ ’আমীরহ্ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়ার সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ সমৃদ্ধ গ্রাম ও নগরের অধিবাসীর মালিক
হওয়া অপেক্ষা আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া আমার নিকট সর্বোত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৫৫, নাসায়ী ৩১৫৩, সহীহ আল জামি‘ ৫৬৮৪, সহীহ
আত্ তারগীব ১৩৫৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বার বার শহিদ হতে চান
(গ)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
আমি বলতে শুনেছি যে, সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যদি মুমিনদের এমন একটি
দল না থাকত, যারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করে না এবং যাদের সকলকে সওয়ারী দিতে
পারব না বলে আশংকা করতাম, তা হলে যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছে, আমি সেই ক্ষুদ্র
দলটির সঙ্গী হওয়া থেকে বিরত থাকতাম না। সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি
পছন্দ করি আমাকে যেন আল্লাহর রাস্তায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, অতঃপর শহীদ করা
হয়। আবার জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, আবার শহীদ করা হয়।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৯৭, ৩৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৫৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উল্লেখিত দলিল দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, বারজাখী
তথা পরকালীন জীবনে শহিদগণ জীবিত তবে সেটা আল্লাহর নিকট। শহিদগণ সশরীরে কখনোই কবরে জীবিত
না। তাঁরা আমাদের মত সাধারণ নন, তারা বিশেষভাবে সম্মান প্রাপ্ত এবং বিশেষ গুনে গুণান্বিত।
আরও জানতে পারলাম যে,
প্রত্যেক মুমিনের আত্মাই জান্নাতে একটি পাখির
ভিতর গিয়ে অবস্থান করে। এ প্রেক্ষিতে প্রত্যেক মু’মিনই জান্নাতে জীবিত। তবে শহিদগণ
হচ্ছেন আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।
অতএব উপরোক্ত সুরা বাকারার আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা
দানের কোন সুযোগ নেই যদিও আমাদের জ্ঞানের স্বল্পতা ও অজ্ঞতার সুযোগে অনেক ভন্ড লোক
ঠিকই এই আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে ফায়দা লুটে নিচ্ছে।
কোনো ভন্ড পীর, অলি, দরবেশ, গাউস, কুতুব, বুজুর্গ
বা তাদের কোনো মুরিদ যদি বলে যে, তাদের বাবাগণ কবরে বা মাজারে জীবিত বা তাদের বাবাগণ
মারা গেলে কবরে বা মাজারে জীবিত থাকবে এবং
মাজারে গিয়ে কান্নাকাটি করলে বাবা দয়া করে
সমস্যা সমাধান করে দিবেন তাদের কথা বিশ্বাস করবেন না। এসব বিশ্বাস করা শিরক। রাসুল
সাঃ নিজেও সশরীরে তাঁর কবরে জীবিত নেই। তাহলে এরা কিভাবে জীবিত থাকবে?
আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়ে জানতে পেরেছি যে,
শহিদগণ কবরে জীবিত না, তাঁরা আল্লাহর নিকট জীবিত, শহীদগণের আত্মা জান্নাতের সবুজ রঙয়ের
পাখির দেহে থাকে এবং আল্লাহর নিকট থেকে তাঁরা রিজিকপ্রাপ্ত হোন।
দ্বিতীয় অধ্যায়
প্রকৃত মুজাহিদ কে
আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, জনৈক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, এমন কেউ
যদি গনীমাতের ধন-মালের লাভের প্রত্যাশায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে, কেউ সুনাম সুখ্যাতি
(তথা মুজাহিদ নাম) অর্জনের প্রত্যাশায় যুদ্ধ করে, আর কেউ আছে বীরত্ব প্রদর্শনের (তথা
যোদ্ধা হওয়ার) অহমিকায় যুদ্ধ করে- এদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি সর্বোত্তম? উত্তরে তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর বাণী-বিধান
(ইসলাম) প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করে, সে-ই শুধু আল্লাহর পথে জিহাদ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮১৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১২৩, ২৮১০, ৩১২৬, ৭৪৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮১৩, ৪৮১৪, ৪৮১৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৯০৪, সুনান আবূ দাঊদ ২৫১৭, সুনান আননাসায়ী ৩১৩৬, সুনান আততিরমিযী ১৬৪৬, সুনান
ইবনু মাজাহ ২৭৮৩, মুসনাদ আহমাদ ১৯৫৯৬, ১৮৯৯৯, ১৯০৪৯, ১৯০৯৯, ১৯১৩৪, ১৯২০০, সহীহ আল
জামি‘ ৬৪১৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৩২৮, ইবনু হিব্বান ৪৬৩৬, বায়হাকী ফিশ শুআব ৪২৩৬, বায়হাকী
ফিস সুনান ৯/১৬৮, ১০/৩০, আল-হাকিম ফিল মুসতদরাক ২/১৯২, আত-তালীকুর রাগীব ২/১৮০, সহীহ
আবু দাউদ ২২৭৩, ২২৭৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
মানুষের মধ্যে কে উত্তম?
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
জিজ্ঞেস করা হলো, ’হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে কে উত্তম?’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ’সেই মু’মিন যে নিজ জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।’
সাহাবীগণ বললেন, ’অতঃপর কে?’ তিনি বললেন, ’সেই মু’মিন আল্লাহর ভয়ে যে পাহাড়ের কোন গুহায়
অবস্থান নেয় এবং স্বীয় অনিষ্ট থেকে লোকদেরকে নিরাপদ রাখে।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৮৬, ৬৪৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৭৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৮৮, আহমাদ ১১৮৩৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৮০, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৫৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জিহাদে যাওয়ার আহবান
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘(মক্কা) বিজয়ের পর আর হিজরত
নেই। বরং রয়েছে কেবল জিহাদ ও নিয়্যাত। যখন তোমাদের জিহাদের ডাক দেয়া হয়, তখন বেরিয়ে
পড়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৮৩, ২৮২৫, ৩০৭৭,
৩১৮৯, ১৩৪৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৫৩, সুনান আততিরমিযী
১৫৯০, সুনান আননাসায়ী ৪১৭০, সুনান আবূ দাউদ ২৪৮০, আহমাদ ১৯৯২, ২৩৯২, ২৮৯১, ৩৩২৫, দারেমী
২৫১২, ইবনু হিব্বান ৪৫৯০, ৪৫৯২, বায়হাকী ফিস সুনান ৫/১৯৫, ৯/১৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৭৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জিহাদ ও নিয়্যাত কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বললেনঃ মক্কা বিজয়ের পরে আর হিজরত
নেই (ফরয নয়), শুধু জিহাদ ও নিয়্যাত ব্যতীত। অতঃপর যখনই তোমাদেরকে জিহাদের জন্য আহবান
করা হবে, তখনই তোমরা যুদ্ধ করার জন্য বের হয়ে যাবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮১৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮২৫,১৩৪৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৭২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৫৩,
সুনান আবূ দাঊদ ২৪৮০, সুনান আননাসায়ী ৪১৭০, সুনান আততিরমিযী ১৫৯০, মুসনাদ আহমাদ ১৯৯১,
দারিমী ২৫৫৪, ইরওয়া ১১৮৭, সহীহ আল জামি‘ ৭৫৬৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
২৬২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
জিব্রীল (আঃ) এর কথায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুদ্ধের জন্যে
বেরিয়ে পড়লেন
‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। খন্দকের যুদ্ধ থেকে
যখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফিরে এসে অস্ত্র রাখলেন এবং গোসল
করলেন, তখন জিব্রীল (আঃ) তাঁর নিকট এলেন, আর তাঁর মাথায় পট্টির মত ধুলি জমেছিল। তিনি
বললেন, আপনি অস্ত্র রেখে দিয়েছেন অথচ আল্লাহর কসম, আমি এখনো অস্ত্র রাখিনি। আল্লাহর
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কোথায় যেতে হবে? তিনি বানূ কুরায়যার
প্রতি ইশারা করে বললেন, এদিকে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের দিকে বেরিয়ে পড়লেন। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৬৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
মুজাহিদদের মর্যাদা
আল্লাহর পথে যে জিহাদ করবে সে জান্নাতী
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রসূলের
প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়িম করবে, রমাযানের সিয়াম পালন করবে, আল্লাহর পথে জিহাদ করবে
বা স্বীয় জন্মভূমিতে অবস্থান করে- তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর ওপর হক ও দায়িত্ব
হয়ে যায়। অতঃপর লোকেরা (সাহাবায়ে কিরাম) বললেন, আমরা কি জনগণের মাঝে এ সুসংবাদ জানিয়ে
দিব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য
আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে একশ’ মর্যাদা প্রস্তুত করে রেখেছে। প্রতি দু’ শ্রেণীর মর্যাদার
মাঝে দূরত্বের পরিমাণ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। সুতরাং তোমরা
যখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে, তখন তার নিকট (জান্নাতুল) ফিরদাওস প্রার্থনা করবে।
কেননা তা জান্নাতের মধ্যম ও সর্বোত্তম জান্নাত। তার উপরিভাগে আল্লাহর ’আরশ এবং সেখান
থেকে জান্নাতের ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৭৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৯০, ৭৪২৩, মুসনাদ আহমাদ ৮৪৭৪, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ২৫৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৯৫ )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহর পথে একটি উষ্ট্রী দোহনের সময় পরিমাণ যুদ্ধ করলে তার জন্য জান্নাত
অবধারিত
মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ কোন মুসলিম ব্যক্তি মহামহিম আল্লাহর
পথে একটি উষ্ট্রী দোহনের সময় পরিমাণ যুদ্ধ করলে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।
(সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৯২, সুনান আততিরমিযী ১৬৫৭, ইবনু হিব্বান
৪৬১৮, ৩১৮৫, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ২/৭৭, বায়হাকী ফিস সুনান ৯/১৭০, বায়হাকী ফিশ শুআব
৪২৪৯, ৪২৫০, আত-তালীকুর রাগীব ২/১৭৯, সহীহ আবু দাউদ ২২৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) এর নিজ আত্মার সাথে কথা
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি এক যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) বললেন, “হে আত্মা! আমি
কি দেখছি না যে, তুমি জান্নাতকে অপছন্দ করছো! আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমাকে অবশ্যই
জান্নাতে যেতে হবে আনন্দে হোক বা নিরানন্দে’’। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২৭৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মুজাহিদ (জিহাদ থেকে) গাযী হয়ে ফিরে আসা পূর্ণ সাওয়াবের অধিকারী হবে
আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুজাহিদ (জিহাদ থেকে) গাযী
হয়ে ফিরে আসা পূর্ণ সাওয়াবের অধিকারী হবে। আর জিহাদের জন্য ধন-সম্পদ দানকারী জিহাদে
শামিল হওয়া ও দান করা উভয়ের (দু’টি) সাওয়াবের অধিকারী হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৪২, সুনান আবূ দাঊদ ২৫২৬, মুসনাদ
আহমাদ ৬৬২৪, সহীহাহ্ ২১৫৩, সহীহ আল জামি‘ ৫১৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কোন্ জিহাদ উত্তম?
আমর ইবনে আবাসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন্
জিহাদ উত্তম? তিনি বলেনঃ যে যুদ্ধে মুজাহিদের রক্ত প্রবাহিত হয় এবং তার ঘোড়াও আহত হয়।
(সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৯৪, আহমাদ ১৬৫৭৯, ১৮৯৪০, আত-তালীকুর
রাগীব ২/১৭৮, ১৯১, ১৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
মুজাহিদদের তুলনা সায়িম পালনকারী ও সালাত আদায়কারীর মতো
(ক)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আল্লাহর পথে মুজাহিদদের তুলনা ঐরূপ সায়িমের (রোযাদারের) ও সালাত আদায়রত অবস্থায়
তিলাওয়াতকারীর ন্যায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত
সিয়াম পালনে ও সালাত আদায়ে নিমগ্ন থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৭৮৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৮৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৭৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৮, সুনান আননাসায়ী
৩১২৪, মুসনাদ আহমাদ ৯৪৮১, সহীহ আত্ তারগীব ১৩০৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
২৫৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ
তাঁর রাস্তায় জিহাদকারীর যিম্মাদার। হয় তিনি তাকে তার ক্ষমা ও রহমতে ধন্য করে উঠিয়ে
নিবেন অথবা তাকে সওয়াব ও গনীমাতসহ ফিরিয়ে আনবেন। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী সেই ব্যক্তির
ন্যায় যে অক্লান্তভাবে (দিনভর) রোযা রাখে এবং (রাতভর) নামায পড়ে জিহাদ থেকে ফিরে না
আসা পর্যন্ত। (সুনানে ইবনে মাজাহ ২৭৫৪, বায়হাকী ফিস সুনান
৯/৪২, আত-তালীকুর রাগীব ২/১৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ)
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও সিয়াম পালন করে, আল্লাহ্ তার মুখমন্ডলকে
দোযখের আগুন হতে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৪০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৬০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১১৫৩, আহমাদ ১১৭৯০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৪০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
আল্লাহর পথে যে বের হয় আল্লাহ তাকে পরিপূর্ণ সাওয়াব দান করবেন বা গনীমাতের
মালসহ ঘরে ফিরিয়ে আনবেন অথবা তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার পথে
বের হয় তথা দায়িত্বগ্রহণ করে, এই মুজাহিদ আমার ও আমার রসূলের প্রতি ঈমান ও বিশ্বাসের
সত্যতা স্বীকারের তাকীদেই স্বীয় ঘর হতে আমার পথে বের হয়েছে, তাকে আমি অবশ্যই পরিপূর্ণ
সাওয়াব দান করবো অথবা গনীমাতের মালসহ ঘরে ফিরিয়ে আনবো অথবা তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ
করাব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৮৯, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৬, ২৭৮৭, ২৭৯৭, ২৯৭২, ৩১২৩, ৭২২৬, ৭২২৭, ৭৪৫৭, ৭৪৬৩, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৭৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৬, আহমাদ ৯১৯৮, ৯৪৮১, ৯৪৮৪, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহর পথে একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত করা, দুনিয়া ও তার সমুদয়
সমস্ত সম্পদ হতে সর্বোত্তম
(ক)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আল্লাহর পথে একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত করা, দুনিয়া ও তার সমুদয় সমস্ত সম্পদ
হতে সর্বোত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৯২, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৬১৫, ২৭৯২, ২৭৯৬, ৬৫৬৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৬৭,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৮০, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৫৭, সুনান আততিরমিযী ১৬৫১, মুসনাদ আহমাদ
১২৩৫০, ১১৯৪১, ১২০২৮, ১২১৪৬, ১২১৯১, ১২৭৪৯, ১৩৩৬৮, সহীহ আল জামি‘ ৪১৫১, সহীহ আত্ তারগীব
১২৬১, বায়হাকী ফিশ শুআব ৪২৫৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৩/১৮৭, ইবনু হিব্বান ৪৬০২, ৭৩৯৮, ইরওয়া
১১৮২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল অথবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার মধ্যকার
সবকিছু থেকে উত্তম। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৫৫, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৯৩, আহমাদ ১০৫০২, ১০৫১৯, বায়হাকী ফিস সুনান ৭/৩০৯, ইরওয়া ৫/৩,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) সাহল
ইবনে সাদ আস-সাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও
তার মধ্যকার সবকিছু থেকে কল্যাণকর। (সুনান ইবনু মাজাহ
২৭৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৯৪, ২৮৯২, ৬৪১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৭৬৮, ৪৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৮১, ১৮৮২, সুনান আততিরমিযী ১৬৪৮, সুনান আননাসায়ী
৩১১৮, আহমাদ ১৫৫৩২, ২২৩৩৭, দারেমী ২৩৯৮, ইরওয়া ৫/৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৮৭, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৫৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ)
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি বিকাল চললো, তাতে সে যতোটা ধুলিমলিন হলো, তা কিয়ামতের
দিন তার জন্য এর সমপরিমাণ কস্তরীতে পরিণত হবে। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২৭৭৫, সহীহাহ ২৩৩৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঙ)
হুমাইদ (রহ.) বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট হতে এ কথাও বর্ণনা করতে শুনেছি যে, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল
অথবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও এর সব কিছু থেকে উত্তম। তোমাদের কারোর ধনুকের
কিংবা চাবুক রাখার মত জান্নাতের জায়গাটুকু দুনিয়া ও এর সব কিছু থেকে উত্তম। জান্নাতী
কোন মহিলা যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি উঁকি দেয় তাহলে আসমান ও যমীনের মাঝের সব কিছু আলোকিত
এবং সুরভিত হয়ে যাবে। আর তার মাথার ওড়না দুনিয়া ও তার সব কিছু চেয়ে উত্তম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৯৬, ২৭৯২, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৫৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়ার ফজিলাত
(ক)
সালমান ফারিসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছি, আল্লাহর পথে একদিন বা একরাত সীমানা পাহারা দেয়া, এক মাসের সওম পালন ও
সালাত আদায় করা হতে উত্তম। আর ঐ প্রহরী যদি এ অবস্থায় মারা যায়, তবে তার কৃতকর্মের
এ পুণ্য ’আমলের সাওয়াব অবিরত পেতে থাকবে, তার জন্য সর্বক্ষণ রিযক (জান্নাত হতে) আসতে
থাকবে এবং সে কবরের কঠিন পরীক্ষা হতে মুক্তি পাবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৯৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১৩,
সুনান আততিরমিযী ১৬৬৫, ইরওয়া ১২০০, সহীহ আল জামি‘ ৩৪৮০, সহীহ আত্ তারগীব ১২১৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) লোকেদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তিনি বলেন, হে জনগণ! আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একটি হাদীস শুনেছি। সেটি তোমাদের
নিকট বর্ণনা করা থেকে আমাকে বিরত রেখেছে তোমাদের সাহচর্যের প্রতি আমার কৃপণতা। অতএব
কেউ চাইলে তা নিজের জন্য গ্রহণ করতে পারে অথবা পরিহারও করতে পারে। আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার রাস্তায়
এক রাত সীমান্ত অঞ্চলে পাহারা দেয়, তা এক হাজার দিন রোযা রাখা এবং এক হাজার রাত জেগে
নামায পড়ার সমতুল্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৬৬, সুনান আততিরমিযী
১৬৬৭, সুনান আননাসায়ী ৩১৬৯, ৩১৬০, আহমাদ ৪৪৪, ৪৬৫, ৪৭২, ৪৭৯, দারেমী ২৪২৪, বায়হাকী
ফিস সুনান ৩/৫, ৯/৩৯, বায়হাকী ফিশ শুআব ৬২৮৪, সহীহাহ ২৯২১, সহীহ আল-জামি’ আস-সগীর ৫২৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) সাহল
ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আল্লাহর পথে এক দিনের সীমান্ত পাহারা দেয়া, দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে
(তার থেকে) সর্বাপেক্ষা উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৭৯১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৬৮, ৪৭৭০,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৮১, ১৮৮২,, সুনান আততিরমিযী ১৬৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ১২১৬, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ২৬৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) উসমান
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আল্লাহর পথে একদিনের সীমান্ত পাহারা দেয়া, অন্য সকল পুণ্যকর্মের তুলনায় এক হাজার দিনের
চেয়ে উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৩১, সুনান আননাসায়ী
৩১৬৯, সুনান আততিরমিযী ১৬৬৭, মুসনাদ আহমাদ ৪৭০, সহীহ আত্ তারগীব ১২২৪)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
(ঙ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
কোন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত অঞ্চল পাহারাদানরত অবস্থায় মারা গেলে আল্লাহ তার
জন্য সেইসব নেক আমলের সওয়াব প্রদান অব্যাহত রাখবেন যা সে করতো, জান্নাতে তাকে রিযিক
দান করবেন, কবরের বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে নিরাপদ রাখবেন এবং কিয়ামতের ভয়ভীতি থেকে মুক্ত
অবস্থায় উঠাবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৬৭, আহমাদ ৮৯৯১,
রাওদুন নাদীর ১০১৩, আত-তালীকুর রাগীব ২/১৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ)
সাহল ইবনু সা‘দ সায়ি‘দী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত প্রহরা দেয়া দুনিয়া ও এর উপর যা কিছু আছে তার চেয়ে
উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারো চাবুক পরিমান জায়গা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত কিছুর
চেয়ে উত্তম। আল্লাহর পথে বান্দার একটি সকাল বা বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের
সব কিছুর চেয়ে উত্তম।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৮৯২, ২৭৯৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
আল্লাহর পথে যে বান্দার পদদ্বয় ধূলায় ধূসরিত হয়, জাহান্নামের আগুন তার পদদ্বয়
স্পর্শ করবে না
(ক) আবূ
আবস্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আল্লাহর পথে যে বান্দার পদদ্বয় ধূলায় ধূসরিত হয়, জাহান্নামের আগুন তার পদদ্বয় স্পর্শ
করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৯৪, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮১১, ৯০৭, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৬১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর পথে
ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কোনো মুসলিম বান্দার পেটে একত্র হতে পারবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৭৪, সুনান আততিরমিযী ১২৩৩, সুনান আননাসায়ী
৩১০৭, ৩১০৮, ৩১০৯, ৩১১০, ৩১১১, ৩১১২, ৩১১৩, ৩১১৪, ৩১১৫, ইবনু হিব্বান ৩২৫১, আল-হাকিম
ফিল মুসতদারাক ২/২৭, বায়হাকী ফিশ শুআব ৭৯৮, ৮০০, রাওদুন নাদীর ১১৮০, আত-তালীকুর রাগীব
২/১৬৬, মিশকাত ৩৮২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এখানে উল্লেখ্য যে, ইলিয়াসী ধর্ম তাবলীগ জামাতের
বইয়ে উপরোল্লিখিত কয়েকটি হাদিস দিয়ে সাধারণ জনগণকে বুঝানো হয় যে, আল্লাহর রাস্তায় পাহারা
দেয়া ও আল্লাহর পথে একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত করা, দুনিয়া ও তার সমুদয় সমস্ত
সম্পদ হতে সর্বোত্তম। আসলে এখানে বুঝতে হবে যে, এই হাদিসগুলো জিহাদ উপলক্ষে বলা হয়েছে। যারা পাহারাদার
হিসেবে কাজ করবেন তারা মুজাহিদ। জিহাদ শুরু হলে সীমান্ত পাহারা দিবেন মুজাহিদগণ। এখানে
তাবলীগ জামাত এলো কোথা থেকে। আর তাবলীগ জামাত তো জিহাদের কাজে বের হয়নি তারা জিহাদের
মাঠেও নেই। অতএব তাদের জন্যে এইসব হাদিস প্রযোজ্য নয়।
আগে ইসলাম গ্রহণ, অতঃপর জিহাদ
বারা’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লৌহ বর্মে আবৃত এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যুদ্ধে শরীক হবো, না ইসলাম গ্রহণ করব?’ তিনি বললেন, ‘ইসলাম গ্রহণ কর, অতঃপর যুদ্ধে যাও।’ অতঃপর সে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে যুদ্ধে গেল এবং শাহাদাত লাভ করল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘সে কম আমল করে অধিক পুরস্কার পেল।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮০৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম জীবনযাপন করে ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে স্বীয়
ঘোড়ার লাগাম ধরে তার পিঠের উপর বসে অপেক্ষারত থাকে
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম জীবনযাপন
করে ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে স্বীয় ঘোড়ার লাগাম ধরে তার পিঠের উপর বসে অপেক্ষারত
থাকে। যখনই কোনো ভয়ভীতির সংকেত শুনতে পায়, তৎক্ষণাৎ সে দ্রুতবেগে তার দিকে ধাবিত হয়
এবং তাকে হত্যা করে বা মৃত্যু সম্ভাবনাময় স্থানে খুঁজতে থাকে। আর ঐ ব্যক্তির জীবন
(সর্বোত্তম) কিছু বকরীর একটি পাল বা ছোট একটি বকরীর পাল নিয়ে কোনো পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান
নেয় বা কোনো সমতল ভূমিতে বকরী চরায় এবং শেষ নিঃশ্বাস থাকা তথা মৃত্যু পর্যন্ত সালাত
কায়িম করে, যাকাত আদায় করে এবং সর্বদা স্বীয় প্রতিপালকের ’ইবাদাতে মশগুল থাকে। এসব
মানুষেরাই সর্বোত্তম জীবন যাপনের অধিকারী হয়ে থাকে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৮৯,
সহীহ আল জামি‘ ৯৫১৫, সহীহ আত্ তারগীব ১২২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৩৬, ইসলামিক সেন্টার
৪৭৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কোনো যোদ্ধাকে জিহাদের সরঞ্জাম যোগাড় করে দেয়ার ফজিলত
(ক)
যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো মুজাহিদকে যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করে দিল, সে যেন নিজেই যুদ্ধে
অংশগ্রহণ করল। আর যে ব্যক্তি কোনো মুজাহিদের অবর্তমানে তার পরিবার-পরিজনের তত্ত্বাবধান
করল, সেও যেন স্বয়ং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৭৯৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৪৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৭৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৫, সুনান আবূ দাঊদ ২৫০৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৫৯, সুনান
আততিরমিযী ১৬২৮, ১৬২৯, ১৬৩১, সুনান আননাসায়ী ৩১৮০, ৩১৮১, আহমাদ ১৬৫৯১, ১৬৫৯৬, ১৬৬০৮,
২১১৬৮, ২১১৭৩, দারেমী ২৪১৯, বায়হাকী ফিস সুনান ৯/১৪৯, আল-হাকিম ফিল মুসতদারাক ২/৮৬,
রাওদুন নাদীর ৩২২, আত-তালীকুর রাগীব ২/৯৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
২৬৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৪৯, ইসলামিক সেন্টার ৪৭৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘শরীরের
প্রতিটি জোড়ার উপর প্রতিদিন একটি করে সাদাকা রয়েছে। কোন ব্যক্তিকে তার সাওয়ারীতে উঠার
ক্ষেত্রে সাহায্য করা, অথবা তার মাল-সরঞ্জাম তুলে দেয়া সাদাকা। উত্তম কথা বলা ও সালাতের
উদ্দেশ্যে গমনের প্রতিটি পদক্ষেপ সাদাকা এবং রাস্তা বাতলিয়ে দেয়া সাদাকা।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৯১, ২৭০৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৬৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
শহিদদের প্রতি সহানুভূতি জানানো
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদিনা্য় উম্মু সুলাইম ছাড়া কারো ঘরে যাতায়াত করতেন না তাঁর স্ত্রীদের
ব্যতীত। এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা
হলে তিনি বলেন, ‘উম্মু সুলাইমের ভাই আমার সঙ্গে জিহাদে শরীক হয়ে সে শহীদ হয়েছে, তাই
আমি তার প্রতি সহানুভূতি জানাই। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২৮৪৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬২১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৫৫, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ২৬৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যে ব্যক্তি মুজাহিদদের কোনো বিষয়ে সহযোগিতা করল না আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই
তাকে কঠিন বিপদ আপদে নিপতিত করবেন
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজে জিহাদে অংশগ্রহণ করল না,
মুজাহিদদের যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবস্থাও করল না এবং কোনো মুজাহিদের অবর্তমানে তার পরিবার-পরিজনের
তত্ত্বাবধান (দেখাশোনা) করল না, আল্লাহ তা’আলা তাকে কিয়ামতের পূর্বে (দুনিয়াতেই) কঠিন
বিপদাপদে নিপতিত করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২০,
সুনানে আবূ দাঊদ ২৫০৩, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৬২, দারিমী ২৪৬২, রিয়াযুস্ সলিহীন ১৩৫৬)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
মুজাহিদের পরিবারের তত্বাবধায়ক আমানতের খিয়ানত করলে তার শাস্তি
বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘরে অবস্থানকারী পুরুষগণের নিকট মুজাহিদের
সহধর্মিণীদের সম্মান ও মর্যাদা তাদের মাতৃসম। যদি ঘরে অবস্থানকারী কোনো ব্যক্তি কোনো
মুজাহিদের পরিবারের তত্ত্বাবধানে থেকে তাদের ব্যাপারে খিয়ানাত করে, তবে খিয়ানাতকারীকে
কিয়ামতের দিন আটকিয়ে মুজাহিদকে বলা হবে তুমি তার নেক ’আমল যত পরিমাণ ইচ্ছা আদায় করে
নাও। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এবার তোমাদের কি ধারণা? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৮০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৭, সুনান আবূ দাঊদ ২৪৯৬, সুনান আননাসায়ী ৩১৮৯, মুসনাদ
আহমাদ ২২৯৭৭, সহীহ আল জামি‘ ৩১৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
মহান আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার ফজিলাত
(ক) আবূ
মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি স্বীয় উষ্ট্রীর নাকে
লাগামসহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এনে বলল, এ উষ্ট্রী আল্লাহর
পথে দান করলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, তোমাকে তার
বিনিময়ে কিয়ামতের দিনে সাতশত লাগামসহ উষ্ট্রী প্রদান করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৯৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৭৯১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯২, দারিমী ২৪৪৬, সহীহাহ্ ৬৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ)
খুরয়ম ইবনু ফাতিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কিছু ব্যয় (দান) করবে, তার জন্য এর বিনিময়ে সাতশত গুণ
সাওয়াব প্রদান করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২৬,
সুনান আননাসায়ী ৩১৮৬, সুনান আততিরমিযী ১৬২৫, সহীহ আল জামি‘ ১৬১০, সহীহ আত্ তারগীব ১২৩৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(গ) আবূ
উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আল্লাহর পথে সর্বোত্তম দান হলো তাঁবুর ছায়ার ব্যবস্থা করা এবং আল্লাহর পথে
যুদ্ধরত সৈনিকের সেবা-শশ্রুষার জন্য গোলাম দান করা অথবা আল্লাহর পথে পূর্ণ বয়স্কা
(বাচ্চা প্রজননকারী অথবা সৈনিকের আরোহণের জন্য) উষ্ট্রী দান করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২৭, সুনান আততিরমিযী ১৬২৭, মুসনাদ
আহমাদ ২২৩২১, সহীহ আল জামি‘ ১২৪০, সহীহ আত্ তারগীব ১১০৯)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(ঘ)
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ লোকে যে দীনারগুলো (অর্থ-সম্পদ) খরচ করে তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দীনার হলো-
যা সে তার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে, যা সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের ঘোড়া প্রতিপালনে
ব্যয় করে এবং যা সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী তার সহ-যোদ্ধাদের জন্য খরচ করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২০০,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৯৪, আহমাদ ২১৮৭৫, ২১৯০০, ২১৯৪৭, ইবনু হিব্বান ৪২৪২, ৪৬৪৬, বায়হাকী
ফিস সুনান ৪/১৭৮, বায়হাকী ফিশ শুআব ৩৪২২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১৭৯, ইসলামীক সেন্টার ২১৮১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি
আল্লাহর রাস্তায় দু’টি করে কোন জিনিস ব্যয় করবে, জান্নাতের প্রত্যেক দরজায় প্রহরী তাকে
ডাক দিবে। (তারা বলবে), হে অমুক। এদিকে আস। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল!
তাহলে তো তার জন্য কোন ক্ষতি নেই। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আমি
আশা করি যে, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৪১, ১৮৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৬১, ২২৬৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০২৭, আহমাদ ৭৬৩৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৪১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আবূ
সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
মিম্বারে দাঁড়ালেন এবং বললেন, আমি আমার পর তোমাদের জন্য ভয় করি এ ব্যাপারে যে, তোমাদের
জন্য দুনিয়ার কল্যাণের দরজা খুলে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি দুনিয়ার নিয়ামতের উল্লেখ করেন।
এতে তিনি প্রথমে একটির কথা বলেন, পরে দ্বিতীয়টির বর্ণনা করেন। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস
করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কল্যাণও কি অকল্যাণ বয়ে আনবে?’ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
নীরব রইলেন, আমরা বললাম, তাঁর উপর ওয়াহী নাযিল হচ্ছে। সমস্ত লোকও এমনভাবে নীরবতা অবলম্বন
করল, যেন তাদের মাথার উপর পাখী বসে আছে। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) মুখের ঘাম মুছে বললেন, সেই প্রশ্নকারী কোথায়? তা কী কল্যাণকর? তিনি তিনবার
এ কথাটি বললেন। কল্যাণ কল্যাণই বয়ে আনে। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, বসন্তকালীন উদ্ভিদ
পশুকে ধ্বংস অথবা ধ্বংসের মুখে নিয়ে আসে। কিন্তু যে পশু সেই ঘাস এ পরিমাণ খায় যাতে
তার ক্ষুধা মিটে, অতঃপর রোদ পোহায় এবং মলমূত্র ত্যাগ করে, অতঃপর আবার ঘাস খায়। নিশ্চয়ই
এ মাল সবুজ শ্যামল সুস্বাদু। সেই মুসলিমের সম্পদই উত্তম যে ন্যায়সঙ্গতভাবে তা উপার্জন
করেছে এবং আল্লাহর পথে, ইয়াতীম ও মিসকীন ও মুসাফিরের জন্য খরচ করেছে। আর যে ব্যক্তি
অন্যায়ভাবে অর্জন করে তার দৃষ্টান্ত এমন ভক্ষণকারীর মত যার ক্ষুধা মিটে না এবং তা কিয়ামতের
দিন তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২৮৪২, ৯২১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৪২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
প্রতি পরিবারের দুই জনের মধ্যে একজন যুদ্ধে গেলে উভয়কেই পুণ্যলাভ দেয়া হবে
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুযায়ল গোত্রের বানী লিহ্ইয়ান-এর
বিরুদ্ধে একদল সেনা পাঠিয়ে বললেন, প্রত্যেক গোত্রের প্রতি দু’জনের মধ্যে হতে একজন অভিযানে
যেতে প্রস্তুত হও, পুণ্যলাভ তোমাদের উভয়কে দেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮০০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৬,
মুসনাদ আহমাদ ১১৩০১, সহীহ আল জামি‘ ৫৪৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৫১, ইসলামিক সেন্টার
৪৭৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
ইসলামী জীবন বিধান সুপ্রতিষ্ঠিত রাখতে কিয়ামত পর্যন্ত একদল মুজাহিদ সংগ্রাম
করতে থাকবে
জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় এ দীন (ইসলামী জীবন
বিধান) সর্বদা সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং একদল মুসলিম কিয়ামত দিবস পর্যন্ত এই দীনের জন্য
সংগ্রাম করতে থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮০১,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯২২, মুসনাদ আহমাদ ২০৯৮৫,
সহীহ আল জামি‘ ৫২২০. ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮০০, ইসলামীক সেন্টার ৪৮০১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih।
কিয়ামত পর্যন্ত একটি মুজাহিদ-দল সত্যের উপর অটল-অবিচল থেকে শত্রুর মুকাবিলায়
সংগ্রাম করতে থাকবে
ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে সর্বদা
একটি দল সত্যের উপর অটল-অবিচল থেকে শত্রুর মুকাবিলায় সংগ্রাম করতে থাকবে এবং তাদের
বিরুদ্ধবাদীদের ওপর বিজয়ী হবে। এমনিভাবে উম্মাতের শেষ দল মাসীহ দাজ্জালের (সত্য-মিথ্যার
আন্দোলনে) সাথেও লড়াই-সংগ্রাম করতে থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৮১৯, সুনান আবূ দাঊদ ২৪৮৪, মুসনাদ আহমাদ ১৯৮৫১, সহীহ আল জামি‘ ৭২৯৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
আহত মুজাহিদের রক্ত থেকে কিয়ামতে মিশকের সুঘ্রাণ বের হবে
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর পথে
আহত হয়, তবে আল্লাহই প্রকৃতপক্ষে জানেন যে, কে তার পথে হতাহত হয়েছে। কিয়ামতের দিনে
সে এরূপ অবস্থায় আগমন করবে যে, তার ক্ষতস্থান হতে রক্ত প্রবাহিত হয়ে বের হতে থাকবে
এবং তার বর্ণ রক্তের মতো হবে আর তার সুগন্ধি হবে মিশকের সুঘ্রাণের ন্যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮০২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৩৭, ২৮০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৫৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৬, সুনান ইবনু
মাজাহ ২৭৯৬, সুনান আততিরমিযী ১৬৫৬, সহীহ আল জামি‘ ৫৭৮৩, বায়হাকী ফিস সুনান ৯/১৬৪, আত-তালীকুর
রাগীব ২/১৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭১০, ইসলামিক সেন্টার ৪৭১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ ‘‘মু‘মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ
করেছে। (আল আহযাব ২৩)।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমার চাচা আনাস ইবনু নাযার (রাঃ) বাদারের যুদ্ধের সময় অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন,
‘হে আল্লাহর রাসূল! মুশরিকদের সঙ্গে আপনি প্রথম যে যুদ্ধ করেছেন, আমি সে সময় অনুপস্থিত
ছিলাম। আল্লাহ্ যদি আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধে শরীক হবার সুযোগ দেন, তাহলে
অবশ্যই আল্লাহ্ দেখতে পাবেন যে, আমি কী করি।’ অতঃপর উহুদের যুদ্ধে মুসলিমরা ছত্রভঙ্গ
হয়ে পড়লে আনাস ইবনু নাযার (রাঃ) বলেছিলেন, আল্লাহ্! এরা অর্থাৎ তাঁর সাহাবীরা যা করেছেন,
তার সম্বন্ধে আপনার নিকট ওযর পেশ করছি এবং এরা অর্থাৎ মুশরিকরা যা করেছে তা থেকে আমি
নিজেকে সম্পর্কহীন বলে ঘোষণা করছি। অতঃপর তিনি এগিয়ে গেলেন, এবং সা‘দ ইবনু মু‘আযের
সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, হে সা‘দ ইবনু মু‘আয, (আমার কাম্য)। নাযারের রবের
কসম, উহুদের দিক থেকে আমি জান্নাতের সুগন্ধ পাচ্ছি। সা‘দ (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল!
তিনি যা করেছেন, আমি তা করতে পারিনি। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা তাকে এমতাবস্থায় পেয়েছি
যে, তার দেহে আশিটিরও অধিক তলোয়ার, বর্শা ও তীরের যখম রয়েছে। আমরা তাকে নিহত অবস্থায়
পেলাম। মুশরিকরা তার দেহ বিকৃত করে দিয়েছিল। তার বোন ব্যতীত কেউ তাকে চিনতে পারেনি
এবং বোন তার আঙ্গুলের ডগা দেখে চিনতে পেরেছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমাদের ধারণা, কুরআনের
এই আয়াতটি তাঁর এবং তাঁর মত মুমিনদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। ‘‘মু’মিনদের মধ্য হতে কিছু
সংখ্যক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।’’ (আল-আহযাবঃ ২৩)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮০৫, ৪০৪৮, ৪৭৮৩, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৮১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৯৬ প্রথমাংশ,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬০৮ প্রথমাংশ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যারা অসামর্থতার কারণে যুদ্ধে যেতে পারে না তারাও যোদ্ধাদের সাথে সাওয়াব
লাভে শরীক হবে
(ক)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক
যুদ্ধ হতে ফিরে যখন মদীনার সন্নিকটবর্তী হলেন তখন বললেন, এমন কিছু সংখ্যক লোক মদীনায়
রয়ে গেছে। তোমরা সফরে যে সকল ভূমি বা উপত্যকায় যেখানে যেখানে গমন করেছ, তারা সর্বাবস্থায়
তোমাদের সঙ্গে ছিল।
অপর বর্ণনায় রয়েছে, তারা তোমাদের সাথে সাওয়াব
লাভে শরীক ছিল। উপস্থিত সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! তারা মদীনায় অবস্থান
করে আমাদের সাথে কিভাবে শরীক হয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
হ্যাঁ, তারা মদীনাতেই অবস্থানরত; তাদের (শারীরিক ও আর্থিক) অসামর্থ্যই (অপারগতা) তোমাদের
সাথে যেতে বিরত রেখেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮১৫,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪২৩, ২৮৩৮, সুনান আবু দাউদ ২২৬৫, সুনান ইবনু মাজাহ
২৭৬৪, ২৭৬৫, মুসনাদ আহমাদ ১২০০৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৪০৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, আমাকে এমন কাজের কথা বলে দিন, যা জিহাদের সমতুল্য
হয়। তিনি বলেন, আমি তা পাচ্ছি না। (অতঃপর বললেন,) তুমি কি এতে সক্ষম হবে যে, মুজাহিদ
যখন বেরিয়ে যায়, তখন থেকে তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে এবং দাঁড়িয়ে ‘ইবাদাত করবে এবং আলস্য
করবে না, আর সিয়াম পালন করতে থাকবে এবং সিয়াম ভাঙ্গবে না। ব্যক্তিটি বলল, এটা কে পারবে?
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, ‘মুজাহিদের ঘোড়া রশির দৈর্ঘ্য পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে, এতেও
তার জন্য নেকী লেখা হয়।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৭৮৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৮, আহমাদ ৯৯৬৭, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ২৫৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
মুসলিমদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা
সমান নয়
সাহল ইবনু সা‘দ সা‘ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন যে, আমি মারওয়ান ইবনু হাকামকে মসজিদে উপবিষ্ট অবস্থায় দেখলাম। অতঃপর আমি তাঁর
দিকে এগিয়ে গেলাম এবং তাঁর পাশে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বর্ণনা করেন যে, যায়দ ইবনু
সাবিত (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর
উপর অবতীর্ণ আয়াত, ‘‘মুসলিমদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে জিহাদ
করে তারা সমান নয়’’ (আন-নিসাঃ ৯৫) যখন তাকে দিয়ে লিখেছিলেন, ঠিক সে সময় অন্ধ ইবনু উম্মু
মাকতুম (রাঃ) সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি জিহাদে যেতে সক্ষম
হতাম, তবে অবশ্যই অংশ গ্রহণ করতাম।’ সে সময় আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর ওয়াহী নাযিল করেন। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর উরু আমার উরুর উপর রাখা ছিল এবং তা আমার নিকট এতই ভারী মনে হচ্ছিল যে,
আমি আমার উরু ভেঙ্গে যাবার আশংকা করছিলাম। অতঃপর ওয়াহী অবতীর্ণ হবার অবস্থা দূর হল,
এ সময় غَيْرُ
أُولِي
الضَّرَرِ
আয়াতটি আল্লাহ নাযিল করেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৪৫৯২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
মাতা পিতা জীবিত থাকলে তাদের বিনা অনুমতিতে জিহাদে যাওয়া নিষেধ
(ক)
আবদুল্লাহ ইবনে ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
এবং আখেরাতে জান্নাত লাভের আশায় আপনার সাথে জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে এসেছি। আমি আমার
পিতা-মাতাকে কাঁদিয়ে এসেছি। তিনি বলেনঃ তাদের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের মুখে হাসি ফুটাও,
যেভাবে তুমি তাদেরকে কাঁদিয়ে এসেছো। (সুনান ইবনু মাজাহ
২৭৮২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮১৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০০৪, ৫৯৭২,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৩৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৪৯, সুনান আবূ দাঊদ ২৫২৮,
২৫২৯, সুনান আননাসায়ী ৩১০৩, সুনান আততিরমিযী ১৬৭১, মুসনাদ আহমাদ ৬৭৬৫, ৬৫০৮, ৬৭২৬,
৬৭৭২, ৬৮১৯, ৭০২২, ইরওয়া ১১৯৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৪৮০, আত-তালীকুর রাগীব ৩/২১৩, সহীহ
আবু দাউদ ২২৮১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ)
মুআবিয়া ইবনে জাহিমা আস-সালামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর সন্তোষ লাভের
এবং আখেরাতে জান্নাত প্রাপ্তির আশায় আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। তিনি বলেনঃ তোমার
জন্য দুঃখ হয়, তোমার মা কি জীবিত আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ ফিরে গিয়ে তার
সেবাযত্ন করো। এরপর আমি অপর পাশ থেকে তাঁর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখেরাতে জান্নাত লাভের আশায় আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই।
তিনি বলেনঃ তোমার জন্য দুঃখ হয়, তোমার মা কি
জীবিত আছে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হাঁ। তিনি বলেন, তুমি ফিরে যাও এবং তার সেবাযত্ন
করো। এরপর আমি তাঁর সম্মুখভাগে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
এবং আখেরাতে জান্নাত লাভের আশায় আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। তিনি বলেনঃ তোমার
জন্য দুঃখ হয়, তোমার মা কি জীবিত আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বলেনঃ
তোমার জন্য আফসোস! তার পায়ের কাছে পড়ে থাকো, সেখানেই জান্নাত। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৮১, সুনান আননাসায়ী ৩১০৪, ইরওয়া ৫/২০-২১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
জান, মাল ও জবান দ্বারা যুদ্ধ করা
(ক)
আব্দুল্লাহ ইবনু হুবাশী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে সর্বোত্তম ’আমলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন, দীর্ঘ ক্বিয়ামের সালাত আদায়। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ দান সর্বোত্তম? তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অভাবগ্রস্ত অবস্থায় দানের প্রয়াস। আবার জিজ্ঞেস
করা হলো, কোন্ হিজরত সর্বোত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ
তা’আলা যা নিষেধ করেছেন তা বর্জন করা। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ জিহাদ সর্বোত্তম?
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মুশরিকদের বিরুদ্ধে জান ও মাল দ্বারা
জিহাদ করা। অতঃপর জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ ধরনের মৃত্যু (শহীদ হওয়া) উত্তম? উত্তরে তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যার রক্ত প্রবাহিত হয়েছে এবং তার সওয়ারীর পাও
কেটে ফেলা হয়েছে।
নাসায়ী-এর বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে সর্বোত্তম ’আমলের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সন্দেহ সংশয়মুক্ত ঈমান, গনীমাতে প্রাপ্ত মালে চুরি বা আত্মসাৎমুক্ত
জিহাদ এবং মাকবুল (গ্রহণযোগ্য) হজ্জ/হজ। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ সালাত সর্বোত্তম?
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, দীর্ঘ কুনূত। অতঃপর অন্যান্য বর্ণনায়
তারা (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী) উভয়ে ঐকমত্যে আছেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৩৩, সুনান আননাসায়ী ২৫২৬, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৪৯, দারিমী ১৪৬৪, সহীহ
আত্ তারগীব ১৩১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুশরিকদের
সাথে তোমাদের জান, মাল ও জবান দ্বারা জিহাদ কর। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২১, সুনান আবূ দাঊদ ২৫০৪, সুনান আননাসায়ী ৩০৯৬, মুসনাদ আহমাদ ১২২৪৬,
দারিমী ২৪৭৫, সহীহ আল জামি‘ ৩০৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
মুজাহিদদের শরীরে লেগে থাকা ধূলাবালু এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কস্মিনকালেও
মিলিতি হতে পারে না
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে ক্রন্দন
করে, তার জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করা অসম্ভব, যেমনিভাবে দোহনকৃত দুধ পুনরায় স্তনে প্রবেশ
করানো অসম্ভব। আর কোনো বান্দার শরীরে লেগে থাকা ধূলাবালু এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কস্মিনকালেও
মিলিতি হতে পারে না।
ইমাম নাসায়ী (রহঃ) অপর হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা
করেন যে, কোনো মুসলিমের নাকের অভ্যন্তরে আল্লাহর পথে ধূলাবালু ও জাহান্নামের ধোঁয়া
কক্ষনো একত্রিত হবে না। নাসায়ীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, (সেটা) কোনো বান্দার নাকে কক্ষনো
একত্রিত হতে পারে না। অনুরূপ কোনো বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও কৃপণতা কক্ষনো একত্রিত হতে
পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২৮, সুনান আননাসায়ী
৩১০৮, সুনান আততিরমিযী ১৬৩৩, মুসনাদ আহমাদ ১০৫৬০, সহীহ আল জামি‘ ৭৭৭৮, সহীহ আত্ তারগীব
১২৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
আল্লাহর পথে অবস্থান (জিহাদে শামিল থাকা) স্বীয় বাড়ীতে সত্তর বছরের সালাত
আদায় অপেক্ষা সর্বোত্তম
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবী পাহাড়ের সংকীর্ণ
পথ অতিক্রমকালে সুমিষ্ট পানির এক ঝর্ণা দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি আনন্দে আতিশয্যে বলে ফেললেন
যে, কতই না উত্তম হতো আমি যদি লোকালয় ছেড়ে এ পাহাড়ে বসবাস করতে পারতাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সাহাবীর এ আকাঙ্ক্ষার প্রসঙ্গে কথা উঠলে তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (সাবধান) ঐরূপ কামনা করো না। কেননা তোমাদের
কারও আল্লাহর পথে অবস্থান (জিহাদে শামিল থাকা) স্বীয় বাড়ীতে সত্তর বছরের সালাত আদায়
অপেক্ষা সর্বোত্তম। তোমরা কি এটা প্রত্যাশা কর না যে, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের গুনাহ
মাফ করে দেন এবং পরিশেষে জান্নাতে প্রবেশ করান? তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর। কোনো ব্যক্তি
আল্লাহর পথে উষ্ট্রী দোহনের বিরতির ন্যায়ও যদি কিছু সময় যুদ্ধ করে, তার জন্য জান্নাত
নির্ধারিত হয়ে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৩০,
সুনান আততিরমিযী ১৬৫০, সহীহ আত্ তারগীব ১৩১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আল্লাহর পথে প্রবাহিত রক্তের ফোঁটা আল্লাহর নিকট খুবই পছন্দনীয়
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু’টি ফোঁটা এবং দু’টি দাগের
(চিহ্নের) চেয়ে পছন্দনীয় অন্য কিছুই নয়। ফোঁটা দু’টির একটি হলো আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনরত
অশ্রুর ফোঁটা, অপরটি হলো আল্লাহর পথে প্রবাহিত রক্তের ফোঁটা। আর দাগ দু’টির একটি আল্লাহর
পথে (জিহাদে) আহত হওয়ার দাগ, অপরটি ফরয ’ইবাদাতসমূহের কোনো একটি আদায়ের দাগ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৩৭, সুনান আততিরমিযী ১৬৬৯, সহীহ
আত্ তারগীব ১৩৭৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
মুজাহিদের (জিহাদ শেষে স্বীয়) ঘরে ফিরে আসাও জিহাদের সমতুল্য
আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুজাহিদের (জিহাদ শেষে স্বীয়)
ঘরে ফিরে আসাও জিহাদের সমতুল্য। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৮৪১, সুনান আবূ দাঊদ ২৪৮৭, মুসনাদ আহমাদ ৬৬২৫, সহীহ আল জামি‘ ৪৩৯৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
জিহাদেরও যাবে গণিমতের মালও সংগ্রহ করবে এমন ইচ্ছে নিয়ে জিহাদে গেলে তার
কোনো সওয়াব নেই
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! কোনো লোক যদি আল্লাহর পথে জিহাদে যাওয়ার
ইচ্ছা পোষণ করে এবং দুনিয়ার ধন-সম্পদ (গনীমাত) প্রাপ্তির লোভও রাখে (তবে তার কি কোনো
সাওয়াব মিলবে)? তদুত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তার কোনো সাওয়াব
নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৪৫, সুনান আবূ দাঊদ
২৫১৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৩২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
যে মুজাহিদের নিদ্রা-জাগরণ সবই সাওয়াবে পরিণত হবে
মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিহাদ দু’ প্রকারের হয়ে থাকে।
যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায় জিহাদ করে, ইমামের (নেতার) আনুগত্য
প্রদর্শনের সাথে সাথে স্বীয় ধন-সম্পদ খরচ করে, সহচরদের সাথে সদাচরণ করে এবং অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা
হতে দূরে থেকে জিহাদে শরীক হয়- তাহলে ঐ ব্যক্তির নিদ্রা-জাগরণ সবই সাওয়াবে পরিণত হবে।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি অহংকার, বীরত্ব প্রকাশ ও সুনাম-সুখ্যাতি লাভের জন্য জিহাদ করে,
আর ইমামের আনুগত্যের খিলাফ করে এবং জমিনে অনিয়ম-অরাজকতা সৃষ্টি করে, সে জিহাদ থেকে
ন্যূনতম সাওয়াব নিয়েও ফিরবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৮৪৬, সুনান আবূ দাঊদ ২৫১৫, সুনান আননাসায়ী ৩১৮৮, সহীহাহ্ ১৯৯০, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৩৩)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
নিয়্যাত অনুযায়ী জিহাদে গিয়ে তাই পাবে
উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে
উট বাঁধার রশি প্রাপ্তির আশায় জিহাদ করে, সে তার নিয়্যাত অনুযায়ী তা-ই পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৫০, সুনান আননাসায়ী ৩১৩৮, সহীহ
আল জামি‘ ৬৪০১, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহর পথে জিহাদ করলে তাকে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে একশত গুণের উচ্চাসনে
মর্যাদা দিবেন, প্রতিটি মর্যাদা বা স্তরের মাঝে দূরত্ব হলো আকাশমন্ডলী ও দুনিয়ার মধ্যকার
সমপরিমাণ
(ক) আবূ
সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব্ (প্রতিপালক) হিসেবে, ইসলামকে দীন (জীবন বিধান) হিসেবে
এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রসূল (উত্তম আদর্শ) হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে
গ্রহণ করে নিয়েছে, তার জন্য জান্নাত অপরিহার্য হয়ে গেছে। এটা শুনে আবূ সা’ঈদ অত্যন্ত
আনন্দ আতিশয্যে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এ মাহাত্ম্যপূর্ণ কথাগুলো পুনরায় বলুন!
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় তা বললেন। অতঃপর আরো বললেন, আরও একটি
উত্তম কাজ রয়েছে যা আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে জান্নাতে একশত গুণের উচ্চাসনে মর্যাদা দিবেন,
প্রতিটি মর্যাদা বা স্তরের মাঝে দূরত্ব হলো আকাশমন্ডলী ও দুনিয়ার মধ্যকার সমপরিমাণ।
তিনি [আবূ সা’ঈদ (রাঃ)] জিজ্ঞেস করলেন, সেই (দ্বিতীয়) কাজটি কী, হে আল্লাহর রসূল? উত্তরে
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ, আল্লাহর পথে জিহাদ,
আল্লাহর পথে জিহাদ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৫১,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৮৪, সুনান আননাসায়ী ৩১৩১,
সহীহ আত্ তারগীব ১৩০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭২৬, ইসলামিক সেন্টার ৪৭২৭)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি যে ঈমান আনল, সালাত আদায় করল ও রমাযানের সিয়াম
পালন করল সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয় জন্মভূমিতে বসে থাকুক, তাকে জান্নাতে
প্রবেশ করিয়ে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা
কি লোকদের এ সুসংবাদ পৌঁছে দিব না? তিনি বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহ্
তা’আলা জান্নাতে একশ’টি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান
ও যমীনের দূরত্বের মত। তোমরা আল্লাহর নিকট চাইলে ফেরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হলো সবচেয়ে
উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। আমার মনে হয়, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এও বলেছেন, এর উপরে রয়েছে আরশে রহমান। আর সেখান থেকে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইবনু ফুলাইহ্ (রহ.) তাঁর পিতার সূত্রে (নিঃসন্দেহে) বলেন, এর উপর রয়েছে আরশে
রহমান। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৯০, ৭৪২৩, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ২৫৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তরবারির ছায়ায় ঘেরা জান্নাতের দরজাসমূহ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে জিহাদ
করতে হবে
(ক)
আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতের দরজাসমূহ তরবারির ছায়ায় ঘেরা। এটা শুনে জীর্ণশীর্ণ জনৈক
ব্যক্তি তাকে (আবূ মূসা আল আশ্’আরী –কে) জিজ্ঞেস করল, আপনি কি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরূপ বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর লোকটি উঠে স্বীয়
সঙ্গীদের নিকট গিয়ে তাদেরকে সালাম করলেন এবং নিজের তরবারির খাপ খুলে ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে
উন্মু্ক্ত তরবারি নিয়ে শত্রুর মুকাবিলায় অগ্রসর হলেন এবং অবশেষে বহু শত্রু হত্যা করে
নিজে শাহাদাত লাভ করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত ৩৮৫২,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০২, সুনান আততিরমিযী ১৬৫৯,
সহীহ আল জামি‘ ১৫৩০, সহীহ আত্ তারগীব ১৩০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৬৩, ইসলামিক সেন্টার
৪৭৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) উমার
ইবনু ’উবায়দুল্লাহ্ (রহ.)-এর আযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব সালিম আবূন নাযর (রহঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) তাঁকে লিখেছিলেন যে, আল্লাহর রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা জেনে রাখ, তরবারির ছায়া-তলেই জান্নাত।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮১৮, ২৮৩৩, ২৯৬৬, ৩০২৪,
৭২৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৪২, আহমাদ ১৯১৩৬,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
আল্লাহর রাস্তায় সওয়ারী থেকে পতিত হয়ে কারো মৃত্যু ঘটলে, সে জিহাদকারীদের
অন্তর্ভুক্ত
উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার নিকটবর্তী এক
স্থানে শুয়েছিলেন, অতঃপর জেগে উঠে মুচকি হাসতে লাগলেন। আমি বললাম আপনি হাসলেন কেন?
তিনি বললেন, আমার উম্মাতের এমন কিছু লোককে আমার সামনে উপস্থিত করা হলো যারা এই নীল
সমুদ্রে আরোহণ করছে, যেমন বাদশাহ সিংহাসনে আরোহণ করে। উম্মু হারাম (রাঃ) বললেন, আল্লাহর
নিকট দুআ করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি তার জন্য দুআ করলেন। অতঃপর
তিনি দ্বিতীয়বার নিদ্রা গেলেন এবং আগের মতই করলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) আগের মতই বললেন
এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগের মতই জবাব দিলেন। উম্মু হারাম
(রাঃ) বললেন, আল্লাহর নিকট দুআ করুন তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহর
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মু‘আবিয়াহ (রাঃ)-এর সঙ্গে মুসলিমরা যখন প্রথম সমুদ্র পথে অভিযানে বের হয়, তখন তিনি
তাঁর স্বামী ‘উবাদাহ ইবনু সামিতের সঙ্গে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তাদের
কাফেলা সিরিয়ায় যাত্রা বিরতি করে। আরোহণের জন্য উম্মু হারামকে একটি সওয়ারী দেয়া হলো,
তিনি সওয়ারীর উপর থেকে পড়ে মারা গেলেন। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৯৯, ২৮০০, ২৮০১, ২৭৮৮, ২৭৮৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৯১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৬০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তৃতীয় অধ্যায়
জিহাদের জন্যে যুদ্ধাস্ত্র প্রস্তুত, ক্রয় ও ব্যবহার করা
(ক) উমার
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনূ নযীরের সম্পদ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে ‘ফায়’ হিসেবে দান করেছিলেন। এতে মুসলিমগণ অশ্ব বা সাওয়ারী চালনা
করেনি। এ কারণে তা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জন্য নির্দিষ্ট
ছিল। এ সম্পদ থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর পরিবারকে এক বছরের খরচ
দিয়ে দিতেন এবং বাকী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের প্রস্তুতির জন্য হাতিয়ার ও ঘোড়া ইত্যাদিতে
ব্যয় করতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯০৪, ৩০৯৪,
৪০৩৩, ৪৮৮৫, ৫৩৫৭, ৫৩৫৮, ৬৭২৮, ৭৩০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৫৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৬৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আনাস
ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন
শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করেন। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২৮০৫, (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৪৬, ৩০৪৪, ৪২৮৬, ৫৮০৮, ৭৩৪৫, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৫৭, সুনান আততিরমিযী ১৬৯৩, সুনান আননাসায়ী ২৮৬৭, সুনান আবূ দাউদ ২৬৮৫, আহমাদ ১১৬৫৭,
১২২৭০, ১২৪৪১, ১২৫২১, ১২৯৩২, ১৩০৪০, ১৩০২৪, ১৩১০৬, মুয়াত্তা মালেক ৯৬৪, দারেমী ১৯৬৮,
২৪৫৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৭২, মুখতাসারুশ শামাইল ৯১, সহীহ আবু দাউদ ২৪০৬, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৩১৭৪, ইসলামীক সেন্টার ৩১৭১))। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) সায়িব
ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ
যুদ্ধের দিন দু’টি বর্ম পরিধান করেছিলেন। অবশ্য একটির উপর আরেকটি পরিধান করেছিলেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৮৬, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৯০,
সুনান ইবনু মাজাহ ২৮০৬, আহমাদ ১৫২৯৫, সহীহ আবু দাউদ ২৩৩২, মুখতাসারুশ শামাইল ৯০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ)
উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে মসজিদে নববীর মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযানে সাধ্যমতো শক্তি সঞ্চয় কর।
মনে রাখ, প্রকৃত শক্তি হলো তীর নিক্ষেপ করা। শোন! প্রকৃত শক্তি হলো তীর নিক্ষেপ করা।
শোন! প্রকৃত শক্তি হলো তীর নিক্ষেপ করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৮৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১৭, সুনান
আততিরমিযী ৩০৮৩, সুনান আবূ দাঊদ ২৫১৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮১৩, আহমাদ ১৭৪৩২, দারিমী
২৪৪৮, ইরওয়া ১৫০০, সহীহ আল জামি‘ ২৬৩৩, সহীহ আত্ তারগীব ১২৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৯৩,
ইসলামীক সেন্টার ৪৭৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, শীঘ্রই রোম সাম্রাজ্য তোমাদের হাতে পরাজিত হবে এবং তোমাদের সাহায্যের
জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। অতএব তোমাদের কেউ যেন তীর নিক্ষেপে অক্ষমতা প্রকাশ না করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৮৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১৮, সুনান আততিরমিযী ৩০৮৩, আহমাদ ১৭৪৩৩, সহীহ আল জামি‘
২৬৩৪, সহীহ আত্ তারগীব ১২৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
’যুল-ফাকার’ নামক তরবারি বদরের যুদ্ধের দিন গনীমতস্বরূপ গ্রহণ করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮০৮, সুনান আততিরমিযী ১৫৬১, আহমাদ ২৪৪১,
বায়হাকী ফিস সুনান ৯/২০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ছ) উকবা
ইবনে আমের আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করতে শুনেছি (অনুবাদ) ’’তোমরা দুশমনের
বিরুদ্ধে যথাসাধ্য শক্তি সঞ্চয় করো’’ (সূরা আনফালঃ ৬০)। জেনে রেখো! এই শক্তি হলো তীরন্দাজী।
কথাটি তিনি তিনবার বলেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮১৩, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১৭, সুনান আততিরমিযী ৩০৮৩, সুনান
আবূ দাউদ ২৫১৪, আহমাদ ১৬৯৭৯, দারেমী ২৪০৪, ইরওয়া ১৫০০, গায়াতুল মারাম ৩৮০, তাখরীজুল
ফিকহুস সায়রাহ ২২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৯৩, ইসলামীক সেন্টার ৪৭৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
যুদ্ধের ট্রেনিং যে নিবে না সে মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত না
উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি তীরন্দাজী শিক্ষা গ্রহণ করে তা পরিহার (চর্চা
না) করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়, অথবা সে নাফরমানি করল। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৬৩, সুনান ইবনে মাজাহ ২৮১৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮৪৩,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১৯, সহীহাহ্ ৩৪৪৮, সহীহ আল জামি‘ ৬৩৯৫, সহীহ আত্ তারগীব ১২৯৩,
সুনান আননাসায়ী ৩৫৭৮, সুনান আবূ দাউদ ২৫১৩, আহমাদ ১৬৮৪৯, ১৬৮৭০, ১৬৮৮৪, দারেমী ২৪০৫,
আত-তালীকুর রাগীব ২/১৭২, রাওদুন নাদীর ১১৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৯৬, ইসলামীক সেন্টার
৪৭৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইসলামি রাষ্ট্রের বিধান হচ্ছে, প্রাপ্ত বয়স্ক
সকল যুবককেই যুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। এরপর সার্বক্ষণিক রাষ্ট্রীয় কাজে
কিছু সৈন্য নিয়োজিত থাকবে এবং অন্যরা যার যার ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকবে। কখনো শত্রুপক্ষের
সাথে যুদ্ধ লাগলে সম্মিলিতভাবে সকলেই যুদ্ধ করবে। বর্তমানে ইসরাইলে ইহুদি শাসক এই নীতিতে
কাজ করছে।
তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাদেরকে উৎসাহিত করলেন
সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আসলাম’ সম্প্রদায়ের
একদল লোকের কাছে আসলেন, তখন তারা বাজারের মধ্যে তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা করছিল। অতঃপর
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের লক্ষ্য করে বললেন, হে ইসমা’ঈল-এর বংশধর!
তোমরা তীরন্দাজ হও। কেননা তোমাদের পিতামহ (ইসমা’ঈল (আঃ)) তীরন্দাজ ছিলেন। আমি অমুক
দলের পক্ষে আছি। কিন্তু অপর পক্ষ থেকে তীর চালনা বন্ধ করে দিল। তখন (নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদের কি হলো? তারা বলল, আমরা কিরূপে তীর ছুঁড়তে পারি,
আপনি যে অমুক দলের সঙ্গে রয়েছেন? এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
আচ্ছা তোমরা তীর নিক্ষেপ করতে থাক, আমি তোমাদের সকলের সাথেই আছি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৬৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৮৯৯, ৪৪৭৩, ৩৫০৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮১৫, সহীহাহ্ ১৪৩৯, সহীহ আল জামি‘ ৯১১, সহীহ আত্
তারগীব ১২৮০, আহমাদ ৩৪৩৪, গায়াতুল মারাম ৩৭৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
২৬৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যুদ্ধের উকরনের মধ্যে ঘোড়ার কপালের
মধ্যে বরকত ও কল্যাণ নিহিত
(ক)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
(যুদ্ধাস্ত্রের) ঘোড়ার কপালের মধ্যে বরকত ও কল্যাণ নিহিত।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৬৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৫১, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৭৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৪, সুনান আননাসায়ী ৮৫৭১, আহমাদ ১২১২৫,
১২৭৫১, সহীহাহ্ ৩৬১৫, সহীহ আল জামি‘২৮৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ১২৫২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৪১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) উরওয়া
আল-বারিকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ ঘোড়ার কপালে কিয়ামত পর্যন্ত কল্যাণ ও প্রাচুর্য বাঁধা থাকবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৫০,
২৮৫২, ৩১১৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৩, সুনান আততিরমিযী
১৬৯৪, সুনান আননাসায়ী ৩৫৭৪, ৩৫৭৫, ৩৫৭৬, ৩৫৭৭, আহমাদ ১৮৮৬৫, ১৮৮৬৯, দারেমী ২৪২৬, ইবনু
হিব্বান ৪১৪০, বায়হাকী ফিস সুনান ৬/৩১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
২৬৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) জারীর
ইবনু ’আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলাম যে, তিনি স্বহস্তে ঘোড়ার কপালের কেশরাজি মুছছিলেন
এবং বলছিলেন, কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আর তা হলো (আখিরাতে)
পুরস্কার ও (দুনিয়াতে) গনীমাতের মাল। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৮৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭২, আহমাদ
১৯১৯৭, সহীহ আল জামি‘৩৩৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৯৪, ইসলামিক সেন্টার ৪৬৯৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahi।
(ঘ) আবদুল্লাহ
ইবনে ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত
পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ ও প্রাচুর্য যুক্ত থাকবে। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২৭৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৪৯, ৩৬৪৪, সুনান আননাসায়ী ৩৫৭৩,
আহমাদ ৪৬০২, ৪৮০১, ৫০৮৩, ৫১৭৮, ৫৭৩৪, ৫৭৪৯, ৫৮৮২, মুয়াত্তা মালেক ১০১৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৬৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জিহাদের উদ্দেশে ঘোড়া লালন-পালন করার ফজিলত
(ক)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং তার প্রতিশ্রুতির উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস
রেখে আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশে ঘোড়া লালন-পালন করে, কিয়ামতের দিন তার তৃপ্তিদায়ক
খাদ্য ও প্রস্রাব-পায়খানা ঐ লোকের ’আমলের পাল্লায় ওযন করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৬৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৮৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ১২৪১, সুনান আননাসায়ী ৩৫৮২, আহমাদ ৮৮৬৬, ইরওয়া ১৫৮৬, সহীহ আল
জামি‘৫৯৬৭, সহীহ আত্ তারগীব ১২৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) তামীম
আদ-দারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (জিহাদের উদ্দেশে) একটি ঘোড়া পোষে, অতঃপর স্বহস্তে
একে ঘাস ও শস্যদানা খাওয়ায়, তার আমলনামায় প্রতিটি দানার বিনিময়ে একটি করে সওয়াব লেখা
হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৯১, বায়হাকী ফিস সুনান ৫/৫১৫,
রাওদুন নাদীর ১৮৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৫৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahi।
রাসুল সাঃ এর সময়ে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ছিল না। সেসময় তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহিত
করেছেন তথা জিহাদের উদ্দেশ্যে তীরন্দাজ হতে হবে আবার জিহাদের উদ্দেশে ঘোড়া লালন-পালন
করলে তার ফজিলত বলে দিয়েছেন তাই বর্তমান যুগে জিহাদের উদ্দেশ্যে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র
আবিস্কার করা ও সেগুলোর ব্যবহার শেখা তথা প্রশিক্ষণ নেয়া প্রত্যেক মুসলমানদের জন্যে
কর্তব্য। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তীরন্দাজী শিক্ষা
তথা জিহাদের উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তা পরিহার (চর্চা না) করে, সে আমাদের দলভুক্ত
নয়, অথবা সে নাফরমানি করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৮৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১৯, সহীহাহ্ ৩৪৪৮,
সহীহ আল জামি‘ ৬৩৯৫, সহীহ আত্ তারগীব ১২৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো
বলেছেন,
উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা একটি তীরের বিনিময়ে তিন (শ্রেণীর)
লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ১- তীর প্রস্তুতকারী, যে সাওয়াবের নিয়্যাতে তা প্রস্তুত
করে। ২- তীর নিক্ষেপকারী ও ৩- তীর দানকারী। সুতরাং তোমরা তীর নিক্ষেপ ও সওয়ারীর (যুদ্ধযানের)
প্রশিক্ষণ গ্রহণ কর। তবে তীর নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ আমার নিকট তোমাদের সওয়ারীতে আরোহণ
অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয়। তিনটি খেলা ছাড়া সকল প্রকারের খেলা যা লোকেরা খেলে থাকে তা
অন্যায় ও বাতিল। ১- ধনুকের সাহায্যে তীর নিক্ষেপ করা। ২- ঘোড়ার প্রশিক্ষণ ও ৩- স্ত্রীর
সঙ্গে আমোদণ্ডপ্রমোদ করা। এগুলো শারী’আতে বৈধ ও স্বীকৃত। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)
আর আবূ দাঊদ ও দারিমী অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন,
যে ব্যক্তি তীর নিক্ষেপের শিক্ষা গ্রহণ করার পর অবহেলা বা অনীহা প্রকাশ করে তা বর্জন
করে, প্রকৃতপক্ষে সে আল্লাহর একটি নি’আমাত পরিহার করল। অথবা বলেছেন, সে আল্লাহর নি’আমাতের
অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৭২,
প্রথম অংশ বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযী ১৮৩৭, ১৬৩৮, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮১১; আর ২য় অংশ
বর্ণনা করেছেন ইমাম আবূ দাঊদ ২৫১৩, বায়হাকী ফিস সুনান ১০/১৪, তাখরীজুল ফিকহুস সায়রাহ
২২৫, সহীহাহ ৩১৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
জিহাদে যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করার ফজিলত
আবূ নাজীহ আস্ সুলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে (কোনো শত্রুর
উপর) আঘাত হানলো, তার জন্য জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা নির্ধারিত রয়েছে। আর যে লোক আল্লাহর
পথে তীর নিক্ষেপ করল (শত্রুর গায়ে বিদ্ধ হোক বা না হোক) তার জন্য একটি গোলাম মুক্তি
করার সমপরিমাণ সাওয়াব রয়েছে। আর যে লোক ইসলামের কাজে নিয়োজিত থেকে বার্ধক্যে পৌঁছেছে,
কিয়ামতের দিন তার জন্য তা উজ্জ্বল নূরে পরিণত হবে। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)
আবূ দাঊদ এ হাদীসটির শুধুমাত্র প্রথম অংশটি,
নাসায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় অংশটি এবং তিরমিযী দ্বিতীয় ও তৃতীয় অংশটি বর্ণনা করেছেন। তবে
বায়হাক্বী ও তিরমিযীর বর্ণনার মধ্যে ’’ইসলামে’’ এর স্থলে ’’আল্লাহর পথে’’ বর্ণিত হয়েছে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৭৩, সুনানে ইবনে মাজাহ ২৮১২,
সুনান আবূ দাঊদ ৩৯৬৫, সুনান আননাসায়ী ৩১৪২, সুনান আততিরমিযী ১৬৩৮, আহমাদ ১৭০২৪, সহীহ
আল জামি‘১২৮৬, বায়হাকী ফিস সুনান ১০/২৭২, বায়হাকী ফিশ শুআব ৪৩৪১, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক
২/১২১, আত-তালীকুর রাগীব ২/১৭১, তাখরীজু ফিকহুস সায়রাহ ২২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সেকাল আর একালের যুদ্ধাস্ত্র
রাসুল সাঃ এর সময়ে যুদ্ধাস্ত্র বলতে যা ছিল
তা হচ্ছে, ঢাল, তলোয়ার, বর্ম, শিরস্ত্রান, তীর ও ঘোড়া। এগুলো দিয়েই রাসুল সাঃ তিনি
নিজে সশরীরে ১৯টি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর জীবদ্দশায়
২৭টি বড় ধরনের যুদ্ধ (গাজওয়া) ও ৬০টি ছোটখাটো দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ (র্ষসারিয়া) সরাসরি পরিচালনা
করেছেন। (ইসলামী বিশ্বকোষ) মুফতি শাফি (রহ.) লিখেছেন, বড় যুদ্ধ (গাজওয়া) ২৩টি এবং ছোটখাটো
যুদ্ধ (সারিয়া) ৪৩টি। এখানে যুদ্ধের সংখ্যা কম বেশী যাই হোক না কেনো যুদ্ধের উপকরন
ছিল ঐ ঢাল তলোয়ারসমূহ।
বর্তমান যুগে একটি মুসলিম মুজাহিদ দল ঐসব প্রাচীন
যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে শত্রুপক্ষকে পরাজিত কি করতে পারবে? যুদ্ধের ময়দানে আল্লাহ তায়ালা
জিবরাইল ও মিকাইল (আঃ) কে যুদ্ধে সহযোগিতা করার জন্যে প্রেরণ করেছিলেন। কতো বড় গায়েবী
সাহায্য তবুও যুদ্ধে মুসলমানদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে ঐসব যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে
গায়েবী সাহায্য ছাড়া শত্রুপক্ষকে পরাজিত করা কোনোভাবে সম্ভব নয়। এ জন্যে আমাদেরকে কুরআন
হাদিস শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞানে পড়াশোনা করতে হবে, আমাদেরকে শিখতে হবে কিভাবে পারমানবিক
অস্ত্রসমূহ তৈরী করতে হয়, আমাদেরকে শিখতে হবে কিভাবে যুদ্ধ বিমান পরিচালনা করতে হয়।
দুঃখের বিষয় আমাদের সমাজে এখনো কিছু আলেম আছেন তারা মনে করেন বিজ্ঞান শিখলে নাকি সে
কাফির বা মুরতাদ হবে। আসলে এটা একটা মিথ্যে
কথা। যে মুরতাদ হওয়ার সে হবেই।
আসুন আমরা আধুনিক কিছু যুদ্ধাস্ত্রের সাথে
পরিচিত হই। অত্যাধুনিক এই যুদ্ধাস্ত্রগুলো সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার
করা হচ্ছে।
বিশ্বের সমরশক্তির দিক দিয়ে রাশিয়ার অবস্থান
চূড়ার দিকে। একটি সূত্র মতে, রাশিয়ার নিকট যে পরিমান পারমানবিক অস্ত্র আছে তা দিয়ে
এই পৃথিবীকে ৫০ বার ধবংস করা যাবে। তাই দেশটির হাতে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র থাকবে, বিষয়টি
স্বাভাবিক। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে রুশ বাহিনী নানা ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা
চালিয়েছে। সে অনুযায়ী, ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যবহার করা আধুনিক অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে
কেএ–৫২ই ও এমআই–১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার, সুখোই–৫৭ই ও সুখোই–৩৫ যুদ্ধবিমান, ইস্কান্দার–ই
ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণব্যবস্থা এবং টি–৯০ ট্যাংক।
যুদ্ধে যেসব অস্ত্র শক্তি জুগিয়েছে ইউক্রেনকে
কাঁধ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র:
যুক্তরাজ্যের দেওয়া এনএলএডব্লিউ ও যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এফজিএম–১৪৮ জ্যাভলিন ব্যবহার
করে রাশিয়ার ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানগুলোকে থামাতে পেরেছিল ইউক্রেন। এমনই আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র
এফআইএম–৯২ স্টিংগার। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এ অস্ত্রটি আকাশপ্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহার
করেছেন ইউক্রেনীয়রা। জর্জ ব্যারোসের ভাষ্যমতে, স্টিংগার দিয়ে রাশিয়ার বহু যুদ্ধবিমান
ও হেলিকপ্টার ধ্বংস করা হয়েছে।
বেরাকতার টিবি–২ ড্রোন: ইউক্রেন যুদ্ধের একপর্যায়ে
এসে নজর কেড়েছিল তুরস্কের তৈরি করা বেরাকতার টিবি–২ ড্রোন। ড্রোনটি ব্যবহার করে যুদ্ধে
রুশ বাহিনীর বিভিন্ন অবস্থানে নির্ভুলভাবে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন বাহিনী।
এইচএআরএম ক্ষেপণাস্ত্র: ইউক্রেনীয় বাহিনীকে বড় সহায়তা
করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এজিএম–৮৮ হাইস্পিড অ্যান্টি রেডিয়েশন মিসাইল (এইচএআরএম)।
ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শত্রুপক্ষের রাডারব্যবস্থা ধ্বংস করতে সক্ষম। জর্জ ব্যারোস বলেন,
খারকিভে রাশিয়ার আকাশপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থার রাডারগুলো ধ্বংস করতে এবং হুমকির মুখে ফেলতে
এইচএআরএম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল ইউক্রেন।
এম৭৭৭ হোইৎজার: যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম৭৭৭ হোইৎজার কামান।
এই কামানগুলো ৪০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
হিমার্স ও অন্যান্য রকেট উৎক্ষেপণব্যবস্থা:
ইউক্রেনকে হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম বা হিমার্স দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হিমার্স
ব্যবহার করে ৫০ মাইল পর্যন্ত দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যায়।
এস–৩০০ ও অন্যান্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা:
যুদ্ধের শুরু থেকে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ঠেকাতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের
এস–৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করছে ইউক্রেন। যু্দ্ধ শুরুর আগে ইউক্রেনের
কাছে প্রায় ২৫০টি এস–৩০০ ছিল। প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ থেকেও এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
পেয়েছে ইউক্রেন। এস–৩০০–এর ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর পাল্লা সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার। এ ছাড়া
গত নভেম্বরে ইউক্রেনকে ন্যাশনাল অ্যাডভান্সড সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম বা নাসামস
আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। আর তুলনামূলক নিচ দিয়ে চলাচল করা উড়োজাহাজগুলো
ধ্বংস করতে স্টারস্ট্রেকসহ কয়েকটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। জার্মানি
দিয়েছে আঘাত হানতে আসা ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম আইআরআইএস–টি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।
ব্রাডলি সাঁজোয়া যান: যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি
ব্রাডলি সাঁজোয়া যান ব্যবহার করছে ইউক্রেন। সম্প্রতি আরও ৫৯টি এই সাঁজোয়া যান কিয়েভকে
দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। এই যানে সর্বোচ্চ সাতজন সেনাসদস্য থাকতে পারেন। গতি সর্বোচ্চ
৫৬ কিলোমিটার, যা যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যবহৃত সাঁজোয়া যানগুলোর চেয়ে কম। ইরাক যুদ্ধের সময়
এই সাঁজোয়া যানটি ব্যাপক হারে ব্যবহার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
অত্যাধুনিক ট্যাংক: যুদ্ধের শুরুতে সেকেলে টি–৭২
ট্যাংক নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন ইউক্রেনের সেনারা। এ ছাড়া পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্রসহ
কয়েকটি দেশ ইউক্রেনকে ২০০টির বেশি টি–৭২এস ট্যাংক দিয়েছিল। তবে রুশ বাহিনীকে মোকাবিলায়
বহু আগে থেকেই পশ্চিমা মিত্রদের কাছে অত্যাধুনিক ট্যাংক চেয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট
ভলোদিমির জেলেনস্কি। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, স্পেন, পোল্যান্ডসহ
কয়েকটি দেশ ইউক্রেনকে আধুনিক ট্যাংক দিতে রাজি হয়েছে। দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী
শিগগিরই আব্রামস, চ্যালেঞ্জার–২ ও লেপার্ড–২–এর মতো ট্যাংক পেতে যাচ্ছে ইউক্রেন। এরই
মধ্যে দুটি লেপার্ড–২ ট্যাংক কিয়েভের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পোল্যান্ড।
স্ট্রাইকার সাঁজোয়া যান: ইউক্রেনে ৯০টি স্ট্রাইকার
সাঁজোয়া যান যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাপরিবহন, আহত সেনাদের সরিয়ে নেওয়া—এমনকি লড়াইয়ের কাজেও
ব্যবহার করা হয়। এর সর্বোচ্চ গতি ৯০ কিলোমিটার। ব্রাডলি সাঁজোয়া যানের চেয়ে শক্তিশালী
স্ট্রাইকার এর আগে ইরাক ও আফগানিস্তানে ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা:
ক্ষেপণাস্ত্রের ধরনের ওপর এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিয়ে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের
লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যায়।
জিএলএসডিবি বোমা: রকেটচালিত দূরপাল্লার এই বোমাগুলো দিয়ে
দূর থেকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করা সম্ভব (১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তুতে
আঘাত হানতে পারে)।
কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র: শব্দের গতি প্রতি
সেকেন্ডে ৩৩২ মিটার। কিনজালের গতি শব্দের গতির ১০ গুণ। অর্থাৎ এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতি
সেকেন্ডে যাবে সোয়া তিন কিলোমিটারের বেশি পথ। এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়া বিশ্বের
যেকোনো স্থানে নির্ভুলভাবে পারমাণবিক হামলা চালাতে সক্ষম বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার অ্যারোস্পেস ফোর্সের প্রধান সেরগেই সুরোভিকিন
বলেন, এই ক্ষেপণাস্ত্রের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই লক্ষ্যবস্তুতে
আঘাত হানার জন্য এটি উৎক্ষেপণ করা সম্ভব।
কালিবার ও অন্যান্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র:
যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি ইউক্রেনজুড়ে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে কালিবার ক্রুজ
ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া। এই ক্ষেপণাস্ত্র নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত
হানতে সক্ষম। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি
দিতে পারে। কিয়েভ ও খারকিভে বিভিন্ন সরকারি ভবন ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালাতে কালিবার
ব্যবহার করেছিল রুশ বাহিনী। এই ভবনগুলো আবাসিক এলাকার কাছাকাছি ছিল। ফলে ওই হামলায়
অনেক বেসামরিক লোকজন হতাহত হন। এ ছাড়া ইউক্রেনে কেএইচ–১০১, কেএইচ–৫৫৫ ও তোচকা–ইউ ত্রুজ
ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে রুশ বাহিনী।
ইস্কান্দার–এম ক্ষেপণাস্ত্র: রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক
হারে ইস্কান্দার–এম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ৪০০ কিলোমিটার
দূরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এমনকি ক্ষেপণাস্ত্রটি পারমাণবিক অস্ত্রও বহন করতে
সক্ষম। গত ডিসেম্বরে এই ক্ষেপণাস্ত্র মিত্রদেশ বেলারুশকে দিয়েছিল মস্কো।
ইরানের ড্রোন: ইউক্রেনে ইরানের তৈরি ড্রোন দিয়ে হামলা
চালাচ্ছে রাশিয়া। এসব ড্রোনের মধ্যে রয়েছে শহীদ–১৩১ ড্রোন, শহীদ–১৩৬ কামিকাজে ড্রোন
(আত্মঘাতী) ও মোহাজের–৬ ড্রোন। এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনী, গোলন্দাজ
ও সাঁজোয়া ইউনিট, বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, জ্বালানি সংরক্ষণাগারসহ সামরিক ও জ্বালানি
অবকাঠামো এবং বেসামরিক স্থাপনা।
রকেট উৎক্ষেপণব্যবস্থা ও কামান: ইউক্রেনে সোভিয়েত
নকশায় তৈরি গ্রাদ, স্মের্চ ও উরাগান নামের রকেট উৎক্ষেপণব্যবস্থা ব্যবহার করে হামলা
চালাচ্ছে রাশিয়া। এ ছাড়া টিওএস–১এ নামের রকেট উৎক্ষেপণব্যবস্থা দিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে।
ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর ব্যবহৃত কামানগুলোর মধ্যে রয়েছে ২এ৩৬ জিয়াতস্তিন–বি হোইৎজার ও
ডি–৩০ হোইৎজার। এর মধ্যে সক্ষমতার দিক দিয়ে ২এ৩৬ জিয়াতস্তিন-বি হোইৎজারকে যুক্তরাষ্ট্রের
তৈরি এম৭৭৭ হোইৎজারের সঙ্গে তুলনা করা চলে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল–জাজিরা, বিজনেস ইনসাইডার, রয়টার্স,
ইউরোএশিয়ান টাইমস (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত)।
পারমানবিক অস্ত্র
পারমাণবিক অস্ত্র, হল একটি বিস্ফোরণীয় যন্ত্র
যা পরমাণু প্রতিক্রিয়াসমূহ থেকে তার ধ্বংসকারী শক্তি উৎপন্ন করে, বা ফিশন
(Fission) অথবা ফিশন এবং ফিউশন(Fusion) প্রতিক্রিয়াসমূহের একটি সমন্বয় (থার্মোনিউক্লিয়ার
অস্ত্র) তৈরি করে যা একটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম।
বর্তমানে বিশ্বের মাত্র নয়টি দেশের কাছে রয়েছে
মোট ১৬,৩০০ টি পারমাণবিক বোমা। তন্মধ্যে রাশিয়ার কাছেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি এ ধ্বংসাত্মক
অস্ত্র। স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইন্সটিটিউট সিপ্রি-র তথ্য মতে, রাশিয়ার
কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক বোমা রয়েছে। দেশটিতে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা ৭৫০০
এর বেশি৷ ১৯৪৯ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল দেশটি। এ অস্ত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে
রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা বানিয়ে এটা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহারও করেছে। দেশটির এখন ৭০০০ এর মতো পারমাণবিক বোমা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দখলেই রয়েছে প্রায় ১৫,০০০ এর কাছাকাছি ধ্বংসাত্মক এ বোমা।
অন্যদিকে বাকি বোমাগুলো অন্যান্য পারমাণবিক
অস্ত্রধর দেশের অধীনে রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে আছে (২১৫), ফ্রান্স (৩০০টি), চীন
(২৭০), ভারত (১২০), পাকিস্তান (১২০), ইসরায়েল (৮০) এবং উত্তর কোরিয়া (১০) এর মতো বোমা
রয়েছে। আর্মড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন-এসিএ’র মতে, ভারতের হাতে যেখানে ১৩৫টি পরমাণু অস্ত্র
রয়েছে, সেখানে পাকিস্তানের হাতে রয়েছে ১৪৫টি। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর
২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতের ১৩০-১৪০টি আর পাকিস্তানের ১৪০-১৫০টি পরমাণু অস্ত্র
আছে।
কার্যকরী মোট ১৬,৩০০ পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দখলে, বাকিগুলো অন্যান্য রাষ্ট্রের কাছে আছে। আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের হিসেব বলছে, এসব অস্ত্রের মধ্যে ১০,০০০ সংখ্যক অস্ত্র সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, বাকিগুলো অকার্যকরণ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা যায়।
পৃথিবী ধ্বংস হতে কতোগুলো পারমাণবিক বোমার প্রয়োজন
পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শহরাঞ্চল রয়েছে।
প্রতিটি শহরকে ধ্বংস্তুপে পরিণত করতে গড়ে ২-৩টি পারমাণবিক বোমাই যথেষ্ট। কিন্তু এরপরও
১,৫০০টি পারমাণবিক বোমার কোনো ব্যবহারই দরকার পড়বে না। এমতাবস্থায় যদি ১৬৩০০ বোমার
সব পারমাণবিক বোমা এক জায়গায় রেখে একইসাথে বিস্ফোরণ ঘটানো হলে পৃথিবীর অবস্থা সহজেই
অনুমানযোগ্য। একটি ছোটখাট বিস্ফোরণ বোমার শক্তি হচ্ছে ১ টন টিএনটি'র সমতুল্য। আর গড়ে
একটি পারমাণবিক বোমার শক্তি থাকে ২ লক্ষ টন টিএনটির সমান। ২ লক্ষকে ১৬৩০০ দিয়ে গুণ
করলে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৩২৬০,০০০,০০০ টন টিএনটি।
আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র
আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হলো এমন এক প্রকার
ক্ষেপণাস্ত্র যা একমহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে আক্রমণ করা যায়। যে ক্ষেপনাস্ত্রগুলো
৫৫০০ কিমি এর চেয়ে বেশি দূরের লক্ষকে বিনষ্ট করতে পারে তাদেরকে সাধারণত আন্তঃমহাদেশীয়
ক্ষেপনাস্ত্র বলে। ভারতের অগ্নি-V (ICBM) ৫২০০+কিমি দূরে আঘাত আনতে সক্ষম।
প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা, উপরে
বর্ণিত কিছু অত্যাধুনিক মারনাস্ত্রের নাম আমরা জানতে পারলাম। উল্লেখিত অস্ত্রগুলো দিয়ে
এক জায়গায় বসে পুরো পৃথিবীটাকে ধ্বংস করা সম্ভব। অথচ এই অস্ত্রগুলো মুসলিম বিদ্বেষী
মনোভাবাপন্ন সব রাষ্ট্রের নিকট সংরক্ষিত। আমরা মুসলমান এইসব অস্ত্রের কয়টি নাম জানি।
এগুলো কিভাবে আবিস্কার করতে হয়, কিভাবে ব্যবহার করতে হয় আমরা তা জানি না। তাই ইসলামকে
পৃথিবীর বুকে সমুন্নত রাখতে, মুসলিম জাতি পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে রাখতে চাইলে আমাদেরকে
অত্যাধুরিক সামরিক অস্ত্র আবিস্কার করা শিখতে হবে। তানাহলে আদিম যুগের ঢাল তলোয়ার আর
ঘোড়া দিয়ে ঐসব অস্ত্রের সাথে মোকাবেলা করে বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয়।
চতুর্থ অধ্যায়
সামরিক অভিযানে সৈন্যদল পাঠানোর আগে ইমামের উপদেশ
সাফ্ওয়ান ইবনে আসসাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে একটি ক্ষুদ্র সামরিক অভিযানে
পাঠান, তিনি বলেনঃ তোমরা আল্লাহর নামে আল্লাহর রাস্তায় রওয়ানা হয়ে যাও, যারা আল্লাহর
সাথে কুফরী করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, লাশ (নাক-কান কেটে) বিকৃত করো না, বিশ্বাসঘাতকতা
করো না, গনীমতের মাল আত্মসাৎ করো না এবং শিশুদের হত্যা করো না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৫৭,
আহমাদ ১৭৬২৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
যুদ্ধে যাওয়ার আগে সৈন্যদেরকে যুদ্ধের মাঠের পরিবেশ, শত্রু সংখ্যা ইত্যাদি
বিষয়ে পূর্বেই জানানো উচিৎ
কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যথারীতি অভ্যাস ছিল, তিনি কোনো নির্দিষ্ট
যুদ্ধাভিযানে যাওয়ার সংকল্প করলে তা মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখে অন্যদিকে ইঙ্গিত করতেন।
কিন্তু তাবূক যুদ্ধে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড গরমের মৌসুমে সফর, দুর্গম মরুপথ এবং শত্রু
সংখ্যার বিশালতার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের সম্মুখে
ব্যাপারটি স্পষ্ট করে ব্যক্ত করলেন, যাতে তারা এ দুর্গম অভিযানের জন্য পরিপূর্ণরূপে
প্রস্তুতি নিতে পারে (মনোবল না হারায়)। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
স্বীয় লক্ষ্যস্থল সাহাবীদেরকে জানিয়ে দিলেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৩৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৪৮, ২৭৫৭, ৪৪১৮, সহীহ আত্
তারগীব ২৯২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যুদ্ধের সময় মুজাহিদ বাহিনীকে এগিয়ে দেওয়া এবং দোয়া করে তাদের বিদায় জানানো
(ক) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে বিদায় দিয়ে বলেনঃ আমি তোমাকে আল্লাহর আমানতে সোপর্দ করলাম, যাঁর নিকট সোপর্দকৃত
জিনিস ধ্বংস হয় না। (সুনান ইবনে মাজাহ ২৮২৫, আহমাদ ৮৯৭৭,
সহীহাহ ১৬, ২৫৪৭, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ১৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
ইবনে ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কোন সামরিক বাহিনীকে বিদায় দিয়ে বলতেনঃ আমি তোমার দীন, তোমার বিশ্বস্ততা ও তোমার সর্বশেষ
আমল আল্লাহর নিকট সোপর্দ করলাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮২৬,
সুনান আততিরমিযী ৩৪৪২, সুনান আবূ দাউদ ২৬০০, আহমাদ ৪৫১০, ৪৭৫৬, ৪৯৩৭, ৬১৬৪, সহিহ ১৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সম্মুখ যুদ্ধে কাফির মুশরিকদেরকে প্রথমে তিনটি বিষয়ের প্রতি আহবান করতে
হয়
সুলায়মান ইবনু বুরায়দাহ্ তাঁর পিতা হতে বর্ণনা
করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোনো বৃহৎ অথবা
ক্ষুদ্র সৈন্যবাহিনীর ওপর কাউকে আমীর (নেতা) নিয়োজিত করতেন, তখন তাকে বিশেষভাবে উপদেশ
দিতেন, সে যেন আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সফরসঙ্গী মুসলিম সৈন্যদের
সাথে সদাচরণ করে। অতঃপর বলতেন, আল্লাহর নাম নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদে রওয়ানা হও এবং
যারা আল্লাহর প্রতি কুফরী (বিদ্রোহ) করে, তাদের সাথে লড়াই কর, জিহাদে যাও। সাবধান!
গনীমাতের মালে খিয়ানাত করো না। যখন তুমি কোনো মুশরিক শত্রুর সম্মুখীন হবে, তখন তাদেরকে
তিনটি বিষয়ের প্রতি আহবান করবে। যদি তারা কোনো একটি মেনে নেয়, তুমি তখন তার গ্রহণযোগ্যতার
স্বীকৃতি নিবে এবং তাদের ওপর আক্রমণ করা হতে বিরত থাকবে।
(ক) প্রথমে তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান করবে,
যদি তারা তা গ্রহণ করে, তখন তুমি তার স্বীকৃতি নিবে এবং তাদের ওপর আক্রমণ করা হতে বিরত
থাকবে। অতঃপর তাদের স্বদেশ (দারুল হার্ব) হতে মুহাজিরীনদের আবাসভূমিতে (দারুল ইসলামে)
চলে আসতে বলবে এবং এটাও জানিয়ে দেবে যে, যদি তারা হিজরত করে, তখন তারাও মুহাজিরীনদের
ন্যায় সুযোগ-সুবিধা পাবে, আর মুহাজিরীনদের ন্যায় দায়-দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত হবে।
কিন্তু তারা যদি স্বদেশ ত্যাগ করতে অস্বীকার করে, তখন তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, তাদের
সাথে সেরূপ আচরণই করা হবে, যেরূপ আচরণ অন্যান্য গ্রাম্য মুসলিমদের সাথে করা হবে। অর্থাৎ
আল্লাহর সেই বিধান তাদের ওপর কার্যকর করা হবে যা সকল মুসলিমের ওপর কার্যকর করা হয়ে
থাকে। কিন্তু গনীমাতের মাল ও ফাই (বিনা যুদ্ধলব্ধ মাল) হতে তারা সাধারণত কোনো অংশ পাবে
না। তবে এ ধন-সম্পদের অংশীদার তারা তখনই পাবে, যখন তারা মুসলিমদের সাথে সম্মিলিতভাবে
জিহাদে শরীক হবে।
(খ) আর যদি তারা তাতে (ইসলাম কবুল করতে) অস্বীকার
করে, তখন তাদের ওপর জিয্ইয়াহ্ (কর) ধার্য কর। যদি তারা তা মেনে নেয়, তখন তুমিও তা গ্রহণ
কর এবং তাদের ওপর আক্রমণ করা হতে বিরত থাক।
(গ) তবে তারা যদি তাতেও অস্বীকার করে, তখন
আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে তাদের সাথে যুদ্ধ কর। আর যদি তুমি কোনো দুর্গবাসীদের
অবরোধ কর এবং তারা তোমার সাথে আল্লাহ ও তার রসূলের দায়িত্বের উপর কোনো চুক্তিবদ্ধ হতে
চায়, তখন তুমি তাদের সাথে আল্লাহ ও তার রসূলের দায়িত্বে কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ো না;
বরং তুমি ও তোমার সঙ্গীদের নিজ দায়িত্বে চুক্তিবদ্ধ হতে পারো। কেননা কোনো কারণে যদি
উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করতে বাধ্য হও, তখন আল্লাহ ও তার রসূলের নামে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করার
চেয়ে তোমার ও তোমার সঙ্গীদের কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা অনেক সহজসাধ্য। আর যদি তুমি কোনো
দূর্গ অবরোধ কর এবং তারা তোমার নিকট আল্লাহর বিধানানুসারে ফায়সালার শর্তে অবরোধ তুলে
নিতে আবেদন জানায়, তখন আল্লাহর বিধানের শর্তে তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ো না; বরং তোমার
সঙ্গীদের দায়িত্বে অব্যাহতি দিবে। কেননা তুমি তো জানো না, আল্লাহর বিধান (ফায়সালা)
সঠিকভাবে তাদের ব্যাপারে প্রয়োগ করতে পারবে কিনা। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯২৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৩১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৫৮, আহমাদ ২৩০৩০, সুনান আততিরমিযী
১৩০৮, ১৬১৭, সুনান আবূ দাউদ ২৬১২, ২৬১৩, আহমাদ ২২৪৬৯, ২২৫২১, দারেমী ২৪৩৯, ২৪৪২, ইরওয়া
১২৪৭, ৭/২৯২, রাওদুন নাদীর ১৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩৭২, ইসলামিক সেন্টার ৪৩৭২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
যুদ্ধ করার উপযুক্ত সময়
(ক) আব্দুল্লাহ
ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কোনো এক অভিযানে শত্রুর মুকাবিলায় অপেক্ষা করতে লাগলেন। অতঃপর সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে
গেলে, তখন তিনি লোকেদের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে বললেন, হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর মুকাবিলার
আকাঙ্ক্ষা করো না; বরং আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা লাভের প্রার্থনা কর। তবে শত্রুর মুকাবিলা
সংঘটিত হয়ে গেলে ধৈর্যধারণ করতে থাক। আর জেনে রাখ! তরবারির ছায়াতলেই জান্নাত অবস্থিত।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! তুমি কিতাব
(আল কুরআন) অবতরণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী এবং শত্রুবাহিনী দমনকারী! তুমি তাদের দমন
কর এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য (জয়যুক্ত) কর। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৩০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৬৫, ২৯৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৪৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৪২, সুনানে আবূ দাঊদ ২৬৩১, সহীহ আল জামি‘ ২৭৫০,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩৯২, ইসলামিক সেন্টার ৪৩৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদেরকে নিয়ে কোনো গোত্রের
বিরুদ্ধে জিহাদে যেতেন, তখন ভোর অবধি আক্রমণ করতেন না। আর ভোর হলে আযানের আওয়াজের অপেক্ষায়
থাকতেন, আর যদি আযান শুনতে পেতেন, তখন আক্রমণ করা হতে বিরত থাকতেন। আর আযান না শুনলে
আক্রমণ করতেন। রাবী বলেন, আমরা খায়বারের যুদ্ধের জন্য বের হলাম এবং রাতের বেলায় তথায়
গিয়ে পৌঁছলাম। যখন ভোর হলো এবং আযান শোনা গেল না তখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সওয়ার হলেন এবং আমি ও ত্বলহা এর পিছনে সওয়ার হলাম। আমার পায়ের সাথে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পা মুবারক স্পর্শ করছিল।
(আনাস বলেন) এমন সময় খায়বারের অধিবাসীরা (ক্ষেত-খামারে
কাজের উদ্দেশে) কাসেত্ম, কোদাল ও ঝুড়ি ইত্যাদি নিয়ে এগিয়ে এলো এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠল, এই যে মুহাম্মাদ! আল্লাহর কসম!
মুহাম্মাদ ও তাঁর পঞ্চবাহিনী (সম্পূর্ণ দল) নিয়ে এসে পড়েছে। অতঃপর দৌড়িয়ে দুর্গের ভিতরে
আশ্রয় গ্রহণ করল। তিনি (আনাস) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
তাদের এরূপ অবস্থা প্রত্যক্ষ করলেন, তখন বলে উঠলেন- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,
খায়বারের ধ্বংস নিশ্চিত। এভাবে আমরা যখন কোনো জাতির আঙিনায় অবতীর্ণ হই, তখন যেই জাতিকে
পূর্বাহ্নে সতর্ক করা হয়েছে তাদের সকাল দুর্ভাগ্যজনকভাবে খারাপ হয়ে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৩১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৬৫, আহমাদ ১২৬১৮, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৩৩৬২, ইসলামীক সেন্টার ৩৩৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ)
নু’মান ইবনু মুকররিন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি অসংখ্য জিহাদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে শরীক ছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যদি
দিনের প্রথমভাগে আক্রমণ না করতেন, তবে (দুপুর গড়িয়ে) মৃদু বাতাস প্রবাহিত হওয়া ও সালাতের
ওয়াক্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে যুদ্ধ শুরু করতেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৩২, ৩৯৩৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৬০, সুনান আততিরমিযী
১৬১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৩৪ শেষাংশ)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahi।
(ঘ)
সালামা ইবনুল আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর যুগে আবূ বকর (রাঃ) এর সাথে হাওয়াযিন গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। আমরা ফাযারা গোত্রের
পানির উৎসে পৌঁছে সেখানে রাত কাটাই। ভোর হলে আমরা তাদেরকে অতর্কিতে আক্রমণ করলাম। অতঃপর
আমরা পানির মালিকদের নিকট এসে তাদেরকে আক্রমণ করে তাদের নয় অথবা সাত ঘর লোককে হত্যা
করি। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৪০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৫৫, সুনান আবূ দাউদ
২৬৯৭, আহমাদ ১৬০৬৭, ১৬০৭০, ১৬১০২, সহীহ আবু দাউদ ২৩৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪২১, ইসলামিক
সেন্টার ৪৪২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যুদ্ধ চলাকালীন শত্রু পক্ষের সাথে ছল চাতুরী ও মিথ্যের আশ্রয় নেয়া
(ক) জাবির
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যুদ্ধ হলো ছল-কৌশল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৩৯,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০৩০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৩১, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৭৩৯, সুনান আবূ দাঊদ ২৬৩৬, সুনান আততিরমিযী ১৬৭৫, আহমাদ ১৪৩০৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৮০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮১৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যুদ্ধ হলো কৌশল। (সুনানে ইবনে মাজাহ ২৮৩৩, ২৮৩৪, রাওদুন নাদীর ৩৭০, সহীহ আবু
দাউদ ২৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
যুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধাস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ, খাবার তৈরি ও আহত সৈন্যদের সেবা
যত্ন করার জন্যে মহিলাদের সাথে নিয়ে যাওয়া
(ক) আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোনো
যুদ্ধাভিযানে বের হতেন তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) (আনাস (রাঃ)-এর মা) এবং অন্যান্য আনসারী
মহিলাগণ জিহাদে শামিল থাকতেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এ সমস্ত মহিলাগণ সৈন্যদেরকে পানি
পান করাতেন এবং আহতদের সেবা-শুশ্রূষা করতেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৪০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৫৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮১০,
সুনান আবূ দাঊদ ২৫৩১, সুনান আততিরমিযী ১৫৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ)
উম্মু ’আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাতটি জিহাদে অংশগ্রহণ করেছি। মুজাহিদগণ যখন ময়দানে যুদ্ধরত থাকতেন,
তখন আমি তাঁবুতে তাদের যুদ্ধাস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ করতাম, খাবার তৈরি করতাম এবং আহত সৈন্যদের
পরিচর্যা ও রোগীর সেবা-শুশ্রূষা করতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৯৪১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩২৪, ৯৮০, ১৬৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৫৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮১২,
সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৫৬, দারিমী ২৪২২, আহমাদ ২০৭৯২, ২০২৬৫, ২৬৭৫৫, দারেমী ২৪২২, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৪৫৩৩, ইসলামিক সেন্টার ৪৫৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধে সাহাবীগণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। আমি দেখলাম, ‘আয়িশাহ বিন্তে আবূ বকর ও উম্মু
সুলাইম (রাঃ) তাঁদের আঁচল এতটুকু উঠিয়ে নিয়েছেন যে, আমি তাঁদের উভয় পায়ের গহনা দেখছিলাম।
তাঁরা উভয়েই মশক পিঠে বয়ে সাহাবীগণের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। আবার ফিরে গিয়ে মশ্ক
ভর্তি করে নিয়ে এসে সাহাবীগণের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৮০, ২৯০২, ৩৮১১, ৪০৬৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৬৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) সা‘লাবাহ
ইবনু আবূ মালিক হতে বর্ণিত যে, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) মদিনার কিছু সংখ্যক মহিলার
মধ্যে কয়েকখানা (রেশমী) চাদর বণ্টন করেন। অতঃপর একটি ভাল চাদর রয়ে গেল। তাঁর নিকট উপস্থিত
একজন তাঁকে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এ চাদরটি আপনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর নাতনী উম্মু কুলসুম বিন্তে ‘আলী (রাঃ) যিনি আপনার নিকট আছেন, তাকে দিয়ে
দিন। ‘উমার (রাঃ) বলেন, উম্মু সালীত (রাঃ) এই চাদরটির অধিক হক্দার। উম্মু সালীত (রাঃ)
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাতে বায়‘আতকারিণী আনসার মহিলাদের
একজন। ‘উমার (রাঃ) বলেন, কেননা, উম্মু সালীত (রাঃ) উহুদের যুদ্ধে আমাদের নিকট মশক বহন
করে নিয়ে আসতেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) (রহ.) বলেন, تَزْفِرُ অর্থ তিনি সেলাই করতেন।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৮১, ৪০৭১, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৬৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ)
রুবাইয়ি‘ বিনতু মআব্বিয (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমরা (যুদ্ধের ময়দানে) নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে থেকে লোকেদের পানি পান করাতাম, আহতদের পরিচর্যা
করতাম এবং নিহতদের মদিনা্য় পাঠাতাম।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২৮৮২, ২৮৮৩, ৫৬৭৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৮১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) সাহল
ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুদ্ধের ময়দানে যখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর মাথার শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে গেল ও তাঁর মুখমন্ডল রক্তে ভিজে গেল এবং তাঁর
সামনের দাঁত ভেঙ্গে গেল, তখন ‘আলী (রাঃ) ঢালে ভরে ভরে পানি আনতেন এবং ফাতিমাহ (রাঃ)
ক্ষতস্থান ধুয়ে দিচ্ছিলেন। যখন ফাতিমাহ (রাঃ) দেখলেন যে, পানির চেয়ে রক্ত পড়া আরো বৃদ্ধি
পাচ্ছে, তখন একখানা চাটাই নিয়ে তা পোড়ালেন এবং তার ছাই ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলেন, তাতে
রক্ত বন্ধ হয়ে গেল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯০৩,
২৪৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যোদ্ধা হিসেবে কোনো নারীর যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি নেই
উম্মুল
মুমিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট জিহাদের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, ‘তোমাদের জিহাদ হলো হাজ্জ।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৭৫, ২৮৭৬, ১৫২০, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৬৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কয়েকজন স্ত্রীর মধ্যে একজনকে নিয়ে জিহাদে যাওয়া
‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাইরে কোথাও যাবার ইচ্ছা করলে তিনি তাঁর স্ত্রীদের
মধ্যে করআর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন এবং এতে যার নাম আসত তাঁকেই নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সঙ্গে নিয়ে যেতেন। এক যুদ্ধে এভাবে তিনি আমাদের মধ্যে করআর মাধ্যমে
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। এতে আমার নাম আসল এবং আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
সঙ্গে বের হলাম। এ ছিল পর্দার আয়াত নাযিল হবার পরবর্তী ঘটনা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৭৯, ২৫৯৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৬৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মহান আল্লাহর পথে যুদ্ধে প্রহরা দান
‘আয়িশাহ
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (এক রাতে) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
জেগে কাটান। অতঃপর তিনি যখন মদিনা্য় এলেন এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলেন যে, আমার সাহাবীদের
মধ্যে কোন যোগ্য ব্যক্তি যদি রাতে আমার পাহারায় থাকত। এমন সময় আমরা অস্ত্রের শব্দ শুনতে
পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কে? ব্যক্তিটি বলল, আমি সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস, আপনার
পাহারার জন্য এসেছি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুমিয়ে গেলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৮৫, ৭২৩১, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬১২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪১০, আহমাদ ২৫১৪৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৭৩, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৬৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যুদ্ধে খিদমাতের ফজিলত
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক
সফরে আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমাদের মধ্যে সেই
ব্যক্তির ছায়াই ছিল সর্বাধিক যে তার চাদর দ্বারা ছায়া গ্রহণ করছিল। তাই যারা সিয়াম
পালন করছিল তারা কোন কাজই করতে পারছিল না। যারা সিয়াম রত ছিল না, তারা উটের দেখাশুনা
করছিল, খিদমতের দায়িত্ব পালন করছিল এবং পরিশ্রমের কাজ করছিল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘যারা সওম পালন করে নি তারাই আজ সাওয়াব নিয়ে গেল।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৯০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২৫১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৮৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যুদ্ধে যাদেরকে হত্যা করা নিষেধ
(ক)
আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জিহাদে মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যা করা হতে বিরত থাকতে বলেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৪২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩০১৫, ৩০১৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৩৯,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৪৪, সুনান আততিরমিযী ১৫৬৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৪১, দারিমী ২৫০৫,
২৪৬২, আহমাদ ৪৭২৫, ৪৭৩২, ৪৭৩৯, ৫৪৩৫, ৫৬২৬, ৫৭১৯, ৫৯২৩, ৬০০১, ৬০১৯, মুয়াত্তা মালেক
৯৮১, বায়হাকী ফিস সুনান ৯/৭৭, ইবনু হিব্বান ১৩৫, ইরওয়া ১২১০, সহীহ আবু দাউদ ২৩৯৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
আব্দুল্লাহ ইবনু ’আওন হতে বর্ণিত। নাফি’ [ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর মুক্ত দাস] তাঁকে লিখে
জানান, ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার(রাঃ) তাঁকে বলেছেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বানী মুসত্বালিক-এর ওপর অতর্কিতভাবে আক্রমণ করেন, যখন তারা মুরয়সী’ নামক স্থানে নিজেদের
গবাদিপশু নিয়ে বিভোর ছিল। ফলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের মধ্যে যুদ্ধ
করার সক্ষম লোকেদেরকে হত্যা করেন এবং নারী ও শিশু-কিশোরদেরকে বন্দী করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৪৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৫৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৩০, আহমাদ ৪৮৫৭, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৪৩৭০, ইসলামিক সেন্টার ৪৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) রবাহ
ইবনুর্ রবী’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কোনো এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বহু সংখ্যক
লোকেদেরকে এক জায়গায় জড়ো হতে দেখে জনৈক ব্যক্তিকে লোকেদের ভিড় করার কারণ জানতে পাঠালে
লোকটি এসে বলল, একজন মহিলার লাশকে কেন্দ্র করে লোকেরা জড়ো হয়েছে। এ কথা শুনে তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ মহিলাটি তো এমন নয় যে, সে আমাদের বিরুদ্ধে
লড়বে। বর্ণনাকারী বলেন, এ সেনাদলের অগ্রাধিনায়ক ছিলেন খালিদ ইবনু ওয়ালীদ। অতঃপর তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে এই বলে পাঠালেন- খালিদকে বলে দাও!
কোনো মহিলা এবং শ্রমিক বা চাকরদেরকে হত্যা করো না। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৫৫, সুনান আবূ দাঊদ ২৬৬৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৪২, আহমাদ ১৭১৮৫,
সহীহাহ ৭০১, সহীহ আবু দাউদ ২৩৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ
সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর ফায়সালা
মেনে নেয়ার শর্তে (ইয়াহূদী) বানূ কুরয়যাহ্ গোত্র দুর্গ থেকে বের হয়ে আসলো, তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সা’দ ইবনু মু’আয -কে আনার জন্য) লোক পাঠালেন। এমতাবস্থায়
সা’দ একটি গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে আসলেন। যখন তিনি কাছে আসলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত লোকেদের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের নেতার দিকে গমন কর। তখন
সা’দ এসে বসলেন।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(সা’দ (রাঃ)-এর প্রতি দৃষ্টিপাত করে) বললেন, এরা তোমার ফায়সালা মেনে নেয়ার শর্তে দুর্গ
খুলে বের হয়ে এসেছে। সুতরাং তুমি তাদের সম্পর্কে ফায়সালা দাও। তখন সা’দ বললেন, এদের
ব্যাপারে আমার ফায়সালা হচ্ছে, যুদ্ধ করতে সক্ষমদেরকে হত্যা করা হোক এবং নারী ও শিশুদেরকে
বন্দী করা হোক। অতঃপর এ রায় শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলে উঠলেন,
তাদের ব্যাপারে তুমি বাদশাহর (আল্লাহর) ফায়সালা মুতাবিক বিচার করেছ। অপর এক বর্ণনাতে
আছে, তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও হুকুম অনুসারেই রায় দিয়েছ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৬৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০৪৩, ৩৮০৪,
৪১২১, ৬২৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৬৯, সুনান আবূ দাঊদ ৫২১৫, আহমাদ ১১১৬৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৮১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতর্কিত আক্রমণকালে মহিলা ও শিশুগণ আক্রমণের শিকার হয়ে আহত বা নিহত হলে
দোষের কিছু নেই
সা’ব ইবনু জাসসামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, যদি কোনো মুশরিক
পরিবারের ওপর রাতে অতর্কিত আক্রমণকালে মহিলা ও শিশুগণ সেই আক্রমণের শিকার হয়ে আহত বা
নিহত হয়- তাদের ব্যাপারে আপনি কি বলেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
তারাও তাদের অন্তর্ভুক্ত। অপর এক বর্ণনায় আছে, তারাও তাদের পিতা-মাতাদের অন্তর্ভুক্ত।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৪৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৩০১২, ৩০১৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৪৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৪৫, সুনান আততিরমিযী ১৫৭০, সুনান আবূ দাউদ ২৬৭২,
৩০৮৩, ৩০৮৪, আহমাদ ২৭৯০২, ১৬৪২২, সহীহ আবু
দাউদ ২৩৯৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
বন্দীকে ইসলামের পথে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল অশ্বারোহী
সৈন্য নজদের দিকে পাঠিয়েছিলেন। তারা সুমামাহ ইবনু উসাল নামক বনু হানীফার এক লোককে ধরে
আনলেন এবং মসজিদে নাববীর একটি খুঁটির সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে গিয়ে বললেন, ওহে সুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে?
সে উত্তর দিল, হে মুহাম্মাদ! আমার কাছে তো ভালই মনে হচ্ছে। যদি আমাকে হত্যা করেন তাহলে
আপনি একজন খুনীকে হত্যা করবেন। আর যদি আপনি অনুগ্রহ করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে
অনুগ্রহ করবেন। আর যদি আপনি অর্থ সম্পদ পেতে চান তাহলে যতটা ইচ্ছা দাবী করুন। নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেই অবস্থার উপর রেখে দিলেন। এভাবে পরের দিন আসল। নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার তাকে বললেন, ওহে সুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে বলল,
আমার কাছে সেটিই মনে হচ্ছে যা আমি আপনাকে বলেছিলাম যে, যদি আপনি অনুগ্রহ করেন তাহলে
একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করবেন। তিনি তাকে সেই অবস্থায় রেখে দিলেন। এভাবে
এর পরের দিনও আসল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে সুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে
বলল, আমার কাছে তা-ই মনে হচ্ছে যা আমি পূর্বেই বলেছি। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তোমরা সুমামাহর বন্ধন ছেড়ে দাও। এবার সুমামাহ মসজিদে নাববীতে প্রবেশ করে বলল,
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। (তিনি বললেন) হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর কসম! ইতোপূর্বে আমার
কাছে যমীনের উপর আপনার চেহারার চেয়ে অধিক অপছন্দনীয় আর কোন চেহারা ছিল না। কিন্তু এখন
আপনার চেহারাই আমার কাছে সকল চেহারা অপেক্ষা অধিক প্রিয়। আল্লাহর কসম! আমার কাছে আপনার
দ্বীন অপেক্ষা অধিক ঘৃণিত অন্য কোন দ্বীন ছিল না। এখন আপনার দ্বীনই আমার কাছে সকল দ্বীনের
চেয়ে প্রিয়তম। আল্লাহর কসম! আমার মনে আপনার শহরের চেয়ে অধিক খারাপ শহর অন্য কোনটি ছিল
না। কিন্তু এখন আপনার শহরটিই আমার কাছে সকল শহর চেয়ে অধিক প্রিয়। আপনার অশ্বারোহী সৈনিকগণ
আমাকে ধরে এনেছে, সে সময় আমি ‘উমরাহর উদ্দেশে বেরিয়ে ছিলাম। এখন আপনি আমাকে কী হুকুম
করেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সু-সংবাদ প্রদান করলেন
এবং ‘উমরাহ্ আদায়ের নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি যখন মক্কা্য় আসলেন তখন এক ব্যক্তি তাকে
বলল, বেদ্বীন হয়ে গেছ? তিনি উত্তর করলেন, না, বরং আমি মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আর আল্লাহর কসম! নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি ব্যতীত তোমাদের কাছে ইয়ামামাহ থেকে গমের একটি দানাও আসবে
না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩৭২, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৯৬৪, ৪৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৬৪,
সুনান আবূ দাঊদ ২৬৭৯, ইরওয়া ১২১৬, (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০৩০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেয়া
(ক) মারওয়ান
ইবনু হাকাম ও মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধি দল
যখন ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলেন,
তখন তিনি উঠে দাঁড়ালেন। প্রতিনিধি দল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে তাদের ধন-সম্পদ ও বন্দী ফেরত চাইলেন। তখন তিনি বললেন, আমার নিকট সত্য কথাই
অধিকতর পছন্দনীয়। কাজেই তোমরা দু’টোর মধ্যে একটা বেছে নাও- হয় বন্দী, নয় ধন-সম্পদ।
আমি তো এদের আগমনের অপেক্ষায়ই প্রতীক্ষমান ছিলাম। (বর্ণনাকারী বলেন) তায়িফ হতে প্রত্যাবর্তন
করে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ রাতেরও বেশী তাদের জন্য অপেক্ষা
করেছিলেন। যখন (প্রতিনিধি দল) বুঝতে পারলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দু’টোর মধ্যে একটি ফেরত দেবেন, তখন তারা বললেন, আমরা আমাদের বন্দীদেরকে
গ্রহণ করছি। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমগণের মাঝে দাঁড়িয়ে
আল্লাহ তা‘আলার যথাযথ প্রশংসা করে বললেন, তোমাদের এই ভাইয়েরা তাওবা করে আমার কাছে এসেছে
এবং আমার অভিপ্রায় এই যে, আমি তাদের বন্দীদের ফেরত দেই। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি
নিজ খুশিতে স্বেচ্ছা-প্রণোদিত হয়ে ফেরত দিতে চায়, সে দিক। আর তোমাদের মধ্যে যে এর বিনিময়
গ্রহণ পছন্দ করে, আমরা সেই গণীমতের মাল হতে তা দিব যা আল্লাহ প্রথম আমাদের দান করবেন।
সে তা করুক অর্থাৎ বিনিময় নিয়ে ফেরত দিক। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা স্বেচ্ছায়
তাদেরকে ফেরত দিলাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের
মধ্যে কে অনুমতি দিল আর কে অনুমতি দিল না, তা আমরা বুঝতে পারছি না। কাজেই তোমরা ফিরে
যাও এবং তোমাদের নেতাগণ তোমাদের মতামত আমাদের নিকট পেশ করুক। সাহাবীগণ ফিরে গেলেন।
তাঁদের নেতা তাঁদের সাথে আলাপ-আলোচনা করলেন। তারপর তাঁরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে জানালেন যে, সাহাবীগণ সন্তুষ্টচিত্তে অনুমতি দিয়েছেন।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩০৭, ২৫৩৯, ২৫৮৪, ২৬০৭,
৩১৩১, ৪৩১৮, ৭১৭৬, ২৩০৮, ২৫৪০, ২৫৮৩, ২৬০৮, ৩১৩২, ৪৩১৯, ৭১৭৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৯৬৮, আহমাদ ১৮৯১৪, ইরওয়া ১২১১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২১৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২১৫৯))।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আয়িশাহ্
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কার কাফিরগণ যখন বদরে তাদের বন্দীদের মুক্তির জন্য
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট মুক্তিপণ পাঠাল, তখন (রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা) যায়নাব (রাঃ) তার স্বামী আবুল ’আস-এর মুক্তির জন্যও কিছু
মাল পাঠালেন। তন্মধ্যে একটি হার ছিল যার মালিক ছিলেন খাদীজাহ্ (রাঃ)। আবুল ’আস-এর সাথে
যায়নাব-এর বিয়ের সময় বিবি খাদীজাহ্ উপহার স্বরূপ হারটি যায়নাব (রাঃ)-কে দিয়েছিলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারটি দেখে (বিবি খাদীজার স্মৃতিচারণে)
অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন এবং সাহাবীগণকে বললেন, যদি তোমরা সমীচীন মনে কর তাহলে
যায়নাবের কয়েদি (আবুল ’আস)-কে ছেড়ে দাও এবং যায়নাব যে সমস্ত ধন-সম্পদ পাঠিয়েছে তাও
তাকে ফেরত দিয়ে দাও। এতে সাহাবীগণ সম্মতি প্রকাশ করলে, আবুল ’আস মুক্ত হয়ে গেল।
অবশ্য তাকে মুক্তি দেয়ার সময় নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট হতে এ অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, যায়নাবকে মদীনায় তাঁর নিকট
আসার পথে যেন বাধা সৃষ্টি না করে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যায়দ ইবনু হারিসাহ্ ও একজন আনসারীকে মক্কায় পাঠালেন এবং তাদেরকে বলে দিলেন, তোমরা মক্কার
অনতিদূরে (প্রায় আট কিলোমিটার দূরে তান্’ঈম-এর নিকটবর্তী) ’’ইয়া’জাজ’’ নামক স্থানে
অবস্থান করবে। যায়নাব সে পর্যন্ত এসে পৌঁছলে তোমরা উভয়ে তার সঙ্গী হবে এবং তাকে মদীনায়
নিয়ে আসবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৭০, সুনান আবূ
দাঊদ ২৬৯২, আহমাদ ২৬৩৬২, ইরওয়া ১২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ)
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল
(আঃ) এসে আমাকে বললেন, আপনার সাহাবীগণকে (বদরের বন্দীদের ব্যাপারে) এ অধিকার দিয়ে দিন,
তারা ইচ্ছা করলে বন্দীদেরকে হত্যা করতে পারবে, আর যদি মুক্তিপণ স্বরূপ ধন-সম্পদের বিনিময়ে
তাদেরকে ছেড়ে দিতে চায়, তাও পারবে। কিন্তু মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিলে, আগামীতে কাফিরদের
সমপরিমাণ (৭০ জন) নিজেদের মধ্য হতে শহীদ হবে। অতঃপর সাহাবীগণ বললেন, মুক্তিপণ আমরা
গ্রহণ করলাম এবং আমাদের মধ্য হতে (আগামীতে সমপরিমাণ) শহীদ হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৭৩, সুনান আততিরমিযী ১৫৬৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে যাদের গুপ্তাঙ্গের লোম ওঠেনি তাদেরকে হত্যা না করা
আত্বিয়্যাতুল কুরাযী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমিও বানী কুরায়যার বন্দীদের মধ্যে ছিলাম। আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে উপস্থিত করা হলো। সাহাবীগণ বন্দীদের সতর খুলে দেখেন। যার গুপ্তাঙ্গের
লোম উঠেছে তাকে হত্যা করা হয়, আর যার লোম প্রকাশ পায়নি তাকে হত্যা করা হয়নি। ফলে তাঁরা
আমার সতর খুলে দেখলেন যে, আমার গুপ্তাঙ্গের লোম উঠেনি। তাই আমাকে হত্যা না করে বন্দীদের
মধ্যে রেখে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৭৪, সুনান
আবূ দাঊদ ৪৪০৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪১, সুনান আততিরমিযী ১৫৮৪, আহমাদ ১৮৭৭৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
যুদ্ধবন্দীদের হত্যা না করা
ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ ইবনু ওয়ালীদ -কে বানী জাযীমাহ্-এর বিরুদ্ধে
অভিযানে পাঠালেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানালেন। কিন্তু তারা “আমরা
ইসলাম গ্রহণ করেছি’’ সঠিকভাবে বাক্যটি উচ্চারণ না করে ’’আমরা স্বীয় ধর্ম ত্যাগ করেছি’’
এ বাক্যটি উচ্চারণ করতে থাকে। এমতাবস্থায় খালিদ তাদেরকে হত্যা ও বন্দী করতে লাগলেন
এবং বন্দীদেরকে আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। একদিন তিনি আমাদের প্রত্যেককে
স্বীয় বন্দীদেরকে হত্যার নির্দেশ দিলেন। আমি (বর্ণনাকারী) বললাম, আল্লাহর কসম! আমি
আমার বন্দীকে হত্যা করব না এবং আমার সাথীরাও কেউ তাদের বন্দীকে হত্যা করবে না। অতঃপর
ঘটনাটি আদ্যোপান্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনা করলাম। এতদশ্রবণে
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর দু’ হাত উপরে উঠিয়ে বললেন, হে আল্লাহ!
খালিদ-এর কৃত অপরাধ হতে আমি তোমার নিকট আমার দায়মুক্তি ঘোষণা করছি। এভাবে দু’বার বললেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৭৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৪৩৩৯, ৭১৮৯, সুনান আননাসায়ী ৫৪০৫, আহমাদ ৬৩৮২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৯৬, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৪০০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আশ্রিত ব্যক্তিকে হত্যা করা নিষেধ
উম্মু হানী বিনতু আবূ ত্বালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একদিন আমি মক্কা বিজয়ের বৎসর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নিকট এসে দেখলাম তিনি গোসল করছেন এবং তার কন্যা ফাত্বিমাহ্ একটি চাদর দিয়ে তাঁকে আড়াল
করে রাখছেন। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস
করলেন, কে এই মহিলা? উত্তরে বললাম, আমি আবূ ত্বালিব-এর কন্যা উম্মু হানী। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে উম্মু হানী! তোমার আগমন কল্যাণ হোক। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গোসল শেষ করে এক বস্ত্রে সর্বাঙ্গ আচ্ছাদিত করে সালাত আদায় করতে
দাঁড়ালেন এবং আট রাক্’আত সালাত আদায় করলেন।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
সালাত আদায় শেষ করলে, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার ভাই ’আলী এমন একজন
লোককে হত্যা করতে চায় যাকে আমি আশ্রয় দিয়েছি। সে হলো, হুবায়রাহ্-এর পুত্র অমুক। তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মু হানী! তুমি যাকে নিরাপত্তা
দান করেছ, আমিও তাকে নিরাপত্তা দান করলাম। উম্মু হানী (রাঃ) বলেন, এটা ছিল পূর্বাহ্নের
(চাশ্তের) সালাত। (বুখারী ও মুসলিম)
আর তিরমিযী-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, উম্মু
হানী (রাঃ) বলেন, আমি আমার স্বামীর পক্ষের দু’জন নিকটাত্মীয়কে আশ্রয় দিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমরাও তাকে
আশ্রয় দান করলাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৭৭, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৭১, ২৮০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৩৬, সুনান আততিরমিযী
২৭৩৪, আহমাদ ২৭৩৮৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৪৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
আশ্রিত ব্যক্তিকে হত্যা করার শাস্তি
আমর ইবনুল হামিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তিকে কেউ যদি নিরাপত্তা দান করার পর তাকে হত্যা
করে, কিয়ামতের দিন উক্ত আশ্রয় দানকারীকে বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা প্রদান করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৭৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৭১৭, ইবনু
মাজাহ ২৬৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বন্দী বিনিময় করা
ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, বানী সাক্বীফ ছিল বানী ’উকায়ল-এর মিত্র গোত্র। একদিন বানী সাক্বীফ-এর লোকেরা
অন্যায়ভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’জন সাহাবীকে বন্দী করল।
বন্দীর প্রতিশোধ স্বরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ বানী
’উকায়ল-এর এক ব্যক্তিকে সুযোগ পেয়ে বন্দী করে মদীনার অদূরে ’হাররাহ্’ নামক মরু প্রান্তরে
ফেলে রাখলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিলেন,
এমতাবস্থায় সে চিৎকার দিয়ে বলল, হে মুহাম্মাদ! হে মুহাম্মাদ! কি অপরাধে আমাকে বন্দী
করা হয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার মিত্র গোত্র সাক্বীফ
গোত্রের অপরাধে।
এটা বলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
সম্মুখে অগ্রসর হলেন। লোকটি আবারও হে মুহাম্মাদ! হে মুহাম্মাদ! বলে তাকে আহবান করতে
লাগল। এতে তাঁর মনে দয়ার উদ্রেক হলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি হয়েছে? লোকটি বলল, আমি মুসলিম হয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ স্বীকারোক্তি তুমি যদি তোমার স্বাধীনতা ও কর্তৃত্ব থাকাকালীন
সময়ে বলতে, তবে তুমি পূর্ণরূপে সাফল্য লাভ করতে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ঐ দু’জন মুসলিম বন্দীর বিনিময়ে ছেড়ে দিলেন, যাদেরকে
বানী সাক্বীফ বন্দী করে রেখেছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৯৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪১৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৪১, আহমাদ ১৯৮৯৪,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪০৯৯, ইসলামিক সেন্টার ৪০৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বন্দীদের মুক্তিপণস্বরূপ দেয়া
সালামা ইবনুল আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আবূ বকর (রাঃ) এর সাথে
হাওয়াযিন গোত্রের বিরুদ্ধে জিহাদ করি। তিনি ফাযারা গোত্রের একটি কন্যা গনীমতের অতিরিক্ত
আমাকে দেন। সে ছিল আরবের সেরা সুন্দরী। তার পরনে ছিল চামড়ার পোশাক। আমি তার কাপড় উন্মোচন
করিনি। এমতাবস্থায় আমি মদীনায় পৌঁছি। বাজারে আমার সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাত হলে তিনি বলেনঃ তোমার পিতা ছিল উত্তম লোক (তোমার পিতা, আল্লাহর
শপথ!), ঐ মেয়েটি আমাকে দান করো। আমি মেয়েটি তাঁকে দান করলাম। অতঃপর তিনি সেই মেয়েটিকে
মক্কায় বন্দী মুসলিমদের মুক্তিপণস্বরূপ তথায় পাঠিয়ে দেন। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২৮৪৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৫৫, সুনান
আবূ দাউদ ২৬৯৭, আহমাদ ১৬০৬২, ১৬০৭০, ১৬১০২, সহীহ আবু দাউদ ২৪১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৪৪২১, ইসলামিক সেন্টার ৪৪২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
শত্রু গোয়েন্দা বা গুপ্তচরকে হত্যা করার হুকুম
(ক) সালামাহ্
ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(নাজদ এলাকায়) এক সফরে ছিলেন। তখন মুশরিকদের একজন গুপ্তচর (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর কাছে) এসে সাহাবীগণের সঙ্গে বসে কথাবার্তা বলে সরে পড়ল। এতদশ্রবণে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটিকে খুঁজে বের করে হত্যা কর। বর্ণনাকারী
বলেন, আমি তাকে (গুপ্তচরকে) হত্যা করলাম এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
তার সঙ্গে থাকা মাল আমাকে দান করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৯৬১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০৫১, সুনান আবূ দাঊদ ২৬৫৩, ইরওয়া ১২২২,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) সালামাহ্
ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ’হাওয়াযিন’ গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। (যুদ্ধরত
অবস্থায়) একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে দুপুরে খাবার
খাচ্ছিলাম, তখন একজন (অপরিচিত) লোক একটি লালবর্ণের উটে সওয়ার হয়ে সেখানে আসলো এবং উটটি
এক জায়গায় বসিয়ে এদিক-সেদিক দেখতে লাগল। আমাদের মধ্যে কিছুটা দুর্বলতা ছিল এবং আমাদের
সওয়ারীও ছিল কম, তাই কেউ ছিল পদাতিক। অতঃপর লোকটি সন্তর্পণে স্বীয় উটের কাছে এসে দ্রুতগতিতে
উটটি হাঁকাতে লাগল।
বর্ণনাকারী [সালামাহ্(রাঃ)] বলেন, তার এরূপ
অবস্থা দেখে আমিও তৎক্ষণাৎ তার পিছু ছুটলাম। অবশেষে তার উটের লাগাম ধরে ফেললাম এবং
তরবারির আঘাতে তাকে হত্যা করলাম। অতঃপর আমি তার উটসহ যা কিছু মাল ছিল সমস্ত কিছু নিয়ে
এলাম। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অন্যান্য লোকজন আমার
দিকে এগিয়ে আসলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, লোকটিকে কে
হত্যা করেছে? তখন লোকেরা বলল, আক্ওয়া’-এর পুত্র (সালামাহ্)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ঐ নিহত লোকটির সমস্ত মাল-সামান সেই পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০৫১, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৫৪, সুনান আবূ দাঊদ ২৬৫৪, আহমাদ
১৬৫৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪২০, ইসলামিক সেন্টার ৪৪২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহর জন্যে শত্রুপক্ষের খবরাখবর সংগ্রহ করা
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের
যুদ্ধের সময় আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘কে আমাকে শত্রু
পক্ষের খবরাখবর এনে দিবে?’ যুবাইর (রাঃ) বললেন, ‘আমি আনব।’ তিনি আবার বললেন, ‘আমার
শত্রু পক্ষের খবরাখবর কে এনে দিবে?’ যুবায়র (রাঃ) আবারও বললেন, ‘আমি আনব।’ অতঃপর নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘প্রত্যেক নবীরই সাহায্যকারী থাকে আর আমার
সাহায্যকারী যুবাইর।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৮৪৬, ২৮৪৭, ২৯৯৭, ৩৭১৯, ৪১১৩, ৭২৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬১৩৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৪১৫, আহমাদ ১৪৬৩৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৪৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসুল সাঃ এর যুদ্ধ কৌশল
(ক) আবূ
উসায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধের দিন যখন আমরা সারিবদ্ধ হয়ে কুরায়শদের
বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম এবং তারাও আমাদের মুকাবিলায় সারিবদ্ধ হয়েছিল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যখন তারা তোমাদের খুব সন্নিকটবর্তী হবে
তখনই তাদের ওপর তীর নিক্ষেপ করবে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, যখনই তারা তোমাদের খুব
কাছাকাছি এসে যাবে, তখনই তীর ছুঁড়তে থাকবে এবং কিছু তীর সংরক্ষিত রাখবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৪৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৯০০, ৩৯৮৪, ৩৯৮৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৯৭)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ)
মুহাল্লাব হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
(খন্দকের যুদ্ধের সময়) শত্রুরা যদি রাতের বেলায় তোমাদের ওপর আক্রমণ করে, তখন তোমাদের
সাংকেতিক ধ্বনি হবেحٰمٓ
لَا
ينْصَرُوْنَ
’হা-মীম্ লা- ইউনসারূন’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৪৮,
সুনান আবূ দাঊদ ২৫৯৭, সুনান আততিরমিযী ১৬৮২, আহমাদ ১৬৬১৫, সহীহাহ্ ৩০৯৭, সহীহ আল জামি‘
১৪১৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) সালামাহ্
ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সময় আবূ বকর (রাঃ)-এর নেতৃত্বে এক অভিযানে শত্রুর ওপর রাতের বেলায় আক্রমণ করি, তখন
আমাদের সংকেত ছিল ’আমিত আমিত’ অর্থাৎ- (হে আল্লাহ!) শত্রুদেরকে ধ্বংস কর (মৃত্যু দাও)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৫০, সুনান আবূ দাঊদ ২৬৩৮,
আহমাদ ১৬৪৯৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
কারো সাথে চুক্তি হলে চুক্তির মর্যাদা রক্ষা করা
(ক)
সুলায়ম ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু’আবিয়াহ্ ও রোমীয়দের মধ্যে একটি
চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল, কিন্তু উক্ত মেয়াদ উত্তীর্ণের পূর্বেই মু’আবিয়াহ্ রোমীয়দের
দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন। কেননা চুক্তির মেয়াদ শেষ হতেই যেন তাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ
চালাতে পারে। ঠিক সে সময়ই জনৈক ব্যক্তি ’আরবী অথবা তুর্কী ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে বলতে
বলতে আসছিলেন, ’আল্লা-হু আকবার’ ’আল্লা-হু আকবার’ চুক্তির মর্যাদা রক্ষা করতে হবে,
বিশ্বাসঘাতকতা করা যাবে না। তিনি নিকটে আসলে লোকেরা তাকিয়ে দেখলেন, তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশিষ্ট সাহাবী ’আমর ইবনু ’আবাসাহ্।
অতঃপর মু’আবিয়াহ্ তাকে কথাগুলো বলার কারণ জিজ্ঞেস
করলে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি,
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো সম্প্রদায়ের
সাথে সন্ধিচুক্তি সম্পাদন করে, তবে সে যেন তা ভঙ্গ না করে এবং শক্তও না করে, যে পর্যন্ত
না মেয়াদ অতিবাহিত হয় অথবা পূর্বাহ্নে তাদেরকে স্পষ্টভাবে চুক্তি ভঙ্গের সংবাদ না দেয়।
বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) নিজের লোকেদেরকে নিয়ে ফিরে আসলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৮০, সুনান আবূ দাঊদ ২৭৫৯, সুনান
আততিরমিযী ১৫৮০,সহীহাহ্ ২৩৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) আমর
ইবনু শু’আয়ব তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা হতে বর্ণনা করেন। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খুৎবায় বললেনঃ তোমরা জাহিলিয়্যাত যুগের সন্ধি বা কসমসমূহ রক্ষা
করে চল। কেননা, ইসলাম চুক্তিকে আরো শক্তিশালী করে। আর ইসলাম কবূলের পর নতুন করে কোনো
প্রকার চুক্তি করো না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৮৩,
সুনান আততিরমিযী ১৫৮৫, আহমাদ ৬৯৩৩, সহীহ আল জামি‘ ২৫৫৩)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
দুতকে হত্যা বা বন্দী না করা
(ক) আবূ
রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন কুরায়শরা আমাকে মদীনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে পাঠিয়েছিল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
দেখামাত্রই ইসলামের মহানুভবতা আমার অন্তরে গেঁথে গেল। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল!
আল্লাহর কসম, আমি আর তাদের (কুরায়শদের) কাছে কখনো ফিরে যাব না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি চুক্তি ভঙ্গ করি না এবং কোনো দূতকেও বন্দী করি না। তবে
তুমি এখন চলে যাও। তোমার অন্তরে বর্তমানে ইসলাম গ্রহণের যে আগ্রহ আছে তা যদি চলে যাওয়ার
পরও এ অবস্থায় (ইসলাম) জাগরুক থাকে, তখন তুমি চলে এসো। আবূ রাফি’ (রাঃ) বলেন, আমি চলে
গেলাম। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করলাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৮১, সুনান আবূ দাঊদ ২৭৫৮, আহমাদ
২৩৮৫৭, সহীহাহ্ ৭০২, সহীহ আল জামি‘ ২৫২১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
(খ)
নু’আয়ম ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদিন (নাবূওয়াতের মিথ্যা দাবিদার) মুসায়লিমাহ্ কায্যাব-এর পক্ষ
হতে দু’জন ব্যক্তি তাঁর নিকট আসলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বললেন,
আল্লাহর কসম! দূতকে হত্যা করার যদি বিধান থাকত, তাহলে এখনই আমি তোমাদের শিরশ্ছেদ করতাম।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৮২, সুনান আবূ দাঊদ ২৭৬১,
আহমাদ ৩৭৬১, সহীহ আল জামি‘ ১৩৩৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
যুদ্ধে পরাজয় হলে সঙ্গীদের সারিবদ্ধ করা, নিজের সওয়ারী থেকে নামা ও আল্লাহর
সাহায্য প্রার্থনা করা
বারা’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস
করল, হে আবূ উমারা! হুনায়নের দিন আপনারা কি পলায়ন করেছিলেন? তিনি বললেন, না, আল্লাহর
কসম, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পলায়ন করেননি। বরং তাঁর কিছু সংখ্যক
নওজোয়ান সাহাবী হাতিয়ার ছাড়াই অগ্রসর হয়ে গিয়েছিলেন। তারা বানূ হাওয়াযিন ও বানূ নাসর
গোত্রের সুদক্ষ তীরন্দাজদের সম্মুখীন হন। তাদের কোন তীরই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। তারা এদের
প্রতি এমনভাবে তীর বর্ষণ করল যে, তাদের কোন তীরই ব্যর্থ হয়নি। সেখান থেকে তারা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে উপস্থিত হলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর সাদা খচ্চরটির পিঠে ছিলেন এবং তাঁর চাচাতো ভাই আবূ সুফ্ইয়ান ইবনু
হারিস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব তাঁর লাগাম ধরে ছিলেন। তখন তিনি নামেন এবং আল্লাহর সাহায্য
প্রার্থনা করেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমি নবী, এ কথা মিথ্যা নয়। আমি ‘আবদুল মুত্তালিবের
পুত্র। অতঃপর তিনি সাহাবীদের সারিবদ্ধ করেন। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৩০, ২৮৬৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৫০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৭৭৬, আহমাদ ১৮৪৯৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭২৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
মুশরিকদের পরাজিত ও প্রকম্পিত করার দু‘আ
(ক)
‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধের দিন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দু‘আ করেন, ‘আল্লাহ তাদের (মুশরিকদের) ঘর ও কবর আগুনে পূর্ণ করুন। কেননা
তারা মধ্যম সালাত (তথা ‘আসরের সালাত) থেকে আমাদেরকে ব্যস্ত করে রেখেছে, এমনকি সূর্য
অস্তমিত হয়ে যায়।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৩১,
৪১১১, ৪৫৩৩, ৬৩৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬২৭, আহমাদ
৫৯১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনূতে
নাযিলায় এই দু‘আ করতেন, ‘হে আল্লাহ্! আপনি সালামাহ ইবনু হিশামকে নাজাত দিন। হে আল্লাহ্!
ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে নাজাত দিন। হে আল্লাহ্! আয়্যাশ ইবনু আবী রাবী‘আ-কে নাজাত দিন।
হে আল্লাহ্! দুর্বল মুমিনদের নাজাত দিন। হে আল্লাহ! মুযার গোত্রকে সমূলে উৎপাটিত করুন।
হে আল্লাহ! কাফিরদের উপর ইউসুফ (আঃ)-এর সময়ের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষ নাযিল করুন।’
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৩২, ৭৯৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৭১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(গ)
‘আবদুল্লাহ ইবনু আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আহযাবের দিনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে মুশরিকদের বিরুদ্ধে দু‘আ করেছিলেন যে, হে কিতাব নাযিলকারী,
সত্বর হিসাব গ্রহণকারী আল্লাহ্! হে আল্লাহ্! তাদের সকল দলকে পরাজিত করুন। হে আল্লাহ্!
আপনি তাদের পর্যুদস্ত ও প্রকম্পিত করুন।’ (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৩৩, ২৯৬৫, ৩০২৫, ৪১১৫, ৬৩৯২, ৭৪৮৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৪৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৪২, আহমাদ ১৯১২৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
২৭২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ)
‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বার
ছায়ায় সালাত আদায় করছিলেন। তখন আবূ জাহল ও কুরায়েশদের কিছু ব্যক্তি পরামর্শ করে। সেই
সময় মক্কার বাইরে একটি উট যবেহ হয়েছিল। কুরায়শরা একজন পাঠিয়ে সেখান থেকে এর ভুঁড়ি নিয়ে
এলো এবং তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিঠে ঢেলে দিল। অতঃপর ফাতিমাহ
(রাঃ) এসে এটি তাঁর থেকে সরিয়ে দিলেন। এই সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের
বিরুদ্ধে দু‘আ করেন, হে আল্লাহ্! আপনি কুরায়শদের ধ্বংস করুন। হে আল্লাহ! আপনি কুরায়শদের
ধ্বংস করুন। হে আল্লাহ্! আপনি কুরায়শদের ধ্বংস করুন। অর্থাৎ আবূ জাহ্ল, ইবনু হিশাম,
উতবা ইবনু রবী‘আহ, শায়বা ইবনু রবীআহ’, ওয়ালীদ ইবনু উতবাহ, ‘উবাই ইবনু খাল্ফ এবং ‘উকবাহ
ইবনু আবী মু‘আইত। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি তাদের সকলকে বাদারের একটি পরিত্যক্ত
কূয়ায় নিহত দেখেছি। আবূ ইসহাক (রহ.) বলেন, আমি সপ্তম ব্যক্তির নাম ভুলে গিয়েছি। আবূ
‘আবদুল্লাহ (রহ.) বলেন, ইউসুফ ইবনু ‘‘ইসহাক (রহ.) আবূ ইসহাক (রহ.) সূত্রে উমাইয়া ইবনু
খালফ বলেছেন। শু‘বাহ (রহ.) বলেন, উমাইয়া অথবা ‘উবাই। তবে সঠিক হলো উমাইয়াহ।। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৩৪, ২৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৭১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা
(ক)
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, তোমরা ইয়াহূদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি তাদের কেউ যদি পাথরের আড়ালে লুকিয়ে
থাকে তাহলে পাথরও বলবে, ‘হে আল্লাহর বান্দা, আমার পেছনে ইয়াহূদী আছে, তাকে হত্যা কর।’
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯২৫, ৩৫৯৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৭১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ইয়াহূদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
এমনকি কোন ইয়াহূদী পাথরের আড়ালে লুকিয়ে থাকলে, পাথর বলবে, ‘হে মুসলিম, আমার পেছনে ইয়াহূদী
আছে, তাকে হত্যা কর।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৯২৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭২২৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯২২, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৭১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পঞ্চম অধ্যায়
গনীমাতের সম্পদ বণ্টন
মুজাহিদদের গণিমতের মাল গ্রহণ করা জায়েজ
(১) (ক)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আমাদের পূর্বে কারো জন্য গনীমাতের মাল (ভোগ করা) জায়িয ছিল না। আল্লাহ তা’আলা
আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখে তা আমাদের জন্য জায়িয করে দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৮৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩১২৪, ৫১৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৪৭, আহমাদ ৮২০০,
সহীহাহ্ ২৭৪২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আবূ
উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আল্লাহ তা’আলা আমাকে সমস্ত নবীগণের ওপর শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী করেছেন অথবা বলেন, আমার
উম্মাতকে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী করেছেন অন্য সকল উম্মাতের ওপরে এবং আমাদের জন্য গনীমাতের
মাল হালাল করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০০১, সুনান
আততিরমিযী ১৫৫৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
গণিমতের মাল পেলেও সওয়াব না পেলেও সওয়াব
আবদুল্লাহ ইবনে ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে সেনাদল আল্লাহর রাস্তায়
জিহাদ করে গনীমাতের মাল লাভ করলো, তারা তাদের দু’ তৃতীয়াংশ সওয়াব সাথে সাথে পেয়ে গেলো।
আর গনীমাতের মাল না পেলে তারা (আখেরাতে) পূর্ণ সওয়াব লাভ করবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৮৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮১৯,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৬, সুনান আননাসায়ী ৩১২৫, সুনান আবূ দাউদ ২৬৯৭, আহমাদ ৬৫৪১,
আত-তালীকুর রাগীব ২/১৮৩, সহীহ আবু দাউদ ২২৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হত্যাকৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সমস্ত মালের অধিকারী হবে হত্যাকারী মুজাহিদ
(২) (ক) আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিন তথা
হুনায়ন-এর যুদ্ধের দিন ঘোষণা করেন, যে কেউ কোনো কাফিরকে হত্যা করবে সে নিহত ব্যক্তির
পরিত্যক্ত সমস্ত মালের অধিকারী হবে। (বর্ণনাকারী বলেন) আবূ ত্বলহাহ্ সেদিন একাই বিশজন
কাফিরকে হত্যা করেছেন এবং তিনি তাদের সমস্ত মাল-সামানের অধিকারী হয়েছেন বা তাদের সমস্ত
মাল গ্রহণ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০০২, সুনান
আবূ দাঊদ ২৭১৮, দারিমী ২৫২৭, আহমাদ ১২১৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আওফ
ইবনু মালিক আল আশজা’ঈ ও খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেনঃ হত্যাকৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সমস্ত মালের অধিকারী
হবে হত্যাকারী মুজাহিদ এবং উক্ত মাল-সামান হতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এক-পঞ্চমাংশ বের করেননি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০০৩,
সুনান আবূ দাঊদ ২৭২১, ইরওয়া ১২২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(গ) আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়ন
অভিযানে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অংশগ্রহণ করলাম। যখন আমরা
শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিলাম, তখন (যুদ্ধের প্রথম দিকে) মুসলিমদের বিশৃঙ্খলার দরুন
পরাজয়ের লক্ষণ দেখা দিল। এমন সময় আমি দেখলাম, এক মুশরিক জনৈক মুসলিম সৈন্যের উপর চড়ে
বসেছে, তৎক্ষণাৎ আমি পিছন থেকে তার গর্দানে তরবারি মেরে তার লৌহবর্ম কেটে ফেললাম। তখন
সে আমাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরল, আমি যেন তা হতে মৃত্যুর গন্ধ পেলাম। ক্ষণিক পরেই সে আমাকে
ছেড়ে দিল।
এরপর আমি ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ)-এর সাক্ষাৎ
পেলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করলাম, লোকজনের (যুদ্ধের) অবস্থা কোন্ পর্যায়ে? তিনি বলেন,
সবকিছু আল্লাহর হুকুম। অতঃপর মুসলিমগণ পুনরায় (বিজয় বেশে) ফিরে আসলেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জায়গায় বসে ঘোষণা করলেন, আজ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কাফিরদের
মধ্যে যাকে হত্যা করেছে এবং ঐ হত্যার সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে, সেই উক্ত নিহত ব্যক্তির
পরিত্যক্ত সবকিছু পাবে। আবূ কাতাদাহ(রাঃ) বলেন, আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কেউ কি আমার পক্ষে
সাক্ষ্য দিবে? এ কথাটি বলে আমি বসে পড়লাম।
অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
পূর্বের ন্যায় ঘোষণা করলেন, আর আমিও দাঁড়িয়ে বললাম, কেউ কি আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে?
এ কথা বলে আমি আবারও বসে পড়লাম। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারও পূর্বের
ন্যায় ঘোষণা করলেন, আর আমি এবারও পূর্বের ন্যায় একই কথার পুনরাবৃত্তি করলাম। তখন তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ কাতাদাহ! তোমার কি হয়েছে
(বারবার উঠছ এবং কি যেন বলে বসছ কেন)? তখন আমি ঘটনার আদ্যোপান্ত খুলে বললাম, এমন সময়
জনৈক ব্যক্তি বলে উঠল, আবূ কাতাদাহ সত্য কথাই বলেছেন এবং সেই নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত
সমস্ত মালামাল আমার আয়ত্বেই আছে, আপনি তাকে অন্য কিছুর বিনিময়ে সন্তুষ্ট করে দিন (আর
আমিই তা ভোগ করব)।
এ কথা শুনে আবূ বকর সিদ্দীক বলে উঠলেন, আল্লাহর
কসম! তা কক্ষনো হতে পারে না। আল্লাহর সিংহসমূহের একটি সিংহ যে আল্লাহ ও তার রসূলের
পক্ষে যুদ্ধ করেছে, তাকে বঞ্চিত করে তার প্রাপ্য তথা নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত মাল তোমাকে
দেয়া হবে, এটা কক্ষনো হতে পারে না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
আবূ বকর যথার্থই বলেছেন। তুমি ঐ নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত মাল আবূ কাতাদাহ (রাঃ)-কে
দিয়ে দাও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে তখন সে সমুদয় মাল আমাকে
দিয়ে দিল। আবূ কাতাদাহ বলেন, ঐ মাল বিক্রি করে আমি বানূ সালামার একটি খেজুরের বাগান
ক্রয় করলাম। আর ইসলাম গ্রহণের পর এটাই আমার অর্জিত প্রথম সম্পত্তি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৮৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৪৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৫১, সুনান আবূ দাঊদ ২৭১৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩১৪২, ৪৩২১, ৪৩২২, ৭১৭০, ২১০০, সুনান আততিরমিযী ১৫৬২, আহমাদ ২২০১২, ২২০২১, ২২১০১, ২২১০৮,
মুয়াত্তা মালেক ৯৯০, দারেমী ২৪৮৫, সহীহ আবু দাউদ ২৪৩০, ইরওয়া ১২২১, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৯০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(ঘ)
আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বদর যুদ্ধের দিন সৈনিকদের
কাতারে দাঁড়িয়ে আমার ডানে-বামে তাকিয়ে দেখি যে, আমি দু’জন কমবয়সী আনসার যুবকের মাঝখানে
দাঁড়িয়ে আছি। তখন আমি মনে মনে এ আকাঙ্ক্ষা পোষণ করলামঃ আহা! কতই না উত্তম হত, যদি আমি
এ দু’জনের চেয়ে বীর যোদ্ধার মাঝখানে দাঁড়াতাম। এমন সময় তাদের একজন আমাকে খোঁচা মেরে
বলল, চাচাজান! আপনি কি আবূ জাহালকে চিনেন? আমি বললামঃ হ্যাঁ, চিনি, তবে বৎস! তাকে তোমার
কি প্রয়োজন? সে বলল, আমি শুনেছি সে না-কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
গালি দেয়। আল্লাহর কসম! আমি যদি তাকে দেখতে পাই, তবে আমাদের মধ্যে (তথা আমার ও আবূ
জাহাল-এর মধ্যে) একজনের নির্ধারিত মৃত্যু না ঘটা পর্যন্ত আমরা উভয়ে পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন
হব না।
আবদুর রহমান বলেনঃ তার এ কথা শুনে আমি অত্যন্ত
আশ্চর্যান্বিত হলাম। ঠিক এমনি সময়ে অপর তরুণটিও আমাকে অনুরূপ খোঁচা মেরে একই কথার পুনরাবৃত্তি
করল। আমাদের কথা-বার্তা শেষ না হতেই হঠাৎ দেখতে পেলাম আবূ জাহাল লোকেদের মাঝে ঘুরাফেরা
করছে। তখন আমি তরুণদেরকে বললামঃ তোমরা উভয়ে যার ব্যাপারে আমার কাছে জানতে চাচ্ছ, ঐ
হলো সে ব্যক্তি। আমার কথা শুনামাত্রই তারা উভয়ে তলোয়ার হাতে দ্রুতবেগে তার ওপর ঝাঁপিয়ে
পড়ে তাকে হত্যা করে ফেলল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট
ছুটে এসে ঘটনাটি তাঁকে জানাল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন,
তোমাদের মধ্যে কে তাকে হত্যা করেছ? তারা উভয়েই বললঃ আমিই তাকে হত্যা করেছি।
এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
জিজ্ঞেস করলেনঃ আচ্ছা! তাকে হত্যা করার পর তোমরা কি স্বীয় তলোয়ার মুছে ফেলেছ? তারা
বলল, না। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের তলোয়ার দেখে বললেনঃ তোমরা
উভয়েই তাকে হত্যা করেছ। এই বলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘোষণা দিলেন,
তার (আবূ জাহাল-এর) পরিত্যক্ত মালের অধিকারী হবে মু’আয ইবনু ’আমর ইবনুল জামূহ। এ তরুণদ্বয়
ছিলেন মু’আয ইবনু ’আমর ইবনুল জামূহ ও মু’আয ইবনু ’আফরা (রাঃ)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০২৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩১৪১, ৩৯৬৪, ৩৯৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৫২, আহমাদ
১৬৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪১৭, ইসলামিক সেন্টার ৪৪১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯০৬, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৯১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) সালামা
ইবনুল আকওয়া’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তির সাথে মল্লযুদ্ধে লিপ্ত
হয়ে তাকে হত্যা করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মালপত্র আমাকে
দিলেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৩৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩০৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৫৪, দারেমী ২৪৫১,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৩৩))। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
(চ)
সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (যুদ্ধের ময়দানে) যে যাকে হত্যা করে তার মালপত্র হত্যাকারীর প্রাপ্য।
(সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৩৮, আহমাদ ১৯৬৩১, বায়হাকী ফিস সুনান
৬/৩০৬, ৩২৪, ৯/১১০, ইবনু হিব্বান ৪৭০৫, ৪৮৩৭, আস-সহীহ ২৪৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
গণিমতের সম্পদ ভাগ বন্টনের নিয়ম
(৩) (ক)
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের
যুদ্ধের দিন গনীমতের মাল বণ্টন করেন অশ্বারোহীর জন্য তিন ভাগঃ ঘোড়ার জন্য দু’ ভাগ এবং
পদাতিকের জন্য এক ভাগ। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৫৪, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৬৩, ২৪২৮, ১৬৩২, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১৭৬২, সুনান আবূ দাঊদ ২৭৩৩, ইরওয়া ১২২৬, সুনান আততিরমিযী ১৫৫৪, আহমাদ
৪৪৪৮, ৫৩৮৯, ৫৪৯৪, দারেমী ২৪৭২, বায়হাকী ফিস সুনান ২/৩২৪, ৩২৫, ৯/৩৩১, ইবনু হিব্বান
৪৮১০, সহীহ আবু দাউদ ২৪৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) সালামাহ্
ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম স্বীয় গোলাম রবাহ-কে উট ইত্যাদির তত্ত্বাবধানে (মদীনার বাইরে) পাঠালেন,
আমিও তার সাথে ছিলাম। ভোর হতে না হতেই আকস্মিক আক্রমণ করে (গাত্ফান গোত্রের অন্যতম
দলনেতা) ’আব্দুর রহমান ফাযারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উটগুলো
লুট করে নিয়ে গেল। (সালামাহ্ বলেন) আমি একটি উচ্চ টিলার উপরে উঠে মদীনার দিকে মুখ করে
তিনবার উচ্চস্বরে ’ইয়া সবাহাহ্’ (বিপদ সংকেত) বলে চিৎকার করলাম। অতঃপর আমি লুণ্ঠনকারী
শত্রুদলের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে করতে তাদেরকে ধাওয়া করলাম। আর ছন্দ আবৃত্তি করতে
থাকলাম- ’আমি আক্ওয়া’-এর স্বনামধন্য পুত্র, আজ মাতৃদুগ্ধ স্মরণের দিন’।
অবশেষে আমি তাদের প্রতি অবিরাম তীর নিক্ষেপ
করতে করতে অগ্রসর হতে লাগলাম এবং লুণ্ঠিত উটগুলো আমার পশ্চাতে ফেলে রেখে পুনরায় তীর
নিক্ষেপ করতে করতে তাদের পিছনে ছুটলাম। পরিশেষে (আমার আক্রমণে তারা অতিষ্ঠ হয়ে) শরীরের
বোঝা লাঘবের নিমিত্তে ত্রিশটির অধিক চাদর, কম্বল ও ত্রিশটি বর্শা শরীর হতে ফেলে দ্রুত
পালিয়ে গেল। অতঃপর আমি প্রতিটি চাদর কম্বল ও বর্শার উপরে পাথর চাপা দিয়ে এই চিহ্ন রেখে
গেলাম যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথীরা এ কথা বুঝতে পারেন
যে, এ সমস্ত জিনিসগুলো আমিই শত্রুদের নিকট হতে করায়ত্ব করেছি। এতক্ষণে আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথীদেরকে দেখতে পেলাম।
এমন সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর ঘোড়সওয়ার আবূ কাতাদাহ ’আব্দুর রহমান ফাযারীকে সম্মুখে পেয়ে হত্যা করে
ফেললেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহের সাথে বললেন, আবূ কাতাদাহ
হলো আমাদের ঘোড়সওয়ারীদের মধ্যে উত্তম, আর পদাতিকের মধ্যে সর্বোত্তম হলো সালামাহ্ ইবনুল
আক্ওয়া’। সালামাহ্ বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দু’-তৃতীয়াংশ
দিলেন। এক অংশ অশ্বারোহীর এবং আরেক অংশ পদাতিকের। অতঃপর মদীনায় প্রত্যাবর্তনকালে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তার ’আযবা নামক উটের উপরে তার পিছনে বসিয়ে নিলেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৮৯, মুসলিম ১৮০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) হাবীব
ইবনু মাসলামাহ্ আল ফিহরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কোনো এক যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। যারা যাওয়ার পথে যুদ্ধ করে বিজয়ী
হয়েছে, তাদেরকে গনীমাতের এক-চতুর্থাংশ এবং যারা ফেরার পথে যুদ্ধ করে, তাদেরকে এক-তৃতীয়াংশ
নফল স্বরূপ প্রদান করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০০৭,
সুনান আবূ দাঊদ ২৭৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) হাবীব
ইবনু মাসলামাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যুদ্ধলব্ধ মালের এক-পঞ্চমাংশ বের করার পর অবশিষ্ট এক-চতুর্থাংশ এবং যুদ্ধ হতে ফেরার
সময় এক-পঞ্চমাংশ বের করার পর এক-তৃতীয়াংশ নফল স্বরূপ প্রদান করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০০৮, সুনান আবূ দাঊদ ২৭৪৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আবুল
জুওয়াইরিয়্যাহ্ আল জারমী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর শাসনামলে
রোমকদের সাথে যুদ্ধে স্বর্ণমুদ্রা ভর্তি লালবর্ণের একটি কলস লাভ করি। তখন আমাদের সেনাপতি
ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের একজন বানী সুলায়ম
গোত্রীয় মা’ন ইবনু ইয়াযীদ। অতএব আমি উক্ত মুদ্রার কলসটি তাঁর নিকট নিয়ে এলাম। তখন তিনি
উক্ত মুদ্রাগুলো সমস্ত মুসলিমদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন এবং তাদের প্রত্যেককে যে পরিমাণ
দিলেন আমাকেও সে পরিমাণই দিলেন। অতঃপর বললেনঃ আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে এমনটি বলতে না শুনতাম যে, ’’খুমুস (এক-পঞ্চমাংশ) বের করার পরই নফল দিতে
হয়, তবে আমি তোমাকে তা হতে অবশ্যই নফল স্বরূপ দিতাম’’। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০০৯, সুনান আবূ দাঊদ ৭২৫৩, আহমাদ ১৫৮৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(চ) আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বার জয়
করেছেন, তখন আমরা (হাবশাহ্ হতে) আগমন করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
খায়বারের গনীমাত হতে আমাদেরকেও দিয়েছেন। অথবা (আবূ মূসা ) বলেছেনঃ উক্ত গনীমাত হতে
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকেও দিয়েছেন। তবে যারা খায়বার যুদ্ধে
উপস্থিত ছিল না আমাদের ব্যতীত এমন আর কাউকেও গনীমাত হতে অংশ দেননি। অবশ্য যারা যুদ্ধের
সময় তাঁর সাথে অংশগ্রহণ করেছিল শুধু তাদেরকে দিয়েছেন। এছাড়া অনুপস্থিতদের মধ্যে যারা
আমাদের নৌকায় ছিলেন, অর্থাৎ- জা’ফার ইবনু আবূ ত্বালিব এবং তাঁর সহযোদ্ধা মুজাহিদদের
সাথে গনীমাতের অংশ প্রদান করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪০১০, সুনান আবূ দাঊদ ২৭২৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৫০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ছ) আবদুল্লাহ
ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যখনই গনীমাতের মাল লাভ করতেন তখন বিলাল (রাঃ)-কে সকলের উদ্দেশে ঘোষণা করার জন্য নির্দেশ
করতেন, আর লোকেরা তাদের স্ব-স্ব গনীমাত নিয়ে জমা করতো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) সমস্ত মাল হতে (বায়তুল মালের) এক-পঞ্চমাংশ বের করতেন এবং অবশিষ্টগুলো লোকেদের
মধ্যে বণ্টন করে দিতেন। একদিন এক ব্যক্তি খুমুস (এক-পঞ্চমাংশ) বের করার এবং সমস্ত মাল
বণ্টন করে দেয়ার পর পশমের একটি লাগাম নিয়ে এসে বললঃ হে আল্লাহর রসূল! এটাও কি গনীমাতের
মাল বলে বিবেচ্য হবে, যা আমি পেয়েছিলাম। তার কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
জিজ্ঞেস করলেনঃ বিলাল যে ইতোঃপূর্বে তিনবার ঘোষণা করেছিল, তখন এটা আনলে না কেন? সে
বিভিন্ন (দুর্বল) ওযর পেশ করল। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
যাও! তুমি এটা নিয়ে যাও, কিয়ামতের দিন এ রশি নিয়েই তুমি উপস্থিত হবে। আমি তোমার নিকট
হতে এটা গ্রহণ করব না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০১২,
সুনান আবূ দাঊদ ২৭১২, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৪৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
গনীমাতের মাল বণ্টনে উট বকরী সংখ্যায় মিলকরণ
(জ) রাফি’
ইবনু খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
গনীমাতের মাল বণ্টনে দশটি বকরী একটি উটের সমপরিমাণ গণ্য করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০৩২, সুনান আননাসায়ী ৪৩৯১, আহমাদ
১৫৮১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
গনীমাতের মাল বণ্টনের পূর্বে কেনা-বেচা করতে নিষেধ
(জ) আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমাতের মাল বণ্টনের পূর্বে কেনা-বেচা করতে নিষেধ
করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০১৫, সুনান আততিরমিযী
১৫৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) আবূ
উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
গনীমাতের মাল বণ্টনের পূর্বে (কিয়দংশও) বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০১৬, দারিমী ২৫১৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ঞ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর যুদ্ধের দিন যুলফাকার নামক তরবারি নিজের জন্য গনীমাত হতে নফল
হিসেবে গ্রহণ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০১৮,
সুনান আততিরমিযী ১৫৬১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮০৮, আহমাদ ২৪৪৫)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
জিহাদে অংশগ্রহনকারী গোলাম ও মহিলাগণ গণিমতের নির্ধারিত কোনো অংশ পাবে না
(৪) (ক) ইয়াযীদ ইবনু হুরমুয হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন (খারিজী নেতা) নাজদাতুল হারূরী ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট
পত্র লিখে জানতে চাইল, যদি কোনো নারী বা গোলাম জিহাদে অংশগ্রহণ করে তারা গনীমাতের মালে
অংশ পাবে কিনা? তখন ইবনু ’আব্বাস ইয়াযীদকে বললেন, তাকে লিখে দাও, তাদের কোনো নির্ধারিত
অংশ নেই। তবে ইমাম তাদেরকে সামান্য কিছু মাল দিতে পারেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে, ইবনু ’আব্বাস তাকে লিখে
পাঠিয়েছেন যে, তুমি আমার কাছে জানতে চেয়েছ যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জিহাদে নারীদেরকে সঙ্গে নিয়েছেন কিনা এবং তাদেরকে গনীমাতের মালের অংশ দিতেন কিনা? তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নারীদেরকে সঙ্গে নিতেন এ উদ্দেশে যে, তারা অসুস্থ
ও আহত মুজাহিদদের পরিচর্যা ও সেবা-শুশ্রূষা করবেন, এতে তাদেরকে গনীমাত হতে সামান্য
কিছু দেয়া হতো, নিয়মিত অংশাধিকার দেননি। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৯৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ৪৫৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮১২, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৪৫৩৩, ইসলামিক সেন্টার ৪৫৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবুল লাহম
(রাঃ) এর মুক্তদাস উমাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। ওয়াকী (রাঃ) বলেন, আবুল লাহম (রাঃ) মাংস
খেতেন না। উমাইর (রাঃ) বলেন, আমি গোলাম অবস্থায় আমার মনিবের সাথে খায়বারের দিন যুদ্ধ
করেছিলাম। গনীমতের মালে আমাকে ভাগ দেয়া হয়নি। আমাকে ঘরের আসবাবপত্র থেকে একখানি তরবারি
দেয়া হয়। আমি তা কোমরে বেঁধে মাটিতে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যেতাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৫৫, সুনান আততিরমিযী ১৫৫৭, সুনান আবূ দাউদ ২৭৩০, আহমাদ
২৭৯১৪, দারেমী ২৪৭৫, ইবনু হিব্বান ৪৮৩১, দারাকুতনী ৪/১৪৭, বায়হাকী ফিস সুনান ৯/৩১,
৫৩, ৮/১৪৭, ইরওয়া ১২৩৪, সহীহ আবু দাউদ ২৪৪০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
গনীমাতের সম্পদ তথা সরকারী সম্পদ আত্মসাৎ করার পরিনাম
(১) খাওলাহ্ আল আনসারিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ এমন কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহ প্রদত্ত
মাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করতে চায়! জেনে রাখ, এ শ্রেণীর লোকেদের জন্য কিয়ামতের দিন জাহান্নামের
আগুন অবধারিত রয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৯৫,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১১৮, আহমাদ ২৭৩১৮, সহীহ আল জামি‘ ২০৭৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৮৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে গনীমাত খিয়ানাত
করা যে, মারাত্মক অপরাধ এবং তার পরিণাম ফল যে, খুব ভয়াবহ- এ সম্পর্কে নাসীহাত করার
পর সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলেন, কিয়ামতের দিন আমি যেন তোমাদের কাউকেও এ অবস্থায় দেখতে
না পাই, সে স্বীয় কাঁধের উপর চিৎকাররত একটি উটসহ উপস্থিত হয়ে বলতে থাকবে, হে আল্লাহর
রসূল! আমাকে রক্ষা করুন! আর আমি বলব, আজ আমার কিছু করার নেই। আমি তো আল্লাহর বিধান
আগেই (দুনিয়াতে) জানিয়ে দিয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বললেন,
আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামতের দিন এ অবস্থায় দেখতে না পাই যে, সে স্বীয় কাঁধের উপর চিৎকাররত
একটি বকরী বহন করে আসবে, আর আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে রক্ষা করুন।
আমি বলব, আমার কিছু করার নেই। আমি তো আল্লাহর
বিধান আগেই জানিয়ে দিয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বললেন, আমি তোমাদের
কাউকে কিয়ামতের দিন এ অবস্থায় দেখতে না পাই যে, সে স্বীয় কাঁধের উপর চিৎকাররত একটি
মানুষকে বহন করে আসবে, আর আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে রক্ষা করুন। আমি বলব,
আমার কিছু করার নেই। আমি তো আল্লাহর বিধান আগেই জানিয়ে দিয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বললেন, আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামতের দিন এ অবস্থায় দেখতে না
পাই যে, সে স্বীয় কাঁধের উপর এলোমেলো বিশিষ্ট কাপড়-চোপড় বহন করে আসবে, আর আমাকে বলবে,
হে আল্লাহর রসূল! আমাকে রক্ষা করুন।
আমি বলব, আমার কিছু করার নেই। আমি তো আল্লাহর
বিধান আগেই জানিয়ে দিয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বললেন, আমি তোমাদের
কাউকে কিয়ামতের দিন এ অবস্থায় দেখতে না পাই যে, সে স্বীয় কাঁধের উপর জড়ো সম্পদ বহন
করে আসবে, আর আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে রক্ষা করুন। আমি বলব, আমার কিছু করার
নেই। আমি তো আল্লাহর বিধান আগেই জানিয়ে দিয়েছি। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৯৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৩০৭৩, ১৪০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬২৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩১,
আহমাদ ৯৫০৩, সহীহ আল জামি‘ ৭১৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৪৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৪২, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৮৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
(৩) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
জনৈক ব্যক্তি (বানী দুবার গোত্রীয়) মিদ্’আম নামক একটি গোলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাদিয়া স্বরূপ দেন। এক যুদ্ধে সে সওয়ারীর উপর হতে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাওদা বা গদি নামাচ্ছিল। অকস্মাৎ কোথা থেকে একটি
অজ্ঞাত তীর এসে তার গায়ে বিধঁল এবং এটাই তাকে হত্যা করে ফেলল; তখন লোকেরা বলে উঠল,
তার জন্য জান্নাত মুবারক হোক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
কক্ষনো না। সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ। খায়বার যুদ্ধে গনীমাতের মাল
হতে বণ্টন ব্যতিরেকে যে চাদরটি সে আত্মসাৎ করেছে, তা তার উপর অগ্নিরূপে দগ্ধ করবে।
এ কথা শুনে এক ব্যক্তির জুতার একটি কিংবা দু’টি ফিতা যা অন্যের অগোচরে লুকিয়ে রেখেছিল,
তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এনে পেশ করল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এই একটি ফিতা বা দু’টি ফিতার কারণেও জাহান্নামের প্রজ্জ্বলিত
আগুন হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৯৭, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭০৭, ৪২৩৪, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ২১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫, সুনান আবূ দাঊদ ২৭১১, সুনান আননাসায়ী
৩৮২৭, সহীহ আল জামি‘ ৭০৬৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৬২৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৫০))। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) আব্দুল্লাহ
ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কারকারাহ্ নামক জনৈক ব্যক্তি যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আসবাবপত্র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। সে (যুদ্ধে)
নিহত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামী। এটা শুনে
লোকেরা তার মাল-সামানের সন্ধান করতে গিয়ে দেখতে পেল যে, সে গনীমাতের মাল হতে একটি জুববা
(পোশাক) খিয়ানাত করেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৯৮,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০৭৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৪৯, আহমাদ ৬৪৯৩, সহীহ আত্
তারগীব ১৩৪৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৫৪))। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih।
যুদ্ধকালীন গণিমতের যেসব জিনিস খেলে দোষের কিছু নেই
(৫) (ক) ইবনু
’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুদ্ধ চলাকালে আমরা মধু ও আঙ্গুর ইত্যাদি পেতাম,
কিন্তু তা বায়তুল মালে (সরকারী কোষাগারে) জমা না দিয়ে নিজেরা ভোগ করতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৯৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩১৫৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আব্দুল্লাহ
ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধের দিন আমি একটি চর্বিভর্তি
থলি পেয়ে উঠিয়ে নিলাম আর (মনে মনে) বলতে লাগলাম, আজ আমি এটা হতে অন্য কাউকেও ভাগ দেব
না। এমন সময় পাশে তাকিয়ে দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে
চেয়ে মৃদু হাসছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০০০, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৩৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৭৭২, সুনান আবূ দাঊদ ২৭০২, সুনান আননাসায়ী ৪৪৩৫, আহমাদ ১৬৭৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪৫৩,
ইসলামিক সেন্টার ৪৪৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) মুহাম্মাদ
ইবনু আবুল মুজালিদ (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
আমি সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে
আপনারা কি খাদ্যজাত দ্রব্যের এক-পঞ্চমাংশ বায়তুল মালে (সরকারী কোষাগারে) জমা করতেন?
তারা বললেনঃ খায়বার যুদ্ধে আমরা খাদ্যদ্রব্য লাভ করি, অতঃপর লোকেরা এসে যার যার প্রয়োজন
অনুপাতে নিয়ে যেত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০২০, সুনান
আবূ দাঊদ ২৭০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
(ঘ)
ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে
একটি সৈন্যবাহিনী গনীমাতের মাল হতে কিছু খাদ্যদ্রব্য ও মধু পেয়েছিল, অথচ তাদের থেকে
’খুমুস’ (এক-পঞ্চমাংশ) নেয়া হয়নি। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৪০২১, সুনান আবূ দাঊদ ২৭০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬)
খাওলাহ্ বিনতু কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই
এ (যুদ্ধলব্ধ) মাল দুনিয়াতে মোহনীয় ও আকর্ষণীয়। তবে যে ব্যক্তি তা ন্যায়সঙ্গতভাবে অর্জন
করে তাতে তার বরকত হয়। আবার এমন অনেক লোকও আছে, যে আল্লাহ ও তাঁর রসূল-এর সম্পদের যথোপযুক্ত
ব্যবহার করে না তথা খিয়ানাত করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন ছাড়া আর কিছুই
নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০১৭, সুনান আততিরমিযী
২৩৭৪, আহমাদ ২৭০৫৪, সহীহাহ্ ১৫৯২, সহীহ আল জামি‘ ২২৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
গণিমতের সম্পদ সরকারি কোষাগারে জমা করার তাগিদ
(৭) (ক)
উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমরা গনীমাতে প্রাপ্ত সুঁচ-সুতা পর্যন্ত জমা দিয়ে দাও। সাবধান! গনীমাতের মালে
খিয়ানাত করা হতে বিরত থাকো। কেননা তা কিয়ামতের দিন খিয়ানাতকারীর জন্য লাঞ্ছনা-অপমান
ভোগের কারণ হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০২৩, দারিমী
২৫৩০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) আমর
ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি উটের কাছে গিয়ে তার কুঁজের চুলের গোস্বা ধরে বললেনঃ হে লোক
সকল! এ সমস্ত গনীমাতের মালে আমি মালিক নই। এমনকি এ চুলের গোস্বারও আমি মালিক নই। তিনি
তাঁর অঙ্গুলি উঠিয়ে বললেনঃ শুধু এক-পঞ্চমাংশ রয়েছে। আর সে এক-পঞ্চমাংশও তোমাদের মাঝে
বণ্টন করা হবে। সুতরাং সুঁচ-সুতা থাকলেও তা জমা দিয়ে দাও। এটা শুনে জনৈক ব্যক্তি একগুচ্ছ
পশম হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে বললঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি তো আমার সওয়ারীর গদির নিচের কম্বলটি
সেলাই করার জন্য এটা নিয়েছি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অবশ্যই
এটার মধ্যে আমার ও বানী ’আবদুল মুত্ত্বালিব-এর যে পরিমাণ অংশ রয়েছে, তা তোমাকে দান
করলাম। এটা শুনে লোকটি বলে উঠল, এই একগুচ্ছ পশমের অবস্থা যদি এ পর্যায়ে পৌঁছে, তখন
তো আর আমার এটার কোনই প্রয়োজন নেই। এ বলে সে পশম গুচ্ছটি ছুঁড়ে ফেলে দিলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০২৫, সুনান আবূ দাঊদ ২৬৯৪, আহমাদ
৬৭২৯, সহীহ আল জামি‘ ৭৮৭৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ)
আমর ইবনু ’আবাসাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম গনীমাতের একটি উটকে (সুতরাহ্ হিসেবে) সামনে রেখে আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায়
করলেন। সালাম ফিরিয়ে উটটির পাঁজরের চুলগুচ্ছ ধরে বললেনঃ গনীমাতের এ সম্পদ হতে এক-পঞ্চমাংশ
ব্যতীত এ চুলগুচ্ছ পরিমাণও রাখার অধিকার তোমাদের কারো নেই। আর সে এক-পঞ্চমাংশও তোমাদের
মধ্যে বিতরণ করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০২৬,
সুনান আবূ দাঊদ ২৭৫৫, ইরওয়া ১২৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
’উমার(রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, খায়বার যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কয়েকজন সাহাবী এসে নিহত মুসলিমদের বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন, অমুক অমুক শহীদ হয়েছে। পরিশেষে
তারা আরো একজন সম্পর্কেও বললেন, অমুকও শহীদ হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কক্ষনো না। গনীমাতের মাল হতে একটি কম্বল অথবা বলেছেন একটি জুববা
খিয়ানাতের দায়ে আমি তাকে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হতে দেখছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ইবনুল খত্ত্বাব! যাও, লোকেদেরকে তিনবার ঘোষণা শুনিয়ে দাও,
মু’মিন ছাড়া কেউ জান্নাতে যাবে না। ’উমার বলেনঃ আমিও এ ঘোষণা তিনবার প্রচার করলাম যে,
মু’মিন ছাড়া কেউ জান্নাতের অধিকারী হবে না (জান্নাতে প্রবেশ করবে না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০৪৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৪, আহমাদ ২০৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৪৬, দারিমী ২৫৩২, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২১০, ইসলামিক সেন্টারঃ ২১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, হুনায়নের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে
গনীমতের উটের পাশে নামায পড়লেন। তারপর তিনি উটের দেহ থেকে একটি পশম নিয়ে তা তাঁর দু’
আঙ্গুলের মাঝে রেখে বলেনঃ হে লোকসকল! অবশ্য এটা তোমাদের গনীমতের মাল। সুতা এবং সুঁই,
আর যা পরিমাণে তার চেয়ে বেশী এবং যা তার চেয়ে কম, সবই তোমরা গনীমতের মালের মধ্যে জমা
দাও। কেননা গনীমতের মাল চুরি করার ফলে কিয়ামতের দিন তা চোরের জন্য অপমান ও গ্লানি এবং
জাহান্নামের শাস্তির কারণ হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৫০, ইরওয়া ৫/৭৪-৭৫, সহীহাহ ৯৮৫)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan।
(সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন.এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
...........................................................................................
কুরআন
ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক
করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment