Search This Blog

Thursday, September 26, 2019

অবৈধ উপায়ে অর্থ সম্পদ উপার্জনকারী হবে জাহান্নামী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

অবৈধ উপায়ে অর্থ সম্পদ উপার্জনকারী হবে জাহান্নামী

ভূমিকাঃ  হালাল জীবিকা মুমিন জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। শারীরিক ও আর্থিক সকল প্রকার ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হলো হালাল জীবিকা। হালালকে গ্রহণ ও হারামকে বর্জনের মধ্যেই রয়েছে মুমিনের দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা।

তাই দুনিয়া ও আখিরাতের সার্বিক কল্যাণ লাভের জন্য হালাল জীবিকা অর্জনে ব্রতী হওয়া প্রত্যেক মুসলিমের উপর অবশ্য কর্তব্য। শরী‘আতে হালাল পন্থায় সম্পদ উপার্জনের জন্য যেমন বিভিন্নভাবে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। তেমনি হারাম উপার্জনের ভয়াবহ পরিনতির ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে। এখানে অবৈধ উপায়ে অর্থ সম্পদ উপার্জনের কারণ, ক্ষতিকর দিকসমূহ এবং এর স্বরূপ সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

জীবিকার্জনের ক্ষেত্রে শরী‘আতে সার্বিক দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, ‘হে মানবকুল! তোমরা পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত ভক্ষণ কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৬৮)।

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে হালাল ও পবিত্র যা দিয়েছেন তা হ’তে আহার কর এবং আল্লাহর নে‘মতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত কর’। (সুরা নাহল ১৬/১১৪)।

ইসলাম অবৈধ উপায়ে অর্থ সম্পদ  উপার্জনকে নিষিদ্ধ করেছে। কারণ এটা উপার্জনকারীর জন্য দুর্ভাগ্য ও বিপদ ডেকে আনে। পরকালীন কঠিন শাস্তির সাথে সাথে এর কারণে মানুষের হৃদয় কঠোর হয়, ঈমানী নূর নির্বাপিত হয়, আল্লাহর অসন্তোষ অবধারিত হয়। দো‘আ কবুলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। অতএব হারাম আয়-উপার্জন পরিত্যাগ করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য।

হারাম উপার্জনের তোয়াক্কা না করার ফলে আজ সমাজে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, সূদ, ঘুষ, জুয়া, প্রতারণা, মজুতদারী, মাপে ঠকানো, ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা, অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করা সহ বিভিন্ন প্রকার গর্হিত কাজ ব্যাপকতা লাভ করেছে।

মানুষের নিকট এমন এক সময় আসবে যখন হালাল উপার্জনের বিষয় টিকে তারা তুচ্ছ জ্ঞান করবে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই উপার্জনে লিপ্ত হবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এমন এক যুগ আসবে, যখন মানুষ পরোয়া করবে না যে, সে কোথা হতে সম্পদ উপার্জন করল, হালাল হতে না হারাম হতে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৫৯, ২০৮৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯১৬ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আরো একশ্রেণীর মানুষ রয়েছে, যারা জেনেশুনে স্বপ্রণোদিত হয়ে আল্লাহর বিধানকে উপেক্ষা করে হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম বানায়। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘বল, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ তোমাদের যে রিযিক দিয়েছেন তোমরা এর কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ? বল, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এর অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করছ’? (সুরা ইউনুস ১০/৫৯)।

হালাল জীবিকা গ্রহণ করা ওয়াজিব

আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য মুসলিম ব্যক্তি হালাল জীবিকা গ্রহণ করবে এবং হারাম উপার্জন থেকে বিরত থাকবে। আর এটাই হ’ল আল্লাহ তা‘আলার চূড়ান্ত ফায়ছালা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে মানব জাতি! তোমরা পৃথিবী থেকে হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৬৮)।

কুরতুবী (রহঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণের নিম্নোক্ত অভিমত তুলে ধরেছেন-

(১) সাহল বিন আব্দুল্লাহ বলেন, ‘নাজাত তিনটি জিনিসে। তাহ’ল ১. হালাল খাবার গ্রহণ করা, ২. ফরয সমূহ আদায় করা এবং ৩. নবী করীম (ছাঃ)-এর অনুসরণ করা।

(২) সাঈদ বিন ইয়াযীদ বলেন,

‘পাঁচটি গুণে ইলমের পূর্ণতা রয়েছে। আর তা হ’ল আল্লাহকে চেনা, হক বুঝা, আল্লাহর জন্য ইখলাছপূর্ণ আমল করা, সুন্নাহ মোতাবেক আমল ও হালাল খাদ্য গ্রহণ করা। আর এর একটি নষ্ট হ’লে আমল কবুল হবে না’। (তাফসীরে কুরতুবী, ২/২০৮, সূরা বাক্বারাহ ১৬৮নং আয়াতের তাফসীর দ্রঃ)।

হারাম উপার্জনের কতিপয় কারণ

(১) তাক্বওয়াশূন্য হৃদয়:

হারাম উপার্জনে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল হৃদয় থেকে আল্লাহভীতি দূর হয়ে যাওয়া। আল্লাহভীতি মানবাত্মাকে হারামে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। আর আল্লাহকে লজ্জা করে অন্যায় কর্ম ত্যাগ করাই হলো প্রকৃত লজ্জা। রাসূল (ছাঃ) প্রকৃত লজ্জা কি তা ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন তিনি বলেন,

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্ তা’আলাকে যথাযথভাবে লজ্জা কর। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমরা তো নিশ্চয়ই লজ্জা করি, সকল প্রশংসা আল্লাহ্ তা’আলার জন্য। তিনি বললেনঃ তা নয়, বরং আল্লাহ্ তা’আলাকে যথাযথভাবে লজ্জা করার অর্থ এই যে, তুমি তোমার মাথা এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা সংরক্ষণ করবে এবং পেট ও এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা হিফাযাত করবে, মৃত্যুকে এবং এরপর পচে-গলে যাবার কথা স্মরণ করবে। আর যে লোক পরকালের আশা করে, সে যেন দুনিয়াবী জাকজমক পরিহার করে। যে লোক এইসকল কাজ করতে পারে সে-ই আল্লাহ্ তা’আলাকে যথাযথভাবে লজ্জা করে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪৫৮, রাওয়ুন নায়ীর ৬০১, মিশকাত তাহকীক সানী ১৬০৮, আহমাদ ৩৬৭১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আবূ মাসউদ উকবা ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ পূর্ববর্তী নবীগণের বাণী থেকে যা পেয়েছে তার মধ্যে আছে, “তোমার লজ্জা-শরম না থাকলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারো’’। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১৮৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৮৩, ৩৪৮৪, ৬১২০, সুনান আবূ দাউদ ৪৭৯৭, আহমাদ ১৬৬৪১, ১৬৬৫৮, ২১৮৪০, ইরওয়া ২৬৭৩, সহীহাহ ৬৮৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হৃদয় থেকে আল্লাহভীতি দূর হয়ে গেলে মানবাত্মা  অনুভূতিশুন্য হয়ে পড়ে। ফলে তার মাঝে হালাল-হারাম যাচাই-বাছাই করার কোন তাকীদ অনুভূত হয় না।

(২) ত্বরিত গতিতে উপার্জনের লালসা:

হারাম উপার্জনের আরেকটি কারণ হ’ল দ্রুত উপার্জনের লালসা। কতক মানুষ রয়েছে যারা দ্রুততার সাথে অর্থোপার্জনের চেষ্টায় উন্মত্ত থাকে। যেকোন ভাবে যেকোন পন্থায় তারা আয়ের ব্যবস্থা করতেও দ্বিধান্বিত হয় না। সুতরাং স্বল্প সময়ে অধিক উপার্জন করাই তাদের অভীষ্ট উদ্দেশ্য ও ইপ্সিত লক্ষ্য হয়ে থাকে। যার ফলে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে যে নির্ধারিত জীবিকা পেত, তার সীমালংঘন করে দ্রুত উপার্জন করতে চেষ্টা করে। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,

ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে লোক সকল! যে ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে আদেশ করেছি তাছাড়া এমন কোন জিনিসই নেই যা তোমাদেরকে জান্নাতের নিকটবর্তী করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। আর যা থেকে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছি তাছাড়া এমন কোন জিনিসই নেই যা তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। রূহুল আমীন আরেক বর্ণনায় আছে রূহুল কুদুস (জিবরীল আলাইহিস সালাম) আমার অন্তরে এ কথাটি ঢেলে দিয়েছেন যে, কোন দেহ তার (নির্ধারিত) রিযক পরিপূর্ণভাবে ভোগ না করা পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। সাবধান! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং ধনসম্পদ উপার্জনে উত্তম নীতি অবলম্বন কর। কাঙিক্ষত রিযক পৌছার বিলম্বতা যেন তোমাদেরকে আল্লাহর অবাধ্যতার খোঁজার পথে তা অন্বেষণে উদ্বুদ্ধ না করে। কেননা আল্লাহর কাছে যা নির্ধারিত রিযক আছে তা আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া অর্জন করা যায় না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩০০, শুআবূল ঈমান ১০৩৭৬, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ১৭০০, সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮৬৬, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৪৩৩২, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ২১৩৬, শারহুস্ সুন্নাহ ৪১১১, ৪১১২, ছহীহাহ ২৬০৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তির উচিত এ বিষয়টিকে অনুধাবন করা যে, পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং বান্দার রূযী-রোযগার ও আয়-ব্যয়ের হিসাব আল্লাহর কাছে অবশ্যই প্রদান করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

ইবনু মাসউদ (রাঃ) নাবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন : কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের পদদ্বয় একটু নড়তে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। ১. তার বয়স সম্পর্কে, সে তা কী কাজে ব্যয় করেছে? ২. তার যৌবন সম্পর্কে, সে তা কী কাজে ক্ষয় করেছে? ৩. তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, সে তা কোথা হতে অর্জন করেছে? ৪. আর তা কোথায় ব্যয় করেছে? এবং ৫. যে জ্ঞানার্জন করেছিল, সে অনুযায়ী কী ’আমাল করেছে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৯৭, সুনান আততিরমিযী ২৪১৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ ৯৪৬, সহীহুল জামি ৭২৯৯, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ১২৮, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৯৪৬, ইয়া'লা ৫২৭১, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৯৬৫৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উল্লিখিত হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, জীবিকার বৈধ উপার্জন যেমন ইবাদত কবুলের শর্ত তেমনি পারলৌকিক কল্যাণের জন্যও হালাল উৎস থেকে উপার্জন ও বৈধ কাজে ব্যয় করা একান্ত যরূরী।

(৩) অতিরিক্ত লোভ ও অল্পেতুষ্টির অভাব:

অবৈধ পন্থায় উপার্জনের অন্যতম কারণ হলো, মাত্রাতিরিক্ত লোভ ও অল্পেতুষ্ট না হওয়া। আর অতিরিক্ত লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষ চুরি-ডাকাতি করতেও দ্বিধান্বিত হয় না। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,

কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: দুটি ক্ষুধার্ত বাঘকে মেষ-বকরীর দলের মধ্যে ছেড়ে দিলে ততটুকু ক্ষতিসাধন করে না, যতটুকু কোন ব্যক্তির ধন সম্পদের ভালোবাসা ও মর্যাদার লালসা তার দীনের ক্ষতি করে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৮১, সুনান আততিরমিযী ২৩৭৬, দারিমী ২৭৩০, সহীহুল জামি ১০৫৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ১৭১০, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৪৩৮০, মুসনাদে আহমাদ ১৫৮২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩২২৮, শুআবুল ঈমান ১০২৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাই লালসার বশবর্তী হওয়া উচিত নয়। কেননা লোভ জীবিকা তো বৃদ্ধি করেই না; বরং তা ব্যক্তিকে কষ্টে নিপতিত করে ও নিঃস্ব করে।

(৪) হারাম জীবিকার স্বরূপ ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অবহেলা :

আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ হারাম উপার্জনের স্বরূপ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। তার হুকুম কি, ব্যক্তি ও সমাজের উপরে এর কুপ্রভাব কি, এর মাধ্যমগুলি কি কি এসব সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ একদিকে যেমন অজ্ঞ অন্যদিকে সেগুলি সম্পর্কে জানার ব্যাপারেও চরম অবহেলা। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আবূ বকর (রাঃ)-এর একটি ক্রীতদাস ছিল। দাসটি তাঁর জন্য রুযী-রোজগার করতো এবং তিনি তা খেতেন। একবার সেই ক্রীতদাসটি কোনো খাবার নিয়ে এলে আবূ বকর(রাঃ) তা খেলেন। ক্রীতদাসটি তাঁকে বললেন, আপনি কি জানেন- এটা কিভাবে উপার্জিত হয়েছে? আবূ বকর(রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ মাল কিভাবে উপার্জিত? তখন ক্রীতদাসটি বললো, জাহিলী যুগে একবার আমি এক ব্যক্তির কাছে গণকের কাজ করেছিলাম, অথচ আমি গণনার কাজও ভালো করে জানতাম না। আমি গণনার ভান করে তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম। ঐ ব্যক্তির সাথে আজ আমার দেখা হলে সে আমাকে আগের ঐ গণনার বিনিময়ে বস্তুটি দান করেছে, আপনি তাই খেয়েছেন। তিনি বলেন, (এ কথা শুনামাত্র) আবূ বকর(রাঃ) গলার ভিতরে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে পেটের সব জিনিস বমি করে ফেলে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৮৪২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হারাম উপার্জনের ক্ষতিকর দিক সমূহ

(১) হৃদয় ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আনুগত্যে স্থবিরতা: হারাম উপার্জনের বহু ক্ষতিকর দিক রয়েছে, যা হারামের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অন্তরে আসন গেড়ে বসে। তা হ’ল অন্তরের কাঠিন্য ও আল্লাহর আনুগত্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহের স্থবিরতা। যার ফলাফল হলো ইহলৌকিক জীবন ও জীবিকায় বরকত হরাস হওয়া। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

(ক) আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে, সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৭, সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল ঈমান ৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহের গোশত/গোশত হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭২, আহমাদ ১৪৪১, শু‘আবুল ঈমান ৮৯৭২, দারিমী ২৭৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ভাল কাজের নূরানী ছাপ অন্তরে অবশ্যই গ্রোথিত হয়, মুখমন্ডল উদ্ভাসিত হয়, শরীরে শক্তি বর্ধিত হয়, জীবিকায় প্রাচুর্য আসে। অপরপক্ষে খারাপ কাজের প্রভাব মুখমন্ডলে প্রস্ফূটিত হয়, অন্তর তমসাচ্ছন্ন হয়, চেহারা হয় দুর্বল এবং জীবিকায় আসে ক্ষীণতা।

(২) দো‘আ অগ্রাহ্য হয়: হারাম জীবিকা উপার্জনের আরেক ক্ষতিকর দিক হ’ল, আল্লাহর কাছে দো‘আ করলে তা কবুল হয় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : ’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ’মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ১৭২)।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আততিরমিযী ২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭, গাইয়াতুল মারাম ২৭,ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

এ হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, হারাম উপার্জন দো‘আ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অন্যতম কারণ।

(৩) সৎকর্ম কবুলে প্রতিবন্ধক: হারাম উপার্জন হলো সৎকর্ম কবুলের পথে অন্তরায়। যেমন পূর্বোক্ত হাদীছে এসেছে, ‘কেমন করে তার দো‘আ কবুল হবে’? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আততিরমিযী ২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭, গাইয়াতুল মারাম ২৭,ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। উমার ইবনু খাত্তাব (রাযিঃ) বলেন, খাইবারে অমুক অমুক শহীদ হয়েছেন। অবশেষে এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে তারা বললেন যে, সেও শহীদ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কখনই না। গনীমাতের মাল থেকে চাঁদর আত্মসাৎ করার কারণে আমি তাকে জাহান্নামে দেখেছি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! যাও লোকেদের মাঝে ঘোষণা করে দাও যে, জান্নাতে কেবলমাত্র প্রকৃত মুমিন ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে। উমর ইবনু খাত্তাব (রাযিঃ) বলেন, তারপর আমি বের হলাম এবং ঘোষণা করে দিলাম, "সাবধান! শুধুমাত্র প্রকৃত মুমিনরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ২০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২১০, ইসলামিক সেন্টারঃ ২১৭, ছহীহ ইবনে হিববান ৪৮৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) মহাশক্তিধর আল্লাহর ক্রোধ ও জাহান্নামে প্রবেশ: হারাম উপার্জন আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয় এবং জাহান্নামে প্রবেশে সহায়তা করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ, মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ)....আবূ যার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না। বরং তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটি তিনবার পাঠ করলেন। আবূ যার (রাযিঃ) বলে উঠলেন, তার তো ধ্বংস হবে, সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহর রাসূল! এরা কারা? তিনি বললেন, যে লোক পায়ের গোছার নীচে কাপড় ঝুলিয়ে চলে, কোন কিছু দান করে খোটা দেয় এবং মিথ্যা শপথ করে পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ২০১, আহমাদ ২১৪৭৩; সুনান আবু দাঊদ ৪০৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কসমের মাধ্যমে কোনো মুসলিমের হক আত্মসাৎ করলো, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত করে দিয়েছেন এবং তার জন্য জান্নাত হারাম করেছেন। অতঃপর জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! যদি তা নগণ্য কিছু হয়? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদিও তা পিলু গাছের একটি ডালও হয় (পিলু গাছ মিসওয়াক হিসেবে ব্যবহৃত হয়)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৭, সুনান আননাসায়ী ৫৪১৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২৩২৪, সহীহ আল জামি‘ ৬০৭৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৮৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫২. ইসলামিক সেন্টারঃ ২৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদীছে এসেছে,

খাওলাহ্ আনসারীয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, কিছু লোক আল্লাহর দেয়া সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১১৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৯৪, আহমাদ ৭২০৬; ছহীহাহ ৩৩৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

হারাম উপার্জনের স্বরূপ

(১) পরিমাণ ও ওযনে কমতি করা: ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেন-দেনের ক্ষেত্রে পরিমাণ ও ওযনে ঠকানোর মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন জঘন্য কাজ। আল্লাহ তা‘আলা এহেন কারবারীর বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় হুঁশিয়ার বাণী নাযিল করেছেন। তিনি বলেন,  ‘যারা মাপে কম দেয়, তাদের জন্য দুর্ভোগ। এরা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয় এবং যখন মেপে দেয় তখন কম করে দেয়’। (সুরা তাত্বফীফ ৮৩/১-৩)।

এ ধরনের কর্মকান্ড তারাই করে থাকে, যারা অত্যধিক ধূর্ত। এভাবে তারা মানুষকে ঠকিয়ে অসৎ পন্থায় আয় করে। অথচ এই অন্যায়কর্ম সম্পাদনের কারণে পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেনো তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায় নি (যেমন: করোনা)। যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না (তথা ইসলামি আইন মোতাবেক বিচারিক কার্যক্রম ও রাষ্ট্র শাসন করে না) এবং আল্লাহর নাযীলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না (তথা কুরআনকে সংবিধান হিসেবে মেনে নেয় না), তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন।  (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৪০১৯, সহীহাহ ১০৬)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(২) যাকাতের সম্পদ গোপন রাখা: নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও যাকাত আদায় না করে নিঃস্ব-অভাবী লোকদের হক্ব নষ্ট করা এবং সম্পদের নিছাব গোপন করা পাপ। এর পার্থিব শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ অনাবৃষ্টি ও খরা চাপিয়ে দেন। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

‘যে সম্প্রদায় তাদের সম্পদের যাকাত প্রদান করে না, তাদেরকে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণও করা হ’ত না, যদি প্রাণীকুল না থাকত’। দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৪০১৯, সহীহাহ ১০৬)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

অর্থাৎ প্রাণীদের কারণেই তাদেরকে বৃষ্টি দান করা হয়। আর পরকালীন শাস্তিতো অত্যন্ত মর্মন্তুদ ও যন্ত্রণাদায়ক। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

‘স্বর্ণ-রূপার মালিক যারা তার যাকাত আদায় করেনি, ক্বিয়ামতের দিন তা পাত বানানো হবে, অতঃপর তা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তার পার্শ্বদেশ, কপাল ও পিঠে সেকা দেওয়া হবে (তাওবা৯/৩৫)। যখন তা ঠান্ডা হয়ে যাবে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হবে, এমন দিনে যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান। এভাবে সকল বান্দার মধ্যে ফায়ছালা হবে। অতঃপর তাকে জান্নাত অথবা জাহান্নামের দিকে রাস্তা দেখানো হবে’। (ছহীহ আত-তারগীব হা/১৭৬১; ছাহীহাহ হা/৪০০৯)।

অনুরূপভাবে পশু-সম্পদ, অর্থসম্পদ, ওশর ইত্যাদির যাকাত অনাদায়কারীকেও পরকালে শাস্তি দেওয়া হবে।

(৩) সূদের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা: বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেন-দেনে সূদের ব্যাপক ছড়াছড়ি পরিলক্ষিত হয়।

 জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন, যে ব্যক্তি সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদের কাগজপত্র লিখে, যে দু’জন সুদের সাক্ষী হয় তাদের সকলের ওপর। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, (গুনাহের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে) তারা সকলেই সমান। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৩৯৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৭-১৫৯৮, সহীহ আত্ তারগীব ১৮৪৭, সুনান আততিরমিযী ১২০৬; সুনান আবূ দাউদ ৩৩৩৩; ইব্নু মাজাহ্ ২২৭৭; ইব্নু হিববান ৫০২৫; আহমাদ ৬৩৫, ৬৬০, ৮৪৪, ১১২০, ১২৮৮, ১৩৬৪, ৩৭২৫, ৩৭৩৭, ৩৮০৯, ৪৩২৭, ১৪৩০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আর এ অভিশপ্ত পন্থাকে মানুষ নানান ভাষা ব্যবহার করে  ছলেবলে কৌশলে সিদ্ধ করার পাঁয়তারা করছে। কখনো একে Interest, কখনো মুনাফা, কখনো লাভ ইত্যাদি নামে অভিহিত করে জীবিকা নির্বাহ করছে। আর বস্ত্তত বিশ্বের দারিদ্র্য, অনাহার, নিঃস্বতা ইত্যাদি হচ্ছে সূদী লেনদেনের বিষময় ফল। কেননা সূদ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। আল্লাহ বলেন,  ‘আল্লাহ সূদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-ছাদাক্বা বৃদ্ধি করেন’। (সুরা বাক্বারাহ ২/২৭৬)।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা (২) যাদু (৩) আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবা সতী-সাধ্বী মু’মিনাদের অপবাদ দেয়া। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৬৬, ৫৭৬৪, ৬৮৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,

 আব্দুল্লাহ ইবনু হানযালাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। যিনি মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) কর্তৃক গোসলপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জেনে শুনে সুদের কেবলমাত্র একটি রোপ্যমুদ্রা খায়, তার গুনাহ ছত্রিশবার যিনার চেয়ে বেশি হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৮৫, আহমাদ ২১৯৫৭, দারাকুত্বনী ২৮৪৩, শু‘আবুল ঈমান ৫১৩০)।

(৪) ঠকবাজি ও জুয়াচুরি: এটা বেশি হয়ে থাকে ব্যবসার ক্ষেত্রে। যেমন খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশানো, উৎকৃষ্ট মালের সাথে নিম্নমানের মাল মিলানো, অতিরিক্ত গ্রহণ করা, এক জিনিস নির্ধারণ করে জোরপূর্বক অন্যটি দিয়ে দেয়া, মাপে কম দেয়া ইত্যাদি। অথচ এ বিষয়ে আল্লাহর

ইয়াহইয়াহ ইবনু আইয়ুব, কুতাইবাহ ও ইবনু হুজর (রহঃ)...আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্য শস্যের একটি স্তুপের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করলেন। তিনি স্তুপের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন ফলে হাতের আঙ্গুলগুলো ভিজে গেলো। তিনি বললেন, হে স্তুপের মালিক! এ কি ব্যাপার? লোকটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে। তিনি বললেন, সেগুলো তুমি স্তুপের ওপরে রাখলে না কেন? তাহলে লোকেরা দেখে নিতে পারতো। জেনে রাখো, যে ব্যক্তি ধোকাবাজি করে, আমার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)   ১৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৬০, সুনান আবূ দাঊদ ৪৩৫২, সুনান আততিরমিযী ১৩১৫, সুনান ইবনু মাজাহ ২২২৪, আহমাদ ৭২৯২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৯০৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বাস ও রেল স্টেশন এবং লঞ্চঘাটে কুলিদের উৎপীড়ন ও মালামাল উঠানো-নামানো নিয়ে দর কষাকষি এবং অতিরিক্ত আদায় ঠকবাজির শামিল।

(৫) উৎকোচ: বর্তমানে ঘুষ-উৎকোচ গোটা দেশকে জাহেলিয়াতের প্রগাঢ় অমানিশায় নিক্ষেপ করেছে। এমন বহু নযীর রয়েছে যে, কোন ব্যক্তির প্রাপ্য আদায়ে আবশ্যকিভাবে ঘুষের লেন-দেন করা হচ্ছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়েও ব্যাপকহারে ঘুষের লেনদেন হচ্ছে প্রকাশ্যেই। কিন্তু তারা যদি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অমিয় বাণীর দিকে লক্ষ্য করত, তবে কখনই অভিশপ্ত এই পন্থায় জীবিকা নির্বাহ করত না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে ঘুষখোর ও ঘুষ প্রদানকারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৩৬, ১৩৩৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৩১৩, সুনান আবূ দাউদ ৩৫৮০, ৬৫৯৬, ৬৭৩৯, ৬৭৯১, ৬৯৪৫, ইরওয়া ২৬২০, মিশকাত ৩৭৫৩, রাওদুন নাদীর ৫৮৩, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৪৩, আহমাদ ৬৫৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) চুরি, ডাকাতির মাধ্যমে জীবিকা অর্জন: এক শ্রেণীর লোক রয়েছে যারা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটতরাজ ইত্যাকার কর্মকান্ড করে থাকে। বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় নতুন ব্র্যান্ডের মোটর সাইকেল, জীপ ছিনতাইয়ের সচিত্র রিপোর্ট প্রকাশ হয়ে থাকে। গভীর রাতে রাস্তায় গাছ ফেলে ডাকাতি করার ঘটনা এদেশে নতুন নয়। তাদের কি ঈমান হারানোর কথা অন্তকরণে সামান্যতমও জাগ্রত হয় না?

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যভিচারী মু’মিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোন মদ্যপায়ী মু’মিন অবস্থায় মদ পান করে না। কোন চোর মু’মিন অবস্থায় চুরি করে না। কোন লুটতরাজকারী মু’মিন অবস্থায় এরূপ লুটতরাজ করে না যে, যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে।

সা‘ঈদ ও আবূ সালামাহ (রাঃ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরূপ বর্ণিত, তবে তাতে লুটতরাজের উল্লেখ নেই। ফিরাবরী (রহ.) বলেন, আমি আবূ জা‘ফর (রহ.)-এর লেখা পান্ডুলিপিতে পেয়েছি যে, আবূ ‘আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহ.) বলেন, এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, এর অর্থ হল, তার হতে ঈমানের নূর ছিনিয়ে নেয়া হয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অর্থাৎ তার ঈমান এ অবস্থা থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত উপরে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।

(৭) আত্মসাৎ: এ ধরনের কাজের জন্য পরকালে কঠোর শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আত্মসাৎ করবে, সে ক্বিয়ামত দিবসে আত্মসাৎকৃত বস্তু নিয়েই হাযির হবে’। (সুরা আলে ইমরান ৩/১৬১)।

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)....আদী ইবনু উমাইরাহ্ আল-কিন্দী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আমরা তোমাদের মধ্যে যাকে আদায়কারী নিযুক্ত করি, আর সে একটি সূচ পরিমাণ বা তার চাইতেও কম মাল আমাদের কাছে গোপন করে, তাই আত্মসাৎ বলে গণ্য হবে এবং তা নিয়েই কিয়ামতের দিন সে উপস্থিত হবে। রাবী বলেন, তখন একজন কৃষ্ণকায় আনসারী (সাহাবী) তার দিকে অগ্রসর হলেন, আমি যেন তাকে দেখতে পাচ্ছি। তিনি আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার দায়িত্বভার আপনি বুঝে নিন। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কী হয়েছে? তিনি আরয করলেন, আমি আপনাকে এরূপ এরূপ (কঠিন ভাষা) বলতে শুনেছি। তখন তিনি বললেন, আমি এখনও বলছি, তোমাদের মধ্যকার যাকেই আমি কর্মচারী নিযুক্ত করি আর সে অল্প বিস্তর যা-ই আদায় করে এনে উপস্থিত করে, তারপর তাকে যা-ই দেয়া হয় তা-ই গ্রহণ করে এবং যা থেকে নিষেধ করা হয় তা থেকে বিরত থাকে (তার জন্য ভয়ের কারণ নেই)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৯১, ইসলামিক সেন্টার ৪৫৯৪, আহমাদ ১৭৭৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) জুয়া ও বাজি ধরা: ক্রিকেট ও ফুটবল খেলাকে ঘিরে যে কত শত কোটি টাকার বাজি ধরা হয় দেশে তার ইয়ত্তা নেই। বাজিতে জেতা অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে ধান্দাবাজ বাজিকররা। অথচ এসব হারাম। মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা, ভাগ্যনির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও’। (সুরা মায়েদাহ ৫/৯০)।

(৯) পণ্য বিক্রয়ে অধিক কসম করা: যুহায়র ইবনু হারব, আবূ তাহির ও হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)...আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কসমে পণ্য-দ্রব্যের কাটতি হয়, তবে তা লাভ ধ্বংসকারী। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪০১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৮০, ইসলামিক সেন্টার ৩৯৭৯, মুসনাদ আবী ইয়ালা ৬৪৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ, মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ)....আবূ যার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না। বরং তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটি তিনবার পাঠ করলেন। আবূ যার (রাযিঃ) বলে উঠলেন, তার তো ধ্বংস হবে, সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহর রাসূল! এরা কারা? তিনি বললেন, যে লোক পায়ের গোছার নীচে কাপড় ঝুলিয়ে চলে, কোন কিছু দান করে খোটা দেয় এবং মিথ্যা শপথ করে পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ২০১, আহমাদ ২১৫৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করা: আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ গ্রাস করে, তারা তো তাদের উদরে আগুন ভক্ষণ করল’।  (সুরা নিসা ৪/১০)।

(১১) মজুতদারি করা: মানুষের একান্ত প্রয়োজনীয় পণ্য মওজুদ করে রাখা ইসলামে নিষিদ্ধ। এ সময় ব্যবসায়ী বেচাকেনা বন্ধ রাখে যাতে বাজার মূল্য চড়া হয়।

ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশে চল্লিশ দিন পর্যন্ত খাদ্য-সামগ্রী গুদামজাত করে রাখবে, আল্লাহ থেকে সম্পর্কহীন (সে আল্লাহর আইন অমান্যকারী) এবং আল্লাহ তা’আলাও তার থেকে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যান (আল্লাহ তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৯৬, আহমাদ ৪৮৮০, ছহীহাহ ৩৩৬২;আহমাদ ৪৮৮০)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,

মা’মার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক খাদ্য-সামগ্রী গুদামজাত করে, সে অপরাধী; সে গুনাহগার সাব্যস্ত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬০৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৭৭, ইসলামিক সেন্টার ৩৯৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

গান-বাজনার উপকরণ বিক্রি করা, ভাস্কর্য, ছবি নির্মাণ করা, সেলুনে দাড়ি কামিয়ে অর্থ উপার্জন করা, নেশাজতীয় দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয় করা, মদ, কুকুর-শূকর বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করে অর্থের পাহাড় বানানো এসব হারাম উপার্জনের উল্লেখযোগ্য মাধ্যম।

হালাল জীবিকা উপার্জনে শ্রেষ্ঠতম মানুষদের প্রচেষ্টা

প্রথম মানব আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সকল যুগের শ্রেষ্ঠ মানবগণ হালাল জীবিকা উপার্জনে তৎপর ছিলেন। তাদের অনুসরণ করলে হালাল উপার্জনের প্রতি আমাদের আগ্রহ সৃষ্টি হবে এবং হারাম উপার্জনের চিন্তা চেতনা বিদূরিত হবে। নবী-রাসূলগণ মানব জাতির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তারা আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে থাকেননি। বরং কাজ করেছেন। ঐ সমস্ত শ্রেষ্ঠ মানবদের জীবিকা উপার্জনের কিছু দিক এখানে তুলে ধরা হ’ল, যা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের কর্মজীবনে তা বাস্তবায়ন করতে পারি।

নবী-রাসূলগণের কর্মজীবন

আদম (আঃ): মানব জাতির আদি পিতা আদম (আঃ) ছিলেন একজন কৃষক। যিনি জমিতে ফসল ফলাতেন এবং নিজ হাতে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরী করতেন। আর এ কাজে তাঁর স্ত্রীও সাহায্য করতেন। তিনি একজন রাজ মিস্ত্রীও ছিলেন। (ত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবহাত ফি তালবির রিযক, পৃঃ ৬৪)।

দাউদ (আঃ): মিকদাম (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায় না। আল্লাহর নবী দাঊদ (আঃ) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৭২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯২৭ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনু আববাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত আছে যে, ‘দাঊদ (আঃ) ছিলেন বর্ম নির্মাতা, আদম (আঃ) ছিলেন কৃষক, নূহ (আঃ) ছিলেন কাঠ মিস্ত্রী, ইদ্রীস (আঃ) ছিলেন দর্জি, মূসা (আঃ) ছিলেন রাখাল’। (ফাৎহুল বারী ২০৭২নং হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।

হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকারিয়্যা (আঃ) কাঠমিস্ত্রী ছিলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬০৫৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৯৪৭, ইসলামিক সেন্টার ৫৯৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

ইদ্রীস (আঃ): সর্বপ্রথম ইদ্রীস (আঃ) প্রথম ব্যক্তি যিনি সুতার তৈরী সেলাইযুক্ত পোষাক তৈরী করেন।

নূহ (আঃ): নূহ (আঃ) নিজ কওমের ছাগল চরাতেন। তিনি কাঠ মিস্ত্রীও ছিলেন। তিনি প্লাবনের পূর্বে স্বহস্তে কাঠের নৌকা তৈরী করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সে নৌকা নির্মাণ করতে লাগল, আর যখনই তার কওমের প্রধানদের কোন দল তার নিকট দিয়ে গমন করত, তখনই তার সাথে উপহাস করত’। (সুরা হূদ ১১/৩৮)।

ইউসুফ (আঃ): ইউসুফ (আঃ) ছিলেন মিসরের অর্থমন্ত্রী। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেন,قَالَ ‘ইউসুফ বলল, আপনি আমাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্বে নিয়োজিত করুন। নিশ্চয়ই আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও (এ বিষয়ে) বিজ্ঞ’। (সুরা ইউসুফ ১২/৫৫)।

মূসা (আঃ): মূসার দৈহিক শক্তি ও আমানতদারিতার কারণে আট বা দশ বছর শো‘আয়েব (আঃ)-এর ছাগল চরানোর বিনিময়ে তার কন্যাকে বিবাহ করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই কর্মচারী হিসাবে উত্তম হবে সে ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত’। (সুরা কাছাছ ২৮/২৬; ইত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবহাত ফি তালবির রিযক, পৃঃ ৬৪)।

হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ): আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কয়েক কীরাতের বিনিময়ে মক্কাবাসীর ছাগল চরাতেন। এ বিষয়ে আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যিনি বকরী না চরিয়েছেন। তখন তাঁর সাহাবীগণ বলেন, আপনিও? তিনি বলেন, হ্যাঁ; আমি কয়েক কীরাতের (মুদ্রা) বিনিময়ে মক্কা্বাসীদের ছাগল চরাতাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৬২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২১০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ  ২১১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

খোলাফায়ে রাশেদীনগণের পেশা

(১) আবুবকর (রাঃ): আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) ছিলেন জাহেলী যুগ থেকেই একজন সৎ ব্যবসায়ী। কুরাইশদের মধ্যে তিনি ছিলেন ধনাঢ্য ব্যক্তি। ইসলাম কবুল করার পর তার সম্পদ গোলাম আযাদ ও ইসলাম প্রচারের কাজে ব্যয় করেন। কিন্তু যখন তিনি খলীফা নিযুক্ত হন, তখনও কাপড় নিয়ে বাজারে বিক্রির জন্য বের হন। পরে ওমর ও আবু ওবায়দার পরামর্শক্রমে ভাতা নির্ধারণ করলে তা থেকে সংসার চালান। (ফাৎহুল বারী হা/২০৭১নং হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।

(২) ওমর ফারূক (রাঃ): ওমর (রাঃ) ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। এর মাধ্যমে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। (ইত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবুহাত ফি চলাবির রিযক, পৃঃ ৬৮)।

(৩) ওছমান (রাঃ): ওছমান (রাঃ) জাহেলী যুগে ও ইসলামী যুগে কাপড় বিক্রয় করতেন এবং এর মাধ্যমে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। (ইত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবুহাত ফি চলাবির রিযক, পৃঃ ৬৮)।

(৪) আলী (রাঃ): আলী (রাঃ) নিজ হাতে কাজ করতেন। তিনি খেজুরের বিনিময়ে কুপ থেকে পানি তুলে অন্যের জমিতে সেচ দিতেন। তার কষ্ট এমন পর্যায়ে পৌঁছতো যে হাতে রশির দাগ পড়ে যেত। (ইত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবুহাত ফি চলাবির রিযক, পৃঃ ৬৮)।

অন্যান্য ছাহাবী:

খাববাব ইবনে আরত ছিলেন কর্মকার, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসূদ (রাঃ) ছিলেন রাখাল, সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) তীর প্রস্ত্ততকারী ছিলেন, জোবায়ের ইবনে আওয়াম দর্জী, বেলাল ইবনে রাবাহ ও আম্মার ইবনে ইয়াসির গোলাম ছিলেন। সালমান ফারসী ক্ষুরকার ও খেজুর গাছে পরাগায়নের কাজ করতেন। বারা ইবনে আযেব ও যায়েদ বিন আরকাম ছিলেন ব্যবসায়ী। (ইত্তিকাউল হারাম ওয়াশ শুবুহাত ফি চলাবির রিযক, পৃঃ ৬৮)।

উপরোক্ত মহান ব্যক্তিদের কর্মজীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা কি হালাল জীবিকা গ্রহণ করতে পারি না? যাতে আমাদের জীবন হবে কল্যাণকর। আর যাবতীয় হারাম জীবিকা ও হারাম উপার্জন, যেমন সূদী কারবার ও সূদের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চাকরী করা, ওযনে কম দেওয়া ইত্যাদি হারাম ও নিষিদ্ধ কর্ম হতে বিরত থাকা যরূরী। কারণ পরকালে আল্লাহ মানুষের উপার্জিত সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন।

রাসূল (ছাঃ) বলেন,

ইবনু মাসউদ (রাঃ) নাবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন : কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের পদদ্বয় একটু নড়তে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। ১. তার বয়স সম্পর্কে, সে তা কী কাজে ব্যয় করেছে? ২. তার যৌবন সম্পর্কে, সে তা কী কাজে ক্ষয় করেছে? ৩. তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, সে তা কোথা হতে অর্জন করেছে? ৪. আর তা কোথায় ব্যয় করেছে? এবং ৫. যে জ্ঞানার্জন করেছিল, সে অনুযায়ী কী ’আমাল করেছে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৯৭, সুনান আততিরমিযী ২৪১৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ ৯৪৬, সহীহুল জামি ৭২৯৯, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ১২৮, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৯৪৬, ইয়া'লা ৫২৭১, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৯৬৫৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ দ্বারা ক্রয়কৃত খাদ্য ভক্ষণ করলে সেই দেহ জান্নাতে যাবে না

হারাম বা অবৈধ উপায়ে অর্থ বা সম্পদ উপার্জনের মাধ্যমগুলো যেমন সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতী, ছিনতাই, ওজনে কম দেয়া, মিথ্যে কথা বলে পণ্য বিক্রি করা, নারী পাচার করা, যিনার মূল্য, কুকুরের মূল্য ইত্যাদি ইত্যাদি এর সাথে যারা জড়িত তারা জান্নাতে যাবে না।

হালাল রিজিক ইবাদত কবুলের অন্যতম প্রধান শর্ত। রিজিক হালাল বা পবিত্র এবং বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে।

প্রথমতঃ ব্যবহার্য, ভোগ্য বা উপভোগ্য বস্তু বা বিষয়টি হালাল তথা পবিত্র ও অনুমোদিত হতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ তা প্রাপ্তি বা অর্জনের পথ বা মাধ্যম হালাল বা বৈধ হতে হবে। এ দুইয়ের কোনো একটির ব্যত্যয় ঘটলে ঐ রিজিক হালাল বা পবিত্র হবে না।

রাসুল সাঃ বলেন,

(ক) আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে, সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৭, সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল ঈমান ৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহের গোশত/গোশত হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭২, আহমাদ ১৪৪১, শু‘আবুল ঈমান ৮৯৭২, দারিমী ২৭৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : ’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ’মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ১৭২)।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের সামনে এমন একটি যুগ আসবে, যখন কেউ কি উপায়ে ধন-সম্পদ উপার্জন করলো, হারাম না হালাল উপায়ে- এ ব্যাপারে কেউ কোনো প্রকার পরোয়া করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৫৯, ২০৮৩,  নাসায়ী ৪৪৫৪, সহীহ আল জামি‘ ৮০০৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭২২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯১৬ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৩১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর এ উভয়ের মধ্যে এমন অনেক সন্দেহভাজন বিষয় বা বস্ত্ত আছে, যে ব্যাপারে অনেক মানুষই এগুলো হালাল, কি হারাম- এ বিষয়ে অবগত নয়। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় হতে বিরত থাকবে, তার দীন ও মান-মর্যাদা পুত-পবিত্র থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত থাকবে, সে সহসাই হারামে জড়িয়ে পড়বে। বিষয়টি সেই রাখালের ন্যায়, যে রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার কাছাকাছি নিয়ে চরালো, তার পাল অজান্তেই নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

সাবধান! প্রত্যেক দায়িত্বশীলেরই (প্রশাসন বা সরকারেরই) চারণভূমি (নিষিদ্ধ এলাকা) আছে, আর আল্লাহ তা’আলার নিষিদ্ধ চারণভূমি হারামসমূহকে নির্ধারিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, মানব দেহের ভিতরে একটি গোশতপিন্ড আছে, যা ভালো থাকলে গোটা শরীরই ভালো থাকে। আর এটি নষ্ট হয়ে গেলে বা বিকৃতি ঘটলে সমস্ত শরীরটাই নষ্ট হয়ে যায়। সেই গোশতপিন্ডটিই হলো ’কলব’ (অন্তঃকরণ)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২০৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ৩৩৩০, আহমাদ ১৮৩৭৪, দারিমী ২৫৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

(ক) “হে মানবগণ! পৃথিবীর মধ্যে যা বৈধ-পবিত্র, তা হতে ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”। (সুরা আলবাক্বারাহ  ১৬৮)।

(খ) “হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যা জীবিকা স্বরূপ দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাকো”। (সুরা আলবাক্বারাহ  ১৭২)।

(গ) “হে রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র বস্তু হতে আহার করুন ও সৎকর্ম করুন; আপনারা যা করেন সে সম্বন্ধে আমি অবগত”। (সুরা মুমিনূন ৫১)।

হারাম উপায়ে উপার্জিত কিছু খাত

 (ক) রাফি’ বিন খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুকুর বিক্রয়লব্ধ মূল্য ঘৃণিত বস্তু, যিনা-ব্যভিচারের বিনিময়ও ঘৃণিত, শিঙ্গা লাগানোর (রক্তমোক্ষণের) ব্যবসা ঘৃণিত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ৩৪২১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৭৫, আহমাদ ১৫৮২৭, দারিমী ২৬৬৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০৭৭, সহীহাহ্ ৩৬২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারের বিনিময় এবং গণকের পারিতোষিক (গ্রহণ করা) হতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৭, ২২৮২, ২৩৪৬, ৫৭৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৫৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৭, ২২৮২, ৫৩৪৬, ৫৭৬১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৩৩, ১২৭৬, নাসায়ী ৪২৯২, ৪৬৬৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪২৮, ৩৪৮১, আহমাদ ১৬৬২২, ১৬৬২৬,১৬৬৩৯ মুয়াত্তা মালেক ১৩৬৩, দারেমী ২৫৬৮,  ইরওয়া ১২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৫৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ  ২০৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য ও পাঠার ভাড়া গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮৪, নাসায়ী ৪২৯৩, ৪৬৭৩, আহমাদ ৭৯১৬, ৮১৮৯, ৯১০৮, ১০১১১, দারেমী ২৬২৩, ২৬২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিড়ালের মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৭৯, নান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮০, নাসায়ী ৪২৯৫, ৪৬৬৮, আহমাদ ১৪২৪২, ১৪৩৫৩, ১৪৭২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তমোক্ষণ কাজের বিনিময়, কুকুর বিক্রয় মূল্য ও যিনা-ব্যভিচারের বিনিময় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লা’নাত (অভিসম্পাত) করেছেন সুদগ্রহীতা ও সুদদাতার প্রতি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো লা’নাত করেছেন ওই ব্যক্তির প্রতি যে দেহের কোনো অংশে নাম বা চিত্রাঙ্কন করে ও করায়। তাছাড়াও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছবি অঙ্কনকারীর প্রতিও লা’নাত করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৬২, ২০৮৬, আহমাদ ১৮৭৬৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫৫২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা গায়িকা বেচা-কেনা করো না তাদেরকে (মেয়েদেরকে) গান শিক্ষাও দিয়ো না, এর মূল্য হারাম। এ জাতীয় কাজ যারা করে তাদের ব্যাপারেই কুরআন মাজীদের এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, অর্থাৎ- ’’কতক মানুষ আল্লাহ্র পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশে অজ্ঞতাবশত অবান্তর কথাবার্তা ক্রয় করে আর আল্লাহ্র পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদের জন্যই আছে অবমাননাকর শাস্তি।’’- (সূরা লুকমান ৩১ : ৬)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৮২, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬৮, সহীহ আল জামি ৫০৯১, সহিহাহ ২৯২২)। (হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)-ইবনে মাজাহ সূত্রে)।

(ছ) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আবূ বকর (রাঃ)-এর একটি ক্রীতদাস ছিল। দাসটি তাঁর জন্য রুযী-রোজগার করতো এবং তিনি তা খেতেন। একবার সেই ক্রীতদাসটি কোনো খাবার নিয়ে এলে আবূ বকর (রাঃ) তা খেলেন। ক্রীতদাসটি তাঁকে বললেন, আপনি কি জানেন- এটা কিভাবে উপার্জিত হয়েছে? আবূ বকর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ মাল কিভাবে উপার্জিত? তখন ক্রীতদাসটি বললো, জাহিলী যুগে একবার আমি এক ব্যক্তির কাছে গণকের কাজ করেছিলাম, অথচ আমি গণনার কাজও ভালো করে জানতাম না। আমি গণনার ভান করে তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম। ঐ ব্যক্তির সাথে আজ আমার দেখা হলে সে আমাকে আগের ঐ গণনার বিনিময়ে বস্তুটি দান করেছে, আপনি তাই খেয়েছেন। তিনি বলেন, (এ কথা শুনামাত্র) আবূ বকর(রাঃ) গলার ভিতরে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে পেটের সব জিনিস বমি করে ফেলে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৮৪২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ)  আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন পথে পড়ে থাকা একটি খেজুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ খেজুর যাকাত বা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হবার সন্দেহ না থাকলে আমি উঠিয়ে খেয়ে নিতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮২১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৩১, ২০৫৫,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩৬৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৭১, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক্ব ১৮৬৪২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩৬, ইরওয়া ১৫৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাতি হাসান ইবনু ’আলী (রাঃ) সদাক্বার খেজুর হতে একটি খেজুর উঠিয়ে মুখে পুরলেন। (তা দেখে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খেজুরটি মুখ থেকে বের করে ফেলো, বের করে ফেলো। (তিনি এ কথাটি এভাবে বললেন যেন হাসান তা মুখ থেকে বের করে ফেলে দেয়)। তারপর তিনি তাঁকে বললেন, তুমি কি জানো না যে, আমরা (বানী হাশিম) সদাক্বার মাল খেতে পারি না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬৯, আহমাদ ৯৩০৮, দারিমী ১৬৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩২৩১, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৪৭৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঞ) জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর তথায় অবস্থানকালে বলেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মদ, মৃতজমত্ত, শুকর ও মূর্তির ক্রয়-বিক্রয় হারাম করেছেন। তাঁকে বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মৃত জন্তুর চর্বি সম্পর্কে কী বলেন? কারণ এটি নৌকায় লাগানো হয়, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহৃত হয় এবং লোকেরা তা দিয়ে বাতিও জ্বালায়। তিনি বলেনঃ না, এগুলোও হারাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ ইহূদীদের ধ্বংস করুন। আল্লাহ তাদের জন্য চর্বি হারাম করলে তারা এটি গলিয়ে বিক্রয় করে এবং এর মূল্য ভোগ করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৬, ৪৬৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৮১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৯৭, নাসায়ী ৪২৫৬, ৪৬৬৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮৬, বায়হাকী ৯/৩৫৫, ইবনু হিব্বান ৪৯৩৭, ইরওয়া ১২৯০, রাওদুন নাদীর ৪৪৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এগুলো ছাড়াও হারাম উপায়ে অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন খাত রয়েছে, যেমন সুদ খাওয়া, সুদীকারবারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা, ঘুষ নেয়া, দুর্নীতি করা, সুপারিশের করে টাকা নেয়া, নাটক সিনেমায় অভিনয় করা, চাঁদাবাজি করা, টেন্ডারবাজি করা, চুরি করা, ডাকাতি করা, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা, যেকোনো অবৈধ ব্যবসা করা, ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে কর্মরত থাকা অবস্থায় আলাদাভাবে রোগী দেখে টাকা নেয়া কিংবা অন্য কোথাও রেফার্ড করে বা টেস্ট করিয়ে তার কমিশন নেয়া, ঘুষ নিয়ে রায় দেয়া, ঘুষ নিয়ে মামলার রিপোর্ট পরিবর্তন করা আর কতো লিখবো এরকম হাজার হাজার অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের খাত আছে। যারা এসব খাতের সাথে জড়িত তাদের উপার্জিত অর্থ হারাম। হারাম খেলে দেহও হারাম হয়ে যায়। তাদের ইবাদত, আমল বা দান খয়রাত আল্লাহ তায়ালা কখনো কবুল করবেন না। রাসুল সাঃ বলেন,

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবূল করেন না এবং হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের দান-খয়রাত কবূল করেন না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১, আহমাদ ৪৬৮৬, ৪৯৪৯, ৫১০২, ৫১৮৩, ৫৩৯৬, ইরওয়াহ ১২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সকল মুমিন নর-নারীর উচিত হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহের গোশত/গোশত হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭২, আহমাদ ১৪৪১, শু‘আবুল ঈমান ৮৯৭২, দারিমী ২৭৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরও বলেন, 

কাব ইবনু উজরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে কা’ব ইবনু উজরা! আমার পরে যেসব নেতার উদয় হবে আমি তাদের (খারাবী) থেকে তোমার জন্য আল্লাহ তা’আলার সহায়তা প্রার্থনা করি। যে ব্যক্তি তাদের দ্বারস্থ হলো (সান্নিধ্য লাভ করলো), তাদের মিথ্যাকে সত্য বললো এবং তাদের স্বৈরাচার ও যুলুম-নির্যাতনে সহায়তা করলো, আমার সাথে এ ব্যক্তির কোন সম্পর্ক নেই এবং এ ব্যক্তির সাথে আমারো কোন সংস্রব নেই। এ ব্যক্তি কাওসার’ নামক হাউজের ধারে আমার নিকট আসতে পারবে না।

অপরদিকে যে ব্যক্তি তাদের দ্বারস্থ হলো (তাদের কোন পদ গ্রহণ করলো) কিন্তু তাদের মিথ্যাকে সত্য বলে মানল না এবং তাদের স্বৈরাচার ও যুলুম-নির্যাতনে সহায়তা করলো না, আমার সাথে এ ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে এবং এ ব্যক্তির সাথে আমারও সম্পর্ক রয়েছে। শীঘ্রই সে কাওসার’ নামক হাউজের কাছে আমার সাথে দেখা করবে। হে কা’ব ইবনু উজরা নামায হলো (মুক্তির) সনদ, রোযা হলো মজবুত ঢাল (জাহান্নামের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক) এবং সাদাকা (যাকাত বা দান-খয়রাত) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়, যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। হে কাব ইবনু উজরা! হারাম (পস্থায় উপার্জিত সম্পদ) দ্বারা সৃষ্ট ও পরিপুষ্ট মাংস (দেহ)-এর জন্য (জাহান্নামের) আগুনই উপযুক্ত। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৬১৪, তালীকুর রাগীব (৩/১৫, ১৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরও বলেন, 

আবূ বারযা আল-আসলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দার পদদ্বয় (কিয়ামত দিবসে) এতটুকুও সরবে না, তাকে এ কয়টি বিষয় সম্পর্কে যে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ না করা হবে? কিভাবে তার জীবনকালকে অতিবাহিত করেছে; তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী কি আমল করেছে; কোথা হতে তার ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে ও কোন কোন খাতে ব্যয় করেছে এবং কি কি কাজে তার শরীর বিনাশ করেছে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪১৭, তাখরীজ ইকতিযাউল ইলমি আল-আমল (১৫/১), দারেমী ৫৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাই আসুন, আমরা হারাম থেকে বেঁচে থাকি এবং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ মোতাবেক আমাদের সার্বিক জীবন পরিচালনা করি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!

 (সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন

(MSHRC)

------------------------------

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...