বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
কোরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক দ্বীনী প্রশ্নোত্তর- (আকিদা'হ ও তাওহীদ বিষয়ক)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর-
মহান আল্লাহ্ কোথায় আছেন?
মহান আল্লাহ্ আছেন সাত আসমানের উর্ধ্বে আরশের উপর। তিনি বলেছেন "পরম দয়াময় আরশে সমুন্নত" (সুরা ত-হাঃ ৫)।
তিনি স্রষ্টা, সৃষ্টি থেকে উর্ধ্বে থাকেন। তবুও তিনি বান্দার নিকটবর্তী। তার জ্ঞান ও
দৃষ্টি সর্বত্র আছে। মুমিনের হৃদয়ে তার যিকর বা স্মরণ থাকে।
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
মহান আল্লাহ্ কি নিরাকার, নাকি
তার আকার আছে?
মহান আল্লাহ্র আকার আছে। তিনি
নিরাকার নন। তবে সেই আকার কেমন, তা কেউ জানে না। তিনি বলেছেন "কোন কিছুই তার সদৃশ
নয়, তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা " (সুরা শূরাঃ১১) তাকে বেহেশতে দেখা যাবে। তার
দীদারই হবে বেহেশতে সবচেয়ে বড় সুখ। মহানবী (সাঃ) স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। তিনি বলেছেন,
আমি আমার প্রতিপালককে সবচেয়ে সুন্দর আকৃতিতে দর্শন করেছি (৪) -(৪) আহমাদ, তিরমিজী,
সহিহুল জামে' ৫৯নং
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
যে মসজিদে কবর আছে, সে মসজিদে
নামাজ হয় না। মসজিদে কবর দেওয়া অথবা কবরের উপরে মসজিদ বানানো বৈধ নয় কেন? অথচ মহানবী
(সাঃ) এর কবর মসজিদের ভিতরে রয়েছে।
বৈধ নয়, যেহেতু মহানবী (সাঃ)
তা নিষেধ করে গেছেন। আর তার কবর মসজিদের ভিতরে মনে হলেও তাতে কিন্তু বৈধতার দলীল নেই।
কারনঃ
প্রথমতঃ মসজিদে নববী নবী (সাঃ) নিজে বানিয়েছেন। সুতরাং তার কবরের উপর
মসজিদ হয়নি।
দ্বিতীয়তঃ তার ইন্তেকালের পর তার কবর মসজিদ হয়নি। বরং তার কবর হয়েছিল মা
আয়েশা (রাঃ) ঘরের ভিতরে।
তৃতীয়তঃ মসজিদে নববী সম্প্রসারণের সময় মা আয়েশার ঘর যখন মসজিদের শামিলে
আনা হয়, তখন তা সাহাবাগনের ঐক্যমতে ছিল না। বরং সেই সময় অধিকাংশ সাহাবা পরলোকগত। আর
তা ছিল প্রায় ৯৪ হিজরীতে। যে সকল সাহাবা তখন বর্তমান ছিলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই সে
কাজের প্রতিবাদ করেছেন। তাবেঈনদের মধ্যে যারা প্রতিবাদ করেছেন, তাদের মধ্যে সাঈদ বিন
মুসাইয়িব অন্যতম।
চতুর্থতঃ মা আয়েশার হুজরা মসজিদে শামিল হওয়ার পরেও কবর মসজিদে নয়। বরং
তা পৃথক কক্ষে সংরক্ষিত আছে। তিন তিনটি দেওয়াল ও রেলিং দিয়ে তা পৃথক করা আছে। ভিতরের
দেওয়াল দেওয়া আছে তিনকোণা আকারে, যাতে তার পশ্চাতে কেউ নামায পড়তে দাঁড়ালে সরাসরি কবর
সামনে না পড়ে ।
বলা বাহুল্য, মহানবী (সাঃ) এর
কবর দেখে মসজিদের ভিতর কবর দেওয়ার বৈধতার দলীল পেশ করা শুদ্ধ নয়। (৫)-(৫) ইবনে উষাইমীন
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
আহলে কিতাব (ইয়াহুদী- খ্রিষ্টান)
কি কাফের?
মহান আল্লাহ্ই তাদেরকে মুশরিক
ও কাফের গণ্য করেছেন। তিনি বলেছেন "আর ইয়াহুদীরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র এবং
খ্রিষ্টানরা বলে, মসীহ আল্লাহর পুত্র । এটা তাদের মুখের কথা মাত্র (বাস্তবে তা কিছুই
নয়)। তারা তো তাদের মতই কথা বলছে, যারা তাদের পূর্বে অবিশ্বাস করেছে। আল্লাহ্ তাদেরকে
ধ্বংস করুন, তারা উল্টা কোন দিকে যাচ্ছে! তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের পণ্ডিত-পুরোহিতদেরকে
প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মারইয়াম পুত্র মসীহকেও। অথচ তাদেরকে শুধু এই আদেশ করা হয়েছিল
যে, তারা শুধুমাত্র একক উপাস্যের উপাসনা করবে, যিনি ব্যাতিত (সত্য) উপাস্য আর কেউই
নেই, তিনি তাদের অংশী স্থির করা হতে পবিত্র " (সুরা তাওবাহঃ ৩০-৩১)
নিশ্চয় তারা অবিশ্বাসী (কাফের)
যারা বলে মারইয়াম তনয় মসীহই আল্লাহ্ (সুরা মায়ীদাহঃ ১৭,৭২)
আর মহানবী (সাঃ) বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ আছে! এই উম্মতের যে কেউ, ইয়াহুদী অথবা খ্রিষ্টান আমার কথা শুনবে, অতঃপর সে আমি যা দিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার প্রতি ঈমান না এনে মারা যাবে, সে জাহান্নামবাসী হবে। (৬)
সুতরাং রাজনৈতিক তোষামোদির কারনে কাফেরকে কাফের মনে না করা, কাফেরদের ভজনালয়কে আল্লাহর ঘর ধারনা করা কুফরী (৭), (৬) মুসলিম (৭) ইবনে উষাইমিন
আর মহানবী (সাঃ) বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ আছে! এই উম্মতের যে কেউ, ইয়াহুদী অথবা খ্রিষ্টান আমার কথা শুনবে, অতঃপর সে আমি যা দিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার প্রতি ঈমান না এনে মারা যাবে, সে জাহান্নামবাসী হবে। (৬)
সুতরাং রাজনৈতিক তোষামোদির কারনে কাফেরকে কাফের মনে না করা, কাফেরদের ভজনালয়কে আল্লাহর ঘর ধারনা করা কুফরী (৭), (৬) মুসলিম (৭) ইবনে উষাইমিন
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
কবরপূজা কি ইসলামের শরীয়ত সমর্থিত?
না। কবরপূজা, আস্তানাপূজা ইত্যাদি
ইসলামে কোন পূজা নেই। ইসলামে আছে ইবাদত। আর তা কেবলমাত্র মহান আল্লাহ্র জন্য। কবরপূজা
মূর্তিপূজার শামিল। কবরকে কেন্দ্র ক’রে তাওয়াফ করা, নযর বা মানত মানা, কবরকে সিজদা
করা, কবরবাসীর কাছে কামনা বা প্রার্থনা করা ইত্যাদি শিরকে আকবর। এমন কাজে মুসলিম ইসলাম
থেকে খারিজ হয়ে যায়। কবরকে উঁচু করা, কবর বাঁধানো, রং করা, তার উপর চাদর চড়ানো, তার
উপর ঘর বা গম্ভুজ নির্মাণ করা, কবরের পাশে বাতি বা ধুপধুনো দেওয়া, উরস করা ইত্যাদিতেও
ইসলামের অনুমোদন নেই। (৮) (বিস্তারিত তাওহীদের পুস্তাকাবলীতে দ্রষ্টব্য)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
আল্লাহ্র নবী (সঃ) কি হাযির-নাযির?
আল্লাহ্র নবী (সঃ)-এর ইন্তিকালের
পর তাঁর দেহ মা আয়েশার ঘরে সমাহিত আছে এবং তাঁর রূহ আছে জান্নাতে। সে এক ভিন্ন জগৎ।
সে (মধ্য) জগৎ ও এ (পার্থিব) জগতের মাঝে আছে যবনিকা। সে জগৎ থেকে তিনি এ জগতের কোথাও
হাযির (উপস্থিত) ও নাযির (পরিদর্শন) বা বিরাজমান হতে পারে না। তিনি না বিদআতী মীলাদের
সময়, আর না অন্য কোন শুভ সন্ধিক্ষণে এসে উপস্থিত হতে পারেন। সে জগৎ থেকে তিনি এ জগতের
কোন খবর ও জানতে পারেন না। ভক্তির আতিশয্যে শুধু বিশ্বাস করলেই হয় না, বাস্তবে তাঁর
দলীল-প্রমাণ থাকা আবশ্যক।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, মহান
আল্লাহ্ও সর্বত্র বিরাজমান নন। বরং তাঁর জ্ঞান, দৃষ্টি ও সাহায্য গগণে-ভুবনে সর্বত্র
আছে। আর তিনি আছে সকল সৃষ্টির ঊর্ধ্বে আরশের উপরে।
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
‘ইয়া রাসুলুল্লাহ’, ‘ইয়া আলী’,
বা ‘ইয়া জীলানী’, বলা বৈধ কি?
উদ্দেশ্য যদি আপদে-বিপদে আহবানে
বা সাহায্য প্রার্থনা করা হয়, তাহলে তা শিরকে আকবর। এমন শিরক মুসলিমকে ইসলাম থেকে খারিজ
ক’রে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, “অথবা
তিনি, যিনি আর্তের আহবানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং বিপদ-আপদ দূরীভূত করেন এবং
তোমাদেরকে পৃথিবীর প্রতিনিধি করেন। আল্লাহ্র সঙ্গে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা
অতি সামান্যই উপদেশ গ্রহণ ক’রে থাক।" (নামলঃ৬২)
“সে,
ব্যাক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহ্র পরিবর্তনে এমন কিছুকে ডাকে, যা কিয়ামত
দিবস পর্যন্তও তাঁর ডাকে সাড়া দেবে না? আর তারা তাঁদের ডাক সম্বন্ধে অবহিতও নয়।”(আহকাফঃ৫)
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, কোন
সৃষ্টির কাছে সাহায্য প্রার্থনার আহবান তিন শর্তে বৈধঃ
১। যার নিকট সাহায্য চাওয়া হবে, তাঁকে পার্থিব জীবনে জীবিত থাকতে হবে।
১। যার নিকট সাহায্য চাওয়া হবে, তাঁকে পার্থিব জীবনে জীবিত থাকতে হবে।
২। তাকে উপস্থিত বা আহবান শুনতে
পাচ্ছে এমন অবস্থায় থাকতে হবে।
৩। যে সাহায্য চাওয়া হচ্ছে,
সে সাহায্য করার মতো তাঁর ক্ষমতা থাকতে হবে। ৯
৯ (দলীল ‘তাওহীদ-কৌমুদী’তে দ্রঃ)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
আল্লাহ ছাড়া কেউ কি ‘বিপত্তারণ’
বা ‘গওস পাক’ আছে?
আল্লাহ ছাড়া কেউ ‘বিপত্তারণ’
বা ‘গওস’ নেই। সুতরাং বিপদে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকতে হবে, একমাত্র তারই কাছে সাহায্য
চাইতে হবে। বিপদে ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, ইয়া আলী, ইয়া জীলানী’ বলে সাহায্য চাওয়া শিরকে
আকবর। মহান আল্লাহ বলেন,
“অথবা
তিনি, যিনি আর্তের আহবানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং বিপদ-আপদ দূরীভূত করেন এবং
তোমাদেরকে পৃথিবীর প্রতিনিধি করেন। আল্লাহ্র সঙ্গে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা
অতি সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করে থাক।”(নামলঃ৬২)
মহানবী (সঃ) বলেন, “যখন তুমি
চাইবে, তখন আল্লাহ্র কাছেই চেয়ো। আর যখন তুমি প্রার্থনা করবে, তখন একমাত্র আল্লাহ্র
কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করো।” ১০-১০ (তিরমিযী)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
মহানবী (সঃ) কি আমাদের মতো মানুষ
ছিলেন?
মহানবী (সঃ) আমাদের মত রক্ত,
গোশত ও অস্তির গড়া মানুষ ছিলেন। আমাদের মত পিতার ঔরসে ও মাতার গর্ভে তাঁর জন্ম হয়েছিল।
আমাদের মত তিনি খেতেন, পান করতেন। সুস্থ-অসুস্থ থাকতেন। বিস্মৃত হতেন, স্মরন করতেন।
বিবাহ-শাদী করেছেন, তাঁর একাধিক স্ত্রী ছিল। তিনি সন্তানের জনক ছিলেন। ব্যবসা- বাণিজ্য
করতেন। দুঃখণ্ডশোক, ব্যাথা ও যন্ত্রণা অনুভব করতেন। তাঁর প্রস্রাব- পায়খানা হত এবং
তা অপবিত্র ছিল। তাঁর নাপাকীর উযু-গোসলের প্রয়োজন হতো। ১১ জীবিত ছিলেন, ইন্তিকাল
করেছেন। মানুষের সকল প্রকৃতি ও প্রয়োজন তাঁর মাঝে ছিল।
মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সঃ)-কে
বলেছেন,
তুমি বল, ‘আমি তো তোমাদেরই মতই
একজন মানুষ; আমার প্রতি প্র্যত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের উপাস্যই একমাত্র উপাস্য; সুতরাং
যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে
কাউকেও শরীক না করে।’(কাহফঃ ১১০, হা-মীম সাজদাহঃ৬)
পক্ষান্তরে কোন মানুষই তাঁর
মত (সমান) নয়। আমরা তাঁর মতো মানুষ নই। অতিপ্রাকৃত বিষয়ে কেউই তাঁর মতো নয়। তিনি একটানা
রোযা রাখতেন। সাহাবীগন তাঁর মতো রোযা রাখতে চাইলেন। তিনি বললেন, ‘এ বিষয়ে তোমরা আমার
মতো নও। আমি তো রাত্রি অতিবাহিত করি, আর আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান।’১২
তাঁর দেহের ঘাম ছিল সুগন্ধি।
একদা তিনি উম্মে সুলাইম (রঃ)'র ঘরে এসে শুয়ে ঘুমিয়ে গেলেন। তিনি ঘর্মাক্ত হলে উম্মে
সুলাইম সেই ঘাম জমা করতে লাগলেন। তিনি জেগে উঠে তা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী ব্যাপার
উম্মে সুলাইম?’ বললেন ‘আপনার ঘাম। আমাদের সুগন্ধিতে মিশিয়ে দেব। আর তা হবে শ্রেষ্ঠ
সুগন্ধি।’১৩
তিনি বিশেষ ক’রে নামাযে সামনে
যেমন দেখতেন, তেমনি পিছনেও দেখতেন। একদা এক নামাযের সালাম ফিরে তিনি বললেন, “তোমরা
তোমাদের রুকু ও সিজদাকে পরিপূর্ণভাবে আদায় কর। সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রান
আছে, আমার নিকট তোমাদের রুকু, সিজদাহ ও বিনয়-নম্রতা অস্পষ্ট নয়। আমি আমার পিঠের পিছনে
থেকে দেখতে পাই, যেমন সামনে দেখতে পাই। ১৪
তাঁর চক্ষু নিদ্রাভিভূত হতো,
কিন্তু হৃদয় নিদ্রাভিভূত হতো না। ১৫
তাঁর দেহ ও দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন
চুল, থুথু, তাঁর ব্যবহারিত জিনিস ইত্যাদি বরকতময় ছিল। ১৬
১১ (তিরমিযী ২৪৯১নং) । ১২ (মুসলিম
১১০৩, মিশকাত ১৯৮৬ নং) । ১৩ (মুসলিম ৬২০১নং)
১৪ (আহমাদ ৯৭৯৬, বুখারী ৪১৮, মুসলিম ৯৮৬, হাকেম ১/৩৬১, ইবনে খুজাইমা ৪৭৪, মিশকাত ৮৬৮ নং)
১৪ (আহমাদ ৯৭৯৬, বুখারী ৪১৮, মুসলিম ৯৮৬, হাকেম ১/৩৬১, ইবনে খুজাইমা ৪৭৪, মিশকাত ৮৬৮ নং)
১৫ (বুখারী ৮৫৯, ১১৪৭, মুসলিম
১৭৫৭, ১৮২৬, আবূ-দাঊদ ২০২, তিরমিযী ৪৩৯, নাসাঈ ৬৯৭ নং), ১৬ (বুখারী, মুসলিম ৩২১৩ নং)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
মহানবী (সঃ) কি মাটির তৈরি ছিলেন,
নাকি নূরের তৈরি ছিলেন?
নূরের তৈরি ফিরিশতামণ্ডলী। মহানবী
(সঃ) আদমের অন্যতম সন্তান। সুতরাং তারাও আদিসৃষ্টি মাটি থেকেই।
তিনি আল্লাহ্র তরফ থেকে অন্ধকারে
নিমজ্জিত পথভ্রষ্ট মানুষের জন্য প্রেরিত নূর (জ্যোতি বা আলো) ছিলেন। সেই নূর বা আলোতে
জাহেলিয়াতে তমসাচ্ছন্ন যুগ ও সমাজ আলোকিত হল। অন্ধকারে দিশাহারা মানুষ সেই আলোকবর্তিকায়
সরল পথের দিশা পেল। তাঁর দেহ নূরানি ছিল, কিন্তু তিনি নূর বা নূর থেকে সৃষ্টি ছিলেন
না। মহান আল্লাহ্র সৃষ্টি বৃত্তান্তে একমাত্র ফিরিশতাই নূর থেকে সৃষ্টি। আর নবী মুস্তফা
(সঃ) ফিরিশতা ছিলেন না।১৭ সর্বপ্রথম আল্লাহপাক আরশ ও কলম সৃষ্টি করেন।১৮ নূরে
মুহাম্মাদী আল্লাহ্র প্রথম সৃষ্টি নয়। পক্ষান্তরে যে হাদীসে নূরে মুহাম্মাদীর কথা
বলা হয়েছে, তা জাল বা বাতিল হাদীস।
১৭ (কুরান৬/৫০) । ১৮ (আহমাদ
৫/৩১৭)
যারা ‘নবী’কে ‘খোদা’ বলে বিশ্বাস
রাখে, তাঁদের বিধান কি?
তাঁরা খ্রিস্টানদের মতো কাফের।
মহান আল্লাহ বলেছেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে কাফের, যারা বলে, ‘আল্লাহ্ই মারয়্যাম-তনয় মাসীহ।’
অথচ মাসীহ বলেছেন, ‘হে বনী ইস্রাইল! তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর
উপাসনা কর। অবশ্যই যে কেউ আল্লাহ্র অংশী করবে, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর জন্য বেহেশত নিষিদ্ধ
করবেন ও দোযখ তাঁর বাসস্থান হবে এবং অত্যাচারীদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।’ (মায়িদাহঃ৭২)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
নবীর জন্য সারা বিশ্বজগৎ সৃষ্টি
হয়েছে। ---এ ধারনা কি সঠিক?
মোটেই না। ‘লাওলাক’-এর হাদীস
মনগড়া। ভক্তির আতিশয্যে মানুষ এমন অত্যুক্তি রচনা ক’রে প্রচার করেছে। মহান আল্লাহ এ
বিশ্ব রচনা করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। তিনি বলেন, আমি সৃষ্টি করেছি জীন ও মানুষকে কেবল
এ জন্য যে, তাঁরা আমারই ইবাদত করবে। (যারিয়াতঃ ৫৬) আর নবী পাঠিয়েছেন সেই ইবাদতের পদ্ধতি
বাতলে দেওয়ার জন্য।
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
নবি-ওলীর আসীলায় দুআ করা যায়
কি?
না। নবি-আলীর আসীলায় দু’আ করা
যায় না। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সরাসরি দু’আ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
আর আমার দাসগণ যখন আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেসা করে,
তখন তুমি বল, আমি তো কাছেই আছি। যখন কোন প্রার্থনাকারী আমাকে ডাকে, তখন আমি তাঁর ডাকে
সাড়া দিই। অতএব তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমাতে বিশ্বাস স্থাপন করুক, যাতে তাঁরা
ঠিক পথে চলতে পারে। (বাকারাহঃ ১৮৬)
আর মুহাম্মাদ (সঃ)-এর অসীলায়
আদম (আঃ)-এর দুআ করার কথা প্রমাণিত নয়।
পরন্ত প্রমাণের ভিত্তিতে তিন প্রকার আসীলায় দুআ করা যায়ঃ-
পরন্ত প্রমাণের ভিত্তিতে তিন প্রকার আসীলায় দুআ করা যায়ঃ-
১। মহান আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলীর
আসীলায় দুআ।
২। স্বীকৃত নেক আমলের আসীলায়
দুআ।
৩। জীবিত ও উপস্থিত ব্যক্তির
দুআর আসীলায় দুআ।
এ সবের দলীল রয়েছে আকীদার বইগুলিতে।
পক্ষান্তরে শেষ নবী (সঃ)-এর আসীলায় আদম (আঃ)-এর দু’আর হাদীস সহীহ নয়। দলিল-সহ সবিস্তার
দ্রষ্টব্য ‘তাওহীদ-কৌমুদী’।
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
হেতুর উপর ভরসা করলে শিরক কখন
হয়?
হেতুর উপর ভরসা তিন প্রকার হতে
পারেঃ-
১। মানুষ এমন হেতুর উপর পরিপূর্ণ
ভরসা করে, যা আসলেই কোন হেতু নয়। যেমন সন্তান লাভের হেতু স্বরূপ কুমীর-পীরের উপর ভরসা
রাখে। এমন ভরসা শিরকে আকবর, যা করলে মানুষ ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়।
২। এমন হেতুর উপর ভরসা করে,
যা আসলেই শরয়ী ও শুদ্ধ হেতু। কিন্তু হেতুর সংঘটক ও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ভুলে বসে।
এ কাজেও এক প্রকার শিরক, তবে তাতে মানুষ দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে যায় না। যেমন নিজ রুযী-রুটির
ব্যাপারে চাকরি বা ব্যাবসার উপর ভরসা রাখে, আরোগ্যের ব্যাপারে ঔষুধের উপর ভরসা রাখে
আর রুযীদাতা ও আরোগ্যদাতা যে একমাত্র আল্লাহ এবং চাকরি ও ঔষুধ শুধু হেতুমাত্র---
তা ভুলে বসে। এটা শিরকে আসগার।
৩। এমন হেতুর উপর ভরসা করে, যা আসলেই শরয়ী ও শুদ্ধ হেতু। কিন্তু হেতুর সংঘটক ও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্র উপরেই পরিপূর্ণ ভরসা রাখে। সে জানে, আল্লাহ্র ইচ্ছা হলে চাকরি বা ব্যাবসার মাধ্যমে রুযী দেবেন, নচেৎ দেবেন না, ঔষুধ খেলে আল্লাহ্র ইচ্ছায় আরোগ্য হবে, নচেৎ হবে না। এমন কাজ তাওহীদ ও তাওয়াক্কুল-বিরোধী নয়। বরং এমন কাজ তাওহীদবাদী মুসলিমের। পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে আল্লাহ্র উপর, কিন্তু সেই সাথে শরয়ী ও শুদ্ধ হেতু বা আসীলাও ব্যবহার করতে হবে। মহানবী (সঃ) মহান আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা রাখতেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি আঘাত থেকে বাঁচার জন্য শিরস্ত্রাণ ও লৌহবর্ম ব্যবহার করতেন। ১৯
৩। এমন হেতুর উপর ভরসা করে, যা আসলেই শরয়ী ও শুদ্ধ হেতু। কিন্তু হেতুর সংঘটক ও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্র উপরেই পরিপূর্ণ ভরসা রাখে। সে জানে, আল্লাহ্র ইচ্ছা হলে চাকরি বা ব্যাবসার মাধ্যমে রুযী দেবেন, নচেৎ দেবেন না, ঔষুধ খেলে আল্লাহ্র ইচ্ছায় আরোগ্য হবে, নচেৎ হবে না। এমন কাজ তাওহীদ ও তাওয়াক্কুল-বিরোধী নয়। বরং এমন কাজ তাওহীদবাদী মুসলিমের। পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে আল্লাহ্র উপর, কিন্তু সেই সাথে শরয়ী ও শুদ্ধ হেতু বা আসীলাও ব্যবহার করতে হবে। মহানবী (সঃ) মহান আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা রাখতেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি আঘাত থেকে বাঁচার জন্য শিরস্ত্রাণ ও লৌহবর্ম ব্যবহার করতেন। ১৯
১৯ (ইবনে উষাইমীন)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
কোন মাযারের জন্য হাঁস-মুরগী
বা ফল-ফসল মানত করা বৈধ কি?
কোন মাযার বা পীরের জন্য হাঁস-মুরগী
মানত করা, সেখানে তা পেশ করা অথবা যবেহ করা শিরকে আকবর। কারণ নযর ও যবেহ এক প্রকার
ইবাদত। আর সে ইবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য নিবেদন করা হারাম ও শিরক।
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
মুসলিম হওয়ার জন্য কেবল কালেমা
পড়াই কি যথেষ্ট?
অবশ্যই নয়। কালেমা হল ইসলাম-গৃহ
প্রবেশ করার চাবি। প্রবেশ করার পরেও এমন কাজ আছে, যা না করলে সে মুসলিম থাকতে পারে
না। ঈমানের ছয় রুকন ছাড়া আরো অনেক কিছুর প্রতি ঈমান জরুরী। প্রকৃত মুসলিম হতে অনেক
কিছু করার আছে।
মহানবী (সঃ) মুআয (রঃ)-কে ইয়ামান
পাঠাবার সময়ে (তাঁর উদেশ্যে) বললেন, “তাঁদের (ইয়ামানবাসীদেরকে সর্বপ্রথম) এই সাক্ষ্য
দেওয়ার জন্য আহবান জানাবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই,
আর আমি আল্লাহ্র রাসুল। যদি তাঁরা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দেবে যে,
আল্লাহ তাঁদের উপর দিবারাত্রে পাঁচ অক্তের নামাজ ফরয করেছেন। অতঃপর যদি তাঁরা এ কথা
মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তাঁদের উপর যাকাত ফরয করেছেন; যা তাঁদের
মধ্যে যারা (নিসাব পরিমাণ) মালের অধিকারী তাঁদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাঁদের
দরিদ্র ও অভাবী মানুষদের মাঝে তা বণ্ঠন ক’রে দেওয়া হবে।” ২০, ২০
(বুখারী ও মুসলিম)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
‘জন্মে-জন্মে’ বা জন্মে জন্মান্তরে
তোমাকে ভালবাসব ---এ বিশ্বাস কি সঠিক?
যে জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস রাখে,
সে মুসলিম থাকতে পারে না। এ জন্মের পর কেবল একটাই জীবন আছে। আর তা হল হিসাব নিকাশের
জন্য পরকালের পুনরুত্থান। অতঃপর জান্নাত নতুবা জাহান্নাম। মানুষ মারা গেলে পুনরায় মানুষ
হয়ে অথবা নিজ কর্ম অনুযায়ী অন্য কোন জীব-জন্ত হয়ে জন্ম গ্রহণ করে, এমন আকিদা কুফরী।
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
জাতীয় পতাকার তা’যীমে তাঁকে
স্যালুট করা এবং তাঁর সামনে একাগ্রচিত্তে দণ্ডায়মান হওয়া কি মুসলিমের জন্য বৈধ?
মুসলিমের জন্য এ কাজ বৈধ নয়।
এ কাজ আসলে অমুসলিমদের। মুসলিম মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর তা’যীম উদ্দেশ্যে একাগ্রচিত্তে
দণ্ডায়মান হয় না। সুতরাং উক্ত কাজ একটি জঘন্য বিদআত এবং পরিপূর্ণ তাওহিদের পরিপন্থী।
২১
২১ (লাজনাহ দায়েমাহ)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর প্রতি
ঈমানের সাথে তাগুতের প্রতি কুফরী (অর্থাৎ তাগুতকে অস্বীকার) করতে বলেছেন। কিন্তু তাগুত
কাকে বলে?
প্রত্যেক সেই পুজ্যমান
উপাস্য যে আল্লাহ্র পরিবর্তে পুজিত হয় এবং সে তাঁর এই পূজায় সম্মত থাকে অথবা আল্লাহ
ও তদীয় রসুলের অবাধ্যতায় প্রত্যেক অনুসৃত বা মানিত ব্যাক্তিকেই তাগুত বলা হয়।
এ দুনিয়ায় তাগূত বহু আছে।
অবশ্য তাঁদের প্রধান হল পাঁচটিঃ
(১) শয়তান।
(২) আল্লাহ্র বিধান বিকৃতকারী
অত্যাচারী শাসক।
(৩) আল্লাহ্র অবতীর্ণকৃত বিধান
ছেড়ে অন্য বিধানানুসারে বিচারকর্তা শাসক।
(৪) আল্লাহ ব্যতিত ইলমে গায়েব
(গায়েবী বা অদৃশ্য খবর জানার) দাবীদার।
(৫) আল্লাহ্র পরিবর্তে (নযর-নিয়ায,
মানত, সিজদা প্রভৃতি দ্বারা) যার পূজা করা ও যাকে (বিপদে) আহবান করা হয় এবং সে এতে
সম্মত থাকে।
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
তকদীর যদি সত্য হয়, তাহলে কি
আমল বৃথা নয়?
না। তকদীর সত্য এবং তদবীরও সঠিক।
বান্দা নিজ এখতিয়ারে ভাল-মন্দ কর্ম করে। আর মহান আল্লাহ সেই বান্দা ও তাঁর কর্মের সৃষ্টিকর্তা।
বান্দার ভাগ্যে যা লেখা থাকে, তা তাঁর জন্য সহজ হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেছেন,
অবশ্যই তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা বিভিন্নমুখী। সুতরাং যে
দান করে ও আল্লাহকে ভয় করে এবং সৎ বিষয়কে সত্যজ্ঞান করে। অচিরেই আমি তাঁর জন্য সুগম
করে দেব (জান্নাতের) সহজ পথ। পক্ষান্তরে যে কার্পণ্য করে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণও মনে
করে। আর সৎ বিষয়কে মিথ্যাজ্ঞান করে, অচিরেই তাঁর জন্য আমি সুগম ক’রে দেব (জাহান্নামের)
কঠোর পরিণামের পথ। (লাইলঃ ৪-১০)
আর মহানবী (সঃ) বলেছেন,
“তোমরা কাজ ক’রে যাও। যেহেতু যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা
হয়েছে, তাঁর জন্য তা সহজ ক’রে দেওয়া হবে। ২২- ২২
(বুখারী ৪৯৪৯, মুসলিম ৬৯০৩ নং)
এ কথা কি ঠিক যে, যার নাম “মুহাম্মদ”
হবে সে জান্নাতী হবে এবং তাঁকে গালি দেওয়া ও প্রহার করা যাবে না?
এ কথা আদৌ সঠিক নয়। কারো নাম
বা বংশ তাঁকে সন্মান ও মুক্তি দিতে পারে না। আসলে উক্ত কথা নবী (সঃ)-এর নাম নিয়ে অতিরঞ্জন
ও মনগড়া অত্যুক্তি ছাড়া কিছু নয়। ২৩
অনুরূপ এ কথাও মনগড়া যে, যে মেয়ের নাম ‘মার্য়্যাম’, ‘মারিয়াম’ বা ‘মরিয়ম’ হবে সে জাহান্নামে যাবে না। কারণ তা এক নবীর মায়ের নাম। ২৩ (ইবন বায)
অনুরূপ এ কথাও মনগড়া যে, যে মেয়ের নাম ‘মার্য়্যাম’, ‘মারিয়াম’ বা ‘মরিয়ম’ হবে সে জাহান্নামে যাবে না। কারণ তা এক নবীর মায়ের নাম। ২৩ (ইবন বায)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
মানুষের মতো জীনদেরও জান্নাত-জাহান্নাম
আছে? কিন্তু আগুনের তৈরি জীন আগুনে শাস্তি পাবে কীভাবে?
মানুষের মতো জীনেরাও জাহান্নামে
যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, “আমাদের কতক আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)
এবং কতক সীমালঙ্ঘনকারী; সুতরাং যারা আত্মসমর্পণ করে (মুসলমান হয়), তাঁরা নিঃসন্দেহে
সত্য পথ বেছে নেয়। অপরপক্ষে সীমালঙ্ঘনকারীরা তো জাহান্নামেরই ইন্ধন।”(জীনঃ ১৪-১৫)
তারা আগুন থেকে সৃষ্টি হলেও
পরকালে আগুন দ্বারা শাস্তি ও কষ্ট পাবে। কারণ জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার আগুন অপেক্ষা
সত্তর গুণ তেজবিশিষ্ট। অথবা তাদের জন্য থাকবে পৃথক আগুনের ব্যবস্থা।
মানুষ মাটির তৈরি হয়েও যেমন
মাটির আঘাতে কষ্ট পায়, তেমনি জীনও আগুনের তৈরি হয়ে আগুনের দহনে কষ্ট পাবে।, ২৪ (ইবনে
জিবরীন)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
জীন কি মানবদেহে প্রবেশ করতে
পারে?
জীন মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে।
তাঁর প্রমাণ স্বরূপ উলামাগণ বিভিন্ন দলীল উল্লেখ করেন। মহান আল্লাহ বলেন, “যারা সুদ খায় তারা (কিয়ামত) সেই ব্যক্তির মত দণ্ডায়মান হবে, যাকে শয়তান স্পর্শ
দ্বারা পাগল ক’রে দিয়েছে।” ( বাকারাহঃ ২৭৫)
মহানবী (সঃ) বলেছেন, “শয়তান
মানুষের রক্ত-শিরায় প্রবাহিত হয়।” ২৫
এ ছাড়া মহানবী (সঃ) ‘উখরুজ আদুওয়াল্লাহ’
বলে মুখে থুথু দিয়ে জীন বিতাড়িত করেছেন। ২৬, (বুখারী ২০৩৮, মুসলিম ৫৮০৭ নং) | ২৬ (আহমাদ,
ইবনে মাজাহ ৩৫৪৮ নং
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
স্বামী বা ডাক্তার কি ইচ্ছামতো
পুত্র বা কন্যা-সন্তান জন্মাতে পারে?
বিশেষ পদ্ধতিতে চেষ্টা করতে
পারে মাত্র। বাকি সব কিছু আল্লাহ্র হাতে। তিনিই নিজ ইচ্ছামতো পুত্র-কন্যা , সুঠামাঙ্গ-বিকালাঙ্গ,
সুন্দর-অসুন্দর সৃষ্টি করেন। তিনি বলেন, “তিনিই মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছা তোমাদেরকে আকৃতি
গঠন করেন। তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্যিকার) উপাস্য নেই। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”
(আলে ইমরানঃ ৬)
“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন; তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা দান করেন পুত্র-কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাঁকে বন্ধ্যা ক’রে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান।”(শূরাঃ ৪৯-৫০)
“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন; তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা দান করেন পুত্র-কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাঁকে বন্ধ্যা ক’রে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান।”(শূরাঃ ৪৯-৫০)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
মায়ের পেটে কোন সন্তান আছে,
তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। কিন্তু বর্তমানে তো যন্ত্র দ্বারা বলা সম্ভভ হয়েছে। তাহলে
কি কুরআনের ব্যাখ্যা ভুল করা হয়েছে?
না, কুরআনের বক্তব্য ও ব্যাখ্যা
ঠিকই আছে, আল্লাহ ছাড়া কেউ অদৃষ্টের খবর জানে না। কোন যন্ত্রের দ্বারা অদৃশ্যের বস্তুকে
দৃশ্য ক’রে দেখার নাম অদৃশ্যের খবর জানা নয়, বরং বিনা কোন মাধ্যম বা অসীলায় কোন অদৃশ্যের
খবর বলে দেওয়াকে ‘গায়ব জানা’ বলা হয়। আপনার পেটের উপর জামা-গেঞ্জির ভিতরে কি বাঁধা
আছে আমি জানি না, বিনা অসিলায় তা বলে দিতে পারলে আমি গায়েব-জান্তা। কিন্তু কোন যন্ত্র
লাগিয়ে বলে দিলে আমি গায়েব-জান্তা নই।
এইভাবেই মহানবী (সঃ) গায়েব জানতেন
না। কিন্তু তিনি অনেক গায়েবের খবর বলেছেন। যেহেতু তিনি ওহীর মাধ্যমে বলেছেন,
তাই গায়বী খবর বলা সত্ত্বেও তিনি ‘গায়েব-জান্তা’ ছিলেন না। ‘গায়েব-জান্তা’ কেবল মহান
আল্লাহ। তিনি বলেছেন,
বল, ‘আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য
বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং ওরা কখন পুনরুত্থিত হবে। (তাও) ওরা জানে না’(নামলঃ ৬৫)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
আল্লাহ বা তাঁর রাসূল (সঃ)-কে
গালি দিলে কেউ মুসলিম থাকবে কি?
আল্লাহ বা তাঁর রাসূল (সঃ)-এর
বিরুদ্ধে কোন কুমন্তব্য করা, গালি প্রয়োগ করা, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ বা কটাক্ষ করা বড় কুফরী।
মহান আল্লাহ বলেন,
“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তো তাদেরকে
ইহলোকে ও পরলোকে অভিশপ্ত করেন এবং তিনি তাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।”
(আহযাবঃ ৫৭)
তিনি আরও বলেন, “তাদের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে, ‘সে প্রত্যেক কথায় কর্ণপাত ক’রে থাকে।’ তুমি বলে দাও, ‘সে কর্ণপাত তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর। সে আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনায়ন করে এবং মু’মিনদের(কথাকে) বিশ্বাস করে। আর সে তোমাদের মধ্যে বিশ্বাসী লোকেদের জন্য করুণাস্বরূপ। যারা আল্লাহ্র রাসুলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।’ (তাওবাহঃ ৬১)
তিনি আরও বলেন, “তাদের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে, ‘সে প্রত্যেক কথায় কর্ণপাত ক’রে থাকে।’ তুমি বলে দাও, ‘সে কর্ণপাত তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর। সে আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনায়ন করে এবং মু’মিনদের(কথাকে) বিশ্বাস করে। আর সে তোমাদের মধ্যে বিশ্বাসী লোকেদের জন্য করুণাস্বরূপ। যারা আল্লাহ্র রাসুলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।’ (তাওবাহঃ ৬১)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
অনেক সময় নবী (সঃ)-এর হুজরার
আশেপাশে চিরকুট পড়ে থাকতে দেখা যায়, তাতে থাকে নানা আবেদন। সে আবেদন করা হয় নবী (সঃ)-এর
কাছে। কেউ লেখে চাকরি চাই, কেউ লেখে সুখ-সমৃদ্ধি চাই, কেউ কেউ লেখে কিয়ামতে সুপারিশ
চাই, কেউ লেখে ভাল স্বামী চাই ইত্যাদি। নবী (সঃ)-এর দরবারে এমন দরখাস্ত পেশ করার শরয়ী
বিধান কি?
নবী (সঃ)-এর দরবারে এমন দরখাস্ত
পেশ করা শিরকে আকবার। যেহেতু তিনি এ দরখাস্ত সম্পর্কে জানতে পারেন না, এ দরখাস্ত মঞ্জুর
করার মতো ক্ষমতাও তাঁর নেই। এ ক্ষমতা কেবল মহান আল্লাহ্র হাতে। তিনি তাঁকে বলেছেন,
বল, ‘আমি তোমাদেরকে এ বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহ্র
ধনভাণ্ডার আছে, অদৃশ্য সমন্ধেও আমি অবগত নই এবং তোমাদেরকে এ কথাও বলি না যে, আমি ফিরিশতা।
আমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ হয় আমি শুধু তারই অনুসরণ করি!’ বল, ‘অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান?
তোমরা কি অনুধাবন কর না?’ (আনআমঃ ৫০)
বল, ‘আমি তোমাদের অপকার অথবা উপকার কিছুরই মালিক নই।’
(জীনঃ ২১)
মহানবী (সাঃ) তাঁর আত্মীয় ও
বংশকে সম্বোধন করে বলে গেছেন, “হে কুরাইশদল! তোমরা আল্লাহ্র নিকট নিজেদেরকে বাঁচিয়ে
নাও, আমি তোমাদের ব্যাপারে আল্লাহ্র নিকট কোন উপকার করতে পারব না। হে বানী আব্দুল
মুত্তালিব! আমি আল্লাহ্র দরবারে আপনার কোন কাজে আসব না। যে আল্লাহ্র রসূলের ফুফু
সাফিয়্যাহ! আমি আপনার জন্য আল্লাহ্র দরবারে কোন উপকারে আসব না। হে আল্লাহ্র রসূলের
বেটী ফাতেমা! আমার কাছে যে ধন-সম্পদ চাইবে চেয়ে নাও, আমি আল্লাহ্র কাছে তোমার কোন
উপকার করতে পারব না” ২৭ (বুখারী-মুসলিম)
মনের আকুল আবেদন শ্রবণ করেন একমাত্র মহান আল্লাহ। তিনি বলেছেন “অথবা তিনি, যিনি আর্তের আহবানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং বিপদ-আপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীর প্রতিনিধি করেন। আল্লাহ্র সঙ্গে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করে থাক (নামলঃ ৬২), ২৭ (বুখারী-মুসলিম)
মনের আকুল আবেদন শ্রবণ করেন একমাত্র মহান আল্লাহ। তিনি বলেছেন “অথবা তিনি, যিনি আর্তের আহবানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং বিপদ-আপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীর প্রতিনিধি করেন। আল্লাহ্র সঙ্গে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করে থাক (নামলঃ ৬২), ২৭ (বুখারী-মুসলিম)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
এক পীর সাহবে আছেন, যিনি তাঁর
মুরীদদেরকে অসিয়তে বলেন, “পাপের সম্মুখীন হলে আমাকে স্মরণ করো, তাহলে পাপ থেকে বেঁচে
যাবে”। এই শ্রেণীর স্মরণ কি শিরক নয়?
এটি একটি বড় আপত্তিকর ও বড় শিরকের
কাজ। পাপ সামনে এলে পীরকে কেন স্মরণ অরতে হবে? স্মরণ করতে হবে মহান আল্লাহ্কে। ২৮
পাপ কাজের সম্মুখীন হলে আল্লাহ্কে
স্মরণ করে কেবল তারই ভয়ে পাপ বর্জন করতে হবে। পাপ ঘটে গেলে তাকেই স্মরণ করে ক্ষমা প্রার্থনা
করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজের প্রতি যুলুম
করলে আলাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া
অন্য কে পাপ ক্ষমা করতে পারে? এবং তাঁরা যা (অপরাধ) করে ফেলে, তাতে জেনে-শুনে অটল থাকে
না। (আলে ইমরানঃ ১৩৫), ২৮ (ইবনে বায)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
শোনা যায়, আল্লাহ্র চোখ আছে।
এ কথা কি ঠিক?
মহান আল্লাহ্র চোখ আছে। যেহেতু
তিনি নূহ (আঃ) কে বলেছিলেন “আর তুমি আমার চোখের সামনে ও আমার ওহী
(প্রত্যাদেশ) অনুযায়ী নৌকা নির্মাণ কর, আর যালেমদের ব্যাপারে আমাকে কিছু বলো না। নিশ্চয়
তাদেরকে ডুবানো হবে। (হুদঃ৩৭)
আর মহানবী (সাঃ) কে বলেছিলেন, তুমি ধৈর্যধারন কর তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায়; তুমি আমার চোখের
সামনেই রয়েছ। আর তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর যখন তুমি
শয্যা ত্যাগ কর (তূরঃ৪৮)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কানা দাজ্জালের
কথা আলোচনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, “আল্লাহ যে নবীই পাঠিয়েছেন, তিনি নিজ জাতিকে তাঁর ব্যাপারে
ভয় দেখিয়েছেন। নূহ ও তাঁর পরে আগমনকারী নবীগণ তাঁর ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করেছেন।
যদি সে তোমাদের মধ্যে বের হয়, তবে তাঁর অবস্থা তোমাদের কাছে গোপন থাকবে না। তোমাদের
কাছে এ কথা গোপন নয় যে, তোমাদের প্রভু কানা নয়, আর দাজ্জাল কানা হবে। তাঁর ডান চোখ
কানা হবে, তাঁর চোখটি যেন (গুচ্ছ থেকে) ভেসে উঠা আঙ্গুর”। ২৯
হাদিসে “তোমাদের প্রভু কানা
নন” মানেই তাঁর চোখ আছে। অবশ্য তা কেমন তা কেউ বলতে পারে না। ৩০, ২৯ (বুখারী, মুসলিম
৪৪৪ নং) | ৩০ (আলবানী)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
“মালাকুল মাওত” ফিরিশতার নাম
কি আজরাঈল?
এ নাম কুরআন ও সহীহ সুন্নাতে
উল্লেখ হয়নি। এ নামটি ইস্রাইলী বর্ণনা উদ্ভূত। ৩১
৩১ (আলবানী)
কুফর ও শিরক না করেও মানুষ কখন
কাফের হয়?
যখন মুসলিম কোন কবিরা গোনহর
‘হারাম’ কাজকে অন্তরে ‘হালাল’ বিশ্বাস রেখে করে, তখন কাফের হয়ে যায়। ৩২-৩২ (আলবানি)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
নবী (সঃ)-এর নবুয়ত-প্রাপ্তির
আগে যারা মুশারিক অবস্থায় মারা গেছে, তাঁরা জাহান্নামে যাবে কেন? অথচ মহান আল্লাহ বলেছেন,
“আমি রসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দিই না। (বনী ইস্রাইলঃ ১৫)
তাঁরা তাদের শিরক ও কুফরীর কারণে
জাহান্নামে যাবে। তাদের কাছে পূর্বে রসুল এসেছিলেন ইব্রাহীম (আঃ) ও তাঁর পরবর্তীতে
আরও নবী তাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা পৌত্তলিকতা অবলম্বন করে। আর তাঁর
ফলে তাদের শাস্তি হবে। ৩৩-৩৩ (আলবানী)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
কোন কাফের ‘মুসলিম’ হলে কুফরী
অবস্থায় কৃত আমলের সওয়াব সে পাবে কি?
কাফের কোন নেক কাজের সওয়াবই
আখেরাতে পাবে না। যেহেতু সে সওয়াব সে দুনিয়াতেই ভোগ করে নেয়। পক্ষান্তরে সে ইসলাম গ্রহণ
করলে কুফরি অবস্থায় কৃত নেক আমলের সওয়াব আখেরাতে পাবে। মহানবী (সঃ) বলেছেন,
“বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করে এবং তাঁর ইসলাম সুন্দর হয়,
তখন আল্লাহ তাঁর পূর্বকৃত পুণ্যগুলিকেও লিপিবদ্ধ করেন।”৩৪-৩৪ (নাসাঈ ৪৯৯৮ নং, আলবানী)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
ভাল নিয়তে কোন খারাপ কাজ করলে
কি তাঁর সওয়াব পাওয়া যাবে?
খারাপ কাজ ভাল নিয়তে করলে তা
ভাল হয়ে যায় না, তথা তাঁর সওয়াব পাওয়া যায় না। কবরকে সামনে করে ভাল নিয়াতে আল্লাহ্র
উদ্দেশ্যে নামাজ পড়লে কি সেটা ভাল কাজ বলে মনে করা যাবে? অবশ্যই না।৩৫ বরং
ভাল কাজ ভাল নিয়তে করলেও অনেক সময় তা ভাল কাজ হয় না। যখন তা তরীকায় মুহাম্মাদী অনুযায়ী
না করে নিজের অথবা অন্য কারো তারীকা অনুযায়ী করা হয়। ৩৫ (আলবানী)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
আল্লাহ্র রসূল (সঃ)-কে ‘হাবীবুল্লাহ’
বলা উচিত, নাকি ‘খালীলুল্লাহ’?
আল্লাহ্র রসূল (সঃ)-কে ‘খালীলুল্লাহ’
বলা উচিৎ। যেহেতু ‘হাবীবুল্লাহ’ থেকে ‘খালীলুল্লাহ’র মর্যাদা উচ্চতর। তিনি আরও বলেছেন,
“আমি পৃথিবীর কাউকে ‘খালীল’রূপে
গ্রহণ করলে ইবনে আবী কুয়াফাহ (আবূ বকর )কে
খালীল’রূপে গ্রহণ করতাম। কিন্তু
তোমাদের সাথী ‘খালীলুল্লাহ’।৩৬
পক্ষান্তরে তাঁর ‘হাবীবুল্লাহ’
হওয়ার কথা কোন সহীহ হাদীসে আসেনি।৩৭
৩৬ (মুসলিম ৬৩২৬ নং) | ৩৭ (আলবানী)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
মহান আল্লাহর সর্বপ্রথম সৃষ্টি
কি?
মহান আল্লাহ্র প্রথম সৃষ্টি
কলম। মহানবী (সঃ) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ প্রথম যে জিনিস
সৃষ্টি করেন, তা হল কলম। তিনি তাঁকে বললেন, ‘লিখো’। সে বলল, ‘প্রভু! কি লিখব?’ তিনি
বললেন, ‘কিয়ামত পর্যন্ত প্র্যত্যেক জিনিসের ভাগ্য লিখো।’
৩৮ (আবূ দাউদ ৪৭০২, তিরমিযী
২১৫৫ নং)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) কি কিছু
ভুলতেন? যা ভুলে যেতেন, তা কি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে বিধান জারি করার জন্য নয়?
আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) ভুলতেন,
তাঁর নামাজ ভুল হতো, কুরআন পড়তে গিয়ে আয়াত ছুটে যেতো। আর এটা বিধান জারি করারা জন্য
নয়। বরং মানব-মনের সাধারণ প্রকৃতির কারণেই তিনি ভুলতেন। তিনি বলেছেন,
“আমি তোমাদেরই মত একজন মানুষ। আমিও ভুলে যাই, যেমন তোমরা
ভুলে যাও। সুতরাং আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে মনে করিয়ে দিও।৩৯
অবশ্য সে ভুলের কারণেও বিধান
জারি হতো এবং উম্মাতের শিক্ষা হতো। ৪০-৩৯ (বুখারী ৪০১, মুসলিম ৫৭২ নং) । ৪০ (আলবানী)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
মহান আল্লাহ তো সবই জানেন, তাহলে
কিরামান-কাতেবীন দ্বারা লিখাবার যুক্তি কি?
মহান আল্লাহ বান্দার সকল আমল
লিখে রাখছেন, কিয়ামতে তা বান্দার সামনে পেশ করবেন, তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষী মানা হবে,
তাঁর আমল ওজন করা হবে, তাঁকে প্রশ্ন করা হবে ইত্যাদি, অথচ তিনি সব জানেন। যেহেতু বান্দাকে
তিনি বুঝাতে চান যে, তিনি তাঁর প্রতি কোন অন্যায় করছেন না। বান্দা মিথ্যা বলে পার পেতে
চাইলেও যাতে লেখা ও সাক্ষ্য অনুযায়ী সে বুঝতে পারে যে, তাঁর প্রতি অবিচার করা হচ্ছে
না।
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
যারা কবীরা গুনাহ করে, অর্থাৎ
ব্যাভিচার করে, খুন করে, মদ্যপান করে, মিথ্যা কথা বলে ইত্যাদি, তাঁরা কি কাফের? তাঁরা
কি চিরকাল দোযখে বাস করবে?
কবিরা গোনাহর গোনাহগার যদি সেই
গোনাহর কাজকে হালাল মনে না করে, তাহলে কাফের নয়। গোনাহর ফলে অবশ্যই ঈমানে দুর্বলতা
আসবে। তাওহীদ থাকলে ও নিয়মিত নামাজ পড়লে এবং গোনাহ থেকে তওবা না করে মারা গেলে কিয়ামতে
সে মহান আল্লাহ্র ইচ্ছাধীন থাকবে। তিনি ইচ্ছা করলে তাওহীদের গুনে তাঁকে ক্ষমা করে
বেহেশত দেবেন। নচেৎ গোনাহ অনুযায়ী জাহান্নামে শাস্তি ভুগিয়ে একদিন না একদিন বেহেশতে
দেবেন।
মহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী (শিরক) করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য
অপরাধ যার জন্য ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। আর যে কেউ আল্লাহ্র সাথে অংশী স্থাপন (শিরক)
করে, সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়। (নিসাঃ১১৬)
লক্ষণীয় যে, অবিবাহিত ব্যভিচারীর
শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত ও কারাদণ্ড, মদ্যপায়ীর শাস্তি বেত্রাঘাত, চোরের শাস্তি হাত কাটা
ইত্যাদি। তাঁরা কাফের হয়ে গেলে তাদেরকে হত্যা করা হতো। যেহেতু মুসলিম কাফের হয়ে গেলে
তাঁর শাস্তি হল হত্যা। ৪১-৪১ (বুখারী ৩০১৭ নং)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
‘আল্লাহ আকাশ-পৃথিবীর জ্যোতি’
কথার অর্থ কি?
‘আল্লাহ আকাশ-পৃথিবীর জ্যোতি।’
(নুরঃ ৩৫) এর অর্থ হল, মহান আল্লাহ আকাশ-পৃথিবীকে জ্যোতির্ময় ও আলোকিত করেন। সুতরাং
আকাশে যত আলো আছে, পৃথিবিতে যত রকমের আলো আছে এবং কিয়ামতে সে আলো হবে, সব কিছু তারই
আলো, তারই জ্যোতি।
অবশ্য তাঁর জ্যোতি দুই প্রকারঃ সৃষ্ট জ্যোতি। আর তা হল আকাশ-পৃথিবীর সে আলো আমরা দেখতে পাচ্ছি, যা সূর্য, চন্দ্র ও গ্রহ-নক্ষত্রের মাধ্যমে লাভ করে থাকি এবং যা বিদ্যুৎ ও অগ্নির মাধ্যমে দেখতে পাই, সবই তাঁর সৃষ্ট আলো।
অবশ্য তাঁর জ্যোতি দুই প্রকারঃ সৃষ্ট জ্যোতি। আর তা হল আকাশ-পৃথিবীর সে আলো আমরা দেখতে পাচ্ছি, যা সূর্য, চন্দ্র ও গ্রহ-নক্ষত্রের মাধ্যমে লাভ করে থাকি এবং যা বিদ্যুৎ ও অগ্নির মাধ্যমে দেখতে পাই, সবই তাঁর সৃষ্ট আলো।
আর দ্বিতীয় প্রকার জ্যোতি হল
তাঁর গুণ। সে জ্যোতি সৃষ্ট নয়। তা তাঁর সাত্তিক গুণ। একদা নবী (সঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা
হল, “আপনি কি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন?” উত্তরে তিনি বললেন, “তাঁকে কিরূপে দেখা সম্ভব?
যার পর্দা (অন্তরাল) হল নূর (জ্যোতি)। যে পর্দা উন্মোচিত হলে তাঁর আনন-দীপ্তি সমগ্র
সৃষ্টিকুলকে দগ্ধীভূত করে ফেলবে।”৪২ অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, “আমি নূর দেখেছি।”
৪২ (মুসলিম ৪৬৩ নং)
সৃষ্টিতত্ত্বের কোন সংবাদ প্রচারে
কেউ কেউ বলে থাকেন, এত কোটি বছরে এই হয়েছিল। এত কোটি বছর আগে ঐ হয়েছিল। এত কোটি বছর
পূর্বে পৃথিবীতে মানুষের বসবাস শুরু হয়। ইত্যাদি। এ সবে বিশ্বাস করা কি বৈধ?
কোন তত্ত্ববিদ বা বিজ্ঞানী যখন
অনুরূপ তথ্য পরিবেশন করেন, তখন কিছুর উপর ভিত্তি করে অনুমানপ্রসুত কথা বলেন। তাতে বিশ্বাস-অবিশ্বাস
কিছুই জরুরী নয়। মানুষের ইতিহাস যে কত বছরের, তাও কেউ বলতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেছেন,
তোমাদের কাছে কি সংবাদ আসেনি তোমাদের পূর্ববর্তীদের; নূহের সম্প্রদায়ের, আ’দের ও সামুদের
এবং তাদের পরবর্তীদের? তাদের বিষয় আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না। (ইব্রাহিমঃ ৯)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
আল্লাহ্র বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ,
আল্লাহ্র কাজের সমালোচনা অথবা আল্লার কাজে দোষ বের করা বৈধ কি?
আল্লাহ্র বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ,
আল্লাহ্র কাজের সমালোচনা অথবা আল্লাহ্র কোন দোষ বের করার অধিকার কোন বান্দার নেই।
যেহেতু সকল বিধানে তিনি নিখুঁত বিধায়ক। “কেন” বলে অভিযোগ বা আপত্তি করার অবকাশ ও অধিকার
নেই কারো। মহান আল্লাহ বলেন, আল্লাহ আদেশ করেন। তাঁর আদেশের সমালোচনা
(পুনবিবেচনা) করার কেউ নেই এবং তিনি হিসাব গ্রহনে তৎপর (রা’দঃ ৪১)
তিনি যা করেন, সে বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হবে না; বরং
ওদেরকেই প্রশ্ন করা হবে (আম্বিয়াঃ ২৩)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
বদ-নজর থেকে বাচার উদ্দেশ্য
গাড়ীর সামনে ছেড়া জুতো ঝুলিয়ে দেওয়া, ফলদার গাছে ভাঙ্গা হাড়ি টাঙ্গিয়ে দেওয়া, গরু বা
ঘোড়ার গলায় কিছু বেঁধে দেওয়া বৈধ কি?
বদ-নজর থেকে বাচার জন্য এ সব
ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেহেতু এতে শিরকও হতে পারে।
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
যদি কেউ ইমাম মাহদীর আগমন ও
ঈসা (আঃ) এর অবতরণকে অস্বীকার করে, তাহলে তাঁর বিধান কি?
যদি কেউ ইমাম মাহদীর ও ঈসা
(আঃ) এর অবতরণকে অস্বীকার করে, তাহলে সে ভ্রষ্ট। ৪৩
৪৩ (আলবানী)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
কিয়ামতে মানুষকে তাঁর মায়ের
নাম ধরে ডাকা হবে, নাকি বাপের নাম ধরে?
কিয়ামতে মানুষকে তাঁর বাপের
নাম ধরে ডাকা হবে। যেমন হাদিসে এ কথা স্পষ্টভাবে এসেছে। ৪৪ তাছাড়া নবী (সঃ) বলেন,
“আল্লাহ যখন পূর্বেকার ও পরেকার সকল মানুষকে কিয়ামতের দিন সমবেত করবেন, তখন প্রত্যেক
(প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী) প্রতারকের জন্য একটি করে পতাকা উড্ডয়ন করা হবে, আর বলা হবে,
‘এ হল অমুক (লোকের) পুত্র অমুক (লোকের) প্রতারনা।’ ৪৫ পক্ষান্তরে মায়ের নাম ধরে ডাকার
হাদিস সহীহ নয়। ৪৬
৪৪ (আবূ দাঊদ),৪৫ (মুসলিম
১৭৩৫ নং, ইবনে হিব্বান, বাইহাকী), ৪৬ (আলবানী, সিঃ যয়ীফাহ ৪৩৩ নং)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
আল্লাহ্র রাসূল (সঃ)-এর পিতামাতা
কি মুশরিক অবস্থায় মারা গেছেন?
তাঁরা উভয়ই মুশরিক অবস্থায় মারা
গেছেন। আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) একবার মায়ের কবর যিয়ারতে গেলেন। সঙ্গে কিছু সাহাবাও ছিলেন।
সেখানে পৌঁছে তিনি কেদে উঠলেন। সাহাবাগন কাঁদার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন তিনি বললেন, আমি
আল্লাহ্র নিকট আম্মার (আব্বার) কবর যিয়ারতের এবং ইস্তিগফারের (ক্ষমা প্রার্থনা করার)
অনুমুতি চাইলাম, কিন্তু আল্লাহ আযযা আজাল্ল তাদের জন্য ইস্তিগফারের অনুমুতি দিলেন না।
আল্লাহ্র রাসূল (সঃ) এর মনে প্রশ্ন জাগল যে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তো তাঁর পিতার জন্য
(মুশরিক হওয়া সত্তেও) ইস্তিগফার করেছিলেন। আল্লাহ্র তরফ থেকে উত্তর এল, ‘ইব্রাহীম
তাঁর পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল এবং তা (ইস্তিগফার) তাঁকে দেওয়া আল্লাহ্র
একটি প্রতিশ্রুতির জন্য সম্ভব হয়েছিল। অতঃপর এ তাঁর নিকর সুস্পষ্ট হল যে, সে আল্লাহ্র
শত্রু, তখন ইব্রাহীম তাঁর সম্পর্কে নির্লিপ্ত হয়ে গেল। নিশ্চয় ইব্রাহীম ছিল কোমল হৃদয়
ও সহনশীল।’ ৪৭
একদা এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল,
‘হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার (মৃত) পিতা কোথায় (জান্নাতে না জাহান্নামে)?’ তিনি বললেন,
‘জাহান্নামে।’ অতঃপর সে যখন (মন খারাপ করে) ফিরে যেতে লাগল, তখন তিনি তাঁকে ডেকে বললেন,
“আমার পিতা এবং তোমার পিতা জাহান্নামে।” ৪৮
৪৭ (তাওবাহঃ ১১৪, তাফসীর ইবনে
কাসীর ২/৩৯৩), ৪৮ (মুসলিম ৫২১ নং, দ্রঃ সিঃ সহীহাহ ২৫৯২ নং)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
আদম (আঃ) যখন তওবা করছিলেন,
তখন তিনি মুহাম্মদের আসীলায় ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। --- এ কথা সঠিক কি?
এ ব্যাপারে একটি হাদিস বর্ণনা
করা হয়, যাতে বলা হয়েছে, আদম যখন পাপ করেন, তখন তিনি বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! মুহাম্মাদের
আসীলায় আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ আল্লাহ বললেন,
‘হে আদম! তুমি মুহাম্মদকে চিনলে কীভাবে, অথচ আমি এখনো তাঁকে সৃষ্টিই করিনি?’ আদম বললেন,
‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি যখন আমাকে তোমার হাত দিয়ে সৃষ্টি কর এবং আমার মাঝে তোমার
রূহ ফুঁকো, তখন আমি মাথা তুলে দেখি, আরশের পায়ায় লেখা আছে, ‘লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর
রাসুলুল্লাহ।’ তখন আমি জানি যে, তুমি তোমার নামের পাশে সেই ব্যক্তির নামই যোগ করেছ,
যে তোমার সবচেয়ে প্রিয়তম সৃষ্টি।’ আল্লাহ বললেন, ‘আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। আর মুহাম্মাদ
না হলে আমি তোমাকে সৃষ্টিই করতাম না।’৪৯
উক্ত হাদীসটি জাল ও গড়া হাদীস।
অন্য একটি যয়ীফ হাদীস উক্ত হাদীসের জাল হওয়ার কথা সাক্ষ্য দেয়। আর সেটা এই যে, ‘আদমকে
ভারতে অবতারণ করা হয়। তিনি সেখানে আতঙ্কিত হন। সুতরাং জিবরীল অবতরণ করেন এবং আযান দিতে
শুরু করেন, ‘আশাহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লালাহ’ ২ বার এবং আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ
২ বার। আদম বললেন, ‘মুহাম্মাদ কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমাদের সন্তানদের মধ্যে শেষ নবী।’
পূর্বের হাদিস সত্য হলে আদম
(রঃ) মুহাম্মাদ (সঃ) সম্বন্ধে প্রশ্ন করতেন না, ৫০ পক্ষান্তরে আদম-হাওয়ার পাপ থেকে
ক্ষমা প্রার্থনার দু’আ আমরা কুরআন থেকে জানতে পারি, তাঁরা বলেছিলেন,
তাঁরা বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি। যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না কর, তাহলে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’
তাঁরা বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি। যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না কর, তাহলে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’
(আরাফঃ২৩), ৪৯ (হাকেম
প্রমুখ, সিঃ যয়ীফাহ ২৫ নং), ৫০ (আলবানী)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
কিয়ামতে প্রত্যেক সন্তানকে কি
তাঁর মায়ের নাম জুড়ে ডাকা হবে?
এ ব্যাপারে যে হাদিস বর্ণিত
আছে, তা সহীহ নয়।৫১ সুতরাং সঠিক হল এই যে, ‘প্রত্যেক সন্তানকে তাঁর বাপের নাম
জুড়েই ডাকা হবে।’ মহানবী (সঃ) বলেছেন, ‘কিয়ামতে তোমাদেরকে তোমাদের ও তোমাদের বাপের
নাম ধরে ডাকা হবে।’ নবী (সঃ) আরও বলেছেন, ‘কিয়ামতে প্রত্যেক (প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী)
প্রতারকের জন্য একটি করে পতাকা উড্ডয়ন করা হবে, আর বলা হবে, ‘এ হল অমুকের পুত্র অমুকের
প্রতারণা।’ ৫৩ লক্ষণীয় যে, হাদীসে ‘ফুলান’ (পুং-বাচক) বলা হয়েছে, ‘ফুলানাহ’ (স্ত্রী-বাচক)
বলা হয়নি।
৫১ (সিলসিলায়ে যঃ ৪৩৩), ৫৩
(বুখারী ৬১৭৭, মুসলিম ৪৬২৯ নং)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
দাউদ (আঃ)-এর সৈনিক আওরিয়ার
স্ত্রীর প্রেমে পড়া এবং কৌশলে তাঁকে হত্যা করিয়ে মহিলাকে বিয়ে করার কাহিনী কি ঠিক?
কক্ষনো ঠিক নয়। এটি একটি ইসরাঈলী রূপকথা। ৫৪-৫৪ (দ্রঃ সিঃ যয়ীফাহ ৩১৩-৩১৪)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
উল্কা বা তাঁরা ছুটার সাথে দুনিয়ার
কোন ঘটনাঘটনের সম্পর্ক আছে কি?
উল্কা বা তাঁরা ছুটার সাথে দুনিয়ার
কোন ঘটনা ঘটনের সম্পর্ক নেই। শয়তানকে তাঁরা ছুঁড়ে মারা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি
তোমাদের নিকটবর্তী আকাশকে নক্ষত্ররাজি দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং একে প্রত্যেক বিদ্রোহী
শয়তান হতে রক্ষা করেছি। ফলে, শয়তানরা ঊর্ধ্ব জগতের কিছু শ্রবণ করতে পারে না। ওদের ওপর
সকল দিক হতে (উল্কা) নিক্ষেপ হয়; ওদেরকে বিতাড়নের জন্য। আর ওদের জন্য আছে অবিরাম শাস্তি।
তবে কেউ গোপনে হটাৎ কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড তাঁর পশ্চাদ্ধাবন করে। (স্বাফফাতঃ
৬-১০)
চন্দ্র বা সূর্য গ্রহণের সাথে
সাথে দুনিয়ার কোন ঘটনাঘটনের সম্পর্ক আছে কি?
চন্দ্র বা সূর্য গ্রহণের সাথে
দুনিয়ার কোন ঘটনাঘটনের সম্পর্ক নেই। মহানবি (সঃ) বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের
অন্যতম। কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে তাতে গ্রহন লাগেনা। সুতরাং গ্রহণ লাগা দেখলে তোমরা
তোমরা আল্লাহ্র নিকট দু'আ কর, তাকবীর পড়, নামায পড় এবং সাদকাহ কর। ৫৫-৫৫ (বুখারি,
মুসলিম, মিশকাত ১৪৮৩ নং)
দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
মাটিতে দাগ টেনে হাত চালিয়ে
অদৃশ্যের কিছু বলা সম্ভভ কি? হাত চালিয়ে ঘরের মধ্যে সাপ কোথায় আছে, সাপে কামড়ালে বিষ
হয়েছে কি না, চুরি হওয়া জিনিস কোথায় আছে বা কে নিয়েছে--- এ সব বলা কি বৈধ?
এ সব অদৃশ্যের খবর এবং ইলমে
গায়বের দাবি। অনুমান অনেক সময় কাজে লাগলেও এমন দাবি বড় গোনহার কাজ। মুআবিয়াহ ইবনে হাকাম
(রঃ) বলেন, একদা আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহ্র রাসুল! আমি জাহেলী যুগের অত্যান্ত
নিকটবর্তী (অর্থাৎ আমি অল্পদিন হল অন্ধযুগ থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছি) এবং বর্তমানে আল্লাহ
আমাকে ইসলামে দীক্ষিত করেছেন। আমাদের কিছু লোক গণকদের নিকট (ভাগ্য-ভবিষ্যৎ জানতে) যায়।’
তিনি বললেন, ‘তুমি তাদের কাছে যেয়ো না।’ আমি বললাম, ‘আমাদের কিছু লোক অশুভ লক্ষণ মেনে
চলে।’ তিনি বললেন, ‘এ এমন জিনিস, যা তাঁর নিজেদের অন্তরে অনুভব করে। সুতরাং এ (সব ধারনা)
যেন তাদেরকে (বঞ্ছিত কর্মে) বাঁধা না দেয়।’ আমি নিবেদন করলাম, ‘আমাদের মধ্যে কিছু লোক
দাগ টেনে শুভাশুভ নিরূপণ করে।’ তিনি বললেন, ‘(প্রাচীন যুগে) এক পয়গম্বর দাগ টানতেন।
সুতরাং যারা দাগ টানার পদ্ধতি উক্ত পয়গম্বরের পদ্ধতি অনুসারে হবে, তা সঠিক বলে বিবেচিত
হবে (নচেৎ না)। ৫৬
আর বিদিত যে, কোন নবীর মতো কারোর
খবর হতে পারে না। কারণ তাঁর নিকট অহী আসে, কোন সাধারণ মানুষের কাছে নয়। অতএব হাত চালানো
এবং হাত চালিয়ে বলা খবর বিশ্বাস করা বৈধ নয়।-৫৬ (মুসলিম)।
No comments:
Post a Comment