বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
গান-বাজনা করা ও শোনা ইসলামে হারাম
গান বাজনার ব্যাপারে ইসলামের
হুকুম কি?
আল্লাহ তায়ালা
বলেন:
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا(لقمان 6)
আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার
জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে। (সূরা
লুকমান ৩১: ৬ আয়াত)।
বেশীর
ভাগ তাফসীরকারকগণ লাহওয়াল হাদীস বলতে গানকে বুঝিয়েছেন।
উবনে মাসউদ রা. বলেন: উহা গান।
ইমাম হাসান বছরী র. বলেন: উহা গান ও বাদ্য শানে নাজিল হয়েছে।
উবনে মাসউদ রা. বলেন: উহা গান।
ইমাম হাসান বছরী র. বলেন: উহা গান ও বাদ্য শানে নাজিল হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা
শয়তানকে সম্বোধন করে বলেন:
وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ(الاسراء 64)
তোমার কন্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো প্ররোচিত কর। (সূরা ইসরা ১৭: ৬৪
আয়াত)
গান বাজনার ক্ষতিকর দিকসমূহ
ইসলাম কোন
জিনিসের মধ্যে ক্ষতিকারক কোন কিছু না থাকলে তাকে হারাম করেনি। গান ও বাজনার মধ্যে
নানা ধরনের ক্ষতিকর জিনিস রয়েছে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া র. এ সম্বন্ধে
বলেন:
বাজনা
হচ্ছে নফসের মদ স্বরুপ: মদ যেমন
মানুষের ক্ষতি করে, বাদ্যও মানুষের সেই রকম ক্ষতি করে। যখন গান বাজনা তাদের
আচ্ছন্ন করে ফেলে, তখনই তারা শিরকে পতিত হয়। আর তখন তারা ফাহেশা কাজ ও জুলুম করতে
উদ্যত হয়। তারা শিরক করতে থাকে এবং যাদের কতল করা নিষেধ তাদেরকেও কতল করতে থাকে।
যেনা করতে থাকে। যারা গান বাজনা করে তাদের বেশীর ভাগের মধ্যেই এই তিনটি দোশ দেখা
যায়। তাদের বেশীর ভাগই মুখ দিয়ে শিস দেয় ও হাততালি দেয়।
শিরকের
নিদর্শন: তাদের বেশীর
ভাগই তাদের শায়খ (পীর) অথবা গায়কদের আল্লাহরই মতই ভালবাসে অথবা আরো অধিক।
ফাহেশার
মধ্যে আছে: গান হল যেনার
রাস্তা স্বরূপ। এর কারণেই বেশীর ভাগ ফাহেশা কাজ অনুষ্ঠিত হয় গানের মজলিসে। ষেখানে
পুরুষ, বালক, বালিকা ও মহিলা চরম স্বধীন ও লজ্জাহীন হয়ে পড়ে। এভাবে গান শ্রবন
করতে করতে নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনে। তখন তাদের জন্য ফাহেশা কাজ করা সহজ হয়ে
দাড়ায়, যা মদ্যপানের সমতুল্য কিংবা আরও অধিক।
কতল
বা হত্যা: অনেক সময় গান
শ্রবণ করতে করতে উত্তেজিত হয়ে একে অপরকে কতল করে ফেলে। তখন বলে: তার মধ্যে এমন
অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল যে জন্য হত্যা করা ছাড়া উপায় ছিল না। উহা হতে বিরত থাকা
তার ক্ষমতার বাইরে ছিল। আসলে এই সময়ে মজলিসে শয়তান উপস্থিত হয়। আর যাদের উপর
শয়তান বেশী শক্তিশালী, তারা অন্যদের কতল করে ফেলে।
গান বাজনা
শ্রবণে অন্তরের কোন লাভ হয় না, তাতে কোন উপকারও নেইঅ বরঞ্চ ওতে আছে গোমরাহী এবং
ক্ষতি, যা লাভের থেকেও বেশী ক্ষতিকর। উহা রুহের জন্য ঐ রকম ক্ষতিকর যেমন মদ শরীরের
জন্য ক্ষতিকর। ফলে যারা সঙ্গীত শ্রবণ করে, তাদের নেশা মদ্যপায়ীর নেশা থেকেও অনেক
বেশী হয়। তারা ওতে যে মজা পায়, তা মদ্যপায়ীর থেকেও অনেক বেশী।
শয়তানও তাদের
নিয়ে খেলা করে। তখন এই অবস্থায় তারা আগুনে প্রবেশ করে, কেউ গরম লোহা শরীরের
মধ্যে কিংবা জিহবায় প্রবেশ করায় অথবা এ জাতীয় কাজ করে। তারা সালাত আদায়ের সময়
অথবা কোরআন তেলাওয়াতের সময় এই রকম অবস্থা প্রাপ্ত হয় না। কারণ এগুলি শরীয়ত
সম্মত ইবাদত, ঈমানী কাজ, রাসূলের সা. কাজ, যা শয়তানকে দুরে সরিয়ে দেয়। আর
অন্যগুলো ইবাদতের নামে বিদআত। এতে আছে শিরক ও শয়তানী কাজ, দার্শনিকের কাজ, যাতে
শয়তানরা সহজেই আকৃষ্ট হয়।
শরীরে লোহা প্রবেশ করানোর হাকীকত
শরীরের মধ্যে
লোহার শলাকা, না রাসূল সা., আর না সাহাবীরা প্রবেশ করাতেন। যদি এ কাজ উত্তমই হত
তবে অবশ্যই তারা এতে অগ্রগামী হতেন। বরঞ্চ উহা সূফী পীর ও বিদআতীদের কাজ। আমি
তাদেরকে মসজিদে একত্রিত হতে দেখেছি, তাদের সাথে তবলা জাতীয় যন্ত্র দফ ছিল। তারা
গান করছিল: আমাদের মদের গ্লাস এনে দাও এবং তা আমাদের পান করাও। আল্লাহর ঘরে বসে মদ
জাতীয় দ্রব্যের উচ্চারণ করতে তাদের লজ্জাও হয় না। তারপর উচ্চ আওয়াজে দফ বাজাচ্ছিল
এবং উচ্চ আওয়াজে গাইরুল্লাহর নিকট বিপদে উদ্ধার চাচ্ছিল। আর বলছিল: হে দাদা!
এভাবে শয়তান তাদের ধোকায় নিপতিত করছিল। তারপর আর একজন তার জামা খুলে একটি লোহার
শিক হাতে নিয়ে তার পাঁজরের মধ্যে প্রবেশ করাল। তারপর আর একজন উঠে দাড়িয়েঁ
কাচেঁর একটি গ্লাস ভেঙ্গে তা দাঁত দিয়ে চুর্ণ বিচুর্ণ করছিল। তখন আমি মনে মনে
বললাম, এরা যা বলছে তা যদি সত্যিই সহীহ হয় তবে যেন তারা ঐ ইয়াহুদীদের সাথে সাথে
যুদ্ধ করে যারা আমাদের ভূমি জবর দখল করে রেখেছে, আর আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে।
এসব কাজ যে সব শয়তানরা সেখানে উপস্থিত হয় তারা তাদের সাহায্য করে। কারণ, ঐ
লোকেরা আল্লাহর স্বরণ হতে দূরে রয়েছে। আর যখন তারা তাদের পূর্ব পুরুষদের নিকট
বিপদে উদ্ধার চায়, তখন তারা শিরকের মধ্যে লিপ্ত হয়। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ ﴿36﴾ وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّونَهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ مُهْتَدُونَ ﴿37﴾ الزخرف
আর যে পরম করুণাময়ের জিকির থেকে বিমুখ থাকে আমি তার জন্য এক শয়তানকে
নিয়োজিত করি, ফলে সে এক শয়তানের সঙ্গী হয়ে যায়।
আর নিশ্চয়ই তারাই (শয়তান)
মানুষদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বাধা দেয়। অথচ মানুষ মনে করে তারা হিদায়েত প্রাপ্ত।
(সূরা জুখরুফ ৩৬ ৩৭ আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা
তাদের জন্য শয়তানকে নির্দিষ্ট করে দেন, যাতে তারা আরও গোমরাহ হতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা
বলেন:
قُلْ مَنْ كَانَ فِي الضَّلَالَةِ فَلْيَمْدُدْ لَهُ الرَّحْمَنُ مَدًّا(مريم75)
বল, যে বিভ্রান্তিতে রয়েছে তাকে পরম করূণাময় প্রচুর অবকাশ দেবেন, (সূরা
মারইয়াম ৭৫ আয়াত)
শয়তান যে তাদের সাহায্য করে, এতে আবাক হওয়ার কিছুই
নেই। কারণ, সুলাইমান আ: এক জিনের নিকট সাহায্য চেয়েছিলেন, রাণী বিলকিসের সিংহাসন
উঠিয়ে আনার জন্য। এ সম্বন্ধে কোরআনে আছে:
قَالَ عِفْريتٌ مِنَ الْجِنِّ أَنَا آَتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَنْ تَقُومَ مِنْ مَقَامِكَ وَإِنِّي عَلَيْهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٌ ﴿النمل : 39﴾
এক শক্তিশালী জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দিব।
আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে । (সূরা নামল ৩৯ আয়াত)।
যারা হিন্দুস্তানে গিয়েছেন, যেমন ভ্রমনবিদ ইবনে বতুতা
কিংবা অন্যান্যরা, তারা অগ্নি উপাসকদের লোহার শিক শরীরে প্রবেশ করানো হতেও বেশী
ভযংকর ঘটনা দেখেছে, যদিও তারা ছিল কাফের। তাই এই ঘটনা কোন কারামত বা অলৌকিক ঘটনা
নয়। বরঞ্চ ইহা ঐ সমস্ত শয়তানদের ঘটনা যারা এভাবে একত্রিত হয় গান বাজনার আশরে।
দেখা যায়, বেশীর ভাগ লোক, যারা শরীরে শিক প্রবেশ করায়, তারা নানা ধরনের পাপে
লিপ্ত। এমনকি প্রকাশ্যভাবে তারা আল্লাহর সাথে শিরকে লিপ্ত থাকে। কারণ তারা তাদের
মৃত পুর্বপুরুষদের নিকট সাহায্য ভিক্ষা করে। তাহলে কিভাবে কারামতের অধিকারী অলী
আল্লাহ হতে পারে?
আল্লাহ তায়ালা
আউলিয়াদের সম্বন্ধে বলেন:
أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ﴿يونس : 62﴾
শুনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই, আর তারা পেরেশানও হবে না।
(সূরা ইউনুস ৬২ আয়াত)।
অলী হচ্ছেন ঐ মুমিন বান্দা, যিনি সর্বদা এক আল্লাহর নিকট
সাহায্য ভিক্ষা করেন। আর মুত্তাকি হচ্ছেন ঐ ব্যক্তি যিনি আল্লাহর সাথে পাপ ও
শিরক করা হতে বিরত থাকেন। এই সমস্ত অলীদের জীবনে হঠাৎ করে কোন কারামত ঘটে যায়।
আনুষ্ঠানিকভাবে কোন মানুষের দাবী বা লোক দেখএনার জন্য এটা ঘটে না।
বর্তমান জামানায় গান বাজনা
বর্তমান
জামানায় বেশীর ভাগ গান হয় বিয়ের মজলিসে অথবা অন্য কোন উৎসবে, রেডিও ও
টেলিভিশনে। এগুলোর বেশীর ভাগই ভালবাসা, শাহওয়াত, চুমু দেখা সাক্ষাৎ ইত্যাদির উপরে
ভিত্তি করে রচিত। তাতে থাকে মুখের, কপালের এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গের
বর্ণনা, যা যুবকদের মনে শাহওয়াত জাগিয়ে তোলে, আর তাদের ফাহেশা কাজ ও যেনা করতে
উদ্বুদ্ধ করে। আর তাদের চরিত্র নষ্ট করে।
যখন গায়ক
গায়িকারা গান বাজনার নামে একত্রিত হয়, তখন ঐ সমস্ত ধন দৌলত ব্যয় হয়, যা সংস্কৃতির
নামে জাতীয় তহবিল হতে চুরি করা হয়। তারপর ঐ ধন দৌলত নিয়ে ইউরোপ আমেরিকা যেয়ে
বাড়ী গাড়ী ইত্যাদি খরিদ করে। তারা তাদের অশ্লীল গান বাজনা দিয়ে জাতীয় চরিত্র
নষ্ট করে দেয়। তাদের অশ্লীল ও নগ্ন ছবি দিয়ে যুবকদের চরিত্র নষ্ট করে। ফলে,
আল্লাহকে ছেড়ে তারা তাদেরকে ভালবাসতে থাকে। এমনকি ১৯৬৭ সালে ইয়াহুদীদের সাথে
যুদ্ধের সময় রেডিও হতে বলা হচ্ছিল, তোমরা যুদ্ধে অগ্রসর হতে থাক; কারণ তোমাদের
সাথে অমুক অমুক গায়িকা আছে। ফলে, তারা পাপিষ্ট ইয়াহুদীদের সাথে চরমভাবে
বিপর্যস্ত ও পরাজিত হয়। বরঞ্চ তাদের বলা উচিৎ ছিল: তোমরা সম্মুখে অগ্রসর হতে থাক
তোমাদের সাথে আল্লাহ আছেন, তাঁর সাহায্য নিয়ে। এমনকি এক গায়িকা এই ঘোষণা
দিয়েছিল যে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পূর্বে তার প্রতি মাসে কায়রোয় যে মাসিক উৎসব
হতো, এ বৎসর তা সে তেলআবিবে করবে, যদি তারা জয়যুক্ত হয়। অন্যদিকে ইয়াহুদিরা
যুদ্ধের পর বায়তুল মুকাদ্দাসের গোনাহ মোচনের দেয়ালের সামনে দাড়িয়েঁ আল্লাহর
শুকরিয়া আদায় করছিল, আল্লাহ তাদের সাহায্য করার জন্য। এমনকি দ্বীনি গ্ন বাজনার
মধ্যে নানা ধরনের গর্হিত কথা থাকে। যেমন বলা হল, প্রতি নবীরই একটা নির্দিষ্ট
অবস্থান আছে, আর হে মুহাম্মাদ! এই সেই আরশ! একে গ্রহণ কর। এই বাক্যের শেষ কথা
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নামে মিথ্যা বানান হয়েছে, যার মূল ঠিক নয়। কারণ রাসূল সা.
কক্ষনই আরশ গ্রহণ করবেন না, আর তাঁর রবও এ কথা বলবেন না।
শ্রুতিমধুর কন্ঠস্বরের দ্বারা মেয়েদের ফিৎনা
সাহাবী বারাহ
ইবনে সালেকের রা. কন্ঠস্বর ছিল মধুর। কোন কোন সফরে রাসূলের সা. সাথেচলার সময়
ধর্মীয় গান গাইতেন। একদা যখন তিনি গান গাচ্ছিলেন, আর মহিলারা নিকটে এসে পড়ল, তখন
রাসূল সা. তাকে বললেন:মেয়েদের থেকে সাবধান! ফলে তিনি নিশ্চুপ হয়ে পড়লেন। তার
স্বর মেয়েরা শ্রবণ করুক তা রাসূল সা. পছন্দ করেন নি। (হাকেম)।
যদি রাসূল সা.
এই ভয় পেয়ে থাকেন যে বাগানে গিয়ে সুর করে কবিতা পড়লে মেয়েদের মধ্যে ফিৎনা
হবে, তাহলে বর্তমান জামানায় মহিলারা রেডিও টেলিভিশনে যে ধরণের গান বাজনা করে,
তাদের গান বাজনা শুনলে কি বলতেন? এই ধরনের গায়িকারা বেশীর ভাগই নানা ধরনের ফাসেক
ও নগ্ন কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে, আর শরীরের নানাবিধ বর্ণনা দিয়ে যে কবিতা পাঠ করে
তাতে বিবিধ ধরনের অব্স্থার ও নফসিয়াতের উদ্রেক করে। ফলে অন্তরে এমন রোগের সৃষ্টি
হয় যাতোদের উৎসাহিত করে তাদের লজ্জা শরম বির্সজন দিতে ও বেহায়াপনায় লিপ্ত হতে।
যদি এই গানের সাথে মাতার করা সুরের মিশ্রন হয়, তবে তো তাদের বুত্থির বিভ্রম
ঘটায়। যারা ই গানের নেশায় পড়ে, তাদের তা ঐ রকমই ক্ষতি করে যা মদ পান করার পর
হয়ে থাকে।
গান অন্তরে নিফাকী সৃষ্টি করে
ইবনে মাসউদ রা. বলেন: গান
অন্তরে মুনাফেকী সৃষ্টি করে, যেমন ভাবে পানি ঘাস সৃষ্টি করে। যিকর অন্তরে ঈমান
সৃষ্টি করে, যেমন পানি ফসল উৎপন্ন করে।
ইবনুল কাইয়িম র. বলেন: যে
ব্যক্তি সব সময় গান বাজনায় ব্যস্ত থাকে, তার অন্তরে মুনাফেকীও সৃষ্টি হবে, যদিও
তার মধ্যে এর অনুভুতি আসবে না। যদি সে মুনাফেকীর হাকিকত বুঝতে পারত, তবে অব্শ্যই
অন্তরে তার প্রতিফলন দেখতে পেত। কারণ কোন বান্দার অন্তরে কোন অবস্থাতেই গানের
মহব্বত ও কোরআনের মহব্বত একত্রে সন্নিবেশিত হতে পারে না। তাদের একটি অন্যটিকে
অবশ্যই দুর করে দিবে। কারণ আমরা দেখতে পাই যে, কোরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করা, গান ও
কাওয়ালী শ্রবণকারীদের কাছে খুবই শক্ত ঠেকে। আর কারি যে আয়াত তেলাওয়াত করে, তা
দ্বারা তারা মো্টেই উপকৃত হয় না। ফলে শরীরে কোন নাড়াচড়া ও অন্তরে কোন উদ্দীপনা
আসে না। আর যখনই তারা গান শ্রবণ করে, তখনই তাদের কন্ঠস্বরে ভয়ের এক প্রভাব সৃষ্টি
হয়, অন্তরে এক ভাবের সৃষ্টি হয়, রাত্রি জাগরণ করা মধুর হয়। ফলে দেখতে পাই তারা
গান বাদ্য শ্রবণ করাকে কোরআনে তেলাওয়াত শ্রবণ অপেক্ষা বেশী প্রধান্য দেয়। বেশীর
ভাগ লোকই যারা গান ও বাদ্যের ফিৎনায় লিপ্ত আছে, তারা সালাত আদায়ে খুব অলসতা
দেখায়। বিশেষ করে জামাতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে।
ইবনে আকীল র. যিনি হাম্বলি মাযহাবের একজন বড় আলেম, তিনি বলেন: যদি কোন গায়িকা (নিজের স্ত্রী ব্যতিত) গান গায় তবে
তা শ্রবণ করা হারাম। এ ব্যপারে হাম্বলি মাজহাবে কোন মতবিরোধ নেই।
ইবনে হাযম র. বলেন: মুসলিমদের
জন্য কোন অপরিচিতা মহিলার গান শ্রবণ করে আনন্দ লাভ করা হারাম।
গান বাজনা শ্রবণের প্রতিকার
রেডিও
টেলিভিশন, ভিডিও কিংবা অন্য কোন স্থানে যে গান হয়, তা শ্রবণ করা হতে বিরত থাকতে
হবে। বিশেষ করে অশ্লিল গান হতে, যাতে বাদ্যও বাজান হয়।
গান বাজনা থেকে
বিপরিত কাজ হল আল্লাহর যিকর করা ও কোরআন তেলাওয়াত করা। বিশেষ করে সূরা বাকারা
তেলাওয়াত করা।
রাসূল সা. বলেছেন:
إنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الذِيْ يَقْرَأُ فِيْهِ الْبَقَرَةَ (رواه مسلم)
যে বাড়িতে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করা হয় সে বড়ী হতে শয়তান পালায়ন করে
(মুসলিম)
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
يا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ ﴿57يونس﴾
হে মানুষ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাতের কাছে এসেছে উপদেশ এবং অন্তর সমূহে
যা থাকে তার শিফা, আর মুমিনদের জন্য হিদায়েত ও রহমত। (সূরা ইউনুস ৫৭ আয়াত)
রাসূলের সা. জীবনী ও শামায়েল (আখলাক)পাঠ করা এবং সাথে
সাথে সাহবায়ে কেরামগণের জীবনীও অধ্যায়ন করা।
যে সমস্ত গান শ্রবণ করা জায়েয
ঈদের গান শ্রবণ
করা: এ হাদীসটি আয়েশা রা. হতে বর্ণিত:
دَخَلَ رَسُولُ اللهِ صَلي الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا جَارِيَتَانِ تَضْرِبَانِ بِدَفَّيْنِ (وَفِي رِوَايَةٍ عِنْدِي جَارِيَتَانِ تُغَنِّيَانِ) فَانْتَهَرَهُمَا ابُوْبَكرٍ فَقالَ صَلي الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعْهُنَّ فَانَّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيْدًا وَإنَّ عِيْدَنَا هَذا الْيَوْم (رواه البخاري)
একদা রাসূল সা. তাঁর ঘরে প্রবেশ করেন। তখন তার ঘরে দুই বালিকা দফ বাজাচ্ছিল।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে গান করছিল। আবু বকর রা. তাদের ধমক দেন। তখন রাসূল সা. বললেন:
তাদের গাইতে দাও। কারণ প্রত্যেক জাতিরই ঈদের দিন আছে। আর আমাদের ঈদ হল আজকের দিন।
(বুখারী)
দফ বাজিয়ে বিয়ে প্রচারের জন্য গান গাওয়া আর তাতে
মানুষদের উদ্ধুদ্ধ করা। দলিল: রাসূল সা. বলেছেন:
فَصْلُ ما بَيْنَ الْحَلَالِ وَالْحَرَمِ ضَرْبُ الدَّفِ وَالصَّوْتُ فِي النِّكَاحِ (رواه أحمد)
হারাম ও হলালের মধ্যে পার্থক্য হল দফের বাজনা। এই শব্দে বুঝা যায় যে, সেখানে
বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। (আহমাদ)
কাজ করার সময় ইসলামী গান শ্রবণ করা, যাতে কর্মক্ষমতা
বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ঐ গানে যদি দুয়া থাকে। এমনকি রাসূল সা. পর্যন্ত ইবনে
রাওয়াহা রা. নামক সাহবীর কবিতা আবৃত্তি করতেন। আর সাথীদেরকে খন্দকের যুদ্ধের সময়
পরিখা খনন করতে উদ্ধুদ্ধ করতেন এই বলে যে, হে আল্লাহ কোনই জীবন নেই আখেরাতের জীবন
ব্যতীত। তাই আনছার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করনি। তখন আনছার ও মুহাজিনগণ উত্তর দিলেন:
আমরাই হচ্ছি ঐ ব্যক্তিবর্গ যারা রাসূলের নিকট বাইআত করেছি জিহাদির জন্য যতদিনই
আমরা জীবিত থাকিনা কেন।
আর রাসূল সা.
সাহাবীদের নিয়ে যখন খন্দক (গর্ত) খনন করছিলেন, তখন ইবনে রাওয়াহা রা. এই কবিতা
আবৃত্তি করছিলেন:
আল্লাহর কসম!
যদি আল্লাহ না থাকতেন তাহলে আমরা হেদায়েত পেতাম না। আর সিয়ামও পালন করতাম না, আর
সালাতও আদায় করতাম না। তাই আমাদের উপর সাকিনা (শান্তি) নাযিল করুন। আর যখন
শত্রুদের মুকাবিলা করব তখন আমাদের মজবুত রাখুন। মুশরিকরা আমাদের উপর আক্রমণ করেছে,
আর যদি তারা কোন ফিৎনা সৃষ্টি করে, তবে আমরা তা ঠেকাবই। বারে বারে আবাইনা শব্দটি
তারা উচ্চ স্বরে উচ্চারণ করছিলেন।
ঐ সমস্ত গান,
যাতে আল্লাহর তাওহীদের কথা আছে অথবা রাসূলের সা. মহব্বত ও তার শামায়েল আছে অথবা
যাতে জিহাদে উৎসাহিত করা হয় তাতে দৃঢ় থাকতে অথবা চরিত্রকে দৃঢ় করতে উদ্ধুদ্ধ
করা হয়। অথবা এমন দাওয়াত দেয়া হয় যাতে মুসলিমদের একে অন্যের প্রতি মহব্বত ও
সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। অথবা যাতে ইসলামের মৌলিক নীতি বা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়।
অথবা এই জাতীয় অন্যান্য কথা যা সমাজকে উপকুত করে দ্বীনি আমলের দিকে কিংবা চরিত্র
গঠনের জন্য।
ঈদের সময় ও
বিয়ের সময় কেবল মাত্র মহিলাদের জন্য তাদের নিজেদের মধ্যে দফ বাজানোর অনুমতি
ইসলাম দিয়েছে। যিকরের সময় এটার ব্যবহার ইসলাম কখনই দেয়নি। রাসূল সা. যিকরের
সময় কখনই উহা ব্যবহার করেননি। তাঁর পরে তাঁর সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু
আনহুমগণ কখনই তা করেন নি। বরঞ্চ, ভণ্ড সুফি পীররা তা মুবাহ করেছে নিজেদের জন্য। আর
জিকরের দফ বাজানকে তারা সুন্নত বানিয়ে নিয়েছে। বরঞ্চ উহা বিদআত। রাসূল সা.
বলেছেন:
ايَّاكُمْ وَمُحْدَثاتِ الْاُمُوْرِ فاِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بدْعَةٍ وكُلُّ بِدْعًةٍ ضَلالَةٍ (رواه الترمذي)
তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন কোন সংযোজন করা হতে বিরত থেক। কারণ, প্রতিটি নতুন
সংযোজনই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী। (তিরমিযী)
গান-বাদ্য ও এর কুপ্রভাব
গত কয়েক
বছরে নাচ-গানের চর্চা অকল্পনীয় মাত্রায় বেড়েছে। দেশে যেখানে শিক্ষা-গবেষণা ও
সুনাগরিক তৈরিতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ নেই, সেখানে চরিত্রবিধ্বংসী নাচ-গানের পেছনে অনুদান বা
বিনিয়োগ তথা আগ্রহের অন্ত নেই। যেখানে রোজই চিকিৎসার অর্থ না পেয়ে মৃত্যুর জন্য
প্রহরগোনা অসহায় মানুষের করুণ মুখ পত্রিকায় ছাপা হয় সেখানেই বহুজাতিক কোম্পানি
ও বড় বড় ব্যবসায়িক ইন্ডাস্ট্রিগুলো তাদের উপার্জিত অর্থের অনেকটাই ঢালে নৃত্য ও
সঙ্গীতের পেছনে! এখনো যেখানে বিরাটসংখ্যক মানুষের বাস দারিদ্রসীমার নিচে, আজো যারা পেটের আগুন নেভাতে গিয়ে নিজের ঈমান পর্যন্ত
বিকিয়ে দিতে বাধ্য হয়, সেখানকারই একশ্রেণীর নাগরিক নির্দ্বিধায় পঞ্চাশ হাজার
টাকায় কেনে এক সন্ধ্যার কনসার্টের টিকেট! যেখানে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক নয়,সেখানে আবার অনেক কিন্ডারগার্টেনে নিষ্পাপ শিশুদের নৃত্য
ও সঙ্গীত শেখা বাধ্যতামূলক! আমরা যে আজ নাচ-গানে কতটা মেতেছে তা প্রমাণে বোধ হয়
আর কিছু বলার দরকার নাই। তারপরও খানেকটা ইঙ্গিত দেয়া যাক।
আসলে বাঙের
ছাতার মতো যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা টিভি চ্যালেনগুলোই নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে
নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে নেমেছে মুসলিম সমাজকে গানে মাতাল বানাতে। তাদের সঙ্গে
যোগ দিয়েছে নীতি ও আদর্শ বিবর্জিত মুনাফাগৃধ্নু ব্যবসায়ী
কোম্পানিগুলো। ‘ক্লোজ আপ নাম্বার ওয়ান’, ‘গাও বাংলাদেশ গাও’, ‘ক্ষুদে গানরাজ’, ‘নির্মাণশিল্পীদের গান’, গার্মেন্ট শ্রমিকদের গান’, ‘শাহরুখ খান লাইভ ইন কনসার্ট’,
‘ডেসটিনি ট্রাইনেশন বিগ শো’ ইত্যাদি চটকদার সব শিরোনামের আড়ালেই রয়েছে এ দুই
শ্রেণীর বস্তুগত উদ্দেশ্য।
মিডিয়ার
অকল্পনীয় উন্নতির সুবাদে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীই মাতাল আজ এসব আয়োজনকে ঘিরে।
দুঃখজনক সত্য হলো এসবে শুধু তরুণ প্রজন্মই মেতে নেই, মেতে আছেন একশ্রেণীর অপরিণামদর্শী অভিভাবক মহলও। নাচ-গান
শেখানোর পেছনে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ যদি তারা না ঢালেন, তবে তো নৃত্য-সঙ্গীতের স্কুলগুলো এত রমরমা ব্যবসা করতে
পারে না। ইদানীং বিশ্বে অনেক কিছু নিয়েই জরিপ চালানো হয়। নাচ-গানে
বিনিয়োগ-আত্মনিয়োগ নিয়ে যদি কোনো জরিপ পরিচালিত হয় তবে বাংলাদেশের মতো একটি
গরিব দেশের নাম যে ওই তালিকার অন্যতম শীর্ষস্থানে থাকবে তাতে সন্দেহের কিছু
নেই।
এতসব আয়োজন
ও আয়োজকদের বদান্যতায় এ জাতি এতটাই মেতেছে, দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জর এ জাতি এতটা মাতাল হয়েছে যে
ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষ কোনো শ্রেণীর মানুষই গানের
জোয়ারে গা না ভাসিয়ে বসে থাকছে না। আর সে জোয়ারেই ভেসে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের
নীতি-আদর্শ ও কাম্য সচ্চরিত্র। যে ইভটিজিং ও যৌন অপরাধের ব্যাপক বৃদ্ধিতে এ দেশের
চিরসবুজ শান্তির নিবাসগুলোতে জ্বলছে অশান্তির কালো আগুন তার অনেকখানি দায় এসব
নাচ-গানকেন্দ্রিক আয়োজনের। অবৈধ ভালোবাসা আর ভোগ জীবনের আহ্বানে সদা সরব এসব গান
কাউকে স্বস্তি দিচ্ছে না। বরং তরুণ প্রজন্মের হৃদয়ে পাপের আগুনে ঘি ঢেলে
দিচ্ছে।
এমন কোনো
স্থান নেই যেখানে গেলে গানের আযাব থেকে সম্পূর্ণ পরিত্রাণ মেলে। ঘরে বলেন বা বাইরে, পথে বলেন কিংবা যানবাহনে— সর্বত্র ওই কানে
অগ্নিবর্ষণকারী গানের আওয়াজ। বাসায় ঘুমিয়ে, পড়াশোনা করে এমনকি পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করতে গিয়েও
নিস্তার নেই এই গানের অশ্রাব্য আওয়াজ থেকে। ঘর থেকে বের হলেন তো সেরেছে। কোথায়
যাবেন দোকানে? সেখানেও কিন্তু গানের উপকরণের অভাব নেই। হেঁটে পথ পাড়ি দেবেন? সেখানেও দেখবেন মোবাইলে সজোরে গান শুনতে শুনতে কেউ না কেউ
পথ চলছে। আর বাস বা যানবাহনের কথা তো বলাইবাহুল্য। বড় পরিতাপের বিষয় হলো একমাত্র
নিরাপদ স্থান আল্লাহর ঘর মসজিদেও এই অভিশপ্ত গানের আওয়াজ ইদানীং কানে আসছে।
অসচেতন কিছু মুসল্লী তাদের মোবাইলের রিংটোন হিসেবে গান ব্যবহার করায় এমনটি
হচ্ছে। একজন মুসল্লী কিভাবে
নিজের ছায়াসঙ্গী এই মোবাইল রিংটোন বানান গানকে তা কিছুতেই বোধগম্য নয়!
কেবল সংবাদ
শোনা কিংবা নিছক ক্রিকেট খেলা দেখার অজুহাতে যারা অপছন্দকে সঙ্গী করেই কদাচিৎ টিভি
দেখেন, তারাও আজ বিপদে। এসবের ফাঁকে বিজ্ঞাপনগুলোতে নাচ-গানের
এমন দৃষ্টিকটু অনুপ্রবেশ থাকে যা তাদের মতো ‘স্বল্পপুঁজির’ ঈমানদারদেরও টিভির সামনে ঘেঁষতে দ্বিধান্বিত করে।
আসলে নাচ-গানের ক্ষতিকারিতা এত বেশি যে তা নাজায়েয হওয়ার জন্য
আলাদা কোনো প্রমাণের দরকার পড়ে না। তদুপরি মহান আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু ভাষ্য থেকে তা হারাম হওয়া প্রমাণিত। যেমন
: আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ (6)
‘আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে
আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব।’[1]
গান-গায়িকা এবং এর ব্যবসা ও
চর্চাকে হারাম আখ্যায়িত করে তিনি বলেন,
لاَ تَبِيعُوا الْقَيْنَاتِ وَلاَ تَشْتَرُوهُنَّ وَلاَ تُعَلِّمُوهُنَّ وَلاَ خَيْرَ فِى تِجَارَةٍ فِيهِنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ
‘তোমরা গায়িকা (দাসী) কেনাবেচা করো না এবং
তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। আর এসবের ব্যবসায় কোনো কল্যাণও নেই। জেনে রেখ, এ থেকে প্রাপ্ত মূল্য হারাম।’[2]
অন্যত্র তিনি বলেন,
لَيَشْرَبَنَّ أُنَاسٌ مِنْ أُمَّتِى الْخَمْرَ يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا وَتُضْرَبُ عَلَى رُءُوسِهِمُ الْمَعَازِفُ يَخْسِفُ اللَّهُ بِهِمُ الأَرْضَ وَيَجْعَلُ مِنْهُمْ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ ».
‘আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন
করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার ওপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা নারীদের গান বাজতে
থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে মাটিতে ধ্বসিয়ে দেবেন। এবং
তাদের মধ্যে অনেককে শূকর ও বাঁদর বানিয়ে দেবেন।’[3]
তিনি আরও বলেন,
لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ
‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক সৃষ্টি
হবে, যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল সাব্যস্ত করবে।’[4]
আরেক জায়গায় তিনি বলেন,
بَعَثَنِي اللهُ رَحْمَةً وَهَدًى لِلْعَالَمِينَ وَبَعَثَنِي لِمَحْقِ الْمَعَازِفِ وَالْمَزَامِيرِ، وَأَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ
‘আল্লাহ তা‘আলা আমাকে মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত
স্বরূপ প্রেরণ করেছেন এবং বাদ্যযন্ত্র, ক্রুশ ও জাহেলি প্রথা অবলুপ্ত করার
নির্দেশ দিয়েছেন।’[5]
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু
আনহু বলেন,
الْغِنَاءُ يُنْبِتُ النِّفَاقَ فِى الْقَلْبِ كَمَا يُنْبِتُ الْمَاءُ الزَّرْعَ
অথচ সবাই জানেন বর্তমান প্রজন্মের
মধ্যে মাদক ও পাপাসক্তির ক্রমবিস্তার প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। হাজার
প্রচারণা ও বিজ্ঞাপনেও নেশার ছোবল থেকে এদের রক্ষা করা যাচ্ছে না। এদের হাতেই রোজ
খুন-ধর্ষণসহ ইত্যাকার নানা অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এসব নাচ-গানে ডুবে তারা মানবজীবনের
মূল লক্ষ্য হারিয়ে হতাশার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই দেখা যায় সুখী ও উন্নত
দেশগুলোতেই আত্মহত্যার হার সবচে বেশি। আসলে পরকাল ভাবনাই মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে
নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের ভেতরে সুপ্রবৃত্তি ও সদগুণাবলি জাগিয়ে তোলে। আর
নাচ-গানের মূল সাফল্যই এখানে যে তা আখিরাত ভাবনাকে একেবারে ভুলিয়ে দেয়। মানুষের
সুকুমার বৃত্তির ওপর পর্দা ফেলে ক্ষণিকের বস্তুতে মজে রাখে।
• সাহাবী ও
তাবেয়ীদের
ভাষ্য অনুযায়ী গান ও বাদ্যযন্ত্র বহু গুনাহর সমষ্টি।
যেমন :
ক. নিফাক বা মুনাফেরির উৎস
খ. ব্যভিচারে অনুপ্রাণিতকারী
গ. মস্তিষ্কের ওপর আবরণ
ঘ. কুরআনের প্রতি অনীহা সৃষ্টিকারী
ঙ. আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী
চ. গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী ও
ছ. জিহাদি চেতনা বিনষ্টকারী।[7]
যেমন :
ক. নিফাক বা মুনাফেরির উৎস
খ. ব্যভিচারে অনুপ্রাণিতকারী
গ. মস্তিষ্কের ওপর আবরণ
ঘ. কুরআনের প্রতি অনীহা সৃষ্টিকারী
ঙ. আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী
চ. গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী ও
ছ. জিহাদি চেতনা বিনষ্টকারী।[7]
আজ বড্ড
প্রয়োজন তাই এ নাচ-গানের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করা।
মসজিদ, মাহফিলে, আলোচনার টেবিলে এবং সব ধরনের মিডিয়াতে এ ব্যাপারে
সর্বশ্রেণীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এ জাতির অস্তিত্ব, সমৃদ্ধি ও মঙ্গলের স্বার্থেই তা জরুরী। হ্যা, নাচ-গান তথা অসুস্থ বিনোদনের প্রতি মানুষকে নিরুৎসাহিত করার
পাশাপাশি সুস্থ বিনোদনের দিকেও পথনির্দেশ করতে হবে। বিনোদন মাধ্যমের উন্নতির যুগে
মানুষের জন্য কুরআন-হাদীসের
আলোচনা, হামদ-নাত,ইসলামী
সঙ্গীতও সহজলভ্য করতে হবে। এ জন্য দরকার এসব কাজে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া। এসবের সঙ্গে
জড়িতদের বুদ্ধি-পরামর্শ ও আর্থিক সাহায্য দিয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করা। কারণ, মানুষকে উত্তম বিকল্প না দেয়া পর্যন্ত মানুষ কোনোদিন
মন্দ থেকে বিরত থাকবে না। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে গান-বাদ্যের ফিতনা থেকে দূরে থাকবার
এবং এসব বন্ধে কাজ করার তাওফীক দিন। আমীন।
গানের বিধান : ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে
الحمد لله رب العالمين، وصلى الله وسلم وبارك على نبينا محمد، وعلى آله وأصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين، أما بعد:
আল্লাহ তাআলা মানব জাতীকে অতীব সুন্দর আকৃতিতে
সৃষ্টি করেছেন। চোখ, কান ও অন্তর দ্বারা মানবজাতীকে সৌন্দর্য মন্ডিত করেছেন। আর ক্বিয়ামতের
দিন মানব জাতির প্রত্যেককে আল্লাহ তাআলার দরবারে হাজির হতে হবে এবং জিজ্ঞাসার সম্মূখীন
হতে হবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে স্বীয় মাখলুকের মধ্যে চিন্তা-ফিকির করার যে নির্দেশ
মানুষকে দিয়েছেন সে অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর মাখলুক সম্পর্কে চিন্তা- ফিকির
করে, তবে সে অবশ্যই আল্লাহর সৃষ্টির মহত্ব, তার সৌন্দর্য মন্ডিত কারীগরি ও নিঁখুত আবিস্কারের
পরিপূর্ণতা প্রত্যক্ষ করবে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
((وَفِي أَنفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ)) (الذاريات:২১).
“তোমাদের নিজদের মধ্যেও। তোমরা
কি চক্ষুষ্মান হবে না?” (জারিয়াত: ২১)
আল্লাহ তাআলা মানুষকে যে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
দ্বারা সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে কান ও চোখ হল, মানুষের জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব পূর্ণ
অঙ্গ ও আল্লাহর নেয়ামতসমূহের অন্যতম। আল্লাহ তাআলা তার মহা গ্রন্থ আল-কুরআনে বলেন,
(( إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا)) (الإنسان:২).
“আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র
শুক্রবিন্দু থেকে, আমি তাকে পরীক্ষা করব, ফলে আমি তাকে বানিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।”
এ আয়াতটিতে গভীরভাবে চিন্তা-ফিকির করলে, দেখতে
পাবে কানকে চোখের পূর্বে উল্লেখ করার বিশেষ হিকমত ও প্রজ্ঞাময় অর্থাবলী। অর্থাৎ, কানই
হল আল্লাহর তাআলার সর্বাধিক গুরুত্ব পূর্ণ নেয়ামত যদ্বারা মানুষ আল্লাহর দ্বীনকে আয়ত্ব
করতে পারে এবং তার শরীয়ত ও বিধানাবলী বুঝতে পারে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমের উনিশটি
স্থানে কান ও চোখের কথা উল্লেখ করেছেন এবং সতেরটি স্থানে কানকে চোখের পূর্বে উল্লেখ
করেছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআলা পদত্ত যত নেয়ামত আছে তার মধ্যে কর্ণই হল,
আল্লাহর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও মহান নেয়ামত। আল্লাহ তাআলা তার কালামে কর্ণকে চক্ষুর
পূর্বে উল্লেখ করার হিকমত প্রসঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের কর্ণ চক্ষুর আগেই
পূর্ণতা লাভ করে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কর্ণকে চক্ষুর পূর্বে আলোচনায় নিয়ে আসেন। এছাড়াও
সাধারণত একজন মানুষ কানের মাধ্যমেই শরীয়তের বিধানাবলীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং তার জ্ঞান
মানুষের অন্তরে আল্লাহর বিধান ও শরিয়ত কর্ণের মাধ্যমেই স্থান করে নেয়।
একজন অন্ধ লোক তার দ্বীনের বিষয়ে সর্বাধিক
কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর সে তার দুনিয়ার বিষয়ে সর্বাধিক অধিক ক্ষতিগ্রস্থ এবং সে ক্বিয়ামতের
দিন অঙ্গহীণ ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের থেকে পরিণতিতে সবচেয়ে উত্তম লোক। পক্ষান্তরে বধির তার
দুনিয়া বিষয়ে তাদের উভয়ের থেকে কম ক্ষতিগস্থ এবং দ্বীনের বিষয়ে তাদের উভয়ের তুলনায়
কম উপকৃত। কারণ, কান দ্বারা মানুষ শরীয়তকে বুঝে এবং সে মুকাল্লাফ ও আল্লাহর আদেশ পালনের
দয়িত্ব প্রাপ্ত হন। এ কারণেই কান আল্লাহর মানব সৃষ্টির প্রসংশিত স্থানেই তার স্থান
রাখা হয়েছে। মানুষকে সন্দর সুরের অধিকারী করেছেন এবং কান দিয়েছেন যাতে সুর থেকে সে
আনন্দ ও উল্লাস উপভোগ করতে পারে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে করীমে এরশাদ করেন,
((الْحَمْدُ لِلهِ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ جَاعِلِ الْمَلَائِكَةِ رُسُلًا أُولِي أَجْنِحَةٍ مَّثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ يَزِيدُ فِي الْخَلْقِ مَا يَشَاءُ)) (فاطر:১).
“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য,
যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, ফেরেশতাদেরকে বাণীবাহকরূপে নিযুক্তকারী, যারা দুই
দুই, তিন তিন ও চার চার পাখাবিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। নিশ্চয়
আল্লাহ সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।” (সূরা ফাতির: ১)
আল্লামা ইবনে জারীর আত্তাবারী রহ. আল্লাহ
তাআলার বাণী:
((يزِيدُ فِي الْخَلْقِ مَا يَشَاءُ)) (فاطر:১).
এর তাফসীরে বলেন এখানে উদ্দেশ্য হল, সুন্দর
আওয়াজ, যদ্বারা একজন মানুষ আনন্দ উপভোগ করে। আল্লাহ তাআলা ভালো কথা ও সুন্দর উক্তি
শ্রুতিমধুর হওয়াতে তার প্রসংশা করেছেন। আর শোনা ছাড়াতো কোন কথার প্রসংশা করা যায় না।
তাই আল্লাহর সুন্দর ও শ্রুতি মধুর আওয়াজের প্রশংসা করেছেন এবং কর্কশ ও বিরক্তকর আওয়াজের
নিন্দা করেছেন। আল্লাহ তাআলা গাধার আওয়াজের নিন্দা জানিয়ে বলেন,
'আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা
অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নীচু কর; নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার আওয়াজ'। (সূরা
লুকমান: ১৯)
এতে প্রতীয়মান হয় যে, কতক এমন সুন্দর আওয়াজ
আছে, যা শোনে কান আগ্রহী ও আনন্দ পায়, আর এধরনের আওয়াজ জান্নাতীদের নেয়ামতের অর্ন্তভূক্ত।
যেমন আল্লাহ তআলা বলেন,
"অতএব যারা ঈমান এনেছে
এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে জান্নাতে পরিতুষ্ট করা হবে।"
এ আয়াতের তাফসিরে বর্ণিত, তা হল, শ্রবণ। আল্লামা
ইবনে জারির আওজায়ী হতে এবং তিনি ইয়াহয়া ইবনে কাসীর হতে বর্ণনা করেন তা হল, শ্রবণ।
এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে, মানুষের
স্বভাব হল, সুন্দর আওয়াজ ও সূর দ্বারা উপভোগ করা। তাই দেখা যায় একজন ছোট বাচ্চা যে
কিছুই বোঝে না সেও সূর শোনে অভিভুত হয় এবং আনন্দ পায়।
বিষয়টি শুধু আদম সন্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়,
বরং চতুষ্পদ জন্তুও যখন সে দেখতে পায় তার উপর আরোহী লোকটির সূর সুন্দর হয়, তখন সে খুব
দ্রুত দৌড়তে থাকে।
এ কারণে আল্লামা ইবনে উলাইয়া বলেন, আমি একদিন
ইমাম শাফেয়ীর সাথে হাঁটতে ছিলাম তখন আমরা একটি আওয়াজ শোনে তার প্রতি আকৃষ্ট হলাম তখন
তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমাকে কি আওয়াজ অভিভুত করছে? বললাম না তিনি বললেন, কেন!
সুন্দর।
একই অর্থে সফরে তারা মক্কার পথে যে কবিতা-গান
আবৃতি করত।
بشَّرها دليلُـهـا وقـالا ** غدًا ترين الطّلْحَ والحبالا
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তার উম্মতদের কুরআনকে মধুর কন্ঠে তিলাওয়াত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
(( ليس منّا من لم يتغنَّ بالقرآن )).
“যে কুরআনকে সূর দিয়ে তিলাওয়াত
করে না সে আমার উম্মতের অন্তভূর্ক্ত নয়।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো
বলেন, আল্লাহ তাআলা কোন নবীকে সূর ও উচ্চ আওয়াজ করার অনুমতি দেননি যেমনটি অনুমতি দিয়েছেন
কুরআন তিলাওয়াত বিষয়ে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেন,
(( ما أَذِنَ الله لشيء إذنه لنبي يتغنّى بالقرآن يجهر به )).
“তোমরা তোমাদের সুন্দর কন্ঠ
দ্বারা কুরআনের তিলাওয়াতকে সৌন্দর্য মন্ডিত কর।”
এ কারণে বিজ্ঞ আলেমগণ এ বিষয়ে একমত যে, কুরআনকে
সূর দিয়ে তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। আবার কারো কারো মতে কুরআনকে সূর দিয়ে তিলাওয়াত করা
ওয়াজিব। কারণ, রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পরিষ্কার বলেছেন-
(( زينوا القرآن بأصواتكم)).
“তোমরা তোমাদের সুন্দর আওয়াজের
মাধ্যমে কুরআনকে সৌন্দর্য মণ্ডিত কর।”
জমহুর আলেমদের মত হল, এখানে
তাগান্নি দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আওয়াজ সুন্দর করা। ইমাম শাফি রহ. এর মত, তার ছাত্র রবীর
বর্ণনুযায়ী, এখানে কুরআনের তিলাওয়াতে আওয়াজ সুন্দর করাই উদ্দেশ্য।
আল্লামা ইবনে উলাইয়া বলেন, এখানে
উদ্দেশ্য হল, কুরআনের অর্থ হাসিলের পর অন্য কোন অর্থ থেকে বিমুখ হওয়া। আবু উবাইদ আল
কাসিম বিন সালাম রহ. এক বিবেচনায় এ অর্থটিকে বিশুদ্ধ আখ্যা দিয়েছেন।
আরবী অভিধানে এ ধরনের সব অর্থেরই অবকাশ রয়েছে।
তবে সর্বাধিক স্পষ্ট ও প্রসিদ্ধ অর্থ হল, আওয়াজ সুন্দর করা। এ অর্থটিকেই রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বাণী-
(( زينوا القرآن بأصواتكم)).
(তোমরা তোমাদের সুন্দর আওয়াজের
মাধ্যমে কুরআনকে সৌন্দর্য মণ্ডিত কর) সমর্থন করে।
তবে তাগান্নীর অর্থ 'অমুখাপেক্ষি হওয়া' নেয়াকে
ইমাম শাফী রহ. প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এর বাণী
((ليس منّا من لم يتغنَّ بالقرآن)).
এর অর্থ যদি 'অমুখাপেক্ষি হওয়া' হত তাহলে তিনি
এভাবে বলতেন-
ليس منا من لم يتغن.
কারো কারো মতে হাদীসটির উভয় অর্থেরই সম্ভাবনা
রাখে, যেমনটি স্পষ্ট করে বলেছেন, আবু উবাইদ আল কাসেম ইবনে সাল্লাম রহ.।
এর উপর অনেকেই বিশিষ্ট আরবী কবি আ'শার কথা
দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন, তিনি বলেন,
وكُنْتُ امْرًَا زَمَنًا بالعِراق ** عَفِيفَ المُناخِ طَويلَ التَّغَنْ
অর্থাৎ, মানুষের প্রতি মুখাপেক্ষি না হওয়া
এবং তাদের নিকট কোন অভাব না থাকা।
জাহিলিয়্যাতের যুগ ও ইসলাম আগমনের পরও আরবরা
সাধারণত কবিতা আবৃতি করা ও গান গাওয়াকে বেশি পছন্দ করতো। এমনকি রাসূলের সাহাবীরাও কবিতাও
গানকে উপভোগ করত এবং তা পছন্দ করত। ইমাম বাইহাকী রহ. তার সূনান গ্রন্থে আবী সালমা বিন
আব্দুর রহমান হতে হাসান সনদে একটি হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলের সাহাবীদের
মধ্যে কতক ছাহাবী এমন ছিল যারা কবিতা আবৃতি করত এবং তা উপভোগ করত.....
( كان أصحاب رسول الله - صلى الله عليه وسلم- رجالًا يقولون الشعر، ويتلذذون به، فإذا أُرِيدَ أحدٌ منهم على دينه دارت حماليق عينيه)
এর কারণ হল, অশ্লীল, অশালীন কথাবার্তা ও মানুষের
স্বভাবের পরিপন্থী কার্যকলাপ তাদের ক্ষুব্ধ করত।
আরবী ভাষা, অভিধান ও তাদের পরিভাষার প্রতি
লক্ষ করলে, তুমি দেখতে পাবে- তারা غنى শব্দ
দ্বারা সাধারণত কবিতা, গান, কাব্যিক কথা ইত্যাদিই উদ্দেশ্য নিয়ে থাকে। যেমন বিশিষ্ট
আরবী কবি হুমাইদ বিন সূর বলেন,
عجبت لها أنّى يكون غناؤها ** فصيحًا ولم تفغر بمنطقها فَمَا
কারণ হল, গান হল যা শুধু মুখ থেকে বের হয়ে
থাকে তার সাথে অন্য কিছুকে সম্পৃক্ত করা হয় না। যদি গানের কথার সাথে অন্য কোন বাজনা
বা বাদ্য শোনা যায় তবে তা শুধু গান থাকে না। তখন তাকে কবিতা, গান ও কাব্যিক কথা ইত্যাদি
আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে যদি তার আওয়াজ সুন্দর হয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এর কথার মধ্যে তা আরো স্পষ্ট হয়। তিনি বলেন,
(( ليس منا من لم يتغنَّ بالقرآن)).
তিনি আরো বলেন,
(( ما أذِنَ الله لشيء أذنه لنبي أن يتغنَّ بالقرآن)).
অর্থাৎ, কুরআনের তিলাওয়াতে আওয়াজকে
সুন্দর করা।
রাসূলের সাহাবীদের কর্ম ও আরবদের বিভিন্ন কবিতার
মধ্যে চিন্তাভাবনা করলে দেখা যাবে যে, তারা غناء শব্দ
উল্লেখ করা দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হল, কবিতা ও গান। এমনকি পরবর্তী লোকদের জন্য বিষয়টি
আরো জটিল হয়ে গেল। কারণ, তারা ধারণা করত যে, তারা তাদের কথা ব্যবহার করত এবং তার দ্বারা
পরবর্তীদের পরিভাষানুযায়ী গানকে উদ্দেশ্য নিত। অথচ এটি ছিল, নিচক অজ্ঞতা ও মূর্খতা
বৈ কিছুই নয়। কারণ, তাদের غناء শব্দটি তাদের নিকট
ব্যাপক অর্থে ছিল না।
غناء-পরবর্তীদের পরীভাষা অনুযায়ী
যে অর্থ দাড়ায়- ও হেদা- সাহাবী ও সলফপ্রমূখদের হতে যে অর্থটি বর্ণিত হয়ে আসছে- শব্দ
দুটির উদ্দেশ্যের মাঝে প্রার্থক্য করাটা মুশকিল হওয়া ও শব্দদ্বয় অর্থের দিক দিয়ে একই
রকম হওয়াতে ইবনে হাম্বলী এ বিষয়ে একটি কিতাব লিখেন যার উপর আল্লামা ইবনে কুদামা এ বলে
কটাক্ক করেন- তিনি হেদা শব্দ উল্লেখ করে غنى এর
উপর দলীল পেশ করতে আরম্ভ করেন, আর মূলত. এ কাজটি তিনিই করতে পারে যিনি غناء ও
হেদা শব্দদ্বয়ের মধ্যে প্রার্থক্য করতে পারে না এবং কোনটি কবিতা তাও বুঝে না। সুতরাং
যার যোগ্যতা এর মধ্যে সীমাবদ্ধ সে কখনোই ফতোয়া দেয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি হতে পারে
না।
আর যিনি এ কথা বললেন, সে একই কথা তিনি তার
কিতাবে আলমুগনীতে আলোচনা করেন, তিনি বলেন, আলেমদের নিকট ইখতেলাফের কেন্দ্র হল غناء।
সে এ কথা দ্বারা
কোন غناء উদ্দেশ্য
নিয়েছে?
উত্তর:- এ দ্বারা তার উদ্দেশ্য হেদা-গান।
কারণ, তিনি তার মৃত্যুর একবছর পূর্বে ইবনে হাম্বলীর খুব সমালোচনা করেছে এবং গান- غناء হারাম
হওয়ার আলেমদের ইত্তেফাকের কথা আলোচনা করেছেন।
ইমাম ইবনে যুজী বলেন, " غناء বা
গান তাদের যুগে যুহদ সম্পর্কীয় বিভিন্ন ধরনের কবিতারই সমষ্টিরই নাম তবে তারা এ গুলোকে
সূর দিয়ে আবৃতি করত।"
এ কারণেই অনেক ফকীহগণ রশীদ ইবনে জামের উপস্থিতিতে
বলত, غناء রোজার ক্ষতি করে। তখন সে বলল, তুমি
ওমর বিন আবি রাবীয়ার ঘরে বসে কী বলছ যে এ কাব্য আবৃতি করল
أمِن آل نُعْمٍ أنتَ غادٍ فمُبْكِرُ ** غداة غـد أم رائح فـمـهـجـر!
তার কি রোজার ক্ষতি হবে?
বলল, না। এ তো হল, যদ্বারা আমি আমার আওয়াজকে
লম্বা করলাম এবং আমারাতো কেবল মাথাকেই নাড়ালাম।
তোমরা আরো লক্ষ কর, আতা বিন আবি রাবাহ এর কথার
প্রতি, তিনি বলেন, মুহরিমের জন্য গেনা ও হেদা দ্বারা কোন অসুবিধা নাই।
কুরআন, হাদীস ও রাসূলের সাহাবী হতে বর্ণিত
নুসুস গুলোর প্রতি লক্ষ করলে দেখতে পাবে যে, ওহী বোঝার আরবী সাহিত্য দ্বারাইা বুঝতে
হবে। যার মধ্যে কোন সূর অথবা অশুদ্ধতা থাকে না।
এ কারণেই আল্লামা ইবনে কুদামা রহ. যে ব্যক্তি
শব্দ দুটির মধ্যে প্রার্থক্য করতে পারে না এবং উভয়কে একত্র করে ফেলে, তাকে ফতোয়া দেয়ার
উপযুক্ত বলে মনে করে না। বরং, তিনি তাকে ফতোয়া দেয়ার অযোগ্য মনে করেন।
গেনা এর প্রচলন ঢোল তবলা ও বাদ্য যন্ত্র ব্যবহারের
মাধ্যমে তৃতীয় শতাব্দী হতে শুরু হয়। এর পূর্বে গান ঢোল তবলা ও বাদ্য যন্ত্রের মাধ্যমে
প্রচলন ছিল না। এ জন্যে বলা যায় যে, রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার
সাহাবীদের যুগে গেনা দ্বারা যা বোঝানো হত, তা বর্তমানের বাদ্য যন্ত্র ইতাদি বাঝিযে
যেভাবে গান বাজনা করা হয় তা নয়। বরং তা হল, কবিতা আবৃতি।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ
রহ. বলেন, "রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর
পর তিন যুগ পর্যন্ত হেজায, শাম, ইয়ামন, মিসর, ইরাক, পশ্চিমাঞ্চল ও খুরাসান কোথাও গানবাজনা
ও বাদ্যানুষ্টানে একত্র হওয়ার কোন রীতি নীতি কোন সংস্কারক, আল্লাহ ওয়ালা ও ইবাদতকারীরে
মধ্যে চালু ছিল না। বরং এর প্রচলন হয় দ্বিতীয় শতাব্দীর পর থেকে"।
এ কারণেই এ কথা স্পষ্ট যে, সাহাবীদের কথা ও
আরবদের কবিতার মধ্যে غنى শব্দের যে ব্যবহার
পাওয়া যায় তার দ্বারা উদ্দেশ্য কোন প্রচলিত গান বাজনা নয়। বরং, তার দ্বারা উদ্দেশ্য
হল, কবিতা ও কাব্য। যে গুলোকে বর্তমানে আমরা হামদ নাত ইত্যাদি বলে আখ্যায়িত করে থাকি।
একাধিক ভাষাবিধ, আভিধানিক ও ইমামদের থেকে গেনার
এ ব্যাখ্যাটিই বর্ণিত আছে। যেমন- আবু ওবাইদ কাসেম বিন সাল্লাম তাদের অন্যতম। বরং বিষয়টিকে
ইমাম শাফেয়ী রহ. আরো অধিক স্পষ্ট করেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা অচিরেই আসছে।
মোট কথা হল, আমাদেরকে অবশ্যই বর্তমানের পরিভাষা
ও অতীতের মণীষিদের পরিভাষার মধ্যে প্রার্থক্য জানতে হবে। অন্যথায় বাস্তবতা হতে আমাদের
অনেক দূরে থাকতে হবে। এবং সত্যের অদূরে থাকা ও সত্যকে উপলব্ধি করতে পারা আমাদের দ্বারা
সম্ভব নয়। যদিও শব্দটি এক কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলে দেখা যাবে শব্দটি উভয় বিষয়টিকেই
অন্তভূর্ক্ত করে। তবে আমাদেরকে বাহ্যিক অবস্থার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে যে,
শব্দটির ব্যবহার ও প্রয়োগ কীভাবে হচ্ছে এবং তার সাথে কী মিলছে।
প্রায় চল্লিশ বছর থেকে মিশরে যখন গানের প্রচলন
শুরু হল, তখন তাদের অনেকেই সলফদের গান শব্দের ব্যবহার দ্বারা তাদের নিজেদের পক্ষে দলীল
পেশ করতেন এবং তারা তাদের থেকে বর্ণিত বিভিন্ন উক্তি দ্বারা দলীল পেশ করত।
আর আল্লামা গামারী রহ. যিনি মাগরেবী আলেমদেরই
একজন তিনি বলেন, এমনকি ইবলিস জ্ঞানীদের সাথে গান হারাম হওয়ার বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত।
অর্থাৎ সলফদের কথা দ্বারা দলীল পেশ করাটা সাহাবী
ও তাবেয়ীদের থেকে এ শব্দের যে ব্যাখ্যা বর্ণিত তা বাস্তবতার অনেক দূরে। এ কারণেই যাদের
প্রভৃত্তির প্রভাব বিজয়ী ও যাদের জ্ঞানের পরিধি খুবই সীমিত তাদের অনেকের কাছেই বিষয়টি
অস্পষ্ট ও গোজামিল রয়ে গেছে।
আল্লামা ইবনে কুদামাহ যারা শব্দের অর্থের মধ্যে
প্রার্থক্য করতে পারে না তাদের ফতোওয়া দেয়ার অনুপযোগী বিবেচনা করেন।
কুরআন ও হাদীসের প্রমাণাদি সম্পর্কে চিন্তা
করে সে অবশ্যই দেখতে পাবে যে, আল্লাহ তাআলা একাধিক আয়াতে গান বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত
করেছেন। এ বিষয়ে বর্ণিত আয়াতের সংখ্যা অনেক। গান-বাদ্যকে হারাম করার কারণ, মানবাত্মকে
নেফাক ও কুফর থেকে হেফাজত করা এবং শয়তানের অনুপ্রবেশ ও কুমন্ত্রণা হতে রক্ষা করা।
আল্লাহ তাআলা মক্কাতেই অর্থাৎ ইসলামের প্রাথমিক
অবস্থায় গান বাদ্যকে হারাম ঘোষণা করেন। এতেই অনুমেয় যে গান একজন্য মুসলমানের জন্য কতবড়
ক্ষতিকর এবং বান্দার উপর তার প্রভাব যে কত মারত্মক। আল্লাহ তাআলা সূরা নজমে ও সূরা
লোকমানে গান হারাম হওয়ার বিষয়ে ঘোষণা দেন। আর সূরাদ্বয় অবশ্যই মক্কী সূরা।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন,
(لقمان:৬). (وَمِنَ النّاسِ مَن يَشتَرى لَهوَ الحَديثِ لِيُضِلَّ عَن سَبيلِ اللَّهِ بِغَيرِ عِلمٍ وَيَتَّخِذَها هُزُوًا ۚ أُولٰئِكَ لَهُم عَذابٌ مُهينٌ)
“আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ
না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা
ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব।” (সূরা
লুকমান: ৬)
আল্লাহ তাআলা কথাটি সূরা লোকমানে বলেছেন। আর
সূরা লোকমান হল মক্কী সূরা। সাহাবী ও অন্যান্যদের ব্যাখ্যার প্রতি লক্ষ করলে দেখতে
পাবে তারা সবাই এ বিষয়ে একমত যে, নিশ্চয় এ আয়াতের অর্থের মধ্যে গান অন্তভূর্ক্ত। সাহাবীদের
ব্যাখ্যাসমূহও এ বিষয়ে একমত। হাকেম তার মুসতাদরাকে বলেন, সাহাবীদের তাফসীর যেটি ওহীর
মোতাবেক হবে, তা ইমাম বুখারী ও মুসলিমের মতে হাদীসে মুসনাদের সমপর্যায়ের হবে। তিনি
অন্যত্র বলেন, তাদের ব্যাখ্য হাদীসে মারফুর মতই শক্তিশালী। আল্লামা ইবনে জারীর আততাবারী
ও বাইহাকী তার সূনান ও অন্যত্র আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ হতে বর্ণান করেন, তিনি এ আয়াতের
ব্যাখ্যায় বলেন,
( واللهِ الذي لا إله إلا هو إن لهو الحديث لهو الغناء )
যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই সে আল্লাহর
সপথ করে বলছি, নিশ্চয় কুরআনের আয়াতে لهو
الحديث দ্বারা
উদ্দেশ্য হল গান। তিনি এ কথাটি তিন বার বলেন। আর আব্দুল্লাহ বিন তাফসীর বিষয়ে সমগ্র
সাহাবী হতে অধীক অভিজ্ঞ। যদিও তিনি সব সাহাবীদের থেকে সর্বাধিক জ্ঞানী নন।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম আমশ হতে আর তিনি মুসলিম
আর মুসলিম মাসরুক হতে তিনি আব্দুল্লাহ হতে তিনি বলেন
, ((والذي لا إله غيره ما من كتاب الله سورة إلا أنا أعلم حيث نزلت, وما من آية إلا أنا أعلم فيما أنزلت
ولو أعلم أحدًا هو أعلم بكتاب الله مني تبلغه الإبل لركبت إليه )).
যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নাই তার সপথ
করে বলছি, আল্লাহর কিতাবে এমন কোন সূরা নাই যার অবতরণ স্থান সম্পর্কে আমি জানিনা। আর
এমন কোন আয়াত নাই যার অবতরণের পেক্ষাপট আমি জানি না। যদি আমি কারো বিষয়ে জানতাম যে,
সে আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে আমার চেযে অধিক জ্ঞাত তাহলে আমি তার সফর করতাম যদি সে পর্যন্ত
উট যাওয়ার ব্যবস্থা থাকত।
বরং তাবেয়ীদের মধ্য ইমামুত তাফসীর মুজাহিদ
বিন জবর এবং যিনি ইবনে আব্বাসের নিকট ত্রিশবারের মত কুরআন আবদুল্লাহ বিন আব্বাসের সম্মূখে
তুলে ধরেন। আমি যদি ইবনে মাসউদের ক্বিরাত অনুযায়ী কুরআন পড়তাম তাহলে কুরআনের অনেক অংশ
যে গুলি আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস হতে জেনেছিলাম তা জানার জন্য আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসকে
জিজ্ঞাসা করার মুখাপেক্ষি হতাম না। তিনি তাফসীর বিষয়ে এত বড় পণ্ডিত হওয়া সত্বেও তিনি
আয়াতের এ তাফসীর বিষয়ে আল্লাহর নামের সপথ করেন। অথচ তিনি আল্লাহর বাণী-
“আর যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ
করে কিয়ামতের দিন তুমি তাদের চেহারাগুলো কালো দেখতে পাবে। অহঙ্কারীদের বাসস্থান জাহান্নামের
মধ্যে নয় কি?” তিলাওয়াত করেন। একই আব্দুল্লাহ তাফসীর আব্দুল্লাহ
বিন আব্বাস হতেও বর্ণিত। যেমনটি আল-আদবুল মুফরেদে ইমাম বুখারী ইবনে জারির আতত্বাবারী
এবং অনুরুপভাবে ইবনে আবি শাইবা প্রমূখগণ আতা রহ. এর হাদীস হতে এবং তিনি সাঈদ বিন যুবাইর
হতে আর তিনি আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস হতে, তিনি বলেন, আয়াতটি গান-বাজনা ইত্যাদি বিষয়ে
নাযিল হয়েছে। জাবের বিন আব্দুল্লাহ হতেও একই রকম তাফসীর বর্ণিত তিনি বলেন, তা হল গান।
এ ছাড়াও আরো অনেক তাফসীর কারকদের আয়াতের তাফসীর গান বলেই তাফসীর করেছেন।
আল্লাহ তাআলা সূরা নজমে আরো বলেন,
(( أَفَمِنْ هَذَا الْحَدِيثِ تَعْجَبُونَ وَتَضْحَكُونَ وَلَا تَبْكُونَ وأنتم سامدون))
“তোমরা কি এ কথায় বিস্ময় বোধ
করছ? আর হাসছ এবং কাঁদছ না? আর তোমরা তো গাফিল।” (সূরা নজম: ৫৯-৬১)
এখানে আয়াতে সামেদুন অর্থ গান-বাজনা। যেমন
ইবনে জারির আততাবারী ইকরামা হতে এবং তিনি আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ হতে বর্ণনা করেন তিনি
বলেন, ((السمود
هو
: الغناء )).
আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে ইবলিসকে সম্বোধন
করে বলেন,
'তোমার কণ্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে
যাকে পারো প্ররোচিত কর, তাদের উপর ঝাপিয়ে পড় তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে' (সূরা
ইসরা: ৬৪)
এখানে ইবলিসের আওয়াজ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, গান।
এতেও প্রমাণিত হয় যে, গান হারাম।
মুজাহিদ ইবনে জাবর বলেন, ইবলিসের আওয়াজ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, (( هو الغناء )). গান বাজনা।
মুজাহিদ ইবনে জাবর বলেন, ইবলিসের আওয়াজ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, (( هو الغناء )). গান বাজনা।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
((وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا)) (الفرقان:৭২).
"আর যারা মিথ্যার সাক্ষ্য
হয় না এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায়।" (সূরা
ফুরকান: ৭২)
অনেক তাফসীর বিষারদদের মতে এখানে الزُّور দ্বারা
উদ্দেশ্য হল, গান।
হাদীস দ্বারা গান নিষিদ্ধ হওয়ার
দলীল:
ইমাম বুখারী তার বিশুদ্ধ কিতাব বুখারীতে বলেন,
হিশাম বিন আম্মার বলেন, আমাদের সাদাকা বিন খালেদ হাদীস বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমাকে
আব্দুর রহমান বিন ইয়াজিদ বিন জাবের বলেন আমাদের আতিয়্যা বিন কাইস হাদীস বর্ণনা করেন.....আবুআমের
হাদীস বর্ণনা করেন তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন তিনি
বলেন,
(( لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْحِرَ وَالْحَرِيرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ))
“আমার উম্মতের মধ্যে এমন একটি
দলের আর্ভিবাব হবে যারা পশমকে রেশমকে মদকে ও গান বাজনাকে হালাল মনে করবে।”
এখানে মায়যেফ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, গান। উল্লেখিত
কুরআন ও হাদীসে আলোকে এ কথা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, গান বাজনা ও মদপান ইত্যাদির মধ্যে
কোন প্রার্থক্য নাই। যেমনিভাবে মদ পান করা হারাম তেমনিভাবে গান বাজনাও হারাম।
মিউজিক কি হারাম ?
আল্লাহ রাব্বুল
আলামিন পবিত্র কুরআন মাজিদে বলেন,
“এক শ্রেণীর
লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ
করে অন্ধভাবে এবং উহাকে(আল্লাহর পথ) নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। এদের জন্যে রয়েছে অবমাননাকর
শাস্তি”। [৩১-৬]
আল-ওয়াহিদি
(রাদিয়াল্লাহু আনহুমা), অন্যান্য তাফসীরকারগণের সাথে ব্যাখ্যা করেন যে, এই আয়াতে
“অবান্তর কথাবার্তা” বলতে গান সঙ্গীতকে বুঝানো হয়েছে। যেসকল সাহাবাগণ এই ব্যাখ্যা
প্রদান করেন তারা হলেন ইবন আব্বাস, ইবন মাসউদ, মুজাহিদ, ইকরিমা(রাদিয়াল্লাহু আনহুম)।
ইবন মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, “আল্লাহর শপথ, যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই,
‘অবান্তর কথাবার্তা’ হল গান”।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“আমার উম্মতের
মধ্য হতে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র
ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে। এবং কিছু লোক এমন হবে যারা একটি পর্বতের নিকটে অবস্থান
করবে এবং সন্ধ্যাবেলায় তাদের মেষপালক তাদের নিকট মেষগুলো নিয়ে আসবে এবং তাদের নিকট
কিছু চাইবে, কিন্তু তারা বলবে, ‘আগামীকাল ফেরত এসো’। রাতের বেলায় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে
ধ্বংস করে দিবেন এবং তাদের উপর পর্বত ধ্বসিয়ে দিবেন, বাকি লোকদেরকে তিনি বানর ও শূকরে
পরিণত করে দিবেন এবং শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত তারা এই অবস্থায় থাকবে”। [বুখারী, ভলিউম
৭, বুক ৬৯,সংখ্যা৪৯৪]
এই হাদীসে
উল্লেখ হচ্ছে বাদ্যযন্ত্র হারাম, এবং উলামাগণের মধ্যে এই ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।
ইবন আল-কাইয়্যিম (রাহিমুল্লাহ) তাঁর বই ইগাছাতুল লাহফান এ বলেন, “যখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘বৈধ মনে করবে’, তার মানে তিনি বুঝিয়েছেন
এটা অবৈধ, এরপর লোকেরা একে বৈধ বানিয়েছে ”।
• আবু হুরায়রা
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘একদল লোকদেরকে তিনি বানর ও শূকরে পরিণত করে দিবেন’ সাহাবাগণ আরজ করলেন, “তারা কি ‘লা~ ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ এই সাক্ষ্য প্রদান করে?” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হ্যাঁ, এবং তারা সিয়াম ও হজ্জও পালন করে”। সাহাবাগণ আরজ করলেন, “তাহলে, তাদের সমস্যা কি ছিল?” তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তারা বাদ্যযন্ত্র, ঢোল ও নারী সঙ্গীতশিল্পী ব্যবহার করবে। (একদিন) তারা রাতভর মদপান, হাসি তামাশা করে নিদ্রা যাবে, সকালে(আল্লাহর ইচ্ছায়) তারা বানর ও শূকরে পরিণত হবে”। [ইগাছাতুল লাহফান]
‘একদল লোকদেরকে তিনি বানর ও শূকরে পরিণত করে দিবেন’ সাহাবাগণ আরজ করলেন, “তারা কি ‘লা~ ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ এই সাক্ষ্য প্রদান করে?” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হ্যাঁ, এবং তারা সিয়াম ও হজ্জও পালন করে”। সাহাবাগণ আরজ করলেন, “তাহলে, তাদের সমস্যা কি ছিল?” তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তারা বাদ্যযন্ত্র, ঢোল ও নারী সঙ্গীতশিল্পী ব্যবহার করবে। (একদিন) তারা রাতভর মদপান, হাসি তামাশা করে নিদ্রা যাবে, সকালে(আল্লাহর ইচ্ছায়) তারা বানর ও শূকরে পরিণত হবে”। [ইগাছাতুল লাহফান]
• আল্লাহ তায়ালা
কাফেরদের কাবাঘরের চারপাশের ইবাদতের কথা সমালোচনা করে বলেন,
“(এ ঘরের পাশে) তাদের (জাহেলী যুগের)নামায তো কিছু শিষ দেয়া ও তালি বাজানো ছাড়া কিছুই ছিল না”[সূরা আল আনফাল ৮-৩৫] ।
“(এ ঘরের পাশে) তাদের (জাহেলী যুগের)নামায তো কিছু শিষ দেয়া ও তালি বাজানো ছাড়া কিছুই ছিল না”[সূরা আল আনফাল ৮-৩৫] ।
ইবন আব্বাস,
ইবন উমর, আতিয়্যাহ, মুজাহিদ, আদ-দাহাক, আল হাসান এবং ক্বাতাদাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘মু’কান’ অর্থ শিষ বাজানো, ‘তাসদিয়াহ’ অর্থ তালি
বাজানো।
কুরআন মজীদের
অন্য আয়াতে আছে, ইবলিস-শয়তান আদম সন্তানকে ধোঁকা দেওয়ার আরজী পেশ করলে আল্লাহ
তাআলা ইবলিসকে বললেন,
“তোর আওয়াজ
দ্বারা তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস পদস্খলিত কর”।-সূরা ইসরা : ৬৪
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যে সকল বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তাই ইবলিসের আওয়াজ। বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. বলেন, ইবলিসের আওয়াজ বলতে এখানে গান ও বাদ্যযন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেসব বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তার মধ্যে গান-বাদ্যই সেরা। এজন্যই একে ইবলিসের আওয়াজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৯
বস্তুত গান বাজনার ক্ষতিকর প্রভাব এত বেশি যে, তা নাজায়েয হওয়ার জন্য আলাদা কোনো দলীল খোঁজার প্রয়োজন পড়ে না। এতদসত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বহু হাদীসের মাধ্যমে তা প্রমাণিত।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যে সকল বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তাই ইবলিসের আওয়াজ। বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. বলেন, ইবলিসের আওয়াজ বলতে এখানে গান ও বাদ্যযন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেসব বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তার মধ্যে গান-বাদ্যই সেরা। এজন্যই একে ইবলিসের আওয়াজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৯
বস্তুত গান বাজনার ক্ষতিকর প্রভাব এত বেশি যে, তা নাজায়েয হওয়ার জন্য আলাদা কোনো দলীল খোঁজার প্রয়োজন পড়ে না। এতদসত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বহু হাদীসের মাধ্যমে তা প্রমাণিত।
• গান-গায়িকা
এবং এর ব্যবসা ও চর্চাকে হারাম আখ্যায়িত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন-
তোমরা গায়িকা
(দাসী) ক্রয়-বিক্রয় কর না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। আর এসবের ব্যবসায় কোনো
কল্যাণ নেই। জেনে রেখ, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম।-জামে তিরমিযী হাদীস : ১২৮২; ইবনে মাজাহ
হাদীস : ২১৬৮
বর্তমানে গান ও বাদ্যযন্ত্রের বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে যাতে কোটি কোটি টাকা
বিনিয়োগ করা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, এর সকল উপার্জন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস অনুযায়ী সম্পূর্ণ হারাম।
• রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন,
আমার উম্মতের
কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা
রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন।-সুনানে ইবনে
মাজাহ হাদীস : ৪০২০; সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস : ৬৭৫৮
• হযরত আবদুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রা. বলেন, পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে
নিফাক সৃষ্টি করে।-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৩; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫২
উপরোক্ত বাণীর সত্যতা এখন দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার। গান-বাজনার ব্যাপক বিস্তারের ফলে মানুষের অন্তরে এই পরিমাণ নিফাক সৃষ্টি হয়েছে যে, সাহাবীদের ইসলামকে এ যুগে অচল মনে করা হচ্ছে এবং গান-বাদ্য, নারী-পুরুষের মেলামেশা ইত্যাদিকে হালাল মনে করা হচ্ছে।
• বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত নাফে’ রাহ. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার চলার পথে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বাঁশির আওয়াজ শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুই কানে আঙ্গুল দিলেন। কিছু দূর গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে নাফে’! এখনো কি আওয়াজ শুনছ? আমি বললাম হ্যাঁ। অতঃপর আমি যখন বললাম, এখন আর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না তখন তিনি কান থেকে আঙ্গুল সরালেন এবং বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন। -মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৪৫৩৫; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪৯২৪ বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. থেকেও এমন একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।-ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৯০১
উপরোক্ত বাণীর সত্যতা এখন দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার। গান-বাজনার ব্যাপক বিস্তারের ফলে মানুষের অন্তরে এই পরিমাণ নিফাক সৃষ্টি হয়েছে যে, সাহাবীদের ইসলামকে এ যুগে অচল মনে করা হচ্ছে এবং গান-বাদ্য, নারী-পুরুষের মেলামেশা ইত্যাদিকে হালাল মনে করা হচ্ছে।
• বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত নাফে’ রাহ. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার চলার পথে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বাঁশির আওয়াজ শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুই কানে আঙ্গুল দিলেন। কিছু দূর গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে নাফে’! এখনো কি আওয়াজ শুনছ? আমি বললাম হ্যাঁ। অতঃপর আমি যখন বললাম, এখন আর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না তখন তিনি কান থেকে আঙ্গুল সরালেন এবং বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন। -মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৪৫৩৫; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪৯২৪ বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. থেকেও এমন একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।-ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৯০১
বাজনাদার নুপুর ও ঘুঙুরের আওয়াজও সাহাবায়ে কেরাম বরদাশত করতেন না। তাহলে
গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রশ্নই কি অবান্তর নয়?
নাসাঈ ও সুনানে
আবু দাউদে বর্ণিত আছে,
একদিন হযরত
আয়েশা রা.-এর নিকট বাজনাদার নুপুর পরে কোনো বালিকা আসলে আয়েশা রা. বললেন, খবরদার,
তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ
করে না।-সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদীস : ৫২৩৭
সহীহ মুসলিমে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ঘণ্টি, বাজা,
ঘুঙুর হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র।-সহীহ মুসলিম হাদীস : ২১১৪
মৃদু আওয়াজের
ঘণ্টি-ঘুঙুরের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আধুনিক সুরেলা বাদ্যযন্ত্রের বিধান কী হবে তা
খুব সহজেই বুঝা যায়।
সঙ্গীত সম্পর্কে উলামাগণের
অভিমত
ইমাম ইবন তাইমিয়া
(রাহিমুল্লাহ) বলেন, “যে
সকল কাজ শয়তানের পথকে শক্তিশালী করে তাদের মধ্যে গান বাজনা শোনা এবং অন্যায় হাসি
তামাশা অন্যতম। এটা সেই কাজ যা কাফেররা করত। আল্লাহ তায়ালা বলেন “(এ ঘরের পাশে) তাদের
(জাহেলী যুগের)নামায তো কিছু শিষ দেয়া ও তালি বাজানো ছাড়া কিছুই ছিল না”[সূরা আল
আনফাল ৮-৩৫]। ইবন আব্বাস, ইবন উমর, আতিয়্যাহ, মুজাহিদ, আদ-দাহাক, আল হাসান এবং ক্বাতাদাহ
(রাদিয়াল্লাহু আনহুম) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘মু’কান’ অর্থ শিষ বাজানো,
‘তাসদিয়াহ’ অর্থ তালি বাজানো। এটা মুশরিকদের উপাসনার পথ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণ আল্লাহর ইবাদত করেছেন, তাঁর( আল্লাহর) আদেশ
অনুসারে, তাদের ইবাদতে ছিল কুরআন তিলাওয়াত ও যিকর(দু’আ)। এমনটা কখনো হয়নি যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) গান-বাজনা
শোনার জন্যে সমবেত হয়েছেন এবং যার সাথে তালি বাজানো হত অথবা ঢোল ব্যবহার করা হত”।
ইমাম ইবন তাইমিয়া
(রাহিমুল্লাহ) আরো বলেন সেই ব্যক্তির সম্পর্কে যার স্বভাব হল গান-বাজনা শোনা, “ সে
যখন কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করে তখন সে আবেগাপ্লুত হয় না, অপরদিকে সে যখন শয়তানের
বাদ্যযন্ত্র (গান-বাজনা) শ্রবণ করে, সে নেচে উঠে। যদি সে সালাত প্রতিষ্ঠা করে, তবে
সে হয় বসে বসে তা আদায় করে অথবা মুরগী যেভাবে মাটিতে ঠোকর দিয়ে শস্যদানা খায় সেভাবে
দ্রুততার সাথে আদায় করে। সে কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করতে অপছন্দ করে এবং তাতে কোন সৌন্দর্য
খুঁজে পায় না। তার কুরআনের প্রতি কোন রুচি নেই এবং যখন তা পড়া হয় সে এর প্রতি কোন
টান বা ভালোবাসা অনুভব করে না। বরং, সে মু’কা ও তাসদিয়া শুনে মজা পায়। এগুলো শয়তানী
আনন্দ এবং সে তাদের অন্তর্ভুক্ত যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যে ব্যক্তি দয়াময়
আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে একটি শয়তান নিযুক্ত করে দেই,
অতঃপর সেই সর্বক্ষণ তার সাথী হয়ে থাকে”।[৪৩-৩৬] [আউলিয়া আর রাহমান]
ইমাম ইবন আল-কাইয়্যিম (রাহিমুল্লাহ) বলেন, “ আল্লাহর শত্রু শয়তানের কৌশলসমূহের মধ্যে একটি হল মুকা ও তাসদিয়া, এই ফাঁদ সে ঐ সকল লোকের জন্য পাতে যারা দীনের প্রতি বুদ্ধিমত্তা,জ্ঞান,অথবা আন্তরিকতায় নিরাসক্ত। এই গাফেল(মূর্খ) লোকেরা গান-বাজনা শ্রবণ করে এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে, যা নিষিদ্ধ এবং যার ফলে কুরআনের প্রতি তাদের অন্তর বিমুখ হয়ে যায়। তাদের হৃদয় পাপাচারের প্রতি উদাসীন ও আল্লাহর অবাধ্য। গান-বাজনা(সঙ্গীত) শয়তানের কুরআন এবং ব্যক্তি ও আল্লাহর মাঝের দেয়াল। এটা সমকামিতা ও ব্যভিচারের পথ। যে অন্যায় ভালোবাসার সন্ধান করে ও স্বপ্ন দেখে সে এতে সান্ত্বনা খুঁজে পায়। গান-বাজনার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে ও একে তাদের চোখে শিল্প হিসেবে দেখিয়ে শয়তান দুর্বলচিত্তের মানুষদের ফাঁদে ফেলে। শয়তান তার অনুসারীদের সঙ্গীতের সৌন্দর্যের মিথ্যা দলীল দেখায়। এই লোকগুলো শয়তানের ওহী গ্রহণ করে এবং ফলস্বরুপ কুরআন ত্যাগ করে।
ইমাম ইবন আল-কাইয়্যিম (রাহিমুল্লাহ) বলেন, “ আল্লাহর শত্রু শয়তানের কৌশলসমূহের মধ্যে একটি হল মুকা ও তাসদিয়া, এই ফাঁদ সে ঐ সকল লোকের জন্য পাতে যারা দীনের প্রতি বুদ্ধিমত্তা,জ্ঞান,অথবা আন্তরিকতায় নিরাসক্ত। এই গাফেল(মূর্খ) লোকেরা গান-বাজনা শ্রবণ করে এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে, যা নিষিদ্ধ এবং যার ফলে কুরআনের প্রতি তাদের অন্তর বিমুখ হয়ে যায়। তাদের হৃদয় পাপাচারের প্রতি উদাসীন ও আল্লাহর অবাধ্য। গান-বাজনা(সঙ্গীত) শয়তানের কুরআন এবং ব্যক্তি ও আল্লাহর মাঝের দেয়াল। এটা সমকামিতা ও ব্যভিচারের পথ। যে অন্যায় ভালোবাসার সন্ধান করে ও স্বপ্ন দেখে সে এতে সান্ত্বনা খুঁজে পায়। গান-বাজনার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে ও একে তাদের চোখে শিল্প হিসেবে দেখিয়ে শয়তান দুর্বলচিত্তের মানুষদের ফাঁদে ফেলে। শয়তান তার অনুসারীদের সঙ্গীতের সৌন্দর্যের মিথ্যা দলীল দেখায়। এই লোকগুলো শয়তানের ওহী গ্রহণ করে এবং ফলস্বরুপ কুরআন ত্যাগ করে।
যখন আপনি তাদের
গান-বাজনা শোনা অবস্থায় দেখেন, তাদেরকে বিনয়াবত,অলসভাবে বসা,নীরব নিশ্চুপ অবস্থায়
পাবেন; তাদের অন্তর দিয়ে তারা মনোযোগ দেয় এবং চরমভাবে গান বাজনা উপভোগ করে। তাদের
অন্তর গান বাজনায় এতটা নৈকট্য পায়, যেন তারা মাতাল। তারা নেচে উঠে এবং কুরুচিপূর্ণভাবে
পতিতাদের মত অঙ্গভঙ্গি করে। এবং কেন নয় ? কারণ তারা সঙ্গীতে মত্ত মাতাল, অনুরুপ তাদের
আচরণ। তারা আল্লাহর জন্যে নয়, তারা শয়তানের জন্য, এগুলো ঐ সকল হৃদয় যা পাপাচারে
নাজুক, এদের জীবন আল্লাহর সন্তুষ্টি বাদে অন্য যেকোন কিছুর জন্য। তারা তাদের জীবন হাসি
তামাশায় কাটায় ও দীনের প্রতি তামাশা করে। শয়তানের যন্ত্র তাদের নিকট কুরআন অপেক্ষা
মধুর। তাদের কেউ যদি কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে, সে এতে সামান্যই প্রভাবিত
হবে। আর যদি শয়তানের কুরআন শোনানো হয়, তারা অন্তরে আনন্দ অনুভব করে এবং নিজের চোখেই
তারা এটা দেখতে পায়। তাদের পা নাচে, হাত তালি বাজায়, নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসে এবং সারা
শরীর আনন্দ উপভোগ করে। ওহে যে এই ফাঁদে আটকে আছো ! যে আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানের নিকট
বিক্রি হয়ে গেছো , কত বাজে তোমার এই কারবার ! যখন কুরআন শ্রবণ কর কেন তুমি আনন্দ পাও
না? যখন মহিমান্বিত কুরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন কেন শান্তি স্বস্তি পাও না ? হায়,
সবাই তাই খুঁজে যাতে সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে, এবং শেষ পর্যন্ত সত্যিই নিজেকে মানিয়ে
নেয়”। [ইগাছাতুল লাহফান]
শেখ আব্দুল আযীয বিন বায(রাহিমুল্লাহ) এর কাছে গান বাজনা সম্পর্কে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “এটা কি হারাম? আমি শুধু আনন্দের জন্যেই শুনি। রাবাবা(এক প্রকার গিটার) ও হারানো দিনের গান সম্পর্কে কি বলেন? আর বিয়ে শাদীতে ঢোল ব্যবহার সম্পর্কে?”
শেখ বিন বায বলেন, “ গান বাজনা শোনা হারাম এবং পাপ। এটা হল সেই কাজ যার ফলে আল্লাহর স্মরণ ও প্রার্থনা থেকে অন্তর দুর্বল করে দেয়। কুরআনের আয়াত “এবং সেই মানুষগুলো যারা অর্থহীন কথাবার্তা ক্রয় করে” [সুরা লুকমান ৩১-৬] , এখানে “অর্থহীন কথাবার্তা” বলতে গান বাজনাকে বোঝানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু), যিনি একজন বিশিষ্ট সাহাবী, তিনি আল্লাহর শপথ করে বলেছেন এর মানে হল গান। আর গান যদি রাবাবা এর সাথে হয়,উ’দ(আরবীয় গিটার), বাঁশি কিংবা ঢোলের সাথে হয়, তবে তো আরো বেশি হারাম। যে কোন গান, যেকোন প্রকার বাদ্যযন্ত্র সহকারেই হোক তা হারাম এবং আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত। সুতরাং, মুসলমানদের এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া উচিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার উম্মতের মধ্য হতে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে”[বুখারি]। আমি আপনাকে(প্রশ্নকর্তাকে) রেডিওতে কুরআনিক অনুষ্ঠান শোনার উপদেশ দিতে পারি, এভাবে একজন স্বস্তি খুঁজে পাবে এবং নিজেকে গান বাজনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে। আর বিয়ে শাদীর ব্যাপারে, দফ [এক প্রকার আরবীয় বাদ্যযন্ত্র, দফ-এর এক পাশ খোলা। বাজালে ঢ্যাব ঢ্যাব আওয়াজ হয়। প্লাস্টিকের গামলা বাজালে যেমন আওয়াজ হবে তেমন। আসলে দফ কোনো বাদ্যযন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না। আওনুল বারী গ্রন্থে দফ-এর পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে যে, এর আওয়াজ স্পষ্ট ও চিকন নয় এবং সুরেলা ও আনন্দদায়কও নয়। কোনো দফ-এর আওয়াজ যদি চিকন ও আকর্ষণীয় হয় তখন তা আর দফ থাকবে না; বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হবে।-আওনুল বারী ২/৩৫৭ । আর দফ-এর মধ্যে যখন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এসে যাবে তখন তা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েয বলে পরিগণিত হবে] ব্যবহার করা যেতে পারে এমন কথার গানের সাথে যাকে পাপ বলা যায় না। আর এটা রাতে করা যেতে পারে, কেবলমাত্র বিয়ে শাদীতে, কেবলমাত্র মহিলাদের জন্যে এবং মহিলাদের দ্বারা। এই গীতসমূহ ইসলামিক বিয়ে ঘোষণার একটি অংশ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ হতে তা প্রমাণিত। এবং ড্রামস তথা ঢোলের ক্ষেত্রে, তা সর্বক্ষেত্রে হারাম। দফ কেবলমাত্র বিয়ে শাদীতে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং শুধুমাত্র মহিলাদের দ্বারা শুধুমাত্র মহিলাদের জন্যে”।
শেখ আব্দুল আযীয বিন বায(রাহিমুল্লাহ) এর কাছে গান বাজনা সম্পর্কে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “এটা কি হারাম? আমি শুধু আনন্দের জন্যেই শুনি। রাবাবা(এক প্রকার গিটার) ও হারানো দিনের গান সম্পর্কে কি বলেন? আর বিয়ে শাদীতে ঢোল ব্যবহার সম্পর্কে?”
শেখ বিন বায বলেন, “ গান বাজনা শোনা হারাম এবং পাপ। এটা হল সেই কাজ যার ফলে আল্লাহর স্মরণ ও প্রার্থনা থেকে অন্তর দুর্বল করে দেয়। কুরআনের আয়াত “এবং সেই মানুষগুলো যারা অর্থহীন কথাবার্তা ক্রয় করে” [সুরা লুকমান ৩১-৬] , এখানে “অর্থহীন কথাবার্তা” বলতে গান বাজনাকে বোঝানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু), যিনি একজন বিশিষ্ট সাহাবী, তিনি আল্লাহর শপথ করে বলেছেন এর মানে হল গান। আর গান যদি রাবাবা এর সাথে হয়,উ’দ(আরবীয় গিটার), বাঁশি কিংবা ঢোলের সাথে হয়, তবে তো আরো বেশি হারাম। যে কোন গান, যেকোন প্রকার বাদ্যযন্ত্র সহকারেই হোক তা হারাম এবং আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত। সুতরাং, মুসলমানদের এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া উচিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার উম্মতের মধ্য হতে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে”[বুখারি]। আমি আপনাকে(প্রশ্নকর্তাকে) রেডিওতে কুরআনিক অনুষ্ঠান শোনার উপদেশ দিতে পারি, এভাবে একজন স্বস্তি খুঁজে পাবে এবং নিজেকে গান বাজনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে। আর বিয়ে শাদীর ব্যাপারে, দফ [এক প্রকার আরবীয় বাদ্যযন্ত্র, দফ-এর এক পাশ খোলা। বাজালে ঢ্যাব ঢ্যাব আওয়াজ হয়। প্লাস্টিকের গামলা বাজালে যেমন আওয়াজ হবে তেমন। আসলে দফ কোনো বাদ্যযন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না। আওনুল বারী গ্রন্থে দফ-এর পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে যে, এর আওয়াজ স্পষ্ট ও চিকন নয় এবং সুরেলা ও আনন্দদায়কও নয়। কোনো দফ-এর আওয়াজ যদি চিকন ও আকর্ষণীয় হয় তখন তা আর দফ থাকবে না; বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হবে।-আওনুল বারী ২/৩৫৭ । আর দফ-এর মধ্যে যখন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এসে যাবে তখন তা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েয বলে পরিগণিত হবে] ব্যবহার করা যেতে পারে এমন কথার গানের সাথে যাকে পাপ বলা যায় না। আর এটা রাতে করা যেতে পারে, কেবলমাত্র বিয়ে শাদীতে, কেবলমাত্র মহিলাদের জন্যে এবং মহিলাদের দ্বারা। এই গীতসমূহ ইসলামিক বিয়ে ঘোষণার একটি অংশ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ হতে তা প্রমাণিত। এবং ড্রামস তথা ঢোলের ক্ষেত্রে, তা সর্বক্ষেত্রে হারাম। দফ কেবলমাত্র বিয়ে শাদীতে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং শুধুমাত্র মহিলাদের দ্বারা শুধুমাত্র মহিলাদের জন্যে”।
সাহাবী ও তাবেয়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী বহু গুনাহর সমষ্টি
হল গান ও বাদ্যযন্ত্র। যথা
:
• ক) নিফাক এর উৎস
• খ) ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী
• গ) মস্তিষ্কের উপর আবরণ
• ঘ) কুরআনের প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী
• ঙ) আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী
• চ) গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী ও
• ছ) জিহাদী চেতনা বিনষ্টকারী।–[ইগাছাতুল লাহফান ১/১৮৭]
• ক) নিফাক এর উৎস
• খ) ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী
• গ) মস্তিষ্কের উপর আবরণ
• ঘ) কুরআনের প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী
• ঙ) আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী
• চ) গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী ও
• ছ) জিহাদী চেতনা বিনষ্টকারী।–[ইগাছাতুল লাহফান ১/১৮৭]
চার ইমামের ভাষ্য
গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সকলেই গান-বাদ্যকে হারাম
বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ইমাম মালেক রাহ. কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে।-কুরতুবী ১৪/৫৫ ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেছেন যে, গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল আহমক।তিনি আরো বলেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৭৯; কুরতুবী ১৪/৫৫
হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা আলী মারদভী লেখেন, বাদ্য ছাড়া গান মাকরূহে তাহরীমী। আর যদি বাদ্য থাকে তবে তা হারাম।-আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৮৮
ইমাম মালেক রাহ. কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে।-কুরতুবী ১৪/৫৫ ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেছেন যে, গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল আহমক।তিনি আরো বলেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৭৯; কুরতুবী ১৪/৫৫
হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা আলী মারদভী লেখেন, বাদ্য ছাড়া গান মাকরূহে তাহরীমী। আর যদি বাদ্য থাকে তবে তা হারাম।-আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৮৮
ইমাম শাফেয়ী
রাহ. শর্তসাপেক্ষে শুধু ওলীমা অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশ আছে বলে মত দিয়েছেন। কেননা
বিয়ের ঘোষণার উদ্দেশ্যে ওলীমার অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশের বর্ণনা হাদীসে রয়েছে।-জামে
তিরমিযী হাদীস : ১০৮৯; সহীহ বুখারী হাদীস : ৫১৪৭, ৫১৬২ মনে রাখতে হবে, এখানে দফ বাজানোর
উদ্দেশ্য হল বিবাহের ঘোষণা, অন্য কিছু নয়।
-ফাতহুল বারী
৯/২২৬।
(সমাপ্ত)
কোরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক আরো বিষয় জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ
১৬। কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তরঃ
১৭। জাল হাদিসের কবলে বাংলাদেশের আলেম সমাজ (২০০০টি জাল ও জঈফ হাদিস)ঃ
১৭। জাল হাদিসের কবলে বাংলাদেশের আলেম সমাজ (২০০০টি জাল ও জঈফ হাদিস)ঃ
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে এর উপর ক্লিক করুনঃ
PLEASE SHARE ON
No comments:
Post a Comment