Search This Blog

Saturday, October 7, 2023

পাপ, তওবা ও মুক্তির উপায়

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

পাপ, তওবা ও মুক্তির উপায়

(পাপ থেকে মুক্তি পেতে পাপিষ্ঠ মুসলমানদের জন্যে একটি উত্তম গাইড লাইন)


গুণাহ বা পাপঃ ‘গুনাহ’ শব্দটি বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত হলেও এটি মূলত ফার্সি শব্দ। গুনাহ বুঝাতে বাংলায় আরও একটি বহুল প্রচলিত শব্দ হচ্ছে পাপ। বাংলা অভিধানে এর অর্থ লেখা হয়েছে অন্যায়, কলুষ, দুষ্কৃতি ইত্যাদি। পাপ হলো তাই, যা অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

নাওয়াস ইবনে সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পুণ্যবত্তা হল সচ্চরিত্রতার নাম এবং পাপ হল তাই, যা তোমার অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং তা লোকে জেনে ফেলুক—এ কথা তুমি অপছন্দ কর। (হাদিস সম্ভার ৩৭৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

ওয়াবেস্বাহ ইবনে মা’বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি পুণ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে এসেছ? আমি বললাম, ’জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, তুমি তোমার অন্তরকে (ফতোয়া) জিজ্ঞাসা কর। পুণ্য হল তা, যার প্রতি তোমার মন প্রশান্ত হয় এবং অন্তর পরিতৃপ্ত হয়। আর পাপ হল তা, যা মনে খটকা সৃষ্টি করে এবং অন্তর সন্দিহান হয়; যদিও লোকেরা তোমাকে (তার বৈধ হওয়ার) ফতোয়া দিয়ে থাকে। (হাদিস সম্ভার ৩৭৯৭, আহমাদ ১৮০০১, ১৮০০৬, দারেমী ২৫৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নবি-রাসুলগণ ব্যতীত পৃথিবীতে যতো মানুষ এসেছিলেন এবং আছেন প্রত্যেকেই কোনো কোনো পাপের সাথে জড়িত। যে ব্যক্তি বলবে সে নিষ্পাপ সে একজন মিথ্যেবাদী ও ভন্ড। রাসুল সাঃ বলেন,

আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) আল্লাহর কালামের এ বাণী, “ইল্লাল্লামামা’’ অর্থাৎ- “সগীরাহ্ গুনাহ ছাড়া’’। এক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! যদি তুমি ক্ষমা করো, ক্ষমা করো বড় গুনাহ। কেননা এমন কোন বান্দা আছে কি, যে সগীরাহ্ গুনাহ করেনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৪৯, সুনান আততিরমিযী ৩২৮৪, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৭৪৬, সহীহ আল জামি‘ ১৭১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহর বান্দাগণ পাপ যদি না করতো তাহলে আল্লাহ তায়ালা এই মানুষ জাতিকে ধ্বংস করে অন্য জাতি বানাতেন। রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা গুনাহ না করতে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে সরিয়ে এমন জাতিকে সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করত ও আল্লাহ তা’আলার কাছে ক্ষমা চাইত। আর আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৫৬, ৬৮৫৭, ৬৮৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৮, ২৭৪৯, শু‘আবূল ঈমান ৬৭০০, সহীহাহ্ ১৯৫০, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত হাদিস দ্বারা পাপ বা গুণাহ করতে উৎসাহিত করা হয়নি বরঞ্চ পাপ কাজ হয়ে গেলে তওবার দিকে উৎসাহ দেয়াই এই হাদিসের মূল উদ্দেশ্য।

পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষই যাদের কেউ না কেউ শিরক, কুফর, নিফাক ও বিদআতের সাথে জড়িত। তথা নিজের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অথবা শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে সগিরা ও কবিরা গুণাহগুলো করে যাচ্ছে।

বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায়, সমাজটা সুদ. ঘুষ, দূর্নীতি, মদ, জুয়া, যেনা/ ব্যভিচার, নাচ, গান, উলঙ্গ-বেহায়াপনা, পর্দাহীনতা, অবাধ মেলামেশা ইত্যাদিতে ভরপুর। যারা এসব পাপের সাথে জড়িত তারা নামাজও পড়ে, হজ্জও করে, যৎসামান্য যাকাতও দেয় আবার সাওমও পালন করে। সরকারি চাকরিজীবি প্রতিদিন ঘুষ না খেলে বড় মাছটা কেনা হয় না। কিন্তু এটা যে পাপ ঐ চাকরিজীবি ভুলেই গেছেন। 

তবে এসবের চেয়েও মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে পাপ কাজটি বহুল প্রচলিত সেটা হচ্ছে বিদআত। বিদআতকে তারা নেকি মনে করে নিজের অজান্তে পাপ কাজ করে যাচ্ছে। তাদেরকে শোনানো হচ্ছে, বিদআত করলে তার ফরজ, নফল কোনো ইবাদত বা আমল আল্লাহর নিকট গৃহিত হয় না, এই হাদিসটি তারা মানতেই চায় না। এরা মনে করে তারা যা করছে তাতে অনেক সওয়াব। আর শয়তান এই কাজগুলো করাতে পেরে সে খুবই আনন্দিত। রাসুল সাঃ বলেন,

(ক) ইব্রাহীম তাইমী (রহ.)-এর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, আমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব ও এই সহীফায় যা আছে, এছাড়া অন্য কোন কিতাব নেই, যা আমরা পাঠ করে থাকি। তিনি বলেন, এ সাহীফায় রয়েছে, যখমের দন্ড বিধান, উটের বয়সের বিবরণ এবং আইর পর্বত থেকে সওর পর্যন্ত মদিনা্ হারাম হবার বিধান। যে ব্যক্তি এর মধ্যে বিদ্‘আত উদ্ভাবণ করে কিংবা বিদ্আতীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। আল্লাহ তার কোন নফল ও ফরজ ‘ইবাদাত কবূল করেন না। আর যে নিজ মাওলা ব্যতীত অন্যকে মাওলা হিসেবে গ্রহণ করে, তার উপর একই রকম লা‘নত। আর নিরাপত্তা দানের ক্ষেত্রে সর্বস্তরের মুসলিমগণ একইভাবে দায়িত্বশীল এবং যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের চুক্তি ভঙ্গ করে তার উপরও তেমনি অভিসম্পাত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৭২, ১১১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কুরআন এবং এ কাগজে যা লিখা আছে তা ছাড়া কোন কিছু লিপিবদ্ধ করিনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আয়ির পর্বত হতে এ পর্যন্ত মদিনার হরম এলাকা। যে কেউ দ্বীনের ব্যাপারে বিদ্‘আত উদ্ভাবণ করে কিংবা কোন বিদ্‘আতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ তা‘আলা, ফেরেশতা ও সকল মানুষের লা’নত। তার কোন ফরজ কিংবা নফল ‘ইবাদাত গৃহীত হবে না। আর সকল মুসলিমের পক্ষ হতে নিরাপত্তা একই স্তরের। সাধারণ মুসলিম নিরাপত্তা দিলে সকলকে তা রক্ষা করতে হবে। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দেয়া নিরাপত্তা বাধাগ্রস্ত করবে তার উপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত এবং ফেরেশতামন্ডলী ও সকল মানুষের। তার কোন নফল কিংবা ফরজ ‘ইবাদাত গৃহীত হবে না। আর যে স্বীয় মনিবের অনুমতি ব্যতীত অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বের চুক্তি করে, তার উপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত এবং ফেরেশতামন্ডলী ও সকল মানুষের। তার কোন নফল কিংবা ফরজ ‘ইবাদাত কবূল হবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৭৯, ১১১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৫২ প্রথমাংশ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আমি ওদের কৃতকর্মগুলির প্রতি অভিমুখ করে সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণা (স্বরূপ নিষ্ফল) করে দেব”। (সুরা ফুরকান ২৩)।

পাপ করার পর পূণ্য করার ফজিলত

(ক) উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন পাপ করার পরপরই পুণ্যকর্ম করে, সেই ব্যক্তির উপমা এমন একজনের মত যার দেহে ছিল সংকীর্ণ বর্ম; যা তার শ্বাস রোধ করে ফেলেছিল। অতঃপর সে যখন একটি পুণ্যকর্ম করে, তখন বর্মের একটি আংটা খুলে যায়। তারপর আর একটি পুণ্য করলে আরো একটি আংটা খুলে যায়। ফলে সে সংকীর্ণতার কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে। (হাদিস সম্ভার ৩৭৯৮, আহমাদ ১৭৩০৭, ত্বাবারানী ১৪২০২-১৪২০৩, সহীহুল জামে’ ২১৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুসলমানদের ছয় ঘন্টা পর্যন্ত পাপ লেখা হয় না

উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় বামের ফিরিশতা পাপী বা অপরাধী মুসলিমের উপর থেকে ছয় ঘন্টা কলম তুলে রাখেন। অতঃপর সে যদি পাপে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, তাহলে তা উপেক্ষা করেন। নচেৎ একটি পাপ লেখা হয়। (হাদিস সম্ভার ৩৭৯৯, ত্বাবারানীর কাবীর ৭৬৬৭, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৭০৫১, সহীহুল জামে’ হা/ ২০৯৭, সিঃ সহীহাহ ১২০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পাপ করার সংকল্প করেও যদি তা বাস্তবায়িত  না করে তবু  একটি পূর্ণ নেকি লেখা হয়

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বরকতময় মহান প্রভু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন যে, নিশ্চয় আল্লাহ পুণ্যসমূহ ও পাপসমূহ লিখে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তার ব্যাখ্যাও করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি কোন নেকী করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত করতে পারে না, আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা তার জন্য (কেবল নিয়্যাত করার বিনিময়ে) একটি পূর্ণ নেকী লিখে দেন। আর সে যদি সংকল্প করার পর কাজটি করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ তার বিনিময়ে দশ থেকে সাতশ গুণ, বরং তার চেয়েও অনেক গুণ নেকী লিখে দেন। পক্ষান্তরে যদি সে একটি পাপ করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত না করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিকট একটি পূর্ণ নেকী হিসাবে লিখে দেন। আর সে যদি সংকল্প করার পর ঐ পাপ কাজ করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ মাত্র একটি পাপ লিপিবদ্ধ করেন। (হাদীস সম্ভার ৩৮০০, ৩৮০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫০১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২৩২, ২৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১২৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মনের খারাপ চিন্তা ভাবনাগুলো বাস্তবায়িত না করা পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিয়েছেন

(ক) সাঈদ ইবনু মানসূর, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ আল গুবারী (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কথা বা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের জন্য তাদের মনে কল্পনাগুলোকে মাফ করে দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩১, ইসলামিক সেন্টারঃ ২৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের জন্য কথা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত তাদের মনের কল্পনাগুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন। যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ)...কাতাদাহ্ (রহঃ) এর সূত্রেও হাদীসটি অনুরূপভাবে বর্ণিত আছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩২, ২৩৩; ইসলামিক সেন্টারঃ ২৪০-২৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পাপ কাজ করলে কলবে কালো দাগ পড়ে

আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তওবা করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তা’আলা যার বর্ণনা করেছেনঃ “কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনে জং (মরিচা) ধরিয়েছে”— (সূরা মুত্বাফফিফীন ১৪)। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৩৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৪২, সুনান ইবনে মাজাহ ৪২৪৪, আহমাদ ৭৯৫২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩৯০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৭৬৩, শু‘আবূল ঈমান ৬৮০৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪১, হাদীস সম্ভার ৩৮০৩, আত-তা’লীকুর রাগীব  ২/২৬৮)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

তিন ব্যক্তির কোনো পাপ নেই

আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির নিকট হতে (কিরামান কাতেবীনের পাপ-পুণ্য লিখার) কলম তুলে নেওয়া হয়েছে; ঘুমন্ত ব্যক্তি হতে যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়েছে, পাগল ব্যক্তি হতে যতক্ষণ না সে সুস্থ হয়েছে এবং শিশু হতে, যতদিন না সে সাবালক হয়েছে। (হাদীস সম্ভার ৩৮০৪,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪০০, আহমাদ ১/১৪০, আবূ দাঊদ ৪৪০০, হাকেম ৪/৪৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে, তাকে পূর্বাপর সকল কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জাহিলী যুগে যা করেছি, সে সম্পর্কে কি আমাদের জাবাবদিহি করতে হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যারা ইসলাম গ্রহণের পর ভালো কাজ করেছে তাদেরকে জাহিলী যুগের কৃতকর্ম সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে, তাকে পূর্বাপর সকল কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৪২,সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৯২১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১২০, আহমাদ ৩৫৮৫, ৩৮৭৬, ৪০৭৫, ৪০৯২, ৪৩৯৪, দারেমী ১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ক্ষুদ্র গুনাহগুলোর জন্যও আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে আয়েশা! ক্ষুদ্র গুনাহ থেকেও সাবধান হও। কারণ সেগুলোর জন্যও আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৪৩, আহমাদ ২৩৮৯৪, ২৪৬৫১, দারেমী ২৭২৬, সহীহাহ ৫১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হলে কিয়ামতে তার পর্বতমালা সমপরিমান  নেকি নিক্ষিপ্ত করা হবে

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি আমার উম্মাতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি যারা কিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমলসহ উপস্থিত হবে। মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের নিকট বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বলেনঃ তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে, একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৪৫, রাওদুন নাদীর ১৮১, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৭৮, সহীহাহ ৫০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নিজের গোপন পাপ প্রকাশ করে বেড়ালে সেই পাপ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করেন না

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আমার সকল উম্মাতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়ই অন্যায় যে, কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে, আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেলল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৯০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বান্দা তার গোপন পাপ প্রকাশ না করলে আল্লাহও তা গোপন রেখে কিয়ামতে মাফ করে নেকির আমলনামা দিবেন

ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ তা’আলা মু’মিনদেরকে নিজের কাছাকাছি করবেন এবং আল্লাহ তা’আলা নিজ বাজু তার উপরে রেখে তাকে ঢেকে নেবেন। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা সে বন্দাকে বলবেন, আচ্ছা বল দেখি! তুমি এ গুনাহটি করেছ কি? তুমি এ গুনাহটি সম্পর্কে অবহিত আছ কি? সে বলবে, হ্যাঁ, হে আমার রব! আমি অবহিত আছি।

শেষ পর্যন্ত এক একটি করে তার কৃত সকল গুনাহের স্বীকৃতি আদায় করবেন। এদিকে সে বান্দা মনে মনে ধারণা করবে যে, সে এই সমস্ত অপরাধের কারণে নিঃসন্দেহে ধ্বংস হবে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, দুনিয়াতে আমি তোমার এ সকল অন্যায় ঢেকে রেখেছিলাম। আর আজ আমি তা মাফ করে তোমাকে মুক্তি দিব। অতঃপর তাকে নেকির ’আমলনামা দেয়া হবে। আর কাফির ও মুনাফিকদেরকে সমস্ত সৃষ্টিকুলের সামনে আনা হবে এবং উচ্চৈঃস্বরে এ ঘোষণা দেয়া হবে- এরা তারা, যারা আপন প্রভুর বিরুদ্ধে মিথ্যারোপ করত। জেনে রাখ, এ সমস্ত যালিমদের ওপর আজ আল্লাহর লানত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৫১,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪১, ৪৬৮৫, ৬০৭০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৯০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৬৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৩, মুসনাদে আহমাদ ৫৪৩৬, ৫৪১৩, ৫৭৯১, সহীহুল জামি ১৮৯৪, আবূ ইয়া'লা ৫৭৫১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৫৫, হিলইয়াতুল আওলিয়া ২/২১৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিয়ামতে আল্লাহ তাঁর বান্দার নিরানব্বই ভলিউমের আমলনামা খুলে প্রতিটি পাপের স্বীকারোক্তি নিয়ে অত:পর জান্নাতে দিবেন

আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন এমন এক লোককে (মুক্তি দেয়া হবে এভাবে যে, তাকে) জনসম্মুখে উপস্থিত করা হবে যার ’আমলনামা খোলা হবে নিরানব্বই ভলিউমে এবং প্রতিটি ভলিউম বিস্তীর্ণ হবে দৃষ্টির সীমা অবধি। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রশ্ন করবেন, আচ্ছা বল দেখি, তুমি এর কোন একটিকে অস্বীকার করতে পারবে? অথবা আমার লেখক মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) কি তোমার প্রতি অবিচার করেছে? সে বলবে না; হে আমার প্রভু!

আল্লাহ তা’আলা প্রশ্ন করবেন, তবে কি তোমার পক্ষ হতে কোন ওযর পেশ করার আছে? সে বলবে, না; হে আমার রব! তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, হ্যাঁ, তোমার একটি পুণ্য আমার নিকট আছে। তুমি নিশ্চিত জেনে রাখ, আজ তোমার প্রতি কোন যুলম বা অবিচার করা হবে না। এরপর এক টুকরা কাগজ বের করা হবে, যাতে রয়েছে-(আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মোহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু) “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল"।

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে বলবেন, তোমার ’আমালের ওযন দেখার জন্য উপস্থিত হও। তখন সে বলবে, হে প্রভু! ঐ সমস্ত বিরাট বিরাট রেজিস্ট্রারের মোকাবিলায় এই এক টুকরা কাগজের মূল্যই বা কি আছে?

তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার ওপর কোন অবিচার করা হবে না। তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর ঐ সকল রেজিস্ট্রারগুলো পাল্লার এক পালিতে এবং এ কাগজের টুকরাখানি আরেক পালিতে রাখা হবে। তখন দফতরগুলোর পালি হালকা হয়ে উপরে উঠে যাবে এবং কাগজের টুকরার পালি ভারী হয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে থাকবে। মোটকথা, আল্লাহর নামের সাথে অন্য কোন জিনিস ওযন হতে পারবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৫৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৩৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩০০, সহীহুল জামি ১৭৭৬, সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৩৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ২২৫, শুআবূল ঈমান ২৮৩, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৪৯০, আল মু'জামুল আওসাত্ব ৪৭২৫, আত-তালীকুর রাগীব ২/২৪০, ২৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে পাপের শাস্তি দুনিয়াতেই দেয়া হয়

(১) অশ্লীলতা, ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করা, যাকাত আদায় না করা, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করা ও আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা না করাঃ

আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেনো তোমরা তার সম্মুখীন না হও।

(ক) যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায় নি (যেমন: করোনা)।

(খ) যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং

(গ) যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না।

(ঘ) যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়।

(ঙ) যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না (তথা ইসলামি আইন মোতাবেক বিচারিক কার্যক্রম ও রাষ্ট্র শাসন করে না) এবং আল্লাহর নাযীলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না (তথা কুরআনকে সংবিধান হিসেবে মেনে নেয় না), তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন।  (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৪০১৯, সহীহাহ ১০৬)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(২) আল্লাহ বিদ্রোহী ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীঃ

আবূ বকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (ন্যায়পরায়ণ শাসকের বিরুদ্ধে) বিদ্রোহ এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মত মারাত্মক আর কোন গুনাহ নাই, যার শাস্তি আল্লাহ ত্বরিতে দুনিয়াতে দেন এবং আখেরাতের জন্যও জমা রাখেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২১১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫১১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯০২,আহমাদ ১৯৮৬১, ১৯৮৮৫, সহীহাহ ৯১৭, আত-তালীকুর রাগীব ৩/২২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৩)  পিতা-মাতার অবাধ্যতা ও জুলুম করাঃ

হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, রসুল স. বলেছেন এমন দুটি অপরাধ আছে যার শাস্তি ত্বরান্বিত হয়ে দুনিয়া থেকেই শুরু হয়ে যায় ১. পিতা-মাতার অবাধ্যতা ২. জুলুম। (মুস্তাদরাকে হাকেম ৭৩৫০)।

(৪) জুলুম বা অত্যাচার করাঃ

জুলুম-অত্যাচার এমন এক অপরাধ যা করে কখনো পার পওয়া যায় না। দুনিয়ার জীবনে তার শাস্তি শুরু হয়ে যায়। আর পরকালে জুলুম ভয়ভহ রুপ ধারণ করবে। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ্ ইবনু কা’নাব (রহঃ)....জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অত্যাচার করা থেকে বিরত থাক। কেননা কিয়ামত দিবসে অত্যাচার অন্ধকারে পরিণত হবে। তোমরা কৃপণতা থেকে সাবধান হও। কেননা এ কৃপণতাই তোমাদের আগেকার কাওমকে ধ্বংস করেছে। এ কৃপণতা তাদের খুন-খারাবী ও রক্তপাতে উৎসাহ যুগিয়েছে এবং হারাম বস্তুসমূহ হালাল জ্ঞান করতে প্রলোভন দিয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪০, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ফিরআউন, নমরুদ, আবু জেহেল, আবু লাহাব সহ যারা দুনিয়াতে জুলুম করেছে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে লাঞ্চিত করে দুনিয়া থেকে নিয়েছেন। আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য। জুলুম, অবিচার, অত্যাচার, লুণ্ঠন, দুঃশাসন, অপশাসন, জবরদখল সহ বিভিন্নভাবে যারা মানুষকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে দুনিয়াতেই শাস্তি দেন, চাই সে শাস্তি আমরা দেখি বা না দেখি। আর আখেরাতের শাস্তি তো আছেই। (আদাবুল মুফরাদ ৫৯১)।

(৫) রিয়া বা লোক দেখানো আমল করাঃ

(ক) সালামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জুনদুবকে বলতে শুনেছি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন। তিনি ছাড়া আমি অন্য কাউকে ’নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন’ এমন বলতে শুনিনি। আমি তাঁর নিকট গেলাম এবং তাঁকে বলতে শুনলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লোক শোনানো ’ইবাদাত করে আল্লাহ্ এর বিনিময়ে তার ’লোক-শোনানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন’। আর যে ব্যক্তি লোক-দেখানো ’ইবাদাত করবে আল্লাহর এর বিনিময়ে তার ’লোক দেখানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৯৯, ৭১৫২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, (কিয়ামতের দিন) যখন আমাদের প্রভু পায়ের নলা বা গোছা উন্মোচিত করবেন, তখন ঈমানদার নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই তাঁকে সিজদাহ্ করবে। আর বিরত থাকবে ঐ সকল লোক যারা দুনিয়াতে রিয়া (লোক দেখানো) ও শুনানোর জন্য সিজদাহ্ করত, তারা সিজদাহ করতে চাইবে কিন্তু তাদের পৃষ্ঠদেশ ও কোমর একটি কাষ্ঠফলকের মতো শক্ত হয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৪২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯১৯, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৫৮৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৭৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলেঃ

(ক) কায়েস ইবনে আবূ হাযেম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়ালেন, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন, অতঃপর বলেন, হে লোকসকল! তোমরা তো এই আয়াত তিলাওয়াত করো (অনুবাদঃ) ’’হে ঈমানদারগণ! আত্মসংশোধন করাই তোমাদের কর্তব্য, তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও, তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’’ (সূরা মাইদাঃ ১০৫)। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ লোকেরা মন্দ কাজ হতে দেখে তা পরিবর্তনের চেষ্টা না করলে অচিরেই আল্লাহ তাদের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান। আবূ উসামা (রাঃ) -এর অপর সনদে এভাবে উক্ত হয়েছেঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৪২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৬৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৩৮, তাখরীজুল মুখতার ৫৪-৫৮, সহীহাহ ১৫৬৪, সহীহুল জামি ১৯৭৪, আহমাদ ৩০, আবূ ইয়া‘লা ১৩১, অন্য রিওয়ায়তে আবূ দাঊদ ৪৩৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে পাপাচার হতে থাকে এবং তাদের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্ষমতা থাকা সত্বেও তাদের পাপাচারীদের বাধা দেয় না, তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৩৯, আহমাদ ১৮৭৩১, ১৮৭৬৮, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৭০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৭) যে জাতি নারী নেতৃত্ব মেনে নেয় বা নারীকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পন করে সে জাতির কল্যাণ হবে নাঃ

আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ আসলো যে, পারস্যের (ইরানের) অধিবাসীরা কিস্রার কন্যাকে তাদের সম্রাজ্ঞী নিযুক্ত করেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে জাতি কক্ষনো সফলকাম হতে পারে না, যারা দেশের শাসনভার কোনো মহিলার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৯৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪২৫, ৭০৯৯, নাসায়ী ৫৩৮৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২২৬২, সহীহাহ্ ২৬১৩, ইরওয়া ২৪৫৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) রাষ্ট্র প্রধান বা তার প্রতিনিধি ব্যতীত অন্য কেউ বায়াত গ্রহণ করলে তাকে হত্যা করার নির্দেশঃ

 আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন দু’ খলীফার বায়’আত করা হয়, তখন তাদের দ্বিতীয়জনকে হত্যা করে ফেলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৭৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৫৩, সহীহাহ্ ৩০৮৯, সহীহ আল জামি ৪২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৪৬, ইসলামিক সেন্টার ৪৬৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

’আরফাজাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে শীঘ্রই কলহ-বিবাদ ও বিশৃঙ্খলার উদ্ভব হবে। সুতরাং উম্মাতের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত থাকার পরও যে ব্যক্তি বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়, তাকে তরবারির আঘাতে হত্যা করে ফেলো, সে যে কেউ হোক না কেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৭৭, ৩৬৭৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৫২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৭৬২, নাসায়ী ৪০২২, আহমাদ ১৮২৯৫, ইরওয়া ২৪৫২, সহীহ আল জামি ২৩৯৩, ৫৯৪৬,  ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৪৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খলীফার (ইমামের) বায়’আত করল, স্বীয় হাতে হাত দিয়ে আনুগত্যের অঙ্গীকারাবদ্ধ হলো এবং অন্তর দিয়ে সে বায়’আতের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করল। সে যেন পরিপূর্ণরূপে তার আনুগত্য করে। তথাপিও যদি কেউ এসে (খিলাফাতের দাবি করে) প্রথম ইমামের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, তাহলে তোমরা তার গর্দান ভেঙ্গে দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৭৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৪৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৪৮, নাসায়ী ৪১৯১, আহমাদ ৬৫০৩, সহীহাহ্ ১৪১, সহীহ আল জামি‘ ২৪০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬২৪, ইসলামিক সেন্টার ৪৬২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

এ হাদিসগুলো প্রত্যেকটি রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করা সংক্রান্ত; এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

বিভিন্ন দলের হাতে বাইআত করা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শাইখ সালেহ আল-ফাওযান বলেন: বাইআত শুধুমাত্র মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে করতে হবে। এ ছাড়া যতো বাইআত আছে এগুলো বিদআত। এ বাইআতগুলো অনৈক্যের কারণ। একই দেশের একই রাজ্যের মুসলমানদের উপর আবশ্যকীয় হলো একজন রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করা। একাধিক বাইআত করা নাজায়েয। (আল-মুনতাকা মিন ফাতাওয়াস শাইখ সালেহ আল-ফাওযান ১/৩৬৭)।

(৯) যে ব্যক্তি মুজাহিদদের কোনো বিষয়ে সহযোগিতা করল না আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই তাকে কঠিন বিপদ আপদে নিপতিত করবেনঃ

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজে জিহাদে অংশগ্রহণ করল না, মুজাহিদদের যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবস্থাও করল না এবং কোনো মুজাহিদের অবর্তমানে তার পরিবার-পরিজনের তত্ত্বাবধান (দেখাশোনা) করল না, আল্লাহ তা’আলা তাকে কিয়ামতের পূর্বে (দুনিয়াতেই) কঠিন বিপদাপদে নিপতিত করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২০, সুনানে আবূ দাঊদ ২৫০৩, দারিমী ২৪৬২, রিয়াযুস্ সলিহীন ১৩৫৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

তওবার বিবরণ

তওবা অর্থ হলো ফিরে আসা। মানুষ যখন ভুল পথে যায় বা বিপথগামী হয়, তখন সেখান থেকে সঠিক পথে বা ভালো পথে ফিরে আসাকে তওবা বলা হয়। তওবার পারিভাষিক অর্থ হলো লজ্জিত হওয়া, অনুতপ্ত হওয়া। অর্থাৎ স্বীয় কৃতকর্মে লজ্জিত হয়ে সঠিক পথে ফিরে আসা।

ইবনে মা’কিল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সাথে আব্দুল্লাহ (রাঃ) -এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি তাকে বলতে শুনলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “অনুতপ্ত হওয়াই তওবা’’। আমার পিতা তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি নিজে কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, “অনুতপ্ত হওয়াই তওবা’’? তিনি বলেন, হাঁ। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৫২, আহমাদ ৩৫৫৮, ৪০০৪, ৪১১৩, রাওদুন নাদীর ৬৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

প্রত্যেক পাপ থেকে তওবা করা ওয়াজেব। যদি গোনাহর সম্পর্ক আল্লাহর সঙ্গে থাকে এবং কোন মানুষের অধিকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাহলে এ ধরনের তওবা কবুলের জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে।

১। পাপ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।

২। পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।

৩। ঐ পাপ আগামীতে দ্বিতীয়বার না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করতে হবে। সুতরাং যদি এর মধ্যে একটি শর্তও লুপ্ত হয়, তাহলে সেই তওবা বিশুদ্ধ হবে না।

পক্ষান্তরে যদি সেই পাপ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত হয়, তাহলে তা গ্রহণীয় হওয়ার জন্য চারটি শর্ত আছে। উপরোক্ত তিনটি এবং চতুর্থ শর্ত হল, হকদারদের হক ফিরিয়ে দিতে হবে। যদি অবৈধ পন্থায় কারো মাল বা অন্য কিছু নিয়ে থাকে, তাহলে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যদি কারো উপর মিথ্যা অপবাদ দেয় অথবা অনুরূপ কোন দোষ ক’রে থাকে, তাহলে সংশিস্নষ্ট ব্যক্তির কাছে শাস্তি নিতে নিজেকে পেশ করতে হবে অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। যদি কারো গীবত করে থাকে, তাহলে তার কাছে তা বৈধ করে নেবে।

তওবা ওয়াজেব হওয়ার ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে উম্মতের ঐকমত্যও বিদ্যমান। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

(ক)  হে ঈমানদারগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সুরা নূর ৩১)।

(খ) তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট (পাপের জন্য) ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর। (সূরা হূদ ৩)।

(গ) হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা। (সূরা তাহরীম ৮)।

(ঘ) সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং তাঁর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি অধিক তাওবা গ্রহণকারী। (সূরা নাসর ৩ নং আয়াত)।

(ঙ) আল্লাহর কাছে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা নিসা ১০৬ আয়াত)।

(চ) আর যে কেউ মন্দ কার্য করে অথবা নিজের প্রতি জুলুম করে, কিন্তু পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে আল্লাহকে অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু-রূপে পাবে। (সূরা নিসা ১১০ নং আয়াত)।

(ছ) আল্লাহ এরূপ নন যে, তুমি তাদের মধ্যে থাকা অবস্থায় তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তিনি এরূপ নন যে, তাদের ক্ষমা প্রার্থনা করা অবস্থায় তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল ৩৩ নং আয়াত)।

(জ) যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারে? এবং তারা যা [অপরাধ] করে ফেলে তাতে জেনে-শুনে অটল থাকে না। (সূরা আলে ইমরান ১৩৫ নং আয়াত।

(ঝ) যারা সাবধান [পরহেজগার] হয়ে চলে তাদের জন্য রয়েছে উদ্যানসমূহ যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তার দাসদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত। যারা বলে, ’হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা বিশ্বাস করেছি; অতএব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা কর এবং দোযখের শাস্তি থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর।’ যারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, দানশীল এবং রাত্রির শেষাংশে ক্ষমা-প্রার্থী। (সূরা আলে ইমরান ১৫-১৭ আয়াত)।

তাওবার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও তার মাধ্যমে গুণাহ থেকে মুক্তি লাভ করা

(১) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন ব্যক্তি তার হারানো উট প্রাপ্তিতে যতো আনন্দিত হয়, তোমাদের কারো তওবায় মহান আল্লাহ ততোধিক আনন্দিত হন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৪৭, সুনান আততিরমিযী ৩৫৩৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

(২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা যদি পাপাচার করতে, এমনকি তোমাদের পাপ আকাশের সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যেতো, অতঃপর তোমরা তওবা করতে, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের তওবা কবুল করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৪৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৩) আবূ উবায়দা ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গুনাহ থেকে তওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তিতুল্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৫০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৬৩, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০২৮১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৫৬১, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪৫, সহীহ আল জামি‘ ৩০০৮, শারহুস্ সুন্নাহ ১৩০৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৪) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক আদম সন্তানই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তওবাকারীগণ উত্তম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৫১, সুনান আততিরমিযী ২৪৯৯, আহমাদ ১২৬৩৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৫) আবদুল্লাহ ইবনে ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ রূহ কণ্ঠাগত না হওয়া (মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত) পর্যন্ত মহামহিম আল্লাহ বান্দার তওবা কবুল করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৫৩, সুনান আততিরমিযী ৩৫৩৭, আত-তালীকুর রাগীব ৪/৭৫, মিশকাত ২৩৪৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৬) ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুমু দিয়েছিল। তারপর সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বিষয়টি বললো। এ সময়ে আল্লাহ ওয়াহী নাযিল করেনঃ “সালাত  ক্বায়িম কর দিনের দু’ অংশে, রাতের কিছু অংশে। নিশ্চয়ই নেক কাজ পাপ কাজকে দূর করে দেয়’’- (সূরাহ্ হূদ ১১: ১১৪)।

লোকটি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, এটা কি আমার জন্য? তিনি বললেন, এটি আমার সকল উম্মতের জন্য। অন্য একটি বর্ণনা অনুসারে তিনি বলেছিলেন, "আমার উম্মাহর মধ্যে যারা এটি মেনে চলে তাদের জন্যও।" (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫২৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৬৩, সুনান আততিরমিযী ৩১১৪, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪২৫৪, আহমাদ ৩৬৫৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এক ব্যক্তি নিজের উপর যুলুম (পাপাচার) করলো। তার মৃত্যু উপস্থিত হলে সে তার পুত্রদের ওসিয়ত করে বললো, আমি মারা যাওয়ার পর তোমরা আমাকে আগুনে ভস্মীভূত করবে, অতঃপর ছাই পিষে চূর্ণ-বিচূর্ণ করবে, তারপর সমুদ্রে প্রবল বায়ুর মধ্যে সেগুলো নিক্ষেপ করবে। আল্লাহর শপথ! যদি আমার রব আমাকে পাকড়াও করতে পারেন তাহলে আমাকে এমন ভয়াবহ শাস্তি দিবেন যা অন্য কাউকে দেননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তার পুত্ররা তার ওসিয়াত মত কাজ করলো। আল্লাহ তা’আলা জমীনকে বলেন, তুমি তার দেহ থেকে যা গ্রহণ করেছো, তা ফেরত দাও। ফলে সে সোজা দাঁড়িয়ে গেল। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ কাজ করতে কিসে তোমাকে প্ররোচিত করেছে? সে বললো, হে প্রভু! আপনার ভয়। এজন্য আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৫৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৮১, ৭৫০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৫৬, আহমাদ ৭৫৯১, ৭৯৮০, মুয়াত্তা মালেক ৫৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৮) আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা রাতে নিজের হাত বাড়িয়ে দেন, যাতে দিনের বেলায় গুনাহকারীর তওবা্ করতে পারেন। আবার দিনের বেলায় তিনি তার হাত বাড়িয়ে দেন, যাতে রাতের বেলায় গুনাহকারীর তওবা্ করতে পারেন। এভাবে তিনি হাত প্রসারিত করতে থাকবেন যতদিন না সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩২৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৮২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৫৯, সহীহাহ্ ৩৫১৩, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৩৫, সহীহ আল জামি‘ ১৮৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন গুনাহ করার পর তা স্বীকার করে (অনুতপ্ত হয়) আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৬৬১, মুসলিম ২৭৭০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৯৭৪৮, ইবনু হিব্বান ৪২১২, শু‘আবূল ঈমান ৬৬২৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৫৫৭, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদয়ের (কিয়ামতের) আগে তওবা্ করবে আল্লাহ তা’আলা তার তওবা্ কবূল করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৩, ইবনু হিব্বান ৬২৯, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৩৬, সহীহ আল জামি‘ ৬১৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তার বান্দার তওবা্ করায় অত্যন্ত আনন্দিত হন যখন সে তাঁর কাছে তওবা্ করে। তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তির খুশীর চেয়ে অধিক খুশী হন, যে ব্যক্তির আরোহণের বাহন মরুভূমিতে তার কাছ থেকে ছুটে পালায়, আর এ বাহনের উপর আছে তার খাবার ও পানীয়। এ কারণে সে হতাশ-নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় আরোহণের বাহন সম্পর্কে একেবারেই নিরাশ হয়ে একটি গাছের কাছে এসে সে এর ছায়ায় শুয়ে পড়ে। এমন সময় সে হঠাৎ দেখে, বাহন তার কাছে এসে দাঁড়ানো। সে বাহনের লাগাম ধরে আর আনন্দে আবেগ আপ্লুত হয়ে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রভু। সে আনন্দের আতিশয্যে এ ভুল করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪৩, সহীহ আল জামি‘ ৫০৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা গুনাহ করে বলে, ’হে আমার রব! আমি গুনাহ করে ফেলেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করে দাও।’ তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, (হে আমার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)!) আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন? যে ’রব’ গুনাহ মাফ করেন অথবা (এর জন্য) তাকে শাস্তি দেন? (তোমরা সাক্ষী থেক) আমি তাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর যতদিন আল্লাহ চাইলেন, সে গুনাহ না করে থাকল। তারপর আবার সে গুনাহ করল ও বলল, ’হে রব’! আমি আবার গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ মাফ করো। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা এর জন্য শাস্তি দেন। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যতদিন চাইলেন, সে কোন গুনাহ না করে থাকল। তারপর সে আবারও গুনাহ করল এবং বলল, হে রব! আমি আবার গুনাহ করেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করো। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা অপরাধের জন্য শাস্তি দেন? আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করলাম। সে যা চায় করুক। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৫৮, আহমাদ ৭৯৪৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৭৬৪, শু‘আবূল ঈমান ৬৬৮৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪০, ইবনু হিব্বান ৬২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

(১৩) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে ডাকবে ও আমার নিকট ক্ষমার আশা পোষণ করবে, তোমার অবস্থা যা-ই হোক না কেন, আমি কারো পরোয়া করি না, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে, আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব, আমি কারো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবীসম গুনাহ নিয়েও আমার সাথে সাক্ষাৎ করো এবং আমার সাথে কাউকে শারীক না করে সাক্ষাৎ করো, আমি পৃথিবীসম ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে উপস্থিত হব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৬, সুনান আততিরমিযী ৩৫৪০, সহীহাহ্ ১২৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩৩৮২, সহীহ আল জামি‘ ৪৩৩৮, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)  ১৮৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৪)  আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, যে জানে আমি গুনাহ মাফ করে দেয়ার মালিক। আমি তাকে মাফ করে দেবো এবং আমি কারো পরোয়া করি না যতক্ষণ পর্যন্ত সে আমার সাথে কাউকে শারীক না করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৮, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১৬১৫, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৭৬৭৬, শারহুস্ সুন্নাহ ৪১৯১, সহীহ আল জামি‘ ৪৩৩০)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৫) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক আদম সন্তানই পাপী। আর উত্তম পাপী হলো সে ব্যক্তি যে (গুনাহ করে) তওবা্ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৪১, সুনান আততিরমিযী ২৪৯৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৫১, দারিমী ২৭৬৯, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৭৬১৭, সহীহ আল জামি‘ ৪৫১৫, শু‘আবূল ঈমান ৬৭২৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৬) আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দার প্রাণ (রূহ) ওষ্ঠাগত না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই আল্লাহ তার তওবা্ কবূল করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৪৩, সুনান আততিরমিযী ৩৫৩৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৫৩, আহমাদ ৬১৬০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৭৬৫৯, শু‘আবূল ঈমান ৬৬৬১, ইবনু হিব্বান ৬২৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪৩, সহীহ আল জামি‘ ১৯০৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৭) আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শয়তান (আল্লাহ তা’আলার কাছে) বলল, হে মহান প্রতিপালক, তোমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমার বান্দাদেরকে প্রতিনিয়ত গুমরাহ করতে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে রূহ থাকবে। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমার ইজ্জত, আমার মর্যাদা ও আমার সুউচ্চ অবস্থানের কসম! আমার বান্দা আমার কাছে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে থাকবে, আমি সর্বদা তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৪৪, আহমাদ ১১২৩৭, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৭৬৭২, সহীহাহ্ ১০৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬১৭, সহীহ আল জামি‘ ১৬৫০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৮) সফ্ওয়ান ইবনু ’আসসাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তওবা্ কবূলের জন্য পশ্চিম দিকে একটি দরজা খুলে রেখেছেন, যার প্রশস্ততা সত্তর বছরের পথ। সূর্য পশ্চিম দিকে উদয় না হওয়া পর্যন্ত এ দরজা বন্ধ করা হবে না। আর এটাই হলো আল্লাহ তা’আলার এ বাণীর ব্যাখ্যাঃ ’’যেদিন (কিয়ামতের পূর্বে) তোমার ’রবের’ কোন বিশেষ নিদর্শন এসে পৌঁছবে, সেদিন এ ঈমান তার কোন কাজে আসবে না। কেননা এ নিদর্শন আসার আগে ঈমান আনেনি’’- (সূরা আল আন্’আম ৬ : ১৫৮)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৪৫, সুনান আততিরমিযী ৩৫৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৩৭, সহীহ আল জামি‘ ৪১৯১, আহমাদ ১৮১০০, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭৩৮৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৯) মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হিজরতের ধারাবাহিকতা বন্ধ হবে না ততকক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ তাওবার দরজা বন্ধ না হয়। আর তাওবার দরজা বন্ধ হবে না, সূর্য পশ্চিমাকাশে উদয় না হওয়া পর্যন্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৪৬, সুনান আবূ দাঊদ ২৪৭৯, আহমাদ ১৬৯০৬, দারিমী ২৫৫৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭৭৭৮, ইরওয়া ১২০৮, সহীহ আল জামি‘ ৭৪৬৯)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২০) আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সৌভাগ্যবান হবে সে, যার আমলনামায় ইস্তিগফার বা ক্ষমা চাওয়া বেশি পাওয়া যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৫৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮১৮, শু‘আবূল ঈমান ৬৩৮, সহীহ আত্ তারগীব ১৬১৮, সহীহ আল জামি‘ ৩৯৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২১) হারিস ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) বলেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) আমাকে দু’টো কথা বলেছেন- একটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে, আর অপরটি তাঁর নিজের পক্ষ থেকে। তিনি বলেছেন, মু’মিন নিজের গুনাহকে মনে করে সে যেন কোন পাহাড়ের নীচে বসে আছে, যা তার উপর ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করে। অপরদিকে গুনাহগার ব্যক্তি নিজের গুনাহকে দেখে একটি মাছির মতো, যা তার নাকের উপর বসল, আর তা সে হাত দিয়ে নাড়িয়ে তাড়িয়ে দিলো।

এরপর তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দার তাওবায় সে লোকের চেয়ে বেশি আনন্দিত হন, যে লোক কোন ধ্বংসকারী মরুভূমিতে পৌঁছেছে, আর তার সাথে তার বাহন রয়েছে, যার উপর তার খাদ্য ও পানীয় রয়েছে। সেখানে সে জমিনে মাথা রাখল ও কিছুক্ষণ ঘুমাল। অতঃপর জেগে দেখল তার বাহন পালিয়ে গেছে। সে তা খুঁজতে শুরু করল। অবশেষে গরম ও তৃষ্ণা এবং অপরাপর দুঃখ-বেদনা যা আল্লাহর মর্জি তাকে দুর্বল করে ফেলল। তখন সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল, আমি যেখানে ছিলাম সেখানে গিয়ে (আমৃত্যু) শুয়ে থাকব। সুতরাং সে সেখানে গিয়ে নিজের বাহুর উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ল, যাতে সে মৃত্যুবরণ করে।

হঠাৎ এক সময় জেগে দেখে তার বাহন তার কাছে, বাহনের উপর তার খাদ্য-সামগ্রীও আছে। তখন সে তার বাহন ও খাদ্য-সামগ্রী ফেরত পাওয়ার আকস্মিকতায় যেরূপ খুশী হয়, আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দার তাওবায় এর চেয়েও বেশি খুশী হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৫৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২২) সুওয়াইদ ইবনু সাঈদ (রহঃ)....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর সানাদে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ রববুল আলামীন ইরশাদ করেছেনঃ আমার উপর বান্দার ধারণা অনুযায়ী আমি তার সাথে আছি। সে যেখানেই আমাকে স্মরণ করে আমি তার সাথে আছি। আল্লাহর কসম, শূন্য মাঠে তোমাদের কেউ হারানো প্রাণী পাওয়ার পর যে আনন্দিত হয় আল্লাহ তা’আলা বান্দার তাওবার কারণে এর চেয়েও বেশি আনন্দিত হন। যদি কেউ একবিঘত সমান আমার দিকে অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে একহাত অগ্রসর হই। যদি কেউ একহাত সমান আমার প্রতি অগ্রসর হয়, তাহলে আমি একগজ সমান তার প্রতি অগ্রসর হই। যদি কেউ আমার দিকে পায়ে হেঁটে আসে তবে আমি তার দিকে দৌড়ে আসি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭০০, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২৩) উবাইদুল্লাহ ইবনু মুআয আল আম্বারী (রহঃ)....সিমাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নুমান ইবনু বাশীর (রাযিঃ) খুতবাহ দিতে গিয়ে বললেন, আল্লাহ তার বান্দার তাওবার কারণে ঐ লোক হতেও বেশি আনন্দিত হন যে তার একটি উটের উপর সহায় সম্বল বহন করে সফরে বের হয়েছে। আর অবশেষে এক জনমানবহীন মাঠে উপস্থিত হয়। এমতাবস্থায় দুপুর হয়ে যায়। তখন সে নেমে বৃক্ষের তলায় বিশ্রাম করতে থাকে। সে গভীর ঘুমে নিমগ্ন হয় এবং তার উটটি চলে যায়। সে সজাগ হয়ে ঐ টিলায় দৌড়ে গেল, অতঃপর সে কোন কিছু দেখতে পেল না। তারপর সে অপর টিলায় দৌড়ে উঠল কিন্তু সেখানেও কোন কিছু দেখতে পেল না। তারপর সে তৃতীয় এক টিলার উপরে উঠে, কিন্তু সেখানেও কোন কিছু দেখতে পেল না। অবশেষে হতাশ হয়ে সে বিশ্রামাগারে ফিরে গিয়ে সেখানে এসে বসে থাকে। এমন সময় হঠাৎ হাঁটতে হঁটতে উটটি তার কাছে চলে আসে। অমনি সে তার হাতে এর লাগাম চেপে ধরে। আল্লাহ তার মু’মিন বান্দার তাওবার কারণে ঐ উট প্রাপ্ত লোকের চেয়েও বেশি খুশী হন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৫১, ৬৮৫২, ৬৮৫৩,  আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৫, ২৭৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭০৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(২৪) ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [মহিলাদেরকে সম্বোধন করে] বললেন, ’’হে মহিলা সকল! তোমরা সাদকাহ-খয়রাত করতে থাক ও অধিকমাত্রায় ইস্তিগফার কর। কারণ আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসীরূপে দেখলাম।’’ একজন মহিলা নিবেদন করল, ’আমাদের অধিকাংশ জাহান্নামী হওয়ার কারণ কি? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ’’তোমরা অভিশাপ বেশি কর এবং নিজ স্বামীর অকৃতজ্ঞতা কর। বুদ্ধি ও ধর্মে অপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বিচক্ষণ ব্যক্তির উপর তোমাদের চাইতে আর কাউকে বেশি প্রভাব খাটাতে দেখিনি।’’ মহিলাটি আবার নিবেদন করল, ’বুদ্ধি ও ধর্মের ক্ষেত্রে অপূর্ণতা কি?’ তিনি বললেন, ’’দু’জন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্য সমতুল্য। আর [প্রসবোত্তর খুন ও মাসিক আসার] দিনগুলিতে মহিলা নামায পড়া বন্ধ রাখে।’’ (রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৮৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০৪, ১৪৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯, ৮০, সুনান আননাসায়ী ১৫৭৬, ১৫৭৯, সুনান আবূ দাউদ ৪৬৭৯, সুনান ইবনু মাজাহ ১২৮৮, ৪০০৩, আহমাদ ৫৩২১, ১০৯২২, ১০৯৮৮, ১১১১৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নিজের সন্তান-সন্ততি মাগফিরাত কামনা করলে জান্নাতে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে তাঁর কোন নেক বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। এ অবস্থা দেখে সে (নেক বান্দা) বলবে, হে আমার রব! আমার এ মর্যাদা কিভাবে বৃদ্ধি হলো? তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার সন্তান-সন্ততি তোমার জন্য মাগফিরাত কামনা করার কারণে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৫৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৬৬০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৭৪০, আহমাদ ১০৬১০, সহীহাহ্ ১৫৯৮, সহীহ আল জামি‘ ১৬১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

বার বার একই পাপ করে বার বার তওবা ও ইস্তেগফার করলেই কি আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন?

কিছু কিছু পাপ আছে যেগুলো নিয়মিত করতে হয়। যেমন, ঘুষ নেয়া, দুর্নীতি করা, সুদ লেনদেন করা, মদ পান করা, বেশ্যালয়ে গমন করা, বেপর্দায় চলাফেরা করা, অবাধ মেলামেশা করা ইত্যাদি। ধরুন একজন মুসলিম চাকরিজীবি যিনি প্রতিদিন ঘুষ নেন আবার পাঁচ ওয়াক্ত সালাতও আদায় করেন। এই ঘুষখোর প্রতি সালাতে তওবা ও ইস্তেগফার পাঠ করেন আবার সারাদিন আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ যিকিরও করেন এভাবে তার চাকরিজীবন পার করলেন। ইতিমধ্যে ঘুস দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়েছেন এবং এই হারাম মালে তার রক্ত মাংসও গঠিত হয়েছে তাহলে যার দেহ হারাম মালে গঠিত তার দোয়া আল্লাহ কিভাবে কবুল করবেন। রাসুল সাঃ বলেন,

(ক) আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে, সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৭, সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল ঈমান ৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহের গোশত/গোশত হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭২, আহমাদ ১৪৪১, শু‘আবুল ঈমান ৮৯৭২, দারিমী ২৭৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ)  আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : ’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ’মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ১৭২)।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ)  আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের সামনে এমন একটি যুগ আসবে, যখন কেউ কি উপায়ে ধন-সম্পদ উপার্জন করলো, হারাম না হালাল উপায়ে- এ ব্যাপারে কেউ কোনো প্রকার পরোয়া করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৫৯, ২০৮৩,  নাসায়ী ৪৪৫৪, সহীহ আল জামি‘ ৮০০৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭২২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯১৬ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৩১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর এ উভয়ের মধ্যে এমন অনেক সন্দেহভাজন বিষয় বা বস্ত্ত আছে, যে ব্যাপারে অনেক মানুষই এগুলো হালাল, কি হারাম- এ বিষয়ে অবগত নয়। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় হতে বিরত থাকবে, তার দীন ও মান-মর্যাদা পুত-পবিত্র থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত থাকবে, সে সহসাই হারামে জড়িয়ে পড়বে। বিষয়টি সেই রাখালের ন্যায়, যে রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার কাছাকাছি নিয়ে চরালো, তার পাল অজান্তেই নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

সাবধান! প্রত্যেক দায়িত্বশীলেরই (প্রশাসন বা সরকারেরই) চারণভূমি (নিষিদ্ধ এলাকা) আছে, আর আল্লাহ তা’আলার নিষিদ্ধ চারণভূমি হারামসমূহকে নির্ধারিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, মানব দেহের ভিতরে একটি গোশতপিন্ড আছে, যা ভালো থাকলে গোটা শরীরই ভালো থাকে। আর এটি নষ্ট হয়ে গেলে বা বিকৃতি ঘটলে সমস্ত শরীরটাই নষ্ট হয়ে যায়। সেই গোশতপিন্ডটিই হলো ’কলব’ (অন্তঃকরণ)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২০৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ৩৩৩০, আহমাদ ১৮৩৭৪, দারিমী ২৫৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত দলিলসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, হারাম মাল দ্বারা গঠিত দেহ জান্নাতে যাবে না।

এখন কথা হচ্ছে, যে ব্যক্তি হারাম উপার্জনের সাথে জড়িত না কিন্তু নিয়মিত যেনা/ব্যভিচার বা খুনের সাথে জড়িত সেই ব্যক্তি বার বার যেনা করলো আবার বার বার তওবা করলো তার তওবা আল্লাহ কবুল করবে কিনা। এক্ষেত্রে কাফিরদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন,

“তাওবাহ্ তাদের জন্য নয় যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে, ‘আমি এখন তাওবাহ করছি’ এবং তাদের জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফের অবস্থায়। এরাই তারা যাদের জন্য আমরা কষ্টদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করেছি”। (সুরা নিসা ১৮)।

তবে মুসলমানদের ক্ষেত্রে একই পাপ একাধিক বার করা জঘন্য অন্যায়। এতে এক সময় ব্যক্তি পাপের অনুভূতিশূন্য হয়ে যায় এবং তওবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এজন্য পাপ থেকে বিরত থাকার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকবে এবং প্রতিমুহূর্তে আল্লাহকে স্মরণ করবে ও তওবা-ইস্তিগফার করবে। যদি খালেছ নিয়তে তওবা করে তবে তা কবুলযোগ্য হবে ইনশাআল্লাহ। হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা গুনাহ করে বলে, ’হে আমার রব! আমি গুনাহ করে ফেলেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করে দাও।’ তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, (হে আমার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)!) আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন? যে ’রব’ গুনাহ মাফ করেন অথবা (এর জন্য) তাকে শাস্তি দেন? (তোমরা সাক্ষী থেক) আমি তাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর যতদিন আল্লাহ চাইলেন, সে গুনাহ না করে থাকল। তারপর আবার সে গুনাহ করল ও বলল, ’হে রব’! আমি আবার গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ মাফ করো। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা এর জন্য শাস্তি দেন। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যতদিন চাইলেন, সে কোন গুনাহ না করে থাকল। তারপর সে আবারও গুনাহ করল এবং বলল, হে রব! আমি আবার গুনাহ করেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করো। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা অপরাধের জন্য শাস্তি দেন? আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করলাম। সে যা চায় করুক। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৮৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৫৮, আহমাদ ৭৯৪৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৭৬৪, শু‘আবূল ঈমান ৬৬৮৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪০, ইবনু হিব্বান ৬২২, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী বলেন, বান্দা যদি একশ’ বার বা হাযার বার বা তার চেয়ে বেশীবারও পাপ করে আর প্রত্যেকবার তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। (নববী, শরহ মুসলিম হা/২৭৫৭, ১৭/৭৫; ফাৎহুল বারী ১৩/৪৭২)।

অতএব নিরাশ না হয়ে পুনরায় পাপ না করার দৃঢ় ইচ্ছার সাথে তওবা করতে হবে। সাথে সাথে সৎ কর্ম ও নেককার মানুষদের সাথে উঠা-বসা করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি নিজেকে ধরে রাখো তাদের সাথে যারা সকালে ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে ডাকে তাঁর দীদার লাভের কামনায় এবং তুমি তাদের থেকে তোমার দু’চোখ ফিরিয়ে নিয়ো না পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায়’। (সুরা কাহফ ১৮/২৮)।

আল্লাহ বলেন, “আর তুমি ছালাত কায়েম কর দিনের দুই প্রান্তে ও রাত্রির কিছু অংশে। নিশ্চয়ই সৎকর্মসমূহ মন্দ কর্মসমূহকে বিদূরিত করে। আর এটি (অর্থাৎ কুরআন) হ’ল উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য (সর্বোত্তম) উপদেশ”। (সুরা হূদ ১১/১১৪)।

পাপিষ্ঠকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না এ কথা বললে নিজের সব আমল নষ্ট হয়ে যাবে

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলের মধ্যে দু’ ব্যক্তি পরস্পর বন্ধু ছিল। তাদের একজন ছিল বড় ’আবিদ আর অন্যজন ছিল গুনাহগার। ’আবিদ তাকে বলত, তুমি যেসব (গুনাহের) কাজে লিপ্ত আছো তা হতে বিরত থাক। গুনাহগার বলত, আমাকে আমার ’রবের’ কাছে ছেড়ে দাও। পরিশেষে একদিন ’আবিদ গুনাহগার ব্যক্তিকে এমন একটি বড় গুনাহের কাজে লিপ্ত পেলো, যা তার কাছে খুবই গুরুতর বলে মনে হল এবং বলল, বিরত থাকো। সে বলল, আমাকে আমার ’রবের’ কাছে ছেড়ে দাও। তোমাকে কী আমার জন্য পাহারাদার করে পাঠানো হয়েছে? ’আবিদ ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! তোমাকে কক্ষনো আল্লাহ ক্ষমা করবেন না এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাদের কাছে একজন মালাক (ফেরেশতা) পাঠালেন। সে তাদের উভয়ের রূহ কবয করল। তারা উভয়েই আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হলো। তখন গুনাহগার ব্যক্তিকে আল্লাহ বললেন, আমার রহমতের মাধ্যমে তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো। আর ’আবিদ ব্যক্তিকে বললেন, তুমি কি আমাকে আমার বান্দার প্রতি রহম করতে বাধা দিতে পারো? সে বলল, ’না, হে রব’। তখন আল্লাহ বললেন, একে জাহান্নামে প্রবেশ করাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৪৭, সুনান আবূ দাঊদ ৪৯০১, আহমাদ ৮২৯২, শু‘আবূল ঈমান ৬২৬২, ইবনু হিব্বান ৫৭১২, সহীহ আল জামি‘ ৪৪৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জনৈক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা’আলা অমুক ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন না। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেন, এমন কে আছে যে আমাকে কসম দিতে পারে যে, (আমার নামে শপথ করতে পারে) আমি অমুককে ক্ষমা করব না। যাও, আমি তাকে মাফ করে দিলাম এবং তোমার ’আমল নষ্ট করে দিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি এ বাক্য অথবা অনুরূপ বাক্য বলেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬২১, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৬৭৯, শু‘আবূল ঈমান ৬২৬১, ইবনু হিব্বান ৫৭১১, সহীহাহ্ ২০১৪, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৬১, সহীহ আল জামি‘ ২০৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পাপ থেকে মুক্ত হতে অধিক অনুতপ্ত হওয়ার ফজিলত

আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলের মধ্যে জনৈক ব্যক্তি নিরানব্বই জন মানুষ হত্যা করেছিল। তারপর সে শার’ঈ বিধান জানার জন্য একজন আল্লাহভীরুর কাছে জিজ্ঞেস করল, এ ধরনের মানুষের জন্য তাওবার কোন অবকাশ আছে কিনা? তিনি বললেন, নেই। তারপর সে তাকেও (’আলিমকেও) হত্যা করল। এভাবে সে লোকদেরকে অনবরত জিজ্ঞেস করতে থাকল। এক ব্যক্তি শুনে বলল, অমুক গ্রামে গিয়ে অমুককে জিজ্ঞেস করো। এমন সময়েই সে মৃত্যুমুখে পতিত হলো এবং মৃত্যুর সময় সে ওই গ্রামের দিকে নিজের সিনাকে বাড়িয়ে দিলো। তারপর রহমতের মালাক (ফেরেশতা) ও ’আযাবের মালাক পরস্পর ঝগড়া করতে লাগল, কারা তার রূহ নিয়ে যাবে। এমন সময় আল্লাহ তা’আলা ওই গ্রামকে বললেন, তুমি মৃত ব্যক্তির কাছে আসো। আর নিজ গ্রামকে বললেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর আল্লাহ মালায়িকাহকে (ফেরেশতাদের) বললেন, তোমরা উভয় দিকের পথের দূরত্ব পরিমাপ করে দেখো। মাপের পর মৃতকে এ গ্রামের দিকে এক বিঘত নিকটে পাওয়া গেল। সুতরাং তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩২৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৭০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৯০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৬৬, সুনান ইবনু মাজাহ ২৬২২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫৮৩৬, শু‘আবূল ঈমান ৬৬৬৩, ইবনু হিব্বান ৬১৫, সহীহাহ্ ২৬৪০, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৫১, সহীহ আল জামি‘ ২০৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পাপ থেকে মুক্তির উপায়

(কিসের মাধ্যমে কলবের কালো দাগ পরিস্কার হবে)

মানুষ মাত্রই ভুল করবে ও পাপ করবে এটাই স্বাভাবিক। ভুল বা পাপ করার পর আল্লাহর নিকট তওবা করলে আল্লাহ অধিক খুশি হোন। তবে গুণাহ বা পাপ থেকে মুক্ত থাকতে তওবা ছাড়াও আরো অনেক উপায় বা মাধ্যম আছে। সেই সব উপায় বা মাধ্যমগুলোর আলোচনা এখানে তুলে ধরা হলোঃ

(১) পরিপূর্ণভাবে ওযু করে জুমার সালাতে যাওয়াঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করবে এবং উত্তমভাবে উযূ করবে, তারপর জুমু‘আর সালাতে যাবে। চুপচাপ খুত্ববাহ্ (খুতবা) শুনবে। তাহলে তার এ জুমু‘আহ্ হতে ওই জুমু‘আহ্ পর্যন্ত সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে, অধিকন্তু আরো তিন দিনের। আর যে ব্যক্তি খুত্ববার সময় ধূলা বালি নাড়ল সে অর্থহীন কাজ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫০২৭, আহমাদ ৯৪৮৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৫৬, ১৮১৮, ইবনু হিব্বান ২৭৭৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৪৯, শু‘আবুল ঈমান ২৭২৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৬১৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) ওযু-পরবর্তী দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করাঃ

আবূ তাহির, আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু সারহ ও হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া আত-তুজীবী (রহঃ)....উসমান ইবনু আফফান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ওযুর পানি চাইলেন। এরপর তিনি ওযু করতে আরম্ভ করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন), তিনি উসমান (রাযিঃ) তিনবার তার হাতের কজি পর্যন্ত ধুলেন, এরপর কুলি করলেন এবং নাক ঝাড়লেন। এরপর তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুলেন এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরূপভাবে ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন। এরপর তার ডান পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন- অতঃপর তদ্রুপভাবে বাম পা ধুলেন তারপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার এ ওয়ূর করার ন্যায় ওযু করতে দেখেছি এবং ওযু শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযুর ন্যায় ওযু করবে এবং একান্ত মনোযোগের সাথে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

ইবনু শিহাব বলেন, আমাদের ’আলিমগণ বলতেন যে, সালাতের জন্য কারোর এ নিয়মের ওযুই হল পরিপূর্ণ ওযু । (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৩৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) রুকু থেকে দাঁড়িয়ে দু‘আ পাঠ করাঃ

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ই।মাম যখন সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে, তোমরা তখন রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ বল। কেননা যার কথা ফিরিশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৯৬, ৩২২৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৮৪৮, আহমাদ ৯৯৩০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪)  সূরা ফাতিহা শেষে 'আমীন' বলাঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘আমীন’ বলেন, তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলো। কেননা, যার ‘আমীন’ (বলা) ও মালাইকাহর ‘আমীন’ (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মা‘ফ করে দেয়া হয়। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আমীন’ বলতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৮০, ৬৪০২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১০, আহমাদ ৮২৪৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) পাপকে বড় মনে করা ও তাকে ছোট বা তুচ্ছ জ্ঞান না করাঃ

গোনাহ যে পর্যায়েরই হোক না কেন তাকে ছোট মনে না করা। বরং তাকে পরকালে শাস্তির কারণ মনে করে তা থেকে বিরত থাকা জরুরী।

’আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) দু’টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। একটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আর অন্যটি তাঁর নিজ থেকে। তিনি বলেন, ঈমানদার ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে এত বিরাট মনে করে, যেন সে একটা পর্বতের নীচে উপবিষ্ট আছে, আর সে আশঙ্কা করছে যে, সম্ভবত পর্বতটা তার উপর ধ্বসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে মাছির মত মনে করে, যা তার নাকে বসে চলে যায়। এ কথাটি আবূ শিহাব নিজ নাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলেন।

তারপর [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মনে কর কোন এক ব্যক্তি (সফরের) কোন এক স্থানে অবতরণ করলো, সেখানে প্রাণেরও ভয় ছিল। তার সঙ্গে তার সফরের বাহন ছিল। যার উপর তার খাদ্য ও পানীয় ছিল, সে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো এবং জেগে দেখলো তার বাহন চলে গেছে। তখন সে গরমে ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লো। রাবী বলেনঃ আল্লাহ যা চাইলেন তা হলো। তখন সে বললো যে, আমি যে স্থানে ছিলাম সেখানেই ফিরে যাই। এরপর সে নিজ স্থানে ফিরে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। তারপর জেগে দেখলো যে, তার বাহনটি তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে ব্যক্তি যতটা খুশী হলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দার তওবা করার কারণে এর চেয়েও অনেক অধিক খুশী হন। আবূ আওয়ানাহ ও জারীর আ’মাশ (রহ.) থেকে এ রকমই বর্ণনা করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৫৫, সুনান আততিরমিযী ২৪৯৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা ছোট ছোট গোনাহ থেকে বেঁচে থাক। তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ সম্প্রদায়ের মত যারা কোন উপত্যকায় অবতরণ করেছে। অতঃপর প্রত্যেকে একটি করে কাঠ নিয়ে এসেছে। এমনকি তা স্তূপাকার ধারণ করেছে। যার দ্বারা তারা রুটি পাকাতে পারে। আর নিশ্চয়ই ছোট ছোট গোনাহ যখন পাপীকে পাকড়াও করবে তখন তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে’। (আহমাদ হা/২২৮৬০; ছহীহাহ হা/৩৮৯, ৩১০২)।

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে বলেন,

“তুমি ঐ সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাক যেগুলোকে ছোট বলে ধারণা করা হবে। কেননা এ সমস্ত ছোট ছোট গুনাহগুলোর খোঁজ রাখার জন্য আল্লাহ তরফ থেকে (ফেরেশতা) নিয়োজিত রয়েছে”। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩৫৬, সহিহ ইবনু মাজাহ ৪২৪৩, সিলসিলাতুস সহীহাহ ৫১৩, ২৭৩১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ২৪৭২, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৫১৩, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৪৩৩৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৬৮, শুআবূল ঈমান ৭২৬১, দারিমী ২৭২৬, আল মু'জামুল আওসাত্ব ২৩৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) পাপীদের সাথে অবস্থান না করাঃ

পাপী ব্যক্তিদের সাথে ওঠাবসা না করার জন্য মুমিনদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,

সুওয়াইদ ইবনু সাঈদ (রহঃ)....আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বেঁচে থাকো। তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! (পথের উপরে) আমাদের মাজলিস না করে উপায় নেই, তথায় বসে আমরা (দরকারী) আলোচনা করে থাকি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিতান্তই যদি তোমাদের তা করতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তারা বললেন, রাস্তায় হক কি? তিনি বললেন, দৃষ্টি নিচু করা, কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা, সালামের উত্তর দেয়া এবং ভাল কাজের আদেশ দেয়া ও মন্দ কর্ম থেকে নিষেধ করা। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৫৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৮০, ইসলামিক সেন্টার ৫৪০০, ছহীহাহ  ২৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন তুমি দেখবে যে, লোকেরা আমাদের আয়াত সমূহে ছিদ্রান্বেষণ করছে, তখন তুমি তাদের থেকে সরে যাও, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান তোমাকে এটা ভুলিয়ে দেয়, তাহ’লে স্মরণ হওয়ার পর আর যালেম সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না’। (সুরা আন‘আম ৬/৬৮)।

(৭) অন্তরকে পাপমুক্ত রাখা ও পাপের দিকে ঝুঁকে না যাওয়াঃ

মানুষের অন্তর মন্দ প্রবণ। আল্লাহ ইউসুফ (আঃ)-এর ভাষ্য এভাবে উল্লেখ করেন ‘আর আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না। নিশ্চয়ই মানুষের মন মন্দপ্রবণ। কেবল ঐ ব্যক্তি ছাড়া যার প্রতি আমার প্রভু দয়া করেন। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল ও দয়াবান’। (সুরা ইউসুফ ১২/৫৩)।

সুতরাং মানুষের অন্তরকে পাপের পঙ্কিলতা ও কলুষ-কালিমা মুক্ত রাখার চেষ্টা করা যরূরী। যাতে তা পাপের দিকে ঝুঁকে না পড়ে।

(৮) উত্তম লোকদের সাথে অবস্থান করাঃ

মানুষ তার সঙ্গী-সাথীর দ্বারা প্রভাবিত হয়। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠে। সুতরাং তার বন্ধু নির্বাচনের সময় এ বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত, সে কাকে বন্ধু নির্বাচন করছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০১৯, সুনান আততিরমিযী ২৩৭৮, সুনান আবূ দাঊদ ৪৮৩৩, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯২৭, সহীহুল জামি‘ ৩৫৪৫, আহমাদ ৮৪১৭, শু‘আবুল ঈমান ৯৪৩৮, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/১৬৫, আল মুসতাদরাক ৭৩১৯, ছহীহুল জামে‘ ৩৫৪৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

তাই ভাল মানুষের সাথে মেশা এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্যই রাসূল (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, মু’মিন ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধু বানাবে না এবং তোমার খাদ্য আল্লাহভীরু লোক ছাড়া যেন অন্য কেউ না খায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০১৮, সুনান আততিরমিযী ২৩৯৫, সুনান আবূ দাঊদ ৪৮৩২, সহীহুল জামি‘ ৭৩৪১, সহীহ আত্ তারগীব ৩০৩৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৪, আহমাদ ১১৩৩৭, আবূ ইয়া‘লা ১৩১৫, দারিমী ২০৫৭, শু‘আবুল ঈমান ৯৩৮২, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৭/৭৪, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৩১৩৬, আল মুসতাদরাক ৭১৬৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

বনী ইসরাঈলের ৯৯টি হত্যাকারীর তওবা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘তুমি যে গ্রামে ছিলে তা একটি মন্দ গ্রাম। সেখান থেকে তুমি বের হয়ে অমুক উত্তম গ্রামের দিকে গমন কর। ঐ গ্রামে এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর ইবাদত করে। সুতরাং সেখানে গিয়ে তাদের সাথে তুমি তোমার রবের ইবাদত কর। আর তুমি তোমার দেশে ফিরে এসো না। কেননা সেটা মন্দ এলাকা’। (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ৭০৬৬; ছহীহাহ ২৬৪০; ছহীহ আত-তারগীব ৩১৫১)।

(৯) ইবাদতে রত হওয়াঃ

আল্লাহর ইবাদতে সদা লিপ্ত থাকা যরূরী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘অতএব যখন অবসর পাও, ইবাদতের কষ্টে রত হও। এবং তোমার প্রভুর দিকে রুজূ হও’। (সুরা শরহ ৯৪/৭-৮)।

তিনি আরো বলেন, ‘আর তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর, যতক্ষণ না মৃত্যু তোমার নিকট উপস্থিত হয়’। (সুরা হিজর ১৫/৯৯)।

আবার নিজে ইবাদত না করে অপরকে নির্দেশ দিলে পরকালে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।

 উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন একজন লোককে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে, সাথে সাথেই তার পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে পড়বে। সে নাড়িভুঁড়িকে কেন্দ্র করে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেভাবে আটার চাক্কিকে কেন্দ্র করে গাধা ঘুরতে থাকে। এটা দেখে জাহান্নামবাসীরা তার পাশে জমায়েত হয়ে তাকে বলবে : হে অমুক! তোমার ব্যাপার কি? তুমি না আমাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করতে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করতে? লোকটি বলবে, আমি তোমাদেরকে সৎ কাজের জন্য আদেশ করতাম; কিন্তু নিজে সেটা করতাম না। আর তোমাদেরকে অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করতাম; কিন্তু নিজে সেটা থেকে বিরত থাকতাম না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৩৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৬৭,  ৭০৯৮,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৯, সহীহুল জামি‘ ৮০২২, সহীহ আত্ তারগীব ১২৪, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৯২, আহমাদ ২১৭৮৪, শু‘আবুল ঈমান ৭৫৬৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৭০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাত গুণাহ থেকে রক্ষা করে

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু’আহ্ হতে অপর জুমু’আহ্ পর্যন্ত এবং এক রমাযান হতে আরেক রমাযান পর্যন্ত সব গুনাহে্র কাফফারাহ্ হয়, যদি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৪, মুসলিম ২৩৩, আহমাদ ৯১৯৭, সহীহাহ্ ৩৩২২, সহীহ আল জামি‘ ৩৮৭৫, সহীহ আত তারগীব ৬৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীগণের উদ্দেশে) বললেন, আচ্ছা বলো তো, তোমাদের কারো বাড়ীর দরজার কাছে যদি একটি নদী থাকে, যাতে সে নদীতে দিনে পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবীগণ উত্তরে বললেন, না, কোন ময়লা থাকবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এ দৃষ্টান্ত হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের। এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়কারীর গুনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৫, বুসহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৮, মুসলিম ৬৬৭, নাসায়ী ৪৬২, তিরমিযী ২৮৬৮, আহমাদ ৮৯২৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭২৬, ইরওয়া ১৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫২। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুমু দিয়েছিল। তারপর সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বিষয়টি বললো। এ সময়ে আল্লাহ ওয়াহী নাযিল করেনঃ “সালাত  ক্বায়িম কর দিনের দু’ অংশে, রাতের কিছু অংশে। নিশ্চয়ই নেক কাজ পাপ কাজকে দূর করে দেয়’’- (সূরাহ্ হূদ ১১: ১১৪)।

লোকটি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, এটা কি আমার জন্য? তিনি বললেন, এটি আমার সকল উম্মতের জন্য। অন্য একটি বর্ণনা অনুসারে তিনি বলেছিলেন, "আমার উম্মাহর মধ্যে যারা এটি মেনে চলে তাদের জন্যও।" (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৬সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৬, মুসলিম ২৭৬৩, তিরমিযী ৩১১৪, ইবনু মাজাহ্ ৪২৫৪, আহমাদ ৩৬৫৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি “হাদ্দ” যোগ্য-এর কাজ (অপরাধ) করে ফেলেছি। আমার ওপর তা প্রয়োগ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অপরাধ সম্পর্কে কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না। বরং সালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত  আদায় করলেন। লোকটিও রসূলের সাথে সালাত আদায় করলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত শেষ করলে লোকটি দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি হাদ্দ-এর কাজ করেছি। আমার ওপর আল্লাহর কিতাবের নির্দিষ্ট হাদ্দ জারী করুন। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি আমাদের সাথে সালাত  আদায় করনি। লোকটি বলল, হ্যাঁ, করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (এ সালাতের মাধ্যমে) আল্লাহ তোমার গুনাহ বা হাদ্দ মাফ করে দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৮২৩, মুসলিম ২৭৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), যা আল্লাহ তা’আলা (বান্দার জন্য) ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি এ সালাতের জন্য ভালোভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকূ’ ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭০, আহমাদ ২২৭০৪, সুনান আবূ দাঊদ ৪২৫, মালিক ১৪, নাসায়ী ৪৬১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(১০) পাপ থেকে সর্বদা তওবা-ইস্তেগফার করাঃ

শয়তান সর্বদা মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে ব্যাপৃত আছে। তার প্ররোচনায় মানুষ পাপাচারে লিপ্ত হয়। পাপ হয়ে গেলে সাথে সাথে তওবা করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা কখনো কোন অশ্লীল কাজ করলে কিংবা নিজের উপর কোন যুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে। অতঃপর স্বীয় পাপসমূহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কে আছে? আর যারা জেনেশুনে স্বীয় কৃতকর্মের উপর হঠকারিতা প্রদর্শন করে না’। (সুরা আলে ইমরান ৩/১৩৫)।

রাসূল (ছাঃ)-এর পূর্বাপর সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার পরও তিনি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার তওবা-ইস্তেগফার করতেন

আগার আল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার অন্তরে মরিচা পড়ে, আর (ওই মরিচা পরিষ্কার করার জন্য) আমি দিনে একশ’বার করে ইস্তিগফার করি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩২৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৭৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০২, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৮৮৩, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৮১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩৩৩৪১, শু‘আবূল ঈমান ৬৩১, সহীহ আল জামি‘ ২৪১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র এসেছে, ইবনু আবূ মূসা (রহঃ) তাঁর পিতা হ’তে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (ছাঃ) এরূপ দো‘আ করতেন,

উবাইদুল্লাহ ইবনু মুআয আল আম্বারী (রহঃ)....আবু মূসা আল আশ’আরী (রাযিঃ) এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি এ দু’আর মাধ্যমে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতেন,

“আল্ল-হুম্মাগ ফির্লী খতীআতী ওয়া জাহ্লী ওয়া ইসরা-ফী কী আমরী ওয়ামা- আনতা আ’লামু বিহি মিন্নী, আল্ল-হুম্মাগ ফিরলী জিদ্দী ওয়া হাযলী ওয়া খতায়ী ওয়া আমদী ওয়া কুল্লু যালিকা ইন্দী, আল্ল-হুম্মাগ ফিরলী মা- কদ্দামতু ওয়ামা- আখখারতু ওয়ামা- আসরারতু ওয়ামা- আ’লানতু ওয়ামা- আনতা আ’লামু বিহি মিন্নী আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আন্তাল মুয়াখখিরু ওয়া আনতা আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর"

অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আপনি আমার পাপ, আমার অজ্ঞতা ও আমার কাজের সীমালঙ্ঘনকে মার্জনা করে দিন। আপনি এ বিষয়ে আমার চেয়ে সর্বাধিক জ্ঞাত। হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করে দিন আমার আন্তরিকতাপূর্ণ ও রসিকতামূলক অপরাধ এবং আমার ইচ্ছাকৃত ও ভুলক্রমে সব রকমের অপরাধগুলো (যা আমি করেছি)। হে আল্লাহ! মাফ করে দিন যা আমি আগে করে ফেলেছি এবং যা আমি পরে করব, যা আমি গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি। আর আপনি আমার চাইতে আমার সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত। আপনিই একমাত্র অগ্রবর্তী এবং আপনিই একমাত্র পরবর্তী। আপনি সব বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭১৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৯৮, ৬৩৯৯, আহমাদ ১৯৭৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৫৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৭০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিসের মাধ্যমে কলবের কালো দাগ পরিস্কার হবে

আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তওবা করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তা’আলা যার বর্ণনা করেছেনঃ “কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনে জং (মরিচা) ধরিয়েছে”— (সূরা মুত্বাফফিফীন ১৪)। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৩৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৪২, সুনান ইবনে মাজাহ ৪২৪৪, আহমাদ ৭৯৫২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩৯০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৭৬৩, শু‘আবূল ঈমান ৬৮০৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪১, হাদীস সম্ভার ৩৮০৩, আত-তা’লীকুর রাগীব  ২/২৬৮)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অতএব অন্তর বা কলবের  কালো দাগ দূর করতে হলে তাকে গুণাহের কাজ ছাড়তে হবে, ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে ও তওবা করতে হবে। কথিত কোনো ভন্ড পির বা অলি কিংবা দরবেশ এর বানানো যিকির বা আমল কিংবা অজিফা দ্বারা কলবের কালো দাগ দূর করা সম্ভব নয়।

গোনাহ করার পর তওবা করলে আল্লাহ সেই পাপ ক্ষমা করে দেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তবে তারা ব্যতীত, যে তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে। আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন’। (সুরা ফুরক্বান ২৫/৭০)।

মহান আল্লাহ আরও বলেন, “আর যে তাওবা করে ও সৎকাজ করে, সে তো সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়”। (সুরা ফুরক্বান ২৫/৭১)।

(১১) পাপ প্রকাশ না করাঃ 

পাপ করার পর তা প্রকাশ করা যাবে না। কেননা আল্লাহ বান্দার পাপ গোপন রাখেন। কিন্তু বান্দা নিজে তা প্রকাশ করলে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আমার সকল উম্মাতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়ই অন্যায় যে, কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে, আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেলল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৯০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি আরো বলেন,  সফ্ওয়ান ইবনু মুহরিয (রহ.) হতে বর্ণিত যে, এক লোক ইবনু ’উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলঃ আপনি ’নাজওয়া’ (কিয়ামতের দিন আল্লাহ ও তাঁর মু’মিন বান্দার মধ্যে গোপন আলোচনা)। ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কী বলতে শুনেছেন? বললেন, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের এক ব্যক্তি তার প্রতিপালকের এত কাছাকাছি হবে যে, তিনি তার উপর তাঁর নিজস্ব আবরণ টেনে দিয়ে দু’বার জিজ্ঞেস করবেনঃ তুমি এই এই কাজ করেছিলে? সে বলবেঃ হাঁ। আবার তিনি জিজ্ঞেস করবেনঃ তুমি এই এই কাজ করেছিলে? সে বলবেঃ হাঁ। এভাবে তিনি তার স্বীকারোক্তি গ্রহণ করবেন। এরপর বলবেনঃ আমি দুনিয়াতে তোমার এগুলো লুকিয়ে রেখেছিলাম। আজ আমি তোমার এসব গুনাহ ক্ষমা করে দিলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৭০, ২৪৪১, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১২) পাপের পর নেকীর কাজ করাঃ 

শয়তানের প্ররোচনায় পাপ হয়ে গেলে, বুঝতে পারার পর তওবা করা এবং তারপর নেকীর কাজ করা যরূরী। যাতে নেকীর কাজ পাপকে মিটিয়ে দেয়।

’আবদুল্লাহ (রাঃ) বিন মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি মদীনার উপকণ্ঠে এক মহিলার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া ছাড়া আর সব রসাস্বাদন করেছি। আমি আপনার দরবারে উপস্থিত, তাই আমার প্রতি এ অপরাধের কারণে যা শাস্তি বিধান করার তা আপনি করুন। ’উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তোমার অপরাধ ঢেকে রেখেছিলেন। তুমি নিজেও তা ঢেকে রাখতে (আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে, তবে তা উত্তম হতো)। বর্ণনাকারী [’আবদুল্লাহ (রাঃ)] বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথার কোন উত্তর দিলেন না। তাই লোকটি উঠে চলে যেতে লাগলো। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পিছনে লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন এবং তার সামনে এ আয়াত পাঠ করলেন- (অর্থ) ’’সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কায়িম কর দিনের দু’ অংশে, রাতের কিছু অংশে। নিশ্চয়ই নেক কাজ বদ কাজকে দূর করে দেয়, উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটা একটা উপদেশ’’- (সূরাহ্ হূদ ১১: ১১৪)। এ সময় উপস্থিত এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর নবী! এ হুকুম কি বিশেষভাবে তার জন্য। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, না, বরং সকল মানুষের জন্যই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৬৮৭, ৫২৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৬৩, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৬৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭০৮৫, সুনান আততিরমিযী ৩১১২, সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৯৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৩২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আপর হাদীছে এসেছে, আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তুমি যখন যেভাবে থাকবে, আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করবে। মন্দ কাজ হয়ে গেলে সাথে সাথেই ভালো কাজ করবে। কারণ ভালো কাজ মন্দকে মুছে ফেলে। আর মানুষের সাথে সদাচরণ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০৮৩, আহমাদ ২১৩৫৪, সুনান আততিরমিযী ১৯৮৭, দারিমী ২৭৯১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৬৫৫, মুসনাদুল বাযযার ৪০২২, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৪/৩৭৮, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৬৭১৭, আল মু‘জামুস্ সগীর ৫৩০, ছহীহুল জামে‘ ৯৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৩) পাপের কারণে অন্যকে তিরস্কার না করাঃ

পাপের কারণে কাউকে তিরস্কার না করে তাকে সংশোধনের জন্য নছীহত করা জরুরী। যাতে সে পাপাচার থেকে তওবা করে। আবার তাকে তাচ্ছিল্য করে একথা বলাও সমীচীন নয় যে, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না। কেননা এরূপ বলার পরিণতি ভয়াবহ।

জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জনৈক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা’আলা অমুক ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন না। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেন, এমন কে আছে যে আমাকে কসম দিতে পারে যে, (আমার নামে শপথ করতে পারে) আমি অমুককে ক্ষমা করব না। যাও, আমি তাকে মাফ করে দিলাম এবং তোমার ’আমল নষ্ট করে দিলাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৫৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬২১, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৬৭৯, শু‘আবূল ঈমান ৬২৬১, ইবনু হিব্বান ৫৭১১, সহীহাহ্ ২০১৪, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৬১, সহীহ আল জামি ২০৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৪) নিরাশ না হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করাঃ

হতাশ বা নিরাশ হওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। পাপ কাজ হয়ে গেলে হতাশ না হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ও তওবা করা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন, ‘বল, হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল ও দয়াবান’। (সুরা যুমার ৩৯/৫৩)।

তিনি আরো বলেন, ‘আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে যাও, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’। (সুরা নূর ২৪/৩১)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করে না এবং যারা আল্লাহ যাকে হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, ন্যায় সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং যারা ব্যভিচার করেনা। যারা এগুলি করবে তারা শাস্তি ভোগ করবে। ক্বিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তারা সেখানে লাঞ্চিত অবস্থায় চিরকাল থাকবে। তবে তারা ব্যতীত, যে তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে। আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’। (সুরা ফুরক্বান ২৫/৬৮-৭০)।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে ডাকবে ও আমার নিকট ক্ষমার আশা পোষণ করবে, তোমার অবস্থা যা-ই হোক না কেন, আমি কারো পরোয়া করি না, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে, আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব, আমি কারো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবীসম গুনাহ নিয়েও আমার সাথে সাক্ষাৎ করো এবং আমার সাথে কাউকে শারীক না করে সাক্ষাৎ করো, আমি পৃথিবীসম ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে উপস্থিত হব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৬, সুনান আততিরমিযী ৩৫৪০, সহীহাহ্ ১২৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩৩৮২, ছহীহাহ ১২৭-২৮; ছহীহুল জামে‘ ৪৩৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি আরো বলেন,  আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা রাতে নিজের হাত বাড়িয়ে দেন, যাতে দিনের বেলায় গুনাহকারীর তওবা্ করতে পারেন। আবার দিনের বেলায় তিনি তার হাত বাড়িয়ে দেন, যাতে রাতের বেলায় গুনাহকারীর তওবা্ করতে পারেন। এভাবে তিনি হাত প্রসারিত করতে থাকবেন যতদিন না সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩২৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৮২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৫৯, সহীহাহ্ ৩৫১৩, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৩৫, সহীহ আল জামি‘ ১৮৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মানুষের মাঝে কামনা-বাসনা আছে এবং তাদের বিভ্রান্ত করার জন্য শয়তান সদা তৎপর। তাই মানুষের দ্বারা পাপ কাজ সংঘটিত হওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু সে পাপের মাঝে ডুবে না থেকে তওবা করে তা থেকে ফিরে আসা অতিব যরূরী। কেননা মানুষের সীমিত জীবনকালে এবং হঠাৎ আগমনকারী মৃত্যুর কারণে যে তওবার সুযোগ নাও পেতে পারে। তাই পাপের পরে অবিলম্বে তওবা ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজেকে মুক্ত করে নেওয়া আবশ্যক।

ক্ষমা বা ইস্তেগফার করার দোয়া বা আমলসমূহ

(১) ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একই মজলিসে বসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (এই ইস্তিগফারটি) পাঠ করা অবস্থায় একশো বার পর্যন্ত গুনতাম,

‘রাব্বিগফির লী অতুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আন্তাত তাউওয়াবুর রাহীম।’

অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর, আমার তওবা কবুল কর, নিশ্চয় তুমি অতিশয় তওবাহ কবূলকারী দয়াবান। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫১৬, তিরমিযী ৩৪৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮১৪, সহীহাহ ৫৫৬, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অথবা

আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একই মাজলিসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইসতিগফার একশ’বার গণনা করতাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন,

“রব্বিগফিরলী ওয়াতুব্ ’আলাইয়্যা ইন্‌নাকা আন্‌তাত্ তাও্ওয়া-বুল গফূর’’

(অর্থাৎ- হে রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমার তওবা্ কবূল করো। কেননা তুমি তওবা্ কবূলকারী ও ক্ষমাকারী)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৫২, আবূ দাঊদ ১৫১৬, তিরমিযী ৩৪৩৪, ইবনু মাজাহ ৩৮১৪, আহমাদ ৪৭২৬, ইবনু হিব্বান ৯২৭, সহীহাহ্ ৫৫৬, সহীহ আল জামি‘ ৩৪৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত দোয়াটি তাশাহুদ বৈঠকে, একাকী দুই হাত তুলে মুনাজাতে ও সকাল বিকেলে ১০০ বার করে পাঠ করবেন।

(২) সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাছওয়ালা নবী ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে গিয়ে যখন দু’আ পড়েছিলেন তা হলো এই

“লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায্ যোয়া-লিমীন’’

অর্থাৎ- ’’তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই। তুমি পবিত্র, আমি হচ্ছি যালিম বা অত্যাচারী অপরাধী’’- (সূরা আম্বিয়া ২১:৮৭)।

যে কোন মুসলিমই যে কোন ব্যাপারে এ দু’আ পাঠ করবে, তার দু’আ নিশ্চয়ই গৃহীত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৯২, তিরমিযী ৩৫০৫, আহমাদ ১৪৬২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৬২, শু‘আবূল ঈমান ৬১১, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১২৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৪, সহীহ আল জামি ৩৩৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৩) ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এ দো‘আ পড়বে,

‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু অ আতূবু ইলাইহ্।’

অর্থাৎ আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা করছি।

সে ব্যক্তির পাপরাশি মার্জনা করা হবে; যদিও সে রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে (যাওয়ার পাপ করে) থাকে।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) আবূ দাউদ ১৫১৭, তিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)- তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত দোয়াটি তাশাহুদ বৈঠকে, একাকী দুই হাত তুলে মুনাজাতে ও সকাল বিকেলে ১০০ বার করে পাঠ করবেন।

(৪) “রব্বানা য-লামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কূনান্না মিনাল খ-সিরীন। ”

অর্থঃ “হে আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের নফসের উপর যুলুম করেছি, তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না কর, আমাদের প্রতি করুণা না কর তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।” (সূরা আ‘রাফ- ২৩)।

উক্ত দোয়াটি তাশাহুদ বৈঠকে ও একাকী দুই হাত তুলে মুনাজাতে পাঠ করবেন।

(৫) আবূ বাকর সিদ্দীক (রাযি.) হতে বর্ণিত। একদা তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আরয করলেন, আমাকে সালাতে পাঠ করার জন্য একটি দু‘আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, এ দু‘আটি বলবে-

“আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাছিরাও ওয়া লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন্ ইন্দিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আংতাল গাফুরুর রাহিম।”

‘‘হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অধিক জুলুম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ হতে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৩৪, ৬৩২৬, ৭৩৮৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত দোয়াটি তাশাহুদ বৈঠকে ও একাকী দুই হাত তুলে মুনাজাতে পাঠ করবেন।

(৬) রুকুতে গুণাহ মাফ সংক্রান্ত পঠিতব্য দোয়াসমূহঃ

(ক) যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)...‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকু’-সাজদায় এ দু'আ অধিক পরিমাণে পাঠ করতেনঃ

“সুবহ-নাকা আল্লহুম্মা রব্বানা- ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”।

অর্থাৎ "হে আল্লাহ! হে আমার প্রতিপালক! তোমার প্রশংসার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।” তিনি কুরআনের উপর 'আমল করতেন। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭২-(২১৭/৪৮৪), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টার ৯৭৮, মিশকাত ৮৭১, নায়লুল আওত্বার ৩/১০৬, আবূ দাঊদ ৮৭৭, নাসায়ী ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, বুখারী-৪২৯৩)। হাদিসের মান-সহিহ।

(খ) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ), ‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইন্তিকালের পূর্বে এ দু'আটি খুব বেশি মাত্রায় পাঠ করতেনঃ

"সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা আস্তাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলায়ক"।

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা প্রাপ্য একমাত্র তিনি, আমি তোমার নিকট সকল পাপের ক্ষমা চাচ্ছি ও তওবা করছি।” রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে যে এসব নতুন বাক্য পড়তে দেখছি- এগুলো কী? তিনি বললেনঃ আমার উন্মাতের মধ্যে আমার জন্য একটি চিহ্ন বা নিদর্শন রাখা হয়েছে। যখন আমি তা দেখি তখন এগুলো বলতে থাকি। আমি দেখেছিঃ “ইযা-জা-আ নাসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" সূরার শেষ পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৯, মুসনাদে আহমদ ১৯৭০, সিলসিলা সহীহা ৩০৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ), আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "ইযা- জাআ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" (সূরাহু আন নাসর) নাযিল হওয়ার পর থেকে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ দু'আ পাঠ করা ব্যতিরেকে কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি। অথবা তিনি সেখানে (সালাতে) বলতেনঃ

"সুবহা-নাকা রব্বী ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”।

অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক আপনার জন্যই সকল পবিত্রতা ও প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন”। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৯, ইসলামিক সেন্টার ৯৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ), আয়িশাহ্ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পড়তেনঃ

“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হাম্‌দিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"।

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তওবা করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।” রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে অধিক সংখ্যায় এ কথা বলতে দেখছিঃ “সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"। রাবী বলেন, তিনি বললেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আমি অচিরেই আমার উন্মাতের মধ্যে একটি নিদর্শন দেখতে পাব। যখন আমি সে আলামাত দেখতে পাই তখন অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পাঠ করতে থাকিঃ "সুবহানাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"। সে নিদর্শন সম্ভবত এই “ইযা- জা-আ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ ..”। অর্থাৎ “যখন আল্লাহর সাহায্য আসবে এবং বিজয় লাভ হবে (অর্থাৎ- মক্কা বিজয়), তুমি দেখত পাবে, দলে দলে লোক আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে; তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা সহকারে তার তাসবীহ করে এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিঃসন্দেহে তিনি খুবই তওবা গ্রহণকারী"- (সূরাহ আন নাসর)। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৫-(২২০), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৭০, ইসলামিক সেন্টার ৯৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) গুণাহ মাফ সংক্রান্ত দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আঃ

(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ সাজদার মধ্যে বলতেনঃ

‘‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়া ‘আ-ফিনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুক্বনী’’-

(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ কর। আমাকে রহম কর, হিদায়াত কর, আমাকে হিফাযাত কর। আমাকে রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) দান কর)। (মিশকাতুল মিসাবীহ ৯০০, আবূ দাঊদ ৮৫০, তিরমিযী ২৮৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) এরপর কমপক্ষে ২ বার বলবেন,

হুযাইফাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’ সিজদার মাঝে বলতেন:  “রব্বিগফির লী।”  (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর)। (মিশকাতুল মিসাবীহ-৯০১, আহমাদ ৩৯৭, ৪০০, ইবনু মাজাহ ৮৯৭, আল ‍কুবরা ৬৫৬, ৭৩১, ১৩৭৮, ১৩৭৯, আবু দাউদ ৮৭৪; তিরমিযী, শামাইল ২৭০, বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ ৯১০, বাইহাকী ২/১২১-১২২, আবু দাউদ তায়ালিসী ৪১৬, সুনান আদ-দারেমী ১৩৬০, নাসাঈ,  ১০৬৯, ইরওয়া ৩৩৫, দারিমী ১৩৬৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) গুণাহ মাফ সংক্রান্ত সিজদার অতিরিক্ত তাসবীহ বা দোয়াসমূহঃ

(ক) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের উপর ‘আমল করে নিজের রুকূ‘ ও সাজদায় এই দু‘আ বেশি বেশি পাঠ করতেনঃ

 ‘‘সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা- ওয়াবিহামদিকা, আল্লা-হুমাগ ফিরলী’’-

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি পূত-পবিত্র। তুমি আমাদের রব। আমি তোমার গুণগান করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭১, সহীহ বুখারী ৭৯৪, ৮১৭, ৪২৯৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৭, নাসায়ী, ১০৪৬, ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭২-(২১৭/৪৮৪), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টার ৯৭৮, নায়লুল আওত্বার ৩/১০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)...‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইন্তিকালের পূর্বে এ দু'আটি খুব বেশি মাত্রায় পাঠ করতেনঃ

"সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা আস্তাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলায়ক"।

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা প্রাপ্য একমাত্র তিনি, আমি তোমার নিকট সকল পাপের ক্ষমা চাচ্ছি ও তওবা করছি।” (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৩-(২১৮), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৯, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৮৮৬, মুসলিম)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ).....আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "ইযা- জাআ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" (সূরাহু আন নাসর) নাযিল হওয়ার পর থেকে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ দু'আ পাঠ করা ব্যতিরেকে কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি। অথবা তিনি সেখানে (সালাতে) বলতেনঃ

"সুবহা-নাকা রব্বী ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”।

অর্থাৎ, হে আমার প্রতিপালক আপনার জন্যই সকল পবিত্রতা ও প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন।" (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৪-(২১৯), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ), আয়িশাহ্ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পড়তেনঃ

“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হাম্‌দিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"।

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তওবা করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।” (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৫-(২২০), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৭০, ইসলামিক সেন্টার ৯৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় গিয়ে বলতেন,

‘‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী জামবী কুল্লাহূ দিক্কহূ ওয়া জিল্লাহূ ওয়া আও্ওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ ওয়া ‘আলা- নিয়াতাহূ ওয়া সিররহূ’’-

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার সকল ছোট-বড়, আগে-পরের, গোপনীয় ও প্রকাশ্য গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৮৩, ৯৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯৩১, ইবনু খুযাইমাহ, ৬৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে গুণাহ মাফ সংক্রান্ত পঠিতব্য দোয়াসমূহঃ

(ক) ‘উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (রহ.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) তাঁকে বলেছেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে এ বলে দু‘আ করতেনঃ

“আল্ল-হুম্মা ইন্নি  আউজুবিকা মিন আযা-বিল ক্ববরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জ-লি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়া ফিতনাতিল মামাতি, আল্ল-হুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মাছামি ওয়াল মাগরামি।”

‘‘কবরের আযাব হতে, মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা হতে ইয়া আল্লাহ্! আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ্! গুনাহ্ ও ঋণগ্রস্ততা হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই।’’

তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আপনি কতই না ঋণগ্রস্ততা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বললেনঃ যখন কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৮৩২,৮৩৩, ২৩৯৭, ৬৩৬৮, ৬৩৭৫, ৬৩৭৬, ৬৩৭৭, ৭১২৯, আধুনিক প্রকাশনী ৭৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৯৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৩৯, মুসলিম ৫৮৯, আবূ দাঊদ ৮৮০, নাসায়ী ১৩০৯, আহমাদ ২৪৫৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাশাহহুদ ও সালাম ফিরার মধ্যখানে শেষ বেলায় অর্থাৎ সালাম ফিরবার আগে) এই দো‘আ পড়তেন,

“আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখ্খারতু অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু অমা আসরাফতু অমা আন্তা আ‘লামু বিহী মিন্নী, আন্তাল মুক্বাদ্দিমু অ আন্তাল মুআখখিরু লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত্।”

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর, যে অপরাধ আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি, যা অতিরিক্ত করেছি এবং যা তুমি আমার চাইতে অধিক জান। তুমি আদি, তুমিই অন্ত। তুমি ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন, ১১২০, ৬৩১৭, ৬৩৮৫, ৭৪৪২, ৭৪৯৯, ৭৩৮৫, সুনান ইবনু মাজাহ, ১৩৫৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪১৮,মুসলিম ৭৬৯, নাসায়ী ১৬১৯, আবূ দাঊদ ৭৭১, আহমাদ ২৮১৩, ২৭০৫, ২৭৪৩, ২৮০৮, ৩৩৫৮,৩৪৫৮; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৫০০, দারিমী ১৪৮৬,আধুনিক প্রকাশনী ১০৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১০৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(গ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের মধ্যে (সালাম ফিরাবার আগে) দু‘আ করতেন। বলতেন,

‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল কবরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-লি। ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া- ওয়া ফিতনাতিল মামা-তি। আল্লা-হুমা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল মা’সামি ওয়াল মাগরামি’’।

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি কবরের ‘আযাব থেকে। আমি তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। আমি তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি গুনাহ ও দেনার বোঝা হতে)।

এক ব্যক্তি বলল, হে নবী! আপনি দেনার বোঝা হতে বড় বেশী পানাহ চেয়ে থাকেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কেউ যখন দেনাদার হয় তখন কথা বলে, মিথ্যা বলে এবং অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৩৯, সহীহ বুখারী ৮৩৩, মুসলিম ৫৮৯, আবূ দাঊদ ৮৮০, নাসায়ী ১৩০৯, আহমাদ ২৪৫৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) সকাল ও সন্ধ্যায় “সায়্যিদুল ইস্তিগফা” পাঠ করাঃ

শাদ্দাদ ইবনে আউস রাদিয়াল্লাহু আনহুকর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সায়্যিদুল ইস্তিগফার [শ্রেষ্ঠতম ক্ষমা প্রার্থনার দো’আ] হল বান্দার এই বলা যে,

“আল্লা-হুম্মা আন্তা রাববী লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা খালাক্বতানী, অ আনা আব্দুকা অ আনা আলা আহদিকা অ অ’দিকা মাসতাত্বা’তু, আঊযুবিকা মিন শার্রি মা স্বানা’তু, আবূউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা অ আবূউ বিযামবী ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়্যাগফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্ত্।”

অর্থ- হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার দাস। আমি তোমার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর যথাসাধ্য প্রতিষ্ঠিত আছি। আমি যা করেছি তার মন্দ থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমার উপর তোমার যে সম্পদ রয়েছে তা আমি স্বীকার করছি এবং আমার অপরাধও আমি স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমাকে মার্জনা করে দাও, যেহেতু তুমি ছাড়া আর কেউ পাপ মার্জনা করতে পারে না।

যে ব্যক্তি দিনে [সকাল] বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ দুআটি পড়বে অতঃপর সে সেই দিনে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে [সন্ধ্যায়] এ দুআটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে অতঃপর সে সেই রাতে ভোর হওয়ার পূর্বেই মারা যাবে, তাহলে সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬, ৬৩২৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৯৩, সুনান আননাসায়ী ৫৫২২, আহমাদ ১৬৬৬২, ১৬৬৮১, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২১,  রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৮৮৪, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) সালাম ফিরানোর পর তিনবার ইস্তেগফার পাঠ করাঃ

 সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযান্তে সালাম ফিরে তিনবার ইস্তিগফার করে এই দো’আ পড়তেন, ’

আল্লা-হুম্মা আন্তাস সালা-মু অমিন্কাস সালা-ম, তাবা-রাকতা ইয়া যাল জালা-লি অল ইকরা-ম।’

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি শান্তি [সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র] এবং তোমার নিকট থেকেই শান্তি। তুমি বরকতময় হে মহিমময়, মহানুভব!

এ হাদিসের অন্যতম বর্ণনাকারী ইমাম আওযায়ীকে প্রশ্ন করা হল, ইস্তিগফার কিভাবে হবে? তিনি বললেন, ’বলবে, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ।’ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।  (রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৮৮৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১২২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯১, সুনান আততিরমিযী ৩০০, সুনান আবূ দাউদ ১৫১২, সুনান ইবনু মাজাহ ৯২৮, আহমাদ ২১৯০২, দারেমী ১৩৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ নিজে দৈনিক ১০০/৭০ বার ইস্তেগফার পাঠ করতেন

(১) আগার্র মুযানী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে নিমেষভর বাধাপ্রাপ্ত হয়। সেহেতু আমি দিনে একশত বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা ভিক্ষা চাই।’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০২, সুনান আবূ দাউদ ১৫১৫, আহমাদ ১৭৩৯১, ১৭৮২৭, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৮৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “আল্লাহর শপথ! আমি প্রত্যহ আল্লাহর কাছে সত্তর বারেরও বেশি ইস্তিগফার [ক্ষমাপ্রার্থনা] ও তওবা করে থাকি।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৭, সুনান আততিরমিযী ৩২৫৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬১, আহমাদ ৭৭৩৪, ৮২৮৮, ৯৫১৫, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৮৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

ইস্তেগফার করার ফজিলত

মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা নূহের ১০-১২ নং আয়াতে ছয়টি পুরস্কারের ঘোষণা করেছেন।

(১)  সব পাপ ক্ষমা করে দেবেনঃ

 এর ফলে পাপের কারণে যে আজাব ও গজব অবধারিত হয়ে গিয়েছিল তা আল্লাহ তায়ালা দূর করে দেবেন। যেমনÑ হজরত ইউনুছ আ:-এর জাতি যখন আজাব প্রত্যক্ষ করেছিল তখন তাওবা-ইস্তেগফার শুরু করে দিয়েছিল, ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং তাদের ওপর থেকে ভয়ানক আজাব সরিয়ে দিয়েছিলেন।

(২) রহমতের প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করবেনঃ

 এর ফলে করোনার কারণে আমরা যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছি তা আল্লাহ তায়ালা দূর করে দেবেন। ইস্তেগফারের কারণে রহমতের বৃষ্টি বর্ষণের অনেক ঘটনা কিতাবে রয়েছে, কিন্তু পত্রিকার কলেবর বৃদ্ধি পাবে বিধায় তা এখানে উল্লেখ করলাম না।

(৩) ধন-সম্পদের মাধ্যমে সাহায্য করবেনঃ

 বর্তমানে ভাইরাসের কারণে আয়ের সব উৎস প্রায় বন্ধ। অপর দিকে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে অর্থ-স¤পদ ব্যয় হচ্ছে। যার ফলে অভাবের আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠছে। এখন যদি আমরা ইস্তেগফার করতে শুরু করি তাহলে এ আশঙ্কা কমে যাবে।

(৪) সুসন্তানের মাধ্যমে সাহায্য করবেনঃ

 বিয়ের পর সন্তান লাভের জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করি। কেউ যায় মাজারে, কেউবা পড়ে ভণ্ডের খপ্পরে। কেউ ঈমান হারায় আবার কেউ অর্থ খোয়ায়, কিন্তু সন্তান পায় না। অথচ আল্লাহ তায়ালা ইস্তেগফারের বিনিময়ে এমন সুসন্তানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, যারা মা-বাবার উপকারে আসবে। তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করবে।

(৫) বাগ-বগিচা দান করবেনঃ

অর্থাৎ ফল-ফ্রুট, শাক-সবজি, তরি-তরকারি এবং ফসলাদিতে অনেক প্রাচুর্য দান করবেন। ফলে খাদ্যের কোনো অভাব হবে না।

(৬) নদী-নালা প্রবাহিত করবেনঃ

বর্তমানে নদী-নালার বহমানতা একেবারেই কমে গেছে। বহু নদী শুকিয়ে খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। সাধারণ জেলেরা দূর-দূরান্ত ঘুরে বহু কষ্টে মাছ ধরলেও গ্রামের ছেলেদের জন্য এখন মাছ ধরা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। তাই ইস্তেগফার করতে থাকলে আমাদের পানি এবং মাছ কোনোটারই সঙ্কট থাকবে না।

পবিত্র কুরআনের সূরা হুদের তিন নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইস্তেগফারের আরো দুটি পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন।

(৭) সুখময় জীবন দান করবেনঃ

বর্তমানে বহু তরুণ-তরুণী এবং বহু দম্পতি অশান্তির আগুনে জ্বলছে। সুখের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরেও ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ কুরআন সুখময় জীবনের পথনির্দেশনা দিচ্ছে।

(৮) সম্মানিতদের সম্মান বৃদ্ধি করবেনঃ

বর্তমানে অনেক জ্ঞানী-গুণী, শিক্ষিত এবং সম্মানি লোক আছেন যারা সমাজে কাক্সিক্ষত মর্যাদা পান না। তারও কারণ এ ইস্তেগফার।

ইস্তেগফারের আরো একটি পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা সূরা হুদের ৫২ নং আয়াতে।

(৯) আমাদের শক্তি বৃদ্ধি করে দেবেনঃ

বর্তমানে আমরা সব ক্ষেত্রে দুর্বল। আমরা যদি বেশি বেশি ইস্তেগফার করি, তাহলে তিনি আমাদের শারীরিক শক্তি, সামাজিক শক্তি, অর্থনৈতিক শক্তি, সামরিক শক্তি এবং রাষ্ট্রীয় শক্তির সাথে গায়েবি শক্তি যুক্ত করে দেবেন।

আর সূরা আনফালের ৩৩ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে আরো একটি পুরস্কার।

(১০) আজাব-গজব দেবেন নাঃ

আমরা যদি বেশি বেশি ইস্তেগফার করতে থাকি, তাহলে তিনি আজাব-গজব দূর করে দেবেন।

সুনানে আবু দাউদের ১৫১৮, সুনানে ইবনে মাজাহের ৩৮১৯ এবং মুসনাদে আহমদের ২২৩৪ নং হাদিসের মধ্যে আরো তিনটি পুরস্কারের কথা বর্ণিত হয়েছে। যথাঃ

(১১) সব প্রকার আপদ-বিপদ ও সঙ্কট দূর করে দেবেন।

(১২) সব দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন।

(১৩) অকল্পনীয়ভাবে রিজিক দান করবেন।

ইবনু ’আব্বাস রাযিয়াল্লাহু ’আনহু সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি নিয়মিত ইসতিগফার পড়লে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ হতে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সকল দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক্ব দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫১৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮১৯, মুসনাদে আহমদের ২২৩৪, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (৩/৩৫১)।হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

আরেকটি পুরস্কার অভিজ্ঞতার আলোকে বোঝা যায়।

(১৪) মুস্তাজাবুদ দাওয়াত হয়ে যাবেন। অর্থাৎ, ইস্তেগফার পাঠকারী এমন হয়ে যাবেন, যখন তিনি কোনো দোয়া করবেন আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করবেন।

(১৫) মৃত্যুর পর তাকে জান্নাত দান করবেন।

তাই আসুন আমরা বেশি বেশি ইস্তেগফার করি, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং সব বিপদ-আপদ থকে বেঁচে, আল্লাহর দেয়া পুরস্কার লাভ করতে চেষ্টা করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন, আমিন।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...