বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আপনি কি জান্নাতী হুরদের বিয়ে করতে চান?
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “অতএব কেউই জানে না তাদের
জন্য চোখ জুড়ানো কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ!” (সুরা আস সাজদাহ-১৭)।
হাদীসে কুদসীতে উদ্ধৃত হয়েছে যে,
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আমি আমার নেক বান্দাদের
জন্য এমন সব বস্তু বানিয়ে রেখেছি, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন অন্তঃকরণ
চিন্তা করেনি। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেছেন, তোমরা চাইলে এ আয়াত তিলাওয়াত করঃ “কেউ জানে
না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কোন্ বিষয় লুকিয়ে রাখা হয়েছে’’- (আস্-সিজদাহ ৩২/১৭)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৭৭৯, ৩২৪৪, ৪৭৮০, ৭৪৯৮, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮২৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৫৬১২, সুনান আততিরমিযী ৩১৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩২৮, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ১৯৭৮, সহীহুল
জামি ৪৩০৭, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৭২৮, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২০৮৭৪, মুসান্নাফ
ইবনু আবী শায়বাহ ৩৩৯৭৪, মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ১১৩৩, মুসনাদে আহমাদ ৮১২৮, আবূ ইয়া'লা
৬২৭৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৬৯, শু’আবূল ঈমান ৩৮২, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১১০৮৫,
সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি) ২৮৬৬, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০২, আল মু'জামুস্
সগীর লিত্ব তবারানী ৫১, আল মু'জামুল আওসাত্ব ১৬৩৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪১৫, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৪৪১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদিসে এসেছে,
সাঈদ ইবনু আমুর আল আশ’আসী, ইবনু আবূ উমার এবং
বিশর ইবনু হাকম (রহঃ) ... মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাযিঃ) এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার মূসা (আঃ) তার প্রতিপালককে জিজ্ঞেস করেছিলেন,
জান্নাতের সবচেয়ে নিম্নস্তরের মর্যাদা লোক কে হবে? তিনি (আল্লাহ) বললেন সে হল এমন
এক ব্যক্তি যে জান্নাতীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আসবে। তাকে বলা হবে, জান্নাতে
প্রবেশ কর। সে বলবে, হে প্রতিপালক। তা কিরূপে হবে? জান্নাতীগণ তো নিজ নিজ আবাসের অধিকারী
হয়ে গেছেন। তারা তাদের প্রাপ্য নিয়েছেন। তাকে বলা হবে, পৃথিবীর কোন সম্রাটের সাম্রাজ্যের
সমপরিমাণ সম্পদ নিয়ে তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে, হে প্ৰভু! আমি খুশী। আল্লাহ বলবেনঃ
তোমাকে উক্ত পরিমাণ সম্পদ দেয়া হল। সাথে দেয়া হল আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ, আরো
সমপরিমাণ। পঞ্চমবারে সে বলে উঠবে, আমি সন্তুষ্ট, হে আমার রব। তিনি (আল্লাহ) বলবেনঃ
এটা তোমার জন্য এবং আরো দশগুণ দেয়া হল। তাছাড়া তোমার জন্য রয়েছে এমন জিনিস যা দ্বারা
মন তৃপ্ত হয় চোখ জুড়ায়।
সে (লোকটি) বলবে, হে আমার প্রভু! আমি পরিতৃপ্ত।
মূসা (আঃ) বললেনঃ তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ কে? আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ এরা তারাই, যাদের
মর্যাদা আমি চূড়ান্তভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি। তিনি (আল্লাহ) বলবেনঃ ওরা তারাই যাদের
জন্য আমি নিজ হস্তে তাদের মর্যাদা উন্নীত করেছি। আর তার উপর মোহর মেরে দিয়েছি। এমন
জিনিস তাদের জন্য রেখেছি যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শুনেনি, কারো অন্তরে
কখনো কল্পনায়ও উদয় হয়নি। বর্ণনাকারী বলেন, কুরআন মাজীদের এ আয়াতটি এর সত্যায়ন
করেঃ "কেউ জানে না তাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর কি লুকায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের
পুরস্কার স্বরূপ" (সূরাহ আস সিজদা ৪১:১৭)। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৬১, ইসলামিক
সেন্টারঃ ৩৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবু হুরাইরাহ
(রাযিঃ) এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে
লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে সে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবে কখনো দুর্দশাগ্রস্ত হবে না। তার পরিধেয়
বস্ত্র কখনো পুরনো হবে না এবং তার যৌবন কক্ষনো শেষ হবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৩৬,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৮৯৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৯৫০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ সাঈদ ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা
করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতবাসী জান্নাতে প্রবেশ করার পর একজন ঘোষণাকারী
ঘোষণা দিবেন, তোমরা সর্বদা সুস্থ থাকবে, আর কখনো রোগগ্রস্ত হবে না। তোমরা সর্বদা জীবিত
থাকবে আর কখনো মৃত্যুবরণ করবে না। তোমরা সর্বদা যুবক থাকবে, আর কখনো বার্ধক্যে উপনীত
হবে না এবং সর্বদা আরাম-আয়েশে থাকবে, আর কখনো হতাশ ও দুশ্চিন্তা তোমাদেরকে পাবে না।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬২২, ৫৬২৩, ৫৬৩০, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৭০৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৮৩৭, সহীহুল জামি ৮১৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩৭৭১, আল মু'জামুস্ সগীর লিত্ব
ত্ববারানী ২১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতবাসী কেশবিহীন (পশমবিহীন) ও দাড়িবিহীন হবেন, তাদের
চক্ষু সুরমায়িত হবে, তাদের যৌবন কোন দিনই হারাবে না এবং তাদের কাপড়চোপড়ও পুরনো হবে
না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৩৮, সুনান আততিরমিযী
২৫৩৯, সহীহুল জামি ২৫২৫, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৬৯৯, মুসনাদে বাযযার ২৬৪৪,
সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি) ২৮৫৭, ২৮৬৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
জান্নাতে প্রবেশের সময় জান্নাতীদের বয়স
মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.)
বলেছেন: জান্নাতবাসীগণ কেশবিহীন (লোম বা পশমহীন), দাড়িবিহীন ও সুরমায়িত চক্ষুবিশিষ্ট
ত্রিশ বা তেত্রিশ বছর বয়সীর মতো প্রবেশ করবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৩৯, সুনান আততিরমিযী ২৫৪৫, সহীহুল জামি ৮০৭২, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত
তারহীব ৩৭০০, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৬৯৮, সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৯৮৭, মুসান্নাফ
ইবনু আবী শায়বাহ ৩৪০০৬, মুসনাদে আহমাদ ৭৯২০, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৬৫৪২,
আল মু'জামুস সগীর লিত্ব তবারানী ৮০৮, আল মু'জামুল আওসাত্ব ৫৪২২)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
জান্নাতী হুরদের বর্ণনা
(১) জান্নাতী হুরগণ দৈহিক গঠনে ও সৌন্দর্যে
হবে অতুলনীয়ঃ
জান্নাতী হুর। হুর সেই মহিলাদেরকে বলা হয়,
যাদের চোখের তারা খুব কালো এবং বাকী অংশ খুব সাদা। এদের চোখের অন্য এক সৌন্দর্য বর্ণনায়
বলা হয়, ঈন। তার মানে ডাগর ডাগর চোখবিশিষ্ট মহিলা। তারা লজ্জা-নম্র, আয়তলোচনা তন্বী---সুরক্ষিত
ডিম্বের মত উজ্জ্বল গৌরবর্ণ হবে।
মহান আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ, “যেন তারা গৌরবর্ণ
সুরক্ষিত ডিম”। (সুরা স্বা-ফফাতঃ ৪৯)।
মহান আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ, আর (তাদের জন্য
থাকবে) আয়তলোচনা হুর; সুরক্ষিত মুক্তা সদৃশ। (সুরা ওয়াক্বিআহঃ
২২-২৩)।
সে সুনয়না তরুণীগণ---যাদেরকে পূর্বে কোন মানুষ
অথবা জিন স্পর্শ করেনি। তারা তাদের স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষকে তাকিয়েও দেখবে না। মহান
আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, “সে সবের মাঝে রয়েছে বহু আনত নয়না;
যাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের
প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? তারা (সৌন্দর্যে) যেন পদ্মরাগ ও
প্রবালসদৃশ”। (সুরা রাহমানঃ ৫৬-৫৮)।
(২) প্রবাল ও পদ্মরাগ-সদৃশ হুরদের স্বচ্ছ
কাচ সদৃশ দেহকান্তি হবেঃ
জান্নাতী হুরগণ তারা এতোই ফর্সা ও সুন্দরী
হবে যে, যাদের সৌন্দর্যের কারণে তাদের হাড় ও মাংসের উপর থেকে নলার ভিতরের অস্থিমজ্জা
পর্যস্ত দেখা যাবে কিংবা সত্তর জোড়া (পরত) কাপড়ের ভেতর হতেও জান্নাতী মহিলাদের পায়ের
গোছার উজ্জ্বলতা দেখা যাবে, এমনকি এর অস্থিও দেখা যাবে। তার চেহারার উজ্জ্বলতা আয়নার চেয়ে বেশি স্বচ্ছ
হবে এবং তার গায়ে রক্ষিত মামুলি মুক্তার আলো পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মধ্যবর্তী স্থানকে
আলোকিত করে ফেলবে।
(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: প্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, পূর্ণিমা রজনির চাঁদের
মতো (উজ্জ্বল ও সুন্দর) রূপ ধারণ করেই তারা প্রবেশ করবে। আর পরবর্তী তাদের যে দল যাবে,
তারা হবে আকাশের সমুজ্বল তারকার মতো উদ্দীপ্ত, জান্নাতবাসী সকলের অন্তর এক লোকের অন্তরের
মতো হবে। তাদের মধ্যে কোন ঝগড়া থাকবে না এবং কোন হিংসা-বিদ্বেষও থাকবে না। তাদের প্রত্যেকের
জন্য হুরি ’ঈন থেকে দু’ দু’জন স্ত্রী থাকবে। সৌন্দর্যের কারণে তাদের হাড় ও মাংসের
উপর থেকে নলার ভিতরের মজ্জা দেখা যাবে। তারা সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনায়
ব্যস্ত থাকবে। তারা কখনো রোগাগ্রস্ত হবে না। তাদের পেশাব হবে না, পায়খানাও করবে না,
থুথু ফেলবে না, নাক দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরবে না। তাদের পাত্রসমূহ হবে সোনা-রূপার। আর তাদের
চিরুনি হবে স্বর্ণের এবং তাদের ধুনীর জ্বালানি হবে আগরের, তাদের গায়ের ঘর্ম হবে কস্তুরীর
মতো (সুগন্ধি)। তাদের স্বভাব হবে এক লোকের মতো, শারীরিক গঠন অবয়বে হবে তাদের পিতা
আদাম ’আলায়হিস সালাম -এর ন্যায়, উচ্চতায় ষাট গজ লম্বা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬১৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩২৭, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০৩৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৮৩৪, সুনান আততিরমিযী ২৫৩৫, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ১৭৩৬, সহীহুল জামি ২০১৫,
সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩৬৯৭, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২০৮৭৯, দারিমী ২৮২৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ
সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম
যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো আলোকিত হবে। আর দ্বিতীয়
দলটির চেহারা হবে আকাশের সর্বাধিক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো ঝকঝকে। তথায় প্রত্যেক লোকের
জন্য দু’ দু’ জন করে স্ত্রী থাকবে, যাদের প্রত্যেক স্ত্রীর পরিধানে সত্তর জোড়া কাপড়
থাকবে, যাদের পায়ের নলার মজ্জা কাপড়ের উপর দিয়ে দেখা যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৩৫, সুনান আততিরমিযী ২৫৩৫, সিলসিলাতুস
সহীহাহ ১৭৩৬, আত্ তা'লীকুর রগীব ২৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(গ) আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: কোন জান্নাতী
লোক সত্তরটি গদিতে (সিংহাসনে) হেলান দিয়ে বসবে। এটা শুধু তার একই স্থান থাকবে। অতঃপর
একজন মহিলা (হুর) এসে তার কাঁধে চাপড় মারবে, তখন সে ঐ মহিলার দিকে দৃষ্টি দেবে, তার
চেহারার উজ্জ্বলতা আয়নার চেয়ে বেশি স্বচ্ছ হবে এবং তার গায়ে রক্ষিত মামুলি মুক্তার
আলো পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মধ্যবর্তী স্থানকে আলোকিত করে ফেলবে। মহিলাটি উক্ত পুরুষটিকে
সালাম করবে, সে সালামের জবাব দিয়ে প্রশ্ন করবে, তুমি কে? মহিলাটি উত্তরে বলবে, আমি
অতিরিক্ত সেবকদের অন্তর্ভুক্ত। তার পরনে বিভিন্ন রঙের সত্তরটি কাপড় থাকবে এবং তার
ভিতর দিয়েই তার পায়ের নলার মজ্জা দেখা যাবে। আর তার মাথায় এমন মুকুট হবে, যার নিম্নমানের
মুক্তার আলো পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্তের মধ্যবর্তী স্থান আলোকিত করে দেবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৫২, ইবনু লাহী'আহ ও দাররাজ য'ঈফ;
মুসনাদে আহমাদ ১১৭৩৩, য'ঈফ আত তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২২১৩)।
(ঘ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযি.) হতে বর্ণিত আছে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সত্তর জোড়া (পরত) কাপড়ের ভেতর
হতেও জান্নাতী মহিলাদের পায়ের গোছার উজ্জ্বলতা দেখা যাবে, এমনকি এর অস্থিও দেখা যাবে।
কেননা আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ “তারা (হুরগণ) যেন মহামূল্যবান পদ্মরাগমণি ও মুক্তা”-(সূরা
আর-রহমানঃ ৫৮)। আর পদ্মরাগমণি তো এমন একটি পাথর যে, এর মধ্যে তুমি একটি সুতা ঢুকিয়ে
তারপর তা পরিষ্কার করে দেখতে চাও, তাহলে এর বাইরে হতেও তা দেখতে পারবে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫৩৩, তা’লীকুর রাগীব-হাঃ নং-
৪/২৬৩)।
(৩) সমগ্র জগৎ হুরদের রূপের ছটায় আলোকিত
হবেঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন: আল্লাহর পথে এক সকাল এবং এক সন্ধ্যা কাটানো দুনিয়া ও তার সকল সম্পদ
থেকে উত্তম। যদি জান্নাতবাসিনী কোন নারী (হুর) পৃথিবীর দিকে উঁকি দেয়, তবে সমগ্র জগৎটা
(তার রূপের ছটায়) আলোকিত হয়ে যাবে এবং আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানসমূহ সুগন্ধিতে
মোহিত করে ফেলবে। এমনকি তাদের (হুরদের) মাথার ওড়নাও গোটা দুনিয়া এবং সম্পদরাশি থেকে
উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬১৪, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৮২, ৬৫৬৮, সহিহ মুসলিম
১১৫-(১৮৮৩), সুনান আততিরমিযী ১৬৪৮, সুনান আবূ দাউদ ২৭৫৬, সুনান আননাসায়ী ৩১১৯, সহীহুল
জামি ৪১৫১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ১২৬২, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৯৫৪৩, মুসান্নাফ
ইবনু আবী শায়বাহ্ ১৯৪৭২, মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ২২৫, মুসনাদে বাযযার ৩৫৪৮, মুসনাদে
আহমাদ ২২৯১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৯৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৪৩২৭, আল মু'জামুল
কাবীর লিত্ব তবারানী ৫৭০৩, আল মুজামুল আওসাত্ব ৮৬৬৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৬১১৩, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন- ৬১২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) তারা হবে শতরূপে অপরূপা সুন্দরী
বধূঃ
মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, সে সকলের মাঝে রয়েছে উত্তম চরিত্রের
সুন্দরীগণ। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান
করবে? তারা তাঁবুতে সুরক্ষিত হুর। অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন্ অনুগ্রহকে
মিথ্যাজ্ঞান করবে? তাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি। (সুরা রাহমানঃ ৭০-৭৪)।
সম্ভ্রান্ত শয্যাসঙ্গিনী, যাদেরকে আল্লাহপাক
জান্নাতীদিগের জন্য বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছেন। তারা চিরকুমারী, সোহাগিনী ও সমবয়স্কা
এবং উদ্ভিন্ন-যৌবনা তরুণী। মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, “তাদেরকে (হুরীগণকে) আমি সৃষ্টি করেছি
বিশেষরূপে। তাদেরকে করেছি কুমারী। প্রেমময়ী ও সমবয়স্কা। ডান হাত-ওয়ালাদের জন্য।
(যাদেরকে ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। সেখানে আছে কাঁটাহীন। কুলগাছ। কাঁদি ভরা কলাগাছ”।
(সুরা ওয়াক্বিআহঃ ২৭-২৯)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
অর্থাৎ, “নিশ্চয়ই আল্লাহভীরুদের জন্যই রয়েছে
সফলতা; উদ্যানসমূহ ও নানাবিধ আঙ্গুর এবং উদ্ভিন্ন-যৌবনা সমবয়স্কা তরুণীগণ”। (সুরা নাবাঃ ৩১-৩৩)।
(৫) জান্নাতে কে কতোজন হুর পাবে?
প্রতি জান্নাতী স্বীয় আমল অনুযায়ী দুই বা
ততোধিক জান্নাতী হুর পাবে
(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: প্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, পূর্ণিমা রজনির চাঁদের
মতো (উজ্জ্বল ও সুন্দর) রূপ ধারণ করেই তারা প্রবেশ করবে। আর পরবর্তী তাদের যে দল যাবে,
তারা হবে আকাশের সমুজ্বল তারকার মতো উদ্দীপ্ত, জান্নাতবাসী সকলের অন্তর এক লোকের অন্তরের
মতো হবে। তাদের মধ্যে কোন ঝগড়া থাকবে না এবং কোন হিংসা-বিদ্বেষও থাকবে না। তাদের প্রত্যেকের
জন্য হুরি ’ঈন থেকে দু’ দু’জন স্ত্রী থাকবে। সৌন্দর্যের কারণে তাদের হাড় ও মাংসের
উপর থেকে নলার ভিতরের মজ্জা দেখা যাবে। তারা সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনায়
ব্যস্ত থাকবে। তারা কখনো রোগাগ্রস্ত হবে না। তাদের পেশাব হবে না, পায়খানাও করবে না,
থুথু ফেলবে না, নাক দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরবে না। তাদের পাত্রসমূহ হবে সোনা-রূপার। আর তাদের
চিরুনি হবে স্বর্ণের এবং তাদের ধুনীর জ্বালানি হবে আগরের, তাদের গায়ের ঘর্ম হবে কস্তুরীর
মতো (সুগন্ধি)। তাদের স্বভাব হবে এক লোকের মতো, শারীরিক গঠন অবয়বে হবে তাদের পিতা
আদাম ’আলায়হিস সালাম -এর ন্যায়, উচ্চতায় ষাট গজ লম্বা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬১৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩২৭, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৩৪, , সুনান আততিরমিযী ২৫৩৫,
সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ১৭৩৬, সহীহুল জামি ২০১৫, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩৬৯৭, মুসান্নাফ
আবদুর রাযযাক ২০৮৭৯, সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি) ২৮৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা
পূর্ণিমার চাঁদের মতো আলোকিত হবে। আর দ্বিতীয় দলটির চেহারা হবে আকাশের সর্বাধিক উজ্জ্বল
নক্ষত্রের মতো ঝকঝকে। তথায় প্রত্যেক লোকের জন্য দু’ দু’ জন করে স্ত্রী থাকবে, যাদের
প্রত্যেক স্ত্রীর পরিধানে সত্তর জোড়া কাপড় থাকবে, যাদের পায়ের নলার মজ্জা কাপড়ের
উপর দিয়ে দেখা যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৩৫,
সুনান আততিরমিযী ২৫৩৫, সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৭৩৬, আত্ তা'লীকুর রগীব ২৬১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih।
(গ) আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন: নিম্নমানের জান্নাতবাসীর জন্য আশি হাজার সেবক এবং বাহাত্তর জন স্ত্রী
হবে, তার জন্য গম্বুজ আকৃতির ছাউনি স্থাপন করা হবে, যা মণি-মুক্তা, হীরা ও ইয়াকুত
দ্বারা তৈরি। উক্ত ছাউনির প্রশস্ততা হবে জাবিয়াহ্ থেকে সন্’আ পর্যন্ত মধ্যবর্তী দূরত্বের
পরিমাণ। উক্ত সূত্রে আরো বর্ণিত হয়েছে, তিনি (সা.) বলেছেন: ছোট বয়সে কিংবা বৃদ্ধ
বয়সে যে কোন জান্নাতী লোক (দুনিয়াতে) মারা যাবে, সে জান্নাতে ত্রিশ বছর বয়সী (যুবক)
হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং বয়স (-এর আকৃতি) কখনো বৃদ্ধি পাবে না। জাহান্নামবাসীরাও
ঐ রকম (৩০ বছর বয়সী) হবে।
উক্ত সূত্রে অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূল (সা.)
বলেছেন, জান্নাতবাসীদের মাথায় এমন মুকুট রাখা হবে, যার সাধারণ মুক্তা দুনিয়ার পূর্বপ্রান্ত
থেকে পশ্চিমপ্রান্ত পর্যন্ত আলোকিত করবে।
অত্র সনদে অপর এক বর্ণনায় আছে (সহীহ লিগায়রিহী),
জান্নাতে সন্তান কামনা করবে, তখন গর্ভ, প্রসব এবং তার বয়স চাহিদা অনুযায়ী মুহুর্তের
মধ্যে সংঘটিত হয়। জান্নাতে যখনই সন্তানের আকাঙ্ক্ষা করবে, তখনই সে সন্তান পাবে, তবে
কেউই আশা করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৪৮, সুনান
আততিরমিযী ২৫৬২, য'ঈফুল জামি ২৬৬, মুসনাদে আহমাদ ১১৭৪১, আবূ ইয়া'লা ১৪০৪, য'ঈফ আত্
তারগীব ওয়াত তারহীব ২১৮৭, রিশদীন ইবনু সা'দ ও দাররাজ আবূস্ সামহ দু’জনেই য'ঈফ; হিদয়াতুর
রুওয়াত ৫/২১৪, হা. ৫৫৭৩)।
শহীদগণ পাবে বাহাত্তরজন হুর
মিকদাম ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শাহীদের জন্য আল্লাহর
নিকট ছয়টি পুরস্কার সুরক্ষিত রয়েছে।
(ক) যুদ্ধরত অবস্থায় তার রক্তের ফোঁটা মাটিতে
ঝরা মাত্রই তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং তাকে জান্নাতের আবাসস্থল দেখানো হয়।
(খ) তাকে কবরের ’আযাব হতে নিষ্কৃতি দেয়া হয়।
(গ) হাশরের ময়দানের মহাভীতি হতে দূরে রাখা
হয়।
(ঘ) (কিয়ামতের দিন) সম্মানজনকভাবে তার মাথায়
ইয়াকূতের মুকুট পরানো হবে, যার মধ্যে খচিত একটি ইয়াকূত দুনিয়া ও তার সমস্ত ধন-সম্পদ
হতে উত্তম।
(ঙ) সুন্দর বড় বড় চক্ষুবিশিষ্ট বাহাত্তর জন
হূরকে তার সঙ্গিনীরূপে দেয়া হবে।
(চ) তার নিকটাত্মীয়দের মধ্যে সত্তরজনের সুপারিশ
কবুল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৩৪, সুনান
আততিরমিযী ১৬৬৩, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৯৯, সহীহাহ্ ৩২১৩, আহমাদ ১৬৭৩০, বায়হাকী ফিস সুনান
৯/১৬৪, বায়হাকী ফিশ শুআব ১০৮২৩, ১০৮২৪, আল-আহকাম ৩৬ নং পৃষ্ঠা, আত-তালীকুর রাগীব ২/১৯৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) জান্নাতে সতীনদের মধ্যে কোনো কলহ থাকবে নাঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর আমরা তাদের অন্তর থেকে ঈর্ষা দূর করব,
তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। আর তারা বলবে, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহরই যিনি
আমাদেরকে এ পথের হিদায়াত করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াত না করলে, আমরা কখনো হিদায়াত
পেতাম না। অবশ্যই আমাদের রবের রাসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছিলেন। আর তাদেরকে সম্বোধন করে
বলা হবে, তোমরা যা করতে তারই জন্য তোমাদেরকে এ জান্নাতের(২) ওয়ারিস করা হয়েছে”। (সুরা আরাফ ৪৩)।
এ আয়াতে জান্নাতীদের বিশেষ অবস্থা বর্ণিত
হয়েছে। বলা হয়েছে, “জান্নাতীদের অন্তরে পরস্পরের পক্ষ থেকে যদি কোন মালিন্য থাকে,
তবে আমরা তা তাদের অন্তর থেকে অপসারণ করে দেব, তাদের নীচ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত থাকবে।”
সূরা আল-হিজরের ৪৭ নং আয়াতে আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, “আমরা জান্নাতীদের অন্তর
থেকে যাবতীয় মালিন্য দূর করে দেব, তারা একে অপরের প্রতি সন্তুষ্টি ও ভাই ভাই হয়ে
জান্নাতে মুখোমুখী হয়ে খাটিয়ায় থাকবে এবং বসবাস করবে।”
(৭) এতোগুলো হুরদের সাথে সহবাসের সঙ্গমশক্তি
কোথায় পাবেঃ
(ক) আনাস (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি
(সা.) বলেছেন: জান্নাতী মুমিনদেরকে এত এত সহবাসের শক্তি প্রদান করা হবে। প্রশ্ন করা
হলো, হে আল্লাহর রাসূল! এক লোক এত শক্তি রাখবে কি? তিনি (সা.) বললেন, প্রত্যেক লোককে
একশত পুরুষের শক্তি দান করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৫৬৩৬, সুনান আততিরমিযী ২৫৩৬, সহীহুল জামি ৮১০৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) যাইদ ইবনু আরকাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “জান্নাতের
অধিবাসীদের একজন লোককে পানাহার, সহবাস ও কামশক্তি ইত্যাদির ক্ষেত্রে একশত পুরুষের শক্তি
প্রদান করা হবে।” তখন এক ইয়াহুদী বললো, যারা পানাহার করবে, এজন্য তাদের তো প্রাকৃতিক
প্রয়োজন পূরণ (তথা পেশাব-পায়খানা) করতে হবে। তিনি বললেন: “তাদের গাত্র চামড়া হতে ঘাম
বের হবে, তখন তাদের পেট আবার সংকুচিত হয়ে যাবে।” (সুনান
আদ-দারেমী (হাদিসবিডি) ২৮৬৩, আহমাদ ৪/৩৭১; ইবনু আবী শাইবা ১৩/১০৮ নং ১৫৮৪১; তাবারাণী,
কাবীর ৫/১৭৮ নং ৫০০৪, ৫০০৫, ৫০০৬, ৫০০৭, ৫০০৮, ৫০০৯; হুসাইন মারওয়াযী, যাওয়াইদ আলা
যুহদি ইবনুল মুবারক নং ১৪৫৯; আবী নুয়াইম, সিফাতুল জান্নাত নং ৩২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৮) দুনিয়ার স্ত্রী জান্নাতে গেলে,
সেও স্বামীর সাথে বাস করবেঃ
মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তাদেরকে
স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ দান কর; যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাদের দিয়েছ (এবং তাদের) পিতা-মাতা,
পতি-পত্নী ও সন্তান সন্ততিদের মধ্যে (যারা) সৎকাজ করেছে, তাদেরকেও (জান্নাত প্রবেশের
অধিকার দাও)। নিশ্চয়ই তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা
মু'মিনঃ ৮)।
অর্থাৎ, স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ
করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতিপত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও।
আর ফিরিশ্তাগণ তাদের কাছে প্রবেশ করবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। (সুরা রা’দঃ ২৩)।
অর্থাৎ, তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণীগণ সানন্দে
জান্নাতে প্রবেশ কর। (সুরা যুখরুফঃ ৭০)।
অর্থাৎ, তারা এবং তাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়ায়
থাকবে এবং হেলান দিয়ে বসবে সুসজ্জিত আসনে। (সুরা ইয়াসীনঃ
৫৬)।
পার্থিব স্ত্রীর রূপ-গুণ জান্নাতী হুরদের তুলনায়
অধিক হবে। জান্নাতী হুরগণ তাদের পার্থিব সপত্নীর খিদমত করবে।
অবিবাহিত নারী এবং যার স্বামী জাহান্নামবাসী
হবে, তাদের ইচ্ছামত জান্নাতী কোনো পুরুষের সাথে বিবাহ দেওয়া হবে। কয়েকটি দুর্বল হাদীসে
এসেছে যে, মারয়্যাম, আসিয়া ও (মূসা নবীর বোন) কুলসুমের বিবাহ হবে শেষ নবী (ﷺ)-এর সাথে। (সিঃ যয়ীফাহ ৫৮৮৫, সঃ জামে ১২৩৫, ১৬১১ন)।
সাঈদ ইবনু মানসূর (রহঃ).....আবদুল্লাহ ইবনু
কায়স (রাযিঃ) এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
মুমিনদের জন্য জান্নাতে মধ্যস্থলে ফাঁকা এমন একটি মুক্তার তাবু নির্মাণ করা হবে যার
দৈর্ঘ্য হবে ষাট মাইল। মু’মিনদের সহধর্মিণীগণও এতে থাকবে। তারা তাদের সকলের নিকট গমন
করবে। তবে স্ত্রীগণ পরস্পর একে অন্যকে দেখতে পাবে না। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০৫০-৭০৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৮৯৫,
ইসলামিক সেন্টার ৬৯৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) যে নারীর একাধিক বার একাধিক পুরুষের
সাথে বিবাহ হয়েছিলঃ
পৃথিবীতে যে নারীর একাধিক বার একাধিক পুরুষের
সাথে বিবাহ হয়েছিল তারা সকলেই জান্নাতে গেলে তার পছন্দমত একজন স্বামীর সাথে বাস করবে।
যেহেতু সেখানে মনমতো সবকিছু পাওয়া যাবে। নচেৎ শেষ স্বামীর স্ত্রী হয়ে থাকবে। (সহিহ জামে ৬৬৯১নং)।
একদা হুযাইফা (রাঃ) তার স্ত্রীকে বললেন, তুমি
যদি জান্নাতে আমার স্ত্রী থাকতে চাও, তাহলে আমার পরে আর কাউকে বিয়ে করো না। কারণ,
মহিলা তার পার্থিব শেষ স্বামীর অধিকারে থাকবে। (বাইহাকী,
সিঃ সহীহাহ ১২৮১নং)।
আর সম্ভবতঃ এই জন্যই মহানবী (ﷺ) এর ইন্তিকালের পর তার স্ত্রীদের
বিবাহ হারাম ছিল। কারণ, তারা জান্নাতেও তার বেহেশতী পত্নী।
(১০) জান্নাতে স্ত্রীগণ সদা পবিত্র থাকবেঃ
সকল স্ত্রীগণই সদা পবিত্রা থাকবে। সেখানে তাদের
কোন প্রকারের স্রাব, মল, কফ, থুথু, ঋতু ইত্যাদি কিছুই থাকবে না।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ
করবে তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চন্দ্রের মত উজ্জ্বল। অতঃপর যে দল তাদের অনুগামী
হবে তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাধিক দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকার ন্যায়। তারা পেশাব
করবে না, পায়খানা করবে না। তাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হবে না এবং তাদের নাক হতে শ্লেষ্মাও
বের হবে না। তাদের চিরুণী হবে স্বর্ণের তৈরী। তাদের ঘাম হবে মিস্কের মত সুগন্ধযুক্ত।
তাদের ধনুচি হবে সুগন্ধযুক্ত চন্দন কাষ্ঠের। বড় চক্ষু বিশিষ্টা হুরগণ হবেন তাদের স্ত্রী।
তাদের সকলের দেহের গঠন হবে একই। তারা সবাই তাদের আদি পিতা আদম (আঃ)-এর আকৃতিতে হবেন।
উচ্চতায় তাদের দেহের দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩২৭, ৩২৪৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০৪৪, ৭০৪৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৮৩৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতী লোকেরা
তথায় পানাহার করবে। তবে তারা তথায় পেশাব করবেনা, নাকও ঝাড়বেনা, আবার পায়খানা করবে না।
তাদের ঐগুলি হবে ঢেকুর আকারে। তারা আহার করবে, পান করবে, আর তাসবীহ-তাহলীলের যোগ্যতা
তাদের অন্তকরণে ইলহাম করা হবে যেমনি ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস তাদের মাঝে ইলহাম করা হয়।”
(সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি) ২৮৬৫)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(১১) ইচ্ছামত ক্ষণেকে স্ত্রী গর্ভবতী
হবে এবং সন্তান প্রসব করবে ও বয়ঃপ্রাপ্ত হবেঃ
স্বামী সহবাসেও চিরকুমারী এবং অনন্ত যৌবনা
থাকবে। বীর্যপাত বা কোন অপবিত্রতাও থাকবে না। কেউ কোনদিন গর্ভবতীও হবে না। অবশ্য কোন
জান্নাতীর শখ হলে তার ইচ্ছামত ক্ষণেকে তার স্ত্রী গর্ভবতী হবে এবং সন্তান প্রসব করবে
ও বয়ঃপ্রাপ্ত হবে।
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুমিন ব্যক্তি জান্নাতে
সন্তান কামনা করলে তার স্ত্রী গর্ভধারণ করবে এবং সন্তান প্রসব করবে এবং সন্তানটি হবে
বয়সে যুবক। এসবকিছু মুহূর্তের মধ্যে সম্পন্ন হবে। (সুনান
ইবনু মাজাহ ৪৩৩৮, সুনান আততিরমিযী ২৫৬৩, সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি) ২৮৭২, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২) দুনিয়ার বৃদ্ধাগণও সেদিন যুবতীতে
পরিণত হবেঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক বৃদ্ধা মহিলাকে বললেনঃ কোন বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না। বৃদ্ধা
জিজ্ঞেস করল, কি কারণে বৃদ্ধারা জান্নাতে যাবে না? অথচ এ বৃদ্ধা মহিলা কুরআন পাঠ করেছিল।
তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি কি কুরআনের এ আয়াত পাঠ করনি-
অর্থাৎ- “তাদেরকে (অর্থাৎ ঐ হূরদেরকে) আমি সৃষ্টি করেছি এক অভিনব সৃষ্টিতে’’- (সূরাহ্
আল ওয়াক্বি’আহ্ ৫৬ : ৩৫)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪৮৮৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩/৪৫৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৯৮৭, গয়াতুল মারাম ৩৭৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
আবূ হুরাইরা ও আবী সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা
থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ আয়াত): “আর তাদেরকে আহবান করা
হবে যে, এ হলো তোমাদের জান্নাত, তোমাদেরকে যার অধিকারী করা হয়েছে তোমাদের কর্মফলস্বরূপ
(আ’রাফ ৭: ৪৩)।” –এ সম্পর্কে বলেছেন: “তাদেরকে আহবান করে বলা হবে, ’তোমরা সদা সুস্থ
থাকবে, কখনও অসুস্থ হবে না। তোমরা সদা সুখ-স্বাচ্ছন্দে থাকবে, কখনও দু:খ-কষ্টে পতিত
হবে না। তোমরা সদা তরুণ থাকবে, কখনও বৃদ্ধ হবে না। তোমরা সদা জীবিত থাকবে, কখনও মরবে
না।” (সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি) ২৮৬২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
যৌবন-পরিপক্বতায় সকল স্ত্রীর বয়স হবে তেত্রিশ
বছর। সকলের দেহ হবে ষোড়শীর মত, যাদের বুকের উঁচু উঁচু সুডৌল স্তনযুগল নতমুখী হয়ে ঢলে
যাবে না।
সেই বেহেশ্তবাসিনী, রূপের ডালি, ঝলমলে লাবণ্যময়ী,
সুবাসিনী কোন যুবতী যদি পৃথিবীর তমসাচ্ছন্ন আকাশে উকি মারে, তাহলে তার রূপালোকে ও সৌরভে
সারা জগৎ আলোকিত ও সুরভিত হয়ে উঠবে। অনন্ত যৌবনা---এমন সুরমার কেবলমাত্র শীর্ষস্থিত
উত্তরীয় খানি পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সব কিছু হতে উত্তম ও মূল্যবান।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, এক সকাল বা এক বিকাল
আল্লাহর পথে চলা দুনিয়া ও তার মাঝের সবকিছুর চেয়ে উত্তম। তোমাদের কারো ধনুক পরিমাণ
বা পা রাখার জায়গা পরিমাণ জান্নাতের জায়গা দুনিয়া ও তার মাঝের সবকিছুর চেয়ে উত্তম।
জান্নাতের কোন নারী যদি দুনিয়ার প্রতি উঁকি মারে তবে তামাম দুনিয়া আলোকিত ও সুঘ্রাণে
পূর্ণ হয়ে যাবে। জান্নাতি নারীর ওড়না দুনিয়া ও তার ভিতরের সব কিছুর চেয়ে উত্তম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৬৮, ২৭৯২, আধুনিক প্রকাশনী-
৬১১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(১৩) জান্নাতে দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রী উভয়ের সুগন্ধি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি
পাবেঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন: জান্নাতে একটি বাজার আছে। জান্নাতবাসীগণ সপ্তাহের প্রত্যেক জুমু’আর দিন
সেখানে একত্রিত হবে। তখন উত্তরী বাতাস প্রবাহিত হবে এবং তা তাদের মুখমণ্ডলে ও কাপড়চোপড়ে
সুগন্ধি নিক্ষেপ করবে, ফলে তাদের রূপ-সৌন্দর্য আরো অধিক বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর যখন তারা
বর্ধিত সুগন্ধি ও সৌন্দর্য অবস্থায় নিজেদের স্ত্রীদের কাছে যাবে, তখন স্ত্রীগণ তাদেরকে
বলবে, আল্লাহর শপথ! তোমরা তো আমাদের অবর্তমানে সুগন্ধি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ফেলেছ।
তার উত্তরে তারা বলবে, আল্লাহ শপথ! আমাদের অনুপস্থিতিতে তোমাদের রূপ-সৌন্দর্যও বৃদ্ধি
পেয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬১৮, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৭০৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৩৩, সহীহুল জামি ২১২৪, সহীহ আত তারগীব
ওয়াত তারহীব ৩৭৫২, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৪৭১, মুসনাদে আহমাদ ১৪০৬৭, মুসান্নাফ ইবনু
আবী শায়বাহ্ ৩৪১১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ তায়ালা জান্নাতী পুরুষদের সাথে হুরদের বিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন
মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, “আর যারা বিশ্বাস করে ও ভাল কাজ করে,
তাদেরকে বেহেস্তে প্রবেশ করাব; যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে,
সেখানে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী আছে এবং তাদেরকে চিরস্নিগ্ধ ঘন ছায়ায় স্থান দান
করব”। (সুরা নিসাঃ ৫৭)।
মহান আল্লাহ বলেন,
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে
শুভ সংবাদ দিন যে, তাদের জুন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। যখনই তাদেরকে
ফলমূল খেতে দেয়া হবে তখনই তারা বলবে, আমাদেরকে - পূর্বে জীবিকা হিসেবে যা দেয়া হত
এতো তাই’। আর তাদেরকে তা দেয়া হবে সাদৃশ্যপূর্ণ করেই এবং সেখানে তাদের জন্য রয়েছে
পবিত্র সঙ্গিনী। আর তারা সেখানে স্থায়ী হবে”। (সুরা আল
বাকারাহঃ ২৫)।
মহান আল্লাহ বলেন,
“বল, আমি কি তোমাদেরকে এ সব বস্তু হতে উৎকৃষ্ট
কোন কিছুর সংবাদ দেব? যারা সাবধান (পরহেযগার) হয়ে চলে তাদের জন্য রয়েছে উদ্যানসমূহ
যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে,তাদের জন্য পবিত্রা সঙ্গিনীগণ
এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তার দাসদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত। (সুরা আলে ইমরানঃ ১৫)।
মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, “এরূপই ঘটবে ওদের; আর আয়তলোচনা হুরদের
সাথে তাদের বিবাহ দেব”। (সুরা দুখানঃ ৫৪)।
মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, “তারা বসবে সারিবদ্ধভাবে সজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে; আমি তাদের বিবাহ দেব আয়তলোচনা হুরদের সঙ্গে:। (সুরা তুরঃ ২০)।
জান্নাতী হুরদের বিয়ে করার পুর্ব শর্তসমূহ
জান্নাতে আছে সোনা মুক্তা খচিত রাজপ্রাসাদ,
আছে ফলমূল, পাখী, সোনার তৈরী ডালপালা বিশিষ্ট বৃক্ষরাজি, আছে হাউজে কাউসার এর সুপিয়
পানি, সর্বক্ষণ বইছে মৃদু বাতাসসহ সকল সুযোগ সুবিধাসমৃদ্ধ একটি নয় দশগুণ বা তার চেয়েও
বহুগুণ বড় রাজ্য যা আপনাকে দেয়া হবে। দশগুণ বা একশ গুণ বড় রাজ্য পেয়েও আপনার মনের চাহিদা
মিটবে না বলে আল্লাহ তায়ালা তৈরী করে রেখেছেন জান্নাতী হুর। যাদের রুপ যৌবনের বর্ণনা
উপরে আলোকপাত করা হয়েছে। সেই জান্নাতী হুরদের পেতে হলে বা তাদেরকে বিয়ে করতে চাইলে
কিছু শর্ত আছে। আপনি দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে জান্নাতী হুর চাইলে পাবেন না। হুরকে বিয়ে
করে মহাসুখে জান্নাতে থাকতে চাইলে আপনাকে দুনিয়ায় বেঁচে থাকতেই সেই শর্তগুলো পালন করে
যেতে হবে। শর্তগুলো পালন করতে পারলে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে দিবেন জান্নাত। আর জান্নাতে
যেতে পারলেই হুরকে পাওয়া যাবে। আসুন জান্নাত পাওয়ার উপায়সমূহ জেনে নেই।
ইহকালীন জীবনে মানুষের কৃতকর্মের মাধ্যমে অর্জিত
নেকী পরকালীন জীবনে পরিত্রাণ লাভের অসীলা হবে। তাই দুনিয়াতে অধিক নেক আমলের দ্বারা
বেশী বেশী ছওয়াব লাভের চেষ্টা করা মুমিনের কর্তব্য। কিন্তু পার্থিব জীবনের মায়াময়তায়
জড়িয়ে আমলে ছালেহ থেকে দূরে থাকলে পরকালীন জীবনে কষ্টভোগ করতে হবে। এজন্য রাসূল (ছাঃ)
বলেন, ‘পৃথিবীর মিষ্টতা পরকালের তিক্ততা। আর পৃথিবীর তিক্ততা পরকালের মিষ্টতা’। (মুসনাদে আহমাদ, ছহীহাহ ১৮১৭; ছহীহুল জামে ৩১৫৫)।
তাই পরকালীন জীবনে আল্লাহর শাস্তির ভয়ে গোনাহ
পরিহার করতে হবে এবং অফুরন্ত নে‘মত সমৃদ্ধ অমূল্য জান্নাত লাভে নেক আমল বেশী বেশী করতে
হবে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে লোক ভয় পায় সে ভোররাতেই যাত্রা শুরু করে, আর ভোররাতেই
যে লোক যাত্রা শুরু করে, সে গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে পারে। জেনে রাখ, আল্লাহ তা’আলার পণ্য
খুবই দামী। জেনে রাখ, আল্লাহ তা’আলার পণ্য হলো জান্নাত। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩৪৮, সুনান আততিরমিযী ২৪৫০, সিলসিলাতু সহীহাহ্ ৯৫৪, ২৩৩৫, সহীহুল
জামি ৬২২২, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৩৭৭, মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ১৪৬০, শুআবূল
ঈমান ১০৫৭৬, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৭৮৫২, ছহীহাহ ৯৫৪, ২৩৩৫; ছহীহুল জামে ৬২২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রত্যাশী ও জান্নাত
লাভে আকাঙ্ক্ষী মুমিন সারারাত ঘুমিয়ে কাটাতে পারে না। এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি জাহান্নামের মতো এমন কিছু
দেখিনি যা হতে আত্মরক্ষাকারীগণ ঘুমে অচেতন এবং জান্নাতের মতো এমন কিছুও দেখিনি যার
অন্বেষণকারীগণও ঘুমে অচেতন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২৬০১, সহীহাহ ৯৫১, ৯৫৩; ছহীহুল জামে ৫৬২২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
তাই জান্নাত লাভের জন্য নেকীর কাজ বেশী বেশী
করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।
আর জান্নাত লাভের জন্য বহু নেক আমল রয়েছে।
তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় নেক আমল এখানে আলোকপাত করা হলো, যাতে পাঠক সেসব পালন করার
মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পায় ও জান্নাত লাভ করে সুন্দরী হুরদের বিয়ে করতে পারে।
(১) তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি দেয়াঃ
আল্লাহর একত্বের স্বীকৃতি প্রদান ও তদনুযায়ী
আমল করা মানুষের জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের প্রথম শর্ত।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন বান্দা খালেস মনে ‘লা-
ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলবে, অবশ্যই তার জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খোলা হবে, যতক্ষণ না
তা আল্লাহর ’আরশে না পৌঁছে, তবে যদি সে কাবীরাহ্ গুনাহ হতে বিরত থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩১৪, সুনান আততিরমিযী ৩৫৯০, সহীহ
আস সগীর ৫৬৪৮, সহীহ আত্ তারগীব ১৫২৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি এক ভ্রমণে গাধার উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে আরোহণ
করলাম। আমার আর তাঁর মধ্যে হাওদার পেছন দিকের হেলানো কাঠ ছাড়া আর কোন ব্যবধান ছিল না।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে মু’আয! বান্দাদের ওপর আল্লাহর কি
হক এবং আল্লাহর ওপর বান্দার কি হক, তুমি কি তা জান? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলই
এ ব্যাপারে অধিক অবগত। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বান্দাদের
ওপর আল্লাহর হক হলো, তারা আল্লাহর ’ইবাদাত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর
আল্লাহর ওপর বান্দার হক হলো, যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি, আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি
দিবেন না- এ কথা শুনে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে আমি কি এ সুসংবাদ মানুষদেরকে
জানিয়ে দিব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, লোকদেরকে এ সুংসংবাদ
দিও না। কারণ তাহলে তারা এর উপর নির্ভর করে বসে থাকবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৫৬ ও ৫৯৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৩০, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৯৬, সহীহ আল জামি ৭৯৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
দাউদ ইবনু রুশায়দ...উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাযিঃ)
হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বলে,
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক এবং মুহাম্মাদসাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল, আর নিশ্চয় ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা, তার বান্দীর
(মারইয়ামের) পুত্র ও তার সে কালিমা- যা তিনি মারইয়ামকে পৌছিয়েছেন এবং তার পক্ষ থেকে
প্রেরিত একটি রূহ মাত্র, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, আল্লাহ তাকে জান্নাতের আটটি
দরজার যেটি দিয়ে প্রবেশ করাতে চাইবেন, প্রবেশ করাবেন।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করাঃ
আল্লাহর আযাব থেকে পরিত্রাণ লাভ ও জান্নাতে
প্রবেশের জন্য আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করা অত্যাবশ্যক। কেননা ঈমান ব্যতিরেকে মানুষের
কোন নেক আমল আল্লাহর নিকটে কবুল হয় না। তেমনি কারো অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান থাকলে সে
অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা ঈমান আনে ও নেককর্ম
করে তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’। (সুরা আল বাক্বারাহ ২/৮২)।
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে
ও নেককর্ম করেছে, জান্নাতুল ফিরদাউসে তাদের জন্য রয়েছে আপ্যায়ন’। (সুরা কাহফ ১৮/১০৭)।
তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
প্রতি ঈমান আন, আর নিজের ধন-মাল ও আত্মার দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ কর। এটাই তোমাদের
জন্য অতীব উত্তম, যদি তোমরা জান। এতে আল্লাহ তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে
এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার নিম্নে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান রয়েছে এবং চিরকাল বসবাসের
জন্য জান্নাতে অতীব উত্তম ঘর দান করবেন। আর এটাই হচ্ছে বড় সফলতা’। (সুরা ছফ ৬১/১১-১২)।
তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান আনে এবং নেক
আমল করে আল্লাহ তার পাপ মুছে ফেলেন এবং তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে
ঝর্ণাধারা প্রবাহমান রয়েছে। এরা সেখানে চিরকাল থাকবে। আর এটাই হচ্ছে বড় সফলতা’। (সুরা তাগাবূন ৬৪/৯)।
তিনি আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও নেক
আমল করে তাদের জন্য এমন জান্নাত রয়েছে, যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবহমান। আর এটাই হচ্ছে
বড় সফলতা’। (সুরা বুরূজ ৮৫/১১)।
তিনি আরো বলেন, ‘যারা ঈমান আনে এবং নেক আমল
করে তাদের প্রতি আল্লাহর ওয়াদা এই যে, আল্লাহ তাদের ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন এবং তাদের
বড় প্রতিফল দিবেন’। (সুরা মায়েদাহ ৫/৯)।
(৩) তাক্বওয়া অর্জন করাঃ
জান্নাত লাভের অন্যতম উপায় হচ্ছে তাক্বওয়াশীল
হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে,
তার জন্য রয়েছে দু’টি উদ্যান’। (সুরা আর-রহমান ৫৫/৪৬)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ জিনিসের বদৌলতে বেশীর
ভাগ লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি বলেনঃ তাক্বওয়া ও সচ্চরিত্রের বদৌলতে। তাকে আরো
জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ জিনিসের কারণে অধিকাংশ লোক জাহান্নামে যাবে? তিনি বলেনঃ দু’টি
অংগ- মুখ ও লজ্জাস্থান। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৪৬, আহমাদ
৭৮৪৭, ৮৮৫২, ৯৪০৩, সহীহাহ ৯৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে ক্রন্দন
করে, তার জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করা অসম্ভব, যেমনিভাবে দোহনকৃত দুধ পুনরায় স্তনে প্রবেশ
করানো অসম্ভব। আর কোনো বান্দার শরীরে লেগে থাকা ধূলাবালু এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কস্মিনকালেও
মিলিতি হতে পারে না।
ইমাম নাসায়ী (রহঃ) অপর হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা
করেন যে, কোনো মুসলিমের নাকের অভ্যন্তরে আল্লাহর পথে ধূলাবালু ও জাহান্নামের ধোঁয়া
কক্ষনো একত্রিত হবে না। নাসায়ীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, (সেটা) কোনো বান্দার নাকে কক্ষনো
একত্রিত হতে পারে না। অনুরূপ কোনো বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও কৃপণতা কক্ষনো একত্রিত হতে
পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২৮, সুনান আননাসায়ী
৩১০৮, সুনান আততিরমিযী ১৬৩৩, মুসনাদ আহমাদ ১০৫৬০, সহীহ আল জামি‘ ৭৭৭৮, সহীহ আত্ তারগীব
১২৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করাঃ
জান্নাত লাভের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ
ও আনুগত্য করা যরূরী। তাঁর অনুসরণ ব্যতীত যেমন কোন আমল কবুল হয় না, তেমনি তাঁর আনুগত্য
ব্যতিরেকে জান্নাত লাভ করাও যায় না।
আল্লাহ বলেন, ‘যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
আদেশ মান্য করে চলে তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী সমূহ প্রবাহিত।
তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ হল বিরাট সাফল্য। আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা
করে এবং তাঁর সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরকাল
থাকবে। তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি’। (সুরা নিসা ৪/১৩-১৪)।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু
যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে
তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৮০, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) ছালাত আদায় করাঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নামাযীরা পাবে জান্নাতে
সম্মানজনক আসন যারা নিজেদের সালাত হেফাযত করে, (পরকালে) তারা (অতীব) মর্যাদাসম্পন্ন
জান্নাতে অবস্থান করবে।” (সূরা ৭০; মা'আরিজ ৩৪৩৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “ঐসব মুমিন বান্দারা নিশ্চিত
সফলতা লাভ করে ফেলেছে, যারা তাদের সালাতে (খুশু-খুযূ ও) বিনয়াবনত থাকে”। (সূরা ২৩; মুমিনূন ১-২)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু’আহ্
হতে অপর জুমু’আহ্ পর্যন্ত এবং এক রমাযান হতে আরেক রমাযান পর্যন্ত সব গুনাহে্র কাফফারাহ্
হয়, যদি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৩,
আহমাদ ৯১৯৭, সহীহাহ্ ৩৩২২, সহীহ আল জামি ৩৮৭৫, আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
যায়দ বিন খালিদ আল জুহানী (রাঃ)হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দু’ রাক্’আত
সালাত আদায় করেছে, আর এতে ভুল করেনি, আল্লাহ তার অতীত জীবনের সব গুনাহ (সগীরাহ্) ক্ষমা
করে দিবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭৭, আহমাদ ২১১৮৩,
সুনান আবূ দাঊদ ৯০৫, সহীহ আত্ তারগীব ২২৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
ফরয ছালাতের পাশাপাশি সুন্নাত-নফল ছালাতও জান্নাত
লাভের উপায়। যেমন, উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক দিন রাতে বারো রাক্’আত সালাত আদায় করবে তার জন্যে
জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (সে বারো রাক্’আত সালাত হলো) চার রাক্’আত যুহরের ফরজের
পূর্বে আর দু’ রাক্’আত যুহরের (ফারযের) পরে, দু’ রাক্’আত মাগরিবের (ফরয সালাতের) পরে।
দু’ রাক্’আত ’ইশার ফরয সালাতের পরে। আর দু’ রাক্’আত ফাজ্রের (ফজরের) (ফরয সালাতের)
পূর্বে। (সুনান আততিরমিযী)।
মুসলিমের এক বর্ণনায় শব্দ হলো উম্মু হাবীবাহ্
বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে মুসলিম
প্রতিদিন আল্লাহ তা’আলার ফরয সালাত ব্যতীত বারো রাক্’আত সুন্নাত সালাত আদায় করবে। আল্লাহ
তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। অথবা বলেছেন, জান্নাতে তার জন্যে একটি ঘর
বানানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৫৯, সুনান আত্
তিরমিযী ৪১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৫৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৮, সুনান আননাসায়ী ১৮০৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১৪১,
সহীহ আল জামি ৬৩৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন।
আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে লোক যুহরের (ফরয
সালাতের) পূর্বে চার রাক্’আত, এরপর চার রাক্’আত সালাত আদায় করে। আল্লাহ তার ওপর জাহান্নামের
আগুন হারাম করে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬৭,
সুনান আবূ দাঊদ ১২৬৯, সুনান আত্ তিরমিযী ৪২৮, সুনান আননাসায়ী ১৮১৬, সুনান ইবনু মাজাহ্
১১৬০, সহীহ আল জামি ৬১৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহকে বেশি বেশি সিজদা্ করলে জান্নাতে যাওয়া যায়
মাদান ইবনু ত্বলহাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুক্তদাস সাওবান (রাঃ)-এর
সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের সন্ধান দিন যে কাজ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ
করাবে। তিনি খামোশ থাকলেন। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম। তিনি খামোশ (নীরব) রইলেন। তৃতীয়বার
তাকে আবার একই প্রশ্ন করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, আমি নিজেও এ বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আল্লাহকে বেশি বেশি সিজদা্
করতে থাকবে। কেননা আল্লাহকে তুমি যত বেশি সিজদা্ করতে থাকবে, আল্লাহ তোমার মর্যাদা
বাড়াতে থাকবেন। তোমার অতটা গুনাহ উক্ত সিজদা্
দিয়ে কমাতে থাকবেন। মা’দান বলেন, এরপর আবুদ্ দারদার সাথে দেখা করে তাকেও আমি
একই প্রশ্ন করি। তিনিও আমাকে সাওবান (রাঃ)যা বলেছিলেন তাই বললেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৯৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪২৩, সুনান আততিরমিযী ৩৮৮, আহমাদ
২২৩৭৭, আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৮৭, সুনান আননাসাঈ ২/২২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৫,
ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) ছিয়াম পালন করাঃ
যে সকল আমলের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করা যায়,
ছিয়াম তন্মধ্যে সর্বোত্তম। আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও
সিয়াম পালন করে, আল্লাহ্ তার মুখমণ্ডলকে দোযখের আগুন হতে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে
নেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৪০, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ২৬০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১১৫৩, আহমাদ ১১৭৯০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৪০, সিলসিলা ছহীহাহ
২২৬৭, ২৫৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট
করার উদ্দেশ্যে একদিন ছিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার নিকট হ’তে জাহান্নামকে একশত বছরের
পথ দূরে করে দিবেন’। (সিলসিলা ছহীহাহ ২২৬৭,২৫৬৫)।
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট
করার উদ্দেশ্যে একদিন ছিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে একটি
গর্ত খনন করবেন, যার ব্যবধান হবে আসমান-যমীনের ব্যবধানের সমান’। (সিলসিলা ছহীহাহ ২২৬৮)।
ছিয়াম পালনকারীর জন্য জান্নাতে বিশেষ দরজা
থাকবে।
সাহল ইবনু সা’দ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ‘রইয়্যান’
নামে একটি দরজা রয়েছে। সিয়াম পালনকারীগণ ছাড়া এ দরজা দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে
না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৫৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৩২৫৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৫২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ছিয়াম পালন করলে মানুষের কৃত গোনাহ সমূহ মাফ
হয়ে যায়। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার সৌভাগ্য অর্জন করে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব
লাভের আশায় রমাযান (রমজান) মাসে সিয়াম পালন করবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া
হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় ইবাদাতে রাত কাটাবে, তার আগের
সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় লায়লাতুল
কদরে ’ইবাদাতে কাটাবে তারও আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৫৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৮, ১৮০২, ১৯১০, ২০১৪, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৬৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৭৬০, সুনান আবূ দাঊদ ১৩৭২, সুনান আননাসায়ী ২২০৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১৬৪১, ইবনু
আবী শায়বাহ্ ৮৮৭৫, আহমাদ ৭১৭০, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৯৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৮৫০৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৪৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তানের প্রত্যেকটি নেক
’আমল দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন, কিন্তু এর ব্যতিক্রম
হলো সওম। কেননা, সওম আমার জন্যে রাখা হয় এবং আমিই এর প্রতিদান দিব। কারণ সায়িম (রোযাদার)
ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির তাড়না ও খাবার-দাবার শুধু আমার জন্য পরিহার করে। সায়িমের
জন্য দু’টি খুশী রয়েছে। একটি ইফতার করার সময় আর অপরটি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়।
সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও বেশী পবিত্র ও পছন্দনীয় এবং
সিয়াম ঢাল স্বরূপ (জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কবচ)। তাই তোমাদের যে কেউ যেদিন সায়িম
হবে সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে আর শোরগোল বা উচ্চবাচ্য না করে। তাকে কেউ যদি গালি
দেয় বা কটু কথা বলে অথবা তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, সে যেন বলে দেয়, ‘আমি একজন সায়িম’।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৫৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ১৯০৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২৫৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫১, সুনান আন নাসায়ী ২২১৭, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক
ফাউন্ডেশন) ২২২০, সুনান ইবনু মাজাহ ১৬৩৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৮৯৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৯৬,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৪২৩, আহমাদ ৭৬৯৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৩৩২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য শাফা’আত করবে।
সিয়াম বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মিটাতে বাধা
দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার শাফা’আত কবূল করো। কুরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে
রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। অতঃপর উভয়ের
সুপারিশই কবূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৬৩,
মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৩৬, শু‘আবূল ঈমান ১৮৩৯, সহীহ আল জামি‘ ৩৮৮২, সহীহ আত্ তারগীব
৯৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(৭) যাকাত আদায় করাঃ
যাকাত আদায়কারীকে আল্লাহ মহান পুরস্কারে ভূষিত
করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘যারা ছালাত প্রতিষ্ঠাকারী ও যাকাত প্রদানকারী
হবে, তাদেরকে সত্বর মহান পুরস্কারে ভূষিত করা হবে’। (সুরা
নিসা ৪/১৬২)।
তিনি অন্যত্র বলেন,
‘বল, আমার প্রতিপালক তো তাঁর বান্দাদের মধ্যে
যার প্রতি ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন এবং যার প্রতি ইচ্ছা সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু
ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দিবেন। তিনিই শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা’। (সুরা সাবা ৩৪/৩৯)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘যারা ছালাত ক্বায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তারাই
আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী; তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে আছে এবং তারাই সফলকাম’।
(সুরা লুকমান ৩১/৪-৫)।
তিনি অন্যত্র বলেন,
‘যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে, ছালাত ক্বায়েম
করে এবং যাকাত দেয়, তাদের পুরষ্কার তাদের প্রতিপালকের নিকট আছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং
তারা দুঃখিতও হবে না’। (সুরা বাকারাহ ২/২৭৭)।
ইসলামের মৌলিক পাঁচটি ফরযের মধ্যে যাকাত অন্যতম।
নিছাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তিকে যাকাত আদায় করতে হয়। এর ফলে জান্নাত লাভ করা
যায়।
আবু উমামা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
’আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিদায় হাজের ভাষণে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের প্রতিপালক
আল্লাহ তা’আলাকে ভয় কর, তোমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় কর। তোমাদের রামাযান মাসের
রোযা রাখ, তোমাদের ধন-দৌলতের যাকাত আদায় কর এবং তোমাদের আমীরের অনুসরণ কর, তবেই তোমাদের
রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। আমি (সুলাইম) আবু উমামা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, আপনি
কতদিন পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এ হাদীস শুনেছেন?
তিনি বলেনঃ আমি তিরিশ বছর বয়সে তার নিকট এ হাদীস শুনেছি। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৬১৬, আস-সহীহাহ ৮৬৭, ইবুন হিববান ৭৯৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অপর একটি হাদীছে এসেছে,
আবদুর
রহমান (রহঃ)...আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি বললোঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ!
আমাকে এমন একটি আমল শিক্ষা দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। উপস্থিত লোকজন বলল
তার কি হয়েছে? তার কি হয়েছে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার
একটি বিশেষ প্রয়োজন আছে। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি আল্লাহর
ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে। একে ছেড়ে দাও বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি ঐ সময় তার সাওয়ারীর
উপর ছিলেন। (সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৫৫৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৫৯৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ মালিক আল আশ্’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ জান্নাতে এমনসব কক্ষ
আছে যার বাইরের জিনিস ভেতর থেকে আর ভেতরের জিনিস বাইরে থেকে দেখা যায়। আর এ বালাখানা
আল্লাহ তা’আলা ঐসব ব্যক্তির জন্যে তৈরি করে রেখেছেন, যারা অন্য ব্যক্তির সঙ্গে নরম
কথা বলে। (গরীব-মিসকীনকে) খাবার দেয়। প্রায়ই (নফল) সওম পালন করে। রাত্রে এমন সময় (তাহাজ্জুদের)
সালাত আদায় করে যখন অনেক মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৩২, ইবনু হিব্বান ৫০৯, মুসতাদরাক লিল হাকিম ২৭০, শু‘আবুল ঈমান ২৮২৫,
সহীহ আত্ তারগীব ৬১৮, সহীহ আল জামি‘ ২১২৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
জনৈক (বেদুঈন) লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর
রসূল! আমাকে এমন একটি কাজের সন্ধান দিন যা করলে আমি সহজে জান্নাতে পৌঁছতে পারি। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর ’ইবাদাত করতে থাকবে, তাঁর সাথে কাউকে
শরীক করবে না, ফরয সালাত ক্বায়িম করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে এবং রমাযানের সিয়াম পালন
করবে- এ কথা শুনে লোকটি বলল, আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন রয়েছে! আমি এর থেকে
বেশিও করবো না, কমও করবো না। সে লোক যখন চলে গেল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, কেউ যদি জান্নাতী কোন লোককে দেখে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন এ লোককে দেখে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৩৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪, আহমাদ ৮৫, সহীহ আত্
তারগীব ৭৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) হজ্জব্রত পালন করাঃ
হজ্জ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদত। অর্থিক
সচ্ছলতা ও দৈহিক শক্তি-সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করা ফরয। কবুল হজ্জের প্রতিদান একমাত্র
জান্নাত। হাদীছে এসেছে,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো,
কোন্ ’আমল সর্বোত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ ও তাঁর
রসূলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, তারপরে কোন্ ’আমল? তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। আবারও জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোনটি?
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’হজ্জে মাবরুর’ অর্থাৎ- কবূলযোগ্য হজ্জ।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৫০৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩, সুনান আততিরমিযী ১৬৫৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১৯৩৫২,
আহমাদ ৭৫৯০, দারিমী ২৪৩৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৮৪৮৩, শু‘আবুল ঈমান ৩৭৯৩, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৪৫৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি আরো বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ’উমরা হতে অপর ’উমরা পর্যন্ত
সময়ের জন্য (গুনাহের) কাফফারাহ স্বরূপ আর কবূলযোগ্য হজের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত আর
কিছু নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৫০৮, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৭৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৩৪৯, সুনান আননাসায়ী ২৬২৯, সুনান আততিরমিযী ৯৩৩, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৮৮, মুয়াত্ত্বা
মালিক ১২৫৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১২৬৩৯, আহমাদ ৯৯৪৮, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৫১৩, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৭২৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৬৯৬, সহীহ আল জামি‘ ৪১৩৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahi।
(৯) দান-ছাদাক্বাহ করাঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন,
হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে
ধ্বংস করে দিন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৪২,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৮৬০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩৫৫, হাদীস সম্ভার ৯২৯, সুনানুল
কুবরা লিন নাসায়ী ৯১৩৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮১৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৫৮,
সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৯২০, সহীহ আত্ তারগীব ৯১৪, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৭৯৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
ছাদাক্বাহ করা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম
মাধ্যম। যার দ্বারা জান্নাত লাভ করা যায়।
দানকারী জান্নাতের সকল দরজা থেকে আহূত হবে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদ
হতে কোন জিনিস এক জোড়া (দু’ গুণ) আল্লাহর পথে সন্তুষ্টির জন্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করবে,
জান্নাতের সবগুলো দরজা দিয়ে তাকে সাদর সম্ভাষণ জানানো হবে। আর জান্নাতের অনেক (আটটি)
দরজা আছে। যে ব্যক্তি সালাত আদায়কারী হবে, তাকে ’বাবুস্ সালাত’ হতে ডাকা হবে। যে আল্লাহর
পথে জিহাদ করবে, তাকে ডাকা হবে ’বাবুল জিহাদ’ হতে। দান সদাক্বাকারীকে ডাকা হবে ’বাবুস্
সদাক্বাহ্’ দিয়ে। যে ব্যক্তি সায়িম (রোযাদার) হবে, তাকে ’বাবুর রাইয়্যান’ দিয়ে ডাকা
হবে। এ কথা শুনে আবূ বকর (রাঃ) জানতে চাইলেন, যে ব্যক্তিকে এসব দরজার কোন একটি দিয়ে
ডাকা হবে তাকে কি অন্য সকল দরজা দিয়ে ডাকার প্রয়োজন হবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ! (হবে) আর আমি আশা করি তুমি তাদেরই একজন হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৯০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৮৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২৭, সুনান আত্ তিরমিযী
৩৬৭৪, সুনান আননাসায়ী ২৪৩৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৭০০, আহমাদ ৭৬৩৩, ইবনু হিব্বান ৩০৮,
সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৮৭৯, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬১০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২৪০,
ইসলামীক সেন্টার ২২৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
‘জোড়া’ বলতে দুই দিরহাম, দুই দীনার বা জামা-পায়জামা,
শাড়ি-লুঙ্গী ইত্যাদি যে কোন বস্তুত দু’টি করে দান করা। (মিরক্বাত)।
আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে মুসলিম বান্দা তার ধন-সম্পদ থেকে দু’
দু’টি (জোড়া) আল্লাহর পথে খরচ করে, জান্নাতের সকল প্রহরী তাকে অভ্যর্থনা জানাবে। তাকে
তাদের কাছে রক্ষিত জিনিসের দিকে ডাকবে। আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ‘দু’ দু’টি
অর্থ কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদি তাঁর কাছে উট থাকে তাহলে
দু’ দু’টি করে উট আর যদি গরু থাকে, তাহলে দু’ দু’টি করে গরু (দান করবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯২৪, সুনান আননাসায়ী ৩১৮৫, আহমাদ
২১৩৪১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৬৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৭৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
তিনি আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই দান কবরের শাস্তিকে
মিটিয়ে দেয় এবং ক্বিয়ামতের দিন মুমিন তার দানের ছায়াতলে ছায়া গ্রহণ করবে’। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮১৬/৩৪৮৪)।
দান-সদাকা আল্লাহর ক্রোধ নিভিয়ে দেয়
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘সৎকর্ম সমূহ মন্দ
পরিণতি থেকে রক্ষা করে। গোপন ছাদাক্বা আল্লাহর ক্রোধ নিভিয়ে দেয়। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক
রক্ষা করলে বয়স বৃদ্ধি পায়’। (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৮০১৪,
রাবী আবু উমামা বাহেলী (রাঃ); ছহীহুত তারগীব হা/৮৮৯)।
দান-সদাকা দাতা ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে থাকবে
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে দিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না,
সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন।
(১)
ন্যায়পরায়ণ শাসক,
(২) সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের
ইবাদতের মধ্যে,
(৩)
সে ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে,
(৪) সে দু’ ব্যক্তি যারা পরস্পরকে ভালবাসে
আল্লাহর ওয়াস্তে, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য,
(৫) সে ব্যক্তি যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী
নারী আহবান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’,
(৬) সে ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে, তার
ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না,
(৭) সে ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর যিকর করে,
ফলে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০১, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ২২৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩১, সুনান আননাসায়ী ৫৩৮০, সুনান আততিরমিযী
২৩৯১, আহমাদ ৯৬৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪৮৬, ইরওয়া ৮৮৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬২০, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৬২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
মারসাদ ইবনু ’আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু সাহাবী আমাকে এ হাদীসটি
শুনিয়েছেন যে, তাঁরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছেন,
’’কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন মু’মিনের ছায়া হবে তার দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা)।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯২৫, আহমাদ ১৮০৪৩, সহীহ আত্ তারগীব
৮৭২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
দান-ছদাকাকারীকে পুরুস্কৃত করা হবে
(ক) আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তাদের হিদায়াত দানের
দায়িত্ব আপনার নয়; বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছে হিদায়াত দেন। আর যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয়
কর তা তোমাদের নিজেদের জন্য আর তোমরা তো শুধু আল্লাহ্কে চেয়েই (তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই) ব্যয় করে
থাক। আর তোমরা উত্তম কোন কিছু ব্যয় করে থাকলে তার পুরস্কার তোমাদেরকে পুরোপুরিভাবেই
দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না”। (সুরা
আল বাকারা ২৭২)।
(খ) আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা নিজেদের ধন-সম্পদ
রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের প্রতিদান তাদের রব-এর নিকট রয়েছে।
আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না”। (সুরা
আল-বাকারা ২৭৪)।
(১০) কুরআন তেলাওয়াত করাঃ
কুরআন তেলাওয়াত করলে বহু ছওয়াব অর্জিত হয় এবং
জান্নাত লাভ করা যায়। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন পাঠকারীকে কিয়ামতের দিন বলা হবে, পাঠ
করতে থাকো আর উপরে উঠতে থাকো। (অক্ষরে অক্ষরে ও শব্দে শব্দে) সুস্পষ্টভাবে পাঠ করতে
থাকো, যেভাবে দুনিয়াতে স্পষ্টভাবে পাঠ করতে। কারণ তোমার স্থান (মর্যাদা) হবে যা তুমি
পাঠ করবে শেষ আয়াত পর্যন্ত (আয়াত পাঠের তুলনাগত দিক থেকে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৩৪, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৬৪, সুনান
আততিরমিযী ২৯১৪, সহীহাহ্ ২২৪০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৯০, সহীহ আত্ তারগীব ১৪২৬, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৪২৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন অধ্যয়নে পারদর্শী ব্যক্তি মর্যাদাবান লিপিকার মালায়িকাহ্’র
(ফেরেশ্তাগণের) সাথী হবে। আর যে ব্যক্তি কুরআন অধ্যয়ন করে ও যে এতে আটকে যায় এবং কুরআন
তার জন্য কষ্টদায়ক হয়, তাহলে তার জন্য দু’টি পুরস্কার। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১২১২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ
৩৭৭৯, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৪১৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ক) সূরা বাক্বারাহ ও আলে ইমরান
পাঠ করাঃ
সূরা বাক্বারাহ ও আলে ইমরান তার তেলাওয়াতকারীর
জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে।
নাওয়াস ইবনু সাম্’আন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কুরআন ও কুরআন পাঠকদের
যারা কুরআন অনুযায়ী ’আমল করত (তাদের) কিয়ামতের দিন উপস্থিত করা হবে। তাদের সামনে দু’টি
মেঘখণ্ড অথবা দু’টি কালো ছায়ারূপে থাকবে সূরা আল বাকারাহ্ ও সূরা আ-লি ’ইমরান। এদের
মাঝখানে থাকবে দীপ্তি। অথবা থাকবে প্রসারিত- পালক বিশিষ্ট পাখির দু’টি ঝাঁক। তারা আল্লাহর
নিকট কুরআন পাঠকের পক্ষে সুপারিশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২১২১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৫, সুনান
আততিরমিযী ২৮৮৩, আহমাদ ১৭৬৩৭, শু‘আবূল ঈমান ২১৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৬৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন পড়। কারণ
কুরআন পাঠ কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী হয়ে আসবে। তোমরা দু’ উজ্জ্বল
সূরা আল বাকারাহ্ ও আ-লি ’ইমরান পড়বে। কেননা কিয়ামতের দিন এ সূরা দু’টি মেঘখণ্ড অথবা
দু’টি সামিয়ানা অথবা দু’টি পক্ষ প্রসারিত পাখির ঝাঁকরূপে আসবে। এ দু’ সূরার পাঠকদের
জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে। বিশেষ করে তোমরা সূরা আল বাকারাহ্ পড়বে। কারণ সূরা
আল বাকারাহ্ পড়া বারাকাত আর তা না পড়া আক্ষেপ। এ সূরা দু’টি পড়তে পারবে না অলস বেকুবরা।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২০, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ১৭৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৪, শু‘আবূল ঈমান ১৮২৭, সহীহ ইবনু হিববান ১১৬,
সহীহাহ্ ৩৯৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আয়াতুল কুরসী পাঠ করাঃ
নিয়মিত আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে জান্নাত অবধারিত
হয়ে যায়।
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ মিম্বারের কাঠের উপর বসে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি
প্রতি সালাত শেষে আয়াতুল কুরসী পড়বে তাকে মৃত্যু ব্যতীত আর কোন বিষয় জান্নাতে প্রবেশে
বাধা দিতে পারে না। আর যে ব্যক্তি ঘুমাবার সময় আয়াতুল কুরসী পড়বে, আল্লাহ তা’আলা তার
ঘর, প্রতিবেশীদের ঘর ও তার চারপাশের ঘর-বাড়ীর নিরাপত্তা দিবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৭৪, শু‘আবুল ঈমান ২৩৯৫)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক
ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে, তার জান্নাতে প্রবেশে মৃত্যু ব্যতিরেকে কোন প্রতিবন্ধক
থাকবে না’। (ছহীহাহ ৯৭২)।
(গ) সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করাঃ
সূরা কাহফ তেলাওয়াত করলে জ্যোতি লাভ হয় এবং
দাজ্জালের ফেৎনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ
পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমাহ্ হতে আগামী জুমাহ্ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৫৯৯৬, ইরওয়া ৬২৬, সহীহ আত্ তারগীব ৭৩৬, সহীহ আল জামি‘ ৬৪৭০, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫২৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ-এর প্রথম দিকের
তিনটি আয়াত পড়বে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা হতে নিরাপদ রাখা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৪৬, সুনান আততিরমিযী ২৮৮৬, য‘ঈফাহ্
১৩৩৬, য‘ঈফ আত্ তারগীব ৮৮৩, য‘ঈফ আল জামি‘ ৫৭৬৫)।
আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ-এর প্রথম দশটি আয়াত
মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রাখা হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৯,
সুনান আবূ দাঊদ ৪৩২৩, সুনান আততিরমিযী ২৮৮৬, আহমাদ ২১৭১২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩৩৯১,
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৭, রিয়াযুস্ সলিহীন ১০২৮, সহীহাহ্ ৫৮২, সহীহ আত্ তারগীব
১৪৭২, সহীহ আল জামি‘ ৬২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) সূরা মুলক পাঠ করাঃ
সূরা মুলক তেলাওয়াতকারীর জন্য সে সুপারিশ করে
এবং এ সূরা তেলাওয়াতকারী কবরের আযাব থেকে নিরাপত্তা লাভ করে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআনে ত্রিশ আয়াতের একটি সূরা
আছে, যা এক ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করেছে। ফলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়েছে। সে সূরাটি হচ্ছে,
‘তাবা-রাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক’। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২১৫৩, সুনান আবূ দাঊদ ১৪০০, সুনান আততিরমিযী ২৮৯১, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৮৬,
মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৮৭, শু‘আবূল
ঈমান ২৫০৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
অন্য হাদিসে এসেছে,
‘যে ব্যক্তি প্রতি রাতে তাবারাকাল্লাযী অর্থাৎ
সূরা মুলক পড়বে, এর জন্য আল্লাহ তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্ত রাখবেন। আর আমরা রাসূল
(ছাঃ)-এর আমলে একে (কবর আযাব) প্রতিরোধকারী বলে অভিহিত করতাম। নিশ্চয়ই আল্লাহর কিতাবে
(কুরআনে) একটি সূরা আছে, যে ব্যক্তি রাতে তা
পাঠ করল, সে অধিক করল ও উত্তম কাজ করল। (হাকেম, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৫৮৯)। হাদিসের মানঃ হাসান।
(ঙ) সূরা ইখলাছ পাঠ করাঃ
সূরা ইখলাছ পাঠ করা এবং তার সাথে মহববত রাখা
জান্নাত লাভের মাধ্যম। আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এক ব্যক্তিকে একটি সেনাদলের সেনাপতি করে পাঠালেন। সে তার সঙ্গীদের সালাত আদায় করাত
এবং ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ দিয়ে সালাত শেষ করত। তারা মদীনায় ফেরার পর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ কথা উল্লেখ করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, তাকে জিজ্ঞেস করো কি কারণে সে তা করে। সে বলল, এর কারণ এতে আল্লাহর গুণাবলীর
উল্লেখ রয়েছে। আর আমি আল্লাহর গুণাবলী পড়তে ভালবাসি। তার উত্তর শুনে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে জানিয়ে দাও, আল্লাহ তা’আলাও তাকে ভালবাসেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৩৭৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৭৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৮১৩, ইবনু হিববান ৭৯৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৮৩, সুনান আননাসায়ী ৯৯৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
সুরা ইখলাস তিলাওয়াকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি
বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি এ ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ সূরাকে ভালবাসি। (এ কথা শুনে)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার এ সূরার প্রতি ভালবাসা তোমাকে
জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৩০,
সুনান আততিরমিযী ২৯০১, দারিমী ৩৪০৫, সহীহ ইবনু হিববান ৭৯২, আহমাদ ১২৪৩২, সহীহ আত্ তারগীব
১৪৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ পড়তে শুনে
বললেন, সুনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। আমি শুনে বললাম, কি সুনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে (হে আল্লাহর
রসূল) উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘জান্নাত’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৬০, সুনান আততিরমিযী ২৮৯৭, সুনান
আননাসায়ী ৯৯৪, আহমাদ ১০৯১৯, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সূরা ইখলাস তিলাওয়াকারীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়
আবুল হাসান মুহাজির রাহ. বলেন, জনৈক সাহাবী
বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক সফরে ছিলেন।
(একদিন তাঁর কাছে এমনভাবে বসা ছিলেন যে,) তার হাঁটুদু’টি নবীজীর হাঁটুদ্বয়ের সঙ্গে
লেগে ছিল।
এ অবস্থায় এক লোককে শুনলেন, সূরা কাফিরূন
তিলাওয়াত করছে। তা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে শিরক থেকে
পবিত্র হয়ে গেছে।
আরেক লোককে শুনলেন, সূরা ইখলাছ তিলাওয়াত করছে।
তখন তিনি বললেন, তাকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে।
(সুনানে দারেমী, হাদীস ৪৩৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস
২৩২০৬; সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদীস ৭৯৭৪; ফাযায়েলে কুরআন, মুস্তাগফিরী, হাদীস ১০৫৩)।
জান্নাতে যার জন্য অট্টালিকা নির্মিত হবে
মুআয ইবনে আনাস জুহানী রা. বলেন, রাসূলে কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-যে ব্যক্তি সূরা قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ দশবার পড়বে আল্লাহ তাআলা
তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।
এ কথা শুনে উমর ইবনে খাত্তাব রা. বললেন, তাহলে তো আমরা অনেক প্রাসাদের অধিকারী হয়ে
যাব। (অর্থাৎ অধিক হারে এই সূরা পাঠ করব। ফলে আল্লাহ আমাদের অনেক প্রাসাদ দান করবেন।)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলার দান আরো প্রশস্ত,
আরো উৎকৃষ্ঠ। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৬১০, সিলসিলা ছহীহা,
হা/৫৮৯; ছহীহুল জামে, হা/৬৪৭২)।
সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব রাহ. বলেন, আল্লাহর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
যে ব্যক্তি সূরা قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ দশবার পড়বে তার জন্য জান্নাতে অট্টালিকা নির্মাণ
করা হবে। যে বিশবার পড়বে তার জন্য দুটি অট্টালিকা তৈরি করা হবে। আর যে ত্রিশবার পড়বে
তার জন্য তিনটি অট্টালিকা প্রস্তুত করা হবে।
নবীজীর এই কথা শুনে উমর ইবনে খাত্তাব রা. বললেন,
তাহলে তো আমরা অনেক অট্টালিকার মালিক হয়ে যাব।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, আল্লাহ তাআলার দান এর চেয়ে আরো প্রশস্ত। (সুনানে
দারেমী, হাদীস ৩৪৭২; ফাযায়েলে কুরআন, মুস্তাগফিরী, হাদীস ১০৫৯)।
উল্লেখ্য যে, সূরা ইখলাছ ৫০, ১০০, কিংবা ২০০
বার পাঠ করার ফযীলত সম্পর্কে যে সকল হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তার সবগুলোই যঈফ’। (তিরমিযী,
হা/২৮৯৮; সিলসিলা যঈফা, হা/৩০০; মিশকাত, হা/২১৫৮-৫৯)।
(১১) উত্তমরূপে ওযূ করাঃ
ওযূর গুরুত্ব ও ফযীলত অনেক। এটাও জান্নাত লাভকারী
আমল।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীগণের উদ্দেশ করে) বললেনঃ আমি কি
তোমাদের এমন একটি কথা বললো না আল্লাহ তা’আলা যা দিয়ে তোমাদের গুনাহখাতা মাফ করে দিবেন
এবং (জান্নাতেও) পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন? সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর
রসূল! অবশ্যই। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কষ্ট হলেও পরিপূর্ণভাবে
উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করা, মসজিদের দিকে অধিক পদক্ষেপ রাখা এবং এক ওয়াক্ত সালাত আদায়ের
পর আর এক ওয়াক্ত সালাতের প্রতীক্ষায় থাকা। আর এটাই হলো ’রিবাত্ব’ (প্রস্তুতি গ্রহণ)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ,২৫১ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৯৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
উসমান (রাঃ) হতে বণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করে এবং উত্তমভাবে উযূ করে, তার শরীর হতে তার সকল
গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নিচ হতেও তা বের হয়ে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৮৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম অথবা মু’মিন বান্দা
উযূ করে এবং তার চেহারা ধুয়ে নেয়, তখন তার
চেহারা হতে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার চোখের দ্বারা কৃত সকল গুনাহ
বের হয়ে যায় যা সে চোখ দিয়ে দেখেছে। যখন সে তার দুই হাত ধোয় তখন তার দুই হাত দিয়ে করা
গুনাহ পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যা তার দু’ হাত দিয়ে ধরার
কারণে সংঘটিত হয়েছে। অনুরূপভাবে সে যখন তার দুই পা ধোয়, তার পা দ্বারা কৃত গুনাহ পানির
সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যে পাপের জন্যে তার দু’ পা হাঁটছে। ফলে
সে (উযূর জায়গা হতে উঠার সময়) সকল গুনাহ হতে পাক-পবিত্র হয়ে যায়। ( মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৮৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আমার উম্মাতকে
(জান্নাতে যাবার জন্য) এই অবস্থায় ডাকা হবে যখন তাদের চেহারা উযূর কারণে ঝকমক করতে
থাকবে, সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চমকাতে থাকবে। “অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ উজ্জ্বলতাকে
বাড়াতে সক্ষম সে যেন তাই করে।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৯০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৬, (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৪৭০, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২) মসজিদে গমন করাঃ
মসজিদে গমন ছওয়াব লাভের অন্যতম মাধ্যম। মসজিদে
গমনকারীর জন্য ফিরিশতারা আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল মসজিদে যাবে,
আল্লাহ তা’আলা তার প্রত্যেকবারে যাতায়াতের জন্য জান্নাতে একটি মেহমানদারীর ব্যবস্থা
করে রাখবেন। চাই সে সকালে যাক কী সন্ধ্যায়। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৬৯, আহমাদ ১০৬০৮, সহীহ
ইবনু খুযাইমাহ্ ২০৩৭, সহীহ আল জামি‘ ৬৩৯৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৯৭০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘরে অথবা (ব্যস্ততার কারণে) কারো
বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে মসজিদে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করার সাওয়াব পঁচিশ গুণ
বেশী। কারণ কোন ব্যক্তি ভালো করে (সকল আদাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে) উযূ করে নিঃস্বার্থভাবে
সালাত আদায় করার জন্যই মসজিদে আসে। তার প্রতি ক্বদমের বিনিময়ে একটি সাওয়াবে তার মর্যাদা
বেড়ে যায়, আর একটি গুনাহ কমে যায়। এভাবে মসজিদে পৌঁছা পর্যন্ত (চলতে থাকে)। সালাত আদায়
শেষ করে যখন সে মুসল্লায় বসে থাকে, মালায়িকাহ্ অনবরত এ দু’আ করতে থাকেঃ ‘হে আল্লাহ!
তুমি তাকে মাফ করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তার ওপর রহমত বর্ষণ কর।’’ আর যতক্ষণ পর্যন্ত
তোমাদের কেউ সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, সে সময়টা তার সালাতের সময়ের মধ্যেই পরিগণিত
হবে।
আর এক বর্ণনার শব্দ হলো, ‘যখন কেউ মসজিদে গেল,
আর সালাতের জন্য অবস্থান করলো সেখানে, তাহলে সে যেন সালাতেই রইল। আর মালায়িকার দু’আর
শব্দাবলী আরো বেশিঃ ‘হে আল্লাহ! এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। তার তওবা্ ক্ববূল কর’’।
এভাবে চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্য কোন মুসলিমকে কষ্ট না দেয় বা তার উযূ ছুটে
না যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০২, সহিহ মুসলিম
৬৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিনের পূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ
দাও তাদেরকে যারা অন্ধকারে মসজিদে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৭২১, সুনান আততিরমিযী ২২৩, সুনান আবূ দাঊদ ৫৬১, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
(১৩) মসজিদ নির্মাণ করাঃ
মসজিদ নির্মাণ করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে
ঘর নির্মাণ করেন।
উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে একটি মাসজিদ নির্মাণ
করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১০৭৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩৩, সুনান আততিরমিযী ৩১৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৭৩৬, দারেমী
১৪৩২, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ১২৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৪) আযান দেওয়াঃ
আযান দেওয়ার বিনিময় জাহান্নাম হ’তে মুক্তি
ও জান্নাত লাভ। ক্বিয়ামতের দিন মুওয়াযযিন অতীব সম্মানিত হবে। মানুষ, জিন ও পৃথিবীর
সকল বস্ত্ত ক্বিয়ামতের দিন মুওয়াযযিনের জন্য কল্যাণের সাক্ষী দিবে।
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যতদূর পর্যন্ত মানুষ, জিন্
বা অন্য কিছু মুয়াযযিনের আযানের ধ্বনি শুনবে তারা সকলেই কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার
পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৬৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫৪৮, ২৩৯৬, ৬০৯, সুনান আননাসায়ী ৬৪৪, আহমাদ ১১৩০৫,
সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৬১, সহীহ আল জামি‘ ২৪৫০, মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৫৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুয়াজ্জিনের কণ্ঠস্বর যতদূর পর্যন্ত যায় তাকে ততদূর ক্ষমা
করে দেয়া হয়। তাজা ও শুষ্ক প্রতিটি জিনিসই (কিয়ামতের দিন) তার জন্য সাক্ষী হয়ে যাবে।
আর কেউ জামাআতে হাজির হলে তার জন্য পঁচিশ ওয়াক্ত সালাতের সাওয়াব লিখা হয় এবং এক সালাত
থেকে আরেক সালাতের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৫, সুনান আননাসায়ী ৬৪৩, ৬৪৫,
সুনান ইবনু মাজাহ ৭২৪, আহমাদ (৯২/২৬৬), ইবনু
খুযাইমাহ ৩৯০, সুনান আবূ দাঊদ ৫১৫, আহমাদ ৭৫৫৬,
৯০৭৩, ৯২৫৭।)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি বারো বছর আযান দেয় তার জন্য জান্নাত
অবধারিত হয়ে যায়। আর প্রতি দিনের আযানের বিনিময়ে তার জন্য ষাট নেকী এবং প্রতি ইকামতের
জন্য তিরিশ নেকী লেখা হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭২৮, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৭৮, সহীহাহ ৪২, সহীহ তারগীব ২৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, কোন ব্যাক্তি মুয়ায্যিনের আযান শোনার পর নিম্নোক্ত দুআ পড়লে তার গুনাহ ক্ষমা
করা হবেঃ আমি সাক্ষ্য দেই যে, "আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু, লা-
শারীকা লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু, ওয়া রাসূলুহু, রাযীতু বিল্লা-হি রব্বান
ওয়াবি মুহাম্মাদিন রসূলান ওয়াবিল ইসলামী দীনন"
অর্থঃ ল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর
কোন শারীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি আল্লাহকে
রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবী হিসাবে পেয়ে
সন্তুষ্ট। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭২১, ৭২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৭৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৬, সুনান আততিরমিযী ২১০, সুনান আননাসায়ী ৬৭৯,
সুনান আবূ দাঊদ ৫২৫, আহমাদ ১৫৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৫) আযানের উত্তর দেওয়াঃ
আযানের উত্তর দেওয়া ও তৎপরবর্তী দো‘আ করলে
রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত অবধারিত হয়ে যায়। তেমনি পরকালে জান্নাত লাভ করা যায়।
আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুয়াযযিনের আযান শুনলে
উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ যে
ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ
করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ‘ওয়াসীলা’ হলো জান্নাতের
সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা
এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ’ওয়াসীলা’র দু’আ করবে, কিয়ামতের (কিয়ামতের)
দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৪,
সুনান আবূ দাঊদ ৫২৩, সুনান আননাসায়ী ৬৭৮, সুনান আততিরমিযী ৩৬১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান
১৬৯০, ইরওয়া ২৪২, সহীহ আল জামি ৬১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৩৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৪৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুয়ায্যিন যখন “আল্লা-হু আকবার’’ বলে তখন তোমাদের
কেউ যদি (উত্তরে) অন্তর থেকে বলে, “আল্লা-হু আকবার’’ “আল্লা-হু আকবার’’, এরপর মুয়ায্যিন
যখন বলেন, “আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,’’ সেও বলে, “আশ্হাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’’।
অতঃপর মুয়ায্যিন যখন বলে, “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার্ রসূলুল্ল-হ’’, সেও বলে “আশ্হাদু
আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ’’, তারপর মুয়ায্যিন যখন বলে, “হাইয়্যা ’আলাস্ সলা-হ্’’,
সে তখন বলে, “লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’; পরে মুয়ায্যিন যখন বলে,
“আল্লা-হু আকবার ‘আল্লা-হু আকবার’’, সেও বলে, “আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার’’ এরপর
মুয়ায্যিন যখন বলে, “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,’’ সেও বলে ’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’,
সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৬৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৩৮৫, সুনান আবূ দাঊদ ৫২৭, সহীহ আল জামি ৭১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৩৪, ইসলামিক
সেন্টারঃ ৭৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, এক ব্যক্তি আবেদন করলো, হে আল্লাহর রসূল! আযানদাতাতো আমাদের চেয়ে মর্যাদায় বেড়ে
যায়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা যেভাবে বলে তোমরাও তাদের
সাথে সাথে সেভাবে বলে যাও। আর আযানের উত্তর শেষে যা খুশী তাই আল্লাহর কাছে চাও, তোমাদেরকে
দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৭৩, সুনান আবূ
দাঊদ ৫২৪। সহীহ আত্ তারগীব ২৫৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে যাচ্ছিলাম, বিলাল দাঁড়িয়ে
আযান দিতে লাগলেন। আযান শেষে বিলাল চুপ করলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, যে ব্যক্তি অন্তরের দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে এর মতো বলবে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ
করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৭৬, সুনান নাসায়ী ৬৭৪,
সহীহ আল জামি ২৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৬) দো‘আ ও তাসবীহ-তাহলীলঃ
তাসবীহ-তাহলীল, যিকর-আযকার, পাপ মোচন, জাহান্নাম
থেকে পরিত্রাণ ও জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম। তাই মুমিনকে ছহীহ হাদীছে বর্ণিত দো‘আ,
যিকর-আযকার ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করতে হবে। নিম্নে কিছু দো‘আ, তাসবীহ ফযীলত সহ উল্লেখ
করা হলো।-
(ক)
সকল গোনাহ মাফ হয়: আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দৈনিক একশ’বার পড়বে ‘সুবহা-নাল্ল-হি
ওয়াবিহামদিহী’ (অর্থাৎ- আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে)- তার গুনাহসমূহ
যদি সমুদ্রের ফেনার মতো বেশি হয় তবুও তা মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৯৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৪০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯১, মুয়াত্ত্বা মালিক
৭১৩, ইবনু হিব্বান ৮২৯, সহীহ আল জামি‘ ৬৪৩১, সুনান আততিরমিযী ৩৪৬৬, ইবনু আবী শায়বাহ্
২৯৪১৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮১২, আহমাদ ৮০০৯, সহীহ আত্ তারগীব ১৫৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৫৯৮, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে লোক প্রত্যেক সালাতের শেষে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’
তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার এবং ‘আল্ল-হু আকবার’ তেত্রিশবার পড়বে, যার
মোট সংখ্যা হবে নিরানব্বই বার, একশত পূর্ণ করার জন্যে একবার ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু
ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন
ক্বদীর’’ (অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই।
সমগ্র রাজত্ব একমাত্র তাঁরই ও সকল প্রকারের প্রশংসা তাঁরই জন্য এবং তিনি সকল বস্তুর
উপর ক্ষমতাবান।) পাঠ করবে, তাহলে তার সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদি তা সাগরের ফেনারাশির
সমানও হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৭, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১২৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৫৯৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২২৮, ইসলামীক সেন্টার ১২৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সেই সাথে জাহান্নাম থেকেও মুক্তি পেয়ে যাবেন
কেননা দিনে ৩৬০ বার এই তাসবিহগুলো পড়লেই জাহান্নাম থেকে মুক্ত রাখা হয় আর এভাবে ৫ ওয়াক্তে
৫০০ বার পড়া হচ্ছে।
মূল হাদিসঃ
হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ)....আয়িশাহ
(রাযিঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক
আদম সন্তানকেই ৩৬০টি অস্থিসন্ধি বিশিষ্ট করে সৃষ্টি করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি ঐ সংখ্যা
পরিমাণ আল্লা-হু আকবার বলবে, আলহামদু লিল্লাহ’ বলবে, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলবে, সুবহা-নাল্ল-হ’
বলবে, আসতাগফিরুল্ল-হ’ বলবে, মানুষের চলার পথ থেকে একটি পাথর বা একটি কাটা বা একটি
হাড় সরাবে, সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে, সে কিয়ামতের দিন এমনভাবে
চলাফেরা করবে যে, সে নিজেকে ৩৬০ ( অস্থিসন্ধি) সংখ্যা পরিমাণ জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে
অর্থাৎ বেঁচে থাকবে। আবূ তওবা তার বর্ণনায় এ কথাও উল্লেখ করেছেন যে, সে এ অবস্থায়
সন্ধ্যা করবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২২০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২১৯৯, ইসলামীক সেন্টার ২২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পৃথিবীর বক্ষে যে লোকই
বলে,
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, ওয়াল্লাহু আকবার,
ওয়া লা- হাওলা ওয়া লা- কুওওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ”
“আল্লাহু তা’আলা ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই, আল্লাহ
সুমহান, খারাপকে রোধ করা এবং কল্যাণকে লাভ করার শক্তি আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কারো
নেই", তার অপরাধগুলো মাফ করা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির ন্যায় (বেশি) হয়।
(সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৬০, তা’লীকুর রাগীব ২/২৪৯)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
রাসূল (সা) বলেছেন, "যে-ব্যক্তি বিছানায়,
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ, ওয়াহ্দাহু লা- শারীকা
লাহ, লাহূল মুলকু ওয়া লাহূল হামদু ওয়া হূওয়া ‘আলা কুল্লি শায়্য়িন ক্বদীর, লা- হাওলা
ওয়া লা- কুওওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ, সুবহা-নাল্লা-হ, ওয়াল হামদুলিল্লা-হ, ওয়া লা- ইলা-হা
ইল্লাল লাহূ, ওয়াল্লাহু আকবার”
পাঠ করে, তাঁর সমস্ত গুনাহ মাফ করা দেওয়া হয়।
যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার চেয়েও বেশি হয়।" (ইবনু
হিব্বান ৫৫২৮)। হাদিসের মান সহিহ।
পোশাক পরিধানের দু‘আ পাঠ করাঃ
সাহল
ইবনু মু’আয ইবনু আনাস (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি খাওয়ার পরে এ দু’আ পাঠ করবে তার আগে পরের সকল গুনাহ
ক্ষমা করা হবে।
“আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত’আমানী
হাযা ওয়া রাযাকানীহি মিনগাইরি হাওলিন মিন্নী ওয়ালা কুওয়াতিন’’
অর্থঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে
এ খাদ্য খাওয়ালেন এবং আমার পক্ষ থেকে কোনো কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই রিযিক দান
করলেন।’’
তিনি আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি কোনো কাপড় পরার
সময় এ দু’আ পাঠ করবে তার আগে পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবেঃ
“আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী কাসা-নী হাযা- ওয়া
রযাক্বানীহি মিন গইরি হাওলিম মিন্নী ওয়া লা- কুওওয়াতিন”
অর্থঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার
কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই আমাকে এ কাপড়ের ব্যবস্থা করে পরালেন।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০২৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
খাবার শেষে দু‘আ পাঠ করাঃ
সাহল ইবনে মুআয ইবনে আনাস আল-জুহানী (রাঃ)
থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি
আহার করে সে যেন বলে,
“আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত’আমানী হাযা ওয়া
রাযাকানীহি মিনগাইরি হাওলিন মিন্নী ওয়ালা কুওয়াতিন’’
(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য যিনি আমাকে
আমার শক্তি ও জোর ব্যতীত আহার করিয়েছেন ও রিযিক দান করেছেন), তাহলে তার পূর্বেকার গুনাহ
মাফ করে দেয়া হবে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৫৮,
সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৮৫, ইরওয়া ১৯৮৯, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১০০, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব
১৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) জান্নাতের ভান্ডার :
আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, এক সফরে আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। লোকেরা
তখন উচ্চস্বরে তাকবীর বলছিল। (তাকবীর শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের নাফসের উপর রহম করো। কেননা তোমরা তাকবীরের মাধ্যমে
কোন বধিরকে বা কোন অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না, তোমরা ডাকছ এমন সত্তাকে যিনি তোমাদের
সব কথা শুনেন ও দেখেন। তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। তোমরা যাঁকে ডাকছ তিনি তোমাদের প্রত্যেকের
বাহনের গর্দান থেকেও বেশি নিকটে। আবূ মূসা আল আশ্’আরী বলেন, আমি তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে চুপে চুপে বলছিলাম “লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা-
বিল্লা-হ’’ (অর্থাৎ- আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমার কোন উপায় নেই)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! (আবূ মূসার ডাক নাম) আমি কি তোমাকে
জান্নাতের ভাণ্ডারগুলোর একটি ভাণ্ডারের সন্ধান দেব না? আমি বললাম, অবশ্যই দেবেন, হে
আল্লাহর রসূল! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সেটা হলো “লা- হাওলা
ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৩০৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪২০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২৭০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) জান্নাতে বৃক্ষ রোপণ :
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি “সুবহা-নাল্ল-হিল ’আযীম ওয়া বিহামদিহী’’
(অর্থাৎ- মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে) পড়বে, তার জন্য জান্নাতে
একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৩০৪, সুনান আততিরমিযী ৩৪৬৪, মু‘জামুস সগীর লিত্ব ত্ববারানী ২৮৭, মুসতাদারাক লিল হাকিম
১৮৪৭, সহীহাহ্ ৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৫৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) ছওয়াব লাভ, মর্যাদা বৃদ্ধি
ও জান্নাতে গৃহ লাভ:
আবদুর রহমান ইবনু গানম (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফাজর (ফজর) ও মাগরিবের সালাতের শেষে জায়গা হতে উঠার
ও পা ঘুরানোর আগে এ দু’আ দশবার পড়েঃ
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ
লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু বিয়াদিহিল খায়রু, ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াওহুয়া
’আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর’’
(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ
নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, তাঁর হাতেই সমস্ত
কল্যাণ রয়েছে, তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন, তিনি সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।)।
তাহলে প্রতিবারের বিনিময়ে তার জন্য দশ নেকী
লিখা হয়। তার দশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। তাকে দশটি মর্যাদার স্তরে উন্নীত করা হয়।
আর এ দু’আ তাকে সমস্ত অপছন্দনীয় ও বিতাড়িত শায়ত্বন (শয়তান) থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। শির্ক
ছাড়া অন্য কোন গুনাহের কারণে তাকে ধর-পাকড় করা হালাল হবে না। ’আমলের দিক দিয়ে এ লোক
হবে অন্য লোকের চেয়ে উত্তম, তবে সে ব্যক্তি ব্যতীত যে এর চেয়েও অতি উত্তম ’আমল করবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৭৫, আহমাদ ১৭৯৯৯, সহীহ আত্
তারগীব ৪৭৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক বাজারে প্রবেশ করে এ দু’আ পড়ে,
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা
লাহূ লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াহুওয়া হায়য়ুন, লা- ইয়ামূতু,
বিয়াদিহিল খয়রু, ওয়াহুয়া ’আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর’’
(অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ
নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই প্রশংসা, তিনি জীবন দান করেন
ও মৃত্যু দান করেন, তিনি চিরঞ্জীব, কক্ষনো মৃত্যুবরণ করবেন না। তাঁর হাতেই কল্যাণ এবং
তিনি সমস্ত জিনিসের উপর ক্ষমতাশীল)।
আল্লাহ তা’আলা তার জন্য দশ লক্ষ সাওয়াব লিখবেন,
দশ লক্ষ গুনাহ মিটিয়ে দেন, এছাড়া তার জন্য দশ লক্ষ মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং জান্নাতে
তার জন্য একটি ঘর তৈরি করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৪৩১, সুনান আততিরমিযী ৩৪২৮, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৩৫, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৭৪, আল
কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২৩০, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৯৪, সহীহ আল জামি‘ ৬২৩১)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
(ঙ) জান্নাত লাভের দোয়া পাঠ করাঃ
জান্নাত পাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের
দোয়াঃ
কিয়ামতের দিন হাসরের ময়দানে সবাই যখন ‘ইয়া
নাফসিু’ ‘ইয়া নাফসি' বলতে থাকবে। কারণ দুনিয়ার কার কাজকে মহান আল্লাহ তা’য়ালা পছন্দ
করেছেন কিংবা করেননি, তা কেউ জানেন না। তাই আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্ট অর্জনের জন্য আমাদের
প্রত্যেককে অতিরিক্ত কিছু আমল করা দরকার। যা আপনাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে।
পাশাপাশি জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ করে দেবে।
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ৩ বার করে পড়তে হয়ঃ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা
ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্নার।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই
এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জান্নাত প্রার্থনা
করে, জান্নাত আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করো। যে ব্যক্তি আল্লাহর
কাছে ৩ বার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, জাহান্নাম আল্লাহর কাছে দুয়া করে,
হে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও”।
মুল হাদিসঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জান্নাতের
প্রত্যাশা করে; জান্নাত বলবে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর যে ব্যক্তি
তিনবার জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করবে; জাহান্নাম বলবে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম
থেকে মুক্তি দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৭৮, সুনান
আততিরমিযী ৫৫২১, সুনান আননাসায়ী ৫৫২১, সহীহ ইবনু হিববান ১০৩৪, সহীহ আল জামি ৬২৭৫)।
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।
একটি জাল হাদিসঃ আল্লাহুম্মা আজরনি মিনান্নার।
উল্লেখ্য–সকাল সন্ধ্যায় ৭ বার “আল্লাহুম্মা
আজিরনি মিনান্নার” পড়ার হাদীসটা জয়ীফ বা দুর্বল, শায়খ আলবানী সিলসিলা জয়ীফাহঃ ১৬২৪।
যেহেতু “আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার” জয়ীফ
বা দুর্বল তাই ইহার আমল না করে "আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু
বিকা মিনান্নার" সকাল সন্ধ্যায় তিনবার করে পাঠ করবেন।
(১৭) জিহাদ করাঃ
জিহাদের অশেষ গুরুত্ব ও ফযীলত রয়েছে। এর বিনিময়
জান্নাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘হে
ঈমানাদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের কথা বলে দিব না, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি থেকে রক্ষা করবে? তা এই যে, তোমরা ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি।
আর তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য
শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে। এর ফলে তিনি তোমাদের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে
জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার নিম্নদেশ দিয়ে নহর সমূহ প্রবাহিত এবং তা এমন মনোরম আবাসগৃহ
যা অনন্তকাল বসবাসের জন্য, এটাই মহা সাফল্য’। (সুরা ছফ
৬১/১০-১২)।
আল্লাহ আরো বলেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত
হয়, তাদেরকে মৃত ভেবো না। বরং তারা জীবিত। তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট হ’তে জীবিকাপ্রাপ্ত
হয়’। (সুরা আলে ইমরান ৩/১৬৯)।
অন্যত্র তিনি আরো বলেন,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের নিকট থেকে তাদের
জান ও মাল খরিদ করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে। তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে। অতঃপর
তারা হত্যা করে অথবা নিহত হয়। এর বিনিময়ে তাদের জন্য (জান্নাত লাভের) সত্য ওয়াদা করা
হয়েছে তওরাত, ইনজীল ও কুরআনে। আর আল্লাহর চাইতে নিজের অঙ্গীকার অধিক পূরণকারী আর কে
আছে? অতএব তোমরা এই ক্রয়-বিক্রয়ের বিনিময়ে (জান্নাতের) সুসংবাদ গ্রহণ কর যা তোমরা তাঁর
সাথে করেছ। আর এটাই হ’ল মহান সফলতা’। (সুরা তওবা ৯/১১১)।
জিহাদের গুরুত্ব ও ফযীলত এবং মুজাহিদ ও শহীদের
মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
তন্মধ্যে কতিপয় হাদীছ এখানে উল্লেখ করা হলোঃ-
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রসূলের
প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়িম করবে, রমাযানের সিয়াম পালন করবে, আল্লাহর পথে জিহাদ করবে
বা স্বীয় জন্মভূমিতে অবস্থান করে- তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর ওপর হক ও দায়িত্ব
হয়ে যায়। অতঃপর লোকেরা (সাহাবায়ে কিরাম) বললেন, আমরা কি জনগণের মাঝে এ সুসংবাদ জানিয়ে
দিব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য
আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে একশ’ মর্যাদা প্রস্তুত করে রেখেছে। প্রতি দু’ শ্রেণীর মর্যাদার
মাঝে দূরত্বের পরিমাণ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। সুতরাং তোমরা
যখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে, তখন তার নিকট (জান্নাতুল) ফিরদাওস প্রার্থনা করবে।
কেননা তা জান্নাতের মধ্যম ও সর্বোত্তম জান্নাত। তার উপরিভাগে আল্লাহর ’আরশ এবং সেখান
থেকে জান্নাতের ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৭৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৭৯০, ৭৪২৩, মুসনাদ আহমাদ ৮৪৭৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৯৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশের পর আর কেউ দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা
করবে না, যদিও দুনিয়ার সকল জিনিস তাকে দেয়া হয়। একমাত্র শহীদ ব্যতীত; সে দুনিয়ায় ফিরে
আসার আকাঙ্ক্ষা করবে যেন দশবার শহীদ হয়। কেননা সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখেছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮১৭, ২৭৯৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৭৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৭,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮০৩, আহমাদ ১২২৭৫, ১২৭৭১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১৬৬২, ১৬৪৩, সহীহ আল জামি‘ ৫৫১৯, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৫২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০৭, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৬১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রুবাইয়্যা’
বিনুত বারা (রাঃ)-এর কন্যা হারিসাহ্ ইবনু সুরাকাহ্-এর মা। একদিন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী! তার পুত্র হারিসাহ্
যে বাদ্রের যুদ্ধে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির তীর নিক্ষেপে নিহত হয়, সে ব্যাপারে জানতে চাইলেন
যে, হারিসাহ্ জান্নাতী হবে কিনা? যদি সে জান্নাতে প্রবেশ করে, তবে আমি ধৈর্যধারণ করব,
অন্যথায় তার জন্য আমার আত্মার কান্না রোধ করতে পারব না। এটা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হে হারিসার মা! জান্নাতে অসংখ্য বাগান রয়েছে, আর তোমার ছেলে
তো জান্নাতুল ফিরদাওসের উচ্চাসনে স্থান পেয়েছে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮০৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮০৯, ৩৯৮২, ৬৫৫০, ৬৫৬৭, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ২৫৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১১, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আব্দুর
রহমান ইবনু আবূ ’আমীরহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মুসলিমকে আল্লাহ মৃত্যু দান করার পরে আবার তোমাদের মধ্যে
(দুনিয়ায়) ফিরে আসতে চাইবে না, যদিও দুনিয়া ও তার সমুদয় ধন-সম্পদের পরিমাণ তাকে দেয়া
হয়, একমাত্র শাহাদাতবরণ ব্যতীত। ইবনু আবূ ’আমীরহ্ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়ার সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ সমৃদ্ধ গ্রাম ও নগরের অধিবাসীর মালিক
হওয়া অপেক্ষা আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া আমার নিকট সর্বোত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৫৫, নাসায়ী ৩১৫৩, সহীহ আল জামি‘ ৫৬৮৪, সহীহ
আত্ তারগীব ১৩৫৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
শহীদদের মর্যাদা সম্পর্কে বহু বর্ণনা এসেছে।
মিকদাম ইবনে মাদীকারিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ শহীদের জন্য আল্লাহর নিকট ছয়টি বৈশিষ্ট্য
রয়েছে।
(১) তার দেহের রক্তের প্রথম ফোঁটাটি বের হতেই
তিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং জান্নাতে তার ঠিকানা তাকে দেখানো হয়,
(২) কবরের আযাব থেকে তাকে রক্ষা করা হয়,
(৩) (কিয়ামতের) ভয়ংকর ত্রাস থেকে সে নিরাপদ
থাকবে;
(৪) তাকে ঈমানের চাদর পরানো হবে;
(৫) আয়তলোচনা হুরের সাথে তার বিবাহ দেয়া হবে
এবং
(৬) তার নিকট আত্মীয়দের মধ্য থেকে সত্তরজনের
পক্ষে তাকে শাফা’আত করার অনুমতি দেয়া হবে। (সুনান ইবনু
মাজাহ ২৭৯৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৩৪, সুনান আততিরমিযী ১৬৬৩, সহীহাহ্ ৩২১৩,
আহমাদ ১৬৭৩০, বায়হাকী ফিস সুনান ৯/১৬৪, বায়হাকী ফিশ শুআব ১০৮২৩, ১০৮২৪, আল-আহকাম ৩৬
নং পৃষ্ঠা, মিশকাত আত-তালীকুর রাগীব ২/১৯৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু’টি ফোঁটা এবং দু’টি দাগের
(চিহ্নের) চেয়ে পছন্দনীয় অন্য কিছুই নয়। ফোঁটা দু’টির একটি হলো আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনরত
অশ্রুর ফোঁটা, অপরটি হলো আল্লাহর পথে প্রবাহিত রক্তের ফোঁটা। আর দাগ দু’টির একটি আল্লাহর
পথে (জিহাদে) আহত হওয়ার দাগ, অপরটি ফরয ’ইবাদাতসমূহের কোনো একটি আদায়ের দাগ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৩৭, সুনান আততিরমিযী ১৬৬৯, সহীহ
আত্ তারগীব ১৩৭৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে লোক অতি অল্প সময়
আল্লাহর পথে জিহাদ করে শহীদ হয়েছে, তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায়। যে লোক (শত্রুর
আঘাতে) আল্লাহর পথে হতাহত বা ক্ষত-বিক্ষতের দরুন কাতর হয়েছে- সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায়
উপস্থিত হবে যে, উক্ত ক্ষতস্থান (দুনিয়ার তুলনায়) সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে, রক্তের রং
হবে যা’ফরানের এবং তা হতে মিশ্কের সুগন্ধি বিচ্ছুরিত হতে থাকবে। আর আল্লাহর পথে জিহাদরত
থাকাবস্থায় যে ব্যক্তির শরীরে ফোঁড়া-ঠোসা পরিলক্ষেত হবে, কিয়ামতের দিন উক্ত ফোঁড়ার
উপরে শহীদগণের সীলমোহর থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৮২৫, সুনান আবূ দাঊদ ২৫৪১, সুনান আননাসায়ী ৩১৪১, সুনান আততিরমিযী ১৬৫৭, সুনান ইবনু
মাজাহ ২৭৯২, মুসনাদ আহমাদ ২২১১৬, সহীহ আল জামি‘ ৬৪১৬, সহীহ আত্ তারগীব ১২৭৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৮) আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেওয়াঃ
আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেওয়ার অত্যধিক গুরুত্ব
ও ফযীলত রয়েছে। এর জন্য অশেষ ছওয়াব রয়েছে এবং এর সর্বোচ্চ বিনিময় হ’ল জান্নাত।
(ক) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে এক দিনের সীমান্ত
পাহারা দেয়া, দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে (তার থেকে) সর্বাপেক্ষা উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৯১, সহীহুল বুখারী ২৮৯২, সহীহ
মুসলিম ১৮৮১, তিরমিযী ১৬৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ১২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত
করা, দুনিয়া ও তার সমুদয় সমস্ত সম্পদ হতে সর্বোত্তম। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৯২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৬১৫, ২৭৯২, ২৭৯৬, ৬৫৬৮, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৮০, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৫৭, সুনান
আততিরমিযী ১৬৫১, মুসনাদ আহমাদ ১২৩৫০, ১১৯৪১, ১২০২৮, ১২১৪৬, ১২১৯১, ১২৭৪৯, ১৩৩৬৮, সহীহ
আল জামি‘ ৪১৫১, সহীহ আত্ তারগীব ১২৬১, বায়হাকী ফিশ শুআব ৪২৫৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৩/১৮৭,
ইবনু হিব্বান ৪৬০২, ৭৩৯৮, ইরওয়া ১১৮২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৯৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল অথবা
একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৫৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৯৩,
আহমাদ ১০৫০২, ১০৫১৯, বায়হাকী ফিস সুনান ৭/৩০৯, ইরওয়া ৫/৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৮৬, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৫৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) সাহল ইবনে সাদ আস-সাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর রাস্তায় একটি
সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে কল্যাণকর। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৯৪,
২৮৯২, ৬৪১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৬৮, ৪৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৮১, ১৮৮২,
সুনান আততিরমিযী ১৬৪৮, সুনান আননাসায়ী ৩১১৮, আহমাদ ১৫৫৩২, ২২৩৩৭, দারেমী ২৩৯৮, ইরওয়া
৫/৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি বিকাল
চললো, তাতে সে যতোটা ধুলিমলিন হলো, তা কিয়ামতের দিন তার জন্য এর সমপরিমাণ কস্তরীতে
পরিণত হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৭৫, সহীহাহ ২৩৩৮)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(চ) হুমাইদ (রহ.) বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট হতে এ কথাও বর্ণনা করতে শুনেছি
যে, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল অথবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও এর সব কিছু থেকে
উত্তম। তোমাদের কারোর ধনুকের কিংবা চাবুক রাখার মত জান্নাতের জায়গাটুকু দুনিয়া ও এর
সব কিছু থেকে উত্তম। জান্নাতী কোন মহিলা যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি উঁকি দেয় তাহলে আসমান
ও যমীনের মাঝের সব কিছু আলোকিত এবং সুরভিত হয়ে যাবে। আর তার মাথার ওড়না দুনিয়া ও তার
সব কিছু চেয়ে উত্তম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৭৯৬, ২৭৯২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
আল্লাহর রাস্তার প্রহরীর আমল মৃত্যুর পরও বৃদ্ধি
পেতে থাকে।
(ছ) ফাযালাহ্ ইবনু ’উবায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক লোকের মৃত্যুর
সাথে সাথে তার ’আমলের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু যে লোক আল্লাহর পথে (কোনো কাজে) নিয়োজিত
থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তার ’আমল নিঃশেষ হয় না, কিয়ামত পর্যন্ত তার ’আমল বৃদ্ধি
পেতে থাকে এবং সে কবরের কঠিন ’আযাব হতে নিরাপত্তা লাভ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২৩, সুনান আবূ দাঊদ ২৫০০, সুনান
আততিরমিযী ১৬২১, মুসনাদ আহমাদ ২৩৯৫১, সহীহ আল জামি‘ ৪৫৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কোন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় প্রহরারত অবস্থায়
মৃত্যুবরণ করলে, সে জাহান্নামে যাবে না।
(জ) আবূ আবস্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে যে বান্দার পদদ্বয় ধূলায় ধূসরিত
হয়, জাহান্নামের আগুন তার পদদ্বয় স্পর্শ করবে না। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮১১, ৯০৭ , আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৬০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১৩, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে ক্রন্দন
করে, তার জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করা অসম্ভব, যেমনিভাবে দোহনকৃত দুধ পুনরায় স্তনে প্রবেশ
করানো অসম্ভব। আর কোনো বান্দার শরীরে লেগে থাকা ধূলাবালু এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কস্মিনকালেও
মিলিতি হতে পারে না।
ইমাম নাসায়ী (রহঃ) অপর হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা
করেন যে, কোনো মুসলিমের নাকের অভ্যন্তরে আল্লাহর পথে ধূলাবালু ও জাহান্নামের ধোঁয়া
কক্ষনো একত্রিত হবে না। নাসায়ীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, (সেটা) কোনো বান্দার নাকে কক্ষনো
একত্রিত হতে পারে না। অনুরূপ কোনো বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও কৃপণতা কক্ষনো একত্রিত হতে
পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২৮, সুনান আননাসায়ী
৩১০৮, সুনান আততিরমিযী ১৬৩৩, মুসনাদ আহমাদ ১০৫৬০, সহীহ আল জামি ৭৭৭৮, সহীহ আত্ তারগীব
১২৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
(১৯) ছবর বা ধৈর্যধারণ করাঃ
রোগ-ব্যাধি, বিপদাপদ, দুঃখ-শোক প্রভৃতি ক্ষেত্রে
ধৈর্যধারণ করা অশেষ ছওয়াব ও জান্নাত লাভের মাধ্যম। তবে বিপদের প্রথম পর্যায়ে ধৈর্যধারণ
করতে হবে। নিম্নে ছবরের কয়েকটি ক্ষেত্র ফযীলত সহ উল্লেখ করা হলো।-
(ক) সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ
:
কোন মুসলিম ব্যক্তির শিশু সন্তান-সন্ততি মারা
গেলে সে যদি ধৈর্যধারণ করে তাহলে ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিমের তিনটি সন্তান মারা
গেলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তবে কসম পুরা করার জন্য (ক্ষণিকের জন্য হলেও) প্রবেশ
করানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭২৯, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৫১, ৬৬০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৬৩২, আহমাদ ৭২২৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৭৮, সুনান আত্ তিরমিযী
১০৬০, সুনান আননাসায়ী ১৮৭৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৬০৩, মুয়াত্ত্বা মালিক ৮০৫, আহমাদ ৭২৬৫,
ইবনু হিব্বান ২৯৪২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১৩৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৪১, সহীহ
আত্ তারগীব ১৯৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এক হাদীছে এসেছে,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের কিছু সংখ্যক মহিলাকে উদ্দেশ করে
বলেন, তোমাদের যে কারো তিনটি সন্তান মৃত্যুবরণ করবে, আর সে (এজন্য) ধৈর্যধারণ করে সাওয়াবের
প্রত্যাশা করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (এ কথা শুনে) তাদের একজন বলল, যদি দু’ সন্তান
মৃত্যুবরণ করে, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, হ্যাঁ। দু’জন করলেও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৩০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৩৪, আহমাদ ৭৭২১, সহীহ
আত্ তারগীব ১৯৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪৬১, ইসলামিক সেন্টার ৬৫১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদা এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আমার একটি পুত্র সন্তান মারা গেছে, যার জন্য আমি শোকাহত।
আপনি কি আপনার বন্ধু (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে এমন কোন কথা
শুনেছেন যা আমাদের হৃদয়কে খুশী করতে পারে? আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মুসলিমদের শিশুরা জান্নাতে সাগরের
মাছের মতো সাঁতার কাটতে থাকবে। যখন তারা তাদের পিতাকে পাবে তখন পিতার কাপড়ের কোণা টেনে
ধরবে। পিতাকে জান্নাতে না পৌঁছানো পর্যন্ত ছাড়বে না। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৯৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৩৫,
আহমাদ ১০৩৩২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১৪৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৪৩১, সহীহ আত্
তারগীব ১৯৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪৬২, ইসলামিক সেন্টার ৬৫১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অন্য এক হাদীছে এসেছে,
আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একজন মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! পুরুষ
আপনার বাণী শুনে উপকৃত হচ্ছে, (এ অবস্থায়) আপনি আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে
দিন, যেদিন আমরা আপনার খিদমাতে উপস্থিত হব। আপনি আমাদেরকে ওসব কথা শুনাবেন, যা আল্লাহ
আপনাকে বলেছেন। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দিন
ও স্থান নির্ধারণ করে উপস্থিত থাকতে বললেন। সে মতে মহিলাগণ সেখানে একত্রিত হলো। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ওসব কথাই শিক্ষা দিলেন, যা আল্লাহ তাঁকে শিক্ষা
দিয়েছেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যার তিনটি সন্তান তার আগে মৃত্যুবরণ করেছে,
সে তার ও জাহান্নামের মধ্যে আড়াল হবে। এ কথা শুনে তাদের একজন জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর
রসূল! যদি আগে দু’ সন্তান মৃত্যুবরণ করে এবং সে কথাটি দু’বার পুনরাবৃত্তি করল। তখন
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- যদি দু’জনও হয়, দু’জন হয়, দু’জন
হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৫৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৭৩১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৩৩, শু‘আবুল
ঈমান ৯২৮৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৮০৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-
৬৮১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
অন্য হাদীছে এসেছে,
কুররাহ্ আল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, এক ব্যক্তি তার ছেলেকে সঙ্গে করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট
আসতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি কি তোমার ছেলেকে বেশী
ভালবাসো? সে ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ তা’আলা আপনাকে ভালবাসেন যেমনভাবে
আমি তাকে ভালবাসি। (কিছু দিন পর একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেটিকে
তার পিতার সাথে দেখতে পেলেন না।) তিনি জিজ্ঞেস করলেন, অমুক ব্যক্তির সন্তানের কি হলো?
সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! তার ছেলেটি মারা গেছে। (এরপর ওই ব্যক্তি উপস্থিত
হলে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এ কথা পছন্দ করো না
যে, তুমি (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) জান্নাতের যে দরজাতেই যাবে, সেখানেই তোমার সন্তানকে
তোমার জন্য অপেক্ষারত দেখবে? এক ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! এ শুভসংবাদ কি শুধু
এ ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট, না সকলের জন্য? তিনি বললেন, সকলের জন্য। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৫৬, সুনান আননাসায়ী ১৮৭০, আহমাদ
১৫৫৯৫, সহীহ আত্ তারগীব ২০০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবু সিনান (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
আমার ছেলে সিনানকে আমি দাফন করলাম। কবরের কিনারায় আবু তালহা আল-খাওলানী (রহঃ) বসা
অবস্থায় ছিলেন। কবর হতে আমি যখন উঠে আসতে চাইলাম তখন আমার হাত ধরে তিনি বললেন, হে
আবু সিনান! তোমাকে কি আমি সুসংবাদ দিব না? আমি বললাম, অবশ্যই দিন। তিনি বললেন, আবু
মূসা আল-আশআরী (রাঃ) হতে যাহহাক ইবনু আবদুর রাহমান ইবনু আরযাব (রাহঃ) আমাকে বর্ণনা
করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দার কোন সন্তান
মারা গেলে তখন আল্লাহ্ তা’আলা তার ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানকে
কি ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। পুনরায় আল্লাহ্ তায়ালা প্রশ্ন করেন, তোমরা তার
হৃদয়ের টুকরাকে ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। পুনরায় তিনি প্রশ্ন করেন, তখন আমার
বান্দা কি বলেছে? তারা বলে, সে আপনার প্রতি প্রশংসা করেছে এবং ইন্না লিল্লাহি ওয়া
ইন্না ইলাইহি রাজিউন পাঠ করেছে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, জান্নাতের মধ্যে আমার এই বান্দার
জন্য একটি ঘর তৈরী কর এবং তার নাম রাখ “বাইতুল হামদ” বা প্রশংসালয়। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০২১, সহীহাহ ১৪০৮)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) বিপদে ধৈর্যধারণ:
বিপদে ছবর করা অত্যন্ত কঠিন। অথচ বিপদে ধৈর্যধারণ
করাই প্রকৃত ধৈর্য। এর পুরস্কারও অগণিত। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের কাজ বড় বিস্ময়কর। সে সুখের সময় যেমন আল্লাহর প্রশংসা ও শুকর করে, আবার বিপদেও তেমনি আল্লাহর প্রশংসা ও ধৈর্যধারণ করে। মু’মিনকে প্রতিটি কাজের জন্যই প্রতিদান দেয়া হয়। এমনকি তার স্ত্রীর মুখে খাবারের লোকমা তুলে দেয়ার সময়েও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৩৩, আহমাদ ১৪৮৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৫৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) রোগ-ব্যাধিতে ধৈর্যধারণ :
অসুখ-বিসুখে ধৈর্যধারণ করলে অশেষ ছওয়াব লাভ
করা যায় এবং গোনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
উম্মুল আলা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। তিনি
বললেনঃ হে আলার মা! সুসংবাদ গ্রহণ করো, আগুন যেভাবে সোনা-রূপার ময়লা দূর করে দেয় তদ্রুপ
মহান আল্লাহ কোনো মুসলিমের রোগের দ্বারা তার গুনাহসমূহ দূর করে দেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩০৯২, সহীহঃ সহীহাহ ৭১৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদীছে এসেছে,
উবাইদুল্লাহ ইবনু উমার আল কাওয়ারীরী (রহঃ)....জাবির
ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একদিন উম্মু সায়িব কিংবা উম্মুল মুসাইয়্যাব (রাযিঃ) এর কাছে গিয়ে বললেন, তোমার কি
হয়েছে হে উম্মু সায়িব অথবা উম্মুল মুসাইয়্যাব! কাঁদছ কেন? তিনি বললেন, ভীষণ জ্বর,
একে আল্লাহ বর্ধিত না করুন। তখন তিনি বললেন, তুমি জ্বরকে গালমন্দ করো না। কেননা জ্বর
আদম সন্তানের পাপরাশ মোচন করে দেয়, যেভাবে হাপর লোহার মরিচিকা দূরীভূত করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৫,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৩৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বান্দাকে অসুখ দিয়ে আল্লাহ তার গোনাহ মাফের
ব্যবস্থা করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন , ‘নিশ্চয়ই
আল্লাহ তাঁর বান্দাকে অসুখ দিয়ে পরীক্ষা করেন। এভাবে আল্লাহ তার সমস্ত গুনাহ মুছে দেন’।
(মুস্তাদরাক হাকেম হা/১২৮৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৯৩)।
বিপদগ্রস্ত কোন মুমিন ভাইকে সান্ত্বনা দিলে
অশেষ ছওয়াব অর্জিত হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘কোন মুমিন যদি কোন বিপদগ্রস্ত মুমিনকে
সান্ত্বনা দেয়, তাহ’লে আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন সম্মানিত পোশাক পরাবেন’। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩০৫/১৯৫; ইরওয়া হা/৭৬৪)।
উল্লেখ্য যে, বিপদের প্রথম অবস্থাতেই ধৈর্যধারণ
করতে হবে।
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা’আলা (মানুষকে উদ্দেশ করে) বলেন, হে আদম সন্তান!
তুমি যদি বিপদের প্রথম সময়ে ধৈর্যধারণ করো এবং আল্লাহর কাছে সাওয়াবের আশা পোষণ করো,
তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ছাড়া অন্য কোন সাওয়াবে সন্তুষ্ট হব না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৫৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৯৭)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঘ) চোখ হারিয়ে ধৈর্যধারণ :
মানুষের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চোখ।
এ চোখ বিনষ্ট হ’লে কিংবা এতে দৃষ্টি শক্তি না থাকলে মানুষ দুনিয়ার কোন কিছুই দেখতে
পায় না। পার্থক্য করতে পারে না ভাল-মন্দ। কাজেই এ চোখ মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত
এক অনুপম নে‘মত। এ চোখ কারো বিনষ্ট হ’লে এবং সে ধৈর্যধারণ করলে আল্লাহ তাকে জান্নাত
দান করবেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
আমি আমার বান্দা থেকে তার সম্মানিত বস্ত্ত তথা চোখ কেড়ে নিলে যদি সে তাতে ধৈর্যধারণ
করে, তাহ’লে আমি তাকে একমাত্র জান্নাত দেওয়া ছাড়া অন্য কিছু প্রদানে সন্তুষ্ট নই’।
(ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৯২০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০১০)।
(২০) আল্লাহর নাম মুখস্থ করাঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিরানব্বই-এক কম
একশ’টি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এ নামগুলো মুখস্থ করবে সে জান্নাতে যাবে। অপর বর্ণনায়
আছে, তিনি বিজোড়, (তাই) বিজোড়কে ভালবাসেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২২৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৩৬, ৭৩৯২, ৬৪১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৭০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৭,
আহমাদ ৭৫০৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৪৬, সুনান আততিরমিযী ৩৫০৬,
সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬০, আহমাদ ৭৬২৩, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ২৯২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
১৯৮১৬, ইবনু হিব্বান ৮১৭, সহীহ আল জামি‘ ২১৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২১) উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের
অধিকারী হওয়াঃ
চরিত্রবান লোক সকলের নিকটে সম্মানিত ও সমাদৃত।
তিনিই সর্বোত্তম ব্যক্তি। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের
মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৫৫৯, ৩৭৫৯, ৬০২৯, ৬০৩৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৯২৭,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩২১, আহমাদ ৬৫১৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৩৩০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮২৬, ইসলামিক সেন্টার ৫৯৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাদের চরিত্র উত্তম, তারাই পূর্ণ
ঈমানদার। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১০১, সুনান আবূ
দাঊদ ৪৬৮২, সুনান আততিরমিযী ১১৭৮, দারিমী ২৭৯২, আহমাদ ৭৪০২, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১১৬২,
সহীহুল জামি‘ ২১১০, সহীহ আত্ তারগীব ১৯২৩, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ৩০৩৭০, মুসনাদে
আবূ ইয়া‘লা ৭২৪০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৭৯, শু‘আবুল ঈমান ৭৯৮৩, সুনানুন্ নাসায়ী আর কুবরা
৯১৫৪, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৯/২৪৮৯, আল মু‘জামুল কাবীর ৮২৯, আল মু‘জামুস্ সগীর ৬০৫, আর
মুসতাদরাক ১, আস্ সুনানুল কুবরা ২১৩০২)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
আবুদ্ দারদা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের
দিন মু’মিনদের পাল্লায় ভারী যে বস্তুটি রাখা হবে, তা হলো উত্তম চরিত্র। আল্লাহ তা’আলা
অশ্লীলভাষী ও বাচালকে ঘৃণা করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৫০৮১, সুনান আততিরমিযী ২০০২, সুনান আবূ দাঊদ ৪৭৯৯, সহীহুল জামি‘ ১৩৫, সহীহ আত্ তারগীব
২৬৪১, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৮৭৬, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২০১৫৭, আস্ সুনানুল কুবরা
লিল বায়হাক্বী ২১৩১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উত্তম চরিত্রের অধিকারী লোকই অধিক হারে জান্নাতে
প্রবেশ করবে।
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস
করা হলো, কোন্ জিনিসের বদৌলতে বেশীর ভাগ লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি বলেনঃ তাক্বওয়া
ও সচ্চরিত্রের বদৌলতে। তাকে আরো জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ জিনিসের কারণে অধিকাংশ লোক জাহান্নামে
যাবে? তিনি বলেনঃ দু’টি অংগ- মুখ ও লজ্জাস্থান। (সুনান
ইবনু মাজাহ ৪২৪৬, আহমাদ ৭৮৪৭, ৮৮৫২, ৯৪০৩, সহীহাহ ৯৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২২) পিতামাতার সাথে সদাচরণ করাঃ
পিতা-মাতার মাধ্যমে মানুষ দুনিয়াতে আসে। তাই
তাদের প্রতি সদাচরণ করা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য করণীয়। এটা আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক
পসন্দনীয় আমলও বটে। এর বিনিময় হচ্ছে জান্নাত।
আবদুল্লাহ (রাঃ) ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ কাজ (’আমল)
আল্লাহর কাছে বেশী প্রিয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সঠিক সময়ে
সালাত আদায় করা। আমি বললাম, এরপর কোন্ কাজ?
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি আবার
জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোন্ কাজ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর
পথে জিহাদ করা। রাবী [ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)] বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
আমাকে এসব উত্তর দিলেন। আমি যদি আরও জিজ্ঞেস করতাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
আমাকে আরও কথা বলতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৮,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৩-১৫৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৮৫, সুনান আননাসায়ী ৬১০, আহমাদ ৩৮৯০, ইরওয়া ১১৯৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩৯৭, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ১৫৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যত্র তিনি বলেন,
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তার নাক ধুলোয় মলিন হোক, তার নাক
ধূলোয় মলিন হোক, তার নাক ধূলোয় মলিন হোক (তথা অপদস্থ হোক)। তিনি জনৈক সাহাবী কর্তৃক
জিজ্ঞাসিত হলেন, হে আল্লাহর রসূল! কে সে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
যে ব্যক্তি নিজের পিতা-মাতার কোন একজনকে বা উভয়কে বার্ধক্য অবস্থায় পেল, অথচ (তাদের
খিদমাত করে) সে জান্নাতে প্রবেশ করল না। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৪৯১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৪০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫১, সহীহুল জামি‘ ৩৫১১, সহীহ আত্ তারগীর ওয়াত
তারহীব ২৪৯০, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২৭৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৩২৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পিতামাতার সেবা করা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ
করার চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
মু’আবিয়াহ্ ইবনু জাহিমাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, তাঁর পিতা জাহিমাহ্ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস
করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি জিহাদে অংশগ্রহণের ইচ্ছা করি, এজন্য আপনার সাথে পরামর্শ
করতে এসেছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার মা জীবিত
আছেন কী? তিনি বললেনঃ জ্বী হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ মায়ের
সেবাকেই অবলম্বন করো। কেননা জান্নাত তাঁর পায়ের কাছে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৩৯, আহমাদ ১৫৫৩৮, সুনান আননাসায়ী ৩১০৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৮১,
সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৪৮৫, ইরওয়া ৫/২১, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৪৩১২, আল
মুসতাদরাক ৭২৪৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
তায়সাল ইবনে মায়্যাস (রহঃ) বলেন, আমি যুদ্ধ-বিগ্রহে
লিপ্ত ছিলাম। আমি কিছু পাপকাজ করে বসি যা আমার মতে কবীরা গুনাহর শামিল। আমি তা ইবনে
উমার (রাঃ)-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি জিজ্ঞেস করেন, তা কি? আমি বললাম, এই এই ব্যাপার।
তিনি বলেন, এগুলো কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত নয়। কবীরা গুনাহ নয়টিঃ (১) আল্লাহর সাথে
শরীক করা, (২) নরহত্যা, (৩) জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন, (৪) সতী-সাধ্বী নারীর বিরুদ্ধে
যেনার মিথ্যা অপবাদ রটানো, (৫) সূদ খাওয়া, (৬) ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা, (৭) মসজিদে
ধর্মদ্রোহী কাজ করা, (৮) ধর্ম নিয়ে উপহাস করা এবং (৯) সন্তানের অসদাচরণ যা পিতা-মাতার
কান্নার কারণ হয়। ইবনে উমার (রাঃ) আমাকে বলেন, তুমি কি জাহান্নাম থেকে দূরে থাকতে
এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চাও? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! আমি তাই চাই। তিনি বলেন, তোমার
পিতা-মাতা কি জীবিত আছেন? আমি বললাম, আমার মা জীবিত আছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ!
তুমি তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বললে এবং তার ভরণপোষণ করলে তুমি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ
করবে, যদি কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকো। (আল-আদাবুল
মুফরাদ ৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম এবং এতে কুরআন পাঠ
করতে শুনলাম। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এ ব্যক্তি কে? মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বললেনঃ হারিসাহ্
ইবনু নু’মান (রাঃ)। এটা শুনে সাহাবায়ি কিরামের মনে প্রশ্ন জাগল, হারিসাহ্ কিভাবে এত
মর্যাদা লাভ করল? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ পুণ্যের প্রতিফল এরূপই,
পুণ্যের প্রতিফল এরূপই। সে তার মায়ের সাথে সকল মানুষের তুলনায় সর্বোত্তম সদাচরণ করত।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯২৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৪১৯,
শু‘আবুল ঈমান ৭৮৫১, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯১৩, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাকব ২০১১৯, আহমাদ
২৫১৮২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭০২৫, শু‘আবুল ঈমান ৭৮৫১ সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৮২৩৩,
আল মুসতাদরাক ৭২৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! সন্তানের ওপর মা-বাবার কি দাবি আছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাঁরা দু’জন তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৪১, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৬৬২, য‘ঈফুল জামি‘ ৬০৯৮)।
(২৩) আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করাঃ
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা জান্নাতে প্রবেশ
করার অন্যতম মাধ্যম।
আবূ আইয়ূব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক সাহাবী
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেনঃ আমাকে এমন একটি ‘আমলের কথা বলুন যা
আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার
কী হয়েছে! তার কী হয়েছে! এবং বললেনঃ তার দরকার রয়েছে তো। তুমি আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে,
তাঁর সঙ্গে অপর কোন কিছুকে শরীক করবে না। সালাত আদায় করবে, যাকাত আদায় করবে, আত্মীয়তার
সম্পর্ক অটুট রাখবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৩৯৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবু আইউব আনসারী (রাঃ) বলেন, এক বেদুইন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক সফরে তার সাথে সাক্ষাত করে বললো, যা আমাকে বেহেশতের
নিকটবর্তী এবং দোযখের দূরবর্তী করবে তা আমাকে অবহিত করুন। তিনি বলেনঃ তুমি আল্লাহর
ইবাদত করো, তার সাথে কিছু শরীক করো না, নামায কায়েম করো, যাকাতা দাও এবং আত্মীয়তার
বন্ধন অক্ষুন্ন রাখো। (আল-আদাবুল মুফরাদ ৪৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা সকল মাখলূক সৃষ্টি
করলেন। আর যখন তা থেকে অবসর হলেন, তখন রহিম তথা ’’আত্মীয়তা’’ উঠে দাঁড়াল এবং আল্লাহ
রহমানুর্ রহীম-এর কোমর ধরল। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ থামো, কি চাও বলো? ’’আত্মীয়তা’’
জিজ্ঞেস করল, এ স্থান তার, যে তোমার কাছে আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ থেকে রেহাই চায়। আল্লাহ
তা’আলা বললেনঃ তুমি কি এ কথায় সম্মত আছ, যে ব্যক্তি তোমাকে বহাল ও সমুন্নত রাখবে, তার
সাথে আমিও সম্পর্ক বহাল রাখব; আর যে তোমাকে ছিন্ন করবে, আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন
করব? রহিম তথা আত্মীয়তা উত্তর দিল, হ্যাঁ, রাযি আছি, হে আমার প্রভু! আল্লাহ তা’আলা
বললেনঃ তাহলে তোমার সাথে আমার এ ওয়া’দাই রইল। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯১৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮৩০, ৭৫০২; সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৪১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫৪, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৩৬, আল মুসতাদরাক
৭২৮৬, সহীহুল জামি‘ ২৬৪২, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৫২৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্
২৭৪১, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২৮৭, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’’রহিম’’ (আত্মীয়তা) শব্দটি আল্লাহ
তা’আলার গুণবাচক নাম ’’রহমান’’ থেকে উদ্ভূত। আল্লাহ তা’আলা ’’রহম’’ (আত্মীয়তা)-কে বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি তোমাকে সংযোজন করে, আমি তার সাথে সংযোজিত হবো; আর যে ব্যক্তি তোমাকে ছিন্ন
করবে আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৪৯২০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৮৮, সুনান তিরমিযী ১৯২৪, সিলসিলাতুস্
সহীহাহ্ ৯২২, সহীহুল জামি‘ ৩৫৪৮, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৫৩০, সহীহ আল আদাবুল
মুফরাদ ৩৯, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৩৯৪, আহমাদ ৯২৭৩, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৪৫৯৯,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪২, শু‘আবুল ঈমান ৭৯৪০, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/২২০, আর মু‘জামুল কাবীর
লিত্ব ত্ববারানী ৭১৪, আল মুসতাদরাক ৭২৬৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-
৫৪৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “রহিম’’ তথা আত্মীয়তা আল্লাহ তা’আলার ’আরশের
সাথে ঝুলন্ত আছে এবং বলছে, যে ব্যক্তি আমাকে সংযোজন করবে তথা আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল
রাখবে, আল্লাহ তা’আলা তার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করবেন এবং যে ব্যক্তি আমাকে ছিন্ন করবে
আল্লাহ তা’আলা তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯২১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৮৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৪১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫৫, সহীহুল জামি‘ ৩৫৪৯, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৩৯৬,
মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৪৪৪৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪৫, শু‘আবুল ঈমান ৭৯৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬২৮৮, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জুবায়র ইবনু মুত্ব’ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী
জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪৯২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪১৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৫৫৫, সুনান আবূ দাঊদ ১৬৯৬, সুনান আততিরমিযী ১৯০৯, সহীহুল জামি‘ ৭৬৭১, সহীহ
আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৫৪০ সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৪৫, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২০২৩৪,
মুসনাদুল বাযযার ৩৪০৫, আহমাদ ১৬৭৩২, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৩৯২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৫৪,
শু‘আবুল ঈমান ৭৯৫২, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ১৪৯১, আর মু‘জামুল আওসাত্ব ৯২৮৭,
আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৪) প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করাঃ
প্রতিবেশীর সাথে উত্তম ব্যবহার করার জন্য রাসূল
(ছাঃ) বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, জিবরীল (আঃ) এসেই আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে
উপদেশ দেন। মনে হচ্ছিল তিনি যেন প্রতিবেশীকে আমার উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবেন।
মানুষ অধিকহারে নফল ছালাত-ছিয়াম আদায় ও দান-ছাদাক্বা
করেও যদি প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার করে তাহলে সে জান্নাতে যেতে পারবে না।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল : হে আল্লাহর রসূল!
অমুক মহিলা সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে, সে বেশি বেশি সালাত আদায় করে, সওম পালন করে এবং
দান-দক্ষিণায় খুব প্রসিদ্ধি লাভ করেছে; কিন্তু নিজের মুখ দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে জাহান্নামে যাবে। লোকটি জিজ্ঞেস করল
: হে আল্লাহর রসূল! অমুক মহিলা, যার সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে, সে কম সওম পালন করে,
কম দান-দক্ষিণা করে এবং কম সালাত আদায় করে। সে শুধু কয়েক টুকরো পনির আল্লাহর রাস্তায়
দান করে; কিন্তু নিজের কথার দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে জান্নাতে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৪৯৯২, বায়হাক্বী ৯৫৪৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৯০, আহমাদ ৯৬৭৫, সহীহ ইবনু হিব্বান
৫৫৭৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৬০, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার হবে না,
আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার হবে না, আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার হবে না। জিজ্ঞেস করা হলো,
হে আল্লাহর রসূল! কে সে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যার প্রতিবেশী
তার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪৯৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৭০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৪৬, সহীহুল জামি ৭১০২, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৫০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩০০০, আহমাদ
৭৮৭৮, শু‘আবুল ঈমান ৯৫৩৪, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৭৯৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৭৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এ ধরনের লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী
তার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪৯৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৬, সহীহুল জামি‘ ৭৬৭৫,
সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৮৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৭৫, আহমাদ ৮৮৫৫, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা
৬৪৯০, শু‘আবুল ঈমান ৯৫৩৫, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/২৪, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী
১০৪০১, আল মুসতাদরাক ২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih।
(২৫) ইয়াতীম প্রতিপালন করাঃ
সমাজের অনাথ-ইয়াতীম শিশুরা হয়ে থাকে অবহেলিত।
তাদের দেখা-শুনা ও প্রতিপালনের কেউ থাকে না। ফলে তারা হয়ে ওঠে দুষ্টু চরিত্রের। বখাটেপনা
তাদের পেয়ে বসে। এদের দ্বারা সমাজ কলুষিত হয়।
রাসূল (ছাঃ) এদের রক্ষার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ
দিয়েছেন। তাদের প্রতিপালনে অশেষ ছওয়াবের কথাও উল্লেখ করেছেন। সেই সাথে আরেক শ্রেণী
আছে স্বামীহীনা বিধবা মহিলা। তাদের ভরণ-পোষণ, জৈবিক চাহিদা পূরণ এবং অনেক ক্ষেত্রে
নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণেরও ব্যবস্থা থাকে না। এ শ্রেণীর মানুষকে রক্ষার জন্য রাসূল (ছাঃ)
বিশেষভাবে আদেশ দিয়েছেন। এদের দেখাশুনায়ও অনেক ছওয়াব রয়েছে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিধবা ও নিঃস্বদের জন্য উপার্জনকারী আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গকারীর মতো। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এটাও বলেছেন যে, বিধবা ও নিঃস্বদের জন্য উপার্জনকারী রাতজাগা ’ইবাদাতকারীর মতো, যে অলসতা করে না এবং ঐ সায়িমের (রোযাদারের) মতো যে কক্ষনো সওম ভঙ্গ করে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৫১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০০৬, ৬০০৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮২, আহমাদ ৮৭৩২, নাসায়ী ২৫৭৭, ইবনু মাজাহ ২১৪০, তিরমিযী ১৯৬৯, সহীহুল জামি‘ ৩৬৮০, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৪৬, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৯৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৮৮২, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাকব ২০৫৯২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪২৪৫, শু‘আবুল ঈমান ১১০২৯, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ২৩৫৮, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৩০৬, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩০৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৯৮, ইসলামিক সেন্টার ৭২৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সাহল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ও ইয়াতীমদের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকবো। এ
বলে তিনি তাঁর মধ্যমা ও তর্জনী (আঙ্গুল) একত্র করলেন। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবু হুরাইরাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আত্মীয় বা অনাত্মীয় ইয়াতীমের রক্ষণাবেক্ষণকারী ও আমি জান্নাতে এ দু’ আঙ্গুলের ন্যায়
কাছাকাছি থাকব। বর্ণনাকারী মালিক (রহঃ) হাদীস বর্ণনার সময় শাহাদাত ও মধ্যম অঙ্গুলির
দ্বারা ইঙ্গিত করে দেখালেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭৩৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৯৯, ইসলামিক সেন্টার ৭২৫২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৬) কন্যা সন্তান প্রতিপালন করাঃ
কন্যা সন্তানকে সমাজে হীন দৃষ্টিতে দেখা হয়।
অথচ কন্যা সন্তান প্রতিপালন করা জান্নাত লাভের উপায়।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দু’টো কন্যাকে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া
পর্যন্ত লালন-পালন করবে, সে ব্যক্তি ও আমি কিয়ামতের দিন এভাবে একত্রিত হব, যেমন এ দু’টো
অঙ্গুলি। এ বলে তিনি নিজের দু’টো আঙ্গুল একত্রে মিলালেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৩১,
সুনান আততিরমিযী ১৯১৪, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৯৭, সহীহুল জামি‘ ৬৩৯১, সহীহ আত্ তারগীব
১৯৭০, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৬৯০, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৪৩৯, শু‘আবুল ইমাম
৮৬৭৪, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৫৫৭, আল মুসতাদরাক ৭৩৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪৫৬, ইসলামিক
সেন্টার ৬৫০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি আরো বলেন,
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক দুটি মেয়ে সন্তানকে
লালন-পালন করবে, আমি এবং সে এভাবে একসাথে পাশাপাশি জান্নাতে যাব। এই বলে তিনি নিজের
হাতের দুটি আঙ্গুল একত্র করে ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন। (সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৯১৪, সহীহাহ ২৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৭) আল্লাহর জন্য ভালবাসা স্থাপন
করাঃ
সমাজের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে
ওঠে। একে অপরের সাথে সম্প্রীতি-সৌহার্দ্যের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এই সম্পর্ক যদি আল্লাহর
সন্তুষ্টি লাভের মানসে হয়ে থাকে তাহ’লে তার বিনিময় হচ্ছে জান্নাত।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ
যারা আমার সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশে পরস্পরকে ভালোবাসে, আমার উদ্দেশে সভা-সমাবেশে উপস্থিত
হয়ে আমার গুণগান করে, আমার উদ্দেশে পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করে এবং আমারই ভালোবাসা অর্জনের
জন্য নিজেদের সম্পদ পরস্পরের মধ্যে ব্যয় করে, তাদেরকে ভালোবাসা আমার জন্য ওয়াজিব হয়।
আর তিরমিযীর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেন, “আমার মহত্ব ও সম্মানের খাতিরে যারা
পরস্পর মহববত করে, তাদের জন্য পরকালে বিরাট নূরের মিনার হবে, যা দেখে নবী ও শাহীদগণ
ঈর্ষা করবেন’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০১১, মুওয়াত্ত্বা
মালিক ৩৫০৭, সুনান আততিরমিযী ২৩৯০, সহীহ আত্ তারগীব ৩০১৯, আহমাদ ২২০৮০, শু‘আবুল ঈমান
৮৯৯৩, হিলইয়াতুল আওলিয়া ২/১৩১, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৩৩৫৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
তিনি আরো বলেন,
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা বলবেন,
সে লোকেরা কোথায়? যারা আমার ইয্যতের খাতিরে একে অপরকে ভালোবাসত। আজ আমি তাদেরকে আমার
ছায়ায় জায়গা দেব। আজ আমার ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া নেই। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৩১,
আহমাদ ৮৪৫৫, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৫০৪, সহীহুল জামি‘ ১৯১৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩০১১, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৫৭৪, শু‘আবুল ঈমান ৪৯৯০, দারিমী ২৭৫৭, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৬/৩৪৪, আস্ সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১৫৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদীছে এসেছে,
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছায়
রওয়ানা করল। সে আরেক গ্রামে থাকে। আল্লাহ তা’আলা রাস্তায় তার অপেক্ষায় একজন মালাক
(ফেরেশতা) বসিয়ে দিলেন। সে যখন সেখানে পৌঁছল, মালাক জিজ্ঞেস করল, কোথায় যেতে ইচ্ছে
করেছ? সে বলল, ঐ গ্রামে আমার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে। মালাক বলল, তার কাছে তোমার
কোন পাওনা আছে যে, তুমি তা আনবে? সে বলল, না, আমি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাকে
ভালোবাসী। তখন মালাক বলল : আমি আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তোমার কাছে প্রেরিত হয়েছি।
আল্লাহ তোমাকে এ সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আল্লাহ তা’আলাও তোমাকে অনুরূপ ভালোবাসেন, যেরূপ
তুমি তাকে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য ভালোবেসেছ। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৭,
সহীহ আত্ তারগীব ৩০১৭, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ৩৪২২৩, আহমাদ ১০২৪৭, সহীহ ইবনু হিব্বান
৫৭২, শু‘আবুল ঈমান ৯০০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩১৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৬৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
তিনি আরো বলেন,
উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার বান্দাদের মধ্যে কিছু লোক এমন
আছে যে, তাঁরা নবীও নন, শাহীদও নন; কিন্তু কিয়ামতের দিন নবীগণ ও শাহীদগণ আল্লাহ তা’আলার
কাছে তাঁদের মর্যাদা দেখে ঈর্ষা করবেন। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল!
তাঁরা কারা? আমাদেরকে বলুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাঁরা সেসব
লোক, যারা শুধু আল্লাহ তা’আলার ক্বুরআনের খাতিরে একে অপরকে ভালোবাসে, তাদের মধ্যে কোন
নিকট আত্মীয়তার সম্পর্কও নেই, তাঁদের পরস্পরের মধ্যে ধন-সম্পদের লেনদেনের সম্পর্কও
নেই। আল্লাহর কসম! তাদের মুখমণ্ডলে উজ্জ্বল হবে অথবা তাঁরা স্বয়ং আলোকবর্তিকা হবে।
তারা সে সময় ভীত-সন্ত্রস্ত হবে না, যখন সকল মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হবে; তাঁরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত
হবে না, যখন সকল মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এ আয়াত পাঠ করলেনঃ অর্থাৎ- “সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুগণের কোন ভয় নেই। তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও
হবে না’’- (সূরাহ্ ইউনুস ১০ : ৬২)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৫০১২, সুনান আবূ দাঊদ ৩৫২৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩০২৬, আহমাদ ২২৮৯৭, মুসনাদে আবূ
ইয়া‘লা ৬৮৪২, হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/৫, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ১১২৩৬, শু‘আবুল ঈমান
৮৯৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৮) মুসলিম ভাইয়ের কষ্ট দূরীভূত
করাঃ
দুনিয়াতে মুসলিম ভাইয়ের দুঃখ-দুর্দশা দূর করা
বা তার কোন কষ্ট লাঘব করা আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা লাভ করার মাধ্যম।
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম মুসলিমের ভাই। কোন
মুসলিম না কোন মুসলিমের ওপর জুলুম করবে, না তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে। যে ব্যক্তি
কোন মুসলিম ভাইয়ের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তা’আলা তার অভাব মোচন করবেন। যে
ব্যক্তি কোন মুসলিম ভাইয়ের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার দুঃখ-কষ্ট
লাঘব করবেন। যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ তা’আলা
কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৪৯৫৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৪৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮০, সুনান আততিরমিযী ১৫২৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৫০৪,
সুনান আবূ দাঊদ ৪৮৯৩, সহীহুল জামি‘ ৬৭০৭, শু‘আবুল ঈমান ১১১৫০, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা
৭২৯১, হিলইয়াতুল আওলিয়া ২/১৯৫, আল মু‘জামুল কাবীর ১২৯৫৯, আস্ সুনানুল কুবরা ১২৪৮৮,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪২, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে দুনিয়ার বিপদসমূহের মধ্যকার কোনো
বিপদ থেকে রক্ষা করবে, এর প্রতিদানে আল্লাহ কিয়ামতের দিনের বিপদসমূহের কোনো বিপদ থেকে
তাকে রক্ষা করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো গরীব লোকের সঙ্গে (পাওনা আদায়ে) নম্র ব্যবহার
করবে, আল্লাহর তার সঙ্গে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে নম্র ব্যবহার করবেন। যে ব্যক্তি
কোনো মুসলিমের দোষত্রুটি গোপন করে রাখবে আল্লাহও তার দোষত্রুটি দুনিয়া ও আখিরাত উভয়
স্থানে গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে, আল্লাহও ততক্ষণ তাঁর বান্দার
সাহায্য করে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯৪৬, সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৯৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি আরো বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মু’মিনের দুনিয়ার
বিপদসমূহের কোন একটি বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তা’আলা তার আখিরাতের বিপদসমূহের মধ্য
হতে একটি (কঠিন) বিপদ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত লোকের অভাব (সাহায্যের
মাধ্যমে) সহজ করে দিবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিনে তাকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য
প্রদান করবেন। যে ব্যক্তি কোন মু’মিনের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে (প্রকাশ করবে না), আল্লাহ
তা’আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাদেরকে
ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে। যে ব্যক্তি
জ্ঞান অন্বেষণের জন্য কোন পথ বা পন্থায় অনুপ্রবেশ করার সন্ধান করে, আল্লাহ তা’আলা এর
বিনিময়ে তার জান্নাতে প্রবেশ করার পথ সহজ করে দেন। যখন কোন দল আল্লাহর কোন ঘরে সমবেত
হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং জ্ঞানচর্চা করে, তাদের ওপর আল্লাহর তরফ থেকে স্বস্তি
ও প্রশান্তি নাযিল হতে থাকে, আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয় এবং মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ)
তাদেরকে ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তা’আলা মালায়িকাহ্’র নিকট তাদের উল্লেখ করেন। আর যার
আমল তাকে পিছিয়ে দেয় তার বংশ তাকে এগিয়ে দিতে পারে না। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৯,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬০৮, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৯) ছয়টি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী
হওয়াঃ
ছয়টি এমন গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, কোন ব্যক্তি
সেগুলির অধিকার হলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব গ্রহণ
করবেন। উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের পক্ষ থেকে আমাকে ছয়টি জামানাত দাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের
জামিন হব- ১. যখন তোমরা কথা বলবে, সত্য বলবে, ২. যখন প্রতিশ্রুতি দেবে, প্রতিশ্রুতি
পালন করবে, ৩. যখন তোমাদের কাছে গচ্ছিত রাখা হবে, তা পরিশোধ করবে, ৪. নিজের লজ্জাস্থানসমূহকে
হিফাযাত করবে, ৫. নিজ দৃষ্টি অবনমিত রাখবে, ৬. নিজের হস্তদ্বয়কে আয়ত্তে রাখবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৮৭০, শু‘আবুল ঈমান ৪৮০২, আল মুসতাদরাক
৮০৬৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৭১, আহমাদ ২২৭৫৭, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৪৭০, সহীহ আত্ তারগীব
ওয়াত্ তারহীব ১৯০১, সহীহুল জামি‘ ১০১৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩০৬৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
নিম্নোক্ত কাজগুলো
করলেও জান্নাতে যাওয়া যায়।
আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করার পর আমি তাঁর কাছে গেলাম।
তাঁর ‘চেহারা মুবারাক’ দেখেই আমি চিনতে পেরেছি এ কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা হতে পারে না।
সর্বপ্রথম তিনি যে কথা বলেছিলেন তা ছিল, ‘‘হে লোকেরা! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় করো,
ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদাচরণ করো, রাতের বেলা যখন লোকেরা ঘুমিয়ে
থাকবে, তখন তাহাজ্জুদের সালাত আদায় কর, তাহলে
প্রশান্তচিত্তে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৯০৭, সুনান আতআত্ তিরমিযী ২৪৮৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৩২৫১, ইবনু আবী শায়বাহ্
৩৫৮৪৭, আহমাদ ২৩৭৮৪, দারিমী ১৪৬০, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪২৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ৬১৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রহমানের ‘ইবাদাত করো, খাবার
দাও, মুসলিমদেরকে সালাম দাও; তোমরা সহজে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯০৮, সুনান আত্ তিরমিযী ১৮৫৫, সুনান
ইবনু মাজাহ্ ৩৬৯৪, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৭১, সহীহ আত্ তারগীব ৯৪৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(৩০) মহিলাদের জন্য স্বামীর আনুগত্য করাঃ
মুসলিম মহিলাদের জন্য স্বামীর আনুগত্য করা
জান্নাত লাভের মাধ্যম। হুছায়েন ইবনে মেহছান তার ফুফু আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,
তার ফুফু একদা তার কোন প্রয়োজনে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গেলেন। রাসূল (ছাঃ) তার প্রয়োজন
পূর্ণ করলেন।
অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তোমার স্বামী আছে
কি? সে বলল, হ্যাঁ আছে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি তার কেমন স্ত্রী? সে বলল, আমি তার
খিদমত করতে কম করি না, তবে যদি আমি তার ব্যাপারে অপারগ হই। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন,
তুমি যা বলছ, সে ব্যাপারে চিন্তা কর, তুমি তার থেকে কোথায় যাবে? নিশ্চয়ই সে তোমার জান্নাত
ও জাহান্নাম’। (মিশকাত ৪৯৪১; সিলসিলা ছহীহা ২৬১২, ১৯৩৪)।
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে,
রমাযানের সিয়াম পালন করে, গুপ্তাঙ্গের হিফাযাত করে, স্বামীর একান্ত অনুগত হয়। তার জন্য
জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশের সুযোগ থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩২৫৪, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৬/৩০৮)।
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে তার সাথে বিছানায় শোয়ার জন্য আহবান
করার পর যদি স্ত্রী না আসে এবং স্বামী তার উপর অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত কাটায়, তাহলে
সকাল পর্যন্ত ফিরিশতাগণ ঐ স্ত্রীকে অভিসম্পাত করতে থাকেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৪৩০, ৩৪৩২,
৩৪৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪০৩, ইসলামীক সেন্টার ৩৪০২, আহমদ:
(২/৪৩৯); দারেমী, হাদীস নং ২২২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪০৩, ইসলামীক সেন্টার ৩৪০২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
কোনো নারী অকারণে তালাক কামনা করলে
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে নারী তার স্বামীর কাছে একান্ত অসুবিধা ছাড়া
তালাক দাবি করে, তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণ হারাম। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২০৫৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩২৭৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৮৬,
১১৮৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২২২৬, আহমাদ ২১৮৭৪, ২১৯৩৪, দারেমী ২২৭০, ১৩১৬, ইরওয়াহ
২১৩৫, ২০৩৫, সহীহ আবী দাউদ ১৯২৮, আহমাদ ২২৪৪০,
সহীহ আল জামি ২৭০৬, সহীহ আত্ তারগীব ২০১৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩১) ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দেওয়াঃ
ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দানকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ
তা‘আলা ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি লোকেদেরকে ধার দিত। সে তার
কর্মচারীকে বলে দিত, কোনো পাওনাদারকে (ঋণ পরিশোধে) অক্ষম দেখলে তাকে মুক্তি দিয়ে দিও।
এর ওয়াসীলায় হয়তো আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে মুক্তি দিবেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ অতঃপর (মৃত্যুর পর) ঐ ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে পৌঁছলে আল্লাহ তা’আলা
তাকে মুক্তি করে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯০১,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৭৮, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৮৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬২, আহমাদ ৭৫৭৯, সহীহ আল জামি‘
৪৪৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৮৫৩, ইসলামিক সেন্টার ৩৮৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যত্র তিনি বলেন,
আবূল হায়সাম খালিদ ইবনু খিদাশ ইবনু আজলান
(রহঃ) ..... আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ কাতাদাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, আবূ কাতাদাহ্ (রাযিঃ)
একবার তার কাছ থেকে ঋণ গ্রহণকারী একজনকে খোঁজ করেন। সে তার থেকে লুকিয়ে ছিল। পরে তিনি
তাকে পেয়ে যান। সে বললঃ আমি অভাবগ্রস্ত। তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ! সে বললঃ আল্লাহর
শপথ। তিনি বললেনঃ তাহলে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ
যে ব্যক্তি এটা চায় যে, আল্লাহ তাকে কিয়ামত দিবসের দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি দিক সে
যেন ঋণগ্রস্ত অক্ষম লোকের সহজ ব্যবস্থা করে কিংবা ঋণ মওকুফ করে দেয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৮৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৩,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯০২, সহীহ আত্ তারগীব ৯০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৮৫৫, ইসলামিক
সেন্টার ৩৮৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি আরো বলেন,
আবূ কাতাদাহ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অক্ষম
ঋণীকে সময় দিবে অথবা ঋণ মাওকূফ করে দেবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামত দিবসের দুঃখ-কষ্ট হতে
তাকে মুক্তি দান করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯০৩,
সহিহ মুসলিম ১৫৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,
‘যে
ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে অথবা তার ঋণ মাফ করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা
তাকে ক্বিয়ামতের দিন রহমতের এক বিশেষ ছায়া দান করবেন’। (মুসলিম,
বাংলা মিশকাত ২২৭৮)।
(৩২) গোলাম আযাদ করাঃ
কোন মুসলিম দাসকে মুক্ত করলে তা জাহান্নাম
থেকে পরিত্রাণ লাভের উপায় হিসাবে গণ্য হয়।
শুরাহবীল ইবনুস সিমত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি কা’ব (রাঃ)-কে বললাম, হে কাব ইবনে মুররা! আমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস বর্ণনা করুন এবং সাবধানতা অবলম্বন করুন। তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি একটি মুসলিম
গোলাম আযাদ করলো, সে তার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভের বিনিময় হবে। আজাদকৃত দাসের
প্রতিটি হাড় তার হাড়ের প্রতিদান হবে। যে ব্যক্তি দু’জন মুসলিম দাসীকে আযাদ করবে তারা
তার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভের বিনিময় হবে। তাদের দু’টি হাড় তার একটি হাড়ের প্রতিদান
হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫২২, সুনান আবূ দাউদ ৩৯৬৫, আহমাদ
১৭৫৯৭, ১৭৫৯৯, ১৮৪১৭, রাওদুন নাদীর ৩৫৩, সহীহাহ ২৬১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ কোন মুসলিম ক্রীতদাস মুক্ত করলে আল্লাহ
সেই ক্রীতদাসের প্রত্যেক অঙ্গের বিনিময়ে তার এক একটি অঙ্গ (জাহান্নামের) আগুন হতে মুক্ত
করবেন। সাঈদ ইবনু মারজানা (রাঃ) বলেন, এ হাদীসটি আমি আলী ইবনু হুসাইনের খিদমতে পেশ
করলাম। তখন ‘আলী ইবনু হুসাইন (রাঃ) তাঁর এক ক্রীতদাসের কাছে উঠে গেলেন যার বিনিময়ে
‘আবদুল্লাহ ইবনু জা‘ফার (রাঃ) তাকে দশ হাজার দিরহাম কিংবা এক হাজার দ্বীনার দিতে চেয়েছিলেন
এবং তিনি তাকে মুক্ত করে দিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২৫১৭, ৬৭১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৬৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫০৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২৩৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩৫১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(৩৩) তওবা করাঃ
তওবা করা ওয়াজেব। এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে
প্রচুর প্রমাণ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে উম্মতের ঐকমত্যও বিদ্যমান। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
(ক) হে
ঈমানদারগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে
পার। (সুরা নূর ৩১)।
(খ) তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট (পাপের জন্য)
ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর। (সূরা হূদ ৩)।
(গ) হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর
বিশুদ্ধ তওবা। (সূরা তাহরীম ৮)।
(ঘ) সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা
ঘোষণা কর এবং তাঁর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি অধিক তাওবা গ্রহণকারী। (সূরা নাসর ৩ নং আয়াত)।
(ঙ) আল্লাহর কাছে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়
আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা নিসা ১০৬ আয়াত)।
(চ) আর যে কেউ মন্দ কার্য করে অথবা নিজের প্রতি
জুলুম করে, কিন্তু পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে আল্লাহকে অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু-রূপে
পাবে। (সূরা নিসা ১১০ নং আয়াত)।
(ছ) আল্লাহ এরূপ নন যে, তুমি তাদের মধ্যে থাকা
অবস্থায় তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তিনি এরূপ নন যে, তাদের ক্ষমা প্রার্থনা করা
অবস্থায় তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল ৩৩ নং
আয়াত)।
(জ) যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের
প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।
আর আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারে? এবং তারা যা [অপরাধ] করে ফেলে তাতে জেনে-শুনে
অটল থাকে না। (সূরা আলে ইমরান ১৩৫ নং আয়াত)।
(ঝ) যারা সাবধান [পরহেজগার] হয়ে চলে তাদের জন্য
রয়েছে উদ্যানসমূহ যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, তাদের জন্য
পবিত্র সঙ্গিনী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তার দাসদের সম্বন্ধে সম্যক
অবহিত। যারা বলে, ’হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা বিশ্বাস করেছি; অতএব আমাদের অপরাধসমূহ
ক্ষমা কর এবং দোযখের শাস্তি থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর।’ যারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত,
দানশীল এবং রাত্রির শেষাংশে ক্ষমা-প্রার্থী। (সূরা আলে
ইমরান ১৫-১৭ আয়াত)।
যে ব্যক্তি অপরাধ করার পর আল্লাহর নিকটে ক্ষমা
চায় সে আল্লাহর ভালবাসা লাভ করে। এতে আল্লাহ যত বেশী খুশী হন, অন্য কোন ইবাদতে তিনি
তত খুশী হন না।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক আদম সন্তানই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের
মধ্যে তওবাকারীগণ উত্তম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৫১, সুনান
আততিরমিযী ২৪৯৯, আহমাদ ১২৬৩৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন গুনাহ করার পর তা স্বীকার করে
(অনুতপ্ত হয়) আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৬৬১, মুসলিম ২৭৭০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৯৭৪৮, ইবনু হিব্বান ৪২১২, শু‘আবূল ঈমান ৬৬২৮,
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৫৫৭, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৪৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন, আল্লাহ বলেন,
‘হে আমার বান্দারা! আমি যুলুমকে আমার জন্য
হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম করো না।
হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই পথহারা কিন্তু আমি যাকে পথ দেখাই। সুতরাং তোমরা
আমার নিকট সঠিক পথের সন্ধান চাও। আমি তোমাদেরকে পথ দেখাব। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের
প্রত্যেকেই ক্ষুধার্ত কিন্তু আমি যাকে আহার দেই। অতএব তোমরা আমার নিকট খাদ্য চাও। আমি
তোমাদেরকে খাদ্য দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই নগ্ন বা বস্ত্রহীন কিন্তু
আমি যাকে পরিধান করাই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট পোশাক চাও। আমি তোমাদেরকে পরিধান করাব।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা অপরাধ করে থাক রাত-দিন, আমি সমস্ত অপরাধ মাফ করে দেই। সুতরাং
তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩২৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৪৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৫৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৫, সহীহ
আল জামি‘ ৪৩৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৩৮, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন!
যদি তোমরা গুনাহ না করতে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে সরিয়ে এমন জাতিকে সৃষ্টি করতেন
যারা গুনাহ করত ও আল্লাহ তা’আলার কাছে ক্ষমা চাইত। আর আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ক্ষমা
করে দিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩২৮, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৬৮৫৬, ৬৮৫৭, ৬৮৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৮, ২৭৪৯, শু‘আবূল ঈমান
৬৭০০, সহীহাহ্ ১৯৫০, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বান্দা পাপ করার পর আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা
করলে তিনি অতি খুশি হন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তার বান্দার তওবা্ করায় অত্যন্ত
আনন্দিত হন যখন সে তাঁর কাছে তওবা্ করে। তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তির খুশীর চেয়ে অধিক
খুশী হন, যে ব্যক্তির আরোহণের বাহন মরুভূমিতে তার কাছ থেকে ছুটে পালায়, আর এ বাহনের
উপর আছে তার খাবার ও পানীয়। এ কারণে সে হতাশ-নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় আরোহণের বাহন
সম্পর্কে একেবারেই নিরাশ হয়ে একটি গাছের কাছে এসে সে এর ছায়ায় শুয়ে পড়ে। এমন সময় সে
হঠাৎ দেখে, বাহন তার কাছে এসে দাঁড়ানো। সে বাহনের লাগাম ধরে আর আনন্দে আবেগ আপ্লুত
হয়ে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রভু। সে আনন্দের আতিশয্যে
এ ভুল করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩২, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৬৮৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪৩, সহীহ আল জামি‘
৫০৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদীছে এসেছে, তিনি বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা গুনাহ করে বলে, ’হে
আমার রব! আমি গুনাহ করে ফেলেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করে দাও।’ তখন আল্লাহ তা’আলা
বলেন, (হে আমার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)!) আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন? যে
’রব’ গুনাহ মাফ করেন অথবা (এর জন্য) তাকে শাস্তি দেন? (তোমরা সাক্ষী থেক) আমি তাকে
মাফ করে দিলাম। অতঃপর যতদিন আল্লাহ চাইলেন, সে গুনাহ না করে থাকল। তারপর আবার সে গুনাহ
করল ও বলল, ’হে রব’! আমি আবার গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ মাফ করো। তখন আল্লাহ
তা’আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা
এর জন্য শাস্তি দেন। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যতদিন চাইলেন,
সে কোন গুনাহ না করে থাকল। তারপর সে আবারও গুনাহ করল এবং বলল, হে রব! আমি আবার গুনাহ
করেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করো। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে,
তার একজন ’রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা অপরাধের জন্য শাস্তি দেন? আমি আমার
বান্দাকে ক্ষমা করলাম। সে যা চায় করুক। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৩৩৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৮৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৫৮, আহমাদ ৭৯৪৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৭৬৪,
শু‘আবূল ঈমান ৬৬৮৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪০, ইবনু হিব্বান ৬২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahi।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ক্ষমা প্রার্থনা করার
শ্রেষ্ঠ দো‘আ হলো তোমার এরূপ বলা-
শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাইয়্যিদুল ইসতিগফার এভাবে
পড়বে,
“আল্ল-হুম্মা আনতা রব্বী, লা-
ইলা-হা ইল্লা- আন্তা খলাকতানী, ওয়া আনা- ‘আবদুকা, ওয়া আনা- ‘আলা- ‘আহদিকা, ওয়া ওয়া’দিকা
মাস্তাত্ব’তু, আ’ঊযুবিকা মিন শার্রি মা- সনা’তু, আবূউলাকা বিনি’মাতিকা ‘আলাইয়্যা,
ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী, ফাইন্নাহূ লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রভু, তুমি
ছাড়া কোন মা’বূদ নেই; তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার বান্দা, আমি আমার সাধ্যানুযায়ী
তোমার চুক্তি ও অঙ্গীকারের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি। আমি আমার কৃতকর্মের মন্দ পরিণাম হতে
তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমি স্বীকার করি, আমার প্রতি তোমার দানকে এবং স্বীকার করি
আমার গুনাহকে। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কেননা তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার আর কেউ নেই।)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন, যে ব্যক্তি এ সাইয়্যিদুল ইসতিগফারের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে দিনে পড়বে আর সন্ধ্যার
আগে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে এ দু’আ রাতে পড়বে আর
সকাল হবার আগে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৩০৬, ৬৩২৩, সুনান আততিরমিযী ৩৩৯৩, সুনান আননাসায়ী ৫৫২২, আহমাদ ১৭১১১, মু‘জামুল আওসাত
লিত্ব ত্ববারানী ১০১৪, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭১৭২, শু‘আবূল ঈমান ৬৫৮, ইবনু
হিব্বান ৯৩৩, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৬২০/৪৮৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২১, সহীহ আত্ তারগীব
৬৫০, সহীহ আল জামি‘ ৩৬৭৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি
যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে ডাকবে ও আমার নিকট ক্ষমার আশা পোষণ করবে, তোমার অবস্থা যা-ই হোক
না কেন, আমি কারো পরোয়া করি না, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ
যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে, আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব,
আমি কারো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবীসম গুনাহ নিয়েও আমার সাথে সাক্ষাৎ
করো এবং আমার সাথে কাউকে শারীক না করে সাক্ষাৎ করো, আমি পৃথিবীসম ক্ষমা নিয়ে তোমার
কাছে উপস্থিত হব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৬, সুনান
আততিরমিযী ৩৫৪০, সহীহাহ্ ১২৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩৩৮২, সহীহ আল জামি‘ ৪৩৩৮, রিয়াযুস স্বা-লিহীন
(রিয়াদুস সালেহীন) ১৮৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৮৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,
আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি
সবসময় ক্ষমা চায়, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য প্রত্যেক সংকীর্ণতা হতে বের হয়ে আসার পথ খুলে
দেন এবং প্রত্যেক দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করেন। আর তাকে এমন রিযক দান করেন, যা সে কক্ষনো
ভাবতেও পারেনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৯, সুনান
আবূ দাঊদ ১৫১৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮১৯, রিয়াযুস্ সলিহীন ১৮৮২, য‘ঈফ আত্ তারগীব ১১৪৫,
য‘ঈফ আল জামি‘ ৫৮২৯, আহমাদ ২২৩৪, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৬৬৫, মুসতাদারাক
লিল হাকিম ৭৬৭৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪২১, য‘ঈফাহ্ ৭০৫)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এ দো‘আ
পড়বে,
‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা
হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু অ আতূবু ইলাইহ্।’
অর্থাৎ আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা
করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা
করছি।
সে ব্যক্তির পাপরাশি মার্জনা করা হবে; যদিও
সে রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে (যাওয়ার পাপ করে) থাকে।’’ (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) আবূ দাউদ ১৫১৭, তিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-
তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৩৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩৪) ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেনে সহনশীল
হওয়াঃ
(ক) হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতের এক লোকের কাছে
মৃত্যুর মালাক (ফেরেশতা) তার রূহ কবজ করার জন্য উপস্থিত হলেন। ওই লোকটিকে জিজ্ঞেস করা
হলো, তুমি কি কোনো বিশেষ নেক আমল করেছো? লোকটি বললো, আমার স্মরণ নেই। লোকটিকে বলা হলো,
তুমি চিন্তা করো। অতঃপর লোকটি বললো, একটি কাজ ছাড়া এমন কোনো ভালো কাজের কথা আমার স্মরণে
আসে না। আর তা হলো দুনিয়ার জীবনে আমি লোকেদের সাথে ব্যবসা করতাম, ব্যবসায়ী আদান প্রদানের
ক্ষেত্রে আমি লোকেদের সাথে সহানুভূতিশীল থাকতাম। আমার দেনাদার ধনী লোক হলেও আমি তাকে
সময় দান করতাম, আর দেনাদার গরীব-লোক হলে আমি তাকে আমার পাওনা মাফ করে দিতাম। এ (নেক)
আমলের কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৯১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩৮৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬০, আহমাদ ২৩৩৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ৯০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৩৮৪৮, ইসলামিক সেন্টার ৩৮৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ওই লোকের ওপর রহম করুন; যে লোক বিক্রয়ের
ক্ষেত্রে ও ক্রয়ের ক্ষেত্রে এবং নিজের প্রাপ্য আদায়ের জন্য চাওয়ার ক্ষেত্রে সহনশীল
হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৯০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২০৭৬, সুনান ইবনু মাজাহ ২২০৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৯০৩, সহীহ আল জামি‘৩৪৯৫,
সহীহ আত্ তারগীব ১৭৪২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯৩১ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৪৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
(৩৫) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু
সরানোঃ
(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (একদিন) এক ব্যক্তি পথচলা অবস্থায়
সামনে দেখে একটি গাছের ডাল পথের উপর পড়ে আছে। সে ভাবল, আমি মুসলিমদের চলার পথ থেকে
ডালটিকে সরিয়ে দেব, যাতে তাদের কষ্ট না হয়। এ কারণে এ লোকটিকে জান্নাতে প্রবেশ করানো
হলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯০৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৮৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১৪, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৮৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৪৭৮৭, ইসলামীক সেন্টার ৪৭৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তানের প্রত্যেককে তিনশ’ ষাটটি জোড়া
দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ অবস্থায় যে ব্যক্তি ‘আল্ল-হু আকবার’, ‘আলহামদুলিল্লা-হ’,
‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’, ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ বলবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে,
মানুষের পথ হতে পাথর, কাঁটা কিংবা হাড্ডি সরিয়ে দেবে অথবা ভাল কাজের হুকুম করবে, খারাপ
কাজে বাধা দেবে, আর এসব কাজ তিনশ’ ষাটটি জোড়ার সংখ্যা অনুসারে করবে, সে ব্যক্তি নিজকে
সেদিন থেকে জাহান্নাম হতে বাঁচিয়ে চলতে থাকল। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০০৭,
সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ১০৬০৫, ইবনু হিব্বান ৩৩৮০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮২২,
সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৭১৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৫৬০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২৩৯১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ২১৯৯, ইসলামীক সেন্টার ২২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি এক ব্যক্তিকে দেখলাম
জান্নাতে একটি গাছের নীচে স্বাচ্ছন্দে হাঁটছে। সে এমন একটি গাছ রাস্তার মধ্য থেকে কেটে
ফেলে দিয়েছিল যা মানুষকে কষ্ট দিত। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৯০৫, সহিহ মুসলিম ১৯১৮, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫১৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
উপরে বর্ণিত আমলগুলো কোনো মুমিন পূর্ণ একনিষ্ঠতা
সহকারে যথাযথভাবে আদায় করতে পারলে সে অবশ্যই জান্নাত লাভ করতে পারবে। আল্লাহর উপরে
অবিচল আস্থা-বিশ্বাস ও তাঁর রহমত লাভের আশা নিয়ে এসব আমলের পাশাপাশি আরো যেসব আমলে
আল্লাহ রাযী-খুশি ও সন্তুষ্ট হোন সেগুলো সম্পাদন করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অবশ্য করণীয়।
আর জান্নাতে যেতে পারলেই জান্নাতী হুরদের বিয়ে করা সম্ভব। যা আল্লাহ তায়ালা পূর্বেই
প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন।
আপনি যদি জান্নাতে যেতেই চান তাহলে,
দুনিয়ায় থাকতেই অন্যের প্রতি অন্যায়, অত্যাচার, গালি দেয়া, কাউকে হত্যা
করা, সম্পদ আত্মসাৎ করা, ঘুষ, দুর্নীতি করা তথা অন্যের হক নষ্ট করে থাকলে তা পরিশোধ
করে দিবেন অথবা মাফ চেয়ে নিবেন। নইলে উপরোক্ত যতো আমলই করেন না কেনো কিয়ামতে অন্যের
নষ্ট হক পূরণ করতে গিয়ে নিজেকে নিঃশ্ব করে জাহান্নামে যেতে হবে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ
(ক) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো, (প্রকৃত) গরীব কে? সহাবায়ে
কিরাম বললেনঃ আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা, ধনদৌলত নেই, সে-ই গরীব।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের মধ্যে ঐ
ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি গরীব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে সালাত, সিয়াম ও যাকাত আদায় করে
আসবে; কিন্তু সাথে সাথে সেসব লোকেদেরকেও নিয়ে আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারো
অপবাদ রটিয়েছে, কারো সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে; এমন
ব্যক্তিদেরকে তার নেকীগুলো দিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর যখন তার পুণ্য শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের
পাওনা তখনো বাকি, তখন পাওনাদারদের গুনাহ তথা পাপ তার ওপর ঢেলে দেয়া হবে, আর তাকে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করা হবে। (মিসকাতুল মাশাবিহ মিসকাত ৫১২৭, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১, সুনান আততিরমিযী ২৪১৮, সিলসিলাতুস্
সহীহাহ্ ৮৪৫, সহীহুল জামি‘ ৮৭, সহীহ আত্ তারগীব ২২২৩, শু‘আবুল ঈমান ৩৩, আহমাদ ৮০২৯,
মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪১১, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর
৫৬১, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ২৭৭৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৩৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৩)। হাদিসের মান সহিহ।
(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন হকদারদের হক আদায়
করা হবে, এমনকি যে বকরীর শিং নেই, তার জন্য শিংওয়ালা বকরী থেকে বিনিময় আদায় করে দেয়া
হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৪৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮২, সুনান আততিরমিযী ২৪২০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্
১৫৮৮, সহীহুল জামি‘ ৫০৬২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৬০৩, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১৩৬, আহমাদ
৭২০৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৬৩, আস্ সুনানুল কুবরা ১১৮৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৪, ইসলামিক
সেন্টার ৬৩৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)...আবূ সাঈদ খুদরী
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মু’মিনগণ যখন
জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে, তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে এক পুলের উপর তাদের
আটকে রাখা হবে। তখন পৃথিবীতে একের প্রতি অন্যের যা যা জুলুম ও অন্যায় ছিল, তার প্রতিশোধ
গ্রহণের পরে যখন তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া
হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে
তার আবাসস্থল যেরূপ চিনত, তার চাইতে অধিক তার জান্নাতের আবাসস্থল চিনতে পারবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪০, ৬৫৩৫, সহীহ বুখারী (ইসলামিক
ফাউন্ডেশন) ২২৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৬১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ঘ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তির কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অত্যাচারঘটিত; যেমন- মানহানি বা অন্য
কোন বিষয়ের কোন হক থাকে, তবে সে যেন সেদিনের পূর্বেই তার কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নেয়,
যেদিন তার কাছে কোন দীনার বা দিরহাম থাকবে না। যদি তার নেক আমল থাকে, তাহলে অত্যাচারিতের
হক অনুসারে তার কাছ থেকে নেক ’আমল নিয়ে নেয়া হবে। আর যদি তার নেক না থাকে, তবে অত্যাচারিত
ব্যক্তির পাপকে তার ওপর চাপানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৫১২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪৯, ৬৫৩৪, সহীহুল জামি ৬৫১১, সহীহ
আত্ তারগীব ২২২২, আহমাদ ১০৫৭৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৬১, শু‘আবুল ঈমান ৭৪৭০, আর মু‘জামুল
কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৩৫, আল মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ৩৪৮, আস্ সুনানুল কুবরা
লিল বায়হাক্বী ১১৭৮০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৭)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)। (সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো:
ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি,
এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
...........................................................................................
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে
PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment