Search This Blog

Tuesday, September 10, 2019

শয়তানের চক্রান্ত ও আত্ম রক্ষার উপায়-


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

শয়তানের চক্রান্ত ও আত্ম রক্ষার উপায়

কোরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক আরো বিষয় জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ



















শয়তানের চক্রান্ত ও আত্ম রক্ষার উপায়

শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। সে মানুষের ভিতরে-বাইরে, শয়নে-স্বপনে, দিবা-নিশি সর্বাবস্থায় পথভ্রষ্ট করার সকল প্রকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আদম (আঃ)-কে জান্নাত থেকে বের করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে সফলতা অর্জন করে। আদম (আঃ)-কে সিজদা না করায় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ইবলীসের প্রতি ছিল চরম অভিশাপ। যার ফলশ্রুতিতে ইবলীস বা শয়তানের মানব জাতির সাথে চির শত্রুতা।
জাত বা বংশ : শয়তান মানুষ ও জিন উভয় শ্রেণীভুক্ত। তবে নেতা বা মূল সরদার হ’ল ইবলীস।[1] মহান আল্লাহ বলেন, وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِيْنَ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ ‘এভাবে আমরা প্রত্যেক নবীর জন্য মানুষ ও জিনের মধ্য থেকে বহু শয়তানকে শত্রুরূপে নিযুক্ত করেছি। তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অপরকে চাকচিক্যপূর্ণ কথা দ্বারা প্ররোচনা দেয়’ (আন‘আম ৬/১১২)। ইবলীস জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। আদম (আঃ)-কে সিজদার আদেশ এই ইবলীসই অমান্য করেছিল। আল্লাহ বলেন,فَسَجَدُوْا إِلَّا إِبْلِيْسَ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ ‘তোমরা সিজদা কর আদমকে। তখন তারা সবাই সিজদা করেছিল, ইবলীস ব্যতীত। সে ছিল জিনদের অন্তর্ভুক্ত। ফলে সে তার প্রভুর আদেশ অমান্য করল’ (কাহফ ১৮/৫০)। এতে বুঝা যায় শয়তান জিন জাতের অন্তর্ভুক্ত।
আকার-আকৃতি : এদের নির্দিষ্ট কোন আকার-আকৃতি নেই। প্রয়োজন মোতাবেক স্বেচ্ছায় নিজেদের আকার পরিবর্তন করতে পারে। শুধুমাত্র রাসূল (ছাঃ)-এর আকার ধারণ করতে পারে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَمَنْ رَآنِي فِي المَنَامِ فَقَدْ رَآنِي، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لاَ يَتَمَثَّلُ فِيْ صُورَتِيْ- ‘যে আমাকে স্বপ্নে দেখে সে ঠিক আমাকেই দেখে। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না’।[2]
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, অনেকে মনে করে শয়তান লম্বা শিং, বিশাল দেহ, উজ্জ্বল অগ্নিঝরা দু’টি চোখ, লম্বা লেজ বিশিষ্ট এক প্রাণী। কিন্তু এর কোন দলীল প্রমাণ নেই’।[3] তবে বিভিন্নভাবে শয়তানের আকার-আকৃতি বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
শয়তানের শিং :
উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইয়ামনের দিকে লক্ষ্য করে বলেন, .... ‘বেদুঈনদের মধ্যে যারা উট নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং ধর্মের প্রতি মনোযোগী হয় না, যেখান থেকে শয়তানের শিং দু’টি বের হয় তা হ’ল রাবী‘আহ ও মুযার গোত্রদ্বয়ের মাঝে’।[4]
আমর ইবনু আনবাসা আস-সুলামী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘সূর্য শয়তানের দুই শিং-এর মাঝখান দিয়ে উদিত হয় এবং ঐ সময় কাফেররা শয়তানের পুঁজা করে’।[5]
বকরীর আকৃতি :
আনাস বিন মালেক হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,رُصُّوْا صُفُوْفَكُمْ وَقَارِبُوْا بَيْنَهَا وَحَاذُوْا بِالْأَعْنَاقِ، فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ إِنِّيْ لَأَرَى الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَأَنَّهَا الْحَذَفُ ‘তোমরা কাতারের মধ্যে পরস্পর মিলে মিশে দাঁড়াও। এক কাতার অপর কাতারের নিকটে কর এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও। যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ! আমি শয়তানকে ছালাতের কাতারের মধ্যে বকরীর ন্যায় প্রবেশ করতে দেখেছি’।[6]
কাল কুকুরের আকৃতি :
আবূ যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الْكَلْبُ الْأَسْوَدُ شَيْطَانٌ ‘কাল কুকুর হ’ল শয়তান’।[7]
শয়তানের মাথা :
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, (যে কূপে রাসূলের জন্য যাদু করা হয়) সে কূপের পানি মেহেদীর পানির মত (লাল) এবং তার পাড়ের খেজুর গাছের মাথাগুলো শয়তানের মাথার মত’।[8]
মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّهَا شَجَرَةٌ تَخْرُجُ فِيْ أَصْلِ الْجَحِيْمِ، طَلْعُهَا كَأَنَّهُ رُءُوْسُ الشَّيَاطِيْنِ ‘এটি এমন বৃক্ষ, যা উদ্ধত হয়েছে জাহান্নামের তলদেশ থেকে। এর কলিগুলো যেন শয়তানের মাথা’ (ছাফ্ফাত ৩৭/৬৪-৬৫)। মূলতঃ এটা জাহান্নামী ব্যক্তিদের খাবার হিসাবে প্রস্ত্তত রাখা যাক্কুম গাছ। যার মাথা শয়তানের মাথার মত।
শয়তান সৃষ্টির উপাদান :
শয়তান তথা ইবলীস সৃষ্টির উপাদান হিসাবে আল্লাহ তা‘আলা আগুনের কথা উল্লেখ করে বলেন,قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِيْ مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِيْنٍ- ‘আল্লাহ বললেন, আমি যখন তোমাকে নির্দেশ দিলাম, তখন কোন বস্ত্ত তোমাকে বাধা দিল যে তুমি সিজদা করলে না? সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে’ (আ‘রাফ ৭/১২)। তিনি আরো বলেন,وَالْجَانَّ خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ مِنْ نَارِ السَّمُومِ، ‘এর পূর্বে জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি অগ্নিশিখা হ’তে’ (হিজর ১৫/২৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, وَخَلَقَ الْجَانَّ مِنْ مَارِجٍ مِّنْ نَارٍ ‘এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হ’তে’ (আর-রহমান ৫৫/১৫)
বাসস্থান :
জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ) থেকে শুনেছি তিনি বলেন, নিশ্চয়ই ইবলীসের আসন সমুদ্রের উপরে স্থাপিত, সে লোকদেরকে ফিতনায় লিপ্ত করার জন্য তার বাহিনী প্রেরণ করে। শয়তানের নিকট সর্বাধিক বড় সেই, যে সর্বাধিক ফিৎনা সৃষ্টিকারী’।[9]
শয়তানের মূল আবাসস্থল সমুদ্রে। এছাড়াও তার কিছু থাকার জায়গা রয়েছে। যেমন মানুষের নাকের ছিদ্রে থাকে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,إِذَا اسْتَيْقَظَ أُرَاهُ أَحَدُكُمْ مِنْ مَنَامِهِ فَتَوَضَّأَ فَلْيَسْتَنْثِرْ ثَلاَثًا، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَبِيتُ عَلَى خَيْشُومِهِ، ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুম হ’তে উঠে এবং অযূ করে তখন তার উচিৎ নাক তিনবার ঝেড়ে ফেলা। কারণ শয়তান তার নাকের ছিদ্রে রাত কাটিয়েছে’।[10]
শয়তানের আড্ডাখানা :
বারা বিন আযেব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,وَسُئِلَ عَنِ الصَّلَاةِ فِيْ مَبَارِكِ الْإِبِلِ، فَقَالَ: لَا تُصَلُّوْا فِيْ مَبَارِكِ الْإِبِلِ، فَإِنَّهَا مِنَ الشَّيَاطِيْنِ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল উটের আস্তাবলে ছালাত আদায় করা সম্পর্কে। তিনি সেখানে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেন। কেননা তা শয়তানের আড্ডাখানা’।[11]
সালমান ফারসী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন,لَا تَكُوْنَنَّ إِنِ اسْتَطَعْتَ، أَوَّلَ مَنْ يَدْخُلُ السُّوْقَ وَلَا آخِرَ مَنْ يَخْرُجُ مِنْهَا، فَإِنَّهَا مَعْرَكَةُ الشَّيْطَانِ، وَبِهَا يَنْصِبُ رَايَتَه- ‘তোমার যদি সম্ভব হয় তবে প্রথম বাজারে প্রবেশকারী হয়ো না এবং সেখান থেকে সর্বশেষ প্রস্থানকারী হয়ো না। কারণ বাজার শয়তানের আড্ডাস্থল। সেখানে সে স্বীয় ঝান্ডা গাড়ে’।[12]
সাঈদ ইবনে আবী সাঈদ আল-মাকবুরী তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি হাসান ইবনু আলী (রাঃ)-কে ছালাত রত অবস্থায় মাথার উপরাংশে চুল বাধার খোঁপা দেখে তার খোঁপা খুলে দেন। এতে তিনি রাগান্বিত হ’লে আবু রাফে‘ বলেন,
لَا تَغْضَبْ فَإِنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ : ذَلِكَ كِفْلُ الشَّيْطَانِ يَعْنِيْ مَقْعَدَ الشَّيْطَانِ، يَعْنِيْ مَغْرَزَ ضَفْرِهِ-
‘রাগান্বিত হবেন না। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি এটা শয়তানের আসন। অর্থাৎ পুরুষের মাথার উপরিভাগে চুলের খোঁপা বাধলে তা শয়তানের আড্ডাখানায় পরিণত হয়।[13]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা বিছানা প্রসঙ্গে বলেন, একটি বিছানা নিজের জন্য, অপরটি স্ত্রীর জন্য, আরো একটি মেহমানদের জন্য হওয়া দরকার। আর চতুর্থ বিছানাটি শয়তানের জন্য’।[14] অতএব বুঝা যায়, অতিরিক্ত বিছানায় শয়তানের থাকার সুযোগ হয়।
শয়তানের ক্ষমতা :
যখন ইবলীস আদম (আঃ)-কে সিজদা না করার কারণে  বিতাড়িত শয়তানে পরিণত হয়ে গেল তখন সে বলল,
أَنْظِرْنِيْ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ، قَالَ إِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِيْنَ، قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِيْ لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيْمَ، ثُمَّ لَآتِيَنَّهُمْ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيْهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَائِلِهِمْ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِيْنَ-
‘আমাকে ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেন, তোমাকে অবকাশ দেওয়া হ’ল। সে বলল, যে আদমের প্রতি অহংকারের কারণে আপনি আমার মধ্যে পথভ্রষ্টতার সঞ্চার করেছেন, সেই আদম সন্তানদের পথভ্রষ্ট করার জন্য আমি অবশ্যই আপনার সরল পথের উপর বসে থাকব। অতঃপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে আসব তাদের সামনে, পিছনে, ডাইনে, বামে সবদিক থেকে। আর তখন আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’ (আ‘রাফ ৭/১৪-১৭)
অবশেষে শয়তানকে এমন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যে, সে বনী আদমের শিরায় প্রবেশ করতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
لَا تَلِجُوْا عَلَى المُغِيبَاتِ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِي مِنْ أَحَدِكُمْ مَجْرَى الدَّمِ، قُلْنَا: وَمِنْكَ؟ قَالَ: وَمِنِّي، وَلَكِنَّ اللهَ أَعَانَنِي عَلَيْهِ فَأَسْلَمُ،
‘সবামীর অনুপস্থিতিতে কোন স্ত্রীর নিকট তোমরা প্রবেশ কর না। কেননা শয়তান তোমাদের রক্তনালীতে চলমান রয়েছে। আমরা বললাম, আপনার মধ্যেও? তিনি বললেন, আমার মাঝেও। তবে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তার বিরুদ্ধে সাহায্য করেছেন। ফলে আমি নিরাপত্তা লাভ করেছি’।[15]
শয়তানের দলের লোক :
যারা অসৎ পথে থেকেও মনে করে সৎ পথে আছি তারা মূলত মিথ্যাবাদী। আর এমন মিথ্যাবাদীদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِ أُولَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ-
‘শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত’ (মুজাদালাহ ৫৮/১৯)
১. কবুতর দিয়ে খেলাধুলাকারী : কবুতর দিয়ে খেলাধুলাকারীকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শয়তান বলেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে একটি কবুতরের অনুসরণ করতে দেখে বললেন, شَيْطَانٌ يَتْبَعُ شَيْطَانَةً ‘এক শয়তান আরেক শয়তানের পিছে লেগেছে’।[16]
২. মন্ত্র পাঠ করা :
মন্ত্র পাঠ করাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে মন্ত্র পাঠ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন,هُوَ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ ‘এটি শয়তানের কাজ’।[17]
কেউ যদি কাউকে অভিশাপ দেয় অথবা লাঞ্ছিত করার বদদো‘আ করে সে শয়তানের সাহায্যকারী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরূপ করতে নিষেধ করেছেন।[18]
৩. শয়তানের মত বসা : আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন তাশাহহুদের বৈঠকে বসতেন তখন বাম পা বিছিয়ে ডান পা খাড়া করে রাখতেন।وَكَانَ يَنْهَى عَنْ عَقِبِ الشَّيْطَانِ ‘তিনি শয়তানের মত বসতে নিষেধ করেছেন’। (তাহ’ল দুই পায়ের গোড়ালী খাড়া রেখে তার উপরে পাছা রেখে বসা)।[19]
৪. বিছিন্ন হওয়া শয়তানের কাজ :
আবু সা‘লাবা খুশানী (রাঃ) বলেন, লোকেরা যখন কোনস্থানে অবতরণ করতেন, তখন তারা উপত্যকায় ছড়িয়ে যেতেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমাদের এ সকল গিরিপথে ও উপত্যকায় বিক্ষিপ্ত হওয়া শয়তানের কাজ। এরপর তাঁরা কখনো কোন মনযিলে অবতরণ করলে একে অপরের সাথে মিলিত হয়ে থাকতেন।[20]
৫. বাম হাতে পান করা :
ইবনে ওমার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِيْنِهِ، وَإِذَا شَرِبَ فَلْيَشْرَبْ بِيَمِيْنِهِ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ، وَيَشْرَبُ بِشِمَالِهِ، ‘তোমাদের কেউ যখন খাবার খায় তখন সে যেন ডান হাত দিয়ে খায় এবং যখন পান করে তখন যেন ডান হাত দিয়ে পান করে। কারণ শয়তান বাম হাত দিয়ে খায় ও পান করে’।[21]
৬. ছালাতে পাথর নাড়াচাড়া করা :
ছালাতের মধ্যে পাথর নাড়াচাড়া করাকে শয়তানের কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে ছালাতে থাকা অবস্থায় পাথরের টুকরা নাড়াচাড়া করতে দেখে বললেন,لَا تُحَرِّكِ الْحَصَى وَأَنْتَ فِي الصَّلَاةِ فَإِنَّ ذَلِكَ مِنَ الشَّيْطَانِ، ‘তুমি ছালাতে থাকা অবস্থায় পাথরের টুকরা নেড়ো না। কারণ তা শয়তানের কাজ’।[22]
উল্লেখিত বিষয়গুলো মানবরূপী শয়তানের কাজ। ফলে যে ব্যক্তি এরূপ কাজে রত থাকবে তারাই শয়তান বা ইবলীসের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। এছাড়াও ছালাতে কোমরে হাত রাখা ব্যক্তি[23], গুপ্ত হত্যাকারী[24], অস্ত্র দ্বারা (কোন মুসলিমকে) ইশারাকারী[25] ও শয়তানের দলভুক্ত।
শয়তান মহান প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করার পর মুমিনকে পথভ্রষ্ট করার জন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসে থাকে। হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ هُوَ ابْنُ مَسْعُودٍ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: خَطَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطًّا بِيَدِهِ، ثُمَّ قَالَ: هَذَا سَبِيل اللهِ مُسْتَقِيمًا. وَخَطَّ عَلَى يَمِينِهِ وَشِمَالِهِ، ثُمَّ قَالَ: هَذِهِ السُّبُل لَيْسَ مِنْهَا سَبِيْلٌ إِلَّا عَلَيْهِ شَيْطَانٌ يَدْعُو إِلَيْهِ. ثُمَّ قَرَأَ: {وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ}
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ হাতে একটি দাগ দিলেন, অতঃপর বললেন, এটা আল্লাহর সরল সঠিক পথ। এরপর ডানে বামে দাগ কাটলেন এবং বললেন, এই রাস্তাগুলির প্রত্যেকটিতে একজন শয়তান দাঁড়িয়ে আছে। যে মানুষকে তার দিকে আহবান করে থাকে। অতঃপর পাঠ করলেন, ‘এটাই আমার সরল সঠিক পথ, এরই অনুসরণ কর। অন্যান্য পথের অনুসরণ করনা, তা হ’লে (শয়তান) তোমাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে’ (আন‘আম ৬/১৫৩)।[26]
আয়াতের মর্মে ও হাদীছের ভাষ্যে বুঝা যায় শয়তান রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসে মানুষকে তাদের দিকে বিভ্রান্ত করার জন্য আহবান করে থাকে।
শয়তানের চক্রান্ত ও কর্মকান্ড সমূহ : শয়তানের চক্রান্ত ও কর্মকান্ড কুরআন-হাদীছ হ’তে বিভিন্ন পরিভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে। যা পরিত্যাগ করা প্রতিটি মানুষের জন্য অত্যন্ত যরূরী। নিম্নে সংক্ষেপে বিষয়গুলো আলোকপাত করা হ’ল।
১. اَلْاِغْوَاءُ (বিভ্রান্ত করা, বিপথগামী করা) :
আদম (আঃ)-কে সিজদা না করার কারণে ইবলীস যখন অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হ’ল তখন ঈমানদার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য প্রতিজ্ঞা করে। মহান আল্লাহ বলেন, وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَى يَوْمِ الدِّينِ، قَالَ رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ، قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ، إِلَى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ، قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِيْن- ‘আর তোমার প্রতি আমার অভিশাপ রইল বিচারদিবস পর্যন্ত। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে অবকাশ দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। তিনি বললেন, বেশ! তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হ’লে। নির্ধারিত সময়কাল উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। সে বলল, আপনার ইয্যতের কসম! আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথগামী করব’ (ছোয়াদ ৩৮/৭৮-৮২)
ইয়ায ইবনু হিমার আল-মুজাশী থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খুৎবায় বললেন,
أَلَا إِنَّ رَبِّيْ أَمَرَنِيْ أَنْ أُعَلِّمَكُمْ مَا جَهِلْتُمْ، مِمَّا عَلَّمَنِيْ يَوْمِيْ هَذَا، كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حَلَالٌ، وَإِنِّيْ خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ، وَإِنَّهُمْ أَتَتْهُمُ الشَّيَاطِيْنُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِيْنِهِمْ، وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ-
‘জেনে রাখ আমার রব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি তোমাদের শিক্ষা দেই যা তোমরা জান না, যা তিনি  আমাকে আজকের এই দিনে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি আমার বান্দাকে যে সম্পদ দিয়েছি তা হালাল। নিশ্চয়ই আমি আমার সকল বান্দাদেরকে শিরকমুক্ত একনিষ্ঠ করে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের নিকট শয়তান এসে তাদেরকে দ্বীন থেকে বিচ্যুত করেছে। তাদের উপর যা হালাল করেছি তা তারা হারাম করেছে’।[27]
মহান আল্লাহ বলেন,أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ أَنَّهُمْ آمَنُوْا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ أَنْ يَتَحَاكَمُوْا إِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ أُمِرُوْا أَنْ يَكْفُرُوْا بِهِ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيْدًا- ‘তুমি কি তাদের দেখনি, যারা ধারণা করে যে, তারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে যা আপনার উপর নাযিল হয়েছে তার উপর এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল হয়েছে তার উপর। তারা ত্বাগূতের নিকট ফায়ছালা পেশ করতে চায়। অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাকে অস্বীকার করার জন্য। বস্ত্ততঃ শয়তান তাদেরকে দূরতম ভ্রষ্টতায় নিক্ষেপ করতে চায়’ (নিসা ৪/৬০)
২. পদস্খলন করা :
মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ تَوَلَّوْا مِنْكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوْا وَلَقَدْ عَفَا اللهُ عَنْهُمْ إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ- ‘তোমাদের মধ্যে যারা (ওহোদের যুদ্ধে) দু’দলের মুখোমুখি হবার দিন ঘাঁটি থেকে ফিরে গিয়েছিল, তাদের নিজেদের কিছু কৃতকর্মের দরুন শয়তান তাদের প্রতারিত করেছিল, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও সহনশীল’ (আলে ইমরান ৩/১৫৫)
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওহোদের যুদ্ধে প্রথম দিকে মুশরিকরা যখন চরমভাবে পরাজিত হয়ে পড়ল, তখন ইবলীস চিৎকার করে (মুসলমানদের) বলল, হে আল্লাহর বান্দাগণ! পিছনের দিকে লক্ষ্য কর। তখন অগ্রবর্তীদল পিছনে ফিরে (শত্রুমনে করে) নিজ দলের উপর আক্রমণ করে একে অপরকে হত্যা করতে লাগল। এমন সময় হুযায়ফা (রাঃ) পিছনে তার পিতাকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে বললেন, এই যে আমার পিতা, আমার পিতা। শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করে ফেলল।[28] এটা ছিল শয়তানের পদস্খলনের পরিণাম। আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন।
কখনো কখনো আলেমদের মুখে গোমরাহী কথা বের করে দেয় এই ইবলীস। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَأُحَذِّرُكُمْ زَيْغَةَ الْحَكِيمِ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ يَقُولُ كَلِمَةَ الضَّلَالَةِ عَلَى لِسَانِ الْحَكِيم ‘আমি আলেমদের গুমরাহী সম্পর্কে অধিক শংকিত। কেননা শয়তান কখনো কখনো আলেমদের মুখ থেকে গুমরাহী কথা বের করে দেয়’।[29]
ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, إِنَّ أَهْلَ فَارِسَ لَمَّا مَاتَ نَبِيُّهُمْ كَتَبَ لَهُمْ إِبْلِيسُ الْمَجُوسِيَّة ‘যখন পারসিকদের নবী মৃত্যু করেন, তখন ইবলীস তাদের অগ্নিপূজায় লাগিয়ে দেয়। (অর্থাৎ গুমরাহ করে ফেলে)।[30]
৩.  الكيدছলনা করা, কৌশল করা : শয়তান বিভিন্ন কায়দা-কৌশল ও ছলনা করে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে। তবে শয়তানের কৌশল খুবই দুর্বল। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا- ‘নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল একান্তই দুর্বল’ (নিসা ৪/৭৬)। ইউসুফ (আঃ) যখন স্বপ্নে তার ভবিষ্যতের সফলতার ইঙ্গিত পেলেন তখন তার পিতা তাকে বললেন,قَالَ يَا بُنَيَّ لَا تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلَى إِخْوَتِكَ فَيَكِيْدُوْا لَكَ كَيْدًا إِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوٌّ مُبِيْنٌ- ‘পিতা বললেন, ‘বৎস! তোমার ভাইদের সামনে এ স্বপ্ন বর্ণনা কর না। তাহ’লে ওরা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’ (ইউসুফ ১২/৫)
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
أَلاَ كُلَّمَا نَفَرْنَا فِى سَبِيلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ خَلَفَ أَحَدُهُمْ لَهُ نَبِيبٌ كَنَبِيبِ التَّيْسِ يَمْنَحُ إِحْدَاهُنَّ الْكُثْبَةَ أَمَا إِنَّ اللهَ إِنْ يُمَكِّنِّى مِنْ أَحَدٍ مِنْهُمْ إِلاَّ نَكَلْتُهُ عَنْهُنَّ،
‘আমরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্যে সফর করি, তখন কাফেলার পেছনে তদারককারী হিসাবে এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করা হয়। সে বকরীর মত শব্দ করে এবং সুযোগমত কোন মহিলার সাথে শয়তানী চক্রান্তে যিনায় লিপ্ত হয়।[31]
৪. الوعد (প্রতিশ্রুতি) : শয়তান মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও দিক নির্দেশনা দিয়ে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে। আল্লাহ বলেন,
لَعَنَهُ اللهُ وَقَالَ لَأَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيبًا مَفْرُوضًا، وَلَأُضِلَّنَّهُمْ وَلَأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الْأَنْعَامِ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ
اللهِ وَمَنْ يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِنْ دُونِ اللهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُبِينًا، يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا، أُولَئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَلَا يَجِدُونَ عَنْهَا مَحِيصًا-
‘আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেছেন। আর সে বলেছিল যে, অবশ্যই আমি তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে একটা নির্দিষ্ট অংশকে আমার দলে টেনে নেব। আমি অবশ্যই তাদের পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেব, তাদেরকে আদেশ দেব যেন তারা পশুর কর্ণ ছেদন করে এবং তাদেরকে আদেশ করব যেন তারা আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করে। বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়। সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় ও মিথ্যা আশ্বাস দেয়। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা প্রতারণা বৈ কিছু নয়। ওদের ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম। সেখান থেকে তারা অন্য কোন আশ্রয়স্থল পাবে না’ (নিসা ৪/১১৮-১২১)।                    
[1]. ইগাছাতুল লাহফান ফী মাছায়িদিশ শাইত্বান ১/৮
[2]. বুখারী হা/১১০; মুসলিম হা/২২৬৬।   
[3]. ইগাছাতুল লাহফান ফী মাছায়িদিশ শাইত্বান ১/৮।    
[4]. বুখারী হা/৩৩০২।     
[5]. মুসলিম, আবু দাঊদ হা/১২৭৭।     
[6]. আবূদাঊদ হা/৬৬৭; মিশকাত হা/১০৯৩, সনদ ছহীহ।      
[7]. মুসলিম হা/৫১০; আবূদাঊদ হা/৭০২; তিরমিযী হা/৩৩৮; নাসাঈ হা/৭৫০।        
[8]. বুখারী হা/৫৭৬৩; মুসলিম হা/২১৮৯।        
[9]. মুসলিম হা/২৮১৩।         
[10]. বুখারী হা/৩২৯৫; মুসলিম হা/২৩৮।          
[11]. আবু দাঊদ হা/১৮৪; ইরওয়া হা/১৭৬।           
[12]. মুসলিম হা/২৪৫১; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১৮৫১।           
[13]. আবুদাঊদ হা/৬৪৬; ছহীহাহ হা/২৩৮৬।            
[14]. আবু দাঊদ হা/৪১৪২, সনদ ছহীহ।            
[15]. বুখারী  হা/৭১৭১; মুসলিম হা/২১৭৫; তিরমিযী হা/১১৭২।          
[16]. আবূদাঊদ হা/৪৯৪০; ইবনে মাজাহ হা/৩৭৬৪; মিশকাত হা/৪৫০৬, সনদ ছহীহ।         
[17]. আবূদাঊদ হা/৩৮৬৮; মিশকাত হা/৪৫৫৩; ছহীহাহ হা/২৭৬০।     
[18]. বুখারী হা/৬৭৭৭।            
[19]. মুসলিম হা/৪৯৮; আবূদাঊদ হা/৭৮৩।             
[20]. আবূদাঊদ হা/২৬২৮; মিশকাত হা/৩৯১৪, সনদ ছহীহ।
[21]. আবূদাঊদ হা/৩৭৭৬; ছহীহাহ হা/১২৩৬।               
[22]. নাসাঈ হা/১১৬০; আবূদাঊদ হা/৯৪৫।                
[23]. বুখারী হা/১২২০; মুসলিম হা/৫৪৫।                
[24]. আবূদাঊদ হা/৪৫৬৫।                 
[25]. বুখারী হা/৭০৭২; মুসলিম হা/২৬১৭।                  
[26]. হাকেম হা/৩২৪১; মিশকাত হা/১৬৬, সনদ হাসান; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা হা/১১১১০।  [27]. মুসলিম হা/২৮৬৫।                  
[28]. বুখারী হা/৪০৬৫।                  
[29]. আবু দাঊদ হা/৪৬১১।                 
[30]. আবু দাঊদ হা/৩০৪২।              
[31]. আবুদাঊদ হা/৪৪২২।
শয়তানের চক্রান্ত থেকে আত্মরক্ষার উপায় (২য় কিস্তি)
৫. শত্রুতা ও বিদ্বেষ  (العداوة والبغضاء) : শয়তান মানুষের মাঝে শত্রুতা ও ঘৃণা সৃষ্টি করে। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ- ‘শয়তান তো কেবল চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও ছালাত হ’তে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব তোমরা নিবৃত্ত হবে কি?’ (মায়েদাহ ৫/৯১)
পরস্পরে ভাল আচরণ করতে হবে। অন্যথা এই দুর্বলতার সুযোগে শয়তান মানুষের মাঝে সংঘর্ষ বাধিয়ে চরম শত্রুতা সৃষ্টি করবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَقُلْ لِعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوًّا مُبِينًا- ‘(হে নবী!) তুমি আমার বান্দাদের বল, তারা যেন (পরস্পরে) উত্তম কথা বলে। (কেননা) শয়তান সর্বদা তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৫৩)
এজন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ ‘যে আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে’।[1]
৬. সুসজ্জিত করা  (التزيين) : শয়তান মানুষের সামনে পাপ, অশালীন ও অশ্লীল কাজকর্মকে সুন্দর ও সুসজ্জিত করে উপস্থাপন করে। ফলে তাকে ভালকাজ মনে করে মানুষ আমল করে জাহান্নামী হয়ে যায়। শয়তানের এই ভাষাকে মহান আল্লাহ উল্লেখ করে বলেন,قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ، إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ- ‘সে বলল, হে আমার পালনকর্তা। যেহেতু তুমি আমাকে বিপথগামী করলে, সেহেতু আমিও পৃথিবীতে তাদের নিকট পাপকর্মকে শোভনীয় করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব। তবে তাদের মধ্য থেকে তোমার নির্বাচিত বান্দারা ব্যতীত’ (হিজর ১৫/৩৯-৪০)। অন্যত্র এসেছে,
وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَكُمْ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَى عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكُمْ إِنِّي أَرَى مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللهَ وَاللهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ-
‘যখন শয়তান (বদরের দিন) কাফেরদের নিকট তাদের কাজগুলিকে শোভনীয় করে দেখিয়েছিল এবং বলেছিল, আজ তোমাদের উপর বিজয়ী হবার মত কোন লোক নেই। আর আমি তোমাদের সাথী আছি। কিন্তু যখন দু’দল মুখোমুখী হ’ল, তখন সে পিঠ ফিরে পালালো এবং বলল, আমি তোমাদের থেকে মুক্ত। আমি যা দেখেছি তোমরা তা দেখনি। আমি আল্লাহকে ভয় করি। আর আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা’ (আনফাল ৮/৪৮)
আয়াতের প্রেক্ষাপট হ’ল, বদর যুদ্ধের সময় শয়তান মুশরিকদেরকে বিজয়ের আশ্বাস দিয়ে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের কার্যাবলীকে শোভনীয় করে দেখায়। কিন্তু যখন শয়তান ফেরেশতাদের দল তাদের বিপক্ষে দেখতে পায় তখন পলায়ন করে পিছু হটে যায়। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
تَاللهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِنْ قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ-
‘আল্লাহর কসম! আমরা তোমার পূর্বে বহু জাতির নিকটে রাসূল প্রেরণ করেছি। অতঃপর শয়তান তাদের মন্দ কর্মসমূহকে শোভনীয় করে দেখিয়েছিল। সে আজ তাদের অভিভাবক। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (নাহল ১৬/৬৩)। এছাড়াও এব্যাপারে সূরা আন‘আমের ৪৩, নামলের ২৪ এবং আনকাবুতের ৩৮নং আয়াতেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে।
৭. কুমন্ত্রণা  (الوسواس): শয়তান মানুষের মনের মাঝে কুমন্ত্রণা, প্ররোচনা, সংশয়-সংন্দেহ, অবিশ্বাস প্রবেশ করিয়ে পথভ্রষ্ট করার প্রচেষ্টা চালায়। মিথ্যা প্ররোচনার মাধ্যমে আদম ও হাওয়া (আঃ)-কে জান্নাত থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনা পবিত্র কুরআনে সবিস্তার বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, فَوَسْوَسَ لَهُمَا الشَّيْطَانُ لِيُبْدِيَ لَهُمَا مَا وُورِيَ عَنْهُمَا مِنْ سَوْآتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ إِلَّا أَنْ تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ الْخَالِدِيْنَ- ‘অতঃপর তাদের লজ্জাস্থান যা পরস্পর থেকে গোপন ছিল তা প্রকাশ করে দেবার জন্য শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দিল এবং বলল, তোমাদের প্রতিপালক এই বৃক্ষ থেকে তোমাদের নিষেধ করেছেন কেবল এজন্যে যে, তাহ’লে তোমরা দু’জন ফেরেশতা হয়ে যাবে অথবা এখানে চিরস্থায়ী বসবাসকারী হয়ে যাবে’ (আ‘রাফ ৭/২০)। অন্যত্র এসেছে,
فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَا آدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَا يَبْلَى، فَأَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ وَعَصَى آدَمُ رَبَّهُ فَغَوَى-
‘অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্ত জীবনদায়িনী বৃক্ষের কথা এবং এমন রাজত্বের কথা যা ক্ষয় হয় না? অতঃপর তারা উভয়ে উক্ত (নিষিদ্ধ) বৃক্ষ হ’তে (ফল) ভক্ষণ করল। ফলে তাদের সামনে তাদের গুপ্তাঙ্গ প্রকাশিত হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের বৃক্ষপত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে শুরু করল। এভাবে আদম তার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করল এবং পথ হারাল’ (ত্ব-হা ২০/১২০-১২১)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, يَأْتِي الشَّيْطَانُ أَحَدَكُمْ فَيَقُوْلُ: مَنْ خَلَقَ كَذَا، مَنْ خَلَقَ كَذَا، حَتَّى يَقُولَ: مَنْ خَلَقَ رَبَّكَ؟ فَإِذَا بَلَغَهُ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللهِ وَلْيَنْتَهِ- ‘তোমাদের কারো নিকট শয়তান আসতে পারে এবং বলতে পারে, এ বস্ত্ত কে সৃষ্টি করেছে? ঐ বস্ত্ত কে সৃষ্ট করেছে? এমনকি শেষ পর্যন্ত বলে বসবে, তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে? যখন ব্যাপারটি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায় এবং সে যেন এমন চিন্তা থেকে বিরত হয়ে যায়’।[2]
ছালাতে ওয়াসওয়াসা : আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْتِي أَحَدَكُمْ فِي صَلَاتِهِ فَيَلْبِسُ عَلَيْهِ، حَتَّى لَا يَدْرِيَ كَمْ صَلَّى، فَإِذَا وَجَدَ ذَلِكَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْجُدْ سَجْدَتَيْنِ وَهُوَ جَالِسٌ- ‘তোমাদের কারো কারো ছালাত আদায়কালে শয়তান আসে এবং ছালাতের বিষয়ে সন্দেহে ফেলে দেয়। ফলে সে বুঝতে পারে না কত রাক‘আত আদায় করল। তোমাদের কারো যদি এই রকম কিছু হয় তবে (শেষ বৈঠকে) বসা অবস্থায় সে যেন দু’টি সিজদাহ করে দেয়’।[3]
৮. আল্লাহর যিকির ভুলে যাওয়া  (النسيان لذكر الله):
শয়তানের কাজ হ’ল আল্লাহর স্মরণ বা যিকির ভুলিয়ে দিয়ে বিপথগামী করা। যেমন- মহান আল্লাহ বলেন,وَقَالَ لِلَّذِيْ ظَنَّ أَنَّهُ نَاجٍ مِنْهُمَا اذْكُرْنِي عِنْدَ رَبِّكَ فَأَنْسَاهُ الشَّيْطَانُ ذِكْرَ رَبِّهِ فَلَبِثَ فِي السِّجْنِ بِضْعَ سِنِيْنَ- ‘অতঃপর যে ব্যক্তি সম্পর্কে (স্বপ্নের ব্যাখ্যা অনুযায়ী) ধারণা ছিল যে, সে মুক্তি পাবে, তাকে ইউসুফ বলে দিল যে, তুমি তোমার মনিবের কাছে (অর্থাৎ বাদশাহর কাছে) আমার বিষয়ে আলোচনা করবে (যাতে তিনি আমাকে মুক্তি দেন)। কিন্তু শয়তান তাকে তার মনিবের কাছে বলার বিষয়টি ভুলিয়ে দেয়। ফলে তাকে কয়েক বছর কারাগারে থাকতে হয়’ (ইউসুফ ১২/৪২)
মূসা (আঃ) এক যুবককে নিয়ে খিজির (আঃ)-এর সাক্ষাতে বের হ’লেন। একটি মাছ ছিল তাদের গন্তব্যের চিহ্ন। মাছটি যেখানে জীবিত হয়ে সমুদ্রে চলে যাবে সেখানে সে সাক্ষাৎ পাবে বলে নির্দেশনা দেয়া ছিল। কিন্তু যুবক তা বলতে ভুলে যায়। মাছের বিষয়ে মূসা (আঃ) যুবককে জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দিলقَالَ أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّيْ نَسِيْتُ الْحُوْتَ وَمَا أَنْسَانِيْهُ إِلَّا الشَّيْطَانُ أَنْ أَذْكُرَهُ وَاتَّخَذَ سَبِيْلَهُ فِي الْبَحْرِ عَجَبًا- ‘যুবক বলল, আপনি কি খেয়াল করে দেখেছেন যখন আমরা একটি প্রস্তর খন্ডে বিশ্রাম নিয়েছিলাম, সেখানে আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শয়তানই আমাকে ওর কথা স্মরণ রাখতে ভুলিয়ে দিয়েছিল। সে বিস্ময়করভাবে নিজের পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল (কাহাফ ১৮/৬৩; বুখারী হা/৭৪)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, হে লোক সকল! আমাকে কদরের রাত সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল এবং আমি তোমাদের তা জানানোর জন্য বের হয়ে আসলাম। কিন্তু দুই ব্যক্তি ঝগড়া করতে করতে আমার নিকটে উপস্থিত হ’ল এবং তাদের সাথে ছিল শয়তান। তাই আমি তা ভুলে গেছি’।[4]
৯. প্ররোচনা দেওয়া  (النزع): শয়তান মানুষের মাঝে বিভিন্ন কৌশলে প্ররোচনা দেয়। মহান আল্লাহ বলেন,وَقُلْ لِعِبَادِيْ يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوًّا مُبِيْنًا- ‘(হে নবী!) তুমি আমার বান্দাদের বল, তারা যেন (পরস্পরে) উত্তম কথা বলে। (কেননা) শয়তান সর্বদা তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৫৩)
শয়তান ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইদের মধ্যে যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল তা সকলেরই জানা। মহান আল্লাহ সূরা ইউসুফের ১০০নং আয়াতে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। আর এমন পরিস্থিতির মোকাবেলায় মহান আল্লাহ বলেন,وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ إِنَّهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ- ‘শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহ’লে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (আ‘রাফ ৭/২০০; ফুছছিলাত বা হা-মীম-সাজদাহ ৪১/৩৬)
১০. ধোঁকা দেওয়া  (الغرور): শয়তান মানুষকে নানাভাবে ধোঁকা দেয়। সে মানুষকে ছলনা ও ধোঁকাপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُوْرًا- ‘শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা ছলনা মাত্র’ (বাণী ইসরাঈল ১৭/৬৪)
আদম ও হাওয়া (আঃ) স্বয়ং এমন ধোঁকা ও প্রতারণার শিকার হন। মহান আল্লাহ বলেন,فَدَلَّاهُمَا بِغُرُورٍ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ ‘এভাবে তাদের দু’জনকে ধোঁকার মাধ্যমে সে ধীরে ধীরে ধ্বংসে নামিয়ে দিল। অতঃপর যখন তারা উক্ত বৃক্ষের স্বাদ আস্বাদন করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়ল। ফলে তারা জান্নাতের পাতাসমূহ দিয়ে তা ঢাকতে লাগল’ (আ‘রাফ ৭/২২)। অন্যত্র তিনি বলেন,
يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُوْرًا- ‘সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় ও মিথ্যা আশ্বাস দেয়। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা প্রতারণা বৈ কিছু নয়’ (নিসা ৪/১২০)
ধোঁকা দিয়ে শয়তান মানুষের মাঝে ফিতনা সৃষ্টি করে। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে দেয়। জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ إِبْلِيْسَ يَضَعُ عَرْشَهُ عَلَى الْمَاءِ، ثُمَّ يَبْعَثُ سَرَايَاهُ، فَأَدْنَاهُمْ مِنْهُ مَنْزِلَةً أَعْظَمُهُمْ فِتْنَةً، يَجِيْءُ أَحَدُهُمْ فَيَقُوْلُ: فَعَلْتُ كَذَا وَكَذَا، فَيَقُوْلُ: مَا صَنَعْتَ شَيْئًا، قَالَ ثُمَّ يَجِيْءُ أَحَدُهُمْ فَيَقُوْلُ: مَا تَرَكْتُهُ حَتَّى فَرَّقْتُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ امْرَأَتِهِ، قَالَ: فَيُدْنِيْهِ مِنْهُ وَيَقُوْلُ: نِعْمَ أَنْتَ قَالَ الْأَعْمَشُ: أُرَاهُ قَالَ: فَيَلْتَزِمُهُ-
‘ইবলীস পানির উপর তার সিংহাসন স্থাপন করতঃ তার বাহিনী প্রেরণ করে। তাদের মধ্যে তার সর্বাধিক নৈকট্য প্রাপ্ত সেই, যে সর্বাধিক ফেতনা সৃষ্টিকারী। তাদের একজন এসে বলে, আমি অমুক অমুক কাজ করেছি। সে বলে তুমি কিছুই করনি। অতঃপর অন্যজন এসে বলে, অমুকের সাথে আমি সকল প্রকার ধোঁকার আচরণই করেছি। অবশেষে তার ও তার স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি। অতঃপর শয়তান তাকে তার নিকটবর্তী করে নেয় এবং বলে হ্যাঁ, তুমি একটি বড় কাজ করেছ। বর্ণনাকারী আ‘মাশ (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয়, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, অতঃপর শয়তান তাকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়’।[5]
কবরবাসীরা কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারে না। তাই কবরবাসীদের নিকট কোন কিছু কামনা করা জায়েয নয় বরং শিরক। যদিও কোন কোন কবর থেকে অলৌকিক কিছু প্রকাশ পেয়ে থাকে। যেমন- কবর থেকে আলো বের হওয়া, সুঘ্রান বের হওয়া ইত্যাদি।[6]
আমরা অনেক সময় শুনে থাকি কারো কবরের উপর ঐ মৃত ব্যক্তিকেই দাঁড়ানো অবস্থায় বা বসা অবস্থায় অথবা অন্য কোন অচেনা মৃত ব্যক্তিকে দেখেছে। আবার ভাঙ্গা কবরে সাপ পেঁচানো লাশ দেখেছে। এগুলো সবই শয়তানের ধোঁকা মাত্র। মনে রাখতে হবে কবরের কোন শাস্তি নবী ব্যতীত দুনিয়ার মানুষ ও জিনকে দেখানো হবে না।[7] অতএব কেউ যদি অনুরূপ দেখে তবে বুঝতে হবে এটা শয়তানের কাজ ছাড়া কিছুই নয়।
১১. পরীক্ষা করা, বিপদে ফেলা, গোলযোগ সৃষ্টি করা (الفةنة): যুগে যুগে শয়তান মানুষের মাঝে গোলযোগ সৃষ্টি করে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করেছে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُوْلٍ وَلَا نَبِيٍّ إِلَّا إِذَا تَمَنَّى أَلْقَى الشَّيْطَانُ فِي أُمْنِيَّتِهِ فَيَنْسَخُ اللهُ مَا يُلْقِي الشَّيْطَانُ ثُمَّ يُحْكِمُ اللهُ آيَاتِهِ وَاللهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ، لِيَجْعَلَ مَا يُلْقِي الشَّيْطَانُ فِتْنَةً لِلَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَرَضٌ وَالْقَاسِيَةِ قُلُوْبُهُمْ وَإِنَّ الظَّالِمِيْنَ لَفِي شِقَاقٍ بَعِيدٍ-
‘আমরা তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি যে, তারা যখনই কিছু পাঠ করেছে, তখনই শয়তান উক্ত পাঠে কিছু মিশিয়ে দিয়েছে। তখন আল্লাহ দূর করে দেন শয়তান যা মিশিয়ে দেয়। অতঃপর আল্লাহ স্বীয় আয়াত সমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। এটা এ কারণে যে, শয়তান যা মিশ্রণ করে, তিনি তা পরীক্ষা স্বরূপ করে দেন তাদের জন্য, যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এবং যারা পাষাণ হৃদয়। বস্ত্ততঃ অত্যাচারীরা দূরতম যিদের মধ্যে রয়েছে’ (হজ্জ ২২/৫২-৫৩)
হুযায়ফা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, চাটাই বুননের মত এক এক করে ফিৎনা মানুষের অন্তরে আসতে থাকে। যে অন্তরে তা গেঁথে যায়, তাতে একটি করে কালো দাগ পড়ে। আর যে অন্তর তা প্রত্যাখ্যান করে, তাতে একটি করে শুভ্রোজ্জ্বল চিহ্ন পড়বে। এমনি করে দু’টি অন্তর দু’ধরনের হয়ে যায়। একটি শ্বেত পাথরের মত; আসমান ও যমীন যতদিন থাকবে ততদিন কোন ফিৎনা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর অপরটি হয়ে যায় উল্টানো কালো কলসির মত। প্রবৃত্তি তার মধ্যে যা উপস্থাপন করেছে তাছাড়া ভালমন্দ বলতে সে কিছুই চিনে না।[8]
উপরোক্ত ফিৎনা মূলতঃ শয়তান দ্বারা প্রসার লাভ করে। যারা বুঝতে পারে তারা ফিৎনা থেকে বাঁচতে পারে। অন্যথায় এমন ফিৎনায় পতিত হ’তে হবে। এমন সকল ফিৎনা থেকে বাঁচার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ ‘কোন পুরুষ যখন কোন স্ত্রী লোকের সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ করে তখন এদের সঙ্গে অবশ্যই তৃতীয়জন থাকে শয়তান’।[9]
একজন মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে এমন ফিৎনা ফাসাদে জড়িয়ে পড়ে। এর ভয়াবহতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ ‘বস্ত্ততঃ ফিৎনা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও বড় পাপ’ (বাক্বারাহ ২/১৯১)। একশ্রেণীর লোক কুরআন দ্বারা ফিৎনা সৃষ্টির লক্ষ্যে আয়াতের অপব্যাখ্যায় লিপ্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,فَأَمَّا الَّذِيْنَ فِي قُلُوْبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ- ‘অতঃপর যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে, তারা অস্পষ্ট আয়াতগুলির পিছে পড়ে ফিৎনা সৃষ্টির জন্য এবং তাদের মনমত ব্যাখ্যা দেবার জন্য’ (আলে ইমরান ৩/৭)
১২. কু-কর্ম, অশ্লীলতা ও নিন্দনীয় কর্মের আদেশ দেয় (الفحشاء والمنكر) : মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَنْ يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَوْلَا فَضْلُ اللهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَى مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَكِنَّ اللهَ يُزَكِّي مَنْ يَشَاءُ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ-
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। যে ব্যক্তি শয়তানের অনুসরণ করে, সে তো তাকে নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়। যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত তাহ’লে তোমাদের কেউ কখনো পবিত্র হ’তে পারতে না। তবে আল্লাহ যাকে চান তাকে পবিত্র করেন এবং আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন’ (নূর ২৪/২১)। তিনি আরো বলেন,إِنَّمَا يَأْمُرُكُمْ بِالسُّوْءِ وَالْفَحْشَاءِ وَأَنْ تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ- ‘সে তো তোমাদের কেবল মন্দ ও অশ্লীল কাজের এবং আল্লাহ সম্বন্ধে তোমরা যা জানো না এমনসব বিষয় তোমাদের বলার নির্দেশ দেয়’ (বাক্বারাহ ২/১৬৯)
শয়তানের নির্দেশে কখনো অশ্লীল কাজে জড়িত হওয়া যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوْا بِاللهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ- ‘তুমি বল, নিশ্চয়ই আমার প্রভু প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার অশ্লীলতা হারাম করেছেন এবং হারাম করেছেন সকল প্রকার পাপ ও অন্যায় বাড়াবাড়ি। আর তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না যে বিষয়ে তিনি কোন প্রমাণ নাযিল করেননি এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কথা বল না যে বিষয়ে তোমরা কিছু জান না’ (আ‘রাফ ৭/৩৩)
একবার হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিছনে ফযল ইবনে আববাস (রাসূলের চাচাত ভাই) উটে আরোহী অবস্থায় ছিলেন। এক যুবতী মহিলা বৃদ্ধ পিতার বদলী হজ্জের ফৎওয়া তলব করতে আসলে তিনি ফযলের ঘাড় ঘুরিয়ে অন্য দিকে করে দিলেন। আববাস (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনার চাচাত ভাইয়ের ঘাড় ঘুরিয়ে দিলেন কেন? তিনি বললেন, আমি দেখলাম, এরা দু’জন হ’ল যুবক-যুবতী। আমি তাদেরকে শয়তান থেকে নিরাপদ মনে করিনি।[10] এতে বুঝা যায় অশ্লীল ও অপসন্দনীয় কিছু ঘটার সন্দেহপূর্ণ অবস্থাতেই শতর্ক হ’তে হবে।
১৩. বিপদগ্রস্তকে একা ফেলে চলে যাওয়া, বিপদ কালে ধোঁকা দেয়া, পথভ্রষ্ট করা, নিরাশ করা (الخذلان) :
যারা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে রাসূল (ছাঃ)-এর পথের সাথে অন্য পথ অবলম্বন করে চলে, তারা হাশরের মাঠে নিজেদের হাত কামড়িয়ে আফসোস করবে এবং বলবে,لَقَدْ أَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءَنِيْ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنْسَانِ خَذُولًا، ‘আমার কাছে উপদেশ (কুরআন) আসার পর সে  আমাকে পথভ্রষ্ট করেছিল। বস্ত্ততঃ শয়তান মানুষের জন্য পথভ্রষ্টকারী’ (ফুরক্বান ২৫/২৯)
বদরের যুদ্ধের পূর্বে কাফেরদেরকে শয়তান খুব সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু যখন বিপদ ঘনীভূত হয়ে আসল তখন সে তার দলবল নিয়ে কাফের কুরাইশদেরকে মাঠে ফেলে পলায়ন করল।
কখনো কখনো শয়তান অনেককে কুফুরী করতে আদেশ দিয়ে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। মহান আল্লাহ বলেন,كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنْسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّيْ بَرِيْءٌ مِنْكَ إِنِّي أَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ- ‘তাদের দৃষ্টান্ত শয়তানের মত, যে মানুষকে বলে কুফরী কর। অতঃপর যখন সে কুফরী করে, তখন বলে আমি তোমার থেকে মুক্ত। আমি বিশ্ব চরাচরের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি’ (হাশর ৫৯/১৬)
১৪. ভাল ও কল্যাণমূলক কাজে বাধা প্রদান করা الصد عن) (الخير : মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُوْنَ- ‘শয়তান তো কেবল চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও ছালাত হ’তে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব এক্ষণে তোমরা নিবৃত্ত হবে কি?’ (মায়েদাহ ৫/৯১)
এমনিভাবে শয়তান সাবা বাসীদেরকে আল্লাহর ইবাদত থেকে সূর্যের ইবাদতে মত্ত রাখে। মহান আল্লাহ বলেন, (হুদহুদ পাখির ভাষায়)وَجَدْتُهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُوْنَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُوْنَ- ‘আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহকে ছেড়ে সূর্যের পূজা করছে। শয়তান তাদের কর্মসমূহকে তাদের নিকট শোভনীয় করে দিয়েছে এবং তাদেরকে (আল্লাহর) পথ থেকে বিরত রেখেছে। ফলে তারা সুপথপ্রাপ্ত হয় না’ (নমল ২৭/২৪)
আল্লাহ তা‘আলা সতর্ক করে দিয়ে বলেন,وَلَا يَصُدَّنَّكُمُ الشَّيْطَانُ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِيْنٌ- ‘আর শয়তান যেন তোমাদেরকে (আমার অনুসরণ থেকে) বিরত না রাখে। সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (যুখরুফ ৪৩/৬২)
যারা আল্লাহর রাস্তায় তথা কল্যাণের পথে বাধা প্রদান করে তাদের অশুভ পরিণতির কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেন, الَّذِيْنَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللهِ زِدْنَاهُمْ عَذَابًا فَوْقَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوا يُفْسِدُوْنَ- ‘যারা কুফরী করেছিল এবং আল্লাহর পথে বাধা দান করেছিল, আমরা তাদের শাস্তির উপর শাস্তি বাড়িয়ে দেব। কারণ তারা (পৃথিবীতে) অশান্তি সৃষ্টি করত’ (নাহল ১৬/৮৮)
১৫. পরাভূত করা, বশীভূত করা (الاستحواذ) : যারা সত্যিকার মিথ্যাবাদী শয়তান তাদেরকে পরাভূত করে নিজেদের দলভুক্ত করে নিয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ اللهُ جَمِيْعًا فَيَحْلِفُوْنَ لَهُ كَمَا يَحْلِفُوْنَ لَكُمْ وَيَحْسَبُوْنَ أَنَّهُمْ عَلَى شَيْءٍ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ الْكَاذِبُونَ، اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنْسَاهُمْ ذِكْرَ اللهِ أُولَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ- ‘যে দিন আল্লাহ তাদের সবাইকে পুনরুত্থিত করবেন তখন তারা আল্লাহর সামনে শপথ করবে। যেমন তারা তোমাদের সামনে শপথ করে এবং তারা ধারণা করে যে, তারা যথেষ্ট হেদায়াতের উপর রয়েছে। সাবধান! ওরাই হ’ল মিথ্যাবাদী। শয়তান তাদের উপর বিজয়ী হয়েছে ...’ (মুজাদালা ৫৮/১৮-১৯)
আবুদ দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, مَا مِنْ ثَلَاثَةٍ فِيْ قَرْيَةٍ وَلَا بَدْوٍ لَا تُقَامُ فِيهِمُ الصَّلَاةُ إِلَّا قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ، فَعَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ؛ فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ- ‘যখন কোন গ্রামে বা বন-জঙ্গলে তিন জন লোক একত্রিত হয় এবং জামা‘আতে ছালাত আদায় না করে তখন শয়তান তাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করে। অতএব তোমরা জমা‘আতে ছালাত আদায় কর। কেননা দলচ্যুত বকরীকে নেকড়ে বাঘে ভক্ষণ করে থাকে’।[11]
হুযায়ফাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে আহার করতে বসলে তিনি খাবারে হাত না রাখা পর্যন্ত আমরা হাত দিতাম না। একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে খাবার খেতে উপস্থিত হ’লাম।
فَجَاءَتْ جَارِيَةٌ كَأَنَّهَا تُدْفَعُ، فَذَهَبَتْ لِتَضَعَ يَدَهَا فِي الطَّعَامِ، فَأَخَذَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهَا، ثُمَّ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ كَأَنَّمَا يُدْفَعُ فَأَخَذَ بِيَدِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أَنْ لَا يُذْكَرَ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ، وَإِنَّهُ جَاءَ بِهَذِهِ الْجَارِيَةِ لِيَسْتَحِلَّ بِهَا فَأَخَذْتُ بِيَدِهَا، فَجَاءَ بِهَذَا الْأَعْرَابِيِّ لِيَسْتَحِلَّ بِهِ فَأَخَذْتُ بِيَدِهِ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ يَدَهُ فِي يَدِي مَعَ يَدِهَا وَزَادَ فِي آخِرِ الْحَدِيثِ: ثُمَّ ذَكَرَ اسْمَ اللهِ وَأَكَلَ-
‘হঠাৎ একটি বালিকা এমনভাবে এল, যেন তাকে পিছন থেকে ধাক্কা দেওয়া হচ্ছিল। সে নিজ হাতে খাবার গ্রহণ করতে উদ্যত হয়েছিল, এমন অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার হাত ধরে নিলেন। তারপর এক বেদুঈনও অনুরূপভাবে এসে খাবারে হাত দিতে উদ্যত হ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার হাত ধরে নিলেন এবং বললেন, যে খাবারে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি শয়তান সে খাদ্যকে হালাল মনে করে। এই মেয়েটিকে এবং বেদুঈনটিকে শয়তানই নিয়ে এসেছে যেন তার দ্বারা নিজের জন্য খাদ্য হালাল করে নিতে পারে। কিন্তু আমি ওদের হাত ধরে ফেললাম। সেই মহান সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে, শয়তানের হাত ঐ দু’জনের হাতের সঙ্গে আমার হাতে ধরা পড়েছিল। অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহ বলে আহার করলেন’।[12]
উল্লেখিত হাদীছ থেকে বুঝা যায়, শয়তান তাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে পরাভূত করে ফেলেছিল কিন্তু রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে টিকতে পারেনি।
ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিইয়া (রঃ) বলেন, সাবধান! জেনে রেখ! ইবলীসের প্রথম প্ররোচনা হ’ল মানুষকে ইলম অর্জনে বাধা প্রদান করা। কারণ ইলম হ’ল হেদায়াতের আলো। যদি এই আলো নিভিয়ে দিতে পারে তাহ’লে মানুষকে জাহিলিয়াতের অন্ধকারে যেমন খুশি তেমন ডুবিয়ে দিতে পারে। এমনকি তাদের ভক্তদের বিবাহের মত সুন্নাত পরিত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করে। সংসার বিরাগী করে ছূফী মতবাদের দিকে ঠেলে দেয়। গ্রহণ করে বৈরাগ্য সাধন, ইবাদত করে পাহাড়ে বসে, ত্যাগ করে জুম‘আ ও জামা‘আত।[13]
১৬. প্ররোচনা দেওয়া, বার্তা পাঠানো (الايحاء) :
শয়তান তার সমর্থকদের মাঝে প্ররোচনা দেয়, অবহিত করে। ফলে ঝগড়া-বিবাদ ও ফিৎনা-ফাসাদ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ- ‘আর শয়তানরা তাদের বন্ধুদের প্ররোচনা দেয় যেন তারা তোমাদের সাথে বিতন্ডা করে। তবে যদি তোমরা তাদের (শিরকী যুক্তির) আনুগত্য কর, তাহ’লে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হয়ে যাবে’ (আন‘আম ৬/১২১)। তিনি আরো বলেন, وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنْسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا ‘এভাবে আমরা প্রত্যেক নবীর জন্য মানুষ ও জিনের মধ্য থেকে বহু শয়তানকে শত্রুরূপে নিযুক্ত করেছি। তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অপরকে চাকচিক্যপূর্ণ কথা দ্বারা প্ররোচনা দেয়’ (আন‘আম ৬/১১২)
ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নূহ (আঃ)-এর কওমের ভাল লোকগুলো মৃত্যুবরণ করল তখন শয়তান তাদের নিকট বার্তা পাঠাল যে,أَنِ انْصِبُوا إِلَى مَجَالِسِهِمُ الَّتِي كَانُوا يَجْلِسُونَ أَنْصَابًا وَسَمُّوهَا بِأَسْمَائِهِمْ، فَفَعَلُوا، فَلَمْ تُعْبَدْ، حَتَّى إِذَا هَلَكَ أُولَئِكَ وَتَنَسَّخَ العِلْمُ عُبِدَتْ ‘তারা যেখানে বসে মজলিস করত, সেখানে তোমরা কতিপয় মূর্তি স্থাপন কর এবং ঐ সমস্ত পুন্যবান লোকের নামেই এগুলোর নামকরণ কর। কাজেই তারা তাই করল, কিন্তু তখনও ঐসব মূর্তির পূজা করা হ’ত না। তবে মূর্তি স্থাপনকারী লোকগুলো মারা গেলে এবং মূর্তিগুলোর ব্যাপারে সত্যিকারের জ্ঞান বিলুপ্ত হ’লে লোকজন তাদের পূজা আরম্ভ করে দেয়’।[14]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ আসমানে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা জারী করলে ফেরেশতারা বিনয়াবনত হয়ে পাখা ঝাপটাতে থাকে। ... ফেরেশতাদের পারস্পরিক আলোচনা শয়তান ওঁৎ পেতে শোনে এবং ভূপৃষ্ঠে অবস্থানকারী তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের কাছে তা পৌঁছে দেয়। কখনো তা নিম্নে অবস্থানকারীদের কাছে পৌঁছানোর পূর্বে তাদের প্রতি উল্কাপিন্ড নিক্ষেপ করা হয়। শ্রুত কথা তারা পৃথিবীতে এসে গণক অথবা যাদুকরের সামনে পেশ করে। আবার কখনো তারা কিছুই শুনতে পায় না বরং নিজেদের পক্ষ থেকে তা গণক ও যাদুকরের মুখে তাদের কথার সাথে সত্য মিথ্যা যোগ করে পেশ করে। তাই কেবল সত্য সেটিই হয় যা তারা আসমান থেকে শোনে’।[15]
১৭. অপচয় করা (التبذير) :
মহান আল্লাহ অপচয় করতে নিষেধ করে বলেন,وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا، إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا- ‘আর তুমি মোটেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ’ (বনী ইসরাঈল ১৭/২৬-২৭)
অপচয়রোধে হাদীছে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে,
عَنِ المُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ: عُقُوقَ الأُمَّهَاتِ، وَوَأْدَ البَنَاتِ، وَمَنَعَ وَهَاتِ، وَكَرِهَ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإِضَاعَةَ المَالِ
‘মুগীরা বিন শু‘বাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের জন্য হারাম করেছেন, মায়েদের অবাধ্যাচরণ করা, অধিকার প্রদানে বিরত থাকা ও অনধিকার কিছু প্রার্থনা করা এবং জীবন্ত কন্যা প্রোথিত করা। আর তোমাদের জন্য অপসন্দ করেছেন, ভিত্তিহীন বাজে কথা বলা, অধিক প্রশ্ন করা, ধন-সম্পদ অপচয় করা’।[16]
দয়াময় আল্লাহর বান্দাদের গুণাবলী উল্লেখ করতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,وَالَّذِيْنَ إِذَا أَنْفَقُوْا لَمْ يُسْرِفُوْا وَلَمْ يَقْتُرُوْا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا- ‘তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না বা কৃপণতা করে না। বরং তারা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকে’ (ফুরক্বান ২৫/৬৭)
তাহ’লে বুঝা গেল অপচয়কারী শয়তানের ভাই, আর অপচয় না করা হচ্ছে দয়াময় (রহমান) আল্লাহর খাঁটি বান্দা হিসাবে নিজেকে পরিগণিত করা।
[1]. বুখারী হা/৬০১৮।
[2]. বুখারী হা/৩২৭৬; মুসলিম হা/১৩৪
[3]. তিরমিযী হা/৩৯৭; বুখারী, মুসলিম
[4]. মুসলিম হা/১১৬৭
[5]. মুসলিম  হা/২৮১৩
[6]. ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, ঈমান  অধ্যায়, পর্ব-৭৯
[7]. বুখারী হা/১২৭৩।
[8]. মুসলিম হা/১৪৪
[9]. তিরমিযী হা/১১৭১
[10]. তিরমিযী হা/৮৮৫
[11]. নাসাঈ হা/৮৪৭; মিশকাত হা/১০৬৭; ইবনে কাছীর ৪/৪২১
[12]. বুখারী হা/৩২৮০; মুসলিম হা/২০১৭; আবূদাঊদ হা/৩৭৬৬
[13]. সার সংক্ষেপ : ইগাছাতুল লাহফান ফি মাছায়িদিশ শায়ত্বান ১/১৬
[14]. বুখারী হা/৪৯২০
[15]. বুখারী হা/৪৭০১; ইবনে মাজাহ হা/১৯৪; তিরমিযী হা/৩২২৩
[16]. বুখারী হা/৫৯৭৫; মুসলিম হা/৫৯৩
     
শয়তানের চক্রান্ত থেকে আত্মরক্ষার উপায় (শেষ কিস্তি)
১৮. যাদু করা :
যাদু করা শয়তানের কাজ। এটা কবীরা গোনাহ। মহান আল্লাহ বলেন,وَاتَّبَعُوْا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ ‘আর তারা ঐসবের অনুসরণ করল, যা আবৃত্তি করত শয়তানেরা সুলায়মানের রাজত্বকালে। আর সুলায়মান কুফরী করেনি বরং শয়তানেরাই কুফরী করেছিল। যারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত’ (বাক্বারাহ ২/১০২)
এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাদুকে ধ্বংসাত্মক সাত বস্ত্তর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি বলেন,
اجْتَنِبُوا السَّبْعَ المُوبِقَاتِ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا هُنَّ؟ قَالَ: الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ اليَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ المُحْصَنَاتِ المُؤْمِنَاتِ الغَافِلاَتِ-
‘তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বস্ত্ত থেকে সাবধান থাক। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, ১. আল্লাহর সাথে শিরক করা ২. যাদু করা।’ ৩. কোন ব্যক্তিকে হত্য করা, যার হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তবে হকভাবে হত্যা করা যাবে। ৪. সূদ খাওয়া। ৫. ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ করা। ৬. যুদ্ধের দিন ময়দান হতে পালিয়ে যাওয়া। ৭. সতী-সাধ্বী স্ত্রীলোকদের উপর যেনার মিথ্যা অপবাদ দেওয়া যে সম্পর্কে তারা অনবহিত থাকে’।[1]
শয়তান আসমান থেকে আল্লাহ ও ফেরেশতাদের আলাপ গোপনে শ্রবণ করে এসে যাদুকরদের কাছে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে প্রকাশ করে।[2] এরপর গণক, যাদুকররা তা মানুষের সামনে প্রকাশ করে। সুতরাং যাদু করা শয়তানের কাজ, যা সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য।
১৯. لو  (লাও) শব্দের ব্যবহার :
লাও (لو) অর্থ ‘যদি’। ‘যদি’ বলে কোন কথায় সন্দেহ সৃষ্টি অথবা কোন কর্মে ভুল সংশোধন করার জন্য এমন বাক্য ব্যবহার করে যার মধ্যে শির্কী নমুনা পাওয়া যায়। এটা শয়তানের কাজ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,فَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ، فَلَا تَقُلْ: لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَذَا وَكَذَا، وَلَكِنْ قُلْ: قَدَّرَ اللهُ، وَمَا شَاءَ فَعَلَ، فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ- ‘তোমার কোন ক্ষতি হ’লে এভাবে বল না, যদি আমি এরূপ এরূপ করতাম, বরং বল আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি যা চান তাই করেন। কারণ ‘লাও’ (لو) বা ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের কর্মকান্ডের দ্বার খুলে দেয়’।[3]
২০. শয়তানের খোঁচা :
বিভিন্ন সময় শয়তান মানুষকে খোঁচা মারে। যেমন- যয়নব বিনতে জাহাশের বোন হামনা বিনতে জাহাশ হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি চরম ইস্তিহাযায় (মাসিক সংক্রান্ত রোগ) আক্রান্ত ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে এসে এ বিষয়ে ফৎওয়া জানতে চাইলে তিনি (এক পর্যায়ে) বললেন, إِنَّمَا هِيَ رَكْضَةٌ مِنَ الشَّيْطَانِ ‘নিশ্চয়ই এটা হ’ল শয়তানের খোঁচা’।[4]
আল্লাহ বলেন,الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ الرِّبَا لَا يَقُوْمُوْنَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ‘যারা সূদ ভক্ষণ করে, তারা (ক্বিয়ামতের দিন) দাঁড়াতে পারবে না জিনে ধরা রোগীর ন্যায় ব্যতীত। এর কারণ এই যে, তারা বলে ক্রয়-বিক্রয় তো সূদের মতই’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ لِلشَّيْطَانِ لَمَّةً بِابْنِ آدَمَ وَلِلْمَلَكِ لَمَّةً فَأَمَّا لَمَّةُ الشَّيْطَانِ فَإِيعَادٌ بِالشَّرِّ وَتَكْذِيبٌ بِالحَقِّ، وَأَمَّا لَمَّةُ المَلَكِ فَإِيعَادٌ بِالخَيْرِ وَتَصْدِيقٌ بِالحَقِّ، فَمَنْ وَجَدَ ذَلِكَ فَلْيَعْلَمْ أَنَّهُ مِنَ اللهِ فَلْيَحْمَدِ اللهَ وَمَنْ وَجَدَ الأُخْرَى فَلْيَتَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، ثُمَّ قَرَأَ {الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالفَحْشَاءِ}
‘আদম সন্তানের প্রতি ফেরেশতাদের ১টি স্পর্শ রয়েছে এবং শয়তানের ১টি স্পর্শ রয়েছে। ফেরেশতার স্পর্শ হ’ল কল্যাণ কাজে উৎসাহিত করা এবং সত্যকে স্বীকার করা। শয়তানের স্পর্শ হ’ল মন্দ কাজের প্ররোচনা দেওয়া ও সত্যকে অস্বীকার করা। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কুরআনের আয়াত পাঠ করলেন, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্রে্যর ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়। আর আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন’।[5]
অন্যত্র তিনি বলেন,مَا مِنْ بَنِي آدَمَ مَوْلُودٌ إِلَّا يَمَسُّهُ الشَّيْطَانُ حِيْنَ يُولَدُ، فَيَسْتَهِلُّ صَارِخًا مِنْ مَسِّ الشَّيْطَانِ، غَيْرَ مَرْيَمَ وَابْنِهَا- ‘এমন কোন আদম সন্তান নেই, যাকে জন্মের সময় শয়তান স্পর্শ করে না। আর শয়তানের স্পর্শের কারণেই সে চিৎকার করে উঠে। তবে মারইয়াম (আঃ) এবং তার ছেলে ঈসা (আঃ) ব্যতীত’।[6]
তিনি আর বলেন,إِنَّ اللهَ مَعَ القَاضِي مَا لَمْ يَجُرْ، فَإِذَا جَارَ تَخَلَّى عَنْهُ وَلَزِمَهُ الشَّيْطَانُ، ‘বিচারক যতক্ষণ যুলুমে লিপ্ত না হবে ততক্ষণ আল্লাহ তা‘আলা তার সঙ্গে থাকেন। যখন সে যুলুমে লিপ্ত হয় তখন তিনি তাকে ছেড়ে চলে যান আর শয়তান তাকে অাঁকড়ে ধরে’।[7]
২১ শয়তানের পেশাব :
ছালাত আদায় না করে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকলে শয়তান ঐ ব্যক্তির কানে পেশাব করে দেয়। আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,ذُكِرَ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ نَامَ لَيْلَهُ حَتَّى أَصْبَحَ، قَالَ: ذَاكَ رَجُلٌ بَالَ الشَّيْطَانُ فِي أُذُنَيْهِ، أَوْ قَالَ: فِي أُذُنِهِ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এমন এক লোকের ব্যাপারে উল্লেখ করা হ’ল, যে সারারাত এমনকি ভোর পর্যন্ত ঘুমিয়েছিল। তখন তিনি বললেন, সে এমন লোক যার উভয় কানে অথবা তিনি বলেছেন, তার কানে শয়তান পেশাব করেছে’।[8]
২২. শয়তানের গিঁট :
ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘাড়ে শয়তান মন্ত্র পড়ে গিঁট দেয়, যাতে সে ছালাতের জন্য না উঠতে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, يَعْقِدُ الشَّيْطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَأْسِ أَحَدِكُمْ إِذَا هُوَ نَامَ ثَلاَثَ عُقَدٍ يَضْرِبُ كُلَّ عُقْدَةٍ عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ، فَارْقُدْ فَإِنِ اسْتَيْقَظَ فَذَكَرَ اللَّهَ، انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ تَوَضَّأَ انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ صَلَّى انْحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَأَصْبَحَ نَشِيطًا طَيِّبَ النَّفْسِ وَإِلَّا أَصْبَحَ خَبِيثَ النَّفْسِ كَسْلاَنَ- ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এই মন্ত্র পড়ে যে, ‘তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত। অতএব তুমি ঘুমাও’। অতঃপর যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর যিকির করে, তাহ’লে একটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যদি ওযূ করে তবে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। তারপর যদি ছালাত আদায় করে, তাহ’লে সমস্ত গিঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় আনন্দ ফুর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে উঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে’।[9]
২৩. ছালাতে শয়তানের অংশ :
আসওয়াদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন, لاَ يَجْعَلْ أَحَدُكُمْ لِلشَّيْطَانِ شَيْئًا مِنْ صَلاَتِهِ يَرَى أَنَّ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ لاَ يَنْصَرِفَ إِلَّا عَنْ يَمِيْنِهِ لَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَثِيرًا يَنْصَرِفُ عَنْ يَسَارِهِ ‘তোমাদের কেউ যেন স্বীয় ছালাতের কোন কিছু শয়তানের জন্য না করে। তা হ’ল, শুধুমাত্র ডান দিকে ফিরা আবশ্যক মনে করা। আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে অধিকাংশ সময়ই বাম দিকে ফিরতে দেখেছি’।[10]
২৪. শয়তানের ছোঁ :
ছালাতে মুছল্লীর মনোযোগ বিঘ্ন করার জন্য শয়তান ছোঁ মারে। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ছালাতে এদিক সেদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন,هُوَ اخْتِلاَسٌ يَخْتَلِسُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ صَلاَةِ العَبْد ‘এ হ’ল এক ধরনের ছোঁ মারা। এতে শয়তান কারো ছালাত থেকে ছোঁ মেরে কিছু অংশ  নিয়ে যায়’।[11]
২৫. দুঃস্বপ্ন :
শয়তানের পক্ষ থেকে দুঃস্বপ্ন দেখানো হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ مِنَ اللهِ، وَالحُلْمُ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَإِذَا حَلَمَ فَلْيَتَعَوَّذْ مِنْهُ، وَلْيَبْصُقْ عَنْ شِمَالِهِ، فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّهُ ‘ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে (অন্য বর্ণনায় সুন্দর স্বপ্ন হ’ল আল্লাহর পক্ষ থেকে) এবং দুঃস্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে দেখানো হয়। সুতরাং যে অপ্রীতিকর কিছু দেখবে, সে যেন তার বাম দিকে তিনবার হাল্কাভাবে থুক মারে ও শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। তাহ’লে তা তাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[12]
২৬. মৃত পিতা-মাতার রূপে শয়তান :
আবু উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি ভাষণের এক পর্যায়ে বললেন,وَإِنَّ مِنْ فِتْنَتِهِ أَنْ يَقُولَ لِأَعْرَابِيٍّ: أَرَأَيْتَ إِنْ بَعَثْتُ لَكَ أَبَاكَ وَأُمَّكَ، أَتَشْهَدُ أَنِّي رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ، فَيَتَمَثَّلُ لَهُ شَيْطَانَانِ فِي صُورَةِ أَبِيهِ، وَأُمِّهِ، فَيَقُولَانِ: يَا بُنَيَّ، اتَّبِعْهُ، فَإِنَّهُ رَبُّكَ ‘দাজ্জালের আরেকটি অনাসৃষ্টি এই যে, সে এক বেদুঈনকে বলবে, আমি যদি তোমার পিতা-মাতাকে জীবিত করে দিতে পারি তবে তুমি কি এই সাক্ষ্য দিবে যে, আমি তোমার রব? সে বলবে, হ্যাঁ। তখন দু’টি শয়তান দ্বারা তার পিতা-মাতার আকৃতি ধারণ করে হাযির হয়ে বলবে, হে প্রিয় বৎস! তার অনুগত্য কর। সেই তোমার প্রভু’।[13]
দাজ্জালের এই ফিৎনা থেকে বাঁচার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আবু দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ حَفِظَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ الْكَهْفِ عُصِمَ مِنَ الدَّجَّالِ، ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জালের ফিতনা হ’তে মুক্ত রাখা হবে’।[14]
শয়তানের কুমন্ত্রণা, আক্রমণ ও ওয়াসওয়াসা থেকে আত্মরক্ষার উপায় :
শয়তান মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার অসংখ্য রাস্তা বেছে নিয়েছে। প্রয়োজনে নব উদ্ভাবিত পন্থায় মানুষকে ধোঁকা দিতে সদা প্রস্ত্তত। আর মানুষেরও উচিত তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে কুরআন-সুন্নার যথাযথ  অনুসরণ করার মাধ্যমে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। ‘মুখতাছার যাদুল মা‘আদ’ গ্রন্থকার বলেন, শয়তানের সাথে জিহাদ দুই প্রকার : (১) যেসব সন্দেহের কারণে ঈমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শয়তানের সেসব ওয়াসওয়াসার বিরুদ্ধে জিহাদ করা। (২) যেসব পাপ কাজের জন্য আসক্তি নিক্ষেপ করে তা প্রতিহত করতে জিহাদ করা। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوبِ كَالْحَصِيرِ عُودًا عُودًا، فَأَيُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا، نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ، وَأَيُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا، نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ، حَتَّى تَصِيرَ عَلَى قَلْبَيْنِ، عَلَى أَبْيَضَ مِثْلِ الصَّفَا فَلَا تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ -
‘চাটাই বুননের মত ফিৎনা মানুষের অন্তরে এক এক করে (শয়তানের মাধ্যমে) পেশ করা হয়। যে অন্তর তা গ্রহণ করে নেয় সে অন্তরে একটি করে কালো দাগ দেওয়া হয়। আর যে অন্তর তা প্রত্যাখ্যান করে সে অন্তরে একটি করে শুভ্রোজ্জ্বল চিহ্ন পড়ে। এমনি করে অন্তরগুলো দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি উল্টানো কালো কলসির ন্যায় হয়ে যায়। প্রবৃত্তি তার মধ্যে যা উপস্থাপন করে তা ব্যতীত ভাল-মন্দ কিছুই বুঝে না। আর অপরটি সাদা পাথরের ন্যায়; যতদিন আসমান ও যমীনের স্থায়ীত্ব ততদিন কোন ফিৎনা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[15]
শয়তান থেকে আত্মরক্ষার জন্য প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। নিম্নে শয়তান থেকে বাঁচার জন্য কুরআন-সুন্নার আলোকে কিছু আমলের উল্লেখ করা হ’ল :
১। সূরা বাক্বারাহ পাঠ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَا تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ مَقَابِرَ، إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِي تُقْرَأُ فِيهِ سُورَةُ الْبَقَرَة ‘তোমরা নিজেদের ঘর-বাড়িগুলো কবরে পরিণত কর না। যে বাড়িতে সূরা বাক্বারাহ পাঠ করা হয়, অবশ্যই সে বাড়ি থেকে শয়তান পলায়ন করে’।[16]
২। ছাদাক্বা করা : কায়েস ইবনে আবি গারাযা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, يَا مَعْشَرَ التُّجَّارِ، إِنَّ الشَّيْطَانَ وَالإِثْمَ يَحْضُرَانِ البَيْعَ فَشُوبُوا بَيْعَكُمْ بِالصَّدَقَةِ، ‘হে ব্যবসায়ী সমাজ! ব্যবসা ক্ষেত্রে শয়তান ও পাপ এসে উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমরা ব্যবসায় (শয়তান ও পাপ মুক্ত করতে) ছাদাক্বা জড়িত কর’।[17]
৩। আয়াতুল কুরসী পাঠ : আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিতর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিলেন। আমি তিন রাত চোর আটক করলাম। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সে ২ রাতে ছুটে গেল। তৃতীয় রাতে সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও তোমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দিব, যা দ্বারা তোমার উপকার হবে। আমি বললাম, সেগুলো কি? সে বলল, যখন তুমি ঘুমাতে যাবে তখন ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করবে। তাহ’লে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত করা হয়। আর সকাল পর্যন্ত তার নিকট শয়তান আসতে পারে না। ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা। তুমি কি জান সে কে? সে হ’ল চিরমিথ্যাবাদী কিন্তু তোমার সাথে সত্য বলেছে। সে হ’ল শয়তান’।[18]
৪। শয়তানের হাত থেকে বাঁচার যিকির : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ قَالَ: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ فِي يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ، وَكُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ، وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ، وَكَانَتْ لَهُ حِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَهُ ذَلِكَ حَتَّى يُمْسِيَ، ‘যে লোক একশ’বার এ দো‘আটি পড়বে, (আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই জন্য, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তাঁরই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতা বান)। তাহ’লে দশটি গোলাম আযাদ করার সমান ছওয়াব হবে। তার জন্য ১০০টি ছওয়াব লিখা হবে একশটি গুনাহ মাফ করা হবে। ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান হ’তে নিরাপদ থাকবে’।[19]
শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যার দো‘আ :
 আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললেন, مُرْنِي بِشَيْءٍ أَقُولُهُ إِذَا أَصْبَحْتُ وَإِذَا أَمْسَيْتُ؟ قَالَ: قُلْ: اللَّهُمَّ عَالِمَ الغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيكَهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ، قَالَ: قُلْهُ إِذَا أَصْبَحْتَ، وَإِذَا أَمْسَيْتَ، وَإِذَا أَخَذْتَ مَضْجَعَك ‘আমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দিন যেগুলো সকাল-সন্ধ্যায় আমি পড়তে পারব। তিনি বলেন, ‘বল, ‘আল্লাহুম্মা ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরজি ‘আলিমাল গাইবি ওয়াশ শাহাদাত, রাববা কুল্লা শাইয়িন ওয়া মালিকিহী ওয়া আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়া আউযুবিকা মিন শাররি নাফসী ওয়া শাররিশ শাইত্বান ওয়া শিরকিহী। ‘তিনি বলেন, সকাল-সন্ধ্যা এবং যখন বিছানায় শুইতে যাবে তখন এটি পাঠ করবে’।[20] সকাল-সন্ধ্যা দো‘আটি পাঠ করলে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে ইনশাআল্লাহ।
রাসূলের পক্ষ থেকে হাসান-হুসাইনকে ঝাড়ফুঁক :
ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَوِّذُ الْحَسَنَ، وَالْحُسَيْنَ، يَقُولُ: أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ، قَالَ: وَكَانَ أَبُونَا إِبْرَاهِيمُ يُعَوِّذُ بِهَا إِسْمَاعِيلَ، وَإِسْحَاقَ- ‘নবী করীম (ছাঃ) হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-কে ঝাড়ফুঁক করে বলতেন, ‘আঊযুবি কালিমা-তিল্লাহিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হা-ম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিল লা-ম্মাতি’ এবং এই ঝাড়ফুঁক দ্বারা আমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ) ইসহাক ও ইসমাঈলকে ঝাড়ফুঁক করতেন।[21]
ঘুমের মাঝে ভয় পেলে :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যদি ঘুমের মধ্যে ভয় পায় তবে যেন সে এই দো‘আ পাঠ করে, তাহ’লে তার কোন অনিষ্ট হবে না’।أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ ‘আঊযু বিকালিমা-তিল্লাহিত-তা-ম্মা-তি মিন গাযাবিহী ওয়া ইক্বা-বিহী ওয়া শার্রি ‘ইবা-দিহী ওয়া মিন হামাযা-তিশ শায়াত্বীনি ওয়া আই ইয়াহযুরূন’।[22]
গাধার ডাক শুনলে : নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা মোরগের ডাক শুনলে আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনা করবে কারণ সে ফেরেশতা দেখেছে। আর গাধার ডাক শুনলে শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। কেননা সে শয়তান প্রত্যক্ষ করেছে’।[23]
জিন ও বদনযর হ’তে আশ্রয় : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিন এবং মানুষের কু-দৃষ্টি হ’তে আশ্রয় চাইতেন। এরপর সূরা ফালাক্ব এবং নাস নাযিল হ’লে তিনি এ সূরা দু’টি গ্রহণ করেন এবং বাকীগুলো পরিত্যাগ করেন।[24] বাচ্চাদেরকে বদনযর থেকে রক্ষা করতে উক্ত সূরা দু’টি পাঠ করা যরূরী।
পেশাব-পায়খানায় শয়তান থেকে আশ্রয় : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ هَذِهِ الْحُشُوشَ مُحْتَضَرَةٌ، فَإِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الْخَلَاءَ فَلْيَقُلْ: أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ ‘এই সকল পায়খানার স্থানে সাধারণত শয়তানের উপস্থিতি থাকে। অতএব তোমাদের কেউ যখন পায়খানায় যাওয়ার ইচ্ছা করে তখন সে যেন বলে, ‘আউযুবিল্লাহি মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ’। অর্থাৎ ‘আমি আল্লাহর নিকট স্ত্রী ও পুরুষ উভয় শয়তানের খারাবী থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।[25]
অন্য আরেকটি বর্ণনায় আনাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন সৌচাগারে যেতেন, তখন বলতেন, اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الخُبُثِ وَالخَبَائِثِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবা-য়িছ’। অর্থ: হে আল্লাহ আমি স্ত্রী ও পুরুষ শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।[26]
কুরআন তেলাওয়াতকালে : কুরআন তেলাওয়াতকালে শয়তান থেকে আশ্রয় নিতে মহান আল্লাহ বলেন,فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‘যখন তুমি কুরআন তেলাওয়াত কর, তখন (শুরুতে) বিতাড়িত শয়তান হ’তে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর’ (নাহল ১৬/৯৮)
শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে বেশী বেশী দো‘আ করতে হবে। যেমন : اللهم اني اعوذبك من همزات الشياطين ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন হামাযা-তিশ শায়াত্বীন’ (মুমিনূন ২৩/৯৭)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ بِاللَّيْلِ كَبَّرَ،  ثُمَّ يَقُولُ: سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ، ثُمَّ يَقُولُ: اللهُ أَكْبَرُ كَبِيْرًا، ثُمَّ يَقُولُ: أَعُوذُ بِاللهِ السَّمِيعِ العَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ، ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন রাতে ছালাতে দাঁড়াতেন তখন ছালাত শুরু করে বলতেন, ‘আমি অভিশপ্ত শয়তান এবং তার কুমন্ত্রণা, ঝাঁড়ফুঁক ও যাদুমন্ত্র হ’তে সর্বশ্রোতা ও সর্বময় জ্ঞানের অধিকারী আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।[27]
উত্তম কথা বলে শত্রকে বন্ধু বানানোর মাধ্যমে মানবীয় শয়তানকে প্রতিহত করা এবং তার অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করা। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ ‘ভাল ও মন্দ কখনো সমান হ’তে পারে না। তুমি উত্তম দ্বারা (অনুত্তমকে) প্রতিহত কর। ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে (তোমার) অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৩৪)
আবার জিন শয়তানের অনিষ্ট হ’তে বাঁচার পন্থা হিসাবে মহান আল্লাহ বলেন,وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ‘যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (হামীম সাজদাহ ৪১/৩৬)
তবে একথা সব সময় মনে রাখতে হবে যে, ‘শয়তানকে কখনো গালি দেওয়া যাবে না। কারণ শয়তানকে গালি দিলে তার ক্ষমতা বেড়ে যায়। আবু মালিহা একজন ছাহাবী হ’তে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে একই উটের পিঠে আরোহণ করলাম। এমন সময় উট লাফালাফি করতে থাকলে আমি বললাম, শয়তানের সর্বনাশ হোক। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,لَا تَقُلْ تَعِسَ الشَّيْطَانُ، فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ تَعَاظَمَ حَتَّى يَكُونَ مِثْلَ الْبَيْتِ، وَيَقُولُ: بِقُوَّتِي، وَلَكِنْ قُلْ: بِسْمِ اللهِ فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ تَصَاغَرَ حَتَّى يَكُونَ مِثْلَ الذُّبَابِ ‘তুমি বল না শয়তানের সর্বনাশ হোক! কেননা এরূপ বললে শয়তান অহংকারে ফুলে উঠে ঘরের সমান হয়ে যায় এবং বলতে থাকে আমি খুবই শক্তিমান। কিন্তু ‘বিসমিল্লাহ’ বল। কারণ যদি বিসমিল্লাহ বল তবে সে আস্তে আস্তে ছোট হয়ে থাকে। এমনকি মাছির সমান হয়ে যায়’।[28]
সহবাস কালে দো‘আ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا أَتَى أَهْلَهُ قَالَ بِاسْمِ اللهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا، فَقُضِيَ بَيْنَهُمَا وَلَدٌ لَمْ يَضُرُّهُ، ‘তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলনের পূর্বে যদি বলে ‘আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বানা মা রাযাক্বতানা’। অতঃপর  এ মিলনে যদি কোন সন্তান হয় তবে তাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না’। মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, ‘শয়তান তাকে কখনো কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[29]
বাড়ীতে প্রবেশকালে যিকির : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ فَذَكَرَ اللهَ عِنْدَ دُخُولِهِ، وَعِنْدَ طَعَامِهِ، قَالَ الشَّيْطَانُ: لَا مَبِيتَ لَكُمْ وَلَا عَشَاءَ، وَإِذَا دَخَلَ فَلَمْ يُذْكَرِ اللهَ عِنْدَ دُخُولِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ: أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ، فَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ: أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ وَالْعَشَاءَ ‘কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহর নাম স্মরণ করলে শয়তান তার সঙ্গীদের বলে, তোমাদের রাত্রি যাপন ও রাতের আহারের কোন ব্যবস্থা হ’ল না। কিন্তু কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমরা রাত্রিযাপনের জায়গা পেয়ে গেলে। সে আহারের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমাদের রাতের আহারের ও শয্যাগ্রহণের ব্যবস্থা হয়ে গেল’।[30]
সুতরাং শয়তানকে প্রতিহত করার একটি বড় মাধ্যম হ’ল প্রতিটি কাজে আল্লাহকে স্মরণ করা। অন্যথা শয়তান তার সাথে অংশগ্রহণ করে।
তিলাওয়াতে সিজদাহ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, বনী আদম যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদায় যায়, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে দূরে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে হায়! আমার দুর্ভাগ্য! বনী আদম সিজদার জন্য আদিষ্ট হ’ল। তারপর সে সিজদা করল এবং তার বিনিময়ে জান্নাত নির্ধারিত হ’ল। আর আমাকে সিজদার জন্য আদেশ করা হ’লে আমি তা অস্বীকার করলাম ফলে জাহান্নাম নির্ধারিত হ’ল।[31]
জামা‘আতে পায়ে পা মিলানো : জামা‘আতে কাতারবদ্ধ হওয়ার সময় দু’জনের মাঝের ফাঁক বন্ধ করতে হবে। কারণ দু’জনের মাঝের ফাঁকে শয়তান দাঁড়ায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَلَا تَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ، ‘কাতারের মাঝে শয়তানের জন্য জায়গা রেখ না’।[32]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেছেন,رُصُّوْا صُفُوفَكُمْ وَقَارِبُوْا بَيْنَهَا وَحَاذُوْا بِالْأَعْنَاقِ، فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ إِنِّيْ لَأَرَىْ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَأَنَّهَا الْحَذَفُ ‘তোমরা কাতার সমূহে পরস্পরে মিলে দাঁড়াবে এবং পরস্পরকে কাছে টেনে নিবে। তোমাদের ঘাড় সমূহকে সমপর্যায়ে সোজা রাখবে। আমি ঐ সত্তার কসম করে বলছি, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, নিশ্চয়ই আমি শয়তানকে দেখি সে কাতারের ফাঁক সমূহে প্রবেশ করে কালো ভেড়ার বাচ্চার ন্যায়’।[33]
মানুষ যখন ইবাদত বা ভাল কাজে লিপ্ত হয় তখন হাই উঠে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,وَأَمَّا التَّثَاؤُبُ: فَإِنَّمَا هُوَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَلْيَرُدَّهُ مَا اسْتَطَاعَ، فَإِذَا قَالَ: هَا، ضَحِكَ مِنْهُ الشَّيْطَانُ، ‘হাই উঠে শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং যথাসাধ্য সে যেন তা প্রতিহত করতে চেষ্টা করে। কারণ কেউ যদি হাই তোলে ‘হা’ বলে তবে শয়তান তা দেখে হাসতে থাকে’।[34]
অন্যত্র এসেছে, إِذَا تَثَاءَبَ أَحَدُكُمْ، فَلْيُمْسِكْ بِيَدِهِ عَلَى فِيهِ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ، ‘তোমাদের কারো যদি হাই আসে তবে তার হাত দিয়ে যেন মুখ চেপে ধরে, কারণ শয়তান ভিতরে প্রবেশ করে’।[35]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, غَطُّوا الْإِنَاءَ، وَأَوْكُوا السِّقَاءَ، وَأَغْلِقُوا الْبَابَ، وَأَطْفِئُوا السِّرَاجَ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَحُلُّ سِقَاءً، وَلَا يَفْتَحُ بَابًا، وَلَا يَكْشِفُ إِنَاءً، فَإِنْ لَمْ يَجِدْ أَحَدُكُمْ إِلَّا أَنْ يَعْرُضَ عَلَى إِنَائِهِ عُودًا، وَيَذْكُرَ اسْمَ اللهِ، فَلْيَفْعَلْ، فَإِنَّ الْفُوَيْسِقَةَ تُضْرِمُ عَلَى أَهْلِ الْبَيْتِ بَيْتَهُمْ، ‘তোমরা খাদ্য ও পানপাত্র ঢেকে রাখো, মশকের মুখ বন্ধ করো, প্রদীপ  নিভিয়ে দাও এবং শয়নকালে ঘরের দরজা বন্ধ রাখ। কারণ শয়তান বন্ধ মশক খুলতে পারে না, বন্ধ দরজা খুলতে পারে না, ঢেকে রাখা পাত্রও খুলতে পারে না। তোমাদের কেউ যদি পাত্র ঢাকার কিছু না পায় তবে সে যেন তার উপর একটি কাঠি আড়াআড়িভাবে দিয়ে দেয় এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করে। কারণ ইঁদুর মানুষের ঘর জ্বালিয়ে দেয়’।[36]
খাবার পড়ে গেলে : খাবার সময় লোকমা পড়ে গেলে শয়তান তাতে অংশগ্রহণ করতে চায়। তাই ঐ খাবার তুলে খেতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَحْضُرُ أَحَدَكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَيْءٍ مِنْ شَأْنِهِ، حَتَّى يَحْضُرَهُ عِنْدَ طَعَامِهِ، فَإِذَا سَقَطَتْ مِنْ أَحَدِكُمُ اللُّقْمَةُ، فَلْيُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أَذًى، ثُمَّ لِيَأْكُلْهَا، وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ، فَإِذَا فَرَغَ فَلْيَلْعَقْ أَصَابِعَهُ، فَإِنَّهُ لَا يَدْرِي فِي أَيِّ طَعَامِهِ تَكُونُ الْبَرَكَةُ-
‘নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের সকল ভাল কাজে উপস্থিত হয় এমনকি খাদ্য খাওয়ার সময়েও। অতএব তোমাদের হাতের লোকমা যদি পড়ে যায় তবে ময়লা পরিষ্কার করে তুলে নিবে। কারণ কেউ জানে না কোন খাদ্যে বরকত রয়েছে’।[37]
মুসলিমের অপর বর্ণনায় রয়েছে وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ ‘আর তা যেন শয়তানের জন্য ফেলে না রাখে’।[38]
অতএব খাবার পড়ে গেলে শয়তানের খাবার থেকে প্রতিহত করতে চাইলে তুলে খেতে হবে। তবেই শয়তান ব্যর্থ হবে। তাছাড়াও শয়তানকে কষাঘাত করতে শিক্ষা দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)। নাফে‘ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) যখন ছালাত আদায় করতে তাশাহহুদে বসতেন তখন উভয় হাত উভয় হাঁটুর উপর রাখতেন এবং তার  আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। তার দৃষ্টি থাকত ঐ আঙ্গুলের দিকে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَهِيَ أَشَدُّ عَلَى الشَّيْطَانِ مِنَ الْحَدِيْدِ يَعْنِي السَّبَّابَةَ ‘নিশ্চয়ই উহা লেŠহ দন্ডের আঘাতের চেয়েও শয়তানের নিকট কঠিন আঘাত। অর্থাৎ শাহাদাত আঙ্গুল।[39]
আযান দ্বারা শয়তান তাড়ানো : আযানের আওয়াজ শুনলে শয়তান পালিয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الشَّيْطَانَ إِذَا سَمِعَ النِّدَاءَ بِالصَّلَاةِ ذَهَبَ حَتَّى يَكُونَ مَكَانَ الرَّوْحَاء، ‘যখন ছালাতের আযান দেওয়া হয় তখন শয়তান আযানের শব্দ শুনে রাওহা নামক স্থান অতিক্রম করে। (রাওহা নামক স্থানটি মদীনা থেকে ছত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত)।[40]
বাড়ী থেকে বের হওয়ার যিকির : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ قَالَ يَعْنِي إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ: بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، يُقَالُ لَهُ: كُفِيتَ، وَوُقِيتَ، وَتَنَحَّى عَنْهُ الشَّيْطَانُ ‘যে ব্যক্তি বাড়ী হ’তে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কালতু ‘আল্লাল্লা-হি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। তাকে তখন বলা হয়, (আল্লাহ তা‘আলাই) তোমার জন্য যথেষ্ট, (সকল অনিষ্ট হ’তে) তুমি হিফাযত অবলম্বন করেছ। আর তার নিকট হ’তে শয়তান দূরে সরে যায়’।[41]
শয়তান অন্যকে বলতে থাকেكَيْفَ لَكَ بِرَجُلٍ قَدْ هُدِيَ وَكُفِيَ وَوُقِيَ؟ ‘ঐ ব্যক্তির সাথে কি করে পেরে উঠা সম্ভব, যাকে হেদায়াত দেওয়া হয়েছে, যার জন্য প্রভু যথেষ্ট হয়েছেন এবং যাকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে’।[42]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,
مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ عَشْرَ مَرَّاتٍ عَلَى إِثْرِ المَغْرِبِ بَعَثَ اللهُ لَهُ مَسْلَحَةً يَحْفَظُونَهُ مِنَ الشَّيْطَانِ حَتَّى يُصْبِحَ، وَكَتَبَ اللهُ لَهُ بِهَا عَشْرَ حَسَنَاتٍ مُوجِبَاتٍ، وَمَحَا عَنْهُ عَشْرَ سَيِّئَاتٍ مُوبِقَاتٍ، وَكَانَتْ لَهُ بِعَدْلِ عَشْرِ رِقَابٍ مُؤْمِنَاتٍ-
‘যে ব্যক্তি মাগরিবের ছালাতের পর ১০ বার বলবে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইউহ্য়ী ওয়া ইউমীতু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লী শাইয়িন কাদীর’ আল্লাহ তা‘আলা সকাল পর্যন্ত তাকে শয়তান হ’তে নিরাপত্তা দান করেন, তার জন্য অবশ্যম্ভাবী করার ন্যায় ১০টি পুণ্য লিখে দেন, তার ১০টি ধ্বংসাত্মক গুনাহ মুছে দেন, তার জন্য ১০টি ঈমানদার দাস মুক্ত করার সমপরিমাণ ছওয়াব প্রদান করেন’।[43]
রাগ বা ক্রোধ শয়তানের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। কারণ সুলায়মান ইবনু সারদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর সামনে দু’ব্যক্তি মারামারি করতে উদ্যত হ’ল। তাদের একজনের ভয়ানক রাগে চেহারা লাল হয়ে গেল। তখন নবী করীম (ছাঃ) তাদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আমি এমন একটি কালেমা জানি যা পাঠ করলে তার ক্রোধ চলে যাবে। আর তা হ’ল أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ ‘আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।[44]
তুচ্ছ অন্যায় করলেও শয়তান খুশি হয়। তাই সরাসরি শয়তানের অনুসরণ যেমন ত্যাগ করতে হবে তেমন ছোটখাট অন্যায়ও ত্যাগ করতে হবে। সুলায়মান ইবনে আহওয়াস (রহঃ) তার পিতার সূত্রে বর্ণণা করেন। তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বিদায় হজ্জের ভাষণে বলতে শুনেছি,أَلَا إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ أَيِسَ أَنْ يُعْبَدَ فِيْ بَلَدِكُمْ هَذَا أَبَدًا، وَلَكِنْ سَيَكُوْنُ لَهُ طَاعَةٌ فِي بَعْضِ مَا تَحْتَقِرُوْنَ مِنْ أَعْمَالِكُمْ، ‘জেনে রেখ! তোমাদের এই শহরে শয়তান নিজের জন্য ইবাদত পাওয়ার ব্যাপারে চিরকালের জন্য নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু কতগুলো কাজ যা তোমরা তুচ্ছজ্ঞানে করতে গিয়ে শয়তানের আনুগত্য করো, ফলে তাতে সে খুশি হয়’।[45]
ছোটখাট অন্যায় করলেও যেহেতু শয়তান খুশি হয় সেহেতু সকল প্রকার অন্যায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর হ’তে হবে। যেমন কঠোর ছিলেন ওমর (রাঃ)। আমাদেরও অন্যায়, অনাচার ও শয়তানী কর্মকান্ড থেকে এমন প্রতিবাদী ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যেন শয়তান পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মনে রাখতে হবে শয়তানের যতই শক্তি, ক্ষমতা থাকুক না কেন মুমিনের একটা ছোট দো‘আই তাকে ঘায়েল করতে যথেষ্ট। সুতরাং আমরা শয়তান থেকে বাঁচতে বেশী বেশী দো‘আ করব এবং সৎকাজে মশগূল থাকব। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শয়তানের চক্রান্ত থেকে হেফাযত করুন- আমীন!
[1]. বুখারী হা/২৭৬৬; মুসলিম হা/৮৯; আবূ দাঊদ হা/২৮৭৪।
[2]. বুখারী হা/৪৭০১।
[3]. মুসলিম হা/২৬৬৪; ইবনে মাজাহ হা/৭৯।
[4]. তিরমিযী হা/১২৮।
[5]. বাক্বারাহ ২/২৬৮; তিরমিযী হা/২৯৮৮।
[6]. বুখারী হা/৩৪৩১; বঙ্গানুবাদ বুখারী (ইফাবা) হা/৩০৫৬।
[7]. তিরমিযী হা/১৩৩০।
[8]. বুখারী হা/৩২৭০।
[9]. বুখারী হা/১১৪২; মুসলিম হা/৭৭৬।
[10]. বুখারী হা/৮৫২; মুসলিম হা/৭০৭।
[11]. বুখারী হা/৭৫১; তিরমিযী হা/৫৯০।
[12]. বুখারী হা/৬৯৮৬; মুসলিম হা/২২৬১; তিরমিযী হা/২২৭৭।
[13]. ইবনে মাজাহ হা/৪০৭৭।
[14]. মুসলিম হা/৮০৯; আবু দাঊদ হা/৪৩২৩।
[15]. মুসলিম হা/১৪৪।
[16]. মুসলিম হা/৭৮০।
[17]. তিরমিযী হা/১২০৮।
[18]. বুখারী হা/২৩১১।
[19]. বুখারী হা/৩২৯৩।
[20]. তিরমিযী হা/৩৩৯৩।
[21]. বুখারী হা/৩৩৭১; তিরমিযী হা/২০৬০।
[22]. তিরমিযী হা/৩৫২৮।
[23]. মুসলিম হা/২৭২৯।
[24]. তিরমিযী হা/২০৫৮।
[25]. আবূদাঊদ হা/৬।
[26]. বুখারী হা/১৪২; ইবনে মাজাহ হা/২৯৮।
[27]. তিরমিযী হা/২৪২; ইবনে মাজাহ হা/৮০৪।
[28]. আবূদাঊদ হা/৪৯৮২;ছহীহুল জামে‘ হা/২৫৮৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩১২৮, ৩১২৯।
[29]. বুখারী হা/১৪১; মুসলিম হা/১৪৩৪।
[30]. মুসলিম হা/২০১৮; আবূদাঊদ হা/৩৭৬৫।
[31]. মুসলিম হা/৮১।
[32]. আবূদাঊদ হা/৬৬৬।
[33]. আবূদাঊদ হা/৬৬৭।
[34]. বুখারী হা/৬২২৩।
[35]. মুসলিম হা/২৯৯৫।
[36]. মুসলিম হা/২০১২।
[37]. মুসলিম হা/২০৩৩।
[38]. মুসলিম হা/২০৩৪।
[39]. মুসনাদে আহমাদ হা/৬০০০।
[40]. মুসলিম হা/৩৮৮।
[41]. তিরমিযী হা/৩৪২৬।
[42]. আবূদাঊদ হা/৫০৯৫।
[43]. তিরমিযী হা/৩৫৩৪।
[44]. মুসলিম হা/২৬১০। 
[45]. ইবনু মাজাহ হা/৩০৫৫।
(সমাপ্ত)



No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...