বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তানের ভয়াবহ পরিনতি
দুনিয়াতেই যারা সন্তানের জন্য জান্নাত ও জাহান্নাম
তারা হলেন পিতা-মাতা। যারা দুনিয়াতে পিতা-মাতাকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে; দুনিয়া ও পরকাল
সফলতার তাদের জন্য। আর যারা দুনিয়াতে পিতা-মাতার সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ তাদের দুনিয়া
ও পরকাল উভয়টিই ব্যর্থ।
পিতামাতার সাথে সদব্যবহার করার হুকুম
(ক) আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
‘‘আপনার প্রভু এ বলে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা
তিনি ছাড়া অন্য কারোর ইবাদাত করবেনা এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। তাদের একজন
বা উভয়জন তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তুমি তাদেরকে বিরক্তি সূচক কোন শব্দ
বলবেনা এবং তাদেরকে ভৎর্সনাও করবেনা। বরং তাদের সাথে সম্মান সূচক নম্র কথা বলবে। দয়াপরবশ
হয়ে তাদের প্রতি সর্বদা বিনয়ী থাকবে এবং সর্বদা তাদের জন্য এ দো‘আ করবে যে, হে আমার
প্রভু! আপনি তাদের প্রতি দয়া করুন যেমনিভাবে শৈশবে তারা আমার প্রতি অশেষ দয়া করে আমাকে
লালন-পালন করেছেন’’। (সুরা ইস্রা/বানী ইসরাঈল্ : ২৩-২৪)।
(খ) আবু
দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নয়টি ব্যাপারে
ওসিয়াত করেছেনঃ (১) আল্লাহর সাথে কিছু শরীক করো না, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় অথবা
অগ্নিদগ্ধ করা হয়। (২) ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয নামায ত্যাগ করো না, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায়
ফরয নামায ত্যাগ করবে তার সম্পর্কে আমার কোন দায়িত্ব নাই। (৩) মদ্যপান করো না, কেননা
তা সকল অনাচারের চাবি। (৪) তোমার পিতা-মাতার আনুগত্য করবে, তারা যদি তোমাকে দুনিয়া
ছাড়তেও আদেশ করেন তবে তাই করবে। (৫) শাসকদের সাথে বিবাদে জড়াবে না, যদিও দেখো যে,
তুমিই তুমি। (৬) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করো না, যদিও তুমি ধ্বংস হও এবং তোমার সঙ্গীরা
পলায়ন করে। (৭) তোমার সামর্থ্য অনুসারে পরিবারের জন্য ব্যয় করো। (৮) তোমার পরিবারের
উপর থেকে লাঠি তুলে রাখবে না এবং (৯) তাদের মধ্যে মহামহিম আল্লাহর ভয় জাগ্রত রাখবে।
(আল-আদাবুল মুফরাদ ১৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
মানুষের মাঝে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার কে অধিক হকদার?
(ক) আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক
হকদার? তিনি বললেনঃ তোমার মা। লোকটি বললঃ অতঃপর কে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ তোমার মা। সে বললঃ অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বললঃ অতঃপর কে? তিনি
বললেনঃ অতঃপর তোমার বাপ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৯৭১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৩৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৪৮, আল-আদাবুল মুফরাদ
৩, ৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, আমি এক মহিলাকে
বিবাহের প্রস্তাব দিলাম। সে আমাকে বিবাহ করতে অস্বীকার করলো। অপর এক ব্যক্তি তাকে বিবাহের
প্রস্তাব দিলে সে তাকে বিবাহ করতে পছন্দ করলো। এতে আমার আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লাগলে
আমি তাকে হত্যা করি। আমার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? তিনি বলেন, তোমার মা কি জীবিত আছেন?
সে বললো, না। তিনি বলেন, তুমি মহামহিম আল্লাহর নিকট তওবা করো এবং যথাসাধ্য তার নৈকট্য
লাভে যত্নবান হও। আতা (রহঃ) বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
তার মা জীবিত আছে কিনা তা আপনি কেন জিজ্ঞেস করলেন? তিনি বলেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের
জন্য মায়ের সাথে সদাচারের চেয়ে উত্তম কোন কাজ আমার জানা নাই। (আল-আদাবুল মুফরাদ ৪, বাযযার)।
আল্লাহর নিকট কোন্ কাজ সব থেকে অধিক পছন্দনীয়?
আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর নিকট
কোন্ কাজ সব থেকে অধিক পছন্দনীয়? তিনি বললেনঃ সময় মত সালাত আদায় করা। (’আবদুল্লাহ)
জিজ্ঞেস করলেনঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ পিতা-মাতার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা। ’আবদুল্লাহ
জিজ্ঞেস করলেনঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। ’আবদুল্লাহ বললেনঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো সম্পর্কে আমাকে বলেছেন। আমি তাঁকে আরও অধিক
প্রশ্ন করলে, তিনি আমাকে আরো জানাতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৫৯৭০, ৫২৭, আল-আদাবুল মুফরাদ ১, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-
৫৪৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পিতা-মাতার প্রতিদান শোধ করা সম্ভব নয়
(ক) আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সন্তানের পক্ষে
তার পিতার প্রতিদান শোধ করা সম্ভব নয়। তবে সে তাকে দাসরূপে পেয়ে ক্রয় করে দাসত্বমুক্ত
করে দিলে তার প্রতিদান হতে পারে। (আল-আদাবুল মুফরাদ ১০
মুসলিম, দারিমী, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, তাহাবী)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আবু
বুরদা (রহঃ) বলেন, তিনি ইবনে উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলেন। ইয়ামনের এক ব্যক্তি তার মাকে
তার পিঠে বহন করে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করছিল আর বলছিল, “আমি তার জন্য তার অনুগত উটতুল্য
ও আমি তার পাদানিতে আঘাতপ্রাপ্ত হলেও নিরুদ্বেগে তা সহ্য করি”। অতঃপর সে ইবনে উমার
(রাঃ)-কে বললো, আমি কি আমার মাতার প্রতিদান দিতে পেরেছি বলে আপনি মনে করেন? তিনি বলেন,
না, তার একটি দীর্ঘশ্বাসের প্রতিদানও হয়নি। অতঃপর ইবনে উমার (রাঃ) তাওয়াফ করলেন।
তিনি মাকামে ইবরাহীমে পৌঁছে দুই রাকআত নামায পড়ার পর বলেন, হে আবু মূসার পুত্র প্রতি
দুই রাকআত নামায পূর্ববর্তী পাপের কাফফারা। (আল-আদাবুল
মুফরাদ ১১, বায়হাকী, কানযুল উম্মাল)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া একটি গুরুতর অপরাধ
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রা.) থেকে
বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
আবদুল্লাহ্ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কবীরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা,
পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া অথবা বলেছেন, মিথ্যা কসম করা। শু’বাহ (রহ.) তাতে সন্দেহ করেন।
এবং মুয়ায (রহ.) বলেন, শু’বাহ আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন, কবীরা গুনাহ্ হচ্ছে আল্লাহর
সঙ্গে শরীক করা, মিথ্যা কসম করা আর মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া অথবা বলেছেন প্রাণ হত্যা
করা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৮৭০, ৬৬৭৫, আধুনিক
প্রকাশনী- ৬৩৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর হারাম
করেছেন, মা-বাপের নাফরমানী করা, প্রাপকের প্রাপ্য আটক রাখা, যে জিনিস গ্রহণ করা তোমাদের
জন্য ঠিক নয় তা তলব করা এবং কন্যা সন্তানকে জীবিত কবর দেয়া। আর তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ
করেছেন গল্প-গুজব করা, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা ও সম্পদ অপচয় করা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৭৫, ৮৪৪, ২৪০৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পিতা-মাতার নাফরমানী করা কবীরা গুনাহ
(ক) মুগীরা
ইবনু শু’বা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মা-বাপের নাফরমানী করা, প্রাপকের প্রাপ্য
আটক রাখা, যে জিনিস গ্রহণ করা তোমাদের জন্য ঠিক নয় তা তলব করা এবং কন্যা সন্তানকে জীবিত
কবর দেয়া। আর তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেছেন গল্প-গুজব করা, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা
ও সম্পদ অপচয় করা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৭৫,
৮৪৪, ২৪০৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪২, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
আবূ বকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের সব থেকে বড় গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করব না? আমরা বললামঃ অবশ্যই
সতর্ক করবেন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে অংশীদার গণ্য
করা, পিতা-মাতার নাফরমানী করা। এ কথা বলার সময় তিনি হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর
(সোজা হয়ে) বসলেন এবং বললেনঃ মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, দু’বার করে বললেন এবং
ক্রমাগত বলেই চললেন। এমনকি আমি বললাম, তিনি মনে হয় থামবেন না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৭৬, ২৬৫৪, আল-আদাবুল মুফরাদ
১৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-
৫৪৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কাবীরা গুনাহর কথা উল্লেখ করলেন অথবা তাঁকে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো।
তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর সঙ্গে শারীক করা, মানুষ হত্যা করা ও মা-বাপের নাফরমানী করা।
তারপর তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের কবীরা গুনাহর অন্যতম গুনাহ হতে সতর্ক করবো না? পরে
বললেনঃ মিথ্যা কথা বলা, অথবা বলেছেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। শু’বাহ (রহ.) বলেন, আমার
বেশি ধারণা হয় যে, তিনি বলেছেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৭৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করলে তার প্রতি আল্লাহও অভিশাপ দেয়
(ক) আবু
তোফাইল (রহঃ) বলেন, আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কি কোন বিশেষ ব্যাপার আপনাকে বলেছেন, যা সর্বসাধারণকে বলেননি? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য কাউকে বলেননি এমন কোন বিশেষ কথা একান্তভাবে আমাকে
বলেননি। অবশ্য আমার তরবারির খাপের মধ্যে যা আছে ততটুকুই। অতঃপর তিনি একখানি লিপি বের
করলেন। তাতে লেখা ছিলঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অপর কারো নামে পশু জবাই করে তার প্রতি
আল্লাহর অভিশাপ। যে ব্যক্তি জমির সীমানা চিহ্ন চুরি করে তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ।
যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করে তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। যে ব্যক্তি বিদআতীকে
আশ্রয় দেয় তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ। (আল-আদাবুল মুফরাদ
১৭, মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) সাবিত ইবনু যাহ্হাক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি গাছের
নীচে বাই’আত গ্রহণকারীদের অন্যতম সাহাবী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দলের উপর কসম খাবে, সে ঐ দলেরই শামিল হয়ে
যাবে। আর মানুষ যে জিনিসের মালিক নয়, এমন জিনিসের নযর আদায় করা তার উপর ওয়াজিব নয়।
আর কোন লোক দুনিয়াতে যে জিনিস দিয়ে আত্মহত্যা করবে, কিয়ামতের দিন সে জিনিস দিয়েই তাকে
আযাব দেয়া হবে। কোন লোক কোন মু’মিনের উপর অভিশাপ দিলে, তা তাকে হত্যা করারই শামিল হবে।
আর কোন্ মু’মিনকে কাফির বললে, তাও তাকে হত্যা করার মতই হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৪৭, ১৩৬৩, হাদীস সম্ভার ২০৬১,
আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ)
আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যখন কোনো বান্দা কোনো বস্তুকে অভিশাপ দেয় তখন ঐ অভিশাপ আকাশের দিকে অগ্রসর
হয়। অতঃপর সেই অভিশাপ আকাশে উঠার পথকে বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন তা পুনরায় দুনিয়ায় প্রত্যার্বতনের
জন্য রওয়ানা হয়, কিন্তু দুনিয়াতে আসার পথও বন্ধ করে দেয়ায় সে ডানে বামে যাওযার চেষ্টা
করে। অবশেষে অন্য কোনো পথ না পেয়ে যাকে অভিশাপ করা হয়েছে তার নিকট ফিরে আসে। তখন সেই
বস্তু যদি ঐ অভিশাপের যোগ্য হয়, তাহলে তার উপর ঐ অভিশাপ পতিত হয়, অন্যথায় অভিশাপকারীর
উপরই তা পতিত হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯০৫, হাদীস
সম্ভার ২০৬৬, সিলসিলাহ সহীহাহ ১২৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান জাহান্নামে প্রবেশ করবে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন:
‘‘আমার নিকট জিব্রীল এসে বললো: হে মুহাম্মাদ!
যে ব্যক্তি মাতা-পিতার কোন একজনকে জীবিত পেয়েও তাদের খিদমত করেনি। বরং তার অবাধ্য হয়েছে
এবং যদ্দরুন সে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে নিজ রহমত থেকে বঞ্চিত
করুক। আপনি বলুন: হে আল্লাহ্! আপনি দো‘আটি কবুল করুন। আমি বললাম: হে আল্লাহ্! আপনি
দোআটি কবুল করুন’’। (সাহীহুল্ জা’মি’ ১/৭৮)।
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠলেন। তিনি প্রথম সিঁড়িতে উঠে বলেনঃ আমীন।
তিনি দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠেও বলেনঃ আমীন। তিনি তৃতীয় সিঁড়িতে উঠেও বলেনঃ আমীন। সাহাবীগণ
বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনাকে তিনবার আমীন বলতে শুনলাম। তিনি বলেনঃ আমি প্রথম
সিঁড়িতে উঠতেই জিবরাঈল (আঃ) এসে বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে রমযান মাস পেলো এবং
তা শেষ হয়ে যাওয়া সত্বেও তার গুনাহর ক্ষমা হলো না। আমি বললামঃ আমীন। অতঃপর দ্বিতীয়
ধাপে উঠতেই তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে নিজ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা তাদের
একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেলো, অথচ তারা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করালো না। আমি বললামঃ আমীন।
অতঃপর তৃতীয় ধাপে উঠতেই তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যার নিকট আপনার উল্লেখ
হলো, অথচ সে আপনার প্রতি দুরূদ পড়েনি। আমি বললামঃ আমীন। (আল-আদাবুল
মুফরাদ ৬৪৮, সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৯০৮)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো
বলেন:
‘‘তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেনা: যে
ব্যক্তি কাউকে অনুগ্রহ করে পুনরায় খোঁটা দেয়, মাতা-পিতার অবাধ্য এবং মদপানে অভ্যস্ত
ব্যক্তি’’। (জা’মিউস্ সাগীর : ৬/২২৮)।
তিনি আরো বলেন:
‘‘তিন ব্যক্তির উপর আল্লাহ্ তা‘আলা জান্নাত
হারাম করে দিয়েছেন। তম্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তি’’। (জা’মিউস্ সাগীর : ৩/৬৯)।
তিনি আরো বলেন:
‘‘তিন ব্যক্তি বাইতুল্ মাক্বদিসে প্রবেশ করতে
পারবেনা: অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, মাতা-পিতার অবাধ্য এবং যে ব্যক্তি কাউকে অনুগ্রহ করে পুনরায়
খোঁটা দেয়’’। (সিল্সিলাতুল্ আহা’দীসিস্ সাহীহাহ্ ২/২৮৯)।
পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের কোন সৎকর্ম কবুল হয় না
আবু উমামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন, ‘তিনজন ব্যক্তির কোন দান বা সৎকর্ম আল্লাহ কবুল করেন না: পিতা-মাতার অবাধ্য
সন্তান, খোটা দানকারী এবং তাক্বদীরে অবিশ্বাসী ব্যক্তি’। (ত্বাবারাণী
কাবীর হা/৭৫৪৭; ছহীহাহ হা/১৭৮৫)।
মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তির রিযিকে সংকট দেখা দেয় এবং তার জীবনে কোন বরকত
হয় না
আবূ হুরাইরাহ্ এবং আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত
তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি শুনেছি, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পছন্দ
করে যে, তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তাঁর মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের
সঙ্গে সদাচরণ করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৬৭,
৫৯৮৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৯২২ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কারোর
জন্য নিজ মাতা-পিতার চাইতেও নিকটাত্মীয় আর কে হতে পারে?
মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তি কখনো আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে
না
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রা.) থেকে
বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
‘‘প্রভুর সন্তুষ্টি মাতা-পিতার সন্তুষ্টির
মধ্যে এবং তাঁর অসন্তুষ্টি তাঁদের অসন্তুষ্টির মধ্যে’’। (সাহীহুল্
জা’মি ৩/১৭৮)
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার
সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং প্রতিপালকের অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯২৭, সুনান আততিরমিযী ১৮৯৯, আল-আদাবুল
মুফরাদ ২, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৫১৫, মুসনাদুল বাযযার ২৩৯৪, আল মুসতাদরাক ৭২৪৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
নাও্ওয়াস ইবনু সিম্আন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিপালকের অবাধ্যতার মাঝে
কোনো সৃষ্টির আনুগত্য নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৬৯৬,, শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৪৫৫, সহীহ আল জামি ৭৫২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মাতা-পিতার অবাধ্য ব্যক্তির সন্তানও তার অবাধ্য হবে অথবা হওয়া স্বাভাবিক
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
‘‘যে ব্যক্তি সৎ কাজ করলো সে তা তার ভালোর
জন্যই করলো। আর যে মন্দ কাজ করলো সে অবশ্যই উহার প্রতিফল ভোগ করবে। আপনার প্রভু তাঁর
বান্দাহ্দের প্রতি কোন যুলুম করেন না’’। (সুরা ফুস্সিলাত/
হা’মীম আস্ সাজ্দাহ্ ৪৬)।
মাতা-পিতার বদদোয়া কবুল হয়
যেমনিভাবে মাতা-পিতার দো‘আ সন্তানের কল্যাণে
আসে তেমনিভাবে তাদের বদদো‘আও তার সকল অকল্যাণ ডেকে আনে।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘‘জুরাইজ’’ নামক জনৈক ইবাদাতগুযার
ব্যক্তি কোন এক গির্জায় ইবাদাত করতো। একদা তার মা তার গির্জায় এসে তাকে ডাকতে শুরু
করলো। বললো: হে ‘‘জুরাইজ’’! আমি তোমার মা। তুমি আমার সাথে কথা বলো। তার মা তাকে নামায
পড়তে দেখলো। তখন সে তাঁর ডাকে বললো: হে আল্লাহ্! আমার মা এবং আমার নামায! এ কথা বলেই
সে নামাযে রত থাকলো। এভাবে তার মা তিন দিন তাকে ডাকলো এবং সে প্রতি দিন তাঁর সঙ্গে
একই আচরণ দেখালো। তৃতীয় দিন তার মা তাকে এ বলে বদদো‘আ করলো: হে আল্লাহ্! আপনি আমার
ছেলেটিকে মৃত্যু দিবেন না যতক্ষণ না সে কোন বেশ্যা মহিলার চেহারা দেখে। আল্লাহ্ তা‘আলা
তার মায়ের বদদো‘আ কবুল করেন।
জনৈক মেষচারক তার গির্জায় রাত্রিযাপন করতো।
একদা এক সুন্দরী মহিলা গ্রাম থেকে বের হয়ে আসলে সে তার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। অতঃপর
মহিলাটি একটি ছেলে জন্ম দেয়। মহিলাটিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে: সন্তানটি
ইবাদাতগুযার ব্যক্তির। এ কথা শুনে সাধারণ জনগণ কুড়াল-সাবল নিয়ে গির্জায় উপস্থিত হয়।
তারা গির্জায় এসে তাকে নামায পড়তে দেখে তার সাথে কোন কথা বলেনি। বরং তারা গির্জাটি
ধ্বংস করার কাজে লেগে গেলো। সে এ কান্ড দেখে গির্জা থেকে নেমে আসলো। তখন তারা তাকে
বললো: কিছু জিজ্ঞাসা করার থাকলে এ মহিলাটিকে জিজ্ঞাসা করো। ইবাদাতগুযার ব্যক্তিটি মুচকি
হেসে বাচ্চার মাথায় হাত রেখে বললো: তোমার পিতা কে? বাচ্চাটি বললো: মেষচারক। জনগণ তা
শুনে তাকে বললো: আমরা তোমার ধ্বংসপ্রাপ্ত গির্জা সোনা-রূপা দিয়ে বানিয়ে দেবো। সে বললো:
তা করতে হবে না। বরং তোমরা মাটি দিয়েই বানিয়ে দাও যেভাবে পূর্বে ছিলো। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
গুনাহ্’র কাজে তাদের কোন আনুগত্য করা যাবে না
মাতা-পিতাকে মেরে, গালি দিয়ে বা কারোর নিকট
তাদের গীবত বা দোষ চর্চা করে তাদেরকে কষ্ট দেয়া সর্বোচ্চ নাফরমানি। তবে গুনাহ্’র কাজে
তাদের কোন আনুগত্য করা যাবে না।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
‘‘তোমার মাতা-পিতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন
বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে শরীক করতে পীড়াপীড়ি করে যে ব্যাপারে তোমার কোন জ্ঞান নেই তথা কুর‘আন
ও হাদীসের কোন সাপোর্ট নেই তাহলে তুমি এ ব্যাপারে তাদের কোন আনুগত্য করবেনা। তবে তুমি
এতদ্সত্ত্বেও দুনিয়াতে তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে এবং সর্বদা তুমি আমি (আল্লাহ্)
অভিমুখী মানুষের পথ অনুসরণ করবে। কারণ, পরিশেষে তোমাদের সকলকে আমার নিকটই প্রত্যাবর্তন
করতে হবে। তখন আমি তোমাদের কর্ম সম্পর্কে তোমাদেরকে অবশ্যই অবগত করবো’’। (সুরা লুক্বমান ১৫)।
মুশরিক পিতার সাথে সুসম্পর্ক রাখা
(ক)
আবূ বকর (রাঃ)-এর কন্যা আসমা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এলেন। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নিকট জিজ্ঞেস করলামঃ তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবো কি না? তিনি বললেন, হাঁ।
ইবনু ’উয়াইনাহ (রহ.) বলেন, এ ঘটনা প্রসঙ্গেই
আল্লাহ তা’আলা অবতীর্ণ করেনঃ ’’দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি, আর
তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের করে দেয়নি তাদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করতে আর ন্যায়নিষ্ঠ
আচরণ করতে আল্লাহ নিষেধ করেননি।’’ (সূরাহ আল-মুমতাহিনাহ ৬০:৮)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৭৮, ২৬২০] (আধুনিক প্রকাশনী-
৫৫৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আসমা
(রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ কুরাইশরা যে সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সঙ্গে সন্ধি চুক্তি করেছিল, ঐ চুক্তিবদ্ধ সময়ে আমার মা তাঁর পিতার সঙ্গে এলেন। আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিজ্ঞেস করলামঃ আমার মা এসেছেন, তবে সে
অমুসলিম। আমি কি তাঁর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ। তোমার মায়ের সঙ্গে
উত্তম ব্যবহার করো। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৭৯,
২৬২০, আধুনিক প্রকাশনী- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অবাধ্য সন্তানদের মীরাছের ব্যাপারে শরী‘আতের বিধান
পিতা-মাতার অবাধ্য হ’লে ছেলে-মেয়ে কবীরা গোনাহগার
হয়। কিন্তু মীরাছ হ’তে বঞ্চিত হয় না। কারণ মীরাছ হয় বংশীয় কারণে, সদাচরণের জন্য নয়।
(ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৫/২৮১)।
তাই সন্তানকে ত্যাজ্যপুত্র করা বা সম্পদ থেকে
বঞ্চিত করা নিষিদ্ধ। বরং পিতা-মাতা একাজ করলে সন্তানের হক নষ্ট করা হবে, যা পরকালে
নিজের নেকী থেকে তাকে পরিশোধ করতে হবে ।
হাদিসঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো, (প্রকৃত) গরীব কে? সাহাবায়ে
কিরাম বললেনঃ আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা, ধনদৌলত নেই, সে-ই গরীব।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের মধ্যে ঐ
ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি গরীব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে সালাত, সিয়াম ও যাকাত আদায় করে
আসবে; কিন্তু সাথে সাথে সেসব লোকেদেরকেও নিয়ে আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারো
অপবাদ রটিয়েছে, কারো সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে; এমন
ব্যক্তিদেরকে তার নেকীগুলো দিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর যখন তার পুণ্য শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের
পাওনা তখনো বাকি, তখন পাওনাদারদের গুনাহ তথা পাপ তার ওপর ঢেলে দেয়া হবে, আর তাকে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১২৭, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১, সুনান আততিরমিযী ২৪১৮, সিলসিলাতুস্
সহীহাহ্ ৮৪৫, সহীহুল জামি ৮৭, সহীহ আত্ তারগীব ২২২৩, শু‘আবুল ঈমান ৩৩, আহমাদ ৮০২৯,
মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪১১, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর
৫৬১, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ২৭৭৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৩৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
তবে
সন্তান ‘মুরতাদ’ হলে কিংবা অন্যায়ভাবে পিতা বা মাতাকে হত্যা করলে সে তাদের সম্পদ থেকে
বঞ্চিত হবে।
হাদিসঃ
উসামাহ্
ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ মুসলিম কাফিরের ওয়ারিস হবে না, আর কাফিরও মুসলিমের ওয়ারিস হবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩০৪৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৭৬৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪০৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬১৪, সুনান আততিরমিযী
২১০৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭২৯, সুনান আবূ দাঊদ ২৯০৯, আহমাদ ২৭৭৪৭, সহীহ ইবনু হিব্বান
৬০৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৯৫, ইসলামিক সেন্টার ৩৯৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এক্ষেত্রে অবাধ্য ছেলে-মেয়েকে পিতা-মাতার কাছে
এসে ক্ষমা চাইতে হবে এবং সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে হবে। কেননা পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর
সন্তুষ্টি।
হাদিসঃ
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বাবার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ
তা’আলার সস্তুষ্টি এবং বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ তা’আলার অসন্তুষ্টি রয়েছে।
(সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৮৯৯, সহীহা ৫১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এবং মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত।
হাদিসঃ
একদা মু‘আবিয়াহ বিন জাহিমাহ আস-সুলামী রাসূলুল্লাহ
(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল
(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি যুদ্ধে যেতে চাই। আর এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ
কামনা করছি। উত্তরে তিনি বলেন, তোমার মা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন,
তাহলে তাঁর খিদমতে লেগে থাক। কেননা জান্নাত তাঁর দু‘পায়ের নিচে। (সুনান আননাসাঈ, হা/৩১০৪)।
হাদিসের মান: হাসান।
এখানে
উভয়পক্ষকে নমনীয় হতে হবে। কেননা ‘রক্তসম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে
না’। জুবায়র ইবনু মুত্ব’ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী
জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪৯২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪১৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৫৫৫, সুনান আবূ দাঊদ ১৬৯৬, সুনান আততিরমিযী ১৯০৯, সহীহুল জামি‘ ৭৬৭১, সহীহ
আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৫৪০, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৪৫, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২০২৩৪,
মুসনাদুল বাযযার ৩৪০৫, আহমাদ ১৬৭৩২, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৩৯২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৫৪,
শু‘আবুল ঈমান ৭৯৫২, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ১৪৯১, আর মু‘জামুল আওসাত্ব ৯২৮৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২৮৮, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যের পিতামাতাকে গালি দেয়া যাবে না
আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে
বড় হলো নিজের পিতা-মাতাকে লা’নত করা। জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপন পিতা-মাতাকে
কোন লোক কীভাবে লা’নত করতে পারে? তিনি বললেনঃ সে অন্যের পিতাকে গালি দেয়, তখন সে তার
পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্যের মাকে গালি দেয়, তখন সে তার মাকে গালি দেয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯০, আহমাদ ৬৫৪০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-
৫৪৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পিতা-মাতার অনুমতি ব্যতীত জিহাদে গমন করবে না
আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলঃ আমি কি জিহাদে
যাব? তিনি বললেনঃ তোমার কি পিতা-মাতা আছে? সে বললঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ তা হলে তাদের
(সেবা করার মাধ্যমে) জিহাদ কর। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৯৭৩, ৫৯৭২, ৩০০৪, আল-আদাবুল মুফরাদ ১৩, ১৯,
২০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মাতা-পিতার দোয়া কবুল হয়
(ক)
আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘‘তিনটি দো‘আ কখনো না মঞ্জুর করা হয়না: মাতা-পিতার
দো‘আ তার সন্তানের জন্য, রোযাদারের দো‘আ ও মুসাফিরের দো‘আ’’। (সাহীহুল্ জা’মি’ : ৩/৬৩)।
(খ) ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনজন লোক হেঁটে
চলছিল। তাদের উপর বৃষ্টি শুরু হলে তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়। এমন সময় পাহাড়
হতে একটি পাথর তাদের গুহার মুখের উপর গড়িয়ে পড়ে এবং মুখ বন্ধ করে ফেলে। তাদের একজন
অন্যদের বললঃ তোমরা তোমাদের কৃত ’আমলের প্রতি লক্ষ্য করো যে নেক ’আমল তোমরা আল্লাহর
জন্য করেছ; তার ওয়াসীলাহ্য় আল্লাহর নিকট দু’আ করো। হয়তো তিনি এটি হটিয়ে দেবেন।
তখন তাদের একজন বললঃ হে আল্লাহ! আমার বয়োবৃদ্ধ
মাতা-পিতা ছিল এবং ছোট ছোট শিশু ছিল। আমি তাদের (জীবিকার) জন্যে মাঠে পশু চরাতাম। যখন
সন্ধ্যায় ফিরতাম, তখন দুধ দোহন করতাম এবং আমার সন্তানদের আগেই পিতা-মাতাকে পান করতে
দিতাম। একদিন পশুগুলো দূরে বনের মধ্যে চলে যায়। ফলে আমার ফিরে আসতে দেরী হয়ে যায়। ফিরে
দেখলাম তারা উভয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি যেমন দুধ দোহন করতাম, তেমনি দোহন করলাম। তারপর
দুধ নিয়ে এলাম এবং উভয়ের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। ঘুম থেকে তাদের উভয়কে জাগানো ভাল
মনে করলাম না। আর তাদের আগে শিশুদের পান করানোও অপছন্দ করলাম। আর শিশুরা আমাদের দু’পায়ের
কাছে কান্নাকাটি করছিল। তাদের ও আমার মাঝে এ অবস্থা চলতে থাকে। শেষে ভোর হয়ে গেল।
(হে আল্লাহ) আপনি জানেন যে, আমি কেবল আপনার সন্তুষ্টির জন্যেই এ কাজ করেছি। তাই আপনি
আমাদের জন্য একটু ফাঁক করে দিন, যাতে আমরা আকাশ দেখতে পাই। তখন আল্লাহ তাদের জন্যে
একটু ফাঁক করে দিলেন, যাতে তারা আকাশ দেখতে পায়।
দ্বিতীয় ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহ! আমার একটি
চাচাত বোন ছিল। আমি তাকে এতখানি ভালবাসতাম, যতখানি একজন পুরুষ কোন নারীকে ভালবাসতে
পারে। আমি তাকে একান্তে পেতে চাইলাম। সে অসম্মতি জানাল, যতক্ষণ আমি তার কাছে একশ’ দ্বীনার
উপস্থিত না করি। আমি চেষ্টা করলাম এবং একশ’ স্বর্ণমুদ্রা জোগাড় করলাম। এগুলো নিয়ে তার
সাথে সাক্ষাৎ করলাম। যখন আমি তার দু’পায়ের মধ্যে বসলাম, তখন সে বললঃ হে আল্লাহর বান্দাহ!
আল্লাহকে ভয় করো, আমার কুমারিত্ব নষ্ট করো না। তখন আমি উঠে গেলাম। হে আল্লাহ! আপনি
জানেন যে, কেবল আপনার সন্তুষ্টির জন্যেই আমি তা করেছি। তাই আমাদের জন্যে এটি ফাঁক করে
দিন। তখন তাদের জন্যে আল্লাহ আরও কিছু ফাঁক করে দিলেন।
শেষের লোকটি বললঃ হে আল্লাহ! আমি একজন মজদুরকে
এক ’ফারক’ চাউলের বিনিময়ে কাজে নিয়োগ করেছিলাম। সে তার কাজ শেষ করে এসে বলল, আমার প্রাপ্য
দিয়ে দিন। আমি তার প্রাপ্য তার সামনে উপস্থিত করলাম। কিন্তু সে তা ছেড়ে দিল ও প্রত্যাখ্যান
করলো। তারপর তার প্রাপ্যটা আমি ক্রমাগত কৃষিকাজে খাটাতে লাগলাম। তা দিয়ে অনেকগুলো গরু
ও রাখাল জমা করলাম। এরপর সে একদিন আমার কাছে এসে বললঃ আল্লাহকে ভয় কর, আমার উপর যুল্ম
করো না এবং আমার প্রাপ্য দিয়ে দাও। আমি বললামঃ ঐ গরু ও রাখালের কাছে চলে যাও। সে বললঃ
আল্লাহকে ভয় করো, আমার সাথে উপহাস কর না। আমি বললামঃ তোমার সাথে আমি উপহাস করছি না।
তুমি ঐ গরুগুলো ও তার রাখাল নিয়ে যাও। তারপর সে ওগুলো নিয়ে চলে গেল। (হে আল্লাহ!) আপনি
জানেন যে, তা আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্যেই করেছি, তাই আপনি অবশিষ্ট অংশ উন্মুক্ত
করে দিন। তারপর আল্লাহ তাদের জন্য তা উন্মুক্ত করে দিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৭৪, ২২১৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অবাধ্য সন্তানের করণীয়
কোনো সন্তান যদি পিতা-মাতার অবাধ্য হয়, বেয়াদবি
করে, পিতা-মাতার কথা না শোনে—তাহলে তিনি দুটি হক নষ্ট করেন। একটি হলো—পিতা-মাতার হক
নষ্ট করলে; আরেকটি হলো—আল্লাহ যে নির্দেশ দিয়েছেন পিতা-মাতার সঙ্গে বেয়াদবি না করতে,
সেই হকও নষ্ট করেছেন। এখন আপনি পিতা-মাতার কাছে ক্ষমা চেয়ে যদি ক্ষমা পান, তাহলে আপনি
একটি হক থেকে দায়মুক্ত হয়ে গেলেন। কিন্তু আপনি যেহেতু, আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছেন,
সে দায় থেকে যাবে। এ জন্য আপনাকে পিতা-মাতার পাশাপাশি আল্লাহর কাছেও ক্ষমা চাইতে হবে।
নিজের কর্মের জন্য আল্লাহর কাছেও তওবা করতে হবে। তাহলে আশা করা যায়, আপনি পিতা-মাতা
ও আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে দায়মুক্ত হবেন
পিতা-মাতার মৃত্যুর পর সন্তানের কর্তব্য
প্রথম করণীয় হলো, তাঁদের ঋণ পরিশোধ করা ও অছিয়ত
পূর্ণ করা। অতঃপর মীরাছ বণ্টন করা। (সুরা নিসা ৪/১১)।
অতঃপর পিতা-মাতার জন্য দো‘আ করা, ছাদাক্বা
করা এবং ইল্ম বিতরণ করা। আরেকটি হলো তাদের পক্ষ হতে হজ্জ করা। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩১০; তালখীছ ৭৬)।
তবে এজন্য উত্তরাধিকারীকে প্রথমে নিজের ফরয
হজ্জ আদায় করতে হবে।
হাদিসঃ
আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন,
আমি শুব্রম্নমাহ্’র পক্ষ হতে (হজ্জ/হজ পালনের উদ্দেশে) উপস্থিত হয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, শুব্রম্নমাহ্ কে? সে বললো, আমার ভাই অথবা বললো, আমার নিকটাত্মীয়।
তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নিজের হজ করেছো কি?
সে বললো, জি না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে (প্রথমে) নিজের
হজ্জ করো। পরে শুবরুমাহ্’র পক্ষ হতে হজ্জ/হজ করবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৫২৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৮১১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০৩, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্
৩০৩৯, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১২৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৯৮৮, ইরওয়া ৯৯৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ জান্নাতে
সৎকর্মশীল বান্দার মর্যাদার স্তর উঁচু করবেন। তখন সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কিভাবে
এটা আমার জন্য হলো? তিনি বলবেন, ‘তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার কারণে।
হাদিসঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে তাঁর কোন
নেক বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। এ অবস্থা দেখে সে (নেক বান্দা) বলবে, হে আমার রব!
আমার এ মর্যাদা কিভাবে বৃদ্ধি হলো? তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার সন্তান-সন্ততি তোমার
জন্য মাগফিরাত কামনা করার কারণে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৩৫৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৬৬০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৭৪০, আহমাদ ১০৬১০, সহীহাহ্ ১৫৯৮,
সহীহ আল জামি ১৬১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এজন্য সন্তানকে সর্বদা দো‘আ করতে হবে,
(রবিবরহাম্হুমা কামা রববাইয়া-নী ছগীরা)
অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি
দয়া কর যেমন তারা আমাকে শৈশবে দয়াপরবশে লালন-পালন করেছিলেন’। (সুরা ইসরা ১৭/২৪)।
(রববানাগফিরলী
ওয়ালিওয়া-লিদাইয়া ওয়া লিলমু’মিনীনা ইয়াউমা ইয়াক্বূমুল হিসা-ব) ‘
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাকে ও আমার
পিতা-মাতাকে এবং ঈমানদার সকলকে ক্ষমা কর যেদিন হিসাব দন্ডায়মান হবে’। (সুরা ইবরাহীম ১৪/৪১)।
ছাদাক্বার মধ্যে ঐ ছাদাক্বা উত্তম, যা ছাদাক্বায়ে
জারিয়াহ, যা সর্বদা জারি থাকে ও স্থায়ী নেকী দান করে। এর মধ্যে সর্বোত্তম হ’ল ইল্ম
বিতরণ করা। যে ইল্ম মানুষকে নির্ভেজাল তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাহর পথ দেখায় এবং শিরক ও
বিদ‘আত হ’তে বিরত রাখে। উক্ত উদ্দেশ্যে উচ্চতর ইসলামী গবেষণা খাতে সহযোগিতা প্রদান
করা, সেজন্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও পরিচালনা করা। বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমল সম্পন্ন বই
ছাপানো ও বিতরণ করা এবং এজন্য স্থায়ী প্রচার মাধ্যম স্থাপন ও পরিচালনা করা ইত্যাদি।
অতঃপরমসজিদ, মাদরাসা, ইয়াতীমখানা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
নির্মাণ ও পরিচালনা, রাস্তা ও বাঁধ নির্মাণ, অনাবাদী জমিকে আবাদ করা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা
করা, দাতব্য চিকিৎসালয় ও হাসপাতাল স্থাপন ও পরিচালনা করা ইত্যাদি।
জানা আবশ্যক যে, ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ দু’ভাবে
হতে পারে।
(১) মৃত ব্যক্তি স্বীয় জীবদ্দশায় এটা করে যাবেন।
এটি নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম। কারণ মানুষ সেটাই পায়, যার জন্য সে চেষ্টা করে। (সুরা নাজম ৫৩/৩৯)।
(২) মৃত্যুর পরে তার জন্য তার উত্তরাধিকারীগণ
বা অন্যেরা যেটা করেন। সাইয়িদ রশীদ রিযা বলেন, দো‘আ, ছাদাক্বা (ও হজ্জ)-এর নেকী মৃত
ব্যক্তি পাবেন, এ বিষয়ে বিদ্বানগণ সকলে একমত। কেননা উক্ত বিষয়ে শরী‘আতে স্পষ্ট নির্দেশনা
রয়েছে। (মির‘আত ৫/৪৫৩)।
আরেকটি বিষয় মনে রাখা আবশ্যক যে, স্থান-কাল-পাত্র
ভেদে ছাদাক্বায়ে জারিয়াহর ধরন পরিবর্তন হয়ে থাকে। অতএব যেখানে বা যাকে এটা দেওয়া হবে,
তার গুরুত্ব ও স্থায়ী কল্যাণ বুঝে এটা দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে সদা সতর্ক থাকতে
হবে, যেন উক্ত ছাদাক্বা ধর্মের নামে কোন শিরক ও বিদ‘আতের পুষ্টি সাধনে ব্যয়িত না হয়।
যা স্থায়ী নেকীর বদলে স্থায়ী গোনাহের কারণ হবে। ক্বিয়ামতের দিন বান্দাকে তার আয় ও ব্যয়
দু’টিরই হিসাব দিতে হবে।
ইবনু মাসউদ (রাঃ) নাবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন।
তিনি (সা.) বলেছেন : কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের পদদ্বয় একটু নড়তে পারবে না যতক্ষণ
পর্যন্ত তাকে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। ১. তার বয়স সম্পর্কে, সে তা কী
কাজে ব্যয় করেছে? ২. তার যৌবন সম্পর্কে, সে তা কী কাজে ক্ষয় করেছে? ৩. তার ধন-সম্পদ
সম্পর্কে, সে তা কোথা হতে অর্জন করেছে? ৪. আর তা কোথায় ব্যয় করেছে? এবং ৫. যে জ্ঞানার্জন
করেছিল, সে অনুযায়ী কী ’আমাল করেছে? (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৫১৯৭, সুনান আততিরমিযী ২৪১৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ ৯৪৬, সহীহুল জামি ৭২৯৯, সহীহ
আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ১২৮, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৯৪৬, ইয়া'লা ৫২৭১, আল মু'জামুল
কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৯৬৫৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
লেখকের
অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন
----------------------
Please Share On
No comments:
Post a Comment