বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
জাল হাদিসের কবলে বাংলাদেশের আলেম সমাজ
(২০০০টি জাল ও জঈফ
হাদিস)-প্রচারে-PMMRC
(প্রথম পর্ব)
বাংলাদেশে হাজার হাজার মুফতি, মুহাদ্দিস, ইমাম, মুয়াজ্জিন,
মাদ্রাসার শিক্ষক (আলিম ও কওমী), কোরআনের হাফেজ, হাদিসের হাফেজ, পির-অলি,
ওযাজকারী, তাবলীগ জামায়াত, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ
অসংখ্য ইসলামী সংগঠন আছে। এরা প্রত্যেকেই ইসলামের দাওয়াতী কাজ করেন। তারা নিজেরা
আমল করেন ও সেই আমল তাদের অনুসারীদেরকেও শিখিয়ে দেন। এভাবেই যুগ যুগ ধরে চলছে
দাওয়াতী কাজ। কিন্তু দেখা যায়, তাদের আমলের বা দাওয়াতী কাজের ৯৫%-ই
জাল ও জঈফ হাদিস ভিত্তিক। একজন মসজিদের ইমাম, তিনি একজন কোরআনের হাফেজ
আবার মুফতি কিংবা কোনো মাদ্রাসার শিক্ষক। এই ইমাম সাহেব যখন বাংলা খোতবা দেন আর
যখন জাল ও জঈফ হাদিসগুলো বর্ণনা করেন তখন মনে হয় এরা কোনো পড়াশোনাই করেননি। আর
পড়াশোনা করলেও তাদের পাঠ্য পুস্তকগুলোই জাল ও জঈফ হাদিসে ভরপুর। তাদের ওস্তাদগণও
একই শিক্ষায় শিক্ষিত। যার ফলে তাদের সাগরেদরা ঐ ওস্তাদদের শুধুই অন্ধ অনুকরন করেই
চলছে। একবারও তারা চিন্তা করে দেখা না যে, তাদের শিক্ষা বিদআতী শিক্ষা কিনা। যাই
হোক যারা বিদআতী শিক্ষায় শিক্ষিত তাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্যই জাল
ও জঈফ হাদিসগুলো দেয়া হলো। আপনারা পড়বেন আর অন্যদেরকে নতুন করে শিখিয়ে দিবেন।
এতোদিন যে ভুলের উপর আমল করে আসছেন তা কিন্তু আল্লাহর দরবারে কবুল হয়নি। তাই তওবা
করে সহীহ হাদিসের পথে ফিরে আসবেন এই অনুরোধ সকলের প্রতি রইল। এবার আওয়াজ তুলুন:-
সহীহ হাদিসের আগমন, বিদআত পলায়ন।
হাদিস নম্বরঃ ১ |
১।
দ্বীন (ধর্ম) হচ্ছে বিবেক, যার দ্বীন (ধর্ম) নেই তাঁর কোন বিবেক নেই।
- হাদীসটি
বাতিল।
হাদীসটি
নাসাঈ “আল-কুনা” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং তার থেকে দুলাবী “আল-কুনা ওয়াল আসমা”
গ্রন্থে (২/১০৪) আবূ মালেক বিশ্র ইবনু গালিব সূত্রে যুহরী হতে ... প্রথম বাক্যটি
ছাড়া মারফূ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ইমাম নাসাঈ হাদীসটি সম্পর্কে বলেনঃ (هذا حديث باطل منكر) এ হাদীসটি বাতিল, মুনকার।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে এ বিশর নামক বর্ণনাকারী। কারন আযদী
বলেনঃ তিনি মাজহূল (অপরিচিত) বর্ণনাকারী। ইমাম যাহাবী “মীযানুল ই’তিদাল” এবং ইবনু
হাজার আসকালানী “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে তার কথাকে সমর্থন করেছেন।
হারিস
ইবনু আবী উসামা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (কাফ ১০০/১-১০৪/১) দাউদ ইবনুল মুহাব্বার
সূত্রে বিবেকের ফযিলত সম্পর্কে ত্রিশের অধিক হাদীস উল্লেখ করেছেন। হাফিয ইবনু
হাজার আসকালানী বলেনঃ সে সবগুলোই জাল (বানোয়াট)।
সেগুলোর
একটি হচ্ছে এ হাদীসটি যেমনটি ইমাম সুয়ুতী তার “যায়লুল-লাআলিল মাসনু’ইয়াতি ফিল
আহাদীসিল মাওযু’আত” গ্রন্থে (পৃঃ ৪-১০) উল্লেখ করেছেন। তার থেকে হাদীসটি আল্লামা
মুহাম্মাদ তাহির আল-হিন্দী মাওযু’ গ্রন্থ “তাযকিরাতুল মাওযু’আত” এর মধ্যে (পৃঃ
২৯-৩০) উল্লেখ করেছেন।
দাউদ
ইবনুল মুহাব্বার সম্পর্কে যাহাবী বলেনঃ
ইমাম
আহমাদ ইবনু হাম্বল বলেনঃ হাদীস কি তিনি তাই জানতেন না। আবূ হাতিম বলেনঃ তিনি
যাহেবুল হাদীস[হাদীসকে বিতাড়নকারী], নির্ভরযোগ্য নন। দারাকুতনী বলেনঃ তিনি
মাতরূক [অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি]। আব্দুল গনী ইবনু সা’ঈদ দারাকুতনী হতে বর্ণনা
করেছেন, তিনি বলেনঃ মায়সারা ইবনু আব্দি রাব্বিহি “আল-আকল” নামক গ্রন্থ রচনা করেছন
আর তার নিকট হতে দাউদ ইবনুল মুহাব্বার তা চুরি করেন। অতঃপর তিনি তার (মায়সারার)
সনদের পরিবর্তে নিজের বানোয়াট সনদ জড়িয়ে দেন। এরপর তা চুরি করেন আব্দুল আযীয ইবনু
রাজা এবং সুলায়মান ইবনু ঈসা সাজযী।
মোটকথা
বিবেকের ফযিলত সম্পর্কে কোন সহীহ হাদীস নেই। এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস হয় দুর্বল,
না হয় জাল (বানোয়াট)।
আল্লামা
ইবনুল কাইয়্যিম “আল-মানার” গ্রন্থে (পৃঃ ২৫) বলেনঃ (أحاديث العقل كلها كذب) ‘বিবেক সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদীস
মিথ্যা।‘
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
| হাদিস নম্বরঃ ২ |
২।
যে ব্যাক্তির সালাত (নামায/নামাজ) তাঁকে তাঁর নির্লজ্জ ও অশোভনীয় কাজ হতে বিরত করে
না, আল্লাহর নিকট হতে তাঁর শুধু দূরত্বই বৃদ্ধি পায়।
হাদীসটি
বাতিল।
যদিও
হাদীসটি মানুষের মুখে মুখে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে তবুও সেটি সনদ এবং ভাষা ও উভয় দিক
দিয়েই সহীহ নয়।
সনদ
সহীহ না হওয়ার কারনঃ হাদীসটি
তাবারানী “আল-মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/১০৬/২), কাযাঈ “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে
(২/৪৩) এবং ইবনু আবী হাতিম বর্ণনা করেছেন, যেমনটি “তাফসীর ইবনু কাসীর” গ্রন্থে
(২/৪১৪) এবং “আল কাওয়াকাবুদ দুরারী” গ্রন্থে (৮৩/২/১) লাইস সূত্রে তাউস এর মাধ্যমে
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে।
এ
লাইসের কারণে হাদীসটির সনদ দুর্বল – তিনি হচ্ছেন লাইস ইবনু আবী সুলাইম- কারন তিনি
দুর্বল বর্ণনাকারী।
হাফিয
ইবনু হাজার “তাকরীবুত তাহযীব” গ্রন্থে তার জীবনী লিখতে গিয়ে বলেনঃ তিনি সত্যবাদী,
কিন্তু শেষ জীবনে তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল। তার হাদীস পৃথক করা যেত না, ফলে তার
হাদীস মাতরূক (অগ্রহণযোগ্য)।
হায়সামী
“মাজমা’উয যাওয়াঈদ” গ্রন্থে (১/১৩৪) একই কারন উল্লেখ করেছেন। তার শাইখ হাফিয
আল-ইরাকী “ তাখরীজুল ইহইয়া” গ্রন্থে (১/১৪৩) বলেছেনঃ হাদীসটির সনদ লাইয়েনুন
(দুর্বল)।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি ইবনু জারীর তার “তাফসীর” গ্রন্থে (২০/৯২) ইবনু আব্বাস
(রাঃ) হতে অন্য সূত্রে মওকুফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। সম্ভবত এটিই সহীহ অর্থাৎ
সাহাবীর কথা। যদিও তার সনদে এমন ব্যক্তি রয়েছেন যার নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ইমাম
আহমাদ “কিতাবুয যুহুদ” গ্রন্থে (পৃঃ ১৫৯) আত তাবারানী “মু’জামুল কাবীর” গ্রন্থে
হাদীসটি ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবে ভিন্ন ভাষায় বর্ণনা করেছেন।
হাফিয
ইরাকী বলেনঃ তার সনদটি সহীহ। অতএব হাদীসটি মওকুফ।
ইবনুল
আ’রাবী তার “আল-মু’জাম” গ্রন্থে (১/১৯৩) হাদীসটি হাসান বাসরী হতে মুরসাল হিসাবে
বর্ণনা করেছেন। হাসান হচ্ছেন মুদাল্লিস।
হাফিস
যাহাবী “মীযানুল ই’তিদাল” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি বেশী বেশী তাদলীস করতেন। তিনি আন
শব্দে বর্ণনা করলে তার হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করাটা দুর্বল হয়ে যায়। আবূ হুরায়রা
(রাঃ) হতে তার শ্রবন সাব্যস্ত হয়নি। এ কারনে মুহাদ্দিসগণ আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে
তার হাদীসকে মুনকাতি’ হিসাবে গণ্য করেছেন।
তবে
হাসান বাসরীর নিজের কথা হিসাবে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এমন কথা বলেননি। ইমাম আহমাদ “আয-যুহুদ” গ্রন্থে (পৃঃ
২৬৪) এভাবেই বর্ণনা করেছেন আর তার সনদটি সহীহ। অনুরূপভাবে ইবনু জারীরও বিভিন্ন
সূত্রে তার থেকেই (২০/৯২) বর্ণনা করেছেন এবং এটই সঠিক।
“মুসনাদুস
শিহাব” গ্রন্থে (২/৪৩) মিকদাম ইবনু দাউদ সূত্রে হাসান বাসরী হতে মারফূ’’ হিসাবে
বর্ণিত হয়েছে।
কিন্তু
এই মিকদাম সম্পর্কে নাসাঈ বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন।
মোটকথা
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত এটির সনদ সহীহ নয়। ইবনু মাসউদ (রাঃ)
এবং হাসান বাসরী হতে সহীহ সনদ বর্ণিত হয়েছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেও বর্ণনা করা
হয়েছে।
এ
কারণেই ইবনু তাইমিয়্যা “কিতাবুল ঈমান” গ্রন্থে (পৃঃ ১২) মওকুফ হিসাবেই উল্লেখ
করেছেন।
ইবনু
উরওয়াহ্ “আল-কাওয়াকিব” গ্রন্থে বলেছেনঃ এটই বেশী সঠিক।
ভাষার
দিক দিয়ে সহীহ না হওয়ার কারনঃ
হাদীসটি
যে ব্যক্তি সালাতের শর্ত এবং আরকান সমূহের দিকে যত্নবান হয়ে যথাযথভাবে আদায় করে সে
ব্যক্তিকেও সম্পৃক্ত করে। অথচ শারী’আত তার সালাতকে বিশুদ্ধ বলে রায় প্রদান করেছে।
যদিও এ মুসল্লি কোন গুনাহের সাথে জড়িত থাকে। অতএব কিভাবে এ সালাতের কারনে তা সাথে
আল্লাহর দূরত্ব বৃদ্ধি পাবে? এটি বিবেক বর্জিত কথা। শারী’আত এ কথার সাক্ষ্য দেয়
না। হাদীসটি মওকুফ হওয়ার ক্ষেত্রেও সালাত দ্বারা এমন সালাতকে বুঝানো হয়েছে যে
সালাতে এমন কোন অংশ ছেড়ে দেয়া হয়েছে যা ছেড়ে দিলে সালাত শুদ্ধ হয় না।
আল্লাহ্
বলেনঃ (إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ) অর্থ ‘নিশ্চয় সালাত নির্লজ্জ ও
অশোভনীয় কাজ হতে বিরত রাখে ’ (আনকাবুতঃ ৪৫)
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল অমুক ব্যক্তি সারা রাত
ধরে ইবাদাত করে অতঃপর যখন সকাল হয় তখন সে চুরি করে! উত্তরে তিনি উক্ত আয়াতের
গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেনঃ
‘তুমি
যা বলছ তা থেকেই অচিরেই তাকে তার সালাত বিরত করবে অথবা বলেনঃ তাকে তার সালাত বাধা
প্রদান করবে’
হাদীসটি
ইমাম আহমাদ, বায্যার, তাহাবী “মুশকিল আসার” গ্রন্থে (২/৪৩০), বাগাবী “হাদীসু আলী
ইবনুল যা’আদ” গ্রন্থে (৩১/১/৬৯/১) সহীহ্ সনদে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা
করেছেন।
লক্ষ্য
করুন! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন যে, এ ব্যক্তি তার
সালাতের কারনে চুরি করা হতে বিরত থাকবে (যদি তার সালাতটি যথাযথ ভাবে হয়)। তিনি
বলেননি যে, তার দূরত্ব বৃদ্ধি করবে, যদিও সে তার চুরি হতে বিরত হয়নি। এ কারনেই
আব্দুল হক ইশবীলী “আত-তাহাজ্জুদ” গ্রন্থে (কাফ-১/২৪) বলেনঃ সত্যিকার অর্থে যে
ব্যক্তি সালাত আদায় করবে এবং সালাতকে আঁকড়ে ধরে রাখবে, তার সালাত তাকে হারামে জড়িত
হওয়া এবং হারামে পতিত হওয়া থেকে বিরত রাখবে।
অতএব
প্রমাণিত হচ্ছে যে, হাদীসটি সনদ এবং ভাষা উভয় দিক দিয়েই দুর্বল।
এ
ছাড়া আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইয্যুদ্দ্বীন ইবনু আব্দিস সালাম ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর
আসারটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ এ ধরনের হাদীসকে ভীতি প্রদর্শনমূলক হাদীস হিসাবে গণ্য
করা বাঞ্ছনীয়।
এ
হাদীসকে তার বাহ্যিক অর্থে নেয়া ঠিক হবেনা। কারন তার বাহ্যিক অর্থ সহীহ হাদীসে যা
সাব্যস্ত হয়েছে তার বিপরীত অর্থ বহন করছে। সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে যে, সালাত গুনাহ
সমূহকে মোচন করে, অতএব আল্লাহর সাথে দূরত্ব বৃদ্ধি করলে সালাত কিভাবে গুনাহ
মোচনকারী হতে পারে?
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এরূপ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে তবে মওকুফ হিসাবে গণ্য করে,
রাসুলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী হিসাবে নয়।
উপরের
আলোচনার সাক্ষ্য দেয় বুখারীতে বর্ণিত হাদীস। এক ব্যক্তি কোন মহিলাকে চুমু দিয়ে
দেয়। অতঃপর সে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ঘটনাটি উল্লেখ করলে
আল্লাহ্ তা’আলা নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল করেনঃ
إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ
‘নিঃসন্দেহে
সৎ কর্মগুলো অসৎ কর্মগুলোকে মুছে ফেলে’ (হুদঃ ১১৪)
হাফিয
যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে (৩/২৯৩) ইবনুুয যুনায়েদ হতে বর্ণনা করে (আলোচ্য)
হাদীসটি সম্পর্কে বলেনঃ এটি মিথ্যা।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৩ | 3 | ۳
৩।
পুরুষদের ইচ্ছা (মনোবল) পর্বতমালাকে স্থানচ্যুত করতে পারে।
এটি
হাদীস নয়।
ইসমাঈল
আজলুনী “কাশফুল খাফা” গ্রন্থে বলেনঃ এটি যে হাদীস তা অবহিত হতে পারিনি। তবে কোন
ব্যক্তি শাইখ আহমাদ গাযালীর উদ্ধৃতিতে বলেছেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (همة الرجال تزيل الجبال) ‘পুরুষদের মনোবল পর্বতমালার উচ্ছেদ ঘটাতে পারে’
আমি
(আলবানী) বলছিঃ সুন্নাতের গ্রন্থগুলো খুঁজেছি এর (হাদীসটির) কোন অস্তিত্ব পাইনি।
শাইখ আহমাদ গাযালী কর্তৃক হাদীস বলে উল্লেখ করাটা তাকে সাব্যস্ত করে না। কারন তিনি
মুহাদ্দিসদের দলভুক্ত নন, বরং তিনি তার ভাই মুহাম্মাদের ন্যায় সূফী সম্প্রদায়ভুক্ত
একজন ফকীহ ছিলেন। তার ভাই কর্তৃক রচিত “আল-ইয়াহিয়া” গ্রন্থে কতইনা হাদীস নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদ্ধৃতিতে দৃঢ়তার সাথে বলা হয়েছে এগুলো হাদীস।
অথচ সেগুলোর কোন ভিত্তি নেই। যেমনিভাবে হাফিয ইরাকীও আরো অনেকে বলেছেন। সেগুলোর
একটি নিম্নের হাদীসটি।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৪ | 4 | ٤
৪।
মসজিদের মধ্যে কথপোকথন পুণ্যগুলোকে খেয়ে ফেলে যেমনভাবে চতুষ্পদ জন্তুগুলো ঘাস খেয়ে
ফেলে।
হাদীসটি
ভিত্তিহীন।
গাযালী
এটি “আল-ইহইয়া” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন (১/১৩৬)। অথচ তার কোন ভিত্তি নেই। হাফিয
ইরাকী বলেনঃ তার কোন ভিত্তি সম্পর্কে অবহিত হইনি। হাফিয ইবনু হাজার “তারীখুল কাশ্শফ”
গ্রন্থে ভিত্তি না থাকাকে (৭৩/৯৩, ১৩০/১৭৬) আরো সুস্পষ্ট করেছেন। আব্দুল ওয়াহাব
সুবকী “তাবাকাতুশ-শাফে'ঈয়াহ” গ্রন্থে (৪/১৪৫-১৪৭) বলেছেনঃ তার কোন সনদ পাইনি।
লোকদের মুখে মুখে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে যে, মসজিদের মধ্যে বৈধ কথা সৎ কর্মগুলোকে
খেয়ে ফেলে যেমনভাবে খড়িকে আগুন খেয়ে ফেলে।
এটি
ও উপরেরটির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৫ | 5 | ۵
৫।
কোন বান্দা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে যখন কিছু ত্যাগ করে, তখন
আল্লাহ তাঁকে তাঁর দ্বীন ও দুনিয়াবী ক্ষেত্রে তাঁর চাইতেও অতি কল্যাণকর বস্তু
প্রতিদান হিসেবে দান করেন।
এ
ভাষায় হাদীসটি বানোয়াট।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি ১৩৭৯ হিজরী সনের রমাযান মাসে রেডিও দামেস্কে প্রচারিত কোন
এক সন্মানিত ব্যক্তির বক্তব্যে শুনি। হাদীসটি আবূ নো’য়াইম “হিলইয়াতুল আওলিয়া”
গ্রন্থে (২/১৯৬), দাইলামী “আল-গারায়েবুল মুলতাকাতাহ্” গ্রন্থে, আস-সিলাফী
“আত-তায়ুরীয়াত” গ্রন্থে (২/২০০) এবং ইবনু আসাকীর (৩/২০৮/২,১৫/৭০/১) আবদুল্লাহ ইবনু
সা’দ আর-রাকী সূত্রে... বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর
আবূ নু’য়াইম বলেনঃ হাদীসটি গারীব।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সনদ বানোয়াট, কারন হাদীসটির সনদে বর্ণিত যুহ্রীর নিচের
বর্ণনাকারীগণের মধ্য থেকে আবদুল্লাহ ইবনু সা’দ আর-রাকী ব্যতীত অন্য কোন
বর্ণনাকারীর বিবরণ হাদীসের গ্রন্থসমূহে মিলে না। তিনি পরিচিত, তবে মিথ্যুক হিসাবে!
হাফিয
যাহাবী “মীযানুল ই’তিদাল” গ্রন্থে এবং তার অনুসরণ করে হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী
“লিসানুল মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ
(كذبه الدارقطني وقال: كان يضع الحديث) দারাকুতনী তাকে মিথ্যুক আখ্যা
দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন। আর আহমাদ ইবনু আব্দান তাকে খুবই
দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
হাদীসটিতে
অন্য একটি সমস্যা রয়েছে, সেটি হচ্ছে বাক্কার ইবনু মুহাম্মাদ। তিনি মাজহূল
(অপরিচিত)। ইবনু আসাকীর তার জীবনীতে তার সম্পর্কে ভাল মন্দ কিছুই বলেননি। তবে
হ্যাঁ হাদীসটি (في دينه ودنياه) এ শব্দ ছাড়া সহীহ। যা ওয়াকী’ “আল-যুহুদ” নামক গ্রন্থে
(২/৬৮/২) এবং তার থেকে ইমাম আহমাদ (৫/৩৬৩) ও কাযা’ঈ “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে
(১১৩৫) নিম্নের ভাষায় উল্লেখ করেছেনঃ
إنك لن تدع شيئا لله عز وجل إلا بدلك الله به ما هو خير لك منه
‘তুমি
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের উদ্দেশ্যে কিছু ত্যাগ করলে অবশ্যই আল্লাহ্ তার
প্রতিদান হিসাবে তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন।’
ইমাম
মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীসটির সনদ সহীহ। হাদীসটি ইসপাহানীও “আত-তারগীব” গ্রন্থে
(১/৭৩) বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে তার একটি শাহেদ
[সাক্ষীমূলক] হাদীস এমন এক সনদে বর্ণনা করেছেন, শাহেদ হওয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোন
সমস্যা নেই।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৬ | 6 | ٦
৬।
ধূলিকণা হতে তোমরা বেঁচে চল, কারণ ধূলিকণা হতেই জীবাণু সৃষ্টি হয়।
হাদীসটির
কোন ভিত্তি নাই।
ইবনুল
আসীর “نسم” মাদায় “ আননেহায়া” গ্রন্থে
হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন যে, এটি হাদীস! কিন্তু মারফু হিসাবে এটির কোন ভিত্তি
সম্পর্কে জানি না।
তবে
আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবে ইবনু সাদ “তাবাকাতুল কুবরা” গ্রন্থে
(৮/২/১৯৮) বর্ণনা করেছেন।
তিনি
বলেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনু সালেহ্ মিসরী বলেছেন...।
তা
সত্ত্বেও কয়েকটি কারণে সনদের দিক থেকে হাদীসটি সহীহ নয়ঃ
১।
ইবনু সা'দ মাধ্যম হিসাবে তার শাইখের নাম উল্লেখ করেননি। অর্থাৎ মুয়াল্লাক হিসাবে
বর্ণনা করেছেন।
২।
এছাড়া সনদে উল্লেখিত আব্দুল্লাহ ইবনু সালেহ্-এর মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে, যদিও বুখারী
তার থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনু হিব্বান বলেনঃ
মুনকারের
প্রবেশ ঘটেছে। তিনি বলেনঃ আমি ইবনু খুযায়মাকে বলতে শুনেছিঃ প্রতিবেশীর সাথে তার
শক্রতা ছিল। এ কারণে প্রতিবেশী ইবনু সালেহের শাইখের উদ্ধৃতিতে নিজের হাতে লিখে
হাদীস জাল করত এবং (আব্দুল্লাহর হাতের লিখার সাথে তার হাতের লিখার মিল ছিল) সে
হাদীসকে আব্দুল্লাহ ইবনু সালেহের বাড়ীতে তার গ্রন্থগুলোর উপর ফেলে দিত। ফলে
আব্দুল্লাহ্ তার লিখাকে নিজের হাতের লিখা মনে করতেন এবং তিনি তাকে হাদীস হিসাবে
বর্ণনা করতেন।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৭ | 7 | ۷
৭।
দু’টি বস্তুর নিকটবর্তী হয়ো না, আল্লাহ্র সাথে শরীক স্থাপন করা এবং মানুষের ক্ষতি
সাধন করা।
হাদীসটির
কোন ভিত্তি নেই।
হাদীসটি
এ বাক্যেই পরিচিতি লাভ করেছে। সুন্নাহের কোন গ্রন্থে এর ভিত্তি সম্পর্কে অবহিত
হইনি। হতে পারে এর মূলে আছে গাযালীর “আল-ইহইয়া” গ্রন্থে (২/১৮৫) বর্ণিত কথিত
হাদীস।
হাফিয
ইরাকী তার “তাখরীজ” গ্রন্থে বলেনঃ হাদীসটি “ফিরদাউস” গ্রন্থের রচনাকারী আলী
(রাঃ)-এর হাদীস হতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তার ছেলে তার “মুসনাদ” গ্রন্থে মুসনাদ
হাদীস হিসাবে উল্লেখ করেননি।
এ
কারণেই সুবকী সেটিকে সেই সব হাদীসগুলোর অন্তর্ভুক্ত করেছেন (৪/১৫৬) যেগুলো
“আল-ইহইয়া” গ্রন্থে এসেছে, অথচ তিনি সেগুলোর কোন সনদ পাননি।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৮ | 8 | ۸
৮।
তুমি দুনিয়ার জন্য এমনভাবে কর্ম কর, যেন তুমি অনন্ত কালের জন্য জীবন ধারন করবে। আর
আখেরাতের জন্য এমনভাবে আমল কর, যেন তুমি কালকেই মৃত্যুবরণ করবে।
মারফূ’
হিসেবে হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
যদিও
এটি পরবর্তী সময়গুলোতে মুখে মুখে পরিচিতি লাভ করেছে। তবে মওকুফ হিসাবে হাদীসটির
ভিত্তি পেয়েছি। ইবনু কুতায়বা “গারীবুল হাদীস” গ্রন্থে ((১/৪৬/২) বর্ণনা করেছেন।
কিন্তু এটির সনদের বর্ণনাকারী ওবায়দুল্লাহ ইবনু আয়যারের জীবনী কে উল্লেখ করেছেন
পাচ্ছি না। অতঃপর এটি সম্পর্কে “তারীখু বুখারী” গ্রন্থে (৩/৩৯৪) এবং “যারহু ওয়াত
তা’দীল” (২/২/৩৩০) গ্রন্থে অবহিত হয়েছি। কিন্তু সনদটি মুনকাতি বিচ্ছিন্ন।
অতঃপর
ইবনু হিব্বানকে এটিকে “সিকাতু আতবাইত তাবেঈন” গ্রন্থে (৭/১৪৮) উল্লেখ করতে দেখেছি।
ইবনুল মুবারাকও অন্য সূত্রে “আল-যুহুদ” গ্রন্থে (২/২১৮) মওকুফ হিসাবে বর্ণনা
করেছেন। কিন্তু এটিও মুনকাতি' অর্থাৎ এর সনদে বিচ্ছন্নতা রয়েছে। মারফু হিসাবেও
বর্ণিত হয়েছে।
বাইহাকী
তার “সুনান” গ্রন্থে (৩/১৯) আবু সালেহ-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন (তবে ভাষায়
ভিন্নতা আছে)। কিন্তু এটির সনদটি দুটি কারণে দুর্বলঃ সনদের এক বর্ণনাকারী উমার
ইবনু আদিল আযীযের দাস মাজহুল এবং আবু সালেহ দুর্বল। তিনি হচ্ছেন আব্দুল্লাহ ইবনু
সালেহ, লাইসের কাতিব [কেরানী]। তার সম্পর্কে ৬ নং হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে।
বাইহাকী কর্তৃক বর্ণিত ইবনু আমরের হাদীসের প্রথম অংশটি বাযযার জাবের (রাঃ)-এর
হাদীস হতে বর্ণনা করেছেন (দেখুন, ১/৫৭/৭৪- কাশফুল আসতার)। হায়সামী
“আল-মাজমা" গ্রন্থে (১/৬২) বলেছেনঃ এটির সনদে ইয়াহইয়া ইবনুল মুতাওয়াক্কিল
(আবু আকীল) রয়েছেন। তিনি মিথ্যুক।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৯ | 9 | ۹
৯।
আমি প্রত্যেক পরহেজগার (সংযমী) ব্যাক্তির দাদা।
হাদীসটির
কোন ভিত্তি নাই।
হাফিয
সুয়ূতীকে এটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেনঃ আমি এ হাদীসটি চিনি না।
তিনি এ কথাটি তার “আল-হাবী লিল ফাতাওয়া” গ্রন্থে (২/৮৯) বলেছেন।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১০ | 10 | ۱۰
১০।
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাকে হালাল রুযি অন্বেষণের উদ্দেশ্যে পরিশ্রান্ত অবস্থায়
দেখতে ভালবাসেন।
হাদীসটি
জাল।
এটিকে
আবু মানসূর দাইলামী “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে আলী (রাঃ)-এর হাদীস হতে মারফু
হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
হাফিয
ইরাকী (২/৫৬)বলেনঃ এটির সনদে মুহাম্মাদ ইবনু সাহাল আল-আত্তার নামক এক বর্ণনাকারী
আছেন। তার সম্পর্কে দারাকুতনী বলেনঃ তিনি হাদীস জালকারী।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটি সেই সব হাদীসের একটি যেগুলোকে সুয়ূতী “জামেউস সাগীর”
গ্রন্থে উল্লেখ করে তার গ্রন্থকে কালিমালিপ্ত করেছেন ভূমিকাতে উদ্ধৃত তার নিজ
উক্তির বিরোধিতা করে, তিনি বলেছেনঃ
صنته عما تفرد به وضاع أو كذاب
‘আমি
কিতাবটি জালকারী ও মিথ্যুকের একক বর্ণনা হতে হেফাযাত করেছি।
এ
গ্রন্থের ভাষ্যকার আব্দুর রউফ আল-মানাবী “ফয়যুল কাদীর” গ্রন্থে বলেনঃ -জামেউস
সাগীর" এর লেখকের হাদীসটিকে তার গ্রন্থ হতে মুছে ফেলা উচিত ছিল।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ১১ | 11 | ۱۱
১১।
আমাকে প্রেরন করা হয়েছে শিক্ষাদানকারী হিসেবে।
হাদীসটি
য’ঈফ (দুর্বল)।
এটি
দারেমী (১/৯৯) আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ সূত্রে (তিনি হচ্ছেন আবু আদির রহমান
মাকরী), ইবনু ওয়াহাব “মুসনাদ” গ্রন্থে (৮/১৬৪/২), আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাক
“আল-যুহুদ” গ্রন্থে (২/২২০), তার থেকে হারিস তার “মুসনাদ" গ্রন্থে (পৃ. ১৬)
এবং তায়ালিসী (পৃ ২৯৮ হাঃ নং ২২৫১) বর্ণনা করেছেন। তারা সকলে আব্দুর রহমান ইবনু
যিয়াদ ইবনে আনয়াম হতে এরং তিনি আব্দুর রহমান ইবনু রাফে' হতে ...বর্ণনা করেছেন।
এ
সনদটি দুর্বল। কারণ আব্দুর রহমান বিন যিয়াদ এবং ইবনু রাফে তারা উভয়েই দুর্বল,
যেমনভাবে হাফিয ইবনু হাজার “তাকরীবুত তাহযীব” গ্রন্থে বলেছেন। ইবনু মাজাহও হাদীসটি
(১/১০১) দাউদ ইবনু যাবারকান সূত্রে বাকর ইবনু খুনায়েস হতে, আর তিনি আব্দুর রহমান
ইবনু যিয়াদ হতে বর্ণনা করেছেন।
এ
সনদটি প্রথমটির চেয়ে বেশী দুর্বল। কারণ আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ-এর নীচের
বর্ণনাকারীগণ সকলেই দুর্বল। তারা নির্ভরশীল বর্ণনাকারীদের বিরোধিতা করেছেন।
বূসয়রী “আল-যাওয়াইদ” গ্রন্থে (কাফ ১৬/২) বলেনঃ এর সনদে দাউদ, বাকর ও আব্দুর
রহমান নামের (তিনজন) বর্ণনাকারী রয়েছেন। তারা সকলেই দুর্বল। হাফিয ইরাকী
“তাখরীজুল ইহইয়া” গ্রন্থে বলেনঃ সনদটি দুর্বল।
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১২ | 12 | ۱۲
১২।
আল্লাহ দুনিয়ার নিকট অহী মারফত বলেছেন যে, তুমি খেদমত কর ঐ ব্যাক্তির যে আমার
খেদমত করে আর কষ্ট দাও ঐ ব্যাক্তিকে যে তোমার খেদমত করে।
হাদীসটি
জাল।
হাদীসটি
খাতীব বাগদাদী “তারীখ বাগদাদ” গ্রন্থে (৮/৪৪) ও হাকিম “মা'রিফাতু উলূমিল হাদীস”
গ্রন্থে (পৃ:১০১) বিভিন্ন সূত্রে হুসাইন বিন দাউদ হতে, তিনি ফুযায়েল ইবনু আয়ায
হতে, ... আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ হতে মারফু হিসাবে বর্ননা করেছেন। আল-খাতীব বলেনঃ
হুসাইন ফুযায়েল হতে এককভাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি বানোয়াট। হুসাইন ইবনু দাউদ
বাদে হাদীসটির সকল বর্ণনাকারী নির্ভরশীল। কারণ তিনি ইয়াযীদ ইবনু হারুণ সূত্রে
হুমায়েদ-এর মাধ্যমে আনাস (রাঃ) হতে একটি কপি বর্ণনা করেছেন, যার অধিকাংশই
বানোয়াট।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৩ | 13 | ۱۳
১৩।
শামের অধিবাসীরা আল্লাহর পৃথিবীতে তাঁর চাবুক। তিনি তাঁদের দ্বারা তাঁর বান্দাদের
থেকে যাকে চান শাস্তি দেন। তাঁদের মুমিনদের উপর তাঁদের মুনাফিকদের প্রাধান্য
বিস্তারকে হারাম করে দেয়া হয়েছে। তাঁদের মুনাফিকরা শুধুমাত্র চিন্তা ও অস্থির
অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে।
হাদীসটি
দুর্বল।
এটি
তাবরানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৪১৬৩) ওয়ালীদ বিন মুসলিম হতে দুটি সূত্রে
বর্ণনা করেছেন।
দুটি
কারণে হাদীসটি সহীহ নয়ঃ
১।
ওয়ালীদ আন আন শব্দ দ্বারা বর্ণনা করেছেন। কারণ তিনি 'তাদলীসুত তাসবিয়া' করতেন।
যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি যখন আন আন্ শব্দ দ্বারা ইবনু জুরায়েজ ও
আওযাঈ হতে বর্ণনা করেন তখন তার বর্ণনা নির্ভরযোগ্য নয়। কারণ তিনি মিথ্যুকদের থেকে
তাদলীস করতেন। তবে যখন ثنا 'আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন' এ শব্দ ব্যবহার করেছেন
তখন তার হাদীস গ্রহণযোগ্য। [তাদলীসের ব্যাখ্যা সম্পর্কে ৫৭ পৃষ্ঠায় দেখুন।]
হাফিয
ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি নির্ভরশীল। কিন্তু তিনি বহু তাদলীস এবং
তাসবিয়া কারী।
২।
মওকুফঃ মওকুফ (সাহাবীর বাণী) হিসাবে ইমাম আহমাদ (৩/৪৯৮) বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি
সহীহ। ইবনু তাইমিয়া সন্দেহ বশত হাদীসটিকে মারফু বলেছেন। কিন্তু আসলে সেরূপ নয়।
মুনযেরী
“তারগীব ওয়াত তারহীব” গ্রন্থে (৪/৬৩) বলেনঃ হাদীসটি মওকূফ হিসাবেই সঠিক।
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৪ | 14 | ۱٤
১৪।
তোমরা তোমাদেরকে এবং সার দেয়া ভূমির সবুজ বর্ণকে রক্ষা কর। জিজ্ঞাসা করা হল, সার
দেয়া ভূমির সবুজ বর্ণ কি? (উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
নিকৃষ্ট উৎপত্তি স্থল হতে জন্ম গ্রহণ করা সুন্দরী নারী।
হাদীসটি
নিতান্তই দুর্বল।
হাদীসটি
কাজা'ঈ “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে (কাফ ৮১/১) ওয়াকেদী এবং গাযালী “আল-ইহইয়া”
গ্রন্থে (২/৩৮) উল্লেখ করেছেন।
তার
তাখরাজকারী ইরাকী বলেনঃ হাদীসটি দারাকুতনী “আল-আফরাদ” গ্রন্থে এবং রামহুরমুজী
“আল-আমসাল" গ্রন্থে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর হাদীস হতে উল্লেখ করেছেন।
দারাকুতনী বলেনঃ এ হাদীসটি ওয়াকেদী এককভাবে বর্ণনা করেছেন, তিনি দুর্বল
বর্ণনাকারী।
ইবনুল
মুলাক্কান “খুলাসাতুল বাদরিল মুনীর” গ্রন্থে (কাফ ১১৮/১) তার মতই উক্তি করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ তিনি মাতরূক। ইমাম আহমাদ, নাসাঈ ও ইবনুল মাদীনী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ
তাকে (ওয়াকেদীকে) মিথ্যুক বলেছেন। কোন কোন গোড়া ব্যক্তি তাকে নির্ভরযোগ্য বলার
চেষ্টা করেছেন, সেদিকে দৃষ্টি দেয়া যাবে না। কারণ তা মুহাদ্দিসগণের প্রসিদ্ধ
সূত্র (ব্যাখ্যাকৃত দোষারোপ অগ্রাধিকার পাবে নির্দোষীতার উপর) বিরোধী। এ জন্য
কাওসারী হাদীসটিকে জাল বলেছেন।
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৫ | 15 | ۱۵
১৫।
শাম দেশ আমার তীর রাখার স্থল। যে তাঁর কোনোরূপ অনিষ্ট করার ইচ্ছা করবে, আমি তাঁকে
সেখানকার তীর দ্বারা আঘাত করব।
মারফূ’
হিসেবে হাদীসটির কোন ভিত্তি নাই।
সম্ভবত
এটি ইসরাইলী বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ আহলে কিতাবদের বর্ণনাকৃত। এটি হাফিয আবুল
হাসান রিব'ঈ “ফাযায়েলুশ-শাম” গ্রন্থে (পৃঃ ৭) আউন ইবনু আবদিল্লাহ ইবনে উতবা হতে
বর্ণনা করেছেন।
এটির
সনদে বর্ণনাকারী মাসউদী রয়েছেন। তার নাম আব্দুর রহমান ইবনু আবদিল্লাহ। তার
মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটার কারণে তিনি দুর্বল। এছাড়া অন্য বর্ণনাকারীদের জীবনী কে
উল্লেখ করেছেন পাচ্ছি না।
ইমাম
সাখাবীও “মাকাসিদুল হাসানা” গ্রন্থে বলেছেনঃ মারফু হিসাবে হাদীসটির কোন ভিত্তি
নেই।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৬ | 16 | ۱٦
১৬।
আমার উম্মাতের দু’শ্রেণীর লোক যখন ঠিক হয়ে যাবে, তখন মানুষ ভাল হয়ে যাবে। নেতাগণ
এবং ফাকীহগণ। (অন্য বর্ণনায় এসেছে ‘আলেমগণ’)।
হাদীসটি
জাল
তাম্মাম
“আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (১/২৩৮), আবু নোয়াইম “হিলইয়াহ” গ্রন্থে (৪/৯৬) এবং ইবনু
আবদিল বার "জামেউ বায়ানিল ইলম” গ্রন্থে (১/১৮৪) মুহাম্মাদ বিন যিয়াদ
ইয়াশকুরী সূত্রে ... হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
এ
সনদটি বানোয়াট। এ মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেনঃ كذاب أعور يضع الحديث 'তিনি মিথ্যুক, চোখ টেরা, হাদীস
জালকারী'।
ইবনু
মাঈন ও দারাকুতনী বলেনঃ “كذاب” তিনি মিথ্যুক । আবূ যুর'আহ ও অন্যরাও তাকে মিথ্যুক আখ্যা
দিয়েছেন। সুয়ূতী হাদীসটি “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে তার শর্তের বিরোধিতা করে উল্লেখ
করেছেন। গাযালী “আল-ইহইয়া” গ্রন্থে (১/৬) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীস হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তার তাখরীজকারী হাফিয ইরাকী বলেনঃ
সনদটি দুর্বল। হাফিয যে বলেছেন সনদটি দুর্বল আর আমরা বলেছি বানোয়াট তার মধ্যে কোন
দ্বন্ধ নেই। কারণ বানোয়ট হচ্ছে দুর্বল হাদীসের প্রকারগুলোর একটি। যেমনটি হাদীস শাস্ত্রের
নীতির উপর রচিত গ্রন্থ সমূহে এসেছে। এ মিথ্যুকের আরেকটি হাদীসঃ (দেখুন পরেরটি)
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৭ | 17 | ۱۷
১৭।
যে ব্যাক্তি হাসতে হাসতে গুনাহ করবে, সে কাঁদতে কাঁদতে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
হাদীসটি
জাল।
হাদীসটি
আবু নু'য়াইম (৪/৯৬) উমর ইবনু আইউব সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। এ সনদেও মুহাম্মাদ
ইবনু যিয়াদ ইয়াশকুরী রয়েছেন।
এ
হাদীসটি সেই সব হাদীসের একটি, যেগুলোর দ্বারা সুয়ূতী তার “জামোউস সাগীর” গ্রন্থকে
কালিমালিপ্ত করেছেন। হাদীসটি সম্পর্কে “জামেউস সাগীর” গ্রন্থের ভাষ্যকার মানাবী
বলেনঃ এর সনদে বর্ণনাকারী উমার ইবনু আইউব রয়েছেন, তার সম্পর্কে যাহাবী বলেনঃ ইবনু
হিব্বান তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ উমার হচ্ছেন মুযানী। দারাকুতনী তাকে খুবই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন,
যেমনটি “আল-মীযান” এবং “আল-লিসান” গ্রন্থে এসেছে। হাদীসটির সনদে মুহাম্মাদ বিন
যিয়াদ ইয়াশকুরীও রয়েছেন। তার দ্বারা দোষ বর্ণনা করাই উত্তম। কারণ তাকে মুহাদ্দিসগণ
মিথ্যুক এবং হাদীস জালকারী বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এ
মিথ্যুকের সূত্রেই বর্ণিত হয়েছে নিম্নের হাদীসটিঃ (দেখুন পরেরটি)
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৮ | 18 | ۱۸
১৮।
তোমরা পরকাটা কবুতর গ্রহণ কর, কারন তা তোমাদের বাচ্চাদের (সন্তানদের) থেকে জ্বীনকে
বিমুখ করে দেয়।
হাদীসটি
জাল।
এটি
ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (২/২৮৮), খাতীব বাগদাদী (৫/২৭৮) ও ইবনু আসাকির
(১৭/৪৬৯) মুহাম্মাদ বিন যিয়াদ সূত্রে পূর্বের সনদেই ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা
করেছেন।
এ
হাদীসটিকেও সুয়ুতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন তার ভাষ্যকার মানাবী তার
সমালোচনা করে বলেছেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ সম্পর্কে ইমাম আহমাদ, ইবনু মাঈন
প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ বলেছেনঃ তিনি ছিলেন মিথ্যুক, হাদীস জালকারী।
ইবনু
হাজার বলেনঃ তাকে তারা মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ
তিনি মিথ্যুক, জালকারী। ইবনু হিব্বান বলেছেনঃ তিনি নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে জাল
হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ কারণেই ইবনুল জাওয়ী হাদীসটি জাল বলে হুকুম লাগিয়েছেন।
ইবনু ইরাক, হিন্দী ও অন্যরাও হাদীসটি জাল বলেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ তাদের মধ্যে “আল-মানার” গ্রন্থে (৩৯) জাল আখ্যাদানকারী হিসাবে
ইবনুল কাইয়্যিমও রয়েছেন। এ মিথ্যুকের আরো একটি হাদীসঃ (দেখুন পরেরটি)
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৯ | 19 | ۱۹
১৯।
তোমরা তোমাদের নারীদের মজলিশগুলো প্রেমালাপের দ্বারা সৌন্দর্য মণ্ডিত কর।
হাদীসটি
বানোয়াট।
হাদীসটি
ইবনু আদী (২/২৮৮) ও খাতীব বাগদাদী (৫/২৮০) ইয়াশকুরী সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
ইবনু
আদী বলেনঃ এ ইয়াশকুরী দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি মায়মুন হতে এমন সব মুনকার
হাদীস বর্ণনা করেছেন, যেগুলো তিনি ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা করেননি। কোন নির্ভরযোগ্য
বর্ণনাকারী তার সাথে মিলে হাদীসটি বর্ণনা করেননি।
খাতীব
বাগদাদী সূত্রে হাদীসটি ইবনুল জাওয়ী “মাওযু'আত” গ্রন্থে (২/২৭৭) উল্লেখ করেছেন।
আর সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/১৭৯) তাকে সমর্থন করেছেন।
এ
হাদীসের মতই আরো একটি হাদীসঃ (দেখুন পরেরটি)
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২০ | 20 | ۲۰
২০।
তোমাদের দস্তরখানাগুলো সবজি দ্বারা সৌন্দর্যমণ্ডিত কর, কারন তা বিসমিল্লাহ বলে
আহার করলে শয়তানকে বিতাড়ণকারী যন্ত্র।
হাদীসটি
বানোয়াট।
হাদীসটি
আব্দুর রহমান আদ-দামেস্কি "আল-ফাওয়াইদ" গ্রন্থে (২/২২৯/১), ইবনু
হিব্বান “আয-যু'য়াফা ওয়াল মাতরূকীন" গ্রন্থে (২/১৮৬) এবং আবু নু’য়াইম
“আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/২১৬) “আলা ইবনু মাসলামা সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এটি একটি জাল হাদীস। এর সমস্যা হচ্ছে বর্ণনাকারী এ আলা। যাহাবী
“আল-মীযান” গ্রন্থে বলেন, আযদী বলেছেনঃ 'আলা হতে বর্ণনা করা বৈধ নয়। কারণ কি
বর্ণনা করছেন তিনি তার কোন পরওয়া করতেন না। ইবনু তাহের বলেনঃ তিনি হাদীস জাল
করতেন। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে হাদীস জাল করতেন। তিনি
আরো বলেনঃ কোন অবস্থাতেই তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হালাল নয়।
সুয়ুতী
হাদীসটিকে “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করে তার গ্রন্থকে কালিমালিপ্ত করেছেন।
ইবনুল
জাওয়ী হাদীসটি “আল-মাওযু’আত” গ্রন্থে (৩/২৯৮) ইবনু হিব্বান এর সূত্রে 'আলা ইবনু
মাসলামা হতে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ এটির কোন ভিত্তি নেই, 'আলা জালকারী...।
এছাড়া “আল-মীযান” গ্রন্থে যা উল্লেখ করা হয়েছে তিনি সে সব কিছুও উল্লেখ করেছেন।
সুয়ূতী
তার সমালোচনা করে এ হাদীসটির আরো একটি সূত্র “আল লাআলিল মাসনুয়াহ" গ্রন্থে
(২/১২) উল্লেখ করেছেন, যাতে হাসান ইবনু শাবীবুল মাকতাব নামক এক বর্ণনাকারী
রয়েছেন।
তার
সম্পর্কে যাহাবী "আল-মীযান" গ্রন্থে বলেনঃ তিনি হচ্ছেন এ হাদীসের
সমস্যা। তার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে বাতিল হাদীস
বর্ণনা করতেন।
ইবনুল
কাইয়্যিম "আল-মানার" গ্রন্থে (পৃ. ৩২) বলেছেনঃ হাদীসটি জাল।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ২১ | 21 | ۲۱
২১।
আমার অবস্থা সম্পর্কে তাঁর জ্ঞাত হওয়া আমার চাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
এটির
কোন ভিত্তি নেই।
কেউ
কেউ এটিকে ইবরাহীম (আঃ)-এর বাণী বলেছেন। যখন তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তখন জিবরীল
(আঃ) তাকে তার প্রয়োজনীতার কথা জিজ্ঞাসা করেন। সে সময় তিনি এ কথা দ্বারা তার
উত্তর দিয়েছিলেন। এটি ইসরাইলী বর্ণনা। মারফু' হিসাবে এর কোন সনদ মিলে না। বাগাবী
সূরা আম্বিয়ার তাফসীরের মধ্যে উল্লেখ করে দুর্বল বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এছাড়া
এটি কুরআন এবং সহীহ হাদীস পরিপন্থী। কারণ কুরআন এবং সহীহ হাদীসে আল্লাহকে ডাকা ও
তাঁর কাছে চাওয়ার ব্যাপারে বহু তাগিদ এসেছে। এছাড়া দোয়ার ফযীলতও বর্ণনা করা
হয়েছে। ইব্রাহীম (আঃ) নিজে আল্লাহর নিকট প্রার্থনাও করেছেন। ইবরাহীম (আঃ) বলেনঃ
رَّبَّنَا إِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ
সূরা
ইব্রাহীম-এর ৩৭ নং আয়াত হতে ৪১ নং পর্যন্ত সবই দোআ । এছাড়া কুরআন এবং সুন্নাতের
মধ্যে নাবীগণের অগণিত দোআ এসেছে।
আল্লাহ্
বলছেনঃ তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব...। (সূরা গাফেরঃ ৬০)
রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দো'আই হচ্ছে ইবাদাত । সহীহ আবী দাউদ (১৩২৯)।
হাদীসটি সুনান রচনাকারীগণ বর্ণনা করেছেন।
এমনকি
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ডাকে না আল্লাহ
তার উপর রাগান্নিত হন।' এ হাদীসটি হাকিম বর্ণনা করে ১/৪৯১ সহীহ্ আখ্যা দিয়েছেন আর
যাহাবী তার কথাকে সমর্থন করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি হাসান।
আলোচ্য
হাদীসটিকে ইবনু ইরাক “তানযীহুশ-শারী'য়াতিল মারফুয়াহ আনিল আখবারিশ-শানী'য়াতিল
মাওযুআহ” গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেন (১/২৫০), ইবনু তাইমিয়্যা বলেছেনঃ হাদীসটি
বানোয়াট।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২২ | 22 | ۲۲
২২।
তোমরা আমার সত্তা দ্বারা অসীলা ধর, কারন আমার সত্তা আল্লাহর কাছে মহান।
এটির
কোন ভিত্তি নেই।
এ
ব্যাপারে ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) “আল-কা'য়েদাতুল জালীলাহ" গ্রন্থে আলোকপাত
করেছেন। কোন সন্দেহ নেই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সত্তা আল্লাহর
নিকট মহা সম্মানিত। আল্লাহ তা'আলা মূসা (আঃ)-এর ব্যাপারে বলেনঃ (وَكَانَ عِندَ اللَّهِ وَجِيهًا)
অর্থঃ “তিনি আল্লাহর নিকট বড়ই সম্মানিত ছিলেন।" (সূরা আহযাবঃ ৬৯)। আমরা সকলে
জ্ঞাত আছি যে, আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা (আঃ)-এর চাইতেও
উত্তম। কিন্তু এটি এক বিষয় আর তাঁর সত্তার অসীলায় কিছু চাওয়া অন্য বিষয়। দুটি
বিষয়কে এক করে দেখার কোন সুযোগ নেই। কারণ তাঁর সত্তার অসীলায় যে ব্যক্তি কিছু
পাবার ইচ্ছা পোষণ করে, সে এটা কামনা করে যে তাঁর দোআ কবুল হয়। এ বিশ্বাস (যে তিনি
পরে কারো জন্য দোআ করতে সক্ষম) সাব্যস্ত করার জন্য প্রয়োজন সহীহ দলীলের। কারণ এটি
সম্পূর্ণ গায়েবী ব্যাপার। তার পরেও এটি এমন এক বিষয় যে তা ব্যক্তির বুদ্ধি
দ্বারা জানা এবং তা সাব্যস্ত করাও সম্ভব নয়।
আমরা
দলীল দেখতে গেলে পাচ্ছি যে, অসীলা সংক্রান্ত হাদীসগুলো দু’ভাগে বিভক্ত, সহীহ ও
য’ঈফ। যদি সহীহ হাদীসগুলোর দিকে লক্ষ করি, তাহলে দেখতে পাব যে, সেগুলোতে তাঁর
সত্তা দ্বারা অসীলা গ্রহণকারীর কোন দলীল মিলছে না। ইসতিস্কার সলাতে তার মাধ্যমে
অসীলা করা, অন্ধ ব্যক্তির তার মাধ্যমে অসীলা করা, এসব অসীলা ছিল তার জীবিত থাকা
অবস্থায় তাঁর দো'আর দ্বারা, তার সত্তার দ্বারা নয়। অতএব যখন তাঁর মৃত্যুর পর তার
দোআর দ্বারা অসীলা করা সম্ভব নয়, তখন তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সত্তার দ্বারা অসীলা
করাও সম্ভব নয় এবং তা জায়েযও নয়। যদি তা জায়েয থাকত তাহলে সাহাবীগণ উমার
(রাঃ)-এর যুগে ইসতিস্কার সলাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাচা
আব্বাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে বৃষ্টির জন্য দোআ করতেন না। বরং রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসীলায় পানি প্রার্থনা করতেন। কারণ তিনিই সর্ব শ্রেষ্ঠ। তারা
(সাহাবীগণ) উমার (রাঃ) এর যুগে আব্বাস (রাঃ)-এর দোআকে মাধ্যম হিসাবে ধরে তার
দ্বারা বৃষ্টি প্রার্থনা করেছেন। এ কারণে যে, তারা জানতেন কোন অসীলাটি বৈধ আর
কোনটি বৈধ নয়। অর্থাৎ জীবিত ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে মৃত্যু ব্যক্তির দোআ বা তার
সত্তার অসীলা ধরা বৈধ নয়। সে যে কেউ হোকনা কেন। যে অন্ধ ব্যক্তি রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অসীলা ধরেছিলেন, তার দোআর ভাষা ছিল এরুপ اللهم فشفعه في হে
আল্লাহ! তুমি তাঁর শাফা'আতকে (দোআকে)
বিদ'আতী
অসীলার সাথে তার কোন প্রকার সম্পর্ক নেই। এ কারণে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) এ ধরনের
অসীলাকে অস্বীকার করে বলেছেনঃ أكره أن يسأل الله إلا بالله 'আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো মাধ্যমে চাওয়াকে আমি
ঘৃণা করি। এমনটিই এসেছে “দুররুল মুখতার" সহ হানাফী মাযহাবের অন্যান্য
গ্রন্থে।
কাওসারী
যে বলেছেন "ইমাম শাফেঈ ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর অসীলায় তার কবরের নিকট বরকত
গ্রহণ করেছেন এবং আল্লাহর কাছে চেয়েছেন।" এ মর্মে বর্ণিত কথাটি বাতিল। কারণ
তার সূত্রে উমার বিন ইসহাক নামে এক ব্যক্তি আছেন, যার সম্পর্কে কিছু জানা যায় না।
তিনি মাজহুল অপরিচিত। এ জন্য ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) বলেছেন যে, এটি ইমাম শাফে'ঈর উপর
মিথ্যারোপ।
ইবনু
তাইমিয়্যাহ “ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম" গ্রন্থে (১৬৫) বলেনঃ এটি সুস্পষ্ট
মিথ্যারোপ ... কারণ ইমাম শাফে'ঈ হিজাজ, ইয়ামান, শাম, ইরাক, মিসর ভ্রমনকালে বহু
নাবী, সাহাবী ও তাবেঈগণের কবর দেখেছেন যারা ইমাম আবু হানীফা ও তার ন্যায় আলেমগণের
চেয়ে বহুগুনে উত্তম, তা সত্ত্বেও তিনি তাদের কারো নিকট দুআ না করে শুধু আবূ
হানীফার নিকট দু'আ করেলেন? এ ছাড়া ইমাম আবু হানীফার কোন শিষ্য থেকেও এরূপ
প্রমাণিত হয়নি ...।
আর
দ্বিতীয় প্রকার অসীলা সংক্রান্ত হাদীসগুলো দুর্বল, যেগুলো বিদ'আতী অসীলার প্রমাণ
বহন করে, সেগুলো সম্পর্কেও কিছু সতর্কতা মূলক আলোচনা হওয়া দরকার। সেগুলোর
কয়েকটির বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো। (দেখুন পরেরগুলো)
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২৩ | 23 | ۲۳বাংলা
২৩।
আল্লাহ এমন এক সত্তা যিনি জীবন দান করেন, আবার মৃত্যুও দেন। তিনি চিরঞ্জীব
মৃত্যুবরণ করবেন না। তুমি ক্ষমা কর আমার মা ফাতিমা বিনতু আসা’দকে। তাঁকে উপাধি দাও
তাঁর অলংকার হিসেবে, তাঁর প্রবেশ পথকে প্রশস্ত কর, তোমার নাবীকে সত্য ও আমার
পূর্ববর্তী সকল নাবীকে সত্য জানার দ্বারা। কারন তুমিই সকল দয়ালুর মাঝে সর্বাপেক্ষা
দয়াবান।
হাদীসটি
দুর্বল।
হাদীসটি
তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (২৪/৩৫১,৩৫২) ও “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে
(১/১৫২-১৫৩) বর্ণনা করেছেন এবং তার সূত্রে আবু নু’য়াইম "হিলইয়াহতুল
আওলিয়া” গ্রন্থে (৩/১২১) উল্লেখ করেছেন। যখন আলী (রাঃ)-এর মা ফাতিমা বিনতে আসাদ
বিন হিশাম মারা গেলেন, তখন কবর খোড়ার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
উক্ত দোআ পড়েন বলে কথিত আছে।
এ
হাদীসের সনদে রাওহ ইবনু সলাহ নামক একজন বর্ণনাকারী আছেন। তার সম্পর্কে তাবারানী
বলেনঃ তিনি হাদীসটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন । তাকে মুহাদ্দিসগণ দুর্বল বর্ণনাকারী
বলে আখ্যা দিয়েছেন। যেমন ইবনু আদী (৩/১০০৫) বলেছেনঃ তিনি দুর্বল। ইবনু ইউনুস
বলেনঃ তার থেকে বহু মুনকার হাদীস বর্ণিত হয়েছে। দারাকুতনী বলেছেনঃ তিনি হাদীসের
ক্ষেত্রে য'ঈফ। ইবনু মাকুলা বলেনঃ মুহাদ্দিসগণ তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
কোন
কোন শিথিলতা প্রদর্শনকারী মুহাদ্দিস তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। যেমন ইবনু হিব্বান ও
হাকিম। কিন্তু তাদের কথা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ মুহাদ্দিসগণের মধ্যে যখন কোন
হাদীসের ক্ষেত্রে এরূপ দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, তখন তাদের দু'জনের কথা গৃহীত হয় না।
কারণ তারা বহু অজ্ঞাত বর্ণনাকারীর হাদীসকেও সহীহ আখ্যা দিয়েছেন, অথচ হাদীসটি সহীহ
নয়। তারা উভয়ে শিথিলতা প্রদর্শনকারী হিসাবে প্রসিদ্ধ। এ শাস্ত্রে যারা বেশি
বিজ্ঞ তাদের নিকট রাওহ দুর্বল। আর হাদীস শাস্ত্রের থিওরি অনুযায়ী ব্যাখ্যাকৃত
দোষারোপ প্রাধান্য পাবে যারা কাউকে নির্ভরযোগ্য বলবেন তার উপর।
কাওসারীও
তার "আল-মাকালাত” গ্রন্থে (পৃ. ১৮৫) বলেছেনঃ সহীহ আখ্যা দেয়ার ক্ষেত্রে
হাকিম ও ইবনু হিব্বান শিথিলতা প্রদর্শনকারী হিসাবে প্রসিদ্ধ। এ কথা বলে তিনি হাকিম
এবং ইবনু হিব্বান কর্তৃক নির্ভরযোগ্য বলা ব্যক্তির বর্ণনাকৃত হাদীসকে গ্রহণ
করেননি। অতএব যেখানে অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ তাকে দুর্বল হিসাবে উল্লেখ করেছেন,
সেখানে ইবনু হিব্বান ও হাকিম নির্ভরযোগ্য বলেছেন, এ কথা বলে তার (কাওসারী কর্তৃক)
এ হাদীসটিকে সহীহ বলা গ্রহণযোগ্য নয়।
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২৪ | 24 | ۲٤বাংলা
২৪।
যে ব্যাক্তি তাঁর বাড়ী হতে সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য বের হয়, অতঃপর এ দু’আ বলেঃ
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করেছি তোমার নিকট প্রার্থনাকারীদের সত্য
জানার দ্বারা, আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি আমার এ চলাকে সত্য জানার দ্বারা।
কারন আমি অহংকার করে আর অকৃতজ্ঞ হয়ে বের হয়নি ... তখন আল্লাহ তাঁর চেহারা সমেত
তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হন এবং তাঁর জন্য এক হাজার ফেরেশতা ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
হাদীসটি
দুর্বল।
এটি
ইবনু মাজাহ (১/২৬১-২৬২), আহমাদ (৩/২১), বাগাবী "হাদীসু আলী ইবনুল
যায়াদ" গ্রন্থে (৯/৯৩/৩) ও ইবনুস সুন্নী (নং ৮৩) ফুযায়েল ইবনু মারযুক
সূত্রে আতিয়া আল-আওফী হতে বর্ণনা করেছেন।
দুটি
কারণে হাদীসটির সনদ দুর্বলঃ ।
১।
ফুযায়েল ইবনু মারযুক দুর্বল বর্ণনাকারী। একদল তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। আর
একদল তাকে নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন।
আবু
হাতিম বলেনঃ তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল। তিনি আরো বলেনঃ তার হাদীস দ্বারা দলীল
গ্রহণ করা যাবে না।
হাকিম
বলেনঃ তিনি সহীহার শর্তের মধ্যে পড়েন না। ইমাম মুসলিম তার সূত্রে হাদীস বর্ণনা
করার কারণে দোষী হয়েছেন। নাসাঈ বলেনঃ তিনি দুর্বল।
ইবনু
হিব্বান তার “আস-সিকাত” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি ভুল করতেন। তিনি
"আয-যুয়াফা" গ্রন্থে আরো বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের বিপক্ষে ভুল করতেন
এবং আতিয়া হতে জাল (বানোয়াট) হাদীস বর্ণনা করতেন।
লক্ষ্য
করুন তাকে আবু হাতিম ও নাসাঈর সাথে হাকিম এবং ইবনু হিব্বানও দুর্বল বলেছেন, অথচ
তারা দু'জন নির্ভরযোগ্য বলার ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
কাওসারী যে বলেছেনঃ শুধুমাত্র আবু হাতিমই তাকে দুর্বল বলেছেন। কথাটি যে সঠিক নয়
তার প্রমাণ মিলে গেছে।
তিনি
যে বলেছেন, দোষারোপটি ব্যাখ্যাকৃত নয়, সেটিও ঠিক নয়। কারণ আবূ হাতিম বলেনঃ তিনি
বহু ভুল করতেন। হাফিয ইবনু হাজার তার এ কথার উপর নির্ভর করেছেন।
এছাড়া
তিনি বলেছেন যে, বুস্তি তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। বুস্তি হচ্ছেন ইবনু হিব্বান।
তিনি কি বলেছেন আপনারা তা অবগত হয়েছেন।
২।
হাদীসটি দুর্বল হওয়ার আরো একটি কারণ হচ্ছে আতিয়া আল-আওফী নামক দুর্বল
বর্ণনাকারী। হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব" গ্রন্থে বলেনঃ তিনি সত্যবাদী, তবে
বহু ভুল করতেন। এছাড়া তিনি একজন শিয়া মতাবলম্বী মুদাল্লিস বর্ণনাকারী ছিলেন।
অতএব তাকে দোষ দেয়াটা ব্যাখ্যাকৃত দোষারোপ।
ইবনু
হিব্বান “আয-যুয়াফা" গ্রন্থে বলেনঃ তিনি আবু সাঈদ (রাঃ) হতে কতিপয় হাদীস
শুনেন। অতঃপর যখন আবু সাঈদ (রাঃ) মারা গেলেন, তখন তিনি কালবীর মজলিসে বসা শুরু
করলেন। যখন কালবী বলতেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন..., তখন তিনি
তা হেফয করে নিতেন। কালবীর কুনিয়াত ছিল আবূ সাঈদ। তিনি তার থেকে বর্ণনা করতেন।
তাকে যখন বলা হত এ হাদীসটি আপনাকে কে বর্ণনা করেছেন? তখন তিনি বলতেনঃ আমাকে
হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আবু সাঈদ। ফলে লোকেরা ধারণা করত যে, তিনি আবু সাঈদ খুদরী
(রাঃ)-কে বুঝাচ্ছেন, অথচ আসলে হবে কালবী। এ জন্য তার হাদীস লিপিবদ্ধ করাই হালাল
নয়। তবে আশ্চর্য হবার উদ্দেশ্যে লিখা যেতে পারে।
যাহাবীও
“আল-মীযান” গ্রন্থে তাকে দুর্বল বলেছেন। ইমাম তিরমিয়ী আতিয়ার হাদীসকে হাসান
বলেছেন। কিন্তু তার একথা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তিরমিযী এ ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শনকারী
হিসাবে পরিচিত। ইবনু দাহিয়া বলেনঃ তিনি বহু জাল এবং দুর্বল হাদীসের সনদকেও সহীহ
বা হাসান বলে উল্লেখ করেছেন। এ কারণে ইমাম যাহাবী বলেনঃ আলেমগণ ইমাম তিরমিযীর
বিশুদ্ধকরণের উপর নির্ভর করেননি।
আবুস
সিদ্দীক হাদীসটির মুতাবায়াত করেছেন। কিন্তু তার সনদে আব্দুল হাকিম ইবনু যাকওয়ান
রয়েছেন। তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ তাকে আমি চিনি না। ইবনু হিব্বান তাকে
নির্ভরযোগ্য বললেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। এর ব্যাখ্যা পূর্বেই দেয়া হয়েছে।
হাদীসটি
দুর্বল হওয়ার তৃতীয় কারণ হচ্ছে ইযতিরাব। একবার এসেছে মারফু’ হিসাবে আরেকবার
এসেছে মওকুফ হিসাবে। এছাড়া ইবনুস সুন্নী “আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ"
গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তার সনদে বর্ণনাকারী ওয়াযে রয়েছেন, তিনি বিলাল
হতে বর্ণনা করেছেন। এ ওয়াযে সম্পর্কে আবু হাতিম বলেনঃ তিনি নিতান্তই দুর্বল, তিনি
কিছুই না।
তিনি
তার ছেলেকে বলেনঃ তার হাদীসগুলো নিক্ষেপ কর, কারণ সেগুলো মুনকার।
হাকিম
বলেনঃ তিনি কতিপয় বানোয়াট হাদীস বর্ণনা করেছেন। অন্যরাও অনুরূপ বলেছেন।
মোটকথা
হাদীসটি উভয় সূত্রেই দুর্বল। একটি সূত্র অন্যটি হতে বেশী দুর্বল। বূসয়রী,
মুনযেরী ও অন্যান্য ইমামগণ হাদীসটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২৫ | 25 | ۲۵বাংলা
২৫।
আদম (আঃ) যখন গুনাহ করে ফেললেন, তিনি বললেনঃ হে আমার প্রভু! তোমার নিকট মুহাম্মদকে
সত্য জেনে প্রার্থনা করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আল্লাহ বললেনঃ হে আদম! তুমি
কিভাবে মুহাম্মদকে চিনলে, অথচ আমি তাকে সৃষ্টি করিনি? (আদম) বললেনঃ হে আমার প্রভু!
আপনি আমাকে যখন আপনার হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছিলেন এবং আমার মধ্যে আপনার আত্না থেকে
আত্নার প্রবেশ ঘটান, তখন আমি আমার মাথা উঁচু করেছিলাম। অতঃপর আমি আরশের
স্তম্ভগুলোতে (খুঁটি) লিখা দেখেছিলাম লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর
রাসুলুল্লাহ। আমি জেনেছি যে, আপনার কাছে সর্বাপেক্ষা ভালবাসার সৃষ্টি ব্যাতীত অন্য
কাউকে আপনি আপনার নামের সাথে সম্পৃক্ত করবেন না। সত্যই বলেছ হে আদম! নিশ্চয় তিনি
আমার নিকট সর্বাপেক্ষা ভালবাসার সৃষ্টি। তুমি তাঁকে হক জানার দ্বারা আমাকে ডাক।
আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব। মুহাম্মদ যদি না হতো আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।
হাদীসটি
জাল।
ইমাম
হাকিম “আল-মুসতাদরাক” গ্রন্থে (২/৬১০) এবং তার সূত্রে ইবনু আসাকির (২/৩২৩/২) ও
বাইহাকী “দালায়েলুন নবুওয়াহ" গ্রন্থে (৫/৪৮৮) রহমান ইবনু যায়েদ ইবনে আসলাম
হতে ... বর্ণনা করেছেন।
হাকিম
বলেনঃ হাদীসটির সনদ সহীহ। যাহাবী তার বিরোধিতা করে বলেছেনঃ বরং হাদীসটি বানোয়াট।
আব্দুর রহমান দুর্বল আর আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম আল-ফিহরী কে তা জানি না।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ ফিহরীকে “মীযানুল ইতিদাল” গ্রন্থে এ হাদীসটির কারণে উল্লেখ করা
হয়েছে। তিনি (যাহাবী) বলেছেনঃ হাদীসটি বাতিল।
বাইহাকী
বলেনঃ হাদীসটি আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ একক ভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি দুর্বল।
ইবনু
কাসীর তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে (২/৩২৩) তা সমর্থন করেছেন। আর হাফিয ইবনু হাজার
“আল-লিসান” গ্রন্থে যাহাবীর সাথে ঐকমত্য পোষণ করে বলেছেনঃ হাদীসটি বাতিল। আমি
(আলবানী) বলছিঃ ইবনু হিব্বান বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম ইবনে রাশীদ
সম্পর্কে বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করার দোষে দোষী। তিনি লাইস, মালেক এবং ইবনু
লাহিয়ার উপর হাদীস জাল করতেন। তার হাদীস লিখা হালাল নয়।
হাকিম
কর্তৃক এ হাদীসের বর্ণনা তার বিপক্ষেই গেছে। কারণ হাকিম সহীহ বললেও তিনি
“আল-মাদখাল ইলা মারিফাতিস সহীহে মিনাস সাকিমে” নামক গ্রন্থে বলেছেনঃ আব্দুর রহমান
ইবনু যায়েদ ইবনে আসলাম তার পিতা হতে কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। একই কথা আবু
নু’য়াইমও বলেছেন।
ইবনু
তাইমিয়া বলেছেনঃ এ আব্দুর রহমান ইবনু আসলাম দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে সকল
মুহাদ্দিসগণ একমত। ইবনুল জাওযী বলেনঃ আপনি যদি হাদীস শাস্ত্রের পণ্ডিতদের
কিতাবগুলো খুঁজেন, তাহলে তাকে কেউ দুর্বল বলেননি এরূপ পাবেন না। বরং তাকে আলী
ইবনুল মাদীনী এবং ইবনু সাদ অত্যন্ত দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
ইমাম
তাহাবী বলেনঃ তার হাদীসের বিদ্বানদের নিকটে চরম পর্যায়ের দুর্বল। ইবনু হিব্বান
বলেনঃ তিনি না জেনে হাদীসকে উলট পালট করে ফেলতেন। তিনি বহু মুরসাল বর্ণনা ও মওকুফ
সনদকে মারফু করে ফেলেছেন। এ জন্য তাকে পরিত্যাগ করাই হচ্ছে তার প্রাপ্য।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ সম্ভবত হাদীসটি ইসরাইলী বর্ণনা হতে এসেছে। ভুল করে আব্দুর রহমান
ইবনু যায়েদ মারফু করে ফেলেছেন। কারণ আলোচিত ফেহরী সূত্রেই হাদীসটি মওকুফ হিসাবে
বর্ণিত হয়েছে। আবূ বাকর আজুরী “আশ-শারীয়াহ" গ্রন্থে (পৃ. ৪২৭) তা উল্লেখ
করেছেন। এছাড়া আবূ মারওয়ান উসমানী সূত্রে উসমান ইবনু খালিদ হতে মওকুফ হিসাবে
বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু তারা দু’জনই দুর্বল। ইবনু আসাকিরও অনুরূপ ভাবে (২/৩১০/২)
মদিনাবাসী এক শাইখ হতে ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর সাথীদের থেকে বর্ণনা করেছেন। এটির সনদে
একাধিক মাজহুল বর্ণনাকারী রয়েছেন। মোটকথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হতে হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। হাদীসটিকে দু’ হাফিয যাহাবী ও আসকালানী বাতিল বলে
হুকুম লাগিয়েছেন। যেমনটি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
পরবর্তীতে
বর্ণিত ৪০৩ নং হাদীসটিও এ হাদীসটি বাতিল হওয়ার প্রমাণ বহন করে।*
*বিঃ
দ্রঃ (কাওসারী এ জাল হাদীসকে সাব্যস্ত করার জন্য বহু চেষ্টা করেছেন। তার কথার
বহুলাংশই স্ববিরোধীও বটে। এছাড়া তিনি তথ্যগত বহু ভুলও করেছেন। শাইখ আলবানী এ
“যঈফা” গ্রন্থেই বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এ পরিসরে তা বিষদভাবে উল্লেখ করা সম্ভব
হলো না। যার একান্তই প্রয়োজন মূল কিতাব দেখে নেয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি)।
(অনুবাদক)
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২৬ | 26 | ۲٦বা
২৬।
ধর্মীয় চেতনা আচ্ছাদিত করবে আমার উম্মাতের উত্তম উত্তম ব্যাক্তিগনকে।
হাদীসটি
দুর্বল।
হাদীসটি
তাবারানী (৩/১১৮/১,১/১২৩), ইবনু আদী (১/১৬৩) ও মুখাল্লেস “আল-ফাওয়াইদুল মুনতাকাত”
গ্রন্থে (৬/৪৪/২) সালামুত তাবীল সূত্রে ফযল ইবনু আতিয়া হতে ... বর্ণনা করেছেন।
বাগাবী
বলেনঃ হাদীসটি মুনকার। সালামুত তাবীল হাদীসের ক্ষেত্রে নিতান্তই দুর্বল
বর্ণনাকারী।
ইবনুল
জাওযী বলেনঃ সালামুত তাবীল মাতরূক অগ্রহণযোগ্য এবং ফযল ইবনু আতিয়াও তার ন্যায়।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ ফযল ইবনু আতিয়া যদিও দুর্বল তবুও তাকে হাদীস জাল করার মত দোষ
দেয়া যায় না। তবে সালামুত তাবীল তার বিপরীত। কারণ তাকে মিথ্যুক ও জালকারী হিসাবে
একাধিক ব্যক্তি দোষী করেছেন। হ্যাঁ তার একটি মুতাবায়াত পাওয়া যায় মুহাম্মাদ
ইবনু ফযল হতে, যেটি আবু নু’য়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/৬১) ও আল-খাতীব তার
“আত-তারীখ" গ্রন্থে (১৪/৭৩) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ মুহাম্মাদ ইবনুল ফযলও
মিথ্যুক। তার মুতাবায়াত দ্বারা খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারণ তাকে ইবনু মা'ঈন,
ফাল্লাস ও অন্যরা মিথ্যুক বলেছেন। [মুতাবাআতের অর্থ জানা জন্য ৫৭ পৃষ্ঠা দেখুন।]
তা
সত্ত্বেও হাদীসটি জাল এরূপ হুকুম লাগানো যাচ্ছে না। কারণ এর শাহেদ অন্য সনদে
মিলছে, যার অবস্থা এটির চেয়ে উত্তম। সেটি হাসান ইবনু সুফিয়ান তার “মুসনাদ”
গ্রন্থে, বিশর ইবনু মাতার তার “হাদীস” গ্রন্থে (৩/৮৯/১), ইবনু মান্দা “মারিফাতুস
সাহাবা” গ্রন্থে (২/২৬৪/২), আবূ নু’য়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/৭) ও
আল-খাতীব “আল-মুওয়াযিযহ” গ্রন্থে (২/৫০) দূরায়েদ ইবনু নাফি'র সূত্রে আবু মানসূর
আল ফারেসী হতে বর্ণনা করেছেন।
এ
সনদটিও দুর্বল। কারণ আবু মানসূর সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেনঃ তার হাদীস মুরসাল।
আলোচ্য হাদীসটি বিভিন্ন ভাষায় ও সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর কোনটিই
মিথ্যুক হতে খালী নয়। নিম্নে সেগুলোর তিনটি উল্লেখ করা হলোঃ (দেখুন পরেরগুলো)
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২৭ | 27 | ۲۷
২৭।
ধর্মীয় চেতনা আচ্ছাদিত করবে কুরআন বহনকারীদেরকে। তাঁদের পেটে কুরআনকে ইয্যত করার
উদ্দেশ্যে।
হাদীসটি
জাল।
হাদীসটি
ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (৭/২৫২৯) ওয়াহাব ইবনু ওয়াহাব সূত্রে নিজ সনদে
মুয়ায ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ وهب يضع الحديث ওয়াহাব
হাদীস জাল করতেন। উকায়লী (৪/৩২৫) বলেনঃ أحاديثه كلها بواطيل তার সকল হাদীস বাতিল।
সুয়ুতীও
ইবনু আদীর বর্ণনায় "জামেউস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। মানাবী
বলেনঃ তার সনদে ওয়াহাব ইবনু ওয়াহাব ইবনে কাসীর রয়েছেন। তার সম্পর্কে যাহাবী
“আল-মীযান” গ্রন্থে বলেন, ইবনু মাঈন বলেছেনঃ তিনি মিথ্যা বলতেন। ইমাম আহমাদ বলেনঃ
তিনি জাল করতেন। অতঃপর তার কতিপয় হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন (যেগুলোর শেষে এটিও
রয়েছে) এ হাদীসগুলো মিথ্যা।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২৮ | 28 | ۲۸
২৮।
ধর্মীয় চেতনা শুধুমাত্র আমার উম্মতের নেককার ও সৎকর্মশীলদের মধ্যেই হবে। অতঃপর তা
ফিরে যাবে।
হাদীসটি
জাল।
হাদীসটি
ইবনু বিশরান “আল-আমালী” গ্রন্থে (২৩/৬৯/২) বিশর ইবনু হুসাইন সূত্রে ... আনাস ইবনু
মালেক (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ বিশর মিথ্যুক। ইমাম সুয়ুতী দাইলামী কর্তৃক “মুসনাদুল ফিরদাউস”
গ্রন্থের বর্ণনা হতে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। যাহাবী বলেন, দারাকুতনী বলেছেনঃ তিনি
(বিশর) মাতরূক। আদীর প্রতি মিথ্যারোপ করতেন। ইবনু হিব্বান বলেনঃ বিশর ইবনু হুসাইন
জাল হাদীসের পাণ্ডলিপি হতে বর্ণনা করতেন। তাতে প্রায় একশত পঞ্চাশটি জাল হাদীস
ছিল। এটি সেগুলোরই একটি, যেমনটি যাহাবী তার জীবনীতে উল্লেখ করেছেন।
হাদীসটি
উকায়লীও “আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (১/১৪১) বিশর সূত্রেই উল্লেখ করেছেন। তিনি তার
আরো কিছু হাদীস উল্লেখ করে বলেছেনঃ সবগুলোই মুনকার।
মানাবী
বলেনঃ তায়ালিসীও তাকে মিথ্যুক বলেছেন।
আশ্চর্যজনক
ব্যাপার হচ্ছে এই যে, ইমাম সুয়ূতী মুয়ায এবং আনাস (রাঃ) এর হাদীস দুটি “যায়লুল
আহাদীছিল মাওযূ'আহ" গ্রন্থে (পৃঃ ২৪) উল্লেখ করা সত্ত্বেও “জামেউস সাগীর”
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। অথচ ভূমিকায় বলেছেন যে, তিনি এ গ্রন্থটিকে মিথ্যুক এবং
জাল বর্ণনাকারী হতে হেফাযাত করেছেন।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২৯ | 29 | ۲۹বাংলা
২৯।
আমার উম্মতের সর্বোত্তম ব্যাক্তিরা হচ্ছেন তাঁদের ধর্মীয় চেতনার অধিকারীগণ। যখন
তাঁরা রাগান্বিত হয় তখন তাঁরা (তা হতে) প্রত্যাবর্তন করে।
হাদীসটি
বাতিল।
হাদীসটি
উকায়লী “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে (পৃঃ ২১৭), তাম্মাম “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (২/২৪৯),
ইবনু শাযান “ফাওয়াইদু ইবনু কানে ওয়া গায়রিহি” গ্রন্থে (২/১৬৩) এবং সিলাফী
“আত-তায়ূরিয়াত” গ্রন্থে (২/১৪০) আব্দুল্লাহ ইবনু কুমবার সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
উকায়লী
বলেনঃ হাদীসটি সাব্যস্ত করতে আব্দুল্লার অনুসরণ করা যাবে না।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ আব্দুল্লাহ সম্পর্কে আযদী বলেনঃ تركوه (মুহাদ্দিসগণ) তাকে গ্রহণ করেননি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তার জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে যাহাবী এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি একটি বাতিল
হাদীস। আসকালানীও তা স্বীকার করেছেন।
তাবারানী
হাদীসটি “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। যার সনদে ইয়াগনাম ইবনু সালেম
ইবনে কুমবার রয়েছেন। তিনি মিথ্যুক, যেমনটি হায়সামী (৮/৬৮) ও সাখাবী (পৃঃ ১৮৭)
বলেছেন।
মোটকথা
ধর্মীয় চেতনা সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদীস জাল। একমাত্র দুরায়েদের হাদীসটি বাদে।
যেটি আবু মানসূর আল ফারেসী সূত্রে বর্ণিত হয়েছে (২৬)। সেটি শুধুমাত্র দুর্বল
মুরসাল হওয়ার কারণে।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৩০ | 30 | ۳۰
৩০।
আমার ও আমার উম্মাতের মাঝে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত কল্যাণ নিহিত।
হাদীসটির
কোন ভিত্তি নাই।
সাখাবী
“আল-মাকাসীদ” গ্রন্থে বলেছেনঃ আমাদের শাইখ ইবনু হাজার আসকালানী বলেছেনঃ হাদীসটি
আমি চিনি না।
ইবনু
হাজার হায়তামী আল-ফাকীহ “আল-ফাতাওয়াল হাদীসাহ” গ্রন্থে (১৩৪) বলেছেনঃ এ শব্দ
বর্ণিত হয়নি।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ কারণে সুয়ূতী “যাইলুল আহাদীছিল মাওযুআহ” গ্রন্থে (১২২০ নং)
উল্লেখ করেছেন।
হাদীসটি
হতে আমাদেরকে মুক্ত রাখে নিম্নের সহীহ হাদীস। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ "আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে..."।
হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩১ | 31 | ۳۱
৩১।
দুনিয়া হচ্ছে মু’মিন ব্যাক্তির এক পদক্ষেপ।
হাদীসটির
কোন ভিত্তি নাই।
হাদীসটি
সম্পর্কে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া “আল-ফাতাওয়া” গ্রন্থে (১/১৯৬) বলেনঃ এটি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে, এছাড়া উম্মাতের সালাফ (সাহাবী ও তাবেঈ)
এমনকি ইমামগণ হতেও জানা যায় না। হাদীসটি সুয়ূতী “যায়লুল আহাদীছিল মাওযুআহ”
গ্রন্থে (১১৮৭ নং) উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৩২ | 32 | ۳۲
৩২।
আখেরাতের অধিবাসীদের জন্য দুনিয়া হারাম এবং দুনিয়ার অধিবাসীদের জন্য আখেরাত হারাম।
দুনিয়া ও আখেরাতের উভয়টই হারাম আল্লাহর ওয়ালাদের জন্য।
হাদীসটি
জাল।
হাদীসটি
সে সব হাদীসের একটি যার দ্বারা সুয়ূতী তার “জামেউস সাগীর” গ্রন্থকে কালিমালিপ্ত
করে বলেছেন যে, দাইলামী “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা
করেছেন।
মানাবী
তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ এ হাদীসের সনদে জাবালাত ইবনু সুলায়মান নামে এক
বর্ণনাকারী রয়েছেন। যাহাবী তাকে “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর
বলেছেনঃ তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ সত্যিই যিনি এ হাদীস বর্ণনা করবেন তিনি নির্ভরযোগ্য হবেন না, বরং
তিনি হবেন অত্যন্ত নিকৃষ্ট মিথ্যুক। কারণ এ হাদীসটি বাতিল তাতে কোন বিবেকবান
মু'মিন সন্দেহ পোষণ করতে পারেন না। কীভাবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আখেরাতের
অধিবাসী মুমিনদের উপর দুনিয়াকে হারাম করেন। যার উত্তম উত্তম বস্তু দ্বারা উপকৃত
হওয়াকে তাদের জন্য স্বয়ং আল্লাহ হালাল করে দিয়েছেন তার (هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا)
তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদের জন্য যমীনের সব কিছুকে সৃষ্টি করেছেন" (সূরা
বাক্কারাহঃ ২৯) এ বাণী দ্বারা, তিনি আরো বলেছেনঃ
قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِ قُلْ هِيَ لِلَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“আপনি
বলে দিন আল্লাহর অলংকারাজী, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং
পানাহারের হালাল বস্তুগুলোকে কে হারাম করেছে। আপনি বলে দিন সে নেয়ামাতগুলো
মুমিনদের জন্যেই পার্থিব জীবনে এবং বিশেষ করে কিয়ামত দিবসে..." (সূরা আল
আরাফঃ ৩২)।
অতঃপর
কীভাবে বলা সম্ভব যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া ও আখেরাতকে
একসাথে হারাম করে দিয়েছেন আল্লাহ ভক্তদের উপর। অথচ আল্লাহ ভক্তরাই হচ্ছেন কুরআনের
ভক্ত। যারা তাকে প্রতিষ্ঠা করে এবং তাঁর নির্দেশাবলীর উপর আমল করে। আর আখেরাত হয়
জান্নাত নয়তোবা জাহান্নাম। আল্লাহ ভক্তদের উপর জাহান্নামকে আল্লাহ হারাম করে
দিয়েছেন। এ সংবাদ তিনি নিজেই দিয়েছেন, যেমনিভাবে তিনি মুমিনদের জন্য জান্নাতকে
ওয়াজিব করে দিয়েছেন। কীভাবে এ মিথ্যুক বলে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আখেরাতকে তাদের উপর হারাম করে দিয়েছেন? অথচ এ আখেরাতেই রয়েছে
জান্নাত, যা মুত্তাকীদের জন্য ওয়াদা করা হয়েছে।
আমার
ধারণা এ হাদীসটির জালকারী হচ্ছেন একজন মূৰ্খ সূফী। তিনি এ দ্বারা মুসলমানদের মাঝে
সূফী আকীদাহ ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন।
অতঃপর
আমি দাইলামীর “মুসনাদ” গ্রন্থে এটির সনদ সম্পর্কে (২/১৪৮) অবহিত হয়েছি। তাতে
(তিনজন) বর্ণনাকারী রয়েছেন, যাদেরকে আমি চিনি না। এ ছাড়াও এটি ইবনু যুরায়েজ হতে
আন আন্ শব্দে বর্ণিত হয়েছে। তিনি মুদাল্লিস বর্ণনাকারী। [মুদাল্লিস-এর অর্থ দেখুন
৫৭ নং পৃষ্ঠায়।]
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৩৩ | 33 | ۳۳
৩৩।
দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের সতীন।
নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এর কোন ভিত্তি নেই।
যেমনটি
“আল- কাশফ” সহ অন্যান্য গ্রন্থে বলা হয়েছে। অনুরূপভাবে ঈসা (আঃ)-এর বাণী হিসাবেও
বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৩৪ | 34 | ۳٤
৩৪।
দুনিয়া থেকে তোমরা বেঁচে চল, কারন তা হচ্ছে হারুত ও মারূতের চেয়েও অধিক যাদুকর।
হাদীসটি
মুনকার এর কোন ভিত্তি নেই।
“তীখরীজুল
ইহইয়া” গ্রন্থে (৩/১৭৭) ইরাকী বলেনঃ হাদীসটি ইবনু আবিদ দুনিয়া ও বাইহাকী
“শুয়াবুল ঈমান” গ্রন্থে আবুদ-দারদা আর-রাহাবীর বর্ণনা সূত্রে মুরসাল হিসাবে
বর্ণনা করেছেন। বাইহাকী বলেন, তাদের কেউ বলেছেনঃ আবুদ দারদা কোন একজন সাহাবী হতে
বর্ণনা করেছেন। যাহাবী বলেনঃ আবুদ-দারদা কে তা জানা যায় না। আরো বলেনঃ এটি
মুনকার, এর কোন ভিত্তি নেই।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে (৬/৩৭৫) তা
সমর্থন করেছেন।
যিনি
ধারণা করবেন যে, আবুদ-দারদা সাহাবী তিনি ভুল করবেন। সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” ও “দুররুল
মানসূর” গ্রন্থে (১/১০০) এমনটিই বুঝিয়েছেন বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি বলেছেনঃ
আবুদ-দারদা হতে। এ ক্ষেত্রে মানাবীও তার অনুসরণ করেছেন। মোটকথা হাদীসটির সমস্যা
হচ্ছে এ আবুদ-দারদাই, তিনি মাজহুল [অপরিচিত], তিনি সাহাবী নন।
হাদিসের
মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৩৫ | 35 | ۳۵
৩৫।
যে আযান দিবে সেই যেন ইকামত দেয়।
এ
শব্দে হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
বর্ণিত
হয়েছে এ ভাষায় من أذن فهو يقيم “যে আযান দিবে সেইকামাত দিবে” এ
ভাষাতেও হাদীসটি দুর্বল। (১/২৬৫,২৬৬) ও ইবনু আসাকির (৯/৪৬৬,৪৬৭) আবদুর রহমান ইবনু
যিয়াদ আল-ইফরীকী সূত্রে ...বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি এ আল-ইফরীকীর কারণে দুর্বল।
হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি মুখস্থ বিদ্যায় দুর্বল ছিলেন।
ইমাম তিরমিযীও তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়ে বলেছেনঃ
إنما نعرفه من حديث الإفريقى، وهو ضعيف عند أهل الحديث
এ
হাদীসটিকে ইফরীকী সূত্রেই চিনি, তিনি গণের নিকট দুর্বল।
হাদীসটিকে
বাগাবীও “শারহুস সুন্নাহ" গ্রন্থে (২/৩০২) দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম
নাবাবীও “আল-মাজমূ” গ্রন্থে (৩/১২১) তেমনটিই বলেছেন। বাইহাকী “সুনানুল কুবরা”
গ্রন্থে (১/৪০০) দুর্বল বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। হাদীসটি অন্য সূত্রেও ইবনু উমার
(রাঃ) হতে আবদু ইবনে হামীদ “আল-মুনতাখাব মিন মুসনাদিহি” গ্রন্থে (২/৮৮), আবু
উমাইয়্যাহ্ “আত-তারসূসী মুসনাদু ইবনে উমর” গ্রন্থে (১/২০২), ইবনু হিব্বান
“আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (১/৩২৪), বাইহাকী, তাবারানী (৩/২৭/২) ও উকায়লী
“আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (পৃঃ ১৫০) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ সূত্রেও হাদীসটি
দুর্বল।
হাদীসটিকে
বাইহাকীও দুর্বল আখ্যা দিয়ে বলেনঃ সাঈদ ইবনু রাশেদ এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা
করেছেন, তিনি দুর্বল।
হাফিয
ইবনু হাজারও “আত-তালখীস” (৩/১০) গ্রন্থে অনুরূপ কথা বলেছেন। তিনি বলেনঃ আবু হাতিম
আর-রায়ী ও ইবনু হিব্বান “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে এ হাদীসটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
ইবনু আবী হাতিম “ইলালুল হাদীস” গ্রন্থে (নং ৩২৬) তার পিতার উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ এ
হাদীসটি মুনকার, সাঈদ হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল। আরেকবার বলেছেনঃ তিনি মাতরূকুল
হাদীস।
ইবনু
আবী হাতিম হাদীসটি ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে (১/২৯৫) বর্ণনা করেছেন। যার সূত্রে
মুহাম্মাদ ইবনুল ফযল ইবনে আতিয়া রয়েছেন। তিনি মিথ্যার দোষে দোষী। ইবনু আদী বলেনঃ
নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণ তার অধিকাংশ হাদীসের মুতাবা'য়াত করেননি।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৩৬ | 36 | ۳٦
৩৬।
দেশকে ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ (দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ)।
হাদীসটি
জাল।
যেমনিভাবে
সাগানী (পৃঃ ৭) ও অন্যরা বলেছেন। এটির অর্থও সহীহ নয়। কারণ এ ভালবাসা নিজকে এবং
সম্পদকে ভালবাসার মতই প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যেই মূলগত ভাবে বিদ্যমান। শারীয়াতের
দৃষ্টিকোণ থেকে এ ভালবাসার প্রশংসা করা যায় না। এটি ঈমানের জন্য অপরিহার্যও নয়।
আপনারা কী দেখছেন না যে, এ ভালবাসায় মু'মিন এবং কাফিরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৩৭ | 37 | ۳۷
৩৭।
মানুষের মাঝে এমন এক যামানা আসবে যখন তাঁরা বাঘের ন্যায় হবে। অতঃপর যে ব্যাক্তি
বাঘ না হতে পারবে তাঁকে বাঘগুলো খেয়ে ফেলবে।
হাদীসটি
নিতান্তই দুর্বল।
ইবনুল
জাওযী তার “আল-মাওযু"আত” গ্রন্থে (৩/৮০) দারাকুতনীর সূত্রে উল্লেখ করেছেন। এ
সনদে যিয়াদ ইবনু আবী যিয়াদ আল-জাসসাস নামক এক বর্ণনাকারী আছেন।
দারাকুতনী
বলেনঃ যিয়াদ এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি মাতরূক [অগ্রহণযোগ্য]।
সুয়ূতী
তার “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/১৫২) বলেনঃ “আল-মীযান” গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, যিয়াদ
দুর্বল হওয়ার বিষয়ে সকলে একমত পোষণ করেছেন। ইবনু হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্যদের
অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বলেছেন যে, কখনও কখনও ক্রটি করতেন। তাবারানীও হাদীসটি
“মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ তাবারানীর বর্ণনায় হায়সামী “আল-মাজমা" গ্রন্থে (৭/২৮৭,
৮/৮৯) উল্লেখ করে হাদীসটি সম্পর্কে বলেছেনঃ এর সনদের মধ্যে এমন সব ব্যক্তি রয়েছেন
যাদে কে চিনি না।
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৩৮ | 38 | ۳۸
৩৮।
যে ব্যাক্তি চল্লিশ দিনকে নিছক আল্লাহর উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট করবে, তাঁর ভাষায়
বিচক্ষণতার ঝর্ণাধারা উদ্ভাসিত হবে।
হাদীসটি
দুর্বল।
হাদীসটি
আবু নু’য়াইম “আল-হিলইয়্যাহ” গ্রন্থে (৫/১৮৯) মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল সুত্রে আবূ
খালেদ ইয়াযীদ ওয়াসেতী হতে, তিনি হাজ্জাজ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এছাড়া
হুসাইন আল-মারওয়ায়ী “জাওয়ায়েদুয যুহুদ” গ্রন্থে (১/২০৪), ইবনু আবী শাইবাহ
“আল-মুসান্নাফ" গ্রন্থে (১৩/২৩১) ও হান্নাদ “আল-যুহুদ” গ্রন্থে (৬৭৮ নং)
উল্লেখ করেছেন। ইবনুল জাওযী হাদীসটি তার “মাওযূ"আত” গ্রন্থে (৩/১৪৪) আবু
নয়াইম সূত্রে উল্লেখ করে বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়। ইয়াযীদ ইবনু আবী ইয়াযীদ
আব্দুর রহমান ওয়াসেতী অধিক পরিমাণে ভুল করতেন, হাজ্জাজ ক্রটি যুক্ত ব্যক্তি,
মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল অপরিচিত এবং আবু আইউব (রাঃ) হতে মাকহুলের শ্রবণ সাব্যস্ত
হয়নি।
সুয়ূতী
“আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/১৭৬) তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ ইরাকী “তাখরীজুল ইহইয়া”
গ্রন্থে শুধুমাত্র দুর্বল বলেই ক্ষান্ত হয়েছেন। মাকহুল হতে মুরসাল হিসাবে তার
অন্য একটি সূত্র রয়েছে, যাতে মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাইল ও ইয়াযীদ নেই।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ সনদে বর্ণিত হাজ্জাজ হচ্ছেন ইবনু আরতাত-তিনি মুদাল্লিস, আন আন
শব্দে বর্ণনা করেছেন। তা সত্ত্বেও মুরসাল। হাদীসটিকে সাগানী “আহাদীসুল মাওযু আত”
গ্রন্থে (পৃ ৭) উল্লেখ করেছেন।
এ
হাদীসটির অন্য একটি সনদ পেয়েছি, সেটি কাযাঈ বর্ণনা করেছেন। তাতেও সেওয়ার ইবনু মুস'য়াব
নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন। তার সম্পর্কে নাসাঈ সহ প্রমুখ মহাদিসগণ বলেছেনঃ
তিনি মাতরূক। সুতরাং হাদীসটি দুর্বল।
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৩৯ | 39 | ۳۹
৩৯।
যে ব্যাক্তি আসরের পর ঘুমবে, তার জ্ঞান ছিনিয়ে নেয়া হবে। ফলে সে শুধুমাত্র নিজেকেই
দোষারোপ করবে।
হাদীসটি
দুর্বল।
হাদীসটি
ইবনু হিব্বান “আয-যুয়াফা ওয়াল মাতরূকীন" গ্রন্থে (১/২৮৩) খালিদ ইবনুল কাসেম
সূত্রে বর্ণনা করেছেন। ইবনুল জাওযী “মাওযু"আত” গ্রন্থে (৩/৬৯) হাদীসটি উল্লেখ
করে বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়। কারণ খালেদ মিথ্যুক। হাদীসটি মূলত ইবনু লাহীয়ার,
খালিদ তা ছিনিয়ে নিয়েছেন। অতঃপর তাকে লাইস-এর সূত্রে গেথে দিয়েছেন।
তৃতীয়
সূত্রে মারওয়ান হতে বর্ণনা করা হয়েছে। সেটি ইবনু আদী “আল কামিল গ্রন্থে (কাফ
২১১/১৯ ও সাহমী “তারীখু জুরজান' গ্রন্থে (৫৩) উল্লেখ করেছেন। মারওয়ান বলেনঃ আমি
লাইস ইবনু সা'দকে এমতাবস্থায় বললাম যে, তিনি রামাযান মাসে আসরের পরে ঘুমাচ্ছিলেনঃ
হে আবুল হারিস কী হয়েছে আপনার যে আপনি আসরের পরে ঘুমাচ্ছেন? অথচ আমাদেরকে ইবনু
লাহীয়া হাদীস শুনিয়েছেন ... । উত্তরে আবুল লাইস বললেনঃ আকীল হতে ইবনু লাহীয়ার
হাদীসের কারণে আমি এমন কিছু ছাড়ব না যা আমার উপকার করে!
(ইবনু
লাহীয়া মুখস্থ বিদ্যায় দুর্বল)।
বর্তমান
যুগের বহু মাশায়েখ আসরের পরে ঘুমাতে নিষেধ করে থাকেন যদিও তার প্রয়োজন হয়। তাকে
যদি বলা হয় এ মর্মে বর্ণিত হাদীসটি দুর্বল। তাহলে দ্রুত উত্তরে বলেনঃ ফাযায়েলে
আমল-এর ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যায়। ভেবে দেখুন পূর্ববতীদের
চিন্তা-চেতনা আর পরবর্তীদের জ্ঞানের মধ্যে কত বড় পার্থক্য? লাইস ছিলেন মুসলমানদের
ইমাম এবং প্রসিদ্ধ এক ফাকীহ। তার কথা প্রমান বহন করছে তার চিন্তাচেতনা ও জ্ঞানের
গভীরতার, অথচ পরবর্তীগণ কী বলেন?
হাদীসটি
আবু ইয়ালা ও আবু নয়াইম “আত-তিব্ববুন্নাবাবী" গ্রন্থে (২/১২) আমর ইবনু
হুসাইন সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এ আমরকে খাতীব বাগদাদীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ
মিথ্যুক বলেছেন। এ আমরই নিম্নের ডালের হাদীস বর্ণনাকারীঃ (দেখুন পরেরটি)
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৪০ | 40 | ٤۰
৪০।
তোমরা কদু (লাউ) অপরিহার্য করে নাও। কারন তা অনুভূতি (জ্ঞান) বৃদ্ধি করে। তোমরা
ডালকে অপরিহার্য করে নাও, কারন তার পবিত্রতা বর্ণিত হয়েছে সত্তর জন নাবীর ভাষায়।
হাদীসটি
জাল।
হাদীসটি
তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (২২/৬২ নং১৫২) আমর ইবনুল হুসাইন সূত্রে ইবনু আলাসা
হতে বর্ণনা করেছেন।
সুয়ূতী
“আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/১৫১) বলেছেনঃ আমর ও তার শাইখ তারা দু’জনই মাতরূক।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ তা সত্ত্বেও সুয়ূতী হাদীসটি "জামেউস সাগীর" গ্রন্থে
উল্লেখ করেছেন।
যারাকশী
"আল-লাআলিল মানসূরা ফিল আহাদীসল মশহুরাহ" (১৪৩ নং) গ্রন্থে বলেনঃ ইবনুস
সালাহ-র হাতের লিখায় পেয়েছি যে, এটি একটি বাতিল হাদীস। হাদীসটি ইবনুল জাওযী
“মাওযুআত” গ্রন্থে (২/২৯৪,২৯৫) কয়েকটি সূত্রে উল্লেখ করেছেন এবং বানোয়াট হিসাবে
হুকুম লাগিয়েছেন।
সাগানী
“আহাদীসুল মাওয়ূ"আহ” গ্রন্থে (পৃঃ ৯) ও ইবনুল কাইয়্যিম আলজাওযিয়া “আল-মানার”
গ্রন্থে (পৃঃ ২০) উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি সাদৃশ্যপূর্ণ সেই সব জালকারীদের সাথে
যারা মান্না ওয়াস সালওয়ার উপর এটিকে পছন্দ করেছেন।
আলী
আল-কারী তার “মাওযুআত” গ্রন্থে (পৃঃ ১০৭) এটিকে বানোয়াট হিসাবেই স্বীকার করেছেন।
ইবনু তাইমিয়্যা “মাজমূউ ফাতাওয়া” গ্রন্থে বলেছেনঃ জ্ঞানীজনদের ঐক্যমতে মিথ্যা ও
বানোয়াট।
এ
মিথ্যুক আমরের আরো একটি হাদীস। (দেখুন পরেরটি)
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪১ | 41 | ٤۱
৪১।
যে ব্যাক্তি হারাম পন্থায় (অন্যকে বিপদ্গ্রস্থ করে) সম্পদ অর্জন করল, আল্লাহ তাঁকে
নরকে নিয়ে যাবেন।
হাদীসটি
সহীহ নয়।
হাদীসটি
কাযাঈ “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে (কাফ ২/৩৭) ও রামহুরমুযী “আল-আমসাল" গ্রন্থে
(পৃঃ ১৬০) আমর ইবনুল হুসাঈন সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি সাকেত [নিক্ষেপযোগ্য]। এ আমর ইবনুল হুসাঈন মিথ্যুক। পূর্বে
তার সম্পর্কে বহুবার আলোচনা করা হয়েছে। সাখাবী “আল-মাকাসিদ” গ্রন্থে (নং ১০৬১)
বলেছেনঃ আমর মাতরূক। আর আবূ সালমা হচ্ছেন সুলায়মান ইবনু সালাম। তিনি ইয়াহইয়া
ইবনু জাবের-এর কাতিব [লেখক], তিনি সাহাবী নন।
এছাড়া
আবু সালমা আল-হিমসী সম্পর্কে মানাবী বলেনঃ তিনি একজন মাজহুল [অপরিচিত] তাবেঈ।
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৪২ | 42 | ٤۲
৪২।
নাবীগণ হচ্ছেন নেতা, ফাকীহগন হচ্ছেন সর্দার আর তাদের মজলিসগুলো হচ্ছে অতিরিক্ত।
হাদীসটি
বানোয়াট।
হাদীসটি
দারাকুতনী তার “সুনান” গ্রন্থে (পৃঃ ৩২২) এবং কাযাঈ “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে
(১/২৩) ... হারিস ইবনু আবদিল্লাহ হামদানী আল-আওয়ার সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। এ
সনদটি নিতান্তই দুর্বল। হারিসকে জমহুর ওলামা দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইবনুল মাদীনী
বলেনঃ “كذاب” তিনি মিথ্যুক। শু'বা বলেনঃ আবু ইসহাক তার থেকে মাত্র চারটি
হাদীস শ্রবণ করেছেন।
“আল-কাশফ”
গ্রন্থে এসেছে (১/২০৫), ‘আলী আল-কারী বলেনঃ এটি বানোয়াট হাদীস। অনুরূপ কথা
“খুলাসা" গ্রন্থেও এসেছে।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ৪৩ | 43 | ٤۳
৪৩।
আসমান ও যমীনের মাঝে রমাযান মাস ঝুলন্ত থাকে। তাঁকে যাকাতুল ফিতর প্রদান না করা
পর্যন্ত আল্লাহর নিকটে উঠিয়ে নেয়া হয় না।
হাদীসটি
দুর্বল।
হাদীসটি
“জামেউস সাগীর” গ্রন্থে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে ইবনু শাহীন তার “আত-তারগীব”
গ্রন্থে এবং যিয়া জারীর হতে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তাকে দুর্বল হিসাবে চিহ্নিত
করেছেন। মানাবী তার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছেনঃ হাদীসটি ইবনুল জাওযী
“আল-ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেনঃ সহীহ নয়। সনদে মুহাম্মাদ ইবনু
ওবায়েদ আল-বাসরী নামক বর্ণনাকারী আছেন, তিনি মাজহুল।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ “ইলালুল মুতানাহিয়া” গ্রন্থে (৮২৪) ইবনুল জাওযীর পূর্ণাঙ্গ কথা
হচ্ছেঃ لا يتابع عليه তার অনুসরণ করা যায় না। হাফিয ইবনু হাজার তার
কথাকে সমর্থন করেছেন।
আনাস
(রাঃ)-এর হাদীস হতে আল-খাতীব (৯/১২১) বর্ণনা করেছেন, তার থেকে ইবনুল জাওযী
“আল-ইলাল” গ্রন্থে (৮২৩) এবং ইবনু আসাকির (১২/২৩৯/২) বাকিয়া ইবনুল ওয়ালিদ সূত্রে
আব্দুর রহমান ইবনু উসমান ইবনে উমার হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ আব্দুর রহমানকে আমি চিনি না। বাহ্যিক ব্যাপার এই যে, তিনি
বাকিয়ার মাজহুল শাইখদের একজন। ইবনুল জাওযী ধারণা করেছেন যে, তিনি হচ্ছেন বাকরাবী।
যার সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেনঃ লোকেরা তার হাদীসকে গ্রহণ করেনি।
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৪৪ | 44 | ٤٤
৪৪।
যে ব্যাক্তি মল-মুত্র ত্যাগ করল, অতঃপর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করল না সে আমার সাথে
কর্কশ আচরণ করল। যে ব্যাক্তি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করল, অতঃপর সালাত (নামায/নামাজ)
আদায় করল না সে আমার সাথে কর্কশ আচরণ করল। যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) আদায়
করল, অতঃপর আমাকে ডাকলো না, সে আমার সাথে কর্কশ আচরণ করল। যে ব্যাক্তি আমাকে ডাকলো
আর আমি তার ডাকে সারা দিলাম না তার সাথে আমি রুঢ় আচরণ করলাম। অথচ আমি রুঢ় আচরণকারী
প্রতিপালক নই।
হাদীসটি
জাল।
সাগানী
(পৃঃ ৬) ও অন্যরা এ কথাই বলেছেন।
হাদীসটি
বানোয়াট হওয়ার প্রমাণ এই যে, মল-মূত্র ত্যাগ করার পর ওযু করা এবং ওযূর পরে সালাত
আদায় করা মুস্তাহাব কাজের অন্তর্ভুক্ত অথচ হাদিসটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এ দু’টাে
ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত فقد جفاني 'আমার
সাথে কর্কশ আচরণ করল' এ কথার কারণে। অথচ এটি কোন অজানা কথা নয় যে, এসব কর্ম
মুসতাহাবের অন্তর্ভুক্ত।
নিম্নের
হাদীসটি উপরের হাদীসের ন্যায়। (দেখুন পরেরটি)
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৪৫ | 45 | ٤۵
৪৫।
যে ব্যাক্তি বায়তুল্লাহ যিয়ারত করল, অথচ আমাকে যিয়ারত করল না, সে আমার ব্যাপারে
রুঢ় আচরণ করল।
হাদীসটি
জাল।
হাফিয
যাহাবী “আল-মীযান” (৩/২৩৭) গ্রন্থে এ কথাই বলেছেন। সাগানী “আল-আহাদীসুল মাওযুআত”
গ্রন্থে (পৃঃ ৬), অনুরূপ ভাবে যারাকশী ও শওকানী “আল-ফাওয়ায়েদুল মাজমূয়াহ ফিল আহাদীসিল
মাওযুআত” গ্রন্থে (পৃঃ ৪২) হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। এর সমস্যা হচ্ছে মুহাম্মাদ ইবনু
মুহাম্মাদ ইবনে নুমান।
ইবনু
আদী (৭/২৪৮০) ও ইবনু হিব্বান “আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (৩/৭৩) হাদীসটি বর্ণনা
করেছেন। তার সূত্রে ইবনুল জাওযী “মাওযু"আত” গ্রন্থে (২/২১৭) উল্লেখ করেছেন।
তারা উভয়ে (ইবনু আদী ও ইবনু হিব্বান) বলেছেনঃ মুহাম্মাদ নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে
বড় সমস্যা (মিথ্যা) বহন করে আনতেন এবং দৃঢ়চেতাদের উদ্ধৃতিতে উল্টা পাল্টা হাদীস
বর্ণনা করতেন।
দারাকুতনী
বলেনঃ এ হাদীসটির সনদের মধ্যে দোষনীয় ব্যক্তি হচ্ছেন মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ
ইবনে নুমান।
এছাড়া
হাদীসটি বানোয়াট হওয়ার প্রমাণ এটিও যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
ব্যাপারে রুঢ় আচরণ করা যদি কুফরী নাও হয়, তবুও তা বড় গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এর
ফলে যে তাঁকে যিয়ারত করা ছেড়ে দিবে, সে বড় গুনাহে লিপ্ত হল। এমনটি হলে হাদীসটি
যিয়ারত করাকে হজ্জের ন্যায় অপরিহার্য করে। অথচ যিয়ারত করা ওয়াজিব এমন কথা কোন
মুসলিম ব্যক্তি বলেননি। যিয়ারত করা যদি নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যমও হয় তবুও তা
আলেমদের নিকট মুসতাহাবের গণ্ডি হতে আর বেশী কিছু হবে না। অতএব কীভাবে তাঁর যিয়ারত
পরিত্যাগকারী তাঁর সাথে রুঢ় আরচণকারী হয় এবং কীভাবে তাঁর থেকে বিমুখ হয়?
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৪৬ | 46 | ٤٦
৪৬।
যে ব্যাক্তি আমাকে ও আমার পিতা ইবরাহীমকে একই বছরে যিয়ারত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ
করবে।
হাদীসটি
জাল।
যারাকশী
“আল-লাআলিল মানসূরা” গ্রন্থে (১৫৬ নং) বলেনঃ কোন কোন হাফিয বলেছেনঃ হাদীসটি
বানোয়াট। হাদীস সম্পর্কে কোন জ্ঞানী ব্যক্তি এটিকে হাদীস বলে বর্ণনা করেননি।
অনুরূপভাবে ইমাম নাবাবী বলেনঃ এটি বানোয়াট, এর কোন ভিত্তি নেই। সুয়ূতী এটিকে
“যায়লুল আহাদীছিল মাওযুআহ” গ্রন্থে (নং ১১৯) উল্লেখ করার পর বলেছেনঃ ইবনু
তাইমিয়া ও নাবাবী বলেছেনঃ হাদীসটি জাল, ও ভিত্তিহীন। শাওকানীও “আল-ফাওয়াইদ”
গ্রন্থে (পৃঃ ৪২) তা সমর্থন করেছেন।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৪৭ | 47 | ٤۷
৪৭।
যে ব্যাক্তি হাজ্জ (হজ্জ) করবে, অতঃপর আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করবে, সে
যেন ঐ ব্যাক্তির ন্যায় যে জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছে।
হাদীসটি
জাল।
হাদীসটি
তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/২০৩/২) এবং “আওসাত" গ্রন্থে (১/১২৬/২),
ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে, দারাকুতনী তার “সুনান” গ্রন্থে (পৃ ২৭৯), বাইহাকী
(৫/২৪৬) ও সিলাফী “আস-সানী আশার মিনাল মাশীখাতিল বাগদাদীয়াহ" গ্রন্থে (২/৫৪)
বর্ণনা করেছেন। তারা প্রত্যেকেই হাফস ইবনু সুলায়মান আবী উমার সূত্রে লাইস ইবনু
আবী সুলাইম হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ দুটি কারণে হাদীসটির সনদ নিতান্তই দুর্বলঃ
১।
লাইস ইবনু সুলাইম-এর মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল, যেমনটি বলা হয়েছে ২ নং হাদীসের
আলোচনায়।
২।
হাফস ইবনু সুলায়মান হচ্ছেন আল-কারী, তাকে আল-গাযেরী বলা হয়। তিনি নিতান্তই
দুর্বল, যেমনটি ইঙ্গিত দিয়েছেন হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব" গ্রন্থে
নিম্নোক্ত কথার দ্বারাঃ
متروك الحديث তিনি
হাদীসের ক্ষেত্রে মাতরূক [অগ্রহণযোগ্য]।
কারণ
তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ كان كذابا তিনি
ছিলেন মিথ্যুক; যেমনটি ইবনু আদীর “আল-কামিল” গ্রন্থে এসেছে।
ইবনু
খাররাশ বলেন كذاب يضع الحديث তিনি মিথ্যুক, হাদিস জাল করতেন ।
এ
হাদীসের সনদের সমর্থন সূচক আরো কিছু সনদ দ্বারা হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।* যেগুলো
এটিকে শক্তিশালী করে না। কারণ দুর্বলের দিক থেকে সেগুলোর অবস্থা এটির সনদ চেয়ে কম
নয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর যিয়ারতের ব্যাপারে আরো হাদীস
এসেছে, যেগুলো সুবকী “আল-শেফা” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। সেগুলোর সবই দুর্বলের
অন্তর্ভুক্ত, যার একটি অপরটির চেয়ে বেশী দুর্বল।
ইবনু
তাইমিয়া “আল-কায়েদাতুল জলীলা" গ্রন্থে (পৃঃ ৫৭) বলেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর যিয়ারতের ব্যাপারে যে সব হাদীস এসেছে সবই দুর্বল।
দ্বীনি বিষয়ে সেগুলোর কোনটির উপরেই নির্ভর করা যায় না। সে কারণেই সহীহ গ্রন্থ
এবং “সুনান” গ্রন্থের লেখকগণ এ সংক্রান্ত কোন হাদীস তাদের গ্রন্থগুলোতে বর্ণনা
করেননি। সেগুলো বর্ণনা করেছেন তারাই যারা দুর্বল হাদীস বর্ণনা করে থাকেন। যেমন
দারাকুতনী, বাযযার ও আরো অনেকে।
অতঃপর
তিনি এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন যে, এ হাদীসের মিথ্যাবদিতা সুস্পষ্ট, এটি
মুসলমানদের ধর্ম বিরোধী। কারণ যে ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
জীবিত থাকাকালীন মুমিন অবস্থায় তাঁকে যিয়ারত করেছে, সে সাহাবীগণের দলভুক্ত,
যাদের ফযীলত বর্ণনা করে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কোন ব্যক্তি সাহাবীগণের পরে যে কোন
আমলের দ্বারা, যদিও সেটি ওয়াজিব এর পর্যায়ভুক্ত হয় যেমন হজ্জ, জিহাদ, পাঁচ
ওয়াক্ত সলাত ও তাঁর উপর দুরূদ পাঠ করা তবুও সাহাবগণের সমকক্ষ হতে পারবে না। অতএব
কীভাবে তাদের সমকক্ষ হবে এমন একটি আমলের দ্বারা যেটি (তাঁর কবর যিয়ারত) সকল
মুসলিমের ঐক্যমতে ওয়াজিব নয়। বরং তাঁর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাই
শারীয়াত সম্মত নয়। বরং সেটি নিষিদ্ধ। তবে কেউ যদি তাঁর মসজিদে সলাত
কায়েমের উদ্দেশ্যে সফর করে তাহলে তা মুস্তাহাব এবং সে সাথে কবর যিয়ারতও করতে
পারবে।
সতর্কবাণীঃ
বহু লোক মনে করেন যে, ইবনু তাইমিয়া এবং সালাফীদের মধ্য থেকে যারা তার নীতির
অনুসরণ করেছেন শুধুমাত্র তারাই বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কবর যিয়ারত করা নিষেধ। এটি মিথ্যা ও অপবাদ মাত্র। যাদের ইবনু তাইমিয়্যার
(কিতাবের) গ্ৰন্থরাজী সম্পর্কে জ্ঞান আছে, তারা জানেন যে, ইবনু তাইমিয়া নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর যিয়ারতকে শারীয়াত সম্মত এবং মুস্তাহাব
বলেছেন। যদি তার সাথে কোন প্রকার শারীয়াত বিরোধী কর্মকাণ্ড এবং বিদ’আত জড়িত না
হয় তাহলেই। যেমন যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বাহন প্রস্তুত করা বা শুধু তাঁর কবর
যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা।
রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাপক ভিত্তিক নিম্নোক্ত হাদীসের কারণেঃ لا تشد الرحل إلا إلى ثلاثة مساجد তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন স্থানের উদ্দেশ্যে বাহন
প্রস্তত কর না। তিনটি মসজিদ ছাড়া শুধুমাত্র অন্য মসজিদগুলোতে যাওয়াকেই বাতিল করা
হয়নি, যেমনটি বহুলোকে ধারণা করে থাকেন বরং আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে যে কোন
স্থানে যাওয়াকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চাই সেটি মসজিদ বা কবর বা অন্য কোন স্থান
হোক না কেন। এর দলীল আবু হুরাইরাহ (রাঃ)-এর হাদীসঃ
বুসরা
ইবনু আবূ বুসরা বলেনঃ আমি তুর পাহাড় হতে ফিরে এসে আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর সাথে
মিলিত হলাম। আমাকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কোথা হতে আসলে? আমি বললামঃ তুর হতে। অতঃপর
তিনি বললেনঃ আমি যদি তোমাকে তুরের দিকে বের হওয়ার পূর্বে পেতাম তাহলে তুমি বের
হতে না। কারণ আমি রসূলকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আরোহী
প্রস্তুত কর না তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন স্থানের উদ্দেশ্যে বাহন তৈরি করো না। (আল
হাদীস)। হাদীসটি ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
দেখুন "আহকামুল জানায়েয" (পৃঃ ২২৬)।
*[যেমনঃ
তাবারানী তার “আল-আওসাত” গ্রন্থে (১/১২৬/২) আহমাদ ইবনু রাশদীন সূত্রে ‘আলী ইবনুল
হাসান ইবনে হারুন আনসারী হতে হাফস ইবনু সুলায়মানের মুতাবায়াত হিসাবে বর্ণনা
করেছেন। কিন্তু এ আহমাদ ইবনু রাশদীন সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তাকে মুহাদ্দিসগণ
মিথ্যুক বলেছেন এবং তার উপর বহু কিছু ইনকার করা হয়েছে। যাহাবী তার কতিপয় বাতিল
হাদীস উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও একাধিক মাজহুল বর্ণনাকারীর সমাবেশ ঘটেছে]
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৪৮ | 48 | ٤۸
৪৮।
সন্তান তার পিতার উত্তম ভূমি।
হাদীসটি
কোন ভিত্তি নেই।
ইমাম
সাখাবী “মাকাসিদুল হাসানাত” গ্রন্থে (পৃঃ ৭০৬) এ কথা বলেছেন। ইমাম সুয়ূতীও তার
“আদ-দুরার” গ্রন্থে (পৃঃ ১৭০) যারাকশীর (আত-তাজকিরাহ পৃঃ ২১১) গ্রন্থের অনুসরণ করে
এরূপই বলেছেন। সাগানী "আল আহাদীসুল মাওজুআহ" গ্রন্থে (পৃষ্ঠাঃ ৪) এ
হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। এটির অর্থের প্রয়োগও সহীহ্ নয়। কারণ নাবীগণের মধ্যে এমন
আছেন যার পিতা ছিলেন মুশরিক, নাফারমান। যেমন- ইব্রাহীম (আঃ)-এর পিতা আযর । তাদের
মধ্যে এমনও আছেন যার সন্তান ছিলেন মুশরিক। যেমন- নূহ (আঃ)-এর পুত্র।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৪৯ | 49 | ٤۹
৪৯।
যে ব্যাক্তি তার পিতা-মাতা উভয়ের কবর অথবা যে কোন একজনের কবর প্রত্যেক জুম’আর
দিবসে যিয়ারত করবে, তাঁকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং তাঁকে সৎকর্মশীলদের তালিকায়
লিপিবদ্ধ করা হবে।
হাদীসটি
জাল।
তাবারানী
হাদীসটি “মু'জামুস সাগীর” গ্রন্থে (পৃ. ১৯৯) এবং “মু'জামুল কাবীর” গ্রন্থে
(১/৮৪/১) উল্লেখ করেছেন। তার থেকে ইস্পাহানী “আত-তারগীব” গ্রন্থে (২/২২৮)
মুহাম্মাদ ইবনু নু'মান সূত্রে ইয়াহইয়া ইবনু 'আলা বাজালী হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি
আবদুল করীম আবী উমাইয়াহ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি বানোয়াট। এ মুহাম্মাদ ইবনু নুমান সম্পর্কে যাহাবী
“আল-মীযান” গ্রন্থে এবং তার অনুসরণ করে “আল-লিসান” গ্রন্থে ইবনু হাজার
বলেছেনঃ مجهول، قاله العقيلي، ويحيى متروك
উকায়লী
বলেনঃ তিনি মজহুল এবং ইয়াহইয়া হচ্ছেন মাতরূক অগ্রহণযোগ্য।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ ইয়াহইয়ার দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত। তাকে ওয়াকী
মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। অনুরূপ ভাবে ইমাম আহমাদ বলেছেনঃ كذاب يضع الحديث তিনি
মিথ্যুক, হাদীস জালকারী।
ইবনু
আদী বলেনঃ তার বর্ণনাগুলোতে দুর্বলতা সুস্পষ্ট এবং তার হাদীসগুলো বানোয়াট।
তার
শাইখ আব্দুল করীম আবু উমাইয়াহ ইবনু আবিল মুখারিকও দুর্বল। তবে তাকে মিথ্যার দোষে
দোষী করা যায় না। এ কারণে শুধুমাত্র তার (আব্দুল করীম) কথা উল্লেখ করে হাদীসটি
দুর্বল হওয়ার কারণ বর্ণনা করে হাফিয হায়সামী সঠিক কাজটি করেননি।
তিনি
বলেছেনঃ (৩/৬০) তাবারানী হাদীসটি “মু'জামুস সাগীর" এবং “মু'জামূল কাবীর”
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাতে আব্দুল করীম আবু উমাইয়াহ নামক একজন বর্ণনাকারী আছেন,
তিনি দুর্বল।
ইমাম
সুয়ুতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/২৩৪) বলেছেনঃ عبد الكريم ضعيف، ويحيى بن العلاء ومحمد بن النعمان مجهولان (আবদুল
করীম দুর্বল, ইয়াহইয়া ইবনুল আলা এবং মুহাম্মাদ ইবনু নুমান দু’জনই মাজহুল)।
শুধুমাত্র এভাবে কারণ দর্শিয়ে ঠিক করেননি। কারণ ইয়াহইয়া ইবনুল আলা মাজহুল নন
বরং তিনি পরিচিত, তবে মিথ্যুক হিসাবে। এছাড়াও হাদীসটির সনদে ইযতিরাব সংঘটিত
হয়েছে। এর কারণও বর্ণনা করা হয়েছে।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৫০ | 50 | ۵۰
৫০।
যে ব্যাক্তি তার পিতা-মাতা উভয়ের কবর প্রত্যেক জুম’আর দিবসে যিয়ারত করবে। অতঃপর
তাদের উভয়ের নিকট অথবা পিতার কবরের নিকট সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে, প্রত্যেক আয়াত অথবা
অক্ষরের সংখ্যার বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।
হাদীসটি
জাল।
হাদীসটি
ইবনু আদী (১/২৮৬), আবূ নু’য়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/৩৪৪-৩৪৫) ও আব্দুল
গনী আল-মাকদেসী “সুনান” গ্রন্থে (২/৯১) ... আমর ইবনু যিয়াদ সূত্রে ...বর্ণনা
করেছেন।
কোন
মুহাদ্দিস (আমার ধারণা তিনি হচ্ছেন ইবনু মুহিব কিংবা যাহাবী) “সুনানুল মাকদেসী”
গ্রন্থের হাশিয়াতে (টীকাতে) লিখেছেন, هذا حديث غير ثابت এ হাদীসটি সাব্যস্ত হয়নি।
ইবনু
আদী বলেনঃ হাদীসটি বাতিল। এ সনদে এটির কোন ভিত্তি নেই। আমর ইবনু যিয়াদ (তিনি
হচ্ছেন আবুল হাসান আস-সাওবানী)-এর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে তার অন্যান্য হাদীসের
সাথে এ হাদীসটির ব্যাপারে উল্লেখিত মন্তব্যটি করেন। সে সব হাদীসের একটি সম্পর্কে
বলেনঃ موضوع জাল (বানোয়াট)।
অতঃপর
বলেনঃ আমর ইবনু যিয়াদ-এর এ হাদীসটি ছাড়া আরো হাদীস রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু
আছে নির্ভরযোগ্যদের থেকে চুরি করা এবং কিছু আছে বানোয়াট। তাকে সেগুলো জালকারী
হিসাবে দোষী করা হয়েছে। দারাকুতনী বলেনঃ يضع الحديث তিনি হাদীস জাল করতেন।
এ
কারণে ইবনুল জাওযী হাদীসটিকে তার “আল-মাওযু আত” গ্রন্থে (৩/ ২৩৯) ইবনু আদীর সূত্রে
উল্লেখ করেছেন। তিনি ঠিকই করেছেন। অথচ সুয়ূতী তার সমালোচনা করে “আল-লাআলী”
গ্রন্থে (২/৪৪০) বলেছেনঃ হাদীসটির সমর্থনে শাহেদ আছে। অতঃপর তিনি এ হাদীসটিতে
পূর্বের হাদীসের সনদটিই উল্লেখ করেছেন। যেটি সম্পর্কে আপনি জেনেছেন যে, সেটিও জাল
হাদীস। যদিও বলা হয়েছে সেটি শুধু দুর্বল। তা সত্ত্বেও সেটিকে এ হাদীসের শাহেদ
হিসাবে ধরা যেতে পারে না। কারণ এটির সাথে সেটির ভাষার মিল নেই। আর জাল হাদীসের
শাহেদ হিসাবে জাল হাদীস উল্লেখ করাতে কোন উপকারীতাও নেই। [শাহেদ অর্থ জানতে দেখুনঃ
৫৬ নং পৃষ্ঠা]
উল্লেখ্য
কবরের নিকট কুরআন পাঠ করা মুস্তাহাব এ মর্মে সহীহ সুন্নাহ হতে কোন প্রমাণ মিলে না।
বরং সহীহ সুন্নাহ প্রমাণ করে যে, কবর যিয়ারতের সময় মৃত্যু ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে
শুধুমাত্র সালাম প্রদান করা এবং আখেরাতকে স্বরণ করাই হচ্ছে শারীয়াত সম্মত। সালাফে
সালেহীনের আমল এর উপরেই হয়ে আসছে। অতএব কবরের নিকট কুরআন পাঠ করা ঘৃণিত বিদ'আত।
যেমনটি স্পষ্ট ভাবে পূর্ববর্তী একদল ওলামা বলেছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আবু
হানীফা, ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য ইমামগণ, কারণ এ মর্মে কোন হাদীস বর্ণিত
হয়নি।
ইবনু
উমার (রাঃ) হতে দাফনের সময় সূরা বাকারার প্রথম এবং শেষ অংশ পাঠের যে কথা বলা
হয়েছে তা সহীহ সনদে প্রমাণিত হয়নি। যদি ধরেইনি সহীহ তাহলে তা শুধুমাত্র দাফনের
সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট [কিন্তু ধরে নিয়ে কি সহিহ বানানো সঠিক]।
অতএব
আমাদেরকে সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরতে হবে আর বিদ’আত হতে সতর্ক হয়ে তা হতে বেঁচে চলতে
হবে। যদিও লোকেরা বিদ'আতকে ভাল কাজ হিসাবে দেখে। কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল বিদ'আতই পথভ্রষ্টতা।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস
নম্বরঃ ৫১ | 51 | ۵۱
৫১।
বহু সন্তানের পিতা দরিদ্র সৎ মু’মিন বান্দাকে আল্লাহ ভালোবাসেন।
হাদীসটি
দুর্বল।
হাদীসটি
ইবনু মাজাহ (২/৫২৯) এবং উকায়লী “আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (পৃঃ ৩৬১) হাম্মাদ ইবনু
ঈসার সূত্রে মূসা ইবনু ওবায়দাহ হতে, তিনি কাসিম ইবনু মিহরান হতে ... বর্ণনা
করেছেন। উকায়লী কাসেম-এর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ
لا يثبت سماعه من عمران بن حصين، رواه عنه موسى بن عبيدة وهو متروك
কাসেম
কর্তৃক ইমরান ইবনু হুসাইন হতে শ্রবণ সাব্যস্ত হয়নি এবং তার থেকে হাদীসটি
বর্ণনাকারী মূসা ইবনু ওবায়দাহ মাতরূক।’
বূসয়রী
“আয-যাওয়াইদ" গ্রন্থে (২/২৫৩) উকায়লীর এ কথাকে সমর্থন করে বলেছেনঃ এ সনদটি
দুর্বল।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ উকায়লীর কথা হতে হাদীসটি দুর্বল হওয়ার দুটি কারণ স্পষ্ট হয়েছে।
কারণ দুটি হচ্ছে সনদে বিচ্ছিন্নতা এবং ইবনু ওবায়দার দুর্বলতা। এটির তৃতীয় কারণ
হচ্ছে কাসেম ইবনু মিহরানের মাজহুল হওয়া। হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে
তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি মাজহুল [অপরিচিত)।
চতুর্থ
কারণ হাম্মাদ ইবনু ঈসা ওয়াসেতী সম্পর্কে হাফিয বলেনঃ তিনি দুর্বল। এ কারণে হাফিয
ইরাকী বলেনঃ হাদীসটির সনদ দুর্বল, যেমনভাবে মানাবী উল্লেখ করেছেন। হাদীসটিকে
সাখাবীও “আল-মাকাসিদ” গ্রন্থে (২৪৬) দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির আরেকটি সূত্র পেয়েছি। কিন্তু সেটির দ্বারা শুধু এটির
দুর্বলতাই বৃদ্ধি পায়। কারণ এটি মুহাম্মাদ ইবনু ফযল-এর সূত্রে যায়েদ ইবনু 'আমী
মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন হতে বর্ণনা করেছেন। এটি ইবনু আদী (১/২৯৫) ও আবু নু’য়াইম
(২/২৮২) উল্লেখ করেছেন। এটি দুর্বল হওয়ার পিছনে তিনটি কারণঃ
১।
মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন ও ইমরান ইবনু হুসাইনের মধ্যে সনদে বিচ্ছিন্নতা। কারণ তিনি
ইমরান হতে শুনেননি, যেমনটি দারাকুতনী বলেছেন।
২।
যায়েদ আল-'আমী, তিনি হচ্ছেন ইবনুল হাওয়ারী, তিনি দুর্বল।
৩।
মুহাম্মাদ ইবনু ফযল; তিনি একজন মিথ্যুক, যেমনভাবে ফাল্লাস ও আরো অনেকে বলেছেন।
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৫২ | 52 | ۵۲
৫২।
তোমাদের কারোর উপর যখন তার পশুটি বোঝা স্বরূপ হয়ে যাবে অথবা তার স্ত্রীর চরিত্র
অথবা তার পরিবারের যে কোন একজনের চরিত্র মন্দ হয়ে যাবে, তখন সে যেন তার কানে আযান
দেয়।
হাদীসটি
দুর্বল।
হাদীসটি
গাযালী দৃঢ়তার সাথে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা বলে “ইয়াহইয়াউল
উলুমিদ-দ্বীন" গ্রন্থে (২/১৯৫) উল্লেখ করেছেন। তার তাখরীজকারী হাফিয ইরাকী
বলেনঃ হাদীসটি আবু মানসূর আদ-দাইলামী “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে হুসাইন ইবনু ‘আলী
ইবনে আবী তালিব (রাঃ) হতে দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে (৩/৫৫৮) হাদীসটির ভাষা নিম্নরূপঃ
من ساء خلقه من إنسان أو دابة، فأذنوا في أذنيه
মানুষ
অথবা পশুর মধ্য হতে যার চরিত্র খারাপ হয়ে যাবে তোমরা তার কান দু'টোতে আযান দিবে।’
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৫৩ | 53 | ۵۳
৫৩।
তোমরা বৃদ্ধদের ধর্মকে আঁকড়ে ধর।
হাদীসটির
কোন ভিত্তি নেই।
সাখাবী
“আল-মাকাসিদ” গ্রন্থে এরূপই বলেছেন। সাগানী “আল-আহাদীসুল মাওযুআত” গ্রন্থে (পৃঃ ৭)
হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। অথচ ইমাম গাযালী মারফু হিসাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন!
তার
তাখরীজকারী হাফিয ইরাকী বলেনঃ ইবনু তাহের “কিতাবুত তাযকিরাহ” গ্রন্থে (৫১১) বলেনঃ
সাধারণ লোকদের মাঝে হাদীসটি পরিচিত, অথচ সহীহ বা দুর্বল বর্ণনাতেও এটির কোন ভিত্তি
সম্পর্কে অবহিত হতে পারিনি।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৫৪ | 54 | ۵٤
৫৪।
যখন কেউ শেষ যামানায় এসে যাবে এবং মতামতগুলো বিভিন্নরুপ হয়ে যাবে, তখন তোমরা
মফস্বলবাসী ও নারীদের ধর্মকে ধারন করবে।
হাদীসটি
জাল।
ইবনু
তাহের বলেনঃ এটির সনদে ইবনুল বাইলামানী রয়েছেন। তিনি তার পিতা হতে, তার পিতা ইবনু
উমার (রাঃ) হতে এমন এক কপি বর্ণনা করেছেন, যেটিকে জাল করার দোষে তাকে দোষী করা
হয়েছে।
হাফিয
ইরাকী বলেনঃ এ সূত্রেই ইবনুল বাইলামানীর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে ইবনু হিব্বান
হাদীসটি “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ ইবনু হিব্বান-এর সূত্রে ইবনুল জাওযী “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (১/২৭১)
হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। হাদীসটির অন্য সমস্যা হচ্ছে ইবনু আব্দির রহমান বাইলামানী
হতে বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনুল হারিস হারেসী; তিনি দুর্বল। ইবনু আদী (২/২৯৭)
হাদীসটি ইবনু আবদির রহমান বাইলামানী হতে বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনুল হারিস
আল-হারেসীর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ وعامة ما يرويه غير محفوظ তার বর্ণনাকৃত অধিকাংশ হাদীস মাহফুয নয় (নিরাপদ নয়)।
ইবনুল
জাওযী বলেনঃ হাদীসটি সহীহ্ নয়। মুহাম্মাদ ইবনুল হারিস কিছুই না এবং তার শাইখ
ইবনুল বাইলামানী তার ন্যায়। তিনি তার পিতা হতে জাল কপির মাধ্যমে হাদীসটি বর্ণনা
করেছেন। এটিকে উমার ইবনু আবদিল আযীয-এর ভাষ্য হিসাবে জানা যায়।
সুয়ূতী
“আল-লাআলিল মাসনূ'য়াহ" গ্রন্থে তার এ কথাকে সমর্থন করে বলেছেনঃ মুহাম্মাদ
ইবনু হারিস সুনান ইবনু মাজাহর বর্ণনাকারীদের একজন। “আল-মীযান” গ্রন্থে বলা হয়েছে
এ হাদীসটি তার অদ্ভুত বর্ণনাগুলোর একটি।
ইবনু
হারিস সম্পর্কে কিছু আলোচনা না করে এখানে ইবনুল বাইলামানীর সম্পর্কে বলাই উত্তম।
কারণ সকলেই তার দুর্বল হওয়ার বিষয়ে একমত। আর কেউ কেউ ইবনু হারিসকে নির্ভরযোগ্যও
বলেছেন। অতএব এ হাদীসের সমস্যা হচ্ছে-ইবনুল বাইলামানী। যার সম্পর্কে সাখাবীও
“আল-মাকাসিদ” গ্রন্থে ইবনু তাহেরের ভাষ্যের ন্যায় বলেছেন।
শাইখ
আলী আল-কারী বলেনঃ حديث موضوع হাদীসটি
বানোয়াট। তা সত্ত্বেও হাদীসটি সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৫৫ | 55 | ۵۵
৫৫।
দ্রুত চলা মু’মিনের উজ্জলতাকে বিতাড়িত করে দেয়।
হাদীসটি
নিতান্তই মুনকার।
হাদীসটি
আবু হুরাইরা, ইবনু উমার, আনাস ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে।
প্রথমতঃ
আবু হুরাইরা (রঃ)-এর হাদীস; এটি
তিনটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছেঃ
প্রথম
সূত্রঃ হাদীসটি
আবু সাঈদ আল-মালীনী "আল-আরবাউন ফি শুয়ুখিস সুফিয়া” গ্রন্থে (৫/১), আবু
নু’য়াইম "হিলইয়াহ" গ্রন্থে (১০/২৯০), আল-খাতীব “তারীখু বাগদাদ”
গ্রন্থে (১/৪১৭) এবং তার সূত্রে ইবনুল জাওযী “আল ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে (১১৭৮)
উল্লেখ করেছেন। যাহাবী মুহাম্মাদ ইবনুল আসমাঈর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ
হাদীসটি নিতান্তই মুনকার। অতঃপর তিনি হাদীসটির সনদ উল্লেখ করে বলেনঃ এটি সহীহ নয়।
হাফিয ইবনু হাজারও “আল-লিসান” গ্রন্থে তার (যাহাবীর) কথাকে সমর্থন করেছেন।[ মুনকার
অর্থ জানার জন্য দেখুন (৫৬) পৃষ্ঠা]।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ প্রথম সূত্রটি দুর্বল হওয়ার কারণ তিনটিঃ
১।
এতে মুহাম্মাদ ইবনু আসমাঈ নামক একজন বর্ণনাকরী রয়েছেন। তিনি মাজহুল [অপরিচিত]।
২। ইবনু আসমাঈ হতে বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াকুব আল-ফারাজীর জীবনী পাচ্ছি না।
৩। আবু মাশার যার নাম নাজীহ ইবনু আবদির রহমান সিন্দী, সবার ঐক্যমতে তিনি দুর্বল। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ তাকে নিতান্তই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। অনুরূপভাবে ইমাম বুখারীও বলেছেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস।
২। ইবনু আসমাঈ হতে বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াকুব আল-ফারাজীর জীবনী পাচ্ছি না।
৩। আবু মাশার যার নাম নাজীহ ইবনু আবদির রহমান সিন্দী, সবার ঐক্যমতে তিনি দুর্বল। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ তাকে নিতান্তই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। অনুরূপভাবে ইমাম বুখারীও বলেছেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস।
দ্বিতীয়
সূত্রঃ ইবনু
আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (৫/৭২), তার থেকে ইবনুল জাওযী “আল-ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে
(২/২১৯) আব্দুল্লাহ ইবনু সালেম সূত্রে আম্মার ইবনু মাতার রাহাবী হতে বর্ণনা করে
ইবনুল জাওযী বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়। এ সূত্রের বর্ণনাকারী আম্মার ইবনু মাতার
রাহাবী সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেনঃ তিনি মিথ্যা বলতেন। ইবনু আদী বলেনঃ তার
হাদীসগুলো বাতিল। দারাকুতনী বলেনঃ তিনি দুর্বল।
তৃতীয়
সূত্রঃ ইবনু
আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (৫/৭২) এবং তার থেকে ইবনুল জাওযী আবূ শিহাব আব্দুল কুদ্দুস
সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। তার সম্পর্কে যাহাবী বলেনঃ له أكاذيب وضعها তার
বহু মিথ্যা [হাদীস] রয়েছে যেগুলো তিনি জাল করেছেন।
হাফিয
ইবনু হাজার “আল-লিসান” গ্রন্থে এটিকে মুনকার হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
এ
তিনটি সুত্রের প্রথমটি উত্তম তা সত্ত্বেও সেটি দুর্বল বহুবিধ কারণে।
দ্বিতীয়তঃ
ইবনু উমার (রাঃ)-এর হাদীস;
এটি
আব্বাস দাওরী “তারীখু ইবনু মা'ঈন” গ্রন্থে (কাফ ২/৪১), ইবনু আদী (৫/১৩, ৭/৭৭),
আল-খাতীব “আল-জামে” গ্রন্থে (৫/৯১/২), ওয়াহেদী "ওয়াসীত" গ্রন্থে
(৩/১৯৪/১০), সালাবী “তাফসীর” গ্রন্থে (৩/৭৮/২) ও ইবনুল জাওযী “আল-ওয়াহিয়াত”
গ্রন্থে (১১৭৭) বর্ণনা করেছেন।
এর
সনদে ওয়ালীদ ইবনু সালামা (জর্ডানের কাজী) এবং উমার ইবনু সহবান নামক দু’জন
বর্ণনাকারী রয়েছেন।
এ
উমার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণ এ উমারের হাদীসগুলোর
অনুসরণ করেননি। তার অধিকাংশ হাদীস মুনকার।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ তিনি খুবই দুর্বল। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল
হাদীস।
দারাকুতনী
বলেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস। তার থেকে বর্ণনাকারী ওয়ালীদ ইবনু সালামা তার চাইতেও
মন্দ। তার সম্পর্কে একাধিক ব্যক্তি বলেছেনঃ তিনি বড়ই মিথ্যুক। ইবনু হিব্বান
বলেনঃ يضع الحديث على الثقات তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে
হাদীস জাল করতেন।
তৃতীয়তঃ
আনাস (রাঃ) এর হাদিস;
হাদিসটি
ইবনু বিশারন আল আমালী গ্রন্থে (২৩/৬৯/২) ও আল-খাতীব “আল-জামে” গ্রন্থে (২/২২/১)
মুহাম্মাদ ইবনু ইউনুস সূত্রে ইউসুফ ইবনু কামেল হতে, তিনি আব্দুস সালাম ইবনু
সুলায়মান আযদী হতে, তিনি আবান হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এ
সনদটি বাতিল। এ সনদে উল্লেখিত কোন ব্যক্তিই নির্ভরযোগ্য নয়।
আবান
সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস।
শু'বা
বলেনঃ لأن يزني الرجل خير من أن يروي عن أبان আবানের নিকট হতে হাদীস বর্ণনা করার চেয়ে কোন ব্যক্তির
যেনা করাটা বেশী উত্তম (অর্থাৎ জাল হাদীস বর্ণনা করা যেনার চেয়েও জঘন্য)। এ
কথাটিই প্রমাণ করে যে তিনি মিথ্যুক হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন।
আব্দুস
সালাম ইবনু সুলায়মান আল-আযদী মাজহুলুল হাল (তার অবস্থা অজ্ঞাত)।
তিনি
একজন শামী বর্ণনাকারী। অথচ এ সনদটি শামী নয়। অতএব তিনি এ হাদীসের বর্ণনাকারী নন
এটিই সুস্পষ্ট।
ইউসুফ
ইবনু কামিল আল-আত্তার; তার সম্পর্কে ভাল মন্দ কিছুই বলা হয়নি। অর্থাৎ তিনি মাজহুল
(অপরিচিত)। মু
হাম্মাদ
ইবনু ইউনুস; তিনি হচ্ছেন কুদাইমী। তার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ قد اتهم بالوضع তাকে
(হাদীস) জাল করার দোষে দোষী করা হয়েছে।
ইবনু
হিব্বান বলেনঃ সম্ভবত তিনি হাজারাধিক হাদীস জাল করেছেন।
আবু
দাউদ, মূসা ইবনু হারুন এবং কাসিম ইবনু মুতাররীয তাকে মিথ্যুক বলেছেন।
দারাকুতনী
বলেনঃ তাকে হাদীস জাল করার ব্যাপারে দোষারোপ করা হয়েছে।
চতুর্থতঃ
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস;
সুয়ূতী
তার “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি ইবনু নাজ্জারের উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু তার সনদটি পাইনি। আমার বেশীর ভাগ ধারণা এটিও অন্যান্যটির ন্যায় দুর্বল ।
এক
কথায় এ হাদীসটি সম্পর্কে বর্ণিত সকল সনদ নিতান্তই দুর্বল। এ জন্য একটি সনদ
অপরটিকে শক্তিশালী করে না।
শাইখ
‘আলী আল-কারী “শারহুশ শামায়েল” গ্রন্থে (১/৫২) এটিকে যুহরীর বাণী বলে উল্লেখ
করেছেন।
এটি
যে হাদীস নয় তার জন্য এ কথাই যথেষ্ট যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
চলার সময় দ্রুত চলতেন। (দেখুন তিরমিযীর “মুখতাসারুশ শামায়েল” (পৃঃ ৭১ ও ২০),
ইমাম বুখারীর “আদাবুল মুফরাদ” (১১৯), তাবাকাতু ইবনু সা'দ (১/৩৭৯-৩৮০) এবং “মাজমাউয
যাওয়াইদ” (৮/২৭৩,২৮১)। এটি সহীহ্ সনদে বর্ণিত হয়েছে। উমারও (রাঃ) দ্রুত চলতেন।
দেখুন “তাবাকাতু ইবনে সা'দ” (১/৩৭৯-৩৮০)।
হাদিসের
মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৫৬ | 56 | ۵٦
৫৬।
যদি নারী জাতি না থাকত, তাহলে সত্যই সত্য আল্লাহর ইবাদত করা হত।
হাদীসটি
জাল।
এটি
দু'টি সূত্রে বর্ণিত হয়েছেঃ
প্রথম
সূত্রটিতে বর্ণনাকারী আব্দুর রহীম ইবনু যায়েদ আল-আমী রয়েছেন। তিনি তার পিতা
যায়েদ হতে ... বর্ণনা করেছেন। ইবনু আদী হাদীসটি (কাফ ১/৩১২) উল্লেখ করে বলেছেনঃ
হাদীসটি মুনকার। এ সূত্র ছাড়া অন্য কোন সূত্রে হাদীসটিকে চিনি না। নির্ভরযোগ্য
বর্ণনাকারীগণ আব্দুর রহীম ইবনু যায়েদ আল-আমীর কোন হাদিসকে সমর্থন করেননি।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ ইমাম বুখারী তার সম্পর্কে বলেনঃ تركوه মুহাদ্দিসগণ তাকে গ্রহণ করেননি।
ইবনু
মাঈন বলেনঃ তিনি একজন মিথ্যুক, খবীস। আবূ হাতিম বলেনঃ তার হাদীস ছেড়ে দেয়া উচিৎ।
তিনি মুনকারুল হাদিস। তিনি তার পিতাকে দোষী করতেন। তার থেকে তিনি মহা বিপদ বর্ণনা
করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ তার পিতা যায়েদ দুর্বল। ইবনুল জাওযী হাদীসটি তার “আল-মাওযুআত”
গ্রন্থে (২/২৫৫) ইবনু আদীর সূত্রে বর্ণনা করে বলেছেনঃ এর কোন ভিত্তি নেই। আব্দুর
রহীম ও তার পিতা উভয়েই মাতরূক।
সুয়ূতী
ইবনুল জাওযীর সমালোচনা করে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/১৫৯) বলেছেনঃ এটির শাহেদ রয়েছে,
কিন্তু তার এ সমালোচনা যথার্থ নয়। কারণ এর শাহেদ হিসাবে যে হাদীসটি উপস্থাপন করা
হচ্ছে সেটি আলোচ্য হাদীসটির চেয়ে উত্তম নয়। হাদীসটি নিম্নরূপঃ
لولا النساء دخل الرجال الجنة
"নারীরা
যদি না থাকত, তাহলে পুরুষরা জান্নাতে প্রবেশ করত।"
কারণ
এটির সনদে বিশর ইবনু হুসাইন নামক একজন বর্ণনাকারী আছেন। তিনি মাতরূক, মিথ্যা
বলতেন।
মুসনাদুল
ফিরদাউস” গ্রন্থে হাদীসটির ভাষা এভাবে এসেছে, لولا النساء لعبد الله حق عبادته যদি নারী জাতি না থাকত তাহলে
যথাযথ আল্লাহর ইবাদাত করা হতো। সুয়ূতী বিশর সম্পর্কে বলতে গিয়ে শুধুমাত্র
বলেছেনঃ তিনি মাতরূক। এ জন্য তার সমালোচনা করে ইবনু ইরাক “তানযীহুশ শারীয়াহ"
গ্রন্থে (২/২০৪) বলেছেনঃ بل كذاب وضاع فلا يصلح حديثه شاهدا বরং তিনি মিথ্যুক, জালকারী, তার
হাদীস অন্য হাদীসের সমর্থনে শাহেদ হবার যোগ্য নয়।’
এ
বিশর সম্পর্কে ২৮ নং হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৫৭ | 57 | ۵۷
৫৭।
আমার উম্মাতের মতাভেদ রহমত স্বরূপ।
হাদীসটির
কোন ভিত্তি নেই।
মুহাদ্দিসগণ
হাদীসটির সনদ বের করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। শেষে সুয়ূতী “জামেউস সাগীর”
গ্রন্থে বলেছেনঃ সম্ভবত কোন হুফফায-এর গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু
তা আমাদের নিকট পৌছেনি! আমার নিকট এটি অসম্ভবমূলক কথা, কারণ এ কথা এটাই সাব্যস্ত
করে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু হাদীস উম্মাতের মধ্য হতে
বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কোন মুসলিম ব্যক্তির এরূপ বিশ্বাস রাখা যুক্তিসঙ্গত নয়।
মানাবী
সুবকীর উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ এ হাদিসটি মুহাদ্দিসগণের নিকট পরিচিত নয়। এটির কোন সহিহ,
দুর্বল এমনকি জাল সনদ সম্পর্কেও অবহিত হতে পারিনি।
শাইখ
জাকারিয়া আল-আনসারী “তাফসীরে বায়যাবী" গ্রন্থের টীকাতে (কাফ ২/৯২) মানাবীর
কথাটি সমর্থন করেছেন। এছাড়া এ হাদীসের অর্থও বিচক্ষণ আলেমগণের নিকট অপছন্দনীয়।
ইবনু হাযম “আল-ইহকাম ফি উসূলিল আহকাম” গ্রন্থে (৫/৬৪) এটি কোন হাদীস নয় এ ইঙ্গিত দেয়ার
পর বলেনঃ এটি অত্যন্ত নিকৃষ্ট কথা। কারণ যদি মতভেদ রহমত স্বরূপ হত, তাহলে মতৈক্য
অপছন্দনীয় হত। এটি এমন একটি কথা যা কোন মুসলিম ব্যক্তি বলেন না।
তিনি
অন্য এক স্থানে বলেনঃ باطل مكذوب এটি
বাতিল, মিথ্যারোপ।
এ
বানোয়াট হাদীসের কুপ্রভাবে বহু মুসলমান চার মাযহাবের কঠিন মতভেদগুলোকে স্বীকৃতি
দিয়ে থাকেন। কখনো কিতাবুল্লাহ ও সহীহ হাদীসের দিকে প্রত্যাবর্তন করার চেষ্টা করেন
না। অথচ সে দিকে তাদের ইমামগণ প্রত্যাবর্তন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বরং তাদের
নিকট এ চার মাযহাব যেন একাধিক শরীয়াতের ন্যায়। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ولوكان من عند غير الله لوجدوا فيه اختلافا كثيرا অর্থঃ
“যদি (এ কুরআন) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট হতে আসত, তাহলে তারা তাতে বহু মতভেদ
পেত।” [সূরা নিসা ৮২]
আয়াতটি
স্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছে যে, মতভেদ আল্লাহ তা'আলার নিকট হতে নয়। অতএব কীভাবে এ
মতভেদকে অনুসরণীয় শারীয়াত বানিয়ে নেয়া সঠিক হয়? আর কীভাবেই তা নাযিলকৃত রহমত
হতে পারে?
মোটকথা
শারীয়াতের মধ্যে মতভেদ নিন্দনীয়। ওয়াজিব হচ্ছে যতদূর সম্ভব তা থেকে মুক্ত
হওয়া। কারণ এটি হচ্ছে উম্মাতের দুর্বলতার কারণসমূহের একটি। যেমনিভাবে আল্লাহ্
তা'আলা বলেছনঃ ولا تنازعوا فتفشلوا وتذهب ريحكم অর্থঃ “এবং তোমরা আপোসে বিবাদ করো না, কারণ তোমরা দুর্বল
হয়ে পড়বে আর তোমাদের শক্তি বিনষ্ট হয়ে যাবে" (আনফালঃ ৪৬)।
অতএব
মতভেদে সন্তুষ্ট থাকা এবং রহমত হিসাবে তার নামকরণ করা সম্পূর্ণ আয়াত বিরোধী কথা,
যার অর্থ খুবই স্পষ্ট। অপরপক্ষে মতভেদের সমর্থনে সনদ বিহীন (রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে যার কোন ভিত্তি নেই) এ জাল হাদীস ছাড়া আর কোন প্রমাণ নেই।
এখানে
একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, সাহাবীগণ মতভেদ করেছেন, অথচ তারা লোকদের মধ্যে
সর্বোত্তম। তাদেরকে কি উল্লেখিত এ নিন্দা সম্পৃক্ত করে না।
ইবনু
হাযম তার উত্তরে বলেনঃ কক্ষনও নয়। তাদেরকে এ নিন্দা সম্পৃক্ত করবে না। কারণ তাদের
প্রত্যেকেই আল্লাহর পথ এবং হকের পক্ষকে গ্রহণ করার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। তাদের মধ্য
হতে যে ব্যক্তি ভুল করেছেন তিনি তাতেও সওয়াবের অধিকারী এবং একটি সওয়াব পাবেন।
সুন্দর নিয়্যাত এবং উত্তম ইচ্ছা থাকার কারণে। তাদের উপর হতে তাদের ভুলের গুনাহ
উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। কারণ তারা তা করেননি আর সত্যকে জানার গবেষণার ক্ষেত্রে তারা
অলসতাও করেননি। ফলে তাদের মধ্যে যিনি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছতে সক্ষম হয়েছেন,
তিনি দুটি সওয়াবের অধিকারী। এমন ধারা প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির সমাধান লুকায়িত,
যা আমাদের নিকট এখনও পৌঁছেনি।
উল্লেখিত
নিন্দা ও ভীতি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যে আল্লাহর রজ্জ্বর সম্পর্ককে (কুরআনকে)
এবং নাবীর হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করে, তার নিকট স্পষ্টভাবে দলীল পৌছা ও প্রতীয়মান
হওয়ার পরেও। বরং কুরআন ও সুন্নাহকে পরিত্যাগ করার মানসে অন্য ব্যক্তির সাথে সে
সম্পর্ক স্থাপন করেছে ইচ্ছাকৃতভাবে মতভেদের অন্ধ অনুসরণ করে, গোড়ামী ও অজ্ঞতার
দিকে আহবানকারী হিসাবে। সে এমন এক পর্যায়ে পৌছেছে যে, তার দাবীর সমর্থনে কুরআন ও
হাদীসের যে কথাটি মিলে সেটি গ্রহণ করে আর যেটি তার বিপরীতে যায় সেটি পরিত্যাগ
করে। এরাই হচ্ছে নিন্দনীয় মতভেদকারী।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৫৮ | 58 | ۵۸
৫৮।
আমার সাহাবীগণ নক্ষত্রের ন্যায়, তোমরা তাদের যে কোন একজনের অনুসরণ করলে সঠিক
পথপ্রাপ্ত হবে।
হাদীসটি
জাল।
হাদীসটি
ইবনু আদিল বার “জামেউল ইলম” (২/৯১) ও ইবনু হাযম “আল-ইহকাম” (৬/৮২) গ্রন্থে সালাম
ইবনু সুলাইম সূত্রে হারিস ইবনু গোসাইন হতে, তিনি আমাশ হতে, তিনি আবূ সুফিইয়ান হতে
... বর্ণনা করেছেন।
ইবনু
আদিল বার বলেনঃ
هذا إسناد لا تقوم به حجة لأن الحارث بن غصين مجهول
“এ
সনদটি দ্বারা দলীল সাব্যস্ত হয় না, কারণ এ সনদের বর্ণনাকারী হারিস ইবনু গোসাইন
মাজহুল।
ইবনু
হাযম বলেনঃ এ বর্ণনাটি নিম্ন পর্যায়ের। তাতে আবূ সুফিইয়ান রয়েছেন, তিনি দুর্বল
আর হারিস ইবনু গোসাইন হচ্ছেন মাজহুল। আর সালাম ইবনু সুলাইম কতিপয় জাল হাদীস
বর্ণনা করেছেন। এটি নিঃসন্দেহে সেগুলোর একটি।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ সালাম ইবনু সুলাইমকে বলা হয় ইবনু সুলায়মান আত-তাবীল, তার
দুর্বলতার ব্যাপারে সকলে একমত। এমনকি তার সম্পর্কে ইবনু খাররাশ বলেনঃ তিনি
মিথ্যুক।
ইবনু
হিব্বান বলেনঃ روى أحاديث موضوعة তিনি কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হারিস
মাজহুল হলেও আবূ সুফিইয়ান দুর্বল নয় যেমনভাবে ইবনু হাযম বলেছেন। তিনি বরং
সত্যবাদী যেরূপ ইবনু হাজার "আত-তাকরীব" গ্রন্থে বলেছেন। ইমাম আহমাদ
বলেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়, যেমনভাবে ইবনু কুদামার “আল-মুনতাখাব” গ্রন্থে (১০/১৯৯/২)
এসেছে।
তবে
হাদীসটি জাল হওয়ার জন্য সালামই যথেষ্ট।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৫৯ | 59 | ۵۹
৫৯।
যখনই তোমরা কিতাবুল্লাহ হতে কিছু প্রাপ্ত হবে তখনই তার উপর আমল করবে। তা ছেড়ে দিতে
তোমাদের কারো ওজর চলবে না। যদি কিতাবুল্লাতে (সমাধান) না থাকে। তাহলে আমার নিকট
হতে (সমাধান হিসাবে) প্রাপ্ত অতীত সুন্নাহকে গ্রহণ করতে হবে। যদি আমার পক্ষ হতে
অতীত কোন সুন্নাতে সমাধান না মিলে, তাহলে আমার সাহাবীগণ আসমানের নক্ষত্রের ন্যায়।
অতএব তোমরা যে কোন জনের কথা গ্রহণ করলেই হেদায়েত প্রাপ্ত হবে। আমার সাহাবীগণের
মতভেদ তোমাদের জন্য রহমত স্বরূপ।
হাদীসটি
জাল।
হাদীসটি
খাতীব বাগদাদী “কিফায়াহ ফী ইলমির রিওয়াহ" গ্রন্থে (পৃঃ ৪৮) এবং আবুল আব্বাস
আল-আসাম তার “হাদীস” গ্রন্থে (নং ১৪২) বর্ণনা করেছেন। এছাড়া তার থেকে বাইহাকী
“আল-মাদখাল” গ্রন্থে (নং ১৫২), দাইলামী (৪/৭৫) ও ইবনু আসাকির (৭/৩১৫/২) সুলায়মান
ইবনু আবী কারমা সূত্রে যুওয়াইবির হতে, আর তিনি যহহাক হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি অত্যন্ত দুর্বল।
ইবনু
আবী হাতিম তার পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (২/১/১৩৮) সুলায়মান ইবনু আবী কারমা
সম্পর্কে বলেছেনঃ তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল। যুওয়াইবির ইবনু সাঈদ আল-আযদী
মাতরুক, যেমনভাবে দারাকুতনী, নাসাঈ ও অন্য মুহাদ্দিসগণ বলেছেন। ইবনুল মাদীনী তাকে
নিতান্তই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
আর
যহহাক; তিনি হচ্ছেন ইবনু মাজাহিম আল-হিলালী। ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর সাথে তার
সাক্ষাৎ ঘটেনি। বাস্তব কথা হচ্ছে এই যে, হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে যুওয়াইবির-এর
কারণে খুবই দুর্বল। যেমনভাবে সাখাবী “আল-মাকাসিদুল হাসানা” গ্রন্থে বলেছেন। কিন্তু
অর্থের দিক দিয়ে এটি বানোয়াট।
সুয়ূতী
বলেন যে, হাদীসটির মধ্যে কিছু ফায়েদাহ রয়েছে। কথা হচ্ছে যেটি হাদীস হিসাবে
সাব্যস্তই হচ্ছে না সেটিতে ফায়েদা খুঁজার যৌক্তিকতা কোথায়?
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৬০ | 60 | ٦۰
৬০।
তোমার মৃত্যুর পরে যে বিষয়ে আমার সাথিগণ মতভেদ করেছে, সে বিষয়ে আমি আমার প্রভুকে
জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তাই তিনি আমাকে অহী মারফত জানিয়েছেন, হে মুহাম্মদ! তোমার
সাথীগণ আমার নিকট আসমানের নক্ষত্রতুল্য। যাঁদের কতকজন অন্যজনের চেয়ে অতি উত্তম।
অতএব যে ব্যাক্তি তাদের মতভেদকৃত বস্তু থেকে কিছু গ্রহণ করেছে সে আমার নিকট সঠিক
পথের উপরেই রয়েছে।
হাদীসটি
জাল।
হাদীসটি
ইবনু বাত্তা “আল-ইবানাহ" গ্রন্থে ( ৪/১১/২) এবং আল-খাতীবও বর্ণনা করেছেন।
এছাড়া নিযামুল মুলক “আল-“আমালী” গ্রন্থে (১৩/২), দাইলামী তার “মুসনাদ” গ্রন্থে
(২/১৯০), যিয়া "আল-মুনতাকা" গ্রন্থে (২/১১৬) ও ইবনু আসাকির (৬/৩০৩/১)
নু’য়াইম ইবনু হাম্মাদ সূত্রে আব্দুর রহীম ইবনু যায়েদ আল-'আমী হতে ... বর্ণনা
করেছেন।
এটির
সনদটি বানোয়াট। কারণ নু’য়াইম ইবনু হাম্মাদ দুর্বল। হাফিয ইবনু হাজার তার
সম্পর্কে বলেনঃ তিনি বহু ভুল করতেন। আর আব্দুর রহীম ইবনু যায়েদ আল-'আমী; মিথ্যুক।
তার সম্পর্কে ৫৬ নং হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে।
“জামেউস
সাগীর” গ্রন্থের ভাষ্যকার মানাবী বলেনঃ ইবনুল জাওযী “আল-ইলাল” গ্রন্থে বলেছেনঃ এ
হাদীসটি সহীহ নয়। কারণ নু’য়াইম দোষণীয় ব্যক্তি আর আব্দুর রহীম সম্পর্কে ইবনু
মাঈন বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ এ হাদীসটি বাতিল।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস
নম্বরঃ ৬১ | 61 | ٦۱
৬১।
অবশ্যই আমার সাথীগণ নক্ষত্রতুল্য। অতএব তোমরা তাদের যে কারো কথা গ্রহণ করলে সঠিক
পথপ্রাপ্ত হবে।
হাদীসটি
জাল।
হাদীসটি
ইবনু আবদিল বার মুয়াল্লাক হিসাবে (২/৯০) বর্ণনা করেছেন এবং তার থেকে ইবনু হাযম
মারফু হিসাবে আবূ শিহাব হান্নাত সূত্রে হামযা যাযারী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এছাড়া আবদু ইবনে হুমায়েদ “আল-মুনতাখাব মিনাল মুসনাদ” (১/৮৬) গ্রন্থে, এবং ইবনু
বাত্তা “আল-ইবানাহ" গ্রন্থে (৪/১১/২) ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর
ইবনু আদিল বার বলেছেনঃ
هذا إسناد لا يصح، ولا يرويه عن نافع من يحتج به
এ
সনদটি সহীহ নয়, হাদিসটি নাফে' হতে এমন কেউ বর্ণনা করেননি যার দ্বারা দলীল গ্রহণ
করা যায়।’
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ হামযা হচ্ছে আবু হামযার ছেলে; দারাকুতনী তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি
মাতরূক।
ইবনু
আদী বলেনঃ عامة مروياته موضوعة তার অধিকাংশ বর্ণনা জাল (বানোয়াট)।
ইবনু
হিব্বান বলেনঃ
ينفرد عن الثقات بالموضوعات حتى كأنه المتعمد لها، ولا تحل الرواية عنه
তিনি
নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতিতে এককভাবে জাল (বানোয়াট) হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি যেন তা
ইচ্ছাকৃতই করেছেন। সুতরাং তার থেকে হাদীস বর্ণনা করাই হালাল নয়। যাহাবী
“আল-মীযান” গ্রন্থে তার জাল হাদীসগুলো উল্লেখ করেছেন। সেগুলোর একটি হচ্ছে এটি ।
ইবনু
হাযম “আল-মুহাল্লা” গ্রন্থে ৬/৮৩) বলেনঃ এটিই স্পষ্ট হয়েছে যে, এ বর্ণনাটি আসলে
সাব্যস্ত হয়নি। বরং বর্ণনাটি যে মিথ্যা তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ আল্লাহ তাঁর
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুণাগুণ বর্ণনা করে বলেছেনঃ
وما ينطق عن الهو ى، إن هو إلا وحي يوحى
তিনি
মনোবৃত্তি হতে কিছু বলেন না। তাঁর উক্তি অহী ছাড়া অন্য কিছু নয়।” (সূরা নাজম:
৩-৪)
যখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সকল কথা শরীয়তের মধ্যে সত্য এবং তা গ্রহণ
করা ওয়াজিব, তখন তিনি যা বলেন তা নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট হতেই বলেন। আর আল্লাহর
নিকট হতে যা আসে তাতে মতভেদ থাকতে পারে না, তার এ বাণীর কারণে।
ولوكان من عند غير الله لوجدوا فيه اختلافا كثيرا
অর্থঃ
“আর যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য করে নিকট হতে হতো, তাহলে তারা তাতে বহু মতভেদ পেত।”
(সূরা নিসাঃ ৮২)
আল্লাহ
তা’আলা মতভেদ ও দ্বন্দ্ব করতে নিষেধ করেছেন, তাঁর এ বাণী দ্বারাঃ ولا تنازعوا "আর তোমরা আপোষে বিবাদ করো
না।" (আনফালঃ ৪৬)।
অতএব
এটি অসম্ভবমূলক কথা যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীগণের
প্রত্যেকটি কথার অনুসরণ করার নির্দেশ দিবেন, অথচ তাদের মধ্য হতে কেউ কোন বস্তুকে
হালাল বলেছেন আবার অন্যজন সেটিকে হারাম বলেছেন। ইবনু হাযম এ বিষয়ে আরো বলেছেনঃ
সাহাবীগণের মধ্য হতে এমন মতামতও আছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
জীবদ্দশায় তারা তাতে ভুল করেছেন সুন্নাত বিরোধী হওয়ার কারণে। অতঃপর (৬/৮৬)
বলেছেনঃ কীভাবে সম্ভব তাদের অন্ধ অনুসরণ করা যারা ভুল করেছেন, আবার সঠিকও করেছেন?
ইবনু
হাযম মতভেদ নিন্দনীয় অধ্যায়ে (৫/৬৪) আরো বলেনঃ আমাদের উপর ফরয হচ্ছে আল্লাহর
নিকট হতে কুরআনের মধ্যে যা এসেছে ইসলাম ধর্মের শারীয়াত হিসাবে তার অনুসরণ করা এবং
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সহীহ বর্ণনায় যা এসেছে তার অনুসরণ করা।
কারণ সেগুলোও আল্লাহর নির্দেশ হিসাবে তাঁর নিকট ধর্মের ব্যাখ্যায় এসেছে। অতএব মতভেদ
কখনও রহমত হতে পারে না, আবার তা গ্রহণীয় হতে পারে না।
মোটকথা
হাদীসটি মিথ্যা, বানোয়াট, বাতিল, কখনও সহীহ নয়, যেমনটি ইবনু হাযম বলেছেন।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৬২ | 62 | ٦۲
৬২।
আমার পরিবারের সদস্যগণ নক্ষত্রতুল্য, তোমরা তাদের যে কোন জনকে অনুসরণ করলে সঠিক পথ
লাভ করবে।
হাদীসটি
জাল।
এটি
মিথ্যুক আহমাদ ইবনু নুবায়েতের কপিতে রয়েছে। আমি অবহিত হয়েছি যে, এ বর্ণনাটি আবূ
নু’য়াইম আসবাহানীর। তার সনদে আহমাদ ইবনু কাসিম আল-মিসরী আল-লোকাঈ এবং আহমাদ ইবনু
ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আল-আশযাঈ রয়েছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ আহমাদ উক্ত কপিতে বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন, এটি সেগুলোর একটি।
যাহাবী
এ কপি সম্পর্কে বলেনঃ
فيها بلايا! وأحمد بن إسحاق لا يحل الاحتجاج به فإنه كذاب
তাতে
বহু সমস্যা রয়েছে! আহমাদ ইবনু ইসহাক দ্বারা দলীল গ্রহণ করা বৈধ নয়, কারণ তিনি
একজন মিথ্যুক।’
হাফিয
ইবনু হাজার “আল-লিসান” গ্রন্থে যাহাবীর কথাকে সমর্থন করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ আহমাদ ইবনু ইসহাক হতে বর্ণনাকারী অপর ব্যক্তি আহমাদ ইবনু কাসেম
লোকাঈ দুর্বল।
ইবনু
আররাক হাদিসটি সুয়ূতির "যায়লুল আহাদিসীল মাওযূ'আহ" গ্রন্থের (পৃঃ ২০১)
অনুসরণ করে “তানখীহুশ শারীয়াহ" গ্রন্থে (২/৪১৯) উল্লেখ করেছেন। এছাড়া
শাওকানীও “ফাওয়াইদুল মাযমূয়াহ ফিল আহাদীসিল মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃঃ ১৪৪) উল্লেখ
করেছেন।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৬৩ | 63 | ٦۳
৬৩।
শীলা খাদ্যও না আবার পানীয় দ্রব্যও না।
হাদীসটি
মুনকার।
হাদীসটি
তাহাবী “মুশকিলুল আসার” গ্রন্থে (২/৩৪৭), আবূ ইয়ালা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (কাফ
২/১৯১), সিলাকী “আত-তায়ূরিয়াত” গ্রন্থে (৭/১-২) ও ইবনু আসাকির (৬/৩১৩/২) আলী
ইবনু যায়েদ ইবনু যাদ'আন সূত্রে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সনদ দুর্বল, কারণ আলী ইবনু যায়েদ ইবনে যাদ'আন দুর্বল;
যেরূপভাবে হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেছেন।
শু'বা
ইবনু হাজ্জাজ বলেনঃ আমাদেরকে হাদীসটি আলী ইবনু যায়েদ ইবনে যাদ'আন বর্ণনা করেছেন।
তিনি মওকুফকে মারফু হিসাবে বর্ণনাকারী। অর্থাৎ তিনি ভুল করতেন, মওকুফ হাদীসকে
মারফু' করে ফেলতেন। এটিই হচ্ছে এ হাদীসটির সমস্যা। কারণ নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীগণ
এটিকে আনাস (রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এখানে মওকুফকে মারফু হিসাবে
বর্ণনা করাটাই হচ্ছে মুনকার।
হাদীসটিকে
ইমাম আহমাদ (৩/২৭৯) ও ইবনু আসাকির (৬/৩১৩/২) শু’বা সূত্রে ...আনাস (রাঃ) হতে
বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ একদা শীলা বৃষ্টি হল, তখন আবু তালহা সওম অবস্থায়
ছিলেন। তিনি তা থেকে খাওয়া শুরু করলেন। তাকে বলা হল, আপনি সওম অবস্থায় শীলা
খাচ্ছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ এটিতো বরকত স্বরূপ। শাইখায়নের শর্তানুযায়ী এটির সনদ
সহীহ। ইবনু হাযম “আল-ইহকাম” গ্রন্থে (৬/৮৩) সহীহ বলেছেন। তাহাবীও অন্য দুটি সূত্রে
আনাস (রাঃ) হতেই বর্ণনা করেছেন। ইবনু বাযযারও মওকুফ হিসাবে বর্ণনা করার পর বলেছেনঃ
এটি সাঈদ ইবনু মুসায়য়াব-এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি তা অপছন্দ করেন এবং বলেন যে,
এটি তৃষ্ণাকে দূর করে। সুয়ূতী হাদীসটি “যায়লুল আহাদীসিল মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃঃ
১১৬) দাইলামীর সূত্রে উল্লেখ করে বুঝিয়েছেন যে, এটি মাওযু হাদীস।
কিন্তু
ইবনু আররাক “তানযীহুশ শারীয়াহ" গ্রন্থে (১/১৫৯) তার বিরোধিতা করে বুঝিয়েছেন
যে, এটি মাওযু নয়, তবে এটি দুর্বল। কারণ ইবনু হাজার বলেছেন যে, এটির সনদ দুর্বল।
হাদীসটি
মওকুফ হিসাবে সহীহ হলেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এটি ছিল আবু তালহার অভিমত। অন্যরা
তার এ মতের বিরোধিতা করেছেন। তার এ মতের সাথে কেউ ঐক্যমতও পোষণ করেননি।
হাদিসের
মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৬৪ | 64 | ٦٤
৬৪।
মেষ শাবক (যার বয়স এক বছর পূর্ণ হয়েছে) কতই না উত্তম কুরবানী।
হাদীসটি
দুর্বল।
হাদীসটি
ইমাম তিরমিযী (২/৩৫৫), বাইহাকী (৯/২৭১) ও ইমাম আহমাদ (২/৪৪৪,৪৪৫) উসমান ইবনু
ওয়াকিদ সূত্রে কিদাম ইবনু আবদির রহমান হতে আর তিনি আবূ কাব্বাশ হতে বর্ণনা
করেছেন।
ইমাম
তিরমিযী বলেনঃ حديث غريب হাদীসটি
গারীব। একথা দ্বারা বুঝিয়েছেন এটি দুর্বল। এ জন্য হাফিয ইবনু হাজার "ফতহুল
বারীর" মধ্যে (১০/১২) বলেছেনঃ وفي سنده ضعف ‘এটির সনদে দুর্বলতা রয়েছে।
ইবনু
হাযম “আল-মুহাল্লা” গ্রন্থে (৭/৩৬৫) বলেনঃ উসমান ইবনু ওয়াকিদ মাজহুল আর কিদাম
ইবনু আবদির রহমান জানি না সে কে। আবূ কাব্বাশ সম্পর্কে যা বলেছেন তা যেন ইঙ্গিত
করছে যে, তিনি এ হাদীসের ব্যাপারে অপবাদ প্রাপ্ত ব্যক্তি। কিন্তু তিনি কিদামের ন্যায়
একজন মাজহুল, যেরূপভাবে হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে স্পষ্টভাবে বলেছেন।
উসমান
ইবনু ওয়াকিদ; অপরিচিত নয়। কারণ তাকে ইবনু মাঈন ও অন্যরা নির্ভরযোগ্য বলেছেন।
যদিও আবূ দাউদ তাকে দুর্বল বলেছেন। হাদীসটি অন্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যার সনদে
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল-হুনায়নী রয়েছেন। বাইহাকী তার সম্পর্কে বলেনঃ تفرد به وفي حديثه ضعف "তিনি এককভাবে হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন, তার হাদীসে দুর্বলতা রয়েছে।"
আমি
(আলবানী) বলছিঃ ইসহাক আল-হুনায়নী দুর্বল এ বিষয়ে সকলে একমত। উকায়লী তাকে
“আয-যুয়াফা” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, অতঃপর তার একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেনঃ
এটির কোন ভিত্তি নেই।
অতঃপর
তার এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ روي عن زياد بن ميمون وكان يكذب عن أنس "তিনি যিয়াদ ইবনু মায়মুন হতে আনাস (রাঃ)-এর
উদ্ধৃতিতে মিথ্যা বর্ণনা করতেন।"
ইবনুত
তুরকুমানী বাইহাকীর উপরোক্ত কথার সমালোচনা করে বলেনঃ হাদীসটি হাকিম “আল-মুসতাদরাক”
গ্রন্থে উল্লেখিত ইসহাক সূত্রে উল্লেখ করে বলেছেন যে, এটির সনদ সহীহ!
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ শাস্ত্রের প্রত্যেক বিজ্ঞজন জ্ঞাত আছেন যে, সহীহ এবং নির্ভরযোগ্য
আখ্যা দেয়ার ক্ষেত্রে হাকিম শিথিলতা প্রদর্শনকারী। এ জন্য তার দিকে কেউ দৃষ্টি
দেন না। বিশেষ করে যখন তিনি অন্যদের বিপরীতে বলেছেন। এ কারণেই যাহাবী তার এ সহীহ্
বলাকে “তালখীস” গ্রন্থে সমর্থন করেননি, বরং বলেছেন (৪/২২৩) ইসহাক ধবংসপ্রাপ্ত আর
হিশাম নির্ভরযোগ্য নন। ইবনুত তুরকুমানী সম্ভবত হানাফী হওয়ার কারণে হাদীসটি সহীহ
বলার চেষ্টা চালিছেন। এটি এ ধরনের আলেমের ক্ষেত্রে বড় দোষ।
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৬৫ | 65 | ٦۵
৬৫।
মেষ শাবক দ্বারা কুরবানী দেয়া জায়েয।
হাদীসটি
দুর্বল।
হাদীসটি
ইবনু মাজাহ্ (২/২৭৫), বাইহকী ও ইমাম আহমাদ (৬/৩৩৮) উম্মু মুহাম্মাদ ইবনু আবী
ইয়াহইয়া সূত্রে তার মা হতে, তার মা উম্মু বিলাল বিনতে হিলাল হতে ...বর্ণনা
করেছেন।
এটির
সনদ দুর্বল উম্মু মুহাম্মাদ ইবনু আবী ইয়াহইয়া মাজহুল হওয়ার কারণে, যেমনভাবে
ইবনু হাযম (৭/৩৬৫) বলেছেন। তিনি আরো বলেনঃ উম্মু বিলাল বিনতে হিলালও মাজহুলা। রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটার ব্যাপারটি জানা যায় না
।
সিন্দী
বলেন, দামায়রী বলেছেনঃ ইবনু হাযম প্রথমটিতে ঠিক করেছেন দ্বিতীয়টিতে ঠিক করেননি।
কারণ উম্মে বিলালকে ইবনু মান্দা, আবু নু’য়াইম ও ইবনু আবদিল বার সাহাবীদের
অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তার পরেও যাহাবী “আলমীযান” গ্রন্থে বলেছেনঃ তাকে চেনা যায়
না। অথচ আযালী তাকে নির্ভরশীল বলেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ তার সম্পর্কে ইবনু হাযম যা রলেছেন সেটিই সঠিক। কারণ তাকে একমাত্র এ
হাদীসেই চেনা যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটার
ব্যাপারটি স্পষ্ট নয়। যেমনটি জানা যায় তার সনদে অজ্ঞতাও রয়েছে।
আশ্চর্যের
বিষয় হচ্ছে এই যে, হাদীসটির মধ্যে দুর্বলতা সাব্যস্ত হওয়ার পরেও “নাসবুর
রায়া" গ্রন্থে ইমাম যায়লাঈ (৪/২১৭,২১৮) চুপ থেকেছেন!
এ
অধ্যায়ে আরো হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যেগুলো ইবনু হাযম “আল-মুহাল্লা” গ্রন্থে
(৭/৩৬৪-৩৬৫) উল্লেখ করেছেন এবং সবগুলোকেই দুর্বল বলেছেন।
উকবা
ইবনু আমের-এর হাদীস ব্যতীত অন্যান্য হাদীসকে তার দুর্বল বলার সিদ্ধান্তটি সঠিক।
উকবার হাদীসে বলা হয়েছেঃ
ضحينا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم بجذع من الضأن
"আমরা
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মেষ শাবক যবেহ করেছি"। হাদীসটি
নাসাঈ (২/২০৪) ও বাইহাকী (৯/২৭০) বর্ণনা করেছেন। তাদের সনদটি ভাল।
উকবার
ক্ষেত্রে মেষ শাবক কুরবানী দেয়ার বিষয়টি তার জন্যই খাস ছিল, এ মর্মে হাদীসে
বিবরণ এসেছে বা ওযরের কারণে ছিল । যেমন মুসিন্নার (যে ছাগল দু'বছর পার হয়ে তৃতীয়
বছরে পড়েছে) দুষ্প্রাপ্যতা বা মূল্য বেশী হওয়ার কারণে। এটিই সঠিকের নিকটবর্তী।
আসিম ইবনু কুলাঈব কর্তৃক তার পিতা হতে বর্ণনাকৃত হাদীসের কারণে। তার পিতা বলেনঃ
كنا نؤمر علينا في المغازي أصحاب محمد صلى الله عليه وسلم، وكنا بفارس، فغلت علينا يوم النحر المسان، فكنا نأخذ المسنة بالجذعين والثلاثة، فقام فينا رجل من مزينة فقال: كنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فأصبنا مثل هذا اليوم فكنا نأخذ المسنة بالجذعين والثلاثة فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الجذع يوفي مما يوفي الثني
“আমরা
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথীগণ কর্তৃক যুদ্ধের মধ্যে
আদেষ্টিত হয়েছিলাম। আমরা ছিলাম অশ্বারোহী। কুরবানীর দিন মুসিন্নাগুলোর দাম বেড়ে
গেলে, একটি মুসিন্নাহ দু'টি/তিনটি মেষ শাবক-এর বিপরীতে গ্রহণ করতাম। আমাদের মধ্য
হতে মুযাইনা গোত্রের এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেনঃ আমরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। আজকের দিনের ন্যায় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম, তখন
আমরা একটি মুসিন্নাহ দু'টি/তিনটি মেষ শাবকের পরিবর্তে গ্রহণ করতাম। রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মুসিন্নাহ যাতে যথেষ্ট হয় মেষ শাবকও তাতে যথেষ্ট হবে।
হাদীসটি
নাসাঈ, হাকিম (৪/২২৬) ও ইমাম আহমাদ বর্ণণা করেছেন। হাকিম বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ।
হাদীসটি তেমনই যেমনটি হাকিম বলেছেন। ইবনু হাযম বলেন (৭/২৬৭), হাদীসটি অত্যন্ত
সহীহ্।
হাদীসটি আবু দাউদ (২/৩), ইবনু মাজাহ্ (২/২৭৫) ও বাইহাকী (৯/২৭০) সংক্ষিপ্তাকারে মুশাজে ইবনু মাসউদ আস-সুলামী সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি আবু দাউদ (২/৩), ইবনু মাজাহ্ (২/২৭৫) ও বাইহাকী (৯/২৭০) সংক্ষিপ্তাকারে মুশাজে ইবনু মাসউদ আস-সুলামী সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
এ
হাদীসটি প্রমাণ করছে যে, মেষ শাবক কুরবানী দেয়া যাবে তখনই যখন মুসিন্নার দাম
বেড়ে যাবে এবং তা দুষ্প্রাপ্য হবে। এ ব্যাখ্যাকে জাবির (রাঃ)-এর নিম্নের হাদীসটি
সমর্থন করছেঃ
لا تذبحوا إلا مسنة، إلا أن يعسر عليكم، فتذبحوا جذعة من الضأن
“তোমরা
মুসিন্নাহ ছাড়া অন্য কিছু যবেহ কর না, তবে তোমাদের জন্য যদি তা দুষ্প্রাপ্য হয়ে
যায় তাহলে তোমরা মেষ শাবক যবেহ কর।” হাদীসটি মুসলিম (৬/৭২) ও আবু দাউদ
(২/৩) (৩/৩১২,৩২৭) বর্ণনা করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার “ফতহুল বারীর" মধ্যে
বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ।
জাবির
হতে বর্ণিত হাদীসটি আসলে সহীহ নয়। কারণ আবূ যুবায়ের যখন জাবির হতে বা অন্যদের
থেকে عن عن আন
আন শব্দ দ্বারা হাদীস বর্ণনা করেন এবং তার হাদীসটি যদি লাইস ইবনু সা'দ কর্তৃক তার
থেকে বর্ণিত না হয়, তাহলে আবু যুবায়ের-এর শ্রবণ জাবির হতে সাব্যস্ত হয় না। এ
হাদীসটিতে এদুটোই বিদ্যমান। এ কারণে হাদীসটি দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না,
যতক্ষণ পর্যন্ত জাবির হতে তার শ্রবণ সাব্যস্ত না হয় অথবা সাক্ষীমূলক হাদীস না
মিলে যা তার হাদীসকে শক্তি যোগাবে।
আমি
(আলবানী) প্রথমে মেষ শাবক দ্বারা কুরবানী করা যাবে না এ মতকে সমর্থন করেছি। কিন্তু
এখন তা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং উল্লেখিত হাদীসের ব্যাখ্যায় যা বলেছি তাও
প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। বিশেষ করে মেষ শাবক দ্বারা কুরবানী করা যাবে এ মতকে সমর্থন
করছি এবং শেষবধি বলছি যে, উম্মে হিলাল সূত্রে বর্ণিত হাদীস যদিও সনদের দিক দিয়ে
সহীহ নয় তবুও সেটি অর্থের দিক দিয়ে সহীহ। যার সাক্ষী দিচ্ছে উকবা এবং মুশাজের
হাদীস। তবে যদি ছাগল ছানা হয় তাহলে তার দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। কারণ বারা
(রাঃ)-এর হাদীসে এসেছে; তিনি বলেনঃ
ضحى خالي أبو بردة قبل الصلاة، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: تلك شاة لحم، فقال: يا رسول الله إن عندي جذعة من المعز، فقال: ضح بها، ولا تصلح لغيرك
وفي رواية: اذبحها، ولن تجزئ عن أحد بعدك
وفي أخرى ولا تجزيء جذعة عن أحد بعدك
আমার
খালু আবূ বুরদা সলাতের (কুরবানীর সলাতের) পূর্বেই কুরবানী করেছিলেন, ফলে রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “সেটি গোশতের ছাগল”। তিনি বললেনঃ হে
আল্লাহর রসূল! আমার নিকটে একটি ছাগল ছানা রয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “সেটিই কুরবানী কর, তবে তা তুমি ছাড়া অন্য কারো জন্য প্রযোজ্য
হবে না।"
অন্য
এক বর্ণনায় এসেছেঃ “তাই যবেহ কর, তবে তোমার পরে আর কারো পক্ষ হতে তা যথেষ্ট হবে
না।"
অপর
এক বর্ণনায় এসেছেঃ ছাগল ছানা তোমার পরে আর কারো পক্ষ হতে যথেষ্ট হবে না।
হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন মুসলিম (৬/৭৪-৭৬) এবং বুখারী তার ন্যায়।
ফায়েদা
“المسنة” মুসিন্না দ্বারা বুঝানো হচ্ছে দুই বা তারও বেশী নতুন দাতধারী
উট, গরু ও ছাগলকে। গরু ও ছাগলের মধ্যে যেটির বয়স দু' বছর পূর্ণ হয়ে তৃতীয় বছরে
পদার্পণ করেছে আর উটের ক্ষেত্রে যেটি সবে মাত্র ষষ্ঠ বছরে পদার্পণ করেছে সেটিকে।
আর
“الجذع من الضأن”
মেষ শাবক (ভেড়ার বাচ্চ) বলতে বুঝানো হচ্ছে যেটির বয়স আরবী ভাষাবিদ ও জামহুরে
আহলে ইলমের প্রসিদ্ধ মতানুসারে এক বছর পূর্ণ হয়েছে সেটিকে।
(মোটকথাঃ
ছাগলের এক বছরের বাচ্চা দিয়ে কুরবানী বিশুদ্ধ হবে না, তবে এক বছরের ভেড়া দিয়ে
কুরবানী করা যাবে)।
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৬৬ | 66 | ٦٦
৬৬।
যে ব্যাক্তি নিজেকে চিনেছে, সে তার প্রভুকে চিনতে সক্ষম হয়েছে।
হাদীসটির
কোন ভিত্তি নেই।
হাফিয
সাখাবী “মাকাসিদুল হাসানা” গ্রন্থে (পৃঃ ১৯৮) বলেনঃ আবু মুযাফফার ইবনুস সামায়ানী
বলেনঃ মারফু হিসাবে এটিকে জানা যায় না। ইয়াহইয়া ইবনু মুয়ায আর-রাযীর ভাষ্য
হিসাবে বলা হয়ে থাকে। ইমাম নাবাবী বলেছেনঃ এটি সাব্যস্ত হয়নি। সুয়ূতী হাদীসটি
“যায়লুল মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃ ২০৩) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম নাবাবীর কথাটি উল্লেখ
করে তাকে সমর্থন করেছেন। তিনি তার “আল-কাওলিল আশবাহ” গ্রন্থে (২/৩৫১) বলেছেনঃ
হাদীসটি সহীহ নয়। শাইখ আল-কারী তার “মাওযু’আত” গ্রন্থে (পৃ ৮৩) ইবনু তাইমিয়া হতে
নকল করে বলেছেনঃ হাদীসটি বানোয়াট। ফিরোযাবাদী বলেনঃ যদিও অধিকাংশ লোক এটিকে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস বলে চালাচ্ছেন, তবুও এটি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের অন্তর্ভুক্ত নয়। এর ভিত্তিই সহীহ নয়।
এটি ইসরাইলীদের বর্ণনায় বর্ণিত একটি কথা ।
মুহাদ্দিসগণ
এ হাদীসের উপর উল্লেখিত হুকুম লাগালেও পরবর্তী হানাফী ফকীহগণের মধ্য হতে জনৈক
ফাকীহ্ এটির ব্যাখ্যায় পুস্তক রচনা করেছেন, অথচ হাদীসটির কোন অস্তিত্বই নেই।
দুঃখের
সাথে বলতে হচ্ছে এ ঘটনা প্রমাণ করছে যে, ঐসব ফাকীহগণ-মুহাদ্দিসগণ সুন্নাতের
খিদমাতে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তা হতে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করেননি। এ জন্য তাদের
গ্রন্থসমূহে দুর্বল এবং জাল হাদীসের সমারোহের আধিক্যতা দেখা যায়।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৬৭ | 67 | ٦۷
৬৭।
যে ব্যাক্তি ফজরের সালাতে (নামায/নামাজ) সূরা “আলাম নাশরাহ” এবং সূরা “আলাম তাঁরা
কাইফা” পাঠ করবে; সে চোখে ঝাপসা দেখবে না।
হাদীসটির
কোন ভিত্তি নেই।
সাখাবী
“মাকাসিদুল হাসানা” গ্রন্থে (পৃ ২০০) বলেছেনঃ এটির কোন ভিত্তি নেই। চাই ফজর দ্বারা
সকালের সুন্নাত অথবা সকালের ফরয সলাত ধরা হোক না কেন। উভয়টিতে কিরায়াত পাঠের
সুন্নাত এটির বিপরীতে হওয়ার কারণে।
তিনি
ইঙ্গিত করেছেন যে, ফজরের সুন্নাত সলাতে সুন্নাত হচ্ছে (প্রথম রাকাআতে) কুল
ইয়া-আইউহাল কাফিরুন আর (দ্বিতীয় রাকাআতে) কুল হু-ওয়াল্লাহু আহাদ পাঠ করা। আর
ফজরের ফরজ সালাতে ষাট বা ততোধিক আয়াত পাঠ করা।
অতএব
হাদীসটি সঠিক নয়।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৬৮ | 68 | ٦۸
৬৮।
উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পরে “ইন্না আনযালনাহু” সূরা পাঠ করতে হয়।
হাদীসটির
কোন ভিত্তি নেই।
যেমনটি
সাখাবী বলেছেন।
তিনি
বলেনঃ আমি এটি দেখি হানাফী মাযহাবের ইমাম আবুল লাইস-এর “আল-মুকাদ্দিমা” গ্রন্থে।
বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক তাতে (মুকাদ্দিমাতে) এটির প্রবেশ
ঘটেছে। এটি সহীহ্ সুন্নাতকে বিতাড়িত করে।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ কারণ ওযুর পরের সুন্নাত হচ্ছে, এ দু'আ পাঠ করাঃ
أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدا عبده ورسوله، اللهم اجعلني من التوابين، واجعلني من المتطهرين
এটি
ইমাম মুসলিম ও ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন, তবে বাক্যগুলো তিরমিযীর।
অথবা
বলবেঃ
سبحانك اللهم وبحمدك، أشهد أن لا إله إلا أنت، أستغفرك وأتوب إليك
এটি
হাকিম ও অন্যরা সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ (আলোচ্য) হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। এ কথাতে সন্দেহ হতে পারে যে, এর
কোন সনদ নেই। আসলে তা নয়, সনদ আছে তবে তা সঠিক নয়, যা ১৪৪৯ নং হাদীসে আসবে।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৬৯ | 69 | ٦۹
৬৯।
গর্দান মাসাহ করা নিরাপত্তা বিধান করে বন্দি হওয়া থেকে।
হাদীসটি
জাল।
ইমাম
নাবাবী “আল-মাজমূ শারহুল মুহাযযাব” গ্রন্থে বলেনঃ هذا موضوع ليس من كلام النبي صلى الله عليه وسلم "এটি জাল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
কথা নয়।"
সুয়ূতী
“যায়লুল আহাদীসিল মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃঃ ২০৩) ইমাম নাবাবীর উক্ত কথা বর্ণনা করে
তা সমর্থন করেছেন।
হাফিয
ইবনু হাজার “তালখীসুল হাবীর” গ্রন্থে (১/৪৩৩) বলেনঃ এটি আবু মুহাম্মাদ
আল-যুওয়াইনী বর্ণনা করে বলেছেনঃ হাদীস শাস্ত্রের ইমামগণ এটির সনদে সম্ভষ্ট হতে
পারেননি। গাযালীও “আল-ওয়াসীত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইবনুস সালাহ্ তার সমালোচনা
করে বলেছেনঃ এ হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে জানা যায়নি। এটি
সালাফদের কোন ব্যক্তির কথা।
হাফিয
আরো বলেনঃ হতে পারে এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে সেই হাদীসটিকে যেটি “কিতাবুত
তাহুর"-এর মধ্যে আবূ ওবায়েদ মাসউদী সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু এটি মওকুফ।
তথাপিও গৃহীত হত যদি সূত্রে মাসউদী না থাকত। কারণ তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল। তার
হাদীস যদি মারফুও হয় তাহলে গৃহীত হয় না। অতএব মওকুফ হলে কীভাবে গৃহীত হবে?
হাফিয
ইবনু হাজার (১/৪৩৪-৪৩৫) বলেনঃ আবু নু’য়াইম “তারিখু আসবাহান” গ্রন্থে ও রূইয়ানী
“আল-বাহার” গ্রন্থে পৃথক পৃথক সনদে একই ভাবার্থে আলাদা আলাদা ভাষায় ইবনু উমার
(রাঃ)-এর উদ্ধৃতিতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ কিন্তু “আল-বাহারে” বর্ণিত হাদীসটির সনদে ইবনু ফারেস এবং ফুলাইহ
ইবনু সুলায়মান রয়েছেন। তারা উভয়েই সমস্যার স্থল। তাতে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
“তারীখু আসবাহান" গ্রন্থে (২/১১৫) উল্লেখিত ইবনু উমার (রাঃ) এর হাদীসটিকে
শাইখ আলী আল-কারী “মাওযুআত” গ্রন্থে (পৃঃ ৭৩) দুর্বল সনদে উল্লেখ করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এর কারণ তার সনদে মুহাম্মাদ ইবনু আমর আল-আনসারী রয়েছেন। তিনি
হচ্ছেন আবু সাহাল আল-বাসরী। সকলে তার দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে একমত। ইয়াহইয়া ইবনু
সাঈদ তাকে নিতান্তই দুর্বল বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন যে, তিনি হাসান
হতে ধ্বংসাত্মক বহু কিছু বর্ণনা করেছেন।
আবু
নু’য়াইম-এর শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদও দুর্বল। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ
দারাকুতনী তার থেকে বর্ণনা করে তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ ধরনের হাদীসকে মুনকার হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। কারণ হাদীসটি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত ওযুর পদ্ধতি বর্ণনাকারী সকল সহীহ
হাদীস বিরোধী। কেননা সেগুলোর কোনটিতেই গর্দান মাসাহ করার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
হ্যাঁ একটিতে বলা হয়েছে; যেটি বর্ণিত হয়েছে তালহা ইবনু মুসাররাফ হতে, তিনি তার
পিতা হতে, তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তাতে গর্দান পর্যন্ত মাসাহ করার কথা বলা
হয়েছে। হাদীসটি আবু দাউদ ও অন্যরা বর্ণনা করেছেন। বলা হয়েছে ইবনু ওয়াইনা
হাদীসটি অস্বীকার করতেন। সেটিই হক, কারণ এটির সনদে তিনটি সমস্যা একত্রিত হয়েছে।
একেকটিই তার দুর্বল হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ জন্য নাবাবী, ইবনু তাইমিয়্যা, আসকালানী
ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ এটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। এটিকে আমি য’ঈফু সুনানে আবী
দাউদ গ্রন্থে ১৫ নং হাদীসে বর্ণনা করেছি।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৭০ | 70 | ۷۰
৭০।
যে ব্যাক্তি তার কোন ভাইকে পরিতৃপ্ত না হওয়া পর্যন্ত রুটি খাওয়াবে। তৃষ্ণা না মিটা
পর্যন্ত পানি পান করাবে। তাকে আল্লাহ সাত খন্দক সমপরিমাণ জাহান্নাম থেকে দূরে
সরিয়ে দিবেন। দু’ খন্দকের মধ্যের দূরত্ব হবে পাঁচশত বছরের চলার সমপরিমাণ।
হাদীসটি
জাল।
হাদীসটি
দুলাবী “আল-কুনা” গ্রন্থে (১/১১৭), ইয়াকুব আল-ফুসাবী “আত-তারীখ" গ্রন্থে
(২/৫২৭), ইবনু আবী হাকাম “ফতুহে মিসর” গ্রন্থে (পৃঃ ২৫৪), হাকিম (৪/১২৯), তাবারানী
“আল-আওসাত” গ্রন্থে (১/৯৫/১) ও ইবনু আসাকির (৬/১১৫/২) ইদরীস ইবনু ইয়াহইয়া
খাওলানী সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। এ সনদে রাজা ইবনু আবী আতা নামক এক বর্ণনাকারী
রয়েছেন।
হাকিম
হাদীসটি সম্পর্কে বলেনঃ সহীহ আর তার সাথে সুর মিলিয়েছেন হাফিয যাহাবী!
এটি
তাদের দু’জনের মারাত্মক ভুল। কারণ এ রাজাকে কেউ নির্ভরশীল বলেননি, বরং তিনি একজন
মিথ্যার দোষে দোষী ব্যক্তি। শুনুন স্বয়ং হাকিম নিজে তার সম্পর্কে কি বলেছেন,
যাহাবী নিজেই যা “আল-মীযান” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। নিজে তাকে কিঞ্চিৎ ভাল বলার পর
বলেছেন, হাকিম বলেনঃ তিনি মিসরী জাল হাদীসের হোতা। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি জাল
হাদীস বর্ণনাকারী।
অতঃপর
এ হাদীসটি মিসরীদের সূত্রে উল্লেখ করেছেন। ইবনুল জাওযী তার “আল-মাওযু আত” গ্রন্থে
(২/১৭২) হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/৮৭) তা সমর্থন
করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে বলেছেন যে, হাদীসটি ইবনু
হিব্বান বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ এটি জাল। হাকিম হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেনঃ
হাদীসটির সনদ সহীহ্। আবার তিনি নিজেই তার বর্ণনাকারী (রাজা) সম্পর্কে বলেছেনঃ তিনি
জালের হোতা।
মোটকথা
হাদীসটি জাল (বানোয়াট) এটিই সঠিক।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস
নম্বরঃ ৭১ | 71 | ۷۱
৭১।
তাকবীর হচ্ছে পৃথক পৃথক ভাবে। (অর্থাৎ আযানের তাকবীর)
হাদীসটির
কোন ভিত্তি নেই।
এমনই
বলেছেন হাফিয ইবনু হাজার, সাখাবী ও সুয়ূতী। তবে সুয়ূতী এটিকে ইবরাহীম নাখ'ঈর কথা
হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি এ তাকবীর দ্বারা বুঝিয়েছেন সলাতের তাকবীর। আযানের
সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই, যেমনভাবে কেউ কেউ ধারণা পোষণ করেছেন। মিসরের একদল লোক এ
হাদীসের উপর আমল করে পৃথক পৃথক ভাবে আযান দিয়ে থাকেন। যদিও এ পদ্ধতিতে আযান
দেয়ার কোন ভিত্তি সুন্নাতের মধ্যে নেই। কারণ আযানে দু' তাকবীরকে একসাথে জোড়া
জোড়া করে বলার ব্যাপারে সহীহ সুন্নাতে প্রকাশ্য ইঙ্গিত এসেছে। যা সহীহ মুসলিমে
উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৭২ | 72 | ۷۲
৭২।
আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন, অতঃপর আমার শিষ্টাচারে সুন্দর রূপ
দান করেছেন।
হাদীসটি
দুর্বল।
হাদীসটি
দুর্বল। ইবনু তাইমিয়া “মাজমু'আতুর রাসায়েলিল কুবরা” গ্রন্থে (২/৩৩৬) বলেনঃ
হাদীসটির অর্থ সহীহ, কিন্তু তার সনদ সম্পর্কে জানা যায় না। সাখাবী ও সুয়ূতী তার
একথাকে সমর্থন করে শক্তিশালী করেছেন। দেখুন "কাশফুল খাফা" (১/৭০)।
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৭৩ | 73 | ۷۳
৭৩।
যে ব্যাক্তি তর্জনী অংগুলি দু’টোর ভিতরের অংশ দ্বারা মুয়াযযিন কর্তৃক
আস-হাদু’আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলার সময়
দু’ চোখ মাসাহ করবে; তার জন্য রাসুল-এর সুপারিশ অপরিহার্য হয়ে যাবে।
হাদীসটি
সহীহ নয়।
হাদিসটি
দাইলামী "মুসনাদুল ফিরদাউস" গ্রন্থে আবু বাকর (রাঃ) হতে মারফু' হিসেবে
বর্ণনা করেছেন।
ইবনু
তাহির "আত-তাযকীরাহ" গ্রন্থে বলেনঃ এটি সহীহ নয়।
শাওকানী
"আহাদীসুল মাওযূ'আহ" গ্রন্থে (পৃঃ ৯) অনুরূপ কথাই বলেছেন। সাখাবীও
"মাকাদীসুল হাসানা" গ্রন্থের মধ্যে অনুরূপ বলেছেন।
হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৭৪ | 74 | ۷٤
৭৪।
তোমরা মোটা-তাজা শক্তিশালী পশু দ্বারা কুরবানী কর; কারন তা হবে পুল-সিরাতের উপর
তোমাদের বাহন।
এ
ভাষায় হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
ইবনু
সালাহ বলেনঃ هذا حديث غير معروف ولا ثابت এ হাদিসটি পরিচিতও না এবং সাব্যস্তও হয়নি। হাদীসটি
ইসমাঈল আল-আজলুনী “আল-কাশফ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তার পূর্বে ইবনুল মুলাক্কিন
“আল-খুলাসা" গ্রন্থে (১৬৪/২) উল্লেখ করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সনদ খুবই দুর্বল। এটি সম্পর্কে ২৬৮৭ নং হাদীসে বিস্তারিত
আলোচনা আসবে। ইনশাআল্লাহ।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৭৫ | 75 | ۷۵
৭৫।
সালাত (নামায/নামাজ) ছুটে যাবার পূর্বেই দ্রুত তোমরা তা আদায় কর এবং মৃত্যু গ্রাস
করার পূর্বেই দ্রুত তাওবাহ কর।
হাদীসটি
জাল।
তবে
তার অর্থটি সঠিক। সাগানী "আল-আহাদীসুল মাওযূ'আহ" গ্রন্থে (পৃঃ ৪-৫)
হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৭৬ | 76 | ۷٦
৭৬।
আলেমগণ ব্যাতিত সব মানুষ মৃত, ‘আমলকারীগন ব্যতীত সব আলেম ধ্বংসপ্রাপ্ত, মুখলেসগণ
ব্যাতিত সব আমলকারী ডুবে রয়েছে। আর মুখলেসগণ মহা বিপদে নিপতিত।
হাদীসটি
জাল।
হাদিসটি
সাগানী "আল-আহাদীসুল মাওযূ'আহ" গ্রন্থে (পৃঃ ৫) উল্লেখ করেছেন। তিনি
বলেনঃ এটি একটি মিথ্যারোপ।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ সূফীদের কথার সাথে এটির সাদৃশ্যতা রয়েছে।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৭৭ | 77 | ۷۷
৭৭।
একমাত্র ঈসা (আঃ)-ই হচ্ছেন মাহদী।
হাদীসটি
মুনকার।
এটি
ইবনু মাজাহ (২/৪৯৫), হাকিম (৪/৪৪১), ইবনুল জাওযী “আল-ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে (১৪৪৭),
ইবনু আবদিল বার “জামেউল ইলম” গ্রন্থে (১/১৫৫), আবু আমর আদানী “আস-সুনানুল ওয়ারিদা
ফিল ফিতান” গ্রন্থে, সিলাকী “আত-তায়ূরিয়াত” গ্রন্থে (৬২/১) এবং খাতীব বাগদাদী
(৪/২২১) মুহাম্মাদ ইবনু খালেদ জানাদী সূত্রে আবান ইবনু সালেহ হতে, তিনি হাসান হতে
... বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটির
সনদ তিনটি কারণে দুর্বলঃ
১।
হাসান বাসরী কর্তৃক আন আন “عن عن”
শব্দ দ্বারা বর্ণনাকৃত। কারণ তিনি কখনও কখনও তার শাইখের নাম গোপন করতেন (তাদলীস
করতেন)।
২।
সনদে বর্ণিত মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ আল-জানাদী মাজহুল; যেমনভাবে হাফিয ইবনু হাজার
“আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেছেন।
৩।
হাদীসটির সনদে বিভিন্নতা।
বাইহাকী
বলেনঃ হাসান বাসরী সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে হাদীসটি
মুনকাতি।
যাহাবী
“আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ إنه خبر منكر এ হাদীসটি মুনকার। তিনি এটিকে মুরসালও বলেছেন।
সাগানী
বলেনঃ হাদীসটি জাল; যেমনভাবে শাওকানীর “আল-আহাদীসুল মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃঃ ১৯৫)
এসেছে।
সুয়ূতী
“আল-ওরফুল ওয়ারদী কী আখবারিল মাহদী” (২/২৭৪) গ্রন্থে কুরতুবীর উদ্ধৃতিতে বলেন,
তিনি “তাযকিরা” গ্রন্থে বলেছেনঃ এটির সনদ দুর্বল। হাফিয ইবনু হাজার "ফতহুল
বারীর" মধ্যে (৬/৩৮৫) ইঙ্গিত দিয়েছেন এ হাদীসটি মারদূদ (পরিত্যাক্ত) মাহদী
সংক্রান্ত হাদীসগুলোর বিরোধী হওয়ার কারণে।
হাদিসের
মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৭৮ | 78 | ۷۸
৭৮।
মু’মিনের উচ্ছিষ্টে রয়েছে আরোগ্য।
হাদীসটির
কোন ভিত্তি নেই।
শাইখ
আহমাদ আল-গাযালী আল-আমেরী "আল-যাদ্দুল হাসীস" গ্রন্থে (১৬৮) বলেনঃ ليس بحديث এটি কোন হাদীস নয়। তার একথাকে
শাইখ আজলুনী “কাশফুল খাফা” গ্রন্থে (১/৪৫৮) সমর্থন করেছেন ।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ শাইখ আলী আল-কারী তার “মাওযূ"আত” গ্রন্থে (পৃঃ ৪৫) বলেছেনঃ
অর্থের দিক দিয়ে হাদীসটি সহীহ্। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে “আল-আফরাদ”
গ্রন্থে দারাকুতনীর নিম্নের বর্ণনার কারণেঃ
من التواضع أن يشرب الرجل من سؤر أخيه أي المؤمن
'কোন
ব্যক্তি কর্তৃক তার মুমিন ভাইয়ের উচ্ছিষ্ট হতে পানি পান করা বিনয়ের
অন্তর্ভুক্ত।'
কিন্তু
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর মারফু হাদীসটিও সহীহ নয়। তার বিবরণ একটু পরেই আসবে। যদি
সহীহ্ হত তাহলেও এটি মূলহীন হাদীসের সাক্ষী [শাহেদ] হতে পারতো না। কীভাবে হবে?
যাতে মুমিনের উচ্ছিষ্ট আরোগ্য স্বরূপ একথাটি না স্পষ্টভাবে আছে আর না পরোক্ষভাবে
আছে।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৭৯ | 79 | ۷۹
৭৯।
কোন ব্যাক্তির তার ভাইয়ের উচ্ছিষ্ট হতে পান করা নম্রতার অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যাক্তি
তার ভাইয়ের উচ্ছিষ্ট হতে আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্তির লক্ষ্যে পান করবে, তার
মর্যাদা সত্তর গুণ বৃদ্ধি করা হবে। এবং তার সত্তরটি গুনাহ (অপরাধ) মোচন করে দেয়া
হবে এবং তার জন্য সত্তরটি মর্যাদা লিখা হবে।
হাদীসটি
জাল।
ইবনুল
জাওযী “আল-মাওয়ূ"আত” গ্রন্থে (৩/৪০) দারাকুতনীর বর্ণনায় নূহ ইবনু মারইয়াম
সূত্রে ... উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেনঃ নুহ এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা
করেছেন, তিনি মাতরূক।
কিন্তু
সুয়ূতী “আল-লাআলিল মাসনূয়াহ" গ্রন্থে (২/২৫৯) তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ
এটির মুতাবায়াত পাওয়া যায়। কিন্তু ইসমাঈলী তার “আল-মুজাম” গ্রন্থে (২/১২৩) এমন
এক সনদে বর্ণনা করেছেন, যার মধ্যে ইব্রাহীম ইবনু আহমাদ আল-বালখী এবং হাসান ইবনু
রাশীদ আল-মারওয়ায়ী নামক দুই বর্ণনাকারী রয়েছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ হাসান মুনকারুল হাদীস । ইবনু হাজার আসকালানীর “আল-লিসান” গ্রন্থে
এসেছে; উকায়লী বলেনঃ তার হাদীসে সন্দেহ রয়েছে। তিনি মুনকার হাদীস বর্ণনা করতেন।
অতঃপর ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর সেই হাদীসটি উল্লেখ করেছেন যেটিকে ইবনু আবী হাতিম
মুনকার বলেছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ হাদীসটি বাতিল, তার কোন ভিত্তি নেই।
আবু
বাকর আল-ইসমাঈলী বলেনঃ ইবরাহীম ইবনু আহমাদ আল-বালখী ও হাসান ইবনু রাশীদ
আল-মারওয়ায়ী তারা উভয়েই মাজহুল (অপিরিচিত)। অতএব, সুয়ূতীর পক্ষ হতে সমর্থন
সূচক হাদীস রয়েছে এ দাবীকরণ সঠিক নয়। কারণ সেটিও সহীহ নয়।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ নূহ ছিলেন জ্ঞানীদের একজন। আবু হানীফা (রহঃ)-এর ফিকাহ জমা করার
কারণে আল-জামে নামে তার নামকরণ করা হয়। কিন্তু হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন
একজন মিথ্যার দোষে দোষী ব্যক্তি। তার সম্পর্কে আবু আলী নাইসাপূরী বলেনঃ كان كذابا তিনি ছিলেন একজন মিথ্যুক।’
আবু
সাঈদ আন-নাক্কাশ বলেনঃ তিনি জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার সম্পর্কে হাকিম বলেনঃ
সত্যবাদিতা ব্যতীত তাকে সব কিছু দান করা হয়েছিল। আল্লাহর নিকট তার পদস্থলনের জন্য
আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ইবনু হিব্বানও অনুরূপ কথা বলেছেন। হাফিয বুরহান উদ্দীন
হালাবী “কাশফুল হাসীস” গ্রন্থে তাকে হাদীস জালকারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
এছাড়া
হাদীসটির আরো একটি সমস্যা আছে, তা হচ্ছে ইবনু জুরায়েজ কর্তৃক তাদলীস। তিনি একজন
সম্মানিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও মুদল্লিস ছিলেন।
ইমাম
আহমাদ বলেনঃ কিছু কিছু জাল হাদীসকে ইবনু যুরায়েজ মুরসাল হিসাবে চালিয়ে দিতেন।
তিনি কোথা হতে হাদীসটি গ্রহণ করেছেন এ ব্যাপারে বে-পারওয়া ছিলেন । যাহাবীর
“আল-মীযান” গ্রন্থে এমনটিই এসেছে।
দারাকুতনী
বলেনঃ ইবনু যুরায়েজের তাদলীস (শাইখকে গোপন করা) হতে বেঁচে থাকুন। কারণ তিনি
জঘন্যতম তাদলীস করতেন। তিনি তাদলীস করতেন একমাত্র ঐ ব্যক্তি হতে যিনি দোষণীয়।
“আত-তাহযীব”
গ্রন্থেও অনুরূপ বলা হয়েছে।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস
নম্বরঃ ৮০ | 80 | ۸۰
৮০।
মাহাদী হবে আমার চাচা আব্বাসের সন্তানদের থেকে।
হাদীসটি
জাল।
এটিকে
দারাকুতনী “আল-আফরাদ” গ্রন্থে (২/ নম্বর ২৬) উল্লেখ করেছেন। তার থেকে দাইলামী
(৪/৮৪) ও ইবনুল জাওযী “আল-ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে (১৪৩১) মুহাম্মাদ ইবনুল ওয়ালীদ
আল-কুরাশী সূত্রে ... উল্লেখ করেছেন। দারাকুতনী বলেনঃ হাদীসটি গারীব, মুহাম্মাদ
ইবনুল ওয়ালীদ এককভাবে উল্লেখিত সনদে বর্ণনা করেছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ তিনি মিথ্যার দোষে দোষী। ইবনু আদী বলেনঃ كان يضع الحديث তিনি
হাদীস জাল করতেন।' আবু আরবাহ বলেনঃ كذاب তিনি মিথ্যুক।’ ইবনুল জাওযীর
উদ্ধৃতিতে মানাবী একই কারণ দর্শিয়েছেন।
আমি
(আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটি মিথ্যা হওয়ার প্রমাণ এই যে, এটি রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা বিরোধী। তিনি বলেনঃ “মাহদী আমার মেয়ে ফাতিমার সন্তানদের
মধ্য থেকে হবে।" এটিকে আবু দাউদ (২/২০৭-২০৮), ইবনু মাজাহ (২/৫১৯), হাকিম
(৪/৫৫৭), আবু আমর আদানী ও উকায়লী যিয়াদ ইবনু বায়ান সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
১। দ্বিতীয় পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুনঃ
২। তৃতীয় পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুনঃ
৩। চতুর্থ পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুনঃ
২। তৃতীয় পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুনঃ
৩। চতুর্থ পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুনঃ
No comments:
Post a Comment