বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম
সহিহ হাদিস ভিত্তিক
ছালাতে সাহু বা সহো সিজদাহর সহিহ নিয়ম
ছালাতের মধ্যে কোন ফরয রুকন যেমন রুকূ, সিজদা
বা রাক‘আত কমে গেলে এবং ওয়াক্তের মধ্যে স্মরণ হ’লে বাকী অংশ আদায় করে সহো সিজদা দিতে
হবে। পরে স্মরণ হ’লে পুরো ছালাত আদায় করতে হবে (নববী,
আল মাজমূ‘ ৪/৭৭, ৪/১২৫; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৩/১১৪, ১/৬৯৩; শায়খ উছায়মীন, মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১৪/১৭; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৯৩৬ পৃ.)।
ছালাতের কোন ফরয রুকন বেশী হয়ে গেলে যেমন রাক‘আত
বেড়ে গেলে সহো সিজদা দিতে হবে। এই সহো সিজদা দিতে ভুলে গেলে এবং মসজিদের মধ্যে স্মরণ
হ’লে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে। আর ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর স্মরণ হ’লে সহো সিজদা রহিত
হয়ে যাবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২৮; উছায়মীন, আশ-শারহুল
মুমতে‘ ৩/৩৯৭)।
তবে যখনই স্মরণ হবে তখনই সহো সিজদা দেওয়া ভালো
এবং নিরাপদ (ইবনু তায়মিয়াহ, আল ইখতিয়ারাত ৯৪ পৃ.; বিন
বায, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব)।
আর ছালাতের ওয়াজিব যেমন প্রথম তাশাহুদ ইত্যাদি
ছুটে যাওয়ার কারণে ওয়াজিব হওয়া সহো সিজদা দিতে ভুলে গেলে এবং মসজিদে থাকা অবস্থায় তা
স্মরণ হ’লে সহো সিজদা দিবে। আর দেরীতে স্মরণ হ’লে সহো সিজদা রহিত হয়ে যাবে (নববী, আল মাজমূ‘ ৪/১২৫)।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভুলের দু‘টি সাজদার নাম করণ করেছেন ‘‘আল্-মুরগিমাতাইন’’ (শয়তানের
জন্য লাঞ্ছনাকর দু‘টি সিজদা্)।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১০২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন শয়তান তার
কাছে এসে তাতে ধোঁকা দিতে থাকে। এমনকি সে কয় রাক‘আত সালাত আদায় করেছে তা স্মরণ করতে
পারে না। কাজেই তোমাদের কারো এরূপ অবস্থা হলে সে যেন বসা অবস্থায় দু‘টি সিজদা্ আদায়
করে।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১০৩০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৩২, ৬০৮, আধুনিক প্রকাশনী ১১৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১১৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আমাদের সমাজে দেখা যায়, ছালাতে ভুল করলে প্রায়
মুছল্লী তাশাহ্হুদ পড়ে ডান দিকে একবার সালাম ফিরায়। অতঃপর সহো সিজদা দিয়ে আবার তাশাহ্হুদ
পড়ে। এই আমল ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বিশেষ করে একদিকে সালাম ফিরানোর কোন দলীলই
নেই। একেবারেই ভিত্তিহীন। আর সহো সিজদার পর তাশাহ্হুদ পড়া সম্পর্কে মাত্র একটি বর্ণনা
এসেছে। সেটা আবার যঈফ হাদিছ ।
ইমরান ইবনু হুছাইন থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) তাদেরকে নিয়ে ছালাত আদায় করেন এবং ভুল করেন। অতঃপর তিনি দুইটি সিজদা দেন এবং
পুনরায় তাশাহহুদ পড়েন অতঃপর সালাম ফিরান। (সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ১০৩৯)। হাদিসের মানঃ শা'জ।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। (যঈফ আবুদাঊদ ১০৩৯, পৃঃ ৮৩; বিস্তারিত দ্রঃ তানক্বীহ, পৃঃ ৩৩২-৩৫)।
উক্ত হাদীছ ছহীহ হাদীছেরও বিরোধী। কারণ একই
রাবী থেকে ছহীহ বুখারীতে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সেখানে তাশাহ্হুদ পড়ার কথা নেই।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮২, ৭১৪, ৭১৫, ১২২৭,
১২২৯, ৬০৫১, ৭২৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৭৩, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১০১৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
ইমরান ইবনু হুছাইন থেকে বর্ণিত
হাদিসের মানঃ শায
শায হাদিস শাস্ত্রের বিশেষ একটি পরিভাষা। কোনো
হাদিস যদি শায হয় তাহলে তা আর সহিহ হাদিস হতে পারে না।
মুহাদ্দিসদের মতে শায হাদিস বলা হয়, যা কোনো
বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী বর্ণনা করে। তবে তার বর্ণিত হাদিসটির সাথে তার চেয়েও বেশি গ্রহণযোগ্য
কোনো বর্ণনাকারীর বর্ণিত হাদিসের সাথে বৈপরীত্ব ঘটে।
শায দুই প্রকার। একটি হলো, সনদ বা সূত্রের ক্ষেত্রে শায।
আরেকটি হলো, মতন বা হাদিসের মূল টেক্সটের ক্ষেত্রে শায। আবার কখনো কখনো সনদ এবং মতন
উভয় ক্ষেত্রেই শায হতে পারে। (নুযহাতুন নজর, পৃ. ৬৯)।
অতএব উক্ত আমল পরিত্যাগ করতে হবে। ছালাতে তাশাহ্হুদে
বসতে ভুলে গেলে কিংবা রাক‘আত কম-বেশী হলে অথবা রুকূ-সিজদা ছুটে গেলে ভুল সংশোধন করে
নিতে হবে।
সহিহ হাদিস ভিত্তিক সাহু সিজদার সহিহ নিয়ম
প্রথম নিয়মঃ
তাশাহুদ বৈঠক বা শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ, দরূদ
ও দুআ মাছুরাসহ অন্যান্য দোয়া পড়া শেষ হলে আল্লাহু আকবার বলে দুটি সিজদা করবেন। অতঃপর
ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করবেন। এটিই হলো বিশুদ্ধ পদ্ধতি।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু বুহাইনাহ আসাদী (রাযি.) যিনি
বানূ ‘আবদুল মুত্তালিবের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তিবদ্ধ ছিলেন তাঁর হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতে (দু’রাক‘আত আদায় করার পর) না বসে দাঁড়িয়ে
গেলেন। সালাত পূর্ণ করার পর সালাম ফিরাবার পূর্বে তিনি বসা অবস্থায় ভুলে যাওয়া বৈঠকের
স্থলে দু’টি সিজদা সম্পূর্ণ করলেন, প্রতি সিজদায় তাকবীর বললেন। মুসল্লীগণও তাঁর সঙ্গে
এ দু’টি সিজদা করল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ১২৩০,৮২৯,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বৰ্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি তোমাদের কেউ সালাতে এই বলে
সন্দেহ পোষণ করে যে, সে তিন রাক’আত আদায় করেছে না চার রাক’আত, তবে সে যেন সন্দেহকে
পরিত্যাগ করে এবং যার প্রতি নিশ্চিত মনে হবে তার উপর ভিত্তি করে সালাত আদায় করবে।
অতঃপর শেষে সালাম ফিরানোর পূর্বে দু’টো সাহউ সিজদা করবে। ফলতঃ যদি সে পাঁচ রাক’আত আদায়
করে থাকে তাহলে সাহউ সিজদার ফলে তার সালাত জোড়া বানিয়ে দিবে অর্থাৎ ৬ রাক’আত পূর্ণ
হবে। আর যদি সালাত পূর্ণ হয়ে থাকে তবে সাহউ সিজদা দু’টি শয়তানের জন্য নাক ধূলায়
ধূসরিত বা অপমানের কারণ হবে
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১১৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৭১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৯৬, সুনান ইবনু মাজাহ
১২০৪, ১২১০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০২৪, ১০২৬, ১০২৯, নাসায়ী ১২৩৮, ১২৩৯, আহমাদ
১০৬৯৮, ১০৯২৭, ১০৯৯০, ১১০৭৬, ১১০৮৬, ১১১০৭, ১১২৯২, ১১৩৭৩, ১১৩৮৫, ২৭৭৩৫; মুওয়াত্ত্বা
মালিক ২১৪, দারিমী ১৪৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ‘আত্বা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের মধ্যে তোমাদের কেউ যদি
সালাতে এরূপ সন্দেহে পতিত হয় যে, সে তিন রাক‘আত না চার রাক‘আত সালাত আদায় করেছে তা
স্মরণ করতে পারছে না তাহলে সে যেন আরো এক রাক‘আত সালাত আদায় করে নেয় এবং সালাম ফিরানোর
পূর্বে বসা অবস্থায় দু‘টি সিজদা্ আদায় করে। আদায়কৃত অতিরিক্ত এক রাক‘আত যদি পঞ্চম রাক‘আত
হয়ে থাকে তবে এ দু’টি সিজদা্ মিলে তা দু’ রাক‘আত নফল সালাতে পরিণত হবে। আর যদি তা চতুর্থ
রাক‘আত হয়ে থাকে তবে এ সিজদা্ দু’টি শয়তানের জন্য লাঞ্ছনাকর হবে।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১০২৬, মালিক ৬২, দারিমী ১৪৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
দ্বিতীয় নিয়মঃ
সালাত পূৰ্ণ করে সালাম ফিরানোর পর সাহু বা
সহো সিজদা করবেন। অতঃপর আবার ডানে বামে সালাম ফিরাবেন।
সাওবান (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের যেকোন ভুলের জন্য সালাম ফিরানোর পর দু‘টি সিজদা
করতে হয়।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১০৩৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১২১৯, আহমাদ (৫/২৮০), বায়হাক্বী (২/৩৩৭), ইরওয়াউল গালীল (২/৪৭)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
ছালাতে বিভিন্ন ভুলের জন্যে সাহু সিজদাহ
(ক) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
নবী সৃষ্টি সালাত আদায় করলেন। সালাম ফিরানোর
পর তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল! সালাতের মধ্যে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেন:
তা কী? তাঁরা বললেন, আপনি তো এরূপ এরূপ সালাত আদায় করলেন। তিনি তখন তাঁর দু’পা ঘুরিয়ে
কিবলাহমুখী হলেন। আর দু’টি সিজদা আদায় করলেন। অতঃপর সালাম ফিরলেন। পরে তিনি আমাদের
দিকে ফিরে বললেন: যদি সালাত সম্পর্কে নতুন কিছু হতো, তবে অবশ্যই তোমাদের তা জানিয়ে
দিতাম। কিন্তু আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তোমাদের মত
ভুলে যাই। আমি কোন সময় ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সালাত
সম্বন্ধে সন্দেহে পতিত হলে সে যেন নিঃসন্দেহ হবার চেষ্টা করে এবং সে অনুযায়ী সালাত
পূৰ্ণ করে। অতঃপর যেন সালাম ফিরিয়ে দু’টি সিজদা দেয়।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১০২০, ১০২১, ১০২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৪০১, ৪০৪, ১২২৬, ৬৬৭১, ৭২৪৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৭১-৫৭৭, তিরমিযী ৩৯২, ৩৯৩,
নাসায়ী ১২৪০, ১২:৪১, ১২৪২, ১২৫৬, আবূ দাউদ ১২১৯, ১০২০, ১০২২, সুনান ইবনু মাজাহ ১২০৩, ১২০৫, ১২১১-১২, ১২১৮, আহমাদ
৩৫৫৬, ৩৫৯১, ৩৮৭৩, ৩৯৬৫, ৪০২২, দারিমী ১৪৯৮, ইরওয়াহ ৩৩৯ ‘কানযুল ‘উম্মাল’ ১৯৮২৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত,
একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের
সালাত (ভুল বশতঃ) দু’ রাক‘আত আদায় করেই সালাম ফিরালেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, সালাত
কি সংক্ষিপ্ত করে দেয়া হয়েছে? এ কথা শুনে তিনি আরো দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে দু‘টি
সিজদা্ করলেন।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১০১৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭১৫, নাসায়ী ১২২৬, আহমাদ (২/৩৮৬/৪৬৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে (চার রাক‘আত বিশিষ্ট ফারয) সালাত আদায় করতে গিয়ে (ভুল বশতঃ)
দু’ রাক‘আত আদায় করেই সালাম ফিরালেন। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে ইবনু সীরীন বর্ণিত
হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। এতে রয়েছেঃ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সালাম ফিরালেন এবং দুটি সাহু সিজদা্ করলেন। (সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত), ১০১৭, সুনান ইবনু মাজাহ ১২১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত,
তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আসরের তিন রাক‘আত সালাত আদায় করেই সালাম ফিরালেন এবং হুজরায় প্রবেশ
করলেন। তখন লম্বা হাতওয়ালা বিশিষ্ট খিরবাক্ব নামক এক ব্যক্তি উঠে বললেন, হে আল্লাহর
রসূল! সালাত কি কমিয়ে দেয়া হয়েছে? এ কথা শুনে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
রাগান্বিত অবস্থায় চাদর টানতে টানতে বেরিয়ে এসে লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, সে কি সত্য
বলেছে? লোকজন বললো, হাঁ, তখন তিনি অবশিষ্ট এক রাক‘আত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন।
অতঃপর দু‘টি সাহু সিজদা্ দিয়ে পরে সালাম ফিরালেন। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০১৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১২১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আবদুল্লাহ্ ইব্নু বুহাইনাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত,
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের
নিয়ে যুহরের সলাত আদায় করলেন। তিনি প্রথমে দুই রাকাআত পড়ার পর না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন।
মুক্তাদীগন তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। এভাবে সলাতের শেষভাগে মুক্তাদীগন সালামের জন্য
অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসাবস্থায় তাকবীর
বললেন এবং সালাম ফিরানোর পূর্বে দুইবার সাজদাহ্ করলেন, এরপর সালাম ফিরালেন।
৭ জনে (আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসায়ী,
তিরমিযী, ইবনু মাজাহ) এবং শব্দ বিন্যাস বুখারীর। মুসলিমের ভিন্ন একটি বর্ণনায় আছে-
প্রত্যেক সাহু সাজদাহর জন্য উপবিষ্ট অবস্থায় ‘আল্লাহু আকবার’বলতেন
ও সাজদাহ করতেন এবং মুক্তাদীগনও তাঁর সঙ্গে সাজদাহ করতেন, প্রথম তাশাহহুদে ভুল করে
না বসার কারণে এ সাজদাহ দুইটি দিতেন।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৮২৯, ৮৩০, ১২২৪, ১২২৫, ১২৩০, ৬৬৭০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৫৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৫৭০, তিরমিযী ৩৯১, নাসায়ী ১১৭৭, ১১৭৮, ১২২২, ১২২৩, ১২৬১, আবূ দাউদ ১০৩৪, সুনান
ইবনু মাজাহ ১২০৬, ১২০৭, আহমাদ ২২৪১১, ২২৪২১, মুওয়াত্তা মালেক ২০২, ২০৩, ২১৮-২১৯, দারেমী
১৪৯৯, ১৫০০,, আধুনিক প্রকাশনীঃ৭৮৩ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯১, বুলগুল মারাম-৩৩০।) হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
(চ) মু‘আবিয়াহ ইবনু খাদীজ (রহঃ) হতে বর্ণিত,
একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়কালে সালাতের এক রাক‘আত বাকি
থাকতেই সালাম ফিরালেন। এক ব্যক্তি তাঁর নিকট গিয়ে বললো, আপনি এক রাক‘আত সালাত আদায়
করতে ভুলে গেছেন। কাজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসে মসজিদে
প্রবেশ করে বিলাল (রাঃ)-কে ইক্বামাত দিতে বলেন। বিলাল (রাঃ) ইক্বামাত দিলে তিনি লোকদেরকে
নিয়ে এক রাক‘আত সালাত আদায় করলেন।
মু‘আবিয়াহ ইবনু খাদীজ বলেন, আমি এ ঘটনা লোকজনের
নিকট বর্ণনা করলে তারা আমাকে বললো, আপনি কি লোকটিকে চিনেন? আমি বললাম, না, তবে তাকে
দেখলে চিনতে পারবো। পরে সেই লোকটি আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আমি বললাম, ইনিই
সেই লোক। সকলেই তাকে দেখে বললো, ইনি হচ্ছেন তালহা ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ (রাঃ)।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১০২৩, নাসায়ী ৬৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ছ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত,
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাতে সন্দিহান
হলে সে যেন সন্দেহ পরিহার করে নিশ্চিত প্রত্যয়ের উপর ভিত্তি করে স্বীয় সালাত পূর্ণ
করে এবং দু‘টি সাহু সিজদা্ আদায় করে। তার সালাত পূর্ণ হয়ে থাকলে অতিরিক্ত এক রাক‘আত
ও দু’টি সিজদা্ নফল হিসেবে গণ্য হবে। আর সালাত কম হয়ে থাকলে উক্ত এক রাক‘আত সহ তা পূর্ণ
হবে এবং দু’টি সিজদা্ শয়তানের জন্য অপমানকর হবে।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১০২৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১২১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৫৭১, তিরমিযী ৩৯৬, নাসায়ী ১২৩৭-৩৯, আবূ দাঊদ ১০২৪, ১০২৬, ১০২৯; আহমাদ ১০৬৯৮, ১০৯২৭,
১০৯৯০, ১১০৭৬, ১১০৮৬, ১১১০৭, ১১২৯২, ১১৩৭৩, ১১৩৮৫, ২৭৭৩৫; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২১৪, দারিমী
১৪৯৫, সহীহাহ ১৩৯২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(জ) মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত,
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’ রাক‘আতের পরে ইমাম দাঁড়িয়ে
গেলে এবং সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পূর্বেই তার স্মরণ হলে তিনি বসে যাবেন; কিন্তু সোজা হয়ে
দাঁড়িয়ে গেলে তিনি বসবেন না, বরং সাহু সিজদা্ আদায় করবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৩৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১২০৮, আহমাদ (৪/২৫৩,
২৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যান্য সিজদাহসমূহ
মুফাস্সাল সূরাগুলোতে তিলাওয়াতে সাজদাহ রয়েছেঃ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা “ইযাস্-সামা-উন্-শাক্কাত”
ও “ইক্রা বিস্মে রাব্বেকা” সূরাদ্বয়ে সাজদাহ করেছি।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৬৬, ৭৬৮, ১০৭৪, ১০৭৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৭৮,
সুনান ইবনু মাজাহ ১০৫৮, ১০৫৯, তিরমিযী ৫৭৩, নাসায়ী ৯৬১, ৯৬২, ৯৬৩, ৯৬৫, ৯৬৬, ৯৬৭, ৯৬৮,
আবূ দাঊদ ১৪০৭, ১৪০৮, আহমাদ ৭১০০, ৭৩২৪, ৭৩৪৮, ৭৭২০, মুওয়াত্তা মালেক ৪৭৮, দারেমী ১৪৬৮,
১৪৬৯, ১৪৭০, ১৪৭১, বুলগুল মারাম ৩৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
সূরা সোয়াদ-এ তিলাওতে সাজদার বিধানঃ
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সূরাহ্ স-দ এর সাজদাহ্ অত্যাবশ্যক
সাজদাহ্ সমূহের মধ্যে গণ্য নয়। তবে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমি
তা তিলাওয়াতের পর সাজদাহ্ করতে দেখেছি।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১০৬৯, তিরমিযী ৫৭৭, নাসায়ী ৯৫৭, আবূ দাঊদ ১৪০৯, আহমাদ ২৫১৭, ৩৩৭৭, ৩৪২৬, দারেমী ১৪৬৭,
বুলগুল মারাম ৩৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
সূরা আন্-নাজম এর সাজদাহ এর বিধানঃ
(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ্ ওয়ান্-নাজ্ম তিলাওয়াতের পর সিজদা্ করেন এবং তাঁর সাথে সমস্ত
মুসলিম, মুশরিক, জ্বিন ও ইনসান সবাই সিজদা্ করেছিল। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৭১, ৪৮৬২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১০১০, তিরমিযী ৫৭৫, বুলগুল মারাম-৩৪১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ।
(খ) যায়দ বিন সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন- আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)-কে সূরা “আন্-নাজ্ম” পড়ে শুনিয়েছিলাম- তিনি তাতে সাজদাহ করেননি।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১০৭২, ১০৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৭৭, আহমাদ ২১৬৪৭,
২১৬৭৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০১১, তিরমিযী ৫৭৬, নাসায়ী ৯৬০,
আবূ দাঊদ ১৪০৪, দারেমী ১৪৭২, বুলগুল মারাম-৩৪২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ।
তিলাওয়াতের সাজদাহ এর বিধানঃ
‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি
এক জুমু‘আহর দিন মিম্বরে দাঁড়িয়ে সুরা নাহল তিলাওয়াত করেন। এতে যখন সিজদার আয়াত এল,
তখন তিনি মিম্বর হতে নেমে সিজদা্ করলেন এবং লোকেরাও সিজদা্ করল। এভাবে যখন পরবর্তী
জুমু‘আহ এল, তখন তিনি সে সূরাহ্ পাঠ করেন। এতে যখন সিজদার আয়াত এল, তখন তিনি বললেন,
হে লোক সকল! আমরা যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করি, তখন যে সিজদা্ করবে সে ঠিকই করবে,
যে সিজদা্ করবে না তার কোন গুনাহ নেই। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ১০৭৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০১৬, বুলগুল মারাম-৩৪৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ।
খুশির সংবাদ পেয়ে কৃতজ্ঞতার সিজদাহ দেওয়া শরীয়তসম্মতঃ
(ক) আবু বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
নিকট যখন কোন খুশীর খবর পৌঁছত তখন তিনি আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশে সাজদা
করতেন।”
(সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৯৪, আবূ
দাউদ ২৭৭৪, বুলগুল মারাম-৩৪৭)। হাদিসের মানঃ হাসান।
(খ) আবদুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) সাজদাহ করেছিলেন এবং তা দীর্ঘ করেছিলেন- তারপর তার মাথা উঠিয়ে বলেছিলেন-
আমার নিকট জিবরাইল ‘আলাইহিস সালাম এসেছিলেন ও আমাকে শুভ সংবাদ দান করেছিলেন, ফলে আমি
আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায়ের নিমিত্তে সাজদাহ করলাম।
(আহমাদ ১/৯১ হাকিম ১/৫৫০, বুলগুল
মারাম-৩৪৮। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(গ) বারাআ বিন আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী
(রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠিয়েছিলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন,
‘আলী (রাঃ) নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পত্রদ্বারা ইয়ামেনবাসীদের
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সংবাদ জানিয়েছিলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত
পত্র পাঠান্তে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপনের উদ্দেশে সাজদাহ করলেন। (বাইহাকী ২/৩৬৯, বুলগুল মারাম-৩৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
প্রিয় মুছল্লীবৃন্দঃ রাসুল সাঃ যেভাবে সালাত
আদায় করেছেন এবং সাহাবাগণ যেভাবে রাসুল সাঃ-কে অনুসরন করেছেন ঠিক সেভাবেই আমাদেরকেও
অনুসরন করতে হবে। কালের বিবর্তনে সালাতের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং মনগড়া
সালাতের পদ্ধতি বানিয়ে অনেকে বাজারে বই প্রকাশ করেছে। সেইসব বই পড়ে অনেকে নিজেদের আমল
নষ্ট করেছেন। এখনো সময় আছে আপনারা সহিহ বিষয়টি গ্রহণ করে নিজেদের আমল সংশোধন করুন।
নইলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করেও জাহান্নামে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে সহিহ পথে চলার
তৌফিক দান করুন। আমিন।
(সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কুরআন
ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক
করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment