বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
ঈমান ধ্বংস হওয়ার প্রধান ১০টি কারনঃ
কোরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক আরো বিষয় জানতে এদের
উপর ক্লিক করুনঃ
১৬। কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের
প্রশ্নোত্তরঃ
১৭। জাল হাদিসের কবলে বাংলাদেশের আলেম সমাজ (২০০০টি জাল ও জঈফ হাদিস)ঃ
১৭। জাল হাদিসের কবলে বাংলাদেশের আলেম সমাজ (২০০০টি জাল ও জঈফ হাদিস)ঃ
ঈমান ধ্বংস হওয়ার প্রধান
১০টি কারনঃ
ভূমিকাঃ
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে ইসলামের সুশীতল
ছায়াতলে আশ্রয় নেওয়ার এবং একে আকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে কেউ এমন কাজ না
করে, যা তাকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। এ ব্যাপারে দাওয়াত দেওয়ার জন্যই
আল্লাহ তা‘আলা অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমি
প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর
এবং ত্বাগূত[1] কে পরিহার কর। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যককে আল্লাহ হেদায়াত
করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্য বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল’ (নাহল ৩৬)। সুতরাং
যারা নবীদের অনুসরণ করবে তারা সৎপথ পাবে। আর যারা তাঁদের অনুসরণ করবে না কিংবা অবাধ্যতা
বা বিরোধিতা করবে তারা পথভ্রষ্টতায় নিপতিত হবে। এছাড়াও এমন কিছু কাজ-কর্ম রয়েছে,
যা মুসলমানের ঈমান ধ্বংস করে দেয়, তাকে ‘মুরতাদে’ পরিণত করে তথা ইসলাম থেকে খারিজ
করে দেয়। মুরতাদ হওয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে ও ছহীহ হাদীছ সমূহে অসংখ্য
সাবধান বাণী পরিলক্ষিত হয়। মুরতাদ তথা ধর্মত্যাগীদের ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম একমত
যে, এটা হত্যাযোগ্য অপরাধ এবং তার মাল-সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া ইসলামী রাষ্ট্রের শাসকের
জন্য বৈধ।
ইসলাম থেকে খারিজ হওয়ার বা ঈমান বিনষ্ট হওয়ার
কারণ অনেক। তন্মধ্যে দশটি কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হ’লঃ
১. আল্লাহর ইবাদতে শরীক বা অংশীদার স্থাপন করা।
আল্লাহর ইবাদতে শরীক বা অংশীদার স্থাপন
বিভিন্নভাবে হ’তে পারে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-
(ক) ইবাদত পাওয়ার একমাত্র উপযুক্ত সত্তা
আল্লাহ তা‘আলাকে না মেনে তাঁর সাথে আরো কাউকে যোগ্য বলে মনে করা। অথচ আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,‘আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির কর না। তাহ’লে নিন্দিত ও
(আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে) বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’ (বানী ইসরাঈল
৩৯)।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ‘আল্লাহর
সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির করো না। তাহ’লে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে’ (বানী
ইসরাঈল ২২)। তিনি আরো বলেন, ‘যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, যার
কোন সনদ তার কাছে নেই, তার হিসাব তার পালনকর্তার নিকটে রয়েছে। নিশ্চয়ই কাফিররা
সফলকাম হবে না’ (মুমিনূন ১১৭)।
নবীদেরকেও এ ব্যপারে আল্লাহ তা‘আলা সতর্ক
করে দিয়ে বলেন ‘(হে নবী!) আপনি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকবেন না। তাহ’লে
আপনি শাস্তিতে নিপতিত হবেন’ (শু‘আরা ২১৩)। উল্লেখিত আয়াতে নবী করীম (ছাঃ)-কে
জাহান্নামের ভয় দেখানো হয়েছে। অথচ নবীদের জাহান্নামী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
সুতরাং এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, যারা পীর, অলী-আওলিয়া বা কোন কবরবাসীকে ডাকে, তাদের
ইবাদত করে, তারা ঈমান হারাবে এবং জাহান্নামী হবে। কারণ উক্ত কাজ স্পষ্ট শিরক। আর এ
ধরনের শিরক মুমিনকে ঈমানহীন করে দেয়।
(খ) মৃতব্যক্তির নিকট কিছু চাওয়া বা অনিষ্ট
থেকে বাঁচার জন্য দো‘আ করা শিরকে আকবার তথা বড় শিরক। কোন মুমিন যদি এ কাজ করে তবে
তার ঈমান বিনষ্ট হয়ে যাবে। কারণ ভাল-মন্দ দেওয়া, না দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ
তা‘আলা। তিনি বলেন,‘(হে নবী!) আপনি বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্ত্তর
ইবাদত কর, যে তোমাদের অপকার ও উপকার করার ক্ষমতা রাখে না। অথচ আল্লাহ সব শুনেন ও
জানেন’ (মায়েদাহ ৭৬)। আল্লাহর নবী (ছাঃ) নিজেই নিজের উপকার-অপকার করতে পারতেন না
বলে কুরআনে প্রমাণ মিলে। সেখানে অন্যদের মাধ্যমে কি করে উপকার আশা করা যায়? আল্লাহ
তা‘আলা বলেন, ق ‘(হে নবী!) আপনি বলে
দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই কিন্তু আল্লাহ যা
চান’ (আ‘রাফ ১৮৮)।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,‘(হে নবী!) বলুন,
তবে কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত এমন অভিভাবক স্থির করেছ, যারা ভাল ও মন্দের মালিকও নয়’
(রা‘দ ১৬)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যদি তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি
ব্যতীত তা অপসারণকারী কেউ নেই। পক্ষান্তরে যদি তিনি তোমার মঙ্গল করেন, তবে তিনি সব
কিছুর উপর ক্ষমতাবান। তিনিই তার বান্দার উপর পরাক্রান্ত’ (আন‘আম ১৭-১৮)।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, তোমরা
ভেবে দেখেছ কি যদি আল্লাহ আমার অনিষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তবে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত
যাদেরকে ডাক, তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি রহমত করার
ইচ্ছা করলে তারা কি সে রহমত রোধ করতে পারবে? বলুন, আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট।
(প্রকৃত পক্ষে) নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে’ (যুমার ৩৮)। অন্যত্র তিনি
বলেন, ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে কত উপাস্য গ্রহণ করেছে,
যারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না বরং তারা নিজেরাই
সৃষ্ট। তারা নিজেদের ভালও করতে পারে না মন্দও করতে পারে না। আর জীবন, মরণ ও
পুনরুজ্জীবনের মালিকও তারা নয়’ (ফুরক্বান ৩)। তিনি আরো বলেন,আপনি মৃতদেরকে ডাক শুনাতে
পারবেন না এবং বধিরকেও নয়, যখন তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যায়’ (নামল ২৭)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর
আটিরও অধিকারী নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। শুনলেও
তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। ক্বিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শিরক অস্বীকার করবে।
বস্ত্ততঃ আল্লাহর ন্যায় তোমাকে কেউ অবহিত করতে পারবে না’ (ফাতির ১৩-১৪)।
(গ) মৃতব্যক্তির নিকট সাহায্য চাওয়া বা কাউকে
বান্দা নেওয়াজ, গরীবে নেওয়াজ, গাওছুল আযম (সর্বোচ্চ সহযোগিতাকারী) মনে করাও বড়
গুনাহের অন্তর্ভুক্ত, যা মানুষকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। মহান আল্লাহ
বলেন, إِ - ‘তোমরা তো আল্লাহর
পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে
যাদের ইবাদত করছ, তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর কাছে রিযিক তালাশ
কর, তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত
হবে’ (আনকাবূত ১৭)। আল্লাহ পাক আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে এমন
বস্ত্তর পূঁজা করে, যে ক্বিয়ামত পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দেবে না, তার চেয়ে অধিক
পথভ্রষ্ট আর কে? তারাতো তাদের পূঁজা সম্পর্কেও বেখবর’ (আহকাফ ৫)।
কোন কিছু চাইতে হ’লে কেবল আল্লাহর কাছে
চাইতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তুমি কোন কিছু চাইবে তখন আল্লাহর
কাছেই চাইবে। আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে তখন আল্লাহর কাছেই করবে’।[2]
সাহায্য চাওয়ার দু’টি অবস্থা হ’তে পারে। একটি
‘দো‘আ’ অপরটি ‘ইস্তিগাছা’। সাধারণভাবে সর্বাবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার নাম
হচ্ছে ‘দো‘আ’। আর দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় আল্লাহর কাছে দো‘আ করার নাম হচ্ছে
‘ইস্তিগাছা’। সুতরাং ইস্তিগাছা শব্দ সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা এবং
তাদের নামের সাথে ‘গাওছুল আযম’ ব্যবহার করা জায়েয নয়। এসব কেবল আল্লাহর জন্য হওয়াই
বাঞ্ছনীয়। তিনিই দো‘আকারীর ডাকে সাড়া দেন। তিনিই বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে বিপদ থেকে
উদ্ধার করেন।[3]
(ঘ) আল্লাহ ব্যতীত মৃত বা জীবিত কারো নামে
মানত করা শিরক। গায়রুল্লাহর নামে মানত করলে ঐ মানত পূর্ণ করা যাবে না। আয়েশা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আললাহর আনুগত্যের
কাজে মানত করে, সে যেন তা পূরা করার মাধ্যমে তার আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি
আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মানত করে, সে যেন তার নাফরমানী না করে। (অর্থাৎ মানত
পূরা না করে)।[4] নযর বা মানত করা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হবে, যদি তা একমাত্র
আল্লাহর উদ্দেশ্যে হয়। আর আল্লাহর নামে মানত করলে তা আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহ ছাড়া
অন্যের নামে মানত করলে তা শিরক হবে। বিধায় তা পূর্ণ করা হারাম। এরূপ মান্নতের নিয়ত
করে থাকলে তা ত্যাগ করতে হবে এবং তওবা করতে হবে।[5]
অনেকে কবরে মোমবাতি, তেল, আগরবাতি,
টাকা-পয়সা, গরু-খাসি, মোরগ-মুরগী, কবুতর ইত্যাদি মানত করে। তারা মনে করে এর
মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য হাছিল হবে, রোগমুক্তি হবে, হারানো ব্যক্তিকে ফিরে পাবে,
মালের নিরাপত্তা লাভ হবে, নিঃসন্তানের সন্তান হবে ইত্যাদি। এসবই শিরক-এর অন্তর্ভুক্ত।
নবীগণ সবচেয়ে সম্মানী ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়া সত্যেও তাঁদের কবর সমূহে কোন নযরানা,
মানত দেওয়া হয় না। এ ধরনের মানত, নযরানা তারা কবরবাসীর সম্মান ও বরকতের জন্যই করে
থাকে এবং তাদের ধারণা এর দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাছিল হবে। যেমন মক্কার মুশরিকদের
ধারণা ছিল। তারা বলত, ‘তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দিবে বলেই আমরা
তাদের ইবাদত করি’ (যুমার ৩)। এমনকি যেখানে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পূজা করা হ’ত
সেখানেও আল্লাহর নামে মানত করা হারাম। বর্তমানে সেখানে পূজা চলুক বা না চলুক।
ছাবিত বিন আয-যাহহাক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসূলের যুগে
‘বুয়ানা’ নামক স্থানে একটি উট কুরবানী করার মানত করল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে
জিজ্ঞেস করলেন, ‘সে স্থানে এমন কোন মূর্তি ছিল কি, জাহেলী যুগে যার পূজা করা হত’?
ছাহাবায়ে কেরাম বললেন, না। তিনি বললেন ‘সে স্থানে কি তাদের কোন উৎসব বা মেলা
অনুষ্ঠিত হ’ত’? তাঁরা বললেন, না। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি তোমার মানত পূর্ণ
কর। কেননা আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মানত পূর্ণ করা যাবে না। আদম সন্তান যা করতে
সক্ষম নয়, এমন মানতও পুরা করা যাবে না’।[6]
(ঙ) যে স্থানে মুশরিকরা তাদের দেব-দেবীর
উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করে সে স্থানটি শিরকের নিদর্শনে পরিণত হয়। কারণ এর দ্বারা
তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেব-দেবীর নৈকট্য লাভ করা এবং আল্লাহর সাথে শরীক করা।
একারণেই যদি কোন মুসলমান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়তেও উক্ত স্থানে পশু যবেহ করে,
তবুও তা হবে মুশরিকদের অনুরূপ কাজ। মুশরিকদের দৃষ্টিতে তাদের পুণ্যময় স্থানের
অংশীদার। মুশরিকদের কোন কাজের সাথে বাহ্যিক বা আভ্যন্তরীণ মিল তাদের প্রতি
আসক্তিরই নামান্তর।[7] মৃতব্যক্তির নামে কোন কিছু যবেহ করাও হারাম। মহান আল্লাহ
বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃতপ্রাণী, রক্ত, শূকরের গোশত, যেসব
জন্তু আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়’। একটু পরেই বলেন, ‘যে জন্তু
যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বণ্টন করা হয় (তাও
হারাম)। এসব পাপ কাজ’ (মায়েদাহ ৩)।
এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘(১)
যে ব্যক্তি নিজ পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয় তার উপর আল্লাহর লা‘নত (২) যে ব্যক্তি
গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু-প্রাণী যবেহ করে তার উপর আল্লাহর লা‘নত (৩) যে ব্যক্তি
কোন বিদ‘আতীকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহর লা‘নত (৪) যে ব্যক্তি জমির সীমানা
পরিবর্তন করে, তার উপর আল্লাহর লা’নত’।[8]
উল্লিখিত বিষয় সমূহ সুস্পষ্ট রূপে শিরকে
আকবর, যা থেকে বিরত থাকা একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলা শিরকের ব্যাপারে
বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না। তবে অন্যান্য
গুনাহ ক্ষমা করতে পারেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত
হয়’ (নিসা ১১৬)। অন্যত্র তিনি বলেন,
‘নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে
আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার আবাসস্থল হয় জাহান্নাম। আর
যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (মায়েদাহ ৭২)।
ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা অবস্থায়
মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।[9]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,-
‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে
থাক। ছাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ঐ ধ্বংসাত্মক
জিনিসগুলো কি? তিনি জবাবে বললেন, (১) ‘আললাহর সাথে শিরক করা, (২) যাদু করা, (৩)
অন্যায়ভাবে এমন কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন, (৪) সূদ
খাওয়া, (৫) ইয়াতীমের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করা, (৬) ধর্মযুদ্ধ কালীন সময়ে (রণক্ষেত্র)
থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করা, (৭) সতী-সাধ্বী উদাসীনা মুমিন নারীদের প্রতি
মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা’।[10]
আবু বকর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সমূহের কথা বলব না?
ছাহাবীগণ বললেন, নিশ্চয়ই বলুন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন
বললেন, ‘আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া...’।[11]
জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন শিরক করা ব্যতীত আল্লাহর সাথে
সাক্ষাৎ করবে (মৃত্যুবরণ করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি শিরক করা
অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।[12]
আল্লাহ তা‘আলা নবী করীম (ছাঃ)-কেও শিরক
থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বললেন এভাবে,‘যদি তুমি শিরক কর, তবে তোমার সমস্ত আমল
অবশ্যই বাতিল হয়ে যাবে এবং নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (যুমার ৬৫)।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন আমল
করে যে আমলে আমার সাথে অন্যকে শরীক করেছে, এমন আমল ও যাকে সে শরীক স্থাপন করেছে,
আমি উভয়ই প্রত্যাখ্যান করি।[13]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. ওমর বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, ‘ত্বাগূত অর্থ হ’ল শয়তান’।
ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রহঃ)-এর মতে, ইবাদত, অনুসরণ ও আনুগত্যের দিক দিয়ে মা‘বূদ
(আল্লাহ)-কে ত্যাগ করে অন্যের ইবাদত করা। ঐ জাতিকেও ত্বাগূত বলা হয়, যারা আল্লাহ ও
রাসূল (ছাঃ)-এর বিধান ব্যতীত অন্যের তৈরী বিধান দ্বারা ফায়ছালা করে’। দ্রঃ ফাতহুল
মাজীদ ১৯ পৃঃ।
[2]. তিরমিযী হা/২৫১৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৫৭।
[3]. তাওহীদের মর্মকথা পৃঃ ৭৩ (টীকা)।
[4]. বুখারী হা/৬৬৯৬।
[5]. ফাতহুল মাজীদ ১৩৬ পৃঃ।
[6]. আবূদাঊদ হা/৩৩১৫; ইবনু মাজাহ হা/২১৩০, সনদ ছহীহ।
[7]. তাওহীদের মর্মকথা, ৬৬ পৃঃ টীকা দ্রঃ।
[8]. মুসলিম হা/১৯৭৮; মিশকাত হা/৪০৭০।
[9]. বুখারী হা/৪৪৯৭।
[10]. বুখারী হা/৬৮৫৭; মুসলিম হা/৮৯।
[11]. বুখারী হা/৬৯৭৬; মুসলিম হা/৮৭।
[12]. মুসলিম হা/৯৩।
[13]. মুসলিম হা/৭৬৬৬; মিশকাত হা/৫৩১৫।
[2]. তিরমিযী হা/২৫১৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৫৭।
[3]. তাওহীদের মর্মকথা পৃঃ ৭৩ (টীকা)।
[4]. বুখারী হা/৬৬৯৬।
[5]. ফাতহুল মাজীদ ১৩৬ পৃঃ।
[6]. আবূদাঊদ হা/৩৩১৫; ইবনু মাজাহ হা/২১৩০, সনদ ছহীহ।
[7]. তাওহীদের মর্মকথা, ৬৬ পৃঃ টীকা দ্রঃ।
[8]. মুসলিম হা/১৯৭৮; মিশকাত হা/৪০৭০।
[9]. বুখারী হা/৪৪৯৭।
[10]. বুখারী হা/৬৮৫৭; মুসলিম হা/৮৯।
[11]. বুখারী হা/৬৯৭৬; মুসলিম হা/৮৭।
[12]. মুসলিম হা/৯৩।
[13]. মুসলিম হা/৭৬৬৬; মিশকাত হা/৫৩১৫।
২. যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে কাউকে
মাধ্যম তৈরী করে তাদেরকে ডাকে এবং তাদের নিকট শাফা‘আত কামনা করে।
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে কাউকে
মাধ্যম তৈরী করে তাদেরকে ডাকে এবং তাদের নিকট শাফা‘আত কামনা করে, সে মুরতাদ হয়ে
যাবে। কারণ শাফা‘আতের একমাত্র মালিক আল্লাহ। তিনি বলেন,‘বলুন, সমস্ত সুফারিশ
আল্লাহরই আয়াত্ত্বাধীন, আসমান ও যমীনে তাঁরই সাম্রাজ্য’ (যুমার ৪৪)।
এক শ্রেণীর লোক আল্লাহকে ছেড়ে অন্যের
ইবাদত করে এবং তাদেরকে সুফারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করে। অথচ তাদের সুফারিশ করার কোন
ক্ষমতা নেই। আল্লাহ বলেন, ‘তারা উপাসনা করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্ত্তর,
যা না তাদের কোন ক্ষতিসাধন করতে পারে, না পারে উপকার করতে এবং তারা বলে, এরা তো
আল্লাহর কাছে আমাদের সুফারিশকারী। তুমি বল, তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ে অবহিত
করছ, যে বিষয়ে তিনি অবহিত নন আসমান ও যমীনের মাঝে’ (ইউনুস ১৮)।
আল্লাহ ছাড়া অন্যের উপর ভরসা করা কুফরী।
যেমন কোন পীর, অলী-আউলিয়া, জীবিত বা মৃত কোন বুযুর্গ বা বিশেষ কোন ব্যক্তির উপর
ভরসা করে কোন কাজ শুরু করা। কেউ যদি গুরু সহায়, খাজা ভরসা, ফাতেমা সহায়, রাসূল
ভরসা ইত্যাদি বলে তাহ’লে শিরক হবে। একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা রাখতে হবে, অন্যথা
ঈমান বিনষ্ট হবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে ঈমানদারদের বিশেষ গুণ হিসাবে
তাঁর উপর ভরসা রাখার কথা বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা মুমিন
হয়ে থাক তবে আল্লাহর উপর ভরসা কর’ (মায়েদাহ ২৩)। তিনি আরও বলেন, ‘যদি তোমরা
আল্লাহর উপর ঈমান এনেই থাক এবং যদি মুসলিম হয়ে থাক, তবে আল্লাহর উপর ভরসা কর’
(ইউনুস ৮৪)। মহান আল্লাহ নবী করীম (ছাঃ)-কে শিখিয়ে দিয়েছেন, ‘বলুন, (হে নবী!)
আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে’ (যুমার ৩৮)।
৩. যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি মুশরিকদেরকে কাফির
মনে না করে অথবা তাদের কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তাদের মতবাদসমূহ সঠিক
মনে করে।
যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি মুশরিকদেরকে কাফির মনে
না করে অথবা তাদের কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তাদের মতবাদসমূহ সঠিক মনে
করে। মহান আল্লাহ বলেন,‘নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র’ (তওবা ২৮)। মুশরিক সম্প্রদায়
অপবিত্র হওয়ার পর কি করে তাদের মতবাদ গ্রহণীয় হ’তে পারে? তিনি আরও
বলেন, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ছাঃ) মুশরিকদের থেকে মুক্ত’ (তওবা ৩)। অর্থাৎ
মুশরিকদের ব্যাপারে আল্লাহর কোন দায়দায়িত্ব নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই
আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে এবং শিরক করে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী এবং
এরাই সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্ট সৃষ্টি’ (বায়্যিনাহ ৬)। যার কারণেই আল্লাহ এদের সাথে
বিবাহ পর্যন্ত হারাম ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
‘তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ কর না,
যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য মুসলিম ক্রীতদাসী মুশরিক নারী অপেক্ষা
উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভাল লাগে। তোমরা কোন মুশরিক পুরুষের সঙ্গে বিবাহ
বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত না সে ঈমান আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন
মুশরিকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা জাহান্নামের দিকে
আহবান করে’ (বাক্বারাহ ২২১)।
৪. যদি কোন মুসলিম নবী করীম (ছাঃ)-এর দেখানো পথ
ব্যতীত অন্য কোন পথ পরিপূর্ণ অথবা ইসলামী হুকুমাত বা বিধান ব্যতীত অন্য কারো তৈরী
হুকুমাত উত্তম মনে করে, তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে।
যদি কোন মুসলিম নবী করীম (ছাঃ)-এর দেখানো পথ
ব্যতীত অন্য কোন পথ পরিপূর্ণ অথবা ইসলামী হুকুমাত বা বিধান ব্যতীত অন্য কারো তৈরী
হুকুমাত উত্তম মনে করে, তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি এই
বিশ্বাস করে যে, মানুষের তৈরী আইন ও বিধান ইসলামী শরী‘আত থেকে উত্তম বা ইসলামের
সমান, মানব সৃষ্ট বিধান দিয়ে বিচার-ফায়ছালা জায়েয, ইসলামী হুকুমাত বিংশ শতাব্দীর
জন্য প্রযোজ্য নয়, ইসলামই মুসলমানদের পিছিয়ে পড়ার কারণ, ইসলামের সাথে পরকালীন
সম্পর্ক, দুনিয়াবী কোন সম্পর্ক নেই- ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমতে উক্ত বিষয়গুলো কুফরীর
শামিল। কারণ এটা হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল করার হীন প্রচেষ্টা মাত্র।[14]
আল্লাহ বলেন, ‘তারা (ইহুদী-খ্রীষ্টানরা) তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদেরকে
তাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে আল্লাহ ব্যতিরেকে’ (তওবা ৩১)।
ইহুদী-খৃষ্টান পন্ডিত ও ধর্ম জাযকদের
মা‘বূদ (প্রভু) সাব্যস্ত করা অর্থ তাদেরকে প্রভু হিসাবে গ্রহণ করা নয়, বরং তারা সর্বাবস্থায়
যাজক শ্রেণীর আনুগত্য করে থাকে। যদিও তারা আল্লাহ প্রদত্ত হালালকে হারাম এবং
হারামকে হালাল করে দেয়। এধরনের আনুগত্য তাদেরকে প্রভু সাব্যস্ত করারই নামান্তর। আর
এটা হ’ল প্রকাশ্য কুফরী।[15]
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফায়ছালা পরিত্যাগ
করা কোন মুমিনের জন্য জায়েয হ’তে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর
রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার
নারী-পুরুষের সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার
নেই। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে’
(আহযাব ৩৬)। সুতরাং আল্লাহ কর্তৃক কোন বিষয় নির্ধারিত হ’লে তা পরিবর্তন করার
এখতিয়ার কারও নেই।
[14]. ফাতাওয়া আল-মারআতুল মুসলিমা ১/১৩৭ পৃঃ।
[15]. তাফসীরে মা‘রেফুল কোরআন ৫৬৭ পৃঃ।
[15]. তাফসীরে মা‘রেফুল কোরআন ৫৬৭ পৃঃ।
৫. যদি কোন মুসলমান আল্লাহর নবী (ছাঃ)-এর আনিত
বিধানের কোন অংশকে অপসন্দ করে তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে, যদিও সে ঐ বিষয়ে
আমল করে।
যদি কোন মুসলমান আল্লাহর নবী (ছাঃ)-এর আনিত
বিধানের কোন অংশকে অপসন্দ করে তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে, যদিও সে ঐ বিষয়ে
আমল করে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর যারা কাফির তাদের জন্য রয়েছে
দুর্গতি এবং তিনি তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দিবেন। এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল
করেছেন, তারা তা পসন্দ করে না। অতএব তাদের কর্মসমূহ আল্লাহ ব্যর্থ করে দিবেন’
(মুহাম্মাদ ৮-৯)। এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, আমল সমূহ বাতিল হওয়ার অন্যতম কারণ
আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় অপসন্দ করা। উক্ত বিষয় আমল করলেও অপসন্দ করার কারণে ইসলাম
থেকে খারিজ হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা পূর্ব থেকেই বিভেদ সৃষ্টির
সুযোগ সন্ধানে ছিল এবং আপনার কার্য সমূহ উলট-পালট করে দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সত্য
প্রতিশ্রুতি এসে গেল এবং জয়ী হ’ল আল্লাহর হুকুম, যে অবস্থায় তারা অপসন্দ করল’
(তওবা ৪৮)।
৬. যদি কোন মুসলিম মুহাম্মাদ (ছাঃ) আনিত ধর্মের
কোন বিষয়ে অথবা ধর্মীয় ছওয়াব বা শাস্তির ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে তবে সেও
কাফির হয়ে যাবে।
যদি কোন মুসলিম মুহাম্মাদ (ছাঃ) আনিত ধর্মের কোন
বিষয়ে অথবা ধর্মীয় ছওয়াব বা শাস্তির ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে তবে সেও কাফির
হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে তাঁর
হুকুম-আহকামের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, ঈমান আনার
পর তোমরা যে কাফির হয়ে গেছ’ (তওবা ৬৫-৬৬)। যারা ইসলাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে
তাদের আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের কোন আশা নেই। আল্লাহ বলেন, ف
‘সুতরাং যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে
ব্যতিব্যস্ত করে রাখি’ (ইউনুস ১১)। এ ধরনের লোকদের সাথে উঠাবসা, চলাফেরা ত্যাগ
করতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা উক্ত আচরণ পরিত্যাগ না করে। মহান আল্লাহ বলেন,
‘আর কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই
হুকুম জারী করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহর আয়াত সমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও
বিদ্রূপ করতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গ
পরিবর্তন করে। অন্যথা তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদেরকে
জাহান্নামে একই জায়গায় সমবেত করবেন’ (নিসা ১৪০)। এরূপ ব্যক্তিদের আল্লাহ নির্বোধ
বলে ঘোষণা করেন এবং তাদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করতেও নিষেধ করেন। তিনি বলেন,
‘হে মুমিনগণ! আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে
যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফিরদেরকে
বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও। আর যখন তোমরা ছালাতের
জন্য আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা মনে করে। কারণ তারা নির্বোধ’ (মায়েদাহ
৫৭-৫৮)। উপহাস করা মুনাফিকদের আলামত হিসাবে আল্লাহ রাববুল আলামীন উল্লেখ করেন,‘আর
তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের
শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি, আমরাতো
(মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্র’ (বাক্বারাহ ১৪)। উল্লিখিত আয়াত সমূহে ধর্মে
ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও উপহাসকারীকে জাহান্নামী, নির্বোধ ও মুনাফিকদের সাথে তুলনা করা
হয়েছে এবং এদের সাথে চলাফেরা, উঠাবসাও সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করা হয়েছে।
৭. যদি কেউ যাদুর মাধ্যমে ভাল কিছু অর্জন বা
মন্দ কিছু বর্জন করতে চায় অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক স্থাপন বা ভাঙ্গন
ধরাতে গোপন, প্রকাশ্য, মন্ত্র-তন্ত্র করতে চায় অথবা কারো সাথে (ছেলে-মেয়ে) সম্পর্ক
স্থাপন বা বন্ধুত্বে ফাঁটল ধরাতে চায়।
যদি কেউ যাদুর মাধ্যমে ভাল কিছু অর্জন বা মন্দ
কিছু বর্জন করতে চায় অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক স্থাপন বা ভাঙ্গন ধরাতে
গোপন, প্রকাশ্য, মন্ত্র-তন্ত্র করতে চায় অথবা কারো সাথে (ছেলে-মেয়ে) সম্পর্ক স্থাপন
বা বন্ধুত্বে ফাঁটল ধরাতে চায় তবে তা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে
এবং যে ব্যক্তি এর প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে উভয়ই কুফরী করল।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক।
ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ঐ ধ্বংসাত্মক জিনিসগুলো কি? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সাথে
শিরক করা (২) যাদু করা (৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করে
দিয়েছেন (৪) সূদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা (৬) যুদ্ধের ময়দান থেকে
পলায়ন করা (৭) সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া’।[16]
আল্লাহ রাববুল আলামীন যাদুকে কুফরী ও
শয়তানী শিক্ষা হিসাবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘কিন্তু
শয়তানরাই কুফরী করেছিল তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত’ (বাক্বারাহ ১০২)। অত্র
আয়াতের শেষের দিকে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা ভালরূপেই জানে যে, যে কেউ যাদু অবলম্বন
করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই’ (বাক্বারাহ ১০২)।
যাদুর শ্রেণীভুক্ত কিছু বিষয় :
(ক) আউফ (রাঃ) বলেন, ‘ইয়াফা’ হচ্ছে পাখি উড়িয়ে
ভাগ্য গণনা করা। ‘তারক’ হচ্ছে মাটিতে রেখা টেনে ভাগ্য গণনা করা। হাসান বলেন,
‘জিবত’ হচ্ছে শয়তানের মন্ত্র।[17] ওমর (রাঃ) বলেন, ‘জিবত’ হচ্ছে যাদু’।[18]
(খ) ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জ্যোতির্বিদ্যা থেকে কিছু অংশ
শিখল সে মূলতঃ যাদুবিদ্যারই কিছু অংশ শিখল। এ (জ্যোতির্বিদ্যা) যত বাড়বে
যাদুবিদ্যাও তত বাড়বে’।[19]
(ঘ) ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে যাদু কি এ সম্পর্কে সংবাদ
দিব না? তা হচ্ছে চোগলখুরী বা কুৎসা রটনা করা অর্থাৎ মানুষের মধ্যে কথা লাগানো বা
বদনাম ছড়ানো’।[20]
দু’টি কারণে যাদু শিরকের অন্তর্ভুক্ত :
১। যাদু বিদ্যায় শয়তানকে ব্যবহার করা হয় এবং তার
সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।
২। যাদু বিদ্যায় ইলমে গায়েবের দাবী করা হয়
এবং যাদুকরের জ্ঞান ও যাদুবিদ্যা অর্জনের ক্ষেত্রে আল্লাহর অংশীদারিত্বের দাবী করা
হয়। এটা নিঃসন্দেহে শিরক এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।[21]
যাদুকরের শাস্তি : যাদুকররা কাফির ও
হত্যাযোগ্য অপরাধী।[22]
বাজালা (রহঃ) বলেন, আমি আহনাফ ইবনে কায়সের
চাচা মাযই ইবনে মু‘আবিয়ার কাতেব (সচিব) ছিলাম। ওমর (রাঃ)-এর মৃত্যুর একবছর পূর্বে
তাঁর লেখা একখানা পত্র আমাদের হস্তগত হ’ল। তাতে লেখা ছিল,‘প্রত্যেক
যাদুকরকে হত্যা কর’।[23]
ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে, ওমর (রাঃ)
মুসলিম গভর্ণরদের কাছে পাঠানো নির্দেশনামায় লিখেছিলেন, ‘তোমরা প্রত্যেক যাদুকর
পুরুষ এবং যাদুকর নারীকে হত্যা কর’। বাজালা বিন আবাদাহ বলেন, ‘এ নির্দেশের পর আমরা
তিনজন যাদুকরকে হত্যা করেছি’।[24] তবে ইমাম আহমাদ ও ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর মতে, যদি
তারা তওবা করে তবে তাদের তওবা কবুল হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ মুশরিকও তওবা করলে কবুল
হয়, যেমন তওবা করেছিল ফিরআঊনের যাদুকররা।[25]
[16]. বুখারী হা/২৭৬৬; মুসলিম হা/২৭২; মিশকাত হা/৫২।
[17]. আহমাদের সনদে ফাতহুল মাজীদ ২৪৯ পৃঃ।
[18]. ফাতহুল মাজীদ ২৪৩ পৃঃ।
[19]. আবূদাঊদ হা/৩৯০৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৮৫৮, সনদ হাসান।
[20]. মুসলিম এর সনদে ফাহুল মাজীদ ২৫২ পৃঃ।
[21]. তাওহীদ মর্মকথা ১১৭ পৃঃ।
[22]. তাওহীদের মর্মকথা ১১৬ পৃঃ।
[23]. আবুদাউদ হা/৩০৪৩, সনদ ছহীহ।
[24]. বুখারী, আহমাদ ১/১৯০ পৃঃ।
[25]. ফাতহুল মাজীদ ২৪৭ পৃঃ।
[17]. আহমাদের সনদে ফাতহুল মাজীদ ২৪৯ পৃঃ।
[18]. ফাতহুল মাজীদ ২৪৩ পৃঃ।
[19]. আবূদাঊদ হা/৩৯০৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৮৫৮, সনদ হাসান।
[20]. মুসলিম এর সনদে ফাহুল মাজীদ ২৫২ পৃঃ।
[21]. তাওহীদ মর্মকথা ১১৭ পৃঃ।
[22]. তাওহীদের মর্মকথা ১১৬ পৃঃ।
[23]. আবুদাউদ হা/৩০৪৩, সনদ ছহীহ।
[24]. বুখারী, আহমাদ ১/১৯০ পৃঃ।
[25]. ফাতহুল মাজীদ ২৪৭ পৃঃ।
৮. মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদেরকে
সাহায্য-সহযোগিতা করা।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদেরকে
সাহায্য-সহযোগিতা করা। যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি এমন কাজ করে তবে সে কুফরী করল। মহান
আল্লাহ বলেন,তোমাদের মধ্যে যে তাদের (বিধর্মীদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত
হবে। আল্লাহ তা‘আলা যালিমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না’ (মায়েদাহ ৫১)। তিনি আরো বলেন,
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আমার এবং তোমাদের
শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও,
অথচ তারা তোমাদের কাছে যে সত্য এসেছে, তা অস্বীকার করেছে। তারা রাসূলকে ও
তোমাদেরকে বহিষ্কার করে এই অপরাধে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করেছ। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এবং আমার পথে জিহাদ করার জন্য
বের হয়ে থাক, তবে কেন তাদের প্রতি গোপনে বন্ধুত্বের পয়গাম প্রেরণ করছ? তোমরা যা গোপন
কর এবং যা প্রকাশ কর, তা আমি খুব জানি। তোমাদের মধ্যে যে এটা করে, সে সরল পথ থেকে
বিচ্যুত হয়ে যায়’ (মুমতাহিনা ১)। পরের আয়াতেই মহান আল্লাহ বলেন,‘তোমাদেরকে করতলগত
করতে পারলে তারা তোমাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং মন্দ উদ্দেশ্যে তোমাদের প্রতি বাহু ও
রসনা প্রসারিত করবে এবং চাইবে যে কোনরূপে তোমরাও কাফির হয়ে যাও’ (মুমতাহিনা ২)। এ
আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, সুযোগ পাওয়ার পর তারা মুমিনদের সাথে উদার ব্যবহার করবে,
তাদের কাছে এরূপ প্রত্যাশা করা দুরাশা মাত্র। তারা যখনই সুযোগ পাবে তাদের বাহু ও
জিহবা মুসলমানদের অনিষ্ট করার জন্য প্রসারিত করবে। এজন্য তাদের সাথে মিল রাখা
ভবিষ্যতে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা থাকায় এ আচরণ ত্যাগ করতে হবে। অন্যথা ঈমান
হারা হয়ে যাবে।
৯. যে ব্যক্তি মনে করে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর
শরী‘আত ব্যতীত অন্য কোন ধর্মে জীবন পরিচালনা করলেও জান্নাত পাওয়া যাবে বা আল্লাহর
সন্তুষ্টি পাওয়া সম্ভব, সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে।
যে ব্যক্তি মনে করে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর শরী‘আত
ব্যতীত অন্য কোন ধর্মে জীবন পরিচালনা করলেও জান্নাত পাওয়া যাবে বা আল্লাহর
সন্তুষ্টি পাওয়া সম্ভব, সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,যে ব্যক্তি
ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মকে গ্রহণ করবে তার কোন আমল গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে
ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আলে ইমরান ৮৫)।
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, যে কেউ
রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের
অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিকে সে অবলম্বন করেছে এবং
তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান’ (নিসা ১১৫)।
মানুষ আল্লাহর দ্বীন ত্যাগ করে অন্য দ্বীন
তালাশ করে, অথচ আসমান-যমীনে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহর দ্বীন মেনে চলে। মহান
আল্লাহ বলেন,‘তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও
যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর
দিকেই ফিরে যাবে’ (আলে ইমরান ৮৩)। এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, জড় বস্ত্ত আল্লাহর
দ্বীনের অনুগত হ’তে বাধ্য, আর মানুষের বিষয়টিতো এর চেয়ে কঠিন। কারণ মানুষ আল্লাহর
দ্বীন মানবে বলে রূহের জগতে ওয়াদাবদ্ধ হয়ে এসেছে। যা লঙ্ঘন করলে চিরস্থায়ী
জাহান্নামী হ’তে হবে।
১০. আল্লাহ মনোনীত
দ্বীন ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।
আল্লাহ মনোনীত দ্বীন ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে
নেওয়া। যারা ইসলাম অনুসারে আমল করতে এবং শিক্ষা গ্রহণ করতে নারাজ, এরকম ব্যক্তি
কাফির। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তিকে আল্লাহর আয়াত সমূহ দ্বারা উপদেশ
প্রদান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালিম আর কে হ’তে পারে?
নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব’ (সাজদাহ ২২)।
এছাড়াও সূরা কাহফের ৫৭নং আয়াতেও একই ধরনের
বক্তব্য এসেছে। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে,
তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে
বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? আমিতো চক্ষুষ্মান ছিলাম।
আল্লাহ বলবেন, এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াত সমূহ এসেছিল। অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে
গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব’ (ত্ব-হা ১২৪-১২৬)।
মানুষ নির্দ্বিধায় আল্লাহকে ভুলে অসৎ পথে
চলে, পাপাচারে লিপ্ত হয়। প্রবৃত্তির অনুসারী হ’তেও দ্বিধা করে না। কিন্তু হক্ব যদি
প্রবৃত্তির অনুসরণ করত তবে আসমান-যমীন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত। মহান আল্লাহ
বলেন, ‘সত্য যদি তাদের কাছে কামনা-বাসনার (প্রবৃত্তির) অনুসারী হ’ত, তবে
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং এগুলোর মধ্যবর্তী সবকিছুই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত’ (মুমিনূন ৭১)।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে,
ইসলামী আক্বীদাহ ও তাওহীদ গ্রহণের পর যদি কেউ উপরোল্লিখিত বিষয়গুলিতে নিপতিত হয়,
তবে সে ঈমান হারা হবে বা মুরতাদ হয়ে যাবে। তার উপর মুরতাদের হুকুম (মৃত্যুদন্ড)
ওয়াজিব হবে। যা কার্যকর করার মালিক হচ্ছেন দেশের সরকার। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই
দন্ড কার্যকর করার অধিকার রাখে না। ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوْهُ ‘যে
তার দ্বীন পরিবর্তন করল তাকে হত্যা কর’।[26] তবে তওবা করে নতুনভাবে ইসলাম গ্রহণ
করলে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
‘বলুন, ‘হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত
থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম
দয়ালু’ (যুমার ৫৩)।
মহান আল্লাহর দরবারে এই প্রার্থনা, যেন
তিনি আমাদেরকে বিষয়গুলো বুঝে তা থেকে দূরে থাকার তাওফীক্ব দান করেন। -আমীন!
[26]. বুখারী হা/৩০১৭।
(সমাপ্ত)
(প্রচার করো, যদি একটি মাত্র আয়াতও হয়- সহিহ বুখারী-৩৪৬১)
No comments:
Post a Comment