Search This Blog

Friday, September 27, 2019

ছালাতে নাভীর নীচে হাত বাঁধবো না বুকে হাত বাঁধবো-সহিহ হাদিসের আলোকে দ্বন্দ্ব নিরসনঃ


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ছালাতে নাভীর নীচে হাত বাঁধবো না বুকে হাত বাঁধবো-সহিহ হাদিসের আলোকে দ্বন্দ্ব নিরসনঃ

ছালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদত। এ ইবাদত কবুল হওয়ার উপরেই অন্যান্য ইবাদত নির্ভর করে। অথচ মানুষ ছালাতের যথার্থ গুরুত্ব অনুধাবন না করে যেনতেনভাবে ছালাত আদায় করে। এ ধরনের ছালাত আল্লাহর নিকটে কবুল হবে না; বরং এসব ছালাত আদায়কারীর জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে।
ছালাত আদায়কারী তিন শ্রেণীর মুছল্লীকে জাহান্নামে শাস্তি পেতে হবে। 
প্রথমতঃ যারা অলসতা বা অবহেলা বশতঃ সঠিক সময়ে ছালাত আদায় করে না।
দেখুনঃ
[1]. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, তাফসীরুল কুরআন ৩০তম পারা, পৃঃ ৫০১।
[2]. কুরতুবী হা/৬৪৮৩; বাযযার, ত্বাবারী, বায়হাক্বী। তবে বায়হাক্বী সা‘দ থেকে ‘মওকূফ’ সূত্রে বর্ণনা করার পর সেটাকেই ‘সঠিক’ বলেছেন (২/২১৪-১৫)। হায়ছামী একে ‘হাসান’ বলেছেন (১/৩২৫)।
[3]. মুসলিম হা/৬২২; মিশকাত হা/৫৯৩।
[4]. বুখারী হা/৫২৭, ই.ফা.বা. হা/২১৮, পৃঃ ৫০২; মুসলিম হা/৮৫।
[5]. আবুদাঊদ হা/৪২৬; তিরমিযী হা/১৭০; মিশকাত হা/৬০৭, সনদ ছহীহ
[6]. মুসলিম হা/৬৪৮; ই.ফা. বা. হা/১৩৩৮; মিশকাত হা/৬০০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৫৫২, ২/১৭৭
[7]. আবু দাঊদ হা/১২০৩; সনদ ছহীহ; নাসাঈ হা/৬৬৬; ছহীহাহ হা/৪১; মিশকাত হা/৬৬৫, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬১৪, ২/২০২ পৃঃ
দ্বিতীয়তঃ ছালাত আদায় করেও জাহান্নামে যাবে ঐসব মুছল্লী যারা রাসূল (ছাঃ)-এর পদ্ধতিতে ছালাত আদায় না করে নিজেদের মনগড়া পদ্ধতিতে ছালাত আদায় করে।
দেখুনঃ
[8]. বুখারী হা/৬৩১; মিশকাত হা/৬৮৩
[9]. বুখারী হা/৭৫৭; তিরমিযী হা/৩০৩; নাসাঈ হা/৮৮৪; মিশকাত হা/৭৯০ ‘ছালাতের বিবারণ’ অধ্যায়
[10]. মুসনাদে আহামাদ হা/২২৬৯৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৯৮৬; মিশকাত হা/৮৮৫
[11]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৪৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫৩৯
[12]. আহমাদ হা/১৬৩২৬; ছহীহাহ হা/২৫৩৬; মিশকাত হা/৯০৪
[13]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৯৬৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫২৯; ছহীহাহ হা/২৫৩৫, সনদ হাসান
[14]. আবুদাঊদ হা/৮৫৫, ১/১২৪; মিশকাত হা/৮৭৮; ছহীহ তারগীব হা/৫২৮, তাবরানী কাবীর হা/৩৭৪৮
তৃতীয়তঃ যারা লোক দেখানো ছালাত আদায় করে। মহান আল্লাহ বলেন, الَّذِيْنَ هُمْ يُرَاءُوْنَ ‘যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে’ (মাঊন ১০৭/৬)
দেখুনঃ
(15) (নিসা ৪/১৪২)।
(16) (নিসা ৪/১৪৫)।
[17]. তাফসীরুল কুরআন ৩০তম পারা, পৃঃ ৫০৩।
[18]. মুসলিম হা/৬৫১
[19]. বুখারী হা/৬৪৯৯; মুসলিম হা/২৯৮৬ ‘শুনানো ও দেখানো’ অনুচ্ছেদ।
[20]. মুসলিম হা/১৯০৫; মিশকাত ২০৫।
সুতরাং জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদেরকে রাসুল (সাঃ) এর দেখানো পদ্ধতি মোতাবেক ছালাত আদায় করতে হবে। কিন্তু আমাদের সমাজের কতিপয় শিক্ষিত আলেম যারা মসজিদের ইমাম, মুফতি, হাফেজ (কোরআন ও হাদিস), মুহাদ্দিস, ওযাজকারী, শায়েখ, কথিত পির-অলিদের মধ্যে দেখা যায় জাল-জইফ হাদিস নির্ভর ছালাত আদায়ের পদ্ধতি। তারা নিজেরা যেমন সহিহ হাদিস মানেন না তেমনি আবার অন্যদেরকেও গোমরাহী করছেন। তারা আবার তর্ক-বিতর্ক করেন। বাহাসে বসেন। আসলে তাদের সমস্ত যুক্তিই হচ্ছে জাল-জইফ হাদিস ভিত্তিক। যাই হোক কোনটা সঠিক তা যাচাই করে সঠিকটা গ্রহণ করবো ইনশাআল্লাহ।
(১) নাভীর নীচে হাত বাঁধার পক্ষে দলীলসমূহ ও পর্যালোচনাঃ
ছহীহ হাদীছের দাবী হল বুকের উপর হাত বেঁধে ছালাত আদায় করা। নাভীর নীচে হাত বেঁধে ছালাত আদায় করার পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। এর পক্ষে যত হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সবই ত্রুটিপূর্ণ।
(১) عَنْ أَبِىْ جُحَيْفَةَ أَنَّ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مِنْ السُّنَّةِ وَضْعُ الْكَفِّ عَلَى الْكَفِّ فِي الصَّلَاةِ تَحْتَ السُّرَّةِ.
(১) আবু জুহায়ফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আলী (রাঃ) বলেছেন, সুন্নাত হল ছালাতের মধ্যে নাভীর নীচে হাতের পাতার উপর হাতের পাতা রাখা।[1]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি নিতান্তই যঈফ। উক্ত সনদে আব্দুর রহমান ইবনু ইসহাক নামে একজন রাবী আছে। সে সকল মুহাদ্দিছের ঐকমত্যে যঈফ।[2] ইমাম বায়হাক্বী বলেন, ‘উক্ত হাদীছের সনদ ছহীহ বলে প্রমাণিত হয়নি। আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাক্ব একাকী এটা বর্ণনা করেছে। সে পরিত্যক্ত রাবী।[3] আল্লামা আইনী হানাফী (মৃঃ ৮৫৫ হিঃ) বলেন, ‘এর সনদ ছহীহ নয়’।[4] ইবনু হাজার আসক্বালানী (৭৭৩-৮৫২) বলেন, এর সনদ যঈফ’।[5] শায়খ আলবানীও যঈফ বলেছেন।[6]
(২) عَنْ أَبِىْ وَائِلٍ قَالَ قَالَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ أَخْذُ الْأَكُفِّ عَلَى الْأَكُفِّ فِى الصَّلَاةِ تَحْتَ السُّرَّةِ.
(২) আবী ওয়ায়েল (রাঃ) বলেন, আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেছেন, ছালাতের মধ্যে এক হাত আরেক হাতের উপর রেখে নাভীর নীচে রাখবে।[7]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি নিতান্তই যঈফ। ইমাম আবুদাঊদ বলেন,
 سَمِعْتُ أَحْمَدَ بْنَ حَنْبَلٍ يُضَعِّفُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ إِسْحَقَ الْكُوْفِيَّ ‘আমি আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আব্দুর রহমান ইবনু ইসহাক্ব যঈফ’।[8]ইবনু আব্দিল বার্র এই হাদীছকে যঈফ বলেছেন।[9] শায়খ আলবানীও যঈফ বলেছেন।[10]
(৩) عَنْ أَنَسٍ قَالَ ثَلاَثٌ مِنْ أَخْلاَقِ النُّبُوَّةِ تَعَجُّلُ الْإِفْطاَرِ وَتَأْخِيْرُ السَّحُوْرِ وَوَضْعُ الْيَدِ الْيُمْنىَ عَلَى الْيَدِ الْيُسْرَى فِى الصَّلاَةِ تَحْتَ السُّرَّةِ.
(৩) আনাস (রাঃ) বলেন, তিনটি জিনিস নবীদের চরিত্র। (ক) দ্রুত ইফতার করা (খ) দেরীতে সাহারী করা এবং (গ) ছালাতের মধ্যে ডান হাত বাম হাতের উপর স্থাপন করে নাভীর নীচে রাখা।[11]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। মুহাদ্দিছ যাকারিয়া বিন গোলাম কাদের বলেন, ‘এই শব্দে কেউ কোন সনদ উল্লেখ করেননি’।[12] মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, ‘আমি এই হাদীছের সনদ সম্পর্কে অবগত নই’।[13] উক্ত বর্ণনা সম্পর্কে না জেনেই অনেক লেখক তা দলীল হিসাবে পেশ করেছেন। নিঃসন্দেহে এটি দুঃখজনক।[14] অবশ্য এ মর্মে বর্ণিত ছহীহ হাদীছে ‘নাভীর নীচে’ অংশটুকু নেই।[15]
(৪) عَنْ وَائِلِ ابْنِ حُجْرٍ فِىْ صِفَةِ صَلاَةِ رَسُوْلِ اللهِ r قَالَ رَأَيْتُ النَّبِىَّ r يَضَعُ يَمِيْنَهُ عَلَى شِمَالِهِ تَحْتَ السُّرَّةِ.
(৪) ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাতের পদ্ধতির ব্যাপারে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ডান হাত বাম হাতের উপর স্থাপন করে নাভীর নীচে রাখতে দেখেছি।[16]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। ‘নাভীর নীচে’ কথাটুকু হাদীছে নেই। সুতরাং এই অংশটুকু জাল করা হয়েছে। শায়খ মুহাম্মাদ হায়াত সিন্দী
বলেন, زِيَادَةُ تَحْتَ السُّرَّةِ نَظْرٌ بَلْ هِىَ غَلَطٌ مَنْشَؤُهُ السَّهْوُ فَإِنِّىْ رَاجَعْتُنُسْخَةً صَحِيْحَةً مِنَ الْمُصَنِّفِ فَرَأَيْتُ فِيْهَا هَذَا الْحَدِيْثَ بِهَذَا السَّنَدِ وَبِهَذِهِ الْأَلْفَاظِ إِلاَّ أَنَّهُ لَيْسَ فِيْهَا تَحْتَ السُّرَّةِ ‘নাভীর নীচে’ এই অতিরিক্ত অংশ ত্রুটিপূর্ণ। বরং তা স্পষ্ট ভুল। মূলেই ভুল রয়েছে। আমি সংকলকের মূল কপি দেখেছি। সেখানে এই সনদ ও শব্দগুলো দেখেছি। কিন্তু তার মধ্যে ‘নাভীর নীচে’ অংশটুকু নেই’।[17]
জ্ঞাতব্য : উক্ত বর্ণনা ভিত্তিহীন হলেও মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বার নামে ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে’ বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাকে বিশুদ্ধ বলা হয়েছে।[18] যার ভিত্তি নেই তাকে বিশুদ্ধ বলার উদ্দেশ্য কি? মড়ার উপর খাড়ার ঘা?
(৫) إِنَّ النَّبِىَّ r قَالَ إِنَّ مِنَ السُّنَّةِ وَضْعُ الْيُمْنىَ عَلَى الشِّمَالِ تَحْتَ السُّرَّةِ.
(৫) নবী করীম (ছাঃ) বলেন, সুন্নাত হল বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে নাভীর নীচে রাখা।[19]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি মিথ্যা ও বানোয়াট। কারণ উক্ত মর্মে রাসূল (ছাঃ) থেকে কোন বর্ণনা নেই। মদ্বীনা পাবলিকেশান্স থেকে প্রকাশিত ‘হানাফীদের কয়েকটি জরুরী মাসায়েল’ নামক বইয়ে উক্ত শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে।[20]
বিশেষ সর্তকতা : কুদূরী ও হেদায়া কিতাবে বলা হয়েছে,
 وَيَعْتَمِدُ بِيَدِهِ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى تَحْتَ السُّرَّةِ  ‘এবং ডান হাত বাম হাতের উপর স্থাপন করে নাভীর নীচে রাখবে’।[21] অতঃপর হেদায়া কিতাবে দলীল হিসাবে পেশ করা হয়েছে, ‘কারণ রাসূল (ছাঃ)-এর কথা হল,
 لِقَوْلِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ إنَّ مِنَ السُّنَّةِ وَضْعَ الْيَمِيْنِ عَلَى الشِّمَالِ تَحْتَ السُّرَّةِ  ‘নিশ্চয় ডান হাত বাম হাতের উপর স্থাপন করে নাভীর নীচে রাখা সুন্নাত’।[22] অথচ উক্ত বর্ণনার কোন ভিত্তি নেই।
সুধী পাঠক! হানাফী মাযহাবের সর্বাধিক অনুসরণীয় কিতাবে যদি এভাবে রাসূল (ছাঃ)-এর নামে মিথ্যা বর্ণনা মিশ্রিত করা হয়, তাহলে মানুষ সত্যের সন্ধান পাবে কোথায়?
(৬) عَنِ ابْنِ جَرِيْرٍ الضَّبِّيِّ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ رَأَيْتُ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يُمْسِكُ شِمَالَهُ بِيَمِيْنِهِ عَلَى الرُّسْغِ فَوْقَ السُّرَّةِ.
(৬) গাযওয়ান ইবনু জারীর তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি আলী (রাঃ)-কে ডান হাত দ্বারা বাম হাতকে কব্জির উপর রেখে নাভীর উপর বাঁধতে দেখেছি।[23]
তাহক্বীক্ব : সনদ যঈফ।[24]  ইমাম আবুদাঊদ বলেন,
 وَرُوِيَ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ فَوْقَ السُّرَّةِ قَالَ أَبُوْ مِجْلَزٍ تَحْتَ السُّرَّةِ وَرُوِيَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَلَيْسَ بِالْقَوِيِّ. ‘সাঈদ ইবনে জুবাইর-এর পক্ষ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে- নাভীর উপরে হাত রাখতেন। আর আবু মিজলায বলেছেন, নাভীর নীচে হাত রাখতেন। অনুরূপ আবু হুরায়রা থেকেও বর্ণিত হয়েছে। তবে কোনটিই নির্ভরযোগ্য নয়’।[25]
(৭) عَنِ الحَجَّاجِ بْنِ حَسَّانَ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا مِجْلَزٍ أَوْ سَأَلْتُهُ  قَالَ قُلْتُ كَيْفَ أَصْنَعُ؟ قَالَ يَضَعُ بَاطِنَ كَفِّ يَمِيْنِهِ عَلَى ظَاهِرِ كَفِّ شِمَالِهِ وَيَجْعَلُهَا أَسْفَلَ مِنَ السُّرَّةِ.
(৭) হাজ্জাজ ইবনু হাস্সান বলেছেন, আমি আবু মিজলাযকে বলতে শুনেছি অথবা তাকে প্রশ্ন করেছি, আমি কিভাবে হাত রাখব? তিনি বললেন, ডান হাতের পেট বাম হাতের পিঠের উপর রাখবে এবং একেবারে নাভীর নীচে রাখবে।[26]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এর সনদ বিচ্ছিন্ন।[27] যদিও কেউ তাকে ‘সুন্দর সনদ’ বলে মন্তব্য করেছেন।[28] কিন্তু ছহীহ হাদীছের বিরোধী হলে কিভাবে তাকে সুন্দর সনদ বলা যায়? [29]
(8) عَنْ أَبِى الزُّبَيْرِ قَالَ أَمَرَنِىْ عَطَاءٌ أَنْ أَسْأَلَ سَعِيْدًا أَيْنَ تَكُوْنُ الْيَدَانِ فِى الصَّلاَةِ؟ فَوْقَ السُّرَّةِ أَوْ أَسْفَلَ مِنَ السُّرَّةِ؟ فَسَأَلْتُهُ فَقَالَ فَوْقَ السُّرَّةِ.
(৮) যুবাইর বলেন, আত্বা আমাকে বললেন, আমি যেন সাঈদ ইবনু জুবাইরকে জিজ্ঞেস করি, ছালাতের মধ্যে দুই হাত কোথায় থাকবে? নাভীর উপরে না নাভীর নীচে? অতঃপর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নাভীর উপরে।[30]
তাহক্বীক্ব : সনদ যঈফ। এর সনদে ইয়াহইয়া ইবনু আবী তালেব ও যায়েদ ইবনু হুবাব নামে রাবী আছে, তারা ত্রুটিপূর্ণ।[31] মূলতঃ পরবর্তীতে এই বর্ণনার মাঝে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।[32]
(9) قاَلَ عَبْدُ اللهِ رَأَيْتُ أَبِىْ إِذَا صَلَّى وَضَعَ يَدَيْهِ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَوْقَ السُّرَّةِ.
(৯) আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ (রহঃ) বলেন, আমি আমার আব্বাকে দেখেছি যে, তিনি যখন ছালাত আদায় করতেন তখন তিনি তার এক হাত অপর হাতের উপর স্থাপন করে নাভীর উপরে রাখতেন।[33]
তাহক্বীক্ব : ইমাম আহমাদ (রহঃ) নাভীর নীচে হাত বাঁধার বর্ণনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। যেমন ইমাম আবু দাঊদ বলেন, سَمِعْتُ أَحْمَدَ بْنَ حَنْبَلٍ يُضَعِّفُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ إِسْحَقَ الْكُوفِيَّ ‘আমি আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আব্দুর রহমান ইবনু ইসহাক্ব যঈফ’।[34] সুতরাং উক্ত বর্ণনার দিকে ভ্রুক্ষেপ করার প্রশ্নই উঠে না। তাছাড়া ইমাম নববী ও আলবানী গ্রহণ করেননি।[35] ইমাম আহমাদ সম্পর্কে নাভীর নীচে ও উপরে দুই ধরনের কথা এসেছে। মূলতঃ তা সন্দেহ যুক্ত। যেমনটি দাবী করেছেন কাযী আবু ইয়ালা আল-ফার্র।[36] সুতরাং তার পক্ষ থেকে বুকের উপর হাত বাঁধাই প্রমাণিত হয়। যাকে ইমাম আবুদাঊদ ছহীহ বলেছেন।[37]
বিভ্রান্তি থেকে সাবধান :
বাজারে প্রচলিত ‘নামায শিক্ষা’ বইগুলোতে উক্ত যঈফ, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বর্ণনা দ্বারা নাভীর নীচে হাত বাঁধার দলীল পেশ করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে মাওলানা আব্দুল মতিন প্রণীত ‘দলিলসহ নামাযের মাসায়েল’ একটি। উক্ত লেখক শুধু বানোয়াট বর্ণনাই পেশ করেননি, বরং রীতি মত ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা করে রাসূল (ছাঃ)-এর আমলকে যবাই করে নিজেদেরকে ‘প্রকৃত আহলে হাদীস’ বলে দাবী করেছেন।[38] কথায় বলে ‘অন্ধ ছেলের নাম পদ্মলোচন’। কারণ অন্ধ মাযহাবের মরণ ফাঁদে পড়ে কেউ আহলেহাদীছ পরিচয় ব্যক্ত করতে পারে না। এ জন্য ‘আহলেহাদীছ’ পরিচয় দেয়ার সাহস হয় না।
হাদিসের উৎসঃ
[1]. আবুদাঊদ হা/৭৫৬; আহমাদ ১/১১০; দারাকুৎনী ১/২৮৬; ইবনু আবী শায়বাহ ১/৩৯১; বায়হাক্বী ২/৩১। উল্লেখ্য যে, ভারতীয় ছাপা আবুদাঊদে উক্ত মর্মে কয়েকটি হাদীছ নেই।
[2].
وَقَدِ اتَّفَقَ الْأَئِمَّةُ عَلَى تَضْعِيْفِهِ -তানক্বীহ, পৃঃ ২৮৪।
[3].
لَمْ يَثْبُتْ إِسْنَادُهُ تَفَرَّدَ بِهِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنِ إِسْحَاقَ الْوَاسِطِىِّ وَهُوَ مَتْرُوْكٌ -বায়হাক্বী, আল-মা‘রেফাহ ১/৪৯৯।
[4].
إِسْنَادُهُ غَيْرُ صَحِيْحٍ -উমদাতুল ক্বারী ৫/২৮৯।
[5].
إسناده ضعيف -ইবনু হাজার আসক্বালানী, আদ-দিরায়াহ ১/১২৮।
[6]. যঈফ আবুদাঊদ হা/৭৫৬।
[7]. আবুদাঊদ হা/৭৫৮।
[8]. আবুদাঊদ হা/৭৫৮।
[9]. ঐ, আত-তামহীদ ২০/৭৫।
[10]. যঈফ আবুদাঊদ হা/৭৫৮।
[11]. ইমাম ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা ৪/১৫৭; তানক্বীহ, পৃঃ ২৮৫।
[12].
وَلَمْ يَذْكُرْ لَهُ سَنَدًا بِهَذَا اللَّفْظِ وَإِِنَّهَا عَلَّقَهُ -তানক্বীহ, পৃঃ ২৮৫।
[13].
لَمْ أَقِفْ عَلَى سَنَدِ هَذَا الْحَدِيْثِ -ঐ, তুহফাতুল আহওয়াযী ১/২১৫।
[14]. মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ২৯১; নবীজীর নামায, পৃঃ ১৫০।
[15]. ইবনু হিববান হা/১৭৬৭; সনদ ছহীহ, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ৮৭; ইবনু ক্বাইয়িম, তাহযীব সুনানে আবী দাঊদ ১/১৩০ -
حَدِيث أَبِي حُمَيْدٍ هَذَا حَدِيث صَحِيح مُتَلَقًّى بِالْقَبُولِ لَا عِلَّة لَهُ وَقَدْ أَعَلَّهُ قَوْم بِمَا بَرَّأَهُ اللَّه
[16]. তানক্বীহ, পৃঃ ২৮৫; তুহফাতুল আহওয়াযী ১/২১৪।
[17]. তুহফাতুল আহওয়াযী ১/২১৪।
[18]. ঐ, পৃঃ ২৯০।
[19]. হেদায়াহ ১/৮৬; হানাফীদের জরুরী মাসায়েল, পৃঃ ২৬।
[20]. ঐ, পৃঃ ২৬।
[21]. আবুল হুসাইন আহমাদ আল-কুদূরী, মুখতাছারুল কুদূরী, পৃঃ ২৮; হেদায়া ১/১০৬ পৃঃ।
[22]. হেদায়া ১/১০৬ পৃঃ; নাছবুর রাইয়াহ ১/৩১৩ পৃঃ।
[23]. আবুদাঊদ হা/৭৫৭; বায়হাক্বী ২/৩০।
[24]. যঈফ আবুদঊদ হা/৭৫৭।
[25]. আবুদাঊদ হা/৭৫৭।
[26]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৯৬৩, ১/৩৯১; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ২৯১।
[27]. আওনুল মা‘বূদ ২/৩২৪ পৃঃ -
مقطوع لأن أبا مجلز تابعي والمقطوع لا يقوم به الحجة
[28]. যঈফ আবুদাঊদ হা/১৩০-এর আলোচনা দ্রঃ।
[29]. মির‘আতুল মাফাতীহ ৩/৬৩ পৃঃ-
أن هذا قول تابعي ينفيه الحديث المرفوع فلا يلتفت إليه
[30]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/২৪৩৪; আওনুল মা‘বূদ ২/৩২৪ পৃঃ।
[31]. আওনুল মা‘বূদ ২/৩২৪ পৃঃ।
[32]. যঈফ আবুদাঊদ হা/১৩০।
[33]. ইরওয়াউল গালীল ২/৭০ পৃঃ।
[34]. আবুদাঊদ হা/৭৫৮।
[35]. ইরওয়াউল গালীল ২/৭০ পৃঃ।
[36]. আল-মাসাইলুল ফিক্বহিয়াহ, ১/৩২ পৃঃ -
وهذا يحتمل أن يكون ظناً من الراوي أنها كانت على السرة ويحتمل أن يكون سهواً من أحمد في ذلك
[37]. আবুদাঊদ হা/৭৫৯, সনদ ছহীহ।
[38]. দলিলসহ নামাযের মাসায়েল , পৃঃ ২৪।
(২) বুকের উপর হাত বাঁধার ছহীহ হাদীছ সমূহঃ
বুকের উপর হাত বাঁধার ছহীহ হাদীছ সমূহ :
রাসূল (ছাঃ) সর্বদা বুকের উপর হাত বেঁধে ছালাত আদায় করতেন। উক্ত মর্মে একাধিক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি পেশ করা হল :
(1) عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُوْنَ أَنْ يَضَعَ الرَّجُلُ الْيَدَ الْيُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ الْيُسْرَى فِي الصَّلَاةِ قَالَ أَبُوْ حَازِمٍ لَا أَعْلَمُهُ إِلَّا يَنْمِىْ ذَلِكَ إِلَى النَّبِيِّ r.
(১) সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) বলেন, লোকদেরকে নির্দেশ দেওয়া হত, মুছল্লী যেন ছালাতের মধ্যে তার ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর রাখে। আবু হাযেম বলেন, এটা রাসূল (ছাঃ)-এর দিকেই ইঙ্গিত করা হত বলে আমি জানি।[1]
ইমাম বুখারী (রহঃ) অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন, بَابُ وَضْعِ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى  ‘ছালাতের মধ্যে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা অনুচ্ছেদ’।[2] উল্লেখ্য যে, ইমাম নববী (রহঃ) নিম্নোক্ত মর্মে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন- ‘তাকবীরে তাহরীমার পর ডান হাত বাম হাতের উপর স্থাপন করে বুকের নীচে নাভীর উপরে রাখা’।[3] অথচ হাদীছে ‘বুকের নীচে নাভীর উপরে’ কথাটুকু নেই। মূলতঃ পুরো ডান হাতের উপর বাম হাত রাখলে বুকের উপরই চলে যায়। যেমন  উক্ত হাদীছ উল্লেখ করে শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,
وَمِثْلُهُ حَدِيْثُ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ كَانَ يَضَعُ الْيُمْنىَ عَلَى ظَهْرِ كَفِّهِ الْيُسْرَى وَالرُّسْغِ وَ السَّاعِدِ رَوَاهُ أَبُوْدَاؤُدَ وَ النَّسَائِىُّ بِسَنَدِ صَحِيْحٍ وَ هَذِهِ الْكَيْفِيّةُ نَسْتَلْزِمُ أَنْ يَّكُوْنَ الْوَضْعُ عَلَى الصَّدْرِ إِذَا أَنْتَ تَأَمَّلْتَ ذَلِكَ وَعَمِلْتَ بِهَا فَجَرِّبْ إِنْ شِئْتَ وَ مِمَّا يَنْبَغِىْ أَنْ يَّعْلَمَ أَنَّهُ لَمْ يَصِحُّ عَنْهُ r الْوَضْعُ عَلَى غَيْرِ الصَّدْرِ كَحَدِيْثِ وَ السُّنَّةُ وَضْعُ الْكَفِّ فِى الصَّلاَةِ تَحْتَ السُّرَّةِ.
‘অনুরূপ ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ) ডান হাত বাম হাতের পাতা, হাত ও বাহুর উপর রাখতেন। যা ছহীহ সনদে আবুদাঊদ ও নাসাঈ বর্ণনা করেছেন। এই পদ্ধতিই আমাদের জন্য অপরিহার্য করে যে হাত রাখতে হবে বুকের উপর। যদি আপনি এটা বুঝেন এবং এর প্রতি আমল করেন। অতএব আপনি চাইলে যাচাই করতে পারেন। আর এ সম্পর্কে যা জানা উচিৎ তা হল, বুকের উপর ছাড়া অন্যত্র হাত বাঁধার বিষয়টি রাসূল (ছাঃ) থেকে ছহীহ হিসাবে সাব্যস্ত হয়নি। যেমন একটি হাদীছ, ‘সুন্নাত হল ছালাতের মধ্যে নাভীর নীচে হাতের পাতা রাখা’ (এই বর্ণনা সঠিক নয়)।[4]
বিশেষ জ্ঞাতব্য : সুধী পাঠক! ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত উক্ত হাদীছের অনুবাদ করতে গিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন অনুবাদে ‘ডান হাত বাম হাতের কবজির উপরে’ মর্মে অনুবাদ করা হয়েছে।[5] আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত বুখারীতেও একই অনুবাদ করা হয়েছে।[6] অথচ ইসলমিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একই খন্ডের মধ্যে অন্যত্র এর অর্থ করা হয়েছে ‘বাহু’।[7] কিন্তু ‘বাহু’ আর ‘কব্জি’ কি এক বস্ত্ত? সব হাদীছ গ্রন্থে ‘যিরা’ অর্থ ‘বাহু’ করা হয়েছে। যেমন রাসূল (ছাঃ) ওযূ করার সময় মুখমন্ডল ধৌত করার পর বাহুর উপর পানি ঢালতেন।[8] এছাড়া আরবী কোন অভিধানে ‘যিরা’ শব্দের অর্থ ‘কব্জি’ করা হয়নি। অতএব কোন সন্দেহ নেই যে, নাভীর নীচে হাত বাঁধার ত্রুটিপূর্ণ আমলকে প্রমাণ করার জন্যই উক্ত কারচুপি করা হয়েছে। অথচ অন্যত্র ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ) তাঁর ডান হাতটি বাম হাতের পাতা, কব্জি ও বাহুর উপর রাখতেন, যা পূর্বে আলবানীর আলোচনায় পেশ করা হয়েছে।
(2) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ لَأَنْظُرَنَّ إِلَى صَلاَةِ رَسُوْلِ اللهِ r كَيْفَ يُصَلِّى فَنَظَرْتُ إِلَيْهِ فَقَامَ فَكَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى حَاذَتَا بِأُذُنَيْهِ ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى كَفِّهِ الْيُسْرَى وَالرُّسْغِ وَالسَّاعِدِ فَلَمَّا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ مِثْلَهَا ...
(২) ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, আমি অবশ্যই রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতের দিকে লক্ষ্য করতাম, তিনি কিভাবে ছালাত আদায় করেন। আমি তাঁর দিকে লক্ষ্য করতাম যে, তিনি ছালাতে দাঁড়াতেন অতঃপর তাকবীর দিতেন এবং কান বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন। তারপর তাঁর ডান হাত বাম হাতের পাতা, কব্জি ও বাহুর উপর রাখতেন। অতঃপর যখন তিনি রুকূ করার ইচ্ছা করতেন তখন অনুরূপ দুই হাত উত্তোলন করতেন...।[9]
উল্লেখ্য যে, ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে’ বইটিতে উক্ত হাদীছটির পূর্ণ অর্থ করা হয়নি; বরং অর্থ গোপন করা হয়েছে।[10] তাছাড়া ভারতীয় ছাপা আবুদাঊদে অর্থ পরিবর্তন করার উদ্দেশ্যে দুইটি শব্দে ভুল হরকত দেয়া হয়েছে।[11]
সুধী পাঠক! উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, রাসূল (ছাঃ) ডান হাতটি পুরো বাম হাতের উপর রাখতেন। এমতাবস্থায় হাত নাভীর নীচে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এইভাবে হাত রেখে নাভীর নীচে স্থাপন করতে চাইলে মাজা বাঁকা করে নাভীর নীচে হাত নিয়ে যেতে হবে, যা উচিৎ নয়। আমরা এবার দেখব রাসূল (ছাঃ) তাঁর দুই হাত কোথায় স্থাপন করতেন।
(3) عَنْ طَاوُسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ r يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى ثُمَّ يَشُدُّ بَيْنَهُمَا عَلَى صَدْرِهِ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ.
(৩) ত্বাঊস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ছালাতের মধ্যে তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন এবং উভয় হাত বুকের উপর শক্ত করে ধরে রাখতেন।[12]
জরূরী জ্ঞাতব্য : ভারতীয় ছাপা আবুদাঊদে হাত বাঁধা সংক্রান্ত একটি হাদীছও উল্লেখিত হয়নি। এর কারণ সম্পূর্ণ অজানা। তবে ইমাম আবুদাঊদ নাভীর নীচে হাত বাঁধা সম্পর্কে বর্ণিত বর্ণনাগুলোকে যঈফ বলেছেন। আর বুকের উপর হাত বাঁধার হাদীছটিকে ছহীহ হিসাবে পেশ করতে চেয়েছেন। কারণ উক্ত হাদীছ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেননি। সে জন্যই হয়ত কোন হাদীছই উল্লেখ করা হয়নি।[13]
উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছকে অনেকে নিজস্ব গোঁড়ামী ও ব্যক্তিত্বের বলে যঈফ বলে প্রত্যাখ্যান করতে চান। মুহাদ্দিছগণের মন্তব্যের তোয়াক্কা করেন না। নিজেকে শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ বলে পরিচয় দিতে চান। অথচ আলবানী উক্ত হাদীছ উল্লেখ করে বলেন, رَوَاهُ أَبُوْ دَاوُدَ بِإِسْنَادٍ صَحِيْحٍ عَنْهُ ‘আবুদাঊদ ত্বাঊস থেকে এই হাদীছকে ছহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন’। অতঃপর তিনি অন্যের দাবী খন্ডন করে বলেন,
وَهُوَ وَإِنْ كَانَ مُرْسَلاً فَهُوَ حُجَّةٌ عِنْدَ جَمِيْعِ الْعُلَمَاءِ عَلَى اخْتِلاَفِ مَذَاهِبِهِمْ فِى الْمُرْسَلِ لِأَنَّهُ صَحِيْحُ السَّنَدِ إِلَى الْمُرْسَلِ وَقَدْ جاَءَ مَوْصُوْلاً مِنْ طُرُقٍ كَمَا أَشَرْنَا إِلَيْهِ آنِفًا فَكاَنَ حُجَّةً عِنْدَ الْجَمِيْعِ.
‘ত্বাউস যদিও মুরসাল রাবী তবুও তিনি সকল মুহাদ্দিছের নিকট দলীলযোগ্য। কারণ তিনি মুরসাল হলেও সনদের জন্য ছহীহ। তাছাড়াও এই হাদীছ মারফূ‘ হিসাবে অনেকগুলো সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। যেমনটি আমি এই মাত্রই উল্লেখ করলাম। অতএব তা সকল মুহাদ্দিছের নিকট দলীলযোগ্য।[14] এছাড়াও এই হাদীছকে আলবানী ছহীহ আবুদাঊদে উল্লেখ করেছেন।[15]
(৪) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ رضي الله عنه قَالَ صَلَّيْتُ مَعَ اَلنَّبِيِّ r فَوَضَعَ يَدَهُ اَلْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ اَلْيُسْرَى عَلَى صَدْرِهِ.
(৪) ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছালাত আদায় করেছি। তিনি তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর স্থাপন করে বুকের উপর রাখতেন।[16] উক্ত হাদীছের টীকায় শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,
إِسْنَادُهُ ضَعِيْفٌ لِأَنَّ مُؤَمَّلاً وَهُوَ ابْنُ إِسْمَاعِيْلَ سَيِّئُ الْحِفْظِ لَكِنَّ الْحَدِيْثَ صَحِيْحٌ جَاءَ مِنْ طُرُقٍ أُخْرَى بِمَعْنَاهُ وَفِى الْوَضْعِ عَلَى الصَّدْرِ أَحَادِيْثُ تَشْهَدُ لَهُ.
‘এর সনদ যঈফ। কারণ তা ত্রুটিপূর্ণ। আর তিনি হলেন ইবনু ইসমাঈ। তার স্মৃতি শক্তি দুর্বল। তবে হাদীছ ছহীহ। এই হাদীছ অন্য সূত্রে একই অর্থে বর্ণিত হয়েছে। বুকের উপর হাত রাখার আরো যে হাদীছগুলো আছে, সেগুলো এর জন্য সাক্ষ্য প্রদান করে’। ইমাম শাওকানী উক্ত হাদীছ সম্পর্কে বলেন,
 وَ لاَشَيْءَ فِى اْلبَابِ أَصَحُّ مِنْ حَدِيْثِ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ الْمَذْكُوْرِ فِىْ صَحِيْحِ ابْنِ خُزَيْمَةَ ‘হাত বাঁধা সম্পর্কে ছহীহ ইবনু খুযায়মাতে ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছের চেয়ে বিশুদ্ধ কোন হাদীছ আর নেই’।[17] তাছাড়া একই রাবী থেকে অন্যত্র ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
(5) عَنْ قَبِيْصَةَ بْنِ هُلْبٍ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِىَّ r يَنْصَرِفُ عَنْ يَمِيْنِهِ وَعَنْ يَسَارِهِ وَرَأَيْتُهُ قَالَ يَضَعُ هَذِهِ عَلَى صَدْرِهِ وَضَعَ يَحْيَى الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى فَوْقَ الْمِفْصَلِ.
(৫) ক্বাবীছাহ বিন হুলব তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেছেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে ডান ও বামে ফিরতে দেখেছি এবং হাতকে বুকের উপর রাখার কথা বলতে শুনেছি। অতঃপর ইয়াহইয়া ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর  রাখেন।[18]
উল্লেখ্য যে, কেউ কেউ উক্ত হাদীছকে ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন। কিন্তু তাদের দাবী সঠিক নয়। কারণ রাবী ক্বাবীছার ব্যাপারে কথা থাকলেও এর পক্ষে অনেক সাক্ষী রয়েছে। ফলে তা হাসান।[19]
(6) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله r إِنَّا مَعْشَرَ الأَنْبِيَاءِ أُمِرْنَا أَنْ نُعَجِّلَ إِفْطَارَنَا وَأَنْ نُؤَخِّرَ سَحُوْرَنَا وَنَضَعَ أَيْمَانَنَا عَلَى شَمَائِلِنَا فِي الصَّلاَةِ.
(৬) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, নিশ্চয় আমরা নবীদের দল। আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- আমরা যেন দ্রুত ইফতার করি এবং দেরিতে সাহারী করি। আর ছালাতের মধ্যে আমাদের ডান হাত বাম হাতের উপর যেন রাখি।[20]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. ছহীহ বুখারী হা/৭৪০, ১/১০২ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭০৪, ২য় খন্ড, পৃঃ ১০২)। ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮৭ بَابُ وَضْعِ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى
[2]. ছহীহ বুখারী ১/১০২ পৃঃ।
[3]. ছহীহ মুসলিম ১/১৭৩ পৃঃ, হা/৯২৩-এর অনুচ্ছেদ-১৫, ‘ছালাত’ অধ্যায়-
باَبُ وَضْعِ يَدِهِ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى بَعْدَ تَكْبِيْرَةِ الإِحْرَامِ تَحْتَ صَدْرِهِ فَوْقَ سُرَّتِهِ وَوَضْعِهِمَا فِى السُّجُوْدِ عَلَى الأَرْضِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ
[4]. মিশকাত হা/৭৯৮ -এর টীকা দ্রঃ, ১/২৪৯ পৃঃ।
[5]. বুখারী শরীফ (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন, নবম সংস্করণ, জানুয়ারী ২০১২), ২য় খন্ড, পৃঃ ১০২, হা/৭০৪।
[6]. সহীহ আল-বুখারী (ঢাকা : আধুনিক প্রকাশনী, বাংলা বাজার, জুন ১৯৯৭), ১ম খন্ড, পৃঃ ৩২২, হা/৬৯৬।
[7]. বুখারী শরীফ ২য় খন্ড, পৃঃ ৯, হা/৫০৭; ৭ম খন্ড, পৃঃ ২৩১, হা/৪০৭৬; ছহীহ বুখারী হা/৫৩২, ১/৭৬ পৃঃ ও হা/৪৪২১।
[8]. ছহীহ মুসলিম হা/১৫৯৭, ‘মসজিদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬, উল্লেখ্য যে, ভারতীয় ছাপায় হাদীছটি নেই, ১/২৪০-২৪১; মিশকাত হা/৩৯২২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৭৪৬, ৮/২২ পৃঃ; আবাদাঊদ হা/১৩৫, ১/১৮ পৃঃ; মুসনাদে আহমাদ হা/১০০৮ -
ثُمَّ قَالَ لَهُ صُبَّ فَصَبَّ عَلَيْهِ فَغَسَلَ كَفَّهُ ثَلاَثاً وَأَدْخَلَ كَفَّهُ الْيُمْنَى فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ ثَلاَثاً ثُمَّ أَدْخَلَ كَفَّيْهِ فَغَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثاً ثُمَّ أَدْخَلَ كَفَّهُ الْيُمْنَى فَغَسَلَ ذِرَاعَهُ الأَيْمَنَ ثَلاَثاً ثُمَّ غَسَلَ ذِرَاعَهُ الأَيْسَرَ ثَلاَثاً فَقَالَ هَذَا وُضُوْءُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
[9]. নাসাঈ হা/৮৮৯, ১/১০২ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৭২৭, পৃঃ ১০৫; আহমাদ হা/১৮৮৯০; ছহীহ ইবনে খুযায়মাহ হা/৪৮০; ইবনু হিববান হা/১৮৬০, সনদ ছহীহ।
[10]. ঐ, পৃঃ ২৯০।
[11]. আবুদাঊদ, পৃঃ ১০৫।
[12]. আবুদাঊদ হা/৭৫৯, সনদ ছহীহ।
[13]. আবুদাঊদ, পৃঃ ১২২।
[14]. ইরওয়াউল গালীল ২/৭১ পৃঃ।
[15]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৭৫৯।
[16]. ছহীহ ইবনে খুযায়মাহ হা/৪৭৯, ১/২৪৩ পৃঃ; বলূগুল মারাম হা/২৭৫।
[17]. নায়লুল আওত্বার ৩/২৫ পৃঃ।
[18]. আহমাদ হা/২২০১৭; সনদ হাসান।
[19]. আলবানী, আহকামুল জানাইয, পৃঃ ১১৮ -
فمثله حديثه حسن في الشواهد ولذلك قال الترمذي بعد أن خرج له من هذا الحديث أخذ الشمال باليمين حديث حسن فهذه ثلاثة أحاديث في أن السنة الوضع على الصدر ولا يشك من وقف على مجموعها في أنها صالحة للاستدلال على ذلك.।
[20]. ইবনু হিববান হা/১৭৬৭; সনদ ছহীহ, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ৮৭; ইবনু ক্বাইয়িম, তাহযীব সুনানে আবী দাঊদ ১/১৩০ -
حَدِيث أَبِي حُمَيْدٍ هَذَا حَدِيث صَحِيح مُتَلَقًّى بِالْقَبُولِ لَا عِلَّة لَهُ وَقَدْ أَعَلَّهُ قَوْم بِمَا بَرَّأَهُ اللَّه
ইমাম তিরমিযী ও ইবনু কুদামার মন্তব্য এবং পর্যালোচনা
ইমাম তিরমিযী ও ইবনু কুদামার মন্তব্য এবং পর্যালোচনা :
উপরের আলোচনায় প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ) বুকের উপর হাত বেঁধে ছালাত আদায় করতেন। কিন্তু কোন কোন মনীষী দুই ধরনের আমলের প্রতি শীথিলতা প্রদর্শন করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বাম হাতের উপর ডান হাত রাখার একটি হাদীছ বর্ণনা করার পর বলেন,
 وَرَأَى بَعْضُهُمْ أَنْ يَضَعَهُمَا فَوْقَ السُّرَّةِ وَرَأَى بَعْضُهُمْ أَنْ يَضَعَهُمَا تَحْتَ السُّرَّةِ وَكُلُّ ذَلِكَ وَاسِعٌ عِنْدَهُمْ ‘তাদের কেউ মনে করেন দুই হাত নাভীর উপর রাখবে। আবার কেউ মনে করেন নাভীর নীচে রাখবে। তাদের নিকটে উভয় আমলের ব্যাপারে প্রশস্ততা রয়েছে।[1] ইবনু কুদামাও অনুরূপ বলেছেন।[2]
পর্যালোচনা : উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ) বুকের উপর হাত রেখে ছালাত আদায় করেছেন। সুতরাং অন্য কারো আমল ও কথার দিকে ভ্রুক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই। তবে ইমাম তিরমিযী (রহঃ) যেমন অন্যের ব্যক্তিগত আমলের কথা বর্ণনা করেছেন, তেমনি ইবনু কুদামাও কেবল হাম্বলী মাযহাবের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করেছেন। যা পাঠকের সামনে পরিষ্কার।
হাদিসের উৎসঃ
[1]. তিরমিযী হা/২৫২ -এর মন্তব্য দ্রঃ।
[2]. আল-মুগনী ১/৫৪৯ পৃঃ; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ২৯২।
হাত বাঁধার বিশেষ পদ্ধতি বানোয়াট
হাত বাঁধার জন্য সমাজে যে বিশেষ পদ্ধতি চালু আছে তা কল্পিত ও উদ্ভট। যেমন- মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন খান লিখেছেন, ‘হাত বাঁধার নিয়ম হলো পুরুষেরা বাম হাতের তালু নাভীর নিচে রাখবে এবং ডান হাতের তালু বাম হাতের তালুর পিঠের ওপর স্থাপন করে কনিষ্ঠা আঙ্গুল এবং বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা বাম হাতের কব্জি ধরবে, অনামিকা, মধ্যমা এবং শাহাদাত আঙ্গুল লম্বাভাবে বাম হাতের কব্জির ওপরে বিছানো থাকবে’।[1] তবে মাওলানা কোন প্রমাণ পেশ করেননি। মূলতঃ উক্ত পদ্ধতি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
[1]. তালীমু-সালাত, পৃঃ ৩১।
পুরুষ ও মহিলার ছালাতের মধে কোনো পার্থক্য নাইঃ
বিভিন্ন ছালাত শিক্ষা বইয়ে পুরুষ ও মহিলাদের ছালাতের মাঝে অনেক পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। অথচ ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন খান লিখেছেন, ‘তাকবীরে তাহরীমা বলে পুরুষরা নাভীর নীচে এবং মহিলারা সীনার ওপর হাত বেঁধে দাঁড়াবে’।[1] কিন্তু এর প্রমাণে কোন দলীল উল্লেখ করেননি। অনুরূপভাবে মারকাযুদ দাওয়াহ, ঢাকা-এর শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মালেক কয়েকটি পার্থক্য তুলে ধরেছেন।[2] অতঃপর তিনি অনেকগুলো জাল ও যঈফ বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মহিলারা বুকের উপর আর পুরুষরা নাভীর নীচে হাত বাঁধবে মর্মে কোন জাল বর্ণনাও উল্লেখ করতে পারেননি।[3] যদিও তিনি এক স্থানে আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভীর কথা দ্বারা পার্থক্য করতে চেয়েছেন। কিন্তু তার পক্ষে কোন ভুয়া দলীলও উল্লেখ করেননি। প্রশ্ন হড়, তিনি কোন্ দলীলের আলোকে উক্ত পার্থক্য করেছেন?
নারী-পুরুষের ছালাতের পার্থক্যের ব্যাপারে যে সমস্ত বর্ণনা পেশ করা হয় তার কয়েকটি নিম্নে পেশ করা হল-
عَنْ يَزِيْدَ بْنِ أَبِىْ حَبِيْبٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ r مَرَّ عَلَى امْرَأَتَيْنِ تُصَلِّيَانِ فَقَالَ إِذَا سَجَدْتُمَا فَضُمَّا بَعْضَ اللَّحْمِ إِلَى الأَرْضِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ لَيْسَتْ فِى ذَلِكَ كَالرَّجُلِ.
ইয়াযীদ ইবনু আবী হাবীব বলেন, দু’জন মহিলা ছালাত রত অবস্থায় রাসূল (ছাঃ) তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, সিজদার সময় তোমরা শরীরের কিছু অংশ মাটির সাথে ঠেকিয়ে দাও। কারণ মহিলাদের সিজদা পুরুষদের মত নয়।[4]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ।[5] উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে ইমাম বায়হাক্বী নিজেই বলেছেন, ‘এই বিষয়ে দুইটি মারফূ‘ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোনটিই নির্ভরযোগ্য নয়’।[6]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ r إِذَا جَلَسَتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى وَإِذَا سَجَدَتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِىْ فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُوْنُ لَهَا وَإِنَّ اللهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُوْلُ يَا مَلاَئِكَتِىْ أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا.
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, মহিলা যখন ছালাতে বসবে তখন সে তার এক উরুর সাথে অন্য উরু লাগিয়ে রাখবে এবং যখন সিজদা দিবে তখন তার পেট দুই উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। যেন তা তার জন্য পর্দা স্বরূপ হয়। আর তখন আল্লাহ তা‘আলা  তা লক্ষ্য করেন এবং ফেরেশতাদেরকে ডেকে বলেন, তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।[7]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা যঈফ। ইমাম বায়হাক্বী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে তিনি নিজেই যঈফ বলেছেন ও প্রত্যাখ্যান করেছেন।[8] কিন্তু মাওলানা আব্দুল মালেক তা গোপন করেছেন। তিনি বায়হাক্বী থেকে বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন, কিন্তু বায়হাক্বীর মন্তব্যটা পাঠকদের জানাননি। এটা কেমন ইনছাফ?
عَنْ وَائِلِ بن حُجْرٍ قَالَ جِئْتُ النَّبِيَّ r فَقَالَ هَذَا وَائِلُ بن حُجْرٍ جَاءَكُمْ لَمْ يَجِئْكُمْ رَغْبَةً وَلا رَهْبَةً جَاءَ حُبًّا لِلَّهِ وَلِرَسُولِهِ...فَقَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ r يَا وَائِلُ بن حُجْرٍ إِذَا صَلَّيْتَ فَاجْعَلْ يَدَيْكَ حِذَاءَ أُذُنَيْكَ وَالْمَرْأَةُ تَجْعَلُ يَدَيْهَا حِذَاءَ ثَدْيَيْهَا.
ওয়ায়েল বিন হুজুর (রাঃ) বলেন, আমি একদা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসলাম। তিনি ছাহাবীদেরকে বললেন, এটা হল ওয়ায়েল বিন হুজুর। সে তোমাদের কাছে উৎসাহে বা ভীতির কারণে আসেনি; বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর ভালবাসার কারণে এসেছে।.. ওয়ায়েল (রাঃ) বলেন, তিনি আমাকে বললেন, তুমি যখন ছালাত আদায় করবে তখন তোমার হাত দুই কান বরাবর উঠাবে। আর মহিলা মুছল্লী তার হাত বুক বরাবর উঠাবে।[9]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি নিতান্তই যঈফ। এর সনদে মায়মূনাহ বিনতে হুজর এবং উম্মু ইয়াহইয়া বিনতে আব্দুল জাববার নামে দুইজন অপরিচিত রাবী আছে।[10]  
উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে কতিপয় ছাহাবী ও তাবেঈর নামে আরো কিছু বর্ণনা উল্লেখ করা হয়। তবে সবই মুনকার ও ভিত্তিহীন। সেগুলোর দিকে ভ্রুক্ষেপ করার কোন প্রয়োজন নেই।[11]
মূলতঃ ছালাতের ক্ষেত্রে শরী‘আত পুরুষ ও মহিলার মাঝে কোন পার্থক্য করেনি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে ছালাত আদায় করতে দেখছ, সেভাবেই ছালাত আদায় কর’।[12] তিনি নারী ও পুরুষের জন্য দু’বার দু’ভাবে ছালাত আদায় করেননি। বিশিষ্ট তাবেঈ ইবরাহীম নাখঈ (রহঃ) বলেন, ‘পুরুষেরা ছালাতে যা করে নারীরাও তাই করবে’।[13] তবে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। যেমন-
(১) মহিলা ইমাম মহিলাদের প্রথম কাতারের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে।[14] 
(২) ইমাম কোন ভুল করলে মহিলা মুক্তাদীরা হাতে হাত মেরে আওয়ায করবে।[15] 
(৩) প্রাপ্ত বয়স্কা মহিলারা বড় চাদর দিয়ে পুরা দেহ না ঢাকলে তাদের ছালাত হবে না।[16] পুরুষের জন্য টাখনুর উপরে কাপড় থাকতে হবে।[17] কিন্তু মহিলাগণ টাখনু ঢাকতে পারেন।[18] এগুলো ছালাতের পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নয়। 
এ জন্য আলবানী বলেন, 
وَلاَ أَعْلَمُ حَدِيْثاً صَحِيْحاً فِى التَّفْرِيْقِ بَيْنَ صَلاَةِ الرَّجُلِ وَصَلاَةِ الْمَرْأَةِ وَإِنَّمَا هُوَ الرَّأْىُ وَالْاِجْتِهَادُ  ‘পুরুষ ও মহিলার ছালাতের পার্থক্য সম্পর্কে আমি কোন ছহীহ হাদীছ জানতে পারিনি। এটা ব্যক্তি রায় ও ইজতিহাদ মাত্র।[19]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. তালীমুস-সালাত, পৃঃ ৩১।
[2]. নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৬, পরিশিষ্ট-২।
[3]. দেখুনঃ ঐ, পৃঃ ৩৭৫-৩৯৭।
[4]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩৩২৫।
[5]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৬৫২।
[6].
وروي ذلك في حديثين موصولين غير قويين বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১০৫০।
[7]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩৩২৪; নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৭-৩৭৮।
[8]. সুনানুল কুবরা হা/৩৩২৪ -
قَالَ أَبُو أَحْمَدَ : أَبُو مُطِيعٍ بَيِّنُ الضَّعْفِ فِى أَحَادِيثِهِ وَعَامَّةُ مَا يَرْوِيهِ لاَ يُتَابَعُ عَلَيْهِ قَالَ الشَّيْخُ رَحِمَهُ اللهُ وَقَدْ ضَعَّفَهُ يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ وَغَيْرُهُ وَكَذَلِكَ عَطَاءُ بْنُ عَجْلاَنَ ضَعِيفٌ.।
[9]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/১৭৪৯৭; নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৯।
[10]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৫০০।
[11]. নবীজীর নামায, পৃঃ ৩৭৯-৩৮৮।
[12]. বুখারী হা/৬৩১, ১/৮৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬০৩, ২/৫২ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, ‘মুসাফিরদেও জন্য আযান যখন তারা জামা‘আত করবে’-১৮; মিশকাত হা/৬৮৩, পৃঃ ৬৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৩২, ২/২০৮ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘সংশ্লিষ্ট আযান’ অনুচ্ছেদ।
[13]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ১/৭৫ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
[14]. বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান হা/১৬২১; সুনানুল কুবরা হা/৫৫৬৩; আওনুল মা‘বূদ ২/২১২ পৃঃ; আবুদাঊদ, দারাকুৎনী, ইরওয়া হা/৪৯৩ -
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّهَا أَمَّتْهُنَّ فَقَامَتْ وَسَطًا
[15]. বুখারী হা/১২০৩, ‘ছালাতের মধ্য অন্যান্য কর্ম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫; মুসলিম হা/৭৮২; মিশকাত হা/৯৮৮, পৃঃ ৯১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯২৪, ৩/১৪ পৃঃ ‘ছালাতের মধ্য যে সমস্ত কর্ম বৈধ নয়’ অনুচ্ছেদ-৫।
[16]. আবুদাঊদ হা/৬৪১, ১/৯৪ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩৭৭; মিশকাত হা/৭৬২-৬৩, পৃঃ, ৭৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭০৬, ২/২৪০ পৃঃ, ‘সতর’ অনুচ্ছেদ।
[17]. আবুদাঊদ হা/৬৩৭, ১/৯৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৪৩৩১, পৃঃ ৩৭৪, ‘পোশাক’ অধ্যায়।
[18]. তিরমিযী হা/১৭৩১; আবুদাঊদ হা/৪১১৭; মিশকাত হা/৪৩৩৪-৩৫, পৃঃ ৩৭৪, ‘পোশাক’ অধ্যায়।
[19]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৫০০-এর আলোচনা দ্রঃ।
(সমাপ্ত)
কোরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক আরো বিষয় জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ



৫। তাওবা ও ইস্তেগফারে রিজিক বৃদ্ধি পায়, অভাব-অনটন দূর হয়: (ইহা পরীক্ষিত):








































৫৩। আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কতিপয় ভ্রান্ত আক্বীদার দ্বন্দ্ব নিরসনঃ


৫৪। দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালাকে কি স্বচক্ষেদেখা যায়? কথিত পির-আউলিয়াগণ দেখেনঃ

৫৫। প্রচলিত ১১৩টি জাল-জইফ হাদিসঃ যেগুলো আলেমগণ মুখস্থ বলে বেড়ায়-

৫৬। ফজিলতপূর্ণ কিছু আমলসমূহ-যা আপনার গুণাহ মাফ ও জান্নাতে নিয়ে যাবেঃ



৬৮। ছালাতে ইমামেরপিছনে মুক্তাদিগণ সুরা ফাতিহা পাঠ করবে কি করবে নাঃ দ্বন্দ্ব নিরসন-

 'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
 “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
« مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا »
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” 
(বুখারী ৩৪৬১, হাদিস  সম্ভার,  হাদিস নং ১৫৪৮রিয়াদুস সলেহিনহাদিস নং ১৩৮৮।)
লেখক  সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচিালক-পিএমএমআরসি, গুলশান-ঢাকা

ইসলামের উপর লেখা সকল অধ্যায় এক সাথে দেখতে চাইলে নীচে ক্লিক করুন।

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...