বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
পর্দার বিধান ও পর্দাহীনতার
শেষ পরিণতি
পর্দাঃ
আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং
তাদেরকে সমগ্র মাখলুকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা নারী ও পুরুষ হিসেবে মানবজাতির
শ্রেণী বিন্যাস করেছেন। মানুষকে একই আত্মা থেকে সৃষ্টি করলেও তিনি মানুষের মধ্যে
ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর,
যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে
এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার
মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের
ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক”।[1]
আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন মানব সৃষ্টি করার পর নারী ও পুরুষ উভয়কে কিছু বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। নারী
যেমন কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী অনুরূপভাবে পুরুষেরও রয়েছে কিছু
স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। নারী ও পুরুষের
বৈশিষ্টগত পার্থক্যটা অনেকটাই সৃষ্টিগত; যা আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি না। আর
কিছু পার্থক্য আছে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে। নারীদের দায়িত্ব ও পুরুষের দায়িত্ব
কখনো এক নয়। একজন পুরুষ যে দায়িত্ব পালন করতে পারে নারীরা তা পারে না। আবার একজন
নারী যে কাজ করতে পারে একজন পরুষ তা করতে পারে না। নারীর জন্য সন্তান লালন-পালন,
স্বামীর খেদমত, বাড়ীর ঘরের রান্না-বান্না ইত্যাদি কর্মই হল শোভনীয়। আর পুরুষের জন্য খেত-খামার,
চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি শোভনীয়।
নারী ও পুরুষের কর্ম ক্ষেত্র ও
দায়িত্ব ভিন্ন হলেও আল্লাহ তা‘আলার
নিকট মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের বিবেচনা হলো তাকওয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহকে যত বেশি ভয়
করবে, চাই সে নারী হোক বা পুরুষ হোক আল্লাহর নিকট তার মূল্যায়নটা তত বেশি হবে।
আল্লাহ তা‘আলা
কোনো নারী বা পুরুষকে তার নেক আমলের প্রতিদান দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য প্রদর্শন
করেন না। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন, “হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর
তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার।
তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক
তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।”[2]
যদি কোনো নারী
বা পুরুষ মুমিন থাকা অবস্থায় নেক আমল করে আল্লাহ তা‘আলা তাদের উভয়কে জান্নাত দান করবেন
তাদের প্রতি কোনো প্রকার জুলুম করা হবে না এবং বৈষম্য করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে নেক কাজ
করবে এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি
খেজুর-বীচির আবরণ পরিমাণ জুলুমও করা হবে না”।[3]
অপর আয়াতে
আল্লাহ তা‘আলা
আরও বলেন,
“যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে,
পুরুষ হোক বা নারী হোক, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং যা করত তার তুলনায়
অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব”।[4]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
কেউ পাপ কাজ করলে তাকে শুধু পাপের
সমান প্রতিদান দেওয়া হবে, আর যে পুরুষ অথবা নারী মুমিন হয়ে সৎকাজ করবে, তবে তারা
জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেখানে তাদেরকে অগণিত রিজিক দেওয়া হবে।[5]
আল্লাহ তা‘আলা নারী ও পুরুষের মাঝে পর্দার বিধান
রেখেছেন। নারীদের উপর পর পুরুষ থেকে পর্দা করা ফরয করেছেন। পর্দার বিধান নারীর
কল্যাণের জন্যই রাখা হয়েছে। যদি পর্দার বিধান না রাখা হতো তাহলে নারী ও পুরুষের
অবাধ মেলা-মেশার কারণে সমাজে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটত। যেমনটি বর্তমানে যে দেশ বা
সমাজে পর্দা নাই সে সমাজের অবস্থার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই। সেখানে প্রতিনিয়তই
নারীরা জলুম নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী ও পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা মানব
সমাজকে কলুষিত করে এবং সমাজে ফেতনা-ফ্যাসাদ বৃদ্ধি করে।রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
নারীর ফেতনাই হল
বড় ফেতনা। এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে নারীদের
বিষয়ে অধিক সতর্ক করেছেন। যাতে এ ফিতনা থেকে বেঁচে থাকা যায় এবং পর্দার বিধান
রেখেছেন। মাহরাম অর্থাৎ যাদের সাথে চিরতরে বিবাহ অবৈধ, তারা ব্যতীত বেগানা অর্থাৎ,
যাদের সাথে বিবাহ হারাম নয়, এমন লোকদের সাথে পর্দা করতে হয়।
কোন নারী কোনো পুরুষের সাথে
একান্তে থাকবে না:
নারী-পুরুষের
কোনো নির্জন স্থানে একাকী বাস, কিছুক্ষণের জন্যও লোক-চক্ষুর অন্তরালে, ঘরের ভিতরে, পর্দার আড়ালে একান্তে অবস্থান শরীয়তে
হারাম। যেহেতু তা ব্যভিচার না হলেও ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে, ব্যভিচারের
ভূমিকা অবতারণায় সহায়িকা হয়। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
এ ব্যাপারে সমাজে অধিক শৈথিল্য পরিলক্ষিত হয় দেওর-ভাবী ও
শালী-বুনাই-এর ক্ষেত্রে। অথচ এদের মাঝেই বিপর্যয় ঘটে অধিক। কারণ ‘পর চোরকে পার আছে, ঘর চোরকে পার নাই।’ তাই তো আল্লাহর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের পক্ষে তাদের দেওরকে মৃত্যুর
সাথে তুলনা করেছেন।” উকবা
ইব্ন আমের রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“তোমরা নারীদের কাছে প্রবেশ করা হতে
বিরত থাক। এ কথা বলার পর একজন আনসারী ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল দেবরের
বিষয়ে আপনি কি বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেন, দেবর হল মৃত্যু সমতুল্য”।[8]
অতএব দেওরের সাথে মায়ের বাড়ি, ডাক্তারখানা, অনুরূপ বুনাই-এর সাথে বোনের বাড়ি, ডাক্তারখানা বা
কোনো বিলাস-বিহারে যাওয়া-আসা এক মারাত্মক বিস্ফোরক প্রথা বা ফ্যাশন।
তদনুরূপ তাদের
সাথে কোনো কামরা বা স্থানে নির্জনতা অবলম্বন, বাড়ির দাসী বা
দাসের সাথে গৃহকর্তা বা কর্ত্রী অথবা তাদের ছেলে-মেয়ের সাথে নিভৃত বাস, বাগদত্তা বরকনের একান্তে আলাপ বা গমন, বন্ধু-বান্ধবীর
একত্রে নির্জন বাস, লিফটে কোনো বেগানা যুবক-যুবতীর একান্তে
উঠা-নামা,ডাক্তার ও নার্সের একান্তে চেম্বারে
অবস্থান, টিউটর ও ছাত্রীর একান্তে নির্জন-বাস ও
পড়াশোনা, স্বামীর অবর্তমানে কোনো বেগানা আত্মীয় বা
বন্ধুর সাথে নির্জন-বাস, ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে বা
রিক্সায় রিকশাচালকের সাথে নির্জনে গমন, তথাকথিত পীর ও তথাকথিত মহিলা মুরিদের একান্তে বয়াত ও তা‘লীম[9] প্রভৃতি
একই পর্যায়ের; যাদের মাঝে শয়তান কুটনি সেজে অবৈধ
বাসনা ও কামনা জাগ্রত করে কোনো পাপ সংঘটিত করতে চেষ্টা করে।
বারুদের নিকট আগুন
রাখা হলে বিস্ফোরণ তো হতেই পারে। যেহেতু মানুষের মন বড় মন্দ প্রবণ এবং দুর্নিবার
কামনা ও বাসনা মানুষকে অন্ধ ও বধির করে তোলে। তা ছাড়া নারীর মাঝে রয়েছে মনোরম
কমনীয়তা, মোহনীয়তা এবং চপলতা। আর শয়তান তো মানুষকে
অসৎ কাজে ফাঁসিয়ে দিয়ে আনন্দ বোধ করে থাকে। অনুরূপ কোনো বেগানা মহিলার সাথে
নির্জনে নামায পড়াও বৈধ নয়।
তালাক প্রাপ্তা
স্ত্রীর নিকট নিজের সন্তান দেখতে গিয়ে বা কোনো কাজে গিয়ে তার সাথে নির্জনতাও
অনুরূপ। কারণ, সে আর স্ত্রী নেই। আর এমন মহিলার সাথে
বিপদের আশঙ্কা বেশী। শয়তান তাদেরকে তাদের পূর্বের স্মৃতিচারণ করে ফাঁসিয়ে দিতে
পারে।
বৃদ্ধ-বৃদ্ধার একান্তে বা তাদের সাথে যুবতী-যুবকের নির্জন
বাস, কোনো হিজরে বা খাসি করা
নারী-পুরুষের আপসে বা তাদের সাথে যুবক-যুবতীর,একাধিক মহিলার
সাথে কোনো একটি যুবক অথবা একাধিক পুরুষের সাথে এক মহিলার, কোনো
সুশ্রী কিশোরের সাথে যুবকের নির্জন বাসও অবৈধ। প্রয়োজন হলে এবং মহিলার মাহরাম না
পাওয়া গেলে কোনো মহিলার জামাতে একজন পুরুষ থেকে সফর করায় অনেকের নিকট অনুমতি
রয়েছে। প্রকাশ যে, মহিলার সাথে কোনো নাবালক শিশু থাকলে
নির্জনতা কাটে না।
ব্যভিচার
থেকে সমাজকে দূরে রাখার জন্যই ইসলামে নারী-পুরুষে অবাধ মেলামেশা, নিষিদ্ধ
করা হয়েছে। একই অফিসে, মেসে, ক্লাসরুমে,বিয়ে ও মরা
বাড়িতে, হাসপাতালে, বাজারে প্রভৃতি ক্ষেত্রে উভয় জাতির একত্রে অবাধ
মেলা-মেশা করা অবৈধ।
মুসলিম নারীর
শিক্ষার অর্থ এই নয় যে, তাকে বড় ডিগ্রী, সুউচ্চ পদ, মোটা টাকার চাকুরী পেতে হবে। তার শিক্ষা জাতি গঠনের জন্য, সমাজ গড়ার জন্য, মুসলিম দেশ ও
পরিবেশ গড়ার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু শিখতে পারলেই যথেষ্ট; যদিও তা ঘরে
বসেই হয়। তাছাড়া পৃথক গার্লস স্কুল-কলেজ না থাকলে মিশ্র শিক্ষাঙ্গনে মুসলিম নারীর
শিক্ষায় ‘জল খেতে গিয়ে ঘটি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাই
অধিক ঘটে থাকে; যে সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত হওয়া
যায় ঠিকই, কিন্তু আদর্শ মুসলিম হওয়া যায় না।
নারীর স্বনির্ভরশীলা হয়ে জীবন-যাপন করায় গর্ব আছে ঠিকই, কিন্তু সুখ নেই। প্রকৃতির সাথে লড়ে আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা
করে নানান বিপত্তি ও বাধাকে উল্লঙ্ঘন করে অর্থ কামিয়ে স্বাধীনতা আনা যায় ঠিকই; কিন্তু শান্তি আনা যায় না। শান্তি আছে স্বামীর সোহাগে, স্বামীর প্রেম, ভালোবাসা ও
আনুগত্যে। পরিত্যক্তা বা নিপীড়িতা হলে এবং দেখার কেউ না থাকলে মুসলিম রাষ্ট্র ও
সমাজে তার কালাতিপাত করার যথেষ্ট সহজ উপায় আছে। যেখানে নেই সেখানকার কথা বিরল।
অবশ্য দ্বীন ও দুনিয়ার প্রকৃত মূল্যায়ন করতে পারলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে উঠবে।
যারা পরকালের চিরসুখে বিশ্বাসী তারা জাগতিক কয়েকদিনের সুখ-বিলাসের জন্য দ্বীন ও
ইজ্জত বিলিয়ে দেবে কেন?
নারীরা কখনোই একাকী ঘরের
বাইরে যাবে না:
ব্যভিচারের
প্রতি নিকটবর্তী হওয়ার আর এক পদক্ষেপ মহিলাদের একাকিনী কোথাও বাইরে যাওয়া-আসা।
তাই ‘সুন্দরী চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে?’ বলে বহু লম্পট
তাদের পাল্লায় পড়ে থাকে, ধর্ষণের হাত হতে অনেকেই রক্ষা পায় না, পারে না নিজেকে ‘রিমার্ক’ ও ‘টিস্’এর শিলাবৃষ্টি হতে বাঁচাতে। এর জন্যই তো
সমাজ-বিজ্ঞানী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“কোন মহিলা যেন এগানা পুরুষ ছাড়া একাকিনী
সফর না করে, তার নিকট যেন এগানা ছাড়া কোনো বেগানা
পরুষ প্রবেশ না করে, এ কথা শোনে এক জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসূলুল্লাহ আমি অমুক অমুক
যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য সৈন্য দলে নাম লিখিয়েছি অথচ আমার স্ত্রী হজের উদ্দেশ্যে
রওয়ানা দিয়েছেন এখন আমি কি করব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উত্তর
দিলেন তুমি তার সাথে বের হও”।[10]
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন “নারী গুপ্ত জিনিস; সুতরাং যখন সে
(বাড়ি হতে) বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে রমণীয়
করে দেখায়”।[11]
যার স্বামী বিদেশ তার নিকট
গমন নিষিদ্ধ
ব্যভিচারের কাছে
যাওয়ার আর এক পদক্ষেপ কোনো এমন মহিলার নিকট কোনো গম্য আত্মীয় বা অন্য পুরুষের গমন যার স্বামী
বর্তমানে বাড়িতে নেই, বিদেশে আছে। কারণ এমন স্ত্রীর মনে
সাধারণত: যৌন ক্ষুধা একটু তুঙ্গে থাকে, তাই বিপদ
ঘটাই স্বাভাবিক। স্ত্রী বা ঐ পুরুষ যতই পরহেজগার হোক, তবুও না। এ
বিষয়ে নীতি-বিজ্ঞানী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“তোমরা সেই মহিলাদের নিকট গমন করো না
যাদের স্বামীরা বিদেশে আছে। কারণ, শয়তান তোমাদের
রক্ত শিরায় প্রবাহিত হয়”।[12]
“আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামআমাদেরকে নিষেধ করেছেন যে, আমরা যেন মহিলাদের নিকট
তাদের স্বামীদের বিনা অনুমতিতে গমন না করি।”[13]
সুগন্ধি ব্যবহার করে
নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ
অনুরূপ কোনো
প্রকার সেন্ট বা পারফিউমড্ ক্রিম অথবা পাউডার ব্যবহার করে বাইরে পুরুষদের সম্মুখে (পর্দার সাথে হলেও) যাওয়া
ব্যভিচারের নিকটবর্তী হওয়ার এক ভূমিকা। যেহেতু যুবকের প্রবৃত্তি এই যে, মহিলার নিকট হতে সুগন্ধ পেলে তার যৌন-চেতনা উত্তেজনায় পরিণত
হয়। যার জন্যই সংস্কারক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী। আর নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো
(পুরুষের) মজলিসের পাশ দিয়ে পার হয়ে যায় তাহলে সে এক বেশ্যা।”এমন কি এই
অবস্থায় নামাযের জন্য যেতেও নিষিদ্ধ।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে মহিলা সেন্ট ব্যবহার করে মসজিদে যায়, সেই মহিলার গোসল না করা পর্যন্ত কোনো নামায কবুল হবে না”।[14]
কোন পুরুষের সাথে মোহনীয়
কন্ঠে কথা বলবে না:
কোন গম্য
পুরুষের সাথে মহিলার প্রগলভতার সাথে কিংবা মোহনীয় কণ্ঠে সংলাপ ও কথোপকথন করাও ব্যভিচারের নিকটবর্তীকারী
পথসমূহের অন্যতম ছিদ্রপথ। এ বিপজ্জনক বিষয়ে সাবধান করে আল্লাহ তা‘আলা মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলেন,
“হে
নবী স্ত্রীগণ তোমরা অন্যান্য নারীদের মত নয়, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পরপুরুষদের সাথে কোমল কণ্ঠে
এমনভাবে কথা বলো না,যাতে ব্যাধিগ্রস্ত অন্তরের মানুষ
প্রলুব্ধ হয়।” [সূরা
আল-আহযাব: ৩২]
এই জন্যই ইমাম ভুল করলে পুরুষ মুক্তাদীরা তসবিহ বলে
স্মরণ করাবে, আর মহিলারা হাত তালির শব্দে, তসবীহ বলেও নয়! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, «التَّسْبِيحُ لِلرِّجَالِ، وَالتَّصْفِيقُ لِلنِّسَاءِ» পুরুষদের
জন্য তাসবীহ এবং নারীদের জন্য তালি।[15] যাতে নারীর কণ্ঠের শব্দেকতক পুরুষের মনে যৌনানুভূতি জাগ্রত না হয়ে উঠে। সুতরাং, নারী-কণ্ঠের গান তথা অশ্লীল গান যে কি, তা রুচিশীল
মানুষদের নিকট সহজে অনুমেয়।
এমন বহু
হতভাগী মহিলা আছে যারা স্বামীর সাথে কর্কশ কণ্ঠ
স্বরে কথা বলে
কিন্তু কোনো উপহাসের পাত্রের (?) সাথে মোহন-সূরে সংলাপ ও উপহাস করে। এরা
নিশ্চয়ই পরকালেও হতভাগী।
নারী হাত স্পর্শ করা হারাম
তদ্রুপ বেগানা
নারীর সাথে মুসাফাহা বৈধ নয়। হাতে মোজা, দস্তানা বা
কাপড়ের কভার রেখেও নয়। কাম মনে হলে তা হবে হাতের ব্যভিচার। আয়েশা
রা. বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কখনো স্ত্রী ছাড়া আর কোনো মহিলার হাত স্পর্শ করেননি।
করতল চেপে ধরা এবং সুড়সুড়ি দেওয়াও হল তার ইঙ্গিত! কোনো
গম্য নারীর দেহ স্পর্শ, বাসে-ট্রেনে, হাটে-বাজারে, স্কুলে-কলেজে প্রভৃতি ক্ষেত্রে গায়ে গা লাগিয়ে চলা বা বসা, নারী-পুরুষের ম্যাচ খেলা ও দেখা প্রভৃতি ইসলামে হারাম। কারণ, এ সবগুলিও অবৈধ যৌনাচারের সহায়ক। এগুলো
মানুষের হাত পা ও চোখের ব্যভিচার। সমাজ সংস্কারক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের কিছু
অংশ লিপিবদ্ধ হয়েছে সে অবশ্যই তার মধ্যে লিপ্ত হবে। দুই চোখের ব্যভিচার হল,
দৃষ্টি, দুই কানের ব্যভিচার হল শ্রবণ, মুখের ব্যাভিচার হল, কথা বলা, হাতের
ব্যভিচার হল, স্পর্শ করা এবং পায়ের ব্যভিচার হল, অগ্রসর হওয়া। আর অন্তর আশা ও
আকাঙ্ক্ষা করতে থাকে। লজ্জা স্থান তাকে বাস্তবায়ন করে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে”।[16]
“কোন ব্যক্তির মাথায় লৌহ সুচ দ্বারা
খোঁচা যাওয়া ভালো, তবুও যে নারী তার জন্য অবৈধ তাকে স্পর্শ
করা ভালো নয়”।[17]
রাস্তায় বের হয়ে নিজেদের সৌন্দর্য্য পর পুরুষকে
প্রদর্শন করা:
বাইরে বের
হয়ে নারীর রমণীয়, মোহনীয় ও
সৌন্দর্য-গর্বজনক চপল মধুর চলনও ব্যভিচার ও যৌন উত্তেজনার সহায়ক কর্ম। এরা সেই
নারী যাদের প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী যাদেরকে
আমি দেখিনি, তারা ভবিষ্যতে আসবে প্রথম শ্রেণী অত্যাচারীর দল যাদের সঙ্গে থাকবে
গরুর লেজের মত চাবুক যদ্ধারা তারা লোকদেরকে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় শ্রেণী হল সে
নারীর দল যারা কাপড়তো পরিধান করবে কিন্তু তারা উলঙ্গ, নিজেরা অন্যদের প্রতি আকৃষ্ট
এবং অন্যদেরকেও তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে, যাদের মস্তক [খোপা বাধার কারণে] উটের
হেলে যাওয়া কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তার গন্ধও পাবে না। অথচ
জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে”।[18]
অনুরূপ খটখট শব্দবিশিষ্ট জুতো নিয়ে চটপটে চলন, দেহের অলঙ্কার যেমন চুড়ি, খুঁটকাটি, নূপুর, তোরা প্রভৃতির বাজনা বাজিয়ে লাস্যময় চলনও
যুবকের মনে যৌন-আন্দোলন আনে। সুতরাং, এ কর্ম যে হারাম তা বলাই বাহুল্য।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তারা
তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না, তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে----।[19]”
নারীরা রাস্তায়
চলার সময় কখনোই রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলবে না। তারা রাস্তার এক পাশ দিয়ে চলবে।
রাসূল সা. বলেন,
আবু উসাই আল
আনছারী তার পিতা থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছেন, তিনি
মসজিদের বাহিরে দেখতে পান যে, নারীরা রাস্তায় পুরুষের সাথে মিশে গেছেন। তখন
আল্লাহর রাসূল নারীদের বলেন, তোমরা অপেক্ষা কর, কারণ, তোমাদের জন্য রাস্তার মাঝে
হাটা উচিত নয়, তোমাদের জন্য হল রাস্তার পাশ। এ কথা শোনে নারী দেয়াল ঘেসে হাটা শুরু
করে তখন দেখা গেল তাদের অনেকের কাপড় দেয়ালের সাথে মিশে যেত।[21]
মহিলাদের জন্য স্বগৃহে গোসলখানা (বাথরুম) করা ওয়াজেব
(সিমেন্টের হওয়া জরুরী নয়) এবং ফাঁকা পুকুরে, নদীতে, ঝর্ণায়, সমুদ্রতীরে বা সাধারণ গোসলখানায় গোসল করা
তাদের জন্য হারাম। যেহেতু সমাজ-বিজ্ঞানী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যে নারী স্বগৃহ, স্বামীগৃহ বা
মায়ের বাড়ি ছাড়া অন্য স্থানে নিজের পর্দা রাখে (কাপড় খোলে) সে
তার ও তার রবের মধ্যকার পর্দা ও
লজ্জাশীলতাকে বিদীর্ণ করে দেয়[22]।
রাসূল সা. বলেন,
স্বগৃহ ছেড়ে পরকীয় গৃহে বাস, বান্ধবী বা বান্ধবীর স্বামীর বাড়িতে রাত্রিবাস
ইত্যাদিও বিপজ্জনক ব্যভিচারের ছিদ্রপথ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে মহিলা নিজের স্বামীগৃহ ছাড়া অন্য গৃহে নিজের কাপড়
খোলে সে আল্লাহ তা‘আলা ও তার নিজের মাঝে পর্দা বিদীর্ণ করে ফেলে।”
একই কারণে অপরের
লজ্জা স্থান (নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত স্থান) দেখা এবং একই কাপড়ে পুরুষে-পুরুষে বা
মহিলায়-মহিলায় শয়ন করাও নিষিদ্ধ।
মহিলার দিক তাকানো থেকে
বিরত থাকা:
পর পুরুষের
দৃষ্টিতে মহিলার সর্বশরীর লজ্জাস্থান। বিশেষ করে চক্ষু
এমন এক অঙ্গ যার দ্বারা বিপত্তির সূচনা হয়। চোখাচোখি থেকে শুরু হয়, কিন্তু শেষ হয় গলাগলিতে। এই ছোট্ট অঙ্গার টুকরা থেকেই সূত্রপাত
হয় সর্বগ্রাসী বড় অগ্নিকান্ডের মহা বিপদ।
দৃষ্টির কথায়
কবি বলেন,
“আঁখি ও তো আঁখি নহে, বাঁকা ছুরি গো
কে জানে সে কার
মন করে চুরি গো!”
সুতরাং এ দৃষ্টি
বড় সাংঘাতিক বিপত্তি। যার জন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে (নজর ঝুকিয়ে চলে) এবং
তাদের যৌনাঙ্গকে হেফাযতে রাখে; এটিই তাদের জন্য উত্তম। ওরা যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারাও যেন নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও লজ্জাস্থান সংরক্ষনকরে---।”
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “(কোন নারীর উপর তোমার দৃষ্টি পড়লে তার প্রতি) বারবার দৃকপাত
করো না। বরং নজর সত্বর ফিরিয়ে নিও, কারণ, তোমার জন্য প্রথমবার ক্ষমা,
দ্বিতীয়বার নয়”।[24]
যেহেতু “চক্ষুও ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার হল (কাম) দৃষ্টি।”
সুতরাং, এ দৃষ্টিকে ছবি থেকেও সংযত করতে
হবে এবং পরপুরুষ থেকে আড়ালে রাখতে হবে। যাতে একহাতে তালি নিশ্চয়ই বাজবে না। আর এই
বড় বিপদ সৃষ্টিকারী অঙ্গ চোখটি থাকে চেহারায়। চোখাচোখি যাতে না হয় তাই তো নারীর
জন্য জরুরী তার চেহারাকেও গোপন করা।
অত্যন্ত
সখীত্বের খাতিরে হলেও বিনা পর্দায় সখীতে-সখীতে দৃঢ় আলিঙ্গন ও একে অপরকে নিজ নিজ
সৌন্দর্য প্রদর্শন করা বৈধ নয়। কারণ এতে সাধারণত: প্রত্যেক সখী তার সখীর
দেহ-সৌষ্ঠব নিজের স্বামীর নিকট বর্ণনা করলে স্বামী মনের পর্দায় তার
স্ত্রীর ঐ সখীর বিলক্ষণ রূপ-দৃশ্য নিয়ে মনোতৃপ্তি লাভ করে থাকে।
হয়তো বা মনের
অলক্ষ্যেই এই পুরুষ তার হৃদয়ের কোনো কোণে ঐ মহিলার জন্য আসন পেতে দেয়। আর পরবর্তীতে
তাকে দেখার ও কাছে পাওয়ার মত বাসনাও জাগ্রত করে তোলে।
নোংরা
পত্র-পত্রিকা পাঠ, অশ্লীল ছায়াছবি ও থিয়েটার-যাত্রা দর্শনও
একই পর্যায়ের; যাতে ধ্বংস হয় তরুণ-তরুণীর চরিত্র, নোংরা হয়ে উঠে
পরিবেশ।
স্বামী-স্ত্রীর
মিলন-রহস্য প্রভৃতি জানার জন্য সঠিক সময় হল বিবাহের পর অথবা বিবাহের পাকা দিন
হওয়ার পর। নচেৎ এর পূর্বে রতি বা কামশাস্ত্র পাঠ করে বিবাহে দেরী হলে মিলন তৃষ্ণা
যে পর্যায়ে পৌঁছায় তাতে বিপত্তি যে কোনো সময়ে ঘটতে পারে। কারো রূপ, দ্বীনদারী প্রভৃতির প্রশংসা শুনে তাকে মনে মনে ভালোবেসে
ফেলা দোষণীয় নয়। তাকে
পেতে বৈধ উপায় প্রয়োগ করা এবং বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ করে সুখের সংসার গড়া উত্তম।
কিন্তু অবৈধভাবে তাকে দেখা, পাওয়া, তার কথা শোনা ও
তার সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা করা অবশ্যই সীমালঙ্ঘন। অবৈধ বন্ধুত্ব ও
প্রণয়ে পড়ে টেলিফোনে সংলাপ ও সাক্ষাৎ প্রভৃতি ইসলামে হারাম।
যুবক-যুবতীর ঐ
গুপ্ত ভালোবাসা তো কেবল কিছু দৈহিক সুখ লুটার জন্য। যার শুরুতেও চক্ষে অশ্রু ঝরে এবং শেষেও। তবে শুরুতে ঝরে আনন্দাশ্রু, আর শেষে উপেক্ষা ও লাঞ্ছনার। কারণ, ‘কপট প্রেম
লুকোচুরি, মুখে মধু, হৃদে ছুরিই অধিকাংশ হয়। এতে তরুণী বুঝতে
পারে না যে,প্রেমিক তার নিকট থেকে যৌন তৃপ্তি লাভ
করে তাকে বিনষ্ট করে চুইংগামের মত মিষ্টতা চুষে নিয়ে শেষে আঠাল পদার্থটিকে ছুঁড়ে
ফেলে দেবে।
“বন্ধু গো যেও ভুলে-
প্রভাতে
যে হবে বাসি, সন্ধ্যায় রেখো না সে ফুল তুলে।
উপবনে তব
ফোটে যে গোলাপ প্রভাতেই তুমি জাগি,
জানি, তার কাছে যাও শুধু তার গন্ধ-সুষমা লাগি।”
সুতরাং, এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত মুসলিম
তরুণীকে এবং তার অভিভাবককেও। কারণ, ‘বালির বাঁধ, শঠের প্রীতি, এ দুয়ের একই রীতি।’
ব্যভিচারের
ছিদ্রপথ বন্ধ করার আর এক উপায় হল পর্দা। নারীর দেহ-সৌষ্ঠব প্রকৃতিগত ভাবেই রমণীয়। কামিনীর রূপ লাবণ্য
এবং তদুপরি তার অঙ্গরাজ বড় কমনীয়; যা পুরুষের কামানল প্রজ্বলিত করে। তাই
পুরুষের দৃষ্টির অন্তরালে থেকে নিজের মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে নারী জাতির প্রতি
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর এই বিধান এলো। এই জন্যই কোনো গম্য (যার সাথে নারীর কোনও
সময়ে বিবাহ বৈধ হতে পারে এমন) পুরুষের দৃষ্টিতে তার সৌন্দর্য ও লাবণ্য প্রকাশ করতে
পারে না। পক্ষান্তরে যার সাথে নারীর কোনও কালে বিবাহ বৈধ নয় এমন পুরুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ
করতে পারে। কারণ এদের দৃষ্টিতে কাম থাকে না। আর যাদের থাকে তারা মানুষ নয়, পশু। (কাদের সাথে কোনও কালে বিবাহ বৈধ নয় তাদের কথা পরে
আলোচিত হবে।) অনুরূপ নারীর রূপ বিষয়ে অজ্ঞ বালক, যৌনকামনাহীন
পুরুষের সাথে মহিলা
দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারে।
পর্দার ব্যাপারে
আল্লাহর সাধারণ নির্দেশঃ-
“(হে নারী জাতি!) তোমরা স্বগৃহে অবস্থান কর এবং প্রাক-ইসলামী
(জাহেলিয়াতী) যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়িও না।”
“হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রী, কন্যা ও মুসলিম রমণীগণকে বল, তারা যেন তাদের
চাদরের কিয়দংশ নিজেদের (মুখমণ্ডলের) উপর টেনে নেয়। এতে (ক্রীতদাসী থেকে) তাদেরকে
চেনা সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।
(লম্পটরা তাদেরকে উত্যক্ত করবে না।)”
“মুমিন নারীদেরকে
বল, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে ও লজ্জাস্থান হিফাজত করে
এবং যা প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের (অন্যান্য) আভরণ প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় (উড়না অথবা চাদর)
দ্বারা আবৃত করে”।[25]
“(হে পুরুষগণ!) তোমরা তাদের (নারীদের) নিকট
হতে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল হতে চাইবে। এ বিধান তোমাদের এবং তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র”।[26]
সুতরাং, মুসলিম নারীর নিকট পর্দা:- আল্লাহ ও তদীয় রসূলের
আনুগত্য।
পর্দা, চরিত্রের পবিত্রতা, অনাবিলতা ও নিষ্কলঙ্কতা।
পর্দা, নারীর নারীত্ব, সম্ভ্রম ও
মর্যাদা।
পর্দা, লজ্জাশীলতা, অন্তর্মাধুর্য ও সদাচারীতা।
পর্দা, মানবরূপী শয়তানের দৃষ্টি থেকে রক্ষার
মাধ্যম।
পর্দা, ইজ্জত হিফাজত করে, অবৈধ প্রণয়, ধর্ষণ, অশ্লীলতা ও ব্যভিচার দূর করে, নারীর মান ও মূল্য রক্ষা করে। জিনিস দামী ও মূল্যবান হলেই
তাকে গোপনে লুকিয়ে রাখা হয়। যত্রতত্রে কাঁচ পাওয়া যায় বলেই তার কোনো কদর নেই।
কিন্তু কাঞ্চন পাওয়া যায় না বলেই তার বড় কদর। পর্দানশীন নারী কাঁচ নয়; বরং কাঞ্চন, সুরক্ষিত মুক্তা।
পর্দা, নারীকে কাফের ও ক্রীতদাসী থেকে বাছাই করে সম্ভ্রান্ত মুসলিম
নারী রূপে চিহ্নিত করে।
পর্দা, আল্লাহর গযব ও জাহান্নামের আগুন থেকে
বাঁচার মাধ্যম।
নারীদের প্রধান
শত্রু তার সৌন্দর্য ও
যৌবন। আর পর্দা তার লাল কেল্লা।
ইসলামের
সুসভ্য দৃষ্টিতে নারীর পর্দা ও সভ্য লেবাসের কয়েকটি শর্ত:
১- মুসলিম মহিলা যে পোশাক ব্যবহার
করবে তাতে যেন পর্দা পাওয়া যায়; অর্থাৎ সেই পোশাক যেন তার সারা দেহকে
আবৃত করে। সুতরাং, যে লেবাসে নারীর কেশদাম, গ্রীবা, বক্ষদেশ, উদর ও পৃষ্ঠদেশ (যেমন, শাড়ি ও খাটো ব্লাউজে) এবং হাঁটু ও জাং (যেমন, স্ক্যাট, ঘাগরা, ফ্রক ইত্যাদিতে)
প্রকাশিত থাকে তা (গম্য পুরুষদের সামনে) পরিধান করা হারাম।
২- এই লেবাস যেন সৌন্দর্যময় ও
দৃষ্টি-আকর্ষণকারী না হয়।
সুতরাং, কামদার
(এমব্রয়ডারি করা) চকচকে রঙিন বোরকাও পরা বৈধ নয়।
৩- এমন পাতলা যেন না হয় যাতে ভিতরের চামড়ার রঙ নজরে আসে।
অতএব পাতলা শাড়ি, উড়না প্রভৃতি মুসলিম মহিলার ড্রেস নয়।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী; যাদেরকে আমি দেখিনি। (তারা ভবিষ্যতে আসবে।) প্রথম শ্রেণী
(অত্যাচারীর দল) যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক, যদ্দারা তারা লোককে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয়
শ্রেণী হল সেই নারীদল; যারা কাপড় তো পরিধান করবে, কিন্তু তারা বস্তুত: উলঙ্গ থাকবে, যারা পুরুষদের
আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে, যাদের মস্তক
(খোপা বাঁধার কারণে) উটের হিলে যাওয়া কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তার গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরবর্তী
স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।”
৪- এমন টাইটফিট বা আঁট-সাঁট যেন না হয়; যাতে দেহাঙ্গের উচ্চতা ও নীচতা এবং আকার
ও আকৃতি কাপড়ের উপরেও বুঝা যায়। তাই এমন চুস্ত ও ফ্যাশনের লেবাস মুসলিম নারী পরিধান করতে পারে না, যাতে তার সুডৌল স্তন-যুগল, সুউচ্চ নিতম্ব
সরু কোমর প্রভৃতির আকার প্রকাশ পায়।
টাইটফিট ইত্যাদি
লেবাস যে বড় ফিতনাসৃষ্টিকারী ও হারাম তা বিভিন্ন লেডিস অন্তর্বাস কোম্পানীর নামই সাক্ষ্য দেয়।
৫- এই লেবাস যেন পুরুষদের পোষাকের অনুরূপ না হয়। সুতরাং প্যান্ট, শার্ট প্রভৃতি পুরুষদের মত পোশাক কোনো মুসলিম মহিলা ব্যবহার
করতে পারে না। যেহেতু পুরুষদের বেশধারিণী নারীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ থাকে,
তাই কোনো পুরুষের জন্য পুরুষের বেশ ধারণ করা উচিত নয়। রাসূল সা. বলেন,
৬- তদ্রূপ তা যেন কাফের মহিলাদের অনুরূপ না
হয়। অবশ্য ঢিলে ম্যাক্সি ও
শেলোয়ার কামীস এবং তার উপর চাদর বা উড়না; যা মাথার কেশ,বক্ষস্থল ইত্যাদি আচ্ছাদিত করে তা মুসলিম নারীর লেবাস। কেবলমাত্র শেলোয়ার কামীস বা
ম্যাক্সি অথবা তার উপর বক্ষে ও গ্রীবায় থাক বা ভাঁজ করা উড়নার লেবাস কাফের
মহিলাদের। অনুরূপ শাড়ি যদি সর্বশরীরকে ঢেকে নেয় তবে মুসলিমদের; নচেৎ থাক করে বুকে চাপানো থাকলে তথা কেশদাম ও পেট-পিঠ
প্রকাশ করে রাখলে তা অমুসলিম মহিলাদের লেবাস। আর প্রিয় নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
৭- এই পোশাক যেন জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ তথা প্রসিদ্ধি
জনক না হয়।
৮- লেবাস যেন সুগন্ধিত বা সুরভিত না
হয়। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, যে নারী সুগন্ধি ছড়িয়ে লোকালয়ে যায়, সে বেশ্যা নারী।
প্রকাশ
যে, নারীদেহে যৌবনের চিহ্ন দেখা দেওয়া মাত্রই এই শর্তের পোশাক পরা ওয়াজেব।
কোন
কোনো অঙ্গ দেখানো চলবে?
স্বামী-স্ত্রীর
মাঝে কোনো পর্দা নেই উভয়েই এক অপরের পোশাক।
উভয়েই উভয়ের
সর্বাঙ্গ দেখতে পারে। তবে সর্বদা নগ্ন পোশাকে থাকা উচিত নয়।
মা-বেটার
মাঝে পর্দা ও গোপনীয় কেবল নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত। অন্যান্য নিকটাত্মীয়; যাদের সাথে চিরকালের জন্য বিবাহ হারাম তাদের সামনে পর্দা ও
গোপনীয় অঙ্গ হল গলা
থেকে হাঁটু পর্যন্ত।
অবশ্য কোনো
চরিত্রহীন এগানা পুরুষের কথায় বা ভাবভঙ্গিতে অশ্লীলতা ও কামভাব বুঝলে, মহিলা তার নিকটেও যথা সম্ভব অন্যান্য অঙ্গও পর্দা করবে।
মহিলার সামনে
মহিলার পর্দা নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। মহিলা কাফের হলে তার সামনে হাত ও চেহারা
ছাড়া অন্যান্য অঙ্গ খোলা বৈধ নয়। যেমন,কোনো নোংরা
ব্যভিচারিণী মেয়ের সামনেও নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করা উচিত নয়। অনুরূপ এমন কোনো
মহিলার সামনেও দেহসৌষ্ঠব খোলা নিষিদ্ধ; যে তার কোনো
বন্ধু বা স্বামীর নিকট অন্য মহিলার রূপচর্চা করে বলে জানা যায় বা আশঙ্কা হয়।
এমন মহিলার সাথে মুসলিম মহিলার সখীত্ব বা বন্ধুত্বও বৈধ নয়।
মা-বাপের চাচা ও
মামা, মেয়ের চাচা ও মামা মাহরাম। সুতরাং চাচাতো
দাদো বা নানার সামনে পর্দা গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত।
তালাকের পর
ইদ্দত পার হয়ে গেলে ঐ স্বামী এই স্ত্রীর জন্য বেগানা হয়ে যায়। সুতরাং তার
নিকটে পর্দা ওয়াজেব।
পালিত পুত্র
থেকে পালয়িত্রী মায়ের এবং পালয়িতা বাপ থেকে পালিতা কন্যার পর্দা ওয়াজেব। প্রকাশ যে, ইসলামে এ ধরনের প্রথার কোনো অনুমতি নেই।
অনুরূপ
পাতানো ভাই বোন, মা-বেটা, বাপ-বেটির মাঝে, পীর ভাই-বোন (?)[29] বিয়াই-বিয়ান ও বন্ধুর স্বামী বা স্ত্রীর
মাঝে পর্দা ওয়াজেব। যদিও তাদের চরিত্র ফিরিশতার মত হয় তবুও দেখা দেওয়া হারাম।
পর্দা হবে আল্লাহর ভয়ে তাঁর আনুগত্যের উদ্দেশ্যে। মানুষের ভয়ে বা লোক প্রদর্শনের
জন্য নয়। এতে মানুষের চরিত্র ও সম্মান বিচার্য নয়। সুতরাং লম্পট, নারীবাজ, পরহেজগার, মৌলবি সাহেব প্রভৃতি পর্দায় সকলেই সমান।
আল্লাহর ফরয মানতে কোনো প্রকারের লৌকিকতা ও সামাজিকতার খেয়াল অথবা কারো মনোরঞ্জনের
খেয়াল নিশ্চয় বৈধ নয়।
দৃষ্টিহীন অন্ধ
পুরুষের সামনে পর্দা নেই। অবশ্য মহিলাকে ঐ পুরুষ থেকে দৃষ্টি সংযত করতে হবে।
পৃথক মহিলা
শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান না থাকলে বেপর্দায় ছেলেদের সাথে একই
সাথে পাশাপাশি বসে
শিক্ষা গ্রহণ বৈধ নয়। স্বামী-সংসার উদ্দেশ্য হলে বাড়িতে বসে বিভিন্ন
জ্ঞানগর্ভ বই-পুস্তক পড়া এবং দ্বীন-সংসার শিখার শিক্ষাই যথেষ্ট। অন্যান্য
শিক্ষার প্রয়োজনে যথাসম্ভব পর্দার সাথে শিখতে হবে। পর্দার চেষ্টা না করে
গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিলে অবশ্যই মেয়ে-অভিভাবক সকলেই পাপী হবে।
চিকিৎসার
প্রয়োজনে মহিলার জন্য ডাক্তার খোঁজা ওয়াজেব। লেডী ডাক্তার না পেলে অথবা যথাবিহিত
চিকিৎসা তার নিকট না হলে বাধ্য হয়ে পুরুষ ডাক্তারের নিকট যেতে পারে। তবে শর্ত হল
মহিলার সাথে তার স্বামী অথবা কোনো মাহরাম থাকবে। একাকিনী ডাক্তার-রুমে যাবে
না। পরন্তু ডাক্তারকে কেবল সেই অঙ্গ দেখাবে, যে অঙ্গ দেখানো
প্রয়োজন। লজ্জা স্থান দেখলেও অন্যান্য অঙ্গ দেখানো অপ্রয়োজনে বৈধ হবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
একাকিনী হলেও নামাযে আদবের লেবাস জরুরী। এই সময় কেবল
চেহারা ও হাত খুলে রাখা যাবে। শাড়ি পরে বাহু-পেট-পিঠ-চুল বের হয়ে গেলে নামায হয়
না। যেমন, সম্মখে বেগানা পুরুষ থাকলে চেহারাও ঢাকতে হবে।
সেলোয়ার-কামিস
বা ম্যাক্সিতে নামায পড়লে চাদর জরুরী। কুরআন শরীফ পড়তে গিয়ে মাথা খুলে গেলে ক্ষতি
নেই। এতে ওযুও নষ্ট হয় না।আল্লাহ বলেন,
“বৃদ্ধা নারী; যারা বিবাহের
আশা রাখে না, তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে যদি
বহির্বাস খুলে রাখে তাহলে তা দোষের নয়। তবে পর্দায় থাকাটাই তাদের জন্য উত্তম”।[31]
যেহেতু কানা বেগুনের ডগলা খদ্দেরও বর্তমান। পর্দায় থাকলে
বাড়ির লোক ঠাট্টা করলে এবং কোনো প্রকার অথবা সর্বপ্রকার সহায়তা না করলে মহিলার
উচিত যথাসম্ভব নিজে নিজে পর্দা করা। এ ক্ষেত্রে হাল ছেড়ে বসা বৈধ নয়। কল-পায়খানা নেই বলে ওজর গ্রহণযোগ্য নয়। স্বামী পর্দায়
থাকতে না দিলে চেষ্টার পরও যদি একান্ত নিরুপায় হয়ে বেপর্দা হতে হয় তবুও যথাসাধ্য
নিজেকে সংযত ও আবৃত করবে। আল্লাহ এ চেষ্টার অন্তর দেখবেন। যারা সহায়তা করে না বা
বাধা দেয় তাদের পাপ তাদের উপর।
পক্ষান্তরে
বেগানা পুরুষ দেখে ঘর ঢুকলে বা মুখ ঢাকলে যারা হাসাহাসি করে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে, কটাক্ষ হানে
অথবা অসমীচীন মন্তব্য করে বা টিস্ মারে, শরয়ী পর্দা নিয়ে
যারা উপহাস করে তারা কাফের। এই পর্দানশীন মহিলারা কাল কিয়ামতে ঐ উপহাসকারীদেরকে
দেখে হাসবে।
সুতরাং মুমিন
নারীর দুঃখ করা উচিত নয়, একাকিনী হলেও মন ছোট করা সমীচীন নয়।
সত্যের জয় অবধারিত, আজ অথবা কাল। মরতে সকলকেই হবে, প্রতিফল সকলেই পাবে।
‘মরে না মরে না কভু সত্য যাহা, শত শতাব্দীর বিস্মৃতির তলে
নাহি মরে
উপেক্ষায়, অপমানে হয় না চঞ্চল, আঘাতে না টলে।’
পর্দায় থাকার
জন্য দেওর-ভরা সংসার থেকে পৃথক হয়ে আলাদা ঘর বাড়ি করার জন্য স্ত্রী যদি
তার স্বামীকে তাকীদ করে তবে তা স্বামীর মানা উচিত; বরং নিজে থেকেই
হওয়া উচিত। বিশেষ করে তার ভাইরা যদি অসৎ প্রকৃতির হয়। ইসলামে এটা জরুরী নয় যে, চিরদিন ভাই-ভাই মিলে একই সংসারে থাকতে হবে। যা জরুরী তা হল, আল্লাহর দ্বীন নিজেদের জীবন ও পরিবেশে কায়েম করা, আপোষে ভ্রাতৃত্ব-বোধ ও সহায়তা-সহানুভূতি রাখা। সকলে মিলে
পিতা-মাতার যথাসাধ্য সেবা করা। কিন্তু হায়রে! আল্লাহতে প্রেম ও বিদ্বেষ করতে গিয়ে
মানুষের মাঝে মানুষকে দুশমন হতে হয়। হারাতে হয় একান্ত আপনকে। যেহেতু, আল্লাহর চেয়ে অধিক আপন আর কে?
পর্দা নিজের
কাছে নয়। কোনো ইঁদুর নিজের চোখ বন্ধ করে যদি মনে করে যে, সে সমস্ত বিড়াল
থেকে নিরাপদ তবে এ তার বোকামী নয় কি?নারীর সৌন্দর্য দেখে বদখেয়াল ও কুচিন্তা
আসাও মানুষের জন্য স্বাভাবিক। অতএব পর্দা না করে কি কাম লোলুপতা ও ব্যভিচারের
ছিদ্রপথ বন্ধ করা সম্ভব?
নারীর মোহনীয়তা, কমনীয়তা ও মনোহারিত্ব লুকিয়ে থাকে তার লজ্জাশীলতায়। নারীর
লজ্জাশীলতা তার রূপ-লাবণ্য অপেক্ষা বেশী আকর্ষণীয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“অশ্লীলতা বা নির্লজ্জতা যে বিষয়ে থাকে, সে বিষয়কে তা সৌন্দর্যহীন করে ফেলে; পক্ষান্তরে
লজ্জাশীলতা যে বিষয়ে থাকে, সে বিষয়কে তা সৌন্দর্যময় ও মনোহর করে
তোলে”।[32]
সভ্য লেবাসের পর্দা থেকে বের হওয়া নারী-স্বাধীনতার যুগে
পর্দা বড় বিরল। এর মূল কারণ হল লজ্জাহীনতা। কেননা, লজ্জাশীলতা
নারীর ভূষণ। ভূষণ হারিয়ে নারী তার বসনও হারিয়েছে। দ্বীনী সংযম নেই নারী ও তার
অভিভাবকের মনে। পরন্তু সংযমের বন্ধন একবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে উদ্দাম-উচ্ছৃঙ্খলতা
বন্যার মত প্রবাহিত হয়। তাতে সংস্কার, শিক্ষা, চরিত্র, সবই অনায়াসে ভেসে যায়। শেষে লজ্জাও আর থাকে না। বরং এই লজ্জাহীনতাই
এক নতুন ‘ফ্যাশন’ রূপে ‘সভ্য’ ও ‘আলোক প্রাপ্ত’ নামে সুপরিচিতই লাভ করে। সত্যই তো, বগল-কাটা ব্লাউজ
ও ছাঁটা চুল না হলে কি সভ্য নারী হওয়া যায়? আধা বক্ষ-স্থল, ভুঁড়ির ভাঁজ ও জাং প্রভৃতি গোপন অঙ্গে
দিনের আলো না পেলে কি ‘আলোক প্রাপ্ত’ হওয়া যায়?![নাউযুবিল্লাহ]
বলাই বাহুল্য যে, মুসলিম নারী-শিক্ষার ‘সুবেহ সাদেক’ চায়, নারী-দেহের নয়। মুসলিম নারী-বিদ্বেষী নয়, নারী-শিক্ষার দুশমনও নয়। মুসলিম বেপর্দা তথা অশ্লীলতা ও
ব্যভিচারের দুশমন। শিক্ষা, প্রগতি, নৈতিকতা তথা
পর্দা সবই মুসলিমের কাম্য। আর পর্দা প্রগতির পথ অবরোধ করতে চায় না;চায় বেলেল্লাপনা ও নগ্নতার পথ রুদ্ধ করতে।
পক্ষান্তরে
পর্দাহীনতা; আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অবাধ্যতা।
পর্দাহীনতা; নগ্নতা, অসভ্যতা, অশ্লীলতা, লজ্জাহীনতা, ঈর্ষাহীনতা ও ধৃষ্টতা।
পর্দাহীনতা; সাংসারিক অশান্তি, ধর্ষণ, অপহরণ, ব্যভিচার প্রভৃতির ছিদ্রপথ।
পর্দাহীনতা; যৌন উত্তেজনার সহায়ক। মানবরূপী শয়তানদের চক্ষুশীতলকারী।
পর্দাহীনতা; দুষ্কৃতীদের নয়নাভিরাম।
পর্দাহীনতা; কেবল ধর্মীয় শৃঙ্খল থেকে নারী-স্বাধীনতা নয়, বরং সভ্য পরিচ্ছদের ঘেরাটোপ থেকে নারীর সৌন্দর্য প্রকাশ ও
দেহ মুক্তির নামান্তর।
পর্দাহীনতা; কিয়ামতের কালিমা ও অন্ধকার।
পর্দাহীনতা; বিজাতীয় ইবলীসী ও জাহেলিয়াতি প্রথা। বরং সভ্য যুগের এই
নগ্নতা দেখে জাহেলিয়াতের পর্দাহীনারাও লজ্জা পাবে।
বেপর্দার জন্য
জাহান্নামের আগুন থেকে কোনো পর্দা নেই।
প্রসাধন
ও অঙ্গসজ্জা
নারীর রূপমাধুরী
ও সৌন্দর্য লাবণ্য নারীর গর্ব। তার এ রূপ-যৌবন সৃষ্টি হয়েছে একমাত্র কেবল
তার স্বামীর জন্য। স্বামীকে সে রূপ উপহার না দিতে পারলে কোনো মূল্যই
থাকে না নারীর। এই রূপ-যৌবন স্বামীকে উপহার দিয়ে কত যে আনন্দ, সে তো নারীরাই জানে। সুন্দর অঙ্গের উপর অঙ্গরাজ দিয়ে আরও
মনোহারী ও লোভনীয় করে স্বামীকে উপহার দিয়ে উভয়েই পরমানন্দ ও প্রকৃত
দাম্পত্য-সুখ লুটতে পারে পার্থিব সংসারে।
সুতরাং অঙ্গ যার
জন্য নিবেদিত অঙ্গরাজও তার জন্যই নির্দিষ্ট। স্বামী ব্যতীত অন্য কারো জন্য
অঙ্গসজ্জা করা ও তা প্রদর্শন করা বৈধ নয়।
যুগের তালে তালে
নারীদের অঙ্গরাজ, মেকআপ ও প্রসাধন-সামগ্রী অতিশয় বেড়ে
উঠেছে। যার হালাল ও হারাম হওয়ার কষ্টিপাথর হলো এই যে,ঐ প্রসাধনদ্রব্য
ব্যবহারে যেন অঙ্গের বা ত্বকের কোনো ক্ষতি না হয়। ঐ দ্রব্যে যেন কোনো প্রকার অবৈধ
বা অপবিত্র বস্তু মিশ্রিত না থাকে, তা যেন বিজাতীয় মহিলাদের বৈশিষ্ট্য না
হয়। (যেমন সিন্দূর, টিপ প্রভৃতি) এবং তা যেন বেগানার সামনে
প্রকাশ না পায়।
সুতরাং শরীয়তের
সীমার মাঝে থেকে নারী যে কোনো প্রসাধন কেবল স্বামীর মন আকর্ষণের জন্য ব্যবহার
করতে পারে। পরিধান করতে পারে যে কোনো পোশাক তার সামনে, কেবল তাকেই ভালো
লাগানোর জন্য। এই সাজ-সজ্জাতেও লুকিয়ে থাকে ভালোবাসার
রহস্য। পক্ষান্তরে স্ত্রী যদি স্বামীর জন্য অঙ্গসজ্জা না করে; পরন্তু বাইরে গেলে বা আর কারো জন্য প্রসাধন করে, তবে নিশ্চয়ই সে নারী প্রেম-প্রকৃতির বিরোধী। নচেৎ
সে স্বামীর প্রেম ও দৃষ্টি আকর্ষণকে জরুরী ভাবে না। এমন নারী হতভাগী বৈ কি? সে জানে না যে, তার নিজের
দোষে স্বামী অন্যাসক্ত হয়ে পড়বে।
টাইটফিট চুস্ত
পোশাক কেবল স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে বাড়ির ভিতর পরিধান বৈধ। অবশ্য
কোনো এগানা ও মহিলার সামনে, এমন কি পিতা-মাতা বা ছেলে-মেয়েদের সামনেও
ব্যবহার উচিত নয়।
কেবল স্বামীর
দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, বা নিজের কমনীয়তা রক্ষার জন্য ব্রা ব্যবহার বৈধ। অন্যের জন্য
ধোঁকার উদ্দেশ্যে তা অবৈধ।
যে পোশাকে অথবা
অলঙ্কারে কোনো প্রকারের মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি অঙ্কিত থাকে তা ব্যবহার করা বৈধ
নয়। যেহেতু ইসলাম ছবি ও মূর্তির ঘোর বিরোধী।
যে লেবাস বা
অলঙ্কারে ক্রুশ, শঙ্খ, সর্প বা
অন্যান্য কোনো বিজাতীয় ধর্মীয় প্রতীক চিত্রিত থাকে মুসলিমের জন্য তাও ব্যবহার করা
বৈধ নয়।
নিউ মডেল বা
ফ্যাশনের পরিচ্ছদ ব্যবহার তখনই বৈধ, যখন তা পর্দার কাজ দেবে এবং তাতে কোনো
হিরো-হিরোইন বা কাফেরদের অনুকরণ হবে না।
স্ক্যার্ট-ব্লাউজ
বা স্ক্যার্ট-গেঞ্জি মুসলিম মহিলার ড্রেস নয়। বাড়িতে এগানার সামনে সেই ড্রেস পরা
উচিত যাতে গলা থেকে পায়ের গাঁট পর্যন্ত পর্দায় থাকে। আর (বিনা বোরকায়)
বেগানার সামনে ও বাইরে গেলে তো নিঃসন্দেহে তা পরা হারাম।
প্যান্ট-শার্ট
মুসলিমদের ড্রেস নয়। কিছু শর্তের সাথে পরা বৈধ হলেও মহিলারা তা ব্যবহার করতে পারে
না; যদিও তা ঢিলেঢালা হয় এবং টাইট ফিট না হয়। এই জন্য যে, তা হল পুরুষদের ড্রেস। আর পুরুষের বেশ ধারিণী নারী অভিশপ্ত।
কেশবিন্যাসে
মহিলার সিঁথি হবে মাথার মাঝে। এই অভ্যাসের বিরোধিতা করে সে মাথার এক পাশে সিঁথি
করতে পারে না। সাধারণত: এ ফ্যাশন দ্বীনদার মহিলাদের নয়।
বেণী বা চুঁটি
গেঁথে মাথা বাঁধাই উত্তম। খোঁপা বা লোটন মাথার উপরে বাঁধা অবৈধ। পিছন দিকে ঘাড়ের
উপর যদি কাপড়ের উপর তার উচ্চতা ও আকার নজরে আসে তবে তাও বৈধ নয়। মহিলার চুল বেশী
বা লম্বা আছে -একথা যেন পরপুরুষে আন্দাজ না করতে পারে। যেহেতু নারীর সুকেশ এক
সৌন্দর্য; যা কোনো প্রকারে বেগানার সামনে প্রকাশ
করা হারাম।
প্রিয় নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“আমার শেষ জামানার উম্মতের মধ্যে কিছু এমন লোক হবে যারা ঘরের মত
জিন (মোটর গাড়ি)তে সওয়ার হয়ে মসজিদের দরজায় দরজায় নামবে। (গাড়ি করে নামায পড়তে
আসবে।) আর তাদের মহিলারা হবে অর্ধ নগ্না; যাদের মাথা কৃশ
উঁটের কুঁজের মত (খোঁপা) হবে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ করো। কারণ, তারা অভিশপ্ত”।[33]
এ ভবিষ্যৎবাণী যে কত সত্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না!
মাথার
ঝরে-পরা-কেশ মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম। যেহেতু বিশেষ করে মহিলার চুল উল্লেখযোগ্য
দীর্ঘ হলে তা যুবকদের মন কাড়ে। পরন্তু ঐ চুল নিয়ে জাদুও করা যায়। তাই যেখানে-সেখানে না ফেলাই
উচিত।
মহিলার চুল ও
কেশদাম অমূল্য সম্পদ, তা বিক্রয় করা বৈধ নয়।
মহিলারা চুলে
খেজাব বা কলপ ব্যবহার করতে পারে। তবে কালো রঙের কলপ ব্যবহার হারাম। বাদামী, সোনালী, লালচে প্রভৃতি কলপ দিয়ে রঙাতে পারে। তবে
তাতে যেন কোনো হিরোইন বা কাফের নারীর অনুকরণ বা বেশধারণ উদ্দেশ্য না হয়।
সৌন্দর্যের জন্য
সামনের কিছু চুল ছাঁটা অবৈধ নয়। তবে কোনো হিরোইন বা কাফের মহিলাদের অনুকরণ করে
তাদের মত অথবা পুরুষদের মত করে ছেঁটে ‘সাধনা-কাট’, বা ‘হিপ্পি-কাট’ ইত্যাদি হারাম।
তাছাড়া সুদীর্ঘ
কেশদাম সুকেশিনীর এক মনোলোভা সৌন্দর্য, যা ছেঁটে নষ্ট
না করাই উত্তম।
স্বামীর দৃষ্টি
আকর্ষণের উদ্দেশ্যে - অর্থের অপচয় না হলে- মেশিন দ্বারা চুল কুঁচকানো বা
থ্যাকথ্যাক করা বৈধ। তবে তা কোনো পুরুষ সেলুনে অবশ্যই নয়। মহিলা সেলুনে
মহিলার নিকট এসব বৈধ। তবে গুপ্তাঙ্গের লোম আদি (বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে) পরিষ্কার করতে
কোনো মহিলার কাছেও লজ্জা স্থান খোলা বৈধ নয়।
কৃত্রিম চুল বা
পরচুলা (ট্যাসেল) আদি কেশ বেশী দেখাবার উদ্দেশ্যে ব্যবহার হারাম, স্বামী চাইলেও তা মাথায় লাগানো যাবে না। প্রিয় নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে নারী তার
মাথায় এমন চুল বাড়তি লাগায় যা তার মাথার নয়, সে তার মাথায়
জালিয়াতি সংযোগ করে”।[34]
যে মেয়েরা মাথায়
পরচুলা লাগিয়ে বড় খোঁপা প্রদর্শন করে আল্লাহ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন।
অবশ্য কোনো
মহিলার মাথায় যদি আদৌ চুল না থাকে তবে ঐ ত্রুটি ঢাকার জন্য তার পক্ষে পরচুলা
ব্যবহার বৈধ।
ভ্রু চেঁছে সরু চাঁদের মত করে সৌন্দর্য আনয়ন
বৈধ নয়। স্বামী চাইলেও নয়। যেহেতু ভ্রু ছেঁড়া বা চাঁছাতে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হয়;যাতে তাঁর অনুমতি নেই। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন
মেয়েদেরকেও অভিশাপ করেছেন। অনুরূপ কপাল চেঁছেও সৌন্দর্য আনা অবৈধ।
মহিলার গালে বা
ওষ্ঠের উপরে পুরুষের দাড়ি-মোচের মত দু-একটা বা ততোধিক লোম থাকলে তা তুলে ফেলায় দোষ
নেই। কারণ, বিকৃত অঙ্গেস্বাভাবিক আকৃতি ও শ্রী
ফিরিয়ে আনতে শরীয়তের অনুমতি আছে।
নাক ফুড়িয়ে তাতে
কোনো অলঙ্কার ব্যবহার করার ব্যাপারে কোনো দলীল নেই।
তবে কেউ কেউ তা বৈধ বলেছেন। কিন্তু তা
সুন্নাত নয় বিধায় কাজটি না করাই শ্রেয়।
দেগে মুখে-হাতে
নক্সা করা বৈধ নয়। এরূপ দেগে নক্সা যে বানিয়ে দেয় এবং যার জন্য বানানো হয় উভয়কেই
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামঅভিসম্পাত করেছেন।
স্বামীর দৃষ্টি
ও মন আকর্ষণের জন্য ঠোঁট-পালিশ, গাল-পালিশ প্রভৃতি অঙ্গরাজ ব্যবহার বৈধ; যদি তাতে কোনো প্রকার হারাম বা ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত না
থাকে।
দাঁত ঘষে
ফাঁক-ফাঁক করে চিরনদাঁতির রূপ আনা বৈধ নয়। এমন নারীও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর মুখে অভিশপ্ত।
অবশ্য কোনো দাঁত
অস্বাভাবিক ও অশোভনীয় রূপে বাঁকা বা অতিরিক্ত (কুকুরদাঁত) থাকলে তা সিধা করা বা
তুলে ফেলা বৈধ। নখ কেটে ফেলা মানুষের এক প্রকৃতিগত রীতি। প্রতি সপ্তাহে একবার না
পারলেও ৪০ দিনের ভিতর কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু এই প্রকৃতির বিপরীত করে কতক
মহিলা নখ লম্বা করায় সৌন্দর্য আছে মনে করে। নিছক পাশ্চাত্যের মহিলাদের অনুকরণে
অসভ্য লম্বা ধারালো নখে নখ-পালিশ লাগিয়ে বন্য সুন্দরী সাজে। কিন্তু মনের
রাখতে হবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
নখে নখ-পালিশ ব্যবহার অবৈধ নয়, তবে ওযুর পূর্বে
তুলে ফেলতে হবে। নচেৎ ওযু হবে না। অবশ্য এর জন্য উত্তম সময় হল মাসিকের কয়েক
দিন। তবে গোসলের পূর্বে অবশ্যই তুলে ফেলতে হবে।
মহিলাদের চুলে, হাতে ও পায়ে মেহেন্দি ব্যবহার মাসিকাবস্থাতেও বৈধ। বরং
মহিলাদের নখ সর্বদা মেহেন্দী দ্বারা রঙ্গিয়ে রাখাই উত্তম। এতে এবং অনুরূপ আলতাতে
পানি প্রবেশে বাধা হয় না। সুতরাং না তুলে ওযু-গোসল হয়ে যাবে।
রঙ ব্যবহার
পুরুষদের জন্য বৈধ নয়। অবশ্য চুল-দাঁড়িতে কলপ লাগাতে পারে; তবে কালো রং নয়।
পায়ে নূপুর পরা
বৈধ; যদি তাতে
বাজনা না থাকে। বাজনা থাকলে বাইরে যাওয়া অথবা বেগানার সামনে শব্দ করে চলা হারাম।
কেবল স্বামী বা এগানার সামনে বাজনাদার নূপুর বা তোড়া আদি ব্যবহার দোষের নয়।
অতিরিক্ত উঁচু
সরু হিল-তোলা জুতা ব্যবহার বৈধ নয়। কারণ এতে নারীর চলনে এমন ভঙ্গি সৃষ্টি হয় যা
দৃষ্টি-আকর্ষণ করে; যাতে পুরুষ
প্রলুব্ধ হয়। তাছাড়া এতে আছাড় খেয়ে বিপদগ্রস্ত বা লাঞ্ছিতা হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
স্বামীর জন্য
নিজেকে সর্বদা সুরভিতা করে রাখায় নারীত্বের এক আনন্দ আছে। ভালোবাসায় যাতে ঘুণ না
ধরে; বরং তা যাতে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয় সে
চেষ্টা স্বামী-স্ত্রীর উভয়কেই রাখা উচিত। তবে মহিলা কোনো সেন্ট বা সেন্টজাতীয়
প্রসাধন ব্যবহার ক’রে বাইরে বেগানার সামনে যেতে পারে না।কারণ, তার নিকট থেকে সেন্ট যেমন স্বামীর
মন ও ধ্যান আকর্ষণ করে সুপ্ত যৌন বাসনা জাগ্রত করে, কামানল
প্রজ্বলিত করে, ঠিক তেমনিই পরপুরুষের মন, ধ্যান, যৌবন প্রভৃতি আকৃষ্ট হয়। তাই তো যারা সেন্ট ব্যবহার করে
বাইরে বেগানা পুরুষের সামনে যায় তাদেরকে শরীয়তে ‘বেশ্যা’বলা হয়েছে।
এখানে খেয়াল
রাখার বিষয় যে, সেন্টে যেন কোহল বা স্পিরিট মিশ্রিত না
থাকে; থাকলে তা ব্যবহার (অনেকের নিকট) বৈধ নয়।
কোনো বিকৃত অঙ্গে সৌন্দর্য আনয়নের জন্য
অপারেশন বৈধ। কিন্তু ত্রুটিহীন অঙ্গে অধিক সৌন্দর্য আনয়নের উদ্দেশ্যে অস্ত্রোপচার
করা বৈধ নয়। পক্ষান্তরে অতিরিক্ত আঙ্গুল বা মাংস হাতে বা দেহের কোনো অঙ্গে লটকে
থাকলে তা কেটে ফেলা বৈধ।
কোনো আঙ্গিক ত্রুটি ঢাকার জন্য কৃত্রিম অঙ্গ ব্যবহার
দূষণীয় নয়। যেমন, সোনার বাঁধানো নাক, দাঁত ইত্যাদি
ব্যবহার করা যায়।
সতর্কতার বিষয়
যে, অলঙ্কার ও পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে মহিলা মহলে মহিলাদের আপসে গর্ব করা এবং দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য
ক্ষণে ক্ষণে ‘ড্রেস চেঞ্জ’করা বা অলঙ্কার
বদলে পরা বা ডবল সায়া ইত্যাদি পরা ভালো মেয়ের লক্ষণ নয়। গর্ব এমন এক কর্ম যাতে
মানুষ লোকচক্ষে খর্ব হয়ে যায়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যা ইচ্ছা খাও,পান
কর ও পর, তবে যেন দু’টি জিনিস না থাকে; অপচয় ও গর্ব,
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. বলেন, তুমি যা চাও খাও এবং যা পার পরিধান কর তবে তোমার
থেকে দুটি জিনিস যেন না প্রকাশ পায় -অপচয় ও অহংকার”।[36]
আল্লাহ তা‘আলা সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা
পছন্দ করেন। কিন্তু এতে সময় ও অর্থের অপচয় করা বৈধ নয়। কারণ, তিনি
অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না। পরন্তু অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই-বোন।
পক্ষান্তরে, ফুলের সৌরভ ও রূপের গৌরব থাকেও না বেশী দিন।
সৌন্দর্য-গর্বিতা ওগো রানী!
তোমার এ
কমনীয় রম্য দেহখানি,
এই তব যৌবনের
আনন্দ বাহার
জান কি গো, নহে তা তোমার?’
এক বৃদ্ধার
মুখমণ্ডলে ঔজ্জ্বল্য দেখে একজন মহিলা তাকে প্রশ্ন করল, তোমার চেহারায় এ
বৃদ্ধ বয়সেও লাবণ্য ফুটছে, রূপ যেন এখনো যুবতীর মতই আছে। তুমি কোনো
ক্রিম ব্যবহার কর গো?
বৃদ্ধা সহাস্যে
বলল, দুই ঠোঁটে ব্যবহার করি সত্যবাদিতার
লিপস্টিক, চোখে ব্যবহার করি (হারাম থেকে) অবনত
দৃষ্টির কাজল, মুখমণ্ডলে ব্যবহার করি পর্দার ক্রিম ও
গোপনীয়তার পাউডার, হাতে ব্যবহার করি পরোপকারিতার ভেজ-লীন, দেহে ব্যবহার করি ইবাদতের তেল, অন্তরে ব্যবহার
করি আল্লাহর ভালোবাসা, মস্তিষ্কে
ব্যবহার করি প্রজ্ঞা, আত্মায় ব্যবহার করি আনুগত্য এবং
প্রবৃত্তির জন্য ব্যবহার করি ঈমান।
সত্যই কি অমূল্য
ক্রিমই না ব্যবহার করে বৃদ্ধা। তাই তো তার চেহারায় ঈমানী লাবণ্য ও জ্যোতি।
আল্লাহ আমাদের মা-বোন-স্ত্রীদেরকে
পর্দার উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন। আমীন।
[34] সহীহ আল-জামিউস
সাগীর: ২৭০৫
[36] বুখারী, ৭/১৪০। তা‘লীক হিসেবে তিনি নিয়ে এসেছেন। আবু আবদুর রাহমান
আহমাদ ইবন শু‘আইব আন-নাসাঈ তার গ্রন্থে তা সনদসহ বর্ণনা করেছেন। যার সনদ হাসান।
সেমাপ্ত)
No comments:
Post a Comment