বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম
দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত
আল্লাহ
তায়ালা বলেন,
“যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি
শস্য-বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মে, প্রতিটি শীষে থাকে একশত শস্য-দানা। আর আল্লাহ
যার জন্য ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ মহাদানশীল, মহাজ্ঞানী”। (সূরা বাক্বারাহ-২৬১)।
তিনি আরো বলেন,
“হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি
জমি হতে তোমাদের জন্য যা উৎপাদন করে থাকি, তা থেকে যা উৎকৃষ্ট তা দান কর। এমন মন্দ
জিনিস দান করার সংকল্প করো না, যা তোমরা মুদিত চক্ষু ব্যতীত গ্রহণ কর না”। (সূরা বাক্বারাহ-২৬৭)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“অতঃপর যে ব্যক্তি দান করেছে এবং আল্লাহকে
ভয় করেছে আর ভাল কথাকে সত্য বলে বুঝেছে, তবে আমি তাকে শান্তির উপকরণ প্রদান করব। আর
যে ব্যক্তি কার্পণ্য করেছে এবং বেপরোয়া হয়েছে আর ভাল কথাকে অবিশ্বাস করেছে, ফলতঃ আমি
তাকে ক্লেশদায়ক বস্তুর জন্য আসবাব প্রদান করব”। (সুরা
আল-লাইলঃ ৫-৯)।
দান-সদকায় মনে শান্তি আসে। দানে বিভিন্ন বালা-
মুসিবত থেকে মহান রব আমাদের হিফাজত করেন। দান করলে ধন বেড়ে যায়, কমে না। তাই দানের
হাত প্রসারিত করলে গরিব-দুঃখীসহ অনেকের উপকার হয়। মহান রব বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে
দান-সদকা করো, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির-মিসকিনকে দান করে দাও, তবে আরো
বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন’। (সূরা
আল বাকারা: ২৭১)।
সদকা কাকে বলে?
ইসলামী পরিভাষায় দান করাকেই সদকা বলা হয়। সদকা
শব্দটি এসেছে আরবি ‘সিদকুন’ থেকে। অর্থ- সত্যতা, যথার্থতা। পরিভাষায় সদকা বলা হয়, একমাত্র
আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে স্বীয় সম্পদ ব্যয় করা। কারণ, মানুষের
সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু এবং জীবন যাপনের প্রধান উপকরণ কষ্টার্জিত মাল ব্যয় করে সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভালোবাসা এবং তার নির্দেশাবলির প্রতি আনুগত্যের বাস্তব
প্রমাণ দিয়ে থাকেন বলে এই ব্যয়কে সদকা নামে অভিহিত করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন-হাদিসে
অত্যাবশ্যক এবং ঐচ্ছিক এ উভয় প্রকার দানকেই সদকা বলা হয়েছে। তবে প্রচলিত অর্থে শুধু
ঐচ্ছিক নফল দানকেই সদকা বলা হয়ে থাকে।
সদকার প্রকারভেদঃ
সদকা দুই প্রকারঃ-
(১) সাধারণ সদকা;
(২) সদকায়ে জারিয়া।
গরিব দুঃখীকে টাকা পয়সা দান করা, ভালো ব্যবহার
করা সাধারণ সদকার অন্তর্ভুক্ত। আর সদকায়ে জারিয়া বলা হয় ওই সব সৎকর্ম যেগুলোর কল্যাণকারিতা
স্থায়ী হয়। এর মধ্যে সর্বাগ্রে হচ্ছে দ্বীনি এলেম শিক্ষা দান, দ্বীনি বই পুস্তক রচনা
ও প্রকাশ করে সর্বসাধারণের মধ্যে এলেম পৌঁছানো। কারণ, দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে মানবসন্তানের
জন্য সর্বাধিক কল্যাণকর বিষয় হচ্ছে- আল্লাহর সাথে, তাঁর বিধি-বিধানের সাথে এবং রাসূলের
সাথে পরিচিতি লাভ।
এক ব্যক্তি অন্যকে যদি দ্বীনি এলেম শিক্ষা
দেন তবে সে ব্যক্তি নিজে আমল করবে এবং প্রত্যক্ষভাবেই হোক বা পরোক্ষভাবেই হোক পরবর্তী
কাউকে না কাউকে শিক্ষা দেবে। এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত এ সৎকাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
হজরত মুহাম্মদ সা: ওই ব্যক্তিকে সর্বাপেক্ষা বড় দাতারূপে আখ্যায়িত করেছেন যিনি পবিত্র
কুরআন-সুন্নাহর এলেম অন্যদেরকে শিক্ষা দেন। তার পরের স্থান মসজিদ, এতিমখানা, মাদরাসা,
রাস্তাঘাট, সেতু, পুকুর প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক খাতে দান করা। এসবের দ্বারা অনেক বেশি
লোক উপকৃত হন এবং উপকারটুকু দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়।
ছাদাক্বা এমনই এক ইবাদত যার মাধ্যমে আল্লাহর
নৈকট্য হাছিল হয় এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
দান ছাদাক্বা করাকে উৎসাহিত করা
(ক) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আদী ইবনে হাতেম
(রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা জাহান্নাম
থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়! (যদি এক টুকরা খেজুরও না পাও, তবে
উত্তম কথা বলে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪১৭,
১৪১৩, হাদীস সম্ভার ৯২৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৩২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) উম্মু বুজায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল!
মিসকীন আমার দরজায় এসে দাঁড়ালে (এবং আমার কাছে কিছু চায়) তখন আমি খুবই লজ্জা পাই, কারণ
তাকে দেবার মতো আমার ঘরে কিছু পাই না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
তার হাতে কিছু দিও, যদি তা আগুনে ঝলসানো একটি খুরও হয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৭৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৬৬৭, সুনান আত্ তিরমিযী ৬৬৫, সুনান আননাসায়ী
২৫৭৪, আহমাদ ২৭১৪৮, সহীহ আত্ তারগীব ৮৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) উম্মু
বুজায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
সাহায্যপ্রার্থীকে কিছু দিয়ে বিদায় করবে। যদি তা আগুনে ঝলসানো একটি খুরও হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৪২, সুনান আননাসায়ী ২৫৬৫, আহমাদ
২৭৪৫০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৭৪৯, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৩৫০২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ
(Sahih)।
(ঘ) আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! ধন-সম্পদ দান করো, তোমাকেও দান করা হবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৫৩৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৯৩, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ২১৭৭, ইসলামীক সেন্টার ২১৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(ঙ) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ
(রাযিঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তার একটি নিম্নরূপ। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আল্লাহ তা’আলা আমাকে বলেছেন, ’খরচ কর, তোমার উপরও খরচ করা হবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, আল্লাহ তা’আলার হাত আরো প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ। রাত দিন
ব্যয় করা সত্ত্বেও তা মোটেই কমছে না। একটু ভেবে দেখ! আসমান জমিন সৃষ্টি থেকে এ পর্যন্ত
যে বিপুল পরিমাণ ব্যয় করেছেন এতে তার হাত একটুও খালি হয়নি। তিনি বলেন, তার (আল্লাহর)
আরশ পানির উপর এবং তার অপর হাতে রয়েছে মৃত্যু। যাকে ইচ্ছে করেন উপরে উঠান ও উন্নত
করেন। আর যাকে চান নীচু করেন, অবনত করেন। (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ২১৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২১৭৮, ইসলামীক
সেন্টার ২১৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মহান আল্লাহ বলেনঃ) হে আদম সন্তান!
প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে সম্পদ তোমার কাছে আছে তা খরচ করা তোমার জন্য (দুনিয়া ও আখিরাতে)
কল্যাণকর। আর তা খরচ না করা হবে অকল্যাণকর। প্রয়োজন পরিমাণ ধন-সম্পদ (জমা করায়) দোষ
নেই। তোমার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধন-সম্পদ ব্যয়ের কাজ নিজ পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করো।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ২২৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩৬, সুনান আত্ তিরমিযী ২৩৪৩, সুনানুল কুবরা
লিল বায়হাক্বী ৭৭৪১, সহীহ আত্ তারগীব ৮৩১, সুবীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৭৮৩৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
(ছ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে মুসলিম মহিলারা! তোমরা এক প্রতিবেশী
আর এক প্রতিবেশীকে তুহফা দেয়া ছোট করে দেখো না। তা বকরীর খুর হলেও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৯২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৫৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৬৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩০, আহমাদ ৭৫৯১, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৭৪৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৭৯৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(জ) আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কসম দিয়ে
তোমার কাছে আশ্রয় চায়, তাকে আশ্রয় দেবে। যে তোমার কাছে আল্লাহর কসম দিয়ে চায়, তাকে
কিছু দিবে। আর যে ব্যক্তি তোমাকে দা’ওয়াত দেয় তার দা’ওয়াত কবূল করবে। যে তোমার ওপর
ইহসান করে, তাকে বিনিময় দিবে। যদি বিনিময় আদায়ের মতো কিছু না থাকে, তার জন্য দু’আ করো
যতদিন পর্যন্ত তুমি না বুঝো যে, তার ইহসানের বিনিময় আদায় হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৪৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১৬৭২, ইবনু হিব্বান ৩৪০৮, সহীহ আত্ তারগীব ৮৫২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬০২১, নাসায়ী
২৫৬৭, বুখারীর ‘আদাবুল মুফরাদ’ ২১৬, আহমাদ
৫৩৬৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) মদীনার আনসারদের মধ্যে খেজুর বাগানের
মালিক হিসেবে সর্বাধিক সম্পদশালী ছিলেন। আর তার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয় ছিল মসজিদে
নাবাবী সামনের ’বায়রাহা-’ (নামক বাগানটি)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এ বাগানটিতে প্রায়ই প্রবেশ করতেন ও এর পবিত্র পানি পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যখন
অর্থাৎ ’’তোমরা ততক্ষণ জান্নাতে অবশ্যই পৌঁছতে পারবে না, যে পর্যন্ত তোমাদের প্রিয়তর
জিনিস আল্লাহর পথে খরচ না করবে’’- (সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ৯২) এ আয়াত নাযিল হলো; তখন
ত্বলহাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর
রসূল! যেহেতু আল্লাহ তা’আলা বলেন, অর্থাৎ আমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ ’বায়রাহা-’ আল্লাহর
নামে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করলাম। আমি আশা করব আমি এর জন্য আল্লাহর কাছে সাওয়াব পাব।
হে আল্লাহর রসূল! আপনি তা কবূল করুন। যে কাজে আল্লাহ চান তাতে আপনি তা লাগান। (এ ঘোষণা
শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবাশ! সাবাশ!! বলে উঠলেন। (তিনি
বললেন) এ সম্পদ খুবই কল্যাণকর হবে। তোমার ঘোষণা আমি শুনেছি। এ বাগানটি তুমি তোমার গরীব
নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দাও। আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি
তাই করব। অতঃপর আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) খেজুর বাগানটিকে তাঁর নিকটাত্মীয় ও চাচাতো ভাইদের
মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৪৫,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২০৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৯৯৮, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৬৫২, আহমাদ ১২৪৩৮, সহীহ আত্ তারগীব ৮৭৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahi।
(ঞ) আয়িশাহ্
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
এসে বলল, আমার মা আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। আমার মনে হয় তিনি কথা বলতে পারলে সদাক্বাহ্
(সাদাকা) করতেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করি তার সাওয়াব কি তিনি
পাবেন? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৫০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৩৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২১৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০০৪, সুনান আবূ দাঊদ
২৮৮১, সুনান নাসায়ী ৩৬৪৯, সুনান ইবনু মাজাহ্ ২৭১৭, মুয়াত্ত্বা মালিক ২৮১৩, ইবনু আবী
শায়বাহ্ ১২০৭৭, আহমাদ ২৪২৫১, ইবনু খুযায়মাহ্ ২৪৯৯, ইবনু হিব্বান ৩৩৫৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ট) আবুল লাহম (রাঃ)-এর আযাদ করা গোলাম ’উমায়র
(রাঃ)বলেন, আমার মুনিব আমাকে মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) টুকরা করার হুকুম দিলেন। এমন সময়
একজন মিসকীন এলো। আমি তাকে ওখান থেকে কিছু মাংস খেতে দিলাম। আমার মুনিব এ কথা জানতে
পারলেন। তিনি আমাকে মারলেন। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে
এলাম। এ ঘটনা তাঁর কাছে বললাম। তিনি আমার মুনিবকে ডেকে পাঠালেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
তুমি ’উমায়রকে মেরেছ কেন? তিনি বললেন, সে আমার অনুমতি ছাড়া (মিসকীনকে) খাবার দিয়ে দেয়।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর সাওয়াব তোমাদের দু’জনেরই হত।
অন্য বর্ণনায় আছে, ’উমায়র বলেছেন, আমি গোলাম।
তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার মুনিবের ধন-সম্পদ
থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতে পারব কিনা? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পারবে। এর সাওয়াব তোমরা
দু’জন অর্ধেক অর্ধেক করে পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৯৫৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৫৮, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২৩৭, ইসলামীক সেন্টার ২২৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঠ) আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। নাবী (সা.) বলেছেন:
হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মিসকীন অবস্থায় জীবিত রাখো, মিসকীন অবস্থায় মৃত্যু দান করো
এবং মিসকীনদের দলে হাশর করো। আয়িশাহ (রাঃ) বললেন: কেন হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সা.)
বললেন : তারা ধনীদের চল্লিশ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হে ’আয়িশাহ্! কোন মিসকীনকে
তোমার দুয়ার হতে (খালি হাতে) ফিরিয়ে দিও না। খেজুরের একটি টুকরা হলেও প্রদান করো।
হে ’আয়িশাহ্! মিসকীনদেরকে ভালোবাসো এবং তাদেরকে নিজের কাছে জায়গা দিয়ে, ফলে আল্লাহ
তা’আলা কিয়ামতের দিন তোমাকে নিকটে রাখবেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫২৪৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৪১২৬, ইরওয়া ৮৬১, সিলসিলাতুস সহীহাহ ৩০৮,
সুনান আততিরমিযী ২৩৫২, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩১৯২, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ
১০০২, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৩৫৩০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
গরীব-মিসকানকে ভালোবাসার নির্দেশনা
আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার
অন্তরঙ্গ বন্ধু (নাবী সা.) আমাকে সাতটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। যথা- ১. তিনি (সা.)
আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন গরীব-মিসকান, ভালোবাসার এবং তাদের সহচার্য লাভের, ২. আরো নির্দেশ
দিয়েছেন- আমি যেন ঐ ব্যক্তির দিকে তাকাই ’যে আমার চেয়ে নিম্নস্তরের এবং ঐ লোকের দিকে
যেন না তাকাই, যে আমার চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের ৩. তিনি আরো নির্দেশ দিয়েছেন- আমি যেন
আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ভালো আচরণ করি, যদিও তারা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, ৪. তিনি
(সা.) আরো নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন কারো নিকট কোন কিছু না চাই, ৫. তিনি (সা.) আরো
নির্দেশ করেছেন- আমি যেন ন্যায় ও সত্য কথা বলি, যদিও তা তিক্ত হয়, ৬. তিনি (সা.) আরো
আদেশ দিয়েছেন- আমি যেন আল্লাহর (দীনের) ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় না করি
এবং ৭. তিনি আমাকে এ নির্দেশও দিয়েছেন- আমি যেন অধিক পরিমাণে “লা-হাওলা ওয়ালা ক্যুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ” “আল্লাহর
শক্তি-সামর্থ ছাড়া কারো কোন শক্তি-সামর্থ্য নেই” পাঠ করি। কেননা এ কথাগুলো ’আরশের
নিচের কোষাগার হতে আগত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫২৫৯,
মুসনাদে আহমাদ ২১৪৫৩, সিলসিলাতুস সহীহাহ ২১৬৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
কৃপণতা ও অসদাচরণ এক মুমিনের মধ্যে
একত্রে থাকতে পারে না
(ক) আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের মধ্যে দু’টি স্বভাব
একত্রে জমা হতে পারে না, কৃপণতা এবং অসদাচরণ। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৭২, সুনান আততিরমিযী ১৯৬২, সহীহ আত্ তারগীব ২৬০৮, শু‘আবুল ঈমান
১০৩৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের মধ্যে যেসব স্বভাব পাওয়া
যায় তার মধ্যে দু’টো স্বভাব সবচেয়ে গর্হিত। একটি হলো চিত্ত অস্থিরকারী কৃপণতা, আর দ্বিতীয়টি
হলো ভীতিকর কাপুরুষতা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৭৪,
সুনান আবূ দাঊদ ২৫১১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৬৬০৯, আহমাদ ৮২৬৩, ইবনু হিব্বান ৩২৫০, সিলসিলাহ্
আস্ সহীহাহ্ ৫৬০, সহীহ আত্ তারগীব ২৬০৫, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৩৭০৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
থাকা সত্বেও ভিক্ষুককে না দেয়ার পরিনতি
উসমান (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, (একবার) উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর কাছে (রান্না করা) কিছু
মাংসের টুকরা তুহফা হিসেবে এলো। এর মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর খুব প্রিয় (খাবার) ছিল। তাই উম্মু সালামাহ্ তাঁর সেবিকাকে বললেন, এ মাংস
ঘরে রেখে দাও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা হয়ত খাবেন। সেবিকা তা রেখে দিলো।
এ সময়ে একজন ভিক্ষুক দরজায় দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বলল, হে অন্তঃপুরবাসিনী! আল্লাহর পথে
কিছু খরচ করো, আল্লাহ তোমাদের ধন-সম্পদে বারাকাত দেবেন। ঘরের লোকেরা বলল, আল্লাহ তোমাকে
বারাকাত দান করুন (অর্থাৎ মাফ করো)। ভিক্ষুকটি (এ কথা শুনে) চলে গেল।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ঘরে ফিরে এসে বললেন, উম্মু সালামাহ্! তোমার কাছে খাবার আছে? উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) জবাব
দিলেন, হ্যাঁ আছে। (এরপর) তিনি সেবিকাকে বললেন, যাও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর জন্য মাংস (মাংস/মাংস/গোসত) নিয়ে এসো। সেবিকা আনতে গেল। কিন্তু সে তাদের
কাছে গিয়ে হতবাক। (সে দেখল), তাদের মধ্যে একটি সাদা হাড় ছাড়া আর কিছু নেই। (এ অবস্থা
দেখে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা ভিক্ষুককে কিছুই দাওনি। তাই
এ মাংস খন্ডই সাদা হাড় হয়ে গেছে। (বায়হাক্বী; এ বর্ণনাটি দালায়িলুন নুবূওয়্যাত গ্রন্থে
উদ্ধৃত করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৮০)।
সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি কে?
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতম ব্যক্তিকে
আমি কি তোমাদেরকে চিনাব? সাহাবীগণ নিবেদন করলেন, জী হ্যাঁ, আল্লাহর রসূল! অবশ্যই। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহর কসম দিয়ে কেউ কিছু
চায়, আর সে তাকে কিছু দেয় না (সে সবচেয়ে নিকৃষ্ট)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৮১, আহমাদ ২৯২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতিরিক্ত সঞ্চয় জাহান্নামের উত্তাপ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
(একদিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল-এর নিকট এলেন। তখন তাঁর কাছে খেজুরের
বড় স্তূপ। তিনি বিলালকে জিজ্ঞেস করলেন, বিলাল এসব কী? বিলাল বললেন, এসব আমি (ভবিষ্যতের
জন্য) জমা করে রেখেছি। (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
কাল কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন এতে তুমি জাহান্নামের তাপ অনুভবকে কী ভয় করছ না? বিলাল!
এসব তুমি দান করে দাও। ’আরশের মালিক-এর কাছে ভূখা নাঙা থাকার ভয় করো না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৮৫, শু‘আবুল ঈমান ৩০৬৭, সিলসিলাহ্
আস্ সহীহাহ্ ২৬৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কার হাত লম্বা?
’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কেউ কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের
মধ্যে কে আপনার সাথে প্রথমে মিলিত হবেন (অর্থাৎ আপনার মৃত্যুর পর কে প্রথম মৃত্যুবরণ
করবে)? তিনি বললেন, যার হাত সবচেয়ে বেশী লম্বা। [আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথা শুনার পর] তাঁর স্ত্রীগণ বাঁশ অথবা কঞ্চির টুকরা দিয়ে নিজেদের
হাত মাপতে লাগলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী সাওদা (রাঃ)-এর হাত
সবচেয়ে লম্বা ছিল। কিন্তু এরপর আমরা জানতে পারলাম, হাত লম্বা অর্থ দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা)
বেশী করে করা। আর আমাদের মধ্যে যিনি সবার আগে তাঁর সাথে মিলিত হলেন তিনি যায়নাব। দান
সদাক্বাহ্ (সাদাকা) তিনি খুবই ভালবাসতেন।
বুখারী, মুসলিমের এক বর্ণনায় ’আয়িশাহ্ (রাঃ)
হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি (স্ত্রীদের প্রশ্নের জবাবে) বলেন, তোমাদের মধ্যে যার হাত
লম্বা সে আমার সাথে সকলের আগে মিলিত হবে। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, (এ কথা শুনে) স্ত্রীগণ
মেপে দেখতে লাগলেন, কার হাত বেশী লম্বা। প্রকৃতপক্ষে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা হাত
ছিল যায়নাব-এর। কেননা তিনি নিজ হাতে সব কাজ করতেন এবং বেশী বেশী দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা)
করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৭৫, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪২০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬২১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৫২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬০৯৪, ইসলামিক সেন্টার ৬১৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন,
হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে
ধ্বংস করে দিন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৪২,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৮৬০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩৫৫, হাদীস সম্ভার ৯২৯, সুনানুল
কুবরা লিন নাসায়ী ৯১৩৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮১৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৫৮,
সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৯২০, সহীহ আত্ তারগীব ৯১৪, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৭৯৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
দান-সদাকার উপকারিতা
(১) দান-সদাকা গোনাহকে মিটিয়ে দেয়ঃ
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
কাব ইবনু উজরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি
বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে কা’ব ইবনু উজরা!
আমার পরে যেসব নেতার উদয় হবে আমি তাদের (খারাবী) থেকে তোমার জন্য আল্লাহ তা’আলার সহায়তা
প্রার্থনা করি। যে ব্যক্তি তাদের দ্বারস্থ হলো (সান্নিধ্য লাভ করলো), তাদের মিথ্যাকে
সত্য বললো এবং তাদের স্বৈরাচার ও যুলুম-নির্যাতনে সহায়তা করলো, আমার সাথে এ ব্যক্তির
কোন সম্পর্ক নেই এবং এ ব্যক্তির সাথে আমারো কোন সংস্রব নেই। এ ব্যক্তি কাওসার’ নামক
হাউজের ধারে আমার নিকট আসতে পারবে না।
অপরদিকে যে ব্যক্তি তাদের দ্বারস্থ হলো (তাদের
কোন পদ গ্রহণ করলো) কিন্তু তাদের মিথ্যাকে সত্য বলে মানল না এবং তাদের স্বৈরাচার ও
যুলুম-নির্যাতনে সহায়তা করলো না, আমার সাথে এ ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে এবং এ ব্যক্তির
সাথে আমারও সম্পর্ক রয়েছে। শীঘ্রই সে কাওসার’ নামক হাউজের কাছে আমার সাথে দেখা করবে।
হে কা’ব ইবনু উজরা নামায হলো (মুক্তির) সনদ, রোযা হলো মজবুত ঢাল (জাহান্নামের বিরুদ্ধে
প্রতিবন্ধক) এবং সাদাকা (যাকাত বা দান-খয়রাত) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়, যেভাবে পানি
আগুনকে নিভিয়ে দেয়। হে কাব ইবনু উজরা! হারাম (পস্থায় উপার্জিত সম্পদ) দ্বারা সৃষ্ট
ও পরিপুষ্ট মাংস (দেহ)-এর জন্য (জাহান্নামের) আগুনই উপযুক্ত। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৬১৪, আহমাদ হা/১৫৩১৯; তালীকুর
রাগীব (৩/১৫, ১৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় ছাদাক্বা কবরের উত্তাপ
নিভিয়ে দেয় এবং ক্বিয়ামতের দিন মুমিন তার ছাদাক্বার ছায়াতলে আশ্রয় পাবে... মানুষের
মধ্যে বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত’। (ত্বাবারাণী কাবীর
হা/৭৮৮, রাবী ওক্ববা বিন ‘আমের (রাঃ); ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৩১০; ছহীহাহ হা/৩৪৮৪)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তবে তা ভাল; আর
যদি গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্থকে দাও তা তোমাদের জন্য আরো ভাল; এবং এতে তিনি তোমাদের
জন্য কিছু পাপ মোচন করবেন। আর তোমরা যে আমল কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্মক অবহিত”। (সুরা আল বাকারা ২৭১)।
(২) দান-সদাকার নেকি অপরিসীমঃ
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, খুরয়ম ইবনু ফাতিক
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কিছু ব্যয় (দান) করবে, তার জন্য এর বিনিময়ে সাতশত গুণ সাওয়াব
প্রদান করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২৬, সুনান
আননাসায়ী ৩১৮৬, সুনান আততিরমিযী ১৬২৫, সহীহ আল জামি ১৬১০, সহীহ আত্ তারগীব ১২৩৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি বলেন,
নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী, যুহায়র ইবনু হারব
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ উমামাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “হে আদম সন্তান! তোমার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত
যে মালামাল রয়েছে তা খরচ করতে থাক; এটা তোমার জন্য উত্তম। আর যদি তুমি তা দান না করে
কুক্ষিগত করে রাখো তাহলে এটা তোমার জন্য অকল্যাণ বয়ে আনবে। তবে প্রয়োজন পরিমাণ রাখায়
কোন দোষ নেই। এজন্য তোমাকে ভৎসনাও করা হবে না। যাদের প্রতিপালনের দায়িত্ব তোমার উপর
রয়েছে তাদেরকে দিয়েই দান শুরু কর। উপরের হাত নীচের হাতের চেয়ে উত্তম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩৬,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬৩, সুনান আত্ তিরমিযী ২৩৪৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৭৭৪১, সহীহ আত্ তারগীব ৮৩১, সুবীহ আল জামি আস্ সগীর ৭৮৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahi।
হাদীছে কুদসীতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ
ইবনু নুমায়র (রহঃ)....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “হে আদম সন্তানেরা তোমরা অকাতরে দান করতে থাক,
আমিও তোমাদের উপর ব্যয় করব।" নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, আল্লাহর
ডান হাত প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ। রাত দিন অনবরত ব্যয় করলেও তা মোটেই কমছে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৯৩,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৩৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
২১৭৭, ইসলামীক সেন্টার ২১৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
আসমা (বিনতু আবূ বকর) (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (আল্লাহর রাস্তায়) খরচ কর।
কিন্তু গুণে গুণে খরচ করো না। তাহলে আল্লাহ তোমাকে গুণে গুণে (নেকী) দিবেন। তোমার জমা
করে রেখ না। তাহলে আল্লাহ তা’আলা জমা করে রাখবেন। সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর পথে খরচ
করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন)২৫৯১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২৯, ইবনু
হিব্বান ৩২০৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৫৫, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১৫১৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih।
আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা ধন-সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর
সন্তুষ্টি লাভ ও ছওয়াব লাভের দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে, তাদের উদাহরণ সমভূমির ঐ বাগিচার মত,
যেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হ’লে দ্বিগুণ শস্য উৎপাদিত হয়। আর প্রবল বৃষ্টি না হ’লে হাল্কা
বৃষ্টিই যথেষ্ট হয়। বস্তুত তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ সবই দেখেন’। (সুরা বাক্বারাহ-মাদানী ২/২৬৫)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড় সমান
সোনাও থাকে, ঋণের অংশ বাদে তা তিনদিন আমার কাছে জমা না থাকলেই আমি খুশী হব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৫৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৪৪৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০৯৫৬, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১১৩৯, সহীহ আল জামি
আস্ সগীর ৫২৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর চেহারা কামনায়
ছাদাক্বা করল এবং সেটাই যদি তার শেষ আমল হয়, তাহ’লে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। (আহমাদ হা/২৩৩৭২, রাবী হোযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ); ছহীহুত তারগীব
হা/৯৮৫)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিদিন ভোরে (আকাশ থেকে) দু’জন
মালাক (ফেরেশতা) নেমে আসে। এদের একজন দু’আ করে, ‘হে আল্লাহ! দানশীলকে তুমি বিনিময় দাও।
আর দ্বিতীয় মালাক এ বদ্দু’আ করে, হে আল্লাহ! কৃপণকে ক্ষতিগ্রস্ত করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৪৪২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১০, সুনানুল কুবরা
লিন নাসায়ী ৯১৩৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮১৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৫৮, সিলসিলাহ্
আস্ সহীহাহ্ ৯২০, সহীহ আত্ তারগীব ৯১৪, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৭৯৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৩৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) আল্লাহ তা‘আলা দান-সদাকা নিজ হাতে গ্রহণ করেনঃ
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বৈধভাবে অর্জিত সম্পদ
থেকে একটি খেজুর সমান সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে এবং আল্লাহ তা’আলা বৈধ ব্যতীত কোন কিছু
কবূল করেন না। তাই বৈধ সম্পদ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করলে আল্লাহ তা’আলা তা’ ডান হাতে
কবূল করেন। অতঃপর এ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দানকারীর জন্য এভাবে লালন-পালন করেন যেভাবে
তোমরা ঘোড়ার বাছুর লালন-পালন করে থাকে। এমনকি এ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) অথবা এর সাওয়াব
একসময় পাহাড়ের মতো হয়ে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৮৮৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩২, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০১৪, আহমাদ ৮৩৮১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৭৪৬, ইরওয়া ৮৮৬, সহীহ আত্
তারগীব ৮৫৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬১৫২, মুয়াত্ত্বা মালিক ২/১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৪) দান-সদাকা ব্যক্তিকে পবিত্র করেঃ
ছাদাক্বার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জিত হয়। অন্তরের
কৃপণতা দূর হয়। কারো সম্পদের পাহাড় না থাকলেও আল্লাহ তার অন্তরে প্রাচুর্য দান করেন।
সেজন্য আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন, ‘তুমি তাদের সম্পদ থেকে ছাদাক্বা গ্রহণ কর। যা দ্বারা
তুমি তাদের (কৃপণতার কলুষ হতে) পবিত্র করবে ও পরিশুদ্ধ করবে’। (সুরা তওবা-মাদানী ৯/১০৩)।
(৫) দান-সদাকায় সম্পদের প্রবৃদ্ধি ঘটেঃ
আপাত দৃষ্টিতে ছাদাক্বায় সম্পদের পরিমাণ হ্রাস
পেলেও মূলত সম্পদ কমে না। আল্লাহ এমন উৎস থেকে বান্দাকে দান করতে থাকেন যে সম্পর্কে
বান্দার কোন ধারণাই থাকে না। সেকারণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা) ধন-সম্পদ কমায় না। যে ব্যক্তি কারো অপরাধ ক্ষমা করে,
আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আর যে শুধু আল্লাহরই জন্য বিনয় প্রকাশ করে আল্লাহ তার
মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৮৯,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮৮, সুনান আত্ তিরমিযী ২০২৯,
দারিমী ১৭১৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ২৪৩৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১০৯০, শারহুস্ সুন্নাহ্
১৬৩৩, ইরওয়া ২২০০, সহীহ আত্ তারগীব ৮৫৮, সহীহ আল জামে আস্ সগীর ৫৮০৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih।
অপর একটি হাদীছে এসছে,
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তুমি খরচ কর। আমি তোমাকে দান করব এবং [রাসূল (ছাঃ)] বললেন,
আল্লাহ তা‘আলার হাত পরিপূর্ণ। (তোমার) রাতদিন অবিরাম খরচেও তা কমবে না। তিনি বলেন,
তোমরা দেখ না, যখন থেকে (আল্লাহ) আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, তখন থেকে কি পরিমাণ খরচ
করেছেন? কিন্তু এত খরচ করার পরও তাঁর হ’তে সম্পদের কোন কমতি হয়নি...। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৪৬৮৪, ৫৩৫২, ৭৪১১, ৭৪১৯, ৭৪৯৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দানের মাধ্যমে যে আল্লাহ সম্পদ বাড়িয়ে দেন
সে সম্পর্কে একটি ঘটনা হাদীছে এসেছে। সেটি হলো,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি এক বিরাণ মাঠে দাঁড়িয়ে ছিল। এমন সময় মেঘমালার মধ্যে
সে একটি আওয়াজ শুনতে পেল। কেউ মেঘমালাকে বলছে, ’অমুক ব্যক্তির বাগানে পানি বর্ষণ করো।’
মেঘমালাটি সেদিকে সরে গিয়ে একটি কংকরময় ভূমিতে পানি বর্ষণ করতে লাগল। তখন দেখা গেল,
ওখানকার নালাগুলোর একটি সব পানি নিজের মধ্যে পুরে নিচ্ছে। তারপর ও ব্যক্তি ওই পানির
পেছনে চলতে থাকল (যেন দেখতে পায় এসব পানি যার বাগানে গিয়ে পৌঁছে সে ব্যক্তি কে?) হঠাৎ
করে সে এক লোককে দেখতে পেল, যে নিজের ক্ষেতে দাঁড়িয়ে সেচনী দিয়ে (বাগানে) পানি দিচ্ছে।
সে লোকটিকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার নাম কি? সে ব্যক্তি বলল, আমার নাম
অমুক।
এ ব্যক্তি ওই নামই বলল, যে নাম সে মেঘমালা
থেকে শুনেছিল। তারপর বাগানের লোকটি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমাকে নাম
জিজ্ঞেস করছ কেন? সে বলল, এজন্য জিজ্ঞেস করছি যে, এ পানি যে মেঘমালার সে মেঘমালা থেকে
আমি একটি আওয়াজ শুনেছি। কেউ বলছিল, অমুকের বাগানে পানি বর্ষণ করো। আর সেটি তোমার নাম।
(এখন বলো), তুমি এ বাগান দিয়ে কি করেছ (যার দরুন তুমি এতো বড়ো মর্যাদায় অভিসিক্ত হয়েছ)।
বাগানওয়ালা লোকটি বলল, ’’যেহেতু তুমি জিজ্ঞেস করছ, তাই আমি বলছি, এ বাগানে যা উৎপাদিত
হয় আমি তার প্রতি লক্ষ্য রাখি। তারপর তা হতে এক-তৃতীয়াংশ আল্লাহর পথে খরচ করি, এক-তৃতীয়াংশ
আমি ও আমার পরিবার খাই, অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ এ বাগানেই লাগাই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭৩৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৪, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২৮৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
আবূ কাবশাহ্ আল আনমারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছেন, [রাসূল (স.) বলেছেন] এমন তিনটি বিষয় আছে যার
(সত্যতার) উপর আমি শপথ করতে পারি এবং আমি তোমাদের সম্মুখে অপর একটি হাদীস বর্ণনা করব,
তাকেও ভালোভাবে স্মরণ রাখবে। আর যে ব্যাপারে আমি শপথ করছি তা হলোঃ-
(ক) দান-খয়রাতের কারণে কোন বান্দার সম্পদে
হ্রাস হয় না, (খ) যে নির্যাতিত বান্দা নির্যাতনের শিকার হয়ে ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ
তা’আলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন, (গ) আর যে বান্দা ভিক্ষার দরজা উন্মুক্ত করে, আল্লাহ
তা’আলা তার অভাব ও নিঃস্বতার দরজা খুলে দেন। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন : আমি যে হাদীসটি
তোমাদেরকে বলব, তাকে খুব ভালোভাবে সংরক্ষণ করো। তা হলো প্রকৃতপক্ষে পার্থিব জীবন হলো
চার শ্রেণির লোকের জন্য।
যথা-
(ক) এমন বান্দা- আল্লাহ যাকে সম্পদ ও বিদ্যা উভয়টি
দান করেছেন, তবে সে তা খরচ করতে আপন প্রভুকে ভয় করে (হারাম পথে ব্যয় করে না); আত্মীয়-স্বজনের
সাথে ভালো ব্যবহার করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সম্পদের হক মোতাবেক ’আমল করে
(খরচ করে)। এ ব্যক্তির মর্যাদা সর্বোত্তম।
(খ) এমন বান্দা- যাকে আল্লাহ বিদ্যা দান করেছেন,
কিন্তু তাকে সম্পদ দান করেননি। তবে সে এ সত্য এবং সঠিক নিয়্যাতে বলে, যদি আমার ধন-সম্পদ
থাকত তাহলে আমি অমুকের মতো পুণ্যের পথে খরচ করতাম। এ দু’ ব্যক্তির সাওয়াব একই সমান।
(গ) এমন বান্দা- যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দিয়েছেন,
কিন্তু বিদ্যা দান করেননি। তার বিদ্যা না থাকার কারণে সে নিজের সম্পদের ব্যাপারে স্বেচ্ছাচারিতায়
লিপ্ত হয়ে পড়ে, এতে সে আল্লাহকে ভয় করে না। আত্মীয়স্বজনদের সাথে আর্থিক সদাচরণ
করে না এবং নিজ সম্পদ হক পথে খরচ করে না। এ ব্যক্তি হলো সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট পর্যায়ের।
(ঘ) এমন বান্দা- যার কাছে সম্পদও নেই বিদ্যাও নেই।
সে আকাঙ্ক্ষা করে বলে, যদি আমার কাছে সম্পদ থাকত, তাহলে আমি তা অমুক ব্যক্তির মতো খরচ
করতাম। এ বান্দাও তার এ মন্দ নিয়্যাতের কারণে গুনাহের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির সমান।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫২৮৭, সুনান আততিরমিযী ২৩২৫,
সুনান ইবনু মাজাহ ৪২২৮, সহীহুল জামি ৩০২৪, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ১৬, আল মু'জামুল
কাবীর লিত্ব তবারানী ১৮২৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) দান-সদাকা আল্লাহর ক্রোধ নিভিয়ে দেয়ঃ
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘সৎকর্ম সমূহ মন্দ
পরিণতি থেকে রক্ষা করে। গোপন ছাদাক্বা আল্লাহর ক্রোধ নিভিয়ে দেয়। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক
রক্ষা করলে বয়স বৃদ্ধি পায়’। (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৮০১৪,
রাবী আবু উমামা বাহেলী (রাঃ); ছহীহুত তারগীব হা/৮৮৯)।
(৭) দান-সদাকা রোগ-ব্যধি দূর
করেঃ
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পীড়িতদের
চিকিৎসা কর ছাদাক্বার মাধ্যমে, তোমরা তোমাদের সম্পদকে সুরক্ষিত কর যাকাত দানের মাধ্যমে
এবং বালা-মুছীবত থেকে বাঁচার চেষ্টা কর দো‘আর মাধ্যমে’। (বায়হাক্বী
৩/৩৮২ পৃ., হা/৬৮৩২, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৫৮)।
বস্তুত আল্লাহর সন্তুষ্টি হাছিল ও তাঁর ক্রোধ
থেকে বাঁচার মাধ্যম হ’ল ছাদাক্বা।
(৮) মানব কল্যাণের অন্যতম মাধ্যম দান-সদাকাঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (বনী ইসরাঈলের) এক ব্যক্তি বলল,
আমি (আজ রাতে) আল্লাহর পথে কিছু মাল খরচ করব। তাই সে কিছু মাল নিয়ে বের হলো এবং সে
মাল (তার অজান্তে) এক চোরকে দিয়ে দিল। (কোনভাবে এ কথা জানতে পেরে) ভোরে লোকেরা বলাবলি
করতে লাগল, আজ রাতে একজন চোরকে সদাক্বার মাল দেয়া হয়েছে। (সদাক্বাহ্ দানকারী এ কথা
জানতে পেরে) বলতে লাগল, হে আল্লাহ! সদাক্বার মাল একজন চোরকে (দেয়া সত্ত্বেও) সব প্রশংসা
তোমার। তারপর সে বলল, (আজ রাতেও) আবার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেব। তাই সে সদাক্বাহ্ (সাদাকা)
দেবার উদ্দেশে আবারও সদাক্বার মাল নিয়ে বের হলো। (এবার এ সদাক্বাহ্ ভুলবশতঃ) একজন ব্যভিচারিণীকে
দিয়ে দিলো। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, আজও তো সদাক্বার মাল একজন ব্যভিচারিণীকে
দেয়া হয়েছে। (এ কথা জানতে পেরে) লোকটি বলল, হে আল্লাহ! একজন ব্যভিচারিণীকে সদাক্বাহ্
(সাদাকা) দিবার জন্য সব প্রশংসা তোমার। এরপর সে বলল, (আজ রাতেও) আমি সদাক্বাহ্ (সাদাকা)
দিব। সে আবারও কিছু মাল নিয়ে বের হলো। (এবারও ভুলবশতঃ) সে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) সে একজন
ধনীকে দিয়ে দিলো। সকালে লোকেরা (এ নিয়ে) বলাবলি করতে লাগল, আজ রাতে একজন ধনী ব্যক্তিকে
সদাক্বার মাল দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে সে ব্যক্তি বলতে লাগল, হে আল্লাহ! সব প্রশংসাই
তোমার যদিও সদাক্বার মাল চোর, ব্যভিচারিণী ও ধনী ব্যক্তি পেয়ে গেছে। স্বপ্নে তাকে বলা
হলো, সদাক্বার যে মাল তুমি চোরকে দিয়েছ, তা দিয়ে সম্ভবতঃ সে চুরি করা হতে বিরত থাকবে।
তুমি ব্যভিচারিণীকে যা দিয়েছ তা দিয়ে সম্ভবত সে ব্যভিচার হতে ফিরবে। যে মাল তুমি ধনীকে
দিয়েছ, সম্ভবত সে এ দান হতে শিক্ষাগ্রহণ করবে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা থেকে খরচ
করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৭৬, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪২১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১০২২, সুনান আননাসায়ী ২৫২৩, ইবনু হিব্বান ৩৩৫৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩২৫২,
সহীহ আত্ তারগীব ২০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৩৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
চুরি ও ব্যভিচার কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে অন্যতম।
তবু্ও চোর ও ব্যভিচারীকে দেয়া ছাদাক্বা রাসূল (ছাঃ) অনুমোদন করেছেন শুধুমাত্র তাদেরকে
কল্যাণের পথে আকৃষ্ট করার জন্য।
(৯) দান-সদাকা দাতা ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে থাকবেঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে দিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না,
সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন।
(১)
ন্যায়পরায়ণ শাসক,
(২) সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের
ইবাদতের মধ্যে,
(৩)
সে ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে,
(৪) সে দু’ ব্যক্তি যারা পরস্পরকে ভালবাসে
আল্লাহর ওয়াস্তে, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য,
(৫) সে ব্যক্তি যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী
নারী আহবান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’,
(৬) সে ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে, তার
ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না,
(৭) সে ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর যিকর করে,
ফলে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০১, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ২২৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩১, সুনান আননাসায়ী ৫৩৮০, সুনান আততিরমিযী
২৩৯১, আহমাদ ৯৬৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪৮৬, ইরওয়া ৮৮৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬২০, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৬২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
মারসাদ ইবনু ’আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু সাহাবী আমাকে এ হাদীসটি
শুনিয়েছেন যে, তাঁরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছেন,
’’কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন মু’মিনের ছায়া হবে তার দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা)।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯২৫, আহমাদ ১৮০৪৩, সহীহ আত্ তারগীব
৮৭২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(১০) দান-সদাকার মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি মেলেঃ
জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য
আল্লাহ যে ব্যবসার কথা বলেছেন, সেখানেও তিনি বলেছেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি কি তোমাদের
এমন একটি ব্যবসায়ের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হ’তে মুক্তি দিবে?’।
‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে
তোমাদের মাল ও জান দিয়ে। সেটাই তোমাদের জন্য উত্তম হবে, যদি তোমরা বুঝ’। (সুরা ছফ-মাদানী ৬১/১০-১১)।
উক্ত আয়াতে মালের কথা আগে বলা হয়েছে, কারণ
জিহাদে প্রথম মালের প্রয়োজন হয়। (কুরতুবী)।
একইভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুশরিকদের সাথে তোমাদের জান, মাল ও জবান দ্বারা জিহাদ
কর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২১, সুনান আবূ দাঊদ
২৫০৪, সুনান আননাসায়ী ৩০৯৬, মুসনাদ আহমাদ ১২২৪৬, দারিমী ২৪৭৫, সহীহ আল জামি‘ ৩০৯০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
এখানেও মালের কথা আগে বলা হয়েছে। অতএব মুসলিম
জীবনে কৃপণতার কোন অবকাশ নেই।
(১১) দানকারী জান্নাতের সকল দরজা থেকে আহূত হবেঃ
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদ
হতে কোন জিনিস এক জোড়া (দু’ গুণ) আল্লাহর পথে সন্তুষ্টির জন্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করবে,
জান্নাতের সবগুলো দরজা দিয়ে তাকে সাদর সম্ভাষণ জানানো হবে। আর জান্নাতের অনেক (আটটি)
দরজা আছে। যে ব্যক্তি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী হবে, তাকে ’বাবুস্ সালাত’
হতে ডাকা হবে। যে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, তাকে ডাকা হবে ’বাবুল জিহাদ’ হতে। দান সদাক্বাকারীকে
ডাকা হবে ’বাবুস্ সদাক্বাহ্’ দিয়ে। যে ব্যক্তি সায়িম (রোযাদার) হবে, তাকে ’বাবুর রাইয়্যান’
দিয়ে ডাকা হবে। এ কথা শুনে আবূ বকর (রাঃ) জানতে চাইলেন, যে ব্যক্তিকে এসব দরজার কোন
একটি দিয়ে ডাকা হবে তাকে কি অন্য সকল দরজা দিয়ে ডাকার প্রয়োজন হবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ! (হবে) আর আমি আশা করি তুমি তাদেরই একজন হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৯০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৮৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২৭, সুনান আত্ তিরমিযী
৩৬৭৪, সুনান আননাসায়ী ২৪৩৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৭০০, আহমাদ ৭৬৩৩, ইবনু হিব্বান ৩০৮,
সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৮৭৯, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬১০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২৪০,
ইসলামীক সেন্টার ২২৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
‘জোড়া’ বলতে দুই দিরহাম, দুই দীনার বা জামা-পায়জামা,
শাড়ি-লুঙ্গী ইত্যাদি যে কোন বস্তুত দু’টি করে দান করা। (মিরক্বাত)।
(১২) দান-সদাকাই প্রকৃত পরকালীন সঞ্চয়ঃ
বিশুদ্ধ নিয়তে হালাল সম্পদ যতটুকু ছাদাক্বা
করা হবে, ততটুকুই আমাদের পরকালীন পাথেয় হিসাবে সঞ্চিত থাকবে। তাই যার ছাদাক্বা যত বেশী,
তার সঞ্চয় তত বেশী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: বান্দা (গর্ব: করে) বলে আমার সম্পদ, আমার সম্পদ; প্রকৃতপক্ষে
তার সম্পদ হতে তার (উপকারে আসে) মাত্র তিনটি যা খেয়ে সে শেষ করে দিয়েছে বা পরিধান
করে ছিড়ে ফেলেছে অথবা দান করে (পরকালের জন্য) সংরক্ষণ করেছে। এতদ্ভিন্ন যা আছে তা
তার কাজে আসবে না এবং সে মানুষের (ওয়ারিসদের) জন্য ছেড়ে চলে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭৩১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৫৯, মুসনাদে আহমাদ ৮৭৯৯, সহীহুল জামি ৮১৩৩, সহীহ আত্
তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৮৬০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩২৪৪, শুআবুল ঈমান ৩৩৩৩, আস্ সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৭৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবদুল্লাহ ইবনু মাস্উদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যার কাছে নিজ সম্পদ
অপেক্ষা উত্তরাধীকারীদের সম্পদ অধিক প্রিয়? তারা বলল : হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্যে
এমন কেউ নেই; বরং ওয়ারিসের সম্পদ অপেক্ষা নিজের সম্পদই অধিক প্রিয়। তিনি (সা.) বললেন
: যে (আল্লাহর পথে খরচ করে) যা অগ্রিম পাঠায় তাই তার সম্পদ। আর যা সে পিছনে রেখে যায়
তা তার ওয়ারিসের সম্পদ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৬৮,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৪২, সুনান আননাসায়ী ৩৬১২, সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৪৮৬,
সহীহুল জামি ২৬৯৬, সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৮৬১, মুসনাদে আহমাদ ৩৬২৬, শুআবুল ঈমান
৩৩৩১, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৬৪৩৯, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ৬৭৪৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
তিনি আরো বলেন
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
এক ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! কোন দান মর্যাদার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড়। তিনি বললেন,
তুমি যখন সুস্থ-সবল থাকো এবং সম্পদের প্রতি আগ্রহ পোষণ করো, দারিদ্রের ভয় কর, ধন-সম্পদের
মালিক হতে চাও, তখনকার দান সবচেয়ে বড়। তাই প্রাণ ওষ্ঠাগত হবার সময় পর্যন্ত দান করার
অপেক্ষা করবে না। কারণ তখন তুমি বলতে থাকবে, এ মাল অমুকের, এ মাল অমুকের এবং এ মাল
অমুকের। অথচ ততক্ষণে মালের মালিক অমুক হয়েই গেছে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪১৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২২৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩২, সুনান আননাসায়ী ৩৬১১, আহমাদ ৭১৫৯, ইবনু হিব্বান ৩৩১২,
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮৩২, ইরওয়া ১৬০২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৮৩, সহীহ আল জামি‘
আস্ সগীর ১১১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(১৩) কৃপণ ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবেঃ
(ক) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বাহ্ (রহঃ) ..... আবূ যার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বার ছায়ায় বসা ছিলেন। এমন সময় আমি গিয়ে তার কাছে উপস্থিত
হলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেনঃ কাবার প্রভুর শপথ। তারাই ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। বর্ণনাকারী
বলেন, অতঃপর আমি গিয়ে তার কাছে বসলাম কিন্তু অনতিবিলম্বে দাঁড়িয়ে বললাম, "হে
আল্লাহর রসূল! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক, সে ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা কারা?”
তিনি বলেনঃ এরা হলো সব ধনাঢ্য ব্যক্তি তবে তারা নয় যারা এদিকে ওদিকে সামনে থেকে, পিছন
থেকে, ডান দিক থেকে ও বাম দিক থেকে অকাতরে (আল্লাহর পথে) খরচ করে। তবে সংখ্যায় এরা
খুব কম। আর যে সব উট, গরু ও ছাগলের মালিক এর যাকাত আদায় করবে না, কিয়ামতের দিন উট,
গরু, ছাগল মোটা-তাজা অবস্থায় মালিকের নিকট আসবে একং তাকে (মালিককে) ওদের পা ও খুর
দিয়ে দলিত মথিত করবে এবং শিং দিয়ে আঘাত করবে। এর শেষ পশুটি অতিক্রম করলে প্রথমটি
পুনরায় এসে ঐরপ করতে আরম্ভ করবে। আর এভাবে চলতে থাকবে যতক্ষণ না বান্দাদের বিচার শেষ
হবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২১৬৯, ইসলামীক সেন্টার ২১৭১,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৯০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৮৬৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬৩৮, সুনান আতআত্ তিরমিযী ৬১৭, সুনান আননাসায়ী
২৪৪০, আহমাদ ২১৩৫১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৮১২, সহীহ আত্ তারগীব ৩২৬০, সহীহ
আল জামি‘ আস্ সগীর ৭০৪৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
অন্যত্র তিনি বলেন,
(খ) আম্র ইবনু আওফ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের সম্পর্কে দরিদ্রতার ভয় করি না;
কিন্তু আমি ভয় করি যে, তোমাদের ওপর দুনিয়াকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে যেমনি প্রশস্ত
করে দেয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। আর তোমরা তা লাভ করার জন্য ঐরূপ প্রতিযোগিতা
করবে যেরূপ তারা এ ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করেছিল। ফলে এটা তোমাদেরকে ধ্বংস করবে যেরূপ
তাদেরকে ধ্বংস করেছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৬৩,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৯৬১, সুনান আততিরমিযী
২৪৬২, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৯৭, মুসনাদে আহমাদ ১৭২৭৩, সহীহুল ১০৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত
তারহীব ৩২৫৫, শুআবুল ঈমান ১০২৯১, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্বাবারানী ১৩৫১৬, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ২৯২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৩৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কৃপণ ব্যক্তিকে মন্দ লোক অভিহিত করে অপর এক
হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
(গ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতম ব্যক্তিকে
আমি কি তোমাদেরকে চিনাব? সাহাবীগণ নিবেদন করলেন, জী হ্যাঁ, আল্লাহর রসূল! অবশ্যই। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহর কসম দিয়ে কেউ কিছু
চায়, আর সে তাকে কিছু দেয় না (সে সবচেয়ে নিকৃষ্ট)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৮১, আহমাদ ২৯২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sah।
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কৃপণ ও দানশীল ব্যক্তির দৃষ্টান্ত
এমন দু’ব্যক্তির মতো যাদের শরীরে দু’টি লোহার পোশাক রয়েছে। আর (এটার কারণে) এ দু’জনের
হাত তাদের সিনা হতে গর্দান পর্যন্ত লটকে আছে। এ অবস্থায় দানশীল ব্যক্তি যখন দান করতে
চায় তখন তার বেড়ি সম্প্রসারিত হয়। এমনকি তাঁর হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত আবৃত করে ফেলে এবং
তার চিহ্ন মিটে যায়। কৃপণ ব্যক্তি দান করতে চাইলে তার বেড়ি সংকুচিত হয়ে এর প্রত্যেকটি
কড়া নিজ নিজ স্থানে একটা আরেকটার সাথে আটকে যায়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২২৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২১, সুনান আননাসায়ী ২৫৪৮, আহমাদ ৯০৫৭, শারহুস্ সুন্নাহ্
১৬৫৯, সহীহ আত্ তারগীব ৮৭০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৮২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২২৮,
ইসলামীক সেন্টার ২২২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যুলম থেকে বেঁচে থাকবে, কারণ কিয়ামতের (কিয়ামতের)
দিন যুলম অন্ধকারের ন্যায় গ্রাস করবে। আর কৃপণতা হতে বেঁচে থাকবে, কারণ কৃপণতা তোমাদের
পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করেছে। এ কৃপণতাই তাদেরকে প্ররোচিত করেছে রক্তপাতের জন্য এবং
হারাম কাজকে হালাল করার দিকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৮৬৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৮, আহমাদ ১৪৪৬১,
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৫০১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৪১৬১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্
৮৫৮, সহীহ আত্ তারগীব ২২১৫, সহীহ আল জামি ১০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৪) সুস্থাবস্থায় তার মাল থেকে যে দান-খয়রাত করেছে তা তার মৃত্যুর
পরও তার সাথে (তার আমলনামায়) যুক্ত হবেঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমানদার ব্যাক্তির মৃত্যুর পর
তার যেসব কাজ ও তার যেসব পুণ্য তার সাথে যুক্ত হয় তা হলঃ যে জ্ঞান সে অন্যকে শিক্ষা
দিয়েছে এবং তার প্রচার করেছে, তার রেখে যাওয়া সৎকর্মপরায়ণ সন্তান, কুরআন যা সে ওয়ারিসী
সূত্রে রেখে গেছে অথবা মাসজিদ যা সে নির্মাণ করিয়েছে অথবা পথিক-মূসা ফিরদের জন্য যে
সরাইখানা নির্মাণ করেছে অথবা পানির নহর যা সে খনন করেছে অথবা তার জীবদ্দশায় ও সুস্থাবস্থায়
তার মাল থেকে যে দান-খয়রাত করেছে তা তার মৃত্যুর পরও তার সাথে (তার আমলনামায়) যুক্ত
হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৪২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪১১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৩১, সুনান আততিরমিযী
১৩৭৬, সুনান আননাসায়ী ৩৬৫১, সুনান আবূ দাঊদ ২৮৮০, আহমাদ ৮৬২৭, দারিমী ৫৫৯, হাদিস সম্ভার
৯৬৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(১৫) দান-ছদাকাকারীকে পুরুস্কৃত করা হবেঃ
(ক) আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তাদের হিদায়াত দানের
দায়িত্ব আপনার নয়; বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছে হিদায়াত দেন। আর যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয়
কর তা তোমাদের নিজেদের জন্য আর তোমরা তো শুধু আল্লাহ্কে চেয়েই (তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই) ব্যয় করে
থাক। আর তোমরা উত্তম কোন কিছু ব্যয় করে থাকলে তার পুরস্কার তোমাদেরকে পুরোপুরিভাবেই
দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না”। (সুরা
আল বাকারা ২৭২)।
(খ) আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা নিজেদের ধন-সম্পদ
রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের প্রতিদান তাদের রব-এর নিকট রয়েছে।
আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না”। (সুরা
আল-বাকারা ২৭৪)।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন সাহাবীগণকে
উদ্দেশ্য করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কে আজ সওম
রেখেছ? আবূ বকর (রাঃ) উত্তর দিলেন, আমি। তিনি বললেন, আজ কে জানাযার সাথে গিয়েছ? আবূ
বকর (রাঃ) বললেন, আমি। তিনি বললেন, তোমাদের কে আজ মিসকীনকে খাবার দিয়েছ? আবূ বকর (রাঃ)
জবাবে বললেন, আমি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের কে অসুস্থকে দেখতে গিয়েছ? আবূ বকর (রাঃ)
বললেন, আমি। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (শুনে রাখো)
যে ব্যক্তির মধ্যে এতো গুণের সমাহার, সে জান্নাতে প্রবেশ করবেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৯১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২২৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮৩০, সিলসিলাহ্ আস্
সহীহাহ্ ৮৮, সহীহ আত্ তারগীব ৯৫৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৬) দান-সদাকায় আল্লাহ সন্তুষ্ট হোনঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। বনী ইসরাঈলের তিন ব্যক্তির
একজন কুষ্ঠরোগী, একজন টাকমাথা ও তৃতীয়জন অন্ধ ছিল। আল্লাহ তা’আলা এ তিন ব্যক্তিকে পরীক্ষা
করতে চাইলেন। তিনি তাদের কাছে একজন মালাক (ফেরেশতা) পাঠালেন। মালাক (প্রথমে) কুষ্ঠ
রোগীর কাছে এলেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ জিনিস তোমার কাছে বেশী প্রিয়? সে বলল, সুন্দর
রং ও সুন্দর ত্বক। আর এ কুষ্ঠ রোগ থেকে আরোগ্য যার জন্য লোকেরা আমাকে ঘৃণা করে। (এ
কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ফেরেশতা কুষ্ঠ রোগীর গায়ে হাত
বুলালেন। তার রোগ ভাল হয়ে গেল। তাকে উত্তম রং ও উত্তম ত্বক দান করা হলো। তারপর মালাক
তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখন কোন সম্পদ তোমার কাছে বেশী প্রিয়? সে ব্যক্তি জবাবে উট অথবা
গরুর কথা বলল। (হাদীস বর্ণনাকারী একব্যক্তি) ইসহাক্বের সন্দেহ করেছেন, ’গরুর’ কথা কুষ্ঠ
রোগী বলেছিল অথবা টাকমাথাওয়ালা। (মোটকথা) এদের একজন উট চেয়েছিল। আর দ্বিতীয়জন চেয়েছিল
গরু। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ লোকটিকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী
উট দান করা হলো। তারপর মালাক দু’আ করলেন, ’আল্লাহ তোমার ধন-সম্পদে প্রবৃদ্ধি দিন।’
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
এরপর মালাক গেলেন টাকওয়ালার কাছে। জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ জিনিস তোমার কাছে প্রিয়তর? সে
বলল, সুন্দর চুল। সেই সাথে এ টাক থেকে মুক্তি, যার জন্য লোকেরা আমাকে ঘৃণা করে। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মালাক তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে তার টাক ভাল
হয়ে গেল। তাকে সুন্দর চুল দান করা হলো। এরপর মালাক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখন তোমার কাছে
কোন্ ধন-সম্পদ অধিক প্রিয়? সে বলল, ’গরু’। তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দেয়া হলো। মালাক
বললেন, আল্লাহ তোমার ধন-সম্পদে বারাকাত দিন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, এরপর মালাক অন্ধের কাছে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কোন্ জিনিস খুব প্রিয়?
অন্ধ লোকটি বলল, আল্লাহ তা’আলা আমাকে আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলে আমি তা দিয়ে লোকজনকে
দেখতে পাব। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (তখন) মালাক তার চোখের
উপর হাত বুলিয়ে দিলে আল্লাহ তাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। তারপর মালাক জানতে চাইলেন,
এখন তার কাছে কোন্ ধন-সম্পদ অত্যন্ত প্রিয়। সে বলল, ভেড়া-ছাগল তাকে একটি গর্ভবতী বকরী
দান করা হলো।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, (কিছু দিন পর) কুষ্ঠ রোগী ও টাকওয়ালা অনেক উট ও গাভী এবং অন্ধ লোকটি অনেক ছাগলের
মালিক হয়ে গেল। এমনকি উটে একটি ময়দান, গরুতে একটি ময়দান এবং ছাগলে একটি ময়দান ভরে গেল।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, (এরপর ওই) মালাক আবার ওই কুষ্ঠ রোগীকে পরীক্ষা করার জন্য আগের রূপ ধরে এলেন।
বললেন, আমি একজন মিসকীন লোক। সফরে আমার সব সম্পদ শেষ হয়ে গেছে, তাই আজ (আমার গন্তব্যে)
পৌঁছা সম্ভব হচ্ছে না। আল্লাহর রহমতে আমি তোমার কাছে সে আল্লাহর কসম দিয়ে একটি উট চাইছি,
যিনি তোমার গায়ের রং ও চামড়া সুন্দর করে দিয়েছেন। তুমি আমাকে একটি উট দিলে আমি সফর
শেষে গন্তব্যে পৌঁছতে পারি। কুষ্ঠ রোগীটি বলল, আমার অনেক দায়-দায়িত্ব মিসকীনরূপী, অর্থাৎ
সে বাহানা করে মিসকীনটিকে (ফেরেশতাকে) এড়িয়ে যেতে চাইল। বলল, তুমি কোন উট পাবে না।
মালাক বললেন, আমি তোমাকে যেন চিনেছি, তুমি কি সে কুষ্ঠ রোগী নও, যাকে লোকেরা ঘৃণা করত?
তুমি মুখাপেক্ষী ও গরীব ছিলে। আল্লাহ তোমাকে (উত্তম রং ও রূপ দিয়ে) সুস্থতা দান করেছেন,
মাল দিয়েছেন। কুষ্ঠরোগী বলল, তোমার কথা ঠিক নয়। এসব অর্থ-সম্পদ আমি উত্তরাধিকার সূত্রে
পেয়েছি। মালাক বললেন, যদি তুমি মিথ্যা বলে থাকো তাহলে আল্লাহ তোমাকে তোমার সে অবস্থায়
ফিরিয়ে দিন যে অবস্থায় তুমি প্রথমে ছিলে।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ তারপর মালাক টাকওয়ালার কাছে স্বরূপে আবির্ভূত হলেন। আগের লোকটিকে যা বলেছিলেন
তাকে তেমনটি বললেন। টাকওয়ালাও ওই জবাবই দিলো যে জবাব কুষ্ঠ রোগীটি দিয়েছিল। তারপর মালাক
বললেন, তুমি মিথ্যা বলে থাকলে আল্লাহ তোমাকে যেন পূর্ব অবস্থা ফিরিয়ে দেন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, (এরপর) মালাক অন্ধ লোকটির কাছে আবির্ভূত হলেন। তাকে বললেন, আমি একজন মিসকীন ও
পথিক। আমার সফরের সব মালসামান শেষ। গন্তব্যে পৌঁছার জন্য আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কিছুই
নেই। আমি তোমার কাছে ওই আল্লাহর দোহাই দিয়ে একটি বকরী চাই যিনি তোমাকে দৃষ্টিশক্তি
ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং অনেক বকরীর মালিক করেছেন। তাহলে আমি গন্তব্যে পৌঁছতে পারি। মালাকের
কথা শুনেই লোকটি বলল, আমি অন্ধ ছিলাম, আল্লাহ আমাকে আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন।
তুমি যত চাও নিয়ে যাও, আর যা ইচ্ছা রেখে যাও। আল্লাহর কসম! (তুমি যা নিবে) তা ফেরত
দেবার মতো কষ্ট আমি তোমাকে দেব না। (অন্ধের এ জবাব শুনে) মালাক বললেন, তোমার মাল তোমার
কাছে থাকুক, তাতে আমার কোন প্রয়োজন নেই। তোমাকে শুধু পরীক্ষা করা হচ্ছিল (তুমি কামিয়াব
হয়েছ)। আল্লাহ তোমার ওপর সন্তুষ্ট। আর তোমার অপর দু’ সাথীর ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৭৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৪৬৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩১৪, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৩৫২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সুতরাং আমাদের আমলের মধ্যে অবশ্যই দান-ছাদাক্বার
পরিমাণ বেশী হওয়া উচিত।
দান-সদাকা কবুলের শর্ত
(১) রিয়া ও শ্রুতিমুক্ত হওয়াঃ
দান-ছাদাক্বা একটি মহৎ ইবাদত। কিন্তু শয়তানী
প্ররোচনায় বহু মানুষ লোক দেখানো দান-ছাদাক্বা করে থাকে। আর কোন ব্যক্তি যে আমলই করুক
না কেন, তার উদ্দেশ্য হ’তে হবে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। কেননা আল্লাহর সন্তুষ্টির
উদ্দেশ্য ব্যতীত কোন ইবাদতের ছওয়াব লাভ করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা লোক দেখানোর
উদ্দেশ্যে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং আল্লাহর প্রতি ও বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস
রাখে না। বস্ত্তত শয়তান যার সঙ্গী হয়েছে, সে নিকৃষ্ট সঙ্গীই বটে!’। (সুরা আননিসা-মাদানী ৪/৩৮)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন
জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
(সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি খ্যাতি অর্জনের জন্য কোন কাজ করে, আল্লাহ তা’আলা তার দোষ-ক্রটিকে
লোক সমাজে প্রকাশ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য কোন কাজ করে, আল্লাহ
তা’আলাও তার সাথে লোক দেখানোর আচরণ করবেন (প্রকৃত সাওয়াব হতে সে বঞ্চিত থাকবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩১৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৪৯৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৬৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৯৮৭, সুনান আততিরমিযী ২৩৮১, সুনান
ইবনু মাজাহ ৪২০৬, সহীহুল জামি ১১৫৫৫, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩৫২৯৮, মুসনাদে ‘আবদ
ইবনু হুমায়দ ৭৭৮, মুসনাদে আহমাদ ১১৩৭৫, আবূ ইয়া'লা ১০৫৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪০৬,
শুআবূল ঈমান ৬৮১৮, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৬৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন প্রথমে
এক শাহীদ ব্যক্তির ব্যাপারে বিচার হবে। আল্লাহ তা’আলার সামনে হাশ্রের (হাশরের) ময়দানে
তাকে পেশ করবেন এবং তাকে তিনি তার সকল নি’আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। অতঃপর তার
এসব নি’আমাতের কথা স্মরণ হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এসব
নি’আমাত পাবার পর দুনিয়াতে তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকারে কী কাজ করেছো? সে উত্তরে বলবে, আমি
তোমার (সন্তুষ্টির) জন্য তোমার পথে (কাফিরদের বিরুদ্ধে) লড়াই করেছি, এমনকি শেষ পর্যন্ত
আমাকে শাহীদ করে দেয়া হয়েছে। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তোমাকে বীরপুরুষ
বলবে এজন্য তুমি লড়েছো। আর তা বলাও হয়েছে (তাই তোমার উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে)। তখন তার
ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি- যে নিজে জ্ঞানার্জন
করেছে, অন্যকেও তা শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন পড়েছে, তাকে উপস্থিত করা হবে। তাকে দেয়া সব
নি’আমাত আল্লাহ তাকে স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব নি’আমাত তার স্মরণ হবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস
করবেন, এসব নি’আমাতের তুমি কি শোকর আদায় করেছো? সে উত্তরে বলবে, আমি ’ইলম অর্জন করেছি,
মানুষকে ’ইলম শিক্ষা দিয়েছি, তোমার জন্য কুরআন পড়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো,
তোমাকে ’আলিম বলা হবে, ক্বারী বলা হবে, তাই তুমি এসব কাজ করেছ। তোমাকে দুনিয়ায় এসব
বলাও হয়েছে। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং মুখের উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে
তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এরপর তৃতীয় ব্যক্তি- যাকে আল্লাহ তা’আলা বিভিন্ন
ধরনের মাল দিয়ে সম্পদশালী করেছেন, তাকেও আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তাকে
দেয়া সব নি’আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব তারও মনে পড়ে যাবে। আল্লাহ তাকে এবার
জিজ্ঞেস করবেন, এসব নি’আমাত পেয়ে তুমি কি ’আমল করেছো? সে ব্যক্তি উত্তরে বলবে, আমি
এমন কোন খাতে খরচ করা বাকী রাখিনি, যে খাতে খরচ করাকে তুমি পছন্দ কর। আল্লাহ তা’আলা
বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো, তুমি খরচ করেছো, যাতে মানুষ তোমাকে দানবীর বলে। সে খিতাব
তুমি দুনিয়ায় অর্জন করেছো। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে
হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৫, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৪৭৭০, ইসলামিক সেন্টার ৪৭৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) খোটা না দেওয়াঃ
দুনিয়াবী কোন প্রতিদানের আশা ছাড়াই নিঃশর্তভাবে
দান করতে হয়। দান করে খোটা দেয়া একটি গর্হিত কাজ। খোটা তারাই দেয় যারা দুনিয়াবী কল্যাণ
কামনা করে। যারা নিঃশর্তভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরকালীন মুক্তির আশায় দান করে
তারা কখনো খোটা দেয়ার মত অন্যায় আচরণ করে না।
আল্লাহ বলেন,
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা খোটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে
তোমাদের দানগুলিকে বিনষ্ট করো না। সেই ব্যক্তির মত, যে তার ধন-সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর
জন্য এবং সে আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করে না। ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ প্রস্তরখন্ডের
মত, যার উপরে কিছু মাটি জমে ছিল। অতঃপর সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হ’ল ও তাকে ধুয়ে ছাফ
করে রেখে গেল। এভাবে তারা যা কিছু উপার্জন করে, সেখান থেকে কোনই সুফল তারা পায় না।
বস্ত্তত আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন না’। (সুরা বাক্বারাহ-মাদানী ২/২৬৪)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না,
তাদের প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক
শাস্তি। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা? তারা তো বিফল হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে। তিনি বলেনঃ
(১) যে ব্যক্তি পায়ের গোছার নিচে পরিধেয় ঝুলিয়ে
পরে,
(২) যে ব্যক্তি দান করার পর খোঁটা দেয় এবং
(৩) যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে নিজের মাল বিক্রয়
করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২১১, নাসায়ী ২৫৬৩, ২৫৬৪,
৪৪৫৮, ৪৪৫৯, ৫৩৩৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৮৭, আহমাদ ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০,
২১০৩৪, দারেমী ২৬০৫, গায়াতুম নারাম ১৭০, ইরওয়া ৯০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৫, ইসলামিক
সেন্টারঃ ২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কোন্ সময়ের দান-সদাকা উত্তম?
সাধারণত যেকোন সময় ছাদাক্বা করা যায়। তবে ছাদাক্বার
একটি উত্তম সময় আছে। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
এক ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! কোন দান মর্যাদার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড়। তিনি বললেন,
তুমি যখন সুস্থ-সবল থাকো এবং সম্পদের প্রতি আগ্রহ পোষণ করো, দারিদ্রের ভয় কর, ধন-সম্পদের
মালিক হতে চাও, তখনকার দান সবচেয়ে বড়। তাই প্রাণ ওষ্ঠাগত হবার সময় পর্যন্ত দান করার
অপেক্ষা করবে না। কারণ তখন তুমি বলতে থাকবে, এ মাল অমুকের, এ মাল অমুকের এবং এ মাল
অমুকের। অথচ ততক্ষণে মালের মালিক অমুক হয়েই গেছে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪১৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২২৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩২, সুনান আননাসায়ী ৩৬১১, আহমাদ ৭১৫৯, ইবনু হিব্বান ৩৩১২,
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮৩২, ইরওয়া ১৬০২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৮৩, সহীহ আল জামি‘
আস্ সগীর ১১১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সুস্থতা মানুষকে আত্মভোলা করে। মালের প্রতি
লোভ ব্যক্তিকে সম্পদ পুঞ্জীভূত করতে উদ্বুদ্ধ করে। দরিদ্রতার ভয় ব্যক্তির কার্পণ্য
সত্তাকে জাগ্রত করে। আর ধনী হওয়ার প্রবণতা ব্যক্তিকে আয়েশী ও দুনিয়ামুখী বানায়। সেকারণে
উক্ত হাদীছে বর্ণিত অবস্থাগুলোতে বেশী বেশী দানের প্রতি তাকীদ দেয়া হয়েছে।
রামাযান মাসে দান-সদাকা
যাকাত ও ছাদাক্বা আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ সময়
হচ্ছে রামাযান মাস। কেননা এ মাসে রয়েছে বহুবিধ ফযীলত। এটি বরকতপূর্ণ এক মহিমান্বিত
মাস। সেজন্য রাসূল (ছাঃ) রামাযান মাসে বেশী বেশী ছাদাক্বা করতেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু
আববাস (রাঃ) বলেন,
আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
কল্যাণকর কাজের ব্যাপারে (দান-খয়রাত) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন
মানুষের মধ্যে সবচেয়ে প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী। আর তাঁর হৃদয়ের এ প্রশস্ততা রমাযান
(রমজান) মাসে বেড়ে যেত সবচেয়ে বেশী। রমাযান (রমজান) মাসে প্রতি রাতে জিবরীল আমীন তাঁর
সাথে সাক্ষাৎ করতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে কুরআন শুনাতেন।
জিবরীল আমীনের সাক্ষাতের সময় তাঁর দান প্রবাহিত বাতাসের বেগের চেয়েও বেশী বেড়ে যেত।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ১৯০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫৯০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩০৮, আহমাদ ৩৪২৫, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৮৯, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৩৪৪০, শামায়িল ৩০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮০৪, ইসলামিক সেন্টার ৫৮৩৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অপর এক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড় সমান সোনাও থাকে, ঋণের অংশ বাদে তা তিনদিন আমার কাছে
জমা না থাকলেই আমি খুশী হব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৮৫৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৪৫, ২৩৮৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০৯৫৬,
সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১১৩৯, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫২৯০, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯৯৫, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৬০০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এ হাদীছ থেকে বোঝা যায় রাসূল (ছাঃ) ধনী ছিলেন
না কিন্তু তাঁর অন্তর প্রাচুর্যে ভরপুর ছিল।
দান-ছাদাক্বার আদব সমূহ
পার্থিব জীবন পরিচালনার জন্য আল্লাহ মানুষকে
ধন-সম্পদ দান করেছেন। মূলতঃ সম্পদের মালিক আল্লাহ। মানুষ কেবল এসবের ব্যবহারকারী। তাই
আল্লাহ কাউকে সম্পদ দিয়ে আবার কাউকে না দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। গরীব-দুঃখী অসহায় মানুষ
ধনীদের সম্পদের মুখাপেক্ষী। তাদেরকে দান করা ধনীদের জন্য করণীয়। এটা যেমন ইবাদত, তেমনি
আল্লাহকে রাযী-খুশী করার অন্যতম উপায়। সুতরাং দরিদ্রদের দান করার মাধ্যমে তাদের অসচ্ছলতা
দূর করার চেষ্টা করা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা মুমিনের কর্তব্য।
কিন্তু দান-ছাদাক্বার কিছু আদব রয়েছে, যার মাধ্যমে দান আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে থাকে।
আর এসবের অনুপস্থিতিতে দান-ছাদাক্বা যথাযথভাবে কবুল হয় না। আলোচ্য নিবন্ধে দান-ছাদাক্বার
আদব বা শিষ্টাচার সমূহ আলোচনা করা হলোঃ
দান-সদাকার আদব সমূহ
দান-ছাদাক্বাসহ অন্যান্য নেক আমল কবুল হওয়ার
জন্য কিছু শর্ত ও আদব রয়েছে। যেগুলো পালন না করা হ’লে ছওয়াব পাওয়া যায় না। এমনকি কিছু
আদব এমন রয়েছে, যেগুলো পালন করা না হ’লে আমল বাতিল হয়ে যেতে পারে। এসব আদবের মধ্যে
কিছু পালনীয় ও কিছু বর্জনীয়। নিম্নে আদব বা শিষ্টাচার সমূহ আলোচনা করা হ’ল।-
(ক) পালনীয় আদব সমূহঃ
(১) দান হালাল দ্রব্য থেকে হওয়াঃ
যেসব বস্তু দান করা হবে তা হালাল হতে হবে।
কেননা আল্লাহ হালাল ও পবিত্র বস্তু ব্যতীত গ্রহণ করেন না।
আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যা উপার্জন
কর এবং যা আমরা তোমাদের জন্য জমিতে উৎপন্ন করি, সেখান থেকে পবিত্র বস্তু ব্যয় কর’।
(সুরা আল বাক্বারাহ ২/২৬৭)।
সুতরাং হারাম বস্তু দান করলে তা কবুল হয় না।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি
পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ
করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন :
’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ’মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)।
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’হে মু’মিনগণ! আমি
তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ১৭২)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের
সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত
আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম,
পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির
দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আততিরমিযী
২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বৈধভাবে অর্জিত সম্পদ
থেকে একটি খেজুর সমান সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে এবং আল্লাহ তা’আলা বৈধ ব্যতীত কোন কিছু
কবূল করেন না। তাই বৈধ সম্পদ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করলে আল্লাহ তা’আলা তা’ ডান হাতে
কবূল করেন। অতঃপর এ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দানকারীর জন্য এভাবে লালন-পালন করেন যেভাবে
তোমরা ঘোড়ার বাছুর লালন-পালন করে থাকে। এমনকি এ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) অথবা এর সাওয়াব
একসময় পাহাড়ের মতো হয়ে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৮৮৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩২, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০১৪, আহমাদ ৮৩৮১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৭৪৬, ইরওয়া ৮৮৬, সহীহ আত্
তারগীব ৮৫৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬১৫২, মুয়াত্ত্বা মালিক ২/১, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৬৬১, জিলালুল জুন্নাহ (৬২৩), তা’লীকুর রাগীব)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাপের মাধ্যমে
কোন সম্পদ লাভ করল, অতঃপর তা দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করল কিংবা তা দান করল
অথবা তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করল। আল্লাহ তা একত্রিত করে জাহান্নামে ছুড়ে মারবেন’।
(ছহীহ আত-তারগীব হা/১৭২১)।
ছাদাক্বা যেমন উত্তম মাল দ্বারা হতে হবে তেমনি
তা যেন পাপাচারের সহায়তায় ব্যয়িত না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
(২) উত্তম মাল দান-সদাকা করাঃ
উত্তম সম্পদ ছাদাক্বা করার চেষ্টা করতে হবে।
কেননা প্রিয় বস্ত্ত ছাদাক্বা না করলে ছওয়াব পাওয়া যায় না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কখনোই
কল্যাণ লাভ করবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্ত্ত থেকে দান করবে’। (সুরা আলে ইমরান ৩/৯২)।
তিনি আরো বলেন, ‘আর সেখান থেকে নিকৃষ্ট বস্ত্ত
ব্যয় করার সংকল্প কর না, যা তোমরা নিজেরা গ্রহণ কর না চোখ বন্ধ করা ব্যতীত। জেনে রেখ
আল্লাহ অভাবমু্ক্ত ও চির প্রশংসিত’। (সুরা বাক্বরাহ ২/২৬৭)।
হাদীছে এসেছে, আওফ ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন,
একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে আমাদের নিকটে
প্রবেশ করলেন, তাঁর হাতে একটি লাঠি ছিল। মসজিদে আমাদের এক ব্যক্তি নিকৃষ্ট মানের এক
গুচ্ছ খেজুর ঝুলিয়ে রেখেছিল। তিনি ঐ খেজুর গুচ্ছে লাঠি দিয়ে আঘাত করে বলেন, এর ছাদাকাক্বারী
ইচ্ছে করলে এর চাইতে উত্তমটি ছাদাক্বা করতে পারত। তিনি আরো বলেন, ‘এর ছাদাকাক্বারীকে
ক্বিয়ামতের দিন নিকৃষ্ট ফল খেতে হবে’। (সুনানে আবূ দাউদ
১৬০৮; সুনান আননাসাঈ ২৪৯২, সুনান ইবনু মাজাহ ১৮২১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৩) দান-সদাকা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য হওয়াঃ
অন্যান্য নেক আমলের ন্যায় ছাদাক্বাও কেবল আল্লাহর
সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রদান করা জরুরী। অন্যথা তা কবুল হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘কাজ
(এর প্রাপ্য হবে) নিয়ত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে’।
’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিয়্যাতের উপরই কাজের ফলাফল
নির্ভরশীল। মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী ফল পাবে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের
সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করবে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্যই গণ্য
হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার স্বার্থপ্রাপ্তির জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিবাহের জন্য হিজরত
করবে সে হিজরত তার নিয়্যাত অনুসারেই হবে যে নিয়্যাতে সে হিজরত করেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৭, সুনান আততিরমিযী
১৬৩৭, সুনান আননাসায়ী ৭৫, সুনান আবূ দাঊদ ২২০১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪২২৭, আহমাদ ১৬৯,
৩০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৭৪, ইসলামিক সেন্টার ৪৭৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
অন্যত্র এসেছে, সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,
সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বৎসর আমি এমন এক রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলাম, যা আমি মৃত্যুর
দ্বারপ্রান্তে পৌঁছলাম। এমনি সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
দেখতে আসলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার প্রচুর ধন-সম্পদ আছে, আর আমার একমাত্র
কন্যা ছাড়া (ঔরসজাত) কোনো ওয়ারিস নেই। আমি কি আমার সমস্ত ধন-সম্পদ (অপর কারো জন্য)
ওয়াসিয়্যাত করে যেতে পারব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। আমি বললাম,
তাহলে কি দুই-তৃতীয়াংশ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। আমি বললাম,
তবে কি অর্ধেক? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। আমি বললাম, তবে কি
এক-তৃতীয়াংশ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, এক-তৃতীয়াংশ; আর
এক-তৃতীয়াংশও অতিরিক্ত।
তুমি তোমার ওয়ারিসদেরকে দরিদ্র রেখে যাওয়া
অপেক্ষা সচ্ছল রেখে যাওয়া তোমার জন্য উত্তম, যাতে তারা অন্যের নিকট যাচ্ঞা না করে
(হাত না পাতে)। তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে তোমার পরিবারের প্রতি যে খরচ
করবে, নিশ্চয় এতেও তোমাকে সাওয়াব দেয়া হবে- এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে (খাদ্য)
লোকমা উঠিয়ে দাও তাতেও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩০৭১,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৯৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪১০৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৬২৮, সুনান আততিরমিযী ২১১৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬০২৬, ইরওয়া ৮৯৯, সহীহ আল
জামি‘ ১৩৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪০৬৯, ইসলামিক সেন্টার ৪০৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৪) গোপনে দান-সদাকা করাঃ
প্রকাশ্যে ও গোপনে উভয় অবস্থায় দান করা যায়।
তবে গোপনে দান করা উত্তম। কেননা এতে লৌকিকতা ও প্রদর্শনেচ্ছা থাকে না। তবে প্রকাশ্যে
দান করা অধিক কল্যাণকর হ’লে প্রকাশ্যেই দান করতে হবে।
আল্লাহ বলেন,
‘যদি
তোমরা প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা কতই না উত্তম! আর যদি তা গোপনে কর ও অভাবীদের প্রদান
কর, তবে তোমাদের জন্য তা আরও উত্তম। এবং (এর দ্বারা) তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করে
দিবেন। আর তোমরা (গোপনে) যা কিছু কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন’। (সুরা আল বাক্বারাহ ২/২৭১)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাত ধরনের মানুষকে আল্লাহ তা’আলা সেদিন
(কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) তাঁর ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর
কারো ছায়া থাকবে নাঃ (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) সেই যুবক যে যৌবন বয়সে আল্লাহর ’ইবাদাতে
কাটিয়েছে, (৩) যে ব্যক্তি মাসজিদ থেকে বের হয়ে এসে আবার সেখানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত
মসজিদেই তার মন পড়ে থাকে, (৪) সেই দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে।
যদি তারা একত্রিত হয় আল্লাহর জন্য হয়, আর যদি পৃথক হয় তাও আল্লাহর জন্যই হয়, (৫) সে
ব্যক্তি, যে একাকী অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে আর আল্লাহর ভয়ে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রু
ঝরে, (৬) সে ব্যক্তি, যাকে কোন উচ্চ বংশীয় সুন্দরী যুবতী কু-কাজ করার জন্য আহবান জানায়।
এর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৭) সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে গোপনে দান
করে। যার বাম হাতও বলতে পারে না যে, তার ডান হতে কী খরচ করেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩১, সুনান আননাসায়ী
৫৩৮০, সুনান আততিরমিযী ২৩৯১, আহমাদ ৯৬৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪৮৬, ইরওয়া ৮৮৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
(৫) খুশিমনে দান-সদাকা করাঃ
স্বতস্ফূর্তভাবে ছাদাক্বা করা উচিত। গোমড়া
মুখ করে দান করা উচিত নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি ভাল কাজই সদাক্বাহ্ (সাদাকা), আর তোমার
নিজের কোন ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ এবং কোন ভাইয়ের পাত্রে নিজের বালতি থেকে পানি
ঢেলে দেয়াও ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৯১০, সুনান আত্ তিরমিযী ১৯৭০, আহমাদ ১৪৮৭৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৪২, সহীহ
আত্ তারগীব ২৬৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
তিনি আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমার
ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করায় তোমার জন্য ছাদাক্বার ছওয়াব লেখা হয়’। (ছহীহ আত-তারগীব
হা/২৬৮৬)।
(৬) প্রকৃত হকদারকে দান-সদাকা করাঃ
যথাযথ হকদার বা প্রাপককে দান করা উচিত। এতে
অধিক ছওয়াব পাওয়া যায় এবং প্রাপক ঐ ছাদাক্বার মাধ্যমে উপকৃত হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
সালমান ইবনু ’আমির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মিসকীনকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা
এক প্রকার, আর নিকটাত্মীয়ের কাউকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেয়া দু’ প্রকার সাওয়াবের কারণ।
এক রকম সাওয়াব নিকটাত্মীয়ের হক আদায় এবং অন্য রকম সাওয়াব সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করার জন্য।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৩৯, সুনান আত্ তিরমিযী ৬৫৮,
সুনান আননাসায়ী ২৫৮২, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৮৪৪,
আহমাদ ১৬২৩, দারিমী ১৭২২, ইবনু খুযায়মাহ্ ২৩৮৫, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৪৭৬, ইরওয়া ৮৮৩,
সহীহ আত্ তারগীব ৮৯২, সহীহ আল জামে আস্ সগীর ৩৮৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭) সামর্থ বা সাধ্যমত দ্রুত দান করাঃ
দান-ছাদাক্বা করার ইচ্ছা করলে দ্রুত তা করা
উচিত।
(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
এক ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! কোন দান মর্যাদার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড়। তিনি বললেন,
তুমি যখন সুস্থ-সবল থাকো এবং সম্পদের প্রতি আগ্রহ পোষণ করো, দারিদ্রের ভয় কর, ধন-সম্পদের
মালিক হতে চাও, তখনকার দান সবচেয়ে বড়। তাই প্রাণ ওষ্ঠাগত হবার সময় পর্যন্ত দান করার
অপেক্ষা করবে না। কারণ তখন তুমি বলতে থাকবে, এ মাল অমুকের, এ মাল অমুকের এবং এ মাল
অমুকের। অথচ ততক্ষণে মালের মালিক অমুক হয়েই গেছে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪১৯, মুসলিম ১০৩২, সুনান নাসায়ী
৩৬১১, আহমাদ ৭১৫৯, ইবনু হিব্বান ৩৩১২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮৩২, ইরওয়া ১৬০২,
সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৮৩, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১১১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) আসমা (বিনতু আবূ বকর) (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (আল্লাহর রাস্তায়) খরচ কর।
কিন্তু গুণে গুণে খরচ করো না। তাহলে আল্লাহ তোমাকে গুণে গুণে (নেকী) দিবেন। তোমার জমা
করে রেখ না। তাহলে আল্লাহ তা’আলা জমা করে রাখবেন। সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর পথে খরচ
করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২৫৯১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২৯, ইবনু
হিব্বান ৩২০৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৫৫, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১৫১৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(৮) সময় থাকতে সদাকা করাঃ
হারিসাহ্ ইবনু ওয়াহ্ব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)
কর, কেননা এমন সময় আসবে যখন একলোক তার সদাক্বার মাল নিয়ে বের হবে কিন্তু তা গ্রহণ করার
লোক পাওয়া যাবে না। বরং প্রত্যেক ব্যক্তিই বলবে, গতকাল তুমি যদি এ মাল নিয়ে আসতে, আমি
গ্রহণ করতাম। আজ এ সদাক্বার আমার কোনই প্রয়োজন নেই। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২২২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) স্বচ্ছল অবস্থায় দান করাঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ও হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ)হতে
বর্ণিত। উভয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উত্তম হলো ওই
সদাক্বাহ্ (সাদাকা) যা স্বচ্ছল অবস্থায় দেয়া হয়। আর সদাক্বাহ্/দান শুরু করতে হবে ওই
ব্যক্তি হতে যার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তোমার ওপর বাধ্যতামূলক। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯২৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৪২৬, ৫৩৫৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩৪, সুনান আননাসায়ী
২৫৪৪, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ১৬৪০৪, আহমাদ ৯২২৩, ইবনু খুযায়মাহ্ ২৪৩৯, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৭৬৯, সহীহ আল জামে আস্ সগীর ৩২৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) বর্জনীয় আদব সমূহঃ
(১) অধিক লাভের আশায় দান-সদাকা
না করাঃ
দান করতে হবে নিঃশর্তভাবে। দান করে তার বিনিময়ে
অধিক লাভের আশা করা সমীচীন নয়। আল্লাহ বলেন, ‘(দুনিয়ায়) অধিক পাওয়ার আশায় কাউকে দান
করবেন না’। (সুরা মুদ্দাচ্ছির ৭৪/৬)।
দানের বিনিময়ে দুনিয়াতে কিছু পাওয়ার আশায় দান
করা যাবে না।
(২) খোঁটা দেওয়া থেকে বিরত থাকাঃ
দান করে খোঁটা দ্বারা
কেবল দান-খয়রাত ও পরোপকারের ছওয়াবই নষ্ট হযনা; বরং এটা একটা কঠিন পাপও বটে।
কেননা
এর দ্বারা উপকৃত ব্যক্তির অন্তরে
আঘাত দেওয়া হয়।
মানুষের
মনে আঘাত দেওয়া
কবীরা গুনাহ। সুতরাং খোঁটা দেওয়া ইসলাম ও ঈমানের সংগে সংগতিপূর্ণ নয়।
(ক) আল্লাহ
তাআলা বলেন:
“যারা নিজ সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে আর ব্যয়
করার পর খোঁটা দেয় না এবং কোনো কষ্টও দেয় না, তারা নিজ প্রতিপালকের কাছে তাদের প্রতিদান
পাবে। তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না”। (সূরা
বাকারা : ২৬২)।
(খ) আল্লাহ
তাআলা আরো বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ
করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ
লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব,
এ ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর
প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অত:পর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল”। (সূরা বাকারা: ২৬৪)।
(গ) রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যে উপকার করে খোটা দেয়। (সুনান নাসাঈ, হা/ ৫৬৮৮)।
(ঘ) আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.)
বলেন, ‘উপকার করে খোঁটা দানকারী, মা-বাবার অবাধ্য সন্তান, সর্বদা মদপানকারী এই তিন
শ্রেণির মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সুনান আননাসায়ি
: ৫৫৭৭)।
(ঙ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না,
তাদের প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক
শাস্তি। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা? তারা তো বিফল হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে। তিনি বলেনঃ
(১) যে ব্যক্তি পায়ের গোছার নিচে পরিধেয় ঝুলিয়ে
পরে,
(২) যে ব্যক্তি দান করার পর খোঁটা দেয় এবং
(৩) যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে নিজের মাল বিক্রয়
করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২১১, নাসায়ী ২৫৬৩, ২৫৬৪,
৪৪৫৮, ৪৪৫৯, ৫৩৩৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৮৭, আহমাদ ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০,
২১০৩৪, দারেমী ২৬০৫, গায়াতুম নারাম ১৭০, ইরওয়া ৯০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৫, ইসলামিক
সেন্টারঃ ২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) দান করে ফেরত না নেয়াঃ
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে আল্লাহর পথে সওয়ার হবার জন্য ঘোড়া দান করলাম। সে এ ঘোড়াটি নষ্ট
করে ফেলল। (তখন) আমি ঘোড়াটিকে কিনে নেবার ইচ্ছা করলাম। আমার ধারণা ছিল, সে কম দামে
ঘোড়াটি বিক্রি করবে। এ সম্পর্কে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস
করলাম। তিনি বললেন, তুমি ওটা কিনো না। আর দান করা জিনিস ফেরতও নিও না যদি তা তোমাকে
এক দিরহামের বিনিময়েও দেয়। কারণ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিয়ে ফেরত নেয়া ব্যক্তি ঐ কুকুরের
সমতুল্য, যে নিজের বমি নিজে চেটে খায়। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ দান করা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) ফেরত নেয়া ব্যক্তি তারই মতো, যে বমি
করে এবং তা চেটে খায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৫৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৪৯০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪০৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬২০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahi।
ইসলামে ভিক্ষা করা নিষেধ
অভ্যাসগত ভিক্ষুকের শেষ পরিনতি
(১) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করার উদ্দেশে
মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ায়, সে নিশ্চয় (জাহান্নামের) আগুন কামনা করে। (এটা জানার পর)
সে কম বা অধিক চাইতে থাকুক। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৩৮, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৮৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০৪১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৮৩৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১০৬৭৩, সুনানুল কুবরা লিল
বায়হাক্বী ৭৮৭১, সহীহ আল জামে আস্ সগীর ৬২৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২৬৭, ইসলামীক সেন্টার
২২৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে হাত পাততে
থাকে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন সে এমনভাবে উঠবে যে, তখন তার মুখমণ্ডলে মাংস থাকবে না।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৩৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৭৪, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৪০, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী
২৩৭৭, সহীহ আত্ তারগীব ৭৯১, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৩) মুআবিয়াহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিছু চাইতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। আল্লাহর
কসম! তোমাদের যে ব্যক্তিই আমার কাছে (অতিরঞ্জিত করে) কিছু চায় (তখন) আমি তাকে কিছু
দিয়ে দেই। (তবে) আমি তা দেয়া খারাপ মনে করি। ফলে এটা কি করে সম্ভব যে, আমি তাকে যা
কিছুই দিই তাতে বারাকাত হবে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৮৪০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩৮, সুনান আননাসায়ী
২৫৯৩, সহীহ আত্ তারগীব ৮৪০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৭৪৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২৫৯,
ইসলামীক সেন্টার ২২৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) আবদুল্লাহ
ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি স্বাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও মানুষের নিকট হাত পাতে, তাকে কিয়ামতের
(কিয়ামতের) দিন এ অবস্থায় উঠানো হবে যে, এ অভ্যাস তার মুখের উপর ‘খুমূশ’ ‘খুদূশ’ অথবা
‘কুদূহ’রূপে প্রকাশ পাবে। নিবেদন করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কি পরিমাণ সম্পদ তাকে অমুখাপেক্ষী
করবে? তিনি বললেন, পঞ্চাশ দিরহাম অথবা এ মূল্যের সোনা। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৪৭, সুনান আবূ দাঊদ ১৬২৬,
সুনান আত্ তিরমিযী ৬৫০, সুনান আননাসায়ী ২৫৯২, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৮৪০, দারিমী ১৬৮০,
সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৪৯৯, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬২৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
পরিশ্রম করে উপার্জন করাকে উৎসাহিত করা
(৫) (ক) যুবায়র ইবনুল আও্ওয়াম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ এক আঁটি লাকড়ি
রশি দিয়ে বেঁধে পিঠে বহন করে এবং তা বিক্রি করে। আল্লাহ তা’আলা এ কাজের দ্বারা তার
ইযযত সম্মান বহাল রাখেন (যা ভিক্ষা করার মাধ্যমে চলে যায়)। এ কাজ মানুষের কাছে হাত
পাতা অপেক্ষা তার জন্য অনেক উত্তম। মানুষ তাকে কিছু দিতে পারে আবার নাও দিতে পারে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৪১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ১৪৭০, ১৪৭১, সুনান আন নাসায়ী ২৫৮৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৩৮১, সহীহ
আল জামি‘ আস্ সহীহ ৭০৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন আনসারের এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাঁর কাছে
কিছু চাইলেন। তিনি বললেন, ’তোমার ঘরে কি কোন জিনিস নেই?’ লোকটি বলল, একটি কমদামী কম্বল
আছে। এটার একাংশ আমি গায়ে দেই, আর অপর অংশ বিছিয়ে নিই। এছাড়া কাঠের একটি পেয়ালা আছে।
এ দিয়ে আমি পানি পান করি।’ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ দু’টো
জিনিস আমার কাছে নিয়ে এসো। লোকটি এ জিনিস দু’টি নবীর কাছে নিয়ে এলো। জিনিসটি নিজের
হাতে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ দু’টি কে কিনবে? এক ব্যক্তি
বলল, আমি এক দিরহামের বিনিময়ে কিনতে প্রস্তুত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ এক দিরহামের বেশী দিয়ে কে কিনতে চাও? এ কথাটি তিনি ’দু’ কি তিনবার’ বললেন।
(এ সময়) এক ব্যক্তি দু’ দিরহাম বললে তিনি দু’ দিরহাম নিয়ে আনসারীকে দিয়ে দিলেন। অতঃপর
তাকে বললেন, এ এক দিরহাম দিয়ে খাদ্য কিনে পরিবারের লোকজনকে দিবে। দ্বিতীয় দিরহামটি
দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার কাছে আসবে। সে ব্যক্তি কুঠার কিনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলো। তিনি নিজ হাতে কুঠারের একটি মজবুত হাতল লাগিয়ে দিয়ে
তাকে বললেন, এটা দিয়ে লাকড়ী কেটে বিক্রি করবে। এরপর আমি এখানে তোমাকে পনের দিন যেন
দেখতে না পাই। লোকটি চলে গেল। বন থেকে লাকড়ী কেটে জমা করে (বাজারে) এনে বিক্রি করতে
লাগল। (কিছু দিন পর) সে যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফিরে
এলো তখন সে দশ দিরহামের মালিক। এ দিরহামের কিছু দিয়ে সে কিছু কাপড়-চোপড় কিনল আর কিছু
দিয়ে খাদ্যশস্য কিনল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার অবস্থার এ পরিবর্তন
দেখে) বললেন, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন ভিক্ষাবৃত্তি তোমার চেহারায় ক্ষত চিহ্ন হয়ে ওঠার
চেয়ে এ অবস্থা কি উত্তম নয়?
(মনে রাখবে), শুধু তিন ধরনের লোক হাত পাততে
পারে, ভিক্ষা করতে পারে। প্রথমতঃ ফকীর যাকে কপর্দকহীনতা মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়তঃ
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যে ভারী ঋণে লাঞ্ছিত হবার পর্যায়ে। তৃতীয়তঃ রক্তপণ আদায়কারী, যা তার
যিম্মায় আছে (অথচ তার সামর্থ্য নেই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৮৫১, সুনান আবূ দাঊদ ১৬৪৫, সুনান আত্ তিরমিযী ২৩২৬, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্
২৭৮৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬০৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যে ব্যক্তি হাত পেতে লোভ লালসা দিয়ে অর্জন করে তাতে বারাকাত দেয়া হয় না
(৬) হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একবার আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে চাইলাম। তিনি আমাকে কিছু
দিলেন। আমি পুনরায় চাইলে তিনি আবার দিলেন। তারপর তিনি আমাকে বললেন, হে হাকীম! এ মাল
সবুজ সতেজ ও মিষ্ট (অর্থাৎ দেখতে সুন্দর, হৃদয়কে তৃপ্তি দেয়)। তাই যে ব্যক্তি এ মাল
হাত না পেতে ও লোভ-লালসা ছাড়া পায় তাতে বারাকাত দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি তা হাত পেতে
লোভ লালসা দিয়ে অর্জন করে তাতে বারাকাত দেয়া হয় না। তার অবস্থা ওই ব্যক্তির মতো, যে
খাবার খায় কিন্তু পেট ভরে না। (মনে রাখবে) উপরের হাত অর্থাৎ দানকারীর হাত নীচের হাত
(দান গ্রহণকারীর হাত) হতে অনেক উত্তম। হাকীম (রাঃ)বলেন, আমি (তখন) বললাম, হে আল্লাহর
রসূল! ওই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যের বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন। আজ থেকে আমি মৃত্যু
পর্যন্ত কারো মাল থেকে কিছু কামনা করব না। মৃত্যু পর্যন্ত কখনো কারো কাছে কিছু চাইব
না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৪২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ১৪৭২, ৬১৪৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৭৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩৫,
সুনান আত্ তিরমিযী ২৪৬৩, সুনান আননাসায়ী ২৬০৩, আহমাদ ১৫৫৭৪, দারিমী ২৭৯২, সুনানুল কুবরা
লিল বায়হাক্বী ৭৮৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ৮১২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২২৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
২২৫৬, ইসলামীক সেন্টার ২২৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যে ব্যক্তি মানুষের কাছে চাওয়া হতে বিরত থাকে,
আল্লাহ তা’আলা তাঁকে মানুষের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখেন, তাকে মানুষের মুখাপেক্ষী
করেন না
(৭) আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, (একদিন) কিছু আনসার ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট
কিছু চাইলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে কিছু দিলেন তারা আবার
চাইলে তিনি আবারো দিলেন। এমনকি তাঁর কাছে যা ছিল তা শেষ হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন,
আমার কাছে যে সম্পদ আসবে তা আমি তোমাদেরকে না দিয়ে বাঁচিয়ে রেখে ধনের স্তুপ বানিয়ে
রাখব না। মনে রাখবে, যে ব্যক্তি মানুষের কাছে চাওয়া হতে বিরত থাকে, আল্লাহ তা’আলা তাঁকে
মানুষের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখেন, তাকে মানুষের মুখাপেক্ষী করেন না। আর
যে ব্যক্তি অপরের সম্পদের অমুখাপেক্ষী হয়, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করেন। যে ব্যক্তি
সবরের প্রত্যাশী হয়; আল্লাহ তাকে ধৈর্যধারণের শক্তি দান করেন। মনে রাখবে, সবরের চেয়ে
বেশী উত্তম ও প্রশস্ত আর কোন কিছু দান করা হয়নি। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৪৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২৩১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৫৩, সুনান আবূ দাঊদ ১৬৪৪, সুনান আত্ তিরমিযী ২০২৪, সুনান
আননাসায়ী ২৫৮৮, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৬৫৮, দারিমী ১৬৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ৮২৩, সহীহ আল
জামি‘ আস্ সগীর ৫৮১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতিরিক্ত পাওয়ার আশায় লোভ লালসা না করা
(৮) (ক) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (যাকাত উসূল করার বিনিময়ে) কিছু দিতে চাইলে
আমি নিবেদন করতাম, এটা যে আমার চেয়ে বেশী অভাবী তাকে দিন। (এ কথার জবাবে) তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, (প্রয়োজন থাকলে) এটাকে তোমার মালের সাথে শামিল করে নাও।
(আর যদি প্রয়োজনের বেশী হয়) তাহলে তুমি নিজে তা আল্লাহর পথে দান করে দাও। তিনি (আরো
বলেন, লোভ লালসা ও হাত না পেতে) যে জিনিস তুমি লাভ করবে, তা গ্রহণ করবে। আর যা এভাবে
আসবে না তার পিছে লেগে থেক না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৮৪৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭১৬৩,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৯৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৪৫, আহমাদ ১০০, ইবনু
খুযায়মাহ্ ২৩৬৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১২০৪০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬২৯, সহীহ আত্
তারগীব ৮৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
(খ) ইবনুস্ সা’ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
উমার (রাঃ) আমাকে যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত করলেন। আমি যাকাত আদায়ের কাজ শেষ করলাম। যাকাতের
মাল ’উমারের কাছে পৌঁছিয়ে দিলে তিনি আমাকে যাকাত আদায়ের বিনিময় গ্রহণ করতে বললেন।
(এ কথা শুনে) আমি বললাম, এ কাজ শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমি করেছি। তাই এ
কাজের বিনিময় আল্লাহর যিম্মায়। ’উমার (রাঃ) বললেন, তোমাকে যা দেয়া হচ্ছে গ্রহণ করো।
কারণ আমিও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় যাকাত আদায় করেছি। তিনি
এর বিনিময় দিতে চাইলে আমিও এ কথাই বলেছিলাম, যা আজ তুমি বলছ। (তখন) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন, যখন কোন জিনিস চাওয়া ছাড়া তোমাকে দেয়া হবে, তা গ্রহণ
করে খাবে। (আর খাবার পর যা তোমার নিকট বেঁচে থাকবে) তা আল্লাহর পথে খরচ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৫৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২২৭৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩৫, সুনান আবূ দাঊদ ১৬৪৭, সুনান আননাসায়ী ২৬০৪, আহমাদ
৩৭১, ইবনু খুযায়মাহ্ ২৩৬৪, ইবনু হিব্বান ৩৪০৫, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩১৬৯,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২৫৬, ইসলামীক সেন্টার ২২৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কখন অন্যের কাছে সাহায্য চাইবে
(১) সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পরের কাছে হাত পাতা একটি
রোগ, যার দ্বারা মানুষ নিজের মুখকে রোগাক্রান্ত করে। যে ব্যক্তি (নিজের মান সম্মান)
অক্ষুণ্ণ রাখতে চায় সে যেন (হাত পাততে) লজ্জা অনুভব করে, মান ইযযত রক্ষা করে। আর যে
ব্যক্তি (মান ইযযত) অক্ষুণ্ণ রাখতে চায় না সে মানুষের কাছে হাত পেতে নিজের মান সম্মানকে
ভূলুণ্ঠিত করতে পারে। তবে মানুষ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হাত পাততে পারে। অথবা এমন
সময়ে (কারো কাছে) কিছু চাইবে যা চাওয়া খুবই প্রয়োজন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৪৬, সুনান আবূ দাঊদ ১৬৩৯, সুনান আত্ তিরমিযী ৬৮১, সুনান আননাসায়ী
২৫৯৯, ইবনু হিব্বান ৩৩৯৭, সহীহ আত্ তারগীব ৭৯২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬৬৯৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) ক্ববীসাহ্ ইবনু মুখারিক্ব (রাঃ)হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি ঋণগ্রস্ত হয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম।
তার কাছে ঋণ আদায়ের জন্য কিছু চাইলাম। তিনি বললেন, অপেক্ষা করো। আমার কাছে যাকাতের
মাল আসা পর্যন্ত আসলে তোমাকে কিছু দেবার জন্য বলে দেব। তারপর তিনি বললেন, ক্ববীসাহ্!
শুধু তিন ধরনের ব্যক্তির জন্য কিছু চাওয়া জায়িয।
প্রথমতঃ যে ব্যক্তি অপরের ঋণের যামিনদার। তবে
বেশী চাইতে পারবে না। বরং যতটুকু ঋণ শোধের জন্য প্রয়োজন শুধু ততটুকু চাইবে। এরপর আর
চাইবে না।
দ্বিতীয়তঃ ওই ব্যক্তি যে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে
(দুর্ভিক্ষ প্লাবন ইত্যাদিতে)। তার সব ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। তারও (শুধু খাবার ও পোশাকের
জন্য) ততটুকু যাতে প্রয়োজন মিটে যায়। তার জীবনের জন্য অবলম্বন হয়ে যায়।
তৃতীয়তঃ ওই ব্যক্তি (যে ধনী, কিন্তু তার এমন
কোন কঠিন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে যা মহল্লাবাসী জানে। যেমন ঘরের সব মালপত্র চুরি হয়ে গেছে
অথবা অন্য কোন দুর্ঘটনার কারণে মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে)। (মহল্লার) তিনজন বুদ্ধিমান সচেতন
লোক এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিবে যে, সত্যিই এ ব্যক্তি মুখাপেক্ষী। তার জন্যও সেই পরিমাণ
(সাহায্য) চাওয়া জায়িয, যাতে তার প্রয়োজন মিটে। অথবা তিনি বলেছেন এর দ্বারা তার মুখাপেক্ষিতা
ও প্রয়োজন দূর হয়, তার জীবনে একটি অবলম্বন আসে। হে ক্ববীসাহ্! এ তিন প্রকারের ’চাওয়া’
ছাড়া হালাল নয়। আর হারাম পন্থায় প্রাপ্ত মাল খাওয়া তার জন্য হারাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২২৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৪৪, সুনান আবূ দাঊদ ১৬৪০, সুনান আননাসায়ী ২৫৮০, দারিমী
১৭২০, ইবনু খুযায়মাহ্ ২৩৬১, ইবনু হিব্বান ৩৩৯৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩১৯৪,
ইরওয়া ৮৬৯, সহীহ আত্ তারগীব ৮১৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৭৯৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
কি পরিমাণ সম্পদ থাকলে অন্য কারো কাছে কিছু চাওয়া সমীচীন হবে না
(ক)
সাহল ইবনু হানযালিয়্যাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অমুখাপেক্ষী থাকার মতো সম্পদের মালিক হয়েও যে ব্যক্তি মানুষের কাছে
হাত পাতে, সে মূলত বেশী আগুন চায়। এ হাদীসের এক বর্ণনাকারী নুফায়লী অন্য এক স্থানে
বর্ণনা করেছেন যে, রসূলের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কি পরিমাণ সম্পদ থাকলে অন্য কারো
কাছে কিছু চাওয়া সমীচীন হবে না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সকাল
সন্ধ্যার পরিমাণ খাদ্য মওজুদ থাকলে। নুফায়লী অন্য এক স্থানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বরাতে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তার কাছে একদিন অথবা একদিন এক
রাতের পরিমাণ খাদ্য মওজুদ থাকলে। অথবা বর্ণনাকারীর সন্দেহ, তিনি শুধু একদিনের কথা বলেছেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৪৮, সুনান আবূ দাঊদ ১৬২৯,
ইবনু খুযায়মাহ্ ২৩৯১, সহীহ আত্ তারগীব ৮০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
’আত্বা ইবনু ইয়াসার বানী আসাদ গোত্রের এক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের যে ব্যক্তি এক উক্বিয়্যাহ্ পরিমাণ
(অর্থাৎ চল্লিশ দিরহাম) অথবা এর সমমূল্যের (সোনা ইত্যাদি) মালিক হবার পরও মানুষের কাছে
হাত পাতে, সে যেন বিনা প্রয়োজনে (মানুষের কাছে) হাত পাতলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৪৯, সুনান আত্ তিরমিযী ৬৫৩, শারহুস্
সুন্নাহ্ ১৬২৩, সহীহ আত্ তারগীব ৮০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহর কাছে চাইলে দুইটির যেকোনো একটি দেন
ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কঠিন অভাবে জর্জরিত,
সে মানুষের সামনে প্রয়োজন পূরণের ইচ্ছা প্রকাশ করলে এ অভাব দূর হবে না। আর যে ব্যক্তি
তার অভাবের কথা শুধু আল্লাহর কাছে বলে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। হয় তাকে তাড়াতাড়ি
মৃত্যু দিয়ে অভাব থেকে মুক্তি দিবেন অথবা তাকে কিছু দিনের মধ্যে ধনী বানিয়ে দেবেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৫২, সুনান আবূ দাঊদ ১৬৪৫,
সুনান আত্ তিরমিযী ২৩২৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৪৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮৬৯,
শারহুস্ সুন্নাহ্ ৪১০৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৭৮৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬০৪১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ভিক্ষার হাত না বাড়ালে তার জন্য জান্নাত
সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বলেছেন, যে আমার সাথে এ ওয়া’দা করবে যে, সে কারো
কাছে ভিক্ষার হাত বাড়াবে না। আমি তার জন্য জান্নাতের ওয়া’দা করতে পারি। সাওবান বলেন,
আমি। ফলে তিনি কারো কাছে কোন কিছু চাইতেন না (বস্তুতঃ সাওবান যত অভাবেই থাকুক, কারো
কাছে আর কোনদিন হাত পাতেননি।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৮৫৭, সুনান আবূ দাঊদ ১৬৪৩, সুনান আননাসায়ী ২৫৯০, সহীহ আত্ তারগীব ৮১৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sah।
কারো কাছে কোনো কিছুর জন্য হাত না পাতার ওয়াদা করা
(ক) আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদিন) ডেকে এনে আমার ওপর শর্তারোপ করে বললেন, তুমি
কারো কাছে কোন কিছুর জন্য হাত পাতবে না। আমি বললাম, আচ্ছা। তারপর তিনি বললেন, এমনকি
তোমার হাতের লাঠিটাও যদি পড়ে যায় কাউকে উঠিয়ে দিতে বলবে না। বরং তুমি নিজে নেমে তা
উঠিয়ে নেবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৫৮, আহমাদ ২১৫০৯,
সহীহ আত্ তারগীব ৮১০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৭৩০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা সাতজন অথবা আটজন অথবা নয়জন রসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নিকট ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা কি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নিকট বাই’আত গ্রহণ করবে না? অথচ আমরা কয়েকদিন আগেই বাই’আত নিয়েছি, তাই আমরা বললাম,
আমরা তো আপনার কাছে বাই’আত হয়েছি। এমনকি তিনি এ কথাটি তিনবার বললেন। অতঃপর আমরা আমাদের
হাত প্রসারিত করে বাই’আত গ্রহণ করলাম। একজন বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা তো বাই’আত
করেছি, তাহলে এখন আবার কিসের উপর বাই’আত হবো? তিনি বললেনঃ তোমরা এক আল্লাহর ’ইবাদাত
করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে এবং আমীরের কথা শুনবে
ও তার আনুগত্য করবে। তিনি সংক্ষেপে নিচু স্বরে বললেনঃ মানুষের কাছে কিছু সওয়াল করবে
না। বর্ণনাকারী বলেন, এদের কেউই (সফরে) একটি ছড়ি নীচে পড়ে গেলেও অন্যকে তা তুলে দিতে
অনুরোধ করেননি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৬৪২, সুনান
ইবনু মাজাহ ৫৯৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহর উপর ভরসা করার ফজিলত
উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, [রাসূল (সাঃ) বলেছেন] যদি তোমরা আল্লাহর
প্রতি যথার্থ ভরসা কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে অনুরূপ রিযক দান করবেন, যেরূপ পাখিকে রিযক
দিয়ে থাকেন। তারা ভোরে খালি পেটে বের হয় এবং দিনের শেষে ভরা পেটে (বাসায়) ফিরে আসে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫২৯৯, সুনান আততিরমিযী ২৩৪৪,
সুনান ইবনু মাজাহ ৪১৬৪, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ ১০, মুসনাদে আহমাদ ২০৫, আবূ ইয়া'লা
২৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ভিক্ষার হাত সবার নীচে
মালিক ইবনু নাদলাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (দানের) হাত তিন প্রকার। (১) আল্লাহর হাত সবার
উপরে (২) অতঃপর দানকারীর হাত (৩) এবং ভিক্ষার হাত সবার নীচে। কাজেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত
সম্পদ দান করো এবং প্রবৃত্তির কাছে অক্ষম হয়ো না। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৬৪৯, ইবনু খুযাইমাহ
২৪৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রত্যেক নেক কাজই সদাক্বাহ্
(ক) জাবির (রাঃ) ও হুযায়ফাহ্ (রাঃ) একত্রে বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক নেক কাজই সদাক্বাহ্ (সাদাকা)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৯৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৬০২১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০০৫, সুনান
আবূ দাঊদ ৪৯৪৭, সুনান আত্ তিরমিযী ১৯৭০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৫৪২৬, আহমাদ ২৩৩৭০, ইবনু
হিব্বান ৩৩৭৮, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৫৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২১৯৭, ইসলামীক সেন্টার
২১৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (আল্লাহর নি’আমাতের শুকরিয়া
হিসেবে) প্রত্যেক মুসলিমেরই সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেয়া উচিত। সাহাবীগণ আরয করলেন, যদি
কারো কাছে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করার মতো কিছু না থাকে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেনঃ উচিত হবে কাজ করে নিজ হাতে উপার্জন করা। তাহলে নিজেও উপকৃত হতে পারবে, আবার
দান সদাক্বাও করতে পারবে। সাহাবীগণ বললেন, যদি সে ব্যক্তি সামর্থ্যবান না হয়; অথবা
বলেছেন, নিজ হাতে কাজকর্ম করতে না পারে? তিনি বললেন, সে যেন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পরমুখাপেক্ষী
লোকে সাহায্য করে। সাহাবীগণ আরয করলেন, যদি এটিও সে না করতে পারে? তিনি বললেন, তাহলে
সে যেন ভাল কাজের নির্দেশ দেয়। সাহাবীগণ পুনঃ জানতে চাইলেন, যদি এটিও সে না পারে? রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে সে মন্দ কাজ হতে ফিরে থাকবে। এটাই তার
জন্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৮৯৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২২৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০০৮, সুনান নাসায়ী ২৫৩৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৬৬৪৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
২৮২১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ২৬২০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪০৩৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২০২, ইসলামীক সেন্টার ২২০৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের উচিত শরীরের প্রতি জোড়ার
জন্য প্রতিদিন সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেয়া। দু’ ব্যক্তির মধ্যে ন্যায়বিচার করাও সদাক্বাহ্
(সাদাকা), কোন ব্যক্তিকে অথবা তার আসবাবপত্র নিজের বাহনে উঠিয়ে নেয়াও সদাক্বাহ্ (সাদাকা),
কারো সাথে ভাল কথা বলা, সালাতের দিকে যাবার প্রতিটি কদম, এসবই এমনকি চলাচলের পথ থেকে
কষ্টদায়ক কিছু সরিয়ে দেয়াও সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৯৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৮৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২২২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০০৯, আহমাদ ৮১৮৩, ইবনু হিব্বান ৩৩৮১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্
১০২৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩০৯, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৫২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২০৪,
ইসলামীক সেন্টার ২২০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঘ) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তানের প্রত্যেককে তিনশ’ ষাটটি জোড়া
দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ অবস্থায় যে ব্যক্তি ’আল্ল-হু আকবার’, ‘আলহামদুলিল্লা-হ’,
’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’, ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ বলবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে,
মানুষের পথ হতে পাথর, কাঁটা কিংবা হাড্ডি সরিয়ে দেবে অথবা ভাল কাজের হুকুম করবে, খারাপ
কাজে বাধা দেবে, আর এসব কাজ তিনশ’ ষাটটি জোড়ার সংখ্যা অনুসারে করবে, সে ব্যক্তি নিজকে
সেদিন থেকে জাহান্নাম হতে বাঁচিয়ে চলতে থাকল। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০০৭,
সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ১০৬০৫, ইবনু হিব্বান ৩৩৮০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮২২,
সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৭১৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৫৬০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২৩৯১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ২১৯৯, ইসলামীক সেন্টার ২২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক ’তাসবীহ’ অর্থাৎ সুবহা-নাল্লহ বলা
সদাক্বাহ্ (সাদাকা), প্রত্যেক ’তাকবীর’ অর্থাৎ আল্ল-হু আকবার বলা সদাক্বাহ্ (সাদাকা),
প্রত্যেক ’তাহমীদ’ বা আলহাম্দুলিল্লাহ বলা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। প্রত্যেক ’তাহলীল’
বা ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লহ’ বলা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। নেককাজের নির্দেশ দেয়া, খারাপ কাজ
থেকে ফিরিয়ে রাখা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। নিজের স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে সহবাস করাও সদাক্বাহ্
(সাদাকা)। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ যদি নিজের কামভাব চরিতার্থ
করে তাতেও কি সে সাওয়াব পাবে? উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
আমাকে বলো, কোন ব্যক্তি যদি হারাম উপায়ে কামভাব চরিতার্থ করে তাহলে সেকি গুনাহগার হবে
না? ঠিক এভাবেই হালাল উপায়ে (স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে) কামভাব চরিতার্থকারী সাওয়াব পাবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ২২১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০০৬, আহমাদ ২১৪৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৭৮২৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৪৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৫৫৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২৫৮৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রচুর দুধ দানকারী উট, প্রচুর
দুধ দানকারী বকরী কাউকে দুধ পান করার জন্য ধার দেয়াও উত্তম সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। যা
সকাল এবং বিকালে পাত্র ভরে দুধ দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৮৯৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২২৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৬২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬৭৭৪,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২২৬, ইসলামীক সেন্টার ২২২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম যে গাছ লাগায় অথবা ফসল ফলায় অতঃপর
কোন মানুষ অথবা পশু, পাখী (মালিক-এর বিনানুমতিতে) এর থেকে কিছু খেয়ে ফেলে, তাহলে (এ
ক্ষতি) মালিক-এর জন্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা) গণ্য হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯০০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩২০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩৮৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৫২, সুনান আত্ তিরমিযী ১৩৮২, আহমাদ ১২৪৯৫, দারিমী ২৬৫২,
সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৭, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৯৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৭৬৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(জ) আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ (একবার) একটি পতিতা মহিলাকে মাফ করে দেয়া হলো। (কারণ) মহিলাটি একবার একটি কুকুরের
কাছ দিয়ে যাবার সময় দেখল সে পিপাসায় কাতর হয়ে একটি কূপের পাশে দাঁড়িয়ে জিহবা বের করে
হাঁপাচ্ছে। পিপাসায় সে মরার উপক্রম। মহিলাটি (এ করুণ অবস্থা দেখে) নিজের মোজা খুলে
ওড়নার সাথে বেঁধে (কূপ হতে) পানি উঠিয়ে কুকুরটিকে পান করাল। এ কাজের জন্য তাকে মাফ
করে দেয়া হলো। (এ কথা শুনে) সাহাবীগণ আরয করলেন, পশু-পাখির সাথে ভাল ব্যবহার করার মধ্যেও
কি আমাদের জন্য সাওয়াব আছে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ।
প্রত্যেকটা প্রাণীর সাথে ভাল ব্যবহার করার মধ্যেও সাওয়াব আছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯০২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৩২১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৭৫৩-৫৭৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৪৫, আহমাদ ১০৬২১,
শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৬৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪১৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (একদিন) এক ব্যক্তি পথচলা অবস্থায়
সামনে দেখে একটি গাছের ডাল পথের উপর পড়ে আছে। সে ভাবল, আমি মুসলিমদের চলার পথ থেকে
ডালটিকে সরিয়ে দেব, যাতে তাদের কষ্ট না হয়। এ কারণে এ লোকটিকে জান্নাতে প্রবেশ করানো
হলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯০৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৫৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১৪, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৮৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৪৩১, ইসলামিক সেন্টার ৬৪৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঞ) আবূ যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার ভাইয়ের সামনে হাসি মুখে আগমন
করা সদাক্বাহ্ (সাদাকা), নেক কাজ নির্দেশ, খারাপ কথাবার্তা হতে বিরত থাকা তোমার জন্য
সদাক্বাহ্ (সাদাকা), পথহারা প্রান্তরে কোন মানুষকে পথ বলে দেয়া, কোন অন্ধ বা দুর্বল
দৃষ্টিশক্তির মানুষকে সাহায্য করা সদাক্বাহ্ (সাদাকা), পথের কাঁটা বা হাড় সরিয়ে দেয়া,
নিজের বালতি থেকে অন্য কোন ভাইয়ের বালতিতে পানি দিয়ে ভরে দেয়া তোমার জন্য সদাক্বাহ্
(সাদাকা)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯১১, সুনান আত্
তিরমিযী ১৯৫৬, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৭২, সহীহ আত্ তারগীব ২৬৮৫, সহীহ আল জামি‘ ২৯০৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ট) সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, হে আল্লাহর রসূল! উম্মু সা’দ (অর্থাৎ আমার মা) মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁর মাগফিরাতের
জন্য কোন্ ধরনের দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা) উত্তম? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ “পানি’’, (এ কথা শুনে) সা’দ কূপ খনন করলেন এবং বললেন, এ কূপ উম্মু সা’দ (রাঃ)-এর
জন্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৯১২, সুনান আবূ দাঊদ ১৬৮১, সুনান আননাসায়ী ৩৬৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ৯৬২)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
(ঠ) জাবির
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে
ব্যক্তি কোন অনাবাদী জমি আবাদ করে (অর্থাৎ ফসল উৎপাদনের উপযোগী করে) তার এ কাজে তার
জন্য সাওয়াব আছে। যদি এ জমি ক্ষুধার্ত কিছু খায় তাহলে এটাও তার জন্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯১৬, আহমাদ ১৫০৮১, শারহুস্
সুন্নাহ্ ১৬৫১, দারিমী ২৬০৭; সহীহ আল জামি‘ ৫৯৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(ড) বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কাউকে একটি দুগ্ধবতী
ছাগী দুধ পানের জন্য দিবে অথবা রূপা (অর্থাৎ টাকা-পয়সা) ধার হিসেবে দেবে অথবা পথহারা
কোন ব্যক্তিকে পথ দেখিয়ে দেবে, সে একটি গোলাম স্বাধীন করার মতো সাওয়াব পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯১৭, সুনান আত্ তিরমিযী ১৯৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ৮৯৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঢ) আবূ জুরাই জাবির ইবনু সুলায়ম (রহঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি একবার মদীনায় এলাম, দেখলাম লোকেরা এক ব্যক্তির মতামত ও জ্ঞানবুদ্ধির
উপর নির্ভরশীল। সে ব্যক্তি যা বলছে, মানুষ সে অনুযায়ী কাজ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। বর্ণনাকারী
বলেন, আমি (তাঁর খিদমাতে হাযির হয়ে) দু’বার বললাম, ’আলায়কাস্ সালা-ম’। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ’আলায়কাস্ সালা-ম’ বলো না। কারণ ’আলায়কাস্ সালা-ম’ হলো মৃত
ব্যক্তির জন্য দু’আ। বরং বলো, ’আস্সালা-মু ’আলায়কা’। এরপর আমি বললাম, আপনি কি আল্লাহর
রসূল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি আল্লাহর রসূল। ওই আল্লাহর, যিনি কোন বিপদ-আপদে তুমি তাঁকে
ডাকলে তিনি তা দূর করে দেন। তুমি যদি দুর্ভিক্ষে পতিত হয়ে তাঁকে ডাকো, তাহলে তিনি জমিনে
তোমার জন্য সবুজ ফসল ফলিয়ে দেবেন। তৃণ ও প্রাণহীন কোন মরুপ্রান্তরে অথবা ময়দানে যখন
থাকো এবং সেখানে তোমার বাহন হারিয়ে গেলে তুমি তাঁকে ডাকো, তিনি তা তোমাকে ফিরিয়ে দেবেন।
জাবির (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আমাকে কিছু নাসীহাত
করুন। তিনি বললেন, কাউকে গালমন্দ করো না। আবূ জুরাই বলেন, এরপর আমি আর কাউকে গালমন্দ
করিনি-মুক্ত ব্যক্তিকে, গোলামকে, উট এবং বকরী কাউকেই নয়। (এরপর) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন নেক কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। যখন তোমার কোন ভাইয়ের সাথে
কথাবার্তা বলবে তখন হাসিমুখে বলবে, এটাও নেক কাজের অংশ। তুমি তোমার পাজামা-লুঙ্গী হাঁটুর
নীচ পর্যন্ত উঠিয়ে পড়বে। এতটুকু উঁচুতে ওঠাতে না চাইলে টাখনুদ্বয়ের উপরে রেখে পড়বে।
কাপড় টাখনুর নীচে ছেড়ে দেয়া সম্পর্কে সাবধান, কারণ টাখনুর নীচে কাপড় পড়া অহংকারের লক্ষণ।
আল্লাহ তা’আলা অহংকার পছন্দ করেন না। কেউ তোমাকে গালি দিলে এবং তোমার এমন কোন দোষের
জন্য লজ্জা দিলে যা তোমার মধ্যে আছে বলে সে জানে, তাহলে তুমি (প্রতিশোধ নিতে) তার কোন
দোষের জন্য তাকে লজ্জা দেবে না, যা তুমি জানো। কারণ তার গুনাহের ভাগী সে হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত
১৯১৮, সুনান আবূ দাঊদ ৪০৮৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১০৯৩, সিলসিলাহ্ আস্
সহীহাহ্ ১১০৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৬৮৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৭৩০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ণ) আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে মুসলিম বান্দা তার ধন-সম্পদ থেকে দু’
দু’টি (জোড়া) আল্লাহর পথে খরচ করে, জান্নাতের সকল প্রহরী তাকে অভ্যর্থনা জানাবে। তাকে
তাদের কাছে রক্ষিত জিনিসের দিকে ডাকবে। আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ’দু’ দু’টি
অর্থ কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদি তাঁর কাছে উট থাকে তাহলে
দু’ দু’টি করে উট আর যদি গরু থাকে, তাহলে দু’ দু’টি করে গরু (দান করবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯২৪, সুনান আননাসায়ী ৩১৮৫, আহমাদ
২১৩৪১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৬৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৭৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
(ত) আবূ মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম যখন সাওয়াবের প্রত্যাশায়
তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করে, এ খরচ তার জন্য সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হিসেবে গণ্য হয়।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৩০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৫৩৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২২১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০০২, সুনান আননাসায়ী ২৫৪৫, আহমাদ ১৭০৮২, ইবনু হিব্বান
৪২৩৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৭৫৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬৭৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৯৫৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(থ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক রকম দীনার তাই যা তোমরা আল্লাহর
পথে খরচ করো। এক রকম দীনার সেটাই যা তুমি গোলাম আযাদ করার জন্য খরচ করো। এসব দীনারের
মধ্যে সাওয়াবের দিক দিয়ে সবচেয়ে মর্যাদাবান হলো যা তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য
খরচ করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৩১, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ২২০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৯৫, আহমাদ ১০১৭৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
১৫৬৯৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৯৫১, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৮৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahi।
(দ) সাওবান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উত্তম হলো ওই দীনার যা কোন ব্যক্তি পরিবার-পরিজন
লালন-পালনের জন্য খরচ করে। উত্তম দীনার হলো তাই যা কোন মানুষ এমন সব পশু পালনে খরচ
করে যেগুলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার জন্য লালিত-পালিত হয়েছে। উত্তম দীনার হলো ওই
দীনার যা কোন মানুষ আল্লাহর পথে জিহাদকারী বন্ধুদের জন্য খরচ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২২০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৯৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯১৩৮, সহীহ আত্ তারগীব
১৯৫২, ইবনু মাজাহ্ ২৭৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ধ) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
(একদিন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আবূ সালামার ছেলেদের জন্য খরচ করাতে আমার
কোন সাওয়াব হবে কি? কারণ তারা তো আমারই ছেলে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ তাদের জন্য খরচ করো। তাদের জন্য তুমি যা খরচ করবে তার সাওয়াব পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৩৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৪৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২১০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০০১, আহমাদ ২৬৫০০৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
২১৮৯, ইসলামীক সেন্টার ২১৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ন) আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব
(রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে
রমণীগণ! তোমরা দান খয়রাত করো। তা তোমাদের অলংকারাদি হতে। যায়নাব বলেন, (এ কথা শুনে)
আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ-এর কাছে এলাম। তাঁকে বললাম, আপনি রিক্তহস্ত মানুষ। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতে বলেছেন। তাই
আপনি তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে জেনে আসুন (আমি যদি আপনাকে ও আপনার সন্তানদের জন্য
সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হিসেবে খরচ করি তাহলে তা আদায় হবে কিনা?) যদি হয়, তাহলে আমি আপনাকেই
সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিয়ে দেব। আর না হলে আপনি ছাড়া অন্য কাউকে দেব। যায়নাব বলেন, ’আবদুল্লাহ
ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) (এ কথা শুনে) আমাকে বললেন, ’’তুমিই যাও’’। তাই আমি নিজেই তাঁর কাছে
গেলাম। আমি গিয়ে দেখলাম, তাঁর ঘরের দরজায় আনসারের এক মহিলাও দাঁড়িয়ে আছে। আমার ও তার
প্রয়োজন একই।
যায়নাব বলেন, যেহেতু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যক্তিত্বের কারণে (তাঁর নিকট যাবার সাহস আমাদের হলো না), তাই
বিলাল (রাঃ)আমাদের কাছে এলে আমরা তাঁকে বললাম, আপনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে খবর দিন যে, দু’জন মহিলা দরজায় আপনার কাছ থেকে জানতে চায়,
তারা যদি তাদের (গরীব) স্বামী, অথবা তাদের পোষ্য ইয়াতীম সন্তানদেরকে দান-খয়রাত করে
তাতে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) আদায় হবে কিনা? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
আমাদের পরিচয় দেবেন না। সে মতে বিলাল (রাঃ)রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কাছে গেলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন।
(এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা কারা? বিলাল (রাঃ)বললেন, একজন আনসার মহিলা, অপরজন যায়নাব। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ যায়নাব? বিলাল বললেন, ’আবদুল্লাহ
ইবনু মাস’ঊদের স্ত্রী। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাদের জন্য
দ্বিগুণ সাওয়াব। এক গুণ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার হক আদায়ের জন্য, আর এক গুণ দান-খয়রাতের জন্য।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৩৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ১৪৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০০০, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩১৫২, সহীহ আত্ তারগীব ৮৯১, ইবনু খুযায়মাহ্ ২৪৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
২১৮৭, ইসলামীক সেন্টার ২১৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(প) উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ বিনতু হারিস (রাঃ)হতে
বর্ণিত। তিনি (একবার) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি দাসী আযাদ
করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন,
তুমি যদি এ দাসীটি তোমার মামাকে দিয়ে দিতে, তাহলে বেশী সাওয়াব হত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৩৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৫৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৯৯, ইবনু হিব্বান ৩৩৪৩,
শু‘আবুল ঈমান ৩১৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২১৮৬, ইসলামীক সেন্টার ২১৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
(ফ) সালমান ইবনু ’আমির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মিসকীনকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা)
করা এক প্রকার, আর নিকটাত্মীয়ের কাউকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেয়া দু’ প্রকার সাওয়াবের
কারণ। এক রকম সাওয়াব নিকটাত্মীয়ের হক আদায় এবং অন্য রকম সাওয়াব সদাক্বাহ্ (সাদাকা)
করার জন্য। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৩৯, সুনান আত্
তিরমিযী ৬৫৮, সুনান আননাসায়ী ২৫৮২, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৮৪৪, আহমাদ ১৬২৩, দারিমী ১৭২২,
ইবনু খুযায়মাহ্ ২৩৮৫, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৪৭৬, ইরওয়া ৮৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ৮৯২, সহীহ
আল জামে আস্ সগীর ৩৮৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ব) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
(একদিন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে এক ব্যক্তি এসে বললো, (হে আল্লাহর
রসূল!) আমার কাছে একটি দীনার আছে। (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেনঃ এ দীনারটি তুমি তোমার সন্তানের জন্য খরচ করো। সে বলল, আমার আরো একটি দীনার আছে।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এটি তুমি তোমার পরিবারের জন্য খরচ করো।
লোকটি বলল, আমার আরো একটি দীনার আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
এটা তোমার খাদিমের জন্য খরচ করো। সে বলল, আমার আরো একটি দীনার আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ (এবার) তুমি এ ব্যাপারে বেশী জান (কাকে দেবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৪০, সুনান আবূ দাঊদ ১৬৯১, সুনান
আননাসায়ী ২৫৩৫, আহমাদ ৭৪১৯, ইবনু হিব্বান ৩৩৩৭, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৫১৪, সহীহ আদাবুল
মুফরাদ ১৯৭/১৪৫, ইরওয়া ৮৯৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৯৬৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan।
(ভ) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন স্ত্রী তার ঘরের কোন খাবার সদাক্বাহ্
(সাদাকা) বা খরচ করে এবং তা যদি বাহুল্য না হয় এ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করার জন্য সে সাওয়াব
পাবে। আর তা কামাই করে আনার জন্য তার স্বামীও সাওয়াব পাবে। রক্ষণাবেক্ষণকারীরও ঠিক
সম পরিমাণ সাওয়াব পাবে, কারো সাওয়াব কারো সাওয়াবকে কিছুমাত্র কম করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৪৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৪২৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২৪, সিলসিলাহ্ আস্
সহীহাহ্ ৭৩০, সহীহ আল জামে আস্ সগীর ৪০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২৩৩, ইসলামীক সেন্টার
২২৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(ম) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
স্ত্রী তার স্বামীর অর্জিত ধন-সম্পদ হতে তার অনুমতি ছাড়া দান-খয়রাত করলে এর সাওয়াব
(স্ত্রী) অর্ধেক পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৪৮,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৬০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০২৬, সুনান আবূ দাঊদ ১৬৮৭, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক্ব ৭২৭২, সিলসিলাহ্ আস্
সহীহাহ্ ৭৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২৩৯, ইসলামীক সেন্টার ২২৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahi।
(য) আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মুসলিম খাদিম বা পাহারাদার,
মালিক-এর নির্দেশ অনুসারে কোন পূর্ণ হৃষ্টচিত্তে আমানাতদারীর সাথে ওই ব্যক্তিকে সদাক্বাহ্
(সাদাকা) দেয়, যাকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেবার জন্য মালিক বলে দিয়েছে, সে সদাক্বাকারীদের
একজন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৪৯, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১০২৩, আহমাদ ৩৩৫৯, সহীহ আত্ তারগীব ৭৭৫, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৩৩৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
২২৩২, ইসলামীক সেন্টার ২২৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দান-সাদকাকারীকে দোয়া করতে হয়
ইয়াহইয়া
ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ, আমর আন নাকিদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও উবায়দুল্লাহ
ইবনু মুআয (রহঃ).....আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কোন গোত্ৰ সাদাকা্ নিয়ে আসলে তিনি তাদের জন্য
দুআ করতেন, হে আল্লাহ! আপনি তাদের উপর সদয় হোন। একবার আমার পিতা আবূ আওফা তার সাদাকা্
নিয়ে তার কাছে আসলে তিনি দুআ করলেন, “হে আল্লাহ! আবূ আওফার পরিবার-পরিজনের উপর রহমত
বর্ষণ করুন।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩৮২,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৭৮, আল-লুলু ওয়াল মারজান ৬৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৩৬০, ইসলামীক
সেন্টার ২৩৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পরিশেষে বলবো, ছাদাক্বা ধনী-গরীবের সামাজিক ভারসাম্য
রক্ষার মাধ্যম। এতে সমাজে সম্পদের প্রবাহ সচল থাকে এবং ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে উপকৃত
হয়। সবচেয়ে বড় কথা হ’ল, পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে ছাদাক্বার সঞ্চয় চূড়ান্ত মুক্তির জন্য
বড় ভূমিকা পালন করবে। সেকারণে সকলের ছাদাক্বার হাত দীর্ঘ হওয়া উচিত। দান-ছাদাক্বা যেমন
গরিব মিসকিনকে দেয়া যায় তেমনি ইসলাম প্রতিষ্ঠা বা ইসলাম প্রচারিক কাজেও দান করা যয়।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমানদার ব্যাক্তির মৃত্যুর পর
তার যেসব কাজ ও তার যেসব পুণ্য তার সাথে যুক্ত হয় তা হলঃ যে জ্ঞান সে অন্যকে শিক্ষা
দিয়েছে এবং তার প্রচার করেছে, তার রেখে যাওয়া সৎকর্মপরায়ণ সন্তান, কুরআন যা সে ওয়ারিসী
সূত্রে রেখে গেছে অথবা মাসজিদ যা সে নির্মাণ করিয়েছে অথবা পথিক-মূসা ফিরদের জন্য যে
সরাইখানা নির্মাণ করেছে অথবা পানির নহর যা সে খনন করেছে অথবা তার জীবদ্দশায় ও সুস্থাবস্থায়
তার মাল থেকে যে দান-খয়রাত করেছে তা তার মৃত্যুর পরও তার সাথে (তার আমলনামায়) যুক্ত
হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৪২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪১১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৩১, সুনান আততিরমিযী
১৩৭৬, সুনান আননাসায়ী ৩৬৫১, সুনান আবূ দাঊদ ২৮৮০, আহমাদ ৮৬২৭, দারিমী ৫৫৯, হাদিস সম্ভার
৯৬৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন লোককে সৎ কাজের
দিকে আহবান করবে, তার জন্যও সে পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে যা তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে,
অথচ তাদের সাওয়াবের কোন অংশ একটুও কমবে না। অনুরূপ যে ব্যক্তি কাউকে গোমরাহীর দিকে
আহবান করে তারও সে পরিমাণ গুনাহ হবে, যতটুকু গুনাহ তার অনুসারীদের জন্য হবে। অথচ এটা
অনুসারীদের গুনাহকে একটুও কমাবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৬৫৬০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইসলাম প্রচারের মাধ্যমে কোনো লোককে সৎপথের দিকে আহবান করলে যেমন সওয়াব
পাওয়া যায় তেমনি এই কাজে যারা সহযোগী হবেন তারাও সওয়াব পাওয়ার অধিকারী হবেন। আর এই
কাজ যেহেতু কিয়ামত পর্যন্ত চলবে তাই মৃত্যুর পরও সে পরিমান সওয়াব তার আমলনামায় যোগ
হতে থাকবে। আসুন আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী দান ছাদাকা করি ও অশেষ সওয়াব হাসিল করি। আল্লাহ
আমাদের সহায় হোন- আমীন!
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল
আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি,
এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
...........................................................................................
কুরআন
ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক
করুন।
দান/সাদাকা/যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করুন Pure Muslim Making Research Center
(PMMRC) একটি অনলাইন ভিত্তিক দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সাল থেকে কুরআন ও সহিহ
হাদিস ভিত্তিক ইসলামের বিভিন্ন বিষয় এখানে প্রচারিত হয়ে আসছে। এই অনলাইন ভিত্তিক দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে
দান/সাদাকা/যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করুন। এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে
পরিচালিত এবং কোনো দল/ সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত নয়, আপনাদের সহযোগিতা দ্বীনের এই কাজকে
আরও ত্বরান্বিত করবে ইং-শা-আল্লাহ। |
যেভাবে সহযোগিতা করবেন নগদ ও বিকাশঃ 01716508708 রকেটঃ 017165087082 আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন লোককে সৎ কাজের
দিকে আহবান করবে, তার জন্যও সে পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে যা তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে,
অথচ তাদের সাওয়াবের কোন অংশ একটুও কমবে না। অনুরূপ যে ব্যক্তি কাউকে গোমরাহীর দিকে
আহবান করে তারও সে পরিমাণ গুনাহ হবে, যতটুকু গুনাহ তার অনুসারীদের জন্য হবে। অথচ
এটা অনুসারীদের গুনাহকে একটুও কমাবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৬৫৬০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। অতএব দান/সাদাকা/যাকাত প্রদানের
মাধ্যমে আমাদের সাথে সংযুক্ত থেকে লোকজনকে সৎপথে আহবান করে অশেষ সওয়াব অর্জন করতে
থাকুন। |
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা
একটি শস্য-বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মে, প্রতিটি শীষে থাকে একশত শস্য-দানা।
আর আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ মহাদানশীল, মহাজ্ঞানী”।
(সূরা বাক্বারাহ-২৬১)। তিনি আরো বলেন, “হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং
আমি জমি হতে তোমাদের জন্য যা উৎপাদন করে থাকি, তা থেকে যা উৎকৃষ্ট তা দান কর। এমন
মন্দ জিনিস দান করার সংকল্প করো না, যা তোমরা মুদিত চক্ষু ব্যতীত গ্রহণ কর না”। (সূরা বাক্বারাহ-২৬৭)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “অতঃপর যে ব্যক্তি দান করেছে এবং আল্লাহকে
ভয় করেছে আর ভাল কথাকে সত্য বলে বুঝেছে, তবে আমি তাকে শান্তির উপকরণ প্রদান করব।
আর যে ব্যক্তি কার্পণ্য করেছে এবং বেপরোয়া হয়েছে আর ভাল কথাকে অবিশ্বাস করেছে, ফলতঃ
আমি তাকে ক্লেশদায়ক বস্তুর জন্য আসবাব প্রদান করব”। (সুরা
আল-লাইলঃ ৫-৯)। রাসুল সাঃ বলেন, (ক) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমানদার
ব্যাক্তির মৃত্যুর পর তার যেসব কাজ ও তার যেসব পুণ্য তার সাথে যুক্ত হয় তা হলঃ যে
জ্ঞান সে অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং তার প্রচার করেছে, তার রেখে যাওয়া সৎকর্মপরায়ণ
সন্তান, কুরআন যা সে ওয়ারিসী সূত্রে রেখে গেছে অথবা মাসজিদ যা সে নির্মাণ করিয়েছে
অথবা পথিক-মূসা ফিরদের জন্য যে সরাইখানা নির্মাণ করেছে অথবা পানির নহর যা সে খনন
করেছে অথবা তার জীবদ্দশায় ও সুস্থাবস্থায় তার মাল থেকে যে দান-খয়রাত করেছে তা তার
মৃত্যুর পরও তার সাথে (তার আমলনামায়) যুক্ত হবে। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২৪২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪১১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৩১, সুনান আততিরমিযী ১৩৭৬, সুনান আননাসায়ী ৩৬৫১,
সুনান আবূ দাঊদ ২৮৮০, আহমাদ ৮৬২৭, দারিমী ৫৫৯, হাদিস সম্ভার ৯৬৪)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)। (খ) আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিদিন
সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের
উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৪২, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ২২২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১৩৫৫, হাদীস সম্ভার ৯২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। (গ)
আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়! (যদি এক টুকরা খেজুরও না পাও, তবে উত্তম কথা বলে।)
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪১৭, ১৪১৩, হাদীস সম্ভার ৯২৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩২৫, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ১৩৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। (ঘ) সাঈদ
ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি আবু হুরাইরা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক বৈধ উপার্জন হতে দান খায়রাত করে,
আর আল্লাহ তাআ’লা হালাল ও পবিত্র মাল ছাড়া গ্রহণ করেন না, সেই দান দয়াময় রাহমান
স্বয়ং ডান হাতে গ্রহণ করেন, তা যদি সামান্য একটি খেজুর হয় তাহলেও। এটা দয়াময়
রাহমানের হাতে বাড়তে বাড়তে পাহাড় হতেও বড় হয়ে যায়; যেভাবে তোমাদের কেউ তার
দুধ ছাড়ানো গাভী বা ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন পালন করে থাকে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৬৬১, জিলালুল জুন্নাহ ৬২৩,
তা’লীকুর রাগীব, ইরওয়া ৮৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। (ঙ) আয়িশাহ্
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি
কোনো স্ত্রী স্বামীর ঘর থেকে নষ্টের উদ্দেশ্য না রেখে কিছু দান করে, তবে সে দানের
কারণে সওয়াব পাবে এবং তার স্বামীও অনুরূপ সওয়াব পাবে উপার্জন করার কারণে। রক্ষণাবেক্ষণকারীও
অনুরূপ সওয়াব পাবে। কিন্তু এতে কারোর সওয়াবে অন্যের কারণে ঘাটতি হবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৬৮৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৪৩৭, ১৪২৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)। (চ) ইবনু
আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, এক লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন।
তার পক্ষে আমি দান-খয়রাত করলে তার কি কোন কল্যাণে আসবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ। সে বলল, আমার একটি বাগান আছে। আপনাকে আমি সাক্ষী
রেখে তার পক্ষ থেকে তা দান করলাম। (সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৬৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। (ছ) আবূ
হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে দিন
আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা
তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক, ২. সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের
ইবাদতের মধ্যে, ৩. সে ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত
রয়েছে, ৪. সে দু’ ব্যক্তি যারা পরস্পরকে ভালবাসে
আল্লাহর ওয়াস্তে, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য, ৫. সে ব্যক্তি যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী
নারী আহবান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’, ৬. সে ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে,
তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না, ৭. সে ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর যিকর করে,
ফলে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০১, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ২২৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩১, সুনান আননাসায়ী ৫৩৮০, সুনান আততিরমিযী
২৩৯১, আহমাদ ৯৬৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪৮৬, ইরওয়া ৮৮৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬২০, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৬২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। |
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
.................................................................
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment