বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পির-মুরিদ ও বিদআতিরা যেসব কারণে জাহান্নামি
পর্ব-২
পির-অলিদের ভ্রান্ত আক্বিদাহসমূহঃ
হযরত বুরহান উদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী গ্রন্থ গোলজারে আলম,
লেখক ক্বারী মোহাম্মদ নূর উদ্দিন চিশতী ৭০ পৃষ্ঠা হতে ৭৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত জানা যায়, বাংলাদেশে ৩৬০ জন আউলিয়া ইসলাম
প্রচারের জন্যে এসেছিল। উক্ত পৃষ্ঠায় ৩৬০ জন আউলিয়ার তালিকা দেয়া আছে। এ জন্যে বাংলাদেশকে
৩৬০ আউলিয়ার দেশ বলা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামে ১২ জন আউলিয়া এসেছিল বলে চট্টগ্রামকে বারো
আউলিয়ার দেশও বলা হয়।
উল্লেখিত আউলিয়াদের পরবর্তী যুগে এসে বাংলাদেশে এখন পির-অলির সংখ্যা ১২৫০০
জন।
আমি মাঝে মধ্যে ফেসবুকে ভন্ড পির-অলিদের বিরুদ্ধে
কিছু লিখলে অনেক মুরিদ হুমকি-ধমকি দিয়ে বলে আপনি ধ্বংস হবেন, আপনি জানেন না এদেশে অলিদের
দ্বারাই ইসলাম প্রচার হয়েছে, যার ফলে আপনি আজ মুসলমান। তারই ধারাবাহিকতা এখনও বিদ্যমান।
তখন আমি তাদেরকে বলি, সেই সময়ের পির-অলি আর এখনকার
পির-অলির মধ্যে এতো পার্থক্য কেনো? তারা তো দরবার খুলে ব্যবসা করে নাই। তাদের ইবাদতে
শিরক, কুফর আর বিদআত চালু ছিল না। তারা ছিলেন কুরআনে ঘোষিত শুধুই অলি-আল্লাহ, কোনো
ভন্ড পির ছিলেন না। বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সুফি সম্রাট দাবীদার দেওয়ানবাগী তার লিখিত,
“মুক্তি কোন পথে” বই এ লিখেছেন-
“পির হওয়ার জন্যে প্রথমে অলী- আল্লাহ্ হওয়া প্রয়োজন।”
অথচ পির শব্দটি ইসলামেই নেই। আর অলি তো একজন কৃষকও হতে পারে, যদি তার মধ্যে ঈমান ও
পরহেজগারিতা থাকে। (সূরা ইউনূসঃ ৬২-৬৪)।
এবং যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং রুকু করে।
(সূরা মায়িদাঃ ৫৫-৫৬)।
আল্লাহ বলেন, আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা
তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন
করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। (সুরা
আনআম-৬, আয়াত ১৫৩)।
অতএব বাংলাদেশের বর্তমান ১২৫০০ জন
লোক আসলেই পির না অলি-আল্লাহ তাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আর ভ্রান্ত আকিদাহ সম্পর্কে জানলেই
বোঝা যাবে, আসলে এরা কারা, এদের মূল উদ্দেশ্য কি? এখানে কতিপয় পিরের তথ্য তুলে ধরা
হয়েছে মাত্র। মনোযোগ সহকারে পড়ুন আর সেই পথের লোক হলে তওবা করে নিজের ইমান আমল সংশোধন
করুন।
প্রথমেই জানবো চরমোনাই পিরের দরবার শরীফ সম্পর্কেঃ
চরমোনাই পিরের দরবার শরীফঃ
সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ তাদের নিজেস্ব উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহিত-
মাওলানা সাইয়েদ মুহাম্মদ ইসহাক (১৯১৫ -১৯৭৭) ছিলেন
বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত পীর ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি পীর সাহেব চরমোনাই নামে
পরিচিত এবং বর্তমানে বহুল পরিচিত চরমোনাইয়ের চিশতিয়া সাবিরিয়া ইমদাদিয়া রশিদিয়া
তরিকার প্রবর্তক ও প্রথম পীর। এ তরিকার দ্বিতীয় পীর তার সন্তান মাওলানা ফজলুল করীমের
মৃত্যুর পর তিনি অনুসারীদের মাঝে 'দাদা হুজুর' নামে অভিহিত হোন।
জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতিঃ
সাইয়েদ মুহাম্মদ ইসহাক ১৯১৫ সালে ( হিজরী ১৩৩৩;
বঙ্গাব্দ ১৩১২) বরিশাল শহরের কীর্তনখোলা নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থিত পশুরীকাঠি গ্রামের
জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সাইয়েদ আমজাদ আলী।
শিক্ষা জীবনঃ
তিনি কুরআন-হাদীসের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তার
চাচাত মামা মাওলানা সাইয়েদ মুহাম্মদ আবদুল জাব্বারের কাছে, যার নামানুসারে চরমোনাইয়ের
অপর নাম আহসানাবাদ রাখা হয়েছে। এরপর তিনি উজানীর ক্বারী মুহাম্মদ ইবরাহীমের কাছে ক্বিরআত-সহ
কুরআন শরীফ শিক্ষা লাভ করেন। তার কাছে সাত ক্বিরআত সমাপ্ত করে তিনি ভোলা দারুল হাদীস
আলিয়া মাদরাসা থেকে জামাআতে উলা পাশ করেন। অতঃপর তিনি ভারতের বিখ্যাত ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র
দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন।
আধ্যাত্মিক দীক্ষা ও খিলাফত লাভঃ
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করে তিনি ক্বারী মুহাম্মদ
ইবরাহীমের কাছে আধ্যাত্মিক শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তার কাছ থেকে তরিকার খিলাফত লাভ করেন।
অনুসারীবৃন্দঃ
তার অসংখ্য অনুসারী রয়েছে; তাদের মধ্যে: মাওলানা
ফজলুল করীম, মুহাম্মদ আবুল বাশার (শাহতলীর পীর), মুহাম্মদ আজহারুল ইসলাম সিদ্দিকী
(মানিকগঞ্জের পীর) প্রমুখ প্রধান।
পারিবারিক জীবনঃ
ইসহাকের তিন স্ত্রী ছিলো; তারা হলেন: সাইয়েদা রাবেয়া
খাতুন (২ পুত্র, ৩ কন্যা; মাওলানা ফজলুল করীম তাদের মধ্যে অন্যতম), সাইয়েদা-(১ পুত্র,
৩ কন্যা)এবং আমেনা বেগম- (৩ পুত্র, ১ কন্যা)।
মৃত্যুঃ
১৯৭৭ সালে (১৩৮০ বঙ্গাব্দ; ১৩৯৬ হিজরী) ৬২ বছর বয়সে
তিনি মৃত্যু বরণ করেন এবং চরমোনাই এলাকাতে তাকে দাফন করা হয়।
বর্তমান পির-সৈয়দ রেজাউল করীম, তিনি সাবেক চরমোনাই পীর সৈয়দ ফজলুল করীম এর সন্তান।
তিনি হলেন বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় নেতা। তিনি পীর সাহেব চরমোনাই হিসেবেই
অধিক পরিচিত। তিনি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমির।
রচনাবলীঃ
সাইয়েদ ইসহাক বিভিন্ন বিষয়ে ২৭টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এগুলো হলোঃ
• আমপারার তাফসির
• ঊনত্রিশ পারার তাফসির
• সুরা ইয়াসিন শরিফের তাফসির
• সুরা আর-রহমান শরিফের তাফসির
• বেহেস্তের সুখ
• দোযখের দুঃখ
• আশেকে মাশুক
• ভেদে মারিফত
• মারিফতে হক বা তালিমে জিকর
• হজরত বড় কারী ইবরাহিম সাহেবের জীবনী
• খাস পর্দা বা স্বামীর খেদমত
• নামাজ শিক্ষা
• ধূম বিনাশ বা দিল পাক
• তাবিজের কিতাব
• জিহাদে ইসলাম
• পীর হইয়া আবার কাফির হয় কেন?
• হাদিয়াতুল ইসলামিয়া (ক্যালেন্ডার)
• ফরিদপুরে বিরাট বহস
• নোয়াখালীর বিরাট বহস
• নুজহাতুল কারীর সরল ব্যাখ্যা
• এশকে দেওয়ান বা প্রেমের গজল
• রাহে জান্নাত বা ১১৬ প্রকার দোয়া
• শর্ষিনার সওয়াল চরমোনাইয়ের জওয়াব
• কবরের আজাব - মস্তবড় আজাব দেখি না কেন?
• জুমার নামাজ* জিকরে জলি বা ওয়াজ হালের অকাট্য
দলিল এবং
• যুক্তিপূর্ণ ওয়াজ বা মাওলাপাকের অনুসন্ধান।
এখন জেনে নেই চরমোনাই পিরের দরবার শরীফের ইমান আমল বা আক্বিদাহসমূহঃ
আল্লাহর আন্দাজ নাই:
মুসলিম জাতির ঈমান-আক্বিদার একটি মূল ভিত্তি হলো
যে, আল্লাহ (সুব:) সকল কাজ সুপরিকল্পিত ও সুপরিমিতভাবে করেন। আল্লাহ (সুব:) পবিত্র
কুরআনে ইরশাদ করেন:
অর্থ: “নিশ্চয় আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত
পরিমাণ অনুযায়ী (কোন ধরণের অসঙ্গতী ছাড়া)।” (সুরা ক্বামার: ৪৯)।
এছাড়াও আল্লাহ (সুব:) পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:
অর্থ: “তিনি যা করেন সে ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা
যাবে না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।” (সুরা আম্বিয়া: ২৩)।
কিন্তু চরমোনাইয়ের পীর সাহেব ‘ভেদে মারেফাত নামক
বইতে মছনবীয়ে রূমীর বরাত দিয়ে শামসূ তাবরিজীর নকল শিরোনামে লিখেন: “বাদশাহ কুতুব
সাহেবকে দরবারে হাজির করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, হুজুর, আপনি কি বলিয়া বৃদ্ধের নাতিকে
জেন্দা করিয়াছেন? তিনি বলিলেন যে আমি বলিয়াছি, হে ছেলে! আমার আদেশে জীবিত হইয়া যাও।
বাদশাহ বলিলেন, আফসোস যদি আল্লাহর আদেশে জেন্দা হইতে বলিতেন। কুতুব সাহেব উত্তর করিলেন
মাবুদের কাছে আবার কি জিজ্ঞাসা করিব তাহার আন্দাজ নাই। এই বৃদ্ধার একটি মাত্র পুত্র
ছিল তাহাও নিয়াছে। বাকি ছিল এই নাতিটি যে গাভী পালন করিয়া কোনরূপ জিন্দেগী গুজরান
করিত এখন এটিও নিয়া গেল। তাই আমি আলস্নাহ পাকের দরবার থেকে জোড়পূর্বক রূহ নিয়া আসিয়াছি।”
(ভেদের মারেফাত বা ইয়াদে খোদা ১৫ পৃষ্ঠা।) এই ধরণের ঘটনা বর্ণনা করা এবং এর উপরে বিশ্বাস
রাখা যে কুরআন বিরোধী তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
চরমোনাই পিরের ১২৬ তরীকা:
আল্লাহ (সুব:) কর্তৃক নাজিলকৃত বিধান অনুযায়ী মানব
জাতির মুক্তির পথ কেবল মাত্র একটি। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে:
অর্থ: “আর এটিই আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ
কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে
দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।”(সুরা
আনআ’ম ৬:১৫৩)।
এই আয়াতে আল্লাহ (সুব:) একটি তরীকাকেই অনুসরণ করতে
বলেছেন।
আল্লাহ (সুব:) আরো বলেন:
অর্থ: “আর সঠিক পথ বাতলে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব,
এবং পথের মধ্যে কিছু আছে বক্র। আর তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সকলকে হিদায়াত
করতেন।”(সুরা নহল ১৬:৯)।
রাসূলুল্লাহ (সা:) থেকে ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ সর্ম্পকে
হাদীস বর্ণিত হয়েছে:
অর্থ: “আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন রাসূলুল্লাহ
(সা:) আমাদেরকে (সিরাতে মুস্তাকিম বুঝানোর জন্য) প্রথমে একটি সোজা দাগ দিলেন। আর বললেন
এটা হলো আল্লাহর রাস্তা । অতপর ডানে বামে অনেকগুলো দাগ দিলেন আর বললেন এই রাস্তাগুলো
শয়তানের রাস্তা । এ রাস্তাগুলোর প্রতিটি রাস্তার মুখে মুখে একেকটা শয়তান বসে আছে
যারা এ রাস্তার দিকে মানুষদেরকে আহবান করে। অতপর রাসূলুল্লাহ (সা:) নিজের কথার প্রমাণে
উপরে উল্লেখিত প্রথম আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন।” (মুসনাদে আহমদ ৪১৪২; নাসায়ী ১১১৭৫;
মেশকাত ১৬৬।)
কিন্তু পীর-মাশায়েখগণের তরীকা অনেক । যেমন: চরমোনাইয়ের
পীর সৈয়দ মোহাম্মদ এসহাক সাহেব তার প্রায় সকল বইতেই উল্লেখ করেছেন যে, “আমার প্রিয়
বন্ধুগণ! জানিয়া রাখিবেন, দোযখের আযাবের পথ বন্ধ করিয়া বেহেশতে যাইবার জন্য কেতাবে
১২৬ তরিক বয়ান করিয়াছেন। তন্মধ্যে চিশতিয়া ছাবেরিয়া তরিকা একেবারে শর্টকাট এই তরিকার
প্রথম ছবকখানা লিখিয়া এজাজত দিলাম।” (‘আশেক মা’শুক’ সৈয়দ মাওলানা এসহাক রচিত পৃষ্ঠা
নং ১১২, একই লেখকের কিতাব ‘ভেদে মারেফাত ইয়াদে খোদা’ পৃষ্ঠা নং ৬।)
আবার সূফীদের কোন কোন বইতে বলা হয়েছে, ‘তরীকার সংখ্যা
অগনিত তবে বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় তিন শতাধিক তরীকা বিদ্যমান রয়েছে’।( ‘সূফী দর্শণ’
ড: ফকির আবদুর রশিদ রচিত, পৃষ্ঠা নং: ১৬৭।)
অথচ রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ
করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার
অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৮০, সহিহ আল জামী ৪৫১৩, আহমদ ৮৭২৮, সহীহাহ ৩১৪১,
আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এই হাদীস দ্বারা বুঝা গেল জান্নাতে যাওয়ার একমাত্র
রাস্তা রাসূল (সা:) এর তরিকায় চলা। চরমোনাইয়ের পীরদের বাতলানো চিশতিয়া ছাবেরিয়া
তরিকা নয়। এ সমস্ত তরিকার বয়ান পবিত্র কুরআনে ও হাদীসে নাই। তাহলে ১২৬ তরিকা ওনারা
কোন কিতাবে পেলেন?
চরমোনাই পিরের ভ্রান্ত আক্বিদাহসমূহের বিস্তারিত আলোচনাঃ
চরমনাই পির কি মুসলিম?
চরমনাই পীরের কথা তার নিজের জবানেই শুনুন, তিনি নিজেই
বলছেনঃ
‘আমিতো এখন আমাকেই চিনি না, আমি যে কে তাহাই আমি
জানি না,
আমি কি জাতি, মুসলমান, না ইহুদী, না অগ্নিপুজক তাহাও
বলিতে পারি না‘’
সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭; আশেক মা’শুক বা এস্কে এলাহী; পৃষ্ঠা নঃ ৯১
যে ব্যক্তি বলে যে আমি মুসলিম নাকি ইয়াহুদি নাকি
অগ্নিপুজক তা আমি জানি না সে কখনই মুসলিম হতে পারে না, কেননা মুসলিম সেই ব্যক্তি যে
ঈমান আনে আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশ্তাগনের প্রতি, কিতাবসমুহের প্রতি, পরকালের প্রতি,
রাসুলগনের প্রতি এবং তাকদীরের ভাল মন্দের প্রতি। আমরা সবাই জানি যে, ইয়াহুদিরা আল্লাহর
কিতাব কোরআন এবং আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি
ইমান আনে না এবং অগ্নিপুজকরা না ঈমান আনে আল্লাহর প্রতি, না ফেরেশতাদের প্রতি, না কিতাব
সমুহের প্রতি না রাসুলগনের প্রতি, যে ব্যক্তি নিশ্চিত নয় যে সে কি মুসলিম, নাকি ইয়াহুদি
নাকি অগ্নিপুজারক সে কাফির, কেননা ইয়াহুদিরা এবং অগ্নিপুজারকরা কাফির এবং মুশরিক,
আর পীর সাহেব নিজেই জানেন না তিনি মুসলিম না অগ্নিপুজক অর্থাৎ কাফির।
চরমনাই পীরের আল্লাহ্ তায়ালার সাথে চরম বেয়াদবী ও অশালীন উপমাঃ -১
“ওগো আমার মাশুক মাওলা!
আপনি আপনার কুদরতি নজরে আমার দিকে চাহিয়া দেখুন,
আমি এখন আমি নাই,আমি আপনি হইয়াছি,
আর আপনি আমি হইয়াছেন;
আমি হইয়াছি তন, আপনি হয়াছেন জান” (নাউজুবিল্লাহ)
(সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭; আশেক মাশুক পৃষ্ঠা নঃ ৪১)
পীর সাহেবের এই আকীদার নাম হলোঃ “হালুল” বিভ্রান্ত
সূফীদের একটি জঘন্য শিরকি আকীদাহ এটি, ‘হালুল’ বলতে তারা(বিভ্রান্ত সুফিরা) বুঝায়
যে, আল্লাহ তার প্রিয় বান্দার মধ্যে প্রবেশ করেন (নাউযুবিল্লাহ), এই ‘হালুল’ এর আকীদার
প্রবরতক হলোঃ “হোসাইন বিন মানসুর আল-হাল্লাজ” নামক এক জালিম, এই জামিল নিজেকে হক্ক
বা আল্লাহ বলে দাবী করেছিল, এবং সে বলতো যে তার বাহ্যিক রুপ তার অন্তরের রুপকে সিজদাহ
করে কেননা তার বিশ্বাস ছিল যে, সে বাহির থেকে মানুষ কিন্তু ভিতর থেকে আল্লাহ।(নাউযুবিল্লাহ)
তার এই শিরকি আকীদার জন্য তাকে কেটে ঝুলিয়ে রাখা হয় অতঃপর তাকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা
হয়। ঠিক একই আকীদা পীর সাহেব থেকেও পাওয়া যাচ্ছে, তাই পীর সাহেবকেও মানসুর হাল্লাজের
মত শাস্তি দেওয়া উচিত, যাই হোক পীর সাহেবতো এটাও জানেন না যে, তিনি মুসলিম না অগ্নিপুজক!!!
মুসলিমরা জানেন যে, আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা
হলেন রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যদি আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের
মধ্যে প্রবেশ করতেন তাহলে তিনি রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
মধ্যেই প্রবেশ করতেন, মুসলিমরা জানেন যে কোন সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর প্রবেশ করা আল্লাহর
শানের বা সম্মানের বাহিরে।
পীর সাহেবের সম্পর্কে কোরআনের দুটি আয়াত উল্লেখ
করলামঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
`তারা আল্লাহ্র যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় না। কিয়ামতের
দ্বীন সমগ্র পৃথিবী তাঁর হাতের মুষ্টিতে থাকবে, আর আকাশমণ্ডলী থাকবে ভাজ করা অবস্থায়
তাঁর ডান হাতে। মাহাত্ম তাঁরই, তারা যাদেরকে তাঁর শরীক করে, তিনি তাদের থেকে বহু উরধে”
সুরা আয-যুমার আয়াত নঃ ৬৭
”আর তিনি মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিকা নারী, মুশরিক
পুরুষ ও মুশরিকা নারীকে শাস্তি দিবেন যারা আল্লাহ্ সম্পর্কে খারাপ ধারনা পোষণ করে।
তাদের জন্য আছে অশুভ চক্র। আল্লাহ্ তাদের উপর রাগান্বিত হয়েছেন আর তাদেরকে লা’নাত
করেছেন। তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জাহান্নাম। তা কতই না নিকৃষ্ট আবাসস্থল” সুরা
আল-ফাতহ আয়াত নঃ ৬
চরমনাই পীরের আল্লাহ্ তায়ালার সাথে চরম বেয়াদবী ও অশালীন উপমাঃ -২
মহান আল্লাহকে প্রেমিকা হিসাবে সম্বোধন!!! (নাউজুবিল্লাহ)
”হে আমার মাশুক! আপনি আমাকে আপনার এস্কে রাত-দিন
মত্ত, মাতোয়ারা, বে-ক্বারার ও অস্থির করিয়া রাখুন‘’
সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭; আশেক মাশুক পৃষ্ঠা নঃ ৫
পীর সাহেবের এরুপ বেয়াদবী ও অশালীন কথাই প্রমান
করে যে তিনি প্রকৃতপূর্ণে মুসলিম নাকি কাফির, অবশ্য তিনি নিজেই তা জানেন না!!! (কিন্তু
তার কথা আমাদের ইঙ্গিত দেয় যে তিনি কি!!!)
চরমনাই পীরের আল্লাহ্ তায়ালার সাথে চরম বেয়াদবী ও অশালীন উপমাঃ ৩
‘অতিশয় খুব ছুরাত সুন্দরী পর্দার আড়ালে লুকাইয়া
থাকিতে অক্ষম; তুমি তাহাকে পর্দায় রাখার জন্য দরওয়াজা বন্ধ করিলেও তিনি জানালা দিয়া
মুখ বাহির করিয়া রুপ দেখাইবেন।
তাই হে মাশুকে হাক্বীক্বী মাওলা! আপনিও আর একা থাকিতে
না পারিয়া আমাদিগকে নিজ হাতে পয়দা করিয়া, নিজরুপ দেখাইয়া যখন আশেক বানাইয়াছেন,
এখন কেন গোপন থাকিবেন? দয়া করিয়া দেখা দেন, প্রান তো মানে না গো”
সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার; প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭; আশেক মাশুক পৃষ্ঠা নঃ ১০-১১
পীর সাহেবের কথাগুলো আসলে কিরুপ অর্থ বহন করে?
পীর সাহবে বলেছেনঃ “আপনিও আর একা থাকিতে না পারিয়া
আমাদিগকে নিজ হাতে পয়দা করিয়া” অর্থাৎ আল্লাহ আর একা থাকতে না পেরে আমাদের সৃষ্টি
করেছেন, অর্থাৎ পীর সাহেবের মতে আল্লাহ একা থাকতে সক্ষম নন তাই বাধ্য হয়ে আমাদের সৃষ্টি
করেছেন, কিন্তু আল্লাহ বলেছেনঃ “তিনি কোন কিছুরই মুখাপেক্ষী নন” (সুরা ইখলাসঃ৪)অর্থাৎ
তিনি কোন কিছুরই বাধ্য নন, সুতরাং প্রমানিত হল যে, পীর সাহবে কোরআন এর স্পষ্ট আয়াতের
বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন।
এছাড়াও পীর সাহেবের অপবিত্র বানীঃ “আপনিও আর একা
থাকিতে না পারিয়া আমাদিগকে নিজ হাতে পয়দা করিয়া” দ্বারা প্রমানিত হয় যে, যখন আল্লাহ
আর একা থাকতে পারছিলেন না তখন তার একাকীত্ব দূর করার জন্য আমাদের সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু
দুর্ভাগ্য এটিও কোরআন এর স্পষ্ট আয়াতের বিরুদ্ধে, মহান ও পবিত্র আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তা’আলা বলেছেনঃ “আমি জীন এবং মানব জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদাত করার জন্য সৃষ্টি
করেছি” কিন্তু পীর সাহেব তো বলছেন ভিন্ন কথা, আসলে তিনি তো তাই বলবেন, কেননা তিনি তো
জানেনই না যে তিনি কি মুসলিম নাকি কাফির!!!
পীর সাহেব আরও এগিয়ে বলেছেনঃ “নিজরুপ দেখাইয়া যখন
আশেক বানাইয়াছেন”, অর্থাৎ পীর সাহেবকে আল্লাহ তার নিজের রুপ দেখিয়েছেন, সুতরাং পীর
সাহবে আল্লাহকে দেখেছেন!!! চিন্তা করেছেন যে, পীর সাহেব কত বড় ব্যক্তি???!!! যেখানে
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই পৃথিবীতে অবস্থান কালে আল্লাহকে
দেখতে পারেন নি এমন কি মিরাজ এ গিয়েও আল্লাহকে দেখতে পারেন নি সেখানে চরমনাই পীর সাহেব
আল্লাহকে দুনিয়াতে বসে দেখেছেন!!! ভণ্ডামির একটা সীমা থাকে কিন্তু পীর সাহবেন সকল
সীমা অতিক্রম করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজে গিয়ে আল্লাহকে
দেখেছেন কিনা তা নিয়ে মুসলিমরা ইখতিলাম করেছেন, তবে সঠিকমত হলো তিনি আল্লাহকে দেখেন
নি যা মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদিসটি রয়েছে সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদঃ
৭৪ (ইঃফাঃ), যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নেই(আসলে মানছি না) যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহকে দেখেছেন(নাউযুবিল্লাহ) তার পরও তিনি তখন মিরাজে গিয়েছিলেন,
কিন্তু পীর সাহেব কি মিরাজে গিয়েছিলেন? না, তাহলে তিনি কিভাবে আল্লাহকে দেখলেন? আল্লাহকে
এই পৃথিবীতে দেখা সম্ভব নয়, কেননা মুসা আলাইহি ওয়া সালাম তাঁর রবকে বললেন ‘’হে আমার
প্রতিপালক আমাকে দেখা দেও, আমি তোমাকে দেখব। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কক্ষনো দেখতে পাবে
না, বরং তুমি পাহাড়ের দিকে তাকাও, যদি তা নিজ স্থানে স্থির থাকতে পারে তাহলে তুমি
আমাকে দেখতে পাবে।’’ অতঃপর তাঁর প্রতিপালক যখন পাহারে নিজ জ্যোতি বিচ্ছুরিত করলেন,
তখন তা পাহারকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল আর মুসা চৈতন্য হারিয়ে পড়ে গেল ” সুরা আ’রাফঃ
১৪৩ ,
আল্লাহকে আখেরাতে দেখা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসঃ
‘তোমরা মৃত্যুবরণ করার পূর্বে কিছুতেই তোমাদের মহা
প্রভুকে দেখতে পাবে না-ফাতহুল বারীঃ ৮৪৯৩
সুতরাং, হয় আল্লাহ এবং রাসুলুল্লাহ সত্য বলেছেন
অথবা পীর সাহেব সত্য বলেছেন, মুসলিমরা বলবো যে অবশ্যই আল্লাহ এবং তার রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য বলেছেন এবং পীর সাহেব মিথ্যা বলেছে
চরমনাই পীরের আল্লাহ্ তায়ালার সাথে চরম বেয়াদবী ও অশালীন উপমাঃ ৪
”আসুন গো ওহে আমাদের মাশুক!
নিরালা নির্জনে বসি প্রেম আলাপ করি গো”
সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার; প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭; আশেক মাশুক পৃষ্ঠা নঃ ১৫
পীর সাহেব আল্লাহকে এই পৃথিবীতে ডাকছেন প্রেম আলাপ
করার জন্য! (নাউযুবিল্লাহ) আমার চিন্তা হয় যে, এই পীর সাহেবকি স্বাভাবিক মস্তিষ্কের
অধিকারী নাকি কয়েকটা নাট-বল্টুর অভাব আছে? নাকি দুনিয়ার স্বার্থ অর্জনের জন্য এসব
জাহিলিয়াত এবং বেয়াদবী করে চলছে? আল্লাহ ভাল জানেন, সবচেয়ে বড় মূর্খ তো তারাই যারা
এসব কিছু জেনে শুনেও এই পীরের অনুসরন করছে!
লক্ষণীয় বিষয়, পীর সাহেব আল্লাহকে এই পৃথিবীতে
ডাকছেন, কিন্তু আমি আগেই কোরআনের আয়াত দিয়ে প্রমান করেছি যে, আল্লাহকে এই পৃথিবীতে
দেখা সম্ভব নয়, যেখানে আল্লাহর পাঠানো নূর বা আলো পৃথিবীর পাহাড় সহ্য করতে না পেরে
পাহাড় ধ্বংস হয়ে গেছে সেখানে আল্লাহ এই পৃথিবীতে আসলে এই পৃথিবী কি টিকে থাকতে পারবে?
না কখনই না, কেননা মুসা আলাইহি ওয়া সালাম এই পৃথিবীতে আল্লাহকে দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু
তিনি পারেন নি, এবং আল্লাহ এই পৃথিবীতে আসার মুখাপেক্ষী নন, অর্থাৎ পীর সাহেবের কথাগুলো
শুধু মাত্রই বেয়াদবী, তার কথা থেকে এটাও প্রমান হয় যে পীর সাহেব কোরআনের এই আয়াতটিও
সম্ভবত জানে না বা জানলেও ভণ্ডামি করছে, আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা, পীর সাহেব মুসলিম
না ইয়াহুদি তা তিনি জানেন না!
চরমনাই পীরের আল্লাহ্ তায়ালার সাথে চরম বেয়াদবী ও অশালীন উপমাঃ ৫
”ওগো মাওলা!
তোমার বিচ্ছেদের আগুন যেন দোজখের আগুন!
আমি ভুল বলিয়াছি,
তোমার মতো সুন্দর মাশুকের জুদাইর অগ্নি সম কোন অগ্নি
নাই।
তাই বলি, আর দূরে রাখিয়া আমারে জালাইও না গো ,
কত আর জ্বালাইবা, সহিতে পারি না গো”
সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার; প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭; আশেক মাশুক পৃষ্ঠা নঃ ১৬
পীর সাহেব যেমন শব্দগুলো আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রয়োগ
করছেন ঠিক সেই শব্দগুলো সাধারণত প্রেমিক-প্রেমিকারা প্রয়োগ করে থাকেন, এরুপ শব্দ মহাম
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা জঘন্য বেয়াদবী, পীর সাহেবের সাহস
থেকে আমার অবাক লাগে যে তিনি মুসলিমদের মধ্যে এসব কথা ছড়াচ্ছেন, অবশ্য তার সাহসও হওয়ারই
কথা, যেহেতু তার কিছু অন্ধ ও মূর্খ অনুসারীও রয়েছে, যেমন অনুসারী রয়েছে ভারত উপমহাদেশে
শিরক ও বিদআত এর প্রধান ধারক ও বাহক আহমাদ রেযা খান বেরেলভীর। পীর সাহেবের বানীঃ “তোমার
বিচ্ছেদের আগুন” থেকে প্রমানিত হয় যে আল্লাহ এবং পীর সাহেবের কোন দিন মিলন হয়েছিল(নাউযুবিল্লাহ),
কেননা মিলন না হলে বিচ্ছেদ হয় না, আর যেহেতু বিচ্ছেদ হয়েছে সেহেতু মিলনও হয়েছিল,
কিন্তু মিলন হওয়ার জন্য আল্লাহকে এই পৃথিবীতে আস্তে হবে কেননা পীর সাহেবতো এই পৃথিবীতে
থাকেন, কিন্তু আমি আগেই প্রমান করেছি যে আল্লাহ এই পৃথিবীতে আসবেন না, আর বাকী থাকলো
আরেকটি পথ তা হল পীর সাহেবকে যেতে হবে আল্লাহর কাছে, অর্থাৎ, মিরাজ-এ, কিন্তু মিরাজ
ছিল একমাত্র রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য, অর্থাৎ মিরাজ
এরও আর সুযোগ থাকলো না, তাহলে আল্লাহর আর পীর সাহেবের মিলন হলো কিভাবে? হালুল এর মাধ্যমে?
যদি পীর সাহেব আবারও হালুল এর আকীদা প্রকাশ করতে চান তাহলে আমি মনে করিয়ে দিব জালিম
মানসুর হাল্লাজের শাস্তিকে, অর্থাৎ প্রমান হলো যে, কোন ভাবেই পীর সাহবে আর মহান আল্লাহর
মধ্যে মিলনতো দুরের কথা দেখা হওয়ার সম্ভব নয়, সুতরাং হয় পীর সাহেব মিথ্যা বলেছেন
অথবা তাকে পাবনায় নিয়ে গিয়ে পাগলেল চিকিৎসা করার প্রয়োজন পড়েছে। না, এখই শেষ নয়,
আরও বাকী আছে, পীর সাহেব আরও বলেছেনঃ “আর দূরে রাখিয়া আমারে জালাইও না গো” অর্থাৎ,
আল্লাহ পীর সাহেবকে দূরে রেখে জ্বালাচ্ছেন! তাহলে প্রশ্ন হলো পীর সাহেবকে আল্লাহ কাছে
রেখেছিলেন কবে? যদি পীর সাহেবকে দূরে রেখে আল্লাহ এখন জ্বালিয়ে থাকেন তাহলে প্রমান
হয় যে কোন দিন আল্লাহ পীর সাহেবকে কাছেও রেখেছিলেন! কিন্তু আমিতো আগেই প্রমান করেছি
যে, পীর সাহেব নয় কখনও আল্লাহকে দেখেছেন, না তিনি আল্লাহর সাথে মিলেছেন, সুতরাং এটাও
প্রমান হয়ে গেল যে, পীর সাহেব কোন দিনও আল্লাহর কাছে ছিলেন না। কেননা না আল্লাহ এই
পৃথিবীতে এসেছেন এবং না পীর সাহেব মিরাজ করে আল্লাহর কাছে গিয়েছেন। সুতরাং আবারও পীর
সাহেব মিথ্যা বলেছেন, পীর সাহেব আরও বলেছেনঃ “কত আর জালাইবা” জ্বালানো শব্দটিকে দুভাবে
প্রয়োগ করা যায়, এক হলো কোন কাওকে জ্বালানো অর্থাৎ ‘কষ্ট দেওয়া’ বা ‘বিরক্ত করা’
আর ২য় অর্থটি হল প্রেমিক-প্রেমিকাদের ক্ষেত্রে, যেহেতু পীর সাহেব চরম বেয়াদবী ইতিপূর্বেও
বহুবার করেছেন সেহেতু জ্বালানো শব্দের ২য় অর্থটিকেই ধরে নিচ্ছি কিন্তু ২য় অর্থটি
আল্লাহর ক্ষেত্রে চরম বেয়েদবীর অর্থ বহন করে, আর যদি প্রথম অর্থটি ধরে নেই তাহলে হলো
কষ্ট দেওয়া কিন্তু আল্লাহ একমাত্র তার নাফরমান বান্দাকেই কষ্টদেন, মুমিন বান্দাকে
না, আর ‘বিরক্ত করা’ আল্লাহর সম্মানের বাহিরে, বিরক্ত করা আল্লাহর মাখলুকের গুন কিন্তু
আল্লাহর নয়, তাই বিরক্ত শব্দটি আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে না। কেননা এতে করে
তাওহীদুল আসমা ওয়া সিফাত এর ৫টি শর্ত হতে একটি শর্ত ভঙ্গ হয়ে শিরক সম্পাদিত হয়,
তাওহীদুল আসমা ওয়া সিফাত এর ৫টি শর্ত হতে একটি শর্ত হলোঃ “আল্লাহর কোন গুন তার মাখলুককে
দেওয়া যাবে না যা তিনি সাব্যস্ত করেন নি এবং মাখলুক এর কোন গুনও আল্লাহকে দেওয়া যাবে
না যা তিনি নিজের জন্য সাব্যস্ত করেন নি” সুতরাং পীর সাহেবের কথাগুলো যেই অর্থেই নেই
না কেন তা বেয়াদবী এবং শিরক এর অর্থই বহন করে, কারন তিনি(পীর সাহেব) তো জানেনই না
যে তিনি মুসলিম নাকি মুশরিক (অগ্নিপুজক এবং মূর্তিপুজকরা মুশরিক)
চরমনাই পীরের আল্লাহ্ তায়ালার সাথে চরম বেয়াদবী ও অশালীন উপমাঃ ৬
”ওগো আমার মাশুক!
আপনি বেপর্দা হইয়া আমার এই বাসায় আসুন’’
সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার; প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭; আশেক মাশুক পৃষ্ঠা নঃ ৫০
এখানে এই জালিম (চরমনাই পীর) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তা’আলাকে তার ঘরে আসতে বলছে, তিনি আল্লাহ যিনি সমস্ত কিছুকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি কোন
কিছুর মুখাপেক্ষী নন তাকে পৃথিবীর সামান্যতম একটি ঘরে আসতে বলছে পীর সাহেব, আমি পূর্বেই
প্রমান করেছি যে মহাম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এই পৃথিবীতে আসবেন না যার ফলে মুসা
আলাইহি ওয়া সালাম আল্লাহকে দেখতে পারেন নি, এই পৃথিবীকে আল্লাহ তার মাখলুককে ধারন
করার জন্য সৃষ্টি করেছেন আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা রয়েছেন আসমানের উপর আরশের
উপর, এবং সেখানে থাকাটাই তার(আল্লাহর) শান, পীর সাহেবের কথাগুলো আমাকে হিন্দুদের আকীদার
কথা মনে করিয়ে দিয়েছে, হিন্দুরা মনে করে যে, আমাদের প্রতিপালক মাঝে মাঝে এই পৃথিবীতে
আসেন যাকে তারা(হিন্দুরা) ‘অবতার’ বলে থাকে, যদিও হিন্দু পণ্ডিতদের মধ্যে মতপার্থক্য
রয়েছে এই “অবতার” শব্দটি নিয়ে, যাই হোক হিন্দু ধর্মের কথা এখন বাদই দেই, সুতরাং এটি
প্রমানিত হলো যে, পীর সাহেবের আকীদা আর হিন্দুদের আকীদা অনেকটাই কাছা-কাছি, এটা এটা
হওয়া স্বাভাবিক, কেননা অগ্নিপূজক আর মূর্তিপূজক দের মধ্যে মিল অনেক, আর পীর সাহেব
মুসলিম নাকি অগ্নিপূজক এটা তিনি(পীর সাহেব) জানেন না।
চরমনাই পীরের আল্লাহ্ তায়ালার সাথে চরম বেয়াদবী ও অশালীন উপমাঃ ৭
”মাহবুবের (অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার) নাম জেকের করা
আশেকের নিকট শরাবের মতো মজা”
সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার; প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭; আশেক মাশুক পৃষ্ঠা নঃ ২৪
পীর সাহেব মহান আল্লাহর জিকীরকে শরাব বা মদের সাথে
তুলনা করলেন, এবং তিনি মদকে মজা বলেও উল্লেখ করলেন, কিন্তু ইসলামী শারিয়াত অনুসারে
শরাব বা মদ একটি জঘন্য পানীয়, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর জিকীরকে অপবিত্র মদের সাথে
তুলনা করতে পারেন, সেই ব্যক্তি কি ঈমানদার হতে পারেন? প্রশ্নটি থেকে গেল, আর মনে রাখা
জরুরী যে, পীর সাহেব মুসলিম না কাফির তা তিনি জানেন না।
চরমনাই পীরের আল্লাহ্ তায়ালার সাথে চরম বেয়াদবী ও অশালীন উপমাঃ – ৮
”মানুষ যদি মানুষের জন্য পাগল হইয়া জঙ্গলবাসী হইতে
পারে,
যেমন- মজনু লাইলির জন্য,
জোলেখা ইউসুফের জন্য,
ফরহাদ শিরীর জন্য,
তবে আল্লাহ্ পাকের প্রেমিকগন
তাঁহার প্রেমে পাগল হইয়া বেহুস-বেকারারী করিতে পারিবে
না কেন”
সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার; প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭;ভেদে মারেফত পৃষ্ঠা নঃ ৬৭
অর্থাৎ, পীর সাহেব ইউসুফ-জলেখার বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনীতে
বিশ্বাস রাখেন, অর্থাৎ, পীর সাহেবের মতে ইউসুফ আলাইহি ওয়া সালাম জলেখার সাথে প্রেম
করেছিলেন(নাউযুবিল্লাহ) কিন্তু বিয়ের পূর্বের এসব অবৈধ সম্পর্ক সম্পূর্ণ হারাম, সুতরাং
পীর সাহেব এর কথা অনুসারে বুঝা যাচ্ছে যে, ইউসুফ আলাইহি ওয়া সালাম হারাম কাজ করেছেন(নাউযুবিল্লাহ),
এটি মূলত নবীদের উপর একটি চরম অপবাদ, কোন নবীই কবীরা গুনাহতে লিপ্ত ছিলেন না এবং আল্লাহর
নাফরমানও ছিলেন না। আর লাইলী-মজনুর বানোয়াট কাহিনীতেও তিনি বিশ্বাসী!!! এই যদি হয়
পীরের অবস্থা তাহলে মুরিদের কি অবস্থা হবে? চিন্তার বিষয়! অতঃপর পীর সাহেব আল্লাহর
প্রেমে বেহুশ হওয়ার কথা বললেন, সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার
পুত্রকে সেসকল লোকদের সাথে মিশতে নিষেধ করেছেন যারা জিকীরের সময় বেহুশ হয়ে যান (এহইয়াউস
সুনান, পৃঃ ৩৭৫), সুতরাং যেমন কর্ম সাহাবীগন অপছন্দ করতেন ঠিক তেমন কর্মকেই পীর সাহেব
সমর্থন করলেন, এ থেকে এটি স্পষ্ট যে, পীর সাহেব সাহাবীদের পথে নেই, এটি হওয়া স্বাভাবিক
কেননা পীর সাহেব কি মুসলিম না কাফির তা তিনি জানেন না!
চরমনাই পীরের আল্লাহ্ তায়ালার সাথে চরম বেয়াদবী ও অশালীন উপমাঃ – ৯
”কাহারো স্ত্রী যদি খুব সুন্দরী হয়,
আর সে যদি খোজা বা ধ্বজভঙ্গ হয়,
তবে কিছুতেই সে ঐ বিবির সঙ্গেমিলিতেপারিবে না।
ঠিক এইরুপ মনে করিবেন- যাহার রুহ খোজা বা মরা,
অর্থাৎ- মাবুদের প্রেম হইতে বঞ্চিত,
তাহার রুহ কিছুতেই মাবুদের সাথেমিলিতেপারিবে না”
(নাউজুবিল্লাহ)
সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার; প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭;ভেদে মারেফত পৃষ্ঠা নঃ ৬৭
পীর সাহেব এখানে চরম বেয়াদবী করেছেন, এর ফল আল্লাহ
তাকে দিবেন ইন শা আল্লাহ, স্বামী-স্ত্রীর মিলন হয় অর্থাৎ, সঙ্গম বা সহবাস বা SEX
, পীর সাহেব বলেছেনঃ স্ত্রী যদি খোজা হয় তাহলে স্বামী তার সাথে মিলিতে পারিবে না বা
সঙ্গম করতে পারবে না বা সহবাস করতে পারবে না বা SEX করতে পারবে না, ঠিক তেমনি যেই মানুষের
রুহ খোজা সে আল্লাহর সাথে মিলিতে পারিবে না অর্থাৎ, সঙ্গম করতে পারিবে না বা সহবাস
করতে পারিবে না বা SEX করতে পারবে না, কিন্তু যদি রুহ খোজা না হয় বরং পীর সাহেবের
মত রুহ হয় তাহলে সে আল্লাহর সাথে মিলিতে পারিবে বা সঙ্গম বা সহবাস বা SEX করিতে পারিবে
(নাউযুবিল্লাহ সুম্মা নাউযুবিল্লাহ, আছতাগফিরুল্লাহ), এতো বড় বেয়াদবী মহান আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সাথে? যিনি ক্ষুদ্র থেকে শুরু করে বৃহৎ পর্যন্ত সবকিছুর স্রষ্টা,
যার সাথে কোন কিছুর তুলনা হয় না, তার সাথে এতো বড় বেয়াদবি কারী বেয়াদবকে কখনই কোন
মুসলিম ক্ষমা করতে পারে না, যতক্ষন না সে এই সকল বেয়াদবীর জন্য তাওবা করে, আসলেই পীর
সাহেব চরমনাই মুসলিম নাকি কাফির মুরতাদ তা আমার সন্দেহ হচ্ছে।
চরমনাই পীরের আল্লাহ্ তায়ালার সাথে চরম বেয়াদবী ও অশালীন উপমাঃ – ১০
‘শরীরের মাশুক স্ত্রীর জন্য যদি আশেক হইয়া মানুষ
জীবন দান করিতে পারে, তবে রুহের মাশুক মাওলার জন্য কেন অজদ হাল হইবে না কেন?’’
সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার; প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭; ভেদে মারেফত পৃষ্ঠা নঃ ৬৭
এই জালিম পীর আবারও স্বামী-স্ত্রীর মিলনের মাঝে মহান
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কে টেনে এনেছে, আবারও সেই চরম বেয়াদবী, এদের মত বেয়াদবদের
বিচার আল্লাহ খুব ভাল ভাবেই নিতে জানেন, তিনি মহান, প্রজ্ঞাময়।
চরমনাই পীরের আল্লাহ্ তায়ালার সাথে চরম বেয়াদবী ও অশালীন উপমাঃ – ১১
”প্রত্যেক জিনিসের মধ্যে একটা তাছির আছে।
যথা অগ্নির তাছির গরম,পানির তাছির ঠাণ্ডা।
যদি স্ত্রীর গায়ে হাত দিলে শরীর গরম হইয়া উঠে,
মাশুকে হাকিকী আল্লাহ্ পাকের নামে কেন তাছির থাকিবে
না?
হ্যা, যদি কেহ খোজা হয়, তবে তাহার স্ত্রীর শরীরে
হাত দিলেও কখনো তাহার মধ্যে এশক-মহব্বত পয়দা হইবে না, এমনিভাবে যাহাদের দেল মরা, তাহাদেরও
আল্লাহ্ পাকের নামে কোন তাছির হইবে না।
বন্ধুগন! নিজের স্ত্রীর সঙ্গে মিলিবার সময় যদি উত্তেজনার
সৃষ্টি হইতে পারে, তবে মাবুদের সঙ্গে রুহ মিলিতে কেন উত্তেজনার সৃষ্টি হইবে না?”
(ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)
সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার;প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭;ভেদে মারেফত পৃষ্ঠা নঃ ৬৯
এই জালিম আবারও সু-স্পষ্ট ভাষায়, স্বামী-স্ত্রীর
যৌন মিলনের সাথে আল্লাহকে তুলনা করলো, নারী-পুরুষের যৌন আকাংখাকে মহান আল্লাহর সাথে
তুলনা করলো, স্ত্রীর সঙ্গে মিলনের উত্তেজনাকে আল্লাহর সঙ্গে নিয়ে লাগিয়েছে, আসলেই
এই পীর হয় পাগল না হয় দুনিয়ার লোভ-লালসায় অন্ধ।
চরমনাই পীরের ইসলামি শরিয়তের সাথে মারাত্মক ধৃষ্টতাঃ
‘কামেল পীরের আদেশ পাইলে,
নাপাক শারাব(মদ) দ্বারাও জায়নামাজ রঙ্গিন করিয়া
তাহাতে নামাজ পড়’’
সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭; আশেক মা’শুক বা এস্কে এলাহী; পৃষ্ঠা নঃ ৩৫
পীর সাহেবের উক্ত নির্দেশ থেকে এটি স্পষ্ট যে, কোরআন
এবং সুন্নাহতে কি আছে তা তার জানার দরকার নেই, বরং পীর সাহেবের নির্দেশ পালন করাই জরুরী।
অবশ্য শুধু মাত্র মুসলিমরাই কোরআন এবং সুন্নাহ এর নির্দেশ পালন করেন এবং এর প্রতি সম্মান
প্রদর্শন করেন, কিন্তু যেহেতু পীর সাহেব আগেই বলে দিয়েছেন যে তিনি মুসলিম নাকি কাফির(ইয়াহুদিরাও
কাফির আর অগ্নিপুজকরাও কাফির) তা তার জানা নেই, সেহেতু কোরআন এবং সুন্নাহর প্রতি তার
সম্মান না থাকাটাই স্বাভাবিক।
বিনা প্রমানে চরমনাই পীরের কিতাবে মারাত্মক বিভ্রান্তিকর তথ্যঃ
‘স্বামী ভক্তা পর্দানশীন স্ত্রীলোকগনের চেহারা হাশরের
দিন পূর্ণিমার চন্দ্রের মত রওশন হইবে, তাহারা বিনা হিসাবে বেহেশতে যাইবেন’’।
সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭; খাছ পর্দা ও স্বামীর খেদমতঃ পৃষ্ঠা নঃ ৯-১০
পীর সাহেবের কাছে আমাদের প্রশ্ন, দয়া করে বলবেন
কি উপরোক্ত বানীটি কার? এই কথা আপনি কোথায় পেলেন? কুরআনের আয়াত অথবা রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর হাদীসে কি এইরকম কোন কথা আছে? নাকি আল্লাহ্ তায়ালা আপনাকে
অহি করে এই কথা বলেছেন?
স্বামীর আনুগত্যশীল ও পর্দানশীন নারীর ফজিলত সম্পর্কে
কুরআন ও হাদীসে বহু সহীহ বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু আমরা আমাদের জ্ঞান অনুযায়ী যথাসাধ্য
চেষ্টা করেও উপরক্ত কথার সমর্থনে কুরআন ও হাদীসে কোন বক্তব্য খুজে পাইনি।
তবে উম্মাতে মুহাম্মাদির মধ্যে একদল লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ
করবে। যারা এই সৌভাগ্যশীল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবেন নিম্নে তাঁদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা
করা হলঃ
ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নাবী
সাল্লালহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিকট আসলেন এবং বললেনঃ আমার সামনে (পূর্ববর্তী
নাবীগণের) উম্মাতদের পেশ করা হল। (আমি দেখলাম) একজন নাবী যাচ্ছেন, তাঁর সাথে আছে মাত্র
একজন লোক এবং আরেকজন নাবী যার সঙ্গে আছে দুইজন লোক। অন্য এক নাবীকে দেখলাম, তাঁর সঙ্গে
আছে একটি দল, আরেকজন নাবী, তাঁর সাথে কেউ নেই।
আবার দেখলাম, একটি বিরাট দল যা দিগন্ত জুড়ে আছে।
আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, এ বিরাট দলটি যদি আমার উম্মাত হত। বলা হলঃ এটা মুসা (আঃ) ও
তাঁর কওম। এরপর আমাকে বলা হলঃ দেখুন। দেখলাম একটি বিশাল জামাত দিগন্ত জুড়ে আছে। আবার
বলা হলঃ এ দিকে দেখুন, ও দিকে দেখুন। দেখলাম বিরাট বিরাট দল দিগন্ত জুড়ে ছেয়ে আছে।
বলা হলঃ ঐ সবই আপনার উম্মাত এবং ওদের সাথে সত্তর হাজার লোক এমন আছে যারা বিনা হিসাবে
জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তাঁদের চেহারাগুলো পূর্ণিমার চাঁদের আলোর মতো জ্বল জ্বল করবে)।
এরপর লোকজন এদিক ওদিক চলে গেল। নাবী সাল্লালহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম আর তাদেরকে (সত্তর হাজারের) ব্যাখ্যা করে বলেননি। নাবী সাল্লালহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবীগন এ নিয়ে নানান কথা শুরু করে দিলেন। তারা বলাবলি করলেনঃ আমরা
তো শিরকের মাঝে জন্মেছি, পরে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল সাল্লালহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
উপর ঈমান এনেছি। বরং এরা আমাদের সন্তানরাই হবে। নাবী সাল্লালহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
কাছে এ কথা পৌঁছলে তিনি বলেনঃ
তাঁরা হবে ঐ সব লোক যারা অবৈধভাবে মঙ্গল-অমঙ্গল নির্ণয়
করে না, (জাহেলী যুগের ন্যায়) ঝাড়ফুঁক বা মন্তর দ্বারা চিকিৎসা কামনা করে না এবং
আগুনে পোড়ানো লোহার দাগ লাগায় না, আর তাঁরা তাঁদের প্রতিপালকের উপর একমাত্র ভরসা
রাখে। বুখারী ৫৭০৫, ৫৭৫২, ৫৮১১, ৬৪৭২, ৬৫৪১, ৬৫৪২, মুসলিম ৩৭১-(২১৮)
হাদিসটি ব্যাখ্যা সম্পর্কে শায়েখ সালেহ বিন আবদুল আযীয আলে-শায়েখ (সাউদী
আরবের গ্র্যান্ড মুফতি) এর গুরুত্বপূর্ণ টিকাঃ
হাদীসের অর্থ এটা নয় যে, মোটেও কোন চিকিৎসা করা
যাবে না। কারন নাবী সাল্লালহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ঝাড়ফুঁক করা হয়েছে, তিনি চিকিৎসা
গ্রহন করেছেন, এবং এর নির্দেশ দিয়েছেন এবং একজন সাহাবীকে শরীরে দাগ দেয়ার নির্দেশও
দিয়েছেন। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ধারনা করা যায় যে, তাঁরা চিকিৎসা ও ঔষধকে আরোগ্য লাভের
একমাত্র কারন হিসাবে গ্রহন করেননি। হাদীসে যে তিনটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে, এগুলোর
ফলে আল্লাহ্র উপর ভরসা কমে যায় এবং তাতে হৃদয় ঝাড়ফুঁক, সেকদাতা ও গনকের দিকে ধাবিত
হয়। এজন্য আল্লাহ্র প্রতি তাঁর ভরসা কমতি হয়ে যায়। পক্ষান্তরে, চিকিৎসা ওয়াজিব
অথবা মুস্তাহাব। কোন কোন অবস্থায় মুবাহ। রাসুল সাল্লালহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
‘’আল্লাহ্ তায়ালা হারাম বস্তুর মধ্যে কোন চিকিৎসা রাখেননি’’ [বাইহাকী ১৯৪৬৩; ইবন হিব্বান
১৩৯১]
সুত্রঃ কিতাবুত তাওহীদ ও এর ব্যাখ্যা- মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান
আয়-তামীমী; ব্যাখ্যাকারীঃ শায়েখ সালেহ বিন আবদুল আযীয আলে-শায়েখ ,অধ্যায়-২ পৃষ্ঠা
নঃ ২৩-২৭।
কুরআন নয় তাদের লিখিত কিতাব ‘খতম’ করার জন্য ও সেই
অনুযায়ী আমল করার জন্য চরমনাই পীরের ধৃষ্টতাপূর্ণ নাসীহাতঃ
‘আপনারা প্রত্যেকেই আমার লিখিত কিতাবগুলোর প্রত্যেকটি
কিতাব খরিদ করিয়া বারবার পড়িয়া খতম করিবেন, এবং তদানুযায়ি আমল করিবেন’
সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক এর রচনাবলী; আল-এছহাক পাবলিকেশন্স;
বাংলাবাজার প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০০৭; আশেক মা’শুক বা এস্কে এলাহী; পৃষ্ঠা নঃ ১১১।
আমরা যারা মুসলিম আমাদের হিদায়াতের জন্য কুরআন ও
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বানীই যথেষ্ট। চরমনাই পীরের শিরকী কিতাবের
কোনই প্রয়োজন নেই। আর যেহেতু পীর সাহেব কোরআন এবং সুন্নাহকে সম্মান করেন না সেহেতু
কোরআন খতম করার কথা বলবেনই বা কেন, তার তিনি তো জানেনই না যে তিনি মুসলিম নাকি কাফির।
দেওয়ানবাগ দরবার শরীফ-বাবে রহমত, মতিঝিল, ঢাকা
(এক রহস্যময় দরবার, যেখানে মিলাদ
কিয়াম অনুষ্ঠিত হলে স্বয়ং আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এসে সেই মিলাদ অনুষ্ঠানে যোগ দেন)
সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুবে খোদা দেওয়ানবাগী
(মাঃ আঃ) আল্লাহকে তার সমস্যার কথা জানালে আল্লাহ নাকি চিন্তিত হয়ে পড়েন, এরপর আবারো
হাত জোড় করে চাইলে আল্লাহ নাকি হাসলেন। তিনি আরো বলেন মা ফাতিমা রাঃ নাকি তার স্ত্রী
আবার মুরিদদের দয়াল মা। তার দরবারে প্রবেশ করতেই দেখা পাওয়া যায় সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুবে খোদা দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) এর খুবই চমৎকার
নুরানী চেহারার বিশালকৃতির একটি ছবি। এই কক্ষেই মুরিদগণ প্রথমে গিয়ে বসেন ও সালাত আদায়সহ
জিকির করেন। তারমতে ছবি অংকন করা ও ছবি ঝুলানো জায়েজ। মাথায় কালো কলপ ব্যবহার করা জায়েজ।
পুরুষদের স্বর্ণ ব্যবহার করা জায়েজ। এমনি এক রহস্যময় সুফি সম্রাটের কথা আজকে আমরা আলোচনা
করবো, ইনশাআল্লাহ।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলা’র সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
নামঃ সূফী
সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুবে খোদা দেওয়ানবাগী
(মাঃ আঃ)।
জন্মঃ দেওয়ানবাগীর জন্ম ২৭শে অগ্রহায়ন ১৩৫৬ বাংলা মোতাবেক
১৪ই ডিসেম্বর ১৯৪৯ ইংরেজী। জন্মস্থান ব্রাক্ষনবাড়ীয়া জেলার আশুগঞ্জ থানাধীন বাহাদুরপুর
গ্রামে। ছয় ভাই দুই বোন। ভাইদের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ।
পিতা মাতার নামঃ পিতা আলহাজ্ব সৈয়দ আব্দুর রশিদ সরকার
(রহ:) ও মাতা সৈয়দা জোবেদা খাতুন (রেহঃ)।
বংশ পরিচয়ঃ তার পুর্বপুরুষ মদিনা থেকে কাতার
হয়ে বাংলাদেশে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে আসেন। বিবাড়িয়াতে তার পূর্বপুরুষের নির্মান
করা ১০০ বছরেরও পুরনো মসজিদ রয়েছে। তারা পুরো এলাকা শাসন করতেন।
বিবাহ ও দরবার গঠনঃ সুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা:আ:)
হুজুর ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা
আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরীর হাতে বাইয়াত গ্রহন করেন। পড়ে স্বীয় মুর্শিদের কন্যা
হামিদা বেগমকে বিয়ে করেন। এ সুবাদে শশুরের কাছ থেকে খিলাফত লাভ করেন। এর কিছুদিন পর
নারায়নগঞ্জের দেওয়ানবাগ নামক স্থানে আস্তানা গঠন করেন এবং নিজেকে “সুফী সম্রাট হিসেবে
পরিচয় দিয়ে শোহরত লাভ করতে থাকেন। এরপর তিনি মতিঝিলের ১৪৭
আরামবাগ ঢাকা-১০০০-তে বাবে রহমত নামে আরেকটি দরবার স্থাপন করেন।
সন্তান সংখ্যাঃ দেওয়ানবাগী হুজুরের ৭ সন্তান। ৪
ছেলে, ৩ মেয়ে। দেওয়ানবাগী পীরের সাত সন্তানের মধ্যে প্রত্যেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন
করেন। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারীরা হলেন- অধ্যাপক সৈয়দা তাহমিনা সুলতানা, অধ্যাপক সৈয়দা
তাকলিমা সুলতানা, সৈয়দা তাসলিমা-এ-খোদা, অধ্যাপক সৈয়দ এএফএম নূর-এ-খোদা, আরসাম কুদরত-এ-খোদা,
সৈয়দ এএফএম ফজল-এ-খোদা, সৈয়দ এএফএম মঞ্জুর-এ-খোদা।
শিক্ষা জীবনঃ
সুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা:আ:) হুজুর কেবলা তাদের
পার্শ্ববর্তী গ্রাম সোহাগপুরের প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষা জীবন শুরু করেন এবং সেখানে
কৃতিত্বের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। এরপর তিনি নায়েবে রাসূল হওয়ার অদম্য বাসনা
নিয়ে আরবী ও ইসলামী শিক্ষা লাভের জন্য তদানীন্তন বিখ্যাত তালশহর করিমিয়া আলীয়া মাদ্রাসায়
ভর্তি হন। তিনি অসাধারণ মেধাবী ও কৃতি ছাত্র হিসেবে বৃত্তিসহকারে মাদ্রাসা শিক্ষার
প্রতিটি স্তর অতিক্রম করে আলীয়া মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রী লাভ করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধ-
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে সূফী
সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা:আ:) হুজুর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল
গঠন করে পাক হানদার বাহিনী কর্তৃক বিতাড়িত মানুষের অন্ন সংস্থান ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা
করেন। ১১ই এপ্রিল ১৯৭১ইং তারিখে তিনি তার দলের ৭২ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়ার
মুক্তিযোদ্ধা ক্যম্পে যোগ দেন।
কর্মময় জীবন-
সুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা:আ:) হুজুর কেবলা একজন
আলেম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ৩নং সেক্টর কমান্ডার জেনারেল এ কে
এম শফিউল্ল্যার পরামর্শে নবগঠিত ১৬ নং বেংগল রেজিমেন্টে ‘রিলিজিয়াস টিচার’ অর্থ্যাৎ
‘ধর্মীয় শিক্ষক’ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি জয়দেবপুরের শহর কুতুবের কাছে তৎকালীন
যুগের শ্রেষ্ঠ অলী ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ:) এর পরিচয় পেয়ে তার নিকট বায়াত
হন। এরপর সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা:আ:) হুজুর বার্ষিক মাহফিলে যোগদানের জন্য তার
মোর্শেদের দরবার শরীফে গমন করেন। তাকে দেখেই ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ:)
চিনে ফেলেন। পরবর্তীতে তিনি সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাকে কাছে রাখার জন্য নিজে উৎসাহিত
হয়ে স্বীয় চতুর্থ কন্যাকে তার কাছে বিবাহ দেন। সূফী সম্রাট হুজুর তরীকতের সবক গ্রহণের
পর থেকে কঠোর ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে গভীর সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি তার
মোর্শেদের নির্দেশে সেনাবাহিনীর চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে মোর্শেদের দরবার শরীফে গমন করেন।
ইমাম হুজুর (রহ:) সূফি সম্রাটের (মা:আ:) উপর দরবার পরিচালনার সমস্ত দায়িত্ব অর্পণ করে
তাকে প্রধান খলিফা ও ওলামা মিশনের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন। সূফীসম্রাট দেওয়ানবাগী
(মা:আ:) তরীকা প্রচারের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ওয়াজ মাহফিল করেন। ঐ মাহফিল
গুলোতে প্রায়শ: বিভিন্ন রকমের আলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হতো এবং তার ওয়াজ শুনে মুগ্ধ হয়ে
হাজার হাজার লোক তরীকা গ্রহন করতো। সুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা:আ:) হুজুর ১৯৮৩ সালের
১৬ই ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার রহমতের সময় মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে মহান সংস্কারকের
দায়িত্ব লাভ করেন, পরবর্তীতে বিশ্বনবী হযরত রাসূল (স:) তাকে ১৯৮৯ সালের ৫ ই এপ্রিল
বুধবার রহমতের সময় ‘ইসলাম ধর্মের পূনর্জীবন কারী’ খেতাবে বিভূষিত করেন।
মোহাম্মদী ইসলাম নাম করণঃ রাসূল (সঃ) হেরা গুহায়
পনের বছর মোরাকাবা করে আল্লাহর কাছ থেকে যে ধর্ম পেয়েছিলেন সেই ধর্মকে মোহাম্মদী ইসলাম
বলে। এই ধর্মটা রাসূলের যুগ, খোলাফায়ে রাশেদার যুগ পর্যন্ত ছিল। পরবর্তীতে উমাইয়াদের
খেলাফত কালে মোহাম্মদী ইসলাম বাদ দিয়েছে দ্বীন ইসলাম প্রচারিত হয়েছে। উমাইয়ারাই দ্বীন
ইসলাম চালু করেছে।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী) হুজুরের শিক্ষাঃ
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “তারাই সফলকাম যারা
আত্মাশুদ্ধ করেছে, প্রভুর নামের জ্বিকির করে ও নামাজ কায়েম করে” (সূরা আ’লা; আয়াত-১৪
ও ১৫)। এ কারণে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা প্রধানতঃ আত্মশুদ্ধি, দীল জিন্দা ও নামাজে
হুজুরী- এ তিনটি বিষয় শিক্ষা দিয়ে মানুষকে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী করে আশেকে রাসূল
বানিয়ে থাকেন।
০১। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি আত্মাকে
পুতঃপবিত্র রাখল, সে সাফল্য লাভ করলো। আর যে ব্যক্তি আত্মাকে কলুষিত করল, সে ধ্বংস
হয়ে গেল” (সূরা শামস; আয়াত- ৯ ও ১০)। এজন্য সূফী সম্রাট হুজুর মানুষকে নিয়মিত পাঁচ
ওয়াক্ত নামাজের পর ওয়াজিফা পালনের মাধ্যমে আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জন করে আদর্শ চরিত্রবান
হওয়ার শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
০২। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “যাদের ক্বালব আল্লাহর
জ্বিকির থেকে গাফেল রয়েছে, তারা প্রকাশ্য গোমরাহ্ বা পথভ্রষ্ট” (সূরা যুমার, আয়াত-২২)।
তাই সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর মানুষকে ক্বালবে আল্লাহর জ্বিকির জারির শিক্ষা
দিয়ে গোমরাহী থেকে উদ্ধার করে ঈমানের পথে চলার শিক্ষা দেন। মহান আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ
করেন, “তোমরা যখন নামাজ শেষ কর তখন দাঁড়ানো, বসা ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর জ্বিকির
কর” (সূরা নিসা, আয়াত-১০৩)। মহান আল্লাহ্ তায়ালার এ নির্দেশ পালন করে মানুষ যাতে
সর্বসময় ক্বালবে আল্লাহর জ্বিকির জারি রেখে অজ্ঞান অবস্থায়ও ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ
করতে পারে, এজন্য তিনি মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে ক্বালবে আল্লাহর জ্বিকির জারির শিক্ষা
দেন।
০৩। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “যে নামাজে দুনিয়ার চিন্তা
আসে, সে নামাজ কবুল হয় না।” মুমিন-মুসলমানগণ যাতে দুনিয়ার চিন্তামুক্ত হয়ে একাগ্রতার
সাথে আল্লাহ্ তায়ালাকে হাজির-নাজির জেনে নামাজ আদায় করতে পারেন, তিনি সেই পদ্ধতি
শিক্ষা দেন। তাঁর নিয়ম অনুসরণ করলে মুসুল্লীদের নামাজে দুনিয়ার কোন চিন্তা আসে না।
ফলে তারা নামাজের পরিপূর্ণ ফায়েজ, বরকত ও রহমত হাসিল করতে পারেন। এমনকি কেউ কেউ “নামাজ
মুমিন ব্যক্তির জন্য মে’রাজ”- এ হাদীসের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন।
০৪। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “(হে হাবীব) আপনি বলে
দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ্ তোমাদের ভালবাসবেন
এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-৩১)। হাদীস শরীফে বর্ণিত
হয়েছে, হযরত রাসূল (সঃ) ফরমান, “যে ব্যক্তি নিজের জান-মাল, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি
যাবতীয় সব মানুষের চেয়ে আমাকে বেশি ভাল না বাসবে সে মু’মিন হতে পারবে না” (বোখারী
ও মুসলিম শরীফ)। এজন্য সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর তাঁর অনুসারীদের
হযরত রাসূল (সঃ)-এর মহব্বত হাসিল করার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৭২২ বার দরূদ শরীফ এবং
রহমতের সময় অর্থাৎ- তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত ও এ’শার ওয়াক্তের নামাজের পর মিলাদ শরীফ
পড়ার ও মোরাকাবা করার শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
০৫। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “হে মুসলমানগণ! তোমাদের
উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্বপুরুষদের উপরও রোজা ফরজ করা হয়েছিল
যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার” (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)। হাদীসে কুদছিতে মহান
আল্লাহ্ তায়ালা ফরমান, “রোজা আমার জন্য, আর আমিই তার প্রতিদান।” তাই সূফী সম্রাট হুজুর
কেবলা মানুষকে সঠিক ও নির্ভুলভাবে রোজা পালন করে আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জনের মাধ্যমে
আল্লাহর নৈকট্য লাভের শিক্ষা দেন।
০৬। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “যারা নামাজ পড়ে, যাকাত
দেয় ও পরকালে বিশ্বাস করে তারাই তাদের প্রতিপালকের পথে আছে, আর তারাই সফলকাম” (সূরা
লোকমান, আয়াত-৪ ও ৫)। এজন্য তিনি মানুষকে সঠিক ও নির্ভুলভাবে যাকাত প্রদানের শিক্ষা
দিয়ে থাকেন।
০৭। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “মানুষের মধ্যে যার
সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহে হজ্ব করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য”
(সূরা আলে ইমরান, আয়াত-৯৭)। মক্কা .মোয়াজ্জমায় গিয়ে বায়তুল্লাহ্ শরীফে হজ্ব পালনের
মাধ্যমে মানুষ মহামানবগণের পদাঙ্ক অনুসরণের শিক্ষা লাভ করে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ
(সঃ)-এর প্রদর্শিত পথে পরিচালিত হবার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হন। এজন্য সূফী সম্রাট হুজুর
তাঁর অনুসারীদের হজ্বের জাহেরী ও বাতেনী হুকুম-আহ্কামগুলো পালন করে এর পূর্ণ ফায়েজ,
বরকত ও রহমত হাসিলের শিক্ষা দেন। তাঁর শিক্ষা অনুযায়ী হজ্ব করে অনেক হাজী সাহেবান
আশেকে রাসূল হয়ে মদীনায় গিয়ে স্বপ্ন ও মোরাকাবায় হযরত রাসূল (সঃ)-এর দীদার লাভ
করে ধন্য হয়েছেন।
০৮। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “আজ আমি তোমাদের ধর্মকে
পূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের জন্য আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকেই একমাত্র
ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম” (সূরা মায়িদাহ্, আয়াত-৩)। সুতরাং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ
(সঃ) প্রবর্তিত মোহাম্মদী ইসলামে মানব জাতির ইহ ও পারলৌকিক শান্তির পথ নির্দেশনা রয়েছে।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা হযরত রাসূল (সঃ)-এর জীবন দর্শন অনুযায়ী মানুষকে এলমে শরীয়ত,
তরীকত, হাকীকত ও মারেফতের আলোকে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা দিয়ে দুনিয়া
ও আখেরাতের জীবনকে সুন্দর ও শান্তিময় করে গড়ে তুলেন। অধিকন্তু তাঁর শিক্ষা পেয়ে
আল্লাহর রহমতে মানুষ পার্থিব জীবনের রোগ-শোক, বিপদ-আপদ, বালা-মুছিবত, অভাব-অনটন থেকে
পরিত্রাণ পাচ্ছেন। এক কথায় তিনি মানবজাতিকে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে আল্লাহর
সত্যিকারের প্রতিনিধি বা ইনসানে কামেল হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছেন। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী
হুজুরের শিক্ষা লাভ করে মানুষ প্রকৃত ইসলামের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন।
সূফী সম্রাটের ধর্মীয় সংস্কারঃ
১. পৃথিবীর আদিমতম জ্ঞান রাসুল(সাঃ)-এর মৌলিক শিক্ষা
ইলমে-তাসাউফ একমাত্র সূফী-সম্রাটই জগতের বুকে তুলে ধরেছেন । আর সে লক্ষে তিনি সরকারের
কাছে প্রস্তাব করেন ইলমে-তাসাউফ ইসলামী শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। ১৯৯৬-সাল থেকে
এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় স্কুল, কলেজ, ভারসিটি-তে “ইলমে-তাসাউফ” অন্তর্ভুক্ত করেন।
২. ১৯৮২-সালের পূর্বে রবিবার সরকারি ছুটি হিসেবে চালু
ছিল যা ব্রিটিশদের উপাসনার দিন ছিল । ফলে সাধারণ মানুষ “জুমা” নামাজ পরতে পারত না ।
সূফী-সম্রাট দেওয়ানবাগী মুসলমানদের কথা চিন্তা করে শুক্রবার ছুটির দিন ঘোষণার জন্য
সরকারে কাছে আবেদন জানান । অবশেষে ১৯৮২-সালে তদানীন্তন সরকার “শুক্রবার” কে সরকারী
ছুটি ঘোষণা করেন।
৩. সারা পৃথিবীর মানুষ জানে আল-কুরআনের আয়াত ৬৬৬৬- টা।
কিন্তু সূফী- সম্রাট কুরআন গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন এতে ৬২৩৬- টি আয়াত রয়েছে। সরকার
সূফী সম্রাটের এ অভিমতের সত্যতা যাচাই করে তা মেনে নেন। এরপর “ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ”
থেকে ১৯৯৭- সাল থেকে প্রকাশিত কুরআন-শরীফের সর্বমোট ৬২৩৬-টি আয়াত আছে বলে উল্লেখ করা
হয়েছে ।
৪. আমরা ১৯৯১-সালের পূর্বে জমিনের রেজিস্ট্রেশন -এর
সময় লেখা হতো -“আমি এই জমির মালিক, আমার মালিকানা-সত্ত্ব অমুকের কাছে বিক্রি করলাম।”
সূফী সাম্রাট দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর বলেন, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”- “পরম
করুনাময় আল্লাহ্ তা-আলা আসমান ও জমিনের প্রকৃত মালিক। কাজেই আমি তাঁর (আল্লাহ্) বান্দা
হিসাবে আমার জমির দখলীয় সত্ত্ব আপনার কাছে বিক্রয় করলাম।”সরকার তাঁর এ প্রস্তাব সাদরে
গ্রহণ ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সারা দেশে তাঁর প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে জমি রেজিস্ট্রেশন
চালু করেন।
৫. আমরা জানতাম রাসুল (সাঃ)- ‘১২-ই রবিউল আওউয়াল’ জন্ম
লাভ করেছেন এবং ঐ দিনেই তিনি ওফাত লাভ করেছেন । যার কারণে আমরা এই দিনে “ফাতেহা -ই
ওয়াজ-দহম” অর্থাৎ “সিরাতুন্নবি” পালন করতাম । কিন্তু সূফী- সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর
কুরআন, হাদিস ও অকাট্য দলীল দিয়ে প্রমাণ করলেন, রাসুল (সাঃ)- ‘১২-ই রবিউল আওউয়াল’ ওফাত
লাভ করেন নাই, তিনি ‘১-লা রবিউল আওউয়াল’ ওফাত লাভ করেন। ‘১২-ই রবিউল আওউয়াল’ বিশ্ব
নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ)-এর শুভ জন্ম দিন। তিনি ঈদ-এ মিলাদুন্নবী-র গুরুত্ত তুলে ধরে
এই দিন-কে সৃষ্টি -কূলের শ্রেষ্ঠ ঈদ হিসাবে ঘোষণা করেন । পরবর্তীতে ‘১২-ই রবিউল আওউয়াল’
পবি্ত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সাঃ) জাতীয়ভাবে ধুমদামের সাথে পালিত হতে শুরু করে।
৬. ইহুদি- নাসারা’রা পবিত্র ‘ক্বাবা’ ও রাসুল (সাঃ)
-এর রওজা মুবারকের ছবি সম্বলিত ‘জায়নামাজ’ বিক্রি করে। আর মুসলমানেরা সরল বিশ্বাসে
ঐ ‘জায়নামাজ’-কে পায়ের নিচে রেখে নামাজ পরে নিজেদের ধন্য মনে করত । কিন্তু সূফী-সম্রাট
হুজুর বলেন, এই দুই পবিত্র স্থানের ছবি সম্বলিত ‘জায়নামাজ’ পায়ের নিচে রেখে নামাজ পড়া
চরম বেয়াদবী । তাঁর অভিমত অনুযায়ী “বি-টিভি” -তে এ ধরণের জায়নামাজ-এ নামাজ না পরার
পরামর্শ দেয়া হয়।
৭. সমগ্র বিশ্ব-বাসী মানুষের বদ্ধ-মূল ধারণা ছিল রাসুল(সাঃ)-গরীব
ছিলেন । তিনি ইহুদির বাগানে খেজুরের বিনিময়ে কুপ থেকে বালতি দিয়ে পানি তুলতেন, তিনি
৭০- তালি-ওয়ালা জামা পরিধান করতেন । কিন্তু সূফী-সম্রাট দেওয়ানবাগী (মাঃআঃ) হুজুর বলেন,
“পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, হে হাবিব ! আমি আপনাকে অসহায় অবস্থায় পেলাম, অতঃপর আপনাকে
সম্পদশালী করেছি।” (সূরা- দু’ হা, আয়াতঃ ৮)
হাদিস-শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসুল (সঃ) ফরমান,
“আল্লাহ্ তা-আলা পৃথিবীর যাবতীয় ধন- ভাণ্ডারের চাবি আমার হাতে দিয়েছেন ।” (বুখারি-শরীফ,মুসলিম-শরীফ)
ইতিহাস থেকে জানা যায়, হযরত রাসুল (সঃ) বিদায় হাজ্জ-এ ১০০-উট কুরবানী করেছিলেন। কুরআন,
হাদিস ও ইতিহাসের অকাট্য দলীল দিয়ে প্রমানিত হয় রাসুল(সঃ) ধনী তো ছিলেন-ই দু- জাহানের
বাদশাও ছিলেন। তিনি কখনো গরীব ছিলেন না । সূফী- সম্রাট হুজুর-কেবলার অকাট্য দলীল প্রমাণে
সমগ্র জাতি হযরত রাসুল (সঃ)- সম্পর্কে নিজেদের ভুল ধারণা সংশোধন করতে সক্ষম হয়েছেন
।
৮. মুসলমানদের জীবনে “জুমার খুৎবা” অপরিসীম। বছরের বিভিন্ন
সময়ে ভিন্ন- ভিন্ন পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের কি করনীয় রয়েছে, সে বিষয়ে সময়-উপযোগী
ও প্রয়োজনীয় উপদেশ দেয়ার উদ্দেশে শুক্রবারের যোহরের
৪-রাকাত ফরজ নামাজ-কে সংকোচিত করে ২-রাকাত ফরজ ও ২-রাকাত ফরজের পরিবর্তে “খুৎবার” বিধান
রয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় খুৎবা আমাদের দেশে আরবি ভাষায় হওয়ায় মুসল্লিগণ তা বুঝতে
পারে না, ফলে তদানুযায়ী আমল করে তা থেকে কোন উপকার লাভে ব্যথ ব্যর্থ হয় । কাজেই খুৎবার
উদ্দেশ্য সফল করার জন্য আমাদের মাতৃভাষায় খুৎবা দেওয়া অত্যন্ত জরুরী বলে সূফী-সম্রাট
দেওয়ানবাগী হুজুর অভিমত প্রকাশ করেন। তাঁর আহ্বানে বাংলাদেশের বহু মসজিদে আরবি- ভাষার
পাশাপাশি বাংলা ভাষায় “খুৎবার” দেওয়ার প্রচলন হয়েছে। ফলে মুসল্লিগণ এর মাধ্যমে “খুৎবার”
তাৎপর্য সম্পর্কে অভহিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ।
৯. কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয় আল্লাহ্ স্বয়ং ও তার
ফেরেশতারা নবীর উপরে দরূদ পাঠ করে, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও তাঁর [রাসুল (সাঃ)] উপর দরূদ
পড় ও শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করো ।” [সুরা-আয হাদ-৩৩; আয়াতঃ ৫৬]
মিলাদ জারী করাঃ একমাত্র মিলাদ মাহফিলে হযরত রাসুল
(সঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করে স্ব-শ্রদ্ধ সালাম পেশ করা হয়। অথচ আমাদের দেশে এক শ্রেণীর
লোক মিলাদ-কে বিদআত, হারাম ইতাদি বলে আখ্যায়িত করত । ফলে এ দেশে মিলাদের প্রচলন বিলুপ্ত
হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু হযরত শাহ্ দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর পবিত্র কুরআন ও হাদিস
দিয়ে মিলাদ পরা যে ফরজ, তা প্রমাণ করলেন। তাঁর পরামর্শে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে অসংখ্য
লোক রাসুল (সঃ)-এর দীদার পাচ্ছেন। ফলে সারা দেশে আশেকে-রাসুলগণ মিলাদ মাহফিল আয়োজন
করে অপরিসীম রহমত ও বরকত হাসিল করতে সক্ষম হচ্ছেন।
সামজিক কার্যক্রমঃ সুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা:আ:)
হুজুর কেবলা ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়ায় ১৯৮০ সালে একটি মাদ্রাসা, একটি এতিমখানা এবং ১৯৮২
সালে একটি হাইস্কুল, একটি হাসপাতাল এবং একটি ডাকঘর প্রতিষ্ঠা করেন। ঐ বছরই তিনি চন্দ্রপাড়ায়
মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করে সেখানে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা
করেন। তিনি ইসলামী গবেষণার জন্য ঢাকায় ১৯৮৩ সালে সুলতানিয়া -মোজাদ্দাদীয়া গবেষণাগার
, ১৯৯২ সালে সূফী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ও ১৯৯৮ সালে আল কোরান গবেষনা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা
করেন। ইসলামী আদর্শ প্রচারের লক্ষ্য তিনি ১৯৮৪ সালে ঢাকা, ১৯৮৫ সালে নারায়নগন্জ , ১৯৯৫
সালে রংপুর ও ১৯৯৭ সালে ময়মনসিংহে দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পাকিস্তান, ভারত,
আবুধাবী, জাপান, সুইডেন, আমেরিকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় শতাধিক মসজিদ ও খানকাহ
শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রকাশনাঃ তিনি ১৯৮১ সালে মাসিক ‘আত্মার বাণী’,
১৯৮৩ সালে ইংরেজী সাপ্তাহিক ‘দি উইকলি চন্দ্রপাড়া’ ১৯৮৯ সালে সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ,
১৯৯১ সালে দৈনিক ইনসানিয়াত, ১৯৯২ সালে ইংরেজী সাপ্তাহিক ‘দি মেসেজ’ প্রকাশ করেন। তিনি
ফেরকা সমস্যার সমাধান, ঈদ সমস্যার সমাধান, সন্তানের প্রতি মায়ের অধিকার, কবর ও মাজার
সম্পর্কে ইসলামের বিধান, আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজ পথ প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন। তাছাড়া
‘সুলতানিয়া খাবনামা’, ‘শান্তি কোন পথে?, ‘মুক্তি কোন পথে?’ ‘আল্লাহ কোন পথে?, এজিদের
চক্রান্তে মোহাম্মাদী ইসলাম, ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতানের জীবনী, সুফী সম্রাটের যুগান্তকারী
ধর্মীয় সংস্কার, বিশ্বনবীর স্বরুপ উদঘাটনে সুফী সম্রাট: রাসূল (স:) কি সত্যিই গরীব
ছিলেন? প্রভৃতি গবেষণা মুলক গ্রন্থ রচিত হয়। তিনি হযরত রাসূল (স:) এর আদর্শ বিশ্বময়
প্রচারের সুবিধার্থে বিশ্ব আশেকে রাসূল (স:) সংস্থা এবং আশেকে রাসূল (স:) পরিষদ গঠন
করেন।
তিনি ধর্মীয় গবেষণা করে বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ভাষায়
প্রায় ২৫টি পুস্তক প্রকাশ করেছেন।
তিনিই সারাবিশ্বের মধ্যে একমাত্র মহামানব যিনি আল্লাহর
পরিপূর্ণ পরিচয় প্রকাশ করতে ৭ খন্ড তাফসীর “তাফসীরে সুফি সম্রাট দেওয়ানবাগী” প্রকাশ
করেন।
সুলতানীয়া মোজাদ্দাদীয়া তরীকার প্রবর্তনঃ তিনি
তাসাউফ সাধনার পদ্ধতির যুগোপযোগী সংস্কার সাধন করে সুলতানীয়া মোজাদ্দাদীয়া তরীকা প্রবর্তন
করেন। তিনি বাতেনী সংস্কার করার পাশাপাশি জাহেরী সংস্কার সাধন করে বিশ্বনবী হযরত রাসুল
(স:) এর প্রকৃত আদর্শ মোহাম্মাদী ইসলাম মানব জাতির কাছে তুলে ধরেন। তিনি বিশ্ব আশেকে
রাসূল (স:) সম্মেলনের আয়োজনের মাধ্যমে মানব জাতিকে রাসুল (স:) এর আশেক বানানোর চেষ্টা
করে যাচ্ছেন। তার শিক্ষা অনুযায়ী ঘরে ঘরে মিলাদ দিয়ে অসংখ্য মানুষ আশেকে রাসূল হয়ে
স্বপ্ন ও মোরাকাবার মাধ্যমে হযরত রাসূল (স:) এর দীদার লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।
কতোটি দেশে কার্যক্রম ও মুরিদ সংখ্যাঃ বর্তমানে
দেওয়ানবাগী হুজুরের কার্যক্রম শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বের ১৩২ টি দেশে একযোগে চলছে...তার
অনুসারীর সংখ্যা সারাবিশ্বে প্রায় ৫ কোটি।
দেওয়ানবাগ দরবারের মূল ইবাদত ও আকিদ্বাহ এবং বাস্তবতা
(১) ইদে মিলাদুন্নবি দুই ইদ (ইদউল ফিতর ও ইদউল আজহা)
এর চেয়েও গরু ছাগল জবাই করে অতি জাকজমকের সহিত উৎসব পালন করা হয়।
(২) সালাত আদায়ের চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়ে যেকোনো অনুষ্ঠানে
তাদের বানানো মিলাদ-কিয়াম অতি সুমধূর সুরে পালন করা হয়।
(৩) সুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা:আ:) হুজুরকে মাথা দিয়ে
সিজদা করা হয়। তার পায়ে মুখ লাগিয়ে চুমু খাওয়া ও পায়ে সালাম করা হয়।
(৪) যেকোনো বিপদ আপদ, অসুখ বিসুখ হলে সুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী
(মা:আ:) হুজুর এর নিকট গিয়ে ব্যক্ত করলে মোটা অংকের টাকা মানত করতে বলে এবং সে মানত
তার দরবারেই দিতে হয়।
(৫) যারা সালাত আদায় করেন তারা সালাতে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ
করে সুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা:আ:) হুজুরকে ক্বলবে খেয়াল করে সালাত আদায় করে। অনেকে
সিজদার স্থানে সুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা:আ:) হুজুরকে কাল্পনিকভাবে বসিয়ে তার পায়ে
সিজদা করে। সালাতের ঘরে সুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা:আ:) হুজুর এর আকর্ষণীয় ছবি ঝুলিয়ে
রাখে। অনেকে তার ছবি বুকে নিয়ে সালাত আদায় করে। ৯০% মুরিদ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে
না। অনেকে সাওম পালন করে না।
(৬) মুরিদগণ কখনো অসুস্থ হলে তাদের বাড়িতে রাখা
“মাসিক আত্মার বাণী”-র এক কোণা পানিতে তিনবার চুবিয়ে সেই পানি বিশ্বাসের সাথে পান করে।
দরবার থেকে প্রকাশিত কোনো বই বা দরবারের কোনো কাগজ কারো ঘরে থাকলে কুরআন এর চেয়েও এরা
বেশী সম্মান করে। হাত থেকে পড়ে গেলে মুরিদেরা বলে বাবাজান মাফ করে দাও। আর সাথে সাথে
দরবারে মানত করে। তাদের বিশ্বাস বাবাজান দরবার থেকে মুরিদের সব দেখছেন। যদি বাবাজান
অসন্তুষ্ট হয় তাহলে ইহকাল পরকাল সব শেষ।
(৭) বিগত ১০ আগস্ট ২০০৮ তারিখে মুরিদগণ পূর্ণিমার
রাতে চাঁদের মাঝে সুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা:আ:) হুজুরের মুখোচ্ছবি দেখতে পায়। এরপর
থেকে প্রতি বছর পূর্ণিমার চাঁদে নাকি তার মুখোচ্ছবি ভক্তগণ দেখে আসছে। এই ঘটনার পর
সুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা:আ:) হুজুর কুরআন ও হাদিস খোঁজা শুরু করলেন যে, আল্লাহ তায়ালা
কেনো এই নিদর্শন দেখালেন। খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলেন কুরআন ও হাদিসে সে বিষয়ে লেখা আছে।
এ বিষয়ে লেখা প্রকাশিত হয়েছে “সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ” তারিখ: ২২ মার্চ ২০১৯।
তিনি প্রমাণ দেখালেন যে, সুরা আন-নামলের (২৭),
৯৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,
“হে রাসুল সাঃ! আপনি মানব জাতিকে বলে দিন,
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি অতি শীঘ্যই তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শন বা চেহারা মোবারক দেখাবেন। তখন তোমরা তাঁকে চিনতে
পারবে।”
এখানে সুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা:আ:) হুজুর
নিদর্শন বলতে চেহারা বুঝিয়েছেন। যেহেতু তাকে
চাঁদে দেখা গেছে তাই প্রমাণ করার জন্যে এখানে আয়াতের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আসলে আল্লাহ তায়ালা নিদর্শন বলতে বুঝিয়েছেন
পরবর্তী আয়াত নাজিল করা নিয়ে।
আয়াতের সরল অনুবাদ-
আর বলুন, সকল প্রশংসা আল্লাহরই (১) তিনি তোমাদেরকে
সত্বর দেখাবেন তার নিদর্শন; তখন তোমরা তা চিনতে পারবে।(২)
ব্যাখ্যাটি এমন হবেঃ
(১)
অর্থাৎ এজন্যই আল্লাহর প্রশংসা যে, তিনি কারও বিপক্ষে প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত না করে শাস্তি
দেন না। অনুরূপভাবে কাউকে ওযর পেশ করার সুযোগ শেষ করা পর্যন্ত আযাব নাযিল করেন না।
আর সে জন্যই তিনি তাঁর আয়াতসমূহ নাযিল করবেন। যাতে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে বলতে না পারে
যে, আমাদের কাছে আয়াত আসলে তো আমরা ঈমান আনতাম। [দেখুন: ইবন কাসীর]।
(২) যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন,
অচিরেই আমরা তাদেরকে আমাদের নিদর্শনাবলী দেখাব, বিশ্ব জগতের প্রান্তসমূহে এবং তাদের
নিজেদের মধ্যে; যাতে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, অবশ্যই এটা (কুরআন) সত্য।”
[সূরা ফুসসিলাত: ৫৩]
দেওয়াবাগী সুরা হা মীম সাজদা-৪১, আয়াত নং ৫৩
এর অপব্যাখ্যা কেরেও প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। যেমনঃ
“হে রাসুল সাঃ! আপনি মানব জাতিকে বলে দিন-আল্লাহ
শীঘ্রই তোমাদেরকে তাঁ চেহারা মোবারক আকাশে (চাঁদে) এবং তোমাদের (ক্বলবের সপ্তম স্তর)
নাফসীর মোকামে দেখাবেন। ফলে মানুষের কাছে প্রমাণিত হবে, তিনি যে, আল্লাহ: শ্চিয়ই এটি
সত্য। আর সর্ব বিষয়ের সাক্ষী হিসেবে আপনার প্রতিপালকই যথেষ্ট”।
উক্ত আয়াতের সরল অনুবাদ ও ব্যাখ্যাঃ
(৫৩) আমি ওদের জন্য আমার নিদর্শনাবলী বিশ্বজগতে
ব্যক্ত করব এবং ওদের নিজেদের মধ্যেও; ফলে ওদের নিকট স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, এ (কুরআন)
সত্য।[1] এ কি যথেষ্ট নয় যে, তোমার প্রতিপালক সর্ববিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী? [2]
[1]
যার দ্বারা কুরআনের সত্যতা এবং এটা যে আল্লাহর পক্ষ হতে আগত, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ,
أنه
তে সর্বনামটি কুরআনের প্রতি ইঙ্গিত করে। কেউ কেউ বলেন, তা ইসলাম অথবা রসূল (সাঃ)-এর
প্রতি ইঙ্গিত করে। সকল ক্ষেত্রেই অর্থের নিগূঢ়ত্ব একই। آفاق শব্দটি أفق এর বহুবচন, অর্থ হল কিনারা
(দিকচক্রবাল)। উদ্দেশ্য হল, আমি নিজ নিদর্শনাবলী বিশ্বজাহানের দিকচক্রবালেও দেখাবো,
আর মানুষের নিজ দেহের ভিতরেও। কেননা, আকাশ ও পৃথিবীর প্রান্তে-প্রান্তেও কুদরতের বড়
বড় নিদর্শন বিদ্যমান রয়েছে। যেমন, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, দিবারাত্রি, বৃষ্টি,
বজ্র, বিদ্যুৎ, উদ্ভিদ, জড় পদার্থ, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা ও সমুদ্র প্রভৃতি। ‘নিজেদের
মধ্যে’ বলতে যে সকল মিশ্রিত উপাদান ও পদার্থ দ্বারা মানুষের অস্তিত্ব ও কাঠামো গঠিত
তাই উদ্দেশ্য; যার বিস্তারিত বিবরণ চিকিৎসা-বিজ্ঞানের একটি চিত্তাকর্ষী বিষয়। কেউ কেউ
বলেন যে, آفاق
(দিকচক্রবাল) থেকে পূর্ব ও পশ্চিমের সেই দূর-দূরান্ত এলাকা উদ্দেশ্য, যা জয় করা মুসলিমদের
জন্য আল্লাহ সহজ করে দিয়েছিলেন। আর أنفس
(নিজেদের মধ্যে) থেকে নিজেদের আরব্য ভূমির উপর মুসলিমদের উন্নতি ও সাফল্য উদ্দেশ্য।
যেমন, বদর যুদ্ধ, মক্কা বিজয় প্রভৃতিতে মুসলিমদেরকে প্রভূত সম্মান ও মর্যাদা দান করা
হয়েছে।
[2]
এ প্রশ্ন হল স্বীকৃতিসূচক। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা নিজ বান্দার কথা ও কর্মের সাক্ষী থাকার
জন্য যথেষ্ট। আর তিনিই এ কথার সাক্ষ্য দেন যে, কুরআন আল্লাহর বাণী, যা তাঁর সত্য রসূল
মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে।
দেওয়ানবাগী হাদিসের মধ্যেও ভেজাল ঢুকিয়েছেন।
নিচের হাদিসটি হলো আসরের সালাতের ফযীলত সম্পর্কে। তিনি এখানেও প্রতিপালকের পাশে লিখেছেন
আল্লাহর চেহারা মোবারক।
৫২৭। হুমাইদী (রহঃ) ... জরীর ইবনু আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে (পূর্ণিমার) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ ঐ চাঁদকে তোমরা যেমন
দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন
ভীড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই সূর্য উদয়ের এবং অস্ত যাওয়ার আগের সালাত (নামায/নামাজ)
(শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে) আদায় করতে পারলে তোমরা তাই করবে। তারপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত
পাঠ করলেন, “কাজেই তোমার প্রতিপালকের প্রশ্নংসার তাসবীহ্ পাঠ কর সূর্য উদয়ের আগে ও
অস্ত যওয়ার আগে।” (৫০ : ৩৯)
ইসমাঈল (রহঃ) বলেন,
এর অর্থ হলঃ এমনভাবে আদায় করার চেষ্টা করবে যেন কখনো ছুটে না যায়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) বর্ণনাকারীঃ জারীর
ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজলী (রাঃ), সহীহ বুখারী
(ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।
এরকম আরো অনেক হাদিস উল্লেখ করে প্রমাণ করেছেন
যে, এটা আল্লাহর চেহারা মোবারক দেওয়ানবাগীর মাধ্যম দিয়ে পূর্ণিমার রাতে চাঁদের মাঝে
নাকি প্রকাশ করেছেন। বিস্তারিত জানতে চাইলে ২২ মার্চ ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত “সাপ্তাহিক
দেওয়ানবাগ” দেখুন। এই পত্রিকাটি বছরে কয়েক লক্ষ সংখ্যা তার মুরিদের মাঝে বিক্রি হয়।
এটা ইনকামের একটা বড় সোর্স।
উক্ত পত্রিকায় তিনি মুরিদদেরকে বুঝে দিয়েছেন
যে, চাঁদে যাকে দেখা গেছে আসলে তিনি দেওয়ানবাগী নন। তিনি আল্লাহ তায়ালা। এই বিষয়টি
এভাবে বোঝার কারণে সেই দিন থেকে দেওয়ানবাগীকে তারা মনে মনে আল্লাহ ভাবা শুরু করে। উক্ত
পত্রিকায় আরো লিখেছেন যে,এটা ইমাম মাহদীর মুখোচ্ছবি। তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন, তিনিই ইমাম
মাহদী। এ প্রসঙ্গে উক্ত পত্রিকায় একাট হাদিসও উল্লেখ করেছেন।
যাই হোক, দেওয়ানবাগী ও তার মুরিদগণ পূর্বে
ইদে মিলাদুন্নবি খুবই জাঁকজমক করে পালন করতো। চাঁদের ঘটনার পর থেকে তারা প্রতি বছর
পূর্ণিমার রাতে “আল্লাহর দেয়া পুরুস্কার: পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি” নাম দিয়ে বড় ধরণের
অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দুই রাকাত শোকরানা নফল সালাত আদায় করে।
এই দুই রাকাত শোকরানা নফল সালাত প্রতি মাসের পূর্ণিমার রাতে সকল ভক্তরা পালন করে থাকে।
দুই রাকাত শোকরানা নফল সালাত এর পর শুরু হয় মিলাদ কিয়াম ও আলোচনা। এই হচ্ছে তাদের মূল
ইবাদত।
(৮) দেওয়ানবাগ দরবারে বাদ্যযন্ত্রসহ সুফিতত্ত্বমূলক
অনেক অডিও ও ভিডি ক্যাসেট কিনতে পাওয়া যায়।
এসব গান পুরুষ ও মহিলা কন্ঠে গাওয়া। পিরের মতে বাদ্যযন্ত্রসহ গান গাওয়া জায়েজ। দেখতে
চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন। “দেওয়ানবাগীর বাদ্যযন্ত্রের গান”
(৯) ২২ মার্চ ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত “সাপ্তাহিক
দেওয়ানবাগ” পত্রিকার প্রথম পাতার শেষ লাইনে লেখা আছে, দুনিয়াতে আল্লাহর দীদার লাভ সম্ভব;
আল্লাহকে দুনিয়াতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে কুরআনের ৩০টি আয়াত ও ১৬২টি হাদিস দিয়ে প্রমাণ
করেছেন। তার এই প্রমাণের কারণে সালাত, সাওম পালন করে না এমন মুরিদও বলে, সে যেদিকে তাকায় সেদিকেই নাকি আল্লাহকে দেখতে পায়। এ বিষয়ে
এক মুরিদকে বললাম, ভাই আপনি দেখছেন কিন্তু আমি তো দেখতে পাচ্ছি না। উত্তরে বলল, আপনার
ক্বলব পরিস্কার নাই, আপনার নফস ঠিক নাই। যে মুরিদ এই কথা বলছে, আমি জানি সে ফরজ গোসল
সঠিকভাবে করার নিয়মই জানে না। আর সে নাকি সব সময় আল্লাহকে দেখে।
ওহে মুসলমান- আপনাদের বলছি, বলুন তো এরা কাকে দেখে?
(১০) সুফি সম্রাট দেওয়ানবাগীর স্ত্রী কুতুবুল আকতাবের মাজারে সিজদা
দেয়াঃ ঢাকার দক্ষিণ কমলাপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের
পেছনে দেওয়ানবাগ দরবার শরিফের বাবা মদিনায় আড়াই বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে উটের খামার।
এই খামারের পাশেই শায়িত আছেন দেওয়ানবাগীর স্ত্রী হামিদা বেগম। সুফি সম্রাট দেওয়ানবাগী
তার স্ত্রীকে কুতুবুল আকতাবের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। অনেকেই কুতুবুল আকতাব শব্দটির সাথে
পরিচিত না। আসুন জেনে নেই পিরদের কিছু পরিভাষা।
‘তাসাউফ” বা সুফি শাস্ত্রে অসংখ্য পরিভাষা প্রচলিত। সকলের নিকট তা সহজ
বোধগম্য নয়। বিভিন্ন বিষয়েরও নানা শ্রেণী রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আওলিয়ায়ে কেরামের শ্রেণী
বিভাগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে আওলিয়া ভক্ত-অনুসারী যারা,
তারা ছাড়াও বিশেষভাবে আলেম সমাজের নিকট আওলিয়ার শ্রেণী বিভাগ অবগত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়।
সুফিয়ায়ে কেরামের পরিভাষায় এরূপ
আওলিয়ায়কে বারো শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে, যা এই: ‘আকতাব, গাওস, ইমামাইন, আওতাদ, আবদাল,
আখইয়ার, আবরার, নোকাবা, নোজাবা, আমদ, মকতুবান, মোফরাদ।’ এসব মহান ব্যক্তিত্বের পরিচয়:
আকতাব: কুতুবের বহুবচন। কুতুবে আলম বা বিশ্ব কুতুব একজন হয়ে থাকেন।
এর আরো কয়েকটি নাম যথা: কুতুবে
আকবর, কুতুবুল এরশাদ, কুতুবুল আকতাব ও কুতুবুল মাদার। গায়েবী জগতে তার নাম আবদুল্লাহ।
তার দুই জন উজির হয়ে থাকেন, তাদের ডানের উজিরের নাম আবদুল মালেক এবং বামের উজিরের নাম
আবদুল রব। এ দুই জন ইমামাইন নামে পরিচিত। বর্ণিত গণ ব্যতীত আরো বারো জন কুতুব হয়ে থাকেন।
তাদের মধ্যে সাতজন দুনিয়ার সাতটি
অঞ্চলে বাস করেন এবং তাদেরকে বলা হয় ‘কুতুবে একলেমী” বা আঞ্চলিক কুতুব। বাকি পাঁচজন
অবস্থান করেন ইয়েমেনে। তারা ‘কুতুবে বেলায়েত’ নামে খ্যাত। এটি কুতুবদের সংখ্যা, তবে অনির্দিষ্ট কুতুব একজন করে প্রত্যেক
শহরে এবং প্রত্যেক গ্রামে হয়ে থাকেন।
গাওস: একজনই গাওস হয়ে থাকেন। কেউ কেউ
কুতুল আকতাবকেই গাওস বলেছেন। কেউ তাকে ভিন্ন বলেছেন এবং তিনি মক্কায় থাকেন। এতে কারো
কারো মতভেদ রয়েছে।
আওতাদ : দুনিয়ার চার কোণে অবস্থানকারী
চারজনের নাম আওতাদ। এদেরকে বলা হয় ‘রোকন” বা স্তম্ভ।
আবদাল : এদের সংখ্যা চল্লিশজন।
বাইশ অথবা বারোজন সিরিয়ায় অবস্থান করেন এবং আঠারো বা আঠাইশজন ইরাকে থাকেন।
আখইয়ার : এদের সংখ্যা পাঁচশ’বা সাতশ। তারা এক স্থানে অবস্থান
করেন না, নানা স্থানে ঘুরে বেড়ান পর্যটকের ন্যায়। তাদের নাম হয় হোসাঈন।
আবরার : অধিকাংশের মতে আবদালকে
আবরার বলা হয়।
নোকাবা : এরা সংখ্যায় তিনশ’এবং সবাই আরব দেশে থাকেন। এদের
সকলের নাম আলী।
নোজাবা : এদের সংখ্যা সত্তরজন এবং
সবাই মিসরে থাকেন এবং সকলের নাম হাসান।
আমদ : চারজন আমদ হয়ে থাকেন দুনিয়ার
চারদিকে অবস্থান করেন এবং সকলের নাম মোহাম্মদ।
ফর্দ : গাওসের স্তর উন্নীত হয়ে ফর্দে
পরিণত হয় এবং আরো উন্নীত হয়ে কুতুবে ওয়াহদাত হয়।
মকতুম: মকতুম একই অবস্থায় সব স্থানেই
থাকেন। (হজরত থানভী (রহ:) কৃত তালীমুদ্দীন)
এ রূহানী মণীষীগণ সাধারণ লোকের
অগোচরে থাকলেও প্রকৃত সাধকগণ তাদেরকে চেনেন। তাদের অবর্তমানে অন্যরা যথার্থভাবে তাদের
স্থলাভিষিক্ত হয়ে থাকেন এবং বলা হয়ে থাকে, এ রূহানী সাধকরাই প্রকৃতপক্ষে দুনিয়ার নেপথ্য
চালিকা শক্তি হিসেবে বিরাজ করে থাকেন।
উক্ত লেখাটি ১২ মার্চ, ২০২০
তারিখে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় “রূহানী সাধকরাই দুনিয়ার নেপথ্য শাসক” শিরোনামে প্রকাশিত থেকে নেয়া।
সুফি সম্রাট দেওয়ানবাগীর স্ত্রী যে জমিতে শায়িত সেই জমি নিয়ে গন্ডগোল
বিদ্যমানঃ
খবরে প্রকাশিত অংশ থেকে নেয়াঃ
"তথাকথিত ছুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী
পীর জাল দলিলের মাধ্যমে জোর পূর্বক কয়েক কোটি টাকার জমি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ
করেছেন জমির প্রকৃত মালিক আব্দুল গফুর। গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি
মিলনায়তনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এই অভিযোগকরেন। এ সময় উপস্থিত
ছিলেন তার ছেলে মহিদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে তিনি
বলেন, ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের পিছনে ১৪২/১ দক্ষিণ কমলাপুরে ৮০ শতাংশ ভূমি ক্রয়
করে। জমিটি ক্রয়ের পর থেকেই তথাকথিত পীর দেওয়ানবাগী তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দখলের
পাঁয়তারা করে আসছিল। ভন্ডপীর দেওয়ানবাগীর সন্ত্রাসী বাহিনী গত ২০০২ সালে রাতের অন্ধকারে
বাড়ির ভাড়াটিয়াদের জোর পূর্বক বের করে জমিটি দখল করে নেয়। ভূমি অফিসের কিছু অসাধু অফিসারে
সাথে অবৈধ লেনদেন করে তিনি কাগজপত্র তৈরি করেন। জমি দখলের বিরুদ্ধে জজ কোর্টে মামলা
করলে কোর্ট গত ২০০৩ সালে স্থগিতাদেশ প্রদান করে। উল্লেখ্য যে দেয়ানবাগী ও তার সন্ত্রাসীচক্র
উক্ত বাড়িতে বর্তমানে উটের খামার করে। এখন নিয়মিত শতাধিক সন্ত্রাসী সেখানে অবস্থান
করে। তার সন্ত্রাসী বাহিনী মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য নিয়মিত মোবাইলে হুমকি দিয়ে আসছে।
এ ব্যাপারে মতিঝিল থানায় একাধিক
জিডি করা হয়েছে। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, উক্ত জমির উপর আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার
পরেও গত ১৪ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রীকে সমাধি করা হয়। তার পালিত সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ
মুখ খুলতে সাহস পায় না। তিনিমতিঝিল ও আরামবাগ এলাকায় একাধিক বাড়ি দখল করে নিয়েছেন।
তাই জমি ফেরত পেতে জমির প্রকৃত মালিক আব্দুল গফুর প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন।
যাই হোক এমনি এক বিতর্কিত জমিতে
গড়ে উঠেছে কুতুবুল আকতাবের মাজার। সেখানে প্রতিদিন ভক্ত বা আশেকে রাসুলগণ আসছেন আর
পরম শ্রদ্ধার সাথে মাজারে লুটিয়ে পড়ে সিজদা করছে। অনেকে দয়াল মা, দয়াল মা বলে কাঁদতে
কাঁদতে বেহুঁশ। মাজারটি অনেক উঁচু ও খুবিই জাঁকজমক করে বানানো। মনে হয় স্বর্ণ খচিত
একটি দ্বীপ।
(১১) দরবারের পাহাড়াদার বা সেবকঃ দেওয়ানবাগী দরবার ও উটের খামার মেসে সব সময় যুবকদের একটা গ্যাং থাকে।
এরা পালাক্রমে দরবার পাহাড়া দেয়। অনেকে দূর দূরান্তর থেকে এসেও দরবার পাহাড়া দেয়। এরা
মনে করে এখানে একটু খেদমত করতে পারলে বাবা খুশি, বাবা খুশি তো রাসুল সাঃ খুশি এরপর
আল্লাহ খুশি তারপর জান্নাত। কিন্তু ৯৭% পাহাড়াদার সালাত আদায় করে না। রমজানে সাওম পালন
করে না। এই দরবারে কেউ এসে উল্টা পাল্টা কথা বললে সাথে সাথে সে গুম হবে। মেরে তক্তা
বানিয়ে দেয় এই সন্ত্রাসী দলটি। প্রশাসনও কিছু বলে না।
(১২) মানতের পরিমানঃ কেউ বিপদে
পড়ে এখানে এলে প্রথম কথা হচ্ছে মানত করো। কাজ না হলে আবার এলে বলবে মানতের পরিমান বাড়াও।
এভাবে অনেকে বাড়াতে বাড়তে বাড়ি ভিটা সব শেষ। মানতের পুরো টাকাই এই দরবারে দিতে হয়।
পুরষদের জন্যে দয়াল বাবা বলে দেন। আর মহিলাদের জন্যে তার মেয়ে বলে দেন। তবে এখানে নারী
পুরুষের মেলামেশা নেই। সব আলাদা।
(১৩) তাফসীরে সুফি সম্রাট দেওয়ানবাগীঃ সুফি সম্রাট দেওয়ানবাগী কয়েক বছর ধরে অনেক সাধনা করে আট খন্ডে “তাফসীরে
সুফি সম্রাট দেওয়ানবাগী” লিখেছেন। বর্তমানে উক্ত তাফসির প্রত্যেক আশেকে রাসুলগণের ঘরে ঘরে।
এই তাফসির লেখা হয়েছে সম্পূর্ণ তাসাউফ ভিত্তিতে। কুরআন ও হাদিসকে অন্য জায়গা থেকে টেনেই
দরবারে এনে ঢুকিয়েছে। এমনিভাবে অপব্যাখ্যা করে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেই পড়বে তার বাবারও
শক্তি নেই যুক্তি খন্ডন করার।
সাধারণ লোক এসবের ভেদ বুঝতেই
পারবে না। ফলে তারা অকপটে বিশ্বাস করবে। খুব উচ্চ পর্যায়ের একডজন আলেম এই তাফসিরের
অপব্যাখ্যার জবাব লিখতে কয়েক বছর লেগে যাবে। তাই সাধারণ মুসলমানদের এই তাফসীর পড়া থেকে
বিরত থাকতে হবে। জাল-জইফ হাদিসে ভরপুর তাদের রচিত বইগুলো।
এই দরবার থেকে প্রকাশিত বই, দেওয়ানবাগীর ছবি, সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগী, মাসিক
আত্মার বাণী ও গানের অডিও-ভিডি ক্যাসেট যে পরিমাণ বিক্রি হয় তা দিয়েই এদের বংশ পরম্পরা
চলে যাবে। মানতের লক্ষ লক্ষ টাকা তো আছেই। এখানে আবার কয়েক ধরণের দান বাক্স আছে।
(১৪) কারামত বা অলৌকিক ঘটনাবলীঃ এই
দরবারে বা দরবারের সাথে জড়িত আশেকে রাসুলগণের প্রতিদিন শত শত অলৌকিক ঘটনা ঘটে থাকে।
বিশ্বাস না হলে তাদের প্রকাশিত “সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ ও মাসিক আত্মার বাণী” পত্রিকার শেষে দেখুন। সেখানে
নাম ঠিকানাসহ অলৌকিক ঘটনাবলী বর্ণিত আছে।
(১৫) সুফি সম্রাট দেওয়াবাগীকে যে র্যাংরক দেয়া হয়েছে তা কোনো নবি-রাসুলকেও দেয়া
হয়নিঃ দেওয়াবাগীর ছেলে আরসাম কুদরত-এ-খোদা বলেছেন, বাবাজানকে যে র্যাং ক দেয়া হয়েছে
তা দুনিয়াতে কোনো অলি-আল্লাহ ও নবি রাসুলকে এতো উচ্চ র্যাং ক দেন নাই। দেওয়ানবাগীর
একটি ভিডিওতে দেখা গেলো তিনি নিজেও বলছেন , আমাকে যে র্যাং ক দেয়া হয়েছে, কার সাধ্য
আছে তা কেড়ে নিতে, কার এতো যোগ্যতা আছে, আসুক দেখি।
(১৬) আশেকে রাসুল নামকরণঃ পৃথিবীতে
হাজার হাজার পির-অলি আছে। তাদের যারা অনুসারী বা ভক্ত সাধারনত তাদেরকে মুরিদ নামে ডাকা
হয়। একমাত্র দেওয়ানবাগীর অনুসারীদেরকে আশেকে রাসুল বলা হয়। যারা বয়স্ক তারা নামের আগে
সব সময় আশেকে রাসুল লেখা হয়। আর তাদের সন্তানগণ নামের আগে ইংলিশে AR লেখে। এদের প্রত্যেকের
সার্টিফিকেটে নামের আগে AR লেখা আছে। তাছাড়া
দরবার থেকে আশেকে রাসুল এর একটি সার্টিফিকেট বা আইডি কার্ড দেয়া হয়েছে। এখানে ইসলামের
মৌলিক ইবাদত না করে যারা দরবারের যতো বেশী দালালী করবে বা সেবা দিবে আশেকে রাসুল হিসেবে
তার মর্যাদা ততো বেশী। আমি খুব কাছে থেকে দেখে আসছি যারা আশেকে রাসুল তাদের ৯৭% লোক
সালাত আদায় করে না। জুমার সালাত পর্যন্ত আদায় করে না। এদের একটাই বিশ্বাস সব কিছু বাবাজান
পার করবে। তার এতো কাজ করে যাচ্ছি তিনি কি দেখছেন না। আর তিনিই তো স্বয়ং আল্লাহ। তারই
তো খেদমত করছি। নাউজুবিল্লাহ।
(১৭) বিশ্ব আশেকে রাসুল (সাঃ) সম্মেলনঃ রাজধানীর মতিঝিল আরামবাগের বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরিফে প্রতি বছর বিশ্ব
আশেকে রাসূল (স.) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পীরানে পীর, দস্তগীর, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া-মোজাদ্দেদিয়া
তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর জন্ম বার্ষিকী স্মরণে মহান
সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনঃজীবনদানকারী সুফি সম্রাট হজরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা
দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলার আহ্বানে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উক্ত সম্মেলনে
লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুলগণের সমাগম হয়। এই দিনটি সাধারণত শুক্রবার হয়। তাদের ওয়াজ শেষ
হতে হতে প্রায় বিকেল তিনটা বাজে। তারপর শুক্রবারের সালাত আদায় করা হয় খুব দ্রততার সাথে।
খোতবায় তারা পিরদের বেশী গুণ গান করা হয়। এই দিনেই তাদের কোটি কোটি টাকা ইনকাম হয়।
আশেকদের জন্যে পোলাও পাকানো হয়। তার জন্যে আগে টাকা দিয়ে একটি টিকেট কাটতে হয়। টিকিটের
মূল্য সর্বনিম্ন ২০ টাকা। কেউ ১০ টাকা দিতে চাইলে তাকে টিকেট দেয়া হয় না। তাদের বিশ্বাস
এই দিনের সম্মেলনে মিলাদ কিয়াম শুরু হলে স্বযং আল্লাহ তার ফেরেশ্তাদের নিয়ে হাজির হোন।
রাসুল সাঃও নাকি হাজির হোন। তাই সকলে দাঁড়িয়ে পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তিসহকারে মিলাদ কিয়াম
পাঠ করে। মিলাদ কিয়াম চলাকালীন অনেকে বাবা বলে চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমি
খোঁজ নিয়ে দেখেছি এই লোকটা পেশাব করে পানি নেয় না। অনেককে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিগারেট
টানতে দেখেছি।
(১৮) ওয়াজিফা আমলের বইঃ আশেকে রাসুলগণ ইসলামের সকল ইবাদত বাদ দিয়ে এই বইয়ে
যা আছে তাই এরা পালন করে। এর বাহিরে কোনো কিছুই পালন করে না। এই বইয়ে এদের নিজেস্ব
বানানো কিছু দরুদ আছে। যারা সালাত আদায় করে তারা দরুদে ইব্রাহিমের পরিবর্তে এই দরুদ
পাঠ করে। এছাড়া দৈনন্দিন কিছু আমল আছে সেই আমলগুলো গুরুত্বসহকারে পালন করে। একটা দরুদ
আছে যেটা দৈনিক ৫০০ বার পাঠ করে।
(১৯) মাসিক আত্মার বাণীর প্রশ্নোত্তর অধ্যায়ঃ অনেকে প্রশ্ন পাঠায় যা মাসিক আত্মার বাণীতে প্রশ্নোত্তর অধ্যায়ে ছাপা
হয়। তাদের প্রত্যেক উত্তর কুরআন-হাদিসের উদ্ধৃতি দিলেও কথায় কথায় দরবারে আসতে হবে।
মহামানবের সান্নিধ্য লাভ করতে হবে। তানাহলে ফল পাওয়া যাবে না। জুলাই ২০১৯ সংখ্যা মাসিক
আত্মার বাণী, ৪৫ পৃষ্ঠার ৫ নং প্রশ্ন হচ্ছেঃ
প্রশ্নঃ আমি নামাজে দাঁড়ালেই মনে নানাবিধ চিন্তা এসে দেখা দেয়, এর হাত
থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি?
দরবারের উত্তরঃ নামাজ হচ্ছে
ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ। এই নামাজ একাগ্রচিত্তে একমাত্র আল্লাহর
উদ্দেশ্যে আদায় করতে হবে। নামাজে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর স্মরণ হলে
তা শিরকের অন্তর্ভুক্ত হয়। হাদীস শরীফে আছে-“লা সালাতা ইল্লা বি হুজুবিল ক্বালবী” অর্থাৎ হুজুরী দিল বা একাগ্রতা
বিহনে নামাজ হয় না। সুতরাং নামাজে একাগ্রতা সৃষ্টি করতে হলে একজন খাঁটি অলী-আল্লাহর
সান্নিধ্যে লাভ করা একান্ত জরুরী। কেননা, অলী-আল্লাহর আশ্রয়ে থাকলে শয়তান কুমন্ত্রণা
দিয়ে নামাজ নষ্ট করতে পারে না। তাই নামাজের মধ্যে নানাবিধ চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে
হলে অবশ্যই কোন একজন অলী-আল্লাহর কাছে বায়াত গ্রহণ করা একান্ত অপরিহার্য।
প্রিয় পাঠকঃ এরা নিজেরাই বলছে সালাতে
কারো খেয়াল আসলে তা শিরক হবে। কিন্তু বাস্তবে এরাই সালাতে এদের বাবাজানকে ক্বলবে স্মরণ
করে সালাত আদায় করে। আর সালাতে নানাবিধ চিন্তা আসলে হাদিসের আলোকে জবাব না দিয়ে তাদের
বাবাজানের নিকট বায়াত গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এখন আসি এমর সমস্যায় রাসুল সাঃ কি সমাধান দিয়েছেনঃ
‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, যা আল্লাহ তাআলা (বান্দার জন্য) ফারয
করেছেন। যে ব্যক্তি এ সলাতের জন্য ভালভাবে উযূ করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকূ
ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে
দিবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে
পারেন আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। [৫৮৩] মালিক এবং নাসায়ী অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
সহীহ : আহমাদ ২২৭০৪, আবূ দাঊদ ৪২৫, মালিক ১৪, নাসায়ী ৪৬১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৭০, মিশকাতুল
মাসাবিহ-হাদিস নং-৫৭০। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ এমন লোকও আছে (যারা সালাত আদায়
করা সত্ত্বেও সালাতের রুকুন ও শর্তগুলো সঠিকভাবে আদায় না করায় এবং সালাতে পরিপূর্ণ
একাগ্রতা ও খুশু-খুযু না থাকায় তারা সালাতের পরিপূর্ন সাওয়াব পায় না)। বরং তারা দশ
ভাগের এক ভাগ, নয় ভাগের এক ভাগ, আট ভাগের এক ভাগ, সাত ভাগের এক ভাগ, ছয় ভাগের এক ভাগ,
পাঁচ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ, বা অর্ধাংশ সাওয়াব প্রাপ্ত
হয়। (আবূ দাঊদ ৭৯৬নং,, হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।
আবুদ্ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতে দাঁড়ালেন। আমরা তাঁকে সলাতে “আঊযুবিল্লাহ-হি মিনকা”পরতে শুনলাম। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার বললেন, “আমি তোমাদের ওপর অভিশাপ করছি, আল্লাহর অভিশাপ
দ্বারা”। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত প্রশস্ত করলেন, যেন তিনি কোন জিনিস নিচ্ছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাত শেষ করলেন তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল। আজ আমরা
আপনাকে সলাতে এমন কথা বলতে শুনলাম যা এর পূর্বে আর কখনো বলতে শুনিনি। আর আজ আমরা আপনাকে
হাত বিস্তার করতেও দেখেছি। জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহর
শত্রু ইবলীস আমার চেহারায় নিক্ষেপ করার জন্যে আগুনের টুকরা হাতে করে নিয়ে এসেছিল। তখন
আমি তিনবার বলেছিলাম, “আঊযুবিল্লাহ-হি মিনকা” (আমি আল্লাহর কাছে তোমার শত্রুতা হতে আশ্রয় চাই)। এরপর আমি বলেছি,
আমি তোমার ওপর অভিশাপ বর্ষণ করছি, আল্লাহর সম্পূর্ণ লানত দ্বারা। এতে সে দূরে সরেনি।
তারপর আমি তাকে ধরতে ইচ্ছা করলাম। আল্লাহর শপথ! যদি আমার ভাই সুলায়মান (আঃ)-এর দুআ
না থাকত তাহলে (সে মাসজিদের খাম্বায়) ভোর পর্যন্ত বাঁধা থাকত। আর মাদীনার শিশু-বাচ্চারা
একে নিয়ে খেলতো। সহীহ : মুসলিম ৫৪২, নাসায়ী
১২১৫, মিশকাতুল মাসাবিহ-হাদিস নং-১০১২।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর আশ্রয়
প্রার্থনা করো।” (সূরা আরাফ: ২০০)
সালাতের মধ্যে আল্লাহর ধ্যানমগ্ন
হওয়া আবশ্যক। কিন্তু এখানেও শয়তান বসে নেই। তাও বিশেষ নামধারী শয়তান। উসমান বিন আবুল
আস নবী সা. এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার ও আমার সালাত
এবং ক্বিরাআতের মাঝে অন্তরাল ও গোলমাল সৃষ্টি করে। (বাঁচার উপায় কী?) তিনি বললেন, ওটা
হলো খিনযাব নামক এক শয়তান। সুতরাং ঐরূপ অনুভব করলে তুমি আল্লাহর নিকট ওর থেকে আশ্রয়
প্রার্থনা করো (তথা এসময় আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম পাঠ করতে হবে) এবং তোমার
বাম দিকে ৩ বার থুথু ফেলো। উসমান রা. বলেন, এরূপ করলে আল্লাহ আমার নিকট থেকে শয়তানের
ঐ কুমন্ত্রনা দূর করে দেন। (মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৬৯)
অন্য এক হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রাহ্
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : সলাতের জন্য আযান দিতে থাকলে শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায়
ও বায়ু ছাড়তে থাকে, যাতে আযানের শব্দ তার কানে না পৌঁছে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে ফিরে
আসে। আবার যখন ইক্বামাত শুরু হয় পিঠ ফিরিয়ে পালাতে থাকে। ইক্বামাত শেষ হলে আবার ফিরে
আসে। সলাতে মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি করতে তাকে। সে বলে, অমুক বিষয় স্মরণ কর। অমুক বিষয়
স্মরণ কর। যেসব বিষয় তার মনে ছিল না সব তখন তার মনে পড়ে যায়। পরিশেষে মানুষ অবচেতন
হয় আর বলতে পারে না কত রাক্আত সলাত আদায় করা হয়েছে। মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং-৬৫৫,
সহীহ : বুখারী ৬০৮, মুসলিম ৩৮৯, আবূ দাঊদ ৫১৬, নাসায়ী ৫৭০, আহমাদ ৯৯৩১, সহীহ আল জামি‘, হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
শয়তান পিছনের বিষয় স্মরণ করিয়ে
দিলে উপকার হয়। এ বিষয়ে হাসান বিন সালেহ বলেছেন, মানুষের জন্য একটি মাত্র অকল্যাণের
দরজা খোলার জন্য শয়তান তার জন্য ৯৯ টি কল্যাণের দরজা খুলে দেয়। (তালবীসু ইবলিস ১/৫১)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা কাতারগুলি সোজা করে নাও। পরস্পর বাহুমূলে বাহুমূল
মিলিয়ে নাও। (কাতারের) ফাঁক বন্ধ করে নাও। তোমাদের ভাইদের জন্য হাতের বাজু নরম করে
দাও। আর শয়তানের জন্য ফাঁক ছেড়ো না। (মনে রাখবে,) যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহ
তার সাথে মিল রাখবেন, আর যে ব্যক্তি কাতার ছিন্ন করবে (মানে কাতারে ফাঁক রাখবে), আল্লাহও
তার সাথে (সম্পর্ক) ছিন্ন করবেন।” (আবূ দাঊদ ৬৬৬নং, বিশুদ্ধ সূত্রে)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
প্রিয় পাঠকঃ হাদিস থেকে জানা যায়,
সালাতে শয়তান কুমন্ত্রণা দিবে আর সে জন্যে নানাবিধ চিন্তা ভাবনা আসবে এটাই স্বাভাবিক।
যেমন, এক ব্যক্তি হযরাত আলী রাঃ কে জিজ্ঞাসা করলো, আমি সালাতে দাঁড়ালে মন এদিক ওদিক
ছুটাছুটি করে আমার সালাত আদায় হবে কি? একথা শুনে হযরত আলী রাঃ বললেন না, সালাত আদায়
হবে না। পাশেই রাসুল সাঃ বসেছিলেন। একথা শুনে রাসুল সাঃ বললেন, আলী তুমি ঠিক বলোনি।
সালাতে মন ছুটাছুটি করবে তবে মনকে ধরে সালাতে বসাতে হবে।
প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরাঃ সালাতে এরকম
পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায় তা রাসুল সাঃ উপায় বলে দিয়েছেন। দেওয়ানবাগ
দরবার থেকে যে উত্তর দেয়া হয়েছে সেখানে কোনো উপায় বলা নেই। তারা প্রশ্নকারীকে
দরবারমুখী করার জন্যে বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করেছেন মাত্র।
দেওয়ানবাগী সাহেবের আক্বীদা-বিশ্বাস ও চিন্তাধারা-বিস্তারিত প্রমানসহ
১. মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্ৰহণ করা জরুরী নয়।
যেমন ‘আল্লাহ কোন পথে’ – গ্রন্থে লেখা হয়েছেঃ যে কোন ধর্মের লোক তার নিজস্ব অবস্থায়
থেকে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে তাঁর বিধানমত নিজেকে পরিচালিত করতে পারে।
তাহলে নামধারী কোন মুসলমানের চেয়েও সে উত্তম । মোটকথা ইসলাম বা মুসলিম কোন ব্যক্তির
নাম নয়, এটা আল্লাহ প্রদত্ত নির্দিষ্ট বিধান এবং বিধান পালনকারীর নাম । যে কোন অবস্থায়
থেকে এই বিধান পালন করতে পারলেই তাকে মুসলমান বলে গণ্য করা যায়। আর যে কোন কুলে থেকেই
এই চরিত্র অর্জন করতে পারলে তার মুক্তি হওয়া সম্ভব। (অর্থাৎ, স্বধৰ্ম ত্যাগ করে ইসলাম
গ্রহণ জরুরী নয়।)[1]
উপরোক্ত বক্তব্যের প্রমাণ স্বরূপ
দেওয়ানবাগী বলেনঃ আমার এখানে এক ব্যক্তি আসে। সে ভিন ধর্মের অনুসারী।
তার ধর্মে থেকেই ওজীফা আমলের নিয়ম তাকে বলে দিলাম। কিছু দিন পর লোকটা এসে আমাকে জানালো-
হুজুর একরাত্রে স্বপ্নে আমার রাসূল (সা.)-এর রওজা শরীফে যাওয়ার খোশ নসীব হয়। সেখানে
গিয়ে উনার কদম মোবারকে সালাম দিয়ে জানালাম যে, শাহ দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলার দরবার
শরীফ থেকে এসেছি। নবীজি শায়িত ছিলেন । তিনি দয়া করে উঠে বসলেন। নবীজি তার হাত মোবারক
বাড়িয়ে আমার সাথে মোসাফা করলেন। মোসাফা করার পর থেকে আমার সারা শরীরে জিকির অনুভব
করতে পারি। এখানে আমার অবস্থা এই যে, যখন যা কিছু করতে চাই তখন আমার হৃদয়ে আল্লাহর
পক্ষ থেকে সংবাদ চলে আসে-তুমি এভাবে চল।[2]
খন্ডন :
অর্থাৎ আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম হল ইসলাম
[সূরা আলে ইমরান : ১৯] অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছেঃ
অর্থাৎ, কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম সন্ধান করলে
কস্মিনকালেও তার থেকে তা গ্ৰহণ করা হবে না। এমন ব্যক্তি পরকালে চির হতভাগাদের দলে থাকবে।
[সূরা আলে ইমরান : ৮৫]
রাসূল (সা.) বলেনঃ
অর্থাৎ হযরত মুসা নবীও যদি জীবিত থাকতেন, তবে আমার
অনুসরণ না করে। তারও কোন উপায় থাকত না ।
তিনি জান্নাত, জাহান্নাম, হাশর, মীযান, পুলসিরাত,
কিরামান কাতেবীন, মুনকার নাকীর, ফিরিশতা, হুর, তাকদীর, আমলনামা ইত্যাদি ঈমান-আকীদা
সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়কে অস্বীকার করেছেন। অর্থাৎ এগুলোর তিনি এমন ব্যাখ্যা দিয়েছেন
যা এগুলো অস্বীকার করার নামান্তর। ‘আল্লাহ কোন পথে? গ্রন্থে সে ব্যাখ্যাগুলো বিদ্যমান।
উক্ত গ্রন্থে প্রথমে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আত এ সব বিষয়ে যে আকীদা-বিশ্বাস রাখেন
সেগুলোকে প্রচলিত ধারণা[3] বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, তারপর আল্লাহপ্রাপ্ত সাধকগণের
বরাদ দিয়ে সেগুলোর এমন অর্থ বলা হয়েছে যা এগুলোকে অস্বীকার করার নামান্তর। যেমন-
বলা হয়েছে প্রচলিত ধারণা মতে ‘হুর’ বলতে বেহেশতবাসীর জন্য নির্ধারিত সুন্দরী রমণীকে
বুঝানো হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে- আল্লাহপ্রাপ্ত সাধকগণ বলেন ‘হুর’ বলতে মানুষের জীবাত্মা
বা নফসকে বুঝায়। এভাবে ঈমান আকীদার সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ের ক্ষেত্রে করা হয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হল । যেমন :
* জান্নাত সম্পর্কে বলা হয়েছে– “প্রভূর সাথে পুনরায় মিলনে আত্মার
যে প্রশান্তি ও আনন্দ লাভ হয় উহাই শ্রেষ্ঠ সুখ। এ মহামিলনের নামই প্রকৃত জান্নাত।”
এখানে জান্নাতের স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং জান্নাত বলতে আত্মিক
সুখকে বোঝানো হয়েছে।[4]
* জান্নাতের হুর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ হুর
বলতে মানুষের জীবাত্মা বা নফসকে বুঝায়।[5]
* জাহান্নাম সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “আত্মার চিরস্থায়ী যন্ত্রণাদায়ক
অবস্থাকেই জাহান্নাম বলে”।[6] এখানে জাহান্নামের স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে অস্বীকার করা
হয়েছে এবং আত্মার যন্ত্রণাকে জাহান্নাম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
* হাশির বা পুনরুত্থান সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “সূফী
সাধকগণের দৃষ্টিতে মানুষের হাশর পৃথিবীর বুকে সংঘটিত হয়ে থাকে। মানুষকে তার কর্মের
প্রতিফল সঙ্গে সঙ্গেই প্ৰদান করা হয়”।[7] এখানে মৃত্যুর পর স্বশরীরে পুনরুত্থানকে
অস্বীকার করা হয়েছে।
উক্ত গ্রন্থে অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় মৃত্যুর পর
স্বশরীরে পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে বলা হয়েছেঃ “প্রকৃতপক্ষে (মৃত্যুর পর) মৃত ব্যক্তির
দেহের কোন ক্রিয়া থাকে না, তার আত্মার উপরেই সবকিছু হয়ে থাকে। আর এ আত্মাকে পরিত্যক্ত
দেহে আর কখনো প্ৰবেশ করানো হয় না”।[8]
* পুলসিরাত সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “পুলসিরাত পার হওয়া বলতে জন্ম থেকে
মৃত্যু পর্যন্ত ঈমানের উপর কায়েম থাকা এবং ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করাকে বুঝায়”।[9]
* মীযান সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “মীযান বলতে মানুষের
ষড়রিপুমুক্ত পরিশুদ্ধ বিবেক কে বুঝায়”।[10]
* মুনকার-নাকীর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “মুনকার
ও নাকীর বলতে কোন ব্যক্তির ভাল ও মন্দ কর্মবিবরণীকে বুঝায়”।[11]
কিরামান
কাতেবীন সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ পরমাত্মার বিদ্যমান সূক্ষ্ম শক্তি যা ফেরেশতার ন্যায়
ক্রিয়াশীল উহাই আলাদা আলাদা ভাবে পাপ এবং পূণ্যের বিবরণী লিপিবদ্ধ করে অর্থাৎ, তা
পরমাত্মার স্মৃতিফলকে সংরক্ষিত হয়।[12]
* আমলনামা সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ আমলনামা বলতে মানুষের সৎ কর্মের
দ্বারা আত্মার উন্নতি এবং অপকর্মের দ্বারা আত্মার অবনতিকে বুঝায়।[13]
* ফিরিশতা সম্পর্কে বলা হয়েছে : ফেরেশতা আলমে আমর বা সূক্ষ্মতিসূক্ষ্ম
জগতের বস্তু এবং ষড়রিপুমুক্ত পুতঃপবিত্র আত্মা বিশেষ। মানুষের মাঝে ২টি আত্মা রয়েছে।
একটি জীবাত্মা এবং অপরটি পরমাত্মা। পরমাত্মার ২টি অংশ। যথা- মানবাত্মা ও ফেরেশতার আত্মা।
এই ফেরেশতার আত্মাই মানুষের দেহের ভিতরে ফেরেশতার কাজ করে থাকে”।[14]
* দেওয়ানবাগীর বিশ্বাস হল আল্লাহ ও জিব্রাঈল এক ও অভিন্নঃ “আত্মার
বাণী” (৫ম বর্ষ ১ম সংখ্যা) পত্রিকায় আছে”।[15] সুলতানিয়া মুজাদ্দেদিয়া তরীকার ইমাম
চন্দ্রপুরী ফরমানঃ জিব্রাঈল বলতে অন্য কেহ নন স্বয়ং হাকীকতে আল্লাহ। উল্লেখ্য- এ পত্রিকার
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি হলো মাহবুবে খোদা দেওয়ানবাগী স্বয়ং নিজে।
* তাকদীর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ তাকদীর বলতে মানুষের কর্মফলকে বুঝায়।
অর্থাৎ, মানুষের কর্মের দ্বারা অর্জিত উন্নতি অবনতির সংরক্ষিত হিসাব নিকাশকে বুঝায়।
সৃষ্টির আদি হতে অদ্যাবধি এবং কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের আত্মা বিভিন্ন বাহনে আরোহন পূর্বক
কর্মের যে স্মরণীয় স্মৃতিশক্তি আত্মার মধ্যে সংরক্ষিত হয়েছে উহাকেই মূলতঃ তাকদীর
বলে”।[16]
এভাবে ঈমান-আকীদার সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ের
ক্ষেত্রে এমন ব্যাখ্যা পেশ করা হয়েছে যা উক্ত বিষয়গুলোকে অস্বীকার করার নামান্তর
। অথচ এ বিষয়গুলো জরুরিয়াতে দ্বীন[17]-এর অন্তর্ভুক্ত। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের
নিকট এর যে, প্রতিষ্ঠিত ও চিরন্তন অর্থ এবং ব্যাখ্যা তার উপর সকলের ইজমা বা ঐক্যমত
রয়েছে। আর এ ধরণের জরুরিয়াতে দ্বীনকে অস্বীকার করা কুফরী। আল্লামা সুবকী (রহঃ) তার
جمع الجو امع গ্রন্থে
লিখেছেন :
অর্থাৎ, জরুরিয়াতে দ্বীন- যার উপর ইজমা সংঘটিত আছে-
তার অস্বীকারকারী এক বাক্যে কাফের।
তবে এ ধরণের ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে, প্রথমত : যদি
তারা কোন ব্যাখ্যা ছাড়াই বেধড়ক কুরআন হাদীছের ভাষ্যকে অস্বীকারপূর্বক মনগড়া মতামত
ব্যক্ত করে। কিংবা শরঈ হুকুমের মাঝে যে ব্যাখ্যামূলক মতামত (تاويل) তারা দেয়, তা (تاويل) এর নিয়ম নীতি অনুসরণ করে দেয় না, তাহলে তারা যে
ব্যাখ্যা (تاويل) এর
আলোকে নিজেদের ধ্যান-ধারনা পোষণ করেছে তা শরীয় আতের নীতি মাফিক না হওয়াতে তারা কুফুরীতে
লিপ্ত হয়ে পড়বে।
হযরত মাওলানা ইদরীস কান্দলভী লিখেছেন- কোন জরুরিয়াতে
দ্বীনে যদি এমন ব্যাখ্যা দেয়া হয় যা তার প্রসিদ্ধ ও সুবিদিত অর্থের বিপরীত, তাহলে
এটা সে বিষয়কে অস্বীকার করারই নামান্তর।[18]
উপরোক্ত ঈমান-আকীদা সংক্রান্ত বিষয়াদির
বাইরে আমলগত বিভিন্ন বিষয়েও তিনি মারাত্মক বিভ্রাত্তিকর ও গোমরাহীমূলক ধ্যান-ধারনা
পোষণ করেন। যেমনঃ
১. দেওয়ানবাগী পুনর্জন্মবাদের প্রবক্তা। চন্দ্রপাড়া
পীরের আকীদা একই রকম, তিনিও পুনর্জন্মবাদের প্রবক্তা ছিলেন। চন্দ্রপাড়ার পীর পুনর্জন্মবাদের
প্রবক্তা। মাসিক আত্মার বাণী ৫ম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা ২৬ সংখ্যা পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে : চন্দ্রপুরী
ফরমাইলেন পুনর্জন্ম সম্বন্ধে কুরআনেই আছে-
অর্থাৎ কিভাবে
তোমরা আল্লাহর সাথে কুফৱী করা? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন,
আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন ও পুনরায় তোমাদেরকে জীবন দান করবেন অনন্তর তোমরা তার দিকেই
ফিরে যাবে। [সূরা বাকারা : ২৮]
চন্দ্রপুরীর মতে এখানে (ثم يحييكم) -এর অর্থ পৃথিবীতে পুনরায় জন্মলাভ করা। উল্লেখ্য
দেওয়ানবাগী। উক্ত পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি এবং চন্দ্রপাড়ার পীর তার পীর ও
শশুর। সৃতরাং বুঝা যায় দেওয়ানবাগীর আকীদাও অনুরূপ। ‘আল্লাহ কোন পথে’ গ্রন্থেও পুনর্জন্মবাদের
স্বপক্ষে বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায়।
খন্ডন :
জমহুরের মতে এখানে (ثم يحييكم) এর অর্থ হাশরে পুনরায় জীবিত অবস্থায় উখিত হওয়া
। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা হল পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাস করা কুফরী।[19]
২. তিনি নিজে হজ করেননি। এ বিষয়ে তার আল্লাহ কোন
পথে? গ্রন্থে লেখা হয়েছে : তার জনৈক ভক্ত আহমদ উল্লাহ দেওয়ানবাগী সাহেব কেন হজ করেননি-
এটা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে যান। স্বপ্নে দেখেন হযরত ইব্রাহীম (আ.) নির্মিত মক্কার
কা’বা ঘর এবং স্বয়ং রাসূল (সা.) বাবে রহমতে হাজির হয়েছেন। রাসূল (সা.) তাকে উদ্দেশ্যে
করে বলেছেন- আমি স্বয়ং আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সাথে আছি এবং সর্বক্ষণ থাকি।
আর কাবা ঘরও তাঁর সম্মুখে উপস্থিত আছে আমার মুহাম্মদী ইসলাম শাহ দেওয়ানবাগী প্রচার
করতেছেন। তার হজ করার কোন প্রয়োজন নেই”।[20]
এখানে মক্কাস্থিত বাইতুল্লাহ শরীফে গিয়ে হজ্জ পালন
করার ফরাযিয়াতকে অস্বীকার করা হয়েছে। আর হজ্জ হল ইসলামের পঞ্চ বুনিয়াদের একটি। এটাকে
অস্বীকার করা সন্দেহাতীতভাবে কুফুরী।
এসব কুফুরী আকীদা-বিশ্বাস ছাড়াও তিনি কুরআন- হাদীছের
বহু বক্তব্যকে চরম ভাবে বিকৃত করেছেন। যেমন কুরআনে বর্ণিত হযরত আদম ও হাওয়া কর্তৃক
নিষিদ্ধ ফল খাওয়া সম্বন্ধে তার বক্তব্য হল : এই ফল দ্বারা যদি গান্দম ফল ধরা হয়,
তাহলে অর্থ হবে গমের আকৃতির ন্যায় নারীদের গোপন অঙ্গ এবং আঞ্জির ফল ধরা হলে তার অর্থ
হবে সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত নারীর বক্ষযুগল। অতএব আদিম হাওয়ার নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ অর্থ তাদের
যৌন মিলন।[21]
জমহুরে উম্মতের নিকট গৃহীত পরিস্কার ব্যাখ্যার বিপরীত।
এরূপ ব্যাখ্যা প্রদানকারীদের বলা হয় যিন্দীক ও মুলহিদ।
উপরোল্লেখিত বিষয় ছাড়াও বিভিন্ন
আকাইদগত বিষয় ও বিভিন্ন মাসায়েলের ক্ষেত্রে তিনি জমহুরের মতামতের বিপরীত এবং অদ্ভুত
ধরণের কিছু বক্তব্য পেশ করেছেন। যেমন :
১. আল্লাহ ও রাসূলকে স্বচক্ষে না দেখে কালিমা পড়ে
সাক্ষ্য দেয়ার ও বিশ্বাস করার কোন অর্থ হয় না ।
২. কুরআন, কিতাব, হাদীছ, তাফসীর পড়ে আল্লাহকে পাওয়া
যায় না। একমাত্র মুরশিদের সাহায্য নিয়ে আধ্যাতিক সাধনা করেই আল্লাহকে পাওয়া সম্ভব,
এমনকি দুনিয়াতেই স্বচক্ষে দেখা যায় । (নাউযুবিল্লাহ)
৩. আল্লাহর সাথে যোগাযোগ সবই ক্বালবেই (অন্তরে) হয়ে
থাকে। অন্যভাবে হাজার ইবাদত করেও আল্লাহকে পাওয়া যায় না।
৪. সাধনার দ্বারা আল্লাহকে নিজের ভিতরেই খুঁজে পাওয়া
সম্ভব, বাইরে কোথাও নয়। কঠিন সাধনার মাধ্যমে আমিত্বকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর
নৈকট্য লাভকারী সাধকের সাথে আল্লাহ এমনভাবে মিশে যান, যেমন চিনি দুধের সাথে মিশে একাকার
হয়ে যায়। তখন ঐ বান্দাকে আল্লাহ থেকে আলাদা করা মুশকিল।
৫. এরূপ ধ্যান করবেন, আদমের জীরে কদম (পায়ের নীচে)
ক্বালব। এই ক্বালবে আল্লাহ ও রাসূল থাকেন।
৬. কুরআনে আল্লাহ আমাদেরকে এই ধারণা দিচ্ছেন যে,
তিনি আমাদের ভিতরে এবং অতি নিকটে অবস্থান করেন কিন্তু আমরা এতই মূখ্য যে, তাঁর অবস্থান
সাত আসমানের উপর বলে মনে করে থাকি।
৭. গত ১৯৯৮ সালে বিশ্ব আশেকে রাসূল সম্মেলনে আল্লাহ
ও রাসূল স্বয়ং দেওয়ানবাগে এসেছিলেন। আল্লাহ ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন উক্ত সম্মেলনে
উপস্থিত সমস্ত আশেকদের তালিকা তৈরী করতে। ঐ তালিকাভূক্ত সবাই বেহেশতে চলে যাবে।[22]
৮. সূর্যোদয় পর্যন্ত সেহরী খাওয়ার সময়। সুবহে
সাদেক অর্থ প্ৰভাত কাল। হুজুরেরা ঘুমানোর জন্য তাড়াতাড়ি আযান দিয়ে দেয়। আপনি কিন্তু
খাবার বন্ধ করবেন না। আযান দিয়েছে নামাযের জন্য। খাবার বন্ধের জন্য আযান দেয়া হয়
না।[23]
৯. দেওয়ানবাগী ও তার অনুসারীগণ প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠানের
উপর অত্যন্ত জোর প্রদান করে থাকেন। তাদের শ্লোগান হল “ঘরে ঘরে মীলাদ দাও রাসূলের শাফাআত
নাও”।
এ ধরণের যিন্দীক ও মুলহিদ সূলভ এবং
কুফরী আকীদা-বিশ্বাস পোষণ করা সত্ত্বেও দেওয়ানবাগী সাহেবের দাবী হল :
১. তিনি আসল ইসলামের প্রচারক। তিনি তার প্রচারিত
উপরোক্ত ধ্যান-ধারনা সম্বলিত মতবাদের নাম দিয়েছেন মোহাম্মাদী ইসলাম।[24] তার বক্তব্য
হল- তার মতবাদের বাইরে সারা বিশ্বে যে ইসলাম চালু রয়েছে এটা আসল ইসলাম নয়, এজিদী
ইসলাম, এজিদী চক্রান্তের ফসল।
২. আল্লাহই তাকে গোটা বিশ্বে খাঁটি মোহাম্মাদী ইসলাম
প্রচারের দায়িত্ব দিয়ে নূরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহক রূপে পাঠিয়েছেন। তার সাপ্তাহিক
পত্রিকায় লেখা হয়েছে- আল্লাহ ও রাসূল (সা.) সহ সমগ্র রূপে নবী রাসূল, ফেরেশতা এবং
দেওয়ানবাগী ও তার মোর্শেদ চন্দ্রপাড়ার মৃত আবুল ফজলের উপস্থিতিতে সমস্ত ওলী আউলিয়াগণ
এক বিশাল ময়দানে সমবেত হয়ে সর্বসম্মতিক্রমে দেওয়ানবাগীকে মোহাম্মাদী ইসলাম-এর প্রচারক
নির্বাচিত করেন। অতঃপর সবাইকে নিয়ে আল্লাহ এক বিশাল মিছিল বের করেন। আল্লাহ, রাসূল
দেওয়ানবাগী ও তার পীর- এর ৪ জনের হাতে মোহাম্মাদী ইসলামের পতাকা। আল্লাহ, দেওয়ানবাগী
ও তার পীর- এই ৩ জন। সমানের সারিতে। সমস্ত নবী রাসূলসহ বাকীরা পেছনে। মিছিলে আল্লাহ
নিজেই শ্লোগান দিচ্ছিলেন মোহাম্মদী ইসলামের আলো ঘরে ঘরে জ্বালো”।[25]
৪. তিনি বর্তমান যামানার মোজাদ্দেদ, মহান সংস্কারক,
শ্রেষ্ঠতম ওলী- আল্লাহ।[26]
তার সম্পর্কে উপরোক্ত দাবী ও তার বুযুর্গী প্রমাণে
তার ও তার ভক্তদের বিভিন্ন স্বপ্নের উল্লেখ করা হয়েছে। যেমনঃ তিনি খাবে দেখেছেন যে,
ঢাকা ও ফরিদপুরের মধ্যখানে একটি বাগানে নবীজির প্রাণহীন দেহ খালি গায়ে পড়ে আছে। অতঃপর
সবশেষে নবীজি দেওয়ানবাগীর সাথে হেঁটে হেঁটে চলে এসেছেন।[27]
আরও স্বপ্ন বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূল (সা.) স্বপ্নযোগে
তাকে “ইসলাম ধর্মের পুনর্জীবনদানকারী” খেতাবে ভূষিত করেছেন।[28]
এভাবে তার সূফী ফাউণ্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত বইগুলির
বিভিন্ন স্থানে তার নিজের এবং তার ভক্তবৃন্দের বিভিন্ন স্বপ্ন বর্ণিত হয়েছে যা দ্বারা
তার বুযুর্গী প্রমাণ করার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। অথচ স্বপ্ন কোন দলীল নয়। কাষী ইয়ায
বলেনঃ স্বপ্নের দ্বারা কোন নিশ্চিত জ্ঞান অর্জিত হয় না। এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের
ইজমা’ রয়েছে। আল্লামা নববী বলেন- অদ্রুপ স্বপ্নের দ্বারা কোন হুকুমের পরিবর্তন ঘটানো
যায় না। এ ব্যাপারে ইত্তেফাক বা সর্বসম্মত মত রয়েছে। যদিও হাদীছে বলা হয়েছে-
অর্থাৎ, নবী করীম (সা.) বলেন যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে
দেখল। সে যেন আমাকেও দেখল । কেনা শয়তান আমার রূপ ধারন করতে পারে। এ হাদীসে বুঝানো
হয়েছে যে, রাসূল (সা.) কে স্বপ্নে দেখা মিথ্যা হতে পারে না। কেননা শয়তান রাসূল (সা.)-এর
আকৃতি ধারণ করতে পারে না। তবে স্বপ্নে সে যা শুনেছে তা সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছে এবং তা
সঠিকভাবে মনে রাখতে পেরেছে, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই স্বপ্ন কোন দলীল হতে পারে না।
এ ব্যাপারে আল্লামা নববী তার দীর্ঘ ইবরাতে যা বলেছেন, সংক্ষিপ্ত ভাবে তার কিছু অংশ
তুলে ধরা হল :
কিছু লোক হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.) কর্তৃক
স্বপ্নে আযানের শব্দগুলো শুনেছিলেন এবং রাসূল (সা.) সে অনুযায়ী আযান প্রবর্তন করেছিলেন-
এ দ্বারা স্বপ্ন দলীল বলে প্ৰমাণ পেশ করে থাকেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। কেননা সেখানে
স্বপ্নটি সঠিক বলে রাসূল (সা.) স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ অর্থাৎ এটা অবশ্যই
সত্য স্বপ্ন ।
রাসূল (সা.) এরূপ স্বীকৃতি না দিলে শুধু ঐ সাহাবীর
স্বপ্নের ভিত্তিতে আযান প্রচলিত হত না। আর রাসূল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর কারও স্বপ্ন
সত্য হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়ার যেহেতু কেই থাকেনি, তাই এখন কারও স্বপ্নকে দলীল
হিসেবে দাড় করানো যাবে না। এখানে এ কথাও স্মরণ রাখা দরকার যে, রেওয়াতে দ্বারা প্রমাণিত
আছে- হযরত ওমর (রা.) এর ২০ দিন পূর্বে আযানের এরূপ শব্দ স্বপ্নে দেখেছিলেন। কিন্তু
তিনি সে স্বপ্নের ভিত্তিতে সেভাবে আযান দেয়া শুরু করেননি।
স্বপ্ন দ্বারা কোন কিছুর দলীল দাঁড় করানো যায় না।
বুযুর্গী স্বপ্ন দ্বারা প্রমাণিত হয় না; বুযুর্গী প্রমাণিত হয় সহীহ-ঈমান-আকীদা ও
সহীহ আমল দ্বারা। অতএব, যতই স্বপ্ন বর্ণনা করা হোক দেওয়ানবাগীর ন্যায় যিন্দীক, মুলহিদ
ও কুফরী পোষণকারী ব্যক্তি (এসব আকীদা পরিত্যাগ করা ব্যতীত) কস্মিনকালেও বুয়ুৰ্গ হতে
পারে না।
তথ্যসূত্র :
[1] “আল্লাহ কোন পথে? ৩য় সংস্করণ, ডিসেম্বর, ১৯৯৭
খ্ৰীষ্টাব্দে, পৃঃ ১১৩-১১৪ ও ১২৫-১২৬।
[2] ‘মানতের নির্দেশিকা’ পৃঃ ৩১, দ্বিতীয় সংস্করণ,
জুন ২০০১ ৷৷
[3] প্রচলিত ধারনা তাদের মতে প্রকৃত ধারণা নয়, অর্থাৎ
এটা ভুল। এ কথা “আল্লাহ কোন পথে?” গ্রন্থের ভূমিকায় বলা হয়েছে।
[4] “আল্লাহ কোন পথে”? ৩য় সংস্করণ, ডিসেম্বর, ১৯৯৭
খ্রীষ্টাব্দ, পৃঃ ৪০।
[5] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১১২।
[6] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৪৪।
[7] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫৪।
[8] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫৯।
[9] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৬০।
[10] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫৭।
[11] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৬৯।
[12] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৬৮।
[13] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১২৮।
[14] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১০৩।
[15] বাতিল পীরের পরিচয়, মুফতী মুহাম্মাদ শামছুল
হক, পৃঃ ২২।
[16] ‘আল্লাহ কোন পথে? ৩য় সংস্করণ, পৃষ্ঠা ১৩০।।
[17] এটা একটি পরিভাষা, এর অর্থ হল তা এমন বিষয়
যা সকলের কাছে সুবিদিত, আম খাস নির্বিশেষে সকলেই সে সম্বন্ধে অবগত ॥
[18] عقئد الاسلام
[19] كشاف اصطلاحات الفنون
[20] আল্লাহ কোন পথে? দ্বিতীয় সংস্করণ, মে/১৯৯৭,
পৃষ্ঠা ১৯২-১৯৩। উল্লেখ্য অত্র বইয়ের তৃতীয় সংস্করণে নিরবে এ বিষয়টির উল্লেখ পরিত্যাগ
করা হয়েছে।
[21] আল্লাহ কোন পথে? ৩য় সংস্করণ, ডিসেম্বর, ১৯৯৭
খ্ৰীষ্টাব্দ, পৃঃ ৯৮ ৷৷
[22] সূত্র : মাসিক আত্মার বাণী, সংখ্যা- নভেম্বর-৯৯,
পৃঃ ১০।।
[23] সূত্র : মাসিক আত্মার বাণী, সংখ্যা- নভেম্বর-৯৯,
পৃঃ ৯।।
[24] তার প্রায় প্রত্যেকটা বইয়ের প্রচ্ছদ মোহাম্মদী
ইসলাম লেখা আছে এবং এই ইসলামের বিশেষ পতাকা দেখানো হয়েছে।
[25] সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ পত্রিকা, সংখ্যা- ১২/৩/৯৯
শুক্রবার।।
[26] আল্লাহ কোন পথে? গ্রন্থের তৃতীয় সংস্করণের
ভূমিকা, ১৩৭ পৃষ্ঠা, রাসূল সত্যিই কি গরীব ছিলেন ? পৃষ্ঠা নং- ১২ (ভূমিকা) ৷
[27] তথ্যসূত্র : ‘রাসূল সত্যিই কি গরীব ছিলেন? পৃষ্ঠা-
১২ (ভূমিক), চতুর্থ সংস্করণ, সেপ্টেম্বর, ২০০১ ৷
[28] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১১।।
*লেখাটি আবদুশ শাফী আহমাদ রচিত “ঈমান বিধ্বংসকারী আক্বীদা ও মারেফতের
গোপন প্রশ্নের জবাব” বই থেকে সংকলিত।
দেওয়ানবাগী সম্পর্কে আরো কিছু তথ্যঃ
(১) ‘দেওয়ানবাগী স্বপ্নে দেখেন ঢাকা এবং ফরিদপুরের
মধ্যবর্তী স্থানে এক বিশাল বাগানে ময়লার স্তূপের উপর বিবস্ত্র অবস্থায় নবীজীর প্রাণহীন
দেহ পড়ে আছে (নাওযুবিল্লাহ)। মাথা দণি দিকে, পা উত্তর দিকে প্রসারিত। বাম পা হাঁটুতে
ভাঁজ হয়ে খাড়া আছে। আমি উদ্ধারের জন্য পেরেশান হয়ে গেলাম। তাঁর বাম পায়ের হাঁটুতে
আমার ডান হাত দিয়ে স্পর্শ করার সাথে সাথে দেহে প্রাণ ফিরে এল। এবং তিনি আমাকে বললেন,
”হে ধর্মের পুনর্জীবনদানকারী, ইতিপূর্বে আমার ধর্ম পাঁচবার পুনর্জীবন লাভ করেছে।”
(সূত্র: রাসূল কি সত্যিই গরিব ছিলেন-দেওয়ানবাগ থেকে প্রকাশিত)।
(২) “একদিন ফজরের পর মোরাকাবারত অবস্থায় আমার তন্দ্রা
এসে যায়। আমি তখন নিজেকে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরিহিত অবস্থায় রওজা শরীফের নিকট দেখতে পাই।
দেখি রওজা শরীফের উপর শুকনা পাতা এবং আগাছা জমে প্রায় এক ফুট পুরুহয়ে আছে। আমি আরো
ল্য করলাম, রওজা শরীফে শায়িত মহামানবের মাথা মোবারক পূর্ব দিকে এবং মুখমণ্ডল দণি দিকে
ফিরানো। এ অবস্থা দেখে আমি আফসোস করতে লাগলাম। এমন সময় পাতার নীচ থেকে উঠে এসে এ মহামানব
বসলেন। তার বুক পর্যন্ত পাতার উপর বের হয়ে পড়ে। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি
দয়া করে আমার রওজা পরিষ্কার করে দেবেন না ? আমি বললাম, জী, দেব। তিনি বললেন, তাহলে
দিন না। এভাবে বারবার তিনবার বলায় আমি এক একটা করেপাতা পরিষ্কার করে দেই। এরপর আমার
তন্দ্রা ভেঙে যায়।” (সূত্র: রাসূল কি সত্যিই গরিব ছিলেন-দেওয়ানবাগ থেকে প্রকাশিত)।
(৩) “দেওয়ানবাগী এবং তার মুরীদদের মাহফিলে স্বয়ং
আল্লাহ্, সমস্ত নবী, রাসূল (সা), ফেরেস্তা, দেওয়ানবাগী ও তার মুর্শিদচন্দ্রপাড়ার
মৃত আবুল ফজলসহ সমস্ত ওলি আওলিয়া, এক বিশাল ময়দানে সমবেত হয়ে সর্বসম্মতিক্রমে দেওয়ানবাগীকে
মোহাম্মাদী ইসলামের প্রচারক নির্বাচিত করা হয়।
অত:পর আল্লাহ সবাইকে নিয়ে একমিছিল বের করে। মোহাম্মাদী
ইসলামের চারটি পতাকা চারজনের_ যথাক্রমে আল্লাহ, রাসূল (সা), দেওয়ানবাগী এবং তার পীরের
হাতে ছিল। আল্লাহ, দেওয়ানবাগী ও তার পীর প্রথম সারিতে ছিলেন। বাকিরা সবাই পিছনের সারিতে।
আল্লাহ নিজেই স্লোগান দিয়েছিলেন_ ”মোহাম্মাদী ইসলামের আলো_ ঘরে ঘরে জ্বালো।” (সূত্র:
সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগী পত্রিকা- ১২/০৩/৯৯ )।
(৪) দেওয়ানবাগীর এক পা-চাটা চাকর বলে (নাম মাওলানা
আহমাদুল্লাহ যুক্তিবাদী,)
“আমি স্বপ্নে দেখলাম হযরত ইব্রাহীম (আ) নির্মিত মক্কারকাবা
ঘর এবং স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা) বাবে রহমতে হাজির হয়েছেন। আমাকে উদ্দেশ্য করে নবী
করীম (সা) বলছেন_”তুমি যে ধারণা করছ যে, শাহ্ দেওয়ানবাগী হজ্জ করেননি আসলে এটা ভুল।
আমি স্বয়ং আল্লাহর নবী মোহাম্মাদ (সা) তার সাথে আছিএবং সর্বণ থাকি। আর কাবা ঘর ও তার
সামনে উপস্থিত আছে। আমার মোহাম্মাদী ইসলাম শাহ্দেওয়ানবাগী প্রচার করতেছেন।
আমি যুক্তি খণ্ডনে যাবো না ।শুধু আপনাদের উপর বিষয়গুলো
ছেড়ে দিলাম । কতো বড় ভণ্ড হলে এরকম বলতে পারে । একটা কথাও কোরআন হাদীস কিংবা ইজমা
কিয়াসের ভিত্তিতে নয় । সব মনগড়া ।
(৫) ভণ্ড পীরের কিছু লোমহর্ষক তথ্য :
“তথাকথিত ছুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী পীর জাল দলিলের
মাধ্যমে জোর পূর্বক কয়েক কোটি টাকার জমি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জমির প্রকৃত
মালিক আব্দুল গফুর। গত কয়েকমাস আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এই অভিযোগ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার ছেলে
মহিদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের
পিছনে ১৪২/১ দক্ষিণ কমলাপুরে ৮০ শতাংশ ভূমি ক্রয় করে। জমিটি ক্রয়ের পর থেকেই তথাকথিত
পীর দেওয়ানবাগী তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দখলের পাঁয়তারা করে আসছিল। ভন্ডপীর দেওয়ানবাগীর
সন্ত্রাসী বাহিনী গত ২০০২ সালে রাতের অন্ধকারে বাড়ির ভাড়াটিয়াদের জোর পূর্বক বেরকরে
জমিটি দখল করে নেয়। ভূমি অফিসের কিছু অসাধু অফিসারে সাথে অবৈধ লেনদেন করে তিনি কাগজপত্র
তৈরি করেন। জমি দখলের বিরুদ্ধে জজ কোর্টে মামলা করলে কোর্ট গত ২০০৩ সালে স্থগিতাদেশ
প্রদান করে। উল্লেখ্য যে দেয়ানবাগীও তার সন্ত্রাসীচক্র উক্ত বাড়িতে বর্তমানে উটের
খামার করে। এখন নিয়মিত শতাধিক সন্ত্রাসী সেখানে অবস্থান করে। তার সন্ত্রাসী বাহিনী
মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য নিয়মিত মোবাইলে হুমকি দিয়ে আসছে। এ ব্যাপারে মতিঝিল থানায়
একাধিক জিডি করা হয়েছে।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, উক্ত জমির উপর আদালতের
স্থগিতাদেশ থাকার পরেও গত ১৪ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রীকে সমাধি করা হয়। তার পালিত সন্ত্রাসীদের
ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তিনি মতিঝিল ও আরামবাগ এলাকায় একাধিক বাড়ি দখল
করে নিয়েছেন। তাই জমি ফেরত পেতে জমির প্রকৃত মালিক আব্দুল গফুর প্রশাসনের সহায়তা
কামনা করেন।” ( দৈনিক সংগ্রাম)
(৬) “আমার অসংখ্য মুরিদান স্বপ্ন ও কাশফের মাধ্যমে
আল্লাহর দীদার লাভ করেছে। আমার স্ত্রী হামিদা বেগম ও আমার কন্যা তাহমিনা এ খোদা স্বপ্নের
মাধ্যমে আল্লাহকে দাড়ী গোফ বিহীন যুবকের ন্যায় দেখতে পায়।” (নাউযুবিল্লাহ) –সুত্রঃআল্লাহ
কোন পথেঃ২৩
(৭) সাংবাদিক সম্মেলনে সে বলে “শুধু আমি নই, আমার
স্ত্রী কন্যা সহ লক্ষ্য লক্ষ্য মুরিদানও আল্লাহকে দেখেছেন” –সুত্রঃ সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ।
(৮) “দেওয়ানবাগে আল্লাহ ও সমস্ত নবী রাসূল, ফেরেস্তারা
মিছিল করে এবং আল্লাহ নিজে শ্লোগান দেন।” –সুত্রঃ সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ, মার্চ ১৯৯৯
ইং।
(৯) “আমি এক ভিন্নধর্মের লোককে ওজীফা ও আমল বাতলে
দিলাম। ক’দিন পর ঐ বিধর্মী স্বপ্নযোগে মদিনায় গেল। নবিজীর হাতে হাত মিলালো। নিজের
সর্বাঙ্গে জিকির অনুভব করতে লাগলো। তারপর থেকে ওই বিধর্মী প্রত্যেক কাজেই অন্তরে আল্লাহর
নির্দেশ পেয়ে থাকে।” (নাউযুবিল্লাহ) –সুত্রঃ মানতের নির্দেশিকাঃ২৩, সূফী ফাউন্ডেশন,
১৪৭ আরামবাগ, ঢাকা।
(১০) “কোন লোক যখন নফসীর মাকামে গিয়ে পৌঁছে, তখন
তাঁর আর কোন ইবাদাত লাগেনা।” –আল্লাহ কোন পথে,পৃঃ ৯০
(১১) “জিব্রাইল বলতে আর কেও নন, স্বয়ং আল্লাহ-ই
জিব্রাইল।”–সুত্রঃ মাসিক আত্মার বাণী, ৫ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা ২১।
(১২) “সূর্যোদয় পর্যন্ত সাহরী খাওয়ার সময়। সুভে
সাদেক অর্থ প্রভাতকাল। হুজুরেরা ঘুমানোর জন্য তারাতারি আযান দিয়ে দেয়। আপনি কিন্তু
খাওয়া বন্ধ করবেন না। আযান দিয়েছে নামাজের জন্য। খাবার বন্ধের জন্য আযান দেয়া হয়না।”
(নাউযুবিল্লাহ) –সুত্রঃ মাসিকআত্মার বাণী, সংখ্যাঃ নভেম্বরঃ ৯৯, পৃঃ ৯।
(১৩) মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হায়াতে জিন্দেগী
কে পুলসিরাত বলা হয়।” –সুত্রঃ আল্লাহ কোন পথে, তৃতীয় সংস্করনঃ ৬০
(১৪) “আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে আত্মা এক
বিচ্ছেদ যাতনা ভোগ করতে থাকে। প্রভূর পরিচয় নিজের মাঝে না পাওয়া অবস্থায় মৃত্যু
হলে সে বেঈমান হয়ে কবরে যাবে। তখন তাঁর আত্মা এমন এক অবস্থায় আটকে পড়ে যে, পুনরায়
আল্লাহর সাথে মিলনের পথ খুঁজে পায়না। আর তা আত্তার জন্য কঠিন যন্ত্রনাদায়ক। আত্মার
এরূপ চিরস্থায়ী যন্ত্রনাদায়ক অবস্থাকেই জাহান্নাম বা দোযোখ বলা হয়।”(নাউযুবিল্লাহ)
–আল্লাহ কোন পথেঃ ৪৪
(১৫) দেওয়ানবাগী নিজেকে ইমাম মাহদী দাবী করেন। অতঃপর
দরুদে মাহদী রচনা করে্ন ।
দরুদে মাহদীঃ (নাউযুবিল্লাহ) “আল্লাহুম্মা ছাল্লী
আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিউ ওয়ালা আ’লা ইমাম মাহদী রাহমাতাল্লিল আলামীন ওয়ালিহী
ওয়াছাল্লীম। ”
(১৬) ময়লার
স্তূপে অর্ধমৃত ও বিবস্ত্র অবস্থায় রাসুল (সাঃ) কে দেখেছি। (নাউযুবিল্লাহ) মীন যালীক
(১৭) দেওয়ানবাগী
১৯৮৯ সালে নাকি একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্বপ্ন দেখে ফেলেন। এ স্বপ্ন সম্পর্কে তিনি বলেন,
“আমি দেখি ঢাকা ও ফরিদপুরের মধ্যবর্তী স্থানজুড়ে
এক বিশাল বাগান ফুলে-ফলে সুশোভিত। ওই বাগানে আমি একা একা হেটে বেড়াচ্ছি। হঠাত বাগানের
এক স্থানে একটি ময়লার স্তূপ আমার চোখে পড়ে। আমি দেখতে পাই ওই ময়লার স্তূপে রাসুল
(সাঃ) এর প্রানহীন দেহ মোবারক পড়ে আছে। তাঁর মাথা মোবারক দক্ষিন দিকে আর পা মোবারক
উত্তর দিকে প্রসারিত। বাম পা মোবারক হাটুতে ভাজ হয়ে খারা অবস্থায় রয়েছে। আমি তাকে
উদ্ধার করার জন্য পেরেশান হয়ে গেলাম। আমি এগিয়ে গিয়ে তাঁর বাম পায়ের হাটুতে আমার
ডান হাত দ্বারা স্পর্শ করলাম। সাথে সাথেই তাঁর দেহ মোবারকে প্রাণ ফিরে এল। তিনি চোখ
মেলে আমার দিকে তাকালেন। মূহুর্তের মধ্যেই রাসূল (সাঃ) সুন্দর পোশাকে সুসজ্জিত হয়ে
গেলেন। তিনি উঠে বসে হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হে ধর্ম পূনর্জীবন দানকারী!
ইতমধ্যেই আমার ধর্ম আরও পাঁচবার পূনর্জীবন লাভ করেছে। একথা বলে রাসূল (সাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে
হেটে হেটে আমার সাথে চলে এলেন। এরপর আমার ঘুম ভেঙে গেল। ” (নাউযুবিল্লাহ)
সুত্রঃ দেওয়ানবাগীর স্বরচিত গ্রন্থঃ
“রাসূল সঃ সত্যিই কি গরীব ছিলেন?” ১১-১২ প্রকাশকালঃ জুন ১৯৯৯।
(১৮) ভন্ড দেওয়ানবাগী সম্পর্কে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফতোয়াঃ
ক. দেওয়ানবাগের পীর নিতান্তই গোমরাহ
ও পথভ্রষ্ট।
খ. ধর্মীয় দীক্ষা গ্রহন করাতো দূরের
কথা, এর সাহায্য সহযোগিতা করা, সান্নিধ্যে উঠা-বসা বরং তাঁর সাথে কোন রকম সংশ্রব রাখা
হারাম।
গ. আর তাঁর অপপ্রচার প্রতিহত করা
প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। (১৭৬৭ ইসঃ ফাঃ সং ও দাওয়াহ/৩/৮৭/ ৫১২২ তাং ৫/৯/৯১ ইং)।
এত কুকর্মের পরেও বিনা বাধায় তাঁর কাজ সে করে চলেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে কোন রকম বাধার সম্মুখীন না হওয়ায় দিন দিন তাঁর অপশক্তি ক্রমবর্ধমান
ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকল মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব এ সকল ফেৎনা সম্পর্কে তাওহীদবাদী
ঈমানদার মুসলমানকে সজাগ ও সতর্ক করা।
চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফ
সকল আধ্যাত্মিক নেতাদের নেতা হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমেদ
(রঃ) চন্দ্রপুরী নকশাবন্দি মোজাদ্দেদী এর সুযোগ্য দাঁড়িবিহীন (ক্লিন সেইভ) পুত্র আহলে
বায়েত মোফাচ্ছারে কোরআন হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ কামরুজ্জামান (মাঃআঃ) হুজুর বর্তমান
চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফের মাদারজাত পির বা সুফি। ইউটিউব ঘাটলে চন্দ্রপাড়াকে নিয়ে বাদ্যযন্ত্র
সংবলিত অনেক অডিও ও ভিডিও পাওয়া যায়।
এখন প্রশ্ন হয- যার মুখে দাঁড়ি নেই, যাদের দরবারে
বাদ্যযন্ত্র সংবলিত সুফি গান বাজে, নিশ্চয় তারা রাসুল সাঃ এর নির্দেশনা মানছেন না।
তারা রাসুল সাঃ এর সুন্নাত বিরোধী। বাদ্যযন্ত্রসহ গান গাওয়া হারাম। তাহলে এরা কেমনে
অলিকুলের শিরোমণি হয়? আসুন জেনে নেই এদের আসল রহস্য।
চন্দ্রপাড়ার পরিচিতিঃ
জামানার মোজাদ্দেদ শাহ চন্দ্রপুরী আওলিয়া (র) আসল নামঃ- কালের শ্রেষ্ঠ মানব ও সংস্কারক, ভক্তদের
মধ্যমণি, সিরাজুমমুনিরার বাহক, সুলতানুল আউলিয়া (সকল আধ্যাত্মিক নেতাদের নেতা) হযরত
মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমেদ (রঃ) চন্দ্রপুরী নকশাবন্দি মোজাদ্দেদী।
তিনি শাহ সূফী এনায়েতপুরীর শিষ্য।
তিনি দেওয়ানবাগী পীর মাহবূবে খোদার পীর ও শ্বশুর।
জন্মঃ- বাংলা ১৩১৬ সনের ফাল্গুন মাসের কোন এক শুক্রবার
সুবেহ সাদিক এর সময় ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার দশহাজার গ্রামে স্বীয় নানার বাড়ীতে
এই নশ্বর ধরাতে আগমন করেন।
পিতার নামঃ সৈয়দ কোরবান আলী খান (রহঃ) যিনি হযরত রাসুল পাক
(দঃ) এর ২০তম পুরুষ
ছিলেন এবং স্যায়েদেনা হয্ররত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর বংসধর ছিলেন।
মাতার নামঃ খাদিজা
বেগম।
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
ফেকাহ শাস্ত্রের জ্ঞান আরোহনের পর তিনি ধর্মের স্বাদ
গ্রহনের জন্য তাসাউফ শিক্ষা তথা কামেল পীরের সন্ধানে উদগ্রীব হয়ে উঠেন। তিনি বহু জায়গাতে
ঘুরেন কিন্তু মনের মত পীর পান না। অবশেষে বাবাজানের সমসাময়িক আরো ২জন লোক কে নিয়ে বাবাজান
সিলেটে একজন কামেল ওলীর কাছে যান মুরীদ হবার জন্য । সেখানে গেলে ওই পীর সাহেব বাকী
২ জন কে তরিকা দিলেন কিন্তু বাবাজান কে বললেন আপনার নাম আমার দরবারে নাই আপনার যিনি
মোরশেদ হবেন তিনি যমুনার তীরে অবস্থান করছেন। আতঃপর বাবাজান মন খারাপ করে ফিরে আসেন।
এই কারনে যে একজন কামেল পীর পেলাম তাও উনি আমাকে মুরীদ করলেন না। পরবরতিতে বাবাজান
এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফের সন্ধান পান। সেখানে গিয়ে দেখেন খাজা বাবা এনায়েতপুরী (
রহঃ) ঐতিহাসিক বরই তলাতে বেতের একখানা কুরসী (চেয়ার) মোবারকে বসে তার মুরীদ সন্তান
দের সাথে আলাপ করছেন। বাবাজান সেখানে গেলে খাজাবাবা তার একজন মুরীদ কে বললেন যে একটা
টুল নিয়ে এসে উনাকে (বাবাজান) বসতে দেয়ার জন্য। টুল এনে বাবাজান কে বসতে দেয়া হলে বাবাজান
ইতস্বতত বোধ করেন কারন খাজাবাবা ছাড়া বাকি সবাই মাটিতে বসা ছিলেন। পরে খাজা হুজুর হুকুম
করলে বাবাজান টুলে বসেন। তখন খাজা বাবা বলেন “মাওলানা সাহেব আপনি ভাল আলেম, লতিফা দেখায়া
তরীকা প্রচার করেন” বাবাজান মনে মনে বলেন পীর কেমন তাই জানলাম না এখনি তরীকা নিব। ঠিক
তখন ই খাজাবাবা বলেন “মাওলানা সাহেব পীর পরীক্ষা করবেন কষ্টি পাথর এনেছেন তো” বাবাজান
কিনচিত লজ্জিত হন। খাজাবাবা বাবাজান কে কিছু আমল দেন। বাবাজান বাড়ি চলে আসেন । কিছুদিন
আমল করার পর চিন্তা করেন অনেক পীর আছে যারা বসে আনার জন্য ওজিফা দিয়ে থাকে। বাবাজান
আমল বন্ধ করে দেন। পরে তিনি নিজের মত করে আমল করা শুরু করেন অরথাত শেষ রাতে রহমতের
সময় উঠে আল্লাহর দরবারে কামেল পীর চেনার উপাই জানতে চেয়ে কান্না কাটি করেন। আল্লাহ
পাক রাজী হন এবং দয়া করে বাবাজান কে ওই শক্তি দান করেন যা দিয়ে কামেল ওলী চেনা যায়।
বাবাজান ওই শক্তি দিয়ে খুজে পান ততকালীন সময়ে খাজাবাবা এনায়েতপুরী (রহঃ) হচ্ছেন সবথেকে
সেরা ওলী।বাবাজান খাজাবাবার কাছে তরীকা গ্রহন করেন।খাজাবাবার ৫২ জন খলিফার মধ্যে বাবাজান
ই একমাত্র যাকে তরীকাদেয়ার পরেই খেলাফত দেয়া হই। খাজাবাবা বাবাজান কে তরীকা প্রচারের
অনুমতি দেন। কিন্তু বাবাজানের কাছে কেও তরীকা নিতে এলে বাবাজান তরীকা না দিয়ে তাদেরকে
খাজাবাবার অন্য দুই খলিফা যাদের বাড়িও সদরপুর ফরিদপুর এলাকাতে তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন।খাজাবাবা
বাবাজান কে অনেক বার বলার পরেও তরীকা না দিলে খাজাবাবা বাবাজান কে ধমক দিয়ে বলেন মিয়া
আপনি পীরের হুকুম মানেন না? তখন বাবাজান বাড়ি এসে পীরের হুকুম মানার খাতিরে একজন কে
তরীকা দেন বাকিদের অন্য দুই দরবারে পাঠিয়ে দেন।কিন্তু যাকে তরিকা দেন লতিফায়ে কালব
দেখানর সাথে সাথে তার জজবা হয়ে যায় ওই লোকটা গলা কাটা মুরগীর ন্যায় লাফাতে থাকে। তার
সারা শরীরে সুলতানুল আসগর যিকির জারি হয়ে যায়। এভাবে আর কিছুদিন যাওয়ার পরে খাজাবাবা
বাবাজান কে ডেকে বলে মাওলানা সাহেব পাগলামী কইরেন না ঠিকমত তরীকা প্রচার করেন।এর পর
থেকে বাবাজান রাসুলুল্লাহ (দঃ) এর সত্য তরীকায়ে নকশবন্দিয়া মোজাদ্দেদীয়া প্রচার শুরু
করেন। এরপর তিনি ঠাকুরের চর নাম পরিবরতন করে গ্রামের নাম করেন চন্দ্রপাড়া এখন যা সরকারী
হিসাবে চন্দ্রপাড়া শরীফ নামে পরিচিত খাজাবাবার ওফাতের আগে খাজা বাবা তার খলিফা দের
ডাকেন এবং তাদের সাথে বিদায়ী বানীমোবারক রাখছিলেন একসময় খাজাবাবা বলেন “ফরিদপুরের মাওলানা
সাহেবরে দেখছিনা উনি কোথায় একজন বলেন বাবা উনিত মসজিদে বসে আঝর নয়নে কাদছেন।খাজাবাবা
তখন মসজিদে যান এবং বাবাজান কে বুকে জড়িয়ে ধরেন। আর ওই সময় সিরাজুম মুনির খাজাবাবার
ছিনা হইতে বাবাজানের ছিনায় স্থানান্তর হয় যেমন হয়েছিল কারবালার ময়দানে ইমাম হোসাঈন
(রাঃ) এর ছিনা হইতে ইমামা জয়নাল আবেদিন (রাঃ) এর ছিনায়।
কঠোর সাধনা ও ইবাদতঃ বাবাজান তার জীবদ্দশায় কঠোর রিয়াজত
সাধনা করেন তার প্রমান তার টাকনু গিরার কাল দাগ দেখলেই বোঝা যেত কঠোর মোরাকাবার প্রমান
স্বরুপ।
বাবাজানের শিক্ষা পদ্ধতির তিন টা স্তর আত্তাসুদ্ধি
, দেলজিন্দা এবং নামাজে হুজুরী। কার আত্তা শুদ্ধ না হলে নিয়ত শুদ্ধ হয়না আর নিয়ত শুদ্ধ
না হলে কোন ইবাদত ই আল্লাহর দরবারে কবুল হই না। আর একজন মানুষের আত্তা শুদ্ধ হলেই তার
দিলের মুখে আল্লাহ যিকির জারি হয় দিল জিন্দা হয়।দিল রওশন হয় আর ওই অবস্থায় মানুষ যখন
নামাজে দাঁড়ায় তখন তার গায়ের আল্লাহ কে সেজদা দেবার ভয় থাকেনা ওই সেজদা আল্লাহর পাক
কদমেই হয় একেই বলে নামাজে হুজুরী নামাজে হুজুরী হলে ওই নামাজে মেরাজ হয় আল্লাহর দিদার
পাওয়া যায়। বাবাজানের জীবনে অসংখ কারামত দেখিয়েছেন যার মধ্যে সব থেকে বড় কারামত হচ্ছে
তার শাহাদত আঙ্গুলের ইশারায় মুহুরতের মধ্যে পাপী তাপী মানুষের দিলের মধ্যে আল্লাহ নামের
যিকির শুরু হয়ে যায় কালবে আল্লাহ নাম খোদাই হয়ে যায় আর মানুষ গুলা আল্লাহ নামের পাগল
দেওয়ানা হয়ে যায়।
পর্দা গ্রহনঃ ১৯৮৩ (ইংরেজি) সালে বাবাজান তার
যাহেরা জীবনের শেষ ওরছ করেন আর সেখানে তিনি তার উত্তরসূরী হিসাবে তার আধ্যাত্মিক প্রতিনিধি
হিসাবে রেখে যান একজন মাদারজাত ওলী তারই জেসমানী আওলাদ ,আহলে বায়েত মোফাচ্ছারে কোরআন
হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ কামরুজ্জামান (মাঃ আঃ) হুজুর
পাককে।
মৃত্যুঃ ১৯৮৪ (ইংরেজি) সাল ২৮শে মার্চ,১৩৯১ সনের ১৪ চৈত্র
বেলা ৩ টা ১০ মিনিটে লক্ষ লক্ষ ভক্ত আশেক জাকের মুরীদদেরকে শোক সাগরে ভাসিয়ে মহান মাশুকের
দিদারে দারুল বাকায় তাশরিফ নেন। কিন্তু আজও তিনি রওজা পাকে শুয়ে আগের মতই জিন্দাপীরের
ন্যায় তার মুরীদ দের ফায়েজ দান করছেন এবং কঠিন বিপদে রুহানীতে উপস্থিত থেকে উদ্ধার
করছেন।
চন্দ্রপুরীর ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদাসমূহ
আকিদা-১. কোন লোক বড় বুজুর্গ হলে তার আর ইবাদত
লাগেনা। স্বয়ং আবুল ফজল কর্তৃক লিখিত “হাক্কুল ইয়াকিন” পুস্তকের ২৯ পৃষ্ঠায় আছেঃ “কোন
লোক যখন মাকামে ছুদুর, নশর, শামসি, নুরী, কুরবে মাকিনের মোকাম অতিক্রম করিয়া নফসির
মোকামে গিয়ে পৌঁছে, তখন তাঁহার কোন ইবাদত থাকে না। জজবার অবস্থায়ও কোন লোক যখন ফানার
শেষ দরজায় গিয়ে পৌঁছে, তখনও তাঁহার কোন ইবাদত থাকে না। এমনকি তখন ইবাদত করিলে কুফরি
হইবে। তাসাওউফের বহু কিতাবে এ বিষয়ে উল্লেখ আছে।
আকিদা-২. চন্দ্রপাড়ার পীরের দ্বিতীয় ভ্রান্ত মতবাদ হলঃ জিব্রাইল
এবং আল্লাহ্ এক ও অভিন্ন। চন্দ্রপাড়া পীরের জামাতা দেওানবাগী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত “সূফী
ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ” থেকে প্রকাশিত মাসিক “আত্মার বানী”(৫ম বর্ষ ১ম সংখ্যা) পত্রিকায়
আছেঃ সুলতানিয়া মুজাদ্দেদিয়া তরীকার ইমাম চন্দ্রপুরী ফরমানঃ জিব্রাইল বলতে অন্য কেহ
নন স্বয়ং হাকিকতে আল্লাহ্।
আকিদা-৩. আল্লাহর ফেরেশ্তারা আল্লাহর নাফরমানী
করেঃ
দেওয়ানবাগ হতে প্রকাশিত আত্মারবানী ৫ম বর্ষ ৬ নং
সংখ্যার ২৫ নং পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ১৪/১১/৮২ ইং এশার সময় জনৈক মুরিদ জিজ্ঞাসা করিল
“বাবাজান ইবলিসের গলায় পায়গম্বরী হার হইলো কেন? এর জবাবে চন্দ্রপাড়ার পীর মৌঃ সুলতান
আহমদ বলিলেন, “ইবলিসের অধীনে অসংখ্য ফেরেশ্তা কাজ করতেছে। চন্দ্রপুরী বলেন, ইবলিস তার
অধীনে যে ফেরেশ্তা আছে তাদের বলতেছে, এই ফেরেশ্তা তুই এই কর। বিভিন্ন নামে আছে তো,
তুমি এইডা বানাও, তুমি ঐডা বানাও। এর চোর বানাও। ওরে চোট্টা বানাও। ওরে সাধু বানাও।
সে হুকুম করতেছে তারা (ফেরেশতারা) বানাইতেছে। একথা থেকে প্রমাণিত হয় যে, চন্দ্রপুরীর
মতে আল্লাহর ফেরেশতারা আল্লাহর নাফরমানী করে।
আকিদা-৪. চন্দ্রপাড়ার পীর পুনর্জন্মবাদের প্রবক্তা। মাসিক
আত্মার বানী ৫ম বর্ষ ৬ নয় সংখ্যা ২৬ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছেঃ চন্দ্রপুরী ফরমাইলেন, “পুনর্জন্ম
সম্বন্ধে কুরআনেই আছে-
অর্থাৎ, কিভাবে তোমরা আল্লাহর সাথে কুফুরি কর? অথচ
তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন
ও পুনরায় তোমাদেরকে জীবন দান করবেন, অনন্তর তাঁর দিকেই তোমরা ফিরে যাবে। (সুরাঃ বাকারা,
আয়াতঃ২৮)
চন্দ্রপুরীর মতে এখানে একটি আরবির শব্দের অর্থ পৃথিবীতে
পুনরায় জন্মলাভ।
চন্দ্রপুরীর প্রসঙ্গঃ
শরঈ উযর বা কারণ ব্যতিত ইবাদত ফরয না হওয়ার আকিদা-বিশ্বাস
একটি কুফরি আকিদা। আর তিনি ইবাদত করাকেই কুফরি বলেছেন! তদুপরি একটি ফরয কাজকে কুফরি
ঘোষণা দানও একি কুফরি। শরহে আকাইদ গ্রন্থে আছেঃ
অর্থাৎ, বান্দা যতক্ষণ সুস্থ মস্তিস্ক বালেগ থাকে
ততক্ষন যত বড় আবেদ হোক না কেন তার উপর হতে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ রহিত হয় না। রহিত হওয়ার
আকিদা কুফর ও পথভ্রষ্টতা।
তারা আল্লাহর মাখলুক ফেরেশতাকে আল্লাহর সাথে অভিন্নতার
মত পোষণ করে মাখলুককে খালেক সাব্যস্ত করেছে। আর খোদার কোন মাখলুককে খোদা সাব্যস্ত করা
কুফরি। তাছাড়া জিব্রাইল (আঃ) সম্পর্কিত ধারণা জরুরিয়াতে দ্বীন এর অন্তর্ভুক্ত। হযরত
মাওলানা ইদ্রিস কান্দলভি বলেনঃ এ ধরনের ক্ষেত্রে কোন ভিন্নতর ব্যাখ্যা প্রদান এটাকে
অস্বীকার করার নামান্তর। আর এ ধরনের বিষয়কে অস্বীকার করা কুফরি।
(তথ্য সূত্রঃ “ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ”-লেখকঃ
মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দিন সাহেব )।
আরো অনেক শিরক, কুফরী আর বিদআতি কর্মকান্ড আছে দেখতে
চাইলে ইউটিউবে সার্চ দিন।
আটরশি পিরের দরবার শরীফ
আখেরি মুজাদ্দেদ আখেরি মুর্শেদ বিশ্ব ওলী হজরত মাওলানা
খাজাবাবা শাহসূফী ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের আধ্যাত্মিক প্রতিনিধি, দেশ ও জাতির অতন্দ্র
প্রহরী, মুসলিম উম্মাহ এবং শান্তিকামী বিশ্ব মানবতার মহান নেতা, জাকের পার্টির মহামান্য
চেয়ারম্যান পীরজাদা আলহাজ্ব খাজা মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী সাহেবের দাঁড়িবিহীন
(ক্লিন সেইভ) ছবি সংবলিত ইদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্যে একটি পোস্টার তাদের এক মুরিদ
ফেসবুকে পোস্ট করে। পোস্টারে আরো দুইজন মুরিদের ক্লিন সেইভ সংবলিত মুখচ্ছবি আছে। আমি
কমেন্টস এ লিখলাম, ক্লিন সেইভ এই লোকটি পির হয় কেমনে? উত্তরে তারা লিখলো-ইসলামের জন্যে
মুখে দাঁড়ি লাগে না, হতে হবে সৎ, নিষ্ঠাবান, থাকতে হবে আদব, বুদ্ধি, মহব্বত ও সাহস,
যার পুরোটাই রয়েছে আমাদের জাকের পার্টির মহামান্য চেয়ারম্যান সাহেবের মধ্যে।
প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা-রাসুল সাঃ এর যে সুন্নাত মানে
না সে কি করে পির দাবী করে? এখানে এসব নিয়ে বিস্তারিত লিখতে চাই না।
আটরশি পিরের মারাত্মক বাণীঃ-মক্কা মদিনার পর তৃতীয় পবিত্র স্থান
হল বিশ্ব জাকের মঞ্জিল।
আমরা ছোট বেলায় দেখতাম কয়েকশত মাইল দূর থেকে আটরশির
মুরিদরা গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগী নিয়ে হেঁটে হেঁটে জিকির করতে করতে আটরশি
দরবারে হাজির হতো। সেই দিনগুলো আর দেখা যায় না। অনেক ইনকাম বন্ধ হয়ে গেছে। যাই হোক,
এখন আসি আটরশির নাকি বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণার পিছনে অনেক অবদান আছে। তাদের
লেখা থেকে তুলে ধরা হলোঃ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণায় হযরত শাহ সূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কূঃ) ছাহেবের
ভূমিকাঃ-
৫ জুন ১৯৮৮ সালে জাতীয় সংসদে এক ঐতিহাসিক বিল পাস
হয়। যে বিলের মাধ্যমে ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়। বিশ্ব জাকের মঞ্জিল
পাক দরবার শরীফ যা সূফীবাদের আধ্যাত্নিক রাজধানী। সেখানে দিবা-নিশি আধ্যাত্নিকতা চর্চা
করা হয়। সেই সাথে পারিবারিক, সামাজিক তথা নিজকে চিনার ও জানার জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয়।
এই বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফের মহামহিম
প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বওলী হযরত শাহ সূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী(কূঃ) ছাহেব সেই ৬০’র দশকে স্থানীয়
ও জেলা পযার্য়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন। ৭০’র দশকে তিঁনি জাতীয় সকল পত্র-পত্রিকা,
রাজনীতি তথা স্রষ্টা প্রেমিকদের কাছে কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।
৮০’র দশকে দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তজার্তিক মহলে,
আন্তজার্তিক খ্যাতনামা পত্রিকাসহ সারা পৃথিবীর সকল ধর্মের মানুষের কাছে আধ্যাত্নিক
নেতা হিসাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।
দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বওলী হযরত
খাজাবাবা ফরিদপুরী পীর ছাহেবের তথা বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের ভূমিকা ছিলো অপরিসীম।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে হাজার হাজার নারী-পুরুষ-
শিশু বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে আশ্রায় গ্রহন করেছিলো। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে
রাত্রীযাপন করে খাওয়া-দাওয়া বিশ্রাম করে বিশ্বওলী হযরত পীর কেবলাজান হুজুরের দোয়া নিয়ে
ফরিদপুর থেকে ট্রেনিং এর উদ্দেশ্যে ভারত গমন করতেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শিশুদের
খাবারের দুধ গরম করার জন্য ৪০ খানা চুলা সর্বক্ষন জ্বালানো থাকতো।
১৯৭৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশ্ব জাকের
মঞ্জিলের ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে পরবর্তী এক বছর দেশের
অস্থিতিশীর রাজনীতি স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের ভূমিকা সম্পর্কে
“The Holiday” পত্রিকায় শিরোনাম করে লিখা হয়,
”The new development in Bangladesh politics is
consequent upon the parley between President Sattar and Chief of The Army Staff
Lt. Gen. H.M. Ershed held on December 3 At Atroshi The Mecca of Bangladesh
politics for some days”.
তারপর আসা যাক রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের ব্যাপারে। এদেশের
প্রতিটি মুসলামের অন্তরের আশা-আকাংখা ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম।
আজ আপনি আমি বা যত সুন্নী, তাবলিগি, কওমী সহ যত মুসলমান গর্ব করে বলতে পারি আমাদের
রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম তার পিছনে সব চেয়ে বড় ভুমিকা রাখেন বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব
হযরত বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব।
তৎকালীন সেনাশাসিত সরকারে সেনা বাহিনিতে তিঁনার ভূমিকা
নিয়ে ফার ইষ্টার্ন ইকোনমিক রিভিয়্যুর পত্রিকায় শিরোনাম হয়, ” Shah Sufi Faridpuri,
a Highly popular muslim saint disagrees with His military devotees on power
sharing”
৩২ বছর আগে ৫ই জুন ১৯৮৮ সালে সংবিধানের ৮ম সংশোধনীর
মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম কে ইসলাম ঘোষণা করা হয়।
সংবিধানের ৮ম সংশোধনী বিলের মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম
হিসাবে ইসলাম গৃহিত হবার পর তৎকালিন রাষ্ট্রপতি এরশাদ তার বক্তব্যে বলেন,
”আমি আমার মুর্শিদ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর হযরত
ফরিদপুরী কেবলাজান হুজুরের শিক্ষাই এই পদক্ষেপের অনুপ্রেরনার উৎস হিসাবে নিয়েছি। তিঁনারই
কারনে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম।”
এই বিল মহান সংসদে পাশ হবার পরদিন রাষ্ট্রপতি এরশাদ
এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা মওদুদ আহমদ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে গমন করে হযরত
পীর কেবলাজান হুজুরের কদমে তাঁদের ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা ব্যক্ত করেন।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের অপরিসীম ভুমিকায় সংবিধানের
৮ম সংশোধনী বিল দ্বারা ইসলামই কেবল রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি পায়নি। একই সঙ্গে
এই বিলে অন্যান্য সকল ধর্ম প্রচার ও পালনের অধিকারও স্বীকৃতি পেয়েছে। সংবিধানের ৮ম
সংশোধনী বিল এদেশের ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের প্রবক্তাদের সমস্ত উদ্দেশ্য ভেস্তে দিয়েছে।
সূফী ইসলামের তাৎপর্য এই যে, আদর্শ ভিত্তি করেই ইসলামের
সাবর্জনীন আদর্শ বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ঐক্যের যেমন ভিত্তি হবে তেমনি স্বাধীন জাতিসত্তার
ধারা সৃষ্টি করে এদেশের ইতিহাসে অবিস্মরনীয় হয়ে থাকবেন বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার
শরীফের মহামহিম প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) কেবলাজান ছাহেব।
সংবিধাবের ৮ম সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পর বিশ্ব জাকের
মঞ্জিল দরবার শরীফে শোকরানা মিলাদ শরীফ ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। তখন দেশের খ্যাতনামা
বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় শিরোনাম করা হয় এভাবে,
”৯ কোটি মুসলামানের আশা পূরন হয়েছে- আটরশির পীর ছাহেব”
দৈনিক ইনকিলাব ২০ জুন, ১৯৮৮
দৈনিক বাংলা ২০ জুন’ ১৯৮৮ সালের তাদের পত্রিকার আর্টিকেলে
লিখেন,
”বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেব হযরত মাওলানা শাহসূফী
ফরিদপুরী (মাঃজিঃআঃ) ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষনায় আল্লাহতায়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায়
করে বলেছেন, ” ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের নিজ নিজ ধর্ম পালন ও তাদের আর্থ-সামাজিক
অধিকার ভোগের ব্যবস্থা ইসলামের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রকে করতে হবে। পীর ছাহেব সম্প্রতি
এক নসিহতে বলেন, ইসলাম আল্লাহতায়ালার মনোনীত ধর্ম। এই ধর্মের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মধ্য
দিয়ে দেশের ৯ কোটি মুসলমানের ঈমানের বিজয় হয়েছে। তিনি সংঘাতমুক্ত,শ্রেনী ভেদাভেদহীন
সাম্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টির উপদেশ দিয়ে বলেন,শুধু মুসলমানকে নয় সমগ্র মানবজাতিকে ভালোবেসে
আশরাফুল মাকলুকাত হবার সৌভাব অর্জন করতে হবে।
যারা এখনো রাষ্ট্র ধর্মের বিরোধীতা করছেন, তাদেরকে
অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসার আহবান জানিয়ে পীর ছাহেব বলেন, যারা আমাদের আত্নপরিচয়ের
পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চান মুসলমানগন তাদের মোকাবেলা করবে।”
তাই গর্ব করে বলতে পারি, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল শুধু
মাত্র পীর-মুরিদীর জন্য নয়। এখানে মানুষকে সত্যিকারে মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়া হয়। পারিবারিক
বন্ধন,সামাজিক বন্ধন, রাষ্ট্রিয় সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়া হয় বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে।
সর্বশেষে বলতে পারি কঠিন মসিবতের যামানায় ” মান আরাফা
নাফসাহু ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু” অর্থঃ নিজেকে চিনলে আল্লাহ্কে চিনা যায়। এই জামানায়
আল্লাহ্ পাককে চিনবার একমাত্র জায়গা বিশ্ব জাকের মঞ্জিল, আটরশি পাক দরবার শরীফ। আসলে
কি তাই?
এখন জেনে নেই তাদের আসল ভন্ডামিঃ
ফরিদপুর শহরের নিকটস্থ আটরশী বিশ্বজাকের মঞ্জিলের
প্রতিষ্ঠাতা শাহসুফি হাশমত উল্লাহ আটরশীর পীর। তিনি এনায়েতপুরের পীর শাহসূফী মোহাম্মদ
ইউনুস আলী এনায়েতপুরীর মুরীদ ও খলীফা। হাশমত উল্লাহ জামালপুর জেলার শেরপুর থানার পাকুরিয়া
গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা শাহ আলিম উদ্দিন। হাশমত উল্লাহর বয়স যখন ৫/৬ বছর
তখন তিনি নোয়াখালির মাওলানা শরাফত আলীর নিকট আরবি, ফার্সি প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন।
এতটুকুই তার পড়াশুনার ইতিহাস পাওয়া যায়।
দশ বছর বয়সের সময় তার পিতা তাকে এনায়েতপুরির পীর
ইউনুস আলীর খেদমতে অর্পণ করেন। ত্রিশ বছর যাবত তিনি এনায়েতপুরি সাহেবের কাছে থাকেন।
অতএব এনায়েতপুরির নির্দেশে ফরিদপুরে এসে তিনি জাকের ক্যাম্প নামে একটি ক্যাম্প স্থাপন
করেন। পরবর্তী কালে এটারই নাম দেওয়া হয় “বিশ্ব জাকের মঞ্জিল”।
হাসমত উল্লাহরর লিখিত একখানা বইয়ের সন্ধান পাওয়া
যায়। এর নাম হল “বিশ্বজাকের মঞ্জিলের পরিচালনা পদ্ধতি”। এছাড়া বিশ্ব জাকের মঞ্জিল
কর্তৃক শাহ সূফী হযরত ফরিদপুরী ছাহেবের নসিহত নামে তার বয়ান ও নসিহতসমুহের সংকলন বের
করা হয়েছে ২২ খণ্ডে।
তার এসব বই এবং জাকের মঞ্জিল কর্তৃক প্রকাশিত অন্যান্য
কয়েকটি বই থেকে তার ও তার অনুসারীদের আকীদা-বিশ্বাস সম্বন্ধে যা জানা যায় তা নিম্নরূপ–
(১) পীর সম্বন্ধে অতিরঞ্জন ধারণা তাদের একটি প্রধান
বিভ্রান্তি।
যেমন-
আটরশি পীর বলেছেন- এনায়েতপুরী সাহেব (কুঃ) ছাহেব
তিরোধানের পূর্বে আমাকে বলিয়া গিয়াছেন, “বাবা তোর ভাল ও মন্দ উভয়টাই আমার হাতে রইল।
তোর কোন চিন্তা নেই।
(সূত্রঃ শাহছুফী হযরত ফরিদপুরী ছাহেবের নসিহত, ৩/১১১
পৃঃ, প্রকাশক : পীরজাদা মোস্তফা আমীর মুজাদ্দেদী, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ফরিদপুর, ৩য় মুদ্রণ
১লা মে-১৯৯৯ খৃষ্টাব্দ)।
অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন- “তুমি বলে দাও
সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে। এই সম্প্রদায়ের কী হল যে, এরা কোন কথা বুঝতে পারে না।”
–সুরা নিসা, আয়াত ৭৮।
উল্লেখ্য, এ শ্রেণীর লোকেরা পীরকে খোদার স্তরে পৌঁছে
দিয়ে পীরের মধ্যে খোদায়ী গুন আরোপ করেছে। তাই ভালো মন্দ সম্পাদনা করার খোদায়ী গুন
পীরের মধ্যে থাকাকে সাব্যস্ত করেছে। যারা আল্লাহ ও রাসুলের মধ্যে পার্থক্য না করার
মত পোষণ করেন বা মানুষের মধ্যে আল্লাহর প্রবেশ করার মত পোষণ করেন বা পীর মাশায়েখকে
খোদার স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন, তারা এ বিষয় সাধারণত সর্বেশ্বরবাদ দর্শনের অপব্যাখ্যার
আশ্রয় নিয়ে এটা করে থাকেন।
পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে- “আর কোন লোক এমনও রয়েছে
যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে,
যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা
ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন-কোন আযাব প্রত্যক্ষ
করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই
সবচেয়ে কঠিনতর।” -সূরা বাক্বারাহ, আয়াত ৯৬।
(২) পীর পরকালে মুক্তির ব্যবস্থা
করে দিবে:
আটরশী পীর বলেন- “দুনিয়াতে থাকাবস্থায় তোমরা খোদা
প্রাপ্তির পথে যে টুকু অগ্রসর হও না কেন, তোমাদের ছাহেবে-ছুলুফ যদি জীবৎকালে সম্পন্ন
নাও হয়, তবুও ভয় নাই। মৃত্যুর পরে কবরের মধ্যে দুই পুণ্যাত্মা (অর্থাৎ রাসুল (সাঃ)
এবং আপন পীর) তোমাদের প্রশিক্ষণ দিবেন। মা’রেফাতের তালিম দিবেন, ফলে হাশরের মাঠে সকলেই
আল্লাহর অলী হইয়া উঠিবেন। এই কারনে বলা হয় এই তরিকায় যিনি দাখিল হন তিনি আর বঞ্চিত
হন না”।
পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে- “বল, আমি কি আল্লাহ্ ব্যতীত
অন্য কোন প্রতিপালক খুঁজবো ? অথচ, তিনিই সকল কিছুর প্রতিপালক। প্রতিটি আত্মা তার নিজ
কর্মের প্রতিফলের জন্য দায়ী। কেউ অন্য কারও পাপের ভার বহন করবে না। তোমাদের সর্বশেষ
লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন। অতঃপর যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করতে তার সত্যতা
সম্বন্ধে তিনি তোমাদের অবহিত করবেন।” –সূরা আন্আম, আয়াত ১৬৪।
অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে- “কেউ কারো পাপের ভার
বহন করবে না; কারো পাপের বোঝা গুরুভার হলে সে যদি অন্যকে তা বহন করতে আহবান করে কেউ
তা বহন করবে না – নিকট আত্মীয় হলেও। তুমি তো শুধু তাদেরকেই সর্তক করতে পার যারা তাদের
প্রভুকে না দেখেই ভয় করে, এবং নিয়মিত নামাজকে প্রতিষ্ঠা করে। যে কেউ নিজেকে পরিশুদ্ধ
করে, সে তো তা করে নিজের আত্মার কল্যাণের জন্য এবং [সকলেরই শেষ] গন্তব্যস্থল হচ্ছে
আল্লাহ।” –সূরা ফাতির, আয়াত ১৮।
কাজেই পীর ধরলেই মুক্তি হবে এমন ধারণা চরম গোমরাহী
মূলক আকীদা। পীর তালিম দিয়ে বা কোনভাবে মুরীদের নাজাতের ব্যবস্থা করতে পারবে এ ধারণা
ভ্রান্ত। কেউ নিজে আমল করে নাজাতের ব্যবস্থা না করলে কোন পীর তাকে নাজাত দিতে পারবে
না।
কোরানে বলা হয়েছে, “যখন [বিচারে] সব কিছুর সিদ্বান্ত
হয়ে যাবে শয়তান বলবে, আল্লাহ-ই তোমাদের সত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমিও দিয়েছিলাম
কিন্তু আমি তোমাদের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। তোমাদের আহবান করা ব্যতীত
তোমাদের উপরে আমার কোন কর্তৃত্ব ছিলো না; কিন্তু তোমরা আমার আহবানে সাড়া দিয়েছ। সুতারাং
আমাকে ভৎর্সনা কর না, বরং তোমাদের নিজ আত্মাকে ভৎর্সনা কর। আমি তোমাদের আর্তনাদ শুনতে
পাই না, তোমরাও আমারটা শুনতে পাও না। পূর্বে তোমরা আমাকে আল্লাহর সাথে যে শরীক করেছিলে,
তোমাদের সে কর্ম আমি অস্বীকার করি। পাপীদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি।” –সূরা ইব্রাহীম,
আয়াত ২২।
(৩) পীর
দুনিয়াতে সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করতে পারেন। আটরশি পীর সাহেব বলেন, “মুর্শিদে
কামেল তদীয় মুরীদ পৃথিবীর যে স্থানেই থাকুক না কেন সেই স্থানেই তাহাকে কুওতে এলাহিয়ার
হেফাযতে রাখিতে পারেন। মুর্শিদে কামেলকে আল্লাহ এইরূপ ক্ষমতা দান করেন। শুধু মুরীদকেই
নয় মুরীদের আত্মীয়-স্বজন, মাল সামানা, বাড়ী ঘর যাহা কিছুই খেয়াল করুক, তাহার সব
কিছুই আল্লাহ তা’আলার কুওতের কেল্লায় বন্দী করিয়া দেন”।
এ ধারণা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী ধারণা। আল্লাহপাক
কারও কোন বিপদের ফয়সালা করলে কেউ তাকে উদ্ধার করতে পারবে না।
কোরআনে করীমের এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- “যদি আল্লাহ
তোমাদের কোন অকল্যাণ ঘটান, তাহলে তা হটানোর কেউ নেই। যদি তিনি তোমার কল্যাণ চান, তবে
তাঁর অনুগ্রহ রদ করার কেউ নাই। তার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি কল্যাণ দান করেন।
তিনি বার বার ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” –সুরা ইউনুস, আয়াত ১০৭।
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- “সেদিন সম্বন্ধে সর্তক কর,
যেদিন নিকটবর্তী হচ্ছে, যেদিন হৃদয় কণ্ঠাগত হয়ে তাদের শ্বাসরোধ করবে। পাপীদের এমন
কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু বা সুপারিশকারী থাকবে না যার কথা গ্রাহ্য করা হবে। [আল্লাহ] চোখের
প্রতারণা অবগত আছেন, এবং [মানুষের] অন্তর যা, গোপন করছে তাও জানেন।” –সূরা মুমিন, আয়াত
১৮-১৯।
পীর তার মুরীদ ও মুরীদদের আত্মীয়-স্বজনকে সব ধরনের
বিপদ আপদ থেকে উদ্ধার করতে পারলে আটরশির মুরীদ ও মুরিদদের আত্মীয়-স্বজন কেন পথে ঘাটে
দুর্ঘটনার স্বীকার হন? কেন তারা আততায়ীর হাতে নিহত হন? কেন তাদের বাড়ি ঘরে চুরি ডাকাতি
হয়?
(৪) পরকালে
মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহনের অবশ্যকতা নেই। আটরশি পীর বলেন- হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ
ও খ্রিষ্টানগণ নিজ নিজ ধর্মের আলোকেই সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করতে পারে
এবং তাহলেই কেবল বিশ্বে শান্তি আসতে পারে।
(সূত্রঃ আটরশীর কাফেলা, সংকলনে মাহফূযুল হক, আটরশীর
দরবার থেকে প্রকাশিত, ৮৯ পৃঃ, সংস্করণ-১৯৮৪, তাসাউফ, তত্ত্ব ও পর্যালোচনা, ১৪৭ পৃঃ,
প্রকাশকাল-২০০০ খৃঃ)।
পবিত্র কোরানে আল্লাহ ঘোষনা করেছেন, “ইসলামই আল্লাহর
নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য পূর্ণাঙ্গ দীন।” –সূরা আল-ইমরান, আয়াত ১৯।
পবিত্র কোরানে আল্লাহ আরো বলেছেন- “আল্লাহর কাছে
একমাত্র মনোনীত ধর্ম হল ইসলাম।” –সূরা আল-ইমরান, আয়াত ৮৫।
(৫) ওরস
সম্পর্কে তাদের অত্যন্ত বাড়াবাড়ি রয়েছে। আটরশি পীর এনায়েতপুরীর উদ্বৃতি দিয়ে বলেন-
“ঔরস কাজা করিলে পরবর্তী এক বছরের জন্য বহু দুর্ভোগ পোহাইতে হয়। যাবতীয় পথ রুদ্ধ
হয়”।
আসুন আগে জানি ওরস বলতে কি বুঝায়। ওরস এর আভিধানিক
অর্থ বিবাহ, বাসর। পরিভাষায় ওরস বলতে বৎসরান্তে কোন ওলী ও বুজুর্গের মাঝারে সমবেত
হয়ে ধুমধাম সহকারে ফাতেহাখানী, ঈসালে ছওয়াব, ভোজ ইত্যাদির আয়োজন করা। ওরস এর ক্ষেত্রে
দুটো বিষয় পালিত হয়ে থাকে।
(১) বৎসরান্তে
নির্দিষ্ট দিনে কোন ওলী ও বুজুর্গের কবর যিয়ারতে সমবেত হওয়া এবং ঈসালে ছওয়াব করা
অর্থাৎ মৃত্যু-বার্ষিকী পালন করা।
(২) সংশ্লিষ্ট
ওলী ও বুজুর্গের কবর দূরে হলে প্রয়োজনে সেই উদ্দেশ্যে সফর করা।
কবর যিয়ারতের জন্য কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে সকলে
সেদিনে সমবেত হওয়াকে শরী’য়াত আদৌ সমর্থন করে না। বিশেষ করে বছরান্তে এক দিনকে নির্দিষ্ট
করা যাকে পরিভাষায় ওরস বলা হয় শরী’য়াতে এর কোন ভিত্তি নেই।
ওরস ইসলামে সম্পূর্ণ বিদআত। কেননা কোন নবী করীম
(সাঃ) এর মৃত্যুর দিনটিকে সাহাবীরা কখন ওরস বানায় নি। এমন কি পীর আলেমদের মৃত্যুর
দিনটিকে কেউ ওরস বানায় নি। সুতরাং উনারা যে কাজগুলো করেন নি সেগুলো করা ইসলামে বিদআত।
সমস্যা হল এটা আটরশি বা অন্যান্যরা পালন করে ফায়দা
লুটার জন্য। আর সেটা হল ধর্মের নামে ব্যবসা করা।
উল্লিখিত বিষয় দ্বারা আটরশির পীরের ধর্মীয় অজ্ঞতা
ও ভণ্ডামী সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন- “কেহ ইসলাম ব্যতীত
[আল্লাহ্র ইচ্ছার নিকট আত্মসমর্পণকারী] অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে, তা কখনও
গ্রহণ করা হবে না। পরলোকে সে হবে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত।” –সূরা আল-ইমরান, আয়াত
৮৫।
আরো ইরশাদ হচ্ছে, “নিশ্চয়ই যারা কুফরী করে এবং কাফির
অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, তাদের কারো থেকে পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণ মুক্তিপণ হিসেবে দিলেও
তা কখনো গ্রহণ করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব এবং তাদের থাকবে না
কোনো সাহায্যকারী।” –সূরা আল-ইমরান, আয়াত ৯১।
আল্লাহ আরো বলেন- “কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে
কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ। অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন,
আবার মৃত্যু দান করবেন। পুনরায় তোমাদেরকে জীবনদান করবেন। অতঃপর তারই প্রতি প্রত্যাবর্তন
করবে। তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমীনে রয়েছে সে সমস্ত।
তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর
আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত।” –সূরা বাকারা, আয়াত ২৮-২৯।
পীরভক্তির শিরকের বিষয়ে কোরানের সতর্ক বানী- “অনেক
মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে। তারা কি নির্ভীক
হয়ে গেছে এ বিষয়ে যে, আল্লাহর আযাবের কোন বিপদ তাদেরকে আবৃত করে ফেলবে অথবা তাদের
কাছে হঠাৎ কেয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা টেরও পাবে না? ” –সূরা ইউসুফ, আয়াত ১০৬-১০৭।
আরো সতর্ক করা হয়েছে- “আল্লাহ্ তাঁর সাথে অংশীদারিত্বকে
ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে খুশী তিনি ক্ষমা করে দেন; আল্লাহর সাথে
শরীক উদ্ভাবন করা এক জঘন্য পাপ।” –সূরা নিসা, আয়াত ৪৮।
আলোচ্য আয়াতসমূহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তথাকথিত
উল্লিখিত পীর তার বিভিন্ন উক্তির মাধ্যমে শুধু নিজের ভণ্ডামীই প্রকাশ করেনি; বরং তার
ঈমানের ব্যাপারেও মানুষকে সন্দেহে ফেলে দিয়েছে।
মাজার ব্যবসায় সবচেয়ে বড় পীর ছিলেন আটরশির কেবলা
হুজুর। আটরশির মাজারই সবচেয়ে বড় আয়াতনের মাজার।
ধর্মব্যবসায়ীদের সম্পর্কে আল্লাহ মুমিনদেরকে বলেছেন-
“হে বিশ্বাসীগণ, ধর্মযাজক ও সন্ন্যাসীদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা অন্যায়ভাবে অন্যের
ধন সাগ্রহে ভোগ করে থাকে এবং লোকদের আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করে থাকে। এবং যারা স্বর্ণ
ও রৌপ্য পুঞ্জিভূত রাখে এবং আল্লাহর রাস্তায় তা ব্যয় করে না, তাদেরকে মহাশাস্তির
ঘোষণা দাও। সেদিন জাহান্নামের আগুনে উহাকে [সম্পদকে] উত্তপ্ত করা হবে এবং উহা দ্বারা
তাদের ললাটে, পার্শ্বদেশে ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। এই সেই [সম্পদ] যা তোমরা তোমাদের
জন্য পুঞ্জিভূত করে রেখেছিলে। সুতরাং যা [সম্পদ] তোমরা পুঞ্ছিভূত রেখেছিলে তার স্বাদ
গ্রহণ কর।” –সূরা তওবা, আয়াত ৩৪-৩৫।
আটরশির উরসের সময় অত্যাধুনিক গাড়ির দীর্ঘ সারি
থেকে অর্থ বোঝাই ব্রিফকেস নিয়ে পালা করে রাখা হয় একটি রুমে ।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় স্পিনিং মিলের মালিক আটরশিরপীর
সাহেব। আটরশির পীরের এত ধনী হওয়ার পেছনে আয়ের উৎস কী? মুরিদদের দান খয়রাত ছাড়া
আর কিছু না। তার সম্পর্কে যা জানি, তিনিও চরম ভোগবাদী জীবনযাপন করতেন।
অর্থ-সম্পদ পুঞ্জিভূতকারীদের বিষয়ে আল্লাহ বলেন-
“পার্থিব সম্পদ বৃদ্ধির প্রতিযোগীতা তোমাদের অন্যমনষ্ক করে রাখে। কিন্তু না, শীঘ্রই
তোমরা [বাস্তবতা] জানতে পারবে। আবার বলি, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। না, তোমাদের যদি
নিশ্চিত জ্ঞান থাকতো; তবে তোমরা [সাবধান] হতে। তোমরা অবশ্যই দোযখের আগুন দেখবে। আবার
বলি, তোমরা উহা নিশ্চিত দৃষ্টিতে দেখতে পাবে। অতঃপর, সেদিন তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে
সেই সব আনন্দ সর্ম্পকে।” –সূরা তাকাসুর।
কোরানে আরো সতর্ক করা হয়েছে- “যে সম্পদের পাহাড়
গড়ে এবং নিয়মিত তা গুণে রাখে; ধারণা করে যে, তার ঐশ্বর্য্য তাকে অমর করবে। না কখনও
না ! অবশ্যই সে হুতামায় নিক্ষিপ্ত হবে। তুমি কি জান হুতামা কি? আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত
আগুন, যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে। নিশ্চয় উহা তাদের চারিদিকে বেষ্টন করে থাকবে, দীর্ঘায়িত
স্তম্ভ সমূহে।” –সূরা হুমাযা।
এত বিত্তশালী ধর্ম ব্যবসায়ীর ধর্ম ব্যবসা সরকারের
নজরে কি আসেনা? এসব ধর্মীয় ভণ্ডামীর অবসান চাই। এদেশের নির্বোধ ধর্মান্ধ মানুষকে প্রতারণার
হাত থেকে রক্ষা করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।
অথচ ভয়াবহ এইসব পীরের দোয়া নিতে সরকার দলীয়, বিরোধী
দলীয় ব্যক্তিবর্গসহ অনেক খ্যাতনামা ব্যাক্তিত্বগণও হুমড়ি খেয়ে পড়েন তার কদমে, পরকালে
নাজাতের আশায়।
আল্লাহ এমন ভন্ড পীর থেকে সরলমনা মুসলমানের ইমান
হিফাজত করার তাওফিক দাও। আমিন।
তথ্য সূত্রঃ
১। পুস্পহার, মৌঃ মোঃ আব্দুর রহমান
মোজাদ্দেদী, মোয়াজ্জেম-দরবার শরীফ এনায়েতপুর, ১২তম সংস্করণ, বাং ১৪০৮,পৃঃ৩৭।
২। গাঞ্জে আছরার বা মা'রেফাতে তত্ত্ব
, খাজাবাবা এনায়েতপুরী এর অনুমোদন ক্রমে মোঃ মকিম উদ্দিন প্রনীত,প্রকাশক পীরজাদা মৌঃ
খাজা কামাল উদ্দিন ১০ম সংস্করণ,১৪০৯ সাল পৃঃ৯৮।
৩। সাহসুফী হযরত ফরিদপুরি (মাঃ জিঃ
আঃ) ছাহেবের নসিহত প্রকাশক পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সাল মুজাদ্দেদী,বিশ্ব জাকের মঞ্জিল
ফরিদপুর,খণ্ড ২১,পৃঃ ৪৯ ,সংস্করণ ৩য়, ৫ই জন ২০০১ / খণ্ড নং ৩, পৃঃ ১১, ১লা মে ১৯৯৯
/ খণ্ড ৪, পৃঃ ৯৩, ৪র্থ মুদ্রণ ৮ এপ্রিল ১৯৯৮ / খণ্ড ৬, পৃঃ ৩৬, ২য় মুদ্রণ ১৭ই জুলাই
১৯৯৭ / ২১খন্ড ৪৯, সংস্করণ ৩য় ৫ই জুন ২০১১।
৪। ওজিফা ও উপদেশ সম্পাদকঃপীরজাদা
মৌঃ খাজা কামাল উদ্দিন-সাজ্জাদনসীন এনায়েতপুর পৃঃ৩৬।
৫। বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পরিচালনা
পদ্ধতি ২০ তম সংস্করণ।
৬। তাসাওউফ,তত্ত্ব ও পর্যালোচনা পৃঃ১৪৭।
‘মাইজভান্ডার দরবার শরীফ
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস-তাদের নিজেস্ব ওয়েব
সাইড থেকে সংগৃহিতঃ
চট্টগ্রাম জেলার মাইজভান্ডার –ছায়া ঘেরা পাখী ডাকা
বাগানতুল্য শান্তিময় এই পল্লী,যাঁহার অধ্যত্ম শরাফতের কল্যাণে সারা বিশ্বে ‘মাইজভান্ডার
দরবার শরীফ’ নামে খ্যাত সেই মহান গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী হযরত মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ
আহমদ উল্লাহ (কঃ) এই স্থানে ১২৩৩ বাংলা (১৮২৬ খৃষ্টাব্দ) ১লা মাঘ শুভ জম্মগ্রহণ করেন।দেশীয়
শিক্ষা শেষে হিজরি ১২৬০ সনে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন এবং অধ্যায়ন শেষে তিনি
যশোরে কাজীর পদ গ্রহণ করেন। উক্ত পদে ইস্তাফা দেওয়ার পর কলিকাতায় মুন্সি বু আলী ছাহেবের
মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তিনি বিল আছালত বা স্বভাব সিদ্ধ জম্মগত অলী উল্লাহ ছিলেন।
মোখালেফাতে নফ্ছ বা প্রবৃত্তির বিরুদ্ধচারণে বিল মালামত বেলায়ত অর্জন করেন।হজরত পীরানে
পীর (কঃ) এঁর বংশধর ও কাদেরীয়া তরিকার খেলাফত প্রাপ্ত গাউছে কাউনাইন হযরত শেখ সৈয়দ
আবু শাহামা ছালেহ আল কাদেরী লাহোরীর দস্তে বায়াত গ্রহণ করিয়া গাউছিয়তের খোদা-দাদ খনি
এবং পীরে তরিকতের বড় ভাই হযরত সৈয়দ দেলোয়ার আলী পাকবাজ হইতে এত্তেহাদী কুতুবিয়তের ফয়েজ
হাসিল করিয়া কামেলে মোকাম্মেল হন। অধ্যত্ম ক্ষেত্রে অনাবিল করুনা বর্ষনের পর ১৯০৬ ইং
২৩শে জানুয়ারী ,বুধবার এই মহান গাউছুল আজম ওফাত প্রাপ্ত হন। ওফাতের পূর্বে তিনি অর্জিত
গাউছিয়ত কুতুবিয়তের মহিমা সমৃদ্ধ শরাফত জারী রাখার লক্ষ্যে নিজ আদরেরর নাতী হযরত মাওলানা
শাহ্ ছুফী সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (কঃ) কে “বালেগ” ঘোষণা করে নিজ গদীতে বসানোর
মাধ্যমে সাজ্জাদানশীন মনোনীত করে যান, যিনি ১৯৮২ সালে ওফাত প্রাপ্ত হন। পুনরায় সাজ্জাদানশীন-এ-
গাউছুল আজম (কঃ) ওফাতের পূর্বে এই শরাফতের ধারা জারী রাখার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সনে নিজ ৩য়
পুত্র হযরত মাওলানা শাহ ছুফী সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভান্ডারী (মঃ) কে তাঁহার রচিত মানব
সভ্যতায় “যোগ্যতম ” ঘোষণা , জীবদ্দশায় প্রকাশিত জরুরী বিজ্ঞপ্তিতে তাঁহার গদীর স্থলাভিষিক্ত
সাজ্জাদানশীন মনোনীত করে শিক্ষা-দীক্ষা , শজরা-দান, ফতুহাত নিয়ন্ত্রন অধিকার সম্পন্ন
এই গাউছিয়ত জারী সফলতা দানকারী সাব্যস্ত করে যান। হযরত কেবলা কাবার গাউছিয়ত কুতুবিয়তের
মহিমা সমৃদ্ধ শরাফতের এই ধারা শজরা প্রাপ্ত মনোনীত সাজ্জাদানশীনের মাধ্যমে হাশর তক্
জারী থাকবে।–ইনশা আল্লাহ
ইমান বিধ্বংসী ‘মাইজভান্ডারী প্রকাশনীর’
প্রকাশিত সুফিতাত্ত্বিক গ্রন্থাবলীঃ
• হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর জীবনী ও কেরামত
(বাংলা ও ইংরেজী)
• বেলায়তে মোত্লাকা
• মূলতত্ত্ব বা তজকীয়ায়ে মোখতাছার
• মিলাদে নববী ও তাওয়াল্লোদে গাউছিয়া
• বিশ্বমানবতায় বেলায়তের স্বরূপ
• মানব সভ্যতা
• মুসলিম আচার ধর্ম
• আয়নায়ে বারী
• মাইজভান্ডারী কায়দা
• রত্ন ভান্ডার (১ম ও ২য় খন্ড)
• জ্ঞানের আলো (ম্যাগাজিন)
• আমালে মকবুলীয়া ফি ফয়উজাতে গাউছিয়া
• তত্ত্বভান্ডার
• জ্ঞানভান্ডার
• শানে গাউছে মাইজভান্ডার
মাইজভান্ডারির মূল ইবাদতঃ নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে
ঢোল, তবলা, বাঁশী তথা বাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে আল্লাহর জিকির করা। আল্লাহর জিকিরের চেয়ে
এদের বাবাজানের গুণকীর্তন বেশী গাওয়া হয়। ইসলামের মূল ইবাদত এখানে দেখতে পাওয়া যায়
না।
এখন জেনে নেই এদের শিরক, কুফরি ও বিদআতি কর্মকান্ডগুলো কি কি?
মাইজভান্ডারের দেয়ালে ওরা লিখে রেখেছে ( আমি স্রষ্টার
গুনে গুনাম্বিত, তাই প্রকৃতির মত নিরব। গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী) {যে কেহ আমার কাছে
সাহায্য প্রার্থনা করিবে আমি তাকে উন্মুক্ত সাহায্য দান করিব। আহমদুল্লাহ মাইজভান্ডারী}
ইত্যাদি।
মাইজভান্ডারী পীর গোলামুর রহমানকে স্রষ্টার গুনে
গুনাম্বিত দাবি করে আল্লাহর একত্ববাদ ( তাওহীদ )কে অস্বীকার করেছে। এভাবে ইসলামের মূল
বুনিয়াদের প্রথমটিকেই তারা ভেঙে দিয়েছে। এরপর অঘোষিতভাবে নিজেকে খোদা দাবি করে প্রধান
পীর আহমাদুল্লাহ আলহাসানী ঘোষণা করেছে, যে কেহ আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করিবে আমি
তাহাকে উন্মুক্ত সাহায্য করিব।
জিয়াউল হক মাইজভান্ডারিতার বাপ
- ভাই - দাদার দাবিকে হার মানিয়ে উল্লেখযোগ্য অন্তত ৬টি দাবি করেছে। যথাঃ -
১। আমার দরবার আন্তর্জাতিক প্রশাসন অফিস;যেখান থেকে
এই বিশ্ব পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত।
২। এই বিশ্বের ৫০০ কোটি মানুষ আমি ই তো চালাই।
৩। এই বিশ্বে কখন কোথায় কি হয়েছে, হচ্ছে, হবে সব
আমার জানা।
৪। আকাশের উপরে বসে আমি সৃষ্টির কাজ কর্ম দেখি;উপরের
দিকে আললাহর সাথে কথা বলি।
৫। দুনিয়ার সব কিছু আমি ভেঙে চুরে ঠিক করি। মাইজভান্ডার
শরিফ হায়াতের ভান্ডার, রিজিকের ভান্ডার , দৌলতের ভান্ডার, ইজ্জতের ভান্ডার।
সুত্রঃ মাইজভান্ডারমাজার থেকে প্রকাশিত ( শাহানশাহ জিয়াউল
হক মাইজভান্ডারী ( কঃ )।
মাইজভান্ডারীদের মতেঃ
ক) তরীকত শরীয়ত থেকে ভিন্ন একটি বিষয়।
খ) বিশেষ ব্যক্তিবর্গের জন্য শরীয়তের অনুসরণ করা
জরুরী নয়।
গ) বিশেষ ব্যক্তিবর্গের জন্যে নামায, রোযা ও অন্যান্য
ইবাদত পালন করা অপরিহার্য নয়।
ঘ) বিশেষ ব্যক্তিবর্গের শরীয়ত ও কুরআন-হাদীস এবং
সাধারণ মানুষের শরীয়ত ও কুরআন-হাদীস থেকে ভিন্ন।
ঙ) সাধারণ মানুষের জন্যে শরীয়তে মুহাম্মদীর অনুসরণও
আবশ্যক নয়, বরং নিজের ইচ্ছেমত যে কোন ধর্মের অনুসরণ করলেই আখেরাতে মুক্তি পাওয়া যাবে।
দেখুন- মাইজভান্ডারীর পীরের লেখা “বেলায়েতে মোতলাকা”
গ্রন্থের ১৬, ১১৮, ১১৯-১২০ নং পৃষ্ঠা।
(চ) মাইজভাণ্ডারীদের একটি ভ্রান্ত মতবাদ হলো, পীর
তার মুরিদকে মৃত্যুকালে কষ্ট থেকে মুক্তি দিবেন, কবরে আরামের ব্যবস্থা করবেন, হাশরে
মুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন, আমলে ত্রুটি থাকলে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করবেন। এ সম্পর্কে
মাইজভান্ডারীদের কিতাবে বলা হয়েছেঃ
দাসগণের প্রাণ হরিতে — ভয় নাহি দূত সমনে
ফুল দেখাই প্রাণ হরিবে — নিজ হাতে গাউছ ধন
মনকির নকিরের ডর — কবরে নাহিক মোর
আদবের চাবুক মেরে হাঁকাইবেন গাউছ ধন
কবর কোশাদা হবে — পুষ্প শয্যা বিছাইবে
সামনে বসি হালকা বন্দি — করাইবেন গাউছ ধনে
হীন দাস হাদী কয় — হাশরেতে নাহি ভয়
পিছে পিছে দাসগণ ফিরাইবেন গাউছ ধন
তথ্যসূত্রঃ রত্নভাণ্ডার,
প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৭, প্রকাশক সৈয়দ মুনিরুল হক, ৮ম সংস্করণ, ১৯৯৭।
অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
গাউছজি, মাওলাজি ডাকছি তোমারে
নাছুতী সঙ্কটে উদ্ধারিত মোরে
দিন দুনিয়ার ছোওয়াব ও গুনা…
মিজানের পাল্লাখানা, পোল ছেরাতের ভাবা গোনা
রেহাই দেও মোরে
তথ্যসূত্রঃ রত্নভাণ্ডার,
দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৭, প্রকাশক সৈয়দ মুনিরুল হক, ৮ম সংস্করণ, ১৯৯৭।
তাদের মাজারের ভন্ডামিঃ বাইরের জেলাগুলো থেকে বিশেষ
করে ওরসের সময় হাজার হাজার মুর্খ মানুষ সেখানে জড় হয়। ঢোল তবলা বাঁশি বাজিয়ে নারি
পুরুষ এক সাথে নেচে গেয়ে মাতিয়ে তোলে। পীর কে সিজদা করে , মহিষ, গরু, ছাগল পীরের
নামেজবাই করে। রাতে পীরের নামে জিকির করে। কোথায় নামাজ কোথায় কি। ধর্মচ্যুৎ এমন ভাবে
হয়েছে যে, দুরদুরান্ত থেকে অনেক মহিলা আসে সন্তানের পাওয়ার আশায় । এসে কিন্তু অধিকাংশ
মহিলা সম্ভ্রম নিয়ে ফিরে যেতে পারেনা। গভীর রাতে মাজার এলাকার বন জঙ্গল থাকে লোকে
লোকারণ্য। পার্কের মত যুবক যুবতীর জোড়া দেখা যায় অস্বাভাবিক অবস্থায়। এলাকার মানুষ
তাদের পুকুরে কাটা দিয়ে রাখে যাতে পানি নষ্ট না করে। বিশ্বাস না হলে ১০ ই মাঘ এসে
তামাশা নিজ চোখে দেখার অনুরোধ থাকল।
আরো জেনে নেই -আটরশী ও মাইজভান্ডার দরবারের আসল রূপঃ
আমাদের বাংলাদেশে ভ্রান্ত আকীদাপন্থী নামধারী পীরদের
মাঝে আটরশী ও মাইজভান্ডারীর দুটি দরবার খুবই প্রসিদ্ধ।
হিন্দুদের
ধর্মগুরু ও তাদের মন্দিদের কার্যক্রমের অনুরূপ পরিচালিত হয় এসব দরবারগুলো।
হিন্দুদের মূর্তিপূজার মতই এসব দরবারে কবরপূজা হয়।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের মূর্তিদের ঘিরে যতগুলো রুসুম রেওয়াজ পরিচালনা করে হুবহু
একই পদ্ধতির রুসুম রেওয়াজ এসব দরবারে পরিচালিত হয়। যেমনঃ
বর্তমান মূর্তিপূজকরা প্রধানত মূর্তিপূজায় ৪টি কাজ করে থাকেঃ
১. বছরে দু’বার মূর্তিকে কেন্দ্র করে বড় আকারের অনুষ্ঠান
করে। যথা- (ক) কালি পূজা (খ) দূর্গা পূজা।
ছোট আকারের পূজা আরো অনেক হয়। কিন্তু সারাদেশব্যাপী
ধুমধামের সাথে এ দু’টি পূজা পালন করে থাকে। এসময় তারা মূর্তিকে ঘিরে যা করে তারা সারাংশ
হলঃ
২. মূর্তির সামনে প্রদীপ জ্বালায়।
৩. মূর্তির নামে মান্নত করে ও পশু বলি দেয়।
৪. মূর্তির সামনে মাথা নত করে ও সেজদা করে।
কবর বা মাযার পূজারীরা যা করে
কবরকে কেন্দ্র করেঃ
১. বছরে দু’বার বড় আকারে উরস ও ফাতেহা মাহফিল নামে
অনুষ্ঠান করে পীর বা বুযুর্গদের কবরকে ঘিরে।
২. কবরের সামনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলিত করে নিয়মিত।
৩. কবরে শায়িত বুযুর্গের নামে মান্নত ও কুরবানী করে।
৪. কবরকে সামনে নিয়ে দুআ করে, ক্ষেত্র বিশেষে মাথানত
ও সেজদাও করে।
বিজ্ঞ পাঠকের কাছে আমার জিজ্ঞাসা-মূর্তিপূজকদের মূর্তিপূজায়
যে কর্মাদী করে আর আমাদের দেশের মাজার ও কবর পূজারীরা যা করে এর মাঝে কি কোন পার্থক্য
আছে?
এবার আসুন দেখি কবর পূজারীদের কর্মকান্ড কুরআন ও হাদিসের মানদন্ডেঃ
(১) স্বীয় কবরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান
করাকে নিষিদ্ধ করে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
“তোমরা স্বীয়
ঘরকে কবর বানিয়োনা। (অর্থাৎ কবরের ন্যায় ইবাদত-নামায, তেলাওয়াত ও যিকির ইত্যাদি বিহীন
করনা।) এবং আমার কবরে উৎসব করোনা।(অর্থাৎ বার্ষিক, মাসিক বা সাপ্তাহিক কোন আসরের আয়োজন
করনা। তবে হ্যাঁ আমার উপর দুরূদ পাঠ কর। নিশ্চয় তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের দরূদ
আমার নিকট পৌঁছে থাকে।(আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতারা পৌঁছিয়ে দেন।)” (সুনানে আবু দাউদ:
হাদিস নং-২০৪৪)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নিজ রওযা মুবারকে উৎসব (উরস) পালন করতে বারণ করেছেন। তাহলে অন্য কে আর এমন
আছে যার কবরে তা বৈধ হবে?
হাদীসের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা মুনাভী রহঃ
এই হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন-
“এ হাদিস
থেকে বুঝা যায় যে, সাধারণ মানুষ যারা বছরের কোন নির্দিষ্ট মাসে বা দিনে (উরসের নামে)
ওলীদের মাযারে একত্রিত হয় এবং বলে-আজ পীর সাহেবের জন্ম বার্ষিকী (মৃত্যু বার্ষিকী),
সেখানে তারা পানাহারেরও আয়োজন করে, আবার নাচ গানেরও ব্যবস্থা করে থাকে, এ সবগুলিই শরীয়ত
পরিপন্থী ও গর্হিত কাজ। এ সব কাজ প্রশাসনের প্রতিরোধ করা জরুরী। (আউনুল মা’বুদ-৬/২৩)
(২) কবরের সামনে বাতি প্রজ্জ্বলন
করাকে হারাম সাব্যস্ত করে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
“হযরত ইবনে
আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশম্পাত
করেছেন (বেপর্দা) কবর যিয়ারতকারীনী মহিলাদের উপর, এবং সেসব লোকদের উপর যারা কবরকে মসজিদ
বানায় (কবরকে সেজদা করে) এবং সেখানে বাতি প্রজ্জ্বলিত করে। (জামি তিরমীযী-২/১৩৬)
উক্ত হাদিসে সুষ্পষ্ট কবরে বাতি প্রজ্জ্বলনকারীর
উপর অভিশম্পাত করেছেন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
(৩) আল্লাহ ছাড়া কারো নামে মান্নত
বা কুরবানী করা যায়না। কারণ মান্নত ও কুরবানী হচ্ছে ইবাদত। আর ইবাদত আল্লাহ ছাড়া কারা
জন্য করা জায়েজ নয়। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেনঃ
“আপনি বলুনঃ
আমার নামায, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই।
তাঁর কোন অংশিদার নেই। আমি তা-ই করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম আনুগত্যশীল। (সূরা
আনআম-১৬২-১৬৩)
সূরা কাউসারে মহান রাব্বুর আলামীন বলেন- فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
(2) অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন। (সূরা কাউসার-২)
সুতরাং পীরের নামে ও মাযারের নামে মান্নত করা কি
শিরকী কাজ ছাড়া আর কী হতে পারে?
(৪) আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা করা সুষ্পষ্ট হারাম।
কুরআনের অসংখ্য আয়াত ও হাদীসে নববী দ্বারা যা দিবালোকের ন্যয় পরিস্কার। একথা মনে হয়
অন্ধ পীর ও মাজার পূজারী ছাড়া সকল মুসলমানরাই জানে।
কুরআন ও হাদীসের উল্লেখিত বিবরণ মোতাবিক কবর ও মূর্তিপূজার
সাযুজ্যতার মাধ্যমে আমরা সহজেই অনুমান করে নিতে পারি আমাদের দেশের আটরশী, মাইজভান্ডারীসহ
মাযারপূজারী ও কবরপূজারীরা কি পরিমাণ শিরকী কর্মকান্ডে লিপ্ত। আরবের মুশরিকদের শিরক
কি ছিল?
মহান রাব্বুর আলামীন বলেন-
“হে পয়গম্বর!
আপনি মুশকদেরকে জিজ্ঞেস করুন যে, বল তো কে তোমাদেরকে আসমান জমিন থেকে রুযী কে দেন?
এবং কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন এবং
কে মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তারা পরিস্কার
বলবে যে, মহান আল্লাহ। বল এরপরও কি তোমরা ভয় করবে না? (সূরা ইউনুস-৩১)
আল্লাহ তায়ালাই মূল ক্ষমতার অধিকারী একথা আরবের মুশরিকরাও
বিশ্বাস করতো, তারপরও তারা কাফের কেন?
এই সূরার প্রথমাংশে মহান রাব্বুল আলামীন এ প্রশ্নের
জবাব দিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে-
আর তার (মুশরেকরা) আল্লাহ ভিন্ন এমন কতিপয়ের ইবাদত
করে, যারা তাদের কোন অপকারও করতে পারেনা এবং তাদের কোন উপকারও করতে পারেনা, ও তারা
বলে-এরা হল আল্লাহ তায়ালার কাছে আমাদের সুপারিশকারী। (হে রাসূল!) আপনি বলে দিন, তোমরা
কি আল্লাহ তায়ালাকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিচ্ছ যা আছে বলে তিনি (নিজেও) জানেন না, না আসমানে
না জমিনে! তিনি তাদের শিরকী কার্যকলাপ হতে পবিত্র ও অনেক ঊর্দ্ধে। (সূরা ইউনুস-১৮)
আরবের মুশরিকরা আল্লাহকে ¯স্রষ্টা স্বীকার করতো।
আরবের মুশরিকরা কাবার হিফাযত করতো। কাবা তওয়াফ করতো। মেহমানদারী করতো। কিন্তু এরপরও
তারা কফির। তারা মুশরিক।
কেন? কারণ তারা আল্লাহর সাথে সাথে মূর্তির কাছে সন্তান
চাইতো। মূর্তির জন্য মান্নত করতো। মূর্তির নামে কুরবানী করতো। এসব কারণে তারা মুশরিক।
আটরশী ও মাইজভান্ডারীদের আরো কিছু কুফরী আকীদা
আটরশী ও মাইজভান্ডারীদের মাঝে উপরোক্ত শিরকী কাজ
ছাড়াও আরো অনেক ইসলাম ও কুরআন হাদীস বিরোধী আকীদা বিদ্যমান।
কয়েকটি নিচে উদ্ধৃত করা হলঃ
(১) ইসলাম আসার পর ইসলাম ছাড়াও অন্য যেকোন ধর্মের
উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে আমল করে মানুষ আখেরাতে মুক্তি পেতে পারে। [মাইজভান্ডারী সিলসিলার
দ্বিতীয় পীর সায়্যিদ দিলাওয়ার হুসাইন (মৃত্যু ১৯৮২ ইং) রচিত “বেলায়েতে মুতলাকা” গ্রন্থের
৮৯-৯১, ১২৯ পৃষ্ঠা দৃষ্টব্য)।
ঠিক একই বক্তব্য রয়েছে আটরশীর পীরের।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিল, ২৫ই ফেব্রুয়ারী ১৯৮৪ ইং এর প্রকাশিত
সংবাদঃ পীর সাহেব বলেন, “হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খৃষ্টানগণ নিজ নিজ ধর্মের আলোকেই
সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করতে পারে”। অথচ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র
ইসলাম। [সূরা আলে ইমরান-১৯]
আর আহলে কিতাবদের এবং নিরক্ষরদের [আরব মুশরকেদের]
বলে দাও যে, তোমরাও কি আতœসমর্পণ করেছ? তখন যদি তারা আত্মসমর্পণ করে, তবে সরল পথ প্রাপ্ত
হলো, আর যদি মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তাহলে তোমার দায়িত্ব হলো শুধু পৌঁছে দেয়া। আর আল্লাহর
দৃষ্টিতে রয়েছে সকল বান্দা। [সূরা আলে ইমরান-২০]।
যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও
তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত। [সূরা আলে ইমরান-৮৫]।
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, এ উম্মতের
ইয়াহুদী বা খৃষ্টান যে-ই আমার দাওয়াত পাবে আর আমার আনীত দ্বীনের উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ
করবে, সে হবে জাহান্নামী। [সহীহ মুসলিম-১/৮৬, হাদীস নং-২৪০]
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহঃ লিখেনঃ
“ইয়াহুদ
ও খৃষ্টানদের উল্লেখ এজন্যে করা হয়েছে যেন অন্যদের ব্যাপারে সতর্কারোপ হয়ে যায়। কেননা,
ইয়াহুদ ও খৃষ্টানদের রয়েছে আসমানী কিতাব। তাদের নিকট আসমানী কিতাব থাকা সত্ত্বেও যখন
অবস্থা এমন, তাহলে যাদের কিতাব নেই তাদের অবস্থাতো বলার অপেক্ষাই রাখে না”। [শরহে মুসলিম-১/৮৬]
সুরেশ্বর দরবার শরীফ-শরিয়তপুর
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস-তাদের
ওয়েব সাইড থেকে সংগৃহিতঃ
'সুরেশ্বর' নামের সন্ধি- সুর+ঈশ্বর = 'সুরেশ্বর'।
ভারতবর্ষ তথা উপমহাদেশের উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক অলিয়ে কামেল শামসুল ওলামা আল্লামা হযরত
শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ আলী ওরফে হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ জান শরীফ শাহ্ রাঃ 'সুরেশ্বরী'
নামেও সমধিক পরিচিত। ভক্ত ও মুরিদগণ তাঁকে 'বাবা সুরেশ্বরী' বা 'সুরেশ্বরী কেবলা কাবা'
বলে সম্বোধন করেন এবং তাজিম ভক্তি শ্রদ্ধা জানান। সাধারণের কাছে তিনি হযরত সুরেশ্বরী
নামে সর্বাধিক পরিচিত।
পদ্মা বিধৌত দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফ
বৃহত্তর ফরিদপুরের বর্ত্তমান শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার সুরেশ্বর গ্রামে অবস্থিত।
বর্ত্তমানে পদ্মা নদী সুরেশ্বর দরবার শরীফ সংলগ্ন অবস্থিত হলেও পূর্ব্বে পদ্মা তীর
হতে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ছিল। আরও পূর্ব্বে সুরেশ্বর ঢাকা জেলার বিক্রমপুর
অঞ্চলের খলিলাবাদ পরগনার অধীনে ছিল। তখন বিক্রমপুর নামেই সমধিক পরিচিত ছিল।
হযরত জানশরীফ শাহ সুরেশ্বরী রাঃ ছিলেন সুরের প্রেমিক।
আল্লাহ্ প্রেম এবং তাঁর রাসূলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনে সুর বা সঙ্গীত গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। সুরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক জড়িত। 'সুর' মনে ভাব জাগায়, অন্তরে প্রেম
সৃষ্টি করে। সুরে আল্লাহ্, ফেরেশতা, মানুষ এমন কি প্রাণীকুল পর্যন্ত বিমোহিত হয়। সুতরাং
এমন সুর কখনো বর্জনীয় হতে পারে না। যে সুরে ভাবের সৃষ্টি হয়, হৃদয়ে ঐশ্বরিক প্রেম জাগে
সে সুর অবশ্যই কাম্য।
উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত অলিয়ে কামিল, বেলায়েত গগনের
সূর্য অলিকুল শিরোমণি শামসুল উলামা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ আলী ওরফে হযরত
জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী রাঃ এর পৌত্র এবং হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ নূরশাহ্ রাঃ
ওরফে হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আবদুল হাই রাঃ এর সর্ব কনিষ্ঠ পুত্র হযরত খাজা শাহ্ সূফী
সৈয়্যেদ নূরে আখতার হোসাইন আহমদীনূরী ওরফে চুন্নু মিয়া শাহ্ মাঃ জিঃ আঃ। তিনি বর্তমানে
দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফের প্রধান গদিনশীন পীর ও মোন্তাযেমে দরবার শরীফের
পদে অধিষ্ঠিত হয়ে দরবার শরীফের সার্বিক কার্যক্রম সুচারু রূপে সাফল্যের সাথে পরিচালনা
করছেন। তিনি ১৯৪৩ খৃষ্টাব্দের ১৮ই নভেম্বর মোতাবেক বাংলা ১৩৫০ সনের ২রা অগ্রহায়ণ দিবাগত
রাতে সুবহে সাদিকের সময় বরুণ ক্ষণে উত্তর-ফাগুনী নক্ষত্রে ভুবন আলোকিত করে ধরনীর বুকে
আবির্ভূত হন।
তাঁর পিতৃকুলের ঊর্ধ্বতন প্রসিদ্ধ আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ
হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ মানিক শাহী ফরিদপুরী এবং সপ্তম পুরুষ আলহাজ্জ্ব হযরত মাওলানা
শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ দীদার উল্লাহ সাহেব রাঃ মদিনা মুনাওয়ারা থেকে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে
বর্তমান ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারত হয়ে বাংলাদেশে আগমন করেন। তাঁর
পূর্ব পুরুষগণ প্রত্যেকে ছিলেন জ্ঞান সাধনায় ও আধ্যাত্মবাদে জগদ্বিখ্যাত আল্লাহর অলি
ও আধ্যাত্মিক পথের দিশারী। তাঁরা জ্ঞানে-গুণে, শিক্ষা-দীক্ষায়, আভিজাত্যে ছিলেন অনন্য।
তিনি দরবার শরীফের উন্নয়নকল্পে প্রতিটি মুহূর্ত সচেষ্ট
রয়েছেন। পিতা কেবলা হযরত হযরত নূরশাহ্ রাঃ এর পবিত্র রওজা মোবারক নির্মাণ, সুরেশ্বর
দরবার শরীফের বৃহদাকার মসজিদের পুনঃ নির্মাণ, হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী রাঃ এর শ্রদ্ধেয়
পিতা হযরত শাহ্ সূফী সাফী হাজ্জীউল হারামাইন আশ-শরীফাইন সৈয়্যেদ মুহাম্মদ মেহের উল্লাহ
রাঃ এর পবিত্র রওজা মোবারক এবং হযরত সুরেশ্বরী রাঃ এর কনিষ্ঠ ভ্রাতা হযরত শাহ্ সূফী
সৈয়্যেদ নয়ান শরীফ শাহ্ রাঃ এর পবিত্র রওজা মোবারক নির্মাণ কার্য চালিয়ে যাচ্ছেন। হযরত
খাজা আহমদীনূরী কখনো নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বা ভবিষ্যতের ভাবনা না ভেবে নিজের সর্বস্ব
উজাড় করে দিয়ে দরবার শরীফের সমগ্র কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
দয়াল পাক হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী রাঃ রচিত কিতাব
সমূহ পুনঃ প্রকাশের লক্ষ্যে তিনি সর্বদা উদগ্রীব থাকেন। এ লক্ষ্যে তিনি দিবা-রাত্র
অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। হযরত সুরেশ্বরী রাঃ এর লেখা নয়খানা কিতাবের মধ্যে হযরত
খাজা আহমদীনূরী এ পর্যন্ত তিন খানা কিতাব যথা ‘নূরেহক গঞ্জেনূর’, ‘মদিনা কলকি অবতারের
ছফিনা’, ‘ছফিনায়ে ছফর’ পুনঃ প্রকাশ করেন। ‘সিররে হক্ক জামে নূর’ গ্রন্থের পূর্ণাঙ্গ
বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করেছেন। ‘লতায়েফে শাফিয়া’, ‘মাতলাউল উলূম’ ও ‘আইনাইন’ মূল কিতাব
ও বঙ্গানুবাদ প্রকাশের কার্যক্রম চলছে তাঁরই সুযোগ্য তত্ত্বাবধানে। হযরত খাজা আহমদীনূরী
প্রতিটি কিতাব প্রকাশের পট ভূমিকায় অনুক্ষণ কর্মব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন।
এ ছাড়া ‘মাসিক সুরেশ্বর’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠা হযরত
খাজা আহমদীনূরীর এক অসম সাহসিক কার্যের পরিচয় বহন করে, যা সর্বোচ্চ প্রশংসার দাবি
রাখে। সুরেশ্বর দরবার শরীফের কার্যক্রম প্রচার-প্রসারের
লক্ষ্যে তিনি ১৯৭০ খৃষ্টাব্দে ৩৮৫/সি, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, ঢাকায় “খানকায়ে সুরেশ্বরী”
স্থাপন করেন। তৎপর এখানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করে অভিজ্ঞ অপারেটর, ভাষাবিদ, আলিম,
জ্ঞানী-গুণীদের সমন্বয়ে প্রকাশনা কার্য সম্পাদন করে আসছেন। তিনি ‘হযরত সুরেশ্বরী রাঃ
গবেষণা সেল’ গঠন করেছেন। তিনি দেশের স্বনামধন্য আলিম ও বহু ভাষাবিদ পন্ডিতগণের উপস্থিতিতে
এই গবেষণা সেল সাফল্যের সাথে পরিচালনা করছেন। এ সেলের মাধ্যমে হযরত সুরেশ্বরী রাঃ লিখিত
কিতাব সমূহের গবেষণা-বিশ্লেষণ এবং তা বঙ্গানুবাদের মাধ্যমে সর্ব সাধারণের কাছে পৌঁছানোর
কার্যক্রম দ্রুততার সাথে এগিয়ে চলছে।
আধ্যাত্মিক সিদ্ধ পুরুষ হযরত খাজা আহমদীনূরী আল্লাহ
পাকের রহমতে নিজ পীর-মোর্শেদ কেবলার অনুগ্রহে স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত। কর্মগুণে তিনি সকলের
শ্রদ্ধাভাজন। যাহেরী ও বাতেনী উভয় শিক্ষায় তিনি নিজ মোর্শেদ কেবলার অনুগ্রহে মর্যাদাশীল।
তাঁর সুখ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে দেশান্তরে। গত ৮ই জুন, ২০০১ ইরান সরকারের আমন্ত্রণে তিনি
ইরান সফর করেন। সেখানকার ‘মাজবাউত তাকরিব বাইনাল মাযাহিবিল মুসলিমীন’ নামক সংস্থা ১০,
১১ ও ১২ জুন তিন দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করেছিল রাজধানী তেহরানে। সেই
অনুষ্ঠানে হযরত খাজা আহমদীনূরী বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উক্ত সেমিনারে
তিনি আহলে বাইত এবং মুসলিম ঐক্যের উপর গুরুত্বপূর্ণ ও নাতিদীর্ঘ বক্তব্য প্রদান করেন।
তাঁর বক্তব্য তেহরানের রেডিও ও টেলিভিশনে প্রচার করা হয় এবং ইরানের জাতীয় দৈনিক পত্রিকা
সমূহে বিশেষ গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়। তাছাড়া ইরান সরকারের আমন্ত্রনে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে
তিনি আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান করেন।
হযরত আহমদীনূরী আধ্যাত্মিকতা প্রচার প্রসারের উদ্দেশ্যে
দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে ও পরিচালনায় রয়েছেন। সেগুলো হচ্ছেঃ
প্রেসিডেন্ট- বিশ্ব আধ্যাত্মিক নির্দেশনা ও গবেষণা
ফাউন্ডেশন
প্রেসিডেন্ট- হযরত রাসূলেনোমা ওয়াইসী পীর রাঃ ফাউন্ডেশন
সভাপতি- সুরেশ্বর জামে মসজিদ
প্রেসিডেন্ট- সুরেশ্বরী সমাজ কল্যাণ সংস্থা
প্রেসিডেন্ট সুরেশ্বর দরবার শরীফ খলিফা পরিষদ
প্রতিষ্ঠাতা
ও প্রকাশক- ইসলামী দর্শনে অনন্য মাসিক সুরেশ্বর
প্রেসিডেন্ট- আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা কমিটি
স্বত্বাধিকারী- আহমদীনূরী কুতুবখানা
মোন্তাজেম- সুরেশ্বর দরবার শরীফ মুসাফির খানা
মোন্তাজেম- খানকায়ে সুরেশ্বরী
চেয়ারম্যান- হযরত সুরেশ্বরী কমপ্লেক্স
খাদেম ও তত্ত্বাবধায়ক- হযরত নূরশাহ রাঃ মাজার শরীফ
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- সুরেশ্বরী শিল্পী গোষ্ঠী প্রভৃতি।
হযরত খাজা আহমদীনূরী মাঃ জিঃ আঃ নিজ পিতা ও পিতামহের
অনুসৃত মত-পথ যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে শরীয়ত, তরিকত, হাকীকত ও মারেফাতের বিধান মোতাবেক
দরবার শরীফের পরিচালনা ও মানবকুলের হেদায়েত কার্যে সম্পূর্ণ রূপে নিমগ্ন রয়েছেন। হযরত
খাজা আহমদীনূরী মাঃ জিঃ আঃ এর পুণ্যময় ও কর্মময় জীবন আরো সাফল্য মন্ডিত হোক এবং তিনি
দীর্ঘ জীবন লাভ করুন এটাই আমাদের কামনা।
সুরেশ্বর দরবারের ভ্রান্ত আক্বিদাহসমূহঃ
বেশ কিছু কুফরী ও শিরকী কর্ম উক্ত পীরের মাজারে সংঘটিত
হয়ে থাকে। যা বর্তমান গদ্দিনশীন পীরদের নেতৃত্বেই হয়ে থাকে।
যেমন-
১-নারী পুরুষের অবাধ দেখা সাক্ষাৎ। পীর নিজেও দেখা
করে। অন্যরাও অবাধে দরবারে নারী পুরুষ একসাথে দেখা করে।
২-পীরের পায়ে সরাসরি সেজদা করে থাকে।
৩-সেখানে অবস্থিত সুরেশ্বরের আগের পীরদের কবরে সরাসরি
সেজদা করা হয়। যা উপস্থিত পীর ও তার নিযুক্ত মাজারের খাদিমদের সম্মতিতেই হয়ে থাকে।
৪-মজলিশ করে শিল্পী দিয়ে গান বাদ্য করা হয়।
৫-কবরকে উপলক্ষ্য করে উরসের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
৬-কবরে বাতি প্রজ্বলন।
৭-মাজারে মান্নত করা।
ডা, বাবা জাহাঙ্গির দরবার শরীফ-কেরানীগঞ্জ
কে এই শাহ সুফি ডা, বাবা জাহাঙ্গির
বা ইমান আল সুরেশ্বরী (রহঃ)?
এই সুফি সাহেবকে কম বেশী অনেকেই চিনেন। ইউটিউবে সার্চ
দিলে তার অনেক ভিডিও ও ছবি পাওয়া যায়। ভিডিও ও ছবিগুলোতে দেখা যায়, তিনি দাঁড়িবিহীন
বয়স্ক একটা লোক। তার দরবারে অনেক মুরিদ আসছে আর তাকে সেজদা দিচ্ছে। এই সুফি সাহেব অনেক
মেয়ে লোককে জড়িয়ে ধরে আছে তার অনেক ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। তার আসনের উপর দিকে
তাকালে দেখা যায়, বাঁধাই করা অনেক ল্যাংটা ও মূর্তির ছবি ঝুলানো। মাথায় লম্বা টুপি
পড়া। মাইজভান্ডারির মতোই বাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে তাদের ইবাদত-বন্দেগী পালন করে। এই সুফি
সাহেবেরও হাজার হাজার মুরিদ আছে।
অনেক মুরিদ ইন্টারনেটে খুবই তৎপর। তার বিরুদ্ধে কেউ
কিছু লিখলেই তাকে খামচে ধরে।
যাই হোক, ইবলিশ শয়তানেরও বড় শয়তান এই আধ্যাত্মিক
ভন্ড গুরু বিগত ২৫ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয়তানের সাথী হয়ে মৃত্যবরণ করে।
ভন্ড জাহাঙ্গীর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজনরা তাকে কয়েকটি
বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে কোনো হাসপাতালেই তাকে
ভর্তি করে নেয়নি। পরে শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া
হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রয়াত ঘোষণা করেন। ভন্ড জাহাঙ্গীরের দাফন করা হয় ঢাকার
অদূরে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া গ্রামের তার
নিজ বাড়ির প্রাঙ্গণে।
এখন আমরা এই ভন্ড গুরুর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জেনে নেই।
ভন্ড মুরিদের ওয়েব সাইড থেকে সংগৃহীতঃ
পৃথিবীতে যে কয় জন মহান অলি সুফিবাদ গবেষণায় এবং
প্রচার প্রসার এ অবদান রেখে চলেছেন তাদের মধ্যে শাহ সুফি ডা, বাবা জাহাঙ্গির বা ইমান
আল সুরেশ্বরী (রহঃ) অন্যতম। আগামী শত বছর এ এমন একজন সুফি তথা আধ্যাত্মিক জগতের পথ
প্রদর্শক এর জন্ম হবে কিনা জানি না। কারন তিনি তার গবেষণার ফল বিনা মূল্যে নিঃস্বার্থে
একমাত্র মানুষের মুক্তির নিমিত্তে বিলিয়েছেন। যা অন্য সুফিদের ক্ষেত্রে বিরল। ঢাকা
কেরানীগঞ্জ এবং এর পরে চট্রগ্রাম এর সীতাকুণ্ডে বছর এর পর বছর সাধনা করে গেছেন।সাধনা
করতে করতে বাবার দেহে রক্ত মাংস কিছুই মছিল না ,ছিল বাকি শুধু দেহ খাঁচা। সাধনায় সিদ্ধি
পাওয়ার পর বাবা এই কঠোর সাধনায় বিরতি দেন। তার পীর শাহ সুফি জালাল নুরি ছিল বাবা জান
শরীফ শাহ সুরেশ্বরীর বংশধর। বাবা শাহ সুফি আওলিয়া হযরত জালাল নুরির প্রধান খলিফা ডাঃ
বাবা জাহাঙ্গির। বাবা শাহ সুফি জালাল নুরি ডাঃ বাবা জাহাঙ্গির কে বিনয়ের সম্রাট বলে
ডাকতেন । এছাড়া তিনি চেরাগে জান শরীফ উপাধি প্রাপ্ত হন।বাবা যেমন একজন আধ্যাত্মিক জগতের
সাধক তেমনি একজন সম্মানিত চিকিৎসক।একজন শিক্ষিত মানুষ হয়েও বাবা বেছে নিলেন সুফিবাদকে
নিজের জীবনের লক্ষ হিসেবে। শুধু তাই নয় ধ্যান সাধনার এতো সহজ নিয়ম দিয়ে রহস্যলোকের
কিছু দর্শন পাবার নিশ্চয়তা টা ডা, বাবা জাহাঙ্গির ছাড়া আর কোন পীর মুর্শিদ দেয় কিনা
জানি না। সাহস করে তিনি বলেছেন ধ্যান সাধনা করে কিছু না পেলে আমাকে ফেলে অন্য গুরু
ধরিও। জীবন এ কি কখনও শুনেছেন জীবন ভর বাবা বাবা ডাকবা অথচ কিছু পাবে না তাহলে বাবা
ডাকার সার্থককতা কোথায়? ডা, বাবা জাহাঙ্গির এর সাধনা যে কোন পীর এর মুরিদ বা যে কোন
ধর্মের মানুষ করতে পারবে। ডা, বাবা জাহাঙ্গির এর দরবার নতুনদের জন্য একটু অন্য রকম
লাগবে, কারন এই দরবার এর সব কিছু রহস্যময়। ডা, বাবা জাহাঙ্গির এর দরবার এ অনেক বড় রোগ
ও ভাল হায়েছে, যা কিনা দেশ বিদেশ থেকে চিকিৎসা করেও ভাল হয় নাই। তিনি তার মুরিদ-ভক্তদের
মোরাকাবা বা ধ্যান সাধনায় বিশেষভাবে উৎসাহিত করেন। নরসিংদীতে তিনি একটি আধ্যাত্মিক
ধ্যান সাধনালয় প্রতিষ্ঠা করেন।তার লেখা সুফিবাদ এর কিতাবগুলো এক একটা সম্পদ।
ডা, বাবা জাহাঙ্গির বা ঈমান আল আল
সুরেশ্বরী লিখিত সুফিবাদ বিষয়ক কিতাব গুলা হলঃ
(১) মারেফত এর গোপন কথা।
(২) মারেফত এর বাণী।
(৩) সুফিবাদ আত্ম পরিচয় এর একমাত্র পথ ১,২,৩,৪ খণ্ড।
(৪) ইতিহাস নয় সুফিবাদের রহস্য।
(৫) চিহ্ন বে ছিত্তদাহঃ সুফিবাদ সর্বজনীন।
(৬) কুরানুল মজিদ । হুবুহু শাব্দিক অনুবাদ ও কিছু
ব্যাখ্যা। বাংলায় রচিত এই ধরনের নিরপেক্ষ কুরআন এর তাফসীর এইটাই প্রথম ।
ডা, বাবা জাহাঙ্গির এর কয়েকটি বাণীঃ
(১) "আল্লাহ্ যেমন রহস্য আদমও তেমনি রহস্য এবং
আজাজিল তথা শয়তানও আল্লাহর একটি উদ্দেশ্যমূলক রহস্য ।" _ ডাঃ বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান
আল সুরেশ্বরী।
(২) আল্লাহর গুনে গুনান্বিত হবার নামই হলো হজ্ব।
ডা.বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী
চেরাগে জান শরীফ-১১/৬/২০১৫ইং।
(৩) ধ্যান সাধনা যেমন ব্যক্তি কেন্দ্রীক সুফিবাদও
তেমনি ব্যক্তি কেন্দ্রীক। ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী। চেরাগে জান শরীফ-১৭/০৯/২০১৫ইং।
(৪) সোনা খাটি কিনা তা আগুনে দিলে ধরা পরে আর মানুষ
খাটি কিনা হাতে মালপানি দিলে তা ধরা পরে। ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী-চেরাগে
জান শরীফ।
ডা, বাবা জাহাঙ্গিরের শিরক, কুফরি আর বিদআতি কর্মকান্ড
তথা ভ্রান্ত আক্বিদাহসমূহ লিখে শেষ করা যাবে না। আপনারা সচক্ষে দেখতে চাইলে ইউটিউবে
গিয়ে, “সুরেশ্বরী পীর বাবা জাহাঙ্গীরের ভন্ডামী” লিখে সার্চ দিন। দেখবেন অনেক ভিডিও
আসবে।
এনায়েতপুরী দরবার শরীফ
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস-তাদের নিজেস্ব উইকিপিডিয়া
থেকে সংগৃহিতঃ
খাজা ইউনুস আলী বেশি পরিচিত খাজা এনায়েতেপুরী নামে।
বিশিষ্ট পীর ও সাধক খাজা মোহাম্মদ ইউনুস আলী জন্ম গ্রহণ করেন ১৮৮৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার
বেলকুচি উপজেলার এনায়েতপুরে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত
সুফী সাদেক। তার পিতার নাম শাহ সুফী মৌলানা আবদুল করিম। তিনি এলাকায় খাজা পীর বলেই
বেশি পরিচিত ছিলেন। নিজ যোগ্যতায় তিনি পীর সাহেবের চব্বিশ লাখ মুরিদানের মধ্যে শীর্ঘস্থান
অধিকার করে প্রাপ্তহন তরীকতের সর্বোচ্চ খিলাফত। এই তরিকা নক্সাবন্দ-মুজাদ্দেদী তরিকা
নামে পরিচিত। খাজা এনায়েতপুরী ভোগবিলাসী জীবনযাপনের চরম বিরোধী ছিলেন। তিনি ইসলামের
মর্মবাণী-তরিকত দর্শন প্রচারের পাশাপাশি সমাজসেবা মুলক কাজেও রেখেছিলেন অনন্য অবদান।
খাজা এনায়েতপুরী কে ভক্তবৃন্দ সুলতানুল আউলিয়া এবং চিরস্থায়ী সংস্কারের জন্য আখেরী
মুজাদ্দেদে বলে অভিহত করেন। তিনি ১৯৫২ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয় এবং খাজা ইউনুস আলী
মেডিকেল কলেজ এর নামকরণ করা হয় খাজা ইউনুস আলির নাম অনুসারে। এই প্রতিষ্ঠান দুটি প্রতিষ্ঠিত
করেন খাজা ইউনুস আলির জামাতা খাজা ডক্টর এম আমজাদ হোসেন। কথিত রয়েছে খাজা তার জীবদ্দশায়
মেডিকেল কলেজ করা হচ্ছে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
খেলাফত দান:
মহান এই মুর্শিদ খাজা এনায়েতপুরী বাংলা ১৩৫৮ সনের
১৮ ফাল্গুন রোববার, ইংরেজি ১৯৫২ সালের ২ মার্চ ইন্তেকাল করলে তার প্রতিষ্ঠিত এনায়েতপুর
পাক দরবার শরীফের গদ্দিনশীন পীর হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন বড় ছেলে আলহাজ্ব হযরত খাজা
হাশেম উদ্দিন। তার মৃত্যুর পর এ দায়িত্ব আরেক সন্তান হযরত খাজা মোজাম্মেল হকের উপর
ন্যাস্ত করা হয়। পরে তিনি অসুস্থ্য হয়ে ইন্তেকাল করলে খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী
এর আরেক ছেলে বর্তমান গদ্দিনশীন হুজুরে পাক হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নুহু মিয়া দায়িত্ব
গ্রহণ করে ইসলামের শান্তির মর্মবাণী প্রচারে বাবার মতই কাজ করছেন।
নিচে তাদের কিছু ভ্রান্ত আকিদা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
(১) এনায়েতপুরী সাহেব মনেকরেন তার ববংশের সকলেই মাদারজাত
ওলী।তিনি ইন্তেকালের পূর্বে বলিয়াছেন,"আমার বংশের তেফেল শিশু বাচ্চাকে ও যদি পাও,
তাহাকে মাদার জাত ওলী মনে করিও।"(খাজা ইউনুসিয়া নকসেবন্দিয়া মোজাদ্দেদি তরিকার
ওজিফা,২য় সংস্করণ;পৃঃ২৫)।
(২) এনায়েতপুরী বলেন,"পীর ধরা সবার জন্য ফরয।"(তরিকতের
ওজিফা শিক্ষা,৭ম সংস্করণ, পৃঃ২৬)।
(৩) আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লামের মাঝে কোন পার্থক্য নেই, শুধু মীম হরফ ছাড়া। আল্লাহ তা‘আলা হলেন আহাদ।
আর হুযূর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন আহমাদ।
(৪) এনায়েতপুরীর আক্বীদা হলো, ভালো-মন্দের ক্ষমতা
পীর সাহেবের হাতে আছে।
(৫) এনায়েতপুরীর অনুসারীরা তাকে প্রায় নবী আ. এর
সমমর্যাদা সম্পন্ন মনে করে। তাদের ধারণায় যে ব্যক্তি এনায়েতপুরীর সাক্ষাত পেয়েছে, সে
জান্নাতী।
রাজারবাগ দরবার শরীফ
সংক্ষিপ্ত পরিচয়-তাদের ওয়েব সাইড
থেকে সংগৃহিতঃ
রাজারবাগের পীর সাহেব উনার প্রকৃত পরিচয় কি? আবু
দাউদ শরীফে বর্ণিত একটি হাদীছ শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ
মুবারক করেনঃ (অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি
এই উম্মতের (পরিশুদ্ধের জন্য) প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে একজন ব্যক্তিকে (মুজাদ্দিদ)
পাঠাবেন যিনি দ্বীনের তাজদীদ (সংষ্কার) করবেন) ।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,“যে ব্যক্তি তার যামানার ইমামকে চিনলো
না সে জাহিলিয়াতের মৃত্যূর ন্যায় মৃত্যূবরণ করলো।” (মুসলিম শরীফ)
হাদীছ শরীফ অনুযায়ী এ শতকেও একজন মুজাদ্দিদ ও ইমাম
থাকার কথা। সুমহান ব্যক্তিত্ব উনি কে? কি উনার পরিচয়?
পিরের পুরো নাম মুবারক:
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ,
ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত্ ত্বরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, মাহিউল বিদ্য়াত,
কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, ছাহিবু সুলত্বানিন নাছীর, ক্বাইয়্যুমে
আ’যম, হাবীবুল্লাহ, গাউছুল আ’যম, ক্বাবিউল আউয়াল, ইমামুল আ’যম, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা
হযরত ইমাম সাইয়্যিদ মুহম্মদ দিল্লুর রহমান আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী
আলাইহিস সালাম।
দরবারের ঠিকানা:
৫, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭
বাংলাদেশ।
বংশ পরিচয়:
মুজাদ্দিদে আ’যমের মুবারক বংশ পরস্পরা সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সম্পৃক্ত। পিতা-মাতার দিক থেকে তিনি যথাক্রমে হযরত ইমাম
হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের সাথে যুক্ত। এ কারণে
তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। রক্ত মুবারকের
ধারাবাহিকতায় সঙ্গতকারণেই তিনি আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী। অর্থাৎ তিনি
আওলাদুর রসূল।
পথভ্রষ্ট ও গোমরাহীতে নিমজ্জিত মানুষকে হিদায়েত
দানের লক্ষ্যে সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ,হাবীবুল্লাহ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান
চীশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিভিন্ন দেশ হিজরত ও সফর শেষে আল্লাহ পাক এবং রসূলে
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সদয় নির্দেশে ছয়শত হিজরীর মাঝামাঝি সময়ে
আজমীর শরীফে তাশরীফ আনেন। উনারই অন্তরঙ্গ সঙ্গী ঐ যামানায় আল্লাহ পাক উনার খাছ লক্ষ্যস্থল
মাদারজাদ ওলী, আওলাদুর রসূল, হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আবূ বকর মুজাদ্দিদী রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনিও আজমীর শরীফ তাশরীফ আনেন। হিদায়েত দানের কাজে নিমগ্ন হয়ে তিনি আজমীর
শরীফ থেকে যান এবং সেখানেই বেসাল শরীফ লাভ করেন। উনার অধস্তন সন্তান হযরত সাইয়্যিদ
মুহম্মদ আলাউদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি এগারশ’ হিজরীর শেধার্ধে হিদায়েতের আলো নিয়ে
আজমীর শরীফ থেকে চট্টগ্রাম এবং অতঃপর সোনারগাঁও হয়ে বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জিলার আড়াইহাজার
থানাধীন প্রভাকরদী গ্রামে হিদায়েতের কেন্দ্র গড়ে তোলেন।
উনার সুযোগ্য সম্মানিত পুত্র হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ
মালা উদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার সুযোগ্য সম্মানিত পুত্র সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইলাহী
বখশ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার সুযোগ্য সম্মানিত পুত্র সাইয়্যিদ মুহম্মদ এলাহী বখশ্
রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার সুযোগ্য সম্মানিত পুত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান আলাইহিস
সালাম এবং উনার সুযোগ্য মহা সম্মানিত পুত্র আলোচ্য মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম।
পিতা-মাতা:
মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বুযূর্গ
পিতা-মাতা উভয়েই আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী। সম্মানিত পিতা ওলীয়ে মাদারজাদ, আফদ্বালুল
ইবাদ, ফখরুল আউলিয়া, লিসানুল হক্ব, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, ছাহিবে কাশফ ওয়া কারামত,
ছাহিবে ইসমে আ’যম, গরীবে নেওয়াজ, কুতুবুযযামান, আওলাদুর রসূল, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ
মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী আলাইহিস সালাম ছিলেন
আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল খাছ ওলী। তিনি নায়িবে মুজাদ্দিদ, কুতুবুল আলম, আলহাজ্জ,
হযরতুল আল্লামা আবু নছর মুহম্মদ আব্দুল হাই ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার বিশিষ্ট খলীফা।
ইলম, আমল ও কামিয়াবীঃ
সূক্ষ মননশীলতা, অনাবিল অনুসাধিৎসা, মুরাকাবার নিবিষ্টতা,
গরিচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণা, ইলম অর্জনের আকুলতা, আল্লাহ পাক এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মা’রিফাত ও মুহব্বতের অতলান্ত গভীরতা এবং মুজাদ্দিদে
আ’যম সুলভ মানসিকতা তিনি জন্ম সূত্রেই লাভ করেছেন। তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর
আক্বীদায় পরিপূর্ণরূপে বিশ্বাসী। ইসলাম বিরোধী পুঞ্জীভূত তমসা দূর করে হিদায়েতের
নূরে দুনিয়া আলোকিত করার জন্য আল্লাহ পাক তাঁর মাঝে সকল গুণ-বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটিয়েছেন।
বিশ বছর বয়স মুবারকের মধ্যেই তিনি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর,
ফিক্বাহ, উছূল, মানতিক,
বালাগাত, ফাছাহাত, নাহু, ছরফ, সাহিত্য, কাব্য,ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন,
বিজ্ঞানসহ ইসলামী ইলম-এর সকল শাখায় অতুলনীয় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। মুজাদ্দিদে আ’যমের
জীবনের আয়োজন, ইলম, আমল ও কামিয়াবীর পরিধি ব্যাপকতর। ইলম, আমল, সমঝ্ ও মুহব্বত-মা’রিফাত
নিজস্ব সম্পদ হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ পাক-এর উদ্দিষ্ট ব্যবস্থায় তিনি আত্মকেন্দ্রীক
হতে পারেন না। মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার দায়িত্ব অপার। ইলমে তাছাউফ অর্জনের
শরঈ কারণে তিনি কুতুবুল আলম, আমীরুশ শরীয়ত ওয়া রাহনুমায়ে তরীক্বত, সুলতানুল আরিফীন,
শাইখুল আসাতিযা, নাজমুল আউলিয়া, জামিউল উলুম,
ওয়াল হিকাম, মুহইস সুন্নাহ, মাহিউল বিদয়াত। লিসানুল উম্মত, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, তাজুল
মুফাসসিরীন, ফখরুল ফুক্বাহা, আল্লামাতুল আইয়াম,
মুফতিউল আ’যম, আশিকু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, শাহ ছূফী, আলহাজ্জ,
হযরতুল আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ ওয়াজীহুল্লাহ নানুপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার নিকট বাইয়াত হয়ে প্রধান খলীফার মর্যাদালাভ করেন এবং পরিপূর্ণ কামিয়াবী হাছিল
করেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কুরআন শরীফ,
হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের পরিপূর্ণ অনুসারী। তিনি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্ঘরূপে
সুন্নতের অনুকরণ ও অনুসরণ করেন। মুস্তাহাব আমলও তিনি কখনো তরক করেন না। উনার ইবাদতে
মগ্নতা ও ফিকিরের গভীরতা যেনো গারে হেরায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
রউফুর রহীম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আল্লাহ
পাককে অনুভবের মতো এক উদ্বেলিত ও নিরন্তর মনোনিবেশ।
রাসূলে মকবুল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে নিছবতঃ
মুজাদ্দিদে আ’যম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার খাছ নায়িব এবং উনার ক্বায়িম মক্বাম। তিনি সুন্নত যিন্দাকারী এবং বিদ্য়াত
অপসারণকারী। অনুক্ষণ তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে
নিমগ্ন। আচরণ, বিচরণ, কথা, কাজ, সীরত, ছূরত ও আমলের কোন কিছুতেই তিনি সুন্নতের খিলাফ
কিছু করেন না। দায়িমী নিছবতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সদয়
ইহ্সান ও নির্দেশেই আওলাদুর রসূল, মজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার তাজদীদসহ যাবতীয়
কাজ পরিচালিত হয়।
এক নজরে সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্যঃ
(১) রাজারবাগের পীর সাহেব একমাত্র ব্যক্তিত্ব বর্তমানে
যিনি মাদ্রাসায় না পড়ে ও কুরআনে হাফেজ, হাদীছে হাফেজ, হাকীমে হাদীছ, অসংখ্য তাফসীরে
হাফেজ, ফিক্বহ শাস্রে হাফেজ ।
এ ছাড়াও উছূল,
মানতিক, বালাগাত, ফাছাহাত,
নাহু, ছরফ, সাহিত্য,
কাব্য, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, বিজ্ঞানসহ
ইসলামী ইলম-এর সকল শাখায় অতুলনীয় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।
[ উল্লেখ্য, কাছে না গেলে এ বিষয়টি কখনো বুঝা যাবেনা।]
(২) একমাত্র ব্যক্তিত্ব বর্তমানে যাঁর কোন ছবি নাই
এবং অনেকে চুরি করে ছবি তুলতে গিয়ে তুলতে পারেনি বরং ক্যামেরাই নষ্ট হয়ে গেছে।
(৩) একমাত্র ব্যক্তিত্ব বর্তমানে যিনি ১০০ ভাগ শরয়ী
পর্দা চর্চা করেন এবং শিক্ষা দেন।
(৪) একমাত্র ব্যক্তিত্ব বর্তমানে যাঁর ছোট বেলা থেকে
একবারের জন্য ও তাহাজ্জুদ নামাজ এবং তাকবীরে উলা ত্বরক হয়নি।
(৫) একমাত্র ব্যক্তিত্ব বর্তমানে যিনি সর্বোচ্চ সুন্নতের
আমল করে থাকেন।
(৬) উনার পিতা ও উঁচু স্তরের বুযুর্গ। যিনি নায়িবে
মুজাদ্দিদ, কুতুবুল আলম, আলহাজ্জ, হযরতুল আল্লামা আবু নছর মুহম্মদ আব্দুল হাই ছিদ্দীক্বী
ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশিষ্ট খলীফা। যিনি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন ।
(৭) উনার সম্মানিত আম্মাজান ও অনেক বড় ওলী আল্লাহ।
যিনি এত পর্দানশীল ছিলেন যে উনাদের খাদেম ৬০ বছর ধরে উনাদের বাসায় আছেন এক মুহুর্তের
জন্য উনার ছায়া ও দেখেনি। ওই খাদেম এখনো আছেন এই বাসায়।
যে বা যারা রাজারবাগ শরীফের নামে মিথ্যা ছড়ায়,
সাহস ও ইলমের জোর থাকলে প্রকৃত পরিচয় দিয়ে সরাসরি প্রকাশ্যে বাহাছে যেন আসে। আর এটাও
যেন মনে রাখে "মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহ পাক উনার লা'নত"।
প্রকাশনাঃ দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়েনাত।
রাজারবাগী পিরের কতিপয় ভ্রান্ত আকিদাহঃ
সপ্তাহিক ২০০০ এ তাকে নিয়ে একটা সাক্ষাতকার প্রকাশ হয়েছিলো ।
প্রতিবেদক : আপনি
ফতোয়া দিয়েছেন ছবি তোলা হারাম। কিন্তু ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ পালন করতেও তো ছবি
তুলতে হয়। ছবি ছাড়া পাসপোর্ট- ভিসা করা যায় না।
পীর দিল্লুর রহমান :
এখন তুমি একটা ফরজ পালন করতে গিয়ে আরেকটি হারাম কাজ করবে নাকি? ছবি তোলা ছাড়া হজ করা
না গেলে করবে না।
কারামতে রাজারবাগীঃ
১. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
রাজারবাগের মুর্শিদ ক্বিবলা জান্নাতী, তোমরা অনুসারীরাও জান্নাতী।
২. বরিশালে বিবির পুকুর পাড়ের সেই মাহফিলে যা হয়েছিল।
রাজারবাগ শরীফের মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী- এর উসীলায় বোমাটি
বিস্ফোরিত হয়নি ॥ হিফাযত হয়েছে শত-সহস্র মানুষ।
৩. লাওহে মাহ্ফূযে জ্বলজ্বল করছে মুজাদ্দিদুয্ যামান
লক্বব মুবারকটি।
৪. খাগড়াছড়ির দূর্গম ও শঙ্কাজনিত যাত্রা পথের পুরোটিতেই
মহান আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে খাছ গায়েবী মদদ রূপে আলাদাভাবে, খাছ করে সাদা কবুতর ও
ডাহুক পাখির ছূরতে ৭০ হাজার ফেরেশতা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীসহ গোটা
সফরসঙ্গীগণকে বেষ্টন করে উড়ছিল।
৫. হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর
তরফ থেকে স্বপ্নযোগে টাকা পেলেন ভোলাহাটের মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান।
৬. হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর
উসীলায় নিষ্প্রভ বাতি জ্বলে উঠে দাউ দাউ করে এবং দীর্ঘ প্রায় তিন ঘন্টা আলোদান করে
তেলহীন চেরাগ।
৭. চোখে বুছা দেয়া সুন্নত স্বপ্নে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই সত্যায়ন করলেন মুজাদ্দিদে আযমের তাজদীদী ফতওয়া ও আমল
মুবারক।
৮. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
তরফ থেকে মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদ্রাসার স্বীকৃতি প্রদান।
৯. রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা
জিল্লুহুল আলী-এর ফুঁক ও তাবীজের দ্বারা আশ্চর্য রকমের ফায়দা হাছিলের অগণিত ঘটনাসমূহের
মাঝে কয়েকটির বর্ণনা।
১০. স্বপ্নে দেখে পানিপড়া দেয়ায় আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েল
হয়ে গেল আর্সেনিকমুক্ত।
১১. স্বপ্নে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন আমি রাজারবাগ শরীফে যাচ্ছি
১২. ইনিইতো বর্তমান যামানার মহামান্য মুজাদ্দিদ ও
সম্মানিত আওলাদে রসূল
১৩. হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর
ওয়াজ শরীফ শুনে বিদ্রুপ ও বিদ্বেষ বশতঃ মাহফিল ত্যাগ করায় বিরোধীরা একই স্থানে ঘুরপাক
খেয়েছে সারারাত।
১৪. হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর
খিদমতে হাদীয়া দেয়ার উছীলায় ফসলের হিফাযত ও বরকত লাভ এবং সংসারের অভাবিত উন্নতি।
১৫. একমাত্র উনার মাধ্যমে যারা আমার কাছে আসবে আল্লাহ
পাক তাদেরকেই পূর্ণ নিয়ামত দান করবেন!
১৭. হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর
উসীলায় কবরে হলনা সুওয়াল- জাওয়াব॥ সুসংবাদ প্রদান মকরা হলো কিয়ামত অবধি
১৮. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক
খিলাফত প্রাপ্তি।
প্রিয় পাঠকঃ রাজারবাগী পিরের ভ্রান্ত আকিদাহ
সম্পর্কে আর কি লিখবো। তার নাম আর উপরোক্ত বিষয়াদির মধ্যেই শিরক. কুফর আর বিদআত লুকায়িত।
এই পিরকে অনেকে মামলাবাজ পির বলেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই থানায় অভিযোগ দায়ের
করা হয়। জোড় পূর্বক অন্যের জমি দখল করার অনেক নিউজ পত্রিকা ও টিভি ইউটিউব চ্যানেলে
দেখতে পাওয়া যায়। তারা কেমন মামলাবাজ নিচের নিউজটি পড়ুন।
মামলা নং-১
১০ জুন, ২০১৩ তারিখে তাদের নিজেস্ব দৈনিক আল-এহসান
পত্রিকায় প্রকাশিত।
রাজারবাগ দরবার শরীফ নিয়ে কটুক্তি:
‘হেফাজত’পন্থী ইমামের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ, ইমাম
পলাতক
নোয়াখালীর জেলার সোনাইমুড়ী থানাস্থ উত্তর পেয়ারাপুর
ভুইয়াবাড়ী জামে মসজিদে জুমুয়ার আলোচনায় মাইকে প্রকাশ্যে সারাবিশ্বে একমাত্র হক্ব সিলসিলা
ও একমাত্র হক্বপথ, হক্বমত প্রচারকারী ঢাকাস্থ রাজারবাগ দরবার শরীফ উনার বিরুদ্ধে ও
রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বিরুদ্ধে কুরুচীপূর্ণ
কটুক্তি করায় ওহাবীপন্থী ও হেক্বারতে ইসলাম খ্যাত হেফাজতে ইসলাম নামধারীদের কট্টর অনুসারি
আমিনুল ইসলাম সেলিমের (৪৫) বিরুদ্ধে সোনাইমুড়ী থানায় মানহানির অভিযোগ দায়ের করা হয়।
২৪ মে ২০১৩ ঈসায়ী তারিখে থানার শরনাপন্ন হয়ে উক্ত মানহানি অভিযোগে মুহম্মদ নুরুল ইসলাম
মামলা আবেদন করেন।
মামলা নং-২
ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী পিরের দরবারের পক্ষ থেকে
জানা যায়-
রাজারবাগীর পক্ষ থেকে আল্লামা ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী
হুজুরের নামে মামলা দায়ের।
রাজারবাগীর পীর নিজেকে
১. ছাহেবে
কুন ফা-ইয়াকুন দাবী করা।
২. নিজের নামের শেষে আলাইহিস সালাম লেখা।
৩. নিজ স্ত্রীর নামের শেষে উম্মুল মু'মিনিন লেখাসহ
অসংখ্য কুফরীর কারণে আল্লামা আব্বাসী হুজুর রাজারবাগী পীরকে বহু পূর্বেই কুফরীর ফতোয়া
দিয়েছিলেন।
উক্ত বক্তব্যের আলোকে ২০১৯ সালে,
সাইবার ট্রাইবুনাল (বাংলাদেশ), ঢাকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা
আইন, ২০১৮-এর ২১ (২), ২৮ (২), ২৯ (২) ধারায় মামলা করা হয়।
দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়েনাত পত্রিকার নির্বাহি
সম্পাদক মুফতি আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলা নং-৩
এনটিভি’র বিরুদ্ধে রাজারবাগ দরবার শরীফের ১০০০ কোটি
টাকার মানহানী মামলা।
কুতুববাগ দরবার শরীফ
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি-তাদের নিজেস্ব ওয়েব সাইড থেকেঃ
একবিংশ শতাব্দীর এই ক্রান্তিলগ্নে পাপসংকুল পৃথিবীতে
সৃষ্টির কুল কায়েনাতের মূল উৎস দো’জাহানের নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সিরাজাম
মুনিরার ধারক ও বাহক হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করেন অসংখ্য ওয়ারেছাতুল আম্বিয়া বা বেলায়েতে
মাশায়েখগণ। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান বিশ্বের পাপী-তাপী গুনাহগার মানুষের আত্মার উন্নতি
ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে পরশ পাথরের মতো মূল্যবান করে তোলার জন্য এবং নাজাত শিক্ষার শিক্ষক
হিসেবে শুভাগমন করেন আমাদের প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ, আরেফে কামেল, মুর্শিদে মোকাম্মেল,
যুগের শ্রেষ্ঠতম সাধক, হেদায়েতের হাদী, নকশ্বন্দীয়া ও মোজাদ্দেদীয়া তরিকার বর্তমানে
একমাত্র খেলাফতপ্রাপ্ত পথপ্রদর্শক খাজাবাবা শাহসুফি কুতুববাগী (মা.জি.আ.) ক্বেবলাজান
হুজুর নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত বন্দর থানার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শুভকরদী গ্রামের এক
সম্ভ্রান্ত ধার্মিক ও সঙ্গতিসম্পন্ন মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জনাব
মুন্সী খলিলুর রহমান এবং তাঁর মা জনাবা মোসাম্মৎ হালিমা খাতুন। তাঁরা দুজনই ছিলেন অত্যন্ত
ধর্মভিরু আল্লাহপ্রেমী, অতিশয় পরহেজগার মানুষ। খাজাবাবা কুতুববাগী শিশু বয়সেই মাতৃহারা
হন। যেদিন ঠিক ফজরের আযানের কিছুক্ষণ আগে ক্বেবলাজানের মায়ের ইন্তেকাল হয়, সেদিন সকালে
কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ঘাড়মোড়া গ্রামের সোলেমান গরুর রাখালের কাজ করতো সে ক্বেবলাজানদের
গৃহপালিত ১৮টি গরু ধলেশ্বরী নদীর ওপারের চরে ঘাস খাওয়ার জন্য খুঁটা গেড়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে
রেখে আসে। বাদ আসর জানাজার জন্য ক্বেবলাজানের মায়ের লাশ যখন মাঠে আনা হয়, তখন দেখা
গেল দড়ি ছিড়ে, নদী সাঁতরে সবগুলো গরু লাশের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। জানাজা শেষে দেখা
গেল প্রতিটি গরুর চোখ থেকে পানি ঝরছে। ক্বেবলাজানের মায়ের জানাজা পড়ান জৈনপুরী মাওলানা
জনাব আব্দুল খালেক সিদ্দিকী সাহেব। সেদিন তিনি ওই গ্রামে অবস্থান করছিলেন। তিনি এই
অভাবনীয় দৃশ্য দেখে বললেন, এমন ঘটনা কোনো দিন দেখিনি। এই মরহুমা তিনি নিশ্চয়ই আল্লাহর
খুব প্রিয় এবং অতিশয় পরহেজগার ছিলেন।’
খাজাবাবা কুতুববাগীর মায়ের ইন্তেকালের পর তাঁর এক
নিকটতম চাচী-আম্মা অপরিসীম স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে ক্বেবলাজানকে মাতৃস্নেহে লালন-পালন
করেন। ক্বেবলাজানের বয়স যখন ৮/৯ বছর, তখন চাঁদপুর জেলার দরবেশগঞ্জের সুযোগ্য আলেম মাওলানা
মোঃ আব্দুল আউয়াল সাহেবের নিকট প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেব
আন্তরিকতার সঙ্গে ভবিষ্যতের এই মহান তাপসকে আরবী ও বাংলা ভাষা শিক্ষা দিতে থাকেন। খাজাবাবা
কুতুববাগীর বয়স যখন ১২-১৩ বছর তখন একদিন শুভকরদী গ্রামের দক্ষিণে একদিকে ব্রক্ষ্মপুত্র
অন্য দিকে শীতলক্ষ্যা এবং অপর দিকে মেঘনাÑ এই নদীর ত্রিমোহনার চরে সমবয়সীদের সঙ্গে
যান। তখন দুপুর ১২টা। ঐ সময় খাজাবাবা কুতুববাগী একা শীতলক্ষ্যা নদীর দিকে ধীর পায়ে
হাঁটতে থাকেন, এমন সময় হঠাৎ দেখেন নদীর পাড়ে একজন বৃদ্ধ বসে আছেন। ঐ বৃদ্ধ খাজাবাবা
কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য ইশারা করলেন। খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান
বৃদ্ধের কাছে গেলে বৃদ্ধ বললেন, বাবা আমাকে এই নদীটি পার করে দাও। খাজাবাবা কুতুববাগী
ক্বেবলাজান তাকিয়ে দেখলেন অদূরেই একটি নৌকা বাঁধা, বৃদ্ধকে সেই নৌকায় পার করে দেওয়ার
সময় নৌকা যখন নদীর মাঝ নদীতে, তখন বৃদ্ধ তাঁর পরিচয় দিয়ে বললেন, বাবা আমার নাম খিজির
(আলাইহিস্ সাল্লাম)। তুমি ধ্যান করলেই আমাকে পাবে। এই বলে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তখন
থেকেই খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান আধ্যাত্মিক সাধনার পথে চলে যান। এই সময়ে তিনি
৩ বছর কবর মোরাকাবায় (ধ্যান-মগ্ন) থাকেন এবং কবরে অবস্থান করেন। তারপর থেকে এই মহাসাধক
আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অলি-আউলিয়া-পীর-ফকির-দরবেশের সান্নিধ্যে
যেতে থাকেন। ১৩ থেকে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত বাংলা ভারতের অসংখ্য মাজার শরীফ জিয়ারত করেন
এবং বহু অলি-আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করেন। তাঁদের মধ্যে অনেক অলি-আল্লাহই খাজাবাবা
কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে তাঁদের এত্তেহাদী তাওয়াজ্জুহ শক্তি দান করেন। এই সময়ে একদিন
খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান মহান আল্লাহ ও রাসুলের (সাঃ) এশ্কে দেওয়ানা হয়ে মজ্জুব
অবস্থায় সিলেটে হযরত শাহ সুন্দার (রঃ)-এর মাজার শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশে রওয়ানা হন। তাঁর
মাজার শরীফ টিলার উপরে অবস্থিত, সেখানে যাওয়ার পথে একটি ঝর্ণা অতিক্রম করতে হয়; কিন্তু
তাতে প্রবল স্রোত থাকার কারণে ঝর্ণাটি পার হওয়া মুশকিল ছিল ওই সময়। তখন খাজাবাবা কুতুববাগী
ক্বেবলাজান কীকরে পার হবেন সেই কথা ভেবে একটু চিন্তায় পড়ে যান। আশপাশে চোখের দৃষ্টি-সীমার
মধ্যে কোথাও কোনো মানুষও দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে হঠাৎ এক বৃদ্ধ এসে জিজ্ঞাসা করলেন,
বাবা আপনি কোথায় যাবেন? খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান বললেন, আমি হযরত শাহ্ সুন্দার
(রঃ)-এর মাজার শরীফ জিয়ারত করতে যাব। তখন ওই বৃদ্ধ খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে
কোলে তুলে নিলেন এবং চোখের পলকে ঝর্ণাটি পার করে দিয়ে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। খাজাবাবা
কুতুববাগী ক্বেবলাজান একটু ভয় পেয়ে দৌড়ে টিলার উপরে মাজারে উঠ গেলেন এবং মাজার শরীফ
জিয়ারত করে চলে আসেন।
এর কিছুদিন পর কামেল পীর পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে
এক পর্যায়ে ফরিদপুরে চন্দ্রপুরী (রঃ)-এর মাজার শরীফ জিয়ারতের জন্য সেখানে যান এবং মাজার
শরীফ জিয়ারত করেন। জিয়ারতের সময় চন্দ্রপুরী (রঃ)-এর রুহানী নির্দেশ পেয়ে খাজাবাবা কুতুববাগী
ক্বেবলাজানের এক নিকট আত্মীয় জনাব শওকত কাজী ও বন্দর থানার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক
সমিতির সভাপতি, কলগাছিয়া ইউনিয়নের হাজরাদি চানপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান
শিক্ষক আলহাজ্ব মাওলানা নূরুল ইসলাম মাস্টার সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে, ঢাকার ডেমরা থানার
অন্তর্গত মাতুয়াইল নিবাসী জগৎবিখ্যাত আলেম, পীরে কামেল, পীরে বে-মেছাল, পীরে বে-নজির,
মুর্শিদে মোকাম্মেল, হাদিয়ে জামান, হেদায়েতের নূর, কুতুবে রাব্বানী, আলেমে হক্কানী,
আলেমে রাব্বানী মোফাস্সিরে কোরআন, শাহসুফি আলহাজ্ব হযরত মাওলানা কুতুবুদ্দীন আহমদ খান
মাতুয়াইলী (রঃ) নক্শবন্দী মোজাদ্দেদীর কাছে দরবারে মোজাদ্দেদীয়ায় উপস্থিত হন। কিছুক্ষণ
পর শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর দরবার শরীফে আসনগ্রহণ করেন এবং মুরিদানের সঙ্গে সাক্ষাৎ
করেন। শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের পরিচয় জানার পর তাঁর
সঙ্গে আসা জনাব শওকত কাজী ও আলহাজ্ব মাওলানা নূরুল ইসলাম মাস্টার সাহেবকে লক্ষ্য করে
বললেন, এই ছেলের মধ্যে বেলায়েতের ছাপ আছে! ছেলেটি মাদারজাত অলি।’ তখন সকাল দশটা। এই
সময় থেকে রাত দশটা পর্যন্ত শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের
সঙ্গে শরিয়ত ও মারেফাতের বিভিন্ন বিষয়ের উপর নিগুঢ়ভাবে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন। এর ফলে
খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের মনে এমন এক ভাবের উদয় হল যে, ইনিই বুঝি আমার মনের
মানুষ, যাঁর তালাশে এতটা বছর তৃষিত হৃদয় নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরেছি।’ কিন্তু মনের কথা
আর মনে থাকলো না, কী এক অপার লীলায়! মন থেকে ক্বেবলাজানের পবিত্র জবানে তা বলেও ফেললেন,
বাবা আপনিই আমার একমাত্র প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ।’
এরপর খাজাবাবা কুতুবাগী ক্বেবলাজান শাহ্ মাতুয়াইলী
(রঃ) হুজুরের কাছে ইলমে মারেফাতের তিনটি তত্ত্ব জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, বাবা আপনি
এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর জেনে যাবেন। জেনে যাওয়ার পর এসে বাইয়াত গ্রহণ করবেন। তখন শাহ্
মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুরের অনুমতি পেয়ে সঙ্গীদের নিয়ে খাজাবাবা কুতুবাবাগী ক্বেবলাজান
বাড়ি ফিরে আসেন; কিন্তু তাঁর মনের ভিতরে খুঁজতে থাকেন ইলমে মারেফাতের তিনটি প্রশ্নের
উত্তর এবং খুঁজতে খুঁজতে কিছুদিনের মধ্যে তা পেয়ে গেলেন! এরপর অত্যন্ত খুশি মনে খাজাবাবা
কুতুববাগী ক্বেবলাজান এবং তাঁর বাল্যজীবনের সঙ্গী আলহাজ্ব নূরুল ইসলাম মাস্টার সাহেবকে
সঙ্গে নিয়ে মাতুয়াইল দরবারে মোজাদ্দেদীয়ায় উপস্থিত হন। মাস্টার সাহেব ছিলেন খাজাবাবা
কুতুববাগী ক্বেবলাজানের দীর্ঘদিনের সাধনার জগতে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে একনিষ্ঠ সঙ্গী।
তাঁকে সঙ্গে নিয়েই শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুরের কাছে তরিকা গ্রহণ করেন খাজাবাবা কুতুববাগী
ক্বেবলাজান। শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুরও খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে সাদরে গ্রহণ
করেন। তরিকা গ্রহণ করার পর খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান জান-মাল দিয়ে আপন মুর্শিদের
খেদমতে সম্পূর্ণরূপে আত্মনিয়োগ করেন। শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুরও ক্বেবলাজানকে অত্যন্ত
আন্তরিকতার সঙ্গে ইলমে শরীয়ত, তরিকত, হাক্বিকত ও মারেফাতের শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে
তোলেন। শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর ক্বেবলাজানকে অত্যন্ত স্নেহ এবং মায়া করতেন। খাজাবাবা
কুতুববাগী ক্বেবলাজানও নিজ মুর্শিদের কদমে খেদমত করে অত্যাধিক আনন্দ লাভ করতেন। শাহ্
মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুরের খেদমতে থাকার সময় খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে অনেক দুঃখ-কষ্ট,
ত্যাগ-তীতিক্ষাসহ কঠিন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
তরিকা গ্রহণ করার পাঁচ বছর পর শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ)
হুজুর একদিন খাজাবাবা কুতুববাগীকে তাঁর পৈতৃক বাড়ি শুভকরদী গ্রামে খানকা শরীফ প্রতিষ্ঠার
হুকুম করেন। খাজাবাবা কুতুববাগী আপন পীরের নির্দেশ মতো খানকা নির্মাণ করলেন এবং প্রাণপ্রিয়
মুর্শিদকে দাওয়াত করলেন। শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর খাজাবাবা কুতুবাবাগীর এই দাওয়াত
অত্যন্ত আনন্দ চিত্তে গ্রহণ করলেন এবং খানকা শরীফ উদ্বোধন করে তিনি তরিকায়ে নকশ্বন্দীয়া
মোজাদ্দেদীয়া প্রচার করতে আদেশ দিলেন। খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান তখন থেকে নিজ
মৃর্শিদের নামে মানুষদেরকে ক্বলব বাতলানো (ক্বলবের শিক্ষা) শুরু করেন। একদিন শাহ্ মাতুয়াইলী
(রঃ) হুজুর খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে আদেশ করলেন, বাবা এখন তোমাকে সাদী মোবারক
করতে হবে।
শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর চন্দ্রপাড়া পাক দরবার
শরীফের খলিফা হাকিম মাওলানা আব্দুল গফুর সাহেবকে নির্দেশ দিলেন যে, আপনি ১৩ দিনের মধ্যে
জাকির শাহ্কে বিবাহ করানোর ব্যবস্থা করেন। এই নির্দেশ পেয়ে হাকিম মাওলানা আব্দুল গফুর
সাহেব খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানেরই ভক্ত কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত মিঠামইন থানার
ঘাঘরা গ্রামের জনাব মোঃ শাহেদ আলী সাহেবের প্রথম কন্যার সঙ্গে শুভবিবাহের প্রস্তাব
করেন। জনাব মোঃ শাহেদ আলী সাহেব এই প্রস্তাব পেয়ে অত্যন্ত খুশি মনে তা গ্রহণ করেন।
শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুরের অনুমতিক্রমে পরের শুক্রবার বিবাহের দিন ধার্য হয়। মাতুয়াইল
পাক দরবার শরীফের জামে মসজিদে বাদজুমা অসংখ্য আশেকান ও জাকেরানের উপস্থিতিতে মহাধুমধাম
করে মহান আল্লাহর এই অলি-বন্ধু যুগশ্রেষ্ঠ হাদী খাজাবাবা কতুববাগী ক্বেবলাজানের শুভ
বিবাহের কাজ সুসম্পন্ন করেন এবং তাঁকে খেলাফতের গুরুদায়িত্বভার অর্পণ করেন।
বিবাহের কিছুদিন পর শাহ্ মাতুয়াইলী (রঃ) হুজুর, খাজাবাবা
কতুববাগী ক্বেবলাজানকে কলাগাছিয়া ছেড়ে বন্দর এলাকায় দরবার শরীফ স্থাপনের হুকুম করেন।
মুর্শিদের আদেশ মতো বন্দর থানার স্বল্পেরচক এলাকায় নিজ মুর্শিদের নামানুসারে দরবারের
নামকরণ করেন, কুতুববাগ দরবার শরীফ। আর এখান থেকেই খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজান তাঁর
নিজের নামে তরিকা প্রচার শুরু করেন। দিনে দিনে তাঁর সুনাম এলাকার গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে
পড়ে চারদিকে। ক্বেবলাজানের দরবার হয়ে ওঠে ভক্ত আশেক-জাকেরদের বালাখানা! ইতোমধ্যে খাজাবাবা
কতুববাগী ক্বেবলাজানের ঘর আলোকিত করে আসেন প্রথম পুত্রসন্তান। তাঁর নাম রাখা হয় খাজা
গোলাম রব্বানী; কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা বেশিদিন তাঁকে দুনিয়াতে রাখলেন না। শৈশবেই তিনি
ইন্তেকাল করেন। নারায়ণগঞ্জ বন্দর দরবার শরীফে তাঁর মাজার শরীফ অবস্থিত। সেখানে খাজাবাবা
কতুববাগীর জন্মতাদা পিতা মুন্সি খলিলুর রহমানের মাজারও রয়েছে।
প্রথম পুত্রের ইন্তেকালের পর, ঘর আলোকিত করে আসেন
এক কন্যাসন্তান সৈয়দা মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন তাসনিম। এরপর দ্বিতীয় পুত্র খাজা গোলাম
রহমান তিনিও দুনিয়াতে বেশিদিন বেঁচে রইলেন না, আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে শিশু বয়সেই চলে
গেলেন পরপারে। বাবাজানের প্রথম খানকা শরীফ কলাগাছিয়াতে তাঁর মাজার অবস্থিত। এভাবেই
শুরু হয় খাজাবাবা কুতুববাগী (মাঃ জিঃ আঃ) ক্বেবলাজানের নকশ্বন্দীয়া-মোজাদ্দেদীয়া তরিকা
প্রচারের বিরামহীন কর্মধারা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সুমননীত এই তাপসের আধ্যাত্মিক
গুণের আলোয় মানুষের অন্ধকার ক্বলবকে আলোকিত করে যেমন তা ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। তাই পৃথিবীর
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোত্র নির্বিশেষে খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানের
নূরানী স্পর্শ, আর তাঁর পবিত্র সান্নিধ্য পাওয়ার বুকভরা আশা নিয়ে ছুটে আসছেন কুতুববাগ
দরবার শরীফে। ক্বেবলাজানের স্বভাবসূলভ মাধুর্য্য দিয়ে সবাইকে তিনি পরম মমতায় আপন করে
নিচ্ছেন প্রত্যহ। এ এক আশ্চর্য ক্ষমতা! শুধু ব্যবহার দিয়েই যে মানুষের মন জয় করা সম্ভব।
এখনো খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে যারা দেখেননি বা তাঁর সান্নিধ্যে আসেননি তাদের
কাছে সত্যি আশ্চর্যই মনে হবে। আর যারা ক্বেবলাজানের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে রাসুল (সাঃ)-এর
সত্য তরিকায় শামিল হচ্ছেন, তাদের আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা ও নামাজে হুজুরি লাভ করে,
নিজ নিজ ক্বলবে আল্লাহপাকের ইস্মে জাতের জিকির জারি করছেন। আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে ইমানের
সঙ্গে কবরে যাওয়ার মহানিয়ামত লাভের জন্য পবিত্র কোরআনের আলোকে সঠিক পথ দেখাচ্ছেন খাজাবাবা
কুতুববাগী ক্বেবলাজান ।
সৈয়দ উপাধি দানঃ
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, বুধবার নকশ্বন্দীয়া মোজাদ্দেদীয়া
তরিকার ঊর্ধ্বতন অলি-আল্লাহ হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী রাসুলে নোমা (রঃ)-এর কন্যা মা জহুরা
খাতুন (রঃ)-এর ছেলে হযরত খাজা এহসান আহমেদ ওয়াইসী (রঃ)-এর ছোট ছেলে সৈয়দ আবুল বাশার
ওয়াইসী সাহেব তাঁর দাদীপীরের রুহানী নির্দেশে কুতুববাগ দরবার শরীফে শুভাগমন করেন। এই
সময় তিনি লিখিত আকারে মা জহুরা খাতুন (রঃ)-এর পক্ষে খাজাবাবা কুতুববাগী ক্বেবলাজানকে
‘সৈয়দ’ উপাধি দান করেন এবং কুতুববাগী ক্বেবলাজানের নামের সঙ্গে সৈয়দ লিখতে জোর আদেশ
প্রদান করেন।
দরবার শরীফের নামকরন ও ঠিকানাঃ
দরবার শরীফের নাম মোর্শেদ ক্বেবলার আপন পীরের নামেই
করা হয়েছে। আমাদের দয়াল দরদী দাদা পীর বিশ্ব বিখ্যাত মোফাস্সেরে কোরআন, কুতুবুল আফতাব,
শাহ্ সুফী আলহাজ্ব খাজাবাবা মাওলানা হযরত কুতুবুদ্দিন আহম্মদ খান মাতুয়াইলী (রঃ) যিনি
আমাদের মহান মোর্শেদ দয়াল খাজাবাবা কুতুববাগী হুজুর কেবলাজানের আপন মোর্শেদ। তিনি দীর্ঘ
দশ বছর স্বীয় পীর ও মোর্শেদের খেদমতের মাধ্যমে খেলাফত লাভ করেছেন। আপন পীরের নামে এই
দরবার শরীফের নামকরণ করা হয়েছে প্রায় ৩০ বছর আগে। বাংলাদেশে যদি অন্য কোনো ‘বাগ’ থেকে
থাকে, সেই ‘বাগের’ সাথে আমাদের কুতুববাগ দরবার শরীফের কোনো সর্ম্পক বা নেসবত (যোগাযোগ)
নেই।
কুতুববাগ
দরবার শরীফের সদর দপ্তরঃ ৩৪ ইন্দিরা রোড, ফার্মগেট , ঢাকা
-১২১৫।
প্রকাশনাঃ মাসিক
আত্মার আলো।
নক্শবন্দীয়া
মোজাদ্দেদীয়া তরিকার শাজারা শরীফ থেকে জানা যায়, আরেফে
কামেল, মোর্শিদে মোকাম্মেল, মোজাদ্দেদে জামান, আলহাজ্ব মাওলানা শাহ্সূফী দয়াল খাজা
বাবা হযরত জাকির শাহ্ কুতুববাগী নক্শবন্দী মোজাদ্দেদী (মাঃ জিঃ আঃ) নাকি রাসুল সাঃ
এর ৩৭তম বংশধর।
কুতুববাগী পিরের ভ্রান্ত আকিদাহসমূহঃ
কুতুববাগ দরবার শরীফ থেকে প্রকাশিত গ্রন্থে পীরকে
বলা হয়েছে-একবিংশ শতাব্দীর এই ক্রান্তিলগ্নে পাপসংকুল পৃথিবীতে সৃষ্টির কুল কায়েনাতের
মূল উৎস, সিরাজাম মুনিরার ধারক ও বাহক হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করেন আরেফে কামেল, মুর্শিদে
মোকাম্মেল, যুগের শ্রেষ্ঠতম সাধক, হেদায়েতের হাদী, নকশ্বন্দীয়া ও মোজাদ্দেদীয়া তরিকার
বর্তমানে একমাত্র খেলাফতপ্রাপ্ত পথপ্রদর্শক খাজাবাবা শাহসুফি কুতুববাগী (মা.জি.আ.)
ক্বেবলাজান হুজুর! (আসতাগফিরুল্লাহ)
বর্তমান বিশ্বের পাপী-তাপী গুনাহগার মানুষের আত্মার
উন্নতি ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে পরশ পাথরের মতো মূল্যবান করে তোলার জন্য এবং নাজাত শিক্ষার
শিক্ষক হিসেবে শুধু কুতুববাগীকে আল্লাহ খেলাফতী দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন। (নাউযুবিল্লাহ)
তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় শিরক-কুফরে
ভরা! এমনকি ওয়াজ-বক্তৃতা থেকে সবধরণের কর্মকান্ডই শিরকী! কুবুতবাগ দরবার শরিফ কর্তৃক
প্রকাশিত এবং তাদের পীরজাদা হযরত খাজা গোলাম রহমানকে উৎসর্গ করা শানে কুতুববাগীর বইয়ে
নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও পবিত্র হজ সম্পর্কে বিভিন্ন মনগড়া আপত্তিকর তথ্য প্রদান
করা হয়।
শিরকি শ্লোকঃ
(১) কুতুববাগীর
পাশে এক রাত করলে ইবাদত/হাজার সালের বন্দেগী হয় করলে মুহাব্বত/আল্লাহ আল্লাহ জিকিরেতে
কালব হয় জারি (ঐ)/আসিলে তোমার দরবারে মকসুদ হয় পূরণ/একিন জানিয়া বিশ্বাস করিবেন যিনি/সাধন
বিনে হয় না তবু সাধকের তরী (ঐ)।
(২) রহমানু রাহীম বলে, কেঁন্দে ডাকো বারে বার/তোমারি
রহমতের দ্বারে বাবা মিসকিন মোরা সেজেছি/দয়া করে দাওগো রহমত, দিলের ঝোলা পেতেছি।
(৩) তুমি আমার দুই নয়নের তারা/দয়াল বাবা তুমি আমার
দুই নয়নের তারা/তুমি যারে করো দয়া লাভ কি তাহার মক্কায় যাইয়া/মুর্শিদ কেবলা সামনে যাহার
খাড়া (ঐ)/আমি যে কাঙ্গালিনী কাঙ্গালেরও বন্ধু গো তুমি/ওই চরণে দিও আমায় জায়গা (ঐ)।
কুতুববাগী পিরের লেখা বই এর সংখ্যাঃ- ৫১টি
(তাদের নিজেস্ব ওয়েব সাইড থেকে)
প্রত্যেকটি বই এ কুরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যা করা
হয়েছে।
ছারছিনা পিরের দরবার শরীফ
ছারছীনা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা পীরে কামেল শাহ
সূফী নেছারুদ্দীন আহমদ (র:) এর জীবনী-তাদের নিজেস্ব ওয়েব সাইড থেকে সংগৃহীতঃ
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
বাংলা ১২৭৯ সাল মোতাবেক ইংরেজি ১৮৭৩ সালে (বর্তমান)
বাংলাদেশের বাকেরগঞ্জ জেলার (বর্তমান পিরোজপুর) নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলার কাছ
দিয়ে বয়ে যাওয়া সন্ধ্যা নদীর তীরে অবস্থিত মাগুরা (বর্তমানে ছারছীনা গ্রামে) মুসলিম
সমাজের এক ক্লান্তিলগ্নে এক আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে হাদী হিসেবে আবির্ভূত হলেন বাংলার
গৌরব, ভাগ্যবান মহাপুরুষ, ওলীকুল শিরোমণি, মুজাদ্দিদে যামান- হযরত মাওলানা শাহ সূফী
নেছারুদ্দীন আহমদ রহ.। পিতার নাম মরহুম হাজী সদর উদ্দীন এবং মাতার নাম মরহুমা জোহোরা
বেগম।
ইলমে শরীয়ত অর্জন:
হযরত পীর
সাহেব কেবলা বার বছর পর্যন্ত পিতামাতার কাছেই ইলমে দীন শিক্ষা করেন। চৌদ্দ বছর বয়সে
তাঁর পিতা হজ্জ আদায় করতে গিয়ে সেখানেই ইন্তেকাল করেন। এরপরে কিছুদিন তাঁর সৎ চরিত্রা
উন্নতমনা মহিয়সী জননীর কাছে ইলমে দীন শিক্ষা করেন। পরবর্তীতে তিনি তাঁর মায়ের দোয়া
নিয়ে মাদারীপুরে এক মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি ঢাকায় আহমদিয়া
মাদ্রাসায় (বর্তমান হাম্মাদিয়া স্কুল, নয়াবাজার) ভর্তি হয়ে কিছুদিন অধ্যায়ন করে, চলে
যান কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায়। এরপরে হুগলী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে পড়াশুনা করেন। বৃত্তি
সহকারে সেখান থেকে ১৮৯৬ খ্রিস্টব্দে ফাজিল (তৎকালীন মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রি)
লাভ করেন এবং ইলমে হাদীসের গভীর পান্ডিত্য অর্জন করেন। ইলমে তাছাউফ অর্জন: পীরে কামেল
আল্লামা নেছারুদ্দীন আহমদ রহ. ছোট বেলা থেকেই মহান আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্য লাভ করার
জন্য সর্বদা ধ্যানমগ্ন থাকতেন। আল্লাহ তা’য়ালাও দয়া পরবশ হয়ে ছাত্র অবস্থাতেই তাকে
সে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। হুগলী মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত অবস্থায় ফুরফুরা শরীফের পীর শাহ সূফী
আবূ বকর ছিদ্দীক রহ. এর সাথে হঠাৎ করে এক জলসায় তার সাক্ষাত হয় এবং তার সান্নিধ্য লাভ
করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ফুরফুরার মহান ওলী মুজাদ্দেদে যামান র. নিজে সাগ্রহে তাঁকে
বায়আত করান, তরীকতের তালীম প্রদান করতে থাকেন, মূলত দয়াময় প্রভুর মদদ তাঁর ওপর এত প্রবল
ছিলো যে, তা লক্ষ্য করেই তার পীর সাগ্রহে তাঁকে কাছে ডেকে নেন। পীরের হাতে হাত রেখে
বাইয়াত গ্রহণ করে নিয়মিত তরীকা চর্চা করে অল্প দিনেই তিনি চার তরীকায় কামালাত নিয়ে
চলে এলেন বাংলায়। দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর্যন্ত তিনি তাঁর মোর্শেদ এর কাছে থেকেছেন।
বিবাহ ও আওলাদ:
হযরত পীর সাহেব কেবলা সর্বমোট তিনটি বিবাহ করেন।
তাঁর প্রথম বিবাহ ছিল স্থানীয় সিকদার পরিবারে। এই ঘরে তাঁর দুই ছেলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
প্রথমা স্ত্রী ইন্তেকাল করার পর দ্বিতীয় বিবাহ করেন ফরিদপুরের কুশলা গ্রামে। এই ঘরে
তার তিন ছেলে ও ছয় কন্যা- সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আরো একটি বিবাহ
করেছিলেন এবং সেই ঘরে কেবলমাত্র একটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মরহুম শাহ আবূ
জাফর মুহাম্মদ ছালেহ রহ. ছিলেন দ্বিতীয় ঘরের সন্তান।
তাবলীগ ও হেদায়াত:
মোর্শেদের কাছ থেকে অনুমতি পেয়ে দেশে ফিরে মঠবাড়িয়া
হতে তিনি তার দাওয়াত কাজ শুরু করেন। তিনি তার সারাটি জীবন এ কাজে ব্যয় করেছিলেন। হাদীসের
আলোকে তাবলীগে দীনের জন্য এক ব্যাপক কর্ম পন্থা গ্রহণ করেছিলেন তিনি। কেবল ওয়াজ নসীহত
করেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ছারছীনা দারুস্সুন্নাত আলীয়া মাদ্রাসা’সহ দেশের বিভিন্ন
স্থানে মাদ্রাসা মকতব, খানকাহ, মসজিদ।
সমাজ সেবা:
হযরত পীর সাহেব কেবলার যেমনি নাম ছিল নেছারুদ্দীন,
তেমনি তিনি ছিলেন ধর্ম ও সমাজের জন্য উৎসর্গকৃত। ধর্ম ও সমাজের জন্য তিনি অসংখ্য প্রতিষ্ঠান
কায়েম করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ছারছীনা দারুস্সুন্নাত আলীয়া মাদ্রাসা, লিল্লাহ
বোডিং, কুতুবখানা, হেমায়েতে ইসলাম ফান্ড, এহইয়ায়ে সুন্নাত তহবিল, মক্কা- মদীনা শরীফ
রিলিফ তহবীল ও মুসাফির খানা, সাধারণ দান তহবিল, পঞ্চগ্রাম সাহায্য সমিতি, বরিশালের
লংগরখানা (১৩৫০),বার্ষিক ঈসালে সওয়াব মাহফিল, সিদ্দিকীয়া ফান্ড ও সিলেট রেফারেন্ডাম।
পুস্তক প্রণয়ন:
সকল বিদয়াতী ও গোমরাহী মতবাদের মোকাবিলা করতে পুস্তক
প্রণয়ন আবশ্যক। এ সত্যটি বুঝতে পেরে তিনি অনেকগুলো বই লিখেছেন। তার লিখিত পুস্তকসমূহ
হলো- তরীকুল ইসলাম (চৌদ্দ খ-), ইজহারুল হক (জুমার বাহাছ), মোসলেম রতœহার, নূরুল হেদায়েত,
মাছায়েলে আরবায়া, তা’লীমে মা’রেফাত, জুমার সংক্ষপ্ত দলীল, গঞ্জেহক্ব, ফুটবলের ফতোয়া,
নসবনামা, অসীয়ত নামা, দাঁড়ি ও ধুমপান, মজহাব ও তকলীদ, জামেউল উসূল, সমাজ দর্পণ, পীর-
মুরীদি দ্বীধাভঞ্জন, আল-জুমুআ, মাসায়েলে ছালাছা, নারী ও পর্দা ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি
শেষবার হজ্জে যাওয়ার সময় ‘তাবলীগ’ নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করে যান।
সংগঠন প্রতিষ্ঠা:
কুরআন ও হাদীসের আলোকে সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলামের
দাওয়াত দেওয়ার জন্য ১৯৪৩ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “আঞ্জুমানে আল ইসলাম” নামে একটি
অরাজনৈতিক সংগঠন। কিছুদিন পরে এর নাম রাখা হয় ‘হিযবুল্লাহ জমইয়াতুল মুজাহেদীন”। ১৯৫০
সালে এর নাম পুন:পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পাকিস্তান জমিয়তে হিযবুল্লাহ’ বাংলাদেশ স্বাধীন
হওয়ার পর নাম রাখা হয় ‘বাংলাদেশ জমইয়তে হিযবুল্লাহ’। আর অঙ্গ সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা
করা হয় ‘জমইয়তে তোলাবায়ে হিযবুল্লাহ’ । ১৯৮৭ সনে আধুনিকায়ন করে নাম রাখা হয় ‘বাংলাদেশ
ছাত্র হিযবুল্লাহ’।
ইবাদত বন্দেগী:
হযরত পীর সাহেব কেবলা প্রায় সব সময়ই ইবাদত বন্দেগীতে
কাটিয়ে দিতেন। ফরয ও ওয়াজিবতো আদায় করতেনই, নফল ইবাদতেও তিনি এত মশগুল থাকতেন যে, মনে
হত যেন তিনি কেবল এ কাজের জন্যই দুনিয়াতে এসেছিলেন। অসুস্থ থাকা অবস্থায়ও তিনি নফল
নামাজ, রোজা, কুরআন শরীফ তেলাওয়াত, ওজীফা পাঠ, মোরাকাবা-মোশাহা দা নিয়মিত করতেন।
জীবন যাপন:
হযরত পীর সাহেব কেবলা সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবন-যাপন
করতেন। সাধারণ কাপড়ের কল্লীদার জামা- পায়জামা অথবা সেলাই বিহীন লুঙ্গী এবং পাগড়ী পরিধান
করতেন। অন্তিমকাল:
বিধাতার অমোঘ বিধান মেনে সকলের এই দুনিয়া ছেড়ে চলে
যেতে হবে পরকালের উদ্দেশ্যে। হযরত পীর সাহেব কেবলাও এই নিয়মানুযায়ী ১৯৫২ সালের ১ফেব্রুয়ারী,
বাংলা ১৩৫৮ সালের ১৮ মাঘ, হিজরীর ১৩৭১সনে ৪ জুমাদিউল আউয়াল রোজ বৃহস্পতিবার রাত নয়টা
পয়তাল্লিশ মিনিটে বিশ্ববাসীকে কাঁদিয়ে মাহবুবের ডাকে সারা দিয়ে রফীকে আ’লার কাছে চলে
গেলেন। [নেছারুদ্দীন র. এর জীবনী, মুহাম্মদ আব্দুল বারী খন্দকার / নেছারুদ্দীন আহমদ
র. একটি জীবন, একটি আদর্শ / বংলাদেশের সূফী সাধক, ইফাবা]
আমল ও আকিদাহঃ
আমিরে হিযবুল্লাহ মুজাদ্দিদে যামান ছারছীনা শরীফের
পীর ছাহেব আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ বলেছেন, ছারছীনা দরবার
আমলের দরবার। নবীর সুন্নতের তরীকায় দাদা হুজুর হযরত নেছারুদ্দীন (রহ.) ছারছীনা শরীফ
প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সব পিরেরা একই বক্তব্য দেয় যে, তারা রাসুল সাঃ এর
তরীকা মোতাবেক দরবার চালায়। এখানে একটি কথা স্পষ্ট যে, পির ব্যবসাই তো ইসলামে জায়েজ
নেই। অন্যান্য পিরের দরবারে যেসব বিদআতি কর্মকান্ড সংঘটিত হয় এই দরবারও তার ব্যতিক্রম
নয়।
আব্বাসী মঞ্জিল জৈনপুর দরবার শরীফ-নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ পাঠানটুলি।
গদ্দিনাশীন পীর আল্লামা মুফতী ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ
এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ওয়া সিদ্দিকী জৈনপুরী হুজুরকে আগে আমি চিনতাম না। তরুন বক্তা
ড. মিজানুর রহমান আজহারীকে যখন উনি কাফের ঘোষণা দিলেন তখন মিডিয়া বা ইন্টারনেটে বিষয়টি
ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। তখনই উনাকে চিনতে পারলাম যে, নারায়ণগঞ্জে এমন একজন পির আছেন।
পরবর্তীতে জানা গেলো যে, উনি চরমোনাই ও দেওয়ানবাগীকেও কাফের বলতে ছাড়েননি।
রাজারবাগী পিরকে কাফের বলায় ২০১৯ সালে উনি মামলা
পর্যন্ত খেয়েছেন।
এভাবে যখন তখন কাফের ঘোষণা দেয়ায় অনেকে উনাকে কাফের
পির বলে আখ্যায়িত করেছন।
উনি খুব দ্রুত মার্কেট পাওয়ার পিছনে দুইট কারণ আছে।
তাহলোঃ
(১) যখন তখন লোকজনকে কাফের ঘোষণা দেয়া।
(২) ওয়াজ মাহফিলে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা।
এই পির ও তার মুরিদদের একটা বৈশিষ্ট্য হলো এদের বিরুদ্ধে
কেউ কিছু বললে তাকে হারামজাদা বলে গালি দেয়া। এভাবে গালি দেয়া নাকি কুরআনে আছে।
হারামজাদা বললে তার পরিনতি কি একটু জেনে নেই।
আপনি কি জানেন "হারামজাদা" মানে কী?
"হারামজাদা" মানে অবৈধ বা জারজ সন্তান। ব্যভিচারের মত মারাত্মক পাপ কাজের
ফলে যে সন্তান জন্ম নেয় তাকে ফার্সি ভাষায় "হারামজাদা" বা অবৈধ সন্তান বলা
হয়। আফসোস! বর্তমান সমাজে আমরাও এ কুশব্দটি যার তার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে দিচ্ছি।
বাস্তবে কেউ জারজ হলেও তাকে জারজ বলে গালি দেয়া হারাম।
সুতরাং কেউ যদি প্রকৃতপক্ষে জারজ না হয়ে থাকে আর আমরা তাকে জারজ বলে গালি দেই তাহলে
তো ডবল গুনাহ হবে। গালি দেওয়ার গুনাহ এবং অপবাদের গুনাহ। আর উভয়টাই কবিরা বা মারাত্মক
গুনাহ। তাছাড়া অপরকে গালি দেয়া মানে তার হক নষ্ট করা বা তার মান সম্মানে আঘাত হানা।
আর এ গুনাহ আল্লাহ তা'আলা ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করবেন
না যতক্ষণ না ঐ বান্দা ক্ষমা করে। তাই সাবধান!! আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,
“আর জেনে রাখ, তোমাদের মাঝে আল্লাহর রাসূল (সা:)
বিদ্যমান রয়েছেন, যদি তিনি অধিকাংশ ব্যাপারে তোমাদের অনুসরণ করতেন তাহলে তোমরাই কষ্ট
পেতে। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা তোমাদের ঈমানকে তোমাদের নিকট প্রিয় ও হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন
এবং কুফরি, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে অপ্রিয় করে দিয়েছেন।” [সূরা হুজুরাত; আয়াত-৭]
অন্যত্রে আল্লাহ তা'আলা বলেন, “আর যারা মুমিন নরনারীদের
কষ্ট দেয় এমন কোনো কাজের জন্য যা তারা করেনি তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।”
[সূরা আহযাব; আয়াত-৫৮]
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, ‘মুসলমানকে গালি দেয়া পাপাচার
আর হত্যা করা কুফরি।’ [বুখারী: ৪৮ শামেলা]
হযরত বিলাল (রা:) ছিলেন হাবশী বংশের। তাঁর গায়ের
রঙ ছিল কালো। একদা আবু যর (রা:) কোনো কারণে তাঁর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বলেছিলেন,
“হে কালো মহিলার ছেলে"। তিনি এ কথা সহ্য করতে না পেরে রাসূল (সা:) এর দরবারে
আবু যর (রা:) এর নামে নালিশ করেন। রাসূল (সা:)
ধমক দিয়ে তাঁকে বললেন,
হে আবু যর! তোমার মাঝে এখনও জাহেলিয়াতের বর্বরতা
রয়ে গেছে [মুসলিম: ৪৪০৩ শামেলা]।
এখন আসুন, এদের আসল পরিচয় জেনে নেইঃ
আব্বাসী মঞ্জিল জৈনপুর দরবার শরীফের
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি-তাদের নিজেস্ব ওয়েব সাইড থেকে সংগৃহিতঃ
আব্বাসী মঞ্জিল জৈনপুর দরবার শরীফ ইলমে শরিয়ত, তরিকত
ও মা'রেফাত প্রচারের এক উজ্জ্বল মারকাজ । হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ কারামাত আলী জৈনপুরী
(রহঃ) এর নাতী শাহ সুফি আল্লামা জহুরুদ্দীন আহমাদ আব্বাসী ওয়া সিদ্দিকী (রহঃ) দরবারটির
প্রতিষ্ঠাতা । হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ কারামাত আলী জৈনপুরী (রহঃ) সুদীর্ঘ ৫০ বছর বাংলা,
বিহার ও আসামে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন । যার ফলশ্রুতিতে ইতিহাসের সাক্ষ্য অনুযায়ী তাঁর
হাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন । তাঁর ইন্তেকালের পর থেকে তাঁর বংশের যোগ্য
উত্তরসূরিগণ দেড় শতাধিক কাল পরও সারা বাংলায় ঘুরে ঘুরে মানুষকে ওয়াজ নসীহতের দ্বারা
দ্বীনের সঠিক শিক্ষা দিয়ে হেদায়েতের কাজ করে যাচ্ছেন । হাদীয়ে বাঙ্গাল শাহ কারামাত
আলী জৈনপুরী (রহঃ) এর উত্তরসূরি গণের মধ্যে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র শাহ সুফি আল্লামা জহুরুদ্দীন
আহমাদ আব্বাসী (রহঃ) । যিনি ১৯৫১ সালে আব্বাসী মঞ্জিল জৈনপুর দরবার শরীফের জায়গা খরীদ
করেন । আল্লামা জহুরুদ্দীন আহমাদ (রহঃ) ১৯৫২ সালে মুন্সিগঞ্জে ইন্তেকাল করেন । তাঁর
জানাজার নামাজ পড়ান তাঁর তৃতীয় সন্তান তাঁরই মনোনীত পরবর্তী গদ্দিনাশীন আল্লামা শাহ
সুফি সিদ্দিক আহমাদ আব্বাসী জৈনপুরী (রহঃ) । পিতার ইন্তেকালের পর তিনি স্থায়ীভাবে আব্বাসী
মঞ্জিল জৈনপুরী দরবারে বসবাস শুরু করেন । এবং এখান থেকেই তিনি সুদীর্ঘ ৫০ বছর বাংলাদেশের
বিভিন্ন প্রান্তে সফর করে ওয়াজ নসীহতের দ্বারা মানুষকে হেদায়েত করেছেন এবং বাহাছ-মুনাজারা
ও ফতুয়া-ফারায়েজ এর মাধ্যমে সঠিক পথ ও মত মানুষকে দেখিয়েছেন । ১৯৯৭ সালের ২৩-শে ডিসেম্বর
এ মহান মনিষী দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে জান্নাতবাসী হন । তাঁর জানাজার নামাজ পড়ান তাঁর
একমাত্র সন্তান তাঁরই মনোনীত পরবর্তী গদ্দিনাশীন আল্লামা শাহ সুফি নিছার আহমাদ আব্বাসী
ওয়া সিদ্দিকী (রহঃ) । ১৯৯৭ সালের ২৯শে ডিসেম্বর রোজ সোমবার দরবারের সকল খলিফা ও মুরিদগণের
উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি আব্বাসী মঞ্জিল জৈনপুর দরবার শরীফের দায়িত্ব গ্রহণ
করেন । বাংলাদেশে সুন্নীয়ত প্রতিষ্ঠায় এ সিলসিলায় তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তি হিসেবে
স্বীকৃত । সারাদেশে ওয়াজ নসীহতের দ্বারা অসংখ্য মানুষকে তিনি হেদায়েত করেছেন । ২০০৬
সালের ১৩ই মার্চ রোজ সোমবার এ মহান মনিষী দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে জান্নাতবাসী হন ।
তাঁর জানাজার নামাজ পড়ান তাঁর চতুর্থ সন্তান তাঁরই মনোনীত পরবর্তী গদ্দিনাশীন পীর আল্লামা
মুফতী ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ওয়া সিদ্দিকী জৈনপুরী হুজুর । ২০০৬
সালের ১৭ই মার্চ রোজ শুক্রবার দরবারের সকল খলিফা ও মুরিদগণের উপস্থিতিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে
উক্ত দরবারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন । আলহামদুলিল্লাহ্ বর্তমানে তিনি তাঁর পূর্বসূরিগণের
মূল যে কাজ ওয়াজ নসীহত করা, ফতুয়া ফারায়েজ দেওয়া ও তালীম তারবিয়তের মাধ্যমে আত্নশুদ্ধির
কাজ তা উক্ত দরবারকে কেন্দ্র করে করে যাচ্ছেন । আলহামদুলিল্লাহ্ বর্তমানে এ দরবারের
পরিচিতি, সুখ্যাতি ও প্রচার সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মাশাআল্লাহ । উত্তরোত্তর দরবারকে
কেন্দ্র করে দ্বীনি খিদমত বেড়েই চলছে ।।
বর্তমান খেদমতসমূহঃ
(১) আব্বাসী মঞ্জিল থেকেই বর্তমান গদ্দিনাশীন পীর আল্লামা
মুফতী ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ওয়া সিদ্দিকী জৈনপুরী হুজুর সারা
বাংলাদেশে সফর করে ওয়াজ নসীহতের মাধ্যমে হেদায়েতী কাজ করে যাচ্ছেন ।
(২) বাংলাদেশের সবচেয়ে দামী ও পরিচিত ইসলামী সংগঠন তাহরিকে
খাতমে নুবুওয়্যাত বাংলাদেশ ও তাঁর সহযোগী সংগঠন জামিয়াতুস শাবাব বাংলাদেশ উক্ত দরবারকে
কেন্দ্র করেই পরিচিত হচ্ছে ।
(৩) সঠিক আকীদার যোগ্য আলেম তৈরির জন্যে উক্ত দরবারকে
কেন্দ্র করে একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান মক্তব থেকে ইফতা পর্যন্ত মাদ্রাসা পরিচালিত
হচ্ছে ।
(৪) দরবার শরীফে নিয়মিত জিকির ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে
তরিকতের সবক ও চর্চা করা হচ্ছে ।
উভয় সংগঠনের আমীর হিসেবে এবং মাদ্রাসার পরিচালক ও
শাইখুল হাদীস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বর্তমান গদ্দিনাশীন পীর আল্লামা মুফতী ড. সাইয়্যেদ
মুহাম্মাদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ওয়া সিদ্দিকী জৈনপুরী হুজুর ।।
দরবারের ভবিষ্যৎ কর্মসূচীঃ
ইনশাআল্লাহ আব্বাসী মঞ্জিল জৈনপুরী দরবার শরীফের
অধীনে একটি স্বতন্ত্র স্কুল-কলেজ ও পরবর্তীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ভবিষ্যৎ
পরিকল্পনা রয়েছে । আমরা বর্তমান গদ্দিনাশীন পীর আল্লামা মুফতী ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মমাদ
এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ওয়া সিদ্দিকী হুজুরের জন্যে দুয়া করবো আল্লাহ তায়ালা তাকে যেন
হায়াতে তাইয়্যেবাহ দান করেন এবং তাঁর সংগঠনে যোগ দিয়ে দরবারের সালেক হয়ে তাঁর হাতকে
মজবুত করবো ইনশাআল্লাহ ।।
দরবারের মাহফিল সমূহঃ
★ ১২ই রবিউল আউয়্যাল- পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে বার্ষিক মাহফিল ।
★ শা'বান মাসের প্রথম শুক্রবার- দাদা
হুজুর ও আব্বা হুজুর (রহঃ) দ্বয়ের ঈসালে সাওয়াব মাহফিল ।
★ প্রতি শুক্রবার- বাদ জুম্মা দরবার
শরীফে মিলাদ শরীফ ও খাস মোনাজাত করা হয় ।
★ প্রতি মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার মাসিক
জিকির মাহফিল ।
★ ২৬-এ রজব শবে মে'রাজ এর মাহফিল ।
★ ১৪-ই শা'বান শবে বরাতের মাহফিল ।
★ ২৬-এ রমজান শবে কদরের মাহফিল ।
বিগত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে “জাগো নিউজ২৪.কম “ অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত-ঘণ্টায়
১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেন ‘হেলিকপ্টার হুজুর’
দুই পাশে সশস্ত্র বডি গার্ডরা আছেন। আছেন পুলিশও।
রোববার বিকেলে নাটোরের সিংড়ার শালমারা দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে এ দৃশ্য দেখা যায়। ওই
হুজুরের নাম এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী জৈনপুরী।তিনি শালমারা দাখিল মাদরাসার বার্ষিক ওয়াজ
মাহফিলে ‘প্রধান বক্তা’ হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন।সিংড়ার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার
বিনিময়ে এনায়তুল্লাহ আব্বাসী মোটা অঙ্কের টাকা ‘হাদিয়া’ নিয়েছেন তা স্থানীয়দের মধ্যে
জানাজানি হয়েছে। এক ঘণ্টায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেন এ হেলিকপ্টার হুজুর।
হেলিকপ্টার থেকে নামার পর আব্বাসীকে অভ্যর্থনা জানাতে
যান শালমারা দাখিল মাদরাসা সুপার শহিদুল ইসলাম, সভাপতি মোসলেম উদ্দিন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ
জলসা কমিটির লোকজন।
এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের
মাদরাসায় বার্ষিক জলসা (ওয়াজ মাহফিল) অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবার জনগণের মাঝে সাড়া তুলতেই
পীরে কেবলা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী জৈনপুরী হুজুরকে এক লাখ টাকার মাধ্যমে প্রধান বক্তা
হিসেবে আনা হয়। এছাড়া হেলিকপ্টার ভাড়া বাবদ আরও ৮০ হাজার টাকার টাকা তাকে দেয়া হয়েছে।
০১ মে ২০১৯ তারিখে “একুশে জার্নাল”
অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত অস্ত্রসহ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর ভাই গ্রেফতার
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলীতে জৈনপুরী
পীর ওরফে হেলিকপ্টার হুজুর এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর ছোট ভাই নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীকে
অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বন্দুক ও গুলির খোসাসহ আগ্নেয়াস্ত্র
উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের
পাঠানটুলী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে
সংবাদ সম্মেলন ডেকে তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন এসপি হারুন অর রশিদ।
এসপি হারুন অর রশিদ বলেন, কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন পত্রিকা
ও ফেসবুকে খবর আসছে নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসী জঙ্গি ড্রেস পরে রিভলবার ও এসএমজি হাতে নিয়ে
ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। তারই প্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত শুরু করি। তদন্তে দেখা যায় ৫
এপ্রিল গভীর রাতে এইচএন এপারেলস নামক একটি পোশাক কারখানায় লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগে
সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত এক-দেড়শ ব্যক্তির
বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এ ঘটনার পরই আলোচিত ওই হেলিকপ্টার হুজুরের ছোট ভাইয়ের একটি ছবি
প্রকাশিত হয়। পোশাক কারখানায় হামলার ঘটনায় আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। তার কাছ থেকে
বন্দুক ও গুলির খোসাসহ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এসপি হারুন বলেন, নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসী কেন জঙ্গি
ড্রেস পরে অস্ত্র হাতে ফেসবুকে ছবি ও স্ট্যাটাস দিয়েছেন সেটি আমরা তদন্ত করে বের করব।
নেয়ামত উল্লাহ কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কিনা সেটিও আমরা বের করব। এসব বিষয়ে তদন্ত
চলছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গুলির খোসাগুলো কি কারণে এবং কোথায় ব্যবহার করেছে সেটিও বের
হবে। পাশাপাশি কেন পোশাক কারখানায় লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে তাও তদন্ত করে বের
করব আমরা।
প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরাঃ ইনি
হচ্ছেন পিরের ছেলে পির। হাদিয়ে বাঙ্গাল শাহ কেরামত আলী নাকি ছিলেন হযরত আবু বক্বর সিদ্দিকী
রাঃ এর বংশধর। এ জন্যে এদের নামের শেষে সিদ্দিকী বসানো হয়েছে। গদ্দিনাশীন পীর আল্লামা
মুফতী ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ওয়া সিদ্দিকী জৈনপুরী হুজুরের নামের
মধ্যেই শিরক, কুফর আর বিদআত বিদ্যমান। উপরোক্ত আলোচনায় প্রমাণিত যে, তারা পির নামকরণ
করে বংশ পরম্পরা ইসলামের অন্তরালে ধর্ম ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিস্তারিত আরো দেখতে
চাইলে ইউটিউবে সার্চ দিন দেখতে পাবেন।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোচিত-সমালোচিত এক ড্যান্সার পির কথিত ভন্ড মুফতি
গিয়াস উদ্দিন আত-তাহারীর কথা সবারই জানা।
প্রিয়
মুসলমান ভাইয়েরাঃ উপরোক্ত আলোচনায় জানা গেলো যে, সব পিরই শ্রেষ্ঠ।
আমার প্রশ্ন হলো সমসাময়িক একই সাথে ছোট্ট এই দেশে এতো সংখ্যক পির আল্লাহ কেনো পাঠাবেন?
পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে মুসলমানের সংখ্যা মাত্র ২% থেকে ৫%। সেব দেশে ইসলাম প্রচারের
কি প্রয়োজন নেই? সব পিরকেই শ্রেষ্ঠত্ব দেয়ায় কেউ কাউকে মানছে না। পিরদের মধ্যে এতোই
পথ মত বা তরীকা, আপনি এখন কোনটা মানবেন। সবাই বলে তার তরীকাই শ্রেষ্ঠ এবং রাসুল সাঃ
নাকি তাদেরকে স্বপ্নযোগে দিক নির্দেশনা দেয়। আসলেই কি তা সত্য। তাদের উপর ওহী আসে কোথা
থেকে? রাসুল সাঃ এজন্যেই বলেছেন, তার উম্মতের মধ্যে ৭৩টি দল হবে। ৭২ দলই জাহান্নামে
যাবে। এরা কি সেই দলের লোক না? মুসলমানদের তরীকা হলো একটাই-
আল্লাহ (সুব:) কর্তৃক নাজিলকৃত বিধান অনুযায়ী মানব
জাতির মুক্তির পথ কেবল মাত্র একটি। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে:
অর্থ: “আর এটিই আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ
কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে
দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।”(সুরা
আনআ’ম ৬:১৫৩)।
এই আয়াতে আল্লাহ (সুব:) একটি তরীকাকেই অনুসরণ করতে
বলেছেন।
আল্লাহ (সুব:) আরো বলেন:
অর্থ: “আর সঠিক পথ বাতলে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব,
এবং পথের মধ্যে কিছু আছে বক্র। আর তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সকলকে হিদায়াত
করতেন।”(সুরা নহল ১৬:৯)।
রাসূলুল্লাহ (সা:) থেকে ‘সিরাতে মুস্তাকিম’
সর্ম্পকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে:
অর্থ: “আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন রাসূলুল্লাহ
(সা:) আমাদেরকে (সিরাতে মুস্তাকিম বুঝানোর জন্য) প্রথমে একটি সোজা দাগ দিলেন। আর বললেন
এটা হলো আল্লাহর রাস্তা । অতপর ডানে বামে অনেকগুলো দাগ দিলেন আর বললেন এই রাস্তাগুলো
শয়তানের রাস্তা । এ রাস্তাগুলোর প্রতিটি রাস্তার মুখে মুখে একেকটা শয়তান বসে আছে
যারা এ রাস্তার দিকে মানুষদেরকে আহবান করে। অতপর রাসূলুল্লাহ (সা:) নিজের কথার প্রমাণে
উপরে উল্লেখিত প্রথম আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন।” (মুসনাদে আহমদ ৪১৪২; নাসায়ী ১১১৭৫;
মেশকাত ১৬৬।)
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:
অর্থ: আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ)
ইরশাদ করেছেন; আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে যে অস্বীকার করল (সে ব্যতিত)।
সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! অস্বীকার করল কে? রাসূল (সাঃ) বললেন,
যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার আনুগত্য করল না সেই
অস্বীকার করল (ফলে সে জাহান্নামে যাবে)। ( সহীহ বুখারী।)
এই হাদীস দ্বারা বুঝা গেল জান্নাতে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা রাসূল (সা:) এর তরীকায় চলা। পিরদের কোনো তরীকায় চলা যাবে না।
Related আরো বিষয় জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ
(১) পিরতন্ত্র বা সুফিবাদ বনাম ইসলাম।
(২) বিদআত কি? বিদআতীদের শেষ ও করুণ পরিনতি।
(৩) যিকির কি? ভন্ডামী যিকির বনাম সহিহ যিকির।সহিহ পথ কোনটি?
(৪) বাংলাদেশে প্রচলিত শির্ক বিদ‘আত ও কুসংস্কারপর্যালোচনা।
No comments:
Post a Comment