বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
যিনা/ব্যভিচার ও ধর্ষণ এর শাস্তি
যিনা বা ব্যভিচারঃ যিনা বা ব্যভিচার বলতে বুঝায়,
ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ বন্ধন ছাড়া অবৈধ পন্থায় যৌন তৃপ্তি লাভ। ইসলামি শরীয়াতে
অবৈধ পন্থায় যৌন সম্ভোগ সম্পূর্ণ হারাম এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ধর্ষণঃ ধর্ষণ হচ্ছে মেয়ের অনিচ্ছায় জোড় পূর্বক যৌন
সঙ্গম। ধর্ষণ এক পুরুষ কর্তৃকও হতে পারে আবার একাধিক পুরুষ মিলেও গণধর্ষণ হতে পারে।
মানব রচিত আইনে যিনা বা ব্যভিচার শাস্তিযোগ্য
অপরাধ নয়। কারণ যিনা বা ব্যভিচারে মেয়ের সম্মতি থাকে। যেমন পরকিয়া প্রেম, পতিতা বৃত্তি
বা লিভটুগেদার কিংবা মোবাইল প্রেম, বিভিন্ন পার্ক, আবাসিক হোটেলে তরুণ-তরুণীদের সাময়িক
অবাধ মেলামেশা ইত্যাদি। এসব Sexual কাজে উভয়ের
সম্মতি থাকে এমনকি অন্যের বিবাহিত স্ত্রীও যদি অন্য পুরুষের সাথে অবৈধ মেলামেশায় লিপ্ত
হয় আর স্বামী যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয় বলে আদালত
রায় দিয়ে থাকে।
কিন্তু ইসলাম সম্মতিক্রমে হোক আর জোড়পূর্বক
ধর্ষণ যাই হোক নারী-পুরুষ বিবাহ বহির্ভুত অবাধ মেলামেশা হলেই তার জন্যে শাস্তি নির্ধারিত।
ইসলাম উভয়ের লজ্জা স্থানের অংশটুকুর যৌন তৃপ্তিকেই যিনা বা ব্যভিচার হিসেবে গণ্য করে
না, মানব দেহের আরো ছয়টি অংশের যৌন তৃপ্তি লাভকেও যিনা বা ব্যভিচার হিসেবে গণ্য করে।
রাসুল সাঃ বলেন,
(ক) আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের জন্য তার ব্যভিচারের অংশ লিখে
রেখেছেন, সে তা নিশ্চয়ই করবে। চোখের ব্যভিচার হলো দেখা, জিহবার ব্যভিচার কথা বলা (যৌন
উদ্দীপ্ত কথা বলা)। আর মন চায় ও আকাঙ্ক্ষা করে এবং গুপ্তাঙ্গ তাকে সত্য বা মিথ্যায়
প্রতিপন্ন করে।
কিন্তু সহীহ মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছে,
আদম সন্তানের জন্য তাক্বদীরে যিনার অংশ যতটুকু নির্ধারণ করা হয়েছে, সে ততটুকু অবশ্যই
পাবে। দুই চোখের যিনা তাকানো, কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের যিনা আবেগ উদ্দীপ্ত
কথা বলা, হাতের যিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশে) স্পর্শ করা আর পায়ের যিনা ব্যভিচারের
উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের যিনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। আর গুপ্তাঙ্গ তা সত্য
বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬২৪৩, ৬৬১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭, সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৫২, আহমাদ ৭৬৬২, ৮১৫৬, ৮৩২১, ৮৩৩৪, ৮৩৯২, ৮৬২৬, ৯০৭৬, ৯২৭৯, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৪৪২০, ইরওয়া ১৭৮৭, সহীহ আল জামি ১৭৯৭, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮০১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫৬৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ) আব্দুল্লাহ
ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের উপর যে ব্যাপারে বেশী ভয় করি তা হচ্ছে যেনা ও গোপন
প্রবৃত্তি”। (আত-তারগীব হা/৩৪১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(গ)
আবু ওমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
বলতে শুনেছি, ‘আমি একদা ঘুমিয়ে ছিলাম আমার পাশে দু’জন লোক আসল, তারা আমার বাহু ধরে
নিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ দেখি আমি কিছু লোকের পাশে যারা খুব ফুলে আছে তাদের গন্ধ এতবেশী
যেন মনে হচ্ছে ভাগাড়। আমি বললাম এরা কারা? নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, এরা ব্যাভিচারী-ব্যাভিচারিণী। (আত-তারগীব হা/৩৪২৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
যিনা/ব্যভিচারের বিধান
ইসলামের মূল লক্ষ্যসমুহের মধ্যে অন্যতম লক্ষ্য
হল, মানুষের ইজ্জত-আবরু ও বংশের হেফাজত করা। যিনার মাধ্যমে ইসলামের এ মহান উদ্দেশ্য
বিঘ্নিত হয় বিধায় ইসলামে এটি হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং যে সব মানবিক অপরাধের
শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে এটি তন্মধ্যে গুরুতর ও অন্যতম। ব্যভিচার একটি মহাপাপ যা
অনেকগুলো অপরাধের নায়ক।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
(ক)
“তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটি অশ্লীল কাজ ও অসৎ পন্থা।” (সূরা বনী ইসরাঈল ৩২)।
তিনি অন্য স্থানে বলেন:
(খ)
“কোন রকম অশ্লীলতার কাছেও যেও না তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক।” (সূরা আল আনআম ১৫১)।
তিনি আরো বলেন,
(গ)
‘তারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন মা‘বূদকে ডাকে না শরী‘আত সম্মত কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা
করে না এবং যেনা করে না। আর যে ব্যক্তি এই সকল কাজ করে সে শাস্তি ভোগ করবে। ক্বিয়ামতের
দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং এ শাস্তি লাঞ্ছিত অবস্থায় সে অনন্তকাল ভোগ করতে
থাকবে’। (ফুরক্বান ৬৮)।
অশ্লীল কাজসমূহের মধ্যে যিনা বা ব্যভিচার সর্বাধিক
অশ্লীল কাজ। ইসলাম পর্দার বিধান পালন, দৃষ্টি অবনতকরণ ও পরনারীর সাথে নির্জনে অবস্থান
নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে ব্যভিচারের পথ ও মাধ্যম রুদ্ধ করে দিয়েছে।
‘আলকামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে চলতে ছিলাম, তখন তিনি বললেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম, তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে
করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংযত করে। আর যার সামর্থ্য নেই,
সে যেন সওম পালন করে। সওম তার প্রবৃত্তিকে দমন করে। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯০৫, ৫০৬৫, ৫০৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২৯১, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৪০০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৪৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৪৫, ১৮৪৬, ১৮৪৭,
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৮১, নাসায়ী ২২৪০, ২২৪১, ২২৪২, আহমাদ ৩৫৮১, দারেমী ২১৬৫,
২১৬৬, বুলগুলমারাম, ৯৬৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৭৮১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
তিনটি কারণ ব্যতীত কোনো মুসলিমকে হত্যা করা বৈধ নয়
(ক)
আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয়- আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, তাকে হত্যা করা বৈধ নয় তিনটি অপরাধের
যে কোনো একটিতে লিপ্ত না হলেঃ (১) বিবাহিত লোক ব্যভিচার করলে তাকে পাথর মেরে হত্যা
করবে, (২) আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে
অথবা ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানো হবে অথবা তাকে দেশ থেকে নির্বাসন দেয়া হবে, (৩) আর কাউকে
হত্যা করলৈ তার বিনিময়ে কিসাসস্বরূপ তাকেও হত্যা করা যাবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ)
আবূ উমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) (ছাদের)
উপর থেকে বিদ্রোহীদের প্রতি তাকালেন। হত্যার ব্যাপারে আলোচনা করতে শুনে তিনি বললেনঃ
তারা আমাকে হত্যার সংকল্প করছে। কেন তারা আমাকে হত্যা করবে? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ তিনটি কারণের কোন একটি বিদ্যমান না থাকলে কোন মুসলিমকে
হত্যা করা বৈধ নয়। বিবাহিত ব্যক্তি যেনা করলে, তাকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করা অথবা
যে ব্যক্তি কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে অথবা যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পর মুরতাদ হয়ে
যায়। আল্লাহর শপথ! আমি জাহিলী যুগেও কখনো যেনা করিনি এবং ইসলামী যুগেও না, আমি কোন
মুসলিমকে হত্যা করিনি এবং আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে মুরতাদ হইনি। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৩৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৫৮,
নাসায়ী ৪০১৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫০২, আহমাদ ৪৩৯, ৪৫৪, ৫১১, ১৪০৫, ২২৯৭, বায়হাকী
ফিস সুনান ৮/১৯৪, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ৪/৩৫০, ইরওয়া ৭/২৫৪, তাখরীজুল মাখতার ৩০০-৩০২,
৩৪২, ৩৪৬, ৩৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ)
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, ’’আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং আমি
আল্লাহর রাসূল’’ তার রক্তপাত বৈধ নয়। কিন্তু তিন শ্রেণীর লোক হত্যার যোগ্যঃ জানের
(হত্যার) বদলে জান (হত্যা), বিবাহিত যেনাকারী এবং মুসলিম জামাআত থেকে পৃথক হয়ে দীন
ত্যাগকারী। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৩৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৬৮৭৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৭৬, সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪০২, নাসায়ী ৪০১৬, ৪৭২১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৫২,
আহমাদ ৩৬১৪, ৪০৫৫, ৪২৩৩, ৪৪১৫, ২৪৯৪৭, দারেমী ২৪৪৭, বায়হাকী ফিস সুনান ৭/২১৩, ২৮৩,
২৮৪, ইবনু হিব্বান ৪৪০৮, ৫৯৭৭, দারাকুতনী ৩/৭২, ইরওয়া ২১৯৬, যিলালুল জান্নাহ ৬০, আধুনিক
প্রকাশনী ৬৩৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যিনা/ব্যভিচার ৭টি জিনিস দিয়ে হয়
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের জন্য তার ব্যভিচারের অংশ লিখে
রেখেছেন, সে তা নিশ্চয়ই করবে। চোখের ব্যভিচার হলো দেখা, জিহবার ব্যভিচার কথা বলা (যৌন
উদ্দীপ্ত কথা বলা)। আর মন চায় ও আকাঙ্ক্ষা করে এবং গুপ্তাঙ্গ তাকে সত্য বা মিথ্যায়
প্রতিপন্ন করে।
কিন্তু সহীহ মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছে,
আদম সন্তানের জন্য তাক্বদীরে যিনার অংশ যতটুকু নির্ধারণ করা হয়েছে, সে ততটুকু অবশ্যই
পাবে। দুই চোখের যিনা তাকানো, কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের যিনা আবেগ উদ্দীপ্ত
কথা বলা, হাতের যিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশে) স্পর্শ করা আর পায়ের যিনা ব্যভিচারের
উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের যিনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। আর গুপ্তাঙ্গ তা সত্য
বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬২৪৩, ৬৬১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭, সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৫২, আহমাদ ৭৬৬২, ৮১৫৬, ৮৩২১, ৮৩৩৪, ৮৩৯২, ৮৬২৬, ৯০৭৬, ৯২৭৯, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৪৪২০, ইরওয়া ১৭৮৭, সহীহ আল জামি ১৭৯৭, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮০১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫৬৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(ক) মনঃ এখান থেকেই ব্যভিচারের উৎপত্তি।
যে ব্যক্তি মনের বিরুদ্ধে চলতে পারে সেই পূর্ণ ঈমানদার মুসলমান হয়।
(খ) চোখঃ
চোখের ব্যভিচার সবচেয়ে বড় ব্যভিচার্। কারোর প্রতি অসাবধানতাবশত প্রথমবার চোখ পড়লে পাপ
হয়না কিন্তু ২য় বার তাকালে বা ১ম বার দৃষ্টির পর সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে না নিলে যিনা
তথা ব্যভিচার হয়।
(গ) জিহ্বাঃ
জিহ্বা দ্বারা ব্যভিচার হয় যখন একজন নর/নারী আরেকজন নর/নারীর সাথে কথা বলে রক্ত ও স্ত্রীর
সম্পর্ক ছাড়া।
(ঘ) কানঃ
এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন নর/নারীর কথা শুনা হয়। রক্তের সম্পর্ক থাকলে সমাস্যা নেই।
(ঙ) হাতঃ
এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন কোন বিবাহিত/ অবিবাহিত নর/নারীর শরীরের যেকোন অংশ স্পর্শ
বা ধরা হয়।
(চ) পাঃ
এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন পায়ে হেটে কাঙ্খিত কোন নর বা নারীর কাছে যাওয়া হয়।
(ছ) গুপ্ত অঙ্গঃ
এটা দিয়েই শুধু ব্যভিচার হয় মানুষ তা ভাবলেও এটার স্থান সবার পরে। কেননা উপরে ৬টিকে
দমন করতে পারলেই এই অঙ্গ হেফাযত করা যাবে।
যিনা/ ব্যভিচারের কুফল
যিনা বা ব্যভিচারের কারণে মানুষের ব্যক্তি
ও সমাজ জীবনে বিভিন্ন ধরণের কুফল বয়ে আনে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোঃ
(ক) যিনাকারী
বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এ কথা অনস্বীকার্য
যে, যিনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে প্রাণঘাতি বিভিন্ন যৌন রোগ সৃষ্টি হয় যার মধ্যে মরণঘাতি
এইডস্ (এইচ, আই, ভি), সিফিলিস, গণোরিয়া, মেহ-প্রমেহ, ক্ষয়রোগ ইত্যাদি প্রধান।
(খ) ব্যভিচারের
কারণে যৌন সম্ভোগের বৈধ পথ রূদ্ধ হয়ে যায়; এর মাধ্যমে বিবাহ, পরিবার, সন্তানসন্তুতির
প্রতি মানুষের অবজ্ঞা সৃষ্টি হয়। ফলত: আবহমান কাল ধরে চলে আসা পরিবার প্রথা ধ্বংস হতে
বাধ্য হয়।
(গ) যিনা
মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যকার বিভেদ উঠায়ে দেয়, এ দুই শ্রেণীর মধ্যে মূল পার্থক্য
হলো- চতুষ্পদ জন্তুর যৌনসঙ্গমের কোন নির্দিষ্ট পরিসর নেই, কিন্তু মানুষের জন্য এ পরিসর
সীমিত। তাই মানুষ যখন যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন এ পরিসরের দেয়াল টপকে মানুষ চতুষ্পদ
জন্তুতে পরিণত হয়। এ শ্রেণির মানুষের দৃষ্টান্ত দিয়ে আল্লাহ বলেন,
“তারা খায় ও আনন্দ উপভোগ করে যেমন আনন্দ উপভোগ
করে চতুষ্পদ জানোয়ার।” (সূরা মুহাম্মদ ১২)।
(ঘ)
যিনাকারীর লজ্জা থাকে না। যৌন পিপাসা মিটানোর নেশায় সে সাধারণ মানবিক লজ্জা-শরম হারিয়ে
ফেলে। বৈধ-অবৈধের মধ্যে কোন পার্থক্য তার কাছে আর থাকে না।
(ঙ)
মানুষের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে যিনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
লজ্জাস্থানের হেফাজত জান্নাতের গ্যারান্টি
যারা অবৈধ যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থেকে নিজেদের
লজ্জাস্থানকে অবৈধ ব্যবহার থেকে হেফাজত করে তাদের জন্য পরকালে জান্নাতের গ্যারান্টি
রয়েছে। মহান আল্লাহ সফলকাম মুমিনদের পরিচয় প্রদান করতে যেয়ে বলেন,
“আর তারা নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহকে সংযত রাখে,
তাদের স্ত্রী ও তারা যাদের মালিক হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ছাড়া এতে তারা নিন্দনীয় হবে
না। সুতরাং কেউ এ ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমা লংঘণকারী। এবং যারা আমানত ও
প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী; আর যারা নিজেদের নামাযে যত্নবান থাকে। তারাই হবে উত্তরাধিকারী;
উত্তরাধিকারী হবে ফেরদাউসের, যাতে তারা স্থায়ী হবে।” (সূরা
আল-মুমিন: ৫-১১)।
রাসুল সাঃ বলেন,
(ক) সাহ্ল ইবনে সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দু’রানের মাঝখানের বস্তু
(লজ্জাস্থান) এর জামানত আমাকে দিবে, আমি তার জান্নাতের যিম্মাদার। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭৪, ৬৮০৭, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৪০৮, আহমাদ ২২৩১৬, রিয়াদুস সলেহীন ১৫২১, তা’লীকুর রাগীব (৩/১৯৭), আধুনিক
প্রকাশনী ৬০২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬০৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ) আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা যে ব্যক্তিকে তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের অকল্যাণ
হতে মুক্ত করেছেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনান আত
তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪০৯), রিয়াদুস সলেহীন ১৫২৭, সহীহাহ ৫১০। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।
ইসলামি আইনে ব্যভিচারী বা যিনাকারীর শাস্তি
দুনিয়াতে লজ্জাস্থানের ব্যভিচারের শাস্তি আছে
। প্রথমে জেনে নেই ব্যভিচার কয় প্রকার।
ব্যভিচার দুই প্রকার। যথাঃ
(ক) Fornication.
(খ) Adultery.
Fornication: Fornication হলো দুজন অবিবাহিত নারী-পুরুষের
যৌন সম্পর্ক। মানে, একজনও বিবাহিত নয়। উল্লেখ্য, বাবা মা বা বাবা মার অনুপস্থিতিতে
অভিভাবককে না জানিয়ে গোপন বিয়ে করলে সে বিয়েও বৈধ হবে না এবং তাদের যৌন সম্পর্ক
Fornication হবে।
Adultery: Adultery হলো দুজন নারী-পুরুষ এর মধ্যে যৌন
সম্পর্ক, যাদের মধ্যে একজন বিবাহিত অপরজন অবিবাহিত আবার দুজনই বিবাহিত হতে পারে।
এ দুই ক্ষেত্রে দুই রকম শাস্তি আছে। দুটোই
আলোচনা করছি-তবে, এটা মনে রাখতে হবে এ শাস্তি কেবল ইসলামিক রাষ্ট্রতেই দেয়া যাবে এবং
শরিয়া সরকার সেটা প্রয়োগ করবে। কোনো ব্যক্তি না। এরকম নন-মুসলিম দেশে বিচার সেদেশের
আইনে হবে, চাইলে আদালত শরীয়া আইনে বিচার করবে, না চাইলে করবে না এটা সে দেশের ব্যাপার।
আমরা মাঝে মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জানতে পারি যে, অনেক আলেম ফতোয়া দিয়ে স্থানীয়ভাবে
দোররা মেরে থাকেন। পরবর্তীতে দেখা যায়, সেই আলেমের বিরুদ্ধে মামলা হয়, ধরপাকড় শুরু
হয় এবং শেষে জেল-জরিমানা গুণতে হয়। যেহেতু আমাদের দেশ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ রাষ্ট্র
হলেও ইসলামি রাষ্ট্র নয় এবং ইসলামি আইনে দেশ পরিচালনা করা হয় না, তাই ফতোয়া দিয়ে স্থানীয়ভাবে
যিনা বা ব্যভিচারের বিচার করা যাবে না। এরুপ অপকর্মে কেহ লিপ্ত হলে দেশের প্রচলিত মানব
রচিত আইনে তার বিচার হবে।
ইসলামি আইনে Fornication এর শাস্তি
(অবিবাহিত ছেলে-মেয়ে)
এই কেসে, শরিয়া আইনে দুজনকেই প্রকাশ্যে জনগণেরে
উপস্থিতে ১০০ বেত্রাঘাত করতে হবে এবং সাথে এক বছরের জন্য নির্বাসন বা জেল। এছাড়া খাঁটিভাবে
তওবা করতে হবে। আর বেত্রাঘাতের ক্ষেত্রে এটাই ইসলামী শরীয়াতের সবচেয়ে বড় শাস্তি।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে এক’শ ঘা করে
বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকরী করবে এদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের অভিভূত না
করে। যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাক। ঈমানদারদের একটি দল যেন এদের শাস্তি
প্রত্যক্ষ করে।” (সূরা আন নূর ২৪:২)।
হাদিস অনুয়ায়ী শাস্তির বিধান নিম্নে উল্লেখ
করা হলোঃ
(ক) যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হতে শুনেছি যে, অবিবাহিত লোক যিনা করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে
একশত চাবুক মারার ও এক বছরের জন্য দেশান্তর করার হুকুম দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৮৩১, ২৩১৪, আধুনিক প্রকাশনী ৬৩৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ)
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(যিনাকারীকে) বেত্ৰাঘাত করেছেন ও নির্বাসন দণ্ড দিয়েছেন, আবূ বকর (রাঃ) বেত্ৰাঘাত
করেছেন ও নির্বাসন দিয়েছেন এবং উমার (রাঃ)-ও বেত্ৰাঘাত করেছেন এবং নির্বাসন দণ্ডও
প্রদান করেছেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৮, ইরওয়া
২৩৪৪, বুলগুলমারাম ১২১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(গ) উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা আমার কাছ থেকে (দীনের বিধান) শিখে নাও। আল্লাহ তাদের (মহিলিাদের
জন্য একটি পথ করে দিয়েছেন। যদি অবিবাহিত পুরুষ অবিবাহিত নারীর সাথে যেনা করে তবে তাদের
প্রত্যেককে এক বছরের নির্বাসনসহ এক শত বেত্রাঘাত করতে হবে। আর যদি বিবাহিত পুরুষ বিবাহিত
নারীর সাথে যেনা করে তবে তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত এবং রজম করতে হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩০৬,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৫৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১৪৩৪, ১৪৫১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪১৫, আহমাদ ২২১৫৮, ২২১৯৫, ২২২০৮, ২২২২৩, ২২২৭৪,
দারেমী ২৩২৭, ইরওয়া ২৩৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৬৭, ইসলামিক সেন্টার ৪২৬৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
(ঘ) আবূ
হুরায়রা, যায়েদ ইবনে খালিদ ও শিবল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে
বললো, আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, আমাদের মধ্যে কিতাবুল্লাহর বিধান অনুযায়ী
মীমাংসা করে দিন। তার তুলনায় অধিক বিচক্ষণ তার প্রতিপক্ষ বললো, হাঁ আমাদের মাঝে আল্লাহর
কিতাব অনুসারে ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে বক্তব্য পেশের অনুমতি দিন। তিনি বলেনঃ বলো।
লোকটি বললো, আমার পুত্র এই ব্যক্তির শ্রমিক
ছিল, সে তার স্ত্রীর সাথে যেনা করেছে। আমি তার পক্ষ থেকে এক শত বকরী এবং একটি গোলাম
পরিশোধ করেছি। অতঃপর আমি কতক বিজ্ঞ লোককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আমাকে বলা হয় যে,
আমার পুত্রকে এক শত বেত্রাঘাত করতে হবে এবং এক বছরের নির্বাসন দিতে হবে, আর এই ব্যক্তির
স্ত্রীকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই তোমাদের দু’জনের মধ্যে আল্লাহর
কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করবো। তুমি তোমার এক শত বকরী ও গোলাম ফেরত লও এবং তোমার পুত্রকে
এক বছরের নির্বাসনসহ এক শত বেত্রাঘাত করা হবে। আর হে উনাইস! তুমি আগামী কাল সকালে তার
স্ত্রীর নিকট যাবে। সে যদি স্বীকারোক্তি করে তবে তাকে রজম করবে। অধস্তন রাবী হিশাম
বলেন, উনায়স (রাঃ) পরদিন সকালে তার নিকট গেলো এবং সে স্বীকারোক্তি করলে তিনি তাকে রজম
করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৬৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯৭ - ১৬৯৮, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৫৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৩, নাসায়ী ৫৪১০, ৫৪১১, সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৪৫, আহমাদ ১৬৫৯০, ১৭০৩৮, মুয়াত্তা মালেক ১৫৫৬, দারেমী ২৩১৭,
ইরওয়া ১৪৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইসলামি আইনে Adultery শাস্তি (বিবাহিত
নারী পুরুষ)
এই কেসে, যে অবিবাহিত তাঁকে ১০০ বেত্রাঘাত
করতে হবে। আর যে বিবাহিত তাকে শরিয়াতের আইন মাফিক পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
করতে হবে। আর যদি দুজনেই বিবাহিত হয় তবে দুজনকেই পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড। যাতে করে
সে তার কুকর্মের উপযুক্ত ফলাফল ভোগ করতে পারে আর হারাম কাজে তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
যেমন করে মজা উপভোগ করেছিল, এখন তেমনি করে ঠিক তার উল্টা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ
করবে। এ মৃত্যুদণ্ডেও যদি তাদের পাপের পূর্ণ প্রায়শ্চিত্ত না হয় এবং তারা উভয়েই
তওবা না করে মারা যায় তাহলে তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে শাস্তি দেয়া হবে। এই ধরণের
বিচার প্রকাশ্য জনসম্মুখে কার্যকর করতে হবে, যাতে অন্যরা দেখে এই কাজ করতে সাহস না
পায়।
সহিহ হাদিস অনুয়ায়ী শাস্তির বিধান নিম্নে উল্লেখ
করা হলোঃ
(ক) উমার (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন এবং তাঁর ওপর কিতাব নাযিল
করেছেন, তন্মধ্যে ’রজমের’ আয়াত ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম
করেছেন এবং তারপরে আমরাও রজম করেছি। আর রজমের দণ্ড আল্লাহর কিতাবের মাঝে অপরিহার্য
সত্য ঐ সমস্ত পুরুষ ও নারীর ওপর যারা বৈবাহিক হওয়া সত্ত্বেও যিনা করে। যখন তা প্রমাণসাপেক্ষ
হয় অথবা গর্ভধারিণী হয় অথবা স্বীকারোক্তি দেয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৫৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৮৩০, ২৪৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৩১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯১, দারিমী ২৩৬৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১৪৩২, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫৩, আহমাদ ৩৯১, ইরওয়া ২৩৩৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৩৫৭, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন- ৬৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা মায়েয ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)!
আমাকে পবিত্র করুন। তিনি বললেন, ‘আক্ষেপ তোমার প্রতি, চলে যাও, আল্লাহর কাছে ক্ষমা
চাও এবং তওবা কর’। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি চলে গেলেন এবং সামান্য একটু দূরে গিয়েই পুনরায়
ফিরে আসলেন এবং আবারও বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে
পবিত্র করুন। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবারও তাঁকে পূর্বের ন্যায়
বললেন। এইভাবে তিনি যখন চতুর্থবার এসে বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা! আমি তোমাকে কোন্ জিনিস হতে পবিত্র করব? তিনি বললেন,
যিনা হতে। তাঁর কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (ছাহাবাদেরকে)
জিজ্ঞেস করলেন, ‘লোকটি কি পাগল’? লোকেরা বলল, না তো? তিনি পাগল নন। তিনি আবার বললেন,
‘লোকটি কি মদ পান করেছে’? তৎক্ষণাৎ এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তাঁর মুখ শুঁকে দেখেন; কিন্তু
মদের কোন গন্ধ তাঁর মুখ হতে পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি
সত্যই যিনা করেছ’? তিনি বললেন, জি হ্যাঁ। এরপর তিনি রজমের নির্দেশ দিলেন, তখন তাঁকে
রজম করা হল। এই ঘটনার দুই/তিন দিন পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
(ছাহাবাদের সম্মুখে) এসে বললেন, তোমরা মায়েয ইবনে মালেকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর।
কেননা সে এমন তওবাই করেছে, যদি তা সমস্ত উম্মতের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হয়, তবে তা
সকলের জন্য যথেষ্ট হবে।
অতঃপর আয্দ বংশের গামেদী গোত্রীয় একটি মহিলা
এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে পবিত্র করুন।
তিনি বললেন, তোমার প্রতি আক্ষেপ! চলে যাও, আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার কর এবং তওবা কর।
তখন মহিলাটি বলল, আপনি মায়েয ইবনে মালেককে যেভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন আমাকেও কি সেভাবে
ফিরিয়ে দিতে চান? দেখুন, আমার এই গর্ভ যিনার! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি (সত্যই গর্ভবতী)?
মহিলাটি বলল, জি হ্যাঁ।
অতঃপর তিনি বললেন, যাও, তোমার পেটের বাচ্চা
প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আনছারী এক লোক মহিলাটির সন্তান
প্রসব হওয়ার সময় পর্যন্ত তাকে নিজের তত্ত্বাবধানে নিয়ে গেলেন। সন্তান প্রসব হওয়ার পর
ঐ লোকটি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খেদমতে এসে বলল, হুযুর! গামেদী
মহিলাটির গর্ভ খালাছ হয়ে গিয়েছে। এবার তিনি বললেন, এই শিশু বাচ্চাটিকে রেখে আমরা মহিলাটিকে
রজম করতে পারব না। এমতাবস্থায় যে, তাকে দুধ পান করাবার মত কেউই নেই। এমন সময় আর একজন
আনছারী দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর নবী! আমিই তার দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করব। বর্ণনাকারী
বলেন, অতঃপর তাকে রজম করলেন ।
অন্য এক রেওয়ায়াতে আছে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মহিলাটিকে বললেন, ‘তুমি চলে যাও এবং সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত
অপেক্ষা কর’। অতঃপর সন্তান প্রসবের পর যখন আসল, তখন বললেন, আবারও চলে যাও এবং তাকে
দুধ পান করাও এবং দুধ ছাড়ান পর্যন্ত অপেক্ষা কর। পরে যখন বাচ্চাটির দুধ খাওয়া বন্ধ
হয়, তখন মহিলাটি বাচ্চার হাতে এক খণ্ড রুটির টুকরা দিয়ে তাকে সঙ্গে করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খেদমতে উপস্থিত হল। এইবার মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর নবী! এই
দেখুন (বাচ্চাটির) দুধ ছাড়ান হয়েছে, এমনকি সে নিজের হাতের খানাও খেতে পারে। তখন রাসূল
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাচ্চাটিকে একজন মুসলমানের হাতে তুলে দিলেন। পরে
মহিলাটির জন্য গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দিলেন। অতএব তার জন্য বক্ষ পর্যন্ত গর্ত খনন করা
হল। তৎপর লোকদেরকে নির্দেশ করলেন, তারা মহিলাটিকে রজম করল। খালেদ ইবনে ওয়ালীদ (রাঃ)
সম্মুখে অগ্রসর হয়ে তার মাথায় একখণ্ড পাথর নিক্ষেপ করতেই রক্ত ছিটে এসে তাঁর মুখমণ্ডলের
উপর পড়ল। তাই তিনি মহিলাটিকে ভর্ৎসনা ও তিরস্কার করে গাল-মন্দ করলেন। (এটা শুনে) নবী
করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে খালেদ, থাম! সেই সত্তার কসম, যার
হাতে আমার প্রাণ! মহিলাটি এমন (খালেছ) তওবা করেছে, যদি কোন বড় যালেমও এই ধরনের তওবা
করে, তারও মাগফেরাত হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি তার জানাযা পড়ার আদেশ করলেন। অতঃপর তার জানাযা
পড়লেন এবং তাকে দাফনও করা হল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৫৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৪২৮২, ইসলামিক সেন্টার ৪২৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(গ) আবূ হুরায়রা, যায়েদ ইবনে
খালিদ ও শিবল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তারা বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললো, আমি
আপনাকে আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, আমাদের মধ্যে কিতাবুল্লাহর বিধান অনুযায়ী মীমাংসা
করে দিন। তার তুলনায় অধিক বিচক্ষণ তার প্রতিপক্ষ বললো, হাঁ আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব
অনুসারে ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে বক্তব্য পেশের অনুমতি দিন। তিনি বলেনঃ বলো।
লোকটি বললো, আমার পুত্র এই ব্যক্তির শ্রমিক
ছিল, সে তার স্ত্রীর সাথে যেনা করেছে। আমি তার পক্ষ থেকে এক শত বকরী এবং একটি গোলাম
পরিশোধ করেছি। অতঃপর আমি কতক বিজ্ঞ লোককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আমাকে বলা হয় যে,
আমার পুত্রকে এক শত বেত্রাঘাত করতে হবে এবং এক বছরের নির্বাসন দিতে হবে, আর এই ব্যক্তির
স্ত্রীকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই তোমাদের দু’জনের মধ্যে আল্লাহর
কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করবো। তুমি তোমার এক শত বকরী ও গোলাম ফেরত লও এবং তোমার পুত্রকে
এক বছরের নির্বাসনসহ এক শত বেত্রাঘাত করা হবে। আর হে উনাইস! তুমি আগামী কাল সকালে তার
স্ত্রীর নিকট যাবে। সে যদি স্বীকারোক্তি করে তবে তাকে রজম করবে। অধস্তন রাবী হিশাম
বলেন, উনায়স (রাঃ) পরদিন সকালে তার নিকট গেলো এবং সে স্বীকারোক্তি করলে তিনি তাকে রজম
করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৩১৫, ২৬৪৯, ২৬৯৬, ২৭২৫, ৬৬৩৩, ৬৮২৮, ৬৮৩২, ৬৮৩৩, ৬৮৩৬, ৬৮৪৩, ৬৮৬০, ৭১৯৫, ৭২৬০, ৭২৭৯,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৪৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৩, নাসায়ী ৫৪১০,
৫৪১১, আহমাদ ১৬৫৯০, মুয়াত্তা মালেক ১৫৫৬, দারেমী ২৩১৭, ইরওয়া ১৪৬৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২১৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২১৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন জনৈক লোক নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলো। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদে
ছিলেন। লোকটি উচ্চস্বরে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি যিনা করেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেদিকে
মুখ ফিরিয়ে নিলেন লোকটি সেদিকে গিয়ে আবার বলল, আমি যিনা করেছি। তখনও নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অবশেষে যখন লোকটি চারবার স্বীকারোক্তি
দিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, তুমি কি পাগল? লোকটি
(দৃঢ়তার সাথে) বলল, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি বিবাহিত?
সে বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীদের উদ্দেশে) বললেন, একে নিয়ে যাও এবং ’রজম’ কর।
(হাদীসের এক বর্ণনাকারী) ইবনু শিহাব (রহঃ)
বলেন, আমার নিকট এমন এক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন, যিনি জাবির ইবনু ’আব্দুল্লাহ থেকে শুনেছেন,
আমরা তাকে মদীনাতেই ’রজম’ করেছি। অতঃপর যখন তার ওপর পাথর নিক্ষেপ করছিল (তীব্র যাতনা
অনুভূত হয়ে) তখন সে পালিয়ে গেল। কিন্তু আমরা ’হাররাহ্’ নামক স্থানে তাকে পেলাম এবং
সেখানেই তার ওপর পাথর নিক্ষেপ করলাম। পরিশেষে সে মৃত্যুবরণ করল।
বুখারীর অপর বর্ণনাতে জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত,
সে বলল, ’হ্যাঁ’। এরপর বর্ণিত আছে যে, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যার নির্দেশ করলেন। সুতরাং ঈদগাহের মাঠে তার ওপর পাথর নিক্ষেপ
করা হয়। কিন্তু নিক্ষিপ্ত পাথরগুলো যখন তার দেহে আঘাত হানতে ছিল, তখন সে অসহ্য যন্ত্রণায়
দৌড়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু পরে তার নাগাল পাওয়া গেল ও রজম করা হলো। অতঃপর তার জানাযার
সালাতও আদায় করালেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৬০,
৩৫৬৫, ৩৫৬৬, ৩৫৬৭, ৩৫৮১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৭২,
৫২৭০, ৬৮২০, ৬৮২৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯১, ১৬৯২,
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪২৮, ১৪২৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪২৮, ৪৪৩০,
৯৫৩৫, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২১৯, ২২৮, আত-তহাবী ৩/১৪৩, ইরওয়া ৭/৩৫৩, নাসায়ী ১৯৫৬, আহমাদ
১৪৪৬২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৩৫, আধুনিক প্রকাশনী ৪৮৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৮০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আবূ গাসসান মালিক ইবনু আবদুল
ওয়াহিদ মিসমাঈ (রহঃ).....ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাযিঃ) এর মাধ্যমে হাদীস শুনিয়েছেন
যে,
জুহাইনাহ গোত্রের এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করল। সে বলল, হে আল্লাহর নবী! আমি হদ (শারীআত কর্তৃক
নির্ধারিত ব্যভিচারের শাস্তি) এর উপযোগী হয়েছি। অতএব আমার উপর তা কার্যকর করুন। তখন
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবককে ডাকালেন এবং বললেন, তাকে
ভালভাবে দেখাশোনা করো। তারপর সে যখন সন্তান প্রসব করবে তখন তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।
সে তাই করলো। এরপর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি (শাস্তি প্রদানের)
নির্দেশ দিলেন। তখন মহিলার কাপড় শক্ত করে বাধা হলো। এরপর তিনি শাস্তি কার্যকর করার
আদেশ দিলেন। তাকে পাথর মারা হলো।
অতঃপর তিনি তার উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন।
তখন উমর (রাযিঃ) বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি তার (জানাযার) সালাত আদায় করলেন অথচ
সে তো ব্যভিচার করেছিল? তিনি বললেন, নিশ্চয়ই সে এমনভাবে তওবা করেছে, যদি তা মদীনার
সত্তরজন লোকের মধ্যে বণ্টিত হতো, তবে তাদের জন্য তাই যথেষ্ট হতো। তুমি কি তার চেয়ে
অধিক উত্তম তওবাকারী কখনও দেখেছো? সে-তো নিজের জীবন আল্লাহর জন্য দিয়ে দিয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯৬,
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৪২৮৪, ইসলামিক সেন্টার ৪২৮৫, নাসায়ী ১৯৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫৫, আহমাদ ১৯৩৬০, ১৯৪০২,
১৯৪০২, ১৯৪২৪, ১৯৪৫২, দারেমী ২৩২৫, ইরওয়া ২৩৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(চ)
আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন কতিপয় ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জানালো যে, তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী
যিনা করেছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন,
’রজমের’ ব্যাপারে তোমরা তাওরাতে কি জেনেছ? তারা বলল, আমরা দোষীকে অপমান করি এবং চাবুক
মারা হয়। ’আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাতে অবশ্যই ’রজমের’
দণ্ড রয়েছে, তা নিয়ে আসো! অবশেষে তারা তা এনে খুলল ঠিকই কিন্তু তাদের একজন ’রজমের’
আয়াতের উপর স্বীয় হাত দিয়ে ঢেকে রেখে দিল এবং তারপর এর আগের ও পরের আয়াত পড়ল।
তখন ’আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, তোমার হাত
উঠাও! সে হাত উঠাল। তখন দেখা গেল, সেখানে রজমের আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। ইয়াহূদীরা বলল,
হে মুহাম্মাদ! সে সত্য বলেছে। এখানে রজমের আয়াত বিদ্যমান আছে। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দুজনকে রজম করে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। তখন তাদের উভয়কে
’’রজম’’ করা হলো। অন্য রিওয়ায়াতে আছে, ’আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, তোমার হাত উঠাও!
সে হাত উঠাল। তখন সেখানে স্পষ্টভাবে রজমের আয়াত বিদ্যমান দেখা গেল। [আয়াত গোপনকারী]
সেই লোকটি বলল, হে মুহাম্মাদ! সত্যিই তাওরাতে রজমের আয়াত বিদ্যমান আছে; কিন্তু আমরা
নিজেদের মাঝে তা গোপন রাখতাম। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয়কে
রজম করার নির্দেশ দিলেন। তখন তাদের উভয়কে রজম করা হলো। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩২৯,
৩৬৩৫, ৪৫৫৬, ৬৮১৯, ৬৮৪১, ৭৩৩২, ৭৫৪৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৩০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৬৯৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৪৬,
৪৪৪৯, আহমাদ ৪৪৮৪, ৪৬৫২, ৬৩৪৯, মুয়াত্তা মালেক ১৫৫১, দারেমী ২৩২১, ইরওয়া ১২৫৩, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ১২৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(ছ)
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....বারা ইবনু আযিব (রাযিঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখ দিয়ে একজন
ইয়াহুদীকে কালি মাখা এবং বেত্ৰাঘাতকৃত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বলেন,
তোমরা কি তোমাদের কিতাবে ব্যভিচারের শাস্তি এরূপই পেয়েছ? তারা বলল, হ্যাঁ। এরপর তিনি
তাদের মধ্য হতে একজন আলিম (পাদরী) ব্যক্তিকে ডাকালেন এবং বললেন, তোমাকে সে আল্লাহর
কসম দিয়ে বলছি, যিনি মূসা (আঃ) এর প্রতি তাওরাত কিতাব অবতীর্ণ করেছিলেন, এরূপই কি
তোমরা তোমাদের কিতাবে ব্যভিচারীর শাস্তি পেয়েছ?
তখন ইয়াহুদী আলিম ব্যক্তি বললেন, না। তিনি
আরো বললেন, আপনি যদি আমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে এভাবে না বলতেন তবে আমি আপনাকে জানাতাম
না যে, এর প্রকৃত শাস্তি রজম (পাথর নিক্ষেপ করা)। কিন্তু আমাদের সমাজের সম্ভান্ত ব্যক্তিদের
মাঝে এর ব্যাপক প্রচলন হয়ে গেছে। অতএব, আমরা যখন এতে কোন সম্ভান্ত লোককে পেতাম, তখন
তাকে ছেড়ে দিতাম এবং যখন কোন নিঃস্ব ব্যক্তিকে পাকড়াও করতাম তখন তার উপর শারীআতের
প্রকৃত শাস্তিحَد
বাস্তবায়িত করতাম। পরিশেষে আমরা বললাম, তোমরা সকলেই এসো, আমরা সবাই মিলে এ ব্যাপারে
একটি শাস্তি নির্ধারিত করে নেই, যা ভদ্র ও অভদ্র সকলের উপরই প্রযোজ্য হবে। সুতরাং আমরা
ব্যভিচারের শাস্তি কালি লাগানো এবং বেত্ৰাঘাত করাকেই স্থির করে নিলাম, পাথর নিক্ষেপের
পরিবর্তে।
তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, হে আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে তোমার নির্দেশ رجم বাস্তবায়িত (পুনর্জীবিত)
করলাম, যা তারা বাতিল করে ফেলেছিল। সুতরাং তিনি তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিলেন। অবশেষে
ঐ ইয়াহুদীকে পাথর মারা হল। এরপর মহান আল্লাহ এ আয়াতঃ “হে রসূল! যারা কুফরী কাজে দ্রুতগামী
তাদের কার্যকলাপ যেন আপনাকে চিন্তিত না করে। ... অতঃপর সেই বাণী পর্যন্ত যদি তোমরা
তা প্রদত্ত হও, তবে তা ধারণ কর"- (সূরা ময়িদাহ ৫:৪১) পর্যন্ত অবতীর্ণ করেন। তারা
(ইয়াহুদীরা) বলতো যে, তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গমন
করো, যদি তিনি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে- কালি লাগানো এবং বেত্ৰাঘাতের নির্দেশ প্রদান করেন,
তবে তোমরা তা কার্যকর করবে; আর যদি তিনি রজমের নির্দেশ দেন তবে তা প্রত্যাখ্যান করবে।
আল্লাহ তা’আলা (এ মর্মে) আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত মুতাবিক
বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারাই হলো কাফির (অস্বীকারকারী) সম্প্রদায়"- (সূরা
ময়িদাহ ৫:৪৪)।
"আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত অনুসারে
বিচার করে না তারাই হলো অত্যাচারী দল"- (সূরা ময়িদাহ ৫:৪৫)। "আর যারা আল্লাহর
নাযিলকৃত আয়াত অনুযায়ী বিচার করে না তারাই হলো সীমালঙ্ঘনকারী দল" (সূরা ময়িদাহ
৫:৪৭)। এ সবগুলো আয়াত কাফিরদের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০০, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫৮, ২৩২৭,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৪৭, ৪৪৪৮, আহমাদ ১৭০৫৪, ইরওয়া ২৬৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৪২৯১, ইসলামিক সেন্টার ৪২৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(জ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মা’ইয ইবনু মালিক যখন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন, তখন তিনি তাঁকে বললেন, তুমি কি (কোনো মহিলাকে) চুমু
দিয়েছিলে, অথবা চোখ দ্বারা ইশারা দিয়েছিলে? সে বলল, না, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে কি তুমি
তার সাথে সঙ্গম করেছ? কথাটি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোনো ইশারা-ইঙ্গিতে
বলেননি, বরং দৃঢ়কণ্ঠে বললেন। সে বলল, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
তাকে ’রজমের’ নির্দেশ করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৫৬১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৮২৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪২৭, আহমাদ
২১২৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৩৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
জোড় পূর্বক ধর্ষণ করলে ধর্ষিতা দোষী সাব্যস্ত হবে না
(ক) ওয়ায়িল
ইবনু হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে
জনৈকা মহিলা সালাতের উদ্দেশে বের হলো। এমন সময় এক ব্যক্তি তাকে ধরে নিয়ে জোরপূর্বক
যিনা করলে মহিলাটির চিৎকারে পুরুষটি পালিয়ে যায়। তখন মুহাজিরদের একটি দল সেখান দিয়ে
যাচ্ছিল। তখন মহিলাটি বলল, ঐ লোকটি আমার সাথে এরূপ এরূপ করেছে। তারা তখন ঐ লোকটিকে
গ্রেফতার করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত করল। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ মহিলাটিকে বললেন, চলে যাও আল্লাহ তা’আলা তোমাকে
ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর যে লোকটি মহিলাটির সাথে যিনা করেছিল। যিনাকারীর ব্যাপারে হুকুম
করলেন, একে পাথর নিক্ষেপে হত্যা কর। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
লোকটি এমনভাবে তওবা্ করেছে যদি মদীনার সকল লোক এরূপ তওবা্ করত, তাহলে তাদের সকলের পক্ষ
থেকে তা কবুল করা হতো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭২,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৭৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৪,আহমাদ ২৭২৪০,
সহীহাহ্ ৯০০, সহীহ আত্ তারগীব ২০২৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ)
লায়স (রহ.)...নাফি’ (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, সফীয়্যাহ বিন্ত আবূ ’উবায়দ তাকে
সংবাদ দিয়েছেন যে, সরকারী মালিকানাধীন এক গোলাম গনীমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসীর সঙ্গে
জবরদস্তি করে যিনা করে। তাতে তার কুমারীত্ব মুছে যায়। ’উমার (রাঃ) উক্ত গোলামকে কশাঘাত
করলেন ও নির্বাসন দিলেন। কিন্তু দাসীটিকে সে বাধ্য করেছিল বলে কশাঘাত করলেন না। যুহরী
(রহ.) কুমারী দাসীর ব্যাপারে বলেন, যার কুমারীত্ব কোন আযাদ ব্যক্তি ছিন্ন করে ফেলল,
বিচারক ঐ কুমারী দাসীর মূল্য অনুপাতে তার জন্য ঐ আযাদ ব্যক্তির নিকট হতে কুমারীত্ব
মুছে ফেলার দিয়াত গ্রহণ করবেন এবং ওকে কশাঘাত করবেন। আর বিবাহিতা দাসীর ক্ষেত্রে ইমামদের
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোন জরিমানা নেই। কিন্তু তার উপর ’হদ’ জারি হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৯৪৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৫৮০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৫৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা কোনো পাগল যিনায় লিপ্ত হলে তার শাস্তি
সা’ঈদ ইবনু সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একদিন সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্(রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট
এমন ব্যক্তিকে ধরে আনলেন, যে ছিল বিকলাঙ্গ ও ব্যাধিগ্রস্ত। তাকে এলাকার এক বাঁদীর সাথে
যিনাগ্রস্ত অবস্থায় দেখা যায়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এমন একটি
খেজুরের বড় ছড়া নিয়ে আসো যার মধ্যে ছোট ছোট একশত শাখা রয়েছে এবং তা দ্বারা লোকটিকে
একবার আঘাত কর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৫৭৪, সুনান
ইবনু মাজাহ ২৫৭৪, আহমাদ ২১৯৩৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৫৯১, সহীহাহ্ ২৯৮৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
যিনা/ব্যভিচারের মিথ্যে অপবাদ দিলে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে
নির্দোষ প্রমাণ করে যখন কুরআনের আয়াত নাযিল হলো তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে তা তিলাওয়াত করলেন। অতঃপর মিম্বার হতে নেমে দু’জন পুরুষ ও একজন
মহিলাকে দণ্ড দেয়ার হুকুম করলেন। তখন লোকেরা তাদের ওপর (মিথ্যা অপবাদের) ’হাদ্দ’ জারি
করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৯, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৩১৮১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৭৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬৭, আহমাদ
২৪০৬৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
হদ্দ কার্যকর করতে কোনো দ্বিধা না করা ও সুপারিশ গ্রহণ না করা
(ক) উবাদা
ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমরা কাছের ও দূরের সকলের উপর আল্লাহ নির্ধারিত হদ্দ কার্যকর করো। আল্লাহর
কাজে কোন সমালোচকের সমালোচনা যেন তোমাদেরকে বিব্রত না করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৮৭, সহীহাহ ৬৭০, ১৯৪২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৫২,
মুসতাদরাক লিল হাকিম ২৪০৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ)
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মাখযূম গোত্রের এক নারী চুরি করে ধরা পড়লে তার বিষয়টি কুরায়শদেরকে
অত্যন্ত বিচলিত করে তোলে। তারা বলাবলি করলো, বিষয়টি নিয়ে কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কথা বলতে পারে? তারা বলাবলি করলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয়পাত্র উসামা ইবনে যায়েদ ছাড়া আর কেউ এমন দুঃসাহস করতে পারবে
না। অতঃপর উসামা (রাঃ) তাঁর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি কি আল্লাহ নির্ধারিত হদ্দের ব্যাপারে সুপারিশ করছো?
অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে খুতবা দিলেন এবং বলেনঃ
হে জনগণ! তোমাদের পূর্ববর্তীরা এ কারণে ধ্বংস হয়েছে যে, তাদের মধ্যকার কোন সম্ভ্রান্ত
ব্যক্তি চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিতো এবং কোন দুর্বল অসহায় ব্যক্তি চুরি করলে তাকে
শাস্তি দিতো। আল্লাহর শপথ! মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমাও যদি চুরি করতো, তাহলে অবশ্যই
আমি তার হাতও কেটে দিতাম। রাবী মুহাম্মাদ ইবনুর রুম্হ (রাঃ) বলেন, আমি লাইছ ইবনে সাদকে
বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলা তাকে (হযরত ফাতিমাকে) চুরি করা থেকে হেফাজত করেছেন। প্রত্যেক
মুসলিমেরই এরূপ বলা উচিত। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪৭, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৭৫, ২৬৪৮, ৩৭৩৩, ৪৩০৪, ৬৭৮৭, ৬৭৮৮, ৬৮০০, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৩০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৮৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩০,
নাসায়ী ৪৮৯৫, ৪৮৯৬, ৪৮৯৭, ৪৮৯৮, ৪৮৯১, ৪৯০০, ৪৯০১, ৪৯০২, ৪৯০৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৪৩৭৩, আহমাদ ২৪৭৬৯, দারেমী ২৩০২, ইরওয়া ২৩১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যার উপর হদ্দ কার্যকর করা আবশ্যিক নয়
আতিয়্যা আল-কুরাজী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, বনূ কুরায়জাকে হত্যার দিন আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সামনে উপস্থিত করা হলো। যার (লজ্জাস্থানের) লোম গজিয়েছিল, তাকে হত্যা করা হলো এবং
যার লোম গজায়নি তাকে রেহাই দেয়া হলো। আমি ছিলাম লোম না গজানোদের অন্তর্ভুক্ত, তাই আমাকে
রেহাই দেয়া হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪১, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৯৭৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪০৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৫৮৪,
আহমাদ ১৮৭৭৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৭/২৩৯, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ৪/৩৬৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahi)।
হদ্দ কার্যকর করার সুফল
(ক) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর নির্ধারিত হদ্দসমূহের মধ্য থেকে কোন
হদ্দ কার্যকর করা, চল্লিশ রাত মহান আল্লাহর কোন জনপদে বৃষ্টিপাত হওয়ার চেয়ে উত্তম।
(সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৩৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৮৮,
বায়হাকী ফিস সুনান ৭/২৬৭, সহীহাহ ২৩১, নাদীর ১০৬৮, সহীহ আল জামি ১১৩৯, সহীহ আত্ তারগীব
২৩৫০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ক)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ কোন জনপদে একটি হদ্দ কার্যকর করা সেই জনপদে চল্লিশ দিন বৃষ্টিপাত হওয়ার তুলনায়
উত্তম। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৩৮, নাসায়ী ৪৯০৪, ৪৯০৫, আল-হাকিম
ফিল মুসতাদরাক ৪/৩০৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
ইসলামে ধর্ষণ প্রমাণ করা
যিনা প্রমাণের জন্য ইসলামে দুটোর যে কোনোটি
জরুরী।
(ক)
৪ জন স্বাক্ষী।
(খ)
ধর্ষকের স্বীকারোক্তি।
তবে স্বাক্ষ্য না পাওয়া গেলে আধুনিক ডিএনএ
টেস্ট, সিসি ক্যামেরা, মোবাইল ভিডিও, ধর্ষিতার বক্তব্য ইত্যাদি অনুযায়ী ধর্ষককে দ্রুত
গ্রেফতার করে স্বীকার করার জন্য চাপ দিতে হবে। স্বীকারোক্তি পেলে তার ওপর শাস্তি কার্যকর
কর হবে।
পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন: নিশ্চয় আল্লাহ মুহাম্মাদ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন। আর তাঁর উপর কিতাব অবতীর্ণ
করেছেন। এবং আল্লাহর অবতীর্ণ বিষয়াদির একটি ছিল রজমের আয়াত। আমরা সে আয়াত পড়েছি, বুঝেছি,
আয়ত্ত করেছি। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাথর মেরে হত্যা করেছেন।
আমরাও তাঁর পরে পাথর মেরে হত্যা করেছি। আমি আশংকা করছি যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হবার
পর কোন লোক এ কথা বলে ফেলতে পারে যে, আল্লাহর কসম! আমরা আল্লাহর কিতাবে পাথর মেরে হত্যার
আয়াত পাচ্ছি না। ফলে তারা এমন একটি ফর্য ত্যাগের কারণে পথভ্রষ্ট হবে, যা আল্লাহ অবতীর্ণ
করেছেন। আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির উপর পাথর মেরে হত্যা অবধারিত যে বিবাহিত
হবার পর যিনা করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, যখন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাবে অথবা গর্ভ
বা স্বীকারোক্তি পাওয়া যাবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৪৬২, ৩৪৪৫, ৩৯২৮, ৪০২১, ৬৮৩০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৬৯১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪১৮, সুনান
ইবনু মাজাহ ২৫৫৩, আহমাদ ১৫১, ১৫৫, মালেক ১৫৫৮, দারেমী ২৩২২, বুলগুলমারাম ১২০৯, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৪২৭৩, ইসলামিক সেন্টার ৪২৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
যিনাকারীকে প্রকাশ্যে জনসাধারণের উপস্থিতিতে
পাথর মেরে হত্যা করতে হবে যাতে উক্ত শাস্তি দেখে ভয়ে অন্যরা অনুরুপ কাজে লিপ্ত না হয়।
তবে বর্তমানে প্রকাশ্যে জনসাধারণের উপস্থিতিতে
গুলি করে বা ফাঁসিতে ঝুলিয়েও হত্যা করা যেতে পারে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবরচিত আইনে ধর্ষকের
শাস্তিস্বরুপ ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বিধান আছে। তবে ইসলামের সাথে এখানে
পার্থক্য হলো, মানবরচিত আইনে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় গোপন কক্ষে আর ইসলামি আইনে
মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় প্রকাশে।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করার বিধান
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইসলামের সর্বপ্রথম সংঘটিত লি’আন’
এজন্য ছিল যে, হিলাল ইবনু উমাইয়াহ তার স্ত্রীর সাথে শারীক ইবনু সাহমার ব্যভিচারের অপবাদ
আরোপ করেছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে (হিলালকে) বলেন,
প্রমাণ উপস্থিত কর অন্যথায় তোমার পিঠের উপর অপবাদের হাদ্দ মারা হবে। (বুলুগুল মারাম ১২২৪, ইমাম শাওকানীর নাইলুল আওত্বার (৭/৬৯),
ইবনু হাযামের আল মাহাল্লী (১১/১৬৮, ১১/২৬৫), মুসনাদ আবূ ইয়ালা ২৮২৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
দাসীর ব্যভিচারের শাস্তি
(ক) আবূ হুরায়রা, যায়েদ ইবনে খালিদ ও শিবল (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ
তারা বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তাঁকে অবিবাহিত ক্রীতদাসীর যেনায় লিপ্ত হওয়া
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তাকে বেত্রাঘাত করো।
যদি সে পুনরায় যেনা করে তবে আমার তালে বেত্রাঘাত করো। তৃতীয় বা চতুর্থবারে তিনি বলেনঃ
চুলের একটি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে দাও। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২৫৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২১৫২, ২১৫৪, ২২৩৩, ২২৩৪, ২৫৫৬, ৬৮৩৮,
৬৮৩৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০৩, ১৭০৪, সুনান আত
তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৩, ১৪৪০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৬৯, ৪৪৭০, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৬৩, আহমাদ ৭৩৪৭, ৮৬৮৯, ৯১৭৪, ১০০৩৩, ১৬৫৯৫, ১৬৬০৯, মুয়াত্তা মালেক
১৫৬৪, দারেমী ২৩২৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২১৯, ২৪৪, ১০/৮৬, আল-হুমায়দী ৮১১, ইরওয়া ২৩২৬,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০১৯))। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আয়েশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
ক্রীতদাসী যেনায় লিপ্ত হলে তাকে বেত্রাঘাত করো। সে আবার যেনায় লিপ্ত হলে আবার তাকে
বেত্রাঘাত করো, আবার যেনায় লিপ্ত হলে আবারও তাকে বেত্রাঘাত করো, আবার যেনায় লিপ্ত হলে
আবারও তাকে বেত্রাঘাত করো। অতঃপর একটি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে দাও। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬৬, আহমাদ ২৩৮৪০, সহীহাহ ২৯২১, সহীহ আল-জামি
সগীর ৫২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দাসী গর্ভবতী হলে দন্ড প্রয়োগ করার বিধান
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে লোক সকল!
তোমরা তোমাদের গোলাম-বাঁদীদের ওপর দণ্ড কার্যকর কর, বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক। একদিন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক বাঁদী যিনা করেছিল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে তার ওপর দণ্ড প্রয়োগের নির্দেশ করলেন। অতঃপর যখন আমি জানতে
পারলাম, দাসীটি সদ্য প্রসূতি। তখন আমার সংশয় হলো, যদি আমি তাকে চাবুক মারি তাহলে আমার
দ্বারাই তার মৃত্যু হবে। সুতরাং আমি বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
জানালে তিনি বললেন, তুমি উত্তমই করেছ। (মুসলিম)
আবূ দাঊদ-এর এক বর্ণনাতে আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তার নিফাসের রক্তস্রাব বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তুমি তাকে ছেড়ে
দাও, তারপর তার ওপর ’’হাদ্দ’’ কার্যকর কর। আর তোমরা তোমাদের গোলাম-বাঁদীদের ওপর ’’হাদ্দ’
প্রয়োগ কর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৬৪, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৩৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৪১,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৭৩, আহমাদ ১৩৪১, ইরওয়া (৭/৩৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
দাসের প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ আরোপকারীর বিধান
(ক) আবু
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে কেউ আপন ক্রীতদাসের প্রতি অপবাদ আরোপ করল – অথচ সে তা থেকে পবিত্র
যা সে বলেছে- ক্বিয়ামাত দিবসে তাকে কশাঘাত করা হবে। তবে যদি এমনই হয় যেমন সে বলেছে
(সে ক্ষেত্রে কশাঘাত করা হবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৬৮৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৬০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত ১৯৪৭,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৬৫, আহমাদ ৯২৮৩, ১০১১০, বুলগুলমারাম ১২২৭, আধুনিক প্রকাশনী-
৬৩৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৯৪। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ) ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘‘যে ব্যক্তি নিজ গোলামকে এমন অপরাধের সাজা দেয়, যা সে করেনি অথবা তাকে চড় মারে, তাহলে
তার প্রায়শ্চিত্ত হল, সে তাকে মুক্ত ক‘রে দেবে। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪১৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৬১৬৮, আহমাদ ৪৭৬৯, ৫০৩১, ৫২৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
কোনো মানুষ পশুর সাথে কু-কর্মে
লিপ্ত হলে তার শাস্তি
কোন পশুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া হারাম ও কবীরা
গুনাহ্। আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
আল্লাহ্’র লা’নত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন পশুর
সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। (আহমাদ ১/২১৭; আবূ ইয়া’লা ২৫২১;
ইব্নু হিববান ৪৪১৭ ’হাকিম ৪/৩৫৬; ত্বাবারানী/কাবীর ১১৫৪৬ বায়হাক্বী ৮/২৩১)।
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো জন্তু-জানোয়ারের
সাথে অপকর্ম করল, তাকে হত্যা করে দাও এবং তার সাথে ঐ জানোয়ারটিকেও হত্যা করে ফেল। ইবনু
’আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, জানোয়ারটি কেন হত্যাযোগ্য? তিনি বললেন, এ ব্যাপারে
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছুই শুনিনি। তবে আমি মনে করি
যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানোয়ারটির গোশ্ত/গোশত খাওয়া বা কোনভাবে
তাত্থেকে উপকৃত হওয়াকে অপছন্দ করেন। যেহেতু জানোয়ারটির সাথে অপকর্ম হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৬, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬৪, সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৬৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৫, ৮/৩৩০, দারাকুতনী ৩/১২৭,
ইরওয়া ২৩৪৮, ২৩৫২, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৯৯, যইফ আল-জামি ৫৮৭৮, সহীহ আল জামি ৫৯৩৮, সহীহ
আত্ তারগীব ২৪২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব কুকর্মকারীকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে
অথবা আধুনিক যুগে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কিংবা ফায়ার করে হত্যা করতে হবে। তবে একাজ
রাষ্ট্র ছাড়া সাধারণ জনগণ করবে না।
পায়ুকাম বা সমকামিতা
সমকামিতা অত্যন্ত ঘৃণ্য পাপ এবং কবীরা গুনাহ।
এই পাপের কারণেই বর্তমান পৃথিবীতে এইড্স-এর মত মরণ ব্যধি ছড়িয়ে পড়েছে। কারোর ব্যাপারে
সমকাম প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে ও তার সমকামী সঙ্গীকে শাস্তি স্বরূপ হত্যা করতে হয়। এ
অপরাধের কারণে বিগত যুগে আল্লাহ তা‘আলা কওমে লূতকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন । আল্লাহ তায়ালা
বলেন,
“আর আমি লূতকেও পাঠিয়েছিলাম। তিনি তার সম্প্রদায়কে
বলেছিলেন, “তোমরা কি এমন খারাপ কাজ করে যাচ্ছ যা তোমাদের আগে সৃষ্টিকুলের কেউ করেনি?
তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারীদের ছেড়ে পুরুষের কাছে যাও, বরং তোমরা সীমালংঘনকারী
সম্প্রদায়। উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, এদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে বহিস্কার কর,
এরা তো এমন লোক যারা অতি পবিত্র হতে চায়। অতঃপর আমরা তাকে ও তার পরিজনদের সবাইকে উদ্ধার
করেছিলাম, তার স্ত্রী ছাড়া, সে ছিল পিছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত। আর আমরা তাদের
উপর ভীষণভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম। কাজেই দেখুন, অপরাধীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছিল”।
(সুরা আরাফ ৮০-৮৪)।
আল্লাহ তাঁদেরকে এই কুকাজের শাস্তি স্বরূপ
তাঁদের ঘর বাড়ী উল্টে দিয়েছিলেন এবং আকাশ থেকে তাঁদের উপর বর্ষণ করেছিলেন পাথর।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
“আপনার জীবন, নিশ্চয় তারা তাদের নেশায় বিভ্রান্ত
হয়ে ঘুরছিল। অতঃপর সূর্যোদয়ের সময় প্রকাণ্ড চীৎকার তাদেরকে পাকড়াও করল; তাতে আমরা
জনপদকে উল্টিয়ে উপর-নীচ করে দিলাম এবং তাদের উপর পোড়ামাটির পাথর-কংকর বর্ষণ করলা।
নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণ-শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। আর নিশ্চয় তা
লোক চলাচলের পথের পাশেই বিদ্যমান”। (হিজর ১৫/৭২-৭৬)।
ইসলামি আইনে সমকামীর শাস্তি
(পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড কার্যকর
করা)
(ক) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ তোমরা কাউকে লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত পেলে তাকে এবং যার সাথে তা করা হয়
তাকে হত্যা করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৬১, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১৪৫৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৬২,মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৫,
বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৩২, ইরওয়া ২৩৫০, সহীহ আল জামি ৬৫৮৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৪২২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি
সম্পর্কে বলেনঃ তোমরা উপরের এবং নিচের ব্যক্তিকে অর্থাৎ উভয়কে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করো।
(সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১৪৫৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৩২, ইরওয়া ৬/১৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) জাবির
ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আমি আমার উম্মাতের ব্যাপারে লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার সর্বাধিক
আশঙ্কা করি। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬৩, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১৪৫৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৭, বায়হাকী ফিস সুনান ২/২১৫, ৬/১০৬।
আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৯৭, ১৯৮, আহমাদ ১৫০৯৩, সহীহ আল জামি ১৫৫২, সহীহ আত্ তারগীব ২৪১৭)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
সুতরাং উক্ত সম্প্রদায়ের মতো কুকর্মে যে লিপ্ত
হবে সেও উপর্যুক্ত শাস্তির উপযুক্ত। তাই এমন দুরাচার প্রসঙ্গে কিছু সাহাবা (রাঃ) এর
ফতোয়া হলো, তাকে জ্বালিয়ে মারা হবে। কেউ কেউ বলেন, উঁচু জায়গা থেকে ধাক্কা দিয়ে নীচে
ফেলে তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হবে। (ইবনে জিবরীন ৬২৬)।
রযীন-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, ইবনু ’আব্বাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত, ’আলী (রাঃ) এরূপ অপকর্মে (সমকামিতায়) লিপ্ত উভয়কে (যে করে এবং যাকে
করে) জ্বালিয়ে দিয়েছেন এবং আবূ বকর উভয়ের উপর দেয়াল চাপা দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৮৪)।
সমকামিদের উপর আল্লাহর লানত ও কিয়ামতে আল্লাহ তাদের দিকে তাকাবেন না
(ক) ইবনু
’আব্বাস ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের ন্যায় অপকর্মে লিপ্ত হয়, তার ওপর আল্লাহর
লা’নাত (অভিশাপ)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৮৩, সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) ইবনু
’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, যে কোনো পুরুষ
বা নারীর গুহ্যদারে সঙ্গম করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৫৮, তিরমিযী ১১৬৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১৬৮০৩, সহীহ আত্ তারগীব ২৪২৪, সহীহ আল জামি ৭৮০১)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
স্ত্রীর পায়ুপথে সংগম করার শাস্তি
স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস কবিরা গুনাহ। কেননা,
এটা হারাম হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট দলিল আছে। এমনকি ইমাম তাহাবি রহ বলেন, এর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত হাদিসগুলো মুতাওয়াতির
(বর্ণনা-পরম্পরার প্রতিটি স্তরেই রয়েছে বৃহৎ জনসংখ্যা।) (শরহু
মাআনিল আসার ৩/৪৩)।
যেমন,
(এক)
(ক) আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ
বলেছেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ কোনো ব্যক্তি গণকের নিকট গেলে (বর্ণনাকারী মূসা তার হাদীসে বলেন) এবং তার কথা
বিশ্বাস করলে অথবা স্ত্রীর সাথে (মুসাদ্দাদের বর্ণনায় রয়েছে) ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস
করলে অথবা স্ত্রীর সাথে পশ্চাৎ দ্বারে সহবাস করলে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে, সে তা থেকে দায়মুক্ত (অর্থাৎ ইসলামের গন্ডির বাইরে)।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
(খ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে লোক কোন পুরুষ বা স্ত্রীলোকের মলদ্বারে সংগম করে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ
তা’আলা তার দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। (সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৬৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৫)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(গ)
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে গুহ্যদ্বারে সঙ্গম করে সে অভিশপ্ত।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৬২)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(ঘ)
খুযাইমা ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না। কথাটি তিনি তিনবার বলেন।
(অতঃপর বলেন) তোমরা মহিলাদের মলদ্বারে সঙ্গম করো না। (সুনান
ইবনু মাজাহ ১৯২৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯২, আহমাদ ২১৩৪৩, ২১৩৬৭, দারেমী ১১৪৪,
ইরওয়াহ ২০০৫, আদাবুয যিফাফ ২৯)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ)
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
‘‘সেটি হচ্ছে ছোট সমকাম। অর্থাৎ পুরুষ নিজ
স্ত্রীর মলদ্বার ব্যবহার করা’’। (আহমাদ ৬৭০৬, ৬৯৬৭, ৬৯৬৮;
বায়হাক্বী ১৩৯০০)।
(দুই) উল্লেখ্য, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের দেহ থেকে
সব উপায়ে সুখ নেয়ার অনুমতি ইসলামে আছে। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের স্ত্রীগণ
তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ; অতএব তোমরা যেভাবেই ইচ্ছা তোমাদের ক্ষেতে গমণ কর। (সূরা বাকারা ২২৩)।
তবে যে উপায়ে সুখ নেয়া হারাম হওয়ার ব্যাপারে
স্পষ্ট দলিল আছে, তা পরিহার করতে হবে। যেমন, মলদ্বারে সহবাস এবং ঋতুবতী ও প্রসব পরবর্তী
সময়ে নির্গত রক্তস্রাব অবস্থায় সহবাস।
মুজাহিদ রহ. আয়াতের তফসিরে বলেন, দাঁড়ানো ও
বসা অবস্থায়, সামনের দিক থেকে এবং পিছনের দিক থেকে (সঙ্গম করতে পারো, তবে তা হতে হবে)
স্ত্রীর যোনিপথে।’ (দুররে মানছুর ১/২৬৫ তাফসীর তাবারী
২/৩৮৭-৩৮৮ মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ৪/২৩২)।
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, কুতায়বাহ ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ
ও আমর আন্ নাকিদ (রহিমাহুমুল্লাহ)....জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, স্বামী ইচ্ছে করলে
উপুড় করে, ইচ্ছা করলে উপুড় না করে তবে একই দ্বারে (যোনিপথে) হতে হবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৪২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৩৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দন্ডবিধি সংক্রান্ত কিছু কথা
কাউকে লুক্কায়িতভাবে ব্যভিচার কিংবা যে কোন
হারাম কাজ করতে দেখলে তা তড়িঘড়ি বিচারককে না জানিয়ে তাকে ব্যক্তিগতভাবে নসীহত করা ও
পরকালে আল্লাহ্ তা‘আলার কঠিন শাস্তির ভয় দেখানো উচিত।
(ক) আবু
হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে লোক কোন মু’মিন ব্যক্তির দুনিয়াবী অসুবিধাগুলোর কোন একটি অসুবিধা দূর করে
দেয়, তার পরকালের অসুবিধাগুলোর মধ্যে একটি অসুবিধা আল্লাহ তা’আলা দূর করে দিবেন। কোন
মুসলিম ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি যে লোক গোপন রাখে, তার দোষ-ত্রুটি আল্লাহ তা’আলা দুনিয়া
ও আখিরাতে গোপন রাখেন। যে পর্যন্ত বান্দাহ তার ভাইকে সাহায্য করতে থাকে সে পর্যন্ত
আল্লাহ তা’আলাও তাকে সাহায্য করতে থাকেন। (সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫; সুনান ইবনু মাজাহ ২২৫, ২৫৪৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৭৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৫৫, ৩৬৪৩,
৪৯৪৬; আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ৮১১৭, ১০১১৮, ১০২৯৮; দারিমী ৩৪৪, সহীহ্ তারগীব ১/৩১/৬৭, সহীহাহ
২৩৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬০৮, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬১)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি
তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন (অপরাধের) বিষয় গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার গুপ্ত
(অপরাধের) বিষয় গোপন রাখবেন। আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন বিষয় ফাঁস করে দিবে,
আল্লাহ তার গোপন বিষয় ফাঁস করে দিবেন, এমনকি এই কারণে তাকে তার ঘরে পর্যন্ত অপদস্থ
করবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪৬, আত-তালীকুর রাগীব৩/১৭৬,
সহীহাহ ২৩৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দন্ডবিধি প্রয়োগের সময় চেহারার প্রতি লক্ষ্য রাখা
কারোর উপর শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোনো দন্ডবিধি
প্রয়োগ করার সময় তার চেহারার প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে
ক্ষত-বিক্ষত না হয়ে যায়।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ প্রহার করার সময় যেন মুখমন্ডল থেকে বিরত থাকে।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৯৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৫৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪১৩, ইসলামিক সেন্টার
৬৪৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যে কোনো দন্ডবিধি মসজিদে প্রয়োগ না করা
(ক)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
মসজিদের ভিতর হদ কার্যকর করা যাবে না এবং ছেলেকে খুনের দায়ে বাবাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানকরা
যাবে না। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪০১, সুনান ইবনু
মাজাহ ২৫৯৯, ২৬৬১, দারেমী ২৩৫৭, ইরওয়া ৭/২৭১, ২৩২৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ)
হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মসজিদের ভিতরে কিসাস গ্রহণ করতে, কবিতা আবৃত্তি করতে এবং হাদ্দ কার্যকর
করতে নিষেধ করেছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৯০)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
দুনিয়াতে কারোর উপর শরীয়তের কোনো দন্ডবিধি
কায়েম করা হলে তা তার জন্য কাফ্ফারা হয়ে যায় তথা তার অপরাধটি ক্ষমা করে দেয়া হয়। পরকালে
এ জন্য তাকে কোনো শাস্তি দেয়া হবে না।
উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি
বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে কোন এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলাম।
তিনি বললেনঃ তোমরা এই কথার উপর আমার নিকট বাই’আত করঃ আল্লাহ্ তা’আলার সাথে তোমরা কোন
অংশীদার স্থাপন করবে না, চুরি করবে না এবং যিনা-ব্যভিচার করবে না। তারপর তিনি বাই’আত
বিষয়ক পূর্ণ আয়াত তাদেরকে তিলাওয়াত করে শুনালেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের যে লোক
এই বাই’আত পূর্ণ করবে, আল্লাহ্ তা’আলার নিকট রয়েছে তার জন্য তার পুরস্কার। আর কোন
মানুষ এর কোন একটি অপরাধে জড়িয়ে পড়লে এবং এর জন্য তাকে শাস্তিও প্রদান করা হলে তাতে
তার গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। আর কোন মানুষ এর কোন একটি অপকর্ম করে বসলে এবং আল্লাহ
তা’আলা সেটাকে লোকচক্ষুর আড়ালে রেখে দিলে তার প্রসঙ্গটি আল্লাহ তা’আলার উপর ন্যস্ত।
তাকে আল্লাহ তা’আলা চাইলে শাস্তিও দিতে পারেন আবার মাফও করে দিতে পারেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৯, ইরওয়া ২৩৩৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
যিনাকারীর পরকালীন শাস্তি
আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ)...আবূ হুরাইরাহ
(রাযিঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির
সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা কথা বললেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না।
রাবী আবূ মু’আবিয়াহ বলেন, তাদের প্রতি তাকাবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
(এরা হলো)
(ক)
ব্যভিচারী বুড়ো,
(খ)
মিথ্যাবাদী শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান ও
(গ) অহঙ্কার
দরিদ্র ব্যক্তি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ১৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১৯৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ২০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
সামুরাহ ইবনু জুনদাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল
সাঃ বলেন,
যিনারাকীরা উলংগ অবস্থায় এমন এক চুলার মধ্যে
থাকবে যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সংকীর্ণ আর নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত উহার তলদেশে অগ্নি
প্রজ্বলিত থাকবে তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝে মধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার
কাছাকাছি অবস্থায় পৌছে যাবে; অত:পর আগুন যখন স্তমিত হয়ে যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে
যাবে। আর তাদের সাথে এই আচারণ কেয়ামত পর্যন্ত করা হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৭০৪৭, ৮৪৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৭৫,
আহমাদ ২০১১৫, আধুনিক প্রকাশনী ৬৫৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahi।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা
ব্যভিচার পরিত্যাগ করো। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি
আখেরাতে প্রকাশ পাবে।
যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,
(ক) তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে,
(খ) তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং
(গ) তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।
আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা
হচ্ছে,
(ক) সে
আল্লাহর অসন্তোষ,
(খ) কঠিন
হিসাব ও
(গ) জাহান্নামের
শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)
আবু ওমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
বলতে শুনেছি, ‘আমি একদা ঘুমিয়ে ছিলাম আমার পাশে দু’জন লোক আসল, তারা আমার বাহু ধরে
নিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ দেখি আমি কিছু লোকের পাশে যারা খুব ফুলে আছে তাদের গন্ধ এতবেশী
যেন মনে হচ্ছে ভাগাড়। আমি বললাম এরা কারা? নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, এরা ব্যাভিচারী-ব্যাভিচারিণী। (আত-তারগীব ৩৪২৪)।
যিনাকারীনী মহিলা যদি গর্ভবতী হয়ে যায় তাহলে সে অবস্থায় যিনাকারীর সাথে তার বিবাহের বিধান
জিনা-ব্যভিচার জঘন্য গুনাহ (কবিরা গুনাহ)।
ইসলামের দৃষ্টিতে এর শাস্তি হল, প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা যদি জেনা কারি/জেনাকারিনি
বিবাহিত হয়। ইসলামে এর চেয়ে কঠিন শাস্তি আর কিছু নেই।
অথবা ১০০ বেত্রাঘাত এবং এক বছর দেশান্তর (বর্তমানে
জেল) যদি জেনাকারী/জেনাকারীনি অবিবাহিত হয়।
কিন্তু বর্তমানে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি,
গার্মেন্টস, অফিস-আদালত সহ সর্বত্র নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশা, পর্দা হীনতা, আল্লাহর
ভয় না থাকা, ইসলামের কঠোর আইনের অনুপস্থিতি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে এই ভয়ানক অপরাধ আমাদের
সমাজে পানির মত সহজ হয়ে গেছে! যা একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক!
অত:পর কথা হলো, কথিত প্রেমের নামে দেহ ভোগের
এই ঘৃণিত অপরাধে জড়িত হওয়ার ফলশ্রুতিতে যদি মহিলাটি গর্ভবতী হয়ে যায় তাহলে উক্ত যিনাকারী
পুরুষের সাথে তার বিবাহ বন্ধন বৈধ দুটি শর্ত সাপেক্ষে। যথা:
(ক) আল্লাহর
নিকট খাঁটিভাবে তওবা করা। (ব্যভিচারী পুরুষ ও নারী উভয়কেই তওবা করে পবিত্র হতে হবে)।
(খ) গর্ভস্থ
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া।
তওবা করা এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত
মহিলাটির বিবাহ বৈধ নয়। এটি অধিকাংশ আলেমের অভিমত এবং হাদিসের আলোকেও এটি অধিক বিশুদ্ধ।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
(ক)
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আওতাস যুদ্ধের বন্দী দাসীদের সম্বন্ধে বলেছেনঃ সন্তান প্রসবের আগে গর্ভবতীর
সাথে সঙ্গম করা যাবে না। আর গর্ভবতী নয় এমন নারীর মাসিক ঋতু শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার
সাথেও সঙ্গম করা যাবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২১৫৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩৩৮, আহমাদ ১১২২৮, দারিমী ২৩৪১, ইরওয়া ১৮৭, সহীহ
আল জামি ৭৪৭৯, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/১১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) রুয়াইফি’
ইবনু সাবিত আল-আনসারী (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। হানাশ (রহ.) বলেন, একদা রুয়াইফি’ আমাদের
সাথে দাঁড়িয়ে ভাষণ প্রদানের সময় বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে যা কিছু শুনেছি তোমাদেরকে শুধু তাই বলবো। তিনি হুনাইনের দিন বলেছেনঃ যে ব্যক্তি
আল্লাহ এবং শেষ দিনের উপর ঈমান রাখে, তার জন্য বৈধ নয় অন্যের ফসলে নিজের পানি সেচন
করা। অর্থাৎ গর্ভবতী মহিলার সাথে সঙ্গম করা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ঈমান
রাখে তার জন্য বৈধ নয় কোনো বন্দী নারীর সাথে সঙ্গম করা যতক্ষণ না সে সন্তান প্রসব করে
পবিত্র হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তার জন্যও বৈধ নয় বন্টনের
পূর্বে গনীমাত বিক্রয় করা। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২১৫৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে আলেমগণ গর্ভবতী নারীর বিবাহকে হারাম বলেছেন।
যে কোনো ঈমানদার পবিত্র পুরুষের জন্য কোনো
ব্যভিচারিণী মেয়েকে বিবাহ করা হারাম। তেমনিভাবে যে কোনো ঈমানদার সতী মেয়ের জন্যও কোনো
ব্যভিচারী পুরুষকে বিবাহ করা হারাম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“একজন ব্যভিচারী পুরুষ আরেকজন ব্যভিচারিণী
অথবা মুশরিকা মেয়েকেই বিবাহ করে এবং একজন ব্যভিচারিণী মেয়েকে আরেকজন ব্যভিচারী পুরুষ
অথবা মুশরিকই বিবাহ করে। মুমিনদের জন্য তা করা হারাম”। (সূরা
আন-নূর ৩)।
তওবার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,
"বরং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের
ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং
ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি
দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস
স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে এবং দেবেন।
আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যে তওবা করে ও সৎকর্ম করে, সে ফিরে আসার স্থান আল্লাহর
দিকে ফিরে আসে।" (সূরা ফুরকান: ৭০, ৭০ ও ৭১)।
সৌদি আরবে গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল্লাহ
বিন বায রা. এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
যদিও ইমাম আবু হানিফা রাহ. সহ কোনো কোনো আলেম
গর্ভবতী অবস্থায় যিনাকারীর সাথে বিবাহকে বৈধ বলেছেন। কিন্তু অধিক নির্ভরযোগ্য অভিমত
হলো, যিনাকারী ও যিনাকারীনী উভয়কে এই অন্যায় কর্ম সম্পাদনের কারণে খাঁটি তওবা করে পবিত্র
হতে হবে। তারপর মহিলার গর্ভস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর উক্ত যিনারকারীর সাথে বিবাহ
বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে; এর আগে নয়।
সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর বিবাহ করার বিধান
যেহেতু গর্ভের সন্তানটি যিনার সন্তান এবং তা
বিবাহকারীর নিজের, সেজন্য এখানে নতুন বিবাহের প্রয়োজন নেই বলে অধিকাংশ বিদ্বান মত প্রকাশ
করেছেন। (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৭/১৩০; হাশিয়াহ ইবনু আবেদীন
৩/৪৯; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ২৯/৩৩৮)।
উল্লেখ্য যে, এই বিবাহপূর্ব সন্তান মাতার দিকে
সম্বন্ধিত হবে এবং সে পিতার সম্পদের ওয়ারিছ হবে না। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২৭৪৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২২৬৫, আহমাদ ৬৬৬০, ৭০০৬, দারেমী ৩১১১)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আমর ইবনু শু’আইব (রহ.) থেকে পর্যায়ক্রমে তার
পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের প্রথম
যুগে এরূপ ফায়সালা করতেন যে, প্রত্যেক উত্তরাধিকারী তার পিতার মৃত্যুর পর তার ওয়ারিস
হবে যাকে সে ওয়ারিস হিসাবে স্বীকার করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ ফায়সালাও
দিতেনঃ প্রত্যেক দাসীর সন্তানকে সেই পাবে, যে ঐ দাসীর মালিক হয়ে তার সাথে সহবাস করেছে
এবং সে সন্তানও ঐ ব্যক্তির সাথে সংযুক্ত হবে। ইতিপূর্বে যেসব সম্পদ বন্টন হয়ে গেছে,
এ সন্তান তা থেকে কোনো অংশ পাবে না। আর যেগুলো ইতিপূর্বে বন্টন হয়নি এ সন্তান তা থেকে
অংশ প্রাপ্ত হবে।
তবে পিতা তার জীবদ্দশায় সন্তানটিকে অস্বীকার
করলে সন্তানটি তার সাথে সংযুক্ত হবে না। আর যদি সন্তান এমন দাসী থেকে জন্ম নেয়, যে
ব্যক্তি তার মালিক নয় কিংবা এমন স্বাধীন মহিলা থেকে জন্ম নেয়, যার সাথে সে যিনা করেছে,
এমতাবস্থায় এ সন্তান ঐ ব্যক্তির সাথে সংযুক্ত হবে না এবং এ সন্তান তার উত্তরাধিকারীও
হবে না, যদিও সে ব্যক্তি দাবী করে। আর যাকে তার সাথে সংযুক্ত করা হয়, আর সেও সম্পর্কিত
হয়, সে জারজ সন্তান, চাই সে দাসী কিংবা স্বাধীন নারীর গর্ভে জন্ম গ্রহণ করুক না কেন।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২২৬৫, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৪৬,
আহমাদ ৬৬৬০, ৭০০৬, দারেমী ৩১১১। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
যিনা/ব্যভিচারে লিপ্ত নারী-পুরুষের তওবার বিধান
নিঃসন্দেহে যেনা কাবীরা গুনাহ। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন, “তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট অভ্যাস”। (সূরা
বানী ইসরাঈল: ৩২)।
কোন ব্যক্তি মুমিন থাকাবস্থায় যেনা করে না।
কারণ সে সময় তার থেকে ঈমানের নূরকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৯৬, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৩১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইসলামী শরীআতে যেনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই
অবিবাহিত কোন পুরুষ যদি ব্যভিচার করে, তাহলে তাকে একশ বেত্রাঘাত করা হবে এবং এক বছরের
জন্য এলাকা থেকে বিতাড়িত করতে হবে। (সূরা আন-নূর: ২; সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯০: সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৪৪১৫; সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৬৭, ইসলামিক সেন্টার
৪২৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আর বিবাহিত নারী-পুরুষ যেনায় লিপ্ত হলে তাকে
রজম করতে হবে তথা পাথর দিয়ে মেরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৭০-৫২৭১, ৬৮২৫; সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৩১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৭১, ইসলামিক
সেন্টার ৪২৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এতদ্ব্যতীত ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুনের
লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৭০৪৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৭৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আর ধর্ষণের শাস্তি সাথে সাথে মৃত্যুদণ্ড দেয়া।
(সূরা আল-মায়েদাহ ৩৩)।
এমতাবস্থায় কর্তব্য হলো, দ্রুত উত্তম তওবাহ
করা। আর তা হচ্ছে, এ জন্য লজ্জিত হওয়া, অনুতপ্ত হওয়া এবং এই জঘন্যকর্ম পরিত্যাগ করা।
আর ভবিষ্যতে কখনো এ ধরনের হারাম কর্মে জড়িত না হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। যে ব্যক্তি
স্বচ্ছ ও পবিত্র অন্তরে একনিষ্ঠ ও একাগ্রতার সাথে খালেছ তওবা করে আল্লাহ তাঁর তওবা
কবুল করেন।
খাঁটিভাবে তওবা করার একটি ঘটনা
আবূ নুজাইদ ‘ইমরান ইবনুল হুসাইন আল খুযা‘ঈ
(রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুহায়নাহ্ গোত্রের এক নারী আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর নিকট
হাজির হল। সে যিনার কারণে গর্ভবতী ছিল। সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি দন্ডনীয় অপরাধ
করে ফেলেছি তাই আপনি আমাকে শাস্তি দিন!’ আল্লাহর নাবী (সা.) তার আত্মীয়কে ডেকে বললেন,
‘‘তুমি একে নিজের কাছে যত্ন সহকারে রাখ এবং সন্তান প্রসবের পর একে আমার নিকট নিয়ে এসো।’’
সুতরাং সে তাই করল (অর্থাৎ প্রসবের পর তাকে রাসূল (সা.)-এর কাছে নিয়ে এল)।
আল্লাহর নাবী (সা.) তার কাপড় তার (শরীরের)
উপর মজবুত করে বেঁধে দেয়ার আদেশ দিলেন। অতঃপর তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার আদেশ দিলেন।
অতঃপর তিনি তার জানাযার সলাত আদায় করলেন। ‘উমার তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি
এই মহিলার জানাযার সলাত আদায় করলেন, অথচ সে ব্যভিচার করেছিল?’ তিনি বললেন, ‘‘(‘উমার!
তুমি জান না যে,) এই মহিলাটি এমন বিশুদ্ধ তাওবাহ্ করেছে, যদি তা মদীনার ৭০ জন লোকের
মধ্যে বণ্টন করা হত তাহলে তা তাদের সকলের জন্য যথেষ্ট হত। এর চেয়ে কি তুমি কোন উত্তম
কাজ পেয়েছ যে, সে আল্লাহর জন্য নিজের প্রাণকে কুরবান করে দিল?’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯৬,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৮৪, ইসলামিক সেন্টার ৪২৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ তাআলা বলেন, “(হে নবী!) আপনি বলুন,
হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো
না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। (সূরা আয-যুমার ৫৩; সূরা আল-ফুরক্বান: ৬৮-৭০; ইবনু বায, মাজমূঊ
ফাতাওয়া, ৯ম খণ্ড, পৃ. ৩৬৪; ইসলাম সুওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-২৭১১৩, ২৩৪৮৫)।
এখানে মূল কথা হলো, যিনা/ব্যভিচার বা ধর্ষণ
করলে তা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে ইসলামি বিধান মোতাবেক দুনিয়ায় তার দন্ড কার্যকর করতে
হবে। সে যদি দুনিয়ায় বেঁচে থাকতেই খালেসভাবে তওবা করে তাহলে পরকালের শাস্তি থেকে রেহাই
পেতে পারে। নতুবা আগুনে পুড়ে মরতে হবে। যে শাস্তির শেষ নেই।
আর যদি যিনা/ব্যভিচারের বিষয়টি গোপন থাকে তাহলে
এই পথ থেকে সরে আসতে হবে এবং নিভৃতে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর নিকট বারংবার তওবা করতে
হবে ও এর সাথে সৎকর্ম চালিয়ে যেতে হবে।
কিন্তু আমাদের মুসলিম সমাজে এখন হচ্ছেটা কী?
গ্রাম-গঞ্জ, শহর বন্দর, হোটেল-মোটেলসহ এমন কোনো জায়গা নেই যে, সেখানে ব্যবিচার হচ্ছে
না। আর আমাদের সম্মানিত অভিভাবকগণ চেয়ে চেয়ে তাদের ছেলে মেয়েদের এসব অপকর্ম দেখছে ও
সায় দিয়ে যাচ্ছে।
নারী হাত স্পর্শ করা হারাম
তদ্রূপ বেগানা নারীর সাথে মুসাফাহা বৈধ নয়।
হাতে মোজা, দস্তানা বা কাপড়ের কভার রেখেও নয়। কাম মনে হলে তা হবে হাতের ব্যভিচার।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো
স্ত্রী ছাড়া আর কোনো মহিলার হাত স্পর্শ করেননি।
“আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ ঈমানদার নারীদের মধ্যে
যারা আয়াতে উল্লেখিত) শর্তাবলী মেনে নিত, তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হত। তাই যখনই তারা
এ সম্পর্কে মুখে স্বীকারোক্তি করত তখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাদেরকে বলতেন যাও, আমি তোমাদের বাই’আত গ্রহণ করেছি। আল্লাহর কসম! কথার দ্বারা বাই’আত
গ্রহণ ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত কখনো কোন নারীর হাত
স্পর্শ করেনি। আল্লাহর কসম! তিনি কেবল সেসব বিষয়েই বাই’আত গ্রহণ করতেন, যে সব বিষয়ে
বাই’আত গ্রহণ করার জন্য আল্লাহ তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাই’আত গ্রহণ শেষে তিনি বলতেনঃ
আমি কথা দ্বারা তোমাদের বাই’আত গ্রহণ করলাম”। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন ৫২৮৮, ২৭১৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৭২৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৬৬, আহমাদ ২৬৩৮৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯০০, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন- ৪৭৯৫) । হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahi।
নারীর করতল চেপে ধরা এবং সুড়সুড়ি দেওয়াও হলো
তার ইঙ্গিত! কোনো গম্য নারীর দেহ স্পর্শ, বাসে-ট্রেনে, হাটে-বাজারে, স্কুলে-কলেজে প্রভৃতি
ক্ষেত্রে গায়ে গা লাগিয়ে চলা বা বসা, নারী-পুরুষের ম্যাচ খেলা ও দেখা প্রভৃতি ইসলামে
হারাম। কারণ, এ সবগুলিও অবৈধ যৌনাচারের সহায়ক। এগুলো মানুষের হাত পা ও চোখের ব্যভিচার।
সমাজ সংস্কারক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ্
(রাযিঃ) এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আদম
সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে অংশ লিখিত রয়েছে তা অবশ্যই সে, প্রাপ্ত হবে। নিঃসন্দেহে
দু’চোখের ব্যভিচার হলো তাকানো, দু’কানের ব্যভিচার হলো শোনা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো কথোপকথন
করা, হাতের ব্যভিচার হলো শক্ত করে ধরা, পায়ের ব্যভিচার হলো হেঁটে যাওয়া, হৃদয়ের
ব্যভিচার হচ্ছে কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে বা মিথ্যা সাব্যস্ত
করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৬৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৫৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
“কোন ব্যক্তির মাথায় লৌহ সুচ দ্বারা খোঁচা
যাওয়া ভালো, তবুও যে নারী তার জন্য অবৈধ তাকে স্পর্শ করা ভালো নয়”। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ, আলবানী: ২২৬)।
মহিলার দিকে তাকানো থেকে বিরত থাকা
পর পুরুষের দৃষ্টিতে মহিলার সর্বশরীর লজ্জাস্থান।
বিশেষ করে চক্ষু এমন এক অঙ্গ যার দ্বারা বিপত্তির সূচনা হয়। চোখাচোখি থেকে শুরু হয়,
কিন্তু শেষ হয় গলাগলিতে। এই ছোট্ট অঙ্গার টুকরা থেকেই সূত্রপাত হয় সর্বগ্রাসী বড় অগ্নিকান্ডের
মহা বিপদ।
সুতরাং এ দৃষ্টি বড় সাংঘাতিক বিপত্তি। যার
জন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে
(নজর ঝুকিয়ে চলে) এবং তাদের যৌনাঙ্গকে হেফাযতে রাখে; এটিই তাদের জন্য উত্তম। ওরা যা
করে, আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারাও যেন নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত
রাখে ও লজ্জাস্থান সংরক্ষন করে---।” প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“(কোন নারীর উপর তোমার দৃষ্টি পড়লে তার প্রতি) বারবার দৃকপাত করো না। বরং নজর সত্বর
ফিরিয়ে নিও, কারণ, তোমার জন্য প্রথমবার ক্ষমা, দ্বিতীয়বার নয়”। (আহমদ ১৩৬৯)।
যেহেতু “চক্ষুও ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার
হল (কাম) দৃষ্টি।”
সুতরাং, এ দৃষ্টিকে ছবি থেকেও সংযত করতে হবে
এবং পরপুরুষ থেকে আড়ালে রাখতে হবে। যাতে একহাতে তালি নিশ্চয়ই বাজবে না। আর এই বড় বিপদ
সৃষ্টিকারী অঙ্গ চোখটি থাকে চেহারায়। চোখাচোখি যাতে না হয় তাই তো নারীর জন্য জরুরী
তার চেহারাকেও গোপন করা।
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘কোন পুরুষ অন্য পুরুষের গুপ্তাঙ্গের দিকে যেন না তাকায়। কোন নারী অন্য নারীর
গুপ্তস্থানের দিকে যেন না তাকায়। কোন পুরুষ অন্য পুরুষের সঙ্গে একই কাপড়ে যেন (উলঙ্গ)
শয়ন না করে। (অনুরূপভাবে) কোন নারী, অন্য নারীর সাথে একই কাপড়ে যেন (উলঙ্গ) শয়ন না
করে। (রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৬৩৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৬২৭, মুসলিম ৩৩৮, আহমাদ ১১২০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইসলামের সুসভ্য দৃষ্টিতে নারীর পর্দা ও সভ্য লেবাসের কয়েকটি শর্ত
(ক) মুসলিম
মহিলা যে পোশাক ব্যবহার করবে তাতে যেন পর্দা পাওয়া যায়; অর্থাৎ সেই পোশাক যেন তার সারা
দেহকে আবৃত করে। সুতরাং, যে লেবাসে নারীর কেশদাম, গ্রীবা, বক্ষদেশ, উদর ও পৃষ্ঠদেশ
(যেমন, শাড়ি ও খাটো ব্লাউজে) এবং হাঁটু ও জাং (যেমন, স্ক্যাট, ঘাগরা, ফ্রক ইত্যাদিতে)
প্রকাশিত থাকে তা (গম্য পুরুষদের সামনে) পরিধান করা হারাম।
(খ)
এই লেবাস যেন সৌন্দর্যময় ও দৃষ্টি-আকর্ষণকারী না হয়। সুতরাং, কামদার (এমব্রয়ডারি করা)
চকচকে রঙিন বোরকাও পরা বৈধ নয়।
(গ)
এমন পাতলা যেন না হয় যাতে ভিতরের চামড়ার রঙ নজরে আসে। অতএব পাতলা শাড়ি, উড়না প্রভৃতি
মুসলিম মহিলার ড্রেস নয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“দুই
শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামের অধিবাসী; যাদেরকে আমি দেখিনি। (তারা ভবিষ্যতে আসবে।) প্রথম
শ্রেণী (অত্যাচারীর দল) যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক, যদ্দারা তারা লোককে
প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় শ্রেণী হল সেই নারীদল; যারা কাপড় তো পরিধান করবে, কিন্তু তারা
বস্তুত: উলঙ্গ থাকবে, যারা পুরুষদের আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে,
যাদের মস্তক (খোপা বাঁধার কারণে) উটের হিলে যাওয়া কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ
করবে না, তার গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া
যাবে।”
(ঘ) এমন
টাইটফিট বা আঁট-সাঁট যেন না হয়; যাতে দেহাঙ্গের উচ্চতা ও নীচতা এবং আকার ও আকৃতি কাপড়ের
উপরেও বুঝা যায়। তাই এমন চুস্ত ও ফ্যাশনের লেবাস মুসলিম নারী পরিধান করতে পারে না,
যাতে তার সুডৌল স্তন-যুগল, সুউচ্চ নিতম্ব সরু কোমর প্রভৃতির আকার প্রকাশ পায়।
টাইটফিট ইত্যাদি লেবাস যে বড় ফিতনাসৃষ্টিকারী
ও হারাম তা বিভিন্ন লেডিস অন্তর্বাস কোম্পানীর নামই সাক্ষ্য দেয়।
(ঙ)
এই লেবাস যেন পুরুষদের পোষাকের অনুরূপ না হয়। সুতরাং প্যান্ট, শার্ট প্রভৃতি পুরুষদের
মত পোশাক কোনো মুসলিম মহিলা ব্যবহার করতে পারে না। যেহেতু পুরুষদের বেশধারিণী নারীদের
উপর আল্লাহর অভিশাপ থাকে, তাই কোনো পুরুষের জন্য পুরুষের বেশ ধারণ করা উচিত নয়। রাসূল
সা. বলেন,
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন নারীর বেশধারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশধারিণী
নারীদেরকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৫৮৮৫, ৫৮৮৬, ৬৮৩৪, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৭৮৪, ২৭৮৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৯৭, ৪৯৩০, আহমাদ ১৯৮৩, ২০০৮,
২১২৪, ৩৪৪৮, দারেমী ২৬৪৯, রওয ৪৪৭, আল-আদাব ৪৪৭, হিজাবুল মারআহ ৬৭)।হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(চ) তদ্রূপ
তা যেন কাফের মহিলাদের অনুরূপ না হয়। অবশ্য ঢিলে ম্যাক্সি ও শেলোয়ার কামীস এবং তার
উপর চাদর বা উড়না; যা মাথার কেশ, বক্ষস্থল ইত্যাদি আচ্ছাদিত করে তা মুসলিম নারীর লেবাস।
কেবলমাত্র শেলোয়ার কামীস বা ম্যাক্সি অথবা তার উপর বক্ষে ও গ্রীবায় থাক বা ভাঁজ করা
উড়নার লেবাস কাফের মহিলাদের। অনুরূপ শাড়ি যদি সর্বশরীরকে ঢেকে নেয় তবে মুসলিমদের; নচেৎ
থাক করে বুকে চাপানো থাকলে তথা কেশদাম ও পেট-পিঠ প্রকাশ করে রাখলে তা অমুসলিম মহিলাদের
লেবাস। আর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করবে, সে সেই
জাতির দলভুক্ত”। (আহমদ, হাদিস: ৫১১৪)।
(ছ) এই পোশাক যেন জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ তথা প্রসিদ্ধি
জনক না হয়।
(জ) লেবাস
যেন সুগন্ধিত বা সুরভিত না হয়। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, যে নারী সুগন্ধি ছড়িয়ে লোকালয়ে
যায়, সে বেশ্যা নারী। প্রকাশ যে, নারীদেহে যৌবনের চিহ্ন দেখা দেওয়া মাত্রই এই শর্তের
পোশাক পরা ওয়াজেব।
নারীদের কোন্ কোন্ অঙ্গ দেখানো যাবে
স্বামী-স্ত্রীর
মাঝে কোনো পর্দা নেই উভয়েই এক অপরের পোশাক।
উভয়েই উভয়ের সর্বাঙ্গ দেখতে পারে। তবে সর্বদা
নগ্ন পোশাকে থাকা উচিত নয়।
মা-বেটার মাঝে পর্দা ও গোপনীয় কেবল নাভি হতে
হাঁটু পর্যন্ত। অন্যান্য নিকটাত্মীয়; যাদের সাথে চিরকালের জন্য বিবাহ হারাম তাদের সামনে
পর্দা ও গোপনীয় অঙ্গ হল গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত।
অবশ্য কোনো চরিত্রহীন এগানা পুরুষের কথায় বা
ভাবভঙ্গিতে অশ্লীলতা ও কামভাব বুঝলে, মহিলা তার নিকটেও যথা সম্ভব অন্যান্য অঙ্গও পর্দা
করবে।
মহিলার সামনে মহিলার পর্দা নাভি থেকে হাঁটু
পর্যন্ত। মহিলা কাফের হলে তার সামনে হাত ও চেহারা ছাড়া অন্যান্য অঙ্গ খোলা বৈধ নয়।
যেমন, কোনো নোংরা ব্যভিচারিণী মেয়ের সামনেও নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করা উচিত নয়। অনুরূপ
এমন কোনো মহিলার সামনেও দেহসৌষ্ঠব খোলা নিষিদ্ধ; যে তার কোনো বন্ধু বা স্বামীর নিকট
অন্য মহিলার রূপচর্চা করে বলে জানা যায় বা আশঙ্কা হয়। এমন মহিলার সাথে মুসলিম মহিলার
সখীত্ব বা বন্ধুত্বও বৈধ নয়।
মা-বাপের চাচা ও মামা, মেয়ের চাচা ও মামা মাহরাম।
সুতরাং চাচাতো দাদো বা নানার সামনে পর্দা গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত।
তালাকের পর ইদ্দত পার হয়ে গেলে ঐ স্বামী এই
স্ত্রীর জন্য বেগানা হয়ে যায়। সুতরাং তার নিকটে পর্দা ওয়াজেব।
পালিত পুত্র থেকে পালয়িত্রী মায়ের এবং পালয়িতা
বাপ থেকে পালিতা কন্যার পর্দা ওয়াজেব। প্রকাশ যে, ইসলামে এ ধরনের প্রথার কোনো অনুমতি
নেই।
অনুরূপ পাতানো ভাই বোন, মা-বেটা, বাপ-বেটির
মাঝে, পীর ভাই-বোন (?)
বিয়াই-বিয়ান ও বন্ধুর স্বামী বা স্ত্রীর মাঝে
পর্দা ওয়াজেব। যদিও তাদের চরিত্র ফিরিশতার মত হয় তবুও দেখা দেওয়া হারাম। পর্দা হবে
আল্লাহর ভয়ে তাঁর আনুগত্যের উদ্দেশ্যে। মানুষের ভয়ে বা লোক প্রদর্শনের জন্য নয়। এতে
মানুষের চরিত্র ও সম্মান বিচার্য নয়। সুতরাং লম্পট, নারীবাজ, পরহেজগার, মৌলবি সাহেব
প্রভৃতি পর্দায় সকলেই সমান। আল্লাহর ফরয মানতে কোনো প্রকারের লৌকিকতা ও সামাজিকতার
খেয়াল অথবা কারো মনোরঞ্জনের খেয়াল নিশ্চয় বৈধ নয়।
দৃষ্টিহীন অন্ধ পুরুষের সামনে পর্দা নেই। অবশ্য
মহিলাকে ঐ পুরুষ থেকে দৃষ্টি সংযত করতে হবে।
পৃথক মহিলা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান না থাকলে বেপর্দায়
ছেলেদের সাথে একই সাথে পাশাপাশি বসে শিক্ষা গ্রহণ বৈধ নয়। স্বামী-সংসার উদ্দেশ্য হলে
বাড়িতে বসে বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ বই-পুস্তক পড়া এবং দ্বীন-সংসার শিখার শিক্ষাই যথেষ্ট।
অন্যান্য শিক্ষার প্রয়োজনে যথাসম্ভব পর্দার সাথে শিখতে হবে। পর্দার চেষ্টা না করে গড্ডালিকা
প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিলে অবশ্যই মেয়ে-অভিভাবক সকলেই পাপী হবে।
চিকিৎসার প্রয়োজনে মহিলার জন্য ডাক্তার খোঁজা
ওয়াজেব। লেডী ডাক্তার না পেলে অথবা যথাবিহিত চিকিৎসা তার নিকট না হলে বাধ্য হয়ে পুরুষ
ডাক্তারের নিকট যেতে পারে। তবে শর্ত হল মহিলার সাথে তার স্বামী অথবা কোনো মাহরাম থাকবে।
একাকিনী ডাক্তার-রুমে যাবে না। পরন্তু ডাক্তারকে কেবল সেই অঙ্গ দেখাবে, যে অঙ্গ দেখানো
প্রয়োজন। লজ্জা স্থান দেখলেও অন্যান্য অঙ্গ দেখানো অপ্রয়োজনে বৈধ হবে না। মহান আল্লাহ
বলেন,
“তোমরা আল্লাহকে যথাসম্ভব ভয় কর”। (সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৬)।
একাকিনী হলেও নামাযে আদবের লেবাস জরুরী। এই
সময় কেবল চেহারা ও হাত খুলে রাখা যাবে। শাড়ি পরে বাহু-পেট-পিঠ-চুল বের হয়ে গেলে নামায
হয় না। যেমন, সম্মখে বেগানা পুরুষ থাকলে চেহারাও ঢাকতে হবে।
সেলোয়ার-কামিস বা ম্যাক্সিতে নামায পড়লে চাদর
জরুরী। কুরআন শরীফ পড়তে গিয়ে মাথা খুলে গেলে ক্ষতি নেই। এতে ওযুও নষ্ট হয় না। আল্লাহ
বলেন,
“বৃদ্ধা
নারী; যারা বিবাহের আশা রাখে না, তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে যদি বহির্বাস
খুলে রাখে তাহলে তা দোষের নয়। তবে পর্দায় থাকাটাই তাদের জন্য উত্তম”। (সূরা নূর, ৬০)।
যেহেতু কানা বেগুনের ডগলা খদ্দেরও বর্তমান।
পর্দায় থাকলে বাড়ির লোক ঠাট্টা করলে এবং কোনো প্রকার অথবা সর্বপ্রকার সহায়তা না করলে
মহিলার উচিত যথাসম্ভব নিজে নিজে পর্দা করা। এ ক্ষেত্রে হাল ছেড়ে বসা বৈধ নয়। কল-পায়খানা
নেই বলে ওজর গ্রহণযোগ্য নয়। স্বামী পর্দায় থাকতে না দিলে চেষ্টার পরও যদি একান্ত নিরুপায়
হয়ে বেপর্দা হতে হয় তবুও যথাসাধ্য নিজেকে সংযত ও আবৃত করবে। আল্লাহ এ চেষ্টার অন্তর
দেখবেন। যারা সহায়তা করে না বা বাধা দেয় তাদের পাপ তাদের উপর।
পক্ষান্তরে বেগানা পুরুষ দেখে ঘর ঢুকলে বা
মুখ ঢাকলে যারা হাসাহাসি করে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে, কটাক্ষ হানে অথবা অসমীচীন মন্তব্য
করে বা টিস্ মারে, শরয়ী পর্দা নিয়ে যারা উপহাস করে তারা কাফের। এই পর্দানশীন মহিলারা
কাল কিয়ামতে ঐ উপহাসকারীদেরকে দেখে হাসবে।
সুতরাং মুমিন নারীর দুঃখ করা উচিত নয়, একাকিনী
হলেও মন ছোট করা সমীচীন নয়। সত্যের জয় অবধারিত, আজ অথবা কাল। মরতে সকলকেই হবে, প্রতিফল
সকলেই পাবে।
পর্দায় থাকার জন্য দেওর-ভরা সংসার থেকে পৃথক
হয়ে আলাদা ঘর বাড়ি করার জন্য স্ত্রী যদি তার স্বামীকে তাকীদ করে তবে তা স্বামীর মানা
উচিত; বরং নিজে থেকেই হওয়া উচিত। বিশেষ করে তার ভাইরা যদি অসৎ প্রকৃতির হয়। ইসলামে
এটা জরুরী নয় যে, চিরদিন ভাই-ভাই মিলে একই সংসারে থাকতে হবে। যা জরুরী তা হল, আল্লাহর
দ্বীন নিজেদের জীবন ও পরিবেশে কায়েম করা, আপোষে ভ্রাতৃত্ব-বোধ ও সহায়তা-সহানুভূতি রাখা।
সকলে মিলে পিতা-মাতার যথাসাধ্য সেবা করা। কিন্তু হায়রে! আল্লাহতে প্রেম ও বিদ্বেষ করতে
গিয়ে মানুষের মাঝে মানুষকে দুশমন হতে হয়। হারাতে হয় একান্ত আপনকে। যেহেতু, আল্লাহর
চেয়ে অধিক আপন আর কে?
পর্দা নিজের কাছে নয়। কোনো ইঁদুর নিজের চোখ
বন্ধ করে যদি মনে করে যে, সে সমস্ত বিড়াল থেকে নিরাপদ তবে এ তার বোকামী নয় কি? নারীর
সৌন্দর্য দেখে বদখেয়াল ও কুচিন্তা আসাও মানুষের জন্য স্বাভাবিক। অতএব পর্দা না করে
কি কাম লোলুপতা ও ব্যভিচারের ছিদ্রপথ বন্ধ করা সম্ভব? নারীর মোহনীয়তা, কমনীয়তা ও মনোহারিত্ব
লুকিয়ে থাকে তার লজ্জাশীলতায়। নারীর লজ্জাশীলতা তার রূপ-লাবণ্য অপেক্ষা বেশী আকর্ষণীয়।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“অশ্লীলতা বা নির্লজ্জতা যে বিষয়ে থাকে, সে
বিষয়কে তা সৌন্দর্যহীন করে ফেলে; পক্ষান্তরে লজ্জাশীলতা যে বিষয়ে থাকে, সে বিষয়কে তা
সৌন্দর্যময় ও মনোহর করে তোলে”। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১৮৫; সুনান আততিরমিযি ১৯৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সভ্য লেবাসের পর্দা থেকে বের হওয়া নারী-স্বাধীনতার
যুগে পর্দা বড় বিরল। এর মূল কারণ হল লজ্জাহীনতা। কেননা, লজ্জাশীলতা নারীর ভূষণ। ভূষণ
হারিয়ে নারী তার বসনও হারিয়েছে। দ্বীনী সংযম নেই নারী ও তার অভিভাবকের মনে। পরন্তু
সংযমের বন্ধন একবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে উদ্দাম-উচ্ছৃঙ্খলতা বন্যার মত প্রবাহিত হয়।
তাতে সংস্কার, শিক্ষা, চরিত্র, সবই অনায়াসে ভেসে যায়। শেষে লজ্জাও আর থাকে না। বরং
এই লজ্জাহীনতাই এক নতুন ‘ফ্যাশন’ রূপে ‘সভ্য’ ও ‘আলোক প্রাপ্ত’ নামে সুপরিচিতই লাভ
করে। সত্যই তো, বগল-কাটা ব্লাউজ ও ছাঁটা চুল না হলে কি সভ্য নারী হওয়া যায়? আধা বক্ষ-স্থল,
ভুঁড়ির ভাঁজ ও জাং প্রভৃতি গোপন অঙ্গে দিনের আলো না পেলে কি ‘আলোক প্রাপ্ত’ হওয়া যায়?!
[নাউযুবিল্লাহ]
বলাই বাহুল্য যে, মুসলিম নারী-শিক্ষার ‘সুবেহ
সাদেক’ চায়, নারী-দেহের নয়। মুসলিম নারী-বিদ্বেষী নয়, নারী-শিক্ষার দুশমনও নয়। মুসলিম
বেপর্দা তথা অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের দুশমন। শিক্ষা, প্রগতি, নৈতিকতা তথা পর্দা সবই মুসলিমের
কাম্য। আর পর্দা প্রগতির পথ অবরোধ করতে চায় না; চায় বেলেল্লাপনা ও নগ্নতার পথ রুদ্ধ
করতে।
পক্ষান্তরে পর্দাহীনতা; আল্লাহ ও তাঁর রসূলের
অবাধ্যতা।
পর্দাহীনতা; নগ্নতা, অসভ্যতা, অশ্লীলতা, লজ্জাহীনতা,
ঈর্ষাহীনতা ও ধৃষ্টতা।
পর্দাহীনতা; সাংসারিক অশান্তি, ধর্ষণ, অপহরণ,
ব্যভিচার প্রভৃতির ছিদ্রপথ।
পর্দাহীনতা; যৌন উত্তেজনার সহায়ক। মানবরূপী
শয়তানদের চক্ষুশীতলকারী।
পর্দাহীনতা; দুষ্কৃতীদের নয়নাভিরাম।
পর্দাহীনতা; কেবল ধর্মীয় শৃঙ্খল থেকে নারী-স্বাধীনতা
নয়, বরং সভ্য পরিচ্ছদের ঘেরাটোপ থেকে নারীর সৌন্দর্য প্রকাশ ও দেহ মুক্তির নামান্তর।
পর্দাহীনতা; কিয়ামতের কালিমা ও অন্ধকার।
পর্দাহীনতা; বিজাতীয় ইবলীসী ও জাহেলিয়াতি প্রথা।
বরং সভ্য যুগের এই নগ্নতা দেখে জাহেলিয়াতের পর্দাহীনারাও লজ্জা পাবে। বেপর্দার জন্য
জাহান্নামের আগুন থেকে কোনো পর্দা নেই।
সুগন্ধি ব্যবহার করে নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ
অনুরূপ কোনো প্রকার সেন্ট বা পারফিউমড্ ক্রিম
অথবা পাউডার ব্যবহার করে বাইরে পুরুষদের সম্মুখে (পর্দার সাথে হলেও) যাওয়া ব্যভিচারের
নিকটবর্তী হওয়ার এক ভূমিকা। যেহেতু যুবকের প্রবৃত্তি এই যে, মহিলার নিকট হতে সুগন্ধ
পেলে তার যৌন-চেতনা উত্তেজনায় পরিণত হয়। যার জন্যই সংস্কারক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
“প্রত্যেক
চক্ষুই ব্যভিচারী। আর নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো (পুরুষের) মজলিসের পাশ দিয়ে
পার হয়ে যায় তাহলে সে এক বেশ্যা।” এমন কি এই অবস্থায় নামাযের জন্য যেতেও নিষিদ্ধ। প্রিয়
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে মহিলা সেন্ট ব্যবহার করে মসজিদে যায়,
সেই মহিলার গোসল না করা পর্যন্ত কোনো নামায কবুল হবে না”। (সহীহ আল-জামে আস-সগীর আযযিয়াদাতুহ: ২৭০)।
(ক)
আবদুর রহমান ইবনু সাল্লাম জুমাহী (রহঃ)...আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক (রাস্তায়) চলাফেরা করছিল। তার মাথার
চুল ও দু’টি চাদর তাকে পুলকিত করে তুলছিল। এমন সময় তাকে জমিনে দাবিয়ে দেয়া হলো।
সে কিয়ামত অবধি মাটির নিচে দাবতে থাকবে। (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী ৫৩৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২৯০, ইসলামিক
সেন্টার ৫৩০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ)
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন এক আনসারী মহিলা তার মেয়েকে
বিয়ে দিলেন। কিন্তু তার মাথার চুলগুলো উঠে যেতে লাগল। এরপর সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে এ ঘটনা বর্ণনা করে বলল, তার স্বামী আমাকে বলেছে আমি যেন আমার
মেয়ের মাথায় কৃত্রিম চুল পরিধান করাই। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
না তা করো না, কারণ, আল্লাহ্ তা’আলা এ ধরনের মহিলাদের ওপর লা’নত বর্ষণ করেন, যারা মাথায়
কৃত্রিম চুল পরিধান করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫২০৫, ৫৯৩৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(গ) আবদুল্লাহ্
ইবনে মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্ লা’নাত করেছেন ঐ সমস্ত
নারীর প্রতি যারা অন্যের শরীরে উল্কি অংকণ করে, নিজ শরীরে উল্কি অংকণ করায়, যারা সৌন্দর্যের
জন্য ভূরু-চুল উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। সে সব নারী আল্লাহর সৃষ্টিতে
বিকৃতি আনয়ন করে। এরপর বানী আসাদ গোত্রের উম্মু ইয়াকূব নামের এক মহিলার কাছে এ সংবাদ
পৌঁছলে সে এসে বলল, আমি জানতে পারলাম, আপনি এ ধরনের মহিলাদের প্রতি লা’নত করেছেন। তিনি
বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার প্রতি লা’নাত করেছেন, আল্লাহর
কিতাবে যার প্রতি লা’নাত করা হয়েছে, আমি তার প্রতি লা’নাত করব না কেন? তখন মহিলা বলল,
আমি দুই ফলকের মাঝে যা আছে তা (পূর্ণ কুরআন) পড়েছি। কিন্তু আপনি যা বলেছেন, তা তো এতে
পাইনি।
’আবদুল্লাহ্ বললেন, যদি তুমি কুরআন পড়তে তাহলে
অবশ্যই তা পেতে, তুমি কি পড়নি রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে যা
দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক। মহিলাটি
বলল, হাঁ নিশ্চয়ই পড়েছি। ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তখন মহিলা বলল, আমার মনে হয় আপনার পরিবারও এ কাজ করে তিনি
বললেন, তুমি যাও এবং ভালমত দেখে এসো। এরপর মহিলা গেল এবং ভালভাবে দেখে এলো। কিন্তু
তার দেখার কিছুই দেখতে পেলো না। তখন ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বললেন, যদি আমার স্ত্রী এমন
করত, তবে সে আমার সঙ্গে একত্র থাকতে পারত না। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮৮৬, ৪৮৮৭, ৫৯৩১, ৫৯৩৯, ৫৯৪৩, ৫৯৪৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫৪৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৫, আহমাদ ৪৩৪৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৪৫২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ)
হুমায়দ ইব্নু ‘আবদুর রাহমান (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি মু‘আবিয়া ইব্নু আবূ সুফ্ইয়ান (রাঃ)-কে
বলতে শুনেছেন যে, তার হাজ্জ পালনের বছর মিম্বরে নববীতে উপবিষ্ট অবস্থায় তাঁর দেহরক্ষীদের
কাছ থেকে মহিলাদের একগুচ্ছ চুল নিজ হাতে নিয়ে তিনি বলেন যে, হে মীনাবাসী! কোথায় তোমাদের
আলিম সমাজ? আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ রকম পরচুলা ব্যবহার হতে
নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, বনী ইসরাঈল তখনই ধ্বংস হয়, যখন তাদের মহিলাগণ এ ধরনের
পরচুলা ব্যবহার করতে শুরু করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৪৬৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৭)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
(ঙ)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ
করেছেন।’
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী
মহিলাদেরকে অভিশাপ করেছেন।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৮৮৫, ৫৮৮৬, ৬৮৩৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৮৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৪০৯৭৮, ৪৯৩০, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০৪, আহমাদ ১৯৮৩, ২০০৭, ২১২৪, ২২৬৩, ২২৯১, ৩১৪১, ৩৪৪৮,
দারেমী ২৬৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(চ) আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সেই পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন, যে মহিলার পোশাক পরে এবং সেই মহিলাকে অভিসম্পাত
করেছেন যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে।’(সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৪০৯৮, আহমাদ ৮১১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
মেয়েদের কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গীতে
কথা বলা নিষেধ
আল্লাহ বলেন, হে নবী পত্নীগন ! (উদ্দেশ্য উম্মতের
সকল মহিলা) তোমরা অন্য নারীদের মত নও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে পরপুরুষের
সাথে এমন কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গীতে কথা বলো না, যার ফলে যে ব্যক্তির অন্তরে ব্যধি রয়েছে
সে কু-বাসনা করবে । আর তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলন। (সূরা
আহযাব, আয়াত ৩২)।
উক্ত আয়াতটিও নারীদের পর্দা সম্পর্কিত, তাঁদের
কন্ঠ ও বাক্যালাপ নিয়ন্ত্রন সংক্রান্ত । আয়াতে فَلَا
تَخْضَعْنَ
بِالْقَوْلِ
এর ব্যাখ্যা হচ্ছে যদি পরপরুষের সাথে পর্দার অন্তরাল থেকে কথা বলা প্রয়োজনীয়তা দেখা
দেয়, তাহলে বাক্যালাপের সময় নারী কন্ঠের স্বভাবসুলভ কোমলতা ও লাজুকতা কৃত্রিমভাবে
পরিহার করবে। অর্থাৎ, এমন কোমলতা বা শ্রোতার মনে অবাঞ্ছিত কামনা সঞ্চার করে, তার কোন
সুযোগ দিবে না ।
যেমন এর পরে এরশাদ হয়েছে ,অর্থাৎ এরুপ কোমল
কন্ঠে বাক্যালাপ করো না, যা ব্যধিগ্রস্থ অন্তর বিশিষ্ট লোকের মনে কু-লালসা ও আকর্ষন
সৃষ্টি করে ।
মোদ্দাকথা, নারীদেরকে পরপুরুষের থেকে নিরাপদ
দূরত্বে অবস্থান করে পর্দার এমন উন্নত স্তর অর্জন করা উচিত, যাতে কোন অপরিচিত দূর্বল
ঈমান বিশিষ্ট লোকের অন্তরে কোন কামনা ও লালসা সৃষ্টি করা তো দূরের কথা, তার নিকটেও
ঘেষবা না । বরং তার বিরুদ্ধে অবস্থা ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে । (মা’আরিফুল কোরআন-৭/১৩২)।
স্বর্ণযুগের সোনার মানুষ পুন্যাত্মা নবী-পত্নীগনকে
যদি স্বর্ণযুগের স্বর্ণমানব সাহাবায়ে কেরামের সাথে পর্দার আড়াল করা সত্ত্বেও কথা
বলার ক্ষেত্রে এমন কড়া নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে যে, তাঁদের কন্ঠ ও বাক্যালাপও নিয়ন্ত্রণে
রাখতে হবে । তাহলে আধুনিক যুগের নারী-পুরুষদের কি পর্দার প্রয়োজন নেই? অথবা পর্দার
প্রয়োজন থাকলেও তাঁদের কন্ঠ ও বাক্যালাপ নিয়ন্ত্রন রাখার প্রয়োজন নেই ? অবশ্যই প্রয়োজন
রয়েছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না; বরং বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষনের পর সে প্রয়োজন
আরো তীব্রভাবে অনুভূত হয় ।
বেগানা নারীর জন্যে পুরুষের প্রতি ইসলামের হুকুম
(ক) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাক।’’ লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ওখানে আমাদের
বসা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। আমরা (ওখানে) বসে বাক্যালাপ করি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যদি তোমরা রাস্তায় বসা ছাড়া থাকতে না পার, তাহলে রাস্তার
হক আদায় কর।’’ তারা নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! রাস্তার হক কী?’ তিনি বললেন, ‘‘দৃষ্টি
অবনত রাখা, (অপরকে) কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া এবং ভাল কাজের আদেশ
দেওয়া ও মন্দ কাজে বাধা প্রদান করা।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২৪৬৫, ৬২২৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮১৫, আহমাদ ১০৯১৬, ১১০৪৪, ১১১৯২,
রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩০৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
(খ) আবূ
ত্বালহা যায়েদ ইবনে সাহ্ল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা ঘরের বাইরে অবস্থিত প্রাঙ্গণে
বসে কথাবার্তায় রত ছিলাম। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সেখানে)
এসে আমাদের নিকট দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘তোমরা রাস্তায় বৈঠক করছ? তোমরা রাস্তায় বসা থেকে
বিরত থাক।’’ আমরা নিবেদন করলাম, ‘আমরা তো এখানে এমন উদ্দেশ্যে বসেছি, যাতে (শরীয়তের
দৃষ্টিতে) কোন আপত্তি নেই। আমরা এখানে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করা ও কথাবার্তা বলার
জন্য বসেছি।’ তিনি বললেন, ‘‘যদি রাস্তায় বসা ত্যাগ না কর, তাহলে তার হক আদায় কর। আর
তা হল, দৃষ্টি সংযত রাখা, সালামের উত্তর দেওয়া এবং সুন্দরভাবে কথাবার্তা বলা।’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৬১,
আহমাদ ১৫৯৩২, রিয়াদুস সলেহীহ ১৬৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(গ) মজাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বললেন, আচমকা দৃষ্টি সম্পর্কে আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘‘তুমি তোমার দৃষ্টি
ফিরিয়ে নাও।’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৩৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২১৫৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৭৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৪৮,
আহমাদ ১৮৬৭৯, ১৮৭১৫, দারেমী ২৬৪৩, রিয়াদুস সলেহীহ ১৬৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৫৯, ইসলামিক
সেন্টার ৫৪৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(ঘ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘কোন পুরুষ অন্য পুরুষের গুপ্তাঙ্গের দিকে যেন না তাকায়। কোন নারী অন্য নারীর
গুপ্তস্থানের দিকে যেন না তাকায়। কোন পুরুষ অন্য পুরুষের সঙ্গে একই কাপড়ে যেন (উলঙ্গ)
শয়ন না করে। (অনুরূপভাবে) কোন নারী, অন্য নারীর সাথে একই কাপড়ে যেন (উলঙ্গ) শয়ন না
করে। (মুসলিম ৩৩৮, আহমাদ ১১২০৭) , রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(ঙ) উক্বা
ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘‘তোমরা (বেগানা) নারীদের নিকট (একাকী) যাওয়া থেকে বিরত থাক।’’ (এ কথা শুনে)
জনৈক আনসারী নিবেদন করল, ‘স্বামীর আত্মীয় সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?’ তিনি বললেন,
‘‘স্বামীর আত্মীয় তো মুত্যুসম (বিপজ্জনক)।’’(সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৭২, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ১১৭১, আহমাদ ১৬৮৯৬, ১৬৯৪৫, দারেমী ২৬৪২), রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৬। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
(চ)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘মাহরামের উপস্থিতি ছাড়া কোন পুরুষ যেন কোনো মহিলার সাথে নির্জন-বাস না করে।’’
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৬২, ৩০০৬, ৩০৬১, ৫২৩৩,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৪১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০০,
আহমাদ ১৯৩৫, ৩২২১), রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(ছ) বুরাইদা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘স্বগৃহে অবস্থানকারী লোকদের পক্ষে মুজাহিদদের স্ত্রীদের মর্যাদা
তাদের নিজেদের মায়ের মর্যাদার মত। স্বগৃহে অবস্থানকারী লোকদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন
মুজাহিদ ব্যক্তির পরিবারের প্রতিনিধিত্ব (দেখা-শুনা) করে, অতঃপর তাদের ব্যাপারে সে
তার খেয়ানত ক’রে বসে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে মুজাহিদের সম্মুখে দাঁড় করানো হবে এবং
সে তার নেকীসমূহ থেকে সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত ইচ্ছামত নেকী নিয়ে নেবে।’’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে বললেন, ‘‘তোমাদের ধারণা কী?
(সে কি তখন তার কাছ থেকে নেকী নিতে ছাড়বে?’’ (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৮০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৭, নাসায়ী ৩১৮৯, ৩১৯০, ৩১৯১, সুনান
আবূ দাউদ ২৪৯৬, আহমাদ ২২৪৬৮, ২২৪৯৫), রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৮। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
ব্যভিচার বন্ধ করার লক্ষ্যে যৌথভাবে সামাজিক যে প্রচেষ্টার প্রয়োজন তা হলো
নিম্নরূপঃ
(১)
পর্দাহীনতা দূর করে, সমাজে পবিত্র পর্দা-আইন চালু করা। আর এ দায়িত্ব হলো প্রত্যেক মুসলিমের,
নারী ও পুরুষ, যুবক ও বৃদ্ধ, রাজা ও প্রজা সকলের।
(২) ব্যভিচারের
‘হদ্দ্’ দণ্ডবিধি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চালু করা। এমন শাস্তি প্রয়োগ করা, যাতে কোনো লম্পট
তার লাম্পট্যে সুযোগ ও সাহস না পায়।
(৩) মহিলাকে কোনো মাহরাম বা স্বামী ছাড়া একাকিনী বাড়ির
বাইরে না ছাড়া।
(৪) কোনো
বেগানা (দেওর, বুনাই, নন্দাই, বন্ধু প্রভৃতি) পুরুষের সাথে নারীকে নির্জনতা অবলম্বন
করার সুযোগ না দেওয়া। সে বেগানা পুরুষ ফিরিশতা তুল্য হলেও তার সহিত মহিলাকে নির্জন
বাস বা সফর করতে না দেওয়া।
(৫) সৎ-চরিত্র
গঠন করার সামাজিক ভূমিকা পালন করা; অশ্লীল ছবি, পত্র-পত্রিকা, গানবাজনা, যাত্রা-থিয়েটার
প্রভৃতি বন্ধ করা এবং রেডিও, টিভি ও পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি প্রচারমাধ্যমে সচ্চরিত্র
গঠনের উপর তাকীদ প্রচার করা।
(৬)
সর্বতোভাবে বিবাহের সকল উপায়-উপকরণ সহজ করা। সহজে বিবাহ হওয়ার পথে সকল বাধা-বিপত্তি
দূর করা।
(৭)
স্কুল-কলেজে সহশিক্ষা বন্ধ করে বালক ও বালিকাদের জন্য পৃথক পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
ব্যবস্থা করা। অবিবাহিত তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীকে যৌন-শিক্ষা না দেওয়া।
(৮) নারীর জন্য পৃথক চাকুরী-ক্ষেত্র তৈরী করা।
(৯) সকল প্রকার বেশ্যাবৃত্তি ও যৌন-ব্যবসা বন্ধ করা।
উপসংহারঃ ইসলামে
ধর্ষণ ও যিনা, তথা সম্মতি ও অসম্মতি উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষের শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।
তবে নারীর ক্ষেত্রে জোড়পূর্বক ধর্ষিতা হলে কোনো শাস্তি নেই, সম্মতিতে হলে শাস্তি আছে।
যৌন অপরাধ নির্ণয়ে ইসলাম নির্ধারিত বিভাজন রেখা (বিবাহিত-অবিবাহিত) সর্বোৎকৃষ্ট। বাংলাদেশের
আইনে যতোটুকু শাস্তি রয়েছে তা প্রয়োগে প্রশাসনের অবহেলা আর বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক
চাপ প্রয়োগে ধর্ষণের উপযুক্ত শাস্তি হয় না। উপরন্তু ধর্ষিতাকে একঘরে করে রাখা হয়,
তাকে সমাজে বাঁকা চোখে দেখা হয়। তার পরিবারকে হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। এগুলোর কোনোটিই
ইসলাম সমর্থন করে না।
অবৈধ সম্পর্ক বা দৈহিক মিলনকে যেনা-ব্যভিচার
কিংবা ধর্ষণ যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেনো ইসলামে তা জঘন্য অপরাধ। উপরোক্ত মানব
রচিত আইনী পর্যালোচনায় এটাই প্রমাণিত যে, ধর্ষণ সম্পর্কে মানুষের তৈরী কোনো আইন পৃথিবীর
কোনো রাষ্ট্র বা সমাজে শান্তি বা একটা সুষ্ঠু সমাজ উপহার দিতে পারে নাই আর পারবেও না।
মানব রচিত আইনে দিন দিন নারী নির্যাতনসহ ধর্ষণমূলক অপরাধের সংখ্যা আরো বেড়েই চলছে।
বাংলাদেশে ৯০% মুসলমান বসবাস করে। ৯০% মুসলমানদের
মধ্যে ৭০% মুসলমানই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েম হোক এটা চায় না। কারণ এরা
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যিনা-ব্যভিচারের সাথে জড়িত। শহরাঞ্চলে দেখা যায়, মেয়েরা হাফ
প্যান্ট আর একটা ছোট্ট গেঞ্জি পরে বাহিরে যত্র-তত্র যাচ্ছে, নেশা করছে, মদের বারে যাচ্ছে,
বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড নিয়ে সময় কাটাচ্ছে, মা তার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে যাচ্ছে,
বাবাও তেমনি বিভিন্ন নারীদের নিয়ে ফুর্তি করে বেড়াচ্ছে আবার তার সন্তানরাও একই কাজ
করে বেড়াচ্ছে। সবাই যেনো লাগামহীন জীববন-যাপন করছে। কেউ কাউকে বাঁধা দিচ্ছে না। পাশ্চাত্য
কৃষ্টি-কালচার আমাদের এই সমাজে এখন বিরাজমান। এদের দেখা দেখি অন্যরাও নষ্ট হচ্ছে। এটা
তাদের নাকি ফ্যাশন। পুরো সমাজটাই যেনো যিনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণে নিমজ্জিত।
মানব রচিত যে আইন আইন, তা দিয়ে কি এই সমাজটাকে
উদ্ধার করা সম্ভব? বড়ই দুঃখের বিষয় এক শ্রেণির আলেম এই সমস্ত লোকদের পক্ষে কথা বলে
না। সমাজ থেকে এসব দূরীভুত করার কোনো পদক্ষেপ তাদের মধ্যে দেখা যায় না। আমাদের দেশের
বিশিষ্ট এক পরিচিত আলেম নারীর নগ্নতা নিয়ে তিনি ফতোয়া দেন যে, সৌন্দর্য তো আল্লাহর
নিয়ামত।
প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরাঃ কুপের মধ্যে মৃত বিড়াল
রেখে বালতি বালতি পানি উত্তোলন করলে যেমন কুপের পানি পরিষ্কার হবে না, তেমনি সমাজে
যিনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণ, নারীর নগ্নতা, অবাধ মেলামেশা রেখে সমাজ কোনোদিন কলুষিত মুক্ত
হবে না।
একটি সুষ্ঠু সমাজ বা রাষ্ট্র গড়তে হলে চাই
ইসলামি অনুশাসন। ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্যে যেসব কুরআন ও হাদিসের হুকুম
আছে সেসব নিয়ে আমাদের দেশের পির-অলি ও তাদের মুরিদসহ বিদআতি আলেমগণ কোনো দিন ওয়াজ করে
না। তারা মনে করে এসব ইসলামের বাজে একটি অংশ। (নাউযুবিল্লাহ)।
এজন্যে এই সমস্ত আলেম বা তাদের অনুসারীগণ মুসলমান
হয়েও তারা কাফের, মুশরেক, ফাসেক ও জালেম। এদের স্থান হবে জাহান্নামের নিম্ন স্তরে।
(১) আল্লাহতায়ালা বলেন,
“হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি।
অতএব তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে
আল্লাহ্র পথ হতে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহ্র পথ হতে ভ্রষ্ট হয় তাদের জন্য রয়েছে
কঠিন শাস্তি। কারণ তারা বিচারদিবসকে ভুলে আছে”। (সূরা
ছদ (৩৮) : ২৬)।
(২) আল্লাহতায়ালা রাসুল সাঃ এর আদেশ নিষেধ মানতে
বলেছেন,
“রসুল (সঃ) তোমাদের জন্য যা কিছু দেন তা গ্রহণ
কর, আর যে জিনিস থেকে বিরত রাখেন (নিষেধ) করেন তা থেকে বিরত থাক। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই
আল্লাহ কঠিন শাস্তি দাতা”। (হাশর -৭)।
(৩) যারা মানবে না তাদের শাস্তিঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যারা তাঁর (রাসুলসঃ) হুকুমের বিরুদ্ধাচারন করে এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য যে, তারা
মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে”। (নূর-৬৩)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
“সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের
ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য
ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম
(সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে
জ্বালাবেন”। (সুরা আন নিসা ১১৫)।
(৪) যারা কুরআনের অর্ধেক হুকুম মানেঃ
“তোমরা কি কোরআনের কোন কোন অংশ (আয়াত) মানো
আর কোন কোন অংশ মানো না? অত:পর যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্য থেকে এরুপ কাজ করবে – পার্থিব জীবনে প্রকাশ্য লাঞ্চণা ভোগ করা
আর কিয়ামতের দিনে ভীষণ শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার আর কী সাজা হতে পারে!
আর আল্লাহ তো তোমাদের কার্য কলাপ সম্বন্ধেবে- খবর নন”। (বাকারা-৮৫)।
(৫) ইসলামি আইন ব্যতীত
অন্য আইন গ্রহন করলেঃ
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন
করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে
তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)।
রাসুল সাঃ বলেন,
(৬) আবদুল্লাহ্
ইব্নু মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আমি হাউযে কাউসারের নিকট তোমাদের আগেই হাজির থাকব। তোমাদের থেকে কিছু লোককে
আমার নিকট পেশ করা হবে। কিন্তু আমি যখন তাদের পান করাতে উদ্যত হব, তখন তাদেরকে আমার
নিকট হতে ছিনিয়ে নেয়া হবে। আমি বলব, হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার
পর তারা নতুন কী ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৪৯, ৬৫৭৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭)
আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন,
আমি হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এমন সময় নু’মান
ইব্নু আবূ আয়াস আমার নিকট হতে এ হাদীসটি শুনে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি সাহ্ল থেকে হাদীসটি
এরূপ শুনেছেন। আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন সে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আবূ সা’ঈদ
খুদ্রী (রাঃ) - কে এ হাদীসে অতিরিক্ত বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) তখন বলবেনঃ এরা তো আমারই অনুসারী। তখন বলা হবে, আপনি নিশ্চয় জানেন না যে,
আপনার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কি পরিবর্তন করেছে (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম, যা আপনি করতে
বলেননি)। এ শুনে আমি বলব, যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে, তারা (বিদআতী পির-অলি ও আলেম)
দূর হোক, দূর হোক। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৫০,
আধুনিক প্রকাশনী ৬৫৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৮)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেনঃ
কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর
যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৮০, আধুনিক প্রকাশনী ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৬৭৮৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) জারীর বিন আব্দুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন, “যে সম্প্রদায় যখন বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি থাকে,
যার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি তারা তাদেরকে বাধা না দেয় (এবং ঐ পাপাচরণ
বন্ধ না করে), তাহলে (তাদের জীবদ্দশাতেই) মহান আল্লাহ তাদেরকে ব্যাপকভাবে তাঁর কোন
শাস্তি ভোগ করান।” (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৩৯,
আহমাদ ৪/৩৬৪, সুনান ইবনে মাজাহ ৪০০৯, ইবনে হিব্বান, সহীহ আবূ দাউদ ৩৬৪৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
(১০) আবূ যায়দ উসামাহইবনে যায়দ ইবনে হারেষাহ (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ
আবূ ওয়াইল (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসামাহ
(রাঃ)-কে বলা হল, কত ভাল হত! যদি আপনি ঐ ব্যক্তির (উসমান (রাঃ)-এর নিকট যেতেন এবং তাঁর
সঙ্গে আলোচনা করতেন। উত্তরে তিনি বললেন, আপনারা মনে করছেন যে আমি তাঁর সঙ্গে আপনাদেরকে
শুনিয়ে শুনিয়ে বলব। অথচ আমি তাঁর সঙ্গে (দাঙ্গা দমনের ব্যাপারে) গোপনে আলোচনা করছি,
যেন আমি একটি দ্বার খুলে না বসি। আমি দ্বার উন্মুক্তকারীর প্রথম ব্যক্তি হতে চাই না।
আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হতে কিছু শুনেছি, যার পরে
আমি কোন ব্যক্তিকে যিনি আমাদের আমীর নির্বাচিত হয়েছেন এ কারণে তিনি আমাদের সবচেয়ে উত্তম
ব্যক্তি এ কথা বলতে পারি না। লোকেরা তাঁকে বলল, আপনি তাঁকে কী বলতে শুনেছেন? উসামাহ
(রাঃ) বললেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন আগুনে পুড়ে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। এ সময় সে
ঘুরতে থাকবে যেমন গাধা তার চাকা নিয়ে তার চারপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামবাসীরা
তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, হে অমুক ব্যক্তি! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না আমাদেরকে
সৎ কাজের আদেশ করতে আর অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করতে? সে বলবে, আমি তোমাদেরকে সৎ কাজে
আদেশ করতাম বটে, কিন্তু আমি তা করতাম না আর আমি তোমাদেরকে অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করতাম,
অথচ আমিই তা করতাম। এ হাদীসটি গুনদার (রহ.) শুবা (রহ.) সূত্রে আ‘মাশ (রহ.) হতে বর্ণনা
করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৬৭, ৭০৯৮,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৯,আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০২৬,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১১) আনাস
(রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
“আমি মি’রাজের রাতে এমন একদল লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি যারা আগুনের কাঁচি দ্বারা
নিজেদের ঠোঁট কাটছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে জিবরীল! ওরা কারা?’ তিনি বললেন, ‘ওরা
আপনার উম্মতের বক্তাদল (বিদআতী পির-অলি ও আলেম); যারা নিজেদের বিস্মৃত হয়ে মানুষকে
সৎকাজের নির্দেশ দিত, অথচ ওরা কিতাব (গ্রন্থ) অধ্যয়ন করত, তবে কি ওরা বুঝত না।” (আহমাদ ১২২১১, ১২৮৫৬ প্রভৃতি, ইবনে হিব্বান ৫৩, ত্বাবারানীর
আওসাত্ব ২৮৩২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭৩, আবূ য়্যা’লা ৩৯৯২, সহীহ তারগীব ১২৫)-হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
(১২) আবূ উমামা (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “আমার উম্মতের দুই শ্রেণির লোক আমার সুপারিশ লাভ করতে পারবে না; (বিবেকহীন)
অত্যাচারী রাষ্ট্রনেতা এবং প্রত্যেক সত্যত্যাগী অতিরঞ্জনকারী।” (ত্বাবারানী ৮০০৫, সহীহুল জামে’ ৩৭৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
আল্লাহ
তায়ালা বলেন,
(১৩)
যারা ইসলামি আইন বাদ দিয়ে অন্য আইন তথা মানব রচিত আইন
মানবে তারা শিরকের মধ্যে গণ্যঃ
অন্য কাউকে যদি আইন প্রদানের মালিক মনে করা
হয় তবে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেই রব মানা হয়; যা প্রকাশ্য বড় শির্ক। আর এ জন্যই আল্লাহ
তা‘আলা যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আইন মানবে তাদের সম্পর্কে বলেছেন:
“তারা কি জাহেলিয়াতের আইন চায়? দৃঢ়বিশ্বাসীগণের
জন্য আল্লাহর চেয়ে উত্তম হুকুম-বিধান দাতা আর কে হতে পারে?” (সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫০)।
এখানে জাহেলিয়্যাতের আইন বলতে আল্লাহ কর্তৃক
প্রণীত আইন ছাড়া যাবতীয় আইনকেই বুঝানো হয়েছে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রণীত আইনের
বাইরে যতো প্রকার মানব রচিত আইন রয়েছে, তার সবই জাহেলী আইন, যেমন ইংরেজদের রেখে যাওয়া
আইন, রোমান আইন ইত্যাদি।
হানী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি যখন তার গোত্রের
প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন, তখন
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার গোত্রের লোকদেরকে তাকে আবুল হাকাম উপনামে
ডাকতে শুনে তাকে ডেকে বললেন, আল্লাহই হলেন হাকাম (বিধান দাতা)এবং তাঁর নিকটই ন্যায়বিচার
ও নির্দেশ। তোমার উপনাম কি করে আবুল হাকাম হলো? তিনি বললেন, আমার গোত্রের লোকজনের মধ্যে
বিভেদ সৃষ্টি হলে তারা মীমাংসার জন্য আমার নিকট আসে। আমি যে সিদ্ধান্ত দেই তাতে তারা
উভয় পক্ষই সন্তুষ্ট হয়ে যায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯৫৫, নাসায়ী ২২৬, বায়হাকী ১৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
(১৪) ইসলামী আইন বাস্তবায়ন না করা
কুফুরী, যা ঈমান নষ্ট করে দেয়ঃ
আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
“আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুসারে বিচারকার্য
সম্পাদন করে না, তারা কাফির। (সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত:
৪৪)।
তিনি আরও বলেন,
“আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুসারে বিচারকার্য
সম্পাদন করে না, তারা যালিম।” (সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত:
৪৫)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুসারে বিচারকার্য
সম্পাদন করে না, তারা ফাসেক।” (সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত:
৪৭)।
মূলত আল্লাহর আইন অনুসারে না চলার কয়েকটি পর্যায় হতে পারে,
(ক) আল্লাহর
আইন ছাড়া অন্য কোনো আইনে বিচার-ফয়সালা পরিচালনা জায়েয মনে করা।
(খ) আল্লাহর
আইন ব্যতীত অন্য কোনো আইন দ্বারা শাসন কার্য পরিচালনা উত্তম মনে করা।
(গ)
আল্লাহর আইন ও অন্য কোনো আইন শাসনকার্য ও বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে সমপর্যায়ের মনে করা।
(ঘ) আল্লাহর
আইন পরিবর্তন করে তদস্থলে অন্য কোনো আইন প্রতিষ্ঠা করা।
উপরোক্ত যে কোনো একটি কেউ বিশ্বাস করলে সে
সর্বসম্মতভাবে কাফির হয়ে যাবে। (এর জন্য দেখুন: শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম আল-শাইখ
প্রণিত গ্রন্থ ‘তাহকীমুল কাওয়ানীন)।
অতএব পির-অলি, বড় পির, রাসুল সাঃ এর আওলাদ,
মুফতি, হাফেজ, মুহাদ্দিস, এ নেতা ও নেতা, বড় মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল ইত্যাদি ইত্যাদি
হয়ে পরকালে ১০০% কোনো মুক্তি নেই, যদি না আপনি ইসলামি আইন বিষয়ক কুরআন ও হাদিস না মানেন,
না প্রচার করেন, না বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ নেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ?
এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক
পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার
করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল
নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো
আর আমার আয়াত ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ
করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।” (কাহাফঃ
১০৩-১০৫)।
মূল কথা হলো, আমাদের দেশে খুন, যিনা/ব্যভিচার/ধর্ষণ,
যিনার মিথ্যে অপবাদ দেয়া, আল্লাহদ্রোহীতা, চুরি/ডাকাতি, দস্যুতাসহ শত শত অপরাধের বিচার
ইসলামি আইনে কার্যকর করা হয় না। কারণ আমাদের দেশে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম নেই।
অথচ মুসলিম নেতৃবৃন্দ যখন ক্ষমতায় আসবে তাদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে কুরআনকে
সংবিধান হিসেবে মেনে নিয়ে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। কিন্তু তারা তা না করে মানবরচিত
আইনে রাষ্ট্র পরিচালনা করে থাকে। এজন্যেই আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতে দলীয় নেতাসহ তাদের
সবাইকে ডেকে তাদের আমলনামা দেখানো হবে এবং সেই নেতার সাথেই তাদের পরবর্তী বসবাস হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“স্মরণ কর, যখন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের নেতা সহ আহবান
করব। যাদেরকে ডান হাতে তাদের আমলনামা দেওয়া হবে, তারা তাদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের
প্রতি খেজুরের আঁটির ফাটলে সুতো বরাবর (সামান্য পরিমাণ)ও যুলুম করা হবে না”। (সুরা
আল ইসরা (বণি ইসলাইল) ৭১)।
অর্থাৎ কিয়ামতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নেতার
নাম দ্বারা ডাকা হবে এবং সবাইকে এক জায়গায় জমায়েত করা হবে। রাসুল সাঃ বলেন,
আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
খিদমাতে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে আপনার কি অভিমত?
যে কোন কওম বা দলকে ভালোবাসে; কিন্তু তাদের সাথে (কখনো) সাক্ষাৎ হয়নি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে ব্যক্তি তার সাথেই আছে, যাকে সে ভালোবাসে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০০৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬১৬৮, ৬১৬৯, ৬১৭০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৪০, সুনান
আত তিরমিযী ২৩৮৭, সুনানে আবূ দাঊদ ৫১২৭, সহীহুল জামি‘ ৬৬৮৯, সহীহ আত্ তারগীব ৩০৩৩,
বাযযার ৩০১৪, আহমাদ ১৩৩৮৮, আবূ ইয়া‘লা ৫১৬৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৭, শু‘আবুল ঈমান ৪৯৭, সুনানুর নাসায়ী আল কুবরা ১১১৭৮, দারাকুত্বনী ২, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী
৭২০৮, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ৭৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব আজকে আপনি যে দল নেতার পিছে দৌঁড়াচ্ছেন
কিয়ামতে তার পিছেই থাকতে হবে। তথা সে জাহান্নামী হলে আপনার স্থানও সেই জায়গাতেই হবে।
তাই সকল দল মত বাদ দিয়ে ইসলামের পথে ফিরে আসুন। নইলে কিয়ামতে আপনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো
হবে এবং জিজ্ঞাসা করা হবে আপনি একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে ইসলামের জন্যে কী কী
দায়িত্ব পালন করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৫৫৮, ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৭৫১, ৫১৮৮,
৫২০০, ৭১৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬১৮,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮২৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৭০৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২৯২৮, আহমদ ৪৪৮১, ৫১৪৮, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭, ৫৯৯০,
আল লুলু ওয়াল মারজান-১১৯৯। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(সমাপ্ত)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইসলাম বুঝার তৌফিক
দান করুন। আমিন।
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
...........................................................................................
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য
সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC
এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment