বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ছালাতে ইমামের পিছনে মুক্তাদিগণ সুরা ফাতিহা পাঠ করবে কি করবে নাঃ (দ্বন্দ্ব
নিরসন)
ভূমিকাঃ
ছালাতের যে কয়টি বিষয়ে আমাদের মাঝে অস্পষ্টতা রয়েছে তন্মধ্যে ইমামের পিছে মুক্তাদীর
সূরা ফাতিহা পাঠের বিষয়টি অন্যতম। যারা ইমামের পিছে সূরা ফাতিহা পাঠ অসিদ্ধ বলে মনে
করেন বা বিরোধিতা করেন, তারা কোন্ দলীলের ভিত্তিতে এমনটি করেন-সে বিষয়টির পর্যালোচনা
হওয়া জরুরী।
ছালাতে
সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যকীয় বিষয়, যা না পড়লে ছালাত হয় না। কিন্তু ইমামের পিছনে সূরা
ফাতিহা পড়া নিয়ে অনেক দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। তবে ছালাত সরবে হোক বা নীরবে হোক প্রত্যেক
ছালাতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। সূরা ফাতিহা না পড়ার পক্ষে যে সমস্ত
বর্ণনা পেশ করা হয়, মুহাদ্দিছগণের নিকট সেগুলো সবই জাল ও যঈফ। এ নিয়ে তিন ধরনের আলোচনা
রয়েছে।
(এক) ছালাত
জেহরী কিংবা সের্রী হোক অর্থাৎ সরবে ক্বিরাআত পড়া হোক আর নীরবে পড়া হোক ইমামের পিছনে
মুক্তাদী সূরা ফাতিহা পড়তে পারবে না।
(দুই)
সরবে ক্বিরাআত পড়া হলে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে না। ইমাম নীরবে ক্বিরাআত পড়লে মুক্তাদী
সূরা ফাতিহা পড়বে।
(তিন) সকল
ছালাতে ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।
সর্বশেষ
আমলটিই সর্বাধিক দলীল ভিত্তিক। প্রথম মতের পক্ষে কোন দলীলই নেই। শুধু অপব্যাখ্যা ও
দলীয় গোঁড়ামীর কারণে এটি বাজারে চলছে। যদিও অধিকাংশ মুছল্লী এরই জালে আটকা পড়েছে। দ্বিতীয়
মতের পক্ষে কিছু আলোচনা রয়েছে।
নিম্নে সূরা ফাতিহা না পড়ার দলীলগুলো পর্যালোচনা করা হলোঃ
ইবনে
আববাস (রাঃ) বলেন,যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর এবং চুপ থাক। যেন তোমাদের প্রতি রহম করা হয় অর্থাৎ ফরয
ছলাতের মধ্যে। (ইবনে
জারীর হা/১৫৬০৪)।
পর্যালোচনাঃ
সনদ যঈফ। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেছেন, আলী বিন আবী ত্বালহা ইবনে আববাস হতে শ্রবণ করেন
নি। (আল-ইরওয়া হা/১৪১১)।
হাফেয
ইবনে হাজার (রহঃ) বলেছেন, আলী বিন আবী ত্বালহা...ইবনে আববাস হ’তে মুরসাল বর্ণনা রেওয়ায়েত
করেছেন। তিনি তাকে দেখেননি। তিনি ষষ্ঠ ত্বাবাকার রাবী। তিনি সত্যবাদী, মাঝে মাঝে ভুল
করতেন। তিনি ৪৩ হিজরীতে মারা গিয়েছেন’। (তাক্বরীবুত তাহযীব, রাবী নং ৪৭৫৪)।
ইবনু
মাসঊদ (রাঃ) ছালাত পড়ছিলেন। তখন কতিপয় লোককে ইমামের সাথে ক্বিরাআত পড়তে শুনলেন। ছালাত
শেষে তিনি বললেন, তোমাদের কি অনুধাবন করার সময় আসেনি, তোমাদের কি বুঝার সময় হয়নি? যখন
কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং নীরব থাকবে’। (ইবনে জারী, তাফসীরে ত্বাবারী হা/১৫৫৮৪)।
পর্যালোচনাঃ সনদ
যঈফ।
প্রথমতঃ
বাশীর বিন জাবের ও মুহারিবী উভয়েই মাজহূল। ‘মুহারিবী’ বলতে কোন্ মুহারিবী তা আমরা জানতে
সক্ষম হইনি। এ সম্পর্কে শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ (রহঃ) বলেছেন, ‘বাশীর বিন জাবেরের জীবনী
কোন গ্রন্থেই পাওয়া যায়নি। এমন রাবী যার জীবনী পাওয়া যায় না তিনি মাজহূল বা মাসতূর
হয়ে থাকেন। সরফরায খান ছফদর দেওবন্দী স্বীয় আল্লামা যুবায়দী হতে বর্ণনা করেছেন যে,
ইমাম ছাহেবের (আবূ হানীফা) নিকটে মাজহূলের বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত হয়’। (আহসানুল কালাম ২/৯৫)।
বাশীর
বিন জাবের ছাহেবকে ‘হাদীছ আওর আহলেহাদীছ’ বইটির গ্রন্থকার ‘ইয়াসির বিন জাবের’ লিখেছেন।
এর সনদের একজন রাবী ‘আল-মুহারিবী’র নির্দিষ্ট পরিচয় রিজালের গ্রন্থসমূহ থেকে অনুসন্ধান
করতে হবে।
দ্বিতীয় এই
যে, এই রেওয়ায়েতে ‘ইমামের সাথে ক্বিরাআত করতে শুনেছেন’ দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রকাশ হয়
যে, তারা ইমামের পিছে উচ্চস্বরে ক্বিরাআত করেছিলেন। আর এটি সাধারণ জনগণেরও জানা আছে
যে, আহলেহাদীছদের নিকটে ওযর ব্যতীত (যেমন ক্বিরাআতের ভুল ধরা) ইমামের পিছে জেহরী ক্বিরাআত
নিষিদ্ধ। (যুবায়ের
আলী যাঈ, মাসআলা ফাতেহা খলফাল ইমাম, পৃঃ ১০৮)।
আবূ
হুরায়রা হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই ইমামকে নিয়োগ করা হয়েছে
তাকে অনুসরণ করার জন্য। যখন সে তাকবীর দিবে তখন তোমরাও তাকবীর দিবে। আর যখন সে ক্বিরাআত
করে তখন তোমরা চুপ থাকবে। আর যখন সে বলবে, সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ, তখন তোমরা বলবে
আল্লাহুম্মা রববানা লাকাল হামদ’। (নাসাঈ হা/৯২১; আবূ দাঊদ হা/৬০৩; তিরমিযী হা/৩৬১)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ ইমাম এজন্যই নিয়োগ করা হয়, যেন তার অনুসরণ করা হয়। কাজেই ইমাম তাকবীর বললে
তখন তোমরাও তাকবীর বলবে। ইমাম তাকবীর না বলা পর্যন্ত তোমরা তাকবীর বলবে না। ইমাম রুকু'
করলে তোমরাও রুকু' করবে। ইমাম রুকু' না করা পর্যন্ত তোমরা রুকু‘ করবে না। ইমাম ‘‘সামিআল্লাহু
লিমান হামিদাহ্’’ বললে তোমরা বলবে, ‘‘আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ’’। মুসলিমের বর্ণনায়
রয়েছেঃ ‘‘ওয়া লাকাল হামদ’’। ইমাম সিজদা্ করলে তোমরাও সিজদা্ করবে। ইমাম সিজদা্ না করা
পর্যন্ত তোমরা সিজদাহ্ করবে না। ইমাম দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলে তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত
আদায় করবে। আর বসে আদায় করলে তোমরাও বসে আদায় করবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬০৩, ৬০৪, নাসাঈ হা/৯২১,
তিরমিযী হা/৩৬১), আহমাদ (২/৩৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পর্যালোচনাঃ
এই হাদীছটি সম্পর্কে শায়েখ যুবায়ের আলী যাঈ বলেন, ‘এই রেওয়ায়াতটি মানসূখ বা রহিত। এই
হাদীছের রাবী আবূ হুরায়রা (রাঃ) জেহরী ছালাতসমূহেও ইমামের পিছনে ফাতিহা পাঠের হুকুম
দিতেন’। (দ্র.আছারুস
সুনান হা/৩৫৮;মুসনাদুল হুমায়দী, দেওবন্দী নুসখা হা/৯৭৪)।
রাবী
যদি নিজের বর্ণনার বিরোধী ফৎওয়া দেন তবে ঐ রেওয়ায়াতটি হানাফীদের উছূল অনুযায়ীও মানসূখ
হয়ে যায়’। (দ্র. ত্বাহাবী,
শারহু মাআনিল আছার ১/২৩; আছারুস সুনান মাআত তালীক্ব পৃ. ২০; তাওযীহুস সুনান ১/১০৭;
খাযায়েনুস সুনান ১/১৯১, ১৯২; উমদাতুল ক্বারী ৩/৪১; হুসাইন আহমাদ, তাক্বরীরে তিরমিযী
পৃ. ২১০)।
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) ছালাত শেষ করলেন, যে ছালাতে তিনি উচ্চস্বরে
ক্বিরাআত পড়ছিলেন। অতঃপর বললেন, তোমাদের কেউ কি একটু পূর্বে আমার সাথে কুরআন পড়েছে?
তখন একজন বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! হ্যাঁ, আমি পড়েছি। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তাই তো বলেছি
আমার সাথে কুরআন নিয়ে টানাটানি হচ্ছে কেন? লোকেরা যেদিন রাসূল (ছাঃ) হ’তে একথা শুনলেন
তখন থেকে সেসব ছালাতে কুরআন পড়া ছেড়ে দিলেন, যেসব ছালাতে রাসূল (ছাঃ) উচ্চস্বরে কুরআন
পড়তেন’। (মুওয়াত্ত্বা
ইমাম মালেক হা/১১১)।
পর্যালোচনাঃ
এটাও মানসূখ। উপরের হাদীছের তাহক্বীক্বে মানসূখের কারণ বলা হয়েছে।
জাবের
হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তির ইমাম আছে, তার ইমামের ক্বিরাআতই তার
ক্বিরাআত বলে গণ্য হবে’। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৩৮০২)।
পর্যালোচনাঃ যঈফ
হাদীছ। এর একাধিক সনদ রয়েছে। আবুয যুবায়ের সম্পর্কে ইমামগণের মন্তব্য নিম্নরূপ-
(১) ইবনে
হাজার (রহঃ)
বলেছেন,
‘আবুয যুবায়ের তাবেঈদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি তাদলীসের কারণে প্রসিদ্ধ’। (তাবাকাতুল মুদাল্লিসীন,
জীবনী নং ১০১)।
তিনি
আরো বলেছেন, আবুয যুবায়ের আল-মাক্কী সত্যবাদী।
কিন্তু তিনি তাদলীস করতেন। তিনি চতুর্থ স্তরভুক্ত’। (আত-তাক্বরীব, রাবী নং ৬২৯১)।
(২)
ইমাম নাসাঈ (রহঃ) বলেছেন, ‘তিনি তাদলীস করতেন’। (আস-সুনানুল কুবরা হা/২১১২; যিকরুল মুদাল্লিসীন, রাবী
১৫)।
(৩)
সুয়ূত্বী (রহঃ) (আসমাউল
মুদাল্লিসীন জীবনী নং ৫৪), বুরহানুদ্দীন হালাবী (রহঃ) (আত-তাবঈন লি আসমাইল মুদাল্লিসীন
জীবনী নং ৭২), ইবনুল ইরাক্বী (রহঃ) (আল-মুদাল্লিসূন জীবনী নং ৫৯)। তাকে প্রসিদ্ধ
মুদাল্লিস হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
(৪) শায়খ
আলবানী (আহকামুল জানায়েয
পৃ. ১৬০), শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ (আল-ফাতহুল মুবীন পৃ. ১২০) এবং শায়খ ইরশাদুল হক আছারী
(মুসনাদুস সার্রাজ
হা/৫৭২) তাকে মুদাল্লিস বলেছেন।
দ্বিতীয় সমালোচিত
রাবীঃ অপর রাবী জাবের আল-জু‘ফী চরম সমালোচিত রাবী। নিমেণ তাঁর
সম্পর্কে ইমামদের মতামত উল্লেখ করা হল-
(১)
হাফেয হায়ছামী (রহঃ) বলেছেন, ‘এতে জাবের বিন ইয়াযীদ আল-জু‘ফী আছেন। তিনি যঈফ। যদিও
শু‘বা ও সুফিয়ান তাকে ছিক্বাহ বলেছেন’। (মাজমা হা/১৭৪২)।
(২) শায়েখ আলবানী (রহঃ) বলেছেন, ‘জাবের বিন ইয়াযীদ আল-জু‘ফী পরিত্যক্ত রাবী’। (আল-ইরওয়া হা/১১৪৯)।
(৩)
ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেছেন, মুহাদ্দিছগণ তাকে দুর্বল বলেছেন’। (তাফসীর ইবনু কাছীর ৩/৪৭)।
(৪) ইমাম
বুখারী (আয-যুআফাউছ
ছগীর, রাবী নং ৫০), ইমাম মুসলিম (আল-কুনা ওয়াল আসমা, রাবী নং ২৯১৮), ইমাম নাসাঈ (আয-যুআফা
ওয়াল-মাতরূকীন, রাবী নং ৯৮), ইবনে আবী হাতেম (আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল, রাবী নং ২০৪৩), ইবনে হিববান (আল-মাজরূহীন, রাবী নং
১৭৩) এবং ইবনে আদী (আল-কামিল, রাবী নং ৩২৬)
সহ আরো অনেক বিদ্বান তার সমালোচনা করেছেন। উপরের আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হ’ল যে, জাবের
জু‘ফী প্রত্যাখ্যাত রাবী। কেউ কেউ তাকে কাযযাবও বলেছেন।
উল্লেখ্য
যে, এর অন্য একটি সনদে জাবের জু‘ফীর পরিবর্তে ‘লায়ছ বিন আবী সুলাইম’ রয়েছেন। তিনিও
যঈফ রাবী। তিনি সত্যবাদী। কিন্তু শেষ বয়সে ইখতিলাত্বের শিকার হন। আর তাঁর হাদীছসমূহের
মাঝে পার্থক্য করতে পারতেন না (কোন হাদীছটি ইখতিলাত্বের আগে আর কোনটি পরের তা বুঝতে
পারতেন না)।
ইবনুল
জাওযী (আত-তাহকীক ফী
মাসাইলিল খিলাফ হা/১৩১), আবুল হাসান ইবনুল ক্বাত্ত্বান (বায়ানুল ওয়াহমি ওয়াল
ঈহাম ফী কুতুবিল আহকাম ৫/২৯৫), ইবনে আব্দুল হাদী (তানকীহুত তাহকীক ৩/২৩৪), হাফেয যায়লাঈ (নাছবুর রায়াহ
২/৪৭৫), হাফেয হায়ছামী (মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৬৩৬৪), হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী
(ইতহাফুল মাহারাহ হা/২৭৬০;
তাকরীবুত তাহযীব, রাবী নং ৫৬৮৫; তাবাকাতুল মুদাল্লিসীন, নং ১৬/১৬৮) তাকে
যঈফ ও মুদাল্লিস বলেছেন।
তাছাড়াও
এখানে আমভাবে ক্বিরাআতের কথা এসেছে। ইমামের পিছে আমভাবে যে কোন সূরা পাঠ করা নিষেধ।
কিন্তু সূরা ফাতেহা ব্যতীত। ফাতেহাও ক্বিরাআতের অন্তুর্ভুক্ত। তবে ক্বিরাআত দ্বারা
আমভাবে ফাতেহা সহ সকল সূরাকে বুঝানো হয়। আমভাবে ক্বিরাআত পাঠ করা নিষেধ। তবে খাছভাবে
সূরা ফাতেহা পাঠ করা ওয়াজিব।
আবূ
হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমরা সেজদায় থাকাবস্থায় যদি তোমরা ছালাতে
শরীক হও তবে তোমরাও সেজদা করবে। সেটাকে কিছু গণ্য করবে না। আর যে ব্যক্তি রুকূ পেল
সে যেন পুরো ছালাত পেল তথা ঐ রাক‘আতটি পেল’। (আবূ দাঊদ হা/৮৮৯)।
পর্যালোচনাঃ
সনদ যঈফ। এখানে ইয়াহইয়া নামে একজন সমালোচিত রাবী আছেন। তার সম্পর্কে ইমাম বায়হাক্বী
(রহঃ) বলেছেন, ইয়াহইয়া বিন আবী সুলায়মান শক্তিশালী নন’। (মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/৩৪৬৫)।
ইমাম
নববী (রহঃ) বলেছেন, ‘এটি আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন। এতে ইয়াহইয়া বিন আবী সুলায়মান আল-মাদীনী
আছেন। তিনি যঈফ রাবী’। (খুলাছাতুল আহকাম হা/২৩২৪)।
আলী ও ইবনে মাসঊদ বলেছেন, যে ব্যক্তি রুকূ পেল না সে যেন সিজদা করেই সেটাকে রাক‘আত গণ্য না করে’। (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক্ব হা/৩৩৭১)।
পর্যালোচনাঃ এর সনদ যঈফ। কারণ এখানে ‘আবূ ইসহাক্ব আস-সাবীঈ’ তাদলীস করেছেন। ‘আসমাউল মুদাল্লিসীন’
গ্রন্থে আছে যে, তিনি অত্যধিক তাদলীসকারী এবং ইমাম হিসাবে পরিচিত। (রাবী নং ৪৫)।
ইবনে
হাজার আসক্বালানী (রহঃ) তাঁকে মুদাল্লিস বলেছেন। (তাবাকাতুল মুদাল্লিসীন, রাবী নং ৯১)।
শায়খ
নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) তাঁকে মুদাল্লিস রাবী বলেছেন। (ছহীহাহ হা/১৭০১)।
ওমর
ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেছেন, ইমামের ক্বিরাআতই তোমার জন্য যথেষ্ট। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ
হা/৩৭৮৪)।
তাহক্বীক্ব:
হাদীছটি যঈফ। শায়খ আলী যাঈ (রহঃ) বলেছেন, আনাস বিন সীরীন ৩৩ বা ৩৪ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ
করেছেন। (তাহযীবুত
তাহযীব ১/৩৭৪)।
ওমর
(রাঃ) ২৩ হিজরীতে শহীদ হয়েছিলেন। (তাকরীবুত তাহযীব, জীবনী নং ৪৮৮৮)।
নাফে‘
ওমর (রাঃ)-কে পান নি। (ইতহাফুল মাহরাহ ১২/৩৮)।
সুতরাং
এই বর্ণনাটি মুনক্বাত্বি বা বিচ্ছিন্ন।
‘রাসূল
(ছাঃ), আবূ বকর, ওমর এবং ওছমান (রাঃ) ইমামের পিছে ক্বিরাআত পাঠ হতে নিষেধ করতেন’। (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক্ব
হা/২৮১০)।
তাহক্বীক্ব: প্রখ্যাত
দেওবন্দী আলেম মাওলানা আব্দুল মতীন ছাহেব বলেছেন, ‘এর সনদে আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ
আছেন, তিনি যঈফ’। (দলীলসহ
নামাযের মাসায়েল পৃ. ১৫৬)।
ওমর
(রাঃ) দৃঢ়ভাবে বলেছেন, তোমরা ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ কর না’। (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক
হা/২৮০৪)।
পর্যালোচনা: এখানে
সুফিয়ান বিন উয়ায়নাহ (রহঃ) তাদলীস করেছেন। ইমাম নাসাঈ (যিকরুল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ১৮), বুরহানুদ্দীন
হালাবী (আত-তাবঈন লি-আসমাইল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ২৬) সহ অন্যরা তাকে মুদাল্লিস রাবী
হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
ইবনু
মাসঊদ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পড়ে তার মুখ যদি মাটিতে ভরে যেত’।
(মুছান্নাফ আব্দুর
রাযযাক হা/২৮০৬)।
পর্যালোচনা:
মুহাম্মাদ বিন আজলান (রহঃ) ইবনে মাসঊদ (রাঃ)-কে পাননি। এটা মুহতারাম আব্দুল মতীন ছাহেবও
স্বীকার করেছেন। (লীলসহ
নামাযের মাসায়েল পৃ. ১৫৭)।
ইবনু
মাসঊদ বলেছেন, ‘যে ইমামের পিছে কিরাআত পাঠ করে তার মুখ যদি আগুনে ভরে যেত! (শারহু মাআনিল আছার হা/১৩১০)।
পর্যালোচনা: এটা অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণিত নয়। কারণ এখানে আবূ ইসহাক্ব সাবীঈ রয়েছেন যিনি মুদাল্লিস রাবী। আর মুদাল্লিস রাবীর ‘আন’ যোগে বর্ণনা করা প্রসঙ্গে আব্দুল মতীন ছাহেব লিখেছেন, ‘আর স্বীকৃত কথা যে, মুদাল্লিস রাবী যদি আন (হতে বা থেকে) শব্দ যোগে বর্ণনা করেন, তবে সেটি অবিচ্ছিন্ন সূত্র বলে বিবেচিত হয় না’। (দলীলসহ নামাযের মাসায়েল পৃ. ৮৭)।
অপর
রাবী হুদাইজ সম্পর্কে শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেছেন, ‘এর সনদটি যঈফ। এতে হুদাইজ বিন মুআবিয়া
রয়েছেন। তিনি যঈফ। যেমনটি ইমাম নাসাঈ ও অন্যরা বলেছেন’। (আল-ইরওয়া হা/৫০৩)।
হাফেয
হায়ছামী (রহঃ) বলেছেন, এতে হুদাইজ বিন মুআবিয়া রয়েছেন। তিনি যঈফ। আবূ হাতেম বলেছেন,
তিনি সত্যবাদী স্তরের। তার হাদীছ লেখা যাবে। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১১৪৫৯)।
মুসনাদে
আহমাদের টীকাকারগণ হুদাইজকে যঈফ বলেছেন। (তাহকীক মুসনাদে আহমাদ ৭/৪০৯)।
ইমাম
ইবনে মাঈন (রহঃ) বলেছেন, ‘হুদাইজ (হাদীছ বর্ণনায়) কিছুই নন’। (তারীখে ইবনে মাঈন, দূরীর বর্ণনা, ক্রমিক নং ১৩১৯)।
ইমাম
বুখারী (রহঃ) বলেছেন, ‘মুহাদ্দিছগণ তার কতিপয় হাদীছে সমালোচনা করেছেন’। (আত-তারীখুল কাবীর, ক্রমিক
৩৮৮; আয-যুআফাউছ ছগীর, ক্রমিক ৯৯)।
ইমাম
নাসাঈ (রহঃ) বলেছেন, হুদাইজ বিন মুআবিয়া হ’লেন বছরার অধিবাসী। তিনি শক্তিশালী নন’।
(আয-যুআফাউল মাতরূকীন,
জীবনী নং ১২১)।
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হলো যে, হুদাইজ হলেন যঈফ রাবী। যাকে জমহুর ইমামগণ সমালোচনা
করেছেন।
আবূ
ওয়াইল হ’তে বর্ণিত যে, একজন ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদের নিকটে আসলেন। তিনি বললেন,
আমি কি ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ করবো? আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ তাকে বললেন, নিশ্চয়
ছালাতে গভীর ধ্যান এবং মনোযোগ দিতে হয়। আর এর জন্য ইমামই তোমার জন্য যথেষ্ট। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ
হা/৩৭৮০)।
পর্যালোচনা:
এখানে আমভাবে ক্বিরাআতের কথা আছে। খাছভাবে ফাতিহা পড়ার নিষেধাজ্ঞার উল্লেখ থাকতে হবে।
তা না হলে আম দলীল দ্বারা খাছ দলীলকে বাতিল করা হবে যা গ্রহণীয় নয়।
যে
ব্যক্তি ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ করবে তার মুখে (যদি) জ্বলন্ত অঙ্গার হত! (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ
হা/৩৭৮২)।
পর্যালোচনা:
সনদ যঈফ। এখানে কাতাদা নামক একজন প্রসিদ্ধ রাবী রয়েছেন। তাঁর সম্পর্কে হাফেয যাহাবী
(রহঃ) বলেছেন, ‘তিনি মুদাল্লিস। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, রাবী নং ১৩২; মীযানুল ইতিদাল, রাবী নং ৬৮৬৪)।
হাফেয
আলাঈ (রহঃ) বলেছেন, ক্বাতাদা বিন দিআমাহ অন্যতম প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস রাবী। তিনি প্রচুর
পরিমাণে মুরসাল বর্ণনা রেওয়ায়াত করতেন। (জামেউত তাহছীল, রাবী নং ৬৩৩; এছাড়াও আল-মুদাল্লিসীন রাবী নং ৪৯;
আত-তাবঈন লি-আসমাইল মুদাল্লিসীন রাবী নং ৫৭ ইত্যাদি)।
ইবনে
হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেছেন,‘ক্বাতাদা বিন দিআমাহ আস-সাদূসী আল-বছরী আনাস বিন মালেক
(রাঃ) এর ছাত্র। তিনি তার যামানার যুগশ্রেষ্ঠ হাফেয ছিলেন। এবং তিনি তাদলীসের কারণে
প্রসিদ্ধ। নাসাঈ ও অন্যরা তাকে মুদাল্লিস রাবী হিসাবে উল্লেখ করেছেন’। (তাবাকাতুল মুদাল্লিসীন,
রাবী নং ৯২; আল-ফাতহুল মুবীন পৃ. ১১১, রাবী নং ৯২)।
অপর
রাবী আবূ নিজাদ হলেন মাসতূর বা মাজহূলুল হাল।
হাম্মাদ
বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পড়ে তার মুখ যদি মাদকে পূর্ণ হতো। (বুখারী, জুযউল ক্বিরাআত
পৃ. ১৪)।
পর্যালোচনা
: এর কোন সনদ ইমাম বুখারী (রহঃ) উল্লেখ করেননি। আমাদের জানামতে এর কোন সনদ নেই। না
যঈফ আর না ছহীহ।
আলী
বলেছেন, ‘যে ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ করে সে স্বাভাবিক নিয়মের উপর নেই’। (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক্ব
হা/২৮০৬)।
পর্যালোচনা:
মুহাম্মাদ বিন আজলান মুদাল্লিস রাবী। তার মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। তদুপরি তার সাথে
আলীর সাক্ষাৎ হওয়া প্রমাণিত নয়। ইবনে হাজার (রহঃ) বলেছেন,
মুহাম্মাদ
বিন আজলান আল-মাদানী স্বল্পবয়সী তাবেঈ এবং প্রসিদ্ধ। তিনি ইমাম মালেকের অন্যতম উস্তাদ।
ইবনে হিববান তাকে মুদাল্লিস বলেছেন। (তাবাকাতুল মুদাল্লিসীন, রাবী নং ৯৮; আল-ফাৎহুল মুবীন পৃ. ১১৭; তাকরীবুত
তাহযীব, রাবী নং ৬১৩৬)।
সুতরাং
বর্ণনাটি যঈফ।
আলী
বলেছেন,‘যে ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ করলো সে স্বাভাবিক ধর্ম হতে বিচ্যুত হয়ে গেল’।
(মুছান্নাফ ইবনে আবী
শায়বাহ হা/৩৭৮১)।
পর্যালোচনা: যঈফ।
মুহাম্মাদ বিন সুলায়মান দুর্বল রাবী। (ড.সাদ বিন নাছির বিন আব্দুল আযীয, তাহকীক মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ
৩/৩৩১)।
শায়খ
আলবানী তাকে যঈফ বলেছেন। (ইরওয়া হা/৫০৩)।
যায়েদ
বিন ছাবেত বলেছেন, যে ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ করল তার কোন ছালাত নেই। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ
হা/৩৭৮৮)।
পর্যালোচনা:
এর সকল রাবীই ছিক্বাহ। তবে মূসা বিন সা‘দ বিন যায়েদের সাথে তার দাদা যায়েদ বিন ছাবেতের
সাক্ষাৎ হওয়া প্রমাণিত নয়। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন,
এই
সনদের রাবীদের একে অপর থেকে হাদীছ শ্রবণের বিষয়টি অজ্ঞাত। আর এমন (বিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণিত)
হাদীছ ছহীহও হয় না। (তাহকীক জুযউল ক্বিরাআত হা/৪৫)।
অত্র
মওকূফ বর্ণনাটি যঈফ হলেও এর মরফূ সূত্রে বর্ণিত হাদীছটি জাল। এটাকেই আলবানী (রহঃ)
‘বাতিল’ বলেছেন। (যঈফা
হা/৯৯৩)।
সারকথা:
মারফূ হিসাবে এটা জাল। তবে মওকূফ হিসাবে যঈফ, সনদে বিচ্ছিন্নতা থাকার কারণে।
ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেছেন, ইমামের ক্বিরাআতই তোমার জন্য যথেষ্ট। আস্তে পাঠ করুক বা জোরে। (দারাকুতনী হা/১২৫২)।
পর্যালোচনা: সনদ
যঈফ। ইমাম দারাকুতনী নিজেই বলেছেন,
‘আছেম
শক্তিশালী নন। একে মরফূ হিসাবে বর্ণনা করায় তার ভ্রম হয়েছে’। (দারাকুতনী হা/১২৫২)।
এছাড়াও
এখানে ক্বিরাআতের কথা আছে। খাছভাবে সূরা ফাতিহার কথা নেই। ইমাম বাযযার (রহঃ) বলেছেন,
‘আছেম শক্তিশালী নন’। (মুসনাদুল বাযযার হা/৩৮২)।
ইমাম
মুগলত্বাঈ হানাফী (রহঃ) বলেছেন, ‘বায়হাক্বী এটা আছেম বিন আবদুল আযীয হতে বর্ণনা করেছেন।
আর তিনি যঈফ রাবী’। (শরহে ইবনে মাজাহ হা/৯৪৩-এর আলোচনা দ্র.)।
হাফেয
যাহাবী (রহঃ) বলেছেন, ‘আছেম বিন আব্দুল আযীয হলেন যঈফ’। (তানকীহুত তাহকীক মাসআলা নং ১২৬; আরো দেখুন : আল-কাশিফ,
রাবী নং ২৫০৫; আল-মুগনী ফিয যুআফা, রাবী নং ২৯৮৬; আল-মুক্বতানা ফী সারদিল কুনা, রাবী
নং ৩৯০৭)।
ইমাম
আবূ যুরআহ (রহঃ) বলেছেন, ‘আমি বললাম, আছেম বিন আব্দুল আযীয কেমন? তিনি বললেন, আছেম
শক্তিশালী রাবী নন’। বুখারী (রহঃ) বলেছেন, ‘আছেম বিন আব্দুল আযীয আল-আশজাঈর ব্যাপারে
আপত্তি রয়েছে’। (আয-যুআফাউল কাবীর, ক্রমিক নং ১৩৬৪)।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হয়েছে যে, ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা
পাঠ করার পক্ষে আলোচ্য দলীলগুলি গ্রহণযোগ্য নয়। আর কিরাআত পাঠের নিষিদ্ধতা সম্পর্কে
বর্ণিত হাদীছগুলো আম দলীল। এগুলোতে খাছভাবে সূরা ফাতিহার কথা না পড়ার কথা বলা নেই।
সুতরাং এ সকল দলীলের ভিত্তিতে ছালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ থেকে বিরত থাকা যাবে না।
ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়ার ছহীহ হাদীছ সমূহঃ
ইমাম
ও মুক্তাদী সকলের জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা ফরয। কারণ কেউ ছালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ না
করলে তার ছালাত হয় না।
(১) আবূ
বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ, আমর আন নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... উবাদাহ ইবনু সামিত
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি (সালাতে)
সূরাহ্ ফা-তিহাহ্ পাঠ করে না তার সালাতই হয় না।
(সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন),৭৫৬,সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৭৬০-(৩৪/৩৯৪), মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৮২২, ৮২৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮২২, সুনান ইবনু মাজাহ ৮৩৭, সুনান
আদ-দারেমী, ১২৭৪, নাসায়ী ৯১০-১১, ৯২০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ২৪৭, আহমাদ ২২৬৭৭,
২২৮০৭, ইবনু হিব্বান ১৭৮২, ১৭৮৫, ১৭৮৬, ১৭৯২, ১৮৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৫৮, ইসলামিক
সেন্টার ৭৭১, ইরওয়া ৩০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(বিঃ দ্রঃ-
আমাদের দেশের হানাফী ভাইয়েরা ইমামের পেছনে সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করেন না, এটা নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ‘আমলের বিপরীত। ইমামের পিছনে মুক্তাদীকে অবশ্যই সূরা আল-ফাতিহা
পাঠ করতে হবে। মুক্তাদী ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা না পড়লে তার সালাত, সালাত বলে গণ্য
হবে না ।
বুখারীর
অন্য বর্ণনায় জুযউল ক্বিরাআতের মধ্যে আছে- ‘আমর্ বিন শুয়াইব তাঁর পিতা হতে, তাঁর পিতা
তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করে বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন তোমরা কি আমার পেছনে কিছু পড়ে থাক? তাঁরা বললেন, হাঁ আমরা খুব তাড়াহুড়া করে
পাঠ করে থাকি। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন তোমরা উম্মুল কুরআন
অর্থাৎ সূরা ফাতিহা ব্যতিত কিছুই পড়বে না।
(বুখারী ১ম
১০৪ পৃষ্ঠা। জুযউল কিরায়াত। মুসলিম ১৬৯, ১৭০ পৃষ্ঠা। আবূ দাউদ ১০১ পৃষ্ঠা। তিরমিযী
১ম খণ্ড ৫৭, ৭১ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৪৬ পৃষ্ঠা। ইব্নু মাজাহ ৬১ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তা মুহাম্মাদ
৯৫ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তা মালিক ১০৬ পৃষ্ঠা। সহীহ ইব্নু খুযায়মাহ ১ম খণ্ড ২৪৭ পৃষ্ঠা। মুসলিম
ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাদীস নং ৭৫৮-৭৬৭ ও ৮২০-৮২৪। হাদীস শরীফ, মাওঃ আবদুর রহীম, ২য় খণ্ড
১৯৩-১৯৬ পৃষ্ঠা, ইসলামিয়াত বি-এ, হাদীস পর্ব ১৪৪-১৬১ পৃষ্ঠা। হিদায়াহ দিরায়াহ ১০৬ পৃষ্ঠা।
মেশকাত ৭৮ পৃষ্ঠা। বুখারী আযীযুল হক ১ম হাদীস নং ৪৪১। বুখারী- আধুনিক প্রকাশনী ১ম খণ্ড
হাদীস নং ৭১২।বুখারী-ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭১৮। তিরমিযী-ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১ম খণ্ড হাদীস নং ২৪৭। মিশকাত- নূর মোহাম্মদ আযমী ২য় খণ্ড ও মাদ্রাসা পাঠ্য হাদীস নং
৭৬৫, ৭৬৬, ৭৯৪। বুলূগুল মারাম ৮৩ পৃষ্ঠা। কিমিয়ায়ে সায়াদাত ১ম খণ্ড ২০৪ পৃষ্ঠা ।)
ইমাম
বুখারী উক্ত হাদীছ উল্লেখ করার পূর্বে নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ নির্ধারণ করেন, ‘প্রত্যেক
ছালাতে ইমাম-মুক্তাদী উভয়ের জন্য ক্বিরা‘আত (সূরা ফাতিহা) পড়া ওয়াজিব। মুক্বীম অবস্থায়
হোক বা সফর অবস্থায় হোক, জেহরী ছালাতে হোক বা সের্রী ছালাতে হোক’। (ছহীহ বুখারী ১/১০৪পৃঃ, হা/৭৫৬-এর অনুচ্ছেদ দ্রঃ)।
উল্লেখ্য
যে, উক্ত হাদীছ পেশ করে ব্যাখ্যা দেয়া হয় যে, এই হাদীছ একাকী ছালাতের জন্য। অথচ উক্ত
দাবী সঠিক নয়; বরং বিভ্রান্তিকর। দাবী যদি সঠিক হয়, তাহলে জামা‘আতে ছালাত আদায়ের সময়
যোহর ও আছর ছালাতে এবং মাগরিবের শেষ রাক‘আতে ও এশার ছালাতের শেষ দুই রাক‘আতেও কি সূরা
ফাতিহা পড়া যাবে না? কারণ মুক্তাদী তো একাকী নয়, ইমামের সাথে আছে? অথচ যোহর ও আছরের
ছালাতে মুক্তাদীরা সূরা ফাতিহাসহ অন্য সূরাও পাঠ করতে পারবে মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত
হয়েছে। (ইবনু মাজাহ
হা/৮৪৩, পৃঃ ৬১; সনদ ছহীহ, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৫০৬)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক)
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যোহর ও আসর সালাতের প্রথম
দু রাকআতে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা ও অন্য সূরাহ এবং শেষ দু সালাতে কেবল সূরাহ ফাতিহা
পড়তাম।(সুনান ইবনু
মাজাহ, ৮৪৩, ইরওয়াহ ৫০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতে প্রথম দু’ রাক্‘আতে সূরাহ্ ফাতিহাহ্ এবং আরও দু’টি সূরাহ্ পাঠ করতেন। পরের দু’ রাক্‘আতে শুধু সূরাহ্ ফাতিহা পাঠ করতেন। আর কখনও কখনও তিনি আমাদেরকে আয়াত শুনিয়ে পাঠ করতেন। তিনি প্রথম রাক্‘আতকে দ্বিতীয় রাক্‘আত অপেক্ষা লম্বা করে পাঠ করতেন। এভাবে তিনি ‘আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)ও আদায় করতেন। এভাবে তিনি ফাজ্রের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮২৮, সহীহ বুখারী ৭৫৯, মুসলিম ৪৫১, আবূ দাঊদ ৭৯৮, নাসায়ী ৯৭৮, আহমাদ ২২৫২০, দারেমী ১৩২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তাছাড়া
একাকী বলতে মৌলিক কোন ছালাত আছে কি? ফরয ছালাত তো জামা‘আতেই পড়তে হবে। এমনকি কোথাও
দুইজন থাকলেও জামা‘আত করে ছালাত আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (বুখারী হা/৬৫৮, ১/৯০
পৃঃ, (ইফাবা হা/৬২৫, ২/৬২ পৃঃ); মুসলিম হা/১৫৭০, ১/২৩৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৪০৭); তিরমিযী
হা/২০৫; মিশকাত হা/৬৮২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৩১, ২/২০৭ পৃঃ, ‘আযানের সংশ্লিষ্ট’ অনুচ্ছেদ)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
মালিক
ইব্নু হুওয়াইরিস (রাযি.) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে র্বর্ণিত,
তিনি বলেন: সালাতের সময় হলে তোমাদের দু’জনের একজন আযান দিবে এবং ইক্বামাত বলবে। অতঃপর
তোমাদের মধ্যে যে বয়সে অধিক বড় সে ইমামাত করবে।
(সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৫৮, ৬২৮, আধুনিক প্রকাশনী ৬১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬২৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
কখনো
কখনো ফরয ছালাত একাকী পড়া হয়। তাহলে ঐ হাদীছটি কি শুধু কখনো কখনো একাকী ছালাতের জন্য
প্রযোজ্য? না শুধু নফল ছালাতের জন্য? আর নফল ছালাত তো কেউ না পড়লেও পারে। তাহলে উক্ত
হাদীছের ব্যাপারে এ ধরনের দাবী কিভাবে যথার্থ হতে পারে? এ জন্য ইমাম বুখারীসহ অন্যান্য
প্রায় সকল মুহাদ্দিছ জামা‘আতে পড়ার পক্ষেই উক্ত হাদীছ পেশ করেছেন। (ইবনু মাজাহ হা/৮৩৭)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক)
উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে
ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করেনি, তার সালাত হয়নি।
(সুনান ইবনু মাজাহ,
৮৩৭, বুখারী ৭৫৬, মুসলিম ৩৯১-৩, তিরমিযী ২৪৭, নাসায়ী ৯১০-১১, ৯২০; আবূ দাঊদ ৮২২-২৪,
আহমাদ ২২১৬৯, ২২১৮৬, ২২২৩৭, ২২২৪০; দারিমী ১২৪২, ইরওয়াহ ৩০২, সহীহ আবী দাউদ ৭৮০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূস
সাইব (রহঃ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন সালাত পড়লো এবং তাতে উম্মুল কুরআন (সূরাহ ফাতিহা) পড়েনি তার সালাত
অসম্পূর্ণ। আবূস সাইব (রহঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আবূ হুরাইরাহ! আমি কখনো কখনো ইমামের
সাথে সালাত পড়ি। তিনি আমার বাহুতে খোঁচা দিয়ে বলেন, হে ফারিসী! তুমি তা মনে মনে পড়ো।
(সুনান ইবনু মাজাহ,
৮৩৮, মুসলিম ৩৯৫, তিরমিযী ২৯৫৩, নাসায়ী ৯০৯, আবূ দাঊদ ৮১৯-২১, আহমাদ ৭২৪৯, ৭৭৭৭, ৭৮৪১,
৯২৪৫, ৯৫৮৪, ৯৬১৬, ৯৮৪২, ৯৯৪৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৮৯, সহীহ আবী দাউদ ৭৭৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sah।
অতএব
উক্ত হাদীছগুলো জামা‘আত ও একাকী উভয় অবস্থার সাথেই সম্পৃক্ত।
(২) আবু
হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন ছালাত আদায় করল অথচ
সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার ছালাত অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। এ কথাটি তিনি তিনবার বলেন। তখন
আবু হুরায়রাকে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা যখন ইমামের পিছনে থাকি? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি
চুপে চুপে পড়। কেননা আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি ছালাতকে
আমার মাঝে ও আমার বান্দার মাঝে দুই ভাগে ভাগ করেছি। আমার বান্দার জন্য সেই অংশ যা সে
চাইবে। বান্দা যখন বলে, ‘আল-হামদুলিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন’ (যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর
জন্য, যিনি জগৎ সমূহের প্রতিপালক)। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল।
বান্দা যখন বলে, ‘আর-রহমা-নির রহীম’ (যিনি করুণাময়, পরম দয়ালু)। তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা
আমার গুণগান করল। বান্দা যখন বলে, ‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দ্বীন’ (যিনি বিচার দিবসের মালিক)
তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করল। বান্দা যখন বলে, ইয়্যা-কানা‘বুদু
ওয়া ইয়্যা-কানাসতাঈন (আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা
করি)। তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মাঝে আধাআধি ভাগ (অর্থাৎ ইবাদত আমার
জন্য আর প্রার্থনা বান্দার জন্য) এবং আমার বান্দার জন্য সেই অংশ রয়েছে, যা সে চাইবে।
যখন বান্দা বলে, ‘ইহদিনাছ ছিরাত্বাল মুস্তাক্বীম, ছিরা-ত্বল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলায়হিম,
গয়রিল মাগযূবি ‘আলায়হিম ওয়ালায য-ল্লীন (আপনি আমাদের সরল পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ
যাদের উপর আপনি রহম করেছেন। তাদের পথ নয় যারা অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্ট)। তখন আল্লাহ বলেন,
আমার বান্দা যা চেয়েছে তা তার জন্য’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮২৩, সহীহ মুসলিম ৩৯৫, তিরমিযী ২৯৫৩,
ইবনু মাজাহ্ ৮৩৮, আহমাদ ৭২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত
হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইমাম-মুক্তাদী সকলেই সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। সূরা ফাতিহা
শুধু ইমামের জন্য নয়। কারণ আল্লাহর বান্দা শুধু ইমাম নন, মুক্তাদীও আল্লাহর বান্দা।
আর আবু হুরায়রাহ (রাঃ) সেটা বুঝানোর জন্যই উক্ত হাদীছ পেশ করেছেন। অতএব ইমামের পিছনে
মুক্তাদীও সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।
(৩)
রিফা‘আহ্ ইবনু রাফি‘ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মসজিদে এসে সালাত আদায়
করলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে সালাম জানালেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তুমি আবার সালাত আদায়
কর। তোমার সালাত হয়নি। লোকটি বলল, হে আল্লাহর
রসূল! কিভাবে সালাত আদায় করবো তা আমাকে শিখিয়ে দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তুমি ক্বিবলা মুখী হয়ে প্রথমে তাকবীর বলবে। তারপর সূরাহ্ ফাতিহা পাঠ করবে। এর
সাথে আর যা পারো (কুরআন থেকে) পড়ে নিবে। তারপর রুকূ‘ করবে। (রুকূ‘তে) তোমার দু’ হাতের
তালু তোমার দু’ হাঁটুর উপর রাখবে। রুকূ‘তে প্রশান্তিতে থাকবে এবং পিঠ সটান সোজা রাখবে।
রুকূ‘ হতে উঠে পিঠ সোজা করে মাথা তুলে দাঁড়াবে যাতে হাড়গুলো নিজ নিজ জায়গায় এসে যায়।
তারপর সিজদা করবে। সাজদায় প্রশান্তির সাথে থাকবে।
(মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৮০৪, ছহীহ ইবনে হিববান হা/১৭৮৪, আবূ দাঊদ ৮৫৯, ৮৬০, আহমাদ ১৮৫১৬,
সহীহ আল জামি ৩২৪, তিরমিযী ৩০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
অপব্যাখ্যা ও তার জবাবঃ
জেহরী
ও সের্রী কোন ছালাতেই ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া যাবে না। দলীল হিসাবে নিম্নের আয়াত
ও কিছু হাদীছ পেশ করা হয়।
অপব্যাখ্যা ও তার
জবাবঃ
(এক)
জেহরী ও সের্রী কোন ছালাতেই ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা
পড়া যাবে না। দলীল হিসাবে নিম্নের আয়াত ও কিছু হাদীছ পেশ করা হয়।
(ক)
আল্লাহ বলেন, وَإِذَا
قُرِئَ
الْقُرْآنُ
فَاسْتَمِعُوْا
لَهُ
وَأَنْصِتُوْا
لَعَلَّكُمْ
تُرْحَمُوْنَ
‘আর যখন কুরআন তেলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর এবং চুপ থাক। তোমাদের
উপর রহম করা হবে’ (আ‘রাফ
২০৪)। আরো বলা হয় যে, ছালাতে কুরআন পাঠ করার বিরুদ্ধেই উক্ত আয়াত নাযিল
হয়।
পর্যালোচনাঃ মূলতঃ
উক্ত আয়াতে তাদের কোন দলীল নেই। বরং তারা অপব্যাখ্যা করে এর হুকুম লংঘন করে থাকে। কারণ
কুরআন পাঠ করার সময় চুপ থেকে মনোযোগ দিয়ে শুনতে বলা হয়েছে। কিন্তু যোহর ও আছরের ছালাতে
এবং মাগরিবের শেষ রাক‘আতে ও এশার শেষ দুই রাক‘আতে ইমাম কুরআন পাঠ করেন না। অথচ তখনও
তারা সূরা ফাতিহা পাঠ করে না।
দ্বিতীয়তঃ সূরা
ফাতিহা উক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই উক্ত আয়াতের আমল বিদ্যমান। কারণ সূরা ফাতিহার
পর ইমাম যা-ই তেলাওয়াত করুন মুক্তাদী তার সাথে পাঠ করে না, যদি ইমাম ছোট্ট কোন সূরাও
পাঠ করেন। বরং মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করে থাকে। তাছাড়া উক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে মুহাম্মাদ
(ছাঃ)-এর উপর। আর তিনিই সূরা ফাতিহাকে এর হুকুম থেকে পৃথক করেছেন এবং চুপে চুপে পাঠ
করতে বলেছেন। (ছহীহ
ইবনে হিববান হা/১৮৪১, তাহক্বীক্ব আলবানী, সনদ ছহীহ লিগায়রিহী; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/২৮০৫।
মুহাক্কিক হুসাইন সালীম আসাদ বলেন, এর সনদ জাইয়িদ)।
আর
এটা আল্লাহর নির্দেশেই হয়েছে। (নাজম ৩-৪; আবুদাঊদ হা/১৪৫)।
এ
বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা সামনে রয়েছে। উল্লেখ্য যে, উক্ত আয়াতের হুকুম ব্যাপক। সর্বাবস্থায়
কুরআন তেলাওয়াত মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। (মির‘আতুল মাফাতীহ ৩/১২৫ পৃঃ)।
তাছাড়া
আল্লাহ তা‘আলাও সূরা ফাতিহাকে কুরআন থেকে পৃথক করে উল্লেখ করেছেন। রাসূল (ছাঃ)-কে লক্ষ্য
করে বলেন, وَلَقَدْ آَتَيْنَاكَ
سَبْعًا
مِنَ
الْمَثَانِي
وَالْقُرْآَنَ
الْعَظِيْمَ
‘আমি আপনাকে মাছানী থেকে সাতটি আয়াত এবং মহান গ্রন্থ আল-কুরআন দান করেছি’ (সূরা হিজর
৮৭)। সুতরাং সূরা ফাতিহা ও কুরআন পৃথক বিষয়। যেমন ভূমিকা মূল গ্রন্থ থেকে পৃথক। এটি
কুরআনের ভূমিকা। ভূমিকা যেমন একটি গ্রন্থের অধ্যায় হতে পারে কিন্তু মূল অংশের অন্তর্ভুক্ত
হতে পারে না। তেমনি সূরা ফাতিহা কুরআনের ভূমিকা। আর ‘ফাতিহা’ অর্থও ভূমিকা। অতএব ক্বিরাআত
বলতে সূরা ফাতিহা নয়। যেমন ইমাম বুখারী (রহঃ) পরিষ্কারভাবে দাবী করেছেন। (বুখারী, আল-ক্বিরাআতু
খালফাল ইমাম, পৃঃ ২০)।
অনুরূপ
ইবনুল মুনযিরও বলেছেন। (ইবনুল মুনযির, আল-আওসাত্ব ৪/২২৪ পৃঃ হা/১২৭১-এর আলোচনা দ্রঃ)।
(খ) যোহর
ও আছরের ছালাতে সূরা ফাতিহা না পড়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, ইমামের আগেই যদি মুক্তাদীর
ক্বিরাআত পড়া হয়ে যায়, তাহলে ইমামের অনুসরণ করা হবে না। তাছাড়া ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ
সন্ধানে’ বইয়ে কোন প্রমাণ ছাড়াই জোরপূর্বক লেখা হয়েছে, فَاسْتَمِعُوْا لَهُ وَأَنْصِتُوْا ‘শব্দ দুটি সুস্পষ্টভাবে একথার প্রমাণ করে যে, যদি
ইমাম উচ্চ আওয়াজে কিরাত পড়ে তাহলে মুক্তাদীর কর্তব্য হচ্ছে, সে মনোযোগের সাথে উক্ত
কিরাত শ্রবণ করবে। আর (দ্বিতীয় শব্দটি অর্থাৎ وَأَنْصِتُوْا
(নীরব থাকবে) বলার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,) যদি ইমাম নিম্ন আওয়াজেও কিরাত পড়ে তাহলেও
মুক্তাগীন (মুক্তাদীগণ) নীরবই থাকবে, কিছুই পড়বে না’। (ঐ, পৃঃ ২৬০-২৬১)।
পর্যালোচনাঃ সুধী
পাঠক! পবিত্র কুরআনের আয়াতটির কিভাবে উদ্ভট ব্যাখ্যা দেয়া হল তা কি লক্ষ্য করেছেন?
মনে হল, আয়াতটা লেখকের উপরই নাযিল হয়েছে। তা না হলে এভাবে কেউ ব্যাখ্য দিতে পারেন?
যেখানে শর্ত করা হয়েছে, কুরআন যখন তেলাওয়াত করা হবে তখন মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং
চুপ থাকতে হবে। এর মধ্যে কিভাবে যোহর ও আছর ছালাত অন্তর্ভুক্ত হল? মূল কারণ হল, এই
অপব্যাখ্যা ছাড়া তাদের জন্য অন্য কোন উপায় নেই। অথচ যোহর ও আছর ছালাতে মুক্তাদীরা সূরা
ফাতিহা তো পড়বেই তার সাথে অন্য সূরাও পড়তে পারে। উক্ত মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
জাবের
ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা যোহর ও আছর ছালাতে প্রথম দুই রাক‘আতে ইমামের পিছনে
সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করতাম। আর পরের দুই রাক‘আতে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ
করতাম। (ইবনু মাজাহ
হা/৮৪৩, পৃঃ ৬১; সনদ ছহীহ, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৫০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
ইমামের
অনুসরণের যে দাবী করা হয়েছে, তাও অযৌক্তিক। কারণ রুকূ, সিজদা, তাশাহ্হুদ, দরূদ, দু‘আ
মাছূরাহ সবই ইমাম-মুক্তাদী উভয়ে প্রত্যেক ছালাতে পড়ে থাকে। সে ব্যাপারে কখনো প্রশ্ন
আসে না যে, ইমাম আগে পড়লেন, না মুক্তাদী আগে পড়লেন। সমস্যা শুধু সূরা ফাতিহার ক্ষেত্রে।
আরো দুঃখজনক হল, ফজর, মাগরিব কিংবা এশার ছালাতের ক্বিরাআত চলাকালীন একজন মুক্তাদী ছালাতে
শরীক হয়ে প্রথমে নিয়ত বলে, তারপর জায়নামাযের দু‘আ পড়ে অতঃপর তাকবীর দিয়ে ছানা পড়ে থাকে।
অথচ সূরা ফাতিহা পাঠ করে না। তাহলে সূরা ফাতিহা কী অপরাধ করল? ক্বিরাআত অবস্থায় যদি
সূরা ফাতিহা না পড়া যায় তাহলে উদ্ভট নিয়ত, জায়নামাযের ভিত্তিহীন দু‘আ ও ছানা পড়ার দলীল
কোথায় পাওয়া গেল? অতএব যারা কোন ছালাতেই, কোন রাক‘আতেই সূরা ফাতিহা পড়া জায়েয মনে করে
না, তাদের জন্য উক্ত আয়াতে কোন দলীল নেই। তাদের দাবী কল্পনাপ্রসূত, উদ্ভট, মনগড়া ও
অযৌক্তিক।
(দুই) শুধু জেহরী ছালাতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া যাবে না। অনেক শীর্ষ
বিদ্বান এই দাবী করেছেন। শায়খ আলবানী (রহঃ) জেহরী ছালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার বিষয়টিকে
‘মানসূখ’ বলেছেন। সেই সাথে অনেক আছারকেও বিশুদ্ধ বলেছেন। দলীল হিসাবে নিম্নের হাদীছ
পেশ করা হয়েছে।
(দুই) শুধু
জেহরী ছালাতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া যাবে না। অনেক শীর্ষ বিদ্বান এই দাবী করেছেন।
শায়খ আলবানী (রহঃ) জেহরী ছালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার বিষয়টিকে ‘মানসূখ’ বলেছেন। (ছিফাতু ছালাতিন নাবী,
পৃঃ ৯৮)।
সেই
সাথে অনেক আছারকেও বিশুদ্ধ বলেছেন। (দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৯২)।
দলীল হিসাবে নিম্নের হাদীছ পেশ করা হয়েছেঃ
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেহরী সালাত
অর্থাৎ- শব্দ করে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়া সালাত শেষ করে সালাত আদায়কারীদের দিকে ফিরে
বললেন, তোমাদের কেউ কি এখন আমার সাথে ক্বিরাআত (কিরআত) তিলাওয়াত করেছো? এক ব্যক্তি
বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! (আমি পড়েছি)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তাই তো, আমি সালাতে মনে মনে বলছিলাম, কি হলো, আমি ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করতে
আটকিয়ে যাচ্ছি কেন? আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
এ কথা শুনার পর লোকেরা রসূলের পেছনে জেহরী সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ বন্ধ করে দিয়েছিল।
(মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৮৫৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮২৬, তিরমিযী ৩১২, নাসায়ী ৮৪৮, ৯১৯, মালিক ৪৪, ২৮৬, আহমাদ ৮০০৭,
ইবনু মাজাহ ৮৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দৃষ্টি আকর্ষণঃ
হাদীসের বক্তব্যে বুঝা যায় যে, মুক্তাদীগণের মধ্যে কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাথে স্বরবে ক্বিরাআত করেছিলেন। যার জন্য ইমাম হিসেবে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্বিরাআতে, বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছিল। ইতিপূর্বে আনাস
ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস দু’টিতে নীরবে পড়ার কথা এসেছে, যাতে বিঘ্ন সৃষ্টি
না হয়। শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী (রহঃ) বলেন, জেহরী সালাতে মুক্তাদীরা এমনভাবে সূরায়ে
ফাতিহা পাঠ করবে, যাতে ইমামের ক্বিরাআতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়- (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ
২/৯)।অতএব নীরবে ইমামের পিছনে সূরায়ে ফাতিহা পড়লে ইমামের ক্বিরাআতে বিঘ্ন সৃষ্টির প্রশ্নই
আসে না। উল্লেখ্য যে, হাদীসের শেষাংশে অতঃপর লোকেরা ক্বিরাআত থেকে বিরত হলো কথাটি
‘মুদরাজ’ যা ইবনু শিহাব যুহরী কর্তৃক সংযুক্ত। (নায়লুল আওত্বার ৩/৬৭)।
আরেকটি হাদীছ পেশ
করা হয়ঃ
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ ইমাম এজন্য নিয়োগ করা হয় যে, তাকে অনুসরণ করা হবে। তাই ইমাম ‘আল্লা-হু আকবার’
বললে তোমরাও ‘আল্লা-হু আকবার’ বলবে। ইমাম যখন ক্বিরাআত (কিরআত) তিলাওয়াত করবে, তোমরা
তখন চুপ থাকবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৫৭, ৮২৭, সহীহ আবূ দাঊদ ৯৭৩, ইবনু মাজাহ্ ৮৪৬, সহীহুল জামি ২৩৫৮,
নাসাঈ হা/৯২১-৯২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আত্বা
ইবনু ইয়াসার একদা যায়েদ ইবনু ছাবেত (রাঃ)-কে ইমামের সাথে ক্বিরাআত পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করলেন। তিনি বললেন, কোন কিছুতে ইমামের সাথে ক্বিরাআত নেই। রাবী ধারণা করেন যে, তিনি
রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট সূরা নাজম পড়েছিলেন। কিন্তু তিনি সিজদা করেননি। (ছহীহ মুসলিম হা/১৩২৬,
১/২১৫ পৃঃ, ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২১)।
পর্যালোচনাঃ
(ক) উক্ত
দলীলগুলোর প্রথমটিতে এসেছে, ‘লোকেরা ক্বিরাআত পড়া বন্ধ করে দিল’। উক্ত অংশ নিয়ে মতানৈক্য
রয়েছে। ইমাম বুখারী প্রতিবাদ করেছেন যে, উক্ত অংশ যুহরীর পক্ষ থেকে সংযোজিত। (বুখারী, আল-ক্বিরাআতু
খালফাল ইমাম হা/৬৮, পৃঃ ৭১; তানক্বীহ, পৃঃ ২৮৮)।
ইবনু
হাজার আসক্বালানীও একই মত ব্যক্ত করেছেন। (ঐ, তালখীছুল হাবীর, ১/২৪৬)।
যা
আমরা যঈফ হাদীছের ধারাবাহিকতায় প্রথমে উল্লেখ করেছি। সুতরাং যে বর্ণনা নিয়ে শুরু থেকেই
মতানৈক্য রয়েছে, তাকে শক্তিশালী দলীল হিসাবে কিভাবে গ্রহণ করা যাবে?
প্রিয় মুছল্লীঃ
মাজহাবপন্থীগণ উক্ত দলিল দিয়ে এটাই প্রমাণ করেন যে, ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সুরা ফাতিহা
পাঠ করা লাগবে না। তবে এখানে স্পষ্ট যে, হাদিসের কোথাও সুরা ফাতিহার কথা উল্লেখ নেই।
বলা হয়েছে কিরআত পাঠের কথা। ইমাম যখন জেহরী সালাতে সুরা ফাতিহা হোক বা অন্য সুরা হোক
সশব্দে তেলোয়াত শুরু করবেন তখন মুক্তাদী সশব্দে কিরআত পাঠ করবে না। সশব্দে পড়লে ইমামের
বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। তার মানে এই নয় যে, মনে মনেও সুরা ফাতিহা পাঠ করা যাবে না। এখানে
বুঝার ভুল আছে।
(খ) দ্বিতীয়
হাদীছে বলা হয়েছে, ‘যখন ক্বিরাআত করবেন তখন তোমরা চুপ থাক’। এই অংশটুকু নিয়েও মুহাদ্দিছগণের
মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম আবুদাঊদ হাদীছটি দুই স্থানে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু উভয় স্থানেই
প্রতিবাদ করেছেন।
(আবুদাঊদ হা/৬০৪, ১/৮৯ পৃঃ, ও হা/৯৭৩, ১/১৪০ পৃঃ)
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম এজন্যই
নিয়োগ করা হয়, যেন অন্যেরা তার অনুসরণ করে। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তাতে আরো
রয়েছেঃ ইমাম যখন কিরাত পাঠ করবে, তখন তোমরা চুপ থাকবে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এই
অতিরিক্ত অংশটুকু-‘‘ইমাম যখন কিরাত পাঠ করবে, তখন তোমরা চুপ থাকবে’’ সুরক্ষিত (মাহফূয)
নয়। এটা আবূ খালিদের ধারণা মাত্র।
(সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত), ৬০৪, নাসায়ী (অধ্যায়ঃ ইফতিতাহ, অনুঃ মহান আল্লাহর এ বাণীঃ যখন কুরআন তিলাওয়াত
করা হয় তখনর তোমরা শ্রবণ করো এবং চুপ থাকো, হাঃ ৯২০), ইবনু মাজাহ ৮৬৪, আহমাদ (২/৪২০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যদিও
ইমাম মুসলিম ছহীহ বলেছেন। (মুসলিম হা/৯৩২)।
তবে
মতবিরোধ আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এছাড়া ‘ইমামের ক্বিরাআত মুক্তাদীর ক্বিরাআত’ এই বর্ণনাটিও
পেশ করা হয়। যদিও মুহাদ্দিছগণের প্রায় সকলেই যঈফ বলেছেন। (ইবনু মাজাহ হা/৮৫০; ফাৎহুল বারী হা/৭৫৬-এর ব্যাখ্যা
দ্রঃ, ২/২৮৩ পৃঃ। ইমাম বুখারী বলেন, هذا خبر لم يثبت عند أهل العلم من أهل الحجاز وأهل العراق وغيرهم لإرساله وانقطاعه -জুযউল ক্বিরাআত, পৃঃ ২০)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
জাবির
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যাদের ইমাম আছে ইমামের কিরাআতই তার কিরাআত। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৮৫০, আহমাদ ১৪২৩৩, ইরওযা ৮৫০)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
উক্ত
হাদিসের রাবী জাবির (বিন ইয়াযীদ ইবনু হারিস) সম্পর্কে ওয়াকী ইবনুল জাররাহ সিকাহ বললেও
আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি মিথ্যা কথা বলেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি মিথ্যুক।
আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। আল জাওযুজানী তাকে মিথ্যুক বলেছেন।
(গ) উক্ত
হাদীছগুলো ত্রুটিমুক্ত হিসাবে গ্রহণ করে যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন্ ক্বিরাআত পড়ার সময়
চুপ থাকতে হবে? ছালাতে কোন্ ক্বিরাআত পাঠ করা সমস্যা? রাসূল (ছাঃ) যে ক্বিরাআতের প্রতিবাদ
করেছিলেন, তা কি সূরা ফাতিহা ছিল, না অন্য সূরা ছিল? উক্ত হাদীছে তা উল্লেখ নেই। এর
জবাব কী হবে। এরপর আরেকটি বিষয় হল, শুধু কি জেহরী ছালাতে ক্বিরাআত পড়লেই সমস্যা হয়,
না সের্রী ছালাতেও সমস্যা হয়? নিম্নের হাদীছটি কী সাক্ষ্য দেয়?
ইমরান
ইবনু হুছাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) একদা যোহরের ছালাত আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায়
জনৈক ব্যক্তি এসে তার পিছনে সূরা আ‘লা পাঠ করল। যখন তিনি ছালাত শেষ করলেন তখন বললেন,
তোমাদের কে তেলাওয়াত করল? তারা বলল, অমুক ব্যক্তি। রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি বুঝতে পারলাম,
তোমাদের কেউ আমাকে এর দ্বারা বিরক্ত করল। (আবুদাঊদ হা/৮২৮, ১/১২০ পৃঃ, সনদ ছহীহ; বায়হাক্বী, ক্বিরাআতু খালফাল
ইমাম; ইরওয়া হা/৩৩২-এর আলোচনা দ্রঃ)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে তাঁর পিছনে ‘‘সাবিবহিসমা রব্বিকাল- অলা’’ (সূরাহ আ‘লা) পাঠ করল। সালাত শেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যকার কে কিরাত করেছে? জবাবে তাঁরা বলেন, এক ব্যক্তি। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি বুঝতে পেরেছি তোমাদের কেউ আমাকে (কুরআন পাঠে) জটিলতায় ফেলেছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮২৮, ৮২৯, মুসলিম ৯১৬, আহমাদ (৪/৪২৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত হাদীস থেকে
শিক্ষাঃ
১। ইমামের
পিছনে মুক্তাদীর স্বশব্দে ক্বিরাআত পাঠ অপছন্দনীয়।
২।
স্বরব ক্বিরাআত সম্পন্ন সালাতের ন্যায় নীরব ক্বিরাআত সম্পন্ন সালাতেও মুক্তাদীগণ ইমামের
পিছনে সূরাহ ফাতিহা চুপি চুপি পাঠ করবেন।
৩।
নীরব ক্বিরাআত সম্পন্ন সালাতে মুক্তাদীগণ সূরাহ ফাতিহার সাথে অন্য সূরাহও পাঠ করবেন।
৪।
সালাতে ক্বিরাআতের ন্যায় রুকু‘ সিজদা, তাশাহুদ ইত্যাদিতে পঠিতব্য দু‘আবলীও মুক্তাদীগণ
নীরবে পাঠ করবেন, যাতে জোরে পড়ার কারণে ইমামসহ পাশ্ববর্তী মুসল্লীর ক্বিরাআত, দু‘আ
পাঠ ও একাগ্রতায় বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। তবে সেসব দু‘আর কথা ভিন্ন যেগুলো জোরে পড়ার অনুমতি
হাদীসে এসেছে। যেমন, স্বরব ক্বিরাআত সম্পন্ন সালাতে ইমামের সাথে মুক্তাদীগণের জোরে
আমীন বলা। এটি সহীহভাবে প্রমাণিত আছে।
সংশয় নিরসনঃ
ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ না করার পক্ষে পেশকৃত কতিপয় দলীল ও তার জবাব।
(ক) সূরাহ
মুযযাম্মিলের ২০নং আয়াতে কুরআন থেকে সহজমত পাঠ করতে বলা হয়েছে আর সূরাহ ‘আরাফের ২০৪
নং আয়াতে ক্বিরাআতের সময় চুপ থাকতে বলা হয়েছে। এতে কোনো সূরাহকে নির্দিষ্ট করা হয়নি।
সুতরাং হাদীস দ্বারা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করাকে নির্দিষ্ট করা কুরআনের আয়াতকে রহিত করার
শামিল। হাদীস দ্বারা তো কুরআনের আয়াত রহিত করা যায় না।
উত্তরঃ এখানে
রহিত হবার প্রশ্নই উঠে না। বরং হাদীসে ব্যাখ্যাকারে বর্ণিত হয়েছে এবং কুরআনের মধ্য
থেকে উম্মুল কুরআনকে নির্দিষ্ট (খাস) করা হয়েছে। যেমন কুরআনে সকল উম্মাতকে লক্ষ্য করে
‘মীরাস’ বণ্টনের সাধারণ নিয়ম-এর আদেশ দেয়া হয়েছে (নিসা, ৭, ১১)। কিন্তু হাদীসে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারী সন্তানগণ পাবেন না বলে
‘খাস’ ভাবে নির্দেশ করা হয়েছে।
মূলতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমন ঘটেছিল কুরআনের ব্যাখ্যাকারী হিসেবে
এবং ঐ ব্যাখ্যাও ছিলো সরাসরি আল্লাহ কর্তৃক প্রত্যাদিষ্ট। অতএব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রদত্ত্ব ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান করা ‘অহিয়ে গায়ের মাতলু’ বা
আল্লাহর অনাবৃত্ত অহিকে প্রত্যাখ্যান করার শামিল হবে।
(খ)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন, ইমাম নিযুক্ত করা হয়েছে তাকে অনুসরণ করার জন্য। তিনি যখন তাকবীর বলেন, তখন তোমরা
তাকবীর বলো। তিনি যখন ক্বিরাআত করেন, তখন তোমরা চুপ থাকো। (নাসায়ী, আবূ দাঊদ, ইবনু
মাজাহ)।
জবাবঃ
‘উক্ত হাদীসে ‘আম’ ভাবে ক্বিরাআতের সময় চুপ থাকতে বলা হয়েছে। কুরআনেও অনুরূপ নির্দেশ
এসেছে (আরাফ ২০৪)। একই বর্ণনাকারীর ইতিপূর্বেকার বর্ণনায় এবং আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে
সূরায়ে ফাতিহাকে ‘খাস’ ভাবে চুপে চুপে পড়তে নির্দেশ করা হয়েছে। অতএব ইমামের পিছনে চুপে
চুপে সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করলে উভয় সহীহ হাদীসের উপরে ‘আমল করা সম্ভব হয়।
(গ) জাবির
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যার ইমাম
রয়েছে, ইমামের ক্বিরাআত তার জন্য ক্বিরাআত হবে- (ইবনু মাজাহ, দারাকুতনী, বায়হাক্বী)।
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, যতগুলি সূত্র থেকে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে সকল
সূত্রই দোষযুক্ত। সেজন্য হাদীসটি সকল বিদ্বানের নিকটে সর্বসম্মতভাবে যঈফ। (ফাতহুল বারী ২/৬৮৩)।
জবাবঃ অত্র
হাদীসে ক্বিরাআত শব্দটি ‘আম।’ কিন্তু সূরাহ ফাতিহা পাঠের নির্দেশটি ‘খাস।’ অতএব অন্য
সব সূরাহ বাদ দিয়ে কেবল সূরাহ ফাতিহা পাঠ করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ যদি অত্র হাদীসের অর্থ
‘ইমামের ক্বিরাআত মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট, বলে ধরা হয়, তবে হাদীসটি কেবল সহীহ হাদীসসমূহের
বিরোধী হবে না, বরং কুরআনী নির্দেশেরও বিরোধী হবে। কেননা কুরআনে (সূরাহ মুযযাম্মিল
২০ নং আয়াতে) ইমাম, মুক্তাদী বা একাকী সকল মুসল্লীর জন্য কুরআন থেকে যা সহজ মনে করা
হয়, তা পড়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অথচ উপরোক্ত যঈফ হাদীস মানতে গেলে ইমামের পিছনে কুরআনের
কিছুই পড়া চলে না। তৃতীয়তঃ উক্ত হাদীসে ইমামের ক্বিরাআত ইমামের জন্য বলা হয়েছে। মুক্তাদীর
জন্য হবে, এমন কথা নেই। কেননা ‘তার জন্য’ (له)
সর্বনামটির ইঙ্গিত নিকটতম বিশেষ্য ‘ইমাম’ (الإمام)
এর দিকে হওয়াই ব্যাকরণের দৃষ্টিতে যুক্তযুক্ত। অতএব ইমাম সূরাহ ফাতিহা পড়লে তা কেবল
ইমামের জন্যই হবে, মুক্তাদীর জন্য নয়। উদাহরণ স্বরূপঃ من كان له إمام فزوجة الإمام له زوجة অর্থাৎ ‘যার ইমাম আছে, উক্ত
ইমামের স্ত্রী তার জন্য স্ত্রী হবে।’ কিন্তু এ বাক্যের অর্থ ইমামের স্ত্রী মুক্তাদীর
জন্য হবে’ এমনটা করা যাবে না।’ অনুরূপভাবে ইমামের ক্বিরাআত ইমামের জন্য হবে। কিন্তু
‘ইমামের ক্বিরাআত মুক্তাদীর জন্য হবে’ এমন অর্থ করা ঠিক হবে না। (দেখুন, সালাতুর রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃঃ ৫৩-৫৫)।
সুধী পাঠক!
ক্বিরাআত পড়া যদি সমস্যা হয় তবে নীরবে পঠিত ছালাতেও সমস্যা হতে পারে। তখন যোহর ও আছরেও
সূরা ফাতিহা পড়া যাবে না। কারণ উক্ত ছালাত যোহরের ছালাত ছিল। অথচ যোহর ও আছর ছালাতে
ছাহাবায়ে কেরাম সূরা ফাতিহা তো পড়তেনই ইমামের পিছনে অন্য সূরাও পাঠ করতেন। (ইবনু মাজাহ হা/৮৪৩, পৃঃ
৬১; সনদ ছহীহ, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৫০৬)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমরা যোহর ও আসর সালাতের প্রথম দু রাকআতে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা ও অন্য সূরাহ এবং
শেষ দু সালাতে কেবল সূরাহ ফাতিহা পড়তাম। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৮৪৩, ইরওয়াহ ৫০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
মূল কথা
তো এটাই যে, মুক্তাদীর সরবে ক্বিরাআত জেহরী ছালাতের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি সের্রী
ছালাতের জন্যও ক্ষতিকর। কিন্তু চুপে চুপে পড়লে কোন সমস্যা নেই। দ্বিতীয়তঃ উক্ত ছাহাবী
নিঃসন্দেহে সূরা ফাতিহা না পড়ে সূরা আ‘লা পড়েননি। তাহলে হাদীছে সূরা ফাতিহার কথা উল্লেখ
না করে শুধু সূরা আ‘লা পড়াকে দোষারোপ করা হল কেন? সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, সূরা ফাতিহা
পড়ায় কোন দোষ নেই। তাই ক্বিরাআত বলতে যে সূরা ফাতিহা নয় তা পরিষ্কার। বরং অন্য সূরা
পাঠ করা নিষেধ।
তাছাড়া
যায়েদ ইবনু ছাবেত (রাঃ) থেকে যে আছার বর্ণিত হয়েছে, সেখান থেকেও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে,
ক্বিরাআত বলতে সূরা ফাতিহা নয়। যেমন ইমাম নববী বলেন, ‘যায়েদের কথাই প্রমাণ বহন করে
যে, সেটা সূরা ফাতিহার পরের সূরা যা জেহরী ছালাতে পড়া হয়’। (ছহীহ মুসলিম শরহে নববীসহ হা/১৩২৬-এর আলোচনা দ্রঃ
১/২১৫)।
তাছাড়া
নিম্নের হাদীছটিও প্রমাণ করে যে, জেহরী ছালাতেও সূরা ফাতিহা পড়া যাবে।
জাবের
ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা যোহর ও আছর ছালাতে প্রথম দুই রাক‘আতে ইমামের পিছনে
সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করতাম। আর পরের দুই রাক‘আতে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ
করতাম। (ইবনু মাজাহ
হা/৮৪৩, পৃঃ ৬১; সনদ ছহীহ, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৫০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
নিঃসন্দেহে
উক্ত হাদীছটির মুখ্য বিষয় হল, ইমামের পিছনে অন্য সূরা পাঠ করা। অর্থাৎ জেহরী ছালাতে
শুধু সূরা ফাতিহা পড়া হত। তবে যোহর ও আছর ছালাতে অন্য সূরাও পড়া হতো।
(তিন)
জেহরী ছালাতে চুপে চুপে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করলে সমস্যা
নেইঃ
পর্যালোচনাঃ উক্ত
দাবীই যথার্থ এবং এর পক্ষেই ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) একদা তাঁর ছাহাবীদের নিয়ে ছালাত আদায় করেন। যখন ছালাত
শেষ করলেন, তখন তাদের দিকে মুখ করলেন। অতঃপর বললেন, ইমাম ক্বিরাআত করা অবস্থায় তোমরা
কি তোমাদের ছালাতে ইমামের পিছনে ক্বিরআত পাঠ করলে? তারা চুপ থাকলেন। এভাবে তিনি তিনবার
জিজ্ঞেস করলেন। তখন তাদের একজন বা সকলে বললেন, হ্যঁা আমরা পাঠ করেছি। তখন তিনি বললেন,
তোমরা এমনটি কর না। নীরবে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। আলবানী বলেন, হাদীছটির সনদ ছহীহ লিগায়রিহী।
(ছহীহ ইবনে হিববান
হা/১৮৪১ তাহক্বীক্ব আলবানী, সনদ ছহীহ লিগায়রিহী; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/২৮০৫)।
মুহাক্কিক
হুসাইন সালীম আসাদ বলেন, এর সনদ জাইয়িদ। (ছহীহ ইবনে হিববান হা/১৮৪১)।
উল্লেখ্য
যে, উক্ত মর্মে বর্ণিত যে সমস্ত হাদীছকে আলবানী ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন, সেগুলোর থেকে এই
হাদীছের পৃথক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেটা হল, এই হাদীছে রাসূল (ছাঃ) চুপে চুপে পড়ার কথা
বলেছেন। এছাড়াও নিম্নের দুইটি হাদীছও তাই প্রমাণ করে-
ইয়াযীদ
ইবনু শারীক একদা ওমর (রাঃ)-কে ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন।
তিনি উত্তরে বললেন, তুমি শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ কর। আমি বললাম, যদি আপনি ইমাম হৌন? তিনি
বললেন, যদিও আমি ইমাম হই। আমি পুনরায় বললাম, যদি আপনি জোরে ক্বিরাআত পাঠ করেন? তিনি
বললেন, যদিও আমি জোরে ক্বিরাআত পাঠ করি। (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩০৪৭; সনদ ছহীহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৯২-এর
আলোচনা দ্রঃ)।
আবু
হুরায়রা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা তো ইমামের পিছনে থাকি। তখন কী করব? তিনি বললেন,
চুপে চুপে পড়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৮২৩, সহীহ মুসলিম ৩৯৫, তিরমিযী ২৯৫৩, ইবনু মাজাহ্ ৮৩৮, আহমাদ ৭২৯১,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৭৬)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাত আদায় করলো কিন্তু এতে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ- সূরাহ্ ফাতিহাহ্
পাঠ করলো না তাতে তার সালাত ‘‘অসম্পূর্ণ’’ রয়ে গেল। এ কথা তিনি তিনবার বললেন। এ কথা
শুনে কেউ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা যখন ইমামের পিছনে সালাত আদায়
করবো তখনও কি তা পাঠ করবো? উত্তরে তিনি বললেন, হাঁ তখনও তা পাঠ করবে নিজের মনে মনে।
কারণ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আল্লাহ বলেছেন,
আমি ‘সালাত’ অর্থাৎ, সূরাহ্ ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ
করেছি, (এভাবে যে, হামদ ও সানা আমার জন্য আর দু‘আ বান্দার জন্য)। আর বান্দা যা চায়
তা তাকে দেয়া হয়।
বান্দা
বলে, সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি সমস্ত জাহানের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার
বান্দা আমার প্রশংসা করলো। যখন বান্দা বলে, আল্লাহ বড় মেহেরবান ও পরম দয়ালু। আল্লাহ
তখন বলেন, আমার বান্দা আমার গুণগান করলো। বান্দা যখন বলে, আল্লাহ কিয়ামতের (কিয়ামতের)
দিনের মালিক, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করলো। বান্দা যখন
বলে, (হে আল্লাহ!) আমরা একমাত্র তোমারই ‘ইবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য কামনা
করি, তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার (‘ইবাদাত আল্লাহর জন্য
আর দু‘আ বান্দার জন্য)। আর আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ)!
তুমি আমাদেরকে সহজ ও সরল পথে পরিচালিত কর। সে সমস্ত লোকের পথে, যাদেরকে তুমি নি‘আমাত
দান করেছ। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি তোমার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এটা আমার বান্দার জন্য, আর বান্দা যা চাইবে, সে তাই পাবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৮২৩, সহীহ মুসলিম ৩৯৫, তিরমিযী ২৯৫৩, ইবনু মাজাহ্ ৮৩৮, আহমাদ ৭২৯১, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৭৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এছাড়া
জনৈক যুবককে রাসূল (ছাঃ) জিজ্ঞেস করেন, তুমি ছালাতে কী পড়? উত্তরে সে বলেছিল, আমি সূরা
ফাতিহা পাঠ করি এবং আল্লাহর কাছে জান্নাত চাই আর জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চাই। এটা
মু‘আয (রাঃ)-এর ইমামতির ঘটনা সম্পর্কিত বিষয়। (আবুদাঊদ হা/৭৯৩, ১/১১৬ পৃঃ, সনদ ছহীহ)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
জাবির
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি মু‘আয (রাঃ)-এর ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক যুবককে বললেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি সালাতে কি পড়? সে বলল,
আমি সূরাহ ফাতিহা পড়ি এবং আল্লাহর কাছে জান্নাতের প্রত্যাশা ও জাহান্নাম হতে আশ্রয়
চাই। আমি আপনার ও মু‘আযের অস্পষ্ট শব্দগুলো বুঝি না (অর্থাৎ আপনি এবং আমাদের ইমাম মু‘আয
সালাতে নীরবে কোন কোন শব্দযোগে দু‘আ ও মুনাজাত করেন তা আমি অবহিত নই)। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এবং মু‘আয উভয়ের আশে-পাশেই ঘুরে থাকি (অর্থাৎ আমরাও জান্নাতের
প্রত্যাশা এবং জাহান্নাম হতে আশ্রয় প্রার্থনা করি), অথবা অনুরূপ কিছু বলেছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৭৯৩, আহমাদ (৩/৪৭৪, ৫/৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ওমর, আবু হুরায়রা (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী যদি ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করার কথা বলেন, তবে মানসূখ হওয়ার বিষয়টি কিভাবে সঙ্গত হতে পারে? অতএব জেহরী হোক বা সের্রী হোক প্রত্যেক ছালাতে ইমামের পিছনে মুক্তাদীগণকে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।
সুধী পাঠক!
পবিত্র কুরআনের শ্রেষ্ঠ সূরা হল, ‘সূরাতুল ফাতিহা’। আর
এর মৌলিক আবেদন হল, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন’। এই মৌলিক প্রার্থনা
হতে কোন মুছল্লী বিরত থাকতে পারে কি? এছাড়া উক্ত সূরার মাধ্যমে মুছল্লীরা প্রতিনিয়ত
ইহুদী-খ্রীস্টানদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে। সেজন্য শেষে দু‘আ কবুলের জন্য
উচ্চকণ্ঠে ‘আমীন’ বলে। আর এই আমীনের শব্দ শুনে ইহুদীরা সবচেয়ে বেশী হিংসা করে। কিন্তু
লক্ষ লক্ষ মুছল্লী এক সঙ্গে ছালাত আদায় করছে অথচ ইমাম ব্যতীত কোন মুছল্লী কোন রাক‘আতে
সূরা ফাতিহা পাঠ করে না। শেষে উচ্চকণ্ঠে আমীনও বলে না। তারা ছালাতের ভিতরে উক্ত প্রার্থনা
পরিত্যাগ করলেও ছালাতের পরে প্রচলিত বিদ‘আতী মুনাজাত ছাড়তে চায় না। অন্যদিকে সূরা ফাতিহা
পাঠের বিরুদ্ধে অসংখ্য জাল ও বানোয়াট বর্ণনা তৈরি করে মুছল্লীদেরকে প্রকৃত সত্যের আড়ালে
রাখা হয়েছে। ষড়যন্ত্রের শিকড় কি তাহলে এত গভীরে! আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
অতএব উল্লেখিত সহিহ হাদিস ভিত্তিক এটাই প্রমাণিত যে, ছালাত সরবে হোক বা
নীরবে হোক প্রত্যেক ছালাতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। তানাহলে ছালাত আদায়
হবে না।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক নিয়ম মাফিক ছালাত আদায় করার তৌফিক দান করুন।
আমিন।
(সমাপ্ত)
ভন্ড ও বিদআতী পির-অলি ও আলেমদের করুণ পরিনতির দলীলসমূহঃ
১।
হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না
কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ? এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক
যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই,
যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের
প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের
কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো আর আমার আয়াত ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতি
দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)।
২।
যারা তাঁর (রাসুলসঃ) হুকুমের বিরুদ্ধাচারন
করে এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য
যে, তারা মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে। (নূর-৬৩)।
৩। সঠিক
পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম (সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে
দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন। (কোরআন-৪:১১৫)।
৪।
“তোমরা কি কোরআনের কোন কোন অংশ (আয়াত) মানো আর কোন কোন অংশ মানো না? অত:পর যে ব্যক্তি
তোমাদের মধ্য থেকে এরুপ কাজ করবে – পার্থিব
জীবনে প্রকাশ্য লাঞ্চণা ভোগ করা আর কিয়ামতের দিনে ভীষণ শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়া
ছাড়া তার আর কী সাজা হতে পারে! আর আল্লাহ তো তোমাদের কার্য কলাপ সম্বন্ধেবে- খবর নন।
(বাকারা-৮৫)।
৫।
“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল
করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত
: ৮৫)।
৬। আবদুল্লাহ্
ইব্নু মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি হাউজে কাউসারের নিকট তোমাদের
আগেই হাজির থাকবো। তোমাদের থেকে কিছু লোককে আমার নিকট পেশ করা হবে। কিন্তু আমি যখন
তাদের পান করাতে উদ্যত হবো, তখন তাদেরকে আমার নিকট হতে ছিনিয়ে নেয়া হবে। আমি বলবো,
হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার পর তারা নতুন (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম,
যা আপনি করতে বলেননি) কী ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন
না। (আধুনিক প্রকাশনী-
৬৫৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৩, সহিহ বুখারী-হাদিস নং-৭০৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৭। সাহ্ল
ইব্নু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, আমি নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে বলতে শুনেছি যে, আমি হাউজের ধারে
তোমাদের আগে হাজির থাকব। যে সেখানে হাজির হবে, সে সেখান থেকে পান করার সুযোগ পাবে।
আর যে একবার সে হাউজ থেকে পান করবে সে কখনই পিপাসিত হবে না। অবশ্যই এমন কিছু দল আমার
কাছে হাজির হবে যাদের আমি (আমার উম্মাত বলে) চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে।
কিন্তু এরপরই তাদের ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা দাড় করে দেয়া হবে।
আবূ
হাযিম (রহঃ) বলেন, আমি হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এমন সময় নু’মান ইব্নু আবূ আয়াস আমার নিকট
হতে এ হাদীসটি শুনে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি সাহ্ল থেকে হাদীসটি এরূপ শুনেছেন। আমি বললাম,
হ্যাঁ। তখন সে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) - কে এ হাদীসে
অতিরিক্ত বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলবেনঃ এরা তো
আমারই অনুসারী। তখন বলা হবে, আপনি নিশ্চয় জানেন না যে, আপনার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে
কি পরিবর্তন করেছে (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম, যা আপনি করতে বলেননি) । এ শুনে আমি বলব,
যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে, তারা (বিদআতী পির-অলি ও আলেম) দূর হোক, দূর হোক। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৪, সহিহ বুখারী-হাদিস নং-৭০৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৮।
“হোজায়ফা (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
মুসলিম সমাজে এমন লোকদের আবির্ভাব হইবে যাহারা আমার নীতি ছাড়া অন্য নীতিও অবলম্বন করিবে।
তাহাদের কোন কোন কাজ ভালো এবং কোন কাজ মন্দও দেখিতে পাইবে।”(বুখারী)।
৯। “যে
ব্যক্তি নিজের মতবাদকে কেন্দ্র করে তার নিয়ন্ত্রনে কোরআনের ব্যাখ্যা করে- যে ব্যক্তি
কোরআনের নির্দেশ অনুসারে স্বীয় মতবাদ স্থির করে না; বরং স্বীয় মতবাদের নির্দেশ
অনুসারে কোরআনের ব্যাখ্যা করে, শাব্দিক অর্থে ঐ ব্যাখ্যা শুদ্ধ হলেও বস্তুত
তা ভুল পরিগণিত।” (মেশকাত)।
১০।
নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন: হযরত হারিসুল আশয়ারী (রঃ)হতে বর্ণিতঃ
নবি
করিম সা: ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি (১) জামায়াত বদ্ধ
হবে (২) নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে (৩) তার আদেশ মেনে চলব (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ
বর্জন করবে (৫) আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, যে ব্যক্তি ইসলামি সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত
দূরে সরে গেল, সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তন
করে তো স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীতির দিকে (লোকদের) আহবান জানায়
সে জাহান্নামী। যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)।
১১।
আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে,
কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেনঃ কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ
করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৭২৮০,আধুনিক
প্রকাশনী- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)।
১২। আবূ
হুরাইরা রাদিয়াল্লাহুআনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “যাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক কোন কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, আর সে (যদি উত্তর না দিয়ে)
তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে (জাহান্নামের) আগুনের লাগাম পরানো হবে।” (তিরমিযী ২৬৪৯, ইবনু মাজাহ
২৬৬, আহমাদ ৭৫১৭, ৭৮৮৩, ৭৯৮৮, ৮৩২৮, ৮৪২৪, ১০০৪৮)।
১৩।
উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহুআনহু হতে বর্ণিত,
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন জ্ঞান
অর্জন করল, যার দ্বারা আল্লাহ আয্যা অজাল্লার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা সে কেবল পার্থিব
স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করল, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত
পাবে না।” (আবূ দাউদ
বিশুদ্ধ সানাদ)-আবূ দাউদ ৩৬৬৪, ইবনু মাজাহ ২৫২, আহমাদ ৮২৫২)।
১৪।
‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইলম তুলে
নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নেবেন (অর্থাৎ আলেম
দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মূর্খ অনভিজ্ঞ
ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে
ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী
১০০, ৭৩০৭, মুসলিম ২৬৭৩, তিরমিযী ২৬৫২, ইবনু মাজাহ ৫২, আহমাদ ৬৪৭৫, ৬৭৪৮, ৬৮৫৭, দারেমী
২৩৯)।
১৫। কা’ব
বিন মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে, “যে ব্যক্তি উলামাদের সাথে তর্ক
করার জন্য, অথবা মূর্খ লোকেদের সাথে বচসা করার জন্য এবং জন সাধারণের সমর্থন (বা অর্থ)
কুড়াবার জন্য ইল্ম অন্বেষণ করে, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ জাহান্নাম প্রবেশ করাবেন।” (তিরমিযী ২৬৫৪, ইবনে আবিদ্দুনয়্যা,
হাকেম ২৯৩, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭২, সহীহ তারগীব ১০০)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
১৬।
আলী (রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার উপর মিথ্যা বলো না। যেহেতু
যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করল, সে যেন দোযখে প্রবেশ করল।” (বুখারী ১০৬, মুসলিম ২)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১৭। সালামাহ
(রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমি যা বলিনি তা বানিয়ে বলে,
সে যেন নিজের ঠিকানা দোযখে বানিয়ে নেয়। (বুখারী ১০৯)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১৮। মুগীরাহ
বিন শু’বাহথেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার পক্ষ থেকে কোন এমন হাদীস
বর্ণনা করে যার বিষয়ে সে মনে করে যে তা মিথ্যা, তাহলে সে (বর্ণনাকারী) মিথ্যাবাদীদের
একজন।” (মুসলিম, সহীহুল
জামে’ ৬১৯৯)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
১৯। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “শেষ যুগে আমার উম্মতের মধ্যে এমন
কতক লোক হবে (বিদআতী পির-অলি ও আলেম), যারা তোমাদেরকে সেই হাদীস বর্ণনা করবে, যা তোমরা
এবং তোমাদের পিতৃ পুরুষরাও শ্রবণ করেনি সুতরাং তোমরা তাদের হতে সাবধান থেকো।” (মুসলিম ১৫)
হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
২০। আবূ
হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আখেরী যামানায় বহু ধোকাবাজ মিথ্যাবাদী
হবে; যারা তোমাদের কাছে এমন এমন হাদীস নিয়ে উপস্থিত হবে, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপদাদারাও
কোন দিন শ্রবণ করেনি। সুতরাং তোমরা তাদের থেকে সাবধান থেকো; তারা যেন তোমাদেরকে ভ্রষ্টতা
ও ফিতনায় না ফেলে।” (মুসলিম ১৬)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
২১। উক্ত
আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার নামে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা
বলে, সে যেন নিজের বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।” (বুখারী ১১০, ৬১৯৭, মুসলিম ৪)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২২। আবূ
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “বিনা ইল্মে যাকে ফতোয়া দেওয়া হয় (এবং সেই
ভুল ফতোয়া দ্বারা সে ভুল কর্ম করে) তবে তার পাপ ঐ মুফতীর উপর এবং যে ব্যক্তি তার ভাইকে
এমন পরামর্শ দেয় অথচ সে জানে যে তার জন্য মঙ্গল অন্য কিছুতে আছে, তবে সে ব্যক্তি তার
খিয়ানত (বিশ্বাসঘাতকতা) করে।” (আবূ দাঊদ ৩৬৫৯, হাকেম ৩৫০, সহীহুল জামে’ ৬০৬৮)-হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
২৩। আবূ
সাঈদ খুদরীথেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তার দ্বারা আল্লাহর
নিকট জান্নাত প্রার্থনা কর, তাদের পূর্বে পূর্বে যারা কুরআন শিক্ষা করে তার দ্বারা
দুনিয়া যাচনা করবে। যেহেতু কুরআন তিন ব্যক্তি শিক্ষা করে; প্রথমতঃ সেই ব্যক্তি যে তার
দ্বারা বড়াই করবে। দ্বিতীয়তঃ সেই ব্যক্তি যে তার দ্বারা উদরপূর্তি করবে এবং তৃতীয়তঃ
সেই ব্যক্তি যে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে তেলাঅত করবে।’ (বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ২৬৩০, সিঃ সহীহাহ ২৫৮)-হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
২৪। আবু
দারদা (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষাদানের উপর একটি
ধনুকও গ্রহণ করবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার পরিবর্তে জাহান্নামের আগুনের ধনুক
তার গলায় লটকাবেন।” (বাইহাক্বী ১১৪৬৫, সহীহুল জামে’ ৫৯৮২)
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
২৫।
জারীর বিন আব্দুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে সম্প্রদায় যখন বিভিন্ন পাপাচারে
লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি থাকে, যার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও
যদি তারা তাদেরকে বাধা না দেয় (এবং ঐ পাপাচরণ বন্ধ না করে), তাহলে (তাদের জীবদ্দশাতেই)
মহান আল্লাহ তাদেরকে ব্যাপকভাবে তাঁর কোন শাস্তি ভোগ করান।” (আহমাদ ৪/৩৬৪, আবূ দাউদ ৪৩৩৯, ইবনে মাজাহ ৪০০৯, ইবনে
হিব্বান, সহীহ আবূ দাউদ ৩৬৪৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
২৬। আবূ
হুরাইরাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি (কাউকে) সৎপথের দিকে আহবান করবে,
সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী পাবে। এটা তাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কম করবে না।
আর যে ব্যক্তি (কাউকে) ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করবে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ
চাপবে। এটা তাদের গোনাহ থেকে কিছুই কম করবে না।” (মুসলিম ৬৯৮০ প্রমুখ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
২৭।
আবূ যায়দ উসামাহইবনে যায়দ ইবনে হারেষাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে
আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে
এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে।
তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ‘ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন?
তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, ‘অবশ্যই।
আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা
দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!” (বুখারী ৩২৬৭, মুসলিম ৭৬৭৪)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
২৮। আনাস
(রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “আমি মি’রাজের রাতে এমন একদল লোকের পাশ দিয়ে
অতিক্রম করেছি যারা আগুনের কাঁচি দ্বারা নিজেদের ঠোঁট কাটছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
‘হে জিবরীল! ওরা কারা?’ তিনি বললেন, ‘ওরা আপনার উম্মতের বক্তাদল (বিদআতী পির-অলি ও
আলেম); যারা নিজেদের বিস্মৃত হয়ে মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দিত, অথচ ওরা কিতাব (গ্রন্থ)
অধ্যয়ন করত, তবে কি ওরা বুঝত না।” (আহমাদ ১২২১১, ১২৮৫৬ প্রভৃতি, ইবনে হিব্বান ৫৩, ত্বাবারানীর আওসাত্ব
২৮৩২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭৩, আবূ য়্যা’লা ৩৯৯২, সহীহ তারগীব ১২৫)-হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস
২৯।
উমার বিন খাত্তাব(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “ইসলাম বিজয় লাভ করবে। যার ফলশ্রুতিতে
বণিকদল সমুদ্রে বাণিজ্য-সফর করবে। এমন কি অশ্বদল আল্লাহর পথে (জিহাদে) অবতরণ করবে।
অতঃপর এমন একদল লোক প্রকাশ পাবে; যারা কুরআন পাঠ করবে (দ্বীনী ইলম শিক্ষা করে ক্বারী
ও আলেম হবে)। তারা (বড়াই করে) বলবে, ‘আমাদের চেয়ে ভালো ক্বারী আর কে আছে? আমাদের চেয়ে
বড় আলেম আর কে আছে? আমাদের চেয়ে বড় ফকীহ (দ্বীন-বিষয়ক পন্ডিত) আর কে আছে?’ অতঃপর নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবাগণের উদ্দেশ্যে বললেন, “ওদের মধ্যে কি কোন
প্রকারের মঙ্গল থাকবে?” সকলে বলল, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই অধিক জানেন।’তিনি বললেন,
“ওরা তোমাদেরই মধ্য হতে এই উম্মতেরই দলভুক্ত। কিন্তু ওরা হবে জাহান্নামের ইন্ধন।” (ত্বাবারানীর আউসাত্ব
৬২৪২, বাযযার, সহীহ তারগীব ১৩৫)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩০। ইবনে
মাসঊদ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
“তোমরা
অনুসরণ কর, নতুন কিছু রচনা করো না। কারণ তোমাদের জন্য তাই যথেষ্ট। আর তোমরা পুরাতন
পন্থাই অবলম্বন কর।” (সহীহ, সিলসিলা যায়ীফাহ ২/১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩১।
আলী বিন আবী তালেব(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে
গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে নিজ পিতামাতাকে
অভিসম্পাত করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন দুষ্কৃতকারী বা বিদআতীকে
আশ্রয় দেয় এবং আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে ভূমির (জমি-জায়গার) সীমা-চিহ্ন
পরিবর্তন করে।” (মুসলিম
৫২৪০নং)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩২। আবূ
হুরাইরাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে, সেই সত্তার
কসম! এই উম্মতের যে কেউ---ইয়াহুদী হোক বা খ্রিস্টান আমার কথা শুনবে, অতঃপর যা দিয়ে
আমি প্রেরিত হয়েছি, তার প্রতি ঈমান আনবে না, সেই জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(মুসলিম ৪০৩), হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৩৩। ইবনে
মাসঊদ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী (আল্লাহর অবাধ্যাচরণ)
এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী।” (বুখারী ৪৮, ৬০৪৪, মুসলিম ২৩০, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)-হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৩৪। আবূ
হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে উৎসব
কেন্দ্রে পরিণত করো না (যেমন কবর-পূজারীরা উরস ইত্যাদির মেলা লাগিয়ে ক’রে থাকে)। তোমরা
আমার প্রতি দরূদ পেশ কর। কারণ, তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের পেশকৃত দরূদ আমার কাছে পৌঁছে
যায়।” (আবূ দাঊদ ২০৪৪
নং, বিশুদ্ধ সূত্রে, সহীহুল জামে’ ৭২২৬ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৫। সুহাইল
থেকে বর্ণিতঃ
একদা
(নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাতির ছেলে) হাসান বিন হাসান বিন আলী আমাকে
কবরের নিকট দেখলেন। তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। সেই সময় তিনি ফাতেমার বাড়িতে রাতের খাবার
খাচ্ছিলেন। আমি উপস্থিত হলে তিনি বললেন, ‘এসো খানা খাও।’ আমি বললাম, ‘খাবার ইচ্ছা নেই।’
অতঃপর তিনি বললেন, ‘কী ব্যাপার যে, আমি তোমাকে কবরের পাশে দেখলাম?’ আমি বললাম, ‘নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে সালাম দিলাম।’ তিনি বললেন, ‘যখন মসজিদে প্রবেশ
করবে, তখন সালাম দেবে।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে ঈদ বানিয়ে নিয়ো না। তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ে নিয়ো না। তোমরা
যেখানেই থাক, সেখান থেকেই আমার উপর দরূদ পাঠ কর। কারণ তোমাদের দরূদ আমার নিকট (ফেরেশতার
মাধ্যমে) পৌঁছে যায়। আল্লাহ ইয়াহুদকে অভিশাপ করুন। কারণ তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে
মসজিদ (সিজদা ও নামাযের স্থান) বানিয়ে নিয়েছে।” (এ ব্যাপারে এখানে) তোমরা এবং উন্দুলুসের
লোকেরা সমান।’ (সুনান
সাঈদ বিন মানসূর, আহকামুল জানায়েয, আলবানী ২২০পৃঃ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৬।
আবূ উমামা (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার উম্মতের দুই শ্রেণির লোক আমার সুপারিশ
লাভ করতে পারবে না; (বিবেকহীন) অত্যাচারী রাষ্ট্রনেতা এবং প্রত্যেক সত্যত্যাগী অতিরঞ্জনকারী।”
(ত্বাবারানী ৮০০৫,
সহীহুল জামে’ ৩৭৯৮ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৩৭।
আরফাজাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “অদূর ভবিষ্যতে বড় ফিতনা ও ফাসাদের
প্রার্দুভাব ঘটবে। সুতরাং যে ব্যক্তি এই উম্মতের ঐক্য ও সংহতিকে (নষ্ট করে) বিচ্ছিন্নতা
আনতে চাইবে সে ব্যক্তিকে তোমরা তরবারি দ্বারা হত্যা করে ফেলো; তাতে সে যেই হোক না কেন।”
(মুসলিম ৪৯০২ নং)-হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস
৩৮।
ষাওবান (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমি আমার উম্মতের উপর ভ্রষ্টকারী ইমাম
(আলেম ও নেতা প্রভৃতি)র দলকেই ভয় করি।” (আহমাদ ২২৩৯৩, আবূ
দাঊদ ৪২৫৪, তিরমিযী ২২২৯ )-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৯। আবূ
সাঈদ (রাঃ)ও আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
বলেছেন, “আমার উম্মতের মাঝে মতবিরোধ ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হবে। একদল হবে যাদের কথাবার্তা
সুন্দর হবে এবং কর্ম হবে অসুন্দর। তারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের গলদেশের অভ্যন্তরে
প্রবেশ করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের
হয়ে যায়। তারা (সেইরূপ দ্বীনে) ফিরে আসবে না, যেরূপ তীর ধনুকে ফিরে আসে না। তারা সৃষ্টির
সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি। শুভ পরিণাম তার জন্য, যে তাদেরকে হত্যা করবে এবং যাকে তারা হত্যা
করবে। তারা আল্লাহর কিতাবের দিকে মানুষকে আহবান করবে, অথচ তারা (সঠিকভাবে) তার উপরে
প্রতিষ্ঠিত থাকবে না। যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, সে হবে বাকী উম্মত অপেক্ষা আল্লাহর
নিকটবর্তী। তাদের চিহ্ন হবে মাথা নেড়া।” (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ, হাকেম, সহীহুল জামে’ ৩৬৬৮ নং)-হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
৪০। আবূ
বাকরাহ থেকেবর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “----- এক জাতি হবে যারা গরুর লেজ ধরে চাষবাস
করবে এবং জিহাদে বিমুখতা প্রকাশ করবে, তারা হবে ধ্বংস।” (আবূ দাঊদ ৪৩০৬, মিশকাত ৫৪৩২ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
৪১।
আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি
বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মারা গেল
অথচ সে জিহাদ করেনি এবং অন্তরে জিহাদ সম্পর্কে কোন চিন্তা-ভাবনাও করেনি, সে মুনাফিক্বীর
একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করল।” (মুসলিম ৫০৪০, আবূ দাঊদ ২৫০৪ নং), হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪২। মাসরূক
থেকে বর্ণিতঃ
আমি
আয়েশা (রাঃ)র নিকট হেলান দিয়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ তিনি বললেন, ‘হে আবূ আয়েশা! যে ব্যক্তি
তিনটের মধ্যে একটি কথা বলে, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করেঃ
(ক) যে
ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মদ তাঁর প্রতিপালক (আল্লাহ)কে দেখেছেন, সে আল্লাহর প্রতি
বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। যেহেতু আল্লাহ বলেন, “দৃষ্টিসমূহ তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না,
কিন্তু দৃষ্টিসমূহ তাঁর আয়ত্বে আছে এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী; সম্যক পরিজ্ঞাত।”
(আনআমঃ ১০৩)
(খ) “কোন
মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন ওহীর (প্রত্যাদেশ)
মাধ্যম ব্যতিরেকে, অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা কোন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে; আর তখন আল্লাহ
যা চান তা তাঁর অনুমতিক্রমে অহী (প্রত্যাদেশ) করেন; নিঃসন্দেহে তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়।”
(শূরাঃ ৫১)
(গ) বর্ণনাকারী
মাসরূক বলেন, আমি হেলান দিয়ে বসে ছিলাম। এ কথা শুনে সোজা হয়ে বসে বললাম, ‘হে উন্মুল
মু’মিনীন! একটু থামুন, আমার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবেন না। আল্লাহ তাআলা কি বলেননি
যে,
“নিশ্চয়ই
সে তাকে আরেকবার দেখেছিল।” (নাজ্মঃ ১৩) “অবশ্যই সে তাকে স্পষ্ট দিগন্তে দর্শন করেছে।”
(তাকভীরঃ ২৩)
মা
আয়েশা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি এ ব্যাপারে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন,
“তিনি
হলেন জিব্রীল। তাঁকে ঐ দুইবার ছাড়া অন্য বারে তার সৃষ্টিগত আসল রূপে দর্শন করিনি।
যখন তিনি আসমানে অবতরণরত ছিলেন, তাঁর বিরাট সৃষ্টি-আকৃতি আকাশ-পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থানকে
ঘিরে রেখেছিল!”
(২)
যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মদ আল্লাহর অবতীর্ণ কিছু অহী গোপন করেছেন, সে আল্লাহর
প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। অথচ আল্লাহ বলেন, “হে রসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে
তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা প্রচার কর (যদি তা না কর, তাহলে তো তুমি তাঁর
বার্তা প্রচার করলে না।)” (সূরা মাইদাহ ৬৭ আয়াত)
(৩) যে
ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মাদ ভবিষ্যতের খবর জানেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা
আরোপ করে। অথচ আল্লাহ বলেন, “বল, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য
বিষয়ের জ্ঞান রাখে না।” (নাম্লঃ ৬৫), (মুসলিম ৪৫৭নং, তিরমিযী ৩০৬৮নং, প্রমুখ)-হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস
৪৩। বিদআত
এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধঃ
(ক)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
অর্থাৎ,
সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি আছে? (সূরা ইউনুস ৩২ আয়াত)
(খ)
তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ,
আমি কিতাবে কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে ক্রটি করিনি। (সূরা আনআম ৩৮ আয়াত)
(গ)
তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ,
আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে
ফিরিয়ে দাও। (সূরা নিসা ৫৯ আয়াত) অর্থাৎ, কিতাব ও সুন্নাহর দিকে।
(ঘ) তিনি
অন্যত্র বলেছেন,
অর্থাৎ,
নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এরই অনুসরণ কর এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, করলে
তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন ক’রে ফেলবে। (সূরা আনআম ১৫৩ আয়াত)
(ঙ)
তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ,
বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন
এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। (সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)
এ
ছাড়া এ প্রসঙ্গে আরো বহু আয়াত রয়েছে। আর হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ
৪৪।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(ক) রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ
থেকে) কোন নতুন কথা উদ্ভাবন করল---যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।” (বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম
৪৫৮৯)
(খ) মুসলিমের
অন্য এক বর্ণনায় আছে, “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল, যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই তা
বর্জনীয়।” (৪৫৯০)-হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
৪৫। ইবনে
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নসীহত করার জন্য আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন।
অতঃপর তিনি বললেন, “হে লোক সকল! তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট উলঙ্গ পা, উলঙ্গ দেহ ও খাতনাবিহীন
অবস্থায় একত্রিত করা হবে। (আল্লাহ বলেন,) ‘যেমন আমি প্রথম সৃষ্টি করেছি আমি পুনর্বার
তাকে সেই অবস্থায় ফিরাবো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা, যা আমি পুরা করব।’ (সূরা আম্বিয়া ১০৪)
জেনে রাখো!
কিয়ামতের দিন সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম ইব্রাহীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
কে বস্ত্র পরিধান করানো হবে। আরো শুনে রাখ! সে দিন আমার উম্মতের কিছু লোককে নিয়ে আসা
হবে অতঃপর তাদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর আমি বলব, ‘হে প্রভু! এরা তো আমার
সঙ্গী।’কিন্তু আমাকে বলা হবে, ‘এরা আপনার (মৃত্যুর) পর (দ্বীনে) কী কী নতুন নতুন রীতি
আবিষ্কার করেছিল, তা আপনি জানেন না।’(এ কথা শুনে) আমি বলব--যেমন নেক বান্দা (ঈসা (আঃ)
বলেছিলেন, “যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী।
কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই তো ছিলে তাদের ক্রিয়াকলাপের পর্যবেক্ষক।
আর তুমি সর্ববস্তুর উপর সাক্ষী। তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তোমারই বান্দা।
আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’(সূরা মায়েদা ১১৭) অতঃপর
আমাকে বলা হবে যে, ‘নিঃসন্দেহে আপনার ছেড়ে আসার পর এরা (ইসলাম থেকে) পিছনে ফিরে গিয়েছিল।’(বুখারী ৩৩৪৯, মুসলিম
৭৩৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
বিদআতী পির-অলি ও আলেমদের তওবাও কবুল হয় না যতক্ষণ না---
আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ প্রত্যেক বিদআতীর তওবা ততক্ষণ
পর্যন্ত স্থগিত রাখেন (গ্রহণ করেন না), যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার বিদআত বর্জন না করেছে।”
(ত্বাবারানীর আওসাত্ব
৪২০২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৯৪৫৭, সহীহ তারগীব ৫৪নং)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
সুপ্রিয় মুসলমান
ভাই ও বোনেরাঃ আমাদের সমাজে সম্প্রতি হাজার হাজার বিদআতী
পির-অলি ও আলেমের আবির্ভাব ঘটেছে। এই সব ভন্ড আলেম আগেও ছিল বর্তমানেও আছে। ভবিষ্যতেও
থাকবে। ইতিমধ্যে ভন্ডরা হাদিস নামে মিথ্যে কিচ্ছা কাহিনী বলে বলে কোটি কোটি টাকার মালিক
হয়ে গেছে। এক সময় তারা যা বলতো সাধারন মুসলমান তাই বিশ্বাস করতো। কিন্তু বর্তমানে কোরআন
ও হাদিসের সহিহ চর্চার কারনে বিশেষ করে ইসলামি ফাউন্ডেশন কর্তৃক হাদিস গ্রন্থসমূহ বাংলায়
অনুবাদ করায় সকল শিক্ষিত মুসলমানরা যখন আদ্যোপান্ত পড়ে বুঝতে পারল যে, এতোদিন ভন্ড
আলেমরা শুধুই মনগড়া মিথ্যে ওয়াজ করেছে আর বর্তমানে এসবের বিরোধীতা করায় তথা বিদআতীদের
গোপন রহস্য ফাঁস করায় এই সব ভন্ড আলেমদের ধর্ম
ব্যবসায় ধ্বস নামা শুরু হয়েছে। আফসোসের বিষয় এদের মধ্যে আছে কোরআনের হাফেজ, হাদিসের
হাফেজ বা মুফতি, মুহাদ্দিস, পির, অলি আবার অনেকে আছে ডক্টরেট পাশ। কিন্তু এরা সকলেই
জাল-জইফ হাদিস ভিত্তিক যেমন ওয়াজ করে তেমনি বিভিন্ন বিদআতী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।
এরা এক দিকে যেমন গোমরাহী হয়ে জাহান্নামী হচ্ছে
তেমনি এদের সাগরেদ বা মুরিদ কিংবা অনুসারীদেরকেও জাহান্নামী বানাচ্ছে। ইমান আমল নষ্ট
করে দিচ্ছে।
এই
দলের মধ্যে আছে বাংলাদেশের তথা কথিত ভন্ড পির বা অলি এবং আরেক শ্রেণির ওয়াজকারী ধর্ম
ব্যবসায়ী।
আপনারা
একটা কথা মনে রাখবেন, আল্লাহকে ডাকতে কোনো মাধ্যম লাগে না। কোরআন আছে পড়বেন, জানবেন,
মানবেন আর সহিহ হাদিস কোথায় পাবেন? বোখারীতেও জাল হাদিস, মিশকাতেও জাল হাদিস, এখন সাধারন
মুসলমানরা বুঝবে কেমনে? আপনাদেরকে সঠিক তথ্য দেয়ার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা।
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক
প্রবন্ধের
লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের
Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির
লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা
হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।”
(সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে,
নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন।
(সূরা হা মীম সিজদা
আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান
জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে
কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের
সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।”
[মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে
(আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর,
তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস)
আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস
সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
===============================================
মো: ইজাবুল
আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি,
এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে
PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment