বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম
ফরজ ছালাতে ছালাম ফিরানোর
পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দুই হাত তুলে মোনাজাত না করে পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ
দোয়াসমূহঃ
ভূমিকাঃ যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য। আমরা
তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁরই নিকট তওবা করি। আমাদের নাফসের সকল
প্রকার বিপর্যয় ও কুকীর্তি হতে রক্ষা করার জন্য তাঁরই সাহায্য প্রার্থনা করি।
অতঃপর আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ এক এবং তাঁর কোনো শরিক নেই এবং
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র বান্দাহ্ ও রাসুল। আল্লাহ্র
পক্ষ হতে কিয়ামত পর্যন্ত সালাম বর্ষিত হউক তাঁর রাসূল, আহলে বাইত এবং সমস্ত
সাহাবারদের উপর আর ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের উপর যারা অনুসরণ করেছেন রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের এবং আঁকড়ে ধরেছেন তাঁর সুন্নাতকে।
আমাদের সমাজে দেখা যায়, ফরজ সলাত
শেষে সালাম ফিরানোর পরই ইমাম-মুক্তাদীগণ সম্মিলিতভাবে দুই হাত তুলে মুনাজাত করে থাকেন। অথবা শুরু হয় বিদআতী পদ্ধতিতে
সম্মিলিত জিকির। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযা সাল্লাম ফরজ সলাত শেষে সালাম
ফিরানোর পর যে সকল দুয়া ও জিকির নিয়মিত পাঠ করতেন সেগুলোর কোন গুরুত্ব নাই। ইমাম
সাহেব নিজেও এসব দুয়া ও জিকিরগুলো পাঠ করেন না, মুসল্লীদেরকেও শেখান না বা পড়তে
উৎসাহিত করেন না। অনেককে দেখা যায়, সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত দিয়ে দোয়া পড়ে।
অনেকে দোয়া পড়ে আঙ্গুলে ফু দিয়ে চোখ ঘষে। অথচ নবি (সাঃ) এসবের কিছুই করেন নি।
তিনি (নবি সা:) সালাত পড়ার আগে, সালাত পড়ার সময়
ও সালাতের সালাম ফিরানোর পর কি কি করতেন বা কোন্ কো্ন দোয়া পড়তেন তা তিনি নিজে
যেমন আমল করতেন তেমনি সাহাবাদেরকেও শিখিয়ে দিতেন। সব সাহাবাগণ সেই মোতাবেক চলতেন।
অতএব আমাদেরকেও সেই দেখানো পথেই চলতে হবে। নতুন কোনো পথ মত বা সূত্র আমরা তৈরী
করবো না বা অন্যের তৈরী নতুন পদ্ধতিও মানবো না। নবি (সা:) যে সব দোয়া পড়তেন তা
খুবই বরকতময়। আমরা অযথা বিদআতী যিকির আর মোনাজাতে সময় নষ্ট না করে সেই সময়ে
নিম্নোক্ত দোয়াগুলো পড়ে অশেষ সওয়াব হাসিল করবো। আল্লাহ যেনো আমাদেরকে বিদআত বর্জন
করে সুন্নত অনুসরণ করার তাওফীক দান করেন। আমিন।
সহিহ হাদিস থেকে ফরজ সালাত শেষে
ইমাম-মুক্তাদী সবার জন্য পঠিতব্য দোয়া ও জিকিরসমূহ উপস্থাপন করা হল:
সালাম ফিরানোর পরই প্রথমে পড়ুন:-
(১নং) আল্ল-হু আকবার (একবার)।
(২নং) আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ (তিনবার)।
অর্থ : আল্লাহ সবার
চেয়ে বড়। আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মুসলিম,মিশকাত হা/৯৫৯, ৯৬১]
আমাদের
দেশের ৯৫% আলেম বা ইমাম-মুয়াজ্জিন ফরজ ছালাত শেষে ১ ও ২ নং দোয়া পাঠ করেই দুই হাত
তুলে মোনাজাত ধরেন। তারপর ৩ নং দোয়া দুই হাত তুলে মোনাজাতে বলেন। ফরজ
ছালাত শেষে বসে বসে যিকির করলে বা দোয়া দরুদ পাঠ করলে কতো যে ফজিলত তা কখনো ইমাম-মুয়াজ্জিনদের
বলতে শোনা যায় না। অনেক মুছল্লি আছেন যারা ছালাম ফিরানোর সাথে সাথেই উঠে চলে যায়।
অথচ এভাবে চলে যাওয়া হাদিসে সম্পূর্ণ নিষেধ আছে। যেমন,
“একদা সালাত শেষে জনৈক এক ব্যক্তি তাড়াহুড়ো
করে যেতে ধরলে হযরত উমর রাঃ তার ঘাড় ধরে বসালেন। এই দৃশ্য রাসুল সাঃ দেখে বললেন, উমর
তুমি ঠিকই করেছো।”
আহামদ হাদিস নং ২৩১৭০, সিলসিলা সহিহাহ হাদিস
নং ২৫৪৯। হাদিসের মান-সহিহ হাদিস।
রাসুল (সাঃ) ফরজ
ছালাত শেষে ছালাম ফিরানোর পর সম্মিলিত মোনাজাত না করে তিনি কমপক্ষে ১৭/১৮ প্রকার
দোয়া পাঠ করতেন।
যারা
বিদআতি সম্মিলিত মোনাজাতের পক্ষে তারা একদিকে যেমন বিদআতি কর্মকান্ড করে
জাহান্নামের রাস্তা তৈরী করছেন, অন্য দিকে নিজেরা ও মুছল্লিগণসহ সকলেই বিভিন্ন
দোয়া পাঠের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা রাসুল (সাঃ) এর সুন্নত মান্য করছেন না।
এসব কারনে ছালাত আদায়কারী তিন শ্রেণির মুছল্লি জাহান্নামে যাবে।
ফরজ ছালাত শেষে ছালাম
ফিরানোর পরই চলে না গিয়ে কিংবা সম্মিলিত মোনাজাতে অংশ না নিয়ে ছালাতের জায়গায় অযু
অবস্থায় বসে বসে বিভিন্ন দোয়া পাঠ বা যিকির করার ফজিলতঃ
(১)
উক্ত রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“ফিরিশতাবর্গ তোমাদের প্রত্যেকের জন্য দু‘আ ক’রে থাকেন, যতক্ষণ সে সেই স্থানে অবস্থান
করে, যেখানে সে নামায পড়েছে; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার ওযূ নষ্ট হয়েছে; বলেন, ‘হে আল্লাহ!
ওকে ক্ষমা ক’রে দাও। হে আল্লাহ! ওর প্রতি সদয় হও।” (বুখারী ৪৪৫নং,হাদিস সম্ভার-৭৩৪)।হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
(২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) প্রমুখাৎ থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি নামাযের অবস্থাতেই থাকে যতক্ষণ নামায তাকে (অন্যান্য কর্ম
হতে) আটকে রাখে। তাকে নামায ব্যতীত অন্য কিছু তার পরিবারের নিকট ফিরে যেতে বাধা দেয়
না।” (বুখারী ৬৫৯, মুসলিম ১৫৪২নং)
বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় এরূপ এসেছে, “তোমাদের মধ্যে সেই
ব্যক্তি নামাযেই থাকে যতক্ষণ নামায তাকে আটকে রাখে। (আগামী নামায পড়ার জন্য অপেক্ষা
করে মসজিদেই বসে থাকে।) আর সেই সময় ফিরিশতাবর্গ বলতে থাকেন, ‘হে আল্লাহ! ওকে ক্ষমা
করে দাও। হে আল্লাহ! ওর প্রতি সদয় হও।’ (এই দু‘আ ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে) যতক্ষণ
পর্যন্ত না সে নামাযের স্থান ত্যাগ করেছে অথবা তার ওযু নষ্ট হয়েছে।” (বুখারী ৩২২৯,হাদিস
সম্ভার-৭৩৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(৩) আবূ হুরাইরা
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“নামাযের পর আর এক নামাযের জন্য অপেক্ষমাণ ব্যক্তি সেই অশ্বারোহীর সমতুল্য, যে তার
অশ্বসহ আল্লাহর পথে শত্রুর বিরুদ্ধে বিক্রমের সাথে সদা প্রস্তুত; যে থাকে বৃহৎ প্রতিরক্ষার
কাজে।” (আহমাদ ৮৬২৫, ত্বাবারানীর কাবীর ১১৭৫, আওসাত্ব ৮১৪৪, সহীহ তারগীব ৪৫০নং, হাদিস
সম্ভার-৭৩৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(৪) উক্ত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“ইসমাঈলের বংশধরের চারটি মানুষকে দাসত্বমুক্ত করা অপেক্ষা ফজরের নামাযের পর থেকে সূর্যোদয়
পর্যন্ত যিকিরকারী দলের সাথে বসাটা আমার নিকট অধিক প্রিয়। অনুরূপ চারটি জীবন দাসমুক্ত
করার চেয়ে আসরের নামাযের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যিকিরকারী সম্প্রদায়ের সাথে বসাটা
আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়।” (আবূ দাঊদ ৩৬৬৯, সহীহ তারগীব ৪৬৫নং,হাদিস সম্ভার-৭৩১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(৫)
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতে পড়ে, অতঃপর সূর্যোদয় অবধি বসে আল্লাহর যিকির
করে তারপর দুই রাকআত নামায পড়ে, সেই ব্যক্তির একটি হজ্জ ও উমরার সওয়াব লাভ হয়।” বর্ণনাকারী
বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ,
পরিপূর্ণ।” অর্থাৎ কোন অসম্পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব নয় বরং পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব।
(তিরমিযী ৫৮৬, সহীহ তারগীব ৪৬৪নং,হাদিস সম্ভার-৭৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৬)
মু'মিন জননী জুয়াইরিয়াহ বিনতে হারেস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল ভোরে ফজরের
নামায সমাপ্ত করে তাঁর নিকট থেকে বাইরে গেলেন। আর তিনি (জুয়াইরিয়াহ) স্বীয় জায়নামাযে
বসেই রইলেন। তারপর চাশ্তের সময় তিনি যখন ফিরে এলেন, তখনও তিনি সেখানেই বসেছিলেন। এ
দেখে তিনি তাঁকে বললেন, “আমি যে অবস্থায় তোমাকে ছেড়ে বাইরে গেলাম, সে অবস্থাতেই তুমি
রয়েছ?” তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমার
নিকট থেকে যাবার পর আমি চারটি বাক্য তিনবার পড়েছি। যদি সেগুলিকে তোমার সকাল থেকে (এ
যাবৎ) পঠিত দু‘আর মুকাবিলায় ওজন করা যায়, তাহলে তা ওজনে সমান হয়ে যাবে। আর তা হচ্ছে
এই যে,
‘সুবহা-নাল্লা-হি অবিহামদিহী আদাদা খালক্বিহী, অরিযা নাফসিহী,
অযিনাতা আরশিহী, অমিদা-দা কালিমা-তিহ্।’ অর্থাৎ, আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি;
তাঁর সৃষ্টির সমান সংখ্যক, তাঁর নিজ মর্জি অনুযায়ী, তাঁর আরশের ওজন বরাবর ও তাঁর বাণীসমূহের
সমান সংখ্যক প্রশংসা।”
(মুসলিম ২৭২৬, তিরমিযী ৩৫৫৫, নাসায়ী ১৩৫২, ইবনু মাজাহ ৩৮০৮,
আহমাদ ২৬২১৮, ২৬৮৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৭)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার বান্দার ধারণার পাশে থাকি। (অর্থাৎ, সে যদি ধারণা রাখে
যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন, তার তওবা কবুল করবেন, বিপদ আপদ থেকে উদ্ধার করবেন, তাহলে
তাই করি।) আর আমি তার সাথে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। সুতরাং সে যদি তার মনে আমাকে
স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে আমার মনে স্মরণ করি, সে যদি কোন সভায় আমাকে স্মরণ করে, তাহলে
আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম ব্যক্তিদের (ফিরিশতাদের) সভায় স্মরণ করি।”
(রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং-১৪৪৩, সহীহুল বুখারী ৭৪০৫, ৭৫০৫,
৭৫৩৬, ৭৫৩৬, ৭৫৩৭, মুসলিম ২৬৭৫, তিরমিযী ২৩৮৮, ৩৬০৩, ইবনু মাজাহ ৩৮২২, আহমাদ ৭৩৭৪,
৮৪৩৬, ৮৮৩৩, ৯০০১, ৯০৮৭, ৯৩৩৪, ৯৪৫৭, ১০১২০, ১০২৪১, ১০৩০৬, ১০৩২৬, ১০৪০৩, ১০৫২৬, ১০৫৮৫,
২৭২৭৯, ২৭২৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৮)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর কিছু ফিরিশতা আছেন, যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে-ফিরে আহলে যিকর
খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন সম্প্রদায়কে আল্লাহর যিকররত অবস্থায় পেয়ে যান, তখন তাঁরা
একে অপরকে আহ্বান ক‘রে বলতে থাকেন, ‘এস তোমাদের প্রয়োজনের দিকে।’ সুতরাং তাঁরা (সেখানে
উপস্থিত হয়ে) তাদেরকে নিজেদের ডানা দ্বারা নিচের আসমান পর্যন্ত বেষ্টিত করে ফেলেন।
অতঃপর তাঁদেরকে তাঁদের প্রতিপালক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার বান্দারা
কি বলছে?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, আপনার মহত্ত্ব বর্ণনা
করছে, আপনার প্রশংসা ও গৌরব বয়ান করছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি আমাকে দেখেছে?’ ফিরিশতারা
বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! তারা আপনাকে দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা আমাকে
দেখত?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘যদি তারা আপনাকে দেখত, তাহলে আরও বেশী বেশী ইবাদত, গৌরব বর্ণনা
ও তসবীহ করত।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি চায় তারা?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা আপনার কাছে বেহেশত
চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জান্নাত দেখেছে?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম!
হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফিরিশতারা
বলেন, ‘তারা তা দেখলে তার জন্য আরও বেশী আগ্রহান্বিত হত। আরও বেশী বেশী তা প্রার্থনা
করত। তাদের চাহিদা আরও বড় হত।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি থেকে পানাহ চায়?’ ফিরিশতারা বলেন,
‘তারা দোযখ থেকে পানাহ চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি দোযখ দেখেছে?’ ফেরেশতারা বলেন,
‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা
তা দেখত?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে বেশী বেশী করে তা হতে পলায়ন করত। বেশী বেশী
ভয় করত।’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে মাফ ক‘রে
দিলাম।’ ফিরিশতাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘কিন্তু ওদের মধ্যে অমুক ওদের দলভুক্ত নয়।
সে আসলে নিজের কোন প্রয়োজনে সেখানে এসেছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘(আমি তাকেও মাফ করে দিলাম!
কারণ,) তারা হল এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত (হতভাগা) থাকে না।”
(রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস
নং-১৪৫৫, সহীহুল বুখারী ৬৪০৮, মুসলিম ২৬৮৯, তিরমিযী ৩৬০০, আহমাদ ৭৩৭৬, ৮৪৮৯, ৮৭৪৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৯)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) ও আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “যখনই কোন সম্প্রদায় আল্লাহ আয্যা অজাল্লার যিকরেরত হয়, তখনই তাদেরকে ফিরিশতাবর্গ
ঢেকে নেন, তাদেরকে রহমত আচ্ছন্ন করে নেয়, তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহ
তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাবর্গের কাছে তাদের কথা আলোচনা করেন।”
(রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস
নং-১৪৫৬, মুসলিম ২৬৯৯, ২৭০০, তিরমিযী ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫, আবূ দাউদ ৪৯৪৬, ইবনু
মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
সম্মানিত মুছল্লিবৃন্দ!
রাসুল সাঃ এর আমলের বাহিরে আমরা তো বানিয়ে বানিয়ে আমল করতে পারি না। আর করলেও কোনো
ফজিলত নেই। আমরা আনুগত্য করবো রাসুল সাঃ এর ও আল্লাহ তায়ালার। রাসুল সাঃ ফরজ ছালাত
শেষে যেসব আমল করতেন তা উল্লেখ করা হলো।
১ ও ২ নং দোয়া পাঠ করার
পর পরের দোয়াগুলো পাঠ করবো।
(৩নং) আল্ল-হুম্মা আন্তাস্ সালাম ওয়া মিনকাস্ সালাম, তা বারাক্তা ইয়া
যাল জালা-লি ওয়াল ইকরাম। (৩ বার)।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ!
আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের
মালিক’। ‘এটুকু পড়েই ইমাম উঠে যেতে পারেন’। [মুসলিম,মিশকাত হা/৯৬০।
সালাম ফিরানোর পর সহীহ
হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো না পড়ে ইমামের সাথে সম্মিলিতভাবে দুই হাত তুলে মোনাজাত করা
যেহেতু বিদআত এবং নবি করিম সা: তা করেন নি, সেই হেতু সম্মিলিত মোনাজাতে অংশ
গ্রহণ না করে আমরা ১ নং থেকে পরপর
দোয়াগুলো সময় নিয়ে পড়তে থাকবো বা যতোদূর সম্ভব পড়বো। এরপর একাকী দুই হাত তুলে
মোনাজাত করবো। যেকোনো সলাতে সালাম ফিরানোর পর বা যেকোনো সময় বিশেষ উদ্দেশ্যকে
সামনে রেখে একাকী দুই হাত তুলে মোনাজাত করা যাবে। আমরা অনেকে মোনাজাত শেষে দুই
হাত দিয়ে মুখ মন্ডল মাসেহ করি। এটা বিদআত। সহীহ হাদিস দ্বারা ইহা প্রমাণিত নয়। নবি
(সাঃ) এরুপ করেন নি। আমরা নবি (সাঃ)-কে অনুসরণ করবো এবং তিনি যেভাবে মোনাজাত শেষে সরাসরি দুই হাত ছেড়ে দিতেন আমরাও
তাই করবো। নবি (সাঃ) কে অনুসরণ করা এবং কাজে-কর্মে, কথা-বার্তায় সেগুলোর বাস্তবায়ন
যারা করেন তারাই হলো আশেকে রাসুল।
(৪নং) সুবহা-নাল্লা-হ (৩৩ বার)। আলহাম্দুলিল্লা-হ (৩৩ বার)।
আল্লাহু-আকবার (৩৩ বার)। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ; লাহুল
মুল্কু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লে শাইয়িন ক্বাদীর (১ বার)। অথবা
আল্লা-হু আকবার (৩৪ বার)।
অর্থ : পবিত্রতাময় আল্লাহ। যাবতীয়
প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। নেই কোন উপাস্য একক আল্লাহ ব্যতীত;
তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব ও তাঁরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। তিনি
সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী।[মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৬, ৯৬৭]
কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতি ফরয সলাতের
পর পাঠ করার মতো কিছু কালিমাহ্ আছে যেগুলো পাঠকারী বা ‘আমালকারী বঞ্চিত হয় না। সে
কালিমাগুলো হলোঃ ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ তেত্রিশবার ও
‘আল্ল-হু আকবার’ চৌত্রিশবার করে পড়া।(সহীহ মুসলিম ৫৯৬)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে লোক প্রত্যেক
সলাতের শেষে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার এবং
‘আল্ল-হু আকবার’ তেত্রিশবার পড়বে, যার মোট
সংখ্যা হবে নিরানব্বই বার, একশত পূর্ণ করার জন্যে একবার ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু
ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি
শাইয়্যিন ক্বদীর’’ (অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর
কোন শরীক নেই। সমগ্র রাজত্ব একমাত্র তাঁরই ও সকল প্রকারের প্রশংসা তাঁরই জন্য এবং
তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।) পাঠ করবে, তাহলে তার সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে,
যদি তা সাগরের ফেনারাশির সমানও হয়।
‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন ফাতিমা (রাঃ) (আটার) চাক্কি পিষতে পিষতে তার হাতের কষ্ট অনুভূত হওয়ার অভিযোগ
স্বরূপ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন। তিনি [ফাতিমা (রাঃ)]
জানতে পেরেছিলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যুদ্ধবন্দী
গোলাম এসেছে। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রসূলের দেখা না পেয়ে
মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে এ কথা বললেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
যখন ফিরে আসলেন ‘আয়িশাহ্ ফাত্বিমার কথা তাঁকে জানালেন। ‘আলী (রাঃ) বলেন, অতঃপর খবর
পেয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন আমাদের এখানে আসলেন, তখন আমরা
বিছানায় শুয়ে পড়ছিলাম। তাঁকে দেখে আমরা উঠতে চাইলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় থাকো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে এসে আমার ও ফাত্বিমার মাঝে বসে গেলেন। এমনকি আমি আমার
পেটে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পায়ের শীতলতা অনুভব করলাম। তারপর
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা যা আমার কাছে চেয়েছ এর
(গোলামের) চেয়ে অনেক উত্তম এমন কথা আমি কি তোমাদেরকে বলে দেবো না? আর তা হলো যখন
তোমরা ঘুমাবে তখন তেত্রিশবার ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, তেত্রিশবার ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ এবং
চৌত্রিশবার ‘আল্ল-হু আকবার’ পড়বে। এটা তোমাদের জন্য খাদিম (গোলাম) হতে অনেক উত্তম
হবে। (বুখারী ৫৩৬১,মুসলিম ২৭২৭, আবূ দাঊদ ৫০৬২,আহমাদ ১১৪১, ইবনু হিববান ৬৯২১, সহীহ
আত্ তারগীব ৬০৪। হাদিসের মানঃ সহিহ)
(৫নং) আয়াতুল কুরসী:-
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু
সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস
ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা
ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি
ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম।
অর্থ:
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ
করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন,
যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে
সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না,
কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে
আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
[২:২৫৫][১]
আয়তুল কুরসিকে বলা হয় আল কোরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত। এটি নিয়মিত আমল করলে
শ্রেষ্ঠ নেয়ামত লাভ করা যায়। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বর্ণনা করেছেন কোন আয়াতগুলি সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এই আয়াতগুলো
পাঠে কী ধরনের নেয়ামত অর্জন করবে বান্দা।
ফজিলত ও নেয়ামতে ভরপুর সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি। কুরআনের
সর্ববৃহৎ ও দ্বিতীয় সূরা ‘সূরা আল-বাক্বারা’র ২৫৫ নম্বর আয়াত। আয়াতটিতে মহাবিশ্বের
ওপর আল্লাহর ক্ষমতার কথা বর্ণিত হয়েছে।
হজরত আবু জর জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি নাজিলকৃত সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন
আয়াত কোনটি? তিনি বলে, আয়াতুল কুরসি। (নাসাঈ)
এ আয়াতটি ‘আয়াতুল কুরসি’ নামেই সব মুসলিমের কাছে পরিচিত। কিন্তু আমরা
অনেকেই জানি না এর ফজিলত কী। এ আয়াত পাঠে কেমন সওয়াব হয়। আসুন জেনে নেই আয়াতটির গুরুত্বপূর্ণ
ফজিলত-
(ক) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক ফরয ছালাত শেষে আয়াতুল কুরসী
পাঠকারীর জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আর কোন বাধা থাকে না মৃত্যু ব্যতীত’ (নাসাঈ)।
শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হেফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযু্ক্ত
থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হ’তে না পারে’ (বুখারী)।
[নাসাঈ কুবরা হা/৯৯২৮,
সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭২; মিশকাত হা/৯৭৪, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-১৮; মুসলিম,
বুখারী, মিশকাত হা/২১২২-২৩ ‘কুরআনের ফাযায়েল’ অধ্যায়-৮]
(খ) হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত
পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় থাকে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি শোয়ার আগে
পড়বে আল্লাহ তার ঘর, প্রতিবেশীর ঘর এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন। (বায়হাকি)
(গ) হজরত উবাই বিন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই বিন কাবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার কাছে কুরআন মাজিদের কোন
আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ? তিনি বলেছিলেন, (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু আল্ হাইয়্যুল কাইয়্যুম)
তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত তার বুকে রেখে বলেন, আবুল মুনযির!
এই ইলমের কারণে তোমাকে ধন্যবাদ। (মুসলিম)
(ঘ) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, সেটি হলো আয়াতুল
কুরসি। যে ঘরে এটি পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে হাকিম)
( যাদের হাতে সময় কম তবুও ১ নং থেকে ৪ নং পর্যন্ত পড়ে পরবর্তী সলাতে
যেতে হবে, মনে রাখবেন সলাতে তাড়াহুড়ো করলে সে সলাত কবুল হবে না। সালাম ফিরানোর পর পঠিতব্য
এই দোয়াগুলো খুবই ফজিলতপূর্ণ, যা নবি সা: নিজে পাঠ করতেন)।
এরপর সময় থাকলে নিচের দোয়াগুলো
পরপর পড়তে থাকবো:-
(৬নং) ‘আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সলাতের সালাম ফিরানোর পর উচ্চ কণ্ঠে
বলতেন,
‘‘লা- ইলা-হা
ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া
‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ, লা-
ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়ালা- না‘বুদু ইল্লা- ঈয়্যাহু, লাহুন্ নি‘মাতু, ওয়ালাহুল
ফাযলু, ওয়ালাহুস্ সানা-উল হাসানু, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন,
ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন’’
(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন
মা‘বূদ নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর এবং
তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাশীল। কোন অন্যায় ও অনিষ্ট হতে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই
এবং কোন সৎ কাজ করারও ক্ষমতা নেই একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। আল্লাহ ছাড়া
সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, আমরা একমাত্র তাঁরই ‘ইবাদাত করি, যাবতীয় নি‘আমাত ও
অনুগ্রহ একমাত্র তাঁরই পক্ষ থেকে এবং উত্তম প্রশংসাও তাঁর। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার
কোন মা‘বূদ নেই। আমরা তাঁর দেয়া জীবন বিধান একমাত্র তাঁর জন্য একনিষ্ঠভাবে মান্য
করি, যদিও কাফিরদের নিকট তা অপ্রীতিকর।(মুসলিম ৫৯৪)।
(৭নং) মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে
ভালোবাসি। আমিও সবিনয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তুমি প্রত্যেক সলাতের পর এ দু‘আ
পাঠ করতে ভুল করো নাঃ
‘‘রব্বি আ‘ইন্নী ‘আলা- যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি
‘ইবা-দাতিকা।’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিকর,
শুকর ও উত্তমরূপে ‘ইবাদাত করতে সাহায্য কর)। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও
(৮নং) রাযীতু বিললা-হি রববান
ওয়া বিল ইসলা-মি দীনান ওয়াবি মুহাম্মাদিন্ নাবিইয়ান।
অর্থ: আমি সন্তুষ্ট
হয়ে গেলাম আল্লাহর উপরে প্রতিপালক হিসাবে, ইসলামের উপরে দ্বীন হিসাবে এবং
মুহাম্মাদের উপরে নবী হিসাবে’।
রাসূলুল্লাহ (সা:)
বলেন, যে ব্যক্তি এই দো‘আ পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে’।
[আবুদাঊদ হা/১৫২৯,
(৯নং) আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল জুব্নি ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনাল
বুখ্লি ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন আরযালিল ‘উমুরি,
ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন্ ফিৎনাতিদ দুন্ইয়া ওয়া ‘আযা-বিল ক্বাবরি।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! (১)
আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি ভীরুতা হ’তে (২) আশ্রয় প্রার্থনা করছি
কৃপণতা হ’তে (৩) আশ্রয় প্রার্থনা করছি নিকৃষ্টতম বয়স হ’তে এবং (৪) আশ্রয়
প্রার্থনা করছি দুনিয়ার ফিৎনা হ’তে ও (৫) কবরের আযাব হ’তে’। [বুখারী,মিশকাত
হা/৯৬৪। সহিহ]
(১০নং) আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল
‘আজঝি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়া যালা‘ইদ দায়নি ওয়া গালাবাতির
রিজা-লি।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি
আপনার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ-বেদনা হ’তে, অক্ষমতা ও অলসতা
হ’তে, ভীরুতা ও কৃপণতা হ’তে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের যবরদস্তি হ’তে’।[মুত্তাফাক্ব
‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৪৫৮(সহিহ)
(১১নং) সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহাম্দিহী ‘আদাদা খালকিহী ওয়া রিদা
নাফ্সিহী ওয়া ঝিনাতা ‘আরশিহী ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহি (৩ বার)।
অর্থ : মহাপবিত্র
আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য। তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার সমপরিমাণ, তাঁর
সত্তার সন্তুষ্টির সমপরিমাণ এবং তাঁর আরশের ওযন ও মহিমাময় বাক্য সমূহের ব্যাপ্তি
সমপরিমাণ।[ মুসলিম, মিশকাত হা/২৩০১ (সহিহ)আবুদাঊদ হা/১৫০৩।]
(১২নং) ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূবে ছাবিবত ক্বালবী ‘আলা দ্বীনিকা,
আল্লা-হুম্মা মুছারিরফাল কবুলূবে ছাররিফ ক্বুলূবানা
‘আলা ত্বোয়া-‘আতিকা।
অর্থ : হে হৃদয় সমূহের
পরিবর্তনকারী! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখো’। ‘হে অন্তর সমূহের
রূপান্তরকারী! আমাদের অন্তর সমূহকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দাও’।[তিরমিযী,
ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১০২ মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯। ]
(১৩নং) আল্লা-হুম্মা আদখিলনিল জান্নাতা ওয়া আজিরনী মিনান্ না-র (৩ বার)।
অর্থ : হে আল্লাহ তুমি
আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ দাও! [তিরমিযী, নাসাঈ,মিশকাত
হা/২৪৭৮]
(১৪নং) আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াত তুক্বা ওয়াল ‘আফা-ফা
ওয়াল গিণা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি
তোমার নিকটে সুপথের নির্দেশনা, পরহেযগারিতা, পবিত্রতা ও সচ্ছলতা প্রার্থনা করছি।
[মুসলিম, মিশকাত হা/২৪৮৪]
(১৫নং) সুব্হা-নাল্লা-হি ওয়া বিহাম্দিহী, সুব্হা-নাল্লা-হিল ‘আযীম। অথবা সকালে ও
সন্ধ্যায় ১০০ বার করে ‘সুবহা-নাল্লা-হে ওয়া বেহামদিহী’ পড়বে।
অর্থ : ‘মহাপবিত্র
আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য। মহাপবিত্র আল্লাহ, যিনি মহান’। এই দো‘আ পাঠের
ফলে তার সকল গোনাহ ঝরে যাবে। যদিও তা সাগরের ফেনা সমতুল্য হয়’।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই দো‘আ সম্পর্কে বলেন যে,
দু’টি কালেমা রয়েছে,
যা রহমানের নিকটে খুবই প্রিয়, যবানে বলতে খুবই হালকা এবং মীযানের পাল্লায় খুবই
ভারী। তা হ’ল :-
সুব্হা-নাল্লা-হি ওয়া
বিহাম্দিহী, সুব্হা-নাল্লা-হিল ‘আযীম। [মুত্তাফাক্ব
‘আলাইহ,মিশকাত
হা/২২৯৬-৯৮,বুখারী হা/৭৫৬৩।
(১৬নং) আল্লা-হুম্মাক্ফিনী
বেহালা-লেকা ‘আন হারা-মেকা ওয়া আগ্নিনী বেফায্লেকা ‘আম্মান সেওয়া-কা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি
আমাকে হারাম ছাড়া হালাল দ্বারা যথেষ্ট করুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে
অন্যদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন করুন!
রাসূল (সা:)
বলেন, এই দো‘আর ফলে পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকলেও আল্লাহ তার ঋণ মুক্তির ব্যবস্থা
করে দেন’।[ তিরমিযী, বায়হাক্বী (দা‘ওয়াতুল কাবীর),মিশকাত হা/২৪৪৯]
(১৭নং) আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল
ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।
অর্থ : আমি আল্লাহর
নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও
বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে তাঁর দিকে ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি’। এই
দো‘আ পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী
হয়’।[তিরমিযী, আবুদাঊদ,মিশকাত হা/২৩৫৩, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭২৭।] রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) দৈনিক ১০০ করে বার তওবা করতেন’।[মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫ ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও
তওবা করা’ অনুচ্ছেদ-৪।]
(১৮নং) রাসূলুল্লাহ (সা:) প্রত্যেক ছালাতের শেষে সূরা ‘ফালাক্ব’ ও ‘নাস’
পড়ার নির্দেশ দিতেন। [আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৯৬৯, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪,
‘ছালাত পরবর্তী যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।]
রাসুল (সা:) প্রতি রাতে
শুতে যাওয়ার সময় সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পড়ে দু’হাতে ফুঁক দিয়ে মাথা ও
চেহারাসহ সাধ্যপক্ষে সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। তিনি এটি তিনবার করতেন।
(মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২১৩২ ‘কুরআনের ফাযায়েল’ অধ্যায়-৮)।
উল্লেখিত দোয়াগুলো ছাড়াও সহীহ হাদিসের আলোকে সকাল ও বিকেলে পঠিতব্য
অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়া আছে, যেগুলো আমরা পাঠ করবো।
সকাল
বেলার যিকির ও দোয়াসমূহ
সকাল বেলার যিকিরসমূহঃ সাধারনত এই যিকির ফজরের সময় থেকে নিয়ে সূর্য
উঠা পর্যন্ত সময়ে করার কথা এসেছে। তবে কেউ যদি এই সময়ের দোয়া ও যিকির নির্ধারিত সময়ে
না পড়তে পারেন, তাহলে যোহরের পূর্বে যেকোন সময়ে পড়লেও হবে ইন শা আল্লাহ।
১ নং দোয়া:- সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫ (আয়াতুল কুরসী)
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু
সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস
ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা
ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি
ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক।
তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে,
সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে
কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই
পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান
ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ
এবং সর্বাপেক্ষা মহান। [২:২৫৫][১]
আয়তুল কুরসিকে বলা হয় আল কোরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত। এটি নিয়মিত আমল করলে
শ্রেষ্ঠ নেয়ামত লাভ করা যায়। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বর্ণনা করেছেন কোন আয়াতগুলি সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এই আয়াতগুলো
পাঠে কী ধরনের নেয়ামত অর্জন করবে বান্দা।
ফজিলত ও নিয়ামতে ভরপুর সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি। কুরআনের
সর্ববৃহৎ ও দ্বিতীয় সূরা ‘সূরা আল-বাক্বারা’র ২৫৫ নম্বর আয়াত। আয়াতটিতে মহাবিশ্বের
ওপর আল্লাহর ক্ষমতার কথা বর্ণিত হয়েছে।
হজরত আবু জর জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি নাজিলকৃত সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন
আয়াত কোনটি? তিনি বলে, আয়াতুল কুরসি। (নাসাঈ)
এ আয়াতটি ‘আয়াতুল কুরসি’ নামেই সব মুসলিমের কাছে পরিচিত। কিন্তু আমরা
অনেকেই জানি না এর ফজিলত কী। এ আয়াত পাঠে কেমন সওয়াব হয়। আসুন জেনে নেই
আয়াতটির গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত-
০১. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক ফরয ছালাত শেষে আয়াতুল কুরসী
পাঠকারীর জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আর কোন বাধা থাকে না মৃত্যু ব্যতীত’ (নাসাঈ)।
শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হেফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযু্ক্ত
থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হ’তে না পারে’ (বুখারী)।
[ নাসাঈ কুবরা হা/৯৯২৮,
সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭২; মিশকাত হা/৯৭৪, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-১৮; মুসলিম,
বুখারী, মিশকাত হা/২১২২-২৩ ‘কুরআনের ফাযায়েল’ অধ্যায়-৮ ]
০২. হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত
পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় থাকে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি শোয়ার আগে
পড়বে আল্লাহ তার ঘর, প্রতিবেশীর ঘর এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন। (বায়হাকি)
০৩. হজরত উবাই বিন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই বিন কাবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার কাছে কুরআন মাজিদের কোন
আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ? তিনি বলেছিলেন, (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু আল্ হাইয়্যুল কাইয়্যুম)
তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত তার বুকে রেখে বলেন, আবুল মুনযির!
এই ইলমের কারণে তোমাকে ধন্যবাদ। (মুসলিম)
০৪. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, সেটি হলো আয়াতুল
কুরসি। যে ঘরে এটি পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে হাকিম)
২ নং দোয়া:-
রাসূল বললেন, যে
ব্যক্তি সকাল ও বিকালে ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’ (সূরা ইখলাস), ‘সূরা ফালাক’ ও ‘সূরা
নাস’ তিনবার করে বলবে, এটাই আপনার সব কিছুর জন্য যথেষ্ট হবে। (সহীহুত তিরমিযী,
৩/১৮২।)
৩ নং দোয়া:-
আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া
আতূবু ইলাইহি।
“আমি আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা
প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকটই তাওবা করছি”। (প্রতি দিন ১০০ বার) (বুখারী ১১/১০১, নং ৬৩০৭;
মুসলিম ৪/২০৭৫, নং ২৭০২।)
৪ নং দোয়া:-
আল্লা-হুম্মা ইন্নী
আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন্ ওয়া রিয্কান ত্বায়্যিবান ওয়া ‘আমালান মুতাক্বাব্বালান।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট
উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করি।” এটি ফজর নামাযের সালাম
ফিরানোর পর পড়তে হবে। (ইবন মাজাহ্, নং ৯২৫; নাসাঈ, হাদীস নং ১০২, মিশকাত, হা/২৪৯৮
)
৫ নং দোয়া:-
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু
ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হাম্দু ইয়ুহ্য়ী ওয়াইয়ূমীতু
ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর)।
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব
ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত
করেন এবং মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান”। ১০ বার করে পড়তে হবে।
(তিরমিযী ৫/৫১৫, নং ৩৪৭৪; আহমাদ ৪/২২৭, নং ১৭৯৯০।)
৬ নং দোয়া:-
আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী
ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাম্‘ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী। লা
ইলা-হা ইল্লা আনতা। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল-ফাক্বরি ওয়া
আ‘উযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা)। (৩ বার)
“হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন
আমার শরীরে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শ্রবণশক্তিতে। হে আল্লাহ! আমাকে
নিরাপত্তা দিন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি
আপনার কাছে আশ্রয় চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব
থেকে। আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই।” (৩ বার)
আবূ দাউদ ৪/৩২৪, নং
৫০৯২; আহমাদ ৫/৪২, নং ২০৪৩০; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭০১।
৭ নং দোয়া:-
হাসবিয়াল্লা-হু লা
ইলা-হা ইল্লা হুয়া, ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম) (৭ বার)
“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি
ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব।” (আবূ দাউদ ৪/৩২১;
মাওকূফ সনদে, নং ৫০৮১।)
যে ব্যক্তি দো‘আটি
সকালবেলা সাতবার এবং বিকালবেলা সাতবার বলবে তার দুনিয়া ও আখেরাতের সকল
চিন্তাভাবনার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট হবেন।
৮ নং দোয়া:-
যে ব্যক্তি এ দো‘আ সকাল
ও বিকাল তিনবার করে বলবে, আল্লাহর কাছে তার অধিকার হয়ে যায় তাকে কিয়ামাতের দিন
সন্তুষ্ট করা।
রদ্বীতু বিল্লা-হি
রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি দীনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যান)। (৩ বার)
“আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন ও
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবীরূপে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট।” (আবু দাউদ, ৪/৩১৮, নং
১৫৩১; তিরমিযী ৫/৪৬৫, নং ৩৩৮৯।)
৯ নং দোয়া:-
ইয়া হাইয়্যু ইয়া
ক্বাইয়্যূমু বিরহ্মাতিকা আস্তাগীসু, আসলিহ্ লী শা’নী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী
ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন)।
“হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি
আপনার রহমতের অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার কামনা করি, আপনি আমার সার্বিক অবস্থা
সংশোধন করে দিন, আর আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না।” [ হাকেম ১/৫৪৫, , সহীহ
আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ১/২৭৩।
১০ নং দোয়া:-
আল্লা-হুম্মা সাল্লি ওয়াসাল্লিম ‘আলা নাবিয়্যিনা
মুহাম্মাদ) [সকাল-বিকাল ১০ বার করে]
“হে আল্লাহ! আপনি সালাত ও সালাম
পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর।”
(বুখারী, ৭/১৬২, নং
১১৬২।)
১১ নং দোয়া ও যিকর:- (সায়্যিদুল
ইসতিগফার)
আল্লা-হুম্মা আনতা
রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা
ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা
বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয
যুনূবা ইল্লা আনতা।
“হে আল্লাহ্! আপনি
আমার রব্ব, আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি
আপনার বান্দা। আর আমি আমার সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের)
প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি
আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার
অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।”
“যে ব্যক্তি সকালবেলা
অথবা সন্ধ্যাবেলা এটি (‘সায়্যিদুল ইসতিগফার’) অর্থ বুঝে দৃঢ় বিশ্বাসসহকারে পড়বে,
সে ঐ দিন রাতে বা দিনে মারা গেলে অবশ্যই জান্নাতে যাবে।
(” বুখারী, ৭/১৫০, নং
৬৩০৬।)
১২ নং দোয়া:-
আসবাহনা ‘আলা
ফিত্বরাতিল ইসলামি ওয়া আলা কালিমাতিল ইখলাসি ওয়া আলা দ্বীনি নাবিয়্যিনা
মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়া আলা মিল্লাতি আবীনা ইবরা-হীমা
হানীফাম মুসলিমাও ওয়ামা কা-না মিনাল মুশরিকীন)।
“আমরা সকালে উপনীত
হয়েছি ইসলামের ফিত্বরাতের উপর, নিষ্ঠাপূর্ণ বাণী (তাওহীদ) এর উপর, আমাদের নবী
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীনের উপর, আর আমাদের পিতা
ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম-এর মিল্লাতের উপর—যিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম এবং যিনি
মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না”। (আহমাদ ৩/৪০৬, ৪০৭, নং ১৫৩৬০)।
১৩ নং দোয়া:-
(সুব্হা-নাল্লা-হি
ওয়া বিহামদিহী ‘আদাদা খালক্বিহী, ওয়া রিদা নাফসিহী, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহী, ওয়া
মিদা-দা কালিমা-তিহী)।
(৩ বার ফযর সালাতের পর
) যে কালিমাহ্ চারটির ওযন ভারী।
আমি আল্লাহর প্রশংসার
সাথে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর মাখলুকের সংখ্যার পরিমাণ, তাঁর সন্তুষ্টির
পরিমাণ, তাঁর ‘আর্শের ওযন পরিমাণ ও তাঁর কালিমাসমূহের সংখ্যার পরিমাণ।” (৩বার
পড়বে) মুসলিম ৪/২০৯০, নং ২৭২৬।
১৪ নং দোয়া:-
আসবাহ্না ওয়া আসবাহাল
মুলকু লিল্লাহি ওয়ালহাম্দু লিল্লাহি, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা
শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর।
রব্বি আস্আলুকা খাইরা মা ফী হা-যাল ইয়াউমি ওয়া খাইরা মা বা‘দাহু, ওয়া আ‘ঊযু বিকা
মিন শাররি মা ফী হা-যাল ইয়াউমি ওয়া শাররি মা বা‘দাহু। রব্বি আঊযু বিকা মিনাল
কাসালি ওয়া সূইল-কিবারি। রবিব আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযাবিন ফিন্না-রি ওয়া আযাবিন্ ফিল
ক্বাবরি)।
“আমরা সকালে উপনীত
হয়েছি, অনুরূপ যাবতীয় রাজত্বও সকালে উপনীত হয়েছে, আল্লাহ্র জন্য। সমুদয় প্রশংসা
আল্লাহ্র জন্য। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই।
রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হে রব্ব! এই দিনের মাঝে
এবং এর পরে যা কিছু কল্যাণ আছে আমি আপনার নিকট তা প্রার্থনা করি। আর এই দিনের মাঝে
এবং এর পরে যা কিছু অকল্যাণ আছে, তা থেকে আমি আপনার আশ্রয় চাই।
হে রব্ব! আমি আপনার
কাছে আশ্রয় চাই অলসতা ও খারাপ বার্ধক্য থেকে। হে রব্ব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই
জাহান্নামে আযাব হওয়া থেকে এবং কবরে আযাব হওয়া থেকে।” (মুসলিম, ৪/২০৮৮, নং ২৭২৩।)
১৫ নং দোয়া :-
(আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসবাহ্তু উশহিদুকা ওয়া
উশহিদু হামালাতা ‘আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতিকা ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা, আন্নাকা
আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা, ওয়া আন্না
মুহাম্মাদান আব্দুকা ওয়া রাসূলুকা) [৪ বার]
“হে আল্লাহ! আমি সকালে
উপনীত হয়েছি। আপনাকে আমি সাক্ষী রাখছি, আরও সাক্ষী রাখছি আপনার ‘আরশ বহনকারীদেরকে,
আপনার ফেরেশতাগণকে ও আপনার সকল সৃষ্টিকে, (এর উপর) যে নিশ্চয় আপনিই আল্লাহ,
একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই; আর মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার বান্দা ও রাসূল।”
যে ব্যক্তি সকালে অথবা
বিকালে তা চারবার বলবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করবেন। (বুখারী,
আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ১২০১;)
১৬ নং দোয়া:-
আল্লা-হুম্মা মা আসবাহা
বী মিন নি‘মাতিন আউ বিআহাদিন মিন খালক্বিকা ফামিনকা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা,
ফালাকাল হাম্দু ওয়ালাকাশ্ শুক্রু)।
“হে আল্লাহ! যে নেয়ামত
আমার সাথে সকালে উপনীত হয়েছে, অথবা আপনার সৃষ্টির অন্য কারও সাথে; এসব নেয়ামত
কেবলমাত্র আপনার নিকট থেকেই; আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং সকল প্রশংসা আপনারই। আর
সকল কৃতজ্ঞতা আপনারই প্রাপ্য।”
যে ব্যক্তি সকালবেলা
উপরোক্ত দো‘আ পাঠ করলো সে যেনো সেই দিনের শুকরিয়া আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি
বিকালবেলা এ দো‘আ পাঠ করলো সে যেনো রাতের শুকরিয়া আদায় করলো’’। আবূ দাউদ
৪/৩১৮, নং ৫০৭৫;
১৭ নং দোয়া:-
আল্লা-হুম্মা ইন্নী
আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল- ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাতি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী
আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা ফী দীনী ওয়াদুনইয়াইয়া, ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী,
আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী ওয়া আ-মিন রাও‘আ-তি। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি
ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ‘ঊযু
বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী)।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার
নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার
নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে
আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন
নিরাপত্তায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের
দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর
আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আশ্রয় চাই আমার নীচ থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে”।সহীহ ইবন
মাজাহ্ ২/৩৩২।
১৮ নং দোয়া:-
আল্লা-হুম্মা আ-লিমাল
গাইবি ওয়াশ্শাহা-দাতি ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, রব্বা কুল্লি শাই’ইন
ওয়া মালীকাহু, আশহাদু আল-লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আ‘উযু বিকা মিন শাররি নাফ্সী
ওয়া মিন শাররিশ শাইত্বা-নি ওয়াশিরকিহী/ওয়াশারাকিহী ওয়া আন আক্বতারিফা ‘আলা নাফ্সী
সূওআন আউ আজুররাহূ ইলা মুসলিম)।
“হে আল্লাহ! হে গায়েব ও
উপস্থিতের জ্ঞানী, হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, হে সব কিছুর রব্ব ও মালিক! আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই
আমার আত্মার অনিষ্ট থেকে, শয়তানের অনিষ্টতা থেকে ও তার শির্ক বা তার ফাঁদ থেকে,
আমার নিজের উপর কোনো অনিষ্ট করা, অথবা কোনো মুসলিমের দিকে তা টেনে নেওয়া থেকে।” এই
দোয়াটি সকাল সন্ধ্যা ও শয্যায় যাওয়ার সময় বলা যাবে। (সহীহুত তিরমিযী, হা/৩৩৯২, আবু
দাউদ, হা/ ৫০৬৭, দারেমী, হা/ ২৬৮৯, মিশকাত, হা/২৩৯০)
বিকেল
বেলার যিকির ও দোয়াসমূহ
বিকেল বেলার যিকির ও দোয়াসমূহঃ সাধারনত এই দোয়া ও যিকিরসমূহ আসরের সময় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মাঝে
করার কথা বলা হয়েছে। তবে মাগরিবের পর রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ সময়ের মাঝে করলেও সওয়াব
পাওয়া যাবে।
১ নং দোয়া:-
“আ’উযু বিকালিমা –তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন
শাররি মা খলাক্বা” (তিন বার)
অর্থঃ আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের অসিলায় আমি
তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই। (তিরমিজি, হা/৩/১৮৭)
২ নং দোয়া :-
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু
ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হাম্দু ইয়ুহ্য়ী ওয়াইয়ূমীতু
ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর)।
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব
ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত
করেন এবং মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান”। ১০ বার করে পড়তে হবে।
(তিরমিযী ৫/৫১৫,নং ৩৪৭৪; আহমাদ ৪/২২৭,নং ১৭৯৯০।)
৩ নং দোয়া :- সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫ (আয়াতুল কুরসী)
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু
সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস
ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা
ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি
ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক।
তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে,
সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে
কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই
পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান
ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ
এবং সর্বাপেক্ষা মহান। [২:২৫৫][১]
আয়তুল কুরসিকে বলা হয় আল কোরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত। এটি নিয়মিত আমল করলে
শ্রেষ্ঠ নেয়ামত লাভ করা যায়। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বর্ণনা করেছেন কোন আয়াতগুলি সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এই আয়াতগুলো
পাঠে কী ধরনের নেয়ামত অর্জন করবে বান্দা।
ফজিলত ও নিয়ামতে ভরপুর সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি। কুরআনের
সর্ববৃহৎ ও দ্বিতীয় সূরা ‘সূরা আল-বাক্বারা’র ২৫৫ নম্বর আয়াত। আয়াতটিতে মহাবিশ্বের
ওপর আল্লাহর ক্ষমতার কথা বর্ণিত হয়েছে।
হজরত আবু জর জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি নাজিলকৃত সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন
আয়াত কোনটি? তিনি বলে, আয়াতুল কুরসি। (নাসাঈ)
এ আয়াতটি ‘আয়াতুল কুরসি’ নামেই সব মুসলিমের কাছে পরিচিত। কিন্তু আমরা
অনেকেই জানি না এর ফজিলত কী। এ আয়াত পাঠে কেমন সওয়াব হয়। আসুন জেনে নেই আয়াতটির গুরুত্বপূর্ণ
ফজিলত-
(ক) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন, প্রত্যেক ফরয ছালাত শেষে আয়াতুল কুরসী পাঠকারীর জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য
আর কোন বাধা থাকে না মৃত্যু ব্যতীত’ (নাসাঈ)। শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার
হেফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযু্ক্ত থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী
হ’তে না পারে’ (বুখারী)।
[ নাসাঈ কুবরা হা/৯৯২৮,
সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭২; মিশকাত হা/৯৭৪, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-১৮; মুসলিম,
বুখারী, মিশকাত হা/২১২২-২৩ ‘কুরআনের ফাযায়েল’ অধ্যায়-৮ ]
(খ) হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত
পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় থাকে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি শোয়ার আগে
পড়বে আল্লাহ তার ঘর, প্রতিবেশীর ঘর এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন। (বায়হাকি)
(গ) হজরত উবাই বিন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই বিন কাবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার কাছে কুরআন মাজিদের কোন
আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ? তিনি বলেছিলেন, (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু আল্ হাইয়্যুল কাইয়্যুম)
তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত তার বুকে রেখে বলেন, আবুল মুনযির!
এই ইলমের কারণে তোমাকে ধন্যবাদ। (মুসলিম)
(ঘ) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, সেটি হলো আয়াতুল
কুরসি। যে ঘরে এটি পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে হাকিম)
৪ নং দোয়া:-
রাসূল বললেন, যে
ব্যক্তি সকাল ও বিকালে ‘কুলহু আল্লাহু আহাদ’ (সূরা ইখলাস), ‘সূরা ফালাক’ ও ‘সূরা
নাস’ তিনবার করে বলবে, এটাই আপনার সবকিছুর জন্য যথেষ্ট হবে।( সহীহুত তিরমিযী,
৩/১৮২, আবু দাউদ, হা/৪/৩২২, নং ৫০৮২।)
৫ নং দোয়া:-
আল্লা-হুম্মা মা আমসা (
সকালে বলতে হবে আসবাহা ) বী মিন নি‘মাতিন আউ বিআহাদিন মিন খালক্বিকা ফামিনকা ওয়াহ্দাকা
লা শারীকা লাকা, ফালাকাল হাম্দু ওয়ালাকাশ্ শুক্রু)।
“হে আল্লাহ! যে নেয়ামত
আমার সাথে বিকালে উপনীত হয়েছে, অথবা আপনার সৃষ্টির অন্য কারও সাথে; এসব নেয়ামত
কেবলমাত্র আপনার নিকট থেকেই; আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং সকল প্রশংসা আপনারই। আর
সকল কৃতজ্ঞতা আপনারই প্রাপ্য।”
যে ব্যক্তি সকালবেলা
উপরোক্ত দো‘আ পাঠ করলো সে যেনো সেই দিনের শুকরিয়া আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি
বিকালবেলা এ দো‘আ পাঠ করলো সে যেনো রাতের শুকরিয়া আদায় করলো’’। আবূ দাউদ
৪/৩১৮, নং ৫০৭৫;
৬ নং দোয়া:-
“আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী
ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাম্‘ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী। লা
ইলা-হা ইল্লা আনতা। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল-ফাক্বরি ওয়া
আ‘উযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা।” (৩ বার)
“হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন
আমার শরীরে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শ্রবণশক্তিতে। হে আল্লাহ! আমাকে
নিরাপত্তা দিন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি
আপনার কাছে আশ্রয় চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব
থেকে। আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই।” (৩ বার)
আবূ দাউদ ৪/৩২৪, নং
৫০৯২; আহমাদ ৫/৪২, নং ২০৪৩০; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭০১।
৭ নং দোয়া:-
হাসবিয়াল্লা-হু লা
ইলা-হা ইল্লা হুয়া, ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম) (৭ বার)
“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি
ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব।” (আবূ দাউদ ৪/৩২১;
মাওকূফ সনদে, নং ৫০৮১।)
যে ব্যক্তি দো‘আটি সকাল
বেলা সাতবার এবং বিকাল বেলা সাতবার বলবে তার দুনিয়া ও আখেরাতের সকল চিন্তাভাবনার
জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট হবেন।
৮ নং দোয়া:-
যে ব্যক্তি এ দো‘আ সকাল
ও বিকাল তিনবার করে বলবে, আল্লাহর কাছে তার অধিকার হয়ে যায় তাকে কিয়ামাতের দিন
সন্তুষ্ট করা।
রদ্বীতু বিল্লা-হি
রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি দীনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যান)। (৩ বার)
“আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন ও
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবীরূপে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট।” (আবু দাউদ, ৪/৩১৮, নং
১৫৩১; তিরমিযী ৫/৪৬৫, নং ৩৩৮৯।)
৯ নং দোয়া:-
ইয়া হাইয়্যু ইয়া
ক্বাইয়্যূমু বিরহ্মাতিকা আস্তাগীসু, আসলিহ্ লী শা’নী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী
ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন)।
“হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি
আপনার রহমতের অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার কামনা করি, আপনি আমার সার্বিক অবস্থা
সংশোধন করে দিন, আর আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না।” [ হাকেম ১/৫৪৫, , সহীহ
আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ১/২৭৩।
১০ নং দোয়া:-
আল্লা-হুম্মা সাল্লি ওয়াসাল্লিম ‘আলা নাবিয়্যিনা
মুহাম্মাদ) [সকাল-বিকাল ১০ বার করে]
“হে আল্লাহ! আপনি সালাত ও সালাম
পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর।”
(বুখারী, ৭/১৬২, নং
১১৬২।)
১১ নং দোয়া:-
(আল্লা-হুম্মা ইন্নী আমসাইতু (সকালে বলতে
হবে-আসবাহ্তু) উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা ‘আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতিকা ওয়া জামী‘আ
খালক্বিকা, আন্নাকা আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা,
ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আব্দুকা ওয়া রাসূলুকা) [৪ বার]
“হে আল্লাহ! আমি বিকালে
উপনীত হয়েছি। আপনাকে আমি সাক্ষী রাখছি, আরও সাক্ষী রাখছি আপনার ‘আরশ বহনকারীদেরকে,
আপনার ফেরেশতাগণকে ও আপনার সকল সৃষ্টিকে, (এর উপর) যে নিশ্চয় আপনিই আল্লাহ,
একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই; আর মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার বান্দা ও রাসূল।”
যে ব্যক্তি সকালে অথবা
বিকালে তা চারবার বলবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করবেন। (বুখারী,
আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ১২০১;)
১২ নং দোয়া:-
আমসাইনা ওয়া আমসাল
মুলকু লিল্লাহি ওয়ালহাম্দু লিল্লাহি, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা
শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর।
রব্বি আস্আলুকা খাইরা মা ফী হা-যাল ইয়াউমি ওয়া খাইরা মা বা‘দাহু, ওয়া আ‘ঊযু বিকা
মিন শাররি মা ফী হা-যাল ইয়াউমি ওয়া শাররি মা বা‘দাহু। রব্বি আঊযু বিকা মিনাল
কাসালি ওয়া সূইল-কিবারি। রবিব আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযাবিন ফিন্না-রি ওয়া আযাবিন্ ফিল
ক্বাবরি)।
“আমরা বিকালে উপনীত
হয়েছি, অনুরূপ যাবতীয় রাজত্বও বিকালে উপনীত হয়েছে, আল্লাহ্র জন্য। সমুদয় প্রশংসা আল্লাহ্র
জন্য। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই
এবং প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হে রব্ব! এই দিনের মাঝে
এবং এর পরে যা কিছু কল্যাণ আছে আমি আপনার নিকট তা প্রার্থনা করি। আর এই দিনের মাঝে
এবং এর পরে যা কিছু অকল্যাণ আছে, তা থেকে আমি আপনার আশ্রয় চাই।
হে রব্ব! আমি আপনার
কাছে আশ্রয় চাই অলসতা ও খারাপ বার্ধক্য থেকে। হে রব্ব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই
জাহান্নামে আযাব হওয়া থেকে এবং কবরে আযাব হওয়া থেকে।” (মুসলিম, ৪/২০৮৮, নং ২৭২৩।)
১৩ নং দোয়া:-
আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া
আতূবু ইলাইহি।
“আমি আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা
প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকটই তাওবা করছি”। (প্রতি দিন ১০০ বার)
(বুখারী ১১/১০১, নং
৬৩০৭; মুসলিম ৪/২০৭৫, নং ২৭০২।)
১৪ নং দোয়া:-
(সায়্যিদুল ইসতিগফার)
আল্লা-হুম্মা আনতা
রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা
ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা
বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয
যুনূবা ইল্লা আনতা।
“হে আল্লাহ্! আপনি
আমার রব্ব, আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি
আপনার বান্দা। আর আমি আমার সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের)
প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি
আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার
অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।”
“যে ব্যক্তি সকালবেলা
অথবা সন্ধ্যাবেলা এটি (‘সায়্যিদুল ইসতিগফার’) অর্থ বুঝে দৃঢ় বিশ্বাসসহকারে পড়বে,
সে ঐ দিন রাতে বা দিনে মারা গেলে অবশ্যই জান্নাতে যাবে।
(” বুখারী, ৭/১৫০, নং
৬৩০৬।)
১৫ নং দোয়া:-
আল্লা-হুম্মা ইন্নী
আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল- ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাতি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী
আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা ফী দীনী ওয়াদুনইয়াইয়া, ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী,
আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী ওয়া আ-মিন রাও‘আ-তি। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি
ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ‘ঊযু
বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী)।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার
নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার
নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে
আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন
নিরাপত্তায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের
দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর
আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আশ্রয় চাই আমার নীচ থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে”।সহীহ
ইবন মাজাহ্ ২/৩৩২।
১৬ নং দোয়া:-
আল্লা-হুম্মা আ-লিমাল
গাইবি ওয়াশ্শাহা-দাতি ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, রব্বা কুল্লি শাই’ইন
ওয়া মালীকাহু, আশহাদু আল-লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আ‘উযু বিকা মিন শাররি নাফ্সী
ওয়া মিন শাররিশ শাইত্বা-নি ওয়াশিরকিহী/
ওয়াশারাকিহী ওয়া আন
আক্বতারিফা ‘আলা নাফ্সী সূওআন আউ আজুররাহূ ইলা মুসলিম)।
“হে আল্লাহ! হে গায়েব ও
উপস্থিতের জ্ঞানী, হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, হে সব কিছুর রব্ব ও মালিক! আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই
আমার আত্মার অনিষ্ট থেকে, শয়তানের অনিষ্টতা থেকে ও তার শির্ক বা তার ফাঁদ থেকে, আমার
নিজের উপর কোনো অনিষ্ট করা, অথবা কোনো মুসলিমের দিকে তা টেনে নেওয়া থেকে।” (সহীহুত
তিরমিযী, ৩/১৪২।)
১৭ নং দোয়া:-
“ বিসমিল্লা-হিল্লাযি
লা-ইয়াদুররু মা”আ ইসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামা-ই ওয়া হুয়াস সামীউল
আলীম”।
অর্থঃ আমি ঐ আল্লাহর
নামে আরম্ভ করছি, যার নামে আরম্ভ করলে আসমান ও যমীনের কোনো বস্তুই কোনোরুপ ক্ষতি
সাধন করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৬৯,
তিরমিযি,হা/৩৩৮৮, আবু দাউদ, হা/৫০৮৮, সনদ সহীহ, মিশকাত, হা/২৩৯১)
১৮ নং দোয়া:-
“লা -ইলা-হা ইল্লাল্ল-হুল আযীমুল হালীম, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুল
আরশিল আযীম, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুস সামা ওয়া-তি ওয়া রব্বুল আরদি ওয়া রব্বুল
আরশিল কারীম।”
অর্থঃ
আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, যিনি মহান, যিনি সহনশীল। আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই।
তিনি আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালক
এবং মহান আরশের প্রতিপালক। (সহীহ বুখারী,হা/ ৬৩৪৫-৪৬, সহীহ মুসলিম, হা/৭০৯৭, মিশকাত,
হা/২৪১৭)।
আব্দুল্লাহ
ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) এ দোয়া পড়তেন-
১৯ নং দোয়া:-
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন যা-ওয়া-লি নি’মাতিকা ওয়া তাহাওঁবুলি
আ-ফিয়াতিকা ওয়া ফুজা-আতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামী’ঈ সাখাতিক।”
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার নি’আমতের হ্রাসপ্রাপ্তি, তোমার
শান্তির বিবর্তন, তোমার শাস্তির হঠাৎ আক্রমণ এবং সমস্ত অসন্তোষ হতে। (সহীহ মুসলিম,
হা/২৭৩৯, আবু দাউদ, হা/১৫৪৫, মিশকাত, হা/২৪৬১)
২০ নং দোয়া:-
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল
বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া আযাবিল ক্ববরি। আল্ল-হুম্মা আ-তি নাফসী তাকওয়া-হা- ওয়া যাক্কিহা-আন্তা
খইরু মান যাক্কা-হা আন্তা ওয়ালিয়্যুহা- ওয়া মাওলাহা- আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন
ইলমিন লা- ইয়ানফাউ ওয়া মিন ক্বলবিন লা-ইয়াখশা-উ ওয়া মিন নাফসিন লা-তাশবা’উ ওয়া মিন
দা’ ওয়াতিন লা-ইউসতাজা-বু লাহা।”
অর্থ:
হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আশ্যয় চাচ্ছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা,
বার্ধ্যকতা ও ক্বরেরর আযাব হতে। হে আল্লাহ! আমার আত্মাকে সংযম দান করুন, একে পবিত্র
করুন, আপনি শ্রেষ্ঠ পবিত্রকারী, আপনি তার অভিভাবক ও প্রভু। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি
আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এমন ইলম হতে যা উপকার করে না। এমন অন্তর হতে যা ভয় করে না।
এমন আত্মা হতে যা তৃপ্তি লাভ করে না এবং এমন দোয়া হতে যা কবুল হয় না। (সহীহ মুসলিম,
হা/২৭২২, আবু দাউদ, হা/১৫৪৮, ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৩৭, মিশকাত, হা/২৪৬০)
২১ নং দোয়া:-
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে
বর্ণিত, নবি সা: বলেছেন, তোমরা আল্লাহর নিকট পানাহ চেয়ে বল:
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ'উযুবিকা
মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাক্বা-ই, ওয়া সূইল ক্বাযা-ই, ওয়া শামা-তাতিল আ'দা-ই।“
অর্থ” আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি অক্ষমকারী
বিপদের কষ্ট হ'তে , দুভার্গ্যের আক্রমন হতে , মন্দ ফায়সালা হ'তে এবং শত্রুর হাসি
হ'তে।
(বুখারী-৬৩৪৭,৬৬১৬,
মুসলিম-২৭০৭,নাসাঈ-৫৪৯১,৫৪৯২, ৭৩০৮, মিশকাত, হা/২৪৫৭, আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৬৯)।
২২ নং দোয়া:-
“আল্লাহুম্মা
ইন্নি আউযুবিকা মিন ফিতনাতিন্নারি অআযাবিন্নারি অমিন শার্রিল গিনা ওয়াল ফাক্ব।“
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের ফিতনা থেকে, জাহান্নামের আযাব
থেকে এবং ধনবত্তা ও দারিদ্রের মন্দ থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
(বুখারী-৮৩৩,২৩৯৭, ৬৩৬৮, ৫৩৭৫, ৫৩৭৬, ৬৩৭৭, ৭১২৯,
মুসলিম-৫৮৭, ৫৮৯, নাসাঈ- ১৩০৯, ৫৪৫৪, ৫৪৬৬, ৫৪৭২, ৫৪৭৭, ৫৪০৪, ইবনে মাজাহ- ৩৮৩৮, আহমদ-
২৪০৫৭, ২৪০৬১, ২৫৭৯৫, তিরমিযি- ৩৪৮৯, আবু দাউদ- ১৫৪৩)।
২৩ নং দোয়া:-
“আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আ’ন হারামিক; ওয়া আগনিনি
বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।”
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালালের সাহায্যে হারাম থেকে
বাঁচান। এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষি হতে বাঁচান।’ (তিরমিজি,
হা/৩৫৬৩ মিশকাত, হা/৩৪৪৯, মুসতাদরাকে হাকিম, হা/১৯৭৩)।
২৪ নং দোয়া:-
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল ফাক্বরি ওয়াল কিল্লাতি ওয়ায যিল্লাতি ওয়া আ’উযুবিকা মিন আন আযলিমা আও উযলিমা”। (আবু দাউদ-হা/১৫৪৪)।
অর্থ:
হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট অভাব, স্বল্পতা ও অপমান হতে আশ্রয় চাই, আরো আশ্রয় চাই অত্যাচার করা ও অত্যাচার হওয়া থেকে।
২৫ নং দোয়া:-
আনাস (রাঃ) বলেন, নবি সা: বলতেন-
“আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল
হুযনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি,
ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন গালাবাতিদ দ্বীনি ওয়া কাহরির রিজালি।”
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ
থেকে; অপারগতা ও অলসতা থেকে; কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে; এবং ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন
থেকে। (সহীহ বুখারি, হা/২৮৯৩/৬৩৬৯, মিশকাত, হা/ ২৪৫৮, তিরমিযি, হা/৩৪৮৪, আবু দাউদ,
হা/১৫৪১, আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৭২)।
দৈনিক তাসবীহ,
তাহমীদ, তাহলীল ও তাকবীর
এই তাসবীহ সমূহ আমরা সারাদিনে রাতে যেকোন সময়
যেকোন স্থানেই পাঠ করতে পারি শুধুমাত্র টয়লেটে ও স্বামী স্ত্রীর সহাবস্থানের সময়
ছাড়া। অযু থাকা বা না থাকা যেকোন অবস্থায় কেবলামুখী হই বা না হই তাতে কোন সমস্যা
নেই। হাতে গুনে গুনে পড়াটাই সুন্নাহ ও উত্তম।
১ নং তাসবীহঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার বলে,
(সুব্হানাল্লা-হি
ওয়াবিহামদিহী)
‘আমি আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি’, তার
পাপসমূহ মুছে ফেলা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমান হয়ে থাকে।”( বুখারী ৭/১৬৮, নং
৬৪০৫; মুসলিম ৪/২০৭১, নং ২৬৯১)।
২ নং তাসবীহঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরও বলেন, যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত বাণীটি ১০ বার বলবে,
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা
লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর)।
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর
কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সকল কিছুর উপর
ক্ষমতাবান।” এটা তার জন্য এমন হবে যেন সে ইসমাঈলের সন্তানদের চারজনকে দাসত্ব থেকে
মুক্ত করল।”( বুখারী ৭/৬৭ নং ৬৪০৪;)।
৩ নং তাসবীহঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা যবানে সহজ, মীযানের পাল্লায় ভারী এবং করুণাময়
আল্লাহ্র নিকট অতি প্রিয়। আর তা হচ্ছে,
(সুব্হানাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, সুব্হানাল্লা-হিল
‘আযীম)।
‘আল্লাহ্র প্রশংসাসহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা
বর্ণনা করছি। মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি’।”( বুখারী ৭/১৬৮, নং
৬৪০৪;)।
৪ নং তাসবীহঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ,
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার— সূর্য যা কিছুর উপর উদিত হয় তার চেয়ে এগুলো
বলা আমার কাছে অধিক প্রিয়।(”মুসলিম, ৪/২০৭২, নং ২৬৯৫)।
৫ নং তাসবীহঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “তোমাদের কেউ কি প্রতিদিন এক হাজার সওয়াব অর্জন করতে অপারগ?” তাঁর সাথীদের
মধ্যে একজন প্রশ্ন করে বলল, আমাদের কেউ কী করে এক হাজার সওয়াব অর্জন করতে পারে?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, তার জন্য এক হাজার সওয়াব লেখা হবে
অথবা তার এক হাজার পাপ মুছে ফেলা হবে। (মুসলিম ৪/২০৭৩, নং ২৬৯৮)।
“যে ব্যক্তি বলবে,
৬ নং তাসবীহঃ
(সুব্হানাল্লা-হিল ‘আযীম ওয়াবিহামদিহী)।
‘মহান আল্লাহর প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা ও
মহিমা ঘোষণা করছি’— তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে।” ( তিরমিযী ৫/১১, নং
৩৪৬৪)।
৭ নং তাসবীহঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “ওহে আব্দুল্লাহ ইবন কায়েস! আমি কি জান্নাতের এক রত্নভাণ্ডার সম্পর্কে
তোমাকে অবহিত করব না?” আমি বললাম, নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, “তুমি
বল,
(লা হাউলা ওয়ালা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ)।
“আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে
থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।” (বুখারী, ফাতহুল
বারীসহ ১১/২১৩, নং ৪২০৬; মুসলিম ৪/২০৭৬, নং ২৭০৪)।
৮ নং তাসবীহঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “আল্লাহ্র নিকট সর্বাধিক প্রিয় বাক্য চারটি, তার যে কোনটি দিয়েই শুরু করাতে
তোমার কোনো ক্ষতি নেই। আর তা হলো,
(সুবহানাল্লা-হি ওয়ালহাম্দু লিল্লা-হি ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু
ওয়াল্লা-হু আকবার)।
“আল্লাহ পবিত্র-মহান। সকল হামদ-প্রশংসা আল্লাহর।
আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়।” (মুসলিম ৩/১৬৮৫, নং
২১৩৭)।
৯ নং তাসবীহঃ
এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আমাকে একটি কালেমা শিক্ষা দিন যা আমি বলব। তখন
রাসূল বললেন, “বল,
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, আল্লা-হু আকবার
কাবীরান, ওয়ালহামদুলিল্লা-হি কাসীরান, সুবহা-নাল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন, লা হাউলা
ওয়ালা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হিল ‘আযীযিল হাকীম।)
“একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই,
তাঁর কোনো শরীক নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়, অতীব বড়। আল্লাহ্র অনেক-অজস্র প্রশংসা।
সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ কতই না পবিত্র-মহান। প্রবল পরাক্রমশীল ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহর
সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি
কারো নেই।”
তখন বেদুঈন বলল, এগুলো তো আমার রবের জন্য;
আমার জন্য কী? তিনি বললেন: “বল,
(আল্লা-হুম্মাগফির লী, ওয়ারহামনী,
ওয়াহদিনী, ওয়ারযুক্বনী)
“হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া
করুন, আমাকে হেদায়াত দিন এবং আমাকে রিযিক দিন।” মুসলিম ৪/২০৭২, নং
২৬৯৬।
১০ নং তাসবীহঃ
“কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রথমে সালাত শিক্ষা দিতেন। অতঃপর এসব কথা
দিয়ে দো‘আ করার আদেশ দিতেন,
(আল্লা-হুম্মাগফির লী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া ‘আ-ফিনী
ওয়ারযুক্বনী)।
“হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া
করুন, আমাকে আপনি হেদায়াত দিন, আমাকে নিরাপদ রাখুন এবং আমাকে রিযিক দান
করুন।”( মুসলিম
৪/২০৭৩; নং ৩৬৯৭)।
১১ নং তাসবীহঃ
“সর্বশ্রেষ্ঠ
দো‘আ হল,
(আলহামদু লিল্লাহ)
“সকল প্রশংসা আল্লাহরই”। আর সর্বোত্তম যিক্র
হল,
(লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ)
“আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই।” (তিরমিযী ৫/৪৬২, নং
৩৩৮৩)।
১২ নং তাসবীহঃ
“‘আল-বাকিয়াতুস সালিহাত’ তথা চিরস্থায়ী নেক
আমল হচ্ছে,
(সুবহা-নাল্লা-হি, ওয়ালহামদুলিল্লা-হি, ওয়া
লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার, ওয়ালা হাউলা ওয়ালা কূওয়াতা ইল্লা
বিল্লা-হি)
“আল্লাহ পবিত্র-মহান। সকল হামদ-প্রশংসা আল্লাহর।
আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ
কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।” মুসনাদে আহমাদ নং
৫১৩;
১৩ নং তাসবীহঃ
‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি
লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি”
অর্থ :
‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ব্যতিত কোনো মাবুদ নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চির
প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁর কাছে তাওবা করি।’
আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন যদিও সে যুদ্ধ
ক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়। ( তিরমিজি: ৩/১৮২)।
১৪ নং তাসবীহঃ
শিরকের ভয়ে দুয়া:
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লামু ওয়া আস্তাগফিরুকা
লিমা লা আ’লামু”।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি জ্ঞাতসারে আপনার
সাথে শির্ক করা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই এবং অজ্ঞাতসারে (শিরক) হয়ে গেলে তার জন্য
ক্ষমা চাই। (ইমাম বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭১৬)।
(সমাপ্ত)
অন্যান্য বিষয়সমূহ জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ
কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে লিখিত অন্যন্য সকল বই এক সাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন।
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
উপদেষ্টা-
মোঃ আনোয়ার হোসাইন আকন্দ (কামিল, ফার্স্ট ক্লাশ-আল হাদিস)
সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়া, ঢাকা, বাংলাদেশ।
========================================================
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী ৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
--------------------------------------------------------------
(1) BCSসহ যেকোনো সরকারি বেসরকারি চাকরি সহজে পেতে এখানে ক্লিক করুন।
(2) মজার মজার ইসলামিক গজল ও অন্যান্য বিষয়ের ভিডিও দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন।
-------------------------------------------------------------------
Please Share On
Go Ahead
ReplyDelete