বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
গুণাহ মাফ ও জান্নাত পাওয়ার সহজ
আমল-১
মানুষ মাত্রই ভুল করে বা পাপ করে। বর্তমান
যুগে যেদিকেই তাকাই শুধু পাপ আর পাপ। এই পাপের কারনে নবি সাঃ এর ৯৯% উম্মত জাহান্নামে
যাবে। তবে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে ও জান্নাত পেতে রাসুল সাঃ অনেক সহজ আমল বলে দিয়েছেন,
যা আমল করলে সহজে জান্নাতে যাওয়া যাবে। আসুন সহিহ হাদিস ভিত্তিক সহজ আমলগুলো জেনে নেই
ও নিয়মিত পালন করি।
গুণাহ মাফ হওয়ার আমলসমূহ
(১) পরিপূর্ণভাবে ওযু করাঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করবে এবং উত্তমভাবে
উযূ করবে, তারপর জুমু‘আর সালাতে যাবে। চুপচাপ খুত্ববাহ্ (খুতবা) শুনবে। তাহলে তার এ
জুমু‘আহ্ হতে ওই জুমু‘আহ্ পর্যন্ত সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে, অধিকন্তু আরো তিন দিনের।
আর যে ব্যক্তি খুত্ববার সময় ধূলা বালি নাড়ল সে অর্থহীন কাজ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯০, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১০৫০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫০২৭, আহমাদ ৯৪৮৪, ইবনু
খুযায়মাহ্ ১৭৫৬, ১৮১৮, ইবনু হিব্বান ২৭৭৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৪৯, শু‘আবুল
ঈমান ২৭২৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৬১৭৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) ওযু-পরবর্তী দুই রাকা‘আত সালাতঃ
আবূ তাহির, আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ
ইবনু আমর ইবনু সারহ ও হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া আত-তুজীবী (রহঃ)....উসমান ইবনু আফফান
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ওযুর পানি চাইলেন। এরপর তিনি ওযু করতে আরম্ভ করলেন।
(বর্ণনাকারী বলেন), তিনি উসমান (রাযিঃ) তিনবার তার হাতের কজি পর্যন্ত ধুলেন, এরপর কুলি
করলেন এবং নাক ঝাড়লেন। এরপর তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুলেন এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার
ধুলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরূপভাবে ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন। এরপর তার ডান
পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন- অতঃপর তদ্রুপভাবে বাম পা ধুলেন তারপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার এ ওয়ূর করার ন্যায় ওযু করতে দেখেছি এবং ওযু
শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযুর ন্যায়
ওযু করবে এবং একান্ত মনোযোগের সাথে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পিছনের
সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
ইবনু শিহাব বলেন, আমাদের ’আলিমগণ বলতেন যে,
সালাতের জন্য কারোর এ নিয়মের ওযুই হল পরিপূর্ণ ওযু । (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৪৩৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৩) রুকু থেকে দাঁড়িয়ে দু‘আ পাঠঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ই।মাম যখন সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে,
তোমরা তখন রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ বল। কেননা যার কথা ফিরিশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে
তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৬৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৯৬, ৩২২৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৮৪৮, আহমাদ ৯৯৩০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)
(৪) সূরা ফাতিহা শেষে 'আমীন' বলাঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘আমীন’ বলেন, তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলো।
কেননা, যার ‘আমীন’ (বলা) ও মালাইকাহর ‘আমীন’ (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মা‘ফ
করে দেয়া হয়। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ও ‘আমীন’ বলতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৮০,
৬৪০২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১০, আহমাদ ৮২৪৭, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) খাবার শেষে দু‘আ পাঠ করাঃ
সাহল ইবনে মুআয ইবনে আনাস আল-জুহানী (রাঃ)
থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি
আহার করে সে যেন বলে,
“আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত’আমানী
হাযা ওয়া রাযাকানীহি মিনগাইরি হাওলিন মিন্নী ওয়ালা কুওয়াতিন’’
(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য যিনি আমাকে
আমার শক্তি ও জোর ব্যতীত আহার করিয়েছেন ও রিযিক দান করেছেন), তাহলে তার পূর্বেকার গুনাহ
মাফ করে দেয়া হবে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৫৮,
সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৮৫, ইরওয়া ১৯৮৯, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১০০, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব
১৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৬) পোশাক পরিধানের দু‘আ পাঠ করাঃ
সাহল
ইবনু মু’আয ইবনু আনাস (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি খাওয়ার পরে এ দু’আ পাঠ করবে তার আগে পরের সকল গুনাহ
ক্ষমা করা হবে।
“আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত’আমানী
হাযা ওয়া রাযাকানীহি মিনগাইরি হাওলিন মিন্নী ওয়ালা কুওয়াতিন’’
অর্থঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে
এ খাদ্য খাওয়ালেন এবং আমার পক্ষ থেকে কোনো কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই রিযিক দান
করলেন।’’
তিনি আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি কোনো কাপড় পরার
সময় এ দু’আ পাঠ করবে তার আগে পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবেঃ
“আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী কাসা-নী
হাযা- ওয়া রযাক্বানীহি মিন গইরি হাওলিম মিন্নী ওয়া লা- কুওওয়াতিন”
অর্থঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার
কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই আমাকে এ কাপড়ের ব্যবস্থা করে পরালেন।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০২৩)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(৭) রমাযানের সিয়াম পালন করাঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সওম
পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব
লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ
মাফ করে দেয়া হয়। সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহ.) যুহরী (রহ.) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪০২৩, ৩৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৮৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(৮) রমাযানে ক্বিয়াম তথা তারাবীর
সালাত আদায় করাঃ
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)....আবূ হুরায়রাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। যে ব্যক্তি রমযান মাসে ঈমানের সাথে ও একান্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির
নিমিত্তে তারাবীহ পড়ে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৬৪, ১৬৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৭৫৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৪৯, ইসলামীক সেন্টার ১৬৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(৯) লাইলাতুল ক্বদরে ইবাদত করাঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সওম
পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব
লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ
মাফ করে দেয়া হয়। সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহ.) যুহরী (রহ.) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪০২৩, ৩৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৮৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(১০) হজ্ব সম্পাদন করাঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন লোক যদি হজ্জ করে এবং তাতে
কোন রকম অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ না করে তাহলে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া
হয়। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৮১১, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫২১, ১৮১৯, ১৮২০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৪২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪২৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) আযানের দু‘আ পাঠ করাঃ
সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের
আযান শুনে এই দু‘আ পড়বে,
‘‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু
ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়ারসূলুহূ, রযীতু
বিল্লা-হি রববাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন রসূলান ওয়াবিল ইসলা-মি দীনা’’
(অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া
প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল, আমি আল্লাহকে রব, দীন হিসেবে
ইসলাম, রসূল হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানি ও মানি) এর উপর
আমি সন্তুষ্ট, তাহলে তার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬১, মুসলিম ৩৮৬, আবূ দাঊদ ৫২৫, নাসায়ী ৬৭৯, তিরমিযী ২১০, ইবনু মাজাহ্
৭২১, আহমাদ ১৫৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৪২২। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১২) ইস্তিগফার পাঠ করাঃ
ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এ দো‘আ
পড়বে,
‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা
ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু অ আতূবু ইলাইহ্।’
অর্থাৎ আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা
করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা
করছি।
সে ব্যক্তির পাপরাশি মার্জনা করা হবে; যদিও
সে রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে (যাওয়ার পাপ করে) থাকে।’’ (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) আবূ দাউদ ১৫১৭, তিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-
তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১৩) ফরয-সালাত পরবর্তী তাসবীহ,
তাহমীদ ও তাকবীর পাঠ করাঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে লোক প্রত্যেক সালাতের শেষে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’
তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার এবং ‘আল্ল-হু আকবার’ তেত্রিশবার পড়বে, যার
মোট সংখ্যা হবে নিরানব্বই বার, একশত পূর্ণ করার জন্যে একবার ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু
ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন
ক্বদীর’’ (অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই।
সমগ্র রাজত্ব একমাত্র তাঁরই ও সকল প্রকারের প্রশংসা তাঁরই জন্য এবং তিনি সকল বস্তুর
উপর ক্ষমতাবান।) পাঠ করবে, তাহলে তার সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদি তা সাগরের ফেনারাশির
সমানও হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৭, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১২৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৫৯৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২২৮, ইসলামীক সেন্টার ১২৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সেই সাথে জাহান্নাম থেকেও মুক্তি পেয়ে যাবেন
কেননা দিনে ৩৬০ বার এই তাসবিহগুলো পড়লেই জাহান্নাম থেকে মুক্ত রাখা হয় আর এভাবে ৫ ওয়াক্তে
৫০০ বার পড়া হচ্ছে।
মূল হাদিসঃ
হাসান
ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ)....আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক আদম সন্তানকেই ৩৬০টি অস্থিসন্ধি বিশিষ্ট
করে সৃষ্টি করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি ঐ সংখ্যা পরিমাণ আল্লা-হু আকবার বলবে, আলহামদু
লিল্লাহ’ বলবে, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলবে, সুবহা-নাল্ল-হ’ বলবে, আসতাগফিরুল্ল-হ’
বলবে, মানুষের চলার পথ থেকে একটি পাথর বা একটি কাটা বা একটি হাড় সরাবে, সৎ কাজের আদেশ
দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে, সে কিয়ামতের দিন এমনভাবে চলাফেরা করবে যে, সে নিজেকে
৩৬০ ( অস্থিসন্ধি) সংখ্যা পরিমাণ জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে অর্থাৎ বেঁচে থাকবে। আবূ
তওবা তার বর্ণনায় এ কথাও উল্লেখ করেছেন যে, সে এ অবস্থায় সন্ধ্যা করবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০০৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২১৯৯, ইসলামীক সেন্টার ২২০১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৪) প্রতিদিন ১০০ বার ‘সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করাঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক প্রতিদিন একশ’বার সুবাহানাল্লাহি ওয়া
বিহামদিহ বলবে তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯১, আহমাদ ৮০১৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-
৫৮৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৫) ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,
ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা- হাওলা ওয়া লা- কুওওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ’ পাঠ করাঃ
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পৃথিবীর বক্ষে যে লোকই
বলে,
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, ওয়াল্লাহু
আকবার, ওয়া লা- হাওলা ওয়া লা- কুওওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ”
“আল্লাহু তা’আলা ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই, আল্লাহ
সুমহান, খারাপকে রোধ করা এবং কল্যাণকে লাভ করার শক্তি আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কারো
নেই", তার অপরাধগুলো মাফ করা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির ন্যায় (বেশি) হয়।
(সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৬০, তা’লীকুর রাগীব ২/২৪৯)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(১৬) বিছানায় দু‘আ পাঠ করাঃ
রাসূল (সা) বলেছেন, "যে-ব্যক্তি বিছানায়,
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ, ওয়াহ্দাহু
লা- শারীকা লাহ, লাহূল মুলকু ওয়া লাহূল হামদু , ওয়া হূওয়া ‘আলা কুল্লি শায়্য়িন ক্বদীর,
লা- হাওলা ওয়া লা- কুওওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ, সুবহা-নাল্লা-হ, ওয়াল হামদুলিল্লা-হ, ওয়া
লা- ইলা-হা ইল্লাল লাহূ, ওয়াল্লাহু আকবার”
পাঠ করে, তাঁর সমস্ত গুনাহ মাফ করা দেওয়া হয়।
যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার চেয়েও বেশি হয়।" (ইবনু
হিব্বান ৫৫২৮)। হাদিসের মান সহিহ।
(১৮) পরস্পর সাক্ষাতে সালাম দিয়ে মুসাফাহা করাঃ
আল-বারাআ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’ জন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে
মুসাফাহা করলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বেই তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১৯) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করাঃ
(ক) আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক শীতের
সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন, আর তখন গাছের পাতা ঝরে পড়ছিল। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি গাছের দু’টি ডাল ধরে নাড়া দিলেন। বর্ণনাকারী
বলেন, তাতে গাছের পাতা ঝরতে লাগলো। আবূ যার (রাঃ) বলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) আমাকে ডাকলেন, হে আবূ যার! উত্তরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি উপস্থিত।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কোন মুসলিম বান্দা যদি
আল্লাহর সন্তুষ্টির বিধানের জন্য খালিস মনে সালাত আদায় করে, তার জীবন থেকে তার গুনাহসমূহ
এভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেভাবে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭৬, আহমাদ
২১০৪৬, সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৪)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
(খ) যায়দ বিন খালিদ আল জুহানী (রাঃ)হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দু’ রাক্’আত
সালাত আদায় করেছে, আর এতে ভুল করেনি, আল্লাহ তার অতীত জীবনের সব গুনাহ (সগীরাহ্) ক্ষমা
করে দিবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭৭, আহমাদ ২১১৮৩,
আবূ দাঊদ ৯০৫, সহীহ আত্ তারগীব ২২৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(২০) আরাফার দিন ও আশূরার ছিয়াম পালন করাঃ
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আল্লাহর নিকট আরাফাত দিবসের
রোযার এই সওয়াব আশা করি যে, তিনি তাঁর বিনিময়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুনাহ মাফ
করে দিবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৭৩০, সুনান তিরমিযী ৭৪৯,
আহমাদ ২২০২৪, ইরওয়াহ ৯৫২, আবী দাউদ ২০৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আশূরার ছিয়াম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আশূরা বা ১০ই মুহাররমের ছিয়াম আমি
আশা করি আল্লাহর নিকটে বান্দার বিগত এক বছরের (ছগীরা) গোনাহের কাফফারা হিসাবে গন্য
হবে’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৪৪, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ২৬৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৬২, সুনান আবূ দাঊদ ২৪২৫, সুনান আততিরমিযী
৭৫২, সুনান ইবনু মাজাহ ১৭৩৮, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২০৮৭, শু‘আবূল ঈমান ৩৮৮৩, সহীহ ইবনু
হিব্বান ৩৬৩২, ইরওয়া ৯২৫, সহীহ আত্ তারগীব ১০১৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৮৩৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(২১) খুশূ-খুযূ বা বিনয় ও একাগ্রতার সাথে ছালাত আদায় করাঃ
’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যা আল্লাহ
তা’আলা (বান্দার জন্য) ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি এ সালাতের জন্য ভালোভাবে উযূ করবে, সঠিক
সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকূ’ ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা
রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা নেই।
ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭০, আহমাদ ২২৭০৪, সুনান আবূ দাঊদ
৪২৫, মালিক ১৪, সুনান আননাসায়ী ৪৬১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(২২) জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করাঃ
ওছমান ইবনু আফফান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি উত্তম রূপে ওযূ করে ফরয ছালাতের
জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে ইমামের সাথে ছালাত আদায় করে তার গোনাহ সমূহ ক্ষমা করা হয়’।
(ইবনু খুযায়মাহ হা/১৪৮৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩০০, ৪০৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৩) ছালাতে সশব্দে আমীন বলাঃ
(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ’আমীন’ বলবে, তোমরাও
’আমীন’ বলবে। কারণ যে ব্যক্তির ’আমীন’ মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) আমীনের সাথে মিলে
যায়, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহগুলো মাফ করে দেন।
আর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন ইমাম বলে, “গয়রিল মাগযূবি ’আলায়হিম ওয়ালায্ যোয়াল্লীন’’, তখন
তোমরা ’আমীন’ বলবে। কারণ যার ’আমীন’ শব্দ মালায়িকাহ্’র ’আমীন’ শব্দের সাথে মিলে যায়
তার আগের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। এ শব্দগুলো সহীহুল বুখারীর।
সহীহ মুসলিমের হাদীসের শব্দগুলোও এর মতই। আর
সহীহুল বুখারীর অন্য একটি বর্ণনার শব্দ হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যখন কুরআন তিলাওয়াতকারী, অর্থাৎ- ইমাম বা অন্য কেউ ’আমীন’ বলবে, তোমরাও সাথে সাথে
’আমীন’ বলো। আর যে ব্যক্তির ’আমীন’ শব্দ মালায়িকাহ্’র আমীন শব্দের সাথে মিলে যাবে,
তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৮২৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৮০, ৬৪০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪১০, সুনান আবূ দাঊদ
৯৩৬, সুনান আননাসায়ী ৯৩৮, সুনান আততিরমিযী ২৫০, ইরওয়া ৩৪৪, সহীহ আল জামি‘ ৩৯৫, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ (সালাতে) ‘আমীন’ বলে,
আর আসমানে মালাইকাহ্ ‘আমীন’ বলেন এবং উভয়ের ‘আমীন’ একই সময় হলে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত
পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৭৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(২৪) বেশী বেশী সিজদা করাঃ
মাদান ইবনু আবূ তালহা আল-ইয়ামূরী (রহঃ) বলেন,
আমি সাওবান (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করে তাকে বললাম, আপনি আমার নিকট একটি হাদীস বর্ণনা
করুন, আশা করি তার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। রাবী বলেন, তিনি নীরব থাকলেন।
আমি বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করলাম, এবারও তিনি নীরব থাকলেন। এভাবে তিনবার নীরব থাকলেন।
অবশেষে তিনি আমাকে বলেন, তুমি অবশ্যই আল্লাহ্র জন্য সিজদা করো। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ যে কোন বান্দা আল্লাহ্র জন্য একটি
সিজদা করলেই আল্লাহ এর বিনিময়ে তার একধাপ মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার একটি গুনাহ ক্ষমা
করে দেন। মাদান (রহঃ) বলেন, অতঃপর আমি আবূ দারদা -এর সঙ্গে সাক্ষাত করে তাকে এ সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও একই কথা বলেন। (সুনান ইবনু মাজাহ
১৪২৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৮০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৪৮৮, সুনান আততিরমিযী ৩৮৮, ১১৩৯; আহমাদ ২১৮৬৫, ১১৯০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(২৫) জুম‘আর দিন মনোযোগ সহকারে খুৎবা শ্রবণ করা ও ছালাত আদায় করাঃ
সালমান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন গোসল করবে, যতটুকু
সম্ভব পবিত্রতা অর্জন করবে, তারপর নিজের তেল হতে তার শরীরে কিছু তেল মাখাবে, অথবা ঘরে
সুগন্ধি থাকলে কিছু সুগন্ধি লাগাবে। তারপর মসজিদের দিকে রওনা হবে। দু’ব্যক্তির মধ্যে
ফাঁক করবে না। যতটুকু সম্ভব সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) (নফল) আদায় করবে। চুপচাপ বসে
ইমামের খুতবাহ্ শুনবে। নিশ্চয় তার জুমু’আহ্ ও আগের জুমু’আর মাঝখানের সব (সগীরাহ্) গুনাহ
মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮১, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮৩, ৯১০, শারহুস
সুন্নাত ১০৫৮, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৯, সহীহ আল জামি‘ ৭৭৩৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩২ ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৬) অসচ্ছল ও অভাবীকে
অবকাশ দেয়াঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যবসায়ী লোকদের ঋণ দিত। কোন অভাবগ্রস্তকে
দেখলে সে তার কর্মচারীদের বলত, তাকে ক্ষমা করে দাও, হয়তো আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ক্ষমা
করে দিবেন। এর ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৭৮, ৩৪৮০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৮৯০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৬২, আহমাদ ৭৫৮২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯৩৩ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৪৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
হুযাইফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক ব্যক্তির
রূহের সাথে ফেরেশতা সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কোন নেক কাজ করেছ? লোকটি উত্তর
দিল, আমি আমার কর্মচারীদের আদেশ করতাম যে, তারা যেন সচ্ছল ব্যক্তিকে অবকাশ দেয় এবং
তার উপর পীড়াপীড়ি না করে। রাবী বলেন, তিনি বলেছেন, ফেরেশতারাও তাঁকে ক্ষমা করে দেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৯৩২)।
আবূ মালিক (রহ.) রিব্ঈ ইবনু হিরাশ (রহ.) সূত্রে
বর্ণনা করেন, আমি সচ্ছল ব্যক্তির জন্য সহজ করতাম এবং অভাবগ্রস্তকে অবকাশ দিতাম। শু‘বাহ্
(রহ.) আবদুল মালিক (রহ.) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেন। আবূ আওয়ানাহ (রহ.) আবদুল মালিক (রহ.)
সূত্রে বর্ণনা করেন, আমি সচ্ছলকে অবকাশ দিতাম এবং অভাবগ্রস্তকে মাফ করে দিতাম এবং নু‘আইম
ইবনু আবূ হিন্দ (রহ.) রিব্ঈ (রহ.) সূত্রে বলেন, আমি সচ্ছল ব্যক্তি হতে গ্রহণ করতাম
এবং অভাবগ্রস্তকে ক্ষমা করে দিতাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২০৭৭, ২৩৯১, ৩৪৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৮৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৫৬০, আহমাদ ২৩৪৪৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ শেষাংশ নেই, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৪৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৭) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু
সরিয়ে ফেলাঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় কাঁটাদার
গাছের একটি ডাল রাস্তায় পেল, তখন সেটাকে রাস্তা হতে অপসারণ করল, আল্লাহ তার এ কাজকে
কবূল করলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২৪৭২, ৬৫২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩১০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(২৮) আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির প্রতি সদয় হওয়াঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা
লাগল। সে কূপে নেমে পানি পান করল। এরপর সে বের হয়ে দেখতে পেল যে, একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে
এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল, কুকুরটারও আমার মতো পিপাসা লেগেছে। সে কূপের
মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে উপরে উঠে এসে কুকুরটিকে
পানি পান করাল। আল্লাহ তা‘আলা তার আমল কবূল করলেন এবং আল্লাহ তার গোনাহ মাফ করে দেন।
সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলেও কি আমাদের সাওয়াব হবে?
তিনি বললেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করাতেই পুণ্য রয়েছে। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩৬৩, ১৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৭৫২, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২২৪৪, আহমাদ ৮৮৮৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২১৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২০৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৯) আল্লাহর পথে জিহাদ করাঃ
মিকদাম ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শাহীদের জন্য আল্লাহর
নিকট ছয়টি পুরস্কার সুরক্ষিত রয়েছে। ১- যুদ্ধরত অবস্থায় তার রক্তের ফোঁটা মাটিতে ঝরা
মাত্রই তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং তাকে জান্নাতের আবাসস্থল দেখানো হয়। ২- তাকে কবরের
’আযাব হতে নিষ্কৃতি দেয়া হয়। ৩- হাশরের ময়দানের মহাভীতি হতে দূরে রাখা হয়। ৪- (কিয়ামতের
দিন) সম্মানজনকভাবে তার মাথায় ইয়াকূতের মুকুট পরানো হবে, যার মধ্যে খচিত একটি ইয়াকূত
দুনিয়া ও তার সমস্ত ধন-সম্পদ হতে উত্তম। ৫- সুন্দর বড় বড় চক্ষুবিশিষ্ট বাহাত্তর জন
হূরকে তার সঙ্গিনীরূপে দেয়া হবে। ৬- তার নিকটাত্মীয়দের মধ্যে সত্তরজনের সুপারিশ কবুল
করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৩৪, সুনান আততিরমিযী
১৬৬৩, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৯৯, সহীহাহ্ ৩২১৩, আহমাদ ১৬৭৩০, বায়হাকী ফিস সুনান ৯/১৬৪,
বায়হাকী ফিশ শুআব ১০৮২৩, ১০৮২৪, আল-আহকাম ৩৬ নং পৃষ্ঠা, মিশকাত ৩৮৩৪, আত-তালীকুর রাগীব
২/১৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জান্নাত পাওয়ার সহজ আমল
(১) মনে প্রাণে আল্লাহ তাআলাকে
এক বলে সাক্ষ্য প্রদান করাঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বাহনের উপর বসা ছিলেন এবং তাঁর পেছনে মু’আয (রাঃ) আরোহণ করেছিলেন। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে মু’আয! তিনি (মু’আয) বললেন, আমি উপস্থিত
আছি, হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেন, হে মু’আয!
তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি উপস্থিত আছি। তৃতীয়বার আবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে মু’আয! তিনি বললেন, আমি উপস্থিত আছি। এভাবে মু’আযকে তিনবার ডাকলেন
এবং (মু’আয) তিনবারই তাঁর উত্তর দিলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, আল্লাহর যে বান্দা খাঁটি মনে এ ঘোষণা দিবে, ’’আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই,
আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল’’, আল্লাহ তার ওপর জাহান্নাম
হারাম করে দিবেন।
তখন মু’আয (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এ
সুসংবাদটি কি আমি লোকেদেরকে জানিয়ে দিব? তারা যাতে এ খোশখবরী শুনলে খুশী হয়? তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না, তাহলে তারা এর উপর নির্ভর করে বসে থাকবে।
[আনাস (রাঃ) বলেন] মু’আয (রাঃ) শুধুমাত্র হাদীস গোপন করার অপরাধে অপরাধী হওয়ার ভয়েই
মৃত্যুকালে এ হাদীসটি প্রকাশ করে গিয়েছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৮, ১২৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩২, সহীহ আত্ তারগীব ১৫২২, শু‘আবুল ঈমান ১২৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) একক ভাবে আল্লাহর ইবাদত করাঃ
মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি এক ভ্রমণে গাধার উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে আরোহণ
করলাম। আমার আর তাঁর মধ্যে হাওদার পেছন দিকের হেলানো কাঠ ছাড়া আর কোন ব্যবধান ছিল না।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে মু’আয! বান্দাদের ওপর আল্লাহর কি
হক এবং আল্লাহর ওপর বান্দার কি হক, তুমি কি তা জান? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলই
এ ব্যাপারে অধিক অবগত। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বান্দাদের
ওপর আল্লাহর হক হলো, তারা আল্লাহর ’ইবাদাত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর
আল্লাহর ওপর বান্দার হক হলো, যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি, আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি
দিবেন না- এ কথা শুনে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে আমি কি এ সুসংবাদ মানুষদেরকে
জানিয়ে দিব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, লোকদেরকে এ সুংসংবাদ
দিও না। কারণ তাহলে তারা এর উপর নির্ভর করে বসে থাকবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২৮৫৬, ৫৯৬৭, ৬২৬৭, ৬৫০০, ৭৩৭৩,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩০, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৯৬,
সুনান আততিরমিযী ২৬৪৩, সুনান আবূ দাউদ ২৫৫৯, আহমাদ ১৩৩৩১, ২১৪৮৬, ২১৪৯৯, ২১৫৩৪, ২১৫৫৩,
২১৫৯১, সহীহ আল জামি‘ ৭৯৬৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৫৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ঠিক সময় আদায় করাঃ
(ক) উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ),
যা আল্লাহ তা’আলা (বান্দার জন্য) ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি এ সালাতের জন্য ভালোভাবে উযূ
(ওযু/ওজু/অজু) করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকূ’ ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে,
তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তা না করবে, তার
জন্য আল্লাহর ওয়া’দা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও
দিতে পারেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭০, সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৫, আহমাদ ২২৭০৪, মালিক ১৪, সুনান আননাসায়ী ৪৬১, সহীহ আত্ তারগীব
৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের ওপর ফরয করা পাঁচ ওয়াক্ত
সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় কর, তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করা মাসটির সিয়াম (রোযা)
পালন কর, আদায় কর তোমাদের ধন-সম্পদের যাকাত এবং তোমাদের নেতৃবৃন্দের আনুগত্য কর। তাহলে
তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৫৭১, আহমাদ ২১৬৫৭, সুনান আততিরমিযী ৬১৬, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৮৬৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) প্রতিদিন ১২ রাকাআত নফল সালাত আদায় করাঃ
উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক দিন রাতে বারো রাক্’আত সালাত
আদায় করবে তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (সে বারো রাক্’আত সালাত হলো) চার
রাক্’আত যুহরের ফারযের পূর্বে আর দু’ রাক্’আত যুহরের (ফারযের) পরে, দু’ রাক্’আত মাগরিবের
(ফরয সালাতের) পরে। দু’ রাক্’আত ’ইশার ফরয সালাতের পরে। আর দু’ রাক্’আত ফাজ্রের (ফজরের)
(ফরয সালাতের) পূর্বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৫৯,
সুনান ইবনু মাজাহ ১১৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৮,
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪১৫, সহীহ আল জামি ৬৩৬২, সুনান আননাসায়ী ১৭৯৬-৯৯, ১৮০১-২,
১৮০৪, ১৮০৬, ১৮০৮-১০; আহমাদ ২৬২২৮, ২৬৮৬৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫৬৪, ইসলামীক সেন্টার
১৫৭১, সহীহাহ ২৩৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) আসর ও ফজরের সালাতঃ
(ক) উমারাহ্ ইবনু রুআয়বাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ এমন ব্যক্তি
জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্য উঠার ও ডোবার আগে সালাত আদায় করেছে, অর্থাৎ- ফাজর (ফজর)
ও আসরের সালাত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬২৪, ৬২৫,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩৪, সহীহ আল জামি ৫২২৮, সুনান
আবূ দাঊদ ৪২৭, সুনান আননাসায়ী ৪৭১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমাদের কাছে রাতে একদল ও দিনে একদল মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) আসতে থাকেন। তারা
ফাজর (ফজর) ও ’আসরের ওয়াক্তে মিলিত হন। যারা তোমাদের কাছে থাকেন তারা আকাশে উঠে গেলে
আল্লাহ তা’আলা তাদের কাছে (বান্দার) অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, যদিও তিনি তাদের
সম্পর্কে অধিক অবগত। বলেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কী অবস্থায় রেখে এসেছো? উত্তরে মালায়িকাহ্
বলেন, হে আল্লাহ! আমরা আপনার বান্দাদেরকে সালাত আদায়ে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। আর যে
সময় আমরা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছেছি তখনও তারা সালাত আদায় করছিল।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫৫, ৩২২৩, ৭৪২৯,
৭৪৮৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩২, নাসায়ী ৪৮৫, মালিক
১৮০/৫৯০, আহমাদ ১০৩০৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৩৭, সহীহ আল জামি ৮০১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৫২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) জুনদুব আল ক্বসরী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করলো সে আল্লাহর যিম্মাদারিতে থাকলো। অতএব
আল্লাহ যেন আপন যিম্মাদারীর কোন বিষয় সম্পর্কে তোমাদের বিপক্ষে বাদী না হন। কারণ তিনি
যার বিপক্ষে আপন দায়িত্বের কোন ব্যাপারে বাদী হবেন, তাকে (নিশ্চিত) ধরতে পারবেনই। অতঃপর
তিনি তাকে উপুড় করে জাহান্নামের আগুনে ফেলবেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৫৭,
আহমাদ ১৮৮১৪, সহীহাহ্ ২৮৯০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(৬) অযু করার পর একনিষ্ঠ হৃদয়ে দু রাকাআত নামায আদায় করাঃ
মুহাম্মাদ
ইবনু হাতিম ইবনু মাইমূন (রহঃ)....উকবাহ ইবনু আমির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার
ওপর উট চড়ানোর দায়িত্ব ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম।
তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকেদের সঙ্গে
কথা বলছেন। তখন আমি তার এ কথা শুনতে পেলাম, "যে মুসলিম সুন্দরভাবে ওযু করে তারপর
দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ রেখে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করে
সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। উকবাহ বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলামঃ বাহ! হাদীসটি কত চমৎকার!
তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন, আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সে দিকে তাকিয়ে দেখলাম
তিনি ’উমার। তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে দেখেছি, এ মাত্র এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর আগে বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করে
এ দু’আ পড়বে- "আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয় আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু
ওয়া রাসূলুহু"। তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা
সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৪, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৯০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৭) প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করাঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল
কুরসী পাঠ করবে তাকে জান্নাতে যাওয়া থেকে মৃত্যু ব্যতীত কোন কিছুই বাধা দিতে পারবে
না।”
“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল
ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল
আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম
ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া
কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল
আজীম”। (সুনান আন নাসাই ৯৯২৮, সহীহ জামে ৫/৩৩৯, ৬৪৬৪, সিলসিলাহ সহীহাহ্ ৯৭২)।
(৮) আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোযা রাখাঃ
(ক) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায়
এক দিনও সিয়াম পালন করে, আল্লাহ্ তার মুখমন্ডলকে দোযখের আগুন হতে সত্তর বছরের রাস্তা
দূরে সরিয়ে নেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৪০,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৬০১-২৬০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫৩, আহমাদ ১১৭৯০, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ২৬৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ)...সাহল (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা
আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারীরাই প্রবেশ করবে।
তাঁদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম পালনকারীরা
কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাঁদের প্রবেশের
পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে। (সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ১৭৭৫, ১৭৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৮৯৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৯৬, ৩২৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ২৬০০,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে
তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ হতে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব যে সালাত
আদায়কারী, তাকে সালাতের দরজা হতে ডাকা হবে। যে মুজাহিদ, তাকে জিহাদের দরজা হতে ডাকা
হবে। যে সিয়াম পালনকারী, তাকে রাইয়্যান দরজা হতে ডাকা হবে। যে সাদাকা দানকারী, তাকে
সাদাকার দরজা হতে ডাকা হবে। এরপর আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য
আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক, সকল দরজা হতে কাউকে ডাকার কোন প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে
সব দরজা হতে ডাকা হবে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হাঁ। আমি
আশা করি তুমি তাদের মধ্যে হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৮৯৭, ২৭৪১, ৩২১৬, ৩৬৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২৭,
আহমাদ ৭৬৩৭, সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ১৭৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) অযুর দুআ পাঠ করাঃ
মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মাইমূন (রহঃ)....উকবাহ
ইবনু আমির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ওপর উট চড়ানোর দায়িত্ব ছিল। আমার
পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকেদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তার এ কথা শুনতে
পেলাম, "যে মুসলিম সুন্দরভাবে ওযু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি আল্লাহর
প্রতি নিবদ্ধ রেখে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। উকবাহ বলেন,
কথাটি শুনে আমি বলে উঠলামঃ বাহ! হাদীসটি কত চমৎকার! তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন,
আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সে দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি ’উমার। তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে
দেখেছি, এ মাত্র এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগে বলেছেন, তোমাদের
মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করে এ দু’আ পড়বে-
"আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়
আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু"।
তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং
যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৪, ইসলামিক
সেন্টারঃ ৪৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পাঠ করাঃ
শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু‘আ পড়া-
“আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা
ইল্লা আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু।
আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী।
ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা”।
‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে
সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের
উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি
তোমার যে নি‘য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি
আমাকে ক্ষমা কর।’’
যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে
এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি
রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে
সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬,
৬৩২৩, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) জান্নাত লাভের প্রার্থনা করাঃ
(ক) “আল্লা-হুম্মা আদখিলনিল জান্নাতা
ওয়া আজিরনী মিনান্ না-র”। (৩ বার)
অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ
করাও এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ দাও! (তিরমিযী, নাসাঈ,
মিশকাত হা/২৪৭৮)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জান্নাতের
প্রত্যাশা করে; জান্নাত বলবে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর যে ব্যক্তি
তিনবার জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করবে; জাহান্নাম বলবে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম
থেকে মুক্তি দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৭৮, সহীহ
তিরমিযী ৫৫২১, নাসায়ী ৫৫২১, সহীহ ইবনু হিববান ১০৩৪, সহীহ আল জামি‘ ৬২৭৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ
সালিহ (রহঃ) হতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি সালাতে কি
দু‘আ পাঠ কর? লোকটি বলল, আমি তাশাহহুদ (তথা আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা¬হি..) পাঠ করি এবং
বলি
‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা
ওয়া আ‘উযুবিকা মিনান্ নার।’
কিন্তু আমি আপনার ও মু‘আযের অস্পষ্ট শব্দগুলো
বুঝতে পারি না ( অর্থাৎ আপনি ও মু‘আয কি দু‘আ পড়েন তা বুঝতে সক্ষম হই না)। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরাও তার আশে-পাশে ঘুরে থাকি (অর্থাৎ জান্নাত প্রার্থনা করি)।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৯২, ৭৯৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১২৭-১২৮, ইবনু মাজাহ
৯১, ছহীহ ইবনু হিববান ৮৬৫, আহমাদ (৩/৪৭৪, ৫/৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২) আযানের জবাব দেয়াঃ
(ক) ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুয়ায্যিন যখন ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ বলে তখন
তোমাদের কেউ যদি (উত্তরে) অন্তর থেকে বলে, ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ ‘‘আল্লা-হু আকবার’’,
এরপর মুয়ায্যিন যখন বলেন, ‘‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,’’ সেও বলে, ‘‘আশ্হাদু
আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’’। অতঃপর মুয়ায্যিন যখন বলে, ‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার্
রসূলুল্ল-হ’’, সেও বলে ‘‘আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ’’, তারপর মুয়ায্যিন
যখন বলে, ‘‘হাইয়্যা ‘আলাস্ সলা-হ্’’, সে তখন বলে, ‘‘লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা-
বিল্লা-হ’’; পরে মুয়ায্যিন যখন বলে, ‘‘আল্লা-হু আকবার ‘আল্লা-হু আকবার’’, সেও বলে,
‘‘আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার’’ এরপর মুয়ায্যিন যখন বলে, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,’’
সেও বলে ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫২৭, সহীহ আল জামি ৭১৪,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৩৪, ইসলামিক সেন্টার ৭৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুয়াযযিনের আযান
শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ
যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত
বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ‘ওয়াসীলা’ হলো
জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর
আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’র দু‘আ করবে, কিয়ামতের
(কিয়ামতের) দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫২৩, সুনান আন-নাসায়ী
(ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৭৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৬১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯০,
ইরওয়া ২৪২, সহীহ আল জামি ৬১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৩) নিম্ন লিখিত দুআটি পাঠ করাঃ
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসবাহ্তু উশহিদুকা
ওয়া উশহিদু হামালাতা ‘আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতিকা ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা, আন্নাকা আনতাল্লা-হু
লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আব্দুকা ওয়া
রাসূলুকা”। (৪ বার)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি সকালে উপনীত হয়েছি।
আপনাকে আমি সাক্ষী রাখছি, আরও সাক্ষী রাখছি আপনার ‘আরশ বহনকারীদেরকে, আপনার ফেরেশতাগণকে
ও আপনার সকল সৃষ্টিকে, (এর উপর) যে নিশ্চয় আপনিই আল্লাহ, একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো
হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই; আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আপনার বান্দা ও রাসূল।”
যে ব্যক্তি সকালে অথবা বিকালে তা চারবার বলবে,
আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করবেন। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৭১, বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ১২০১; নাসাঈ, ‘আমালুল ইয়াওমি
ওয়াল লাইলাহ, নং ৯; ইবনুস সুন্নী, নং ৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৪) সালামের প্রচলন করাঃ
আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ
(রাযিঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঈমানদার ছাড়া
কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না একে
অন্যকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বলে দিব না, কি করলে তোমাদের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসার
সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা পরস্পর বেশি সালাম বিনিময় করবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৪, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৬৮৮, সুনান আবূ দাউদ ৫১৯৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৬৮, ৩৬৯২, আহমাদ ৮৮৪১, ৯৪১৬,
৯৮২১, ১০২৭২, ২৭৩১৪, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ৮৫২, ইরওয়া ৭৭৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৫) ইসলামী জ্ঞান অর্জন করাঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি কোন মুসলিমের পার্থিব
বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করলো, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার পারলোকিক বিপদসমূহ থেকে
একটি বিপদ দূর করবেন। কোন ব্যাক্তি অপর মুসলিমের দোষ গোপন রাখলে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে
তার দোষ গোপন রাখবেন। যে ব্যাক্তি অপর ব্যাক্তির কষ্ট-কাঠিন্য সহজ করে দেয়, আল্লাহ
দুনিয়া ও আখিরাতে তার কষ্ট সহজ করে দিবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতায়
রত থাকে, আল্লাহ ততক্ষণ তার সাহায্য-সহায়তায় রত থাকেন।
কোন ব্যাক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোন পথ অবলম্বন
করলে, আল্লাহ এই উসীলায় তার জন্য জান্নাতের একটি পথ সুগম করে দেন। যখন কোন লোকসমষ্টি
আল্লাহ্র ঘরসমূহের মধ্যকার কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহ্র কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পর
তা শিক্ষা করে, তখন মালায়িকাহ তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখেন, তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল
হয়, দয়া ও অনুগ্রহ তাদের আবৃত করে নেয় এবং আল্লাহ তাঁর নিকটে অবস্থানকারীদের (মালায়িকাহর)
সাথে তাদের বিষয়ে আলোচনা করেন। (পৃথিবীতে) যার সৎকর্ম কম হবে (আখিরাতে) তার বংশমর্যাদা
কোন উপকারে আসবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৫, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৬৭৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৬৯৯, সুনান আততিরমিযী ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫; সুনান আবূ দাঊদ ১৪৫৫, ৩৬৪৩, ৪৯৪৬; আহমাদ
৭৩৭৯, ৭৮৮২, ৮১১৭, ১০১১৮, ১০২৯৮; দারিমী ৩৪৪, সহীহ্ তারগীব ১/৩১/৬৭, হাদীস সম্ভার ১৫৪৯,
রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৩৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৬) সত্য কথা বলা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা, আমানত আদায় করা, লজ্জাস্থান হেফাযত করা ও দৃষ্টি অবনত রাখাঃ
হজরত উবাদা বিন সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমাকে ছয়টি বিষয়ের জামানত (নিশ্চয়তা) দাও; আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জামিন
হচ্ছি (নিশ্চয়তা দিচ্ছি)।
(১) যখন কথা বলবে, সত্য বলবে।
(২) কখনও ওয়াদা করলে তা পূরণ করবে।
(৩) কখনও তোমাদের কাছে আমানত রাখা হলে, তা
(প্রাপকের কাছে ঠিকমতো) পৌঁছে দেবে।
(৪) লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে।
(৫) দৃষ্টি অবনত রাখবে।
(৬) হাতকে অন্যায় থেকে বিরত রাখবে। (মুসনাদে আহমদ ২২৭৫৭, সহিহ আল-জামে ১০১৮)।
(১৭) জিহ্বা ও লজ্জাস্থানকে হেফাযত
করাঃ
সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা)
এবং দু’রানের মাঝখানের বস্তু (লজ্জাস্থান) এর জামানত আমাকে দিবে, আমি তার জান্নাতের
যিম্মাদার। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭৪, আধুনিক
প্রকাশনী- ৬০২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৮) মাসজিদ নির্মাণ করাঃ
(ক) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি
আল্লাহ্র নামের যিকিরের জন্য একটি মাসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি
প্রাসা’দ তৈরি করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৩৫-৭৩৬, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৭৬-৭৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৫৩৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫০, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৩৬, আহমাদ ১২৭, ৩৭৮, সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩১৮, দারেমী ১৪৩২, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ১২৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ্র জন্য টিড্ডির ঢিবির ন্যায়
বা তার চাইতেও ক্ষুদ্র একটি মাসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর
নির্মাণ করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১৯) পিতা-মাতার সেবা করাঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তার নাক ধুলোয় মলিন হোক, তার নাক
ধূলোয় মলিন হোক, তার নাক ধূলোয় মলিন হোক (তথা অপদস্থ হোক)। তিনি জনৈক সাহাবী কর্তৃক
জিজ্ঞাসিত হলেন, হে আল্লাহর রসূল! কে সে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
যে ব্যক্তি নিজের পিতা-মাতার কোন একজনকে বা উভয়কে বার্ধক্য অবস্থায় পেল, অথচ (তাদের
খিদমাত করে) সে জান্নাতে প্রবেশ করল না। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৪৯১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫১, সহীহুল
জামি‘ ৩৫১১, সহীহ আত্ তারগীর ওয়াত তারহীব ২৪৯০, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১৬, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৬২৭৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৩২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২০) ক্রোধ সংবরণ করাঃ
(ক) আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর
হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও জমিনের
সমান, যা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর
পথে) ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্মশীলদের
ভালোবাসেন”। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪)।
(খ) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ
সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে তা অন্য কিছু সংবরণে নেই। (সুনান
ইবনু মাজাহ ৪১৮৯, আত-তাকীকুর রাগীব ৩/২৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) মুআয ইবনে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধকে কার্যে পরিণত করার ক্ষমতা রেখেও
তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টি সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের
যে কোন হূর নিজের ইচ্ছামত বেছে নেয়ার অধিকার দান করবেন। (সুনান
ইবনু মাজাহ ৪১৮৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০৮৮, সুনান আততিরমিযী ২০২১, ২৪৯৩, সুনান
আবূ দাউদ ৪৭৭৭, আহমাদ ১৫২১০, রাওদুন নাদীর ৪৮১, ৮৫৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/২৭৯)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঘ) জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল,
হে আল্লাহর রাসূল! এমন একটি আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বললেন,
‘তুমি রাগ প্রকাশ করবে না, তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে’। (ত্বাবারাণী
আওসাত্ব হা/২৩৫৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৭৪৯)।
(ঙ) আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ মহীয়ান ও গরীয়ানের
দৃষ্টিতে কোন বান্দা রাগের ঢোকের চেয়ে উত্তম ঢোক গিলে না, যা সে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির
জন্য গিলে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১১৬, আহমাদ
৬১১৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৪১৮৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৭৫২, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৯৯৫, শু‘আবুল
ঈমান ৮৩০৭, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৬৩, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৭২৮২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
(২১) ইয়াতীমের লালন-পালন করাঃ
(ক) ইয়াতীমদের লালন-পালন করলে জান্নাত লাভ হয়।
আমর বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাতা পিতা মারা যাওয়া কোন মুসলিম
ইয়াতীমকে স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত নিজ পানাহারে শামিল করে, ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাত
অবধারিত হয়ে যায়’। (আহমাদ হা/১৯০২৫; ছহীহ তারগীব হা/২৫৪৩)।
একই ভাবে অসহায় মায়ের ক্ষুধার্ত অবুঝ সন্তানকে
নিজের মুখের গ্রাস তুলে দেওয়ার মধ্যেও জান্নাত হাছিল হয়।
(খ) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ).....আয়িশাহ (রাযিঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক অসহায় স্ত্রী তার দুটি মেয়ে সন্তানসহ আমার নিকট
আসলো। আমি তাদেরকে তিনটি খেজুর খেতে দিলাম। সে দু’ মেয়ের প্রত্যেককে একটি করে খেজুর
দিল এবং একটি নিজে খাবার জন্যে তার মুখে তুলল। সে মুহুর্তে মেয়ে দুটি এ খেজুরটিও খেতে
চাইল। সে তখন নিজে খাবার জন্যে যে খেজুরটি মুখে তুলেছিল সেটি তাদের উভয়ের মাঝে বণ্টন
করে দিল। তার এ আচরণ আমাকে আশ্চর্য করে দিল। পরে আমি সে যা করেছে তা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমীপে আলোচনা করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা এ কারণে তার জন্যে
জান্নাত আবশ্যক করে দিয়েছেন অথবা তিনি তাকে এ কারণে জাহান্নাম হতে মুক্তি দিয়েছেন।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৬৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪৫৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৫০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি এবং ইয়াতীমের লালন-পালনকারী,
সে ইয়াতীম নিজের হোক বা অন্য কারো হোক জান্নাতে এরূপ হবো, এ কথা বলে তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করলেন। তখন দু’ অঙ্গুলির
মধ্যে সামান্য ব্যবধান ছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪৯৫২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০০৫, সুনান আততিরমিযী ১৯১৮, সুনান আবূ দাঊদ
৫১৫০, সহীহাহ্ ৮০০, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৪১, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১০০, আহমাদ ২২৮২০,
মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৫৫৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৬০, আর মু‘জামুল কাবীর ৫৭৭২, আস্ সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩০৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবু হুরাইরাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আত্মীয় বা অনাত্মীয় ইয়াতীমের রক্ষণাবেক্ষণকারী ও আমি জান্নাতে এ দু’ আঙ্গুলের ন্যায়
কাছাকাছি থাকব। বর্ণনাকারী মালিক (রহঃ) হাদীস বর্ণনার সময় শাহাদাত ও মধ্যম অঙ্গুলির
দ্বারা ইঙ্গিত করে দেখালেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭৩৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৯৯, ইসলামিক সেন্টার ৭২৫২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২২) স্বামীর আনুগত্য করাঃ
স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“নারী যদি তার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ে, রমযান
মাসের সিয়াম রাখে, স্বীয় লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং নিজ স্বামীর আনুগত্য করে, তাহলে
জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে”। (সহীহ ইবন
হিব্বান)।
(২৩) আল্লাহর নাম মুখস্থ করাঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম
আছে অর্থাৎ এক কম এক শত। যে ব্যক্তি এই নামগুলো কণ্ঠস্থ করলো বা গুণে গুণে পড়লো সে
জান্নাতে প্রবেশ করলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬০, ৩৮৬১,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৩৬, ৭৩৯২, ৬৪১০, মুসলিম ২৬৭৭, তিরমিযী ৩৫০৬, ৩৫০৭,
৩৫০৮, আহমাদ ৭৪৫০, ৭৫৬৮, ২৭৩৬৩, ৯২২৯, ১০১০৩, ১০১৫৪, ১০৩০৭, মিশকাত ২২৮৭, আদ্ দা‘ওয়াতুল
কাবীর ২৯২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৮১৬, ইবনু হিব্বান ৮১৭, সহীহ আল জামি ২১৬৬,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৪৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে জান্নাতি আমলগুলো
সঠিকভাবে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
(সমাপ্ত)
এসব বিষয় জানতে এদের উপর ক্লিক করুন।
(১) নবি (সাঃ) এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো?(প্রথম অংশ)।
(২) নবি সাঃ এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো?(দ্বিতীয় অংশ)।
(৩) যেসব কারণে অধিকাংশ নারী জাহান্নামী।
(৪) জাহান্নামের বর্ণনা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তিরউপায়। (তৃতীয় অংশ)
(৬) দুই হাত তুলে দোয়া বা মুনাজাত করার সহিহনিয়ম।
(৭) দৈনন্দিন সহজ কিছু জান্নাতি আমল।
(৮) গুণাহ মাফ ও জান্নাতে যাওয়ার অধিক ফজিলতপূর্ণ আমলসমূহ-২
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
.................................................................
কুরআন
ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক
করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment