বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক
সহিহ দোয়ার ভান্ডার
দোয়া অর্থ আহবান বা ডাকা, যা ইসলামে একটি
বিশুদ্ধ মিনতি প্রক্রিয়া। এই শব্দটি এসেছে একটি আরবি শব্দ থেকে যার বাংলা অর্থ ডাকো
বা তলব করো।
আল্লাহ বলেন,
“আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো,
আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেবো। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশতঃ আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে,
তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে”। (সুরা
আল মুমিন ৪০, আয়াত ৬০)।
রাসুল সাঃ বলেছেন:
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু‘আর চেয়ে কোন জিনিসের
অধিক মর্যাদা (উত্তম) নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩২, তিরমিযী ৩৩৭০, ইবনু মাজাহ
৩৭২৯, আহমাদ ৮৭৪৮, মু‘জামুল আওসাত ৩৭০৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০১, আদ্ দা‘ওয়াতুল
কাবীর ৩, শু‘আবূল ঈমান ১০৭১, ইবনু হিববান ৮৭০, আল-আদাবুল মুফরাদ ৭১৮, সহীহ আত্ তারগীব
১৬২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
নেক আমল ও দু’আ ব্যতীত ভাগ্যের পরিবর্তন হয়
না
নেক আমল ও দো‘আর মাধ্যমে মানুষের তাকদীরের
পরিবর্তন হয়। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা করেন
তা বহাল রাখেন”। (সূরা রা’দ, আয়াত ৩৯)।
সালমান আল ফারিসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু‘আ ছাড়া অন্য কিছুই তাকদীদের
লিখনকে পরিবর্তন করতে পারে না এবং নেক ‘আমল ছাড়া অন্য কিছু বয়স বাড়াতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২১৩৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২২, মু‘জামুল কাবীর
লিত্ব ত্ববারানী ৬১২৮, সহীহাহ্ ১৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৯, সহীহ আল জামি ৭৬৮৭)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
দোয়া পাঠ বা জিকির করার হুকুম এবং ফজিলত
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
(১) ‘‘তোমার প্রতিপালক বলেন- তোমরা আমাকে ডাকো,
আমি (তোমাদের ডাকে) সাড়া দেব। আরও তাঁর বাণীঃ যারা অহংকারবশতঃ আমার ‘ইবাদাত করে না,
নিশ্চিতই তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (সূরা আল-মু’মিন ৪০/৬০)।
(২) ‘আমি বলেছি- ‘তোমরা তোমাদের রবেবর কাছে ক্ষমা
চাও, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল। (তোমরা তা করলে) তিনি অজস্র ধারায় তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ
করবেন, তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন
এবং তোমাদের জন্য নদ্বীনালা প্রবাহিত করবেন।।’’ (সূরা
নূহ ৭১/১০-১২)।
(৩) ‘‘যারা কোন পাপ কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের
প্রতি যুল্ম করলে আল্লাহ্কে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে…..।’’
(সূরা আলে ‘ইমরান ৩/১৩৫)।
(৪) ‘‘তোমরা সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে
তাওবাহ করো।’’ (সূরাহ আত্-তাহরীম ৬৬/৮)।
(৫) মহান আল্লাহ বলেছেন, “অবশ্যই আল্লাহর স্মরণ
সর্বশ্রেষ্ঠ।” (সূরা আনকাবূত ৪৫ আয়াত)।
(৬) আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “তোমরা আমাকে স্মরণ
কর; আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।” (সূরা বাকারা ১৫২ আয়াত)।
(৭) তিনি অন্য জায়গায় বলেন, “আল্লাহকে অধিক-রূপে
স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (সূরা জুমআ ১০ আয়াত)।
(৮) তিনি আরও বলেছেন, “নিশ্চয়ই আত্মসমর্পণকারী
(মুসলিম) পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত
পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী,
বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযা পালনকারী পুরুষ ও রোযা
পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী (সংযমী) পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী (সংযমী) নারী,
আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নারী---এদের জন্য আল্লাহ
ক্ষমা ও মহা প্রতিদান রেখেছেন।” (সূরা আহযাব ৩৫ আয়াত)।
(৯) তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ!
তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।”
(সূরা আহযাব ৪১-৪২ আয়াত)।
রাসুল সাঃ বলেন,
(১) মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ ও যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ)....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তওবা করে তখন আল্লাহ ঐ লোকের চেয়েও
বেশি আনন্দিত হন, যে মরুভূমিতে নিজ সওয়ারীর উপর আরোহিত ছিল। তারপর সওয়ারটি তার হতে
হারিয়ে যায়। আর তার উপর ছিল তার খাদ্য ও পানীয়। এরপর নিরাশ হয়ে সে একটি গাছের ছায়ায়
এসে আরাম করে এবং তার উটটি সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় হঠাৎ
উটটি তার কাছে এসে দাঁড়ায়। অমনিই সে, তার লাগাম ধরে ফেলে। এরপর সে আনন্দে আত্মহারা
হয়ে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার রব। আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে
ভুল করে ফেলেছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৭, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশ'আরী ও মুহাম্মাদ
ইবনুল আ'লা (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় আর যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয়
না এরূপ দুটি ঘরের তুলনা করা যায় জীবিত ও মৃতের সঙ্গে। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৪০৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৯৩, ইসলামীক সেন্টার ১৭০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার
বান্দার ধারণার পাশে থাকি। (অর্থাৎ সে যদি ধারণা রাখে যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন,
তার তওবা কবুল করবেন, বিপদ আপদ থেকে উদ্ধার করবেন, তাহলে তাই করি।) আর আমি তার সাথে
থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। সুতরাং সে যদি তার মনে আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে
আমার মনে স্মরণ করি, সে যদি কোন সভায় আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম
ব্যক্তিদের (ফিরিশতাদের) সভায় স্মরণ করি।”
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫৩৬,
৭৫৩৬, ৭৫৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৬৬৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৫, সুনান
ইবনু মাজাহ ৩৮২২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২৩৮৮, ৩৬০৩, আহমাদ ৭৩৭৪, ৮৪৩৬, ৮৮৩৩, ৯০০১, ৯০৮৭, ৯৩৩৪, ৯৪৫৭, ১০১২০, ১০২৪১, ১০৩০৬,
১০৩২৬, ১০৪০৩, ১০৫২৬, ১০৫৮৫, ২৭২৭৯, ২৭২৮৩, সহীহাহ ২২৮৭, রিয়াযুস সালেহীন ২৮/১৪৪৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪)
মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ).....আগার আবূ মুসলিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আবু হুরাইরাহ ও আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) তারা
উভয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন জাতি আল্লাহ
সুবহানাহ ওয়াতা’আলার যিকর করতে বসলে একদল ফেরেশতা তাদেরকে ঘিরে ফেলে এবং রহমত তাদেরকে
ঢেকে নেয়। আর তাদের উপর শান্তি নাযিল হয় এবং আল্লাহ তা’আলা তার নিকটস্থ ফেরেশতাগণের
মধ্যে তাদের আলোচনা করেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০০, ২৬৯৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫, আবূ দাঊদ ১৪৫৫, ৩৬৪৩, ৪৯৪৬,
সুনান ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ৮১১৭, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৬৬১০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৩, রিয়াযুস সালেহীন-২/১৪৫৬, সহীহ্ তারগীব ১/৩১/৬৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া” হলো ইবাদত
(ক) নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ দু’আই (মূল) ’ইবাদাত। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের
এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’এবং তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু’আ করো, আমি তোমাদের
দু’আ কবূল করব।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩০, আবূ
দাঊদ ১৪৭৯, তিরমিযী ২৯৬৯, ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৭, আহমাদ ১৮৩৫২, মু‘জামুস্
সগীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৪১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০২, শু‘আবূল ঈমান ১০৭০, সহীহ ইবনু
হিববান ৮৯০, আদাবুল মুফরাদ ৭১৪/৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৪০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আল্লাহ বলেন,
“তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া
দিব। যারা অহংকার বশে আমার ইবাদত হতে বিমুখ হয়, সত্বর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে
লাঞ্ছিত অবস্থায়”। এখানে ‘ইবাদত’ অর্থ দো‘আ। (সুরা গাফের/মুমিন
৪০/৬০; ‘আওনুল মা‘বূদ হা/১৪৬৬-এর ব্যাখ্যা, ‘দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৩৫২)।
(গ) আল্লাহ তায়লা আরও বলেন,
“আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে আমার বিষয়ে
জিজ্ঞেস করে, তখন বলে দাও যে, আমি তাদের অতীব নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর আহবানে সাড়া
দিয়ে থাকি, যখন সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমার আদেশ সমূহ পালন করে এবং আমার
প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে। যাতে তারা সুপথ প্রাপ্ত হয়”। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৮৬)।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। পরিবার,
সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি অংশে ইসলামের দিক নির্দেশনা দেয়া আছে। মুসলিম হিসেবে সেগুলো
আমাদের মেনে চলতে হবে। শুধু নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাতই ইসলাম না বা ইবাদত না। আমাদের
দৈনন্দিন চলার পথে আরও অনেক আমল বা দোয়া আছে সেগুলো আমরা পাঠ করে বা জিকির করে সবসময়
আল্লাহকে স্মরণ করবো।
(ঘ) আল্লাহ বলেন, “তোমার প্রতিপালককে মনে মনে
সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর (জিকির কর) এবং তুমি
উদাসীনদের দলভুক্ত হয়ো না।” (সূরা আ‘রাফ ২০৫ নং আয়াত)।
(ঙ) আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি কি তোমাদের আমলসমূহের সর্বোত্তমটি সম্পর্কে তোমাদেরকে
অবহিত করবো না, যা তোমাদের প্রভুর নিকট সর্বাধিক প্রিয়, তোমাদের মর্যাদাকে অধিক উন্নীতকারী,
তোমাদের সোনা-রূপা দান করার চেয়ে এবং যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তোমাদের শত্রুুদের হত্যা করা
এবং তোমাদের নিহত হওয়ার চেয়ে উত্তম? সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেটি কী? তিনি
বলেনঃ আল্লাহর যিকির। মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, কোন মানুষের জন্য আল্লাহর যিকিরের
চেয়ে উত্তম কোন আমল নাই, যা তাকে মহামহিম আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই দিতে পারে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৯০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৬৯, সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৭৭, আহমাদ ২১১৯৫, ২৬৯৭৭, ২১৭০২, মুয়াত্তা মালেক ৪৯০, তাখরীজুল
কালিমুত তায়্যিব ১, আত-তালীকুর রাগীব ২/২২৮),
মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮২৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৯৩, সহীহ আল জামি ২৬২৯। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
সহিহ দোয়াসমূহ
ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া
ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নিজে নিজে “আসসালামু
আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে ডান পা দিয়ে
বের হতে হবে।
এরপর বলতে হবে,
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি ঘর হতে বের হবার সময় যখন বলে,
“বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কাল্তু ’আলাল্ল-হি, লা-
হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হি’’
অর্থাৎ- আল্লাহর নামে বের হলাম, আল্লাহর ওপর
ভরসা করলাম, আল্লাহ ছাড়া কোন উপায় নেই, ক্ষমতা নেই)- তখন তাকে বলা হয়, পথ পেলে, উপায়-উপকরণ
পেলে এবং নিরাপদ থাকলে। সুতরাং শয়তান তার কাছ হতে দূর হয়ে যায় এবং অন্য এক শয়তান এই
শয়তানকে বলে, যে ব্যক্তিকে পথ দেখানো হয়েছে, উপায়-উপকরণ দেয়া হয়েছে এবং রক্ষা করা হয়েছে-
তাকে তুমি কি করতে পারবে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৪৩, সুনান আবূ দাঊদ ৫০৯৫, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর,
সহীহ আত্ তারগীব ১৬০৫, সহীহ আল জামি‘ ৪৯৯, সুনান আততিরমিযী ৩৪২৬, ইবনু হিব্বান ৮২২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এরপর বলতে হবে,
আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহর অন্য বর্ণনায় আছে,
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই ঘর হতে
বের হতেন, তখন আকাশের দিকে মাথা উঠিয়ে বলতেন,
’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা আন্ আযিল্লা
আও উযল্লা, আও আযলিমা আও উযলামা, আও আজহালা আও ইউজহালা ’আলাইয়্যা’’
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই
বিপথগামী হওয়া, বিপথগামী করা, উৎপীড়ন করা, উৎপীড়িত হওয়া, অজ্ঞতা প্রকাশ করা বা অজ্ঞতা
প্রকাশের পাত্র হওয়া হতে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৪৪২, সুনান আততিরমিযী ৩৪২৭, সুনান আবূ দাঊদ ৫০৯৪, সহীহ আল জামি‘ ৪৭০৬, ৪৭০৮, আহমাদ
২৬৬১৬, সহীহাহ্ ৩১৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এরপর আয়াতুল কুরসী পাঠ করতে পারেন।
ঘর থেকে বের হওয়ার সময় যদি কেউ উপস্থিত থাকে
যিনি আপনাকে বিদায় দিচ্ছেন তিনি বলবেন,
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি সফরের
ইচ্ছা করেছি, আমাকে কিছু পাথেয় (উপদেশ) দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন,
“যাউয়াদাকাল্লা-হুত্ তাক্বওয়া ওয়া গাফারা যাম্বাকা
ওয়া ইয়াস্সারা লাকাল খায়রা হায়ছু মা কুন্তা”
অর্থঃ আল্লাহ আপনাকে তাক্বওয়ার পুঁজি দান করুন!
আপনার গোনাহ মাফ করুন এবং আপনি যেখানেই থাকুন আপনার জন্য কল্যাণকে সহজ করে দিন’।
আল্লাহ তোমাকে তাকওয়া অবলম্বনের পাথেয় দান
করুন (ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বাঁচান)। লোকটি বললো, আমাকে আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তোমার গুনাহ মাফ করুন।
লোকটি আবার বললো, আমার মাতাপিতা আপনার জন্য
কুরবান হোক। আমাকে আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
তুমি যেখানেই থাকো আল্লাহ যেন তোমার জন্য কল্যাণকর কাজ করা সহজ করে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৩৭, সুনান আততিরমিযী ৩৪৪৪, ইবনু
খুযায়মাহ্ ২৫৩২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২৪৭৭, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৪৫৬, আল কালিমুত্ব
ত্বইয়্যিব ১৭১, সহীহ আল জামি‘ ৩৫৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় পরিবার পরিজনের জন্য দোয়া
“আসতাওদিউকাল্লাহাল্লাজি লা তাদীউ ওয়াদা-ইউহু”
অর্থ: ‘আমি তোমাকে আল্লাহর আমানতে সোপর্দ করলাম,
যাঁর নিকট সোপর্দকৃত জিনিস ধ্বংস হয় না।’ (ইবনে মাজাহ:
২৮২৫)।
হাদিসঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিদায় দিয়ে বলেনঃ “আসতাওদিউকাল্লাহাল্লাজি
লা তাদীউ ওয়াদা-ইউহু” অর্থঃ আমি তোমাকে আল্লাহর আমানতে সোপর্দ করলাম, যাঁর নিকট সোপর্দকৃত
জিনিস ধ্বংস হয় না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮২৫, আহমাদ ৮৯৭৭,
সহীহাহ ১৬, ২৫৪৭, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ১৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ঘরে প্রবেশের দোয়া
ঘরে প্রবেশের সময় প্রথমে বলতে হবে “বিসমিল্লাহ”।
হাদিসঃ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি গৃহে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে
ও খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান (তার অনুসারীদেরকে) বলে, এ ঘরে তোমাদের
জন্য রাত্রি যাপনের সুযোগ নেই এবং রাতে খাবারও নেই। আর যখন সে (ঘরে) প্রবেশ করে এবং
প্রবেশকালে আল্লাহর নাম নেয় না, তখন শয়তান বলে, তোমরা রাত্রি যাপনের স্থান পেয়েছ। আর
যখন সে খাওয়ার সময়ও আল্লাহর নাম নেয় না, তখন সে বলে, তোমরা রাত্রি যাপন ও রাতের খাওয়া
উভয়টির সুযোগ লাভ করেছ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৬১, সহীহ মুসলিম (২০১৮)-১০৩, সুনান আবূ দাঊদ ৩৭৬৫,
সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৮৭, আল আদাবুল মুফরাদ ১০৯৬, নাসায়ী আল কুবরা ৬৭৫৭, সহীহ আত্ তারগীব
ওয়াত্ তারহীব ১৬০৭, মুসনাদে আহমাদ ১৫১৪৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৮১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অতঃপর গৃহবাসীর উদ্দেশ্যে সালাম দিতে হবে।
(আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ)
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যখন তোমরা কোনো ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা
পরস্পরের প্রতি সালাম করবে অভিবাদনস্বরূপ যা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্ৰ”। (সুরা নূর ২৪/৬১)।
এরপর বলতে হবে,
"ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব সাব্বিত কালবি
আলা দিনিক"
অর্থঃ হে মনের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে
তোমার দ্বীনের উপর স্থির রাখ।
শাহর ইবনু হাওশাব (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি
বলেন, উম্মু সালামাহ (রাযিঃ)-কে আমি বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার কাছে অবস্থানকালে অধিকাংশ সময় কোন দু’আটি পাঠ করতেন? তিনি
বললেন, তিনি অধিকাংশ সময় এ দু’আ পাঠ করতেনঃ
"ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব সাব্বিত কালবি
আলা দিনিক"
অর্থঃ হে মনের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে
তোমার দ্বীনের উপর স্থির রাখ।
উম্মু সালামাহ (রাযিঃ) বলেন, আমি বললাম, হে
আল্লাহর রাসূল! আপনি অধিকাংশ সময় “হে মনের পরিবর্তনকারী! আমার মনকে তোমার দ্বীনের
উপর স্থির রাখ” দু’আটি কেন পাঠ করেন? তিনি বললেনঃ হে উম্মু সালামাহ! এরূপ কোন মানুষ
নেই যার মন আল্লাহ তা’আলার দুই আঙ্গুলের মধ্যবর্তীতে অবস্থিত নয়। যাকে ইচ্ছা তিনি
(দ্বীনের উপর) স্থির রাখেন এবং যাকে ইচ্ছা (দ্বীন হতে) বিপথগামী করে দেন।
তারপর অধঃস্তন বর্ণনাকারী মুআয (রহঃ) কুরআনের
এ আয়াত তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ) “হে আমাদের রব! আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করার পর
তুমি আমাদের অন্তরসমূহকে বাকা করে দিও না”। (সুনান আত
তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫২২, যিলালুল জান্নাহ ২২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যানবাহনে চড়া সংক্রান্ত দোয়াসমূহ
চড়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলবেস। চড়ে বসে বলবেস,
আলহামদু লিল্লাহ। অতঃপর নিম্নের আয়াত পাঠ করবেন,
“সুবহানাল্লাজি সাখ্খারা লানা হাজা ওয়ামা
কুন্না লাহু মুকরিনিন ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনকলিবুন”।
অর্থঃ পবিত্র ও মহান তিনি যিনি একে আমাদের
বশীভূত করে দিয়েছেন, অথচ আমরা একে বশীভূত করতে সমর্থ ছিলাম না। আমরা আমাদের প্রতিপালকের
দিকে অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব। (সূরা যুখরুফ (৪৩): ১২-১৪)।
অতঃপর আলহামদু লিল্লা-হ’ ৩ বার। আল্লাহু আকবার’
৩ বার পড়ে নিম্নের দুআ বলবেন,
সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী
ফাগ্ফির লী, ফাইন্নাহু লা য়্যাগফিরুযযুনুবা ইল্লা আন্ত।
অর্থঃ তুমি পবিত্র হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি
নিজের প্রতি যুলুম করেছি অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও। যেহেতু তুমি ছাড়া আর কেউ গোনাহ
মাফ করতে পারেনা। (আঃ দাঃ ৩/৩৪, সঃ তিঃ ১৫৬)।
হাদিসঃ
আলী ইবনু রবী’আহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি দেখলাম, ’আলী (রাঃ)-এর কাছে আরোহণের একটি পশু আনা হলে তিনি এর পা-দানিতে
পা রাখতেই বললেন, ’বিসমিল্লাহ’ এবং এর পিঠে চড়ে সোজা হয়ে বসে বললেন, আল-হামদুলিল্লাহ।’’
অতঃপর তিনি এ আয়াত পড়লেনঃ
“সুবহানাল্লাজি সাখ্খারা লানা হাজা ওয়ামা
কুন্না লাহু মুকরিনিন ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনকলিবুন”।
’’মহান পবিত্র তিনি, যিনি একে আমাদের অনুগত
বানিয়েছেন, তা না হলে একে বশ করতে ’আমরা সক্ষম ছিলাম না। নিশ্চয়ই আমাদেরকে আমাদের রবের
নিকট ফিরে যেতে হবে।’’ (সূরা আয-যুখরুকঃ আয়াত ১৩-১৪)।
পুনরায় তিনি তিনবার ’আলহামদু লিল্লাহ’ এবং
তিনবার ’আল্লাহু আকবার’ বললেন।
অতঃপর বললেন,
“সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী
ফাগ্ফির লী, ফাইন্নাহু লা য়্যাগফিরুযযুনুবা ইল্লা আন্ত”।
’’(হে আল্লাহ!) আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি,
আমিই আমার উপর যুলুম করেছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আপনি ছাড়া কেউই গুনাহ ক্ষমা করতে
পারে না।’’ অতঃপর তিনি হেসে দিলেন।
তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আমীরুল মু’মিনীন!
আপনি কেন হাসলেন? তিনি বললেন, আমি যেরূপ করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেও
এরূপ করতে দেখেছি। তিনি তখন হেসেছিলেন তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি
হাসলেন কেন? তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দার উপর সন্তুষ্ট হন যখন
সে বলেঃ ’’(হে আমার রব!) আপনি আমার গুনাহ ক্ষমা করুন।’’ আর বান্দা তো জানে যে, আমি
(আল্লাহ) ছাড়া কেউই গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। (রিয়াযুস
স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ৯৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৯৭৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৬০২, সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২৫৯৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৪৬, সুনান আত তিরমিজী
(ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৩৪৪৬, সহীহ ইবনু হিব্বান (হাদিসবিডি) ২৬৮৬-২৬৮৭, মুসনাদ আহমাদ:
১/৯৭; আত তায়ালিসী: ১৩২; নাসাঈ: ৭/৪৩৬; হাকিম: ২/৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নৌকা ভ্রমণের দোয়া
“বিসমিল্লাহি মাজরিহা ওয়া মুরসা-হা, ইন্না
রাব্বি লা গাফুরুর রহিম”।
অর্থ : তোমরা এতে আরোহন করো। আল্লাহর নামেই
এর গতি ও স্থিতি। আমার পালনকর্তা অতি ক্ষমাপরায়ন, মেহেরবান। (সুরা : হুদ : ৪১)।
সফরে কোথাও থামলে যে দোয়া পড়বেন
ভ্রমণের মাঝপথে কোথাও অবস্থান করতে হলে এ দোয়া
পড়ার নির্দেশ দিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, এই দোয়াটি পড়লে, ঘরে ফেরা পর্যন্ত কোনো কিছুই
ক্ষতি করতে পারবে না।
দোয়াটি-
“আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তা-ম্মাতি মিন শাররি
মা খালাক”।
অর্থ: আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালেমার মাধ্যমে সব
ধরনের ক্ষতি থেকে নিরাপত্তা চাচ্ছি।
হাদিসঃ
কুতাইবাহ্ ইবনু সাঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ্
(রহঃ)...খাওলা বিনতু হাকীম আস্ সুলামিয়্যাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ যে লোক
কোন ঘাটিতে নেমে এ দু’আ পড়ে,
"আউযু বিকালিমাতিল্ লা-হিত তা-মা-তি মিন্
শাররি মা- খলাক"।
অর্থাৎ- “আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালাম দিয়ে
তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির খারাবী হতে আশ্রয় চাই।" সে ঐ ঘাটি হতে অন্য ঘাটিতে রওনা
না হওয়া পর্যন্ত তাকে কোন কিছুই কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৭১-৬৭৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৩১, ইসলামিক সেন্টার, ৬৬৮৫, আহমাদ ২/২৯০, নং ৭৮৯৮; নাসাঈ,
আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নং ৫৯০; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৮; আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী
৩/১৮৭; সহীহ ইবন মাজাহ ২/২৬৬; তুহফাতুল আখইয়ার লি ইবন বায, পৃ. ৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সফর শেষে দোয়া
“আয়িবুনা ইনশাআল্লাহু তায়িবুনা আবিদুনা লি-রাব্বিনা
হামিদুন।’ অর্থ: ‘আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী নিজ
রবের প্রশংসাকারী”।
হাদিসঃ
ইবনু উমার (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরে রাওয়ানা হতেন তখন বাহনে আরোহণ করে তিনবার তাকবীর বলতেন
এবং আরো বলতেনঃ “অতি পবিত্র ও মহান তিনি যিনি একে আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করেছেন, তা
না হলে আমরা একে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিলাম না। অবশ্যই আমরা আমাদের পালনকর্তার কাছে
ফিরে যাব”। (সূরা
যুখরুফ ১৩-১৪)।
তারপর তিনি বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমার এ সফরে
আমি তোমার নিকট পুণ্য ও তাকওয়া এবং তোমার পছন্দনীয় কাজ করার তাওফীক প্রার্থনা করি।
হে আল্লাহ! আমাদের সফরটি আমাদের জন্য সহজসাধ্য করে দাও এবং আমাদের জন্য পথের ব্যবধান
সংকুচিত করে দাও। হে আল্লাহ! সফরে তুমিই আমাদের সঙ্গী এবং আমাদের পরিবার-পরিজনের প্রতিনিধি।
হে আল্লাহ! আমাদের এ সফরে তুমি আমাদের বন্ধু এবং আমাদের পরিজনের প্রতিনিধি হয়ে যাও।”
তিনি সফর হতে পরিজনের কাছে প্রত্যাবর্তন করে
বলতেনঃ ইনশা আল্লাহ আমরা প্রত্যাবর্তনকারী এবং তওবাকারী, আমাদের রবের ইবাদতকারী ও প্রশংসাকারী”।
(সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৪৭, সহীহ আবূ দাউদ ২৩৩৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ঘুমানো ও ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দোয়াসমূহ
শোয়ার সময়
আল্লাহর নাম না নিলে তার উপর লাঞ্চনাঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শোয়ার সময় আল্লাহকে
স্মরণ করলো না, সে কিয়ামতের দিন বঞ্চিত হবে। আর যে ব্যক্তি কোনো আসনে বসলো অথচ সেখানে
সে মহামহিমান্বিত আল্লাহকে স্মরণ করলো না, কিয়ামতের দিন সে বঞ্চিত হবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৫৯, ৪৮৫৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
ডান কাত হয়ে শোয়া ও দোয়া পড়াঃ
(ক) আল-বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ যখন তুমি পবিত্র হয়ে
বিছানায় বিশ্রাম নিবে তখন তোমার ডান হাত মাথার নীচে রাখবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) হুযাইফাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর সময় বলতেনঃ
“আল্লাহুম্মা বিইসমিকা আহইয়া ওয়া অমূতু’’
(অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নামে মরি ও বাঁচি)।
অথবা,
"বিস্মিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া"
(হে আল্লাহ! আপনার নামেই মরি, আপনার নামেই
জীবিত হই)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩১৪, ৬৩১২,
আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৬২))। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অথবা
“আল্ল-হুম্মা বিস্মিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া’’
(হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে মৃত্যুবরণ করি
ও তোমার নামেই জীবিত হই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৩৮২, আহমাদ ২৩২৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবার তিনি যখন জাগতেন তখন বলতেনঃ
“আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আহইয়ানা বা’দা মা
আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর’’
(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরতেক
মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করবেন)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩২৪, ৬৩১২, ৬৩১৪, ৭৩৯৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৭৯,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৭২, তিরমিযী ৩৪১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন এই দো’আ পড়তেন,
“আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্বআমানা অ সাক্বা-না
অকাফা-না অ আ-ওয়া-না, ফাকাম মিম্মাল লা কা-ফিয়া লাহু অলা মু’বী”।
অর্থাৎ সেই আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাদেরকে
পানাহার করিয়েছেন, তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছেন এবং আশ্রয় দিয়েছেন। অথচ কত এমন লোক
আছে যাদের যথেষ্ট-কারী ও আশ্রয়দাতা নেই। (সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৫০৫৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭১৫, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৮৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৯৬, আহমাদ ১২১৪২, ১২৩০১, ১৩২৪১,
১২৫৫২, ইবনু হিব্বান ৫৫৪০, শামায়িলে তিরমিযী ২১৯, সহীহ আল জামি ৪৬৮৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ঘ) বারাআ ইবনু ’আযিব (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে নির্দেশ দিলেন। অন্য সূত্রে বর্ণনা করেন যে,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে অসিয়ত করলেন যে, যখন তুমি বিছানায়
ঘুমাতে যাবে, তখন তুমি এ দু’আ পড়বেঃ
“আল্লা-হুম্মা আস্লামতু নাফ্সী ইলাইকা, ওয়া
ফাউওয়াদ্বতু আমরী ইলাইকা, ওয়া ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া ইলাইকা, ওয়াআলজা’তু যাহ্রী ইলাইকা,
রাগবাতান ওয়া রাহবাতান ইলাইকা। লা মালজা’আ ওয়ালা মান্জা মিনকা ইল্লা ইলাইকা। আ-মানতু
বিকিতা-বিকাল্লাযী আনযালতা ওয়াবিনাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালতা”
(হে আল্লাহ! আমি আমার প্রাণকে আপনার কাছে সমর্পণ
করলাম, আর আমার বিষয় ন্যস্ত করলাম আপনার দিকে এবং আমার চেহারা আপনার দিকে ফিরিয়ে দিলাম,
আপনার রহমতের আশায় এবং আপনার গযবের ভয়ে। আপনার নিকট ব্যতীত আপনার গযব থেকে পালিয়ে যাবার
এবং আপনার আযাব থেকে বাঁচার আর কোন স্থান নেই। আপনি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, আমি তার
উপর দৃঢ় বিশ্বাস করছি এবং আপনি যে নবী পাঠিয়েছেন, আমি তাঁর উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন
করেছি)।
যদি তুমি এ অবস্থায়ই মরে যাও, তবে তুমি স্বভাবধর্ম
ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৩১৩, ৬৩১৫, ২৪৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭১০, সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৪৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৮৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬৮,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৬১, তিরমিযী ৩৫৭৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৬৫২৬, আহমাদ ১৮৫১৫, শু‘আবূল
ঈমান ৪৩৮১, ইবনু হিব্বান ৫৫৩৬, সহীহাহ্ ২৮৮৯, সহীহ আত্ তারগীব ৬০৩, সহীহ আল জামি ২৭৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন হাত মাথার নীচে রাখতেন,
অতঃপর বলতেন,
“আল্ল-হুম্মা কিনী ’আযা-বাকা ইয়াওমা তাজমা’উ
’ইবা-দাকা, আও তাব্’আসু ’ইবা-দাকা’’
(হে আল্লাহ! আমাকে তোমার শাস্তি হতে বাঁচিয়ে
রেখ, যেদিন তুমি তোমার বান্দাদেরকে পুনঃএকত্র করবে; অথবা (বলেছেন) যেদিন তুমি তোমার
বান্দাদেরকে কবর হতে উঠাবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪০০, ২৪০২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৪৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৯৮, সহীহ আল জামি ৪৭৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(চ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বিছানায় ঘুমানোর সময় বলতেন,
“আল্ল-হুম্মা রব্বাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়া রববাল
আরযি ওয়া রব্বা কুল্লি শাইয়িন, ফালিকল হাব্বি ওয়ান্ নাওয়া- মুনযিলাত্ তাওরা-তি, ওয়াল
ইঞ্জীলি ওয়াল কুরআ-নি। আ’ঊযুবিকা মিন শাররি কুল্লি যী শাররি। আন্তা আ-খিযুন বিনা-সিয়াতিহী,
আন্তাল আও্ওয়ালু, ফালায়সা কবলাকা শায়উন, ওয়া আন্তাল আ-খিরু, ফালায়সা বা’দাকা শায়উন,
ওয়া আন্তায্ যা-হিরু, ফালায়সা ফাওককা শাইউন। ওয়া আন্তাল বা-ত্বিনু, ফালায়সা দূনাকা
শায়উন, ইকযি ’আন্নিদ্দায়না, ওয়া আগ্নিনী মিনাল ফাকরি’’
(হে আল্লাহ! যিনি আসমানের রব, জমিনের রব, তথা
প্রতিটি জিনিসের রব, শস্যবীজ ও খেজুর দানা ফেড়ে গাছ-পালা উৎপাদনকারী; তাওরাত, ইঞ্জীল
ও কুরআন অবতীর্ণকারী, আমি তোমার কাছে এমন প্রতিটি অনিষ্টকারীর অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাই
যা তোমার অধিকারে রয়েছে। তুমিই প্রথম- তোমার আগে কেউ ছিল না। তুমিই শেষ- তোমার পরে
আর কেউ থাকবে না। তুমি প্রকাশ্য- তোমার চেয়ে প্রকাশ্য আর কিছু নেই। তুমি অন্তর্যামী-
তোমার চেয়ে গোপনীয়তা আর কিছু নেই। তুমি আমাকে ঋণমুক্ত করে দাও এবং দারিদ্র্যতা হতে
বাঁচিয়ে রেখ [স্বচ্ছলতা দাও])। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৫১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪০০, সুনানে ইবনু মাজাহ ৩৮৭৩, আহমাদ ৮৯৬০, সহীহ
আদাবুল মুফরাদ ১২১২/৯২৩, সহীহ আল জামি ৪৪২৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) আবূল আযহার আল আনমারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে বিছানায় ঘুমানোর সময় বলতেন,
“বিস্মিল্লা-হি ওয়াযা’তু যাম্বী লিল্লা-হি,
আল্ল-হুম্মাগফিরলী যাম্বী ওয়াখসা’ শায়ত্ব-নী ওয়া ফুক্কা রিহা-নী, ওয়াজ্’আল্নী ফিন্
নাদিয়্যিল আ’লা-’’
(আল্লাহর নামে, আল্লাহর উদ্দেশে আমি পার্শ্ব
রাখলাম। হে আল্লাহ! তুমি আমার অপরাধ ক্ষমা করো। আমার কাছ থেকে শয়তানকে তাড়িয়ে দাও।
আমার ঘাড়কে মুক্ত করো এবং আমাকে উচ্চাসনে সমাসীন করো)। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৫৪, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭৫৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম
২০১২, সহীহ আল জামি‘ ৪৬৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(জ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ঘুমানোর সময় বলতেন,
“আলহাম্দু লিল্লা-হিল্লাযী কাফা-নী, ওয়াআ-ওয়া-নী,
ওয়া আত্ব’আমানী, ওয়া সাকা-নী, ওয়াল্লাযী মান্না ’আলাইয়্যা ফাআফযালা ওয়াল্লাযী আ’ত্বা-নী
ফাআজ্যালা, আলহাম্দুলিল্লা-হি ’আলা- কুল্লি হা-ল, আল্ল-হুম্মা রব্বা কুল্লি শাইয়িন
ওয়া মালীকাহূ, ওয়া ইলা-হা কুল্লি শাইয়িন আ’ঊযুবিকা মিনান্না-র’’
(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার প্রয়োজন
পূরণ করলেন, আমাকে রাতে আশ্রয় দিলেন, আমাকে খাওয়ালেন, আমাকে পান করালেন, যিনি আমার
প্রতি দয়াপ্রদর্শন করলেন, অনেক অনুগ্রহ করলেন, যিনি আমাকে দান করলেন এবং যথেষ্ট দান
করলেন। তাই সকল অবস্থায় আল্লাহর শুকর। হে আল্লাহ! যিনি প্রতিটি বস্তুর প্রতিপালক ও
এর অধিকারী এবং প্রত্যেক বস্ত্তর উপাস্য। আমি তোমার কাছে জাহান্নামের আগুন হতে আশ্রয়
চাই। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৫৮, আহমাদ ৫৯৮৩, আদ্
দা‘ওয়াতুল কাবীর ৩৯৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল!
আমাকে এমন কিছু কালেমা শিখিয়ে দিন যা আমি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলবো। তিনি বলেনঃ
তুমি বলো,
“আল্ল-হুম্মা ‘আ-লিমাল গয়বি ওয়াশ্শাহা-দাতি,
ফা-ত্বিরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, রব্বা কুল্লি শাইয়িন, ওয়া মালীকাহূ আশহাদু আল্লা-
ইলা-হা ইল্লা- আন্তা, আ‘ঊযুবিকা মিন্ শাররি নাফ্সী, ওয়ামিন শার্রিশ্ শায়ত্ব-নি, ওয়া
শিরকিহী’’।
“হে আল্লাহ! আপনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা,
দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞাতা, প্রত্যেক বস্তুর রব ও মালিক! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি
ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আমার মনের কু-প্রবৃত্তি, শয়তানের খারাবী ও তার শিরকী থেকে আপনার
নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।’’
তিনি বলেনঃ হে আবূ বকর! তুমি এ কথাগুলো ভোরে,
সন্ধ্যায় ও শোয়ার সময় বলবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৩৯০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৯২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৬৭, আহমাদ
৬৩, দারিমী ২৭৩১, ২৬৮৯, ইবনু হিব্বান ৯৬২, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ১২০২/৯১৭, আল-কালিমুত
তাইয়্যিব ২২, সহীহাহ ২৭৫৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
শোয়ার সময় তাসবিহ পাঠ করা
(ক) আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, যাঁতা
ঘুরাতে ঘুরাতে ফাতিমাহ (রাঃ)-এর হাত ফোসকা পড়ে যাওয়ায় তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অভিযোগ করেন। কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী থেকে ফাতিমাহ (রাঃ) একটি খাদেম
চাওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন, কিন্তু তাঁর দেখা না
পেয়ে তিনি এ বিষয়ে আয়িশাহ (রাঃ)-কে জানিয়ে চলে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ফিরে আসলে তিনি তাঁকে বিষয়টি জানালেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন সময়
আমাদের নিকট উপস্থিত হলেন যখন আমরা ঘুমাতে যাচ্ছিলাম।
তাঁর আগমনে আমরা বিছানা থেকে উঠতে উদ্যত হলে
তিনি বললেনঃ তোমরা স্বস্থানে থাকো। তিনি এসে আমাদের দু’জনের মাঝখানে বসলেন। এমন কি
আমি তাঁর পায়ের শীতল পরশ আমার বুকে অনুভব করছিলাম। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের দু’জনকে
এমন একটি উত্তম পথ দেখাবো না যা তোমাদের পার্থিত জিনিসের চেয়ে উত্তম হবে? তা হলো, তোমরা
শোয়ার সময় তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশ বার আলহমাদু লিল্লাহ ও চৌত্রিশ বার আল্লাহু
আকবার বলবে। আর এটা তোমাদের উভয়ের জন্য একটি খাদেমের চেয়ে অধিক উত্তম হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩১৮, ৩১১৩, ৫৩৬১, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৬৮০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৮৮,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৬২, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৮৭, আধুনিক প্রকাশনী-৫৮৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৫৭৬৬, আহমাদ ১১৪১, ইবনু হিববান ৬৯২১, সহীহ আত্ তারগীব
৬০৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’টি বিষয় বা দু’টি অভ্যাসের
প্রতি যে মুসলিম খেয়াল রাখবে সে নিশ্চয়ই জান্নাতে যাবে। অভ্যাস দু’টি সহজ কিন্তু তা
আমলকারীর সংখ্যা কম। তা হলোঃ
(১) প্রত্যেক
সালাতের পর দশবার সুবহানাল্লাহ, দশবার আলহামদু লিল্লাহ ও দশবার আল্লাহু আকবার বলবে।
মুখে (পাঁচ ওয়াক্ত) এর সংখ্যা একশো পঞ্চাশ কিন্তু মীযানে তা এক হাজার পাঁচশো ।
(২) যখন
শয্যায় যাবে চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবার, তেত্রিশ বার আলহামদু লিল্লাহ ও তেত্রিশ বার
সুবহানাল্লাহ বলবে। তা মুখে একশো কিন্তু মীযানে এক হাজার।
আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা হাতের আঙ্গুলে গণনা করতে দেখেছি। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর
রাসূল! অভ্যাস দু’টো সহজ হওয়া সত্ত্বেও এর আমলকারীর সংখ্যা কম কেন? তিনি বললেনঃ তোমরা
বিছানায় ঘুমাতে গেলে শয়তান তোমাদের কোনো লোককে তা বলার আগেই ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আর সালাতের
মধ্যে শয়তান এসে তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং সে ঐগুলো বলার
আগেই প্রয়োজনের দিকে চলে যায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সুরা ইখলাস ও নাস-ফালাক পড়ে
শরীরে ফুঁ দেওয়া
(ক) আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, প্রতি রাতে নবী
সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সূরাহ ইখ্লাস, সূরাহ ফালাক
ও সূরাহ নাস পাঠ করে দু’হাত একত্র করে হাতে ফুঁক দিয়ে যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত
বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তাঁর দেহের সম্মুখ ভাগের উপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার
এরূপ করতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১৭, ৫৭৪৮,
৬৩১৯, ৪৪৩৯, ৫০১৬, ৫০১৮, ৫৭৩৫, ৫৭৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৬০৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২১৯২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৫৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৪৬৪৮, আহমাদ ২৪২০৭, ২৪৩১০, ২৪৪০৬, ২৪৮০৭, ২৪৯৫৫, ২৫৬৫৭, ২৫৭৩১, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৫৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, যখনই নবী সাল্লাল্লাহু
’আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হতেন তখনই তিনি ’সূরায়ে মু’আব্বিযাত’ পড়ে নিজের উপর ফুঁক
দিতেন। যখন তাঁর রোগ কঠিন হয়ে গেল, তখন বারাকাত অর্জনের জন্য আমি এই সূরাহ পাঠ করে
তাঁর হাত দিয়ে শরীর মাসহ (মাসেহ) করিয়ে দিতাম। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১৬, ৪৪৩৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আয়াতুল কুরসি পড়া
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমাযানের যাকাত হিফাযত করার দায়িত্বে
নিযুক্ত করলেন। এক ব্যক্তি এসে আঞ্জলা ভর্তি করে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে
পাকড়াও করলাম এবং বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্থিত করব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি খুব অভাবগ্রস্ত, আমার
যিম্মায় পরিবারের দায়িত্ব রয়েছে এবং আমার প্রয়োজন তীব্র। তিনি বললেন, আমি ছেড়ে দিলাম।
যখন সকাল হলো, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ
হুরাইরা, তোমার রাতের বন্দী কি করলে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার তীব্র অভাব
ও পরিবার, পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়, তাই তাকে আমি ছেড়ে দিয়েছি। তিনি
বললেন, সাবধান! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। ‘সে আবার আসবে’ আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ উক্তির কারণে আমি বুঝতে পারলাম যে, সে পুনরায়
আসবে। কাজেই আমি তার অপেক্ষায় থাকলাম। সে এল এবং অঞ্জলি ভরে খাদ্র সামগ্রী নিতে লাগল।
আমি ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। কেননা, আমি খুবই দরিদ্র এবং আমার উপর পরিবার-পরিজনের
দায়িত্ব ন্যস্ত, আমি আর আসব না। তার প্রতি আমার দয়া হল এবং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকাল
হলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ হুরাইরাহ!
তোমার বন্দী কী করল? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার তীব্র প্রয়োজন এবং পরিবার-পরিজনের
কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, খবরদার সে
তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। তাই আমি তৃতীয়বার তার অপেক্ষায় রইলাম। সে
আবার আসল এবং অঞ্জলি ভর্তি করে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং
বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে অবশ্যই নিয়ে
যাব। এ হলো তিনবারের শেষবার। তুমি প্রত্যেকবার বল যে, আর আসবে না, কিন্তু আবার আস।
সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দেব। যা দিয়ে আল্লাহ তোমাকে
উপকৃত করবেন। আমি বললাম, সেটা কী? সে বলল, যখন তুমি রাতে শয্যায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী
(اللهُ
لاَ
إِلٰهَ
إِلاَّ
هُوَ
الْحَيُّ
الْقَيُّومُ) আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে। তখন আল্লাহর তরফ হতে তোমার
জন্যে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। কাজেই
তাকে আমি ছেড়ে দিলাম। ভোর হলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
বললেন, গত রাতের তোমার বন্দী কী করল? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে আমাকে বলল যে,
সে আমাকে কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দেবে যা দিয়ে আল্লাহ আমাকে লাভবান করবেন। তাই আমি তাকে
ছেড়ে দিয়েছি। তিনি আমাকে বললেন, এই বাক্যগুলো কী? আমি বললাম, সে আমাকে বলল, যখন তুমি
তোমার বিছানায় শুতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসী( اللهُ
لاَ
إِلٰهَ
إِلاَّ
هُوَ
الْحَيُّ
الْقَيُّومُ
) প্রথম হতে আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে এবং সে
আমাকে বলল, এতে আল্লাহর তরফ হতে তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবেন এবং ভোর পর্যন্ত
তোমার নিকট কোন শয়তান আসতে পারবে না। সাহাবায়ে কিরাম কল্যাণের জন্য বিশেষ লালায়িত ছিলেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, এ কথাটি তো সে তোমাকে সত্য বলেছে।
কিন্তু হুশিয়ার, সে মিথ্যুক। হে আবূ হুরাইরাহ! তুমি কি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে
কথাবার্তা বলেছিলে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বললেন, না। তিনি বললেন, সে ছিল শয়তান। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩১১, ৩২৭৫, ৫০১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ
কিতাবুল ওয়াকালাহ অনুচ্ছেদ-১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ অনুচ্ছেদ ১৪৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আয়াতুল কুরসী
“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল
ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল
আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম
ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া
কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল
আজীম”।
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি
জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও
যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি
ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা
থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর
সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে
কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা
আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫)।
সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া
(ক) আবূ মাসউদ আল-আনসারী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল-বাক্কারার
শেষ দুই আয়াত রাতের বেলা তিলাওয়াত করবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৪০, ৪০০৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৪৬৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৭১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করার
দু’ হাজার বছর আগে আল্লাহ তা’আলা একটি কিতাব লিখেছেন। এ কিতাব হতে পরবর্তীতে দু’টি
আয়াত নাযিল করেছেন যা দ্বারা সূরা আল বাকারাহ্ শেষ করেছেন। কোন ঘরে তা তিন রাত পড়া
হবে, অথচ এরপরও এ ঘরের কাছে শয়তান যাবে, এমনটা হতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৪৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২৮৮২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮২, আহমাদ ১৮৪১৪, দারিমী ৩৪৩০, মুসতাদারাক লিল
হাকিম ৩০৩১, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৬৭, রাওযুন নায়ীর ৮৮৬, তা’লীকুর রাগীব ২/২১৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
সুরা মুলক পড়া
কুরআনে সুরা আল–মুলক নামের একটি স্বতন্ত্র
সুরা আছে। এটি ৬৭ নম্বর সুরা। এ সুরা পাঠের সীমাহীন ফজিলত রয়েছে।
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআনের মধ্যে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা
আছে যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়। এ সূরাটি হল তাবারাকাল্লায়ী
বিয়াদিহিল মুলক। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৯১,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৫৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪০০, সুনান ইবনু মাজাহ
৩৭৮৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৮৭, শু‘আবূল
ঈমান ২৫০৬, রাওদুন নাদীর ৬৪, তা’লীকুর রাগীব ২/২২৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
প্রতি রাতে (রাতের যেকোনো সময়) সুরা মুলক তিলাওয়াত
করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাত।
(খ) জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুরা ‘আলিফ লাম মিম তানজিলুল কিতাব’ (সুরা আস-সাজদা) ও সূরা “তাবারাকাল্লায়ী
বিয়াদিহিল মুলক” না পাঠ করে ঘুমাতেন না। (সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৮৯২, সহীহাহ ৫৮৫, আর-রওয ২২৭, মিশকাত তাহকীক সানী ২১৫৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
সুরা কাফিরুন পড়া
ফারওয়াহ ইবনু নাওফাল (রহঃ) থেকে তার পিতার
সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাওফাল (রাঃ)-কে বলেনঃ তুমি ’’কুল
ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’’ সূরাটি পড়ে ঘুমাবে। কেননা তা শিরক থেকে মুক্তকারী। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৫৫, তিরমিযী, আহমাদ)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
ঘুম থেকে উঠার দোয়া
হুযাইফাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর সময় বলতেনঃ
“আল্লাহুম্মা বিইসমিকা আহইয়া ওয়া অমূতু’’
(অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নামে মরি ও বাঁচি)।
আবার তিনি যখন জাগতেন তখন বলতেনঃ
’’আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আহইয়ানা বা’দা মা
আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর’’
(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরতেক
মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করবেন)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩২৪, ৬৩১২, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৭৯, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন- ৫৭৭২, তিরমিযী)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ঘুম থেকে উঠার পর অন্যান্য দোয়াসমূহ
(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেছেন, একদিন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে
একটি দু’আ বলে দিন যা আমি সকাল-সন্ধ্যায় পড়তে পারি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, তুমি পড়বে, ’
“আল্ল-হুম্মা ’আ-লিমাল গয়বি ওয়াশ্শাহা-দাতি,
ফা-ত্বিরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, রব্বা কুল্লি শাইয়িন, ওয়া মালীকাহূ আশহাদু আল্লা-
ইলা-হা ইল্লা- আন্তা, আ’ঊযুবিকা মিন্ শাররি নাফ্সী, ওয়ামিন শার্রিশ্ শায়ত্ব-নি, ওয়া
শিরকিহী’’
(হে আল্লাহ! যিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী,
আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, প্রত্যেক জিনিসের প্রতিপালক ও মালিক- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,
তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, আমি তোমার কাছে আমার মনের মন্দ হতে, শয়তানের মন্দ
ও তাঁর শির্ক হতে আশ্রয় চাই।)
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
তুমি এ দু’আ সকালে-সন্ধ্যায় ও ঘুমানোর সময় পড়বে।’’ (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৯২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৬৭, আহমাদ ৬৩, দারিমী ২৭৩১, ২৬৮৯, ইবনু হিব্বান ৯৬২, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ১২০২/৯১৭,
আল-কালিমুত তাইয়্যিব ২২, সহীহাহ ২৭৫৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরা) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে এই দো’আ পড়তেন,
“আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা অবিকা আমসাইনা,
অবিকা নাহ্ইয়া, অবিকা নামূতু অইলাইকান নুশূর”।
(হে আল্লাহ! তোমারই হুকুমে আমাদের সকাল হল
এবং তোমারই হুকুমে আমাদের সন্ধ্যা হয়, তোমারই হুকুমে আমরা জীবিত থাকি, তোমারই হুকুমে
আমরা মৃত্যু বরণ করব এবং তোমারই দিকে আমাদের পুনর্জীবন)।
আর সন্ধ্যায় এই দো’আ পড়তেন,
“আল্লাহুম্মা বিকা আমসাইনা, অবিকা নাহ্ইয়া,
অবিকা নামূতু অইলাইকান নুশূর”।
(হে আল্লাহ! তোমারই হুকুমে আমাদের সন্ধ্যা
হল, তোমারই হুকুমে আমরা জীবিত থাকি, তোমারই হুকুমে আমরা মৃত্যু বরণ করব এবং তোমারই
দিকে আমাদের প্রত্যাবর্তন)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৬৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬৮, আহমাদ ৮৪৩৫,
১০৩৮৪, তিরমিযী ৩৩৯১, সহীহাহ ২৬৩, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ২০, তাখরীজুল মিশকাত ২৩৮৯।)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মিশকাতের বর্ণনা অনুযায়ী:-
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে ঘুম থেকে উঠে বলতেন,
“আল্ল-হুম্মা বিকা আসবাহনা-, ওয়াবিকা আমসায়না-,
ওয়াবিকা নাহ্ইয়া-, ওয়াবিকা নামূতু, ওয়া ইলায়কাল মাসীর’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্যে
সকালে [ঘুম থেকে] উঠি, তোমারই সাহায্যে আমরা সন্ধ্যায় পৌঁছি। তোমারই নামে আমরা জীবিত
হই [ঘুম থেকে উঠি] ও তোমারই নামে আমরা মৃত্যুবরণ করি [ঘুমাতে যাই]। আর তোমার কাছেই
আমরা ফিরে যাব।)।
সন্ধ্যার সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলতেন,
“আল্ল-হুম্মা বিকা আমসায়না-, ওয়াবিকা আসবাহনা-,
ওয়াবিকা নাহ্ইয়া-, ওয়াবিকা নামূতু ওয়া ইলায়কান্ নুশূর’’
(হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্যে সন্ধ্যা
বেলায় এসে পৌঁছি, তোমারই সাহায্যে সকালে উঠি। তোমারই নামে আমরা জীবিত হই, তোমারই নামে
আমরা মৃত্যুবরণ করি। আর তোমারই দিকে আমরা পুনঃএকত্রিত হব)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৮৯, আবূ দাঊদ ৫০২৭, তিরমিযী ৩৩৯১,
ইবনু মাজাহ ৩৮৬৮, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ১১৯৯/৯১৫, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২০, সহীহাহ্
২৬৩, সহীহ আল জামি ৩৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবদুর রহমন ইবনু আবযা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরে উঠে বলতেন,
’’আস্বাহনা-’আলা-ফিত্বরাতিল ইস্লা-মি ওয়া কালিমাতিল
ইখলা-সি ওয়া ’আলা-দীনি নাবিয়্যিনা- মুহাম্মাদিন ওয়া ’আলা-মিল্লাতি আবীনা-ইব্রা-হীমা
হানীফাওঁ ওয়ামা-কা-না মিনাল মুশরিকীন’’
(আমরা ইসলামের ফিত্বরাতের উপর ও কালিমায়ে তাওহীদের
সাথে ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
দীনের উপর ও ইব্রাহীম (আঃ)-এর মিল্লাতের উপর, আর তিনি মুশরিক ছিলেন না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৪১৫, আহমাদ ১৫৩৬০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৬৫৪০, দারিমী ২৭৩০, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর
২৬, সহীহাহ্ ২৯৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) “আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা
আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু।
আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী।
ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা”।
অর্থঃ “হে আল্লাহ্! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া
আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার
সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার
কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি
স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি
ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।”
হাদিসঃ-
শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু‘আ পড়া-
“আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা
আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু।
আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী।
ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা”।
‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে
সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের
উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি
তোমার যে নি‘য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি
আমাকে ক্ষমা কর।’’
যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে
এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি
রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে
সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬,
৬৩২৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৭০, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আমসাইতু (সকালে বলতে হবে-আসবাহ্তু)
উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা ‘আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতিকা ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা, আন্নাকা
আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান
আব্দুকা ওয়া রাসূলুকা”।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি সকালে উপনীত হয়েছি।
আপনাকে আমি সাক্ষী রাখছি, আরও সাক্ষী রাখছি আপনার ‘আরশ বহনকারীদেরকে, আপনার ফেরেশতাগণকে
ও আপনার সকল সৃষ্টিকে, (এর উপর) যে নিশ্চয় আপনিই আল্লাহ, একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো
হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই; আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আপনার বান্দা ও রাসূল।”
যে ব্যক্তি সকালে অথবা বিকালে তা চারবার বলবে,
আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করবেন।
হাদিস:
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলতেনঃ অর্থ ’’আমরা সন্ধ্যায়
উপনীত হয়েছি এবং রাজ্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে সন্ধ্যায় প্রবেশ করেছে, সকল প্রশংসা আল্লাহর,
আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই।’’
জারীর (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ ’’আল্লাহ
ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই, তাঁরই জন্য সাম্রাজ্য, সকল প্রশংসা
তাঁরই এবং তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। হে আমার রব! আমি আপনার নিকট এ রাতের কল্যাণ
চাইছি এবং রাতের পরবর্তী কল্যাণও কামনা করছি। আর এ রাতের সকল প্রকার অমঙ্গল থেকে আপনার
নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং তারপরে যা আছে তার অমঙ্গল থেকেও মুক্তি চাচ্ছি।
হে আমার রব! আমি আপনার নিকট অলসতা, গর্ব-অহংকারের
অনিষ্ট ও কুফরীর অনিষ্টট থেকে আশ্রয চাচ্ছি। হে রব! আমি আপনার নিকট জাহান্নামের শাস্তি
ও কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাইছি।’’ আর তিনি ভোরে উপনীত হয়েও এরূপ বলতেনঃ আমরা ভোরে
উপনীত হলাম এবং ভোরে উপনীত হলো রাজ্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে...। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৭১, বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ,
নং ১২০১; নাসাঈ, ‘আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নং ৯; ইবনুস সুন্নী ৭০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(চ)’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধ্যা হলে বলতেন, ’
“আম্সায়না-ওয়া আম্সাল মুলকু লিল্লা-হি ওয়ালহাম্দু
লিল্লা-হি লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হাম্দু
ওয়াহুওয়া ’আলা-কুল্লি শাইয়িন কদীর, রব্বী আস্আলুকা খয়রা মা-ফী হা-যিহিল লায়লাতি ওয়া
খয়রা মা-বা’দাহা-ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন্ শার্রি মা- ফী হা-যিহিল লায়লাতি ওয়াশার্রি মা-বা’দাহা-
রব্বী আ’ঊযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়ামিন্ সূয়িল কিবারি আউইল কুফরি’’
(অর্থাৎ- আমরা সন্ধ্যায় এসে পৌঁছলাম এবং সমগ্র
সাম্রাজ্য সন্ধ্যায় এসে পৌঁছল আল্লাহর উদ্দেশে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া
প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই। তাঁরই রাজত্ব ও শাসন, তাঁরই
জন্য সব প্রশংসা। আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আমি তোমার কাছে চাই এ রাতে যা কল্যাণ
আছে তা হতে, এরপরে যা আছে তার কল্যাণ হতে। আর আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই এ রাতে যা অকল্যাণ
রয়েছে তা হতে। এরপরে যা অকল্যাণ রয়েছে তা হতেও। হে রব! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই অলসতা
হতে ও বার্ধক্যের অকল্যাণ হতে; অথবা বলেছেন, কুফরীর অনিষ্টতা হতে।)।
আর অপর এক বর্ণনায় আছে, বার্ধক্যের অকল্যাণ
ও দাম্ভিকতা হতে। হে পরওয়ারদিগার! আমি তোমার কাছে জাহান্নাম ও কবরের শাস্তি হতে আশ্রয়
চাই। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সকালে উঠতেন তখনও এ দু’আ পড়তেন।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পড়তেন,
“আস্বাহনা- ওয়া আস্বাহাল মুলকু লিল্লা-হি’’
(আমরা সকালে এসে উপনীত হলাম। আর সমগ্র সাম্রাজ্যও
আল্লাহর উদ্দেশে এসে উপনীত হলো)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৩৯২, আবূ দাঊদ ৫০৭১, তিরমিযী ৩৩৯০, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ছ) “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-
‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাতি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা
ফী দীনী ওয়াদুনইয়াইয়া, ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী ওয়া আ-মিন রাও‘আ-তি।
আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী
ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী”।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও
আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা
চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ
ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে
হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার
বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আশ্রয় চাই আমার নীচ
থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে”।
হাদিসঃ-
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেনঃ
‘‘ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আমার দীন, আমার দুনিয়া, আমার পরিবার ও আমার সম্পদের স্বস্তি
ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমার লজ্জাস্থানকে গোপন রাখো, আমার ভয়কে শান্তিতে
পরিণত করো এবং আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে ও আমার উপরের দিক থেকে আমাকে হেফাজত
করো। আমি তোমার নিকট আমার নিচের দিক দিয়ে আমাকে ধ্বসিয়ে দেয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
করি্। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৭৪, নাসায়ী ৫৫২৯, ৫৫৩০, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(জ) জুবায়র ইবনু আবূ সুলাইমান ইবনু জুবায়র ইবনু
মুত্বইম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে এ দু’আগুলো পড়া ছেড়ে দিতেন
নাঃ
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-
‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাতি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা
ফী দীনী ওয়াদুনইয়াইয়া, ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী ওয়া আ-মিন রাও‘আ-তি।
আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী
ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী”।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও
আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা
চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ
ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে
হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার
বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আশ্রয় চাই আমার নীচ
থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে”। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৭৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৭১, নাসায়ী ৫৫২৯, ৫৫৩০,
তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ২৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২৭৮, আহমাদ ৪৭৮৫, ইবনু হিব্বান ৯৬১,
সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১২০০/৯১৬, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঝ) আবূ আয়্যাশ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে উপনীত হয়ে বলেঃ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু
, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদ ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর”
(আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর
কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান)
এটা তার জন্য ইসমাঈল (আঃ) বংশীয় একটি গোলাম
আযাদ করার সমান হবে, তার জন্য দশটি পুণ্য হবে ও দশটি পাপ মোচন করা হবে এবং তার দশটি
মর্যাদা বুলন্দ করা হবে এবং শয়তান থেকে নিরাপদ থাকবে যতক্ষণ না সন্ধ্যা হয়। আর যদি
সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে তা বলে, তাহলে ভোর পর্যন্ত অনুরূপ ফাযীলাত পাবে। বর্ণনাকারী হাম্মাদ
(রহঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছেঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
স্বপ্নে দেখে প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহর রাসূল! আবূ আয়্যাশ (রাঃ) আপনার নামে এই এই বলেছে।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আবূ আয়্যাশ সত্যিই বলেছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৭৭, ইবনু মাজাহ, আহমাদ)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঞ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ্
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
"লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা-শারীকা
লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলাকুল্লি শাইয়্যিন কদীর।"
(আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই; তিনি অদ্বিতীয়,
তার কোন অংশীদার নেই, তারই রাজত্ব, তারই যাবতীয় প্রশংসা; তিনিই সব বিষয়ের উপর শক্তিধর)
যে লোক এ দু’আ প্রতিদিনে একশ’ বার পাঠ করে
সে দশজন গোলাম মুক্ত করার পুণ্য অর্জন হয়, তার (আমলনামায়) একশ’ নেকী লেখা হয় এবং
তার হতে একশ’ পাপ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর তা ঐ দিন বিকাল পর্যন্ত শাইতান (শয়তান) (তার
কুমন্ত্রণা) হতে তার জন্যে রক্ষাকারী হয়ে যায়। সেদিন সে যা পুণ্য অর্জন করেছে তার
চেয়ে বেশি পুণ্যবান কেউ হবে না। তবে কেউ তার চাইতে বেশি ’আমল করলে তার কথা আলাদা।
আর যে লোক দিনে একশ’ বার
"সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী"।
অর্থাৎ- ’আমি আল্লাহর সপ্রশংসা সহ তার পবিত্রতা
বর্ণনা করছি পাঠ করবে, তার সমস্ত পাপ মিটিয়ে দেয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ
হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৬৯১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৯৩, ৬৪০৫, তিরমিযী ৩৪৬৬, ৩৪৬৮, ৩৪৬৯,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৯১, ইবনু মাজাহ ৩৭৯৮, ৩৮১২, আহমাদ ৭৯৪৮, ৮৫০২, ৮৬১৬,
৮৬৫৬, ৯৮৯৭, ১০৩০৫, মুওয়াত্তা মালিক ৪৮৬, ৪৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৯৮, ইসলামিক সেন্টার
৬৬৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ট) মু’আয ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু খুবাইব (রহঃ) থেকে
তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে আমাদের সালাত
পড়ার জন্য আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে
পেয়ে গেলাম। তিনি বললেনঃ বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বললেন, বলো। আমি কিছুই
বললাম না। তিনি আবার বললেনঃ বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কি বলবো? তিনি বললেনঃ
তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সূরা কুল হুয়াল্লাহু (সূরা ইখলাস), সূরা নাস
ও ফালাক পড়বে; এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৮২, তিরমিযী, নাসায়ী)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঠ) শারীক আল-হাওযানী (রহঃ) বলেন, একদা আমি আয়িশাহ
(রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বলি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে জেগে সর্বপ্রথম
কোনো দু’আ পড়ার মাধ্যমে শুরু করতেন। তিনি বললেন, তুমি আমাকে এমন একটি বিষয়ে প্রশ্ন
করেছো, তোমার পূর্বে কেউই এ ব্যাপারে আমার নিকট জানতে চায়নি। তিনি যখন রাতে জাগতেন
তখন দশবার আল্লাহু আকবার ও দশবার আলহামদুলিল্লাহ বলতেন। আর সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি
দশবার ও সুবহানাল মালিকুল কুদ্দুস দশবার এবং আসতাগফিরুল্লাহ ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
দশবার বলতেন। অতঃপর তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয়
অভাব, সংকীর্ণতা ও বিপদগ্রস্ততা থেকে আশ্রয় চাইছি। এরপর তিনি সালাত শুরু করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৮৫, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(ড) “বিসমিল্লা-হিল্লাযি লা-ইয়াদুররু মা”আ ইসমিহি
শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামা-ই ওয়া হুয়াস সামীউল আলীম”।
অর্থঃ আমি ঐ আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যার
নামে আরম্ভ করলে আসমান ও যমীনের কোনো বস্তুই কোনোরুপ ক্ষতি সাধন করতে পারে না। আর তিনি
সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
হাদিসঃ-
আবান ইবনু ‘উসমান হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
আমার পিতাকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে বান্দা প্রত্যেক সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়বে,
‘‘বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা- ইয়াযুররু মা‘আইস্মিহী
শায়উন ফিল আরযি ওয়ালা- ফিস্সামা-য়ি, ওয়া হুওয়াস্ সামী‘উল ‘আলিম’’
(আল্লাহর নামে শুরু করছি, যে নামের সাথে আসমান
ও জমিনে কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সব শুনেন ও জানেন)- কোন কিছু তাকে
ক্ষতি করতে পারে না। বর্ণনাকারী বলেন, আবান পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এজন্য যারা
হাদীস শুনছিলেন তারা তাঁর দিকে তাকাচ্ছিল। আবান তখন বললেন, আমার দিকে কী দেখছ? নিশ্চয়ই
হাদীস যা আমি বর্ণনা করছি তাই, তবে যেদিন আমি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছি সেদিন এ দু‘আ পড়িনি।
এ কারণে আল্লাহ আমার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছিলেন তা কার্যকরী হয়েছে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ,
ইবনু মাজাহ। কিন্তু আবূ দাঊদ-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, সে রাতে তাঁর ওপর কোন আকস্মিক বিপদাপদ
ঘটবে না যে পর্যন্ত না ভোর হয়, আর যে তা ভোরে বলবে তার ওপর কোন আকস্মিক বিপদাপদ সংঘটিত
হবে না যে পর্যন্ত না সন্ধ্যা উপনীত হয়)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৩৯১, তিরমিযী ৩৩৮৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৮৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬৯,
মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৯৫, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২৩, সহীহ আত্ তারগীব ৬৫৫, সহীহ
আল জামি ৫৭৪৫, আহমাদ ৪৪৮, ৫২৯, তাখরীজুল মুখতার ২৯১, ২৯২, আত-তালীকুর রাগীব ১/২২৬,
২২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঢ) আব্দুর রাহমান ইবনু আবূ বকর বলেন, আমি আমার
পিতাকে বললাম, হে আব্বাজান! আমি আপনাকে প্রতিদিন ভোরে ও সন্ধ্যায় তিনবার বলতে শুনিঃ
“আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা
আফিনি ফি সাময়ি, আল্লাহুম্মা আফেনি বি বাসারি; লা ইলাহা ইল্লা আন্তা”।
(হে আল্লাহ! আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ!
আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে।
আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই)।
তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ বাক্যগুলো দ্বারা দু’আ করতে শুনেছি। সেজন্য আমিও তার নিয়ম অনুসরণ
করতে ভালোবাসি। আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে তিনি বললেনঃ
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি,
ওয়াল ফাকরি, ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ‘আযাবিল কাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা”
(হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কুফরী ও দরিদ্রতা
থেকে আশ্রয় চাইছি। হে আল্লাহ! আমি কবরের আযাব থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাইছি, আপনি ছাড়া
অন্য কোনো ইলাহ নেই)।
তিনি এ দু’আ সকালে তিনবার ও সন্ধ্যায় তিনবার
করে বলতেন। তাই আমিও তাঁর নিয়ম অনুসরণ করতে ভালোবাসি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির দু’আ হলোঃ
“আল্ল-হুম্মা রহমাতাকা আরজূ ফালা তাকিলনী ইলা
নাফসী ত্বরফাতা ‘আইনিন ওয়া আছলিছ লী শা’নী কুল্লাহু”
(হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমত প্রার্থী। কাজেই
আমাকে এক পলকের জন্যও আমার নিজের নিকট সোপর্দ করবেন না এবং আমার সবকিছু সুষ্ঠুভাবে
সম্পন্ন করে দিন। আর আপনিই একমাত্র ইলাহ)। (সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৯০, মুছান্নাফে ইবনু আবী
শায়বা, ৯১৫৪; ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৯৭০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ণ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে জেগে উঠে একশো
বার বলবেঃ
“সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহি’’
এবং সন্ধ্যায় উপনীত হয়েও অনুরূপ বলে, তাহলে
সৃষ্টিকুলের কেউই তার মত মর্যাদা ও সওয়াব অর্জনে সক্ষম হবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৯১, মুসলিম, তিরমিযী, নাসায়ীর
আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ত) ইয়াকুব (রহঃ) বলেন, কা’কা ইবনু হাকীম (রহঃ)...আবু
হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! গত রাতে একটি বিছু
আমাকে দংশন করার কারণে আমি বড় কষ্ট পেয়েছি। তিনি বললেন, যদি তুমি সন্ধ্যায় এ দু’আটি
পড়তে
"আউযু বিকালিমাতিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি
মিন শাররি মা- খলাক"
(আমি পূর্ণাঙ্গ কালিমাহ দ্বারা আল্লাহর নিকট
তার সৃষ্টির খারাবী থেকে পানাহ চাই’। তাহলে সে তোমাকে ক্ষতি করতে পারত না)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৯,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৩২, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৮৬, আহমাদ ৮৬৬৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
খাওয়ার আগে ও পরের দোয়াসমূহ
প্রথমে সতর্ক হতে হবে যে, খাদ্যটি হালাল ও
পবিত্র (ত্বাইয়িব) কি-না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“হে মানুষ! তোমরা খাও যমীনে যা কিছু বৈধ ও
পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে তা থেকে। আর তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে
তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৬৮)।
খানাপিনার শুরুতে আল্লাহর নাম
স্মরণ করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হবেঃ
উমার ইবনু আবূ সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি একজন বালক হিসেবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তত্ত্বাবধানে
ছিলাম। আমার হাত খাওয়ার পাত্রের চতুর্দিকে পৌঁছত, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ ’বিসমিল্লাহ’ বলে ডান হাতে খাও এবং নিজের সম্মুখ হতে খাও।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৫৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৫৩৭৬, ৫৩৭৭, ৫৩৭৮, সহিহ মুসলিম (২০২২)-১০৮, সুনান আততিরমিযী ১৮৫৭, সুনান
আবূ দাঊদ ৩৭৭৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৬৭, ইরওয়া ১৯৬৮, মালিক ৩৪৪৫, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক
১৯৫৪৪, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৬৫৫৬, মুসনাদে আহমাদ ১৬৩৩০, সহীহ ইবনু হিব্বান
৫২১৫, ‘নাসায়ী’র আল কুবরা ১০১১, দারিমী ২০৪৫, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৮২২৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শয়তান সে খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যদি না তাতে
বিসমিল্লা-হ বলা হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৬০,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৫৪, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২০১৭, মুসনাদে আহমাদ ২৩২৪৯, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১০৯, সুনান আবূ
দাঊদ ৩৭৬৮, সহীহুল জামি‘ ১৬৫৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি গৃহে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে
ও খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান (তার অনুসারীদেরকে) বলে, এ ঘরে তোমাদের
জন্য রাত্রি যাপনের সুযোগ নেই এবং রাতে খাবারও নেই। আর যখন সে (ঘরে) প্রবেশ করে এবং
প্রবেশকালে আল্লাহর নাম নেয় না, তখন শয়তান বলে, তোমরা রাত্রি যাপনের স্থান পেয়েছ। আর
যখন সে খাওয়ার সময়ও আল্লাহর নাম নেয় না, তখন সে বলে, তোমরা রাত্রি যাপন ও রাতের খাওয়া
উভয়টির সুযোগ লাভ করেছ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৬১,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) (৫১৫৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০১৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৭৬৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৮৭, আল আদাবুল মুফরাদ ১০৯৬, নাসায়ী আল কুবরা ৬৭৫৭, সহীহ আত্
তারগীব ওয়াত্ তারহীব ১৬০৭, মুসনাদে আহমাদ ১৫১৪৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৮১৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন
আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কোন খাবার মাজলিসে উপস্থিত
হতাম, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুরু করে তাতে হাত না রাখা পর্যন্ত
আমরা আমাদের হাত রাখতাম না। একবার আমরা তাঁর সঙ্গে এক দা’ওয়াতে উপস্থিত ছিলাম। সে সময়
একটি মেয়ে এমনভাবে এলো যেন তাকে তাড়িয়ে আনা হয়েছে এবং সে খাদ্যের মধ্যে হাত রাখতে উদ্যত
হলো। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে ফেললেন। অতঃপর এক
বেদুঈন এলো। তাকেও যেন কেউ তাড়িয়ে এনেছে। তিনি তার হাতও ধরে ফেললেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয় শয়তান তখনই খাবারকে হালাল মনে করে, যখন
তাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না। তাই সে (প্রথমে) ঐ মেয়েটিকে নিয়ে এসেছিল, যেন তার দ্বারা
(খাবারটি নিজের জন্য) হালাল করতে পারে। তাই আমি তার হাত ধরে ফেললাম। পরে সে ঐ বেদুঈনকে
নিয়ে এলো (খাদ্যটি নিজের জন্য) হালাল করে নিতে। তাই আমি তার হাতও ধরে ফেললাম। সেই সত্তার
কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, ঐ মেয়েটির হাতের সাথে শয়তানের হাতটিও আমার মুঠোতে রয়েছে।
অন্য আরেক রিওয়ায়াতে অতিরিক্ত আছে, অতঃপর তিনি ’’বিসমিল্লা-হ’’ পড়ে খাবার খেলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৩৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৭৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২০১৭, মুসনাদে আহমাদ ২৩২৪৯, শু‘আবুল ঈমান ৫৮৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বিসমিল্লাহি বলার পর এই দোয়াটি পাঠ করবেনঃ
“আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি ওয়া আত্ব‘ইমনা খয়রাম মিনহু”
(‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য এই খাদ্যে বরকত দাও এবং আমাদেরকে এর চাইতে
উত্তম খাওয়াও’)।
হাদিসঃ
আবদুল্লাহ
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ খাবার খায়, তখন সে যেন এ দু’আটি পড়ে-
“আল্ল-হুম্মা বা-রিক লানা- ফীহি ওয়া আত্ব’ইমনা-
খয়রম্ মিনহু’’
(হে আল্লাহ! তার মধ্যে আমাদের জন্য বারাকাত
দাও এবং তা অপেক্ষা উত্তম খাদ্য দান করো)।
আর যখন দুধ পান করবে তখন যেন বলে,
“আল্ল-হুম্মা বা-রিক লানা- ফীহি ওয়াযিদনা-
মিনহ’’
(হে আল্লাহ! এর মধ্যে আমাদের জন্য বারাকাত
দাও এবং তা আরো অধিক দান করো)। কেননা দুধ ব্যতীত অন্য কোন জিনিসই খাদ্য ও পানীয় উভয়ের
জন্য যথেষ্ট নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৮৩, সুনান
আততিরমিযী ৩৪৫৫, সুনান আবূ দাঊদ ৩৭৩০, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩২২, মুসনাদে আহমাদ ১৯৭৮,
মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ৮৬৭৬, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ১০১১৮, শু‘আবুল ঈমান ৫৯৫৭,
মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ৮৬৭৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৩২০, সহীহুল জামি‘ ৩৮২)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
সবসময় ডান হাতে খাওয়া ও পান
করতে হয়ঃ
’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কিছু খায়,
তখন সে যেন ডান হাতে খায়। আর যখন পান করে তখন যেন ডান হাতে পান করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫১৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০২০, সুনান আততিরমিযী ১৮০০, সুনান আবূ দাঊদ ৩৭৭৬, সুনানুন্
নাসায়ী আল কুবরা ৬৮৯০, মুসনাদে আহমাদ ৪৮৮৬, সহীহুল জামি‘৩৮৪, ৩৮৫; সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্
১২৩৬, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ১৯৫৪১, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪৪৩৯, আস্ সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫০০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বাম হাতে খাওয়া বা পান করা নিষেধ।
কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করেঃ
আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! তোমাদের কেউই যেন
বাম হাতে না খায় এবং সে (বাম) হাতে পানও না করে। কেননা শয়তান তার বাম হাতে খায় এবং
সে হাতে পানও করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৬৩, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০২০, আহমাদ ৬১৮৪, সহীহ আত্ তারগীব
ওয়াত্ তারহীব ২১১৩, আল আদাবুল মুফরাদ ১১৮৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৬৬, সহীহ তিরমিযী ১৮৭৬,
সহীহুল জামি‘ ৭৫৭৯, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৪১২, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৫৫৭৫, আল মু‘জামুল
কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৮৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
খাদ্য পড়ে গেলে সেটা ছাফ করে
খেতে হবেঃ
পড়ে যাওয়া খাদ্য শয়তানের জন্য রেখে দেয়া যাবে
না। খাওয়া শেষে হাত ধোয়ার পূর্বে ভালভাবে প্লেট ও আঙ্গুল চেটে খেতে হবে। কেননা কোন্
খাদ্যে বরকত আছে, আমরা তা জানি না’।
কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন আঙ্গুলে খাবার খেতেন এবং হাত মোছার
পূর্বে তা চেটে নিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৬৪,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৩২, সহীহুল জামি‘ ৪৮৮২,
সুনান আবূ দাঊদ ৩৮৪৮, ইরওয়াউল গালীল ১৯৬৯, আবূ দাঊদ ৩৮৪৮, সহীহুল জামি‘ ৪৮৮২, মুসনাদে
আহমাদ ২৭২১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খাওয়ার শেষে) অঙ্গুলিসমূহ ও খাদ্যপাত্র চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন
এবং বলেছেনঃ খাদ্যের কোন অংশটির মধ্যে বারাকাত রয়েছে নিশ্চয় তোমরা তা অবগত নও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৬৫, সহিহ মুসলিম (২০৩৩)-১৩৩, মুসনাদে আহমাদ ১৫২২৪,
সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১৫৯, ইরওয়া ৭/৩১, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪৪৫৫,
আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১২৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ কিছু খায়, তখন সে যেন (অঙ্গুলি) চেটে খাওয়া
অথবা অন্যের দ্বারা তা চাটিয়ে নেয়া পর্যন্ত হাত না মুছে ফেলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৬৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৪৫৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৮৯-৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৩১, সুনান ইবনু
মাজাহ ৩২৬৯, সহীহুল জামি‘ ৩৭৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৯১, মুসনাদে আহমাদ ১৯২৪, মুসনাদে
আবূ ইয়া‘লা ২৫০৩, আবূ দাঊদ ৩৮৪৮, ৩৮৪৭; সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১৬৩, মুসান্নাফ
‘আবদুর রায্যাক ৭৫০৬, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১২১৭, আস্ সুনানুল কুবরা
লিল বায়হাক্বী ১৫০১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেনঃ তোমাদের কারো প্রতিটি কাজের সময় শয়তান তার পাশে উপস্থিত হয়, এমনকি তার খাওয়ার
সময়েও। অতএব যদি তোমাদের কারো লোকমা পড়ে যায়, সে যেন তা তুলে ময়লা পরিষ্কার করে তা
খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য তা ছেড়ে না দেয়। আর খাওয়া শেষে যেন অঙ্গুলি চেটে নেয়। কেননা
সে জানে না যে, তার খাদ্যের কোন্ অংশে বারাকাত রয়েছে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ৫১৯৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৩৩,
সহীহুল জামি‘ ১৬৫৯, সুনান আততিরমিযী ১৮০৩, সুনান আবূ দাঊদ ৩৮৪৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৭৮,
সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১৬১, মুসনাদে আহমাদ ১২৮১৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫২৪৯,
আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫০১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্লেট চেটে খাওয়ার ফজিলতঃ
নুবায়শাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন পাত্রে খায় এবং পরে তা চেটে
নেয়, তখন পাত্রটি তাকে (লক্ষ্য করে) বলে, আল্লাহ তোমাকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্ত
রাখুন, যেমন তুমি আমাকে শয়তান হতে মুক্ত রেখেছ। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৪২, দারিমী ২০২৭, সুনান আততিরমিযী ১৮০৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৭১, আল জামি‘উস্ সগীর ৫৪৭৮, তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ-
শু‘আয়ব আরনাউত্বব: ২০৭৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অনেকে প্লেট ধুয়ে খান। কেউ আঙ্গুল দিয়ে প্লেট
না চেটে সরাসরি জিভ দিয়ে প্লেট চাটেন। এগুলি স্রেফ বাড়াবাড়ি। খাওয়ার শেষে ভালভাবে
(সাবান ইত্যাদি দিয়ে) হাত ধুয়ে ফেলবেস। যেনো সেখানে কিছুই লেগে না থাকে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় রাত্রিযাপন
করে যে, তার হাতের মধ্যে খাদ্যের চিহ্ন (তেল, চর্বি ইত্যাদি) থেকে যায়, সে তা ধৌত করেনি।
পরে কোন কিছু তার অনিষ্ট করে, তবে সে যেন নিজেকেই দোষারোপ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২১৯, সুনান আততিরমিযী ১৮৬০, সুনান
ইবনু মাজাহ ৩২৯৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৮৫২, সহীহুল জামি‘ ৬৫৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১৬৬, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ
৫১৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৯৫৬, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ২০৯৩৯, মুসান্নাফ ইবনু আবূ
শায়বাহ্ ২৬২১৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫২১, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫০০২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ভান্ডের মুখে
মুখ লাগিয়ে এবং দাঁড়িয়ে খেতে ও পানি পান করতে নিষেধ করেছেনঃ
আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশকের মুখ হতে (মুখ লাগিয়ে)
পান করতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৬৪,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬২৭, ৫৬২৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৬৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২০২৩, দারিমী ২১১৭, তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ ৭১৫৩, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৯৯,
সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১২১, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৩৫৪, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৫৩১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৬৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০২৪, মুসনাদে আহমাদ
৮৩৩৫, সুনান আততিরমিযী ১৮৭৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৪২৪, সুনান আবূ দাঊদ ৩৭১৭, সহীহুল জামি‘
৬৮২৯, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ২০৮৩, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৩১৬৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউই যেন দাঁড়িয়ে পান না
করে। যদি কেউ ভুলবশতঃ এরূপ করে, সে যেন বমি করে ফেলে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০২৬,
সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৭৭১৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫০৩৭, মা‘রিফাতুস্ সুনান
ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৪৬০২)। দিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে
খাওয়া ও পানি পান করা যায়ঃ
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামানায় চলা অবস্থায় খেতাম
এবং দাঁড়ানো অবস্থায় পান করতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪২৭৫, সুনান আততিরমিযী ১৮৮১, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩০১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৩২৫, দারিমী
২১২৫, মুসনাদে আহমাদ ৪৭৬৫, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪১১৫, শু‘আবুল ঈমান ৫৯৮৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আমর ইবনু শু’আয়ব (রহঃ) তাঁর পিতা হতে, তিনি
তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
দাঁড়ানো এবং বসা উভয় অবস্থায় পান করতে দেখেছি। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৭৬, সুনান আততিরমিযী ১৮৮৩, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ৪৪৯০, মুসনাদে
আহমাদ ৬৯২৮ : তাহক্বীক- শু‘আয়ব আরনাউত্বব, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ১২৮৪, নাসায়ী ১৩৬১,
আল মু‘জামুল আওসাত্ব ১২১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কাবশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার গৃহে এলেন এবং একটি লটকানো মশক হতে
দাঁড়ানো অবস্থায় পান করলেন। পরে আমি মশকের নিকট গিয়ে মশকের সে মুখখানা কেটে রেখে দিলাম।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৮১, সুনান আততিরমিযী ১৮৯২,
সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১০৫৭-এর আলোচনা দ্রঃ, শু‘আবুল ঈমান ৬০২৬, ইবনু মাজাহ ৩৪২৩, মা‘রিফাতুস্
সুনান ওয়াল আসার ৪৬০৫, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪১৩০, মুসনাদে আহমাদ ২৭৪৩০, শু‘আবুল
ঈমান ৬০২৭, ৬০২৫; আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ২০৮১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি (রাসুল সা.) যমযমের পানি
এবং ওযূ শেষে পাত্রের অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেনঃ
আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একদিন আমি এক বালতি যম্যমে্র পানি নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
খিদমাতে উপস্থিত হলাম, তিনি তা দাঁড়িয়ে পান করলেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৬৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৬৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০২৭, মুসনাদে আহমাদ
২২৪৪, সুনান আননাসায়ী ২৯৬৫, সুনান আততিরমিযী ১৮৮২, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৪২২, মা‘রিফাতুস্
সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৪৬০১, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ৯১১৫, মুসান্নাফ ইবনু
আবী শয়বাহ্ ২৪১০৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৩২০, শু‘আবুল ঈমান ৫৯৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি যুহরের সালাত
আদায় করলেন, অতঃপর জনগণের বিভিন্ন অভাব-অভিযোগ সমাধানের জন্য কূফার (মসজিদের) আঙ্গিনায়
বসলেন। এমনকি ’আসর সালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেল। তারপর পানি আনা হলো। তিনি তার কিছুটা পান
করলেন এবং নিজের হস্তদ্বয় ও মুখ ধুইলেন।বর্ণনাকারী তাঁর মাথা ও পদদ্বয়ের কথাও উল্লেখ
করেছেন (অর্থাৎ- উযূ করলেন)। অতঃপর উঠে দাঁড়ালেন এবং দাঁড়ানো অবস্থায় পাত্রের অবশিষ্ট
পানি পান করলেন। পরে বললেন, লোকেরা দাঁড়িয়ে পানি পান করাকে মাকরূহ মনে করে, অথচ আমি
যেরূপ করেছি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও অনুরূপ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৬৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৬১৬, ৫৬১৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩৫৭, শু‘আবুল ঈমান ৫৯৮২, মুসনাদে আহমাদ
৯৭০, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৩০৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৫২০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
সোনা ও রুপার পাত্রে পানি পান
করা নিষেধঃ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রৌপ্য পাত্রে পান করে, বস্তুত সে
যেন তার পেটের মধ্যে জাহান্নামের আগুনের ঢোক গিলে নেয়।
আর মুসলিম-এর রিওয়ায়াতে আছে, যে ব্যক্তি রৌপ্য
ও স্বর্ণের পাত্রে পানাহার করে.....। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৪২৭১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৩৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫২৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৩৪২, ইবনু মাজাহ ৩৪১৩, ইরওয়া
৩৩, সহীহুল জামি‘ ৯৬২৮, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১১০, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৪২০,
মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ১৩৬, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ১৯৯২৬, মুসনাদুশ্
শাফি‘ঈ ২৩, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৯৯৮, দারিমী ২১২৯, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী
১৯৩৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২১২, ইসলামিক সেন্টার ৫২২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমরা মোটা কিংবা মিহি রেশমী বস্ত্র পরিধান করো না এবং সোনা ও রূপার
পেয়ালায় পান করো না। আর তামার পাত্রে খেয়ো না। কেননা এগুলো হলো তাদের (কাফিরদের) জন্য
দুনিয়াতে আর তোমাদের (মু’মিনদের) জন্য এগুলো হলো আখিরাতে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৭২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৪২৬, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫২৮৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২০৬৭, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৬৬৩১, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০২,
সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১১১, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৫/৫৮, আল মু‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল
আসার ১৩৭, ইরওয়া ৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২২০, ইসলামিক সেন্টার ৫২৩৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস ফেলা
যাবে না বরং তিনবার বাইরে শ্বাস ফেলবেন (ও ধীরে ধীরে পানি পান করবেন):
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কিছু পান করার সময়) পাত্রের মধ্যে
নিঃশ্বাস ফেলতে এবং তার মধ্যে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৭৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭২৮,
সুনান আততিরমিযী ১৮৮৮, সুনান আননাসায়ী ৪৮, সহীহুল জামি‘ ১২৭৭৬, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্
তারহীব ২১১৭, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ১৯৫৮৪, তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ ১৯০৭, মুসনাদে
আবূ ইয়া‘লা ২৪০২, শু‘আবুল ঈমান ৬০০৩, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১৮০৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা উটের ন্যায় এক শ্বাসে পান
করবে না; বরং দু’ কিংবা তিন শ্বাসে পান করবে। আর যখন পান করবে (শুরুতে) বিসমিল্লা-হ
পড়বে এবং যখন (পানান্তে) পেয়ালা মুখ হতে আলাদা করবে, তখন আলহামদুলিল্লা-হ বলবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৭৮, সুনান আততিরমিযী ১৮৮৫, জামি‘ ৬২৩৩, রিয়াযুস্ সলিহীন ৭৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন নিঃশ্বাসে পান করতেন। অর্থাৎ- একবারে এক ঢোকে সবটুকু
পান করতেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৬৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৩১, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০২৮, সুনান আততিরমিযী ১৮৮৪, সুনান
ইবনু মাজাহ ৩৪১৬, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১১৯, তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ ১৩২৩০,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৩৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫১১৪, ইসলামিক সেন্টার ৫১২৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানীয় বস্তুতে (পান করার সময়) ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন।
তখন জনৈক ব্যক্তি বলল, যদি আমি পানির মধ্যে খড়কুটা দেখতে পাই? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তা ফেলে দাও। সে আবার বলল : এক নিঃশ্বাসে পান করলে আমার তৃপ্তি
হয় না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এমতাবস্থায় পেয়ালাটি মুখ হতে পৃথক
করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৭৯.
সুনান আততিরমিযী ১৮৮৭, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৮৫, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১১৫,
দারিমী ২১২১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৩২৭, মুসনাদে আহমাদ ১১২১৯, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্
(৩৬)-৩)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেয়ালার ছিদ্র দিয়ে পান করতে এবং
পানীয় বস্তুতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৪২৮০, সুনান আবূ দাঊদ ৩৭২২, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৮৭, তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ
১১৭৭৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৩১৫ শু‘আবুল ঈমান ৬০১৮, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১১৬,
আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৫৯০, সহীহুল জামি‘ ৬৮৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অনেক লোকের মধ্যে হলে খাদ্য
পরিবেশনের সময় ডান দিক থেকে শুরু করবেনঃ
আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
জন্য একটি গৃহপালিত বকরীর দুধ দোহন করা হলো এবং তাতে আনাস (রাঃ)-এর কূপের পানি মিশানো
হলো। অতঃপর তা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে পেশ করা হল। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা পান করলেন। এ সময় তাঁর বাম পার্শ্বে ছিলেন আবূ
বকর (রাঃ) এবং ডানে ছিল এক বেদুঈন। তখন ’উমার(রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! (অবশিষ্ট)
আবূ বকর (রাঃ)-কে প্রদান করুন। কিন্তু তিনি তাঁর ডান পার্শ্বের সে বেদুঈনকেই দিলেন।
অতঃপর বললেনঃ ডানদিকের ব্যক্তিরই হক প্রথমে। অপর এক রিওয়ায়াতে বর্ণিত। ডানে যারা রয়েছে,
তারপর ডানে যারা রয়েছে তারা হকদার। সাবধান! ডান পার্শ্বওয়ালাদের অগ্রাধিকার দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৭৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৩৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৮৪-৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০২৯, সুনানুন্ নাসায়ী
আল কুবরা ৬৮৬১, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪১৯৫, মুসনাদে আহমাদ ১২০৭৭, মুসনাদে আবূ
ইয়া‘লা ৩৫৫২, দারিমী ২১১৬, সুনান আততিরমিযী
১৮৯৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৪২৫, সুনান আবূ দাঊদ ৩৭২৬, সহীহুল জামি‘ ২৮০৭, সিলসিলাতুস্
সহীহাহ্ ১৭৭১, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৪২৮, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ১৯৫৮২, মুসনাদে আহমাদ
১২০৭৭, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫০৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫১১৭, ইসলামিক সেন্টার
৫১২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সম্পূর্ণ পেট ভরে খাওয়া নিষেধঃ
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আদম সন্তানের জন্য
কয়েক লোকমা খাদ্য যথেষ্ট, যা দিয়ে সে তার কোমর সোজা রাখতে পারে (ও আল্লাহর ইবাদত করতে
পারে)। এরপরেও যদি খেতে হয়, তবে পেটের তিনভাগের এক ভাগ খাদ্য ও একভাগ পানি দিয়ে ভরবে
এবং একভাগ খালি রাখবে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য’।
মিক্বদাম ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, [রাসূল (সা.) বলেছেন] কোন ব্যক্তি
তার পেট অপেক্ষা মন্দ কোন পাত্রকে ভর্তি করেনি। আদম সন্তানের জন্য এ পরিমাণ কয়েক লোকমাই
যথেষ্ট যা দ্বারা সে স্বীয় কোমরকে সোজা রাখতে পারে (ও আল্লাহর ইবাদত করতে পারে)। যদি
এর বেশি খাওয়া প্রয়োজন মনে করে তবে এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য, আরেক তৃতীয়াংশ পানীয় এবং
অপর তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৯২, সুনান আততিরমিযী ২৩৮০, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৪৯, সহীহ আত্ তারগীব
ওয়াত্ তারহীব ২১৩৫, মুসনাদে আহমাদ ১৭২২৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৭৪, শুআবুল ঈমান ৫৬৪৮,
আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৬৭৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি বলেন, এক মুমিনের খানা দুই মুমিনে খায়।
দুই মুমিনের খানা চার মুমিনে খায় এবং চার মুমিনের খানা আট মুমিনে খায় (অর্থাৎ সর্বদা
সে পরিমাণে কম খায়)।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট,
দু’জনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট এবং চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৭৮, সহীহ মুসলিম (২০৫৯)-১৭৯,সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৩৯২ নং হাদীসের অধ্যায়, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫২৩৭, মুসনাদে
আহমাদ ৯২৭৭, তিরমিযী ১৮২০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৬৮৬, ইবনু মাজাহ ৩২৫৪, সহীহুল জামি‘
৩৯১০, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ১৯৫৫৭, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪৫৫১, আল মু‘জামুল
কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’জনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট
এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৪১৭৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৩৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫২৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৫৮, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৬৭৭৩, সুনান আততিরমিযী
১৮২০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৬৮৬, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৪৩২, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব
২১২৯, ইবনু মাজাহ ৩২৫৫, সহীহুল জামি‘ ৪৫০১, মুসনাদে আহমাদ ৭৩২০, আল মু‘জামুল কাবীর
লিত্ব ত্ববারানী ১৩০৫৮, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫১৯৪, ইসলামিক সেন্টার ৫২০৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
কেননা মুমিন এক পেটে খায় ও কাফের সাত পেটে
খায় (অর্থাৎ সে সর্বদা বেশী খায়)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
এক ব্যক্তি অধিক পরিমাণে খাবার খেতো, পরে সে ইসলাম গ্রহণ করল। তখন সে অল্প খেতে লাগল।
ব্যাপারটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালে তিনি বললেনঃ মু’মিন খায় এক
পাকস্থলীতে আর কাফির খায় সাত পাকস্থলীতে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৪১৭৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৩৯৭, সুনান আততিরমিযী ১৮১৮, মুসনাদে
আহমাদ ১৪৫৭৭, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৭৬৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তবে আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে সহীহ মুসলিম-এর
অপর একটি রিওয়ায়াতে আছে যে, জনৈক কাফির রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
মেহমান হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বকরীর দুধ আনতে নির্দেশ
দিলেন, দুধ দোহন করা হলো এবং লোকটি সবটুকু দুধ পান করে ফেলল। অতঃপর আরেকটি বকরীর দুধ
আনতে নির্দেশ দিলেন, বকরী দোহন করা হলো। এ দুধটুকুও সে পান করে ফেলল। এরপর তৃতীয় আরেকটি
বকরী দোহন করা হলো। এ দুধটুকুও সে পান করে ফেলল। এভাবে সে শেষ নাগাদ সাতটি বকরীর সবটুকু
দুধ একাই পান করে ফেলল। (পরদিন) ভোরে লোকটি ইসলাম গ্রহণ করল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য একটি বকরীর দুধ দোহন করার নির্দেশ দিলেন। দুধ দোহন করা
হলো। লোকটি সবটুকু দুধ পান করে ফেলল। অতঃপর আরেকটি বকরী দোহন করার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু
সে এবার সবটুকু দুধ পান করতে পারল না। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ মু’মিন এক পাকস্থলীতে পান করে। আর কাফির পান করে সাত পাকস্থলীতে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৭৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫২৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৬৩, সুনান আততিরমিযী ১৮১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫২৩৫, মুওয়াত্ত্বা
মালিক ৩৪১৮, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৬৮৯৩, মুসনাদে আহমাদ ৮৮৭৯, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্
তারহীব ২১৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২০৬, ইসলামিক সেন্টার ৫২১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
কাত হয়ে বা ঠেস দিয়ে খাওয়া নিষেধঃ
হাদিসঃ
আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি হেলান দিয়ে খাই না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৬৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৩৯৮, সুনান আবূ দাঊদ ৩৭৬৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৬২, ইরওয়া ১৯৬৬, মা‘রিফাতুস্ সুনান
ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৪৬০৮, মুসনাদে আহমাদ ১৮৭৫৪, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৮৮৪, দারিমী
২০৭১, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৭৮০৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
১৫০৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ না
বললে শয়তান তার সাথে খায়ঃ
হাদিসঃ
হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শয়তান সে খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যদি না তাতে
বিসমিল্লা-হ বলা হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৬০,
সহিহ মুসলিম (২০১৭)-১০২, মুসনাদে আহমাদ ২৩২৪৯, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১০৯,
সুনান আবূ দাঊদ ৩৭৬৮, সহীহুল জামি‘ ১৬৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’
বলতে ভুলে গেলেঃ
খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে
(শেষ হওয়ার আগেই) বলবে, “বিসমিল্লা-হি আউওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ” (আল্লাহর নামে এর শুরু
ও শেষ)।
হাদিসঃ
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ খাবার খায় এবং আল্লাহর নাম
নিতে ভুলে যায়, (স্মরণ হওয়ার পর) সে যেন বলে, ’’বিসমিল্লা-হি আও্ওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ’’
(অর্থাৎ- খাবারের প্রথমে এবং শেষে আল্লাহর নামে)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২০২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৭৬৭, সুনান আততিরমিযী ১৮৫৮ সহীহ ইবনু মাজাহ ৩২৬৪, সহীহ
আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১০৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫২১৪, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৬৭৫৮,
দারিমী ২০২০, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৮৫২, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
১৫০০৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
খাওয়া ও পানি পান শেষে বলবেনঃ
(১) আলহামদুলিল্লাহ’
(সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।
হাদিসঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তাঁর সে বান্দাদের প্রতি সন্তুষ্টি
প্রকাশ করেন, যে এক গ্রাস খাদ্য খেয়ে তার প্রশংসা করে অথবা এক ঢোক পানি পান করে তার
শুকরানা আদায় করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২০০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭৩৪, সুনান আততিরমিযী ১৮১৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৬৫১, সহীহুল জামি‘ ১৮১৬,
মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৪৩৩২, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ (২৬)-১, মুসনাদে আহমাদ ১১৯৭৩,
শু‘আবুল ঈমান ৬০৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৮২, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
এরপর বলবেন,
(২) “আলহামদু
লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব’আমানী হা-যাত্ব ত্ব’আ-মা ওয়ারাযাকানীহি মিন গয়রি হাওলিম্ মিন্নী
ওয়ালা- ক্যুওয়াহ্’’
অর্থাৎ- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাকে
এ খাদ্য খাইয়েছেন এবং আমার শক্তি সামর্থ্য ব্যতিরেকেই তিনি তা আমাকে দান করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি খাওয়ার
পরে এই দোয়াটি পাঠ করবে, তার বিগত সকল গোনাহ মাফ করা হবে।
হাদিসঃ
মু’আয ইবনু আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খাবার খাওয়ার পর এ দু’আ,
“আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব’আমানী হা-যাত্ব
ত্ব’আ-মা ওয়ারাযাকানীহি মিন গয়রি হাওলিম্ মিন্নী ওয়ালা- ক্যুওয়াহ্’’
পড়ে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। অর্থাৎ-
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাকে এ খাদ্য খাইয়েছেন এবং আমার শক্তি সামর্থ্য ব্যতিরেকেই
তিনি তা আমাকে দান করেছেন।
আর আবূ দাঊদ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি
নতুন কাপড় পরিধান করে এ দু’আ, ’’আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী কাসা-নী হা-যা- ওয়ারাযাকানীহি
মিন গয়রি হাওলিম্ মিন্নী ওয়ালা- ক্যুওয়াহ্’’ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার
কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই আমাকে এ কাপড়ের ব্যবস্থা করে পরালেন) পড়ে তার আগের ও
পরের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৩৪৩, সুনান আততিরমিযী ৩৪৫৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৮৫,
সুনান আবূ দাঊদ ৪০২৩, সহীহুল জামি‘ ৬০৮৬, আল জামি‘উস্ সগীর ১১০৩১, সহীহ আত্ তারগীব
ওয়াত্ তারহীব ২০৪২, ইরওয়া ১৯৮৮, মুসনাদে আহমাদ- ১৫৬৭০, তাহক্বীক শু‘আয়ব আরনাউত্বব
: হাসান; মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা- ১৪৮৮, তাহক্বীক হুসায়ন সুলায়ম আসাদ : সানাদ হাসান; শু‘আবুল
ঈমান ৬২৮৫, সুনান দারিমী- ২৬৯০, তাহক্বীক হুসায়ন সুলায়ম আসাদ : সানাদ হাসান; আল মু‘জামুল
কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৬৮০১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৩)
অথবা বলবেন,
আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কিছু খেতেন বা পান করতেন, তখন
এ দু’আ পড়তেন, ’’আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আত্ব’আমা ওয়াসাকা- ওয়াসাও্ ওয়াগাহূ ওয়াজা’আলা
লাহূ মাখরাজা-’’ (সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য যিনি খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন, অতি
সহজে তা উদরস্থ করিয়েছেন এবং [মলদ্বার দিয়ে অপ্রয়োজনীয় অংশ] বের হওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২০৭, সুনান আবূ দাঊদ ৩৮৫১,
সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২০৬১, আস সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৩৮৯৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫২২০,
আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৩৯৭৫, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৫৩৮৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
খাওয়া শেষে আল্লাহর প্রশংসা
করার ফজিলতঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ খাবার খেয়ে শুকরিয়া আদায়কারী সংযমী
সায়িমের (রোযাদারের) ন্যায় (সাওয়াবের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫২০৫, সুনান আততিরমিযী ২৪৮৬, সুনান ইবনু মাজাহ
১৭৬৪, ১৭৬৫; দারিমী ২০২৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩১৫, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৯৮, মুসনাদে
আহমাদ ৭৮০৬, সহীহুল জামি‘ ৩৯৪৩, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৬৫৫, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক
১৯৫৭৩, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৯২৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৭৮২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
খাওয়া শেষে প্লেট বা দস্তারখান উঠানোর সময় দোয়াঃ
“আলহামদুলিল্লা-হি হামদান কাসীরন ত্বইয়িবাম্ মুবা-রাকান ফীহি গয়রা মাকফিয়্যিন ওয়ালা-মুওয়াদ্দা’ইন মুসতাগনান ’আনহু রব্বুনা-’’
(পাক-পবিত্র, বারাকাতময়, অনেক অনেক প্রশংসা আল্লাহর জন্য। হে পরওয়ারদিগার! তোমার নি’আমাত হতে মুখ ফিরানো যায় না, আর তার অন্বেষণ ত্যাগ করা যায় না এবং তার প্রয়োজন হতে মুক্ত থাকা যায় না।)
হাদিসঃ
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখ হতে যখন দস্তরখান উঠানো হত, তখন তিনি এ দু’আ করতেন,
“আলহামদুলিল্লা-হি হামদান কাসীরন ত্বইয়িবাম্
মুবা-রাকান ফীহি গয়রা মাকফিয়্যিন ওয়ালা-মুওয়াদ্দা’ইন মুসতাগনান ’আনহু রব্বুনা-’’
(পাক-পবিত্র, বারাকাতময়, অনেক অনেক প্রশংসা
আল্লাহর জন্য। হে পরওয়ারদিগার! তোমার নি’আমাত হতে মুখ ফিরানো যায় না, আর তার অন্বেষণ
ত্যাগ করা যায় না এবং তার প্রয়োজন হতে মুক্ত থাকা যায় না।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৯৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৪৫৮, সুনান আবূ দাঊদ ৩৮৪৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৮৪, মুসনাদে আহমাদ ২২২০০, আল মু‘জামুল
কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭৩৪৫, দারিমী ২০২৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫২১৭, শু‘আবুল ঈমান ৬০৩৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মিষ্টি ও মধু পছন্দ করতেনঃ
হাদিসঃ
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিষ্টি ও মধু পছন্দ করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৮২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৪৩১, ৫৫৯৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৫৭০-৩৫৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৭৪, সুনান
আততিরমিযী ১৮৩১, সুনান আবূ দাঊদ ৩৭১৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩২৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫২৫৪,
সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৭৫৬২, দারিমী ২০৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পাত্রের মাঝখান থেকে খাওয়া নিষেধঃ
’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে এক পাত্র সারীদ আনা হলো। তখন
তিনি লোকেদেরকে বললেনঃ তোমরা এর পাশ থেকে খাও, মাঝখান থেকে খেয়ো না। কেননা খাদ্যের
বারাকাত মাঝখানে অবতীর্ণ হয়। আর আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ খাবার খায়, সে যেন পাত্রের উপরিভাগ হতে
না খায়; বরং তার নিম্নভাগ হতে খায়। কেননা বারাকাত উপরিভাগে (মাঝখানেই) অবতীর্ণ হয়।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২১১, সুনান আততিরমিযী ১৮০৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৭৭২, সুনান ইবনু মাজাহ
৩২৭৭, দারিমী ২০৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫২৪৫, মুসনাদে আহমাদ ২৭৩০, সুনানুন্ নাসায়ী আল
কুবরা ৬৭৬২, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১২৩, সহীহুল জামি‘ ৮২৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্
২০৩০, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১২১২৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫০০৯)।হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আব্দুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি বড়ো কড়াই ছিলো। তা চারজন লোক
বহন করতো। পাত্রটির নাম ছিলো ’গাররাআ।’ বেলা কিছুটা উপরে উঠলে এবং লোকের চাশতের সালাত
আদায় শেষ হলে পাত্রটি নিয়ে আসা হলো। অর্থাৎ তাতে ঝোল মিশ্রিত রুটি ছিলো। লোকেরা এর
চারিদিকে বসলো। লোকের আধিক্যের কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁটু
গেড়ে বসলেন। এক বেদুঈন বললো, এটা কিভাবে বসা হলো! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাকে ভদ্র ও সম্মানিত বান্দা বানিয়েছেন। তিনি আমাকে অবাধ্য
ও উচ্ছৃঙ্খল বানাননি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ পাত্রের
কিনারা থেকে খাও এবং মধ্যখান ছেড়ে দাও। এতে বরকত হবে। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৭৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কোনো খাদ্যের দোষ প্রকাশ করা নিষেধঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোন খাদ্যের দোষ প্রকাশ করেননি। অবশ্য মনে
ধরলে খেয়েছেন। আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করেছেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৭২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৫৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫২৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৬৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৪৩৭, সুনান আবূ দাঊদ ৩৭৬৩, আস্
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫০১৭, তিরমিযী ২০৩১, ইবনু মাজাহ ৩২৫৯, আহমাদ ১০৪২১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫২০৭, ইসলামিক সেন্টার ৫২১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আজওয়া খেজুরের গুণাবলীঃ
সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর
খাবে, সেদিন কোন বিষ ও যাদু-টোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৯০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৪৪৫, ৫৭৬৮, ৫৭৬৯, ৫৭৭৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ৫২৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৪৭,
সুনান আবূ দাঊদ ৩৮৭৬, মুসনাদে আহমাদ ১৫৭১, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৮৭, মুসান্নাফ ইবনু
আবূ শায়বাহ্ ২৩৪৭৭, সহীহুল জামি‘ ১১০৩০, আল মুজামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ৩১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫১৬৫, ইসলামিক সেন্টার ৫১৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদীনার উচ্চভূমির ’আজওয়াহ্ খেজুরের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে।
আর প্রথম ভোরে তা (খাওয়া) বিষের প্রতিষেধক। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৯১, সহিহ মুসলিম (৫৪৬২)-২৭, সহীহুল জামি‘ ৩৮৯৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্
৩৫৩৯, মুসনাদে আহমাদ ২৪৭৩৭, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৩৪৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
ইশার সালাত ও রাতে খাবার একত্রে উপস্থিত হলে
আগে কোনটা করবেন?
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের রাতের খাবার উপস্থিত করা হলে এবং
’ইশার সালাতের ইকামাত দেয়া হলে খাবার শেষ না করে সালাতে যাবে না। মুসাদ্দাদের বর্ণনায়
রয়েছেঃ আব্দুল্লাহ ইবনু উমারের রাতের খাবার পরিবেশন করা হলে বা রাতের খাবার আনা হলে
তিনি আহার শেষ না করে কখনো সালাতের জন্য উঠতেন না। এমন কি ইকামাত বা ইমামের কিরাআত
শুনতে পেলেও তিনি আহার শেষ না করা পর্যন্ত উঠতেন না। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৭৫৭-৩৭৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
একসঙ্গে খাওয়া ও দাওয়াতে বাড়ির কর্তার অনুমতি
সাপেক্ষে খাওয়া শুরু করতে হয়
ওয়াহশী ইবনু হারব থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা
ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ বললেন,
হে আল্লাহর রাসূল! আমরা খাবার খাই, কিন্তু পরিতৃপ্ত হতে পারি না। তিনি বললেনঃ হয় তো
তোমরা বিচ্ছিন্নভাবে খাও। তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমরা একত্রে আহার করো এবং
খাদ্য গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করো, তাহলে তোমাদের খাদ্যে বরকত দেয়া হবে।
ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, যদি তোমাকে কোথাও
দা’ওয়াত করা হয় এবং খাবার সামনে রাখা হয় তাহলে বাড়ির কর্তা অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত
খাওয়া শুরু করবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৭৬৪,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৫২, সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৮৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৬৬৪,
সহীহ ইবনু হিব্বান- তাহক্বীক আরনাউত্বব : ৫২২৪, শু‘আবূল ঈমান ৫৮৩৫, সহীহ আত্ তারগীব
ওয়াত্ তারহীব ২১২৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০৬৫৯, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব
ত্ববারানী ১৭৮২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাতে শোয়ার আগে সকল পাত্র ঢেকে রাখতে হবেঃ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন রাত্রের আঁধার নেমে আসে, অথবা বলেছেনঃ
সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের শিশুদেরকে (বাইরে যাওয়া থেকে) আবদ্ধ রাখো। কেননা সে সময় শয়তান
ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে তাদেরকে ছেড়ে দাও এবং বিসমিল্লা-হ
বলে ঘরের দরজাসমূহ বন্ধ করো। কারণ শয়তান বদ্ধদ্বার খুলতে পারে না। আর বিসমিল্লা-হ পড়ে
তোমাদের মশকগুলোর মুখ বন্ধ করো এবং বিসমিল্লা-হ বলে তোমাদের পাত্রগুলোও ঢেকে রাখো।
(ঢাকার কিছু না পেলে) কোন কিছু আড়াআড়িভাবে হলেও পাত্রের উপর রেখে দাও। (আর ঘুমানোর
সময়) বাতিগুলো নিভিয়ে দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪২৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬২৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৪১, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২০১২, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৪০, সহীহুল জামি‘ ৭৬৪, আল জামি‘উস্ সগীর ৭৬৬, ইরওয়া
৩৯, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৯৩১, শু‘আবুল ঈমান ৬০৫৮, মুসনাদে আহমাদ ৮৭৫২,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫০৭৬, ইসলামিক সেন্টার ৫০৮৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বুখারী-এর অপর এক বর্ণনাতে আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ পাত্রসমূহ ঢেকে রাখো। মশকগুলোর মুখ বেঁধে রাখো। কেননা এ
সময় জিনেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং ছিনিয়ে নেয়। আর তোমরা শয়নকালে বাতিগুলো নিভিয়ে দাও। কেননা
দুষ্ট ইঁদুরগুলো কখনো কখনো (প্রজ্জ্বলিত) সলতা টেনে নিয়ে যায়। ফলে গৃহবাসীকে পুড়িয়ে
দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৯৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৩৩১৬, ৬২৯৫; শু‘আবুল ঈমান ৬০৬২, সুনান আততিরমিযী ২৮৫৭, ইবনু মাজাহ ৩৪১০,
সহীহুল জামি‘ ৩২৫৬, আল জামি‘উস্ সগীর ৫৫৬৭, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৭, মুসনাদে আহমাদ
১৫১৬৭, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ২১৩০ আল মু‘জামুল আওসাত্ব ১৩৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
মুসলিম-এর এক বর্ণনাতে আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা পাত্রসমূহ ঢেকে রাখো, মশকের মুখ বেঁধে রাখো। ঘরের
দরজাসমূহ (সন্ধ্যাকালে) বন্ধ রাখো এবং (শয়নকালে) বাতি নিভিয়ে দাও। কেননা শয়তান (বন্ধ)
মশক ও (বন্ধ) দরজা খুলতে পারে না এবং (ঢাকা) পাত্র উন্মুক্ত করতে পারে না। আর যদি তোমাদের
কেউ একখানা কাঠি ব্যতীত কিছু না পায়, তবে ’’বিসমিল্লা-হ’’ বলে তাই যেন আড়াআড়িভাবে পাত্রের
উপর রেখে দেয়। কেননা দুষ্ট ইঁদুর গৃহবাসীসহ ঘর পুড়িয়ে ফেলতে পারে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৯৬, সহিহ মুসলিম (২০১২)-৯৬, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৫৫১৮, শু‘আবুল ঈমান ৬০৬১, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৪১০, সহীহুল জামি‘ ৪১৬০,
আল জামি‘উস্ সগীর ৭৬০৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৭, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ২২৫৮, আল মু‘জামুস্
সগীর লিত্ব ত্ববারানী ১১৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মুসলিম-এর আরেক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ খাদ্য-পাত্র ঢেকে রাখো এবং মশক বন্ধ রাখো। কেননা বছরে এমন
এক রাত্রি আছে, যে রাত্রে বিভিন্ন প্রকারের বালা-মুসীবাত নাযিল হয়। ঐসব বালার গতিবিধি
এমন সব পাত্রের দিকে হয় যা ঢাকা নয় এবং এমন পান-পাত্রের দিকে হয় যার মুখ বন্ধ নয়, ফলে
তা তার মধ্যে প্রবেশ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪২৯৮, সহিহ মুসলিম (২০১৪)-৯৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৭, ইরওয়া ৩৯, শু‘আবুল ঈমান ৬০৫৯,
মুসনাদে আহমাদ ১৪৮২৯, সহীহুল জামি‘ ৭৬০৮, আল জামি‘উস্ সগীর ৯৬০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন, যখন তোমরা রাতে কুকুরের চিৎকার এবং গাধার ডাক শুনতে পাবে, তখন আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত
শয়তান হতে আশ্রয় চাইবে। কেননা তারা এমন এমন কিছু দেখতে পায়, যা তোমরা দেখতে পাও না।
আর রাতে যখন মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তখন তোমরাও বাইরে যাওয়া কমিয়ে দাও। কেননা মহাপরাক্রমশালী
আল্লাহ তা’আলা তাঁর সৃষ্ট কিছু জীবকে রাত্রিকালে ছেড়ে দেন। তোমরা ঘরের দরজা বন্ধ রাখো,
আর আল্লাহর নাম স্মরণ করো। কারণ শয়তান এমন দরজা খুলতে পারে না যা আল্লাহর নাম নিয়ে
বন্ধ করা হয়। আর তোমরা ঘটি, মটকা (খাদ্য-পাত্রসমূহ) ঢেকে রাখো, শূন্য পাত্র উপুড় করে
রাখ এবং মশকের মুখ বেঁধে রাখো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪৩০২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩০৬০, আল মুসতাদরাক ‘আলাস্ সহীহায়ান ৭৮২৭, আল মু‘জামুল কাবীর
লিত্ব ত্ববারানী ৭১৬০, আল আদাবুল মুফরাদ ১২৩৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫১৭, মুসনাদে আহমাদ
১৪২৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
পেশাব পায়খানার দোয়া ও আদবসমূহ
পেশাব-পায়খানার পূর্বে দুআঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় গেলে বলতেনঃ
’আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল খুবুসি
ওয়াল খবা-য়িস’’-
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট নর ও নারী
শয়তানদের (ক্ষতি সাধন) থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।
অথবা
’আ’ঊযু বিল্লা-হি মিনাল খুবুসি ওয়াল খবা-য়িস’’-
অর্থাৎ- আমি নাপাক নর-নারী শায়ত্বন (শয়তান)
থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৩৭-৩৫৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৭৫, (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৭১৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ করবে তখন
জিন শয়তানের চোখ আর বনী আদমের লজ্জাস্থানের মধ্যে পর্দা হলো ’’বিসমিল্লা-হ’’ বলা। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৫৮, সুনান আততিরমিযী ৬০৬, সহীহুল জামি‘ ৩৫১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সেই হিসেবে,
’’বিসমিল্লাহ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা
মিনাল খুবুসি ওয়াল খবা-য়িস’’
অথবা
’বিসমিল্লাহ আ’ঊযু বিল্লা-হি মিনাল খুবুসি
ওয়াল খবা-য়িস’’
পেশাব-পায়খানার স্থান থেকে বের হওয়ার সময়ঃ
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পায়খানা হতে বের হতেন তখন বলতেনঃ ’
’গুফরা-নাকা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার ক্ষমা প্রার্থনা
করছি)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৯, সুনান আবূ দাঊদ
৩০, সুনান আততিরমিযী ৭, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৩০০, সহীহুল জামি‘ ৪৭০৭, দারিমী ৭০৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রস্রাব করার পর উযূ ও নিজের লজ্জাস্থানে
পানি ছিটানোঃ
হাকাম ইবনু সুফ্ইয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাব করার পর উযূ করতেন এবং নিজের লজ্জাস্থানে
পানি ছিটিয়ে দিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬১, সুনান
আবূ দাঊদ ১৬৮, সুনান আননাসায়ী ১৩৫, দারিমী ৭৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পেশাব পায়খানার আদবসমূহঃ
(ক) আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন পায়খানায় যাবে
তখন ক্বিবলাকে সামনে বা পেছনে রেখে বসবে না, বরং পূর্বদিকে ফিরে বসবে অথবা পশ্চিম দিকে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৩৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৫০০, ইসলামিক সেন্টারঃ ৫১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি আমার কোন কাজে (আমার বোন উম্মুল মু’মিনীন) হাফসার ঘরের ছাদে উঠেছিলাম। তখন
আমি দেখলাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নীচে এক ঘেরাও করা জায়গায়)
ক্বিবলাহকে (কিবলাকে) পেছনে রেখে (উত্তরে) সিরিয়ার দিকে মুখ ফিরিয়ে পায়খানা করছেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ১৪৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ক্বিবলার দিকে মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা করতে,
ডান হাতে ইসতিনজা করতে, তিনটির কম ঢিলা দিয়ে ইসতিনজা করতে এবং শুকনা গোবর ও হাড় দিয়ে
ইসতিনজা করতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৩৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৪৯৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৫১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দু’টি অভিসম্পাত থেকে বেঁচে
থাকবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! সে দু’টি অভিসম্পাত কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি মানুষের চলাচলের পথে অথবা তাদের কোন কিছুর ছায়ার
স্থানে পায়খানা করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩৯,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০৯,
ইসলামিক সেন্টারঃ ৫২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ পানি পান করার সময়
যেন পানপাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলে, শৌচাগারে গেলে ডান হাতে নিজের পুরুষাঙ্গকে না ধরে
এবং নিজের ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য না করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৪০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫০১,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭, (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৫২০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
(চ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি উযূ করার সময় যেন ভালো
করে নাক ঝেড়ে নেয় এবং ইসতিনজা করার সময় বেজোড় সংখ্যায় ঢিলা (তিন, পাঁচ ও সাত) ব্যবহার
করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৪১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ১৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৭, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৪৫১, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (তা’লীম ও নাসীহাতের ব্যাপারে)
আমি তোমাদের জন্য পিতা-পুত্রের ন্যায়। আমি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে থাকি (তোমাদের দীন,
এমনকি প্রস্রাব-পায়খানার শিষ্টাচারও)। যখন তোমরা পায়খানায় যাবে ক্বিবলার দিকে মুখ করে
বসবে না, পিঠ দিয়েও বসবে না। পায়খানা করার পর তিনটি ঢিলা দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) পাক-পবিত্র হবার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং শুকনা গোবর ও হাড় দিয়ে (পাক-পবিত্র
হতে) নিষেধ করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ডান হাতে শৌচ করতেও নিষেধ
করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৪৭-৩৭০-৩৭৫, সুনান
ইবনু মাজাহ্ ৩১৩, সুনান আবূ দাঊদ ৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(জ) রুওয়াইফি’ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে রুওয়াইফি’! হয়তো তুমি
আমার পরে দীর্ঘ জীবন লাভ করবে, তুমি তখন মানুষকে এ সংবাদ দিবে যে, যে ব্যক্তি নিজের
দাড়ি জট পাকাবে অথবা ধনুকের রশি গলায় কবচ হিসেবে বাঁধবে অথবা পশুর গোবর বা হাড় দিয়ে
শৌচকর্ম করবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে কোন সম্পর্ক রাখেন
না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫১, সুনান আবূ দাঊদ ৩৬,
সহীহুল জামি‘ ৭৩১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুই ব্যক্তি এক সঙ্গে যেন
পায়খানায় এমনভাবে না বসে যে, দু’জনেই দু’জনার লজ্জাস্থান দেখতে পায় এবং পরস্পরের সাথে
কথা বলে। কেননা মহান আল্লাহ এ ধরনের কাজে খুবই রাগান্বিত হন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৬, সুনান আবূ দাঊদ ১৫, সহীহুত্
তারগীব ১৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঞ) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে
ব্যক্তি বলে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতেন, তোমরা তার
কথা বিশ্বাস করো না। তিনি সব সময়ই বসে প্রস্রাব করতেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৫, সুনান আততিরমিযী ১২,
সুনান আননাসায়ী ২৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পেশাব করার উত্তমভাবে পাক-পবিত্র না হওয়ায় কবরে শাস্তি হয়ঃ
(ক) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার কোন বাগানের বাইরে গেলেন। তখন তিনি
এমন দু’জন লোকের শব্দ শুনলেন, যাদের কবরে আযাব দেয়া হচ্ছিল। তিনি বললেনঃ তাদের দু’জনকে
আযাব দেয়া হচ্ছে। তবে বড় গুনাহের কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। আর তা হলো কবীরা গুনাহ।
এদের একজন প্রস্রাবের সময় সতর্ক থাকত না। আর অন্য ব্যক্তি চোগলখোলী করে বেড়াতো। তারপর
তিনি একটা কাঁচা ডাল আনিয়ে তা ভেঙ্গে দু’ টুকরো করে, এক কবরে এক টুকরো আর অন্য কবরে
এক টুকরো গেড়ে দিলেন এবং বললেনঃ দু’টি যতক্ষণ পর্যন্ত না শুকাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের
আযাব হালকা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬০৫৫, ৬০৫২, ২১৬, ৬০২, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৪৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৬৪, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৯২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৭০, নাসায়ী
৩১, ২০৬৮; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০, আহমাদ ১৯৮১, দারিমী ৭৩৯, ইরওয়া ১৭৮, আধুনিক
প্রকাশনী ৫৬২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বেশির ভাগ কবরে আযাব পেশাব থেকে
অসতর্কতার কারণেই হয়ে থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৪৮, আহমাদ ৮১৩১, ৮৮০০, ইরওয়াহ ২৮০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ বাকারহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি কবর অতিক্রম করার সময় বলেনঃ নিশ্চয় এই দু
কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে এবং তাদেরকে কোন কঠিন অপরাধের জন্য শাস্তি দেয়া হচ্ছে
না। এদের একজনকে পেশাবের (অসতর্কতার) কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে এবং অপরজনকে গীবত করার
কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৪৯, আহমাদ
১৯৮৬০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
হাঁচি বিষয়ে বিভিন্ন দোয়াসমূহ
(ক) হাঁচি দিলে বলতে হবে, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (আল্লাহর
জন্য যাবতীয় প্রশংসা। অথবা বলতে হবে, ‘আলহামদুলিল্লা-হি রবিবল ‘আ-লামীন’ (বিশ্বচরাচরের
পালনকর্তা আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা)।
হাদিসঃ
হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একদিন আমরা সালিম ইবনু ’উবায়দ (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। জনতার মধ্য হতে জনৈক
ব্যক্তি হাঁচি দিলো এবং (’আলহামদুলিল্লা-হ’র পরিবর্তে) ’’আসসালা-মু ’আলাইকুম’’ বলল
(এ ধারণায় যে, হয়তো বা এটাও জায়িয আছে)। তখন সালিম(রাঃ) তার জবাবে বললেনঃ ’’তোমার ওপর
এবং তোমার মায়ের ওপর সালাম।’’ লোকটি এতে মনে ব্যথা পেল। তখন সালিম(রাঃ) বললেনঃ আমি
তো এটা আমার পক্ষ হতে বলিনি; বরং এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলেছিলেন,
যখন এক ব্যক্তি তাঁর সম্মুখে হাঁচি দিলো এবং বলল : ’’আসসালা-মু ’আলাইকুম’’, তখন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ’’তোমার ওপর এবং তোমার মায়ের উপর সালাম।’’ যখন
তোমাদের কারো হাঁচি আসে, সে যেন ’’আলহামদু লিল্লা-হি রব্বিল ’আ-লামীন’’ বলে এবং যে
তার জবাব দেয়, সে যেন ’’ইয়ারহামুকাল্ল-হ’’ বলে এবং হাঁচিদাতা যেন তার জবাবে ’’ইয়াগফিরুল্ল-হু
লী ওয়া লাকুম’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ তা’আলা তোমাকে ও আমাকে ক্ষমা করুন) বলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৭৪১, সুনান আততিরমিযী ২৭৪০, সুনান
আবূ দাঊদ ৫০৩১)।
অথবা বলবে,‘আলহামদুলিল্লা-হি ‘আলা কুল্লে হা-ল’
(সর্বাবস্থায় আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা)।
হাদিসঃ
আবূ আইয়ূব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারো হাঁচি আসে, সে যেন বলে, ’’আল-হামদু লিল্লাহি
’আলা- কুল্লি হা-ল’’ অর্থাৎ- সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রশংসা। আর যে ব্যক্তি তার
উত্তর দেবে সে যেন বলে, ’’ইয়ারহামুকাল্ল-হ’’ অর্থাৎ- আল্লাহ তোমাকে দয়া করুন! এরপর
তার উত্তরে পুনরায় হাঁচিদাতা বলবে, ’’ইয়াহ্ দীকুমুল্ল-হু ওয়া ইউসলিহু বা-লাকুম’’ অর্থাৎ-
আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথপ্রদর্শন করুন এবং তোমার অবস্থা ভালো করুন! (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৭৩৯, সুনান আততিরমিযী ২৭৪১, দারিমী
২৬৫৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭১৫, সুনান আবূ দাঊদ ৫০৩৩, সহীহুল জামি‘উস্ সগীর, ৬৮৮, ইরওয়াউল
গালীল ৩/২৪৪, আহমাদ ৮৬৩১, বুখারী ৬২২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) হাঁচির জবাবে বলতে হবে, ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ (আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন)।
(গ) হাঁচির জবাব শুনে বলতে হবে,‘ইয়াহদীকুমুল্লা-হু
ওয়া ইউছলিহু বা-লাকুম’ (আল্লাহ আপনাকে (বা আপনাদেরকে) হেদায়াত করুন এবং আপনার (বা আপনাদের)
সংশোধন করুন)।
হাদিসঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারো হাঁচি আসে, তখন
সে যেন ’’আলহামদুলিল্লা-হ’’ বলে এবং তার কোন মুসলিম ভাই অথবা বন্ধু তার উত্তরে ’’ইয়ারহামুকাল্ল-হ’’
বলে। আর যখন হাঁচিদাতার উত্তরে শ্রোতা ব্যক্তি ’’ইয়ারহামুকাল্ল-হ’’ বলে, তখন হাঁচিদাতা
ঐ ব্যক্তির উত্তরের উত্তরে ’’ইয়াহদীকুমুল্ল-হু ওয়া ইউসলিহু বা-লাকুম’’ অর্থাৎ- ’’আল্লাহ
তা’আলা তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং তোমাদের আধ্যাত্মিক অবস্থা কল্যাণময় করুন’’
বলবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৭৩৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬২২৪, সুনান
আবূ দাঊদ ৫০৩৩, সুনান আততিরমিযী ২৭৩৯, দারিমী ২৬৫৯, ‘নাসায়ী’র কুবরা ১০০৪১, সহীহ ইবনু
খুযায়মাহ্ ১১৫২, আল আদাবুল মুফরাদ ৯২৭, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৫৫২০, আল মু‘জামুল কাবীর
লিত্ব ত্ববারানী ৩৩৬৩, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৭/১৬৩, মুসনাদে আহমাদ ৯৭২, মুসান্নাফ ইবনু
আবূ শায়বাহ্ ১১১, ইরওয়াউল গালীল ৩/২৪৪ পৃঃ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অথবা বলবে, ‘ইয়াগফিরুল্লা-হু লী ওয়া লাকুম’
(আল্লাহ আমাকে ও আপনাকে (বা আপনাদেরকে) ক্ষমা করুন)।
(ঘ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যদি কেউ হাঁচির পরে
‘আলহামদুলিল্লা-হ’ না বলে, তাহলে তুমি তাকে ‘ইয়ারহামুকাল্লা-হ’ বলো না।
হাদিসঃ
আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের কেউ
যদি হাঁচি দেয় এবং আল্লাহর প্রশংসা করে, তবে তোমরা তার জবাবে ’’ইয়ারহামুকাল্ল-হ’’ বলবে।
আর যদি সে আল্লাহর প্রশংসা না করে, তবে তোমরা ’’ইয়ারহামুকাল্ল-হ’’ বলে জবাব দেবে না।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৭৩৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৭৩৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৯২, আহমাদ ১৯৬৯৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩০৯৪,
আল আদাবুল মুফরাদ ৯৪১, আল মুসতাদরাক ৭৬৯০, শু‘আবুল ঈমান ৯৩৩০, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্
২৫৯৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) যদি কোন অমুসলিম হাঁচি দেয়, তখন কোনো মুসলিম
তাকে ‘ইয়ারহামুকাল্লা-হ’ বলবে না। কেবল তাকে ``ইয়াহদীকুমুল্লা-হু ওয়া ইউছলিহু বা-লাকুম'' বলবে।
হাদিসঃ
আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহূদীগণ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে ইচ্ছা করে এ উদ্দেশে হাঁচি দিত, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের হাঁচির জবাবে ’’ইয়াহদীকুমুল্ল-হু ওয়া ইউসলিহু
বা-লাকুম’’ অর্থাৎ- ’’আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে হিদায়াত করুন’’ এবং তোমাদের অবস্থা ভালো
করুন’’ বলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৭৪০, সুনান আততিরমিযী ২৭৩৯, সুনান আবূ দাঊদ ৫০৩৮,
আল মুসতাদরাক ৭৬৯৯, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৭২৩, মুসনাদে আহমাদ ১৯৫৮৬, শু‘আবুল ঈমান
৯৩৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ হাঁচি পছন্দ
করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন। অতএব তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দেয় এবং ‘আলহামদুলিল্লা-হ’
বলে, তখন যে মুসলিম তা শুনে, তার উপরে কর্তব্য হয়ে যায় ঐ ব্যক্তির উদ্দেশ্যে ‘ইয়ারহামুকাল্লা-হ’
বলে দো‘আ করা। তিনি বলেন, হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। অতএব যখন তোমাদের কেউ হাই
তোলে, তখন সে যেন সাধ্যপক্ষে তা চাপা দেয়। কেননা তোমাদের কেউ হাই তুললে ও ‘হা’ করে
মুখ খুলে শব্দ করলে শয়তান হাসে।
হাদিসঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
আল্লাহ তা’আলা হাঁচিকে পছন্দ করেন এবং হাই তোলাকে অপছন্দ করেন। সুতরাং তোমাদের মধ্যে
যখন কোন ব্যক্তি হাঁচি দেয় এবং ’’আলহামদুলিল্লা-হ’’ বলে আল্লাহর প্রশংসা করে, তখন এমন
প্রত্যেক মুসলিমের প্রতি ’’ইয়ারহামুকাল্ল-হ’’ বলা অপরিহার্য হয়ে পড়ে, যে হাঁচিদাতার
’’আলহামদুলিল্লা-হ’’ শুনতে পায়। আর হাই তোলা শয়তানের কাজ। অতএব তোমাদের কারো যখন হাই
আসে, তখন যথাসম্ভব তা প্রতিরোধ করা উচিত। কারণ যখন কোন ব্যক্তি হাই তোলে, তখন শয়তান
তা দেখে হাসতে থাকে।
মুসলিম-এর এক বর্ণনায় রয়েছে যে, তোমাদের কেউ
যখন হাই তোলার সময় ’হা’ করে, তখন শয়তান তা দেখে হাসতে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৭৩২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৮৯, ৬২২৬,
সুনান আবূ দাঊদ ৫০২৮, সুনান আততিরমিযী ২৭৪৭, ‘নাসায়ী’র কুবরা ১০০৪৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
তিনি একথাও বলেছেন যে, তোমাদের যখন হাই আসে,
তখন মুখে হাত দিয়ে তা চেপে রাখবে। নইলে শয়তান সেখানে ঢুকে পড়বে।
হাদিসঃ
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারো হাই আসে,
সে যেন নিজের হাত মুখের উপর রাখে। কেননা শয়তান মুখে প্রবেশ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৭৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭৩৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৯৫, সুনান সুনান আবূ দাঊদ ৫০২৬, সহীহুল জামি‘ ৪২৬, ৪২৭,
সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৭৩১, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ১১৩৪, মুসান্নাফ
‘আবদুর রাযযাক ৩৩২৫, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ৭৯৮১, মুসনাদে আহমাদ ১১৩৪১, মুসনাদে
আবূ ইয়া‘লা ১১৬২, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ৯১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৩৬০, শু‘আবুল ঈমান ৯৩৬৮,
দারিমী ১৩৮২, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩৭২০, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী
৭৬২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭২২১, ইসলামিক সেন্টার ৭২৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) ছালাতের মধ্যে হাঁচি আসলে ‘আলহামদুলিল্লা-হ’
বলা যাবে। কিন্তু তার জওয়াবে
মুখে ‘ইয়ারহামুকাল্লা-হ’ বলা যাবে না।
হাদিসঃ
রিফা’আহ্ ইবনু রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে সালাত আদায় করলাম।
(সালাতের মধ্যে) আমি হাঁচি দিলাম। আমি ক্বালিমায়ে হামদ অর্থাৎ
’’আলহামদু লিল্লা-হি হামদান কাসীরান ত্বইয়্যিবাম্
মুবা-রাকান ফীহি মুবা-রাকান ’আলায়হি কামা- ইউহিব্বু রব্বুনা- ওয়া ইয়ারযা-’’
পাঠ করলাম। সালাত শেষ করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে বললেন, সালাতের মাঝে কথা বলল কে? এতে কেউ কোন কথা বলেনি, তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় প্রশ্ন করলেন। তবুও কেউ কোন কথা বলেনি। তৃতীয়বার
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার প্রশ্ন করলেন। এবার রিফা’আহ্ (রাঃ)বললেন,
হে আল্লাহর রসূল! আমি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ জাতের শপথ যাঁর
হাতে আমার প্রাণ! ত্রিশের বেশি মালাক (ফেরেশতা) এ ক্বালিমায়ে হামদগুলো কার আগে কে উপরে
নিয়ে যাবে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা করছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৯৯২, সুনান আত্ তিরমিযী ৪০৪, সুনান আবূ দাঊদ ৭৭০, সুনান আননাসায়ী ৯৩১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
ছিয়াম বিষয়ে দোয়া সমূহ
(ক) ইফতারের দো‘আঃ
‘বিসমিল্লা-হ’ (আল্লাহর নামে শুরু করছি) বলে খাওয়া শুরু করবেন।
(খ) ইফতার শেষে দো‘আঃ
‘আলহামদুলিল্লা-হ’ (আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা)। অথবা (ঐ সাথে) বলবেন,
‘যাহাবায যামাউ ওয়াবতাল্লাতিল উরূক্বু ওয়া
ছাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লাহ’ (তৃষ্ণা দূর হলো, শিরা-উপশিরা সিক্ত হ’ল এবং আল্লাহ চাহে
তো পুরস্কার নিশ্চিত হ’ল)।
হাদিসঃ
ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতার করার পর বলতেন, যাহাবায যামাউ ওয়াবতাল্লাতিল
উরূক্বু ওয়া ছাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লাহ’ পিপাসা
চলে গেছে, (শরীরের) রগগুলো সতেজ হয়েছে। আল্লাহর মর্জি হলে সাওয়াব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৯৩, সুনান আবূ দাঊদ ২৩৫৭,
মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৫৩৬, ইরওয়া ৯২০, সহীহ আল জামি‘ ৪৬৭৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৮১৩৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) লায়লাতুল ক্বদরের বিশেষ দো‘আঃ
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে রামাযানের
শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলিতে পড়ার জন্য নিম্নের দো‘আটি শিক্ষা দিয়েছিলেন।-
“আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা ‘আফুববুন তোহেববুল ‘আফওয়া ফা‘ফু ‘আন্নী’
(হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমা করতে ভালবাস। অতএব আমাকে
ক্ষমা কর)।
হাদিসঃ
’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে বলে দিন, যদি আমি ’কদর রাত’ পাই, এতে আমি কী দু’আ করব?
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি বলবে,
’’আল্ল-হুম্মা ইন্নাকা ’আফুব্বুন, তুহিব্বুল
আফ্ওয়া’, ফা’ফু ’আন্নী’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমিই ক্ষমাকারী। আর ক্ষমা
করাকে তুমি পছন্দ করো। অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও।) (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৯১, সুনান আততিরমিযী ৩৫১৩,
সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৫০, আহমাদ ২৫৩৮৪, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৪২, সহীহাহ্ ৩৩৩৭, সহীহ
আল জামি‘ ৩৩৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কাহারো থেকে ভয় থাকলে পড়বেন
(ক) ``আল্লা-হুম্মা ইন্না নাজ‘আলুকা ফী নুহূরিহিম
ওয়া না‘ঊযুবিকা মিন শুরূরিহিম’' (হে আল্লাহ! আমরা আপনাকে ওদের মুকাবিলায় পেশ করছি এবং
ওদের অনিষ্ট সমূহ হ’তে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি)।
হাদিসঃ
আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন দলের ব্যাপারে ভয় করতেন, তখন বলতেন,
’’আল্ল-হুম্মা ইন্না- নাজ্’আলুকা ফী নুহূরিহিম
ওয়ানা’ঊযুবিকা মিন্ শুরূরিহিম’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমরা তোমাকে তাদের মোকাবেলা
করলাম [তুমিই তাদের প্রতিহত কর] এবং তাদের অনিষ্টতা হতে তোমার কাছে আশ্রয় নিলাম)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৪১, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৩৭, আহমাদ ১৯৭২০, মু‘জামুল
আওসাত ২৫৩১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২৬২৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০৩২৫, ইবনু হিব্বান
৪৭৬৫, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১২৫, সহীহ আল জামি‘ ৪৭০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) অথবা বলবেন, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা
মিন শাররি মা ‘আমিলতু ওয়া শাররি মা লাম আ‘মাল’ (হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা
করছি, ঐসব কাজের অনিষ্টকারিতা হ’তে, যা আমি করেছি এবং যা আমি করিনি)।
হাদিসঃ
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে দু’আ করতেন,
’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিন শাররি মা-
’আমিলতু ওয়ামিন্ শাররি মা-লাম আ’মাল’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয়
চাই যা আমি করেছি এবং যা আমি করিনি তার অনিষ্টতা বা অপকারিতা হতে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭১৬, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৫০, সুনান আননাসায়ী ৫৫২৭, মুসলিম
২৫৭৮৪, ইবনু হিববান ১০৩১, সহীহ আল জামি‘ ১২৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৪৭, ইসলামিক সেন্টার
৬৭০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ছালাতে শয়তানী ধোঁকা হ’তে বাঁচার উপায়
শয়তান ছালাতের মধ্যে ঢুকে ছালাত ও ক্বিরাআতের
মধ্যে গোলমাল সৃষ্টি করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এরা হ’ল ‘খিনযাব’ (শয়তানের একটি
বিশেষ দল)। যখন তুমি এদের অস্তিত্ব বুঝতে পারবে, তখন শয়তান থেকে আল্লাহর পানাহ চেয়ে
আ‘ঊযুবিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-নিররাযীম বলে বাম দিকে তিনবার থুক (থুঃ থুঃ থুঃ) মারবে।
রাবী ওছমান বিন আবুল ‘আছ বলেন, এরূপ করাতে আল্লাহ আমার থেকে ঐ শয়তানকে দূরে সরিয়ে দেন।
হাদিসঃ
’উসমান ইবনু আবুল ’আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর
রসূল! শায়ত্বন (শয়তান) আমার সালাত ও ক্বিরাআতের মধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং সে আমার
মনে সন্দেহ-সংশয় তৈরি করে দেয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐটা
একটা শায়ত্বন (শয়তান) যাকে ’খিনযাব’ বলা হয়। যখন তোমার (মনে) তার উপস্থিতি অনুভব করবে,
তখন তা হতে তুমি আল্লাহ তা’আলার নিকট আশ্রয় চাইবে এবং বামদিকে তিনবার থু থু ফেলবে।
[’উসমান (রাঃ) বলেন] আমি [রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ অনুযায়ী]
এরূপ করলে আল্লাহ তা’আলা আমার নিকট হতে শায়ত্বন (শয়তান) দূর করে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) | ৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫৬৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২০৩, আহমাদ ১৭৮৯৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬১৫, মুসান্নাফ ‘আবদুর
রাযযাক্ব ৪২২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫৫০, ইসলামিক সেন্টার ৫৫৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সাইয়িদুল ইস্তিগফার (সাইয়েদুল ইস্তেগফার) বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ
দো‘আ
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের
সাথে এই দো‘আ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা
গেলে, সে জান্নাতী হবে’।
“আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা
আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু,
আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী
ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা”।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি
ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার
নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার
নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং
আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ
ক্ষমা করার কেউ নেই’।
হাদিসঃ
শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাইয়্যিদুল ইসতিগফার এভাবে
পড়বে,
’’আল্ল-হুম্মা আনতা রব্বী, লা- ইলা-হা ইল্লা-
আন্তা খলাকতানী, ওয়া আনা- ’আবদুকা, ওয়া আনা- ’আলা- ’আহদিকা, ওয়া ওয়া’দিকা মাস্তাত্ব’তু,
আ’ঊযুবিকা মিন শার্রি মা- সনা’তু, আবূউলাকা বিনি’মাতিকা ’আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী
ফাগফিরলী, ফাইন্নাহূ লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রভু, তুমি
ছাড়া কোন মা’বূদ নেই; তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার বান্দা, আমি আমার সাধ্যানুযায়ী
তোমার চুক্তি ও অঙ্গীকারের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি। আমি আমার কৃতকর্মের মন্দ পরিণাম হতে
তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমি স্বীকার করি, আমার প্রতি তোমার দানকে এবং স্বীকার করি
আমার গুনাহকে। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কেননা তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার আর কেউ নেই।)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেন, যে ব্যক্তি এ সাইয়্যিদুল ইসতিগফারের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে দিনে পড়বে আর সন্ধ্যার
আগে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে এ দু’আ রাতে পড়বে আর
সকাল হবার আগে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৩০৬, ৬৩২৩, সুনান আততিরমিযী ৩৩৯৩, সুনান আননাসায়ী ৫৫২২, আহমাদ ১৭১১১, মু‘জামুল আওসাত
লিত্ব ত্ববারানী ১০১৪, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭১৭২, শু‘আবূল ঈমান ৬৫৮, ইবনু
হিব্বান ৯৩৩, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৬২০/৪৮৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২১, সহীহ আত্ তারগীব
৬৫০, সহীহ আল জামি‘ ৩৬৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নতুন চাঁদ দেখার দো‘আ
“আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহূ
‘আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমা-নি, ওয়াস্সালা-মাতি ওয়াল ইসলা-মি, ওয়াত্তাওফীক্বি লিমা
তুহিববু ওয়া তারযা; রব্বী ওয়া রব্বুকাল্লা-হ ”।
অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। হে আল্লাহ! আপনি
আমাদের উপরে চাঁদকে উদিত করুন শান্তি ও ঈমানের সাথে, নিরাপত্তা ও ইসলামের সাথে এবং
আমাদেরকে ঐ সকল কাজের ক্ষমতা দানের সাথে, যা আপনি ভালবাসেন ও যাতে আপনি খুশী হন। (হে
চন্দ্র!) আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ’।
হাদিসঃ
তালহা ইবনু ’উবায়দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন চাঁদ দেখে বলতেন,
“আল্ল-হুম্মা আহিল্লাহূ ’আলায়না- বিল আম্নি
ওয়াল ঈমা-নি, ওয়াস্সালা-মাতি ওয়াল ইসলা-মি রব্বী ওয়া রব্বুকাল্ল-হু’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাদের প্রতি চাঁদকে উদয়
করো নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের উপর। [হে চাঁদ!] আমার রব ও তোমার রব এক আল্লাহ)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪২৮, সুনান আততিরমিযী ৩৪৫১,
আহমাদ ১৩৯৭, দারিমী ১৭৩০, সহীহাহ্ ১৮১৬, সহীহ আল জামি‘ ৪৭২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
ঝড়ের সময় দো‘আঃ
(ক) ঝড়ের সময় দো‘আ:
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া
খায়রা মা ফীহা ওয়া খায়রা মা উরসিলাত বিহী; ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রিহা ওয়া শাররি মা
ফীহা ওয়া মিন শাররি মা উরসিলাত বিহী”।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে এর মঙ্গল,
এর মধ্যকার মঙ্গল ও যা নিয়ে ওটি প্রেরিত হয়েছে, তার মঙ্গল সমূহ প্রার্থনা করছি এবং
আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর অমঙ্গল হ’তে, এর মধ্যকার অমঙ্গল হ’তে এবং যা নিয়ে
ওটি প্রেরিত হয়েছে, তার অমঙ্গল সমূহ হ’তে’।
হাদিসঃ
’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঝড়ো
হাওয়া বইতে শুরু করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন,
’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খয়রহা- ওয়া খয়রা
মা- ফীহা- ওয়া খয়রা মা- উরসিলাত বিহী ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন শাররিহা- ওয়া শাররি মা- ফীহা-
ওয়া শাররি মা- উরসিলাত বিহী’’
(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এ ঝড়ো হাওয়ার
কল্যাণের দিক কামনা করছি। কামনা করছি এর মধ্যে যা কিছু কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যে কারণে
এ ঝড়ো হাওয়া পাঠানো হয়েছে সে কল্যাণ চাই। আমি আশ্রয় চাই তোমার নিকট এর ক্ষতির দিক থেকে
এবং এতে যা কিছু ক্ষতি নিহিত আছে এবং যে ক্ষতির জন্য তা পাঠানো হয়েছে তা থেকে আশ্রয়
প্রার্থনা করি।)
(’আয়িশাহ্ বলেন) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেলে
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে যেত। তিনি বিপদের
ভয়ে একবার বের হয়ে যেতেন। আবার প্রবেশ করতেন। কখনো সামনে আসতেন। কখনো পেছনে সরতেন।
বৃষ্টি শুরু হলে তার উৎকণ্ঠা কমে যেত। বর্ণনাকারী বলেন, একবার ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ উৎকণ্ঠা অনুভূত হলে তিনি তাঁর নিকট
এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, হে ’আয়িশাহ্! এ ঝড়ো হাওয়া এমনতো হতে পারে যা ’আদ
জাতি ভেবে ছিল। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বলেন, ’’তারা যখন একে তাদের মাঠের দিকে আসতে দেখল,
বললো, এটা তো মেঘ। আমাদের ওপর পানি বর্ষণ করবে’’- (সূরাহ্ আল আহক্বাফ ৪৬: ২৪)। অন্য
এক বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বাভাবিক বৃষ্টি দেখলে
বলতেন, এটা আল্লাহর রহমত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৫১৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮২৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৬৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৮৯৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪৬৩, সহীহ আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৫৫,
সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৭৫৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯৫৪, ইসলামীক সেন্টার ১৯৬১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লা-হুম্মা লাক্বহান
লা ‘আক্বীমান’ (হে আল্লাহ! মঙ্গলপূর্ণ কর, মঙ্গলশূন্য নয়)। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০৫৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৬৭০)।
(খ) বজ্রের আওয়ায শুনে দো‘আঃ
“সুবহা-নাল্লাযী ইয়ুসাবিবহুর রা‘দু বিহামদিহী
ওয়াল মালা-ইকাতু মিন খীফাতিহি”।
অনুবাদ: মহা পবিত্র সেই সত্তা যাঁর গুণগান
করে বজ্র ও ফেরেশতামন্ডলী সভয়ে’।
হাদিসঃ
’আমির ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ)হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মেঘের গর্জন শুনতেন
কথাবার্তা বন্ধ করে দিতেন। তিনি বলতেন, আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সে সত্তার যার পবিত্রতা
বর্ণনা করে ’’মেঘের গর্জন, তার প্রশংসাসহ ফেরেশতাগণও তার ভয়ে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা
ও প্রশংসা করেন’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২২, মুয়াত্তা
মালিক ৩৬৪১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২১৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪৭১, সহীহ আদাবুল
মুফারাদ ৭২৩, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ঝড়-বৃষ্টির ঘনঘটায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূরা
ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়তে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, এগুলিই
তোমার জন্য যথেষ্ট হবে অন্য সবকিছু থেকে’।
(১) ’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একবার আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জুহফাহ্ ও আব্ওয়া
(নামক স্থানের) মধ্যবর্তী জায়গায় চলছিলাম। এ সময় প্রবল ঝড় ও ঘোর অন্ধকার আমাদেরকে ঘিরে
ফেলল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা ’’কুল আ’ঊযু বিরাব্বিল
ফালাক’’ ও সূরা ’’কুল আ’ঊযু বিরাব্বিন্না-স’’ পড়ে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইলেন। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে ’উকবাহ্! এ দু’টি সূরা দ্বারা আল্লাহর
আশ্রয় চাও। কারণ এ দু’ সূরার মতো অন্য কোন সূরা দিয়ে কোন প্রার্থনাকারীই আশ্রয় প্রার্থনা
করতে পারেনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৬২, সুনান
আবূ দাঊদ ১৪৬৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪০৫০, শু‘আবূল ঈমান ২৩২৮, সহীহ আত্ তারগীব
১৪৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) ’আবদুল্লাহ ইবনু খুবায়ব (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমরা একবার ঝড়-বৃষ্টি ও ঘনঘোর অন্ধকারময় রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর খোঁজে বের হলাম এবং তাঁকে খুঁজে পেলাম। (তিনি আমাদেরকে দেখে) তখন বললেন,
পড়ো! আমি বললাম, কি পড়বো (হে আল্লাহর রসূল!)? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ, ক্বুল আ’ঊযু বিরাব্বিল ফালাক
ও ক্বুল আ’ঊযু বিরাব্বিন্না-স পড়বে। এ সূরাহগুলো সকল বিপদাপদের মুকাবিলায় তোমার জন্য
যথেষ্ট হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৬৩, সুনান আবূ
দাঊদ ৫০৮২, সুনান আততিরমিযী ৩৫৭৫, সুনান আন নাসায়ী ৫৪২৮, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৪৫, সহীহ
আত্ তারগীব ৬৪৯, সহীহ আল জামি‘ ৪৪০৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
উল্লেখ্য যে, এই সময় আল্লা-হুম্মা লা তাক্বতুলনা
বিগাযাবিকা অলা তুহলিকনা বি‘আযাবিকা ওয়া ‘আ-ফিনা ক্বাবলা যালিকা মর্মে বর্ণিত হাদীছটি
‘যঈফ’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২১, আত্ তিরযিমী
৩৪৫০, কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৫৯৯, সিলসিলাহ্ আয্ য‘ঈফাহ্ ১০৪২, য‘ঈফ আল জামি‘ আস্ সগীর
৪৪২১, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২১৭, আহমাদ ৫৭৬৩)। হাদিসের মানঃ
যঈফ (Dai'f)।
রোগী পরিচর্যার দো‘আসমূহ
রোগীর মাথায় ডান হাত রেখে বা দেহে ডান হাত
বুলিয়ে দো‘আ পড়বেনঃ
(১) “আযহিবিল বা’স, রব্বান না-স! ওয়াশ্ফি, আনতাশ
শা-ফী, লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উকা, শিফা-আল লা ইউগা-দিরু সাক্বামা”।
অনুবাদ: ‘কষ্ট দূর কর হে মানুষের প্রতিপালক!
আরোগ্য দান কর। তুমিই আরোগ্য দানকারী। কোন আরোগ্য নেই তোমার দেওয়া আরোগ্য ব্যতীত; যা
কোন রোগীকে ধোঁকা দেয় না’।
হাদিসঃ
(ক) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের
কারো অসুখ হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত রোগীর গায়ে
বুলিয়ে দিয়ে বলতেন,
“আযহিবিল বা’স, রব্বান না-স! ওয়াশ্ফি, আনতাশ
শা-ফী, লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উকা, শিফা-আল লা ইউগা-দিরু সাক্বামা”।
হে মানুষের রব! এ ব্যক্তির রোগ দূর করে দিন।
তাকে নিরাময় করে দিন। নিরাময় করার মালিক আপনিই। আপনার নিরাময় ছাড়া আর কোন নিরাময় নেই।
এমন নিরাময় যা কোন রোগকে বাকী রাখে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৫৩০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৭৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৬০০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২১৯১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৩৫২০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৪৯০, আহমাদ ২৪৭৭৬, সুনানুল
কুবরা লিল নাসায়ী ৭৪৬৬, ইবনু হিব্বান ২৯৭১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৯০, শারহুস্
সুন্নাহ্ ১৪১৩, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৪৮, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১৩০৩, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫৫১৯, ইসলামিক সেন্টার ৫৫৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)-এর স্ত্রী
যায়নাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। (আমার স্বামী) ’আবদুল্লাহ আমার গলায় একখানা তাগা দেখে জিজ্ঞেস
করলেন : এটা কী? বললামঃ এটা একটি তাগা, আমার জন্য তাতে মন্ত্র পড়া হয়েছে। যায়নাব বলেনঃ
এটা শুনে তিনি তাগাটি টেনে ছিঁড়ে ফেললেন। অতঃপর বললেনঃ তোমরা ’আবদুল্লাহর পরিবারবর্গ!
তোমরা শির্কের মুখাপেক্ষী নও, (এতে কলূষিত হবে কেন?) আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ঝাড়ফুঁক,
তা’বীয ও জাদুটোনা শির্কী কাজ। (যায়নাব বলেনঃ) তখন আমি বললামঃ আপনি কেন এরূপ কথা বলছেন?
একবার আমার চোখে ব্যথা হচ্ছিল, যেন চোখটি বের হয়ে পড়বে। তখন আমি অমুক ইয়াহূদীর কাছে
যাওয়া-আসা করতাম। যখন সে ইয়াহূদী তাতে মন্ত্র পড়ল, তখনই তার ব্যথা চলে গেল।
এ কথা শুনে ’আবদুল্লাহ বললেনঃ এটা তো শয়তানেরই
কাজ। সে নিজের হাতের দ্বারা তাতে আঘাত করছিল, আর যখন মন্ত্র পড়া হয়, তখন সে বিরত হয়ে
যায়। বস্তুতঃ (এ জাতীয় রোগ) তোমার পক্ষ এরূপ বলাই যথেষ্ট ছিল, যেভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’’আযহিবিল বা’সা রব্বান্ না-স, ওয়াশফি আনতাশ্ শা-ফী লা-
শাফা-আ ইল্লা- শিফা-উকা শিফা-উন লা- ইউগা-দিরু সাকামা-’’ (হে মানুষের রব! আপনি বিপদ
দূর করে দিন এবং রোগ হতে নিরাময় দান করুন। আপনিই নিরাময়কারী। আপনার নিরাময় প্রদান ব্যতীত
আরোগ্য লাভ করা সম্ভব নয়। এমন নিরাময় দান করুন, যেন কোন রোগই অবশিষ্ট না থাকে।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৫৫২, সুনান আবূ দাঊদ ৩৮৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৩০,
‘বায়হাক্বী’র কুবরা ২০০৮৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬০৯০, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৫২০৮, আহমাদ
৩৬১৫, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৩১, গয়াতুল মারাম ২৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) অথবা ‘লা বা’সা ত্বহূরুন ইনশা-আল্লাহ’। ‘কষ্ট
থাকবে না। আল্লাহ চাহে তো দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন’।
হাদিসঃ
’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একজন অসুস্থ বেদুঈনকে দেখতে গেলেন।
আর কোন রোগীকে দেখতে গেলে তিনি বলতেন, ’ভয় নেই, আল্লাহ চান তো তুমি খুব শীঘ্রই ভাল
হয়ে যাবে। এ রোগ তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’ এ নিয়ম অনুযায়ী তিনি বেদুঈনকে
সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ’ভয় নেই, তুমি ভাল হয়ে যাবে। আল্লাহর ইচ্ছায় এটা তোমার পবিত্র
হবার কারণ হয়ে যাবে।’ তাঁর কথা শুনে বেদুঈন বলল, কক্ষনো নয়। বরং এটা এমন এক জ্বর, যা
একজন বৃদ্ধ লোকের শরীরে ফুঁটছে। এটা তাকে কবরে নিয়ে ছাড়বে। তার কথা শুনে এবার নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা, তুমি যদি তাই বুঝে থাক তবে তোমার জন্য তা-ই হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৬১৬, ৫৬৫৬,
৫৬৬২, ইবনু হিব্বান ২৯৫৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৭১৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) অথবা দেহের ব্যথাতুর স্থানে (ডান) হাত রেখে
রোগী তিনবার ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। অতঃপর সাতবার নিম্নের দো‘আটি পাঠ করবে,
আ‘ঊযু বি‘ইযযাতিল্লা-হি ওয়া ক্বুদরাতিহি মিন
শাররি মা আজিদু ওয়া উহা-যিরু’ (আমি যে ব্যথা ভোগ করছি ও যে ভয়ের আশংকা করছি, তার অনিষ্ট
হতে আমি আল্লাহর সম্মান ও শক্তির আশ্রয় প্রার্থনা করছি)’।
রাবী ওছমান বিন আবুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, আমি এটা
করি এবং আল্লাহ আমার দেহের বেদনা দূর করে দেন।
হাদিসঃ
’উসমান ইবনু আবুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একবার তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাঁর শরীরে অনুভূত
একটি ব্যথার কথা জানালেন। এ কথা শুনে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে
বললেন, যে জায়গায় তুমি ব্যথা অনুভব করো সেখানে তোমার হাত রাখো। তারপর তিনবার ’’বিসমিল্লা-হ’’
(অর্থাৎ আল্লাহর নামে) আর সাতবার বলো, ’
“আ’ঊযু বি’ইযযাতিল্ল-হি ওয়া কুদ্রাতিহী মিন্
শার্রি মা- আজিদু ওয়াউহা-যির’’
(অর্থাৎ আমি আল্লাহর সম্মান ও তাঁর ক্ষমতার
আশ্রয় নিচ্ছি, যা আমি অনুভব করছি ও আশংকা করছি তাঁর ক্ষতি হতে)।
’উসমান ইবনু আবুল ’আস বলেন, আমি তা করলাম।
ফলে আমার শরীরে যে ব্যথা-বেদনা ছিল তা আল্লাহ দূর করে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৬৩০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২২০২, সুনান আবূ দাঊদ ৩৮৯১, সুনান আতআত্ তিরমিযী ২০৮০, সুনান ইবনু মাজাহ্
৩৫২২, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭৪২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৩৫৮৩, আহমাদ ১৬২৬৮, ইবনু হিব্বান ২৯৬৫,
মুসতাদরাক লিল হাকিম ১২৭১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১৭, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৪৯, সিলসিলাহ্
আস্ সহীহাহ্ ১২৫৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৫৩, সহীহ আল জামি‘ ৩৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫৫১,
ইসলামিক সেন্টার ৫৫৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) অথবা সূরা ফালাক্ব ও নাস পড়ে দু’হাতে ফুঁক
দিয়ে রোগী নিজে অথবা তার হাত ধরে অন্য কেউ যতদূর সম্ভব সারা দেহে বুলাবে।
হাদিসঃ
’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হলে ’’মু’আব্বিযা-ত’’ অর্থাৎ সূরাহ্ আন্ নাস
ও সূরাহ্ আল ফালাক্ব পড়ে নিজের শরীরের উপর ফুঁ দিতেন এবং নিজের হাত দিয়ে শরীর মুছে
ফেলতেন। তিনি মৃত্যুজনিত রোগে আক্রান্ত হলে আমি মু্বিব্বিযাত পড়ে তাঁর শরীরে ফুঁ দিতাম,
যেসব মু’আব্বিযাত পড়ে তিনি নিজে ফুঁ দিতেন। তবে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
হাত দিয়েই তাঁর শরীর মুছে দিতাম।
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন,
তাঁর পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তিনি ’’মু’আব্বিযাত’’ পড়ে তার গায়ে ফুঁ দিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৩২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৪৪৩৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৬০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৯২, ইবনু হিব্বান
৬৫৯০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৬৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫২৬, ইসলামিক সেন্টার ৫৫৫১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নতুন কাপড় পরিধানকালে দো‘আসমূহ
এই দোয়া পাঠ করলে আগের ও পরের সমস্ত গুনাহ
মাফ হয়ে যায়।
“আলহাম্দুলিল্লা-হিল্লাযি কাসা-নী হা-যা ওয়া
রাঝাক্বানীহি মিন গায়রে হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওয়াতিন”।
অনুবাদ: ‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি
আমার কোন ক্ষমতা ও শক্তি ছাড়াই আমাকে এই কাপড় পরিধান করিয়েছেন ও এটি প্রদান করেছেন’।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এটা পাঠ করে, আল্লাহ তার আগে-পিছের সকল গোনাহ মাফ
করে দেন।
হাদিসঃ
মু’আয ইবনু আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খাবার খাওয়ার পর এ দু’আ, ’’আলহামদু
লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব’আমানী হা-যাত্ব ত্ব’আ-মা ওয়ারাযাকানীহি মিন গয়রি হাওলিম্ মিন্নী
ওয়ালা- ক্যুওয়াহ্’’ পড়ে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। অর্থাৎ- সমস্ত প্রশংসা
আল্লাহরই যিনি আমাকে এ খাদ্য খাইয়েছেন এবং আমার শক্তি সামর্থ্য ব্যতিরেকেই তিনি তা
আমাকে দান করেছেন।
আর আবূ দাঊদ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি
নতুন কাপড় পরিধান করে এ দু’আ, ’’আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী কাসা-নী হা-যা- ওয়ারাযাকানীহি
মিন গয়রি হাওলিম্ মিন্নী ওয়ালা- ক্যুওয়াহ্’’
(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার কৌশল
ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই আমাকে এ কাপড়ের ব্যবস্থা করে পরালেন) পড়ে তার আগের ও পরের
সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৩৪৩, সুনান আততিরমিযী ৩৪৫৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৮৫,
সুনান আবূ দাঊদ ৪০২৩, সহীহুল জামি‘ ৬০৮৬, আল জামি‘উস্ সগীর ১১০৩১, সহীহ আত্ তারগীব
ওয়াত্ তারহীব ২০৪২, ইরওয়া ১৯৮৮, মুসনাদে আহমাদ- ১৫৬৭০, তাহক্বীক শু‘আয়ব আরনাউত্বব
: হাসান; মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা- ১৪৮৮, তাহক্বীক হুসায়ন সুলায়ম আসাদ : সানাদ হাসান; শু‘আবুল
ঈমান ৬২৮৫, সুনান দারিমী- ২৬৯০, তাহক্বীক হুসায়ন সুলায়ম আসাদ : সানাদ হাসান; আল মু‘জামুল
কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৬৮০১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
গোড়ালীর নিচে কাপড় যতটুক যাবে ততটুকু জাহান্নামে পুড়বেঃ
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, গোড়ালীর নিচে কাপড়
যতটুক যাবে ততটুকু জাহান্নামে পুড়বে।
হাদিসঃ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ টাখনুর নিচে ইযারের যে অংশ থাকবে
তা জাহান্নামে। (অর্থাৎ- কিয়দংশের জন্য সারা শরীরই আগুনে প্রজ্জ্বলিত হবে।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৩১৪, বুখারী ৫৭৮৭, মুসনাদে আহমাদ ৯৩১৯, নাসায়ী
৫৩৩১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২০২৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২০৩৭, মুসান্নাফ ইবনু
আবী শারবাহ্ ২৪৮২৪, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ২৭২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
কিন্তু মহিলারা গোড়ালীর নিচেও কাপড় পরিধান
করতে পারবেন।
হাদিসঃ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইযার সম্পর্কে আলোচনা করলেন, তখন আমি জিজ্ঞেস
করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! এ ব্যাপারে মহিলাদের বিধান কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এক বিঘত পরিমাণ ঝুলাতে পারবে। তখন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বললেনঃ
এমতাবস্থায় তার অঙ্গ (পা) খুলে যাবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
তবে এক হাত তার অধিক যেন না হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৩৩৪-৩৫, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৩৯২, সুনান আবূ দাঊদ
৪১১৭, সহীহ নাসায়ী ৫৩৩৬, ৪৯২৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৪৫১, ইবনু মাজাহ ৩৫৮০, সিলসিলাতুস্
সহীহাহ্ ১৮৬৪, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪৮৯০, শু‘আবুল ঈমান ৬১৪৩, মুসনাদে আহমাদ
৫১৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সাদা পোষাক পরিধান করার হুকুমঃ
তিনি বলেন, ‘তোমরা সাদা পোষাক পরিধান কর। কেননা
এটি তোমাদের উত্তম পোষাক সমূহের অন্যতম’...।
হাদিসঃ
’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাদা কাপড় পরিধান
করবে, কারণ সাদা কাপড়ই সবচেয়ে ভাল। আর মুর্দাকে সাদা কাপড় দিয়েই কাফন দিবে। তোমাদের
জন্য সুরমা হলো ’ইসমিদ’ কারণ এ সুরমা ব্যবহারে তোমাদের চোখের পাপড়ি নতুন করে গজায় ও
চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৬৩৮, সুনান আবূ দাঊদ ৪০৬১, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৯৪, সুনান আননাসায়ী ৫৩২২, মুসান্নাফ
‘আবদুর রাযযাক্ব ৬২০০, আহমাদ ৩৪২৬, ইবনু হিব্বান ৫৪২৩, শু‘আবুল ঈমান ৫৯০৫, শারহুস্
সুন্নাহ্ ১৪৭৭, সহীহ আত্ তারগীব ২০২৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১২৩৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
বিবাহের পর নবদম্পতির জন্য দো‘আ ও বিবাহের পর স্ত্রীর জন্য স্বামীর
দো‘আ
(ক) বিবাহের পর নবদম্পতির জন্য দো‘আ: বিবাহে উপস্থিত
সকলে এই দোয়া পাঠ করবে।
“বা-রাকাল্লা-হু লাকুমা ওয়া বা-রাকা ‘আলাইকুমা
ওয়া জামা‘আ বায়নাকুমা ফী খায়রিন। (এই বিবাহে আল্লাহ তোমাদের জন্য বরকত দান করুন ও তোমাদের
উপর বরকত দান করুন এবং তোমাদের উভয়কে কল্যাণের সাথে একত্রিত করুন)।
হাদিসঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
কোন ব্যক্তি বিয়ে করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলতেন,
’’বা-রকাল্ল-হ লাকা ওয়া বা-রকা ’আলায়কুমা-
ওয়া জামা’আ বায়নাকুমা- ফী খায়রিন’’
(অর্থাৎ- আল্লাহ তোমাকে বারাকাত দিন, তোমাদের
উভয়ের ওপর বারাকাতময় করুন এবং তোমাদেরকে [সর্বদা] কল্যাণের সাথে একত্রিত রাখুন)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৪৫, সুনান আবূ দাঊদ ২১৩০, সুনান আততিরমিযী ১০৯১,
সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০৫, আহমাদ ৮৯৫৭, দারিমী ২২২০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২৭৪৫, সহীহ
আল জামি‘ ৪৭২৯, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২০৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩৮৪১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অথবা বলবে, “আল্লা-হুম্মা বা-রিক লাহুম” (হে
আল্লাহ! তুমি তাদেরকে বরকত দাও)। বিয়ের খবর শুনে বরকে বলবে, “বা-রাকাল্লা-হু লাকা
(আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন”!)
হাদিসঃ
(১) আকীল ইবনু আবূ ত্বলিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বনু জুশম গোত্রের এক মহিলাকে বিবাহ করলে লোকেরা (মুবারকবাদ দিয়ে) বললো, সুখী হও
এবং অধিক সন্তান হোক। তিনি বলেন, তোমরা এরূপ বলো না, বরং যেরূপ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তদ্রূপ বলোঃ “আল্লা-হুম্মা বা-রিক লাহুম”
’’হে আল্লাহ্! তাদেরকে বরকত দান করুন এবং তাদের
উপর বরকত নাযিল করুন।’’ (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০৬, সুনান আননাসায়ী ৩৩৭১, আহমাদ ১৭৪০, ১৫৩১৩,
দারেমী ২১৭৩, আল-আদাব ৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-এর চেহারায় হলুদের রং দেখে তাকে বলেনঃ
একী? ’আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি এক মহিলাকে সামান্য সোনার বিনিময়ে
বিবাহ করেছি। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তোমাকে বরকত দান করুন। একটি বকরী দিয়ে হলেও বিবাহ
ভোজের আয়োজন করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৪৯, ৩৭৮১, ৩৯৩৭, ৫০৭২, ৫১৪৮, ৫১৫৩, ৫১৫৫, ৫১৬৭,
৬০৮২, ৬৩৮৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪২৭, সুনান আততিরমিযী
১০৯৪, ১৯৩৩, সুনান আননাসায়ী ৩৩৫১, ৩৩৫২, ৩৩৭২, ৩৩৭৩, ৩৩৭৪, ৩৩৮৮, সুনান আবূ দাউদ ২১০৯,
আহমাদ ১২২৭৪, ১২৫৬৪, ১২৭১০, ১২৯৫৭, ১৩৪৫১, ১৩৪৯১, ১৩৫৫০, মুয়াত্তা মালেক ১১৫৭, দারেমী
০৬৪, ২২০৪, ইরওয়াহ ১৯২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৩৫৫, ইসলামীক সেন্টার ৩৩৫৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
উল্লেখ্য যে, ব্যক্তিগত ভাবে প্রত্যেকে নবদম্পতির
উদ্দেশ্যে উক্ত দো‘আ পড়বেন। এ সময় দু’হাত তুলে সম্মিলিত ভাবে মুনাজাত করার প্রথাটি
ভিত্তিহীন এবং এসময় বরের দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার প্রথাটিও প্রমাণহীন।
(খ) বিবাহের পর স্ত্রীর জন্য স্বামীর দো‘আঃ
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা
মা জাবালতাহা ‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা ‘আলাইহি”।
অনুবাদ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তার মঙ্গল
চাই এবং তার সেই কল্যাণময় স্বভাব প্রার্থনা করি, যার উপর তুমি তাকে সৃষ্টি করেছ। আর
আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই তার অনিষ্ট হ’তে এবং সেই মন্দ স্বভাবের অনিষ্ট হ’তে, যা দিয়ে
তুমি তাকে সৃষ্টি করেছ’। এই সময় স্ত্রীর কপালের চুল ধরে স্বামী উক্ত বরকতের দো‘আটি
করবে।
হাদিসঃ
’আমর ইবনু শু’আয়ব হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতার
মাধ্যমে দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের
মধ্যে কেউ যখন কোন মহিলাকে বিয়ে অথবা কোন চাকর ক্রয় করে তখন সে যেন বলে,
’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খয়রহা- ওয়া খয়রা
মা- জাবালতাহা- ’আলায়হি ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন্ শাররিহা- ওয়া শাররি মা- জাবালতাহা- ’আলায়হি’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তার কল্যাণ
এবং তাকে যে সৎ চরিত্রের সাথে সৃষ্টি করেছো তার কল্যাণ চাই। আর তোমার কাছে আমি তার
অনিষ্ট ও তাকে যে খারাপ স্বভাবের সাথে সৃষ্টি করেছো তা হতে আশ্রয় চাই।)।
আর যখন কোন ব্যক্তি উট ক্রয় করে, তখন যেন ঠোঁটের
চূড়া ধরে আগের মতো দু’আ পড়ে। অন্য এক বর্ণনায় মহিলা ও চাকর সম্বদ্ধে বলা হয়েছে, তখন
সে যেন তার সামনের চুল ধরে বারাকাতের জন্য দু’আ করে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৪৬, সুনান আবূ দাঊদ ২১৬০, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৫২, আল কালিমুত্ব
ত্বইয়্যিব ২০৮, সহীহ আল জামি‘ ৩৪১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
এর মধ্যে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি ক্ষমাশীল
ও দয়াশীল হয়ে দাম্পত্য জীবন যাপন করার ইঙ্গিত রয়েছে।
পিতামাতার জন্য দো‘আসমূহ
(ক) ‘রব্বীরহামহুমা কামা রববাইয়া-নী ছগীরা’ (হে
আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের উপরে দয়া কর, যেমন তারা আমাকে ছোটকালে দয়ার সাথে প্রতিপালন
করেছিলেন)’। (সুরা ইসরা ১৭/২৪)।
কুরআনের আয়াত হওয়ার কারণে দো‘আটি সিজদায় পড়া
যাবে না। তবে শেষ বৈঠকে দো‘আয়ে মাছূরাহর পরে পড়া যাবে।
(খ) “রব্বানাগফিরলী ওয়ালিওয়া-লিদাইয়া ওয়া লিলমু’মিনীনা
ইয়াউমা ইয়াক্বূমুল হিসা-ব’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে
ক্ষমা কর, যেদিন হিসাব কায়েম হবে’। (সুরা ইবরাহীম ১৪/৪১)।
হাদিসঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে তাঁর কোন
নেক বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। এ অবস্থা দেখে সে (নেক বান্দা) বলবে, হে আমার রব!
আমার এ মর্যাদা কিভাবে বৃদ্ধি হলো? তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার সন্তান-সন্ততি তোমার
জন্য মাগফিরাত কামনা করার কারণে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৩৫৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৬৬০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৭৪০, আহমাদ ১০৬১০, সহীহাহ্ ১৫৯৮,
সহীহ আল জামি‘ ১৬১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) “রব্বিগফিরলি' ওয়ালি ওয়া-লিদাইয়া ওয়ালিমান
দাখলা বাইতিয়া মু'মিনা, ওয়া লিলমু'মিনীনা ওয়াল মু'মিনা'তি ওয়ালা' তাযিদিজ জ'লিমি'না
ইল্লা তাবা র'।
অর্থ:- হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে
এবং মুমিন হয়ে আমার ঘরে যারা প্রবেশ করবে এমন সব লোককে এবং মুমিন পুরুষ এবং মহিলাদেরকে
ক্ষমা করে দাও। আর যালেমদের জন্যে ধ্বংস ছাড়া অন্য কিছুই বৃদ্ধি করো না।। (সুরা নূহ: ২৮)।
বিদ্যা বুদ্ধি বা জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়াসমূহ
(ক) ‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন
ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা’’।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান,
কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই”।
হাদিসঃ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে বলতেন,
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন
ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী
জ্ঞান, কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৪৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৯২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২৬৫, আহমাদ ২৬৫২১, আদ্ দা‘ওয়াতুল
কাবীর ১১৯, শু‘আবূল ঈমান ১৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) মুসা আঃ ফিরাউনের দরবারে গমনের সময় বলেছিলেন,
“রব্বিশ রহলি' সদরি' ওয়াসসিরলি' আমরি' ওয়াহলুল
উকদাতাম মিল লিছানি' ইয়াফক্বাহু ক্বওলি"।
অর্থ:- হে আমার পালনকর্তা! আমার বক্ষ প্রশস্ত
করে দিন এবং আমার কর্ম সহজ করে দিন, আমার জিহ্ববার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার
কথা বুঝতে পারে। (সুরা ত্বহা- ২৫-২৮)।
(গ) নবি করিম (সাঃ) কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় তা
গ্রহণের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করলে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে নবি! আপনি বলুন,
“রব্বি যিদনী ইলমা’।
অর্থঃ- হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি
করুন। (সুরা ত্বহাঃ১১৪)।
(ঘ) "আল্লাহ ফাক্বিহনী ফিদ্দীন"
"হে আল্লাহ, আমাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান
ও প্রজ্ঞা দান করুন"।
হাদিসঃ
ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, একদা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় গেলেন, তখন আমি তাঁর জন্য উযূর পানি রাখলাম।
তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘এটা কে রেখেছে?’ তাঁকে জানানো হলে তিনি বললেনঃ "আল্লাহ ফাক্বিহনী
ফিদ্দীন"
‘হে আল্লাহ্! তুমি তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান
কর।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৩, ৭৫; মুসলিম ৪৪/৩০, হাঃ ২৪৭৭, আহমাদ ২৩৯৭,
২৮৮১, ৩০২৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
উপকারী ব্যক্তির জন্য দো‘আ
কেউ কোনো কিছু দিলে বা দান করলে বলতে হবে,
“জাযা-কাল্লা-হু খায়রান” (আল্লাহ আপনাকে উত্তম
প্রতিদান দিন)।
হাদিসঃ
উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার প্রতি কোনো উত্তম আচরণ
করা হলো, আর সে উত্তম আচরণকারীকে বলল, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। সে তার
অনেক প্রশংসা করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩০২৪, সুনান আততিরমিযী ২০৩৫, সহীহ আল জামি‘ ৬৩৬৮,
সহীহ আত্ তারগীব ৯৬৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৪১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের
শুকরিয়া আদায় করে না, সে ব্যক্তি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে না’।
হাদিসঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে
না, সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩০২৫, সুনান আততিরমিযী ১৯৫৫, আহমাদ ১১২৮০, সহীহাহ্ ৪১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার
কর, তাহ’লে অবশ্যই আমি তোমাদের বেশী বেশী দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহ’লে জেনো নিশ্চয়ই
আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর’। (সুরা ইবরাহীম ১৪/৭)।
নিজের জন্য দো‘আ
নিজের জন্য দো‘আ [সোলায়মান (আঃ)-এর দো‘আর ন্যায়]
:
“রব্বি আওঝি‘নী আন আশকুরা নি‘মাতাকাল্লাতী
আন‘আমতা ‘আলাইয়া, ওয়া ‘আলা ওয়ালিদাইয়া, ওয়া আন আ‘মালা ছ-লিহান তারযা-হু, ওয়া আদখিলনী
বি রহমাতিকা ফী ‘ইবা-দিকাছ ছ-লিহীন”।
অনুবাদ: ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে ও আমার
পিতা-মাতাকে যে নে‘মত তুমি দান করেছ, তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শক্তি আমাকে দান কর
এবং আমি যেন এমন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পসন্দ কর এবং আমাকে তোমার অনুগ্রহে তোমার
সৎকর্মশীল বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত কর’। (সুরা নমল ২৭/১৯)।
কোনো গ্রামে বা শহরে প্রবেশের দো‘আ ও বাজারে প্রবেশকালে দো‘আ
(ক) কোন গ্রামে বা শহরে প্রবেশের দো‘আঃ
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস’আলুকা খায়রা হা-যিহিল
ক্বারইয়াতি ওয়া খায়রা আহলিহা ওয়া খায়রা মা ফীহা। ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রিহা ওয়া শার্রি
আহলিহা ওয়া শাররি মা ফীহা”।
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে এই জনপদের
ও এর অধিবাসীদের এবং এর মধ্যকার কল্যাণ সমূহ প্রার্থনা করছি এবং আমি এই জনপদের ও এর
অধিবাসীদের এবং এর মধ্যকার অনিষ্ট সমূহ হ’তে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (হাকেম, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭৫৯)।
(খ) বাজারে প্রবেশকালে দো‘আঃ
’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক বাজারে প্রবেশ করে এ দু’আ পড়ে,
’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা
লাহূ লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াহুওয়া হায়য়ুন, লা- ইয়ামূতু,
বিয়াদিহিল খয়রু, ওয়াহুয়া ’আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর’’
(অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ
নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই প্রশংসা, তিনি জীবন দান করেন
ও মৃত্যু দান করেন, তিনি চিরঞ্জীব, কক্ষনো মৃত্যুবরণ করবেন না। তাঁর হাতেই কল্যাণ এবং
তিনি সমস্ত জিনিসের উপর ক্ষমতাশীল।)।
আল্লাহ তা’আলা তার জন্য দশ লক্ষ সাওয়াব লিখবেন,
দশ লক্ষ গুনাহ মিটিয়ে দেন, এছাড়া তার জন্য দশ লক্ষ মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং জান্নাতে
তার জন্য একটি ঘর তৈরি করবেন। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ; কিন্তু তিরমিযী বলেন, হাদীসটি
হাসান গরীব। আর শারহুস্ সুন্নাহয় ’বাজার’ শব্দের স্থলে ’বড় বাজার’ রয়েছে যেখানে ক্রয়-বিক্রয়
হয়।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৩১, সুনান আততিরমিযী
৩৪২৮, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৩৫, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৭৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২৩০,
সহীহ আত্ তারগীব ১৬৯৪, সহীহ আল জামি‘ ৬২৩১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
কর্মেক্ষেত্রে বরকত লাভের দোয়া
আপনি
যে স্থানে চাকরি করেন বা কর্ম করেন বা ব্যবসার স্থান সেখানে উপস্থিত হয়ে নিম্নের দোয়া
পাঠ করবেন।
“আল্লাহুম্মাকফিনি
বি হালালিকা আন হারামিক, ওয়াগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক”।
অর্থ: হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে আপনার হালাল
রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করুন। আর আপনাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী করবেন না এবং স্বীয়
অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে সচ্ছলতা দান করুন।
হাদিসঃ
আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, একটি চুক্তিবদ্ধ
গোলাম তার নিকটে এসে বলে, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে আমি অপরাগ হয়ে পড়েছি। আমাকে
আপনি সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিব না যা আমাকে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর সীর (সাবীর)
পর্বত পরিমাণ ঋণও থাকে তবে আল্লাহ তা’আলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি
বলেনঃ তুমি বল, “আল্লাহুম্মাকফিনি বি হালালিকা আন হারামিক, ওয়াগনিনি বিফাদলিকা আম্মান
সিওয়াক”।
“হে
আল্লাহ! তোমার হালালের মাধ্যমে আমাকে তোমার হারাম হতে বিরত রাখ বা দূরে রাখ এবং তোমার
দয়ায় তুমি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া হতে আমাকে আত্মনির্ভরশীল কর”। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৬৩, তা’লীকুর রাগীব (২/৪০),
মুসনাদ আহমদ: ১৩২১, আল-কালিমুত তাইয়্যিব (১৪৩/৯৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
বিবাহ ও স্ত্রী সহবাস করা সংক্রান্ত দোয়াসমূহ
বিবাহের পর বরকনের জন্য অন্যরা নিম্নের দোয়া করবেঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, যখন কোন
লোক বিয়ে করত, তখন তার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু’আ
পাঠ করতেনঃ
“বারাকাল্লাহু লাকা ওয়া বারাকা আলাইকা ওয়া
জামাআ বাইনাকুমা ফিল খাইরি”।
অর্থঃ আল্লাহ তা’আলা তোমার জীবন বারকাতময়
করুন আর তোমাদেরকে কল্যাণের মধ্যে একত্রিত করুন। (সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৯১, সুনান ইবনু মা-জাহ ২৯০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বাসর ঘরে প্রবেশ করার
পর দুআঃ
প্রথম সাক্ষাতে (দুই রাকআত নামায পড়ে) স্ত্রীর
ললাটে হাত রেখে নিম্নের দুআ পড়তে হয়।
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাইরাহা অখাইরা
মা জাবালতাহা আলাইহ, অআউযু বিকা মিন শাররিহা অশাররি মা জাবালতাহা আলাইহ”।
অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট এর
কল্যাণ এবং যে প্রকৃতির উপর তুমি একে সৃষ্টি করেছ তার কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আর তোমার
নিকট এর অকল্যাণ এবং যে প্রকৃতির উপর তুমি একে সৃষ্টি করেছ তার অকল্যাণ হতে আশ্রয়
প্রার্থনা করছি। (আবু দাউদ ২/২৪৮, সহীহ ইবনে মাজাহ ১/৩২৪)।
স্বামী-স্ত্রী মিলিত হওয়ার আগে এই দোয়া পাঠ করবেঃ
“বিসমিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বানা
অজান্নিবিশ শায়ত্বনা মা রাযাকতানা”।
অর্থঃ আমি আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি। হে
আল্লাহ! তুমি শয়তানকে আমাদের নিকট থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে (সন্তান) দান করবে
তার থেকেও শয়তানকে দুরে রাখ।
এই সহবাসে সন্তান জন্ম নিলে ঐ সন্তানকে শয়তান
কখনো ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না। হাদিসঃ
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন তার স্ত্রীর কাছে আসে, তখন সে যেন বলেঃ
“বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইতানা
ওয়া জান্নিবিশ শাইতানা মা রাযাকতানা”।
অর্থঃ আমি আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি। হে
আল্লাহ! তুমি শয়তানকে আমাদের নিকট থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে (সন্তান) দান করবে
তার থেকেও শয়তানকে দুরে রাখ।
অতঃপর স্বামী-স্ত্রীর সেই মিলনে যদি কোন সন্তান
হয়, তবে আল্লাহ্ তার উপর শয়তানকে কোন প্রভাব বিস্তার করতে দিবেন না অথবা শয়তান তার
কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯১৯, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪১, ৩২৭১, ৩২৮৩,
৫১৬৫, ৬৩৮৮, ৭৩৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩৪২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৩৪, সুনান আততিরমিযী ১০৯২, সুনান আবূ দাউদ ২১৬১,
আহমাদ ১৮৭০, ১৯১১, ২১৭৯, ২৫৫১, ২৫৯২, দারেমী ২২১২, ইরওয়াহ ২০১২, সহীহ আবী দাউদ ১৮৭৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৩৯৮, ইসলামীক সেন্টার ৩৩৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সন্তান ভূমিষ্ট হলেঃ
শিশু (ছেলে অথবা মেয়ে) ভূমিষ্ট হলে তার কানে
নামাযের আযান দেওয়া সুন্নত। (তিঃ ১৫১৪, আঃ দাঃ ১৫০৫) ।
হাদিসঃ
উবাইদুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি (রহ.) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, ফাতিমাহ (রাঃ) যখন আলী (রাঃ)-এর পুত্র হাসান (রাঃ)-কে প্রসব করলেন, তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কানে সালাতের আযান ন্যায় আযান দিয়েছিলেন।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১০৫, তিরমিযী, আহমাদ)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
ইকামত দেওয়ার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসটি জাল।
(সিলসিলাহ যয়ীফাহ ৩২১ নং)।
স্বামী সহবাসের
জন্য্য স্ত্রীকে বিছানায় ডাকলে আর স্ত্রী যদি না আসে তাহলে তার শাস্তি কী?
আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ’আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’যদি কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায়
ডাকে এবং সে না আসে, অতঃপর সে (স্বামী) তার প্রতি রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটায়, তাহলে
ফিরিশতাগণ তাকে সকাল অবধি অভিসম্পাত করতে থাকেন।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ’’যখন স্ত্রী নিজ
স্বামীর বিছানা ত্যাগ করে (অন্যত্র) রাত্রিযাপন করে, তখন ফিরিশতাবর্গ সকাল পর্যন্ত
তাকে অভিশাপ দিতে থাকেন।’’
আর এক বর্ণনায় আছে যে, ’’সেই আল্লাহর কসম,
যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে নিজ বিছানার দিকে আহ্বান করার
পর সে আসতে অস্বীকার করলে যিনি আকাশে আছেন তিনি (আল্লাহ) তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন,
যে পর্যন্ত না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যায়।’’ (রিয়াযুস
স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ২৮৭, সহীহুল
বুখারী ৩২৩৭, ৫১৯৩, ৫১৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৪৩০-৩৪৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৪৩৬, সুনান আবূ দাউদ ২১৪১, আহমাদ ৭৪২২, ৮৩৭৩, ৮৭৮৬, ৯৭০২, ৯৮৬৫, ১০৫৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
স্বামী-স্ত্রীর
মাঝে সংঘটিত সহবাসের ব্যাপারটি অন্য কাউকে জানানো যাবে নাঃ
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সংঘটিত সহবাসের ব্যাপারটি
অন্য কাউকে জানানো হারাম ও কবীরা গুনাহ্। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন:
(ক) “হয়তোবা কোন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে যা করে
তা মানুষের কাছে বলে বেড়ায়। হয়তোবা কোন মহিলা তার স্বামীর সাথে যা করে তা মানুষের কাছে
বলে বেড়ায় ?! সাহাবায়ে কিরাম চুপ থাকলেন। কেউ কোন কিছুই বললেন না। তখন আমি (বর্ণনাকারী)
বললাম: হ্যাঁ, আল্লাহ্’র কসম! হে আল্লাহ্’র রাসূল! মহিলারা এমন করে থাকে এবং পুরুষরাও।
তিনি বললেন: না, তোমরা এমন করো না। কারণ, এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন যে কোন এক শয়তান অন্য
শয়তানের সাথে রাস্তায় সহবাস করলো। আর মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলো’’। (আল্বানী/আ’দাবুয্
যিফাফ ১৪৪)।
(খ) আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলার নিকট সর্বাধিক
আমানত হলো ঐ বিষয়। অন্য বর্ণনায় কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা’আলার নিকটে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম
ঐ ব্যক্তি- যে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে, অতঃপর পরস্পরের মধ্যস্থ গোপনীয়তা (মানুষের
মাঝে) প্রকাশ করে দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৪৩৪-৩৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৪৩৭, সুনান আবূ দাঊদ ৪৮৭০, আহমাদ ১১৬৫৫, আল জামি‘ ১৯৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৩৪০৮, ইসলামীক সেন্টার ৩৪০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
স্ত্রীকে যেমন ইচ্ছে তেমনিভাবে ববহার করা যায়ঃ
স্ত্রীকে কাঁত করে, চিৎ করে, খাড়া করে, উপর
করে, কোলে বসে, পিছন দিকে থেকে যমেন ইচ্ছে সহবাস করবে তবে পায়ু ব্যতীত।
(ক) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহূদীগণ
বলত, কেউ যদি পিছন দিক হতে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে সঙ্গম করে তাহলে সন্তান ট্যারা বা টেগ্রা
হয়। এমতাবস্থায় কুরআন মাজীদের এ আয়াত নাযিল হয়, অর্থাৎ- ’’তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের
শস্যক্ষেত্র, তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা যেতে পার’’- (সূরা আল বাকারা
২ : ২২৩)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৮৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৪২৭-২৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৪৩৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২৫, সুনান আবূ দাঊদ ২১৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪০০,
ইসলামীক সেন্টার ৩৩৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর ওয়াহী নাযিল হয়- ’’তোমাদের স্ত্রীগণ
তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত। অতএব, তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা যেতে পার’’-
(সূরা আল বাকারা ২ : ২২৩)। তাই সামনের দিক হতে বা পিছন দিক হতে সহবাস কর; কিন্তু গুহ্যদ্বার
(মলদ্বার) ও ঋতুবতী (মাসিক থাকাকালীন) হতে বিরত থাক। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯, সুনান আততিরমিযী ২৯৮০,
সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২৫, আহমাদ ২৭০৩, সহীহ আল জামি‘ ১১৪১)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
স্ত্রীর মাসিক চলাকালীন ও স্ত্রীর পায়ু পথে সহবাস নিষিদ্ধঃ
এ বিষয়টি এখানে আলোচনা করার উদ্দেশ্য হলো,
অধিকাংশ নবদম্পত্তি মাসিক চলাকালীন সহবাসে লিপ্ত হয় এবং অনেকে উত্তেজনাবশতঃ স্ত্রীর
পায়ু পথ ব্যবহার করে থাকে। এভাবে সহবাস করা যে গুণাহ তা অনেকেই জানে না। আসুন এ বিষয়ে
বিস্তারিত জেনে নেই।
(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর ওয়াহী নাযিল হয়- ‘‘তোমাদের স্ত্রীগণ
তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত। অতএব, তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা যেতে পার’’-
(সূরা আল বাকারা ২ : ২২৩)। তাই সামনের দিক হতে বা পিছন দিক হতে সহবাস কর; কিন্তু গুহ্যদ্বার
(মলদ্বার) ও ঋতুবতী (মাসিক থাকাকালীন) হতে বিরত থাক। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৮০, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫২৮, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৩৪২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৩৫, সুনান আবূ দাউদ ২১৬৩, আহমাদ ২৭০৩, সহীহ আল জামি ১১৪১, দারেমী ১১৩২, ২২১৪,
ইরওয়াহ ৭/৬২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
মহান আল্লাহ বলেছেন, “লোকেরা তোমাকে রাজঃস্রাব
সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করে। তুমি বোল, তা অশূচি। সুতরাং তোমরা রাজঃস্রব কালে স্ত্রী সঙ্গ
বর্জন কর। এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য)তাঁদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর
যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাঁদের নিকট ঠিক সেই ভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে
আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ
করেন।” (সুরা আল বাকারাহঃ ২২২)।
(খ) ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আল্লাহ ইবনু উমার (রাযি.)-কে ক্ষমা করুন, তিনি ভুল করেছেন। আসল কথা হচ্ছে, আনসারদের
এই জনপদের লোকেরা মূর্তিপূজারী ছিলো। তারা আহলে কিতাব ইয়াহুদীদের সাথে বসবাস করতো এবং
ইয়াহুদীরা জ্ঞানের দিক দিয়ে মূর্তিপূজারীদের উপর নিজেদের মর্যাদা দিতো। সুতরাং তারা
নিজেদের কাজকর্মে ইয়াহুদীদের অনুসারী ছিলো। আহলে কিতাবদের নিয়ম ছিলো, তারা স্ত্রীদেরকে
কেবল চিৎ করে শুইয়ে সঙ্গম করতো এবং বলতো, মহিলাদের সতর এ নিয়মে অধিক সংরক্ষিত। আনসার
সম্প্রদায়ও তাদের এ কাজে আহলে কিতাবদের নিয়ম অনুসরণ করতো। কিন্তু কুরাইশরা নারীদেরকে
সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে সঙ্গম করতো এবং তাদেরকে সামনাসামনি, পেছনের দিকে এবং চিৎ করে শুইয়ে
বিভিন্নভাবে সঙ্গম করতো।
অতঃপর যখন মুহাজিরগণ মদীনাহয় আসলেন তখন তাদের
এক ব্যক্তি জনৈক আনাসারী নারীকে বিয়ে করে তার সাথে ঐভাবে সঙ্গম করতে চাইলো যেভাবে তারা
মক্কার নারীদের সাথে করতো। কিন্তু মহিলাটি তাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বললো, আমরা শুধু এক
অবস্থায়ই সঙ্গম করি। সুতরাং তোমাকেও সেভাবেই সঙ্গম করতে হবে অন্যথায় আমার থেকে দূরে
থাকো। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ খবর পৌঁছলে মহান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ ‘‘তোমাদের
স্ত্রীগণ তোমাদের ক্ষেতস্বরূপ, সুতরাং যেভাবে ইচ্ছা করো তোমাদের ক্ষেতে গমন করো।’’অর্থাৎ
সামনের দিক থেকে, পিছনের দিক থেকে বা চিৎ করে শুইয়ে তার লজ্জাস্থানেই সঙ্গম করো (পায়ু
পথে নয়)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৬৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) খুযায়মাহ্ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সত্য প্রকাশে
লজ্জাবোধ করেন না, তোমরা তোমাদের স্ত্রীগণের গুহ্যদ্বারে সহবাস করো না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৬৪, সুনান ইবনু
মাজাহ ১৯২৪, দারিমী ১১৪৪, ১১৮১, আহমাদ ২১৮৬৫,
২১৩৪৩, ২১৩৬৭, সহীহ আল জামি ১৮৮৫, সহীহ আত্
তারগীব ২৪২৭, ইরওয়া ২০০৫, আদাবুয যিফাফ ২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ লোক অভিশপ্ত, যে তার স্ত্রীর
গুহ্যদ্বারে সহবাস করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৩,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৬২, আহমাদ ৯৭৩৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক তার স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে
সহবাস করে আল্লাহ তার প্রতি (রহমত, করুণা নিয়ে) দৃষ্টিপাত করেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৪, আহমাদ ৭৬৮৪, শারহুস্ সুন্নাহ্
২২৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২৩, সুনান আবূ দাউদ ২১৬২, সহীহ আল জামি ১৬৯১, শু‘আবুল ঈমান
৪৯৯১, আহমাদ ৭৬২৭, ৮৩২৭, ৯৪৪০, ৯৮৫০, দারেমী ১১৪০, বায়হাকী ৭/৭৩৪, আদাবুয যিফাফ ৩০,
সহীহ আবী দাউদ ১৮৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(চ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির প্রতি
(রহমত ও করুণার) দৃষ্টিপাত করেন না, যে কোনো পুরুষের সাথে সহবাস করে অথবা নারীর গুহ্যদ্বারে
সহবাস করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৫, সূনান আত
তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৬৫, সহীহ আল জামি ৭৮০১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ছ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আওতাস যুদ্ধের বন্দী দাসীদের
সম্বন্ধে বলেছেনঃ সন্তান প্রসবের আগে গর্ভবতীর সাথে সঙ্গম করা যাবে না। আর গর্ভবতী
নয় এমন নারীর মাসিক ঋতু শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথেও সঙ্গম করা যাবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(জ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে
সহবাস করলো অথবা স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করলো অথবা গণকের নিকট গেলো এবং সে যা বললো
তা বিশ্বাস করলো, সে অবশ্যই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর নাযিলকৃত
জিনিসের (আল্লাহ্র কিতাবের) বিরুদ্ধাচরণ করলো। (সুনান
ইবনু মাজাহ ৬৩৯, সুনান আততিরমিযী ১৩৫, সুনান
আবূ দাঊদ ৩৯০৪, আহমাদ ৯০৩৫, ৯৮১১; দারিমী ১১৩৬)। হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ।
ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাসের কাফ্ফারাহঃ
ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কিত বর্ণিত, যে হায়িয অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সঙ্গম
করেছে। তিনি বলেনঃ সে এক অথবা অর্ধ দীনার সাদাকাহ করবে। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৬৮, ২১৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পায়ুপথ ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধঃ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যে মানুষকে লূত সম্প্রদায়ের কুকর্মে (সমকামিতায়) নিয়োজিত
পাবে সেই কুকর্মকারীকে এবং যার সাথে কুকর্ম করা হয়েছে তাকে মেরে ফেলবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৬,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৫, বায়হাকী ফিস সুনান
৮/২৩২, ইরওয়া ২৩৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ফরজ গোসলের দোয়া ও বিধিবিধান
ইসলামে পবিত্রতার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। এমনকি
ধর্মীয় সব হুকুম-আহকাম পালন পবিত্রতার ওপর নির্ভর করে। এজন্য ইসলামের পরিভাষায় পবিত্রতাকে
ইমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। আবূ মালিক আল আশ্’আরী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাক-পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধেক। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৩, আহমাদ ৫/৩৪২-৪৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ কুরআনে পবিত্রতার কথা উল্লেখ করে ইরশাদ
করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন।’ (সূরা আল বাকারা : ২২২)।
গোসলের নিয়তঃ আমাদের সমাজে প্রচলিত গোসলের
নিয়ত, “নাওয়াইতুয়ান গোসলা লিরাফইল জানাবাতি” কোনো হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। গোসলের
নিয়তের এই বাক্যটি শুধুই জনশ্রুতি। তাই মুখে উচ্চারণ করে এই নিয়ত করা যাবে না। আপনি
পবিত্র হওয়ার জন্যে গোসল করছেন তা মনে মনে থাকলেই হবে। এখানে ওযুর নিয়মে গোসল করার
কয়েকটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেই পবিত্রতা অর্জন হবে। মুখে নিয়ত উচ্চারণ করতে হবে না।
রাসুল সাঃ এরুপ করেননি তাই আমরাও করবো না।
প্রকাশ যে, গোসল, ওযু বা অন্যান্য কর্মের সময়
নিয়ত আরবীতে বা নিজ ভাষায় মুখে উচ্চারণ করা বিদআত।
গোসলের নিয়ত যেমন মুখে উচ্চারণ করে বলার কোনো
হাদিস নেই তেমনি গোসলের পূর্বে “বিছমিল্লাহ” বলারও কোনো হাদিস নেই। তবে গোসলের বিষয়টি
যেহেতু ওযুর সাথে সম্পৃক্ত আর ওযুর পূর্বে “বিছমিল্লাহ” না বললে যেহেতু ওযু হয় না তাই
গোসলের শুরুতে “বিছমিল্লাহ” বলতে হবে।
অনেকে শুরুতেই “বিছমিল্লাহ” পাঠ করেন আবার
অনেকে দুই হাতের কবজি ধৌত করার পর বাম হাত দিয়ে নাপাকি দূর করে বাম হাত ধুইয়ে “বিছমিল্লাহ”
বলে সালাতের ওযুর মতো ওযু শুরু করেন।
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি উযূর সময় আল্লাহ্র নাম স্মরণ করেনি তার উযূ হয়নি।
(সুনানে ইবনে মাজাহ. ৩৯৭, ৩৯৮, ৩৯৯, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৪০৪, দারিমী ৬৯১, ইরওয়াহ ৮১, সহীহ আবূ দাউদ ৯০, ১০১, সুনান তিরমিযী ২৫) ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
ফরজ গোসলের সহিহ পদ্ধতি
প্রথমে বিসমিল্লাহ বলার পর,
(ক)
৩ বার দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুতে হবে।
(খ) অতঃপর বাম হাতের উপর পানি ঢেলে দিয়ে দেহের
যেসব স্থানে নাপাকী লেগেছে সেইসব স্থান ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
(গ)
তারপর বাম হাতকে মাটি অথবা সাবান দ্বারা ধুয়ে নিতে হবে।
(ঘ)
এরপর সালাতের জন্য ওযু করার মত পূর্ণ ওযু করতে হবে।
অবশ্য গোসলের জায়গা পরিষ্কার না হলে ওযু করার
সময় দুই পা না ধুয়ে গোসল শেষে সেই স্থান থেকে একটু সরে গিয়ে দুই পা ধুয়ে নিতে হবে।
(ঙ)
ওযুর পর প্রথমে ৩ বার মাথায় পানি ঢেলে ভাল করে চুলগুলো ধুয়ে নিতে হবে, যাতে
সমস্ত চুলের গোড়ায় গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। তারপর সারা দেহে ৩ বার পানি ঢেলে ভালরুপে
ধুতে হবে। (সহিহ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৪৩৫-৪৩৬)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্রতার জন্য ফরয গোসল করার সময় প্রথমে (কব্জি পর্যন্ত)
দুই হাত ধুতেন। এরপর সালাতের উযূর মতো উযূ করতেন। অতঃপর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে তা
দিয়ে মাথার চুলের গোড়া খিলাল করতেন। অতঃপর মাথার উপর তিন অঞ্জলি পানি ঢালতেন, তারপর
শরীরের সর্বাঙ্গ পানি দিয়ে ভিজাতেন।
কিন্তু ইমাম মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় আছে, তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাত্রে হাত ডুবিয়ে দেয়ার আগে কব্জি পর্যন্ত হাত ধুতেন।
তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতের তালুতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধুতেন, অতঃপর উযূ করতেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৩৫-৪৩৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২৪৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬০৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬০৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৬২৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এখানে সুস্পষ্ট করে মনে রাখতে হবে যে, উল্লেখিত
পদ্ধতি মোতাবেক যারা ফরজ গোসল করেন না তারা ২৪ ঘন্টাই নাপাক অবস্থায় থাকেন। এমতাবস্থায়
তারা সর্বত্র বিচরন করেন, এমনকি এই নাপাক দেহ নিয়ে মসজিদে বা একাকী সালাতসহ অন্যান্য
ইবাদতগুলো পালন করেন। অথচ তিনি জানেনই না যে, তার ফরজ গোসল হয়নি। তিনি অপবিত্র।
মনে রাখবেন, গোসল শুদ্ধ না হলে দেহ পবিত্র
হবে না, দেহ পবিত্র না হলে সালাত আদায় হবে
না।
গনগোসলখানায় মহিলাদের প্রবেশ নিষেধঃ
(ক) উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি
বলেন, হে লোক সকল! অবশ্যই আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
শুনেছি, তিনি বলেছেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন অবশ্যই এমন
(ভোজনের) দস্তরখানে না বসে, যাতে মদ্য পরিবেশিত হয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস
রাখে, সে যেন সাধারণ গোসলখানায় বিবস্ত্র হয়ে প্রবেশ না করে। আর যে মহিলা আল্লাহ ও পরকালে
বিশ্বাস রাখে, সে যেন সাধারণ গোসলখানায় প্রবেশ না করে। (হাদিস
সম্ভার-৫৫১, আহমাদ ১২৫, সহীহ তারগীব ১৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) উম্মে দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একদা আমি সাধারণ গোসলখানা হতে বের হলাম। ইত্যবসরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি আমাকে বললেন, কোত্থেকে, হে উম্মে দারদা?! আমি বললাম,
গোসলখানা থেকে। তিনি বললেন, সেই সত্তার শপথ; যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! যে কোনও মহিলা
তার কোন মায়ের ঘর ছাড়া অন্য স্থানে নিজের কাপড় খোলে, সে তার ও দয়াময় (আল্লাহর) মাঝে
প্রত্যেক পর্দা বিদীর্ণ করে ফেলে। (হাদিস সম্ভার-৫৫২,
আহমাদ ২৭০৩৮, ত্বাবারানীর কাবীর, সহীহ তারগীব ১৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নাপাক অবস্থায় ঘুমানোর নিয়মঃ
(ক) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে
জিজ্ঞেস বললেন, (কোন সময়) রাতে তার নাপাকী হয়ে গেলে (তৎক্ষণাৎ তার কী করা উচিত)? রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তখন তুমি উযূ করবে, তোমার গুপ্তাঙ্গ ধুয়ে নিবে,
অতঃপর ঘুমাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৪৫২,সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৫৯৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৬০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপবিত্র হওয়ার পর ঘুমানোর ইচ্ছা করলে তার পূর্বে সালাতের
উযূর ন্যায় উযূ করে নিতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫৯১, ৫৯৩,
৫৮৪, ৫৮৫, ৫৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৬, ২৮৭, ২৮৮, ২৮৯-৯০, মুসলিম ৩০১-২,
৩০৬, সুনান আততিরমিযী ১১৮, সুনান আননাসায়ী ২৫৫-৫৮, ২৫৯-৬০, সুনান আবূ দাঊদ ২২১, ২২২, ২২৪, ৩৯০, আহমাদ ৩৬১,
৫০৩৬, ৫১৬৮, ৫২৯২, ৫৪১৯, ৫৪৭৩, ৫৯৩১, ২৩৫৬৩, ২৪০৭৮, ২৪১৯৩, ২৪১৯৬, ২৪৩৪৫, ২৪৩৫৩, ২৪৩৬১,
২৪৪২৮, ২৪৪৪৮, ২৪৫৮০, ২৪৬৩৪, ২৪৮০৩, ২৫০৫৫, ২৫০৬৫, ২৫১৩৯, ২৫২৮৬, ২৫৪৭২, ২৫৮১০, ২৫৮৫১;
দারিমী ৭৫৬, ৭৫৭, মুওয়াত্ত্বা মালিক ১০৯ , সহীহাহ ৩৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) নাপাক
অবস্থায় খেতে চাইলে তার নিয়মঃ
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাপাক অবস্থায় কিছু খাওয়ার ইচ্ছা করলে উযূ করে নিতেন।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫৮৪, ৫৯১, ৫৯২, ৫৯৩, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) |২৮৬, ২৮৮; মুসলিম ৩০১-২, সুনান আততিরমিযী ১১৮, সুনান আননাসায়ী
২৫৫-৫৮, সুনান আবূ দাঊদ ২২০, ২২২, ২২৪; আহমাদ ২৩৫৬৩, ২৪০৭৮, ২৪১৯৩, ২৪১৯৬, ২৪৩৪৫, ২৪৩৫৩,
২৪৩৬১, ২৪৪২৮, ২৪৪৪৮, ২৪৫৮০, ২৪৬৩৪, ২৪৮০৩, ২৫০৫৫, ২৫০৬৫, ২৫১৩৯, ২৫২৮৬, ২৫৪৭২, ২৫৮১০,
২৫৮৫১; দারিমী ৭৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঘ) নাপাক
অবস্থায় কেই খেতে চাইলে দু হাত ধুয়ে নিতে হবেঃ
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাপাক অবস্থায় খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা করলে তাঁর দু হাত ধুয়ে নিতেন।
(সুনানে ইবনে মাজাহ ৫৮৪, ৫৯১, ৫৯৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২৮৬, ২৮৮; মুসলিম ৩০১-২, সুনান আততিরমিযী ১১৮, সুনান নাসায়ী ২৫৫-৫৮, সুনান
আবূ দাঊদ ২১৯, ২২২, ২২৪; আহমাদ ২৩৫৬৩, ২৪০৭৮, ২৪১৯৩, ২৪১৯৬, ২৪৩৪৫, ২৪৩৫৩, ২৪৩৬১, ২৪৪২৮,
২৪৪৪৮, ২৪৫৮০, ২৪৬৩৪, ২৪৮০৩, ২৫০৫৫, ২৫০৬৫, ২৫১৩৯, ২৫২৮৬, ২৫৪৭২, ২৫৮১০, ২৫৮৫১; দারিমী
৭৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নাপাক অবস্থায় আবার স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে চাইলে তার নিয়মঃ
আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর
সাথে যৌন সঙ্গম করার পর আবারও যদি সঙ্গম করতে চায়, তাহলে সে যেন মধ্যখানে (সালাতের
উযূর মতো) উযূ করে নেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫৮৭, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত),৪৫৪, ৪৫৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩০৮, সুনান আততিরমিযী
১৪১, সুনান আননাসায়ী ২৬২, সুনান আবূ দাঊদ ২১৬, ২২০, আহমাদ ১০৭৭৭, ১০৮৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৫৯৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৬১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সকল স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর
একবার গোসল করাঃ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সকল স্ত্রীর সাথে সহবাস শেষে একবার গোসল করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫৮৮, ৫৮৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
| ২৬৮, ২৮৪, ৫০৬৮, ৫২১৫; সহিহ মুসলিম ৩০৯, সুনান আততিরমিযী ১৪০, সুনান আননাসায়ী ২৬৩-৬৪,
৩১৯৮, আহমাদ ১১৫৩৫, ১২২২১, ১২২৯০, ১২৫১৪, ১২৫৫৫, ১২৯৪২, ১৩০৯৩, ১৩২৩৬; দারিমী ৭৫৩-৫৪,
সহীহ আবূ দাউদ ২১৮, ২১১-২১৩। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
তবে অধিকতর বিশুদ্ধ, পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হলো
প্রত্যেকের সাথে সহবাসের পর পর গোসল করাঃ
আবূ রাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে তাঁর স্ত্রীগণের সাথে সহবাস করলেন। তিনি তাদের প্রত্যেকের
সাথে সহবাসের পর পর গোসল করেন। তাঁকে বলা হল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি কেন একবার গোসল
করলেন না? তিনি বলেনঃ সেটি অধিকতর বিশুদ্ধ, পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫৯০, সুনান আবূ দাঊদ ২১৯। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
অযু সংক্রান্ত দোয়া ও অযুর সহিহ নিয়ম
(১)
মুছল্লী প্রথমে মনে মনে ওযূ করার নিয়ত বা সংকল্প করবে। (ছহীহ বুখারী হা/১; ছহীহ মুসলিম
হা/৫০৩৬; মিশকাত হা/১)।
হাদিসঃ
“উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিয়্যাতের উপরই কাজের ফলাফল
নির্ভরশীল। মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী ফল পাবে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের
সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করবে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্যই গণ্য
হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার স্বার্থপ্রাপ্তির জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিবাহের জন্য হিজরত
করবে সে হিজরত তার নিয়্যাত অনুসারেই হবে যে নিয়্যাতে সে হিজরত করেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১, ৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২২০১, তিরমিযী ১৬৩৭, নাসায়ী ৭৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪২২৭, আহমাদ ১৬৯, ৩০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) তারপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। (তিরমিযী ২৫; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭, মিশকাত ৪০২)।
হাদিসঃ
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি উযূর সময় আল্লাহ্র নাম স্মরণ করেনি তার উযূ হয়নি।
(সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০৪,
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫, দারিমী ৬৯১, ইরওয়াহ ৮১, সহীহ আবূ দাউদ ৯০)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
অতঃপর,
(৩) ডান হাতে পানি নিয়ে (আবুদাঊদ ১০৮)।
হাদিসঃ
’উসমান ইবনু ’আবদুর রহমান আত-তাইমী সূত্রে
বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আবূ মুলায়কাহকে অযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
আমি ’উসমান ইবনু ’আফফান (রাঃ)-কে অযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে দেখেছি। তিনি (’উসমান)
পানি চাইলেন। একটি পাত্রে পানি আনা হলে তিনি প্রথমে উক্ত পাত্র স্বীয় ডান হাতের উপর
কাঁত করলেন (অর্থাৎ ডান হাত ধৌত করলেন)। এরপর পাত্রে ডান হাত ডুবিয়ে পানি নিয়ে তিনবার
কুলি করলেন, তিনবার নাকে পানি দিলেন, তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন, তিনবার ডান হাত ধুলেন,
তিনবার বাম হাত ধুলেন, অতঃপর হাত ডুবিয়ে পানি নিয়ে মাথা ও কান মাসাহ্ করলেন- উভয় কানের
ভিতর ও বহিরাংশ একবার করে মাসাহ্ করলেন। তারপর উভয় পা ধৌত করে বললেনঃ অযু সম্পর্কে
জিজ্ঞাসাকারীরা কোথায়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরূপই অযু করতে
আমি দেখেছি।’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করবে। (সহিহ বুখারী
১৫৯, ইফাবা ১৬১, মিশকাত ২৮৭)।
হাদিসঃ
উসমান
(রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি এরূপে উযূ করলেন, তিনবার নিজের দু’ হাতের কব্জি পর্যন্ত
ধুলেন, তারপর তিনবার কুলি করলেন, নাকে পানি দিয়ে তা ঝেড়ে পরিষ্কার করলেন, তিনবার মুখমণ্ডল
ধুলেন, তারপর কনুই পর্যন্ত তিনবার ডান হাত ধুলেন, এভাবে বাম হাতও কনুই পর্যন্ত ধুলেন।
এরপর মাথা মাসাহ করলেন, তারপর ডান পা তিনবার ও বাম পা তিনবার করে ধুলেন। এরপর তিনি
’উসমান (রাঃ) বললেন, আমি যেভাবে উযূ করলাম এভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
উযূ করতে দেখেছি। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি আমার
ন্যায় উযূ করবে ও মনোযোগ সহকারে দুই রাক্’আত (নফল) সালাত আদায় করবে, তার পূর্বেকার
সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৩৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৬-৪২৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) সেই সাথে হাতের আঙ্গুলগুলো খিলাল করবে। (তিরমিযী
৭৮৮, নাসাঈ ১১৪; মিশকাত ৪০৫)।
হাদিসঃ
লাক্বীত্ব ইবনু সবুরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বললাম, হে আল্লাহর রসূল!
আমাকে উযূ সম্পর্কে বলুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, উযূর অঙ্গগুলো
পরিপূর্ণভাবে ধুবে। আঙ্গুলগুলোর মধ্যে (আঙ্গুল ঢুকিয়ে) খিলাল করবে এবং উত্তমরূপে নাকে
পানি পৌঁছাবে, যদি সিয়াম পালনকারী (রোযাদার) না হও। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৭৮৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪৪৮, আহমাদ ১৫৯৪৫-৪৬,
নাসায়ী ১১৪, দারিমী ৭০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আংটি থাকলে পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করবে। (ছহীহ
বুখারী, তরজমাতুল বাব ‘ওযূ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৯, হা/১৬৫-এর পূর্বের আলোচনা, ইবনু সীরীন
আংটির জায়গা ধৌত করতেন- ১/২৮ পৃঃ)।
(৬) ডান হাতে পানি নিয়ে একই সঙ্গে মুখে এবং নাকে
পানি দিবে ও নাক ঝাড়বে। (বুখারী ১৯১, ইফাবা ১৯০,
মুসলিম ৫৭৮, ইফাবা ৪৪৬; মিশকাত ৩৯৪ ও ৪১২)।
হাদিসঃ
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
একদা তিনি পাত্র হতে দু’হাতে পানি ঢেলে দু’হাত ধৌত করলেন। অতঃপর এক খাবল পানি দিয়ে
(মুখ) ধুলেন বা কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। তিনবার এরূপ করলেন। তারপর দু’ হাত
কনুই পর্যন্ত দু’-দু’বার ধুলেন এবং মাথার সামনের অংশ এবং পেছনের অংশ মাসেহ করলেন। আর
টাখনু পর্যন্ত দু’ পা ধুলেন। অতঃপর বললেনঃ ‘‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর উযূ এরূপ ছিল।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৯১, ১৮৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)১১৯,সূনান আত
তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮, আধুনিক প্রকাশনী ১৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তারপর,
(৭) কপালের গোড়া থেকে দুই কানের লতীসহ থুৎনীর নীচ
পর্যন্ত সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ধৌত করবে। (বুখারী ১৫৯, ইফাবা ১৬১, মিশকাত ২৮৭)।
হাদিসঃ
হুমরান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘উসমান ইবনু
আফফান (রাযি.)-কে দেখেছেন যে, তিনি পানির পাত্র আনিয়ে উভয় হাতের তালুতে তিনবার ঢেলে
তা ধুয়ে নিলেন। অতঃপর ডান হাত পাত্রের মধ্যে ঢুকালেন। তারপর কুলি করলেন ও নাকে পানি
দিয়ে নাক পরিষ্কার করলেন। তারপর তাঁর মুখমন্ডল তিনবার ধুয়ে এবং দু’হাত কনুই পর্যন্ত
তিনবার ধুলেন। অতঃপর মাথা মাসেহ করলেন। অতঃপর দুই পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। পরে
বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আমার মত
এ রকম উযূ করবে, অতঃপর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে, যাতে দুনিয়ার কোন খেয়াল করবে না,
তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫৯, ১৬০, ১৬৪, ১৯৩৪, ৬৪৩৩; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৭, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৬, আহমাদ ৪৯৩, ৫১৩, আধুনিক প্রকাশনী
১৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তারপর,
(৮) এক অঞ্জলি পানি নিয়ে থুৎনীর নীচে দিয়ে দাড়ি
খিলাল করবে। (আবুদাঊদ ১৪৫, তিরমিযী ৩১)।
হাদিসঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করার সময় হাতে এক অঞ্জলি পানি নিতেন। তারপর ঐ পানি
চোয়ালের নিম্নদেশে (থুতনির নীচে) লাগিয়ে দাড়ি খিলাল করতেন এবং বলতেনঃ আমার মহান প্রতিপালক
আমাকে এরূপ করারই নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১৪৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩১, সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩০, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’
(১/৫৪), হাকিম (১/১৪৯), ইরওয়াউল গালীল (১/১৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতঃপর,
(৯) প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত
করবে। (বুখারী ১৪০, ইফাবা ১৪২)।
হাদিসঃ
ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণনা করেন যে,
তিনি উয়ু করলেন এবং তাঁর মুখমন্ডল ধুলেন। এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে কুলি করলেন ও নাকে
পানি দিলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে অনুরূপ করলেন অর্থাৎ আরেক হাতের সাথে
মিলিয়ে মুখমন্ডল ধুলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে ডান হাত ধুলেন। অতঃপর আর
এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে তাঁর বাঁ হাত ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসহ(মাসেহ) করলেন।
অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে ডান পায়ের উপর ঢেলে দিয়ে তা ধুয়ে ফেললেন। অতঃপর আর এক আজলা
পানি নিয়ে তা দিয়ে বাম পা ধুলেন। অতঃপর বললেনঃ ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে এভাবে উযূ করতে দেখেছি।’ (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
এরপর,
(১০) নতুন পানি নিয়ে (মুসলিম ৫৮২, (ইফাবা ৪৫০),
মিশকাত ৪১৫)।
হাদিসঃ
’আবদুল্লাহ
ইবনু যায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উযূ করতে দেখেছেন। আর এটাও দেখেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথা মাসাহ করলেন এমন পানি দিয়ে, যা তাঁর দুই হাতের পানির অবশিষ্টাংশ
নয় (অর্থাৎ- নতুন পানি দিয়ে মাসাহ করলেন)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৪১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৬, সূনান আত
তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) দুই হাত দ্বারা মাথার সম্মুখ হতে পিছনে ও
পিছন হতে সম্মুখে নিয়ে গিয়ে একবার পুরো মাথা মাসাহ করবে। (বুখারী ১৮৫, (ইফাবা ১৮৫,
মিশকাত ৩৯৪)।
হাদিসঃ
’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ’আসিম (রাঃ)-কে
বলা হলো, যেভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ করতেন ঠিক সেভাবে আপনি আমাদের সামনে উযূ করুন। তাই
তিনি [’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)] পানি আনালেন। পাত্র কাত করে পানি নিয়ে দুই হাতের
উপর পানি ঢেলে তিনবার হাত ধুয়ে নিলেন। এরপর পাত্রের ভিতর হাত ঢুকিয়ে পানি এনে এক কোষ
পানি দিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। এভাবে তিনি তিনবার করলেন। তারপর আবার নিজের
হাত পাত্রে ঢুকিয়ে পানি এনে তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুইলেন। আবার পাত্রে হাত ঢুকিয়ে পানি
এনে নিজের মাথা মাসাহ এভাবে করলেন, প্রথমে নিজ হাত দু’টি সামনে থেকে পেছনের দিকে নিয়ে
গেলেন। আবার পেছন থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন, তারপর নিজের দুই পা গিরা পর্যন্ত ধুইলেন।
অতঃপর বললেন, এরূপই ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযূ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৮৫, ১৮৬, ১৯১, ১৯২, ১৯৭, ১৯৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৩৫, আহমাদ ১৬৪৪৫, আধুনিক প্রকাশনী ১৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১২) একই সঙ্গে ভিজা শাহাদাত আংগুল দ্বারা কানের
ভিতর অংশে ও বুড়ো আংগুল দ্বারা কানের পিঠ মাসাহ করবে। (নাসাঈ ১০২, নায়ল ১/২৪২-৪৩; আবুদাঊদ
১৩৭; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা ১৬১; মিশকাত ৪১৩)।
হাদিসঃ
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মাথা ও দুই কান মাসাহ করেছেন। কানের ভিতরাংশ
নিজের দুই শাহাদাত আঙ্গুল ও উপরিভাগ বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে মাসাহ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৩, নাসায়ী ১০২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
অতঃপর,
(১৩) ডান ও বাম পায়ের টাখনুসহ ভালভাবে ধৌত করবে।
(বুখারী ১৮৫, ইফাবা ১৮৫, মিশকাত ৩৯৪)।
হাদিসঃ
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এ হাদীসটি বর্ণিত
হয়েছে এভাবে, ’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ’আসিম (রাঃ)-কে বলা হলো, যেভাবে রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ করতেন ঠিক সেভাবে আপনি আমাদের সামনে উযূ করুন।
তাই তিনি [’আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)] পানি আনালেন। পাত্র কাত করে পানি নিয়ে দুই হাতের
উপর পানি ঢেলে তিনবার হাত ধুয়ে নিলেন। এরপর পাত্রের ভিতর হাত ঢুকিয়ে পানি এনে এক কোষ
পানি দিয়ে কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। এভাবে তিনি তিনবার করলেন। তারপর আবার নিজের
হাত পাত্রে ঢুকিয়ে পানি এনে তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুইলেন। আবার পাত্রে হাত ঢুকিয়ে পানি
এনে নিজের মাথা মাসাহ এভাবে করলেন, প্রথমে নিজ হাত দু’টি সামনে থেকে পেছনের দিকে নিয়ে
গেলেন। আবার পেছন থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন, তারপর নিজের দুই পা গিরা পর্যন্ত ধুইলেন।
অতঃপর বললেন, এরূপই ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযূ। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম-এর এক বর্ণনায়
আছে, (মাসাহ করার জন্য) নিজের দুই হাতকে সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার
পিছনের দিক থেকে সামনের দিকে নিয়ে এলেন। অর্থাৎ মাথার সামনের অংশ হতে ’মাসাহ’ শুরু
করে দুই হাত পিছন পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। তারপর আবার পিছন থেকে শুরু করে হাত সেখানে নিয়ে
এলেন যেখান থেকে শুরু করেছিলেন। অতঃপর দুই পা ধুইলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম-এর অপর বর্ণনায়
এভাবে বলা হয়েছে, তিনি এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করলেন, আর নাকে পানি দিলেন। এভাবে তিনবার
করলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বুখারীর বর্ণনার শব্দ হলো, তারপর তিনি মাথা
মাসাহ করলেন। নিজের দুই হাতকে সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। আবার পেছন থেকে
সামনের দিকে নিয়ে এলেন। আর এটা তিনি একবার করেছেন। অতঃপর টাখনু পর্যন্ত দুই পা ধুইলেন।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বুখারীরই এক বর্ণনার শব্দ হলো, অতঃপর তিনি
কুলি করলেন ও নাক ঝাড়লেন তিনবার এক কোষ পানি দিয়ে। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১৪) এ সময় বাম হাতের কনিষ্ঠা আংগুল দ্বারা পায়ের
আংগুল সমূহ খিলাল করবে। (আবুদাঊদ ১৪৮, তিরমিযী ৪০; মিশকাত ৪০৬-০৭)।
হাদিসঃ
মুস্তাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ (রাঃ)হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উযূ করার সময় দেখেছি
যে, তিনি বাম হাতের ছোট আঙ্গুল দিয়ে দুই পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০৭, ৪০৬, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৮, সহীহুল
জামি ৪৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(১৫) ওযূ শেষে বাম হাতে কিছু পানি নিয়ে লজ্জাস্থান
বরাবর ছিটিয়ে দিবে। (আবুদাঊদ ১৬৮, মিশকাত ৩৬১)।
হাদিসঃ
হাকাম ইবনু সুফ্ইয়ান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাব করার পর উযূ করতেন এবং নিজের লজ্জাস্থানে
পানি ছিটিয়ে দিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬১, সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৬৮, নাসায়ী ১৩৫, দারিমী ৭৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৬) অতঃপর দু‘আ পাঠ করবে। উল্লেখ্য যে, ওযূর অঙ্গগুলো
এক, দুই ও তিনবার ধোয়া যায়। এর বেশী ধোয়া যাবে না। (বুখারী ১৫৭, ১৫৮, ১৫৯; মিশকাত ৩৯৫,
৩৯৬, ৩৯৭)।
একবার ধোয়াঃ
হাদিসঃ
’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উযূর স্থানসমূহ) একবার
করে উযূ করলেন। একবারের অধিক ধুলেন না। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৫, আধুনিক প্রকাশনী ১৫৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ১৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)
দুইবার করে ধোয়াঃ
‘আবদুল্লাহ্ ইবন যায়দ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূতে দু’বার করে ধুয়েছেন।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৫,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনবার করে ধোয়াঃ
হুমরান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘উসমান ইবনু
আফফান (রাযি.)-কে দেখেছেন যে, তিনি পানির পাত্র আনিয়ে উভয় হাতের তালুতে তিনবার ঢেলে
তা ধুয়ে নিলেন। অতঃপর ডান হাত পাত্রের মধ্যে ঢুকালেন। তারপর কুলি করলেন ও নাকে পানি
দিয়ে নাক পরিষ্কার করলেন। তারপর তাঁর মুখমন্ডল তিনবার ধুয়ে এবং দু’হাত কনুই পর্যন্ত
তিনবার ধুলেন। অতঃপর মাথা মাসেহ করলেন। অতঃপর দুই পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। পরে
বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আমার মত
এ রকম উযূ করবে, অতঃপর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে, যাতে দুনিয়ার কোন খেয়াল করবে না,
তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫৯, ১৬০, ১৬৪, ১৯৩৪, ৬৪৩৩; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৬-৪২৭,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৬, আহমাদ ৪৯৩, ৫১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ওযূর ফজিলতসমূহ
হযরত ওছমান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গোসল করে এবং উত্তমরূপে ওযূ করে, তার শরীর হ’তে তার সকল
গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নীচ হ’তেও তা বের হয়ে যায়’। (মুসলিম হা/২৪৫; আহমাদ
হা/৪৭৬; মিশকাত হা/২৮৪)।
অন্যত্র এসেছে,
আবু
হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যখন কোন মুসলিম অথবা
মুমিন বান্দা ওযূ করে এবং তার চেহারা ধৌত করে, তখন তার চেহারা হ’তে পানির সাথে অথবা
পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার চোখের দ্বারা কৃত সকল গুনাহ বের হয়ে যায়। যা সে চোখ দিয়ে
দেখেছে। যখন সে তার দুই হাত ধৌত করে তখন তার দুই হাত দিয়ে করা সকল গুনাহ পানির সাথে
বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়। যা তার দু’হাত দিয়ে ধরার কারণে সংঘটিত হয়েছে।
অনুরূপভাবে সে যখন তার দুই পা ধৌত করে, তার পা দ্বারা কৃত গুনাহ সমূহ পানির সাথে অথবা
পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যে পাপের জন্য তার দু’পা হেঁটেছে। ফলে সে (ওযূর
জায়গা হ’তে উঠার সময়) সকল গুনাহ হ’তে পাক-পবিত্র হয়ে যায়’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৪; সহিহ আততিরমিযী
৪৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ক্বিয়ামতের মাঠে মহানবী (ছাঃ) উম্মতে
মুহাম্মাদীর ওযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উজ্জ্বল্য দেখে তাদেরকে চিনতে পারবে এবং হাউযে কাউছারে
পানি পান করানোর জন্য আগেই পৌঁছে যাবেঃ
হাদীছে এসেছে,
আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে এসে কবরবাসীদের সালাম দিলেন এবং বললেনঃ ’’আসসালামু আলাইকুম
দারা কাওমিম মুমিনীন ওয়াইন্না ইনশাআল্লাহ তাআলা বিকুম লাহিকুন’(ঈমানদার কবরবাসীরা!
তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। অচিরেই আল্লাহর মর্জি আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হবো)।
অতঃপর তিনি বলেনঃ নিশ্চয় আমাদের আকাঙ্ক্ষা এই যে, আমরা আমাদের ভাইদের দেখতে পাবো। তারা
বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বলেনঃ তোমরা আমার সাহাবী। আর যারা
আমাদের পরে আসবে তারা আমার ভাই। আমি তোমাদের আগেই হাওযের নিকট উপস্থিত হবো। তারা জিজ্ঞাসা
করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এমন লোকেদের আপনার উম্মাতরূপে কিভাবে চিনবেন, যারা এখনও
জন্মগ্রহণ করেনি?
তিনি বলেনঃ তোমরা কি দেখো না, যদি কোন ব্যক্তির
একটি সাদা পা ও সাদা পেশানীযুক্ত ঘোড়া অপর ব্যক্তির কোলো ঘোড়ার পালে মিশে যায়, তবে
সে কি তার ঘোড়াটি চিনতে পারবে না? তারা বলেন, হাঁ, নিশ্চয় চিনতে পারবে। তিনি বলেনঃ
তারা কিয়ামতের দিন উযুর বদৌলতে সাদা পেশানী ও সাদা হাত-পাবিশিষ্ট অবস্থায় আসবে। তিনি
আরো বলেনঃ আমি তোমাদের আগেই হাওয কাওছারে উপস্থিত হবো। একদল লোক আমার হাওয থেকে বিতাড়িত
হবে, যেমন পথভোলা উট বিতাড়িত হয়। আমি তাদেরকে ডেকে বলবোঃ তোমরা এদিকে এসো তোমরা এদিকে
এসো। তখন বলা হবে, এসব লোক আপনার পর (দীনকে) পরিবর্তন করেছে এবং অবিরত তারা তাদের পশ্চাতে
ফিরে গেছে। তখন আমি বলবোঃ সাবধান! দূর হও দূর হও। (সুনান
ইবনু মাজাহ ৪৩০৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭২,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৯, আহমাদ ৯০৩৭, আল-আহকাম ১৯০, ইরওয়া ৭৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
কষ্ট সত্বেও যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে
ওযূ করে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং পদ মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেনঃ
এ মর্মে হাদীছে এসেছে
ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতাইবাহ ও ইবনু হুজর
(রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের এমন কাজ জানাবো না, যা করলে আল্লাহ (বান্দার) পাপরাশি
দূর করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন। তিনি
বললেন অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদে আসার জন্যে বেশি পদচারণা
করা এবং এক সালাতের পর আর এক সালাতের জন্যে প্রতীক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হল সীমান্ত
প্রহরা। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ওযূর দো‘আর ফজিলত
যে
ব্যক্তি পূর্ণভাবে ওযূ করবে এবং শেষে ওযূর দো‘আ পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের সব কয়টি
দরজা খুলে দেওয়া হবে। সে যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছামত প্রবেশ করতে পারবে। ওমর ইবনুল খাত্তাব
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযূ
করার পর বলবে,
‘(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন
প্রকৃত ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ
(ছাঃ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। হে আল্লাহ আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর এবং
আমাকে পবিত্রতা অর্জনকারী অন্তর্ভুক্ত কর)। তাঁর জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া
হবে। যেটা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে’। (মুসলিম হা/২৩৪; তিরমিযী হা/৫৫; মিশকাত হা/২৮৯)।
হাদিসঃ
’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি
উযূ করবে এবং উত্তমভাবে অথবা পরিপূর্ণভাবে
উযূ করবে, এরপর বলবেঃ
“আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আন্না
মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়া রসূলুহ”
অর্থাৎ- ’আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া
প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা
ও রসূল’। আর এক বর্ণনায় আছেঃ
“আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ
লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়া রসূলুহ”
(অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত
প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি,
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল।) তার জন্য জান্নাতের
আটটি দরজা খুলে যাবে। এসব দরজার যেটি দিয়ে খুশী সে সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৯, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫৫,
সহীহুল জামি ৬১৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ওযু বিষয়ক ভ্রান্ত ধারণা
ওযূর শুরুতে মুখে নিয়ত বলা
মুখে নিয়ত বলার শারঈ কোন বিধান নেই। রাসূল
(ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এ ধরনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এটি মানুষের তৈরী বিধান।
অতএব তা পরিত্যাগ করে মনে মনে নিয়ত করতে হবে। (ছহীহ বুখারী হা/১; ছহীহ মুসলিম হা/৫০৩৬;
মিশকাত হা/১)।
উল্লেখ্য যে, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)-এর
নামে প্রকাশিত ‘পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা ও যরূরী মাসআলা মাসায়েল’ নামক বইয়ে বলা হয়েছে
যে, ক্বিবলার দিকে মুখ করে উঁচু স্থানে বসে ওযূ করতে হবে। (হযরত মাওলানা আশরাফ আলী
থানবী (রহঃ), ‘পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা ও জরুরী মাসআলা মাসায়েল’, সংকলনে ও সম্পাদনায়-
মাওলানা আজিজুল হক (ঢাকা : মীনা বুক হাউস, ৪৫, বাংলা বাজার, চতুর্থ মুদ্রণ-আগস্ট ২০০৯),
পৃঃ ৪২; উল্লেখ্য যে, মাওলানার নামে বহু রকমের ছালাত শিক্ষা বইয়ের বাংলা অনুবাদ বাজারে
চালু আছে। কোন্টি যে আসল অনুবাদ তা আল্লাহই ভাল জানেন)।
অথচ উক্ত কথার প্রমাণে কোন দলীল পেশ করা হয়নি।
উক্ত দাবী ভিত্তিহীন।
ওযূর শুরুতে “বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রাহীম
আল-ইসলামু হাক্কুন, ওয়াল কুফরু বাতিলুন, আল-ঈমানু নূরুন, ওয়াল কুফরু যুলমাতুন’ দু‘আ
পাঠ করা”
উক্ত দু‘আর প্রমাণে কোন ছহীহ দলীল নেই। যদিও
মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) উক্ত দু‘আর সাথে আরো কিছু বাড়তি কথা যোগ করে তার বইয়ে
উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কোন প্রমাণ উল্লেখ করেননি। (পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪৩)।
এটা পড়লে সুন্নাতের বিরোধিতা করা হবে। উক্ত
দু‘আটি দেশের বিভিন্ন মসজিদের ওযূখানায় লেখা দেখা যায়। উক্ত দু‘আ হতে বিরত থাকতে হবে।
বরং ওযূর শুরুতে শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হবে। (ছহীহ তিরমিযী হা/২৫, ১/১৩ পৃঃ; ছহীহ
ইবনে মাজাহ হা/৩৯৭, পৃঃ ৩২, সনদ হাসান)।
হাদিসঃ
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি উযূর সময় আল্লাহ্র নাম স্মরণ করেনি তার উযূ হয়নি।
(সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০৪,
দারিমী ৬৯১, ইরওয়াহ ৮১, সহীহ আবূ দাউদ ৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রতিটি অঙ্গ ধৌত করার সময় পৃথক পৃথক দু‘আ পড়াঃ
ওযূর প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় পৃথক পৃথক
দু‘আ পড়তে হবে মর্মে আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি কোন দলীল পেশ করেননি।
অন্য শব্দে একটি জাল হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
(রাসূল (ছাঃ) বলেন) হে আনাস! তুমি আমার নিকটবর্তী
হও, তোমাকে ওযূর মিক্বদার শিক্ষা দিব। অতঃপর আমি তার নিকটবর্তী হলাম। তখন তিনি তাঁর
দুই হাত ধৌত করার সময় বললেন, ‘বিসমিল্লা-হি ওয়াল হামদুল্লিা-হি ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা
ইল্লা বিল্লা-হি’। যখন তিনি ইস্তিঞ্জা করলেন তখন বললেন, ‘আল্লা-হুম্মা হাছ্ছিন ফারজী
ওয়া ইয়াস্সিরলী আমরী’। যখন তিনি ওযূ করেন ও নাক ঝাড়েন তখন বললেন, ‘আল্লা-হুম্মা লাক্কিনী
হুজ্জাতী ওয়ালা তারহামনী রায়েহাতাল জান্নাতি’। যখন তার মুখমন্ডল ধৌত করেন তখন বললেন,
‘আল্লা-হুম্মা বাইয়িয ওয়াজহী ইয়াওমা তাবইয়ায্যু উজূহুওঁ’। যখন তিনি দুই হাত ধৌত করলেন
তখন বললেন, ‘আল্লাহুম্মা আ‘ত্বিনী কিতাবী ইয়ামানী’। যখন হাত দ্বারা মাসাহ করলেন তখন
বললেন, ‘আল্লা-হুম্মা আগিছনা বিরহমাতিকা ওয়া জান্নিবনা আযাবাকা’। যখন তিনি দুই পা ধৌত
করলেন তখন বললেন, ‘আল্ল-হুম্মা ছাবিবত ক্বাদামী ইয়াওমা তাযিল্লু ফীহি আক্বদাম’।
অতঃপর তিনি বলেন, হে আনাস! ঐ সত্তার কসম করে
বলছি, যিনি আমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, যে বান্দা ওযূ করার সময় এই দু‘আ বলবে, তার
আঙ্গুল সমূহের ফাঁক থেকে যত ফোঁটা পানি পড়বে তার প্রত্যেক ফোঁটা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা
একজন করে ফেরেশতা তৈরি করবেন। সেই ফেরেশতা সত্তরটি জিহবা দ্বারা আল্লাহর তাসবীহ বর্ণনা
করবেন। এই ছওয়াব ক্বিয়ামত পর্যন্ত হতে থাকবে। (তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩২; আল-ফাওয়াইদুল
মাজমূ‘আহ, পৃঃ ১৩, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, হা/৩৩)।
তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি
জাল। এর সনদে উবাদা বিন ছুহাইব ও আহমাদ বিন হাশেমসহ কয়েকজন মিথ্যুক রাবী রয়েছে। ইমাম
বুখারী, নাসাঈ, দারাকুৎনীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছও তাদেরকে পরিত্যক্ত বলেছেন। ইমাম নববী
বলেন, এই বর্ণনাটি বাতিল, এর কোন ভিত্তি নেই। (তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩২; আল-ফাওয়াইদুল
মাজমূ‘আহ, পৃঃ ১৩, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, হা/৩৩)।
ওযূর পানি পাত্রের মধ্যে পড়লে উক্ত পানি দ্বারা ওযূ হবে না বলে বিশ্বাস
করাঃ
এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। আশরাফ আলী থানবী
(রহঃ) লিখেছেন, ‘উঁচু স্থানে বসবে, যেন ওযূর পানির ছিটা শরীরে আসতে না পারে’। (পূর্ণাঙ্গ
নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪২)।
অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পাত্রের মধ্যে হাত ডুবিয়ে
দিতেন আবার বের করতেন। এভাবে তিনি ওযূ করতেন। (বুখারী হা/১৮৬, ১/৩১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮৬,
১/১১৯ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/৫৭৮; ১/১২৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪৪৬); মিশকাত হা/৩৯৪, ৪১১, পৃঃ
৪৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬২, ২য় খন্ড, পৃঃ ৭৭)।
ত্রুটিপূর্ণ কথা বললে ওযূ নষ্ট হয়ে যায়। ওযূর সময় কথা বললে ফেরেশতারা রুমাল
নিয়ে চলে যায়ঃ
ওযূকারীর মাথার উপর চারজন ফেরেশতা রুমাল নিয়ে
ছায়া করে রাখে। পর পর চারটি কথা বললে রুমাল নিয়ে চলে যায় বলে যে কাহিনী সমাজে প্রচলিত
আছে, তা উদ্ভট, মিথ্যা ও কাল্পনিক। তাছাড়া খারাপ কথা বললে ওযূ নষ্ট হয়ে যায় এ আক্বীদাও
ঠিক নয়। এ মর্মে যে হাদীছ রয়েছে তা জাল।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, অপবিত্রতা দুই প্রকার। জিহবার ও লজ্জাস্থানের অপবিত্রতা। দুইটি এক সমান নয়।
লজ্জাস্থানের অপবিত্রতার চেয়ে জিহবার অপবিত্রতা বেশী। আর এর কারণে ওযূ করতে হবে। (আব্দুর
রহমান ইবনু আলী ইবনিল জাওযী, আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ ফিল আহাদীছিল ওয়াহিয়াহ (বৈরুত
: দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪০৩), হা/৬০৪; দায়লামী ২/১৬০, হা/২৮১৪; ইমাম সুয়ূত্বী,
জামিউল আহাদীছ হা/১১৭২৬)।
তাহকবীক্ব:
হাদীছটি বাতিল। (জাওয়াযকানী, আল-আবাতিল ১/৩৫৩ পৃঃ)।
এর সনদে বাক্বিয়াহ নামক রাবী রয়েছে, সে ত্রুটিপূর্ণ।
সে দুর্বল রাবীদের নিকট থেকে হাদীছ বর্ণনাকারী। রাসূল (ছাঃ) থেকে উক্ত মর্মে কোন ছহীহ
হাদীছ বর্ণিত হয়নি। (আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ হা/৬০৪-এর আলোচনা দ্রঃ)।
কুলি করার জন্য আলাদা পানি নেওয়াঃ
সুন্নাত হল হাতে পানি নিয়ে একই সঙ্গে মুখে
ও নাকে পানি দেয়া। রাসূল (ছাঃ) এভাবেই ওযূ করতেন। ‘তিনি এক অঞ্জলি দ্বারাই কুলি করেন
ও নাক পরিষ্কার করেন’। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ বুখারী হা/১৯১, ১/৩১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৯০,
১/১২১ পৃঃ), ‘ওযূ’ অধ্যায়, ‘এক অঞ্জলি পানি দিয়ে মুখ ও নাক পরিষ্কার করা’ অনুচ্ছেদ;
ছহীহ মুসলিম হা/৫৭৮, ১/১২৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪৪৬); মিশকাত হা/৩৯৪ ও ৪১২, পৃঃ ৪৫; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/৩৬২, ২য় খন্ড, পৃঃ ৭৭)।
আলাদাভাবে পানি নেওয়ার যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে
তা যঈফ। যেমন-
ত্বালহা (রাঃ) তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে
বর্ণনা করেন, আমি যখন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম তখন তিনি ওযূ করছিলেন। আর পানি তাঁর
মুখমন্ডল ও দাড়ি থেকে তাঁর বুকে পড়ছিল। অতঃপর আমি তাকে দেখলাম, তিনি কুলি করা ও নাকে
পানি দেওয়ার সময় পৃথক করলেন। (আবুদাঊদ হা/১৩৯, ১/১৮-১৯ পৃঃ; বুলূগুল মারাম হা/৪৯, পৃঃ
১৮)।
তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে লাইছ ও মুছাররফ
নামের দু’জন রাবী রয়েছে, যারা ত্রুটিপূর্ণ। এছাড়াও আরো ত্রুটি রয়েছে। এই হাদীছ যঈফ
হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিছগণ একমত। (যঈফ আবুদাঊদ হা/১৩৯-এর আলোচনা দ্রঃ)।
শায়খ ছফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, তালক
বিন মুছাররফের হাদীছ পৃথক করা প্রমাণ করে, কিন্তু তা যঈফ। (শরহে বুলূগুল মারাম, পৃঃ
২৬)।
কান মাসাহ করার সময় নতুন পানি নেওয়াঃ
ওযূতে কান মাসাহ করার ক্ষেত্রে মাথা ও কান
একই সঙ্গে একই পানিতে মাসাহ করবে। ‘অতঃপর রাসূল (ছাঃ) এক অঞ্জলি পানি নিতেন এবং হাত
ঝাড়তেন। তারপর এর দ্বারা তাঁর মাথা ও কান মাসাহ করতেন’। (ছহীহ আবুদাঊদ হা/১৩৭, ১/১৮
পৃঃ)।
এ জন্য পৃথকভাবে নতুন পানি নেওয়ার প্রয়োজন
নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘দুই কান মাথার অন্তর্ভুক্ত’। (তিরমিযী হা/৩৭, ১/১৬ পৃঃ; ইবনু
মাজাহ হা/৪৪৩ ও ৪৪৪, পৃঃ ৩৫, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৬; ইরওয়াউল গালীল হা/৮৪)।
তাছাড়া বায়হাক্বীতেও একই পানিতে মাথা ও কান
মাসাহ করার ছহীহ হাদীছ এসেছে। (বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/২৫৬; নাসাঈ, আস-সুনানুল
কুবরা হা/১৬১, সনদ ছহীহ)।
নতুনভাবে পানি নেয়ার হাদীছটি ছহীহ নয়। যেমন-
(ক) আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছেন যে, পানি দ্বারা মাথা মাসাহ করেছেন। অতঃপর তা ব্যতীত কান মাসাহ
করার জন্য পৃথক পানি নিয়েছেন। (বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১৯১, ১/২২৯
পৃঃ; বলূগুল মারাম হা/৩৯, পৃঃ ২৩)।
তাহক্বীক্ব: উক্ত
শব্দে বর্ণিত হাদীছ যঈফ। উল্লেখ্য যে, উক্ত বর্ণনার পরে হাদীছটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে
ইমাম তিরমিযী ও বায়হাক্বীর যে মন্তব্য ইবনু হাজার আসক্বালানী তুলে ধরেছেন তা মূলতঃ
এই হাদীছের ক্ষেত্রে নয়; বরং হাত ধৌত করার পর নতুন করে পানি নিয়ে মাথা ও কান মাসাহ
করা সংক্রান্ত হাদীছটির ব্যাপারে, যা ছহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। (ছহীহ মুসলিম হা/৫৮২,
১/১২৩ পৃঃ)।
তাই আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন,
‘সমালোচনা থেকে মুক্ত এমন কোন মারফূ হাদীছ
এ ব্যাপারে আছে বলে আমি অবগত নই, যার দ্বারা নতুন পানি নিয়ে কান মাসাহ করা যাবে’।
(তুহফাতুল আহওয়াযী ১/১২২ পৃঃ, হা/২৮-এর আলোচনা; বিস্তারিত আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ
হা/১০৪৬ ও ৯৯৫; মাজমূউ ফাতাওয়া আলবানী, পৃঃ ৩৬)।
(খ) নাফে‘ বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) যখন ওযূ করতেন,
তখন কান মাসাহ করার জন্য দুই আঙ্গুলে পানি নিতেন। (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩১৪;
মুওয়াত্ত্বা হা/৯২)।
তাহক্বীক্ব: এ বর্ণনাটিও যঈফ। বায়হাক্বীর মুহাক্কিক
মুহাম্মাদ আব্দুল কবাদির ‘আতা বলেন, রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, দুই কান মাথার
অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং ঐ হাদীছগুলো যঈফ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। (বায়হাক্বী হা/৩১৭-এর ভাষ্য
দ্রঃ)।
উল্লেখ্য যে, ইবনু ওমর (রাঃ)-এর ব্যক্তিগত
আমলকে ইবনুল ক্বাইয়িম ছহীহ বলতে চেয়েছেন। কিন্তু উক্ত ত্রুটি থাকার কারণে তা যঈফ। যেমন
তিনি বলেন,
‘রাসূল (ছাঃ) দুই কান মাসাহ করার জন্য নতুন
পানি নিয়েছেন এমন হাদীছ প্রমাণিত হয়নি। তবে ইবনু ওমর থেকে সেটা ছহীহ হিসাবে বর্ণিত
হয়েছে’। (ইমাম শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ১/২০০ পৃঃ; বুলূগুল মারাম, পৃঃ ২৩-এর উক্ত হাদীছের
ভাষ্য দ্রঃ)।
শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,
‘দুই কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নেওয়ার
প্রয়োজন নেই। বরং মাথা মাসহের জন্য নেয়া পানির সিক্ততা দিয়েই দুই কান মাসাহ করা জায়েয’।
(সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৬-এর ভাষ্য দ্রঃ)।
অতএব কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নেওয়ার
প্রয়োজন নেই; বরং মাথা ও কান একই সঙ্গে মাসাহ করতে হবে।
জ্ঞাতব্য: অনেকে কান মাসাহকে ফরয বলেন না।
অথচ কানসহ মাথা মাসাহ করা ফরয। কারণ দুই কান মাথার অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘দুই কান মাথার অন্তর্ভুক্ত’। (তিরমিযী হা/৩৭, ১/১৬ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৪৪৩ ও ৪৪৪,
পৃঃ ৩৫, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৬; ইরওয়াউল গালীল হা/৮৪)।
তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) একই পানিতে মাথা ও কান
মাসাহ করতেন। যেমন-
‘অতঃপর
তিনি এক অঞ্জলি পানি নিতেন এবং মাথা ও দুই কান মাসাহ করতেন’। (ছহীহ আবুদাঊদ হা/১৩৭;
বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/২৫৬; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা হা/১৬১, সনদ ছহীহ)।
মাথা ও কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি না নেওয়াঃ
অনেকে দুই হাত ধৌত করার পর সরাসরি মাথা মাসাহ
করে, নতুন পানি নেয় না। যেমন আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) বলেছেন, ‘কান ও মাথা মাছহে করার
জন্য নতুন পানি নেয়ার প্রয়োজন নেই, ভেজা হাত দ্বারাই মাছহে করবে’। (পূর্ণাঙ্গ নামায
শিক্ষা, পৃঃ ৪২)।
এটি সুন্নাতের বরখেলাফ। কারণ রাসূল (ছাঃ) দুই
হাত ধৌত করার পর নতুন পানি নিয়ে মাথা ও কান মাসাহ করতেন। যেমন- ‘হাতের অতিরিক্ত পানি
ছাড়াই তিনি নতুন পানি দ্বারা তাঁর মাথা মাসাহ করতেন’। (ছহীহ মুসলিম হা/৫৮২, ১/১২৩ পৃঃ,
‘নবী (ছাঃ)-এর ওযূ’ অনুচ্ছেদ)।
মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসাহ করাঃ
মাথা মাসাহ করার ব্যাপারে অবহেলা ও উদাসীনতা
লক্ষ্য করা যায়। কেউ চুল স্পর্শ করাকেই মাসাহ মনে করেন, কেউ মাথার চার ভাগের একভাগ
মাসাহ করেন এবং কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যায় নেমে পড়েন। কুদূরী ও হেদায়ার লেখক চার ভাগের
এক ভাগ মাসাহ করার কথা উল্লেখ করেছেন। আর দলীল হিসাবে পেশ করেছেন ছহীহ মুসলিমের হাদীছ।
অথচ উক্ত হাদীছে পাগড়ী থাকা অবস্থায় মাসাহ করা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য,
কুদূরী এবং হেদায়াতে মুগীরা (রাঃ)-এর নামে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তা ভুল হয়েছে। (দ্রঃ
ছহীহ মুসলিম হা/৬৪৭, ১/১৩৩ পৃঃ ও হা/৬৫৬, ১/১৩৪ পৃঃ)।
যা হেদায়ার টীকাতেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তারা
দুইটি হাদীছকে একত্রে মিশ্রিত করে উল্লেখ করেছেন। (আবুল হাসান বিন আহমাদ বিন জা‘ফর
আল-বাগদাদী আল-কুদূরী, মুখতাছারুল কুদূরী (ঢাকা): ইসলামিয়া কুতুবখানা, বাংলাবাজার ১৯৮২/১৪০৩),
পৃঃ ৩; শায়খুল ইসলাম বুরহানুদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবনু আবী বকর আল-মারগীনানী (৫১১-৫৯৩
হিঃ), আল-হেদায়াহ (নাদিয়াতুল কুরআন কুতুবখানা (১৪০১), ১/১৭ পৃঃ; বঙ্গানুবাদ (ঢাকা
: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় সংস্করণ : মার্চ ২০০৬), ১/৬ পৃঃ)।
সুধী পাঠক!
শরী‘আতের ব্যাখ্যা হিসাবে রাসূল (ছাঃ) সুন্দরভাবে মাথা মাসাহ করার পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন।
কারণ পবিত্র কুরআন তাঁর উপরই নাযিল হয়েছে। আর তিনি মাথার সামনের দিক থেকে শুরু করে
পিছনে চুলের শেষ পর্যন্ত দুই হাত নিয়ে যেতেন এবং সেখান থেকে সামনে নিয়ে এসে শেষ করতেন।
এভাবে তিনি পুরো মাথা মাসাহ করতেন। যেমন-
‘অতঃপর তিনি তাঁর দুই হাত দ্বারা মাথা মাসাহ
করেন। এতে দুই হাত তিনি সামনে করেন এবং পিছনে নেন। তিনি মাথার অগ্রভাগ থেকে শুরু করে
ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যেতেন অতঃপর যে স্থান থেকে শুরু করেছিলেন সেখানে আবার ফিরিয়ে নিয়ে
আসেন’। (ছহীহ বুখারী হা/১৮৫, ১/৩১ পৃঃ; বুখারী (ইফাবা হা/১৮৫); মুত্তাফাক্ব আলাইহ,
মিশকাত হা/৩৯৪, পৃঃ ৪৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬২, ২/৭৮ পৃঃ; ছহীহ তিরমিযী হা/৩৪)।
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৪১ হিঃ) বলেন,
‘রাসূল (ছাঃ) কখনো মাথার কিছু অংশ মাসাহ করেছেন
মর্মে কোন একটি হাদীছ থেকেও প্রমাণিত হয়নি’। (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/১৮৫ পৃঃ,
‘মাসাহ করার বর্ণনা’)।
উল্লেখ্য, পাগড়ী পরা অবস্থায় থাকলে মাথার অগ্রভাগ
মাসাহ করা যাবে। (ছহীহ মুসলিম হা/৬৫৬, ৫৭, ৫৯, ১/১৩৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫২৪ ও ৫২৫); মিশকাত
হা/৩৯৯, পৃঃ ৪৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬৭, ২/৮১ পৃঃ; ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ
১/১৮৫ পৃঃ, ‘মাসাহ করার বর্ণনা’)।
আরো উল্লেখ্য যে, পাগড়ীর নীচে মাসাহ করতেন
বলে আবুদাঊদে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ। (যঈফ আবুদাঊদ হা/১৪৭, ১/১৯-২০ পৃঃ; যঈফ
ইবনে মাজাহ হা/৫৬৪)।
ওযূতে ঘাড় মাসাহ করাঃ
ওযূতে ঘাড় মাসাহ করার পক্ষে ছহীহ কোন প্রমাণ
নেই। এর পক্ষে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, সবই জাল ও মিথ্যা। অথচ কিছু আলেম এর পক্ষে মুসলিম
জনতাকে উৎসাহিত করেছেন। আশরাফ আলী থানবী ঘাড় মাসাহ করার দাবী করেছেন এবং এ সময় পৃথক
দু‘আ পড়ার কথা উল্লেখ করেছেন। (পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪২ ও ৪৪)।
ড. শাইখ মুহাম্মাদ ইলিয়াস ফয়সাল (মদ্বীনা মুনাওয়ারাহ)
প্রণীত ও মারকাযুদ-দাওয়াহ আল-ইসলামিইয়াহ, ঢাকার শিক্ষক মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া
আব্দুল্লাহ অনুদিত ‘নবীজীর নামায’ বইয়ে ওযূর সুন্নাত আলোচনা করতে গিয়ে গর্দান মাসাহ
করার কথা বলেছেন। এর পক্ষে জাল হাদীছও পেশ করেছেন। (ঐ, (ঢাকা: মুমতায লাইব্রেরী, ১১,
বাংলাবাজার, দ্বিতীয় সংস্করণ, জানুয়ারী ২০১০), পৃঃ ১১৪-১১৫)।
এভাবেই ভিত্তিহীন আমলটি সমাজে বিস্তার লাভ
করেছে। জাল দলীলগুলো নিম্নরূপ :
(ক) ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর ওযূর
পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করেন। ..অতঃপর তিনি তিনবার তার মাথা মাসাহ করেন এবং দুই কানের
পিঠ মাসাহ করেন ও ঘাড় মাসাহ করেন, দাড়ির পার্শ্ব মাসাহ করেন মাথার অতিরিক্ত পানি দিয়ে।
(ত্বাবারাণী কাবীর হা/১৭৫৮৪, ২২/৫০)।
তাহক্বীক্ব: مِنْ كَلاَمِ النَّبِىِّ ‘এটা জাল। নবী (ছাঃ)-এর
বক্তব্য নয়। (আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ১/৪৬৫ পৃঃ)।
বর্ণনাটি জাল। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৯ ও ৭৪৪)।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,
(খ) আমর ইবনু কা‘ব বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে
ওযূ করার সময় আমি দাড়ির পার্শ্ব এবং ঘাড় মাসাহ করতে দেখেছি। (ত্বাবারাণী কাবীর ১৯/১৮১)।
তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল। ইবনুল ক্বাত্ত্বান
বলেন, এর সনদ অপরিচিত। মুছাররফসহ তার পিতা ও দাদা সবাই অপরিচিত। (লিসানুল মীযান ৬/৪২
পৃঃ; তানক্বীহ, পৃঃ ৮৩)।
(গ) ত্বালহা ইবনু মুছাররফ তার পিতার সূত্রে তার
দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছি তিনি একবার তাঁর মাথা মাসাহ করতেন
এমনকি তিনি মাথার পশ্চাদ্ভাগ পর্যন্ত পৌঁছাতেন। আর তা হল ঘাড়ের অগ্রভাগ। (আবুদাঊদ হা/১৩২,
১/১৭-১৮ পৃঃ)।
তাহক্বীক্ব:
হাদীছটি মুনকার বা অস্বীকৃত। মুসাদ্দাদ বলেন, তিনি মাথার সামনের দিক থেকে পিছনের দিক
পর্যন্ত মাসাহ করেন এমনকি তার দুই হাত কানের নিচ দিয়ে বের করে নেন’ এই কথা ইয়াহইয়ার
কাছে বর্ণনা করলে তিনি একে অস্বীকৃতি জানান। ইমাম আবুদাঊদ বলেন, আমি ইমাম আহমাদকে বলতে
শুনেছি, ইবনু উ‘আইনাহ বলতেন, মুহাদ্দিছগণ ধারণা করতেন এটা ছহীহ হাদীছের বিরোধী। তিনি
এটাও বলতেন, ত্বালহা তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে এ কথা কোথায় পেল? (যঈফ আবুদাঊদ
হা/১৩২-এর আলোচনা দ্রঃ)।
(ঘ) ‘ঘাড় মাসাহ করলে বেড়ী থেকে নিরাপদ থাকবে’।
তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল। (সিলসিলা যঈফাহ
হা/৬৯, ১/১৬৮ পৃঃ)।
ইমাম সুয়ূত্বী জাল হাদীছের গ্রন্থে হাদীছটি
বর্ণনা করেছেন। (হাফেয জালালুদ্দীন আস-সুয়ূত্বী, আল-লাআলিল মাছনূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ,
পৃঃ ২০৩, দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ ১/১৬৮ পৃঃ)।
(ঙ) ‘যে ব্যক্তি ওযূ করবে এবং ঘাড় মাসাহ করবে,
তাকে ক্বিয়ামতের দিন বেড়ী দ্বারা বাঁধা হবে না’। (আবু নু‘আইম, তারীখুল আছবাহান ২/১১৫
পৃঃ)।
তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। (সিলসিলা
যঈফাহ হা/৭৪৪, ২/১৬৭ পৃঃ)।
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী উক্ত বর্ণনাকে
জাল বলেছেন। (আল-মাছনূ‘ ফী মা‘রেফাতিল হাদীছিল মাওযূ‘, পৃঃ ৭৩, দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ
১/১৬৯ পৃঃ)।
উক্ত বর্ণনায় মুহাম্মাদ ইবনু আমল আল-আনছারী
ও মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনে মুহাররম নামের দু’জন রাবী ত্রুটিপূর্ণ। মুহাদ্দিছগণ তাদেরকে
দুর্বল বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। (সিলসিলা যঈফাহ ১/১৬৯ পৃঃ)।
উল্লেখ্য যে, ঘাড় মাসাহ করা সম্পর্কে এ ধরনের
মিথ্যা বর্ণনা আরো আছে। এর দ্বারা প্রতারিত হওয়া যাবে না। বরং ঘাড় মাসাহ করার অভ্যাস
ছেড়ে দিতে হবে।
ওযূর পর অঙ্গ মুছতে নিষেধ করাঃ
ওযূ করার পর রুমাল, গামছা কিংবা কাপড় দ্বারা
অঙ্গ মুছতে পারে। এটা ইচ্ছাধীন। (বায়হাক্বী, সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০৯৯; ইবনু
মাজাহ হা/৪৬৮; আওনুল মা‘বূদ ১/৪১৭-১৮ পৃঃ)।
যে
বর্ণনায় অঙ্গ মুছতে নিষেধ করা হয়েছে, তা জাল বা মিথ্যা।
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), আবুবকর,
ওমর, আলী এবং ইবনু মাসঊদ (রাঃ) ওযূর পর রুমাল দিয়ে মুখ মুছতেন না। (ইবনু শাহীন, নাসিখুল
হাদীছ ওয়া মানসূখাহু, পৃঃ ১৪৫, দ্রঃ যাকারিয়া বিন গুলামা ক্বাদের পাকিস্তানী, তানকীহুল
কালাম ফিল আহাদীছিয যঈফাহ ফী মাসাইলিল আহকাম (বৈরুত : দারু ইবনে হাযম, ১৯৯৯/১৪২০),
পৃঃ ৯৬)।
তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল। এর সনদে সাঈদ বিন
মাইসারা নামে একজন রাবী রয়েছে। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছও তাকে মিথ্যুক
বলেছেন। ইবনু হিববান তাকে জাল হাদীছের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইমাম বুখারী তাকে মুনকার
বলেছেন। (আওনুল মা‘বূদ ১/২৮৭ পৃঃ; নায়লুল আওত্বার ১/২২০ পৃঃ; নাসিখুল হাদীছ ওয়া মানসূখাহু,
পৃঃ ১৪৫)।
উল্লেখ্য, উক্ত মর্মে যঈফ হাদীছও আছে।
হাত ধোয়ার সময় কনুই-এর উপরে আরো বেশী করে বাড়িয়ে ধৌত করাঃ
হাত ধৌত করতে হবে কুনই পর্যন্ত। এর বেশি নয়।
আল্লাহর নির্দেশ এটাই (সূরা মায়েদাহ ৬)। হাদীছের শেষে ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করার যে বক্তব্য
এসেছে, তার উদ্দেশ্য অঙ্গ বাড়িয়ে ধৌত করা নয়; বরং ভালভাবে ওযূ সম্পাদন করা। (সিলসিলা
ছহীহাহ হা/২৫২ নং-এর ভাষ্য দ্রঃ, উল্লেখ্য, উক্ত অংশটুকু সংযোজনের ক্ষেত্রে ত্রুটি
সাব্যস্ত হয়েছে বলেও মুহাদ্দিছগণ উল্লেখ করেছেন। (দ্রষ্টব্য আহমাদ হা/৮৩৯৪; ইবনু হাজার
আসক্বালানী, ফাতহুল বারী হা/১৩৬-এর আলোচনা, ‘ওযূর ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; ইরওয়াউল গালীল ১/১৩৩
পৃঃ)।
চামড়ার মোজা ছাড়া মাসাহ করা যাবে না বলে ধারণা করাঃ
উক্ত ধারণা সঠিক নয়। বরং যেকোন পবিত্র মোজার
উপর মাসাহ করা যাবে। (ছহীহ আবুদাঊদ হা/১৫৯, ১/২১ পৃঃ; ছহীহ তিরমিযী হা/৯৯; সনদ ছহীহ,
মিশকাত হা/৫২৩, পৃঃ ৫৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৮৮, ২/১৩২ পৃঃ)।
হাদীছে কোন নির্দিষ্ট মোজার শর্তারোপ করা হয়নি।
(আলোচনা দ্রঃ ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউ ফাতাওয়া ১/২৬২ পৃঃ; আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাত্বাব,
পৃঃ ১৪-১৫)।
মোজার উপরে ও নীচে মাসাহ করাঃ
অনেককে মোজার উপরে-নীচে উভয় দিকে মাসাহ করতে
দেখা যায়। অথচ সুন্নাত হল মোজার উপরে মাসাহ করা। (ছহীহ বুখারী হা/১৮২, ১/৩০ পৃঃ, (ইফাবা
হা/১৮২, ১/১১৫ পৃঃ); মুসলিম হা/৬৪৯; ছহীহ আবুদাঊদ হা/১৬১ ও ১৬২, ১/২২ পৃঃ; তিরমিযী
হা/৯৮, ১/২৮-২৯ পৃঃ)।
উপরে-নীচে উভয় দিকে মাসাহ করা সংক্রান্ত যে
হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তার সনদ যঈফ এবং ছহীহ হাদীছের বিরোধী। যেমন-
মুগীরা ইবনু শু‘বা (রাঃ) বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে
রাসূল (ছাঃ)-কে ওযূ করিয়েছি। তিনি দুই মোজার উপরে এবং নীচে মাসাহ করেছেন। (আবুদাঊদ
হা/১৬৫, ১/২২ পৃঃ; তিরমিযী হা/৯৭, ১/২৮ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৫৫০, পৃঃ ৪২; মিশকাত হা/৫২১,
পৃঃ ৫৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৮৬, ২/১৩১ পৃঃ)।
তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী বলেন, ‘এই
হাদীছটি ত্রুটিপূর্ণ। আমি ইমাম আবু যুর‘আহ ও ইমাম বুখারীকে এই হাদীছ সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করলে তারা বলেন, এই হাদীছ ছহীহ নয়। ইমাম আবুদাঊদও একে দুর্বল বলেছেন। (তিরমিযী হা/৯৭,
১/২৮ পৃঃ)।
এই হাদীছের সনদে ছাওর নামক একজন রাবী রয়েছে।
ইমাম আবুদাঊদ বলেন, সে রাজা ইবনু হাইওয়া থেকে না শুনেই বর্ণনা করেছে। (যঈফ আবুদাঊদ
হা/১৬৫, ১/২২ পৃঃ)।
জ্ঞাতব্য: বর্তমানে অনেকেই মোজা পরিহিত অবস্থায়
টাখনুর নীচে লুঙ্গি-প্যান্ট পরিধান করাকে জায়েয বলছেন ও পরিধান করছেন। এটা শরী‘আতকে
ছোট করার মিথ্যা কৌশল মাত্র। পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির সাথে আপোস করে তারা রাসূল (ছাঃ)-এর
আদর্শকে নস্যাৎ করতে চায়। এই মিথ্যা কৌশল থেকে সাবধান থাকতে হবে।
ওযূর পর আকাশের দিকে তাকিয়ে দু‘আ পড়াঃ
ওযূর দু‘আ পড়ার সময় আকাশের দিকে তাকানোর প্রয়োজন
নেই। উক্ত মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।
উক্ববা বিন আমের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযূ করল, অতঃপর আকাশের দিকে চোখ তুলে দু‘আ পড়ল, তার জন্য জান্নাতের
আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। যেকোন দরজা দিয়ে সে প্রবেশ করতে পারবে। (আহমাদ হা/১২১; মুন্তাখাব
হাদীস, পৃঃ ২৯৩)।
তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি
মুনকার। ‘আকাশের দিকে তাকানো’ অংশটুকু ছহীহ হাদীছের বিরোধী। তাই শায়খ আলবানী (রহঃ)
বলেন, ‘এই অতিরিক্ত অংশটুকু অস্বীকৃত। কারণ ইবনু আম আবী উক্বাইল এককভাবে বর্ণনা করেছে।
সে অপরিচিত’। (ইরওয়াউল গালীল হা/৯৬-এর আলোচনা দ্রঃ, ১/১৩৫ পৃঃ)।
ওযূর পরে সূরা ক্বদর পড়াঃ
ওযূর পর সূরা ক্বদর পড়া যাবে না। উক্ত মর্মে
যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি
তার ওযূর পর ‘ইন্না আনযালনা-হু ফী লায়লাতিল ক্বাদরি’ অর্থাৎ সূরা ক্বদর একবার পাঠ করবে
সে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হবে, যে দুই বার পাঠ করবে তার নাম শহীদদের দফতরে লিখা হবে
এবং যে ব্যক্তি তিনবার পাঠ করবে আল্লাহ তাকে নবীদের সাথে হাশর-নাশর করাবেন। (দায়লামী,
মুসনাদুল ফেরদাঊস; সুয়ূত্বী, আল-হাবী লিল ফাতাওয়া ২/১১ পৃঃ)।
তাহক্বীক্ব:
বর্ণনাটি জাল। এর কোন সনদই নেই। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১৪৪৯ ও ১৫২৭)।
উল্লেখ্য যে, আশরাফ আলী থানবী তার বইয়ে সূরা
ক্বদর পড়ার কথা বলেছেন এবং ওযূর পরের দু‘আর সাথে অনেকগুলো নতুন শব্দ যোগ করেছেন যা
হাদীছের গ্রন্থ সমূহে পাওয়া যায় না। (পূর্ণাঙ্গ নামায, পৃঃ ৪৫)।
অতএব সাবধান! ওযূ করার পর শুধু নিম্নের দু‘আ
পাঠ করতে হবে, যা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। (ছহীহ মুসলিম হা/৫৭৬, ১/১২২ পৃঃ, (ইফাবা
হা/৪৪৪), ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬; মিশকাত হা/২৮৯, পৃঃ ৩৯, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়;
ছহীহ তিরমিযী হা/৫৫, ১/১৮ পৃঃ সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/২৮৯, পৃঃ ৩৯; ইরওয়া হা/৯৬, সনদ ছহীহ)।
উচ্চারণ: আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু
ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকা লাহূ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু। আল্ল-হুম্মাজ্‘আল্নী
মিনাত্ তাউওয়াবীনা ওয়াজ্‘আলনী মিনাল মুতাত্বাহ্হিরীন।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি যথাযথভাবে ওযূ
করবে ও কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজার সবই খুলে দেওয়া হবে।
যেটা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করতে পারবে’। (ছহীহ মুসলিম হা/৪৭৬, ১/১২২ পৃঃ; মিশকাত হা/২৮৯)।
অতএব মিথ্যা ফযীলতের প্রয়োজন নেই। মুছল্লীর
প্রয়োজন জান্নাত।
রক্ত বের হলে ওযূ ভেঙ্গে যায়ঃ
শরীর থেকে রক্ত প্রবাহিত হওয়া ওযূ ভঙ্গের কারণ
নয়। রক্ত বের হলে ওযূ করতে হবে মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।
ওমর ইবনু আব্দুল আযীয তামীম দারী (রাঃ) থেকে
বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক প্রবহমান রক্তের কারণেই ওযূ করতে হবে। (দারাকুৎনী
১/১৫৭; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭০; মিশকাত হা/৩৩৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩০৭, ২/৫৭)।
তাহক্বীক্ব: হাদীছটি
যঈফ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭০)।
ইমাম দারাকুৎনী (রহঃ) বলেন, ওমর ইবনু আব্দুল
আযীয তামীম দারীর নিকট থেকে শুনেননি। আর ইয়াযীদ ইবনু খালেদ ও ইয়াযীদ ইবনু মুহাম্মাদ
দুইজনই অপরিচিত। (দারাকুৎনী ১/১৫৭ পৃঃ; মিশকাত হা/৩৩৩ )।
তাছাড়া রক্ত বের হওয়া অবস্থায় ছাহাবায়ে কেরাম
ছালাত আদায় করতেন। (আবুদাঊদ হা/১৯৮, ১/২৬ পৃঃ, সনদ হাসান, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৯)।
তারা ওযূ করতেন না মর্মে ছহীহ আছার বর্ণিত
হয়েছে। যেমন-
বাকর (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু
ওমর (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি তার মুখমন্ডলে উঠা ফোড়ায় চাপ দিলেন ফলে কিছু রক্ত বের হল।
তখন তিনি আঙ্গুল দ্বারা ঘষে দিলেন। অতঃপর ছালাত আদায় করলেন। কিন্তু ওযূ করেননি। (মুছান্নাফ
ইবনে আবী শায়বাহ হা/১৪৬৯, সনদ ছহীহ; আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭০-এর আলোচনা দ্রঃ,
১/৬৮৩ পৃঃ)।
শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, রক্ত বের হলে ওযূ
করা ওয়াজিব হবে মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। তা কম হোক বা বেশী হোক। (আলবানী, মিশকাত
হা/৩৩৩-এর টীকা দ্রঃ ১/১০৮ পৃঃ)।
বমি হলে ওযূ ভেঙ্গে যায়ঃ
ওযূ ভঙ্গের কারণ হিসাবে বিভিন্ন গ্রন্থে বমিকে
উল্লেখ করা হয়েছে। আর মানুষও তাই আমল করে থাকে। অথচ তার পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই।
(ক) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, ছালাতের মধ্যে কারো যদি বমি হয় অথবা নাক থেকে রক্ত ঝরে বা মুখ দিয়ে খাদ্যদ্রব্য
বের হয় কিংবা মযী নির্গত হয়, তাহলে সে যেন ফিরে যায় এবং ওযূ করে। এরপর পূর্ববর্তী ছালাতের
উপর ভিত্তি করে ছালাত আদায় করে। আর এই সময়ে সে কোন কথা বলবে না। (ইবনু মাজাহ হা/১২২১,
‘ছালাত কায়েম ও তার সুন্নাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩৭)।
তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে
ইসমাঈল ইবনু আইয়াশ নামে একজন রাবী আছে, সে যঈফ। সে হিজাযের দুই ব্যক্তি থেকে বর্ণনা
করেছে। কিন্তু তারাও যঈফ। (যঈফ ইবনে মাজাহ হা/১২২১; যঈফ আবুদাঊদ (আল-উম্ম), পৃঃ ৬৮;
যঈফুল জামে‘ হা/৫৪২৬)।
(খ) যায়েদ ইবনু আলী তার পিতার সূত্রে তার দাদা
থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বমি অপবিত্র। (দারাকুৎনী ১/১৫৫ পৃঃ)।
তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি
নিতান্ত যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, এর সনদে সাওর নামক রাবী রয়েছে।
সে যায়েদ বা অন্য কারো নিকট থেকে বর্ণনা করেনি। (দারাকুৎনী ১/১৫৫ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ
হা/৪০৭৫, ৯/৭২ পৃঃ; যঈফুল জামে‘ হা/৪১৩৯)।
অতএব বমি হলে ওযূ করতে হবে মর্মে কোন ছহীহ
বিধান নেই।
জ্ঞাতব্য: হেদায়া
ও কুদূরীতে রক্ত বের হওয়া ও বমি হওয়াকে ওযূ ভঙ্গের কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
(হেদায়া ১ম খন্ড, পৃঃ ২৩; বঙ্গানুবাদ ১/৮-৯ পৃঃ; কুদূরী, পৃঃ ৫)।
আর সে কারণেই এই আমল চালু আছে। দুঃখজনক হল,
ইমাম দারাকুৎনীর উক্ত মন্তব্য থাকতে হেদায়া ও কুদূরীতে কিভাবে তা পেশ করা হল?
ওযূ থাকা সত্ত্বেও ওযূ করলে দশগুণ নেকীঃ
উক্ত ফযীলত সঠিক নয়। কারণ এ মর্মে বর্ণিত হাদীছ
যঈফ।
(ক) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন
যোহরের আযান দেয়া হল তখন তিনি ওযূ করলেন এবং ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর যখন আছরের আযান
দেয়া হল তখনও ওযূ করলেন। রাবী বলেন, আমি তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, যে ওযূ অবস্থায় ওযূ করবে, তার জন্য আল্লাহ দশটি নেকী লিপিবদ্ধ করবেন।
(আবুদাঊদ হা/৬২, ১/৯ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৫১২, পৃঃ ৩৯; তিরমিযী হা/৫৯, ১/১৯ পৃঃ; আলবানী,
মিশকাত হা/২৯৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭৩, ২/৪৩ পৃঃ; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৭)।
তাহক্বীক্ব:
হাদীছটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী, মুনযেরী, ইরাক্বী, নববী, ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) প্রমুখ
মুহাদ্দিছ হাদীছটি যঈফ হওয়ার ব্যাপারে একমত। (যঈফ আবুদাঊদ হা/১০)।
উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুর রহমান ইবনু যিয়াদ
ইফরীক্বী ও গুত্বাইফ নামক দুইজন দুর্বল ও অপরিচিত রাবী আছে। (আবুদাঊদ হা/৬২; ইবনু মাজাহ
হা/৫১২; তিরমিযী হা/৫৯; আলবানী, মিশকাত হা/২৯৩, ১/৯৬ পৃঃ)।
(খ) ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি একবার করে ওযূ করবে সে ব্যক্তি ওযূর নিয়ম পালন করল, যা তার
জন্য আবশ্যক ছিল। যে ব্যক্তি দুইবার করে ধৌত করবে সে দ্বিগুণ ছওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি
তিনবার করে ধৌত করবে তার ওযূ আমার ও আমার পূর্বের নবীগণের ওযূর ন্যায় হল। (মুসনাদে
আহমাদ হা/৫৭৩৫; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৪)।
তাহক্বীক্ব:
বর্ণনাটি যঈফ। (যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৩৬; তাহক্বীক্ব মুসনাদ হা/৫৭৩৫)।
উক্ত যঈফ হাদীছ হেদায়াতেও উল্লেখ করা হয়েছে।
(ঐ, ১/১৯ পৃঃ)।
এর সনদে যায়েদ আল-আম্মী নামে একজন দুর্বল রাবী
আছে। (যঈফ ইবনে মাজাহ হা/৪২০)।
(গ) ওছমান (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে
শুনেছি যে, কোন বান্দা যখন উত্তমরূপে ওযূ করে তখন আল্লাহ তার সামনের ও পিছনের সমস্ত
পাপ ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদুল বাযযার হা/৪২২, ১/৯৩ পৃঃ; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯২)।
তাহক্বীক্ব:
বর্ণনাটি মুনকার বা অস্বীকৃত। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫০৩৬, ১১/৬২ পৃঃ)।
মুছল্লীর ওযূতে ত্রুটি থাকলে ইমামের ক্বিরাআতে
ভুল হয়
অনেক আলেমের মাঝে উক্ত বিশ্বাস বিদ্যমান রয়েছে।
কিন্তু উক্ত মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।
শাবীব আবী রাওহ ছাহাবীদের কোন একজন থেকে বর্ণনা
করেন যে, রাসূল (ছাঃ) একদা ফজরের ছালাত আদায় করলেন এবং সূরা রূম পড়লেন। কিন্তু পড়ার
মাঝে কিছু গোলমাল হল। ছালাত শেষে তিনি বললেন, তাদের কী হয়েছে যে, যারা আমাদের সাথে
ছালাত আদায় করে অথচ উত্তমরূপে ওযূ করে না। এরাই আমাদের কুরআন তেলাওয়াতে গোলযোগ সৃষ্টি
করে। (নাসাঈ হা/৯৪৭, ১/১১০ পৃঃ; আলবানী, মিশকাত হা/২৯৫, পৃঃ ৩৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/২৭৫, ২/৪৪)।
তাহক্বীক্ব: হাদীছটি
যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুল মালেক বিন উমাইর নামে একজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী রয়েছে।
(তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/২৯৫-এর টীকা দ্রঃ; নাসাঈ হা/৯৪৭; যঈফুল জামে‘ হা/৫০৩৪)।
মাথার চুলের গোড়ায় নাপাকি থাকবে মনে করে সর্বদা
মাথার চুল ছোট করে রাখা বা কামিয়ে রাখা
নাপাকির ভয়ে এক শ্রেণীর মুরববী সর্বদা মাথা
ন্যাড়া করে রাখেন বা চুল খুব ছোট করে রাখেন এবং একে খুব ফযীলতপূর্ণ মনে করেন। আলী
(রাঃ) এরূপ করতেন বলে তারা এর অনুসরণ করে থাকেন। অথচ উক্ত মর্মে যে বর্ণনা প্রচলিত
আছে তা যঈফ। মোটেই আমলযোগ্য নয়।
(ক) আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি
নাপাকীর একচুল পরিমাণ স্থানও ছেড়ে দিবে এবং উহা ধৌত করবে না, তার সাথে আগুনের দ্বারা
এই এই ব্যবস্থা করা হবে। আলী (রাঃ) বলেন, সে অবধিই আমি আমার মাথার সাথে শত্রুতা করেছি।
একথা তিনি তিনবার বললেন। তিনি তার মাথার চুল খুব ছোট করে রাখতেন। (আবুদাঊদ হা/২৪৯,
১/৩৩ পৃঃ; আহমাদ হা/১১২১; মিশকাত হা/৪৪৪, পৃঃ ৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪০৮)।
তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি
যঈফ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৩০; ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৩; তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৪৪৪, ১/১৩৮
পৃঃ)।
উক্ত বর্ণনার সনদে ‘আত্বা, হাম্মাদ ও যাযান
নামের ব্যক্তি ত্রুটিপূর্ণ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৩০, ২/২৩২ পৃঃ)।
(খ) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
প্রত্যেক চুলের নীচেই নাপাকি রয়েছে। সুতরাং চুলগুলোকে ভালভাবে ধৌত করবে এবং চামড়াকে
সুন্দর করে পরিষ্কার করবে। (আবুদাঊদ হা/২৪৮, ১/৩৩ পৃঃ; তিরমিযী হা/১০৬, ১/২৯ পৃঃ; ইবনু
মাজাহ হা/৫৯৭, পৃঃ ৪৪; আলবানী, মিশকাত হা/৪৪৩, পৃঃ ৪৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪০৭, ২/৯৭
পৃঃ)।
তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি
যঈফ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৮০১)।
এর সনদে হারিছ ইবনু ওয়াজীহ নামক এক রাবী আছে।
ইমাম আবুদাঊদ বলেন, তার হাদীছ মুনকার আর সে দুর্বল রাবী। (যঈফ আবুদাঊদ হা/২৮৪; তাহক্বীক্ব
মিশকাত হা/৪৪৩, ১/১৩৮ পৃঃ)।
(গ) আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল
(ছাঃ) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম‘আ থেকে অপর জুম‘আ, আমানত আদায় করা- এর মধ্যবর্তী
সময়ের গুনাহের কাফফারা। আমি বললাম, আমানত আদায়ের অর্থ কী? তিনি বললেন, জানাবাতের গোসল
করা। কারণ প্রতিটি পশমের গোড়ায় নাপাকি রয়েছে। (ইবনু মাজাহ হা/৫৯৮, পৃঃ ৪৪, ‘পবিত্রতা
অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০৬)।
তাহক্বীক্ব:
উক্ত হাদীছও যঈফ। (যঈফ ইবনে মাজাহ হা/৫৯৮)।
এর সনদে উতবা ইবনু আবী হাকীম নামে একজন দুর্বল
রাবী আছে। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৮০১, ৮/২৭২)।
অযুর সময় পায়ের গোড়ালী সঠিকভাবে না ভেজালে সেই গোড়ালী জাহান্নামে যাবেঃ
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে উযূ করতে দেখলেন, কিন্তু
তাদের পায়ের গোড়ালি (না ভেজায়) চমকাচ্ছিল। তিনি বলেনঃ পায়ের গোড়ালিসমূহের জন্য জাহান্নামের
শাস্তি রয়েছে। তোমরা পূর্ণাঙ্গরূপে উযূ করো। (সুনান ইবনু
মাজাহ ৪৫০, বুখারী ৬০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উটের গোশত ভক্ষণ করলে ওযূ নষ্ট হওয়ার কারণ কি?
প্রথমতঃ উটের
গোশত ভক্ষণ করলে ওযূ নষ্ট হয় আর সে জন্যে পূনরায় অযু করতে হয়। এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর
সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
হাদিসঃ
জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলো, আমরা
কি বকরীর মাংস (মাংস/গোসত) খেলে উযূ করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
তুমি চাইলে করতে পারো, না চাইলে না কর। সে আবার জিজ্ঞেস করলো, উটের মাংস খাবার পর কি
উযূ করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, উটের মাংস খাবার পর
উযূ কর। অতঃপর সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করলো, বকরী থাকার স্থানে কি সালাত আদায় করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, হ্যাঁ, পারো। তারপর সে ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, উটের বাথানে কি সালাত আদায় করবো?
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৬০,
(ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৮৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব এরূপ কোন নির্দেশের ক্ষেত্রে মুমিন নারী-পুরুষের
প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই । (সুরা আহযাব ৩৬)।
দ্বিতীয়তঃ
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, উট শয়তান থেকে সৃষ্টি হয়েছে।
হাদিসঃ
আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল আল-মুযানী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ভেড়ার খোঁয়াড়ে
সালাত আদায় করতে পারো, কিন্তু উটের খোঁয়াড়ে সালাত পড়ো না। কেননা তা শয়তানদের থেকে সৃষ্ট।
(সুনান ইবনু মাজাহ ৭৬৯, সুনান আননাসায়ী ৭৩৫, আহমাদ ২৭৮৫২,
১৬৩৫৭, ২০০১৮, ২০০৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যত্র তিনি বলেন, প্রত্যেক উটের পৃষ্ঠে শয়তান
থাকে। সুতরাং তোমরা তাতে আরোহণের সময় বিসমিল্লাহ বল। (আহমাদ; ছহীহাহ হা/২২৭১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ বলেন, উটের গোশত ভক্ষণে
মানুষের শরীরে শয়তানী প্রভাব জাগ্রত হয়। এই প্রভাবকে বিনষ্ট করার জন্য রাসূল (ছাঃ)
এরূপ নির্দেশ দিয়েছেন। (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২০/৫২৩)।
শায়খ উছায়মীন বলেন, উটের গোশত দেহে স্নায়ুবিক
চাপ বৃদ্ধি করে। ওযূ করার মাধ্যমে তা হ্রাসপ্রাপ্ত
হয়। (শারহুল মুমতে‘ ১/৩০৮)।
তায়াম্মুম
তায়াম্মুমেম শাব্দিক ও পারিভাষিক পরিচিতি
সংজ্ঞা: তায়াম্মুম অর্থ ‘সংকল্প করা’। পারিভাষিক
অর্থে: ‘পানি না পাওয়া গেলে ওযূ বা গোসলের পরিবর্তে পাক মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের
ইসলামী পদ্ধতিকে ‘তায়াম্মুম’ বলে’। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর অন্যতম বিশেষ অনুগ্রহ।
যা ইতিপূর্বে কোন উম্মতকে দেওয়া হয়নি। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৯)।
এটি ছিল মুসলিম উম্মাহর জন্য আবুবকর-পরিবারের
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কেননা সম্ভবত: ৫ম হিজরী সনে বনুল মুছত্বালিক্ব যুদ্ধ থেকে
ফেরার পথে মদীনার উপকণ্ঠে ‘বায়দা’ (البَيْدَاء)
নামক স্থানে পৌঁছে আয়েশা (রাঃ)-এর গলার হার হারিয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেটি
খোঁজার জন্য কাফেলা থামিয়ে দেন। কিন্তু সেখানে কোন পানি ছিল না। ফলে এভাবেই পানি ছাড়া
সকাল হয়ে যায়। তখন আল্লাহ তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করেন। (সুরা আল মায়েদাহ ৬)।
ছাহাবী উসায়েদ বিন হুযায়ের (রাঃ) হযরত আবুবকর
(রাঃ)-কে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, হে আবুবকর-পরিবার! এটি উম্মতের জন্য আপনাদের প্রথম
অবদান নয় (مَا
هِىَ
بِأَوَّلِ
بَرَكَتِكُمْ
يَا
آلَ
أَبِى
بَكْرٍ)’।
আয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা উট উঠিয়ে দিলাম, যার উপরে আমরা ছিলাম এবং তার নীচে হারটি
পেয়ে গেলাম’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৬০৮, ৩৩৪, আধুনিক প্রকাশনী ৪২৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৫০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ বলেন,
‘আর যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক অথবা
পায়খানা থেকে আস কিংবা স্ত্রী স্পর্শ করে থাক, অতঃপর পানি না পাও, তাহ’লে তোমরা পবিত্র
মাটি দ্বারা ‘তায়াম্মুম’ কর ও তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ কর’...।
(সুরা মায়েদাহ ৫/৬, সুরা নিসা ৪/৪৩)।
পবিত্র মাটি
আরবী পরিভাষায় ‘মাটি’ বলতে ভূ-পৃষ্ঠকে বুঝায়।
যেমন বলা হয়েছে, الصعيد
وجه
الأرض
ترابا
كان
أو
غيره।
‘মাটি হলো ভূ-পৃষ্ঠ। চাই তা নিরেট মাটি হৌক বা অন্য কিছু হৌক’। (আল-মিছবাহুল মুনীর)।
আরব দেশের মাটি অধিকাংশ পাথুরে ও বালুকাময়।
বিভিন্ন সফরে আল্লাহর নবী (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ বালুকাময় মরুভূমির মধ্য দিয়ে বহু দূরের
রাস্তা অতিক্রম করতেন। বিশেষ করে মদ্বীনা হ’তে প্রায় ৭৫০ কি: মি: দূরে ৯ম হিজরীর রজব
মোতাবেক ৬৩০ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তাবূক যুদ্ধের সফরে তাঁরা মরুভূমির মধ্যে দারুণ
পানির কষ্টে পড়েছিলেন। কিন্তু ‘তায়াম্মুমের’ জন্য দূর থেকে মাটি বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন
বলে জানা যায় না। অতএব ভূ-পৃষ্ঠের মাটি, বালি বা পাথুরে মাটি ইত্যাদি দিয়ে ‘তায়াম্মুম’
করা যাবে। তবে ধুলা-মাটিহীন স্বচ্ছ পাথর, কাঠ, কয়লা, লোহা, মোজাইক, প্লাষ্টার, টাইলস,
চুন ইত্যাদি দ্বারা ‘তায়াম্মুম’ জায়েয নয়। (আলোচনা দ্রষ্টব্য : ছাদেক শিয়ালকোটি, ছালাতুর
রসূল; টীকা, পৃঃ ১৪৮-৪৯)।
তায়াম্মুম ফরয হওয়ার শর্তাবলীঃ
ক- বালেগ বা প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়া।
খ- মাটি ব্যবহারে সক্ষম হওয়া।
গ- অপবিত্রতা নষ্টকারী কোনো কিছু ঘটা।
তায়াম্মুমের ফরযসমূহঃ
ক- নিয়ত।
খ- পবিত্র মাটি।
গ- একবার মাটিতে হাত মারা।
ঘ- মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি পর্যন্ত মাসাহ করা।
তায়াম্মুমের কারণসমূহঃ
(১) যদি পাক পানি না পাওয়া যায়
(২) পানি পেতে গেলে যদি ছালাত ক্বাযা হওয়ার
ভয় থাকে
(৩) পানি ব্যবহারে যদি রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে
(৪) যদি কোন বিপদ বা জীবনের ঝুঁকি থাকে ইত্যাদি।
উপরোক্ত কারণ সমূহের প্রেক্ষিতে ওযূ বা ফরয গোসলের পরিবর্তে প্রয়োজনে দীর্ঘদিন যাবৎ
একটানা ‘তায়াম্মুম’ করা যাবে। (সুরা আল মায়েদাহ ৫/৬; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত ৫২৭
‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০; বুখারী ৩৪৪, ১/৪৯ পৃঃ; আহমাদ, তিরমিযী
ইত্যাদি মিশকাত ৫৩০)।
হাদিসঃ
’ইমরান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে ছিলাম। তিনি আমাদেরকে সালাত আদায় করালেন।
সালাত শেষ করার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখলেন এক ব্যক্তি পৃথক হয়ে
বসে আছে, অথচ সে মানুষের সাথে জামা’আতে সালাত আদায় করেনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক! মানুষের সাথে জামা’আতে সালাত আদায় করতে তোমাকে
কিসে বাধা দিয়েছে? লোকটি বলল, আমি নাপাক ছিলাম, অথচ তখন পানি পাচ্ছিলাম না। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার মাটি (তায়াম্মুমের মাধ্যমে) ব্যবহার করা উচিত ছিল।
আর (পবিত্রতা অর্জনে) এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫২৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৪৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮২, নাসায়ী ৩২১, আহমাদ ১৯৮৯৮, দারেমী ৭৭০, সহীহ ইবনু হিব্বান
১৩০১, ইরওয়া ১৫৬, সহীহ আল জামি ৪০৪৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
‘নিশ্চয়ই পবিত্র মাটি মুসলমানদের জন্য ওযূর
মাধ্যম স্বরূপ। যদিও সে ১০ বছর পর্যন্ত পানি না পায়’। (আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ,
মিশকাত ৫৩০, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০)।
হাদিসঃ
আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাক-পবিত্র মাটি মুসলিমকে পবিত্রতার বন্ধনে
আবদ্ধ করে, যদি দশ বছরও সে পানি না পায়। পানি যখন পাবে তখন সে যেন তার গায়ে পানি লাগায়।
এটাই তার জন্য উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩০,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৩২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৪, ইরওয়া ১৫৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
ব্যান্ডেজ ও ক্ষতস্থানে তায়াম্মুমঃ
কারো হাড় ভেঙ্গে গেলে বা শরীরে ক্ষত বা জখম
হলে পানি ব্যবহারে ক্ষতির আশংকা করলে ও কষ্ট হলে তবে ব্যান্ডেজ ও ক্ষতস্থানে তায়াম্মুম
করবে এবং বাকী অংশ ধুয়ে ফেলবে।
কেউ পানি ও মাটি কোনটিই না পেলে যে অবস্থায়
আছে সে অবস্থায়ই সালাত আদায় করে নিবে। তাকে উক্ত সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না।
মোজা ও বন্ধ ফলকের উপর মাসাহঃ
ইবন মুবারক বলেছেন, মোজার উপর মাসাহর ব্যাপারে
কোনো মতানৈক্য নেই। ইমাম আহমাদ বলেছেন, মোজার উপর মাসাহর ব্যাপারে আমার অন্তরে কোনো
সংশয় নেই। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চল্লিশটি হাদীস
বর্ণিত আছে। পা ধোয়ার চেয়ে মোজার উপর মাসাহ করা উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ উত্তমটিই তালাশ করতেন।
সময়সীমাঃ
মুকিমের জন্য একদিন ও একরাত এবং মুসাফিরের
জন্য তিনদিন ও তিনরাত মাসাহ করা জায়েয। মোজা পরিধান করার পরে প্রথম বার অপবিত্র হওয়া
থেকে সময়সীমা শুরু হয়।
মোজার উপর মাসাহর শর্তাবলীঃ
পরিধেয় মোজা বৈধ ও পবিত্র হওয়া। ফরয পরিমাণ
অংশ ঢেকে থাকা এবং মোজা পবিত্র অবস্থায় পরিধান করা।
মোজার উপর মাসাহর পদ্ধতিঃ
পানিতে হাত ভিজিয়ে পায়ের উপরিভাগের আঙ্গুলের
অগ্রভাগ থেকে নলা পর্যন্ত একবার মাসাহ করা। পায়ের নিচে ও পিছনে মাসাহ নয়।
মোজার উপর মাসাহ ভঙ্গের কারণসমূহঃ
নিচের চারটির যে কোনো একটি কারণে মোজার উপর
মাসাহ নষ্ট হয়ে যায়:
(ক) পায়ের থেকে মোজা খুলে ফেললে।
(খ) মোজা খুলে ফেলা অত্যাবশ্যকীয় হলে, যেমন
গোসল ফরয হলে।
(গ) পরিহিত মোজা বড় ছিদ্র বা ছিড়ে গেলে।
(ঘ) মাসাহের মেয়াদ পূর্ণ হলে।
সব ধরণের পট্টি বা ব্যান্ডেজ খুলে না ফেলা
পর্যন্ত তার উপর মাসাহ করা জায়েয, এতে মেয়াদ যতই দীর্ঘ হোক বা জানাবত তথা বড় নাপাকী
লাগুক।
তায়াম্মুমের সঠিক পদ্ধতি
মুছল্লী পবিত্র হওয়ার নিয়ত করে ‘বিসমিল্লাহ’
বলে মাটিতে দুই হাত একবার মারবে। (বুখারী ১; মিশকাত ১; তিরমিযী ২৫, ইবনু মাজাহ ৩৯৭, মিশকাত ৪০২)।
অতঃপর ফুঁক দিয়ে ঝেড়ে ফেলে দুই হাত দিয়ে প্রথমে
মুখমন্ডল তারপর বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কব্জি এরপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি পর্যন্ত
একবার করে মাসাহ করবে। যেমনঃ রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘তোমার জন্য এইরূপ করাই যথেষ্ট ছিল। এই বলে
তিনি তাঁর দুই হাত মাটির উপর মারলেন এবং ফুঁক দিলেন। অতঃপর দুই হাত দ্বারা মুখমন্ডল
ও দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন। (বুখারী ৩৩৮, ইফাবা ৩৩১, মুসলিম ৮৪৬, মিশকাত
৫২৮)।
হাদিসঃ
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবী
শাইবাহ ও ইবনু নুমায়র (রহঃ).....শাকীক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার আবদুল্লাহ
(ইবনু মাসউদ) ও আবূ মূসা (রাযিঃ) এর কাছে বসেছিলাম। তখন আবূ মূসা (রাযিঃ) বললেন, হে
আবূ আবদুর রহমান! কোন লোক যদি জুনুবী হয় (যার ফলে তার গোসল ফরয হয়) এবং সে এক মাস
যাবৎ পানি না পায় তাহলে সে কিভাবে সালাত আদায় করবে? আবদুল্লাহ বললেন, সে তায়াম্মুম
করবে না যদিও একমাস পানি না পায়। আবূ মূসা (রাযিঃ) বললেন, তাহলে সূরাহ মায়িদাহ এর
এ আয়াত-...."যদি তোমরা পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম কর"-
(সূরাহ আল মায়িদাহ ৫: ৬) এর কি হবে?
আবদুল্লাহ বললেন, এ আয়াতের দ্বারা তাদেরকে
যদি তায়াম্মমের অনুমতি দেয়া হয় তাহলে (ধীরে ধীরে এমন এক পর্যায়ে পৌছবে যে) পানি
ঠাণ্ডাবোধ হলে তারা মাটি দিয়ে তায়াম্মুম শুরু করবে। আবূ মূসা (রাযিঃ) তখন আবদুল্লাহ-কে
বললেন, আপনি কি আম্মার-এর বর্ণনা শোনেননি (তিনি বলেন) যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কোন এক প্রয়োজনে পাঠালেন। (পথিমধ্যে) আমি অপবিত্র হয়ে গেলাম
এবং পানি পেলাম না। তখন আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম চতুষ্পদ জন্তু যেভাবে মাটিতে গড়াগড়ি
দেয়।
তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে এ ঘটনা বললাম। তিনি বললেন, তোমার জন্যে দু’হাত দিয়ে এরূপ করাই
যথেষ্ট ছিল-এ বলে তিনি তার দু’হাত একবার মাটিতে মারলেন। তারপর বামহাত দিয়ে ডানহাত
মাসাহ করলেন এরং উভয় হাতের কব্জির উপরিভাগ ও মুখমণ্ডল মাসাহ করলেন। আবদুল্লাহ বললেন,
তুমি কি দেখনি যে, উমার (রাযিঃ) আম্মার (রাযিঃ) এর কথা যথেষ্ট মনে করেননি? (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০৪-৭০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৬৮, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩৮, ৩৩৯, ৩৪০, ৩৪১, ৩৪২, ৩৪৩, ৩৪৫, ৩৪৬, ৩৪৭; আহমাদ ১৮৩৫৬) (আ.প্র.
৩২৬, ই.ফা. ৩৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জ্ঞাতব্যঃ আবুদাঊদে
দুইবার হাত মারা ও পুরো হাত বগল পর্যন্ত মাসাহ করা সংক্রান্ত যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে,
তার সনদ বিশুদ্ধ হলেও সেগুলো মূলতঃ কতিপয় ছাহাবীর ঘটনা মাত্র, যা রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে
শিক্ষা দেওয়ার আগে ঘটেছিল। (আবুদাঊদ ৩১৮, মিশকাত ৫৩৬)।
অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তায়াম্মুমের উক্ত পদ্ধতি
শিক্ষা দেন। যেমন- ইমাম মুহিউস সুন্নাহ বলেন,
‘এটা ছাহাবীদের কাজের ঘটনা, যা আমরা রাসূল
(ছাঃ) থেকে নকল করতে পারিনি। যেমনটি আম্মার (রাঃ) জুনবী অবস্থায় মাটিতে গড়াগড়ি করার
ঘটনা নিজের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর যখন তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন,
তখন তিনি শুধু মুখমন্ডল ও দুই কব্জি মাসাহর নির্দেশ দান করেন। এ পর্যন্তই শেষ করেছেন।
আর আম্মার (রাঃ) তার কাজ থেকে ফিরে আসেন। (মিশকাত ৫৩৬)।
হাদিসঃ
’আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একবার তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অবস্থানকালে পানি
না থাকার কারণে ফজরের (ফজরের) সালাতের জন্য মাটি দিয়ে মাসাহ করলেন। তারা তাদের হাতকে
মাটিতে মারলেন, তারপর একবার তাদের চেহারা মাসাহ করলেন। আবার মাটিতে হাত মারলেন এবং
সম্পূর্ণ হাত বাহুমূল পর্যন্ত এবং হাতের ভিতর দিকে বগল পর্যন্ত মাসাহ করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তায়াম্মুমের সময় দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যন্ত মাসাহ করা
তায়াম্মুম করার সময় একবার মাটিতে হাত মারতে
হবে অতঃপর মুখমন্ডল এবং দুই হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করতে হবে। দুইবার হাত মারা ও কনুই
পর্যন্ত মাসাহ করা সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। যেমন-
(ক) ইবনু ওমর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,
তিনি বলেছেন, তায়াম্মুমে দুইবার হাত মারবে। মুখের জন্য একবার আর দুই হাত কনুই পর্যন্ত
মাসাহ করার জন্য একবার। (বায়হাক্বী হা/১০৫৪, ১/২০৭; হাকেম হা/৬৩৪ ও ৬৩৬; আবুদাঊদ হা/৩৩০,
১/৪৭ পৃঃ; দারাকুৎনী ১/১৭৭; বুলূগুল মারাম হা/১২৮; বিস্তারিত দ্রঃ তানক্বীহ, পৃঃ ১৯৪-১৯৭)।
তাহক্বীক্ব:
হাদীছটি যঈফ। এর সনদে কয়েকজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর আল-উমরা নামক
রাবীর স্মৃতিশক্তি দুর্বল হিসাবে যঈফ। আলী ইবনু যাবইয়ান নামক রাবী অত্যন্ত দুর্বল।
ইমাম ইবনু মাঈন বলেন, সে মিথ্যুক, অপবিত্র। ইমাম বুখারী বলেন, সে মুনকার হাদীছ বর্ণনাকারী।
ইমাম নাসাঈ বলেন, সে হাদীছের পরিত্যক্ত রাবী। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৪২৭; যঈফুল জামে‘
হা/২৫১৯; যঈফ আবুদাঊদ হা/৩৩০)।
প্রশ্ন হল, উক্ত হাদীছ হেদায়া ও কুদূরীতে কিভাবে
স্থান পেল? (হেদায়া ১ম খন্ড, পৃঃ ৫০, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ; কুদূরী, পৃঃ ১২)।
আর ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে তায়াম্মুম করার পদ্ধতি
সম্পর্কে যে সমস্ত ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সেগুলো কেন প্রত্যাখ্যান করা হল? (ছহীহ
বুখারী হা/৩৩৮, ১/৪৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৩৩১, ১/১৮৮ পৃঃ), ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪;
মুসলিম হা/৮৪৬, ১/১৬১ পৃঃ; মিশকাত হা/৫২৮, পৃঃ ৫৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৯৩, ২/১৩৫
পৃঃ)।
(খ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু
’উমার (রাঃ) কোন কাজে গেলে আমিও তার সাথে গেলাম। তিনি তাঁর কাজ শেষ করলেন। সেদিন তাঁর
কথার মধ্যে এ কথাটি ছিল, তিনি বললেন, এক ব্যক্তি কোন একটি গলি দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময়
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাব বা পায়খানা সেরে বের হলেন। ঐ লোকটির
সাথে তাঁর দেখা হলে সে সালাম দিল। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার
সালামের উত্তর দিলেন না। লোকটি যখন অন্য গলির দিকে মোড় নিচ্ছিল, তিনি (তায়াম্মুম করার
জন্য) দেওয়ালে দুই হাত মেরে মুখমণ্ডল মাসেহ করলেন। অতঃপর আবার দেওয়ালে হাত মেরে কনুইসহ
দু’হাত মাসাহ করলেন (অর্থাৎ- তায়াম্মুম করলেন)। এরপর লোকটির সালামের উত্তর দিলেন এবং
বললেন, তোমাকে সালামের উত্তর দিতে পারিনি। কারণ আমি বে-উযূ ছিলাম, এটাই ছিল (তোমার
সালামের উত্তর দিতে আমার) বাধা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪৬৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৩০)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। ইমাম আবুদাঊদ বলেন,
‘আমি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে বলতে শুনেছি, মুহাম্মাদ বিন ছাবিত তায়াম্মুম সম্পর্কে
একটি মুনকার হাদীছ বর্ণনা করেছে’। (যঈফ আবুদাঊদ হা/৩৩০)।
ইমাম বুখারী এবং ইয়াহইয়া ইবনু মাঈনও অনুরূপ
বলেছেন। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে যঈফ বলেছেন। ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, হাদীটি ছহীহ
নয়। কারণ মুহাম্মাদ ইবনু ছাবিত আল-আবদী অত্যন্ত দুর্বল। তার হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ
করা হয় না। (যঈফ আবুদাঊদ (আল-উম্ম) হা/৫৮, পৃঃ ১৩৬)।
ইমাম আবুদাঊদ আরো বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু ছাবিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দুইবার হাত মারা ও ইবনু ওমরের কাজের যে বর্ণনা করেছে, এই ঘটনার
ব্যাপারে সে নির্ভরযোগ্য নয়। (যঈফ আবুদাঊদ হা/৩৩০)।
জ্ঞাতব্যঃ
(১) ‘তায়াম্মুম’ করে ছালাত আদায়ের পরে ওয়াক্তের
মধ্যে পানি পাওয়া গেলে পুনরায় ঐ ছালাত আদায় করতে হবে না। (আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত ৫৩৩;
আবুদাঊদ ৩৩৮)।
হাদিসঃ
আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, দুই লোক সফরে বের হলো। পথিমধ্যে সালাতের সময় হলো, অথচ তাদের কাছে পানি ছিল না।
তাই তারা দু’জনই পাক মাটিতে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করে নিলো। অতঃপর সালাতের সময়ের
মধ্যেই তারা পানি পেয়ে গেল। তাই তাদের একজন উযূ
করে আবার সালাত আদায় করে নিলো এবং দ্বিতীয়জন তা করলো না। এরপর তারা ফিরে এসে
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তা বর্ণনা করলো। যে ব্যক্তি সালাত
আদায় করেনি তাকে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি সুন্নাতের উপরই
ছিলে। এ সালাতই তোমার জন্য যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি উযূ করে পুনরায় সালাত আদায় করেছে
তাকে বললেন, তোমার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৩৮, সুনান আন-নাসায়ী (তাহকীককৃত) ৪৩৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) ওযূর মাধ্যমে যেসব কাজ করা যায়, তায়াম্মুমের
দ্বারা সেসব কাজ করা যায়। অমনিভাবে যেসব কারণে ওযূ ভঙ্গ হয়, সেসব কারণে ‘তায়াম্মুম’
ভঙ্গ হয়।
(৩) যদি মাটি বা পানি কিছুই না পাওয়া যায়, তাহ’লে
বিনা ওযূতেই ছালাত আদায় করবে। (বুখারী ৩৩৬; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ ও অন্যান্য; নায়লুল
আওত্বার ১/৪০০, ‘পানি ও মাটি ব্যতীত ছালাত’ অনুচ্ছেদ)।
হাদিসঃ
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি একদা (তাঁর
বোন) আসমা (রাঃ) এর হার ধার করে নিয়ে গিয়েছিলেন। (পথিমধ্যে) হারখানা হারিয়ে গেল। আল্লাহ্র
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-সেটির অনুসন্ধানে লোক পাঠালেন। তিনি হারটি
এমন সময় পেলেন, যখন তাঁদের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল অথচ তাঁদের কাছে পানি ছিল না। তাঁরা
সালাত আদায় করলেন। তারপর বিষয়টি তাঁরা আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর
নিকট বর্ণনা করেন। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করেন। সেজন্য উসায়দ
ইব্নু হুযায়র (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান
প্রদান করুন। আল্লাহ্র কসম! আপনি যে কোন অপছন্দনীয় অবস্থার মুখোমুখী হয়েছেন, তাতেই
আল্লাহ্ তা’আলা আপনার ও সমস্ত মুসলিমের জন্য মঙ্গল রেখেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৩৬, ৩৩৪, আ.প্র. ৩২৪, ই.ফা. ৩২৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আজানের জবাব ও আজান শেষে দোয়া
আযানের জওয়াব
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুওয়ায্যিন যা বলে তদ্রুপ
বল’ ...। (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘আযানের ফযীলত ও তার জবাব’
অনুচ্ছেদ-৫)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুয়াযযিনের আযান
শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ
যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত
বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ‘ওয়াসীলা’ হলো
জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর
আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’র দু‘আ করবে, কিয়ামতের
(কিয়ামতের) দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৬৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৩৮৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫২৩, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৭৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৬১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯০, ইরওয়া ২৪২, সহীহ
আল জামি ৬১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যত্র
তিনি এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মুওয়ায্যিনের পিছে পিছে আযানের
বাক্যগুলি অন্তর থেকে পাঠ করে এবং ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ’ ও ‘হাইয়া‘আলাল ফালা-হ’ শেষে ‘লা-হাওলা
অলা-কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’
(নেই কোন ক্ষমতা,
নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত) বলে,
সে ব্যক্তি জান্নাতে
প্রবেশ করবে। (মিশকাত হা/৬৫৮)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুয়ায্যিন যখন ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ বলে তখন
তোমাদের কেউ যদি (উত্তরে) অন্তর থেকে বলে, ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ ‘‘আল্লা-হু আকবার’’,
এরপর মুয়ায্যিন যখন বলেন, ‘‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,’’ সেও বলে, ‘‘আশ্হাদু
আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’’। অতঃপর মুয়ায্যিন যখন বলে, ‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার্
রসূলুল্ল-হ’’, সেও বলে ‘‘আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ’’, তারপর মুয়ায্যিন
যখন বলে, ‘‘হাইয়্যা ‘আলাস্ সলা-হ্’’, সে তখন বলে, ‘‘লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা-
বিল্লা-হ’’; পরে মুয়ায্যিন যখন বলে, ‘‘আল্লা-হু আকবার ‘আল্লা-হু আকবার’’, সেও বলে,
‘‘আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার’’ এরপর মুয়ায্যিন যখন বলে, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,’’
সেও বলে ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৬৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৫, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৫২৭, সহীহ আল জামি ৭১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৩৪, ইসলামিক সেন্টার ৭৪৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব
আযান ও এক্বামতে
‘হাইয়া ‘আলাছ ছালাহ’ ও ‘ফালাহ’ বাদে বাকী বাক্যগুলির
জওয়াবে মুওয়ায্যিন যেমন বলবে, তেমনই বলতে হবে। ইক্বামতের জবাব একইভাবে
দিবে। কেননা আযান ও ইক্বামত
দু’টিকেই হাদীছে ‘আযান’
বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে,
(১) ফজরের আযানে ‘আছ ছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম’
এর জওয়াবে ‘ছাদাক্বতা
ওয়া বারারতা’ বলার কোন ভিত্তি নেই, কোনো দলীল নেই। (মির‘আত ২/৩৬৩,
হা/৬৬২-এর ভাষ্য দ্রষ্টব্য)। ইহা বলা যাবে না।
(২) অমনিভাবে এক্বামত-এর সময় ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ
ছালা-হ’-এর জওয়াবে‘আক্বা-
মাহাল্লাহু ওয়া আদা-মাহা’ বলা সম্পর্কে আবুদাঊদে
বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’।
(আবুদাঊদ হা/৫২৮, মিশকাত হা/৬৭০; আলবানী, ইরওয়াউল
গালীল হা/২৪১, ১/২৫৮-৫৯ পৃঃ, ইরওয়া ২৪১। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)। কারণ এর সানাদে
একজন অপরিচিত ও দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছে।
ইহা বলা যাবে না।
(৩) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’এর
জবাবে ‘ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা যাবে না।
রাসূল (ছাঃ) নির্দেশ করেছেন যে, মুয়াযযিন যা
বলবেন, উত্তরে তাই বলতে হবে। শুধু ‘হায়্যইয়া আলাছ
ছালাহ’ ও ‘হায়্যইয়া
আলাল ফালাহ’ ব্যতীত।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬১১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৭-৬৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৩৮৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫২৩, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৭৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৬১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯০, ইরওয়া ২৪২, সহীহ
আল জামি ৬১৩, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তাই
আযান ও ইক্বামতের
সময় ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’-এর জবাবে
‘ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা যাবে না।
বরং ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদা
রাসূলুল্লাহ্’-ই বলতে হবে। তবে
অন্য সময়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নাম শুনলে
বা পড়লে সংক্ষিপ্ত দরূদ হিসাবে
‘ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলবে। (সুনা্ন আততিরমিযী হা/৩৫৪৫ মিশকাত
হা/৯২৭ ও ৯৩৩, মুস্তাদরাক হাকেম হা/৭২৫৬,
সনদ ছহীহ; ছহীহ তারগীব হা/৯৯৫)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লাঞ্ছিত হোক সেই ব্যক্তি, যার নিকট
আমার নাম উচ্চারিত হয় কিন্তু সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে না। লাঞ্ছিত হোক সেই ব্যক্তি,
যার কাছে রমাযান মাস আসে আবার তার গুনাহ ক্ষমার আগে সে মাস চলে যায়। লাঞ্ছিত হোক সেই
ব্যক্তি, যার নিকট তার বৃদ্ধ মা-বাপ অথবা দু’জনের একজন বেঁচে থাকে অথচ তারা তাকে জান্নাতে
পৌঁছায় না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৭, ৯৩৩, তিরমিযী ৩৫৪৫, সহীহ আত্ তারগীব ৯৯৫, হাকিম ১/৫৪৯, ইরওয়া ৫, আহমাদ ১৭৩৬। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
আজানের জওয়াব শেষে আযানের দো‘আসমূহ
(১) আযানের জওয়াব দান শেষে প্রথমে দরূদ পড়বেন।
(মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুয়াযযিনের আযান
শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ
যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত
বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ‘ওয়াসীলা’ হলো
জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর
আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’র দু‘আ করবে, কিয়ামতের
দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৪,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫২৩, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৭৮, সূনান আত
তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৬১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯০, ইরওয়া ২৪২, সহীহ আল জামি ৬১৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) অতঃপর আযানের দো‘আ পড়বে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি আযান
শুনে এই দো‘আ পাঠ করবে, তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে’। (মিশকাত
হা/৬৫৯)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে (ও এর উত্তর দেয়ার ও
দরূদ পড়ার পর) এ দু‘আ পড়ে, তার জন্য সুপারিশ করা আমার অবশ্য করণীয় হয়ে পড়ে। দু‘আ হলোঃ
‘‘আল্লা-হুম্মা রব্বা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্
তা-ম্মাতি ওয়াস্ সলা-তিল ক্ব-য়িমাতি আ-তি মুহাম্মাদা-নিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ্,
ওয়াব্‘আসহু মাক্বা-মাম্ মাহমূদা-নিল্লাযী ওয়া‘আদতাহ্’’
[অর্থাৎ- হে আল্লাহ! এ পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত
সালাতের প্রভু! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দান কর ওয়াসীলা;
সুমহান মর্যাদা ও প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও তাঁকে (মাক্বামে মাহমূদে), যার ওয়া‘দা তুমি
তাঁকে দিয়েছ।] কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য আমার শাফা‘আত আবশ্যকীয়ভাবে হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৯, বুখারী ৬১৪, নাসায়ী ৬৮০, আবূ
দাঊদ ৫২৯, ইরওয়া ২৪৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৪২৩, তিরমিযী ২১১, ইবনু মাজাহ্ ৭২২, আহমাদ ১৪৮১৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মনে
রাখা আবশ্যক যে, আযান উচ্চৈঃস্বরে
দেওয়া সুন্নাত। কিন্তু উচ্চৈঃস্বরে আযানের
দো‘আ পাঠ করা বিদ‘আত। অতএব মাইকে আযানের
দো‘আ পাঠের রীতি অবশ্যই বর্জনীয়। আযানের
অন্য দো‘আও রয়েছে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৬৬১, মুসলিম ৩৮৬, আবূ দাঊদ ৫২৫, নাসায়ী ৬৭৯, তিরমিযী ২১০, ইবনু মাজাহ্ ৭২১, আহমাদ ১৫৬৫,
সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯৩, সহীহ আল জামি ৬৪২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) আযানের দো‘আ পাঠের পর কালিমা শাহাদাত পাঠ
করতে হবে, তাহলে তার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া
হবে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের
আযান শুনে এই দু‘আ পড়বে,
‘‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ
লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়ারসূলুহূ, রযীতু বিল্লা-হি
রববাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন রসূলান ওয়াবিল ইসলা-মি দীনা’’
(অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া
প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল, আমি আল্লাহকে রব, দীন হিসেবে
ইসলাম, রসূল হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানি ও মানি) এর উপর
আমি সন্তুষ্ট, তাহলে তার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬১, মুসলিম ৩৮৬, আবূ দাঊদ ৫২৫, নাসায়ী ৬৭৯, তিরমিযী ২১০, ইবনু মাজাহ্
৭২১, আহমাদ ১৫৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৪২২। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৪) সবশেষে আবার দরুদ পড়বে। কারন হাদিসে আছে,
রাসুল সাঃ এর উপর দরুদ না পড়া পর্যন্ত সেই দোয়া ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
“আনাস রা. বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “যতক্ষণ রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর দরূদ পড়া হবে না ততক্ষণ
তা বাধাগ্রস্ত অবস্থায় থাকবে (অর্থাৎ আল্লাহর নিকট পৌঁছবে না এবং দুআও কবুল করা হয়
না।) [ত্বাবরানী: ২০৩৫ শাইখ আলবানী বলেন: অন্যান্য শাওয়াহেদ এর মাধ্যমে হাদিসটি হাসান]।
আযানের দো‘আয় বাড়তি বিষয়সমূহ পড়া যাবে না
আযানের দো‘আয় কয়েকটি বিষয় বাড়তিভাবে চালু হয়েছে,
যা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে
বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামে মিথ্যারোপ
করল, সে জাহান্নামে তার ঠিকানা করে নিল’। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রকাশ
থাকে যে, আযান একটি ইবাদত। এতে
কোনরূপ কমবেশী করা জায়েয
নয়। তবুও আযানের দো‘আয় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য যোগ হয়েছে, যার কিছু নিম্নরূপ:
অতিরিক্তি শব্দ বা বাক্য পাঠ করা বিদআত।
(১) বায়হাক্বীতে (১ম খন্ড ৪১০ পৃ:) বর্ণিত
আযানের দো‘আর শুরুতে ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলুকা বে হাকক্বে
হা-যিহিদ দাওয়াতে’
(২) একই হাদীছের শেষে বর্ণিত ‘ইন্নাকা লা তুখ্লিফুল
মী‘আ-দ
(৩) ইমাম ত্বাহাভীর ‘শারহু মা‘আনিল আছার’-য়ে
বর্ণিত ‘আ-তে সাইয়িদানা মুহাম্মাদান’
(৪) ইবনুস সুন্নীর ‘ফী ‘আমালিল ইয়াওমে ওয়াল
লায়লাহ’তে ‘ওয়াদ্দারাজাতার রাফী‘আতা’
(৫) রাফেঈ প্রণীত ‘আল-মুহার্রির’-য়ে আযানের
দো‘আর শেষে বর্ণিত ‘ইয়া আরহামার রাহেমীন’। (দ্রষ্টব্য: আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/২৪৩
পৃঃ ১/২৬০ ৬১; মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, মিরক্বাত ২/১৬৩)।
(৬) আযান বা ইক্বামতে ‘আশহাদু আন্না সাইয়েদানা
মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলা। (ফিক্বহুস সুন্নাহ পৃঃ ১/৯২)।
(৭) বর্তমানে রেডিও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ টেলিভিশন
থেকে প্রচারিত আযানের দো‘আয় ‘ওয়ারঝুক্ব না
শাফা ‘আতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাহ ’ বাক্যটি যোগ করা হচ্ছে।
যার কোন শারঈ ভিত্তি জানা যায়
না। এছাড়া ওয়াল ফাযীলাতা-র পরে ওয়াদ্দারাজাতার রাফী ‘আতা
এবং শেষে ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আ-দ যোগ করা হয়, যা পরিত্যাজ্য।
(৮) মাইকে আযানের দো‘আ পাঠ করা, অতঃপর শেষে
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হ, ছাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম
বলা।
মসজিদে যাওয়ার সময় দোয়া
মসজিদ যাওয়ার সময় পথে নিম্নের দুআ
পড়তে হয়:
উচ্চারণ- আল্লাহুম্মাজ্আল ফী ক্বালবী নূরা,
অফী লিসানী নূরা, অজ্আল ফী সাময়ী নূরা,অজ্আল ফী বাস্বারী নূরা, অজ্আল মিন খালফী
নূরা, অমিন আমা-মী নূরা, অজ্আল মিন ফাউক্বী নূরা, অমিন তাহ্তী নূরা, আল্লাহুম্মা
আ’তিনী নূরা।
অর্থ- হে আল্লাহ! আমার হৃদয়, রসনা, কর্ণ, চক্ষু,
পশ্চাত, সম্মুখ, ঊর্ধ্ব ও নিম্নে জ্যোতি প্রদান কর। হে আল্লাহ! আমাকে নূর (জ্যোতি)
দান কর। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩১৬, মুসলিম,
সহীহ ৭৬৩, আহমাদ ২০৮৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৬৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
মসজিদে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময় দুআ
ফাতিমা আল-কুবরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে ঢুকতেন তখন মুহাম্মাদের
(স্বয়ং নিজের) প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেনঃ “রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ
লী আবওয়াবা রহমতিকা।”
“হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন
এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”।
যখন তিনি মাসজিদ হতে বের হতেন তখনও মুহাম্মাদের
(নিজের) প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেনঃ
“রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা
ফাদলিকা।”
(হে আল্লাহ্! আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং
আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন)। (সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩১৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭১, আহমাদ ২৫৮৭৭-৭৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
আবু হুমাইদ কিংবা আবু উসাইদ সাঈদী রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে
যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম পাঠায়। অতঃপর বলে:
"আল্ল-হুম্মাফ তাহলী আবওয়া-বা রহমতিক"
যার অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার
রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন। আর যখন সে মসজিদ থেকে বের হয় তখন সে যেন বলে:
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা”
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সমূহ কল্যাণ
কামনা করি”। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৬৫, সুনান
ইবনু মাজাহ ৭৭২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৫৩৭-১৫৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১৩, দারিমী ২৬৯, ১৩৯৪, ২৬৯১, আহমাদ (৩/১৯৭),
ইবনুস-সুন্নী ৮৮, নাসায়ী ৭২৯, আহমাদ ১৫৬২৭, ২৩০৯৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫২২, ইসলামীক
সেন্টার ১৫২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি
মসজিদে প্রবেশের সময় নিম্নের দুআও পড়তেন,
“আঊযু
বিল্লা-হিল আযীম, অবিঅজ্হিহিল কারীম, অ সুলত্বা-নিহিল ক্বাদীম, মিনাশ শায়ত্বা-নির
রাজীম”।
অর্থ-আমি মহিমময় আল্লাহর নিকট এবং তার সম্মানিত
চেহারা ও তাঁর প্রাচীন পরাক্রমের অসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
উক্ত দুআ পড়ে মসজিদ প্রবেশ করলে শয়তান বলে,
‘সারা দিন ও আমার অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করল।’
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ
ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করার সময় বলতেন, আমি আশ্রয় চাচ্ছি মহান আল্লাহর মর্যাদাপূর্ণ
চেহারার ও তাঁর অফুরন্ত ক্ষমতায় বিতাড়িত শায়ত্বন (শয়তান) হতে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, কেউ এ দু‘আ পাঠ করলে শায়ত্বন (শয়তান) বলে, আমার নিকট হতে সে সারা
দিনের জন্য রক্ষা পেয়ে গেল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৭৪৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬০৬, নাসায়ী ২৯৩, দারিমী (১৩৭৬),
আহমাদ (৬/৩২৫, ৪২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বের হওয়ার সময় বলতেন,
‘বিসমিল্লাহ্’ ও দরুদের পর এ দুআও পড়া যায়,
উচ্চারণ:- আল্লাহুম্মা’সিমনী মিনাশ শাইত্বান।
অর্থ:- হে আল্লাহ! আমাকে শয়তান থেকে রক্ষা
কর।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের যে কেউ মসজিদে প্রবেশকালে যেন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সালাম পেশ করে, অতঃপর বলেঃ
"আল্ল-হুম্মাফ তাহলী আবওয়া-বা রহমতিক"
হে আল্লাহ্! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ
খুলে দিন এবং বের হওয়ার সময়ও যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি সালাম
পেশ করে, অতঃপর বলেঃ
”আল্লাহুম্মা’সিমনী মিনাশ শাইত্বান”
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত শয়তান রক্ষা
করুন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আনাস (রাঃ) বলেন, ‘এক সুন্নাহ্ (নবী (সাঃ)
এর তরীকা) এই যে, যখন তুমি মসজিদ প্রবেশ করবে, তখন ডান পা আগে বাড়াবে এবং যখন মসজিদ
থেকে বের হবে, তখন বাম পা আগে বাড়াবে।’ (হাকেম, মুস্তাদরাক
১/২১৮)।
মসজিদে ঢুকে আশপাশের লোকগুলো শুনতে পায় এমন
স্বরে তাদেরকে সালাম করবেন।
(ক) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ও ইবনু
হুজর (রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমের প্রতি মুসলিমের হক ছয়টি। প্রশ্ন করা হলো- সেগুলো কী,
হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, (সেগুলো হলো-)
(১) কারো সাথে তোমার দেখা হলে তাকে সালাম করবে,
(২) তোমাকে দাওয়াত করলে তা তুমি কবুল করবে,
(৩) সে তোমার নিকট ভাল উপদেশ চাইলে, তুমি তাকে
ভাল উপদেশ দিবে,
(৪) সে হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ্ বললে,
তার জন্যে তুমি (ইয়ারহামুকাল্লাহ্ বলে) রহমতের দু’আ করবে,
(৫) সে পীড়িত হলে তার সেবা-শুশ্রুষা করবে
এবং
(৬) সে মৃত্যুবরণ করলে তার (জানাযার) সাথে
যাবে।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৫৫৪৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫৪৬৬, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
তোমাদের কেউ যখন কোন মাজলিসে পৌঁছে, সে যেন সালাম করে। অতঃপর যদি বসার প্রয়োজন হয়,
তবে বসে পড়বে। অতঃপর যখন প্রস্থানের উদ্দেশে দাঁড়াবে সালাম দেবে। কেননা প্রথমবারের
সালাম দ্বিতীয়বারের সালামের চেয়ে উত্তম নয় (অর্থাৎ- উভয় সালামই মর্যাদার দিক দিয়ে সমান)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৪৬৬০, তিরমিযী ২৭০৬, আবূ দাঊদ ৫২০৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৮৩, সহীহ ইবনু
হিব্বান ৪৯৬, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৭০৭, আহমাদ ৯৬৬৪, ‘নাসায়ী’র কুবরা ১০১৭৪,
আল আদাবুল মুফরাদ ৯৮৬, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ২০২, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুস্
সগীর ১০৪৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
ধারাবাহিকভাবে সংক্ষেপে আলোচনাঃ
(ক) ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে
রাসুল সা. এর উপর দরুদ ও সালাম পেশ, প্রবেশের দোয়া পাঠ ও নিম্নস্বরে সালাম প্রদান করবেন।
দরুদঃ
(ক) ‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিও
ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- সল্লায়তা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আল- আ-লি ইবরা-হীমা
ইননাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন
কামা- বা-রাকতা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর
পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর
পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে সম্মানিত করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত।
হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে যে সম্মান
বা মর্যাদা প্রদান করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীম
ও তাঁর পরিবারবর্গের সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৩৭০, ৪৭৯৭, ৬৩৫৭, মুসলিম
৩/১৭ হাঃ ৪০৬, আহমাদ ১৮১৫৬, আধুনিক প্রকাশনী ৩১২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩১২৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অথবা-
(খ) আবূ হুমাইদ সা‘ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। সাহাবীগণ
বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কিভাবে আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবে পড়বে, হে আল্লাহ!
(আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া
‘আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা সাল্লাইতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া
‘আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা বা-রাক্তা ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম
মাজীদ)।
আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরদের উপর রহমত নাযিল করুন, যেরূপ আপনি রহমত
নাযিল করেছেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। আর আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর এমনিভাবে বরকত নাযিল
করুন যেমনি আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয় আপনি অতি
প্রশংসিত এবং অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৩৬৯, ৬৩৬০, মুসলিম৩/১৭, আহমাদ ২৩৬৬১, আধুনিক প্রকাশনী ৩১১৯, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৩১২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) এরপর মসজিদে প্রবেশের দোয়া পাঠ করবেন।
প্রবেশের দোয়াঃ
“রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা
রহমতিকা”
অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা
করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”।
অথবা-
"আল্ল-হুম্মাফ তাহলী আবওয়া-বা রহমতিক"
হে আল্লাহ্! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ
খুলে দিন।
এরপর নিম্নের দোয়া পাঠ করবেন-
“আঊযু বিল্লা-হিল আযীম, অবিঅজ্হিহিল কারীম,
অ সুলত্বা-নিহিল ক্বাদীম, মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম”।
অর্থ- আমি মহিমময় আল্লাহর নিকট এবং তার সম্মানিত
চেহারা ও তাঁর প্রাচীন পরাক্রমের অসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
(গ) তারপর নিম্নস্বরে সালাম দিবেন।
(ঘ) মসজিদ থেকে প্রস্থানের সময় আবারও রাসুল
সা. এর উপর দরুদ ও সালাম পেশ এবং বাহির হওয়ার দোয়া পাঠ, সালাম প্রদান করে বাম পা দিয়ে
বের হবেন।
দরুদ-ঐ
বাহির হওয়ার দোয়াঃ
“রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা
ফাদলিকা।”
(হে আল্লাহ্! আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং
আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন)।
অথবা-
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা”
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সমূহ কল্যাণ
কামনা করি”।
এরপর বলবেন-
”আল্লাহুম্মা’সিমনী মিনাশ শাইত্বান”
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত শয়তান রক্ষা
করুন।
তারপর নিম্নস্বরে সালাম প্রদান ও বাম পা দিয়ে
মসজিদ থেকে বের হবেন।
সালাতের ভিতরে পঠিতব্য দোয়াসমূহ
সালাতের মধ্যে
অতিরিক্ত দোয়া পড়ার গুরুত্বঃ
(১) রুকুর সময়ঃ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! আমাকে রুকূ-সাজদায় কুরআন
তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকূ’তে তোমাদের ’রবের’ মহিমা বর্ণনা কর।
আর সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু’আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু’আ ক্ববূল করা হবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৪৭৯, সুনান আননাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি ২৭৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৯৫৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) সিজদার সময়ঃ
(ক) আল্লাহ তাআলা বলেন,‘ সিজদা করো এবং নিকটবর্তী
হও।’ (সুরা আলাক : ১৯) ।
(খ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু‘আ
করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু‘আ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৯,
সুনান আননাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৯৫৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বান্দারা তাদের রবের বেশি
নিকটে যায় সাজদারত অবস্থায়। তাই তখন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দু‘আ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৯৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮২, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭৫, সুনান আননাসায়ী ১১৩৭, আহমাদ ৯৪৬১,
সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৩) সলাতের মধ্যে তাশাহুদের পরঃ
রাসুল সা: বলেন, “তাশাহুদের পর যার যা ইচ্ছে
দোয়া করবে”।
হাদিসঃ
আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস’ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা এ ছিল যে, যখন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সঙ্গে সালাতে থাকতাম, তখন আমরা বলতাম, বান্দার পক্ষ হতে আল্লাহর প্রতি সালাম। সালাম
অমুকের প্রতি, সালাম অমুকের প্রতি। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
আল্লাহর প্রতি সালাম, তোমরা এরূপ বল না। কারণ আল্লাহ্ নিজেই সালাম। বরং তোমরা বল-
“সমস্ত মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর
জন্য। হে নবী! আপনার উপর প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের
প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাগণের প্রতি।’’ তোমরা যখন তা বলবে তখন আসমান বা আসমান ও
যমীনের মধ্যে আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার নিকট তা পৌঁছে যাবে। (এরপর বলবে) ’’আমি সাক্ষ্য
প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন মাবূদ নাই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।’’ অতঃপর যে দু’আ
তার পছন্দ হয় তা সে বেছে নিবে এবং পড়বে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৩৫, ৮৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, সালাতের
শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে যেকোনো ধরনের দোয়া করা যায়। চাই তা কুরআনের আয়াত হোক
বা হাদিসে বর্ণিত দোয়াই হোক।
রুকূ-সাজদায় কুরআন তিলাওয়াত করা নিষেধ
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! আমাকে রুকূ-সাজদায় কুরআন
তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকূ’তে তোমাদের ’রবের’ মহিমা বর্ণনা কর।
আর সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু’আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু’আ ক্ববূল করা হবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৯৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৯, সুনান আননাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ
আল জামি ২৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সালাতের জন্য কাতারে দাঁড়ানোর পর পড়ার দোয়া
কাতারে দাঁড়িয়ে পড়তে হবেঃ
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আনাস ইবনু মালিক
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি এসে সালাতের কাতারে ঢুকে পড়ল। তখন সে
হাঁপাতে ছিল। এ অবস্থায় সে বলে উঠল “আল হামদুলিল্লা-হি হামদান কাসীরান তুইয়্যিবাম
মুবা-রকান ফীহ”
(অর্থাৎ- সব প্রশংসাই মহান আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট।
তার অনেক অনেক প্রশংসা যা পবিত্র কল্যাণময়।)। সালাত শেষ করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ কথাগুলো কে বলেছ? তখন সবাই চুপ করে রইল। তিনি আবার
জিজ্ঞেস করলেনঃ ঐ কথাগুলো যে বলেছে সে তো কোন খারাপ কথা বলেনি। তখন জনৈক ব্যক্তি বলে
উঠলঃ আমি এসে যখন সালাতে শারীক হই তখন আমি হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। তাই আমি এ কথাগুলো বলেছি।
এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি দেখলাম, বারোজন মালায়িকাহ
ঐ কথাগুলোকে আগে উঠিয়ে নেয়ার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬০০,
ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২৩২, ইসলামীক সেন্টার ১২৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (স) হাত উঠিয়ে ‘আল্লাহু আকবার' বলে তাকবীর দিয়েছেন
হাদিসটি নিম্ন রুপঃ
(ক) আবূ কিলাবাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি মালিক
ইবনু হুওয়ায়রিস (রাযি.)-কে দেখেছেন, তিনি যখন সালাত আদায় করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং
তাঁর দু’ হাত উঠাতেন। (সহিহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৩৭, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯১, আহমাদ ২০৫৫৮, আধুনিক প্রকাশনী
৬৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করার সময় দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা
বলতেন। আবার রুকূ‘তে যাবার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর সাজদায় যাবার সময় আবার তাকবীর বলতেন।
সিজদা্ হতে মাথা উঠাবার সময় তাকবীর বলতেন।
পুনরায় দ্বিতীয় সাজদায় যেতে তাকবীর বলতেন, আবার সিজদা্ থেকে মাথা তোলার সময় তাকবীর
বলতেন। সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত গোটা সালাতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এরূপ করতেন। যখন দু’ রাক্‘আত আদায় করার পর বসা হতে উঠতেন তাকবীর বলতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৯, সহীহ বুখারী ৭৮৯, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৭৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯২, সুনান আননাসায়ী ১১৫০, আহমাদ ৯৮৫১,
ইরওয়া ৩৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৫২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
উল্লেখ্য যে, হাত বাঁধার সময় দুই কানের লতি
বরাবর দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী উঠানো বা কানের লতি স্পর্শ করা সংক্রান্ত হাদীছ যঈফ।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৩৭, আহমাদ ৩১৬, সুনান আননাসায়ী
৮৮১)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
অতঃপর বাম হাতের উপরে ডান হাত বুকের উপরে বেঁধে
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সম্মুখে নিবেদিত চিত্তে সিজদার স্থান বরাবর দৃষ্টি রেখে (হাকেম,
বায়হাক্বী, আলবানী, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী (বৈরূত : ১৪০৩/১৯৮৩) পৃঃ ৬৯; ইরওয়া হা/৩৫৪-এর
শেষে দ্রষ্টব্য।) দন্ডায়মান হবেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর জন্য নিবিষ্টচিত্তে
দাঁড়িয়ে যাও। (সুরা বাক্বারাহ ২/২৩৮)।
তাকবীরে তাহরীমার পর দো'আ
ছানাঃ
‘ছানা’ অর্থ ‘প্রশংসা’। এটা মূলতঃ ‘দো‘আয়ে
ইস্তেফতা-হ’ বা ছালাত শুরুর দো‘আ। বুকে জোড় হাত বেঁধে সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে বিনম্রচিত্তে
নিম্নোক্ত দো‘আর মাধ্যমে মুছল্লী তার সর্বোত্তম ইবাদতের শুভ সূচনা করবে।
(১) আবূ সাঈদ ও আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল
(সাঃ) সালাতের শুরুতে এই দুআ পাঠ করতেন।
“সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা অতাবা-রাকাসমুকা
অতাআ’-লা জাদ্দুকা অ লা ইলা-হা গায়রুক”।
অর্থ:- তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা
বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার নাম অতি বর্কতময়, তোমার মাহাত্ম অতি উচ্চ এবং তুমি ছাড়া
কোন সত্য উপাস্য নেই। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৮০৬, সুনান
আততিরমিযী ২৪৩, সুনান আবূ দাঊদ ৭৭৬, ত্বাহাবী ১/১১৭, দারাক্বুত্বনী, সুনান ১১৩, বায়হাকী
২/৩৪,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মহানবী (সাঃ) বলেন, “নি:সন্দেহে আল্লাহর নিকট
সবচেয়ে প্রিয় কথা হলো বান্দার ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা---’ বলা।” (তাওহীদ, ইবনে মাজাহ্, নাসাঈ, সুনান, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী
২৯৩৯ নং)।
উক্ত ছানার স্থলে পড়ার অতিরিক্ত দোয়া বা ছানাসমূহ
(যেকোনো ১টি পড়তে হবে):
(২) “ইন্নী ওয়াজজাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ
ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন”। (সুরা:
আনয়াম, আয়াত নং-৭৯)।
অর্থ:
আমি সব দিক থেকে মূখ পিরেয়ে বিশেষ ভাবে কেবল মাত্র সেই মহান সত্তাকেই ইবাদত জন্য নির্দিষ্ট
করলাম,যিনি সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই ।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮১৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭১, মুসনাদে শাফি‘ঈ
২০১, সুনান আবূ দাঊদ ৭৬০, সুনান আততিরমিযী ৩৪২১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১০৫৪, আহমাদ ৭২৯,
সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আলী
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করার
জন্য দাঁড়াতেন, আর এক বর্ণনায় আছে সালাত শুরু করার সময়, সর্বপ্রথম তাকবীরে তাহরীমা
বলতেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই দু‘আ পাঠ করতেনঃ
‘‘ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজী ফাত্বারাস্
সামাওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাওঁ ওয়ামা- আনা- মিনাল মুশরিকীন, ইন্না সলা-তী ওয়ানুসুকী
ওয়া মাহ্ইয়া-ইয়া ওয়ামামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন - লা- শারীকা লাহূ, ওয়াবিযা-লিকা
উমিরতু, ওয়াআনা- মিনাল মুসলিমীন, আল্লা-হুম্মা আনতাল মালিকু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা
রব্বী, ওয়াআনা- ‘আবদুকা যলামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু, বিযাম্বী, ফাগফিরলী যুনূবী জামী‘আ-,
ইন্নাহূ লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আন্তা, ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক্বি লা- ইয়াহদী
লিআহসানিহা- ইল্লা- আন্তা, ওয়াসরিফ ‘আন্নী সায়ইউয়াহা- লা- ইয়াসরিফু ‘আন্নী সায়য়্যিয়াহা-
ইল্লা- আন্তা লাব্বায়কা ওয়া সা‘দায়কা, ওয়াল খয়রা কুল্লুহূ ফী ইয়াদায়কা, ওয়াশ্ শাররু
লায়সা ইলায়কা, আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা, তাবা-রাকতা ওয়াতা‘আ-লায়তা, আস্তাগফিরুকা ওয়াআতূবু
ইলায়কা’’ -
(অর্থাৎ- ‘‘আমি একনিষ্ঠভাবে আমার মুখ ফিরিয়েছি
তাঁর দিকে, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। নিশ্চয়ই
আমার সালাত আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার
মৃত্যু আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীনের জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। আর এজন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি।
আমি মুসলিমের অন্তর্ভুক্ত। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ, তুমি ছাড়া প্রকৃত আর কোন মা‘বূদ
নেই। তুমি আমার রব। আমি তোমার গোলাম। আমি আমার নিজের ওপর যুলম (অত্যাচার) করেছি। আমি
স্বীকার করছি আমার অপরাধ। তুমি আমার সব অপরাধ ক্ষমা কর। তুমি ছাড়া নিশ্চয়ই আর কেউ অপরাধ
ক্ষমা করতে পারে না। আমাকে পরিচালিত করতে পারে না। তুমি দূরে রাখো আমার নিকট হতে মন্দ
কাজ। তুমি ছাড়া মন্দ কাজ থেকে আর কেউ দূরে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে
তোমার আদেশ পালনে উপস্থিত। সকল কল্যাণই তোমার হাতে। কোন অকল্যাণই তোমার প্রতি আরোপিত
হয় না। আমি তোমার সাহায্যেই টিকে আছি। তোমার দিকেই ফিরে আছি। তুমি কল্যাণের আধার। আমি
তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তোমার দিকেই আমি প্রত্যাবর্তন করছি”)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮১৩ (২), হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
এখানে উল্লেখ্য যে, অনেকে সুরা: আনয়াম, আয়াত
নং-৭৯ এর “ইন্নী ওয়াজজাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও
ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন” এই অংশটুকু জায়নামাজে দাঁড়িয়ে জায়নামাজের দোয়া হিসেবে পড়ে
থাকে যা হাদিস দ্বারা প্রমানিত নয়।
উক্ত হাদিস দ্বারা জানা যায় যে, রাসুল সাঃ
উক্ত দোয়া তাকবীরে তাহরীমার পর পড়তেন। ইহা জায়নামাজের দোয়া নয়।
সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ছানার দোয়া
(৩) “আল্লা-হুম্মা বা-‘এদ বায়নী ওয়া বায়না খাত্বা-ইয়া-ইয়া,
কামা বা-‘আদতা বায়নাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিবি। আল্লা-হুম্মা নাকক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া,
কামা ইউনাকক্বাছ ছাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাসি। আল্লা-হুম্মাগসিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিল
মা-য়ি ওয়াছ ছালজি ওয়াল বারাদি”।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার এবং আমার গুনাহ্ খাতার
মাঝে এমন দূরত্ব সৃষ্টি কর যেরূপ পশ্চিম ও পূর্বের দূরত্ব সৃষ্টি করেছ। হে আল্লাহ!
আমাকে আমার গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার কর যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা
হয়। হে আল্লাহ! আমার পাপসমূহকে পানি, বরফ ও শিশিরের মাধ্যমে ধৌত করে দাও।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমার পর ক্বিরাআত (কিরআত) শুরু
করার আগে কিছু সময় চুপ থাকতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি
কুরবান হোন! আপনি তাকবীর ও ক্বিরাআতের মধ্যবর্তী সময় চুপ থাকেন তাতে কি বলেন? উত্তরে
তিনি বললেন, আমি বলি, ‘‘হে আল্লাহ! আমি ও আমার গুনাহসমূহের মধ্যে দূরত্ব করে দাও, যেভাবে
তুমি দূরত্ব সৃষ্টি করে দিয়েছো মাশরিক ও মাগরিবের (অর্থাৎ- পূর্ব ও পশ্চিমের) মধ্যে।
হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর গুনাহ হতে, যেভাবে পরিষ্কার করা হয় সাদা
কাপড়কে ময়লা হতে। হে আল্লাহ! তুমি পানি, বরফ ও মুষলধারার বৃষ্টি দিয়ে আমার গুনাহসমূহকে
ধুয়ে ফেল।’’ (মিশকাতুল
মিসাবীহ ৮১২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৪১,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯৮, সুনান আবূ দাঊদ ৭৮১, সুনান আননাসায়ী ৬০, সুনান ইবনু মাজাহ্
৮০৫, আহমাদ ৭১৬৪, দারেমী ১২৮০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৭৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২৩০, ইসলামীক
সেন্টার ১২৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আউযুবিল্লাহ পাঠ
ছানা বা দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ পাঠ শেষে,
“আ’উযু বিল্লাহিস সামিইল-‘আলীমি মিনাশ-শয়তানির
রজীম মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি”
নীরবে পড়বেন। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৭৫, সুনান আততিরমিযী ২৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাদিসটি নিম্নরুপ:
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সালাতের জন্য দন্ডায়মান হলে
তাকবীরে তাহরীমা বলার পর এই দুআ পড়তেনঃ
”সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া
তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা”
অতঃপর তিনবার ”লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” ও তিনবার
”আল্লা¬হু আকবার কাবীরান” বলার পর”আউযু বিল্লাহিস সামিইল-‘আলীমি মিনাশ-শয়তানির রজীম
মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি” বলতেন। তারপর কিরাত পাঠ করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৭৫, সুনান আততিরমিযী ২৪২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রকাশ থাকে যে, ‘আঊযুবিল্লাহ’ কেবল ১ম রাক‘আতে
পড়বেন, বাকী রাক‘আতগুলিতে নয়। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১১২
পৃঃ ; নায়ল ৩/৩৬-৩৯ পৃঃ)।
বিসমিল্লাহ পাঠ
‘আঊযুবিল্লাহ’ পাঠ শেষে ‘বিসমিল্লাহ’ নীরবে
পড়বেন। অতঃপর সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবেন। সুরা ফাতিহা পাঠ শেষে আমিন বলবেন। এরপর বিসমিল্লাহসহ
অন্য সুরা বা সুরার অংশ বিশেষ যা পূর্ণাঙ্গ অর্থ বহন করে এমন আয়াত পাঠ করবেন।
সুরা ফাতিহাসহ অন্যান্য সুরা পাঠ করার পূর্বে
“বিসমিল্লাহ “ বলার দলিল
(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম অবতীর্ণ না
হওয়া পর্যন্ত তিনি কোন সূরার শুরুর দিক চিহ্নিত
করতে পারতেন না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৮৮, হাকিম
(১/২৩২), বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (২/৪২)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এইমাত্র আমার উপর একটি সূরাহ
অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তিনি পড়লেনঃ ‘‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম, ইন্না আ’ত্বায়না
কাল-কাওসার .....’’ সূরাটির শেষ পর্যন্ত। তিনি বললেন, তোমরা কি জান! কাওসার কি? তাঁরা
বললেন, এ বিষয়ে আল্লাহ এবং তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই সর্বাধিক অবগত।
তিনি বললেন, তা হচ্ছে একটি নহর, আমার রব্ব আমাকে জান্নাতে তা দান করবেন বলে অঙ্গীকার
করেছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৮৪। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
‘বিসমিল্লাহ’ সূরায়ে ফাতিহার অংশ হওয়ার পক্ষে
যেমন কোনো ছহীহ দলীল নেই। (নায়লুল আওত্বার ৩/৫২ পৃঃ। বিস্তারিত আলোচনা দ্রষ্টব্য :
নায়ল ৩/৩৯-৫২)।
তেমনি ‘জেহরী’ ছালাতে ‘বিসমিল্লাহ’ সরবে পড়ার
পক্ষে কোন নির্ভরযোগ্য ভিত্তি নেই। (নায়লুল আওত্বার ৩/৪৬ পৃঃ)।
বরং এটি দুই সূরার মধ্যে পার্থক্যকারী হিসাবে
পঠিত হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৮৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)
ইমাম কুরতুবী বলেন যে, সকল কথার মধ্যে সঠিক
কথা হ’ল ইমাম মালেকের কথা যে, ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা ফাতিহার অংশ নয়’। যেমন ‘কুরআন’ খবরে
ওয়াহেদ অর্থাৎ একজন ব্যক্তির বর্ণনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় না। বরং তা প্রতিষ্ঠিত
হয় অবিরত ধারায় অকাট্ট বর্ণনা সমূহের মাধ্যমে, যাতে কোন মতভেদ থাকে না। ইবনুল ‘আরাবী
বলেন, এটি সূরা ফাতিহার অংশ না হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এতে মতভেদ রয়েছে। আর
কুরআনে কোন মতভেদ থাকে না। বরং ছহীহ-শুদ্ধ বর্ণনা সমূহ যাতে কোন আপত্তি নেই, একথা প্রমাণ
করে যে, ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা ফাতিহার অংশ নয়’। এটি সূরা নমলের ৩০তম আয়াত মাত্র। এ বিষয়ে
ছহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি প্রণিধানযোগ্য’। (মুসলিম, মিশকাত হা/৮২৩ ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২; তাফসীরে
কুরতুবী মুক্বাদ্দামা, ‘বিসমিল্লাহ’ অংশ দ্রষ্টব্য)।
(১) আনাস বিন মালিক (রাঃ) বলেন,
“আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), আবুবকর, ওমর ও ওছমান
(রাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করেছি। কিন্তু তাঁদের কাউকে ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে পড়তে শুনিনি’।
(ছহীহ ইবনু খুযায়মা (বৈরূত : ১৩৯১/১৯৭১), হা/৪৯৪-৯৬; আহমাদ,
মুসলিম, নায়ল ৩/৩৯; দারাকুৎনী হা/১১৮৬-৯৫; হাদীছ ছহীহ)।
(২) দারাকুৎনী বলেন, ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে বলার বিষয়ে
কোন হাদীছ ‘ছহীহ’ প্রমাণিত হয়নি। (নায়লুল আওত্বার ৩/৪৬ পৃঃ)।
(৩) তবে ছহীহ হাদীছ সমূহের বিপরীতে সবল-দুর্বল
মিলে প্রায় ১৪টি হাদীছের প্রতি লক্ষ্য রেখে হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) হয়তোবা কখনো কখনো ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে বলে থাকবেন। তবে অধিকাংশ সময় তিনি চুপে চুপেই
পড়তেন। এটা নিশ্চিত যে, তিনি সর্বদা জোরে পড়তেন না। যদি তাই পড়তেন, তাহ’লে ছাহাবায়ে
কেরাম, খুলাফায়ে রাশেদ্বীন, শহরবাসী ও সাধারণ মুছল্লীদের নিকটে বিষয়টি গোপন থাকত না’।....
অতঃপর বর্ণিত হাদীছগুলি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলির মধ্যে যেগুলি
ছহীহ, সেগুলির বক্তব্য স্পষ্ট নয় এবং স্পষ্টগুলি ছহীহ নয়’। (যা-দুল মা‘আ-দ ১/১৯৯-২০০ পৃঃ ; নায়ল ৩/৪৭ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ
১/১০২ পৃঃ)।
সুরা ফাতিহার শেষে আমিন বলা প্রসঙ্গে
সূরা ফাতিহার পর ইমাম ও মুক্তাদি সবাই আমীন
বলবেন। আমীন শব্দের অর্থ হলো ‘হে আল্লাহ, কবুল কর। হাদীসে আছে, মুসল্লীগণ যখন আমীন
বলে তখন ফেরেশতারা তাদের সাথে সাথে আমীন বলে। যখন উভয় গ্রুপের আমীন বলার আওয়াজ এক
হয়ে যায় তখন এ মুসল্লীদের পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘আমীন’ বলেন, তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলো।
কেননা, যার ‘আমীন’ (বলা) ও মালাইকাহর ‘আমীন’ (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মা‘ফ
করে দেয়া হয়। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ও ‘আমীন’ বলতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৮০, ৭৮১, ৭৮২,
৪৪৭৫, ৬৪০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১০, আহমাদ ৮২৪৭,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৮, ইসলামিক সেন্টারঃ
৮১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উল্লেখিত হাদিস দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, সকল
সালাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করার পর আমিন বলতে হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, আমিন জোড়ে বলতে হবে নাকি নিম্ন
স্বরে নাকি মনে মনে?
জবাবঃ
নামাজি ব্যক্তি একাই কিংবা ইমামের পিছনে হলে
জোহর ও আসরসহ সকল সুন্নত এবং নফল সালাতে সুরা ফাতিহা শেষে আমিন মনে মনে বলবেন। ইমামের
পিছনে সালাত আদায় করলে যেহেতু প্রতি রাকাতে মুক্তাদিকে সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হয় তাই
সুরা ফাতিহা শেষে ইমাম মুক্তাদি সকলে মনে মনে আমিন বলবেন। এছাড়া ফজর, মাগরিব, এশা ও
জুমার সালাতে ইমাম মুক্তাতি উভয়ই আমিন জোড়ে বলবেন এবং ইমাম মুক্তাতির আমিন বলা একই
সাথে হতে হবে। ফজর, মাগরিব ও এশা সালাতে একাকি হলেও জোড়ে বা উচ্চ স্বরে আমিন বলবেন।
ইমামের পিছনে আমিন জোড়ে বলার সহিহ হাদিসসমূহ
(ক) ওয়াইল
ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, (সালাত আদায়কালে সূরাহ ফাতিহার শেষে) রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘‘ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন’’ পড়তেন তখন তিনি সশব্দে আমীন
বলতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৩২, সুনান আততিরমিযী ২৪৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৮৫৫,
আহমাদ (৪/৩১৬), দারাকুতনী (১/৫/৩৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত আদায় করেছেন। তাতে তিনি
সশব্দে ‘‘আমীন’’ বলেছেন। তিনি ডানে ও বামে এভাবে সালাম ফিরিয়েছেন যে, আমি তাঁর গালের
শুভ্রতা দেখেছি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৩৩, সুনান
আততিরমিযী ২৪৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘আমীন’ বলেন, তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলো।
কেননা, যার ‘আমীন’ (বলা) ও মালাইকাহর ‘আমীন’ (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মা‘ফ
করে দেয়া হয়। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ও ‘আমীন’ বলতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৮০, ৬৪০২; সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১০, ৯৪২, আহমাদ ৮২৪৭, আধুনিক প্রকাশনী
৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৪৪, ৭৪৬, সুনান আবুদাঊদ ৯৩২, ৯৩৩, সুনান আততিরমিযী ২৪৮, সুনান
ইবনু মাজাহ ৮৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবু হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম غَيْرِ
الْمَغْضُوبِ
عَلَيْهِمْ
وَلاَ
الضَّالِّينَ
পড়লে তোমরা ‘আমীন’ বলো। কেননা, যার এ (আমীন) বলা মালাকগণের (আমীন) বলার সাথে একই সময়
হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর (রহ.) আবূ সালামাহ
(রহ.) সূত্রে আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.)-এর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হতে এবং নু‘আইম- মুজমির (রহ.) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে হাদীস বর্ণনায় সুমাই (রহ.)-এর
অনুসরণ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৮২, ৪৪৭৫, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৭৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদীছে এসেছে, তোমরা আমীন বল আল্লাহ তোমাদের
দু‘আ কবুল করবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৭২, সুনান
আননাসায়ী, ১০৬৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৯০১, আহমাদ ৩৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য বর্ণনায় আছে, ক্বারী যখন আমীন বলবেন,
তখন তোমরা ‘আমীন’ বল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ),৬৪০২, ২/৯৪৭
পৃঃ, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জ্ঞাতব্যঃ অনেকে দাবী করেন, উক্ত হাদীছগুলোতে
আমীন জোরে বলার কথা নেই। অথচ হাদীছে বলা হয়েছে ‘যখন ইমাম আমীন বলবে তখন তোমরা আমীন
বল’। তাহলে ইমাম ‘আমীন’ জোরে না বললে মুক্তাদীরা কিভাবে বুঝতে পারবে এবং কখন আমীন বলবে?
তাছাড়া মুছল্লীদের আমীনের সাথে ফেরেশতাদের আমীন কিভাবে মিলবে? অন্য হাদীছে এসেছে,
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইয়াহূদীরা তোমাদের কোন ব্যাপারে এত বেশি ঈর্ষান্বিত নয় যতটা
তারা তোমাদের সালাম ও আমীনের ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত। (সুনানে
ইবনে মাজাহ, ৮৫৬, সহীহাহ ৬৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার সুন্নাত গ্রহণ
করাই হবে প্রকৃত মুমিনের দায়িত্ব। নীরবে আমীন বলার পক্ষে যে কয়টি বর্ণনা এসেছে, তার
সবই যঈফ ও জাল।
রুকুর অতিরিক্ত দোয়াসমূহ
(১) রুকুতে
গিয়ে প্রথমে পাঠ করুন, ‘সুবহানা রব্বীয়াল ‘আযীম’’ (৩ বার)।
হাদিসঃ
হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম রুকূ’তে “সুবহা-না রব্বিয়াল ’আযীম’’
ও সাজদায়
“সুবহা-না রব্বিয়াল আ’লা-’’ পড়তেন।
আর
যখনই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ক্বিরাআতের সময় রহমতের আয়াতে পৌঁছতেন,
ওখানে থেমে যেতেন, রহমত তলবের দু’আ পাঠ করতেন। আবার যখন ’আযাবের আয়াতে পৌঁছতেন, সেখানে
থেমে গিয়ে ’আযাব থেকে বাঁচার জন্য দু’আ করতেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৮১, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭১, সুনান আততিরমিযী ২৬২, সুনান আননাসায়ী ১/১৭০,
সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৮৮, দারিমী ১৩৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
এই দো‘আটি তিনবার পড়বেন।
বেশির কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৮৫; সুনান ইবনু মাজাহ ৮৮৮; আলবানী,
ছিফাত, ১১৩ পৃঃ, নাসায়ী ১১৩৪)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
ঊর্ধ্বে দশবার পড়ার হাদীছ ‘যঈফ’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮০, ৮৮৩, সুনান দাঊদ ৮৮৬, সুনান
আততিরমিযী ২৬১, ইবনু মাজাহ্ ৮৯০, য‘ঈফ আল জামি‘ ৫২৫)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
অথবা
(২) ‘‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী”।
অর্থ: আমার মহান রব্বের পবিত্রতা ও প্রশংসা
বর্ণনা করছি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৮৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
এরপর,
(৩) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের উপর ‘আমল করে নিজের রুকূ’ ও সাজদায় এই দু’আ
বেশি বেশি পাঠ করতেনঃ
“সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা- ওয়াবিহামদিকা,
আল্লা-হুমাগ ফিরলী’’-
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি পূত-পবিত্র। তুমি
আমাদের রব। আমি তোমার গুণগান করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৮১৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৭২, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৪৮৪, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭৭, সুনান আননাসায়ী ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এরপর,
(৪) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ ও সাজদায় বলতেন,
“সুব্বুহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালা-য়িকাতি ওয়াররূহ’’
(অর্থাৎ- মালাক ও রূহ জিবরীলের রব অত্যন্ত
পবিত্র, খুবই পবিত্র)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭২,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৭৮, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৪৮৭, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭২, আহমাদ ২৪০৬৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৯৭৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এরপর
(৫) মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর আল মুকাদ্দামী (রহঃ)...আলী
ইবনু আবূ তুলিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা
করেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সালাত আদায় করতে দাঁড়াতেন
তখন এ বলে শুরু করতেনঃ
"ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস
সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাওঁ ওয়ামা- আনা মিনাল মুশরিকীনা ইন্না সলা-তী ওয়া নুসুকী
ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীনা লা শারীকা লাহু ওয়াবি যা-লিকা
উমিরতু ওয়া আনা- মিনাল মুসলিমীন, আল্ল-হুম্মা আনতাল মালিকু লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা
আনতা রব্বী ওয়া আনা- আবদুকা যলামতু নাফসী ওয়া’তারাফতু বিযাম্বি ফাগফিরলী যুনুবী জামী’আন
ইন্নাহু লা- ইয়াগকরুত্ব যুনুবা ইল্লা- আনতা ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক্বি লা- ইয়াহদী
লিআহসানিহা- ইল্লা- আনতা ওয়াসরিফ আন্নী সাইয়্যিআহা- লা- ইয়াসরিফু ’আন্নী সাইয়্যিআহা-
ইল্লা- আনতা লাব্বায়কা ওয়া সাদায়কা ওয়াল খয়রু কুল্লুহু কী ইয়াদায়কা ওয়াশ শুররু
লায়সা ইলায়কা আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা তাবা-রাকত ওয়াতা আ-লায়তা আস্তাগফিরুকা ওয়া
আতুব ইলায়ক"
(অর্থাৎ- আমি একনিষ্ঠ হয়ে আমার মুখ সে মহান
সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিলাম যিনি আসমান ও জমিনকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত
নই। আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছুই আল্লাহর জন্য যিনি সারা
বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। তার কোন শারীক নেই। আমি এ জন্যই আদিষ্ট হয়েছি। আমি মুসলিম
বা আত্মসমর্পণকারী। হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম বাদশাহ। তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই।
তুমি আমার প্রতিপালক, আর আমি তোমার বান্দা। আমি নিজে আমার প্রতি যুলুম করেছি। আমি আমার
পাপ স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমার সব পাপ ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া আর কেউ
পাপ ক্ষমা করতে পারে না। আমাকে সর্বোত্তম আখলাক বা নৈতিকতার পথ দেখাও। তুমি ছাড়া এ
পথ আর কেউ দেখাতে সক্ষম নয়। আর আখলাক বা নৈতিকতার মন্দ দিকগুলো আমার থেকে দূরে রাখ।
তুমি ছাড়া আর কেউ মন্দগুলোকে দূরে রাখতে সক্ষম নয়। আমি তোমার সামনে হাজির আছি- তোমার
আনুগত্য করতে প্রস্তুত আছি। সব রকম কল্যাণের মালিক তুমিই। অকল্যাণের দায়-দায়িত্ব
তোমার নয়। আমার সব কামনা-বাসনা তোমার কাছেই কাম্য। আমার শক্তিসামর্থ্যও তোমারই দেয়া।
তুমি কল্যাণময়, তুমি মহান। আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার কাছেই তওবা
করছি।)।
আর রুকূ করার সময় বলতেনঃ
“আল্ল-হুম্মা লাকা রাকা’তু ওয়াবিকা আ-মানতু
ওয়ালাকা আসলামতু খশা’আ লাকা সামঈ ওয়া বাসার ওয়া মুখখী ওয়া আযমী ওয়া আসাবী"
(অর্থাৎ-
হে আল্লাহ! তোমার উদ্দেশেই আত্মসমর্পণ করলাম। আমার কান, চোখ, মগজ, হাড় এবং সব স্নায়ুতন্ত্রী
তোমার কাছে নত ও বশীভূত হ’ল)।
আর রুকূ’ থেকে উঠে বলতেনঃ
“আল্ল-হুম্মা
রব্বানা- লাকাল হামদু মিলআস সামা-ওয়াতি ওয়ামিল আল আরযি ওয়ামিলআ মা- বায়নাহুমা-
ওয়ামিলআ মা- শি’তা মিন শাইয়িন বাদু”
(অর্থাৎ-
হে আল্লাহ! হে আমার প্রতিপালক, সব প্রশংসা তোমারই প্রাপ্য। আসমান ভর্তি প্রশংসা একমাত্র
তোমারই প্রাপ্য)।
আর যখন সাজদায় যেতেন তখন বলতেনঃ
"আল্ল-হুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়াবিকা আ-মানতু
ওয়ালাকা আসলামৃত্যু সাজাদা ওয়াজহী লিল্লায়ী খলাকাহু ওয়াসাও ওয়ারাহু ওয়াশাক্বকা
সাম’আহু ওয়া বাসারাহ্ তাবা-রাকাল্লা-হু আহসানুল খ-লিকীন”
(অর্থা- হে আল্লাহ! তোমারই উদ্দেশে আমি সিজদা
করলাম। তোমারই প্রতি আমি ঈমান পোষণ করেছি। তোমারই উদ্দেশে আমি আত্মসমর্পণ করেছি। আমার
মুখমণ্ডল সে মহান সত্তার উদ্দেশে সিজদা করল যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আকৃতি দান
করেছেন আর কান ও চোখ ফুটিয়ে শোনা ও দেখার উপযোগী করে তৈরি করেছেন। মহা কল্যাণময় আল্লাহ,
তিনি কতই না উত্তম সৃষ্টিকার)।
অতঃপর সবশেষে তাশাহহুদ ও সালামের মধ্যবর্তী
সময়ে তিনি বলতেনঃ
“আল্ল-হুম্মাগফিরলী মা- ক্বদ্দামতু ওয়ামা-
আখখারতু ওয়ামা আসসারতু ওয়ামা আ’লানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আ’লামু বিহী মিন্নী
আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা"
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বের ও পরের,
গোপনে এবং প্রকাশ্যে কৃত গুনাহ ক্ষমা করে দাও। আর যে সব ব্যাপারে আমি বাড়াবাড়ি করেছি
তাও ক্ষমা করে দাও। আমার কৃত যেসব পাপ সম্পর্কে তুমি আমার চাইতে বেশী জান তাও ক্ষমা
করে দাও। তুমিই আদি এবং তুমিই অন্ত, তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭১,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৬০, সুনান আততিরমিযী ৩৪২১; সুনান আননাসাঈ ১০৪৯; ইবন খুযাইমার
৬০৭; ইবন হিব্বান, নং ১৯০১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৮২, ইসলামীক সেন্টার ১৬৮৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
এরপর,
(৬) আওফ ইবনু মালিক (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করতে দাঁড়ালাম।
তিনি রুকূতে গিয়ে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ তিলাওয়াত করতে যত সময় লাগতো তত সময় রুকূ’তে
থাকলেন। রুকূ’তে বলতে থাকলেন,
“সুবহা-না যিল জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল
কিবরিয়া-য়ি ওয়াল আযামাতি’’
(অর্থাৎ- ক্ষমতা, রাজ্য, বড়ত্ব, মহত্ব ও বিরাটত্বের
মালিকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৮৮২, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭০, সুনান আননাসায়ী ১০৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এরপর
(৭) আবূ
বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ), ‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইন্তিকালের পূর্বে এ দু'আটি খুব বেশি
মাত্রায় পাঠ করতেনঃ
"সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা আস্তাগফিরুকা
ওয়াতুবু ইলায়ক"
অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা
প্রাপ্য একমাত্র তিনি, আমি তোমার নিকট সকল পাপের ক্ষমা চাচ্ছি ও তওবা করছি।” রাবী বলেন,
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে যে এসব নতুন বাক্য পড়তে দেখছি- এগুলো কী? তিনি
বললেনঃ আমার উন্মাতের মধ্যে আমার জন্য একটি চিহ্ন বা নিদর্শন রাখা হয়েছে। যখন আমি
তা দেখি তখন এগুলো বলতে থাকি। আমি দেখেছিঃ “ইযা-জা-আ নাসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ"
সূরার শেষ পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৩, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৯, মুসনাদে আহমদ ১৯৭০, সিলসিলা সহীহা ৩০৩২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
(৮) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ), আয়িশাহ (রাযিঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "ইযা- জাআ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" (সূরাহু আন নাসর)
নাযিল হওয়ার পর থেকে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ দু'আ পাঠ করা ব্যতিরেকে
কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি। অথবা তিনি সেখানে (সালাতে) বলতেনঃ
"সুবহা-নাকা রব্বী ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ
ফিরলী”
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক আপনার জন্যই সকল
পবিত্রতা ও প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন”। (সহীহ
মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৯, ইসলামিক সেন্টার ৯৮০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(৯) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ), আয়িশাহ্
(রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পড়তেনঃ
“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হাম্দিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা
ওয়াতুবু ইলাইহি"
অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা
তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তওবা করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।”
রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে অধিক সংখ্যায় এ কথা বলতে দেখছিঃ
“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"। রাবী বলেন,
তিনি বললেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আমি অচিরেই আমার উন্মাতের
মধ্যে একটি নিদর্শন দেখতে পাব। যখন আমি সে আলামাত দেখতে পাই তখন অধিক সংখ্যায় এ দু'আ
পাঠ করতে থাকিঃ "সুবহানাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"।
সে নিদর্শন সম্ভবত এই “ইযা- জা-আ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ ..”। অর্থাৎ “যখন আল্লাহর সাহায্য
আসবে এবং বিজয় লাভ হবে (অর্থাৎ- মক্কা বিজয়), তুমি দেখত পাবে, দলে দলে লোক আল্লাহর
দীনে প্রবেশ করছে; তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা সহকারে তার তাসবীহ করে এবং তার কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিঃসন্দেহে তিনি খুবই তওবা গ্রহণকারী"- (সূরাহ আন নাসর)।
(সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৫-(২২০), ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৯৭০, ইসলামিক সেন্টার ৯৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) হাসান ইবনু ‘আলী আল হুলওয়ানী ও মুহাম্মাদ
ইবনু রাফি (রহঃ), ইবনু জুরায়য (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আতাকে জিজ্ঞেস করলাম,
আপনি রুকু’তে কি পড়েন? তিনি বলেন,
"সুবহা-নাকা ওয়াবি হামদিকা লা- ইলা-হা
ইল্লা- আনতা"
অর্থাৎ "হে আল্লাহ! আমরা তোমার প্রশংসার
সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি ব্যতীত কোন মা'বূদ নেই।" কেননা ইবনু আবূ
মুলাইকাহ আমাকে আয়িশার সূত্রে অবহিত করছেন যে, তিনি ['আয়িশাহ (রাযিঃ)] বলেছেন, একরাতে
আমি ঘুম থেকে জেগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আমার কাছে পেলাম না। আমি
ধারণা করলাম, তিনি হয়ত তার অপর কোন স্ত্রীর কাছে গেছেন। আমি তার খোঁজে বের হলাম, কিন্তু
না পেয়ে ফিরে আসলাম। দেখি, তিনি রুকু' অথবা (রাবীর সন্দেহ) সাজদায় আছেন এবং বলছেনঃ
"সুবহ-নাকা ওয়াবি হামদিকা লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা"। আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা
আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। আমি কি ধারণায় নিমজ্জিত হয়েছি, আর আপনি কি কাজে মগ্ন আছেন।
(সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৬-(২২১/৪৮৫), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৯৭১, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ক্বওমা
রুকূ থেকে উঠে সুস্থির হয়ে দাঁড়ানোকে ‘ক্বওমা’
বলে। ‘ক্বওমা’র সময় দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবেন ও ইমাম-মুক্তাদী সকলে বলবেন,
“সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ” অর্থাৎ ‘আল্লাহ
শোনেন তার কথা যে তাঁর প্রশংসা করে’।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করার সময় দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা
বলতেন। আবার রুকূ‘তে যাবার সময় তাকবীর বলতেন। রুকূ‘ হতে তাঁর পিঠ উঠাবার সময় ‘‘সামি‘আল্লা-হু
লিমান হামিদাহ’’ এবং দাঁড়ানো অবস্থায় ‘‘রব্বানা- লাকাল হামদ’’ বলতেন। তারপর সাজদায়
যাবার সময় আবার তাকবীর বলতেন। সিজদা্ হতে মাথা
উঠাবার সময় তাকবীর বলতেন। পুনরায় দ্বিতীয় সাজদায় যেতে তাকবীর বলতেন, আবার সিজদা্ থেকে
মাথা তোলার সময় তাকবীর বলতেন। সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত গোটা সালাতে তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরূপ করতেন। যখন দু’ রাক্‘আত আদায় করার পর বসা হতে উঠতেন তাকবীর
বলতেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৮৯, হীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯২, সুনান আননাসায়ী ১১৫০, আহমাদ ৯৮৫১, ইরওয়া ৩৩১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৭৫১, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বলবে, তখন তোমরা ‘‘আল্লা-হুম্মা
রব্বানা- লাকাল হামদ’’ বলবে। কেননা যার কথা মালায়িকার কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের
(ছোট) গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৮৭৪-৭৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৩২-৩৫, ৭৩৮, ৭৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৯, সুনান আবূ দাঊদ
৮৪৮, সুনান আততিরমিযী ২৬৭, আহমাদ ৯৯২৩, সহীহ আল জামি‘ ৭০৫, সহীহ আত্ তারগীব ৫২০, মালিক
১৯৭, নাসাঈ ১০৬৩, হাদীস সম্ভার ৬৬৩, । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত বর্ণনা থেকে এ কথা বুঝা যায় যে, ইমাম
‘সামিআল্লাহু---’বললে মুক্তাদী ‘রাব্বানা অলাকালহাম্দ’ বলবে। তবে এখানে এ কথা নিশ্চিত
নয় যে, মুক্তাদী ‘সামিআল্লাহু---’ বলবে না। বরং মুক্তাদীও উভয় বাক্যই বলতে পারে। যেহেতু
আল্লাহর নবি (সাঃ) উভয়ই বলেছেন।
অথবা
(৪) আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ হতে মাথা উঠিয়ে বলতেনঃ
“আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদু মিল্আস্
সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ওয়া মিল্আ মা- শি’তা মিন শাইয়্যিম বা’দু আহলুস্ সানা-য়ি ওয়াল
মাজদি আহাক্কু মা ক্ব-লাল ’আবদু ওয়া কুল্লুনা- লাকা ’আবদুন, আল্লা-হুম্মা লা- মা-নি’আ
লিমা- আ’ত্বাইতা ওয়ালা- মু’তিয়া লিমা- মানা’তা। ওয়ালা ইয়ানফা’উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দ’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! হে আমাদের রব! তোমারই
সব প্রশংসা। আকাশ পরিপূর্ণ ও পৃথিবী পরিপূর্ণ, এরপর তুমি যা চাও তাও পরিপূর্ণ। হে প্রশংসা
ও মর্যাদার মালিক! মানুষ তোমার প্রশংসায় যা বলে তুমি তার চেয়েও অধিক প্রশংসা ও মর্যাদার
অধিকারী। আমরা সকলেই তোমার গোলাম। হে আল্লাহ! তুমি যা দিবে তাতে বাধা দেবার কেউ নেই।
আর তুমি যাতে বাধা দিবে তা দিতেও কেউ সমর্থ নয়। কোন সম্পদশালীর সম্পদই তোমার শাস্তি
হতে তাকে রক্ষা করতে পারবে না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৮৭৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৫৮, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৪৭৭, সুনান আবূ দাঊদ ৮৪৭, সুনান আননাসায়ী ১০৬৮, আহমাদ ১১৮২৮, সহীহ ইবনু হিব্বান
১৯০৫, ইরওয়া ৩৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অথবা
(৫) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ হতে তাঁর পিঠ সোজা করে
উঠে বলতেন,
“সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ, আল্লা-হুম্মা
রব্বানা- লাকাল হামদ মিলআস্ সামা-ওয়া-তি ওয়া মিল্আল আরযি ওয়া মিল্আ মা- শি’তা মিন শাইয়িম
বা’দ’’
(অর্থাৎ-
আল্লাহ শুনেন যে তার প্রশংসা করে। হে আমার রব! আকাশ ও পৃথিবীপূর্ণ তোমার প্রশংসা, এরপর
তুমি যা সৃষ্টি করতে চাও তাও পরিপূর্ণ)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৮৭৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৬, সুনান আবূ দাঊদ
৮৪৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৭৮, আহমাদ ১৯১০৪, ইরওয়া ৩৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৪৯, ইসলামিক
সেন্টারঃ ৯৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অথবা
(৬) রিফা’আহ্ ইবনু রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত আদায় করছিলাম। তিনি
যখন রুকূ’ হতে মাথা তুলে,
“সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বললেন (যে
ব্যক্তি আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করলো আল্লাহ তা শুনলেন), তখন এক ব্যক্তি ’বলল,
“রব্বানা- লাকাল হামদু হামদান কাসীরান ত্বইয়্যিবাম্
মুবা-রকান্ ফীহ’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার জন্য প্রশংসা, অনেক
প্রশংসা, যে প্রশংসা শির্ক ও রিয়া হতে পবিত্র ও মুবারক)। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এখন এ বাক্যগুলো কে পড়ল? সেই ব্যক্তি উত্তরে বললো,
আমি, হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি বললেন, আমি ত্রিশজনেরও অধিক মালাক দেখেছি এ কালিমার
সাওয়াব কার আগে কে লিখবে, এ নিয়ে তাড়াহুড়া করছেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৬২, সুনান আননাসায়ী ১০৬২,
সুনান আবূ দাঊদ ৭৭০, সুনান আততিরমিযী ৪০৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সিজদাহ
‘সিজদা’ অর্থ চেহারা মাটিতে রাখা। পারিভাষিক
অর্থ, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে বিনম্রচিত্তে চেহারা মাটিতে রাখা। রুকূ হতে উঠে ক্বওমার
দো‘আ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে আল্লাহর নিকটে সিজদায় লুটিয়ে পড়বেন এবং সিজদার দো‘আসমূহ
পাঠ করবেন। নাকসহ কপাল, দু’হাত, দু’হাঁটু ও দু’পায়ের আংগুল সমূহের অগ্রভাগসহ মোট ৭টি
অঙ্গ মাটিতে লাগিয়ে সিজদা করবেন।
সাত অঙ্গ দ্বারা সিজদা করা ও সিজদায় চুল-কাপড় না গুটানোর হুকুমঃ
ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা্ করতে এবং চুল ও কাপড়
না গুটাতে নির্দেশিত হয়েছিলেন। (অঙ্গ সাতটি হল) কপাল দু’ হাত, দু’ হাঁটু ও দু’ পা।
(সুনান আদ-দারেমী, ১৩৫৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৮০৯,৮১০,
৮১২, ৮১৫, ৮১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৮২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯০, মুসনাদুল
মাউসিলী ২৩৮৯, ২৪৩১, ২৪৬৪, ২৬৬৯, সহীহ ইবনু
হিব্বান ১৯২১, ১৯২৩, ১৯২৪, ১৯২৫, মুসনাদুল হুমাইদী ৫০০, ৫০১, ৫০২, আহমাদ ২৫৮৪, আধুনিক
প্রকাশনী ৭৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৭২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৯৭৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সিজদায় যাওয়ার নিয়ম
(ক) সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে দু’হাত মাটিতে রাখবেন।
কেননা এ বিষয়ে আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত وَلْيَضَعْ
يَدَيْهِ
قَبْلَ
رُكْبَتَيْهِ
হাদীছটি ‘ছহীহ’। (আবুদাঊদ ৮৪০, মিশকাত ৮৯৯)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সিজদা্ করার সময় যেন
উটের বসার মতো না বসে, বরং দু’ হাত যেন হাঁটুর আগে মাটিতে রাখে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৯, সুনান আননাসায়ী ১০৯১, সহীহ
আল জামি‘ ৫৯৫, দারিমী ১৩২১, ১৩৫৭, ১৩৬০, মুসনাদুল মাওসিলী, ৬৫৪০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৮৪০, ১০৯০, আহমাদ ৩৮১, বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ ৩/১৩৪, বাইহাকী ২/৯৯, তাহাবী ১/২৫৪;
হাযিমী, আল ই’তিবার পৃ: ১৫৮-১৫৯, মুসনাদুল মাউসিলী ৬৫৪০। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) কিন্তু ওয়ায়েল বিন হুজ্র (রাঃ) বর্ণিত আগে
হাঁটু রাখার হাদীছটি ‘যঈফ’ বা দুর্বল। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত)-হাদিস একাডেমী-৮৯৮, সুনান আবূ দাঊদ ৮০৮, ৮৩৮, সুনান আততিরমিযী ২৬৮, সুনান
আননাসায়ী ১০৮৯, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৮২, ইরওয়া ৩৫৭, দারিমী ১৩৫৯, মির‘আত ৩/২১৭-১৮)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)। যঈফ হাদিস আমলযোগ্য
নয়।
(গ) সিজদার সময় হাত দু’খানা ক্বিবলামুখী করে রাখতে
হবে। (‘কেননা দুই হাতও সিজদা করে যেমন মুখমন্ডল সিজদা করে থাকে’। হাদিসটি নিম্নরুপঃ
নাফি‘ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু
‘উমার (রাঃ) বলতেন, যে ব্যক্তি সালাতের সাজদায় নিজের কপাল জমিনে রাখে সে যেন তার হাত
দু’টিকেও জমিনে ওখানে রাখে যেখানে কপাল রাখে। তারপর যখন সিজদা হতে উঠবে তখন নিজের হাত
দু’টিও উঠায়। কারণ যেভাবে মুখমণ্ডল সিজদা করে ঠিক সেভাবে দু’ হাতও সিজদা করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত)-হাদিস একাডেমী- ৯০৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) সিজদার সময় হাত দু’খানা মাথার দু’পাশে কাঁধ
বা কান বরাবর থাকবে। (ফিক্বহুস্ সুন্নাহ ১/১২৩, নায়লুল
আওত্বার ৩/১২১)।
(ঙ) মাটিতে
স্বাভাবিকভাবে রাখবেন। হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একদল সাহাবীর মধ্যে বললেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত আপনাদের চেয়ে বেশি আমি মনে রেখেছি। আমি তাঁকে
দেখেছি, তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় দু্’ হাত দু’ কাঁধ বরাবর উঠাতেন। রুকূ‘ করার
সময় পিঠ নুইয়ে রেখে দু’ হাত দিয়ে দু’ হাঁটু শক্ত করে ধরতেন। আর মাথা উঠিয়ে ঠিক সোজা
হয়ে দাঁড়াতেন। এতে প্রতিটি গ্রন্থি স্ব-স্ব স্থানে চলে যেত। তারপর তিনি সিজদা করতেন।
এ সময় হাত দু’টি মাটির সাথে বিছিয়েও রাখতেন না, আবার পাঁজরের সাথে মিশাতেনও না এবং
দু’ পায়ের আঙ্গুলগুলোর মাথা ক্বিবলা মুখী করে রাখতেন। এরপর দু’ রাক্‘আতের পরে যখন বসতেন
বাম পায়ের উপরে বসতেন ডান পা খাড়া রাখতেন। সর্বশেষ রাক্‘আতে বাম পা বাড়িয়ে দিয়ে আর
অপর পা খাড়া রেখে নিতম্বের উপর (ভর করে) বসতেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস একাডেমী- ৭৯২,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮২৮, ইরওয়া ৩৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অনুরুপ আর একটি হাদিস,
বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদা করার সময় তোমরা দু’ হাতের
তালু জমিনে রাখবে। উভয় হাতের কনুই উপরে উঁচিয়ে রাখবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৯১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৪,
আহমাদ ১৮৪৯১, সহীহ আল জামি‘ ৫৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৮৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৯৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) কনুই
ও বগল ফাঁকা রাখবেন। হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহায়নাহ্ (রাঃ)হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা দিতেন, তার হাত দু’টিকে
এমন প্রশস্ত রাখতেন যে, তার বগলের নিচের শুভ্রতাও দেখা যেত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস একাডেমী- ৮৯১, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৯৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৯০,
সুনান আননাসায়ী ১১০৬, আহমাদ ২২৯২৫, ইরওয়া ৩৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৮৬, ইসলামিক সেন্টারঃ
৯৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মায়মূনাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় নিজের দু’ হাত জমিন ও পেট হতে পৃথক করে রাখতেন,
এমনকি যদি একটি ছাগলের বাচ্চা তাঁর হাতের নিচ দিয়ে চলে যেতে চাইলে যেতে পারতো।
সহীহ মুসলিমে প্রায় অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। মায়মূনাহ্
(রাঃ)বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা্ করতেন, তখন ছাগলের বাচ্চা
তাঁর দু’ হাতের মাঝ দিয়ে (পেট ও হাতের ভিতর দিয়ে) চলে যেতে চাইলে যেতে পারতো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৯০, সুনান আবূ দাঊদ ৮৯৮, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৯৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৮০, সুনান আননাসায়ী
১১০৯, ১১৪৭, আহমাদ ২৬২৬৯, ২৬২৭৮, ২৬২৯১, ২৬৩০৪; দারিমী ১৩৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৮৮,
ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) হাঁটু
বা মাটিতে ঠেস দিবেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮০১,
সহীহ আবূ দাঊদ ৭৩০, ৯৬৩, ৭৩১-৭৩৫, দারিমী ১৩৯৬। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(জ) সিজদায় দুই কনুই উঁচু রাখবেন এবং কোনভাবেই
দু’হাত কুকুরের মত মাটিতে বিছিয়ে দেওয়া যাবেন না। হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা সুষ্ঠুভাবে সিজদা করো। তোমাদের কেউ যেন কুকুরের ন্যায়
তার বাহুদ্বয় মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে সিজদা না করে। (সুনানে
ইবনে মাজাহ-তাওহীদ ৮৯২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৩২, ৮২২; সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৯৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৩, সুনান
আততিরমিযী ২৭৬, সুনান আননাসায়ী ১০২৮, ১১০৩, ১১১০; সুনান আবূ দাঊদ ৮৯৭, আহমাদ ১১৬৫৫,
১১৭৩৮, ১২৪০১, ১২৪২৯, ১২৫৭৯, ১২৮২০, ১৩০০৭, ১৩৪৮৩, ১৩৫৬১, ১৩৬৮৩; দারিমী ১৩২২,ইরওয়াহ
৩৭২, (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৮৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) সিজদা
এমন (লম্বা) হবে, যাতে বুকের নীচ দিয়ে একটা বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে। হাদিসটি
নিম্নরুপঃ
মায়মূনাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় নিজের দু’ হাত জমিন ও পেট হতে পৃথক করে রাখতেন,
এমনকি যদি একটি ছাগলের বাচ্চা তাঁর হাতের নিচ দিয়ে চলে যেতে চাইলে যেতে পারতো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮৯০, সৃনান আবূ দাঊদ ৮৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৯৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৬, সুনান আননাসায়ী ১১০৯, সুনান ইবনু মাজাহ্। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ঞ) সহজ হিসেবে প্রত্যেক মুছল্লী নিজ হাঁটু হ’তে
নিজ হাতের দেড় হাত দূরে সিজদা দিলে ঠিক হতে পারে। সিজদা হতে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে
বসবেন এবং ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবেন ও আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী রাখবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮০১, ৭৯২, সহীহ আবূ দাঊদ ৭৩০, ৯৬৩, দারিমী ১৩৯৬, সহীহ আবূ দাঊদ ৭৩১-৭৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সিজদায় যা করা যাবে না
(ট) ‘আবদুর রহমান ইবনু শিবল (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় কাকের মতো ঠোঁকর মারতে,
হিংস্র প্রাণীর মতো জমিনে হাত বিছিয়ে দিতে ও উটের মতো মসজিদের মধ্যে নিজের জন্য স্থান
নির্দিষ্ট করে নিতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯০২, সুনান আবূ দাঊদ ৮৬২, সুনান আননাসায়ী ১১১২, সহীহ আত্ তারগীব ৫২৩, দারিমী
১৩৬২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
সাজদায় কুকুরের মতো জমিনে হাত বিছিয়ে না দেয়া
(ঠ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদা্ ঠিক মত করবে। তোমাদের কেউ যেন সাজদায়
কুকুরের মতো জমিনে হাত বিছিয়ে না দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৮৮৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৩, সুনান আননাসায়ী
১১১০, আহমাদ ১২১৪৯, সুনান আততিরমিযী ২৭৬, সুনান আবূ দাঊদ ৮৯৭, আহমাদ ১২১৪৯, ইরওয়া ৩৭২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সিজদার গুরুত্ব ও ফজিলত
(১) আল্লাহ তাআলা বলেন,‘ সিজদা করো এবং নিকটবর্তী
হও।’ (সুরা আলাক : ১৯) ।
(২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু‘আ
করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু‘আ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৯,
সুনান আননাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৯৫৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বান্দারা তাদের রবের বেশি
নিকটে যায় সাজদারত অবস্থায়। তাই তখন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দু‘আ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৯৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮২, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭৫, সুনান আননাসায়ী ১১৩৭, আহমাদ ৯৪৬১,
সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৯৬৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....মা’দান ইবনু তালহাহ
আল ইয়ামারী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাযিঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম আমি বললাম, আমাকে একটি
কাজের কথা বলে দিন যা করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা (রাবীর সন্দেহ)
তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহর প্রিয়তম ও পছন্দনীয় কাজের কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি
চুপ থাকলেন। আমি পুনর্বার জিজ্ঞেস করলাম। এবারও তিনি নীরব থাকলেন। আমি তৃতীয়বার জিজ্ঞেস
করলে তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস
করেছিলাম। তিনি বলেছেনঃ তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশি বেশি সিজদা করবে। কেননা তুমি
যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা একধাপ
বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তোমার একটি গুনাহ মাফ করে দিবেন। মাদান বলেন, অতঃপর আমি আবূ দারদাহ
(রাযিঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে জিজ্ঞেস করলাম সাওবান (রাযিঃ) আমাকে যা বলেছেন, তিনিও
তাই বললেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৮০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৪৮৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪২৩, সুনান আততিরমিযী
৩৮৮, আহমাদ ২২৩৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৫) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তানরা যখন সাজদার আয়াত পড়ে
ও সিজদা্ করে, শায়ত্বন (শয়তান) তখন কাঁদতে কাঁদতে একদিকে চলে যায় ও বলে হায় আমার কপাল
মন্দ। আদম সন্তান সাজদার আদেশ পেয়ে সিজদা করলো, তাই তার জন্য জান্নাত। আর আমাকে সাজদার
আদেশ দেয়া হয়েছিল আমি তা অমান্য করলাম। আমার জন্য তাই জাহান্নাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৮১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১০৫২, আহমাদ ৯৭১৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৭৫৯, সহীহ আল জামি ৭২৭,
সহীহ আত্ তারগীব ৯৪৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৫২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(৬) আবূ
হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাব? তিনি
বললেনঃ মেঘমুক্ত পুর্ণিমার রাতের চাঁদকে দেখার ব্যাপারে তোমরা কি সন্দেহ পোষণ কর? তাঁরা
বললেন, না, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখার ব্যাপারে কি
তোমাদের কোন সন্দেহ আছে? সবাই বললেন, না। তখন তিনি বললেনঃ নিঃসন্দেহে তোমরাও আল্লাহকে
তেমনিভাবে দেখতে পাবে।
কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে। অতঃপর
আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, যে যার উপাসনা করতে সে যেন তার অনুসরণ করে। তাই তাদের কেউ সূর্যের
অনুসরণ করবে, কেউ চন্দ্রের অনুসরণ করবে, কেউ তাগুতের অনুসরণ করবে। আর বাকী থাকবে শুধুমাত্র
উম্মাহ্, তবে তাদের সাথে মুনাফিকরাও থাকবে। তাঁদের মাঝে এ সময় আল্লাহ তা‘আলা আগমন করবেন
এবং বলবেনঃ ‘‘আমি তোমাদের রব।’’ তখন তারা বলবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রবের আগমন না
হবে, ততক্ষণ আমরা এখানেই থাকব। আর তার যখন আগমন হবে তখন আমরা অবশ্যই তাঁকে চিনতে পারব।
তখন তাদের মাঝে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা‘আলা আগমন করবেন এবং বলবেন, ‘‘আমি তোমাদের
রব।’’ তারা বলবে, হাঁ, আপনিই আমাদের রব। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের ডাকবেন। আর জাহান্নামের
উপর একটি সেতু স্থাপন করা হবে। রাসূলগণের মধ্যে আমিই সবার আগে আমার উম্মাত নিয়ে এ পথ
অতিক্রম করব। সেদিন রাসূলগণ ব্যতীত আর কেউ কথা বলবে না। আর রাসূলগণের কথা হবেঃ (আল্লাহুম্মা
সাল্লিম সাল্লিম) হে আল্লাহ্! রক্ষা করুন, রক্ষা করুন।
আর জাহান্নামে বাঁকা লোহার বহু শলাকা থাকবে;
সেগুলো হবে সা‘দান কাঁটার মতো। তোমরা কি সা‘দান কাঁটা দেখেছ? তারা বলবে, হাঁ, দেখেছি।
তিনি বলবেন, সেগুলো দেখতে সা‘দান* কাঁটার মতোই। তবে সেগুলো কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহ্
ছাড়া আর কেউ জানে না। সে কাঁটা লোকের ‘আমল অনুযায়ী তাদের তড়িৎ গতিতে ধরবে। তাদের কিছু
লোক ধ্বংস হবে ‘আমলের কারণে। আর কারোর পায়ে যখম হবে, কিছু লোক কাঁটায় আক্রান্ত হবে,
অতঃপর নাজাত পেয়ে যাবে। জাহান্নামীদের হতে যাদের প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলা রহমত করতে ইচ্ছা
করবেন, তাদের ব্যাপারে মালাইকাহ্কে নির্দেশ দেবেন যে, যারা আল্লাহর ‘ইবাদাত করতো, তাদের
যেন জাহান্নাম হতে বের করে আনা হয়। মালাইকাহ তাদের বের করে আনবেন এবং সিজদার চিহ্ন
দেখে তাঁরা তাদের চিনতে পারবেন। কেননা, আল্লাহ্ তা‘আলা জাহান্নামের জন্য সিজদার চিহ্নগুলো
মিটিয়ে দেয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে তাদের জাহান্নাম হতে বের করে আনা হবে। কাজেই সিজদার
চিহ্ন ছাড়া আগুন বানী আদমের সব কিছুই গ্রাস করে ফেলবে। অবশেষে, তাদেরকে অঙ্গারে পরিণত
অবস্থায় জাহান্নাম হতে বের করা হবে। তাদের উপর ‘আবে-হায়াত’ ঢেলে দেয়া হবে ফলে তারা
স্রোতে বাহিত ফেনার উপর গজিয়ে উঠা উদ্ভিদের মত সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা
বান্দাদের বিচার কাজ সমাপ্ত করবেন কিন্তু একজন লোক জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে থেকে
যাবে। তার মুখমণ্ডল তখনও জাহান্নামের দিকে ফেরানো থাকবে। জাহান্নামবাসীদের মধ্যে জান্নাতে
প্রবেশকারী সেই শেষ ব্যক্তি।
সে তখন নিবেদন করবে, হে আমার রব! জাহান্নাম
হতে আমার চেহারা ফিরিয়ে দিন। এর দূষিত হাওয়া আমাকে বিষিয়ে তুলছে, এর লেলিহান শিখা আমাকে
যন্ত্রণা দিচ্ছে। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, তোমার নিবেদন গ্রহণ করা হলে, তুমি এছাড়া
আর কিছু চাইবে না তো? সে বলবে, না, আপনার ইয্যতের শপথ! সে তার ইচ্ছামত আল্লাহ্ তা‘আলাকে
অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিবে। কাজেই আল্লাহ তা‘আলা তার চেহারাকে জাহান্নামের দিক হতে
ফিরিয়ে দিবেন। অতঃপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে, তখন সে জান্নাতের অপরূপ সৌন্দর্য
দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহর ইচ্ছা সে চুপ করে থাকবে।
অতঃপর সে বলবে, হে আমার রব! আপনি জান্নাতের
দরজার নিকট পৌঁছে দিন। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন, তুমি পূর্বে যা চেয়েছিলে, তা
ছাড়া আর কিছু চাইবে না বলে তুমি কি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দাওনি? তখন সে বলবে, হে
আমার রব! তোমার সৃষ্টির সবচাইতে হতভাগ্য আমি হতে চাই না। আল্লাহ্ তারক্ষণিক বলবেন,
তোমার এটি পূরণ করা হলে তুমি এ ছাড়া কিছু চাইবে না তো? সে বলবে না, আপনার ইযয্তের কসম!
এছাড়া আমি আর কিছুই চাইব না। এ ব্যাপারে সে তার ইচ্ছানুযায়ী অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি
দেবে। সে যখন জান্নাতের দরজায় পৌঁছবে তখন জান্নাতের অনাবিল সৌন্দর্য ও তার আভ্যন্তরীণ
সুখ শান্তি ও আনন্দঘন পরিবেশ দেখতে পাবে। যতক্ষণ আল্লাহ্ তা‘আলা ইচ্ছা করবেন, সে চুপ
করে থাকবে। অতঃপর সে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দাও! তখন পরাক্রমশালী
মহান আল্লাহ্ বলবেনঃ হে আদম সন্তান, কি আশ্চর্য! তুমি কত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী! তুমি
কি আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করনি এবং প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হয়েছে, তাছাড়া
আর কিছু চাইবে না? তখন সে বলবে, হে আমার রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আমাকে সবচাইতে হতভাগ্য
করবেন না। এতে আল্লাহ্ হেসে দেবেন। অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন এবং
বলবেন, চাও। সে তখন চাইবে, এমন কি তার চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ফুরিয়ে যাবে। তখন পরাক্রমশালী
মহান আল্লাহ্ বলবেনঃ এটা চাও, ওটা চাও। এভাবে তার রব তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে থাকবেন।
অবশেষে যখন তার আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেনঃ এ সবই তোমার, এ
সাথে আরো সমপরিমাণ (তোমাকে দেয়া হল)। আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.)-কে
বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা
বলবেনঃ এ সবই তোমার, তার সাথে আরও দশগুণ (তোমাকে দেয়া হল)। আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) বললেন,
আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুধু এ কথাটি স্মরণ রেখেছি যে,
এ সবই তোমার এবং এর সাথে সমপরিমাণ। আবূ সা‘ঈদ (রাযি.) বললেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি
যে, এসব তোমার এবং এর সাথে আরও দশগুণ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৮০৬, ৬৫৭৩, ৭৩৩৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮২, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৬০৯, মুসান্নাফ আবদুর
রাযযাক ২০৮৫৬, মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ১১৭৮, মুসনাদে বাযযার ৭৭৯১, আহমাদ ৭৭২১, ৭৭০৩,
আবূ ইয়া'লা ৬৩৬০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১৪১, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১১৪৮৮,
দারিমী ২৮০১, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম: ৮৭৩৬, (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৭৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭) সিজদাহ হলো দোয়া কবুলের সর্বোত্তম সময়।
উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেনঃ যখন কোন বান্দা আল্লাহ্র
জন্য একটি সিজদা করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে একটি নেকী দান করেন, তার একটি গুনাহ মাফ
করেন এবং তার মর্যাদা এক ধাপ উন্নত করেন। অতএব তোমরা অধিক সংখ্যায় সিজদা করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৪২৪,)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) বী’আহ্ ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাতের বেলা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে থাকতাম। উযূর পানিসহ
অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন মিসওয়াক, জায়নামায ইত্যাদি এগিয়ে দিতাম। একদিন তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, (দীন-দুনিয়ার কল্যাণের জন্য যা কিছু
চাও) চেয়ে নাও। আমি নিবেদন করলাম, আমার তো শুধু জান্নাতে আপনার সাহচর্য লাভই একমাত্র
কাম্য। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (যে মর্যাদায় তুমি পৌঁছতে চাও
এটা তো বড় কথা) এছাড়া আর কিছু চাও? আমি বললাম, এটাই আমার একমাত্র আবেদন। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি বেশি বেশি সিজদা্ করে (এ মর্যাদা লাভের জন্য) আমাকে
সাহায্য কর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৯৬, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী ৯৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৩২০, সুনান আননাসায়ী
১১৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সিজদার তাসবীহ বা দোয়া
ক্বাওমার দোয়া পাঠ শেষে আল্লাহু আকবার বলতে
বলতে সিজদায় গিয়ে প্রথমে পাঠ করুনঃ
(১) হুযাইফাহ্
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায়
করেছেন। তিনি রুকূ‘তে ‘সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম’ এবং সিজদাতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল আলা’
পাঠ করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) , ৮৭১, সুনান
আততিরমিযী ২৬২, সুনান ইবনু মাজাহ ৮৯৭, দারিমী ১৩০৬), সুনান আননাসায়ী ১০০৭, আহমাদ, ইবনু
খুযাইমাহ ৫৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) সা‘দী
(রাঃ) হতে তাঁর পিতা অথবা তাঁর চাচার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতরত অবস্থায় দেখেছি। তিনি রুকূ‘ ও সিজদাতে ‘‘সুবহানাল্লাহি
ওয়া বিহামদিহী’’ তিনবার পড়ার সমপরিমাণ সময় অবস্থান করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সিজদার অতিরিক্ত তাসবীহ বা দোয়াসমূহ
(৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের উপর ‘আমল করে নিজের রুকূ‘ ও সাজদায় এই দু‘আ
বেশি বেশি পাঠ করতেনঃ
‘‘সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা- ওয়াবিহামদিকা,
আল্লা-হুমাগ ফিরলী’’-
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি পূত-পবিত্র। তুমি
আমাদের রব। আমি তোমার গুণগান করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৯৪, ৮১৭, ৪২৯৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৯৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৭, সুনান আননাসায়ী,
১০৪৬, ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টার ৯৭৮,
নায়লুল আওত্বার ৩/১০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(৪) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)....আয়িশাহ
(রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইন্তিকালের
পূর্বে এ দু’আটি খুব বেশি মাত্রায় পাঠ করতেনঃ
"সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা আস্তাগফিরুকা
ওয়াতুবু ইলায়ক"
অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা
প্রাপ্য একমাত্র তিনি, আমি তোমার নিকট সকল পাপের ক্ষমা চাচ্ছি ও তওবা করছি।” রাবী বলেন,
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে যে এসব নতুন বাক্য পড়তে দেখছি- এগুলো কী? তিনি
বললেনঃ আমার উন্মাতের মধ্যে আমার জন্য একটি চিহ্ন বা নিদর্শন রাখা হয়েছে। যখন আমি
তা দেখি তখন এগুলো বলতে থাকি। আমি দেখেছিঃ “ইযা-জা-আ নাসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ"
সূরার শেষ পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৯৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(৫) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ).....আয়িশাহ (রাযিঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "ইযা- জাআ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" (সূরাহু আন নাসর)
নাযিল হওয়ার পর থেকে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ দু'আ পাঠ করা ব্যতিরেকে
কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি। অথবা তিনি সেখানে (সালাতে) বলতেনঃ
"সুবহা-নাকা রব্বী ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ
ফিরলী”।
অর্থাৎ, হে আমার প্রতিপালক আপনার জন্যই সকল
পবিত্রতা ও প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন।" (সহীহ
মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৪৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ)...আয়িশাহ্
(রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক সংখ্যায় এ দু’আ পড়তেনঃ
“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হাম্দিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা
ওয়াতুবু ইলাইহি"
অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা
তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তওবা করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।”
রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে অধিক সংখ্যায় এ কথা বলতে দেখছিঃ
“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"। রাবী বলেন,
তিনি বললেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আমি অচিরেই আমার উন্মাতের
মধ্যে একটি নিদর্শন দেখতে পাব। যখন আমি সে আলামাত দেখতে পাই তখন অধিক সংখ্যায় এ দু’আ
পাঠ করতে থাকিঃ "সুবহানাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"।
সে নিদর্শন সম্ভবত এই “ইযা- জা-আ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ .....”। অর্থাৎ “যখন আল্লাহর
সাহায্য আসবে এবং বিজয় লাভ হবে (অর্থাৎ- মক্কা বিজয়), তুমি দেখত পাবে, দলে দলে লোক
আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে; তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা সহকারে তার তাসবীহ করে এবং
তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিঃসন্দেহে তিনি খুবই তওবা গ্রহণকারী"- (সূরাহ
আন নাসর)। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৪৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৭০, ইসলামিক সেন্টার ৯৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৭) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক
রাতে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার বিছানায় পেলাম না। আমি
তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে আমার হাত রসূলের পায়ের উপর গিয়ে পড়ল। আমি দেখলাম,
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাতরত। তাঁর পা দু’টি খাড়া হয়ে আছে। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলছেনঃ
‘‘আল্লা-হুম্মা আ‘ঊযু বিরিযা-কা মিন সাখাত্বিকা
ওয়া বিমু‘আ-ফা-তিকা মিন ‘উকূবাতিকা, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনকা লা- উহসী সানা-আন ‘আলায়কা,
আনতা কামা- আসনায়তা ‘আলা- নাফসিকা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের
মাধ্যমে তোমার অসন্তোষ ও গযব থেকে পানাহ চাই। তোমার ক্ষমার দ্বারা তোমার ‘আযাব হতে
মুক্তি চাই। তোমার কাছে তোমার রহমতের ওয়াসীলায় আশ্রয় চাই। আমি তোমার প্রশংসা করে শেষ
করতে পারবো না। তুমি তেমন, যেমন তুমি নিজে তোমার প্রশংসা করেছো)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৮৭৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৭৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৬, সুনান ইবনু মাজাহ্
৩৮৪১, আহমাদ ২৫৬৫৬, সুনান আননাসায়ী ১১০০, ১৬৯, আহমাদ, ইবনু খুযাইমাহ ৬৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৯৭২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ‘ ও সাজদায় বলতেন,
‘‘সুব্বুহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালা-য়িকাতি
ওয়াররূহ’’
অর্থ: মালাক ও রূহ জিবরীলের রব অত্যন্ত পবিত্র,
খুবই পবিত্র। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭২, সহীহ মুসলিম
হাদিস একাডেমী ৯৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৭,
সুনান আবূ দাঊদ ৮৭২, আহমাদ ২৪০৬৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৩,
ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় গিয়ে বলতেন,
‘‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী জামবী কুল্লাহূ দিক্কহূ
ওয়া জিল্লাহূ ওয়া আও্ওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ ওয়া ‘আলা- নিয়াতাহূ ওয়া সিররহূ’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার সকল ছোট-বড়,
আগে-পরের, গোপনীয় ও প্রকাশ্য গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৯৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৩,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯৩১, ইবনু খুযাইমাহ, ৬৭২, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) ‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায়ে
দাঁড়ালাম। তিনি ক্বিয়ামের সমপরিমাণ সময় রুকূ‘তে অবস্থান করেন এবং তাতে
‘‘সুবহানা যিল্ জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল
কিবরিয়াই ওয়াল ‘আযমাতি’’
পাঠ করেন। অতঃপর তিনি ক্বিয়ামের সমপরিমাণ সময়
সিজদাতে অবস্থান করেন এবং তাতেও উক্ত দু‘আ পাঠ করেন। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৩, সুনানন আততিরমিযী ‘শামায়িলি মাহমুদিয়্যাহ, ২৯৮, সুনান আননাসায়ী ১০৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১)
“আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়াবিকা ‘আ-মানতু ওয়ালাকা ‘আসলামতু সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী
খলাক্কাহু ওয়াসাও ওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সাম‘আহু ওয়া বাসারাহু তাবারকাল্লাহু আহসানুল খ-লিক্কীন”
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য সিজদা করেছি,
তোমারই প্রতি ঈমান এনেছি, তোমার জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছি, আমার মুখমণ্ডল (আমার সমগ্র
দেহ) সিজদায় অবনমিত সেই মহান সত্তার জন্য যিনি উহাকে সৃষ্টি করেছেন এবং উহার কর্ণ ও
চক্ষু উদ্ভিন্ন করেছেন, মহিমান্বিত আল্লাহ সর্বোত্তম স্রষ্টা। (মুসলিম ১/৫৩৪)।
(১২) আয়েশা
রা: বলেন, রাসুল সা:কে সিজদায় এ দুয়াটি পড়তে শুনেন।
“রব্বি আ‘তি নাফসী তাক্বওয়া-হা, যাক্কিহা-আনতা
খয়রু মান যাক্কা–হা, আনতা ওয়া লিয়্যুহা-ওয়া মাওয়ালাহা”
অর্থ: আমার রব! আমার নফসকে তাকওয়া দান করো
এবং আমার নফসকে পরিশুদ্ধ করো, তুমিই নফসের সর্বোত্তম পরিশুদ্ধকারী। তুমিই তো তার অভিভাবক
ও মুরুব্বী। (মুসনাদ আহমদ-২৫৭৫৭)।
(১৩) হাসান ইবনু ’আলী আল হুলওয়ানী ও মুহাম্মাদ
ইবনু রাফি (রহঃ)...ইবনু জুরায়য (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আতাকে জিজ্ঞেস করলাম,
আপনি রুকু’তে কি পড়েন? তিনি বলেন,
"সুবহা-নাকা ওয়াবি হামদিকা লা- ইলা-হা
ইল্লা- আনতা"
অর্থাৎ "হে আল্লাহ! আমরা তোমার প্রশংসার
সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই।" কেননা ইবনু আবূ
মুলাইকাহ আমাকে আয়িশার সূত্রে অবহিত করছেন যে, তিনি [’আয়িশাহ (রাযিঃ)] বলেছেন, একরাতে
আমি ঘুম থেকে জেগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আমার কাছে পেলাম না। আমি
ধারণা করলাম, তিনি হয়ত তার অপর কোন স্ত্রীর কাছে গেছেন। আমি তার খোঁজে বের হলাম, কিন্তু
না পেয়ে ফিরে আসলাম। দেখি, তিনি রুকু’ অথবা (রাবীর সন্দেহ) সাজদায় আছেন এবং বলছেনঃ
"সুবহ-নাকা ওয়াবি হামদিকা লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা"। আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা
আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। আমি কি ধারণায় নিমজ্জিত হয়েছি, আর আপনি কি কাজে মগ্ন আছেন।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৪৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭১, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এখানে উল্লেখিত রুকু ও সিজদাহর অতিরিক্ত দোয়া
ছাড়াও কুরআনের আয়াত ব্যতীত হাদিস হতে জানা যেমন, অভাব-অনটন, হতাশা, বিপদ-আপদ বা বালা-মসিবত
হতে মুক্তি কিংবা মনের আশা পূরণের যতো দোয়া আছে সবই পড়া যাবে। সালাত যেহেতু এক প্রকার
দোয়া বা মুনাজাত তাই একাকী দুই হাত তুলে মুনাজাতে
যা বলবেন বা আল্লাহর নিকট যা চাইবেন সেই সংক্রান্ত হাদিস হতে দোয়াগুলো রুকু, সিজদা
ও তাশাহুদ বৈঠকে বলবেন। আশা করা যায়, আপনার দোয়া কবুল হবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
(ক) ইবনু
‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু‘আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু‘আ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৯৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৯, সুনান আননাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ
আল জামি‘ ২৭৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বান্দারা তাদের রবের বেশি নিকটে যায়
সাজদারত অবস্থায়। তাই তখন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দু‘আ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮২, সুনান আবূ দাঊদ
৮৭৫, সুনান আননাসায়ী ১১৩৭, আহমাদ ৯৪৬১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৭৫,
সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
দুই সিজদার মাঝে বসার সময় কতোটুকু
রুকু ও সিজদায় যে পরিমান সময় ব্যয় হবে দুই
সিজদার মাঝখানেও প্রায় সে পরিমান সময় ব্যয় করতে হবে।
বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রুকূ’, সিজদা্, দুই সাজদার মধ্যে বসা, রুকূ’র
পর সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময়ের পরিমাণ (ক্বিরাআতের জন্য) দাঁড়ানোর সময় ছাড়া প্রায় সমান
সমান ছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৬৯, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৯২, ৮০১, ৮২০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৪৭১, সুনান আবূ দাঊদ ৮৫২, সুনান আননাসায়ী ১০৬৫, সুনান আততিরমিযী ২৭৯, আহমাদ ১৮৪৬৯,
দারেমী ১৩৭২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৮৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৫৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সিজদারত অবস্থায় ও দুই সিজদার মাঝে বসা অবস্থায়
শান্ত হতে ও তাড়াহুড়া না করতে রাসুল (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন। দুই সিজদার মাঝে বৈঠকে
পরিপূর্ণ শান্তভাবে না বসলে তার সালাত হবে না বলে তিনি জানিয়েছেন। অনেক মুছুল্লীকে
দেখা যায় এক সিজদাহ দেয়ার পর মাথা সামান্য তুলেই আবার দ্বিতীয় সিজদায় যায় তাদের সালাত
হবে না।
দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আ
(১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ সাজদার মধ্যে বলতেনঃ
‘‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়া ‘আ-ফিনী
ওয়াহদিনী ওয়ারযুক্বনী’’
(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ কর। আমাকে
রহম কর, হিদায়াত কর, আমাকে হিফাযাত কর। আমাকে রিযক্ব দান কর)। (মিশকাতুল মিসাবীহ ৯০০, সুনান আবূ দাঊদ ৮৫০, সুনান আততিরমিযী
২৮৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
এরপর বলবেন,
(২) হুযাইফাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’ সিজদার মাঝে বলতেন: “রব্বিগফির লী।” (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর)। (মিশকাতুল মিসাবীহ-৯০১, আহমাদ ৩৯৭, ৪০০, সুনান ইবনু মাজাহ ৮৯৭,
আল কুবরা ৬৫৬, ৭৩১, ১৩৭৮, ১৩৭৯, সুনান আবু দাউদ ৮৭৪; সুনান আততিরমিযী, শামাইল ২৭০,
বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ ৯১০, বাইহাকী ২/১২১-১২২, আবু দাউদ তায়ালিসী ৪১৬, সুনান আদ-দারেমী
১৩৬০, নাসাঈ, ১০৬৯, ইরওয়া ৩৩৫, দারিমী ১৩৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
শেষ বৈঠক (তাশাহুদ বৈঠক)
যে বৈঠকের শেষে সালাম ফিরাতে হয়, তাকে শেষ
বৈঠক বলে। ক্বাযী ‘আয়ায (৪৭৬-৫৪৪ হিঃ) বলেন, আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য এবং শেষ নবীর
রিসালাতের সাক্ষ্য শামিল থাকায় অন্য দো‘আসমূহের উপর প্রাধান্যের কারণে যিকরের এই বিশেষ
অনুষ্ঠানটিকে সামষ্টিক ভাবে তাশাহহুদ বলা হয়’। (মির‘আত
৩/২২৭)।
এটি ফরয, যা না করলে ছালাত বাতিল হয়। তবে ১ম
বৈঠকটি ওয়াজিব, যা ভুলক্রমে না করলে সিজদায়ে সহো ওয়াজিব হয়। ২য় রাক‘আত শেষে বৈঠকে বসবেন।
যদি ১ম বৈঠক হয়, তবে কেবল ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ে ৩য় রাক‘আতের জন্য উঠে যাবেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২৯)।
আর যদি শেষ বৈঠক হয়, তবে ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার
পরে দরূদ, দো‘আয়ে মাছূরাহ এবং সম্ভব হলে অন্য দো‘আ পড়বেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২৯; মির‘আত ১/৭০৪; ঐ, পৃঃ ৩/২৯৪-৯৫, হা/৯৪৭, ৯৪৯)।
বৈঠকে বসার নিয়ম
(১) ১ম
বৈঠকে বাম পা পেতে তার উপরে বসবেন ও শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ
বের করে দিয়ে বাম নিতম্বের উপরে বসবেন ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবেন। এই সময় ডান পায়ের
আঙ্গুলী সমূহের অগ্রভাগ ক্বিবলামুখী থাকবে।
হাদিসঃ
আবূ হুমায়দ আস্ সা’ইদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত সম্পর্কে আপনাদের চেয়ে বেশি জানি। তারা বললেন,
তা আমাদেরকে বলুন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি সালাতের
জন্য দাঁড়ালে দু’ হাত উঠাতেন, এমনকি তা দু’ কাঁধ বরাবর উপরে তুলতেন। তারপর তাকবীর বলতেন।
এরপর ’ক্বিরাআত (কিরআত)’ পাঠ করতেন। এরপর রুকূ’তে যেতেন। দু’ হাতের তালু দু’ হাঁটুর
উপর রাখতেন। পিঠ সোজা রাখতেন। অর্থাৎ- মাথা নীচের দিকেও ঝুকাতেন না, আবার উপরের দিকেও
উঠাতেন না। এরপর (রুকূ’ থেকে) মাথা উঠিয়ে বলতেন “সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’। তারপর
সোজা হয়ে হাত উপরে উঠাতেন, এমনকি তা কাঁধ বরাবর করতেন এবং বলতেন, ’আল্লা-হু আকবার’।
এরপর সিজদা্ করার জন্য জমিনের দিকে ঝুঁকতেন। সাজদার মধ্যে দুই হাতকে বাহু থেকে আলাদা
করে রাখতেন। দু’ পায়ের আঙ্গুলগুলোকে ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে দিতেন। তারপর মাথা উঠাতেন।
বাম পা বিছিয়ে দিয়ে এর উপর বসতেন। এরপর সোজা হয়ে থাকতেন, যাতে তাঁর সমস্ত হাড় নিজ নিজ
জায়গায় এসে যায়।
তারপর তিনি দাঁড়াতেন। দ্বিতীয় রাক্’আতও এভাবে
আদায় করতেন। দু’ রাক্’আত আদায় করে দাঁড়াবার পর তাকবীর বলতেন ও কাঁধ পর্যন্ত দু’ হাত
উঠাতেন, যেভাবে প্রথম সালাত শুরু করার সময়
করতেন। এরপর তাঁর বাকী সালাত এভাবে তিনি আদায় করতেন। শেষ রাক্’আতের শেষ সাজদার পর,
যার পরে সালাম ফিরানো হয়, নিজের বাম পা ডান দিকে বের করে দিতেন এবং এর উপর বসতেন। তারপর
সালাম ফিরাতেন। তারা বলেন, আপনি সত্য বলেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এভাবেই সালাত আদায় করতেন।
আবূ দাঊদ-এর আর এক বর্ণনায় আবূ হুমায়দ-এর হাদীসে
আছেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ’ করলেন। দু’ হাত দিয়ে দু’ হাঁটু আঁকড়ে
মজবুত করে ধরলেন। এ সময় তাঁর দু’ হাত ধনুকের মতো করে দু’ পাঁজর হতে পৃথক রাখলেন। আবূ
হুমায়দ (রাঃ) আরও বলেন, এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিজদা্ করলেন। নাক ও কপাল মাটির সাথে ঠেকালেন। দু’ হাতকে
পাঁজর হতে পৃথক রাখলেন। দু’ হাত কাঁধ সমান জমিনে রাখলেন। দু’ উরুকে রাখলেন পেট থেকে
আলাদা করে। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিজদা্ করলেন। তারপর তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাম পা বিছিয়ে দিয়ে এর উপর বসলেন। ডান পায়ের সম্মুখ
ভাগকে ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে দিলেন। ডান হাতের তালু ডান উরুর উপর এবং বাম হাতের তালু
বাম উরুর উপর রাখলেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করলেন। আবূ দাঊদ-এর আর এক বর্ণনায়
আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুই রাক্’আতের পর বাম পায়ের পেটের উপর
বসতেন। ডান পা রাখতেন খাড়া করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চতুর্থ রাক্’আতে
বাম নিতম্বকে জমিনে ঠেকাতেন আর পা দু’টিকে একদিক দিয়ে বের করে দিতেন (ডান দিকে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮০১, ৭৯২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৩০, ৭৩১, ৯৬৩; দারিমী
১৩৯৬, নায়ল ৩/১৪৩-৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(২) জোড়-বেজোড় যেকোন ছালাতের সালামের বৈঠকে নারী-পুরুষ
সকলকে এভাবেই বাম নিতম্বের উপর বসতে হয়। একে ‘তাওয়ার্রুক’ বলা হয়।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আয়িশাহ্
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর ও
ক্বিরাআত “আলহামদু লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন’’ দ্বারা সালাত শুরু করতেন। তিনি যখন রুকূ করতেন মাথা খুব উপরেও
করতেন না, আবার বেশী নীচুও করতেন না, মাঝামাঝি রাখতেন। রুকূ হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে
না দাঁড়িয়ে সাজদায় যেতেন না। আবার সিজদা্ হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে না বসে দ্বিতীয় সাজদায়
যেতেন না। প্রত্যেক দু’ রাক্’আতের পরই বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়তেন। বসার সময় তিনি তাঁর
বাম পা বিছিয়ে দিতেন। ডান পা খাড়া রাখতেন। শায়ত্বনের (শয়তানের) মতো কুকুর বসা বসতে
নিষেধ করতেন। সাজদায় পশুর মতো মাটিতে দু’ হাত বিছিয়ে দিতেও নিষেধ করতেন। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করতেন সালামের মাধ্যমে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৯১, ৮০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮২৮, ছহীহ ইবনু হিববান
১৮৬২,৬৭,৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৯৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৭, সুনান আবূ
দাঊদ ৭৩০, ৭৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৬৯, আহমাদ ২৪০৩০, ইরওয়া ৩১৬,আধুনিক প্রকাশনী ৭৮২
, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তাশাহুদ বৈঠকে দোয়া পাঠের সময় আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা
(৩) (ক) ওয়ায়িল ইবনু হূজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
(তাশাহুদের বৈঠক সম্পর্কে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন।
অতঃপর তিনি বাম পা বিছিয়ে দিলেন। বাম হাতকে বাম রানের উপর রাখলেন। এভাবে তিনি ডান কনুইকে
ডান রানের উপর বিছিয়ে রাখলেন। এরপর (নব্বইয়ের বন্ধনের ন্যায়) ডান হাতের কনিষ্ঠা ও অনামিকা
বন্ধ করলেন। (মধ্যমা ও বৃদ্ধার দ্বারা) একটি বৃত্ত বানালেন এবং শাহাদাত আঙ্গুল উঠালেন।
এ সময় আমি তাঁকে দেখলাম, তিনি তাশাহুদ পাঠ করতে করতে ইশারা করার জন্য শাহাদাত আঙ্গুল
নাড়ছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯১১, সুনান আননাসায়ী
৮৮৯, ইরওয়া ৩৬৭, সুনান আবূ দাঊদ ৭২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
এক ব্যক্তি সালাতে তাশাহুদ পড়ার সময় শাহাদাতের দু’ আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করতে লাগলো।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, এক আঙ্গুল দিয়েই ইশারা কর,
এক আঙ্গুল দিয়েই ইশারা কর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৯১৩, সুনান আততিরমিযী ৩৫৫৭, সুনান আননাসায়ী ১২৭২, দা‘ওয়াতুল কাবীর ৩১৬)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
(গ) এবং
ডান হাত ৫৩ -এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ থাকবে ও শাহাদাত অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করবেন। ৫৩
-এর ন্যায় অর্থ কনিষ্ঠা, অনামিকা ও মধ্যমা অঙ্গুলী মুষ্টিবদ্ধ করা ও বৃদ্ধাঙ্গুলীকে
তাদের সাথে মিলানো এবং শাহাদাত অঙ্গুলীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া। বৈঠকের শুরু
থেকে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত ইশারা করতে থাকবেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহুদ পড়ার জন্য বসলে তাঁর বাম হাত বাম পায়ের হাঁটুর
উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। এ সময় তিনি তিপ্পান্নের মতো করার জন্য আঙ্গুল
বন্ধ করে রাখতেন, তর্জনী দিয়ে (শাহাদাত) ইশারা করতেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০৬, ৯০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৫৮০, আহমাদ ৬১৫৩, দারেমী ১৩৭৮, মির‘আত ৩/২২৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১১৮৫, ইসলামীক সেন্টার
১১৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) ছাহেবে মির‘আত ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (১৯০৪-৯৪
খৃ:) বলেন, আঙ্গুল ইশারার মাধ্যমে আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেওয়া হয়। (মির‘আত ৩/২২৯ পৃঃ)।
নারী পুরুষ সকলের জন্য একই হুকুম।
(ঙ) ইশারার সময় আঙ্গুল দ্রুত নাড়ানো যাবে না,
যা পাশের মুছল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয়’।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চাদর পরে সালাত আদায় করলেন। চাদরটির এক কোণে অন্য
রঙের বুটির মতো কিছু কাজ করা ছিল। সালাতে এই কারুকার্যের দিকে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) একবার তাকালেন। সালাত শেষ করার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, আমার এ চাদরটি (এর দানকারী) আবূ জাহম-এর কাছে নিয়ে যাও। তাকে এটি ফেরত দিয়ে
আমার জন্য তার ‘আম্বিজা-নিয়াহ্’ নিয়ে আসো। কারণ এই চাদরটি আমাকে আমার সালাতে মনোযোগী
হতে বিরত রেখেছে- (বুখারী ও মুসলিম)।
বুখারীর আর এক বর্ণনায় আছে, আমি সালাতে চাদরের
কারুকার্যের দিকে তাকাচ্ছিলাম, তাই আমার ভয় হচ্ছে এই চাদর সালাতে আমার নিবিষ্টতা বিনষ্ট
করতে পারে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৫৭, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৭৩,৭৫২, ৫৮১৭, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১১২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৫৬, সুনান আবূ দাঊদ ৪০৫২, ইরওয়া ৩৭৬,
আহমাদ ২৪০৮৭, সহীহ আল জামি ৮৬৪, মির‘আত ৭৬৩, ১/৬৬৯ পৃঃ, ঐ, ২/৪৭৩ পৃঃ, আধুনিক প্রকাশনীঃ৩৬০,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) ‘আশহাদু’ বলার সময় আঙ্গুল উঠাবেন ও ইল্লাল্লা-হ’
বলার পর আঙ্গুল নামাবেন’ বলে যে কথা চালু আছে তার কোন ভিত্তি নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০৬, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী, পৃঃ
১৪০; মির‘আত ৩/২২৯), সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮০,
আহমাদ ৬১৫৩, দারেমী ১৩৭৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) মুছল্লীর
নযর ইশারার বাইরে যাবে না।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
নাফি‘ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু
‘উমার (রাঃ) যখন সালাতে বসতেন, নিজের দু’ হাত নিজের দু’ রানের উপর রাখতেন। আর শাহাদাত
আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন এবং তার চোখের দৃষ্টি থাকতো আঙ্গুলের প্রতি। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ শাহাদাত আঙ্গুল শায়ত্বনের (শয়তানের) কাছে
লোহার চেয়ে বেশি শক্ত। অর্থাৎ- শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে তাওহীদের ইশারা করা শায়ত্বনের
(শয়তানের) ওপর নেয়া নিক্ষেপ করার চেয়েও কঠিন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯১৭, আহমাদ ৫৯৬৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৯০, নাসাঈ ১২৭৫)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৪) বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলো বাম হাঁটুর
প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও বিছানো থাকবে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু
‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসুল সাঃ যখন সালাতের মধ্যে বসতেন দু’ হাত দু’
হাঁটুর উপর রাখতেন এবং ডান হাতের বৃদ্ধার নিকট যে আঙ্গুল রয়েছে (তর্জনী) তা উঠাতেন।
তা দিয়ে দু‘আ (ইশারা) করতেন। আর তাঁর বাম হাত বাম হাঁটুর উপর বিছানো থাকতো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১১৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮০, সুনান আননাসায়ী ১২৬৯, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৯১৩, আহমাদ
৬৩৪৯, ইরওয়া ৩৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) দো‘আ
পাঠের সময় আকাশের দিকে তাকানো নিষেধ।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ লোকেরা যেন সালাতে দু‘আ করার
সময় নযরকে আসমানের দিকে ক্ষেপন না করে। অন্যথায় তাদের দৃষ্টিকে ছোঁ মেরে নেয়া হবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৮৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৮৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪২৯, সুনান আননাসাঈ ১২৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৪৯,
ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন লোক যেন সালাতে হাতের উপর ঠেস দিয়ে না
বসে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯১৪, সুনান আবূ দাঊদ
৯৯২, আহমাদ ৬৩৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
তাশাহুদ বৈঠকে পঠিতব্য দোয়াসমূহ
প্রথমতঃ
আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি ওয়াছ্ ছালাওয়া-তু
ওয়াত্ ত্বাইয়িবা-তু আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়ুহান নাবিইয়ু ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু।
আসসালা-মু ‘আলায়না ওয়া ‘আলা ‘ইবা-দিল্লা-হিছ ছা-লেহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু
ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু।
অনুবাদ: যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয়
পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ
ও সমৃদ্ধি সমূহ নাযিল হউক। শান্তি বর্ষিত হউক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের
উপরে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল’।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করতাম
তখন এ দু‘আ পাঠ করতাম, ‘‘আসসালা-মু ‘আলাল্ল-হি ক্ববলা ‘ইবা-দিহী, আসসালা-মু ‘আলা- জিবরীলা,
আসসালা-মু ‘আলা- মীকায়ীলা, আসসালা-মু ‘আলা- ফুলা-নিন’’
(অর্থাৎ-আল্লাহর ওপর সালাম তাঁর বান্দাদের
ওপর পাঠাবার আগে, জিবরীলের উপর সালাম, মীকায়ীল-এর ওপর সালাম। সালাম অমুকের উপর। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষ করলেন, আমাদের দিকে ফিরে বললেন, ‘‘আল্লাহর
ওপর সালাম’’ বলো না। কারণ আল্লাহ তো নিজেই সালাম (শান্তিদাতা)।
অতএব তোমাদের কেউ সালাতে বসে বলবে,
‘‘আততাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াস্ সলাওয়া-তু
ওয়াত্ব ত্বইয়্যিবা-তু আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়্যুহান নাবিইয়্যু ওয়ারহমাতুল্ল-হি ওয়াবার-কা-তুহু
আসসালা-মু ‘আলায়না ওয়া‘আলা- ‘ইবা-দিল্লা-হিস্ স-লিহীন’’
(অর্থাৎ- সব সম্মান, ‘ইবাদাত, উপাসনা ও পবিত্রতা
আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার ওপর আল্লাহর সব নেক বান্দাদের ওপর সালাম)।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
কোন ব্যক্তি এ কথাগুলো বললে এর বারাকাত আকাশ ও মাটির প্রত্যেক নেক বান্দার কাছে পৌঁছবে।
এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
‘‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু
আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রসূলুহু’’
(অর্থাৎ-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত
কোন মা‘বূদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আল্লাহর বান্দা ও রসূল।)
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
এরপর আল্লাহর বান্দার কাছে যে দু‘আ ভালো লাগে সে দু‘আ পাঠ করে আল্লাহর মহান দরবারে
আকুতি মিনতি জানাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০৯,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৩৫, ৮৩১, ৬২৩০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৮৩,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০২, সুনান আবূ দাঊদ ৯৬৮, নাসায়ী ১২৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৯৯,
আহমাদ ৪১০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৮০, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(খ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আত্তাহিয়্যাতু শিক্ষা
দিতেন, যেভাবে তিনি আমাদেরকে কুরআন মাজীদের সূরাহ্ শিক্ষা দিতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন,
‘‘আততাহিয়্যা-তুল মুবা-রাকা-তুস্ সলাওয়া-তু
ওয়াততাইয়্যিবা-তু লিল্লা-হি। আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়্যুহান্ নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্ল-হি
ওয়া বারাকা-তুহু। আসসালা-মু ‘আলায়না- ওয়া ‘আলা- ‘ইবা-দিল্লা-হিস্ স-লিহীন। আশহাদু আল্লা-
ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়ারসূলুহু’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৭৮৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নীরবে তাশাহ্হুদ পাঠ করা সুন্নত
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, তাশাহহুদ আস্তে পড়া সুন্নাত। (সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত), ৯৮৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯১৮, সুনান আততিরমিযী ২৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দরূদ
দ্বিতীয়তঃ
হাদীছে বিভিন্ন শব্দে ছহীহ সনদে ৭টি দরূদ বর্ণিত
হয়েছে (আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন্নবী, ১৬৫-১৬৮ পৃ.)। তাশাহ্হুদে এর যেকোন একটি পাঠ করলে
ছালাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এর মধ্যে দরূদে ইবরাহীমী পাঠ করাই সর্বোত্তম। (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/৪৫৪-৪৫৮; বিন বায, মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১১/২০২-২০৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/৩৯৯-৪০০)।
(১ নং দরুদ, দরুদে ইবরাহিম):
“আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া
‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লায়তা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইবরা-হীমা ইন্নাকা
হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা
বা-রকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ
ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের
উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ
ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের
উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত’।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ)-এর সাথে আমার দেখা হলে তিনি বললেন, হে ‘আবদুর রহমান!
আমি কি তোমাকে একটি কথা উপহার দিব যা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছি?
উত্তরে আমি বললাম, হাঁ আমাকে তা উপহার দিন। তিনি বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি আমরা ‘সালাম’
কিভাবে পাঠ করবো তা আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা আপানার ও আপনার পরিবারে
প্রতি ‘সালাত’ কিভাবে পাঠ করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা
বলো,
‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিও ওয়া
‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- সল্লায়তা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আল- আ-লি ইবরা-হীমা ইননাকা
হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন
কামা- বা-রাকতা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’’-
(অর্থঃ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের
পরিবার-পরিজনের প্রতি রহমত বর্ষণ কর, যেভাবে তুমি রহমত বর্ষণ করেছো ইবরাহীম ও ইবরাহীমের
পরিবার-পরিজনের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি বারাকাত নাযিল
কর মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি, যেভাবে তুমি বারাকাত নাযিল করেছো
ইব্রাহীম ও ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের প্রতি। তুমি বড় প্রশংসিত ও সম্মানিত)।
কিন্তু ইমাম মুসলিম-এর বর্ণনায় ‘আলা- ইবরা-হীম’
শব্দ দু’ স্থানে উল্লিখিত হয়নি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৯১৯ সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩৭০, ৪৭৯৭, ৬৩৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৬, আহমাদ ১৮১৫৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৩১২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২ নং দরুদ):
আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার প্রতি কিভাবে দরূদ পাঠ করব? রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা বল,
‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া
আয্ওয়া-জিহী ওয়া যুররিইয়্যাতিহী কামা- সল্লায়তা ‘আলা- আ-লি ইব্র-হীমা ওয়াবা-রিক ‘আলা-
মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আয্ওয়া-জিহী ওয়া যুররিইয়্যাতিহী কামা- বা-রকতা ‘আলা- আ-লি ইব্র-হীমা
ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ এবং তাঁর
পত্নীগণ ও বংশধরগণের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করো, যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিজনের
প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করেছো এবং মুহাম্মাদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও বংশধরগণের প্রতি তোমার
কল্যাণ নাযিল করো, যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিবার-পরিজনের প্রতি কল্যাণ নাযিল
করেছো। অবশ্যই তুমি খুব প্রশংসিত এবং খুব সম্মানিত।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত),৯২০,সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪০৭, সুনান আবূ দাঊদ
৯৭৯, সুনান আননাসায়ী ১২৯৪, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৯০৫, আহমাদ ২৩৬০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৭৯৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দরুদ বিষয়ে জ্ঞাতব্য
প্রথমতঃ দরূদে মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর পরিবারকে
ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিবারের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এর ফলে মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর
পরিবারের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে বলে মনে হ’লেও প্রকৃত অর্থে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি
করা হয়েছে। কেননা মুহাম্মাদ (ছাঃ) স্বয়ং ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধর এবং মানব জাতির শ্রেষ্ঠ
সন্তান ও সর্বশেষ রাসূল। পিতা ইবরাহীমের সাথে সন্তান হিসাবে তাঁর তুলনা মোটেই অমর্যাদাকর
নয়।
দ্বিতীয়ত: ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশে হাজার হাজার
নবী ছিলেন। কিন্তু মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরিবারবর্গের মধ্যে কোন নবী না থাকা সত্ত্বেও
তাঁদেরকে অগণিত নবী-রাসূল সমৃদ্ধ মহা সম্মানিত ইবরাহীমী বংশের সাথে তুলনা করার মাধ্যমে
মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরিবারের মর্যাদা নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি করা হয়েছে। (মির‘আত ১/৬৭৮-৬৮০; ঐ, ৩/২৫৩-৫৫)।
দরূদ পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত
(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ
পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৮,
সুনান আবুআবূ দাঊদ ১৫৩০, সুনান আননাসায়ী ১২৯৬, সুনান আততিরমিযী ৪৮৫, আহমাদ ৮৮৫৪, দারেমী
২৮১৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮০৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে,
আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করবেন। তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, আর
আল্লাহর নৈকট্যের জন্য দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২২, সুনান আন নাসায়ী ১২৯৭, হাকিম ১/৫৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা আমার প্রতি বেশি বেশি দরূদ
পাঠ করবে, তারাই কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আমার পক্ষ থেকে বেশি নিকটে হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২৩, সুনান আততিরমিযী ৪৮৪, সহীহ
আত্ তারগীব ১৬৬৮)। হাদিসের মানঃ হাসান। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঘ) উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কিছু মালাক (ফেরেশতা)
আছেন যারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ান। তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার কাছে পৌঁছান। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২৪, সুনান আননাসায়ী ১২৮২, সিলসিলাহ্
আস্ সহীহাহ্ ২৮৫৩, হাকিম ২/৪২১, দারিমী ২৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ আমার ওপর সালাম পাঠ করলে, নিশ্চয়ই
আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে আমার রূহ ফেরত দেন যাতে আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৫, সুনান আবূ দাঊদ ২০৪১,
সহীহ আল জামি ৫৬৭৯, বায়হাক্বীর দা‘ওয়াতে কাবীর ১৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান।
(চ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তোমাদের ঘরকে
কবরস্থান বানিও না, আর আমার কবরকেও উৎসবস্থলে পরিণত করো না। আমার প্রতি তোমরা দরূদ
পাঠ করবে। তোমাদের দরূদ নিশ্চয়ই আমার কাছে পৌঁছে, তোমরা যেখানেই থাক না কেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯২৬, সুনান আবূ দাঊদ ২০৪২, সহীহ আল জামি‘ ৭২২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(ছ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লাঞ্ছিত হোক সেই ব্যক্তি, যার নিকট
আমার নাম উচ্চারিত হয় কিন্তু সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে না। লাঞ্ছিত হোক সেই ব্যক্তি,
যার কাছে রমাযান মাস আসে আবার তার গুনাহ ক্ষমার আগে সে মাস চলে যায়। লাঞ্ছিত হোক সেই
ব্যক্তি, যার নিকট তার বৃদ্ধ মা-বাপ অথবা দু’জনের একজন বেঁচে থাকে অথচ তারা তাকে জান্নাতে
পৌঁছায় না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২৭, সুনান আততিরমিযী
৩৫৪৫, সহীহ আত্ তারগীব, হাকিম ১/৫৪৯)। হাদিসের মানঃ হাসান।
(জ) আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের কাছে তাশরীফ আনলেন। তখন
তাঁর চেহারায় বড় হাসি-খুশী ভাব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার
নিকট জিবরীল (আঃ) এসেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার রব বলেছেন, আপনি
কি এ কথায় সন্তুষ্ট নন যে, আপনার উম্মাতের যে কেউ আপনার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে আমি
তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবো? আর আপনার উম্মাতের কোন ব্যক্তি আপনার ওপর একবার সালাম
পাঠালে আমি তার উপর দশবার সালাম পাঠাবো? (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৯২৮, সুনান আননাসায়ী ১২৮৩, দারিমী ২৮১৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঝ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি সালাত আদায় করছিলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও উপস্থিত
ছিলেন। তাঁর কাছে ছিলেন আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ)। সালাত শেষে আমি যখন বসলাম, আল্লাহ
তা‘আলার প্রশংসা করলাম, এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠ করলাম।
তারপর আমি আমার নিজের জন্য দু‘আ করতে লাগলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
চাও, তোমাকে দেয়া হবে। চাও, তোমাকে দেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৩১, সুনান আততিরমিযী ৫৯৩)। হাদিসের মানঃ হাসান।
(ঞ) ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, দু‘আ আসমান ও জমিনের মধ্যে লটকিয়ে থাকে। এর থেকে কিছুই উপরে উঠে না যতক্ষণ পর্যন্ত
তোমরা তোমাদের নবীর ওপর দরূদ না পাঠাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৩৮, সুনান আততিরমিযী ৪৮৬, সহীহ
আত্ তারগীব ১৬৭৬। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(ট) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে আরয করলাম, হে আল্লাহর
রসূল! আমি আপনার উপর অনেক বেশী দরূদ পাঠ করি। আপনি আমাকে বলে দিন আমি (দু’আর জন্য যতটুকু
সময় বরাদ্দ করে রেখেছি তার) কতটুকু সময় আপনার উপর দরূদ পাঠাবার জন্য নির্দিষ্ট করব?
উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়। আমি আরয করলাম,
যদি এক-তৃতীয়াংশ করি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়,
যদি আরো বেশী কর তাহলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর। আমি আরয করলাম, যদি অর্ধেক সময় নির্ধারণ
করি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার মন যতটুকু চায় কর। যদি আরো বেশী
নির্ধারণ কর তাহলে তোমর জন্যই ভালো। আমি বললাম, যদি দুই-তুতীয়াংশ করি। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়। যদি আরো বেশি নির্ধারণ কর তোমার জন্যই কল্যাণকর।
আমি আরয করলাম, তাহলে আমি আমার দু’আর সবটুকু সবসময়ই আপনার উপর দরূদ পড়ার কাজে নির্দিষ্ট
করে দেব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে,
তোমার দীন-দুনিয়ার মকসুদ পূর্ণ হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৯, সুনান আততিরমিযী ২৪৫৭, সহীহ
আত্ তারগীব ১৬৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঠ) ফুযালাহ্ ইবনু ’উবায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপবিষ্ট ছিলেন। তখন একজন লোক
এলেন। তিনি সালাত আদায় করলেন এবং এই দু’আ পড়লেন,
“আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর ও আমার ওপর
রহম কর)। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালাত আদায়কারী!
তুমি তো নিয়ম ভঙ্গ করে বড্ড তাড়াহুড়া করলে। তারপর তিনি বললেন, তুমি সালাত শেষ করে দু’আর
জন্য বসবে। আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করবে। আমার ওপর দরূদ পড়। তারপর তুমি যা চাও আল্লাহর
কাছে দু’আ করবে।
ফুযালাহ্ (রাঃ) বলেন, এরপর আর এক ব্যক্তি এলো,
সালাত আদায় করলো। সে সালাত শেষে আল্লাহর প্রশংসা করলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
ওপর দরূদ পাঠ করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালাত আদায়কারী!
আল্লাহর কাছে দু’আও কর। দু’আ কবূল করা হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩০, সুনান আততিরমিযী ৩৪৭৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৩, নাসায়ী ১/১৮৯,
আহমাদ ৬/১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ড) খলীফাহ্ আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রকৃত কৃপণ হলো সে
ব্যক্তি, যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হবার পর আমার ওপর দরূদ পাঠ করেনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩৩, সুনান আততিরমিযী ৩৫৪৬, ইরওয়া
৫, আহমাদ ১৭৩৬, হাকিম ১/৫৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(ঢ) আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বের হয়ে একটি খেজুর বাগানে
প্রবেশ করলেন। এখানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর দরবারে সাজদারত
হলেন। সিজদা্ এত দীর্ঘ করলেন যে, আমি ভীত হয়ে পড়লাম। আল্লাহ না করুক তাঁকে তো আবার
আল্লাহ মৃত্যুমুখে পতিত করেননি? আবদুর রহমান বলেন, তাই আমি তাঁর কাছে এলাম, পরখ করে
দেখার জন্য। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথা উঠালেন এবং বললেন, কি হয়েছে?
আমি তাঁকে আমার আশংকার কথা বললাম। আবদুর রহমান বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
তখন আমাকে বললেনঃ জিবরীল (আঃ) আমাকে বললেন, আমি কি আপনাকে এই সুসংবাদ দিবো না যা আল্লাহ
তা’আলা আপনার ব্যাপারে বলেন? যে ব্যক্তি আপনার ওপর দরূদ পাঠ করবে আমি তার প্রতি রহমত
বর্ষণ করব। যে ব্যক্তি আপনার প্রতি সালাম পাঠাবে আমি তার প্রতি শান্তি নাযিল করব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩৭, আহমাদ ১৬৬৫, সহীহ আত তারগীব
১৬৫৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ণ) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, দু’আ আসমান ও জমিনের মধ্যে লটকিয়ে থাকে। এর থেকে কিছুই উপরে উঠে না যতক্ষণ পর্যন্ত
তোমরা তোমাদের নবীর ওপর দরূদ না পাঠাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৯৩৮, সুনান আততিরমিযী ৪৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ছালাতের মধ্যে ইমামের তেলাওয়াতে রাসূল (ছাঃ)-এর
নাম আসলে দরূদ পাঠ করার বিধান
ছালাতসহ যেকোন সময়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নাম শুনলে
তার প্রতি দরূদ পাঠ করা জায়েয। (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৬০৪১-৪২;
হায়তামী, তোহফাতুল মুহতাজ ২/৬৬; আল-মুনতাক্বা শারহুল মুয়াত্তা ১/১৫৪; বিন বায, ফাতাওয়া
নুরুন আলাদ দারব)।
কারণ আল্লাহ তা‘আলা আদেশ দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই
আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ প্রেরণ করেন। (অতএব) হে মুমিনগণ! তোমরা তার
প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ কর (সুরা আহযাব ৩৩/৫৬)।
এখানে ছালাতের মধ্যে বা ছালাতের বাইরে নির্দিষ্ট
করা হয়নি। উল্লেখ্য যে, এই দরূদ সংক্ষেপে ও নীরবে হতে হবে। (আল-মুনতাক্বা শারহুল মুওয়াত্ত্বা ১/১৫৪)।
দো‘আয়ে মাছুরাহ
তৃতীয়তঃ
‘মাছূরাহ’ অর্থ ‘হাদীছে বর্ণিত’। সেই হিসাবে
হাদীছে বর্ণিত সকল দো‘আই মাছূরাহ। কেবলমাত্র অত্র দো‘আটি নয়। তবে এ দো‘আটিই এদেশে
‘দো‘আয়ে মাছূরাহ’ হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে)।
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান
কাছীরাঁও অলা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহামনী
ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম”
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপরে অসংখ্য
যুলুম করেছি। ঐসব গুনাহ মাফ করার কেউ নেই আপনি ব্যতীত। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ
হ’তে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার উপরে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ বাকর আস্ সিদ্দীক্ব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিবেদন জানালাম, হে আল্লাহর
রসূল! আমাকে এমন একটি দু‘আ বলে দিন যা আমি সালাতে (তাশাহুদের পর) পড়ব। উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ দুআ পড়বে,
‘‘আল্লা-হুমা ইন্নী যলামতু নাফসী যুলমান কাসীরা।
ওয়ালা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা। ফাগফিরলী মাগফিরাতাম্ মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহামনী।
ইন্নাকা আনতাল গফূরুর রহীম’’
(অর্থঃ “হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আমার নাফসের
উপর অনেক যুলম করেছি। তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার কেউ নেই। অতএব আমাকে তোমার পক্ষ থেকে
মাফ করে দাও। আমার ওপর রহম কর। তুমিই ক্ষমাকারী ও রহমতকারী”)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৪২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৩৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৫, সুনান আননাসায়ী ১৩০২, সুনান আততিরমিযী ৩৫৩১, সুনান
ইবনু মাজাহ্ ৩৮৩৫, আহমাদ ৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬২৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৭৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ।
তাশাহ্হুদ বৈঠকে অতিরিক্ত পঠিতব্য দোয়াসমূহ
তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যেকার উল্লেখিত দো‘আসমূহের
পাঠ শেষে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নিম্নের দো‘আসমূহ পড়তেনঃ
তাশাহহুদের শেষে নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করার
জন্য বিশেষভাবে তাকীদ এসেছে -
(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ দু‘আ শিক্ষা দিতেন যেমন তাদেরকে কুরআনের
সূরাহ্ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমরা বলো,
‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি
জাহান্নাম, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল কবরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্
দাজ্জা-ল ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া- ওয়াল মামা-তি’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয়
চাই জাহান্নামের শাস্তি হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি হতে। তোমার নিকট আশ্রয়
চাই দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪১,সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯০, সুনান আবূ দাঊদ
১৫৪২, সুনান আননাসায়ী ২০৬৩, সুনান আততিরমিযী ৩৪৯৪, আহমাদ ২১৬৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩৬৫১,
ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২০৯, ইসলামীক সেন্টার ১২২০-১২২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাতের শেষে শেষ তাশাহুদ
পড়ে অবসর হয়ে যেন আল্লাহর কাছে চারটি জিনিস হতে পানাহ চায়। (১) জাহান্নামের ‘আযাব।
(২) কবরের ‘আযাব। (৩) জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ্ (ফিতনা)। (৪) মাসীহুদ্ দাজ্জালের অনিষ্ট।
“আল্লহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন আযা-বি জাহান্নাম
ওয়ামিন আযা-বিল কবরি ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহইয়া- ওয়াল মামা-তি ওয়ামিন শাররি ফিতনাতিল
মাসীহিদ দাজ্জা-ল”
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জাহান্নাম
ও কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার ক্ষতি থেকে
আশ্রয় প্রার্থনা করছি)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪০,সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১২১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮৮, সুনান আবূ দাঊদ ৯৮৩, সুনান আননাসায়ী ১৩১০, ৫৫০৫, ৫৫০৬,
৫৫০৯, ৫৫১১, ৫৫১৩-৫৫১৮, ৫৫২০, সুনান সুনান ইবনু মাজাহ্ ৯০৯, দারেমী ১৩৮৩, ১৩৪৪, সহীহ
আল জামি ৬৯৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২০০, ইসলামীক সেন্টার ১২১১, রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস
১৪৩১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৭৭, তিরমিযী ৩৬০৪, সুনান আবূ দাউদ ৯৮৩, আহমাদ ৭২৩৭, ৭১৯৬, ৭৮১০, ৭৯০৪,
৯০৯৩, ৯১৮৩, ৯৫৪৬, ৯৮২৪, ১০৩৮৯, ২৭৮৯০, ২৭৬৭৪, ২৭২৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(গ) ‘উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (রহ.) হতে বর্ণিত যে,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) তাঁকে বলেছেন যে,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে এ বলে দু‘আ করতেনঃ
“আল্ল-হুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আযা-বিল ক্ববরি, ওয়া আউজুবিকা মিন
ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জ-লি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়া ফিতনাতিল মামাতি,
আল্ল-হুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মাছামি ওয়াল মাগরামি।”
‘‘কবরের আযাব হতে, মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা
হতে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা হতে ইয়া আল্লাহ্! আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে
আল্লাহ্! গুনাহ্ ও ঋণগ্রস্ততা হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই।’’
তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আপনি কতই না ঋণগ্রস্ততা
হতে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বললেনঃ
যখন কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ
করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৮৩২,৮৩৩, ২৩৯৭, ৬৩৬৮, ৬৩৭৫,
৬৩৭৬, ৬৩৭৭, ৭১২৯, আধুনিক প্রকাশনী ৭৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৯৪, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৩৯, মু সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮৯, সুনান
আবূ দাঊদ ৮৮০, সুনান আননাসায়ী ১৩০৯, আহমাদ ২৪৫৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাশাহহুদ
ও সালাম ফিরার মধ্যখানে শেষ বেলায় অর্থাৎ সালাম ফিরবার আগে) এই দো‘আ পড়তেন,
“আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখ্খারতু
অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু অমা আসরাফতু অমা আন্তা আ‘লামু বিহী মিন্নী, আন্তাল মুক্বাদ্দিমু
অ আন্তাল মুআখখিরু লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত্”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর,
যে অপরাধ আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি,
যা অতিরিক্ত করেছি এবং যা তুমি আমার চাইতে অধিক জান। তুমি আদি, তুমিই অন্ত। তুমি ব্যতীত
কেউ সত্য উপাস্য নেই। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত),
৩৪২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন, ১১২০, ৬৩১৭, ৬৩৮৫, ৭৪৪২, ৭৪৯৯, ৭৩৮৫, সুনান ইবনু
মাজাহ, ১৩৫৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪১৮,সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৯৩,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৬৯, সুনান আননাসায়ী ১৬১৯, সুনান আবূ দাঊদ ৭৭১, আহমাদ ২৮১৩, ২৭০৫,
২৭৪৩, ২৮০৮, ৩৩৫৮,৩৪৫৮; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৫০০, দারিমী ১৪৮৬,আধুনিক প্রকাশনী ১০৫০,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১০৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(ঙ) আবূ সালিহ (রহঃ) হতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি সালাতে কি দু‘আ পাঠ কর? লোকটি বলল, আমি তাশাহহুদ (তথা আত্তাহিয়্যাতু
লিল্লা¬হি..) পাঠ করি এবং বলি
‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া
আ‘উযুবিকা মিনান্ নার’
কিন্তু আমি আপনার ও মু‘আযের অস্পষ্ট শব্দগুলো
বুঝতে পারি না ( অর্থাৎ আপনি ও মু‘আয কি দু‘আ পড়েন তা বুঝতে সক্ষম হই না)। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরাও তার আশে-পাশে ঘুরে থাকি (অর্থাৎ জান্নাত প্রার্থনা করি)।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৯২, ৯৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ
৯১০, ছহীহ ইবনু হিববান ৮৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৭৭, সুনান আননাসায়ী ১৩১০,
৫৫০৫-৬, ৫৫০৮-১১, ৫৫১৩-১৮, ৫৫২০; আহমাদ ৭১৯৬, ৭৮১০, ৭৯০৪, ৯০৯৩, ৯১৮৩, ২৭৫৯৬, ২৭৮৯০,
৯৮২৪, ২৭২৮০; দারিমী ১৩৪৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৯৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বসা ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি সালাত আদায় করে
এই বলে দু‘আ করলোঃ
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বি আন্না লাকাল
হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা শারীকা লাকাল মান্না-নু, ইয়া বাদী’আস্ সামা-ওয়া-তি
ওয়াল-আরদী, ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরাম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু, ইন্নী আস্আলুকাল
জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্না-র”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই, কারণ,
সকল প্রশংসা আপনার, কেবলমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই,
সীমাহীন অনুগ্রকারী: হে আসমানসমূহ ও যমীনের অভিনব স্রস্টা! হে মহিমাময় ও মহানুভব! হে
চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী-সর্বসত্তার ধারক! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম
থেকে আশ্রয় চাই”।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
এ ব্যক্তি ইসমে আযম দ্বারা দু‘আ করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে তাঁর
নিকট চাওয়া হলে তিনি দান করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-১৪৯৫,
সুনান আততিরমিযি-৩৫৪৪, সুনান আননাসায়ী ১২৯৯, আহমাদ (৩/১৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(ছ) মুআয (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একদা রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত ধরে বললেন, “হে মুআয! আল্লাহর শপথ! আমি
অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি।” অতঃপর তিনি বললেন, “হে মুআয! আমি তোমাকে অসিয়ত করছি যে, তুমি
প্রত্যেক নামাযের শেষাংশে এ দু‘আটি পড়া অবশ্যই ত্যাগ করবে না,
‘আল্লা-হুম্মা আইন্নী আলা যিক্রিকা ওয়া শুকরিকা
অহুসনি ইবা-দাতিক’
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিক্র
(স্মরণ), শুক্র (কৃতজ্ঞতা) এবং সুন্দর ইবাদত করতে সাহায্য দান কর।” (রিয়াদুস সালেহীন ১৪৩০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫২২, ৫৪৮২,
৫৪৮৩, আহমাদ- ২১৬২১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(জ)
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
সালাতের মধ্যে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করার পর বলতেন,
‘‘আহসানুল কালা-মি কালামুল্ল-হি ওয়া আহসানুল
হাদয়ি হাদয়ু মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’’
(অর্থাৎ-আল্লাহর ‘কালামই’ সর্বোত্তম কালাম।
আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হিদায়াতই সর্বোত্তম হিদায়াত।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৫৬, সুনান আননাসায়ী ১৩১১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) সায়াদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযসমূহের শেষাংশে এই দো‘আ
পড়ে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন,
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল বুখলি
অ আঊযু বিকা মিনাল জুবনি অ আঊযু বিকা মিন আন উরাদ্দা ইলা আরযালিল উমুরি অ আঊযু বিকা
মিন ফিতনাতিদ্দুন্য়্যা অ আঊযু বিকা মিন ফিতনাতিল ক্বাবর”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট কার্পণ্য
ও ভীরুতা থেকে পানাহ চাচ্ছি, স্থবিরতার বয়সে কবলিত হওয়া থেকে আমি তোমার নিকট আশ্রয়
প্রার্থনা করছি আর দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের ফিতনা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। (রিয়াযুস স্বা-লিহীন-১৪/১৪২৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৩৬৫, ৬৩৭০, ৬৩৭৪, ৬৩৯০, ২৮২২, সুনান আততিরমিযী ৩৫৬৭, সুনান আননাসায়ী ৫৪৪৫, ৫৪৪৭, ৫৪৭৮,
৫৪৭৯, ৫৪৮২, ৫৪৮৩, আহমাদ ১৫৮৯, ১৬২৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮১২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ।
তাশাহুদ বৈঠকে যার যা ইচ্ছে দোয়া পাঠ করবে
রুকু ও সিজদায় কুরআনের আয়াত ব্যতীত উল্লেখিত
দোয়াসমুহ ছাড়াও সহিহ হাদিস হতে যতো প্রকার দোয়া আছে যদি জানা থাকে ও সালাত আদায়ের সময়
থাকে তাহলে পাঠ করতে থাকবেন। এমনকি ১৫/২০টি
দোয়াও যদি মুখস্থ থাকে সবই পড়তে পারেন।
তাশাহুদ বৈঠকে কুরআন ও সহিহ হাদিস হতে উল্লেখিত
নিয়মানুসারে প্রচলিত দোয়ায়ে মাছুরা পাঠ করার পর
যতো প্রকার দোয়া মুখস্থ আছে সবই পাঠ করতে পারবেন। আপনি এমন একটি সমস্যায় পড়েছেন যার সমাধানের দোয়া
আপনার মুখস্থ আছে আর সেটি যদি হাদিসের হয় তাহলে আপনি রুকু, সিজদাহ ও তাশাহুদ বৈঠকে
একই দোয়া বারবার পাঠ করতে পারবেন।
রাসুল সা: বলেন, “তাশাহুদের পর যার যা ইচ্ছে
দোয়া করবে”। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৮৩৫, ৮৩১)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা এ ছিল যে, যখন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সঙ্গে সালাতে থাকতাম, তখন আমরা বলতাম, বান্দার পক্ষ হতে আল্লাহর প্রতি সালাম। সালাম
অমুকের প্রতি, সালাম অমুকের প্রতি। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
আল্লাহর প্রতি সালাম, তোমরা এরূপ বল না। কারণ আল্লাহ্ নিজেই সালাম। বরং তোমরা বল-
"আত্তাহিয়াতু লিল্লা-হি ওয়াস্ সলাওয়া-তু
ওয়াত তাইয়িবা-তু আসসালা-মু 'আলাইকা আইয়ুহান নাবিইয়্যু ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়াবারাকুহু
আসসালা-মু 'আলাইনা- ওয়া'আলা- ইবা-দিল্লা-হিস্ স-লিহীন"
”সমস্ত মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর
জন্য। হে নবী! আপনার উপর প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের
প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাগণের প্রতি।” তোমরা যখন তা বলবে তখন আসমান বা আসমান ও
যমীনের মধ্যে আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার নিকট তা পৌঁছে যাবে। (এরপর বলবে) ‘‘আমি সাক্ষ্য
প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন মাবূদ নাই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। অতঃপর যে দুআ তার
পছন্দ হয় তা সে বেছে নিবে এবং পড়বে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),৮৩৫,৮৩১, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী), ৭৮৩, আধুনিক প্রকাশনী ৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)
উক্ত হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, রুকু ও
সিজায় কুরআনের আয়াত ব্যতীত হাদিসে বর্নিত যেকোনো দোয়া এবং সালাতের শেষ বৈঠকে সালাম
ফিরানোর পূর্বে যেকোনো ধরনের দোয়া পাঠ করা যায়। চাই তা কোরআনের আয়াত হোক বা হাদিসে
বর্ণিত দোয়াই হোক।
অতএব সালাম ফিরানোর পর মুনাজাতে সময় ব্যয় না
করে সেই সময় সালাতের মধ্যে ব্যয় করা উচিৎ। মুনাজাতে যা বলবেন তার চেয়ে অধিক বিষয় সালাতের
মধ্যে পঠিতব্য দোয়াগুলোতে আছে। তবে হ্যাঁ দুই হাত তুলে একাকী মুনাজাত করা যাবে। দুই হাত তুলে মুনাজাতে
কুরআন ও হাদিসে বর্নিত দোয়াগুলো ছাড়াও বাংলা ভাষায় যেকোনোভাবে আল্লাহর নিকট চাওয়া যাবে।
তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে দোআ বিষয়ে জ্ঞাতব্য
(ক)
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, এরপর আল্লাহর বান্দার কাছে যে দু‘আ ভালো লাগে সে দু‘আ পাঠ করে আল্লাহর মহান
দরবারে আকুতি মিনতি জানাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৯০৯,সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৩৫, ৮৩১, ৬২৩০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৮৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৪০২, সুনান আবূ দাঊদ ৯৬৮, সুনান আননাসায়ী ১২৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৮৯৯, আহমাদ
৪১০১, মির‘আত হা/৯১৫, ৩/২৩৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
‘আবদুল্লাহ্
ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, অতঃপর যে দু‘আ তার পছন্দ হয় তা সে বেছে
নিবে এবং পড়বে।
এ কথার ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণের মধ্যে একদল বলেছেন,
এ সময় গোনাহ নেই এবং আদবের খেলাফ নয়, দুনিয়া ও আখেরাতের এমন সকল প্রকার দো‘আ করা যাবে।
পক্ষান্তরে অন্যদল বলেছেন, কুরআন-হাদীছে বর্ণিত দো‘আসমূহের মাধ্যমেই কেবল প্রার্থনা
করতে হবে। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমাদের এই ছালাতে মানুষের সাধারণ কথা-বার্তা
বলা চলে না। এটি কেবল তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠ মাত্র’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭৮, সহীহ মুসলিম ৫৩৭, নাসায়ী ১২১৮, দারিমী ১৫৪৩,
সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ৮৫৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বর্ণিত উভয় হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্য এটাই হতে
পারে যে, অন্যের উদ্দেশ্যে নয় এবং আদবের খেলাফ নয়, আল্লাহর নিকট এমন সকল দো‘আ করা যাবে।
তবে ছালাতের পুরা অনুষ্ঠানটিই যেহেতু আরবী ভাষায়, সেহেতু অনারবদের জন্য নিজেদের তৈরী
করা আরবীতে প্রার্থনা করা নিরাপদ নয়।
(খ) সর্বাবস্থায় সকলের জন্য হাদীছের দো‘আ পাঠ
করাই উত্তম। কিন্তু যখন দো‘আ জানা থাকে না, তখন তার জন্য সবচেয়ে উত্তম হবে প্রচলিত
দো‘আয়ে মাছূরাহ (আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু...) শেষে নিম্নের দো‘আটির ন্যায় যে কোন
একটি সারগর্ভ দো‘আ পাঠ করা, যা দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রয়োজনকে শামিল করে।
“আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই এ দু‘আ করতেন,
‘‘আল্ল-হুম্মা আ-তিনা- ফিদ্দুন্ইয়া- হাসানাতাওঁ
ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা- ‘আযা-বান্না-র’’
(অর্থাৎ-হে
আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ায় এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করো। আর জাহান্নামের ‘আযাব [শাস্তি]
হতে বাঁচাও)”। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৮৭, বাক্বারাহ
২/২০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫২২, ৬৩৮৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৬৯০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৩০২, আহমাদ ১৩১৬৩, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ২৮০, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৯৩৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪১৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪১৬৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
এ সময় দুনিয়াবী চাহিদার বিষয়গুলি নিয়তের মধ্যে
শামিল করবে। কেননা আল্লাহ বান্দার অন্তরের খবর রাখেন ও তার হৃদয়ের কান্না শোনেন’। (আলে ইমরান ৩/১১৯, ৩৮; ইবরাহীম ১৪/৩৯; গাফির/মুমিন ৪০/১৯)।
দো‘আর সময় নির্দিষ্টভাবে কোন বিষয়ে নাম না
করাই ভাল। কেননা ভবিষ্যতে বান্দার কিসে মঙ্গল আছে, সেটা আল্লাহ ভাল জানেন। (সুরা বাক্বারাহ
২/২১৬)।
প্রশ্ন হতে পারে, সালাতের মধ্যে পঠিতব্য অতিরিক্ত
দোয়াগুলো কি জামাতে সালাত আদায়কালে পড়ার সময় পাওয়া যাবে?
ইমাম সাধারনত জামাতে সালাত সংক্ষিপ্ত করে থাকেন।
তাই শুধু গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলোই পাঠ করবেন যাতে ইমামের অনুসরণ করে সালাতের প্রতিটি
রুকন অতিক্রম করা যায়। তবে নির্জনে একাকী সালাত আদায়কালে সালাতের প্রতিটি রুকন দোয়াগুলো
পাঠের মাধ্যমে ধীর স্থিরভাবে আদায় করবেন।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন: তোমদের কেউ যখন লোকেদের নিয়ে সালাত আদায় করে, তখন যেনো সে সংক্ষেপ করে। কেননা,
তাদের মধ্যে ছোট, বড়, দুর্বল ও কর্মব্যস্তরা রয়েছে। আর যদি কেউ একাকী সালাত আদায় করে,
তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৬৭, সুনান আততিরমিযী
২৩৬, সুনান আননাসায়ী ৮২৩, সুনান আবূ দাঊদ ৭৯৪, আহমাদ ২৭৪৪, ৯৯৩৩, ১০১৪৪, মুওয়াত্তা
মালেক ৩০৩,বুলগুলমারাম-৪১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৬৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
সালাম শেষে সালাম ফিরানোর পর দোয়াসমূহ
সালাত শেষে ডানে বামে সালাম ফিরানোর পর একবার
সরবে পড়ুন:-
(১নং) আল্ল-হু আকবার (একবার)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত শেষ হওয়াটা বুঝতাম
‘আল্ল-হু আকবার’ বলার মাধ্যমে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৯৫৯, সহীহ বুখারী ৮৪২, মুসলিম ৫৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২নং) এরপর তিনবার ‘আসতাগ্ফিরুল্লা-হ’ ও একবার
‘আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু, তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালা-লে ওয়াল
ইকরা-ম’ বলবেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার ‘‘আস্তাগফিরুল্ল-হ’’
বলতেন, তারপর এ দু‘আ পড়তেনঃ ‘‘আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা
ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার পক্ষ
থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬১, ৯৬০, সহীহ মুসলিম ৫৯১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আমাদের দেশের ৯৫% আলেম বা ইমাম-মুয়াজ্জিন ফরজ
ছালাত শেষে ১ নং ও ২ নং এর ‘আসতাগ্ফিরুল্লা-হ’ পাঠ করেই দুই হাত তুলে মোনাজাত
ধরেন। তারপর ২ নং এর ‘‘আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া-
যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’ দোয়াটি দুই হাত তুলে মোনাজাতে বলেন। অথচ রাসুল সা. এভাবে কখনো
ফরজ সালাত শেষে দুই হাত তুলে সামষ্টিকভাবে মোনাজাত করেননি বা এভাবে দোয়াও পাঠ করেনি।
রাসুল সা. ফরজ সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর যেসব দোয়া পাঠ বা যিকির বা আমল করতেন তা
এখানে সহিহ হাদিস ভিত্তিক আলোচনা করা হলোঃ
ছালাম ফিরানোর পরই উঠে চলে যাওয়া নিষেধ
অনেক মুছল্লি আছেন যারা ছালাম ফিরানোর সাথে
সাথেই উঠে চলে যায়। অথচ এভাবে চলে যাওয়া হাদিসে সম্পূর্ণ নিষেধ আছে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
“একদা সালাত শেষে জনৈক এক ব্যক্তি তাড়াহুড়ো
করে যেতে ধরলে হযরত উমর রাঃ তার ঘাড় ধরে বসালেন। এই দৃশ্য রাসুল সাঃ দেখে বললেন, উমর
তুমি ঠিকই করেছো।” (আহামদ হাদিস নং ২৩১৭০, সিলসিলা সহিহাহ
হাদিস নং ২৫৪৯)। হাদিসের মান-সহিহ হাদিস।
ফরজ ছালাত শেষে ছালাম ফিরানোর পরই চলে না গিয়ে
কিংবা সম্মিলিত মোনাজাতে অংশ না নিয়ে ছালাতের জায়গায় অযু অবস্থায় বসে বসে বিভিন্ন দোয়া
পাঠ বা যিকির করার ফজিলতঃ
(১) মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যতক্ষণ
পর্যন্ত সালাতের জন্য বসে সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতরত
থাকে। আর মালায়িকাহও ততক্ষণ পর্যন্ত তার জন্য এ বলে দু'আ করতে থাকে যে, হে আল্লাহ!
তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তাকে রহম করো। (আর মালায়িকাহ) ততক্ষণ পর্যন্ত
এরূপ দুআ করতে থাকে যতক্ষণ সে সেখান থেকে উঠে চলে না যায় কিংবা যতক্ষণ ওযু নষ্ট না
করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৯৫, ১৩৯৪, ১৩৯৬,
১৩৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ১৭৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩২,হাদিস
সম্ভার-৭৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) প্রমুখাৎ থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি নামাযের অবস্থাতেই থাকে যতক্ষণ নামায তাকে (অন্যান্য
কর্ম হতে) আটকে রাখে। তাকে নামায ব্যতীত অন্য কিছু তার পরিবারের নিকট ফিরে যেতে বাধা
দেয় না।” (বুখারী ৬৫৯, মুসলিম ১৫৪২)।
বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় এরূপ এসেছে, “তোমাদের
মধ্যে সেই ব্যক্তি নামাযেই থাকে যতক্ষণ নামায তাকে আটকে রাখে। (আগামী নামায পড়ার জন্য
অপেক্ষা করে মসজিদেই বসে থাকে।) আর সেই সময় ফিরিশতাবর্গ বলতে থাকেন, ‘হে আল্লাহ! ওকে
ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! ওর প্রতি সদয় হও।’ (এই দু‘আ ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে) যতক্ষণ
পর্যন্ত না সে নামাযের স্থান ত্যাগ করেছে অথবা তার ওযু নষ্ট হয়েছে।” (সহিহ বুখারী ৩২২৯, হাদিস সম্ভার-৭৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৩) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন, “নামাযের পর আর এক নামাযের জন্য অপেক্ষমাণ ব্যক্তি সেই অশ্বারোহীর সমতুল্য, যে
তার অশ্বসহ আল্লাহর পথে শত্রুর বিরুদ্ধে বিক্রমের সাথে সদা প্রস্তুত; যে থাকে বৃহৎ
প্রতিরক্ষার কাজে।” (আহমাদ ৮৬২৫, ত্বাবারানীর কাবীর ১১৭৫,
আওসাত্ব ৮১৪৪, সহীহ তারগীব ৪৫০নং, হাদিস সম্ভার-৭৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৪) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যারা ফাজ্রের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)
শেষ করে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত থাকে তাদের সঙ্গে আমার বসে থাকা, ইসমা‘ঈল
(আঃ)-এর সন্তান থেকে চারজনকে দাসত্বমুক্ত করার চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয়। আর যারা
‘আসরের সালাতের শেষে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত থাকে তাদের সঙ্গে আমার
বসে থাকা, চারজনকে আযাদ করার চেয়ে আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭০, আবূ দাঊদ ৩৬৬৭, ৩৬৬৯, সহীহ
আত্ তারগীব ৪৬৫, হাদিস সম্ভার-৭৩১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৫) আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ফাজ্রের (ফজরের) সালাত জামা‘আতে আদায় করল, অতঃপর বসে বসে সূর্যোদয় পর্যন্ত
আল্লাহর যিকর করতে থাকল, তারপর দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করল, সে একটি পূর্ণ হজ্জ ও একটি সম্পূর্ণ ‘উমরার সমান সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে।
বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি তিনবার বলেছেন,
সম্পূর্ণ হাজ্জ ও সম্পূর্ণ ‘উমরার সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭১, তিরমিযী ৫৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ৪৬৪, হাদিস সম্ভার-৭৩০)। । হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(৬) মু'মিন জননী জুয়াইরিয়াহ বিনতে হারেস (রাঃ)
থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল
ভোরে ফজরের নামায সমাপ্ত করে তাঁর নিকট থেকে বাইরে গেলেন। আর তিনি (জুয়াইরিয়াহ) স্বীয়
জায়নামাযে বসেই রইলেন। তারপর চাশ্তের সময় তিনি যখন ফিরে এলেন, তখনও তিনি সেখানেই বসেছিলেন।
এ দেখে তিনি তাঁকে বললেন, “আমি যে অবস্থায় তোমাকে ছেড়ে বাইরে গেলাম, সে অবস্থাতেই তুমি
রয়েছ?” তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমার
নিকট থেকে যাবার পর আমি চারটি বাক্য তিনবার পড়েছি। যদি সেগুলিকে তোমার সকাল থেকে (এ
যাবৎ) পঠিত দু‘আর মুকাবিলায় ওজন করা যায়, তাহলে তা ওজনে সমান হয়ে যাবে। আর তা হচ্ছে
এই যে,
‘সুবহা-নাল্লা-হি অবিহামদিহী আদাদা খালক্বিহী,
অরিযা নাফসিহী, অযিনাতা আরশিহী, অমিদা-দা কালিমা-তিহ্।’ অর্থাৎ, আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা
ঘোষণা করি; তাঁর সৃষ্টির সমান সংখ্যক, তাঁর নিজ মর্জি অনুযায়ী, তাঁর আরশের ওজন বরাবর
ও তাঁর বাণীসমূহের সমান সংখ্যক প্রশংসা।” (সহিহ মুসলিম
২৭২৬, সুনান আততিরমিযী ৩৫৫৫, সুনান আননাসায়ী ১৩৫২, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮০৮, আহমাদ ২৬২১৮,
২৬৮৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৭) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ).....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ জাল্লা শানুহু বলেন, আমি বান্দার ধারণা অনুযায়ী নিকটে আছি।
যখন সে আমার যিকর (স্মরণ) করে সে সময় আমি তার সাথে থাকি। বান্দা আমাকে একাকী স্মরণ
করলে আমিও তাকে একাকী স্মরণ করি। আর যদি সে আমাকে কোন সভায় আমার কথা স্মরণ করে তাহলে
আমি তাকে তার চেয়ে উত্তম (ফিরিশতাদের) সভায় স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত
অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে আসি। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে আমি
তার দিকে দৌড়িয়ে আসি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৮, ৬৭০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৫, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫৩৬, ৭৫৩৬, ৭৫৩৭, তিরমিযী ২৩৮৮, ৩৬০৩, সুনান ইবনু
মাজাহ ৩৮২২, আহমাদ ৭৩৭৪, ৮৪৩৬, ৮৮৩৩, ৯০০১, ৯০৮৭, ৯৩৩৪, ৯৪৫৭, ১০১২০, ১০২৪১, ১০৩০৬,
১০৩২৬, ১০৪০৩, ১০৫২৬, ১০৫৮৫, ২৭২৭৯, ২৭২৮৩, রিয়াদুস সালেহীন ১৪৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৫৬১, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৮) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর কিছু ফিরিশতা আছেন, যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে-ফিরে
আহলে যিকর খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন সম্প্রদায়কে আল্লাহর যিকররত অবস্থায় পেয়ে যান,
তখন তাঁরা একে অপরকে আহ্বান ক‘রে বলতে থাকেন, ‘এস তোমাদের প্রয়োজনের দিকে।’ সুতরাং
তাঁরা (সেখানে উপস্থিত হয়ে) তাদেরকে নিজেদের ডানা দ্বারা নিচের আসমান পর্যন্ত বেষ্টিত
করে ফেলেন। অতঃপর তাঁদেরকে তাঁদের প্রতিপালক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন,
‘আমার বান্দারা কি বলছে?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, আপনার
মহত্ত্ব বর্ণনা করছে, আপনার প্রশংসা ও গৌরব বয়ান করছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি আমাকে
দেখেছে?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! তারা আপনাকে দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন,
‘ কি হত, যদি তারা আমাকে দেখত?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘যদি তারা আপনাকে দেখত, তাহলে আরও
বেশী বেশী ইবাদত, গৌরব বর্ণনা ও তসবীহ করত।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি চায় তারা?’ ফিরিশতারা
বলেন, ‘তারা আপনার কাছে বেহেশত চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জান্নাত দেখেছে?’ ফিরিশতারা
বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত,
যদি তারা তা দেখত?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে তার জন্য আরও বেশী আগ্রহান্বিত
হত। আরও বেশী বেশী তা প্রার্থনা করত। তাদের চাহিদা আরও বড় হত।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা
কি থেকে পানাহ চায়?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা দোযখ থেকে পানাহ চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা
কি দোযখ দেখেছে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’
আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে বেশী বেশী
করে তা হতে পলায়ন করত। বেশী বেশী ভয় করত।’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাক্ষী
রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে মাফ ক‘রে দিলাম।’ ফিরিশতাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘কিন্তু
ওদের মধ্যে অমুক ওদের দলভুক্ত নয়। সে আসলে নিজের কোন প্রয়োজনে সেখানে এসেছে।’ আল্লাহ
বলেন, ‘(আমি তাকেও মাফ করে দিলাম! কারণ,) তারা হল এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথে যে বসে
সেও বঞ্চিত (হতভাগা) থাকে না।” (রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস
নং-১৪৫৫, সহীহুল বুখারী ৬৪০৮, মুসলিম ২৬৮৯, তিরমিযী ৩৬০০, আহমাদ ৭৩৭৬, ৮৪৮৯, ৮৭৪৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) ও আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যখনই কোন সম্প্রদায় আল্লাহ আয্যা অজাল্লার যিকরেরত হয়, তখনই তাদেরকে
ফিরিশতাবর্গ ঢেকে নেন, তাদেরকে রহমত আচ্ছন্ন করে নেয়, তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ
হয় এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাবর্গের কাছে তাদের কথা আলোচনা করেন।” (রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং-১৪৫৬, মুসলিম ২৬৯৯, ২৭০০, তিরমিযী
১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫, আবূ দাউদ ৪৯৪৬, ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ১০১১৮,
১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(১০) আনাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কিছু মালাক (ফেরেশতা) আছেন যারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ান। তারা
আমার উম্মাতের সালাম আমার কাছে পৌঁছান। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯২৪, সহীহ নাসায়ী ১২৮২, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৮৫৩, হাকিম ২/৪২১, দারিমী
২৮১৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ফরয
সালাতে সালাম ফিরানোর পর পঠিতব্য অতিরিক্ত দুয়া, জিকির বা আমলসমূহঃ
ফরয সালাতের সালাম শেষে রাসূলুল্লাহ (স.) অনেক
দু'আ ও যিকর করেছেন। ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আসমূহ ফরয ছালাতের পর পাঠ করাই সুন্নাত।
কারণ এ ব্যাপারে যে সকল হাদীছ এসেছে তাতে ফরয ছালাতের পরের কথা বলা হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৫৯-৬১; মুসলিম হা/৫৯১-৫৯৬; আলবানী,
ছহীহাহ হা/১০২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)-হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তবে দো‘আ হিসাবে এগুলি পরে পাঠ করলেও তার ছওয়াব
পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন তোমরা ছালাত শেষ করবে, তখন দাঁড়ানো,
বসা ও শোয়া সর্বাবস্থায় আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ কর’। (সুরা
আননিসা ৪/১০৩)।
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ (সময়ের) দু‘আ (আল্লাহর কাছে) বেশী শ্রুতি হয়।
তিনি বললেন, শেষ রাতের মধ্যের (দু‘আ) এবং ফরয সালাতের শেষের দু‘আ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৮, তিরমিযী ৩৪৯৯, সহীহ আত্ তারগীব
১৬৪৮। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আসমূহ সুন্নাত ছালাতের পর বা যেকোন সময় পাঠ করার
বিধান
দো‘আসমূহ সুন্নাত ছালাতের পর বা যেকোন সময়
পাঠ করা যাবে। হাদীছে সকল ছালাতের জন্য আমভাবে প্রথমে আল্লাহু আকবর একবার সরবে, অতঃপর
তিনবার ‘আসতাগফিরুল্লা-হ’ এবং একবার ‘আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু
তাবা-রাকতা ইয়া-যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম’ পাঠের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৫৯-৬১; বুখারী ৮৪২; মুসলিম ৫৮৩,
৫৯১, ৫৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সুতরাং এটি সকল ছালাতের জন্য প্রযোজ্য। আর
ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর, আয়াতুল কুরসী
প্রভৃতি দো‘আ ফরয ছালাতের পরে পাঠের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। অতএব সেগুলি সেখানে পাঠ
করাই উত্তম হবে। (আলবানী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০২-এর আলোচনা)।
তবে সাধারণভাবে এগুলি যেকোন ছালাতের পর পড়া যায় (ফাৎহুল বারী ১১/১৩৪; তুহফাতুল আহওয়াযী
২/১৬৯)।
১ ও ২ নং দোয়া পাঠ করার পর পরের দোয়াগুলো পাঠ
করুনঃ
(৩নং) (ক) প্রতি সালাতের পর ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, আল্ল-হু
আকবার’ ও আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার করে পড়াঃ
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
দরিদ্র মুহাজিরগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হয়ে আরয
করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ধন-সম্পদশালী লোকজন সম্মানে ও স্থায়ী নি‘আমাতের ব্যাপারে আমাদের
থেকে অনেক অগ্রগামী। তিনি বললেন, এটা কিভাবে? তারা বললেন, আমরা যেমন সালাত আদায় করি তারাও আমাদের মতই সালাত আদায় করে, আমাদের
মতো সওম পালন করে। তবে তারা দান-সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে। আমরা তা করতে পারি না। তারা
গোলাম মুক্ত করে, আমরা গোলাম মুক্ত করতে পারি না। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদেরকে কি আমি এমন কিছু শিখাব না যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রগামীদের
মর্যাদায় পৌঁছতে পারবে এবং তোমাদের পশ্চাদ্গামীদের চেয়ে আগে যেতে পারবে, কেউ তোমাদের
চেয়ে বেশী উত্তম হতে পারবে না, তারা ছাড়া যারা তোমাদের মতো ‘আমল করবে? গরীব লোকেরা
বললেন, বলুন হে আল্লাহর রসূল!
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তোমরা প্রতি সালাতের পর ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, আল্ল-হু আকবার’ আলহামদু লিল্লা-হ’
তেত্রিশবার করে পড়বে। রাবী আবূ সালিহ বলেন, পরে সে গরীব মুহাজিরগণ রসূলের দরবারে ফিরে
এসে বললেন, আমাদের ধনী লোকেরা আমাদের ‘আমলের কথা শুনে তারাও তদ্রূপ ‘আমল করছেন। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা আল্লাহ তা‘আলার করুণা, যাকে ইচ্ছা তা দান
করেন। (বুখারী, মুসলিম; আবূ সালিহ-এর কথা শুধু মুসলিমেই বর্ণিত। বুখারীর অন্য বর্ণনায়
তেত্রিশবারের স্থানে প্রতি সালাতের পর দশবার করে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’
‘আল্ল-হু আকবার’ পাঠ করার কথা পাওয়া যায়)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৬৫, সহীহ বুখারী ৮৪৩, ৬৩২৯, মুসলিম
৫৯৫। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন
ফাতিমা (রাঃ) (আটার) চাক্কি পিষতে পিষতে তার হাতের কষ্ট অনুভূত হওয়ার অভিযোগ স্বরূপ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন। তিনি [ফাতিমা (রাঃ)] জানতে পেরেছিলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যুদ্ধবন্দী গোলাম এসেছে। কিন্তু
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রসূলের দেখা না পেয়ে মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর
কাছে এ কথা বললেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ফিরে আসলেন ‘আয়িশাহ্
ফাত্বিমার কথা তাঁকে জানালেন। ‘আলী (রাঃ) বলেন, অতঃপর খবর পেয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন আমাদের এখানে আসলেন, তখন আমরা বিছানায় শুয়ে পড়ছিলাম। তাঁকে
দেখে আমরা উঠতে চাইলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা নিজ নিজ
জায়গায় থাকো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে এসে আমার ও
ফাত্বিমার মাঝে বসে গেলেন। এমনকি আমি আমার পেটে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
পায়ের শীতলতা অনুভব করলাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা
যা আমার কাছে চেয়েছ এর (গোলামের) চেয়ে অনেক উত্তম এমন কথা আমি কি তোমাদেরকে বলে দেবো
না? আর তা হলো যখন তোমরা ঘুমাবে তখন তেত্রিশবার ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, তেত্রিশবার ‘আলহামদুলিল্লা-হ’
এবং চৌত্রিশবার ‘আল্ল-হু আকবার’ পড়বে। এটা তোমাদের জন্য খাদিম (গোলাম) হতে অনেক উত্তম
হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৫৩৬১,৩১১৩, মুসলিম ২৭২৭,
আবূ দাঊদ ৫০৬২,আহমাদ ১১৪১, ইবনু হিববান ৬৯২১, সহীহ আত্ তারগীব ৬০৪। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(গ) কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতি ফরয সালাতের পর পাঠ
করার মতো কিছু কালিমাহ্ আছে যেগুলো পাঠকারী বা ‘আমলকারী বঞ্চিত হয় না। সে কালিমাগুলো
হলোঃ
‘সুবহা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লাহ’
তেত্রিশবার ও ‘আল্ল-হু আকবার’ চৌত্রিশবার করে পড়া। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৬, সহীহ মুসলিম ৫৯৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ যে লোক প্রত্যেক সালাতের শেষে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’
তেত্রিশবার এবং ‘আল্ল-হু আকবার’ তেত্রিশবার পড়বে, যার মোট সংখ্যা হবে নিরানব্বই বার,
একশত পূর্ণ করার জন্যে একবার ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল
মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর’’ (অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত
সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। সমগ্র রাজত্ব একমাত্র তাঁরই
ও সকল প্রকারের প্রশংসা তাঁরই জন্য এবং তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।) পাঠ করবে,
তাহলে তার সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদি তা সাগরের ফেনারাশির সমানও হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৭, সহীহ মুসলিম ৫৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমাদেরকে নির্দেশ করা হয়েছে, প্রতি সালাতের শেষে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদু
লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার ও ‘আল্ল-হু আকবার’ চৌত্রিশবার পাঠ করতে। একজন আনসারী স্বপ্নে
দেখতে পেল যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি
তোমাদেরকে প্রতি সালাত শেষে এতো এতো বার তাসবীহ
পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন? আনসারী স্বপ্নের মধ্যে বলল, হ্যাঁ। মালাক (ফেরেশতা) বললেন, এ
তিনটি কালিমাকে পঁচিশবার করে পাঠ করার জন্য নির্ধারিত করবে। এবং এর সাথে ‘লা- ইলা-হা
ইল্লাল্ল-হ’ পাঠ করে নিবে। সকালে ঐ আনসারী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
দরবারে উপস্থিত হয়ে তার স্বপ্ন সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যা বলা হয়েছে তাই করো।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭৩, সহীহ তিরমিযী ৩৪১৩, দারিমী ১৩৯৪, আহমাদ ২১৬০০। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪নং) (ক) ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতি সালাতের শেষে ‘‘কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিন্
না-স’’ ও ‘‘কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিল ফালাক্ব’’ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৯, সহীহ আবূ দাঊদ ১৫২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে (ঘুমাবার জন্য) বিছানায় যাবার সময় দু’
হাতের তালু একত্র করতেন। তারপর এতে ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ, কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিল ফালাক
ও কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিন্না-স’ পড়ে ফুঁ দিতেন। এরপর এ দু’ হাত দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর শরীরের যতটুকু সম্ভব হত মুছে নিতেন। শুরু করতেন মাথা, চেহারা
এবং শরীরের সম্মুখ ভাগ হতে। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার করতেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৩২, সহীহ বুখারী ৫০১৭,
মুসলিম ২৭১৫, আবূ দাঊদ ৫০৫৬, তিরমিযী ৩৪০২, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৫০৭৯, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৫৫৪৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ৩০, সহীহাহ্ ৩১০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৫নং) (ক) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুক্ত করা
গোলাম বিলাল ইবনু ইয়াসার ইবনু যায়দ বলেন, আমার পিতা আমার দাদার মাধ্যমে বলেন, আমার
দাদা যায়দ বলেছেন, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন।
যে ব্যক্তি বলল, ‘
"আস্তাগফিরুল্ল-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা-
হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি"। (৭ বার)।
(অর্থাৎ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি
ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তওবা্ করি)।
আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করবেন, যদিও সে যুদ্ধের
ময়দান হতে পালিয়ে যেয়ে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৩৫৩, সহীহ লিগয়রিহী আবূ দাঊদ ১৫১৭,
তিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস্ সলিহীন ১৮৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২২, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭২৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আগার আল মুযানী (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে মানবমন্ডলী! আল্লাহর
কাছে তওবা্ করো। আর আমিও প্রতিদিন একশ’বার করে আল্লাহর কাছে তওবা্ করি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৩২৫, সহীহ মুসলিম ২৭০২, সহীহাহ্ ১৪৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৬নং) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে বলতেন,
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন
ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা”। (৩ বার)।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী
জ্ঞান, কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
২৪৯৮, সহীহ ইবনু মাজাহ ৯২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২৬৫, আহমাদ ২৬৫২১, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর
১১৯, শু‘আবূল ঈমান ১৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭নং) (ক) ‘আবদুর রহমান ইবনু গানম (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফাজর (ফজর) ও মাগরিবের সালাতের শেষে জায়গা হতে উঠার
ও পা ঘুরানোর আগে এ দু‘আ দশবার পড়েঃ
‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা
লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু বিয়াদিহিল খায়রু, ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াওহুয়া ‘আলা-
কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর’’। (১০ বার)।
(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ
নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই, তাঁর হাতেই সমস্ত
কল্যাণ রয়েছে, তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন, তিনি সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।)।
তাহলে প্রতিবারের বিনিময়ে তার জন্য দশ নেকী
লিখা হয়। তার দশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। তাকে দশটি মর্যাদার স্তরে উন্নীত করা হয়।
আর এ দু‘আ তাকে সমস্ত অপছন্দনীয় ও বিতাড়িত শায়ত্বন (শয়তান) থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। শির্ক
ছাড়া অন্য কোন গুনাহের কারণে তাকে ধর-পাকড় করা হালাল হবে না। ‘আমলের দিক দিয়ে এ লোক
হবে অন্য লোকের চেয়ে উত্তম, তবে সে ব্যক্তি ব্যতীত যে এর চেয়েও অতি উত্তম ‘আমল করবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭৫, হাসান লিগায়রিহী : আহমাদ
১৭৯৯৯, সহীহ আত্ তারগীব ৪৭৭। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের ফরয ছালাতের পর
দশবার করে বিশেষ তাহলীল পাঠ করে, তার আমলনামায় দশজন মুমিন ক্রীতদাস মুক্ত করার নেকী
লিপিবদ্ধ করা হয়।
উমারাহ ইবনু শাবীব আস-সাবায়ী (রাযিঃ) হতে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাগরিবের
নামাযের পর যে লোক দশবার বলেঃ
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা
লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইয়ুহ্য়ি ওয়া ইয়মীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর”
অর্থাৎ
“আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কোন মা’বূদ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, সমস্ত কিছুই তার
এবং তিনিই সকল প্রশংসার অধিকারী, তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন এবং প্রতিটি জিনিসের
উপর তিনিই মহা ক্ষমতাশালী”,
আল্লাহ তাআলা তার নিরাপত্তার জন্য ফেরেশতা
পাঠান যারা তাকে শায়তানের ক্ষতি হতে ভোর পর্যন্ত নিরাপত্তা দান করেন, তার জন্য (আল্লাহ
তাআলার অনুগ্রহ) অবশ্যম্ভাবী করার ন্যায় দশটি পুণ্য লিখে দেন, তার দশটি ধ্বংসাত্মক
গুনাহ বিলুপ্ত করে দেন এবং তার জন্য দশটি ঈমানদার দাস মুক্ত করার সমপরিমাণ সাওয়াব
রয়েছে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৩৪, সহীহ আত-তারগীব
ওয়াত তারহীব (১/১৬০/৪৭২), নাসাঈ ১০৩৩৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৮নং) মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ফরয সালাতের পরে এ দু‘আ পড়তেনঃ
“লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা
লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, আল্ল-হুম্মা
লা- মা-নি‘আ লিমা- আ‘ত্বয়তা, ওয়ালা- মু‘ত্বিয়া লিমা- মানা‘তা, ওয়ালা- ইয়ানফা‘উ যাল
জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু’’। (১ বার)।
(অর্থাৎ আল্লাহ ভিন্ন কোন উপাস্য নেই। তিনি
অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার নেই! রাজত্ব একমাত্র তারই এবং সব প্রশংসা একমাত্র তাঁর
জন্যে। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান করো, কেউ নেই তা ফিরাবার।
আর যা তুমি দান করতে বারণ করো, কেউ নেই তা দান করার। ধনবানকে ধন-সম্পদে পারবে না কোন
উপকার করতে আপনার আক্রোশ-এর সামনে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৪৪, ১৪৭৭, ২৪০৮, ৫৯৭০, ৬৩৩০, ৬৪৭৩,
৬৬১৫, ৭২৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯৩, আহমাদ ১৮১৬২,
আধুনিক প্রকাশনী ৭৯৬ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮০৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯নং) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাশাহহুদ
ও সালাম ফিরার মধ্যখানে শেষ বেলায় অর্থাৎ সালাম ফিরবার আগে) এই দো‘আ পড়তেন,
“আল্ল-হুম্মাগফিরলী মা-ক্বদ্দামতু ওয়ামা-
আখখারতু ওয়ামা আসসারতু ওয়ামা আ'লানতু ওয়ামা আসরাফতু ওয়ামা আনতা আ'লামু বিহী মিন্নী
আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা" (৩ বার)।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর,
যে অপরাধ আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি,
যা অতিরিক্ত করেছি এবং যা তুমি আমার চাইতে অধিক জান। তুমি আদি, তুমিই অন্ত। তুমি ব্যতীত
কেউ সত্য উপাস্য নেই।
(সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত),
৩৪২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন, ১১২০, ৬৩১৭, ৬৩৮৫, ৭৪৪২, ৭৪৯৯, ৭৩৮৫, সুনান ইবনু
মাজাহ, ১৩৫৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪১৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৯৭,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭১, নাসায়ী ১৬১৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৭১, আহমাদ ২৮১৩,
২৭০৫, ২৭৪৩, ২৮০৮, ৩৩৫৮,৩৪৫৮; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৫০০, দারিমী ১৪৮৬,আধুনিক প্রকাশনী
১০৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১০৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(১০নং) ‘আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সলাতের সালাম ফিরানোর
পর উচ্চ কণ্ঠে বলতেন,
‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা
লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, লা- হাওলা
ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়ালা- না‘বুদু ইল্লা- ঈয়্যাহু,
লাহুন্ নি‘মাতু, ওয়ালাহুল ফাযলু, ওয়ালাহুস্ সানা-উল হাসানু, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু
মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন’’। (১ বার)।
(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই,
তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর এবং তিনি সকল বিষয়ে
ক্ষমতাশীল। কোন অন্যায় ও অনিষ্ট হতে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই এবং কোন সৎ কাজ করারও
ক্ষমতা নেই একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, আমরা
একমাত্র তাঁরই ‘ইবাদাত করি, যাবতীয় নি‘আমাত ও অনুগ্রহ একমাত্র তাঁরই পক্ষ থেকে এবং
উত্তম প্রশংসাও তাঁর। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই। আমরা তাঁর দেয়া জীবন বিধান
একমাত্র তাঁর জন্য একনিষ্ঠভাবে মান্য করি, যদিও কাফিরদের নিকট তা অপ্রীতিকর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৩, সহীহ মুসলিম ৫৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১নং) মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আল্লাহর
শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি। তিনি বললেন,
হে মু‘আয! আমি তোমাকে ওয়াসিয়াত করছি, তুমি প্রত্যেক সালাতের পর এ দু‘আটি কখনো পরিহার
করবে নাঃ
‘‘আল্লাহুম্মা আঈন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা
ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা’’। (৩ বার)।
(অর্থঃ
হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ‘ইবাদাতে আমাকে সাহায্য
করুন)। অতঃপর মু‘আয (রাঃ) আস-সুনাবিহী (রহঃ)-কে এবং আস-সুনাবিহী ‘আবদুর রহমানকে এরূপ
দু‘আ করার ওয়াসিয়াত করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
১৫২২, নাসায়ী ১৩০২, হাকিম (১/২৭৩), আহমাদ (৫/২৪৪), ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ৭৫১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২নং)
“রাযীতু বিললা-হি রববান ওয়া বিল ইসলা-মি দীনান ওয়াবি মুহাম্মাদিন্ নাবিইয়ান”। (৩
বার)।
অর্থ: আমি সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম আল্লাহর উপরে
প্রতিপালক হিসাবে, ইসলামের উপরে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদের উপরে নবী হিসাবে’।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বলে, আমি আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে
দীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রসূল হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে
নিয়েছি, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
১৫২৯, নাসায়ী ৫, হাকিম (১/৫১৮)ইবনু হিববান ‘মাওয়ারিদ’ (হাঃ ২৩৬৮), সিলসিলাহ সহীহাহ
(হাঃ ৩৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৩নং) সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি তার সন্তানদেরকে
দু‘আর এ কালিমাগুলো শিক্ষা দিতেন ও বলতেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সালাতের পর এ কালিমাগুলো দ্বারা আল্লাহর নিকটে আশ্রয় চাইতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল জুবনি,
ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন আরযালিল ‘উমুরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিদ্
দুন্ইয়া- ওয়া ‘আযা-বিল কবরি’’। (৩ বার)।
(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি কাপুরুষতা থেকে তোমার
কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। বখিলী থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। নিষ্কর্মা জীবন থেকে তোমার নিকট
আশ্রয় চাই। দুনিয়ার ফিতনাহ্ (ফিতনা) ও কবরের শাস্তি থেকে তোমার নিকটে আশ্রয় চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৪, সহীহ বুখারী ২৮২২, ৬৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৪নং) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি
ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্
রিজা-ল’’। (৩ বার)।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা,
শোক-তাপ, অক্ষমতা-অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের জোর-জবরদস্তি হতে
আশ্রয় চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৫৮, সহীহ ৬৩৬৯,
মুসলিম ২৭০৬, নাসায়ী ৫৪৪৯, তিরমিযী ৩৪৮৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৪১, আহমাদ ১০৫২, মু‘জামুল
আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১২৯, সহীহ আল জামি ১২৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৫নং) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও উম্মুল মু’মিনীন জুওয়াইরিয়্যাহ্
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জুওয়াইরিয়াহ (রাঃ) এর কাছ থেকে বেরিয়ে এলেন। ইতিপূর্বে তার নাম ছিলো বাররাহ, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ নাম পরিবর্তন করেন। তিনি তার কাছ থেকে বেরিয়ে আসার সময়ও মুসাল্লায়
বসে তাসবীহ পাঠ করতে দেখেন এবং ফিরে এসেও তাকে ঐ মুসাল্লায় বসে থাকতে দেখেন। তিনি জিজ্ঞেস
করলেন, তুমি কি তখন থেকে একটানা এ মুসাল্লায় বসে রয়েছো? তিনি বললেন, হাঁ। তিনি বললেন,
তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি তিনবার চারটি কালেমা পড়েছি; এ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তুমি
যা কিছু পাঠ করেছো, উভয়টি ওজন হলে আমার ঐ চারটি কালেমা ওজনে ভারী হবে। তা হচ্ছেঃ
‘‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি ‘আদাদা খালক্বিহি,
ওয়া রিদা নাফসিহি, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহি, ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।’’ (৩ বার)।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
১৫০৩, তিরমিযী ৩৫৫৫, নাসায়ী ১৩৫১, ইবনু মাজাহ ৩৮০৮, সহীহ মুসলিম ২৭২৬, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ১২৭, শু‘আবূল
ঈমান ৫৯৬, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৫০৪/৬৪৭, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১২, সহীহাহ্ ২১৫৬, সহীহ
আত্ তারগীব ১৫৭৪, সহীহ আল জামি‘ ৫১৩৯, ইবনু খুযায়মাহ্ ৭৫৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
২৩০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৬নং) “ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূবে ছাবিবত ক্বালবী
‘আলা দ্বীনিকা, আল্লা-হুম্মা মুছারিরফাল কবুলূবে
ছাররিফ ক্বুলূবানা ‘আলা ত্বোয়া-‘আতিকা”। (৩ বার)।
অর্থঃ হে হৃদয় সমূহের পরিবর্তনকারী! আমার
হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখো’। ‘হে অন্তর সমূহের রূপান্তরকারী! আমাদের অন্তর
সমূহকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দাও’।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় সময়ই এ দু‘আ করতেনঃ ‘‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী
আল্লাহ! আমার হৃদয়কে তোমার দীনের উপর দৃঢ় রাখ’’। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমরা আপনার
ওপর এবং আপনি যে দীন নিয়ে এসেছেন, তার ওপর ঈমান এনেছি। এরপরও কি আপনি আমাদের সম্পর্কে
আশংকা করেন? জবাবে তিনি বললেন, কেননা ‘ক্বল্ব, আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে রয়েছে (অর্থাৎ-
তাঁর নিয়ন্ত্রণ ও অধিকারে রয়েছে)। তিনি যেভাবে চান সেভাবে (অন্তরকে) ঘুরিয়ে থাকেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
১০২, সহীহ তিরমিযী ২০৬৬, ইবনু মাজাহ্ ৩৮২৪, ইমাম তিরমিযী জামি‘ আত্ তিরমিযীর ২/২০)।হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৭নং) “আল্লা-হুম্মা আদখিলনিল জান্নাতা ওয়া আজিরনী
মিনান্ না-র”। (৩ বার)
অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ
করাও এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ দাও! [তিরমিযী, নাসাঈ,মিশকাত হা/২৪৭৮]
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জান্নাতের
প্রত্যাশা করে; জান্নাত বলবে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর যে ব্যক্তি
তিনবার জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করবে; জাহান্নাম বলবে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম
থেকে মুক্তি দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৭৮, সহীহ
তিরমিযী ৫৫২১, নাসায়ী ৫৫২১, সহীহ ইবনু হিববান ১০৩৪, সহীহ আল জামি‘ ৬২৭৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(১৮নং) “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াত
তুক্বা ওয়াল ‘আফা-ফা ওয়াল গিনা”। (৭ বার)।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে সুপথের নির্দেশনা,
পরহেযগারিতা, পবিত্রতা ও সচ্ছলতা প্রার্থনা করছি।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু‘আয়) বলতেন,
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল হুদা- ওয়াত্তুকা-
ওয়াল ‘আফা-ফা ওয়াল গিনা-’’
(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হিদায়াত
[সঠিক পথ], তাকওয়া [পরহেযগারিতা], হারাম থেকে বেঁচে থাকা ও অমুখাপেক্ষিতা প্রত্যাশা
করি)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৮৪, সহীহ মুসলিম
২৭২১, তিরমিযী ৩৪৮৯, ইবনু মাজাহ ৩৮৩২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৯২, আহমাদ ৩৯৫০, সহীহ ইবনু
হিব্বান ৯০০, সহীহ আল জামি‘ ১২৭৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৯নং) (ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দৈনিক একশ’বার পড়বে
‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী’
(অর্থাৎ- আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর
প্রশংসার সাথে)- তার গুনাহসমূহ যদি সমুদ্রের ফেনার মতো বেশি হয় তবুও তা মাফ করে দেয়া
হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২২৯৬, ২২৯৭, সহীহ বুখারী
৬৪০৫, মুসলিম ২৬৯১, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭১৩, ইবনু হিব্বান ৮২৯, সহীহ আল জামি ৬৪২৫, ৬৪৩১,
তিরমিযী ৩৪৬৬, ৩৪৬৯, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৪১৭, ইবনু মাজাহ ৩৮১২, আহমাদ ৮০০৯, ৮৮৫৫, সহীহ
আত্ তারগীব ৬৫৩, ১৫৯০, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’টি খুব সংক্ষিপ্ত
বাক্য যা বলতে সহজ অথচ (সাওয়াবের) পাল্লায় ভারী এবং আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়, তা হলো
‘‘সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী, সুবহা-নাল্ল-হিল
‘আযীম’’
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
সহীহ বুখারী ৬৬৮২, মুসলিম ২৬৯৪, তিরমিযী ৩৪৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৮০৬, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৪১৩,
আহমাদ ৭১৬৭, শু‘আবূল ঈমান ৫৮৫, ইবনু হিব্বান ৮৪১, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ৮, সহীহ আত্
তারগীব ১৫৩৭, সহীহ আল জামি ৪৫৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২০নং) ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন
তাঁর কাছে একজন মুকাতাব (চুক্তিবদ্ধ দাস) এসে বললো, আমি আমার কিতাবাতের (মুনিবের সাথে
সম্পদের লিখিত চুক্তিপত্রের) মূল্য পরিশোধ করতে পারছি না, আমাকে সাহায্য করুন। উত্তরে
তিনি [‘আলী (রাঃ)] বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালাম (বাক্য) শিখিয়ে দেবো, যা রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শিখিয়েছেন? (এ দু‘আর মাধ্যমে) যদি তোমার ওপর
বড় পাহাড়সম ঋণের বোঝাও থাকে, আল্লাহ তা পরিশোধ করে দেবেন। তুমি পড়বে,
‘‘আল্ল-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন্ হারা-মিকা,
ওয়া আগ্নিনী বিফাযলিকা ‘আম্মান্ সিওয়াক’’। (৭ বার)।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হালাল [জিনিসের]
সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখো এবং তুমি তোমার রহমতের মাধ্যমে আমাকে পরমুখাপেক্ষী
হতে রক্ষা করো)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৪৪৯, তিরমিযী
৩৫৬৩, আহমাদ ১৩১৯, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৭৩, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৪৪, সহীহাহ্
২৬৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৮২০, সহীহ আল জামি ২৬২৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(২১নং) সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫ (আয়াতুল কুরসী)।
“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল
ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল
আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম
ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া
কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল
আজীম”।
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি
জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও
যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি
ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা
থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর
সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে
কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা
আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫)।
আয়তুল কুরসিকে বলা হয় আল কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত।
এটি নিয়মিত আমল করলে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত লাভ করা যায়। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বর্ণনা করেছেন কোন আয়াতগুলি সর্বশ্রেষ্ঠ
এবং এই আয়াতগুলো পাঠে কী ধরনের নেয়ামত অর্জন করবে বান্দা।
ফজিলত ও নিয়ামতে ভরপুর সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হলো
আয়াতুল কুরসি। কুরআনের সর্ববৃহৎ ও দ্বিতীয় সূরা ‘সূরা আল-বাক্বারা’র ২৫৫ নম্বর আয়াত।
আয়াতটিতে মহাবিশ্বের ওপর আল্লাহর ক্ষমতার কথা বর্ণিত হয়েছে।
আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ) ... উবাই
ইবনু কাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একদিন আবূল মুনযিরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে আবূল মুনযির আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি
তোমার কাছে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ? আবূল মুনযির বলেন, জবাবে আমি বললামঃ এ বিষয়ে
আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলই সর্বাধিক অবগত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার
বললেনঃ হে আবূল মুনযির! আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি তোমার কাছে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ?
তখন আমি বললাম, اللَّهُ لاَ
إِلَهَ
إِلاَّ
هُوَ
الْحَىُّ
الْقَيُّومُ
(এ আয়াতটি আমার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ)। এ কথা শুনে তিনি আমার বুকের উপর হাত মেরে
বললেনঃ হে আবূল মুনযির! তোমার জ্ঞানকে স্বাগতম। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২১২২, আবূ দাঊদ ১৪৬০, আহমাদ ২১২৭৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৫৩২৬, শু‘আবূল ঈমান ২১৬৯,
সহীহ আত্ তারগীব ১৪৭১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৫৫, ইসলামীক সেন্টার, ১৭৬২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
এ আয়াতটি ‘আয়াতুল কুরসি’ নামেই সব মুসলিমের
কাছে পরিচিত। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এর ফজিলত কী। এ আয়াত পাঠে কেমন সওয়াব হয়।
আসুন জেনে নেই
আয়াতটির গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতঃ-
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমাযানে যাকাতের মাল হিফাজতের
দায়িত্ব দিলেন। এক সময় এক ব্যক্তি এসে খাদ্য-সামগ্রী উঠিয়ে নেয়ার উপক্রম করল। আমি তাকে
ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কাছে নিয়ে যাব। এরপর পুরো হাদীস বর্ণনা করেন। তখন লোকটি বলল, যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন,
তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন। এর কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন পাহারাদার নিযুক্ত করা
হবে এবং ভোর পর্যন্ত শায়ত্বন আপনার কাছে আসতে পারবে না। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(ঘটনা শুনে) বললেন, (যে তোমার কাছে এসেছিল) সে সত্য কথা বলেছে, যদিও সে বড় মিথ্যাচারী
শায়ত্বন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১০, ২৩১১,
৩২৭৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৩, সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮০, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৪২৪, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৪০৬,
সহীহ আত্ তারগীব ৬১০, আধুনিক প্রকাশনী ৪৬৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৪২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) ইমাম নাসাঈ (রহ.) আবূ উমামা (রা.) থেকে বর্ণনা
করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরয সালাত শেষে আয়াতুল কুরসী
পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাধা হবে না। (সহীহ আল জামে:
হাদিস: ৬৪৬৪)।
(গ)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, সেটি হলো আয়াতুল কুরসি। যে ঘরে এটি
পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে হাকিম)।
(ঘ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি বস্তুরই চূড়া আছে। কুরআনের
উচু চূড়া হল সূরা আল-বাকারা। এতে এমন একটি আয়াত আছে যা কুরআনের আয়াতসমূহের প্রধান।
তা হল আয়াতুল কুরসী। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৭৮,
যঈফা (১৩৪৮), তা’লীকুর রাগীব (২/২১৮)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(ঙ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালবেলা সূরা আল-মু'মিন-এর
হা-মী-ম হতে ইলাইহিল মাসীর (১, ২, ও ৩ নং আয়াত) পর্যন্ত এবং আয়াতুল কুরসী তিলাওয়াত
করবে সে এর উসীলায় সন্ধ্যা পর্যন্ত (আল্লাহ্ তা'আলার) হিফাযাতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি
সন্ধ্যা বেলায় তা পাঠ করবে সে ব্যক্তি এর উসীলায় সকাল পর্যন্ত হিফাযাতে থাকবে। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৭৯, তাহকীক ছানী (২১৪৪)। হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(চ) সূরা আল-বাকারাহ্, ২৫৫ নং আয়াত। যে ব্যক্তি
সকালে তা বলবে সে বিকাল হওয়া পর্যন্ত জিন শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে, আর যে ব্যক্তি
বিকালে তা বলবে সে সকাল হওয়া পর্যন্ত জিন শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে। হাদীসটি
হাকিম সংকলন করেছেন, ১/৫৬২। আর শাইখ আলবানী একে সহীহুত তারগীব ওয়াত-তারহীবে সহীহ বলেছেন
১/২৭৩। আর তিনি একে নাসাঈ, তাবারানীর দিকে সম্পর্কযুক্ত করেছেন এবং বলেছেন, তাবারানীর
সনদ ‘জাইয়্যেদ’ বা ভালো।
‘আয়াতুল কুরসি’ এর ফযিলত প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বিভিন্ন গ্রন্থে মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন, তিনি বলেন,
‘সত্যতার সাথে যদি তুমি আয়াতুল কুরসী সে সময় পড় তাহলে তাদের কর্মকান্ড বাতিল হয়ে যায়,
কারণ তাওহীদ শয়তানকে তাড়ায়। মানুষ যদি শয়তানী চক্রান্ত স্থানে সত্যতার সাথে ‘আয়াতুল
কুরসী’ পড়ে, তাহলে তা (যাদু-মন্ত্র) নষ্ট করে দেয়। (কিতাব: ‘আল ফুরক্বান বাইনা আওলিয়াইর
রহমান ওয়া আওলিয়াইশ শাইত্বান’)।
(২২ নং) ইবনু
‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে
এ দু‘আ শিক্ষা দিতেন যেমন তাদেরকে কুরআনের সূরাহ্ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমরা
বলো,
‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বি
জাহান্নাম, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল কবরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্
দাজ্জা-ল ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া- ওয়াল মামা-তি’’।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয়
চাই জাহান্নামের শাস্তি হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি হতে। তোমার নিকট আশ্রয়
চাই দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১২২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪২, মুয়াত্তা মালেক
৪৯৯, নাসায়ী ২০৬৩, ৫৫১২, ৯৮৪, ১৫৪২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৯৪, সুনান ইবনু
মাজাহ ৩৮৪০, আহমাদ ২১৬৯, ২৩৩৮, ২৭০৪, ২৭৭৪, ২৮৩৪, , সহীহ আত্ তারগীব ৩৬৫১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাতের শেষে শেষ তাশাহুদ
পড়ে অবসর হয়ে যেন আল্লাহর কাছে চারটি জিনিস হতে পানাহ চায়। (১) জাহান্নামের ‘আযাব।
(২) কবরের ‘আযাব। (৩) জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ্ (ফিতনা)। (৪) মাসীহুদ্ দাজ্জালের অনিষ্ট।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ১৩৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৯০৯, ৯১০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৯৮৩, নাসায়ী ১৩১০, ৫৫০৫-৬, ৫৫০৮-১১, ৫৫১৩-১৮, ৫৫২০, আহমাদ ৭১৯৬, ৭৮১০, ৭৯০৪, ৯০৯৩,
৯১৮৩, ২৭৫৯৬, ২৭৮৯০, ৯৮২৪, ২৭২৮০, দারেমী ১৩৮৩,১৩৪৪, সহীহ আল জামি ৬৯৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২০০, ইসলামীক
সেন্টার ১২১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(বিঃদ্রঃ দোয়াটি সালাতের মধ্যে তাশাহুদ বৈঠকে
এবং সালাতে সালাম ফিরানোর পর অন্যান্য দোয়া শেষে পাঠ করা যাবে)।
সম্মানিত মুছল্লীবৃন্দঃ কর্মব্যস্ত মুছল্লীগণ জোহর, আসর ও মাগরিবে হয়তো
সময় বেশী না পাওয়ায় সবগুলো আমল করা সম্ভব হবে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলো অবশ্যই
পাঠ করার চেষ্টা করবেন নিজের জন্যে, দুনিয়ার কল্যাণের জন্যে ও আখিরাতের মুক্তির জন্যে।
ফজর ও ইশার ফরজ সালাতের পর অবশ্যই সবগুলো দোয়া পাঠ করবেন। বিশেষ করে, ফজরের সালাত আদায়
করার পর ওযু অবস্থায় সালাতের জায়গায় বসে থেকেই দোয়াগুলো পাঠ করবেন। এরপর সকালে ও বিকেলে
পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াগুলোও পাঠ করবেন।
ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর কতিপয় জাল জইফ হাদিসের আমল যা পরিত্যাজ্য
(১) সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত রেখে দু‘আ পড়াঃ
সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত রেখে দু‘আ পড়ার
প্রমাণে কোন ছহীহ দলীল নেই। বরং যা বর্ণিত হয়েছে, তার সবই জাল ও যঈফ।
(ক) কাছীর ইবনু সুলায়মান আবু সালামা বলেন,
আমি আনাসের নিকট শুনেছি, রাসূল (ছাঃ) যখন ছালাত আদায় করতেন, তখন ডান হাত তার মাথায়
রাখতেন এবং বলতেন, আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। যিনি পরম করুণাময়,
দয়ালু। হে আল্লাহ! আমার থেকে চিন্তা ও শঙ্কা দূর করে দিন। (ত্বাবারাণী, আওসাত্ব হা/৩১৭৮, পৃঃ ৪৫১)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। এর সনদে কাছীর বিন
সুলাইম নামে রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী ও আবু হাতিম বলেন, সে মুনকার রাবী। শায়খ আলবানী
(রহঃ) বলেন, এই হাদীছের সনদ নিতান্তই যঈফ। (সিলসিলা ছহীহাহ
হা/৬৬০, ২/১১৪-১৫)। তিনি আরো বলেন, এটা জাল। (সিলসিলা
ছহীহাহ হা/৬৬০, ২/১১৪-১৫)।
(খ) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
যখন তার ছালাত শেষ করতেন, তখন ডান হাত দ্বারা তার মাথা মাসাহ করতেন এবং উক্ত দু‘আ পড়তেন।
(ইবনুস সুন্নী হা/১১০)।
তাহক্বীক্বঃ এর সনদ জাল। সালাম আল-মাদাইনী
অভিযুক্ত। সে ছিল দীর্ঘ পুরুষ, ডাহা মিথ্যাবাদী। (সিলসিলা
যঈফাহ হা/১০৫৮, ৩/১৭১ পৃঃ)।
উক্ত মর্মে আরো বর্ণনা আছে। (বনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ হা/১১০)।
তবে সেগুলোর সনদও জাল। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৫৯, ৩/১৭২ পৃঃ)।
অতএব সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত দিয়ে দু‘আ
পড়ার প্রথা বর্জন করতে হবে। কারণ জাল হাদীছ দ্বারা কখনো কোন আমল প্রমাণিত হয় না।
(২) আয়াতুল কুরসী পড়ে বুকে ফুঁক
দেয়াঃ
ফরয ছালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী’ পড়া অত্যন্ত
ফযীলতপূর্ণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে,
তাকে মৃত্যু ব্যতীত কোন কিছু জান্নাতে প্রবেশ করতে বাধা দিতে পারবে না। (নাসাঈ, আল-কুবরা হা/৯৯২৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭২। উল্লেখ্য
যে, মিশকাতে যে বর্ণনা এসেছে, তার সনদ যঈফ। আলবানী, মিশকাত হা/৯৭৪, ১/৩০৮ দ্রঃ)।
তবে এ সময় বুকে ফুঁক দেয়ার শারঈ কোন ভিত্তি
নেই। যদিও আমলটি সমাজে খুবই প্রসিদ্ধ। অতএব এই বিদ‘আতী প্রথা পরিত্যাগ করতে হবে।
(৩) ‘ফাকাশাফনা আনকা গিত্বাআকা’.. পড়ে চোখে মাসাহ করাঃ
সূরা ক্বাফ-এর (২২ নং) উক্ত আয়াত পড়ে বৃদ্ধা
আঙ্গুলে ফুঁক দিয়ে চোখে মাসাহ করার প্রথা চলে আসছে দীর্ঘকাল যাবৎ। কিন্তু নির্দিষ্ট
করে উক্ত আয়াত পড়ার কোন প্রমাণ নেই। তবে পবিত্র কুরআন আরোগ্য দানকারী বিধান। তাই যেকোন
আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আরোগ্য কামনা করা যায়। (সূরা
বাণী ইসরাঈল ৮২)।
(৪) ফজর ও মাগরিব ছালাতের পর সূরা
হাশরের শেষ তিনটি আয়াত পড়াঃ
উক্ত আমল সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে,
তার সনদ যঈফ।
মা‘কিল ইবনু ইয়াসির রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা
করেন, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে তিনবার ‘আঊযুবিল্লা-হিস সামীইল আলীম মিনাশ শায়ত্ব-নির
রাজীম’সহ সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত পড়বে, আল্লাহ তার জন্য ৭০ হাযার ফেরেশতা নিযুক্ত
করবেন, যারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদি ঐ দিন ঐ ব্যক্তি মারা
যায়, তাহলে শহীদ হয়ে মারা যাবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পড়বে, তার জন্যও একই ফযীলত
রয়েছে। (তিরমিযী হা/২৯২২, ২/১২০ পৃঃ)।
তাহক্বীক্বঃ ইমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীছটি
গরীব। আর এই সূত্র ছাড়া আর অন্য কোন সূত্র নেই। (তিরমিযী
হা/২৯২২, ২/১২০ পৃঃ)। এর সনদে খালেদ ইবনু ত্বাহমান নামে যঈফ রাবী আছে। (ইরওয়াউল গালীল ২/৫৮ পৃঃ)। এ সম্পর্কে আরো জাল হাদীছ
রয়েছে। (যঈফুল জামে‘ হা/১৩২০)।
অতএব উক্ত হাদীছ আমল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
বরং সূরা মুলক পড়া যেতে পারে।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ)
বলেন, পবিত্র কুরআনে এমন একটি সূরা আছে, যার ৩০টি আয়াত রয়েছে। যে ব্যক্তি ঐ সূরা পাঠ
করবে, তার জন্য উহা সুপারিশ করবে যতক্ষণ তাকে ক্ষমা না করা হবে। সেটা হল- ‘তাবারাকাল্লাযী
বিইয়াদিহিল মুলক’। (আবুদাঊদ হা/১৪০০, ১/১৯৯ পৃঃ; সনদ হাসান,
মিশকাত হা/২১৫৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২০৪৯; ছহীহ ইবনে হিববান হা/৭৮৪)।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি
প্রত্যেক রাত্রিতে ‘তাবারাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক’ পাঠ করবে এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা
তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দান করবেন। আর আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে এর নাম বলতাম
‘আল-মানে‘আহ’ বা বাধাদানকারী..। (নাসাঈ, সুনানুল কুবরা
হা/১০৫৪৭; সনদ হাসান, ছহীহ তারগীব হা/১৪৭৫)।
(৫) তাসবীহ দানা দ্বারা তাসবীহ গণনা
করাঃ
সমাজে তাসবীহ দানা দিয়ে যিকির করার প্রচলন
ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফরয ছালাতের পর, হাটে-বাজারে, রাস্তায়, বাসে-ট্রেনে, অফিস-আদালতে
সর্বত্র একশ্রেণীর মানুষকে তাসবীহ গণনা করতে দেখা যায়। এতে যে রিয়া সৃষ্টি হয় তাতে
কোন সন্দেহ নেই। অনেক মসজিদের কাতারে কাতারে রেখে দেয়া হয় কিংবা দেওয়ালে ও জালানায়
ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাসবীহই যেন মূল ইবাদত। অথচ এর ছহীহ কোন ভিত্তি নেই। উক্ত মর্মে যে
সমস্ত বর্ণনা রয়েছে তার সবই জাল কিংবা যঈফ।
(ক) আয়েশা বিনতে সা‘দ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন
যে, তার পিতা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে এক মহিলার নিকটে যান। তখন স্ত্রীলোকটির সম্মুখে কিছু
খেজুরের বিচি অথবা কংকর ছিল, যার দ্বারা সে তাসবীহ গণনা করছিল। রাসূল (ছাঃ) বললেন,
আমি কি তোমাকে এমন কথা বলে দিব না, যা এটা অপেক্ষা অধিক সহজ বা উত্তম হবে? তা হচ্ছে-
‘সুবহা-নাল্লাহ’ অর্থাৎ, আল্লাহর পবিত্রতা যে পরিমাণ তিনি আসমানে মাখলূক সৃষ্টি করেছেন,
‘সুবহা-নাল্লাহ’ যে পরিমাণ তিনি যমীনে মাখলূক সৃষ্টি করেছেন, ‘সুবহা-নাল্লাহ’ যে পরিমাণ
উভয়ের মাঝে রয়েছে এবং ‘সুবহা-নাল্লাহ’ যে পরিমাণ তিনি ভবিষ্যতে সৃষ্টি করবেন। ‘আল্লাহু
আকবার’ উহার অনুরূপ, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ উহার অনুরূপ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু’ উহার অনুরূপ
এবং লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ অনুরূপ। (তিরমিযী
হা/৩৫৬৮, ২/১৯৭ পৃঃ ও হা/৩৫৫৪; আবুদাঊদ হা/১৫০০, ১/২১০ পৃঃ; মিশকাত হা/২৩১১; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/২২০৩, ৫/৯০ পৃঃ)।
তাহক্বীক্বঃ যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে খুযায়মাহ
ও সাঈদ ইবনু আবী হেলাল নামে দুইজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে। (যঈফ
তিরমিযী হা/৩৫৬৮, ২/১৯৭ পৃঃ, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩০; যঈফ আবুদাঊদ হা/১৫০০,
১/২১০ পৃঃ; যঈফ আত-তারগীব হা/৯৫৯; সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩)।
তাছাড়া এটি ছহীহ হাদীছের বিরোধী। কারণ রাসূল
(ছাঃ) ডান হাতের আঙ্গুলে তাসবীহ গণনা করতেন। (আবুদাঊদ
হা/১৫০২, ১/২১০ পৃঃ; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/৩১৪৮; ছহীহ ইবনে হিববান হা/৮৪৩;
তিরমিযী হা/৩৪৮৬। উল্লেখ্য যে, ভারতীয় ছাপা তিরমিযীতে উক্ত অংশ নেই দ্রঃ ২/১৮৬ পৃঃ)।
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে দানা
দ্বারা যিকির করে সে কতইনা উত্তম! (দায়লামী, মুসনাদুল
ফেরদাউদ ৪/৯৮ পৃঃ)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার প্রত্যেক
রাবীই ত্রুটিপূর্ণ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩)।
আলবানী বলেন, إِنَّ
السُّبْحَةَ
بِدْعَةٌ
لَمْ
تَكُنْ
فِىْ
عَهْدِ
النَّبِىِّ
صَلَّى
اللهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ
إِنَّمَا
حَدَثَتْ
بَعْدَهُ
‘নিশ্চয় তাসবীহ দানা বিদ‘আত। এটি রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ছিল না। বরং তাঁর পরে সৃষ্টি
হয়েছে’। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩-এর আলোচনা দ্রঃ)।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম
(ছাঃ) কংকর দ্বারা তাসবীহ গণনা করতেন। (আবুল কাসেম জুরজানী,
তারীখে জুরজান হা/৬৮)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। এর সনদে কুদামা
বিন মাযঊন এবং ছালেহ ইবনু আলী নামে অভিযুক্ত রাবী আছে। (সিলসিলা
যঈফাহ হা/১০০২)।
(৬) ফজর ছালাতের পর ১৯ বার ‘বিসমিল্লাহ’
বলাঃ
উক্ত মর্মে ছহীহ বা যঈফ সূত্রে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) থেকে কোন হাদীছ পাওয়া যায় না। তবে ‘বিসমিল্লা-হ’-এর ফযীলত বিষয়ে আব্দুল্লাহ ইবনু
মাসঊদ (রাঃ) থেকে একটি বক্তব্য এসেছে- ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছা পোষণ করে যে, আযাবের ১৯ জন
ফেরেশতা হতে আল্লাহ তাকে পরিত্রাণ দেবেন, সে যেন ‘বিসমিল্লা-হির রহমান-নির রহীম’ পড়ে’।
কারণ ‘বিসমিল্লা-হ’-তে ১৯টি বর্ণ রয়েছে। আর প্রতিটি বর্ণ তার জন্য ঢাল স্বরূপ এবং উক্ত
বর্ণ তাকে আযাবের ১৯ জন ফেরেশতা হতে বাঁচাবে’। কিন্তু উক্ত বর্ণনার ছহীহ কোন ভিত্তি
নেই। ইবনু আত্বিয়াহ বলেন, هَذَا مِنْ
مُلَحِ
التَّفْسِيْرِ
‘এগুলো চটকদার তাফসীরের অন্তর্ভুক্ত’। (তাফসীরে কুরতুবী
১/৯২ পৃঃ, ‘বিসমিল্লাহ’ অনুচ্ছেদ)।
(৭) ফজর ও মাগরিবের পর যিকির করাঃ
অনেক মসজিদে একশ্রেণীর মানুষ ফজর ও মাগরিবের
ছালাতের পর গোল হয়ে বসে যিকির করে থাকে। উক্ত যিকিরের শব্দগুলোও বানোয়াট। উচ্চৈঃস্বরে
যিকিরের কারণে এটা রিয়াতে পরিণত হয়েছে। ভাবখানা দেখে মনে হয় যে, তারা চিৎকার করে আল্লাহকে
আসমান থেকে টেনে নামাবে। এ ধরনের যিকির সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা
তোমাদের প্রতিপালককে ডাকবে বিনীতভাবে ও অতি সংগোপনে। তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পসন্দ করেন
না’ (আ‘রাফ ৫৫)। অন্য আয়াতে বলেন, ‘আপনি আপনার প্রতিপালককে মনে মনে বিনয় ও ভয়-ভীতি
সহকারে নীরবে সকাল-সন্ধ্যায় স্মরণ করুন’ (আ‘রাফ ২০৫)। রাসূল (ছাঃ) সরবে যিকির করতে
নিষেধ করেছেন। (বুখারী হা/২৯৯২, ১/৪২০ পৃঃ, (ইফাবা হা/২৭৮৪,
৫/২২২ পৃঃ), ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩১; মুসলিম হা/৭০৭৩; মিশকাত হা/২৩০৩, পৃঃ ২০১;
বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২১৯৫, ৫/৮৭ পৃঃ, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়, ‘সুবহা-নাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ’
বলার ছওয়াব’ অনুচ্ছেদ)।
উক্ত যিকিরপন্থীরা শেষে লম্বা মুনাজাত করে
বিদায় নেয়। এটাও একটি বিদ‘আতী আমল। শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এ
ধরনের লোকদেরকেই ধমক দিয়েছিলেন। (দারেমী হা/২১০)।
(৮) সকালে সূরা ইয়াসীন এবং সন্ধ্যায়
সূরা ওয়াক্বি‘আহ পাঠ করলে সচ্ছলতা আসে কথাটির সত্যতা আছে কি?
সূরা ইয়াসীন সম্পর্কে উক্ত মর্মে কোন হাদীছ
বা আছার বর্ণিত হয়নি। বরং একজন তাবেঈ থেকে এমন একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যার সনদ ছহীহ
নয়। (মুহাম্মাদ বিন আমর, আহাদীছুন ওয়া মারবিয়াতুন ফিল
মীযান ৪/১১৩, ৭৫ পৃ.)।
আর সূরা ওয়াক্বিআহ সম্পর্কেও অনুরূপ কিছু বর্ণনা
পাওয়া যায়, যেগুলো যঈফ। (মিশকাত হা/২১৮১; যঈফাহ হা/২৮৯;
যঈফুল জামে হা/৫৭৭৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৩/১৪২)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক
রাতে ‘‘সূরা আল ওয়াকিআহ্ তিলাওয়াত করবে, সে
কখনো অভাব অনটনে পড়বে না। বর্ণনাকারী ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ তাঁর কন্যাদেরকে প্রত্যেক
রাতে এ সূরা তিলাওয়াত করতে বলতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ২১৮১,যঈফ শুআবূল ঈমান ২২৬৯, যঈফাহ্ ২৮৯, যঈফ আল জামি ৫৭৭৩। কেননা এর সানাদে
আবূ ত্বয়বাহ্ একজন মাজহূল রাবী। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
অতএব ছহীহ সনদে প্রমাণিত না হওয়ায় এইসব ফযীলতের
বিবরণ গ্রহণযোগ্য নয়।
সুরা ইয়াছিন সম্পর্কে অন্যান্য জইফ হাদিসসমূহঃ
(ক) ‘আত্বা ইবনু আবূ রবাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নির্ভরযোগ্য সূত্রে আমার কাছে এ কথা পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনের প্রথম অংশে সূরা ইয়াসীন পড়বে, তার সব প্রয়োজন
পূর্ণ হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৭৭, যঈফ, দারিমী ৩৪৬১। কারণ এটি মুরসাল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(খ) মাকাল ইবনু ইয়াসার আল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি
লাভের উদ্দেশে সূরা ইয়াসীন পড়বে, তার আগের গুনাহসমূহ (সগীরাহ্) মাফ করে দেয়া হবে। তাই
তোমরা তোমাদের মৃত্যু (আসন্ন) ব্যক্তিদের কাছে এ সূরা পড়বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৭৮, যঈফ, শুআবূল ঈমান ২২৩১, যঈফাহ্
৬৬২৩, যঈফ আল জামি‘ ৫৭৮৫, যঈফ আত্তারগীব ৮৮৪। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(গ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক জিনিসের “কলব” (হৃদয়) আছে। কুরআনের
“কলব” হলো, ‘সূরা ইয়াসীন’। যে ব্যক্তি এ সূরা একবার পড়বে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য একবার
পড়ার কারণে দশবার কুরআন পড়ার সাওয়াব লিখবেন। (তিরমিযী, দারিমী। ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটিকে
গরীব বলেছেন)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৪৭, মাওযূ
(জাল) : তিরমিযী ২৮৮৭, দারিমী ৩৪৫৯, যঈফাহ্ ১৬৯, যঈফ আল জামি ১৯৩৫, যঈফ আত্ তারগীব
৮৮৫। কারণ এর সানাদে মুহাম্মাদ-এর পিতা হারূন একজন মিথ্যার অপবাদপ্রাপ্ত রাবী)। হাদিসের
মানঃ জাল (Fake)।
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিন সৃষ্টির
এক হাজার বছর পূর্বে সূরা ত্ব-হা- ও সূরা ইয়াসীন পাঠ করলেন। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)
(ফেরেশতাগণ) তা শুনে বললেন, ধন্য সে জাতি যাদের ওপর এ সূরা নাযিল হবে। ধন্য সে পেট
যে এ সূরা ধারণ করবে। ধন্য সে মুখ (জিহ্বা), যে তা উচ্চারণ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৪৮, মুনকার দারিমী ৩৪৫৭, শুআবূল
ঈমান ২২২৫, যঈফাহ্ ১২৪৮। কারণ এর সানাদে ইব্রাহীম সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন,
মুনকারুল হাদীস। আর ইমাম নাসায়ী (রহঃ) বলেছেন, দুর্বল)। হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)।
সুরা ইখলাস সম্পর্কে জইফ হাদিসসমূহঃ
(ক) সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) মুরসাল হাদীসরূপে
এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যদি কোন ব্যক্তি সূরা “ক্বুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ” দশবার পড়ে, বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে
একটি প্রাসাদ তৈরি করা হবে। যে ব্যক্তি বিশবার পড়বে তার জন্য দুটি। আর যে ব্যক্তি ত্রিশবার
পড়বে তার জন্য জান্নাতে তিনটি প্রাসাদ তৈরি করা হবে। এ কথা শুনে ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব
(রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ, হে আল্লাহর রসূল! যদি তা-ই হয় তাহলে তো আমরা অনেক প্রাসাদ
লাভ করব। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর রহমত এর চেয়েও
অধিক প্রশস্ত (এতে বিস্ময়ের কিছু নেই হে ‘উমার!)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৮৫, যঈফ দারিমী ৩৪৭২।
কারণ এর সানাদটি মুরসাল)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(খ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন দুইশ বার সূরা ‘কুল
হুওয়াল্ল-হু আহাদ পড়বে তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হবে। যদি তার ওপর কোন ঋণের
বোঝা না থাকে। (তিরমিযী ও দারিমী। কিন্তু দারিমীর বর্ণনায় [দুইশ বারের জায়গায়] পঞ্চাশ
বারের কথা উল্লেখ হয়েছে। তিনি ঋণের কথা উল্লেখ করেননি)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৫৮, যঈফ তিরমিযী ২৮৯৮, যঈফ আত্ তারগীব ৯৭৫, যঈফ আল জামি‘ ৫৭৮৩,
যঈফাহ্ ৩০০, দারিমী,৩৪৪১ যঈফ আত্ তারগীব ৯৭৫। কারণ এর সানাদে রাবী হাতিম ইবনু মায়মূন
মুনকারুল হাদীস। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, সে মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন)। হাদিসের
মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(গ) আনাস (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত হয়েছে। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ঘুমাবার জন্য বিছানায় যাবে এবং ডান পাশের
উপর শোয়ার পর একশ বার সূরা ‘কুল হুওয়াল্ল-হু
আহাদ’পড়বে, কিয়ামতের দিন প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন, হে আমার বান্দা! তুমি
তোমার ডান দিকের জান্নাতে প্রবেশ করো। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান তবে গরীব)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৫৯, যঈফ তিরমিযী ২৮২৯৮, যঈফ আত্ তারগীব ৩৪৮, য‘ঈফ আল জামি‘
৫৩৮৯। কারণ এর সানাদে রাবী হাতিম ইবনু মায়মূন মুনকারুল হাদীস )। হাদিসের মানঃ যঈফ
(Dai'f)।
সালাম ফিরানোর পর ইমাম বা মুক্তাদী কোন দো‘আ
না পড়েই কি উঠে যেতে পারবে?
সালাম ফিরানোর পর ইমাম ও মুক্তাদী সকলের জন্য
মুছাল্লায় বসে দো‘আ ও যিকির করা সুন্নাত। কারণ এ সময়ে ফেরেশতাগণ দো‘আ পাঠরত মুছল্লীদের
জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, মুছল্লী ছালাত শেষে যতক্ষণ স্বীয় স্থানে
বসে তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করে, ততক্ষণ ফেরেশতামন্ডলী তার জন্য দো‘আ করতে থাকে এই মর্মে
যে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর ও তার উপর রহম কর।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘরে অথবা (ব্যাস্ততার কারণে) কারো
বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে মসজিদে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করার সাওয়াব পঁচিশ গুণ
বেশী। কারণ কোন ব্যক্তি ভালো করে (সকল আদাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে) ওযু করে নিঃস্বার্থভাবে
সালাত (আদায় করার জন্যই মসজিদে আসে। তার প্রতি ক্বদমের বিনিময়ে একটি সাওয়াবে তার মর্যাদা
বেড়ে যায়, আর একটি গুনাহ কমে যায়। এভাবে মসজিদে পৌঁছা পর্যন্ত (চলতে থাকে)। সালাত আদায়
শেষ করে যখন সে মুসল্লায় বসে থাকে, মালায়িকাহ্ অনবরত এ দু‘আ করতে থাকেঃ ‘হে আল্লাহ!
তুমি তাকে মাফ করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তার ওপর রহমত বর্ষণ কর।’’ আর যতক্ষণ পর্যন্ত
তোমাদের কেউ সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, সে সময়টা তার সালাতের সময়ের মধ্যেই পরিগণিত
হবে।
আর এক বর্ণনার শব্দ হলো, ‘যখন কেউ মসজিদে গেল,
আর সালাতের জন্য অবস্থান করলো সেখানে, তাহলে সে যেন সালাতেই রইল। আর মালায়িকার দু‘আর
শব্দাবলী আরো বেশিঃ ‘‘হে আল্লাহ! এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। তার তওবা্ ক্ববূল কর’’।
এভাবে চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্য কোন মুসলিমকে কষ্ট না দেয় বা তার উযূ ছুটে
না যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭০২, সহীহ মুসলিম
৬৪৭, ৬৪৯, সহিহ বুখারী ৪৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তবে কেউ যদি ওযরের কারণে যিকির-আযকার সংক্ষিপ্ত
করতে চায় তবে কমপক্ষে তিনি ‘আল্ল-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু, তাবা-রক্তা
ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম’ বলে উঠে যাবেন। (সহিহ বুখারী
৮৪৯; সহিহ মুসলিম ৫৯২; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৯৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সকাল বিকেলে পঠিতব্য দোয়া বা আমলসমূহ
সাধারনত এই যিকির ফজরের সময় থেকে নিয়ে সূর্য
উঠা পর্যন্ত সময়ে করার কথা এসেছে। তবে কেউ যদি এই সময়ের দোয়া ও যিকির নির্ধারিত সময়ে
না পড়তে পারেন, তাহলে যোহরের পূর্বে যেকোন সময়ে পড়লেও হবে ইন শা আল্লাহ।
১ নং দোয়াঃ
সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫ (আয়াতুল কুরসী)।
“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল
ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল
আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম
ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া
কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল
আজীম”।
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি
জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও
যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি
ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা
থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর
সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে
কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা
আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫)।
আয়তুল কুরসিকে বলা হয় আল কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত।
এটি নিয়মিত আমল করলে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত লাভ করা যায়। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তিনি বর্ণনা করেছেন কোন আয়াতগুলি সর্বশ্রেষ্ঠ
এবং এই আয়াতগুলো পাঠে কী ধরনের নেয়ামত অর্জন করবে বান্দা।
ফজিলত ও নিয়ামতে ভরপুর সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হলো
আয়াতুল কুরসি। কুরআনের সর্ববৃহৎ ও দ্বিতীয় সূরা ‘সূরা আল-বাক্বারা’র ২৫৫ নম্বর আয়াত।
আয়াতটিতে মহাবিশ্বের ওপর আল্লাহর ক্ষমতার কথা বর্ণিত হয়েছে।
আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ) ... উবাই
ইবনু কাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একদিন আবূল মুনযিরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে আবূল মুনযির আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি
তোমার কাছে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ? আবূল মুনযির বলেন, জবাবে আমি বললামঃ এ বিষয়ে
আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলই সর্বাধিক অবগত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার
বললেনঃ হে আবূল মুনযির! আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি তোমার কাছে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ?
তখন আমি বললাম, اللَّهُ لاَ
إِلَهَ
إِلاَّ
هُوَ
الْحَىُّ
الْقَيُّومُ
(এ আয়াতটি আমার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ)। এ কথা শুনে তিনি আমার বুকের উপর হাত মেরে
বললেনঃ হে আবূল মুনযির! তোমার জ্ঞানকে স্বাগতম। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২১২২, আবূ দাঊদ ১৪৬০, আহমাদ ২১২৭৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৫৩২৬, শু‘আবূল ঈমান ২১৬৯,
সহীহ আত্ তারগীব ১৪৭১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৫৫, ইসলামীক সেন্টার, ১৭৬২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
২ নং দোয়াঃ-
(সূরা ইখলাস, সূরা নাস ও সূরা ফালাক সকাল ও
বিকেলে প্রতিটি সূরা ৩ বার করে)।
মু‘আয ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু খুবাইব (রহঃ) থেকে
তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে আমাদের সালাত
পড়ার জন্য আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে
পেয়ে গেলাম। তিনি বললেনঃ বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বললেন, বলো। আমি কিছুই
বললাম না। তিনি আবার বললেনঃ বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কি বলবো? তিনি বললেনঃ
তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সূরা কুল হুয়াল্লাহু (সূরা ইখলাস), সূরা নাস
ও ফালাক পড়বে; এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৮২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৭৫, তা’লীকুর রাগীব (১/২২৪),
আল-কালিমুত তাইয়্যিব (১৯/৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
৩ নং দোয়াঃ-
“আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি”। (দৈনিক
১০০ বার)।
(ক) আবু
বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....আবূ বুরদাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহাবা আগার (রাযিঃ) হতে শুনেছি, তিনি ইবনু উমর
(রাযিঃ) এর নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা্ করো। কেননা আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদিন
একশ’ বার তওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৫২, ৬৭৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০২, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৩,
ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও
তওবা করে থাকি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৭,
আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেনঃ
আল্লাহ বলেন,
(ক) সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা
ঘোষণা কর এবং তাঁর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি অধিক তাওবা গ্রহণকারী। (সূরা
নাসর ৩ নং আয়াত)।
(খ) আর যে কেউ মন্দ কার্য করে অথবা নিজের প্রতি
জুলুম করে, কিন্তু পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে আল্লাহকে অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু-রূপে
পাবে। (সূরা নিসা ১১০ নং আয়াত)।
(গ) আল্লাহ এরূপ নন যে, তুমি তাদের মধ্যে থাকা
অবস্থায় তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তিনি এরূপ নন যে, তাদের ক্ষমা প্রার্থনা করা
অবস্থায় তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল ৩৩ নং
আয়াত)।
(ঘ) যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের
প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।
আর আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারে? এবং তারা যা [অপরাধ] করে ফেলে তাতে জেনে-শুনে
অটল থাকে না। (সূরা আলে ইমরান ১৩৫ নং আয়াত।
(ঙ) আবূ হুরাইরা) রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সেই মহান সত্তার
কসম, যার হাতে আমার জীবন আছে! যদি তোমরা পাপ না কর, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে
নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে [তোমাদের পরিবর্তে] এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং
আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’’
(বিঃদ্রঃ এ হাদিস দ্বারা পাপ করার পর আল্লাহর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ব্যক্ত করা হয়েছে। পাপ করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়নি।
কেননা, মানুষ মাত্রই ভুলে জড়িত। তাই ভুলে জড়িত হয়ে পড়লে আবশ্যিক-রূপে ক্ষমা চাওয়া কর্তব্য)।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৮৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৯, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন
নাম্বারঃ ১৮৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭১, তিরমিযী ২৫২৬, আহমাদ ৭৯৮৩, ৮০২১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছিঃ বারাকাতময় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
হে আদম সন্তান! যতক্ষণ আমাকে তুমি ডাকতে থাকবে এবং আমার হতে (ক্ষমা পাওয়ার) আশায়
থাকবে, তোমার গুনাহ যত অধিক হোক, তোমাকে আমি ক্ষমা করব, এতে কোন পরওয়া করব না। হে
আদম সন্তান! তোমার গুনাহর পরিমাণ যদি আসমানের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও পৌছে যায়,
তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি পরওয়া
করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার নিকট আস
এবং আমার সঙ্গে কাউকে অংশীদার না করে থাক, তাহলে তোমার কাছে আমিও পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা
নিয়ে হাযির হব। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৪০,
সহীহাহ১২৭, ১২৮, রাওযুন নাযীর ৪৩২, মিশকাত তাহকীক সানী ২৩৩৬, তা’লীকুর রাগীব ২/২৬৮,
রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৮৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ক্ষমা প্রার্থনা করার বাক্যসমূহ
কুরআন ও হাদিস হতে ক্ষমা প্রার্থনা করার বাক্য
অনেক আছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলোঃ-
(ক) ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, একই মজলিসে বসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (এই ইস্তিগফারটি)
পাঠ করা অবস্থায় একশো বার পর্যন্ত গুনতাম,
‘রাব্বিগফির লী অতুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আন্তাত
তাউওয়াবুর রাহীম।’
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর,
আমার তওবা কবুল কর, নিশ্চয় তুমি অতিশয় তওবাহ কবূলকারী দয়াবান।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১৫১৬, তিরমিযী ৩৪৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮১৪, সহীহাহ ৫৫৬, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস
সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এ দো‘আ
পড়বে,
‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা
হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু অ আতূবু ইলাইহ্।’
অর্থাৎ আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা
করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা
করছি।
সে ব্যক্তির পাপরাশি মার্জনা করা হবে; যদিও
সে রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে (যাওয়ার পাপ করে) থাকে।’’
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
আবূ দাউদ ১৫১৭, তিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)- তাওহীদ পাবলিকেশন
নাম্বারঃ ১৮৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) “রব্বানা য-লামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা
ওয়া তারহামনা লানা কূনান্না মিনাল খ-সিরীন। ”
অর্থঃ “হে আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের নফসের
উপর যুলুম করেছি, তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না কর, আমাদের প্রতি করুণা না কর তবে আমরা
ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।” (সূরা আ‘রাফ- ২৩)।
(ঘ) আবূ বাকর সিদ্দীক (রাযি.) হতে বর্ণিত। একদা
তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আরয করলেন, আমাকে সালাতে
পাঠ করার জন্য একটি দু‘আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, এ দু‘আটি বলবে-
“আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাছিরাও
ওয়া লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন্ ইন্দিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা
আংতাল গাফুরুর রাহিম।”
‘‘হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অধিক জুলুম করেছি।
আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ হতে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন
এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৩৪, ৬৩২৬, ৭৩৮৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৭৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
৪ নং দোয়াঃ-
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন
ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা-’’ (৩ বার)।
অর্থঃ
“হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান, কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই”।
হাদিসঃ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে বলতেন,
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন
ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা-’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী
জ্ঞান, কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ
৯২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২৬৫, আহমাদ ২৬৫২১, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ১১৯, শু‘আবূল ঈমান
১৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
৫ নং দোয়াঃ-
(ক) “লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা
লাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হাম্দু ইয়ুহ্য়ী ওয়াইয়ূমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন
ক্বাদীর”। (১০ বার)।
অর্থঃ “একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ
নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত করেন এবং
মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান”।
হাদিসঃ
আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের নামাযের পর তার দুই পা ভাজ
করা অবস্থায় (তাশাহহুদের অবস্থায়) কোন কথাবার্তা বলার পূর্বে দশবার বলে, “আল্লাহ
তা'আলা ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তার কোন শারীক নেই, রাজত্ব তারই, সকল প্রশংসা
তার জন্য, তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দান করেন, তিনি সকল কিছুর উপর সর্বশক্তিমান”,
তার আমলনামায় দশটি সাওয়াব লেখা হয়, তার দশটি গুনাহ মুছে ফেলা হয় এবং তার সম্মান
দশগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। সে ঐ দিন সব রকমের সংকট হতে নিরাপদ থাকবে এবং শাইতানের ধোকা
হতে তাকে পাহারা দেয়া হবে এবং ঐ দিন শিরকীর গুনাহ ছাড়া অন্য কোন প্রকারের গুনাহ তাকে
সংকটাপন্ন করতে পারবে না। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৪৭৪, তা’লীকুর রাগীব (১/১৬৬), আহমাদ ৪/২২৭, নং ১৭৯৯০)। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান
সহীহ গারীব।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনে একশ’বার পড়বে
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা
লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর’’
(অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ
নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই প্রশংসা এবং তিনি হচ্ছেন সকল
বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান)।
তার দশটি গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সমপরিমাণ সাওয়াব
হবে। তার জন্য একশ নেকী লেখা হবে, তার একশটি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, তার জন্য এ
দুআ ঐ দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান হতে বেঁচে থাকার জন্য রক্ষাকবচ হবে এবং সে যে কাজ
করেছে তার চেয়ে উত্তম কাজ অন্য কেউ করতে পারবে না, কেবল ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে এর চেয়ে
বেশী পড়বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩০২, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৯৩, ৬৪০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯১, মুয়াত্ত্বা মালিক
৭১২, ৪৮৬, ৪৮৮, সুনান আততিরমিযী ৩৪৬৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৯৮, আহমাদ ৮০০৮, আল কালিমুত্ব
ত্বইয়্যিব ৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৫৪, সহীহ আল জামি ৬৪৩৭, আহমাদ ৭৯৪৮, ৮৫০২, ৮৬১৭, ৮৬৫৬,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
৬ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা
‘আ-ফিনী ফী সাম্‘ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী। লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আল্লা-হুম্মা
ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল-ফাক্বরি ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি, লা
ইলাহা ইল্লা আন্তা”। (৩ বার)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার
শরীরে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শ্রবণশক্তিতে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা
দিন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে
আশ্রয় চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। আপনি ছাড়া
আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই।” (আবূ দাউদ ৪/৩২৪, নং ৫০৯২; আহমাদ
৫/৪২, নং ২০৪৩০; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নং ২২; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৯; বুখারী,
আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭০১। আর শাইখ আল্লামা ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’
গ্রন্থের পৃ. ২৬ এ এর সনদকে হাসান বলেছেন)।
৭ নং দোয়াঃ-
“হাসবিয়াল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুয়া, ‘আলাইহি
তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম”। (৭ বার)।
অর্থঃ “আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া
আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব।”
হাদিসঃ-
আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সাতবার বলেঃ ‘‘আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া
কোনো ইলাহ নেই, আমি তাঁর উপর ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের রব’’ আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট
হবেন যা তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তার বিরুদ্ধে চাই সে সত্যিকারভাবে অথবা কৃত্রিমভাবে
বলুক না কেন।
যে ব্যক্তি দো‘আটি সকালবেলা সাতবার এবং বিকালবেলা
সাতবার বলবে তার দুনিয়া ও আখেরাতের সকল চিন্তাভাবনার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট হবেন। (ইবনুস সুন্নী, নং ৭১, মারফূ‘ সনদে; আবূ দাউদ ৪/৩২১; মাওকূফ
সনদে, নং ৫০৮১, কানজুল উম্মাল: ৫০১১)। আর শাইখ শু‘আইব ও আব্দুল কাদের আরনাঊত এর সনদকে
সহীহ বলেছেন। দেখুন, যাদুল মা‘আদ ২/৩৭৬)।
৮ নং দোয়াঃ-
“রদ্বীতু বিল্লা-হি রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি
দীনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যান”। (৩ বার)
অর্থঃ “আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন ও মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবীরূপে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট।”
হাদিসঃ-
সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলে, 'আল্লাহ
তা'আলা আমার রব, ইসলাম আমার দীন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার
রাসূল হওয়ায় আমি সর্বান্তকরণে পরিতৃপ্ত আছি", তাকে পরিতৃপ্ত করা আল্লাহ্ তা'আলার
করণীয় হয়ে যায়।
যে ব্যক্তি এ দো‘আ সকাল ও বিকাল তিনবার করে
বলবে, আল্লাহর কাছে তার অধিকার হয়ে যায় তাকে কিয়ামাতের দিন সন্তুষ্ট করা। (আহমাদ ৪/৩৩৭; নং ১৮৯৬৭; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল-লাইলাহ,
নং ৪; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৮; আবু দাউদ, ৪/৩১৮, নং ১৫৩১; তিরমিযী ৫/৪৬৫, নং ৩৩৮৯। আর
ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’ এর ৩৯ পৃষ্ঠায় একে হাসান বলেছেন)।
৯ নং দোয়াঃ-
“ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু বিরাহমাতিকা
আস্তাগীসু, আসলিহ্ লী শা’নী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন”। (৩
বার)।
অর্থঃ “হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার
রহমতের অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার কামনা করি, আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন,
আর আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না।” (হাকেম ১/৫৪৫, তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, আর যাহাবী তা সমর্থন
করেছেন। আরও দেখুন, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ১/২৭৩)।
১০ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা
সাল্লি ওয়াসাল্লিম ‘আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ”।
(সকাল-বিকাল ১০ বার করে)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আপনি সালাত ও সালাম পেশ
করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর।”
(যে কেউ সকাল বেলা আমার উপর দশবার দরুদ পাঠ
করবে এবং বিকাল বেলা দশবার দরুদ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ দ্বারা সৌভাগ্যবান
হবে।’ (তাবরানী হাদীসটি দু’ সনদে সংকলন করেন, যার একটি
উত্তম। দেখুন, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ১০/১২০; সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব ১/২৭৩)।
১১ নং দোয়াঃ- (সায়্যিদুল ইসতিগফার)
“আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা
আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু।
আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী।
ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা”।
অর্থঃ “হে আল্লাহ্! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া
আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার
সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার
কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি
স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি
ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।”
হাদিসঃ-
শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু‘আ পড়া- ‘‘হে আল্লাহ!
তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার
সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার
কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নি‘য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার
কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’’
যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে
এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি
রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে
সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬,
৬৩২৩, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
১২ নং দোয়াঃ-
“আসবাহনা ‘আলা ফিত্বরাতিল ইসলামি ওয়া আলা কালিমাতিল
ইখলাসি ওয়া আলা দ্বীনি নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়া
আলা মিল্লাতি আবীনা ইবরা-হীমা হানীফাম মুসলিমাও ওয়ামা কা-না মিনাল মুশরিকীন”।
অর্থঃ “আমরা সকালে উপনীত হয়েছি ইসলামের ফিত্বরাতের
উপর, নিষ্ঠাপূর্ণ বাণী (তাওহীদ) এর উপর, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীনের উপর, আর আমাদের পিতা ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম-এর মিল্লাতের উপর—যিনি
ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম এবং যিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না”। (আহমাদ ৩/৪০৬, ৪০৭, নং ১৫৩৬০)।
১৩ নং দোয়াঃ-
“সুব্হা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী ‘আদাদা খালক্বিহী,
ওয়া রিদা নাফসিহী, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহী, ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহী”। (৩ বার ফজরের ফরজ
সালাতের পর)।
অর্থঃ “আমি আল্লাহর প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা
বর্ণনা করছি তাঁর মাখলুকের সংখ্যার পরিমাণ, তাঁর সন্তুষ্টির পরিমাণ, তাঁর ‘আর্শের ওযন
পরিমাণ ও তাঁর কালিমাসমূহের সংখ্যার পরিমাণ।”
হাদিসঃ-
কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ, আমর আন্ নাকিদ, ইবনু আবূ
উমর (রহঃ).....জুওয়াইরিয়াহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরবেলা ফজরের সালাত আদায় করে তার নিকট থেকে বের হলেন। ঐ সময় তিনি
সালাতের স্থানে বসাছিলেন। এরপর তিনি চাশতের পরে ফিরে আসলেন। এমতাবস্থায়ও তিনি উপবিষ্ট
ছিলেন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে যে অবস্থায় ছেড়ে গিয়েছিলাম তুমি সে অবস্থায়ই আছ।
তিনি বললেন, হ্যাঁ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমার নিকট হতে
রওনার পর চারটি কালিমাহ তিনবার পড়েছি। আজকে তুমি এ পর্যন্ত যা বলেছ তার সাথে ওযন করা
হলে এ কালিমাহ চারটির ওযনই ভারী হবে। কালিমাগুলো এই, “সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি হামদিহি
আদাদা খল্কিহি ওয়া রিযা- নাফসিহি ওয়াযিনাতা আরশিহি ওয়ামি দা-দা কালিমা-তিহি",
অর্থাৎ- “আমি আল্লাহর প্রশংসার সাথে তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার মাখলুকের সংখ্যার
পরিমাণ, তার সন্তুষ্টির পরিমণ, তার আরশের ওযন পরিমাণ ও তার কালিমাসমূহের সংখ্যার পরিমাণ।"
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮০৬-৬৮০৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৬৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৭১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৪ নং দোয়াঃ-
“আসবাহ্না ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লাহি ওয়ালহাম্দু
লিল্লাহি, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল
হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর। রব্বি আস্আলুকা খাইরা মা ফী হা-যাল ইয়াউমি
ওয়া খাইরা মা বা‘দাহু, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররি মা ফী হা-যাল ইয়াউমি ওয়া শাররি মা
বা‘দাহু। রব্বি আঊযু বিকা মিনাল কাসালি ওয়া সূইল-কিবারি। রবিব আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযাবিন
ফিন্না-রি ওয়া আযাবিন্ ফিল ক্বাবরি”।
অর্থঃ “আমরা সকালে উপনীত হয়েছি, অনুরূপ যাবতীয়
রাজত্বও সকালে উপনীত হয়েছে, আল্লাহ্র জন্য। সমুদয় প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য। একমাত্র আল্লাহ
ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসাও তাঁর, আর
তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হে রব্ব! এই দিনের মাঝে এবং এর পরে যা কিছু
কল্যাণ আছে আমি আপনার নিকট তা প্রার্থনা করি। আর এই দিনের মাঝে এবং এর পরে যা কিছু
অকল্যাণ আছে, তা থেকে আমি আপনার আশ্রয় চাই।
হে রব্ব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই অলসতা ও
খারাপ বার্ধক্য থেকে। হে রব্ব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামে আযাব হওয়া থেকে
এবং কবরে আযাব হওয়া থেকে।” (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৮০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৫ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসবাহ্তু উশহিদুকা ওয়া
উশহিদু হামালাতা ‘আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতিকা ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা, আন্নাকা আনতাল্লা-হু
লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আব্দুকা ওয়া
রাসূলুকা”। (৪ বার)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি সকালে উপনীত হয়েছি।
আপনাকে আমি সাক্ষী রাখছি, আরও সাক্ষী রাখছি আপনার ‘আরশ বহনকারীদেরকে, আপনার ফেরেশতাগণকে
ও আপনার সকল সৃষ্টিকে, (এর উপর) যে নিশ্চয় আপনিই আল্লাহ, একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো
হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই; আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আপনার বান্দা ও রাসূল।”
যে ব্যক্তি সকালে অথবা বিকালে তা চারবার বলবে,
আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করবেন। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৭১, বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ১২০১; নাসাঈ, ‘আমালুল ইয়াওমি
ওয়াল লাইলাহ, নং ৯; ইবনুস সুন্নী, নং ৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৬ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-
‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাতি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা
ফী দীনী ওয়াদুনইয়াইয়া, ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী ওয়া আ-মিন রাও‘আ-তি।
আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী
ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী”।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও
আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা
চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ
ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে
হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার
বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আশ্রয় চাই আমার নীচ
থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে”।
হাদিসঃ-
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেনঃ
‘‘ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আমার দীন, আমার দুনিয়া, আমার পরিবার ও আমার সম্পদের স্বস্তি
ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমার লজ্জাস্থানকে গোপন রাখো, আমার ভয়কে শান্তিতে
পরিণত করো এবং আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে ও আমার উপরের দিক থেকে আমাকে হেফাজত
করো। আমি তোমার নিকট আমার নিচের দিক দিয়ে আমাকে ধ্বসিয়ে দেয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
করি্। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৭৪, নাসায়ী ৫৫২৯, ৫৫৩০, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
১৭ নং দোয়াঃ-
“আল্ল-হুম্মা ‘আ-লিমাল গয়বি ওয়াশ্শাহা-দাতি,
ফা-ত্বিরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, রব্বা কুল্লি শাইয়িন, ওয়া মালীকাহূ আশহাদু আল্লা-
ইলা-হা ইল্লা- আন্তা, আ‘ঊযুবিকা মিন্ শাররি নাফ্সী, ওয়ামিন শার্রিশ্ শায়ত্ব-নি, ওয়া
শিরকিহী’’।
অর্থঃ হে আল্লাহ! যিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য জ্ঞানের
অধিকারী, আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, প্রত্যেক জিনিসের প্রতিপালক ও মালিক- আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, আমি তোমার কাছে আমার মনের মন্দ হতে,
শয়তানের মন্দ ও তাঁর শির্ক হতে আশ্রয় চাই।) এই দোয়াটি সকাল সন্ধ্যা ও শয্যায় যাওয়ার
সময় বলা যাবে।
হাদিসঃ-
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেছেন, একদিন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে
একটি দু‘আ বলে দিন যা আমি সকাল-সন্ধ্যায় পড়তে পারি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, তুমি পড়বে,
‘আল্ল-হুম্মা ‘আ-লিমাল গয়বি ওয়াশ্শাহা-দাতি,
ফা-ত্বিরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, রব্বা কুল্লি শাইয়িন, ওয়া মালীকাহূ আশহাদু আল্লা-
ইলা-হা ইল্লা- আন্তা, আ‘ঊযুবিকা মিন্ শাররি নাফ্সী, ওয়ামিন শার্রিশ্ শায়ত্ব-নি, ওয়া
শিরকিহী’’।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! যিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য জ্ঞানের
অধিকারী, আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, প্রত্যেক জিনিসের প্রতিপালক ও মালিক- আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, আমি তোমার কাছে আমার মনের মন্দ হতে,
শয়তানের মন্দ ও তাঁর শির্ক হতে আশ্রয় চাই।)
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
তুমি এ দু‘আ সকালে-সন্ধ্যায় ও ঘুমানোর সময় পড়বে।’’ (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৯২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৬৭, আহমাদ ৬৩, দারিমী ২৭৩১, ২৬৮৯, ইবনু হিব্বান ৯৬২, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ১২০২/৯১৭,
আল-কালিমুত তাইয়্যিব ২২, সহীহাহ ২৭৫৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৮ নং দোয়াঃ- জান্নাত পাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের দোয়াঃ
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া
আ’উযু বিকা মিনান্নার”। (৩ বার)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত
চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই”।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জান্নাত প্রার্থনা
করে, জান্নাত আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করো। যে ব্যক্তি আল্লাহর
কাছে ৩ বার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, জাহান্নাম আল্লাহর কাছে দুয়া করে,
হে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও”।
হাদিসঃ-
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জান্নাতের
প্রত্যাশা করে; জান্নাত বলবে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। আর যে ব্যক্তি
তিনবার জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করবে; জাহান্নাম বলবে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম
থেকে মুক্তি দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৭৮, সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫৭২, সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩৪০, নাসায়ী ৫৫২১, সহীহ ইবনু হিববান
১০৩৪, সহীহ আল জামি ৬২৭৫, মুখতাসারুশ শামাইল ৪/২২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
একটি জাঈফ হাদিসঃ আল্লাহুম্মা আজরনি মিনান্নার।
উল্লেখ্য–সকাল সন্ধ্যায় ৭ বার “আল্লাহুম্মা
আজিরনি মিনান্নার” পড়ার হাদীসটা জয়ীফ বা দুর্বল, শায়খ আলবানী সিলসিলা জয়ীফাহঃ ১৬২৪।
যেহেতু “আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার” জয়ীফ
বা দুর্বল তাই ইহার আমল না করে "আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু
বিকা মিনান্নার" সকাল সন্ধ্যায় তিনবার করে পাঠ করবো।
১৯ নং দোয়াঃ-
“বিসমিল্লা-হিল্লাযি লা-ইয়াদুররু মা”আ ইসমিহি
শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামা-ই ওয়া হুয়াস সামীউল আলীম”।
অর্থঃ আমি ঐ আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যার
নামে আরম্ভ করলে আসমান ও যমীনের কোনো বস্তুই কোনোরুপ ক্ষতি সাধন করতে পারে না। আর তিনি
সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
হাদিসঃ-
আবান ইবনু ‘উসমান হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
আমার পিতাকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে বান্দা প্রত্যেক সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়বে,
‘‘বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা- ইয়াযুররু মা‘আইস্মিহী
শায়উন ফিল আরযি ওয়ালা- ফিস্সামা-য়ি, ওয়া হুওয়াস্ সামী‘উল ‘আলিম’’।
(অর্থাৎ- আল্লাহর নামে শুরু করছি, যে নামের
সাথে আসমান ও জমিনে কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সব শুনেন ও জানেন)- কোন
কিছু তাকে ক্ষতি করতে পারে না। বর্ণনাকারী বলেন, আবান পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
এজন্য যারা হাদীস শুনছিলেন তারা তাঁর দিকে তাকাচ্ছিল। আবান তখন বললেন, আমার দিকে কী
দেখছ? নিশ্চয়ই হাদীস যা আমি বর্ণনা করছি তাই, তবে যেদিন আমি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছি
সেদিন এ দু‘আ পড়িনি। এ কারণে আল্লাহ আমার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছিলেন তা কার্যকরী হয়েছে।
(তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ। কিন্তু আবূ দাঊদ-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, সে রাতে তাঁর
ওপর কোন আকস্মিক বিপদাপদ ঘটবে না যে পর্যন্ত না ভোর হয়, আর যে তা ভোরে বলবে তার ওপর
কোন আকস্মিক বিপদাপদ সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না সন্ধ্যা উপনীত হয়।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯১, তিরমিযী ৩৩৮৮, আবূ দাঊদ ৫০৮৮,
ইবনু মাজাহ ৩৮৬৯, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৯৫, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২৩, সহীহ আত্
তারগীব ৬৫৫, সহীহ আল জামি‘ ৫৭৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
২০ নং দোয়াঃ-
“আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু
সাহলান, ওআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা”। (৭ বার)।
অর্থঃ ইয়া আল্লাহ, কোনো বিষয় সহজ নয়। হ্যাঁ,
যাকে তুমি সহজ করে দাও, যখন তুমি চাও তখন তুমি মুশকিলকে সহজ করে দাও। (ইবনে হিব্বান: হাদিস নং-৯৭৪)।
২১ নং দেোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা মা আসবাহা বী মিন নি‘মাতিন আউ
বিআহাদিন মিন খালক্বিকা ফামিনকা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা, ফালাকাল হাম্দু ওয়ালাকাশ্
শুক্রু”। (৩ বার)।
“হে আল্লাহ! যে নেয়ামত আমার সাথে বিকালে উপনীত
হয়েছে, অথবা আপনার সৃষ্টির অন্য কারও সাথে; এসব নেয়ামত কেবলমাত্র আপনার নিকট থেকেই;
আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং সকল প্রশংসা আপনারই। আর সকল কৃতজ্ঞতা আপনারই প্রাপ্য।”
যে ব্যক্তি সকালবেলা উপরোক্ত দো‘আ পাঠ করলো
সে যেনো সেই দিনের শুকরিয়া আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি বিকালবেলা এ দো‘আ পাঠ করলো সে
যেনো রাতের শুকরিয়া আদায় করলো’’। (হাদীসটি সংকলন করেছেন,
আবূ দাউদ ৪/৩১৮, নং ৫০৭৫; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নং ৭; ইবনুস সুন্নী, নং
৪১; ইবন হিব্বান, (মাওয়ারিদ) নং ২৩৬১। আর শাইখ ইবন বায তাঁর তুহফাতুল আখইয়ার পৃ. ২৪
এ এর সনদকে হাসান বলেছেন)।
বিকেল বেলার যিকির ও দোয়াসমূহ
বিকেল বেলার যিকির ও দোয়াসমূহঃ সাধারনত এই
দোয়া ও যিকিরসমূহ আসরের সময় থেকে সূর্যাস্ত
পর্যন্ত সময়ের মাঝে করার কথা বলা হয়েছে। তবে মাগরিবের পর রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ সময়ের
মাঝে করলেও সওয়াব পাওয়া যাবে।
১ নং দোয়াঃ-
“আ’উযু বিকালিমা –তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন
শাররি মা খলাক্বা”। (তিন বার)।
অর্থঃ
আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের অসিলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয়
চাই।
যে কেউ বিকাল বেলা এ দো‘আটি তিনবার বলবে, সে
রাতে কোনো বিষধর প্রাণী তার ক্ষতি করতে পারবে না। (আহমাদ
২/২৯০, নং ৭৮৯৮; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নং ৫৯০; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৮; আরও
দেখুন, সহীহুত তিরমিযী ৩/১৮৭; সহীহ ইবন মাজাহ ২/২৬৬; তুহফাতুল আখইয়ার লি ইবন বায, পৃ.
৪৫)।
২ নং দোয়াঃ-
(ক) “লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা
লাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হাম্দু ইয়ুহ্য়ী ওয়াইয়ূমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন
ক্বাদীর”। (১০ বার)।
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই,
তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু
দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান”। ১০ বার করে পড়তে হবে। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৭৪; আহমাদ ৪/২২৭,নং ১৭৯৯০)।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনে একশ’বার পড়বে
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা
লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর’’
(অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবূদ
নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই প্রশংসা এবং তিনি হচ্ছেন সকল
বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান)।
তার দশটি গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সমপরিমাণ সাওয়াব
হবে। তার জন্য একশ নেকী লেখা হবে, তার একশটি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, তার জন্য এ
দুআ ঐ দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান হতে বেঁচে থাকার জন্য রক্ষাকবচ হবে এবং সে যে কাজ
করেছে তার চেয়ে উত্তম কাজ অন্য কেউ করতে পারবে না, কেবল ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে এর চেয়ে
বেশী পড়বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩০২, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৯৩, ৬৪০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯১, মুয়াত্ত্বা মালিক
৭১২, ৪৮৬, ৪৮৮, সুনান আততিরমিযী ৩৪৬৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৯৮, আহমাদ ৮০০৮, আল কালিমুত্ব
ত্বইয়্যিব ৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৫৪, সহীহ আল জামি ৬৪৩৭, আহমাদ ৭৯৪৮, ৮৫০২, ৮৬১৭, ৮৬৫৬,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
৩ নং দোয়াঃ- সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫- (আয়াতুল
কুরসী)।
“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল
ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল
আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম
ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া
কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল
আজীম”।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি
জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও
যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি
ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা
থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর
সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে
কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা
আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫)।
৪ নং দোয়াঃ-
(সূরা ইখলাস, সূরা নাস ও সূরা ফালাক সকাল ও
বিকেলে প্রতিটি সূরা ৩ বার করে)।
মু‘আয ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু খুবাইব (রহঃ) থেকে
তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে আমাদের সালাত
পড়ার জন্য আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে
পেয়ে গেলাম। তিনি বললেনঃ বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বললেন, বলো। আমি কিছুই
বললাম না। তিনি আবার বললেনঃ বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কি বলবো? তিনি বললেনঃ
তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সূরা কুল হুয়াল্লাহু (সূরা ইখলাস), সূরা নাস
ও ফালাক পড়বে; এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৮২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৭৫, তা’লীকুর রাগীব (১/২২৪),
আল-কালিমুত তাইয়্যিব (১৯/৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
৫ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা মা আমসা (সকালে বলতে হবে আসবাহা
) বী মিন নি‘মাতিন আউ বিআহাদিন মিন খালক্বিকা ফামিনকা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা, ফালাকাল
হাম্দু ওয়ালাকাশ্ শুক্রু”। (৩ বার)।
“হে আল্লাহ! যে নেয়ামত আমার সাথে বিকালে উপনীত
হয়েছে, অথবা আপনার সৃষ্টির অন্য কারও সাথে; এসব নেয়ামত কেবলমাত্র আপনার নিকট থেকেই;
আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং সকল প্রশংসা আপনারই। আর সকল কৃতজ্ঞতা আপনারই প্রাপ্য।”
যে ব্যক্তি সকালবেলা উপরোক্ত দো‘আ পাঠ করলো
সে যেনো সেই দিনের শুকরিয়া আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি বিকালবেলা এ দো‘আ পাঠ করলো সে
যেনো রাতের শুকরিয়া আদায় করলো’’। (হাদীসটি সংকলন করেছেন,
আবূ দাউদ ৪/৩১৮, নং ৫০৭৫; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নং ৭; ইবনুস সুন্নী, নং
৪১; ইবন হিব্বান, (মাওয়ারিদ) নং ২৩৬১। আর শাইখ ইবন বায তাঁর তুহফাতুল আখইয়ার পৃ. ২৪
এ এর সনদকে হাসান বলেছেন)।
৬ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা
‘আ-ফিনী ফী সাম্‘ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী। লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আল্লা-হুম্মা
ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল-ফাক্বরি ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি, লা
ইলাহা ইল্লা আন্তা”। (৩ বার)।
“হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শরীরে।
হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শ্রবণশক্তিতে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন
আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয়
চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। আপনি ছাড়া আর
কোনো হক্ব ইলাহ নেই।” (আবূ দাউদ ৪/৩২৪, নং ৫০৯২; আহমাদ
৫/৪২, নং ২০৪৩০; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নং ২২; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৯; বুখারী,
আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭০১। আর শাইখ আল্লামা ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’
গ্রন্থের পৃ. ২৬ এ এর সনদকে হাসান বলেছেন)।
৭ নং দোয়াঃ-
“হাসবিয়াল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুয়া, ‘আলাইহি
তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম”। (৭ বার)।
“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো
হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব।”
হাদিসঃ-
আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সাতবার বলেঃ ‘‘আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া
কোনো ইলাহ নেই, আমি তাঁর উপর ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের রব’’ আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট
হবেন যা তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তার বিরুদ্ধে চাই সে সত্যিকারভাবে অথবা কৃত্রিমভাবে
বলুক না কেন।
যে ব্যক্তি দো‘আটি সকালবেলা সাতবার এবং বিকালবেলা
সাতবার বলবে তার দুনিয়া ও আখেরাতের সকল চিন্তাভাবনার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট হবেন। (ইবনুস সুন্নী, নং ৭১, মারফূ‘ সনদে; আবূ দাউদ ৪/৩২১; মাওকূফ
সনদে, নং ৫০৮১, কানজুল উম্মাল: ৫০১১)। আর শাইখ শু‘আইব ও আব্দুল কাদের আরনাঊত এর সনদকে
সহীহ বলেছেন। দেখুন, যাদুল মা‘আদ ২/৩৭৬)।
৮ নং দোয়াঃ-
“রদ্বীতু বিল্লা-হি রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি
দীনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যান”। (৩ বার)।
“আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবীরূপে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট।”
হাদিসঃ-
সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলে, 'আল্লাহ
তা'আলা আমার রব, ইসলাম আমার দীন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার
রাসূল হওয়ায় আমি সর্বান্তকরণে পরিতৃপ্ত আছি", তাকে পরিতৃপ্ত করা আল্লাহ্ তা'আলার
করণীয় হয়ে যায়।
যে ব্যক্তি এ দো‘আ সকাল ও বিকাল তিনবার করে
বলবে, আল্লাহর কাছে তার অধিকার হয়ে যায় তাকে কিয়ামাতের দিন সন্তুষ্ট করা। (আহমাদ ৪/৩৩৭; নং ১৮৯৬৭; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল-লাইলাহ,
নং ৪; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৮; আবু দাউদ, ৪/৩১৮, নং ১৫৩১; তিরমিযী ৫/৪৬৫, নং ৩৩৮৯। আর
ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’ এর ৩৯ পৃষ্ঠায় একে হাসান বলেছেন)।
৯ নং দোয়াঃ-
“ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু বিরাহমাতিকা
আস্তাগীসু, আসলিহ্ লী শা’নী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন”।
“হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের
অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার কামনা করি, আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন, আর
আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না।” (হাকেম
১/৫৪৫, তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, আর যাহাবী তা সমর্থন করেছেন। আরও দেখুন, সহীহ আত-তারগীব
ওয়াত-তারহীব ১/২৭৩)।
১০ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা সাল্লি ওয়াসাল্লিম ‘আলা নাবিয়্যিনা
মুহাম্মাদ”। (সকাল-বিকাল ১০ বার করে)।
“হে আল্লাহ! আপনি সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের
নবী মুহাম্মাদের উপর।”
(যে কেউ সকাল বেলা আমার উপর দশবার দরুদ পাঠ
করবে এবং বিকাল বেলা দশবার দরুদ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ দ্বারা সৌভাগ্যবান
হবে।’ (তাবরানী হাদীসটি দু’ সনদে সংকলন করেন, যার একটি
উত্তম। দেখুন, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ১০/১২০; সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব ১/২৭৩)।
১১ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আমসাইতু (সকালে বলতে হবে-আসবাহ্তু)
উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা ‘আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতিকা ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা, আন্নাকা
আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান
আব্দুকা ওয়া রাসূলুকা”। (৪ বার)।
“হে আল্লাহ! আমি বিকালে উপনীত হয়েছি। আপনাকে
আমি সাক্ষী রাখছি, আরও সাক্ষী রাখছি আপনার ‘আরশ বহনকারীদেরকে, আপনার ফেরেশতাগণকে ও
আপনার সকল সৃষ্টিকে, (এর উপর) যে নিশ্চয় আপনিই আল্লাহ, একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব
ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই; আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার
বান্দা ও রাসূল।”
যে ব্যক্তি সকালে অথবা বিকালে তা চারবার বলবে,
আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করবেন। যে ব্যক্তি সকালে অথবা বিকালে তা চারবার
বলবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করবেন। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৭১, বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ১২০১; নাসাঈ, ‘আমালুল ইয়াওমি
ওয়াল লাইলাহ, নং ৯; ইবনুস সুন্নী, নং ৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১২ নং দোয়াঃ-
“আমসাইনা ওয়া আমসাল মুলকু লিল্লাহি ওয়ালহাম্দু
লিল্লাহি, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল
হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর। রব্বি আস্আলুকা খাইরা মা ফী হা-যাল ইয়াউমি
ওয়া খাইরা মা বা‘দাহু, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররি মা ফী হা-যাল ইয়াউমি ওয়া শাররি মা
বা‘দাহু। রব্বি আঊযু বিকা মিনাল কাসালি ওয়া সূইল-কিবারি। রবিব আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযাবিন
ফিন্না-রি ওয়া আযাবিন্ ফিল ক্বাবরি”। (৩ বার)।
“আমরা বিকালে উপনীত হয়েছি, অনুরূপ যাবতীয় রাজত্বও
বিকালে উপনীত হয়েছে, আল্লাহ্র জন্য। সমুদয় প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া
কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি
সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হে রব্ব! এই দিনের মাঝে এবং এর পরে যা কিছু
কল্যাণ আছে আমি আপনার নিকট তা প্রার্থনা করি। আর এই দিনের মাঝে এবং এর পরে যা কিছু
অকল্যাণ আছে, তা থেকে আমি আপনার আশ্রয় চাই।
হে রব্ব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই অলসতা ও
খারাপ বার্ধক্য থেকে। হে রব্ব! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামে আযাব হওয়া থেকে
এবং কবরে আযাব হওয়া থেকে।” (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৮০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৫৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৭১২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৩ নং দোয়াঃ-
“আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি”। (দৈনিক
১০০ বার)।
“আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং
তাঁর নিকটই তাওবা করছি”।
(ক) আবু বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....আবূ
বুরদাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সহাবা আগার (রাযিঃ) হতে শুনেছি, তিনি ইবনু উমর (রাযিঃ) এর নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর
নিকট তওবা্ করো। কেননা আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদিন একশ’ বার তওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫২, ৬৭৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭০২, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর
কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৭, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৪ নং দোয়াঃ- (সায়্যিদুল ইসতিগফার)
“আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা
আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু।
আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী।
ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা”। (৩ বার)।
“হে আল্লাহ্! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া আর
কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার সাধ্য
মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের
অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি স্বীকার করছি,
আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া আর কেউ
গুনাহসমূহ মাফ করে না।”
হাদিসঃ-
শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু‘আ পড়া- ‘‘হে আল্লাহ!
তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার
সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার
কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নি‘য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার
কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’’
যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে
এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি
রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে
সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬,
৬৩২৩, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৫ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-
‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাতি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা
ফী দীনী ওয়াদুনইয়াইয়া, ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী ওয়া আ-মিন রাও‘আ-তি।
আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী
ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী”। (৩ বার)।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে
ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা
চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ
ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে
হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার
বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আশ্রয় চাই আমার নীচ
থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে”।
হাদিসঃ-
ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেনঃ
‘‘ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আমার দীন, আমার দুনিয়া, আমার পরিবার ও আমার সম্পদের স্বস্তি
ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমার লজ্জাস্থানকে গোপন রাখো, আমার ভয়কে শান্তিতে
পরিণত করো এবং আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে ও আমার উপরের দিক থেকে আমাকে হেফাজত
করো। আমি তোমার নিকট আমার নিচের দিক দিয়ে আমাকে ধ্বসিয়ে দেয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
করি্। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৭৪, নাসায়ী ৫৫২৯, ৫৫৩০, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
১৬ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা আ-লিমাল গাইবি ওয়াশ্শাহা-দাতি
ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, রব্বা কুল্লি শাই’ইন ওয়া মালীকাহু, আশহাদু আল-লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আ‘উযু বিকা মিন
শাররি নাফ্সী ওয়া মিন শাররিশ শাইত্বা-নি ওয়াশিরকিহী ওয়া আন আক্বতারিফা ‘আলা নাফ্সী
সূওআন আউ আজুররাহূ ইলা মুসলিম”। (৩ বার)।
“হে আল্লাহ! হে গায়েব ও উপস্থিতের জ্ঞানী,
হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, হে সব কিছুর রব্ব ও মালিক! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,
আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আমার আত্মার অনিষ্ট থেকে,
শয়তানের অনিষ্টতা থেকে ও তার শির্ক বা তার ফাঁদ থেকে, আমার নিজের উপর কোনো অনিষ্ট করা,
অথবা কোনো মুসলিমের দিকে তা টেনে নেওয়া থেকে।”
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
তুমি এ দু‘আ সকালে-সন্ধ্যায় ও ঘুমানোর সময় পড়বে।’’ (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৯২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫০৬৭, আহমাদ ৬৩, দারিমী ২৭৩১, ২৬৮৯, ইবনু হিব্বান ৯৬২, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ১২০২/৯১৭,
আল-কালিমুত তাইয়্যিব ২২, সহীহাহ ২৭৫৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৭ নং দোয়াঃ-
“বিসমিল্লা-হিল্লাযি লা-ইয়াদুররু মা”আ ইসমিহি
শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামা-ই ওয়া হুয়াস সামীউল আলীম”। (৩ বার)।
অর্থঃ আমি ঐ আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যার
নামে আরম্ভ করলে আসমান ও যমীনের কোনো বস্তুই কোনোরুপ ক্ষতি সাধন করতে পারে না। আর তিনি
সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
হাদিসঃ-
আবান ইবনু ‘উসমান হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
আমার পিতাকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে বান্দা প্রত্যেক সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়বে,
‘‘বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা- ইয়াযুররু মা‘আইস্মিহী
শায়উন ফিল আরযি ওয়ালা- ফিস্সামা-য়ি, ওয়া হুওয়াস্ সামী‘উল ‘আলিম’’
(অর্থাৎ- আল্লাহর নামে শুরু করছি, যে নামের
সাথে আসমান ও জমিনে কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সব শুনেন ও জানেন)- কোন
কিছু তাকে ক্ষতি করতে পারে না। বর্ণনাকারী বলেন, আবান পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
এজন্য যারা হাদীস শুনছিলেন তারা তাঁর দিকে তাকাচ্ছিল। আবান তখন বললেন, আমার দিকে কী
দেখছ? নিশ্চয়ই হাদীস যা আমি বর্ণনা করছি তাই, তবে যেদিন আমি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছি
সেদিন এ দু‘আ পড়িনি। এ কারণে আল্লাহ আমার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছিলেন তা কার্যকরী হয়েছে।
(তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ। কিন্তু আবূ দাঊদ-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, সে রাতে তাঁর
ওপর কোন আকস্মিক বিপদাপদ ঘটবে না যে পর্যন্ত না ভোর হয়, আর যে তা ভোরে বলবে তার ওপর
কোন আকস্মিক বিপদাপদ সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না সন্ধ্যা উপনীত হয়।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯১, তিরমিযী ৩৩৮৮, আবূ দাঊদ ৫০৮৮,
ইবনু মাজাহ ৩৮৬৯, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৯৫, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২৩, সহীহ আত্
তারগীব ৬৫৫, সহীহ আল জামি‘ ৫৭৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৮ নং দোয়া:-
“লা -ইলা-হা ইল্লাল্ল-হুল আযীমুল হালীম, লা-ইলা-হা
ইল্লাল্ল-হু রব্বুল আরশিল আযীম, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুস সামা ওয়া-তি ওয়া রব্বুল
আরদি ওয়া রব্বুল আরশিল কারীম।” (৩ বার)।
অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, যিনি
মহান, যিনি সহনশীল। আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ ব্যতীত
কোনো মাবুদ নেই। তিনি আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালক এবং মহান আরশের প্রতিপালক।
হাদিসঃ-
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও
বর্ণিত। তিনি বলেন, বিপদের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন,
‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ‘আযীমুল হালীম, লা-
ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুল ‘আর্শিল ‘আযীম; লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুস্ সামা-ওয়া-তি,
ওয়া রব্বুল আরযি রব্বুল ‘আর্শিল কারীম’’।
(অর্থাৎ- মহান ধৈর্যশীল আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে
কোন মা‘বূদ নেই। মহান ‘আরশের মালিক আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই। আল্লাহ
ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, যিনি সমগ্র আকাশম-লীর রব, মহান ‘আরশের রব।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪১৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৩৪৬, ৬৩৪৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩০, আহমাদ ২০১২,
মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৭৭২, সহীহ আল জামি‘ ৪৯৪০, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব
১১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৯ নং দোয়াঃ-
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন যা-ওয়া-লি
নি’মাতিকা ওয়া তাহাওঁবুলি আ-ফিয়াতিকা ওয়া ফুজা-আতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামী’ঈ সাখাতিক।”
(৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা
করছি তোমার নি’আমতের হ্রাসপ্রাপ্তি, তোমার শান্তির বিবর্তন, তোমার শাস্তির হঠাৎ আক্রমণ
এবং সমস্ত অসন্তোষ হতে।
হাদিসঃ-
উবাইদুল্লাহ
ইবনু আবদুল কারীম আবু যুর’আহ (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’আর মধ্যে একটি ছিল এই যে,
"আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন যাওয়া-লি নি'মাতিকা ওয়াতা হাওউলি আ-ফিয়াতিকা
ওয়া ফুজা-য়াতি নিকমাতিকা ওয়া জামী’ই সাখাতিকা" অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি
তোমার নিকট আশ্রয় চাই নি’আমাত দূর হয়ে যাওয়া হতে, তোমার দেয়া সুস্থতা পরিবর্তন
হয়ে যাওয়া থেকে, তোমার অকস্মাৎ শাস্তি আসা হতে এবং তোমার সকল প্রকার অসন্তুষ্টি থেকে"।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭৩৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬১, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৪৫, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব
ত্ববারানী ৩৫৮৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৪৬, শু‘আবূল ঈমান ৪২২৪, সহীহ আল জামি ১২৯১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৯৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
২০ নং দোয়াঃ-
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল
কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া আযাবিল ক্ববরি। আল্ল-হুম্মা আ-তি নাফসী
তাকওয়া-হা- ওয়া যাক্কিহা-আন্তা খইরু মান যাক্কা-হা আন্তা ওয়ালিয়্যুহা- ওয়া মাওলাহা-
আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন ইলমিন লা- ইয়ানফাউ ওয়া মিন ক্বলবিন লা-ইয়াখশা-উ ওয়া
মিন নাফসিন লা-তাশবা’উ ওয়া মিন দা’ ওয়াতিন লা-ইউসতাজা-বু লাহা।” (৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আশ্যয়
চাচ্ছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধ্যকতা ও ক্বরেরর আযাব হতে। হে আল্লাহ!
আমার আত্মাকে সংযম দান করুন, একে পবিত্র করুন, আপনি শ্রেষ্ঠ পবিত্রকারী, আপনি তার অভিভাবক
ও প্রভু। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এমন ইলম হতে যা উপকার করে
না। এমন অন্তর হতে যা ভয় করে না। এমন আত্মা হতে যা তৃপ্তি লাভ করে না এবং এমন দোয়া
হতে যা কবুল হয় না।
হাদিসঃ-
যায়দ ইবনু আরক্বম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল ‘আজযি
ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া ‘আযা-বিল কবরি, ‘আল্ল-হুম্মা আ-তি
নাফসী তাকওয়া-হা- ওয়াযাক্কিহা- আন্তা খয়রু মিন্ যাক্কা-হা- আন্তা ওয়ালিয়্যুহা- ওয়ামাও
লা- হা-, আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘ইল্মিন লা- ইয়ানফা‘উ ওয়ামিন্ কলবিন লা-
ইয়াখশা‘উ ওয়ামিন্ নাফসিন লা- তাশবা‘উ ওয়ামিন্ দা‘ওয়াতিন্ লা- ইউসতাজা-বু লাহা-’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা,
কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের ‘আযাব হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! তুমি আমার আত্মাকে
সংযমী করো ও একে পবিত্র করো। তুমিই শ্রেষ্ঠ পুতঃপবিত্রকারী, তুমি তার অভিভাবক ও রব।
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ঐ জ্ঞান লাভ হতে আশ্রয় চাই, যে জ্ঞান (আত্মার) কোন উপকারে
আসে না, ঐ অন্তর হতে মুক্তি চাই যে অন্তর তোমার ভয়ে ভীত হয় না। ঐ মন হতে আশ্রয় চাই
যে মন তৃপ্তি লাভ করে না এবং ঐ দু‘আ হতে, যে দু‘আ কবূল করা হয় না।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭২২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১২৪, সহীহাহ্ ৪০০৫, সহীহ আল জামি ১২৮৬, সহীহ আত্
তারগীব ১২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
২১ নং দোয়াঃ-
“আল্লা-হুম্মা
ইন্নী আ'উযুবিকা মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাক্বা-ই, ওয়া সূইল ক্বাযা-ই, ওয়া
শামা-তাতিল আ'দা-ই।“ (৩ বার)।
অর্থঃ আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি
অক্ষমকারী বিপদের কষ্ট হ'তে , দুভার্গ্যের
আক্রমন হতে , মন্দ ফায়সালা হ'তে এবং শত্রুর হাসি হ'তে।
হাদিসঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালা মুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের
অশুভ পরিণতি এবং দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাইলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪৭, ৬৬১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৭, নাসাঈ- ৫৪৯১, ৫৪৯২,
৭৩০৮, আদাবুল মুফরাদ ৬৬৯, সহীহ আল জামি ২৯৬৮, সহীহাহ্ ১৫৪১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯০১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
২২ নং দোয়াঃ-
“আল্লাহুম্মা
ইন্নি আউযুবিকা মিন ফিতনাতিন্নারি অআযাবিন্নারি অমিন শার্রিল গিনা ওয়াল ফাক্ব।“ (৩
বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের ফিতনা থেকে,
জাহান্নামের আযাব থেকে এবং ধনবত্তা ও দারিদ্রের মন্দ থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
হাদিসঃ-
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্যগুলো দিয়ে দু‘আ করতেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের পরীক্ষা,
আগুনের আযাব এবং প্রাচুর্য ও দারিদ্রের মধ্যে নিহিত অকল্যাণ হতে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’’
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৭৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)
২৩ নং দোয়াঃ-
“আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আ’ন হারামিক;
ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।” (৭ বার)।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালালের
সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচান। এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষি
হতে বাঁচান।’
হাদিসঃ-
আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, একটি চুক্তিবদ্ধ
গোলাম তার নিকটে এসে বলে, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে আমি অপরাগ হয়ে পড়েছি। আমাকে
আপনি সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিব না যা আমাকে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর সীর (সাবীর)
পর্বত পরিমাণ ঋণও থাকে তবে আল্লাহ তা'আলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি
বলেনঃ তুমি বল, “হে আল্লাহ! তোমার হালালের মাধ্যমে আমাকে তোমার হারাম হতে বিরত রাখ
বা দূরে রাখ এবং তোমার দয়ায় তুমি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া হতে আমাকে আত্মনির্ভরশীল
কর”। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৬৩, তা’লীকুর রাগীব
(২/৪০), আল-কালিমুত তাইয়্যিব ১৪৩/৯৯, মুসতাদরাকে হাকিম, হা/১৯৭৩)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
২৪ নং দোয়াঃ-
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল ফাক্বরি ওয়াল কিল্লাতি ওয়ায যিল্লাতি ওয়া আ’উযুবিকা মিন আন আযলিমা আও উযলিমা”। (৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট অভাব, স্বল্পতা
ও অপমান হতে আশ্রয় চাই, আরো আশ্রয় চাই অত্যাচার
করা ও অত্যাচার হওয়া থেকে।
হাদিসঃ-
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি দরিদ্রতা হতে, আপনার কম দয়া হতে এবং অসম্মানী
হতে। আমি আপনার কাছে আরো আশ্রয় চাইছি যুলুম করা অথবা অত্যাচারিত হওয়া হতে।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪৪, নাসায়ী ৫৪৭৫), আহমাদ (৩/৩০৫),
হাকিম (১/৫৪০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
২৫ নং দোয়াঃ-
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল
হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্
রিজাল’’। (৩ বার)।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয়
নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে; অপারগতা ও অলসতা থেকে; কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে; এবং ঋণের
ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (সহীহ বুখারি, হা/২৮৯৩/৬৩৬৯,
মিশকাত, হা/ ২৪৫৮, তিরমিযি, হা/৩৪৮৪, আবু দাউদ, হা/১৫৪১, আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৭২)।
হাদিসঃ-
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি
ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্
রিজা-ল’’ ।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা,
শোক-তাপ, অক্ষমতা-অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের জোর-জবরদস্তি হতে
আশ্রয় চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৮, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৯, ৬৭৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭০৬, নাসায়ী ৫৪৪৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৮৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৪১, আহমাদ
১০৫২, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১২৯, সহীহ আল জামি ১২৮৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯২৩,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
২৬ নং দোয়াঃ-
“আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু
সাহলান, ওআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা”। (৭ বার)।
অর্থঃ ইয়া আল্লাহ, কোনো বিষয় সহজ নয়। হ্যাঁ,
যাকে তুমি সহজ করে দাও, যখন তুমি চাও তখন তুমি মুশকিলকে সহজ করে দাও। (ইবনে হিব্বান: হাদিস নং-৯৭৪)।
প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরাঃ সকাল ও বিকেলে পঠিতব্য
অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়া বা আমলগুলো উল্লেখ করা হলো। উক্ত দোয়াগুলো যাদের মুখস্থ আছে তারা
ফজরের সালাত আদায়ের পর তথা সূর্য ওঠার পর থেকে
জুহরের পূর্ব পর্যন্ত এবং আসরের সালাতের পর থেকে মাগরিবের সালাতের পূর্ব পর্যন্ত পাঠ
করবেন। তবে সময় না পেলে ঈশার সালাতের পূর্বেও পাঠ করা যাবে। যাদের মুখস্ত নেই তারা
দেখে দেখে পাঠ করলেও চলবে। তবে যে বিষয়ে আমল শুরু করবেন তা কবুল হোক বা না হোক কখনই
আমল করা ছাড়বেন না। কারণ হয়তো আল্লাহ তায়ালা এর চেয়েও বড় কোনো প্রতিদান উক্ত আমলের
বিনিময়ে দিবেন।
এগুলো ছাড়াও প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর এবং সারা
দিনের আরো কিছু আমল আছে। এগুলোও অব্যাহত রাখতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার
তৌফিক দান করুন। আমিন।
অভাব-অনটন ও দুঃখ কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার দোয়া বা আমলসমূহ
(১) (ক) “আল্লাহুম্মা আকছির মালি ওয়া ওয়ালাদি ওয়া
বারিক লি ফি-মা আ’ত্বাইতানি“।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে ধন-সম্পদ দিন, সন্তান-সন্ততিতে
বরকত দিন এবং আমাকে যা দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।
(বিঃদ্রঃ দোয়াটি সিজদায়, তাশাহুদ বৈঠকে, ফরজ
সালাতে সালাম ফিরানোর পর অন্যান্য দোয়া পাঠ শেষে ১০ বার, এ ছাড়া সকাল ও বিকেলেও ১০
বার করে পাঠ করতে পারেন)।
হাদিসঃ
মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ)....উম্মু
সুলায়ম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনার খাদিম আনাসের জন্য
আল্লাহর কাছে দুআ করুন। তখন তিনি দুয়া করলেন, اللَّهُمَّ
أَكْثِرْ
مَالَهُ
وَوَلَدَهُ
وَبَارِكْ
لَهُ
فِيمَا
أَعْطَيْتَهُ
"হে আল্লাহ, তাকে ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততিতে বারাকাত দিন এবং আপনি তাকে যা দান
করেছেন তাতেও বারাকাত দিন।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬২৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৮০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৮২, ৬৩৩৪,
৬৩৪৪, ৬৩৭৮, ৬৩৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬১৪৮, ইসলামিক সেন্টার ৬১৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(২) আবু বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)....আবু মূসা
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কোন এক সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সাথে ছিলাম। তখন মানুষেরা উচ্চঃস্বরে তাকবীর পাঠ করতেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের জীবনের উপর সদয় হও। কেননা তোমরা তো
কোন বধির অথবা অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছে না। নিশ্চয়ই তোমরা ডাকছো সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী
সত্তাকে যিনি তোমাদের সাথেই আছেন। আবু মূসা (রাযিঃ) বলেন, আমি তার পিছে ছিলাম। তখন
আমি বলছিলাম, আল্লাহর সহযোগিতা ছাড়া কোন ভাল কাজের দিকে এগিয়ে যাওয়ার এবং মন্দ কর্ম
থেকে ফিরে আসার সামর্থ্য নেই। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে
আবদুল্লাহ ইবনু কায়স আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্ত ধনসমূহের মধ্যে কোন একটি গুপ্তধনের
কথা জানিয়ে দিব? আমি বললাম, অবশ্যই হে আল্লাহর রসূল! অতঃপর তিনি বললেন,
“লা-হাওলা
ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ'”
সহযোগিতা ছাড়া কারো (ভাল কর্মের দিকে) এগিয়ে
যাওয়া এবং (খারাপ কর্ম থেকে) ফিরে আসার সামর্থ্য নেই’। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৩৮৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৭০,
তিরমিযী ৩৩৭৪, ৩৪৬১, ইবনু মাজাহ ৩৮২৪, আহমাদ ১৯০২৬, ১৯০৭৮, ১৯০৮২, ১৯১০২, ১৯১০৮, ১৯১৫১,
১৯২৪৬, ১৯২৫৬, রিয়াজুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী- ৩৬/১৪৫১, রাওদুন নাদীর ১০৪১। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) উবাইদুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ).....আনাস (রাযিঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আ পাঠ করতেনঃ
"রব্বনা- আ-তিনা- ফিদ্দুনইয়া- হাসানাতাও ওয়াফিল আ-খিরতি হাসানাতাও ওয়াকিনা-
‘আযা-বান্ না-র"। অর্থাৎ- হে আমাদের রব! আমাদের পার্থিব জীবনে কল্যাণ দান করো,
আখিরাতে কল্যাণ দান করো। আর জাহান্নামের শাস্তি হতে আমাদের বাঁচাও। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯০,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) আবু বকর ইবনু আবু শাইবাহ ও আবু কুরায়ব (রহঃ)...আয়িশাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আসমূহ
পাঠের মাধ্যমে দুআ করতেন,
"আল্ল-হুম্মা ফাইন্নী আউযুবিকা মিন্ ফিতনাতিন
না-রি ওয়া ‘আযা-বিন্ না-রি ওয়া ফিতনাতিল কবরি ওয়া ‘আযা-বিল্ কবরি ওয়ামিন শাররি
ফিতনাতিল গিনা ওয়ামিন শার্রি ফিতনাতিল ফাক্রি ওয়া আউযুবিকা মিন্ শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ
দাজ্জা-ল, আল্ল-হুম্মাগসিল খতা-ইয়া-ইয়া বিমা-য়িস্ সালজি ওয়াল বারাদ, ওয়ানক্কি
কলবী মিনাল খতা-ইয়া- কামানাক্কাইতাস্ সাওবাল আবইয়াযা মিনাদ দানাস ওয়া বা-ইদ বাইনী
ওয়া বাইনা খতা- ইয়া-ইয়া কামা-বা-’আদতা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিব, আল্ল-হুম্মা
ফা-ইন্নী আউযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়াল হারামি ওয়াল মা’সামি ওয়াল মাগ্রাম।"
অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট জাহান্নামের
ফিতনাহ থেকে আশ্রয় চাই, জাহান্নামের শাস্তি হতে আশ্রয় চাই, কবরের ফিতনাহ, কবর শাস্তি
ও ধন-সম্পদের ফিতনাহ এবং অসচ্ছলতার ফিতনার খারাবী হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। আমি আপনার
নিকট মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার বিভ্রান্তির অপকারিতা থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ আমার
গুনাহসমূহ বরফ ও কুয়াশার স্নিগ্ধ-শীতল পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিন। আমার
অন্তর পবিত্র করে দিন যেভাবে আপনি সাদা কাপড় ময়লা হতে পরিষ্কার করে দেন। আমি ও আমার
গুনাহসমূহের মাঝে দূরত্ব করে দিন যেমন আপনি পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন।
হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অলসতা, বার্ধক্য, গুনাহ ও ধার-কৰ্জ হতে আশ্রয় চাই।"
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৫৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬২৪, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ).....আনাস ইবনু
মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলতেনঃ
"আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউয়ুবিকা মিনাল আজ্যি
ওয়াল কাসালি ওয়াল জুব্নি ওয়াল হারামি ওয়াল বুখলি ওয়া আউয়ুবিকা মিন আযা-বিল কবরি
ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহইয়া- ওয়াল মামা-ত"।
অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অক্ষমতা,
অলসতা, কাপুরুষতা, বার্ধক্য, বখিলতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আপনার নিকট আরও আশ্রয়
চাচ্ছি কবরের শাস্তি, জীবন ও মরণের ফিতনার খারাবী থেকে।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৬,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬২৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) আবু
বকর ইবনু নাফি আল আবদী (রহঃ).....আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আসমূহ পাঠ করতেনঃ
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল বুখ্লি
ওয়াল কাসালি ওয়া আরযালিল উমুরি ওয়া আযা-বিল কবরি ওয়া ফিতনাতিল মাহইয়া- ওয়াল মামা-ত”।
অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে
বখিলতা, অলসতা, নিকৃষ্ট জীবন-যাপন, কবরের শাস্তি এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ থেকে আশ্রয়
চাই।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬২৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৭) ইবরাহীম ইবনু দীনার (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
“আল্ল-হুম্মা আসলিহলী দীনিয়াল্লিয়ী হুওয়া
ইসমাতু আমরী ওয়া আস্লিহলী দুন্ইয়াল্লাতী ফীহা মা’আ-শী ওয়া আসলিহলী আ-খিরতিল্লাতী
ফীহা মাআ-দী ওয়াজ আলিল হায়া-তা যিয়া-দাতান্ লী ফী কুল্লি খইরি ওয়াজ আলিল মাওতা
রা-হাতান মিন্ কুল্লি শাররিন"
অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আপনি আমার দীন পরিশুদ্ধ
করে দিন, যে দীনই আমার নিরাপত্তা। আপনি শুদ্ধ করে দিন আমার দুনিয়াকে, যেথায় আমার
জীবনোপকরণ রয়েছে। আপনি সংশোধন করে দিন আমার আখিরাতকে, যেখানে আমাকে প্রত্যাবর্তন করতে
হবে। আপনি আমার আয়ুষ্কালকে বৃদ্ধি করে দিন প্রত্যেকটি ভালো কর্মের জন্য এবং আপনি আমার
মরণকে বিশ্রামাগার বানিয়ে দিন সব প্রকার খারাবী হতে।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২০,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৫৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৭০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু
বাশশার (রহঃ)....আবদুল্লাহ (রাযিঃ) এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
বর্ণিত। তিনি এ বলে দুআ করতেন,
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল হুদা ওয়াত তুকা
ওয়াল “আফা-ফা ওয়াল গিনা”
অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পথনির্দেশ,
আল্লাহভীতি, চারিত্রিক উৎকর্ষতা ও সচ্ছলতার জন্য দুআ করছি।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৫৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৭০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল
কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া আযাবিল ক্ববরি। আল্ল-হুম্মা আ-তি নাফসী
তাকওয়া-হা- ওয়া যাক্কিহা-আন্তা খইরু মান যাক্কা-হা আন্তা ওয়ালিয়্যুহা- ওয়া মাওলাহা-
আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন ইলমিন লা- ইয়ানফাউ ওয়া মিন ক্বলবিন লা-ইয়াখশা-উ ওয়া
মিন নাফসিন লা-তাশবা’উ ওয়া মিন দা’ ওয়াতিন লা-ইউসতাজা-বু লাহা।” (৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আশ্যয়
চাচ্ছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধ্যকতা ও ক্বরেরর আযাব হতে। হে আল্লাহ!
আমার আত্মাকে সংযম দান করুন, একে পবিত্র করুন, আপনি শ্রেষ্ঠ পবিত্রকারী, আপনি তার অভিভাবক
ও প্রভু। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এমন ইলম হতে যা উপকার করে
না। এমন অন্তর হতে যা ভয় করে না। এমন আত্মা হতে যা তৃপ্তি লাভ করে না এবং এমন দোয়া
হতে যা কবুল হয় না।
হাদিসঃ-
যায়দ ইবনু আরক্বম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল ‘আজযি
ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া ‘আযা-বিল কবরি, ‘আল্ল-হুম্মা আ-তি
নাফসী তাকওয়া-হা- ওয়াযাক্কিহা- আন্তা খয়রু মিন্ যাক্কা-হা- আন্তা ওয়ালিয়্যুহা- ওয়ামাও
লা- হা-, আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘ইল্মিন লা- ইয়ানফা‘উ ওয়ামিন্ কলবিন লা-
ইয়াখশা‘উ ওয়ামিন্ নাফসিন লা- তাশবা‘উ ওয়ামিন্ দা‘ওয়াতিন্ লা- ইউসতাজা-বু লাহা-’’
(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আমি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা,
কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের ‘আযাব হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! তুমি আমার আত্মাকে
সংযমী করো ও একে পবিত্র করো। তুমিই শ্রেষ্ঠ পুতঃপবিত্রকারী, তুমি তার অভিভাবক ও রব।
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ঐ জ্ঞান লাভ হতে আশ্রয় চাই, যে জ্ঞান (আত্মার) কোন উপকারে
আসে না, ঐ অন্তর হতে মুক্তি চাই যে অন্তর তোমার ভয়ে ভীত হয় না। ঐ মন হতে আশ্রয় চাই
যে মন তৃপ্তি লাভ করে না এবং ঐ দু‘আ হতে, যে দু‘আ কবূল করা হয় না।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭২২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১২৪, সহীহাহ্ ৪০০৫, সহীহ আল জামি ১২৮৬, সহীহ আত্
তারগীব ১২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল ফাক্বরি
ওয়াল কিল্লাতি ওয়ায যিল্লাতি ওয়া আ’উযুবিকা
মিন আন আযলিমা আও উযলিমা”। (৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট অভাব, স্বল্পতা
ও অপমান হতে আশ্রয় চাই, আরো আশ্রয় চাই অত্যাচার
করা ও অত্যাচার হওয়া থেকে।
হাদিসঃ-
আবূ
হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি দরিদ্রতা হতে, আপনার কম দয়া হতে এবং অসম্মানী
হতে। আমি আপনার কাছে আরো আশ্রয় চাইছি যুলুম করা অথবা অত্যাচারিত হওয়া হতে।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪৪, নাসায়ী ৫৪৭৫), আহমাদ (৩/৩০৫),
হাকিম (১/৫৪০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১)
আনাস (রাঃ) বলেন, নবি সা: বলতেন-
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি
ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্
রিজাল’’। (৩ বার)।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয়
নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে; অপারগতা ও অলসতা থেকে; কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে; এবং ঋণের
ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
হাদিসঃ-
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি
ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্
রিজা-ল’’ ।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা,
শোক-তাপ, অক্ষমতা-অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের জোর-জবরদস্তি হতে
আশ্রয় চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৮, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৯, ৬৭৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭০৬, নাসায়ী ৫৪৪৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৮৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৪১, আহমাদ
১০৫২, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১২৯, সহীহ আল জামি ১২৮৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯২৩,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২) “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ'উযুবিকা মিন জাহদিল
বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাক্বাই, ওয়া সূইল ক্বাযা-ই, ওয়া শামা-তাতিল আ'দা-ই।“ (৩ বার)।
অর্থঃ আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি
অক্ষমকারী বিপদের কষ্ট হ'তে , দুভার্গ্যের
আক্রমন হতে , মন্দ ফায়সালা হ'তে এবং শত্রুর হাসি হ'তে।
হাদিসঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালা মুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের
অশুভ পরিণতি এবং দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাইলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪৭, ৬৬১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৭, নাসাঈ- ৫৪৯১, ৫৪৯২,
৭৩০৮, আদাবুল মুফরাদ ৬৬৯, সহীহ আল জামি ২৯৬৮, সহীহাহ্ ১৫৪১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯০১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৩) “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন ফিতনাতিন্নারি
অআযাবিন্নারি অমিন শার্রিল গিনা ওয়াল ফাক্ব।“ (৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের ফিতনা থেকে,
জাহান্নামের আযাব থেকে এবং ধনবত্তা ও দারিদ্রের মন্দ থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
হাদিসঃ-
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাক্যগুলো দিয়ে দু‘আ করতেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের পরীক্ষা,
আগুনের আযাব এবং প্রাচুর্য ও দারিদ্রের মধ্যে নিহিত অকল্যাণ হতে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’’
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৪৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৭৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)
(১৪) “আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা
‘আ-ফিনী ফী সাম্‘ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী। লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আল্লা-হুম্মা
ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল-ফাক্বরি ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি, লা
ইলাহা ইল্লা আন্তা”। (৩ বার)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার
শরীরে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শ্রবণশক্তিতে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা
দিন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে
আশ্রয় চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। আপনি ছাড়া
আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই।” (আবূ দাউদ ৪/৩২৪, নং ৫০৯২; আহমাদ
৫/৪২, নং ২০৪৩০; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নং ২২; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৯; বুখারী,
আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭০১। আর শাইখ আল্লামা ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’
গ্রন্থের পৃ. ২৬ এ এর সনদকে হাসান বলেছেন)।
(১৫) আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ)
এ দোয়া পড়তেন-
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন যা-ওয়া-লি
নি’মাতিকা ওয়া তাহাওঁবুলি আ-ফিয়াতিকা ওয়া ফুজা-আতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামী’ঈ সাখাতিক।”
(৩ বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা
করছি তোমার নি’আমতের হ্রাসপ্রাপ্তি, তোমার শান্তির বিবর্তন, তোমার শাস্তির হঠাৎ আক্রমণ
এবং সমস্ত অসন্তোষ হতে।
হাদিসঃ-
উবাইদুল্লাহ
ইবনু আবদুল কারীম আবু যুর’আহ (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’আর মধ্যে একটি ছিল এই যে,
"আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন যাওয়া-লি নি'মাতিকা ওয়াতা হাওউলি আ-ফিয়াতিকা
ওয়া ফুজা-য়াতি নিকমাতিকা ওয়া জামী’ই সাখাতিকা" অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি
তোমার নিকট আশ্রয় চাই নি’আমাত দূর হয়ে যাওয়া হতে, তোমার দেয়া সুস্থতা পরিবর্তন
হয়ে যাওয়া থেকে, তোমার অকস্মাৎ শাস্তি আসা হতে এবং তোমার সকল প্রকার অসন্তুষ্টি থেকে"।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭৩৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬১, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৪৫, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব
ত্ববারানী ৩৫৮৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৪৬, শু‘আবূল ঈমান ৪২২৪, সহীহ আল জামি ১২৯১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৯৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৬) ‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন
ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা’’। (৩ বার)।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান,
কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই”।
হাদিসঃ
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করে বলতেন,
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন
ওয়া ‘আমলান মুতাকব্বালান ওয়া রিযকন ত্বইয়্যিবা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে উপকারী
জ্ঞান, কবূলযোগ্য ‘আমল ও হালাল রিযক চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৪৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৯২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২৬৫, আহমাদ ২৬৫২১, আদ্ দা‘ওয়াতুল
কাবীর ১১৯, শু‘আবূল ঈমান ১৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৭) আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দো‘আটি পাঠ করতেন,
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল জূ-’,
ফাইন্নাহু বি’ছায্যাজী’। অ আঊযু বিকা মিনাল খিয়ানাহ, ফাইন্নাহা বি’ছাতিল বিতা-নাহ।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ক্ষুধা থেকে
পানাহ চাচ্ছি, কারণ তা নিকৃষ্ট শয়ন-সাথী। আর আমি খেয়ানত থেকেও পানাহ চাচ্ছি, কারণ তা
নিকৃষ্ট সহচর। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ১৫৪৭, রিয়াযুস
স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন), ১৪৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৮৫, নাসায়ী ৫৪৬৮, ৫৪৬৯।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(১৮) (ক) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ
ইবনু নুমায়র (রহঃ)...মুসআব ইবনু সা’দ (রাযিঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জনৈক গ্রাম্য লোক এসে বলল, আমাকে
একটি কালাম শিক্ষা দিন, যা আমি নিয়মিত পাঠ করব। তিনি বললেন, তুমি বলো
"লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা-শারীকা
লাহু আল্ল-হু আকবার কাবীরা ওয়াল হামদু লিল্লা-হি কাসীরা সুবহানাল্লা-হি রব্বিল আ-লামীনা
লা-হাওলা ওয়ালা- কুত্ত্বওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হিল আযীযিল হাকীম"।
অর্থাৎ-
"আল্লাহ ভিন্ন কোন মা’বূদ নেই, তিনি অদ্বিতীয়, তার কোন অংশীদার নেই, আল্লাহ মহান,
সবচেয়ে মহান, আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা এবং আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পবিত্রতা
ঘোষণা করছি। পরাক্রমশালী বিজ্ঞানময় আল্লাহর সাহায্য ছাড়া ভাল কাজ করার এবং খারাপ
কাজ হতে বিরত থাকার সাধ্য কারো নেই।" সে বলল, এসব তো আমার রবের জন্য। আমার জন্যে
কি? তিনি বললেন, বলো,
‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী অরহামনী অহদিনী অরযুক্বনী।’
অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মাফ করুন, আমার
প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথ দেখিয়ে দিন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৬,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬০৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৫৬, রিয়াজুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী ৭/১৪২২,
আহমাদ ১৫৬৪, ১৬১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত
দোয়াটি দুই সিজদার মাঝখানে পড়তে হয়।
(খ) সাঈদ ইবনু আযহার আল ওয়াসিতী (রহঃ)....আবু
মালিক আল আশজাঈ এর পিতার সানাদে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি ইসলামে দীক্ষা
গ্রহণ করত তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রথমে সালাত আদায়ের শিক্ষা
দিতেন। তারপর তিনি তাকে এ কালিমাসমূহ পাঠ করার নির্দেশ দিতেন,
"আল্লা-হুম্মাগ ফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াহ্দিনী
ওয়া’আ-ফিনী ওয়ারযুকনী।"
অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করুন, আমার
প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথপ্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন এবং আমার জীবিকা
উপকরণ দান করুন।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৪৩,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬০৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৫৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত দোয়াটি দুই সিজদার মাঝখানে পড়তে হয়।
তাওবা ও ইস্তেগফারে রিজিক বৃদ্ধি পায়, অভাব-অনটন দূর হয়
(১) আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অন্যতম নবী ও রাসূল নূহ
আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন,
“আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও;
নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি
বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের
জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। (সূরা নূহ
৭১, আয়াত: ১০-১২)।
(২) “আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা
প্রার্থনা কর। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহ’লে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময়
পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশী দিবেন”। (সুরা হূদ ১১/৩)।
(৩) “আর হে আমার কওম! তোমাদের পালনকর্তার কাছে
তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তারই প্রতি মনোনিবেশ কর। তিনি আসমান থেকে তোমাদের
উপর বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, আর তোমরা অপরাধীদের
মত বিমুখ হয়ো না”। (সুরা হূদ ১১/৫২)।
(৪) ইবনু ‘আব্বাস রাযিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি নিয়মিত
ইসতিগফার পড়লে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ হতে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সকল দুশ্চিন্তা
হতে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক্ব দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫১৮, সুনান ইবনু মাজাহ৩৮১৯, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’
(৩/৩৫১), যইফাহ ৭০৬, যইফ আবু দাউদ ২৬৮, আত-তালীকুর রাগীব ২/২৬৮, যইফ আল-জামি ৫৮২৯)।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
তওবা ও ইস্তেগফারসমূহ
দোয়া-১:
সাওবান (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার
‘‘আস্তাগফিরুল্ল-হ’’ বলতেন, তারপর এ দু‘আ পড়তেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল
ইকর-ম’’
(অর্থাৎঃ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার।
তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১২২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯১, ইসলামী ফাউন্ডেশন, ১২১০, ইসলামীক সেন্টার ১২২২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া-২:
“আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি”। (দৈনিক
১০০ বার)।
(ক) আবু বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)....আবূ বুরদাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহাবা
আগার (রাযিঃ) হতে শুনেছি, তিনি ইবনু উমর (রাযিঃ) এর নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর নিকট
তওবা্ করো। কেননা আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদিন একশ’ বার তওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫২, ৬৭৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭০২, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর
কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৭, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া-৩:
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, একই মজলিসে বসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (এই ইস্তিগফারটি) পাঠ
করা অবস্থায় একশো বার পর্যন্ত গুনতাম,
‘রাব্বিগফির লী অতুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আন্তাত
তাউওয়াবুর রাহীম।’
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর,
আমার তওবা কবুল কর, নিশ্চয় তুমি অতিশয় তওবাহ কবূলকারী দয়াবান। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫১৬, তিরমিযী ৩৪৩৪, সুনান ইবনু
মাজাহ ৩৮১৪, সহীহাহ ৫৫৬, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ
১৮৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।]
দোয়া-৪:
ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এ দো‘আ
পড়বে,
“আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা
হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু অ আতূবু ইলাইহ্।”
অর্থাৎ আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা
করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা
করছি।
সে ব্যক্তির পাপরাশি মার্জনা করা হবে; যদিও
সে রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে (যাওয়ার পাপ করে) থাকে।’’ (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) আবূ দাউদ ১৫১৭, তিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-
তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
দোয়া-৫: (সায়্যিদুল ইসতিগফার)
“আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা
আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু।
আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী।
ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা”।
অর্থঃ “হে আল্লাহ্! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া
আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার
সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার
কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি
স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি
ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।”
হাদিসঃ-
শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু‘আ পড়া- ‘‘হে আল্লাহ!
তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার
সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার
কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নি‘য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার
কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’’
যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে
এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি
রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে
সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬,
৬৩২৩, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া-৬:
সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলার
নবী যুন-নূন ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে থাকাকালে যে দু'আ করেছিলেন তা হলঃ
“লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু
মিনাজ্ জালিমীন”
“তুমি ব্যতীত কোন মা'বূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র।
আমি নিশ্চয় যালিমদের দলভুক্ত"- (সূরা আম্বিয়া ৮৭)। যে কোন মুসলিম লোক কোন বিষয়ে
কখনো এ দু'আ করলে অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা তার দু'আ কবুল করেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫০৫, আল-কালিমুত তাইয়্যিব
(১২২/৭৯), তা’লীকুর রাগীব (২/২৭৫, ৩/৪৩), মিশকাত তাহকীক সানী (২২৯২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
বিপদ আপদ ও টেনশন বা দুশ্চিন্তা দূর করার দোয়া বা আমলসমূহ
দোয়া নং-১। “হাসবিয়াল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুয়া, ‘আলাইহি
তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম”। (সকাল বিকেল ৭ বার করে)।
“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো
হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব।”
হাদিসঃ-
আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সাতবার বলেঃ ‘‘আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া
কোনো ইলাহ নেই, আমি তাঁর উপর ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের রব’’ আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট
হবেন যা তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তার বিরুদ্ধে চাই সে সত্যিকারভাবে অথবা কৃত্রিমভাবে
বলুক না কেন।
যে ব্যক্তি দো‘আটি সকালবেলা সাতবার এবং বিকালবেলা
সাতবার বলবে তার দুনিয়া ও আখেরাতের সকল চিন্তাভাবনার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট হবেন। (ইবনুস সুন্নী, নং ৭১, মারফূ‘ সনদে; আবূ দাউদ ৪/৩২১; মাওকূফ
সনদে, নং ৫০৮১, কানজুল উম্মাল: ৫০১১)। আর শাইখ শু‘আইব ও আব্দুল কাদের আরনাঊত এর সনদকে
সহীহ বলেছেন। দেখুন, যাদুল মা‘আদ ২/৩৭৬)।
দোয়া নং-২। “বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআ’সমিহি
শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিসসামাই ওয়া হুয়াস সামিয়ুল আলিম”। (সকাল বিকেল ৩ বার করে)।
অর্থঃ আল্লাহর নামে (আমি এই দিন বা রাত শুরু
করছি)- যার নামের বরকতে আসমান ও যমীনের কেউ কোন ক্ষতি করতে সক্ষম নয়। তিনি সব শুনেন
ও জানেন।
হাদিসঃ
আবান ইবনু উসমান (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, এবং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবেঃ
“বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআ’সমিহি
শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিসসামাই ওয়া হুয়াস সামিয়ুল আলিম”।
‘‘আল্লাহর নামে যাঁর নামের বরকতে আসমান ও যমীনের
কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।’’ সকাল হওয়া পর্যন্ত
তার প্রতি কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার
উপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না।
আবান (রহঃ) পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলে যে লোকটি তার
থেকে হাদীস শুনেছিল, তার দিকে তাকাচ্ছিল। তখন আবান তাকে বললেন, তোমার কি হয়েছে? তুমি
আমার দিকে তাকাচ্ছো কেন? বিশ্বাস করো, আল্লাহর কসম! আমি উসমান (রাঃ)-এর প্রতি মিথ্যা
আরোপ করিনি আর উসমান (রাঃ)-ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যা আরোপ
করেননি। তবে যেদিন আমি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছে সেদিন আমি রাগের বশে তা বলতে ভুলে গিয়েছি।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
দোয়া নং-৩।
“লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমীন”।
অর্থ: আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আমি
আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমি পাপী।
(সূরা আল আম্বিয়া: ৮৭)।
ফজিলতঃ
(ক) এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, আমি নবী
ইউনুসের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছি। তাকে দু:খ থেকে মুক্তি দিয়েছি। অনুরূপভাবে যে মুমিনরা
এ দোয়া পড়বে আমি তাদেরও বিভিন্ন বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি দিবো। (সূরা আল আম্বিয়া: ৮৮)।
(খ) সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলার
নবী যুন-নূন ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে থাকাকালে যে দু'আ করেছিলেন তা হলঃ “তুমি ব্যতীত
কোন মা'বূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র। আমি নিশ্চয় যালিমদের দলভুক্ত"- (সূরা আম্বিয়া
৮৭)। যে কোন মুসলিম লোক কোন বিষয়ে কখনো এ দু'আ করলে অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা তার দু'আ
কবুল করেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫০৫, আল-কালিমুত
তাইয়্যিব ১২২/৭৯, তা’লীকুর রাগীব (২/২৭৫, ৩/৪৩), মিশকাত তাহকীক সানী ২২৯২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন,
আমার ভাই ইউনুসের দোয়াটি খুব সুন্দর। এর প্রথম অংশে আছে কালিমায়ে তায়্যিবা। মাঝের অংশে
আছে তাসবিহ। আর শেষের অংশে আছে অপরাধের স্বীকারোক্তি। যে কোনো চিন্তিত, দু:খিত, বিপদগ্রস্থ
ব্যক্তি প্রতি দিন এ দোয়া তিন বার পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ডাকে সাড়া দিবেন। (কানজুল উম্মাল: ৩৪২৮)।
দোয়া নং-৪। ইমাম আহমদ (রহ.) আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রা.)
থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো
বিপদ বা দুশ্চিন্তায় দোয়াটি পড়বে, আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা দূর করবেন এবং তার বিষাদকে
আনন্দে পরিণত করে দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ ৩৫২৮ সহিহ তারগীব:
১৮২২)।
দোয়াটি হলো-
“আল্লাহুম্মা ইন্নী আব্দুকা অবনু আব্দিকা অবনু
আমাতিকা, না-সিয়াতী বিয়য়াদিকা, মা-দ্বিন ফিইয়্যা হুকমুকা, আদলুন ফিইয়্যা ক্বাদ্বা-উকা,
আসআলুকা বিকুল্লিস্মিন হুয়া লাকা সাম্মাইতা বিহী নাফসাকা আউ আনযালতাহূ ফী কিতাবিকা,
আউ আল্লামতাহূ আহাদাম মিন খালক্বিকা, আও ইস্তা’সারতা বিহী ফী ইলমিল গাইবি ইন্দাক; আন
তাজআলাল ক্বুরআনা রাবীআ ক্বালবী অনূরা সাদরী অজিলাআ হুযনী অযাহাবা হাম্মী”। (সকাল বিকেল
৩ বার করে)।
অর্থঃ হে আল্লাহ, নিঃসন্দেহে আমি তোমার দাস,
তোমার দাসের পুত্র ও তোমার দাসীর পুত্র, আমার ললাটের কেশগুচ্ছ তোমার হাতে। তোমার বিচার
আমার জীবনে বহাল। তোমার মীমাংসা আমার ভাগ্যলিপিতে ন্যায়সঙ্গত। আমি তোমার নিকট তোমার
প্রত্যেক সেই নামের অসিলায় প্রার্থনা করছি- যে নাম তুমি নিজে নিয়েছ, অথবা তুমি তোমার
গ্রন্থে অবতীর্ণ করেছ, অথবা তোমার সৃষ্টির মধ্যে কাউকে তা শিখিয়েছ, অথবা তুমি তোমার
গায়বি ইলমে নিজের নিকট গোপন রেখেছ, তুমি কুরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত কর, আমার বক্ষের
জ্যোতি কর, আমার দুশ্চিন্তা দূর করার এবং আমার উদ্বেগ চলে যাওয়ার কারণ বানিয়ে দাও।
দোয়া নং-৫। “লা -ইলা-হা ইল্লাল্ল-হুল আযীমুল হালীম, লা-ইলা-হা
ইল্লাল্ল-হু রব্বুল আরশিল আযীম, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুস সামা ওয়া-তি ওয়া রব্বুল
আরদি ওয়া রব্বুল আরশিল কারীম।” (সকাল বিকেল
১০ বার করে)।
অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, যিনি
মহান, যিনি সহনশীল। আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ ব্যতীত
কোনো মাবুদ নেই। তিনি আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালক এবং মহান আরশের প্রতিপালক।
হাদিসঃ-
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও
বর্ণিত। তিনি বলেন, বিপদের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন,
‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ‘আযীমুল হালীম, লা-
ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুল ‘আর্শিল ‘আযীম; লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুস্ সামা-ওয়া-তি,
ওয়া রব্বুল আরযি রব্বুল ‘আর্শিল কারীম’’।
(অর্থাৎ- মহান ধৈর্যশীল আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে
কোন মা‘বূদ নেই। মহান ‘আরশের মালিক আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই। আল্লাহ
ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, যিনি সমগ্র আকাশম-লীর রব, মহান ‘আরশের রব।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪১৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৩৪৬, ৬৩৪৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩০, আহমাদ ২০১২,
মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৭৭২, সহীহ আল জামি‘ ৪৯৪০, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব
১১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া নং-৬। এই দোয়াটি একবার পাঠ করলে ৭০টি বিপদ দূর হয়!
হযরত আবু নাঈম ও ইবনে আবি শায়বা রহ. একটি আমলের
কথা বর্ণনা করেছেন। তাঁরা বলেন, যে ব্যক্তি নিম্নের দুয়া একবার পাঠ করবে- একশ’বার নয়,
মাত্র একবার- আল্লাহ তায়ালা তার সত্তরটি বিপদ দূর করে দিবেন। আর সর্বনিম্ন বিপদ হল
দারিদ্রতা। আর অন্যান্য বিপদগুলো এর চেয়ে অনেক বড় বড়।
দোয়াটি হলো:-
“লা হাউলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি ওয়ালা
মালজাআ ওয়ালা মানজাআ মিনাল্লাহি ইল্লাহ ইলাইহি”।
দোয়াটি নিয়মিত পাঠ করুন। সব রকম সমস্যা থেকে
নাজাত পাবেন, ইনশাআল্লাহ।
দুঃশ্চিন্তাগ্রস্তদের জন্য সান্ত্বনা: কানযুল
উম্মালে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ইয়াকিন ও দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই আয়াতটি পাঠ করবে, আল্লাহ
তায়ালা তার দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হৃদয়কে প্রশান্তি দান করবেন। لا
إِلَهَ
إِلا
أَنْتَ
سُبْحَانَكَ
إِنِّي
كُنْتُ
مِنَ
الظَّالِمِينَ
এখানে ইয়াকিন ও দৃঢ় বিশ্বাসের শর্তারোপ করা হয়েছে। কারো অন্তরে এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকলে
সে সুফল পাবে না।
আমলঃ বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় এই দোয়াটি পড়তে
হয়। এছাড়া দোয়াটি সকাল সন্ধ্যায় ১০ বার করে বা প্রতি সালাতে আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ ও
মাসুরার পর পড়তে পারেন।
দোয়া নং-৭। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে লোক একশ’বার এ দু‘আটি পড়বেঃ
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াহুদাহু লা শারীকা
লাহু লাহুল মুলকু ওয়া হুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর”।
অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই,
তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই; রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তাঁরই
জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।
তাহলে দশটি গোলাম আযাদ করার সমান সাওয়াব তার
হবে। তার জন্য একশটি সাওয়াব লেখা হবে এবং আর একশটি গুনাহ মিটিয়ে ফেলা হবে। ঐদিন সন্ধ্যা
পর্যন্ত সে শয়তান হতে মাহফুজ থাকবে। কোন লোক তার চেয়ে উত্তম সাওয়াবের কাজ করতে পারবে
না। তবে হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে ঐ দু‘আটির ‘আমল বেশি পরিমাণ করবে।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৯৩, ৬৪০৩, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯১, আহমাদ ৮০১৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৫১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
দোয়া নং-৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ)....নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কোন বান্দার ওপর মুসীবাত আসলে যদি
সে বলে,
"ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলায়হি
র-জাউন, আল্ল-হুম্মা' জুরনী ফী মুসীবাতী ওয়া আখলিফ লী খয়রাম মিনহা ইল্লা- আজারাহুল্ল-হু
ফী মুসীবাতিহী ওয়া আখলাফা লাহ্ খয়রাম মিনহা”। (সকাল বিকেল ৩/৭ বার করে)।
(অর্থাৎ-আমরা আল্লাহর জন্যে এবং আমরা তারই
কাছে ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমাকে এ মুসীবাতের বিনিময় দান কর এবং এর চেয়ে উত্তম বস্তু
দান কর। তবে আল্লাহ তাকে তার মুসীবাতের বিনিময় দান করবেন এবং তাকে এর চেয়ে উত্তম
বস্তু দান করবেন।)
উম্মু সালানাহ (রাযিঃ) বলেন, এরপর যখন আবূ
সালামাহ ইনতিকাল করলেন, আমি ঐরূপ দুআ করলাম যেরূপ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আদেশ করেছেন। অতঃপর মহান আল্লাহ আমাকে তার চেয়েও উত্তম নি'আমাত অর্থাৎ রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে স্বামীরূপে দান করলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০১২, ২০১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯১৮, ইসলামী
ফাউন্ডেশন ১৯৯৬, ইসলামীক সেন্টার ২০০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া নং-৯। দুশ্চিন্তা
ও ঋণ মুক্তির দোয়াঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল
হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্
রিজাল’’।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয়
নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে; অপারগতা ও অলসতা থেকে; কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে; এবং ঋণের
ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (সহীহ বুখারি, হা/২৮৯৩/৬৩৬৯,
মিশকাত, হা/ ২৪৫৮, তিরমিযি, হা/৩৪৮৪, আবু দাউদ, হা/১৫৪১, আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৭২)।
হাদিসঃ-
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি
ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্
রিজা-ল’’ ।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা,
শোক-তাপ, অক্ষমতা-অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের জোর-জবরদস্তি হতে
আশ্রয় চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৮, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৯, ৬৭৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৭০৬, নাসায়ী ৫৪৪৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৮৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৪১, আহমাদ
১০৫২, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১২৯, সহীহ আল জামি ১২৮৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯২৩,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া নং- ১০। ঋণ মুক্তির দোয়াঃ
“আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আ’ন হারামিক;
ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।” (সকাল বিকেল ৭ বার করে)।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালালের
সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচান। এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষি
হতে বাঁচান।’
হাদিসঃ-
আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, একটি চুক্তিবদ্ধ
গোলাম তার নিকটে এসে বলে, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে আমি অপরাগ হয়ে পড়েছি। আমাকে
আপনি সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিব না যা আমাকে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর সীর (সাবীর)
পর্বত পরিমাণ ঋণও থাকে তবে আল্লাহ তা'আলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি
বলেনঃ তুমি বল, “হে আল্লাহ! তোমার হালালের মাধ্যমে আমাকে তোমার হারাম হতে বিরত রাখ
বা দূরে রাখ এবং তোমার দয়ায় তুমি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া হতে আমাকে আত্মনির্ভরশীল
কর”। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৬৩, তা’লীকুর রাগীব
(২/৪০), আল-কালিমুত তাইয়্যিব ১৪৩/৯৯, মুসতাদরাকে হাকিম, হা/১৯৭৩)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
দোয়া নং-১১।
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ'উযুবিকা মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাক্বা-ই, ওয়া
সূইল ক্বাযা-ই, ওয়া শামা-তাতিল আ'দা-ই।“ (সকাল
বিকেল ৭/১০ বার করে)।
অর্থঃ আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি
অক্ষমকারী বিপদের কষ্ট হ'তে , দুভার্গ্যের
আক্রমন হতে , মন্দ ফায়সালা হ'তে এবং শত্রুর হাসি হ'তে।
হাদিসঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালা মুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের
অশুভ পরিণতি এবং দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাইলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪৭, ৬৬১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৭, নাসাঈ- ৫৪৯১, ৫৪৯২,
৭৩০৮, আদাবুল মুফরাদ ৬৬৯, সহীহ আল জামি ২৯৬৮, সহীহাহ্ ১৫৪১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯০১,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া নং-১২। ‘‘ইয়া- হাইয়্যু, ইয়া কইয়ূমু বিরহমতিকা
আস্তাগীস’’। (সকাল বিকেল ৭/১০ বার করে)।
হাদিসঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বিষয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লে বলতেন,
‘‘ইয়া- হাইয়্যু, ইয়া কইয়ূমু বিরহমতিকা আস্তাগীস’’
(অর্থাৎ-হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! তোমার
রহমতের সাথে আমি প্রার্থনা করছি)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৪৫৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫২৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১১৯, সহীহাহ্
৩১৮২, সহীহ আল জামি ৪৭৭৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
দোয়া নং-১৩।
“আল্লাহু আল্লাহ রব্বী লা উশরিকু বিহি শাইয়ান”। (সকাল বিকেল ৭ বার করে)।
হাদিসঃ
আসমা বিনতে ওমাইর রা. থেকে বর্ণিত, “নবীজি
সা. বলেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দেব না যা তুমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানির মধ্যে
পড়বে। সাহাবী বললেন, অবশ্যই শেখাবেন। নবীজি (সাঃ) বললেন, দোয়াটি হচ্ছে : ‘
“আল্লাহু আল্লাহ রব্বী লা উশরিকু বিহি শাইয়ান”।
অর্থ : আল্লাহই আল্লাহ আমার প্রতিপালক। আমি
তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করি না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১৫২৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৮২, নাসায়ী ‘আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ’ ৬৪৭, সহীহাহ ২৭৫৫,
আহমাদ (৬/৩৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া নং-১৪। “আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু
সাহলান, ওআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা”। (সকাল বিকেল ৭ বার করে)।
হাদিসঃ
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি (সাঃ) বলেন
:---
“আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু
সাহলান, ওআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা”।
অর্থ: ইয়া আল্লাহ, কোনো বিষয় সহজ নয়। হ্যাঁ,
যাকে তুমি সহজ করে দাও। যখন তুমি চাও তখন তুমি মুশকিলকে সহজ করে দাও। (ইবনে হিব্বান : ৯৭৪)।
দোয়া নং-১৫। আবু বাকরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সা.) এরশাদ করেন, বিপদ ও মুসিবতের সময়কার দোয়া হলোঃ
“আল্লাহুম্মা রহমাতাকা আরজু, ফালা তাকিলনি
ইলা নাফসি ত্বরফাতা আঈন, ওয়া আছলিহলি শানি কুল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লা আনতা”। (সকাল বিকেল
৭ বার করে)। (আবু দাউদ, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৭২১; মকবুল
দোয়া: ১৪৩)।
দোয়া নং-১৬। যেকোন দুঃখ, কষ্ট, বিপদ, দুশ্চিন্তায়
আল্লাহর উপরে পূর্ণ তাওয়াক্কুল প্রকাশের জন্য এই দো‘আটি পাঠ করা যায়।
“হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি‘মাল ওয়াকীল”। (সকাল
বিকেল ৭ বার করে)।
হাদিসঃ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। ‘হাসবুনাল্লাহু
ওয়া নি‘মাল ওয়াকীল’ কথাটি ইবরাহীম (আঃ) বলেছিলেন, যখন তিনি আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন।
আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যখন লোকেরা বলল, ‘‘নিশ্চয় তোমাদের
বিরুদ্ধে কাফিররা বিরাট সাজ-সরঞ্জামের সমাবেশ করেছে, সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর। এ কথা
তাদের ঈমানের তেজ বাড়িয়ে দিল এবং তারা বললঃ ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি‘মাল ওয়াকীল’ অর্থাৎঃ
আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কার্যনির্বাহক’’- (সূরাহ আলে ইমরান ৩/১৭৩)।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫৬৩, ৪৫৬৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৪২০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া নং-১৭। “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ"।
(প্রতি দিন ১০০ বার করে)।
দোয়াটির ফজিলতঃ
(ক) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ‘‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’’ বলতে
শুনে বললেনঃ হে আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস! আমি কি তোমাকে এমন এক বাক্যের সন্ধান দিবো না,
যা জান্নাতের ভান্ডারসমূহের অন্তর্ভুক্ত? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি
বলেনঃ তুমি বলো, ‘‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’’। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫৫,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৭৪, ২৪৬১, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ১৫২৬, আহমাদ ১৯০২৬, ১৯১০২, ১৯১৫১, ১৯২৪৬, ১৯২৫৬, রাওদুন নাদীর ১০৪১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৬৬১৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৭০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্তধনসমূহের
একটির সন্ধান দিবো না? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি বলেনঃ ‘‘লা হাওলা ওয়ালা
কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’’। (আহমাদ ২০৮২৯, ২০৮৪২, ২০৮৭৯,
রাওদুন নাদীর ১০৪১, আত-তালীকুর রাগীব ২/২৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(গ) আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার
এক সফরে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। যখন আমরা উঁচু স্থানে
আরোহণ করতাম তখন উচ্চস্বরে ‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ হে লোকেরা! তোমরা নিজেদের জানের উপর দয়া করো। কারণ তোমরা কোন বধির অথবা অনুপস্থিতকে
আহবান করছ না বরং তোমরা আহবান জানাচ্ছ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টাকে। কিছুক্ষণ পর তিনি
আমার কাছে এলেন, তখন আমি মনে মনে পড়ছিলামঃ ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’।
তখন তিনি বলেন, হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! তুমি পড়বে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা
বিল্লাহ’। কারণ এ দু‘আ হলো জান্নাতের রত্ন ভান্ডারগুলোর একটি। অথবা তিনি বললেনঃ আমি
কি তোমাকে এমন একটি কথার সন্ধান দেব না যে কথাটি জান্নাতের রত্ন ভান্ডার? তাত্থেকে
একটি রত্নভান্ডার হলো ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৮৪, ২৯৯২, আধুনিক প্রকাশনী
৫৯৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) কাইস ইবনু সা'দ ইবনু উবাদাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত
আছে, তার বাবা তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেবার জন্য তার কাছে অর্পণ
করেন। তিনি বলেন, আমি নামাযরত থাকা অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার
কাছ দিয়ে গমন করলেন। তিনি নিজের পা দিয়ে আমাকে আঘাত (ইশারা) করে বললেনঃ আমি তোমাকে
কি জান্নাতের দরজাগুলোর একটি দরজা সম্পর্কে জানাব না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ
“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ" (আল্লাহ ব্যতীত অনিষ্ট দূর করার এবং
কল্যাণ লাভের কোন শক্তি কারো নেই)। (সূনান আত তিরমিজী
৩৫৮১, সহীহাহ ১৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(ঙ) সাফওয়ান ইবনু সুলাইম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
কোন ফেরেশতাই “লা- হাওলা ওয়ালা কু-ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ" পাঠ না করে উর্ধ্বাকাশের
দিকে গমন করেন না। (সূনান আত তিরমিজী ৩৫৮২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ।
(চ) ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ)....উমার ইবনুল খাত্তাব
(রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
মুওয়াযযিন যখন “আল্লাহু আকবার, আল্লা-হু আকবার" বলে তখন তোমাদের কোন ব্যক্তি
আন্তরিকতার সাথে তার জবাবে বলেঃ "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার"। যখন মুওয়াযযিন
বলে "আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ" এর জবাবে সেও বলেঃ "আশহাদু আল
লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ"। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান
রসূলুল্ল-হ" এর জবাবে সে বলেঃ "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্ল-হ”। অতঃপর
মুওয়াযযিন বলেঃ "হাইয়্যা আলাস সলা-হ" এর জবাবে সে বলেঃ “লা-হাওলা ওয়ালা-
কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ"। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ "হাইয়্যা 'আলাল লাফা-হ"
এর জবাবে সে বলেঃ “লা- হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ”। অতঃপর মুওয়াৰ্যযিন
বলেঃ "আল্লা-হু আকবার, আল্লাহু আকবার" এর জবাবে সে বলেঃ "আল্লাহু আকবার,
আল্লাহু আকবার"। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ" এর জবাবে
সে বলেঃ “লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ"। আযানের এ জবাব দেয়ার কারণে সে বেহেশতে যাবে।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ৭৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৩৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৩৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
গুণাহ মাফ হওয়ার আমলসমূহ-১
(১) পরিপূর্ণভাবে ওযু করাঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করবে এবং উত্তমভাবে
উযূ করবে, তারপর জুমু‘আর সালাতে যাবে। চুপচাপ খুত্ববাহ্ (খুতবা) শুনবে। তাহলে তার এ
জুমু‘আহ্ হতে ওই জুমু‘আহ্ পর্যন্ত সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে, অধিকন্তু আরো তিন দিনের।
আর যে ব্যক্তি খুত্ববার সময় ধূলা বালি নাড়ল সে অর্থহীন কাজ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯০, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১০৫০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫০২৭, আহমাদ ৯৪৮৪, ইবনু
খুযায়মাহ্ ১৭৫৬, ১৮১৮, ইবনু হিব্বান ২৭৭৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৪৯, শু‘আবুল
ঈমান ২৭২৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৬১৭৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) ওযু-পরবর্তী দুই রাকা‘আত সালাতঃ
আবূ তাহির, আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ
ইবনু আমর ইবনু সারহ ও হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া আত-তুজীবী (রহঃ)....উসমান ইবনু আফফান
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ওযুর পানি চাইলেন। এরপর তিনি ওযু করতে আরম্ভ করলেন।
(বর্ণনাকারী বলেন), তিনি উসমান (রাযিঃ) তিনবার তার হাতের কজি পর্যন্ত ধুলেন, এরপর কুলি
করলেন এবং নাক ঝাড়লেন। এরপর তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুলেন এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার
ধুলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরূপভাবে ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন। এরপর তার ডান
পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন- অতঃপর তদ্রুপভাবে বাম পা ধুলেন তারপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার এ ওয়ূর করার ন্যায় ওযু করতে দেখেছি এবং ওযু
শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযুর ন্যায়
ওযু করবে এবং একান্ত মনোযোগের সাথে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পিছনের
সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
ইবনু শিহাব বলেন, আমাদের ’আলিমগণ বলতেন যে,
সালাতের জন্য কারোর এ নিয়মের ওযুই হল পরিপূর্ণ ওযু । (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৪৩৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৩) রুকু থেকে দাঁড়িয়ে দু‘আ পাঠঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ই।মাম যখন সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে,
তোমরা তখন রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ বল। কেননা যার কথা ফিরিশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে
তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৬৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৯৬, ৩২২৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৮৪৮, আহমাদ ৯৯৩০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৪) সূরা ফাতিহা শেষে 'আমীন' বলাঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘আমীন’ বলেন, তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলো।
কেননা, যার ‘আমীন’ (বলা) ও মালাইকাহর ‘আমীন’ (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মা‘ফ
করে দেয়া হয়। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ও ‘আমীন’ বলতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৮০,
৬৪০২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১০, আহমাদ ৮২৪৭, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) খাবার শেষে দু‘আ পাঠ করাঃ
সাহল ইবনে মুআয ইবনে আনাস আল-জুহানী (রাঃ)
থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি
আহার করে সে যেন বলে,
“আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত’আমানী হাযা ওয়া
রাযাকানীহি মিনগাইরি হাওলিন মিন্নী ওয়ালা কুওয়াতিন’’
(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য যিনি আমাকে
আমার শক্তি ও জোর ব্যতীত আহার করিয়েছেন ও রিযিক দান করেছেন), তাহলে তার পূর্বেকার গুনাহ
মাফ করে দেয়া হবে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৫৮,
সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৮৫, ইরওয়া ১৯৮৯, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১০০, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব
১৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৬) পোশাক পরিধানের দু‘আ পাঠ করাঃ
সাহল
ইবনু মু’আয ইবনু আনাস (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি খাওয়ার পরে এ দু’আ পাঠ করবে তার আগে পরের সকল গুনাহ
ক্ষমা করা হবে।
“আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত’আমানী হাযা ওয়া
রাযাকানীহি মিনগাইরি হাওলিন মিন্নী ওয়ালা কুওয়াতিন’’
অর্থঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে
এ খাদ্য খাওয়ালেন এবং আমার পক্ষ থেকে কোনো কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই রিযিক দান
করলেন।’’
তিনি আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি কোনো কাপড় পরার
সময় এ দু’আ পাঠ করবে তার আগে পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবেঃ
“আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী কাসা-নী হাযা- ওয়া
রযাক্বানীহি মিন গইরি হাওলিম মিন্নী ওয়া লা- কুওওয়াতিন”
অর্থঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার
কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই আমাকে এ কাপড়ের ব্যবস্থা করে পরালেন।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০২৩)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(৭) রমাযানের সিয়াম পালন করাঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সওম
পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব
লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ
মাফ করে দেয়া হয়। সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহ.) যুহরী (রহ.) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪০২৩, ৩৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৮৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(৮) রমাযানে ক্বিয়াম তথা তারাবীর
সালাত আদায় করাঃ
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)....আবূ হুরায়রাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। যে ব্যক্তি রমযান মাসে ঈমানের সাথে ও একান্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির
নিমিত্তে তারাবীহ পড়ে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৬৪, ১৬৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৭৫৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৪৯, ইসলামীক সেন্টার ১৬৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(৯) লাইলাতুল ক্বদরে ইবাদত করাঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সওম
পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব
লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ
মাফ করে দেয়া হয়। সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহ.) যুহরী (রহ.) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪০২৩, ৩৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৮৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(১০) হজ্ব সম্পাদন করাঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন লোক যদি হজ্জ করে এবং তাতে
কোন রকম অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ না করে তাহলে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া
হয়। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৮১১, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫২১, ১৮১৯, ১৮২০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৪২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪২৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) আযানের দু‘আ পাঠ করাঃ
সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের
আযান শুনে এই দু‘আ পড়বে,
‘‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ
লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়ারসূলুহূ, রযীতু বিল্লা-হি
রববাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন রসূলান ওয়াবিল ইসলা-মি দীনা’’
(অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া
প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল, আমি আল্লাহকে রব, দীন হিসেবে
ইসলাম, রসূল হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানি ও মানি) এর উপর
আমি সন্তুষ্ট, তাহলে তার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬১, মুসলিম ৩৮৬, আবূ দাঊদ ৫২৫, নাসায়ী ৬৭৯, তিরমিযী ২১০, ইবনু মাজাহ্
৭২১, আহমাদ ১৫৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৪২২। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১২) ইস্তিগফার পাঠ করাঃ
ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এ দো‘আ
পড়বে,
‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা
হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু অ আতূবু ইলাইহ্।’
অর্থাৎ আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা
করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা
করছি।
সে ব্যক্তির পাপরাশি মার্জনা করা হবে; যদিও
সে রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে (যাওয়ার পাপ করে) থাকে।’’ (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) আবূ দাউদ ১৫১৭, তিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-
তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১৩) ফরয-সালাত পরবর্তী তাসবীহ,
তাহমীদ ওতাকবীর পাঠ করাঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে লোক প্রত্যেক সালাতের শেষে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’
তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার এবং ‘আল্ল-হু আকবার’ তেত্রিশবার পড়বে, যার
মোট সংখ্যা হবে নিরানব্বই বার, একশত পূর্ণ করার জন্যে একবার ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু
ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন
ক্বদীর’’ (অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই।
সমগ্র রাজত্ব একমাত্র তাঁরই ও সকল প্রকারের প্রশংসা তাঁরই জন্য এবং তিনি সকল বস্তুর
উপর ক্ষমতাবান।) পাঠ করবে, তাহলে তার সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদি তা সাগরের ফেনারাশির
সমানও হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬৭, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১২৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৫৯৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২২৮, ইসলামীক সেন্টার ১২৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সেই সাথে জাহান্নাম থেকেও মুক্তি পেয়ে যাবেন
কেননা দিনে ৩৬০ বার এই তাসবিহগুলো পড়লেই জাহান্নাম থেকে মুক্ত রাখা হয় আর এভাবে ৫ ওয়াক্তে
৫০০ বার পড়া হচ্ছে।
মূল হাদিসঃ
হাসান
ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ)....আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক আদম সন্তানকেই ৩৬০টি অস্থিসন্ধি বিশিষ্ট
করে সৃষ্টি করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি ঐ সংখ্যা পরিমাণ আল্লা-হু আকবার বলবে, আলহামদু
লিল্লাহ’ বলবে, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলবে, সুবহা-নাল্ল-হ’ বলবে, আসতাগফিরুল্ল-হ’
বলবে, মানুষের চলার পথ থেকে একটি পাথর বা একটি কাটা বা একটি হাড় সরাবে, সৎ কাজের আদেশ
দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে, সে কিয়ামতের দিন এমনভাবে চলাফেরা করবে যে, সে নিজেকে
৩৬০ ( অস্থিসন্ধি) সংখ্যা পরিমাণ জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে অর্থাৎ বেঁচে থাকবে। আবূ
তওবা তার বর্ণনায় এ কথাও উল্লেখ করেছেন যে, সে এ অবস্থায় সন্ধ্যা করবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০০৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২১৯৯, ইসলামীক সেন্টার ২২০১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৪) প্রতিদিন ১০০ বার ‘সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করাঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক প্রতিদিন একশ’বার সুবাহানাল্লাহি ওয়া
বিহামদিহ বলবে তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯১, আহমাদ ৮০১৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-
৫৮৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৫) ‘লা-
ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা- হাওলা ওয়া লা- কুওওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ’
পাঠ করাঃ
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পৃথিবীর বক্ষে যে লোকই
বলে,
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, ওয়াল্লাহু আকবার,
ওয়া লা- হাওলা ওয়া লা- কুওওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ”
“আল্লাহু তা’আলা ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই, আল্লাহ
সুমহান, খারাপকে রোধ করা এবং কল্যাণকে লাভ করার শক্তি আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কারো
নেই", তার অপরাধগুলো মাফ করা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির ন্যায় (বেশি) হয়।
(সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৬০, তা’লীকুর রাগীব ২/২৪৯)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(১৬) বিছানায় দু‘আ পাঠ করাঃ
রাসূল (সা) বলেছেন, "যে-ব্যক্তি বিছানায়,
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ, ওয়াহ্দাহু লা- শারীকা
লাহ, লাহূল মুলকু ওয়া লাহূল হামদু , ওয়া হূওয়া ‘আলা কুল্লি শায়্য়িন ক্বদীর, লা- হাওলা
ওয়া লা- কুওওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ, সুবহা-নাল্লা-হ, ওয়াল হামদুলিল্লা-হ, ওয়া লা- ইলা-হা
ইল্লাল লাহূ, ওয়াল্লাহু আকবার”
পাঠ করে, তাঁর সমস্ত গুনাহ মাফ করা দেওয়া হয়।
যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার চেয়েও বেশি হয়।" (ইবনু
হিব্বান ৫৫২৮)। হাদিসের মান সহিহ।
(১৮) পরস্পর সাক্ষাতে সালাম দিয়ে মুসাফাহা করাঃ
আল-বারাআ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’ জন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে
মুসাফাহা করলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বেই তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১৯) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করাঃ
(ক) আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক শীতের
সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন, আর তখন গাছের পাতা ঝরে পড়ছিল। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি গাছের দু’টি ডাল ধরে নাড়া দিলেন। বর্ণনাকারী
বলেন, তাতে গাছের পাতা ঝরতে লাগলো। আবূ যার (রাঃ) বলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) আমাকে ডাকলেন, হে আবূ যার! উত্তরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি উপস্থিত।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কোন মুসলিম বান্দা যদি
আল্লাহর সন্তুষ্টির বিধানের জন্য খালিস মনে সালাত আদায় করে, তার জীবন থেকে তার গুনাহসমূহ
এভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেভাবে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭৬, আহমাদ ২১০৪৬, সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) যায়দ বিন খালিদ আল জুহানী (রাঃ)হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দু’ রাক্’আত
সালাত আদায় করেছে, আর এতে ভুল করেনি, আল্লাহ তার অতীত জীবনের সব গুনাহ (সগীরাহ্) ক্ষমা
করে দিবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭৭, আহমাদ ২১১৮৩,
আবূ দাঊদ ৯০৫, সহীহ আত্ তারগীব ২২৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(২০) আরাফার দিন ও আশূরার ছিয়াম পালন করাঃ
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আল্লাহর নিকট আরাফাত দিবসের
রোযার এই সওয়াব আশা করি যে, তিনি তাঁর বিনিময়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুনাহ মাফ
করে দিবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৭৩০, সুনান তিরমিযী ৭৪৯,
আহমাদ ২২০২৪, ইরওয়াহ ৯৫২, আবী দাউদ ২০৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আশূরার ছিয়াম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আশূরা বা ১০ই মুহাররমের ছিয়াম আমি
আশা করি আল্লাহর নিকটে বান্দার বিগত এক বছরের (ছগীরা) গোনাহের কাফফারা হিসাবে গন্য
হবে’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৪৪, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ২৬৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৬২, সুনান আবূ দাঊদ ২৪২৫, সুনান আততিরমিযী
৭৫২, সুনান ইবনু মাজাহ ১৭৩৮, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২০৮৭, শু‘আবূল ঈমান ৩৮৮৩, সহীহ ইবনু
হিব্বান ৩৬৩২, ইরওয়া ৯২৫, সহীহ আত্ তারগীব ১০১৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৮৩৫)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(২১) খুশূ-খুযূ বা বিনয় ও একাগ্রতার সাথে ছালাত আদায় করাঃ
’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যা আল্লাহ
তা’আলা (বান্দার জন্য) ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি এ সালাতের জন্য ভালোভাবে উযূ করবে, সঠিক
সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকূ’ ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা
রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা নেই।
ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭০, আহমাদ ২২৭০৪, সুনান আবূ দাঊদ
৪২৫, মালিক ১৪, সুনান আননাসায়ী ৪৬১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(২২) জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করাঃ
ওছমান ইবনু আফফান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি উত্তম রূপে ওযূ করে ফরয ছালাতের
জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে ইমামের সাথে ছালাত আদায় করে তার গোনাহ সমূহ ক্ষমা করা হয়’।
(ইবনু খুযায়মাহ হা/১৪৮৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩০০, ৪০৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৩) ছালাতে সশব্দে আমীন বলাঃ
(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ’আমীন’ বলবে, তোমরাও
’আমীন’ বলবে। কারণ যে ব্যক্তির ’আমীন’ মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) আমীনের সাথে মিলে
যায়, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহগুলো মাফ করে দেন।
আর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন ইমাম বলে, “গয়রিল মাগযূবি ’আলায়হিম ওয়ালায্ যোয়াল্লীন’’, তখন
তোমরা ’আমীন’ বলবে। কারণ যার ’আমীন’ শব্দ মালায়িকাহ্’র ’আমীন’ শব্দের সাথে মিলে যায়
তার আগের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। এ শব্দগুলো সহীহুল বুখারীর।
সহীহ মুসলিমের হাদীসের শব্দগুলোও এর মতই। আর
সহীহুল বুখারীর অন্য একটি বর্ণনার শব্দ হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যখন কুরআন তিলাওয়াতকারী, অর্থাৎ- ইমাম বা অন্য কেউ ’আমীন’ বলবে, তোমরাও সাথে সাথে
’আমীন’ বলো। আর যে ব্যক্তির ’আমীন’ শব্দ মালায়িকাহ্’র আমীন শব্দের সাথে মিলে যাবে,
তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৮২৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৮০, ৬৪০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪১০, সুনান আবূ দাঊদ
৯৩৬, সুনান আননাসায়ী ৯৩৮, সুনান আততিরমিযী ২৫০, ইরওয়া ৩৪৪, সহীহ আল জামি‘ ৩৯৫, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ (সালাতে) ‘আমীন’ বলে,
আর আসমানে মালাইকাহ্ ‘আমীন’ বলেন এবং উভয়ের ‘আমীন’ একই সময় হলে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত
পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৭৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(২৪) বেশী বেশী সিজদা করাঃ
মাদান ইবনু আবূ তালহা আল-ইয়ামূরী (রহঃ) বলেন,
আমি সাওবান (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করে তাকে বললাম, আপনি আমার নিকট একটি হাদীস বর্ণনা
করুন, আশা করি তার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। রাবী বলেন, তিনি নীরব থাকলেন।
আমি বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করলাম, এবারও তিনি নীরব থাকলেন। এভাবে তিনবার নীরব থাকলেন।
অবশেষে তিনি আমাকে বলেন, তুমি অবশ্যই আল্লাহ্র জন্য সিজদা করো। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ যে কোন বান্দা আল্লাহ্র জন্য একটি
সিজদা করলেই আল্লাহ এর বিনিময়ে তার একধাপ মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার একটি গুনাহ ক্ষমা
করে দেন। মাদান (রহঃ) বলেন, অতঃপর আমি আবূ দারদা -এর সঙ্গে সাক্ষাত করে তাকে এ সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও একই কথা বলেন। (সুনান ইবনু মাজাহ
১৪২৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৮০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৪৮৮, সুনান আততিরমিযী ৩৮৮, ১১৩৯; আহমাদ ২১৮৬৫, ১১৯০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(২৫) জুম‘আর দিন মনোযোগ সহকারে খুৎবা শ্রবণ করা ও ছালাত আদায় করাঃ
সালমান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন গোসল করবে, যতটুকু
সম্ভব পবিত্রতা অর্জন করবে, তারপর নিজের তেল হতে তার শরীরে কিছু তেল মাখাবে, অথবা ঘরে
সুগন্ধি থাকলে কিছু সুগন্ধি লাগাবে। তারপর মসজিদের দিকে রওনা হবে। দু’ব্যক্তির মধ্যে
ফাঁক করবে না। যতটুকু সম্ভব সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) (নফল) আদায় করবে। চুপচাপ বসে
ইমামের খুতবাহ্ শুনবে। নিশ্চয় তার জুমু’আহ্ ও আগের জুমু’আর মাঝখানের সব (সগীরাহ্) গুনাহ
মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮১, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮৩, ৯১০, শারহুস
সুন্নাত ১০৫৮, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৯, সহীহ আল জামি‘ ৭৭৩৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩২ ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৬) অসচ্ছল ও অভাবীকে
অবকাশ দেয়াঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যবসায়ী লোকদের ঋণ দিত। কোন অভাবগ্রস্তকে
দেখলে সে তার কর্মচারীদের বলত, তাকে ক্ষমা করে দাও, হয়তো আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ক্ষমা
করে দিবেন। এর ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৭৮, ৩৪৮০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৮৯০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৬২, আহমাদ ৭৫৮২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯৩৩ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৪৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
হুযাইফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক ব্যক্তির
রূহের সাথে ফেরেশতা সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কোন নেক কাজ করেছ? লোকটি উত্তর
দিল, আমি আমার কর্মচারীদের আদেশ করতাম যে, তারা যেন সচ্ছল ব্যক্তিকে অবকাশ দেয় এবং
তার উপর পীড়াপীড়ি না করে। রাবী বলেন, তিনি বলেছেন, ফেরেশতারাও তাঁকে ক্ষমা করে দেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯৩২)।
আবূ মালিক (রহ.) রিব্ঈ ইবনু হিরাশ (রহ.) সূত্রে
বর্ণনা করেন, আমি সচ্ছল ব্যক্তির জন্য সহজ করতাম এবং অভাবগ্রস্তকে অবকাশ দিতাম। শু‘বাহ্
(রহ.) আবদুল মালিক (রহ.) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেন। আবূ আওয়ানাহ (রহ.) আবদুল মালিক (রহ.)
সূত্রে বর্ণনা করেন, আমি সচ্ছলকে অবকাশ দিতাম এবং অভাবগ্রস্তকে মাফ করে দিতাম এবং নু‘আইম
ইবনু আবূ হিন্দ (রহ.) রিব্ঈ (রহ.) সূত্রে বলেন, আমি সচ্ছল ব্যক্তি হতে গ্রহণ করতাম
এবং অভাবগ্রস্তকে ক্ষমা করে দিতাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২০৭৭, ২৩৯১, ৩৪৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৮৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৫৬০, আহমাদ ২৩৪৪৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ শেষাংশ নেই, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৪৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৭) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু
সরিয়ে ফেলাঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় কাঁটাদার
গাছের একটি ডাল রাস্তায় পেল, তখন সেটাকে রাস্তা হতে অপসারণ করল, আল্লাহ তার এ কাজকে
কবূল করলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২৪৭২, ৬৫২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩১০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(২৮) আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির প্রতি সদয় হওয়াঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা
লাগল। সে কূপে নেমে পানি পান করল। এরপর সে বের হয়ে দেখতে পেল যে, একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে
এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল, কুকুরটারও আমার মতো পিপাসা লেগেছে। সে কূপের
মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে উপরে উঠে এসে কুকুরটিকে
পানি পান করাল। আল্লাহ তা‘আলা তার আমল কবূল করলেন এবং আল্লাহ তার গোনাহ মাফ করে দেন।
সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলেও কি আমাদের সাওয়াব হবে?
তিনি বললেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করাতেই পুণ্য রয়েছে। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩৬৩, ১৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৭৫২, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২২৪৪, আহমাদ ৮৮৮৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২১৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২০৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২৯) আল্লাহর পথে জিহাদ করাঃ
মিকদাম ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শাহীদের জন্য আল্লাহর
নিকট ছয়টি পুরস্কার সুরক্ষিত রয়েছে। ১- যুদ্ধরত অবস্থায় তার রক্তের ফোঁটা মাটিতে ঝরা
মাত্রই তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং তাকে জান্নাতের আবাসস্থল দেখানো হয়। ২- তাকে কবরের
’আযাব হতে নিষ্কৃতি দেয়া হয়। ৩- হাশরের ময়দানের মহাভীতি হতে দূরে রাখা হয়। ৪- (কিয়ামতের
দিন) সম্মানজনকভাবে তার মাথায় ইয়াকূতের মুকুট পরানো হবে, যার মধ্যে খচিত একটি ইয়াকূত
দুনিয়া ও তার সমস্ত ধন-সম্পদ হতে উত্তম। ৫- সুন্দর বড় বড় চক্ষুবিশিষ্ট বাহাত্তর জন
হূরকে তার সঙ্গিনীরূপে দেয়া হবে। ৬- তার নিকটাত্মীয়দের মধ্যে সত্তরজনের সুপারিশ কবুল
করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৩৪, সুনান আততিরমিযী
১৬৬৩, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৯৯, সহীহাহ্ ৩২১৩, আহমাদ ১৬৭৩০, বায়হাকী ফিস সুনান ৯/১৬৪,
বায়হাকী ফিশ শুআব ১০৮২৩, ১০৮২৪, আল-আহকাম ৩৬ নং পৃষ্ঠা, মিশকাত ৩৮৩৪, আত-তালীকুর রাগীব
২/১৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
গুণাহ মাফ ও জান্নাত পাওয়ার সহজ
আমল-২
(১) ওযূর ফযিলতঃ
ওযূ গুনাহ মাফের একটি মাধ্যম। হাদিসে এসেছে,
উসমান (রাঃ) হতে বণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করে এবং উত্তমভাবে উযূ করে,
তার শরীর হতে তার সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নিচ হতেও তা বের হয়ে যায়।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যত্র এসেছে,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম অথবা মু’মিন বান্দা
উযূ করে এবং তার চেহারা ধুয়ে নেয়, তখন তার চেহারা হতে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর
সাথে তার চোখের দ্বারা কৃত সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যা সে চোখ দিয়ে দেখেছে। যখন সে তার
দুই হাত ধোয় তখন তার দুই হাত দিয়ে করা গুনাহ পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে
বের হয়ে যায় যা তার দু’ হাত দিয়ে ধরার কারণে সংঘটিত হয়েছে। অনুরূপভাবে সে যখন তার দুই
পা ধোয়, তার পা দ্বারা কৃত গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায়
যে পাপের জন্যে তার দু’ পা হাঁটছে। ফলে সে উযূর জায়গা হতে উঠার সময়) সকল গুনাহ হতে
পাক-পবিত্র হয়ে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত ২৮৫, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
ক্বিয়ামতের মাঠে মহানবী (ছাঃ) উম্মতে মুহাম্মাদীর
ওযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উজ্জ্বলতা দেখে তাদেরকে চিনতে পারবে এবং হাউযে কাউছারে পানি
পান করানোর জন্য আগেই পৌঁছে যাবে।
হাদিসে এসেছে,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে (অর্থাৎ- মদীনার বাকী’তে) উপস্থিত
হলেন এবং সেখানে (মৃতদের উদ্দেশে) বললেনঃ ’’আস্সালা-মু ’আলায়কুম, (তোমাদের প্রতি আল্লাহর
শান্তি বর্ষিত হোক) হে মু’মিন অধিবাসীগণ! আমরা ইনশা-আল্লাহ তোমাদের সাথে এসে মিলিত
হচ্ছি। আমরা আশা করি, আমরা যেন আমাদের ভাইদের দেখতে পাই’’। সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে
আল্লাহর রসূল! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
তোমরা আমার বন্ধু। আমার ভাই তারা যারা এখনো দুনিয়ায় আসেনি (পরে আসবে)। সাহাবীগণ আবেদন
করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার উম্মাতদের যারা এখনো আসেনি, তাদের আপনি কিয়ামতের (কিয়ামতের)
দিন কিভাবে চিনবেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বল দেখি,
যদি কোন ব্যক্তির একদল নিছক কালো রঙের ঘোড়ার মধ্যে ধবধবে সাদা কপাল ও সাদা হাত-পা সম্পন্ন
ঘোড়া থাকে, সে কি তার ঘোড়াগুলো চিনতে পারবে না? তারা বললেন, হাঁ, নিশ্চয়ই চিনতে পারবে,
হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, আমার উম্মাত উযূর
কারণে (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) সাদা ধবধবে কপাল ও সাদা হাত-পা নিয়ে উপস্থিত হবে এবং
আমি হাওযে কাওসারের নিকট তাদের অগ্রগামী হিসেবে উপস্থিত থাকবো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩০৬; সুনান আন নাসাঈ ১৫০; মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৯১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
কষ্ট সত্বেও যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে ওযূ করে
আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং পদ মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। এ মর্মে হাদিসে এসেছে,
ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতাইবাহ ও ইবনু হুজর
(রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের এমন কাজ জানাবো না, যা করলে আল্লাহ (বান্দার) পাপরাশি দূর করে
দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন। তিনি বললেন
অসুবিধা ও কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদে আসার জন্যে বেশি পদচারণা করা
এবং এক সালাতের পর আর এক সালাতের জন্যে প্রতীক্ষা করা; আর এ কাজগুলোই হল সীমান্ত প্রহরা।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৫১, সুনান আততিরমিযী ৫, ৫১; মুয়াত্তা মালিক ৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭৮, ইসলামিক
সেন্টারঃ ৪৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) ওযূর দো‘আর ফযিলতঃ
যে
ব্যক্তি পূর্ণভাবে ওযূ করবে এবং শেষে ওযূর দো‘আ পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের সব কয়টি
দরজা খুলে দেওয়া হবে। সে যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছামত প্রবেশ করতে পারবে।
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি
উযূ করবে এবং উত্তমভাবে অথবা পরিপূর্ণভাবে উযূ
করবে, এরপর বলবেঃ
’’আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আন্না
মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়া রসূলুহ’’,
অর্থাৎ- ’আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া
প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা
ও রসূল’। আর এক বর্ণনায় আছেঃ
“আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ
লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়া রসূলুহ’’-
(অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত
প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি,
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল।) তার জন্য জান্নাতের
আটটি দরজা খুলে যাবে। এসব দরজার যেটি দিয়ে খুশী সে সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২৩৪, তিরমিযী ৫৫, সহীহুল জামি ৬১৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৬০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) আযান দাতার ফযিলতঃ
ছালাতের জন্য আযান দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি
আমল। রাসূল (ছাঃ) মুওয়ায্যিনের সম্মান ও মর্যাদার ঘোষণা দিয়েছেন, হযরত মু‘আবিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি
রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, মুওয়ায্যিনগণ ক্বিয়ামতের দিন সবচেয়ে উঁচু গর্দান সম্পন্ন
লোক হবে।
মুওয়ায্যিনের আযান যারা শুনতে পাবে তারা সবাই
ক্বিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। এমনকি জ্বিন, পশু-পাখীও সাক্ষ্য দেবে। এ মর্মে
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুওয়ায্যিনের আযানের ধ্বনি জিন ও ইনসান সহ যত প্রাণী শুনবে, ক্বিয়ামতের দিন
সকলে তার জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবে’। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৬৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫৪৮,৬০৯, সুনান আননাসায়ী ৬৪৪, আহমাদ
১১৩০৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৬১, সহীহ আল জামি ২৪৫০, আধুনিক প্রকাশনী ৭০২৮, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৭০৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
আযানের ধ্বনি যতদূর যায় ততদূর শয়তান থাকতে
পারে না। বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালিয়ে যায়।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের জন্য আযান দিতে থাকলে শায়ত্বন
(শয়তান) পিঠ ফিরিয়ে পালায় ও বায়ু ছাড়তে থাকে, যাতে আযানের শব্দ তার কানে না পৌঁছে।
আযান শেষ হয়ে গেলে সে ফিরে আসে। আবার যখন ইক্বামাত শুরু হয় পিঠ ফিরিয়ে পালাতে থাকে।
ইক্বামাত শেষ হলে আবার ফিরে আসে। সালাতে মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি করতে থাকে। সে বলে,
অমুক বিষয় স্মরণ কর। অমুক বিষয় স্মরণ কর। যেসব বিষয় তার মনে ছিল না সব তখন তার মনে
পড়ে যায়। পরিশেষে মানুষ অবচেতন হয় আর বলতে পারে না কত রাক্’আত সালাত আদায় করা হয়েছে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৬০৮, ১২২২, ১২৩১, ১২১৩২, ৩২৮৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৪২, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৩৮৯, সুনান আবূ দাঊদ ৫১৬, সুনান নাসায়ী ৫৭০, আহমাদ ৯৯৩১, সহীহ আল জামি‘ ৮১৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
পর্বত চূড়ায় যে ব্যক্তি একাকী হলেও আযান দিয়ে
ছালাত আদায় করে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়ে জন্নাতে প্রবেশ করাবেন। হাদিসে এসেছে,
উক্ববাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার রব সেই মেষপালক রাখালের
উপর খুশী হন, যে একা পর্বত চূড়ায় দাঁড়িয়ে সালাতের জন্য আযান দেয় ও সালাত আদায় করে। আল্লাহ তা’আলা সে সময় তার মালায়িকাহ্-কে
(ফেরেশতাগণকে) বলেন, তোমরা আমার এই বান্দার দিকে তাকাও। সে আমাকে ভয় করে (এই পর্বত
চূড়ায়) আযান দেয় ও সালাত আদায় করে। তোমরা সাক্ষী থাক আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম
এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিলাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৬৬৫, সুনান আবূ দাঊদ ১২০৩, সুনান আননাসায়ী ৬৬৬, ‘ইরওয়া ২১৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
যে ব্যক্তি বার বছর আযান দিবে তাঁর জন্য জান্নাত
ওয়াজিব হবে। আযান ও এক্বামতের জন্য যথাক্রমে ষাট ও ত্রিশ নেকী দেওয়া হবে। এ মর্মে হাদিসে এসেছে,
আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বারো বছর পর্যন্ত
আযান দিবে তাঁর জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় এবং তার আযানের বিনিময়ে প্রতিদিন তার
’আমলনামায় ষাটটি নেকী ও প্রত্যেক ইক্বামাতের (পরিবর্তে ত্রিশ নেকী লেখা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৭৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৭২৮, সহীহ
আত্ তারগীব ২৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) আযানের জবাব দাতার ফযিলতঃ
জান্নাতে যাবার একটি মাধ্যম আযানের জবাব দেওয়া।
অথচ অনেকেই এ ব্যাপারে উদাসীন। যে ব্যক্তি অন্তর থেকে আযানের জবাব দিবে সে জান্নাতে
প্রবেশ করবে।
ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ)....উমার ইবনুল খাত্তাব
(রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
মুওয়াযযিন যখন “আল্লাহু আকবার, আল্লা-হু আকবার" বলে তখন তোমাদের কোন ব্যক্তি
আন্তরিকতার সাথে তার জবাবে বলেঃ "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার"। যখন মুওয়াযযিন
বলে "আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ" এর জবাবে সেও বলেঃ "আশহাদু আল
লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ"। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান
রসূলুল্ল-হ" এর জবাবে সে বলেঃ "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্ল-হ”। অতঃপর
মুওয়াযযিন বলেঃ "হাইয়্যা আলাস সলা-হ" এর জবাবে সে বলেঃ “লা-হাওলা ওয়ালা-
কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ"। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ "হাইয়্যা ’আলাল ফালাহ"
এর জবাবে সে বলেঃ “লা- হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ”। অতঃপর মুওয়াৰ্যযিন
বলেঃ "আল্লা-হু আকবার, আল্লাহু আকবার" এর জবাবে সে বলেঃ "আল্লাহু আকবার,
আল্লাহু আকবার"। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ" এর জবাবে
সে বলেঃ “লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ"। আযানের এ জবাব দেয়ার কারণে সে বেহেশতে যাবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৭৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৮, সুনান আবূ
দাঊদ ৫২৭, সহীহ আল জামি ৭১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৩৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৪৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
সুতরাং মুওয়াযযিন আযানের যে বাক্য পাঠ করবে
জবাবেও তাই বলতে হবে। শুধুমাত্র ‘হাইয়া আলাছ ছালা-হ’ ‘হাইয়া আলাল ফালা-হ’। ব্যতীত সেখানে “লা- হাওলা
ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ” বলবে। উল্লেখ্য যে,
ক. ফজরের আযানে ‘আছ ছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম-
এর জওয়াবে ‘ছাদাক্বাতা ওয়া বারারতা’ বলার কোন ভিত্তি নেই।
খ. অমনিভাবে এক্বামত-এর সময় ক্বাদ ক্বা-মাতিছ
ছালা-হ-এর জওয়াবে ‘আক্বা-মাহাল্লা-হু, ওয়া আদা -মাহা’ বলা সম্পর্কে আবুদাঊদে বর্ণিত
হাদীছটি যঈফ।
গ. ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’
এর জওয়াবে ছাল্লা-হু আলাইহে ওয়া সাল্লাম’ বলার ও কোন দলীল নেই’।
(৫) আযানের দো‘আর ফযিলতঃ
আযানের জওয়াবে দান শেষে প্রথমে দরূদ পড়বে কেননা
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন ‘তোমরা মুওয়ায্যিনের আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোই বলবে। অতঃপর
আযান শেষে আমার উপর দরূদ পাঠ করবে’।
আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুয়াযযিনের আযান শুনলে
উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ যে
ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ
করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ’ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ’ওয়াসীলা’ হলো জান্নাতের
সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা
এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ’ওয়াসীলা’র দু’আ করবে, কিয়ামতের (কিয়ামতের)
দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৪,
সুনান আবূ দাঊদ ৫২৩, সুনান আননাসায়ী ৬৭৮, সুনান আততিরমিযী ৩৬১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান
১৬৯০, ইরওয়া ২৪২, সহীহ আল জামি ৬১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতঃপর আযানের দো‘আ পড়বে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
যে ব্যক্তি আযান শুনে এই দো‘আ পাঠ করবে, তাঁর
জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে (ও এর উত্তর দেয়ার ও
দরূদ পড়ার পর) এ দু’আ পড়ে, তার জন্য সুপারিশ করা আমার অবশ্য করণীয় হয়ে পড়ে। দু’আ হলোঃ
“আল্লা-হুম্মা রব্বা হা-যিহিদ্ দা’ওয়াতিত্
তা-ম্মাতি ওয়াস্ সলা-তিল ক্ব-য়িমাতি আ-তি মুহাম্মাদা-নিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ্,
ওয়াব্’আসহু মাক্বা-মাম্ মাহমূদা-নিল্লাযী ওয়া’আদতাহ্’’
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! এ পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত
সালাতের প্রভু! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দান কর ওয়াসীলা;
সুমহান মর্যাদা ও প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও তাঁকে (মাক্বামে মাহমূদে), যার ওয়া’দা তুমি
তাঁকে দিয়েছ। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য আমার শাফা’আত আবশ্যকীয়ভাবে হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৬১৪, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬১৪, ৪৭১৯, সুনান
আননাসায়ী ৬৮০, সুনান আবূ দাঊদ ৫২৯, ইরওয়া ২৪৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৪২৩, সুনান আততিরমিযী
২১১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৭২২, আহমাদ ১৪৮১৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৫৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আযানের অন্য দো‘আও রয়েছে। যে দো‘আ পাঠ করলে
বান্দার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। এ মর্মে হাদীছে এসেছে,
সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের
আযান শুনে এই দু’আ পড়বে,
“আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ
লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ’আবদুহূ ওয়ারসূলুহূ, রযীতু বিল্লা-হি
রববাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন রসূলান ওয়াবিল ইসলা-মি দীনা’’
(অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া
প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল, আমি আল্লাহকে রব, দীন হিসেবে
ইসলাম, রসূল হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানি ও মানি) এর উপর
আমি সন্তুষ্ট, তাহলে তার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৬,
সুনান আবূ দাঊদ ৫২৫, সুনান আননাসায়ী ৬৭৯, সুনান আততিরমিযী ২১০, সুনান ইবনু মাজাহ ৭২১,
আহমাদ ১৫৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৪২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
(৬) তাহিয়াতুল ওযূর ফযিলতঃ
ওযু করার পর যে দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করা
হয় তার নাম তাহিয়াতুল ওযূ। তাহিয়াতুল ওযূর দু’রাকা‘আত ছালাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হযরত বেলাল (রাঃ) এটি নিয়মিত আদায় করার কারণে জান্নাতে রাসূল (ছাঃ)-এর আগে আগে হেঁটে
ছিলেন। এমর্মে হাদিসে এসেছে,
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা ফজরের সালাতের সময় বিলাল (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বিলাল!
ইসলাম গ্রহণের পর সর্বাধিক সন্তুষ্টিব্যঞ্জক যে ‘আমল তুমি করেছ, তার কথা আমার নিকট
ব্যক্ত কর। কেননা, জান্নাতে (মি’রাজের রাতে) আমি আমার সামনে তোমার পাদুকার আওয়াজ শুনতে
পেয়েছি। বিলাল (রাযি.) বললেন, আমার নিকট এর চেয়ে (অধিক) সন্তুষ্টিব্যঞ্জক হয় এমন কিছুতো
আমি করিনি। দিন রাতের যে কোন প্রহরে আমি তাহারাত ও পবিত্রতা অর্জন করেছি, তখনই সে তাহারাত
দ্বারা (তাহিয়াতুল ওযূর) সালাত আদায় করেছি, যে পরিমাণ সালাত আদায় করা আমার তাক্দীরে
লেখা ছিল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৪৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬২১৮, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৪৫৮, আহমাদ ৯৬৭৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৮৩, ইরওয়া
৪৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ২২৬, আহমাদ ৮৪০৩, ইবনু খুযায়মাহ্ ১২০৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৮৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
অন্য বর্ণনায় এ ছালাতের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে,
মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মাইমূন (রহঃ)....উকবাহ ইবনু আমির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমার ওপর উট চড়ানোর দায়িত্ব ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে
নিয়ে এলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে
লোকেদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তার এ কথা শুনতে পেলাম, "যে মুসলিম সুন্দরভাবে
ওযু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ রেখে দু’ রাকাআত
সালাত আদায় করে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। উকবাহ বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলামঃ বাহ!
হাদীসটি কত চমৎকার! তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন, আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সে
দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি ’উমার। তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে দেখেছি, এ মাত্র এসেছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগে বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি
উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করে এ দু’আ পড়বে- "আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়
আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু"। তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে
যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৪,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৬০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭) তাহিয়াতুল মাসজিদঃ
মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দু’রাকা‘আত
ছালাত আদায় করা সুন্নাত। যাকে তাহিয়াতুল মাসজিদ বলে। হাদিসে এসেছে,
আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে
সে যেন বসার আগে দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করে নেয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৪, ১১৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ১৫৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১৪, সুনান আননাসায়ী ৭৩০, সুনান আততিরমিযী ৩১৬,
ইবনু মাজাহ্ ১০১৩, সুনান আবূ দাঊদ ৪৬৭, আহমাদ ২২৫২৩, ইরওয়া ৪৬৭, আহমাদ ১৫৭৮৯, ২২০১৭,
২২০২৩, ২২০৭২, ২২০৮৮, ২২১৪৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৮৮, দারিমী ১৩৯৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৪২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এমনকি জুম‘আর দিনে খুৎবা অবস্থায় যদি কেউ মসজিদে
প্রবেশ করতো তাকেও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করে বসার নির্দেশ দিতেন।
যেমন হাদিসে এসেছে,
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, (কোন এক) জুমু‘আহর দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে
খুৎবাহ দিচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক! তুমি কি
সালাত আদায় করেছ? সে বলল, না; তিনি বললেন, উঠ, সালাত আদায় করে নাও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩০, ৯৩১, ১১৬৬; সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১৯০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৫, আহমাদ ১৪৯১২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৭৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৮) সুন্নাত ও নফল ছালাতের ফযিলতঃ
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাতের আগে পিছের সুন্নাত
ছালাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা নিয়মিত আদায়কারী জন্নাতে প্রবেশ করবে। হাদিসে এসেছে,
উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক দিন রাতে বারো রাক্’আত সালাত
আদায় করবে তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (সে বারো রাক্’আত সালাত হলো) চার
রাক্’আত যুহরের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পূর্বে আর দু’ রাক্’আত যুহরের (ফারযের) পরে, দু’
রাক্’আত মাগরিবের (ফরয সালাতের) পরে। দু’ রাক্’আত ’ইশার ফরয সালাতের পরে। আর দু’ রাক্’আত
ফাজ্রের (ফজরের) (ফরয সালাতের) পূর্বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১১৫৯, সুনান আত্ তিরমিযী ৪১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৮০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৭২৮, সুনান আননাসায়ী ১৮০৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১৪১, সহীহ আল জামি ৬৩৬২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
ক্বিয়ামতের দিন ফরয ছালাতের ঘাটতি হলে সুন্নাত
ও নফল ছালাতের মাধ্যমে তা পূরণ করা হবে। যেমন হাদিসে এসেছে,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন
সব জিনিসের পূর্বে লোকের যে ’আমলের হিসাব হবে, তা হলো সালাত। যদি তার সালাত সঠিক হয়
তাহলে সে সফলকাম হবে ও নাজাত পাবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে সে বিফল ও ক্ষতিগ্রস্ত
হবে। যদি ফরয সালাতে কিছু ভুল হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তা’আলা মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে)
বলবেন, দেখো! আমার বান্দার নিকট সুন্নাত ও নফল সালাত আছে কি-না? তাহলে সেখান থেকে এনে
বান্দার ফরয সালাতের ত্রুটি পূরণ করে দেয়া হবে। এরপর এ রকম বান্দার অন্যান্য হিসাব
নেয়া হবে। অন্য এক বিবরণ এসেছে, তারপর এ রকম যাকাতের হিসাব নেয়া হবে। অতঃপর অবশিষ্ট
সব ’আমলের হিসাব একের পর এক এ রকম নেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৩০, সুনান আত্ তিরমিযী ৪১৩, সুনান আননাসায়ী ৪৬৫, সহীহ আত্ তারগীব
৫৪০, সহীহ আল জামি‘ ২০২০; আবূ দাঊদ ৮৬৪, ৮৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ক) ফজরের সুন্নাতে ছালাতঃ
ফজরের দু’রাকা‘আত সুন্নাত ছালাত খুব ফযিলতপূর্ণ।
ফরযের পূর্বে এ ছালাত আদায় করতে হয়। সময় না পেলে ফরযের পরেও তা আদায় করা যাবে। এ ছালাতের
ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি
বলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ ফাজ্রের (ফজরের) দু’
রাক্’আত সুন্নাত সালাত দুনিয়া ও দুনিয়ার সকল
জিনিসের চেয়ে বেশী উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১১৬৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন
১৫৫৮, ইসলামীক সেন্টার ১৫৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যত্র এসেছে, আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নফল সালাতের মাঝে ফাজ্রের (ফজরের)
দু’ রাক্’আত সুন্নাত সালাতের প্রতি যেমন কঠোর যত্ন নিতেন আর কোন সালাতের উপর এত কঠোর
ছিলেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬৩, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১৫৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) যোহরের সুন্নাত ছালাতঃ
যোহরের ফরযের পূর্বে দু’রাকা‘আত বা চার রাকা‘আত
সুন্নাত ছালাত আদায় করা যায়। ফরযের পরে দু’রাকা‘আত বা চার রাকা‘আত ছালাত আদায় করা যায়।
যোহরের সুন্নাত ছালাতের ফযীলত সম্পর্কে হাদিসে
এসেছে, হাবীবাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে লোক যুহরের (ফরয সালাতের) পূর্বে চার রাক্’আত, এরপর
চার রাক্’আত সালাত আদায় করে। আল্লাহ তার ওপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬৭, সুনান আবূ দাঊদ ১২৬৯, সুনান
আত্ তিরমিযী ৪২৮, সুনান আননাসায়ী ১৮১৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১৬০, সহীহ আল জামি ৬১৯৫,
আহমাদ ২৬২৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনু সায়িব
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য হেলে
যাওয়ার পর যুহরের সালাতের পূর্বে চার রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। তিনি বলতেন, এটা এমন
এক সময় যখন (নেক ’আমল উপরের দিকে যাওয়ার জন্যে) আকাশের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। তাই
এ মুহূর্তে আমার নেক ’আমলগুলো উপরের দিকে চলে যাক এটা আমি চাই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬৯, সুনান আত্ তিরমিযী ৪৭৮, সহীহ
আত্ তারগীব ৫৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আছরের সুন্নাত ছালাতঃ
আছরের পূর্বে চার রাকা‘আত সুন্নাত ছালাত আদায়
করা যায়। এমর্মে হাদিসে এসেছে, ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঐ লোকের ওপর রহমত বর্ষণ
করেন, যে লোক ’আসরের (ফরয সালাতের) পূর্বে চার রাক্’আত সালাত আদায় করে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৭০, সুনান আবূ দাঊদ ১২৭১, সুনান আত্ তিরমিযী ৪৩০, আহমাদ ৫৯৮০, ইবনু
খুযায়মাহ্ ১১৯৩, ইবনু হিব্বান ২৪৫৩, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪১৬৭, সহীহ আত্ তারগীব
৫৮৮, সহীহ আল জামি‘ ৩৪৯৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
অন্যত্র হাদিসে এসেছে,
’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আসরের সালাতের (ফরযের) পূর্বে চার রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। এ চার রাক্’আতের মধ্যখানে সালাম ফিরানোর
দ্বারা নিকটবর্তী মালাক (ফেরেশতা) এবং তাদের অনুসারী মুসলিম ও মু’মিনীনদের মাঝে পার্থক্য
করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৭১, সুনান আত্ তিরমিযী
৪২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঘ) মাগরিবের সুন্নাত ছালাতঃ
মাগরিবের ফরয ছালাতের পরে দু’রাকা‘আত সুন্নাত
ছালাত আদায় করতে হয়’। হাদিসে এসেছে,
ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যুহরের ফারযের (ফরযের/ফরজের)
পূর্বে দু’ রাক্’আত ও মাগরিবের ফারযের পরে দু’ রাক্’আত সালাত তাঁর বাড়িতে এবং ’ইশার সালাতের ফারযের পর দু’ রাক্’আত সালাত তার বাড়িতে আদায় করেছি। ইবনু
’উমার (রাঃ) আরো বলেছেন, হাফসাহ্ (রাঃ) (ইবনু ’উমারের বোন) আমার নিকট বলেছেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালকা দু’ রাক্’আত সালাত ফাজ্রের (ফজরের) সালাতের সময়
আরম্ভ হবার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১১৬০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬১৮, ১১৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৫৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫৬৮, ইসলামীক সেন্টার ১৫৭৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
তবে মাগরিবের আযানের পরে দু’রাকা‘আত ছালাত
আদায় করা মুস্তাহাব। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
’আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাগরিবের ফরয সালাতের
পূর্বে তোমরা দু’ রাক্’আত নফল সালাত আদায় কর। মাগরিবের ফরয সালাতের পূর্বে তোমরা দু’
রাক্’আত নফল সালাত আদায় কর। তৃতীয়বার তিনি বলেছেন, ’’যিনি ইচ্ছা করেন’’ (তিনি তা পড়বেন)।
বর্ণনাকারী বলেনঃ তৃতীয়বার তিনি এ কথাটি এ আশংকায় বললেন যাতে মানুষ একে সুন্নাত না
করে ফেলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬৫, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৮৩, ৭৩৬৮, সুনান আবূ দাঊদ ১২৮১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১০৭, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ১১১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মদীনায়
ছিলাম। (এ সময়ে অবস্থা এমন ছিল যে, মুয়াযযিন মাগরিবের আযান দিলে (কোন কোন সাহাবা (সাহাবা)
ও তাবি’ঈ) মসজিদের খুঁটির দিকে দৌড়াতেন আর দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করতে আরম্ভ করতেন।
এমনকি কোন মুসাফির লোক মসজিদে এসে অনেক লোককে একা একা সালাত আদায় করতে দেখে মনে করতেন
(ফরয) সালাত বুঝি সমাপ্ত হয়ে গেছে। আর লোকেরা এখন সুন্নাত পড়ছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৮০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৮২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যত্র হাদিসে এসেছে,
আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, মুআয্যিন যখন আযান দিতো, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণের
মধ্যে কয়েকজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বের হওয়া পর্যন্ত (মসজিদের) খুঁটির
নিকট গিয়ে দাঁড়াতেন এবং এ অবস্থায় মাগরিবের পূর্বে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। অথচ
মাগরিবের আযান ও ইক্বামাতের মধ্যে কিছু (সময়) থাকত না। ‘উসমান ইবনু জাবালাহ ও আবূ দাঊদ
(রহ.) শু‘বাহ (রহ.) হতে বর্ণনা করেন যে, এ দু’য়ের মধ্যবর্তী ব্যবধান খুবই সামান্য হত।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬২৫, ৫০৩; সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১৮২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৮৯ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৫৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাদিসে এসেছে,
মারসাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ ইয়াযানী (রহ.) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘উকবাহ ইবনু জুহানী (রাযি.)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে বললাম, আবূ
তামীম (রহ.) সম্পর্কে এ কথা বলে কি আমি আপনাকে বিস্মিত করে দিব না যে, তিনি মাগরিবের
(ফরয) সালাতের পূর্বে দু’ রাক‘আত (নফল) সালাত আদায় করে থাকেন। ‘উক্বাহ (রাযি.) বললেন,
(এতে বিস্ময়ের কী আছে?) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়ে তো
আমরা তা আদায় করতাম। আমি প্রশ্ন করলাম, তা হলে এখন কিসে আপনাকে বাধা দিচ্ছে? তিনি বললেন,
কাজকর্মের ব্যস্ততা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১১৮৪; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৮১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১১১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) এশার সুন্নাত ছালাতঃ
এশার ফরজ ছালাতের পরে দু’রাকা‘আত সুন্নাত ছালাত
আদায় করতে হয়। এ মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক দিন রাতে বারো রাক্’আত সালাত
আদায় করবে তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (সে বারো রাক্’আত সালাত হলো) চার
রাক্’আত যুহরের ফারযের (ফরযের/ফরজের) পূর্বে আর দু’ রাক্’আত যুহরের (ফারযের) পরে, দু’
রাক্’আত মাগরিবের (ফরয সালাতের) পরে। দু’ রাক্’আত ’ইশার ফরয সালাতের পরে। আর দু’ রাক্’আত
ফাজ্রের (ফজরের) (ফরয সালাতের) পূর্বে।
মুসলিমের এক বর্ণনায় শব্দ হলো উম্মু হাবীবাহ্
বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে মুসলিম
প্রতিদিন আল্লাহ তা’আলার ফরয সালাত ব্যতীত বারো রাক্’আত সুন্নাত সালাত আদায় করবে। আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি
ঘর বানাবেন। অথবা বলেছেন, জান্নাতে তার জন্যে একটি ঘর বানানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১১৫৯, সুনান আত্ তিরমিযী ৪১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ১৫৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৮, সুনান আননাসায়ী নাসায়ী ১৭৯৬-৯৯, ১৮০১-২, ১৮০৪, ১৮০৮-১০; সুনান ইবনু
মাজাহ্ ১১৪১, সহীহ আল জামি ৬৩৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) ফরয ছালাতের ফযিলতঃ
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সর্বোত্তম মাধ্যম
হলো ছালাত। ছালাত বান্দাকে তাক্বওয়াশীল করে গড়ে তোলে। আত্মশুদ্ধি অর্জনের বড় মাধ্যম
ছালাত। বান্দাকে পাপের কাজ থেকে বিরত রাখে ছালাত। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, আপনি তেলাওয়াত
করুন কিতাব থেকে যা আপনার প্রতি ওহী করা হয় এবং সালাত কায়েম করুন। নিশ্চয় সালাত
বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর
আল্লাহ তা জানেন। (সুরা আনকাবুত ২৯/৪৫)।
ছালাতের ফযিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বিভিন্ন হাদিস বর্ণনা করেছেন। এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস নিম্নে পেশ করা হলো-
(ক) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ
ও আলী ইবনু হুজুর (রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এবং এক জুমুআহ থেকে অন্য জুমুআহ এবং
উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহের জন্যে কাফফারাহ হয়ে যায় যদি সে কাবীরাহ গুনাহতে
লিপ্ত না হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৮, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৩৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৪, আহমাদ ৯১৯৭, সহীহাহ্ ৩৩২২, সহীহ আল জামি‘
৩৮৭৫, সহীহ আত তারগীব ৬৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪১, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৫৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীগণের উদ্দেশে) বললেন, আচ্ছা বলো
তো, তোমাদের কারো বাড়ীর দরজার কাছে যদি একটি নদী থাকে, যাতে সে নদীতে দিনে পাঁচবার
গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবীগণ উত্তরে বললেন, না, কোন
ময়লা থাকবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এ দৃষ্টান্ত হলো পাঁচ
ওয়াক্ত সালাতের। এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়কারীর গুনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৬৭, সুনান আননাসায়ী
৪৬২, সুনান আততিরমিযী ২৮৬৮, আহমাদ ৮৯২৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭২৬, ইরওয়া ১৫, সহীহ আত্
তারগীব ৩৫২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৯৪,
ইসলামীক সেন্টার ১৪০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) “উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত,
যা আল্লাহ তা’আলা (বান্দার জন্য) ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি এ সালাতের জন্য ভালোভাবে উযূ করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকূ’ ও খুশুকে
পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন
আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৫৭০, আহমাদ ২২৭০৪, সুনান আবূ দাঊদ ৪২৫, মালিক ১৪, সুনান আননাসায়ী ৪৬১, সহীহ
আত্ তারগীব ৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ, আবূ কুরায়ব ও
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)....আবূ বকর ইবনু উমারাহ ইবনু রুআয়বাহ তার পিতা রুআয়বাহ থেকে
বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে
শুনেছিঃ এমন কোন ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্যোদয়ের পূর্বের এবং সূর্যাস্তের
পূর্বের সালাত অর্থাৎ— ফাজর ও আসরের সালাত আদায় করে। এ কথা শুনে বাস্রার অধিবাসী একটি
লোক তাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি নিজে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নিকট থেকে এ কথা শুনেছ? সে বললঃ হ্যাঁ। তখন লোকটি বলে উঠল, আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,
আমি নিজে এ হাদীসটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে শুনেছি।
আমার দু’ কান তা শুনেছে আর মন তা স্মরণ রেখেছে। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৬২৪, সহীহ আল জামি ৫২২৮, সুনান আবূ দাঊদ ৪২৭, সুনান আননাসায়ী ৪৭১, সহীহ ইবনু হিব্বান
১৭৩৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩০৯, ইসলামীক সেন্টার ১৩২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডা সময়ের সালাত (অর্থাৎ-
ফাজর ও ’আসর) আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬২৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৫৭৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩৫, আহমাদ
১৬৭৩০, দারেমী ১৪৬৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১৮৫, সহীহ আল জামি ৬৩৩৭, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৫৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) “উক্ববাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার রব সেই মেষপালক রাখালের
উপর খুশী হন, যে একা পর্বত চূড়ায় দাঁড়িয়ে সালাতের জন্য আযান দেয় ও সালাত আদায় করে।
আল্লাহ তা’আলা সে সময় তার মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে) বলেন, তোমরা আমার এই বান্দার
দিকে তাকাও। সে আমাকে ভয় করে (এই পর্বত চূড়ায়) আযান দেয় ও সালাত আদায় করে। তোমরা সাক্ষী
থাক আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিলাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬৫, সুনান আবূ দাঊদ ১২০৩, সুনান
আননাসায়ী ৬৬৬, ‘ইরওয়া ২১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাছে রাতে একদল ও দিনে
একদল মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) আসতে থাকেন। তারা ফাজর (ফজর) ও ’আসরের ওয়াক্তে মিলিত হন।
যারা তোমাদের কাছে থাকেন তারা আকাশে উঠে গেলে আল্লাহ তা’আলা তাদের কাছে (বান্দার) অবস্থা
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, যদিও তিনি তাদের সম্পর্কে অধিক অবগত। বলেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে
কী অবস্থায় রেখে এসেছো? উত্তরে মালায়িকাহ্ বলেন, হে আল্লাহ! আমরা আপনার বান্দাদেরকে
সালাত আদায়ে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। আর যে
সময় আমরা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছেছি তখনও তারা সালাত আদায় করছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৫৫, ৩২২৩, ৭৪২৯, ৭৪৮৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩২,
সুনান আননাসায়ী ৪৮৫, মালিক ১৮০/৫৯০, আহমাদ ১০৩০৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৩৭, সহীহ আল
জামি‘ ৮০১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১০) মসজিদে ছালাতের ফযিলতঃ
আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়তর স্থান হলো মসজিদ’।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট সকল জায়গা হতে মাসজিদই
হলো সবচেয়ে প্রিয়, আর বাজার সবচেয়ে ঘৃণ্য স্থান। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৭১,
সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬০০, সহীহ আল জামি ১৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহর বান্দাহগণ ছালাতের জন্য দিনে রাতে
পাঁচবার সমবেত হয় মসজিদে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরীব, ছোট-বড়, সাদা-কালো সকল ভেদাভেদ
ভুলে পায়ের সাথে পা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয় একই কাতারে একই সৃষ্টিকর্তার ইবাদতে মশগুল
থাকেন। ফলে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃদৃঢ় হয়। সামাজিক বন্ধন মযবুত হয় এবং নেকীর ঝুড়িও সমৃদ্ধ
হয়। এ সম্পর্কিত হাদিসসমূহ নিম্নরূপ-
(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল মসজিদে যাবে,
আল্লাহ তা’আলা তার প্রত্যেকবারে যাতায়াতের জন্য জান্নাতে একটি মেহমানদারীর ব্যবস্থা
করে রাখবেন। চাই সে সকালে যাক কী সন্ধ্যায়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৪১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৬৯, আহমাদ ১০৬০৮, ১০৬১৩, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ২০৩৭, সহীহ
আল জামি ৬৩৯৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৯৭০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৬২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতে সবচেয়ে বেশী সাওয়াব
পাবে ঐ ব্যক্তি দূরত্বের দিক দিয়ে যার বাড়ী সবচেয়ে বেশী দূরে। আর যে ব্যক্তি ইমামের
সাথে জামা’আতে সালাত আদায় করার জন্য মসজিদে গিয়ে অপেক্ষা করে, তার সাওয়াবও ঐ ব্যক্তির
চেয়ে বেশী হবে যে মসজিদের নিকটে থাকে এবং তাড়াতাড়ি সালাত আদায় করেই ঘুমিয়ে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৬২, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্
১৫০১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জামা‘আতে সালাতের ফাযীলত একাকী
আদায়কৃত সালাত অপেক্ষা সাতাশ গুণ বেশী। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৫, ৬৪৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৬৫০, আহমাদ ৫৩৩২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬১৭, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১০৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তির জামা‘আতের সাথে
সালাতের সওয়াব, তার নিজের ঘরে ও বাজারে আদায়কৃত সালাতের সওয়াবের চেয়ে পঁচিশ গুণ বাড়িয়ে
দেয়া হয়। এর কারণ এই যে, সে যখন উত্তমরূপে উযূ করলো, অতঃপর একমাত্র সালাতের উদ্দেশে
মসজিদে রওয়ানা করল তখন তার প্রতি কদমের বিনিময়ে একটি মর্তবা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি
গুনাহ মাফ করা হয়। সালাত আদায়ের পর সে যতক্ষণ নিজ সালাতের স্থানে থাকে, মালাকগণ তার
জন্য এ বলে দু‘আ করতে থাকেন - ‘‘হে আল্লাহ! আপনি তার উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তার প্রতি
অনুগ্রহ করুন।’’ আর তোমাদের কেউ যতক্ষণ সালাতের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতে
রত বলে গণ্য হয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭,
১৭৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬১৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একজন অন্ধ লোক এসে বলেন, হে আল্লাহর রসূল!
আমার এমন কোন চালক নেই যে আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবে। তিনি রসূলের নিকট আবেদন করলেন তাকে
যেন ঘরে সালাত আদায়ের অবকাশ দেয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অবকাশ
দিলেন। সে ফিরে চলে যাওয়া মাত্রই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার তাকে
ডাকলেন এবং বললেন, তুমি কি সালাতের আযান শুনতে পাও? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে অবশ্যই আযানের সাড়া দিবে (অর্থাৎ নিজেকে জামা’আতে শরীক
করবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৫৪, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৬৫৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৫৯, ইসলামীক সেন্টার ১৩৭১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(চ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে দিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না,
সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন।
ক. ন্যায়পরায়ণ শাসক,
খ. সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের
ইবাদতের মধ্যে,
গ. সে ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত
রয়েছে,
ঘ. সে দু’ ব্যক্তি যারা পরস্পরকে ভালবাসে আল্লাহর
ওয়াস্তে, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য,
ঙ. সে ব্যক্তি যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী
নারী আহবান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’,
চ. সে ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে, তার
ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না,
জ. সে ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর যিকর করে,
ফলে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩১, আহমদ ৯৬৭১, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৬২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬২৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০১, সুনান আননাসায়ী
৫৩৮০, সুনান আততিরমিযী ২৩৯১, আহমাদ ৯৬৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪৮৬, ইরওয়া ৮৮৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) জুম‘আর ছালাতের ফযিলতঃ
জুম‘আর দিনের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। এদিন আল্লাহর
নিকট ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের চেয়ে মহিমান্বিত। এ দিনে দো‘আ কবুলের একটা বিশেষ সময়
রয়েছে। যখন বান্দার যে কোন সঙ্গত প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করেন। এ সম্পর্কিত হাদিসসমূহ
নিম্নরূপ-
(ক) লুবাবাহ্ ইবনু ’আবদুল মুনযির (রাঃ)হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’জুমু’আর দিন’’ সকল দিনের
সর্দার, সব দিনের চেয়ে বড় ও আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদাবান। এ দিনটি আল্লাহর কাছে ঈদুল
আযহা ও ঈদুল ফিত্রের চেয়ে অধিক উত্তম। এ দিনটির পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
(১) আল্লাহ তা’আলা এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করেছেন।
(২) এ দিনে তিনি আদমকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে
পাঠিয়েছেন।
(৩) এ দিনেই আদম মৃত্যুবরণ করেছেন।
(৪) এ দিনে এমন একটা ক্ষণ আছে সে ক্ষণে বান্দারা
আল্লাহর কাছে হারাম জিনিস ছাড়া আর যা কিছু চায় তা তিনি তাদেরকে দান করেন। (৫) এ দিনেই
ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) হবে। আল্লাহর নিকটবর্তী মালাক (ফেরেশতা), আসমান, জমিন, বাতাস, পাহাড়,
সাগর সবই এ জুমু’আর দিনকে ভয় করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৩৬৩, সুনান আতআত্ তিরমিযী ১০৮৪, ইবনু শায়বাহ্ ৫৫১৬, সহীহ আল জামি‘ ২২৭৯)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) সালমান ফারিসী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর দিন গোসল করে এবং
যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি
ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু’ জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত
সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমু‘আহ হতে আরেক
জুমু‘আহ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮৩, ৯১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩২ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৯,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮১, শারহুস সুন্নাত ১০৫৮, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৯, সহীহ আল
জামি ৭৭৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) উমাইয়্যাহ ইবনু বিস্তাম (রহঃ)....আবূ হুরায়রাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি গোসল করে
জুমুআর সালাতে আসল, অতঃপর সাধ্যমত (সুন্নাত) সালাত আদায় করল, অতঃপর ইমামের খুতবাহ
শেষ হওয়া পর্যন্ত নীরব থাকল, অতঃপর ইমামের সাথে (জুমুআর) সালাত আদায় করল, এতে তার
দু’ জুমুআর মধ্যকার দিনসমূহের এবং আরো তিন দিনের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৭, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৪, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮২,
ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৭, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমু’আর দিন মালায়িকাহ্
(ফেরেশতারা) মসজিদের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে যান। যে ব্যক্তি মসজিদে প্রথমে আসে তার নাম
লিখেন। এরপর তার পরের ব্যক্তির নাম লিখেন। (অতঃপর তিনি বলেন,) যে ব্যক্তি মসজিদে প্রথমে
যান তার দৃষ্টান্ত হলো, যে মক্কায় কুরবানী দেবার জন্য একটি উট পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি
জুমু’আর সালাতে আসে তার দৃষ্টান্ত হলো, যে একটি গরু পাঠায়। তারপর যে লোক জুমু’আর জন্য
মসজিদে আসে তার উপমা হলো, যে ব্যক্তি কুরবানীর জন্য মক্কায় একটি দুম্বা পাঠায়। তারপর
যে ব্যক্তি জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য মসজিদে আসে তার উদাহরণ
হলো, যে কুরবানী করার জন্য মক্কায় একটি মুরগী পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু’আর জন্য
মসজিদে আসে তার উপমা হলো, যে একটি ডিম পাঠায়। আর ইমাম খুতবাহ্ দেবার জন্য বের হলে তারা
তাদের দপ্তর গুটিয়ে খুতবাহ্ শোনেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৩৮৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯২৯, ৩২১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৮৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫০, আহমাদ ১০৫৬৮, শারহু মা‘আনির আসার ৬২৪১, সুনানুল কুবরা
লিল বায়হাক্বী ৫৮৬২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৮২)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আওস ইবনু আওস আস-সাকাফী (রাঃ) বলেন, আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর দিন (স্ত্রী সহবাসজনিত)
গোসল করলো এবং নিজে গোসল করলো এবং সকাল সকাল যানবাহন ছাড়া পদব্রজে মসজিদে এসে ইমামের
কাছাকাছি বসলো, মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে খুতবাহ শুনলো এবং অনর্থক কিছু করলো না, তার
জন্য প্রতি কদমে এক বছরের সাওম রাখ ও তার রাত
জেগে সালাত পড়ার সমান সওয়াব রয়েছে। (সুনান ইবনু মাজাহ
১০৮৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৮, সুনান আবূ দাঊদ ৩৪৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৪৯৯০,
ইবনুর হিব্বান ২৭৮১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৭৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৬৫, সহীহ
আত্ তারগীব ৬৯০, সহীহ আল জামি‘ ৬৪০৫, সুনান নাসায়ী ১৩৮১, ১৩৮৪, ১৩৯৮, আহমাদ ১৫৭২৮,
১৫৭৩৯, ১৫৭৪২, ১৬৫১৩, ১৫৪৬-৪৭, সুনান আত্ তিরমিযী ৪৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আবুল জা’দ আয্ যুমায়রী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অলসতা ও অবহেলা
করে পরপর তিন জুমু’আর সালাত ছেড়ে দিবে, আল্লাহ
তা’আলা তার দিলে মুহর লাগিয়ে দেবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৩৭১, সুনান আবূ দাঊদ ১০৫২, সুনান আত্ তিরমিযী ৫০০, সুনান নাসাযী ১৩৬৯, আহমাদ ১৫৪৯৮,
ইবনূ খুযায়মাহ্ ১৮৫৮, ইবনু মাজাহ্ ১১২৬, ইবনু হিব্বান ২৭৮৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৩৪,
সহীহ আত্ তারগীব ৭২৭, সহীহ আল জামি‘ ৬১৪৩, মুসনাদুশ্ শাফি‘ঈ ৩৮২, দারিমী ১৬১২, সুনানুল
কুবরা বায়হাক্বী ৫৫৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২) ‘তারাবীহ’ ও ‘তাহাজ্জুদ’ ছালাতের ফযিলতঃ
রাত্রির বিশেষ নফল ছালাত ‘তারাবীহ’ ও ‘তাহাজ্জুদ’
নামে পরিচিত। রামাযানে এশার পর প্রথম রাতে পড়লে তাকে ‘তারাবীহ’ এবং রামাযান ও অন্যান্য
সময়ে শেষরাতে পড়লে তাকে ‘তাহাজ্জুদ’ বলা হয়।
উল্লেখ্য যে, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, ক্বিয়ামে
রামাযান, ক্বিয়ামুল লায়েল সবকিছু এক কথায় ‘ছালাতুল লায়েল’ বা ‘রাত্রির নফল ছালাত’ বলা
হয়।
এ সম্পর্কিত হাদিসগুলি নিম্নরূপ-
(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রতি রাত্রে শেষ তৃতীয়াংশে
আমাদের মর্যাদাবান বারাকাতপূর্ণ রব দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ’যে আমাকে ডাকবে
আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার নিকট কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে
আমার নিকট মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দেব।’
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, তারপর তিনি হাত বাড়িয়ে
দেন এবং বলেন, কে আছে যে এমন সত্তাকে কর্য দেবে যিনি ফকীর নন, না অত্যাচারী এবং সকাল
পর্যন্ত এ কথা বলতে থাকেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১২২৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৪৫, ৬৩২১, ৭৪৯৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৬৫৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫৮, আহমাদ ৭৫৯৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১০৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঐ লোকের ওপর
রহমত নাযিল করুন যে রাতে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত
আদায় করে। আবার নিজের স্ত্রীকেও সালাতের জন্যে জাগায়। যদি স্ত্রী না উঠে তাহলে
তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ ঐ মহিলার প্রতিও রহমত করেন যে রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদের
সালাত আদায় করে। আবার তার স্বামীকেও তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের জন্যে উঠায়। যদি স্বামী
ঘুম থেকে না উঠে তাহলে সে তার মুখে পানি ছিটে দেয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৩০, সুনান আবূ দাঊদ ১৩০৮, সুনান নাসায়ী ১৬১০, সুনান ইবনু মাজাহ
১৩৩৬, ইবনু খুযায়মাহ্ ১১৪৮, ইবনু হিব্বান ২৫৬৭, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১১৬৪, সুনান আল
কুবরা ৪৩১৪, সহীহ আত্ তারগীব ৬২৫, সহীহ আল জামি‘ ৩৪৯৪, আহমাদ ৭৩২২, ৭৩৬২, ৯৩৪৪)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) আবূ মালিক আল আশ্’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ জান্নাতে এমনসব
কক্ষ আছে যার বাইরের জিনিস ভেতর থেকে আর ভেতরের জিনিস বাইরে থেকে দেখা যায়। আর এ বালাখানা
আল্লাহ তা’আলা ঐসব ব্যক্তির জন্যে তৈরি করে রেখেছেন, যারা অন্য ব্যক্তির সঙ্গে নরম
কথা বলে। (গরীব-মিসকীনকে) খাবার দেয়। প্রায়ই (নফল) সওম পালন করে। রাত্রে এমন সময় (তাহাজ্জুদের)
সালাত আদায় করে যখন অনেক মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৩২, ইবনু হিব্বান ৫০৯, মুসতাদরাক লিল হাকিম ২৭০, শু‘আবুল ঈমান ২৮২৫,
সহীহ আত্ তারগীব ৬১৮, সহীহ আল জামি‘ ২১২৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কোন লোক যখন (রাতে)
ঘুমিয়ে যায়, শায়ত্বন (শয়তান) তার মাথার পেছনের দিকে তিনটি গিরা লাগায়। প্রত্যেক গিরায়
শায়ত্বন (শয়তান) তার মনে এ কথার উদ্রেক করে দেয় যে, এখনো অনেক রাত বাকী, কাজেই ঘুমিয়ে
থাকো। সে যদি রাতে জেগে উঠে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাহলে তার (গাফলতির) একটি গিরা
খুলে যায়। তারপর সে যদি উযূ করে, (গাফলতির) আর একটি গিরা খুলে যায়। যদি সে সালাত আরম্ভ করে তখন তার তৃতীয় গিরাটিও খুলে যায়। বস্ত্ততঃ
এ লোক পাক-পবিত্র হয়ে ভোরের মুখ দেখে, নতুবা অপবিত্র হয়ে ভোরের দিকে কলূষ অন্তর ও অলস
মন নিয়ে উঠে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২১৯, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৪২, ৩২৬৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৭৭৬, আহমাদ ৭৩১২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৭১. , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৭৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih।
(ঙ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, রাত্রে এমন একটা সময় অবশ্যই আছে, কোন
মুসলিম যদি এ সময়টা প্রাপ্ত হয় এবং আল্লাহ তা’আলার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কোন কল্যাণ
করে তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাকে তা অবশ্যই দান করেন। এ সময়টা প্রতি রাত্রেই আসে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৬৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৪০, ইসলামীক সেন্টার ১৬৪৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমাযান (রমজান) মাসের সওমের পরে
উত্তম সওম হলো আল্লাহর মাস, মুহাররম মাসের ’আশূরার সওম। আর ফরয সালাতের পরে সর্বোত্তম
সালাত হলো রাতের সালাত (অর্থাৎ- তাহাজ্জুদ)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৩৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৬৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৬৩,
সুনান আবূ দাঊদ ২৪২৯, সুনান আততিরমিযী ৪৩৮, সুনান আননাসায়ী ১৬১৩, আহমাদ ৮৫৩৪, সহীহ
ইবনু খুযায়মাহ্ ১১৩৪, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১১৫৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৪২১,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৬৩৬, ইরওয়া ৯৫১, সহীহ আত্ তারগীব ৬১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৬২২,
ইসলামীক সেন্টার ২৬২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
‘তারাবীহ’-এর ছালাতের ফযিলত
তারাবীহ ছালাতের ফযিলত প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান মাসে ক্বিয়ামুল লায়লের উৎসাহ দিতেন
(তারাবীহ সালাত), কিন্তু তাকিদ করে কোন নির্দেশ দিতেন না। তিনি বলতেন, যে লোক ঈমানের
সঙ্গে ও পুণ্যের জন্যে রমাযান মাসে রাত জেগে ’ইবাদাত করে তার পূর্বের সব সগীরাহ্ গুনাহ
ক্ষমা করে দেয়া হয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর ব্যাপারটি
এভাবেই থেকে গেল। (অর্থাৎ তারাবীহের জন্যে জামা’আত নির্দিষ্ট ছিল না, বরং যে চাইতো
সাওয়াব অর্জনের জন্যে আদায় করে নিত)। আবূ বকরের খিলাফাতকালেও এ অবস্থা ছিল। ’উমারের
খিলাফাতের প্রথম দিকেও এ অবস্থা ছিল। শেষের দিকে ’উমার (রাঃ) তারাবীহের সালাতের জন্যে
জামা’আতের ব্যবস্থা করেন এবং তখন থেকে লাগাতার তারাবীহের জামা’আত চলতে থাকল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৯৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২০০৯, ৩৫, মুসলিম ৮৫৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih।
(১৩) জানাযার ছালাতের ফযিলতঃ
প্রত্যেক মুসলিমের উপর জানাযার ছালাত ‘ফরযে
কেফায়াহ’। অর্থাৎ মুসলমানদের কেউ জানাযা পড়লে উক্ত ফরয আদায় হয়ে যাবে। অন্যথায় না পড়লে
সবাই দায়ী হবে। এক মুমিনের উপর আরেক মুমিনের অধিকার হলো কেউ মারা গেলে তার জানাযার
ছালাতে অংশগ্রহণ করা’।
সুতরাং জানাযার ছালাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
যা আদায়কারীর জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অত্যন্ত চমকপ্রদ ফযিলত বর্ণনা করেছেন। যা নিম্নরূপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের জানাযায়
ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে অংশগ্রহণ করে, এমনকি তার জানাযার সালাত আদায় করে কবরে দাফন করা
পর্যন্ত সাথে থাকে। এমন ব্যক্তি দু’ ক্বীরাত্ব সাওয়াব নিয়ে ঘরে ফেরে। প্রত্যেক ক্বীরাত্ব
উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি শুধু জানাযার সালাত আদায় করে দাফন করার আগে ফিরে
সে এক ক্বীরাত্ব সাওয়াব নিয়ে ফিরে এলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৬৫১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৭, ১৩২৩, ১৩২৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ২০৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪৫, সুনান আননাসায়ীর ৫০৩২, আহমাদ ৯৫৫১, ইবনু
হিব্বান ৩০৮০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৯৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫০১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৪) ইশরাক্ব ও চাশতের ছালাতের ফযিলতঃ
শুরুক অর্থ উদিত হওয়া। ‘ইশরাক’ অর্থ চমকিত
হওয়া। ‘যোহা’ অর্থ সূর্য গরম হওয়া। এই ছালাত সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে
পড়লে একে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’ বলা হয় এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে ‘ছালাতুল
যোহা’ বা চাশতের ছালাত বলা হয়। এই ছালাত বাড়ীতে পড়া মুস্তাহাব। এটি সর্বদা পড়া এবং
আবশ্যিক গণ্য করা ঠিক নয়। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কখনও পড়তেন, কখনো ছাড়তেন।
এ ছালাত অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ। এ সম্পর্কিত হাদিসগুলি
নিম্নরূপ-
(ক) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ফাজ্রের (ফজরের) সালাত জামা’আতে আদায় করল, অতঃপর বসে বসে সূর্যোদয় পর্যন্ত
আল্লাহর যিকর করতে থাকল, তারপর দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করল, সে একটি পূর্ণ হাজ্জ ও
একটি সম্পূর্ণ ’উমরার সমান সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি তিনবার বলেছেন, সম্পূর্ণ হাজ্জ ও সম্পূর্ণ ’উমরার সাওয়াবপ্রাপ্ত
হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৭১, সুনান আততিরমিযী
৫৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ৪৬৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) বুরায়দাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ মানুষের শরীরে তিনশত ষাটটি
জোড়া আছে। প্রত্যেক লোকের উচিত প্রত্যেকটি জোড়ার জন্যে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা। সাহাবীগণ
আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কার সাধ্য আছে এ কাজ করতে? তিনি বললেন, মসজিদে পড়ে থাকা
থুথু মুছে ফেলাও একটি সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। পথ থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে দেয়াও
একটি সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। তিনশত ষাট জোড়ার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেবার মতো কোন জিনিস
না পেলে ’যুহার (চাশ্ত/চাশত) দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করে নেয়া তোমার জন্যে যথেষ্ট।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩১৫, সুনান আবূ দাঊদ ৫২৪২,
ইবনু খুযায়মাহ্ ১২২৬, শু‘আবুল ইমান ১০৬৫০, ইরওয়া ৮৬০, আহমাদ ২২৯৯৮, সহীহ আত্ তারগীব
৬৬৬, ২৯৭১, সহীহ আল জামি‘ ৪২৩৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih।
(গ) আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সকাল হতেই তোমাদের প্রত্যেকের
প্রতিটা গ্রন্থির জন্যে ’সদাক্বাহ্ (সাদাকা)’ দেয়া অবশ্য দায়িত্ব। অতএব প্রতিটা ’তাসবীহ’ই
অর্থাৎ ’সুবহা-নাল্ল-হ’ বলা ’সদাক্বাহ্ (সাদাকা)’। প্রতিটি ’তাহমীদ’ই অর্থাৎ ’আলহামদুলিল্লা-হ’
পড়া সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। প্রতিটি ’তাহলীল’ অর্থাৎ ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলা সদাক্বাহ্
(সাদাকা)। প্রতিটি ’তাকবীর’ অর্থাৎ ’আল্ল-হু আকবার’ বলা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। ’নেক কাজের
নির্দেশ’ করা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। আর
এ সবের পরিবর্তে ’যুহার দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করে নেয়া যথেষ্ট। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৫৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২০, আহমাদ ২১৪৭৫, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৮৯৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০০৭, সহীহ আত্ তারগীব ৬৬৫, সহীহ আল জামি‘
৮০৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৫) কুরআন তেলাওয়াতের ফযিলতঃ
বিশ্ব মানবতার মহা সংবিধান হচ্ছে পবিত্র কুরআন।
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জীবন ব্যবস্থা হিসাবে বিভিন্ন সময়ে জীবরাঈল (আঃ) মারফত
বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর নাযিল করেছেন এবং এর হেফাযতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ
তা‘আলা নিজেই নিয়েছেন। তিনি বলেন,
‘আমরা কুরআনুল কারীম নাযিল করেছি এবং আমরাই
এর হেফাযত করব।’ (সুরা হিজর-১৫/৯)।
যা অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য চূড়ান্ত জীবন বিধান হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে।
তাতে রয়েছে মানুষের জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগের সমাধান। সুতরাং কুরআনের জ্ঞানার্জন
করা, শিক্ষা দেওয়া, তেলাওয়াত করা এবং এর আদেশ-নিষেধগুলি বক্ষে ধারণ করা প্রতিটি বান্দার
জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্য যা প্রচুর ছওয়াব ও ফযীলতে পরিপূর্ণ। হাদিসে এসেছে,
উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম, যে কুরআন
শিক্ষা করে এবং তা (মানুষকে) শিক্ষা দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২১০৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০২৭, ৫০২৮, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৫২, সুনান
আততিরমিযী ২৯০৭, আহমাদ ৫০০, শু‘আবূল ঈমান ১৭৮৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১১৮, সহীহাহ্ ১১৭৩,
সহীহ আত্ তারগীব ১৪১৫, সহীহ আল জামি‘ ৩৩১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মসজিদে গিয়ে কুরআন শিক্ষা করা এবং অন্য শিক্ষা
দেওয়ার ফযিলত অনেক বেশী। যা আরবের উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট মূল্যবান উটের চেয়েও অধিক। এমনকি প্রতিটি আয়াতের বিনিময় একটি
করে উটের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে,
উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা (একদিন) মসজিদের প্রাঙ্গণে বসেছিলাম। এ সময়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আসলেন ও (আমাদেরকে) বললেন, তোমাদের কেউ প্রতিদিন সকালে ’বুত্বহান’
অথবা ’আক্বীক’ বাজারে গিয়ে দু’টি বড় কুঁজওয়ালা উটনী কোন অপরাধ সংঘটন ও আত্মীয়তার বন্ধন
ছিন্ন করা ছাড়া নিয়ে আসতে পছন্দ করবে? এ কথা শুনে আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের
প্রত্যেকেই এ কাজ করতে পছন্দ করবে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
যদি তা-ই হয় তাহলে তোমাদের কেউ কোন মসজিদে গিয়ে সকালে আল্লাহর কিতাবের দু’টি আয়াত
(মানুষকে) শিক্ষা দেয় না বা (নিজে) শিক্ষাগ্রহণ করে না কেন? অথচ এ দু’টি আয়াত শিক্ষা
দেয়া তার জন্য দু’টি উটনী অথবা তিনটি আয়াত শিক্ষা দেয়া তার জন্য তিনটি উটনী অথবা চারটি
আয়াত শিক্ষা দেয়া তার জন্য চারটি উটনীর চেয়েও উত্তম। সারকথা কুরআনের যে কোন সংখ্যক
আয়াত, একই সংখ্যক উটনীর চেয়ে উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২১১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৩, ইবনু
আবী শায়বাহ্ ৩০০৭৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৪১৮, সহীহ আল জামি ২৬৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
পৃথিবীতে এমন কোনো গ্রন্থ
নেই যা পাঠ করলে বিশেষভাবে নেকী হয়। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম হলো কুরআনুল কারীম। যা তেলাওয়াত
করলে নেকী হয়। তেলাওয়াতকৃত প্রতিটি হরফে দশটি নেকী অর্জিত হয়। হাদিসে এসেছে,
(ক) আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর
কিতাবের কোন একটি অক্ষরও পাঠ করবে, সে নেকী পাবে। আর নেকী হচ্ছে ’আমলের দশ গুণ। আমি
বলছি না যে,(الٓمٓ) ’আলিফ লাম মীম’ একটি অক্ষর। বরং ’আলিফ’
একটি অক্ষর, ’লাম’ একটি অক্ষর ও ’মীম’ একটি অক্ষর। (তাই আলিফ, লাম ও মীম বললেই ত্রিশটি
নেকী পাবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৩৭, সুনান আততিরমিযী
২৯১০, সহীহাহ্ ৩৩২৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৪১৬, সহীহ আল জামি‘ ৬৪৬৯, দারিমী ৩৩১১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন পাঠকারীকে কিয়ামতের
দিন বলা হবে, পাঠ করতে থাকো আর উপরে উঠতে থাকো। (অক্ষরে অক্ষরে ও শব্দে শব্দে) সুস্পষ্টভাবে
পাঠ করতে থাকো, যেভাবে দুনিয়াতে স্পষ্টভাবে পাঠ করতে। কারণ তোমার স্থান (মর্যাদা) হবে
যা তুমি পাঠ করবে শেষ আয়াত পর্যন্ত (আয়াত পাঠের তুলনাগত দিক থেকে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৩৪, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৬৪, সুনান
তিরমিযী ২৯১৪, সহীহাহ্ ২২৪০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৯০, সহীহ আত্ তারগীব ১৪২৬, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৪২৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) আবূ মূসা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু
’আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঐ মু’মিন যে কুরআন পাঠ করে এবং সে অনুযায়ী
’আমল করে, তাঁর দৃষ্টান্ত ঐ লেবুর মত যা খেতে সুস্বাদু এবং গন্ধে চমৎকার। আর ঐ মু’মিন
যে কুরআন পাঠ করে না; কিন্তু এর অনুসারে ’আমল করে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ খেজুরের মত
যা খেতে সুস্বাদু কিন্তু সুগন্ধ নেই। আর মুনাফিক যে কুরআন পাঠ করে; তার উদাহরণ হচ্ছে,
ঐ রায়হানের মত, যার মন মাতানো খুশবু আছে, অথচ খেতে একেবারে বিস্বাদ। আর ঐ মুনাফিক যে
কুরআন পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ মাকাল ফলের মত, যা খেতে বিস্বাদ এবং গন্ধে
দুর্গন্ধময়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৫৯, ৫০২০,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) নাওয়াস ইবনু সাম্’আন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কুরআন ও কুরআন পাঠকদের
যারা কুরআন অনুযায়ী ’আমল করত (তাদের) কিয়ামতের দিন উপস্থিত করা হবে। তাদের সামনে দু’টি
মেঘখণ্ড অথবা দু’টি কালো ছায়ারূপে থাকবে সূরা আল বাকারাহ্ ও সূরা আ-লি ’ইমরান। এদের
মাঝখানে থাকবে দীপ্তি। অথবা থাকবে প্রসারিত- পালক বিশিষ্ট পাখির দু’টি ঝাঁক। তারা আল্লাহর
নিকট কুরআন পাঠকের পক্ষে সুপারিশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২১২১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৫, সুনান
আততিরমিযী ২৮৮৩, আহমাদ ১৭৬৩৭, শু‘আবূল ঈমান ২১৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৬৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন
১৭৪৬, ইসলামীক সেন্টার ১৭৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও সূরার পৃথকভাবে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফযিলত বর্ণনা করেছেন। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পরে আয়াতুল
কুরসী পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আর কোন বাধা থাকবে না মৃত্যু ব্যতীত’।
(নাসাঈ কুবরা হা/৯৯২৮)।
এ ছাড়াও ‘যে ব্যক্তি শয়নকালে আয়াতুল কুরসী
পাঠ করবে সকাল পর্যন্ত তার হেফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকবে। যাতে শয়তান তার
নিকটবর্তী হতে না পারে’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৩,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩১১, ৩২৭৫, ৫০১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ কিতাবুল ওয়াকালাহ
অনুচ্ছেদ-১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ অনুচ্ছেদ ১৪৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাদিসে এসেছে,
আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে সূরা
আল বাকারার শেষ দু’টি আয়াত, অর্থাৎ- ’আ-মানার রসূলু’ হতে শেষ পর্যন্ত পড়ে, সেটাই তার
জন্য যথেষ্ট হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৫, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৪০, ৪০০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৮০৭, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৪৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৬৭, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাদিসে এসেছে,
আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ
পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমাহ্ হতে আগামী জুমাহ্ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৫৯৯৬, ইরওয়া ৬২৬, সহীহ আত্ তারগীব ৭৩৬, সহীহ আল জামি‘ ৬৪৭০, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫২৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এ বিষয়ে অন্য হাদিসে এসেছে,
আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ-এর প্রথম দশটি আয়াত
মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রাখা হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৯,
সুনান আবূ দাঊদ ৪৩২৩, সুনান আততিরমিযী ২৮৮৬, আহমাদ ২১৭১২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩৩৯১,
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৭, রিয়াযুস্ সলিহীন ১০২৮, সহীহাহ্ ৫৮২, সহীহ আত্ তারগীব
১৪৭২, সহীহ আল জামি‘ ৬২০১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৫৩, ইসলামীক সেন্টার. ১৭৬০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাদিসে এসেছে,
আবূ দারদা (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কি প্রতি রাতে
এক-তৃতীয়াংশ কুরআন তিলাওয়াতে সক্ষম? সাহাবীগণ বললেন, প্রতি রাতে কি করে এক-তৃতীয়াংশ
কুরআন পড়া যাবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সূরা ’কুল হুওয়াল্ল-হু
আহাদ’ কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২১২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৭৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১১, দারিমী ৩৪৭৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৮০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাদিসে এসেছে,
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে একটি সেনাদলের সেনাপতি করে পাঠালেন। সে তার সঙ্গীদের
সালাত আদায় করাত এবং ’কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ দিয়ে সালাত শেষ করত। তারা মদীনায় ফেরার
পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ কথা উল্লেখ করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে জিজ্ঞেস করো কি কারণে সে তা করে। সে বলল, এর কারণ
এতে আল্লাহর গুণাবলীর উল্লেখ রয়েছে। আর আমি আল্লাহর গুণাবলী পড়তে ভালবাসি। তার উত্তর
শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে জানিয়ে দাও, আল্লাহ তা’আলাও
তাকে ভালবাসেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২৯, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৩৭৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৮১৩, ইবনু হিববান ৭৯৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৮৩, সুনান আননাসায়ী ৯৯৩, আধুনিক প্রকাশনী-
৬৮৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাদিসে এসেছে,
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি
বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি এ ’কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ সূরাকে ভালবাসি। (এ কথা শুনে)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার এ সূরার প্রতি ভালবাসা তোমাকে
জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৩০,
সুনান আততিরমিযী ২৯০১, দারিমী ৩৪০৫, সহীহ ইবনু হিববান ৭৯২, আহমাদ ১২৪৩২, সহীহ আত্ তারগীব
১৪৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) দ্বীনি দাওয়াতের গুরুত্ব ও ফযিলতঃ
পৃথিবীতে যতো নবী রাসূল এসেছিলেন সকলেই তাওহীদের দাওয়াত দিয়ে গেছেন। আল্লাহ বলেন, , প্রত্যেক জাতির
নিকট আমরা রাসূল প্রেরণ করেছি (তারা যেন ঐ মর্মে দাওয়াত দেয়) তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত
কর এবং ত্বাগুত থেকে বেচেঁ থাক'। (সুরা নাহল-১৬/৩৬)।
এ দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আল্লাহ তাঁর প্রেরিত
রাসূলকে সর্তকও করেছেন । যেমন আল্লাহ বলেন,
‘হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা পৌঁছে
দাও। তুমি যদি না কর, তবে তুমি রিসালাতের দায়িত্ব পালন করলে না’। (সুরা মায়েদা-৫/৬৭)।
আল্লাহ প্রদত্ত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রদর্শিত
অভ্রান্ত সত্যকে জনগণের মাঝে প্রচার করা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের কুরআন-সুন্নাহ-এর
স্বনিষ্ট অনুসারীদের দায়িত্ব। শয়তানের ধোঁকায় প্ররোচিত হয়ে বান্দা অন্যায়ে প্রলুব্ধ
হয়। দুনিয়ার নগদ চাকচিক্যের মোহে মানুষ আখেরাতকে ভুলে গিয়ে স্রষ্টার আদেশ-নিষেধকে অমান্য
করে। দিকভ্রান্ত উম্মাহকে হেদায়েতের আলোকবর্তিকায় ফিরে আনার প্রাণান্তকর চেষ্টাকারীদেও
জন্য সুসংবাদ রয়েছে। দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন ‘তুমি মানুষকে
তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক
কর সুন্দর পন্থায়’। (সুরা নামল-১৬/১২৫)।
আল্লাহ বলেন,
‘ঐ ব্যক্তির চাইতে কথায় উত্তম আর কে আছে, যে
(মানুষকে) আল্লাহর দিকে ডাকে ও নিজে সৎকর্ম করে এবং বলে যে, নিশ্চয়ই আমি আত্মসমর্পণকারীদের
অন্তর্ভুক্ত। (সুরা হামীম সাজদাহ-৪১/৩৩)।
হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা
করত সুন্দরভাবে দাওয়াত দিতে হবে।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার পালনকর্তার দিকে (মানুষকে) দাওয়াত দাও।
আর তুমি অবশ্যই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবে না’। (সুরা
ক্বাছাছ ২৮/৮৭)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পক্ষ হতে (মানুষের কাছে)
একটি বাক্য হলেও পৌঁছিয়ে দাও। বনী ইসরাঈল হতে শোনা কথা বলতে পারো, এতে কোন আপত্তি নেই।
কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে
প্রস্তুত করে নেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৮, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৬১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২১২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দাওয়াতী ময়দানে একাকী দাওয়াতের চেয়ে সমবেত
প্রচেষ্টা বেশী ফলপ্রসূ হয়। সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার
প্রতি ইঈিত দিয়ে আল্লাহ বলেন, 'বলুন ইহাই আমার পথ আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর
দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র, আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভূক্ত নয়'। (সুরা ইউসুফ-১০৮)।
আল্লাহ বলেন, মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত,
যারা কল্যাণের দিকে আহবান করে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর
তারাই হবে সফলকাম’। (সুরা আল ইমরান ৩/১০৪)।
সুতরাং একাকী বা সংঘবদ্ধভাবে মানুষকে হক্বের
দিকে দাওয়াত দিতে হবে। হক হ’ল আল্লাহর বিধান যা তাঁর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। আল্লাহ
বলেন,
‘আর তুমি বল হক আসে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে।
অতঃপর যার ইচ্ছা তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করুক, যার ইচ্ছা অবিশ্বাস করুক। আমরা সীমালংঘনকারীদের
জন্য জাহান্নাম প্রস্ত্তত করে রেখেছি’। (সুরা কাহফ-১৮/২৯)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,‘তোমার প্রভুর বাক্য সত্য
ও ন্যায় দ্বারা পূর্ণ। তাঁর বাক্যের পরিবর্তনকারী কেউ নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’।
(সুরা আন’আম-৬/১১৫)।
অথচ মানুষ বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে, সামাজিকতার
দোহাই দিয়ে কিংবা অধিকাংশের দোহাই দিয়ে আল্লাহ প্রদত্ত অভ্রান্ত সত্যের চূড়ান্ত মাপকাঠি
কুরআন ও সুন্নাহর বিধানকে এড়িয়ে চলছে। ধর্মের নামে বিভিন্ন শিরকী ও বিদ’আতী আমল করছে।
অথচ এসব কখনই সত্যের মাপকাঠি নয়। এ বিষয়ে সতর্কতাবাণী দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি তুমি
পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চল, তাহ’লে ওরা তোমাকে আল্লাহর পথ হ’তে বিপদগামী করে
দিবে। তারা তো কেবল ধারণার অনুসরণ করে এবং অনুমানভিত্তিক কথা বলে’। (সুরা আন’আম
-৬/১১৬)।
মালিক ইবনু আনাস (রাঃ) (রহঃ) হতে মুরসালরূপে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের
মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ
পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না- আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসূলের হাদীস। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৬, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৫৯৪)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
অতএব অশান্তিময় বিশ্বকে যদি বাঁচাতে হয়, তাহ’লে
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার বিকল্প নেই। আর সেই সাথে ন্যায়ের পক্ষে ও
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ মর্মে হাদিসে এসেছে,
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন শারী’আত বিরোধী কার্যকলাপ হতে দেখে, সেটাকে যেন নিজ হাতে
পরিবর্তন করে দেয়। যদি নিজ হাতে সেগুলো পরিবর্তন করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে মুখে নিষেধ
করবে। আর যদি মুখে নিষেধ করারও সাধ্য না থাকে, তাহলে অন্তরে সেটা ঘৃণা করবে। এটা সবচেয়ে
দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৩৭,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯, সুনান আবূ দাঊদ ১১৪০, সুনান
আততিরমিযী ২১৭২, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০১৩, সুনান আননাসায়ী ৫০০৮, সহীহ আত্ তারগীব ২৩০২,
মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ৫৬৪৯, আহমাদ ১০৬৮৯, ১০৭৬৬, ১১০৬৮, ১১১০০, ১১১২২, ১১৪৬৬, মুসনাদ
আবূ ইয়া‘লা ১২০৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩০৭, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ১১৭৩৯, হিলইয়াতুল
আওলিয়া ১০/২৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দাওয়াতের ফযিলত
এ বিষয়ে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন -
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন লোককে সৎ কাজের
দিকে আহবান করবে, তার জন্যও সে পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে যা তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে,
অথচ তাদের সাওয়াবের কোন অংশ একটুও কমবে না। অনুরূপ যে ব্যক্তি কাউকে গোমরাহীর দিকে
আহবান করে তারও সে পরিমাণ গুনাহ হবে, যতটুকু গুনাহ তার অনুসারীদের জন্য হবে। অথচ এটা
অনুসারীদের গুনাহকে একটুও কমাবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৬৫৬০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন নেক কাজ চালু
করলো সে এটি চালু করার ছওয়াব তো পাবেই, তারপরের লোকেরা যারা এ নেক কাজের উপর আমল করবে
তাদেরও সমপরিমাণ নেকী হবে। অথচ তাদের নেকী কমবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ
রীতির প্রচলন করলো তার জন্য গুনাহ রয়েছে এবং পরবর্তীতে যারা এ মন্দ রীতির উপর আমল করবে
তাদেরও সমপরিমাণ গুনাহ সে পাবে। তাদের গুনাহও কম করা হবে না’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৬৬৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৫৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,
আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর
রসূল! আমার সওয়ারী চলতে পারছে না, আপনি আমাকে একটি সওয়ারীর ব্যবস্থা করে দিন। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ সময় তো আমার নিকট তোমাকে দেবার মতো কোন
সওয়ারী নেই। এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! আমি তাকে এমন এক লোকের সন্ধান দিতে
পারি, যে তাকে সওয়ারীর ব্যবস্থা করে দিতে পারে। এটা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি কাউকে কোন কল্যাণের দিকে পথপ্রদর্শন করে, সে উক্ত কার্য
সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৩, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৪৭৪৬, ইসলামিক সেন্টার ৪৭৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
তিনি আরো বলেন,
সাহল ইবনু সা‘আদ (রহ.) হতে বর্ণিত যে, তিনি
খায়বারের যুদ্ধের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, আমি এমন
এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব যার হাতে বিজয় আসবে। অতঃপর কাকে পতাকা দেয়া হবে, সেজন্য সকলেই
আশা করতে লাগলেন। পরদিন সকালে প্রত্যেকেই এ আশায় অপেক্ষা করতে লাগলেন যে, হয়ত তাকে
পতাকা দেয়া হবে। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আলী কোথায়? তাঁকে
জানানো হলো যে, তিনি চক্ষুরোগে আক্রান্ত। তখন তিনি ‘আলীকে ডেকে আনতে বললেন। তাকে ডেকে
আনা হল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মুখের লালা তাঁর উভয় চোখে
লাগিয়ে দিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেলেন যে, তাঁর যেন কোন অসুখই ছিল না।
তখন ‘আলী (রাঃ) বললেন, আমি তাদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না তারা
আমাদের মত হয়ে যায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সোজা এগিয়ে যাও।
তুমি তাদের প্রান্তরে উপস্থিত হলে প্রথমে তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান জানাও এবং তাদের
কর্তব্য সম্পর্কে তাদের অবহিত কর। আল্লাহর কসম, যদি একটি ব্যক্তিও তোমার দ্বারা হিদায়াত
লাভ করে, তবে তা তোমার জন্য লাল রংয়ের উটের চেয়েও উত্তম। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৪২, ৩০০৯, ৩৭০১, ৪২১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬১১৭,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪০৬, আহমাদ ২২৮৮৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
২৭৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদিসে এসেছে,
আবূ ’আবস্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে যে বান্দার পদদ্বয় ধূলায় ধূসরিত
হয়, জাহান্নামের আগুন তার পদদ্বয় স্পর্শ করবে না। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮১১, ৯০৭, সহীহ আত্ তারগীব
৬৮৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদিসে এসেছে,
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর পথে একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত
করা, দুনিয়া ও তার সমুদয় সমস্ত সম্পদ হতে সর্বোত্তম। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৮০,
সহীহুল বুখারী ৪৬১৫, সুনান আততিরমিযী ১৬৫১, মুসনাদ আহমাদ ১২৩৫০, সহীহ ইবনু হিব্বান
৪৬০২, সহীহ আল জামি ৪১৫১, সহীহ আত্ তারগীব ১২৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দাওয়াত না দেয়ার পরিণতি
শয়তান প্রতিনিয়ত সমাজ দূষণে রত থাকে এবং মানুষকে
তার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের মাধ্যমে শয়তানের
প্ররোচনায় অন্যায়ে প্রলুব্ধ মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে ফিরিয়ে আনা যায়। যদি দাওয়াতের
এ মহান দায়িত্ব পালন না করা হয় তবে তাহ’লে আল্লাহ তা‘আলা সকলকে পাকড়াও করবেন। এ মর্মে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
জারীর ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে জাতিতে কোন
লোক পাপে লিপ্ত থাকে, আর ঐ ব্যক্তিকে পাপ থেকে ফেরাতে জাতির লোকেদের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও
না ফেরায়, তাহলে তাদের মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও
করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৪৩, সুনান আবূ দাঊদ
৪৩৩৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৩১৬, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
২০৬৮৬, আহমাদ ১৮৭৩১, ১৮৭৬৮, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৭০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
হাদিসে এসেছে,
আবূ
বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি সমবেত লোকেদের উদ্দেশে বলেন, হে জনগণ! তোমরা নিশ্চয়
এ আয়াতটি পাঠ করেছ, (অর্থাৎ-) ’’হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ওপর এ কথা আবশ্যিক করে
নাও, যে পথভ্রষ্ট হয়েছে, সে তোমাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত
তোমরা হিদায়াতের উপর স্থির থাকবে’’। এ সম্পর্কে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মানুষ যখন কোন খারাপ কাজ হতে দেখে, সেটাকে পরিবর্তন করে
না, অনতিবিলম্বেই আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর তাঁর ’আযাব নাযিল করবেন।
আর আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর এক বর্ণনায়
আছে যে, মানুষ যখন কোন অত্যাচারীকে অত্যাচার করতে দেখেও তার হাত ধরে না ফেলে, অনতিবিলম্বেই
আল্লাহ তা’আলা তাকে শাস্তি প্রদান করবেন। ইমাম আবূ দাঊদ-এর অপর এক বর্ণনায় আছে যে,
যে জাতির মধ্যে পাপাচার হয়, আর সে জাতির পরিবর্তন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সেটার পরিবর্তন
না করে, তাহলে অনতিবিলম্বে আল্লাহ তা’আলা তাকে শাস্তি প্রদান করবেন। তাঁর অপর এক বর্ণনায়
আছে যে, যে জাতি পাপাচারে লিপ্ত হয়, আর পাপে লিপ্তদের তুলনায় সাধারণ লোক সংখ্যায় বেশি
হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৪২, সুনান ইবনু মাজাহ
৪০০৫, সুনান আততিরমিযী ২১৬৮, সুনান আবূ দাঊদ ৪৩৩৮, সহীহুল জামি‘ ১৯৭৪, আহমাদ ৩০, আবূ
ইয়া‘লা ১৩১, অন্য রিওয়ায়তে আবূ দাঊদ ৪৩৩৭, তাখরীজুল মুখতার ৫৪-৫৮, সহীহাহ ১৫৬৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যত্র এসেছে,
নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক নির্ধারিত
শাস্তি প্রদানের বিষয়ে অলসতা করাকে ঐ সম্প্রদায়ের সাথে তুলনা করা যায়, যারা নৌকায় স্থান
পাওয়ার জন্য লটারি করেছে এবং লটারি অনুসারে তাদের কেউ নৌকার নিচে এবং কেউ উপরে বসেছে।
নৌকার নিচের লোকেরা উপরের লোকেদের পাশ দিয়ে পানির জন্য গমনাগমন করত, ফলে উপরের লোকেদের
কষ্ট হত। একদিন নিচের লোকেদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি কুঠার হাতে নিয়ে নৌকার তলায় কাঠ
কোপাতে আরম্ভ করল। তখন উপরের লোকেরা তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, সর্বনাশ! তুমি কি করছ?
লোকটি বলল, তোমরা আমাদের কারণে কষ্ট পাচ্ছ। আর আমাদেরও পানি একান্ত প্রয়োজন। এমতাবস্থায়
যদি তারা তার হস্তদ্বয় ধরে ফেলে, তাহলে তাকেও রক্ষা করবে, নিজেরাও রক্ষা পাবে। আর যদি
তাকে তার কাজের উপরই ছেড়ে দেয়, তাহলে তাকেও ধ্বংস করবে, নিজেদেরকেও ধ্বংস করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৩৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৬৮৬, ২৪৯৩, সুনান আততিরমিযী ২১৭৩, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৬৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৩০৯,
আহমাদ ১৮৩৭০, আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১৯৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৯১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৫০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদিসে এসেছে,
হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ পবিত্র সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ,
নিম্নোক্ত দু’টো বিষয়ের মধ্যে একটি অবশ্যই হবে। হয় অবশ্যই তুমি সৎকাজের আদেশ দান করবে
এবং মন্দকাজ হতে নিষেধ করবে; নতুবা অনতিবিলম্বে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ওপর ’আযাব নাযিল
করবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে; কিন্তু তোমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করা
হবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৪০, সুনান আততিরমিযী
২১৬৯, সহীহুল জামি ৭০৭০, সহীহ আত্ তারগীব ২৩১৩, আহমাদ ২৩৩০১, আবূ ইয়া‘লা ৫০৩৫, শু‘আবুল
ঈমান ৭৫৫৮ হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/২৭৯, আল মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৩৯৭, আল মু‘জামুল
আওসাত্ব ১৩৭৯, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৬৯৪)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক, লেখক, সংকলক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ব্লগার ও সম্পাদক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
.................................................................
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে
PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
লেখকের সকল বইয়ের প্রতিটি
বিষয়ে সর্বাধিক হাদিস সংযোজন করা হয়েছে এবং প্রতিটি হাদিসের পিছনে সর্বোচ্চ রেফারেন্স
দেয়া হয়েছে তথা ঐ হাদিসটি আরো কোন্ কোন্ গ্রন্থে আছে তা উল্লেখ করা হয়েছে যা পৃথিবীর
কোনো ইসলামি লেখকের কোনো বইয়ে এতো দলিল নেই।
Please Share On
.jpg)
No comments:
Post a Comment