বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম
রাসুল (ছাঃ)-এর উপর অধিকহারে দরুদ পড়ার ফজিলত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
প্রতি অধিকহারে দরূদ পাঠে সমস্ত বালা-মসিবত, পেরেশানী-হয়রানী, মনের কষ্ট, দুঃখ-দূর্দশা
ও অভাব-অনটন দূর হয় এবং রিজিকের প্রশস্ততা আসে। এছাড়া তার গুণাহ মাফ করা হয়। যেমনটি
অনুমিত হয় নিম্নোক্ত হাদীস থেকে।
উবাই
ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কাছে গিয়ে আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনার উপর অনেক বেশী দরূদ পাঠ করি। আপনি
আমাকে বলে দিন আমি (দু’আর জন্য যতটুকু সময় বরাদ্দ করে রেখেছি তার) কতটুকু সময় আপনার
উপর দরূদ পাঠাবার জন্য নির্দিষ্ট করব? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
তোমার মন যা চায়। আমি আরয করলাম, যদি এক-তৃতীয়াংশ করি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তোমার মন যা চায়, যদি আরো বেশী কর তাহলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর। আমি আরয করলাম,
যদি অর্ধেক সময় নির্ধারণ করি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার মন যতটুকু
চায় কর। যদি আরো বেশী নির্ধারণ কর তাহলে তোমর জন্যই ভালো। আমি বললাম, যদি দুই-তুতীয়াংশ
করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়। যদি আরো বেশি নির্ধারণ
কর তোমার জন্যই কল্যাণকর। আমি আরয করলাম, তাহলে আমি আমার দু’আর সবটুকু সবসময়ই আপনার
উপর দরূদ পড়ার কাজে নির্দিষ্ট করে দেব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
তবে এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে, তোমার দীন-দুনিয়ার মকসুদ পূর্ণ হবে এবং তোমার গুনাহ
মাফ হয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৯, সুনান
আততিরমিযী ২৪৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭০, মুস্তাদরাক ৭৬৭৭)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
আমাদের নবি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার আখেরী রাসূল। তিনি গোটা মানবজাতির জন্য আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ
দূত। তাই তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহতে বিশ্বাস ও আল্লাহর আনুগত্যের
দাবি অর্থহীন। কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে।আল্লাহকে পাওয়ার
একমাত্র পথ খাতামুন্নাবিয়ীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ।
তাই তাঁর জন্য হৃদয়ের গভীরে মহববত ও ভালবাসা পোষণ করা এবং তাঁর জন্য আল্লাহর দরবারে
কায়মনো বাক্যে দুআ করা প্রত্যেক উম্মতির ইমানি কর্তব্য। কুরআন মজীদে স্বয়ং আল্লাহ
তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দরূদ পাঠের তথা আল্লাহর দরবারে
তাঁর জন্য দুআ করার আদেশ করেছেন। এটা একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তাঁর রাসূলের মর্যাদার
প্রমাণ, অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উপায়।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ নবির উপর রহমত নাযিল করেন
এবং ফেরেশতারা তাঁর জন্য রহমতের দুআ করেন। সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ
পড় এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সূরা আহযাব: ৫৬)।
আয়াতের তাফসীরঃ
(এক) আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীর প্রতি দরূদের অর্থ
হচ্ছে, আল্লাহ নবীর প্রতি সীমাহীন করুণার অধিকারী৷ তিনি তার প্রশংসা করেন। তার কাজে
বরকত দেন৷ তার নাম বুলন্দ করেন। তার প্রতি নিজের রহমতের বারি বর্ষণ করেন। ফেরেশতাদের
পক্ষ থেকে তার প্রতি দরূদের অর্থ হচ্ছে, তারা তাকে চরমভাবে ভালোবাসেন এবং তার জন্য
আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, আল্লাহ যেন তাকে সর্বাধিক উচ্চ মর্যাদা দান করেন, তার শরীয়াতকে
প্রসার ও বিস্তৃতি দান করেন এবং তাকে একমাত্র মাহমুদ তথা সবোর্চ্চ প্রশংসিত স্থানে
পৌঁছিয়ে দেন। পূর্বাপর বিষয়বস্তুর প্রতি দৃষ্টি দিলে এ বর্ণনা পরস্পরায় একথা কেন বলা
হয়েছ তা পরিষ্কার অনুভব করা যায়৷ তখন এমন একটি সময় ছিল যখন ইসলামের দুশমনরা এ সুস্পষ্ট
জীবন ব্যবস্থার বিস্তার ও সম্প্রসারণের ফলে নিজেদের মনের আক্রোশ প্রকাশের জন্য নবী
করীমের (সা) বিরুদ্ধে একের পর এক অপবাদ দিয়ে চলছিল এবং তারা নিজেরা একথা মনে করছিল
যে, এভাবে কাঁদা ছিটিয়ে তারা তার নৈতিক প্রভাব নির্মূল করে দেবে। অথচ এ নৈতিক প্রভাবের
ফলে ইসলাম ও মুসলমানরা দিনের পর দিন এগিয়ে চলছিল। এ অবস্থায় আলোচ্য আয়াত নাযিল করে
আল্লাহ দুনিয়াকে একথা জানিয়ে দেন যে, কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকরা আমার নবীর দুর্নাম
রটাবার এবং তাকে অপদস্ত করার যতই প্রচেষ্টা চালাক না কেন শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হবে৷
কারণ আমি তার প্রতি মেহেরবান এবং সমগ্র বিশ্ব জাহানের আইন ও শৃংখলা ব্যবস্থা যেসব ফেরেশতার
মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তারা সবাই তার সহায়ক ও প্রশংসাকারী। আমি যেখানে তার নাম বুলন্দ
করছি। এবং আমার ফেরেশতারা তার প্রশংসাবলীর আলোচনা করছে সেখানে তার নিন্দাবাদ করে তারা
কি লাভ করতে পারে? আমার রহমত ও বরকত তার সহযোগী এবং আমার ফেরেশতারা দিনরাত দোয়া করছে,
হে রব্বুল আলামীন! মুহাম্মাদের (সা.) মর্যাদা আরো বেশী উঁচু করে দাও এবং তার দীনকে
আরো বেশী প্রসারিত ও বিকশিত করো৷ এ অবস্থায় তারা বাজে অস্ত্রের সাহায্যে তার কি ক্ষতি
করতে পারে? (তাফসীর ফি যিলালিল কুরআন ও জালাইন)।
(দুই) এ আয়াতে মুসলমানদেরকে দু’টো জিনিসের হুকুম
দেয়া হয়েছে। একটি হচ্ছে, “সাল্লু আলাইহে অর্থাৎ তার প্রতি দরূদ পড়ো। অন্যটি হচ্ছে,
” ওয়া সাল্লিমূ তাসলীমা” অর্থাৎ তার প্রতি সালাম ও প্রশান্তি পাঠাও ৷ “সালাত” শব্দটি
যখন “আলা” অব্যয় সহকারে বলা হয় তখন এর তিনটি অর্থ হয়ঃ এক, কারো অনুরক্ত হয়ে পড়া! দুই,
কারো প্রশংসা করা। তিন, কারো পক্ষে দোয়া করা। এ শব্দটি যখন আল্লাহর জন্য বলা হবে
তখন একথা সুম্পষ্ট যে, তৃতীয় অর্থটির জন্য এটি বলা হবে না। কারণ আল্লাহর অন্য কারো
কাছে দোয়া করার ব্যাপারটি একেবারেই অকল্পনীয়৷ তাই সেখানে অবশ্যই তা হবে শুধুমাত্র
প্রথম দুটি অর্থের জন্য। কিন্তু যখন এ শব্দ বান্দাদের তথা মানুষ ও ফেরেশতাদের জন্য
বলা হবে তখন তা তিনটি অর্থেই বলা হবে। তার মধ্যে ভালোবাসার অর্থও থাকবে, প্রশংসার
অর্থও থাকবে এবং দোয়া ও রহমতের অর্থও থাকবে। কাজেই মু’মিনদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের পক্ষে “সাল্লু আলাইহে”- এর হুকুম দেয়ার অর্থ হচ্ছে এই যে, তোমরা তাঁর
ভক্ত-অনুরক্ত হয়ে যাও তাঁর প্রশংসা করো এবং তাঁর জন্য দোয়া করো। (মায়ারেফুল কুরআন, মুল মুফতি শফী, বাংলা অনুবাদক মাওলানা মহিউদ্দিন
খান)।
দরূদ পাঠের ফজিলত
নবী করীম (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা তাঁর
উম্মতের প্রতি অবশ্য পালনীয় একটি ইবাদত। এই ইবাদত পালনের মাধ্যমে দরূদ পাঠকারী অনেক
ছওয়াবের অধিকারী হয়ে থাকে, যা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে
কয়েকটি ফজিলত উল্লেখ করা হলোঃ-
(১) আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত লাভঃ
দরূদ পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা’আলা
তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৯২১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৮, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৩০, সুনান আননাসায়ী ১২৯৬, সুনান আততিরমিযী
৪৮৫, আহমাদ ৮৮৫৪, দারেমী ২৮১৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৫৬, রিয়াযুছ ছালেহীন ১৩৯৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)
আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের কাছে তাশরীফ আনলেন। তখন
তাঁর চেহারায় বড় হাসি-খুশী ভাব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার
নিকট জিবরীল (আঃ) এসেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার রব বলেছেন, আপনি
কি এ কথায় সন্তুষ্ট নন যে, আপনার উম্মাতের যে কেউ আপনার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে আমি
তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবো? আর আপনার উম্মাতের কোন ব্যক্তি আপনার ওপর একবার সালাম
পাঠালে আমি তার উপর দশবার সালাম পাঠাবো? (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৯২৮, সুনান আননাসায়ী ১২৮৩, ছহীহুল জামে ৭১, দারিমী ২৮১৫)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য
রহমত। তিনি বান্দার সকল ভাল কাজকেই ১০ গুণ করে বৃদ্ধি করেন। (সুরা আন‘আম ৬/১৬০)।
’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বের হয়ে একটি খেজুর
বাগানে প্রবেশ করলেন। এখানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর দরবারে
সাজদারত হলেন। সিজদা্ এত দীর্ঘ করলেন যে, আমি ভীত হয়ে পড়লাম। আল্লাহ না করুক তাঁকে
তো আবার আল্লাহ মৃত্যুমুখে পতিত করেননি? ’আবদুর রহমান বলেন, তাই আমি তাঁর কাছে এলাম,
পরখ করে দেখার জন্য। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথা উঠালেন এবং বললেন,
কি হয়েছে? আমি তাঁকে আমার আশংকার কথা বললাম। ’আবদুর রহমান বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন আমাকে বললেনঃ জিবরীল (আঃ) আমাকে বললেন, আমি কি আপনাকে এই সুসংবাদ
দিবো না যা আল্লাহ তা’আলা আপনার ব্যাপারে বলেন? যে ব্যক্তি আপনার ওপর দরূদ পাঠ করবে
আমি তার প্রতি রহমত বর্ষণ করব। যে ব্যক্তি আপনার প্রতি সালাম পাঠাবে আমি তার প্রতি
শান্তি নাযিল করব।
(নবী করীম (ছাঃ) বলেন) ‘আর এজন্য আমি শুকরিয়ার
সিজদা করি’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩৭, আহমাদ ১৬৬৫,
১৬৬৪, সহীহ আত তারগীব ১৬৫৮, হাকিম ২০১৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(২) ফেরেশতা কর্তৃক আল্লাহর কাছে
রহমতের জন্য দো‘আঃ
রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে দরূদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতারা
আল্লাহর নিকটে দো‘আ করে থাকেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমু‘আর দিন আমার ওপর বেশী
পরিমাণ করে দরূদ পড়ো। কেননা এ দিনটি হাজিরার দিন। এ দিনে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) হাজির
হয়ে থাকেন। যে বক্তি আমার ওপর দরূদ পাঠ করে তার দরূদ আমার কাছে পেশ করা হতে থাকে, যে
পর্যন্ত সে এর থেকে অবসর না হয়। আবুদ্ দারদা বলেন, আমি বললাম, মৃত্যুর পরও কি? তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলা নবীদের শরীর ভক্ষণ করা মাটির
জন্য হারাম করে দিয়েছেন। অতএব নবীরা কবরে জীবিত এবং তাদেরকে রিযক্ব দেয়া হয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৬, ইরওয়াহ ১/৩৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৬৩৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭২)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
তিনি আরো বলেন,
আমের ইবনু রবীআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন কোন মুসলিম ব্যাক্তি আমার প্রতি দুরূদ পাঠ করে এবং যতক্ষণ
সে আমার প্রতি দুরূদ পাঠরত থাকে, ততক্ষণ ফেরেশতাগণ তার জন্য দুআ করতে থাকেন। অতএব বান্দা
চাইলে তার পরিমাণ (দরূদ পাঠ) কমাতেও পারে বা বাড়াতেও পারে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৯০৭; ছহীহুল জামে‘ ৫৭৪৪)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(৩) পাপ মোচন, ছওয়াব ও মর্যাদা লাভঃ
রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ গুনাহ মাফ,
ছওয়াব ও মর্যাদা লাভের অন্যতম মাধ্যম।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে,
আল্লাহ তা’আলা তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করবেন। তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, আর
আল্লাহর নৈকট্যের জন্য দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২২, সুনান আননাসায়ী ১২৯৭, হাকিম ১/৫৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৪) ক্বিয়ামতের দিন মর্যাদা লাভঃ
দুনিয়াতে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি যারা যত বেশী
দরূদ পাঠ করবে ক্বিয়ামতের দিন তারা রাসূল (ছাঃ)-এর তত বেশী নিকটবর্তী হবে। রাসূল (ছাঃ)
বলেন,
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি
হবে যে আমার প্রতি বেশি পরিমাণে দরূদ পাঠ করেছে। (সুনান
আততিরমিযী ৪৮৪, রিয়াযুছ ছালেহীন ১৩৯৮; ছহীহ আত-তারগীব ১৬৬৮)। হাদিসের মানঃ যঈফ
(Dai'f)।
(৫) রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত লাভঃ
দরূদ পাঠের আরেকটি ফযীলত হলো ক্বিয়ামতের দিন
রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত লাভ করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরূদ পাঠ
করল অথবা আমার জন্য ‘অসীলার’ দো‘আ করল ক্বিয়ামতের দিন তার ব্যাপারে শাফা‘আত করা আমার
জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে’। (ইমাম ইসমাঈল বিন ইসহাক্ব
আল-কাযী (১৯৯-২৮২ হিঃ) : ফাযলুছ ছালাত ‘আলান নাবী (ছাঃ), তাহক্বীক : আলবানী (বৈরূত
: মাকতাবা ইসলামিয়া, ২য় প্রকাশ, ১৩৮৯ হিঃ ১৯৯৬ খৃঃ), পৃঃ ৫১, নং ৫০)।
তিনি আরো বলেন,
’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুয়াযযিনের আযান
শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ
যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত
বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ’ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ’ওয়াসীলা’ হলো
জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর
আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ’ওয়াসীলা’র দু’আ করবে, কিয়ামতের
(কিয়ামতের) দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৬৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৩৮৪, সুনান আবূ দাঊদ ৫২৩, সুনান আননাসায়ী ৬৭৮, সুনান আততিরমিযী ৩৬১৪, সহীহ
ইবনু হিব্বান ১৬৯০, ইরওয়া ২৪২, সহীহ আল জামি‘ ৬১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা লাভঃ
জান্নাতে উচ্চমর্যাদা লাভের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর
প্রতি দরূদ পাঠের কোন বিকল্প নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
ব্যক্তি যত বেশী আমার প্রতি দরূদ পাঠ করবে,
সে ব্যক্তি (জান্নাতে) মর্যাদায় তত বেশী আমার নিকটবর্তী হবে’। (বায়হাক্বী; আস-সুনানুল কুবরা ৩/২৪৯; ছহীহ তারগীব হা/১৬৭৩)।
(৭) ফেরেশতারা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে
দরূদ পৌঁছানঃ
দুনিয়াতে রাসূলের উপরে কেউ দরূদ পাঠ করলে বা
সালাম পেশ করলে ফেরেশতারা তা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে পৌঁছে দেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আনাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কিছু মালাক (ফেরেশতা) আছেন যারা পৃথিবীতে
ঘুরে বেড়ান। তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার কাছে পৌঁছান। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৪, সুনান আননাসায়ী ১২৮২, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৮৫৩, হাকিম ২/৪২১,
দারিমী ২৮১৬, আহমাদ হা/৩৬৬৬, ৪২১০; ইবনে হিববান ৯১৪; ছহীহ তারগীব ১৬৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,
তোমরা আমার প্রতি বেশী বেশী দরূদ পাঠ কর। কেননা
আল্লাহ আমার কবরের কাছে ফেরেশতা নিয়োজিত করে রেখেছেন। যখন আমার উম্মতের কোন লোক আমার
প্রতি দরূদ পাঠ করে, তখন ফেরেশতা আমাকে জানায় যে, নিশ্চয়ই অমুকের ছেলে অমুক আপনার প্রতি
এই সময়ে দরূদ পাঠ করেছে’। (ছহীহুল জামে‘ হা/১২০৭)।
অন্য হাদীছে এসেছে,
রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর তাঁর কবরের উপর
একজন ফেরেশতা দাঁড়িয়ে থাকেন এবং যখনই কেউ দরূদ পাঠ করে তখনই তাকে বলেন, হে মুহাম্মাদ
(ছাঃ)! অমুকের ছেলে অমুক আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করেছেন। (ছহীহ আত-তারগীব ও তাহযীব ২/২৯৬; হা/১৬৬৭)।
উল্লেখ্য যে, এই দরূদ পাঠের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর
কবরের কাছে যাওয়া শর্ত নয়; বরং বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কোন সময় দরূদ পাঠ করলেই
রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে তা পৌঁছানো হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা আমার কবরকে উৎসব কেন্দ্রে
পরিণত করো না। তোমরা আমার প্রতি দরূদ পেশ কর। কারণ তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের পেশকৃত
দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়’।
মূল হাদিসঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তোমাদের ঘরকে
কবরস্থান বানিও না, আর আমার কবরকেও উৎসবস্থলে পরিণত করো না। আমার প্রতি তোমরা দরূদ
পাঠ করবে। তোমাদের দরূদ নিশ্চয়ই আমার কাছে পৌঁছে, তোমরা যেখানেই থাক না কেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৬, সুনান আবূ দাঊদ ২০৪২, সহীহ
আল জামি‘ ৭২২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
মুসলিম সমাজে বর্তমানে ধর্মের নামে আলেম-ওলামার
কবরকে কেন্দ্র করে যে অনুষ্ঠানগুলো হচ্ছে সেগুলোর কোনটিই জায়েয নয়। এজন্য রাসূল (ছাঃ)
সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন,
‘সাবধান, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলো তাদের
নবী ও সৎকর্মশীল বান্দাদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছিল। সাবধান! তোমরা কবরকে মসজিদে
পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ কাজ করতে নিষেধ করছি’।
মূল হাদিসঃ
আবূ
বকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) [শব্দাবলী আবূ বকর এর] ... জুনদুব
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তাকে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের মধ্যে থেকে আমার কোন খলীল বা
একান্ত বন্ধু থাকার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে মুক্ত। কারণ মহান আল্লাহ ইবরাহীমকে যেমন
খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন, সে রকমভাবে আমাকেও খলীল বা একান্ত বন্ধু
হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আমি আমার উম্মাতের মধ্য থেকে কাউকে খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে
গ্রহণ করতে চাইলে আবূ বকরকেই তা করতাম। সাবধান থেকো তোমাদের পূর্বের যুগের লোকেরা তাদের
নবী ও নেককার লোকদের কবরসমূহকে মাসজিদ (সাজদার স্থান) হিসেবে গ্রহণ করত। সাবধান তোমরা
কবরসমূহকে সাজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদেরকে নিষেধ করে যাচ্ছি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩২,
ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৬৯, ইসলামীক সেন্টার ১০৭৭, ছহীহুল জামে‘ ২৪৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
উবাইদুল্লাহ ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবন ’উতবাহ (রহ.)
হতে বর্ণিত। আয়িশাহ ও ’আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযি.) বলেছেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর মৃত্যু পীড়া শুরু হলে তিনি তাঁর একটা চাদরে নিজ মুখমণ্ডল আবৃত করতে
লাগলেন। যখন শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হলো, তখন মুখ হতে চাদর সরিয়ে দিলেন। এমতাবস্থায়
তিনি বললেনঃ ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নবীদের (নবীদের)
কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। (এ বলে) তারা যে (বিদ’আতী) কার্যকলাপ করত তা হতে তিনি সতর্ক
করেছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩৫, ৪৩৬,
১৩৩০, ১৩৯০, ৩৪৫৩, ৩৪৫৪, ৪৪৪১, ৪৪৪৩, ৪৪৪৪, ৫৮১৫, ৫৮১৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১০৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩১; আহমাদ ১৮৮৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৪২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক সালামের
জবাব দানঃ
কেউ যদি সালাম পেশ করে তাহলে রাসূল (ছাঃ) সেই
সালমের জবাব দেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ আমার ওপর সালাম পাঠ করলে, নিশ্চয়ই
আল্লাহ তা’আলা আমার কাছে আমার রূহ ফেরত দেন যাতে আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৫, সুনান আবূ দাঊদ ২০৪১,
সহীহ আল জামি‘ ৫৬৭৯, বায়হাক্বীর দা‘ওয়াতে কাবীর ১৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৯) দরূদ পাঠের মাধ্যমে চিন্তা দূর
হয়ঃ
রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে দরূদ পাঠের কারণে চিন্তা
দূর হয় এবং পাপ মোচন হয়। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনার
উপর অনেক বেশী দরূদ পাঠ করি। আপনি আমাকে বলে দিন আমি (দু’আর জন্য যতটুকু সময় বরাদ্দ
করে রেখেছি তার) কতটুকু সময় আপনার উপর দরূদ পাঠাবার জন্য নির্দিষ্ট করব? উত্তরে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়। আমি আরয করলাম, যদি এক-তৃতীয়াংশ
করি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়, যদি আরো বেশী কর
তাহলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর। আমি আরয করলাম, যদি অর্ধেক সময় নির্ধারণ করি? নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার মন যতটুকু চায় কর। যদি আরো বেশী নির্ধারণ কর তাহলে তোমর
জন্যই ভালো। আমি বললাম, যদি দুই-তুতীয়াংশ করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তোমার মন যা চায়। যদি আরো বেশি নির্ধারণ কর তোমার জন্যই কল্যাণকর। আমি আরয করলাম,
তাহলে আমি আমার দু’আর সবটুকু সবসময়ই আপনার উপর দরূদ পড়ার কাজে নির্দিষ্ট করে দেব। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে, তোমার দীন-দুনিয়ার
মকসুদ পূর্ণ হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৯, তিরমিযী ২৪৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১০) দরূদ পাঠের দ্বারা অন্তর পবিত্র
ও পরিচ্ছন্ন হয়ঃ
রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে দরূদ পাঠ করলে অন্তর পাপ-পঙ্কিলতা
থেকে পবিত্র হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা আমার প্রতি দরূদ পাঠ কর। নিশ্চয়ই আমার উপর
তোমাদের দরূদ তোমাদের (অন্তরের) পবিত্রতা। আর তোমরা আমার জন্য আল্লাহর নিকট ‘ওয়াসীলা’
চাও’। (সিলসিলা
ছহীহা হা/৩২৬৮)।
(১১) দো‘আ কবুল হয়ঃ
হামদ ও ছানা তথা আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূল
(ছাঃ)-এর উপরে দরূদ পাঠ করার পরে দো‘আ করা হলে তা কবুল হয়।
আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি সালাত আদায় করছিলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও উপস্থিত
ছিলেন। তাঁর কাছে ছিলেন আবূ বকর ও ’উমার (রাঃ)। সালাত শেষে আমি যখন বসলাম, আল্লাহ তা’আলার
প্রশংসা করলাম, এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠ করলাম। তারপর
আমি আমার নিজের জন্য দু’আ করতে লাগলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
চাও, তোমাকে দেয়া হবে। চাও, তোমাকে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩১, সুনান
আততিরমিযী ৫৯৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
অপর দিকে দরূদ পাঠ না করে দো‘আ করলে তা আল্লাহর
কাছে পৌঁছতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দো‘আ দরূদ পাঠ না করা পর্যন্ত
আড়াল করে রাখা হয়’। (আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৭২১; ছহীহুল
জামে‘ হা/৪৫২৩; ছহীহাহ হা/২০৩৫)।
(১২) বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হওয়া থেকে
রক্ষাঃ
রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করলে আল্লাহ
বান্দাকে দুনিয়া ও আখেরাতে বিপদ ও আশাহত হওয়া থেকে রক্ষা করবেন। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে সমস্ত লোক কোন দরবারে বসেছে অথচ তারা আল্লাহ
তা’আলার যিকর করেনি এবং তাদের নবীর প্রতি দরূদও পড়েনি, তারা বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হবে।
আল্লাহ তা’আলা চাইলে তাদেরকে শাস্তিও দিতে পারেন কিংবা মাফও করতে পারেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৮০, সহীহাহ ৭৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
সহিহ হাদিস ভিত্তিক কয়েকটি দরুদ
(১) আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ)-এর সাথে আমার দেখা হলে তিনি বললেন, হে ‘আবদুর রহমান!
আমি কি তোমাকে একটি কথা উপহার দিব যা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছি?
উত্তরে আমি বললাম, হাঁ আমাকে তা উপহার দিন। তিনি বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি আমরা ‘সালাম’
কিভাবে পাঠ করবো তা আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা আপানার ও আপনার পরিবারে
প্রতি ‘সালাত’ কিভাবে পাঠ করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা
বলো,
‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন
কামা- সল্লায়তা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আল- আ-লি ইবরা-হীমা ইননাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা
বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- বা-রাকতা ‘আলা- ইবরা-হীমা
ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’’-
(অর্থঃ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের
পরিবার-পরিজনের প্রতি রহমত বর্ষণ কর, যেভাবে তুমি রহমত বর্ষণ করেছো ইবরাহীম ও ইবরাহীমের
পরিবার-পরিজনের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি বারাকাত নাযিল
কর মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি, যেভাবে তুমি বারাকাত নাযিল করেছো
ইব্রাহীম ও ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের প্রতি। তুমি বড় প্রশংসিত ও সম্মানিত)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯১৯ সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৩৭০, ৪৭৯৭, ৬৩৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার প্রতি কিভাবে দরূদ পাঠ করব? রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা বল,
‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আয্ওয়া-জিহী ওয়া যুররিইয়্যাতিহী
কামা- সল্লায়তা ‘আলা- আ-লি ইব্র-হীমা ওয়াবা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আয্ওয়া-জিহী
ওয়া যুররিইয়্যাতিহী কামা- বা-রকতা ‘আলা- আ-লি ইব্র-হীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ’’।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ এবং তাঁর
পত্নীগণ ও বংশধরগণের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করো, যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিজনের
প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করেছো এবং মুহাম্মাদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও বংশধরগণের প্রতি তোমার
কল্যাণ নাযিল করো, যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিবার-পরিজনের প্রতি কল্যাণ নাযিল
করেছো। অবশ্যই তুমি খুব প্রশংসিত এবং খুব সম্মানিত।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত),৯২০,সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬০, ৩৩৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৪০৭, সুনান আবূ দাঊদ ৯৭৯, সুনান আননাসায়ী ১২৯৪, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৯০৫, আহমাদ ২৩৬০০,
আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) আবূ মুহাম্মদ কা‘ব ইবনে ‘উজরাহ রাদিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমাদের নিকট
এলে। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি কিভাবে সালাম পেশ করতে হয় তা জেনেছি,
কিন্তু আপনার প্রতি দরূদ কিভাবে পাঠাব?’ তিনি বললেন, “তোমরা বলোঃ-
“আল্লাহুম্মা সল্লি আলা- মুহাম্মাদিন ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা-
সল্লাইত আলা- আ-লি ইবরহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ, আল্লাহুম্মা রা-রিক আলা- মুহাম্মাদিন
ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- বা-রাকতা আলা- আ-লি ইবর-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।"
যার অর্থ, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ তথা মুহাম্মদের
পরিবারবর্গের উপর দরুদ পাঠ করো; যেমন দরূদ পেশ করেছিলে ইব্রাহীমের পরিবারবর্গের উপর।
নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও অতি সম্মানার্হ। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিজনবর্গের
প্রতি বরকত নাযিল কর; যেমন বরকত নাযিল করেছ ইব্রাহীমের পরিজনবর্গের প্রতি। নিশ্চয় তুমি
প্রশংসিত ও মহা সম্মানীয়।” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৩৭০, ৪৭৯৭, ৬৩৫৭, (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৬, সুনান
আততিরমিযী ৪৮৩, সুনান আননাসায়ী ১২৮৭-১২৮৯, সুনান আবূ দাউদ ৯৭৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৯০৪,
আহমাদ ১৭৬৩৮, ১৭৬৩১, ১৭৬৬৭, দারেমী ১৩৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী (রহঃ)....আবূ
মাসউদ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন,
আমরা তখন সা’দ
ইবনু উবাদাহ (রাযিঃ) এর বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। বাশীর ইবনু সা’দ
(রাযিঃ) তাকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মহান আল্লাহ আপনার উপর দুরূদ পাঠ করার জন্য
আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা কিভাবে আপনার উপর দুরূদ পাঠ করব? রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ করে থাকলেন। এমনকি আমরা আফসোস করে বললাম, সে যদি
তাকে এ প্রশ্ন না করত।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেনঃ তোমরা বল-
"আল্লাহুম্মা সল্লি আলা- মুহাম্মাদিন ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন
কামা- সল্লাইতা আলা- আ-লি ইবর-হীমা ওয়াবা-রিক আলা- মুহাম্মাদিন ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন
কামা বা-রকতা আলা আ-লি ইবর-হীমা ফিল আলামীন। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ"
অর্থাৎ "হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তার পরিবার
পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করো— যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ)-এর
পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। তুমি মুহাম্মাদ ও তার পরিবার-পরিজনকে বারাকাত
ও প্রাচুর্য দান করো— যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ)
এর পরিবার-পরিজনকে দুনিয়া ও আখিরাতে বারাকাত ও প্রাচুর্য দান করেছ। নিশ্চয়ই তুমি
প্রশংসিত ও সম্মানিত।" আর সালাম দেয়ার নিয়ম যা তোমরা ইতিপূর্বে জেনেছ। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৫,
সুনান আততিরমিযী ৩২২০, সুনান আননাসায়ী ১২৮৫, ১২৮৬, সুনান আবূ দাউদ ৯৭৯, আহমাদ ১৬৬১৯,
১৬৬২৪, ২১৮৪৭, মুওয়াত্তা মালিক ৩৯৮, দারেমী ১৩৪৩, (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯০, ইসলামিক
সেন্টারঃ ৮০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সাত অবস্থায় নবী সাঃ এঁর উপর দরুদ ও সালাম পড়া মাকরুহ বা অপছন্দনীয়
১. স্ত্রী সহবাসকালে।
২.পেশাব পায়খানার সময়।
৩. ব্যবসার মাল চালু করার সময়।
৪. হোছট খাওয়ার সময়।
৫. আশ্চর্যজনক সংবাদ শ্রবণের সময়।
৬. যবেহ করার সময়।
৭. হাঁচি দেওয়ার সময়। (ফতোয়ায়ে শামী,১/৩৮৩
পৃষ্ঠা)।
দুআ মাসূরার পূর্বে দরুদ পাঠের গুরুত্ব
প্রত্যেক ছালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর
দরূদ পড়তে হয়। নবী করীম (ছাঃ) নিজের উপর তাশাহহুদ ও তাশাহহুদের পরে দরূদ পাঠ করতেন
এবং উম্মতদেরকে পাঠের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-এর
মতে তাশাহহুদের পর দরূদ পড়া ওয়াজিব। আর ইমাম আবু হানীফা ও মালেক (রহঃ)-এর মতে সুন্নাত।
(আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান বিন ছালেহ আল-বাসসাম, তায়সীরুল
আল্লাম শরহে উমদাতিল আহকাম (কুয়েত : জামইয়াতু ইহইয়াইত তুরাছ আল-ইসলামী, ১৯৯৪ খৃঃ/১৪১৪
হিঃ) ১/২৬৮)।
ফুযালাহ্ ইবনু ’উবায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপবিষ্ট ছিলেন। তখন একজন লোক
এলেন। তিনি সালাত আদায় করলেন এবং এই দু’আ পড়লেন,
“আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর ও আমার ওপর
রহম কর)। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালাত আদায়কারী!
তুমি তো নিয়ম ভঙ্গ করে বড্ড তাড়াহুড়া করলে। তারপর তিনি বললেন, তুমি সালাত শেষ করে দু’আর
জন্য বসবে। আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করবে। আমার ওপর দরূদ পড়। তারপর তুমি যা চাও আল্লাহর
কাছে দু’আ করবে।
ফুযালাহ্ (রাঃ)বলেন, এরপর আর এক ব্যক্তি এলো,
সালাত আদায় করলো। সে সালাত শেষে আল্লাহর প্রশংসা করলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
ওপর দরূদ পাঠ করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালাত আদায়কারী!
আল্লাহর কাছে দু’আও কর। দু’আ কবূল করা হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩০, সুনান আততিরমিযী ৩৪৭৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৩, নাসায়ী ১/১৮৯,
আহমাদ ৬/১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আর এ জন্যই তিনি বলেছেন, “ফরয নামাযের পশ্চাতে
দুআ অধিকরুপে শোনা (কবুল করা) হয়।”
মূল হাদিসঃ
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ (সময়ের) দুআ (আল্লাহর কাছে) বেশী শ্রুতি হয়।
তিনি বললেন, শেষ রাতের মধ্যের (দুআ) এবং ফরয সালাতের শেষের দুআ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৬৮, সুনান আততিরমিযী ৩৪৯৯, সহীহ আত্ তারগীব
১৬৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বলা বাহুল্য এটাই হলো আল্লাহর সাথে প্রকৃত
মুনাজাতের সময়। কারণ “নামাযী মাত্রই নামাযে আল্লাহর সাথে মুনাজাত করে।” (মালেক, মুঅত্তা, আহমাদ, মুসনাদ ২/৩৬, ৪/৩৪৪)।
দরুদ বনাম মিলাদ কিয়াম
আল্লাহতায়ালা বলেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন এবং তার
ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দোআ-ইসতেগফার করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর উপর সালাত পাঠ কর
এবং তাকে যথাযথ ভাবে সালাম জানাও”। (সুরা আহযাব ৩৩/৫৬)।
রাসুল সাঃ এর উপর কিভাবে দরুদ ও সালাম পেশ
করতে হয় তা আমরা উপরোল্লিখিত আলোচনায় জানতে পেরেছি। দরুদ ও সালাম পেশ করার ভাষা বা
শব্দাবলী কি সেটাও আমরা শিখেছি। এর বাহিরে দরুদ ও সালাম পেশ করার অন্য কোনো শব্দাবলী
তৈরী করা যাবে না। কিন্তু আমাদের দেশে এক শ্রেণির আলেম দরুদ ও সালাম পেশ করার রাসুল
সাঃ এর তরিকার বাহিরে মিলাদ ও কিয়াম বানিয়েছে যা সম্পূর্ণ বিদআত। এইসব মিলাদ কিয়াম
গানের সুরে, নেচে নেচে, বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে গাওয়া হয়। মিলাদ কিয়ামের পক্ষে যেসব দলিল
পেশ করা হয় তা কুরআন হাদিস সমর্থিত নয়।
বর্তমান সমাজে দেখা যায়, মারেফতপন্থী লোকেরা
সহীহ হাদিসে উল্লেখিত দরুদগুলো বাদ দিয়ে তারা নিজেরা মনগড়া মতো দরুদ বানিয়ে নিয়েছে।
যেমন: দরুদে মাহি, দরুদে তাজ, দরুদে হক্বানী, দরুদে তুনাজ্জিনা, দরুদে ফুতুহাত, দরুদে
রুইয়াতে নবী (সাঃ), দরুদে শিফা, দরুদে খইর, দরুদে আকবার, দরুদে লাখী, দরুদে হাজারী,
দরুদে রুহী, দরুদে বীর, দরুদে নারীয়া, দরুদে শাফেয়ী, দরুদে গাওসিয়া, দরুদে মুহাম্মদী—এরকম
শত শত। আধুনিক যুগের কথিত পির-আউলিয়াগণও তাদের মতো করে দরুদ বানিয়ে নিয়েছে। তাদের রচিত
পুস্তকগুলোতে সহীহ হাদিসে উল্লেখিত দরুদগুলো দেখা যায় না। সেইসব পুস্তকে তাদের মুরিদদেরকে
সলাতে দরুদে ইব্রাহিম এর পরিবর্তে বানানো দরুদ
দিয়ে সলাত আদায় করার নির্দেশ দেয়া আছে।
আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) পড়তে বলেছেন দরুদ, সেখানে
তারা আবিষ্কার করলো মিলাদ ও কিয়াম। এগুলো সবই বিদআত। আমরা রাসুল (সাঃ) এর উম্মত হিসেবে
কুরআন ও সহীহ হাদিসের বাহিরে যাবো না। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে থাকার তৌফিক দান করুন।
আমিন।
(সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
লেখকের
অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন
(MSHRC)
------------------------------
Please Share On
No comments:
Post a Comment