Search This Blog

Monday, November 4, 2019

সহিহ হাদিসের আলোকে দৈনন্দিন ব্যবহৃত দোয়া ও আমলসমূহ (দ্বিতীয় অংশ)


সহিহ হাদিসের আলোকে দৈনন্দিন ব্যবহৃত দোয়া ও আমলসমূহ
(দ্বিতীয় অংশ)
কিছু কথাঃ ছোট বেলায় বাজার থেকে দোয়ার ভান্ডার নামক একটি বই ক্রয় করে অনেক দোয়া মুখস্থ করেছিলাম। দোয়াগুলো সব সময় আমলও করতাম। পরবর্তীতে জানতে পারলাম দোয়ার ভান্ডার, বাজারে প্রচলিত নামাজ শিক্ষার বই ও তাবলীগ জামায়াতের ফাজায়েলে আমল নামক বইগুলোতে যে সমস্ত দোয়া ও দরুদ উল্লেখ করা আছে তার মধ্যে ৯৫% জাল-জইফ হাদিস ভিত্তিক। যেগুলোর হাদিসের কোনো রেফারেন্স নেই। বই লেখকদের পূর্ব পুরুষদের বানানো কিচ্ছা কাহিনী ছাড়া কিছুই নয়। যারা ঐ সমস্ত বই পড়ে যুগ যুগ ধরে আমল করে আসছেন আসলে তারা অদ্যবধি কোনো সুফল পায় নাই। বরঞ্চ বিদআতীর উপর আমল করে তাদের ইমান আমল সব নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের কোনো আমল আল্লাহর নিকট গৃহীত হয়নি। তাই পথ হারা মুসলমানদের সঠিক পথে ফিরে আনতে ছোট্র এই প্রয়াস। এখানে উল্লেখিত প্রতিটি দোয়ার পার্শ্বে হাদিসের উৎস দেয়া আছে। মানুষ সামাজিক জীব। জীবনে চলার পথে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু প্রতিটি সমস্যা সমাধানের জন্য আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) সমাধানের উপায় বলে দিয়েছেন। তাই দোয়াগুলো সহিহভাবে মুখস্থ করবো এবং যখন যেখানে যে সময় যে দোয়া পড়তে হয় সেভাবে আমল করবো। দেখবেন আপনার সমস্যা সমাধান হবেই ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে সহিহভাবে আমল করার তৌফিক দান করুন- আমিন।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাজারের বই থেকে এ পর্যন্ত যেসব দোয়া মুখস্থ করে আমল করে আসছেন, সেগুলোর সাথে যদি এখানে উল্লেখিত দোয়াগুলোর কোনো মিল না থাকে বা দোয়ার বাক্যে কোনো কম বেশী থাকে তাহলে বুঝে নিবেন বাজারের বইগুলোর দোয়া বানোয়াট মিথ্যে বা জাল হাদিস ভিত্তিক। তাই সেগুলো বাদ দিয়ে এখানে উল্লেখিত দোয়াগুলো মুখস্থ করবেন। কারন এখানে উল্লেখিত দোয়াগুলো ১০০% সহিহ হাদিস ভিত্তিক। আপনারা দেখুন প্রতিটি দোয়ার শেষে হাদিসের রেফারেন্স দেয়া আছে।
অধ্যায়ঃ
পবিত্রতা ও সালাত সংক্রন্ত দোয়া ও আমলসমূহঃ
১. ওযুর পূর্বে যিক্‌র:
(বিস্‌মিল্লাহ্)
- ‘আল্লাহ্‌র নামে’[1]।
[1] আবূ দাউদ, নং ১০১; ইবন মাজাহ্‌, নং ৩৯৭; আহমাদ নং ৯৪১৮। আরও দেখুন, ইরওয়াউল গালীল ১/১২২।
২. ওযু শেষ করার পর যিক্‌রঃ
(আশ্‌হাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহূ)
(১) “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল”[1]।
(আল্লা-হুম্মাজ‘আলনী মিনাত্ তাওয়াবীনা ওয়াজ‘আলনী মিনাল মুতাতাহ্‌হিরীন)
(২) “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করুন।”[2]
 (সুবহানাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল লা-ইলাহা  ইল্লা আন্তা আস্তাগফিরুকা ওয়াআতূবু ইলাইকা)।
(৩) “হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার নিকট তওবা করছি”[3]
[1] মুসলিম ১/২০৯, নং ২৩৪।
[2] তিরিমিযী-১/৭৮, নং ৫৫। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ১/১৮।
[3] নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, পৃ. ১৭৩। আরও দেখুন, ইরওয়াউল গালীল, ১/১৩৫, ৩/৯৪।
৩. মসজিদে যাওয়ার সময়ে পড়ার দো‘আঃ
 (আল্লা-হুম্মাজ‘আল ফী ক্বালবী নূরান, ওয়া ফী লিসানী নূরান, ওয়া ফী সাম্‘য়ী নূরান, ওয়া ফী বাসারী নূরান, ওয়া মিন ফাওকী নূরান, ওয়া মিন তাহ্‌তী নূরান, ওয়া ‘আন ইয়ামীনী নূরান, ওয়া ‘আন শিমালী নূরান, ওয়া মিন আমামী নূরান, ওয়া মিন খলফী নূরান, ওয়াজ‘আল ফী নাফ্‌সী নূরান, ওয়া আ‘যিম লী নূরান, ওয়া ‘আয্‌যিম লী নূরান, ওয়াজ‘আল্ লী নূরান, ওয়াজ‘আলনী নূরান; আল্লা-হুম্মা আ‘তিনী নূরান, ওয়াজ‘আল ফী ‘আসাবী নূরান, ওয়া ফী লাহ্‌মী নূরান, ওয়া ফী দামী নূরান, ওয়া ফী শা‘রী নূরান, ওয়া ফী বাশারী নূরান।
[আল্লা-হুম্মাজ‘আল লী নূরান ফী কাবরী, ওয়া নূরান ফী ‘ইযামী] [ওয়া যিদ্‌নী নূরান, ওয়া যিদনী নূরান, ওয়া যিদনী নূরান] [ওয়া হাবলী নূরান ‘আলা নুর]
- “হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে নূর (বা আলো) দান করুন, আমার যবানে নূর দান করুন, আমার শ্রবণশক্তিতে নূর দান করুন, আমার দর্শনশক্তিতে নূর দান করুন, আমার উপরে নূর দান করুন, আমার নীচে নূর দান করুন, আমার ডানে নূর দান করুন, আমার বামে নূর দান করুন, আমার সামনে নূর দান করুন, আমার পেছনে নূর দান করুন, আমার আত্মায় নূর দান করুন, আমার জন্য নূরকে বড় করে দিন, আমার জন্য নূর বাড়িয়ে দিন, আমার জন্য নূর নির্ধারণ করুন, আমাকে আলোকময় করুন। হে আল্লাহ! আমাকে নূর দান করুন, আমার পেশীতে নূর প্রদান করুন, আমার গোশ্‌তে নূর দান করুন, আমার রক্তে নূর দান করুন, আমার চুলে নূর দান করুন ও আমার চামড়ায় নূর দান করুন[1]।”
[“হে আল্লাহ! আমার জন্য আমার কবরে নূর দিন, আমার হাড়সমূহেও নূর দিন”][2], [“আমাকে নূরে বৃদ্ধি করে দিন, আমাকে নূরে বৃদ্ধি করে দিন, আমাকে নূরে বৃদ্ধি করে দিন”][3], [“আমাকে নূরের উপর নূর দান করুন”][4]।
[1] এ শব্দগুলোর জন্য দেখুন, বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১১৬, নং ৬৩১৬; মুসলিম ১/৫২৬, ৫২৯, ৫৩০, নং ৭৬৩।
[2] তিরমিযী ৫/৪৮৩, নং ৩৪১৯।
[3] ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৬৯৫; পৃ. ২৫৮; আর আলবানী সেটার সনদকে সহীহ আদাবিল মুফরাদে সহীহ বলেছেন, নং ৫৩৬।
[4] হাফেয ইবন হাজার এটাকে তার ফতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন এবং ইবন আবী আসেমের ‘কিতাবুদ দো‘আ’ এর দিকে সম্পর্কিত করেছেন। দেখুন ফাতহুল বারী, ১১/১১৮। আরও বলেছেন, বিভিন্ন বর্ণনা থেকে মোট ২৫ (পঁচিশটি) বিষয় পাওয়া গেল।
৪. মসজিদে প্রবেশের দো‘আঃ
 - ডান পা দিয়ে ঢুকবে [1] এবং বলবে,
(আ‘ঊযু বিল্লা-হিল ‘আযীম, ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম, ওয়াসুলতা-নিহিল ক্বদীম, মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম।
[বিসমিল্লা-হি ওয়াসসালাতু] [ওয়াসসালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লা-হি], আল্লা-হুম্মাফ্‌তাহ লী আবওয়া-বা রাহ্‌মাতিক)।
“আমি মহান আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর সম্মানিত চেহারা ও প্রাচীন ক্ষমতার ওসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”[2] [আল্লাহ্‌র নামে (প্রবেশ করছি), সালাত][3] [ও সালাম আল্লাহ্‌র রাসূলের উপর।][4] “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।”[5]
[1] কারণ, আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “সুন্নাত হচ্ছে, যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন তোমার ডান পা দিয়ে ঢুকবে, আর যখন বের হবে, তখন বাম পা দিয়ে বের হবে”। হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন, হাকিম ১/২১৮; এবং একে মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ বলেছেন, আর ইমাম যাহাবী সেটার সমর্থন করেছেন। আরও উদ্ধৃত করেছেন বাইহাকী, ২/৪৪২; আর শাইখ আলবানী তার সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা গ্রন্থে এটাকে হাসান বলেছেন, ৫/৬২৪; নং ২৪৭৮।
[2] আবূ দাউদ, নং ৪৬৬; আরও দেখুন, সহীহুল জামে‘ ৪৫৯১।
[3] ইবনুসসুন্নি কর্তৃক উদ্ধৃত, নং ৮। আর শাইখ আলবানী তার আস-সামারুল মুস্তাতাব গ্রন্থে একে হাসান বলেছেন, পৃ. ৬০৭।
[4] আবূ দাউদ ১/১২৬; নং ৪৬৫; আরও দেখুন, সহীহুল জামে‘ ১/৫২৮।
[5] মুসলিম ১/৪৯৪, নং ৭১৩; আর সুনান ইবন মাজায় ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীসে এসেছে,
«
اللهم اغفر لي ذنوبي وافتح لي أبواب رحمتك»
“হে আল্লাহ, আমার গুনাহ ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দ্বারসমূহ অবারিত করে দিন”। আর শাইখ আলবানী অন্যান্য শাহেদ বা সম অর্থের বর্ণনার কারণে একে সহীহ বলেছেন। দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ্ ১/১২৮-১২৯।
৫. মসজিদ থেকে বের হওয়ার দো‘আঃ
 - বাম পা দিয়ে শুরু করবে[1] এবং বলবে,
 (বিস্‌মিল্লা-হি ওয়াস্‌সালা-তু ওয়াস্‌সালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লাহ, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাদ্বলিকা, আল্লা-হুম্মা আ‘সিমনি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম।)
“আল্লাহ্‌র নামে (বের হচ্ছি)। আল্লাহ্‌র রাসুলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাসমূহ মাফ করে দিন এবং আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাগুলো খুলে দিন। হে আল্লাহ, আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে হেফাযত করুন” [2]।
[1] আল-হাকিম, ১/২১৮; বাইহাকী, ২/৪৪২, আর শাইখ আলবানী তার সিলসিলাতুস সহীহায় একে হাসান হাদীস বলেছেন, ৫/৬২৪, নং ২৪৭৮। আর সেটার তাখরীজ পূর্বে গত হয়েছে।
[2] মসজিদে প্রবেশের দো‘আয় পূর্বে বর্ণিত হাদীসের রেওয়ায়েতসমূহের তাখরীজ দেখুন, (২০ নং) আর “হে আল্লাহ, আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে হেফাযত করুন” এ বাড়তি অংশের তাখরীজ দেখুন, ইবন মাজাহ্‌ ১/১২৯।
৬. আযানের যিক্‌রসমূহঃ
 (১) মুয়াযযিন যা বলে শ্রোতাও তা বলবে, তবে ‘হাইয়্যা ‘আলাস্‌সালাহ’ এবং ‘হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ’ এর সময় বলবে,
(লা-হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ)
“আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই[1]।”
(২) বলবে,
(ওয়া আনা আশ্‌হাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু, রাদীতু বিল্লা-হি রব্‌বান, ওয়া বিমুহাম্মাদিন রাসূলান, ওয়া বিলইসলা-মি দ্বীনান)।
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দাহ ও রাসূল। আমি আল্লাহকে রব্ব, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে রাসূল এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট।”[2]
মুয়াযযিন তাশাহহুদ (তথা আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার...) উচ্চারণ করার পরই শ্রোতারা এ যিক্‌রটি বলবে।[3]
(৩) মুয়াযযিনের কথার জবাব দেওয়া শেষ করার পর রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়বে।[4]
(৪) তারপর বলবে,
(আল্লা-হুম্মা রববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্ তা-ম্মাতি ওয়াস সালা-তিল ক্বা-’ইমাতি আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদীলাতা ওয়াব্‘আছহু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদতাহ, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আদ)।
“হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত সালাতের রব্ব! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ওসীলা তথা জান্নাতের একটি স্তর এবং ফযীলত তথা সকল সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন। আর তাঁকে মাকামে মাহমূদে (প্রশংসিত স্থানে) পৌঁছে দিন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন। নিশ্চয় আপনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।”[5]
(৫) “আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নিজের জন্য দো‘আ করবে। কেননা ঐ সময়ের দো‘আ প্রত্যাখ্যান করা হয় না।”[6]
[1] বুখারী, ১/১৫২, নং ৬১১, ৬১৩; মুসলিম, ১/২৮৮, নং ৩৮৩।
[2] মুসলিম ১/২৯০, নং ৩৮৬।
[3] ইবন খুযাইমা, ১/২২০।
[4] মুসলিম ১/২৮৮, নং ৩৮৪।
[5] বুখারী ১/২৫২, নং ৬১৪; আর দুই ব্রাকেটের মাঝখানের অংশ উদ্ধৃত করেছেন, বায়হাকী ১/৪১০। আর আল্লামা আবদুল আযীয ইবন বায রাহেমাহুল্লাহ তার ‘তুহফাতুল আখইয়ার’ গ্রন্থে এটার সনদকে হাসান বলেছেন, পৃ. ৩৮।
[6] তিরমিযী, নং ৩৫৯৪; আবূ দাউদ, নং ৫২৫; আহমাদ, নং ১২২০০; আরও দেখুন, ইরওয়াউল গালীল, ১/২৬২।
৭. সালাতের শুরুতে দো‘আঃ
(আল্লা-হুম্মা বা-‘ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্বক্বিনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা ইয়ুনাক্কাস্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ দানাসি। আল্লা-হুম্মাগসিলনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিস্‌সালজি ওয়াল মা-’ই ওয়াল বারাদ)।
(১) “হে আল্লাহ! আপনি আমার এবং আমার গুনাহসমূহের মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করুন যেরূপ দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার গুনাহসমূহ থেকে এমন পরিষ্কার করে দিন, যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার পাপসমূহ থেকে বরফ, পানি ও মেঘের শিলাখণ্ড দ্বারা ধৌত করে দিন।”[1]
 (সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা ওয়া তা‘আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা- ইলা-হা গাইরুকা)।
(২) “হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসাসহ আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, আপনার নাম বড়ই বরকতময়, আপনার প্রতিপত্তি অতি উচ্চ। আর আপনি ব্যতীত অন্য কোনো হক্ব ইলাহ্‌ নেই।”[2]
 (ওয়াজ্জাহ্‌তু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস্ সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালা-তী, ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রাব্বিল ‘আ-লামীন। লা শারীকা লাহু ওয়াবিযা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন।)
আল্লা-হুম্মা আনতাল মালিকু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা, আনতা রব্বী ওয়া আনা ‘আবদুকা। যালামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু বিযাম্বী। ফাগফির লী যুনূবী জামী‘আন ইন্নাহু লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা। ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক্বি, লা ইয়াহ্‌দী লিআহ্‌সানিহা ইল্লা আনতা। ওয়াসরিফ ‘আন্নী সায়্যিআহা লা ইয়াসরিফু সায়্যিআহা ইল্লা আনতা। লাববাইকা ওয়া সা‘দাইকা ওয়াল-খাইরু কুল্লুহু বিয়াদাইকা, ওয়াশশাররু লাইসা ইলাইকা। আনা বিকা ওয়া ইলাইকা, তাবা-রাক্তা ওয়া তা‘আ-লাইতা। আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা)।
(৩) “যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন আমি একনিষ্টভাবে আমার মুখমণ্ডল তাঁর দিকেই ফিরালাম, আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী বা যাবতীয় ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ সৃষ্টিকুলের রব্ব আল্লাহ্‌র জন্য। তাঁর কোনো শরীক নেই। আর আমি এরই আদেশ প্রাপ্ত হয়েছি এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।
“হে আল্লাহ! আপনিই অধিপতি, আপনি ব্যতীত আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমার রব্ব, আমি আপনার বান্দা। আমি আমার নিজের প্রতি অন্যায় করেছি এবং আমি আমার পাপসমূহ স্বীকার করছি। সুতরাং আপনি আমার সমুদয় গুনাহ মাফ করে দিন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করতে পারে না। আর আপনি আমাকে সর্বোত্তম চরিত্রের পথে পরিচালিত করুন, আপনি ছাড়া আর কেউ উত্তম চরিত্রের পথে পরিচালিত করতে পারে না। আর আপনি আমার থেকে আমার খারাপ চরিত্রগুলো দূরীভূত করুন, আপনি ব্যতীত আর কেউ সে খারাপ চরিত্রগুলো অপসারিত করতে পারে না। আমি আপনার হুকুম মানার জন্য সদা-সর্বদা হাজির, সকল কল্যাণই আপনার দু’ হাতে নিহিত। অকল্যাণ আপনার দিকে নয় (অর্থাৎ মন্দকে আপনার দিকে সম্পৃক্ত করা উচিৎ নয়, অথবা মন্দ দ্বারা আপনার নিকটবর্তী হওয়া যায় না, বা মন্দ আপনার দিকে উঠে না)। আমি আপনার দ্বারাই (প্রতিষ্ঠিত আছি, সহযোগিতা পেয়ে থাকি) এবং আপনার দিকেই (আমার সকল প্রবণতা, বা আমার প্রত্যাবর্তন)। আপনি বরকতময় এবং আপনি সুঊচ্চ। আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাই এবং আপনার কাছে তাওবাহ্‌ করছি।”[3]
 (আল্লা-হুম্মা রববা জিব্রাঈলা ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইস্রা-ফীলা ফা-তিরাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ‘আ-লিমাল গাইবি ওয়াশশাহা-দাতি। আনতা তাহকুমু বাইনা ইবা-দিকা ফীমা কা-নূ ফীহি ইয়াখতালিফূন। ইহদিনী লিমাখতুলিফা ফীহি মিনাল হাককি বিইযনিকা ইন্নাকা তাহ্‌দী তাশা-উ ইলা- সিরা-তিম মুস্তাকীম)।
(৪) “হে আল্লাহ! জিবরাঈল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের রব্ব, আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, গায়েব ও প্রকাশ্য সব কিছুর জ্ঞানী, আপনার বান্দাগণ যেসব বিষয়ে মতভেদে লিপ্ত আপনিই তার মীমাংসা করে দিবেন। যেসব বিষয়ে মতভেদ হয়েছে তন্মধ্যে আপনি আপনার অনুমতিক্রমে আমাকে যা সত্য সেদিকে পরিচালিত করুন। নিশ্চয় আপনি যাকে ইচ্ছা সরল পথ প্রদর্শন করেন।”[4]
 (আল্লা-হু আকবার কাবীরান, আল্লা-হু আকবার কাবীরান, আল্লা-হু আকবার কাবীরান, ওয়ালহামদু লিল্লা-হি কাসীরান, ওয়ালহামদু লিল্লা-হি কাসীরান। ওয়ালহামদু লিল্লা-হি কাসী-রান ওয়াসুবহা-নাল্লাহি বুকরাতাঁও ওয়া আসীলা [তিনবার]। আউযু বিল্লা-হি মিনাশ শায়তানি, মিন নাফখিহী ওয়ানাফসিহী ওয়াহামযিহী)
(৫) “আল্লাহ সবচেয়ে বড় অতীব বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড় অতীব বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড় অতীব বড়। আর আল্লাহ্‌র জন্যই অনেক ও অজস্র প্রশংসা, আল্লাহ্‌র জন্যই অনেক ও অজস্র প্রশংসা, আল্লাহ্‌র জন্যই অনেক ও অজস্র প্রশংসা। সকালে ও বিকালে আল্লাহ্‌র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি” (তিনবার) “আমি শয়তান থেকে আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় চাই। আশ্রয় চাই তার ফুঁ তথা দম্ভ-অহংকার থেকে, তার থুতু তথা কবিতা থেকে ও তার চাপ তথা পাগলামি থেকে”[5]।
 (আল্লা-হুম্মা লাকাল হামদু আনতা নুরুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়ামান ফীহিন্না ওয়া লাকাল হাম্‌দু। আনতা ক্বায়্যিমুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়ামান ফীহিন্না, [ওয়া লাকাল হামদু আনতা রববুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়ামান ফীহিন্না], [ওয়া লাকাল হাম্‌দু, লাকা মূলকুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়ামান ফীহিন্না], [ওয়ালাকাল হাম্‌দু, আনতা মালিকুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি], [ওয়া লাকাল হামদু] [আনতাল হাক্কু, ওয়া ওয়া‘দুকাল হাক্কু, ওয়া ক্বাওলুকাল হাক্কু, ওয়া লিক্বা-উকাল হাক্কু, ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন, ওয়ান না-রু হাক্কুন, ওয়ান নাবিয়্যূনা হাক্কুন, ওয়া মুহাম্মাদুন হাক্কুন, ওয়াস্‌সা‘আতু হাক্কুন]। [আল্লা-হুম্মা লাকা আসলামতু, ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়াবিকা আ--মানতু, ওয়া ইলাইকা আনাবতু, ওয়া বিকা খা-সাম্‌তু, ওয়া ইলাইকা হা-কামতু, ফাগফির লী মা কাদ্দামতু, ওয়ামা আখখারতু, ওয়ামা আসরারতু, ওয়ামা আ‘লানতু], [আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আন্তাল্ মুআখখিরু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা] [আনতা ইলা-হী, লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা])।
(৬) “হে আল্লাহ! আপনার জন্যই সকল হামদ-প্রশংসা[6]; আসমানসমূহ, যমীন ও এ-দুটির মাঝে যা কিছু আছে আপনিই এগুলোর নূর (আলো)। আর আপনার জন্যই সব প্রশংসা; আসমানসমূহ, যমীন ও এ-দুটির মাঝে যা আছে আপনিই এসবের রক্ষণাবেক্ষণকারী-পরিচালক। আর আপনার জন্যই সকল প্রশংসা; আসমানসমূহ, যমীন ও এ-দুটির মাঝে যা কিছু আছে আপনিই এসবের রব্ব। আর আপনার জন্যই সব প্রশংসা; আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু’টির মাঝে যা আছে তার সার্বভৌমত্ব আপনারই। আর আপনার জন্যই সকল প্রশংসা; আসমানসমূহ ও যমীনের রাজা আপনিই। আর আপনার জন্যই সকল প্রশংসা; আপনিই হক্ব, আপনার ওয়াদা হক্ব (বাস্তব ও সঠিক), আপনার বাণী হক্ব, আপনার সাক্ষাৎ লাভ হক্ব, জান্নাত হক্ব, জাহান্নাম হক্ব, নবীগণ হক্ব, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হক্ব এবং কিয়ামত হক্ব। হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করি, আপনার উপরই ভরসা করি, আপনার উপরই ঈমান আনি, আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি, আপনার সাহায্যেই বা আপনার জন্যই শত্রুর সাথে বিবাদে লিপ্ত হই, আর আপনার কাছেই বিচার পেশ করি; অতএব ক্ষমা করে দিন আমার গুনাহসমূহ— যা পূর্বে করেছি, যা পরে করেছি, যা আমি গোপন করেছি আর যা প্রকাশ্যে করেছি। আপনিই (কাউকে) করেন অগ্রগামী, আর আপনিই (কাউকে) করেন পশ্চাদগামী, আপনি ব্যতীত আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনিই আমার ইলাহ। আপনি ব্যতীত আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই।”[7]
[1] বুখারী ১/১৮১, নং ৭৪৪; মুসলিম ১/৪১৯, নং ৫৯৮।
[2] মুসলিম, নং ৩৯৯; আর সুনান গ্রন্থকার চারজন। আবু দাউদ, নং ৭৭৫; তিরমিযী, নং ২৪৩; ইবন মাজাহ্‌, নং ৮০৬; নাসাঈ, নং ৮৯৯। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ১/৭৭; সহীহ ইবন মাজাহ্ ১/১৩৫।
[3] মুসলিম ১/৫৩৪, নং ৭৭১।
[4] মুসলিম ১/৫৩৪, নং ৭৭০।
[5] আবূ দাউদ ১/২০৩, নং ৭৬৪; ইবন মাজাহ্‌ ১/২৬৫, ৮০৭; আহমাদ, আহমাদ ৪/৮৫, নং ১৬৭৩৯। শাইখ শু‘আইব আল-আরনাউত তার মুসনাদের তাহকীকে এ হাদীসের সনদকে হাসান লি-গাইরিহি বলেছেন। আর আব্দুল কাদের আরনাউত ইবন তাইমিয়্যার ‘আল-কালেমুত তাইয়্যেব’ গ্রন্থের নং ৭৮, এর তাহকীক বলেন, এটি তার শাওয়াহেদ বা সমার্থবোধক হাদীসের দ্বারা সহীহ লি-গাইরিহী প্রমাণিত হয়। আর আলবানী তার সহীহুল কালেমিত তাইয়্যেব এর ৬২ নং এ হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া ইমাম মুসলিম ইবন উমর থেকে অনুরূপ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন, তবে সেখানে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ১/৪২০, নং ৬০১।
[6] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দো‘আটি রাতে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত পড়ার সময় বলতেন।
[7] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৩/৩, ১১/১১৬, ১৩/৩৭১, ৪২৩, ৪৬৫, নং ১১২০, ৬৩১৭, ৭৩৮৫, ৭৪৪২, ৭৪৯৯; ও মুসলিম সংক্ষিপ্তাকারে ১/৫৩২, নং ৭৬৯।
৮. রুকূ‘র দো‘আঃ
 (সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম)।
(১) “আমার মহান রব্বের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি” (তিনবার)[1]
 (সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা রব্বানা ওয়াবিহামদিকা, আল্লা-হুম্মাগফির লী)।
(২) “হে আল্লাহ! আমাদের রব্ব! আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি আপনার প্রশংসাসহ। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মাফ করে দিন।”[2]
 (“সুব্বূহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালা-’ইকাতি ওয়াররূহ)।
(৩) “(তিনি/আপনি) সম্পূর্ণরূপে দোষ-ত্রুটিমুক্ত, অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত; ফেরেশতাগণ ও রূহ এর রব্ব।”[3]
 (আল্লা-হুম্মা লাকা রাকা‘তু, ওয়াবিকা আ-মানতু ওয়া লাকা আস্‌লামতু। খাশা‘আ লাকা সাম‘ঈ ওয়া বাসারী ওয়া মুখ্‌খী ওয়া ‘আযমী ওয়া ‘আসাবী [ওয়ামাস্তাক্বাল্লাত বিহি কাদামী])।
(৪) “হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যেই রুকু করেছি, আপনার উপরই ঈমান এনেছি এবং আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছি। আমার কান, আমার চোখ, আমার মস্তিষ্ক, আমার হাড়, আমার পেশী, সবই আপনার জন্য বিনয়াবনত। [আর যা আমার পা বহন করে দাঁড়িয়ে আছে (আমার সমগ্র সত্তা) তাও (আপনার জন্য বিনয়াবনত)]”[4]।
 (সুবহা-নাযিল জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়া’ই ওয়াল ‘আযামাতি)।
(৫) “পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি সেই সত্তার, যিনি প্রবল প্রতাপ, বিশাল সাম্রাজ্য, বিরাট গৌরব-গরিমা এবং অতুলনীয় মহত্ত্বের অধিকারী”[5]।
[1] সুনানের গ্রন্থাকারগণ ও আহমাদ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। আবূ দাউদ, নং ৮৭০; তিরমিযী, নং ২৬২; নাসাঈ, নং ১০০৭; ইবন মাজাহ্‌, নং ৮৯৭; আহমাদ, নং ৩৫১৪। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ১/৮৩।
[2] বুখারী ১/৯৯, নং ৭৯৪; মুসলিম ১/৩৫০, নং ৪৮৪।
[3] মুসলিম ১/৩৫৩, নং ৪৭৪; আবূ দাউদ ১/২৩০, নং ৮৭২।
[4] মুসলিম ১/৫৩৪, নং ৭৭১; তাছাড়া চার সুনান গ্রন্থকারগণের মধ্যে ইবন মাজাহ ব্যতীত সবাই তা উদ্ধৃত করেছেন। আবূ দাউদ, নং ৭৬০, ৭৬১; তিরমিযী, নং ৩৪২১; নাসাঈ, নং ১০৪৯; তবে দুই ব্রাকেটের অংশ ইবন খুযাইমার শব্দ, নং ৬০৭; ইবন হিব্বান, নং ১৯০১।
[5] আবূ দাউদ ১/২৩০, নং ৮৭৩; নাসাঈ, নং ১১৩১; আহমাদ, নং ১৩৯৮০। আর তার সনদ হাসান।
৯. রুকু থেকে উঠার দো‘আঃ
(সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ)।
(১) “যে আল্লাহর হামদ-প্রশংসা করে, আল্লাহ তার প্রশংসা শুনুন (কবুল করুন)।”[1]
(রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু, হামদান কাছীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহি)
(২) “হে আমাদের রব্ব! আর আপনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা; অঢেল, পবিত্র ও বরকত-রয়েছে-এমন প্রশংসা।”[2]
(মিল’আস সামা-ওয়া-তি ওয়া মিল’আল আরদি ওয়ামা বাইনাহুমা, ও মিল’আ মা শি’তা মিন শাইয়িন বা‘দু, আহলাস সানা-য়ি ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা ক্বালাল ‘আবদু, ওয়া কুল্লুনা লাকা ‘আবদুন, আল্লা-হুম্মা লা মানি‘আ লিমা আ‘ত্বাইতা, ওয়ালা মু‘তিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়ালা ইয়ানফা‘য়ু যাল-জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু)।
(৩) “(আপনার প্রশংসা করছি) আসমানসমূহ পূর্ণ করে, যমীন পূর্ণ করে ও যা এ দু’টির মাঝে রয়েছে (তাও পূর্ণ করে), আর এর পরে যা পূর্ণ করা আপনার ইচ্ছা তা পূর্ণ করে। হে প্রশংসা ও সম্মান-মর্যাদার যোগ্য সত্ত্বা! বান্দা সবচেয়ে যে সঠিক কথাটি বলেছে তা হচ্ছে—আর আমরা সবাই আপনার বান্দা— হে আল্লাহ, আপনি যা প্রদান করেছেন তা বন্ধ করার কেউ নেই, আর আপনি যা রুদ্ধ করেছেন তা প্রদান করার কেউ নেই। আর কোনো ক্ষমতা-প্রতিপত্তির অধিকারীর ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি আপনার কাছে কোনো কাজে লাগবে না।”[3]
[1] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ২/২৮২, নং ৭৯৬।
[2] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ২/২৮৪, নং ৭৯৬।
[3] মুসলিম, ১/৩৪৬; নং ৪৭৭।
১০. সিজদার দো‘আঃ
(১) (সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা)
 “আমার রব্বের পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করছি, যিনি সবার উপরে।” (তিনবার)[1]
(২) (সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগফির লী)।
“হে আল্লাহ! আমাদের রব্ব! আপনার প্রশংসাসহ আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মাফ করে দিন।”[2]
 (৩) (সুব্বূহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালা-ইকাতি ওয়াররূহ)।
“(তিনি/আপনি) সম্পূর্ণরূপে দোষ-ত্রুটিমুক্ত, অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত; ফেরেশতাগণ ও রূহ এর রব্ব।”[3]
(৪) (আল্লা-হুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়াবিকা আ-মানতু ওয়া লাকা আসলামতু। সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহু ওয়া সাওয়্যারাহু ওয়া শাক্কা সাম‘আহু ওয়া বাসারাহু, তাবারাকাল্লাহু আহ্‌সানুল খালিক্বীন)।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যই সিজদা করেছি, আপনার উপরই ঈমান এনেছি, আপনার কাছেই নিজেকে সঁপে দিয়েছি। আমার মুখমণ্ডল সিজদায় অবনত সেই মহান সত্তার জন্য; যিনি একে সৃষ্টি করেছেন এবং আকৃতি দিয়েছেন, আর তার কান ও চোখ বিদীর্ণ করেছেন। সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ্‌ অত্যন্ত বরকতময়।”[4]
(৫) (সুবহা-নাযিল জাবারূতি, ওয়াল মালাকুতি, ওয়াল কিবরিয়া-ই ওয়াল ‘আযামাতি)।
 “পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি সেই সত্তার, যিনি প্রবল প্রতাপ, বিশাল সাম্রাজ্য, বিরাট গৌরব-গরিমা এবং অতুলনীয় মহত্ত্বের অধিকারী।”[5]
(৬) (আল্লা-হুম্মাগফির লী যাম্বী কুল্লাহু; দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু, ওয়া আউয়ালাহু ওয়া ‘আখিরাহু, ওয়া ‘আলানিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু)।
 “হে আল্লাহ! আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিন— তার ক্ষুদ্র অংশ, তার বড় অংশ, আগের গুনাহ, পরের গুনাহ, প্রকাশ্য ও গোপন গুনাহ।”[6]
 (৭) (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিরিদ্বা-কা মিন সাখাত্বিকা, ওয়া বিমু‘আ-ফা-তিকা মিন ‘উক্বুবাতিকা, ওয়া আঊযু বিকা মিনকা, লা উহ্‌সী সানা-আন আলাইকা, আনতা কামা আসনাইতা ‘আলা নাফসিকা)।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে অসন্তুষ্টি থেকে, আর আপনার নিরাপত্তার মাধ্যমে আপনার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই। আর আমি আপনার নিকটে আপনার (পাকড়াও) থেকে আশ্রয় চাই। আমি আপনার প্রশংসা গুনতে সক্ষম নই; আপনি সেরূপই, যেরূপ প্রশংসা আপনি নিজের জন্য করেছেন”।[7]
[1] হাদীসটি সুনানগ্রন্থকারগণ ও ইমাম আহমাদ সংকলন করেছেন। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৮৭০; তিরমিযী, হাদীস নং ২৬২; নাসাঈ, হাদীস নং ১০০৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৮৯৭; আহমাদ, হাদীস নং ৩৫১৪। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ১/৮৩।
[2] বুখারী, নং ৭৯৪; মুসলিম, নং ৪৮৪; পূর্বে ৩৪ নং তা গত হয়েছে।
[3] মুসলিম ১/৩৫৩, নং ৪৮৭; আবূ দাউদ, নং ৮৭২। পূর্বে ৩৫ নং এ গত হয়েছে।
[4] মুসলিম ১/৫৩৪, নং ৭৭১ ও অন্যান্যগণ।
[5] আবু দাঊদ ১/২৩০, নং ৮৭৩; নাসাঈ, নং ১১৩১; আহমাদ, নং ২৩৯৮০। আর শাইখ আলবানী একে সহীহ আবু দাউদে ১/১৬৬ সহীহ বলেছেন। যার তাখরীজ ৩৭ নং এ চলে গেছে।
[6] মুসলিম ১/২৩০, নং ৪৮৩।
[7] মুসলিম ১/৩৫২, নং ৪৮৬।
১১. দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আঃ
(১) (রব্বিগফির লী, রব্বিগফির লী)
হে আমার রব্ব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। হে আমার রব্ব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।[1]
 (২) (আল্লা-হুম্মাগফির লী, ওয়ারহামনী, ওয়াহদিনী, ওয়াজবুরনী, ওয়া‘আফিনি, ওয়ারযুক্বনী, ওয়ারফা‘নী)
“হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন”[2]।
[1] আবূ দাউদ ১/২৩১, নং ৮৭৪; ইবন মাজাহ্‌ নং ৮৯৭। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ১/১৪৮।
[2] হাদীসটি নাসাঈ ব্যতীত সুনান গ্রন্থগারগণ সবাই সংকলন করেছেন। আবূ দাউদ, ১/২৩১, নং ৮৫০; তিরমিযী, নং ২৮৪, ২৮৫; ইবন মাজাহ, নং ৮৯৮। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ১/৯০; সহীহ ইবন মাজাহ ১/১৪৮।
১২. সিজদার আয়াত তেলাওয়াতের পর সিজদায় দো‘আঃ
(সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহু, ওয়া শাক্কা সাম্‘আহু ওয়া বাসারাহু, বিহাওলিহি ওয়া কুওয়াতিহি, ফাতবারাকাল্লা-হু আহ্‌সানুল খা-লিক্বীন)।
(১) “আমার মুখমণ্ডল সিজদা করেছে সে সত্তার জন্য, যিনি একে সৃষ্টি করেছেন, আর নিজ শক্তি ও ক্ষমতাবলে এর কান ও চোখ বিদীর্ণ করেছেন। সুতরাং সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ্‌ অত্যন্ত বরকতময়।”[1]
 (২) (আল্লা-হুম্মাক্তুব লী বিহা ‘ইনদাকা আজরান, ওয়াদা‘ ‘আন্নী বিহা উইযরান, ওয়াজ ‘আলহা লী ‘ইনদাকা যুখরান, ওয়া তাক্বাব্বালহা মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতাহা মিন আবদিকা দাঊদ)।
“হে আল্লাহ! এই সিজদার বদৌলতে আপনার নিকট আমার জন্য প্রতিদান লিখে রাখুন, এর দ্বারা আমার পাপসমূহ ফেলে দিন, এটাকে আপনার কাছে আমার জন্য সঞ্চয় হিসেবে জমা রাখুন, আর একে আমার থেকে কবুল করুন যেমন কবুল করেছেন আপনার বান্দা দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর থেকে”।[2]
[1] তিরমিযী, ২/৪৭৪, নং ৩৪২৫; আহমাদ ৬/৩০; নং ২৪০২২; হাকিম ও সহীহ বলেছেন এবং যাহাবী সেটা সমর্থন করেছেন, ১/২২০; আর বাড়তি অংশটুকু তাঁরই। আয়াতটুকু সূরা আল-মুমিনূন এর ১৪ নং আয়াত।
[2] তিরমিযী ২/৪৭৩, নং ৫৭৯; হাকেম ও সহীহ বলেছেন, আর ইমাম যাহাবী সমর্থন করেছেন, ১/২১৯।
১২. তাশাহ্‌হুদঃ
(আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্‌সালাওয়া-তু ওয়াত্তায়্যিবা-তু আস্‌সালা-মু ‘আলাইকা আইয়্যূহান নাবিয়্যূ ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আস্‌সালা-মু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবাদিল্লা-হিস সা-লেহীন। আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু)।
- “যাবতীয় অভিবাদন আল্লাহ্‌র জন্য, অনুরূপভাবে সকল সালাত ও পবিত্র কাজও। হে নবী! আপনার উপর বর্ষিত হোক সালাম, আল্লাহর রহমত ও বরকতসমূহ। আমাদের উপর এবং আল্লাহ্‌র সৎ বান্দাদের উপরও বর্ষিত হোক সালাম। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,  আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই এবং আমি আরও  সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ্‌র বান্দা ও রাসূল”।[1]
[1] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১৩, নং ৮৩১; মুসলিম ১/৩০১, নং ৪০২।
১৩. তাশাহ্‌হুদের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত (দরুদ) পাঠঃ
(১) (আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা  ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা  ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইব্রাহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ)।
 “হে আল্লাহ! আপনি (আপনার নিকটস্থ উচ্চসভায়) মুহাম্মাদকে সম্মানের সাথে স্মরণ করুন এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকে, যেমন আপনি সম্মানের সাথে স্মরণ করেছেন ইবরাহীমকে ও তাঁর পরিবার-পরিজনদেরকে। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার পরিজনের উপর বরকত নাযিল করুন যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত”।[1]
(২) (আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া ‘আলা আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা সাল্লাইতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া ‘আলা আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা বা-রাক্তা ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ)।
“হে আল্লাহ! আপনি (আপনার নিকটস্থ উচ্চসভায়) মুহাম্মাদকে সম্মানের সাথে স্মরণ করুন এবং তাঁর স্ত্রীগণ ও তাঁর বংশধরকেও, যেমন আপনি সম্মানের সাথে স্মরণ করেছেন ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনকে। আর আপনি মুহাম্মাদ এবং তাঁর স্ত্রীগণ ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত নাযিল করুন যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীমের পরিবার- পরিজনের উপর। নিশ্চয় আপনি অত্যন্ত প্রশংসিত ও মহামহিমান্বিত”।[2]
[1] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৬/৪০৮, নং ৩৩৭০; মুসলিম, নং ৪০৬।
[2] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৬/৪০৭, নং ৩৩৬৯; মুসলিম ১/৩০৬, নং ৪০৭। আর শব্দটি মুসলিমের
১৪. সালামের আগে শেষ তাশাহহুদের পরের দো‘আঃ
 (১) (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি ওয়া মিন ‘আযা-বি জাহান্নামা, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামা-তি, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল)।
 “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্টতা থেকে”।[1]
(২) (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিন আযা-বিল ক্বাবরি, ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-লি, ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামা-ত। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল মা’ছামি ওয়াল মাগরামি)।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে, আশ্রয় চাই মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই পাপাচার ও ঋণের বোঝা থেকে”।[2]
 (৩) (আল্লা-হুম্মা ইন্নী যলামতু নাফসী যুলমান কাসীরা। ওয়ালা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা। ফাগফির লী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম)।
 “হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া গুনাহসমূহ কেউই ক্ষমা করতে পারে না। অতএব আমাকে আপনার পক্ষ থেকে বিশেষ ক্ষমা দ্বারা মাফ করে দিন, আর আমার প্রতি দয়া করুন; আপনিই তো ক্ষমাকারী, পরম দয়ালু”।[3]
(৪) (আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়া মা আখ্‌খারতু ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ’লান্তু ওয়া মা আসরাফ্‌তু ওয়া মা আনতা আল’লামু বিহী মিন্নী। আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু লা ইলাহা ইল্লা আনতা)।
“হে আল্লাহ! ক্ষমা করে দিন আমার গুনাহসমূহ— যা পূর্বে করেছি, যা পরে করেছি, যা আমি গোপন করেছি, যা প্রকাশ্যে করেছি, যা সীমালঙ্ঘন করে করেছি, আর যা আপনি আমার চেয়ে বেশি জানেন। আপনিই (কাউকে) করেন অগ্রগামী, আর আপনিই (কাউকে) করেন পশ্চাদগামী, আপনি ব্যতীত আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই।”[4]
(৫)  (আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ও শুকরিকা ওয়াহুসনি ইবা-দাতিকা)।
 “হে আল্লাহ! আপনার যিক্‌র করতে, আপনার শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে এবং সুন্দরভাবে আপনার ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন”।[5]
 (৬) (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল বুখলি, ওয়া ‘আউযু বিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আ‘উযু বিকা মিন আন উরাদ্দা ইলা আরযালিল্ ‘উমুরি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন্ ফিতনাতিদ দুনইয়া ও আযা-বিল ক্বাবরি)।
 “হে আল্লাহ ! আমি আপনার আশ্রয় চাই কৃপণতা থেকে, আপনার আশ্রয় চাই কাপুরুষতা থেকে, আপনার আশ্রয় চাই চরম বার্ধক্যে উপনীত হওয়া থেকে, আর আপনার আশ্রয় চাই দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আযাব থেকে।”[6]
(৭) (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ‘উযু বিকা মিনান্নার)।
 “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই”।[7]
 (৮) (আল্লা-হুম্মা বি‘ইলমিকাল গাইবি ওয়া কুদরাতিকা ‘আলাল খালক্বি আহয়িনী মা আলিম্‌তাল হায়া-তা খাইরাল্ লী ওয়া তাওয়াফ্‌ফানী ইযা আলিম্‌তাল ওয়াফা-তা খাইরাল লী। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খাশইয়াতাকা ফিল গাইবি ওয়াশ-শাহাদাতি ওয়া আসআলুকা কালিমাতাল হাক্বক্বি ফির-রিদা ওয়াল-গাদাবি। ওয়া আসআলুকাল কাসদা ফিল গিনা ওয়াল ফাক্বরি, ওয়া আসআলুকা না‘ঈমান লা ইয়ানফাদু, ওয়া আসআলুকা ক্বুররতা আইনিন লা তানকাতি‘উ, ওয়া আস্আলুকার-রিদা বা‘দাল কাদায়ে, ওয়া আসআলুকা বারদাল ‘আইশি বা‘দাল মাওতি, ওয়া  আসআলুকা লাযযাতান-নাযারি ইলা ওয়াজহিকা, ওয়াশ-শাওক্বা ইলা লিক্বাইকা, ফী গাইরি দাররাআ মুদিররাতিন ওয়ালা ফিতনাতিম মুদিল্লাহ। আল্লা-হুম্মা যাইইন্না বিযীনাতিল ঈমানি ওয়াজ‘আলনা হুদাতাম মুহতাদ্বীন)।
 “হে আল্লাহ! আপনার গায়েবী জ্ঞান এবং সকল সৃষ্টির উপর আপনার সার্বভৌম ক্ষমতার অসিলায় (চাই), আমাকে আপনি জীবিত রাখুন সে-সময় পর্যন্ত, যে সময় পর্যন্ত জীবিত থাকা আপনার জ্ঞানে আমার জন্য কল্যাণকর; আর আমাকে মৃত্যু দিন যখন আপনি জানেন যে, মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট চাই গোপনে ও প্রকাশ্যে আপনাকে ভয় করা; আপনার নিকট চাই সন্তুষ্টি ও ক্রোধ উভয় অবস্থায় সত্য কথা বলা; আপনার নিকট চাই দারিদ্র্যে ও প্রাচুর্যে ভারসাম্যপূর্ণ (মধ্যম) পন্থা। আপনার নিকট চাই এমন নে‘আমত, যা কখনো শেষ হবে না; আপনার নিকট চাই এমন নয়নাভিরাম বস্তু, যা কখনো বিচ্ছিন্ন হবে না। আর আমি আপনার নিকট চাই (তাকদীরের) ফয়সালার পর সন্তোষ; আমি আপনার নিকট চাই মৃত্যুর পর প্রশান্ত জীবন। আমি আপনার নিকট চাই আপনার চেহারার প্রতি দৃষ্টিপাতের স্বাদ, আপনার নিকট চাই আপনার সাথে সাক্ষাৎ লাভের ব্যাকুলতা; এমন যে, তাতে থাকবে না কোনো ক্ষতিকর কষ্ট কিংবা ভ্রষ্টকারী ফেতনা। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ঈমানের সৌন্দর্যে সৌন্দর্যমণ্ডিত করুন এবং আমাদেরকে হেদায়াত-প্রাপ্ত পথপ্রদর্শক বানান”।[8]
 (৯) (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইয়া আল্লা-হু বিআন্নাকাল ওয়া-হিদুল আহাদুস্ সমাদুল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইয়ূলাদ ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফূওয়ান আহাদ, আন্ তাগফিরালী যুনূবী, ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রহীম)।
 “হে আল্লাহ! আপনিই একক, অদ্বিতীয়, অমুখাপেক্ষী; যিনি জন্ম দেন নি, জন্ম নেনও নি; আর যার সমকক্ষ কেউ নেই। তাই হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই, যেন আপনি আমার সকল গুনাহ্‌ ক্ষমা করে দেন; নিশ্চয় আপনি অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”।[9]
 (১০) (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা শারীকা লাকাল মান্না-নু, ইয়া বাদী‘আস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল-আরদী, ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরা-ম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যূমু, ইন্নী আসআলুকাল্ জান্নাতা ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনান্না-র)।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই; কারণ, সকল প্রশংসা আপনার, কেবলমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই, সীমাহীন অনুগ্রহকারী; হে আসমানসমূহ ও যমীনের অভিনব স্রষ্টা! হে মহিমাময় ও মহানুভব! হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী-সর্বসত্তার ধারক! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।”[10]
(১১) (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিআন্নী আশ্‌হাদু আন্নাকা আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতাল আহাদুস সামাদুল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইয়ূলাদ ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ)।
 “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই। কেননা, আমি সাক্ষ্য দেই যে, নিশ্চয় আপনিই আল্লাহ, আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই; আপনি একক সত্তা, অমুখাপেক্ষী—সকল কিছু আপনার মুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং জন্ম নেনও নি। আর যাঁর সমকক্ষ কেউ নেই”।[11]
[1] বুখারী ২/১০২, নং ১৩৭৭; মুসলিম ১/৪১২, নং ৫৮৮। আর শব্দ মুসলিমের।
[2] বুখারী ১/২০২, নং ৮৩২; মুসলিম ১/৪১২, নং ৫৮৭।
[3] বুখারী ৮/১৬৮, নং ৮৩৪; মুসলিম ৪/২০৭৮, নং ২৭০৫।
[4] মুসলিম ১/৫৩৪, নং ৭৭১।
[5] আবূ দাউদ ২/৮৬, নং ১৫২২; নাসাঈ ৩/৫৩, নং ২৩০২। আর শাইখ আলবানী সহীহ আবি দাঊদ ১/২৮৪ এটাকে সহীহ বলেছেন।
[6] বুখারি, (ফাতহুল বারীসহ) ৬/৩৫, নং ২৮২২ ও নং ৬৩৯০।
[7] আবূ দাউদ, নং ৭৯২; ইবন মাজাহ্‌ নং ৯১০। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ২/৩২৮।
[8] নাসাঈ ৩/৫৪, ৫৫, নং ১৩০৪; আহমাদ ৪/৩৬৪, নং ২১৬৬৬। আর শাইখ আলবানী সহীহুন নাসাঈ ১/২৮১ তে একে সহীহ বলেছেন।
[9] নাসাঈ ৩/৫২, নং ১৩০০; শব্দ তাঁরই, আহমাদ ৪/৩৩৮, নং ১৮৯৭। আর আলবানী সহীহুন নাসাঈ ১/২৮০ তে একে সহীহ বলেছেন।
[10] হাদীসটি সুনানগ্রন্থকারগণ সকলে সংকলন করেছেন। আবূ দাউদ, নং ১৪৯৫; তিরমিযী, নং ৩৫৪৪; ইবন মাজাহ, নং ৩৮৫৮; নাসাঈ, নং ১২৯৯। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ২/৩২৯।
[11] আবূ দাউদ ২/৬২, নং ১৪৯৩; তিরমিযী ৫/৫১৫, নং ৩৪৭৫; ইবন মাজাহ, ২/১২৬৭, নং ৩৮৫৭; নাসাঈ, নং ১৩০০, আর শব্দ তাঁরই; আহমাদ নং ১৮৯৭৪। আর শাইখ আলবানী সহীহ নাসাঈ ১/২৮০ তে একে সহীহ বলেছেন। তাছাড়া আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ ২/৩২৯; সহীহ আত-তিরমিযী, ৩/১৬৩।
১২. সালাম ফিরানোর পর যিকরসমূহঃ
(১) (আস্তাগফিরুল্লা-হ) (তিনবার)
“আমি আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
(২) (আল্লা-হুম্মা আনতাস্ সালা-মু ওয়া মিনকাস্ সালা-মু তাবা-রক্তা ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরা-ম)।
“হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়। আপনার নিকট থেকেই শান্তি বর্ষিত হয়। আপনি বরকতময়, হে মহিমাময় ও সম্মানের অধিকারী!”[1]
(৩) (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর। [তিন বার]
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” (তিনবার)
(৪) আল্লা-হুম্মা লা মানি‘আ লিমা আ‘তাইতা, ওয়ালা মু‘তিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়ালা ইয়ানফা‘উ যালজাদ্দি মিনকাল জাদ্দু)।
হে আল্লাহ, আপনি যা প্রদান করেছেন তা বন্ধ করার কেউ নেই, আর আপনি যা রুদ্ধ করেছেন তা প্রদান করার কেউ নেই। আর কোনো ক্ষমতা-প্রতিপত্তির অধিকারীর ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি আপনার কাছে কোনো উপকারে আসবে না।”[2]
(৫) (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়ালা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যাহু। লাহুন নি‘মাতু ওয়া লাহুল ফাদলু, ওয়া লাহুসসানাউল হাসান। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসীনা লাহুদ-দ্বীন ওয়া লাও কারিহাল কাফিরূন)।
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি নেই। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করি, নেয়ামতসমূহ তাঁরই, যাবতীয় অনুগ্রহও তাঁর এবং উত্তম প্রশংসা তাঁরই। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আমরা তাঁর দেয়া দ্বীনকে একনিষ্ঠভাবে মান্য করি, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে”।[3]
(৪) (সুবহা-নাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লা-হু আকবার) (৩৩বার)
 “আল্লাহ কতই না পবিত্র-মহান। সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। আল্লাহ সবচেয়ে বড়।” (৩৩ বার)
(৫) (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু  ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর)।
 “একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।”[4]
(৬) প্রত্যেক সালাতের পর একবার, সূরা ইখলাস, সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস:
(ক) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (ক্বুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ। আল্লাহুস্ সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ)।
রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। “বলুন, তিনি আল্লাহ্, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ্ হচ্ছেন ‘সামাদ’ (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী)। তিনি কাউকেও জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয় নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।”
(খ) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (ক্বুল আ‘উযু বিরব্বিল ফালাক্ব। মিন শাররি মা খালাক্ব। ওয়া মিন শাররি গা-সিক্বিন ইযা ওয়াক্বাব। ওয়া মিন শাররিন নাফফা-সা-তি ফিল ‘উক্বাদ। ওয়া মিন শাররি হা-সিদিন ইযা হাসাদ)।
রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। “বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি  ঊষার রবের। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে। ‘আর অনিষ্ট হতে রাতের অন্ধকারের, যখন তা গভীর হয়। আর অনিষ্ট হতে সমস্ত নারীদের, যারা গিরায় ফুঁক দেয়। আর অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।”
(গ) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (ক্বুল ‘আউযু বিরাব্বিন্না-স। মালিকিন্না-সি, ইলা-হিন্নাসি, মিন শাররিল ওয়াসওয়া-সিল খান্না-স, আল্লাযি ইউওয়াসউইসু ফী সুদূরিন না-সি, মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স।)।
রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। “বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের, মানুষের অধিপতির, মানুষের ইলাহের কাছে, আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে; যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিনের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে।”[5]
(৭) আয়াতুল কুরসী। প্রত্যেক সালাতের পর একবার। আর তা হচ্ছে,
 (আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যূল কাইয়্যূমু লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহূ মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহূ ইল্লা বিইযনিহী। ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহীতূনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহী ইল্লা বিমা শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুয়াল ‘আলিয়্যূল ‘আযীম)।
“আল্লাহ্, তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়। আসমানসমূহে যা রয়েছে ও যমীনে যা রয়েছে সবই তাঁর। কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে তা তিনি জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছে করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না। তাঁর ‘কুরসী’ আসমানসমূহ ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে; আর এ দুটোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।”[6]
(৮)  (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হাম্‌দু ইয়ুহ্‌য়ী ওয়াইয়ূমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর)।
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান”।
মাগরিব ও ফজরের নামাযের পর উপরোক্ত যিকর ১০ বার করে করবে।[7]
(৯) (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন্ ওয়া রিয্‌কান ত্বায়্যিবান ওয়া ‘আমালান মুতাক্বাব্বালান)।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করি।”
এটি ফজর নামাযের সালাম ফিরানোর পর পড়বে।[8]
[1] মুসলিম ১/৪১৪, নং ৫৯১।
[2] বুখারী ১/২২৫, নং ৮৪৪; মুসলিম ১/৪১৪, নং ৫৯৩। আর দু ব্রাকেটের মাঝের অংশ বুখারীতে বর্ধিত এসেছে, নং ৬৪৭৩।
[3] মুসলিম ১/৪১৫, নং ৫৯৪।
[4] মুসলিম, ১/৪১৮, নং ৫৯৭; আর তাতে রয়েছে, যে ব্যক্তি প্রতি নামাযের পরে সেটা বলবে, তার পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনারাশির মত হয়।
[5] আবু দাঊদ ২/৮৬, নং ১৫২৩; তিরমিযী, নং ২৯০৩; নাসাঈ ৩/৬৮, নং ১৩৩৫। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ২/৮। আর উপর্যুক্ত তিনটি সূরাকে ‘আল-মু‘আওয়াযাত’ বলা হয়। দেখুন, ফাতহুল বারী, ৯/৬২।
[6] হাদীসে এসেছে, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পরে এটি পড়বে, তাকে মৃত্যু ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশে আর অন্য কিছু বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।” নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নং ১০০; ইবনুস সুন্নী, নং ১২১। আর শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহুল জামে‘ ৫/৩৩৯ তে এবং সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা ২/৬৯৭, নং ৯৭২ তে সহীহ বলেছেন। আর আয়াতটি দেখুন, সূরা আল-বাকারাহ্‌-২৫৫।
[7] তিরমিযী ৫/৫১৫, নং ৩৪৭৪; আহমাদ ৪/২২৭, নং ১৭৯৯০। হাদীসটির তাখরীজের জন্য আরও দেখুন, যাদুল মা‘আদ ১/৩০০।
[8] ইবন মাজাহ্‌, নং ৯২৫; নাসাঈ, তাঁর আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ গ্রন্থে, হাদীস নং ১০২। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ১/১৫২; মাজমাউয যাওয়াইদ, ১০/১১১। তাছাড়া অচিরেই ৯৫ নং হাদীসেও আসবে।
১২. ইসতিখারার সালাতের দো‘আঃ
 জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে প্রত্যেক কাজেই ইসতিখারা (তথা কল্যাণ কামনার নামায ও দো‘আ) শিক্ষা দিতেন, যেরূপ আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজ করার ইচ্ছা করে, তখন সে যেনো ফরয সালাত ব্যতীত দুই রাক্আত নফল নামায পড়ে, অতঃপর যেন বলে,
 (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসতাখীরুকা বি‘ইলমিকা ওয়া আস্তাক্বদিরুকা বিক্বুদরাতিকা ওয়া আস্আলুকা মিন ফাদলিকাল আযীম। ফাইন্নাকা তাক্বদিরু ওয়ালা আক্বদিরু, ওয়া তা‘লামু ওয়ালা আ‘লামু, ওয়া আনতা ‘আল্লামূল গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইন কুনতা তা‘লামু আন্না হা-যাল আম্‌রা (মনে মনে প্রয়োজন উল্লেখ করুন) খাইরুন লী ফী দ্বীনি ওয়া মা‘আ-শী ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী, (অথবা বলেছেন) ‘আজিলিহী ও আজিলিহী, ফাকদুরহু লী, ওয়া ইয়াসসিরহু লী, ছুম্মা বা-রিক লী ফীহি। ওয়াইন কুনতা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা (মনে মনে প্রয়োজন উল্লেখ করুন) শাররুন লী ফী দ্বীনী ওয়া মা‘আ-শী ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী, (অথবা বলেছেন) ‘আজিলিহী ও আজিলিহী, ফাসরিফহু ‘আন্নী ওয়াসরিফনী ‘আনহু, ওয়াকদুর লিয়াল-খাইরা হাইসু কা-না, সুম্মা আরদ্বিনী বিহ্)।
 “হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের সাহায্যে আপনার নিকট কল্যাণ কামনা করছি। আপনার কুদরতের সাহায্যে আপনার নিকট শক্তি কামনা করছি এবং আপনার মহান অনুগ্রহের প্রার্থনা করছি। কেননা আপনিই শক্তিধর, আমি শক্তিহীন। আপনি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন এবং আপনি গায়েবী বিষয় সম্পর্কে মহাজ্ঞানী। হে আল্লাহ! এই কাজটি (এখানে উদ্দিষ্ট কাজ বা বিষয়টি মনে মনে উল্লেখ করবে) আপনার জ্ঞান অনুযায়ী যদি আমার দ্বীন, আমার জীবিকা এবং আমার কাজের পরিণতির দিক দিয়ে, (অথবা বলেছেন) ইহকাল ও পরকালের জন্য কল্যাণকর হয়, তবে তা আমার জন্য নির্ধারিত করুন এবং তাকে আমার জন্য সহজলভ্য করে দিন, তারপর তাতে আমার জন্য বরকত দান করুন। আর এই কাজটি আপনার জ্ঞান অনুযায়ী যদি আমার দ্বীন, আমার জীবিকা এবং আমার কাজের পরিণতির দিক দিয়ে, (অথবা বলেছেন) ইহকাল ও পরকালের জন্য ক্ষতিকর হয়, তবে আপনি আমাকে তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং যেখানেই কল্যাণ থাকুক আমার জন্য সেই কল্যাণ নির্ধারিত করে দিন। অতঃপর তাতেই আমাকে সন্তুষ্ট রাখুন।”[1]
আর যে ব্যক্তি স্রষ্টার কাছে কল্যাণ চাইবে, মুমিনদের সাথে পরামর্শ করবে এবং যে কোনো কাজ করার আগে খোঁজ-খবর নিয়ে করবে, সে কখনো অনুতপ্ত হবে না। কেননা, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
 “আর আপনি কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন, তারপর আপনি কোনো দৃঢ় সংকল্প হলে আল্লাহ্‌র উপর নির্ভর করুন।”[2]
[1] বুখারী, ৭/১৬২, নং ১১৬২।
[2] সূরা আলে-ইমরান: ১৫৯।
১৩.বিত্‌রের কুনুতের দো‘আঃ
 (আল্লা-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদাইতা ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফাইতা ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইতা ওয়াবা-রিক লী ফীমা আ‘ত্বাইতা ওয়াক্বিনী শাররা মা ক্বাদাইতা ফাইন্নাকা তাক্ব‌্দ্বী ওয়ালা ইউক্ব্‌দ্বা ‘আলাইকা। ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মাও ওয়া-লাইতা, [ওয়ালা ইয়া‘ইয্যু মান ‘আ-দাইতা।] তাবা-রক্‌তা রব্বানা ওয়া তা‘আ-লাইতা)।
(১) “হে আল্লাহ! আপনি যাদেরকে হেদায়াত করেছেন তাদের মধ্যে আমাকেও হেদায়াত দিন, আপনি যাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করেছেন তাদের মধ্যে আমাকেও নিরাপত্তা দিন, আপনি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে আমার অভিভাবকত্বও গ্রহণ করুন, আপনি আমাকে যা দিয়েছেন তাতে বরকত দিন। আপনি যা ফয়সালা করেছেন তার অকল্যাণ থেকে আমাকে রক্ষা করুন। কারণ আপনিই চুড়ান্ত ফয়সালা দেন, আপনার বিপরীতে ফয়সালা দেওয়া হয় না। আপনি যার সাথে বন্ধুত্ব করেছেন সে অবশ্যই অপমানিত হয় না [এবং আপনি যার সাথে শত্রুতা করেছেন সে সম্মানিত হয় না।] আপনি বরকতপূর্ণ হে আমাদের রব্ব! আর আপনি সুউচ্চ-সুমহান”[1]।
(২)  (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিরিদ্বা-কা মিন সাখাত্বিকা, ওয়া বিমু‘আ-ফা-তিকা মিন ‘উক্বুবাতিকা, ওয়া আঊযু বিকা মিনকা, লা উহ্‌সী সানা-আন আলাইকা, আনতা কামা আসনাইতা ‘আলা নাফসিকা)।
 “হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে অসন্তুষ্টি থেকে, আর আপনার নিরাপত্তার মাধ্যমে আপনার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই। আর আমি আপনার নিকটে আপনার (পাকড়াও) থেকে আশ্রয় চাই। আমি আপনার প্রশংসা গুনতে সক্ষম নই; আপনি সেরূপই, যেরূপ প্রশংসা আপনি নিজের জন্য করেছেন।”[2]
 (৩) (আল্লা-হুম্মা ইয়্যাকা না‘বুদু, ওয়ালাকা নুসাল্লী, ওনাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস‘আ, ওয়া নাহ্‌ফিদু, নারজূ রাহ্‌মাতাকা, ওয়া নাখশা ‘আযা-বাকা, ইন্না ‘আযা-বাকা বিলকাফিরীনা মুলহাক্ব। আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসতা‘ঈনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা, ওয়া নুসনী ‘আলাইকাল খাইরা, ওয়ালা- নাকফুরুকা, ওয়ানূ’মিনু বিকা, ওয়া নাখদ্বা‘উ লাকা, ওয়ানাখলা‘উ মাই ইয়াকফুরুকা।)
“হে আল্লাহ! আমরা আপনারই ইবাদত করি; আপনার জন্যই সালাত আদায় করি ও সিজদা করি; আমরা আপনার দিকেই দৌড়াই এবং দ্রুত অগ্রসর হই; আমরা আপনার করুণা লাভের আকাঙ্ক্ষা করি এবং আপনার শাস্তিকে ভয় করি। নিশ্চয় আপনার শাস্তি কাফেরদেরকে পাবে।”
“হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমরা আপনার কাছে সাহায্য চাই, আপনার কাছে ক্ষমা চাই, আপনার উত্তম প্রশংসা করি, আপনার সাথে কুফরি করি না, আপনার উপর ঈমান আনি, আপনার প্রতি অনুগত হই, আর যে আপনার সাথে কুফরি করে আমরা তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি।”[3]
[1] সুনান গ্রন্থকারগণ, আহমাদ, দারামী ও বাইহাকী এ হাদীসটি সংকলন করেছেন। আবূ দাউদ, নং ১৪২৫; তিরমিযী, নং ৪৬৪; নাসাঈ, নং ১৭৪৪; ইবন মাজাহ, নং ১১৭৮; আহমাদ, নং ১৭১৮; দারামী, নং ১৫৯২; হাকিম, ৩/১৭২; বাইহাকী, ২/২০৯। আর দু’ ব্রাকেটের মাঝখানের অংশ বাইহাকীর। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী ১/১৪৪, সহীহ ইবন মাজাহ্‌, ১/১৯৪; ইরওয়াউল গালীল, লিল আলবানী, ২/১৭২।
[2] সুনান গ্রন্থকারগণ ও আহমাদ হাদীসটি সংকলন করেছেন। আবূ দাউদ, নং ১৪২৭; তিরমিযী, নং ৩৫৬৬; নাসাঈ, নং ১৭৪৬; ইবন মাজাহ্‌, নং ১১৭৯; আহমাদ, নং ৭৫১। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৮০; সহীহ ইবন মাজাহ্‌, ১/১৯৪, আল-ইরওয়া, ২/১৭৫।
[3] হাদীসটি বায়হাকী তাঁর ‘আস-সুনানুল কবরা’ গ্রন্থে সংকলন করেছেন এবং তার সনদ বিশুদ্ধ বলেছেন, ২/২১১। আর শাইখ আলবানী ইরওয়াউল গালীল এর ২/১৭০ এ বলেন, ‘এর সনদ বিশুদ্ধ। আর তা উমর রা. থেকে মওকূফ হাদীসে বর্ণিত।
১৪. বিত্‌রের নামায থেকে সালাম ফিরানোর পরের যিক্‌রঃ
 (সুবহা-নাল মালিকিল ক্বুদ্দূস)
- “কতই না পবিত্র-মহান সেই মহাপবিত্র বাদশা!”
তিনবার বলতেন; তৃতীয়বারে উচ্চস্বরে টেনে টেনে পড়ে বলতেন,
([রাব্বিল মালা-ইকাতি ওয়ার-রূহ])।
“[যিনি ফেরেশতা ও রূহ -এর রব।]”[1]
[1] নাসাঈ, ৩/২৪৪, নং ১৭৩৪; দারা কুতনী, ২/৩১ ও অন্যান্যগণ। আর দুই ব্রাকেটের মাঝখানের অংশ দারা কুতনীতে ২/৩১, নং ২ বেশি বর্ণিত। যার সনদ বিশুদ্ধ। আরও দেখুন, শু‘আইব আল-আরনাঊত ও আবদুল কাদের আল-আরনাঊত এর ‘যাদুল মা‘আদ’ গ্রন্থের সম্পাদনা ১/৩৩৭।
১৫. সালাতে ও কেরাআতে শয়তানের কুমন্ত্রণায় পতিত ব্যক্তির দো‘আঃ
-(আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম)
“বিতাড়িত শয়তান থেকে আমি আল্লাহ্‌র আশ্রয় নিচ্ছি।”
অতঃপর বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলবে[1]।
[1] মুসলিম ৪/১৭২৯, ২২০৩। সেখানে এসেছে, উসমান ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার ও আমার নামাযের মাঝে অনুপ্রবেশ করে এবং কিরাআতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা বলার নির্দেশ দেন, তিনি সেটা করার পর আল্লাহ তাঁকে সেটা থেকে মুক্ত করেন।
১৬. নাবালক শিশুদের জন্য জানাযার সালাতে দো‘আঃ
 (১) (আল্লা-হুম্মা আ‘য়িযহু মিন আযা-বিল ক্বাবরি)
“হে আল্লাহ! এ শিশুকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন।”[1]
আর যদি নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়া হয় তবে তাও উত্তম:
 (আল্লা-হুম্মাজ‘আলহু ফারাত্বান ওয়া যুখরান লিওয়লিদায়হি, ওয়াশাফী‘আন মুজাবান। আল্লা-হুম্মা সাক্কিল বিহী মাওয়াযীনাহুমা, ওয়াআ‘যিম বিহী উজূরাহুমা, ওয়া আলহিক্বহু বিসা-লিহিল মু’মিনীন, ওয়াজ‘আলহু ফী কাফা-লাতি ইবরাহীমা, ওয়াক্বিহি বিরাহমাতিকা ‘আযা-বাল জাহীম, ওয়া আবদিলহু দা-রান খাইরান মিন দা-রিহি, ওয়া আহলান খায়রান মিন আহলিহি, আল্লা-হুম্মাগফির লি’আসলাফিনা ওয়া আফরাত্বিনা ওয়া মান সাবাক্বানা বিল ঈমান।)
“হে আল্লাহ, তাকে তার পিতা-মাতার জন্য অগ্রগামী প্রতিনিধি বা সওয়াব ও সযত্নে গচ্ছিত সওয়াব হিসেবে কবুল করুন। আর তাকে এমন শাফা‘আতকারী বানান, যার শাফা‘আত কবুল হয়। হে আল্লাহ, এ শিশুর দ্বারা তার পিতা মাতার ওজনসমূহ আরও ভারী করে দিন। আর এর দ্বারা তাদের দু’জনের সওয়াব আরও বাড়িয়ে দিন। আর তাকে নেককারদের সঙ্গী-সাথী বানান এবং তাকে ইবরাহীম আলাইহিসসালামের যিম্মায় রাখুন। আর আপনার রহমতের অসীলায় তাকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। তাকে তার এ বাসস্থানের পরিবর্তে উত্তম বাসস্থান প্রদান করুন, এখানকার পরিবার-পরিজনের পরিবর্তে উত্তম পরিবার-পরিজন প্রদান করুন। হে আল্লাহ, আমাদের পূর্ববর্তী নর-নারী ও নাবালক অগ্রগামী সন্তান-সন্ততিদের মাফ করুন এবং যারা ঈমান সহকারে আমাদের পূর্বে মারা গেছে তাদেরকেও।”[2]
 (২) (আল্লা-হুম্মাজ‘আলহু লানা ফারাত্বান ওয়া সালাফান ওয়া আজরান)
“হে আল্লাহ, আমাদের জন্য তাকে অগ্রগামী প্রতিনিধি, অগ্রিম পূণ্য এবং সওয়াব হিসেবে নির্ধারণ করে দিন।”[3]
[1] সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যেব বলেন, আমি আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর পিছনে একটি শিশুর জানাযার সালাত আদায় করেছি, যে শিশু কখনও কোনো গুনাহ করে নি, তখন আমি তাকে (উপরোক্ত দো‘আটি) বলতে শুনলাম....। হাদীসটি ইমাম মালেক তার মুওয়াত্তা গ্রন্থে সংকলন করেন, ১/২৮৮; ইবন আবী শাইবাহ তার মুসান্নাফ গ্রন্থে, ৩/২১৭; বাইহাকী, ৪/৯। আর শাইখ শু‘আইব আল-আরনাউত শারহুস সুন্নাহ লিল বাগভীর তাহকীকে ৫/৩৫৭, এটার সনদকে সহীহ বলেছেন।
[2] দেখুন, আল-মুগনী, লি ইবন কুদামা, ৩/৪১৬; আরও দেখুন, আদ-দুরুসুল মুহিম্মাহ লি ‘আম্মাতিল উম্মাহ, লিশ শাইখ আবদিল আযীয ইবন আব্দিল্লাহ ইবন বায, রাহেমাহুল্লাহ, পৃ. ১৫।
[3] হাসান বসরী রাহেমাহুল্লাহ যখন ছোট শিশুদের জানাযা পড়তেন তখন তার উপর সূরা ফাতেহা পড়তেন এবং উপরোক্ত দো‘আ বলতেন। হাদীসটি ইমাম বাগভী তার শারহুস সুন্নাহ ৫/৩৫৭ এ বর্ণনা করেছেন। আরও বর্ণনা করেছেন, আব্দুর রায্‌যাক তার মুসান্নাফে, নং ৬৫ ৮৮। তাছাড়া ইমাম বুখারী, কিতাবুল জানায়েয এর, ৬৫, বাবু কিরাআতি ফাতিহাতিল কিতাব আলাল জানাযাত ২/১১৩; ১৩৩৫ নং হাদীসের পূর্বে এটাকে তা‘লীক বা সনদ ব্যতীত বর্ণনা করেছেন।
সাওম [রোজা] সংক্রান্ত দোয়া বা আমলসমূহঃ
১. নতুন চাঁদ দেখে পড়ার দো‘আঃ
 (আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহু ‘আলাইনা বিলআমনি ওয়ালঈমানি ওয়াস্‌সালা-মাতি ওয়াল-ইসলা-মি, ওয়াত্তাওফীকি লিমা তুহিব্বু রব্বানা ওয়া তারদ্বা, রব্বুনা ওয়া রব্বুকাল্লাহ)
- “আল্লাহ সবচেয়ে বড়। হে আল্লাহ! এই নতুন চাঁদকে আমাদের উপর উদিত করুন নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে; আর হে আমাদের রব্ব! যা আপনি পছন্দ করেন এবং যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন তার প্রতি তাওফীক লাভের সাথে। আল্লাহ আমাদের রব্ব এবং তোমার (চাঁদের) রব্ব।”[1]
[1] তিরমিযী ৫/৫০৪, নং ৩৪৫১; আদ-দারিমী, শব্দ তাঁরই, ১/৩৩৬। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৫৭।
২. ইফতারের সময় রোযাদারের দো‘আঃ
(১) (যাহাবায-যামাউ ওয়াবতাল্লাতিল ‘উরূকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লা-হু)।
“পিপাসা মিটেছে, শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহ্‌ চান তো সওয়াব সাব্যস্ত হয়েছে।”[1]
(২) (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিরহ্‌মাতিকাল্লাতী ওয়াসি‘আত কুল্লা শাই’ইন আন তাগফিরা লী)।
“হে আল্লাহ! আপনার যে রহমত সকল কিছু পরিব্যাপ্ত করে রেখেছে তার উসীলায় আবেদন করি, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।”[2]
[1] হাদীসটি সংকলন করেছেন আবূ দাউদ ২/৩০৬, নং ২৩৫৯ ও অন্যান্য। আরও দেখুন, সহীহুল জামে‘ ৪/২০৯।
[2] হাদীসটি সংকলন করেছেন, ইবন মাজাহ্‌ ১/৫৫৭, নং ১৭৫৩; যা মূলত আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার দো‘আ। আর হাফেয ইবন হাজার তাঁর তাখরীজুল আযকারে এটার সনদকে হাসান বলেছেন। শরহুল আযকার, ৪/৩৪২।
৩. রোযাদারের নিকট যদি খাবার উপস্থিত হয়, আর সে রোযা না ভাঙ্গে তখন তার দো‘আ করাঃ
- “যদি কাউকে খাবারের দাওয়াত দেওয়া হয় সে যেন তাতে সাড়া দেয়; তারপর যদি সে রোযাদার হয়, তবে যেন সে তার (খাবার ওয়ালার) জন্য দো‘আ করে, আর যদি রোযা ভঙ্গকারী হয়, তবে যেন সে খায়।”[1]
[1] মুসলিম, ২/১০৫৪, নং ১১৫০।
৪. রোযাদারকে কেউ গালি দিলে যা বলবেঃ
 (ইন্নি সা‘ইমুন, ইন্নি সা’ইমুন)
- “নিশ্চয় আমি রোযাদার, নিশ্চয় আমি রোযাদার।”[1]
[1] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৪/১০৩, নং ১৮৯৪; মুসলিম, ২/৮০৬, নং ১১৫১।
হজ্জ ও উমরা সংক্রান্ত দোয়া ও আমলসমূহঃ
১. হজ্জ বা উমরায় মুহরিম ব্যক্তি কিভাবে তালবিয়াহ পড়বেঃ
 (লাব্বাইকাল্লা-হুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল-হামদা ওয়ান-নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারীকা লাকা)।
- “আমি আপনার দরবারে হাযির, হে আল্লাহ! আমি আপনার দরবারে উপস্থিত। আমি আপনার দরবারে হাযির, আপনার কোনো শরীক নেই, আমি আপনার দরবারে উপস্থিত। নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নেয়ামত আপনার, আর রাজত্বও। আপনার কোনো শরীক নেই।”[1]
[1] বুখারী ৩/৪০৮, নং ১৫৪৯; মুসলিম ২/৮৪১, নং ১১৮৪।
২. হাজরে আসওয়াদের কাছে আসলে তাকবীর বলাঃ
- রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের উপর আরোহণ করে কা‘বা ঘর তাওয়াফ করলেন; যখনই তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে পৌছতেন, তখনই সেদিকে তার নিকটস্থ কিছু দিয়ে ইঙ্গিত করতেন এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন’[1]।
[1] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৩/৪৭৬, নং ১৬১৩। আর ‘কোনো কিছু’ বলে এখানে বাঁকা লাঠি বোঝানো হয়েছে। দেখুন, বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ), ৩/৪৭২।
৩. রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের মাঝে দো‘আঃ
(রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা ‘আযা-বান্না-র)।
- “হে আমাদের রব্ব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।”[1]
[1] আবূ দাউদ ২/১৭৯, নং ১৮৯৪; মুসনাদে আহমাদ ৩/৪১১, নং ১৫৩৯৮; আল-বাগভী ফী শারহিস সুন্নাহ, ৭/১২৮। আর শাইখ আলবানী সহীহ আবি দাউদে ১/৩৫৪ একে সহীহ বলেছেন। আয়াতটি সূরা আল-বাকারাহ্‌র আয়াত নং ২০১।
৪. সাফা ও মারওয়ায় দাঁড়িয়ে যা পড়বেঃ
- যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পর্বতের নিকটবর্তী হলেন, তখন এই আয়াত পড়লেনঃ
 (ইন্নাস্‌সাফা ওয়াল-মারওয়াতা মিন শা‘আ-ইরিল্লা-হ)।
“নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্‌র নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত।”
আর বলেন, “আল্লাহ্‌ যেখান থেকে শুরু করেছেন আমিও সেখান থেকে শুরু করব।” অতঃপর তিনি সাফা পর্বতে আরোহণ করতে  লাগলেন যতক্ষণ না কা‘বা দেখলেন, অতঃপর কিবলামুখী হলেন, তারপর আল্লাহ্‌র তাওহীদ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ঘোষণা করেন এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলেন, অতঃপর এই দো‘আ পড়েন,
 (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু, আনজাযা ওয়া‘দাহু, ওয়ানাসারা ‘আবদাহু, ওয়া হাযামাল-আহযা-বা ওয়াহদাহু)।
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন, আর তিনি সকল বিরোধী দল-গোষ্ঠীকে একাই পরাস্ত করেছেন।” এভাবে তিনি এর মধ্যবর্তী স্থানেও দো‘আ করতে থাকেন। এই দো‘আ তিনবার পাঠ করেন।
হাদীসটিতে আরও আছে, “তিনি সাফা পাহাড়ে যেমন করেছিলেন মারওয়াতেও অনুরূপ করেন।”[1]
[1] মুসলিম ২/৮৮৮, নং ১২১৮; আর আয়াতটি সূরা আল-বাকারার আয়াত নং ১৫৮।
৫. আরাফাতের দিনে দো‘আঃ
- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “শ্রেষ্ঠ দো‘আ হচ্ছে আরাফাত দিবসের দো‘আ। আর আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ যা বলেছি তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে:
 (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর)।
একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।”[1]
[1] তিরমিযী নং ৩৫৮৫; আর শাইখুল আলবানী সহীহুত তিরমিযীতে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন, ৩/১৮৪; অনুরূপভাবে সিলসিলা সহীহায় ৪/৬।
৬. মাশ‘আরুল হারাম তথা মুযদালিফায় যিক্‌রঃ
- “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘কাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীতে আরোহণ করলেন, অবশেষে তিনি যখন মাশ‘আরুল হারামে (মুযদালিফার একটি স্থানে) আসেন, তখন তিনি কিবলামুখী হয়ে দো‘আ করেন এবং তাকবীর বলেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু পাঠ করেন এবং তাঁর তাওহীদ বা একত্ব ঘোষণা করেন। তারপর তিনি (আকাশ) পূর্ণ ফর্সা না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। অতঃপর সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বেই তিনি মুযদালিফা ত্যাগ করেন।”[1]
[1] মুসলিম ২/৮৯১, নং ১২১৮।
৭. জামরাসমূহে প্রত্যেক কংকর নিক্ষেপকালে তাকবীর বলাঃ
- “[রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তিনটি জামরায় প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন, অতঃপর কিছুটা অগ্রসর হয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতেন এবং প্রথম জামরা ও দ্বিতীয় জামরায় দুই হাত উঁচু করে দো‘আ করতেন। কিন্তু জামরাতুল ‘আক্বাবায় প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন এবং সেখানে অবস্থান না করে ফিরে আসতেন।[1]
[1] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৩/৫৮৩, নং ১৭৫১; সেখানে তার শব্দ দেখুন, আরও দেখুন, বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৩/৫৮৩, ৩/৫৮৪, ৩/৫৮১ নং ১৭৫৩; অনুরূপ মুসলিম নং ১২১৮।
৮. পশু যবেহ বা নাহর করার সময় যা বলবেঃ
(বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার, [আল্লা-হুম্মা মিনকা ওয়ালাকা], আল্লা-হুম্মা তাকাব্বাল মিন্নী)
- “আল্লাহ্‌র নামে, আর আল্লাহ সবচেয়ে বড়। [হে আল্লাহ! এটা আপনার নিকট থেকে প্রাপ্ত এবং আপনার জন্যই।] হে আল্লাহ! আপনি আমার তরফ থেকে তা কবুল করুন।”[1]
[1] মুসলিম ৩/১৫৫৭, নং ১৯৬৭; বায়হাকী ৯/২৮৭, দু ব্রাকেটের মাঝখানের অংশ বাইহাকী থেকে, ৯/২৮৭, ইত্যাদি। তবে সর্বশেষ বাক্যটি ইমাম মুসলিমের বর্ণনা থেকে অর্থ হিসেবে গৃহীত।
দুশ্চিন্তা, মুসীবত, রোগ ও মৃত্যু  সংক্রান্ত দোয়া ও আমলসমূহঃ
১. দুঃখ ও দুশ্চিন্তার সময় পড়ার দো‘আঃ
 (১) (আল্লা-হুম্মা ইন্নী ‘আবদুকা ইবনু ‘আবদিকা ইবনু আমাতিকা, না-সিয়াতী বিয়াদিকা, মা-দ্বিন ফিয়্যা হুকমুকা, ‘আদলুন ফিয়্যা কাদ্বা-য়ুকা, আসআলুকা বিকুল্লি ইসমিন্ হুয়া লাকা সাম্মাইতা বিহি নাফসাকা, আও আনযালতাহু ফী কিতা-বিকা আও ‘আল্লামতাহু আহাদাম্-মিন খালক্বিকা আও ইস্তা’সারতা বিহী ফী ‘ইলমিল গাইবি ‘ইনদাকা, আন্ তাজ‘আলাল কুরআ-না রবী‘আ ক্বালবী, ওয়া নূরা সাদ্‌রী, ওয়া জালা’আ হুযনী ওয়া যাহা-বা হাম্মী)।
 “হে আল্লাহ! আমি আপনার বান্দা, আপনারই এক বান্দার পুত্র এবং আপনার এক বাঁদীর পুত্র। আমার কপাল (নিয়ন্ত্রণ) আপনার হাতে; আমার উপর আপনার নির্দেশ কার্যকর; আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালা ন্যায়পূর্ণ। আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি আপনার প্রতিটি নামের উসীলায়; যে নাম আপনি নিজের জন্য নিজে রেখেছেন অথবা আপনার আপনি আপনার কিতাবে নাযিল করেছেন অথবা আপনার সৃষ্টজীবের কাউকেও শিখিয়েছেন অথবা নিজ গায়েবী জ্ঞানে নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন—আপনি কুরআনকে বানিয়ে দিন আমার হৃদয়ের প্রশান্তি, আমার বক্ষের জ্যোতি, আমার দুঃখের অপসারণকারী এবং দুশ্চিন্তা দূরকারী।”[1]
 (২) (আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা‘ইদ দ্বাইনে ওয়া গালাবাতির রিজা-লি)
 “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।”[2]
[1] আহমাদ ১/৩৯১, নং ৩৭১২। আর শাইখ আলবানী তাঁর সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ গ্রন্থে ১/৩৩৭ একে সহীহ বলেছেন।
[2] বুখারী, ৭/১৫৮, নং ২৮৯৩; সেখানে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দো‘আটি বেশি বেশি করতেন। আরও দেখুন, বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১৭৩; আরও দেখুন যা পৃষ্ঠায় ১৩৭ নং এ বর্ণিত হবে।
২. দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তির দো‘আঃ
 (১) (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল ‘আযীমূল হালীম। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম। লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু রব্বুস সামা-ওয়া-তি ওয়া রব্বুল আরদ্বি ওয়া রব্বুল ‘আরশিল কারীম)।
“আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি মহান ও সহিষ্ণু। ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি মহান আরশের রব্ব। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি আসমানসমূহের রব্ব, যমীনের রব্ব এবং সম্মানিত আরশের রব্ব।”[1]
 (২) (আল্লা-হুম্মা রহ্‌মাতাকা আরজু ফালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন, ওয়া আসলিহ্ লী শা’নি কুল্লাহু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা)।
“হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমতেরই আশা করি। তাই আপনি এক নিমেষের জন্যও আমাকে আমার নিজের কাছে সোপর্দ করবেন না। আপনি আমার সার্বিক বিষয়াদি সংশোধন করে দিন। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই।”[2]
(৩) (লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায-যা-লিমীন)।
“আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র-মহান, নিশ্চয় আমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত।”[3]
 (৪) (আল্লাহু আল্লাহু, রব্বী, লা উশরিকু বিহী শাই’আন)।
“আল্লাহ! আল্লাহ! (তিনি) আমার রব্ব! আমি তাঁর সাথে কোনো কিছু শরীক করি না।”[4]
[1] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৭/১৫৪, নং ৬৩৪৫; মুসলিম ৪/২০৯২, নং ২৭৩০।
[2] আবূ দাউদ, ৪/৩২৪, নং ৫০৯০; আহমাদ ৫/৪২, নং ২০৪৩০। আর শাইখ আলবানী সহীহ আবি দাউদ গ্রন্থে ৩/৯৫৯ এটাকে হাসান হাদীস বলেছেন।
[3] তিরমিযী ৫/৫২৯, নং ৩৫০৫; হাকেম এবং তিনি একে সহীহ বলেছেন, যাহাবী সেটা সমর্থন করেছেন, ১/৫০৫। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৬৮।
[4] হাদীসটি সংকলন করেছেন, আবূদাউদ, ২/৮৭, নং ১৫২৫; ইবন মাজাহ্‌, নং ৩৮৮২। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ্‌, ২/৩৩৫।
৩. শত্রু এবং শক্তিধর ব্যক্তির সাক্ষাতকালে দো‘আঃ
(১) (আল্লা-হুম্মা ইন্না নাজ্‘আলুকা ফী নুহূরিহিম ওয়া না‘উযু বিকা মিন শুরূরিহিম)।
“হে আল্লাহ! আমরা আপনাকে তাদের গলদেশে রাখছি এবং তাদের অনিষ্ট থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”[1]
(২) (আল্লহুম্মা আনতা ‘আদ্বুদী, ওয়া আনতা নাসীরী, বিকা আহূলু, ওয়া বিকা আসূলু, ওয়া বিকা উক্বা-তিলু)।
 “হে আল্লাহ! আপনি আমার শক্তি এবং আপনি আমার সাহায্যকারী; আপনারই সাহায্যে আমি বিচরণ করি, আপনারই সাহায্যে আমি আক্রমন করি এবং আপনারই সাহায্যে আমি যুদ্ধ করি।”[2]
 (৩) (হাসবুনাল্লা-হু ওয়া নি‘মাল ওয়াকীল)।
 “আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক”।[3]
[1] আবু দাঊদ ২/৮৯, নং ১৫৩৭; আর হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী একে সমর্থন করেছেন ২/১৪২।
[2] আবূ দাউদ ৩/৪২, নং ২৬৩২; তিরমিযী ৫/৫৭২, নং ৩৫৮৪। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৮৩।
[3] বুখারী ৫/১৭২, নং ৪৫৬৩।
৪. শাসকের অত্যাচারের ভয় করলে পড়ার দো‘আঃ
(১) (আল্লা-হুম্মা রব্বাস্ সামা-ওয়া-তিস সাব‘ঈ, ওয়া রব্বাল ‘আরশিল ‘আযীম। কুন লী জারান মিন্ ফুলানিবনি ফুলানিন, ওয়া আহযাবিহী মিন খালায়েক্বিকা, আঁই ইয়াফরুত্বা ‘আলাইয়্যা আহাদুম মিনহুম আও ইয়াত্বগা, আয্যা জা-রুকা, ওয়া জাল্লা সানা-উকা, ওয়া লা ইলা-হা ইল্লা আনতা)।
 “হে আল্লাহ, সাত আসমানের রব্ব! মহান আরশের রব্ব! আপনার সৃষ্টিকুলের মধ্য থেকে অমুকের পুত্র অমুকের বিপক্ষে এবং তার বাহিনীর বিরুদ্ধে আপনি আমার আশ্রয়দানকারী হোন; যাতে তাদের কেউ আমার উপর দ্রুত আক্রমণ বা সীমালঙ্ঘন করতে না পারে। আপনার আশ্রিত তো শক্তিশালী, আপনার প্রশংসা তো অতি মহান। আর আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই।”[1]
 (২) (আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আ‘আয্যু মিন খালক্বিহী জামী‘আন। আল্লাহু আ‘আয্যু মিম্মা আখা-ফু ওয়া আহযারু। আউযু বিল্লা-হিল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল মুমসিকুস্ সামা-ওয়া-তিস সাব‘ঈ, আন ইয়াকা‘না আলাল্ আরদ্বি ইল্লা বিইযনিহী, মিন শাররি ‘আবদিকা ফুলা-নিন, ওয়া জুনূদিহী ওয়া আতবা‘ইহী ওয়া আশইয়া‘ইহী মিনাল জিন্নি ওয়াল ইনসি। আল্লা-হুম্মা কুন লী জা-রান মিন শাররিহিম, জাল্লা সানা-উকা ওয়া ‘আয্যা জা-রুকা ওয়াতাবা-রকাসমুকা ওয়া লা ইলা-হা গাইরুকা)। (৩ বার)
“আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ তাঁর সমস্ত সৃষ্টি থেকে মহামর্যাদাবান। আমি যা থেকে ভীত ও শঙ্কিত তার চেয়ে আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী। আমি আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাই, যিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, যিনি সাত আসমানের ধারণকারী, তার অনুমতি ব্যতীত পৃথিবীর উপর পতিত হওয়া থেকে— (আশ্রয় চাই) তাঁর অমুক বান্দা, তার সৈন্য-সামন্ত, তার অনুসারী ও তার অনুগামী জিন ও ইনসানের অনিষ্ট থেকে। হে আল্লাহ! তাদের ক্ষতি থেকে আপনি আমার জন্য আশ্রয়দানকারী হোন। আপনার গুণগান অতি মহান, আপনার আশ্রিত প্রবল শক্তিশালী, আপনার নাম অতি বরকতময়। আর আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই।”[2] (৩ বার)
[1] বুখারী, আল-আদাব আল-মুফরাদ, নং ৭১২। আর শাইখ আলবানী সহীহ আল-আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে, নং ৫৪৫, একে সহীহ বলেছেন।
[2] বুখারী, আল-আদাব আল-মুফরাদ, নং ৭০৮। আর শাইখ আলবানী সহীহ আল-আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে, নং ৫৪৬, একে সহীহ বলেছেন।
৫. শত্রুর উপর বদ-দো‘আঃ
 (আল্লা-হুম্মা মুনযিলাল কিতা-বি সারী‘আল হিসা-বি ইহযিমিল আহযা-ব। আল্লা-হুম্মাহযিমহুম ওয়া যালযিলহুম)।
- “হে আল্লাহ, কিতাব নাযিলকারী, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী! আপনি শত্রুবাহিনীকে পরাভূত করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে পরাজিত করুন এবং তাদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করে দিন।”[1]
[1] মুসলিম, ৩/১৩৬২, নং ১৭৪২।
৬. কোনো সম্প্রদায়কে ভয় করলে যা বলবেঃ
 (আল্লা-হুম্মাকফিনীহিম বিমা শি’তা)।
- “হে আল্লাহ! আপনি যা ইচ্ছে তা দ্বারাই এদের মোকাবিলায় আমার জন্য যথেষ্ট হোন।”[1]
[1] মুসলিম ৪/২৩০০, নং ৩০০৫।      
৬. ঋণ মুক্তির জন্য দো‘আঃ
 (১) (আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন হারা-মিকা ওয়া আগনিনী বিফাদ্বলিকা ‘আম্মান সিওয়া-ক)।
“হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালাল দ্বারা পরিতুষ্ট করে আপনার হারাম থেকে ফিরিয়ে রাখুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ছাড়া অন্য সকলের থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী করে দিন।”[1]
(২) (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল)।
“হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।”[2]
[1] তিরমিযী ৫/৫৬০, নং ৩৫৬৩। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৮০।
[2] বুখারী, ৭/১৫৮, নং ২৮৯৩। তাছাড়া পূর্বে পৃষ্ঠায় ১২১ নং এ গত হয়েছে।
৭. কঠিন কাজে পতিত ব্যক্তির দো‘আঃ
 (আল্লা-হুম্মা লা সাহ্‌লা ইল্লা মা জা‘আলতাহু সাহ্‌লান, ওয়া আনতা তাজ্‘আলুল হাযনা ইযা শি’তা সাহ্‌লান)।
 “হে আল্লাহ! আপনি যা সহজ করেছেন তা ছাড়া কোনো কিছুই সহজ নয়। আর যখন আপনি ইচ্ছা করেন তখন কঠিনকেও সহজ করে দেন।”[1]
[1] সহীহ ইবন হিব্বান ২৪২৭, (মাওয়ারিদ); ইবনুস সুন্নী, নং ৩৫১। আর হাফেয (ইবন হাজার) বলেন, এটি সহীহ হাদীস। তাছাড়া আবদুল কাদের আরনাউত ইমাম নওয়াবীর আযকার গ্রন্থের তাখরীজে পৃ. ১০৬, একে সহীহ বলে মত প্রকাশ করেছেন।
8. যখন অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটে, বা যা করতে চায় তাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন পড়ার দো‘আঃ
 (কাদারুল্লা-হ, ওয়ামা শা-আ ফা‘আলা)
- “এটি আল্লাহ্‌র ফয়সালা, আর তিনি যা ইচ্ছা করেছেন।”[1]
[1] হাদীসে এসেছে, “শক্তিশালী ঈমানদার আল্লাহর নিকট উত্তম ও প্রিয় দুর্বল ঈমানদারের চেয়ে। আর তাদের (ঈমানদারদের) প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমার যা কাজে লাগবে সেটা করার ব্যাপারে সচেষ্ট হও আর আল্লাহর সাহায্য চাও, অপারগ হয়ে যেও না। আর যদি তোমার কোনো অনাকাঙ্খিত বিষয় উদয় হয়, তখন বলো না যে, ‘যদি আমি এরকম করতাম তাহলে তা এই এই হতো’, বরং বলো, “এটা আল্লাহর ফয়সালা, আর তিনি যা ইচ্ছে করেছেন।” কেননা, ‘যদি’ শয়তানের কাজের সূচনা করে দেয়। মুসলিম, ৪/২০৫২, নং ২৬৬৪।
৯. রোগী দেখতে গিয়ে তার জন্য দো‘আঃ
(১) (লা বা’সা তুহুরুন ইন শা-আল্লা-হ)।
“কোনো ক্ষতি নেই, আল্লাহ যদি চান তো (রোগটি গুনাহ থেকে) পবিত্রকারী হবে।”[1]
(২) (আসআলুল্লা-হাল ‘আযীম, রব্বাল ‘আরশিল ‘আযীম, আঁই ইয়াশফিয়াকা)। (সাতবার)
 “আমি মহান আল্লাহ্‌র কাছে চাচ্ছি, যিনি মহান আরশের রব, তিনি যেন আপনাকে রোগমুক্তি প্রদান করেন।”[2] (সাতবার)
[1] বুখারী (ফাতহুল বারীসহ) ১০/১১৮, নং ৩৬১৬।
[2] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেউ মৃত্যু আসন্ন নয় এমন কোনো রোগীকে দেখতে গেলে, সে তার সামনে এই দো‘আ সাতবার পাঠ করবে, এর ফলে আল্লাহ তাকে (মৃত্যু আসন্ন না হলে) রোগমুক্ত করবেন। এ দো‘আ সাতবার পড়বে। তিরমিযী, নং ২০৮৩; আবূ দাউদ, নং ৩১০৬। আরও দেখুন, ২/২১০; সহীহুল জামে‘ ৫/১৮০।
১০. রোগী দেখতে যাওয়ার ফযীলতঃ
 - রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোনো লোক তার মুসলিম ভাইকে দেখতে যায়, তখন সে না বসা পর্যন্ত যেন জান্নাতে ফল আহরণে বিচরণ করতে থাকে। অতঃপর যখন সে (রোগীর পাশে) বসে, (আল্লাহ্‌র) রহমত তাকে ঢেকে ফেলে। সময়টা যদি সকাল বেলা হয় তবে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য ক্ষমা ও কল্যাণের দো‘আ করতে থাকে বিকাল হওয়া পর্যন্ত। আর যতি সময়টা বিকাল বেলা হয় তবে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য রহমতের দো‘আ করতে থাকে সকাল হওয়া পর্যন্ত।”[1]
[1] তিরমিযী, নং ৯৬৯; ইবন মাজাহ্‌, নং ১৪৪২; আহমাদ, নং ৯৭৫। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ্ ১/২৪৪; সহীহুত তিরমিযী, ১/২৮৬। তাছাড়া শাইখ আহমাদ শাকেরও হাদীসটি বিশুদ্ধ বলেছেন।
১১. জীবনের আশা ছেড়ে দেওয়া রোগীর দো‘আঃ
(১) (আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়া আলহিক্বনী বির রফীক্বিল আ‘লা)।
“হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন এবং আমাকে সর্বোচ্চ বন্ধুর সঙ্গ পাইয়ে দিন।”[1]
(২) “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর সময় তাঁর দু’হাত পানিতে প্রবেশ করিয়ে তা দিয়ে তাঁর চেহারা মুছছিলেন এবং বলছিলেন,
 (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, ইন্না লিল মাওতি সাকারা-তিন)
“আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, নিশ্চয় মৃত্যুর রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ভয়াবহ কষ্ট।”[2]
(৩) (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, আল্লা-হু আকবার, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়ালা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ)
“আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান। একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই। একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, যাবতীয় রাজত্ব তাঁরই, তার জন্যই সকল প্রশংসা, আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি নেই।”[3]
[1] বুখারী ৭/১০, নং ৪৪৩৫; মুসলিম ৪/১৮৯৩, নং ২৪৪৪।
[2] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ), ৮/১৪৪, নং ৪৪৪৯; তবে হাদীসে মিসওয়াকের উল্লেখও এসেছে।
[3] হাদীসটি ইমাম তিরমিযী সংকলন করেছেন, নং ৩৪৩০; ইবন মাজাহ্‌, নং ৩৭৯৪; আর শাইখ আলবানী একে সহীহ বলেছেন। দেখুন, সহীহুত তিরমিযী ৩/১৫২; সহীহ ইবন মাজাহ ২/৩১৭।
১২. মরণাপন্ন ব্যক্তিকে তালক্বীন (কালেমা স্মরণ করিয়ে দেওয়া):
 - “যার শেষ কথা হবে-
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ)
‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই’— সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”[1]
[1] আবূ দাউদ ৩/১৯০, নং ৩১১৬; আরও দেখুন, সহীহুল জামে‘ ৫/৪৩২।
১৩. কোনো মুসিবতে পতিত ব্যক্তির দো‘আঃ
 (ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি‘উন। আল্লা-হুম্মা আজুরনী ফী মুসীবাতী ওয়াখলুফ লী খাইরাম মিনহা)।
- “আমরা তো আল্লাহ্‌রই। আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ! আমাকে আমার বিপদে সওয়াব দিন এবং আমার জন্য তার চেয়েও উত্তম কিছু স্থলাভিষিক্ত করে দিন।”[1]
[1] মুসলিম ২/৬৩২, নং ৯১৮।
১৪. মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করানোর দো‘আঃ
 (আল্লা-হুম্মাগফির লি ফুলা-নিন (মৃতের নাম বলবে) ওয়ারফা‘ দারাজাতাহু ফিল মাহদিয়্যীন, ওয়াখলুফহু ফী ‘আক্বিবিহী ফিল গা-বিরীন, ওয়াগফির লানা ওয়ালাহু ইয়া রব্বাল আ-লামীন। ওয়াফসাহ্‌ লাহু ফী ক্বাবরিহী ওয়া নাউইর লাহু ফী-হি)।
- “হে আল্লাহ! আপনি অমুককে (মৃত ব্যক্তির নাম ধরে) ক্ষমা করুন; যারা হেদায়াত লাভ করেছে, তাদের মাঝে তার মর্যাদা উঁচু করে দিন; যারা রয়ে গেছে তাদের মাঝে তার বংশধরদের ক্ষেত্রে আপনি তার প্রতিনিধি হোন। হে সৃষ্টিকুলের রব! আমাদের ও তার গুনাহ মাফ করে দিন। তার জন্য তার কবরকে প্রশস্ত করে দিন এবং তার জন্য তা আলোকময় করে দিন।”[1]
[1] মুসলিম ২/৬৩৪, নং ৯২০।
১৫. মৃত ব্যক্তির জন্য জানাযার সালাতে দো‘আঃ
(১) (আল্লা-হুম্মাগফির লাহু, ওয়ারহামহু, ওয়া ‘আ-ফিহি, ওয়া‘ফু ‘আনহু, ওয়া আকরিম নুযুলাহু, ওয়াওয়াসসি‘ মুদখালাহু, ওয়াগসিলহু বিলমা-য়ি ওয়াস্‌সালজি ওয়ালবারাদি, ওয়ানাক্বক্বিহি মিনাল খাতা-ইয়া কামা নাক্কাইতাস সাওবাল আবইয়াদা মিনাদদানাসি, ওয়া আবদিলহু দা-রান খাইরাম মিন দা-রিহি, ওয়া আহলান খাইরাম মিন আহলিহি, ওয়া যাওজান খাইরাম মিন যাওজিহি, ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা, ওয়া আ‘য়িযহু মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি [ওয়া ‘আযাবিন্না-র])।
 “হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, তাকে দয়া করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন, তাকে মাফ করে দিন, তার মেহমানদারীকে মর্যাদাপূর্ণ করুন, তার প্রবেশস্থান কবরকে প্রশস্ত করে দিন। আর আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিলা দিয়ে, আপনি তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করুন যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিষ্কার করেছেন। আর তাকে তার ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর, তার পরিবারের বদলে উত্তম পরিবার ও তার জোড়ের (স্ত্রী/স্বামীর) চেয়ে উত্তম জোড় প্রদান করুন।  আর আপনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং তাকে কবরের আযাব [ও জাহান্নামের আযাব] থেকে রক্ষা করুন”[1]।
 (২) (আল্লা-হুম্মাগফির লিহায়্যিনা ওয়া মায়্যিতিনা ওয়া শা-হিদিনা ওয়া গা-য়িবিনা ওয়া সগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনসা-না। আল্লা-হুম্মা মান আহ্ইয়াইতাহু মিন্না ফা’আহয়িহি ‘আলাল-ইসলাম। ওয়ামান তাওয়াফ্‌ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু ‘আলাল ঈমান। আল্লা-হুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু ওয়ালা তুদ্বিল্লান্না বা‘দাহু)।
“হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড় এবং নর ও নারীদেরকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মধ্যে যাদের আপনি জীবিত রাখবেন তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রাখুন এবং যাদেরকে মৃত্যু দান করবেন তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তার (মৃত্যুতে ধৈয্যধারণের) সওয়াব থেকে বঞ্চিত  করবেন না এবং তার (মৃত্যুর) পর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন না।”[2]
(৩) (আল্লা-হুম্মা ইন্না ফুলানাবনা ফুলা-নিন ফী যিম্মাতিকা, ওয়া হাবলি জিওয়ারিকা, ফাক্বিহি মিন ফিতনাতিল ক্বাবরি ওয়া আযা-বিন না-রি, ওয়া আনতা আহলুল ওয়াফাই ওয়াল হাক্ক, ফাগফির লাহু ওয়ারহামহু, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম)।
 “হে আল্লাহ, অমুকের পুত্র অমুক আপনার যিম্মাদারীতে, আপনার প্রতিবেশিত্বের নিরাপত্তায়; সুতরাং আপনি তাকে কবরের পরীক্ষা থেকে এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। আর আপনি প্রতিশ্রুতি পূর্ণকারী এবং প্রকৃত সত্যের অধিকারী। অতএব, আপনি তাকে ক্ষমা করুন এবং তার উপর দয়া করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।”[3]
(৪) (আল্লা-হুম্মা ‘আবদুকা, ওয়াবনু আমাতিকা, এহতাজা ইলা রাহমাতিকা, ওয়া আনতা গানিয়্যুন ‘আন ‘আযা-বিহি, ইন কা-না মুহসিনান ফাযিদ ফী হাসানা-তিহি, ওয়া ইনকা-না মুসীআন ফা তাজা-ওয়ায ‘আনহু)
 “হে আল্লাহ, আপনার এক দাস, আর এক দাসীর পুত্র, আপনার অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী, আপনি তাকে শাস্তি দেওয়া থেকে অমুখাপেক্ষী। যদি সে নেককার বান্দা হয়, তবে তার সওয়াব  আরও বাড়িয়ে দিন, আর যদি বদকার বান্দা হয়, তবে তার অপরাধকর্ম এড়িয়ে যান।”[4]
[1] মুসলিম ২/৬৬৩, নং ৯৬৩।
[2] আবূ দাঊদ, নং ৩২০১; তিরমিযী, নং ১০২৪; নাসাঈ, নং ১৯৮৫; ইবন মাজাহ, ১/৪৮০, নং ১৪৯৮; আহমাদ ২/৩৬৮, নং ৮৮০৯। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ্‌ ১/২৫১।
[3] ইবন মাজাহ্‌, নং ১৪৯৯। দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ ১/২৫১। তাছাড়া হাদীসটি আবূ দাউদও বর্ণনা করেছেন, ৩/২১১, নং ৩২০২।
[4] হাদীসটি সংকলণ করেন, হাকেম তাঁর মুস্তাদরাকে এবং সহীহ বলেছেন, ১/৩৫৯; আর যাহাবী সেটা সমর্থন করেছেন। আরও দেখুন, আলবানী, আহকামুল জানায়েয, পৃ. ১২৫।
১৬. শোকার্তদের সান্ত্বনা দেওয়ার দো‘আ:
 (ইন্না লিল্লা-হি মা আখাযা, ওয়ালাহু মা আ‘তা, ওয়া কুল্লু শাই’ইন ‘ইনদাহু বিআজালিম মুসাম্মা, ফালতাসবির ওয়াল তাহতাসিব)
- “নিশ্চয় যা নিয়ে গেছেন আল্লাহ্‌ তা তাঁরই, আর যা কিছু প্রদান করেছেন তাও তাঁর। তাঁর কাছে সব কিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। কাজেই সবর করা এবং সওয়াবের আশা করা উচিৎ।”[1]
আর নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়াও ভালো:
 (আ‘যামাল্লাহু আজরাকা, ওয়া আহসানা ‘আযা-’আকা, ওয়াগাফারা লিমাইয়্যিতিকা)
“আল্লাহ আপনার সওয়াব বর্ধিত করুন, আপনার (শোকার্ত মনে) সুন্দর ধৈর্য ধরার তাওফীক দিন, আর আপনার মৃতকে ক্ষমা করে দিন।”[2]
[1] বুখারী, ২/৮০, নং ১২৮৪; মুসলিম, ২/৬৩৬, নং ৯২৩।
[2] আল-আযকার লিন নাওয়াওয়ী, পৃ. ১২৬।
১৭. মৃতকে কবরে প্রবেশ করানোর দো‘আ:
 (বিসমিল্লা-হি ওয়া আলা সুন্নাতি রাসুলিল্লা-হি)।
- “আল্লাহর নামে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়মে।”[1]
[1] আবূ দাউদ ৩/৩১৪, নং ৩২১৫ সহীহ সনদে; অনুরূপভাবে আহমাদ, নং ৫২৩৪; আর ৪৮১২ এর শব্দ হচ্ছে, ‘বিসমিল্লাহ ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর নামে এবং রাসূলুল্লাহর মিল্লাতের উপর।’ তার সনদও বিশুদ্ধ।
১৮. মৃতকে দাফন করার পর দো‘আ:
 (আল্লা-হুম্মাগফির লাহু, আল্লা-হুম্মা সাববিতহু)।
- “হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ্‌ আপনি তাকে (প্রশ্নোত্তরের সময়) স্থির রাখুন।”[1]
[1] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরের পাশে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর তার জন্য দৃঢ়তা চাও। কেননা এখনই তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে’। আবু্দাউদ ৩/৩১৫, নং ৩২২৩; হাকেম এবং তিনি একে সহীহ বলেছেন, আর যাহাবী সমর্থন করেছেন, ১/৩৭০।
১৯. কবর যিয়ারতের দো‘আ:
 (আস্‌সালা-মু আলাইকুম আহলাদ্দিয়ারি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়াইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লা-হিকুনা, ওয়া ইয়ারহামুল্লাহুল মুসতাক্বদিমীনা মিন্না ওয়াল মুসতা’খিরীনা, নাসআলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল ‘আ-ফিয়াহ)।
- “হে গৃহসমূহের অধিবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আর নিশ্চয় আমরা ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথে মিলিত হবো। [আল্লাহ আমাদের পুর্ববর্তীদের এবং পরবর্তীদের প্রতি দয়া করুন।] আমি আল্লাহ্‌র নিকট আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করি।”[1]
[1] মুসলিম ২/৬৭১, নং ৯৭৫; ইবন মাজাহ্‌, ১/৪৯৪, আর শব্দ তাঁরই, নং ১৫৪৭; বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে। আর দু ব্রাকেটের মাঝখানের অংশ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস থেকে, যা সংকলন করেছেন, মুসলিম, ২/৬৭১, নং ৯৭৫।
২০. শরীরে কোনো ব্যথা অনুভব করলে যা করবে ও বলবে:
- “আপনার দেহের যে স্থানে আপনি ব্যথা অনুভব করছেন, সেখানে আপনার হাত রেখে তিনবার বলুন,
 (বিসমিল্লাহ)
“আল্লাহর নামে।” আর সাতবার বলুন,
(আ‘ঊযু বিল্লা-হি ওয়া ক্বুদরাতিহী মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহা-যিরু)।
“এই যে ব্যথা আমি অনুভব করছি এবং যার আমি আশঙ্কা করছি, তা থেকে আমি আল্লাহ্‌র এবং তাঁর কুদরতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”[1]
[1] মুসলিম ৪/১৭২৮, নং ২২০২।
২১. ভীত অবস্থায় যা বলবে:
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ !)
- “আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব উপাস্য নেই!”[1]
 [1] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৬/৩৮১, নং ৩৩৪৬; মুসলিম ৪/২২০৮, নং ২৮৮০।
বিবাহ ও দাম্পত্য বিষয়াবলী দোয়া ও আমলসমূহ
১. সন্তান লাভকারীকে অভিনন্দন ও তার জবাব:
(বা-রাকাল্লা-হু লাকা ফিল মাউহুবি লাক, ওয়া শাকারতাল ওয়া-হিবা, ওয়া বালাগা আশুদ্দাহু, ওয়া রুযিক্তা বিররাহু)।
- “আল্লাহ আপনাকে যা দিয়েছেন তাতে আপনার জন্য বরকত দান করুন, সন্তান দানকারীর শুকরিয়া আদায় করুন, সন্তানটি পরিপূর্ণ বয়সে পদার্পণ করুক এবং তার সদ্ব্যবহার প্রাপ্ত হোন।”[1]
অভিনন্দনের জবাবে বলবে
(বা-রাকাল্লা-হু লাকা ওয়া বা-রাকা ‘আলাইকা, ওয়া জাযা-কাল্লা-হু খাইরান, ওয়া রাযাক্বাকাল্লা-হু মিসলাহু ওয়া আজযালা সাওয়া-বাকা)।
“আল্লাহ আপনাকে বরকত দান করুন, আর আপনার উপর বরকত নাযিল করুন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন, আর আপনাকেও অনুরূপ দান করুন এবং আপনার সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি করুন।”[2]
[1] এটি হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহর বাণী হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। দেখুন, তুহফাতুল মাওদূদ লি ইবনিল কাইয়্যেম, পৃ. ২০; তিনি একে ইবনুল মুনযির এর আল-আওসাত্ব গ্রন্থের দিকে সম্পর্কযুক্ত করেছেন।
[2] এটি ইমাম নাওয়াবী তার আল-আযকার গ্রন্থে পৃ. ৩৪৯ উল্লেখ করেছেন। আরও দেখুন, সহীহুল আযকার লিন নাওয়াবী, সলীম আল-হিলালী, ২/৭১৩। আর এর বিস্তারিত তাখরীজ দেখার জন্য গ্রন্থকারের ‘আয-যিকর ওয়াদ দো‘আ ওয়াল ‘ইলাজ বির রুকা’ গ্রন্থটি দেখুন, পৃ. ১/৪১৬।
২. যা দ্বারা শিশুদের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়:
 - রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা-এর জন্য এই বলে (আল্লাহ্‌র) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন-
 (উ‘ইযুকুমা বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিওঁয়া হা-ম্মাহ্‌, ওয়ামিন কুল্লি আইনিল্লা-ম্মাহ্‌)।
“আমি তোমাদের দু’জনকে আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের আশ্রয়ে নিচ্ছি যাবতীয় শয়তান ও বিষধর জন্তু থেকে এবং যাবতীয় ক্ষতিকর চক্ষু (বদনযর) থেকে।”[1]
[1] বুখারী ৪/১১৯, নং ৩৩৭১; ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার হাদীস থেকে।
৩. নব বিবাহিতের জন্য দো‘আ:
 (বা-রাকাল্লা-হু লাকা ওয়াবা-রাকা ‘আলাইকা ওয়া জামা‘আ বাইনাকুমা ফী খাইরিন্)।
- “আল্লাহ আপনার জন্য বরকতদান করুন, আপনার উপর বরকত নাযিল করুন এবং কল্যাণের সাথে আপনাদের উভয়কে একত্রিত করুন।”[1]
[1] হাদীসটি নাসাঈ ব্যতীত সকল সুনানগ্রন্থকারগণই সংকলন করেছেন। আবু দাঊদ, নং ২১৩০; তিরমিযী, নং ১০৯১; ইবন মাজাহ, নং ১৯০৫; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল-লাইলাহ, নং ২৫৯। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী ১/৩১৬।
৪. বিবাহিত ব্যক্তির দো‘আ এবং বাহন ক্রয়ের পর দো‘আ:
- “যখন তোমাদের কেউ কোনো মেয়েকে বিয়ে করে, অথবা কোনো খাদেম গ্রহণ করে, তখন যেন সে বলে,
 (আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা ‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা ‘আলাইহি)
“হে আল্লাহ, আমি এর যত কল্যাণ রয়েছে এবং যত কল্যাণ তার স্বভাবে আপনি দিয়েছেন তা চাই। আর এর যত অকল্যাণ রয়েছে এবং যত অকল্যাণ ওর স্বভাব-চরিত্রে আপনি রেখেছেন তা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।”
“আর যখন কোনো উট তথা বাহন খরিদ করে, তখন যেন সে তার কুঁজের সর্বোচ্চ স্থানে হাত রাখে এবং অনুরূপ বলে।[1]
[1] আবু দাঊদ-২/২৪৮, নং ২১৬০; ইবন মাজাহ্‌ ১/৬১৭, নং ১৯১৮। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ১/৩২৪।
৫. স্ত্রী-সহবাসের পুর্বের দো‘আ:
(বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ্-শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা মা রযাকতানা)।
- “আল্লাহ্‌র নামে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন এবং আমাদেরকে আপনি যে সন্তান দান করবেন তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখুন।”[1]
[1] বুখারী ৬/১৪১, নং ১৪১; মুসলিম ২/১০২৮, নং ১৪৩৪।
ঈমান সুরক্ষা সংক্রান্ত দোয়া ও আমলসমূহ
১. ঈমানের মধ্যে সন্দেহে পতিত ব্যক্তির দো‘আ:
 (১) আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে (‘আঊযু বিল্লা-হ’ বলবে)।[1]
(২) যে সন্দেহে নিপতিত হয়েছে তা দূর করবে।[2]
 (৩) বলবে,
(আ-মানতু বিল্লা-হি ওয়া রুসুলিহি)
“আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর ঈমান আনলাম।”[3]
(৪) আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণী পড়বে,
(হুয়াল আউওয়ালু ওয়াল আ-খিরু ওয়ায্যা-হিরু ওয়াল-বা-ত্বিনু ওয়া হুয়া বিকুল্লি শাই’ইন ‘আলীম)।
“তিনিই সর্বপ্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই সকলের উপরে, তিনিই সকলের নিকটে এবং তিনি সব কিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।”[4]
[1] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৬/৩৩৬, নং ৩২৭৬; মুসলিম ১/১২০, নং ১৩৪।
[2] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৬/৩৩৬, নং ৩২৭৬; মুসলিম ১/১২০, ১৩৪।
[3] মুসলিম ১/১১৯-১২০, নং ১৩৪।
[4] সূরা হাদীদ-৩, আবূ দাউদ ৪/৩২৯, নং ৫১১০। আর শাইখ আলবানী সহীহ আবি দাউদ ৩/৯৬২ একে হাসান বলেছেন।
২. পাপ করে ফেললে যা বলবে এবং যা করবে:
- “যদি কোনো বান্দা কোনো পাপ কাজ করে ফেলে, অতঃপর সে উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে এবং দাঁড়িয়ে যায় ও দু রাক‘আত সালাত আদায় করে, তারপর আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন।”[1]
[1] আবূ দাউদ ২/৮৬, ১৫২১; তিরমিযী ২/২৫৭, নং ৪০৬; আর শাইখ আলবানী সহীহ আবি দাউদে ১/২৮৩ একে সহীহ বলে মত প্রকাশ করেছেন।
৩. শয়তান ও তার কুমন্ত্রণা দূর করার দো‘আ:
 (১) ‘তার থেকে আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে’[1]   (অর্থাৎ ‘আ‘ঊযু বিল্লাহ’ পড়বে)।
(২) ‘আযান দিবে।’[2]
(৩) ‘যিক্‌র করবে এবং কুরআন পড়বে।’[3]
[1] আবূ দাউদ ১/২০৩, ইবন মাজাহ্‌ ১/২৬৫, নং ৮০৭। আর পূর্বে ৩১ নং হাদীসে এর তাখরীজ চলে গেছে। আরও দেখুন, সূরা আল-মুমিনূন এর ৯৭-৯৮।
[2] মুসলিম ১/২৯১; নং ৩৮৯; বুখারী, ১/১৫১, নং ৬০৮।
[3] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা তোমাদের ঘরসমূহ কবরে পরিণত করুন না। নিশ্চয় শয়তান ঐ ঘর থেকে পলায়ন করে যেখানে সূরা বাকারাহ্‌ পাঠ করা হয়।” মুসলিম ১/৫৩৯, হাদীস নং ৭৮০। তাছাড়া আরও যা শয়তানকে তাড়িয়ে দেয় তা হচ্ছে, সকাল বিকালের যিক্‌রসমূহ, ঘুমের যিক্‌র, জাগ্রত হওয়ার যিক্‌র, ঘরে প্রবেশের ও ঘর থেকে বের হওয়ার যিক্‌রসমূহ, মসজিদে প্রবেশের ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার যিক্‌রসমূহ, ইত্যাদী শরী‘আতসম্মত যিক্‌রসমূহ। যেমন, ঘুমের সময় আয়াতুল কুরসী, সূরা আল-বাকারার সর্বশেষ দু’টি আয়াত। তাছাড়া যে ব্যক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর” একশতবার পড়বে, সেটা তার জন্য সে দিনটির জন্য পুরোপুরিই হেফাযতের কাজ দিবে। তদ্রুপ আযান দিলেও শয়তান পলায়ন করে।
৪. শির্কের ভয়ে দো‘আ:
 (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া ‘আনা আ‘লামু ওয়া আস্তাগফিরুকা লিমা লা আ‘লামু)।
“হে আল্লাহ! আমি জ্ঞাতসারে আপনার সাথে শির্ক করা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই এবং অজ্ঞতাসারে (শির্ক) হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা চাই।”[1]
[1] আহমাদ ৪/৪০৩, নং ১৯৬০৬; ইমাম বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭১৬। আরও দেখুন, সহীহ আল জামে ৩/২৩৩; সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব লিল আলবানী, ১/১৯।
৫. কোনো কিছুর উপর নিজের চোখ লাগার ভয় থাকলে দো‘আ:
- “যখন তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের, অথবা নিজের কোনো বিষয়ে, অথবা নিজের কোনো সম্পদে এমন কিছু দেখে যা তাকে চমৎকৃত করে, [তখন সে যেন সেটার জন্য বরকতের দো‘আ করে;] কারণ, চোখ লাগার (বদ নজরের) বিষয়টি সত্য।”[1]
[1] মুসনাদে আহমাদ ৪/৪৪৭, নং ১৫৭০০; ইবন মাজাহ্, নং ৩৫০৮; মালেক ৩/১১৮-১১৯। আর শাইখুল আলবানী, সহীহুল জামে‘ গ্রন্থে সহীহ বলেছেন, ১/২১২; আরও দেখুন, আরনাঊতের এর যাদুল মা‘আদ এর তাহকীক ৪/১৭০।
৬. দুষ্ট শয়তানদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে যা বলবে:
 (আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্-তা-ম্মা-তিল্লাতী লা ইয়ুজাউইযুহুন্না বাররুন ওয়ালা ফা-জিরুম মিন শাররি মা খালাক্বা, ওয়া বারা’আ, ওয়া যারা’আ, ওয়ামিন শাররি মা ইয়ানযিলু মিনাস্ সামা-য়ি, ওয়ামিন শাররি মা যারাআ ফিল আরদ্বি, ওয়ামিন শাররি মা ইয়াখরুজু মিনহা, ওয়ামিন শাররি ফিতানিল-লাইলি ওয়ান-নাহা-রি, ওয়ামিন শাররি কুল্লি ত্বা-রিকিন ইল্লা ত্বা-রিকান ইয়াত্বরুকু বিখাইরিন, ইয়া রহ্‌মানু)।২৪৭- “আমি আল্লাহ্‌র ঐ সকল পরিপূর্ণ বাণীসমূহের সাহায্যে আশ্রয় চাই যা কোনো সৎলোক বা অসৎলোক অতিক্রম করতে পারে না— আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, অস্তিত্বে এনেছেন এবং তৈরি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, আসমান থেকে যা নেমে আসে তার অনিষ্ট থেকে, যা আকাশে উঠে তার অনিষ্ট থেকে, যা পৃথিবীতে তিনি সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, যা পৃথিবী থেকে বেরিয়ে আসে তার অনিষ্ট থেকে, দিনে-রাতে সংঘটিত ফেতনার অনিষ্ট থেকে, আর রাত্রিবেলা হঠাৎ করে আগত অনিষ্ট থেকে, তবে রাতে আগত যে বিষয় কল্যাণ নিয়ে আসে তা ব্যতীত; হে দয়াময়!”[1]
[1] আহমাদ ৩/৪১৯, নং ১৫৪৬১, সহীহ সনদে। আর ইবনুস সুন্নী, নং ৬৩৭; আরনাঊত তার ত্বাহাভীয়ার তাখরীজে এর সনদকে বিশুদ্ধ বলেছেন, পৃ.১৩৩। আরও দেখুন, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ১০/১২৭।
চলাচল, সফর [ভ্রমন] সংক্রান্ত দোয়া ও আমলসমূহ
১. বাহনে আরোহণের দো‘আ:
(ক) (বিস্‌মিল্লা-হি, আলহাম্‌দু লিল্লা-হি, সুব্‌হা-নাল্লাযী সাখখারা লানা হা-যা ওয়ামা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন। ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনক্বালিবূন, আলহামদুলিল্লা-হ, আলহামদুলিল্লা-হ, আলহামদুলিল্লা-হ, আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী ফাগফির লী। ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা)।
- “আল্লাহ্‌র নামে; আর সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। পবিত্র মহান সেই সত্তা, যিনি একে আমাদের জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন, অন্যথায় আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আর আমরা অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করবো আমাদের রব্বের দিকে। সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য, সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য, সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়। হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র-মহান; আমি আমার নিজের উপর যুলুম করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে মাফ করে দিন। কেননা, আপনি ছাড়া গুনাহ মাফ করার আর কেউ নেই।”[1]
[1] আবু দাঊদ ৩/৩৪, ২৬০২; তিরমিযী ৫/৫০১, নং ৩৪৪৬। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী ৩/১৫৬। আর আয়াত দু’টি হচ্ছে, সূরা আয-যুখরুফের ১৩-১৪।
(খ)  (আল্লা-হু আকবার আল্লা-হু আকবার আল্লা-হু আকবার। সুব্‌হা-নাল্লাযী সাখখারা লানা হা-যা ওয়ামা কুন্না লাহু মুক্বরিনীনা। ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনক্বালিবূন। আল্লা-হুম্মা ইন্না নাস’আলুকা ফী সাফারিনা হা-যাল-বিররা ওয়াত্তাকওয়া, ওয়ামিনাল ‘আমালি মা তারদ্বা। আল্লা-হুম্মা হাউইন ‘আলাইনা সাফারানা হা-যা ওয়াতউই ‘আন্না বু‘দাহু। আল্লা-হুম্মা আনতাস সা-হিবু ফিস সাফারি ওয়াল-খালীফাতু ফিল আহ্‌লি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন ওয়া‘আসা-ইস্ সাফারি ওয়া কা’আবাতিল মানযারি ওয়া সূ-ইল মুনক্বালাবি ফিল মা-লি ওয়াল আহল)।
- “আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়। পবিত্র মহান সেই সত্তা, যিনি আমাদের জন্য একে বশীভূত করে দিয়েছেন, অন্যথায় আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আর আমরা অবশ্যই আমাদের রব্বের নিকট প্রত্যাবর্তন করব।
হে আল্লাহ! আমরা এই সফরে আপনার কাছে চাই পূণ্য ও তাকওয়া এবং এমন কাজ যা আপনি পছন্দ করেন। হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এই সফরকে সহজ করে দিন এবং এর দুরত্বকে আমাদের জন্য কমিয়ে দিন। হে আল্লাহ্! আপনিই সফরে আমাদের সাথী এবং আমাদের পরিবার-পরিজনের তত্ত্বাবধায়ণকারী। হে আল্লাহ! আমরা আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি সফরের কষ্ট-ক্লেশ থেকে, অবাঞ্ছিত অবস্থার দৃশ্য থেকে এবং সম্পদ ও পরিবারে অনিষ্টকর প্রত্যাবর্তন থেকে।”
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফেরার সময়ও তা পড়তেন এবং তাতে যোগ করতেন,
 (আ-ইবূনা তা-ইবূনা ‘আ-বিদূনা, লিরব্বিনা হা-মিদূন)।
“আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আমাদের রব্বের প্রশংসাকারী।”[1]
[1] মুসলিম ২/৯৭৮, হাদীস নং ১৩৪২।
২. গ্রাম বা শহরে প্রবেশের দো‘আ:
 (আল্লা-হুম্মা রব্বাস্ সামা-ওয়া-তিস্ সাব‘ঈ ওয়ামা আযলালনা, ওয়ারব্বাল আরাদ্বীনাস সাব‘ঈ ওয়ামা আক্বলালনা, ওয়া রব্বাশ শাইয়া-তী-নি ওয়ামা আদ্বলালনা, ওয়া রব্বাররিয়া-হি ওয়ামা যারাইনা, আস’আলুকা খাইরা হা-যিহিল কারইয়াতি ওয়া খাইরা আহলিহা ওয়া খাইরা মা ফীহা। ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি আহলিহা ওয়া শাররি মা ফীহা)।
- “হে আল্লাহ! সাত আসমান এবং তা যা কিছু ছায়া দিয়ে রেখেছে তার রব্ব! সাত যমীন এবং তা যা ধারণ করে রেখেছে তার রব্ব! শয়তানদের এবং ওদের দ্বারা পথভ্রষ্টদের রব্ব! বাতাসসমূহ এবং তা যা উড়িয়ে নেয় তার রব্ব! আমি আপনার নিকট চাই এ জনপদের কল্যাণ, এ জনপদবাসীর কল্যাণ এবং এর মাঝে যা আছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই এ জনপদের অনিষ্ট থেকে, তাতে বসবাসকারীদের অনিষ্ট থেকে এবং এর মাঝে যা আছে তার অনিষ্ট থেকে।”[1]
[1] হাকেম, আর তিনি একে সহীহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী সেটা সমর্থন করেছেন ২/১০০; ইবনুস সুন্নী, নং ৫২৪। তাছাড়া হাফেয ইবন হাজার তাঁর তাখরীজুল আযকার ৫/১৫৪, একে হাসান বলেছেন। আল্লামা ইবন বায রাহেমাহুল্লাহ বলেন, ‘হাদীসটি নাসাঈ হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন।’ দেখুন, তুহফাতুল আখইয়ার, পৃ. ৩৭।
৩.বাজারে প্রবেশের দো‘আ:
 (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকালাহু লাহুল-মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইয়ুহঈ ওয়াইয়ুমীতু ওয়াহুয়া হায়্যুন লা ইয়ামূতু বিয়াদিহিল খাইরু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর)।
- “একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর। তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মারেন। আর তিনি চিরঞ্জীব, মারা যাবেন না। সকল প্রকার কল্যাণ তাঁর হাতে নিহিত। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।”[1]
[1] তিরমিযী, নং ৩৪২৮; ইবন মাজাহ, ৫/২৯১, নং ৩৮৬০; হাকেম ১/৫৩৮। আর শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ ইবন মাজাহ্‌ ২/২১; সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৫২ হাসান হাদীস বলেছেন।
৪. বাহন হোঁচট খেলে পড়ার দো‘আ:
 (বিসমিল্লা-হ)
- “আল্লাহ্‌র নামে।”[1]
[1] আবূ দাউদ, ৪/২৯৬, নং ৪৯৮২। আর শাইখ আলবানী একে সহীহ বলেছেন, সহীহ আবি দাউদে, ৩/৯৪১।
৫. মুক্বীম বা অবস্থানকারীদের জন্য মুসাফিরের দো‘আ:
 (আস্তাউদি‘উ কুমুল্লা-হাল্লাযী লা তাদ্বী‘উ ওয়াদা-ই‘উহু)।
- “আমি তোমাদেরকে আল্লাহ্‌র হেফাযতে রেখে যাচ্ছি, যাঁর কাছে রাখা আমানতসমূহ কখনও বিনষ্ট হয় না।”[1]
[1] আহমাদ ২/৪০৩, নং ৯২৩০; ইবন মাজাহ্‌, ২/৯৪৩, নং ২৮২৫। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ্‌ ২/১৩৩।
৬. মুসাফিরের জন্য মুক্বীম বা অবস্থানকারীর দো‘আ:
 (আস্তাউদি‘উল্লা-হা দ্বীনাকা ওয়া আমা-নাতাকা ওয়া খাওয়া-তীমা ‘আমালিকা)।
(১) “আমি আপনার দ্বীন, আপনার আমানত (পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ) এবং আপনার সর্বশেষ আমলকে আল্লাহ্‌র হেফাযতে রাখছি।”[1]  
 (যাওয়াদাকাল্লাহুত তাক্বওয়া, ওয়াগাফারা যানবাকা, ওয়া ইয়াসসারা লাকাল খাইরা হাইসু মা কুনতা)।
(২) “আল্লাহ আপনাকে তাকওয়ার পাথেয় প্রদান করুন, আপনার গুনাহ ক্ষমা করুন, আর যেখানেই থাকুন না কেন আপনার জন্য কল্যাণকে সহজ করে দিন।”[2]
[1] আহমাদ ২/৭, ৪৫২৪, তিরমিযী ৫/৪৯৯, নং ৩৪৪৩। আর শাইখ আলবানী একে সহীহু সুনানিত তিরমিযীতে ৩/৪১৯ সহীহ হাদীস বলেছেন।
[2] তিরমিযী, নং ৩৪৪৪; আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৫৫।
৭. সফরে চলার সময় তাকবীর ও তাসবীহ:
- ‘জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “আমরা যখন উঁচুতে আরোহণ করতাম তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম, আর যখন নীচের দিকে নামতাম তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতাম।”[1]
[1] বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৬/১৩৫, নং ২৯৯৩।
৮. রাত্রির শেষ প্রহরে মুসাফিরের দো‘আ:
(সাম্মা‘আ সা-মি‘উন বিহামদিল্লা-হ, ওয়া হুসনি বালা-ইহী ‘আলাইনা, রাব্বানা সা-হিবনা, ওয়া আফদিল ‘আলাইনা, ‘আ-ইযান বিল্লা-হি মিনান না-রী)  
- “আমরা যে আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলাম, আর আমাদের উপর তাঁর উত্তম নেয়ামতের ঘোষণা দিলাম, তা একজন শ্রোতা আমার এ কথা শুনে অন্যের কাছে পৌঁছে দিক। হে আমাদের রব! আপনি আমাদের সাথী হোন, আর আমাদের উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করুন। আগুন থেকে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয়প্রার্থী হয়ে (এ দো‘আ করছি)।”[1]
[1] মুসলিম, ৪/২০৮৬, নং ২৭১৮। আর হাদীসে ব্যবহৃত سَمِعَ سامِعٌ শব্দের অর্থ, ‘একজন সাক্ষ্যদাতা সাক্ষ্য প্রদান করুন যে, আমরা আল্লাহর প্রশংসা করেছি তার যাবতীয় নেয়ামতের উপর, তাঁর উত্তম দান-দয়ার উপর।’ আর যদি হাদীসে ব্যবহৃত শব্দটিকে سَمَّعَ سامِعٌ ধরা হয়, তখন অর্থ হবে, ‘একজন শ্রোতা আমার এ কথা শুনে তা অন্যের কাছে পৌঁছে দিক।’ আর এ-কথাটি তিনি বলেছেন শেষ রাত্রির দো‘আ ও যিকর সম্পর্কে সচেতন করার জন্য। শারহুন নাওয়াওয়ী ‘আলা সহীহ মুসলিম, ১৭/৩৯।
৯. সফরে বা অন্য অবস্থায় কোনো ঘরে নামলে পড়ার দো‘আ:
 (আ‘ঊযু বি কালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি মিন শাররি মা খালাক্ব)
- “আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় আমি তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।”[1]
[1] মুসলিম, ৪/২০৮০, নং ২৭০৯।
১০. সফর থেকে ফেরার যিক্‌র:
- প্রতিটি উঁচু স্থানে তিন বার তাকবীর দিবে, তারপর বলবে,
 (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর, আ-ইবূনা, তা-ইবূনা, ‘আ-বিদূনা, লি রাব্বিনা হা-মিদূন। সাদাক্বাল্লা-হু ওয়া‘দাহু, ওয়া নাসারা ‘আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু)
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আমাদের রব্বের প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাঁর ওয়াদা বাস্তবায়ন করেছেন, তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন, আর তিনি সকল বিরোধী দল-গোষ্ঠীকে একাই পরাস্ত করেছেন।”[1]
[1] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো যুদ্ধ অথবা হজ্জ থেকে ফিরতেন, তখন এগুলো বলতেন। বুখারী, ৭/১৬৩, নং ১৭৯৭; মুসলিম, ২/৯৮০, নং ১৩৪৪।
শুভ অশুভ লক্ষণ সংক্রান্ত দোয়া ও আমলসমূহ
১. অশুভ লক্ষণ গ্রহণকে অপছন্দ করে দো‘আ:
 (আল্লা-হুম্মা লা ত্বাইরা ইল্লা ত্বাইরুকা ওয়ালা খাইরা ইল্লা খাইরুকা ওয়ালা ইলা-হা গাইরুকা)।
- “হে আল্লাহ! আপনার পক্ষ থেকে অশুভ মঞ্জুর না হলে অশুভ বলে কিছু নেই। আপনার কল্যাণ ছাড়া কোনো কল্যাণ নেই। আর আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই।”[1]
[1] আহমাদ ২/২২০, নং ৭০৪৫; ইবনুস সুন্নী, হাদীস নং ২৯২। আর শাইখ আলবানী তাঁর সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহায় ৩/৫৪, নং ১০৬৫, একে সহীহ বলেছেন। তবে সুলক্ষণ নেওয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করতেন। সে জন্য যখন তিনি কোনো মানুষ থেকে কোনো ভালো বাক্য বা সুবচন শুনতেন, তখন সেটা তাঁর কাছে ভালো লাগত এবং বলতেন, “তোমার মুখ থেকে তোমার সুলক্ষণ গ্রহণ করেছি”। আবু দাউদ, নং ৩৭১৯; আহমাদ, নং ৯০৪০। আর শাইখ আলবানী তাঁর সিলসিলাতুস সহীহায় একে সহীহ বলেছেন, ২/৩৬৩; আবুশ শাইখ, আখলাকুন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, পৃ. ২৭০।
২. আনন্দদায়ক অথবা অপছন্দনীয় কিছুর সম্মুখীন হলে যা বলবে:
 - নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যখন আনন্দায়ক কোনো বিষয় আসত তখন তিনি বলতেন,
 (আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী বিনি‘মাতিহী তাতিম্মুস সা-লিহা-ত)।
“আল্লাহ্‌র জন্য সমস্ত প্রশংসা, যাঁর নেয়ামত দ্বারা সকল ভাল কিছু পরিপূর্ণ হয়।”
আর যখন তার কাছে অপছন্দনীয় বিষয় আসত, তখন তিনি বলতেন,
 (আলহামদুলিল্লা-হি ‘আলা কুল্লি হাল)
“সকল অবস্থায় যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য।”[1]
[1] হাদীসটি সংকলন করেছেন, ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল-লাইলাহ, নং ৩৭৭; হাকেম এবং তিনি একে সহীহ বলেছেন, ১/৪৯৯। আর শাইখ আলবানী তাঁর সহীহুল জামে‘ ৪/২০১।
৩. মোরগের ডাক ও গাধার স্বর শুনলে পড়ার দো‘আ:
- “যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে, তখন তোমরা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ চাইবে, কেননা সে একটি ফেরেশতা দেখেছে। আর যখন তোমরা কোনো গাধার স্বর শুনবে, তখন শয়তান থেকে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাইবে; কেননা সে শয়তান দেখেছে।”[1]
[1] বুখারী (ফাতহুল বারীসহ), ৬/৩৫০, নং ৩৩০৩; মুসলিম, ৪/২০৯২, নং ২৭২৯।
সমাপ্ত
হে আল্লাহ! দ্বীন লেখকের ত্রুটিগুলি তুমি ক্ষমা কর এবং তোমার পথে এই ক্ষুদ্র খিদমতটুকু কবুল কর। হে আল্লাহ! এ বই পড়ে যত মুমিন নর-নারী আমল করবেন, তোমার রাসূল (ছাঃ)-এর ওয়াদা মোতাবেক এ নাচীয লেখকের আমলনামায় তার ছওয়াব পূর্ণরূপে যুক্ত কর এবং এর অসীলায় লেখক ও তার পিতামাতাকে ও তার পরিবারবর্গকে এবং তার সকল শুভাকাংখীকে কবরে ও হাশরে মুক্তি দান কর- আমীন!! সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বেহামদিহী, সুবহা-নাল্লা-হিল ‘আযীম!
 [151] . তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৪৩৩, ২৪৫০; ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯ ‘বিভিন্ন সময়ের দো‘আ সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।

কোরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক আরো বিষয় জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
 “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
« مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا »
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” 
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, গুলশান-ঢাকা।


No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...