Search This Blog

Friday, September 27, 2019

দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালাকে কি স্বচক্ষে দেখা যায়? কথিত পির-আউলিয়াগণ দেখেনঃ


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালাকে কি স্বচক্ষে দেখা যায়? কথিত পির-আউলিয়াগণ দেখেনঃ
আল্লাহ তা‘আলার দিদার প্রতিটি মু’মিনের চির আকাঙ্ক্ষা। মু’মিনের জন্য জান্নাতে সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার হলো আল্লাহর দর্শন; কিন্তু দুনিয়াতে কি স্বচক্ষে বা স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা সম্ভব? আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতের সর্বসম্মত মত হলো, দুনিয়াতে স্বচক্ষে সরাসরি আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়। এমনকি নবী রাসূলগণও দেখেন নি। স্বপ্নে দেখার ব্যাপারে তারা মতানৈক্য করেছেন। অধিকাংশ ‘আলেমের মতে স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা সম্ভব; তবে সে যে আকৃতিতে আল্লাহকে দেখেছে তা আল্লাহর হাকীকি বা আসল আকৃতি নয়।
এক ব্যক্তির দাবী যে, সে স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছে। কেউ কেউ বলে থাকেন, ইমাম আহমদ রহ. একশত বার স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। একথাটা কি সঠিক?
আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বা‘য রহ. বলেছেন, “শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. ও অন্যান্য আলেমগণ বলেছেন, মানুষ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখতে পারে; তবে সে যে আকৃতিতে আল্লাহকে দেখেছে তা আল্লাহর হাকীকি বা আসল আকৃতি নয়। কেননা আল্লাহ তাআলার সদৃশ কিছুই নেই। আল্লাহ বলেছেন,
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١  [الشورى: ١١
“তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা” [সূরা আশ-শূরাআয়াত: ১১]
অতএব, তিনি কোনো কিছুর অনুরূপ নন। কেউ স্বপ্নে আল্লাহর সাথে কথা বলতে পারেন। তবে সে মানুষ বা অন্য যে কোনো প্রাণীর আকৃতিতেই দেখুক না কেন তা আল্লাহর প্রকৃত আকৃতি নয়। তার কোনো সদৃশ নেই, কেউ তার সমকক্ষ বা অনুরূপ নয়”। [1]
শাইখুল ইসলাম তকীউদ্দিন রহ. বলেছেন, ‘বান্দার অবস্থা ভেদে আল্লাহকে দেখাও পার্থক্য হয়ে থাকে। অধিকতর নেককার মানুষের দেখা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশী; তবে সে যে আকৃতিতে বা গুণাবলীতেই দেখুক তা আল্লাহর আকৃতি নয়। কেননা মূল হলো, আল্লাহর সদৃশ কিছুই নেই। সে হয়ত আওয়াজ শুনতে পারে, তাকে বলা হতে পারে যে, তুমি এ কাজটি কর। তবে সৃষ্টিজগতের কারো সাথেই তার মিল নেই। তাঁর কোনো সদৃশ বা উপমা নেই। তিনি এসব থেকে মুক্ত, মহাপবিত্র স্বত্তা’
 দুনিয়াতে স্বপ্নে আল্লাহর দীদার

দুনিয়ায় বসে স্বপ্নযোগে আল্লাহকে দেখা সম্ভব কি না? -সে ব্যাপারে ‘আলেমদের মত হলো, মানুষ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখতে পারে; তবে সে যে আকৃতিতে আল্লাহকে দেখেছে তা আল্লাহর হাকীকি বা আসল রূপ নয়।
কিছু বিদ‘আতী ও ভ্রষ্ট সূফি ও রাফেযিরা (শিয়ারা) মনে করেন যে, দুনিয়াতে স্বপ্নে আল্লাহর দীদার সম্ভব নয়। তারা শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. এর দেওয়া মতের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে থাকেন এবং বলেন যে, তার দেওয়া হাদীসের দলিলটি মওদু‘ তথা বানোয়াট; অথচ হাদীসটি সহীহ, যা নিম্নোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হবে। 
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। নিম্নোক্ত হাদীস থেকে একথা স্পষ্ট বুঝা যায়। উবাই ইবন কা‘ব এর স্ত্রী উম্মে তুফাইল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
“তিনি স্বপ্নে তার রবকে পরিপূর্ণ একজন যুবকের আকৃতিতে ঘন কেশ বিশিষ্ট অবস্থায় দেখেছেন। তাঁর পদপযুগল সবুজ কাপড়ে আবৃত ছিল। তিনি সোনার জুতা পরিহিত ছিলেন। তাঁর চেহারায় সোনার চাদর ছিল[2]
অনুরূপভাবে আরো বর্ণিত হয়েছে, উবাই ইবন কা‘ব এর স্ত্রী উম্মে তুফাইল থেকে। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
“তিনি স্বপ্নে তার রবকে পরিপূর্ণ উত্তম একজন যুবকের আকৃতিতে চুল বিশিষ্ট দেখেছেন। তার পদপযুগল সবুজ কাপড়ে আবৃত ছিল। এতে সোনার জুতা পরিহিত ছিল। তার চেহারায় সোনার চাদর ছিল”। [3]
মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ‌্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“আমি আমার রবকে স্বপ্নে উত্তম আকৃতিতে দেখেছি। তিনি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মদ! আমি বললাম, লাব্বাইকা রাব্বী (আমি উপস্থিত হে আমার রব)। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান উর্ধ্বজগতের লোকজন (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ) কী নিয়ে বিতর্ক করে? আমি বললাম, হে আমার রব! আমি জানি না। তিনি আবার বললেন, হে মুহাম্মদ! আমি বললাম, লাব্বাইকা রাব্বী (আমি উপস্থিত হে আমার রব)। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান উর্ধ্বজগতের লোকজন (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ) কী নিয়ে বিতর্ক করে? আমি বললাম, হে আমার রব! আমি জানি না। অতঃপর তিনি তাঁর হাতের তালু আমার দুই কাঁধের মাঝে রাখলেন। অর্থাৎ বুকে রাখলেন। এতে তার হাতের আঙ্গুলের ঠাণ্ডা আমার দু’স্তনের মাঝে অর্থাৎ বুকে অনুভব করতে লাগলাম। এতে আমার কাছে সব কিছু স্পষ্ট হয়ে গেল। ফলে আমি উর্ধ্বজগতে (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ) কি হয় জানতে পারলাম”।[4]
ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
একবার রাতে সুমহান ও বরকতময় আমার রব আমার কাছে সুন্দরতম রূপে এসেছিলেন। (রাবী বলেন: যতদূর মনে পড়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘স্বপ্নে’ কথাটি বলেছিলেন।) তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন নিয়ে মালা-এ-আলা (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ)-এ বিতর্ক হচ্ছে?আমি বললাম: না। নবীজী বলেন: তখন তিনি আমার কাধের মাঝে তার হাত রাখলেন। এমনকি এর স্নিগ্ধতা আমি আমার বুকেও অনুভব করলাম। এতে আসমান ও জমিনের যা কিছু আছে সব আমি জানতে পারলাম। তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেনী নিয়ে মালা-এ আলায় (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ) আলোচনা হচ্ছেআমি বললাম:
হ্যাঁগুনাহের কাফফারা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করাও কাফফারাজামাআতে পায়ে হেঁটে যাওয়াকষ্টের সময় পরিপূর্ণভাবে অযু করাও কাফফারা। যে ব্যক্তি এই কাজ করবে তার জীবন হবে কল্যাণময়আর মৃত্যুও হবে কল্যাণময়। যেই দিন তাঁর মা তাকে ভূমিষ্ঠ করলেন গুনাহর ক্ষেত্রে তাঁর অবস্থা হবে সেই দিনের মত। আমার রব বললেন: হে মুহাম্মাদ! সালাত শেষে বলবেন: হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি প্রত্যাশা করি ভালো কাজ করা এবং মন্দ কাজ পরিত্যাগেরদরিদ্রদের প্রতি ভালবাসা পোষণের তওফীক। আপনি যখন বান্দাদের বিষয়ে ফিতনা মুসীবতের ইরাদা করবেন তখন আমাকে যেন ফেতনা মুক্ত অবস্থায় উঠিয়ে নেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদে আরো আলোচনা হচ্ছে) উচ্চ মর্যদা লাভের বিষয়ে। তা হলসালামের প্রসার সাধনআহার প্রদান এবং লোকেরা যখন নিদ্রাভিভূত, তখন রাতের নফল সালাতে (তাহাজ্জুদে) নিমগ্ন হওয়া[5]
ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
একবার রাতে সুমহান ও বরকতময় আমার রব আমার কাছে সুন্দরতম রূপে এসেছিলেন। (রাবী বলেন: যতদূর মনে পড়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামস্বপ্নে’ কথাটি বলেছিলেন।) তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন নিয়ে মালা-এ-আলা (সর্বোচ্চ ফিরিশতা পরিষদ)-এ বিতর্ক হচ্ছেআমি বললাম: না।  নবীজী বলেন: তখন তিনি আমার কাধের মাঝে তার  হাত রাখলেন। এমনকি এর স্নিগ্ধতা আমি আমার বুকেও অনুভব করলাম। এতে আসমান ও জমিনের যা কিছু আছে সব আমি জানতে পারলাম। তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেনী নিয়ে মালা-এ আলায় আলোচনা হচ্ছে?আমি বললাম: হ্যাঁগুনাহের কাফফারা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করাও কাফফারাজামাআতে পায়ে হেঁটে যাওয়াকষ্টের সময় পরিপূর্ণভাবে উযু করাও কাফফারা। যে ব্যক্তি এই কাজ করবে তার জীবন হবে কল্যাণময়আর মৃত্যুও হবে কল্যাণময়। যেই দিন তার মা তাকে ভূমিষ্ঠ করলেন গুনাহর ক্ষেত্রে তার অবস্থা হবে সেই দিনের মত[6]
মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
একদিন ভোরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে আসতে দেরী করলেন। এমনকি আমরা প্রায় সূর্য উঠে যাচ্ছে বলে প্রত্যক্ষ করছিলাম। এমন সময় তিনি দ্রুত বেরিয়ে আসলেন। সালাতের ইকামত দেওয়া হল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংক্ষিপ্তভাবে সালাত আদায় করলেন। সালাম শেষে তিনি উচ্চস্বরে ডাকলেন। আমাদের বললেন: যেভাবে তোমরা আছ সেভাবেই তোমাদের কাতারে বসে থাক। এরপর তিনি আমাদের দিকে ফিরলেন। বললেন: আজ ভোরে তোমাদের কাছে (যথাসময়ে বের হয়ে) আসতে আমাকে কিসে বিরত রেখেছিল সে বিষয়ে আমি তোমাদের বলছি। আমি রাতেই উঠেছিলাম। অযু করে যা আমার তাকদীরে ছিল সে পরিমাণ তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলাম। আমি সালাতে তন্দ্রাভিভূত হয়ে পড়লাম। ঘুম ভারী হয়ে এল। হঠাৎ দেখিমহান আল্লাহ্ তাআলা সুন্দরতম রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদআমি বললাম: রব আমারবান্দা হাযির। তিনি বললেন: মালা-এ-আলায় কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছেআমি বললাম: হে আমার রবআমি তো জানি না। আল্লাহ্ তাআলা তিন বার উল্লিখিত উক্তি করলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি দেখলাম তিনি আমার কাঁধের দুই হাড্ডির মাঝে তাঁর হাত রাখলেন। আমার বুকে তাঁর অঙ্গুলীসমূহের শীতল ছোয়া অনুভব করলাম। এতে প্রতিটি বস্তু আমার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠল। সব আমি চিনে নিলাম। তিনি বললেন: হে মুহাম্মাদ! আমি বললাম রব আমারবান্দা হাযির। তিনি বললেন: মালা-এ-আলায় কী নিয়ে আলোচনা হচ্ছেআমি বললাম: গুনাহের কাফফারা নিয়ে। তিনি বললেন: সেগুলো কিআমি বললাম: জামা‘আতের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে যাওয়া,সালাতের পরও মসজিদে অবস্থান করাকষ্টের সময়ও পরিপূর্ণভাবে অযু করা। তিনি বললেন: এরপর কি বিষয়ে আলোচনা হচ্ছেআমি বললাম: খাদ্য দাননরম কথামানুষ যখন নিদ্রামগ্ন তখন রাতে সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করা। তিনি বললেন: আমার কাছে চাও। আমি বললাম: হে আল্লাহ্! আমি যাঞ্ছা করি কল্যাণকর কাজের। মন্দ কাজ পরিত্যাগ করার। মিসকীনদের প্রতি ভালবাসা, মাফ করে দিন আমাকেরহম করুন আমার ওপর। কোনো সম্প্রদায়ের ওপর যখন ফিতনা-মুসীবতের ইচ্ছা করেন তখন আমাকে আপনি ফিতনামুক্ত মৃত্যু দিন। আমি চাই আপনার প্রতি ভালোবাসা। আপনাকে যারা ভালোবাসেন তাদের ভালোবাসা এবং যে সব আমল আমাকে আপনার নিকট করবে সেসব আমলের ভালোবাসা। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন: এ বিষয়টি সত্য তোমরা এটি পড় এবং তা শিখে নাও[7]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেছেন,
«إِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ»
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান ও সম্মানিত আল্লাহকে দেখেছেন[8]
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন,
«إِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، رَأَى رَبَّهُ مَرَّتَيْنِ: مُرَّةً بِبَصَرِهِ، وَمَرَّةً بِفُؤَادِهِ».
“মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে দু’বার দেখেছেন। একবার স্বচক্ষে আরেকবার অন্তর দিয়ে[9]
উল্লিখিত হাদীসসমূহ থেকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে আল্লাহকে দুনিয়াতে দেখেছেন। হাফেয ইবন রজব হাম্বলী রহ. এ বিষয়ে একটি কিতাবও রচনা করেছেন। কিতাবটির নাম:
(اختيار الأولى في شرح حديث اختصام الملأ الأعلى).
এসব আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, নবীগণ আল্লাহকে স্বপ্নে দুনিয়াতে দেখেছেন।
দুনিয়াতে স্বচক্ষে জাগ্রতাবস্থায় আল্লাহকে দেখা
অধিকাংশ ‘আলেমের মতে, দুনিয়াতে স্বচক্ষে জাগ্রতাবস্থায় আল্লাহকে দেখা অসম্ভব। এমনকি নবী রাসূলগণও দেখেন নি। মি‘রাজের রজনীতে রাসূলুল্লাহ‌্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি আল্লাহকে দেখেন নি। তিনি আল্লাহর নূর দেখেছেন। তাছাড়া দাজ্জাল নিজেকে আল্লাহ দাবী করে তার উপর ঈমান আনতে বলবে। কিন্তু একথা সকল মু’মিনই জানেন যে, আল্লাহকে দুনিয়াতে সরাসরি দেখা যায় না। তাই দাজ্জালের কপালে কাফির শব্দ লেখা থাকবে। এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের দলিল নিম্নরূপ:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,]
তিনি (আল্লাহ) দৃষ্টির অধিগম্য ননতবে দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত এবং তিনিই সুক্ষ্মদশী ও সম্যক পরিজ্ঞাত” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১০৩]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন,
মানুষের এমন মর্যাদা নাই যেআল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দত প্রেরণ ব্যতিরেকে যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেনতিনি সর্বোচ্চ ও প্রজ্ঞাময়” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৫১]
যারা আল্লাহকে দুনিয়াতে দেখতে চেয়েছে আল্লাহ তাদেরকে ভর্ৎসনা দিয়ে বলেছেন,
“তারা কি এরই অপেক্ষা করছে যেমেঘের ছায়ায় আল্লাহ ও ফিরিশতাগণ তাদের নিকট আগমন করবেন এবং সব বিষয়ের ফয়সালা করে দেওয়া হবে। আর আল্লাহর নিকটই সব বিষয় প্রত্যাবর্তিত হবে” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১০]
“তারা কি এরই অপেক্ষা করছে যেতাদের নিকট ফিরিশতাগণ হাযির হবে কিংবা তোমার রব উপস্থিত হবে অথবা প্রকাশ পাবে তোমার রবের নিদর্শনসমূহের কিছুযেদিন তোমার রবের নিদর্শনসমূহের কিছু প্রকাশ পাবেসেদিন কোনো ব্যক্তিরই তার ঈমান উপকারে আসবে না। যে পূর্বে ঈমান আনে নি কিংবা সে তার ঈমানে কোনো কল্যাণ অর্জন করে নি। বলতোমরা অপেক্ষা করআমরাও অপেক্ষা করছি” [সূরা: আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫৮]
আল্লাহ তাআলা মূসা আলাইহিস সালামকে বলেছেন,
“আর যখন আমার নির্ধারিত সময়ে মূসা এসে গেল এবং তাঁর রব তার সাথে কথা বললেন। সে বলল, ‘হে আমার রবআপনি আমাকে দেখা দিন,আমি আপনাকে দেখব।’ তিনি বললেনতুমি আমাকে দেখবে না; বরং তুমি পাহাড়ের দিকে তাকাও। অতঃপর তা যদি নিজ স্থানে স্থির থাকে তবে তুমি অচিরেই আমাকে দেখবে। অতঃপর যখন তাঁর রব পাহাড়ের উপর নূর প্রকাশ করলেন তখন তা তাকে চূর্ণ করে দিল এবং মূসা বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেল। অতঃপর যখন তার হুঁশ আসল তখন সে বললআপনি পবিত্র মহানআমি আপনার নিকট তাওবা করলাম এবং আমি মুমিনদের মধ্যে প্রথম” [সূরা: আল-‘আরাফ, আয়াত: ১৪২]
আহলে কিতাবরা আসমান থেকে কিতাব নাযিলের কথা বললে আল্লাহ তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে নবী! তারা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে এর চেয়েও মারাত্মক দাবী করেছিল। আল্লাহ বলেন,
“কিতাবীগণ তোমার নিকট চায় যেআসমান থেকে তুমি তাদের উপর একটি কিতাব নাযিল কর। অথচ তারা মূসার কাছে এর চেয়ে বড় কিছু চেয়েছিলযখন তারা বলেছিল, ‘আমাদেরকে সামনাসামনি আল্লাহকে দেখাও। ফলে তাদেরকে তাদের অন্যায়ের কারণে বজ্র পাকড়াও করেছিল। অতঃপর তারা বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করলতাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণসমূহ আসার পরও। তারপর আমি তা ক্ষমা করে দিয়েছিলাম এবং মূসাকে দিয়েছিলাম সুস্পষ্ট প্রমাণ” [সূরা: আন-নিসা, আয়াত: ১৫৩]
সালিম রহ. বলেনআব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন,
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের উদ্দেশ্যে একটি বক্তৃতা দিলেন। তাতে  আল্লাহ তাআলার যথাযোগ্য প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনার পর দাজ্জালের কথা উল্লেখ করলেন এবং বললেন, আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের ফিৎনা সম্পর্কে সতর্ক করছি যেমন প্রত্যেক নবী তাঁর সম্প্রদায়কে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এমনকি নূহ আলাইহিস সালাম ও তাঁর কাওমকে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তবে এ সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে একটি বিষয় পরিস্কারভাবে বলে দিচ্ছি যা কোন নবী তার সম্প্রদায়কে বলেন নি। তা হল এই যেতোমরা জেনে রাখদাজ্জাল কানা হবে। আল্লাহ তা‘আলা কানা নন। ইবন শিহাব র. বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনক সাহাবী যে দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন সে দিন তিনি বলেছেন, চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে কাফির লেখা থাকবে। যে ব্যক্তি তার কার্যক্রম অপন্দ করবে সে তা পাঠ করতে পারবে অথবা প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তিই তা পাঠ করতে সক্ষম হবে। তিনি এ কথাও বলেছেন যেতোমরা জেনে রাখ যেতোমাদের কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে তার রবকে দেখতে সক্ষম হবে না[10]
যারা দাবী করেন যে, মি‘রাজের রজনীতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে সরাসরি দেখেছেন, তাদের এ দাবীর খণ্ডন করে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেছেন,
মাসরুক রহ. থেকে বর্ণিত যেতিনি বলেনআমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে হেলান দিয়ে বসেছিলাম। তখন তিনি বললেনহে আবু আয়েশা! তিনটি কথা এমনযে এর কোন একটি বললসে আল্লাহ সম্পর্কে ভীষণ অপবাদ দিল। আমি জিজ্ঞেস করলামসেগুলো কতিনি বললেনযে এ কথা বলে যেমুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার  রবকে  দেখেছেনসে আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়। আমি তো হেলান অবস্থায় ছিলামএবার সোজা হয়ে বসলাম। বললামহে উম্মুল মুমিনীনথামুন। আমাকে সময় দিনব্যস্ত হবেন না। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কি বলেন নি: তিনি (রাসূল) তো তাঁকে (আল্লাহকে) স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছেন” [সূরা আত-তাকওয়ীর, আয়াত: ২৩] অন্যত্রে নিশ্চয়ই তিনিতাকে আরেকবার দেখেছিলেন” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ১৩]  আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেনআমিই এ উম্মতের প্রথম ব্যক্তিযে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, তিনি তো ছিলেন জিবরীল আলাইহিস সালামকেবল এ দুবার-ই আমি তাকে তার আসল আকৃতিতে দেখেছি। আমি তাকে আসমান থেকে অবতরণ করতে দেখেছি। তাঁর বিরাট দেহ ঢেকে ফেলেছিল আসমান ও জমিনের মধ্যবতী সবটুকু স্থান। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আরও বলেনতুমি কি শোন নিআল্লাহ তাআলা বলেছেন,“তিনি (আল্লাহ) দৃষ্টির অধিগম্য ননতবে দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত” [সূরা আল-‘আনআম, আয়াত: ১০৩] রূপ তুমি কি শোন নি আল্লাহ  তাআলা বলেছেনমানুষের এমন মর্যাদা নই যেআল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেনতিনি সর্বোচ্চ ওপ্রজ্ঞাময়” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৫১আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনআর ঐ ব্যক্তিও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়যে এমন কথা বলে যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কিতাবের কোনো কথা গোপন রেখেছেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “হে রাসূল!আপনার রবের কাছ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার করুযদি তা না করেন তবে আপনি তার বার্তা প্রচারই করলেন না” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৬৭তিনি (আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) আরো বলেনযে ব্যক্তি এ কথা বলে যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ওহী ব্যতীত কাল ক হবে তা অবহিত করতে পারেনসেও আল্লাহর উপর ভীষ অপবাদ দেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, “বল,আসমান ও জমিনে আল্লাহ ব্যতীত গায়েব সম্পর্কে কেউ জানে না।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৬৫][11]
মাসরুক রহ. বলেন,
আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললামরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজ রজনীতে যদি আল্লাহর দর্শন না পেয়ে থাকেন,তাহলে আল্লাহর এ বলার অর্থ কি দাঁড়াবেএরপর তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর নিকটবর্তী হলেন এবং আরোনিকটবর্তীফলে তাদের মধ্যে ধনুকের ব্যবধান রইল বা তারও কম। তখন আল্লাহ তার বান্দার প্রতি যা ওহী করবার তা ওহী করলেন।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৮-১০আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেনতিনি তো ছিলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে (সাধারণ) পুরুষের আকৃতিতে আসতেন। কিন্তু তিনি এবার (আয়াতে উল্লিখিত সময়) নিজস্ব আকৃতিতেই এসেছিলেন। তাঁর দেহ আকাশের সীমা ঢেকে ফেলেছিল[12]
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মি‘রাজের রাতে আল্লাহকে সরাসরি দেখার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেছেন, তিনি আল্লাহর নূর অবলোকন করেছেন। যেমন নিম্নোক্ত হাদীস তার প্রমাণ:
আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
 “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিআপনি কি আপনার 
রবকে দেখেছেনতিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবললেনতিনি (আল্লাহ) নূরআমি কি করে তা দৃষ্টির অধিগম্য করব? (কীভাবে তাকে দেখব?)[13]
আব্দুল্লাহ ইবন শাকীক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে  বললামযদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাৎ পেতামতবে অবশ্যই তাঁকে একটি কথা জিজ্ঞেস করতাম। আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন জিজ্ঞেস করতেন। তিনি বলেনআমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম যেআপনি কি আপনাররবকে দেখেছেন? আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনএ কথা তো আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলামতিনি বলেছেন, আমি নূর দেখেছি[14]
        ইমাম বুখারী রহ.ও সহীহ বুখারীতে এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীস বর্ণনা করে প্রমাণ করেছেন যে, দুনিয়াতে সরাসরি আল্লাহর দীদার অসম্ভব।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেন,
«مَنْ زَعَمَ أَنَّ مُحَمَّدًا رَأَى رَبَّهُ فَقَدْ أَعْظَمَ، وَلَكِنْ قَدْ رَأَى جِبْرِيلَ فِي صُورَتِهِ وَخَلْقُهُ سَادٌّ مَا بَيْنَ الأُفُقِ».
যে ব্যক্তি মনে করবে যেমুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রবকে দেখেছেনসে ব্যক্তি বড় ভুল করবে; বরং তিনি জিবরীল আলাইহিস সালামকে তাঁর আসল আকৃতি এবং অবয়ব দেখেছেন। তিনি আকাশের দিগন্ত জুড়ে অবস্থান করছিলেন[15]
মাসরূক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
 আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞেস করলামআম্মা! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর রবকে দেখেছিলেনতিনি বললেন,তোমার কথায় আমার গায়ের পশম কাটা দিয়ে খাড়া হয়ে গেছে। তিনটি কথা সম্পর্কে তুমি কি অবগত নওযে তোমাকে এ তিনটি কথা বলবে সে মিথ্যা বলবে। যদি কেউ তোমাকে বলে যেমুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রবকে দেখেছেন, সে মিথ্যাবাদী। তারপর তিনি পাঠ করলেন“তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নহেনকিন্তু দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শীসম্যক পরিজ্ঞাত” [সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১০৩] মানুষের এমন মর্যাদা নেই যেআল্লাহ তার সাথে কথা বলবেনওহীর মাধ্যম ছাড়া অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে [সূরা আশ-শরা,আয়াত: ৫১] আর যে ব্যক্তি তোমাকে বলবে যেআগামীকাল ক হবে সে তা জানেতাহলে সে মিথ্যাবাদী। তারপর তিনি তিলওয়াত করলেন, “কেউ জানে না আগামীকাল সে ক অর্জন করবে। [সূরা লকমান, আয়াত: ৩৪] আর তোমাকে যে বলবে যেমুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কথা গোপন রেখেছেনতাহলেও সে মিথ্যাবাদী। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “হে রাসূল! তোমার রবের কাছ থেকে তোমারপ্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছেতা প্রচার কর। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৬৭]  হ্যাঁতবে রাসূল  জিবরীল  আলাইহিস  সালামকে তাঁর নিজস্ব আকৃতিতে দুবার দেখেছেন[16]
তাছাড়া আখেরাতে মু’মিনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো আল্লাহর দর্শন। আর দুনিয়া হলো পরীক্ষার স্থান। এখানে মু’মিন ও কাফির সবার বসবাস। অতএব এটা আল্লাহর দীদারের স্থান নয়। আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দার জন্য এটা বিশেষ নি‘আমত হিসেবে গচ্ছিত করে রেখেছেন। তবে মানুষ আল্লাহকে দেখার ব্যাপারে যেসব দাবী করে থাকে তা শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. এর মতে মানুষের ‘আমল অনুসারে হয়ে থাকে। মানুষ অনেক সময় ভাবে যে, সে আল্লাহকে দেখেছে, প্রকৃতপক্ষে সে দেখে নি। অনেক সময় শয়তান তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে কাল্পনিকভাবে এসব মনে করিয়ে দেয়। যেমন, একজন দাবী করল যে, “সে আব্দুল কাদের জিলানী রহ. কে পানির উপর একটি আসনে দেখেছে। আর সে তাকে বলল, আমি তোমার রব। তখন সে ব্যক্তি বলল, দূর হও হে আল্লাহর দুশমন, তুমি আমার রব হতে পার না।” কেননা সে এমন সব আদেশ দিচ্ছে যা আল্লাহর শানে অনুপযোগী। অতএব, দুনিয়াতে স্বপ্নে আল্লাহর দীদার সম্ভব। তবে স্বপ্নে যদি শরি‘আত  পরিপন্থী কোনো আদেশ নিষেধ দিয়ে থাকে যেমন বলল, তোমার আর সালাত আদায় করতে হবে না, যাকাত দিতে হবে না, হজ করতে হবে না ইত্যাদি, তাহলে বুঝতে হবে এটা শয়তান। এ ধরণের আদেশ মহান আল্লাহ দিতে পারেন না। তবে আল্লাহ কারো সদৃশ নন।
দুনিয়াতে আল্লাহর দীদার সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতের ‘আলেমদের মতামত:
 ১- ইমাম বায়হাকী রহ. নিম্নোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন,  ইবন  আব্বাস  রাদিয়াল্লাহু  ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“আমি আমার রবকে দাড়িবিহীন কোকড়ানো চুল বিশিষ্ট সবুজ কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখেছি”।[17]
 তিনি বলেন, “আলেমগণ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে আল্লাহকে এভাবে দেখেছেন।” তিনি এ কথার স্বপক্ষে নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দলিল পেশ করেন:
 উবাই ইবন কা’ব এর স্ত্রী উম্মে তুফাইল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,  
«أَنَّهُ رَأَى رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ، شَابًّا مُوَفَّرًا رِجْلَاهُ فِي الْخُضْرَةِ، عَلَيْهِ نَعْلَانِ مِنْ ذَهَبٍ، عَلَى وَجْهِهِ فِرَاشٌ مِنْ ذَهَبٍ».
“তিনি স্বপ্নে তাঁর রবকে পরিপূর্ণ উত্তম একজন যুবকের আকৃতিতে চুল বিশিষ্ট দেখেছেন। তাঁর পদপযুগল সবুজ কাপড়ে আবৃত ছিল। এতে সোনার জুতা পরিহিত ছিল। তাঁর চেহারায় সোনার চাদর ছিল।”[18]
অতঃপর তিনি বলেন, “মানুষের স্বপ্নে বিভ্রম ও ভুলও কিছু দেখতে পারে। দর্শনকারী সৎ ও অসৎ ভেদে এর ব্যাখ্যা হতে পারে[19]
২- ইমাম বাগভী রহ. বলেন, “স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা জায়েয। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন,
«إني نعست فرأيت ربي».
“আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় আমার রবকে দেখতে পেলাম
স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা তার কুদরতের প্রকাশ ঘটা, তার ন্যায়বিচার, বিপদাপদ দূর বা ভালো কিছু অর্জন ইত্যাদি হতে পারে। যেমন সে যদি দেখে যে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ওয়াদা করেছেন বা ক্ষমা করেছেন বা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। যেহেতু আল্লাহর কথা সত্য, তার ওয়াদাও সত্য। আবার যদি দেখে যে, আল্লাহ তার দিকে তাকিয়েছেন, তবে বুঝতে হবে যে, তিনি তার উপর রহমত বর্ষণ করবেন। আর যদি তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, তবে তা বান্দাহর জন্য গুনাহ থেকে সতর্কতা। কেননা আল্লাহ বলেছেন,
﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَشۡتَرُونَ بِعَهۡدِ ٱللَّهِ وَأَيۡمَٰنِهِمۡ ثَمَنٗا قَلِيلًا أُوْلَٰٓئِكَ لَا خَلَٰقَ لَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ ٱللَّهُ وَلَا يَنظُرُ إِلَيۡهِمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمۡ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٧٧﴾ [ال عمران: ٧٧
“নিশ্চয় যারা আল্লাহর অঙ্গীকার ও তাদের শপথের বিনিময়ে খরিদ করে তুচ্ছ মূল্যপরকালে এদের জন্য কোনো অংশ নেই। আর আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং কিয়ামতের দিন তাদের দিকে তাকাবেন না আর তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্যই রয়েছে মর্মন্তুদ ‘আযাব” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭৭]
আর যদি তিনি স্বপ্নে তাকে দুনিয়ার কোনো সম্পদ দেন তবে বুঝতে হবে এটা তার জন্য বালা-মুসিবত ও পরীক্ষা। শারীরিক অসুস্থতা দেখলে রোগ ব্যাধি হবে। ধৈর্যধারণ করলে বিনিময়ে অনেক প্রতিদান পাবে। বান্দা এ ব্যাপারে নানা পেরেশানীতে থাকবে, অবশেষে আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত হবে এবং শেষ পরিণতি উত্তম হবে।”[20]
৩- শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন.
“সকল মুসলিম ‘আলেম এ কথায় একমত যে, দুনিয়াতে স্বচক্ষে কোনো মু’মিনই আল্লাহকে দেখতে পাবে না। কিছু আলেম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন, তিনি কি আল্লাহকে দেখেছেন না দেখেন নি? তবে জমহুর আলেমের মতে, তিনি আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখেন নি। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম, সাহাবী ও তাবেয়ী থেকে অনেক সহীহ হাদীস ও আসার বর্ণিত আছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. থেকে একথা সাব্যস্ত নেই যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখেছেন; বরং তাদের থেকে সাধারণ দেখা বা অন্তরে দেখার কথা উল্লেখ আছে। মি‘রাজের হাদীসসমূহে একথা সাব্যস্ত নেই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম সরাসরি স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখেছেন। ইমাম তিরমিযী বর্ণিত হাদীস,
«أَتَانِي الْبَارِحَةَ رَبِّي فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ».
“গতরাতে আমার রব সুন্দরতম আকৃতিতে আমার কাছে এসেছেন”। [21]
হাদীসটি মদীনায় স্বপ্নে দেখার কথা বলা হয়েছে। এটা উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা। তাছাড়াও উম্মে তুফাইল, ইবন আব্বাস ও অন্যান্যদের বর্ণিত আল্লাহকে দেখা সম্পর্কিত হাদীস মক্কায় মি‘রাজের সময়কার বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যা।[22]
 ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. আরো বলেন,
 “আল্লাহকে দেখা না দেখার ব্যাপারে মানুষ তিনভাগে বিভক্ত। সাহাবী, তাবেয়ী ও মুসলিম ইমামগণ মনে করেন যে, মু’মিনরা আখেরাতে আল্লাহকে সরাসরি স্বচক্ষে দেখতে পাবে, দুনিয়াতে সরাসরি দেখতে পাবে না। তবে স্বপ্নে মানুষের অবস্থাভেদে ...এ রকম কিছু ঘটে থাকে কোনো কোনো মানুষের অন্তরের ... শক্তি বেশি, ফলে সে ধারণা করে, সে স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখেছেন। প্রকৃতপক্ষে এটা ভুল ধারণা। বান্দাহর ঈমান ও অনুরূপ জিনিস অবলোকন করার জ্ঞানের স্তর হিসেবে অন্তরের মুশাহাদারও পার্থক্য হয়। দ্বিতীয় মত হলো, জাহমিয়্যাহরা মনে করেন, আল্লাহকে দুনিয়া বা আখেরাতে কোনো ভাবেই দেখা যাবে না। তৃতীয় দল মনে করেন যে, আল্লাহকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেই দেখা যায়। এরা হলো জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায়ের হুলুল[23] বিশ্বাসে বিশ্বাসীগণ। এদের উভয় দলই বাড়াবাড়িতে রয়েছে। একদল মনে করেন, আল্লাহকে দুনিয়া ও আখেরাতে কখনও দেখা যাবে না। আবার আরেকদল মনে করেন, আল্লাহকে উভয় জগতেই দেখা যাবে[24]
৪- ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, স্বপ্নবিশারদগণ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা জায়েয বলেছেন। তবে সে যে রূপেই দেখুক তা আল্লাহর আসল রূপ নয়, কেননা আল্লাহর আকার আকৃতি মানুষের ধারণার বাইরে। স্বপ্নে আল্লাহর জাত কখনই দেখা সম্ভব নয়।[25]
৫- ইমাম ইবন জাওযী রহ. বলেন, কেউ যদি বলে আল্লাহকে দেখা সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তাদেরকে বলব, আল্লাহকে তার হুবহু আকৃতিতে দেখা যায় না; বরং কোনো একটা উদাহরণস্বরূপ আকৃতিতে দেখা যায়। যাতে মানুষ বুঝতে পারে। যেমন, আল্লাহ কুরআনের উদাহরণ দিয়েছেন আসমান থেকে পানি বর্ষণের সাথে। এ পানি দ্বারা যেমন সবাই উপকৃত হয় তেমনি কুরআন দ্বারাও সবাই উপকৃত হয়। অতএব এর দ্বারা স্পষ্ট হলো যে, দুনিয়াতে আল্লাহকে তার নিজস্ব আকৃতিতে দেখা যাবে না। আল্লাহ এসব আকৃতি থেকে পাক-পবিত্র। মানুষ তার আসল আকৃতি কল্পনা করতে পারে না।[26]
৬- শাইখ মুহাম্মদ সালিহ আল-উসাইমীন রহ.-কে এক অনুষ্ঠানে জিজ্ঞেস করা হলো, কোনো মু’মিন আল্লাহকে দেখেছে বললে একথা কি সত্য? তিনি উত্তরে বলেছেন, দুনিয়াতে স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা যায় আর আখেরাতে যেহেতু ঘুম নেই, তাই সেখানে জাগ্রত অবস্থাতেই সরাসরি স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখবে। আসমানে ফিরিশতাদের আলোচনা সভার হাদীস থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। নবী ছাড়া অন্যদের দেখা সম্পর্কে আমার জানা নেই। তাদের ক্ষেত্রে বাস্তবে সংঘটিত হয়েছে কি হয় নি তা আমার জানা নেই। তবে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ.-এর ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে যে, তিনি স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, মানুষ স্বপ্নে আল্লাহকে দেখতে পারে, তাদের দীনদারীতা অনুসারে উদাহরণস্বরূপ কোনো একটা আকৃতিতে দেখে। অর্থাৎ সে একটা ভালো স্বপ্নে আল্লাহকে দেখে।[27] 
  এভাবে অনেক আলেমই মত ব্যক্ত করেছেন যে, দুনিয়াতে স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা সম্ভব। সরাসরি স্বচক্ষে জাগ্রত অবস্থায় কোনো মানুষই আল্লাহকে দেখেন নি। এমনকি নবী রাসূলরাও দেখেন নি। তবে আখিরাতে আল্লাহকে দেখা যাবে। এটা শুধু মু’মিনদের জন্য বিশেষ নি‘আমত।
মু’মিনরা জান্নাতে আল্লাহকে দেখতে পাবে
 আল্লাহর দিদার একমাত্র মু’মিন বান্দাহর জন্যই কাফিররা এ নি‘আমত থেকে বঞ্চিত হবে। আখেরাতে আল্লাহর সাক্ষাতের ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য আয়াত ও বাণী রয়েছে। এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সর্বজন স্বীকৃত মত। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, যারা আখিরাতে আল্লাহর দেখাকে অস্বীকার করবে তারা কাফির।[28] 
আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
﴿وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣  [القيامة: ٢٢،  ٢٣
“সেদিন কতক মুখমণ্ডল হবে হাস্যোজ্জ্বল। তাদের রবের প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপকারী” [সূরা: আল-কিয়ামাহ, আয়াত: ২২-২৩]
﴿لِّلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ ٱلۡحُسۡنَىٰ وَزِيَادَةٞۖ وَلَا يَرۡهَقُ وُجُوهَهُمۡ قَتَرٞوَلَا ذِلَّةٌۚ أُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلۡجَنَّةِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٢٦  [يونس : ٢٦]
“যারা ভালো কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত) এবং আরও বেশি। আর ধূলোমলিনতা ও লাঞ্ছনা তাদের চেহারাগুলোকে আচ্ছন্ন করবে না। তারাই জান্নাতবাসী। তারা তাতে স্থায়ী হবে” [সূরা: ইউনুস, আয়াত: ২৬] এখানে যিয়াদাহ বলতে আল্লাহর দীদারকে বুঝানো হয়েছে।
কোনো কোনো আয়াতে আল্লাহর দীদারকে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে,
﴿قُلۡ إِنَّمَآ أَنَا۠ بَشَرٞ مِّثۡلُكُمۡ يُوحَىٰٓ إِلَيَّ أَنَّمَآ إِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠﴾ [الكهف: ١١٠
“বলআমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যেতোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ। সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করেসে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে” [সূরা: আল-কাহফ, আয়াত: ১১০]
﴿لَهُم مَّا يَشَآءُونَ فِيهَا وَلَدَيۡنَا مَزِيدٞ ٣٥﴾ [ق: ٣٥
“তারা যা চাইবেসেখানে তাদের জন্য তাই থাকবে এবং আমার কাছে রয়েছে আরও অধিক” [সূরা: কাফ: ৩৫]
আখিরাতে যদি মু’মিনরা আল্লাহকে দেখতে না পায়, তবে আল্লাহ কাফিরদেরকে এ নি‘আমত থেকে বঞ্চিত করার কী অর্থ? কেননা কাফিররা আল্লাহকে দেখতে পাবে না। আল্লাহ বলেছেন, 
“কখনো নয়নিশ্চয় সেদিন তারা তাদের রব থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে” [সূরা আল-মুতাফফিফীন, আয়াত: ১৫]
আবদুল্লাহ ইবন কায়স রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
 বলেছেন,
দুটি জান্নাত এমন যেএগুলোর পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী রুপার তৈরি। অন্য দুটি জান্নাত এমনযেগুলোর পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী স্বর্ণের তৈরি।আদন” নামক জান্নাতে জান্নাতিগণ আল্লাহর দীদার লাভ করবেন। এ সময় তাঁদের ও আল্লাহর মাঝে তাঁর মহিমার চাদর ব্যতীত আর কোনঅন্তরায় থাকবে না[29]
 সুহায়ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
জান্নাতিগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বলবেন, তোমরা ক চাও? আমি আরো অনুগ্রহ বাড়িয়ে দি। তারা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারা আলোকোজ্জ্বল করে দেন নিআমাদের জান্নাতে দাখিল করেন নি এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত দেন নি?রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনএরপর আল্লাহ তাআলা আবরণ তুলে নিবেন। আল্লাহর দীদার অপেক্ষা অতি প্রিয় কোন বস্তুতাদের দেওয়া হয় নি[30]
 ‘আতা ইবন ইয়াযীদ আল-লায়সী থেকে বর্ণিত। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে অবহিত করেছেন যে,
কিছু সংখ্যক লোক রাসূলল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললোহে আল্লাহর রাসূলকিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখতে পাবোরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পূর্ণিমার রাতের চাঁদ দেখতে তোমাদের কি কোনোরূপ অসুবিধা হয়তারা বললোনা হে আল্লাহর রাসূল। তিনি আবার বললেনমেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমাদের কোনোরূপ অসুবিধা হয়সবাই বললোনা। রাসূলুল্লাহ‌্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ঐরূপ স্পষ্টভাবেই আল্লাহকে দেখতে পাবে[31]
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় লোকেরা জিজ্ঞেস করলোহে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাবোরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তিনি আরো বললেন, ঠিক দুপুরে মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোনো অসুবিধা কিংবা কষ্ট হয়? তারা বললোনাহে আল্লার রাসূল! তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলাকে দেখতে তোমাদের ততটুকু কষ্ট হবেযতটুকু ঐ দুটির যে কোনো একটি দেখতে কষ্ট হয়[32]
উক্ত হাদীসসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আখেরাতে মু’মিনরা আল্লাহকে দেখতে পাবে। তবে জাহমিয়্যাহ, মু‘তাযিলা, ইবাদ্বিয়্যাহ (খারেজী সম্প্রদায়ের একটি দল) ইত্যাদি বাতিল সম্প্রদায়রা পরকালেও আল্লাহকে দেখাকে অস্বীকার করেন। তাদের মতে আল্লাহর কোনো রূপ বা আকৃতি নেই, তার কোনো দিক নেই, আকার নেই, তিনি দুনিয়াতেও নেই আবার দুনিয়ার বাইরেও নেই, উপর নিচ, ডান বাম ইত্যাদি কোনো দিকই নেই। তাই তারা আল্লাহর দর্শন অস্বীকার করেন।
দলীলের উৎসঃ
 [1] বায়ানু তালবিসিল জাহমিয়্যাহ ফি বিদ‘ঈহিমুল কালামিয়্যাহ, শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ, মাজমা’ আল-মালিক ফাহাদ লিতবা‘আতিল মাসহাফ, প্রথম সংস্করণ ১৪২৬ হি. পৃষ্ঠা: ১/৩২৬। 
[2] রু’ইয়াতুল্লাহি, দারাকুতনী, হাদীস নং ২৮৬, ইমাম আবু যুর‘আহ রহ. বলেন, হাদিসের সনদের সব রাবী সুপরিচিত, মদীনায় তাদের প্রসিদ্ধ বংশ। মারওয়ান ইবন উসমান হলেন, মারওয়ান ইবন উসমান ইবন আবু সাঈদ মু‘আল্লা আল-আনসারী।  আর ‘উমারাহ হলেন, ‘উমারাহ ইবন ‘আমের ইবন ‘উমার ইবন হাযম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী। ‘আমর ইবন হারিস ও সাঈদ ইবন আবু হিলাল সম্পর্কে কেউ কোনো ধরণের দ্বিধা-সন্দেহ করে নি।
[3] রু’ইয়াতুল্লাহি, দারাকুতনী, হাদীস নং ২৮৭, ইমাম হাইসামী রহ. হাদীসটিকে মাজমাউয যাওয়ায়েদে (৭/১৭৯) মুনকার বলেছেন, তিনি বলেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَقَالَ ابْنُ حِبَّانَ: إِنَّهُ حَدِيثٌ مُنْكَرٌ لِأَنَّ عُمَارَةَ بْنَ عَامِرِ بْنِ حَزْمٍ الْأَنْصَارِيَّ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ أُمِّ الطُّفَيْلِ، ذَكَرَهُ فِي تَرْجَمَةِ عُمَارَةَ فِي الثِّقَاتِ.
[4] রু’ইয়াতুল্লাহি, দারাকুতনী, হাদীস নং ২২৭, পৃ. ৩০৯। 
[5] তিরমিযী, হাদীস নং ৩২৩৩, তিনি বলেছেন, রাবীগণ এই হাদীসটির সনদে আবু কিলাবা ও ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মাঝে আরেক ব্যক্তির উল্লেখ করেছেন। কাতাদা (র) এটিকে আবূ কিলাবা-খালিদ ইবন লাজলাজ-ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সনদে রিওয়ায়ত করেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[6] তিরমিযী, হাদীস নং ৩২৩৪, তিনি হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[7] তিরমিযী, হাদীস নং ৩২৩৫, তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। সুনান দারামি, হাদীস নং ২১৯৫। আল্লামা হুসাইন সুলাইম বলেন, হাদিসের সনদটি সহীহ, যদি আব্দুর রহমান ইবন ‘আয়েশ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাহাবী হওয়াটা নিশ্চিত হয়।  আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[8] সুনান কুবরা লিন-নাসায়ী, হাদীস নং ১১৪৭৩,
[9] মু’জামুল আওসাত, হাদীস নং ৫৭৬১, ইমাম তবরানী রহ. বলেন, হাদিসটি মুজাহিদ থেকে তার পুত্র ইসমাঈল ছাড়া কেউ বর্ণনা করেন নি। ইমাম হাইসামী রহ. মাজমাউজ জাওয়ায়েদে (১/৭৯) বলেন, হাদীসটি ইমাম তাবরানী বর্ণনা করেছেন এবং এর সব রাবী সহীহ।
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ، خَلَا جَهْوَرِ بْنِ مَنْصُورٍ الْكُوفِيِّ، وَجَهْوَرُ بْنُ مَنْصُورٍ ذَكَرَهُ ابْنُ حِبَّانَ فِي الثِّقَاتِ.
[10] মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯।
[11] মুসলিম, হাদীস নং ১৭৭।
[12] মুসলিম, হাদীস নং ১৭৭।
[13] মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮।
[14] মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮।
[15] বুখারী, হাদীস নং ৩২৩৪।
[16] বুখারী, হাদীস নং ৪৮৫৫।
[17] আসমা ওয়াসসিফাত লিলবাইহাকী, মাকতাবাতুস সুয়াদী, জিদ্দা, সৌদি আরব, ২/৩৩৬।
[18] রু’ইয়াতুল্লাহি, দারাকুতনী, হাদীস নং ২৮৭, ইমাম হাইসামী রহ. হাদীসটিকে মাজমাউজ জাওয়ায়েদে (৭/১৭৯) মুনকার বলেছেন, তিনি বলেন,
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَقَالَ ابْنُ حِبَّانَ: إِنَّهُ حَدِيثٌ مُنْكَرٌ لِأَنَّ عُمَارَةَ بْنَ عَامِرِ بْنِ حَزْمٍ الْأَنْصَارِيَّ لَمْ يَسْمَعْ مِنْ أُمِّ الطُّفَيْلِ، ذَكَرَهُ فِي تَرْجَمَةِ عُمَارَةَ فِي الثِّقَاتِ.
[19] আসমা ওয়াসসিফাত লিলবাইহাকী, ২/৩৬৮।
[20] শরহে সুন্নাহ লিলবাগভী, আল-মাকতাব আল-ইসলামি, বৈরূত, ২য় সংস্করণ ১৯৮৩, খ. ১২, পৃ. ২২৭-২২৮।
[21] তিরমিযী, হাদীস নং ৩২৩৪, তিনি হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[22] মাজমু‘উল ফাতাওয়া, ২/৩৩৫-৩৩৬।
[23] যারা মনে করেস্রষ্টা তার সৃষ্টির ভিতরে প্রবেশ করেন। নাউযুবিল্লাহ। [সম্পাদক]
[24] মাজমু‘উল ফাতাওয়া, ২/৩৩৬-৩৩৭।
[25] ফাতহুল বারী, সংক্ষেপিত, ১২/৩৮৮।
[26] সাইদুল খাতির, ইবনুল জাওযী, পৃ. ৪৪২। 
[27] আল-লিকাউল মাফতুহ, ৩০/১৭
[28] মাজমু‘উল ফাতাওয়া, ৬/৪৮৬।
[29] মুসলিম, হাদীস নং ১৮০।
[30] মুসলিম, হাদীস নং ১৮১।
[31] মুসলিম, হাদীস নং ১৮২।
[32] মুসলিম, হাদীস নং ১৮৩।
(সমাপ্ত)

কোরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক আরো বিষয় জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ
৫। তাওবা ও ইস্তেগফারে রিজিক বৃদ্ধি পায়, অভাব-অনটন দূর হয়: (ইহা পরীক্ষিত):

৫৩। আল্লাহ রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কতিপয় ভ্রান্ত আক্বীদার দ্বন্দ্ব নিরসনঃ (আল কোরআন সহিহ হাদিস ভিত্তিক)


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
 “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
« مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا »
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী ৩৪৬১)
হাদিস সম্ভার,  হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮
লেখক সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচিালক-পিএমএমআরসি, গুলশান-ঢাকা)


No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...