Search This Blog

Thursday, March 26, 2020

সালাত সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ ১৭০টি প্রশ্নোত্তর


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম 

সালাত সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ ১৭০টি প্রশ্নোত্তর


(ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম থেকে)
মূল: শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.)
অনুবাদক: মুহাঃ আব্দুল্লাহ আল-কাফী ও আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী
 প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ (১) ইসলামে ছালাতের বিধান কি? কার উপর ছালাত ফরয?
উত্তরঃ ছালাত ইসলামের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রুকন; বরং এটা কালেমায়ে শাহাদাতের পর দ্বিতীয় রুকন। এটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা সংঘটিত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটা ইসলামের মূল খুঁটি। যেমনটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “ইসলামের মূল খুঁটি হচ্ছে, ছালাত।”
আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উপর ছালাত ফরয করেন এমন উঁচু স্থানে যেখানে মানুষের পক্ষে পৌঁছা অসম্ভব। কোন মাধ্যম ছাড়াই রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ একটি রাত মে’রাজের রাতে আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁকে সপ্তাকাশের উপর আরশে নিয়ে এই ছালাত ফরয করেন। প্রথমে রাত-দিনে ছালাত পঞ্চাশ ওয়াক্ত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আল্লাহ্‌ তা’আলা বান্দাদের প্রতি দয়া করে এর সংখ্যা কমিয়ে নির্ধারণ করেন পাঁচ ওয়াক্ত। আর প্রতিদান ঘোষণা করেন পঞ্চাশ ওয়াক্তের বরাবর। এ থেকে প্রমাণিত হয় ছালাত কত গুরুত্বপূর্ণ। ছালাতকে আল্লাহ্‌ কত ভালাবসেন। সুতরাং মানুষের জীবনের সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ সময় এই ক্ষেত্রে ব্যয় করা অত্যন্ত জরুরী। ছালাত ফরয হওয়ার ব্যাপারে দলীল হচ্ছে: কুরআন, সুন্নাহ্‌ ও মুসলমানদের এজমা বা ঐকমত্য।
কুরআন থেকে দলীলঃ আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ
অর্থঃ “যখন তোমরা নিরাপদ হও তখন নামায প্রতিষ্ঠা কর; নিশ্চয় নামায মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা ফরয করা হয়েছে। (সূরা নিসা: ১০৩)
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মু‘আয বিন জাবাল (রা:)কে ইয়ামান প্রেরণ করেন, তখন তাকে বলেনঃ
 “তুমি তাদেরকে শিক্ষা দিবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ প্রতিদিন (দিনে-রাতে) তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন।”
ছালাত ফরয হওয়ার উপর সমস্ত মুসলমান ঐকমত্য হয়েছে। এ জন্য উলামাগণ (রহ:) বলেন, কোন মানুষ যদি পাঁচ ওয়াক্ত বা কোন এক ওয়াক্ত ছালাত ফরয হওয়াকে অস্বীকার করে, তবে সে কাফের মুরতাদ ইসলাম থেকে বহিস্কৃত। তার রক্ত ও সম্পদ হালাল। কিন্তু যদি সে তওবা করে তার কথা ভিন্ন। অবশ্য উক্ত ব্যক্তি যদি নতুন মুসলমান হয়- ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে এবং অনুরূপ কথা বলে তবে তার ওযর গ্রহণযোগ্য হবে। তাকে উক্ত বিষয়ে জ্ঞান শিক্ষা দিতে হবে। তারপরও যদি সে ছালাত ফরয হওয়ার বিষয়টিকে অমান্য করে তবে সেও কাফের বলে গণ্য হবে।
নিম্নলিখিত প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ছালাত ফরযঃ মুসলিম, বালেগ, আকেল, নারী বা পুরুষ।
মুসলিমের বিপরীত হচ্ছে কাফের। কাফেরের উপর ছালাত ফরয নয়। অর্থাৎ- কাফের অবস্থায় তার জন্য ছালাত আদায় করা আবশ্যক নয়। ইসলাম গ্রহণ করলেও আগের ছালাত ক্বাযা আদায় করতে হবে না। কিন্তু এ কারণে ক্বিয়ামত দিবসে তাকে শাস্তি দেয়া হবে। আল্লাহ্‌ বলেন,
“কিন্তু ডানদিকস্তরা, তারা থাকবে জান্নাতে এবং পরস্পরে অপরাধীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। বলবে, তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করেছে? তারা বলবে, আমরা নামায পড়তাম না, অভাবগ্রস্তকে আহার্য দিতাম না, আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম। আর আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম।” (সূরা মুদ্দাস্‌সির- ৩৯-৪৬) ‘আমরা নামায পড়তাম না’ কথা থেকে বুঝা যায়, তারা কাফের ও ক্বিয়ামত দিবসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা সত্বেও ছালাত পরিত্যাগ করার কারণে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে।
প্রাপ্ত বয়স্কঃ যার মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কোন একটি চিহ্ন প্রকাশ পাবে তাকেই বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক বলা হবে। উক্ত চিহ্ন পুরুষের ক্ষেত্রে তিনটি আর নারীর ক্ষেত্রে চারটি।
ক) পনর বছর পূর্ণ হওয়া।
খ) উত্তেজনার সাথে নিদ্রা বা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাত হওয়া।
গ) নাভীমূল গজানো। অর্থাৎ- লজ্জাস্থানের আশে-পাশে শক্ত লোম দেখা দেয়া। এ তিনটি চিহ্ন নারী পুরুষ সবার ক্ষেত্রে প্রজোয্য। নারীর ক্ষেত্রে চতুর্থ চিহ্নটি হচ্ছে, হায়েয বা ঋতুস্রাব হওয়া। কেননা তা বালেগ হওয়ার আলামত।
আকেল বা বুদ্ধিমান হচ্ছে বিবেকহীন পাগলের বিপরীত শব্দ। কোন নারী বা পুরুষ যদি অতি বয়স্ক হওয়ার কারণে হিতাহীত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, তবে সেও এ শ্রেণীর অন্তর্গত হবে। এ অবস্থায় বিবেকহীন হওয়ার কারণে তার উপর ছালাত ফরয হবে না।
ঋতুস্রাব বা নেফাস হলে ছালাত ওয়াজিব নয়। কেননা নবি সাঃ বলেন, “নারী কি এমন নয় যে, সে ঋতুবতী হলে নামায পড়বে না, রোযা রাখবে না?”
প্রশ্নঃ (২) বেহুঁশ এবং স্মৃতি শক্তিহীন ব্যক্তির জন্য শরীয়তের বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করা কি আবশ্যক?
উত্তরঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা মানুষের উপর আবশ্যক করেছেন যাবতীয় ইবাদত বাস্তবায়ন করা- যদি তার মধ্যে সে যোগ্যতা ও ক্ষমতা থাকে। যেমন সে বিবেক সম্পন্ন হবে। সবকিছু বুঝতে পারবে। কিন্তু যে লোক বিবেকশুণ্য, সে শরীয়তের বিধি-নিষেধ মেনে চলতে বাধ্য নয়। এ কারণে পাগল, শিশু বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক-বালিকার উপর কোন বাধ্যবাধকতাও নেই। এটা আল্লাহ্‌র বিশেষ রহমত। অনুরূপ হচ্ছে আধাপাগল- যার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে কিন্তু পুরোপুরি পাগল হয়নি এবং অতি বয়স্ক হওয়ার কারণে হিতাহীত জ্ঞানশুণ্য ব্যক্তির উপরও ছালাত-ছিয়াম আবশ্যক নয়। কেননা সে তো স্মৃতি শক্তিহীন মানুষ। সে ঐ শিশুর মত যার মধ্যে ভাল-মন্দ পার্থক্য করার ক্ষমতা নেই। সুতরাং সমস্ত বিধি-বিধান তার উপর থেকে রহিত, কোন কিছুই তার উপর আবশ্যক নয়।
তবে সম্পদের যাকাত সম্পর্কিত বাধ্যবাধকতা তার উপর বজায় থাকবে। কেননা যাকাতের সম্পর্ক সম্পদের সাথে। তখন ঐ ব্যক্তির অভিভাবক তার পক্ষ থেকে যাকাতের অংশ বের করে দিবেন। কেননা যাকাত ওয়াজিব হয় সম্পদের উপর। এজন্য আল্লাহ্‌ বলেন,
 “তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করুন। উহা তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।” (সূরা তওবা- ১০৩) এখানে আল্লাহ্‌ পাক তাদের সম্পদ থেকে যাকাত নিতে বলেছেন, ব্যক্তি থেকে যাকাত নিতে বলেননি। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মু‘আযকে ইয়ামানে প্রেরণ করেন তাকে বলেন,
 “তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ্‌ তাদের সম্পদে ছাদকা বা যাকাত ফরয করেছেন। তা ধনীদের থেকে নিয়ে গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হবে।” (বুখারী ও মুসলিম) এ হাদীছের ভিত্তিতে সম্পদের আবশ্যকতা স্মৃতিহীন লোকের উপর থেকে রহিত হবে না। কিন্তু শারীরিক ইবাদত যেমন ছালাত, ছিয়াম, পবিত্রতা প্রভৃতি রহিত হয়ে যাবে। কেননা সে বিবেকহীন।
কিন্তু অসুস্থতা প্রভৃতির করণে বেহুঁশ হলে অধিকাংশ বিদ্যানের মতে তার উপর ছালাত আবশ্যক হবে না। এ রকম অসুস্থ ব্যক্তি যদি একদিন বা দু‘দিন বেহুঁশ থাকে তবে তাকে ছালাত কাযা আদায় করতে হবে না। কেননা বিবেকশুণ্য বেহুঁশ মানুষকে ঘুমন্ত ব্যক্তির সাথে তুলনা করা চলবে না। যার সম্পর্কে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
 “যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করতে ভুলে যায় অথবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে, তার কাফ্‌ফারা হচ্ছে যখনই স্মরণ হবে, তখনই সে তা আদায় করে নিবে।” কেননা ঘুমন্ত ব্যক্তি হুঁশ সম্পন্ন এ অর্থে যে, তাকে জাগানো হলে জাগ্রত হবে। কিন্তু বেহুঁশকে জাগানো হলেও তার হুঁশ ফিরবে না। এ বিধান হচ্ছে ঐ অবস্থায়, যখন বেহুঁশী কোন কারণ ছাড়াই ঘটবে। কিন্তু কোন কারণ বশতঃ হলে যেমন সংজ্ঞা লোপ করার জন্য ঔষধ ব্যবহার করে, তবে উক্ত বেহুঁশ অবস্থার ছালাত সমূহ তাকে কাযা আদায় করতে হবে।
দীর্ঘকাল সংজ্ঞাহীন থাকার কারণে ছালাত-ছিয়াম আদায় করতে না পরলে তার হুকুম
প্রশ্নঃ (৩) জনৈক ব্যক্তি দু‘মাস যাবত বেহুশ অবস্থায় ছিল। কোন কিছুই অনুধাবন করতে পারেনি। ফলে না ছালাত আদায় করেছে না রামাযানের ছিয়াম পালন করেছে। এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃ সংজ্ঞাহীন হওয়ার কারণে তার উপর কোন কিছুই আবশ্যক নয়। আল্লাহ্‌ যদি তার জ্ঞান ফিরিয়ে দেন, তবে সে রামাযানের ছিয়াম ক্বাযা আদায় করবে। কিন্তু আল্লাহ্‌ যদি তার মৃত্যুর ফায়সালা করেন, তবে তার উপর কোন কিছু আবশ্যক নয়। তবে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর যদি সার্বক্ষণিক ওযর বিশিষ্ট হয়, যেমন অতি বয়স্ক প্রভৃতি, তবে ফরয হচ্ছেঃ তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের বিনিময়ে একজন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করবে।
তবে ছালাত ক্বাযা আদায় করার ব্যাপারে ওলামাদের মধ্যে দু’রকম মত পাওয়া যায়।
১) অধিকাংশ বিদ্বান বলেন, তাকে ক্বাযা আদায় করতে হবে না। কেননা ইবনু ওমর (রাঃ) একদিন একরাত্রি বেহুঁশ ছিলেন। কিন্তু তিনি ছুটে যাওয়া ছালাত ক্বাযা আদায় করেননি। (মালেক, হা/ ২৩)
২) তাকে ক্বাযা আদায় করতে হবে। এ মত পোষণ করেছেন পরবর্তী যুগের হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণ। ইনছাফ গ্রনে’র লিখক বলেন, এটা মাযহাবের বিচ্ছিন্ন মতামত সমূহের অন্তর্গত। এ মতটি আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি তিন দিন বেহুঁশ ছিলেন। তারপর ছুটে যাওয়া ছালাত ক্বাযা আদায় করেছেন। (মালেক, হা/ ২৩)
প্রশ্নঃ (৪) ছালাতের কোন একটি শর্ত (যেমন পানি সংগ্রহ) পূর্ণ করতে গিয়ে যদি ছালাতের সময় পার হয়ে যায় তবে তার বিধান কি?
উত্তরঃ বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, কোনভাবেই ছালাতের নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত করা বৈধ নয়। কোন লোক যদি সময় পার হয়ে যাওয়ার ভয় করে, তবে যে অবস্থাতেই থাকুক ছালাত আদায় করে নিবে। যদিও একটু পর উক্ত শর্ত পূর্ণ করা সম্ভব হয়। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন,“নিশ্চয় নিদিষ্ট সময়ে ছালাত আদায় করা মুমিনদের উপর ফরয করা হয়েছে।” (সূরা নিসা- ১০৩) অনুরূপভাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিটি ছালাতের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং ঐ সময়ে আদায় করাটাই ওয়াজিব। কেননা শর্ত পূর্ণ করার জন্য অপেক্ষা করা যদি বৈধ হত, তবে তায়াম্মুমের কোন প্রয়োজন ছিল না। সময় পার হওয়ার পর পানি সংগ্রহ করা সম্ভব। সুতরাং দীর্ঘ সময়ের জন্য ছালাতকে দেরী করা বা অল্প সময়ের জন্য দেরী করার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। উভয় অবস্থায় নামাযের সময় পার হয়ে যাচ্ছে। তাই যে অবস্থাতেই থাক না কেন সময়ের মধ্যেই (তায়াম্মুম করে হলেও) ছালাত আদায় করে নিবে। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া এমত পোষণ করেছেন।
প্রশ্নঃ (৫) রাত জাগার কারণে সূর্য উঠার পর নামায আদায় করলে কবূল হবে কি? অন্যান্য নামায সে সময়মতই আদায় করে। সেগুলোর বিধান কি?
উত্তরঃ ইচ্ছাকৃতভাবে সময় পার করে সূর্য উঠার পর ফজর ছালাত আদায় করলে তা কবূল হবে না। কেননা রাত না জেগে আগেভাগে নিদ্রা গেলে সময়মত উক্ত ছালাত আদায় করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল। সুতরাং বিনা ওযরে সময় অতিবাহিত করে ছালাত আদায় করলে উক্ত ছালাত কবূল হবে না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
“যে ব্যক্তি এমন আমল করল, যার পক্ষে আমাদের কোন নির্দেশ নেই, তবে উহা প্রত্যাখ্যাত।” আর যে ব্যক্তি বিনা ওযরে সময় অতিবাহিত করে ছালাত আদায় করে, সে তো এমন আমল করল, যার অনুমতি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল দেননি। সুতরাং উহা প্রত্যাখ্যাত।
কিন্তু সে বলতে পারে আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম। আর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
 “যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করতে ভুলে যায় অথবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে, তার কাফ্‌ফারা হচ্ছে যখনই স্মরণ হবে তখনই সে উহা আদায় করে নিবে।”
আমরা তাকে বলব, যখন কিনা তার জন্য সম্ভব ছিল যে, সময় মত জাগার জন্য আগেভাগে ঘুমিয়ে পড়বে বা এলার্ম ঘড়ি প্রস্তত করবে বা কাউকে অনুরোধ করবে তাকে জাগিয়ে দেয়ার জন্য। তখন এগুলো না করে সময় অতিবাহিত করে ঘুমের ওজুহাত খাড়া করা, ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত পরিত্যাগ করারই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। সুতরাং পরবর্তীতে আদায় করলে উহা কবূল হবে না।
আর অন্যান্য ছালাত সময়মত আদায় করা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে।
এ উপলক্ষ্যে আমি কিছু নসীহত করতে চাইঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর আবশ্যক হচ্ছে, এমনভাবে আল্লাহ্‌র ইবাদত করা, যেভাবে করলে তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। এ দুনিয়ায় তাকে তো সৃষ্টি করা হয়েছে কেবল মাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য। কেউ জানেনা কখন তার মৃত্যু ঘন্টা বেজে উঠবে। তাকে পাড়ি জমাতে হবে পরপারের জগতে। যেখানে হিসাব-নিকাশের সম্মুখিন হবে। তখন আমলই হবে একমাত্র তার সহযোগী। মৃত্যুর পর আমল করার আর কোন অবকাশ থাকবে না। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “যখন মানুষ মৃত্যু বরণ করে, তিনটি আমল ব্যতীত তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। ছাদকায়ে জারিয়া, উপকারী বিদ্যা, সৎ সন্তান যে তার জন্য দু‘আ করবে।”
প্রশ্নঃ (৬) যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত বিলম্ব করে আদায় করে, এমনকি তার সময় পার হয়ে যায়। তার বিধান কি?
উত্তরঃ যারা ফজর ছালাত বিলম্ব করে আদায় করে এমনকি তার সময় পার হয়ে যায়- যদি বিশ্বাস করে যে, এরূপ করা বৈধ, তবে তা আল্লাহ্‌র সাথে কুফরী হল। কেননা বিনা কারণে ছালাতের নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত করা হালাল বা জায়েয, যে ব্যক্তি একথা অন্তর থেকে বিশ্বাস করবে সে কাফের। এই কারণে যে, সে কুরআন, সুন্নাহ্‌ ও মুসলমানদের ইজমার বিরোধীতা করেছে।
কিন্তু যদি তা হালাল না ভেবে বিশ্বাস করে যে, দেরী করে ছালাত আদায় করলে গোনাহ্‌গার হতে হবে। তারপরও প্রবৃত্তির তাড়নায় বা ঘুমের কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে সময় পার করে দেয়। তবে সে সাধারণ পাপী বলে গণ্য হবে। তাকে আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করতে হবে। অন্যায় থেকে বিরত হতে হবে। বড় বড় কাফেরের জন্যও তওবার দরজা উন্মুক্ত। আল্লাহ্‌ বলেন,
 “বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহ্‌র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সমস্ত গোনাহ্‌ ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, অতিব দয়ালু।” (সূরা যুমার- ৫৩)
এদের ব্যাপারে যারা জানবে তারা তাদেরকে নসীহত করবে, তাদেরকে কল্যাণের নির্দেশ দিবে। যদি তারা তওবা না করে, তবে তাদের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করতে হবে। যাতে করে তারা যিম্মামুক্ত হতে পারে। আর কর্তৃপক্ষও তাদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে তাদেরকে সংশোধন করতে পারে।
প্রশ্নঃ (৭) জনৈক যুবক এক ব্যক্তির মেয়েকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, সে ছালাত আদায় করে না। কিন্তু বলা হচ্ছে, ‘ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহ্‌ তাকে হেদায়াত করবেন।’ এই যুবকের সাথে মেয়ে বিবাহ দেয়া কি বৈধ?
উত্তরঃ বিবাহের প্রস্তাবকারী যদি জামাআতের সাথে ছালাত আদায় না করে, তবে সে আল্লাহ্‌ ও রাসূলের নাফারমান্ত গোনাহ্‌গার। মুসলমানদের ইজমার বিরোধীতাকারী। কেননা জামাতবদ্ধ হয়ে ছালাত আদায় করা সর্বোত্তম ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত, এব্যাপারে মুসলমানগণ ঐকমত্য হয়েছে। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) (মাজমু’ ফাতাওয়া ২৩/ ২২২ গ্রনে’) বলেন, ‘আলেমগণ একথার উপর ঐকমত্য হয়েছেন যে, জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করা অতিব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, শ্রেষ্ঠ আনুগত্য ও ইসলামের অন্যতম বড় নিদর্শন।’
কিন্তু তার এই ফাসেক্বী তাকে ইসলাম থেকে বের করে দিবে না। এর সাথে মুসলিম মেয়ের বিবাহ দেয়া জায়েয। কিন্তু তাকে বাদ দিয়ে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত সচ্চরিত্রবান যুবকের সাথে বিবাহ দেয়াই উত্তম। যদিও সে অর্থ-সম্পদ ও বংশ-মর্যাদায় উন্নত না হয়। কেননা হাদীছে এসেছেঃ “তোমাদের কাছে যদি এমন ব্যক্তি (বিবাহের প্রস্তাব দেয়) যার ধর্মীয় ও চারিত্রিক অবস্থা সনে-াষ জনক, তবে তার সাথে বিবাহ দাও। যদি এরূপ না কর তবে পৃথিবীতে ফিৎনা হবে এবং বিরাট ফাসাদ হবে। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! যদি এরূপ লোক না পাওয়া যায়? তিনি বললেন, যদি তোমাদের কাছে এমন ব্যক্তি আসে (বিবাহের প্রস্তাব দেয়) যার ধর্মীয় ও চারিত্রিক অবস্থা সনে-াষ জনক তবে তার সাথে বিবাহ দাও।” কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। ছহীহ্‌ বুখারী ও মুসলিম প্রভৃতি গ্রনে’ প্রমাণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “চারটি গুণাগুণ দেখে কোন নারীকে বিবাহ করা হয়। তার সম্পদ, বংশ মর্যাদা, সৌন্দর্য ও ধর্ম। ধর্মভীরু নারীকে বিবাহ করে তুমি বিজয়ী হও। তোমার দু’হাত ধুলোলুন্ঠিত হোক।” এ দু’টি হাদীছ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, বিবাহের ক্ষেত্রে সর্বাধিক যে বিষয়টির গুরুত্বারোপ করা আবশ্যক, তা হচ্ছে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে- ধর্মভীরুতা ও সচ্চরিত্রবান হওয়া। আর আল্লাহ্‌ভীরু ও দায়িত্ব সচেতন অভিভাবকের জন্য আবশ্যক হচ্ছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশের প্রতি গুরুত্বারোপ করা। কেননা ক্বিয়ামত দিবসে এ বিষয়ে সে জিজ্ঞাসিত হবে। আল্লাহ্‌ বলেন,
 “আর সেদিন আল্লাহ্‌ তাদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা রাসূলগণের আহবানে কি সাড়া দিয়েছিলে?” (সূরা ক্বাছাছ- ৬৫) তিনি আরো বলেন,
 “অতএব আমি অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞেস করব, যাদের কাছে রাসূল প্রেরীত হয়েছিল এবং আমি অবশ্যই জিজ্ঞেস করব রাসূলগণকে। তাদের উপর সব কিছুর বিজ্ঞচিতভাবে বর্ণনা প্রদান করব। আর আমি অনুপসি’ত ছিলাম না। ” (সূরা আ’রাফ- ৬-৭)
আর যদি বিবাহের প্রস্তাবক এমন ব্যক্তি হয়, যে না জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করে না বরং একাকী নামায আদায় করে। অর্থাৎ- মোটেও ছালাত আদায় করে না। তবে সে কাফের ইসলাম থেকে বহিস্কৃত। তার তওবা করা জরুরী। যদি খালেছভাবে তওবা নাসূহা করে ছালাত আদায় শুরু করে, তবে আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু তওবা না করলে তাকে কাফের ও মুরতাদ অবস্থায় হত্যা করতে হবে। গোসল না দিয়ে, কাফন না পরিয়ে, জানাযা না পড়িয়ে, দাফন করতে হবে। মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা যাবে না। তার কাফের হওয়ার ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহ্‌র দলীল নিম্নে প্রদত্ব হলোঃ
কুরআনের দলীলঃ আল্লাহ্‌ বলেন,
“অতঃপর এদের পর এল অপদার্থ লোকেরা। তারা নামায নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। কিন্তু তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে।” (সূরা মারইয়াম- ৫৯-৬০) এখানে ‘কিন্তু তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে।’ একথা দ্বারা বুঝা যায়, ছালাত বিনষ্ট ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করার সময় তারা ঈমানদার ছিল না। আল্লাহ্‌ আরো বলেন,
 “যদি তারা তওবা করে ও ছালাত আদায় করে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।” (সূরা- তওবা- ১১) এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হল, ছালাত প্রতিষ্ঠা ও যাকাত প্রদান না করলে দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব সাব্যস্ত হবে না। অবশ্য হাদীছের দলীল দ্বারা প্রমাণিত যে, যাকাত পরিত্যাগকারী যদি তার আবশ্যকতা স্বীকার করে, কিন্তু কৃপণতার কারণে তা আদায় না করে, তবে সে কাফের হবে না। অতএব ছালাত প্রতিষ্ঠা করা ঈমানী ভ্রাতৃত্বের শর্ত হিসেবে অবশিষ্ট রইল। তাই এর দাবী হচ্ছে তা পরিত্যাগ করা কুফরী। এই কারণে বেনামাযীর সাথে ঈমানী ভ্রাতৃত্ব বিনষ্ট হয়ে যায়। বেনামাযী ফাসেক নয় বা ছোট কাফের নয়। কেননা ফাসেক্বী এবং ছোট কুফরী ঈমানী ভ্রাতৃত্ব থেকে বের করে দেয় না। যেমনটি মু‘মিনদের পরস্পর দু’টি দল যুদ্ধে লিপ্ত হলে, তাদের সংশোধনের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্‌ বলেন,
 “মু’মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের পরস্পরের মাঝে সংশোধন কর।” (সূরা হুজুরাত- ১০) পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত দু’টি দল ঈমানের গন্ডি থেকে বের হয়ে যায়নি। অথচ মু’মিনের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যেমনটি ছহীহ্‌ বুখারীতে আবদুল্লাহ্‌ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “কোন মুসলিমকে গালিগালাজ করা ফাসেক্বী, আর তার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া কুফরী।”
হাদীছের দলীলঃ ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের হওয়ার ব্যাপারে সুন্নাহ্‌ থেকে দলীল সমূহ হচ্ছে নিম্নরূপঃ জাবের বিন আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “মুসলিম বান্দা এবং কাফের ও মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল ছালাত পরিত্যাগ করা।” বুরায়দা বিন হুছাইব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “তাদের মাঝে এবং আমাদের মাঝে চুক্তি হচ্ছে ছালাতের, যে ব্যক্তি ছালাত পরিত্যাগ করবে সে কাফের হয়ে যাবে।”
উবাদাহ্‌ বিন ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে বাইআত করেছেন এই মর্মে যে, ‘‘তারা শাসকের সাথে বিরোধীতায় লিপ্ত হবে না। যতক্ষণ না তারা তাদের থেকে সুস্পষ্ট কুফরী অবলোকন করে, যে ব্যাপারে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে প্রকাশ্য প্রমাণ বিদ্যমান আছে।” অর্থাৎ- শাসকদেরকে আল্লাহ্‌ যে দায়িত্ব দিয়েছেন, লোকেরা সে ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধাচরণ করবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের মধ্যে সুপ্রমাণিত কোন কুফরী অবলোকন করে। আপনি যখন এটা বুঝলেন তখন এই হাদীছটি দেখুন সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
“অচিরেই তোমাদের মাঝে এমন কিছু আমীর বা শাসকের আগমণ ঘটবে, যাদের মধ্যে ভাল বিষয় লক্ষ্য করবে খারাপ বিষয়ও লক্ষ্য করবে। যে ব্যক্তি মন্দ বিষয়গুলো চিনলো (অন্য বর্ণনায়, অপসন্দ করল) সে মুক্ত হয়ে গেল। আর যে ব্যক্তি সেগুলোর প্রতিবাদ করল সে নিরাপদ হলো। কিন্তু যে সন্তুষ্ট হয় ও তাদের অনুসরণ করে। তাঁরা বললেন, আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব না? তিনি বললেন, না, যতক্ষণ তারা ছালাত প্রতিষ্ঠা করে।” এ হাদীছ থেকে জানা গেল, তারা যদি ছালাত আদায় না করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। পূর্বে ঊবাদার হাদীছটিতে বলা হয়েছে কোন ক্রমেই শাসকদের বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না। অতএব বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে সুপ্রমাণিত কোন কুফরী ছাড়া তাদের সাথে লড়াই করা যাবে না। সুতরাং এ দু’টি হাদীছ দ্বারা জানা গেল, ছালাত পরিত্যাগ করা আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে সুপ্রমাণিত সুস্পষ্ট কুফরী।
এগুলো হচ্ছে আল্লাহ্‌র কিতাব ও সুন্নাতে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে দলীল প্রমাণ। ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের। মিল্লাতে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত। যেমনটি অন্যান্য সুস্পষ্ট বর্ণনায় পাওয়া যায়। ইবনু আবী হাতেম সুনান গ্রনে’ ঊবাদা বিন ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নসীহত করেছেনঃ
 “তোমরা কোন কিছুকে আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করবে না। ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত পরিত্যাগ করবে না। কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ছালাত পরিত্যাগ করবে সে মিল্লাতে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।”
এব্যাপারে ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত উক্তি সমূহ নিম্নরূপঃ
ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি ছালাত পরিত্যাগ করে, ইসলামে তার কোন অংশ নেই।”  আবদুল্লাহ্‌ বিন শাক্বীক্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
 “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)এর ছাহাবীগণ ছালাত ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফের মনে করতেন না।”
উল্লেখিত শ্রুতিগত উক্ত দলীল সমূহ ছাড়া সাধারণ যুক্তিও প্রমাণ করে যে, ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, ‘ছালাতে অলসতাকারী প্রত্যেক ব্যক্তি মাত্রই তাকে অবজ্ঞাকারী। সুতরাং সে ইসলামের ব্যাপারে উদাসীন এবং অবজ্ঞাকারী। ছালাতে যাদের যতটুকু অংশ রয়েছে ইসলামে তাদের ততটুকু অংশ রয়েছে। ছালাতের প্রতি যার যতটুকু আগ্রহ রয়েছে ইসলামের প্রতি তার আগ্রহ ততটুকু আছে।
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রহঃ) (কিতাবুছ ছালাত পৃ: ৪০০) বলেন, হাদীছের সমষ্টি থেকে প্রমাণিত হয়ঃ “যে লোক বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা ছালাতের নির্দেশ দিয়েছেন, তা ফরয করেছেন, সে কখনই ছালাত পরিত্যাগ করবে না। সে কখনই ধারাবাহিকভাবে সমস্ত ছালাত থেকে বিরত থাকবে না। কারণ সাধারণ বিবেক ও যুক্তিতে একথা কখনই সম্ভব নয় যে, একজন লোক অন্তর থেকে বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা প্রতিদিন রাত ও দিনে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন, এর পরিত্যাগকারীকে তিনি কঠিন শাস্তি দিবেন; অথচ তারপরও সে তা প্রত্যাখ্যান করবে এবং সার্বক্ষণিক এ ছালাতকে পরিত্যাগ করে চলবে। এটা নিঃসন্দেহে অবাস্তব কথা। সুতরাং ছালাতের ফরযকে সত্যায়নকারী কখনই উহা পরিত্যাগ করে সন্তুষ্ট চিত্তে বসে থাকতে পারে না। ঈমানের দাবী হচ্ছে ছালাত আদায় করা। তার হৃদয় যদি তাকে ছালাতের নির্দেশ না দেয়, তবে তার অন্তরে যে ঈমানের লেশ মাত্র নেই একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্তর সম্পর্কিত বিধি-বিধান ও তার আমল সম্পর্কে যাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নেই তাদের কথায় কান দিবেন না।” ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম সত্য বলেছেন। যে ছালাতে রয়েছে অশেষ, অফুরন্ত ও অসংখ্য ছাওয়াব। তা আদায় করাও অতি সহজ সাধ্য। ছালাত পরিত্যাগ করাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি। যার অন্তরে সামান্যতম ঈমান রয়েছে সে কখনও উক্ত ছালাত পরিত্যাগ করতে পারে না। এটা অসম্ভব ব্যাপার।
যখন কিনা কুরআন্তসুন্নাহ্‌র দলীলাদী দ্বারা প্রমাণিত হল যে, ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের, ইসলাম থেকে বহিস্কৃত মুরতাদ- তখন তার সাথে কোন মুসলিম নারীর বিবাহ সম্পাদন করা বৈধ নয়। আল্লাহ্‌ কুরআনে বলেন,
 “আর তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্যই মুসলিম ক্রীতদাসী মুশরিক নারী অপেক্ষা উত্তম। যদিও তাদেরকে তোমাদের ভাল লাগে।” (সূরা বাক্বারা- ২২১) আর আল্লাহ্‌ মুহাজির নারীদের সম্পর্কে বলেন,
 “যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্য হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্যও হালাল নয়।” (সূরা মুমতাহিনা- ১০) এই দু’টি আয়াতের ভিত্তিতে মুসলমানগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, কোন মুসলিম নারীর সাথে কাফেরের বিবাহ বৈধ নয়। অতএব কোন অভিভাবক যদি নিজ মেয়ে বা অধিনস্ত কোন মেয়ের বিবাহ বেনামাযী ব্যক্তির সাথে সম্পন্ন করে, তবে সে বিবাহ বিশুদ্ধ হবে না। এই বিবাহের মাধ্যমে উক্ত নারী তার জন্য বৈধ হবে না। কেননা এটা এমন সম্পর্ক যাতে আল্লাহ্‌ ও রাসূলের নির্দেশ নেই। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আয়েশা (রাঃ) এর বরাতে ছহীহ্‌ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন,
 “যে ব্যক্তি এমন আমল করবে, যাতে আমাদের নির্দেশনা নেই, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।” (বুখারী ও মুসলিম)
অতএব স্বামী যদি ছালাত পরিত্যাগ করার পর তওবা করে ছালাত আদায়ের মাধ্যমে ইসলামে ফিরে না আসে, তবে তার বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তাই বেনামাযী বিবাহের প্রস্তাবদানকারীর সাথে বিবাহের আক্বদ করার কোন প্রশ্নই আসে না।
সারকথা, বিবাহের প্রস্তাবকারী এই ব্যক্তি যদি জামাতের সাথে ছালাত আদায় না করে, তবে সে ফাসেক্ব- কাফের নয়। এর সাথে বিবাহ দেয়া যায়। তবে তাকে বাদ দিয়ে নামাযে পাবন্দ চরিত্রবান যুবকের সাথে বিবাহ দেয়া বেশী উত্তম।
কিন্তু যদি সে মোটেও ছালাত আদায় না করে- না জামাতের সাথে না একাকী- তবে কাফের, ইসলাম থেকে বহিস্কৃত মুরতাদ। কোনভাবেই তার সাথে মুসলিম নারীর বিবাহ সম্পাদন করা জায়েয নয়। তবে যদি সে সত্যিকারভাবে তওবা করে ছালাত আদায় করে ইসলাম ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে কোন বাধা নেই।
আর প্রশ্নকারী উল্লেখ করেছেন যে, প্রস্তাবকারীর ব্যাপারে প্রশ্নকৃত ব্যক্তি বলেছে ‘ঠিক হয়ে যাবে- আল্লাহ্‌ তাকে হেদায়াত করবেন।’ এটা তো ভবিষ্যতের কথা। সে সম্পর্কে একমাত্র আল্লাই ভাল জানেন। অজানা ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করে কোন কিছু ভিত্তি করা চলে না। কেননা আমরা শুধু বর্তমান অবস্থার উপর জিজ্ঞাসিত হব; ভবিষ্যতের উপর নয়। আর এ ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা হচ্ছে কুফরী। সুতরাং এই কুফরী অবস্থায় কি করে তার সাথে মুসলিম রমণীর বিবাহ সম্পন্ন করা যায়? আমরা আল্লাহর কাছে তার হেদায়াত এবং ইসলামে ফিরে আসার জন্য দু‘আ করি। যাতে করে তার সাথে মুসলিম নারীর বিবাহ সম্পন্ন করা সহজ ও সম্ভব হয়। আল্লাহই হেদায়াতের মালিক।
প্রশ্নঃ (৮) জনৈক ব্যক্তি পরিবারের লোকদের ছালাতের আদেশ করছেন। কিন্তু কেউ তাঁর কথা শুনে না। এঅবস্থায় তিনি কি করবেন? তিনি কি তাদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করবেন, নাকি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবেন?
উত্তরঃ পরিবারের লোকেরা যদি একেবারেই ছালাত আদায় না করে, তবে তারা কাফের ইসলাম থেকে বের হয়ে মুরতাদে পরিণত হবে। তাদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করা জায়েয নয়। কিন্তু তার উপর আবশ্যক হচ্ছে তাদেরকে দা‘ওয়াত দিবেন। বারবার অনুরোধ করবেন। হতে পারে আল্লাহ্‌ তাদেরকে হেদায়াত করবেন। কেননা ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের- নাঊযুবিল্লাহ্‌। কুরআন, সুন্নাহ্‌, ছাহাবায়ে কেরামের উক্তি ও বিশুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি এর দলীল।
যারা বেনামাযীকে কাফের বলার পক্ষপাতী নয়, তাদের দলীলগুলো চারটি অবস্থার বাইরে নয়। যথাঃ
ক) মূলতঃ উক্ত দলীল সমূহে তাদের মতের পক্ষে দলীল নেই।
খ) সেগুলা এমন গুণ সম্পন্ন যে তা বিদ্যমান থাকাবস্থায়, নামায পরিত্যাগের বিষয়টি তার অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়।
গ) অথবা এমন কিছু ওযর ও অবস্থা উল্লেখ করা হয়েছে, যে কারণে নামায পরিত্যাগ করা মার্জনীয়।
ঘ) অথবা উক্ত দলীল সমূহ আম বা ব্যাপক। ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের হওয়ার হাদীছগুলো দ্বারা তা খাছ বা বিশিষ্ট করা হয়েছে।
বেনামাযী মু’মিন বা সে জান্নাতে প্রবেশ করবে বা সে জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে কুরআন্তসুন্নাহ্‌র উক্তি সমূহে এ রকম কথা উল্লেখ নেই। সুতরাং ‘ছালাত পরিত্যাগ করা কুফরী’ এব্যাপারে যে দলীল সমূহ উপস্থাপিত হয়েছে, তা নেয়া’মতের কুফরী বা ছোট কুফরী এরকম ব্যাখ্যা করার কোন অবকাশ নেই।
যখন সুস্পষ্ট হলো, ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের মুরতাদ, তখন তার ব্যাপারে নিম্নল্লিখিত বিধান সমূহ প্রজোয্য হবেঃ
প্রথমতঃ মুসলিম নারীর সাথে তার বিবাহ সম্পন্ন করা বৈধ হবে না। বিবাহের চুক্তি হয়ে গেলেও তা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তার জন্য উক্ত স্ত্রী হালাল হবে না। কেননা আল্লাহ্‌ মুহাজির নারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেনঃ
 “যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্য হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্য হালাল নয়।” (সূরা মুমতাহিনাঃ ১০)
দ্বিতীয়তঃ বিবাহের বন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর যদি ছালাত পরিত্যাগ শুরু করে তবে উক্ত বন্ধন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে- স্ত্রী ব্যবহার তার জন্য হালাল হবে না। পূর্বোল্লিখিত আয়াত এর দলীল।
তৃতীয়তঃ বেনামাযীর যবেহ্‌ করা প্রাণীর গোস্ত খাওয়া জায়েয হবে না। কেননা এটা হারাম। ইহুদী বা খৃষ্টানের যবেহ্‌ করা প্রাণীর গোস্ত খাওয়া আমাদের জন্য বৈধ। কেননা আল্লাহ্‌ তা আমাদের জন্য হালাল করেছেন। (দেখুন সূরা মায়েদা- ৫ নং আয়াত) অতএব বেনামাযীর যবেহ করা গোস্ত ইহুদী খৃষ্টানের চাইতে অধিক নিকৃষ্ট।
চতুর্থতঃ বেনামাযীর জন্য বৈধ নয় মক্কা বা তার হারাম সীমানায় প্রবেশ করা। কেননা আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেছেন,
 “হে ঈমানদারগণ! মুশরিকগণ তো নাপাক। সুতরাং তারা যেন এই বছরের পর আর মসজিদে হারামে প্রবেশ না করে।” (সূরা তওবাঃ ২৮)
পঞ্চমতঃ বেনামাযীর কোন নিকটাত্মীয় মারা গেলে সে তাদের মীরাছ লাভ করবে না। যেমন কোন নামাযী ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল, রেখে গেল একজন ছেলে এবং এক চাচাতো ভাই; কিন্তু ছেলে বেনামাযী আর চাচাতো ভাই নামাযী। এ অবস্থায় দূরের সেই চাচাতো ভাই মীরাছ পাবে ছেলে পাবে না। কেননা উসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
 “কোন মুসলিম কাফেরের মীরাছ লাভ করতে পারবে না। কোন কাফেরও কোন মুসলিমের মীরাছ লাভ করতে পারবে না।” (বুখারী ও মুসলিম) তিনি আরো বলেন:
 “ফারায়েয তথা মীরাছ সমূহ তার অধিকারীদের মাঝে বন্টন করে দাও। কিছু অবশিষ্ট থাকলে মৃত ব্যক্তির নিকটতম পুরুষের জন্য নির্ধারিত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম) এই উদাহরণ প্রজোয্য হবে সমস্ত ওয়ারীসদের ক্ষেত্রে।
ষষ্ঠতঃ বেনামাযী মৃত্যু বরণ করলে- তাকে গোসল দেয়া যাবে না, কাফন পরানো যাবে না, জানাযা নামায পড়া যাবেনা, মুসলমানদের গোরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে না। তাকে কি করতে হবে? মাঠে- ময়দানে গর্ত খনন করে পরিহিত কাপড়েই পুঁতে ফেলতে হবে। কেননা তার কোনই মর্যাদা নেই।
এভিত্তিতে কোন লোক যদি মৃত্যু বরণ করে, আর তার সম্পর্কে জানা যায় যে সে বেনামাযী, তবে জানাযা পড়ার জন্য লাশকে মুসলমানদের সামনে উপস্থিত করা বৈধ হবে না।
সপ্তমতঃ ক্বিয়ামত দিবসে বেনামাযীর হাশর-নশর হবে ফেরাউন, হামান, ক্বারূন ও উবাই বিন খালাফের সাথে। এরা হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কাফের। তারা কখনই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তাই বেনামাযীর পরিবারের পক্ষ থেকে তার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দু‘আ করাও জায়েয নয়। কেননা কাফের কোন দু’আ পাওয়ার উপযুক্ত নয়। আল্লাহ্‌ বলেন,
 “নবী ও ঈমানদারদের জন্য সমিচীন নয় যে তারা কোন মুশরিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা তাদের নিকটাত্মীয় হয় না কেন। যখন প্রমাণিত হল যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।” (সূরা তওবাঃ ১১৩)
সুতরাং বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক। কিন্তু আফসোস! মানুষ বর্তমানে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। নিজেদের গৃহে এমন লোকদের স্থান দিচ্ছে, যারা ছালাত আদায় করে না। অথচ এটা মোটেও ঠিক নয়। (আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞান রাখেন)
প্রশ্নঃ (৯) বেনামাযী স্বামীর সাথে মুসলিম নামাযী স্ত্রীর বসবাস করার বিধান কি? তাদের কয়েকজন সন্তানও আছে। বেনামাযীর সাথে মেয়ে বিবাহ দেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ কোন নারী যদি এমন লোককে বিবাহ করে, যে ছালাত আদায় করে না, জামাআতের সাথেও না বাড়ীতেও একাকি না। তার বিবাহ বিশুদ্ধ নয়। কেননা ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের। যেমনটি আল্লাহর সম্মানিত কিতাব, পবিত্র সুন্নাত ও ছাহাবায়ে কেরামের উক্তি সমূহ একথাটি প্রমাণ করে। আবদুল্লাহ্‌ বিন শাক্বীক্ব বলেন,
 “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)এর ছাহাবীগণ ছালাত ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফের মনে করতেন না।” কাফেরের জন্য কোন মুসলিম নারী বৈধ নয়। আল্লাহ্‌ বলেন,
 “যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্য হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্য হালাল নয়।” (সূরা মুমতাহিনাঃ ১০)
বিবাহের চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর যদি স্বামী ছালাত পরিত্যাগ করা শুরু করে তবে তওবা করে ইসলামে ফিরে না আসলে তার বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে। কতক বিদ্বান বলেছেন, বিবাহ ভঙ্গের বিষয়টি ঈদ্দতের সাথে সম্পৃক্ত। যদি ঈদ্দত পার হয়ে যায় তারপর সে তওবা করে ইসলামে ফিরে আসে তবে নতুন চুক্তি করে আবার উক্ত স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারবে। উক্ত মহিলার জন্য আবশ্যক হচ্ছে বেনামাযী স্বামী থেকে আলাদা থাকবে। তাকে মেলামেশা করতে দিবে না- যতক্ষণ না সে তওবা করে ছালাত আদায় করে। যদিও তাদের সন্তান থাকে। কেননা এ অবস্থায় পিতার কোন অধিকার নেই সন্তানদের প্রতিপালনের।
এ উপলক্ষে আমি মুসলিম ভাইদেরকে সতর্ক করছি ও নসীহত করছি, তারা যেন কোন বেনামাযীর সাথে মেয়েদের বিবাহ সম্পন্ন না করেন। কেননা বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক। এক্ষেত্রে তারা যেন নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর সাথে কোন আপোষ না করেন। (আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞাত আছেন)
প্রশ্নঃ (১০) তওবা করার পর কি ছেড়ে দেয়া ছালাতের কাযা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত পরিত্যাগ করার পর তওবা করে আল্লাহ্‌র পথে ফিরে আসলে ছেড়ে দেয়া ছালাত সমূহ কাযা আদায় করতে হবে কিনা এব্যাপারে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন। এক্ষেত্রে দু’টি মত পাওয়া যায়।
আমার কাছে প্রাধান্যযোগ মতটি হচ্ছে যা শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া পছন্দ করেছেন। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত পরিত্যাগ করে এমনকি সময় পার করে দেয়, তার কাযা আদায় করাতে কোন ফায়দা নেই। কেননা নির্দিষ্ট সময়ের ইবাদত অবশ্যই উক্ত নির্ধারিত সময়েই আদায় করতে হবে। সময়ের আগে আদায় করলে যেমন হবে না, অনুরূপ সময় পার হওয়ার পর আদায় করলেও তা বিশুদ্ধ হবেনা। আল্লাহ্‌র সীমারেখা সমূহ হেফাযত করা অত্যন্ত জরূরী। শরীয়ত প্রণেতা আমাদের উপর ছালাত ফরয করে তার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন্ত এই সময় থেকে এই সময়ের মধ্যে ছালাত আদায় করতে হবে। অতএব যে স্থানকে নামাযের স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়নি সেখানে যেমন ছালাত বিশুদ্ধ হবে না। তেমনি যে সময়কে নামাযের সময় হিসেবে নির্ধারণ করা হয়নি, সে সময়ে ছালাত আদায় করলেও তা বিশুদ্ধ হবে না।
অবশ্য যে ব্যক্তি ছালাত পরিত্যাগ করেছে তার উপর আবশ্যক হচ্ছে বেশী বেশী তওবা ইসে-গফার করা এবং বেশী বেশী নফল ইবাদত ও নেক কাজে লিপ্ত হওয়া। আশা করা যায় এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তাকে মাফ করে দিবেন ও পরিত্যাক্ত ছালাত সমূহকে ক্ষমা করবেন।
প্রশ্নঃ (১১) বেনামাযী সন্তানদের ব্যাপারে পরিবারের কর্তার কর্তব্য কি?
উত্তরঃ পরিবারের কোন সন্তান যদি বেনামাযী হয়, তবে কর্তার উপর আবশ্যক হচ্ছে তাদেরকে নামাযের ব্যাপারে বাধ্য করা। তিনি তাদেরকে নামাযের নির্দেশ দিবেন, বুঝাবেন, প্রয়োজনে তাদেরকে প্রহার করবেন। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا لِعَشْرِ سِنِينَ  “দশ বছর বয়সে ছালাত আদায় না করলে তাদেরকে প্রহার করবে।”
এতে যদি কাজ না হয়, তবে (ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিযুক্ত) দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে তাকে সোপর্দ করবেন। যাতে করে তাকে ছালাত আদায় করতে বাধ্য করা হয়। এক্ষেত্রে চুপ থাকা জায়েয হবে না। কেননা এতে অন্যায় কাজে সমর্থন হয়ে যায়। ছালাত পরিত্যাগ করা কুফরী। ছালাত আদায় না করলে ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। বেনামাযী কাফের চিরকাল জাহান্নামী। তাই সে মৃত্যু বরণ করলে তাকে গোসল দেয়া, জানাযা পড়া বা মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা যাবে না।
প্রশ্নঃ (১২) সফর অবস্থায় আযান দেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ বিষয়টি মতবিরোধপূর্ণ। সঠিক কথা হচ্ছে সফর অবস্থায় আযান দেয়া ওয়াজিব। দলীলঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মালেক বিন হুওয়াইরিছ ও তার সফর সঙ্গীদের বলেছিলেনঃفَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أَحَدُكُمْ  “নামাযের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের মধ্যে যেন একজন আযান দেয়।” এরা রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট ইসলামের তা’লীম নিতে এসেছিলেন। ফেরত যাওয়ার সময় নবীজী তাদেরকে এ নির্দেশ প্রদান করেন। তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর বা গৃহে যেখানেই থাকতেন কখনই আযান বা ইক্বামত পরিত্যাগ করেননি। সফরে থাকাবস্থায় তিনি বেলালকে আযান দেয়ার নির্দেশ দিতেন।
প্রশ্নঃ (১৩) একক ব্যক্তির জন্য আযান ও ইক্বামতের বিধান কি?
উত্তরঃ একক ব্যক্তির জন্য আযান ও ইক্বামত সুন্নাত। ওয়াজিব নয়। কেননা তার আশে-পাশে এমন লোক নেই যাদেরকে আযান দিয়ে ডাকা দরকার। যেহেতু আযানের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ্‌র যিকর ও তাঁর সম্মানের কথা উল্লেখ আছে এবং নিজেকে ছালাত ও মুক্তির দিকে আহ্বান করা হয়েছে, অনুরূপভাবে ইক্বামতেও তাই আযান ও ইক্বামত উভয়টি সুন্নাত। আযান মুস্তাহাব বা সুন্নাত হওয়ার দীলল হচ্ছে, ঊকবা বিন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীছ। তিনি বলেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “তোমার পালনকর্তা আশ্চার্যাম্বিত হন এমন ছাগলের রাখালের কাজে। পাহাড়ের চুঁড়া থেকে ছালাতের জন্য আযান দেয়। আল্লাহ্‌ বলেন, আমার এই বান্দাকে দেখ! ছালাতের জন্য সে আযান ও ইক্বামত দিচ্ছে। সে আমাকে ভয় করছে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম ও জান্নাতে প্রবেশ করালাম।”
প্রশ্নঃ (১৪) কোন ব্যক্তি যদি যোহর ও আছর ছালাত একত্রিত আদায় করে, তবে কি প্রত্যেক ছালাতের জন্য আলাদাভাবে ইক্বামত দিবে? নফল ছালাতের জন্য ইক্বামত আছে কি?
উত্তরঃ প্রত্যেক নামাযের জন্য আলাদাভাবে ইক্বামত দিতে হবে। জাবের (রাঃ) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বিদায় হজ্জের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, তিনি মুযদালিফায় (মাগরিব এশা) দু’নামাযকে একত্রিত করেছেন। ইক্বামত দিয়ে প্রথমে মাগরিব ছালাত আদায় করেন। তারপর ইক্বামত দিয়ে এশা ছালাত আদায় করেন। উভয় ছালাতের মাঝে কোন সুন্নাত আদায় করেননি। নফল নামাযের জন্য কোন ইক্বামত নেই।
প্রশ্নঃ (১৫) (الصلاة خير من النوم) “আছ্‌ছালাতু খাইরুম্‌ মিনান্‌ নাওম” কথাটি কি ফজরের প্রথম আযানে বলতে হবে না দ্বিতীয় আযানে?
উত্তরঃ “আছ্‌ছালাতু খাইরুম্‌ মিনান্‌ নাওম” কথাটি ফজরের প্রথম আযানে বলতে হবে। যেমনটি হাদীছে এসেছেঃ “সকালের প্রথম আযান প্রদান করলে বলবে, “আছ্‌ছালাতু খাইরুম্‌ মিনান্‌ নাওম” ঘুম থেকে সালাত উত্তম। এটা প্রথম আযানে দ্বিতীয় আযানে নয়।
কিন্তু জানা দরকার এ হাদীছে প্রথম আযান বলতে কি বুঝানো হয়েছে? এটা হচ্ছে সেই আযান যা নামাযের সময় হওয়ার পর প্রদান করা হয়। আর দ্বিতীয় আযান হচ্ছেঃ ইক্বামত। কেননা ইক্বামতকেও ‘আযান’ বলা হয়েছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,“প্রত্যেক দু’আযানের মধ্যবর্তী সময়ে ছালাত রয়েছে।” এখানে দু’আযান বলতে ‘আযান ও ইক্বামত’ উদ্দেশ্য।
ছহীহ্‌ বুখারীতে বলা হয়েছেঃ আমীরুল মু’মেনীন ঊছমান বিন আফ্‌ফান (রাঃ) জুমআর জন্য তৃতীয় আযান বৃদ্ধি করেন।
অতএব, বেলালকে প্রথম আযানে যে “আছ্‌ছালাতু খাইরুম্‌ মিনান্‌ নাওম” বলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ফজর নামাযের আযান।
ফজর উদিত হওয়ার আগে যে আযানের কথা পাওয়া যায় তা ফজরের আযান নয়। লোকেরা শেষ রাতের ঐ আযানকে ফজর ছালাতের প্রথম আযানরূপে আখ্যা দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ফজর ছালাতের জন্য নয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “বেলাল রাতে আযান দিয়ে থাকে। যাতে করে ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হয় এবং নফল ছালাত আদায়কারী ফিরে যায়।” অর্থাৎ- ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হয়ে সাহূর খাবে আর ক্বিয়ামুল লায়ল বা তাহাজ্জুদ ছালাত আদায়কারী নামায শেষ করে সাহূর খাবে।
তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মালেক বিন হুওয়াইরিছকে বলেছিলেনঃ “নামাযের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের মধ্যে একজন যেন আযান দেয়।”  আর আমরা জানি যে, ফজর উদিত না হলে ছালাতের সময় উপস্থিত হবে না। অতএব ফজর হওয়ার আগের আযান ফজর ছালাতের জন্য নয়।
অতএব সাধারণভাবে মানুষ ফজরের আযানে যে “আছ্‌ছালাতু খাইরুম্‌ মিনান্‌ নাওম” বলে থাকে সেটাই সঠিক ও বিশুদ্ধ।
কিন্তু যারা ধারণা করে থাকে যে, প্রথম আযান বলতে ফজরের পূর্বের আযান উদ্দেশ্য তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক নয়। তারা দলীল পেশ করে থাকে যে, প্রথম আযান বলতে সেই আযানই উদ্দেশ্য যা শেষ রাতে নফল বা তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য দেয়া হয় এবং সেজন্য বলা হয়ঃ “আছ্‌ছালাতু খাইরুম্‌ মিনান্‌ নাওম” অর্থাৎ- ঘুম থেকে নামায উত্তম। এখানে ‘উত্তম’ শব্দটি দ্বারা বুঝা যায় এ আহবানটি নফল নামাযের জন্যই।
আমরা জবাবে বলবঃ ‘উত্তম’ শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব কাজের জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ্‌ বলেন,
 “হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দিবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহ্‌র পথে নিজেদের ধন্তসম্পদ ও জীবন পন করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম; যদি তোমাদের জ্ঞান থাকে।” (সূরা ছফ্‌ফঃ ১০, ১১) আল্লাহ্‌ জুমআর ছালাত সম্পর্কে বলেনঃ
 “হে ঈমানদারগণ! যখন জুমআর দিনে ছালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহ্‌র যিকিরের প্রতি দ্রুত অগ্রসর হও, বেচা-কেনা ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য উত্তম।” (সূরা জুমআঃ ৯) অতএব ‘উত্তম’ শব্দটি যেমন ফরয বিষয়ে ব্যবহার হয় তেমনি মুস্তাহাব ও নফলের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়।
প্রশ্নঃ (১৬) টেপ রেকর্ডারের মাধ্যমে আযান দিলে আযান হবে কি?
উত্তরঃ টেপ রেকর্ডারের মাধ্যমে আযান দিলে বিশুদ্ধ হবে না। কেননা আযান একটি ইবাদত। আর ইবাদত করার আগে নির্দিষ্ট নিয়ত করতে হবে।
প্রশ্নঃ (১৭) মসজিদে প্রবেশ করার সময় দেখলাম আযান হচ্ছে। এসময় কোন কাজটি উত্তম?
উত্তরঃ উত্তম হচ্ছে, আগে আযানের জবাব দিবে। অতঃপর আযান শেষে দু’আ পাঠ করবে। তারপর তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা সুন্নাত নামায শুরু করবে। তবে বিদ্বানদের মধ্যে অনেকে জুমআর দিনের বিষয়টিকে ব্যতিক্রম বলেছেন। অর্থাৎ- মসজিদে প্রবেশ করার সময় যদি দেখে যে, খুতবার জন্য দ্বিতীয় আযান শুরু হয়ে গেছে, তখন আযানের জবাব না দিয়ে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায শুরু করে দিবে। যাতে করে খুতবা শোনতে পারে। কারণ হচ্ছে, খুতবা শোনা ওয়াজিব, আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব নয়। সুতরাং যা ওয়াজিব নয় তার চাইতে ওয়াজিবের গুরুত্ব দেয়া উত্তম।
প্রশ্নঃ (১৮) আযানের জবাবে ‘রাযিতু বিল্লা-হি রাব্বা, ওয়াবিল ইসলামি দী-না, ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা ওয়া রাসূলা।’ দু’আটি কখন বলতে হবে?
উত্তরঃ হাদীছের বাহ্যিক অর্থে বুঝা যায়, মুআয্‌যিন যখন ‘আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ্‌ বলবে তখন তার জবাব দিয়ে বলবে, ‘রাযীতু বিল্লা-হি রাব্বা, ওয়াবিল ইসলা-মি দী-না, ওয়াবি মুহাম্মাদিন্‌ নাবিয়্যা ওয়া রাসূলা।’ কেননা হাদীছে এসেছেঃ
 “যে ব্যক্তি আযান শুনে বলবেঃ ‘আশহাদু আন লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ্‌ রাযীতু বিল্লা-হি রাব্বা, ওয়াবিল ইসলামি দীনা, ওয়াবি মুহাম্মাদিন্‌ নাবিয়্যা ওয়া রাসূলা।’ অন্য রেওয়াতে বলা হয়েছেঃ “যে বলবে, ‘আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি’।” এই কথাটি প্রমাণ করে যে, উক্ত দু’আটি মুআয্‌যিনের ‘আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ্‌’ বলার পর পরই বলবে।
প্রশ্নঃ (১৯) আযানের দু’আর শেষে “ইন্নাকা লা তুখ্‌লিফুল মীআ’দ” বাক্যটি বৃদ্ধি করে পড়া কি ছহীহ্‌ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত?
উত্তরঃ হাদীছ শাস্ত্রের পন্ডিতদের মধ্যে এ বাক্যটি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, ইহা ছহীহ্‌ নয়। ইহা শায। কেননা আযানের দু’আর ব্যাপারে যারা হাদীছ বর্ণনা করেছেন তাদের অধিকাংশই এবাক্যটি উল্লেখ করেননি। বিশুদ্ধ হলে তো তা বাদ দেয়া বৈধ নয়। দু’আ ও প্রশংসার বাক্যে বা অনুরূপ ক্ষেত্রে কোন শব্দ ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। কেননা এটা দ্বারা ইবাদত সম্পন্ন করা হয়।
বিদ্বানদের মধ্যে অন্যরা বলেছেনঃ এর সনদ ছহীহ্‌। এটা বলা যায় এতে কোন বাধা নেই। শায়খ আবদুল আযীয বিন বায বলেছেন, হাদীছটির সনদ ছহীহ্‌। বায়হাক্বী ছহীহ্‌ সনদে এটা বর্ণনা করেছেন।
প্রশ্নঃ (২০) ইক্বামতের শব্দগুলো কি মুক্তাদীদেরকেও বলতে হবে?
উত্তরঃ ইক্বামত বলার সময় তার পিছে পিছে শব্দগুলো উচ্চারণ করার ব্যাপারে একটি হাদীছ আবু দাঊদে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তা যঈফ। যা গ্রহণের অযোগ্য। অতএব তা না বলাই ভাল।
প্রশ্নঃ (২১) ইক্বামতে ‘ক্বাদক্বামাতিছ্‌ ছালাত’ বলার সময় ‘আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা’ বলা কি ঠিক?
উত্তরঃ এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। মুআয্‌যিন যখন ইক্বামতে ‘ক্বাদক্বামাতিছ ছালাত’ বলত, তখন তিনি বলতেন, ‘আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা’। কিন্তু হাদীছটি যঈফ হওয়ার কারণে দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রশ্নঃ (২২) ছালাত আদায় করার জন্য উত্তম সময় কি? প্রথম সময়ই কি সর্বোত্তম?
উত্তরঃ শরীয়ত নির্ধারিত সময়ে ছালাত আদায় করাই ছালাতের পূর্ণাঙ্গরূপ। এজন্য ‘আল্লাহ্‌র কাছে কোন্‌ আমলটি উত্তম?’ এ প্রশ্নের জবাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “সময়মত ছালাত আদায় করা।” হাদীছে একথা বলা হয়নি ‘ছালাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা।’ কেননা কিছু ছালাত তো এমন আছে যা সময়ের আগেই আদায় করা সুন্নাত। আর কিছু ছালাত এমন আছে যা সময় হওয়ার পরও দেরী করে আদায় করা সুন্নাত। যেমন এশা ছালাত রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করে আদায় করা সুন্নাত। অতএব কোন নারী যদি প্রশ্ন করে, গৃহে অবস্থানের সময় যদি আমি এশা ছালাতের আযান শুনি, তবে আমার জন্য কোনটি উত্তম- আযানের পর পর এশা ছালাত আদায় করে নেয়া নাকি রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করা?
জবাবে বলব, তার জন্য উত্তম হচ্ছে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করে এশা ছালাত আদায় করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা রাতে বের হতে দেরী করলেন। এমনকি লোকেরা বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! নারী ও শিশুরা তো ঘুমিয়ে পড়লো। তারপর তিনি বের হয়ে ছালাত আদায় করলেন এবং বললেন, “এটাই এ নামাযের সময়। আমার উম্মতের উপর যদি কষ্টকর মনে না করতাম (তবে এশা ছালাতের জন্য এ সময়টাকে নির্ধারণ করে দিতাম।) অতএব নারী নিজ গৃহে অবস্থানের সময় তার জন্য উত্তম হচ্ছে দেরী করে এশা ছালাত আদায় করা।
অনুরূপভাবে একদল লোক যদি [সফরে] থাকে (যেখানে আশে পাশে কোন মসজিদ নেই।) তারা যদি প্রশ্ন করে এশা ছালাত কি আমরা দ্রুত পড়ে নিব নাকি দেরী করব? জবাবে বলবঃ তাদের জন্য উত্তম হচ্ছে, দেরী করা। অবশ্য দেরী করলে যদি কষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে আগেভাগে পড়ে নেয়াই উত্তম।
অন্যান্য ছালাতগুলোর ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে, আগেভাগে প্রথম ওয়াক্তেই ছালাত আদায় করা। ফজর, যোহর, আছর ও মাগরিব ছালাত সমূহ প্রথম ওয়াক্তে আদায় করবে। কিন্তু যদি দেরী করার কোন কারণ থাকে, তবে দেরী করাই উত্তম হবে।
দেরী করার কারণ যেমন, গ্রীষ্মকালে যখন প্রচন্ড তাপদাহ শুরু হয়, তখন যোহর ছালাত দেরী করে ঠান্ডা সময়ে আদায় করা উত্তম। অর্থাৎ- আছর ছালাতের কিছুক্ষণ আগে। কেননা আছরের ওয়াক্ত নিকটবর্তী হলে তাপমাত্রা কমে আসে। একথার দলীলঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
 “তাপমাত্রা প্রচন্ড হলে, যোহর ছালাতকে দেরী করে ঠান্ডার সময়ে আদায় করবে। কেননা প্রচন্ড গরম জাহান্নামের কঠিন প্রখরতা থেকে আসে।” নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে থাকাবস্থায় ছালাতের সময় হলে বেলাল আযান দেয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেন। তখন তিনি তাকে বলতেন “ঠান্ডা কর”। কিছুক্ষণ পর আবার আযানের জন্য উঠতেন। তিনি বলতেন, “ঠান্ডা কর।” (অর্থাৎ- রোদের তাপ কম হওয়ার অপেক্ষা কর।) কিছুক্ষণ পর বেলাল আযান দেয়ার জন্য দাঁড়াতেন। তখন তিনি তাকে আযান দেয়ার অনুমতি দিতেন।
দেরী করে ছালাত আদায় করা উত্তম হওয়ার আরো কারণ এমন হতে পারেঃ যেমন, প্রথম ওয়াক্তে ছালাত আদায় করলে জামাআত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় দেরী করে জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করাই উত্তম। যেমন একজন লোক মাঠে-ময়দানে কর্মরত অবস্থায় নামাযের সময় হয়ে গেছে। সে জানে, লোকালয়ে গেলে শেষ সময়ে জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করতে পারবে। এর জন্য কোনটি উত্তম- সময় হওয়ার সাথে সাথে একাকি ছালাত আদায় করে নেয়া, নাকি দেরী করে জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করা?
জবাবে বলব, এর জন্য উত্তম হচ্ছেঃ দেরী করে জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করা। বরং আমি বলি, জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করার জন্য দেরী করা ওয়াজিব।
প্রশ্নঃ (২৩) অজ্ঞতা বশতঃ সময় হওয়ার আগেই ছালাত আদায় করে নেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ সময় হওয়ার আগে ছালাত আদায় করলে তা বিশুদ্ধ হবে না। কেননা আল্লাহ্‌ বলেনঃ
 “নিশ্চয় নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত আদায় করা মু’মিনদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে।” (সূরা নিসাঃ ১০৩) তাছাড়া রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক ছালাতের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, “যোহরের সময় শুরু হবে- সূর্য যখন পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়বে…।” এভাবে প্রত্যেক ছালাতের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি সময় হওয়ার আগেই ছালাত আদায় করে নিবে তা ফরয হিসেবে আদায় হবে না। তবে তা নফল হয়ে যাবে। তাকে নফলের ছাওয়াব দেয়া হবে। অতএব সময় হওয়ার পর ঐ ছালাত তাকে পুনরায় পড়তে হবে। (আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞান রাখেন)
প্রশ্নঃ (২৪) ভুল এবং অজ্ঞতার কারণে ক্বাযা নামায সমূহের তারতীব বা ধারাবাহিকতা কি রহিত হয়ে যাবে?
উত্তরঃ মাসআলাটি মতভেদপূর্ণ। বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, ধারাবাহিকতা রহিত হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেন, “হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুল করি, তবে আমাদেরকে পাকড়াও করিও না।” (সূরা বাক্বারা- ২৮৬) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তা‘আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন আমার উম্মতের ভুলে যাওয়া ও ভুল ক্রমে করে ফেলা বিষয়ের পাপ এবং যে বিষয়ে তাকে জোর-জবরদসি- করা হয়।”
প্রশ্নঃ (২৫) এশা ছালাতের জন্য মসজিদে প্রবেশ করে মনে পড়ল, মাগরিব ছালাত বাকী আছে, এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃ মসজিদে প্রবেশ করে যদি দেখে যে, এশার নামায দাঁড়িয়ে পড়েছে। তারপর মনে পড়ল যে, মাগরিব ছালাত আদায় করে নি। তখন মাগরিব ছালাতের নিয়ত করে এশার জামাআতে শরীক হয়ে যাবে। ইমাম তৃতীয় রাকাআত শেষে চতুর্থ রাকাআতের জন্য দন্ডায়মান হলে- বসে পড়বে এবং পূর্ণ তাশাহুদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে ইমামের অপেক্ষা করবে। তারপর ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে। অবশ্য একাকী সালাম ফিরিয়ে ইমামের অবশিষ্ট নামাযে এশার নিয়তে শামিল হলেও কোন অসুবিধা নেই।
ইমামের সাথে নিয়তের ভিন্নতা হলে কোন অসুবিধা নেই। বিদ্বানদের মধ্যে এব্যাপারে মতভেদ থাকলেও এটিই বিশুদ্ধ মত।
আর যদি একাকী মাগরিব ছালাত আদায় করার পর এশার জামাতে শামিল হয়, তাতেও কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ (২৬) নিদ্রা বা ভুলে যাওয়ার কারণে যদি আমার এক বা ততোধিক ফরয ছালাত ছুটে যায়, তবে তা কাযা আদায় করার নিয়ম কি? প্রথমে কি বর্তমান সময়ের ছালাত আদায় করব তারপর কাযা নামায আদায় করব? নাকি আগে কাযা নামায সমূহ তারপর বর্তমান নামায আদায় করব?
উত্তরঃ ছুটে যাওয়া কাযা নামায সমূহ প্রথমে আদায় করবে। তারপর বর্তমান সময়ের নামায আদায় করবে। দেরী করা ঠিক হবে না। মানুষের মধ্যে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, কারো যদি একাধিক ফরয নামায ছুটে গিয়ে থাকে, তবে ঐ নামাযের সময় উপস্থিত হলে তার কাযা আদায় করবে। যেমন, আজ কারো ফজর নামায ছুটে গেছে। সে উক্ত নামায পরবর্তী দিন ফজরের সময়ে কাযা আদায় করবে। এটা মারাত্মক ভুল এবং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বাণী ও কর্মের বিরোধী।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীঃ
 “যে ব্যক্তি ছালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে অথবা ভুলে যায়, সে যেন ইহা আদায় করে যখনই স্মরণ হবে।” এখানে এরূপ বলা হয়নি, দ্বিতীয় দিন উহা আদায় করে নিবে।
খন্দক যুদ্ধের সময় নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কয়েকটি নামায ছুটে যায়। তখন তিনি বর্তমান সময়ের নামাযের আগেই উক্ত নামাযগুলোর কাযা আদায় করেন।
অতএব ছুটে যাওয়া নামাযের ক্বাযা প্রথমে আদায় করবে তারপর বর্তমান সময়ের নামায আদায় করবে। কিন্তু যদি ভুলক্রমে বা অজ্ঞতা বশতঃ ক্বাযা নামাযের আগে বর্তমান সময়ের নামায আদায় করে ফেলে তবে তা বিশুদ্ধ হবে। কেননা এটা তার ওযর।
উল্লেখ্য যে, ক্বাযা নামায সমূহ তিন ভাগে বিভক্তঃ
প্রথম প্রকারঃ দেরী করার ওযর দূর হয়ে গেলেই ক্বাযা আদায় করে নিবে। তা হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ক্ষেত্রে। অনুরূপভাবে বিতর ও সুন্নাত নামায সমূহ।
দ্বিতীয় প্রকারঃ যার পরিবর্তে অন্য নামায ক্বাযা হিসেবে আদায় করবে। তা হচ্ছে, জুমআর নামায। এ নামায ছুটে গেলে তার পরিবর্তে যোহর নামায আদায় করবে। কেউ যদি জুমআর দিন ইমামের দ্বিতীয় রাকাআতের রুকূ থেকে মাথা উঠানোর পর নামাযে শামিল হয়, তবে সে যোহর নামায আদায় করবে। ঐ অবস্থায় যোহরের নিয়ত করে ইমামের সাথে নামাযে শামিল হবে। অনুরূপভাবে কেউ যদি ইমামের সালামের পর আসে তবে সেও যোহর পড়বে।
তবে কেউ যদি দ্বিতীয় রাকাআতে ইমামের সাথে রুকূ পায়, তবে সে জুমআর নামাযই আদায় করবে। অর্থাৎ ইমাম সালাম ফিরালে এক রাকাআত আদায় করবে। অনেক লোক ইমামের দ্বিতীয় রাকাআতের রুকূ থেকে মাথা উঠানোর পর জুমআর নামাযে শামিল হয়। অতঃপর সালাম শেষে জুমআর নামায হিসেবে দু‘রাকাআত নামায আদায় করে। এটা ভুল। বরং তার জন্য উচিত হচ্ছে ইমামের সালাম ফেরানোর পর যোহর হিসেবে চার রাকাআত নামায আদায় করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
 “যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকআত পেয়ে গেল, সে পূর্ণ ছালাত পেয়ে গেল।” এদ্বারা বুঝা যায় কেউ যদি এর কম পায় সে নামায পেল না। তখন জুমআর কাযা আদায় করবে যোহর নামায আদায় করার মাধ্যমে। এই কারণে নারীরা বাড়িতে, মসজিদে আসতে অপারগ অসুস্থ ব্যক্তিরা যোহর নামায আদায় করবে। তারা জুমআ আদায় করবে না। তারা যদি জুমআ আদায়ও করে, তাদের নামায প্রত্যাখ্যাত হবে- বাতিল বলে গণ্য হবে।
তৃতীয় প্রকারঃ এমন নামায যা ছুটে যাওয়া সময়েই কাযা আদায় করতে হবে। আর তা হচ্ছে ঈদের নামায। ঈদের দিন সম্পর্কে জানা গেল না। কিন্তু সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়া পর জানা গেল যে আজকে ঈদের দিন ছিল। এক্ষেত্রে বিদ্বানগণ বলেন, পরবর্তী দিন সকাল বেলা উক্ত ঈদের নামাযের কাযা আদায় করতে হবে। কেননা ঈদের নামায আদায় করার সময় হচ্ছে সকাল বেলা।
প্রশ্নঃ (২৭) কোন কোন লোক এমন পাতলা পোশাকে ছালাত আদায় করে যে, বাইরে থেকে তার শরীরের রং বুঝা যায়। নীচে রানের আধা-আধি পর্যন্ত ছোট পায়জামা বা জাঙ্গিয়া পরিধান করে। পাতলা কাপড়ের কারণে রানের বাকী অর্ধেক অংশ স্পষ্টই দেখা যায়। এদের নামাযের বিধান কি?
উত্তরঃ এদের নামাযের বিধান ঐ লোকদের নামাযের মত যারা বিনা কাপড়ে শুধু খাট পায়জামা বা জাঙ্গিয়া পরিধান করে নামায পড়ে। কেননা এমন পাতলা পোশাক যা দ্বারা শরীরের সুষ্পষ্ট বিবরণ বুঝা যায়, সতরের স্থান সমূহ ঢেকে রাখে না তা পরিধান করা না করা উভয়ই সমান। তাই তাদের নামাযও বিশুদ্ধ নয়। এ ব্যাপারে উলামাদের দু’টি মত পাওয়া যায়। কিন্তু সঠিক মতটি হচ্ছে, তাদের নামাযও বিশুদ্ধ হবে না। ইমাম আহমাদ (রঃ)এর মাযহাবেও এ মতটি ব্যাপক প্রসিদ্ধ। কেননা নামাযে পুরুষের জন্য সর্ব নিম্ন সতর হচ্ছে- নাভীমূল থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা। এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র বাণীর বাস্তবায়ন হয়। আল্লাহ্‌ বলেনঃ
 “হে আদম সন্তান! প্রত্যেক নামাযের সময় তোমরা সৌন্দর্য গ্রহণ কর।” (সূরা আ’রাফঃ ৩১) অর্থাৎ পোশাক পরিধান কর। সুতরাং আবশ্যক হচ্ছে, তারা এমন পোশাক পরিধান করবে যা দ্বারা নাভীমূল থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা যায়। অথবা ছোট পায়জামা বা জাঙ্গিয়ার উপরে এমন ধরণের মোটা কাপড় পরিধান করবে, যাতে বাইরে থেকে শরীরের রং বুঝা না যায়।
প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়টি বিরাট ভুল ও ভয়ানক। এদের উপর আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করা। নামাযে এমন পোশাক পরিধান করার চেষ্ট করা- যা আবশ্যক সতর ঢেকে রাখে। আল্লাহ্‌ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি আমাদেরকে ও মুসলমান ভাইদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। তাঁর পছন্দনীয় ও রেজামন্দীর পথে চলার তাওফীক দিন। নিশ্চয় তিনি দানশীল ও সম্মানিত।
প্রশ্নঃ (২৮) অনেক মহিলা পোশাক পরিধান করে। যার সামনে, পিছনে ও উভয় পার্শ্বে খোলা থাকে। ফলে পায়ের অনেকাংশ উন্মুক্ত হয়ে যায়। এদের কথা হচ্ছে, আমরা তো শুধু নারীদের সামনেই এরূপ পোশাক পরিধান করি? এদের এই পোশাকের বিধান কি?
উত্তরঃ আমি যা সঠিক মনে করি তা হচ্ছে নারী এমন পোশাক পরিধান করবে, যা তার শরীরের সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখবে। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) উল্লেখ করেছেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর যুগে নারীরা এমন ধরণের কামিছ পরিধান করতেন যা পায়ের টাখনুদ্বয় এবং হাতের কব্জিদ্বয় পর্যন্ত প্রলম্বিত হত। অতএব নারীর উপর আবশ্যক হচ্ছে নিজ সম্ভ্রমের প্রতি যত্নবান হওয়া। এমন পোশাক পরিধান করা যা তার শরীরকে সম্পূর্ণরূপে ঢেকে দিবে। যাতে করে সে নিম্ন লিখিত এই হাদীছের আওতাভুক্ত না হয়। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
 “দু’ধরণের জাহান্নামী লোক। এদেরকে আমি এখনো দেখিনি। একদল, যাদের হাতে গরুর লেজের ন্যায় লাঠি থাকবে। লোকদেরকে তারা প্রহার করবে। দ্বিতীয় দল, এমন নারী যারা পোশাক পরিধান করা সত্বেও যেন উলঙ্গ থাকে। তারা লোকদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করে, অহংকারের সাথে হেলে-দুলে চলে। তাদের মাথাগুলো যেন হেলে যাওয়া উটের চুঁড়ার মত। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তার সুঘ্রাণও পাবে না। নিশ্চয় জান্নাতের সুঘ্রাণ এত এত দূর থেকে পাওয়া যায়।”
প্রশ্নঃ (২৯) নিক্বাব ও হাত মোজা পরিধান করে কি নারীর নামায আদায় করা বৈধ?
উত্তরঃ নারী যদি নিজ গৃহে অথবা এমন স্থানে নামায আদায় করে, যেখানে পরপুরুষ আগমণ করবে না। তবে তার জন্য শরীয়ত সম্মত হচ্ছে, মুখমন্ডল ও কব্জি পর্যন্ত হস্তদ্বয় খোলা রাখা। যাতে করে সিজদার সময় কপাল ও নাক এবং উভয় হাত মাটিতে রাখতে সক্ষম হয়।
কিন্তু সে যদি এমন স্থানে নামায পড়ে যেখানে বেগানা পরুষের আনাগোনা রয়েছে, তবে অবশ্যই মুখমন্ডল ঢেকে রাখবে। কেননা গাইর মাহরাম (যার সাথে বিবাহ সিদ্ধ এমন পর পুরুষের) সামনে মুখমন্ডল ঢেকে রাখা ওয়াজিব। তাদের সামনে মুখ খোলা জায়েয নয়। একথার দলীল হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্‌ এবং সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি। যা থেকে কোন মুমিন তো দূরে থাক সাধারণ বিবেকবানও ভিন্নমত পোষণ করতে পারে না।
হাত মোজা পরিধান করা শরীয়ত সম্মত। মহিলা ছাহাবীরা এরূপই করতেন। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীদের ইহরাম বাঁধার নিয়মের মধ্যে উল্লেখ করেছেনঃ “ইহরামকারী নারী নিক্বাব পরবে না হাত মোজাও পরিধান করবে না।” এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, তাদের সাধারণ অভ্যাস ছিল হাত মোজা পরিধান করা। অতএব পরপুরুষের উপস্থিতিতে হাত মোজা পরিধান করাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু মুখমন্ডল ঢেকে রাখবে দাঁড়ানো, বসা- সর্বাবস্থায়। তবে সিজদার সময় মুখমন্ডলের কাপড় সরিয়ে কপাল ও নাকের উপর সিজদা করবে।
প্রশ্নঃ (৩০) অজানা অবস্থায় কাপড়ে নাপাকি নিয়ে নামায আদায় করলে তার বিধান কি?
উত্তরঃ নামায সম্পন্ন করার পর জানা গেল যে, কাপড়ে নাপাকি ছিল। অথবা কাপড়ে নাপাকি থাকার কথা আগে থেকেই জানতো কিন্তু ভুলে গিয়েছে। নামায শেষ হওয়ার পর সেকথা স্মরণ হল। এ অবস্থায় তাদের নামায বিশুদ্ধ হবে। পুনরায় নামায ফিরিয়ে পড়ার দরকার নেই। কেননা সে তো এই নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়েছে না জেনে অথবা ভুলক্রমে। আর আল্লাহ্‌ তা‘আলা এরশাদ করেছেন, “হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুলক্রমে কোন কিছু করে ফেলি তবে আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না।” (সূরা বাক্বারা- ২৮৬) “আল্লাহ্‌ বলেন, আমি তাই করলাম।” অর্থাৎ- পাকড়াও করলাম না।
একদা রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুতা নিয়ে নামায আদায় করছিলেন, কিন্তু তাতে ছিল নাপাকি। তিনি তা জানতেন না। জিবরীল (আঃ) সে ব্যাপারে তাঁকে অবহিত করলে নামায চলাবস্থায় তিনি তা খুলে ফেললেন। এক্ষেত্রে তিনি নতুন করে নামায আদায় করেননি। এথেকে প্রমাণিত হয়, নামায অবস্থায় যদি নাপাকির ব্যাপারে জানতে পারে, তবে নামায অবস্থাতেই উহা বিদূরীত করার চেষ্টা করবে- যদি উহা বিদূরীত করতে গিয়ে সতর ঢেকে রাখার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা না হয়। অনুরূপভাবে যদি ভুলে যায় আর নামাযরত অবস্থায় তা স্মরণ হয়, তবে সতরের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা না হলে নামায না ভেঙ্গেই উক্ত কাপড় খুলে ফেলবে।
কিন্তু যদি নামায শেষ হওয়ার পর স্মরণ হয় বা নাপাকি সম্পর্কে জানতে পারে, তবে নামায বিশুদ্ধ হবে ফিরিয়ে পড়ার দরকার হবে না।
তবে কেউ যদি ভুলক্রমে ওযু না করে নামায আদায় করে। তারপর নামায শেষে স্মরণ হলো যে, সে বিনা ওযুতে নামায আদায় করেছে। তবে তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে, ওযু সম্পাদন করে নামায ফিরিয়ে পড়া। অনুরূপভাবে কেউ যদি অজ্ঞতা বশতঃ বা ভুলক্রমে শরীরে নাপাকি নিয়ে নামায আদায় করে, অতঃপর কাপড়ে বীর্য দেখে জানতে পারে বা নাপাকির কথা স্মরণ হয়, তবে যতগুলো নামায সে অপবিত্রাবস্থায় আদায় করেছিল সবগুলোই ফিরিয়ে পড়বে।
উভয় মাসআলার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, প্রথম মাসআলাটি- অর্থাৎ কাপড়ে নাপাকী নিয়ে নামায আদায় করা- হচ্ছে, নিষিদ্ধ বিষয়কে পরিত্যাগ করা। আর দ্বিতীয়টি- অর্থাৎ- বিনা ওযুতে বা শরীর নাপাক অবস্থায় নামায আদায় করা- হচ্ছে, নির্দেশিত বিষয় যা ওযু-গোসলের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করতে হয়। আর নির্দেশিত বিষয় অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। বিষয়টির উপস্থিতি ব্যতিরেকে ইবাদত বিশুদ্ধ হবে না। কিন্তু কাপড়ে নাপাকির বিষয়টি হচ্ছে না থাকা। অর্থাৎ- ওটার অনুপসি’তি ব্যতীত নামায বিশুদ্ধ হবে না। অতএব অজ্ঞতা বশতঃ বা ভুলক্রমে যদি তা উপস্থিত থাকে তবে কোন অসুবিধা নেই। কেননা নামাযের আবশ্যক কোন কিছু এখানে ছুটে যায়নি।
প্রশ্নঃ (৩১) টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করা যদি অহংকার বশতঃ হয় তবে তার শাস্তি কি? কিন্তু যদি অহংকার বশতঃ না হয় তবে তার শাস্তি কি? আবু বকরের হাদীছ দ্বারা যারা দলীল পেশ করে তাদের দাবীর কি জবাব?
উত্তরঃ লুঙ্গি, পায়জামা, প্যান্ট ইত্যাদি কাপড় যদি পায়ের কিঞ্চিৎ নিচে ঝুলিয়ে পরিধান করা হয় এবং তাঁর উদ্দেশ্য হয় অহংকার করা, তবে তাঁর শাস্তি হল – কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁর দিকে দৃষ্টি দিবেন না, তাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর যদি অহংকারের সাথে নয় বরং সাধারণভাবে কাপড় ঝুলিয়ে পরে, তবে তাঁর শাস্তি হল –তাঁর টাখনুদ্বয়কে জাহান্নামের আগুনে পোড়ানো হবে। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
 “কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তা’আলা তিনি ব্যাক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। সেই তিনি ব্যাক্তি হল –
১) পায়ের টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধানকারী,
২) দান করে খোটাদানকারী
৩) মিথ্যা শপথ করে পন্য বিক্রয়কারী “ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ
 “যে ব্যাক্তি অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করবে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না” এ বিধান ঐ ব্যাক্তির জন্য যে অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরে।
আর যে ব্যাক্তি অহংকারের উদ্দেশ্য ছাড়া কাপড় ঝুলিয়ে পরবে তাঁর ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
 “যে টাখনুদ্বয়ের নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা হত তা আগুনের মধ্যে জ্বলবে” এ হাদিসে দোযখের আগুনে টাখনু জ্বলার ব্যাপারে অহঙ্কারের কথা উল্লেখ নেই।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
 “মুমিম ব্যাক্তির কাপড় নেসফে সাক তথা অর্ধ হাঁটু পর্যন্ত, এতে কোন অসুবিধা নেই” (হাঁটু থেকে পায়ের তোলার মধ্যভাগকে নেসফে সাক বলা হয়) অন্য বর্ণনায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরুপ বলেনঃ “পায়ের টাখনু এবং হাটুর মধ্যবর্তী স্থানে কাপড় পরিধান করাতে কোন অসুবিধা নেই। যে টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা হবে তা জাহান্নামে যাবে, এবং যে ব্যাক্তি অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরবে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না”।
অনেকে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করে এবং যুক্তি দেখায় যে আমি তো অহংকার বশতঃ কাপড় টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরিনাই, সতরাং এতে তেমন অসুবিধা নেই। উল্লেখিত হাদিসগুলি থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এ ব্যাক্তির যুক্তি সম্পূর্ণ অসাড়।
অতএব অহকারের উদ্দেশ্য ব্যাতিত এমনিই সাধারণভাবে কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরলেই জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। আর তাঁর সাথে যদি অহংকার যুক্ত হয় তবে তাঁর শাস্তি আরও কঠিন, তা  হল – আল্লাহ্‌ তাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাঁর দিকে তাকাবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
আবু বকর (রাঃ) এর হাদীছ দ্বারা যারা দলীল পেশ করতে চায় দু’দিক থেকে তাদের যুক্তি খন্ডনঃ
প্রথম কথাঃ আবু বকর (রাঃ) বলেছেন, আমার কাপড়ের এক পার্শ্ব (অনিচ্ছাকৃত) ঝুলে পড়ে কিন্তু আমি তা বারবার উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি।” অতএব তিনি তো ইচ্ছাকৃত একাজ করতেন না। বরং তাঁর শরীর অধিক ক্ষীণ হওয়ার কারণে অনিচ্ছাকৃত কাপড় ঝুলে যেত। তাছাড়া তিনি তা উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু যারা কাপড় ঝুলিয়ে পরে এবং ধারণা করে যে তারা অহংকার করে না, তারা তো ইচ্ছাকৃত একাজ করে। অতএব তাদের ক্ষেত্রে আমরা বলব, অহংকারের উদ্দেশ্য ব্যতীত ইচ্ছাকৃত কাপড় ঝুলিয়ে পরলে তার টাখনু জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। যেমনটি আবু হুরায়রার হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। আর যদি অহংকার বশতঃ হয় তবে তার শাস্তি হচ্ছে,  আল্লাহ্‌ তাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাঁর দিকে তাকাবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
দ্বিতীয় কথাঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই আবু বকর (রাঃ)কে পরিশুদ্ধ করেছেন এবং সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি সেই সকল লোকদের অন্তর্ভুক্ত নন, যারা অহংকার বশতঃ একাজ করে থাকে। অতএব বর্তমানে এরা কি নবীজীর পক্ষ থেকে এরূপ সচ্চরিত্রের সনদ ও তাঁর সাক্ষ্য লাভ করেছে? কিন্তু শয়তান প্রবৃত্তির অনুসারী লোকদেরকে কুরআন্তসুন্নাহ্‌ থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ উক্তি সমূহকে খেয়াল-খুশির উপর ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধু করে। তখন তারা বিভ্রান্ত হয়। আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে পরিচালিত করে থাকেন।
প্রশ্নঃ (৩২) এক ব্যক্তি নামায সম্পন্ন করার পর জানল যে, সে ‘জুনুব’ অপবিত্র অবস্থায় ছিল, অর্থাৎ তার উপর গোসল ফরয ছিল। এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃ যে কোন মানুষ নামায আদায় করার পর যদি জানতে পারে যে, সে ছোট নাপাকী বা বড় নাপাকীতে লিপ্ত ছিল। তথা ওযু বা গোসল ফরয ছিল। তবে তার উপর আবশ্যক হচ্ছে পবিত্রতা অর্জন করে উক্ত নামায পুনরায় আদায় করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
 “পবিত্রতা ব্যতীত কোন নামায কবূল করা হবে না।”
প্রশ্নঃ (৩৩) ছালাতরত অবস্থায় নাক থেকে রক্ত বের হলে কি করবে?
উত্তরঃ নাক থেকে রক্ত বের হওয়া ওযু ভঙ্গের কারণ নয়। চাই রক্ত কম বের হোক বা বেশী। অনুরূপভাবে দু’রাস্তা (পেশাব-পায়খানার রাস্তা) ছাড়া শরীরের অন্য যে কোন স্থান থেকে কোন কিছু বের হলে ওযু ভঙ্গ হবে না। যেমন বমী, পুঁজ প্রভৃতি। চাই তা কম হোক বা বেশী হোক ওযু ভঙ্গ হবে না। কেননা এগুলোর ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কোন হাদীছ ছহীহ্‌ প্রমাণিত হয়নি।
আসল হচ্ছে পবিত্রতা। এই পবিত্রতা প্রমাণিত হয়েছে শরঈ দলীলের ভিত্তিতে। আর যা শরঈ দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় তা খন্ডন করার জন্য শরঈ দলীল প্রয়োজন। কিন্তু দু’টি রাস্তা ব্যতীত শরীরের অন্য স্থান থেকে কোন কিছু বের হলে, ওযু ভঙ্গের কোন শরঈ দলীল নেই। অতএব নাক থেকে রক্ত বের হলে বা বমী হলে ওযু ভঙ্গ হবে না। কম হোক বা বেশী হোক।
কিন্তু যেহেতু এ অবস্থায় বিনয়ের সাথে ছালাত আদায় করা দুস্কর হয়ে পড়ে, এজন্য নামায থেকে বের হতে কোন বাধা নেই। অনুরূপভাবে নামায যদি মসজিদের মধ্যে হয় আর নাকের রক্ত বা বমি পড়ে মসজিদের পরিচ্ছন্নতা বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে মসজিদ থেকে বের হওয়া ওয়াজিব। কিন্তু অল্প রক্ত কাপড়ে পড়লে কাপড় নাপাক হবে না।
প্রশ্নঃ (৩৪) কোন মসিজদে কবর থাকলে সেখানে নামায আদায় করার হুকুম কি?
উত্তরঃ কবর সংশ্লিষ্ট মসজিদে নামায আদায় করা দু’ভাগে বিভক্তঃ
প্রথম প্রকারঃ প্রথমে কবর ছিল। পরবর্তীতে তাকে কেন্দ্র করে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ওয়াজিব হচ্ছে এই মসজিদ পরিত্যাগ করা; বরং মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা। যদি না করা হয় তবে মুসলিম শাসকের উপর আবশ্যক হচ্ছে উক্ত মসজিদ ধ্বংস করে ফেলা।
দ্বিতীয় প্রকারঃ প্রথমে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। পরে সেখানে কোন মৃতকে দাফন করা হয়েছে। তখন ওয়াজিব হচ্ছে, কবর খনন করে মৃত ব্যক্তি বা তার হাড়-হাড্ডি সেখান থেকে উত্তোলন করে, মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা। এই মসজিদে শর্ত সাপেক্ষে ছালাত আদায় করা জায়েয। আর তা হচ্ছে, কবর যেন মসজিদের সম্মুখভাগে না হয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের দিকে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
কেউ প্রশ্ন করতে পারে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কবর তো মসজিদের মধ্যে? এর জবাব কি?
এর জবাব হচ্ছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর মৃত্যুর পূর্বেই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। একথা সবার জানা যে, তাঁকে মসজিদের মধ্যে দাফন করা হয়নি; বরং মসজিদ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা স্থান, তাঁর নিজ গৃহে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে ৮৮ হিঃ সনে খলীফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক তার অধিনস্ত মদীনার আমীর ওমর বিন আবদুল আযীযকে পত্র মারফত নির্দেশ প্রদান করেন, মসজিদে নববী ভেঙ্গে পূণঃনির্মাণ করার সময় যেন উম্মুল মু’মেনীন তথা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্ত্রীদের গৃহগুলোকে মসজিদের আওতার মধ্যে নিয়ে আসা হয়। তখন ওমর বিন আবদুল আযীয মদীনার নেতৃস্থানীয় লোক এবং ফিক্বাহবিদদেরকে একত্রিত করে তাঁদের সামনে খলীফার পত্র পড়ে শোনান। বিষয়টি তাদের কাছে খুবই কঠিন মনে হয়। তাঁরা বললেন, কবর ও গৃহগুলোকে বর্তমান অবস্থাতেই রেখে দেয়া উচিত। উপদেশ গ্রহণ করার জন্য এটাই সর্বাধিক সঠিক উপায়। বর্ণিত আছে যে, সাঈদ বিন মুসাইয়্যেব আয়েশা (রাঃ)এর গৃহ তথা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কবর শরীফকে মসজিদের মধ্যে শামিল করার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে বাধা প্রদান করেন। কেননা তিনি আশংকা করছিলেন যে, এই কবরকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হতে পারে। যা হাদীছের ভাষায় নিষিদ্ধ। বিষয়টি ওমর লিখে পাঠালেন খলীফা ওয়ালিদের কাছে। কিন্তু ওয়ালিদ তার নির্দেশই বাস্তবায়ন করার আদেশে অটল রইলেন। ফলে বাধ্য হয়ে ওমর খলীফার নির্দেশ মোতাবেক কবরকে মসজিদের মধ্যে শামিল করে ফেললেন।
অতএব আপনি দেখলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কবর মূলতঃ মসজিদের মধ্যে দেয়া হয়নি। আর কবরের উপর মসজিদও বানানো হয়নি। সুতরাং যারা মসজিদে দাফন করা বা কবরের উপর মসজিদ তৈরীর বৈধতার পক্ষে কথা বলে তাদের কোন দলীল নেই। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়েছে তিনি বলেন:
 “ইহুদী ও খৃষ্টানদের প্রতি আল্লাহ্‌র লা’নত (অভিসম্পাত), তারা তাদের নবীদের কবর সমূহকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছে।”
রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুমূর্ষু অবস্থায় ইহুদী খৃষ্টানদের কার্যকলাপ থেকে কঠিনভাবে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে উপরোক্ত বাণী পেশ করেন। উম্মে সালামা (রাঃ) হাবশায় হিজরত করে খৃষ্টানদের গীর্জা বা উপাসনালয়ে স্থাপিত বহু মূর্তী দেখেছিলেন। বিষয়টি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন:
 “ওরা এমন জাতি, তাদের মধ্যে কোন নেক বান্দা বা সৎলোক মৃত্যু বরণ করলে তার কবরের উপর তারা মসজিদ তৈরী করত এবং ঐ মূর্তিগুলো স্থাপন করত। ওরা আল্লাহ্‌র কাছে সৃষ্টির মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট।” আবদুল্লাহ্‌ বিন মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন, “সর্বাধিক নিকৃষ্ট লোক হচ্ছে তারা, যাদের জীবদ্দশায় ক্বিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। আর যারা কবর সমূহকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছে।” ইমাম আহমাদ উত্তম সনদে হাদীছটি বর্ণনা করেন।
অতএব মু’মিন কখনই ইহুদী-খৃষ্টানদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সন্তুষ্ট হবে না এবং সৃষ্টি কুলের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট হবে না।
প্রশ্নঃ (৩৫) টয়লেটের ছাদের উপর ছালাত আদায় করার হুকুম কি? নাপাক উচ্ছিষ্ট একত্রিত করা হয় এমন ঘরের ছাদে ছালাত আদায় করার বিধান কি?
উত্তরঃ বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচলিত টয়লেট সমূহের ছাদের উপর ছালাত আদায় করতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা আমাদের টয়লেট সমূহ বিশেষভাবে আলাদা করে বানানো হয়না। এর ছাদ অন্যান্য ঘরের সাথে সংশ্লিষ্ট করেই বানানো হয়। অনুরূপভাবে নাপাক উচ্ছিষ্ট একত্রিত করা হয় এ রকম ঘরের ছাদে ছালাত আদায় করতেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “যমিনের সকল স্থান আমার জন্য মসজিদ তথা ছালাত আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম করে দেয়া হয়েছে।”
প্রশ্নঃ (৩৬) মসজিদুল হারামের যমিনে (Floor) জুতা নিয়ে হাঁটার বিধান কি?
উত্তরঃ মসজিদুল হারামের যমীনে (Floor) জুতা নিয়ে হাঁটা-হাঁটি করা উচিত নয়। কেননা যারা মসজিদের সম্মান বুঝে না এতে তারা সুযোগ পাবে। ফলে জুতায় পানি বা ময়লা নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করবে এবং মসজিদের পরিচ্ছন্নতা নষ্ট করে ফেলবে। বিদ্বানদের নিকট মূলনীতি হচ্ছেঃ “কল্যাণ ও ক্ষতির সংঘর্ষ যদি বরাবর হয় অথবা ক্ষতির আশংকা বেশী হয়; তখন কল্যাণের দিকে যাওয়ার চেয়ে ক্ষতিকর বিষয়কে প্রতিহত করা অধিক উত্তম।”
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের পর কা’বা শরীফ ভেঙ্গে, ইবরাহীম (আঃ)এর ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু লোকেরা কুফরী ছেড়ে ইসলামে নতুন প্রবেশ করার কারণে, তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে, তাই তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন। তিনি আয়েশা (রাঃ)কে বললেন,
 “তোমার স্বজাতির লোকেরা যদি কুফরী ছেড়ে ইসলামে নতুন প্রবেশকারী না হতো, তবে আমি এই কা’বা ঘর ভেঙ্গে (ইবরাহীমের ভিত্তির উপর) পূণঃনির্মাণ করতাম। ঘরের দু’টি দরজা রাখতাম, একটিতে লোকেরা প্রবেশ করতো অন্যটি দ্বারা বের হতো।”
প্রশ্নঃ (৩৭) ক্বিবলা থেকে সামান্য সরে গিয়ে নামায আদায় করলে কি নামায ফিরিয়ে পড়তে হবে?
উত্তরঃ ক্বিবলার দিক থেকে সামান্য সরে গেলে নামাযে কোন ক্ষতি হবে না। এ হুকুম ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে মসজিদে হারামের বাইরে থাকে। কেননা মসজিদে হারামে ছালাত আদায়কারীর ক্বিবলা হচ্ছে মূল কা’বা। এজন্যই উলামাগণ বলেছেনঃ কা’বা শরীফ অবলোকন করা যার জন্য সম্ভব হবে, তার জন্য ওয়াজিব হচ্ছে মূল কা’বার সম্মুখবর্তী হওয়া। সুতরাং এধরণের ব্যক্তি যদি মূল কা’বার সম্মুখবর্তী না হয়ে শুধু ক্বিবলার দিকে মুখ ফেরায় তবে তার নামায বিশুদ্ধ হবে না। আল্লাহ্‌ বলেনঃ
 “আপনার মুখমন্ডল মসজিদে হারামের দিকে ফেরান। তোমরা যেখানেই থাকনা কেন সেদিকেই তোমাদের মুখমন্ডল ফেরাবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৪৪)
কিন্তু মানুষ দূরে থাকার কারণে যদি কা’বা দেখতে না পায়- যদিও সে মক্কায় থাকে- তবে তার জন্য ওয়াজিব হচ্ছে ক্বিবলার দিকে মুখ ফেরানো। এ ক্ষেত্রে মূল ক্বিবলা থেকে সামান্য সরে গেলে কোন অসুবিধা হবে না। এ কারণে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনাবাসীদের বলেন, “পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে ক্বিবলা।” কেননা মদীনার অধিবাসীগণ দক্ষিণ দিকে মুখ করে নামায আদায় করেন। সুতরাং তা যদি পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝামাঝি স্থানে হয়, তবেই ক্বিবলা ঠিক হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে যারা পশ্চিম দিকে নামায পড়ে, তাদের ক্বিবলা হচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণের মাঝামাঝি স্থানে।
প্রশ্নঃ (৩৮) একদল লোক ক্বিবলামুখী না হয়েই ছালাত আদায় করে নিয়েছে। তাদের এই নামাযের কি হবে?
উত্তরঃ এ মাসআলাটির দু’টি অবস্থা হতে পারেঃ
প্রথম অবস্থাঃ তারা এমন স্থানে ছিল, যেখানে থেকে ক্বিবলা কোন দিকে জানা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। যেমন তারা সফরে ছিল এবং আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। ফলে ক্বিবলা কোন দিকে বুঝতে পারে না। এ অবস্থায় অনুমান ও গবেষণা করে ক্বিবলা নির্ধারণ করবে। নামায শেষে যদি জানা যায় তাদের ক্বিবলা ঠিক ছিলনা, তবে কোন অসুবিধা নেই। কেননা তারা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় করেছে। আল্লাহ্‌ বলেন,“তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর।” (সূরা তাগাবুনঃ ১৬) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,“আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ে আদেশ করলে, সাধ্যানুযায়ী তোমরা তা বাস্তবায়ন করবে।” আল্লাহ্‌ তা’আলা বিশেষ করে এই মাসআলায় বলেন,
 “পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহ্‌র অধিকারে। তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও সেদিকেই আল্লাহ্‌র মুখমন্ডল রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সুপ্রশস্ত মহাজ্ঞানী।” (সূরা বাক্বারাঃ ১১৫)
দ্বিতীয় অবস্থাঃ তারা এমন স্থানে ছিল, কাউকে ক্বিবলা বিষয়ে প্রশ্ন করলেই সমাধান পেয়ে যেত। কিন্তু তারা উদাসীনতা দিয়েছে। তাদের জন্য আবশ্যক হচ্ছে এই নামায ফিরিয়ে পড়া। এই ভুলের কথা নামাযের সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে জানা যাক বা পরে। কেননা এক্ষেত্রে ক্বিবলা নির্ধারণ করতে তাদের ভূল হয়ে গেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে তারা ক্বিবলা ছেড়ে দেয়নি। কিন্তু তারা মানুষকে এব্যাপারে জিজ্ঞাসা না করে ভুল করেছে। অলসতা ও উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। তবে জানা উচিত ক্বিবলার দিক থেকে সামান্য সরে গেলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। ডান দিকে বা বাম দিকে সামান্য সরে  গেলে কোন অসুবিধা হবে না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনার অধিবাসীদের বলেন,“পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে ক্বিবলা।” অতএব যারা কা’বা থেকে উত্তর দিকে রয়েছে তাদেরকে আমরা বলবঃ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী স্থানে ক্বিবলা। অনুরূপ তাদের ক্ষেত্রে যারা দক্ষীণ দিকে থাকে। আর যারা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে থাকে, তাদের ক্বিবলা হচ্ছে উত্তর ও দক্ষীণ দিকের মধ্যবর্তী স্থানে। অতএব সামান্য বাঁকা হলে নামাযে কোন প্রভাব পড়বে না বা ক্ষতি হবেনা।
উল্লেখ্য যে, মসজিদুল হারামে যারা কা’বা ঘর প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম তাদের জন্য ওয়াজিব হচ্ছে মূল কা’বাকে সামনে রাখা। কেননা মূল কা’বা থেকে কিছুটা বাঁকা হয়ে দাঁড়ালে সে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালোনা। দেখা যায় অনেক লোক মসজিদুল হারামে দীর্ঘ কাতারে দাঁড়িয়ে পড়ে, অথচ মূল কা’বার সম্মুখবর্তী হয় না। নিশ্চিতভাবে এদের অনেকেই মূল কা’বা থেকে বাঁকা হয়ে দাঁড়ায়। এটা বিরাট ধরণের ভুল। এব্যাপারে সতর্ক হওয়া ওয়াজিব। উদাসীন হওয়া উচিত নয়। কেননা এভাবে নামায আদায় করলে ক্বিবলা ছাড়া নামায পড়া হবে। ফলে নামায বিশুদ্ধ হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত অনুপসি’ত রয়ে যাবে।
প্রশ্নঃ (৩৯) নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার বিধান কি?
উত্তরঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “কর্মের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে যা সে নিয়ত করবে।” (বুখারী ও মুসলিম) নিয়ত আরবী শব্দ যার অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা বা সংকল্প। নিয়তের স্থান হচ্ছে অন্তর। তা মুখে উচ্চারণ করার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি যখন ওযু করবেন তখন এটাই একটা নিয়ত। একজন বিবেকবান, সুস্থ মস্তিষ্ক, বাধ্য করা হয়নি এমন লোক কোন কাজ করবে আর সেখানে তার কোন নিয়ত বা ইচ্ছা থাকবে না এটা সম্ভব নয়। এজন্য কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, (নিয়ত ছাড়া কোন আমল করা যদি আল্লাহ্‌ আমাদের প্রতি আবশ্যক করতেন, তবে তা হতো সাধ্যাতিত কাজ চাপিয়ে দেয়ার অন্তর্গত।)
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ ব্যাপারে কোন দলীল প্রমাণিত নেই। না প্রমাণিত আছে ছাহাবায়ে কেরাম থেকে। যারা মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করে আপনি দেখবেন তারা হয় মূর্খ নতুবা কোন আলেম বা মুরব্বীর অন্ধানুসারী। মুখে নিয়ত পাঠকারীদের যুক্তি হচ্ছে, অন্তরের ইচ্ছার সাথে মুখের কথা ও কাজের মিলের জন্য নিয়ত পাঠ করা উচিত। কিন্তু তাদের এ যুক্তি অসাড়। একাজ শরীয়ত সম্মত হলে রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কথা বা কাজে উম্মতের সামনে তার বর্ণনা পাওয়া যেত। (আল্লাহ্‌ই তাওফীক দাতা)
প্রশ্নঃ (৪০) নফল আদায়কারী ব্যক্তির পিছনে ফরয নামায আদায় করার বিধান কি? যেমন তারাবীহ্‌র নামাযের ইমামের পিছনে এশা ছালাত আদায় করা?
উত্তরঃ তারাবীহ্‌র নামাযের ইমামের পিছনে এশা ছালাত আদায় করতে কোন অসুবিধা নেই। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন, কোন লোক যদি সফরে থাকে আর তথাকার ইমামকে নামাযের প্রথম থেকেই পায়, তবে তার সাথেই সালাম ফেরাবে। নতুবা ইমামের সালামের পর অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করবে।
প্রশ্নঃ (৪১) মুসাফির যদি স্থানীয় ইমামের শেষ দু’রাকাত নামাযে শরীক হয়। তবে কছরের নিয়ত করে উক্ত দু’রাকাআত শেষে ইমামের সাথে সালাম ফেরানো জায়েয হবে কি?
উত্তরঃ কোন মুসাফির যদি স্থানীয় ইমামের পিছনে নামাযে দন্ডায়মান হয়, তবে কছরের নিয়ত করা জায়েয হবে না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “ইমামের সাথে তোমরা যেটুকু ছালাত পাবে তা আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা সালামের পর পূর্ণ করবে।” অতএব মুসাফির যদি স্থানীয় ইমামের সাথে শেষ দু’রাকাআতে শামিল হয়, তবে ইমামের সালামের পর অবশিষ্ট দু’রাকআত পূর্ণ করা ওয়াজিব। (আল্লাহ্‌ অধিক জ্ঞান রাখেন)
প্রশ্নঃ (৪২) ছালাতে শামিল হওয়ার জন্য দ্রুত পায়ে হেঁটে আসার বিধান কি?
উত্তরঃ ছালাতে শামিল হওয়ার জন্য দ্রুত পায়ে হেঁটে আসা নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
“যখন নামাযের ইক্বামত প্রদান করা হয় তখন তাড়াহুড়া করে নামাযের দিকে আসবে না। বরং হেঁটে হেঁটে ধীর স্থির এবং শান্তভাবে আগমন করবে। অতঃপর নামাযের যতটুকু অংশ পাবে আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা (পরে) পূর্ণ করে নিবে।” অবশ্য কোন কোন বিদ্বান বলেন, ইমাম যদি রুকূতে থাকে তখন রুকূ পাওয়ার জন্য সামান্য জোরে হেঁটে যাওয়াতে কোন দোষ নেই। কিন্তু লোকেরা খুব জোরে হাঁটে বা দৌড় শুরু করে। এটাই নিষিদ্ধ। কিন্তু হাদীছের প্রতি আমল করে ধীর-স্থির ও প্রশান্তির সাথে হেঁটে যাওয়াই উত্তম- যদিও এক বা ততোধিক রাকাআত ছুটে যায়।
প্রশ্নঃ (৪৩) জামাআত চলাবস্থায় ইমামের সাথে রাকাআত ধরার জন্য দ্রুত চলার বিধান কি?
উত্তরঃ মসজিদে প্রবেশ করে আপনি ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেলে তাড়াহুড়া করে দ্রুত হেঁটে বা দৌড়িয়ে নামাযে শামিল হবেন না। কাতারে মিলিত না হয়ে একাকীও নামাযে দাঁড়াবেন না। কেননা জনৈক ছাহাবী আবু বাকরা (রাঃ) একাকী নামাযে দাঁড়ানোতে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছিলেন, زَادَكَ اللَّهُ حِرْصًا وَلَا تَعُدْ “আল্লাহ্‌ তোমার আগ্রহ বৃদ্ধি করে দিন। তুমি এরূপ আর কখনো করিও না।”
প্রশ্নঃ (৪৪) মুছল্লীদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে এমনভাবে উচ্চৈঃস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করার বিধান কি?
উত্তরঃ মসজিদে বসে উচ্চৈঃস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করলে যদি মুছল্লীদের বা শিক্ষার্থীদের বা অন্য কুরআন পাঠকের মনোযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়, তবে তা হারাম। কেননা এব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আল বায়াযী (ফারওয়া বিন আমর) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে এসে দেখেন লোকেরা নামায আদায় করছে কিন্তু কুরআন পাঠের কন্ঠ উঁচু শোনা যাচ্ছিল। তখন তিনি বললেন,
“একজন মুছল্লী নামাযে আপন পালনকর্তার সাথে গোপনে কথা বলে। অতএব সে যেন লক্ষ্য করে কি বলছে তার পালনকর্তাকে। আর পরস্পরে উঁচু স্বরে কুরআন পাঠ করবে না।”  অনুরূপভাবে হাদীছটি আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে আবু দাঊদও বর্ণনা করেন।
প্রশ্নঃ (৪৫) অনেক মানুষ ইক্বামতের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করে নামায শুরু হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায আদায় করে না। এরূপ করার বিধান কি?
উত্তরঃ নামায শুরু হওয়ার সময় যদি অতি অল্প থাকে তবে দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করতে কোন দোষ নেই। কিন্তু ইমাম কখন আসবেন তা যদি জানা না থাকে তবে উত্তম হচ্ছে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায শুরু করে দেয়া। তারপর ইমাম যদি এসে পড়েন আর আপনি প্রথম রাকাআতে থাকেন তবে তা ছেড়ে দিয়ে জামাআতে শামিল হবেন। আর দ্বিতীয় রাকাআতে থাকলে হালকাভাবে তা পূর্ণ করে নিবেন।
প্রশ্নঃ (৪৬) মসজিদুল হারামে দেখা যায় অনেক পুরুষ ফরয নামাযের জামাআতে নারীদের পিছনেই কাতার বন্দী হয়। তাদের নামায কি বিশুদ্ধ হবে? তাদের জন্য আপনি কিছু নসীহত করবেন কি?
উত্তরঃ নারীদের কাতারের পিছনে পুরুষদের কাতার বেঁধে নামায আদায় করার ব্যাপারে বিদ্বানগণ বলেন এতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু তা সুন্নাতের বিপরীত। কেননা সুন্নাত হচ্ছে, নারীরা পুরুষদের পিছনে দাঁড়াবে। তবে মসজিদুল হারামে বর্তমান সময়ে প্রচন্ড ভীড় দেখা যায়; ফলে নারীরা কাতারবন্দী হওয়ার পর পুরুষেরা মসজিদে এসে যেখানে জায়গা পায় সেখানেই কাতারবন্দী হয়। তখন অনেক সময় নারীদের কাতারের পিছনে বাধ্য হয়ে তাদেরকে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু প্রতিটি মুছল্লীর জন্য আবশ্যক হচ্ছে সাধ্যানুযায়ী নারীদের পিছনে কাতারবন্দী হওয়া থেকে বিরত থাকা। কেননা এতে পুরুষদের জন্য ফিতনার সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব পুরুষ নারীর পিছনে নামায আদায় করা থেকে সতর্ক থাকবে। যদিও ফিক্বাহ্‌বিদদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ কাজ জায়েয। আর নারীদেরও উচিত দেখে শুনে পুরুষদের দাঁড়ানোর স্থান থেকে দূরে অন্য কোথাও দাঁড়ানো।
প্রশ্নঃ (৪৭) কাতার থেকে শিশু-কিশোরদেরকে সরিয়ে দেয়া জায়েয কি?
উত্তরঃ কিশোর বা বালক যদি নামাযের কাতারে দন্ডায়মান হয়, তবে তাকে কাতার থেকে সরিয়ে দেয়া জায়েয হবে না। ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “কোন লোক যেন অন্য লোককে তার বসার স্থান থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে না বসে।” তাছাড়া এতে বালকের অধিকার হরণ করা হয়, তার অন্তরে দুঃখ দেয়া হয়, হতে পারে সে নামাযকে ঘৃণা করবে বা তার অন্তরে হিংসা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হবে।
শিশুদেরকে যদি কাতারের শেষে দাঁড় করানো হয়, তবে তারা তো একস্থানে সমবেত হয়ে হাসাহাসি ও খেলাধুলায় মত্ত হয়ে পড়বে। ফলে মুছল্লীদের নামাযের আরো ক্ষতি হবে। কিন্তু দু’জন বা ততোধিক যদি একই স্থানে দন্ডায়মান হয় তবে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য দু’জনের মাঝে বড়দের দাঁড়ানোতে কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ (৪৮) দু’স্তম্ভের মধ্যবর্তী স্থানে নামায আদায় করার বিধান কি?
উত্তরঃ কাতারে জায়গা থাকলে দু’স্তম্ভের মধ্যবর্তী স্থানে নামায আদায় করা জায়েয নয়। কেননা এ কারণে কাতার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু যদি স্থানের সংকুলান না হয় জায়গা না পাওয়া যায়, তবে দু’স্তম্ভের মধ্যবর্তী স্থানে নামায আদায় করতে কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ (৪৯) নারীদের কাতারের বিধান কি? তাদের জন্য উত্তম কাতার শেষেরটি এবং অনুত্তোম কাতার প্রথমটি একথাটি কি সর্বাবস্থায় নাকি একথা নারী-পুরুষের মধ্যবর্তী স্থানে কোন আড়াল না থাকলে?
উত্তরঃ নারী ও পুরুষ যদি একই স্থানে জামাআতবদ্ধ হয়ে নামাযে দাঁড়ায় তবে সেক্ষেত্রে নারীদের জন্য প্রথম কাতারের চেয়ে শেষের কাতার উত্তম। যেমনটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,خَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا  “নারীদের জন্য উত্তম কাতার হচ্ছে শেষেরগুলো আর অনুত্তোম কাতার হচ্ছে প্রথমগুলো।” এটা একারণেই যে, কাতার যত পিছন দিকে হবে ততই তা পুরুষদের থেকে দূরে হবে। আর যত আগের দিকে হবে ততই পুরুষদের নিকটবর্তী হবে। তাই তাদের কাতার পুরুষদের থেকে যতদূরে হবে ততই কল্যাণ জনক হবে। অবশ্য এটা একই মসজিদের ভিতরের কথা।
আর নারীদের নামাযের জন্য যদি স্বতন্ত্র স্থান নির্ধারণ করা থাকে- যেমনটি বর্তমানে অধিকাংশ মসজিদে দেখা যায়- তবে সেক্ষেত্রে পুরুষদের মত তাদের প্রথম কাতারই উত্তম।
প্রশ্নঃ (৫০) মসজিদের বাইরে সংশ্লিষ্ট রাস্তায় নামায আদায় করার বিধান কি?
উত্তরঃ মসজিদে যদি মুছল্লীদের সংকুলান না হয়, তবে বাইরে মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট রাস্তায় নামায পড়লে কোন অসুবিধা নেই। তবে ইমামের অনুসরণ করা ইমামের তাকবীর ধ্বনী শোনা আবশ্যক।
প্রশ্নঃ (৫১) কাতার সোজা করার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য কথা কি? মুছল্লীদের পরস্পর কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলানো কি আবশ্যক?
উত্তরঃ কাতার সোজা করার ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে পায়ের গোড়ালীসমূহ বরাবর করে নেয়া, পায়ের আঙ্গুলসমূহ বরাবর করা আবশ্যক নয়। কেননা শরীরের ভিত্তি থাকে পায়ের গোড়ালীর উপর। আর পায়ের সাইজ অনুযায়ী আঙ্গুলের বিভিন্নতা হয়ে থাকে। কোন পা দীর্ঘ থাকে কোনটা খাট। সুতরাং কাতার বরাবর ও সোজা করা গোড়ালী মিলানো ছাড়া অন্য কোন ভাবে সম্ভব নয়।
আর পায়ের গোড়ালীসমূহ পরস্পরে মিলিত করা নিঃসন্দেহে ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) থেকে প্রমাণিত রয়েছে। তাঁরা কাতার বন্দী হওয়ার সময় গোড়ালী সমূহ একজন অপরজনের সাথে মিলিত করে দিতেন। অর্থাৎ- প্রকৃতভাবে কাতার সোজা ও বরাবর করার জন্য তাঁদের একজন পার্শ্ববর্তী মুছল্লীর গোড়ালীর সাথে গোড়ালী মিলিত করে দাঁড়াতেন। কিন্তু কাতার বন্দীর ক্ষেত্রে এটাই আসল উদ্দেশ্য নয়; বরং এ কাজ কাতার বরাবর সোজা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করার জন্য করতে হয়। একারণে কাতারে দাঁড়ানোর পর উচিত হচ্ছে প্রত্যেকে পার্শবর্তী মুছল্লীর পায়ের সাথে পা মিলিয়ে নিবে, যাতে নিশ্চিত হতে পারে যে, কাতার সোজা হয়েছে। পূর্ণ নামাযে এভাবে পরস্পরের পাগুলোকে মিলিয়ে রাখা আবশ্যক নয়।
অনেকে বাড়াবাড়ি করে পার্শ্ববর্তী মুছল্লীর পায়ের সাথে গোড়ালী মিলাতে গিয়ে নিজের দু’পায়ের মাঝে অতিরিক্ত ফাঁক সৃষ্টি করে ফেলে। এটা যেমন সুন্নাত বিরোধী হয় অনুরূপভাবে পরস্পরের কাঁধ থেকেও বহু দূরে চলে যায়। উদ্দেশ্য হচ্ছে গোড়ালী ও কাঁধ সমূহ বরাবর থাকা।
প্রশ্নঃ (৫২) সালাতে চারটি স্থান ব্যতীত অন্য কোন স্থানে হাত উত্তোলনের কথা কি প্রমাণিত আছে? অনুরূপভাবে জানাযা ও দু’ঈদের ছালাতের তাকবীরের সময় হাত উত্তোলন করার কি বিধান? (নামাযে রফউল ইয়াদাইন বা হাত উত্তোলনের বিধান কি?)
উত্তরঃ সালাতে যে চার স্থানে রফউল ইয়াদাইন বা হাত উত্তোলন করা সুন্নাত তা জেনে নেয়া আবশ্যক। ১) সালাতের প্রারম্ভে তাকবীর তাহরিমা বলার সময় ২) রুকূতে যাওয়ার সময় ৩) রুকূ থেকে উঠার সময় ৪) প্রথম তাশাহুদ শেষ করে তৃতীয় রাকাআতে উঠার সময়। এচারটি স্থানের বিষয়ে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিশুদ্ধভাবে বর্ণনা এসেছে। ইবনু ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’কাঁধ বরাবর হাত দু’টিকে উত্তোলন (রফউল ইয়াদাইন) করতেন্ত যখন নামায শুরু করতেন, যখন রুকূর জন্য তাকবীর দিতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ হাত দু’টিকে উঠাতেন এবং বলতেন ‘সামিয়াল্লাহুলিমান হামীদাহ্‌ রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদু।’ তিনি বলেন, সিজদার সময় তিনি এরূপ করতেন না।”
ইবনু ওমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর ক্রিয়াকলাপ সমূহ অতি সুক্ষ্ণভাবে অনুসন্ধান করতেন ও তার অনুসরণ করতেন। তিনি তাঁর সালাতের নিয়ম-কানুনগুলো অনুসন্ধান করে যা দেখেছেন তা ছিল- তাকবীরে তাহরিমা, রুকূ করা, রুকূ থেকে উঠা এবং প্রথম তাশাহুদ থেকে উঠার সময় হাত উত্তোলন করা। আর তিনি বলেছেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ হাত উঠানো সিজদার সময় করতেন না। এরকম বলা ঠিক হবে না যে, হয়তো ইবনু ওমার সিজদার সময় হাত উঠানোর অবস্থাগুলো দেখেন নি বা সে সময় সতর্ক ছিলেন না। কেননা তিনি কিছু কিছু স্থানের বর্ণনা দেয়ার পর বলেছেন এরূপ তিনি সিজদর সময় করতেন না। এদ্বারা বুঝা যায় তিনি নিশ্চিত হয়েই এ কথা বলেছেন সন্দেহ বা সংশয়ের উপর ভিত্তি করে নয়।
আর জানাযা ও দু’ঈদের প্রত্যেক তাকবীরে রফউল ইয়াদাইন বা হাত উত্তোলন করা শরীয়ত সম্মত।
প্রশ্নঃ (৫৩) ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেলে কয়টি তাকবীর দিতে হবে?
উত্তরঃ ইমামের রুকূ অবস্থায় কোন মানুষ যদি সালাতে শামিল হয় তবে তাকবীরে তাহরিমা দিয়ে সরাসরি রুকূ করবে। এঅবস্থায় রুকূর জন্য তাকবীর প্রদান করা সুন্নাত- ওয়াজিব নয়। তবে রুকূর জন্য আলাদা তাকবীর প্রদান করা উত্তম। তাকবীর না দিলেও কোন অসুবিধা নেই। এখানে কয়েকটি অবস্থা লক্ষণীয়ঃ
প্রথম অবস্থাঃ ইমাম রুকূ থেকে উঠার আগে মুক্তাদী রুকূ করেছে এব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। তাহলেই এটা রাক্‌আত বলে গণ্য হবে। এ অবস্থায় সূরা ফাতিহা পাঠ করা রহিত হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় অবস্থাঃ রুকূতে যাওয়ার আগেই ইমাম রুকূ হতে উঠে গেছেন এব্যাপারে নিশ্চিত হবে। এঅবস্থায় তার ঐ রাকাআত ছুটে গেল। তাকে তা সালামের পর আদায় করতে হবে।
তৃতীয় অবস্থাঃ মুক্তাদি ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেয়েছে কি না বা সে রুকূতে যাওয়ার আগেই ইমাম উঠে গিয়েছেন কি না এব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ বা সন্দেহে থাকবে। তার ধারণা যদি প্রবল হয় যে সে রুকূ অবস্থাতেই ইমামকে পেয়েছে, তবে সে রাকাআত পেয়ে গেল। আর ধারণা যদি প্রবল হয় যে, ইমামকে রুকূ অবস্থায় পায়নি, তবে তার রাকাআত ছুটে গেল। এ অবস্থায় যদি তার নামাযের কোন কিছু ছুটে যায় তবে সালামের পর সে সাহু সিজদা করবে। আর যদি কোন কিছু না ছুটে থাকে- অর্থাৎ সন্দেহযুক্ত রাকাআতটি প্রথম রাকাআত হয়, কিন্তু তার প্রবল ধারণা যে, সে রুকূ পেয়েছে। এঅবস্থায় সাহু সিজদা রহিত হয়ে যাবে। কেননা তার নামায ইমামের নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট। তার নামাযের কোন অংশ যদি ছুটে না যায় তবে ইমাম তার সাহু সিজদার ভার গ্রহণ করবে।
সন্দেহের আরেকটি অবস্থা রয়েছে। তা হচ্ছে, রুকূ পেল কি না সে ব্যাপারে মুক্তাদী সন্দেহে থাকবে- কোনো দিক তার কাছে প্রাধান্য পাবে না। সে অবস্থায় নিশ্চিত বিষয়ের উপর ভিত্তি করবে। অর্থাৎ- রুকূ পায়নি। অতঃপর শেষে এই ছুটে যাওয়া রাকাআত আদায় করে সালাম ফেরানোর পূর্বে সাহু সিজদা করবে।
এখানে আরেকটি মাসআলা উল্লেখ করা জরূরী মনে করছি। ইমাম রুকূতে গেলে অনেক লোক (যারা পরে নামাযে শামিল হচ্ছে) জোরে জোরে গলা খোকরানী দেয়, কেউ কেউ বলে (ইন্নাল্লাহা মা‘আছ্‌ ছাবেরীন), কখনো জোরে জোরে পা ফেলে। যাতে করে ইমাম একটু দেরী করে রুকূ থেকে উঠেন। এ সমস্ত কাজ সুন্নাতের খেলাফ। এতে ইমাম এবং মুক্তাদীদের নামাযে একাগ্রতা নষ্ট হয়। আবার ইমাম রুকূ অবস্থায় থাকলে অনেকে দ্রুত বরং খুব জোরে দৌড়িয়ে নামাযে আসে। অথচ বিষয়টি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “যখন সালাতের ইকামত প্রদান করা হয় তখন তাড়াহুড়া করে নামাযের দিকে আসবে না। বরং হেঁটে হেঁটে ধীর-স্তীরতা এবং প্রশান্তির সাথে আগমণ করবে। অতঃপর সালাতের যতটুকু অংশ পাবে আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা (পরে) পূর্ণ করে নিবে।”
প্রশ্নঃ (৫৪) ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে তা কি বুকের উপর বা অন্তরের (Heart) উপর রাখবে নাকি নাভীর নীচে রাখবে? হাত বাঁধার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মাঝে কোন পার্থক্য আছে কি?
উত্তরঃ সালাতে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখা সুন্নাত। সাহাল বিন সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
লোকেরা নির্দেশিত হত যে, নামাযে ডান হাতকে বাম হাতের বাহুর উপর স্থাপন করবে।” কিন্তু হাত দু’টিকে কোন স্থানে রাখবে? বিশুদ্ধতম মত হচ্ছে, হাত দু’টি বুকের উপর রাখবে। ওয়ায়েল বিন হুজ্‌র্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
 “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর স্থাপন করতেন।” হাদীছটিতে সামান্য দুর্বলতা থাকলেও এক্ষেত্রে বর্ণিত অন্যান্য হাদীছের তুলনায় এটিই সর্বাধিক শক্তিশালী। আর বুকের বাম সাইডে অন্তরের উপর হাত বাঁধা একটি ভিত্তিহীন বিদআত। নাভীর নীচে হাত বাঁধার ব্যাপারে আলী (রাঃ) থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু তা দুর্বল। ওয়ায়েল বিন হুজুর বর্ণিত হাদীছটি অধিক শক্তিশালী।
সালাতের নিয়ম-পদ্ধতিতে নারী-পুরুষের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। সমস্ত বিধানে নারী-পুরুষ বরাবর। দলীল ছাড়া উভয়ের বিধি-নিষেধের ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য করা বৈধ নয়। এই সুন্নাতের ক্ষেত্রে নারী বুকের উপর হাত বাঁধবে বা তার বিপরীত কোন কাজ ছহীহ্‌ সুন্নাত বা হাদীছ থেকে আমার জানা নেই।
প্রশ্নঃ (৫৫) স্বশব্দে ‘বিসমিল্লাহ্‌…” পাঠ করার বিধান কি?
উত্তরঃ সঠিক কথা হচ্ছে, স্বশব্দে ‘বিসমিল্লাহ্‌..’ পাঠ করা উচিত নয়। সুন্নাত হচ্ছে নীরবে পাঠ করা। কেননা ‘বিসমিল্লাহ্‌..’ সূরা ফাতিহার অংশ নয়। কিন্তু কখনো যদি স্বশব্দে তা পাঠ করে, তাতে কোন অসুবিধা নেই। বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, বরং কখনো স্বশব্দে ‘বিসমিল্লাহ্‌..’ পাঠ করা উচিত। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত হয়েছে, “তিনি কখনো স্বশব্দে ‘বিসমিল্লাহ্‌..’ পাঠ করতেন।”
কিন্তু বিশুদ্ধভাবে যা প্রমাণিত হয়েছে তা হচ্ছে, “তিনি উহা স্বশব্দে পাঠ করতেন না।” আর এটাই উত্তম। তবে যদি কখনো বিসমিল্লাহ্‌ স্বশব্দে পাঠ করে এতে কোন অসুবিধা হবে না।
প্রশ্নঃ (৫৬) দু’আ ইসে-ফ্‌তাহ্‌ বা সালাত শুরুর দু’আ (ছানা) পাঠ করার হুকুম কি?
উত্তরঃ সালাত শুরুর ছানা ফরয-সুন্নাত সকল ছালাতে পাঠ করা সুন্নাত- ওয়াজিব নয়।
উচিত হচ্ছে মুছল্লী সালাত শুরুর দু’আ সমূহ থেকে একবার এটা একবার ওটা পাঠ করবে। যাতে করে সকল সুন্নাতের উপর আমল করা সম্ভব হয়। একটি দু’আ ছাড়া আর কিছু জানা না থাকলেও কোন অসুবিধা নেই। বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের দু’আ পাঠ করেছেন। যেমন, নামাযের শুরুতে, তাশাহুদে, নামাযের পরের যিকির। এধরণের বিভিন্নতার উদ্দেশ্য হচ্ছে উম্মতের জন্য সহজ করা। এর দু’টি উপকারিতা আছেঃ
প্রথম উপকারিতাঃ মানুষ সর্বদা এক ধরণের দু’আ পাঠ করবে না। কেননা একটা বিষয় সর্বদা করতে থাকলে সেটা সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। ফলে অনেক সময় উদাসীনতা বা অলসতা থাকলেও অভ্যাস বশতঃ তা হয়ে যায়। তখন অন্তরের উপস্থিতি সেখানে দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু দু’আগুলো থেকে যদি কখনো এটা কখনো ওটা পাঠ করে তবে অন্তর উপস্থিত থাকে। যা বলে তা বুঝার দরকার পড়ে।
দ্বিতীয় উপকারিতাঃ উম্মতের জন্য সহজ করা। যার জন্য যেটা সহজ হবে সেটাই পাঠ করবে। সময় ও প্রয়োজন মোতাবেক কখনো এটা কখনো ওটা পাঠ করবে।
প্রশ্নঃ (৫৭) ‘আমীন’ বলা কি সুন্নাত?
উত্তরঃ হ্যাঁ। আমীন বলা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ্‌। বিশেষ করে ইমাম যখন আমীন বলেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
 “ইমাম যখন আমীন বলেন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা যার আমীন বলা ফেরেস্তাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বের গুনাহ্‌ ক্ষমা করা হবে।”
ইমাম ও মুক্তাদীর আমীন বলা একই সময়ে হতে হবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “ইমাম যখন আমীন বলেন তোমরাও আমীন বলবে।”
প্রশ্নঃ (৫৮) (ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন) পাঠ করার সময় ‘আমরা আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চাই’। এরূপ কথা বলার বিধান কি?
উত্তরঃ মুক্তাদীর জন্য আবশ্যক হচ্ছে ইমামের পড়া চুপ করে শোনা। ইমাম যখন সূরা ফাতিহা শেষ করে আমীন বলবেন সেও আমীন বলবে। এই আমীন বলা ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠ করার সময় কোন দু’আ ইত্যাদি বলা থেকে যথেষ্ট হবে।
প্রশ্নঃ (৫৯) নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করার বিধান কি?
উত্তরঃ সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার ব্যাপারে বিদ্বানদের থেকে নিম্নরূপ মত পাওয়া যায়।
প্রথম মতঃ সালাতে কখনই সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব নয়। স্বরব, নীরব কোন নামাযেই ইমাম, মুক্তাদী, একাকী- কারো জন্য পাঠ করা ওয়াজিব নয়। ওয়াজিব হচ্ছে কুরআন থেকে সহজ যে কোন কিছু পাঠ করা। তাদের দলীল হচ্ছেঃ আল্লাহ্‌ বলেন,
 “অতএব তোমরা কুরআন থেকে সহজ কোন কিছু পাঠ কর।” (সূরা মুযাম্মিল- ২০)
তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায শেখাতে গিয়ে গ্রাম্য লোকটিকে বলেছিলেন,
“কুরআন থেকে তোমার জন্য সহজ হয় এমন কিছু পাঠ করবে।”
দ্বিতীয় মতঃ স্বরব, নীরব সকল নামাযে ইমাম, মুক্তাদী, একাকী- সবার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রুকন বা অবশ্য কর্তব্য। অনুরূপভাবে মাসবূক এবং নামাযের প্রথম থেকে জামাআতে শামিল ব্যক্তির জন্যও রুকন।
তৃতীয় মতঃ ইমাম ও একাকী ব্যক্তির জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রুকন। কিন্তু স্বরব বা নীরব কোন নামাযেই মুক্তাদীর জন্য ওয়াজিব নয়।
চতুর্থ মতঃ ইমাম ও একাকী ব্যক্তির জন্য স্বরব বা নীরব নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করা রুকন। কিন্তু মুক্তাদীর জন্য নীরবের নামাযে রুকন স্বরব নামাযে নয়।
আমার মতে প্রাধান্যযোগ্য মতটি হচ্ছেঃ স্বরব, নীরব সকল নামাযে ইমাম, মুক্তাদী, একাকী- সবার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রুকন বা ফরয। তবে মাসবূক যদি ইমামের রুকূর সময় নামাযে শামিল হয়, তবে সূরা ফাতিহা পাঠ করা রহিত হয়ে যাবে। একথার দলীল হচ্ছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাধারণ বাণীঃ তিনি বলেন,
“যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না তার সালাত হবে না।”
তিনি আরো বলেন,
“যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করবে অথচ তাতে উম্মুল কুরআন সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না তার ছালাত অসম্পূর্ণ- রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কথাটি তিনবার বলেছেন।”
অর্থাৎ- তার সালাত বাতিল।
উবাদা বিন ছামেত বর্ণিত হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা ফজরের নামায শেষ করে ছাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেনঃ
 “তোমরা কি ইমামের পিছনে কোন কিছু পাঠ কর? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! দ্রুত পাঠ করে থাকি। তিনি বললেন, তোমরা এরূপ করো না। তবে উম্মুল কুরআন সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি উহা পাঠ করবে না তার নামায হবে না।”
স্বশব্দের নামাযের ক্ষেত্রে এটি সুস্পষ্ট দলীল যে, সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হবে না।
কিন্তু মাসবূকের জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রহিত হয়ে যাবে। একথার দলীল হচ্ছেঃ আবু বাকরা (রাঃ) এর হাদীছ। তিনি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে রুকূ অবস্থায় পেলেন। তখন দ্রুতগতিতে কাতারে পৌঁছার আগেই তিনি রুকূ করলেন। এরপর ঐ অবস্থায় হেঁটে হেঁটে কাতারে প্রবেশ করলেন। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায শেষ করে জিজ্ঞেস করলেন, কে এরূপ করেছে? আবু বাকরা বললেন, আমি হে আল্লাহ্‌র রাসূল! নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ
 “আল্লাহ্‌ তোমার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন। তবে এরূপ আর কখনো করিও না।”
এ হাদীছে দেখা যায় আবু বাকরা যে রাকাআতটি ছুটে যাওয়ার ভয়ে তাড়াহুড়া করলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ঐ রাকাআতটি পুনরায় আদায় করার আদেশ করলেন না। এটা ওয়াজিব হলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে আদেশ করতেন। যেমনটি আদেশ করেছিলেন ঐ ব্যক্তিকে যে কিনা তাড়াহুড়া করে নামায আদায় করেছিল, আর নামাযের রুকন ওয়াজিব যথাযথভাবে আদায় করছিল না। তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নামায ফিরিয়ে পড়ার আদেশ করেছিলেন।
মাসবূকের সূরা ফাতিহা পাঠ রহিত হওয়ার যুক্তিগত দলীল হচ্ছেঃ এই মাসবূক তো কিরআত পাঠ করার জন্য দাঁড়ানোর সুযোগই পায়নি। অতএব সুযোগ না পেলে তার আবশ্যকতাও রহিত হয়ে যাবে। যেমন হাত কাটা ব্যক্তি ওযু করার সময় তার হাতের কাটা অংশের পরিবর্তে বাহু ধৌত করবে না। বরং ধৌত করার স্থান উপস্থিত না থাকার কারণে এ ফরয রহিত হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেল তার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রহিত হয়ে যাবে। কেননা ক্বিরআত পাঠ করার জন্য দন্ডায়মান হওয়ার সুযোগই সে পায়নি। আর ইমামের অনুসরণ করতে গিয়ে এখানে দন্ডায়মান হওয়াও রহিত হয়ে যাবে।
আমার দৃষ্টিতে এমতটিই সর্বাধিক বিশুদ্ধ। পূর্বোল্লেখিত উবাদা বিন ছামেত (রাঃ) এর হাদীছটি- (ফজরের নামাযে ক্বিরআত পাঠ সংক্রান্ত হাদীছটি) যদি না থাকতো, তবে স্বরবে কিরাআত বিশিষ্ট নামাযে মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক হতো না। আর সেটাই হতো প্রাধান্যযোগ্য মত। কেননা নীরবে শ্রবণকারী পাঠকের মতই ছাওয়াবের অধিকারী হয়। এজন্যই আল্লাহ্‌ তা‘আলা মূসা (আঃ) কে বলেনঃ
 “তোমাদের উভয়ের দু’আ কবূল করা হয়েছে।” (সূরা ইউনূসঃ ৮৯)
অথচ সে সময় দু’আ শুধু মাত্র মূসা (আঃ) এককভাবে করেছিলেন। আল্লাহ্‌ বলেনঃ
 “আর মূসা বললেন, হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় আপনি ফেরাউন ও তার সভাসদদের প্রদান করেছো দুনিয়ার জীবনের চাকচিক্য, সৌন্দর্য ও সম্পদ। হে আমাদের পালনকর্তা! ওরা আপনার পথ থেকে বিভ্রান্ত করে। হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের সম্পদ নিশ্চিহ্ন করে দিন, তাদের হৃদয় কঠোর করে দিন, যাতে তারা ঈমান না আনে। যাতে করে তারা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ করতে পারে।” (সূরা ইউনূসঃ ৮৮)
এখানে কি আল্লাহ্‌ হারূনের দু’আর কথা উল্লেখ করলেন? উত্তরঃ না। তারপরও আল্লাহ্‌ বললেনঃ “তোমাদের উভয়ের দু’আ কবূল করা হয়েছে।” বিদ্বানগণ বলেনঃ এক ব্যক্তি দু’আ করা সত্বেও দ্বিবচন শব্দ এখানে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, মূসা (আঃ) দু’আ করছিলেন আর হারূন (আঃ) আমীন বলছিলেন।
আর আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ:
“যার ইমাম রয়েছে, তার ইমামের ক্বিরাতই তার ক্বিরাত (হিসেবে যথেষ্ট)।” কিন্তু হাদীছের সনদ যঈফ (দুর্বল)।
কেননা তা মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। যেমন হাফেয ইবনু কাছীর তাঁর তাফসীর গ্রনে’র ভূমিকায় বলেছেন। আরো কয়েকটি সূত্রে হাদীছটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু কোনটিই ছহীহ্‌ নয়। তারপরও হাদীছটি দ্বারা যারা দলীল নিয়ে থাকে তারা সাধারণভাবে বলেন না যে, কোন অবস্থাতেই সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে না। বরং তাদের মধ্যে অনেকে বলেনঃ নীরবের নামাযে মুক্তাদীকে অবশ্যই সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
যদি প্রশ্ন করা হয়ঃ ইমাম যদি না থামেন (অর্থাৎ- ফাতিহা শেষ করার পর মুক্তাদীদের ফাতিহা পাঠ করার সুযোগ দেয়ার জন্য কিছু সময় নিরব না থাকেন।) তবে মুক্তাদী কখন সূরা ফাতিহা পাঠ করবে?
উত্তর হচ্ছেঃ ইমামের পড়ার সময়ই মুক্তাদী পড়বে। কেননা ছাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর পড়ার সাথে সাথেই পড়তেন। তখন তিনি তাদেরকে বলেনঃ
 “তোমরা উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) ছাড়া অন্য কিছু পাঠ করবে না। কেননা যে ব্যক্তি তা পাঠ করবে না তার নামায হবে না।”
প্রশ্নঃ (৬০) মুক্তাদী কখন সূরা ফাতিহা পাঠ করবে? ইমামের ফাতিহা পাঠ করার সময়? নাকি ইমাম সূরা ফাতিহা শেষ করে অন্য সূরা পাঠ শুরু করলে?
উত্তরঃ উত্তম হচ্ছে ইমামের ফাতিহা পাঠ শেষ হওয়ার পর মুক্তাদী ফাতিহা পাঠ করবে। কেননা ফরয ক্বিরআত পাঠ করার সময় নীরব থাকা রুকন। ইমামের পড়ার সময় যদি মুক্তাদীও পাঠ করে তবে রুকন আদায় করার সময় নীরব থাকা হল না। আর ফাতিহা পাঠ করার পর যখন ইমাম অন্য ক্বিরআত শুরু করবে, সে সময় তা শোনার জন্য নীরব থাকা মুস্তাহাব। অতএব উত্তম হল, ফাতিহা পাঠ করার সময় নীরব থাকবে। নামাযের সুন্নাত ক্বিরআত পাঠের সময় নীরব থাকার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অন্যতম রুকন সূরা ফাতিহা পাঠ করার সময় নীরব থেকে তা শ্রবণ করা। তাছাড়া ইমামের ‘ওয়ালায্‌ যওয়াল্লীন’ বলার সময় মুক্তাদীও (‘ওয়ালায্‌ যওয়াল্লীন’) পাঠ করলে তাঁর সাথে ‘আমীন’ বলা সম্ভব হবে না।
প্রশ্নঃ (৬১) নামায বা কুরআন তেলাওয়াতের সময় কিভাবে অন্তর নরম করা যায়?
উত্তরঃ বিনয়-নম্রতা নামাযের অন্তঃসার ও আসল প্রাণ। এর অর্থ হচ্ছে, অন্তরের উপস্থিতি। ডানে-বামে অন্তরকে নিয়ে ঘুরাফেরা না করা। বিনয়-নম্রতা বিরোধী কোন কিছু যদি মানুষের অন্তরে আসে তবে সে পাঠ করবে ‘আঊযুবিল্লাহি মিনাশ্‌ শায়তানির রাজীম।’ যেমনটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেছিলেন। সন্দেহ নেই শয়তান মানুষের সমস্ত ইবাদত বিশেষ করে সর্বোত্তম ইবাদত ছালাত বিনষ্ট করার জন্য সর্বাধিক আগ্রহী। নামাযরত ব্যক্তির কাছে শয়তান আগমণ করে বলে, উমুক কথা স্মরণ কর, উমুক কথা স্মরণ কর। তাকে এমন কিছুর খেয়ালে নিয়ে যায় যাতে কোন উপকার নেই। আবার নামায শেষ হলে এসমস্ত খেয়াল শেষ হয়ে যায়।
অতএব মানুষের জন্য আবশ্যক হচ্ছে, নামাযের মত গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ ইবাদত আদায় করার জন্য সবচেয়ে বেশী মনযোগী ও বিনয়ী হওয়া। কেননা সে তো মহান আল্লাহ্‌র সামনে দন্ডায়মান। তাঁর সাথে গোপনে কথা বলছে। মনে করবে সে যেন মহান আল্লাহকে দেখছে বা এতটুকু মনে করবে যে, আল্লাহ্‌ তাকে দেখছেন। আর যখনই শয়তানের কুমন্ত্রনা ও বদখেয়াল মনের দুয়ারে উঁকি দিতে চাইবে তখনই আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাইবে। পাঠ করবেঃ ‘আঊযুবিল্লাহি মিনাশ্‌ শায়তানির রাজীম।’
প্রশ্নঃ (৬২) সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর কিছুক্ষণ চুপ থাকার বিধান কি?
উত্তরঃ ফিক্বাহবিদদের মধ্যে থেকে কেউ মত প্রকাশ করেছেন যে, ইমাম সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর অন্য সূরা শুরু করার পূর্বে কিছুক্ষণ নীরব থাকবেন, যাতে করে মুক্তাদী ফাতিহা পাঠ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। তবে তা হচ্ছে সামান্য বিরতী নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য এবং এই ফাঁকে মুক্তাদি সূরা ফাতিহা পাঠ করা আরম্ভ করে দিবে। এরপর ইমাম অন্য ক্বিরাত শুরু করে দিলেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা সূরা ফাতিহা পাঠ করা মুক্তাদীর জন্য রুকন। কিন্তু ইমামের ক্বিরআত শ্রবণ করা তার জন্য মুস্তাহাব। মোটকথা নীরব থাকার মুহূর্তটি অতি সামান্য দীর্ঘ নয়।
প্রশ্নঃ (৬৩) ফজরের এক রাকাআত নামায ছুটে গেলে বাকী রাকাআতটি কি স্বশব্দে না নীরবে পাঠ করবে?
উত্তরঃ বিষয়টি তার ইচ্ছাধীন। কিন্তু উত্তম হচ্ছে নীরব কন্ঠে পাঠ করা। কেননা জোর কন্ঠে পাঠ করলে হয়তো অন্য মুছল্লীদের নামাযে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
প্রশ্নঃ (৬৪) রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামাযের পদ্ধতির উপর লিখিত একটি পুস্তকে পড়লাম, রুকূ থেকে উঠার পর আবার হাত বাঁধা একটি বিভ্রান্তকর বিদআত। এক্ষেত্রে বিশুদ্ধ কথা কি?
উত্তরঃ যে বিষয়ে ইজতেহাদ বা গবেষণার অবকাশ রয়েছে সে বিষয়ে কাউকে সুন্নাতের পরিপন্থী বিদআতী বলতে আমি সংকোচ বোধ করি। এটা উচিত নয়। যারা রুকূ থেকে উঠে আবার হাত বাঁধেন, তারা নিজেদের মতের পক্ষে সুন্নাত থেকে দলীল উপস্থাপন করে থাকেন। এবিষয়টি কারো গবেষণার বিরোধী হলে তাকে সরাসরি বিদআতী বলা খুবই কঠিন বিষয়। এধরণের বিষয়ে বিদআত শব্দ উচ্চারণ করা করো পক্ষে উচিত নয়। কেননা যে সকল বিষয়ে গবেষণার অবকাশ থাকে এবং হতে পারে একথা সত্য অথবা ঐকথা সত্য, তাতে পরস্পরে বিদআতের অপবাদ দিতে শুরু করলে মুসলিম সমাজে বিচ্ছেদ সৃষ্টি হবে, একে অপরে ঘৃণা ও বিদ্বেষের সূচনা হবে। ইসলামের শত্রুরা তা নিয়ে হাসাহাসি করবে।
আমার মতে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছেঃ রুকূ থেকে উঠার পর ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে বুকে স্থাপন করা একটি সুন্নাত। দলীলঃ সাহাল বিন সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “লোকেরা নির্দেশিত হত যে, নামাযে ডান হাতকে বাম হাতের বাহুর উপর স্থাপন করবে।”
গভীরভাবে লক্ষ্য করে ও অনুসন্ধান করে হাদীছ থেকে দলীল গ্রহণ করার যুক্তি সমূহ হচ্ছেঃ যদি প্রশ্ন করা হয়ঃ সিজদার সময় হাত দু’টি কোথায় থাকবে? উত্তরঃ যমীনের উপর। প্রশ্নঃ রুকূ অবস্থায় হাত কোথায় থাকবে? উত্তরঃ হাঁটুদ্বয়ের উপর। প্রশ্নঃ বসাবস্থায় হাত দু’টি কোথায়? উত্তরঃ রানের উপর।
থাকল দাঁড়ানো অবস্থার কথা। রুকূর আগে ও পরে উভয় অবস্থা হচ্ছে দাঁড়ানো। আর তা এই বাণীর অন্তর্ভুক্ত হবেঃ “লোকেরা নির্দেশিত হত যে, নামাযে ডান হাতকে বাম হাতের বাহুর উপর স্থাপন করবে।” অর্থাৎ- রুকূর আগে বা পরে যে কোন অবস্থার দাঁড়ানোতে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখতে হবে। এটাই হচ্ছে সত্য, সুন্নাতে নববী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যার প্রমাণ বহণ করে।
মোটকথা উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তর দু’টি পয়েন্টে বিভক্তঃ
প্রথমঃ কারো পক্ষে উচিত নয় বিদআত শব্দটি এমন কাজে ব্যবহার করা যেখানে ইজতেহাদ বা গবেষণার অবকাশ রয়েছে।
দ্বিতীয়ঃ বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে রুকূ থেকে উঠে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখাটা সুন্নাত, বিদআত নয়। উল্লেখিত সাহাল বিন সা’দের হাদীছ হচ্ছে এর দলীল। কিন্তু এ অবস্থার ব্যতিক্রম হচ্ছে রুকূ, সিজদা ও বসাবস্থা। কেননা এসকল স্থানে কিভাবে হাত রাখতে হবে হাদীছে তার বিশদ বিবরণ এসেছে। (আল্লাহই অধিক জ্ঞান রাখেন)
প্রশ্নঃ (৬৫) ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদু’ বলার পর ‘ওয়াশ্‌ শুক্‌রু’ শব্দ বৃদ্ধি করে বলার বিধান কি?
উত্তরঃ নিঃসন্দেহে শুধুমাত্র প্রমাণিত দু’আ ও যিকির সমূহ পাঠ করাই উত্তম। নিজের পক্ষ থেকে কোন শব্দ বৃদ্ধি না করা। রুকূ থেকে মাথা উঠানোর পর (সামিআল্লাহুলিমান হামীদাহ্‌ বলে) পাঠ করবেঃ ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদু’। ‘ওয়াশ্‌ শুক্‌রু’ শব্দ বৃদ্ধি করা জায়েয নয়। কেননা এ ব্যাপারে কোন দলীল নেই।
উল্লেখ্য যে, এ সময় চার ধরণের শব্দ প্রমাণিত হয়েছেঃ
১)  ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদু’
২) ‘রাব্বানা লাকাল হামদু’
৩) ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদু’
৪)  ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদু’
এগুলো সবটাই এক সাথে বলবে না; বরং কোন নামাযে এটা কোন নামাযে ওটা পাঠ করবে।
প্রশ্নঃ (৬৬) সিজদায় যাওয়ার পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ সিজদায় যাওয়ার জন্য প্রথমে হাঁটু রাখবে তারপর হাত রাখবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন প্রথমে হাত রেখে সিজদায় যেতে। তিনি এরশাদ করেনঃ
 “তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন সিজদা করবে, সে যেন উটের মত করে না বসে। সে যেন হাঁটু রাখার পূর্বে হাত রাখে।”  হাদীছের বাক্য এরূপ।
কিন্তু হাদীছটি সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব। হাদীছের প্রথম বাক্যঃ ‘উট যেভাবে বসে সেভাবে যেন না বসে।’ নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে সিজদার পদ্ধতিতে। কেননা (الكاف) তাশবীহ্‌ বা তুলনা বুঝানোর জন্য নেয়া হয়েছে। যে অঙ্গের উপর সিজদা করতে হবে তার নিষেধাজ্ঞা উদ্দেশ্য করা হয়নি। এখানে যদি অঙ্গ উদ্দেশ্য হতো তবে এরূপ বলতে হতো, (উট যে অঙ্গের উপর বসে সেরূপ যেন না বসে।) তখন আমরা বলতে পারি, হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসবে না। কেননা উট হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসে থাকে। কিন্তু নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথা বলেননিঃ (উট যে অঙ্গের উপর বসে সেরূপ যেন না বসে।) কিন্তু তিনি বলেছেনঃ ‘উট যেভাবে বসে সেভাবে যেন না বসে।’ অতএব এখানে বসার পদ্ধতির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, অঙ্গের উপর নয়।
একারণে ইমাম ইবনুল ক্বাইয়েম দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে, হাদীছের শেষাংশ বর্ণনাকারীর নিকট উল্টা হয়ে গেছে। শেষাংশটা এরূপ বলা হয়েছেঃ ‘হাঁটু রাখার পূর্বে হাত রাখবে।’ কিন্তু সঠিক বাক্য এরূপ হবেঃ ‘হাত রাখার আগে হাঁটু রাখবে।’ কেননা হাঁটুর আগে হাত রাখলেই উটের মত বসা হল। উট বসার সময় প্রথমে তার হাত দু’টো রাখে। উটের বসা প্রত্যক্ষ করলে এটাই প্রমাণিত হবে।
অতএব হাদীছের প্রথমাংশের সাথে শেষাংশের সামঞ্জস্য করতে চাইলে বলতে হবেঃ ‘হাত রাখার আগে হাঁটু রাখবে।’
জনৈক বিদ্বান এব্যাপারে প্রবন্ধ রচনা করেছেন। নাম দিয়েছেনঃ এতে তিনি খুব সুন্দরভাবে উপকারী কথা লিখেছেন।
সুতরাং সিজদায় যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশিত সুন্নাত হচ্ছেঃ দু’হাত রাখার আগে হাঁটু রাখবে।
প্রশ্নঃ (৬৭) সামনের দিকে অতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে সিজদা করার বিধান কি?
উত্তরঃ সিজদার সময় সামনের দিকে অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া সুন্নাতের পরিপন্থী। রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামাযের বর্ণনা যারা করেছেন, তাদের কেউ একথা বলেননি যে, তিনি সিজদার সময় পৃষ্ঠদেশ অতিরিক্ত লম্বা করতেন। যেমনটি তিনি রুকূর সময় পিঠ অতিরিক্ত চওড়া করতেন। শরীয়ত সম্মত সুন্নাত হচ্ছে, সিজদার সময় দু’রান থেকে পেট আলাদা রাখবে এবং উঁচু করবে। কিন্তু সামনের দিকে অতিরিক্ত বেড়ে যাবে না। যেমনটি অনেকে করে থাকে।
প্রশ্নঃ(৬৮) সিজদার কারণে কপালে দাগ পড়া কি নেক লোকের পরিচয়?
উত্তরঃ সিজদার কারণে কপালে দাগ পড়া নেক লোকের আলামত নয়। বরং তা হচ্ছে মুখমন্ডলের নূর, হৃদয়ের উন্মুক্ততা ও প্রশস্ততা, উত্তম চরিত্র প্রভৃতি। সিজদার কারণে কপালে যে দাগ পড়ে তা অনেক সময় চামড়া নরম হওয়ার কারণে- যারা শুধু মাত্র ফরয নামায আদায় করে- তাদেরও হয়ে থাকে। অথচ অনেক লোক অধিকহারে এবং দীর্ঘ সিজদা করেও তাদের কপালে এ চিহ্ন দেখা যায় না।
প্রশ্নঃ (৬৯) দু’সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানোর বিধান কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ছহীহ্‌ মুসলিমে একটি হাদীছ রয়েছে। ইবনু ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামাযে বসতেন… তিনি বলেন, তিনি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন।” অন্য শব্দে বলা হয়েছেঃ “যখন তিনি তাশাহুদে বসতেন।” প্রথম বাক্যটি আ’ম বা ব্যাপক অর্থবোধক। আর দ্বিতীয় বাক্যটি খাছ বা বিশেষ অর্থবোধক। কায়েদা বা মূলনীতি হচ্ছে খাছ বিষয়কে যদি এমন ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয় যা আ’মের অর্থ বহন করে, তখন আ’ম বিষয়কে আর খাছ করা হবে না। উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিস্কার হবে। আপনি জনৈক ব্যক্তিকে বললেন, ছাত্রদের সম্মানিত করুন। এবং তাকে বললেন, মুহাম্মাদকে সম্মানিত করুন। মুহাম্মাদ ছাত্রদেরই অন্তর্ভুক্ত। এখানে একথা প্রমাণ হয় না যে, অন্যান্য ছাত্রদেরকে সম্মানিত করা হবে না। উছুলবিদ বিদ্বানগণ একথা বলেছেন। শায়খ শানক্বীতী (আযওয়াউল বায়ান) গ্রনে’ এ মূলনীতিটি উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু যদি বলে থাকে ছাত্রদেরকে সম্মানিত কর। তারপর বলল, ক্লাস রূমে যারা ঘুমায় তাদের সম্মানিত করো না। এখানে খাছ বা বিশেষ করে দেয়া হল। কেননা আ’ম বা ব্যাপকের বিধানের বিপরীত বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
তাছাড়া মাসআলাটির ব্যাপারে আলাদা হাদীছও পাওয়া যায়। ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেন, ‘ফতহুর্‌ রাব্বানী’ গ্রনে’র (১/১৪৭) লিখক তার সনদকে হাসান বলেন। যাদুল মা’আদের টিকা লিখকদের কেউ কেউ তার সনদ ছহীহ্‌ বলেও মন্তব্য করেছেন। “রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’সিজদার মধ্যে বসলে আঙ্গুলসমূহ মুষ্টিবদ্ধ করতেন এবং তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন।”
আঙ্গুল নড়াতে হবে না এ ব্যাপারে যারা কথা বলেন তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন, তবে ডান হাত কি অবস্থায় থাকবে? যদি জবাবে বলা হয়, রানের উপর ছড়িয়ে রাখতে হবে। প্রশ্ন হবে, একথার দলীল কি? কোন হাদীছে তো একথা বলা হয়নি যে, তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ডান হাতকে উরুর উপর ছড়িয়ে রাখতেন। এরূপ কোন হাদীছ থাকলে ছাহাবীগণ তার বর্ণনা দিতেন্ত যেমনটি বর্ণনা পাওয়া যায় বাম হাতকে উরুর উপর ছড়িয়ে রাখার ব্যাপারে।
প্রশ্নঃ (৭০) জালসা ইস্তেরাহা করার বিধান কি?
উত্তরঃ এ মাসআলাটিতে বিদ্বানদের তিন ধরণের মতামত পাওয়া যায়।
প্রথমঃ জালসা ইস্তেরাহা করা সবসময় মুস্তাহাব।
দ্বিতীয়ঃ জালসা ইস্তেরাহা করা কখনই মুস্তাহাব নয়।
তৃতীয়ঃ উল্লেখিত দু’টি মতের মধ্যপন্থী মত। সরাসরি দাঁড়াতে যাদের কষ্ট হয় তারা জালসা ইস্তেরাহা করবে। আর যাদের কষ্ট হয় না তারা জালসা ইস্তেরাহা করবে না।
মুগনী গ্রন্থে (১/৫২৯ দারুল মানার প্রকাশনী) বলা হয়েছেঃ “এই তৃতীয় মতটি দ্বারা হাদীছ সমূহের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়েছে এবং তা হচ্ছে দু’টি মতের মধ্যপন্থী মত।” অতঃপর পরবর্তী পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফরয নামাযে সুন্নাত হচ্ছে, কোন ব্যক্তি যখন প্রথম দু’রাকাআত শেষ করে উঠবে, তখন দু’হাত দিয়ে মাটিতে ভর করে যেন না উঠে। তবে যদি অতিবৃদ্ধ ব্যক্তি অনুরূপ করতে সক্ষম না হয়, তবে সে হাত দ্বারা মাটিতে ভর করে উঠতে পারে। (হাদীছটি আছরাম বর্ণনা করেন।) এরপর মুগনী গ্রন’কার বলেন, মালেক বিন হুওয়াইরিছ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছে,
“নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন, সোজা হয়ে বসতেন, তারপর যমীনের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।”
এ হাদীছটি হচ্ছে সেই সময়ের কথা যখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুর্বল ও বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সরাসরি দাঁড়াতে তাঁর কষ্ট হচ্ছিল। কেননা তিনি বলেন, “আমার শরীর ভারী হয়ে গেছে। তাই তোমরা রুকূ সিজদায় আমার আগ বেড়ে কিছু করো না।”
এই তৃতীয় মতকে আমি সমর্থন করি। কেননা মালেক বিন হুওয়াইরিছ (রাঃ) এমন সময় নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট আগমণ করেন যখন তিনি তাবুক যুদ্ধের প্রস্ততি গ্রহণ করছিলেন। আর সে সময় নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর দুর্বলতা সুস্পষ্ট হচ্ছিল। ছহীহ্‌ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। আয়েশা (রাঃ) বলেন,‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শরীর মোবারক যখন মোটা ও ভারী হয়ে গিয়েছিল, তখন অধিকাংশ নামায তিনি বসে বসে আদায় করতেন।’ আবদুল্লাহ্‌ বিন শাক্বীক্ব (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)কে প্রশ্ন করলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বসে বসে নামায আদায় করতেন? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, যখন তিনি বয়োবৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।’  হাফছা (রাঃ) বলেন,
“আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে কখনো বসে নফল নামায আদায় করতে দেখিনি। তবে মৃত্যুর এক বছর পূর্বে থেকে তিনি বসে নফল নামায আদায় করেছেন।” অপর বর্ণনায় ‘একবছর বা দু’বছর পূর্বে থেকে।’ এ বর্ণনাগুলো সবই ছহীহ্‌ মুসলিমে রয়েছে। একথার সমর্থন পাওয়া যায় মালিক বিন হুওয়াইরিছ বর্ণিত হাদীছে, যাতে মাটিতে ভর করে দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ রয়েছে। আর সাধারণতঃ প্রয়োজন ছাড়া কোন বস্তর উপর নির্ভর করার প্রশ্নই উঠে না।
সম্ভবতঃ আমাদের সমর্থনে আবদুল্লাহ্‌ বিন বুহায়না (রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি পেশ করা যায়। তিনি বলেন, ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা তাদেরকে নিয়ে যোহর ছালাত আদায় করলেন। কিন্তু তিনি দু’রাকাআত পড়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন, বসলেন না।’ এখানে ‘বসলেন না’ শব্দটি দ্বারা সবধরণের বসা বুঝা যায়। অর্থাৎ- জালাসা ইস্তেরাহাতেও বসলেন না। কিন্তু এর জবাবে বলা যায়, এখানে ‘বসলেন না’ বলতে তাশাহুদের জন্য বসা উদ্দেশ্য করা হয়েছে। (আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞাত)
প্রশ্নঃ (৭১) তাশাহুদের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তর্জনী আঙ্গুল নড়ানোর বিধান কি?
উত্তরঃ তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানো শুধুমাত্র দু’আর সময় হবে। পূরা তাশাহুদে নয়। যেমনটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছেঃ “তিনি উহা নাড়াতেন ও দু’আ করতেন।” এর কারণ হচ্ছেঃ দু’আ আল্লাহ্‌র কাছেই করা হয়। আর আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আসমানে আছেন। তাই তাঁকে আহবান করার সময় উপরে আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করবে। আল্লাহ্‌ বলেন,
 “তোমরা কি নিরাপদে আছ সেই সত্বা থেকে যিনি আসমানে আছেন যে, তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন না? তখন আকস্মিকভাবে যমীন থরথর করে কাঁপতে থাকবে। অথবা নাকি তোমরা নিরাপদ আছ সেই সত্বার ব্যাপারে যিনি আসমানের অধিপতি তোমাদের উপর কঙ্করবর্ষী ঝঞ্ঝা প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা জানতে পারবে, আমার সকর্ত করণ কিরূপ ছিল।” (সূরা মুলকঃ ১৬-১৭) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তোমারা কি আমাকে আমানতদার মনে করো না? অথচ আমি যিনি আসমানে আছেন তার আমানতদার।” সুতরাং আল্লাহ্‌ আসমানে তথা সবকিছুর উপরে আছেন। যখন আপনি দু’আ করবেন উপরের দিকে ইঙ্গিত করবেন। একারণে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জে খুতবা প্রদান করে বললেন, “আমি কি পৌঁছিয়েছি?” তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তিনি আসমানের দিকে আঙ্গুল উঠালেন
এবং লোকদের দিকে আঙ্গুলটিকে ঘুরাতে থাকলেন বললেন, “হে আল্লাহ্‌ তুমি সাক্ষী থেকো। হে আল্লাহ্‌ তুমি সাক্ষী থেকো। হে আল্লাহ্‌ তুমি সাক্ষী থেকো।” এদ্বারা প্রমাণিত হয় আল্লাহ্‌ তা’আলা সকল বস্তর উপরে অবস্থান করেন। এ বিষয়টি সুস্পষ্ট ও সুপ্রমাণিত ফিতরাতী ভাবে, বিবেক যুক্তি ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে। এই ভিত্তিতে যখনই আপনি আল্লাহ্‌ তা’আলাকে ডাকবেন তাঁর কাছে দু’আ করবেন, তখনই আসমানের দিকে তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করবেন এবং তা নাড়াবেন। আর অন্য অবস্থায় তা স্তীর রাখবেন।
এখন আমরা অনুসন্ধান করি তাশাহুদে দু’আর স্থানগুলোঃ
১) আস্‌সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
২) আস্‌সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ্‌ ছালিহীন।
৩) আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ
৪) আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ
৫) আঊযুবিল্লাহি মিন আযাবি জাহান্নাম
৬) ওয়া মিন আযাবিল ক্বাবরি।
৭) ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ্‌ইয়া ওয়াল মামাত।
৮) ওয়ামিন ফিতনাতল মাসীহিদ্দাজ্জাল। এই আটটি স্থানে আঙ্গুল নাড়াবে এবং তা আকশের দিকে উত্থিত করবে। এগুলো ছাড়া অন্য কোন দু’আ পাঠ করলেও আঙ্গুল উপরে উঠাবে। কেননা দু’আ করলেই আঙ্গুল উপরে উঠাবে।
প্রশ্নঃ (৭২) প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহুদের শব্দগুলো পাঠ করবে? না কি দরূদও পাঠ করবে?
উত্তরঃ তিন বা চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাযের প্রথম তাশাহুদে শুধুমাত্র পাঠ করবেঃ
এটাই উত্তম। যদি এরপর দরূদ পাঠ করে তবেও কোন অসুবিধা নেই। বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। কিন্তু আমার মতে সুন্নাতের নিকটবর্তী কথা হচ্ছে দরূদের পূর্বের বাক্যটি পাঠ করা- দরূদ না পড়া। তবে ইমাম তাশাহুদ দীর্ঘ করলে দরূদ পড়তে কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ (৭৩) সালাতে তাওয়ার্‌রুক করার বিধান কি? এ বিধান কি নারী-পুরুষ সবার জন্যই?
উত্তরঃ যে সকল নামাযে দু’টি তাশাহুদ আছে তার শেষ তাশাহুদে তাওয়ার্‌রুক করা সুন্নাত। যেমন, মাগরিব, এশা, যোহর ও আছর ছালাতে। কিন্তু যে নামাযে শুধু একটিই তাশাহুদ- যেমন ফজর নামায- তাতে তাওয়াররুক করা সুন্নাত নয়।
আর এই সুন্নাত নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রমাণিত। কেননা ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ে বরাবর। তবে দলীলের ভিত্তিতে যে পার্থক্য পাওয়া যায় তার কথা ভিন্ন। কিন্তু এমন কোন ছহীহ্‌ দলীল নেই যা দ্বারা নারী-পুরুষের নামাযে পার্থক্য প্রমাণিত হয়। নামাযের পদ্ধতির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সকলেই সমান।
** তাওয়ার্‌রুক হচ্ছেঃ তাশাহুদের শেষ বৈঠকে বসার সময় ডান পা’কে বাম পায়ের নীচে বের করে দিয়ে নিতম্ব জমিনে রেখে তাঁর উপর বসা এবং ডান পা’কে খাড়া রাখা।
প্রশ্নঃ (৭৪) ইমাম যদি শুধুমাত্র ডান দিকে একবার সালাম ফেরায় তাহলে কি যথেষ্ট হবে?
উত্তরঃ বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ একদিকে সালাম ফেরানো যথেষ্ট মনে করেন। আর কেউ কেউ বলেছেন, অবশ্যই দু’দিকে সালাম দিতে হবে। আবার কেউ বলেন, এক সালাম নফল নামাযের ক্ষেত্রে জায়েয, ফরযে নয়।
কিন্তু সর্বোত্তম কাজ হচ্ছে, দু’দিকে সালাম ফেরানো। কেননা এটাই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অধিকহারে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ইমাম যদি একদিকে সালাম ফেরায় আর মুক্তাদী মনে করে একদিকে সালাম ফেরানো যথেষ্ট নয়, তবে সে দু’দিকেই সালাম ফেরাবে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু ইমাম যদি দু’দিকে সালাম দেয়, আর মুক্তাদী মনে করে একদিকে সালাম ফেরানো যথেষ্ট, তবে সে ইমামের অনুসরণ করার স্বার্থে উভয় দিকে সালাম ফেরাবে।
প্রশ্নঃ (৭৫) নামায শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কি ইমাম উঠে চলে যেতে পারেন? নাকি কিছুটা অপেক্ষা করবেন?
উত্তরঃ ইমামের জন্য উত্তম হচ্ছে সালাম ফেরানোর পর সামান্য কিছু সময় ক্বিবলামুখী হয়ে বসে থাকবেন। উক্ত সময়ের মধ্যে তিনবার أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ ‘আস্তাগফিরুল্লাহ্‌’ ও একবার ‘আল্লাহুম্মা আন্তাস্‌সালাম ওয়া মিনকাস্‌সালাম তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ পাঠ করবেন। তারপর মুক্তাদীদের দিকে ফিরে বসবেন।
ইমাম উঠে চলে যেতে চাইলে যদি মুক্তাদীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে যেতে হয় তবে তার জন্য উত্তম হচ্ছে কিছুক্ষণ বসে থেকে অপেক্ষা করবে। ভীড় কম থাকলে ফিরে যেতে কোন বাধা নেই।
মুক্তাদীর জন্যে উত্তম হচ্ছে ইমামের আগে ফিরে না যাওয়া। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আমার আগেই তোমরা ফিরে যেও না।” কিন্তু ইমাম যদি ক্বিবলামুখী হয়ে সুন্নাতী সময়ের চাইতে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকে। তবে মুক্তাদীদের ফিরে যেতে কোন বাধা নেই।
প্রশ্নঃ (৭৫) সালাত শেষ করেই পার্শ্ববর্তী মুছল্লীর সাথে মুছাফাহা করা ও ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু’ (আল্লাহ্‌ কবূল করুন) বলা সম্পর্কে আপনার মত কি?
উত্তরঃ সালাত শেষ করেই পার্শ্ববর্তী মুছল্লীর সাথে মুছাফাহা করা ও ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু’ (আল্লাহ্‌ কবূল করুন) বলার কোন ভিত্তি নেই। এ সম্পর্কে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর ছাহাবীদের থেকে কোন কিছু প্রমাণিত নেই।
প্রশ্নঃ (৭৭) তাসবীহ্‌ দানা দ্বারা তাসবীহ্‌ পড়ার বিধান কি?
উত্তরঃ তাসবীহ্‌ দানা ব্যবহার করা জায়েয। তবে উত্তম হচ্ছে, হাতের আঙ্গুল ও আঙ্গুলের কর ব্যবহার করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “আঙ্গুল দ্বারা তাসবীহ্‌ গণনা কর। কেননা (ক্বিয়ামত দিবসে) এগুলো জিজ্ঞাসিত হবে এবং এগুলোকে কথা বলানো হবে।”
তাছাড়া তাসবীহ্‌র ছড়া হাতে নিয়ে থাকলে রিয়া বা লোক দেখানো ভাবের উদ্রেক হতে পারে। আর যারা তাসবীহ্‌ ছড়া ব্যবহার করে সাধারণতঃ তাদের অন্তর উপস্থিত থাকে না। এদিক ওদিকে তাকায়। সুতরাং আঙ্গুল ব্যবহার করাই উত্তম ও সুন্নাত।
প্রশ্নঃ (৭৮) সালাতের পর সুন্নাত সম্মত যিকির সমূহ কি কি?
উত্তরঃ সালাতের পর আল্লাহ্‌র যিকির করার ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তা’আলা আদেশ করেছেন। তিনি বলেনঃ
 “যখন তোমরা নামায সমাধা করবে, তখন আল্লাহ্‌র যিকির করবে দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায়।” (সূরা নিসা- ১০৩) আল্লাহ্‌র এই নির্দেশের বর্ণনা দিয়েছেন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কর্ম ও বাণীর মাধ্যমে। অতএব সালাম ফেরানোর পর নিম্ন লিখিত দু’আ সমূহ পাঠ করবেঃ
১) তিনবার ইসে-গফার করবে। অর্থাৎ- আস্তাগফিরুল্লাহ্‌ পাঠ করবে
২) এবং বলবেঃ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আন্তস্‌সালাম ওয়ামিন কাস্‌সালাম তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।
৩) অতঃপর বলবেঃ
উচ্চারণঃ লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশারীকা লাহু। লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
আল্লাহুম্মা লা-মা-নেআ লিমা আত্বাইতা ওয়াল মু’তিয়া লিমা মানা’তা ওয়ালা ইয়ানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থঃ এক আল্লাহ ছাড়া কোন হক উপাস্য নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নাই। মালিকানা তাঁরই, সমুদয় প্রশংসা তাঁরই জন্য।
হে আল্লাহ! আপনি যা দান করেন তা প্রতিরোধকারী কেউ নেই। এবং আপনি যা রোধ করেন তা দানকারী কেউ নেই। আর কোন মর্যাদাবানের মর্যাদা আপনার নিকট থেকে কোন উপকার আদায় করে দিতে পারে না।
৪)   অতঃপর বলবেঃ
 “আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। তারই জন্য রাজত্ব, তারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। তিনি সকল বস্তর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত গুনাহ হতে বিরত থাকা ও আনুগত্য করার ক্ষমতা লাভ করা যায় না। আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। আর আমরা তাঁকে ছাড়া অন্যের ইবাদত করি না। একমাত্র তাঁর অধিকারে সমস্ত নেয়ামত, তাঁরই জন্য সমস্ত সম্মান মর্যাদা, আর তাঁরই জন্য উত্তম স্ততি। আল্লাহ ব্যতীত কোন হক উপাস্য নেই। তার নিমিত্তে আমরা ধর্ম পালন করি একনিষ্ঠ ভাবে। যদিও কাফেররা তা মন্দ ভাবে।
৫) তাসবীহ পাঠ করবে অর্থ্যাৎ ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে ৩৩ বার, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলবে ৩৩ বার এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে ৩৩ বার। এবং একশ এর পূর্ণতা স্বরূপ এই দু‘আটি বলবে।
উচ্চারণঃ লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশারীকা লাহু। লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
অর্থঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই তিনি এক তাঁর কোন শরীক নাই। মালিকানা তাঁরই সমুদয় প্রশংসা তাঁরই জন্য।
যে ব্যক্তি অত্র তাসবীহ্‌ ও দু‘আটি বলবে তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনারাশী পরিমাণ হয় না কেন।
পূর্বোল্লিখিত তাসবীহ্‌গুলো যে কোনটা দ্বারা শুরু করতে পারবে। আর সুুবহানাল্লাহ, আল হামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার একসাথে ৩৩ বার বলবে অথবা প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা ৩৩ বার করে বলবে কোন অসুবিধা নেই।
অনুরূপভাবে উক্ত তাসবীহ্‌ সমূহ ৩৩ বারের পরিবর্তে ১০ বার করে বলতে পারবে।
৬) সুবহানাল্লাহ্‌ ওয়াল হামদুলিল্লাহ্‌ ওয়া লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার- এই চারটি তাসবীহ্‌ ২৫ বার পাঠ করবে। সর্বমোট ১০০ বার।
উল্লেখিত তাসবীহ্‌গুলোর যে কোন একটি প্রকার পাঠ করলেই হবে। কেননা ইসলামী মূলনীতি হচ্ছে, (কোন ইবাদত যদি কয়েকভাবে প্রমাণিত হয়, তবে তার প্রত্যেক প্রকার থেকে কখনো এটা কখনো ওটা বাস্তবায়ন করা সুন্নাত।) এই তাসবীহ সকল নামাযের ক্ষেত্রে প্রজোয্য। ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা। তবে ফজর ও মাগরিব নামায বাদ নিম্নলিখিত দু’আটি ১০ বার পাঠ করবেঃ ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশারীকা লাহু। লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।’ অনুরূপভাবে উক্ত দু’নামাযের পর সাত বার পাঠ করবে এই দু’আঃ ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর।’
৭) অতঃপর আয়াতুল কুরসী (সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত) পাঠ করবে। যে ব্যক্তি প্রতেক ফরয নামাযানে- অত্র আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা হতে বাধা দানকারী একমাত্র মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।
৮) তারপর একবার করে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করবে। তবে ফজর বা মাগরীব নামায এর ব্যতিক্রম- এই দুই নামাযের পর অত্র তিনটি সূরা তিনবার করে পাঠ করবে। (আবু দাউদ, নাসাঈ)
প্রশ্নঃ (৭৯) সালাতের পর হাত উত্তোলন করে দু’আ করার বিধান কি?
উত্তরঃ সালাত শেষে হাত তুলে দু’আ করা শরীয়ত সম্মত নয়। দু’আ করতে চাইলে সালাতের মধ্যে দু’আ করা উত্তম। একারণে ইবনে মাসঊদ বর্ণিত তাশাহুদ শিক্ষার হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেনঃ “তারপর ইচ্ছামত যে কোন দু’আ পাঠ করবে।”
সাধারণ মানুষ অনেকেই ফরয বা সুন্নাত যে কোন নামায শেষ হলেই হাত তুলে দু’আ আরম্ভ করে। এমনকি এদের অধিকাংশ এ কাজ কখনই পরিত্যাগ করে না।َ
অনেক লোক এমন দেখবেন ফরয নামায শুরু হয়ে যাচ্ছে আর সে সুন্নাত নামাযের তাশাহুদে বসে আছে। সালাম ফেরানো হলেই হাত উঠাবে কিছু বলল কি না আল্লাহই জানেন আবার হাত মুখে মুছে ফেলবে। মনে করে নামায শেষ করে হাত দু’টো না উঠালে যেন নামাযটাই সুন্দর হল না।
প্রশ্নঃ (৮০) ফরয নামাযানে- সমস্বরে সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী প্রভৃতি পাঠ করার বিধান কি?
উত্তরঃ নামাযানে- সকলে মিলে সমস্বরে সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী বা অন্যান্য যিকির করা বিদআত। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং ছাহাবীদের (রাঃ) থেকে যেটা প্রমাণিত রয়েছে, তাঁরা ফরয নামায শেষ করে কিছুটা উঁচু আওয়াযে যিকির পাঠ করতেন। কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে পাঠ করতেন। সমস্বরে নয়। অতএব ফরয নামাযানে- উঁচু কন্ঠে যিকির করা ছহীহ্‌ সুন্নাহ্‌ দ্বারা প্রমাণিত। আবদুল্লাহ্‌ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
 “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে লোকেরা ফরয নামায শেষ করলে উঁচু কন্ঠে যিকির পাঠ করতেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, উঁচু কন্ঠের যিকির শুনলে আমি বুঝতাম লোকেরা নামায শেষ করেছেন।”
কিন্তু নামাযের পর উঁচু কন্ঠে বা নীচু কন্ঠে সূরা ফাতিহা পাঠ করার ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে কোন হাদীছ আমি জানি না। তবে ছহীহ্‌ হাদীছে প্রমাণিত হয়েছে, আয়াতুল কুরসী ও মুআব্বেযাতাইন (সূরা ফালাক ও নাস) পাঠ করা।
প্রশ্নঃ (৮১) টয়লেট সারতে গেলে জামাআত ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকলে কি করবে?
উত্তরঃ প্রথমে টয়লেটের কাজ সম্পন্ন করবে। তারপর ওযু করে নামাযের দিকে অগ্রসর হবে। যদিও তার জামাআত ছুটে যায়। এতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এটা তার ওযর। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“খাদ্য উপস্থিত হলে এবং দু’টি নাপাক বস্তর চাপ থাকলে নামায নেই।”
প্রশ্নঃ (৮২) সালাত পড়ার সময় চোখ বন্ধ রাখার বিধান কি?
উত্তরঃ সালাত অবস্থায় চোখ বন্ধ রাখা মাকরূহ। কেননা এটা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সুন্নাত বিরোধী। তবে যদি কোন কারণ থাকে যেমন, সম্মুখের দেয়াল বা কার্পেট বা জায়নামাযে এমন কোন নকশা থাকে যার কারণে নামাযের একাগ্রতা নষ্ট হয় বা সম্মুখে শক্তিশালী আলো থাকে যাতে চোখের ক্ষতির আশংকা হয়, তবে চোখ বন্ধ রাখতে কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ কারণ বশতঃ হলে কোন অসুবিধা নেই। অন্যথা তা মাকরূহ। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে ইমাম ইবনুল কাইয়্যেমের যাদুল মা’আদ গ্রন্থ অধ্যয়ন করা যেতে পারে।
প্রশ্নঃ (৮৩) সালাতরত অবস্থায় ভুলক্রমে আঙ্গুল ফুটালে কি নামায বাতিল হয়ে যাবে?
উত্তরঃ আঙ্গুল ফুটালে নামায বাতিল হয় না। কিন্তু এটি একটি অনর্থক কাজ। যা থেকে বিরত থাকা উচিত। জামাআতের সাথে থাকলে নিঃসন্দেহে এতে অন্যান্য মুছল্লীর নামাযে ব্যাঘাত ঘটবে। তখন তা আরো ক্ষতিকর।
এ উপলক্ষ্যে আমি বলতে চাইঃ নামায অবস্থায় নড়াচড়া করা পাঁচভাগে বিভক্তঃ
১) ওয়াজিব ২) সুন্নাত ৩) মাকরূহ ৪) হারাম ৫) জায়েয।
ওয়াজিব নড়াচড়াঃ যেমনঃ নামায শুরু করেছে এমন সময় স্মরণ হল, তার টুপিতে নাপাকি রয়েছে। তখন টুপি খুলে ফেলার জন্য নড়াচড়া করা ওয়াজিব। একথার দলীল হচ্ছেঃ একদা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুতা পরে নামায আদায় করছিলেন। এমন সময় জিবরীল (আঃ) এসে তাঁকে সংবাদ দিলেন, তাঁর জুতায় নাপাকী রয়েছে। তিনি নামাযরত অবস্থাতেই জুতা খুলে ফেললেন এবং নামায চালিয়ে গেলেন।
সুন্নাত নড়াচড়াঃ নামায পরিপূর্ণ করার জন্য নড়াচড়া করা। যেমনঃ কাতারের ফাঁকা স্থান পূর্ণ করার জন্য নামায অবস্থায় সামনের কাতারে চলে যাওয়া বা ডানে-বামে পার্শ্ববর্তী মুছল্লীর কাছে সরে যাওয়া। এসবগুলো করা সুন্নাত।
মাকরূহ নড়াচড়াঃ অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া। যার সাথে নামাযের কোনই সম্পর্ক নেই।
হারাম নড়াচড়াঃ লাগাতার অধিকহারে নড়াচড়া করা। যেমনঃ দাঁড়ানো অবস্থায় অনর্থক কাজ করা, রুকূ অবস্থায় অধিকহারে নড়াচড়া করা, সিজদা বা বসা অবস্থায় অনর্থক নড়াচড়া করতে থাকা এমনকি এভাবে নামায শেষ করা। এধরণের নড়াচড়া হারাম। এর মাধ্যমে নামায বাতিল হয়ে যাবে।
জায়েয নড়াচড়াঃ যেমন শরীরের কোন স্থান চুলকানোর প্রয়োজন অনুভব করল। বা শরীর থেকে মশা-মাছি তাড়ানোর দরকার পড়ল.. ইত্যাদি ছোট-খাট বিষয় যা পরস্পর নয় এবং অধিকহারে নয় তা বৈধ।
প্রশ্নঃ (৮৪) সুতরার বিধান কি? এবং এর সীমা কতটুকু?
উত্তরঃ সুতরা গ্রহণ করা সুন্নাতে মুআক্কাদা। তবে জামাতের সাথে নামায পড়লে মুক্তাদীর জন্য সুতরার দরকার নেই। ইমামের সুতরা মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট। এর সীমা সম্পর্কে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ
 “উটের উপর হেলান দিয়ে বসার জন্য তার পিঠে যে কাঠ রাখা হয় তার উচ্চতার বরাবর।”
এটা হচ্ছে সর্বোচ্চ উচ্চতা। এর চেয়ে কমও বৈধ আছে। কেননা হাদীছে এসেছেঃ “তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যখন ছালাত আদায় করে, সে যেন একটি তীর দিয়ে হলেও সুতরা করে নেয়।”
হাসান সনদে আবু দাউদে বর্ণিত অন্য হাদীছে বলা হয়েছেঃ “কোন কিছু না পেলে যেন একটি দাগ টেনে নেয়।” হাফেয ইবনু হাজার বুলুগুল মারাম গ্রন্থে বলেনঃ যারা হাদীছটি মুযতারাব বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তারা সঠিক কথা বলেন নি। সুতরাং হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করার তেমন কোন কারণ নেই।
প্রশ্নঃ (৮৫) মসজিদে হারামে মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করার বিধান কি? সালাত ফরয হোক বা নফল। মুছল্লী মুক্তাদী হোক বা একাকী হোক।
উত্তরঃ মসজিদুল হারাম বা অন্য কোন স্থানে মুক্তাদী মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা ইবনু আব্বাস (রাঃ) মিনায় আগমণ করলেন। তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের নিয়ে একটি দেয়াল সামনে রেখে সালাত আদায় করছিলেন। ইবনু আব্বাস কাতারের সম্মুখ দিয়ে একটি গাধার পিঠে চড়ে অতিক্রম করলেন। কেউ তার প্রতিবাদ করেনি।
মুছল্লী যদি ইমাম বা একক হয়, তবে তার সম্মুখ দিয়ে যাওয়া জয়েয নেই। চাই তা মসজিদুল হারামে হোক বা অন্য কোন স্থানে। কেননা সাধারণভাবে হাদীছগুলো এ কথাই প্রমাণ করে। এমন কোন দলীল পাওয়া যায় না যে, মক্কা বা মসজিদে হারামে বা মদীনার মসজিদে মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করা যাবে কোন গুনাহ্‌ হবে না।
প্রশ্নঃ (৮৬) সালাতের সময় মুছল্লীদের সম্মুখে বৈদ্যুতিক হিটার (শীতকালে ঠান্ডা কমানোর জন্য ব্যবহৃত হিটার) রাখার বিধান কি? এক্ষেত্রে কি কোন শরঈ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে?
উত্তরঃ মুছল্লীদের সম্মুখভাগে ক্বিবলার দিকে হিটার রাখতে কোন অসুবিধা নেই। শরীয়তে এর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আমার কোন কিছু জানা নেই।
প্রশ্নঃ (৮৭) সালাতের ক্বিরাতে জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা আসলে জান্নাতের প্রার্থনা এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় কামনা করা জায়েয কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, এটা জায়েয। এক্ষেত্রে ইমাম, মুক্তাদী বা একক ব্যক্তির মাঝে কোন পার্থক্য নেই। তবে মুক্তাদীর যেন ইমামের ক্বিরআত নীরব থেকে শোনার ব্যাপারে কোন ব্যাঘাত না ঘাটে।
প্রশ্নঃ (৮৮) সাহু সিজদা করার কারণ সমূহ কি কি?
উত্তরঃ সাহু সিজদা সংবিধিবদ্ধ করার পিছনে রহস্য হল এই যে, এটা নামাযের মধ্যে যে ত্রুটি হয় তার পূর্ণতা দান করে।
তিনটি কারণে নামাযে সাহু সিজদা দিতে হয়ঃ
১) নামায বৃদ্ধি হওয়া। যেমন, কোন রুকূ বা সিজদা বা বসা ইত্যাদি বৃদ্ধি হওয়া।
২) হ্রাস হওয়া। কোন রুকন বা ওয়াজিব কম হওয়া।
৩) সন্দেহ হওয়া। কত রাকাত পড়েছে তিন না চার এব্যাপারে সংশয় হওয়া।
প্রথমতঃ ছালাতে বৃদ্ধি হওয়া:
মুছল্লী যদি নামাযের অন্তর্ভুক্ত এমন কিছু কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে বৃদ্ধি করে যেমনঃ দাঁড়ানো, বসা, রুকূ‘, সিজদা ইত্যাদি- যেমন দু‘বার করে রুকূ করা, তিন বার সিজদা করা, অথবা যোহর পাঁচ রাকাত আদায় করা। তবে তার ছালাত বাতিল বা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশের বিপরীত আমল করেছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি এমন আমল করবে, যার পক্ষে আমাদের নির্দেশনা নেই, তবে উহা প্রত্যাখ্যাত।”
কিন্তু যদি ভুলবশতঃ তা করে এবং ঐভাবেই ছালাত শেষ করে দেয়ার পর স্মরণ হয় যে, ছালাতে বৃদ্ধি হয়ে গেছে, তবে শুধুমাত্র সাহু সিজদা করবে। তার ছালাতও বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ছালাতরত অবস্থায় যদি উক্ত বৃদ্ধি স্মরণ হয়- যেমন চার রাকাআত শেষ করে পাঁচ রাকাআতের জন্য দাঁড়িয়ে গেছে- তবে সে ফিরে আসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে।
উদাহরণ: জনৈক ব্যক্তি যোহরের ছালাত পাঁচ রাকাআত আদায় করে নিয়েছে। কিন্তু শেষ তাশাহুদে বসার সময় এবৃদ্ধির কথা তার স্মরণ হল, তাহলে সে তাশাহুদ পূর্ণ করবে এবং সালাম ফেরাবে। তারপর সাহু সিজদা করবে এবং সালাম ফিরাবে। আর যদি সালাম ফেরানোর পর তা স্মরণ হয়, তবে সাহু সিজদা করবে এবং সালাম ফিরাবে।
আর যদি পঞ্চম রাকাআত চলা অবস্থায় স্মরণ হয় তবে তখনই বসে পড়বে এবং তাশাহুদ পড়ে সালাম ফেরাবে। তারপর সিজদায়ে সাহু করে আবার সালাম ফেরাবে।
দলীল:
আবদুল্লাহ্‌ বিন মাসঊদ (রা:) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের নামায পাঁচ রাক্‌আত পড়লেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হল, নামায কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেন, কিভাবে? তাঁরা বললেন, আপনি আজ পাঁচ রাকাআত পড়েছেন। তখন তিনি দু‘টি সিজদা করলেন। অন্য রেওয়ায়াতে এসেছে, তখন তিনি পা গুটিয়ে ক্বিবলামুখি হলেন, দু‘টি সিজদা করলেন অত:পর সালাম ফেরালেন।
সালাত পূর্ণ হওয়ার আগেই সালাম ফেরানো:
নামায পূর্ণ হওয়ার আগেই সালাম ফেরানো ছালাতে বৃদ্ধি করার অন্তর্গত। কেননা ছালাতরত অবস্থায় সে সালামকে বৃদ্ধি করেছে। একাজ যদি ইচ্ছাকৃত করে তবে ছালাত বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি ভুলক্রমে হয়, কিন্তু অনেক পরে তার এ ভুলের কথা মনে পড়ল তবে নামায পুনরায় ফিরিয়ে পড়বে। আর যদি একটু পরেই (যেমন দু/এক মিনিট) তবে সে অবশিষ্ট ছালাত পূর্ণ করবে এবং সালাম ফিরাবে। অতঃপর সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবে।
দলীল:
আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে নিয়ে যোহর অথবা আছরের ছালাত আদায় করলেন। কিন্তু দু‘রাকাআত আদায় করেই সালাম ফিরিয়ে দিলেন। কিছু লোক দ্রুত মসিজদ থেকে একথা বলতে বলতে বের হয়ে গেল যে, ছালাত সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। নবীজিও (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদের এক খুঁটির কাছে গিয়ে তাতে হেলান দিয়ে বসে পড়লেন। মনে হচ্ছিল তিনি যেন রাগন্বিত। জনৈক ব্যক্তি তাঁর কাছে গিয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি কি ভুলে গেছেন, নাকি নামায সংক্ষিপ্ত করে দেয়া হয়েছে? নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তো ভুলিনি, আর নামাযও সংক্ষিপ্ত করা হয়নি। লোকটি বলল, বরং আপনি ভুলেই গিয়েছেন। (কারণ আপনি দু‘রাকাআত ছালাত আদায় করেছেন।) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, একি সত্য বলছে? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার দাঁড়িয়ে পড়লেন এবং অবশিষ্ট দু‘রাকাআত আদায় করে তাশাহুদ পড়ে সালাম ফিরলেন। তারপর দু‘টি সিজদা করলেন অতঃপর সালাম ফেরালেন।
দ্বিতীয়ত: ছালাতে হ্রাস হওয়া:
ক) রুকন হ্রাস হওয়া:
মুছল্লী যদি কোন রুকন কম করে ফেলে- উক্ত রুকন যদি তাকবীরে তাহরিমা (নামায শুরু করার তাকবীর) হয়, তবে তার ছালাতই হবে না। চাই উহা ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিক বা ভুলক্রমে ছেড়ে দিক। কেননা তার ছালাতই তো শুরু হয়নি।
আর উক্ত রুকন যদি তাকবীরে তাহরিমা ব্যতীত অন্য কিছু হয় আর তা ইচ্ছাকৃত হয় তবে তার ছালাত বাতিল বা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
কিন্তু যদি অনিচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে কোন রুকন ছুটে যায়- যেমন প্রথম রাকাআতে কোন রুকন ছুটে গেল, এখন যদি দ্বিতীয় রাকাআতে সেই ছুটে যাওয়া রুকনের নিকট পৌঁছে যায়- তবে এঅবস্থায় আগের রাকাআত বাতিল হয়ে যাবে এবং এটাকে প্রথম রাকাআত গণ্য করবে এবং বাকী অংশ পূরা করে সাহু সিজদা দিবে।
কিন্তু যদি দ্বিতীয় রাকাআতে ছুটে যাওয়া সেই রুকনে না পৌঁছে, তবে ছুটে যাওয়া রুকনটি আগে আদায় করবে তারপর বাকী অংশগুলো আদায় করবে এবং সাহু সিজদা দিবে।
উদাহরণ: জনৈক মুছল্লী প্রথম রাকাআতের দ্বিতীয় সিজদাটি ভুলে গেল। যখন সেকথা স্মরণ হল, তখন সে দ্বিতীয় রাকাআতের দু‘সিজদার মধ্যবর্তি স্থানে বসেছে। এঅবস্থায় আগের রাকাতটি বাতিল হয়ে যাবে এবং এটাকে প্রথম রাকাত গণ্য করে অবশিষ্ট অংশ পূর্ণ করে ছালাত শেষে সাহু সিজদা করবে।
আর একটি উদাহরণ: জনৈক ব্যক্তি প্রথম রাকাআতে একটি মাত্র সিজদা করেছে। তারপর দ্বিতীয় সিজদা না করেই দাঁড়িয়ে পড়েছে। অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতে রুকূ করার পর সেই ভুলের কথা স্মরণ হয়েছে, তবে সে বসে পড়বে এবং সেই ছুটে যাওয়া সিজদা দিবে এবং সেখান থেকে ছালাতের বাকী অংশ পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে। তারপর সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবে।
খ) কোন ওয়াজিব হ্রাস হওয়া:
মুছল্লী যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ওয়াজিব পরিত্যাগ করে তবে তার ছালাত বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি ভুলক্রমে হয় আর উক্ত স্থান ছেড়ে যাওয়ার আগেই যদি স্মরণ হয়ে যায় তবে তা আদায় করবে এতে কোন দোষ নেই- সাহু সিজদা দিতে হবে না। কিন্তু যদি উক্ত ওয়াজিব ছেড়ে পরবর্তী রুকন শুরু করার আগেই স্মরণ হয়ে যায় তবে ফিরে গিয়ে সেই ওয়াজিব আদায় করবে এবং শেষে সাহু সিজদা করবে। কিন্তু পরবর্তী রুকন শুরু করার পর যদি স্মরণ হয় তবে উক্ত ছুটে যাওয়া ওয়াজিব রহিত হয়ে যাবে। অবশিষ্ট ছালাত আদায় করে সালামের পূর্বে সাহু সিজদা করলেই ছালাত পূর্ণ হয়ে যাবে।
উদাহরণ: একজন মুছল্লী দ্বিতীয় রাকাতের দ্বিতীয় সিজদা থেকে উঠে না বসে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াতে যাচ্ছে। এমন সময় স্মরণ হল নিজ ভুলের কথা। তখন সে বসে পড়বে এবং তাশাহুদ পড়ে ছালাত পূর্ণ করবে। কোন সাহু সিজদা লাগবে না।
আর যদি কিছুটা দাঁড়ায় কিন্তু পরিপূর্ণরূপে দাঁড়ায়নি তবে সে বসে যাবে এবং তাশাহুদ পড়বে ও ছালাত শেষে সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবে। কিন্তু যদি পূর্ণরূপে দাঁড়িয়ে পড়ে তবে আর বসবে না। তাশাহুদ রহিত হযে যাবে। ঐভাবেই ছালাত পূর্ণ করবে এবং সলাম ফিরানোর পূর্বে সাহু সিজদা করবে।
দলীল:
আবদুল্লাহ্‌ বিন বুহাইনাহ্‌ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে (যোহর) ছালাত আদায় করলেন। কিন্তু দু‘রাকাত শেষে (তাশাহুদ না পড়েই) দাঁড়িয়ে পড়লেন। তিনি নামায চালিয়ে যেতে থাকলেন। ছালাত শেষে মানুষ সালামের অপেক্ষা করছে এমন সময় সালামের পূর্বে তিনি তাকবীর দিয়ে সিজদা করলেন, মাথা উঠিয়ে আবার তাকবীর দিয়ে সিজদা করলেন, তারপর মাথা উঠিয়ে সালাম ফেরালেন।
তৃতীয়ত: সন্দেহ হওয়া: ছালাতের মধ্যে সন্দেহের দু‘টি অবস্থা: প্রথম অবস্থা: সন্দেহযুক্ত দু‘টি বিষয়ের মধ্যে যেটির প্রাধান্য পাবে সে অনুযায়ী কাজ করবে এবং ছালাত পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে। তারপর সাহু সিজদা করে সালাম ফিরাবে।
উদাহরণ: একজন লোক যোহরের ছালাত আদায় করছে। কিন্তু সন্দেহ হল এখন সে কি দ্বিতীয় রাকাতে না তৃতীয় রাকাতে? এ সময় সে অনুমান করে স্থির করবে কোনটা ঠিক। যদি অনুমান প্রাধান্য পায় যে এটা তৃতীয় রাকাত, তবে তা তৃতীয় রাকাত গণ্য করে ছালাত পূর্ণ করবে এবং সালাম ফেরানোর পর সাহু সিজদা করবে।
দলীল: আবদুল্লাহ্‌ বিন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “তোমাদের কারো ছালাতে যদি সন্দেহ হয় তবে সঠিক সিদ্ধানে- উপনীত হওয়ার চেষ্টা করবে এবং সে ভিত্তিতে ছালাত পূর্ণ করবে। তারপর সালাম ফিরিয়ে দু‘টি সাহু সিজদা করবে।”
দ্বিতীয় অবস্থা: সন্দেহযুক্ত দু‘টি দিকের কোনটাই প্রাধান্য পায় না। এ অবস্থায় নিশ্চিত দিকটির উপর ভিত্তি করবে। অর্থাৎ কম সংখ্যাটি নির্ধারণ করে বাকী নামায পূর্ণ করবে। তারপর সালামের আগে সাহু সিজদা করে শেষে সালাম ফিরাবে।
উদাহরণঃ জনৈক ব্যক্তি আছরের ছালাতে সন্দেহ করল- তিন রাকাত পড়েছে না দু‘রাকাত। কিন্তু অনুমান করে কোনটাই তার নিকট প্রাধান্য পেল না। এমতাবস্থায় সে তা দ্বিতীয় রাকাত ধরে প্রথম তাশাহুদ পাঠ করবে। তারপর বাকী দু‘রাকাত নামায পূর্ণ করবে এবং শেষে সালাম ফিরানোর পূর্বে সাহু সিজদা করবে। দলীল: আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “তোমাদের কোন ব্যক্তি যদি ছালাতে সন্দেহ করে যে, তিন রাকাত পড়েছে না চার রাকাত? তবে সে সন্দেহকে বর্জন করবে এবং নিশ্চিতের উপর ভিত্তি করবে। তারপর সালাম ফেরানোর পূর্বে দু‘টি সিজদা করবে। যদি পাঁচ রাকাত পড়ে থাকে তবে ছালাত বেজোড় থেকে জোড় হয়ে যাবে। আর যদি চার রাকাতই পড়ে থাকে, তবে এসিজদা দু‘টি শয়তানকে অপমানের জন্য হবে।”
সারকথা: পূর্বেল্লেখিত আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, সিজদায়ে সাহু কখনো সালামের আগে কখনো সালামের পর করতে হয়।
সালামের পূর্বে সাহু সিজদা দু‘ক্ষেত্রে করতে হয়:
প্রথম: ছালাতে যদি কোন ওয়াজিব হ্রাস হয়। দ্বিতীয়: ছালাতে যদি সন্দেহ হয় এবং দু‘টি দিকের কোনটিই প্রাধান্য না পায়, তবে সালামের পূর্বে সাহু সিজদা করবে।
সালামের পর দু‘ক্ষেত্রে সাহু সিজদা করতে হয়:
প্রথম: যদি ছালাতে বৃদ্ধি হয়ে যায়।
দ্বিতীয়: যদি সন্দেহ হয় এবং যে কোন একটি দিক অনুমানের ভিত্তিতে প্রাধান্য লাভ করে, তবে সালামের পর সাহু সিজদা করবে।
প্রশ্নঃ (৮৯) ইমাম ভুলক্রমে এক রাকাআত সালাত বৃদ্ধি করেছেন। আমি মাসবূক হিসেবে ইমামের অতিরিক্ত সালাত আমার সালাতের সাথে মিলিয়ে নিয়েছি। আমার সালাত কি বিশুদ্ধ হয়েছে? আর যদি ঐ রাকাতের হিসাব না ধরি তবে তার বিধান কি?
উত্তরঃ সঠিক মত হচ্ছে আপনার সালাত বিশুদ্ধ হয়েছে। কেননা আপনি সালাত পূর্ণভাবে আদায় করেছেন। ইমাম যে ভুল করেছেন সে তার উপর বর্তাবে। ভুল হওয়ার কারণে তিনি মা‘যুর (অপারগ ও অক্ষম)। কিন্তু আপনি যদি ঐ রাকাআতের হিসাব না ধরেন এবং অতিরিক্ত রাকাআত আদায় করেন, তবে কোন ওযর ছাড়াই এক রাকাত বৃদ্ধি করলেন। যার কারণে আপনার নামায বাতিল হয়ে যাবে।
প্রশ্নঃ (৯০) তাহাজ্জুদ সালাতে ভুলক্রমে তৃতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়িয়ে পড়লে করণীয় কি?
উত্তরঃ স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে বসে পড়বে। অন্যথায় তার সালাতে বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ইচ্ছাকৃতভাবে তার সালাত বৃদ্ধি হয়ে গেল। ইমাম আহমাদ বলেছেন, কোন লোক যদি রাতের নফল সালাতে তৃতীয় রাকাআতের জন্য দন্ডায়মান হয়, তবে সে যেন ফজর সালাত তৃতীয় রাকাতের জন্য দন্ডায়মান হওয়া বৈধ করে নিল। এ অবস্থায় সে যদি না বসে যায় তবে তার ছালাত বাতিল হয়ে যাবে। তবে বিতর সালাত এর বিপরীত। যদি নিয়ত করে (দু’সালামে) তিন রাকাত বিতর পড়বে। (অর্থাৎ- দু’রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে এক রাকাআত পড়বে) কিন্তু দু’রাকাত পড়ে না বসে ভুলক্রমে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় না বসে যদি নামায চালিয়ে যায় এবং তিন রাকাত পূরা করে তবে তা বিতর হিসেবে যথেষ্ট হবে। কেননা একাধারে তিন রাকাত বিতর নামায আদায় করা বৈধ।
প্রশ্নঃ (৯১) প্রথম তাশাহুদ না পড়ে দাঁড়িয়ে পড়লে করণীয় কি? এক্ষেত্রে কখন সাহু সিজদা করতে হবে?
উত্তরঃ এ অবস্থায় ফিরে আসবেন না তথা বসে পড়বেন না; বরং সালাত চালিয়েই যাবেন। কেননা আপনি তাশাহুদ থেকে পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এবং পরবর্তী রুকনে চলে গিয়েছেন। এ অবস্থায় ফিরে আসা মাকরূহ, তবে যদি ফিরে এসে বসে পড়েন, তবে সালাত বাতিল হবে না। কেননা আপনি হারাম কিছু করেননি। তবে এ অবস্থায় সাহু সিজদা করতে হবে। আর তা সালামের পূর্বে।
কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, সালাত চালিয়ে যাওয়া ওয়াজিব, আর ফিরে আসবেন না। আর ওয়াজিব তাশাহুদ ছুটে যাওয়ার কারণে সালামের পূর্বে সাহু সিজদা করবেন।
প্রশ্নঃ (২৭৫) বিতর সালাতের বিধান কি? উহা কি শুধু রামাযান মাসের জন্যই?
উত্তরঃ বিতর সালাত রামাযান মাসে ও সকল মাসে সুন্নাতে মুআক্কাদা। ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেছেনঃ ‘যে বিতর সালাত পরিত্যাগ করে সে খারাপ লোক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা উচিত নয়।’ সুন্নাতে মুআক্কাদা এ ইবাদতটি রামাযান বা যে কোন সময় পরিত্যাগ করা কোন মুমিনের জন্য উচিত নয়। বিতর হচ্ছে সর্বনিম্ন এক রাকাতের মাধ্যমে রাতের সালাত সমাপ্তি করা। অনেকে মনে করে বিতর মানেই কুনূত। কিন্তু তা ঠিক নয়। কুনূত এক বিষয় বিতর অন্য বিষয়। তবে বিতর সালাত দু’আ কুনূত পাঠ করা যায়। কিন্তু তা পাঠ করা আবশ্যক নয়। রাতের নফল সালাত শেষ করতে হয় এক রাকাত বা একাধারে তিন রাকাত বিতর সালাত আদায় করার মাধ্যমে।
মোট কথা বিতর সালাত সুন্নাতে মুআক্কাদা তা রামাযান মাসে হোক বা অন্য সময়। আর উহা পরিত্যাগ করা কোন মুসলিমের জন্য উচিত নয়।
প্রশ্নঃ (৯২) দু’আ কুনূতের জন্য কি বিশেষ কোন দু’আ আছে? এ সময় দু’আ কি দীর্ঘ করা যায়?
উত্তরঃ এক্ষেত্রে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান বিন আলী (রাঃ)কে যে দু’আটি শিক্ষা দিয়েছিলেন, তাকেই দু’আ কুনূত বলা হয়। দু’আটি নিম্নরূপঃ
 “হে আল্লাহ্‌! তুমি যাদেরকে হেদায়াত করেছো, আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো। তুমি যাদেরকে নিরাপদে রেখেছো আমাকে তাদের দলভুক্ত করো। তুমি যাদের অভিভাকত্ব গ্রহণ করেছো আমাকে তাদের দলভুক্ত করো। তুমি আমাকে যা দিয়েছো তাতে বরকত দাও, তুমি যে অমঙ্গল নির্দিষ্ট করেছো তা হতে আমাকে রক্ষা করো। কারণ তুমিই তো ভাগ্য নির্ধারণ করো, তোমার উপর তো কেহ ভাগ্য নির্ধারণ করার নেই। তুমি যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছো সে কোনদিন অপমানিত হবে না। এবং তুমি যার সাথে শত্রুতা করেছো সে কোন দিন সম্মানিত হতে পারে না। হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি বরকতপূর্ণ ও সুমহান।”
ইমাম এই দু’আ পাঠ করলে তিনি একবচনের স্তলে বহুবচন শব্দ ব্যবহার করবেন। কেননা তিনি নিজের জন্য এবং অন্যদের জন্যও দু’আ করবেন। তিনি যদি উপযুক্ত অন্য কোন দু’আ নির্বাচন করেন তাতেও কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু মুছল্লীদের কষ্ট হয় এমন দীর্ঘ সময় ধরে দু’আ করবেন না। কেননা মু’আয বিন জাবাল (রাঃ) যখন নামাযে দীর্ঘ সময় নিয়ে ইমামতি করেছেন, তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাগম্বিত হয়ে তাকে বলেছিলেন, “হে মুআ’য তুমি ফিতনাবাজ হতে চাও? ”
প্রশ্নঃ (৯৩) দু’আ কুনূত পাঠ করার সময় হাত উত্তোলন করা কি সুন্নাত? দলীলসহ জবাব চাই।
উত্তরঃ হ্যাঁ, সুন্নাত হচ্ছে দু’আ কুনূত পাঠ করার সময় হাত উত্তোলন করা। কেননা মুসলমানদের উপর কোন বিপদ এলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয সালাতে কুনূত পাঠ করার সময় এরূপ করেছিলেন। অনুরূপভাবে ছহীহ্‌ভাবে প্রমাণিত হয়েছে আমীরুল মু’মেনীন উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) বিতরের কুনূতে হাত উত্তোলন করেছেন। তিনি খোলাফা রাশেদার মধ্যে অন্যতম। যাদের অনুসরণ করার জন্য আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে।
অতএব বিতর নামাযে কুনূতের সময় হাত উত্তোলন করা সুন্নাত। চাই সে ইমাম হোক বা মুক্তাদী বা একাকী। যখনই কুনূত পড়বে হাত উত্তোলন করবে।
প্রশ্নঃ (৯৪) ফরয সালাতে কুনূত পড়ার বিধান কি? যদি মুসলমানদের কোন বিপদ আসে তখন করণীয় কি?
উত্তরঃ ফরয সালাতে কুনূত পড়া শরীয়ত সম্মত নয়। তা উচিতও নয়। কিন্তু ইমাম যদি কুনূত পড়েন তার অনুসরণ করতে হবে। কেননা ইমামের বিরোধীতায় অকল্যাণ রয়েছে।
আর মুসলমানদের উপর যদি কোন বড় ধরণের বিপদ নেমে আসে তখন আল্লাহ্‌র কাছে উদ্ধার প্রার্থনা করার জন্য ফরয নামাযে কুনূত পাঠ করতে কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ (৯৫) তারাবীহ্‌ সালাতের বিধান কি? এর রাকাত সংখ্যা কত?
উত্তরঃ তারাবীহ্‌ সালাতে রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সুন্নাত। বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযানের এক রাতে (তারাবীহ) সালাত আদায় করলেন। লোকেরাও তাঁর সাথে ছালাত আদায় করল। পরবর্তী রাতেও ছালাত আদায় করলেন। এরাতে মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী হল। অতঃপর তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাতেও তারা সমবেত হলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর বের হলেন না। প্রভাত হলে তিনি বললেন,
“তোমরা যা করেছো আমি দেখেছি। কিন্তু তোমাদের কাছে আসতে আমাকে কোন কিছুই বাধা দেয়নি। তবে আমি আশংকা করেছি যে, এ নামায তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হবে।” আর এটি ছিল রামাযান মাসের ঘটনা।
তারাবীহ্‌-এর রাকআত সংখ্যাঃ ১১ রাকাআত। বুখারী মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। মাহে রামাযানে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নামায সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
 “তিনি রামাযান মাসে এবং অন্য সময় এগার রাকাতের বেশী নামায পড়তেন না।”
তারাবীহ্‌ ছালাত যদি ১৩ (তের) রাকাআত আদায় করে, কোন অসুবিধা নেই। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামায ছিল ১৩ রাকাত।” অর্থাৎ রাতের নামায। বুখারী।
ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে ১১ এগার রাকাতেরই প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমনটি মুআত্বা মালেকে সর্বাধিক বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে।
যদি এর চাইতে বেশী সংখ্যক রাকাআত আদায় করে তাতেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “রাতের সালাত দু’ দু’ রাকাত করে।” এখানে তিনি কোন সংখ্যা নির্ধারণ করে দেননি।
সালাফে সালেহীন থেকে এ নামাযের বিভিন্ন ধরণের রাকাতের বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু শুধুমাত্র নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত সংখ্যার উপর আমল করা উত্তম। আর তা হচ্ছে এগার বা তের রাকাআত।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা তাঁর খলীফাদের (রাঃ) থেকে কোন হাদীছ বা বর্ণনা প্রমাণিত হয়নি যে, তাঁদের কেউ ২৩ রাকাত তারাবীহ্‌ আদায় করেছেন। বরং ওমর (রাঃ) থেকে এগার রাকাতের কথাই প্রমাণিত হয়েছে। কেননা তিনি উবাই বিন কা’ব এবং তামীম আদ্দারী (রাঃ)কে ১১ রাকাতের দ্বারা লোকদেরকে নিয়ে ক্বিয়ামুল্লায়াল করার আদেশ করেছিলেন। ওমরের (রাঃ) মত ব্যক্তিত্বের জন্য এটাই শোভনীয় যে, তাঁর জীবন চরিত ও ইবাদত বন্দেগী হবে ঠিক তেমনই, যেমনটি ছিল নবীকুল শিরমনী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জীবন চরিত ও ইবাদত বন্দেগী।
আমাদের জানা নেই যে, ছাহাবীদের (রাঃ) মধ্যে কেউ তেইশ রাকাত তারাবীহ্‌ নামায পড়েছিলেন। বরং বাস্তব অবস্থা এর বিপরীত। পূর্বে আয়েশা (রাঃ) এর বাণী উল্লেখ করা হয়েছেঃ “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযান বা অন্য সময় এগার রাকাতের বেশী রাতের নামায আদায় করতেন না।”
নিঃসন্দেহে ছাহাবায়ে কেরামের (রাঃ) এজমা বা ঐকমত্য হচ্ছে একটি হুজ্জত বা বড় দলীল। বিশেষ করে তাদের মধ্যে রয়েছেন খোলাফায়ে রাশেদা। যাঁদের অনুসরণ করতে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা তাঁরা হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ।
জেনে রাখুন! তারাবীহ্‌ নামাযের রাকাত সংখ্যায় বিভিন্নতা বিষয়টি এমন, যাতে ইজতেহাদ বা গবেষণার অবকাশ রয়েছে। বিষয়টি পারস্পরিক মতবিরোধ বা মুসলমানদের মধ্যে ফাটলের কারণ হওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে যখন কিনা এতে সালাফে ছালেহীন থেকেই মতবিরোধ পাওয়া যায়। এ মাসআলায় এমন কোন দলীল পাওয়া যায় না যে, এতে ইজতেহাদ বা গবেষণার কোন সুযোগ নেই। কোন একটি ইজতেহাদী বিষয়ে বিরোধীতাকারীকে জনৈক বিদ্বান বলেছিলেন, আমার বিরোধীতা করে আপনি আমার মতটিই প্রকাশ করেছেন। কেননা ইজতেহাদী বিষয়ে প্রত্যেকে সেটারই অনুসরণ করবে যা সে সত্য মনে করে। আমরা সবার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর পসন্দনীয় ও সন’ষ্টি মুলক কাজ কামনা করছি।
প্রশ্নঃ (৯৬) তারাবীহ্‌ সালাতে কুরআন খতম করার দু’আ পাঠ করার বিধান কি?
উত্তরঃ রামাযান মাসে তারাবীহ্‌ সালাতে কুরআন খতম করার দু’আ পাঠ করার ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত বা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন হাদীছ আমি জানিনা। খুব বেশী যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে, আনাস বিন মালেক (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ। ‘তিনি (আনাস) কুরআন খতম করলে পরিবারের লোকদের একত্রিত করে দু’আ করতেন।’ তবে এটা সালাতের বাইরের কথা।
কুরআন খতমের দু’আ সুন্নাত থেকে তো প্রমাণিত নয়ই তারপরও এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু মসজিদে অতিরিক্ত ভীড় লক্ষ্য করা যায়। অতঃপর মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ ব্যাপক আকারে দেখা যায়। কিন্তু বিদ্বানদের কেউ বলেছেন কুরআন খতম করার পর এই দু’আ পাঠ করা মুস্তাহাব।
ইমাম যদি শেষ রাতের নামায সমাপ্ত করে বিতর নামাযে এই খতমে কুরআনের দু’আ পাঠ করে এবং কুনূত পাঠ করে তবে কোন অসুবিধা নেই। কেননা বিতর নামাযে কুনূত শরীয়ত সম্মত।
প্রশ্নঃ (৯৭) প্রতি বছর কি লাইলাতুল কদর নির্দিষ্ট এক রাতেরই হয়ে থাকে? না কি তা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাতে হয়ে থাকে?
উত্তরঃ নিঃসন্দেহে লাইলাতুল কদর রামাযান মাসে হয়ে থাকে। আল্লাহ্‌ বলেনঃ
 “নিশ্চয় আমি উহা অবতীর্ণ করেছি কদরের রাত্রিতে।” (সূরা কদরঃ ১) অন্য আয়াতে পবিত্র কুরআন রামাযান মাসে নাযিল হয় একথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ্‌ বলেনঃ
 “রামাযান সেই মাস যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লায়লাতুল কদর অনুসন্ধান করার জন্য রামাযানের প্রথম দশকে ই’তেকাফ করেছেন। তারপর দ্বিতীয় দশকে এ’তেকাফ করেছেন। অতঃপর তা দেখেছেন রামাযানের শেষ দশকে। এরপর ছাহাবীদের (রাঃ) একটি দল স্বপ্নে দেখেছেন লাইলাতুল কদর রামাযানের শেষ সাত দিনে। তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “আমি দেখছি তোমাদের সবার স্বপ্ন একরকম হয়েছে শেষ সাত দিনে। অতএব কেউ যদি লায়লাতুল কদর অনুসন্ধান করতে চায় সে যেন শেষ সাত রাতে অনুসন্ধান করে।” লায়লাতুল কদরের সময় নির্ধারণের ব্যাপারে সর্বনিম্ন যা বলা হয়েছে তা হচ্ছে এই।
লায়লাতুল কদরের ব্যাপারে প্রমাণিত দলীল সমূহ যদি আমরা গভীরভাবে অনুসন্ধান করি, তবে দেখা যাবে যে, তা বিভিন্ন রাতে হয়ে থাকে। প্রতি বছর নির্দিষ্টভাবে এক রাতে নয়। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা রাত্রে লায়লাতুল কদর স্বপ্নে দেখলেনঃ পানি ও ভিজা মাটিতে সিজদা করলেন। সে রাতটি ছিল একুশে রাত। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
 “তোমরা রামাযানের শেষ দশকে লায়লাতুল কদর অনুসন্ধান কর।” এদ্বারা বুঝা যায় উহা নির্দিষ্ট একটি রাতে নয়। এজন্য মু’মিন শেষ দশকের প্রতিটি রাতেই অনুসন্ধান করবে ও যে কোন রাতে তা পেয়ে যাওয়ার জন্য আশা করবে।
যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরে ঈমানের সাথে ও ছাওয়াবের আশায় ক্বিয়ামুল্লাইল করবে, সে নিশ্চিতভাবে তার প্রতিদান লাভ করবে। চাই সে জানতে পারুক বা না পারুক। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছাওয়াবের আশায় লায়লাতুল কদরে ক্বিয়াম করে, তার পূর্বের পাপ ক্ষমা করা হবে।” এরূপ বলা হয়নি যে, কখন লায়লাতুল কদর হবে জানতে পারলে এই ছওয়াব হাসিল হবে। অতএব ছাওয়াব পাওয়ার জন্য নির্দিষ্টভাবে কখন লায়লাতুল কদর হচ্ছে তা জানা শর্ত নয়। কিন্তু যে ব্যক্তি রামাযানের শেষ দশকের প্রতিটি রাতেই কিয়াম করবে, সে নিশ্চিতভাবে লায়লাতুল কদর পাবে। চাই তা শেষ দশকের প্রথম দিকে হোক বা মধ্যখানে বা শেষের দিকে হোক।
প্রশ্নঃ (৯৮) তারাবীহ্‌ সালাতে কুরআন হাতে নিয়ে ইমামের পড়ার অনুসরণ করার বিধান কি?
উত্তরঃ ইমামের পড়ার অনুসরণ করবে এই উদ্দেশ্যে হাতে কুরআন নিয়ে তারাবীহ্‌ নামায আদায় করা কয়েকটি কারণে সুন্নাতের পরিপন্থীঃ
১)      একাজ করলে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখার সুন্নাতের উপর আমল করা যায় না।
২)      এতে বিনা প্রয়োজনে অধিক নড়াচড়ার দরকার পড়ে। যেমন, কুরআন খোলা, বন্ধ করা, বগলের নীচে বা পকেটে রাখা প্রভৃতি।
৩)      নিঃসন্দেহে এই নড়াচড়ার কারণে নামাযে অন্যমনস্ক হবে।
৪)      সিজদার স্থানে দৃষ্টিপাত করায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। কেননা সুন্নাত ও উত্তম হচ্ছে, সিজদার স্থানে দৃষ্টিপাত করা।
৫)      এ কারণে হতে পারে নামাযে অন্তর উপস্থিত থাকবে না। ফলে মুছল্লী ভুলেই যাবে সেকি নামাযে আছে না শুধু কুরআন তেলাওয়াত করছে। কিন্তু যদি বিনয়-নম্রতার সাথে দন্ডায়মান হয়ে ডান হাতকে বাম হাতের উপর স্থাপন করে এবং মাথা ও দৃষ্টি অবনত রেখে নামায আদায় করে, তবে অন্তরের উপস্থিতি অনেক বেশী অনুভব করবে এবং মনে থাকবে সে ইমামের পিছনে রয়েছে।
প্রশ্নঃ (৯৯) কোন কোন ইমাম তারাবীহ্‌ নামাযে কন্ঠস্বর পরিবর্তন করে মানুষের অন্তর নরম ও তাদের মধ্যে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করে। কোন কোন মানুষ এটাকে অপছন্দ করে। আল্লাহ্‌ আপনাকে হেফাযত করুন্ত এক্ষেত্রে আপনার মত কি?
উত্তরঃ আমি মনে করি, একাজ যদি কোন প্রকার বাড়াবাড়ি ছাড়াই শরীয়তের গন্ডির মধ্যে হয়, তবে কোন অসুবিধা নেই। এ জন্যই আবু মূসা আল আশআরী (রাঃ) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলেছিলেন, “যদি জানতাম আপনি আমার ক্বেরাত শুনছেন তবে আমি আপনার জন্য কন্ঠস্বর অতি সুন্দর করার চেষ্টা করতাম।” অর্থাৎ- সুন্দর, সুললিত ও উৎকৃষ্ট করার চেষ্টা করতাম। অতএব কেউ যদি কন্ঠস্বর সুন্দর করার চেষ্টা করে এবং এমনভাবে পাঠ করে যা দ্বারা মানুষের অন্তর নরম করা সম্ভব হয় তবে তাতে কোন অসুবিধা আমি মনে করি না। কিন্তু যদি বাড়াবাড়ি করে, যেমন সাধ্যাতিরিক্ত টানে বা গানের সূরের সাথে মিলায় বা প্রতিটি শব্দকেই গানের মত করে উচ্চারণ করার চেষ্টা করে, তবে তা উচিত নয়।
প্রশ্নঃ (১০০) কোন কোন বিদ্বান বলেন, ফরয নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট সুন্নাত সমূহের সময় হচ্ছে ফরয নামাযের সময় হওয়ার পর। ফরযের সময় শেষ হলে সুন্নাতের সময়ও শেষ। আবার কেউ বলেন, পূর্বের সুন্নাতগুলো ফরয শেষ হলেই শেষ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সঠিক কথা কি?
উত্তরঃ সঠিক কথা হচ্ছে, ফরযের পূর্বের সুন্নাত নামাযের সময় হল ফরয নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পর থেকে নিয়ে ঐ নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত। যেমন, যোহরের ফরযের পূর্বের সুন্নাতের সময় শুরু হবে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার পর যোহরের আযান হলে। আর শেষ হবে যোহর নামায শেষ হলে। আর ফরযের পরের সুন্নাতের সময় হচ্ছে, ফরয নামায শেষ হওয়ার পর থেকে নামাযের নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত।
কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে কারো যদি পূর্বের সুন্নাত ছুটে যায়, তবে ফরয নামায আদায়ের পর তা কাযা আদায় করতে পারে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা ওযরে হলে পরে কাযা আদায় করাতে কোন ফায়দা নেই। কেননা বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ইবাদত সমূহ যদি বিনা ওযরে তার সময় পার করে দেয়; তবে পরে আদায় করলে তা বিশুদ্ধও হবে না এবং কবূলও হবে না।
প্রশ্নঃ (১০১) ফজরের পূর্বের সুন্নাত ফরযের পর আদায় করা যাবে কি?
উত্তরঃ বিশুদ্ধমতে ফজর নামায শেষ করে সুন্নাত নামাযের কাযা আদায় করাতে কোন অসুবিধা নেই। এটা ফজরের পর নামায আদায় করার নিষিদ্ধতার অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা কারণ বিহীন কোন নামায উক্ত সময়ে আদায় করা নিষেধ।
কিন্তু যদি ভুলে যাওয়ার আশংকা না থাকে তবে উহা কাযা আদায় করার জন্য সূর্য উঠার পর পর্যন্ত দেরী করা উত্তম।
প্রশ্নঃ (১০২) আযানের পূর্বে যদি মসজিদে প্রবেশ করে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায আদায় করে। তবে আযানের পর কি পুনরায় কোন নফল নামায আদায় করতে পারবে?
উত্তরঃ আযান যদি ফজর বা যোহর নামাযের হয়। তবে আযানের পর ফজরের দু’রাকাত ও যোহরের চার রাকাত সুন্নাত নামায আদায় করবে। আর যদি অন্য নামাযের আযান হয় তবুও নফল আদায় করা শরীয়ত সম্মত। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “প্রত্যেক দু’আযানের মধ্যবর্তী সময়ে ছালাত রয়েছে।”
প্রশ্নঃ (১০৩) সুন্নাত নামাযের সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে তা কি কাযা আদায় করা যায়?
উত্তরঃ হ্যাঁ। নিদ্রা বা ভুলে যাওয়ার কারণে যদি সুন্নাত নামাযের সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, তবে তার কাযা আদায় করা যায়। কেননা তা রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আ’ম বা ব্যাপক হাদীছের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন,
 “যে ব্যক্তি নামায পড়তে ভুলে যায় বা ঘুমিয়ে পড়ে, তার কাফ্‌ফারা হচ্ছে স্মরণ হলেই তা আদায় করে নিবে।” উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের ফরযের পর ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে দু’রাকাত সুন্নাত আদায় করতে না পারলে, আছরের পর তার কাযা আদায় করতেন।’ কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে না পড়ে সময় অতিবাহিত করে দিলে, তার কাযা আদায় করবে না। কেননা সুন্নাত নামায সময় সাপেক্ষ ইবাদত। আর সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ইবাদতসমূহ ইচ্ছাকৃতভাবে তার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত করলে তা কবূল করা হবে না।
প্রশ্নঃ (১০৪) ফরজ সালাত আদায় শেষে সুন্নাত আদায় করার জন্য স্থান পরিবর্তন করার কোন দলীল আছে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ। মুআবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
 “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন এক নামাযের সাথে অন্য নামাযকে মিলিয়ে না দেই যতক্ষণ পর্যন্ত কথা না বলি বা বের না হয়ে যাই।” এথেকে বিদ্বানগণ বলেন, ফরয এবং সুন্নাতের মধ্যবর্তী সময়ে কথা বলে বা স্থানান্তর হয়ে পার্থক্য করা উচিত।
প্রশ্নঃ (১০৫) চাশতের সালাত ছুটে গেলে তার কি কাযা আদায় করা যায়?
উত্তরঃ চাশতের সময় পার হয়ে গেলে তা আদায় করার স্থান ও সময় ছুটে গেল। তাই তা কাযা আদায় করার দরকার নেই। কেননা উহা নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করার সাথে শর্তযুক্ত। কিন্তু সুন্নাত নামায সমূহ ফরয নামায সমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে তা কাযা আদায় করা যাবে। অনুরূপভাবে বিতর নামাযও কাযা আদায় করা যাবে। ছহীহ্‌ সুন্নাতে প্রমাণিত হয়েছেঃ
“নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়ার কারণে বা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কারণে রাতে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতে অক্ষম হলে, দিনের বেলায় ১২ (বার) রাকাআত নামায আদায় করে নিতেন।” অতএব তিনি বিতরও কাযা আদায় করতেন।
প্রশ্নঃ (১০৬) তিলাওয়াতের সিজদা দেয়ার জন্য তাহারাত বা পবিত্রতা কি আবশ্যক? এই সিজদায় কি দু‘আ পাঠ করতে হবে?
উত্তরঃ কুরআনুল কারীমে নির্দিষ্টভাবে যে সমস্ত সিজদার আয়াত রয়েছে তা পাঠ করার সময় সিজদা প্রদান করা শরীয়ত সম্মত। সিজদার সময় হলে, তাকবীর দিয়ে আল্লাহু আকবার বলে সিজদা প্রদান করবে। পাঠ করবেঃ (সুবহানা রাব্বীয়্যাল আ‘লা), (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা, আল্লাহুম্মাগ ফিরলী) (আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু, ওয়া বিকা আমানতু ওয়া লাকা আসলামতু, সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহু, ফাছাউওয়ারাহু, ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাছারাহু ফাতাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালেক্বীন।) আল্লাহুম্মাক্‌তুব লী বিহা আজরা, ওয়া যা’ আন্নী বিহা ভিযরা, ওয়াজ্‌ আলহা লী ইনদাকা যুখরা, ওয়া তাক্বাব্বালহা মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতাহা মিন আ’বদিকা দাঊদ) অর্থঃ হে আল্লাহ্‌ এর বিনিময়ে আমার জন্য প্রতিদান লিখে দাও। আমার গুনাহ্‌ মোচন কর। আমার জন্য আপনার কাছে তাকে সঞ্চিত করে রাখ। আমার নিকট থেকে তা কবূল করে নাও যেমনটি কবূল করেছো তোমার বান্দা দাঊদ (আঃ) থেকে। তারপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবে। তাকবির দিবে না সালামও ফেরাবে না। কিন্তু ছালাত অবস্থায় যদি সিজদার আয়াত পড়ে তবে আবশ্যক হচ্ছে সিজদা দেয়া এবং সিজদা থেকে উঠার সময় তাকবীর দেয়া। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামাযের বর্ণনা যারা দিয়েছেন, তারা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি প্রত্যেকবার মাথা নীচু করা ও মাথা উঠানোর সময় তাকবীর দিতেন।
কিন্তু কিছু লোক ছালাতের মধ্যে সিজদার আয়াত তেলাওয়াত করলে, সিজদার সময় শুধু তাকবীর দেয় উঠার সময় দেয় না। তাদের এ কাজের পক্ষে আমি সুন্নাহ্‌ থেকে বা বিদ্বানদের উক্তি থেকে কোন দলীল খুঁজে পাইনি।
তিলাওয়াতের সিজদার জন্য তাহারাত বা ওযু আবশ্যক কি না? এ ব্যাপারে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেনঃ পবিত্রতা আবশ্যক। কেউ বলেছেনঃ এর কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ইবনু ওমার (রাঃ) বিনা পবিত্রতায় সিজদা করতেন। কিন্তু আমি যেটা মনে করি, তা হচ্ছে জন্য বিনা ওযুতে এই সিজদা না দেয়া।
প্রশ্নঃ (১০৭) কখন আল্লাহ্‌র জন্য সিজদা শুক্‌র দিতে হয়? এর পদ্ধতি কি? এর জন্য ওযু করা কি আবশ্যক?
উত্তরঃ সিজদায়ে শুক্‌র দিতে হয়- মানুষ যখন কোন বিপদ থেকে উদ্ধার লাভ করে বা কোন নেয়ামত প্রাপ্ত হয় বা আনন্দময় কোন কিছু লাভ করে। এ সিজদার নিয়ম নামাযের বাইরে তেলাওয়াতের সিজদার মত। বিদ্বানদের কেউ কেউ এ সিজদার জন্য ওযু এবং তাকবীর আবশ্যক মনে করেন। কেউ শুধু প্রথম তাকবীর দেয়ার কথা বলেন। অর্থাৎ- তাকবীর দিয়ে সিজদাবনত হবে, তারপর (সুবহানা রাব্বীয়্যাল আ‘লা) বলার পর কিছু দু’আ করবে। এরপর তাকবীর না দিয়েই উঠে যাবে।
প্রশ্নঃ (১০৮) ছালাতে ইস্তেখারার বিধান কি? তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা সুন্নাত নামায পড়ে কি ইস্তেখারার দু’আ পড়া যায়?
উত্তরঃ মানুষ যখন কোন কাজ বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা করে; কিন্তু স্থির করতে পারে না কাজটি বাস্তবায়ন করবে না ছেড়ে দিবে? তখন ইস্তেখারার নামায আদায় করা সুন্নাত। তবে করা বা না করার কোন একটি দিক যদি তার কাছে প্রাধান্য পায় এবং স্থির হয়ে যায় তবে সে সময় ইস্তেখারা করা সুন্নাত নয়। এ কারণে রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক কাজই করতেন। কিন্তু দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করার পরেই তা করে ফেলতেন। তিনি এসব প্রত্যেকটা কাজের জন্য ইস্তেখারা করেছেন এরকম বর্ণনা পাওয়া যায় না।
কোন মানুষ যদি ইচ্ছা করে- নামায আদায় করবে বা যাকাত প্রদান করবে বা কোন হারাম গর্হিত বিষয় পরিত্যাগ করবে বা খানা-পিনা করবে বা ঘুমাবে তবে এ সমস্ত ক্ষেত্রে ইস্তেখারা শরীয়ত সম্মত নয়।
তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা সুন্নাত নামায পড়ে ইস্তেখারার দু’আ পড়া যাবে না। কেননা হাদীছে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ এসেছে ইস্তেখারার নিয়তে দু’রাকাআত নামায আদায় করার জন্য। সুতরাং অন্য নিয়তে নামায আদায় করে ইস্তেখারার দু’আ পড়লে হাদীছের নির্দেশ বাস্তবায়ন হবে না।
কিন্তু যদি তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা সুন্নাত নামায আদায় করার সময় ইস্তেখারার নিয়ত করে তারপর ইস্তেখারার দু’আ পাঠ করে, তবে হাদীছের প্রকাশ্য ভাষ্য অনুযায়ী তা যথেষ্ট হবে। হাদীছে বলা হয়েছেঃ “তখন ফরয নয় এমন দু’রাকাআত নামায যেন সে আদায় করে।” এখানে শুধু ফরযকেই বাদ দেয়া হয়েছে। তবে যথেষ্ট না হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা হাদীছে বলা হয়েছেঃ “যখন কোন কাজের ইচ্ছা করে তখন..।” এদ্বারা উক্ত দু’রাকাআতের উদ্দেশ্য ইস্তেখারা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
আমার মতে উত্তম হচ্ছে, এ দু’রাকাআত নামায আলাদাভাবে শুধুমাত্র ইস্তেখারার নিয়তেই আদায় করা উচিত।
প্রশ্নঃ (১০৯) ছালাতু তাছবীহ্‌ সালাত কি?
উত্তরঃ ছালাতুত্‌ তাছবীহ্‌ নামায নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন, এসম্পর্কিত হাদীছ ছহীহ্‌ নয়। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, ‘এসম্পর্কিত হাদীছ মিথ্যা। ইমাম আহমাদ এবং তাঁর অনুসারী ইমামগণ এ নামাযকে মাকরূহ মনে করতেন। কোন ইমামই এ নামাযকে মুস্তাহাব বলেন নি। আর অন্যান্য ইমামগণ আবু হানীফা, মালেক ও শাফেঈ এ সম্পর্কে কোন কিছু শোনেন নি তাই কোন মন্তব্যও করেন নি।” শায়খুল ইসলামের এ কথা খুবই সত্য। কেননা এ নামায বিশুদ্ধ হলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে উম্মতের কাছে সন্দেহাতীতভাবে ছহীহ্‌ সনদে বর্ণনা করা হত। কেননা তাতে রয়েছে বিরাট প্রতিদান ও উপকার। তাছাড়া সাধারণ নামাযের পদ্ধতি থেকেও তা সম্পূর্ণ আলাদা। বরং সমস্ত ইবাদত থেকে এটি মূলতঃ আলাদা ধরণের। কেননা এমন কোন ইবাদত আমরা দেখিনা, যা আদায় করার জন্য এধরণের এখতিয়ার দেয়া হয়েছে- প্রতিদিন আদায় করবে অথবা সপ্তাহে একবার অথবা মাসে একবার অথবা বছরে একবার অথবা সারা জীবনে হলেও একবার। তাছাড়া কোন বিষয় মৌলিকতা থেকে আলাদা হলে মানুষ তার প্রতি গুরুত্বারোপ করতো, বিষয়টি অন্যরকম হওয়ার কারণে মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রচলিত থকাতো। এর কোনটিই না হওয়ার কারণে বুঝা যায়, এ নামায শরীয়ত সম্মত নয়। আর এ কারণেই কোন ইমাম একে মুস্তাহাব বলেননি। (আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞান রাখেন।)
প্রশ্নঃ (১১০) বিবাহের সময় দু’রাকাআত সালাত পড়ার বিধান কি? বিশেষ করে বাসর রাতে এ দু’রাকাআতের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়?
উত্তরঃ বিবাহের সময় দু’রাকাআত নামায পড়া সম্পর্কে কোন হাদীছ নেই। তবে কোন কোন ছাহাবী বাসর রাতে দু’রাকাআত নামায আদায় করেছেন, এরকম বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কোন ছহীহ্‌ হাদীছ জানা যায় না। অবশ্য বাসর রাতে শরীয়ত সম্মত কাজ হচ্ছে, নববধুর কপাল ধরে এই দু’আ পাঠ করবেঃ
“হে আল্লাহ্‌! আপনার কাছে এর কল্যাণ এবং একে যে স্বভাবের উপর সৃষ্টি করেছেন তার কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আর আশ্রয় কামনা করছি এর অকল্যাণ থেকে এবং একে যে স্বভাবের উপর সৃষ্টি করেছেন তার অকল্যাণ থেকে।”
এরকম করলে স্ত্রী ভীত হবে বা অপছন্দ করবে এমন আশংকা থাকলে- তার নিকটবর্তী হওয়ার ভান করে আলতো করে কপালে হাত রাখবে এবং তাকে না শুনিয়েই চুপে চুপে উক্ত দু‘আটি পাঠ করবে। কেননা ইসলামী জ্ঞানে অজ্ঞ থাকার কারণে কোন কোন নারী এরকম খেয়াল করতে পারে যে, আমার মধ্যে কি অকল্যাণ আছে? এতে সে বিষয়টিকে অন্য খাতে নিতে পারে। সুতরাং ঝামেলা এড়ানোর জন্য নীরবে ও না জানিয়ে দু’আ পাঠ করাই ভাল।
প্রশ্নঃ (১১১) সালাত নিষিদ্ধ সময় সমূহ কি কি? মাগরিবের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায আযানের পূর্বে না আযানের পর আদায় করবে?
উত্তরঃ নিষিদ্ধ সময় সমূহ হচ্ছেঃ
১) ফজর ছালাতের পর থেকে তীর বরাবর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ সূর্য উদিত হওয়ার পর ১৫/২০ মিনিটি পর্যন্ত।
২) ঠিক দুপুরের সময়। অর্থাৎ যোহরের সময় হওয়ার ১০ মিঃ আগে থেকে যোহরের সময় হওয়া পর্যন্ত।
৩) আছর ছালাতের পর থেকে পরিপূর্ণরূপে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত।
তবে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায যে কোন সময় আদায় করা শরীয়ত সম্মত। যখনই মসজিদে প্রবেশ করে বসতে যাবে তখনই দু’রাকাআত নামায আদায় করবে। যদিও তা নিষিদ্ধ সময়ে হয়ে থাকে।
জানা উচিত, বিদ্বানদের মতামতের মধ্যে প্রাধান্যযোগ্য মত হচ্ছে, কারণ বিশিষ্ট নফল নামায সমূহ আদায় করার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ সময় বলতে কোন কিছু নেই। নিষিদ্ধ সময়েও তা আদায় করতে কোন বাধা নেই। সুতরাং ফজর নামায বাদ বা আছর নামায বাদ বা সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার সামান্য পূর্বে বা রাতে দিনে যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে, বসার আগে দু’রাকাআত নামায আদায় করবেন। অনুরূপভাবে তাহিয়্যাতুল ওযু নামাযও যে কোন সময় আদায় করা যায়।
প্রশ্নঃ (১১২) জামাআতে সালাত আদায় করার বিধান কি?
উত্তরঃ উলামাগণ একথার উপর একমত হয়েছেন যে, জামাআতে নামায আদায় করা শ্রেষ্ঠতম, গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। বিষয়টি আল্লাহ্‌ তা‘আলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন এবং এমনকি ভীতির সময় জামাআতবদ্ধভাবে ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ বলেনঃ
 “আর যখন আপনি তাদের সাথে থাকেন আর তাদেরকে (জামাআতের সাথে) নামায পড়ান, তবে তা এইভাবে হবে যে, তাদের মধ্যে থেকে একদল আপনার সাথে নামাযে দাঁড়াবে এবং নিজেদের অস্ত্র-শস্ত্র সাথে রাখবে। অনন্তর যখন তারা সিজদা করবে (এক রাকাআত পূর্ণ করবে), তখন তারা আপনাদের পিছনে চলে যাবে এবং অন্য দল যারা এখনও নামায পড়েনি তারা আসবে এবং আপনার সাথে নামায (অবশিষ্ট এক রাকাআত) পড়ে নিবে। আর এরাও আত্মরক্ষার সরঞ্জাম ও নিজ নিজ অস্ত্র-শস্ত্র সাথে রাখবে। কাফেরগণ এটাই চায় যে, আপনারা যদি নিজ নিজ অস্ত্র-শস্ত্র ও দ্রব্যসম্ভার থেকে একটু অসতর্ক হন, তবে অমনি তারা একযোগে আপনাদের উপর আক্রমণ চালাবে। আর যদি বৃষ্টির দরুণ আপনাদের কষ্ট হয় অথবা আপনারা পীড়িত হন, তবে নিজেদের অস্ত্র-শস্ত্র খুলে রাখতে কোন পাপ হবে না। আর সতর্কতা অবলম্বনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে রাখবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনাময় শাস্তি প্রস্তত করে রেখেছেন।” (সূরা নিসাঃ ১০২)
রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সুন্নাতেও অসংখ্য হাদীছ রয়েছে, যা জামাআতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব প্রমাণিত করে। যেমন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “নিশ্চয় আমি ইচ্ছা করছি, নামাযের আদেশ দিব, নামায কায়েম করা হবে। তারপর এক ব্যক্তিকে আদেশ দিব সে লোকদের নিয়ে নামায আদায় করবে। অতঃপর কাঠের বোঝা বহনকারী কিছু লোক নিয়ে আমি বের হব এমন লোকদের উদ্দেশ্যে যারা নামাযের জামাআতে উপস্থিত হয়নি। তারপর তাদেরকেসহ তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিব।” নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
“যে ব্যক্তি আযান শুনে তার জবাবে সাড়া দিয়ে আসবে না, ওযর ব্যতীত তার নামায হবে না।” জনৈক অন্ধ ব্যক্তি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দরবারে এসে জামাআতে না যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে বললেন, هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ بِالصَّلاةِ  “তুমি কি আযানের ধ্বনি শুনে থাক?” সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, فَأَجِبْ “তবে অবশ্যই নামাযে হাজির হবে।” আবদুল্লাহ্‌ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন,
 ‘আমরা দেখেছি সুস্পষ্ট মুনাফিক ও অসুস্থ ব্যক্তি ব্যতীত রাসূলুল্লাহ্‌র (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাহাবীগণ জামাআতের নামায থেকে পশ্চাতে থাকতেন না। আর অসুস্থ ব্যক্তিকে দু’জন ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে নিয়ে এসে কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো।’
সুস্থ দৃষ্টি ভঙ্গিও জামাআতের সাথে নামাযকে ওয়াজিব প্রমাণ করে। ইসলামী উম্মত এক দলভুক্ত জাতি। ইবাদতের একাত্মতা ব্যতীত অন্য কোন মাধ্যমে একতাবদ্ধ হওয়া সম্ভব নয়। আর ইবাদত সমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ, সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠতম ইবাদত হচ্ছে ছালাত। তাই মুসলিম জাতির উপর আবশ্যক হচ্ছে, এই ইবাদত আদায় করার সময় তারা একতাবদ্ধ হবে।
বিদ্বানগণ ঐকমত্য হয়েছেন যে, জামাআতবদ্ধ নামায শ্রেষ্ঠ, গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু তারা মতবিরোধ করেছেন্ত নামায বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য জামাআতবদ্ধ হওয়া কি শর্ত? নাকি একাকী নামায পড়লে নামায হয়ে যাবে, কিন্তু জামাআতের সাথে না পড়ার কারণে সে গুনাহগার হবে?
সঠিক কথা হচ্ছে- জামাআতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব। নামায বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত নয়। তাই শরীয়ত সম্মত কোন কারণ বা ওযর ব্যতিরেকে জামাআত পরিত্যাগ করলে গুনাহগার হবে। একথার দলীল হচ্ছে- রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাকী নামায পড়ার চাইতে জামাআতবদ্ধ নামাযকে অধিক মর্যাদাপূর্ণ আখ্যা দিয়েছেন। একথার অর্থ হচ্ছে একাকী নামায আদায় করলে যদি বিশুদ্ধ না হতো, তবে তার চেয়ে জামাআতবদ্ধ নামাযকে প্রাধান্য দেয়া হতো না।
মোটকথা প্রত্যেক মুসলিম, বিবেকবান প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের উপর ওয়াজিব হচ্ছে জামাআতের সাথে নামাযে হাজির হওয়া। চাই সে বাড়িতে অবস্থান করুক বা সফরে থাকুক।
প্রশ্নঃ (১১৩) একদল লোক কোন স্থানে বসবাস করে। ঐ বাসস্থানে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা কি তাদের জন্য জায়েয হবে? নাকি মসজিদে গমণ করা আবশ্যক?
উত্তরঃ বাসস্থানে বসবাসকারী লোকদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, মসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করা। যাদের আশে পাশেই মসজিদ পাওয়া যায়। মসজিদ নিকটে থাকা সত্বেও কোন ব্যক্তি বা দলের জন্য গৃহে নামায আদায় করা জায়েয নেই। তবে মসজিদ যদি দূরে হয়, ফলে আযান শুনতে না পায়, তবে বাড়িতে জামাআত করে নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই।
কিছু আলেমের কথার উপর ভিত্তি করে অনেক লোক এই মাসআলাটিতে উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা বলে থাকেঃ জামাআতে নামায পড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, নামাযের জন্য একদল লোকের একস্থানে সমবেত হওয়া। চাই তা মসজিদে হোক বা অন্য কোথাও। অতএব একদল লোক যদি নিজ বাড়িতেও জামাআতের সাথে নামায আদায় করে, তবে তো উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেল- ওয়াজিব আদায় হয়ে গেল। কিন্তু এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। কেননা মসজিদে জামাআত প্রতিষ্ঠিত করা আবশ্যক। দলীলঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “নিশ্চয় আমার ইচ্ছা হয়, নামাযের আদেশ দেই, নামায কায়েম করা হোক। তারপর এক ব্যক্তিকে আদেশ দেই সে লোকদের নিয়ে নামায কায়েম করবে। অতঃপর কাঠের বোঝা বহনকারী কিছু লোক নিয়ে আমি বের হই, এমন লোকদের উদ্দেশ্যে, যারা নামাযের জামাআতে উপস্থিত হয়নি। তারপর তাদেরকেসহ তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিব।” অথচ হতে পারে এই লোকেরা নিজ গৃহে নামায আদায় করেছে।
তাছাড়া গুটিকতক লোক একস্থানে সমবেত হয়ে নামায আদায় করলেই যদি জামাআতের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়- মসজিদে যাওয়ার আবশ্যকতা না থাকে, তবে মসজিদ প্রতিষ্ঠারই বা দরকার কি!?
অতএব ঐ লোকদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, মসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা। তবে যদি মসজিদ বেশী দূরে হয়, সেখানে যেতে কষ্ট হয়, তবে গৃহে নামায আদায় করতে কোন দোষ নেই।
প্রশ্নঃ (১১৪) কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীর জন্য কোনটি উত্তম- আযান শোনার সাথে সাথে নামাযে যাওয়া? নাকি কিছুটা অপেক্ষা করে কিছু কাজ সম্পাদন করে নামায আদায় করা। আর সুন্নাতে মুআক্কাদা ছাড়া অন্যান্য নফল নামায পড়ার ক্ষেত্রে তার বিধান কি?
উত্তরঃ সমস্ত মুসলমানের জন্য উত্তম হচ্ছে, আযান শোনার সাথে সাথে নামাযে যাওয়া। কেননা মুআয্‌যিন আহবান করেন, ‘হাইয়্যা আলাছ্‌ছালাহ’ এসো নামাযের দিকে। কোন ধরণের গড়িমসি বা দেরী করলে হয়েতো নামাযটাই ছুটে যাবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব আযান শোনার সাথে সাথে মসজিদের পানে ছুটে যাওয়া।
কিন্তু সুন্নাতে মুআক্কাদা ছাড়া অন্যান্য নফল নামায পড়া উক্ত কর্মচারীর জন্য উচিত হবে না। কেননা চাকরীর চুক্তির ভিত্তিতে এই সময়টুকুর পাওনাদার হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তবে সুন্নাতে মুআক্কাদা আদায় করতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে সাধারণতঃ এর অনুমতি থেকেই থাকে।
প্রশ্নঃ (১১৫) করো যদি প্রথম এক রাকাআত বা দু’রাকাআত ছুটে যায়, তবে ইমামের সালামের পর সে কি ছুটে যাওয়া রাকাআতের কাযা আদায় করার জন্য সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলাবে? নাকি শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করেই ক্ষ্যান্ত হবে?
উত্তরঃ বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, ইমামের সালামের পর মুক্তাদী যে ছালাতটুকু পূরা করে থাকে, তা হচ্ছে তার নিজস্ব নামাযের শেষ অংশ। তাই সে শুধু সূরা ফাতিহাই পাঠ করবে। এটা হচ্ছে- যদি চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাযের ছুটে যাওয়া রাকাআতের সংখ্যা এক বা দুই হয় বা মাগরিবের এক রাকাআত ছুটে থাকে। আর ফজরের কোন রাকাআত ছুটে গেলে ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলাতে হবে।
প্রশ্নঃ (১১৬) জনৈক ব্যক্তি দু‘মাস যাবত বেহুশ অবস্থায় ছিল। কোন কিছুই অনুধাবন করতে পারেনি। ফলে না ছালাত আদায় করেছে না রামাযানের ছিয়াম পালন করেছে। এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃ সংজ্ঞাহীন হওয়ার কারণে তার উপর কোন কিছুই আবশ্যক নয়। আল্লাহ্‌ যদি তার জ্ঞান ফিরিয়ে দেন, তবে সে রামাযানের ছিয়াম ক্বাযা আদায় করবে। কিন্তু আল্লাহ্‌ যদি তার মৃত্যুর ফায়সালা করেন, তবে তার উপর কোন কিছু আবশ্যক নয়। তবে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর যদি সার্বক্ষণিক ওযর বিশিষ্ট হয়, যেমন অতি বয়স্ক প্রভৃতি, তবে ফরয হচ্ছেঃ তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের বিনিময়ে একজন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করবে।
তবে ছালাত ক্বাযা আদায় করার ব্যাপারে ওলামাদের মধ্যে দু’রকম মত পাওয়া যায়।
১) অধিকাংশ বিদ্বান বলেন, তাকে ক্বাযা আদায় করতে হবে না। কেননা ইবনু ওমর (রাঃ) একদিন একরাত্রি বেহুঁশ ছিলেন। কিন্তু তিনি ছুটে যাওয়া ছালাত ক্বাযা আদায় করেননি। (মালেক, হা/ ২৩)
২) তাকে ক্বাযা আদায় করতে হবে। এ মত পোষণ করেছেন পরবর্তী যুগের হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণ। ইনছাফ গ্রন্থের লিখক বলেন, এটা মাযহাবের বিচ্ছিন্ন মতামত সমূহের অন্তর্গত। এ মতটি আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি তিন দিন বেহুঁশ ছিলেন। তারপর ছুটে যাওয়া ছালাত ক্বাযা আদায় করেছেন। (মালেক, হা/ ২৩)
প্রশ্নঃ (১১৭) মসজিদে প্রবেশ করে ইমামকে শেষ তাশাহুদে পেলে কি নামাযে শামিল হবে? নাকি দ্বিতীয় জামাআত কায়েম করার জন্য অপেক্ষা করবে?
উত্তরঃ মসজিদে প্রবেশ করে যদি দেখে যে, ইমাম শেষ তাশাহুদে বসে আছেন, তখন যদি দ্বিতীয় জামাআত অনুষ্ঠিত হওয়ার আশা থাকে, তবে নামাযে শরীক হবে না; বরং অপেক্ষা করবে। কিন্তু দ্বিতীয় জামাআত অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে তাশাহুদে বসে পড়বে। কেননা বিশুদ্ধ মত হচ্ছে এক রাকাআত নামায না পেলে জামাআত পাওয়া হল না। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেনঃ
 “যে ব্যক্তি এক রাকাআত নামায পেল, সে পূর্ণ নামায পেয়ে গেল।” যেমনটি এক রাকাআত নামায না পেলে জুমআর নামায পাওয়া হল না, তেমনি জামাআতের নামায। সুতরাং ইমামের শেষ তাশাহুদে নামাযে শরীক হলে জামাআত পাওয়া হল না। অতএব দ্বিতীয় জামাআতের সম্ভাবনা থাকলে অপেক্ষা করাই ভাল। আর সম্ভাবনা না থাকলে ফিরে যাওয়ার চাইতে শেষ নামাযের তাশাহুদে শামিল হওয়াই উত্তম।
প্রশ্নঃ (১১৮) নফল বা সুন্নাত নামায শুরু করে দিয়েছি। এমন সময় ফরয নামাযের ইক্বামত হয়ে গেল। এখন কি করব?
উত্তরঃ সুন্নাত বা নফল নামায শুরু করার পর যদি ফরয নামাযের ইক্বামত হয়ে যায়, তবে একদল বিদ্বান বলেন, তখনই সালাত ছেড়ে দিতে হবে। যদিও শেষ তাশাহুদে বসে থাকে না কেন।
আরেক দল বিদ্বান বলেন, ইমামের সালাম ফেরানোর আগে তাকবীরে তাহরিমা দেয়ার সম্ভাবনা থাকা পর্যন্ত সালাত ছাড়বে না।
মত দু’টি পরস্পর বিরোধী। প্রথমটি হচ্ছেঃ শেষ তাশাহুদে বসে থাকলেও নামায ছেড়ে দিতে হবে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছেঃ আপনি সালাত চালাতে থাকেন। কিন্তু যদি আশংকা করেন যে, আপনার সালাত শেষ করে ইমামের সাথে তাকবিরে তাহরিমা দেয়ার আগেই ইমাম সালাম ফিরিয়ে দিবেন, তবে নামায ছেড়ে দিয়ে ইমামের সাথে শামিল হবেন।
কিন্তু বিশুদ্ধ ও মধ্যপন্থী মত হচ্ছেঃ ইক্বামত দেয়ার সময় আপনি যদি শেষ রাকাআতে থাকেন তবে হালকা করে সেই রাকাআত পূর্ণ করে নিন। আর যদি প্রথম রাকাআতেই থাকেন তবে নামায ছেড়ে দিন। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি এক রাকাআত নামায পেল, সে নামায পেয়ে গেল।” (বুখারী ও মুসলিম) যখন আপনি ইক্বামতের পূর্বে এক রাকাত ছালাত পড়েছেন, তখন নিষিদ্ধ সময়ের আগেই এক রাকাত পড়ে নিয়েছেন। আর যে এক রাকাত নামায পড়ে নিয়েছে সে পূর্ণ নামাযই পেয়েছে। কিন্তু সে অবশিষ্ট রাকাত হালকাভাবে আদায় করবে। কেননা নফল নামাযের এক অংশ পাওয়ার চাইতে ফরয নামাযের এক অংশ পাওয়া অনেক উত্তম। কিন্তু আপনি যদি প্রথম রাকাতেই থাকেন তবে তো পূর্ণ নামায পাওয়ার সময়ই পেলেন না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এক রাকাআত নামায পেল, সে নামায পেয়ে গেল।” অতএব এ অবস্থায় আপনি নামায ছেড়ে দিবেন। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যখন কোন নামাযের ইক্বামত দেয়া হয়; তখন উক্ত ফরয নামায ছাড়া আর কোন নামায নেই।”
প্রশ্নঃ (১১৯) মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা শেষ হওয়ার পূর্বে ইমাম রুকূতে চলে গেলে মুক্তাদীর করণীয় কি?
উত্তরঃ মুক্তাদী যদি এমন সময় সালাতে শরীক হয় যখন ইমাম রুকূর ইচ্ছা করছেন। আর মুক্তাদী সূরা ফাতিহা পূর্ণ করতে পারেনি যদি দু’এক আয়াত বা অনুরূপ বাকী থাকে তবে তা পড়ে নিয়েই ইমামের সাথে রুকূতে শামিল হবে। আর এটাই উত্তম। কিন্তু যদি সূরা ফাতিহা পূর্ণ করতে অনেকাংশ অবশিষ্ট রয়ে যায়, আর তা পূর্ণ করতে গেলে ইমামের সাথে রুকূতে শামিল হতে পারবে না আশংকা হয়, তবে ফাতিহা ছেড়ে দিয়ে ইমামের সাথে রুকূতে চলে যাবে।
প্রশ্নঃ (১২০) মুক্তাদী যদি ইমামকে সিজদা অবস্থায় পায়, তবে কি ইমামের সিজদা থেকে উঠার অপেক্ষা করবে? নাকি সিজদা অবস্থাতেই নামাযে শামিল হবে?
উত্তরঃ উত্তম হচ্ছে ইমামকে যে অবস্থাতেই মুক্তাদী পাবে নামাযে শামিল হবে, কোনরূপ অপেক্ষা করবে না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা (ইমামের সাথে) যা পাবে তা আদায় করবে।”
প্রশ্নঃ (১২১) যেসমস্ত নামাযে নীরবে কিরাআত পাঠ করা হয় সে সমস্ত নামাযে মুক্তাদীর ফাতিহার পর অন্য সূরা পাঠ করার বিধান কি?
উত্তরঃ ইমামের রুকূ করার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত মুক্তাদী পড়তেই থাকবে। যদিও সে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করে থাকে। চুপ থাকবে না। এমনকি প্রথম তাশাহুদের পর শেষের দু’রাকাতেও সূরা ফাতিহা পড়ার পর যদি দেখে ইমাম রুকূ করেননি, তবে অন্য সূরা পড়া শুরু করবে। কেননা নামাযে শরীয়ত অনুমদিত এমন কোন স্থান নেই যেখানে নামাযী চুপ করে থাকবে। তবে শুধু মাত্র ইমামের উচ্চ কন্ঠে কুরআন তেলাওয়াতের সময় মুক্তাদী নীরব থাকবে ও শুনবে।
প্রশ্নঃ (১২২) ইমামের আগে আগে কোন কাজ করার বিধান কি?
উত্তরঃ ইমামের আগে বেড়ে কোন কাজ করা হারাম। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “যে ব্যক্তি ইমামের পূর্বে মাথা উঠায় সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ্‌ তার মাথাটি গাধার মাথায় রূপান্তরিত করে দিবেন না? অথবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতিতে পরিবর্তন করে দিবেন না?”  আরো প্রমাণিত হয়েছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
 “অনুসরণ করার জন্য ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি তাকবীর দেয়ার পর তোমরা তাকবীর দিবে, তিনি তাকবীর দিয়ে শেষ না করলে তোমরা তাকবীর দিবে না। তিনি রুকূ করলে তোমরা রুকূ করবে। তিনি রুকূতে না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা রুকূ করবে না।”
উল্লেখ্য যে, ইমামের সাথে মুক্তাদীর চারটি অবস্থা রয়েছেঃ
১) ইমামের আগে বেড়ে কোন কিছু করা।
২) ইমামের সাথে সাথে করা।
৩) ইমামের অনুসরণ করা।
৪) ইমামের পিছনে পিছনে করা।
ইমামের আগ বেড়ে কোন কিছু করাঃ অর্থাৎ ইমাম শুরু করার আগেই তা করে নেয়া। এরূপ করা হারাম। একাজ যদি তাকবীরে তাহরীমার ক্ষেত্রে হয় তবে তার নামাযই হবে না। নামায পুনরায় ফিরিয়ে পড়া ওয়াজিব।
ইমামের সাথে সাথে করাঃ অর্থাৎ ইমামের রুকূর সাথে রুকূ করা, সিজদা করার সাথে সাথে সিজদা করা, উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথে উঠে দাঁড়ানো। প্রকাশ্য দলীল সমূহ অনুযায়ী এরূপ করাও হারাম। তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তিনি রুকূতে না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা রুকূ করবে না।”
কোন কোন বিদ্বান বলেছেন এটা হারাম নয়; বরং মাকরূহ। তবে এটা যদি তাকবীরে তাহরীমার সময় হয়, তবে তার নামাযই হবে না। পুনরায় নামায পড়া তার উপর ওয়াজিব।
ইমামের অনুসরণ করাঃ অর্থাৎ ইমামের পর পর দেরী না করে তার অনুসরণ করা। এটাই হচ্ছে সুন্নাতী পদ্ধতি।
ইমামের পিছনে পিছনে করাঃ অর্থাৎ অতিরিক্ত দেরী করে ইমামের অনুসরণ করা। ইহা সুন্নাত বহির্ভূত।
প্রশ্নঃ (১২৩) গুনাহ্‌গার (ফাসেক) লোকের পিছনে নামায পড়া কি জায়েয?
উত্তরঃ প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি- যদিও সে কিছু কিছু গুনাহ্‌র কাজে লিপ্ত থাকে- তার পিছনে নামায আদায় করা জায়েয ও নামায বিশুদ্ধ। এটাই বিশুদ্ধ মত। কিন্তু নিঃসন্দেহে পরহেজগার ও বাহ্যিকভাবে পরিশুদ্ধ লোকের পিছনে নামায আদায় করা উত্তম। ঐ গুনাহ্‌গার ব্যক্তির পাপ সমূহ যদি এমন পর্যায়ের হয় যা ইসলাম ভঙ্গকারী, তাহলে তার পিছে নামায আদায় করা বৈধ হবে না। কেননা তার নিজের নামাযই তো বিশুদ্ধ নয়। কেননা উক্ত পাপের কারণে সে ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে গেছে। অতএব ইমামের নামায যদি বিশুদ্ধ না হয়, তবে তার কি অনুসরণ করা যায়? তখন তো ইমাম ছাড়াই ইমামের অনুসরণের নিয়ত করা হল।
প্রশ্নঃ (১২৪) নফল আদায়কারীর পিছনে কি ফরয আদায় করা জায়েয হবে? অথবা ফরয আদায় কারীর পিছনে কি নফল আদায় করা চলবে?
উত্তরঃ উভয়টিই বিশুদ্ধ। অনুরূপভাবে আছর নামায আদায়কারীর পিছনে যোহর আদায় করা জায়েয হবে এবং যোহর আদায়কারী ইমামের পিছনে আছর আদায় করা যাবে। কেননা প্রত্যেকে নিয়ত অনুযায়ী আমল করবে। তার ফল পাবে। একারণে ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেছেন, আপনি যদি মসজিদে গিয়ে দেখেন ইমাম তারাবীহ্‌ ছালাত আদায় করছেন, আর আপনার এশা নামায বাকী আছে, তবে তার সাথেই এশা নামায আদায় করে নিন। উহা আপনার জন্য ফরয আদায় হবে আর ইমামের হবে নফল।
প্রশ্নঃ (১২৫) একটি বিষয় নিয়ে মুছল্লীদের মাঝে মতবিরোধ হয়েছে। বিষয়টি হচ্ছে, জনৈক লোক নামায কায়েম হওয়ার পর মসজিদে প্রবেশ করে দেখে কাতার পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। কাতারে কোন জায়গা নেই। সে কি আগের কাতার থেকে একজন লোক টেনে নিয়ে তাকে নিয়ে নতুন কাতার করবে? না একাকী কাতারে দাঁড়াবে? না অন্য কিছু করবে?
উত্তরঃ সালাতে এসে যদি দেখে যে, কাতার পরিপূর্ণ হয়ে গেছে, তবে তার তিনটি অবস্থা রয়েছেঃ
১)  কাতারের পিছনে একাকী নামায আদায় করবে।
২)  অথবা সামনের কাতার থেকে একজন লোক টেনে নিবে এবং তাকে নিয়ে নতুন কাতার বানাবে।
৩)  অথবা কাতার সমূহের আগে চলে গিয়ে ইমামের ডান দিকে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে।
এ তিনটি অবস্থা হচ্ছে যদি সে নামাযে প্রবেশ করতে চায়। চতুর্থ অবস্থা হচ্ছে, এর কোনটিই করবে না। অর্থাৎ-
৪) এ জামাআতে শামিল হবে না, অপেক্ষা করবে।
এ চারটি অবস্থার মধ্যে কোনটি গ্রহণ করা বিশুদ্ধ?
আমরা বলব, এচারটি অবস্থার মধ্যে বিশুদ্ধতম অবস্থাটি হচ্ছে, কাতারের পিছনে একাকী দাঁড়াবে এবং ইমামের সাথে নামায আদায় করবে। কেননা ওয়াজিব হচ্ছে জামাআতের সাথে এবং কাতারে শামিল হয়ে নামায আদায় করা। এই দু’টি ওয়াজিবের মধ্যে একটি বাস্তবায়ন করতে অপারগ হলে অন্যটি বাস্তবায়ন করবে। অতএব আমরা বলব, কাতারের পিছনে একাকী হলেও জামাআতের সাথে নামায আদায় করবেন। যাতে তার ফযীলত লাভ করতে পারেন। এ অবস্থায় কাতারে শামিল হওয়ার ওয়াজিব আপনার উপর থেকে রহিত হয়ে যাবে। কেননা আপনি তাতে অপারগ। আর আল্লাহ্‌ সাধ্যের বাইরে কোন কাজ বান্দার উপর চাপিয়ে দেননি। তিনি বলেন, “আল্লাহ্‌ মানুষের সাধ্যাতিত কোন কিছু তার উপর চাপিয়ে দেননি।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮৬) তিনি আরো বলেন, “তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্‌কে ভয় কর।” (সূরা তাগাবুনঃ ১৬) এমতের প্রমাণে বলা যায়, কোন নারী যদি কাউকে সাথী হিসেবে না পায় তবুও সে একাকী কাতারের পিছনে দাঁড়াবে। কেননা পুরুষের কাতারে দাঁড়ানো তার অনুমতি নেই। যখন কিনা শরঈ নির্দেশের কারণে পুরুষের কাতারে দাঁড়াতে সে অপারগ, তখন একাকী কাতারে দাঁড়াবে এবং নামায আদায় করবে।
অতএব যে ব্যক্তি কাতার পূর্ণ হওয়ার পর মসজিদে প্রবেশ করবে এবং সে প্রকৃতপক্ষে কাতারে দাঁড়ানোর জন্য স্থান পাবে না, তখন তার এই ওয়াজিব রহিত হয়ে যাবে। বাকী থাকবে জামাআতের সাথে নামায আদায় করা। তাই সে কাতারের পিছনে একাকীই দাঁড়াবে ও নামায আদায় করবে। কিন্তু সম্মুখের কাতার থেকে কোন লোককে টেনে নিয়ে আসলে তিনটি নিষিদ্ধ কাজ করা হয়ঃ
ক) আগের কাতারে একটি স্থান ফাঁকা করা হল, ফলে কাতার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। যা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশের বিরোধী। তিনি কাতারকে বরাবর ও ফাঁকা স্থান পূর্ণ করতে আদেশ করেছেন।
খ) টেনে নিয়ে আসা লোকটিকে তার উত্তম স্থান থেকে কম ছাওয়াবের স্থানে সরিয়ে দেয়া হল। যা রীতিমত একটি অপরাধ।
গ) লোকটির নামাযে ব্যাঘাত ঘটানো হল। কেননা তাকে টানাটানি করলে তার অন্তরে একাগ্রতা কমে যাবে। এটিও একটি অপরাধ।
তৃতীয় অবস্থায় ইমামের ডান দিকে গিয়ে দাঁড়াতে বলা হয়েছেঃ কিন্তু ইহা উচিত নয়। কেননা ইমামের স্থান অবশ্যই মুক্তাদীদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। যেমন করে ইমাম কথায় ও কাজে মুক্তাদীদের থেকে বিশেষ ও আলাদা থাকেন।
এটাই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হেদায়াত। ইমাম মুক্তাদীদের থেকে আলাদা স্থানে তাদের সম্মুখে এককভাবে অবস্থান করবেন। এটাই ইমামের বিশেষত্ব। এখন মুক্তাদীগণও যদি তাঁর সাথে দন্ডায়মান হয়, তবে তো তার উক্ত বিশেষত্ব শেষ হয়ে গেল।
আর চতুর্থ অবস্থায় জামাত ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকার কথা বলা হয়েছেঃ এটা অযৌক্তিক বিষয়। কেননা জামাআতে শামিল হওয়া ওয়াজিব এবং কাতারে শামিল হওয়াও ওয়াজিব। দু’ওয়াজিবের একটিতে অপারগ হলে তার কারণে অপরটিকে পরিত্যাগ করা জায়েয হবে না।
প্রশ্নঃ (১২৬) মসজিদের উপর তলার লোকেরা নীচের তলার লোকদের দেখতে না পেলে নামায বিশুদ্ধ হবে কি?
উত্তরঃ যখন মসজিদ একটিই, উপর তলার লোকেরা যদি ইমামের তাকবীর ধ্বনী শুনতে পায় তবে একে অপরকে দেখার কোন শর্ত নেই। তাদের সকলের নামায বিশুদ্ধ হবে।
প্রশ্নঃ (১২৭) রেডিও-টিভিতে প্রচারিত সালাতের অনুসরণ করা জায়েয আছে কি?
উত্তরঃ টেলিভিশন ও রেডিওর মাধ্যমে প্রচারিত নামাযে ইমামের অনুসরণ করা কোন মুসলমানের জন্য জায়েয নয়। কেননা সালাতের জন্য জামাআতের অর্থ হচ্ছে একস্থানে সমবেত হওয়া। অতএব তাদেরকে একস্থানে একত্রিত হওয়া জরূরী। কাতার সমূহ মিলিত করা আবশ্যক। ঐ দু’টি কারণে মিডিয়ার মাধ্যমে সালাত জায়েয হবে না। কেননা তা দ্বারা উক্ত উদ্দেশ্য হাসিল হয় না। যদি এটা জায়েয হয়, তবে আর মসজিদের কোন প্রয়োজন থাকে না। প্রত্যেকেই নিজ নিজ গৃহে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও জুমআর নামায আদায় করে নিবে। নিঃসন্দেহে এটা জামাআত ও জুমআ প্রতিষ্ঠিত করার শরীয়ত নির্দেশিত হিকমতের পরিপন্থী। অতএব নারী-পুরুষ কারো জন্য রেডিও বা টেলিভিশনের অনুসরণ করে সালাত আদায় করা বৈধ নয়। (আল্লাহ্‌ সবাইকে তাওফীক দিন)
অসুস্থ ব্যক্তি কিভাবে সালাত আদায় করবে?
১) অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হল- ফরয সালাত দাঁড়িয়েই আদায় করা। যদিও কিছুটা বাঁকা হয়ে দাঁড়াক বা কোন দেয়ালে হেলান দিয়ে বা লাঠিতে ভর করে দাঁড়াক না কেন।
২) যদিও কোন ভাবেই দণ্ডায়মান হতে সক্ষম না হয় তবে বসে সালাত আদায় করবে। উত্তম হল দাঁড়ানো ও রুকুর অবস্থার ক্ষেত্রে চার জানু হয়ে বসবে।
৩) যদি বসেও সালাত আদায় করতে সক্ষম না হয় তবে কিবলা মুখি হয়ে কাত হয়ে শুয়ে সালাত আদায় করবে। এক্ষেত্রে উত্তম হল ডান কাত হয়ে শোয়া। যদি কিবলামুখি হতে সক্ষম না হয় তবে সে দিকে ইচ্ছা মুখ করে সালাত আদায় করবে। তাঁর সালাত বিশুদ্ধ হবে এবং তা ফিরিয়ে পরার দরকার হবে না।
৪) যদি ডান কাত হয়ে শুতে অক্ষম হয় তবে চিৎ হয়ে শুয়ে সালাত আদায় করবে। সে সময় পা দুটি থাকবে কিবলার দিকে। উত্তম হল (বালিশ ইত্যাদি দিয়ে) মাথা উপরের দিকে কিছুটা উঠাবে যাতে করে কিবলামুখি হতে পারে। যদি পা দুটিকে কিবলামুখি করতে সক্ষম না হয়, তবে পা যে দিকেই থাক ঐভাবেই সালাত আদায় করবে। সালাত বিশুদ্ধ হবে এবং পরে তা ফিরিয়ে পড়তে হবে না।
৫) রুগির উপর ওয়াজিব হল সালাতে রুকু ও সিজদা করা। যদি তা করতে সামর্থ্য না হয় তবে মাথা দিয়ে ইশারা করবে। এ সময় রুকুর চেয়ে সিজদার জন্য মাথাটা একটু বেশি নীচু করবে। যদি শুধু রুকু করতে সক্ষম হয় এবং সিজদা করতে না পারে তবে রুকু করবে এবং ইঙ্গিতের মাধ্যমে সিজদা করবে। আর যদি সিজদা করতে সক্ষম হয়, রুকু না করতে পারে তবে সিজদার সময় সিজদা করবে আর রুকুর জন্য মাথা দিয়ে ইশারা করবে।
৬) রুকু সিজদার সময় মাথা নীচু করে যদি ইশারা করতে সক্ষম না হয়, তবে চোখ দিয়ে ইশারা করবে। রুকুর সময় চোখ দুটোকে সামান্য বন্ধ করবে আর সিজদার জন্য বেশী করে বন্ধ করবে। কিন্তু রুকু সিজদার জন্য আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা যেমন কোন কোন রুগী করে থাকে- বিশুদ্ধ নয়। এ ব্যাপারে কুরান-সুন্নাহ বা বিদ্বানদের থেকে কোন দলীল আমি পাই নি।
৭) যদি মাথা বা চোখের মাধ্যমে ইশারা করতেও সক্ষম না হয়, তবে মনে মনে সালাত আদায় করবে। মুখে তাকবীর বলে, কিরাআত পরবে এবং দাঁড়ানো, রুকু করা, সিজদা করা, তাশাহহুদে বসা ইত্যাদির জন্য মনে মনে নিয়ত করবে। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যার সে নিয়ত করে থাকে।
৮) রুগীর উপর ওয়াজিব হল প্রত্যেক সালাত সঠিক সময়ে আদায় করা এবং সে সময়ে তাঁর উপর যা যা ওয়াজিব তাঁর সবই সাধ্যানুযায়ী আদায় করা। যদি প্রত্যেক সালাত নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা তাঁর জন্য কষ্টকর হয় তবে দু সালাতকে একত্রিত আদায় করা জায়েয আছে। যোহর ও আছর দু সালাত একত্রে যোহরের ওয়াক্তে বা দেরি করে আসরের ওয়াক্তে আদায় করবে। এমনিভাবে মাগরীব ও এশা দু’সালাত মাগরীবের ওয়াক্তে একত্রে বা দেরি করে এশার ওয়াক্তে একত্রে আদায় করবে। মোটকথা যেভাবে তাঁর জন্য সহজ হয় সেভাবেই আদায় করবে।
৯) অসুস্থ ব্যক্তি যদি অন্য কোন শহরে চিকিৎসার জন্য সফর করে তবে সে (মুসাফির হিসেবে) চার রাকাআত বিশিষ্ট সালাতকে কসর কবে দু রাকাআত আদায় করবে। অর্থাৎ যোহর, আছর ও এশা দু রাকাআত করে আদায় করবে। যতদিন নিজ শহরে ফিরে না আসে এরূপই করতে থাকবে। চাই সফরের সময় অল্প হোক বা দীর্ঘায়িত হোক।
প্রশ্নঃ (১২৮) উড়োজাহাজে নামায আদায় করার পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ সময় হলেই উড়োজাহাজের উপর নামায আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু নামাযের নির্দিষ্ট সময় বা দু’নামায একত্রিত করার সময় শেষ হওয়ার আগেই যদি বিমান অবতরণ করার সম্ভাবনা থাকে, আর যমীনে থাকাবস্থায় যেভাবে নামায আদায় করতে হয়, সেভাবে যদি বিমানের উপর সম্ভব না হয়, তবে সেখানে ফরয নামায আদায় করবে না। বরং অবতরণ করার পর যমীনে নামায আদায় করবে। যেমনঃ জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে সূর্যাস্তের পূর্বে বিমান উড্ডয়ন করল। এখন আকাশে থাকাবস্থায় মাগরিব নামায আদায় করবে না। পরবর্তী এয়ারপোর্টে বিমান অবতরণ করার পর নামায পড়বে। কিন্তু যদি দেখে যে, মাগরিব নামাযের সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে, তবে এশা নামাযের সাথে মাগরিবকে একত্রিত করার নিয়ত করে নিবে। অতঃপর অবতরণ করে মাগরিব নামাযকে পিছিয়ে দিয়ে এশার সাথে একত্রিত আদায় করবে। কিন্তু যদি বিমান চলতেই থাকে- অবতরণের সম্ভাবনা না থাকে এবং এশা নামাযেরও সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা হয়, তখন বিমানের উপরেই সময় অতিক্রম হওয়ার আগেই মাগরিব ও এশা নামায একত্রিত আদায় করে নিবে।
বিমানের উপর ফরয নামায পড়ার পদ্ধতি হচ্ছে, ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর দিবে। ছানা, সূরা ফাতিহা ও অন্য কোন সূরা বা আয়াত পাঠ করে রুকূ করবে। রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে সিজদা করবে। নিয়ম মাফিক সিজদা করতে সক্ষম না হলে বসে পড়বে এবং বসাবস্থায় ইঙ্গিতের মাধ্যমে সিজদা করবে। নামায শেষ করা পর্যন্ত এরূপই করবে। আর পূর্ণ সময় ক্বিবলামুখী হয়েই থাকবে।
আর নফল নামাযের পদ্ধতি হচ্ছে, বিমানের সিটে বসে বসেই নামায আদায় করবে। ইশারার মাধ্যমে রুকূ-সিজদা করবে। সিজদার জন্য রুকূর চেয়ে একটু বেশী মাথা ঝুকাবে।
প্রশ্নঃ (১২৯) কতটুকু দূরত্বে গেলে মুসাফির নামায কসর করতে পারে? কসর না করেই কি দু’নামাযকে একত্রিত করা যায়?
উত্তরঃ কোন কোন বিদ্বানের মতে ৮৩ (তিরাশী) কিলোমিটার পরিমাণ দুরত্ব অতিক্রম করলে নামায কসর করবে। কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, সমাজে প্রচলিত রীতিনীতিতে বা দেশীয় প্রথায় যাকে সফর বলা হয় তাতেই নামায কসর করবে। যদিও তা ৮০ কিলোমিটার না হয়। আর মানুষ যদি তাকে সফর না বলে, তবে তা সফর নয়; যদিও তা ১০০ কিঃ মিঃ হয়। এটাই শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ)এর মত। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা নির্দিষ্টভাবে সফরের কোন দুরত্ব নির্ধারণ করেননি। অনুরূপভাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকেও সফরের দুরত্ব নির্ধারণের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা পাওয়া যায় না। আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন,
 “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি তিন মাইল বা ফারসাখ পরিমাণ দুরত্ব অতিক্রম করতেন, তবে নামায কসর করতেন ও দু’রাকাত আদায় করতেন।” এজন্য শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়ার মতই অধিক সঠিক।
প্রচলিত রীতিনীতিতে মতভেদ দেখা দিলে ইমামদের যে কোন একটি মত গ্রহণ করলেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা ইমামগণ সবাই মুজতাহিদ বা গবেষক। এক্ষেত্রে কোন দোষ হবে না ইনশাআল্লাহ্‌। কিন্তু বর্তমানে মানুষের প্রচলিত রীতিনীতি যেহেতু সুনির্দিষ্ট তাই ইহা গ্রহণ করাই অধিক সঠিক।
আর নামায কসর করা বৈধ হলেই কি জমা (বা দু’নামায একত্রিত) করা বৈধ? জবাবে বলব, একত্রিত করণের বিষয়টি শুধু কসরের সাথে নির্দিষ্ট নয়; বরং তা প্রয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট। অতএব সফর বা গৃহে অবস্থান যে কোন সময় যদি মানুষ একত্রিত করণের প্রয়োজন অনুভব করে, একত্রিত করবে। অতএব বৃষ্টির কারণে যদি মসজিদে যেতে কষ্ট হয়, তবে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। শীতকালে যদি কঠিন ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হয় এবং সে কারণে মসজিদে যাওয়া কষ্টকর হয় তবে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। নিজের মূল্যবান সম্পদের ক্ষতি বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তবে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। এছাড়া এ ধরণের আরো কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখিন হলে দু’নামাযকে একত্রিত করবে। ছহীহ্‌ মুসলিমে আবদুল্লাহ্‌ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
 “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় বৃষ্টি বা ভয়-ভীতির কারণ ছাড়াই যোহর ও আছর একত্রে এবং মাগরিব ও এশা নামাযকে একত্রে আদায় করেছেন।” ইবনু আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল, কেন তিনি এরূপ করেছেন? তিনি বললেন, তিনি উম্মতকে সংকটে ফেলতে চাননি।
অর্থাৎ এধরণের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে দু’নামাযকে একত্রিত না করলে যে সংকট হওয়ার কথা তিনি তা চাননি।
এটাই হচ্ছে মূলনীতি। মানুষ যখনই দু’নামাযকে একত্রিত না করলে সমস্যা বা সংকটের সম্মুখিন হবে তখনই একত্রিত করণ তার জন্য বৈধ হয়ে যাবে। আর সমস্যা না হলে একত্রিত করবে না। কিন্তু যেহেতু সফর মানেই সমস্যা ও সংকট তাই মুসাফিরের জন্য দু’নামাযকে একত্রিত করা জায়েয। চাই তার সফর চলমান হোক বা কোন স্থানে অবস্থান করুক। তবে সফর চলমান থাকলে একত্রিত করা উত্তম। আর সফরে গিয়ে কোন গৃহে বা হোটেলে অবস্থান করলে একত্রিত না করাই উত্তম।
কিন্তু মুসাফির যদি এমন শহরে অবস্থান করে যেখানে নামায জামাআতের সাথে অনুষ্ঠিত হয়, তখন জামাআতের সাথে নামায আদায় করা ওয়াজিব। ঐ সময় নামায কসরও করবে না একত্রিতও করবে না। কিন্তু জামাআত ছুটে গেলে কসর করবে একত্রিত করবে না। অবশ্য একত্রিত করা জরূরী হয়ে পড়লে করতে পারে।
প্রশ্নঃ (১৩০) জনৈক ব্যক্তি লিখা-পড়ার জন্য জুমআর দিন সন্ধ্যায় রিয়াদ গমণ করে ও সোমবার দিন প্রত্যাবর্তন করে। সে কি মুসাফিরের মত নামায কসর করে আদায় করবে?
উত্তরঃ নিঃসন্দেহে এ ব্যক্তি মুসাফির। কেননা লিখা-পড়ার শহর তার স্থায়ী আবাসস্থল নয়। সেখানে থেকে যাওয়ার বা বসবাস করারও কোন নিয়ত সে করেনি। বরং নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্যে কয়েকদিন তথায় অবস্থান করছে। কিন্তু সে যদি এমন শহরে অবস্থান করে যেখানে জামাআতের সাথে নামায হয়, তবে নামাযের জামাআতে উপস্থিত হওয়া তার জন্য ওয়াজিব। সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, মুসাফিরের জন্য জুমআ বা জামাআতে উপস্থিত হওয়া আবশ্যক নয়- একথার কোন ভিত্তি নেই, কোন দলীল নেই। মুসাফির যদি যুদ্ধের ময়দানে লড়াইয়ে থাকে তবুও তার জন্য জামাআতে নামায আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহ্‌ বলেন,
“আপনি যখন তাদের মধ্যে থাকবেন, তাদের জন্য নামায কায়েম করবেন, তখন তাদের মধ্যে থেকে একদল আপনার সাথে নামাযে দন্ডায়মান হবে।” (সূরা নিসাঃ ১০২) আর যে ব্যক্তিই আযান শুনবে তার জুমআর নামাযে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব। আল্লাহ্‌ বলেন,
 “হে ঈমানদারগণ! জুমআর দিন যখন আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা দ্রুত আল্লাহ্‌র যিকিরের (নামাযের) দিকে আস।” (সূরা জুমআঃ ৯)
প্রশ্নঃ (১৩১) জুমআর সাথে আছরের নামায একত্রিত করার বিধান কি? যারা শহরের বাইরে থাকে তাদের জন্য কি একত্রিত করা জায়েয?
উত্তরঃ জুমআর সাথে আছর নামাযকে একত্রিত করা জায়েয নয়। কেননা এর পক্ষে হাদীছে কোন দলীল পাওয়া যায় না। একে যোহরের নামাযের সাথে ক্বিয়াস করা ঠিক নয়। কেননা জুমআ ও যোহরের মাঝে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। তাছাড়া আসল হচ্ছে প্রত্যেক নামাযকে নির্দিষ্ট সময়েই আদায় করা। তবে শুধুমাত্র দলীলের ভিত্তিতেই এক নামাযকে অন্য নামাযের সাথে একত্রিত করা যায়।
যারা শহরের বাইরে দু’ বা তিনদিন অবস্থান করবে তাদের জন্য দু’নামাযকে একত্রিত করা জায়েয। কেননা তারা মুসাফির। কিন্তু তারা যদি শহরের উপকন্ঠে অবস্থান করে- সাধারণভাবে যাদেরকে মুসাফির বলা হয় না- তারা দু’নামায একত্রিত করবে না। দু’নামায একত্রিত করার অর্থ হচ্ছে: যোহর ও আছর দু’নামায এবং মাগরিব ও এশা দু’নামাযকে একত্রিত করা। কিন্তু জুমআ ও আছর কখনই একত্রিত করা জায়েয নয়।
প্রশ্নঃ (১৩২) সফর অবস্থায় কি কি বিষয়ে রুখসত বা অবকাশ রয়েছে?
উত্তরঃ সফর অবস্থায় চারটি ক্ষেত্রে রুখসত বা অবকাশ রয়েছেঃ
১)   চার রাকাআত বিশিষ্ট নামায দু’রাকাআত আদায় করা।
২)  রামাযানে রোযা ভঙ্গ করা। এবং পরবর্তীতে তার কাযা আদায় করা।
৩)  তিনদিন তিনরাত মোজার উপর মাসেহ করা। প্রথমবার মাসেহ করার পর থেকে উক্ত সময়সীমা
সাব করতে হবে।
৪)  যোহর, মাগরিব ও এশার সুন্নাত আদায় করতে হবে না। তবে ফজরের সুন্নাত এবং অন্যান্য নফল নামায আদায় করা শরীয়ত সম্মত ও মুস্তাহাব।
অতএব মুসাফির সফর অবস্থায় নিম্নলিখিত নামাযগুলো আদায় করতে পারেঃ রাতের নফল (তাহাজ্জুদ), বিতর, ফজরের সুন্নাত, চাশত, তাহিয়্যাতুল ওযু, তাহিয়্যাতুল মসজিদ, সফর থেকে ফেরত এসে দু’রাকাত নামায। সুন্নাত হচ্ছে সফর থেকে ফেরত এসে গৃহে প্রবেশ করার পূর্বে মসজিদে গিয়ে দু’রাকাত ছালাত আদায় করা।
প্রশ্নঃ (১৩৩) শুক্রবার দিবসের প্রথম ওয়াক্ত কখন থেকে শুরু হয়?
উত্তরঃ জুমআর দিবসের প্রহর সমূহ হচ্ছে পাঁচটিঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
 “যে ব্যক্তি জুমআর দিবসে নাপাকী থেকে গোসল করার মত গোসল করবে, অতঃপর প্রথম প্রহরে মসজিদে গমণ করবে, সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় প্রহরে গমণ করবে সে যেন একটি গরু কুরবানী করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় প্রহরে গমণ করবে সে যেন একটি দুম্বা কুরবানী করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ প্রহরে গমণ করবে সে যেন একটি মুরগী উৎসর্গ করল। যে ব্যক্তি পঞ্চম প্রহরে গমণ করবে সে যেন একটি ডিম উৎসর্গ করল (আল্লাহ্‌র পথে দান করল)। অতঃপর ইমাম বের হয়ে এলে ফেরেস্তাগণ উপস্থিত হয়ে যিকির (খুতবা) শুনতে বসে পড়েন।”
এ হাদীছে সূর্য উদয় থেকে খুতবার জন্য ইমামের মিম্বরে আরোহণ পর্যন্ত সময়কে পাঁচভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলোর প্রতিটিই বর্তমান সময়ের এক ঘন্টা বরাবর হতে পারে। এর কম বা বেশীও হতে পারে। কেননা দিন ছোট-বড় হয়। মোটকথা সূর্যোদয় থেকে ইমামের আগমণ পর্যন্ত প্রহর হচ্ছে পাঁচটি। কেউ কেউ বলেন, এই প্রহরের গণনা ফজর উদিত হওয়া থেকে শুরু করতে হবে। কিন্তু এটা ভুল। কেননা সূর্যদয়ের পূর্বের সময় তো ফজর নামাযেরই সময়। আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞান রাখেন
প্রশ্নঃ (১৩৪) ইমামের কন্ঠস্বর শুনতে পেলে কি নিজ গৃহে থেকে জুমআর নামায আদায় করা জায়েয হবে?
উত্তরঃ মসজিদে এসে মুসলমানদের জামাআতে শামিল না হলে জুমআর নামায আদায় করা জায়েয হবে না। কিন্তু মসজিদ পরিপূর্ণ হয়ে গেলে কাতার মিলিত হওয়ার শর্তে পার্শ্ববর্তী রাস্তায় নামায আদায় করাতে কোন দোষ নেই। কিন্তু বাড়ীতে বা দোকানে ছালাত আদায় করা কোন মানুষের জন্য জায়েয বা বৈধ হবে না। কেননা জুমআ এবং জামাআত অনুষ্ঠিত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমানদের একস্থানে সমবেত হওয়া। তারা এক ঐক্যবদ্ধ জাতি একথা প্রমাণ করা। যাতে করে তাদের পরস্পরের মাঝে মমতা ও সমপ্রীতি সৃষ্টি হয়। অজ্ঞ ব্যক্তিরা আলেমদের নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা লাভ করতে পারে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে যদি এই অনুমতি দেয়া হয় যে, তারা নিজ গৃহে থেকে রেডিওতে বা মাইক্রোফোনের আওয়াজ শুনে ছালাত আদায় করবে, তবে মসজিদ নির্মাণ ও মুছল্লীদের উপস্থিত হওয়ার কোন দরকার নেই। তাছাড়া এর মাধ্যমে জুমআ ও জামাআত পরিত্যাগ করার দরজা উম্মুক্ত করা হবে।
প্রশ্নঃ (১৩৫) জুমআর দিন মহিলারা কত রাকাআত নামায আদায় করবে?
উত্তরঃ নারী যদি মসজিদে গিয়ে ইমামের সাথে জুমআ আদায় করে, তবে ইমামের অনুসরণ করে দু’রাকাতই আদায় করবে। কিন্তু সে যদি নিজ গৃহে নামায আদায় করে, তবে চার রাকাত যোহর আদায় করবে।
প্রশ্নঃ (১৩৬) যে ব্যক্তি জুমআর ছালাত আদায় করবে সে কি যোহরও আদায় করবে?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি জুমআর ছালাত আদায় করল সে যোহরের সময়ের ফরযই আদায় করল। তাই সে আর যোহর আদায় করবে না। কিন্তু কিছু লোক জুমআর নামায আদায় করার পর যোহর নামায আদায় করে থাকে। সাধারণ পরিভাষায় এটাকে আখেরী যোহর বলা হয়। এটি একটি বিদআত। কেননা আল্লাহ্‌র কুরআন ও নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতে এর কোন প্রমাণ নেই। অতএব তা পরিত্যাগ করা ওয়াজিব। এমনকি যদিও কয়েক স্থানে জুমআ অনুষ্ঠিত হয়, তবুও জুমআর নামায আদায় করার পর কোন মানুষের জন্য যোহর নামায আদায় করা শরীয়ত সম্মত নয়; বরং তা নিকৃষ্ট বিদআত। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা একটি সময়ে একের অধিক ইবাদত ফরয করেননি। আর তা হচ্ছে জুমআর নামায। তা তো আদায় করা হয়েছে।
যারা জুমআ আদায় করার পর যোহর আদায় করতে বলেন, তাদের যুক্তি হচ্ছে, “এক শহরে একাধিক জুমআ আদায় করা জায়েয নয়। একাধিক জুমআ হলে যে মসজিদে প্রথমে নামায অনুষ্ঠিত হবে সেটাই জুমআ হিসেবে গণ্য হবে। অন্যগুলো বাতিল হবে। কিন্তু যেহেতু কোন্‌ মসজিদে জুমআ প্রথমে হয় তা জানা নেই। তাই সমস্ত জুমআ বাতিল। ফলে তার বদলে পরবর্তীতে যোহর আদায় করতে হবে।”
তাদেরকে আমি বলবঃ এ দলীল ও যুক্তি আপনারা কোথায় পেলেন? এটার ভিত্তি কি কোন হাদীছে আছে? বা ইহা কি বিশুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি ও সঠিক যুক্তি সঙ্গত কথা? উত্তর অবশ্যই না। বরং আমরা বলি, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে যদি একাধিক জুমআ অনুষ্ঠিত হয় তবে সবগুলোই বিশুদ্ধ। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন,“তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্‌কে ভয় কর।” (সূরা তাগাবুনঃ ১৬) আর শহর প্রশস্ত হওয়ার কারণে অথবা মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে এই শহরের অধিবাসীগণ প্রয়োজনের তাগিদেই বিভিন্ন স্থানে জুমআ অনুষ্ঠিত করেছে, এতে তারা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্‌কে ভয় করেছে। আর যে ব্যক্তি সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্‌কে ভয় করেছে সে তার উপর নির্ধারিত ফরয বাস্তবায়ন করেছে। সুতরাং কিভাবে একথা বলা যায় যে তার আমল ফাসেদ বা বাতিল হয়ে গেছে, তাই জুমআর পরিবর্তে যোহর নামায আদায় করতে হবে?
তবে বিনা প্রয়োজনে এক শহরে একাধিক জুমআ অনুষ্ঠিত করা নিঃসন্দেহে সুন্নাহ্‌ বিরোধী কাজ। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও খোলাফায়ে রাশেদার নীতি বিরোধী কাজ। তাই অধিকাংশ বিদ্বানের মত এরূপ করা হারাম। তারপরও আমরা বলতে পারি না যে তাদের ইবাদতই বিশুদ্ধ হবে না। কেননা এক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের কোন দায়দায়িত্ব নেই। এ দায়দায়িত্ব বহণ করবে প্রশাসন যাদের অনুমতিতে বিনা প্রয়োজনে একাধিক জুমআ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই প্রশাসনের মধ্যে যারা মসজিদ তত্ববধানের দায়িত্বে নিয়োজিত তাদের কাছে আমরা আবেদন করি, প্রয়োজন দেখা না দিলে তারা যেন একাধিক জুমআর মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হতে অনুমতি না দেন। কেননা ইসলামী শরীয়তের সুপ্রশস্ত ও সুদূর প্রসারী দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে, ইবাদতের মাধ্যমে মুসলমানদেরকে একস্থানে সমবেত করে পরস্পরের মাঝে সমপ্রীতি ও ভালবাসা সৃষ্টি করা, অজ্ঞদেরকে দ্বীনের শিক্ষা দান করা। এছাড়া আরো অনেক বড় বড় উপকারিতা রয়েছে। শরীয়ত সম্মত সমাবেশ সমূহ হচ্ছেঃ কোনটি সাপ্তাহিক, কোনটি বাৎসরিক, কোনটি দৈনিক। দৈনিক সমাবেশ সমূহ হচ্ছে প্রত্যেক গ্রাম ও মহল্লার মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত অনুষ্ঠিত করা। কেননা শরীয়ত প্রণেতা যদি মুসলমানদেরকে প্রতিদিন পাঁচবার শহরের একটি মাত্র স্থানে একত্রিত হওয়ার আদেশ করতেন তবে নিঃসন্দেহে তা কষ্টকর হত। এজন্য তাদের প্রতি সহজতা কল্পে এই সমাবেশকে প্রত্যেক মহল্লার প্রত্যেক মসজিদে বৈধ করে দেয়া হয়েছে।
আর সপ্তাহিক সমাবেশ হচ্ছে জুমআর দিবসে। এলাকার সমস্ত লোক সপ্তাহে একবার একস্থানে সমবেত হবে। এজন্য সুন্নাত হচ্ছে তারা একটি মাত্র মসজিদেই একত্রিত হবে বিভিন্ন স্থানে নয়। কেননা সপ্তাহিক এই সমাবেশে আসা তাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে না বা বেশী কষ্টকর হবে না। তাছাড়া এতে রয়েছে বিশাল উপকারিতা। সমস্ত লোক একজন মাত্র ইমামের খুতবা শুনবে ও তার নেতৃত্বে ইবাদত আদায় করবে। তিনি তাদেরকে নসীহত করবেন নির্দেশনা প্রদান করবেন। তখন লোকেরা একদিকে নসীহত ও অন্যদিকে নামায নিয়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করবে। তাই বিনা প্রয়োজনে জুমআর নামায একাধিক স্থানে অনুষ্ঠিত করা জায়েয নয়।
আর বাৎসরিক সমাবেশ হচ্ছে, দু’ঈদের নামায। সমস্ত শহরবাসীর জন্য বাৎসরিক দু’টি সমাবেশ। এজন্য একান্ত প্রয়োজন দেখা না দিলে একাধিক ঈদগাহ্‌ কায়েম করা জায়েয নয়।
প্রশ্নঃ (১৩৭) আমরা সমুদ্রের মধ্যে (জাহাজে) কাজ করি। জুমআর নামাযের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু যোহরের আযানের সময় হওয়ার আধা ঘন্টা পর স্তলে এসে আযান দিয়ে জুমআর নামায আদায় করা কি আমাদের জন্য জায়েয হবে?
উত্তরঃ শহর বা গ্রামের মসজিদ ছাড়া কোথাও জুমআর নামায অনুষ্ঠিত করা জায়েয হবে না। জলে বা স্তলে যারা দলবদ্ধ হয়ে কাজ করে তাদের জুমআর নামায বিশুদ্ধ হবে না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হেদায়াত এরূপ ছিল না যে, তিনি শহর বা গ্রাম ছাড়া কোথাও জুমআর নামায অনুষ্ঠিত করেছেন। তিনি কখনো কয়েকদিন ব্যাপি সফর করতেন, কিন্তু সফরে জুমআ অনুষ্ঠিত করতেন না।
অতএব আপনারা এখন সমুদ্রে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছেন। কখনো উত্তরে কখনো দক্ষিনে স্থানান্তর হতে থাকেন। কখনো নিজ দেশে কখনো অন্য শহরে প্রত্যাবর্তন করেন। অতএব আপনাদের জন্য আবশ্যক হচ্ছে, যোহরের নামায আদায় করা, জুমআ নয়। যদি আপনারা সফরের দূরত্বে থাকেন তবে নামায সমূহ কসর করে আদায় করবেন।
প্রশ্নঃ (১৩৮) জুমআর নামাযের শেষ তাশাহুদে ইমামের সাথে নামাযে শামিল হলে কি করবে?
উত্তরঃ কোন মানুষ যদি জুমআর দিন শেষ তাশাহুদে ইমামের সাথে নামাযে শামিল হয় তবে তার জুমআ ছুটে গেল। সে ইমামের সাথে নামাযে শামিল হবে ঠিকই কিন্তু চার রাকাআত যোহর আদায় করবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
 “যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকাআত পেয়ে গেল, সে পূর্ণ ছালাত পেয়ে গেল।”  এ হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে ব্যক্তি এক রাকআতের কম নামায পাবে সে নামায পেল না। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর নামাযের এক রাকাত পেল সে জুমআর নামায পেয়ে গেল।” অর্থাৎ ইমামের সালাম ফেরানোর পর দ্বিতীয় রাকআত আদায় করলে সে জুমআর নামায পেয়ে গেল।
প্রশ্নঃ (১৩৯) জুমআর খুতবার শেষ প্রান্তে ইমাম যখন দু’আ করেন, তখন ‘আমীন’ বলা কি বিদআত?
উত্তরঃ না ইহা বিদআত নয়। ইমাম যদি খুতবায় মুসলমানদের জন্য দু’আ করেন, তবে তার দু’আয় আমীন বলা মুস্তাহাব। কিন্তু তা উঁচু আওয়াযে ও সমবেত কন্ঠে যেন না হয়। প্রত্যেকে আলাদাভাবে নীরবে নীচু কন্ঠে ‘আমীন’ বলবে। যাতে করে সেখানে অন্যের অসুবিধা এবং চেঁচামেচী না হয়।
প্রশ্নঃ (১৪০) জুমআর খুতবায় দু’আর সময় হাত উত্তোলন করার বিধান কি?
উত্তরঃ জুমআর খুতবায় ইমামের দু’আ করার সময় হাত উত্তোলন করা শরীয়ত সম্মত নয়। জুমআর খুতবায় দু’আ করার সময় খলীফা বিশ্‌র বিন মারওয়ান দু’হাত উত্তোলন করলে ছাহাবায়ে কেরাম তার প্রতিবাদ করেন। কিন্তু এর ব্যতিক্রম হচ্ছে ইস্তেস্কার দু’আ। এদু’আ পাঠ করার সময় হাত উত্তোলন করবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি জুমআর খুতবায় বৃষ্টি প্রার্থনার দু’আয় হাত উত্তোলন করেছেন। লোকেরাও তাঁর সাথে হাত উঠিয়েছেন। এছাড়া জুমআর খুতবায় অন্যান্য দু’আর ক্ষেত্রে হাত উত্তোলন করা উচিত নয়।
প্রশ্নঃ (১৪১) আরবী ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা প্রদানের বিধান কি?
উত্তরঃ এই মাসআলায় বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, উপস্থিত মুছল্লীগণ যে ভাষা বুঝে না সে ভাষায় জুমআর খুতবা প্রদান করা জায়েয নয়। যদি উপস্থিত মুছল্লীগণ আনারব হন্ত তারা আরবী না বুঝেন, তবে তাদের ভাষাতেই খুতবা প্রদান করবে। কেননা তাদেরকে বুঝানোর জন্য এ ভাষাই হচ্ছে বক্তৃতা করার মাধ্যম। আর জুমআর খুতবার লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে আল্লাহ্‌র বিধি-বিধান বর্ণনা করা, তাদেরকে ওয়াজ-নসীহত করা। তবে কুরআনের আয়াত সমূহ অবশ্যই আরবী ভাষায় পাঠ করতে হবে। অতঃপর মাতৃভাষায় তার তাফসীর করে দিবে। আর মাতৃভাষায় খুতবা প্রদানের দলীল হচ্ছে, আল্লাহ্‌ বলেনঃ
 “আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে নিজ সম্প্রদায়ের ভাষা-ভাষী করে পাঠিয়েছি। যাতে তিনি তাদেরকে (আল্লাহ্‌র বিধান) বর্ণনা করে দেন।” (সূরা ইবরাহীমঃ ৪) এখানে আল্লাহ্‌ তা’আলা বর্ণনা করে দিলেন যে, সম্প্রদায়ের লোকেরা যে ভাষা বুঝে সে ভাষাতেই তাদের সামনে বক্তৃতা করতে হবে।
প্রশ্নঃ (১৪২) জুমআর দিবসে গোসল করার বিধান কি নারী ও পুরুষের সকলের জন্য? এ দিনের এক বা দু’দিন পূর্বে গোসল করার হুকুম কি?
উত্তরঃ জুমআর দিবসে গোসল ও সাজ-সজ্জার বিধান শুধুমাত্র পুরুষদের জন্যই। কেননা সেই জুমআর নামাযে উপস্থিত হবে। গোসল ও সৌন্দর্য গ্রহণ পুরুষকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে। নারীদের জন্য এটা শরীয়ত সম্মত নয়। তবে যে কোন মানুষ নিজের শরীরে বা অঙ্গে ময়লা-আবর্জনা দেখতে পেলেই তা পরিস্কার করবে। কেননা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ইসলামে প্রশংসিত বিষয়, এতে উদাসীনতা কারো জন্য উচিত নয়।
কিন্তু জুমআর একদিন বা দু’দিন পূর্বে গোসল করলে কোন উপকার নেই। কেননা এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ সমূহ শুধুমাত্র জুমআর দিবসকে কেন্দ্র করেই বলা হয়েছে। আর এ সময়টি হচ্ছে জুমআর দিবস ফজর উদিত হওয়ার পর থেকে জুমআর নামাযের পূর্ব পর্যন্ত। এটাই হচ্ছে গোসল করার সময়। কিন্তু একদিন বা দু’দিন পূর্বে গোসল করা জুমআর দিবসের জন্য যথেষ্ট হবে না।
প্রশ্নঃ (১৪৩) খুতবার জন্য দ্বিতীয় আযানের সময় মসজিদে প্রবেশ করলে করণীয় কি?
উত্তরঃ বিদ্বানগণ উল্লেখ করেছেন যে, কোন ব্যক্তি জুমআর দিবসে মসজিদে প্রবেশ করে যদি দেখে মুআয্‌যিন খুতবার জন্য দ্বিতীয় আযান প্রদান করছে। তখন সে তাহিয়্যাতুল মসজিদ শুরু করবে, মুআয্‌যিনের আযানের জবাব দিতে ব্যস্ত হবে না। যাতে করে খুতবা শোনার জন্য প্রস্ততি নিতে পারে। কেননা খুতবা শোনা ওয়াজিব আর আযানের জবাব দেয়া সুন্নাত। অতএব সুন্নাতের উপর ওয়াজিবকে প্রাধান্য দিতে হবে।
প্রশ্নঃ (১৪৪) জুমআর মসজিদে মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে যাওয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ খুতবা চলা অবস্থায় যদি কেউ মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে যেতে চায়, তবে কোন কথা না বলেই তাকে বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। বসে যাওয়ার জন্য তাকে ইঙ্গিত করবে বা তার কাপড় টেনে ধরবে। তবে উত্তম হচ্ছে খতীব নিজেই একাজ করবে এবং তাকে বসিয়ে দিবে। যেমনটি রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছিলেন। তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন এমন সময় দেখলেন, জনৈক ব্যক্তি মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিল, তিনি তাকে বললেন,“বসে পড় তুমি মানুষকে অনেক কষ্ট দিয়েছো।”
প্রশ্নঃ (১৪৫) ইমামের খুতবার সময় মসজিদে প্রবেশ কালে সালাম প্রদান এবং সালামের জবাব দেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ ইমামের খুতবা চলাবস্থায় কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে শুধুমাত্র দু’রাকাত নামায হালকা করে আদায় করবে। কাউকে সালাম দিবে না। কেননা এ অবস্থায় মানুষকে সালাম দেয়া হারাম। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
 “তুমি যদি জুমআর দিন খুতবা চলাবস্থায় পার্শ্ববর্তী মুছল্লীকে বল ‘চুপ কর’, তবে অনর্থক কাজ করলে।” তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি কঙ্কর স্পর্শ করবে সে অনর্থক কাজ করবে।” অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন অনর্থক কাজ করে, হতে পারে তার এই কাজ জুমআর ছাওয়াব বিনষ্ট করে দিবে। এ কারণে অন্য হাদীছে বলা হয়েছেঃ “যে ব্যক্তি অনর্থক কাজ করে তার জুমআ হবে না।” অতএব কেউ যদি আপনাকে সালাম প্রদান করে তবে ‘ওয়া আলাইকুম সালাম’ শব্দে তার জবাব দিবে না। কিন্তু মুখে কোন শব্দ উচ্চারণ না করে মুসাফাহা করতে কোন বাধা নেই। যদিও মুসাফাহা না করাই উত্তম।
অবশ্য বিদ্বানদের কেউ কেউ বলেন, সালামের জবাব দিতে পারে। কিন্তু বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, সে সালামের জবাব দিবে না। কেননা খুতবা শ্রবণের ওয়াজিবকে সালামের জবাব প্রদানের উপর প্রাধান্য দিতে হবে। তাছাড়া এ অবস্থায় সালাম দেয়াও কোন মুসলমানের জন্য উচিত নয়। কেননা এতে মানুষের খুতবা শোনার ওয়াজিব কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা হয়। অতএব সঠিক কথা হচ্ছেঃ ইমামের খুতবার সময় সালামও নেই, জবাবও নেই।
প্রশ্নঃ (১৪৬) ঈদের দিন কি বলে একে অপরকে অভিনন্দন জানাবে?
উত্তরঃ ঈদের জন্য অভিনন্দন জানানো জায়েয। তবে এর জন্য বিশেষ কোন বাক্য নেই। মানুষের সাধারণ সমাজে প্রচলিত যে কোন শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা যেন কোন অশ্লীল শব্দ না হয় বা কাফেরদের সাথে সদৃশ্যপূর্ণ না হয়।
প্রশ্নঃ (১৪৭) ঈদের নামাযের বিধান কি?
উত্তরঃ আমি মনে করি ঈদের নামায ফরযে আঈন তথা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয। কোন পুরুষের জন্য এ নামায পরিত্যাগ করা জায়েয নয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশ প্রদান করেছেন। বরং কুমারী পর্দানশীন নারীদেরকেও এ নামাযে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন; এমনকি ঋতুবতী নারীদেরকেও অনুরূপ নির্দেশ প্রদান করেছেন। তবে ঋতুবতী ছালাত আদায় করবেনা। এ দ্বারা এ নামাযের অতিরিক্ত গুরুত্ব বুঝা যায়। এটাই প্রাধান্যযোগ্য মত এবং শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াও (রহঃ) অনুরূপ মত পোষণ করেছেন।
এ নামাযটি জুমআর নামাযের মত। কিন্তু ছুটে গেল কাযা আদায় করা যাবে না। কেননা কাযা আদায় করার পক্ষে কোন দলীল নেই। এর পরিবর্তে অন্য কোন নামাযও আদায় করবে না। অবশ্য জুমআর নামায ছুটে গেলে তার পরিবর্তে যোহরের ছালাত আদায় করবে। কেননা সময়টি যোহরের নামাযের সময়। কিন্তু ঈদের নামায ছুটে গেলে তার কোন কাযা নেই।
মুসলিম ভাইদের প্রতি আমার নসীহত হচ্ছে, তারা যেন আল্লাহ্‌ তা’আলাকে ভয় করে এবং এই নামাযটিকে প্রতিষ্ঠিত করে। যাতে রয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ, লোকদের পরস্পর দেখা-সাক্ষ্যাৎ ও প্রীতি-ভালবাসার বিনিময়। দেখবেন মানুষকে যদি কোন খেলাধুলার আসরে আহবান জানানো হয়, তবে কত দ্রুত তারা সেখানে সমবেত হয়। তাদের জন্য কি উচিত নয় মুক্তি দূত বিশ্বনবীর আহবানে সাড়া দিয়ে এই নামাযের জন্য সুবিশাল সমাবেশের আয়োজন করা? যাতে রয়েছে আল্লাহ্‌র অফুরন্ত ছওয়াব এবং মাগফিরাত। কিন্তু নারীদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, এ নামাযে আসতে চাইলে তারা যেন পুরুষদের সাথে সংমিশ্রিত না হয়। তারা থাকবে মসজিদ বা ঈদগাহের একপ্রানে- পুরুষদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা স্থানে। নারীরা যেন আতর-সুগন্ধি মেখে নিজের সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটিয়ে বেপর্দা হয়ে বের না হয়। এই কারণে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নারীদেরকে ঈদের নামাযের জন্য বের হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তারা প্রশ্ন করেছেন: হে আল্লাহ্‌র রাসূল আমাদের তো কারো কারো চাদর নেই? তিনি বললেন, “তার অন্য বোন যেন নিজের চাদর তাকে পরতে দেয়।” আর পর্দার উপযুক্ত চাদর হচ্ছে বর্তমানের বোরকা। এদ্বারা প্রমাণ পাওয়া যায় যে, নারী অবশ্যই পূর্ণ পর্দা করে গৃহ থেকে বের হবে। কেননা নারীর চাদর না থাকলে সে কি করবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে এপ্রশ্ন করলে তিনি এরূপ বলেন নি যে, সাধ্যানুযায়ী পর্দা করে বের হবে। বরং বলেছেন, “অন্য বোন বা নারী তার চাদর তাকে পরিয়ে দিবে।” আর ঈদের নামাযের ইমামের উচিত হচ্ছে, ঈদের খুতবার সময় পুরুষদেরকে নসীহত করার সময় বিশেষভাবে নারীদেরকেও নসীহত করবেন। তাদের সাথে বিশেষিত বিধি-বিধান সমূহ বর্ণনা করবেন। যেমনটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছিলেন। তিনি পুরুষদের নসীহত করার পর নারীদের দিকে আলাদাভাবে গিয়ে তাদেরকে ওয়াজ-নসীহত করেছেন।
প্রশ্নঃ (১৪৮) এক শহরে একাধিক ঈদের নামায অনুষ্ঠিত করার বিধান কি?
উত্তরঃ যদি প্রয়োজন দেখা যায় তবে কোন অসুবিধা নেই। যেমন প্রয়োজন দেখা দিলে জুমআর নামায একাধিক স্থানে অনুষ্ঠিত করা যায়। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন,“দ্বীনের মাঝে আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য কোন অসুবিধা রাখেন নি।” (সূরা হাজ্জঃ ৭৮) একাধিক স্থানে নামায অনুষ্ঠিত জায়েয না হলে নিশ্চিতভাবে অনেক মানুষ জুমআ ও ঈদের নামায থেকে বঞ্চিত হবে। ‘প্রয়োজন্তু বলতে উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেমন শহর অনেক বড়। শহরের সকল প্রান্ত থেকে লোকদের একস্থানে সমবেত হওয়া কষ্টকর, অথবা ঈদগাহে জায়গার সংকুলান না হওয়া ইত্যাদি। কিন্তু এধরণের কোন অসুবিধা না থাকলে একাধিক স্থানে জুমআ বা ঈদের নামায অনুষ্ঠিত করা যাবে না।
প্রশ্নঃ (১৪৯) দু’ঈদের নামাযের পদ্ধতি কিরূপ?
উত্তরঃ দু’ঈদের নামাযের পদ্ধতি হচ্ছেঃ প্রথমে ইমাম উপস্থিত লোকদের নিয়ে দু’রাকাত নামায আদায় করবে। প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরিমা দেয়ার পর অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর দিবে। তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করবে এবং সূরা ‘ক্বাফ’ পাঠ করবে। দ্বিতীয় রাকাতে তাকবীর দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়বে এবং সূরা পাঠ শুরু করার পূর্বে অতিরিক্ত পাঁচটি তাকবীর প্রদান করবে। তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করে সূরা ‘ক্বামার’ পাঠ করবে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ঈদের নামাযে এ দু’টি সূরা পাঠ করতেন। অথবা ইচ্ছা করলে প্রথম রাকাতে ‘সূরা আ‘লা’ এবং দ্বিতীয় রাকাতে ‘সূরা গাশিয়া’ পাঠ করবে।
জেনে রাখুন, জুমআ ও ঈদের নামায দু’টি সূরার ক্ষেত্রে একই, আর দু’টি সূরার ক্ষেত্রে পৃথক। যে দু’টি সূরা উভয় নামাযে পাঠ করতে হয় তা হচ্ছে: ‘সূরা আল আ‘লা’ ও ‘সূরা গাশিয়া’। আর যে দু’টি সূরার ক্ষেত্রে এ দু’নামায পৃথক তা হচ্ছে: ঈদের নামাযে পাঠ করতে হয়, সূরা ‘ক্বাফ’ ও সূরা ‘ক্বামার’। আর জুমআর নামাযে পাঠ করতে হয় সূরা ‘জুমআ’ ও সূরা ‘মুনাফিকূন’। প্রত্যেক ইমামের জন্য উচিত হচ্ছে, এ নামাযগুলোতে উক্ত সূরা সমূহ পাঠ করার সুন্নাতকে পূনর্জীবিত করা। যাতে করে মুসলমানগণ তা জানতে পারে এবং কেউ তা পাঠ করলে যেন প্রতিবাদ না করে।
তারপর নামায শেষ করে ইমাম খুতবা দিবেন। উচিত হচ্ছে খুতবায় নারীদেরকে বিশেষভাবে নসীহত করবে। তাদেরকে সৎ কাজের নির্দেশনা দিবে অসৎ কাজের ভয়াবহতা বর্ণনা করবে ও তা থেকে নিষেধ করবে।
প্রশ্নঃ (১৫০) ঈদের নামাযের পূর্বে দলবদ্ধভাবে মাইক্রোফোনে তাকবীর প্রদান করার বিধান কি?
উত্তরঃ প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিতে তাকবীর পাঠ করা বৈধ নয়। কেননা এধরণের পদ্ধতি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত নয়। সুন্নাত হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে নিজে আলাদাভাবে তাকবীর পাঠ করবে।
প্রশ্নঃ (১৫১) ঈদের তাকবীর কখন থেকে পাঠ করতে হবে? তাকবীর পড়ার পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ ঈদের তাকবীর শুরু হবে রামাযানের শেষ দিন সূর্যাসে-র পর থেকে। শেষ হবে ঈদের নামাযে ইমাম উপস্থিত হলেই। তাকবীরের পদ্ধতিঃ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। অথবা পাঠ করবেঃ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
অর্থাৎ তাকবীরগুলো দু’বার করে পাঠ করবে অথবা তিনবার করে পাঠ করবে। সবগুলোই জায়েয। পুরুষদের জন্য উচিত হচ্ছে এই তাকবীর সমূহ সর্বস্থানে উঁচু কন্ঠে পাঠ করবে। হাটে-বাজারে, মসজিদে, গৃহে সবখানে। কিন্তু নারীদের জন্য উত্তম হচ্ছে নীচু কন্ঠে তাকবীর পাঠ করা।
প্রশ্নঃ (১৫২) সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের নামায আদায় করার বিধান কি?
উত্তরঃ অধিকাংশ বিদ্বানের মতে সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের নামায সুন্নাতে মুআক্কাদা। ওয়াজিব নয়। নিঃসন্দেহে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ নামাযের নির্দেশ প্রদান করেছেন। অতি গুরুত্বসহকারে অন্যান্য নামায থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে তিনি এ নামায আদায় করেছেন।
বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ এ নামাযকে ফরযে আঈন বা ফরযে কেফায়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের দলীল হচ্ছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ নামাযের নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর নির্দেশ মানেই ফরয বা ওয়াজিব। তাছাড়া অন্যান্য নিদর্শন থেকেও এনামাযের অতিরিক্ত গুরুত্ব পাওয়া যায়। এছাড়া বান্দার ত্রুটির কারণেই এই সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ হয়ে থাকে এবং আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে এটি একটি সতর্কতা। তাই বান্দাদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে এই শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে কাকুতি-মিনতী করা এবং ছালাত আদায় করা।
নিঃসন্দেহে এমতের পক্ষের দলীল ও যুক্তি শক্তিশালী। সর্বনিম্ন বিষয়টি ফরযে কেফায়া। আমিও এটাই মনে করি। জমহুর (অধিকাংশ) বিদ্বান যে মত পোষণ করেন্ত অর্থাৎ সুন্নাতে মুআক্কাদা- তাদের মতের পক্ষে ওয়াজিবকে প্রত্যাখ্যান করার কোন দলীল নেই। তবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই হাদীছটি তাদের পক্ষে দলীল হতে পারে: গ্রাম্য ব্যক্তিকে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর নির্দেশ দিলেন তখন সে প্রশ্ন করল, এই পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ছাড়া কি আমার উপর অন্য কিছু ফরয রয়েছে? তিনি বললেন, “না, তবে তুমি নফল আদায় করতে পার।” এ হাদীছের মাধ্যমে অন্যান্য নামাযের আবশ্যকতা বা ফরয হওয়া অস্বীকার করা যাবে না- যদি তার যথাপযোক্ত কারণ থাকে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর ‘না’ বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে সুন্নাত নামায সমূহ যা দিন্তরাতে বার বার আদায় করতে হয় তা আবশ্যক নয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণের সাথে সংশ্লিষ্ট নামায সমূহের আবশ্যকতা এখানে নিষেধ করা হয়নি।
মোটকথা, আমরা যা মনে করি তা হচ্ছে, সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের নামায ফরযে আঈন বা ফরযে কেফায়া। [১]
** ১। এ নামায চারটি রুকু ও চারটি সিজদার মাধ্যমে সর্বমোট দু’রাকাত আদায় করতে হয়। ইমাম প্রথমে সুরা ফাতিহা পাঠ করে দীর্ঘ একটি সুরা পাঠ করবেন, এরপর রুকু করবেন। রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে সিজদায় না গিয়ে আবার দীর্ঘ একটি সুরা পাঠ করবেন। তারপর দুটি সিজদা করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দণ্ডায়মান হবে এবং এ রাকাতও প্রথম রাকাতের ন্যায় দুটি রুকু ও দুটি সিজাদার মাধ্যমে আদায় করবেন।
প্রশ্নঃ (১৫৩) সূর্য গ্রহণ বা চন্দ্র গ্রহণের নামায ছুটে গেলে কিভাবে তা কাযা আদায় করবে?
উত্তরঃ সূর্য গ্রহণ বা চন্দ্র গ্রহণের নামায থেকে কারো যদি এক রাকাত ছুটে যায়, তবে সে সম্পর্কে হাদীছে এরশাদ হয়েছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “তোমরা যখন নামাযের ইকামত শুনবে তখন হেঁটে হেঁটে ধীর-স্থির এবং প্রশান্তির সাথে নামাযের দিকে আগমণ করবে। তাড়াহুড়া করবে না। অতঃপর নামাযের যতটুকু অংশ পাবে আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা (পরে) পূর্ণ করে নিবে।” অতএব যার এক রাকাত নামায ছুটে যাবে সে উহা পূর্ণ করবে- ইমাম যেভাবে আদায় করেছিল সেভাবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বাণী (পূর্ণ করে নিবে) সাধারণভাবে এ অর্থই বহণ করে। এই প্রশ্নটি থেকে আরেকটি শাখা প্রশ্ন আরো জটিল আকারে দেখা দিয়েছে। তা হচ্ছে, কারো যদি প্রথম রুকূ ছুটে যায় তবে সি কি করবে? উত্তরঃ কারো প্রথম রুকূ ছুটে গেলে তার রাকাতটিই ছুটে গেল। ইমাম সালাম ফেরানোর পরিপূর্ণ রাকআতটি সে পুনরায় আদায় করবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাধারণ বাণী একথাই প্রমাণ করে। তিনি বলেন, “আর যা ছুটে যাবে তা (পরে) পূর্ণ করে নিবে।”
প্রশ্নঃ (১৫৪) ইস্তেস্কার নামাযে চাদর উল্টিয়ে নেয়ার কাজটি কখন করতে হবে? দু’আর সময় নাকি গৃহ থেকে বের হওয়ার সময়? আর এই চাদর উল্টানোর হিকমত কি?
উত্তরঃ বৃষ্টি প্রার্থনার নামাযে চাদর উল্টিয়ে নেয়ার কাজটি নামায শেষ করে ইমামের খুতবার সময় করতে হবে। যেমনটি বিদ্বানগণ উল্লেখ করেছেন। একাজের হিকমত তিনটি উপকারিতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়ঃ
প্রথমতঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণ।
দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্‌র কাছে এই আশাবাদ পোষণ করা যে, তিনি দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টিকে সাচ্ছন্দ ও উর্বরতায় পরিবর্তন করে দিবেন।
তৃতীয়তঃ মানুষকে এটি একটি ইঙ্গিত যে, নিজের অবস্থাকে আল্লাহ্‌ বিমূখতা ও নাফরমানী থেকে পরিবর্তন করে আল্লাহ্‌র দিকে ধাবিত করা, তাঁর আনুগত্যকে আঁকড়ে ধরা। কেননা তাক্বওয়া বা আল্লাহ্‌ ভীতি আভ্যন্তরীন পোষাক। আর চাদর বা কাপড় বাহ্যিক পোষাক। অতএব সে বাহ্যিক পোষাককে উল্টিয়ে নেয়ার সাথে সাথে যেন আভ্যন্তরীন পোষাকেরও অবস্থান ঠিক করে নেয়।
প্রশ্নঃ (১৫৫) কেউ কেউ বলে থাকে, “তোমরা ইস্তেস্কা তথা বৃষ্টি প্রার্থনার দু’আ না করলেও বৃষ্টি হবে।” একথা সম্পর্কে আপনার মত কি?
উত্তরঃ আমি মনে করি এব্যক্তি ভয়ানক বিপজ্জনক ও অপরাধের কথা বলেছে। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন, وَقَالَ رَبُّكُمْ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ “তোমাদের পালনকর্তা বলেন তোমরা আমাকে ডাক (দু’আ কর) আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।” (সূরা গাফেরঃ ৬০) আল্লাহ্‌ তা’আলা মহাজ্ঞানী। নিজ অনুগ্রহ প্রদান করতে কখনো তিনি দেরী করেন, যাতে করে মানুষ বুঝতে পারে তারা তাঁর কাছে কত অভাবী, কত মুখাপেক্ষী, তিনি ছাড়া তাদের আর কোন রক্ষাকারী আশ্রয়দাতা নেই। তিনি অনেক সময় মানুষের দু’আর কারণে বৃষ্টি নাযিল করেন। কিন্তু অনেক সময় বৃষ্টি হয়ও না। নিঃসন্দেহে এতে আল্লাহ্‌র কোন হিকমত আছে এবং মানুষের কোন কল্যাণ আছে যা আমাদের জ্ঞানের বাইরে। কেননা আল্লাহ্‌ সর্বাধিক জ্ঞানী, বিজ্ঞানময়। মানুষ নিজের উপর যতটুকু দয়াশীল আল্লাহ্‌ তাদের উপর তার চেয়ে অধিক দয়াশীল ও করুণাময়। অনেক সময় মানুষ দু’আ করে কিন্তু কবূল হয় না। কখনো দু’আ করে কাজ হয়, কখনো দু’আ করে কাজ হয় না। এ সম্পর্কে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “তোমাদের দু’আ কবূল করা হবে যে পর্যন্ত তাড়াহুড়া না করবে। বলবে, দু’আ তো অনেক করলাম, কিন্তু কবূল হল না।”
তখন অনেক লোক হাহুতাশ করবে আক্ষেপ করবে এবং দু’আ করাই ছেড়ে দিবে। (আঊযুবিল্লাহ্‌) অথচ মানুষ দু’আ করলেই তাকে ছওয়াব দেয়া হবে। কেননা দু’আ একটি ইবাদত। তাই দু’আ যে ব্যক্তিই করুক না কেন সে-ই লাভবান। বরং হাদীছে এসেছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “যে কোন মুসলিম আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করবে- যে দু’আয় কোন গুনাহ্‌ থাকবে না, কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা থাকবে না। তাহলে আল্লাহ্‌ তাকে তিনটির যে কোন একটি দান করবেন
১) তার দু’আ দুনিয়াতেই কবূল করা হবে
২) আখেরাতে তার জন্য তা সঞ্চয় করে রাখা হবে।
৩) তার দু’আর অনুরূপ একটি অমঙ্গল তার থেকে দূরীভূত করা হবে।”
প্রশ্নে উল্লেখিত বাক্য যে ব্যক্তি ব্যবহার করেছে তাকে নসীহত করছি, আপনি আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করুন। কেননা এটি একটি মহা অপরাধ মূলক কথা। আল্লাহ্‌র নির্দেশ বিরোধী কথা ও তাঁর সাথে চ্যালেঞ্জ করা।
প্রশ্নঃ (১৫৬) কোন ব্যক্তি নিজের দাফনের ব্যাপারে স্থান নির্ধারণ করে ওসীয়ত করলে তার বিধান কি?
উত্তরঃ প্রথমতঃ তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে কেন সে এ স্থান নিজের জন্য চয়ন করল? যদি এরকম হয় যে, উক্ত স্থানে কোন ভন্ড মিথ্যুক ওলীর মাজার আছে। অথবা এমন মাজার আছে যেখানে অহরহ শির্কের চর্চা হয়। অথবা এরকম কোন কারণ আছে যা শরীয়ত বহির্ভূত। তবে এক্ষেত্রে তার ওসীয়ত বাস্তবায়ন করা যাবে না। বরং সে মুসলিম হলে তাকে মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ উল্লেখিত কোন কারণ যদি না থাকে। বরং এমনিই নিজ এলাকায় লাশ স্থানান্তরের ওসীয়ত করেছে। তবে এই ওসীয়ত পূর্ণ করতে গেলে যদি আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকে তাহলে তা বাস্তবায়ন করতে কোন বাধা নেই। কিন্তু যদি দেখা যায় যে, বিশাল আকারের অর্থ ব্যয় না করলে তার ওসীয়তকৃত স্থানে লাশ নেয়া যাবে না, তবে তার ওসীয়ত বাস্তবায়ন করবে না। বরং মুসলমানদের যে কোন গোরস্থানে দাফন করে দিবে। কেননা আল্লাহ্‌র নিকট পৃথিবীর সকল স্থানের মর্যাদা একই রকম।
প্রশ্নঃ (১৫৭) মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কখন ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার তালক্বীন দিতে হবে?
উত্তরঃ মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তে মুমূর্ষু অবস্থায় তালক্বীন দিতে হবে। যে ব্যক্তির রূহ বের হওয়ার উপক্রম হয়েছে তার কাছে বসে তাকে পাঠ করতে বলবে, ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’। যেমনটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচা আবু তালেবের মৃত্যুর সময় করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “চাচা! আপনি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলুন। এই কালেমা দ্বারা আমি আল্লাহ্‌র কাছে আপনার মুক্তির জন্য সুপারিশ করব।” কিন্তু চাচা আবু তালেব উহা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং শির্কের উপর মৃত্যু বরণ করেছে। (নাঊযুবিল্লাহ্‌)
কিন্তু মৃত্যুর পরবর্তী দাফনের পর তালক্বীন দেয়া একটি বিদআত। কেননা এব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কোন হাদীছ প্রমাণিত নেই। তবে দাফনের পর যা করা উচিত সে সম্পর্কে আবূ দাঊদে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন মৃতকে দাফন শেষ করলে তার কবরের কাছে দাঁড়াতেন এবং বলতেন,
 “তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার দৃঢ়তা কামনা কর। কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে।” কিন্তু কবরের কাছে কুরআন তেলাওয়াত বা সূরা পাঠ বা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর তালক্বীন দেয়া ভিত্তিহীন বিদআত।
প্রশ্নঃ (১৫৮) দূর-দুরান্ত থেকে নিকটাত্মীয়দের উপস্থিত হওয়ার অপেক্ষায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতে বিলম্ব করার বিধান কি?
উত্তরঃ মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশ হচ্ছে দ্রুত দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
 “তোমরা জানাযা বহণ করার সময় দ্রুত গতিতে চল। কেননা সে যদি নেক হয় তবে তাকে কল্যাণের দিকে এগিয়ে দিলে। আর যদি অন্য কিছু হয়, তবে খারাপ লোককে তোমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দিলে।”
কোন কোন নিকটাত্মীয়ের উপস্থিত হওয়ার অপেক্ষায় বিলম্ব করা উচিত নয়। তবে অল্প কিছু সময় দেরী করাতে কোন দোষ নেই। তারপরও দ্রুত জানাযার ব্যবস্থা করাই উত্তম। নিকটাত্মীয়গণ বিলম্বে পৌঁছলেও কোন অসুবিধা নেই। তারা মৃতের কবরের উপর জানাযা নামায আদায় করতে পারবে। যেমনটি করেছিলেন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। জনৈক মহিলা মসজিদে নববী ঝাড়- দেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিল। সে মৃত্যু বরণ করলে লোকেরা বিষয়টি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে না জানিয়েই তাকে দাফন করে দেয়। তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তোমরা আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও। অতঃপর তিনি তার কবরের উপর জানাযা নামায আদায় করেন।”
প্রশ্নঃ (১৫৯) জানাযার নামাযে উপস্থিত হওয়ার জন্য নিকটাত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবকে সংবাদ দেয়া কি নিষিদ্ধ ‘নাঈ’ তথা ঘটা করে মৃত্যু সংবাদ প্রচারের অন্তর্ভুক্ত হবে? নাকি তা বৈধ?
উত্তরঃ এধরণের সংবাদ প্রদান বৈধ। এজন্য নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজাশীর মৃত্যু দিনে তার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেন। তাছাড়া মসজিদে নববীর ঝাড়-র কাজে নিয়োজিত মহিলাটি মৃত্যু বরণ করলে ছাহাবীগণ তাঁকে না জানিয়েই দাফন করে দেয়। তখন তিনি ছাহাবীদেরকে বলেন, “কেন তোমরা আমাকে জানালে না?” অতএব মুছল্লী বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৃত্যু সংবাদ প্রদান করতে কোন দোষ নেই। কেননা এর উদাহরণ হাদীছে পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে জানাযা নামাযে উপস্থিত হওয়ার জন্য নিকটাত্মীয় ও শুভাকাংখীদেরকে সংবাদ দেয়াতেও কোন দোষ নেই।
**কিন্তু যে বিষয় নিষিদ্ধ তা হচ্ছে, ঘটা করে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা। এর জন্য অর্থ ব্যায় করে মাইকিং করা বা রেডিও, টিভিতে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা। কেননা হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নাবী (সাঃ) মৃত্যু সংবাদ পরিবেশন করতে নিষেধ করেছেন (তিরমিজী) তিনি আরও বলেন “তোমরা মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা থেকে সাবধান! কেননা মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা জাহেলিয়াতের রীতি (তিরমিজি – অধ্যায়ঃ জানাযা)
প্রশ্নঃ (১৬০) মৃত ব্যক্তির গোসলের বিশুদ্ধ পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ মৃত ব্যক্তির গোসলের বিশুদ্ধ পদ্ধতি হচ্ছেঃ গোসল দেয়ার সুন্নাত হল, প্রথমে তার লজ্জাস্থান ঢেঁকে দেবে, তারপর তার সমস্ত কাপড় খুলে নিবে। অতঃপর তার মাথাটা বসার মত করে উপরের দিকে উঠাবে এবং আসে- করে পেটে চাপ দিবে, যাতে করে পেটের ময়লা বেরিয়ে যায়। এরপর বেশী করে পানি ঢেলে তা পরিস্কার করে নিবে। তারপর হাতে কাপড় জড়িয়ে বা হাত মুজা পরে তা দিয়ে উভয় লজ্জা স্থানকে (নযর না দিয়ে) ধৌত করবে। তারপর ‘বিসমিল্লাহ্‌’ বলবে এবং ছালাতের ন্যায় ওযু করাবে। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং ভিজা কাপড় আঙ্গুলে জড়িয়ে তা দিয়ে উভয় ঠোঁটের ভিতরের অংশ ও দাঁত পরিস্কার করবে। একইভাবে নাকের ভিতরও পরিস্কার করবে। পানিতে কুল পাতা মিশিয়ে গোসল দেয়া মুস্তাহাব। প্রথমে ডান সাইডের সামনের দিক ও পিছন দিক ধৌত করবে। তারপর বাম দিক ধৌত করবে। এভাবে তিনবার গোসল দিবে। প্রতিবার হালকা ভাবে পেটে হাত বুলাবে এবং ময়লা কিছু বের হলে পরিস্কার করে নিবে। গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজন মোতাবেক তিনবারের বেশী সাত বা ততোধিক গোসল দিতে পারে। শেষবার কর্পূর মিশ্রিত করে গোসল দেয়া সুন্নাত। কেননা নবী (ছা:) তাঁর কন্যা যায়নাবের (রাঃ) শেষ গোসলে কর্পুর মিশ্রিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবং তাঁকে প্রয়োজন মনে করলে তিনবার বা পাঁচবার বা তার চেয়ে অধিকবার গোসল দিতে বলেছেন।
প্রশ্নঃ (১৬১) দুর্ঘটনা কবলিত, আগুনে পুড়া প্রভৃতি কারণে শুধুমাত্র দু’একটি অঙ্গ পাওয়া গেলে তার জানাযা ও গোসলের নিয়ম কি?
উত্তরঃ মৃতের উপর জানাযা পাঠ করার পর যদি তার সামান্য কোন অঙ্গ পাওয়া যায়, তবে তার জানাযা আর পড়তে হবে না। যেমন, জনৈক মৃত ব্যক্তিকে জানাযা দিয়ে আমরা তাকে দাফন করলাম। কিন্তু একটি পা বা হাত কাটা ছিল। দাফন করার পর উহা পাওয়া গেল। এখন এই কর্তিত অংশের জানাযা পড়তে হবে না। কেননা মৃতের উপর তো জানাযা হয়েই গেছে।
কিন্তু যদি মৃতের শরীরের মূল অংশই না পাওয়া যায়। শুধু তার কোন অঙ্গ পাওয়া গেল যেমন মাথা বা পা বা হাত। তবে যা পাওয়া যায় তাই গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে তার জানাযা পড়বে তারপর দাফন করবে। (আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞান রাখেন।)
প্রশ্নঃ (১৬২) জনৈক মহিলার গর্ভস্ত সন্তানের বয়স ছয় মাস হলে তা পড়ে যায়। সে কিন্তু বিভিন্ন ধরণের কষ্টকর ও ক্লান্তিকর কাজ করতো এবং সেই সাথে রামাযান মাসে ছিয়ামও পালন করতো। তার আশংকা হচ্ছে এই গর্ভপাতের কারণ সে নিজেই। কারণ গর্ভ নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতো। তাছাড়া জানাযা না পড়েই উক্ত মৃত সন্তানকে দাফন করে দেয়া হয়েছে। তার জানাযা না পড়া কি ঠিক হয়েছে? আর এই মহিলাই বা কি করবে, যে কঠিন পরিশ্রম করার কারণে বাচ্চা মারা গেছে এই অনুশোচনায় ভুগছে।
উত্তরঃ চার মাস পূর্ণ হওয়ার পর যদি গর্ভস্ত সন্তান পড়ে যায়, তবে তাকে গোসল দেয়া, কাফন পরানো ও দাফন করা ওয়াজিব। কেননা চার মাস পূর্ণ হলে প্রত্যেক ভ্রুণে রূহ ফুঁকে দেয়া হয়। যেমন আবদুল্লাহ্‌ বিন মাসঊদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে প্রমাণ রয়েছে। তিনি বলেন,
 “রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট হাদীছ বর্ণনা করেন, তিনি সত্যবাদী এবং সত্যায়িতঃ “তোমাদের কারো সৃষ্টি তার মাতৃগর্ভে প্রথমে চল্লিশ দিন বীর্য আকারে সঞ্চিত থাকে। পরবর্তী চল্লিশ দিনে উহা জমাট রক্তে পরিণত হয়। এরপর আরো চল্লিশ দিনে উহা মাংশ পিন্ডে রুপান্তরিত হয়। অতঃপর আল্লাহ্‌ তা’আলা একজন ফেরেস্তা প্রেরণ করেন। সে তাতে রূহ ফুঁকে দেয়।” ইহা একশত বিশ দিন অর্থাৎ চার মাস। সে যদি এই সময়ের পর মাতৃগর্ভ থেকে পড়ে যায়, তবে তাকে গোসল দিতে হবে, কাফন পরাতে হবে এবং জানাযা পড়তে হবে। আর সে মানুষের সাথে ক্বিয়ামত দিবসে পূণঃরুত্থিত হবে।
কিন্তু চার মাসের কম বয়সে পড়ে গেলে তাকে গোসল দিতে হবে না, কাফন পরাতে হবে না এবং জানাযাও দিতে হবে না। কেননা ওটা গোশতের একটি টুকরা মানুষ নয়।
প্রশ্নে উল্লেখিত সন্তানের বয়স ছয় মাস হওয়ার পর গর্ভপাত হয়ে গেছে। ওয়াজিব হচ্ছে, তার গোসল দেয়া, কাফন পরানো ও জানাযা পড়া। কিন্তু যেহেতু এর কোনটাই করা হয়নি, তাকে দাফন করে দেয়া হয়েছে। তবে কবর কোনটি জানা থাকলে তার কবরে গিয়ে জানাযা নামায আদায় করতে হবে। আর জানা না থাকলে তার গায়েবানা জানাযা আদায় করে নিবে। যে কোন ভাবে একবার জানাযা পড়ে নিলেই হল।
আর প্রশ্নে উল্লেখিত মহিলাটির যে আশংকা তার কোন ভিত্তি ও প্রভাব নেই। এনিয়ে অনুশোচনায় ভুগা উচিত নয়। অনেক ভ্রুণই এভাবে মাতৃগর্ভে কারণে-অকারণে মরে যায় এবং পড়ে যায়। এনিয়ে অতিরিক্ত মাথা ঘামানোর কোন দরকার নেই। তাকে কোন কিছুই করতে হবে না। অতএব আবশ্যক হচ্ছে এই সন্দেহ ও ওয়াসওয়াসা মন থেকে ঝেড়ে ফেলা এবং স্বভাবিক জীবন যাপন করা। (আল্লাই তাওফীক দাতা ও ক্ষমাকারী।)
প্রশ্নঃ (১৬৩) জানাযা সালাত আদায় করার পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ জানাযা পড়ার পদ্ধতি হচ্ছে, ইমাম পুরুষের লাশের মাথা বরাবর, আর মহিলার মধ্যবর্তী স্থান বরাবর দাঁড়াবে। চার তাকবীরের সাথে জানাযা আদায় করতে হয়। অন্তরে নিয়ত করে দাঁড়াবে। (আরবীতে বা বাংলায় মুখে নিয়ত বলা বা শিখিয়ে দেয়া বিদআত।) প্রথম তাকবীর দিয়ে আঊযুবিল্লাহ্‌… বিসমিল্লাহ্‌… পাঠ করে সূরা ফাতিহা তারপর ছোট কোন সূরা পাঠ করবে। বিদ্বানদের অনেকে ছোট একটি সূরা পাঠ করা সুন্নাত বলেছেন। (তবে ছানা পাঠ করার কোন ছহীহ্‌ হাদীছ নেই) দ্বিতীয় তাকবীর দিয়ে দরূদে ইবরাহীম (যা ছালাতে পাঠ করতে হয়) পাঠ করবে।
এরপর তৃতীয় তাকবীর দিয়ে জানাযার জন্য বর্ণিত যে কোন দু’আ পাঠ করবে। এই দু’আটি পাঠ করা যেতে পারে,
 “হে আল্লাহ্‌! আপনি আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত অনুপসি’ত, ছোট ও বড় নর ও নারীদেরকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ্‌! আমাদের মাঝে যাদের আপনি জীবিত রেখেছেন তাদেরকে ইসলামের উপরে জীবিত রাখুন, এবং যাদেরকে মৃত্যু দান করেন তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করুন। হে আল্লাহ্‌! আমাদেরকে তার ছওয়াব হতে বঞ্চিত করবেন না এবং তার মৃত্যুর পর আমাদেরকে পথ ভ্রষ্ট করবেন না।” এবং এই দু’আটিও পড়তে পারে,
 “হে আল্লাহ্‌! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, তার প্রতি দয়া করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন। তাকে মাফ করে দিন। তার আতিথেয়তা সম্মান জনক করুন। তার বাসস্থানকে প্রশস্ত করে দিন। আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিশির দিয়ে। তাকে গুনাহ হতে এমন ভাবে পরিস্কার করুন যেমন করে সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিস্কার করা হয়। তাকে তার (দুনিয়ার) ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর দান করুন। তার (দুনিয়ার) পরিবার অপেক্ষা উত্তম পরিবার দান করুন। আরো তাকে দান করুন দুনিয়ার স্ত্রী অপেক্ষা উত্তম স্ত্রী। তাকে বেহেসে-প্রবেশ করিয়ে দিন, আর কবরের আযাব ও জাহান্নামের আযাব হতে পরিত্রাণ দিন।”
এরপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়াক্বিনা আযাবান্নার।” তারপর ডান দিকে সালাম ফিরাবে। বাম দিকেও সালাম ফেরাতে পারে। পঞ্চম তাকবীর প্রদান করলেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা এটাও নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত। অতএব কখনো কখনো পঞ্চম তাকবীর দিয়ে জানাযা পড়াও সুন্নাত। আর যা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ছহীহ্‌ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে মানুষের উচিত হচ্ছে সেগুলোর উপর আমল করা। কখনো এটা আমল করবে কখনো ওটা আমল করবে। যদিও চার তাকবীরে জানাযা পাঠ করার বিষয়টি বহুল প্রচলিত।
কয়েকটি লাশ একত্রিত হলে একসাথে জানাযা পড়া যাবে। তখন ইমামের নিকটবর্তী রাখবে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষকে, তারপর নাবালেগ পুরুষ, এরপর প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা, অতঃপর নাবালেগ মেয়েদেরকে রাখবে। এদেরকে সাাজনোর তারতীব হচ্ছে, মহিলাদের বুক বরাবর পুরুষদের মাথা রাখতে হবে। আর ইমাম দাঁড়াবে পুরুষদের মাথা বরাবর। যাতে করে প্রত্যেকটি লাশের সামনে ইমামের দাঁড়ানো শরীয়ত সম্মত হয়।
লক্ষনীয় একটি বিষয়, সাধারণ মানুষের অনেকে ধারণা করে যে, যারা জানাযা উপস্থাপন করবে তাদের জন্য উত্তম হচ্ছে, ইমামের ডানে বামে দাঁড়ানো। বরং কমপক্ষে একজন হলেও ইমামের সাথে দাঁড়াবে। কিন্তু এটা ভুল। কেননা সুন্নাত হচ্ছে, ইমাম সম্মুখে একাকী দাঁড়াবেন। যদি তারা প্রথম কাতারে স্থান না পায় তবে ইমামের পিছনে প্রথম কাতারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়বে।
প্রশ্নঃ (১৬৪) মৃত ব্যক্তি যদি বেনামাযী হয় বা বেনামাযী হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থাকে বা সে মূলতঃ নামাযী বা বেনামাযী তার বিষয়টি অজানা থাকে, তবে তার জানাযা পড়ার বিধান কি?
উত্তরঃ যদি জানা যায় যে মৃত ব্যক্তি বেনামাযী ছিল, তবে তার জানাযা আদায় করা নাজায়েয। বেনামাযী মৃতের অভিভাবকদের জন্য বৈধ নয়; তার লাশকে মুসলমানদের সামনে জানাযার জন্য উপস্থিত করা। কেননা সে কাফের মুরতাদ। আবশ্যক হচ্ছে, তার জানাযা না পড়া এবং মুসলমানদের গোরস্থান ছাড়া অন্য যে কোন স্থানে গর্ত খনন করে তার লাশ সেখানে নিক্ষেপ করা। তার কোনই মর্যাদা নেই। কেননা ক্বিয়ামত দিবসে তার হাশর হবে ফিরাউন, হামান, ক্বারূন ও উবাই বিন খালাফের সাথে।
কিন্তু যে ব্যক্তির অবস্থা অজ্ঞাত বা সন্দেহপূর্ণ তার জানাযা পড়তে হবে। কেননা আসল হচ্ছে সে মুসলিম এবং নামাযী। যতক্ষণ না প্রমাণিত হবে যে সে মুসলমান নয়। তবে সন্দেহ হলে দু’আর ক্ষেত্রে শর্ত করা যায়। দু’আয় এরূপ বলবে: “হে আল্লাহ্‌! লোকটি যদি মু’মিন হয় তবে তাকে ক্ষমা কর, দয়া কর…। আর দু’আয় শর্ত করা বৈধ আছে। লে’আনের মাসআলায় স্বামী-স্ত্রী যদি পরস্পরকে ব্যাভিচারের দোষারোপ করে এবং তাদের মধ্যে কেউ চারজন স্বাক্ষী উপস্থিত করতে না পারে, তবে লে’আন করবে। পুরুষ পঞ্চমবারে বলবে, “আমি যদি মিথ্যাবাদী হই, তবে আমার উপর আল্লাহ্‌র লা’নত।” আর স্ত্রীও পঞ্চমবারে বলবে, “আমার উপর আল্লাহ্‌র লা’নত, যদি আমি মিথ্যাবাদী হই।”
প্রশ্নঃ (১৬৫) জানাযা সালাতের জন্য কোন সময় নির্ধারিত আছে কি? রাতে কি দাফন করা জায়েয। জানাযার উপস্থিতিতে লোক সংখ্যার কি কোন সীমারেখা আছে?
উত্তরঃ জানাযা সালাত আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। এই কারণে যে, মৃত্যুর কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। যখনই মানুষ মৃত্যু বরণ করবে তাকে গোসল দিয়ে, কাফন পরিয়ে তার জানাযা আদায় করবে। তা রাতে হোক বা দিনে। দাফন করবে রাতে হোক বা দিনে। তবে তিনটি সময়ে দাফন করা জায়েয নয়:
১) সূর্য উদয় থেকে নিয়ে এক তীর পরিমাণ সূর্য উপরে উঠা পর্যন্ত।
২) মধ্য দুপুরে, সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলা পর্যন্ত। অর্থাৎ পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলার পূর্বে প্রায় দশ মিনিট।
৩) সূর্যাস্ত যাওয়ার পূর্বে। অর্থাৎ এক তীর পরিমাণ সূর্য থাকার পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত।
এই তিনটি সময়ে দাফন করা জায়েয নয়। এ সময়গুলোতে দাফন করা নিষেধ অর্থাৎ দাফন করা হারাম। কেননা ঊক্ববা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “তিনটি সময়ে রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, নামায আদায় করতে এবং আমাদের মৃতদেরকে দাফন করতে।”
জানাযা নামাযে সর্বনিম্ন কত লোক হতে হবে তার কোন সীমা নির্ধারণ করা নেই। বরং একজন লোকও যদি জানাযা পড়ে যথেষ্ট হবে।
গোরস্থানে গিয়ে জানাযা পড়া জায়েয। এজন্য বিদ্বানগণ গোরস্থানে নামায আদায় করার নিষেধাজ্ঞা থেকে জানাযার বিষয়টিকে স্বতন্ত্র রেখেছেন। তাঁরা বলেন, গোরস্থানে জানাযা নামায আদায় করা জায়েয। হাদীছে প্রমাণিত হয়েছে, মসজিদে নববী ঝাড়-র কাজে নিয়োজিত মহিলাটির জানাযা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কবরে গিয়ে আদায় করেছিলেন। সে রাতে মৃত্যু বরণ করলে ছাহাবীগণ তাঁকে না জানিয়েই দাফন করে দেয়। অতঃপর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেন, “তার কবর কোথায় আমাকে দেখিয়ে দাও।” তারপর তিনি তার কবরে জানাযা আদায় করলেন।
প্রশ্নঃ (১৬৬) গায়েবানা জানাযার বিধান কি?
উত্তরঃ বিদ্বানদের মতামতের মধ্যে প্রাধান্যযোগ্য মত হচ্ছে গায়েবানা জানাযা শরীয়ত সম্মত নয়। তবে যে ব্যক্তির জানাযা হয়নি তার গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে। যেমন জনৈক মুসলমান কোন কাফের ভুখন্ডে মৃত্যু বরণ করল অথবা সমুদ্র বা নদীর পানিতে ডুবে মৃত্যু বরণ করল কিন্তু তার লাশ পাওয়া গেল না। তখন তার গায়েবানা জানাযা আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু যার জানাযা পড়া হয়েছে তার গায়েবানা জানাযা আদায় করা শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা এব্যাপারে নাজাশীর জন্য গায়েবানা জানাযা ছাড়া হাদীছে আর কোন দীলল নেই। কিন্তু নাজাশীর জানাযা তার নিজ দেশে পড়া হয়নি। এজন্য নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় তার গায়েবানা জানাযা আদায় করেন।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর যুগে অনেক নেতৃবৃন্দ ও গোত্রপ্রধান মৃত্যু বরণ করেন কিন্তু এরকম কোন বর্ণনা নেই যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের গায়েবানা জানাযা আদায় করেছেন। বিদ্বানদের মধ্যে আবার কেউ বলেন, মৃত ব্যক্তি যদি এমন পর্যায়ের লোক হয় যার সম্পদ, কার্যক্রম ও জ্ঞান্তবিদ্যা দ্বারা ধর্মের উপকার ও কল্যাণ সাধিত হয়েছে তবে তার গায়েবানা জানাযা পড়া যায়। আর এরূপ না হলে গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে না। আবার কেউ বলেন, কোন শর্ত ছাড়াই সব ধরণের ব্যক্তির জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েয। এটি সর্বাধিক দুর্বল মত।
প্রশ্নঃ (১৬৭) কোন কোন দেশে মৃত ব্যক্তিকে পিঠের উপর শুইয়ে হাত দু‘টো পেটের উপর রেখে দাফন করা হয়। দাফনের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, মৃতকে ডান কাতে শুইয়ে কিবলামুখি রেখে দাফন করা। কেননা কা’বা শরীফ হচ্ছে সকল মুসলমানের জীবিত ও মৃত সর্বাবস্থার কিবলা। যেমন করে ঘুমন্ত ব্যক্তির জন্য সুন্নাত হচ্ছে ডান কাতে শোয়া। তেমনি মৃত ব্যক্তিকে ডান কাতে রেখে দাফন করতে হবে। কেননা নিদ্রা ও মৃত্যুকে আল্লাহ্‌ তা’আলা ওফাতরূপে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
 “আল্লাহ্‌ই প্রাণ হরণ করেন জীব সমূহের তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু আসেনি তাদের প্রাণও নিদ্রার সময়। অতঃপর যার জন্যে মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার প্রাণ তিনি ফিরিয়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।” (সূরা যুমারঃ ৪২) তিনি আরো বলেনঃ
 “আর সেই মহা প্রভুই রাত্রিকালে নিদ্রারূপে তোমাদের নিকট এক প্রকার মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন, আর দিনের বেলা তোমরা যে পরিশ্রম করে থাক তিনি সেটাও সম্যক পরিজ্ঞাত; অতঃপর তিনি নির্দিষ্ট সময়কাল পূরণের নিমিত্ত তোমাদেরকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে থাকেন, তারপর পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তোমাদের কৃত-কর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।” (সূরা আনআমঃ ৬০)
প্রশ্নকারী যা দেখেছে তা হয়তো ঐ এলাকার লোকদের অজ্ঞতার ফল। অন্যথা আমি জানিনা বিদ্বানদের কেউ এমত পোষণ করেছেন যে, মৃত ব্যক্তিকে পিঠের উপর শুইয়ে তার হাত দু‘টোকে পেটের উপর রাখতে হবে।
প্রশ্নঃ (১৬৮) গোরস্থানে কুরআন তেলাওয়াত করা এবং দু’আ করার বিধান কি?
উত্তরঃ কবরে বা গোরস্থানে কুরআন তেলাওয়া করা বিদআত। এ সম্পর্কে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন প্রমাণ নেই। আর যে ব্যাপারে শরীয়তে কোন প্রমাণ নেই তা আমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে উদ্ভাবন করা জায়েয নয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
 “প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত কাজই বিদআত। প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম।” অতএব মুসলমানদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, পূর্ববর্তী নেক সম্প্রদায় ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনের পদাঙ্ক অনুসরণ করা। যাতে করে তারা কল্যাণ ও হেদায়াত লাভ করতে পারে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
 “নিশ্চয় সর্বত্তোম বাণী হচ্ছে আল্লাহ্‌র কিতাব, আর সর্বত্তোম হেদায়াত হচ্ছে মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হেদায়াত।”
কবরের কাছে গিয়ে মৃতের জন্য দু’আ করাতে কোন অসুবিধা নেই। কবরের কাছে দন্ডায়মান হয়ে সাধ্যানুযায়ী মৃতের জন্য দু’আ করবে। যেমন এরূপ বলবে, “হে আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ্‌ তাকে দয়া কর। হে আল্লাহ্‌ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। হে আল্লাহ্‌ তার কবরকে প্রশস্ত করে দাও। .. ইত্যাদি।
আর কবরের কাছে নিজের জন্য দু’আ করার উদ্দেশ্যে কেউ যদি সেখানে যায়, তবে তা বিদআত। কেননা শরীয়তের প্রমাণ ব্যতিরেকে কোন স্থানকে দু’আর জন্য নির্ধারণ করা যাবে না। আর যে ব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই তা নিজেদের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা বিদআত।
প্রশ্নঃ (১৬৯) কবর যিয়ারত করার নিয়ম কি? নারীদের কবর যিয়ারত করার বিধান কি?
উত্তরঃ কবর যিয়ারত করা সুন্নাত। কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করার পর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার অনুমতি প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,
 “পূর্বে আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা উহা যিয়ারত করতে পার। কেননা কবর যিয়ারত তোমাদেরকে আখেরাতের কথা স্মরণ করাবে।” অতএব মরণের কথা স্মরণ ও উপদেশ গ্রহণের জন্য কবর যিয়ারত করতে হবে। কেননা মানুষ যখন মৃত লোকদের কবর যিয়ারত করবে, যারা কিনা তাদের সাথে তাদের মতই পৃথিবীতে বিচরণ করত, খানা-পিনা করত, দুনিয়াদারী করত। আজ তারাই নিজেদের কর্মের হাতে বন্দী। কর্ম ভাল থাকলে তাদের পরিণাম ভাল। কর্ম মন্দ থাকলে পরিণাম মন্দ- তখন নিঃসন্দেহে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করবে তার অন্তর নরম হবে, সে আল্লাহর দিকে ধাবিত হবে। তখন আল্লাহ্‌র নাফরমানী থেকে ফিরে আসবে তাঁর আনুগত্যের দিকে। কবর যিয়ারতের সময় সুন্নাত হচ্ছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর পঠিত দু‘আ পাঠ করা। কবরবাসীকে সালাম দিবেঃ
 “হে কবরের অধিবাসী মু’মিন ও মুসলিমগণ! আপনাদের প্রতি শান্তির ধারা বর্ষিত হোক। নিশ্চয় আমরাও আপনাদের সাথে এসে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌ আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের উপর রহম করুন। আপনাদের জন্য আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার প্রার্থনা করছি।”
আর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এমন কোন প্রমাণ নেই যে, তিনি কবর যিয়ারতের সময় সূরা ফাতিহা, বা সূরা ইখলাছ বা দরূদ শরীফ পাঠ করেছেন। অতএব কবর যিয়ারতের সময় এগুলো পাঠ করা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর শরীয়ত বহির্ভূত কাজ।
নারীদের কবর যিয়ারত করা হারাম। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারতকারীনীদেরকে লা‘নত করেছেন। আরো লা‘নত করেছেন কবরে বাতি জ্বালানো ও মসজিদ নির্মাণকারীদেরকে। অতএব নারীদের জন্য কবর যিয়ারত হালাল নয়। এই নিষিদ্ধতা যদি কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়। কিন্তু কবর যিয়ারতের নিয়ত ছাড়া অন্য কোন কারণে যদি ঘর থেকে বের হয়; তারপর চলার পথে কবর বা গোরস্থান পাওয়া যায়, তবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর শিখানো পদ্ধতিতে সালাম প্রদান করবে। অতএব ঘর থেকে শুধুমাত্র কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে কবর যিয়ারত করা হারাম। কেননা এর মাধ্যমে নিজেকে ফিৎনার সম্মুখিন করবে। কিন্তু কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্য না করে বের হয়ে চলতি পথে পাওয়া কবরে সালাম প্রদান করাতে কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ (১৭০) মৃতের বাড়ীতে কুরআন খানী অনুষ্ঠান করার বিধান কি?
উত্তরঃ নিঃসন্দেহে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে কোরানখানী মাহফিল করা একটি বিদআত। কেননা ইহা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা তাঁর ছাহাবায়ে কেরামের যুগে প্রচলিত ছিল না। কুরআন দ্বারা দুঃখ-চিন্তা হালকা হয়- যদি কোন ব্যক্তি উহা নীচু স্বরে তেলাওয়াত করে থাকে। জোরে চিৎকার করে বা মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পাঠ করলে এরূপ হয় না। কেননা উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করলে সমস্ত মানুষ তা শুনে থাকে এমনকি খেলা-ধুলায় লিপ্ত লোকদের কানেও তা পৌঁছে কিন্তু তারা তার প্রতি গুরুত্বারোপ করে না। এমনকি আপনি দেখবেন যারা গান্তবাদ্য শুনে তাদের কাছেও ঐ কুরআনের আওয়াজ পৌঁছে। তারা গানও শুনছে কুরআনও শুনছে। ফলে তারা যেন এই কুরআনকে ঠাট্টা ও তাচ্ছিল্যের বিষয়ে পরিণত করেছে। কুরআনের অবমাননা করছে।
আর শোক-সমবেদনা জানাতে ও আগত লোকদের স্বাগত জানানোর জন্য মৃতের পরিবারের নিকট সমবেত হওয়া একটি বিদআত। অনুরূপভাবে মৃতের বাড়ীতে ভোজের আয়োজন করাও একটি বিদআত। কেননা বিষয়টি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর যুগে পরিচিত ছিল না। তবে চলতে ফিরতে, মসজিদে বাজারে মৃতের পরিবারকে শোক জানানোতে কোন অসুবিধা নেই। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে তার বাড়িতে সমবেত লোকদের জন্য খাদ্য প্রস্তত করাকে ছাহাবায়ে কেরাম নিষিদ্ধ নিয়াহা বা ‘মৃতের জন্য বিলাপ’ এর অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। আর মৃতের জন্য বিলাপ করা কাবীরা গুনাহ। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাপকারীনী ও বিলাপ শ্রবণকারীনীকে লা‘নত করেছেন। তিনি বলেন,
“উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করে ক্রন্দনকারীনী যদি মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে, তবে ক্বিয়ামত দিবসে এমনভাবে উত্থিত করা হবে যে, তার গায়ে আলকাতরার একটি পায়জামা পরানো হবে এবং পরানো হবে খুঁজলী যুক্ত চাদর।” (আমরা আল্লাহ্‌র কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি)
মুসলিম ভাইদের প্রতি আমার নসীহত, তারা যেন এরকম সবধরণের বিদআত থেকে সাবধান হয়। কেননা বিদআত পরিত্যাগে তাদের যেমন কল্যাণ আছে, তেমনি উপকার আছে মৃত ব্যক্তির। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হবে তার পরিবারের লোকদের ক্রন্দন ও বিলাপের কারণে।”  এখানে ‘শাস্তি দেয়া হবে’ একথার অর্থ হচ্ছে, মৃত ব্যক্তি এই ক্রন্দন ও বিলাপের কারণে ব্যথিত হয় কষ্ট পায়। যদিও বিলাপকারীর শাস্তি তাকে দেয়া হবে না। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, “একজন অন্যজনের পাপের বোঝা বহণ করবে না।” (সূরা আনআমঃ ১৬৪) আর শাস্তি মানেই দন্ডিত হওয়া নয়। কেননা হাদীছে বলা হয়েছেঃ “সফর শাস্তির একটি অংশ।” অথচ এখানে কোন দন্ড নেই; বরং এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, দুঃখ, চিন্তা, মনোকষ্ট প্রভৃতি।
সারকথা মুসলিম ভাইদেরকে আমি নসীহত করি, তারা যেন শরীয়ত বহির্ভূত এই কুসংস্কার পরিত্যাগ করে, যা তাদেরকে আল্লাহ্‌ থেকে দূরে সরিয়ে দিবে এবং মৃতদের শাস্তি বৃদ্ধি করবে।
(সমাপ্ত)

ছালাত সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় জানতে এদের উপর ক্বিলক করুনঃ




















'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
 “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” 
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে  এর উপর ক্লিক করুনঃ


PLEASE SHARE ON

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...