বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ছালাত কবুল হওয়ার শর্তসমূহ
ভূমিকাঃ ছালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর উপরেই
অন্যান্য ইবাদত কবুল হওয়া বা না হওয়া নির্ভর করে। ছালাত সঠিক হলে অন্যান্য সব ইবাদত
সঠিক হবে। আর ছালাত বাতিল হলে অন্যান্য সব ইবাদত বাতিল হবে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন
সব জিনিসের পূর্বে লোকের যে আমলের হিসাব হবে, তা হলো সালাত। যদি তার সালাত সঠিক হয়
তাহলে সে সফলকাম হবে ও নাজাত পাবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে সে বিফল ও ক্ষতিগ্রস্ত
হবে। যদি ফরয সালাতে কিছু ভুল হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তা’আলা মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে)
বলবেন, দেখো! আমার বান্দার নিকট সুন্নাত ও নফল সালাত আছে কি-না? তাহলে সেখান থেকে এনে
বান্দার ফরয সালাতের ত্রুটি পূরণ করে দেয়া হবে। এরপর এ রকম বান্দার অন্যান্য হিসাব
নেয়া হবে। অন্য এক বিবরণ এসেছে, তারপর এ রকম যাকাতের হিসাব নেয়া হবে। অতঃপর অবশিষ্ট
সব ’আমলের হিসাব একের পর এক এ রকম নেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৩০, ১৬৭৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪১৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৮৬৪, ৮৬৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১৪২৫, সুনান আননাসায়ী ৪৬৫-৬৭, সহীহ আত্ তারগীব ৫৪০, সহীহ
আল জামি ২০২০, আহমাদ ৭৮৪২, ৯২১০, ১৬৫০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তাই ছালাতকে সকল ইবাদতের মানদন্ড বলা হয়। ছালাত
কবুল হওয়ার কতিপয় শর্ত কুরআন ও হাদীছে উল্লিখিত হয়েছে। যেগুলি প্রতিপালন করলে ছালাত
সঠিক হবে এবং কাঙ্ক্ষিত ছওয়াব অর্জিত হবে। পক্ষান্তরে এগুলি প্রতিপালন না করলে ছালাত
যেমন সঠিক হবে না, তেমনি কাঙ্ক্ষিত ছওয়াবও অর্জিত হবে না। নিম্নে ছালাত আদায়ের শর্তগুলো
উল্লেখ করা হলোঃ
ইখলাছ বা একনিষ্ঠতা
ইখলাছ সব আমলের ক্ষেত্রে জরুরী। ইখলাছ বিহিন
কোনো আমল কবুল হয় না। তেমনি ছালাতের ক্ষেত্রেও ইখলাছ আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“অথচ তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খালেছ অন্তরে একনিষ্ঠভাবে কেবলমাত্র
আল্লাহর ইবাদত করবে এবং ছালাত কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে। আর এটাই হ’ল সরল দ্বীন”।
(সুরা আল বাইয়েনাহ ৯৮/৫)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সে আমল
গ্রহণ করবেন না, যাতে ইখলাছ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশা করা হয়নি’। (সুনান আন-নাসায়ী (তাহকীককৃত) ৩১৪০; ছহীহাহ ৫২; ছহীহুল জামে
১৮৫৬)।
ইখলাছের অনেক ফলাফল রয়েছে। আল্লাহ রাববুল আলামীন
বলেন,
“কিন্তু তারা নয়, যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ (ইখলাছ
অবলম্বনকারী) বান্দা। তাদের জন্য রয়েছে নির্ধারিত রিযিক, ফলমূল, তারা হবে সম্মানিত,
সুখদ কাননে”। (সুরা ছাফফাত ৩৭/৪০-৪৩)।
আল্লাহ রাববুল আলামীন আরো বলেন,
“শয়তান বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে
বিপথগামী করলেন সেজন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভন করে দিব এবং
আমি তাদের সকলকে বিপথগামী করব, তবে তাদের ব্যতীত, যারা আপনার ইখলাছ অবলম্বনকারী (একনিষ্ঠ)
বান্দা”। (সুরা হিজর ১৫/৩৯-৪০)।
সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এখলাছ বা আন্তরিকতার
সাথে শাহাদাতের মনোষ্কামনা করে; আল্লাহ তা’আলা তাকে শাহীদের মর্যাদায় উন্নীত করেন,
যদিও সে স্বীয় বিছানায় মৃত্যুবরণ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৩৮০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৯, সুনান
আবূ দাঊদ ১৫২০, সুনান আননাসায়ী ৩১৬২, সুনান আততিরমিযী ১৬৫৩, সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৯৭,
দারিমী ২৪৫১, ২৪০৭, সহীহ আল জামি ৬২৭৬, সহীহ আত্ তারগীব ১২৭৬, ইবনু হিব্বান ৩১৯২, আল-হাকিম
ফিল মুসতাদরাক ২/৭৭, বায়হাকী ফিস সুনান ৯/১৭০, আত-তালীকুর রাগীব ২/১৬৯, সহীহ আবু দাউদ
১৩৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ)...সাঈদ ইবনু জুবায়র
(রহঃ) এর প্রিয়ভাজন জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণিত যে, তিনি সাঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) কে খবর
দিয়েছেন, আয়িশা (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
যে ব্যক্তি শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করবে এ
নিয়তে শুয়ে পড়ল। অবশেষে নিদ্রা তাকে কাবু করে ফেলল এবং সকাল হওয়ার আগে জাগতে পারল না।
এমতাবস্থায় সে যা নিয়ত করেছিল তা তার জন্য লেখা হয়ে যাবে এবং এ নিদ্রা তার প্রভুর পক্ষ
থেকে দান হিসাবে ধরা হবে’। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক
ফাউন্ডেশন) ১৭৮৭, ইরউয়াউল গালীল ২/২২৫, তা'লীকুর রাগীব ১/২০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আবান ইবনে উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) দুপুরের সময় মারওয়ানের নিকট থেকে বের হয়ে এলে আমি ভাবলাম, নিশ্চয়
কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানার জন্য এ সময় তিনি তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস
করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আমাদের শ্রুত
কতক হাদীস শোনার জন্য মারওয়ান আমাদের ডেকেছেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ পার্থিব চিন্তা যাকে মোহগ্রস্ত করবে, আল্লাহ তার কাজকর্মে
অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন, দরিদ্রতা তার নিত্যসংগী হবে এবং পার্থিব স্বার্থ ততটুকুই লাভ
করতে পারবে, যতটুকু তার তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে। আর যার উদ্দেশ্য হবে আখেরাত, আল্লাহ
তার সবকিছু সুষ্ঠু করে দিবেন, তার অন্তরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করবেন এবং দুনিয়া স্বয়ং তার
সামনে এসে হাযির হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১০৫, সহীহাহ
৯৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সুতরাং আল্লাহ ইখলাছপূর্ণ আমল কবুল করেন, যাতে
কোন রিয়া বা লৌকিকতা ও শ্রবণ করানোর চিন্তা নেই। আর যাতে কোন প্রকার শিরক নেই।
বিনয়ের সাথে ছালাত আদায় করা
বিনীতভাবে ছালাত আদায়কারী মুমিনদেরকে আল্লাহ
সফলকাম বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “ঐ সকল মুমিন সফলকাম, যারা ছালাতে বিনয়াবনত”।
(সুরা মুমিনূন ২৩/১-২)।
তিনি আরো বলেন, “তোমরা ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে
সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই তা বিনয়ী-একনিষ্ঠ ব্যতীত অন্যদের উপর অতীব কষ্টকর”। (সুরা আল বাক্বারাহ ২/৪৫)।
ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে এক সময় তার উপর আল্লাহর
রহমত নাযিল হবে এবং সে সফলকাম হবে। কিন্তু সালাতের মাধ্যমে কিভাবে সাহায্য প্রার্থনা
করবে? এর উত্তর হচ্ছে, সালাতের মাধ্যমে অন্যায় অশ্লিল কাজ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে রাখে”। (সূরা আল-আনকাবুত:
৪৫)। এটা নিশ্চয় এক বিরাট সাহায্য।
তাছাড়া সালাতের মাধ্যমে রিযকের মধ্যে প্রশস্তি
আসে। আল্লাহ বলেন, “আর আপনার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দিন ও তাতে অবিচল থাকুন, আমরা
আপনার কাছে কোন জীবনোপকরণ চাই না; আমরাই আপনাকে জীবনোপকরণ দেই এবং শুভ পরিণাম তো তাকওয়াতেই
নিহিত”। (সূরা ত্বা-হা: ১৩২)।
আর এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম যখন কোন বিষয়ে সমস্যায় পড়তেন বা চিন্তাগ্রস্ত হতেন তখনই তিনি সালাতে
দাঁড়িয়ে যেতেন”। (মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩৮৮)।
একাগ্রতা সহকারে ছালাত আদায় করা
নিবিষ্ট মনে একাগ্রতা সহকারে ছালাত আদায় করা
জরুরী। কারণ ছালাতে একাগ্রতা ও যথাযথ মনোযোগ না থাকলে তা পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর দরবারে
কবূল হয় না। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একাগ্রতা সহকারে ছালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে, যেন
তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০, ৪৭৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২, সুনান আবূ দাঊদ ৪৬৯৫, সুনান আননাসায়ী ৪৯৯০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫১,
আহমাদ ৩৬৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৮)।হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)
একাগ্রতা সহকারে ছালাত আদায় করতে পারলে জান্নাত
অবধারিত হয়ে যায়।
মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মাইমূন (রহঃ).....উকবাহ
ইবনু আমির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ওপর উট চড়ানোর দায়িত্ব ছিল। আমার
পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকেদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তার এ কথা শুনতে
পেলাম, "যে মুসলিম সুন্দরভাবে ওযু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি আল্লাহর
প্রতি নিবদ্ধ রেখে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। উকবাহ বলেন,
কথাটি শুনে আমি বলে উঠলামঃ বাহ! হাদীসটি কত চমৎকার! তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন,
আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সে দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি ’উমার। তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে
দেখেছি, এ মাত্র এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগে বলেছেন, তোমাদের
মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তম ও পূর্ণরূপে ওযু করে এ দু’আ পড়বে- "আশহাদু আল্লা-ইলা-হা
ইল্লাল্ল-হু ওয় আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু"। তার জন্যে জান্নাতের
আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৪,
সুনান আন-নাসায়ী (তাহকীককৃত) ১৫১, সুনান আবূ দাউদ ১৬৯, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ ২২২, বায়হাকী'র
“সুনানুল কুবরা” (১/৭৮), সহীহ আবূ দাউদ ৮৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৪, ইসলামিক সেন্টারঃ
৪৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হুমরান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘উসমান ইবনু
আফফান (রাযি.)-কে দেখেছেন যে, তিনি পানির পাত্র আনিয়ে উভয় হাতের তালুতে তিনবার ঢেলে
তা ধুয়ে নিলেন। অতঃপর ডান হাত পাত্রের মধ্যে ঢুকালেন। তারপর কুলি করলেন ও নাকে পানি
দিয়ে নাক পরিষ্কার করলেন। তারপর তাঁর মুখমন্ডল তিনবার ধুয়ে এবং দু’হাত কনুই পর্যন্ত
তিনবার ধুলেন। অতঃপর মাথা মাসেহ করলেন। অতঃপর দুই পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। পরে
বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আমার মত
এ রকম উযূ করবে, অতঃপর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে, যাতে দুনিয়ার কোন খেয়াল করবে না,
তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ)-১৫৯, ১৬০, ১৬৪, ১৯৩৪, ৬৪৩৩; মুসলিম ২২৬, আহমাদ ৪৯৩, ৫১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-২৮৬, মুসলিম ২২৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করা
সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছালাত আদায়
করতে হবে। দাঁড়িয়ে ছালাত আদায়ে অপারগ হ’লে বসে এবং তাও সম্ভব না হ’লে শুয়ে ছালাত আদায়
করতে হবে।
ইমরান ইবনু হুসাইন (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমার অর্শরোগ ছিল। তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে
সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, তিনি বললেনঃ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে, তা না পারলে বসে;
যদি তাও না পার তাহলে শুয়ে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১১১৭, ১১১৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৯৫২, সুনান ইবনু মাজাহ ১২২৩, সুনান আততিরমিযী
৩৭১, আহমাদ ১৯৩১৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৫১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
ছালাতের আহকাম-আরকান যথাযথভাবে আদায় করা
ছালাত সম্পাদনের যাবতীয় বিধিবিধান যথাযথভাবে
আদায় করা ছালাত কবুল হওয়ার জন্য জরুরী। যথাযথ পবিত্রতা অর্জনের পর রুকূ‘-সিজদা, কিয়াম-কুঊদ
সঠিকভাবে করতে হবে। অন্যথা ছালাত কবুল হবে না।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘ছালাত তিন ভাগে বিভক্ত। পবিত্রতা এক-তৃতীয়াংশ।
রুকূ‘ এক-তৃতীয়াংশ এবং সিজদা এক-তৃতীয়াংশ। সুতরাং যে ব্যক্তি তার হক আদায় করবে, তার
থেকে তার ছালাত ও সমস্ত আমল কবুল করা হবে। আর যার ছালাত প্রত্যাখ্যান করা হবে, তার
সমস্ত আমল প্রত্যাখ্যান করা হবে’। (মুসনাদ বায্যার ১/১৭৭;
ছহীহাহ হা/২৫৩৭; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫৩৯)।
সালাতের আহকাম সাতটি।
যথাঃ
১. শরীর পাক (অর্থাৎ সালাতের আগে ওযু করে পবিত্র
হতে হবে, আর গোসল ফরয হলে আগে গোসল করে নিতে হবে),
২. পোশাক পাক,
৩. জায়গা পাক,
৪. সময় হওয়া,
৫. সতর ঢাকা,
৬. কিবলামুখী হওয়া,
৭. নিয়ত করা।
অপরদিকে সালাত ফরয হওয়ার জন্য বিজ্ঞ ফকীহগণ
আরও ৩টি শর্ত যোগ করেছেন। আর তা হলো-
(ক) ইসলাম গ্রহণ
(খ) হুঁশ-জ্ঞান থাকা ও
(গ) প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।
দলীলঃ (এক) বুখারী:
১৩৫, ইফা ১৩৭, আধুনিক: ১৩২, (দুই) আবু দাউদ ৩৭৮-৩৭৯, (তিন) বুখারী: ২২০, ইফা ২২০, আধুনিক
২১৪, (চার) সূরা নিসা: ১০৩, (পাঁচ) সূরা আ'রাফ: ৩১, আহমদ: ২/১৮৭, (ছয়) সূরা বাকারা
১৪৪, মুসলিম: ৩৯৭, (সাত) বুখারী: ১।
উপরে বর্ণিত যেকোন একটা হুকুম বা শর্ত জেনে-শুনে
বাদ দিলে সালাত আদায় হবে না। তবে ভুলে কোনটা বাদ গেলে সালাত আদায় হয়ে যাবে ।
বিশুদ্ধ দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে
বিজ্ঞ ফকীহগণের মতে, সালাতের আরকান ১০টি। যথাঃ
১. দাঁড়িয়ে সালাত আদায় (ফরয সালাতে সক্ষম
অবস্থায়)
২. তাকবীরে তাহরীমা (প্রথম তাকবীর)
৩. সূরা ফাতিহা পাঠ (প্রত্যেক রাকাআতে)
৪. রুকু করা এবং রুকু থেকে উঠা।
৫. সিজদা এবং সিজদা থেকে উঠা।
৬. দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠক।
৭. শেষ বৈঠক ও তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়া।
৮. রুকনগুলো ধীরস্থিরভাবে আদায় করা।
৯. রুকন আদায়ে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা (অর্থাৎ
ক্রমধারা অনুযায়ী একের পর এক রুকনগুলো আদায় করা )
১০. সালাম ফেরানো (ডানে ও বামে)।
উল্লেখ্য যে, এর কোন একটা ফরয ইচ্ছায় বা ভুলে
বাদ পড়লে সালাত বাতিল হয়ে যাবে।
দলীলঃ (এক) বুখারী: ১১১৭, (দুই) বুখারী:
৭০৯, ইফা: ৭৫৭, আধুনিক: ৭৪৯, (তিন) বুখারী: ৭৫৬, ইফা ৭২০, আধুনিক ৭১২, (চার) সূরা হাজ্জ:
৭৭, বুখারী: ৭৫৭, ইফা ৭২১, আধুনিক: ৭১৩, (পাঁচ এবং ছয়) বুখারী: ৭৫৭, (সাত) বুখারী:
৭৫৭, ইফা ৭২১, বুখারী: ৮৩১, ইফা ৭৯৩, আধুনিক ৭৮৫, (আট) বুখারী: ৭৫৭, ইফা ৭২১, (নয়)
বুখারী, (দশ) আবু দাউদ: ৬১
ধীর-স্থিরভাবে ছালাত আদায় করা
ছালাতের আরকান ধীর-স্থিরভাবে আদায় করতে হবে।
নইলে ছালাত বাতিল হয়ে যাবে।
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের একপার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। সে সালাত আদায় করে এসে তাঁকে সালাম করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় কর। কারণ তুমি সালাত আদায় করনি। সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করে এসে আবার সালাম করল। তিনি বললেনঃ ওয়া আলাইকাস্ সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় কর। কারণ তুমি সালাত আদায় করনি। সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করে তাঁকে সালাম করল। তখন সে দ্বিতীয় বারে অথবা তার পরের বারে বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে সালাত শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাতে দাঁড়ানোর ইচ্ছে করবে, তখন প্রথমে তুমি যথানিয়মে অযূ করবে। তারপর কিব্লামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে, তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকূ’ করবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সিজদা করবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার সালাতের যাবতীয় কাজ সমাধা করবে। আবূ উসামাহ বলেন, এমনকি শেষে তুমি সোজা হয়ে দন্ডায়মান হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬২৫১, ৭৫৭, ৬৬৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৯০, সুনান আবূদাঊদ ৮৫৬; সুনান আননাসাঈ ৮৮৪; সুনান আততিরমিযী ৩০৩; আহমাদ ৯৬৩৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৯০, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি রুকূ ও সিজদা করে তার পিঠ সোজা করে না, তার সালাত পূর্ণাঙ্গ হয় না। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ) ৮৭০, তিরমিযী ২৬৫, নাসায়ী ১০২৭, ১১০১১; আবূ দাঊদ ৮৫৫, আহমাদ ১৬৬২৫, ১৬৬৫৪; দারিমী ১৩২৭, মিশকাত ৮৭৮, সহীহ আবী দাউদ ৮০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আলী ইবনু শায়বান (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি ছিলেন প্রতিনিধি দলের সদস্য। তিনি বলেন, আমরা রওনা হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম, তাঁর হাতে বাইআত গ্রহণ করলাম এবং তাঁর পিছনে সালাত
পড়লাম। তিনি এক ব্যাক্তির দিকে হালকা দৃষ্টিতে তাকান যে রুকূ ও সাজদা্হয় তার পিঠ সোজা
রাখেনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করে বলেনঃ হে মুসলিম সমাজ! যে
ব্যাক্তি রুকূ ও সিজদায় তার পিঠ সোজা করে না তার সালাত হয় না। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-২/৮৭১, আহমাদ ১৫৮৬২, সহীহাহ ২৫৩৬।
। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ)
ওয়াবিসা ইবনু মাবাদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে
সালাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি যখন রুকূ করতেন তখন তাঁর পিঠ এমনভাবে সোজা করতেন যে,
তার উপর পানি ঢাললে অবশ্যি তার স্থির থাকতো। (সুনানে ইবনে
মাজাহ (তাওহীদ)-২/৮৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ছালাতে সুন্নাতে নববীর অনুসরণ
ছালাত হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যাতে
রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করা আবশ্যিক। সুতরাং রাসূল করেননি বা বলেননি এমন কোন কিছু ছালাতের
মধ্যে করা যাবে না।
মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
সমবয়সী একদল যুবক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট হাযির হলাম। বিশদিন
ও বিশ রাত আমরা তাঁর নিকট অবস্থান করলাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
অত্যন্ত দয়ালু ও নরম স্বভাবের লোক ছিলেন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন যে, আমরা আমাদের পরিজনের
নিকট ফিরে যেতে চাই বা ফিরে যাওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে পড়েছি, তখন তিনি আমাদের জিজ্ঞেস
করলেন, আমরা আমাদের পিছনে কাদের রেখে এসেছি। আমরা তাঁকে জানালাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ
তোমরা তোমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস কর। আর তাদের (দ্বীন) শিক্ষা
দাও, এবং (সৎ কাজের) নির্দেশ দাও। (বর্ণনাকারী বলেন) মালিক (রাযি) আরও কয়েকটি বিষয়
উল্লেখ করেছিলেন যা আমার মনে আছে বা মনে নেই। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছিলেনঃ তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় করবে। সালাতের
সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন যেন আযান দেয় এবং যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে যেন তোমাদের
ইমামত করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩১, ৬২৮,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৮৩, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ৩৯৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৫৮,
সহীহ আল জামি ৮৯৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
আর রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত মুতাবেক সম্পাদিত
না হলে ছালাত কবুল হবে না।
আবূ জাফার মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ ও আবদুল্লাহ
ইবনু আওন হিলালী (রহঃ).....আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মীয় কাজের বিষয়ে এমন বিষয় উদ্ভাবন
করে যা তাতে নেই (দলীলবিহীন), তা পরিত্যাজ্য। (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪৩৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩৪৩, ইসলামিক
সেন্টার ৪৩৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ছালাতে সর্বদা আল্লাহর স্মরণে মশগূল থাকা
মসজিদে আল্লাহর যিকর, দো‘আ, কুরআন তেলাওয়াত
প্রভৃতি কাজে মশগূল থাকা যরূরী। সেই সাথে অন্য মুছল্লী যাতে বিরক্ত না হয় সেদিকে বিশেষভাবে
লক্ষ্য রাখতে হবে। আর ছালাতের মধ্যে এদিক-সেদিক তাকানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা
এতে মনোযোগ বিনষ্ট হয়। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতে এদিক-সেদিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করার ব্যাপারে প্রশ্ন করেছি।
তিনি বলেছেন, এটা ছোঁ মারা। শায়ত্বন (শয়তান) বান্দাকে সালাত হতে ছোঁ মেরে নিয়ে যায়।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৮২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৭৫১, ৩২৯১, সুনান আবূ দাঊদ ৯১০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ছালাতের মধ্যে উপরের দিকে বা আকাশের দিকে তাকানোও
নিষেধ।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ লোকেরা যেন সালাতে দু’আ করার সময় নযরকে আসমানের দিকে ক্ষেপন না করে। অন্যথায় তাদের দৃষ্টিকে ছোঁ মেরে নেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৮৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪২৯, সুনান আননাসাঈ ১২৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৪৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্যত্র তিনি বলেন, আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ).....জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যেসব লোক সালাতের মধ্যে আকাশের দিকে তাকায় তাদের এমন করা থেকে বিরত থাকা উচিত। অন্যথায় তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৪৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৬১, ছহীহুল জামে‘ ৫৪৮১; ছহীহ আত-তারগীব ৫৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উত্তমরূপে ওযূ করা
ওযূ হচ্ছে ছালাতের চাবি। আর উত্তমরূপে ওযূ
করা ছালাত সম্পন্ন হওয়ার জন্য শর্ত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কষ্টের সময় পূর্ণাঙ্গভাবে উযূ করা, মসজিদে যাতায়াত করা এবং
এক ওয়াক্তের সালাত আদায়ের পর পরবর্তী ওয়াক্তের সালাতের জন্য অপেক্ষারত থাকা (এই তিনটি
কাজ) গুনাহসমূহের কাফফারাস্বরূপ। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৮,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫১, সুনান আততিরমিযী ৫১, সুনান
আননাসায়ী ১৪৩, আহমাদ ৭১৬৮, ৭৬৭২, ৭৯৩৫, ৭৯৬১, ৭৩৬১; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৮৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
ছালাতে তাকবীরে তাহরীমা
ছালাতের জন্য তাকবীরে তাহরীমা বলে বুকে হাত
বাঁধা ফরয। আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ পবিত্রতা হল সালাতের চাবি, তার তাকবীর হল হারামকারী এবং তার সালাম হল হালালকারী।
(সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১২,
সুনান আততিরমিযী ৩, সুনানআবূ দাঊদ ৬১, ৬১৮; আহমাদ ১০০৯, ১০৭৫; দারিমী ৬৮৭, মিশকাত ৩১২,
ইরওয়াহ ৩০১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, ‘যখন তুমি ছালাতের জন্য
দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে। অতঃপর কুরআন হ’তে যা তোমার পক্ষে সহজ তা পড়বে। অতঃপর রুকূ‘
করবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকূ‘ করবে। এরপর সিজদা করবে এবং ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। অতঃপর
সিজদা হ’তে উঠে স্থির হয়ে বসবে। আর তোমার পুরো ছালাতে এভাবেই করবে’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৯৩, ৬২৫১, ৬২৫২, ৬৬৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৩৯৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নিয়মিত ছালাত আদায় করা
ছালাত নিয়মিতভাবে আদায় করা। বিশেষ বিশেষ দিনে,
শুধু দুই ঈদে কিংবা কেবল শুক্রবারে ছালাত আদায়ের কোন বিধান ইসলামে নেই। মহান আল্লাহ
বলেন, “যারা নিয়মিত ছালাত আদায় করে”। (সুরা মা‘আরিজ ৭০/২৩)।
’আয়িশাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় ’আমল কী? তিনি
বললেনঃ যে ’আমল সদাসর্বদা নিয়মিত করা হয়। যদিও তা অল্প হয়। তিনি আরও বললেন, তোমরা সাধ্যের
অতীত কাজ নিজের উপর চাপিয়ে নিও না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৬৪৬৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮৩, আধুনিক
প্রকাশনী- ৬০১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি আরো বলেন, ‘কোন ব্যক্তির নিয়মিত আমলই
তাঁর নিকট সর্বাধিক প্রিয় দ্বীন ছিল’।
হাদিসঃ
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার
নিকট এক মহিলা উপস্থিত থাকা অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ
করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এ মহিলা কে? আমি বললাম, অমুক মহিলা, সে রাতে ঘুমায় না।
তিনি তার নামাযের কথা উল্লেখ করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আরে
থামো! তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমল করা তোমাদের কর্তব্য। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ (পুরস্কার
প্রদানে) অবসন্ন হন না, যতক্ষণ না তোমরা অবসন্ন হয়ে পড়ো। আয়েশা (রাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তির
নিয়মিত আমলই তাঁর নিকট সর্বাধিক প্রিয় দীন ছিল। (সুনান
ইবনু মাজাহ ৪২৩৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩, ১১৩২, ১১৫১, ১৯৭০, ১৯৮৭, ৬৪৬১,
৬৪৬২, ৬৪৬৪, ৬৪৬৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৪১, ৭৮২,
৭৮৩, ৭৮৫, ২৮১৮, সুনান আননাসায়ী ৭৬২, ১৬৪২, সুনান আবূ দাউদ ১৩৭০, ১৩৬৮, আহমাদ ২৩৭২৪,
২৩৭৯৮, ২৪৭৮৯, ২৪৮৮৫, ২৪৯৪৫, ২৫০২৮, ২৫১০৪, ২৫১৪৩, ২৫৪১৪, ২৫৫০৭, ২৫৭৭৫, ২৫৮১১, ২৫৮৫৮,
মুয়াত্তা মালেক ৪২২, ইরওয়া ১২৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সময়মত ছালাত আদায় করা
পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে।
সে সময়ে ছালাত আদায় করা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “ছালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট
সময়ের জন্য নির্ধারিত”। (সুরা নিসা ৪/১০৩)। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “সূর্য অপরাহ্নে
ঢলে পড়ার পর থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত তুমি ছালাত কায়েম কর এবং ফজরের ছালাত আদায়
কর। নিশ্চয়ই ফজরের ছালাত (রাত্রি ও দিবসের ফেরেশতাগণের মাধ্যমে) সাক্ষ্যপ্রাপ্ত হয়”।
(সুরা ইসরা ১৭/৭৮)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....আবদুল্লাহ
ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রশ্ন
করলাম, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, সময় মত সালাত আদায় করা।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম,
তারপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর
কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। তার কষ্ট হবে এ ভেবে অতিরিক্ত প্রশ্ন করা
থেকে বিরত থাকলাম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৩,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৫৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৬০, ছহীহুল জামে
১০৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদীছে এসেছে,
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল আমীন খানায়ে ক্বা’বার কাছে
দু’বার আমার সালাতে ইমামাত করেছেন। (প্রথমবার) তিনি আমাকে যুহরের সালাত আদায় করালেন,
সূর্য তখন ঢলে পড়েছিল। আর ছায়া ছিল জুতার দোয়ালির (প্রস্থের) পরিমাণ। ’আসরের সালাত
আদায় করালেন যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার এক গুণ হলো। মাগরিবের সালাত আদায় করালেন
যখন সিয়াম পালনকারী (রোযাদার) ইফত্বার করে। ’ইশার সালাত আদায় করালেন যখন ’শাফাক্ব অস্তমিত
হলো। ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করালেন যখন সিয়াম পালনকারীর জন্য পানাহার হারাম হয়।
দ্বিতীয় দিন যখন এলো তিনি আমাকে যুহরের সালাত
আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার এক গুণ। ’আসরের সালাত আদায় করালেন, যখন কোন
জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ। মাগরিবের সালাত আদায় করালেন, সায়িমগণ (রোযাদাররা) যখন ইফত্বার
করে। ’ইশার সালাত আদায় করালেন, তখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হয়েছে। এরপর তিনি ফাজর
(ফজর) আদায় করালেন তখন বেশ ফর্সা। এরপর আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, হে মুহাম্মাদ!
এটাই আপনার পূর্বেকার নবীগণের সালাতের ওয়াক্ত। এ দুই সময়ের মধ্যে সালাতের ওয়াক্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৩, সুনান আবূ দাঊদ ৩৯৩, সুনান
আততিরমিযী ১৪৯, সহীহুল জামি ১৪০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা
আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা উত্তম আমলের
অন্তর্ভুক্ত। হাদীছে এসেছে,
উম্মু ফারওয়াহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন কাজ (’আমল) বেশী উত্তম?
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতকে তার প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০৭, সুনান আবূ দাঊদ ৪২৬,
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৭০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৯৯, আহমাদ ২৭১০৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাবার সামনে আসলে ছালাত আদায় না করা
ক্ষুধার্ত থাকলে এবং খানা সামনে উপস্থিত থাকলে
আগে খাবার খেয়ে তারপর ছালাত আদায় করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘খাদ্য উপস্থিত হলে ছালাত নেই’।
হাদিসঃ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইরশাদ করতে শুনেছিঃ খাবার সামনে রেখে
কোন সালাত নেই এবং দু’ অনিষ্ট কাজ (পায়খানা-পেশাব) চেপে রেখেও কোন সালাত নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১০৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৮৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৩৩,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পেশাব-পায়খানার চাপ নিয়ে ছালাত আদায় না করা
পেশাব-পায়খানার বেগ অনুভূত হ’লে তা দ্রুত সম্পন্ন
করা উচিত। কেননা রাসূল (ছাঃ) এ অবস্থায় ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
‘খাদ্য উপস্থিত হ’লে ছালাত নেই এবং পেশাব-পায়খানার চাপ থাকলে কোন ছালাত নেই’।
হাদিসঃ
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইরশাদ করতে শুনেছিঃ খাবার সামনে রেখে
কোন সালাত নেই এবং দু’ অনিষ্ট কাজ (পায়খানা-পেশাব) চেপে রেখেও কোন সালাত নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১০৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৮৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৩৩,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তবে এমতাবস্থায় ছালাত আদায় করলে তা বাতিল হবে
না।
ছালাতের জন্য মসজিদে গমনের পথে আল্লাহর যিকর করা
বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় ও প্রবেশকালে আল্লাহর
যিকর করা তথা ‘বিসমিল্লাহ’ বলা। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ
ও খাদ্য গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম নিলে শয়তান (তার সঙ্গীদের) বলে, রাতে এখানে তোমাদের
থাকা-খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যখন কোনো ব্যক্তি ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর নাম নেয় না,
তখন শয়তান বলে, তোমরা রাতে থাকার স্থান পেলে। সে যখন খাবার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে
না তখন শয়তান বলে, তোমরা রাতে থাকার জায়গা ও খাওয়ার দুটোর সুযোগই পেলে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৭৬৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫১৫৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০১৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৫০৯১, ইসলামিক সেন্টার ৫১০১, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৮৭, আল আদাবুল মুফরাদ ১০৯৬, নাসায়ী
আল কুবরা ৬৭৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ১৬০৭, মুসনাদে আহমাদ ১৫১৪৮, ১৪৩১৯, ১৪৬৮৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৮১৯, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় রাসূল (ছাঃ) এ দো‘আ
পড়তেন,
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর হতে বের হবার সময় বলতেন,
’’বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কালতু
’আলাল্ল-হি, আল্ল-হুম্মা ইন্না- না’ঊযুবিকা মিন্ আন্ নাযিল্লা আও নাযিল্লা আও নাযলিমা
আও নুযলামা আও নাজহালা আও ইউজহালা ’আলায়না-’’
(অর্থাৎ- আল্লাহর নামে, আমি আল্লাহর ওপর পূর্ণ
ভরসা করলাম। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই পদস্খলিত হওয়া, বিপথগামী হওয়া, উৎপীড়ন
করা, উৎপীড়িত হওয়া, অজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং কারো অজ্ঞতা প্রকাশের পাত্র হওয়া হতে।)।
আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহর অন্য বর্ণনায় আছে,
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই ঘর হতে
বের হতেন, তখন আকাশের দিকে মাথা উঠিয়ে বলতেন,
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা
আন্ আযিল্লা আও উযল্লা, আও আযলিমা আও উযলামা, আও আজহালা আও ইউজহালা ’আলাইয়্যা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয়
চাই বিপথগামী হওয়া, বিপথগামী করা, উৎপীড়ন করা, উৎপীড়িত হওয়া, অজ্ঞতা প্রকাশ করা বা
অজ্ঞতা প্রকাশের পাত্র হওয়া হতে।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৪৪২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪২৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৮৪, সুনান আবূ
দাঊদ ৫০৯৪, সহীহ আল জামি ৪৭০৬, ৪৭০৮, আহমাদ ২৬৬১৬, সহীহাহ্ ৩১৬৩, নাসায়ী ৫৪৮৬, আহমাদ
২৬০৭৬, ২৬১৮৯, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মসজিদে গমনের সময়ও নির্দিষ্ট দো‘আ রয়েছে। আবদুল্লাহ
ইবনু হাশিম ইবনু হাইয়্যান আল আবদী (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি এক রাতে আমার খালা মায়মূনাহ এর (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর স্ত্রীর) ঘরে কাটালাম। (আমি দেখলাম) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা
উঠলেন এবং প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে এসে মুখমণ্ডল এবং দু’ হাত ধুলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুমালেন। পরে পুনরায় উঠে মশকের পাশে গেলেন এবং এর বন্ধন খুলে ওযু
করলেন। ওযুতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মধ্যমপন্থা অবলম্বন করলেন (অর্থাৎ
ওযু করতে খুব যত্নও নিলেন না আবার একেবারে খুব হালকাভাবেও ওযু করলেন না)। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বেশী পানি ব্যবহার করলেন না। তবে পূর্ণাঙ্গ ওযু করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে
সালাত আদায় করলেন। আমি সে সময় উঠলাম এবং তার কাজকর্ম দেখার জন্য জেগে ছিলাম বা সতর্কভাবে
তা লক্ষ্য করছিলাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা যেন না ভেবে বসেন
তাই আড়মোড়া ভাঙ্গলাম।
এবার আমি ওযু করলাম এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করতে দাঁড়ালেন, অতঃপর আমিও তার বাঁ পাশে দিয়ে দাঁড়ালাম।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে এনে তার ডান পাশে
দাঁড় করিয়ে দিলেন। এভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের সালাত
তের রাকাআত শেষ হ’ল। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি
(ঘুমের মধ্যে তাঁর) নাক ডাকতে শুরু করল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বভাবতঃ
যখনই ঘুমাতেন তখন নাক ডাকত। পরে বিলাল (রাযিঃ) তাকে সালাতের কথা বলে গেলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
"আল্ল-হুম্মাজ আল ফী ক্বলবী
নূরাওঁ ওয়া ফী বাসারী নূরাও, ওয়া ফী সামঈ নূরাও ওয়া আই ইয়ামীনী নুরাওঁ, ওয়া আই
ইয়াসা-রী নূরাওঁ, ওয়া ফাওকী নূরাওঁ, ওয়া তাহতী নূরাওঁ, ওয়া আমামী নূরাওঁ, ওয়া খালফী
নূরাওঁ,ওয়া আয্যিমলী নূরাওঁ"
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমার হৃদয়ে আলো দান
কর, আমার চোখে আলো দান কর, আমার কানে বা শ্রবণ শক্তিতে আলো দান কর। আমার ডান দিকে আলো
দান কর, আমার বাঁ দিকে আলো দান কর, আমার উপর দিকে আলো দান কর, আমার নীচের দিকে আলো
দান কর, আমার সামনে আলো দান কর, আমার পিছনে আলো দান কর এবং আমার আলোকে বিশাল করে দাও।)
বর্ণনাকারী কুরায়ব বলেছেনঃ তিনি এরূপ আরো
সাতটি কথা বলেছিলেন যা আমি ভুলে গিয়েছি। হাদীসের বর্ণনাকারী সালামাহ ইবনু কুহায়ল
বলেন- এরপর আমি আব্বাস (রাযিঃ) এর এক পুত্রের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি ঐগুলো (অবশিষ্ট
সাতটি) আমার কাছে বর্ণনা করলেন। তাতে তিনি উল্লেখ করলেনঃ আমার স্নায়ুতন্ত্ৰীসমূহে,
আমার শরীরের মাংসে, আমার রক্তে, আমার চুলে এবং আমার গাত্রচর্মে আলো দান কর। এছাড়াও
তিনি আরো দুটি বিষয় উল্লেখ করে বললেনঃ এ দু’টিতে তিনি আলো চেয়েছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৬৩,
ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৫৮, ইসলামীক সেন্টার ১৬৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ধীরস্থির ও শান্তভাবে ছালাতের দিকে গমন করা
ছালাতের ইক্বামত হলেও শান্তভাবে ছালাতে গমন
করতে হবে। দৌঁড়ে ছালাতে যাওয়া যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমরা ইক্বামত শুনতে
পাবে, তখন ছালাতের দিকে চলে আসবে, তোমাদের উচিত স্থিরতা ও গাম্ভীর্য অবলম্বন করা। তাড়াহুড়া
করবে না। অতঃপর ইমামের সাথে যতটুকু পাও তা আদায় করবে, আর যা ছুটে যায় তা পূর্ণ করবে’।
মূল হাদিসঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন তোমরা ইক্বামাত শুনতে পাবে, তখন সালাতের দিকে চলে আসবে, তোমাদের
উচিত স্থিরতা ও গাম্ভীর্য অবলম্বন করা। তাড়াহুড়া করবে না। ইমামের সাথে যতটুকু পাও তা
আদায় করবে, আর যা ছুটে যায় তা পূর্ণ করবে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬, ৯০৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৬০৪, আহমাদ ২২৭১২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় দো‘আ ও যিকর
মসজিদে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময় দুআঃ
ফাতিমা আল-কুবরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে ঢুকতেন তখন মুহাম্মাদের
(স্বয়ং নিজের) প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেনঃ
“রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ
লী আবওয়াবা রহমতিকা।”
“হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন
এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”।
যখন তিনি মাসজিদ হতে বের হতেন তখনও মুহাম্মাদের
(নিজের) প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেনঃ
“রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ
লী আবওয়াবা ফাদলিকা।”
(হে আল্লাহ্! আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং
আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন)। (সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩১৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭১, আহমাদ ২৫৮৭৭-৭৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
আবু হুমাইদ কিংবা আবু উসাইদ সাঈদী রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে
যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম পাঠায়। অতঃপর বলে:
"আল্ল-হুম্মাফ তাহলী আবওয়া-বা
রহমতিক"
যার অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার
রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন। আর যখন সে মসজিদ থেকে বের হয় তখন সে যেন বলে:
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা
মিন ফাদলিকা”
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সমূহ কল্যাণ
কামনা করি”। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৬৫, সুনান
ইবনু মাজাহ ৭৭২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৫৩৭-১৫৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১৩, দারিমী ২৬৯, ১৩৯৪, ২৬৯১, আহমাদ (৩/১৯৭),
ইবনুস-সুন্নী ৮৮, সুনান আননাসায়ী ৭২৯, আহমাদ ১৫৬২৭, ২৩০৯৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫২২,
ইসলামীক সেন্টার ১৫২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনি
মসজিদে প্রবেশের সময় নিম্নের দুআও পড়তেন,
“আঊযু বিল্লা-হিল আযীম, অবিঅজ্হিহিল কারীম, অ সুলত্বা-নিহিল
ক্বাদীম, মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম”।
অর্থ-আমি মহিমময় আল্লাহর নিকট এবং তার সম্মানিত
চেহারা ও তাঁর প্রাচীন পরাক্রমের অসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
উক্ত দুআ পড়ে মসজিদ প্রবেশ করলে শয়তান বলে,
‘সারা দিন ও আমার অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করল।’
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ
ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করার সময় বলতেন, আমি আশ্রয় চাচ্ছি মহান আল্লাহর মর্যাদাপূর্ণ
চেহারার ও তাঁর অফুরন্ত ক্ষমতায় বিতাড়িত শায়ত্বন (শয়তান) হতে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, কেউ এ দু‘আ পাঠ করলে শায়ত্বন (শয়তান) বলে, আমার নিকট হতে সে সারা
দিনের জন্য রক্ষা পেয়ে গেল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৭৪৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬০৬, সুনান আননাসায়ী ২৯৩, দারিমী
(১৩৭৬), আহমাদ (৬/৩২৫, ৪২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বের হওয়ার সময় বলতেন,
‘বিসমিল্লাহ্’ ও দরুদের পর এ দুআও পড়া যায়,
“আল্লাহুম্মা’সিমনী মিনাশ শাইত্বান”।
অর্থ:- হে আল্লাহ! আমাকে শয়তান থেকে রক্ষা
কর।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের যে কেউ মসজিদে প্রবেশকালে যেন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সালাম পেশ করে, অতঃপর বলেঃ
"আল্ল-হুম্মাফ তাহলী আবওয়া-বা
রহমতিক"
হে আল্লাহ্! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ
খুলে দিন এবং বের হওয়ার সময়ও যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি সালাম
পেশ করে, অতঃপর বলেঃ
”আল্লাহুম্মা’সিমনী মিনাশ শাইত্বান”
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত শয়তান রক্ষা
করুন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আনাস (রাঃ) বলেন, ‘এক সুন্নাহ্ (নবী (সাঃ)
এর তরীকা) এই যে, যখন তুমি মসজিদ প্রবেশ করবে, তখন ডান পা আগে বাড়াবে এবং যখন মসজিদ
থেকে বের হবে, তখন বাম পা আগে বাড়াবে।’ (হাকেম, মুস্তাদরাক
১/২১৮)।
মসজিদে ঢুকে আশপাশের লোকগুলো শুনতে পায় এমন
স্বরে তাদেরকে সালাম করবেন।
(ক) ইয়াহইয়া
ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ও ইবনু হুজর (রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমের প্রতি মুসলিমের হক ছয়টি।
প্রশ্ন করা হলো- সেগুলো কী, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, (সেগুলো হলো-)
(১) কারো সাথে তোমার দেখা হলে তাকে সালাম করবে,
(২) তোমাকে দাওয়াত করলে তা তুমি কবুল করবে,
(৩) সে তোমার নিকট ভাল উপদেশ চাইলে, তুমি তাকে
ভাল উপদেশ দিবে,
(৪) সে হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ্ বললে,
তার জন্যে তুমি (ইয়ারহামুকাল্লাহ্ বলে) রহমতের দু’আ করবে,
(৫) সে পীড়িত হলে তার সেবা-শুশ্রুষা করবে
এবং
(৬) সে মৃত্যুবরণ করলে তার (জানাযার) সাথে
যাবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৫৫৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৫৪৬৬, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা
করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোন মাজলিসে
পৌঁছে, সে যেন সালাম করে। অতঃপর যদি বসার প্রয়োজন হয়, তবে বসে পড়বে। অতঃপর যখন প্রস্থানের
উদ্দেশে দাঁড়াবে সালাম দেবে। কেননা প্রথমবারের সালাম দ্বিতীয়বারের সালামের চেয়ে উত্তম
নয় (অর্থাৎ- উভয় সালামই মর্যাদার দিক দিয়ে সমান)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৬৬০, সুনান আততিরমিযী
২৭০৬, সুনান আবূ দাঊদ ৫২০৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৮৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৯৬, সহীহ
আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৭০৭, আহমাদ ৯৬৬৪, ‘নাসায়ী’র কুবরা ১০১৭৪, আল আদাবুল মুফরাদ
৯৮৬, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ২০২, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুস্ সগীর ১০৪৬)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
ধারাবাহিকভাবে সংক্ষেপে আলোচনাঃ
(ক) ডান
পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে রাসুল সা. এর উপর দরুদ ও সালাম পেশ, প্রবেশের দোয়া
পাঠ ও নিম্নস্বরে সালাম প্রদান করবেন।
দরুদঃ
(১)
‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন
কামা- সল্লায়তা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আল- আ-লি ইবরা-হীমা ইননাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা
বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- বা-রাকতা ‘আলা- ইবরা-হীমা
ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর
পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর
পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে সম্মানিত করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত।
হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে যে সম্মান
বা মর্যাদা প্রদান করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীম
ও তাঁর পরিবারবর্গের সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৩৭০, ৪৭৯৭, ৬৩৫৭, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৬, আহমাদ ১৮১৫৬, আধুনিক প্রকাশনী
৩১২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩১২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অথবা-
(২)
আবূ হুমাইদ সা‘ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কিভাবে
আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবে
পড়বে, হে আল্লাহ!
(আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া
‘আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা সাল্লাইতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া
‘আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা বা-রাক্তা ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম
মাজীদ)।
আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরদের উপর রহমত নাযিল করুন, যেরূপ আপনি রহমত
নাযিল করেছেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। আর আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর এমনিভাবে বরকত নাযিল
করুন যেমনি আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয় আপনি অতি
প্রশংসিত এবং অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৩৬৯, ৬৩৬০, মুসলিম ৩/১৭, আহমাদ ২৩৬৬১, আধুনিক প্রকাশনী ৩১১৯,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩১২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) এরপর
মসজিদে প্রবেশের দোয়া পাঠ করবেন।
প্রবেশের দোয়া-
“রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ
লী আবওয়াবা রহমতিকা”
অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা
করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”।
অথবা-
"আল্ল-হুম্মাফ তাহলী আবওয়া-বা
রহমতিক"
হে আল্লাহ্! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ
খুলে দিন।
এরপর নিম্নের দোয়া পাঠ করবেন-
“আঊযু বিল্লা-হিল আযীম, অবিঅজ্হিহিল
কারীম, অ সুলত্বা-নিহিল ক্বাদীম, মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম”।
অর্থ- আমি মহিমময় আল্লাহর নিকট এবং তার সম্মানিত
চেহারা ও তাঁর প্রাচীন পরাক্রমের অসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
(গ)
তারপর নিম্নস্বরে সালাম দিবেন।
(ঘ) মসজিদ
থেকে প্রস্থানের সময় আবারও রাসুল সা. এর উপর দরুদ ও সালাম পেশ এবং বাহির হওয়ার দোয়া
পাঠ, সালাম প্রদান করে বাম পা দিয়ে বের হবেন।
দরুদ-ঐ
বাহির হওয়ার দোয়া-
“রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ
লী আবওয়াবা ফাদলিকা।”
(হে আল্লাহ্! আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং
আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন)।
অথবা-
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা
মিন ফাদলিকা”
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সমূহ কল্যাণ
কামনা করি”।
এরপর বলবেন-
”আল্লাহুম্মা’সিমনী মিনাশ শাইত্বান”
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত শয়তান রক্ষা
করুন।
তারপর নিম্নস্বরে সালাদ প্রদান ও বাম পা দিয়ে
মসজিদ থেকে বের হবেন।
মসজিদ প্রবেশ করে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা
মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত
আদায় করা সুন্নাত, যাকে তাহিইয়াতুল মাসজিদ বলে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ মসজিদে
প্রবেশ করলে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার পূর্বে বসবে না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘সে যেন
বসার পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে নেয়’।
মূল হাদিসঃ
আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে
সে যেন বসার আগে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করে
নেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৪৪৪, ১১৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১৪,
নাসায়ী ৭৩০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩১৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১০১৩, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৪৬৭, ইরওয়া ৪৬৭, আহমাদ ২২০১৭, ২২০২৩, ২২০৭২, ২২০৮৮, ২২১৪৬; মুওয়াত্ত্বা
মালিক ৩৮৮, দারিমী ১৩৯৩, আধুনিক প্রকাশনী ৪২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর হতে দিনের সকালের দিক ছাড়া আগমন করতেন
না। আগমন করেই তিনি প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করতেন। দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করতেন, তারপর সেখানে বসতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩০৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১৬, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ২৭৭৩, আহমাদ ১৫৭৭৫, নাসায়ী ৭৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসলাম। তিনি তখন মসজিদে
ছিলেন। রাবী মিস‘আর (রাযি.) বলেনঃ আমার মনে পড়ে রাবী মুহারিব (রহ.) চাশতের সময়ের কথা
বলেছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি দু’ রাক‘আত সালাত আদায়
কর। জাবির (রাযি.) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আমার কিছু পাওনা
ছিল। তিনি তা আদায় করে দিলেন বরং কিছু বেশী দিলেন। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৩, ১৮০১, ২০৯৭, ২৩০৯, ২৩৮৫, ২৩৯৪, ২৪০৬, ২৪৭০, ২৬০৩, ২৬০৪,
২৭১৮, ২৮৬১, ২৯৬৭, ৩০৮৭, ৩০৮৯, ৩০৯০, ৪০৫২, ৫০৭৯, ৫০৮০, ৫২৪৩, ৫২৪৪, ৫২৪৫, ৫২৪৬, ৫২৪৭,
৫৩৬৭, ৬৩৮৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
এমনকি জুম‘আর দিন ইমামের খুৎবা প্রদানকালেও
কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে ‘তাহিইয়াতুল মসজিদ’ দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করে বসার নির্দেশ
এসেছে।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাহ্ দেয়ার সময় বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমু‘আর দিন
ইমামের খুতবাহ্ চলাকালে মসজিদে উপস্থিত হলে সে যেন সংক্ষেপে দু’ রাক্‘আত (নফল) সালাত
আদায় করে নেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১১, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯০৩-১৯০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১১১৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১১১৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৩৫, ইবনু হিব্বান ২৫০০, আহমাদ ১৪৪০৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আযান চলাকালে মসজিদ প্রবেশ করলে না বসে আযানের
জওয়াব দিয়ে শেষ করে তারপর ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ পড়তে হবে। তবে জুমআর দিন খুতবার আযান
হলে জওয়াব না দিয়ে ঐ ২ রাকআত নামায আযান চলা অবস্থায় পড়ে নিতে হবে। যেহেতু খুতবা শোনা
আরো জরুরী। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৩৫)।
মসজিদে প্রবেশ করে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ পড়তে
হলে ঐ নামায আর পড়তে হয় না। কারণ, তখন এই সুন্নতই ওর স্থলাভিষিক্ত ও যথেষ্ট হয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৬৭, লিকাউবাবিল মাফতূহ্,
ইবনে উসাইমীন ৫৩/৬৯)।
যেমন হারামের মসজিদে প্রবেশ করে (বিশেষ করে
মুহ্রিমের জন্য) ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ হল তওয়াফ; ২ রাকআত সুন্নত নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৬/২৬৪-২৬৫)।
উযু নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত মসজিদে সালাতের জায়গায়
যতোক্ষণ বসে থাকবে ততোক্ষণ ফিরিস্তাগণ তার উপর দোয়া করতে থাকে।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে সালাতের পরে হাদাসের
পূর্ব পর্যন্ত যেখানে সে সালাত আদায় করেছে সেখানে যতক্ষণ বসে থাকে ততক্ষণ মালাকগণ তার
জন্যে দু‘আ করতে থাকেন। তাঁরা বলেনঃ হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ! তার উপর
রহম কর। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৫, ১৭৬; সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৬, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৪৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মসজিদে গমনকালে আঙ্গুলের মধ্যে আঙ্গুল না ঢুকানো
মসজিদে গমনের পথে এবং ছালাতের মধ্যে আঙ্গুলের
মধ্যে আঙ্গুল ঢুকানো নিষেধ। কা’ব ইবনু ’উজরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন উযূ করে তখন সে সুন্দর
করে উযূ করবে। তারপর সালাতের উদ্দেশ্য করে মসজিদে যাবে। আর তখন এক হাতের আঙ্গুলকে অন্য
হাতের আঙ্গুলের মধ্যে ঢুকিয়ে মটকাবে না। কেননা সে সালাতে আছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৯৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫৬২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৪, আহমাদ ১৮১০৩, দারিমী
১৪০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
অহংকার মুক্তভাবে ছালাত আদায় করা
ছালাত এমনভাবে আদায় করতে হবে যাতে কোনরূপ অহংকার
প্রকাশ না পায়। বরং বিনয়ীভাবে ছালাত আদায় করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক
বলেন, তোমরা আমার কাছে প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব। যারা অহংকারবশত
আমার ইবাদত হ’তে বিমুখ হয় তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে’। (সুরা মুমিন ৪০/৬০)।
ইবাদত কবুলের অন্যতম প্রধান শর্ত “হালাল রিজিক”
হালাল রিজিক ইবাদত কবুলের অন্যতম প্রধান শর্ত।
রিজিক হালাল বা পবিত্র এবং বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে।
প্রথমতঃ ব্যবহার্য,
ভোগ্য বা উপভোগ্য বস্তু বা বিষয়টি হালাল তথা পবিত্র ও অনুমোদিত হতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ
তা প্রাপ্তি বা অর্জনের পথ বা মাধ্যম হালাল বা বৈধ হতে হবে। এ দুইয়ের কোনো একটির ব্যত্যয়
ঘটলে ঐ রিজিক হালাল বা পবিত্র হবে না।
রাসুল সাঃ বলেন,
(ক) আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে, সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৭, সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল ঈমান ৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ)
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে দেহের গোশত/গোশত হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম
ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭২, আহমাদ ১৪৪১, শু‘আবুল ঈমান ৮৯৭২, দারিমী ২৭৭৯)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি পুত-পবিত্র
জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যে কাজ করতে রসূলদের
প্রতি নির্দেশ করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মুমিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তাআলা
বলেছেন,
’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক
আমাল কর”। (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
’’হে মুমিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ
দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর”। (সূরা
আল বাকারা ২ : ১৭২)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দুইহাত আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির দুআ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের সামনে এমন একটি যুগ আসবে, যখন কেউ কি উপায়ে ধন-সম্পদ উপার্জন করলো, হারাম না হালাল উপায়ে- এ ব্যাপারে কেউ কোনো প্রকার পরোয়া করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৫৯, ২০৮৩, নাসায়ী ৪৪৫৪, সহীহ আল জামি ৮০০৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭২২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯১৬ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ)
নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর এ উভয়ের মধ্যে এমন অনেক সন্দেহভাজন
বিষয় বা বস্ত্ত আছে, যে ব্যাপারে অনেক মানুষই এগুলো হালাল, কি হারাম- এ বিষয়ে অবগত
নয়। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় হতে বিরত থাকবে, তার দীন ও মান-মর্যাদা পুত-পবিত্র
থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত থাকবে, সে সহসাই হারামে জড়িয়ে পড়বে। বিষয়টি সেই
রাখালের ন্যায়, যে রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার কাছাকাছি নিয়ে চরালো, তার
পাল অজান্তেই নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
সাবধান! প্রত্যেক দায়িত্বশীলেরই (প্রশাসন বা
সরকারেরই) চারণভূমি (নিষিদ্ধ এলাকা) আছে, আর আল্লাহ তা’আলার
নিষিদ্ধ চারণভূমি হারামসমূহকে নির্ধারিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, মানব দেহের ভিতরে একটি
গোশতপিন্ড আছে, যা ভালো থাকলে গোটা শরীরই ভালো থাকে। আর এটি নষ্ট হয়ে গেলে বা বিকৃতি
ঘটলে সমস্ত শরীরটাই নষ্ট হয়ে যায়। সেই গোশতপিন্ডটিই হলো ’কলব’
(অন্তঃকরণ)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬২, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৯,
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২০৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ৩৩৩০, আহমাদ ১৮৩৭৪,
দারিমী ২৫৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
(ক) “হে মানবগণ! পৃথিবীর মধ্যে যা বৈধ-পবিত্র, তা হতে ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”। (সুরা আল বাক্বারাহ ১৬৮)।
(খ) “হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যা জীবিকা স্বরূপ দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাকো”। (সুরা আল বাক্বারাহ ১৭২)।
(গ)
“হে রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র বস্তু হতে আহার করুন ও সৎকর্ম করুন; আপনারা যা করেন সে
সম্বন্ধে আমি অবগত”। (সুরা মুমিনূন ৫১)।
হারাম উপায়ে উপার্জিত কিছু খাত
(ক)
রাফি’বিন
খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
কুকুর বিক্রয়লব্ধ মূল্য ঘৃণিত বস্তু, যিনা-ব্যভিচারের বিনিময়ও ঘৃণিত, শিঙ্গা লাগানোর
(রক্তমোক্ষণের) ব্যবসা ঘৃণিত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৮, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত ৩৪২১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৭৫, আহমাদ ১৫৮২৭, দারিমী ২৬৬৩, সহীহ
আল জামি‘ ৩০৭৭, সহীহাহ্ ৩৬২২, সহীহ ইবনু
হিব্বান ৫১৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারের বিনিময় এবং গণকের
পারিতোষিক (গ্রহণ করা) হতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৭, ২২৮২, ২৩৪৬, ৫৭৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০১, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৬৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৫৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৪, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৭, ২২৮২, ৫৩৪৬, ৫৭৬১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৩৩, ১২৭৬,
নাসায়ী ৪২৯২, ৪৬৬৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪২৮, ৩৪৮১, আহমাদ ১৬৬২২, ১৬৬২৬,১৬৬৩৯
মুয়াত্তা মালেক ১৩৬৩, দারেমী ২৫৬৮, ইরওয়া ১২৯১,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৫৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য ও পাঠার ভাড়া গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮৪, নাসায়ী ৪২৯৩, ৪৬৭৩, আহমাদ ৭৯১৬, ৮১৮৯, ৯১০৮, ১০১১১, দারেমী ২৬২৩, ২৬২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিড়ালের মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৭৯, নান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮০, নাসায়ী ৪২৯৫, ৪৬৬৮, আহমাদ ১৪২৪২, ১৪৩৫৩, ১৪৭২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তমোক্ষণ কাজের বিনিময়, কুকুর বিক্রয় মূল্য ও
যিনা-ব্যভিচারের বিনিময় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) লানাত (অভিসম্পাত) করেছেন সুদগ্রহীতা ও সুদদাতার প্রতি। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো লানাত করেছেন ওই ব্যক্তির প্রতি যে দেহের কোনো অংশে নাম বা
চিত্রাঙ্কন করে ও করায়। তাছাড়াও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছবি অঙ্কনকারীর
প্রতিও লানাত করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৫,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৬২, ২০৮৬, আহমাদ ১৮৭৬৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫৫২৯, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫৪২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ)
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমরা গায়িকা বেচা-কেনা করো না তাদেরকে (মেয়েদেরকে) গান শিক্ষাও দিয়ো না, এর
মূল্য হারাম। এ জাতীয় কাজ যারা করে তাদের ব্যাপারেই কুরআন মাজীদের এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে,
অর্থাৎ- ’’কতক মানুষ আল্লাহ্র পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশে অজ্ঞতাবশত অবান্তর কথাবার্তা
ক্রয় করে আর আল্লাহ্র পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদের জন্যই আছে অবমাননাকর শাস্তি”।
(সূরা লুকমান ৩১ : ৬)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮০,
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৮২, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬৮, সহীহ আল জামি ৫০৯১, সহিহাহ
২৯২২)। (হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)-ইবনে মাজাহ সূত্রে)।
(ছ) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার
পিতা আবূ বকর (রাঃ)-এর একটি ক্রীতদাস ছিল। দাসটি তাঁর জন্য রুযী-রোজগার করতো এবং তিনি
তা খেতেন। একবার সেই ক্রীতদাসটি কোনো খাবার নিয়ে এলে আবূ বকর (রাঃ) তা খেলেন। ক্রীতদাসটি
তাঁকে বললেন, আপনি কি জানেন- এটা কিভাবে উপার্জিত হয়েছে? আবূ বকর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন,
এ মাল কিভাবে উপার্জিত? তখন ক্রীতদাসটি বললো, জাহিলী যুগে একবার আমি এক ব্যক্তির কাছে
গণকের কাজ করেছিলাম, অথচ আমি গণনার কাজও ভালো করে জানতাম না। আমি গণনার ভান করে তাকে
ধোঁকা দিয়েছিলাম। ঐ ব্যক্তির সাথে আজ আমার দেখা হলে সে আমাকে আগের ঐ গণনার বিনিময়ে
বস্তুটি দান করেছে, আপনি তাই খেয়েছেন। তিনি বলেন, (এ কথা শুনামাত্র) আবূ বকর(রাঃ) গলার
ভিতরে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে পেটের সব জিনিস বমি করে ফেলে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৮৪২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(জ) আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন পথে পড়ে থাকা
একটি খেজুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
এ খেজুর যাকাত বা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হবার সন্দেহ না থাকলে আমি উঠিয়ে খেয়ে নিতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮২১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৪৩১, ২০৫৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩৬৮,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৭১, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক্ব ১৮৬৪২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩৬,
ইরওয়া ১৫৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাতি হাসান ইবনু ’আলী (রাঃ) সদাক্বার
খেজুর হতে একটি খেজুর উঠিয়ে মুখে পুরলেন। (তা দেখে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, খেজুরটি মুখ থেকে বের করে ফেলো, বের করে ফেলো। (তিনি এ কথাটি এভাবে বললেন যেন
হাসান তা মুখ থেকে বের করে ফেলে দেয়)। তারপর তিনি তাঁকে বললেন, তুমি কি জানো না যে,
আমরা (বানী হাশিম) সদাক্বার মাল খেতে পারি না। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬৯,
আহমাদ ৯৩০৮, দারিমী ১৬৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩২৩১, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৪৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(ঞ) জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর তথায় অবস্থানকালে
বলেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মদ, মৃতজমত্ত, শুকর ও মূর্তির ক্রয়-বিক্রয় হারাম করেছেন।
তাঁকে বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মৃত জন্তুর চর্বি সম্পর্কে কী বলেন? কারণ এটি নৌকায়
লাগানো হয়, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহৃত হয় এবং লোকেরা তা দিয়ে বাতিও জ্বালায়।
তিনি বলেনঃ না, এগুলোও হারাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
আল্লাহ ইহূদীদের ধ্বংস করুন। আল্লাহ তাদের জন্য চর্বি হারাম করলে তারা এটি গলিয়ে বিক্রয়
করে এবং এর মূল্য ভোগ করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬৭, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৬, ৪৬৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৪০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৮১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৯৭, নাসায়ী ৪২৫৬, ৪৬৬৯, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৩৪৮৬, বায়হাকী ৯/৩৫৫, ইবনু হিব্বান ৪৯৩৭, ইরওয়া ১২৯০, রাওদুন নাদীর ৪৪৬,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এগুলো ছাড়াও হারাম উপায়ে অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন
খাত রয়েছে, যেমন সুদ খাওয়া, সুদীকারবারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা, ঘুষ নেয়া, দুর্নীতি
করা, সুপারিশের করে টাকা নেয়া, নাটক সিনেমায় অভিনয় করা, চাঁদাবাজি করা, টেন্ডারবাজি
করা, চুরি করা, ডাকাতি করা, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা, যেকোনো অবৈধ ব্যবসা করা,
ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে কর্মরত থাকা অবস্থায় আলাদাভাবে রোগী দেখে টাকা নেয়া কিংবা
অন্য কোথাও রেফার্ড করে বা টেস্ট করিয়ে তার কমিশন নেয়া, ঘুষ নিয়ে রায় দেয়া, ঘুষ নিয়ে
মামলার রিপোর্ট পরিবর্তন করা আর কতো লিখবো এরকম হাজার হাজার অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের
খাত আছে। যারা এসব খাতের সাথে জড়িত তাদের উপার্জিত অর্থ হারাম। হারাম খেলে দেহও হারাম
হয়ে যায়। তাদের ইবাদত, আমল বা দান খয়রাত আল্লাহ তায়ালা কখনো কবুল করবেন না।
রাসুল সাঃ বলেন,
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবূল করেন না এবং
হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের দান-খয়রাত কবূল করেন না। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২৭২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৪, সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১, আহমাদ ৪৬৮৬, ৪৯৪৯, ৫১০২, ৫১৮৩, ৫৩৯৬, ইরওয়াহ ১২০, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৪২৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ছালাত আদায়ের
ক্ষেত্রে উপরোক্ত শর্তসমূহ মেনে চলা জরুরী। ফলে ছালাত আল্লাহর নিকটে কবুল হবে এবং অশেষ
ছওয়াব হাছিল হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী শিষ্টাচার মেনে
চলার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
(সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
...........................................................................................
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে
PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment